id
stringlengths
3
7
url
stringlengths
31
795
title
stringlengths
1
93
text
stringlengths
13
179k
en_url
stringlengths
30
381
en_title
stringlengths
1
351
en_text
stringlengths
0
21.3k
608
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%20%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B7%E0%A6%BE
বাংলা ভাষা
বাংলা ভাষা (বাঙলা, বাঙ্গলা, তথা বাঙ্গালা নামেও পরিচিত) একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতি জাতির প্রধান কথ্য ও লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পঞ্চম ও মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। বাংলা সার্বভৌম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের বরাক উপত্যকার দাপ্তরিক ভাষা। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা। এছাড়া, ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মেঘালয়, মিজোরাম, ওড়িশার মত রাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতের মোট জনসংখ্যার ৮.০৩ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে এবং হিন্দির পরেই বাংলা ভারতে সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা ও ইউরোপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী অভিবাসী রয়েছে। সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে ২৮.৫ কোটিরও অধিক লোক দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ব্যবহার করে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ও রণসঙ্গীত বাংলাতে রচিত এবং জাতীয় পর্যায়ের সকল কার্যক্রম বাংলাতে পরিচালিত হয়। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ও স্তোত্র বাংলাতে রচিত। বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস ১৩০০ বছর পুরনো। চর্যাপদ এ ভাষার আদি নিদর্শন। অষ্টম শতক থেকে বাংলায় রচিত সাহিত্যের বিশাল ভান্ডারের মধ্য দিয়ে অষ্টাদশ শতকের শেষে এসে বাংলা ভাষা তার বর্তমান রূপ পরিগ্রহণ করে। বাংলা ভাষার লিপি হলো বাংলা লিপি। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত বাংলা ভাষার মধ্যে শব্দগত ও উচ্চারণগত সামান্য পার্থক্য রয়েছে। বাংলার নবজাগরণে ও বাংলার সাংস্কৃতিক বিবিধতাকে এক সূত্রে গ্রন্থনে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে তথা বাংলাদেশ গঠনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলায় প্রায় ৭৫,০০০ পৃথক শব্দ রয়েছে, যার মধ্যে: ৫০,২৫০ (৬৭%) শব্দ "তৎসম" (সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি গৃহীত); ২১,০০০ (২৮%) শব্দ "তদ্ভব" (বাংলা ভাষার শব্দসমূহ যার উৎস পালি এবং প্রাকৃত ভাষা দ্বারা হয়েছে); "বিদেশী" শব্দ প্রায় ৫০০০ টি ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব বাংলায় সংগঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলন এই ভাষার সাথে বাঙালি অস্তিত্বের যোগসূত্র স্থাপন করেছে। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী ছাত্র ও আন্দোলনকারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাকরণের দাবিতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা শহিদদের সংগ্রামের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ইতিহাস বাংলা ভাষার ইতিহাসকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়: প্রাচীন বাংলা (৯০০/১০০০-১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ) — চর্যাপদ, ভক্তিমূলক গান এই সময়কার লিখিত নিদর্শন। এই সময় আমি, তুমি ইত্যাদি সর্বনাম এবং -ইলা, -ইবা, ইত্যাদি ক্রিয়াবিভক্তির আবির্ভাব ঘটে। মধ্য বাংলা (১৪০০-১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ) — এ সময়কার গুরুত্বপূর্ণ লিখিত নিদর্শন চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ইত্যাদি। শব্দের শেষে "অ" ধ্বনির বিলোপ, যৌগিক ক্রিয়ার প্রচলন, ফারসি ভাষার প্রভাব এই সময়ের সাহিত্যে লক্ষ্য করা যায়। কোনো কোনো ভাষাবিদ এই যুগকে আদি ও অন্ত্য এই দুই ভাগে ভাগ করেন। আধুনিক বাংলা (১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে-বর্তমান) — এই সময় ক্রিয়া ও সর্বনামের সংক্ষেপণ ঘটে, যেমন তাহার → তার; করিয়াছিল → করেছিল। বাংলার প্রাচীন ভাষা খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দ থেকে বাংলায় হিন্দু ব্রাহ্মণগণ সংস্কৃত ভাষার চর্চা করত, কিন্তু স্থানীয় বৌদ্ধরা প্রাকৃত ভাষার কোন কোন রূপে (ভ্যারাইটি) কথা বলত, যাকে ডঃ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন মাগধী প্রাকৃতের পূর্ব রূপ বা ভ্যারাইটি হিসেবে। গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়, বাংলা ছিল হিন্দু যাজক বা পুরোহিতদের জন্য সংস্কৃত সাহিত্যের একটি কেন্দ্র, যা স্থানীয়দের কথ্য ভাষাকে প্রভাবিত করে। প্রথম সহস্রাব্দে বাংলা যখন মগধ রাজ্যের একটি অংশ ছিল তখন মধ্য ইন্দো-আর্য উপভাষাগুলি বাংলায় প্রভাবশালী ছিল। এই উপভাষাগুলিকে মাগধী প্রাকৃত বলা হয় এবং এটি আধুনিক বিহার, বাংলা ও আসামে কথিত হত। এই ভাষা থেকে অবশেষে অর্ধ-মাগধী প্রাকৃতের বিকাশ ঘটে। প্রথম সহস্রাব্দের শেষের দিকে অর্ধ-মাগধী থেকে অপভ্রংশের বিকাশ ঘটে। সময়ের সাথে সাথে বাংলা ভাষা একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে বিকশিত হয়। প্রাচীন যুগ অন্যান্য পূর্বাঞ্চলীয় ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহের মতো বাংলাও সংস্কৃত ও মগধী প্রাকৃত থেকে ১০০০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দে বিকশিত হয়। সেসময় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় আপভ্রংশ ছিল পূর্ব অপভ্রংশ বা অবহট্‌ঠ ("অর্থহীন ধ্বনি"), সেটা থেকেই অবশেষে আঞ্চলিক উপভাষাসমূহের বিকাশ ঘটে, এক্ষেত্রে তিনটি ভাষাদল গঠিত হয় - বাংলা–অসমীয়া ভাষাসমূহ, বিহারি ভাষাসমূহ এবং ওড়িয়া ভাষাসমূহ। অনেকে যুক্তি দেখান যে, এই ভাষাদলগুলোর পৃথকীকরণ অনেক আগেই ঘটেছে, কেউ কেউ ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের কথাও বলেন। অনেকে বলেন, মধ্যযুগে প্রাচীন সাহিত্যসমূহের অনেকগুলোকেই আর পাওয়া যায় না, যার ফলে সেসময়কার অনেক শব্দই আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু ভাষা স্থির ছিল না: সেসময় ভাষার বিভিন্ন রূপ বা ভ্যারাইটির সহাবস্থান ছিল, আর সেসময়ে লেখকগণ প্রায়ই একাধিক উপভাষায় লিখেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ষষ্ঠ শতাব্দীর আশেপাশে অর্ধ-মাগধী থেকে অবহট্‌ঠ ভাষার বিকাশ ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়, এই অবহট্‌ঠ ভাষা কিছুসময়ের জন্য বাংলা ভাষার পূর্বপুরুষ প্রোটো-বাংলার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। প্রোটো-বাংলা ছিল পাল সাম্রাজ্য এবং সেন রাজবংশের ভাষা। চৈতন্য মহাপ্রভুর যুগে ও বাংলার নবজাগরণের সময় বাংলা সাহিত্য সংস্কৃত ভাষা দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিল। সংস্কৃত থেকে যে সমস্ত শব্দ বাংলা ভাষায় যোগ করা হয়, তাদের উচ্চারণ অন্যান্য বাংলা রীতি মেনে পরিবর্তিত হলেও সংস্কৃত বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়। মধ্যযুগ বাংলা ভাষার ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করেন বাংলার মুসলিম শাসকগোষ্ঠী। ফারসির পাশাপাশি বাংলাও বাংলার সালতানাতের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত ছিল এবং ব্যাপক হারে ব্যবহার হতো। এছাড়াও প্রত্ন বাংলা ছিল পাল এবং সেন সাম্রাজ্যের প্রধান ভাষা। মধ্য বাংলার লক্ষণ মধ্য স্তরের বাংলা ভাষায় দুইটি সুস্পষ্ট উপস্তর দেখা যায়, আদি-মধ্য আর অন্ত্য-মধ্য। আদি-মধ্য বাংলার স্থিতিকাল আনুমানিক ১৩৫০ হতে ১৪৫০ সন পর্যন্ত । চতুর্দশ শতাব্দে ও পঞ্চদশ শতাব্দে লেখা বলে নিশ্চিতভাবে নেওয়া যেতে পারে এমন কোনো রচনা মিলে না। সুতরাং ১৩৫০ হতে ১৪৫০ অবধি শতাব্দ কালের কতটা প্রাচীন বাংলার অন্তর্গত ছিল এবং কতটা আদি-মধ্য বাংলার অন্তর্গত ছিল তা নিশ্চয় করে বলবার উপায় নাই। সব প্রাচীন রচনায় অষ্টাদশ শতাব্দীর নকল করা উচিত এ পাওয়া গিয়েছে। তাই পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দের ভাষার পরিপূর্ণ রূপটি এগুলিতে প্রতিফলিত নয়। তবে চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পুথি তেমনি পুরানো না হলেও মূলে হস্তক্ষেপ খুব বেশি না পড়ায় আদি-মধ্য বাংলার পরিচয় খানিকটা পাওয়া যায়। অন্ত্য-মধ্য বাংলার স্থিতিকাল ১৬০১ হতে ১৮০০ সন পর্যন্ত। মনে রাখতে হবে যে এই কালসীমা অত্যন্ত আনুমানিক। সাধু ভাষার পরিবর্তনের কথা মনে রাখলে অন্ত্য-মধ্য উপস্তরের শেষসীমা ১৭৫০ সন ধরাই সঙ্গত। তবে সেই সঙ্গে সাহিত্যে ব্যবহারের দিকেও লক্ষ রাখলে ১৮০০ সন ধরতে হয়। আদি-মধ্য বাংলার প্রধান বিশেষত্ব আ-কারের পরস্থিত ই-কার ও উ-কার ধ্বনির ক্ষীণতা, এবং পাশাপাশি দুই স্বরধ্বনির স্থিতি। যেমন— বড়াই > বড়া, আউলাইল > আলাল। মহাপ্রাণ নাসিক্যের মহাপ্রাণতার লোপ অথবা ক্ষীণতা অর্থাৎ ‘হ্ন (ন্‌হ) > ন’, এবং ‘হ্ম (ম্‌হ) > ম’। যেমন— কাহ্ন > কান, আহ্মি > আমি। [রা] বিভক্তির যোগে সর্বনামের কর্তৃকারকের বহুবচন পদ সৃষ্টি। যেমন— আহ্মারা, তোহ্মারা, তারা। [-ইল] -অন্ত অতীতের এবং [-ইব] -অন্ত ভবিষ্যতের কতৃবাচ্যে প্রয়োগ। যেমন— “মো শুনিলোঁ” (=আমি শুনিলাম), “মোই করিবোঁ” (=মুই করিব)। প্রাচীন [-ইঅ-] বিকরণযুক্ত কর্মভাব-বাচ্যের ক্রমশ অপ্রচলন এবং ‘যা’ ও ‘ভূ’ ধাতুর সাহায্যে যৌগিক কর্মভাব-বাচ্যের সামরিক প্রচলন। যেমন— “ততেকে সুঝাল গেল মোর মহাদানে”, “সে কথা কহিল নয়”। অসমাপিকার সহিত ‘আছ্’ ধাতুর যোগে যৌগিক ক্রিয়াপদ গঠন। যেমন— লইছে < লই + (আ)ছে, রহিলছে < রহিল + (আ)ছে (=রহিয়াছে)। যথাক্রমে বক্তার প্রাতিমুখ্য ও আভিমুখ্য বুঝাতে ‘গিয়া’ ও ‘সিয়া’ (< এসে) অসমাপিকা ক্রিয়াপদ অনুসর্গরূপে ব্যবহার। যেমন— দেখ গিয়া > দেখ গে, দেখ সিয়া > দেখ সে। ষোড়শ-মাত্রিক পাদাকুলক-পজ্ঝটিকা হতে চতুর্দশাক্ষর পয়ারের বিকাশ। আধুনিক ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে নদিয়া অঞ্চলে প্রচলিত পশ্চিম-মধ্য বাংলা কথ্য ভাষার ওপর ভিত্তি করে আধুনিক বাংলা সাহিত্য গড়ে ওঠে। বিভিন্ন আঞ্চলিক কথ্য বাংলা ভাষা ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে অনেকখানি পার্থক্য রয়েছে। আধুনিক বাংলা শব্দভাণ্ডারে মাগধী প্রাকৃত, পালি, সংস্কৃত, ফারসি, আরবি ভাষা এবং অস্ট্রো-এশীয় ভাষাসমূহ অন্যান্য ভাষা পরিবারের শব্দ স্থান পেয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর পূর্বে, বাংলা ব্যাকরণ রচনার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৭৩৪ থেকে ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ভাওয়াল জমিদারীতে কর্মরত অবস্থায় পর্তুগিজ খ্রিষ্টান পুরোহিত ও ধর্মপ্রচারক ম্যানুয়েল দ্য আসুম্পসাঁও সর্বপ্রথম ভোকাবোলারিও এম ইডিওমা বেঙ্গালা, এ পোর্তুগুয়েজ ডিভিডিডো এম দুয়াস পার্তেস () নামক বাংলা ভাষার অভিধান ও ব্যাকরণ রচনা করেন। ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হালেদ নামক এক ইংরেজ ব্যাকরণবিদ আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ () নামক গ্রন্থে একটি আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন, যেখানে ছাপাখানার বাংলা হরফ প্রথম ব্যবহৃত হয়। বাঙালি সমাজসংস্কারক রাজা রামমোহন রায় ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে গ্র্যামার অফ্ দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ্ () নামক একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেন। ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশ ১৯৫১-৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জনগণের প্রবল ভাষা সচেতনতার ফলস্বরূপ বাংলা ভাষা আন্দোলন নামক একটি ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনে পাকিস্তান সরকারের নিকট বাংলা ভাষার সরকারি স্বীকৃতি দাবি করা হয়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বহু ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মী নিহত হন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন দিবস পালিত হয়। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা প্রদান করে। ভারত বাংলাদেশ ছাড়াও ১৯৫০-এর দশকে ভারতের বিহার রাজ্যের মানভূম জেলায় বাংলা ভাষা আন্দোলন ঘটে। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকায় একইরকম ভাবে বাংলা ভাষা আন্দোলন সংঘ ভাষা বঙ্গ অঞ্চলের বাঙালি অধিবাসীর মাতৃভাষা। স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত। এছাড়া ভারতের আসাম রাজ্যের দক্ষিণাংশেও এই ভাষা বহুল প্রচলিত। ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসী বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকেন। ভৌগোলিক ভাষাভাষী বাংলা ভাষা বঙ্গভূমির অধিবাসীদের মাতৃভাষা, যা বর্তমান স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে গঠিত। মূল অঞ্চলের পাশাপাশি ত্রিপুরা,দক্ষিণ আসাম এবং ভারতীয় সংযুক্ত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বসবাসরত বাঙালীদেরও মাতৃভাষা বাংলা। ওড়িশা, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের প্রতিবেশী রাজ্যসমূহের বাংলা ভাষায় কথা বলা হয় এবং দিল্লি, মুম্বাই, বারাণসী এবং বৃন্দাবন সহ বঙ্গের বাইরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাংলা ভাষাভাষী রয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং ইতালিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাঙালি বসবাস করেন। সরকারি মর্যাদা বাংলাদেশের সংবিধানের ৩নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা বাংলা। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় ভাষা। ভারতে ভারতের সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত ২৩টি সরকারি ভাষার মধ্যে বাংলা একটি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি ভাষা হল বাংলা। এছাড়াও বাংলা ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম প্রধান ভাষা। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাস হতে বাংলা ভাষা ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা রূপে স্বীকৃত। পাকিস্তানের করাচি শহরের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা রূপে বাংলাকে গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে সিয়েরা লিওনের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আহমাদ তেজন কাব্বাহ ওই রাষ্ট্রে উপস্থিত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর ৫,৩০০ বাংলাদেশি সৈনিকের সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা প্রদান করেন। নোবেলজয়ী বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুইটি বাংলা কবিতা বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়। অধিকন্তু, অনেকে মনে করেন যে, শ্রীলংকার জাতীয় সংগীত (শ্রীলঙ্কা মাতা) মূলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বাংলা কবিতার প্রভাবে লেখা হয়েছিল, আবার অনেকে এমনটাও মনে করেন যে জাতীয় সঙ্গীতটি প্রথমে বাংলায় রচিত হয়েছিল এবং তারপর তা সিংহলিতে অনুবাদ করা হয়েছিল। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জাতিসংঘের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দেওয়ার দাবী জানান। কথ্য ও সাহিত্যের ভাষার বিবিধতা বাংলার কথ্য ও লেখ্য রূপের মধ্যে বিবিধতা বর্তমান। বিভিন্ন শব্দভাণ্ডার দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে বাংলায় দুই ধরনের লিখনপদ্ধতি তৈরি হয়েছে। সাধু ভাষা সাধু ভাষা বাংলার এক ধরনের লেখ্য রূপ, যেখানে সংস্কৃত ও পালি ভাষাসমূহ থেকে উদ্ভূত তৎসম শব্দভাণ্ডার দ্বারা প্রভাবিত অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ ক্রিয়াবিভক্তি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ঊনবিংশ শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এই ধরনের ভাষা বাংলা সাহিত্যে বহুল ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে সাহিত্যে এই ভাষারূপের ব্যবহার নেই বললেই চলে। মান্য চলিত ভাষা চলিতভাষা, যা ভাষাবিদদের নিকট মান্য চলিত বাংলা নামে পরিচিত, বাংলার এক ধরনের লেখ্য রূপ, যেখানে মানুষের কথ্য বাগধারা স্থান পায়। এই লিখনশৈলীতে অপেক্ষাকৃত ছোটো আকারের ক্রিয়াবিভক্তি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমান বাংলা সাহিত্যে এই ধরনের শৈলী অনুসরণ করা হয়ে থাকে। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল প্রভৃতি রচনাগুলিতে এই ধরনের শৈলী সাহিত্যে জায়গা করে নেয়। এই শৈলী নদিয়া জেলার শান্তিপুর অঞ্চলে প্রচলিত কথ্য উপভাষা থেকে গঠিত হয়েছে, ফলে একে অনেক সময় শান্তিপুরি বাংলা বা নদিয়া উপভাষা বলা হয়ে থাকে। মান্য চলিত বাংলায় অধিকাংশ বাংলা সাহিত্য রচিত হলেও, কথ্য বাংলা ভাষার উপভাষাসমূহ মধ্যে যথেষ্ট বিবিধতা রয়েছে। কলকাতাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীরা মান্য চলিত বাংলায় কথা বলে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলগুলির কথ্য ভাষা মান্য চলিত বাংলার থেকে অনেকটাই ভিন্ন। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের কথ্য ভাষার সঙ্গে মান্য চলিত বাংলার খুব সামান্যই মিল রয়েছে। তবে অধিকাংশ বাঙালি নিজেদের মধ্যে ভাব আদানপ্রদানের সময় মান্য চলিত বাংলা সহ একাধিক উপভাষায় কথা বলতে সক্ষম বলে মনে করা হলেও অনেক ভাষাবিদ তা স্বীকার করেন না। উপভাষা [[File:Bengali dialects political map bn.svg|alt=|upright|thumb| বঙ্গভূমির (এবং আসাম ও ঝাড়খণ্ডের কিছু জেলা) একটি মানচিত্র যাতে বাংলা ভাষার উপভাষা সমূহ দেখানো হয়েছে (* দিয়ে শুরু হওয়া মোটা বর্ণের নামগুলোকে কখনো বাংলার উপভাষা আবার কখনো স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়)]] কথ্য বাংলাতে আঞ্চলিক প্রকরণ একটি উপভাষার ধারাবাহিকতা গঠন করে। ভাষাতত্ত্ববিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এই উপভাষাগুলি চারটি বৃহৎ ভাগে বিভক্ত করেছেন - রাঢ়ী, বঙ্গ, কামরূপী উপভাষা এবং বরেন্দ্র; তবে অনেক বিকল্প শ্রেণীকরণ প্রকল্পও প্রস্তাব করা হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমা উপভাষাগুলি (রাঢ়ী বা নদীয়া উপভাষা) আধুনিক মান্য ভাষাগত বাঙালির ভিত্তি তৈরি করে। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের বেশিরভাগ উপাখ্যানগুলিতে (বাংলাদেশের বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং সিলেট বিভাগ), পশ্চিমবঙ্গে শোনা অনেক যতি ও সুস্পষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনিকে উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি হিসাবে উচ্চারণ করা হয়। পাশ্চাত্য তালব্য-মূর্ধন্য ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি চ , , যথাক্রমে প্রাচ্যের , , এর সাথে সম্পর্কিত। বাংলার কিছু উপভাষা বিশেষত চট্টগ্রাম এবং চাকমা ভাষার সুর রয়েছে বৈপরীত্য; বক্তার কণ্ঠের উচ্চারণের তীক্ষ্মতা শব্দগুলোকে পৃথক করতে পারে। খারিয়া থাট এবং মাল পাহাড়িয়া ভাষা পশ্চিমাঞ্চলীয় বাংলা উপভাষার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও সাধারণভাবে তাদেরকে স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে শ্রেণীকরণ করা হয়। উত্তরাঞ্চলীয় বাংলা উপভাষার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও হাজং কে স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে বাংলা ভাষার প্রমিতীকরণের সময় ব্রিটিশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কলকাতা ছিল বঙ্গভূমির সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বাংলাদেশের সীমানার পাশে অবস্থিত নদিয়া জেলার পশ্চিম-মধ্য উপভাষার উপর ভিত্তি করে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে বর্তমান প্রমিত রূপটি গৃহীত হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের একজন বক্তা আদর্শ বাংলায় যে শব্দ ব্যবহার করবেন তা বাংলাদেশের একজন বক্তা ব্যবহার নাও করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবহৃত নুন শব্দটির পরিবর্তে পশ্চিমপ্রান্তে লবণ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ লেখা প্রমিত বাংলায় (এসসিবি) থাকলেও কথ্য উপভাষাগুলি বৈচিত্র‍্য প্রদর্শন করে। কলকাতা সহ দক্ষিণ-পূর্ব পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা এসসিবিতে কথা বলে॥ প্রমিত চলিত থেকে কিছুটা স্বল্প পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্যান্য উপভাষাগুলি পশ্চিমবঙ্গ এবং পশ্চিম বাংলাদেশের অন্যান্য অংশে যেমন মেদিনীপুরের উপভাষায় কিছু নিজস্ব শব্দ রয়েছে। তবে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ লোক উপভাষায় কথা বলেন, এসসিবি থেকে আলাদা কিছু উপভাষা বিশেষত চট্টগ্রাম অঞ্চলের লোকেরা প্রমিত চলিতরূপেই লেখেন চট্টগ্রাম অঞ্চলে উপভাষাটি সাধারণ বাঙালী জনসাধারণের কাছে সহজে বোধগম্য হয় না। এমনকি এসসিবিতেও বক্তার ধর্ম অনুসারে শব্দভাণ্ডার পৃথক হতে পারে: হিন্দুরা সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত শব্দ এবং মুসলমানরা দেশীয় শব্দের পাশাপাশি ফারসি এবং আরবি ভাষার শব্দ ব্যবহার করার সম্ভাবনা বেশি। উদাহরণস্বরূপ: ধ্বনিব্যবস্থা বাংলা ভাষায় প্রচুর স্বরদ্যোতনা রয়েছে; একই অক্ষরে একাধিক স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়। এর মধ্যে এবং দ্বয় কেবলমাত্র একটি করে স্বরবর্ণ এবং দ্বারা লেখা হয়। সর্বমোট যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ১৭ থেকে ৩১ এর মধ্যে রয়েছে বলে অনেকে ধারণা করেন। সরকার (১৯৮৫) কর্তৃক প্রদত্ত একটি লেখ নিচে দেয়া হল: শ্বাসাঘাত আদর্শ বাংলায় সাধারণত শুরুতে শ্বাসাঘাত লক্ষ করা যায়। বাংলা শব্দগুলো বিমুর্তভাবে দ্বিপর্ববিশিষ্ট; শব্দের প্রথম অক্ষরে মুখ্য শ্বাসাঘাত পড়ে এবং প্রায়ই বিজোড় অবস্থানের অক্ষরগুলোতে গৌণ শ্বাসাঘাত লক্ষ করা যায়। ফলে শব্দটি উচ্চারিত হয় shô-hô-jo-gi-ta "cooperation", যেখানে মোটাদাগ মুখ্য এবং গৌণ শ্বাসাঘাত নির্দেশ করে। যুক্তব্যঞ্জন স্থানীয় বাংলা ভাষায় শব্দের শুরুতে যুক্তবর্ণ থাকে না; সর্বোচ্চ ব্য-স্ব-ব্য আকারের অক্ষর হতে পারে(স্বরধনির দুপাশে ব্যঞ্জনধ্বনি)। অনেক বাঙালি এমনকি ইংরেজি কিংবা সংস্কৃত থেকে ধারকৃত শব্দ উচ্চারণের ক্ষেত্রেও এই ধারাটি বজায় রাখে যেমন গ্রাম (ব্য-ব্য.ব্য-স্ব-ব্য) উচ্চারণ করেন গেরাম(ব্য-স্ব.ব্য-স্ব-ব্য), স্কুল(ব্য-ব্য-স্ব-ব্য) উচ্চারণ করেন ইস্কুল(স্ব-ব্য.ব্য-স্ব-ব্য) হিসেবে। বানানতাত্ত্বিক গভীরতা সাধারণভাবে বাংলা লিপির তুলনামূলক বানানতাত্ত্বিক গভীরতা বেশি নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাঙালীদের ধ্বনি এবং বর্ণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে উচ্চারণ-বানান অসঙ্গতি ঘটে। এক ধরনের অসঙ্গতি হল একই শব্দের জন্য লেখায় বেশ কয়েকটি বানানের উপস্থিতি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কিছু পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও, বাংলা বানান পদ্ধতি সংস্কৃত ভাষার জন্য ব্যবহৃত বানানরীতির উপর ভিত্তি করেই রচিত হচ্ছে এবং এভাবে কথ্য ভাষায় কিছু শব্দ সংযোজনের বিষয়টি বিবেচনায় থাকে না। উদাহরণস্বরূপ,অঘোষ দন্তমূলীয়-তালব্য ব্যঞ্জন -এর জন্য তিনটি বর্ণ ( , , এবং রয়েছে যদিও বর্ণটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যেমন -এ ব্যবহৃত হয়। তখন অঘোষ দন্তমূলীয় উষ্মধ্বনি শব্দ ধরে রাখে; যেমন "স্কুল", ইত্যাদি। বর্ণটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র যেমন -এ ব্যবহৃত হয়। তখন অঘোষ মূর্ধন্য উষ্মধ্বনি শব্দ ধরে রাখে; যেমনঃ , ইত্যাদি। একইভাবে,ঘোষ তালব্য-দন্তমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনি প্রকাশ করার জন্য দুটি অক্ষর রয়েছে ( এবং )। তাছাড়া, আগে উচ্চারিত এবং লিখিত মূর্ধন্য অনুনাসিক কে এখন সাধারণ আলাপচারিতায় দন্তমূলীয় হিসেবে উচ্চারণ করা হয় (যখন উচ্চারণ করা হয় তখন পার্থক্য বোঝা যায়) (যদি না অপর একটি মূর্ধন্যধ্বনির যেমন , এবং -এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে), তবে বানানে এই পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না। অর্ধ-সংবৃত সম্মুখ স্বরবর্ণ বানানতাত্ত্বিকভাবে একাধিক উপায়ে নিরূপিত হয়। উদাহরণস্বরূপ: , , , , , । অন্য ধরনের অসঙ্গতিটি লেখায় যথেষ্ট ঔচ্চারণিক তথ্যের ঘাটতিসম্পর্কিত। পূর্ববর্তী ধ্বনির স্বরসঙ্গতির উপর নির্ভর করে লেখায় প্রতিটি ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে জড়িত অন্তর্নিহিত স্বরবর্ণটি কিংবা হতে পারে; কিন্তু লেখায় স্পষ্টভাবে প্রকাশ না পাওয়ায় তা পাঠকের জন্য দ্ব্যর্থতা তৈরি করে। তাছাড়া অন্তর্নিহিত স্বরটি প্রায়শই শব্দের শেষে ঊহ্য থাকে (যেমন: ; তবে তা বানানে প্রতিফলিত না হওয়ায় নতুন পাঠকের পক্ষে এটি কঠিন করে তোলে। অনেক যুক্তব্যঞ্জন তাদের মূল ব্যঞ্জনবর্ণের চেয়ে আলাদা রূপে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যঞ্জনবর্ণের এবং যুক্ত হয়ে গঠন করে এবং তা ( উচ্চারিত হয় ) কিংবা ( - ) অথবা (যেমন এর উচ্চারণ ) হিসেবে উচ্চারিত হতে পারে যা কোনও শব্দে যুক্তব্যঞ্জনটির অবস্থানের উপর নির্ভর করে। বাংলা লেখার ব্যবস্থাটি তাই সর্বদা উচ্চারণের সত্যিকারের সহায়ক নয়। ব্যবহারসমূহ বাংলা, অসমীয়া এবং অন্যান্য ভাষার জন্য ব্যবহৃত লিপিটি বাংলা লিপি হিসাবে পরিচিত। বাংলা এবং তার উপভাষায় বাংলা লিপি হিসেবে এবং কিছু ছোটোখাটো পরিবর্তনের সঙ্গে অসমীয়া ভাষায় অসমীয়া বর্ণমালা হিসেবে পরিচিত। নিকটবর্তী অঞ্চলের অন্যান্য সম্পর্কিত ভাষা যেমন ভারতীয় রাজ্য মণিপুরে মৈতৈ মণিপুরী ভাষাও বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করে, যেখানে মৈতৈ ভাষা বহু শতাব্দী ধরে বাংলা বর্ণমালায় রচিত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মৈতৈ লিপি প্রচার করা হয়েছে। লিখন পদ্ধতি বাংলা লিপি এক ধরনের শব্দীয় বর্ণমালা লিপি, যেখানে ব্যঞ্জনধ্বনির জন্য বর্ণ, স্বরধ্বনির জন্য কারচিহ্ন এবং যদি কোন কার চিহ্ন না থাকে তবে স্বয়ংক্রিয় স্বরবর্ণ হিসেবে অ ধরে নেওয়া হয়। সমগ্র বাংলাদেশ এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলে (আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা) বাংলা বর্ণমালা ব্যবহৃত হয়। আনুমানিক ১০০০ অব্দে ( অথবা ১০ম থেকে ১১শ শতাব্দীতে) ব্রাহ্মী লিপির পরিবর্তিত রূপ থেকে বাংলা বর্ণমালার উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও এটি পাকিস্তানে ব্যবহৃত শাহমুখি লিপির মত আরবি ভিত্তিক বর্ণমালার পরিবর্তে বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করে। বাংলা ভাষায় বক্রলিপিতে নয়টি স্বরধ্বনি এবং দুটি যৌগিক স্বরধ্বনি নির্দেশ করার জন্য ১১ টি প্রতীক বা চিহ্ন এবং ব্যঞ্জনধ্বনি ও অন্যান্য প্রভাবকের জন্য ৩৯ টি প্রতীক ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে বড় হাতের এবং ছোট হাতের বর্ণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বর্ণগুলো বাম থেকে ডানে লেখা হয় এবং ফাঁকা স্থান গুলো লিখিত শব্দসমূহ পৃথক করতে ব্যবহৃত হয়। বাংলা লেখায় দুটি বর্ণকে পাশাপাশি যুক্ত করার জন্য একটি সমান্তরাল রেখা টানা হয় যাকে মাত্রা বলা হয়। বাংলা লিপি আবুগিদা হওয়ায় ব্যঞ্জনবর্ণ গুলো সাধারণত উচ্চারণগত ভাষাতত্ত্ব নির্দেশ করে না বরং উহ্যভাবে স্বরধ্বনি ধরে রাখে। ফলে এগুলো প্রকৃতিগতভাবে অক্ষর। উদ্ধৃত্ত স্বরধ্বনি সাধারণত একটি পশ্চাৎ স্বরধ্বনি। কোন রূপ স্বরধ্বনি উচ্চারণ ব্যতীত কোন একটি ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে জোর প্রদান করতে মূল ব্যঞ্জনবর্ণের নিচে হসন্ত () নামক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। এই চিহ্নটি সব সময় পাওয়া যায় না; তবে যখন উচ্চারণের বৈপরীত্য দেখা যায় তখন এটি ব্যবহৃত হয়। বাংলা ব্যঞ্জন ধ্বনির চিত্রমূলের আবুগিডা প্রকৃতি সর্বদা সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে না। প্রায়শই ব্যঞ্জনান্ত অক্ষরসমূহে হসন্ত না থাকলেও কোন স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয় না। সহজাত ব্যতীত কিছু স্বরধ্বনির পরে একটি ব্যঞ্জনাত্মক ধ্বনি উপরের, নিচে, আগে, পরে বা ব্যঞ্জনবর্ণের চিহ্নের চারপাশে বিভিন্ন স্বরবর্ণ ব্যবহার করে সর্বব্যাপী ব্যঞ্জনবর্ণ-স্বর লিখনরূপের নিয়ম গঠন করে শব্দস্বরূপাত্মকভাবে উপলব্ধি করা যায়। ‘কারচিহ্ন’ নামে পরিচিত এই শব্দস্বরূপগুলি স্বররূপ এবং এগুলি স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে না। বাংলায় স্বরবর্ণগুলো দুটি রূপ নিতে পারে: লিপির মূল তালিকাতে পাওয়া স্বতন্ত্র রূপ এবং নির্ভরশীল, সংক্ষিপ্তরূপ (উপরে বর্ণিত কারচিহ্ন)। কোনও পূর্ববর্তী বা নিম্নলিখিত ব্যঞ্জনবর্ণ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে একটি স্বরকে উপস্থাপন করতে, স্বরবর্ণের স্বতন্ত্র রূপ ব্যবহার করা হয়। অন্তর্নিহিত-স্বর-দমনকারী হসন্তের পাশাপাশি, আরও তিনটি চিহ্ন সাধারণত বাংলাতে ব্যবহৃত হয়। এগুলি হল উর্ধ্বধাবিত চন্দ্রবিন্দু (ঁ) দ্বারা স্বরবর্ণের অনুনাসিক এর অনুপস্থিতিকে বোঝানো হয় (যেমন চাঁদ), পশ্চাদ্ধাবিত অনুস্বার ঘোষ পশ্চাত্তালব্য নাসিক্যধ্বনি (ঙ) ইঙ্গিত করে (যেমন বাংলা; "বাঙলা") এবং পশ্চাদ্ধাবিত বিসর্গ (ঃ) অঘোষ কণ্ঠনালীয় উষ্মধ্বনি (হ) (যেমন উঃ! [উঃ]" আউচ! ") বা পরবর্তী ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব (যেমন দুখখ [দুকু]" দুঃখ ") ইঙ্গিত করে। বাংলা যুক্তব্যঞ্জনসমূহ (লিখিত যুক্তব্যঞ্জন) সাধারণত সংযুক্ত হিসাবে লেখা হয়, যেখানে প্রথমে যে ব্যঞ্জনবর্ণ আসে তা পরবর্তীটির উপরে বা বাম দিকে যুক্ত হয়। এই সংযুক্তিতে মাঝেমাঝে মূল রূপের চেয়ে এতটাই বিকৃত হয় যে তাকে আলাদা করে চেনা যায় না। বাংলা লিপিতে, এমন প্রায় ২৮৫টি যুক্তব্যঞ্জন রয়েছে। তবে যুক্তাক্ষর গঠনের কিছু বাহ্যিক নিয়ম থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ছোটবেলা থেকে রপ্ত করতে হয়। সম্প্রতি, তরুণ শিক্ষার্থীদের উপর এই বোঝা হ্রাস করার লক্ষ্যে, দুটি মূল বাংলা-ভাষা অঞ্চল (পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ) এর বহু যুক্তাক্ষরের "অস্পস্ট" আকৃতির সমাধানের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি চেষ্টা করেছে এবং ফলস্বরূপ, আধুনিক বাংলা পাঠ্যপুস্তকে যুক্তবর্ণগুলোর আরও বেশি "স্বচ্ছ" রূপ ধারণ করা শুরু হয়েছে, যেখানে একটি যুক্তাক্ষরের ব্যঞ্জনবর্ণগুলি বাহ্যিক রূপ সহজেই প্রকাশ পায়। তবে, যেহেতু এই পরিবর্তনটি তত বিস্তৃত নয় এবং বাকী বাংলা মুদ্রিত সাহিত্যের মতো একইভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না, তাই আজকের বাংলা-শিক্ষিত বাচ্চাদের সম্ভবত নতুন "স্বচ্ছ" এবং পুরাতন "অস্বচ্ছ" উভয় রূপই চিনতে হবে, যা শেষ পর্যন্ত শেখার বোঝা পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। বাংলা বিরামচিহ্ন, "।" (দাড়ি) - একটি ফুলস্টপ এর বাংলা সমতুল্য - যা পশ্চিমা লিপি থেকে গৃহীত হয়েছে এবং ব্যবহারও তাদের অনুরূপ। নমুনা পাঠ্য নিম্নলিখিত বাংলা ভাষাতে মানবাধিকার সনদের প্রথম ধারার নমুনা পাঠ্য: বাংলা লিপিতে বাংলা ভাষা ধারা ১: সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাঁদের বিবেক এবং বুদ্ধি আছে; সুতরাং সকলেরই একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচরণ করা উচিত। বাংলার রোমানীকরণ . '''আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালাতে বাংলা ভাষার উচ্চারণ . সম্পর্কিত ভাষাসমূহ বাংলা ভাষার সাথে নেপালি ভাষার ৪০ শতাংশ সাদৃশ্য রয়েছে। এছাড়া অসমীয়া ভাষা, সাদরি ভাষা প্রায় বাংলার অনুরূপ। অনেকেই অসমীয়াকে বাংলার উপভাষা বা আঞ্চলিক রীতি হিসেবে বিবেচনা করেন। সাঁওতালি ভাষা, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার সাথেও বেশ সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। অসমীয়ার পর বাংলার সবথেকে কাছের ভাষা ওড়িয়া। অসমীয়া, চাটগাঁইয়া, সিলেটি এবং প্রমিত বাংলার সাথে তুলনা আরও দেখুন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহ ইন্দো-ইরানি ভাষাসমূহ ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহ বাংলাদেশের ভাষা বৃহত্তর ময়মনসিংহের ভাষা সিলেটি ভাষা চাটগাঁইয়া ভাষা রংপুরী ভাষা বাংলা উপভাষা বাংলা লিপি বাংলা সংখ্যা পদ্ধতি বাংলা ভাষা আন্দোলন আরবি লিপিতে বাংলা লিখন বাংলা একাডেমি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি ইংরেজি ভাষা হিন্দি ভাষা উর্দু ভাষা আরবি ভাষা ফার্সি ভাষা তথ্যসূত্র আরও পড়ুন . . . . . . . Chakraborty, Byomkes, A Comparative Study of Santali and Bengali, K.P. Bagchi & Co., Kolkata, 1994, Byomkes Chakrabarti . . . . . . . . . . . . . . . শ, রামেশ্বর: সাধারণ ভাষাবিজ্ঞান ও বাঙ্গাল ভাষা, পুস্তক বিপনি, ১৯৯৭ হালদার নারায়ণ : বাংলা ভাষা প্রসঙ্গ: বানান কথন লিখনরীতি, পুস্তক বিপনি, কলকাতা, ২০০৭ . Thompson, Hanne-Ruth (2012). Bengali''. Volume 18 of London Oriental and African Language Library. John Benjamins Publishing. . বহিঃসংযোগ বাংলা একাডেমি পূর্ব ইন্দো-আর্য ভাষা বাংলাদেশের ভাষা ভারতের ভাষা ভারতের সরকারি ভাষাসমূহ পশ্চিমবঙ্গের ভাষা ত্রিপুরার ভাষা আসামের ভাষা সরকারীভাবে ভারতীয় লিপিতে লেখা ভাষা সাহিত্য অকাদেমি স্বীকৃত ভাষা ঝাড়খণ্ডের ভাষা বিহারের ভাষা
https://en.wikipedia.org/wiki/Bengali_language
Bengali language
Bengali, also known by its endonym Bangla (বাংলা, Bāṅlā, [ˈbaŋla] ), is an Indo-Aryan language from the Indo-European language family native to the Bengal region of South Asia. With over 250 million native speakers and another 41 million as second language speakers as of 2024, Bengali is the fifth most spoken native language and the seventh most spoken language by the total number of speakers in the world. It is the fifth most spoken Indo-European language. Bengali is the official, national, and most widely spoken language of Bangladesh, with 98% of Bangladeshis using Bengali as their first language. It is the second-most widely spoken language in India. It is the official language of the Indian states of West Bengal and Tripura and the Barak Valley region of the state of Assam. It is also the second official language of the Indian state of Jharkhand since September 2011. It is the most widely spoken language in the Andaman and Nicobar Islands in the Bay of Bengal, and is spoken by significant populations in other states including Bihar, Arunachal Pradesh, Delhi, Chhattisgarh, Meghalaya, Mizoram, Nagaland, Odisha and Uttarakhand. Bengali is also spoken by the Bengali diasporas (Bangladeshi diaspora and Indian Bengalis) across Europe, North America, the Middle East and other regions. Bengali is the fourth fastest growing language in India, following Hindi in the first place, Kashmiri in the second place, and Meitei (Manipuri), along with Gujarati, in the third place, according to the 2011 census of India. Bengali has developed over more than 1,300 years. Bengali literature, with its millennium-old literary history, was extensively developed during the Bengali Renaissance and is one of the most prolific and diverse literary traditions in Asia. The Bengali language movement from 1948 to 1956 demanding that Bengali be an official language of Pakistan fostered Bengali nationalism in East Bengal leading to the emergence of Bangladesh in 1971. In 1999, UNESCO recognised 21 February as International Mother Language Day in recognition of the language movement.
796
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8%20%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BE
প্রধান পাতা
নির্বাচিত নিবন্ধ আপনি জানেন কি... ভালো নিবন্ধ আজকের নির্বাচিত ছবি বিষয় অনুযায়ী বাংলা উইকিপিডিয়া সম্পর্কিত সংস্থা অবদানকারীর জন্য পাঠ্য উইকিপিডিয়ার সহপ্রকল্প অন্যান্য ভাষায় উইকিপিডিয়া
https://en.wikipedia.org/wiki/
null
null
822
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6
বাংলাদেশ
বাংলাদেশ () দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়, পূর্ব সীমান্তে আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে মিয়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্য এবং দক্ষিণ উপকূলে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের সিংহভাগ অঞ্চল জুড়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অবস্থিত। জনসংখ্যার বিচারে প্রায় ১৭ কোটিরও অধিক জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশ। নদীমাতৃক বাংলাদেশ ভূখণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে টারশিয়ারি যুগের পাহাড় মেঘের সাথে মিশে আছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন ও দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে অবস্থিত। দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন ও ধ্রুপদী যুগে বাংলাদেশ অঞ্চলটিতে বঙ্গ, পুণ্ড্র, গৌড়, গঙ্গাঋদ্ধি, সমতট ও হরিকেল নামক জনপদ গড়ে উঠেছিল। মৌর্য যুগে মৌর্য সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ ছিল অঞ্চলটি। জনপদগুলো নৌ-শক্তি ও সামুদ্রিক বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। মধ্যপ্রাচ্য, রোমান সাম্রাজ্যে মসলিন ও রেশম বস্ত্র রপ্তানি করতো জনপদগুলো। প্রথম সহস্রাব্দে বাংলাদেশ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে পাল সাম্রাজ্য, চন্দ্র রাজবংশ, সেন রাজবংশ গড়ে উঠেছিল। বখতিয়ার খলজির ১২০৪ সালে গৌড় জয়ের পরে ও পরবর্তীতে দিল্লি সালতানাত শাসনামলে এ অঞ্চলে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপীয়রা শাহী বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বাণিজ্যিক দেশ হিসেবে গণ্য করতো। মুঘল আমলে বিশ্বের মোট অর্থনৈতিক উৎপাদনের (জিডিপি-র বৈশ্বিক সংস্করণ) ১২ শতাংশ উৎপন্ন হতো সুবাহ বাংলায়, যা তৎকালীন সমগ্র পশ্চিম ইউরোপের মোট অর্থনৈতিক উৎপাদনের চেয়ে বেশি ছিল। ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে বিজয়ের ফলে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা অঞ্চলে শাসন শুরু করে। ১৭৬৫ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ভূখণ্ডটি প্রেসিডেন্সি বাংলার অংশ ছিল। ১৯৪৭-এ ভারত বিভাজনের পর বাংলাদেশ অঞ্চল পূর্ব বাংলা (১৯৪৭–১৯৫৬; পূর্ব পাকিস্তান, ১৯৫৬–১৯৭১) নামে নবগঠিত পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত বাংলা ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ হলে পশ্চিম পাকিস্তানের বিবিধ রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ভারতের সহায়তায় গণতান্ত্রিক ও সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ঘটেছে দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ; এছাড়াও প্রলম্বিত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও পৌনঃপুনিক সামরিক অভ্যুত্থান এদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বারংবার ব্যাহত করেছে। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৯১ সালে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় যার ধারাবাহিকতা আজ অবধি বিদ্যমান। সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গত তিন দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রগতি ও সমৃদ্ধি সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে। জনসংখ্যায় বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ, যদিও আয়তনে বিশ্বে ৯২ তম। ৬টি ক্ষুদ্র দ্বীপ ও নগররাষ্ট্রের পরেই বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইলেরও (প্রায় ১৪৮ হাজার বর্গকিলোমিটার) কম এই ক্ষুদ্রায়তনের দেশটির প্রাক্কলিত (২০১৮) জনসংখ্যা ১৮ কোটির বেশি অর্থাৎ প্রতি বর্গমাইলে জনবসতি ২৮৮৯ জন (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১৪০ জন)। ১ কোটির অধিক জনসংখ্যাবিশিষ্ট দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ন দেশ। দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯৯% মানুষের মাতৃভাষা বাংলা; সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৫.২%। ২০১৭–১৮ অর্থবছরে চলতি বাজারমূল্যে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ ছিল ২২,৫০,৪৭৯ কোটি টাকা (২৬১.২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা ২০১৮–১৯ অর্থবছরে বৃদ্ধি লাভ করে ২৮৫.৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নীত হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। ২০১৭–১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় বার্ষিক আয় ছিল ১৭৫২ ডলার। সরকার প্রাক্কলন করেছে যে, ২০১৮–১৯ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ১৯৫৬ ডলার বা ১ লাখ ৬০ হাজার ৩৯২ টাকা। দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশ, অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১০.৫ শতাংশ এবং বার্ষিক দারিদ্র্য হ্রাসের হার ১.৫ শতাংশ। এই উন্নয়নশীল দেশটি প্রায় দুই দশক যাবৎ বার্ষিক ৫ থেকে ৬.২ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনপূর্বক "পরবর্তী একাদশ" অর্থনীতিসমূহের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য শহরের পরিবর্ধন বাংলাদেশের এই উন্নতির চালিকাশক্তিরূপে কাজ করছে। এর কেন্দ্রবিন্দুতে কাজ করেছে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ত্বরিত বিকাশ এবং একটি সক্ষম ও সক্রিয় উদ্যোক্তা শ্রেণির আর্বিভাব। বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প সারা বিশ্বে বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। জনশক্তি রপ্তানিও দেশটির অন্যতম অর্থনৈতিক স্তম্ভ। বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্কলন এই যে ২০১৮–২০ এই দুই অর্থ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতি বছর গড়ে ৬.৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি লাভ করবে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের উর্বর অববাহিকায় অবস্থিত এই দেশটিতে প্রায় প্রতি বছর মৌসুমী বন্যা হয়; আর ঘূর্ণিঝড়ও খুব সাধারণ ঘটনা। নিম্ন আয়ের এই দেশটির প্রধান সমস্যা পরিব্যাপ্ত দারিদ্র্য গত দুই দশকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে এসেছে, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে দ্রুত, জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অর্জিত হয়েছে অভূতপূর্ব সফলতা। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ দৃষ্টান্তমূলক অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এখনো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে যার মধ্যে রয়েছে পরিব্যাপ্ত পরিবারতন্ত্র, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি, বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধিের ফলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলশ্রুতিতে তলিয়ে যাবার শঙ্কা। তাছাড়া একটি সর্বগ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থার রূপ নিয়ে নতুন ভাবে সামাজিক বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা ও বিমসটেক-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এছাড়া দেশটি জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্ব শুল্ক সংস্থা, কমনওয়েলথ অফ নেশনস, উন্নয়নশীল ৮টি দেশ, জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন এবং ওআইসি ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থার সক্রিয় সদস্য। শব্দের ব্যুৎপত্তি বাংলাদেশ শব্দটি খুঁজে পাওয়া যায় বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, যখন থেকে কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'নম নম নম বাংলাদেশ মম' ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে' এর ন্যায় দেশাত্মবোধক গানগুলোর মাধ্যমে সাধারণ পরিভাষা হিসেবে শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। অতীতে বাংলাদেশ শব্দটিকে দুটি আলাদা শব্দ হিসেবে বাংলা দেশ আকারে লেখা হত। ১৯৫০ দশকের শুরুতে, বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদীরা শব্দটিকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল ও সভা-সমাবেশে ব্যবহার করতো। বাংলা শব্দটি বঙ্গ এলাকা ও বাংলা এলাকা উভয়ের জন্যই একটি প্রধান নাম। শব্দটির প্রাচীনতম ব্যবহার পাওয়া যায় ৮০৫ খ্রিষ্টাব্দের নেসারি ফলকে। এছাড়াও ১১-শতকের দক্ষিণ-এশীয় পাণ্ডুলিপিসমূহে ভাংলাদেসা পরিভাষাটি খুঁজে পাওয়া যায়। ১৪শ শতাব্দীতে বাংলা সালতানাতের সময়কালে পরিভাষাটি দাপ্তরিক মর্যাদা লাভ করে। ১৩৪২ সালে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলার প্রথম শাহ হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন। উক্ত অঞ্চলকে বোঝাতে বাংলা শব্দটির সর্বা‌ধিক ব্যবহার শুরু হয় ইসলামি শাসনামলে। ১৬শ শতাব্দীতে পর্তুগিজরা অঞ্চলটিকে বাঙ্গালা নামে উল্লেখ শুরু করে। বাংলা বা বেঙ্গল শব্দগুলোর আদি উৎস অজ্ঞাত; ধারণা করা হয় আধুনিক এ নামটি বাংলার সুলতানি আমলের বাঙ্গালা শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়। কিন্তু কিছু ঐতিহাসিক ধারণা করেন যে, শব্দটি বং অথবা বাং নামক একটি দ্রাবিড়ীয়-ভাষী উপজাতি বা গোষ্ঠী থেকে উদ্ভূত হয়েছে। বং জাতিগোষ্ঠী ১০০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন। কিছু ঐতিহাসিকদের মতে, বং ছিলেন হিন্দের দ্বিতীয় পুত্র, যেখানে হিন্দ ছিলেন হামের প্রথম পুত্র আর হামের পিতা ছিলেন নবি নুহ। অন্য তত্ত্ব অনুযায়ী শব্দটির উৎপত্তি ভাঙ্গা (বঙ্গ) শব্দ থেকে হয়েছে, যেটি অস্ট্রীয় শব্দ "বঙ্গা" থেকে এসেছিল, অর্থাৎ অংশুমালী। শব্দটি ভাঙ্গা এবং অন্য শব্দ যে বঙ্গ কথাটি অভিহিত করতে জল্পিত (যেমন অঙ্গ) প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে পাওয়া যায়, যেমনঃ বেদ, জৈন গ্রন্থে, মহাভারত এবং পুরাণে। "ভাঙ্গালাদেসা/ ভাঙ্গাদেসাম" (বঙ্গাল/বঙ্গল)-এর সবচেয়ে পুরনো উল্লেখ রাষ্ট্রকূট সম্রাট তৃতীয় গোবিন্দ-এর নেসারি ফলকে উদ্দিষ্ট (৮০৫ খ্রিষ্টাব্দের আগে), যেখানে ভাঙ্গালার রাজা ধর্মপালের বৃত্তান্ত লেখা আছে। ইতিহাস প্রাচীন বাংলা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রস্তর যুগের হাতিয়ার পাওয়া গেছে। এই হাতিয়ারগুলো পাথর, হাড় এবং শিং দিয়ে তৈরি। এই হাতিয়ারগুলো প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই এখানে বসতি স্থাপন করেছিল। তাম্র যুগের বসতির ধ্বংসাবশেষ ৪০০০ বছর আগের। এই ধ্বংসাবশেষগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। এগুলো প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের ইতিহাস তাম্র যুগ প্রায় ৪০০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল। প্রাচীন বাংলায় ধাপে ধাপে আগত অস্ট্রো-এশীয়, তিব্বতি-বর্মী, দ্রাবিড় ও ইন্দো-আর্যদের বসতি স্থাপন করে। এই জনগোষ্ঠীগুলো বাংলা অঞ্চলে বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ভাষা নিয়ে এসেছিল। এই সংস্কৃতি এবং ভাষাগুলো বাংলাদেশের বর্তমান সংস্কৃতি এবং ভাষার বিকাশে অবদান রেখেছে। প্রত্নতত্ত্বের প্রমাণগুলো নিশ্চিত করে যে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই অঞ্চলে ধান চাষকারী সম্প্রদায় বাস করত। এই সম্প্রদায়গুলো ধান চাষের জন্য বর্ষা ঋতুর উপর নির্ভর করত। ১১ শতকে এসে মানুষ সিস্টেমাটিকভাবে সাজানো বাড়িতে বাস করত, তাদের মৃতদের দাফন করত এবং তামা দিয়ে গয়না এবং কালো ও লাল মাটির পাত্র তৈরি করত। এই সময়কালে, বাংলাদেশের সমাজ আরও উন্নত হয়েছিল। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদী যোগাযোগ ও পরিবহনের জন্য প্রাকৃতিক ধমনী ছিল। এই নদীগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশকে সংযুক্ত করেছিল। প্রাথমিক লৌহ যুগ ধাতব অস্ত্র, মুদ্রা, কৃষি এবং সেচের বিকাশের সাক্ষী ছিল। এই সময়কালে, বাংলাদেশের মানুষ আরও উন্নত প্রযুক্তি শিখেছিল। বড় শহুরে বসতিগুলো লোহার যুগের শেষের দিকে, অর্থাৎ প্রথম সহস্রাব্দের খ্রিস্টপূর্বাব্দের মাঝামাঝি সময়ে, উত্তর কালো পালিশ করা মাটির সংস্কৃতির বিকাশের সময় গঠিত হয়েছিল। এই সময়কালে, বাংলাদেশের মানুষ শহরগুলোতে বাস করতে শুরু করেছিল। ১৮৭৯ সালে আলেকজান্ডার কানিংহাম মহাস্থানগড়কে ঋগ্বেদে উল্লিখিত পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি একটি প্রাচীন দুর্গ এবং শহরের ধ্বংসাবশেষ। বাংলাদেশে পাওয়া প্রাচীনতম শিলালিপি মহাস্থানগড়ে পাওয়া গেছে এবং এটি ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা, যা খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে লেখা হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। এই শিলালিপিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল। এটি বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানান দেয়। মহান আলেকজান্ডার বহু বছর আগে এই অঞ্চল আক্রমণ করেছিলেন, কিন্তু গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের শক্তিশালী প্রতিরোধের কারণে সফল হননি। এই দাবিটি ঐতিহাসিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি, তবে এটি এই অঞ্চলের প্রাচীন ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গ্রিক ও রোমান সূত্রগুলো গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে, যা উয়ারী-বটেশ্বর এর সাথে মিলে যায়। এই তথ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্গ শহরের অস্তিত্ব, যা সম্ভবত রাজ্যের রাজধানী ছিল। সোনারগাঁও, একটি ঐতিহাসিক শহর যা টলেমির বিশ্ব মানচিত্রে তালিকাভুক্ত ছিল, সম্ভবত উয়ারী-বটেশ্বর এর সাথে মিলে যায়। এই মিলটি প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত, যা উয়ারী-বটেশ্বর এ একটি সমৃদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্রের অস্তিত্ব প্রমাণ করে। রোমান ভূগোলবিদরা এই অঞ্চলে একটি বড় বন্দরের অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যা আজকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথে মিলে যায়। এই বন্দরটি সম্ভবত উয়ারী-বটেশ্বর এর সাথে যুক্ত ছিল, যা এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। বাংলাদেশকে শাসনকারী প্রাচীন বৌদ্ধ ও হিন্দু রাজ্যগুলোর মধ্যে ছিল বঙ্গ রাজ্য, সমতট ও পুণ্ড্র রাজ্য, মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্য, বর্মণ রাজবংশ, শশাঙ্কের রাজত্ব, খড়্গ ও চন্দ্র রাজবংশ, পাল সাম্রাজ্য, সেন রাজবংশ, হরিকেল রাজত্ব ও দেব রাজবংশ। এই রাজ্যগুলোতে সুগঠিত মুদ্রা, ব্যাংকিং, নৌপরিবহন, স্থাপত্য ও শিল্প ছিল এবং বিক্রমপুর ও ময়নামতির প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল থেকে পণ্ডিতদের আকৃষ্ট করেছিল। প্রথম গোপাল, খ্রিস্টীয় ৭৫০ সালে অঞ্চলের নির্বাচিত প্রথম শাসক ছিলেন; তিনি খ্রিস্টীয় ১১৬১ সাল পর্যন্ত রাজত্বকারী পাল রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এই সময়ের মধ্যে বাংলা সমৃদ্ধ হয়েছিল। চীনা হিউয়েন সাঙ, সোমপুর মহাবিহারে (প্রাচীন ভারতের বৃহত্তম মঠ) বসবাসকারী একজন বিখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন এবং আতিশা, বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করার জন্য বাংলা থেকে তিব্বতে ভ্রমণ করেছিলেন। বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রাচীন রূপ চর্যাপদ অষ্টম শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়েছিল। বাংলা উপসাগরের নাবিকরা প্রারম্ভিক খ্রিস্টীয় যুগ থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্য করত এবং এই অঞ্চল থেকে বৌদ্ধ ও হিন্দু সংস্কৃতি রপ্ত করেছিলেন। ইসলামি বাংলা বাংলাদেশে ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাস দুটি পর্যায়ে বিভক্ত। প্রথম পর্যায়টি ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দী পর্যন্ত ছিল, যখন বাংলার সাথে মুসলিম বাণিজ্য আরব ও ইরানের সাথে বিকশিত হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্যায়টি ১৩শ শতাব্দীতে শুরু হয়েছিল, যখন বাংলা মুসলিম শাসকদের অধীনে আসার পর মুসলিম রাজবংশের শাসন শুরু হয়েছিল। বাংলার সাথে মুসলিম বাণিজ্য আরব ও ইরানের সাথে বিকশিত হয়েছিল। বাংলা মুসলিম শাসনের অধীনে আসার পর বাংলায় মুসলিম রাজবংশের শাসন শুরু হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে, ইসলাম বাংলার প্রধান ধর্ম হয়ে ওঠে। মুসলিম রাজবংশগুলো ইসলামি সংস্কৃতি এবং শিক্ষার উন্নয়নে অবদান রেখেছিল। মুহাম্মদ আল-ইদ্রিসি, ইবনে হাওকাল, আল-মাসুদি, ইবন খোরদাদবেহ এবং সুলাইমান আল তাজিরের লেখা থেকে আরব, ইরান এবং বাংলার মধ্যকার সমুদ্র বাণিজ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়। এই লেখকরা বাংলার সাথে মুসলিম বাণিজ্যের বিকাশ এবং বাংলায় ইসলামের প্রাথমিক প্রসার সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। বাংলার সাথে মুসলিম বাণ্যিজ্য সাসানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর এবং আরবদের পারস্য বাণিজ্য পথগুলো দখল করার পর বিকাশ লাভ করে। সাসানীয় সাম্রাজ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য যা ৭ম শতাব্দীতে আরবদের দ্বারা পরাজিত হয়েছিল। আরবরা পারস্য সাম্রাজ্যের বাণিজ্য পথগুলো দখল করার পর তারা বাংলার সাথে বাণিজ্য করতে শুরু করে। এই বাণিজ্যের বেশিরভাগ অংশ মেঘনা নদীর পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় হত। বাংলাদেশে খ্রিস্টীয় ৬৯০ সালের দিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রাথমিক অস্তিত্বের ধারণা রয়েছে। বাংলা সম্ভবত প্রথম মুসলিমদের দ্বারা চীনে যাওয়ার পথ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। বাংলা চীনের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। মুসলিম ব্যবসায়ীরা বাংলার মধ্য দিয়ে চীনে যাওয়ার জন্য এই বাণিজ্যিক কেন্দ্রটি ব্যবহার করত। পাহাড়পুর এবং ময়নামতির প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষে আব্বাসীয় মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। আব্বাসীয়রা ছিল আরবদের একটি রাজবংশ যা ৭ম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই মুদ্রাগুলো বাংলায় ইসলামের প্রাথমিক প্রসারকে নির্দেশ করে। সুলতানি আমল বাংলায় মুসলিম বিজয়ের সূত্রপাত হয় ১২০৪ সালে মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির নেতৃত্বে পরিচালিত গৌড় অভিযানের মাধ্যমে। তিনি সেন রাজধানী গৌড় দখল করে নেন এবং তিব্বতে প্রথম মুসলিম সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। বাংলা তারপর এক শতাব্দীর মতো দিল্লি সালতানাতের মামলুক, বলবন ও তুঘলক বংশের শাসনাধীন ছিল। চতুর্দশ শতাব্দীতে, বাংলায় তিনটি স্বাধীন নগর রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে: ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ কর্তৃক শাসিত সোনারগাঁও; শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ কর্তৃক শাসিত সাতগাঁও এবং আলাউদ্দিন আলী শাহ কর্তৃক শাসিত লখনৌতি। এই নগর-রাষ্ট্রগুলির শাসকরা ছিলেন দিল্লির সাবেক গভর্নর, যারা পরে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৩৫২ সালে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ নগর-রাষ্ট্রগুলোকে একীভূত করে একটি স্বাধীন সুলতানি রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করেন। দিল্লির সুলতানকে তিনি আক্রমণের মুখে পিছু হটতে বাধ্য করেন। ইলিয়াস শাহ'র সেনাবাহিনী উত্তর-পশ্চিমে বারাণসী, উত্তরে কাঠমান্ডু, পূর্বে কামরূপ এবং দক্ষিণে ওড়িশা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। সিকান্দর শাহ'র শাসনামলে দিল্লি বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়। বাংলা সুলতানি প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে কাজ করার জন্য টাকশালের শহরগুলির একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল যেখানে সুলতানের মুদ্রা তৈরি করা হত। বাংলা যখন ইসলামিক বিশ্বের সর্বপ্রাচ্যের সীমান্তভূমি হয়ে রূপ পায়, তখন বাংলা ভাষা সরকারি রাজদরবারের ভাষা হিসেবে বিকশিত হয়, এবং অনেক স্বনামধন্য লেখক তৈরি করে। এই সুলতানি আমল ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে উন্নতি লাভ করে, যেখানে মুসলিম রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক নেতাদের এক মেলবন্ধন ঘটে। বাংলা সালতানাতের দুটি সবচেয়ে বিশিষ্ট রাজবংশ ছিল ইলিয়াস শাহী এবং হোসেন শাহী রাজবংশ। সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজত্বকালে মিং চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা হয়। সুলতান জালালউদ্দিন মুহাম্মদ শাহের রাজত্বকালে বাঙালি স্থাপত্যরীতির বিকাশ ঘটে। পনেরো শতকের গোড়ার দিকে, বাংলা আরাকানে মিন সাও মনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিল, যার ফলে আরাকান বাংলার একটি করদ রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকালে, বাঙালি সেনাবাহিনী ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার গভীরে প্রবেশ করে এবং শাহ ইসমাইল গাজীর নেতৃত্বে আসাম, ওড়িশার যাজনগর, জৌনপুর সালতানাত, প্রতাপগড় রাজ্য এবং চন্দ্রদ্বীপ দ্বীপ জয় করে। ১৫০০ সালে গৌড় বিশ্বের পঞ্চম জনবহুল শহরে পরিণত হয় যার জনসংখ্যা ছিল ২০০,০০০। সামুদ্রিক বাণিজ্য বাংলাকে চীন, মালাক্কা, সুমাত্রা, ব্রুনাই, পর্তুগীজ ভারত, পূর্ব আফ্রিকা, আরব, পারস্য, মেসোপটেমিয়া, ইয়েমেন এবং মালদ্বীপের সাথে সংযুক্ত করেছিল। সুলতানরা চট্টগ্রামে পর্তুগিজ বসতি স্থাপনের অনুমতি দেন। সুরি সাম্রাজ্যের আক্রমণের ফলে বাংলা সালতানাতের অবক্ষয় শুরু হয়। মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর বাবর বাংলা আক্রমণ করতে থাকেন। আকবরের শাসনামলে কররানি রাজবংশের পতনের সাথে সাথে বাংলা সালতানাতের পুরোপুরি বিলুপ্তি ঘটে। তবে পূর্ব বাংলার ভাটি অঞ্চল প্রাক্তন বাংলা সালতানাতের অভিজাত শ্রেণীর নেতৃত্বে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হতে থাকে। ঈশা খাঁর নেতৃত্বে এই অভিজাতরা 'বারো ভূঁইয়া' নামে পরিচিত একটি স্বাধীন জোট গঠন করে এবং সোনারগাঁওকে রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। মুসা খাঁর পরাজয়ের মাধ্যমে মুঘলদের নিকট আত্মসমর্পণের পর অবশেষে ভূঁইয়াদের শাসনের সমাপ্তি ঘটে। মুঘল যুগ সতেরো শতকের মধ্যে মুঘল সাম্রাজ্য বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে। সোনারগাঁওয়ের শেষ স্বাধীন শাসক মুসা খান বেশ কয়েক বছর মুঘল বিজয়কে প্রতিহত করলেও ১৬১০ সালের ১০ই জুলাই মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সেনাপতি ইসলাম খান চিশতীর হাতে তিনি পরাজিত ও সিংহাসনচ্যুত হন। ইসলাম খান চিশতী বাংলার প্রথম মুঘল সুবাহদার হিসেবে দায়িত্ব নেন। মুসা খান পরাজয়ের পরে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতি অনুগত হয়ে ওঠেন এবং ত্রিপুরা জয় ও কামরূপের বিদ্রোহ দমনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। মুঘলরা ঢাকাকে একটি দুর্গনগরী এবং বাণিজ্যিক মহানগর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ৭৫ বছর ধরে এই নগরী বাংলা সুবাহ্-এর রাজধানী ছিলো। ১৬৬৬ সালে মুঘলরা আরাকানিদের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে বিতাড়িত করে। মুঘল বাংলা তার মসলিন এবং রেশমের জন্য বিদেশী বণিকদের আকৃষ্ট করতো, এবং আর্মেনীয়রা ছিলো একটি উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক সম্প্রদায়। চট্টগ্রামে পর্তুগিজ বসতি এবং রাজশাহীতে ওলন্দাজ বসতি ছিলো। বাংলা সুবাহ, যেটিকে "জাতিসমূহের স্বর্গভূমি" হিসেবে বর্ণনা করা হতো, ছিলো বিশ্বের একটি বড় রপ্তানিকারক অঞ্চল। মসলিন, তুলাবস্ত্র, রেশম, জাহাজ নির্মাণ - এসব শিল্পে বাংলা বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে। বাংলার নাগরিকরা তখন বিশ্বের অন্যতম উঁচু জীবনযাত্রার মান উপভোগ করতো। অষ্টাদশ শতাব্দীর সময়, বাংলার নবাবরা এই অঞ্চলের প্রকৃত শাসক হয়ে ওঠেন। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক বড় একটি অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। নবাবরা ইউরোপীয় বাণিজ্য কোম্পানিগুলির সাথে মিত্রতা স্থাপন করে, যার ফলে শতাব্দীর শুরুর দিকে অঞ্চলটি বেশ সমৃদ্ধি লাভ করে। সমগ্র মুঘল সাম্রাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৫০% বাংলা থেকে আসতো। বাঙালি অর্থনীতি নির্ভর করতো কাপড় উৎপাদন, জাহাজ নির্মাণ, লবণ উৎপাদন, বিভিন্ন হস্তশিল্প ও কৃষিজ পণ্যের উপর। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেরও একটি বড় কেন্দ্র ছিলো বাংলা। বিশ্বব্যাপী বাংলার রেশম ও তুলা বস্ত্রের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল। জাহাজ নির্মাণেও বাংলা বিখ্যাত ছিলো। প্রাচ্য বাংলা ছিলো একটি সমৃদ্ধশালী ও বহুমুখী সংস্কৃতির মিলনস্থল। শক্তিশালী বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যমে এর উন্নতি ঘটে। বাংলা ছিলো উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে মুসলিম জনসংখ্যার একটি বড় কেন্দ্র। বাঙালি মুসলিমরা ধর্মান্তরকরণ ও ধর্মীয় বিবর্তনের ফসল ছিলো, এবং তাদের ইসলাম-পূর্ব বিশ্বাসে বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের উপাদান মিশে ছিলো। মসজিদ, ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র (মাদ্রাসা), ও সুফি মঠ (খানকাহ্) নির্মাণ ধর্মান্তরকরণের সুবিধা করে দেয়। বাঙালি মুসলিম সমাজের বিকাশে ইসলামী মহাজাগতিক দৃষ্টিভঙ্গি একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। পণ্ডিতদের ধারণা, বাঙালিরা ইসলামের সমতাভিত্তিক সামাজিক ব্যবস্থার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলো, যেটা হিন্দু বর্ণপ্রথার সম্পূর্ণ বিপরীত ছিলো। পঞ্চদশ শতাব্দী নাগাদ মুসলিম কবিরা বাংলা ভাষায় ব্যাপকভাবে লেখালেখি শুরু করে। বাউল আন্দোলনের মতো সমন্বয়বাদী ধর্মসাধনা বাঙালি মুসলিম সমাজের প্রান্তে উদ্ভূত হয়। পারস্য সংস্কৃতি বাংলায় তাৎপর্যপূর্ণ ছিলো, যেখানে সোনারগাঁওয়ের মতো শহরগুলি ছিলো পারস্য প্রভাবের সবচেয়ে পূর্বদিকের কেন্দ্র। ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা কমানোর চেষ্টা করেন। তিনি তাদের বাণিজ্য করার অধিকার বাতিল করে দেন এবং কলকাতার দুর্গ ভেঙে ফেলার দাবি জানান। এই উত্তেজনার ফলে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রবার্ট ক্লাইভ নবাবের পরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সুযোগ গ্রহণ করেন এবং নবাবের চাচা ও সেনাপ্রধান মীর জাফরকে ঘুষ দিয়ে সিরাজ-উদ-দৌলার পতন নিশ্চিত করেন। ক্লাইভ সিরাজ-উদ-দৌলার পরিবর্তে মীর জাফরকে নবাব হিসেবে বসান এবং পুরস্কার হিসেবে কোম্পানি পুরোপুরি নবাবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ঐতিহাসিকরা প্রায়শই এই যুদ্ধকে "দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা" হিসেবে চিহ্নিত করেন। কোম্পানি ১৭৬০ সালে মীর জাফরের জায়গায় তার জামাতা মীর কাসিমকে নবাব হিসেবে নিয়োগ দেয়। মীর কাসিম মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ও অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলার সাথে মিত্রতা স্থাপন করে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করেন। কিন্তু, ১৭৬৪ সালের ২৩শে অক্টোবর বক্সারের যুদ্ধে কোম্পানি এই তিন শাসকের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে। যুদ্ধের পরবর্তী চুক্তির ফলে মুঘল সম্রাট ব্রিটিশদের পুতুলে পরিণত হন এবং বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় কর (দেওয়ানি) সংগ্রহের অধিকার কোম্পানির হাতে চলে যায়। এর মাধ্যমে তারা ওই অঞ্চলগুলোর কার্যত নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। কোম্পানি বাংলার করের টাকা ব্যবহার করে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে তাদের সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ করে। ঔপনিবেশিক আমল ইউরোপীয়দের আগমন বাংলার সুলতানরা ১৫২৮ সালে পর্তুগিজদের চট্টগ্রামে একটি বসতি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিলেন। এটিই ছিল বাংলার প্রথম ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক অঞ্চল। ১৫৩১ সালে আরাকান স্বাধীনতা ঘোষণা করে ম্রক-উ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার পর বাংলা সালতানাত চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ষোড়শ শতাব্দীতে গোয়া এবং মালাক্কা থেকে পর্তুগিজ জাহাজগুলি এই বন্দর নগরীতে ঘন ঘন আসা-যাওয়া শুরু করে। এরপর 'কর্তাজ' ব্যবস্থা চালু হয় যেখানে এই অঞ্চলে চলাচলকারী সমস্ত জাহাজকে পর্তুগিজদের কাছ থেকে নৌ-বাণিজ্য লাইসেন্স কিনতে হতো। ফলে সমুদ্রে পর্তুগিজ জলদস্যুতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৬০২ সালে সন্দ্বীপ দ্বীপটি পর্তুগিজদের দখলে চলে যায়। ১৬১৫ সালে চট্টগ্রাম উপকূলের কাছে পর্তুগিজ নৌবাহিনী ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং আরাকানীদের একটি যৌথ নৌবহরকে পরাজিত করে। ১৫৩৪ সালের পর বাংলার সুলতান পর্তুগিজদের সাঁতগাঁও, হুগলি, বান্দেল এবং ঢাকায় বেশ কিছু বসতি স্থাপনের অনুমতি দেন। ১৫৩৫ সালে পর্তুগিজরা বাংলা সুলতানের সাথে মিত্রতা করে মুঘলদের আক্রমণ ঠেকাতে পাটনা থেকে ২৮০ কিলোমিটার (১৭০ মাইল) দূরে তেলিয়াগড়ি গিরিপথ দখল করে রাখে। সেই সময় পর্যন্ত বেশ কিছু পণ্য পাটনা থেকে আসত এবং পর্তুগিজরা ১৫৮০ সালে সেখানে একটি কারখানা স্থাপন করে ব্যবসায়ী পাঠাতে থাকে। পরবর্তীতে এই অঞ্চলের হয়ে ওঠে এশিয়া থেকে ডাচ আমদানির ৪০% এর উৎস। ১৬৬৬ সালে বাংলার মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খানের নেতৃত্বে মুঘল বাহিনী চট্টগ্রাম জয় করে পর্তুগিজ এবং আরাকানীদের বহিষ্কার করে। ১৬৮৬ সালে প্রথম ইঙ্গ-মুঘল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ, ফরাসি, ডাচ, ডেনিশ এবং অস্ট্রিয়ান ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিগুলি সারা বাংলা জুড়ে তাদের কারখানা এবং বাণিজ্যকেন্দ্র নির্মাণ করে। এই কোম্পানিগুলি বাংলার নবাবদের কাছ থেকে বাণিজ্যের অধিকার এবং ছাড় পেয়েছিল। এদের মধ্যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার অধিকাংশ অঞ্চলে সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে জয়ের পর বাংলা ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম বড় অংশ যা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জয় করে। ইলাহাবাদ চুক্তির শর্ত অনুসারে, কোম্পানি মুঘল সম্রাটের পক্ষ থেকে কর আদায় করত। চুক্তিটি বাঙালি মুসলিম কূটনীতিক ইতিসাম-উদ-দীন রচনা করেছিলেন। কোম্পানির ভারত শাসনের অধীনে, মুঘল সম্রাটের অধীনে বাংলা কার্যত ব্রিটিশদের দ্বারা শাসিত হতো। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা প্রেসিডেন্সি গঠন করে, যার মাধ্যমে এটি ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত অঞ্চলটি পরিচালনা করে। কোম্পানির শাসনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, যা সামন্ত জমিদারি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল; এছাড়াও, কোম্পানির নীতির ফলে বাংলার বস্ত্রশিল্পের শিল্পায়নের অবসান ঘটে। বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জমাকৃত মূলধন গ্রেট ব্রিটেনের নতুন শিল্প বিপ্লবে বিনিয়োগ করা হয়েছিল। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, খরা এবং গুটিবসন্ত মহামারীর কারণে সরাসরি ১৭৭০ সালের মহান বাংলা দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়, যাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বেশ কিছু বিদ্রোহ শুরু হয়, কারণ কোম্পানির শাসনের ফলে মুসলিম শাসক শ্রেণী ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল। একজন রক্ষণশীল ইসলামী ধর্মগুরু হাজী শরীয়তুল্লাহ ইসলামিক পুনরুজ্জীবনবাদ প্রচার করে ব্রিটিশদের উৎখাত করার চেষ্টা করেছিলেন। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি শহর ১৮৫৭ সালের ভারতীয় বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল। ব্রিটিশ রাজ ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে ভারত শাসনের দায়িত্ব সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের হাতে হস্তান্তর করে। এর ফলে ব্রিটিশ সরকার প্রশাসনিক ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সমস্ত কার্যক্রমের দায়িত্ব নেয়। সর্বাধিক বিস্তৃতির সময়ে, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি খাইবার গিরিপথ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ রোজি লেওয়েলিন-জোন্সের মতে, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি একটি প্রশাসনিক এখতিয়ার ছিল যা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চালু করেছিল এবং ব্রিটিশ সিভিল কর্মচারী, অভিজাত এবং সামরিক অফিসারদের দ্বারা পরিচালিত হতো। সমগ্র উত্তর ভারত থেকে আফগানিস্তানের সাথে থাকা সীমান্তে অবস্থিত খাইবার গিরিপথ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ছিল। এছাড়াও পূর্বে বার্মা ও সিঙ্গাপুরও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। যুক্তিযুক্তভাবে বলা যায়, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বড় অঞ্চল। এর আঞ্চলিক বিস্তৃতি স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের অধীনে নিউ স্পেনের সর্বোচ্চ বিস্তৃতির সমান্তরাল, যা ফিলিপাইন থেকে আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাবের কাছ থেকে প্রাপ্ত অঞ্চলগুলি (বেঙ্গল, বিহার এবং উড়িষ্যা) নিয়েই প্রাথমিকভাবে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি গঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধের পরে এটি আওধের নবাব এবং দিল্লির মুঘল অঞ্চলগুলিতে বিস্তৃত হয়। দ্বিতীয় এংলো-শিখ যুদ্ধের ফলে ব্রিটিশরা পাঞ্জাব জয় করে এবং ক্রমে প্রেসিডেন্সির সীমানা খাইবার গিরিপথ পর্যন্ত বর্ধিত হয়। খাইবার গিরিপথ পর্যন্ত উত্তর ভারতের প্রসারে বেঙ্গল আর্মি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আসামের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে প্রেসিডেন্সির সম্প্রসারণে স্থানীয় গুর্খা পদাতিক বাহিনীও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উপকূলীয় বার্মার নিয়ন্ত্রণও নেয়, সেইসাথে ব্রিটিশ বণিকরা মালাক্কা প্রণালীতে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে বাণিজ্য উপনিবেশ স্থাপন করে। বেঙ্গল আর্মি ব্রিটিশ ভারতের সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এটা বেঙ্গল, বোম্বে এবং মাদ্রাজের প্রেসিডেন্সি সেনাবাহিনীর মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল। এটি বাংলা, বিহার ও অযোধ্যা অঞ্চলের সৈন্যদের নিয়ে গঠিত হতো যারা ব্রিটিশ অফিসারদের অধীনে কাজ করতো। এর অশ্বারোহী বাহিনীতে প্রাক্তন মুঘল সেনাবাহিনীর সওয়ারগণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। বেঙ্গল আর্মি প্রথম এংলো-আফগান যুদ্ধ, প্রথম এংলো-বার্মিজ যুদ্ধ, দ্বিতীয় এংলো-আফগান যুদ্ধ, প্রথম আফিম যুদ্ধ, দ্বিতীয় এংলো-বার্মিজ যুদ্ধ এবং তৃতীয় এংলো-বার্মিজ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ব্রিটিশ ভারতের সরকার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। স্ট্রেইটস সেটেলমেন্ট বা প্রণালী উপনিবেশগুলিকে ১৮৬৭ সালে বেঙ্গল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সরাসরি অধীনস্থ উপনিবেশে পরিণত করা হয়। বিংশ শতাব্দীর সন্ধিক্ষণ নাগাদ, উত্তর ভারতের বেশিরভাগ অংশকে পৃথক প্রদেশ হিসেবে পুনর্গঠিত করা হয়, যার মধ্যে ছিল পাঞ্জাব, আগ্রা ও আউধের যুক্ত প্রদেশ এবং আসাম। বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমার), বাংলার সীমান্তবর্তী অঞ্চল আরাখানে অনেক অভিবাসী বসতি স্থাপন করে। চট্টগ্রামের বিত্তশালী কৃষকরা বার্মার চাল-ভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চট্টগ্রামের সমৃদ্ধ কৃষকদের প্রচেষ্টার ফলে আরাখান অঞ্চল বিশ্বের অন্যতম প্রধান চাল রপ্তানিকারক অঞ্চলে পরিণত হয়। বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থিত অঞ্চল তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বাণিজ্য নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত হয়, ফলে ব্যবসায়ী ও কূটনীতিকরা সুদূর অঞ্চল থেকে এখানে আসতে থাকেন। প্রথম মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন কর্তৃক বেঞ্জামিন জয়কে প্রথম মার্কিন কনসাল হিসেবে মনোনীত করা হয় এবং চট্টগ্রামে একটি কনসুলার এজেন্সি প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকায় মুঘল শাসনামলের প্রভাব ছিল স্পষ্ট। মুঘল সংস্কৃতির প্রভাবে ঢাকায় তখন এক ভদ্র ও শিষ্ট সমাজের বিকাশ ঘটে। আর্মেনীয়, গ্রীক ও ইহুদি সম্প্রদায়গুলো ঢাকায় তাদের সম্প্রদায় গড়ে তোলে। বাংলায় ব্রিটিশরা বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। স্যার সৈয়দ আহমেদ খান এবং রামমোহন রায় উপমহাদেশে আধুনিক ও উদার শিক্ষার প্রসার ঘটান, যা আলিগড় আন্দোলন এবং বাংলার নবজাগরণকে অনুপ্রাণিত করে। উনিশ শতকের শেষের দিকে, মুসলিম বাঙালি সমাজ থেকে কথাসাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক এবং নারীবাদী ব্যক্তিত্বদের উত্থান ঘটে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে বিদ্যুৎ এবং পৌর পানি ব্যবস্থা চালু হয়; বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে অনেক শহরে সিনেমা হল খোলা হয়। পূর্ববঙ্গের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি, বিশেষ করে পাট ও চা, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ব্রিটিশরা করাধীন নদীবন্দর যেমন নারায়ণগঞ্জ বন্দর, এবং বৃহৎ সমুদ্রবন্দর, যেমন চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিষ্ঠা করে। ব্রিটিশ ভারতে বাংলার সর্বোচ্চ অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ছিল। উপমহাদেশে মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে শীতকালীন রাজধানী শিলং একসময় শীর্ষস্থান অধিকার করেছিল। বাংলা ছিল এশিয়ার প্রথম কয়েকটি অঞ্চলের একটি যেখানে রেল পরিবহন চালু হয়; ১৮৬২ সালে এটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এ অঞ্চলে প্রধান দুইটি রেলওয়ে কোম্পানি ছিল ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে এবং আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে। পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে রেল যোগাযোগ জলপথের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। মুসলিম অভিজাতদের সমর্থনে ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ তৈরি করে। এই নতুন প্রদেশ শিক্ষা, যোগাযোগ ও শিল্পসেক্টরে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বঙ্গভঙ্গের ফলে কলকাতা এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ক্রমবর্ধমান হিন্দু জাতীয়তাবাদের জবাবে ১৯০৬ সালে ঢাকায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ গঠিত হয়। ১৯১২ সালে ব্রিটিশ সরকার প্রদেশগুলিকে পুনর্বিন্যাস করে পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গকে একত্রিত করে এবং আসামকে আলাদা প্রদেশ হিসেবে গড়ে তোলে। উপনিবেশিক ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে স্বশাসনের প্রক্রিয়া ছিল ধীরগতির। ১৮৬২ সালে বাংলা লেজিসলেটিভ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই অঞ্চলে স্থানীয় বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব শুরু হয়, বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যার পরিধি বাড়তে থাকে। বাঙালি মুসলমানদের নাগরিক অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে ১৯১৩ সালে গঠিত হয় বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল মুসলিম লীগ। বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে, মুসলিম লীগ বিভক্ত হয়ে পড়ে - একদল খিলাফত আন্দোলনকে সমর্থন করতো, অন্যদল স্বশাসন অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে সহযোগিতার পক্ষে ছিল। বাংলার অভিজাত শ্রেণীর একটি অংশ মুস্তাফা কামাল আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনের সমর্থকও ছিলেন। ১৯২৯ সালে হিন্দু জমিদারদের প্রভাব মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে বাংলা লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে অল বেঙ্গল টেন্যান্টস অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও পাকিস্তান আন্দোলন তীব্রতা লাভ করে। মর্লি-মিন্টো সংস্কার এবং ব্রিটিশ ভারতের আইনসভায় দ্বৈত-শাসনের সময়কালের পর ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার সীমিত আকারে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তম আইনসভা হিসেবে বাংলা লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৭ সালেই ব্রিটিশ বার্মা ব্রিটিশ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১৯৩৭ সালে যদিও বাংলা কংগ্রেস সর্বাধিক আসন জয়লাভ করেছিল, তারা আইনসভা বয়কট করেছিল। কৃষক প্রজা পার্টির এ.কে. ফজলুল হক বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৪০ সালে হক লাহোর প্রস্তাবকে সমর্থন করেন, যে প্রস্তাবে উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলিতে স্বাধীন রাষ্ট্রের কল্পনা করা হয়েছিল। খাজা নাজিমুদ্দিন হকের উত্তরসূরি হন, যিনি বার্মা অভিযানের প্রভাব, ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষ (যা লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটিয়েছিল) এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সাথে লড়াই করেছিলেন। বিশ্বযুদ্ধের সময়, বাংলাকে বার্মা থেকে জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ১৯৪২ সালের এপ্রিল ও মে মাসে জাপানি বিমানবাহিনী চট্টগ্রামে বোমা হামলা চালায়। যুদ্ধের সময় পূর্ব বাংলায় মিত্রবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। ১৯৪৬ সালে বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল মুসলিম লীগ ব্রিটিশ ভারতে সর্ববৃহৎ মুসলিম লীগের আদেশ নিয়ে প্রাদেশিক নির্বাচনে জয়লাভ করে। এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দি, যিনি ১৯৪৬ সালে একটি অখণ্ড বাংলার জন্য শেষ ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেছিলেন, তিনি ছিলেন বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪৭ সালের বঙ্গভঙ্গ ১৯৪৭ সালের ৩রা জুন মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিটিশ ভারত ভাগের রূপরেখা তৈরি হয়। ওই বছরের ৬ই জুলাই, আসামের সিলেট অঞ্চলের অধিবাসীরা গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন যে তারা পূর্ববাংলার সাথে যুক্ত হবেন। সাইরিল র‍্যাডক্লিফকে ভারত ও পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমান বাংলাদেশের সীমানা তখন 'র‍্যাডক্লিফ লাইন' দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল। র‍্যাডক্লিফ লাইন অনুসারে, বাংলার দুই-তৃতীয়াংশ পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল হিসেবে যুক্ত হয়। কিন্তু, মধ্যযুগীয় এবং আদি-আধুনিক যুগের বাংলার সুলতানি রাজধানী গৌড়, পাণ্ডুয়া এবং মুর্শিদাবাদ পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলে যায়। পাকিস্তানের সাথে একীভবন ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ব বাংলা হয়ে ওঠে পাকিস্তান ফেডারেশনের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ (নেতৃত্বে ছিলেন মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ, যিনি নতুন রাষ্ট্রে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি দেন)। খাজা নাজিমুদ্দিন ছিলেন পূর্ববঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী এবং ফ্রেডরিক চালমার্স বোর্ন ছিলেন এর গভর্নর। ১৯৪৯ সালে সর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। ১৯৫০ সালে পূর্ববাংলা আইনসভায় ভূমি সংস্কার আইন পাস করে, স্থায়ী বন্দোবস্ত এবং জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করে। ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল দেশটির ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দুই অংশের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রথম লক্ষণ। ১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম পরিবর্তন করে আরও ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগ রাখা হয়। ১৯৫৪ সালে প্রথম গণপরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়। যুক্তফ্রন্ট জোট ১৯৫৪ সালের পূর্ববাংলা আইনসভা নির্বাচনে মুসলিম লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। পরের বছর, একক ইউনিট কর্মসূচির অংশ হিসেবে পূর্ববঙ্গের নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান রাখা হয়, এবং এই প্রদেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থার (সিয়াটো) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সামরিক শাসন জারি করে এবং আইয়ুব খান ১১ বছর দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভূমিকা রাখেন। অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দমন-পীড়ন বৃদ্ধি পায়। খান ১৯৬২ সালে একটি নতুন সংবিধান চালু করেন, যা পাকিস্তানের সংসদীয় ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রপতি ও গভর্নর শাসিত ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করে (নির্বাচনী কলেজ নির্বাচনের উপর ভিত্তি করে), যেটিকে বেসিক ডেমোক্রেসি নামে অভিহিত করা হয়। ১৯৬২ সালে ঢাকা পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের আসন হয়ে ওঠে, যে পদক্ষেপটিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবণতাকে সন্তুষ্ট করার প্রচেষ্টা রূপে দেখা হয়। পাকিস্তান সরকার বিতর্কিত কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করে, যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজস্ব ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ প্রতিবেশী ভারতের সাথে সীমান্তবর্তী পরিবহন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে। এটিকে একধরণের দ্বিতীয় বিভাজন বলে অভিহিত করা হয়। ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য ছয় দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেন। বিশ্বব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, পাকিস্তান সরকার ব্যাপকভাবে পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক বৈষম্যের চর্চা করেছে। পাট ও চা দিয়ে পাকিস্তানের ৭০% রপ্তানি আয় করার সত্ত্বেও, জাতীয় বাজেটে পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তান অনেক কম সরকারি বরাদ্দ পেত। রেহমান সোবহান এবং নুরুল ইসলামসহ পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদরা পূর্বাঞ্চলের জন্য একটি পৃথক বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্ট দাবি করেছিলেন। অর্থনীতিবিদরা ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের দ্বিজাতি তত্ত্বের আদর্শকে প্যারাফ্রেজ করে, পাকিস্তানের মধ্যেই দুটি ভিন্ন অর্থনীতির অস্তিত্বের উপস্থিতি দেখিয়েছেন, যেটিকে 'দুই অর্থনীতি-তত্ত্ব' (Two-Economies Theory) নামে অভিহিত করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানকে বরাদ্দকৃত বৈদেশিক সাহায্য দিতেও অস্বীকৃতি জানায় কেন্দ্রীয় সরকার। ১৯৬৯ সালের পূর্ব পাকিস্তানে গণ অভ্যুত্থানের সময় গণতান্ত্রিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়, কিন্তু পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এই অভ্যুত্থান আইয়ুব খানের পদত্যাগের দিকে পরিচালিত করে। জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং পুনরায় সামরিক শাসন জারি করেন। পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক চাকরিতে বাঙালিদের প্রতি ব্যাপক জাতিগত ও ভাষাগত বৈষম্য ছিল। এসব চাকরিতে বাঙালিদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো কম। পূর্ব পাকিস্তানের সংস্কৃতির উপরও বৈষম্য চাপিয়ে দেওয়া হতো, যার ফলে পূর্ব পাকিস্তান তাদের একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয় গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীত নিষিদ্ধ করে দেয়। ১৯৭০ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় পূর্ব পাকিস্তানে আঘাত হানে এবং প্রায় পাঁচ লক্ষ লোকের প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু যেভাবে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার এই বিপর্যয়ের মোকাবেলা করে, তার জন্য তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসের নির্বাচনে বাঙালি-জাতীয়তাবাদী আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন ও একটি নতুন সংবিধান রচনার দাবি করে। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি এর তুমুল বিরোধিতা করে। স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে, ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। আওয়ামী লীগ তার ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে চেয়েছিল; পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী, পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং মুসলিম লীগের অংশ বিশেষগুলো এর বিরোধিতা করেছিল। পাকিস্তানের জান্তা নেতৃত্বে ইয়াহিয়া খান যখন পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন চলমান আলোচনা ভেঙে পড়ে। নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদ জান্তা ও পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের চাপের মুখে আহ্বান করা না হলে বাঙালি জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। নবনির্বাচিত সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে শপথ গ্রহণ করতে দেয়া হয়নি। জুলফিকার আলী ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানের সংসদ সদস্যদের সংসদের প্রথম অধিবেশনের জন্য ঢাকায় উড়ে গেলে তাদের পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে নাগরিক অবাধ্যতা শুরু হয়, স্বাধীনতার জন্য জোরালো আহ্বান জানানো হয়। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ মুজিব প্রায় ২০ লক্ষ লোকের স্বাধীনতা সমর্থনকারী সমাবেশে ভাষণ দেন, যেখানে তিনি বলেন, "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম"। পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবস ২৩শে মার্চ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের মধ্যরাতের দিকে পাকিস্তানি সেনারা অপারেশন সার্চলাইট নামে সামরিক অভিযান শুরু করে। তাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, ঢাকার রাজারবাগের পুলিশ ব্যারাক এবং পুরান ঢাকার হিন্দু পাড়া। পাকিস্তান সেনাবাহিনী শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানের একটি কারাগারে নিয়ে যায়। সেনাবাহিনী দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়। মুজিবকে গ্রেপ্তার করার আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি বাহিনী পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং ধ্বংসের ব্যাপক অভিযান চালায়। বিশেষভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও স্বাধীনতাপন্থীদের লক্ষ্যস্থির করে এসব হামলা চালান হয়েছিল। প্রতিবেশী হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের সাথে পাকিস্তানের শত্রুতার কারণে বাংলাদেশী হিন্দু সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে নির্মম অত্যাচার চালানো হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী বাঙালি প্রতিরোধ বাহিনী হিসেবে আবির্ভূত হয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি অত্যন্ত সফল গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। পাকিস্তানের কূটনৈতিক পরিষেবা, সামরিক, পুলিশ এবং আমলাতন্ত্র থেকে বাঙালিরা দলত্যাগ করতে থাকে। এপ্রিল মাসে, আওয়ামী লীগ নেতাদের ভারত সরকারের সহায়তায় কলকাতায় নির্বাসনে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার স্থাপন করতে সাহায্য করে যা ১৯৭১ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত চালু ছিল। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭১ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয়, যে সময়ে বাঙালি বাহিনী গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের চলাচল বন্ধ করতে রেললাইন বন্ধ করে দেয়। মুক্তিবাহিনীর কিছু উল্লেখযোগ্য অপারেশনের মধ্যে ছিল অপারেশন জ্যাকপট এবং অপারেশন বরিশাল। পাকিস্তানের ব্যর্থ প্রথম আঘাত হানার পর ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর ভারত যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে। বাংলাদেশী ও ভারতীয় যৌথ বাহিনীর স্থল অগ্রযাত্রা সহ ভারত এবং ছোট বাংলাদেশী বিমান বাহিনীর বিমান হামলার মুখে পাকিস্তানের দখলদারিত্ব থেকে মধ্য ডিসেম্বরে রাজধানী ঢাকা মুক্ত হয়। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই শীতল যুদ্ধের মুখোমুখি অবস্থানের রণকৌশল হিসেবে বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনী পাঠায়। নয় মাসব্যাপী যুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে পাকিস্তানের পূর্ব কমান্ডের বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান ১৯৭২ সালের ৮ই জানুয়ারী মুজিবকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয় এবং তাঁকে বাংলাদেশ ফেরত আনা হয়। যেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রায় ১০ লাখ লোকের জনসমাগম ঘটে। অবশিষ্ট ভারতীয় সেনা ১৯৭২ সালের ১২ই মার্চের মধ্যে প্রত্যাহার করা হয়। ১৯৭২ সালের আগস্টের মধ্যে, ৮৬টি দেশ নতুন রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি দেয়। বেশিরভাগ মুসলিম দেশের চাপের পরে ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ সরকারের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সর্বমোট ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন। এই সংখ্যার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম অত্যাচারে নিহত এবং দুর্ভিক্ষের কারণে মৃত ব্যক্তিরা। ন্যূনতম হিসেবে ধরা হয়, যুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ লক্ষের মতো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আনুমানিক এক কোটি শরণার্থী ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং প্রায় তিন কোটি মানুষ দেশের ভেতরে উদ্বাস্তু হন। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে যুদ্ধে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের নজির স্থাপিত হয় মুক্তিযুদ্ধে; প্রায় দুই লক্ষ বাঙালি নারী পাকিস্তানি সেনাদের যৌন নির্যাতনের শিকার হন। যুদ্ধের সময় পরিকল্পিতভাবে বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও অভিজাত শ্রেণির মানুষদের হত্যা করা হয়। জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তাকারী রাজাকার বাহিনী গঠন করে এবং তাদের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে সাহায্য করে। পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে বাঙালি মুসলিমদের বর্ণগত উত্তেজনার কারণে যুদ্ধে তাদের ওপর বড় ধরণের নির্যাতন চালানো হলেও, সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়কে পাকিস্তানি বাহিনী বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। এই নৃশংসতার ধারাবাহিকতা পরবর্তীতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে যুদ্ধটিকে "হিন্দু গণহত্যা" বলে দাবি করতে উদ্বুদ্ধ করে। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড এই পরিস্থিতিকে "নির্বাচিত গণহত্যা" হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ১৯৭৪ এবং ২০০২ সালে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘটনার জন্য "খসড়া" প্রকাশ করে। কিন্তু ২০১৫ সালে তারা অত্যাচারের ঘটনাগুলোকে অস্বীকার করে। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে "১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যাকে স্বীকৃতি" দেওয়ার জন্য একটি দ্বিদলীয় প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ জেনোসাইড স্কলারস ১৯৭১ সালের এই নির্যাতনকে গণহত্যা হিসেবেই আখ্যায়িত করেছে। অধুনা বাংলাদেশ প্রথম সংসদীয় সময়কাল পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুরোপুরিভাবে একটি স্বাধীন বাংলাদেশী রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করেন বাংলাদেশের নতুন সরকার। আওয়ামী লীগ সফলতার সাথে আমলাতন্ত্রকে পুনর্বিন্যস্ত করে, একটি লিখিত সংবিধান রচনা করে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের পুনর্বাসন ঘটায়। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে মুজিব রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্র চালু করেন। ১৯৭২ সালের ১২ই জানুয়ারি মুজিব শপথ গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই উদীয়মান রাষ্ট্রের কাঠামো ব্রিটিশ ওয়েস্টমিনস্টার মডেল দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিল। কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সংবিধান প্রণয়ন কমিটি মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র দ্বারা প্রভাবিত একটি অধিকার বিল প্রতিষ্ঠা করে। গণপরিষদ ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান গ্রহণ করে, যা একটি ধর্মনিরপেক্ষ, বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশ কমনওয়েলথ, জাতিসংঘ, ওআইসি এবং জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে যোগ দেয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তার প্রথম ভাষণে মুজিব উল্লেখ করেন যে "স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে একটি মুক্ত ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকারের জন্য বাঙালি বহু শতাব্দী ধরে সংগ্রাম করেছে। তারা সারা বিশ্বের সকল জাতির সাথে শান্তি ও সম্প্রীতিতে বসবাস করতে চেয়েছিল।" ভারতের সাথে ২৫ বছরের বন্ধুত্ব চুক্তি স্বাক্ষর, সীমান্ত নির্ধারণ চুক্তি এবং সীমান্তবর্তী বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রোটোকল স্বাক্ষরের মাধ্যমে ভারতের সাথে সম্পর্ক জোরদার করেন মুজিব। স্থল সীমানা চুক্তিটি পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রাপ্ত সীমান্ত বিরোধের সমাধান এবং ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময়ের লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছিল। এ চুক্তিটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়। আদালত রায় দেন যে, স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সংসদের পূর্ব অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। ইসরায়েল বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বীকৃতিদানকারী প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটি হওয়া সত্ত্বেও মুজিব ফিলিস্তিনের অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় মিশরে একটি আর্মি মেডিকেল ইউনিট পাঠিয়ে বিদেশে প্রেরিত বাংলাদেশের প্রথম সামরিক সহায়তার সূচনা করেন মুজিব। আর্থনৈতিক নীতিতে, বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ বছরই ছিল এর ইতিহাসের একমাত্র সমাজতান্ত্রিক সময়কাল। মুজিব ৫৮০টি শিল্প কারখানা, পাশাপাশি ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি জাতীয়করণ করেন। ১৯৭৪ সালে সরকার তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বঙ্গোপসাগরে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলিকে আমন্ত্রণ জানায়। জাতীয় তেল ও গ্যাস কর্পোরেশন হিসাবে পেট্রোবাংলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালে বাস্তুচ্যুত লক্ষ লক্ষ মানুষের পুনর্বাসন, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার ভাঙ্গন, দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয়তার অভাবের ফলে মুজিব সরকারের সামনে ব্যাপক অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব তখনও ব্যাপকভাবে অনুভূত হচ্ছিলো এবং যুদ্ধের পর অর্থনীতিতে পুনর্গঠনের প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশের ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ মুজিবের জনপ্রিয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মুজিব একটি শাসনব্যবস্থার সভাপতিত্ব করেন যা তার ব্যক্তিত্বের আরাধনা বা 'কাল্ট অব পার্সোনালিটি' কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। চাটুকার ও অনুগতরা 'মুজিববাদ' নামে পরিচিত একটি মতাদর্শের জন্ম দেন। রাষ্ট্রপতি শাসনামল (১৯৭৫-১৯৯১) ১৯৭৫ সালের জানুয়ারীতে শেখ মুজিবুর রহমান বাকশালের অধীনে একদলীয় সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করেন। তিনি চারটি সরকারি মালিকানাধীন সংবাদপত্র ছাড়া অন্য সমস্ত সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করেন এবং নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সংবিধান সংশোধন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর খন্দকার মোশতাক আহমেদ চার মাস রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের জনগণের কাছে তিনি ব্যাপকভাবে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিচিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পর দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ আরো চারজন স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতাকে ১৯৭৫ সালের ৪ঠা নভেম্বর হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ৬ই নভেম্বর সামরিক বাহিনী প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় বসায়। বাংলাদেশ এরপর তিন বছর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি সামরিক জান্তা দ্বারা শাসিত হয়। ১৯৭৭ সালে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন। তিনি বহুদলীয় রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন, শিল্প ও সংবাদপত্রের বেসরকারিকরণ করেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পুনরায় চালু করেন, বেপজা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৭৯ সালে দেশের দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। ১৯৭৮ সালে বর্মী সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ফলে প্রায় ২০০,০০০ আরাকানি (রোহিঙ্গা) মুসলিম শরণার্থী নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে এই শরণার্থীদেরকে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশে একটি আধা-রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা চালু হয়, যেখানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ১৯৮২ সাল পর্যন্ত শাসনক্ষমতায় ছিল। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয় এবং উপরাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ক্ষমতায় এক বছর থাকার পর ১৯৮২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সাত্তারকে উৎখাত করা হয়। প্রধান বিচারপতি এ.এফ.এম আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি করা হয়, তবে দেশের প্রকৃত ক্ষমতা চলে যায় সেনাপ্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাতে। এরশাদ ১৯৮৩ সালে নিজে রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৬ সালে সামরিক আইন প্রত্যাহার করেন এবং চারজন প্রধানমন্ত্রী (আতাউর রহমান খান, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মওদুদ আহমেদ ও কাজী জাফর আহমেদ) এবং তার জাতীয় পার্টির আধিপত্য বিশিষ্ট জাতীয় সংসদের মাধ্যমে শাসন পরিচালনা করেন। এরশাদ দেশে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করেন এবং দেশকে ৬৪টি জেলায় বিভক্ত করেন। এছাড়া ১৯৮৮ সালে তিনি সংসদের মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদের শাসনামলে ঢাকায় প্রথম সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ ১৯৮৮ সালে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সৈন্য পাঠায়। ১৯৯০ সালে গালফ যুদ্ধের সময় কুয়েতকে মুক্ত করতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীতে বাংলাদেশ অংশ নেয়। ১৯৯০ সালে একটি গণঅভ্যুত্থান এরশাদকে পদত্যাগে বাধ্য করে। প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় রূপান্তরের অংশ হিসেবে দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দেন। সংসদীয় যুগ (১৯৯১ - বর্তমান) ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় প্রজাতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি হিসেবে খালেদা জিয়া ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের নেতৃত্ব দেন। ১৯৯১ সালে তার অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বাংলাদেশী অর্থনীতিকে উদার করার একটি বড় কর্মসূচি শুরু করেন। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ব্যাংকিং, ওষুধ, বিমান চলাচল, সিরামিক, ইস্পাত, টেলিযোগাযোগ ও উচ্চ শিক্ষা খাতকে বিনিয়োগের জন্য খুলে দেওয়া হয়, ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ে। ১৯৯২ সালে বার্মার গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন দমনের কারণে আনুমানিক ২ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়; এই শরণার্থীদের অধিকাংশই ১৯৯৩ সালের মধ্যে বার্মায় ফিরে যায়। ১৯৯৪ সালে হাইতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ অপারেশন আপহোল্ড ডেমোক্রেসি-তে বাংলাদেশ মার্কিন-বহির্ভূত সবচেয়ে বড় দল প্রদান করে। ১৯৯৬ সাল রাজনৈতিক অস্থিরতার বছর ছিল, যেখানে দেখা যায় বয়কটকৃত ফেব্রুয়ারি নির্বাচন, একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টা, এবং নির্বাচন তত্ত্বাবধানে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা। তিন মাসের জন্য মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান দেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২১ বছর পর জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম উদ্যোগগুলোর একটি ছিল বিতর্কিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করা, যে অধ্যাদেশটি তার পিতার হত্যাকারীদের বিচারের হাত থেকে রক্ষা করতো। হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য জেলাগুলোতে দীর্ঘস্থায়ী বিদ্রোহের অবসান করে। এছাড়াও, গঙ্গার পানি বণ্টনের জন্য তিনি ভারতের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছান। ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী উদযাপনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম গণতান্ত্রিক সরকারের প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা, পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেলকে স্বাগত জানান। বিরোধী দলের ঘন ঘন হরতাল ও ধর্মঘটসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক সংস্কারের গতি কমে যায়। ২০০১ সালে অর্থনীতি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিএনপি আবার ক্ষমতায় ফেরে। দ্বিতীয় জিয়া প্রশাসনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশি দেখা গেলেও ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সমস্যা দেশকে গ্রাস করে। জঙ্গি সংগঠন জেএমবি একাধিক সন্ত্রাসী হামলা চালায়। ২০০৬ সালে বিএনপির মেয়াদ শেষে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। বাংলাদেশী সেনাবাহিনী রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে জরুরি অবস্থা জারি করতে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ ও আমলাতন্ত্র সংস্কারের জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আহ্বান জানায়। ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় বসে। জেএমবি নেতাদের গ্রেফতার করা হয় এবং পরে ২০০৭ সালের মার্চ মাসে তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়। ২০০৮-এর নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ফিরে আসে এবং ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারি শেখ হাসিনা আবারো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তাঁর নেতৃত্বে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নতির সূচনা হয়। ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনি ফাঁকফোঁকর বন্ধ করে সশস্ত্র বাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ক্ষমতা সীমিত করে এবং সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিগুলো পুনরায় জোরদার করে। আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জীবিত বাঙালি ইসলামপন্থীদের বিচারের জন্য একটি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে। শেখ হাসিনা ও তার সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষ করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (RAB) দ্বারা সংঘটিত গুমের ঘটনা বৃদ্ধি পায়। ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে সরকারকে ক্রমশ কর্তৃত্ববাদী হিসেবে অভিহিত করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে। সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে বিএনপি ও জামায়াত প্রায়ই সহিংস বিক্ষোভের আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ তার ইতিহাসের সর্ববৃহৎ আরাকানি শরণার্থীদের আগমন দেখতে পায়। রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধন অভিযানের পর আনুমানিক ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। জাতীয় দারিদ্র্যের হার ১৯৭১ সালের ৮০% থেকে কমে ১৯৯১ সালে ৪৪.২% এবং ২০২১ সালে ১২.৯% এ নেমে এসেছে। বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস এবং তিনি প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণের প্রবর্তন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের প্রচেষ্টার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, মাথাপিছু আয়ে ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই ছাড়িয়ে গেছে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি অবকাঠামো মেগাপ্রকল্প চালু করেছে। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে বাকি অংশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়; অপরদিকে ঢাকা মেট্রোরেল উদ্বোধন হয় ২০২৩ সালে। সবুজ প্রযুক্তির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের শিল্পখাত গ্রিন কারখানা নির্মাণে অগ্রণী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০২৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রত্যয়িত গ্রিন কারখানা বাংলাদেশেই অবস্থিত। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বর্জনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসীন হন। ভূগোল বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ২০°৩৪´ থেকে ২৬°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০১´ থেকে ৯২°৪১´ দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশটির পূর্ব-পশ্চিমে সর্বোচ্চ বিস্তৃতি ৪৪০ কিলোমিটার এবং উত্তর-উত্তরপশ্চিম থেকে দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিস্তৃতি ৭৬০ কিলোমিটার। দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম দুটি নদী গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র যেখানে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে সেখানেই কালের পরিক্রমায় গড়ে ওঠে পৃথিবীর বৃহত্তম এই ব-দ্বীপ। এই গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র মোহনা অঞ্চলে প্রায় ৩০০০ বছর বা তারও পূর্ব থেকে যে জনগোষ্ঠীর বসবাস, তা-ই ইতিহাসের নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে বর্তমানের স্বাধীন রাষ্ট্র “বাংলাদেশ” রূপে। ভৌগোলিক বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায়, ভারত ও মিয়ানমারের মাঝখানে। এর ভূখণ্ড ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৪৬০ বর্গ কিলোমিটার (সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক ২০২১ অনুসারে) অথবা ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০২০ অনুসারে) বাংলাদেশের ভূখণ্ডগত সমুদ্রসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল (২২.২২ কিমি) এবং অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল (৩৭০.৪০ কিমি) পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের পশ্চিম, উত্তর, আর পূর্ব সীমান্ত জুড়ে রয়েছে ভারত। তবে পূর্বে ভারত ছাড়াও মিয়ানমারের (বার্মা) সাথে সীমান্ত রয়েছে; দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। ভারতের ৫টি রাজ্য (পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরাম) এর সাথে বাংলাদেশের আন্তঃর্জাতিক সীমানা রয়েছে। বাংলাদেশের পশ্চিমে রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য; উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় রাজ্য এবং পূর্বে রয়েছে আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম। বাংলাদেশের স্থল সীমান্তরেখার দৈর্ঘ্য ৪,২৪৭ কিলোমিটার যার ৯৪ শতাংশ (৯৪%) ভারতের সাথে এবং বাকি ৬ শতাংশ মিয়ানমারের সাথে। বাংলাদেশের সমুদ্রতটরেখার দৈর্ঘ্য ৫৮০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশের কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম অনবচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকতগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশের উচ্চতম স্থান দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামের মোদক মুয়াল, সমুদ্রতল থেকে যার উচ্চতা ১,০৫২ মিটার (৩,৪৫১ ফুট) এবং সর্বোচ্চ শৃঙ্গ “বিজয়” (তাজিং ডং)-এর উচ্চতা ১,২৮০ মিটার যা রাঙ্গামাটি জেলার সাইচল পর্বতসারির অন্তর্ভুক্ত। বঙ্গোপসাগর উপকূলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের অনেকটা অংশ জুড়ে সুন্দরবন অবস্থিত, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এখানে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল (টাইগার) বাঘ, চিত্রা হরিণ সহ নানা ধরনের প্রাণীর বাস। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এই এলাকাকে বিলুপ্তির সম্মুখীন বলে ঘোষণা দেয়া হয়। প্রশাসনভিত্তিক ভৌগোলিক বিভাজন বাংলাদেশ ৮টি প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত। এগুলো হল: ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর এবং ময়মনসিংহ। প্রতিটি বিভাগে রয়েছে একাধিক জেলা। বাংলাদেশের মোট জেলার সংখ্যা ৬৪টি। জেলার চেয়ে ক্ষুদ্রতর প্রশাসনিক অঞ্চলকে উপজেলা বলা হয়। সারাদেশে ৪৯৫টি উপজেলা (সর্বশেষ ৩টি নতুন উপজেলা ঘোষণা করা হয়) রয়েছে। বাংলাদেশে মোট ৪,৫৫৪টি ইউনিয়ন; ৫৯,৯৯০টি মৌজা এবং ৮৭,৩১৯টি গ্রাম রয়েছে। বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনে কোনো নির্বাচিত কর্মকর্তা নেই; সরকার নিযুক্ত প্রশাসকদের অধীনে এসব অঞ্চল পরিচালিত হয়ে থাকে। ইউনিয়ন বা পৌরসভার ওয়ার্ডগুলোতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি রয়েছে। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পর্যায়ে মহিলাদের জন্য ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া শহরাঞ্চলে ১২টি সিটি কর্পোরেশন (ঢাকা-উত্তর, ঢাকা-দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ) এবং ৩৩০টি পৌরসভা রয়েছে। এগুলোর সবগুলোতেই জনগণের ভোটে মেয়র ও জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। রাজধানী ঢাকা বাংলাদেশের বৃহত্তম শহর। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শহরের মধ্যে রয়েছে – চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, কক্সবাজার, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রংপুর, যশোর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী,নাটোর, বগুড়া ও দিনাজপুর। জলবায়ু কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের জলবায়ু ক্রান্তীয়— অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত হালকা শীত এবং মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত গরম, আর্দ্র গ্রীষ্ম বিদ্যমান। বাংলাদেশে কখনও ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) নিচে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়নি। ১৯০৫ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শহর দিনাজপুরে সর্বনিম্ন ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩৪.০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) রেকর্ড করা হয়েছিল। দীর্ঘস্থায়ী উষ্ণ এবং আর্দ্র বর্ষাকাল জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিরাজ করে, যা দেশের বেশিরভাগ বৃষ্টিপাতের উৎস। বন উজাড়, মাটির অবক্ষয় এবং ভূমিক্ষয়ের প্রভাবের সাথে মিলিত হয়ে প্রায় প্রতি বছরই বন্যা, ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো এবং জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। ১৯৭০ এবং ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়গুলো ছিল বিশেষভাবে ধ্বংসাত্মক। পরবর্তীটিতে প্রায় ১৪০,০০০ মানুষ মারা যায়। ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে, বাংলাদেশ আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়, যেখানে দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নিমজ্জিত হয়ে প্রায় ১,০০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বিপর্যয়ের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য নানা আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ের উদ্যোগের ফলে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় থেকে মানবক্ষয় ও অর্থনৈতিক ক্ষতি বছরের পর বছর ধরে কমে আসছে। ২০০৭ সালের দক্ষিণ এশীয় বন্যায় দেশের বিভিন্ন এলাকা বিধ্বস্ত হয়, প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং প্রায় ৫০০ মানুষ প্রাণ হারায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এক শতকের মধ্যে ৫০৮টি ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে আঘাত করেছে, যার মধ্যে ১৭ শতাংশ বাংলাদেশে আঘাত করেছে বলে মনে করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্ধিত বৃষ্টিপাত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপদ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতিটি কৃষি, পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা, মানব স্বাস্থ্য এবং আশ্রয়ের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। অনুমান করা হয় যে ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩ ফুট বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে প্রায় ২০ শতাংশ ভূমি নিমজ্জিত হবে এবং ৩ কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। বাংলাদেশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হুমকি মোকাবেলায় 'বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০' চালু করা হয়েছে। জনসংখ্যার উপাত্ত ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত আদমশুমারির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এই আদমশুমারির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.২ শতাংশ। সরকারি সংস্থা পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন অনুযায়ী জুন ২০১৪-এ জনসংখ্যা ১৫৬,৪৯৯,৬৭৩ জন বা ১৫.৬৪ কোটি। অন্য একটি প্রাক্কলন অনুসারে মার্চ ২০১৪-এ বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৫.৯৫ কোটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির প্রাক্কলন ১৫.৮৫ কোটি। এই হিসাবে বাংলাদেশ পৃথিবীর ৮ম জনবহুল দেশ। জনঘনত্ব প্রতি বর্গমাইল এলাকায় ২৪৯৭ জনের বেশি। ২০১১-এর আদমশুমারির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী পুরুষ ও নারীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭ কোটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার এবং ৭ কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার অর্থাৎ নারী ও পুরুষের অনুপাত ১০০:১০০.৩। জনসংখ্যার নিরিখে এটি বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশ। এখানে জনবসতির ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১,০৫৫ জন, যা সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ (কিছু দ্বীপ ও নগর রাষ্ট্র বাদে)। দেশের অধিকাংশ মানুষ শিশু ও তরুণ বয়সী: যেখানে ০–২৫ বছর বয়সীরা মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ, সেখানে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা মাত্র ৩ শতাংশ। এদেশে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের গড় আয়ু ৭১.৫ বছর। জাতিগতভাবে বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ অধিবাসী বাঙালি। বাকি ২ শতাংশ অধিবাসী বিভিন্ন উপজাতি এবং বিহারি বংশোদ্ভূত। দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৩টি উপজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে চাকমা ও মারমা উপজাতি প্রধান। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরের উপজাতিগুলোর মধ্যে গারো ও সাঁওতাল উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কক্সবাজার এলাকায় বার্মা থেকে বিতাড়িত স্বল্পসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে। মোট জনগোষ্ঠীর ২১.৪ শতাংশ শহরে বাস করে; বাকি ৭৮.৬ শতাংশ গ্রামাঞ্চলের অধিবাসী। সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে দারিদ্র্য বিমোচন ও জনস্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশে জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক গড়ে দৈনিক মাত্র ১ মার্কিন ডলার আয় করে (২০০৫)। সরকারি হিসেব অনুযায়ী মাথাপিছু আয় বর্তমানে ১ হাজার ৫শ মার্কিন ডলারের বেশি। আর্সেনিকজনিত বিষক্রিয়া বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। ১৯৯০ দশকের শেষভাগে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু জ্বর রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। প্রধান শহরাঞ্চল ভাষা দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। সংবিধানের ৩নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলা বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় ভাষাও। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বৈদেশিক যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সরকারি কর্মকাণ্ডে বাংলা ভাষা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে, তাছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সাথে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। ধর্ম বাংলাদেশকে ১৯৭২ সালে সাংবিধানিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দেশটি ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করে, রাষ্ট্র ও ধর্মের পৃথকীকরণ নিশ্চিত করে এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি দাবি করে যে "ব্যবহারিকভাবে এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ"। দেশের সংবিধান যেকোন ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি ও বৈষম্যকে নিষিদ্ধ করে এবং সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকারের ঘোষণা দেয়। ইসলাম দেশটির বৃহত্তম ধর্ম, যা জনসংখ্যার প্রায় ৯১.১% মানুষ অনুসরণ করে। বাংলাদেশী নাগরিকদের বিশাল অংশ বাঙালি মুসলিম যারা সুন্নি ইসলাম মেনে চলে। বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় জনবহুল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র এবং সামগ্রিকভাবে চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে দেশটিতে। হিন্দু ধর্ম জনসংখ্যার ৭.৯% দ্বারা অনুসৃত হয়, প্রধানত বাঙালি হিন্দুদের দ্বারা, যারা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং ভারত ও নেপালের পরে বিশ্বব্যাপী তৃতীয় বৃহত্তম হিন্দু সম্প্রদায় গঠন করে। বৌদ্ধধর্ম দেশের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম যা মোট জনসংখ্যার ০.৬%। বাংলাদেশী বৌদ্ধরা পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে কেন্দ্রীভূত। এছাড়াও, উপকূলীয় চট্টগ্রামে অনেক বাঙালি বৌদ্ধ বসবাস করে। খ্রিস্টান ধর্ম চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম যা মোট জনসংখ্যার ০.৩%, এটি প্রধানত একটি ছোট বাঙালি খ্রিস্টান সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দ্বারা অনুসৃত হয়। জনসংখ্যার ০.১% অন্যান্য ধর্ম যেমন প্রাণবাদ ইত্যাদি পালন করে অথবা ধর্মহীন। ইসলাম ধর্ম জনগোষ্ঠীর প্রধান ধর্মবিশ্বাস ইসলাম ধর্মে (৯১.৪ শতাংশ); এরপরেই রয়েছে হিন্দু ধর্ম (৭.৯৫ শতাংশ), বৌদ্ধ ধর্ম (০.৬ শতাংশ), খ্রিষ্ট ধর্ম (০.৪ শতাংশ), এবং অন্যান্য (০.১ শতাংশ)। মুসলমানদের মধ্যে অধিকাংশ সুন্নি মতাদর্শী। ইসলাম হল বাংলাদেশের বৃহত্তম ও দাপ্তরিক রাষ্ট্রধর্ম, যা হল মোট জনসংখ্যার ৯১.০৮ শতাংশ। দেশটি অধিকাংশ বাঙালি মুসলিমের আবাসস্থল, যা মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয়-বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী। অধিকাংশ বাংলাদেশী মুসলিম হল সুন্নি, এরপর রয়েছে শিয়া ও আহ্‌মদীয়া। এর প্রায় চার শতাংশ হল উপাধিবিহীন মুসলিম। বাংলাদেশের রয়েছে বিশ্বের চতুর্থ-বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যা এবং দেশটি হল ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পর বিশ্বের তৃতীয়-বৃহত্তম মুসলিম-সংখ্যাধিক্যের দেশ। এই অঞ্চলে সুফিবাদের সুদীর্ঘ পরম্পরা রয়েছে। বাংলাদেশে মুসলিমদের বৃহত্তম সমাবেশ হয় তাবলিগ জামাত আয়োজিত বার্ষিক বিশ্ব ইজতেমায়, যা হজের পর মুসলিম বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত। হিন্দু ধর্ম হিন্দুধর্ম হল জনসংখ্যার দিক থেকে মোট জনসংখ্যার ৭.৯৬ শতাংশ; এদের অধিকাংশ বাঙালি হিন্দু, এবং কিছু অংশ হল সংখ্যালঘু নৃত্বাত্তিক জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশী হিন্দুগণ হল নেপাল ও ভারতের পর বিশ্বের দ্বিতীয়-বৃহত্তম হিন্দুধর্মীয় সম্প্রদায়। বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী সমভাবে ও বহুলভাবে বিস্তৃত, যারা আবাসিক ঘনত্বের দিক থেকে গোপালগঞ্জ, দিনাজপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, যশোর, চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম পাহড়ি এলাকায় সংখ্যাধিক। জনসংখ্যার দিক থেকে ক্রমশ হ্রাসপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও, হিন্দু সম্প্রদায় হল মুসলিমদের পর ঢাকার দ্বিতীয়-বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায়। বৌদ্ধ ও খ্রিষ্ট ধর্ম বৌদ্ধধর্ম হল দেশটির তৃতীয়-বৃহত্তম ধর্ম, শতাংশের দিক থেকে ০.৬ শতাংশ। আবাসিক ঘনত্বের দিক থেকে বাংলাদেশী বৌদ্ধগণ চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকার আদিবাসী গোষ্ঠীদের (বিশেষত চাকমা, মারমা ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী) মধ্যে অধিক ও উপকূলীয় চট্টগ্রামে ব্যাপকসংখ্যক বৌদ্ধ বাস করে। খ্রিষ্টধর্ম হল দেশের চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম, সংখ্যায় ০.৪ শতাংশ। বাংলাদেশের সংবিধান ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করলেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। এতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও সকল ধর্মের মানুষের সমান স্বীকৃতি নিশ্চিত করে। ১৯৭২ সাল থেকে, বাংলাদেশ হল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সাংবিধানিক-ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। শিক্ষা বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ক্রমবর্ধমান। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার ছিল প্রায় ৪১ শতাংশ। ইউনিসেফের ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে পুরুষদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার ৫০ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৩১ শতাংশ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০০৯ সালে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৫২ শতাংশ। চার বছর পর ২০১৩ সালে ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে তা ৭১ শতাংশ হয়। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে তা আরও বৃদ্ধি লাভ করে ৭২.৭৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার ৭২.৯ শতাংশ। ২০০৭ এর তুলনায় সাক্ষরতার হার ২৬.১০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১০ সালে সাক্ষর নারী ছিল জনসংখ্যার ৫২.২ শতাংশ এবং পুরুষ ৬১.৩ শতাংশ। ২০১৬ তে সাক্ষর নারীর হার ৬৯.৯০ শতাংশে এবং সাক্ষর পুরুষের হার ৭৫.৬২ শতাংশে উন্নীত হয়। সরকার বাস্তবায়িত বিবিধ সাক্ষরতা কর্মসূচীর ফলে দেশে শিক্ষার হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর মধ্যে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। দেশে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। এছাড়া মেয়েদের শিক্ষার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রবর্তিত বৃত্তি প্রদান কর্মসূচী নারীশিক্ষাকে এগিয়ে নিচ্ছে। ২০১৮ সালে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার ৭২.৯ শতাতম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্টাটিসটিকস-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে শিক্ষার হার বর্তমানে ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ। বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা তিন সারির এবং বহুলাংশে ভর্তুকিপুষ্ট। বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বহু বিদ্যালয়ের পরিচালনা ব্যয় সর্বাংশে বহন করে। সরকার অনেক ব্যক্তিগত স্কুলের জন্য অর্থায়ন করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা খাতে, সরকার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মাধ্যমে ১৫টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থায়ন দিয়ে থাকে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সরকার মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করে আসছে। শিক্ষা বছরের প্রথম দিনের মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে নতুন ক্লাসের বই তুলে দেয়ার ঐতিহ্য প্রবর্তিত হয়েছে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় তিন পদ্ধতি প্রচলিত। প্রথমত সাধারণ পদ্ধতির স্কুলগুলোতে সরকারি পাঠ্যক্রম অনুসৃত হয়। এসব স্কুলে শিক্ষাপ্রদানের ভাষা বাংলা। দ্বিতীয়ত রয়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এগুলোতে পশ্চিমা পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা হয়। তুলনামূলকভাবে সীমিত সংখ্যক হলেও উচ্চ মানের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এই স্কুলগুলো প্রসিদ্ধ। তৃতীয়ত রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা। শেষোক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা। তবে ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, ব্যবসায় ইত্যাদি সকল বিষয়ও পাঠ্য। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে তিনভাগে ভাগ করা যায়: সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশে ৩৭টি সরকারি, ৮৩টি বেসরকারি এবং দুটো আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় চালু রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় বৃহত্তম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত) প্রাচীনতম। এছাড়াও প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি আন্তর্জাতিক সংস্থা ওআইসি-র একটি অঙ্গসংগঠন, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকা উপমহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এশিয়ার ১৪টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। ফ্যাকাল্টির সদস্যবৃন্দ এশিয়া, উত্তর আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি স্থানের বিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছেন। বুয়েট, রুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, বুটেক্স এবং ডুয়েট দেশের ছয়টি সরকারি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কিছু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিও বাংলাদেশে রয়েছে। তাদের মধ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ শুরু হয়। এর ফলে ব্যক্তিখাতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হতে শুরু করে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ বাংলাদেশে ব্যক্তিখাতে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৮টি। স্বাস্থ্য খাত দারিদ্রপীড়িত বাংলাদেশে অপুষ্টি একটি দুরূহ সমস্যা যা স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। অপুষ্টিজনিত কারণে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হিসাবে পরিচিত শিশুরা বিশ্ব ব্যাংকের জরিপে বিশ্বে শীর্ষস্থান দখল করেছে যা মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। মোট জনগোষ্ঠীর ২৬% অপুষ্টিতে ভুগছে। ৪৬% শিশু মাঝারি থেকে গভীরতর পর্যায়ে ওজনজনিত সমস্যায় ভুগছে। ৫ বছর বয়সের পূর্বেই ৪৩% শিশু মারা যায়। প্রতি পাঁচ শিশুর একজন ভিটামিন এ এবং প্রতি দুইজনের একজন রক্তস্বল্পতাজনিত রোগে ভুগছে। তবে গত দুই শতকে মানুষের খাদ্যগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে (২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী: ২০৪০ গ্রাম দৈনিক) এবং সুষম খাদ্যাভাস গড়ে উঠেছে যার ফলস্বরূপ অকাল মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে এবং জনগণের গড় আয়ু ৭১ দশমিক ৬ বৎসরে (২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী) উন্নীত হয়েছে। বহু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং ১৩ হাজার কমিউনিটি হাসাপাতালে মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মান অনেকাংশে উন্নীত হয়েছে। জন্মকালে শিশু মৃত্যু হার (২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী: হাজারে ৫৩ জন) ও মাতৃমৃত্যুর হার (২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী: হাজারে ১৪৩ জন) উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। রাজনীতি এবং সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে এটি আইনত একটি প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ওয়েস্টমিনস্টার-ধাঁচের সংসদীয় প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকার গঠন করেন। সংসদের বৃহত্তম দলের নেতাকে রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমন্ত্রণ জানান। জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠান। এতে ৩৫০ জন সংসদ সদস্য (এমপি) রয়েছেন, যার মধ্যে ৩০০ জন এমপি প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন এবং ৫০ জন এমপি নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে মনোনীত হন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে কোন সংসদ সদস্য তার নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন না। যদিও, বেশ কিছু আইন সংসদ সদস্যদের দ্বারা স্বাধীনভাবে প্রস্তাবিত হয়েছে এবং সেগুলো আইনে পরিণত হয়েছে, যার মধ্যে নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনও রয়েছে। জাতীয় সংসদের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, যিনি সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতির ক্রমানুসারে দ্বিতীয় ব্যক্তি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা করে। একটি সংসদীয় সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। সরকার পরিচালনায় মন্ত্রিপরিষদকে সাহায্য করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস। সিভিল সার্ভিসে নিয়োগের জন্য একটি সরকারি পরীক্ষা নেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সিভিল সার্ভিস একটি যোগ্যতা-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত। তবে বিতর্কিত কোটা পদ্ধতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের পাশাপাশি জ্যেষ্ঠতার প্রাধান্যের কারণে সিভিল সার্ভিসের যোগ্যতা-ভিত্তিক মূলনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক প্রধান যাঁর ক্ষমতার মধ্যে সংসদে পাস হওয়া বিল আইনে স্বাক্ষর করা অন্তর্ভুক্ত। রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক এবং দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট হলো দেশের সর্বোচ্চ আদালত, এর পর রয়েছে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ। বিচার বিভাগের প্রধান হলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, যিনি সুপ্রিম কোর্টে কাজ করেন। বিচার বিভাগের বিচারিক পর্যালোচনার ব্যাপক আওতা রয়েছে এবং সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এর আইনগত ভিত্তি রয়েছে। বিচার বিভাগের মধ্যে জেলা ও মেট্রোপলিটন আদালত অন্তর্ভুক্ত যেগুলো দেওয়ানি এবং ফৌজদারি আদালতে বিভক্ত। বিচারক সংকটের কারণে বিচার বিভাগে মামলা জট রয়েছে। সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত হয়। পরবর্তীকালে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সর্বমোট ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থার সরকার পদ্ধতি প্রচলিত। রাষ্ট্রযন্ত্রের তিনটি শাখা: সংসদ, প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থা। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এক কক্ষবিশিষ্ট। এতে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৩০০ জন সদস্য ছাড়াও নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন আছে। প্রতিটি সংসদের নির্ধারিত মেয়াদকাল ৫ বছর। বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। এছাড়াও, জাতীয় পার্টি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ১৮ বছর বা তদুর্ধ্ব সব নাগরিকের ভোটাধিকার রয়েছে। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নির্বাচনের পূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতি চালু হয় যা ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে সংশোধনক্রমে সংবিধানে গৃহীত হয়। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৯ম জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচনের পূর্বে কেয়ারটেকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছে। এই ব্যবস্থায় সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হত। এ সময় সরকারি ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ উপদেষ্টামণ্ডলীর মাধ্যমে। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে সংবিধানে প্রবিধান রয়েছে। সংসদীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১১-এ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনপূর্ব নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতি বাতিল করা হয়। আবার, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে সংবিধানের ১৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতিদের অভিশংসন প্রথা চালু হয়। প্রধান বিচারপতিদের ইচ্ছে করলে সংসদ অভিশংসন করতে পারবে। আর ২০১৮ সালে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় সংসদে শুধুমাত্র নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনের মেয়াদ আরও ২৫ বছর বৃদ্ধি করা হয়। রাষ্ট্রপতি এদেশের আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান। তার সীমিত ক্ষমতা রয়েছে; কেননা কয়েকটি ক্ষেত্র ব্যতীত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে তিনি সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য। তবে সংসদ নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রের মূল ক্ষমতার অধিকারী হলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি "সরকার প্রধান" হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই সংসদ সদস্য হতে হয়। মন্ত্রিসভার মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত এবং রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু হলো বাংলাদেশ সচিবালয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যাবলী পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নিযুক্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীরা মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী পদমর্যাদায় বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছেন। উপদেষ্টামণ্ডলী মন্ত্রী সভার বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে সরকার গঠনের পরও প্রধানমন্ত্রীর চার জন উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেন একজন স্থায়ী সচিব। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে ৪১টি মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। বড় মন্ত্রণালয়, যেমন অর্থ মন্ত্রণালয়, একাধিক “বিভাগ”-এ বিভক্ত। প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় সরকারি প্রশাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। মন্ত্রণালয়ের মূল কাজ নীতিমালা প্রণয়ন যা বিভিন্ন সংযুক্ত বিভাগ, সংস্থা, বোর্ড, কমিশন, একাডেমী প্রভৃতির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির জন্য পৃথক কার্যালয় রয়েছে। ২০১১-এর হিসাবে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১১ লাখ ৮২ হাজার ৭৬৫। এর বাইরে শূন্যপদ রয়েছে প্রায় দেড় লাখ। কর্মরতদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজার ৫২২, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৭৩ হাজার ৩২১, তৃতীয় শ্রেণীর ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩১১ এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ জন। সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর দুটি স্তর রয়েছে যথা হাইকোর্ট ডিভিশন (উচ্চ আদালত বিভাগ) ও অ্যাপিলাত ডিভিশন (আপিল বিভাগ)। রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। দেশের আইন-কানুন অনেকটা প্রচলিত ব্রিটিশ আইনের আদলে প্রণীত। তবে বিবাহ এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনগুলো ধর্মভিত্তিক। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে প্রশাসন থেকে পৃথক করা হয়েছে। বৈদেশিক সম্পর্কসমূহ বাংলাদেশের বৈদেশিক বা আন্তর্জাতিক বা পররাষ্ট্রনীতি হল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত অপরাপর রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ও আচরণের নীতিমালা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ 'সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়', এই নীতি অনুসরণ করে বৈদেশিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সবসময়ই বিংশ শতাব্দীর স্নায়ুযুদ্ধে প্রভাবশালী রাষ্ট্রসমূহের পক্ষাবলম্বন থেকে বিরত থেকেছে। একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হওয়ার কারণে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সুদৃঢ় কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক রয়েছে। পাশাপাশি, রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী। বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী কারও ইসরায়েলে প্রবেশাধিকার নেই তেমনি কোন ইসরায়েল নাগরিকেরও বাংলাদেশে প্রবেশাধিকার নেই। পররাষ্ট্র নীতি বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২০ এপ্রিল প্রণীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সুস্পষ্টভাবে জাতিসংঘ সনদের প্রতি বিশ্বস্ততা এবং বিশ্বসম্প্রদায়ভুক্ত একটি জাতি হিসেবে সকল দায়-দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সংবিধানে পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতিসমূহ সন্নিবেশিত হয়। সংবিধানের প্রস্তাবনায় “মানবজাতির প্রগতিশীল আশা-আকাঙ্ক্ষার সহিত সঙ্গতি রক্ষা করিয়া আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে পূর্ণ ভূমিকা পালন” করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে। এরই অনুসৃতিতে সংবিধানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির অভিমুখ নির্ধারণ করে ৪টি মূল স্তম্ভ উল্লেখ করা হয়েছে: জাতীয় সমতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা, বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা; শক্তি প্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ প্রয়াস; নিজস্ব আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনে প্রত্যেক জাতির অধিকারের স্বীকৃতি এবং; বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের সমর্থন। ২০১৫ সালের হালনাগাদ হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের ৫৩টি দেশে বাংলাদেশের ৬৯টি মিশন রয়েছে। ঢাকায় অবস্থিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংযুক্ত বিভাগসমূহ, বিশ্বের ৫৩টি দেশে থাকা ৬৯টি দূতাবাস/মিশনসমূহের মাধ্যমে পররাষ্ট্র বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন আন্তর্জাতিক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি; বরং এদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাত-সংকুল দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১৯৮০-এর দশক থেকে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে সাংবিধানিক বাধা না থাকলে একজন বাংলাদেশী দ্বিতীয় একটি দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারেন। কোন প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক উত্তর আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা), অস্ট্রেলিয়া অথবা ইউরোপের কোন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে সে-দেশের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির জন্য পঠিতব্য শপথ বাক্যে বা স্বাক্ষরিত কোন দলিলে যদি বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহারের শপথ না-থাকে, তাহলে তার বাংলাদেশী নাগরিকত্ব বহাল থাকবে। এক্ষেত্রে বিদেশী নাগরিকত্বধারী প্রবাসী বাংলাদেশী তার বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলাদেশী নাগরিক ইসরায়েল ব্যতীত পৃথিবীর যে-কোন দেশে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন। সামরিক খাত ২০১২ সালের হিসাবে, সেনাবাহিনীর বর্তমান শক্তি প্রায় ৩,০০,০০০ (রিজার্ভসহ) এবং নৌবাহিনী ১৯,০০০। ২০২০ সালের হিসাবে বিশ্বের ১৩৮টি দেশের সামরিক বাহিনীর শক্তিমত্তার র‌্যাঙ্কিং তৈরিকারী “গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স” নামক এক বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশ ৪৬ তম স্থান দখল করেছে। প্রথাগত প্রতিরক্ষা ভূমিকা ছাড়াও, সামরিক বাহিনীকে দুর্যোগ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে ত্রাণ ও অভ্যন্তরীণ নাগরিক নিরাপত্তার জন্য কর্তৃপক্ষ ডাক দিতে পারে। বাংলাদেশ বর্তমানে সক্রিয় কোনো চলমান যুদ্ধে নেই, কিন্তু এটি ১৯৯১ সালে অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম () সামরিক অভিযানে ২,৩০০ সৈন্য প্রেরণ করে। বর্তমানে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে সারা বিশ্বে একটি শীর্ষ অবদানকারী (১০,৭৩৬) শান্তিরক্ষা বাহিনী। ২০০৭ সালের মে মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, লাইবেরিয়া, সুদান, পূর্ব তিমুর এবং আইভরি কোস্ট রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সরকার সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অস্ত্র ক্রয় করছে। ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে সরকার প্রায় ১৫ হাজার ১০৪ কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্র ক্রয় করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক আধুনিকায়নের লক্ষ্য নিয়ে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে "ফোর্সেস গৌল ২০৩০" শীর্ষক একটি পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ২০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে চীন থেকে ২টি সাবমেরিন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। কুতুবদিয়া চ্যানেলে একটি সাবমেরিন পোতাশ্রয় গড়ে তোলা হচ্ছে। রাশিয়া থেকে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের এমআই-১৭ হেলিকপ্টার, প্রশিক্ষণ বিমান, ট্যাংক-বিধ্বংসী মিযাইল, আরমার্ড ক্যারিয়ার ক্রয়ের বিশাল অস্ত্র ক্রয় চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। চীন ও রাশিয়া ছাড়াও বাংলাদেশ জার্মানি, ফ্রান্স, বেলারুশ, সার্বিয়া, জাপান, ইংল্যান্ড ও ইতালি থেকে সমরাস্ত্র ক্রয় করে থাকে। দুর্নীতি দুর্নীতি বাংলাদেশের একটি চলমান সমস্যা। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে বড় বাধা। দেশটি ২০০৫ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক প্রকাশিত তালিকায় পৃথিবীর তৎকালীন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে স্থান লাভ করে। ২০১১ এবং ২০১২ সালে দেশটি তালিকার অবস্থানে যথাক্রমে ১২০ এবং ১৪৪ তম স্থান লাভ করে, যেখানে কোন দেশ নম্বরের দিক থেকে যত উপরের দিকে যাবে ততই কম দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে গণ্য হবে। প্রধানত অতিরিক্ত ভোগবাদী মানসিকতা ও নৈতিক মূল্যবোধের অভাব ও অবমূল্যায়ন দুর্নীতির পেছনে দায়ী, পাশাপাশি দরিদ্রতাও ক্ষেত্রবিশেষে দুর্নীতির প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে সব শ্রেণির ব্যক্তির ঘুষ গ্রহণের নজির রয়েছে। তবে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ঘুষ গ্রহণের নজির বেশি, যার কারণ স্ব‌ল্প সময়ের ব্যাবধানে জীবনযাত্রার মান মধ্যবিত্ত হতে বিলাসবহুল পর্যায়ে উন্নীতকরণের মানসিকতা। এছাড়াও মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তগণ তাদের জীবনযাত্রা মান উন্নয়নে ঘুষ গ্রহণ ও প্রদান করে। অর্থনীতি বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ যার অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। জাতিসংঘের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী এটি একটি স্বল্পোন্নত দেশ। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১২৫৯.৯২ মার্কিন ডলার। ২০২০ সালের আগষ্ট মাসে মাথাপিছু বেড়ে ২০৬৪ ডলারে (১ ডলার=৮৪ টাকা) এসে দাঁড়ায়। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১.৯০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সুইজার‌্যলান্ডের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইসের বৈশ্বিক সম্পদ প্রতিবেদন ২০১৮ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ২,৩৩২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০০ সালে বাংলাদেশের মানুষের সম্পদের সর্বমোট মূল্যমান ছিল ৭,৮০০ কোটি মার্কিন ডলার এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ ছিল ১,১৩৮ মার্কিন ডলার। সম্পদের সর্বমোট মূল্যমান বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-এ ২৪,০০০ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা ১০,২৭,৯৩,০০০ জন ধরে প্রাক্কলন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক খানাজরীপ অনুযায়ী সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষের আয় দেশের সর্বমোট আয়ের মাত্র ০.২৩ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত করে যে আয়বণ্টনের অসমতা গত এক দশকে বৃদ্ধি পেয়েছে কেননা ২০০০ সালে দেশের সর্বমোট আয়ে সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষের অংশ ছিল ০.৭৮ শতাংশ। একইভাবে দেশের সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ মানুষের আয় ২০০০-এ মোট জাতীয় আয়ের ২৪.৬১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৮৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দেশের অনতম অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী আয় বণ্টনের অসমতার সূচক জিনি সহগের মান বৃদ্ধি পেয়ে ০.৪৮ এ পৌঁছেছে। ১৯৮০'র দশক থেকে শিল্প ও সেবা খাতের ব্যাপক সম্প্রসারণ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অদ্যাবধি কৃষিনির্ভর কারণ দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কৃষিজীবী। দেশের প্রধান কৃষিজ ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট এবং চা। দেশে আউশ, আমন, বোরো এবং ইরি ধান উৎপন্ন হয়ে থাকে। পাট, যা বাংলাদেশের ‘সোনালী আঁশ’ নামে পরিচিত, এক সময় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস ছিলো। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অধিকাংশ আসে রফতানিকৃত তৈরি পোশাক থেকে, এবং অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার বেশিরভাগ ব্যয় হয় একই খাতের জন্য কাঁচামাল আমদানীতে। সস্তা শ্রম ও অন্যান্য সুবিধার কারণে ১৯৮০-র দশকের শুরু থেকে এই খাতে যথেষ্ট বৈদেশিক ও স্থানীয় বিনিয়োগ হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তৈরী পোশাক রপ্তানীর পরিমাণ ছিল ২৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন কোটি মার্কিন ডলার। তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যাদের ৯০%-ই নারী শ্রমিক। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার আরেকটি বড় অংশ আসে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো অর্থ হতে। পরিবর্তিত হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। নানা অর্থনৈতিক সূচকে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবস্থান পিছনের সারিতে, তবে বিশ্ব ব্যাংকের ২০০৫ সালের দেশভিত্তিক আলোচনায় এদেশের শিক্ষা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য সামাজিক খাতে উন্নয়নের প্রশংসা করা হয়েছে। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশ গড়ে ৫% থেকে ৬.২% শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে এসেছে। মধ্যবিত্ত ও ভোক্তা শ্রেণীর প্রসারণ ঘটেছে দ্রুত। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর বিশ্লেষণে বাংলাদেশকে আগামী ১১ দেশ এর মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবৎসরের প্রাক্কলন অনুযায়ী এবছর প্রায় ৬.৮% জিডিপি প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে। বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সারা দেশে চালু হওয়া ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচী। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষুদ্র ঋণের প্রবক্তা। ১৯৯০ এর দশকের শেষভাগে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ; ব্র্যাকসহ অন্যান্য সাহায্য সংস্থারও প্রায় ২৫ লাখ সদস্য রয়েছে। দেশের শিল্প ও রফতানির উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড) স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বেপজা এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের রফতানি ও আমদানি বাণিজ্যর সিংহভাগ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, মংলা সমুদ্র বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। মুদ্রাব্যবস্থা বাংলাদেশে দুই ধরনের মুদ্রাব্যবস্থা প্রচলিত আছে, ধাতব মুদ্রা ও কাগুজে নোট। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন লিমিটেডের (SPCBL) অধিনে (শিমুলতলী, গাজীপুর) কাগুজে নোট গুলো মুদ্রিত হয়। নোট গুলো প্রচলন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১০ টাকার নোট সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন লিমিটেড কর্তৃক মুদ্রিত প্রথম নোট। নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড, বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান। ১ টাকা এবং ১০০ টাকার নোট এ দেশে প্রথম মুদ্রিত নোট। বাংলাদেশের প্রথম টাকা ও মুদ্রার নকশাকার কে জি মুস্তফা। বর্তমানে নয়টি কাগুজে নোট এবং তিনটি ধাতব মুদ্রা চালু আছে। খনিজ সম্পদ বাংলাদেশের খনিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, পিট, চুনাপাথর, কঠিন শিলা। এছাড়াও দিনাজপুর জেলার হাকিমপুরে লোহার খনি আবিষ্কৃত হয়েছে এবং কক্সবাজারের সৈকতের বালিতে ভারি মণিক (জিরকন, ইলমেনাইট, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট, গারনেট, মোনাজাইট, লিউককসেন, কায়ানাইট ইত্যাদি) পাওয়া গেছে। যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা মূলত ছিলো ডাক আদান-প্রদানভিত্তিক। কিন্তু কালের আবর্তনে বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ, টেলিফোন এবং পরবর্তিতে মোবাইল ফোনের প্রবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সংঘটিত হয়।বাংলাদেশে নৌপথ, স্থলপথ, আকাশপথ এই তিন ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রয়েছে। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১,৪০,৬৯৯ কিলোমিটার পাকা সড়কপথ, ৩,১১৮.৩৮ কিলোমিটার রেলপথ এবং ৬,৫০০ কিলোমিটার নৌপথ রয়েছে। নৌপথ বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই বাংলাদেশের প্রাচীনতম যাতায়াত পথ হিসেবে গণ্য করা হয় নৌপথ বা জলপথকে। নৌপথের নদীপথ এবং সমুদ্রপথ উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থায় নদীপথ গুরুত্বপূর্ণ, তবে বহির্বিশ্বের সাথে যাতায়াত ব্যবস্থায় সমুদ্রপথ ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৮৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ নাব্য জলপথ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪০০ কিলোমিটার সারা বছর নৌচলাচলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার শুধু বর্ষাকালে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের নদীগুলো নৌচলাচলের জন্য বেশি উপযোগী। এ অঞ্চলেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দরগুলো অবস্থিত: ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, খুলনা প্রভৃতি। নদীপথে চলাচলকারী যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই (৯৪%) নৌকা ও লঞ্চে এবং বাকিরা (৬%) স্টিমারে যাতায়াত করেন। দেশের সমুদ্রপথ মূলত ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে তিনটি সমুদ্র বন্দর রয়েছে। এগুলো হল চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা সমুদ্র বন্দর এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর। সড়ক পথ বাংলাদেশের স্থল যোগাযোগের মধ্যে সড়কপথ উল্লেখযোগ্য। সড়কপথের অবকাঠামো নির্মাণ এদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও ভৌগোলিক অবকাঠামোর মধ্যে বেশ ব্যয়বহুল। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশে পাকা রাস্তার পরিমাণ ছিলো ১৯৩১.১৭ কিলোমিটার, ১৯৯৬-১৯৯৭ সালের দিকে তা দাঁড়ায় ১৭৮৮৫৯ কিলোমিটারে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে দেশের জাতীয় মহাসড়ক ৩৪৭৮ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪২২২ কিলোমিটার এবং ফিডার/জেলা রোড ১৩২৪৮ কিলোমিটার। দেশের সড়কপথের উন্নয়নের জন্য "বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন" (বিআরটিসি) নামে একটি সংস্থা গঠন করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত করতে যমুনা নদীর উপরে ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু ১৯৯৮ সালের জুন মাসে উদ্বোধন করা হয় যা রাজধানী ঢাকাকে উত্তরবঙ্গের সাথে সরাসরি সংযুক্ত করে। এছাড়াও ৬.১ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মিত হয়েছে যার মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ সংযুক্ত হয়েছে। অন্যান্য বৃহৎ সড়ক সেতু হচ্ছে: জাপান-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু, মেঘনা-গোমতী সেতু, বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী সেতু, ত্বরা সেতু, চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু ১, চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু ২, শীতলক্ষ্যা সেতু, কর্ণফুলি সেতু ইত্যাদি। সড়কপথে প্রায় সব জেলার সাথে যোগাযোগ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো (ব্রিজ, কালভার্ট) নির্মিত না হওয়ায় ফেরি পারাপারের প্রয়োজন পরে। সড়কপথে জেলাভিত্তিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় বড় যানবাহন যেমন: ট্রাক, বাস ব্যবহৃত হলেও আঞ্চলিক বা স্থানীয় পর্যায়ে ট্যাক্সি, সিএনজি, মিনিবাস, ট্রাক ইত্যাদি যান্ত্রিক বাহন ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও বহু পুরাতন আমলের অযান্ত্রিক বাহন যেমন: রিকশা, গরুর গাড়ি, ঠেলাগাড়িও ব্যবহৃত হয়। রেলপথ বাংলাদেশে স্থলভাগে রেলপথ সবচেয়ে নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা হিসেবে ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের সময় বাংলাদেশে রেলপথ ছিলো ২৮৫৭ কিলোমিটার। ২০০৮-২০০৯ সালের হিসাব মতে, বাংলাদেশে রেলপথ ছিল ২৮৩৫ কিলোমিটার। এদেশে মিটারগেজ এবং ব্রডগেজ-দু'ধরনের রেলপথ রয়েছে। রেলপথ, রেলস্টেশনের দ্বারা পরিচালিত হয়, এছাড়া বিভিন্ন স্টেশনকে জংশন হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। রেলপথকে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে প্রায় ৫০টিরও অধিক যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। বাংলাদেশকে ট্রান্স এশীয় রেলওয়ে জালের সঙ্গে সংযোজনের জন্য চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ অবধি ১২৮ কিলোমিটার রেলসড়ক স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে (২০১৩)। এই রেলসড়ক মিয়ানমারের গুনদুম রেলস্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। রেলপথে সারা বাংলাদেশকে সংযুক্ত করার জন্য সরকারি উদ্যোগে কিছু রেল সেতু স্থাপন করা হয়েছে। এদের মধ্যে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, ভৈরব সেতু, তিস্তা সেতু উল্লেখযোগ্য। আকাশপথ দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে বাংলাদেশে আকাশপথে বা বিমানপথে যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিমান যাতায়াত ব্যবস্থায় দেশের ভিতরকার বিভিন্ন বিমানবন্দরে যাতায়াত করা যায়, আর আন্তর্জাতিক বিমান যাতায়াত ব্যবস্থায় শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বহির্দেশে গমনাগমন করা যায়। ঢাকার কুর্মিটোলায় অবস্থিত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের অন্যতম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট এবং কক্সবাজারেও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা হলো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সচল অভ্যন্তরীণ বিমান বন্দরগুলো হল- যশোর বিমানবন্দর, বরিশাল বিমানবন্দর, শাহ মখদুম বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর, ঈশ্বরদী বিমানবন্দর ইত্যাদি। পর্যটন খাত ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের যোগাযোগ ও পর্যটন খাত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। আগস্ট, ১৯৭৫ সালে পৃথক একটি মন্ত্রণালয় হিসাবে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা হয়। জানুয়ারি, ১৯৭৬ সালে এটি পুনরায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিভাগে পরিণত হয়। ডিসেম্বর, ১৯৭৭ সালে পৃথকভাবে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় খোলা হয়। ২৪ মার্চ, ১৯৮২ সালে এ মন্ত্রণালয়কে বিলুপ্ত করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাস্ত করা হয়। এরপর ১৯৮৬ সাল থেকে উক্ত মন্ত্রণালয়কে পুনঃপ্রতিষ্ঠা অদ্যাবধি তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। সংস্কৃতি সাহিত্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য হাজার বছরের বেশি পুরনো। ৭ম শতাব্দীতে লেখা বৌদ্ধ দোহার সঙ্কলন চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কাব্য, লোকগীতি ও পালাগানের প্রচলন ঘটে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে বাংলা কাব্য ও গদ্যসাহিত্যের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বাংলা ভাষায় সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলার লোক সাহিত্যও সমৃদ্ধ; মৈমনসিংহ গীতিকায় এর পরিচয় পাওয়া যায়। পরিবেশন শিল্পকলা নৃত্য শিল্পের নানা ধরন বাংলাদেশে প্রচলিত। এর মধ্যে রয়েছে উপজাতীয় নৃত্য, লোকজ নৃত্য, শাস্ত্রীয় নৃত্য ইত্যাদি। দেশের গ্রামাঞ্চলে যাত্রা পালার প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশের সংগীত বাণীপ্রধান; এখানে যন্ত্রসংগীতের ভূমিকা সামান্য। গ্রাম বাংলার লোক সঙ্গীতের মধ্যে বাউল গান, জারি গান, সারি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, গম্ভীরা, কবিগান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গ্রামাঞ্চলের এই লোকসঙ্গীতের সাথে বাদ্যযন্ত্র হিসাবে মূলত একতারা, দোতারা, ঢোল, বাঁশি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। প্রচারমাধ্যম ও চলচ্চিত্র বাংলাদেশে মোট প্রায় ২০০টি দৈনিক সংবাদপত্র ও ১৮০০টিও বেশি সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তবে নিয়মিতভাবে পত্রিকা পড়েন এরকম লোকের সংখ্যা কম, মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫%। দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক কালের কণ্ঠ জনপ্রিয়। গণমাধ্যমের মধ্যে রেডিও অঙ্গনে বাংলাদেশ বেতার ও বিবিসি বাংলা জনপ্রিয়। সরকারি টেলিভিশন সংস্থা বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে বেসরকারি ১০টির বেশি উপগ্রহভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ও ৫টির বেশি রেডিও সম্প্রচারিত হয়। ঢাকা-কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র শিল্প হতে প্রতি বছর প্রায় ৮০ হতে ১০০টি বাংলা চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়। রন্ধনশৈলী বাংলাদেশের রান্না-বান্নার ঐতিহ্যের সাথে ভারতীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের রান্নার প্রভাব রয়েছে। ভাত, ডাল ও মাছ বাংলাদেশীদের প্রধান খাবার, যেজন্য বলা হয়ে থাকে মাছে ভাতে বাঙালি। দেশে ছানা ও অন্যান্য প্রকারের মিষ্টান্ন, যেমন রসগোল্লা, কাঁচাগোল্লা, চমচম, সন্দেশ, কালোজাম বেশ জনপ্রিয়। পোশাক বাংলাদেশের নারীদের প্রধান পোশাক শাড়ি। তবে অল্পবয়স্ক মেয়েদের মধ্যে, বিশেষত শহরাঞ্চলে সালোয়ার কামিজেরও প্রচলন রয়েছে। পুরুষদের প্রধান পোশাক লুঙ্গি। তবে শহরাঞ্চলে পাশ্চাত্যের পোশাক শার্ট-প্যান্টই বেশি প্রচলিত। বিশেষ অনুষ্ঠানে পুরুষরা পাঞ্জাবী-পায়জামা পরিধান করে থাকেন। উৎসব বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত উৎসবগুলোকে মূলত ধর্মীয় ও সর্বজনীন এই দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মুসলমান সম্প্রদায়ের উৎসব ঈদুল ফিত্‌র, ঈদুল আজহা, মিলাদুন্নবি, শবে বরাত, শবে কদর ও মুহররম। হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবগুলোর মধ্যে দুর্গাপূজা, কালীপূজা, লক্ষ্মী পূজা, সরস্বতী পূজা, দোলযাত্রা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বৌদ্ধদের প্রধান উৎসব হল বুদ্ধ পূর্ণিমা, আর খ্রিষ্টানদের বড়দিন। তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব হচ্ছে দুই ঈদ, অর্থাৎ ঈদুল ফিত্‌র ও ঈদুল আজহা। ঈদুল ফিতরের আগের দিনটি বাংলাদেশে ‘চাঁদ রাত’ নামে পরিচিত। ছোট ছোট বাচ্চারা এ দিনটি অনেক সময়ই আতশবাজির মাধ্যমে পটকা ফাটিয়ে উদ্‌যাপন করে। ঈদুল আজহার সময় শহরাঞ্চলে প্রচুর কোরবানির পশুর আগমন হয় এবং এটি নিয়ে শিশুদের মাঝে একটি উৎসবমুখর উচ্ছাস থাকে। এই দুই ঈদেই বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা ছেড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ তাদের জন্মস্থল গ্রামে পাড়ি জমায়। এছাড়া বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবের মধ্যে পহেলা বৈশাখ প্রধান। গ্রামাঞ্চলে নবান্ন, পৌষপার্বণ ইত্যাদি লোকজ উৎসবের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে শহিদ দিবস ঘটা করে পালিত হয়। খেলাধুলা বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু বা কাবাডি। এই খেলার মতোই বাংলাদেশের অধিকাংশ নিজস্ব খেলাই উপকরণহীন কিংবা উপকরণের বাহুল্যবর্জিত। উপকরণবহুল খুব কম খেলাই বাংলাদেশের নিজস্ব খেলা। উপকরণহীন খেলার মধ্যে এক্কাদোক্কা, দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, কানামাছি, বরফ-পানি, বউচি, ছোঁয়াছুঁয়ি ইত্যাদি খেলা উল্লেখযোগ্য। উপকরণের বাহুল্যবর্জিত বা সীমিত সহজলভ্য উপকরণের খেলার মধ্যে ডাঙ্গুলি, সাতচাড়া, রাম-সাম-যদু-মধু বা চোর-ডাকাত-পুলিশ, মার্বেল খেলা, রিং খেলা ইত্যাদির নাম করা যায়। যেহেতু বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবশ্যকীয়ভাবে সাঁতার শিখতে হয় তাই সাঁতার বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায় ছাড়া জনসাধারণের কাছে আলাদা ক্রীড়া হিসেবে তেমন একটা মর্যাদা পায় না। গৃহস্থালী খেলার মধ্যে লুডু, সাপ-লুডু, দাবা বেশ প্রচলিত। এছাড়া ক্রিকেট ও ফুটবলের মতো বিভিন্ন বিদেশি খেলাও এদেশে বেশ জনপ্রিয়। অন্যান্য খেলার মধ্যে হকি, হ্যান্ডবল, সাঁতার, কাবাডি, গল্‌ফ, ধনুর্বিদ্যা এবং দাবা উল্লেখযোগ্য। এ যাবৎ ৫জন বাংলাদেশী- নিয়াজ মোরশেদ, জিয়াউর রহমান, রিফাত বিন সাত্তার, আবদুল্লাহ আল রাকিব এবং এনামুল হোসেন রাজীব দাবায় গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাব লাভ করেছেন। বাংলাদেশের খেলাধুলা নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ২৯টি খেলাধুলা সংক্রান্ত ভিন্ন ভিন্ন ফেডারেশন নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রিকেট ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দল কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি জয় করে, যার ফলে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবারের মতো তারা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। সেবার প্রথম পর্বে বাংলাদেশ স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে পরাজিত করে। এছাড়া ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টেস্ট ক্রিকেট খেলার মর্যাদা লাভ করে। ক্রিকেট দলের মধ্যে ধারাবাহিক সাফল্যের অভাব থাকলেও তারা বিশ্বের প্রধান ক্রিকেট দলগুলোকে যেমন: অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এসেছে। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি দল ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে এবং ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে নাটকীয়ভাবে পরাজিত করে বিশ্বক্রিকেটে বিশেষ আলোচনার ঝড় তোলে। টেস্ট ক্রিকেট খেলার মর্যাদা লাভ করার পর ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ পর্যন্ত বাংলাদেশ আটটি টেস্ট সিরিজ জয় করেছে। প্রথমটি জিম্বাবুয়ের সাথে ২০০৪-'০৫ খ্রিষ্টাব্দে, দ্বিতীয়টি জুলাই ২০০৯-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপরীতে এবং তৃতীয়টি ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে জিম্বাবুয়েকে। বাংলাদেশের খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সব ফরম্যাট ক্রিকেটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের মর্যাদা অর্জন করেন। বাংলাদেশ ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে যৌথভাবে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সাথে আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ এককভাবে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রাম ও চা-শিল্পের জন্য বিখ্যাত সিলেটে খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়। আরও দেখুন বাংলাদেশের রূপরেখা বাংলাদেশীদের তালিকা বাঙালিদের তালিকা ব্রিটিশ বাংলাদেশী ব্যক্তিদের তালিকা বাংলাদেশী স্থপতিদের তালিকা বাংলাদেশী চিত্রশিল্পীদের তালিকা বাংলাদেশী কবিদের তালিকা বাংলাদেশী টেস্ট ক্রিকেটারদের তালিকা বাংলাদেশী লেখকদের তালিকা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্কসমূহ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সরকার সাধারণ জ্ঞাতব্য সিআইএ প্রণীত দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকে বাংলাদেশ দৈনিক প্রথম আলোতে বাংলাদেশ বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে গণহত্যার খতিয়ান বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ফিউচার্স থেকে বাংলাদেশের মূল উন্নয়নের পূর্বাভাস বঙ্গ বাংলাভাষী দেশ ও অঞ্চল কমনওয়েলথ প্রজাতন্ত্র উন্নয়নশীল ৮টি দেশের সদস্য রাষ্ট্র এশিয়ায় প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ ও আশ্রিত রাজ্য স্বল্পোন্নত দেশ কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র সার্কের সদস্য রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার দেশ এশিয়ার রাষ্ট্র ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল ১৯৭১-এ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত প্রতি বৎসর হালনাগাদ করা দরকার এমন নিবন্ধ নির্বাচিত দেশ নিবন্ধ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়া সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Bangladesh
Bangladesh
Bangladesh, officially the People's Republic of Bangladesh, is a country in South Asia. It is the eighth-most populous country in the world and is among the most densely populated countries with a population of 170 million in an area of 148,460 square kilometres (57,320 sq mi). Bangladesh shares land borders with India to the north, west, and east, and Myanmar to the southeast. To the south, it has a coastline along the Bay of Bengal. It is narrowly separated from Bhutan and Nepal by the Siliguri Corridor, and from China by the mountainous Indian state of Sikkim in the north. Dhaka, the capital and largest city, is the nation's political, financial, and cultural centre. Chittagong is the second-largest city and is the busiest port on the Bay of Bengal. The official language of Bangladesh is Bengali while Bangladeshi English is also used in the government and official documents alongside Bengali. Bangladesh forms the sovereign part of the historic and ethnolinguistic region of Bengal, which was divided during the Partition of British India in 1947 as the eastern enclave of the Dominion of Pakistan, which it separated from in a bloody independence war in 1971. The country has a Bengali Muslim majority. Ancient Bengal was known as Gangaridai and was a bastion of pre-Islamic kingdoms. Muslim conquests after 1204 heralded the sultanate and Mughal periods, during which an independent Bengal Sultanate and a wealthy Mughal Bengal transformed the region into an important centre of regional affairs, trade, and diplomacy. After the Battle of Plassey in 1757, the maximum extent of British Bengal stretched from the Khyber Pass in the west to Singapore in the east. The creation of Eastern Bengal and Assam in 1905 set a precedent for the emergence of Bangladesh. The All India Muslim League was founded in Dhaka in 1906. In 1940, the first Prime Minister of Bengal, A. K. Fazlul Huq, supported the Lahore Resolution. Before the partition of Bengal, a Bengali sovereign state was first proposed by premier H. S. Suhrawardy. A referendum and the announcement of the Radcliffe Line established the present-day territorial boundary. In 1947, East Bengal became the most populous province in the Dominion of Pakistan. It was renamed East Pakistan, and Dhaka became the country's legislative capital. The Bengali Language Movement in 1952; the East Bengali legislative election, 1954; the 1958 Pakistani coup d'état; the six point movement of 1966; and the 1970 Pakistani general election resulted in the rise of Bengali nationalism and pro-democracy movements. The refusal of the Pakistani military junta to transfer power to the Awami League, led by Sheikh Mujibur Rahman, led to the Bangladesh Liberation War in 1971. The Mukti Bahini, aided by India, waged a successful armed revolution. The conflict saw the Bangladeshi genocide and the massacre of pro-independence Bengali civilians, primarily targeting intellectuals. The new state of Bangladesh became a constitutionally secular state in 1972. Islam was declared the state religion in 1988. In 2010, the Bangladesh Supreme Court reaffirmed secular principles in the constitution. The Constitution of Bangladesh officially declares it a socialist state. A middle power in the Indo-Pacific, Bangladesh is home to the fifth-most spoken native language in the world, the third-largest Muslim-majority population in the world, and the second-largest economy in South Asia. It maintains the third-largest military in the region and is the largest contributor of personnel to UN peacekeeping operations. Bangladesh is a unitary parliamentary republic based on the Westminster system. Bengalis make up almost 99% of the total population. The country consists of eight divisions, 64 districts and 495 subdistricts, as well as the world's largest mangrove forest. It hosts one of the largest refugee populations in the world due to the Rohingya genocide. Bangladesh faces many challenges, particularly corruption, political instability, overpopulation and effects of climate change. Bangladesh has been a leader within the Climate Vulnerable Forum. It hosts the headquarters of Bay of Bengal Initiative for Multi-Sectoral Technical and Economic Cooperation (BIMSTEC). It is a founding member of the South Asian Association for Regional Cooperation (SAARC), as well as a member of the Organization of Islamic Cooperation and the Commonwealth of Nations.
827
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%BE
দুর্গা
দুর্গা (; অর্থাৎ "যিনি দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন"; এবং "যে দেবী দুর্গম নামক অসুরকে বধ করেছিলেন") হলেন হিন্দু দেবী পার্বতীর এক উগ্র রূপ। হিন্দু সংস্কৃতিতে তিনি জনপ্রিয় এক দেবী। তাঁকে আদ্যাশক্তির রণরঙ্গিনী এক মহাদেবীর রূপ বলে মান্য করেন। তিনি চণ্ডিকা, যোগমায়া, অম্বিকা, বৈষ্ণবী, মহিষাসুরসংহন্ত্রী, নারায়ণী, মহামায়া, কাত্যায়নী, দাক্ষায়ণী, অদ্রিজা, নগনন্দিনী, সিংহবাহিনী, শারদা, আনন্দময়ী ইত্যাদি নামেও পরিচিতা। দুর্গার বাহুসংখ্যা অনেক। তাঁর সহস্রভুজা, ত্রিংশতিভুজা, বিংশতিভুজা, অষ্টাদশভুজা, ষোড়শভুজা, দশভুজা, অষ্টভুজা ও চতুর্ভুজা মূর্তির উল্লেখ পুরাণ গ্রন্থাদিতে পাওয়া যায় বা বিভিন্ন স্থাপত্য-ভাস্কর্যে দেখা যায়। তবে দশভুজা রূপটিই সমধিক জনপ্রিয়। তাঁর বাহন সিংহ (উত্তর ও পশ্চিমভারতে আঞ্চলিকভাবে বাঘ)। মহিষাসুরমর্দিনী-মূর্তিতে তাঁকে মহিষাসুর নামে এক অসুরকে বধরত অবস্থায় দেখা যায়। তাঁর অনেক রূপ, যার মধ্যে কালী রূপটি অন্যতম জনপ্রিয়‌। সনাতন ধর্মে দেবী দুর্গা পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ।<ref name="ReferenceA">পৌরাণিকা, প্রথম খণ্ড, অমলকুমার মুখোপাধ্যায়, ফার্মা কেএলএম প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০০১</ref> তিনি শিবের স্ত্রী পার্বতীর উগ্র রূপ, কার্তিক ও গণেশের জননী, এবং কালীর অন্যরূপ। বাংলা মঙ্গলকাব্য গুলোতে এবং আগমনী গানে দুর্গারূপে শিবজায়া হিমালয়দুহিতা পার্বতীর সপরিবারে পিতৃগৃহে অবস্থানের আনন্দময় দিনগুলোর (দুর্গাপূজা) এবং তাঁর বিবাহিত জীবনের অপূর্ব বর্ণনা পাওয়া যায়। মহাদেবী দেবতাদের অনুরোধে দুর্গম অসুরকে বধ করেন তাই দেবী পার্বতী দুর্গা নামে অভিহিত হন। দুর্গার আরাধনা বাংলা (পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ), আসাম, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এবং বিহারের কোনো কোনো অঞ্চলে প্রচলিত। ভারতের অন্যত্র দুর্গাপূজা মূলত নবরাত্রি ব্রত রূপে উদযাপিত হয়। বছরে দুইবার দুর্গোৎসবের প্রথা রয়েছে – আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয়া এবং চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে বাসন্তী দুর্গাপূজা। সম্ভবত খ্রিস্টীয় দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বাংলায় দুর্গোৎসব প্রবর্তিত হয়। জনশ্রুতি আছে, রাজশাহীর তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রথম সাড়ম্বরে শারদীয়া দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন এবং তারপর নেত্রকোনা জেলার, মেন্দিপুর গ্রামের মঠবাড়িতে দূর্গা পূজার সূচনা হয়। দুর্গা নামের উৎপত্তি দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে হিরণ্যাক্ষ পুত্র রুরুর বংশধর দুর্গম সমুদ্র মন্থনকালীন অসুরদের বঞ্চনা তথা তার পিতৃহত্যার প্রতিশোধ কামনায় ব্রহ্মার তপস্যা করে। সেই কঠোর সাধনায় সন্তুষ্ট ব্রহ্মার কাছে দুর্গম এই বর প্রার্থনা করে যে তাকে এমন এক নারী বধ করবেন যিনি অনাবদ্ধকে আবদ্ধ করতে পটিয়সী। বরলাভের অহংকারে মত্ত দুর্গম এর পর শুরু করে চরম বিশৃঙ্খলা, মাৎস্যন্যায়। তার অত্যাচার আর ধ্বংসলীলায় ত্রিভুবন বিধ্বস্ত। ক্ষমতা আর বিজয়গর্বে মত্ত অসুর এবার চতুর্বেদকে হস্তগত করলে সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষায় দেবী মহামায়া এক দশভুজারূপী মঙ্গলময়ী দেবী রূপে আবির্ভূতা হন আর দুর্গমাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করেন। বিন্ধ্যাচলে ১০ দিন ব্যাপী ঘোরযুদ্ধে দেবী ও তাঁর অংশোদ্ভূতা গুহ্যকালী, ছিন্নমস্তা, ত্রিপুরা, ভৈরবী প্রভৃতি দেবীগণ দুর্গমাসুরের কোটি সৈন্যকে নিধন করেন। এরপর দেবী দুর্গমাসুরকে সুতীক্ষ্ণ শূলের আঘাতে বধ করেন এবং চতুর্বেদ ও সকল মন্ত্র উদ্ধার করেন। দেবী তাই সর্বমন্ত্রময়ী। ক্ষমাশীলা পরমাজননী দেবী এরপর অনুতাপদগ্ধ দুর্গমাসুরকে অদ্বৈত ব্রহ্মের জ্ঞান প্রদান করে মোক্ষলাভ করান। দেবী দুর্গা স্বয়ং সচ্চিদানন্দময়ী পরব্রহ্মস্বরূপা আদ্যাশক্তি মহামায়া। যে সময় বা কাল সৃষ্টিতে একমাত্র আবদ্ধ নয়,যে কাল চিরন্তন সত্য, সেই কালকে পিষ্ট করেন মহাকাল শিব আর মহাকালকে পদতলে রেখেছেন দেবী মহামায়া। তিনি পরমাপ্রকৃতি; দেবী ভিন্ন শিব কেবল জড় বস্তু , দেবীর শক্তিতেই ব্রহ্মা সৃজন, বিষ্ণু পালন এবং রুদ্র সংহার করেন। মহিষাসুরমর্দিনী চণ্ডী ও দুর্গতিনাশিনী দুর্গাকে এক অভেদ মূর্তিকল্পে প্রতিষ্ঠিতা। নানা রূপে দেবী দুর্গা মূলত শক্তি দেবী। ঋগ্বেদে দুর্গার বর্ণনা নেই, তবে ঋগ্বেদোক্ত দেবীসূক্তকে দেবী দুর্গার সূক্ত হিসাবেই মান্যতা দেওয়া হয়। দেবী দুর্গা নির্গুণ অবস্থায় এই জগৎসংসারে বিরাজ করেন। তার জন্ম হয়না, আবির্ভাব ঘটে। দুর্গা সপ্তশতী তে বর্ণিত আছে, যে মহাশক্তি ব্রহ্মার ব্রহ্মত্ব, শিবের শিবত্ব, বিষ্ণুর বিষ্ণুত্ব প্রদান করেছেন, সেই দেবী দেবতাদের সমষ্টিভূত তেজপুঞ্জ থেকে স্বরূপ ধারণ করেন। দুর্গার বিশেষ আলোচনা ও পূজাবিধি তন্ত্র ও পুরাণেই প্রচলিত। যেসকল পুরাণ ও উপপুরাণে দুর্গা বা দেবী সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে সেগুলো হল: মৎস্যপুরাণ ,মার্কণ্ডেয় পুরাণ, দেবীপুরাণ, বামনপুরাণ, কালিকাপুরাণ, স্কন্দপুরাণ, বরাহপুরাণ, শিবপুরাণ ও দেবী ভাগবত। তিনি জয়দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, গন্ধেশ্বরী, বনদুর্গা, চণ্ডী, নারায়ণী, কালী, গৌরী, উমা, মহাদুর্গা, অগ্নিদুর্গা, শূলিনী দুর্গা, সিন্ধুদুর্গা, মূলা দুর্গা, মহামায়া, মহিষমর্দিনী, চামুণ্ডা প্রভৃতি নামে ও রূপেও পূজিতা হন। তিনিই জগদীশ্বরী, আপন মহিমায় দ্যাবাপৃথিবীতে পরিব্যাপ্ত হয়ে আছেন প্রতিটি কণায়। তিনি ঘটন-অঘটন পটিয়সী, দুর্গা দুর্গতিনাশিনী। তিনিই জগতকে চালান ও প্রতিপালন করেন জগদ্ধাত্রী রূপে, আবার প্রলয়কালে তিনিই কালিকা রূপে জগৎকে গ্রাস করেন। বঙ্গ দেশে এবং উৎকলে এই দেবীকে নবপত্রিকার মাধ্যমে নটার রূপকে পূজা করা হয়। যা অনেকাংশে কলা বউ নামে পরিচিত। যদিও কলা বউটা লোক ভাষায় পরিচিত যার কোন পুরাণগত ব্যাখ্যা নেই। দেবী দুর্গা শাক্তমতে সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবী, বৈষ্ণব মতে তাকে ভগবান বিষ্ণুর অনন্ত মায়া হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয় এবং শৈবমতে দুর্গাকে শিবের অর্ধাঙ্গিনী পার্বতী । বৈদিক সাহিত্যে দুর্গার উল্লেখ পাওয়া যায়। কেনোপনিষদে বর্ণিত উমা(পার্বতী) হৈমবতীকে দুর্গা হিসাবেই আখ্যায়িত করা হয়েছে। ভাগবতে শ্রীকৃষ্ণের যোগমায়াকে দুর্গার একটি স্বরূপ আখ্যা দেওয়া হয়েছে যিনি হরির সহায়িকা শক্তি তথা শিবভক্তিপ্রদায়িনী। এইগুলো ছাড়াও দুর্গাদেবীর বর্ণনা মহাভারতের বিরাট পর্ব ও অন্যান্য পুরাণে পাওয়া যায়। দেবী দুর্গার ভিন্ন ভিন্ন অবতার সমূহ হল: কালিকা, নন্দা, ভ্রামরী, শাকম্ভরী, রক্তদন্তিকা, কৌশিকী, ভীমা, উগ্রচণ্ডা, ভদ্রকালী, কাত্যায়নী, শান্তা দুর্গা, অজিতা, অপরাজিতা ইত্যাদি। ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে জাপানি দুর্গা বা “জুনতেই ক্যানন (Juntei Kannon)” ১৮ হাতের দুর্গা রূপ। মহাযান পরিব্রাজকদের হাত ধরে দেবীর এই রূপ জাপানে পৌঁছায় ৭০০ শতাব্দীর কাছাকাছি। ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতায় মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড় জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন ছিল। আর্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবতাদের। অনার্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবীদের, তারা পূজিত হতেন আদ্যাশক্তির প্রতীক রূপে। সিন্ধু সভ্যতায় তথা ব্যবিলনীয় সভ্যতায় উল্লেখ পাওয়া যায় এই মাতৃ পূজার। মাতৃপূজাকেন্দ্রিক সংস্কৃতির আদি পর্ব থেকে শুরু সিংহবাহিনী দেবীর পূজা। মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় সভ্যতায় খোঁজ পাওয়া যায় সিংহবাহিনী দেবী ইনান্না-র। কুশান সম্রাট কনিষ্কের মুদ্রাতেও খোঁজ পাওয়া যায় সিংহবাহিনী দেবী নানা-র। তুর্কমেনিস্তান ও আফগানিস্তানে প্রচলিত ছিল এই দেবীর মাহাত্ম্য। এখনও দেবী চণ্ডী “বিবি নানা” হিসেবে এইসব অঞ্চলে পূজিত হন। শাক্ত ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ হয় খ্রিষ্টীয় ৪০০ – ৫০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে। খ্রিষ্টীয় ৪০০ অব্দে রচিত হয় শাক্ত মহাপুরাণের অন্যতম গ্রন্থ দেবীমাহাত্ম্যম্।  এই সময়েই মার্কণ্ডেয় পুরাণের ৮১-৯৩ অধ্যায়গুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় এই গ্রন্থ। দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থেই প্রথম বিভিন্ন নারী দেবতা সংক্রান্ত নানান পুরাণ-কথা, সাংস্কৃতিক ও ধর্মতাত্ত্বিক উপাদানগুলি একত্রিত করা হয়। দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থে বৈদিক পুরুষতান্ত্রিক দেবমণ্ডলীর সঙ্গে সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব নবম অব্দ থেকে বিদ্যমান নৃতাত্ত্বিক মাতৃপূজাকেন্দ্রিক সংস্কৃতির এক সম্মিলনের প্রয়াস লক্ষিত হয়। এর পরবর্তী হাজার বছর এই ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। মহাযান বৌদ্ধধর্মের হাত ধরে দেবী চণ্ডীর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশ, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, তিব্বত, ভুটান, মালয়েশিয়া ও মঙ্গোলিয়ায়। কম্বোডিয়া আর ইন্দোনেশিয়া দেবী চণ্ডীর মাহাত্ম্য পূজিত হতে শুরু করে হিন্দু ধর্মের প্রসারের সাথে। অ্যাংকর যুগের (১০১০ শতাব্দের) পূর্বে কম্বোডিয়ায় মহিষাসুরমর্দিনীর পূজার প্রচলন ছড়িয়ে পরে হিন্দুধর্মের হাত ধরে। এই সময়ের যে দুর্গা মূর্তিগুলি কম্বোডিয়া থেকে উদ্ধারকমত হয়েছে, অধিকাংশ চতুর্ভুজা এবং মহিষাসুরমর্দিনী। মূর্তিগুলির বৈশিষ্ট্যাবলি যে এখানে মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা বিষ্ণুর মতো চতুর্ভুজা এবং শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম ধারণকারী। জাভা ও ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অংশ থেকে উদ্ধার হয়েছে অনেক মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তির প্রত্নতাত্ত্বিকধ্বংসাবশেষ। এই মূর্তিগুলো মধ্যে প্রাচীনতম তারিখ অনুমান অষ্টম শতাব্দীর। ইন্দোনেশিয়ার সেন্ট্রাল জাভাতে রয়েছে নবম শতাব্দীর বিখ্যাত হিন্দু মন্দির প্রাম্বানান। এই মন্দিরে রয়েছে এক জগৎ বিখ্যাত মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি। এটি একটি ইউনেস্কো-স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, ইন্দোনেশিয়ায় বৃহত্তম হিন্দু মন্দির, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বড় মন্দির প্রাঙ্গণ।১৫শ থেকে ১৬শ শতাব্দীর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় মহিষাসুরমর্দিনীর পূজা সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইসলামের আগমনের পর দুর্গার আরাধনা পাড়ি জমায় আরও পূর্বদিকে হিন্দু বালিতে। দুর্গাপূজা দুর্গাপূজা হল শক্তির অধিষ্ঠাত্রী পার্বতীদেবীর দুর্গা রূপের উপাসনার উৎসব। দুর্গাপূজা শরৎ (আশ্বিন) এবং বসন্ত (চৈত্র) ঋতুর শুক্লপক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। মার্কণ্ডেয় চণ্ডী অনুযায়ী, দুর্গাপূজার প্রথম প্রচলন হয়েছিল বসন্ত ঋতুতে রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি কর্তৃক। দেবী ভাগবত ও কালিকাপুরাণে উল্লেখ আছে, শরৎকালে শ্রীরামচন্দ্র দেবী পার্বতীর দুর্গতিনাশিনী দুর্গা রূপের পূজা করেছিলেন রাবণ বধের নিমিত্তে; এজন্য একে, ‘অকালবোধন’ও বলা হয়ে থাকে। পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম, বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ডে দুর্গাপূজা বহুলভাবে উদ্‌যাপন করা হয়; উত্তর ভারতে এটি নবরাত্রি হিসাবে পালন করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের একাধিক রাষ্ট্র দুর্গাপূজা পালন করে এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরাও সকলে দুর্গাপূজা পালন করে। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন তথা ষষ্ঠীর থেকে আরম্ভ করে দশমী পর্যন্ত হয়ে থাকে এই দুর্গোৎসব। এই পাঁচ দিন যথাক্রমে দুর্গা ষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। এই পক্ষটিকে দেবীপক্ষ নামেও জানা যায়। পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন এই দেবীপক্ষের সূচনা হয়, একে মহালয়াও বলা হয়ে থাকে; আর পূর্ণিমার দিনটিকে লক্ষ্মী পূজার দিন হিসাবে গণ্য করা হয় । নাম ব্যুৎপত্তি হিন্দুশাস্ত্রে "দুর্গা" শব্দটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে: অর্থাৎ, "দ" অক্ষরটি দৈত্য বিনাশ করে, উ-কার বিঘ্ন নাশ করে, রেফ রোগ নাশ করে, "গ" অক্ষরটি পাপ নাশ করে এবং অ-কার শত্রু নাশ করে। এর অর্থ, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।" অন্যদিকে শব্দকল্পদ্রুম বলেছে, "দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা"। অর্থাৎ, যিনি দুর্গ নামে অসুরকে বধ করেছিলেন, তিনি সব সময় দুর্গা নামে পরিচিত। দেবী পার্বতী দেবগণের অনুরোধে ও শিবের আদেশে এক উগ্র রূপ ধারণ করে দুর্গম অসুর কে বধ করেন তাই তিনি দুর্গা নামে অভিহিত হন। প্রভাব ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বন্দে মাতরম গানের পিছনে অনুপ্রেরণা দেবী হিসেবে দুর্গা, পরে ভারতের সরকারী জাতীয় গান। দুর্গা ভারতীয় জাতীয়তাবাদে উপস্থিত যেখানে ভারত মাতা অর্থাৎ ভারত মাতাকে দুর্গার একটি রূপ হিসাবে দেখা হয়। এটি সম্পূর্ণরূপে ধর্মনিরপেক্ষ এবং ভারতীয়দের জন্য মা এবং রক্ষক হিসাবে দুর্গার প্রাচীন আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তিনি পপ সংস্কৃতি এবং জয় সন্তোষী মা- এর মতো ব্লকবাস্টার বলিউড সিনেমায় উপস্থিত রয়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী হিন্দুস্তানি বাক্যাংশ ব্যবহার করে যেমন "দুর্গা মাতা কি জয়!" এবং " কালীমাতা কি জয়!"। যে কোনও মহিলা যে ভাল এবং ন্যায়ের জন্য লড়াই করার জন্য একটি কারণ গ্রহণ করে তার মধ্যে দুর্গার আত্মা রয়েছে বলে বলা হয়। আরও দেখুন দুর্গাপূজা জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে দুর্গা পাদটীকা গ্রন্থপঞ্জি বাংলা/সংস্কৃত " শ্রী দেবী ভাগবত" মার্কণ্ডেয় পুরাণ ইংরেজি Durga Puja: Yesterday, Today and Tomorrow, Sudeshna Banerjee, Rupa and Co, Calcutta, 2004. () Hindu Goddesses: Vision of the Divine Feminine in the Hindu Religious Traditions, David Kinsley. () Grace and Mercy in Her Wild Hair : Selected Poems to the Mother Goddess, Ramprasad Sen (1720-1781). () Durga Puja Beginner, Swami Satyananda Saraswati, Devi Mandir, 2001. () "Chandi Path", Swami Satyananda Saraswati, Devi Mandir () "Chandi Path: Study of Chapter One", Swami Satyananda Saraswati, Devi Mandir () "Chandi Path: Study of Chapter Two", Swami Satyananda Saraswati, Devi Mandir () Offering Flowers, Feeding Skulls: Popular Goddess Worship in West Bengal, June McDaniel, Oxford University Press, 2004. () "Pronunciation and the Chandi Samputs", Swami Satyananda Saraswati, Devi Mandir () "Devi Gita", Swami Satyananda Saraswati, Devi Mandir () The Bond Between Women: A Journey to Fierce Compassion, China Galland, Riverhead Trade Publishing, U.S., 1999. Mahishasura Mardini Stotram'' (Prayer to the Goddess who killed Mahishasura), Sri Sri Sri Shankara Bhagavatpadacharya বহিঃসংযোগ 108 names of Durga Quelle Source: Durgāsaptaśatī দুর্গাপূজা পার্বতীর রূপ হিন্দু দেবদেবী দেবী মা শাক্তধর্ম যুদ্ধের দেবী হিন্দু দেবী লক্ষ্মী
https://en.wikipedia.org/wiki/Durga
Durga
Durga (Sanskrit: दुर्गा, IAST: Durgā) is a major Hindu goddess, worshipped as a principal aspect of the mother goddess Mahadevi. She is associated with protection, strength, motherhood, destruction, and wars. Durga's legend centres around combating evils and demonic forces that threaten peace, prosperity, and dharma, representing the power of good over evil. Durga is believed to unleash her divine wrath against the wicked for the liberation of the oppressed, and entails destruction to empower creation. Durga is seen as a motherly figure and often depicted as a beautiful woman, riding a lion or tiger, with many arms each carrying a weapon and often defeating demons. She is widely worshipped by the followers of the goddess-centric sect, Shaktism, and has importance in other denominations like Shaivism and Vaishnavism. The most important texts of Shaktism, Devi Mahatmya and Devi Bhagavata Purana, revere Devi (the Goddess) as the primordial creator of the universe and the Brahman (ultimate truth and reality). She is one of the five equivalent deities in Panchayatana puja of the Smarta tradition of Hinduism. She is also considered to be the younger sister of Vishnu according to Bhagavata purana. Durga has a significant following all over Nepal, India, Bangladesh and many other countries. She is mostly worshipped after spring and autumn harvests, especially during the festivals of Durga Puja, Durga Ashtami, Vijayadashami, Deepavali, and Navaratri.
839
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%AE%E0%A6%A0
আনন্দমঠ
আনন্দমঠ ঊনবিংশ শতাব্দীর ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি বাংলা উপন্যাস। এর প্রকাশকাল ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দ । ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে এর একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। এই উপন্যাসটি ছাপার বিরূদ্ধে ব্রিটিশ সরকার আইন পাশ করে, তবে এর হস্তলিখিত গুপ্ত সংস্করণ জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। উপন্যাসটি মুসলমান-বিরোধী মতধারার জন্য বিতর্কিত। এই উপন্যাসের কাহিনী ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত উত্তরবঙ্গের ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে রচিত। এই উপন্যাসেই বঙ্কিমচন্দ্র বন্দে মাতরম্‌ গানটি লেখেন। পরবর্তীকালে ভারতীয় স্বদেশপ্রেমীরা "বন্দে মাতরম" বাক্যটি জাতীয়তাবাদী শ্লোগান হিসাবে গ্রহণ করেন। এটিকে বাংলা ও ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কাহিনী উপন‍্যাসটির শুরু মহেন্দ্র এবং কল্যাণী নামে এক দম্পতির পরিচয় দিয়ে, যারা দুর্ভিক্ষের সময় খাবার ও জল ছাড়া তাদের গ্রাম পদচিহ্নে আটকে রয়েছে।  তারা তাদের গ্রাম ছেড়ে নিকটতম শহরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেখানে বেঁচে থাকার ভাল সম্ভাবনা রয়েছে।  ঘটনা চলাকালীন, দম্পতি আলাদা হয়ে যায় এবং ডাকাতদের হাতে ধরা না পড়ার জন্য দৌড়াতে থাকে এবং এক পর্যায়ে নদীর তীরে চেতনা হারায়। সত্যানন্দ নামে একজন হিন্দু সন্ন্যাসী কল‍্যাণী ও তার শিশুপুত্রীকে তাঁর আশ্রমে নিয়ে যান এবং তিনি এবং অন্যান্য সন্ন্যাসীরা তার স্বামীর সাথে পুনরায় মিলন না হওয়া পর্যন্ত তার এবং তার সন্তানের যত্ন নেন। স্বামী মহেন্দ্র এই মুহূর্তে সন্ন্যাসীদের আশ্রমে যোগদান এবং মাতৃজাতির সেবা করার দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন।  কল্যাণী নিজেকে হত্যা করার চেষ্টা করে তাঁর স্বপ্ন অর্জনে সহায়তা দিতে চায়, যাতে তিনি পার্থিব কর্তব্য থেকে মুক্তি পান।  এই সময়ে সত্যানন্দ তার সাথে যোগ দেন তবে তিনি তাকে সাহায্য করার আগে তাঁকে ব্রিটিশ সেনারা গ্রেপ্তার করে, কারণ অন্যান্য অনেক সন্ন্যাসী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সূত্রপাত করেছিলেন।  টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি অন্য এক সন্ন্যাসীকে লক্ষ্য করেন যিনি তাঁর সন্ন্যাসীর পোশাকে ছিলেন না। সত্যানন্দ তাঁকে লক্ষ্য করে একটি গান করেন। অন্য সন্ন্যাসী গানটির অর্থ অনুধাবন করে কল্যাণী এবং শিশুপুত্রীটিকে উদ্ধার করে বিদ্রোহী সন্ন্যাসীদের আস্তানায় নিয়ে যান।  একই সাথে কল্যাণীর স্বামী মহেন্দ্রকেও ভিক্ষুরা আশ্রয় দিয়েছিলেন। কল‍্যাণী ও মহেন্দ্র আবার একত্রিত হয়।  বিদ্রোহীদের নেতা মহেন্দ্রকে ভারত-মাতার (মাদার ইন্ডিয়া) তিনটি মুখ দেখান যে পর পর তিনটি ঘরে তিন দেবীর পূজা করা হচ্ছে: জগদ্ধাত্রী, কালী ও দুর্গা। ধীরে ধীরে, বিদ্রোহী প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং তাদের সদস্যসংখ্যা বেড়ে যায়।  উৎসাহিত হয়ে তারা তাদের সদর দফতর একটি ছোট ইটের দুর্গে স্থানান্তরিত করে।  ব্রিটিশরা একটি বিশাল বাহিনী নিয়ে দুর্গ আক্রমণ করে।  বিদ্রোহীরা নিকটবর্তী নদীর উপর ব্রিজ অবরোধ করলেও আর্টিলারি তথা সামরিক প্রশিক্ষণের অভাব উপলব্ধি করে।  লড়াইয়ে ব্রিটিশরা সেতুর উপর থেকে কৌশলগত পশ্চাদপসরণ করে।  সন্ন্যাসীদের অপ্রস্তুত সেনা সামরিক অভিজ্ঞতার অভাব সত্ত্বেও ব্রিটিশদের ফাঁদে ফেলে।  ব্রিজটি বিদ্রোহীদের দ্বারা পূর্ণ হয়ে গেলে ব্রিটিশ আর্টিলারি গুলি চালিয়ে দেয় এবং অনেকে গুরুতর হতাহত হন। তবে কিছু বিদ্রোহী কিছু কামান দখল করে এবং আগুনটিকে ব্রিটিশ লাইনে ফিরিয়ে দেয়।  ব্রিটিশরা পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হয়, বিদ্রোহীরা তাদের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভ করে।  মহেন্দ্র এবং কল্যাণী বাড়ি ফিরে আসে। তাদের আবার বাড়ি তৈরির মধ্য দিয়ে গল্পটি শেষ হয়েছে। মহেন্দ্র বিদ্রোহীদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছিলেন। এই উপন্যাসটিতে বন্দে মাতরম্ গানটি গাওয়া হয়েছে।  বন্দে মাতরমের অর্থ "মা, আমি তোমাকে প্রণাম করি মা"।  এটি বিংশ শতাব্দীতে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলে এবং এর প্রথম দুটি স্তবক স্বাধীনতার পরে ভারতের জাতীয় গানে পরিণত হয়। তথ্যসূত্র বাংলা সাহিত্য বাংলা ভাষার উপন্যাস বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস বাংলা ভাষার ভারতীয় উপন্যাস ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সাহিত্য ভারতের পটভূমিতে উপন্যাস চলচ্চিত্রে গৃহীত ভারতীয় উপন্যাস ১৯শ শতাব্দীর ভারতীয় উপন্যাস
https://en.wikipedia.org/wiki/Anandamath
Anandamath
Anandamath (Bengali: আনন্দমঠ Anondomôţh) (lit. The Abbey of Bliss) is a Bengali historical novel, written by Bankim Chandra Chattopadhyay and published in 1882. It is inspired by and set in the background of the Sannyasi Rebellion in the late 18th century, it is considered one of the most important novels in the history of Bengali and Indian literature. Vande Mataram, "Hail to the Motherland ", first song to represent India - as the Motherland was published in this novel.
855
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A7%8C%E0%A6%B0%E0%A6%AD%20%E0%A6%97%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা সৌরভ গাঙ্গুলী (; জন্ম ৮ জুলাই ১৯৭২) একজন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার এবং ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন ৮ই জুলাই, ১৯৭২ সালে, কলকাতার বেহালায় একটি প্রতিষ্ঠিত পরিবারে। তার বাবার নাম চণ্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায় ও মাতার নাম নিরুপা গঙ্গোপাধ্যায়। সৌরভ মূলত তার দাদার সাহায্যে ক্রিকেট জীবনে প্রতিষ্ঠিত হন। বাঁহাতি ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অদ্যাবধি ভারতের সফলতম টেস্ট অধিনায়ক বলে বিবেচিত হন; তার অধিনায়কত্বে ভারত ৪৯টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ২১টি ম্যাচে জয়লাভ করে। ২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে তার অধিনায়কত্বেই ভারত ফাইনালে পৌঁছে যায়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কেবলমাত্র একজন আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন অধিনায়কই ছিলেন না, তার অধীনে যে সকল তরুণ ক্রিকেটারেরা খেলতেন, তাদের কেরিয়ারের উন্নতিকল্পেও তিনি প্রভূত সহায়তা করতেন। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিশেষ খ্যাতিসম্পন্ন ক্রিকেটার। একদিনের ক্রিকেটে তার মোট রানসংখ্যা এগারো হাজারেরও বেশি। একদিনের ক্রিকেটে তার সাফল্য সত্ত্বেও ক্যারিয়ারের শেষদিকে একদিনের ক্রিকেটে তার স্থলে দলে তরুণ ক্রিকেটারদের নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। ২০০৮ সালের ৭ অক্টোবর সৌরভ ঘোষণা করেন যে সেই মাসে শুরু হতে চলা টেস্ট সিরিজটিই হবে তার জীবনের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ। ২০০৮ সালের ২১ অক্টোবর সৌরভ তার সর্বশেষ প্রথম-সারির ক্রিকেট ম্যাচটি খেলেন। প্রারম্ভিক জীবন ৮ জুলাই, ১৯৭২ সালে, চন্ডীদাস ও নিরুপা গঙ্গোপাধ্যায় দম্পতির কনিষ্ঠ পুত্র সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতার বেহালায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা, চন্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায় মুদ্রণ এর ব্যবসা ছিল এবং তিনি শহরের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন।সৌরভের শৈশবকাল অত্যন্ত সুখকর ছিল এবং তার ডাক নাম ছিল 'মহারাজা'। তার পিতা, চন্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায় দীর্ঘ অসুস্থতার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে ৭৩ বছর বয়সে মারা যান। কলকাতা শহরে বেশির ভাগ লোকের প্রিয় খেলা 'ফুটবল' ছিল এবং তার ফলে সৌরভও প্রাথমিকভাবে এই খেলায় আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তবে খেলাধুলার প্রতি তার ভালবাসায় বাধ সাধল পড়াশুনো এবং তার মা ক্রিকেট বা কোনও খেলাধুলা পেশা হিসাবে গ্রহণের পক্ষে সৌরভকে খুব একটা সমর্থন করেননি। তবে ততক্ষণে তার বড় ভাই স্নেহাশিস ইতিমধ্যে বেঙ্গল ক্রিকেট দলের একজন প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার ছিলেন। তিনি সৌরভের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নকে সমর্থন করেছিলেন এবং তাঁদের পিতাকে গ্রীষ্মের ছুটিতে সৌরভকে একটি ক্রিকেট কোচিং শিবিরে ভর্তি করতে বলেন, সেই সময় সৌরভ দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছিলেন। ডানহাতি হওয়া সত্ত্বেও সৌরভ বাম হাতে ব্যাটিং করতে শিখেছিলেন যাতে তিনি তার ভাইয়ের ক্রিকেট সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারেন। ব্যাটসম্যান হিসাবে কিছু প্রতিশ্রুতি দেখানোর পরে, তাঁকে একটি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করা হয়েছিল সাথে সাথে সৌরভের বাড়িতে একটি ইনডোর মাল্টিম-জিম এবং কংক্রিট উইকেট নির্মিত হয়েছিল যাতে তিনি এবং স্নেহাশিস ক্রিকেটের অনুশীলন করতে পারেন। দুই ভাই অনেকগুলি পুরানো ক্রিকেটের ম্যাচের ভিডিওগুলি দেখতেন, বিশেষত সৌরভের পছন্দ ছিল ডেভিড গাওয়ারের ভিডিওগুলি। ওড়িশার অনূর্ধ্ব ১৫ দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পরে সৌরভকে তার স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্সের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক করা হয়েছিল, যেখানে তার বেশ কয়েকজন সতীর্থ অভিযোগ করেছিলেন যে সৌরভ অধিনায়ক ছিল বলে তার অহংকার ছিল। কোনও এক সময় জুনিয়র দলের সাথে সফরকালে, সৌরভে দ্বাদশতম ব্যক্তি হিসাবে দলে থাকতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কারণ তিনি মনে করেছিলেন যে খেলোয়াড়দের জন্য সরঞ্জাম এবং পানীয় সরবরাহ করার দায়িত্ব, তার কাজ নয়। তার কাছে তার দলীয় সতীর্থদের এমনভাবে সহায়তা কাজগুলির করা মানে হল তার সামাজিক মর্যাদা থাকবে না এবং তিনি এমন কাজগুলি করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে তার খেলোয়াড়ীত্ব তাকে ১৯৮৯ সালে বাংলার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশের সুযোগ দিয়েছিল এবং একই বছরই তার ভাই বাংলার দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। ক্রিকেট জীবন অধিনায়ক তিনি শুধু একজন খেলোয়াড়ই নন, একজন বিখ্যাত অধিনায়কও ছিলেন। তিনি তার ক্রিকেট জীবনে সর্বমোট ৩১১টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন এবং ১১,৩৬৩ রান সংগ্রহ করেছেন। পাশাপাশি তিনি ১১৩টি টেস্ট খেলেছেন ও ৭,২১২ রান সংগ্রহ করেছেন। ভারতকে তিনি ৪৯টি টেস্ট ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যার মধ্যে ভারত জিতেছিল ২১টি ম্যাচে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভারতকে ১৪৬টি একদিনের আন্তজার্তিক ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যার মধ্যে ভারত জিতেছিল ৭৬ টি ম্যাচে। তিনি ভারতের একজন মিডিয়াম পেসার বোলারও ছিলেন। তিনি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০টি এবং টেস্টে ৩২টি উইকেট দখল করেন। এছাড়া তিনি একদিনের আন্তর্জাতিকে ১০০টি ও টেস্টে ৭১টি ক্যাচ নিয়েছেন। ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলার পর তিনি ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। এরপরে ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০-এ আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেন এবং ২০০৮ ও ২০১০-এ এই দলকে নেতৃত্ব দেন। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত আইপিএলের চতুর্থ সিজনে নিলামে তিনি অবিক্রীত থেকে গেলেও শেষ পর্যন্ত পুনে ওয়ারিয়র্সের দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। বর্তমানে তিনি দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের মেন্টর। অবসর পরবর্তী জীবন বর্তমানে সৌরভ গাঙ্গুলী সিএবি (CAB) এর সভাপতি এবং বিসিসিআই - উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। সৌরভ আইএসএল ফুটবল দল অ্যাটলেটিকো দি কলকাতার (ATK) অন্যতম কর্ণধর। সৌরভ গাঙ্গুলী বর্তমানে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল-এর প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছেন সেই সাথে তিনি ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। এর আগে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সফল এই অধিনায়ক বিসিসিআইয়ের টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। অভিনয় জি বাংলার জনপ্রিয় আপাতবাস্তব টেলিভিশন অনুষ্ঠান দাদাগিরিতে তিনি উপস্থাপক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। বকুল কথা জি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিকে তাকে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল বকুলের আইডল হিসাবে৷ ২০১৮ সালে দূর্গা পূজার গান "জয় জয় দূর্গা মা" তে তাকে লক্ষ্য করা যায়। অধিনায়কত্বের পরিসংখ্যান পুরস্কার সৌরভ মোট ৩১টি আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান। ওডিআই ম্যান অব দ্য ম্যাচ স্বাস্থ্য ২ জানুয়ারী ২০২১-এ, গাঙ্গুলি ব্যায়াম করার সময় বুকে ব্যথার অভিযোগ করেছিলেন এবং পরে তিনটি অবরুদ্ধ করোনারি ধমনীতে ধরা পড়েছিল যার ফলে একটি হালকা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল। একই দিনে একটি ব্লকেজের জন্য তার প্রাথমিক এনজিওপ্লাস্টি করা হয়েছিল। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Cumulative Career Averages Fastest To Reach Multiples Sourav Ganguly News Articles ভারতীয় ক্রিকেটার ১৯৭২-এ জন্ম জীবিত ব্যক্তি ভারতের টেস্ট ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকে সেঞ্চুরি করা ক্রিকেটার ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ভারতের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার ২০০৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার এসিসি এশীয় একাদশের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ল্যাঙ্কাশায়ারের ক্রিকেটার গ্ল্যামারগনের ক্রিকেটার নর্দাম্পটনশায়ারের ক্রিকেটার ভারতীয় ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্রিকেটার পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়ার ক্রিকেটার বঙ্গবিভূষণ প্রাপক বাঙালি ক্রিকেটার ভারতীয় হিন্দু বাঙালি হিন্দু ভারতের টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ক মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের ক্রিকেটার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসক বাংলার ক্রিকেটার কলকাতা থেকে আগত ক্রিকেটার ক্রীড়ায় পদ্মশ্রী প্রাপক ইন্ডিয়া গ্রিনের ক্রিকেটার ভারতীয় ক্রীড়া নির্বাহী ও প্রশাসক পূর্বাঞ্চলের ক্রিকেটার অর্জুন পুরস্কার প্রাপক
https://en.wikipedia.org/wiki/Sourav_Ganguly
Sourav Ganguly
Sourav Chandidas Ganguly ( ; natively spelled as Gangopadhyay; born 8 July 1972), also known as Dada (meaning "elder brother" in Bengali), is an Indian cricket commentator and former cricketer. He is popularly called the Maharaja of Indian Cricket. He was captain of the Indian national cricket team and is regarded as one of India's most successful cricket captains. He was in the winning squad of 2007 ICC T20 World Cup as batsman. As captain, he led Indian national team to win the 2002 ICC Champions Trophy and reach the final of the 2003 Cricket World Cup, the 2000 ICC Champions Trophy and the 2004 Asia Cup. Ganguly scored 11363 runs in his ODI career which stands at ninth position in the world for most runs scored in ODI matches. He was the third batsman to cross the 10,000 runs in One day cricket, after Sachin Tendulkar and Inzamam Ul Haq. He holds the record for highest score in an innings (183) by an Indian batsman in the ODI Cricket World Cup. In 2002, the Wisden Cricketers' Almanack ranked him the sixth greatest ODI batsman of all time. He announced his retirement from international cricket in 2008 and from all forms of cricket in 2012. Ganguly was awarded the fourth highest Indian civilian award, Padma Shri in 2004. He was elected as president of the Board of Control for Cricket in India in 2019. He is also a part of the Supreme Court of India appointed probe panel for the IPL Spot fixing and betting scandal's investigations.
864
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%96%20%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE
শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা ওয়াজেদ (জন্ম: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭) বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় প্রধান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা প্রধানমন্ত্রী। তিনি মোট ৮ বার সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তার রাজনৈতিক কর্মজীবন প্রায় চার দশকেরও বেশি সময়ব্যাপী বিস্তৃত। তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ ও ১৯৯১-১৯৯৫ পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা এবং ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮১ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালে জনগণের বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে একটি বিরোধীদলবিহীন নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন। নির্বাচনটি বিরোধীদল কর্তৃক বর্জিত এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি সহিংসতায় দুষ্ট ও বিরোধীদল কর্তৃক সাজানো নির্বাচন হিসেবে সমালোচিত একটি নির্বাচনে চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চম মেয়াদে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন। শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০২০ সালে তার অবস্থান ছিল ৩৯তম, ২০১৯ সালে তার অবস্থান ছিল ২৯তম, ২০১৮ সালে ২৬তম এবং ২০১৭ সালে ৩০তম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ফরেইন পলিসি নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদদের তালিকায় শেখ হাসিনা জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি বিশ্ব নারী নেত্রী পরিষদ-এর একজন সদস্য, যা বর্তমান ও প্রাক্তন নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। প্রারম্ভিক জীবন শেখ হাসিনা পূর্ব পাকিস্তানের টুঙ্গিপাড়ায় (বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া) ১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা। তিনি পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। তিনি টুঙ্গিপাড়াতে বাল্যশিক্ষা নেন। ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি ঢাকায় পরিবারের সাথে মোগলটুলির রজনী বোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে স্থানান্তরিত হন। ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে থাকা শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালে এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে তার বিয়ে হয় এবং ওয়াজেদ মিয়া ৯ মে, ২০০৯ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের সংসারে সজীব ওয়াজেদ জয় (পুত্র) ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (কন্যা) নামে দুই সন্তান রয়েছেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী গ্রেপ্তারের সময় তিনি ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাসায় পিতার পাশেই ছিলেন। শেখ মুজিবের গ্রেপ্তারের পর তিনি মায়ের সঙ্গে ভাই-বোনদের নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ও তার বোন শেখ রেহানা বাদে পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়। বোনদ্বয় সেইসময় পড়াশোনার জন্য পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। এরপর তিনি ভারত, বেলজিয়াম সহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করতে থাকেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব প্রদানের লক্ষ্যে তিনি ১৯৮১তে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে প্রত্যাবর্তন করেন। রাজনৈতিক জীবন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের (সাবেক ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজে) ছাত্রী থাকা অবস্থায় ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী, ১৯৮৬-১৯৮৭ পরবর্তীকালে তিনি এবং তার দল এরশাদ বিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেন ও ১৯৯০ সালে অভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। ১৯৯১-এর নির্বাচন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৮৮ টি সংসদীয় আসন লাভ করে এবং প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্ম প্রকাশ করে । মোট প্রদত্ত ভোটের ৩০.১ % লাভ করে , যা সরকার গঠন কারী দল থেকে মাত্র ০.৭% কম । ১৯৯১-১৯৯৬ ১৯৯১ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের তৎকালীন বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে প্রকাশ পায়। ১৯৯১ সালের স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মেয়াদকাল, ১৯৯৬-২০০১ ১৯৯৬ সালে তার দল আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বামপন্থী দলগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বাধ্য করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তার দল আন্দোলনে জয়ী হওয়ায় পরবর্তীতে তার দল জাতীয় নির্বাচনেও জয়লাভ করে এবং ঐ বছর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বড় ব্যবধানে হেরে যায়। বিরোধীদলীয় সময়কাল, ২০০১-২০০৮ বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি (নাজিউর রহমান মঞ্জু) ও ইসলামী ঐক্যজোট এর নির্বাচনী জোটের কাছে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। শেখ হাসিনা দলের এই পরাজয়ের জন্য তারই মনোনীত তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদকে দায়ী করেন। আন্দোলন-সংগ্রাম আওয়ামী লীগ ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতায় আরোহণকে অবৈধ ঘোষণা করে। এবং তার শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে এবং সামরিক শাসকের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে তার দল ১৯৮৬ সালে এই সামরিক শাসকের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। হত্যাচেষ্টা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় এক জনসভায় বক্তৃতাদানকালে গ্রেনেড হামলায় তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। উক্ত হামলায় তার ঘনিষ্ঠজন এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ১৯ জন মৃত্যুবরণ করেন ও শতাধিক আহত হন। বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে এই হামলাকে বিদেশি ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করা হয়। এই গ্রেনেড হামলার তদন্তকে ভিন্ন খাতে করার জন্য 'জজ মিয়া' নাটক সহ বেশকিছু প্রহসন সৃষ্টি করেছিল তৎকালীন চারদলীয় ঐক্যজোট প্রশাসন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে আসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (বর্তমানে বাংলাদেশে বিলুপ্ত) নেতা মুফতি হান্নান সহ বেশকিছু তৎকালীন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে তিনি পুনরায় আন্দোলন শুরু করেন কিছু নতুন সমস্যা নিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ও গ্রেফতার, অক্টোবর ২০০৬-২০০৮ দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হন ২০০৭ সালে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সকাল ৭:৩১-এ যৌথবাহিনী শেখ হাসিনাকে তার বাসভবন "সুধা সদন" থেকে গ্রেফতার করে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। সেখানে আদালত তার জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করে। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনকে সাব-জেল হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে অন্তরীণ রাখা হয়। গ্রেফতারের পূর্বে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা জিল্লুর রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে যান। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। একটি হল ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে রাজনৈতিক সংঘর্ষের জন্য হত্যা মামলা এবং অন্যটি হল প্রায় তিন কোটি টাকার চাঁদাবাজি মামলা। এর মাঝে একটির বাদী ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মামলাটি তুলে নেন। জেল থেকে মুক্তিলাভের পরে তিনি চিকিৎসার্থে কয়েক মাস বিদেশে অবস্থান করেন। এরপর দেশে ফিরে দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদকাল, ২০০৯-২০১৪ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়লাভ করে। বিজয়ী দলের সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে তিনি জানুয়ারি ৬, ২০০৯-এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তার দল আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে ২৬০টি আসন লাভ করে। অপরদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি পায় মাত্র ৩২টি আসন। তৃতীয় মেয়াদকাল (২০১৪-২০১৯) ইতোপূর্বে সপ্তম, অষ্টম এবং নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ড.ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ক্ষমতা ধরে রাখা এবং রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমনের নামে মামলা ও নির্যাতনের অভিযোগ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক এ ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষিত হওয়া প্রভৃতি কারণে সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিলের উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীতে নবম সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাশের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ৫ই জানুয়ারি ২০১৪ সালে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ৫ই জানুয়ারি রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাকী ১৪৭টি আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ১৮ নভেম্বর, ২০১৩ নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠিত হয়। চতুর্থ মেয়াদকাল (২০১৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৮৮টি সংসদীয় আসনে জয়লাভ করলে শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত নির্বাচনে জয়ী হন। এটি ছিল একাধারে তৃতীয়বারের জন্য তার মেয়াদকাল। বিরোধীদলীয় প্রধান নেতা কামাল হোসেন নির্বাচনকে "প্রহসনমূলক" বলে ঘোষণা করেন এবং ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। নির্বাচনের পূর্বে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অন্যান্য অধিকার সংগঠন সরকারকে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস সম্পাদকীয় নির্বাচনকে প্রহসনমূলক বলে বর্ণনা করে, সম্পাদকীয়তে বলা হয়, পরিস্থিতি এমন ছিল যে, ভোট কারচুপি ছাড়াই হয়তো হাসিনা জিতে যেতেন, তবে কেন তিনি এমন করলেন? পঞ্চম মেয়াদকাল (২০২৪-বর্তমান) সমালোচনা পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি হল বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সরকারের শাসনামলে সংঘটিত একটি ঘটনা, যাতে সরকার কানাডীয় কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনকে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। অভিযোগটি পরবর্তীকালে ভুল ও ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয় এবং কানাডার আদালত এরপর মামলাটি খারিজ করে দেয়। অভিযোগের একটি ফলস্বরূপ, বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করে ৬ কিমি লম্বা বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর রেলপথ ও মহাসড়ক বিশিষ্ট পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প হতে নিজেদের $১.২ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের অর্থায়ন পরিকল্পনা বাতিল করে। মামলা খারিজ হওয়ার তিন মাস পর শেখ হাসিনা যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদ থেকে অপসারণ করেন। ২০১২ সালের ১১ জুলাই, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত বিশ্বব্যাংকের পাঠানো চিঠিটি প্রকাশ করা, যেখানে বিশ্বব্যাংক শেখ হাসিনা এবং অন্য তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ এনেছে। ২০১৬ সালের ১৭ই জানুয়ারি, শেখ হাসিনা দাবি করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যাংকের একজন এমডি বিশ্বব্যাংককে ঋণ বাতিল করার জন্য উসকানি দিয়েছে। ২০১৭ সালের ২৪শে জানুয়ারি, সংসদে নিজ বক্তব্যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প থেকে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তা তুলে নেওয়ার জন্য মুহাম্মদ ইউনুসকে দায়ী করেন। তার মতে, ইউনুস প্রাক্তন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট হিলারি ক্লিনটন-এর সঙ্গে তদবির করেছিলেন বিশ্বব্যাংকে লোন বাতিল করতে প্ররোচিত করার জন্য। ২০১৭ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি কানাডার অন্টারিওতে সুপিরিয়র কোর্টের বিচারপতি ঘুষ-ষড়যন্ত্রের এই কেসটি কোন প্রমাণের অভাবে খারিজ করে দেয়। ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বাংলাদেশ সরকারের সমসাময়িক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকটবর্তী উচ্চপদস্থ নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যার শিরোনাম ছিলো "ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক"। তবে ২রা ফেব্রুয়ারি আইএসপিআর এর একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদনকে ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন বলে নিন্দা জানানো হয়। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) ২০২১ সালের ‘প্রেস ফ্রিডম প্রিডেটর্স’ বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় কঠোর হস্তক্ষেপ করা ৩৭ জন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে। সৃষ্টিকর্ম গ্রন্থ রাজনীতির বাইরে লেখক হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩০টি গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; শেখ মুজিব আমার পিতা সামরিক বনাম গণতন্ত্র ওরা টোকাই কেন বিপন্ন গণতন্ত্র সাদা কালো বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম অসমাপ্ত আত্মজীবনী (গ্রন্থে রূপান্তর) People and Democracy The Quest for Vision 2021 আমাদের ছোট রাসেল সোনা </div> সম্মাননা যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়া ফ্রান্সের ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিপ্লোমা প্রদান করে। ইউএন উইমেন থেকে "প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন" গ্লোবাল পার্টনারশীপ ফোরাম থেকে এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার ৷ ফোর্বস-এ প্রথম ১০০ সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে ৫৯ তম স্থান অর্জন৷ ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ সালে বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ল ডিগ্রি প্রদান৷ ৪ জুলাই ১৯৯৭ সালে জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ল সম্মাননা৷ অ্যবার্টয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৫ অক্টোবর ১৯৯৭ সালে ডক্টর অব ফিলোসপী সম্মাননা। ইউনেসকো থেকে ১৯৯৮ সালে ‘‘হুপে-বোয়ানি’’ শান্তি পুরস্কার৷ সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ থেকে ১৯৯৮ সালে মাদার তেরেসা পুরস্কার। মহাত্মা গান্ধী ফাউন্ডেশন কর্তৃক ১৯৯৮ সালে এম কে গান্ধী পুরস্কার গ্রহণ ৷ আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে ‘‘Medal of Distinction” পদক ও ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে “Head of State” পদক লাভ। ২৪ জানুয়ারি ১৯৯৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'ডেসিকোটাম' (ডক্টর অব লিটারেচার, হনোরিস কাউজা) লাভ ১৯৯৯ সালে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা থেকে চেরেস পদক লাভ। ২০ অক্টোবর ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অফ ল ডিগ্রি লাভ ১৮ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ ল ডিগ্রি লাভ ৫ সেপ্টেম্বর ২০০০ সালে ব্রিজপয়েন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ হিউম্যান লেটার লাভ। ৯ এপ্রিল ২০০০ সালে রানডলপ ম্যাকন উইমেন্স কলেজ কর্তৃক পার্ল এস. বাক পুরস্কার রোটারি ফাউন্ডেশন কর্তৃক পল হ্যারিস ফেলো ২০০৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার। ৩০ ডিসেম্বর, ২০১১ সালে বাংলা ভাষার ধারক ও বাহক হিসেবে বাংলা একাডেমি তাদের বার্ষিক সাধারণ সভায় সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। ১২ জানুয়ারি, ২০১২ সালেদক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি এবং উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ডক্টর অব লিটারেচার বা ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করে। নারী ও কন্যাশিশুদের শিক্ষা প্রসারের স্বীকৃতি হিসাবে ২০১৪ সালে ইউনেস্কো ‘শান্তিবৃক্ষ’ পুরস্কার। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেতৃত্বের জন্য ইউএন পরিবেশ পুরস্কার (চ্যাম্পিয়নস অব দি আর্থ) লাভ। ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা জয়ের জন্য তিনি সাউথ সাউথ পুরস্কার লাভ করেন ৷ ১৬ নভেম্বর ২০১৫ সালে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডক্টর অব দ্য ইউনিভার্সিটি’ ডিগ্রি। ২৬ মে ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক 'ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট)' ডিগ্রি। ২৭ এপ্রিল ২০১৮ সালে বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্বদানের জন্য গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এওয়ার্ড লাভ করেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি ও তার মানবিকতার জন্য আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট এওয়ার্ড এবং ২০১৮ স্পেশাল ডিসটিংশন এওয়ার্ড ফর লিডারশিপ গ্রহণ করেন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সি ‘দি ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস) এবং নিউইয়র্ক, জুরিখ ও হংকং ভিত্তিক তিনটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে দুটি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। মার্চ ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট এ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে ইনস্টিটিউট অব সাউফ এশিয়ান উইমেন। 'ভ্যাকসিন হিরো' –টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতা জন্য পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’-জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে তাকে এই পুরস্কারে প্রদান করেন। ক্ষমতাধর নারী বিশ্ব পর্যায়ে শেখ হাসিনা ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় ৭ম স্থানে ছিলেন। তার পূর্বে এবং পশ্চাতে ছিলেন যথাক্রমে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট অ্যালেন জনসন সার্লেফ এবং আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জোহানা সিগার্ডারডটির । যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নারী নেতৃত্বের ১২জনের নাম নির্বাচিত করে। উল্লেখ্য যে, ২০১০ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে তিনি বিশ্বের সেরা দশ ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থানে ছিলেন। ঐ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের ঠিক পিছনে ছিলেন এবং ব্যাপক প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করেছিলেন। ২০১৫ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫৯তম স্থানে আছেন। ২০১৪ সালে এই তালিকায় শেখ হাসিনার অবস্থান ছিল ৪৭তম। এশীয় পর্যায়ে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা সিএনএন ক্ষমতাধর ৮ এশীয় নারীর তালিকা প্রকাশ করেছিল। উক্ত তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা। জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে চলচ্চিত্র ২০১৮ সালে পিপলু খানের পরিচালনায় আওয়ামী লীগের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের সহায়তায় নির্মিত হাসিনা: এ ডটার'স টেল নামক তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনার জীবনীর বিভিন্ন দিক সরাসরি তুলে ধরা হয়। ২০২১ সালের আল জাজিরার ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক- প্রামান্যচিত্রে শেখ হাসিনাকে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এর দন্ডপ্রাপ্ত ভাইদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায় জেনারেল আজিজ আহমেদের দন্ডপ্রাপ্ত ভাইদের মধ্যে একজন যিনি হারিস নামে পরিচিত তিনি প্রধানমন্ত্রীর থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পাবার কথা বলছেন। স্থাপনা বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করা হয়েছে; যার প্রায় সবই শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ |- ১৯৪৭-এ জন্ম জীবিত ব্যক্তি ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী নারী রাজনীতিবিদ ২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী নারী রাজনীতিবিদ বাঙালি রাজনীতিবিদ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী প্রধানমন্ত্রী মহিলা সরকার প্রধান মহিলা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জাতীয় সংসদের মহিলা সদস্য তৃতীয় জাতীয় সংসদ সদস্য পঞ্চম জাতীয় সংসদ সদস্য সপ্তম জাতীয় সংসদ সদস্য অষ্টম জাতীয় সংসদ সদস্য নবম জাতীয় সংসদ সদস্য দশম জাতীয় সংসদ সদস্য একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ রাজনীতিতে বাংলাদেশী নারী বিরোধীদলীয় নেত্রী বিরোধীদলীয় নেতা (বাংলাদেশ) জাতীয় নেতার সন্তান বাঙালি মুসলিম বাংলাদেশী সুন্নি মুসলিম শেখ পরিবার গোপালগঞ্জ জেলার রাজনীতিবিদ ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বাংলা একাডেমির সম্মানিত ফেলো আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইডেন মহিলা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ জেলার ব্যক্তি ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী ব্যক্তি ২০শ শতাব্দীর বাঙালি ২০শ শতাব্দীর মুসলিম ২১শ শতাব্দীর বাঙালি আরব বংশোদ্ভূত বাংলাদেশী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য
https://en.wikipedia.org/wiki/Sheikh_Hasina
Sheikh Hasina
Sheikh Hasina Wazed (born 28 September 1947) is a Bangladeshi politician who served as the tenth prime minister of Bangladesh from June 1996 to July 2001 and again from January 2009 to August 2024. She is the daughter of Sheikh Mujibur Rahman, the founding father and first president of Bangladesh. Having served for a combined total of over 20 years, she is the longest serving prime minister in the history of Bangladesh. She was the world's longest-serving female head of government. Her premiership ended in self-imposed exile following a series of violent protests in 2024. As the autocratic regime of Hussain Muhammad Ershad came to an end, Hasina, then leader of the Awami League (AL), lost the 1991 election to Khaleda Zia, with whom she had collaborated against Ershad. As leader of the opposition, Hasina accused Zia's Bangladesh Nationalist Party (BNP) of electoral dishonesty and boycotted Parliament, which was followed by violent demonstrations and political turmoil. Zia resigned in favour of a caretaker government, followed by Hasina becoming prime minister after the June 1996 election. While the country began to experience economic growth and a reduction in poverty, it remained in political turmoil during her first term, which ended in July 2001, with Hasina being succeeded by Zia following her victory. Hasina was the first Bangladeshi prime minister to serve a full five-year term since independence in 1971. During the 2006–2008 political crisis, Hasina was detained on extortion charges. After her release from jail, she won the 2008 election. In 2014, she was re-elected for a third term in an election that was boycotted by the BNP and criticised by international observers. In 2017, after nearly a million Rohingya entered the country, fleeing genocide in Myanmar, Hasina received credit and praise for giving them refuge and assistance. She won a fourth and fifth term after the 2018 and 2024 elections, which was marred by violence and widely criticised as being fraudulent. Her second premiership (2009–2024) was marked by economic mismanagement and rampant corruption, leading to rising foreign debt, increasing inflation, youth unemployment and banking irregularities. An estimated US$150 billion or Tk 17.6 lakh crore was syphoned out of Bangladesh by illegal means during this period. In 2022, anti-government protests broke out demanding the resignation of Hasina. In June 2024, fresh student protests erupted throughout the country, demanding the reform of quotas in government jobs. The protests were met with brutal crackdown by law-enforcement agencies and paramilitary forces, resulting in the deaths of many students. By August, the protests intensified into a full-blown mass uprising against the government, which eventually culminated in the resignation of Hasina and her fleeing to India. It is widely considered that Bangladesh experienced democratic backsliding under her premiership. Human Rights Watch documented widespread enforced disappearances and extrajudicial killings under her government. Numerous politicians and journalists were systematically and judicially punished for challenging her views. In 2021, Reporters Without Borders gave a negative assessment of Hasina's media policy for curbing press freedom in Bangladesh since 2014. Domestically, Hasina has been criticised as being too close to India, often at the cost of Bangladesh's sovereignty. She is seen as a manifestation of India's interference in Bangladeshi politics, which the critics described as the main source of Hasina's power. Hasina was among Time's 100 most influential people in the world in 2018, and was listed as being one of the 100 most powerful women in the world by Forbes in 2015, 2018, and 2022.
867
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%96%20%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%B0%20%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8
শেখ মুজিবুর রহমান
শেখ মুজিবুর রহমান (১৭ মার্চ ১৯২০ – ১৫ আগস্ট ১৯৭৫), সংক্ষিপ্তাকারে শেখ মুজিব বা বঙ্গবন্ধু, ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রয়াস এবং পরবর্তীকালে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বাংলাদেশের “জাতির জনক” বা “জাতির পিতা” হিসেবে অভিহিত করা হয়। এছাড়াও তাকে প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি “শেখ মুজিব” বা “শেখ সাহেব” নামে এবং তার উপাধি “বঙ্গবন্ধু” হিসেবেই অধিক পরিচিত। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত বিভাগ পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির প্রাথমিক পর্যায়ে শেখ মুজিব ছিলেন তরুণ ছাত্রনেতা। পরবর্তীকালে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। সমাজতন্ত্রের পক্ষসমর্থনকারী একজন অধিবক্তা হিসেবে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর প্রতি সকল ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছয় দফা স্বায়ত্তশাসন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন, যাকে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা হিসেবে ঘোষণা করেছিল। ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রধান দাবি ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, যার কারণে তিনি আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের অন্যতম বিরোধী পক্ষে পরিণত হন। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকারের সাথে যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে প্রধান আসামি করে আগরতলা মামলা দায়ের করা হয়; তবে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের কারণে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করা সত্ত্বেও তাকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হয়নি। পাকিস্তানের নতুন সরকার গঠন বিষয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে শেখ মুজিবের আলোচনা বিফলে যাওয়ার পর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে গণহত্যা চালায়। ফলশ্রুতিতে, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। একই রাতে তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। ব্রিগেডিয়ার রহিমুদ্দিন খানের সামরিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলেও তা কার্যকর করা হয়নি। নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে “বাংলাদেশ” নামক স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই জানুয়ারি তিনি সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মতাদর্শগতভাবে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ছিলেন; যা সম্মিলিতভাবে মুজিববাদ নামে পরিচিত। এগুলোর উপর ভিত্তি করে সংবিধান প্রণয়ন এবং তদানুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার চেষ্টা সত্ত্বেও তীব্র দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সর্বত্র অরাজকতাসহ ব্যাপক দুর্নীতি মোকাবেলায় তিনি কঠিন সময় অতিবাহিত করেন। ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দমনের লক্ষ্যে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে বাধ্য হন। এর সাত মাস পরে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট একদল বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তার হাতে তিনি সপরিবারে নিহত হন। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি কর্তৃক পরিচালিত জনমত জরিপে শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে নির্বাচিত হন। প্রারম্ভিক জীবন জন্ম শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ (৩রা চৈত্র ১৩২৭ বঙ্গাব্দ) রাত ৮টায় তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের বাইগার নদী তীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামে একটি বাঙালি মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শেখ বংশের গোড়াপত্তনকারী শেখ আউয়াল দরবেশ আল-বগদাদী সাহেবের বংশধর। তার বাবা শেখ লুৎফুর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার বা হিসাব সংরক্ষণকারী ছিলেন এবং তার মা সায়েরা খাতুন। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। শেখ মুজিবুর রহমানের বড় বোনের নাম ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী এবং তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের। তাঁর নসবনামা নিম্নস্বরূপঃ শেখ মুজিবুর রহমান ইবনে শেখ লুৎফর রহমান ইবনে শেখ আব্দুল হামীদ ইবনে শেখ মহম্মদ জাকের ইবনে শেখ একরামুল্লাহ ইবনে শেখ বোরহানুদ্দীন ইবনে শেখ জান মাহমূদ ইবনে শেখ জহীরুদ্দীন ইবনে শেখ আউয়াল দরবেশ আল-বগদাদী। তার নানা শেখ আবদুল মজিদ তার নামকরণ করেন “শেখ মুজিবুর রহমান”। তার ছোটবেলার ডাকনাম ছিল “খোকা”। ছোটবেলা থেকেই তিনি মানুষের প্রতি সহমর্মী স্বভাবের অধিকারী ছিলেন। দুর্ভিক্ষের সময় নিজের গোলা থেকে ধান বিতরণ করতেন। সমিতি করে অন্যদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করে গরিব ছাত্রদের মধ্যে বিলি করতেন। শিক্ষা ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে সাত বছর বয়সে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জ পাবলিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। পিতার বদলিজনিত কারণে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং সেখানে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন এবং তার হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তার চোখে গ্লুকোমা ধরা পড়ে ও অস্ত্রোপচার করাতে হয় এবং এ থেকে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্যলাভ করতে বেশ সময় লেগেছিল। এ কারণে তিনি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চার বছর বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেননি। তিনি ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে সুস্থ হবার পর গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এ সময়ে তার গৃহশিক্ষক ছিলেন ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এবং বহু বছর জেল খাটা কাজী আবদুল হামিদ (হামিদ মাস্টার) নামীয় জনৈক ব্যক্তি। পরবর্তীকালে গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুজিব কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমান নাম মৌলানা আজাদ কলেজ) থেকে আই.এ. এবং ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই কলেজটি তখন বেশ নামকরা ছিল। ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালীন তিনি বেকার হোস্টেলের ২৪ নং কক্ষে থাকতেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার সম্মানার্থে ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষকে একত্র করে “বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ” তৈরি করে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে ফেব্রুয়ারি কক্ষটির সম্মুখে তার আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। ভারত বিভাজনের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে ভর্তি হন। তবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি-দাওয়ার প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে বহিষ্কার করে। পরবর্তীকালে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। ব্রিটিশ ভারতে রাজনৈতিক সক্রিয়তা শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটেছিল ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় থেকে। ঐ বছরই বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন তদানীন্তন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং খাদ্যমন্ত্রী ও পরবর্তীকালে বাংলা প্রদেশ ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী। ঐ সময় বিদ্যালয়ের ছাদ সংস্কারের দাবি নিয়ে একটি দল তাদের কাছে যায়। দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ মুজিব। ব্যক্তিগত রেষারেষির জেরে ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রথমবারের মতো গ্রেফতার করা হয়। ৭ দিন হাজতবাস করার পর তিনি ছাড়া পান। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গোপালগঞ্জ মহকুমা মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি এবং মহকুমা মুসলিম লীগের ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। এ সময়ে তিনি এক বছর মেয়াদের জন্য নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ প্রমুখ যোগদান করেন। শেখ মুজিব এই সম্মেলনের অন্যতম আয়োজক ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। সেখানে অধ্যয়নকালীন তিনি বাংলার অগ্রণী মুসলিম নেতা হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন। এম. ভাস্করণ তাকে “সোহ্‌রাওয়ার্দীর ছত্রতলে রাজনীতির উদীয়মান বরপুত্র” হিসেবে আখ্যায়িত করেন। একই বছর কলকাতায় ছাত্রনেতা আবদুল ওয়াসেক প্রমুখের নেতৃত্বে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ঐ সময় থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন। এখানে তার ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য বিষয় ছিল–পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে শেখ মুজিব বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি কলকাতায় বসবাসরত ফরিদপুরবাসীদের নিয়ে গঠিত “ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশনের” সেক্রেটারি মনোনীত হন। এর দুই বছর পর ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের মহাসচিব নির্বাচিত হন। পাকিস্তান আন্দোলন, যুক্তবঙ্গ ও দেশভাগ ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের পর মুসলিম লীগ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য মাঠে নেমে পড়ে। মুসলিম লীগের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব এ সময় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। “পাকিস্তান দাবির পক্ষে গণভোট” খ্যাত ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে শেখ মুজিব বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে লীগের ওয়ার্কার ইনচার্জের দায়িত্বে থেকে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ কৃষক সমাজের কাছে গিয়ে তিনি পাকিস্তান দাবির ন্যায্যতার বিষয় প্রচার করে ভোট চান। এই নির্বাচনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতে মুসলিম লীগ বিজয় লাভ করে। তবে একমাত্র বাংলায় তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং সোহ্‌রাওয়ার্দীর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালনের সময় কলকাতায় ভয়ানক হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। মুজিব মুসলিমদের রক্ষা এবং দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় শরিক হন। ঐ সময় সোহ্‌রাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, শরৎচন্দ্র বসু প্রমুখের নেতৃত্বে ভারত ও পাকিস্তান কর্তৃত্বের বাইরে অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা গঠনের যে “যুক্তবঙ্গ আন্দোলন” সংগঠিত হয়, শেখ মুজিব তাতেও যুক্ত হন। পরবর্তীকালে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি নিশ্চিত হলে আসাম প্রদেশের বাঙালি মুসলিম অধ্যুষিত সিলেট জেলার ভাগ্য নির্ধারণে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিব সিলেট গণভোটে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে সংগঠক ও প্রচারক হিসেবে কাজ করেন। তিনি এসময় প্রায় ৫০০ কর্মী নিয়ে কলকাতা থেকে সিলেট গিয়েছিলেন। গণভোটে জয়লাভ সত্ত্বেও করিমগঞ্জ পাকিস্তান অংশে না থাকা এবং দেশভাগের সীমানা নির্ধারণের সময় পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন ভৌগোলিক অপ্রাপ্তির বিষয় নিয়ে স্বীয় আত্মজীবনীতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংগ্রাম ব্রিটিশ ভারত থেকে পাকিস্তান ও ভারত পৃথক হবার পর শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন, যার মাধ্যমে তিনি উক্ত অঞ্চলের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন। এ সময় তিনি সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য সমাজতন্ত্রকেই একমাত্র সমাধান হিসেবে মনে করতে থাকেন। বাংলা ভাষা আন্দোলন বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত আন্দোলনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক তৎপরতার সূচনা ঘটে। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে ফেব্রুয়ারি করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে উর্দু বা ইংরেজিতে বক্তব্য দেয়ার প্রস্তাব নাকচ করেন পূর্ব পাকিস্তানের কংগ্রেসের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি বাংলাকেও গণপরিষদের ভাষা করার দাবি তুলে ধরেন। ঐ সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ও পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন বাংলা ভাষার বিরোধিতা করলে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়। এছাড়াও ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। এতে পূর্ব পাকিস্তানে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদী শেখ মুজিব অবিলম্বে মুসলিম লীগের এই পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। একই বছরের ২রা মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের অংশগ্রহণে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সম্মেলনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করা হয়। শেখ মুজিব একটি প্রস্তাব পেশ করেছিলেন যা থেকে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঐ পরিষদের আহ্বানে ১১ই মার্চ ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘট পালনকালে শেখ মুজিবসহ আরও কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মীকে সচিবালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ছাত্রসমাজের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ১৫ই মার্চ শেখ মুজিব এবং অন্যান্য ছাত্র নেতাকে মুক্তি দেয়া হয়। তাদের মুক্তি উপলক্ষে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় শোভাযাত্রা হয় যাতে শেখ মুজিব সভাপতিত্ব করেন। তবে পুলিশ এই শোভাযাত্রা অবরোধ করে রেখেছিল। ১৫ই মার্চ মুজিবের নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা হয়। পুলিশি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে শেখ মুজিব অবিলম্বে ১৭ই মার্চ ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। ১৯শে মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একটি আন্দোলন পরিচালনা করেন। একই সময়ে ফরিদপুরে কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় সেই বছরেরই ১১ই সেপ্টেম্বর তারিখে তাকে আবার আটক করা হয়। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে জানুয়ারি শেখ মুজিবকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি আবার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন যার জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জরিমানা করা হয়। কিন্তু তিনি এই জরিমানাকে অবৈধ ঘোষণা করে তা প্রদান করা থেকে বিরত থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬শে এপ্রিল ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম লীগ বিরোধী প্রার্থী শামসুল হক টাঙ্গাইলের উপ-নির্বাচনে বিজয় লাভ করেন। শেখ মুজিব তার সেই আন্দোলনের সফলতার জন্য উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন ধর্মঘট করেন যার জন্য তাকে পুনরায় আটক করা হয়। এ সময়েই তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করা। উল্লেখ্য যে, মৃত্যু-পরবর্তীকালে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই আগস্ট তার হৃত ছাত্রত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে দেয়। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের পূর্ব পাকিস্তান আগমনকে উপলক্ষ করে আওয়ামী মুসলিম লীগ ঢাকায় দুর্ভিক্ষবিরোধী মিছিল বের করে। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেয়ার কারণে এবারও শেখ মুজিবকে আটক করা হয় এবং দুই বছর জেলে আটক করে রাখা হয়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি মুজিবের জেলমুক্তির আদেশ পাঠ করার কথা থাকলেও খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন, “উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে।” এ ঘোষণার পর জেলে থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে পরোক্ষভাবে পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আয়োজনে তিনি সাহসী ভূমিকা রাখেন। এরপরই ২১শে ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রভাষার দাবি আদায়ের দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সময়ে শেখ মুজিব জেলে অবস্থান করেই ১৪ই ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন পালনের সিদ্ধান্ত নেন। তার এই অনশন ১৩ দিন স্থায়ী ছিল। ২৬শে ফেব্রুয়ারি তাকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে সমাজতান্ত্রিক চীনের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২রা অক্টোবর থেকে ১২ই অক্টোবর পর্যন্ত রাজধানী পিকিংয়ে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান চীন সরকারের আমন্ত্রণে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে এই সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে চীন সফর করেন। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা ও যুক্তফ্রন্ট সরকার ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জুন হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী এবং মাওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করলে শেখ মুজিব মুসলিম লীগ ছেড়ে দিয়ে এই নতুন দলে যোগ দেন। তাকে দলের পূর্ব পাকিস্তান অংশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। তিনি ২৬শে জুন জেল থেকে ছাড়া পান। মুক্তি পাবার পরপরই চলমান খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে আটক করে রাখা হলেও অচিরেই ছাড়া পেয়ে যান। একই বছরের অক্টোবর মাসে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সাথে যুক্ত থেকে লিয়াকত আলি খানের কাছে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের চেষ্টা করায় উভয়কেই আটক করা হয়। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জুলাই শেখ মুজিবকে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। একই বছরের ১৪ই নভেম্বর পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই মার্চ এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে বিপুল ব্যবধানে বিজয় অর্জন করে যার মধ্যে ১৪৩টি আসনই আওয়ামী লীগ লাভ করেছিল। শেখ মুজিব গোপালগঞ্জে আসনে ১০,০০০ ভোটের ব্যবধানে বিজয় লাভ করেন। সেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মুসলিম লীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামান। ৩রা এপ্রিল শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট পূর্ব বাংলা প্রদেশে সরকার গঠন করে এবং ১৫ই মে শেখ মুজিব উক্ত সরকারে যোগ দিয়ে কৃষি, বন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২৯শে মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট ভেঙে দেয়। ৩১শে মে করাচি থেকে ঢাকা ফেরার পর বিমান বন্দর থেকেই তাকে আটক করা হয়। ২৩শে ডিসেম্বর মুক্তি লাভ করেন তিনি। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই জুন শেখ মুজিব প্রথমবারের মতো গণপরিষদের সদস্য হন। ১৭ই জুন আওয়ামী লীগ পল্টন ময়দানে আয়োজিত এক সম্মেলনে ২১ দফা দাবি পেশ করে, যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২৩শে জুন দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্জিত না হলে আইনসভার সকল সদস্য পদত্যাগ করবেন। ২৫শে আগস্ট পাকিস্তানের করাচিতে গণপরিষদের অধিবেশনে শেখ মুজিব বলেন: ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১–২৩শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে দলের নাম থেকে “মুসলিম” শব্দটি বাদ দেয়া হয় ও শেখ মুজিবকে পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ৩রা ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সাথে আওয়ামী লীগের বৈঠকে দল থেকে খসড়া সংবিধানে স্বায়ত্তশাসন অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়। ১৪ই জুলাই রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে সামরিক উপস্থিতির বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব রাখা হয়, যা তিনিই সরকারের কাছে পেশ করেন। ৪ঠা সেপ্টেম্বর তার নেতৃত্বে একটি দুর্ভিক্ষবিরোধী মিছিল বের হয়। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের কারণে এই মিছিলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে কমপক্ষে চারজন নিহত হয়। ১৬ই সেপ্টেম্বর শেখ মুজিব প্রাদেশিক সরকারে যোগ দিয়ে একসাথে শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতিরোধ এবং গ্রামীণ সহায়তা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জানুয়ারি পাক-ভারত বাণিজ্য চুক্তি সম্মেলনে যোগদান করার জন্য নয়াদিল্লি যান। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ সময় ব্যয় করার জন্যে তিনি ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে মে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই আগস্ট তিনি সরকারি সফরে চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন গমন করেন। এই দুই সমাজতান্ত্রিক দেশের নাগরিক জীবন-যাপনের সুবিধা শেখ মুজিবুর রহমানকে সমাজতন্ত্রের প্রতি উজ্জ্বীবিত করে তোলে। ১৯৫৭-৫৮ অর্থবছরের জন্য তিনি পাকিস্তান চা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই অক্টোবর পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা এবং সেনাবাহিনী প্রধান আইয়ুব খান দেশে সামরিক আইন জারি করেন। আইয়ুব খানের সমালোচনা করার জন্য ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই অক্টোবর তাকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই অক্টোবর তারিখে তাকে মুক্তি দেওয়া হলেও, তার উপর নজরদারি করা হয়। ১৯৬০ ও ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কার্যত গৃহবন্দি হিসেবে থাকেন। এ সময় আইয়ুব খান ৬ বছরের জন্য সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। জেলে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়। ১২ই সেপ্টেম্বরে তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৪ মাস একটানা আটক থাকার পর তাকে মুক্তি দেয়া হলেও জেলের ফটক থেকে পুনরায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করার মাধ্যমে তিনি ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ২২ সেপ্টেম্বর জেল থেকে ছাড়া পান। জেল থেকে মুক্তি লাভের পর তিনি গুপ্ত রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। অন্যান্য সাধারণ ছাত্রনেতাকে নিয়ে গোপনে নিউক্লিয়াস ও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে সংগঠন গড়ে তোলেন। সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করা। শেখ মুজিব ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার স্বাধীনতার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছে সাহায্য চাইলে তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জানুয়ারি সামরিক সরকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমান দলকে পুনরায় সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই ফেব্রুয়ারি জননিরাপত্তা আইনে তাকে আবার আটক করা হয়। ২রা জুন তারিখে চার বছরব্যাপী বহাল থাকা সামরিক আইন তুলে নেয়ার পর ১৮ই জুন তাকে মুক্তি দেয়া হয়। ২৫শে জুন তিনি অন্য রাজনৈতিক নেতাদের সাথে মিলে আইয়ুব খান আরোপিত বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমে পড়েন। ৫ই জুন তিনি পল্টন ময়দানে আয়োজিত এক সম্মেলনে আইয়ুব খানের সমালোচনা করেন। ২৪শে সেপ্টেম্বর তিনি লাহোরে যান এবং সেখানে শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর সাথে মিলে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে তোলেন। এটি মূলত বিরোধী দলসমূহের একটি সাধারণ কাঠামো হিসেবে কাজ করেছিল। পুরো অক্টোবর মাসজুড়ে শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর সাথে মিলে যুক্তফ্রন্টের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে তিনি বাংলার বিভিন্ন স্থান সফর করেন। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর সাথে আলোচনার উদ্দেশ্যে লন্ডন যান। শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন ও একই বছরের ৫ ডিসেম্বর বৈরুতে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারি মুজিবের বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুনরায় সংহত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঐ বৈঠকের প্রস্তাবের ভিত্তিতে শেখ মুজিবকে আওয়ামী লীগের মহাসচিব ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই মার্চ একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়, যার মাধ্যমে মুজিব সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধকল্পে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সেনাশাসক রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের সামরিক শাসন, রাজনীতির নামে মৌলিক গণতন্ত্র (বেসিক ডেমোক্রেসি) প্রচলন এবং পাকিস্তানের কাঠামোতে এক-ইউনিট পদ্ধতির বিরোধী নেতাদের মধ্যে অগ্রগামী ছিলেন শেখ মুজিব। মৌলিক গণতন্ত্র অনুযায়ী সারা দেশ থেকে ৮০ হাজার প্রতিনিধি নির্বাচন করা হতো ও তাদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতেন। এ পদ্ধতি অনুযায়ী ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং প্রদেশগুলোকে একত্রে জুড়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ঐ সময় সামরিক বাহিনীর গণহত্যা আর বাঙালিদের ন্যায্য দাবী পূরণে সামরিক শাসকদের উদাসীনতা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে কাজ করতে গিয়ে মুজিব আইয়ুববিরোধী সর্বদলীয় প্রার্থী ফাতেমা জিন্নাহকে সমর্থন করেন। নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পূর্বে ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই নভেম্বর তারিখে ভারতের দালাল অভিযুক্ত করে তাকে আটক করা হয়। শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং আপত্তিকর প্রস্তাব পেশের অভিযোগে অভিযুক্ত করে এক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অবশ্য উচ্চ আদালতের এক রায়ে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই তিনি মুক্তি পেয়ে যান। ছয় দফা আন্দোলন জনসংখ্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং পাকিস্তানের মোট রপ্তানি আয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ (যেমন পাট) পূর্ব পাকিস্তান থেকে হবার পরও এতদাঞ্চলের জনগণের প্রতি সর্বস্তরে বৈষম্য করা হতো। এছাড়াও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুবিধা আনুপাতিক হারে ছিল না। পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিকভিত্তিতে ক্রমাগত বৈষম্যের শিকার হওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে ও প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। এর ফলে, অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা বৈষম্য সম্পর্কে আপত্তি জানাতে শুরু করেন। বৈষম্য নিরসনে শেখ মুজিব ছয়টি দাবি উত্থাপন করেন, যা ছয় দফা দাবি হিসেবে পরিচিত। বাঙালির বহু আকাঙ্ক্ষিত এই দাবি পরবর্তীকালে বাঙালির “প্রাণের দাবি” ও “বাঁচা মরার দাবি” হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনেই শেখ মুজিব তার ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন, যা ছিল কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের পরিপূর্ণ রূপরেখা। ছয় দফার দাবিগুলো ছিল নিম্নরূপ– যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীনে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার হবে। সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দুইটি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে–দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতা থাকবে নিরঙ্কুশ। সমগ্র দেশের জন্যে দুইটি পৃথক অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা, না হয় বিশেষ শর্তসাপেক্ষে একই ধরনের মুদ্রা প্রচলন। ফেডারেশনের অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। তবে, প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গরাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলো নিজেদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার মালিক হবে, এর নির্ধারিত অংশ তারা কেন্দ্রকে দেবে। আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে। শেখ মুজিব এই দাবিকে “আমাদের বাঁচার দাবী” শিরোনামে প্রচার করেছিলেন। এই দাবির মূল বিষয় ছিল–একটি দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত পাকিস্তানি ফেডারেশনে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন। এই দাবি সম্মেলনের উদ্যোক্তারা প্রত্যাখান করেন এবং শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেন। এ কারণে তিনি উক্ত সম্মেলন বর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের পহেলা মার্চে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনের পর তিনি ছয় দফার পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে দেশব্যাপী প্রচার কার্য পরিচালনা করেন ও প্রায় পুরো দেশই ভ্রমণ করে জনসমর্থন অর্জন করেন। এই ভ্রমণের সময় তিনি সিলেট, ময়মনসিংহ এবং ঢাকায় বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে বন্দি হন। বছরের প্রথম চতুর্থাংশেই তাকে আটবার আটক করা হয়েছিল। ঐ বছরের মে মাসের ৮ তারিখে নারায়ণগঞ্জে পাট কারখানার শ্রমিকদের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। তার মুক্তির দাবিতে ৭ই জুন দেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয়। পুলিশ এই ধর্মঘট চলাকালে গুলিবর্ষণ করায় ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে আনুমানিক তিনজনের মৃত্যু হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক হয়ে দুই বছর জেলে থাকার পর ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবসহ ৩৫ জন বাঙালি সামরিক ও সিএসপি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে যা ইতিহাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে সুপরিচিত। ৬ই জানুয়ারি ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ২ জন সিএসপি অফিসারসহ ২৮ জনকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এই ষড়যন্ত্রকে “আগরতলা ষড়যন্ত্র” নামে অভিহিত করে। এই অভিযোগে ১৮ই জানুয়ারি ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। মামলায় পাকিস্তান দণ্ডবিধির ১২১ ও ১৩১ ধারা অনুসারে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, শেখ মুজিবসহ এই কর্মকর্তারা ভারতের ত্রিপুরা অঙ্গরাজ্যের অন্তর্গত আগরতলা শহরে ভারত সরকারের সাথে এক বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করেছে। এতে শেখ মুজিবকে এক নম্বর আসামি করা হয় এবং পাকিস্তান বিভক্তিকরণ ষড়যন্ত্রের মূল হোতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অভিযুক্ত সকল আসামিকে ঢাকা সেনানিবাসে অন্তরীণ করে রাখা হয়। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে জুন ঢাকা সেনানিবাসের এক বিশেষ ট্রাইবুনালে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। বিচারকার্য চলাকালীন ২৬ জন কৌশলী ছিলেন। শেখ মুজিবের প্রধান কৌশলী ছিলেন আব্দুস সালাম খান। একটি অধিবেশনের জন্য ব্রিটেন থেকে আসেন আইনজীবী টমাস উইলিয়ামস। তাকে সাহায্য করেন তরুণ ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম ও মওদুদ আহমেদ। মামলাটিতে মোট ১০০টি অনুচ্ছেদ ছিল। ১১ জন রাজসাক্ষী ও ২২৭ জন সাক্ষীর তালিকা আদালতে পেশ করা হয়। মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঞ্জুর কাদের, এম আর খান ও মুকসুদুল হাকিম। এর অব্যবহিত পরেই সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। মামলাটিকে মিথ্যা ও বানোয়াট আখ্যায়িত করে সর্বস্তরের জনসাধারণ শেখ মুজিবসহ অভিযুক্ত সকলের মুক্তির দাবিতে রাজপথে নেমে আসেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকার্য চলাকালীন ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের এগারো দফা দাবি পেশ করে, তন্মধ্যে শেখ মুজিবের ছয় দফার সবগুলোই অন্তর্ভুক্ত ছিল। উক্ত পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। আন্দোলনটি এক পর্যায়ে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। পরবর্তীকালে এই গণআন্দোলনই “ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান” নামে পরিচিতি পায়। মাসব্যাপী প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ , ১৪৪ ধারা ভঙ্গ, কারফিউ, পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং বেশ কিছু হতাহতের ঘটনার পর আন্দোলন চরম রূপ ধারণ করলে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে এক গোলটেবিল বৈঠকের পর এই মামলা প্রত্যাহার করে নেন। একই সাথে শেখ মুজিবসহ অভিযুক্ত সকলকে মুক্তি দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঐ বছরেরই ২৩শে ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবের সম্মানে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান) এক সভার আয়োজন করে। লাখো জনতার অংশগ্রহণে আয়োজিত এই সম্মেলনে তৎকালীন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধি প্রদান করেন। স্বীয় বক্তৃতায় শেখ মুজিব ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগার দফা দাবির পক্ষে তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে আইয়ুব খানের আহ্বানে অনুষ্ঠিত একটি সর্বদলীয় সম্মেলনে মুজিব তার ছয় দফাসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের দাবিগুলো উপস্থাপন করেন। কিন্তু, তা প্রত্যাখ্যাত হলে সম্মেলন থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই ডিসেম্বর শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে “বাংলাদেশ” নামে নামকরণের ঘোষণা দেন। মুজিবের এই ঘোষণার ফলে সারাদেশে ব্যাপক গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ এবং সামরিক কর্মকর্তারা তাকে একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে মূল্যায়ন করতে শুরু করেন। মুজিবের বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতিগত আত্মপরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের বিতর্কে নতুন মাত্রা এনে দেয়। অনেক বুদ্ধিজীবীদের মতে, যে দ্বিজাতি তত্ত্বের মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে, বাঙালিদের আন্দোলন দ্বিজাতি তত্ত্বকে অস্বীকার করার নামান্তর। বাঙালিদের জাতিগত ও সংস্কৃতিগত এই আত্মপরিচয় তাদেরকে একটি আলাদা জাতিসত্তা প্রদানে সাহায্য করে। তবে মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে সমর্থ হন এবং ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ কার্যত ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ৭০-এর সাধারণ নির্বাচন গণঅভ্যুত্থানের বিরূপ প্রভাবে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মার্চ আইয়ুব খান রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। ২৫শে মার্চ ইয়াহিয়া খান উক্ত পদে আসীন হন। তিনি ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে মার্চ এক ঘোষণায় পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই নভেম্বর ভোলায় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় ১ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় এবং ১০ লক্ষ মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়ে। এতে জনগণ পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের দুর্বল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রতি চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকার এটিকে ‘স্থানীয় নেতাদের ব্যর্থতা’ হিসেবে উল্লেখ করে। এসময় শেখ মুজিব বাস্তুহারাদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে থাকেন। ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নির্বাচনের সময়সূচি পিছিয়ে দেয়া হয়। পরে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই ডিসেম্বর (জাতীয়) ও ১৭ই ডিসেম্বর (প্রাদেশিক) “এক ব্যক্তির এক ভোটের ভিত্তিতে” নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সময় জাতীয় পরিষদে সদস্য সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন। তন্মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ১৬৯ জন এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ১৪৪ জন প্রতিনিধি থাকতেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসনে বিজয়ী হয়। পূর্ব পাকিস্তানের ২টি আসন ছাড়া বাকি সবগুলোতে জয়ী হওয়ায় জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও অর্জন করে আওয়ামী লীগ। ১৭ই ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক নির্বাচনের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। নির্বাচনের ফলাফল পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে মেরুকরণ সৃষ্টি করে। পশ্চিম পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো, মুজিবের স্বায়ত্বশাসনের নীতির প্রবল বিরোধিতা করেন। ভুট্টো অধিবেশন বয়কট করার হুমকি দিয়ে ঘোষণা দেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান মুজিবকে সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানালে তিনি ঐ সরকারকে মেনে নেবেন না। অধিকাংশ পশ্চিম পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ও ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো শেখ মুজিবের আসন্ন প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভের প্রবল বিরোধিতা করে। এসময় শেখ মুজিব কিংবা আওয়ামী লীগের কেউই পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেননি, যদিও কিছুসংখ্যক জাতীয়তাবাদী দল বাংলাদেশের স্বাধীনতা দাবি করতে থাকে। জুলফিকার আলি ভুট্টো গৃহযুদ্ধের ভয়ে শেখ মুজিব ও তার ঘনিষ্ঠজনদেরকে নিজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য একটি গোপন বার্তা পাঠান। পাকিস্তান পিপলস পার্টির মুবাশির হাসান শেখ মুজিবকে ভুট্টোর সাথে কোয়ালিশন সরকার গঠনে প্ররোচনা দেন; যেখানে শেখ মুজিব হবেন প্রধানমন্ত্রী এবং ভুট্টো থাকবেন রাষ্ট্রপতি। সেনাবাহিনীর সকল সদস্যের অগোচরে সম্পূর্ণ গোপনে এই আলোচনা সভাটি পরিচালিত হয়। একইসময়ে, ভুট্টো আসন্ন সরকার গঠনকে বানচাল করার জন্য ইয়াহিয়া খানের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। ৭ই মার্চের ভাষণ আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও সামরিক শাসকগোষ্ঠী দলটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে শুরু করে। প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল, যে-কোনভাবে ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা। এরূপ পরিস্থিতিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে ১লা মার্চ উক্ত অধিবেশনটি অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা বুঝতে পারে, মুজিবের দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সরকার গঠন করতে দেয়া হবে না। এই সংবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। তিনি ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ৬ই মার্চ এক বেতার ভাষণে ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে সকল প্রকার দোষ তার উপর চাপিয়ে দেয়ার প্রয়াস চালান। এ ধরনের ঘোলাটে পরিস্থিতিতেই ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুলসংখ্যক লোক একত্রিত হয়। সাধারণ জনতা এবং সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তার সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। তিনি ঘোষণা দেন– “... রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।” এর কয়েক ঘণ্টা পূর্বে কেন্দ্রীয় সরকার গণমাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেনাবাহিনীর চাপ থাকা সত্ত্বেও ইএমআই মেশিন ও টেলিভিশন ক্যামেরায় ভাষণের অডিও এবং ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখা হয়। ৮ই মার্চ জনতার চাপে ও পাকিস্তান রেডিও’র কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে পাকিস্তান সরকার বেতারে এই ভাষণ পুনঃপ্রচারের অনুমতি দিতে বাধ্য হয়। ইয়াহিয়া-মুজিব-ভুট্টো বৈঠক ১০ই মার্চ নির্বাচিত ১২ জন সংসদীয় শীর্ষস্থানীয় নেতাকে ইয়াহিয়া খান বৈঠকের আমন্ত্রণ জানালে শেখ মুজিব তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং ১৫ই মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের জন্য সুনির্দিষ্ট ৩৫টি নির্দেশনা জারি করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন এবং ১৬ই মার্চ শেখ মুজিবের সঙ্গে সরকার গঠন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু একই সঙ্গে সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানোর পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। সেনাবাহিনীর জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে ঢাকায় প্রেরণের পাশাপাশি সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো চলমান থাকে। ১৯শে মার্চ ইয়াহিয়া-মুজিব তৃতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২১শে মার্চ আলোচনায় যোগ দিতে জুলফিকার আলী ভুট্টো ১২ জন উপদেষ্টাকে সফরসঙ্গী করে ঢাকা আসেন। ২২শে মার্চ ভুট্টো-মুজিবের ৭০ মিনিটের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনেক আশাবাদ ব্যক্ত করা সত্ত্বেও ভুট্টো-মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক সফল হয়নি। পূর্ব পাকিস্তানে ২৩শে মার্চ প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়। ২৫শে মার্চ ভুট্টো-ইয়াহিয়া রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে বাঙালি নিধনযজ্ঞের সবুজ সংকেত অপারেশন সার্চলাইট প্রদান করে সন্ধ্যায় গোপনে পশ্চিম পাকিস্তান যাত্রা করেন। উইং কমান্ডার এ. কে. খন্দকার শেখ মুজিবকে বিষয়টি জানান। ২৫শে মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং ঐদিনই রাত ১টা ১০ মিনিটে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। কারাভোগ শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। তন্মধ্যে বিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে সাত দিন কারাভোগ করেন। বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন তিনি কারাভোগ করেন পাকিস্তান সরকারের আমলে। শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনের প্রায় ১৩ বছর কারাগারে ছিলেন। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জ হিন্দু মহাসভার সভাপতি সুরেন ব্যানার্জির বাড়িতে সহপাঠী বন্ধু আবদুল মালেককে মারপিট করা হলে শেখ মুজিবুর রহমান সেই বাড়িতে গিয়ে ধাওয়া করেন। সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটলে হিন্দু মহাসভার নেতাদের কৃত মামলায় শেখ মুজিবকে প্রথমবারের মতো আটক করা হয়। সাত দিন জেলে থাকার পর মীমাংসার মাধ্যমে মামলা তুলে নেওয়া হলে শেখ মুজিব মুক্তি পান। এছাড়া ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে অল বেঙ্গল মুসলিম ছাত্রলীগের ফরিদপুর জেলা শাখার সহসভাপতি থাকা অবস্থায় বক্তব্য প্রদান এবং গোলযোগের সময় সভাস্থলে অবস্থান করায় শেখ মুজিবুর রহমানকে দুইবার সাময়িকভাবে গ্রেফতার করা হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শেখ মুজিব ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই মার্চ থেকে ১৫ই মার্চ পর্যন্ত পাঁচ দিন কারাগারে ছিলেন। একই বছর ১১ই সেপ্টেম্বর আটক হয়ে মুক্তি পান ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে জানুয়ারি। এ দফায় তিনি ১৩২ দিন কারাভোগ করেন। এরপর ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে এপ্রিল আবারও তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় ও ৮০ দিন কারাভোগ করে ২৮শে জুন মুক্তি পান। ওই দফায় তিনি ২৭ দিন কারাভোগ করেন। একই বছরের অর্থাৎ ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে অক্টোবর থেকে ২৭শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩ দিন এবং ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারি থেকে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে ফেব্রুয়ারি টানা ৭৮৭ দিন কারাগারে ছিলেন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করার পরও শেখ মুজিবকে ২০৬ দিন কারাভোগ করতে হয়। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারির পর ১১ই অক্টোবর শেখ মুজিব আবার গ্রেফতার হন। এ সময়ে টানা ১ হাজার ১৫৩ দিন তাকে কারাগারে কাটাতে হয়। এরপর ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই জানুয়ারি আবারও গ্রেফতার হয়ে মুক্তি পান ওই বছরের ১৮ই জুন। এ দফায় তিনি কারাভোগ করেন ১৫৮ দিন। এরপর ১৯৬৪ ও ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে বিভিন্ন মেয়াদে তিনি ৬৬৫ দিন কারাগারে ছিলেন। ছয় দফা প্রস্তাব দেয়ার পর তিনি যেখানে সমাবেশ করতে গেছেন, সেখানেই গ্রেফতার হয়েছেন। ওই সময়ে তিনি ৩২টি জনসভা করে বিভিন্ন মেয়াদে ৯০ দিন কারাভোগ করেন। এরপর ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই মে আবারও গ্রেফতার হয়ে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মুক্তি পান। এ সময় তিনি ১ হাজার ২১ দিন কারাগারে ছিলেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই পাকিস্তান সরকার তাকে গ্রেফতার করে। এ দফায় তিনি কারাগারে ছিলেন ২৮৮ দিন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা স্বাধীনতার ঘোষণা ইয়াহিয়া খান ২৭ মার্চ পাকিস্তান রেডিওতে এক ঘোষণায় সামরিক আইন জারি করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং মুজিবসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক ও জনসাধারণের অসন্তোষ দমনে ২৫শে মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে। সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরু হলে মুজিব ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়ি থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়। মূল ঘোষণার অনুবাদ নিম্নরূপ: “এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক। জয় বাংলা।” এর কিছুক্ষণ পর তিনি বাংলায় একটি ঘোষণা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন– “সর্ব শক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ, দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপোষ নাই। জয় আমাদের হবেই। পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রু বিতাড়িত করুন। সকল আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক লোকদের কাছে এই সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।” টেক্সাসে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নথি সংগ্রাহক মাহবুবুর রহমান জালাল বলেন, “বিভিন্ন সূত্র ও দলিল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এটিই প্রমাণিত হয় যে, ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান, যা ছিল তার বা অন্য কারো হয়ে ঘোষণা দেওয়ার অনেক পূর্বে।” স্বাধীনতা ঘোষণার পরই রাত ১টা ৩০ মিনিটের সময় শেখ মুজিবকে সেনাবাহিনীর একটি দল তার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে ও সামরিক জিপে তুলে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। ঐ রাতে তাকে আটক রাখা হয় আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে। পরদিন তাকে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে বিমানে করে করাচিতে প্রেরণ করা হয়। করাচি বিমানবন্দরে পেছনে দাঁড়ানো দুই পুলিশ কর্মকর্তার সামনের আসনে বসা অবস্থায় শেখ মুজিবের ছবি পরদিন প্রায় সব দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হয়। এর আগে জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে শেখ মুজিবকে ক্ষমতালোলুপ দেশপ্রেমবর্জিত লোক আখ্যা দিয়ে দেশের ঐক্য ও সংহতির ওপর আঘাত হানা এবং ১২ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অভিযোগ তোলেন ও বলেন যে এই অপরাধের শাস্তি তাকে (শেখ মুজিবকে) পেতেই হবে। মুক্তিযুদ্ধ ও বন্দিজীবন লাহোর থেকে ৮০ মাইল দূরে পাকিস্তানের উষ্ণতম শহর লায়ালপুরের (বর্তমান ফয়সালাবাদ) কারাগারে শেখ মুজিবকে কড়া নিরাপত্তায় আটকে রাখা হয়। তাকে নিঃসঙ্গ সেলে (সলিটারি কনফাইন্টমেন্ট) রাখা হয়েছিল। এদিকে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে (বর্তমানে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর) বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সরকারের রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার অনুপস্থিতিতে মুজিবনগর সরকারের উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর অস্থায়ী সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দিন আহমেদ হন প্রধানমন্ত্রী। পূর্ব পাকিস্তানে মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী বড় রকমের বিদ্রোহ সংঘটিত করে। মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান বাহিনীর মধ্যকার সংঘটিত যুদ্ধটিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৯শে জুলাই পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ সামরিক আদালতে মুজিবের আসন্ন বিচারের বার্তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করে। পাকিস্তানি জেনারেল রহিমুদ্দিন খান এই আদালতের নেতৃত্ব দেন। তবে মামলার প্রকৃত কার্যপ্রণালী ও রায় কখনোই জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। লায়ালপুর কারাগারে সামরিক আদালত গঠন করা হয়। তাই মামলাটি “লায়ালপুর ট্রায়াল” হিসেবে অভিহিত। এই মামলার শুরুতে সরকারের দিক থেকে প্রবীণ সিন্ধি আইনজীবী এ. কে. ব্রোহিকে অভিযুক্তের পক্ষে মামলা পরিচালনায় নিয়োগ দেয়া হয়। আদালতের কার্যক্রমের শুরুতে ১২ দফা অভিযোগনামা পড়ে শোনানো হয়। অভিযোগের মধ্যে ছিল–রাষ্ট্রদ্রোহ, সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ইত্যাদি। ছয়টি অপরাধের জন্য শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। আদালতে ইয়াহিয়া খানের ২৬শে মার্চ প্রদত্ত ভাষণের টেপ রেকর্ডিং বাজিয়ে শোনানো হয়। সেই বক্তব্য শোনার পর শেখ মুজিব আদালতের কোনো কার্যক্রমে অংশ নেওয়া এবং তার পক্ষে কৌঁসুলি নিয়োগে অস্বীকৃতি জানান। তিনি এই বিচারকে প্রহসন আখ্যা দেন। গোটা বিচারকালে তিনি কার্যত আদালতের দিকে পিঠ ফিরিয়ে বসেছিলেন। আদালত কক্ষে যা কিছু ঘটেছে, তা তিনি নিস্পৃহভাবে বরণ করেছিলেন। বিচার প্রক্রিয়ায় আত্মপক্ষ সমর্থন তো দূরের কথা, কোনো কার্যক্রমেই অংশ নেননি তিনি। ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান বিমানবাহিনী ভারতের কয়েকটি সামরিক বিমানঘাঁটি আক্রমণ করলে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়। পরদিন, ৪ঠা ডিসেম্বর সামরিক আদালত বিচারের রায় ঘোষণা করে। শেখ মুজিবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। আদালতের কার্যক্রম শেষে তাকে নেওয়া হয় মিয়ানওয়ালি শহরের আরেকটি কারাগারে। সেখানে দণ্ডাদেশ কার্যকর করার ব্যবস্থা চলতে থাকে। বলা হয়ে থাকে, যে কারাগার কক্ষে তিনি অবস্থান করেছিলেন, তার পাশে একটি কবরও খোঁড়া হয়েছিল। তবে দ্রুত পরিবর্তনশীল যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানি সরকার মুজিবকে ছেড়ে দিতে এবং তার সাথে সমঝোতা করতে অস্বীকৃতি জানায়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে যুদ্ধে ভারতের সরাসরি অংশগ্রহণের ফলে ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নিয়ে গড়া যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ঢাকায় ফিরে সরকার গঠন করেন। কারামুক্তি ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়বরণ করার ফলশ্রুতিতে ২০শে ডিসেম্বর ইয়াহিয়া খান ক্ষমতাচ্যুত হলে জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন। ক্ষমতা হস্তান্তরকালেও ইয়াহিয়া খান জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে মুজিবকে মৃত্যুদণ্ড দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু ভুট্টো নিজের স্বার্থ, বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের পরিণতি ও আন্তর্জাতিক চাপের কথা চিন্তা করে শেখ মুজিবের কোন ক্ষতি করতে চাননি। শেখ মুজিবের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো তাকে কারাগার থেকে দ্রুত নিরাপদ কোন স্থানে সরিয়ে ফেলতে চান এবং মিঁয়াওয়ালী কারাগারের প্রধান হাবিব আলীকে সেরূপ আদেশ দিয়ে জরুরি বার্তা প্রেরণ করেন। ২২শে ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমানকে মিঁয়াওয়ালী কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং একটি অজ্ঞাত স্থানে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। এরপর ২৬শে ডিসেম্বর সিহালার পুলিশ রেস্ট হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। ভুট্টো ঐদিন সেখানে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন। ডিসেম্বরের শেষের দিকে (২৯ অথবা ৩০ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমেদের সাথে এবং ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই জানুয়ারি রাওয়ালপিন্ডিতে আবার ভুট্টোর সাথে মুজিবের বৈঠক হয়। ভুট্টো তাকে পশ্চিম পাকিস্তান ও নবগঠিত বাংলাদেশের সাথে ন্যূনতম কোন “লুস কানেকশন” রাখার অর্থাৎ শিথিল কনফেডারেশন গঠন করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু শেখ মুজিব ঢাকায় এসে জনগণের মতামত না জেনে কোন প্রকার প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকার করেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই জানুয়ারি ভুট্টো শেখ মুজিবের পাকিস্তান ত্যাগের ব্যবস্থা করতে বাধ্য হন। সেদিন রাত ২টায় অর্থাৎ ৮ই জানুয়ারির প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান ও ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি কার্গো বিমান লন্ডনের উদ্দেশ্যে রাওয়ালপিন্ডি ছাড়ে। ভুট্টো নিজে বিমানবন্দরে এসে শেখ মুজিবকে বিদায় জানান। লন্ডনে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি প্রথমে লন্ডন থেকে ভারতের নয়াদিল্লিতে পৌঁছান এবং ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ভি. ভি. গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাতের পর জনসমক্ষে ইন্দিরা গান্ধী ও “ভারতের জনগণ আমার জনগণের শ্রেষ্ঠ বন্ধু” বলে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে এসে তিনি সেদিন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের সামনে বক্তৃতা দেন। বাংলাদেশ শাসন স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ মুজিবুর রহমান অল্পদিনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তান আইনসভার জন্য নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই জানুয়ারি তারিখে নতুন রাষ্ট্রের প্রথম সংসদ গঠন করেন। ১২ই জানুয়ারি সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নিকট হস্তান্তর করেন। সংবিধান প্রণয়ন স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরপরই শেখ মুজিবুর রহমান তার অন্তর্বর্তী সংসদকে একটি নতুন সংবিধান রচনার দায়িত্ব দেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে শেখ মুজিব স্বাক্ষর করেন। ১৫ই ডিসেম্বর শেখ মুজিব সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদানের ঘোষণা দেন। ১৬ই ডিসেম্বর থেকে নতুন সংবিধান কার্যকর করা হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহানের মতে, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তাধারার চারটি বৈশিষ্ট্য হলো, বাঙালি জাতিসত্তা, সমাজতন্ত্র, জনসম্প্রীতি এবং অসাম্প্রদায়িকতা। সংবিধানের চারটি মূলনীতি–জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মাধ্যমে চারটি বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এই চারটি মূলনীতিকে একসাথে মুজিববাদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।’ ৭ই মার্চ, ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ নির্বাচনে শেখ মুজিব ও তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। শেখ মুজিব ঢাকা-১২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত সরকার গঠন করেন। নবরাষ্ট্র পুনর্গঠন ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরিচালিত নয় মাসব্যাপী ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর সমগ্র বাংলাদেশের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। শেখ মুজিব এই ধ্বংসযজ্ঞকে “মানব ইতিহাসের জঘন্যতম ধ্বংসযজ্ঞ” হিসেবে উল্লেখ করে ৩০ লাখ মানুষ নিহত ও ২ লাখ নারীর ধর্ষিত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুজিব মাত্র এক বছরের মধ্যে দেশ পুনর্গঠনের জন্য উল্লেখযােগ্য কর্মসূচি হাতে নেন। প্রশাসনিক ব্যবস্থার পুনর্গঠন, সংবিধান প্রণয়ন, এক কোটি মানুষের পুনর্বাসন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে এবং মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত নামমাত্র মূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন, ১১,০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ ৪০,০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ, দুঃস্থ মহিলাদের কল্যাণের জন্য নারী পুনর্বাসন সংস্থা, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুক্তিযােদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ, বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে কৃষকদের মধ্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ, পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত ব্যাংক, বীমা এবং ৫৮০টি শিল্প ইউনিটের জাতীয়করণ ও চালু করার মাধ্যমে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারীর কর্মসংস্থান, ঘোড়াশাল সার কারখানা, আশুগঞ্জ কমপ্লেক্সের প্রাথমিক কাজ ও অন্যান্য নতুন শিল্প স্থাপন, বন্ধ শিল্প-কারখানা চালুকরণসহ অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলাপূর্বক একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অবকাঠামো তৈরি করে দেশকে ধীরে ধীরে একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রয়াস চালান। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে আঁতাতের অভিযোগে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুনরায় চালু করেন। ইসলামি গোত্রগুলোর জোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মদ তৈরি ও বিপণন এবং জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করেন। তার শাসনে অসন্তুষ্ট ডানপন্থী সমাজতান্ত্রিক দলগুলোর সমর্থন পেতে তিনি সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি শর্তসাপেক্ষে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর সাধারণ ক্ষমার ঘোষণায় তিনি “মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানকে সহায়তাকারী দালালেরা” তাদের ভুল বুঝতে পেরে দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন এবং দালাল অধ্যাদেশে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন। তবে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, বাড়িঘর পোড়ানো ও বিস্ফোরক ব্যবহারে ক্ষতিসাধনের জন্য দোষী সাব্যস্ত অপরাধীদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা হয়নি। অত্যন্ত অল্প সময়ে বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায় ও ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্যপদ লাভ ছিল শেখ মুজিব সরকারের উল্লেখযােগ্য সাফল্য। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়া হয়। ১০০ বিঘার বেশি জমির মালিকদের জমি এবং নতুন চর বিনামূল্যে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। গ্রাম বাংলার ঋণে জর্জরিত কৃষকদের মুক্তির জন্য তিনি “খাই-খালাসী আইন” পাশ করেন। গ্রাম বাংলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ও শিল্প-কৃষি উৎপাদনের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বাের্ড প্রতিষ্ঠা করেন। শেখ মুজিবুর রহমান স্থানীয় সরকারগুলোতে গণতন্ত্রায়নের সূচনা করেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভায় প্রত্যক্ষ ভােটে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে প্রশাসনে জনগণ সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করে। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি নাগাদ ১৩ মাসে ১০ কোটি টাকা তাকাবি ঋণ বণ্টন, ৫ কোটি টাকার সমবায় ঋণ প্রদান, কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন, ১০ লাখ বসতবাড়ি নির্মাণ, চীনের কয়েক দফা ভেটো সত্ত্বেও জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ, ৩০ কোটি টাকার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে মিত্রবাহিনীর সৈন্য প্রত্যাবর্তন শুরুসহ দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে শেখ মুজিব বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়ােজন করেন। মুজিব শতাধিক পরিত্যক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি রাষ্ট্রীয়করণ করেন এবং ভূমি ও মূলধন বাজেয়াপ্ত করে ভূমি পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে কৃষকদের সাহায্যের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী প্রায় ১ কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসনের জন্য বড় ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়। এরফলে, অর্থনৈতিক সঙ্কটের অবসান হতে শুরু করে এবং সমূহ দুর্ভিক্ষ এড়ানো সম্ভব হয়। এছাড়াও তিনি প্রাথমিক শিক্ষা, খাদ্য, স্বাস্থ্য, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটান। শেখ মুজিবের নির্দেশে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে জুন সকল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করে পূর্বের ১৯টি বৃহত্তর জেলার স্থলে ৬১টি জেলা সৃষ্টি করা হয়। ১৬ই জুলাই শেখ মুজিব ৬১ জেলার প্রতিটির জন্য একজন করে গভর্নর নিয়োগ দেন। অর্থনৈতিক নীতি নব নির্বাচিত মুজিব সরকার গুরুতর কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, তন্মধ্যে ছিল–১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর পুনর্বাসন, খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা উপকরণ সরবরাহ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়াবলি। এছাড়া ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এবং যুদ্ধের ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও চরমভাবে ভেঙে পড়েছিল। অর্থনৈতিকভাবে মুজিব একটি বিস্তৃত পরিসরের জাতীয়করণ কার্যক্রম হাতে নেন। বছর শেষ হতে না হতেই, হাজার হাজার বাঙালি পাকিস্তান থেকে চলে আসে ও হাজার হাজার অবাঙালি পাকিস্তানে অভিবাসিত হয়। তা সত্ত্বেও হাজার হাজার মানুষ শরণার্থী শিবিরগুলোতে রয়ে যায়। প্রায় ১ কোটি শরণার্থীকে পুনর্বাসন করার জন্য বৃহৎ সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে এবং দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষ হওয়ার আশঙ্কাকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চ-বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় (১৯৭৩–১৯৭৮) কৃষি, গ্রামীণ অবকাঠামো ও কুটির শিল্প উন্নয়নে প্রাধিকারমূলক সরকারি অর্থ বরাদ্দের নির্দেশ দেয়া হয়। তারপরও ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে চালের দাম আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ভিক্ষ সংঘটিত হয়, যা ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ নামে পরিচিত। উক্ত দুর্ভিক্ষের সময় রংপুর জেলায় খাদ্যাভাব ছড়িয়ে পড়ে। সরকারের অব্যবস্থাপনাকে সেসময় এর জন্যে দোষারোপ করা হয়। মুজিবের শাসনামলে দেশবাসী শিল্পের অবনতি, বাংলাদেশী শিল্পের উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণ এবং জাল টাকা কেলেঙ্কারি প্রত্যক্ষ করে। পররাষ্ট্রনীতি চার বছরের কম সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে যে সাফল্য এনেছেন, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অদ্বিতীয় হয়ে আছে। যেসব দেশ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তাদের সঙ্গেও তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। এমনকি পাকিস্তানের স্বীকৃতিও আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। “কারো সাথে বৈরিতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্ব” ছিল মুজিব সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ ১১৩টি দেশের স্বীকৃতি লাভ করে। শেখ মুজিবের সিদ্ধান্তক্রমে বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের সদস্যপদ গ্রহণ করে। বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভের পর শেখ মুজিব পাকিস্তানের স্বীকৃতি এবং ওআইসি, জাতিসংঘ ও জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনে বাংলাদেশের সদস্যপদ নিশ্চিত করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে ভ্রমণ করে বাংলাদেশের জন্য মানবীয় ও উন্নয়নকল্পের জন্য সহযোগিতা চান। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুজিব প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে ২৫ বছর মেয়াদী মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেন যাতে অর্থনৈতিক ও মানব সম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক সাহায্যের আশ্বাস দেয়া হয়। চুক্তিতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের শর্ত অন্তর্ভুক্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মুজিব ইন্দিরা গান্ধীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখেন। মুজিবের জীবদ্দশায় দুই সরকারের মধ্যে পারষ্পরিক আন্তরিকতাপূর্ণ সমঝোতা ছিল। শেখ মুজিবের অনুরোধক্রমে ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে ভারতীয় বাহিনীকে নিজ দেশে ফেরৎ নিয়ে যান। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই সেপ্টেম্বর আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট-নিরপেক্ষ দেশসমূহের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। পরবর্তীকালে শেখ মুজিবুর রহমান সোভিয়েত ইউনিয়নে রাষ্ট্রীয় সফরে যান। দেশটির শীর্ষ চার নেতা পোদগর্নি, কোসিগিন, ব্রেজনেভ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই গ্রোমিকো তাকে অভ্যর্থনার জন্য ক্রেমলিনে সমবেত হন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তিনি জাপান সফর করেন। জাপানের সম্রাট হিরোহিতো শেখ মুজিবকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ২৩শে ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামি সম্মেলন সংস্থার সম্মেলনে যোগ দেন। উক্ত সম্মেলনে মুজিব তার চরম প্রতিদ্বন্দ্বী জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন যা পাকিস্তানের সাথে কিছুমাত্রায় সম্পর্ক উন্নয়ন ও স্বীকৃতি পেতে সহায়তা করে। তিনি একই বছরের ২৫শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করেন এবং সেখানে জাতিসংঘের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দেন। বক্তৃতায় তিনি ৫০টি সমস্যার পাশাপাশি বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। সামরিক বাহিনী গঠন শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী গড়ে ওঠে। নবগঠিত রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষাকল্পে তিনি সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য বিস্তৃত প্রকল্প গ্রহণ করেন। শেখ মুজিব খাদ্য ক্রয়ের পাশাপাশি বিদেশ থেকে সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়ােজনীয় অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করেন। যুগোস্লাভিয়ায় সামরিক প্রতিনিধিদল প্রেরণ করে পদাতিক বাহিনীর জন্য ক্ষুদ্র অস্ত্রশস্ত্র এবং সাজোঁয়া বাহিনীর জন্য ভারি অস্ত্র আনা হয়। ভারতের অনুদানে ৩০ কোটি টাকায় সেনাবাহিনীর জন্য কেনা হয় কাপড় ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি। সােভিয়েত ইউনিয়ন থেকে তৎকালে উপমহাদেশের সবচেয়ে আধুনিক আকাশযান মিগ বিমান, হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত উদ্যোগের ফলে মিশর থেকে সাজোঁয়া গাড়ি বা ট্যাংক আনা সম্ভব হয়েছিল। উন্নত প্রযুক্তি ও উন্নত জ্ঞান লাভ করে দেশ যাতে আধুনিক সেনাবাহিনী গড়তে পারে সে উদ্দেশ্যে শেখ মুজিব সামরিক কর্মকর্তাদেরকে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে প্রেরণ করেন। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ব্রিটেন, সােভিয়েত ইউনিয়ন, ভারত প্রভৃতি দেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুজিব সরকার সেনাবাহিনীর জন্য নগদ অর্থে আধুনিক বেতারযন্ত্র ক্রয় করে এবং সিগন্যাল শাখাকে আরও আধুনিক করে গড়ে তােলেন। শেখ মুজিব পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তনকারী ত্রিশ হাজারের অধিক সামরিক কর্মকর্তা ও জওয়ানদেরকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পুনর্বাসিত করেন। প্রত্যাবর্তনকারী বাঙালি কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩০০। এই সকল কর্মকর্তা ও জওয়ানদের নিয়ে অর্ধ লক্ষের অধিক সদস্যের দেশের প্রথম সেনাবাহিনী গড়ে উঠেছিল। সামরিক সুবিধা বৃদ্ধি করার জন্য শেখ মুজিবের নির্দেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দীঘিনালা, রুমা, আলীকদমের ন্যায় স্থানে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ছাউনি গড়ে তোলা হয়। সমালোচনা ও বিতর্ক জাতীয় রক্ষীবাহিনী শেখ মুজিবের ক্ষমতালাভের পরপরই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সশস্ত্র বিভাগ গণবাহিনী কর্তৃক সংগঠিত বামপন্থী বিদ্রোহীরা মার্ক্সবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা রোধে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি দেশে প্রত্যাবর্তন করে ক্ষমতা গ্রহণের পর ২৪শে জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার জাতীয় মিলিশিয়া গঠনের ব্যাপারে একটি আদেশ জারি করেন। এরপর ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠনের সরকারি আদেশ জারি করা হয়। রক্ষীবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল সেনাবাহিনীর এক-ষষ্ঠাংশ। শুরুর দিকে রক্ষীবাহিনী বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে অনেক অস্ত্রশস্ত্র, চোরাচালানের মালামাল উদ্ধার করে এবং মজুতদার ও কালোবাজারীদের কার্যকলাপ কিছুটা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। কিন্তু খুব শীঘ্রই ঐ বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হতে থাকে। এর কারণ রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, গুম, গোলাগুলি, এবং ধর্ষণের সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। তাদের যথেচ্ছাচার নিয়ন্ত্রণ বা তাদের কার্যকলাপের জবাবদিহিতার আইনগত কোন ব্যবস্থা ছিল না। অপরাধ স্বীকার করানোর জন্য গ্রেফতারকৃত লোকদের প্রতি অত্যাচার, লুটপাট এবং ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়। রক্ষীবাহিনীর সদস্যদেরকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ন্যায় জলপাই রঙের পোশাক এবং বাহিনী গঠন ও প্রশিক্ষণে ভারতের সহায়তা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। গণঅসন্তোষ সত্ত্বেও মুজিব সরকার ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই ফেব্রুয়ারী “জাতীয় রক্ষীবাহিনী অধ্যাদেশ-১৯৭২” এ একটি সংশোধনী জারি করে রক্ষীবাহিনীর সকল কার্যকলাপ আইনসঙ্গত বলে ঘোষণা করেন। এতে জনগণের মধ্যে মুজিব সরকারের প্রতি সুপ্ত ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকে। সেইসাথে রক্ষীবাহিনীর বিভিন্ন অনাচারের কারণে জনগণের কাছে শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। রক্ষীবাহিনীকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দেয়া এবং সেনাবাহিনীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর অভিযোগে সেনাবাহিনীর একাংশের মধ্যেও সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা স্বাধীনতার পর অচিরেই মুজিবের সরকারকে ক্রমশ বাড়তে থাকা অসন্তোষ সামাল দিতে হয়। তার রাষ্ট্রীয়করণ ও শ্রমভিত্তিক সমাজতন্ত্রের নীতি প্রশিক্ষিত জনবল, অদক্ষতা, মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি আর দুর্বল নেতৃত্বের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুজিব অতিমাত্রায় জাতীয় নীতিতে মনোনিবেশ করায় স্থানীয় সরকার প্রয়োজনীয় গুরুত্ব লাভে ব্যর্থ হয়। আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ করায় গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় তৃণমূল পর্যায়ে কোন নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হয়নি। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মধ্যে কমিউনিস্ট এবং ইসলামপন্থীরা অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণা করায় ইসলামপন্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পদে আপনজনদের নিয়োগ দেয়ার জন্য মুজিবের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষ খাদ্য সংকট আরও বাড়িয়ে দেয় এবং অর্থনীতির প্রধান উৎস কৃষিকে ধ্বংস করে ফেলে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব, দ্রব্যমূল্যের অসামঞ্জস্যতা, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যর্থতার কারণে মুজিবকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সংঘাতের মাত্রা বাড়তে থাকায় মুজিবও তার ক্ষমতা বাড়াতে থাকেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে মুজিব জরুরি অবস্থা জারি করেন। এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারি শেখ মুজিব নতুন যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনে উদ্যোগী হন, একে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিপ্লব বলে আখ্যা দেন। দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির মধ্যে দুটি দিক ছিল–সরকার ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কর্মসূচি এবং আর্থ-সামাজিক কর্মসূচি। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির স্থলে রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। এ সরকারে শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। পরিবর্তিত সংবিধানের আওতায় ৬ই জুন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল দল, সরকারি-বেসরকারি এবং অন্যান্য সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সদস্য নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিবিশেষকে অন্তর্ভুক্ত করে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ নামে একটি জাতীয় দল গঠন করা হয়। এ সময় শেখ মুজিব নিজেকে আমৃত্যু রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। বাকশাল প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনসাধারণ, কৃষক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের বিবেচিত করে এককভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে থাকে। বাকশাল বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সরকারপন্থী চারটি সংবাদপত্র বাদে সকল সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করা হয়। শেখ মুজিব জাতীয় রক্ষীবাহিনীর সহায়তায় বাকশাল-বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করেন এবং সারাদেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন। অনেকের মতে, তার এই নীতির ফলে অস্থিতিশীল অবস্থা আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং দুর্নীতি, কালোবাজারী ও অবৈধ মজুদদারি অনেকাংশে বন্ধ হয়ে যায়। তবে রক্ষীবাহিনী এবং পুলিশের বিরুদ্ধে অত্যাচার ও রাজনৈতিক হত্যার অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও মুজিব নীরব ভূমিকা পালন করেন। ফলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারীরা মুজিবের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠেন এবং তার কর্মকাণ্ডকে গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার বিরোধী বলে গণ্য করেন। মুজিব ও বাকশাল বিরোধীরা গণঅসন্তোষ এবং সরকারের ব্যর্থতার কারণে মুজিব-সরকারের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে ওঠে। হত্যাকাণ্ড ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট প্রত্যূষে একদল সেনা কর্মকর্তা ট্যাঙ্ক দিয়ে রাষ্ট্রপতির ধানমন্ডিস্থ বাসভবন ঘিরে ফেলে এবং শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীদের হত্যা করে। শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্য–বেগম ফজিলাতুন্নেসা, শেখ কামাল ও তার স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকী, শেখ জামাল ও তার স্ত্রী পারভীন জামাল রোজী, শেখ রাসেল, শেখ মুজিবের ভাই শেখ আবু নাসের হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই দিন শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি এবং তার স্ত্রী বেগম আরজু মনি, শেখ মুজিবের ভগ্নিপতি ও মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতনি সুকান্ত বাবু, বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত ও এক আত্মীয় বেন্টু খানকে হত্যা করা হয়। এছাড়া শেখ মুজিবের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জামিল উদ্দিন আহমেদ, এসবি কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক নিহত হন। কেবলমাত্র তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। তাদের বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শেখ মুজিবের শরীরে মোট ১৮টি বুলেটের দাগ দেখতে পাওয়া যায়। তন্মধ্যে, একটি বুলেটে তার ডান হাতের তর্জনী বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শেখ মুজিব ও তার পরিবারের মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করতে সেনা সদর থেকে ঢাকা সেনানিবাসের তৎকালীন স্টেশন কমান্ডার লে. কর্নেল এম এ হামিদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি গিয়ে দেখেন যে নির্দিষ্ট কফিনে শেখ মুজিবের মরদেহ মনে করে তার ভাই শেখ নাসেরের মরদেহ রাখা হয়েছে। দায়িত্বরত সুবেদার এর ব্যাখ্যা দেন যে, দুই ভাই দেখতে অনেকটা একরকম হওয়ায় ও রাতের অন্ধকারের কারণে মরদেহ অদল-বদল হয়ে গিয়েছিল। পরের দিন ১৬ আগস্ট শেখ মুজিবের মরদেহ বহনকারী কফিন একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে তার জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় নেয়া হয় এবং সামরিক তত্ত্বাবধানে দাফন করা হয়। অন্যান্যদেরকে ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর শেখ মুজিবের সম্মানে বরগুনার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। মুজিব ও নিহতদের স্মরণে ৪ নভেম্বর ঢাকায় গণমিছিল ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় যেখানে প্রায় সহস্রাধিক মানুষ সমবেত হয়। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ভারত, ইরাক এবং ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যম শোক বার্তা দেয়। প্রতিক্রিয়া ও বিচার সেনা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সামরিক কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শেখ মুজিবের প্রাক্তন সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমেদ, যিনি পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতির পদে স্থলাভিষিক্ত হন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত এবং বন্দী হন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে সেপ্টেম্বর মুজিব হত্যাকাণ্ডের বিচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে খন্দকার মোশতাক সরকার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ (দায়মুক্তির অধ্যাদেশ) জারি করেন এবং জেনারেল জিয়াউর রহমান ও পাকিস্তানপন্থী প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে তার বৈধতা দেয়া হয়, যা ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই আগস্ট তারিখে জাতীয় সংসদে রহিত করা হয়। সংবাদমাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের ইন্ধনদাতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ)-কে দায়ী করা হয়। লরেন্স লিফশুলজ বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইউজিন বুস্টারের সূত্রে সিআইএ-কে সামরিক অভ্যুত্থান ও গণহত্যার জন্য দোষারোপ করেন। মুজিবের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে বহু বছরের জন্য চলমান রাজনৈতিক সংঘাতের সূচনা ঘটে। সেনা অভ্যুত্থানের নেতারা অল্পদিনের মধ্যে উচ্ছেদ হয়ে যান এবং অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান আর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে দেশে চলমান অচলাবস্থা তৈরি হয় ও সেনাবাহিনীতে ব্যাপক অরাজকতা দেখা দেয়। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই নভেম্বর তৃতীয় সেনা অভ্যুত্থানের ফলে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতা আসীন হয়। তিনি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে সমর্থন করে মুজিব হত্যার বিচার স্থগিত করে দেন এবং মুজিবপন্থী সেনাসদস্যদের গ্রেফতার করেন। সেনা অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান নেতা কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানসহ ১৪ জন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিরা বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ২রা অক্টোবর শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় মুজিব হত্যাকাণ্ডের মামলা দায়ের করেন এবং ১২ই নভেম্বর জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বিচারক কাজী গোলাম রসুল শেখ মুজিব হত্যার বিচারের এজলাস গঠন করেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ১৫ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে রায়ের বিরুদ্ধে কৃত আপিলে হাইকোর্টের দুইটি বেঞ্চ ভিন্ন ভিন্ন রায় দেয়। ফলে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে মামলাটি তৃতীয় বেঞ্চে পাঠানো হয় এবং সেখানে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে এ বিচারের চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে জানুয়ারি সৈয়দ ফারুক রহমানসহ ৫ জন আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই এপ্রিল অন্যতম আসামি আব্দুল মাজেদকে ভারত থেকে বাংলাদেশে এনে গ্রেফতার করা হয় এবং ১২ই এপ্রিল তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে দাদা আব্দুল হামিদের আদেশে শেখ মুজিবের বাবা ১৪ বছর বয়সী শেখ মুজিবকে তার ৩ বছর বয়সী সদ্য পিতৃ-মাতৃহীন জ্ঞাতি বোন বেগম ফজিলাতুন্নেসার সাথে বিয়ে দেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছার বাবা শেখ জহিরুল হক ছিলেন মুজিবুর রহমানের দুঃসম্পর্কের চাচা। উল্লেখ্য, তার বাবা শেখ লুৎফুর রহমান ও মা শেখ সায়েরা খাতুন আপন চাচাতো ভাইবোন ছিলেন। বিয়ের ৯ বছর পর ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুজিব ২২ বছর বয়সে ও ফজিলাতুন্নেসা ১২ বছর বয়সে দাম্পত্যজীবন শুরু করেন। এই দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়–শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের পহেলা অক্টোবর থেকে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত শেখ পরিবারকে এই বাড়িতেই গৃহবন্দি করে রাখে। শেখ কামাল ও জামাল পাহারারত সেনাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান এবং মুক্তি সংগ্রামে যোগ দেন। শেখ কামাল ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যুদ্ধের একজন সমন্বয়ক ছিলেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যুদ্ধকালীন কমিশন লাভ করেন। তিনি মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর এডিসি ছিলেন। তাকে শেখ মুজিবের শাসনামলে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। শেখ জামাল যুক্তরাজ্যের রয়েল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্টে প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার পদে যোগ দেন। শেখ মুজিবের প্রায় পুরো পরিবারই ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট রাতে সেনা অভিযানে নিহত হন। কেবলমাত্র দুই কন্যা–শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ঐসময় তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থানের কারণে বেঁচে যান। শেখ হাসিনা দেশে প্রত্যাবর্তন করে পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চতুর্থ মেয়াদে এবং ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবেও তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। শেখ রেহানার কন্যা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেবার পার্টির রাজনীতিবিদ টিউলিপ সিদ্দিক ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে যুক্তরাজ্যের হাউজ অব কমন্সের সদস্য (গ্রেটার লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে নির্বাচিত)। শেখ মুজিবের ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত শ্রমিকনেতা ও তার মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুজিব বাহিনীর প্রধান নেতা ছিলেন ও ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন (উভয়েই ১৫ আগস্ট নিহত হন)। বর্তমানে শেখ মুজিবের ভাগ্নে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দীন ও শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল বাংলাদেশের সাংসদ। শেখ ফজলে নূর তাপস, মজিবুর রহমান চৌধুরী, নূর-ই-আলম চৌধুরী, আন্দালিব রহমান, শেখ তন্ময়, সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, শেখ ফজলে শামস পরশ, এবং শেখ ফজলে ফাহিম–বাংলাদেশের প্রথমসারির রাজনীতিবিদ ও সম্পর্কে তার নাতি হন। রচিত গ্রন্থাবলি শেখ মুজিব দুই খণ্ডে তার আত্মজীবনী লিখেছিলেন, যেখানে তিনি স্বীয় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করার পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিগত জীবনেরও বর্ণনা দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি তার চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও লিখে রেখেছিলেন। এইসব রচনা তার মৃত্যুর পর তদ্বীয় তনয়া শেখ হাসিনা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন। তার রচিত বইগুলোর রচনাশৈলীতে সাহিত্যের গুণগতমান খুঁজে পাওয়ায় তাকে লেখক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। রাজনৈতিক মতাদর্শ ব্রিটিশ আমলে ঔপনিবেশিকতাবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন। এই সময় থেকেই তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। মুসলিম লীগে তিনি ছিলেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী এবং আবুল হাশিমের নেতৃত্বাধীন উপদলে, যারা প্রগতিশীল বলে পরিচিত ছিলেন। তবে মুসলিম লীগের প্রতি দলীয় আনুগত্যের তুলনায় সোহ্‌রাওয়ার্দীর প্রতি তার ব্যক্তিগত আনুগত্য প্রবল ছিল। আবদুল গাফফার চৌধুরীর মতে, শেখ মুজিব শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক শিষ্য হিসেবে পরিচিত হলেও তার রাজনৈতিক চরিত্র গড়ে উঠেছিল শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, আবুল হাশিম, সুভাষ বসু ও মাওলানা ভাসানীর রাজনীতির প্রভাব বলয়ে থেকে। তিনি পাকিস্তান আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন; আবার তিনি যুক্তবঙ্গ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগেও সামিল হন। অনেক ঐতিহাসিক শেখ মুজিবের তৎকালীন জাতীয়তাবাদী অবস্থানকে প্রকৃতপক্ষে বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদ হিসেবে বর্ণনা করেন। তার নিজের ভাষ্য অনুযায়ী তারা, অর্থাৎ শিক্ষিত বাঙালি মুসলিম সমাজ লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলা ও আসাম নিয়ে ভারতের বাইরে পৃথক রাষ্ট্রের ধারণার সমর্থক ছিলেন। কিন্তু তৎকালীন বাস্তবতায় মুসলিম লীগের নেতৃত্বে সৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে বাঙালি মুসলিমের ভবিষ্যৎ গড়তে বাধ্য হন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যকলাপ পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন, ভাষাকেন্দ্রিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকে ঘিরে আবর্তিত হয়। মুসলিম লীগ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে আরো অনেকের সাথে শেখ মুজিব এই দল থেকে সরে দাঁড়ান। ২৪ বছরের পাকিস্তান আমলের অর্ধেকটা সময় কারাগারে এবং দু-এক বছর ছাড়া পুরোটা সময় জুড়ে বিরোধীদলে অবস্থান করেই তিনি কাটিয়ে দেন। একক পাকিস্তান ধারণার ভঙ্গুরতার বিষয়টি তার লেখা ডায়েরি ও অসংখ্য বক্তৃতায় উঠে এসেছে। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা “পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র করছেন” এমন অভিযোগ তুলে তাকে প্রায়ই পাকিস্তানের দুশমন, ভারতের দালাল ইত্যাদি আখ্যা দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক গুরু সোহ্‌রাওয়ার্দীর মতোই শেখ মুজিব ছিলেন পশ্চিমা ধাঁচের সংসদীয় গণতন্ত্রের একনিষ্ঠ সমর্থক। পাকিস্তান আমলের পুরোটা সময় জুড়ে তজ্জন্যে আন্দোলন সংগ্রাম করেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশে ক্ষমতা গ্রহণ করে প্রথমদিকে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর তিনি ক্রমাগত সমাজতন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন। বিশেষ করে পঞ্চাশের দশকে দুইবার গণচীন ও একবার সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরে জনগণের জীবনমান ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে তাদের প্রদর্শিত সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রতি শেখ মুজিবের আগ্রহ বাড়তে থাকে। তিনি আওয়ামী লীগকে ব্রিটিশ লেবার পার্টির মতো সামাজিক গণতন্ত্রী দল হিসেবে গড়ে তুলতে চাইতেন। তিনি অর্থনৈতিক মুক্তির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সংবিধানের একটি মূলনীতি হিসেবে সমাজতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করেন। তবে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের দমন-নিপীড়ন ও বাকশাল গঠন করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেন; সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য জেল-জুলুম সহ্য করে শেষে নিজেই তা থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ায় অনেকে একে আদর্শচ্যুতি হিসেবে অভিহিত করেন। মুসলিম লীগের মাধ্যমে রাজনীতির হাতেখড়ি হলেও শেখ মুজিব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পরবর্তী জীবনে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতামুক্ত রাজনীতি করেন। তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক বৈষম্যমূলক নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা করতেন। তার দল আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলার সকল ধর্মের বাঙালির সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই দল ও পরবর্তীকালে মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা থাকা স্বত্ত্বেও মুজিব ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে ইসলামি অনুশাসনের পথে অগ্রসর হন। জনসাধারণের সামনে উপস্থিতি এবং ভাষণের সময় শেখ মুজিব ইসলামিক সম্ভাষণ ও শ্লোগান ব্যবহার বাড়িয়ে দেন এবং ইসলামিক আদর্শের কথা উল্লেখ করতে থাকেন। জীবনের শেষ বছরগুলোতে মুজিব তার স্বভাবসুলভ “জয় বাংলা” অভিবাদনের বদলে ধার্মিক মুসলিমদের পছন্দনীয় “খোদা হাফেজ” বলতেন। শেখ মুজিবুর রহমান মনে করতেন, মানুষ ভুল থেকেই শেখে। তার মতাদর্শ নিজের ভুল স্বীকার ও সংশোধনের পক্ষে ছিল। মূল্যায়ন উপাধি ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান) আয়োজিত সম্মেলনে লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করেন। আ. স. ম. আবদুর রব ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে উল্লেখ করেন। পরবর্তীকালে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী তাকে সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের “জাতির পিতা” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি বাংলা’র পক্ষ থেকে সারা বিশ্বে পরিচালিত জরিপে শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই আগস্ট জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে কূটনীতিকেরা তাকে ‘বিশ্ব বন্ধু’ (ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড) হিসেবে আখ্যা দেয়। প্রাপ্তি ও পুরস্কার বিশ্ব শান্তি পরিষদ শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও ক্যুরি শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশীয় শান্তি ও নিরাপত্তা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বিশ্ব শান্তি পরিষদের তৎকালীন মহাসচিব রমেশ চন্দ্র তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। এটি বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক পদক। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজউইক পত্রিকা শেখ মুজিবুর রহমানকে “রাজনীতির কবি” বলে আখ্যায়িত করে লিখে, “তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষকে আকর্ষণ করতে পারেন, সমাবেশে এবং আবেগময় বাগ্মিতায় তরঙ্গের পর তরঙ্গে তাঁদের সম্মোহিত করে রাখতে পারেন। তিনি রাজনীতির কবি।” কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রো ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের জোট-নিরপেক্ষ সম্মেলনে শেখ মুজিবের ব্যক্তিত্বকে হিমালয় পর্বতমালার সাথে তুলনা করে বলেন: ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে ফিরে আসার পর ১৫ই আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তবে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করলে এ ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটে। তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালন বাতিল করে দেয়। পরে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবারও রাষ্ট্রীয়ভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসলে আবারও ১৫ই আগস্টকে শোক দিবস ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশী প্রতিটি ধাতব মুদ্রা ও টাকায় শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি রয়েছে এবং বাংলাদেশের বহু সরকারি প্রতিষ্ঠান তার নামে নামকরণ করা হয়েছে। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় “মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উত্তরণে অবদানের স্বীকৃতি” হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে গান্ধী শান্তি পুরস্কার প্রদান করে। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে অক্টোবর ইউনেস্কো শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই ডিসেম্বর জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থার (ইউনেস্কো) নির্বাহী পরিষদের ২১০তম অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে দ্বিবার্ষিক “ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্য ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি” (সৃজনশীল অর্থনীতি খাতে ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার) প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ অধিবেশনকাল থেকে পুরস্কারটি প্রদান করা হবে। শেখ মুজিবুর রহমান এখনও আওয়ামী লীগের আদর্শগত প্রতীক হয়ে আছেন এবং দলটি মুজিবের সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা ধারণ করে চলেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদগণ শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি সম্মান জানিয়ে “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” বলে ভাষণ ও বাণী সমাপ্ত করেন। শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক প্রচারণায় যে কোট পরতেন, সেটিকে মুজিব কোট নামে ডাকা হয় এবং আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলের রাজনীতিবিদগণ আনুষ্ঠানিকভাবে মুজিব কোট পরিধান করে থাকেন। তিনি বাংলাদেশ, ভারত ও বিশ্বের বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং গোষ্ঠীগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বাঙালিদের আন্দোলনকে স্বাধীনতার পথে ধাবিত করার জন্য তিনি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। সমালোচনা ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তফ্রন্ট ভেঙে ফেলার ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের একরোখা কার্যকলাপকে দায়ী করা হয়। আবার, পঞ্চাশের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের দলীয় মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের সাথে অন্তর্বিরোধে লিপ্ত হন তিনি, যা শেষ পর্যন্ত দুজনের মধ্যে অমোচনীয় বিভেদ তৈরি করে। অনেক সহকর্মী তার বিরুদ্ধে নিজের প্রাধান্যপ্রীতির অভিযোগ তোলেন। এদের মধ্যে আবুল মনসুর আহমদ তার সমালোচনা করে লেখেন– এছাড়াও কিছু কিছু ঐতিহাসিকদের মতে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ভিতরের সংঘাত এবং বৈষম্যগুলোকে শেখ মুজিব ও তার দল অতিরঞ্জিত করেছিল এবং স্বাধীনতা বাংলাদেশকে শিল্প ও মানবসম্পদের ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন করে। সৌদি আরব, সুদান, ওমান ও চীন প্রভৃতি দেশের সরকার শেখ মুজিবের সমালোচনা করে এবং মুজিবের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অনেক দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকে। বাংলাদেশের নেতা হিসেবে শাসনকালে, মুসলিম ধর্মীয় নেতারা মুজিবের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির কারণে তার সমালোচনা করেন। ভারতীয় সরকারের কাছ থেকে ব্যাপক সহযোগিতা গ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও পররাষ্ট্রনীতিতে ভারতের সাথে একাত্মতার কারণে অনেকে মুজিবের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠেন। সমালোচকদের অনেকে আশঙ্কা করেন, বাংলাদেশ ভারতের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে একটি স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তবে শেখ মুজিবের শাসন দক্ষতার জন্যই তা বাস্তবায়িত হয়নি। মুজিবের একদলীয় শাসন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দমন জনগণের একটি বড় অংশের অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায় যা বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চাকে দীর্ঘসময়ের জন্য কক্ষচ্যুত করে। স্বাধীনতা ও শেখ মুজিবের শাসনের এক বছর পর, টাইম সাময়িকী লিখে: যুক্তরাষ্ট্রের টাইম সাময়িকী ২৫শে আগস্ট ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুর দশ দিন পর “১৫ই আগস্ট ১৯৭৫: মুজিব, স্থপতির মৃত্যু” শিরোনামে লিখে: ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রন্টলাইন সাময়িকীর একটি প্রবন্ধে লেখক ডেভিড লুডেন তাকে একজন “ফরগটেন হিরো” বা বিস্মৃত বীর বলে উল্লেখ করেন। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার পূর্বে মুজিবের মৃত্যুর পরবর্তী সরকারগুলোর মুজিব বিরোধিতা ও মুজিবের স্মৃতিচারণ সীমিতকরণের কারণে তার সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর শেখ মুজিবুরের ভাবমূর্তি আবার ফিরে আসে। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ডিজিটাল আইন-২০১৬ মোতাবেক যে-কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদালত কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত মীমাংসিত কোনো বিষয় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা বা প্রোপাগান্ডা চালালে বা অবমাননা করলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অসংখ্য ফিকশন ও নন-ফিকশন বই, পুস্তিকা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তার কন্যা শেখ হাসিনা রচনা করেছেন শেখ মুজিব আমার পিতা। তাকে ঘিরে স্মৃতিচারণামূলক বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো–এ বি এম মূসার বই মুজিব ভাই, বেবী মওদুদ রচিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবার। মুজিবহত্যা নিয়ে গবেষণামূলক বইয়ের মধ্যে রয়েছে–মিজানুর রহমান খানের মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড, এম আর আখতার মুকুল রচিত মুজিবের রক্ত লাল প্রভৃতি। শেখ মুজিবের শাসনামলের বিবরণ উঠে এসেছে এমন বইয়ের মধ্যে রয়েছে–মওদুদ আহমেদ রচিত বাংলাদেশ : শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল, অ্যান্থনি মাসকারেনহাস কর্তৃক রচিত বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ, হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস দেয়াল, নিয়ামত ইমাম রচিত উপন্যাস দ্য ব্ল্যাক কোট প্রভৃতি। শেখ মুজিবকে নিয়ে অনেক গানও রচিত হয়েছে। এর মধ্যে বিখ্যাত দুটি গান হল–১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ভারতীয় গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার রচিত “শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ” এবং ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে হাসান মতিউর রহমান কর্তৃক রচিত “যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই”। গান দুটিতে সুরারোপ করেন যথাক্রমে অংশুমান রায় ও মলয় কুমার গাঙ্গুলী। কবি অন্নদাশঙ্কর রায় বিপন্ন ও বন্দি শেখ মুজিবের প্রাণরক্ষায় বিচলিত চিত্তে ও প্রবল আবেগের বশবর্তী হয়ে রচনা করেন– ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত "সংগ্রাম" চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে নিজ ভূমিকায় অভিনয় করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডনস্থিত শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টারের অর্থায়নে লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী তার লিখিত রাজনৈতিক উপন্যাস “পলাশী থেকে ধানমন্ডি” অবলম্বনে একই নামে একটি টেলিভিশন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এতে শেখ মুজিব চরিত্রে অভিনয় করেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রতের পরিচালনায় “যুদ্ধশিশু” নামক একটি ভারতীয় বাংলা-হিন্দি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রে প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে “আগস্ট ১৯৭৫” নামে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড পরবর্তী ঘটনা নিয়ে একটি বাংলাদেশী পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এছাড়া ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় ও বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র “মুজিব: একটি জাতির রূপকার” মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটি বাংলা, হিন্দি ও উর্দু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাছাড়াও শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ অবলম্বনে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “চিরঞ্জীব মুজিব” ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায়। একই বছর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা কেন্দ্রের অর্থায়নে শেখ হাসিনা লিখিত “মুজিব আমার পিতা” গ্রন্থ অবলম্বনে একই নামে একটি অ্যানিমেটেড কার্টুন চলচ্চিত্রও মুক্তি পায়। এছাড়াও "টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই", "দুঃসাহসী খোকা", "৫৭০", "বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়" সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র মুক্তিপ্রাপ্ত হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ বাংলাদেশে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে; যার প্রায় সবই শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা। এছাড়া বাংলাদেশের বাইরেও বহু স্থাপনা ও সড়কের নাম শেখ মুজিবুর রহমানের নামে করা হয়েছে। মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম উৎক্ষেপিত কৃত্রিম উপগ্রহ “বঙ্গবন্ধু-১” এর নামকরণ শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু যমুনা বহুমুখী সেতুর নাম পরিবর্তন করে “বঙ্গবন্ধু সেতু” করা হয়। এছাড়াও ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে গুলিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশের জাতীয় স্টেডিয়াম “ঢাকা স্টেডিয়ামের” নাম পরিবর্তন করে “বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম” রাখা হয়। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার শেরে বাংলা নগরের আগারগাঁওয়ে অবস্থিত চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে “বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র” নামে পুনর্বহাল করা হয়। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে “ভাসানী নভোথিয়েটারের” নাম পরিবর্তন করে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার” রাখা হয়। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার “ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ” (আইপিজিএমআর)-কে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়” নাম রাখা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই “জিন্নাহ সড়কের” নাম পরিবর্তন করে “শেখ মুজিব সড়ক” নামে চট্টগ্রাম শহরের বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদের প্রধান সড়কের নামকরণ করা হয়। এছাড়াও ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির একটি সড়কের নাম “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মার্গ” রাখা হয়। কনট প্লেসের নিকটবর্তী স্থানটি ইতোপূর্বে “পার্ক স্ট্রিট” নামে পরিচিত ছিল।এছাড়াও ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম এবং বিশ্বের ১২তম মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন “বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ” নামে একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগকে (বিপিএল) “বঙ্গবন্ধু বিপিএল” নামে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। এছাড়াও মুজিব বর্ষ উপলক্ষে শেখ মুজিবের নামে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের বাংলাদেশ গেমসের ৯ম আসরের নামকরণ “বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমস” করা হয়। তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন গেমস স্থগিত ঘোষণা করে। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) মুজিব ১০০ টি২০ কাপ বাংলাদেশ ২০২০ নামে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে এশিয়া একাদশ বনাম বিশ্ব একাদশের মধ্যকার দুইটি টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক (টি২০আই) খেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) স্বীকৃত ঐ খেলাগুলোকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক খেলার মর্যাদা দিলেও, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। মুজিব বর্ষ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের সামসময়িক প্রধানমন্ত্রী ও শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে ২০২০-২১ খ্রিষ্টাব্দকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেন। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে মার্চ পর্যন্ত এ বর্ষ উদ্‌যাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে অধিকাংশ কর্মসূচি নির্ধারিত সময়ে সম্পাদিত না হওয়ায় মুজিব বর্ষের সময়সীমা ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ইউনেস্কোর ১৯৫টি সদস্য দেশে এই মুজিব বর্ষ পালন করা হয়। চিত্রশালা আরও দেখুন বাংলাদেশের ইতিহাস মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা শেখ মুজিবুর রহমানের তৃতীয় মন্ত্রিসভা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পাদটীকা তথ্যসূত্র টীকা উদ্ধৃতি গ্রন্থপঞ্জি বহিঃসংযোগ ৭ই মার্চের ভাষণ (পিডিএফ), ৭ই মার্চের ভাষণ (ভিডিও) “টাইম” সাময়িকীতে বাংলাদেশ নিয়ে লিখিত সকল প্রতিবেদনের তালিকা বঙ্গবন্ধু অনলাইন মিউজিয়াম , বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবনী মুজিব শতবর্ষের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |- |- ১৯২০-এ জন্ম ১৯৭৫-এ মৃত্যু জাতির জনক বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রথম জাতীয় সংসদ সদস্য পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য ১৯৫৫-১৯৫৮ পাকিস্তান আন্দোলনের বাঙালি সক্রিয়তাবাদী শেখ পরিবার বাঙালি ব্যক্তি বাঙালি রাজনীতিবিদ বাঙালি মুসলিম বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জড়িত ব্যক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মৌলানা আজাদ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ জেলার ব্যক্তি গুপ্তহত্যার শিকার বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ গুপ্তহত্যার শিকার রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশে খুন হওয়া ব্যক্তি বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা মৃত্যু বাঙালি স্বাধীনতা কর্মী আরব বংশোদ্ভূত বাংলাদেশী বাংলাদেশে সমাধিস্থ ২০শ শতাব্দীর বাঙালি ২০শ শতাব্দীর মুসলিম নির্বাচিত জীবনী নিবন্ধ ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ব্রিটিশ ভারতীয় ব্যক্তি ১৯৭৫-এ বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ড
https://en.wikipedia.org/wiki/Sheikh_Mujibur_Rahman
Sheikh Mujibur Rahman
Sheikh Mujibur Rahman (17 March 1920 – 15 August 1975), popularly known by the honorific prefix Bangabandhu (lit. 'Friend of Bengal'), was a Bangladeshi politician, revolutionary, statesman, activist and diarist. As a politician, Mujib had held continuous positions either as Bangladesh's president or as its prime minister from April 1971 until his assassination in August 1975. Mujib successfully led the Bangladeshi independence movement and restored Bengali sovereignty after over two centuries following the Battle of Plassey in 1757, for which he is honoured as the "Father of the Nation" in Bangladesh who declared independence. His Bengali nationalist ideology, socio-political theories, and political doctrines are sometimes called Mujibism. Mujib emerged as a student activist in the province of Bengal during the final years of the British Raj. He was a member of the All India Muslim League. In 1949, Mujib was part of a liberal, secular and leftwing faction which later became the Awami League. In the 1950s, Mujib was elected to Pakistan's parliament where he defended the rights of East Bengal; wore suits and bowties; and was described as urbane and charming. By the 1960s, Mujib was transformed into the nationalist leader of East Pakistan, with his trademark Mujib coat and forceful oratory. He became popular for opposing political, ethnic and institutional discrimination; leading the six-point autonomy movement; and challenging the regime of Field Marshal Ayub Khan. In 1970, Mujib led the Awami League to win Pakistan's first general election. When the Pakistani military junta refused to transfer power, he gave the 7th March speech and announced an independence movement. During the Bangladesh Liberation War in 1971, Mujib declared Bangladesh's independence. Bengali nationalists declared Mujib as the head of the Provisional Government of Bangladesh, while he was confined in a jail in West Pakistan. He returned to Bangladesh in January 1972 as a hero. A populist of the 20th century, Sheikh Mujib was one of the most charismatic leaders of the Third World in the early 1970s. Mujib served more than 12 and a half years of his political life in prison during the British Raj and Pakistani rule. He succeeded in normalizing diplomatic ties with most of the world, with a policy of friendship to all and malice to none. He signed a friendship treaty with India, joined the Commonwealth, NAM and the OIC, opposed apartheid and dispatched an army medical unit during the 1973 Arab-Israeli War. Mujib's legacies include the secularist Constitution of Bangladesh and the transformation of East Pakistan's state apparatus, bureaucracy, armed forces, and judiciary into an independent Bangladeshi state. He gave the first Bengali speech to the UN General Assembly in 1974. Mujib's five-year regime was also the only socialist period in Bangladesh's history. In 1975, Mujib installed a one party state which lasted for seven months until his assassination. Mujib's legacy remains divisive among Bangladeshis due to his economic mismanagement, the Bangladesh famine of 1974, human rights violations, and authoritarianism. The Awami League has been accused of promoting a personality cult around Mujib. But most Bangladeshis credit Mujib for leading the country to independence in 1971. In a 2004 BBC opinion poll, Mujib was voted as the Greatest Bengali of all time and ranked first on the list followed by Asia's first Nobel laureate Rabindranath Tagore (2nd) and Bangladeshi national poet Kazi Nazrul Islam (3rd). Mujib's 7 March speech in 1971 is recognized by UNESCO for its historic value, and enshrined in the Memory of the World Register – Asia and the Pacific. His diaries and travelogues were published many years after his death and have been translated into several languages.
1089
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF%20%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B7%E0%A6%BE
কথ্য ভাষা
মানুষে যে ভাষাগুলোতে কথা বলে, সেগুলো কথ্য ভাষা। বর্তমানে, বিশ্বের সব দেশ মিলে কথ্য ভাষার সংখ্যা ৬,০০০-র বেশি। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজস্ব কথ্য ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণের নিয়ম থাকে, কিন্তু এই নিয়মগুলো আর সমাজস্বীকৃত লিখিত ভাষার নিয়মগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। বাংলা ভাষার কথ্যরূপ এবং লিখিত রূপের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখযোগ্য। আঞ্চলিকতা ছাড়াও বাচনভঙ্গী এবং প্রকাশভঙ্গীতে ব্যাপক রূপান্তর লক্ষ্য করা যায়। যেমন ঢাকার প্রমিত সমাজে কথ্যভাষায় তৎসম শব্দের ব্যবহারে অনীহা লক্ষ্য করা যায়। ভাষা কথন ভাষার ধরন ও শৈলী
https://en.wikipedia.org/wiki/Spoken_language
Spoken language
A spoken language is a language produced by articulate sounds or (depending on one's definition) manual gestures, as opposed to a written language. An oral language or vocal language is a language produced with the vocal tract in contrast with a sign language, which is produced with the body and hands.
1094
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%A1
ইউনিকোড
ইউনিকোড (যা আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনিকোড মান নামে পরিচিত) তথ্য প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত একটি মান বা আদর্শ যার উদ্দেশ্যে বিশ্বের সিংহভাগ লিখন পদ্ধতি দ্বারা সৃষ্ট পাঠ্যবস্তুকে দ্বি-আংকিক পরিগণক যন্ত্র (ডিজিটাল কম্পিউটার) ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় সঙ্গতিপূর্ণভাবে সংকেতায়ন, উপস্থাপন ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা। ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম নামক একটি অলাভজনক সংস্থা এই মানটির রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত আছে। এটিতে ১৫৯টি আধুনিক ও ঐতিহাসিক লিপির লিখনপ্রতীকগুলি ছাড়াও অন্যান্য অনেক প্রতীক, ইমোজি (আবেগ-অনুভূতিজ্ঞাপক চিত্রপ্রতীক) এবং অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ ও বিন্যাস সংকেতের জন্য ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৭৬২টি পরিগণনীয় প্রতীক সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ইউনিকোড মানে ব্যবহৃত প্রতীক সম্ভারটি সর্বদা আইএসও/আইইসি ১০৬৪৬ নামক আন্তর্জাতিক মানটিতে সংজ্ঞায়িত সর্বজনীন সংকেতায়িত প্রতীক সেটটি ব্যবহার করে; এই দুইটিতে সংজ্ঞায়িত সংকেতগুলি সম্পূর্ণ অভিন্ন। তবে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের দাপ্তরিক প্রকাশনাটিতে শুধু ঐ প্রতীকগুলির সংকেতায়ন-ই সংজ্ঞায়িত করা হয়নি, বরং এর পাশাপাশি লিপিগুলি সম্পর্কে ও এগুলিকে কীভাবে প্রদর্শন করতে হবে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে আদর্শীকরণ নিয়মাবলি, বিশ্লিষ্টকরণ, আদর্শ ক্রমবিন্যস্তকরণ, চিত্রায়ন, বহুভাষিক পাঠ্যবস্তুর জন্য দ্বিমুখী পাঠ্যবস্তু প্রদর্শন ক্রম, ইত্যাদি উল্লেখ্য। অধিকিন্তু ইউনিকোড মানে সফটওয়্যার নির্মাতা ও নকশাবিদদের প্রতীকসম্ভারটিকে সঠিকভাবে বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য উপাত্ত নথি ও দৃশ্যমান রেখাচিত্রের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতীকের সেটগুলিকে ঐক্যবদ্ধকরণে ইউনিকোডের সাফল্যের কারণে পরিগণক নির্দেশনাসামগ্রী বা কম্পিউটার সফটওয়্যারের আন্তর্জাতিকীকরণ ও স্থানীয়করণে এটির ব্যাপক ও আধিপত্য বিস্তারকারী প্রয়োগ ঘটেছে। বহুসংখ্যক সাম্প্রতিক তথ্য প্রযুক্তিতে এটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যাদের মধ্যে আধুনিক পরিগণক পরিচালক ব্যবস্থা (অপারেটিং সিস্টেম), এক্সএমএল, জাভা প্রোগ্রামিং ভাষা (ও অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষা) এবং ডট নেট পরিকাঠামোর নাম উল্লেখ্য। ইউনিকোড মানটিকে কেবল একটি নয়, বরং একাধিক প্রতীক সংকেতায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। ইউনিকোড মানে যে প্রতীক সংকেতায়ন পদ্ধতিগুলি সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশ কিছু ইউনিকোড রূপান্তর বিন্যাস (ইউটিএফ) যেমন ইউটিএফ-৮, ইউটিএফ-১৬, ইউটিএফ-৩২ ছাড়াও আরও বেশ কিছু প্রতীক সংকেতায়ন পদ্ধতি আছে। ইউনিকোডের সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় বাস্তবায়িত সংকেতায়ন পদ্ধতিগুলি হল ইউটিএফ-৮, ইউটিএফ-১৬ এবং অধুনা বিলুপ্ত ইউসিএস-২। জিবি ১৮০৩০ নামের একটি অনানুষ্ঠানিক আদর্শ আছে, যেটি ইউনিকোডকে সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করেছে এবং যেটি চীনে মান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইতিহাস ১৯৮৭ সালে জিরক্স (Xerox) কোম্পানির জো বেকার (Joe Becker) এবং অ্যাপল (Apple) কোম্পানির লি কলিন্স (Lee Collins) ও মার্ক ডেভিস (Mark Davis) একত্রে মিলে ইউনিকোডের কাজ শুরু করেছিলেন। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল সকল ভাষাকে একটি সর্বজনীন সংকেতায়নের মানদণ্ডে নিয়ে আসা। ফলশ্রুতিতে পরবর্তী বছরের (১৯৮৮) আগস্ট মাসে জো বেকার "International/multilingual text character encoding system, tentatively called Unicode." (বাংলা অনুবাদ: "আন্তর্জাতিক/বহুভাষিক পাঠ্যপ্রতীক সংকেতায়ন পদ্ধতি, যাকে আপাতত 'ইউনিকোড' নামে ডাকা হচ্ছে") নামে একটি খসড়া প্রস্তবনা তৈরি করেন। এই প্রস্তাবনাটি ছিল একটি ১৬ বিটের প্রতীক সংকেতায়ন পদ্ধতি। Unicode is intended to address the need for a workable, reliable world text encoding. Unicode could be roughly described as "wide-body ASCII" that has been stretched to 16 bits to encompass the characters of all the world's living languages. In a properly engineered design, 16 bits per character are more than sufficient for this purpose. ১৬ বিটের প্রতীক সংকেতায়ন পদ্ধতি পছন্দ করার কারণ ছিল এই যে তাঁরা মনে করেছিলেন যে শুধু আধুনিক ভাষার বর্ণগুলি ব্যবহৃত হবে। Unicode gives higher priority to ensuring utility for the future than to preserving past antiquities. Unicode aims in the first instance at the characters published in modern text (e.g. in the union of all newspapers and magazines printed in the world in 1988), whose number is undoubtedly far below 214 = 16,384. Beyond those modern-use characters, all others may be defined to be obsolete or rare; these are better candidates for private-use registration than for congesting the public list of generally-useful Unicodes. পরবর্তীতে অনেক পুরাতন ভাষার জন্যও অন্যান্য বহু প্রতীক তালিকাভুক্ত করার প্রয়োজন পড়ে। এদের মাঝে এমন ভাষাও রয়েছে যেগুলি বর্তমানে আর ব্যবহৃত হয় না। (যেমন: মিশরীয় চিত্রলিপি, লিনিয়ার-এ, লিনিয়ার-বি ইত্যাদি) ১৯৮৯ সালে মেটাফোর (Metaphor) কোম্পানির কেন হুইসলার (Ken Whistler) এবং মাইক কার্নাগান (Mike Kernaghan), আর.এল.জি (RLG) কোম্পানির ক্যারেন স্মিথ-ইয়োশিমুরা (Karen Smith-Yoshimura) ও জোন আলিপ্র্যান্ড (Joan Aliprand) এবং সান মাইক্রোসিস্টেমস (Sun Microsystems) কোম্পানির গ্লেন রাইট (Glenn Wright) ইউনিকোড উন্নয়ন দলে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে মাইক্রোসফট (Microsoft) কোম্পানির মিশেল সুইগনার্ড (Michel Suignard) ও অ্যাস্মাস ফ্রাইট্যাগ (Asmus Freytag) এবং নেক্সট (NeXT) কোম্পানির রিক ম্যাকগোয়ান (Rick McGowan) যোগদান করেন। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে ইউনিকোডের খসড়া প্রস্তাবনা সম্পন্ন হয়। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে ইউনিকোড মানের প্রথম খণ্ডটি এবং ১৯৯২ সালের জুন মাসে এর দ্বিতীয় খণ্ডটি প্রকাশিত হয়। ইউনিকোডের গঠন বুলীয় বীজগণিতের নিয়মে গণনা করায় কম্পিউটার কেবলমাত্র শূন্য বা ০ বা অফ এবং এক বা ১ বা অন এই দুটি অবস্থা বোঝে । এক-একটি সংখ্যাকে বোঝানোর জন্য কম্পিউটারে ০ এবং ১ এর বিভিন্ন ক্রম ব্যবহার করা হয় । কম্পিউটারে লিপি বা অন্যান্য অক্ষর সংরক্ষিত হয় সেই অক্ষরগুলির প্রতিটির জন্য ০ ও ১-এর অদ্বিতীয় একটি ক্রম দিয়ে । একটি প্রতীক সংকেতায়ন পদ্ধতি এরূপ একটি অদ্বিতীয় ক্রমের সঙ্গে একটি অক্ষরকে সংযুক্ত করে । এই সমস্ত ক্রমগুলিকে একত্রে বলা হয় কোডস্পেস্ এবং কোডস্পেসের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটি ক্রমকে ক‌োড পয়েন্ট বলা হয় । কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য একাধিক বর্ণসংকেতায়ন ব্যবস্থা রয়েছে । প্রত্যেকটি অক্ষরের জন্য বিভিন্ন বর্ণসংকেতায়ন ব্যবস্থায় ওই অদ্বিতীয় সংখ্যার মান ভিন্ন হওয়ায় তথ্য আদানপ্রদানে অসুবিধা দেখা দেয় । ইউনিকোডে প্রত্যেকটি পরিচিত অক্ষরের জন্য একটি করে কোডপয়েন্ট বরাদ্দ করা হয় এবং প্রত্যেকটি কোডপয়েন্টকে একটি অদ্বিতীয় ষষ্ঠদশনিধান বিশিষ্ট পূর্ণসংখ্য দ্বারা চিহ্নিত করা হয় । "U+" এর পর কোডপয়েন্টটির ষষ্ঠদশনিধান বিশিষ্ট সংখ্যাটিকে লিখে কোডপয়েন্টটিকে চিহ্নিত করা হয় । ইউনিকোডে বর্তমানে ১১,১৪,১১২ সংখ্যক ক‌োডপয়েন্ট রয়েছে, যেগুলিকে 016 থেকে 10FFFF16 পর্যন্ত সংখ্যগুলি দ্বারা চিহ্নিত করা হয় । যদিও প্রত্যেকটি কোডপয়েন্ট লিখনযোগ্য অক্ষরকে নির্দেশ করে না । উদাহরণস্বরূপ, U+200F কোডপয়েন্টটি Zero Width Non-Joiner অক্ষরটিকে চিহ্নিত করে, যেটিকে মুদ্রিত করা বা কম্পিউটারের মনিটরে দেখানো সম্ভব নয় । ইউনিকোডে অন্তর্ভুক্ত লিপিসমূহ আরবি সিলোটি আর্মেনীয় ইংরেজি হিন্দি বাংলা ব্রাই বা ব্রেইল কানাডীয় আদিবাসী চেরোকী কপ্টীয় সিরিলীয় দেবনাগরী ইথিওপীয় জর্জীয় গ্রিক গুজরাটি গুরুমুখী (পাঞ্জাবি) হান (কাঞ্জি, হাঞ্জা, হাঞ্জি) হাঙ্গুল (কোরীয়) হিব্রু হিরাগানা ও কাতাকানা (জাপানি) আ-ধ্ব-ব খমের (ক্যাম্বোডীয়) কন্নড় লাও লাতিন মালয়ালম মঙ্গোলীয় বর্মী ওড়িয়া সিরীয় তামিল তেলুগু থাই তিব্বতি টিফিনাঘ য়ি ঝুয়িন আরও দেখুন গ্নু ইউনিফন্ট তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ The Unicode Consortium Alan Wood's Unicode Resources Contains lists of word processors with Unicode capability; fonts and characters are grouped by type; characters are presented in lists, not grids মুদ্রণবিদ্যা অক্ষর এনকোডিং
https://en.wikipedia.org/wiki/Unicode
Unicode
Unicode, formally The Unicode Standard, is a text encoding standard maintained by the Unicode Consortium designed to support the use of text in all of the world's writing systems that can be digitized. Version 15.1 of the standard defines 149813 characters and 161 scripts used in various ordinary, literary, academic, and technical contexts. Many common characters, including numerals, punctuation, and other symbols, are unified within the standard and are not treated as specific to any given writing system. Unicode encodes thousands of emoji, with the continued development thereof conducted by the Consortium as a part of the standard. Moreover, the widespread adoption of Unicode was in large part responsible for the initial popularization of emoji outside of Japan. Unicode is ultimately capable of encoding more than 1.1 million characters. Unicode has largely supplanted the previous environment of a myriad of incompatible character sets, each used within different locales and on different computer architectures. Unicode is used to encode the vast majority of text on the Internet, including most web pages, and relevant Unicode support has become a common consideration in contemporary software development. The Unicode character repertoire is synchronized with ISO/IEC 10646, each being code-for-code identical with one another. However, The Unicode Standard is more than just a repertoire within which characters are assigned. To aid developers and designers, the standard also provides charts and reference data, as well as annexes explaining concepts germane to various scripts, providing guidance for their implementation. Topics covered by these annexes include character normalization, character composition and decomposition, collation, and directionality. Unicode text is processed and stored as binary data using one of several encodings, which define how to translate the standard's abstracted codes for characters into sequences of bytes. The Unicode Standard itself defines three encodings: UTF-8, UTF-16, and UTF-32, though several others exist. Of these, UTF-8 is the most widely used by a large margin, in part due to its backwards-compatibility with ASCII.
1096
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%9F
ক্রিকেট
ক্রিকেট হচ্ছে ব্যাট ও বলের একটি দলীয় খেলা যাতে এগারোজন খেলোয়াড়বিশিষ্ট দুইটি দল অংশ নেয়। এই খেলাটির উদ্ভব হয় ইংল্যান্ডে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোসহ অন্যান্য দেশগুলোতে এই খেলা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার লাভ করে চলছে। বর্তমানে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৫ দিনের টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ খেলে থাকে। ২০০৫ সাল থেকে জিম্বাবুয়ে স্বেচ্ছায় টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে ২০১১ সালে আবার খেলায় ফিরে আসে। এছাড়া, আরো বেশ কিছু দেশ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসি'র সদস্য। টেস্টখেলুড়ে দেশগুলি ছাড়াও আইসিসি অনুমোদিত আরো দু’টি দেশ অর্থাৎ মোট ১২টি দেশ একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। খেলোয়াড় হিসেবে যিনি ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করেন বা খেলে থাকেন, তিনি ক্রিকেটার নামে পরিচিত। ক্রিকেট খেলা ঘাসযুক্ত মাঠে (সাধারণত ওভাল বা ডিম্বাকৃতির) খেলা হয়, যার মাঝে ২২ গজের ঘাসবিহীন অংশ থাকে, তাকে পিচ বলে। পিচের দুই প্রান্তে কাঠের তিনটি করে লম্বা লাঠি বা স্ট্যাম্প থাকে। ঐ তিনটি স্ট্যাম্পের উপরে বা মাথায় দুইটি ছোট কাঠের টুকরা বা বেইল থাকে। স্ট্যাম্প ও বেইল সহযোগে এই কাঠের কাঠামোকে উইকেট বলে। ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী দু’টি দলের একটি ব্যাটিং ও অপরটি ফিল্ডিং করে থাকে। ব্যাটিং দলের পক্ষ থেকে মাঠে থাকে দুইজন ব্যাটসম্যান। তবে কোন কারণে ব্যাটসম্যান দৌড়াতে অসমর্থ হলে ব্যাটিং দলের একজন অতিরিক্ত খেলোয়াড় মাঠে নামতে পারে। তিনি রানার নামে পরিচিত। ফিল্ডিং দলের এগারজন খেলোয়াড়ই মাঠে উপস্থিত থাকে। ফিল্ডিং দলের একজন খেলোয়াড় (বোলার) একটি হাতের মুঠো আকারের গোলাকার শক্ত চামড়ায় মোড়ানো কাঠের বা কর্কের বল বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ের (ব্যাটসম্যান) উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করে। সাধারণত নিক্ষেপকৃত বল মাটিতে একবার পড়ে লাফিয়ে সুইং করে বা সোজাভাবে ব্যাটসম্যানের কাছে যায়। ব্যাটসম্যান একটি কাঠের ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে ডেলিভারীকৃত বলের মোকাবেলা করে, যাকে বলে ব্যাটিং করা। যদি ব্যাটসম্যান না আউট হয় দুই ব্যাটসম্যান দুই উইকেটের মাঝে দৌড়িয়ে ব্যাটিং করার জন্য প্রান্ত বদল করে রান করতে পারে। বল নিক্ষেপকারী খেলোয়াড়বাদে অন্য দশজন খেলোয়াড় ফিল্ডার নামে পরিচিত। এদের মধ্যে দস্তানা বা গ্লাভস হাতে উইকেটের পিছনে যিনি অবস্থান করেন, তাকে বলা হয় উইকেটরক্ষক। যে দল বেশি রান করতে পারে সে দল জয়ী হয়। একদিনের ক্রিকেটে জয়লাভ দু'ধরনের হয়:- (ক) রানের ব্যবধানে এবং (খ) উইকেটের ব্যবধানে। রানের ব্যবধানে জয়লাভের উদাহরণ হচ্ছে - প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ দল ৫০ ওভারে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ৩১১ রান করে। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া দল ৪৭ ওভারে সবক'টি উইকেট বা ১০ উইকেটের বিনিময়ে ২১০ রান করে। ফলে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০১ রানে জয়ী হবে। উইকেটের ব্যবধানে জয়লাভের উদাহরণ হচ্ছে - প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া দল ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রান করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ দল ৩৭•৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৩৯ রান করে। ফলে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ উইকেটে জয়ী হবে। কয়েকশ’ বছর ধরে ক্রিকেট একটি দলীয় খেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটির আধুনিক রূপের সূত্রপাত হয় ইংল্যান্ডে এবং কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যেই এই খেলা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন: বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও আফগানিস্তানে ক্রিকেটই অধিক জনপ্রিয় খেলা। বিভিন্ন অঞ্চল যেমনঃ ইংল্যান্ড ও ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, বারমুডা এবং ক্যারিবিয়ানের ইংরেজিভাষী দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহে ক্রিকেট একটি প্রধান খেলা। ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলো একত্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে বিশ্বে ক্রিকেট খেলে থাকে। নেদারল্যান্ডস, কেনিয়া, নেপাল ও আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশে বিভিন্ন অ-পেশাদার ক্রিকেট ক্লাব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া একশর বেশি ক্রিকেট-খেলুড়ে দেশ রয়েছে যারা বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইসিসি'র সদস্য। ক্রিকেটে বিভিন্ন সময়ে অনেক রাজনৈতিক বিতর্ক উঠেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত হচ্ছে ব্যাসিল ডি’অলিভিয়েরা কেলেঙ্কারি যার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্ব ক্রিকেট থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের বডিলাইন সিরিজ এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে আন্ডারআর্ম বোলিংয়ের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। বর্ণনা ব্যাটিং দলের উদ্দেশ্য হচ্ছে যত বেশি ও যত দ্রুত পারা যায় রান করা। রান হয় যখন উভয় ব্যাটসম্যান উইকেটে নিজেদের মধ্যে প্রান্ত পরিবর্তন করেন। (সাধারণত ব্যাটসম্যান বল মোকাবেলার পরই রান নিতে চেষ্টা করেন, তবে এটি জরুরি নয়।) এছাড়া ব্যাটসম্যান যদি বলকে মাঠের সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারেন তখনও রান হয়। যদি মাঠ স্পর্শ না করে বল সীমানার বাইরে চলে যায় তবে ছয় রান এবং মাঠ স্পর্শ করে সীমানা পার হলে চার রান দেয়া হয়। এছাড়া বোলার নিয়ম মোতাবেক বল না করলেও রান দেয়া হয়। বোলিং দলের উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যাটিং দলের সব ব্যাটসম্যানদের আউট (উইকেট, অথবা ডিসমিসাল নামেও পরিচিত) করে দেয়া। ব্যাটসম্যান বিভিন্নভাবে আউট হতে পারে। সবচেয়ে ভাল পথ হচ্ছে বোলারের এমনভাবে বল নিক্ষেপ করা যাতে ব্যাটসম্যান বলকে ঠিকমত খেলতে পারে না এবং বল স্ট্যাম্পে আঘাত করে বেইল ফেলে দেয়। এ ধরনের আউটকে বোল্ড বলে। ব্যাটসম্যানেরা যখন দৌড়ে রান নেয় তখন ফিল্ডাররা বল নিক্ষেপ করে ব্যাটসম্যান কর্তৃক ঠিকমত ক্রিজে পোঁছার আগেই স্ট্যাম্প থেকে বেইল ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। এটি রান আউট নামে পরিচিত। অন্যান্য আউট করার পদ্ধতির মধ্যে আছে ব্যাটসম্যানের মোকাবেলাকৃত বল মাটিতে পরার আগেই ক্যাচ ধরা যা কট আউট নামে পরিচিত এবং ব্যাটসম্যানের পায়ে বল লাগানোর ফলে এল.বি.ডব্লিউ. বা লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে আউট করা হয়। কোন বল মোকাবেলা ও রান নেয়ার পর ব্যাটসম্যান যখন আর কোন রান করার চেষ্টা করেন না তখন বলকে "মৃত (dead)" ঘোষণা করা হয় এবং এর পরিবর্তে আরেকটি বল নিক্ষেপ করা হয়। খেলাটি ছয়টি (বৈধ) বলের ওভারে খেলা হয়। বিভিন্ন ধরনের খেলায় ওভারসংখ্যার বিভিন্নতা রয়েছে। ওভার শেষে ব্যাটিং ও বোলিং করা দল প্রান্ত বদল করে এবং ফিল্ডিং দলকে বোলার পরিবর্তন করতে হয়। এসময় আম্পায়ারদ্বয় তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেন। একজন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেলে তার স্থানে আরেকজন ব্যাটসম্যান ব্যাট করতে নামে। যখন ব্যাটিং দলের দশম ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায় তখন সে দলের ইনিংস শেষ হয়। দশ জন ব্যাটসম্যান আউট হওয়াকে বলে অল আউট। (সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইনিংস শেষ হয় যদি কোন দল অলআউট হয় অথবা দল পূর্বনির্ধারিত সংখ্যক ওভার খেলে ফেলে।) ইনিংস শেষে ব্যাটিং করা দল ফিল্ডিং এবং ফিল্ডিং করা দল ব্যাটিং করতে নামে। সাধারণত যে দল বেশি রান করে সে দল বিজয়ী হয়। তবে বিভিন্ন অবস্থায় জয়ের সংজ্ঞা বিভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় বৃষ্টির কারণে সীমিত ওভারের খেলার ওভার সংখ্যা কমিয়ে আনা হতে পারে, অথবা ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি অবলম্বন করে বিজয়ী নির্ধারন করা হতে পারে। ফলাফল যদি শেষে ব্যাট করা দলের বিপক্ষ দলের করা রানের চেয়ে কম রান করে সবাই আউট হয়ে যায় তবে সে দল "(n) রানে হেরেছে" বলা হয় (যেখানে (n) দুই দলের রানের পার্থক্য নির্দেশ করে)। যদি শেষে ব্যাট করা দল সবাই আউট হওয়ার আগেই বিপক্ষ দলের করা রানের চেয়ে বেশি রান করে তখন সে দল "(n) উইকেটে জিতেছে" বলা হয় (যেখানে (n) ১০ ও জয়ী দলের কতটি উইকেট পড়েছে তার পার্থক্য নির্দেশ করে)। যেসব খেলায় প্রতি দলের দু'টি ইনিংস থাকে তাদের ক্ষেত্রে যদি কোন দল প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংস মিলিয়ে বিপক্ষ দলের প্রথম ইনিংসের সমান রান করতে না পারে তবে এবং ২য় ইনিংসে সবাই আউট হয়ে যায় তবে বিপক্ষ দলকে আর ব্যাট করতে হয় না ও তারা ইনিংস ও (n) রানে জিতেছে বলা হয় (যেখানে (n) দুই দলের রানের পার্থক্য নির্দেশ করে)। যদি সব ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর দুই দলের রান সমান হয় তাহলে টাই হয়। প্রতি দলে দুই ইনিংসের খেলাতে টাই প্রায় দেখাই যায় না। গতানুগতিক খেলাতে যদি বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কোন দল জিততে না পারে তবে খেলাটিকে ড্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যেসব খেলায় একটি দল কেবল একটি ইনিংস খেলে সেসব খেলাতে সাধারণত নির্দিষ্ট সংখ্যক ওভারের বাধ্যবাধকতা দেয়া থাকে। এগুলো সীমিত ওভারের অথবা একদিনের খেলা হিসেবে পরিচিত। এতে যে দল বেশি রান করে তারাই জিতে এবং এই খেলার ফলাফলে উইকেটের কোন মূল্য নেই বলে এসব খেলায় ড্র হয় না। যদি আবহাওয়ার কারণে এই খেলায় সাময়িক বিঘ্ণ ঘটে তাহলে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি নামে একটি সূত্রের মাধ্যমে খেলার জেতার লক্ষ্যমাত্রা পুনঃনির্ধারিত হয়। একদিনের খেলার ফলাফল অমীমাংসিত হতে পারে যদি কোন দলই একটি সর্বনিম্ন সংখ্যক ওভার খেলতে না পারে। আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণেই সাধারণত এ ঘটনা ঘটে। ক্রিকেটের আইন ক্রিকেট খেলায় ৪২টি ক্রিকেট আইন আছে, যা বিভিন্ন প্রধান ক্রিকেট-খেলুড়ে দেশের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে প্রণয়ন করেছে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব। কোন বিশেষ খেলাতে দলগুলো সর্বসম্মতিক্রমে কোন আইন পরিবর্তন বা লঙ্ঘন করতে পারে। অন্যান্য আইনগুলো প্রধান আইনের সম্পূরক এবং বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলাতে ব্যবহৃত হয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, সাম্প্রতিক সময়ে সীমিত ওভারের খেলায় পুরনো আদল থেকে বেরিয়ে ক্রিকেটকে আরো আকর্ষনীয় করতে ফিল্ডিং দলের ওপর কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হচ্ছে। খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা খেলোয়াড় একটি দল এগারজন খেলোয়াড় নিয়ে গঠিত হয়। খেলার দক্ষতার উপর নির্ভর করে এদেরকে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান অথবা বোলার হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। যে-কোন ভারসাম্যপূর্ণ দলে সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় জন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান এবং চার থেকে পাঁচ জন বিশেষজ্ঞ বোলার থাকে। প্রতি দলেই একজন বিশেষজ্ঞ উইকেট রক্ষক থাকে। সাম্প্রতিককালে বিশেষজ্ঞ ফিল্ডারের ধারণা চালু হয়েছে এবং সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রতি দলে একজন অধিনায়ক থাকেন যিনি মাঠে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। যে খেলোয়াড় বোলিং এবং ব্যাটিং উভয় ক্ষেত্রেই সমান পারদর্শী তিনি অল-রাউন্ডার হিসেবে পরিচিত। যিনি ব্যাটসম্যান ও উইকেটরক্ষণের কাজে পারদর্শী তিনি উইকেট-রক্ষক কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত, যা কখনও কখনও বিশেষ ধরনের অল-রাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়। সত্যিকারের অল-রাউন্ডার দলের মূল্যবান খেলোয়াড় তবে এদের দেখা কমই মেলে। অধিকাংশ খেলোয়াড়ই হয় ব্যাটিং, না হয় বোলিংয়েই বেশি মনোযোগ দেন। আম্পায়ার প্রতি খেলায় মাঠে দুইজন আম্পায়ার থাকেন যারা খেলা পরিচালনা করেন। একজন আম্পায়ার (ফিল্ড আম্পায়ার) বোলার যে প্রান্ত থেকে বল করেন সেই প্রান্তে উইকেটের পিছনে অবস্থান করেন। মাঠে তিনিই অধিকাংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অন্য আম্পায়ার (স্কয়ার লেগ আম্পায়ার) মাঠে স্কয়ার লেগ অবস্থানে থাকেন, যাতে তিনি ব্যাটসম্যানকে পাশ থেকে দেখতে পারেন এবং তিনি যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে ফিল্ড আম্পায়ারকে সাহায্য করেন। পেশাদার খেলায় মাঠের বাইরে একজন অতিরিক্ত আম্পায়ার থাকেন যিনি তৃতীয় আম্পায়ার বা থার্ড আম্পায়ার নামে পরিচিত। মাঠের আম্পায়ারেরা কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রয়োজনবোধে তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য নিতে পারেন যিনি টেলিভিশনে পুণঃপ্রচার দেখে সিদ্ধান্ত নেন। আন্তর্জাতিক খেলাগুলোতে মাঠের বাইরে একজন ম্যাচ রেফারি থাকেন, যিনি খেলাটি ক্রিকেটের আইনানুযায়ী হচ্ছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করেন। স্কোরার সাধারণত প্রতিটি দল একজন করে দুইজন স্কোরার নিয়োগ করে থাকে। ক্রিকেটের আইন অনুসারে অফিসিয়াল স্কোরার কত রান হয়েছে, কত উইকেট পড়েছে, এবং কত ওভার খেলা হয়েছে তা লিপিবদ্ধ করে রাখে। তারা আম্পায়ারের সংকেত দেখে এবং খেলার বিরতিতে আম্পায়ারের সাথে স্কোর মিলিয়ে দেখে তা ঠিক আছে কিনা। বাস্তবে স্কোরাররা আরো অনেক ব্যাপার লিপিবদ্ধ করে, যেমনঃ বোলারের বোলিং পরিসংখ্যান, কোন দল কি হারে বোলিং করেছে এবং দলগুলোর বিভিন্ন গড় ও পরিসংখ্যান ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় গণমাধ্যমকে বিভিন্ন রেকর্ড ও পরিসংখ্যান জানতে হয়, তাই ধারাভাষ্যকার, সাংবাদিক ও সম্প্রচারের জন্য বিভিন্ন সময়ে আনঅফিসিয়াল স্কোরার রাখা হয়। অফিসিয়াল স্কোরাররা মাঝে মাঝে ভুল করে, তবে আম্পায়ারের ভুলের সাথে এটির তফাৎ হলো ঘটনার পর এটিকে সংশোধন করা যায়। খেলার মাঠ ক্রিকেট মাঠ একটি বিশাল বৃত্তাকার অথবা ডিম্বাকার ঘাসবহুল জমিনের উপর নির্মিত হয়। যদিও মাঠের আকারের বেলায় সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই তবে এটির ব্যাস সাধারণত ৪৫০ ফুট (১৩৭ মি) থেকে ৫০০ ফুট (১৫০ মি) এর মধ্যে হয়ে থাকে। অধিকাংশ মাঠেই দড়ি দিয়ে মাঠের পরিসীমা ঘেরা দেয়া থাকে যা সীমানা নামে পরিচিত। পিচ ক্রিকেট খেলার বেশিরভাগ ঘটনা ঘটে থাকে মাঠের মাঝে যা সাধারণত ছোট করে ছাটা ঘাস অথবা ঘাসবিহীন চতুর্ভুজাকৃতির অংশ। এটিকে পিচ বলা হয়। পিচের পরিমাপ হচ্ছে ১০ × ৬৬ ফুট (৩.০৫ × ২০.১২ মি)। পিচের দুইপ্রান্তে তিনটি করে খাড়া কাঠের দন্ড মাটিতে গাঁথা থাকে, যা স্টাম্প নামে পরিচিত। স্টাম্পের উপরে দুটি কাঠের টুকরা থাকে যা বেইল নামে পরিচিত।, তিনটি স্ট্যাম্পের উপর দুটি বেইল স্ট্যাম্পগুলোকে সংযুক্ত করে। ক্রিকেটে স্ট্যাম্পে লেগে আউট হওয়ার ক্ষেত্রে যেকোন একটি বেইল ফেলা বাধ্যতামূলক। তিনটি স্ট্যাম্প ও দুটি বেইলের সমষ্টিগত সেট নামে উইকেট নামে পরিচিত। পিচের একপ্রান্তের নাম ব্যাটিং প্রান্ত, যে প্রান্তে ব্যাটসম্যান দাঁড়ায় এবং অপর প্রান্তের নাম বোলিং প্রান্ত যেখান থেকে বোলার দৌড়ে এসে বল করে। দুটি উইকেটের সংযোগকারী রেখার মাধ্যমে মাঠটি দুটি অংশে বিভক্ত হয়; তার মধ্যে যেদিকে ব্যাটসম্যান ব্যাট ধরেন সেদিকটিকে অফ সাইড এবং যে দিকে ব্যাটসম্যানের পা থাকে সেদিকটিকে বলে অন সাইড। অন্যভাবে বলা যায় ডান-হাতি ব্যাটসম্যানের ডান দিক এবং বাম-হাতি ব্যাটসম্যানের বাম দিক হচ্ছে অফ সাইড এবং অন্যটি অন সাইড বা লেগ সাইড। পিচে যে রেখা আঁকা থাকে তাকে বলে ক্রিজ। ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন কিনা তা যাচাই করার জন্য ক্রিজ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বোলার বৈধ বল করেছেন কি না তা যাচাইয়ের জন্যও ক্রিজ ব্যবহৃত হয়। খেলোয়াড়ের অবস্থান ম্যাচের গঠন টস খেলার শুরুতে মুদ্রার নিক্ষেপের মাধ্যমে কোন দল আগে ব্যাটিং করবে এবং কোন দল বোলিং করবে সেটা নির্ধারণ করা হয়। একে টস বলে। ওভার প্রতি ৬ বৈধ বলে একটি ওভারের সফল সমাপ্তি ঘটে। ছয়টি বল করার পর আম্পায়ার ‘ওভার’ বলে থাকেন; তাই ওভার নামকরণ করা হয়েছে। পিচের একপ্রান্তে অবস্থান নিয়ে বোলার বোলিং করেন। ওভার শেষে উইকেটের অপর প্রান্ত থেকে অন্য আরেকজন বোলার বল করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। এরফলে ফিল্ডিংয়ের অবস্থান পরিবর্তনসহ স্কয়ার লেগে অবস্থানকারী আম্পায়ারও পরিবর্তন হয়ে উইকেটের পিছনে অবস্থান করেন। তবে, ব্যাটসম্যান তার নিজ অবস্থানে থেকেই বোলারকে মোকাবেলা করে থাকেন। তখন ব্যাটসম্যান ‘স্ট্রাইকার’ ও পিচের অন্য প্রান্তে অবস্থানকারী ব্যাটসম্যান ‘নন-স্ট্রাইকার’ নামে পরিচিত। কোনো বোলার পরপর ২ ওভার বোলিং করতে পারেন না। কিন্তু একপ্রান্তে থেকে তিনি অসংখ্য ওভার করতে সক্ষম। ৫০-ওভারের একদিনের আন্তর্জাতিকে একজন বোলার সর্বোচ্চ ২০% বা ১০ ওভার এবং ২০-ওভারের টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ২০% বা ৪ ওভার করতে পারে। তবে, টেস্ট ক্রিকেটে ওভার সংখ্যা অসীম থাকায় ওভার সংখ্যার কোন সীমারেখা নেই। পাওয়ার প্লে ১৯৯১ সালে প্রথম এ নিয়ম চালু করা হয় তবে সাম্প্রতিক সময় এ নিয়মের ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এটি শুধুমাত্র একদিনের ম্যাচে প্রযোজ্য। প্রথম ১০ ওভারের পাওয়ার প্লেতে সর্বোচ্চ দুজন ফিল্ডার ৩০গজ বৃত্তের বাইরে থাকতে পারে। এরপর ১৬ থেকে ৪০ ওভারের মধ্যে যেকোনো সময় ব্যাটিং দল ৫ ওভার এবং বোলিং দল ৫ ওভার পাওয়ার প্লে বেছে নিতে পারে,এ সময় সর্বোচ্চ ৩ জন ৩০ গজের বাইরে থাকতে পারে। ইনিংসের পরিসমাপ্তি খেলার সময় ব্যাটিং ও রান করা ব্যাটিং রান করা অতিরিক্ত বোলিং এবং আউট বোলিং ব্যাটসম্যানের আউট হওয়া ফিল্ডিং ও উইকেট-রক্ষণ অন্যান্য ভূমিকা অধিনায়ক রানার যদি কোন ব্যাটসম্যান ব্যাট করার জন্য সক্ষম কিন্তু দৌড়াতে অসমর্থ হয় তবে আম্পায়ার ও ফিল্ডিং দলের অধিনায়ক ব্যাটিং দলের আরেক খেলোয়াড়কে অসমর্থ খেলোয়াড়ের রানার হিসেবে মাঠে নামার অনুমতি দেন। সম্ভব হলে রানারকে অবশ্যই আগে ব্যাট করে আউট হয়েছে এমন হতে হয়। রানারের একমাত্র কাজ উইকেটের মাঝে দুর্বল খেলোয়াড়ের বদলে দৌড়ানো। রানারকে অবশ্যই যে ব্যাটসম্যানের হয়ে মাঠে নেমেছে, সেই ব্যাটসম্যানের ব্যবহৃত সকল উপকরন ধারণ করতে হয়। ২০১১ সালের জুনে, আইসিসির এক ঘোষণার ফলে ১ অক্টোবর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রানার প্রথাটি বাতিল হয়ে যায়। বদলী খেলোয়াড় টেষ্ট ক্রিকেটের সাম্প্রতিক নিয়মে (২০১৯) আইসিসি অনুমোদন করেছে কোনো খেলোয়াড়ের মাথায় আঘাত লাগলে তার বদলে আরেকজন পূর্ণ খেলোয়াড় নামতে পারে।কিন্তু কোনো খেলোয়াড় বিশ্রামের জন্য মাঠ থেকে উঠে বদলি খেলোয়াড় নামলে সে শুধু ফিল্ডিং করতে পারে। ইতিহাস এর তেমন কোনো ইতিহাস জানা যায়নি। তবে প্রথম ইংল্যান্ডে এ খেলা হয় বলে জানা যায়। ক্রিকেটের ধরন বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের ক্রিকেট খেলা হয়; আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পেশাদার ক্রিকেটের মধ্যে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আই উল্লেখযোগ্য। টেস্ট ক্রিকেট টেস্ট ক্রিকেট সাধারণত ৫ দিনে হয়। প্রতি দল দু’টি করে ইনিংস খেলে। এ খেলায় ৪ রকমভাবে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। একদিনের আন্তর্জাতিক একদিনের আন্তর্জাতিকে দুই দল ৫০ ওভার করে ব্যাটিং করে থাকে। এ খেলাগুলোয় সাদা রঙের বল ব্যবহার করা হয়। টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার নবীনতম সংস্করণ।এখানে প্রতিটি দল ২০ ওভার করে ব্যাটিং করে। প্রথম-শ্রেণীর খেলা ক্রিকেটের অন্যান্য ধরন আন্তর্জাতিক গঠন আরও দেখুন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Explanation of Cricket Cricket Explained (An American Viewpoint) Wisden Cricinfo CricketArchive International Cricket Council ICC World Cup ক্রিকেট ইংল্যান্ডে উদ্ভাবিত ক্রীড়া বল খেলা প্রাক্তন গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া দলগত ক্রীড়া বল এবং ব্যাটের ক্রীড়া
https://en.wikipedia.org/wiki/Cricket
Cricket
Cricket is a bat-and-ball game that is played between two teams of eleven players on a field, at the centre of which is a 22-yard (20-metre) pitch with a wicket at each end, each comprising two bails balanced on three stumps. Two players from the batting team (the striker and nonstriker) stand in front of either wicket holding bats, with one player from the fielding team (the bowler) bowling the ball towards the striker's wicket from the opposite end of the pitch. The striker's goal is to hit the bowled ball with the bat and then switch places with the nonstriker, with the batting team scoring one run for each exchange. Runs are also scored when the ball reaches or crosses the boundary of the field or when the ball is bowled illegally. The fielding team tries to prevent runs from being scored by dismissing batters (so they are "out"). Means of dismissal include being bowled, when the ball hits the striker's wicket and dislodges the bails, and by the fielding side either catching the ball after it is hit by the bat but before it hits the ground or hitting a wicket with the ball before a batter can cross the crease in front of the wicket. When ten batters have been dismissed, the innings ends and the teams swap roles. Forms of cricket range from Twenty20 (also known as T20), with each team batting for a single innings of 20 overs (each "over" being a set of 6 fair opportunities for the batting team to score) and the game generally lasting three to four hours, to Test matches played over five days. Traditionally, cricketers play in all-white kit, but in limited overs cricket, they wear club or team colours. In addition to the basic kit, some players wear protective gear to prevent injury caused by the ball, which is a hard, solid spheroid made of compressed leather with a slightly raised sewn seam enclosing a cork core layered with tightly wound string. The earliest known definite reference to cricket is to it being played in South East England in the mid-16th century. It spread globally with the expansion of the British Empire, with the first international matches in the second half of the 19th century. The game's governing body is the International Cricket Council (ICC), which has over 100 members, twelve of which are full members who play Test matches. The game's rules, the Laws of Cricket, are maintained by Marylebone Cricket Club (MCC) in London. The sport is followed primarily in South Asia, Australia, New Zealand, the United Kingdom, Southern Africa, and the West Indies. Women's cricket, which is organised and played separately, has also achieved international standard. The most successful side playing international cricket is Australia, which has won eight One Day International trophies, including six World Cups, more than any other country, and has been the top-rated Test side more than any other country.
1098
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%20%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF
বাংলা সাহিত্য
বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্য নামে পরিচিত। আনুমানিক খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার সূত্রপাত হয়। খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত বৌদ্ধ দোহা-সংকলন চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। আবিষ্কারক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আরও তিনটি গ্রন্থের সঙ্গে চর্যাগানগুলো নিয়ে সম্পাদিত গ্রন্থের নাম দেন "হাজার বছরের পুরনো বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোহা "। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য ছিল কাব্যপ্রধান। ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম ও বাংলার লৌকিক ধর্মবিশ্বাসগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এই সময়কার বাংলা সাহিত্য। ইসলামি ধর্মসাহিত্য,পীরসাহিত্য,বাউল পদাবলি,পবিত্র কুরআনের বঙ্গানুবাদ,মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলি, শাক্তপদাবলি, বৈষ্ণব সন্তজীবনী, রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবতের বঙ্গানুবাদ, নাথসাহিত্য ইত্যাদি ছিল এই সাহিত্যের মূল বিষয়। বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত হয় খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণের যুগে কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। এই সময় থেকে ধর্মীয় বিষয়বস্তুর বদলে মানুষ, মানবতাবাদ ও মানব-মনস্তত্ত্ব বাংলা সাহিত্যের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভাগের পর বাংলা সাহিত্যও দুটি ধারায় বিভক্ত হয়: ঢাকা-কেন্দ্রিক বাংলাদেশের সাহিত্য ও কলকাতা-কেন্দ্রিক পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য। পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য ভারতীয় সাহিত্যের একটি শাখা। বর্তমানে বাংলা সাহিত্য বিশ্বের একটি অন্যতম, সমৃদ্ধ সাহিত্যধারা হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। যুগ বিভাজন বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের ইতিহাস প্রধানত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত: আদিযুগ বা প্রাচীন যুগ (আনুমানিক ৬৫০ খ্রি. মতান্তরে ৯৫০ খ্রি.–১২০০ খ্রি.) মধ্যযুগ (১২০১ খ্রি.–১৮০০ খ্রি.) আধুনিক যুগ (১৮০১ খ্রি.–বর্তমান কাল) প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজনৈতিক ইতিহাসের মতো নির্দিষ্ট সালতারিখ অনুযায়ী সাহিত্যের ইতিহাসের যুগ বিভাজন করা সম্ভব নয়। যদিও সাহিত্যের ইতিহাস সর্বত্র সালতারিখের হিসেব অগ্রাহ্য করে না। সাহিত্যকর্মের বৈচিত্র্যে ও বৈশিষ্ট্যে নির্দিষ্ট যুগের চিহ্ন ও সাহিত্যের বিবর্তনের ধারাটি বিশ্লেষণ করেই সাহিত্যের ইতিহাসে যুগবিভাগ করা হয়ে থাকে। আদিযুগ বা প্রাচীন যুগ বাংলা সাহিত্যের উন্মেষের পূর্বে বাংলায় সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অবহট্‌ঠ ভাষায় সাহিত্য রচনার রীতি প্রচলিত ছিল। এই সাহিত্যের মাধ্যমেই বাংলা সাহিত্যের আদি অধ্যায়ের সূচনা হয়। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তুর্কি আক্রমণের বহু পূর্বেই বাঙালিরা একটি বিশেষ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উন্মেষ ঘটে বাংলা ভাষারও। তবে প্রথম দিকে বাংলায় আর্য ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি ও অনার্য সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটেনি। সংস্কৃত ভাষায় লেখা অভিনন্দ ও সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত, শরণ, ধোয়ী, গোবর্ধন, উমাপতি ধরের কাব্যকবিতা, জয়দেবের গীতগোবিন্দম্, কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয় ও সদুক্তিকর্ণামৃত নামক দুটি সংস্কৃত শ্লোকসংগ্রহ; এবং অবহট্‌ঠ ভাষায় রচিত কবিতা সংকলন প্রাকৃত-পৈঙ্গল বাঙালির সাহিত্য রচনার আদি নিদর্শন। এই সকল গ্রন্থ বাংলা ভাষায় রচিত না হলেও সমকালীন বাঙালি সমাজ ও মননের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। পরবর্তীকালের বাংলা বৈষ্ণব সাহিত্যে গীতগোবিন্দম্ কাব্যের প্রভাব অনস্বীকার্য। বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন হল চর্যাপদ। খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত চর্যা পদাবলি ছিল সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের সাধনসংগীত। আধুনিক ভাষাতাত্ত্বিকগণ বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণের সাহায্যে প্রমাণ করেছেন যে চর্যার ভাষা প্রকৃতপক্ষে হাজার বছর আগের বাংলা ভাষা। সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্র এই পদগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছে। সাহিত্যমূল্যের বিচারে কয়েকটি পদ কালজয়ী। মধ্যযুগ মধ্যযুগ ১২০০ থেকে ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সম্প্রসারিত। মধ্যযুগের প্রথম নিদর্শন বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’। আনুমানিক চৌদ্দ শতকের শেষার্ধে বা পনেরো শতকের প্রথমার্ধে বড়ু চণ্ডীদাস রাধাকৃষ্ণের প্রেমকাহিনি অবলম্বনে এ কাব্য রচনা করেন। এ সময় মৈথিলি কবি বিদ্যাপতি ব্রজবুলি ভাষায় রাধাকৃষ্ণের প্রেমবিষয়ক পদ রচনা করেছিলেন। মধ্যযুগের প্রথম মুসলমান কবি শাহ মুহম্মদ সগীর পঞ্চদশ শতকে প্রণয়োপখ্যান জাতীয় কাব্য “ইউসুফ-জোলেখা” রচনা করেন। এর বাইরে অনুবাদসাহিত্য মধ্যযুগের অনেকখানি অংশজুড়ে আছে। এ ধারার সূত্রপাত হয় কবি কৃত্তিবাস কর্তৃক রামায়ণের বঙ্গানুবাদের মাধ্যমে। পরবর্তীতে বাংলায় আরও অনূদিত হয়েছে অসংখ্য গ্রন্থ। মধ্যযুগের বিশাল পরিসর জুড়ে ছিলো মঙ্গলকাব্য। দেবদেবীর মাহাত্ম্যসূচক এই কাব্যধারার সূত্রপাত হয় পনের শতকে। তবে ষোল শতকে এর সর্বাধিক প্রসার ঘটে। ধর্মমঙ্গল, মনসামঙ্গল, শিবমঙ্গল বা শিবায়ন, চণ্ডীমঙ্গল ইত্যাদি এ পর্যায়েরই নানা শাখা। এই ধারার অন্যতম কবি মাণিক দত্ত, কানাহরি দত্ত, বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস পিপিলাই, কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর প্রমুখ। শ্রীচৈতন্যদেবের (১৪৮৬-১৫৩৩) আবির্ভাবের ফলে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ সমৃদ্ধির পথে অনেকখানি এগিয়ে যায়। মধ্যযুগেই আরাকানের রাজসভায় বাংলা সাহিত্যের চর্চা আরম্ভ হয়। এছাড়া শাক্ত পদাবলী, নাথসাহিত্য, বাউল ও অপরাপর লোকসঙ্গীত, ময়মনসিংহ গীতিকা, পূর্ববঙ্গ-গীতিকা ইত্যাদি অমূল্য সাহিত্য মধ্যযুগেরই সৃষ্টি। মধ্যযুগীয় বাংলা অনুবাদ সাহিত্য মধ্যযুগীয় বাংলা অনুবাদ সাহিত্য মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃত অঙ্গন জুড়ে অনুবাদ সাহিত্যের চর্চা হয়েছিল এবং পরিণামে এ সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধিসাধনে অনুবাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সকল সাহিত্যের পরিপুষ্টিসাধনে অনুবাদমূলক সাহিত্যকর্মের বিশিষ্ট ভূমিকা আছে। বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয় না। সমৃদ্ধতর নানা ভাষা থেকে বিচিত্র নতুন ভাব ও তথ্য সঞ্চয় করে নিজ নিজ ভাষার বহন ও সহন ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলাই অনুবাদ সাহিত্যের প্রাথমিক প্রবণতা। উন্নত ও সমৃদ্ধ ভাষা-সাহিত্যের সান্নিধ্যে এলে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিশব্দ তৈরি করা সম্ভব হয়, অন্য ভাষা থেকে প্রয়োজনীয় শব্দও গ্রহণ করা যায়। অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বক্তব্য আয়ত্তে আসে। ভাষা ও সাহিত্যের যথার্থ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্পদশালী ভাষায় উৎকর্ষপূর্ণ সাহিত্যসৃষ্টির অনুবাদ একটি আবশ্যিক উপাদান। জ্ঞানবিজ্ঞানের বিষয়ের বেলায় শুদ্ধ অনুবাদ অভিপ্রেত। কিন্তু সাহিত্যের অনুবাদ শিল্পসম্মত হওয়া আবশ্যিক বলেই তা আক্ষরিক হলে চলে না। ভিন্ন ভাষার শব্দ সম্পদের পরিমাণ, প্রকাশক্ষমতা ও বাগভঙ্গি অনুযায়ী ভিন্ন ভাষায় ব্যক্ত কথায় সংকোচন, প্রসারণ, বর্জন ও সংযোজন আবশ্যিক হয়। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে যে অনুবাদের ধারাটি সমৃদ্ধি লাভ করে তাতে সৃজনশীল লেখকের প্রতিভা কাজ করেছিল। সে কারণে মধ্যযুগের এই অনুবাদকর্ম সাহিত্য হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। ত্রয়োদশ শতাব্দী: বাংলা সাহিত্যের "অন্ধকার যুগ" বাংলা সাহিত্যের ১২০১-১৩৫০ খ্রি. পর্যন্ত সময়কে “অন্ধকার যুগ” বা “বন্ধ্যা যুগ” বলে কেউ কেউ মনে করেন। হুমায়ুন আজাদ তার “লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী” গ্রন্থে (পৃ. ১৭) লিখেছেন- “১২০১ থেকে ১৩৫০ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রচিত কোন সাহিত্য কর্মের পরিচয় পাওয়া যায়না বলে এ-সময়টাকে বলা হয় ‘অন্ধকার যুগ’। পণ্ডিতেরা এ-সময়টাকে নিয়ে অনেক ভেবেছেন, অনেক আলোচনা করেছেন, কিন্তু কেউ অন্ধকার সরিয়ে ফেলতে পারেন নি।এ- সময়টির দিকে তাকালে তাই চোখে কোন আলো আসেনা, কেবল আঁধার ঢাকা চারদিক।” কিন্তু, ওয়াকিল আহমদ তাঁর ‘বাংলা সাহিত্যের পুরাবৃত্ত’ (পৃ. ১০৫)-এ লিখেছেন- “বাংলা সাতিহ্যের কথিত ‘অন্ধকার যুগ’ মোটেই সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্বের যুগ ছিল না। ধর্ম -শিক্ষা শিল্প চর্চার দায়িত্ব যাদের উপর ন্যস্ত ছিল, তারা সীমিত আকারে হলেও শিক্ষা সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। তবে, কি হিন্দু কি মুসলমান কেউ লোকভাষা বাংলাকে গ্রহণ করেননি। বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন না থাকার এটাই মুখ্য কারণ।” এসময়ের সাহিত্য নিদর্শন: ১. প্রাকৃত ভাষার গীতি কবিতার সংকলিত গ্রন্থ ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’ ২. রামাই পণ্ডিত রচিত ‘শূন্যপুরাণ’ (গদ্যপদ্য মিশ্রিত) ৩. হলায়ুধ মিশ্র রচিত ‘সেক শুভোদয়া’ (গদ্যপদ্য মিশ্রিত) ৪. ডাক ও খনার বচন ‘নিরঞ্জনের উষ্মা’ শূন্যপুরাণ এর অন্তর্গত একটি কবিতা। আধুনিক যুগ মূলত বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগ নিয়ে মত পার্থক্য থাকলেও,মোটামুটি ভাবে ১৭৬০ খ্রীষ্টাব্দে ভারত চন্দ্রের মৃত্যুর পর থেকেই বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের সূত্রপাত বলে নানা সমালোচক মতপ্রকাশ করেছেন। কালের দিক থেকে আধুনিক যুগকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করা যায়- ১৭৬০-১৭৯৯খ্রিঃ(আধুনিক যুগের প্রথম পর্ব) ১৮০০-১৮৫৮খ্রিঃ(আধুনিক যুগের দ্বিতীয় পর্ব) ১৮৫৯-১৯০০খ্রিঃ(আধুনিক যুগের তৃতীয় পর্ব) ১৯০১-১৯৪৭খ্রিঃ(আধুনিক যুগের চতুর্থ পর্ব) ১৯৪৮-২০০০খ্রিঃ(আধুনিক যুগের পঞ্চম পর্ব) ২০০১খ্রিঃ- বর্তমানকাল(আধুনিক যুগের ষষ্ঠ পর্ব) বিভিন্ন সময়ের বিশেষায়িত সাহিত্যধারা-সমূহ চর্যাপদ চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম কাব্য তথা সাহিত্য নিদর্শন। নব্য ভারতীয় আর্যভাষারও প্রাচীনতম রচনা এটি। খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ়ার্থ সাংকেতিক রূপবন্ধে ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তারা পদগুলি রচনা করেছিলেন। বাংলা সাধন সংগীতের শাখাটির সূত্রপাতও এই চর্যাপদ থেকেই। এই বিবেচনায় এটি ধর্মগ্রন্থ স্থানীয় রচনা। একই সঙ্গে সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্রাবলি এই পদগুলিতে উজ্জ্বল। এর সাহিত্যগুণ আজও চিত্তাকর্ষক। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। চর্যার প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন বড়ুচণ্ডীদাস নামক জনৈক মধ্যযুগীয় কবি রচিত রাধাকৃষ্ণের প্রণয়কথা বিষয়ক একটি আখ্যানকাব্য। ১৯০৯ সালে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ বাঁকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রাম থেকে এই কাব্যের একটি পুথি আবিষ্কার করেন। ১৯১৬ সালে তারই সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামে পুথিটি প্রকাশিত হয়। যদিও কারও কারও মতে মূল গ্রন্থটির নাম ছিল শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ। কৃষ্ণের জন্ম, বৃন্দাবনে রাধার সঙ্গে তার প্রণয় এবং অন্তে বৃন্দাবন ও রাধা উভয়কে ত্যাগ করে কৃষ্ণের চিরতরে মথুরায় অভিপ্রয়াণ – এই হল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মূল উপজীব্য। আখ্যানভাগ মোট ১৩ টি খণ্ডে বিভক্ত। পুথিটি খণ্ডিত বলে কাব্যরচনার তারিখ জানা যায় না। তবে কাব্যটি আখ্যানধর্মী ও সংলাপের আকারে রচিত বলে প্রাচীন বাংলা নাটকের একটি আভাস মেলে এই কাব্যে। গ্রন্থটি স্থানে স্থানে আদিরসে জারিত ও গ্রাম্য অশ্লীলতাদোষে দুষ্ট হলেও আখ্যানভাগের বর্ণনানৈপূণ্য ও চরিত্রচিত্রণে মুন্সিয়ানা আধুনিক পাঠকেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চর্যাপদের পর ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ বাংলা ভাষার দ্বিতীয় প্রাচীনতম আবিষ্কৃত নিদর্শন। বাংলা ভাষাতত্ত্বের ইতিহাসে এর গুরুত্ব তাই অপরিসীম। অপরদিকে এটিই প্রথম বাংলায় রচিত কৃষ্ণকথা বিষয়ক কাব্য। মনে করা হয়, এই গ্রন্থের পথ ধরেই বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলির পথ সুগম হয়। মধ্যযুগীয় বাংলা অনুবাদ সাহিত্য মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃত অঙ্গন জুড়ে অনুবাদ সাহিত্যের চর্চা হয়েছিল এবং পরিণামে এ সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধিসাধনে অনুবাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অপরিসীম।সকল সাহিত্যের পরিপুষ্টিসাধনে অনুবাদমূলক সাহিত্যকর্মের বিশিষ্ট ভূমিকা আছে।বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এর ব্যতীক্রম পরিলক্ষিত হয় না।"সমৃদ্ধতর নানা ভাষা থেকে বিচিত্র নতুন ভাব ও তথ্য সঞ্চয় করে নিজ নিজ ভাষার বহন ও সহন ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলাই অনুবাদ সাহিত্যের প্রাথমিক প্রবণতা।"ভাষার মান বাড়ানোর জন্য ভাষার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হয়,আর তাতে সহায়তা করে অনুবাদকর্ম।উন্নত সাহিত্য থেকে ঋণ গ্রহণ করা কখনো অযৌক্তিক বিবেচিত হয়নি।উন্নত ও সমৃদ্ধ ভাষা-সাহিত্যের সান্নিধ্যে এলে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিশব্দ তৈরি করা সম্ভব হয়,অন্য ভাষা থেকে প্রয়োজনীয় শব্দও গ্রহণ করা যায়।অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বক্তব্য আয়ত্তে আসে।ভাষা ও সাহিত্যের যথার্থ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্পদশালী ভাষায় উৎকর্ষপূর্ণ সাহিত্যসৃষ্টির অনুবাদ একটি আবশ্যিক উপাদান। জ্ঞানবিজ্ঞানের বিষয়ের বেলায় শুদ্ধ অনুবাদ অভিপ্রেত।কিন্তু সাহিত্যের অনুবাদ শিল্পসম্মত হওয়া আবশ্যিক বলেই তা আক্ষরিক হলে চলে না।ভিন্ন ভাষার শব্দ সম্পদের পরিমাণ, প্রকাশক্ষমতা ও বাগভঙ্গি অনুযায়ী ভিন্ন ভাষায় ব্যক্ত কথায় সংকোচন, প্রসারণ, বর্জন ও সংযোজন আবশ্যিক হয়।মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে যে অনুবাদের ধারাটি সমৃদ্ধি লাভ করে তাতে সৃজনশীল লেখকের প্রতিভা কাজ করেছিল।সে কারণে মধ্যযুগের এই অনুবাদকর্ম সাহিত্য হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। বুলিকে লেখ্য ভাষার তথা সাহিত্যের ভাষায় উন্নীত করার সহজ উপায় হচ্ছে অনুবাদ।অন্যভাষা থেকে সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান প্রভৃতি জ্ঞান-মননের বিভিন্ন বিসয় অনুবাদ করতে হলে সে বিষয়ক ভাব-চিন্তা-বস্তুর প্রতিশব্দ তৈরী করা অনেক সময় সহজ হয়,তৈরী সম্ভব না হলে মূল ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করতে হয়।এভাবেই সভ্য জাতির ভাষা-সাহিত্য মাত্রই গ্রহণে-সৃজনে ঋদ্ধ হয়েছে।এ ঋণে লজ্জা নেই।যে জ্ঞান বা অনুভব আমাদের দেশে পাঁচশ বছরেও লভ্য হত না,তা আমরা অনুবাদের মাধ্যমে এখনই পেতে পারি।যেমনঃ বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলো,শ্রেষ্ঠ দার্শনিক চিন্তাগুলো,বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো,সমাজতত্ত্বগুলো-মানবচিন্তার শ্রেষ্ঠ সম্পদগুলো এভাবে আয়ত্তে আসে। চৌদ্দ পনেরো শতকে আমাদের লেখ্য সাহিত্যও তেমনি সংস্কৃত-অবহটঠ থেকে ভাব-ভাষা-ছন্দ গ্রহণ করেছে,পুরাণাদি থেকে নিয়েছে বর্ণিত বিষয় ও বর্ণনাভঙ্গি এবং রামায়ণ-মহাভারত-ভাগবত-প্রণয়োপাখ্যান-ধর্মশাস্ত্র প্রভৃতি সংস্কৃত-ফারসী-আরবী-হিন্দি থেকে অনূদিত হয়েছে আমাদের ভাষায়।এভাবেই আমাদের লিখিত বা শিষ্ট বাংলা ভাষাসাহিত্যের বুনিয়াদ নির্মিত হয়েছিল। আদর্শ অনুবাদকের একটা বিশেষ যোগ্যতা অপরিহার্য। ভাষান্তর করতে হলে উভয় ভাষার গতিপ্রকৃতি, বাকভঙ্গি ও বাকবিধির বিষয়ে অনুবাদকের বিশেষ ব্যুৎপত্তির দরকার।তাহলেই ভাষান্তর নিখুঁত ও শিল্পগুণান্বিত হয়।তাই ভাষাবিদ কবি ছাড়া অন্য কেউ কাব্যের সুষ্ঠু অনুবাদে সমর্থ হয় না।মধ্যযুগে অ-কবিও অনুবাদ কর্মে উৎসাহী ছিলেন।তাই অনুবাদে নানা ত্রুটি দেখা যায়।এছাড়া এঁরা নিজেদের সামর্থ্য রুচিবুদ্ধি ও প্রয়োজন অনুসারে মূল পাঠের গ্রহণ-বর্জন ও সংক্ষেপ করেছেন।এজন্য মধ্যযুগের বাংলা ভাষায় কোন তথাকথিত অনুবাদই নির্ভরযোগ্য নয়।সবগুলোই কিছু কায়িক,কিছু ছায়িক,কিছু ভাবিক অনুবাদ এবং কিছু স্বাধীন রচনা।কাব্য সাহিত্যের অনুবাদ আক্ষরিক হতেই পারে না। বৈষ্ণব পদাবলি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য একটি বিস্তৃত কালপর্ব জুড়ে বিন্যস্ত। প্রাকচৈতন্যযুগে বিদ্যাপতি,চণ্ডীদাস এবং চৈতন্য ও চৈতন্য পরবর্তী যুগে গোবিন্দদাস,জ্ঞানদাস বিশেষভাবে খ্যাতিমান হলেও আরও বহু কবি বৈষ্ণব ধর্মাশ্রিত পদ লিখেছেন। তবে ধর্মবর্ণনির্বিশেষে পদাবলি চর্চার এই ইতিহাস চৈতন্যের ধর্মান্দোলনের পরই ছড়িয়েছিল। বৈষ্ণব পদাবলির মূল বিষয়বস্তু হল কৃষ্ণের লীলা এবং মূলত মাধুর্যলীলা। অবশ্য এমন নয় যে কৃষ্ণের ঐতিহ্যলীলার চিত্রণ হয়নি। তবে সংখ্যাধিক্যের হিসেবে কম। আসলে বৈষ্ণব পদাবলির মধ্যে রাধাকৃষ্ণের প্রণয়লীলা স্তরে স্তরে এমন গভীর ও বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে যে অনেকের ধারণা বাংলা সাহিত্যে এ আসলে একটি রোমান্টিক প্রণয়কাব্যের নমুনা। বস্তুত পৃথিবীর অন্যান্য মধ্যযুগীয় সাহিত্যের মতনই এও বিশেষভাবে ধর্মাশ্রিত ও বৈষ্ণব ধর্মের তত্ত্ববিশ্বের উপরে প্রতিষ্ঠিত। তবে যে কোন ধর্মের মতনই বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বেরও আনেকগুলি ঘরানা ছিল। এর মধ্যে তাত্ত্বিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিল বৃন্দাবনের বৈষ্ণবগোষ্ঠী। এদের ধর্মীয় দর্শনের প্রভাব পড়েছে চৈতন্যপরবর্তী পদকর্তাদের রচনায়। প্রাকচেতন্যযুগের পদাবলিকারদের রচনায় তন্ত্র বা নানা সহজিয়া সাধনপন্থার প্রভাব রয়েছে। ভারতীয় সাধনপন্থা মূলত দ্বিপথগামী- স্মার্ত ও তান্ত্রিকী। শশীভূষণ দাশগুপ্ত এই দুই পথকেই বলেছেন "উল্টাসাধন" তন্ত্রও হল এই উল্টাসাধনই। দেহভান্ডই হল ব্রহ্মান্ড এই বিশ্বাস সহজিয়া ও তান্ত্রিক পন্থীদের। সেই কারণে চন্ডীদাস ও বিদ্যাপতির সঙ্গে জ্ঞানদাস বা গোবিন্দদাসদের মূলগত প্রভেদ রয়েছে। বৃন্দাবনের বৈষ্ণবগোষ্ঠী যে তত্ত্ববিশ্ব নির্মাণ করলেন তাতে কৃষ্ণলীলার মূল উৎস ভাগবত ও আন্যান্য পুরাণ হলেও,আসলে কৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলা, সর্বোপরি রাধাকৃষ্ণের প্রণয়লীলা প্রাধান্য পেল। কেননা এঁদের মতে কৃষ্ণের দুই রূপ। প্রথমটি ঐশ্বর্যস্বরূপ ঈশ্বর, যিনি সর্বশক্তিমান। কৃষ্ণের ঘনিষ্ঠ প্রতিটি লোক সে তার মাতা-পিতা বা, স্ত্রী বা সখা যেই হোক না কেন- কৃষ্ণকে তারা ভগবান বলে জানেন, সেভাবেই তাকে দেখেন। দ্বিতীয়টি হল মাধুর্যস্বরূপ কৃষ্ণ। এইরূপে কৃষ্ণের লীলার যে বিচিত্র প্রকাশ অর্থাৎ প্রভুরূপে,পুত্ররূপে,সখারূপে, প্রেমিকরূপে সর্বোপরি রাধামাধবরূপে তাতে কোথাও কৃষ্ণের মনে বা কৃষ্ণলীলাসহকারদের মনে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যমূর্তির জাগরণ ঘটেনা। ঐশ্বর্যমূর্তি নেই বলে কৃষ্ণভক্তি এখানে শুদ্ধ থেকে শুদ্ধতর হয়ে শুদ্ধতম হয়েছে। তাই এই মতাবলম্বী বৈষ্ণব কবিসাধকরা কেউ প্রভু, কেউ পুত্র, কেউ সখা, আর কেউবা প্রেমিকরূপে কৃষ্ণকে প্রার্থনা করেছেন। শেষোক্ত কবিসাধকের সংখ্যাই বেশি। বৃন্দাবনের ষড়গোস্বামীর অন্যতম রূপ গোস্বামী উজ্জ্বলনীলমণি-তে কৃষ্ণভক্তিকেই একমাত্র রসপরিনতি বলা হয়েছে। এর স্হায়ীভাব হল দুপ্রকারের- বিপ্রলম্ভ শৃঙ্গার সম্ভোগ শৃঙ্গার আবার এই দুটি প্রকারও আবার চারটি করে উপবিভাগে বিন্যস্ত। বিপ্রলম্ভ পূর্বরাগ মান (এরও দুটি ভাগ- সহেতু আর নির্হেতু) প্রেমবৈচিত্ত প্রবাস (এরও দুটি ভাগ- সুদূর আর অদূর) সম্ভোগ সংক্ষিপ্ত সংকীর্ণ সম্পূর্ণ সমৃদ্ধিমান বৈষ্ণব পদাবলিতে কৃষ্ণের লীলাবিলাস এই বিষয়পর্যায়ে বিন্যস্ত। অবশ্য,উপর্যুক্ত চারটি ছাড়াও বিপ্রলম্ভকে আরও সূক্ষাতিসূক্ষভাগে ভাগ করা হয়েছে নানাসময়। যেমন- অনুরাগ, আক্ষেপানুরাগ কিংবা, বিপ্রলব্ধা, খন্ডিতা বা, বাসরসজ্জিতা অথবা অভিসার। পুরাণ ছাড়া সাহিত্যে বা কাব্যে বাংলা বৈষ্ণব পদাবলির উৎস হল- সংস্কৃত পদসংকলন গ্রন্থগুলি। যথা, গাথা সপ্তশতী,....... তাছাড়া জয়দেবের গীতগোবিন্দের কথা তো এ প্রসঙ্গে বলতেই হয়। বিদ্যাপতি মূলত মৈথিলি ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলি রচনা করেছেন। তবে অনেকে এই পদাবলিগুলির ভাষার বিশেষ মাধুর্যের জন্য একে ব্রজবুলি ভাষা বলে কল্পনা করতে চেয়েছেন। প্রাচীন এই মতটিকে পরবর্তীকালের আধুনিক সমালোচক শংকরীপ্রসাদ বসু স্বীকার করে নিয়েছেন এবং বিদ্যাপতিকে একটি সাহিত্যিক ভাষার মহান সর্জক বলে মনে করেছেন। সে যাই হোক ভাষাগত এই প্রভাব যে পরবর্তীকালের কবিদেরও বিরাট প্রভাবিত করেছিল তার প্রমাণ গোবিন্দদাস। জ্ঞানদাসের কিছু কিছু পদও এই তথাকথিত ব্রজবুলি ভাষাতেই রচিত। মধ্যযুগের বহু কবি এই ভাষাতেই পদরচনা করেছেন। এমনকি আধুনিক কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও যখন ' ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী ' লেখেন তখন তিনি লেখেন ব্রজবুলি ভাষাতেই। বৈষ্ণব পদাবালি সাহিত্যে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দ দাস ছাড়াও যশোরাজ খান, চাঁদকাজী, রামচন্দ বসু, বলরাম দাস, নরহরি দাস, বৃন্দাবন দাস, বংশীবদন, বাসুদেব, অনন্ত দাস, লোচন দাস, শেখ কবির, সৈয়দ সুলতান, হরহরি সরকার, ফতেহ পরমানন্দ, ঘনশ্যাম দাশ, গয়াস খান, আলাওল, দীন চণ্ডীদাস, চন্দ্রশেখর, হরিদাস, শিবরাম, করম আলী, পীর মুহম্মদ, হীরামনি, ভবানন্দ প্রমুখ উল্লেখ্যযোগ্য কবি। বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যিক গুণে আসামান্য। বিভিন্ন কবির লেখা কিছু পদ এখানে উল্লেখ করা হল- ১.সই কেমনে ধরিব হিয়া।/আমার বঁধুয়া আন বাড়ি যায়/ আমার আঙিনা দিয়া।।/সে বধুঁ কালিয়া না চাহে ফিরিয়া/ এমতি করিল কে।/আমার অন্তর যেমন করিছে/তেমনি করুক সে।।/যাহার লাগিয়া সব তেয়াগিনু/ লোকে অপযশ কয়।/সেই গুণনিধি ছাড়িয়া পিরীতি/আর যেন কার হয়।।/যুবতী হইয়া শ্যাম ভাঙাইয়া/এমত করিল কে।/আমার পরাণ যেমতি করিছে/তেমতি হউক সে।। (চণ্ডীদাস) ২.চলে নীল সাড়ি নিঙারি নিঙারি/পরান সহিতে মোর।/সেই হৈতে মোর হিয়া নহে থির/মন্মথ জ্বরে ভোর । (চণ্ডীদাস) ৩.এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর/এ ভরা বাদর মাহ ভাদর/শূন্য মন্দির মোর।।/ঝম্পি ঘণ গন — জন্তি সন্ততি/ভুবন ভরি বরি খন্তিয়া।/কান্ত পাহুন কাম দারুন/সঘনে খন শর হন্তিয়া।।/কুলিশ শত শত পাত-মোদিত/ময়ূর নাচত মাতিয়া।/মও দাদুরী ডাকে ডাহুকী/ফাটি যাওত ছাতিয়া।।/তিমির দিক ভরি ঘোর যামিনী/অথির বিজুরিক পাঁতিয়া।/বিদ্যাপতি কহ কৈছে গোঙায়াবি/হরি বিনে দিন রাতিয়া।। (বিদ্যাপতি) মঙ্গলকাব্য মধ্যযুগের বাংলা কাব্যধারার একবিশিষ্ট শাখা হল মঙ্গলকাব্য। মঙ্গল শব্দের আভিধানিক অর্থ হল কল্যাণ। মধ্যযুগে বিভিন্ন দেব-দেবীর মহিমা ও মাহাত্ম্যকীর্তন এবং পৃথিবীতে তাদের পূজা প্রতিষ্ঠার কাহিনী নিয়ে যেসব কাব্য রচিত হয়েছে সেগুলোই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মঙ্গল কাব্য নামে পরিচিত।মঙ্গলকাব্যের তিনটি প্রধান ঐতিহ্যের মধ্যে মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল ও ধর্মমঙ্গল ছিল অন্যতম । এই কাব্য তিনটির প্রধান চরিত্র হল যথাক্রমে মনসা, চণ্ডী ও ধর্মঠাকুর যারা বাংলার সকল স্থানীয় দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়। এছাড়াও কিছু ছোট মঙ্গলকাব্য রয়েছে, যেমন- শিবমঙ্গল, কালিকা মঙ্গল, রায় মঙ্গল, শশী মঙ্গল, শীতলা মঙ্গল ও কমলা মঙ্গল প্রভৃতি নামে পরিচিত। মঙ্গলকাব্যের প্রচলিত প্রধান কবিরা হলেন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, বিজয়গুপ্ত, রূপরাম চক্রবর্তী প্রমুখ। রাজসভার সাহিত্য রাজসভার সাহিত্য হল রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত সাহিত্য। মধ্যযুগের প্রধান রাজসভার কবি ছিলেন আলাওল (১৫৯৭-১৬৭৩) এবং ভারত চন্দ্র প্রমুখ। মহাকবি আলাওল ছিলেন আরাকান রাজসভার প্রধান কবি। তিনি আরবি ও ফার্সি ভাষায় কাব্য রচনা করেছিলেন। ব্রজবুলি ও মঘী ভাষাও তার আয়ত্তে ছিল। প্রাকৃতপৈঙ্গল, যোগশাস্ত্র, কামশাস্ত্র, অধ্যাত্মবিদ্যা, ইসলাম ও হিন্দু ধর্মশাস্ত্র-ক্রিয়াপদ্ধতি, যুদ্ধবিদ্যা, নৌকা ও অশ্ব চালনা প্রভৃতিতে বিশেষ পারদর্শী হয়ে আলাওল মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। আলাওলের পদ্মাবতী (১৬৪৮ খৃ:) ছিল সবচেয়ে বিখ্যাত মহাকাব্য। তাছাড়া : সতীময়না লোরচন্দ্রানী (১৬৫৯খৃঃ) সপ্ত পয়কর (১৬৬৫ খৃঃ) সয়ফুলমুলুক-বদিউজ্জামাল (১৬৬৯খৃঃ) সিকান্দরনামা (১৬৭৩খৃঃ) তোহফা (১৬৬৪ খৃঃ) রাগতালনামা মধ্যযুগের শেষ এবং আধুনিক যুগের প্রধান কবি ছিল ভারত চন্দ্র। তিনি তার অন্নদামঙ্গল কাব্যের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। এই কাব্যের বিখ্যাত উক্তি হল, "আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে"। শিবায়ন কাব্য শিবায়ন কাব্য মধ্যযুগীয় বাংলা আখ্যানকাব্যের একটি ধারা। শিব ও দুর্গার দরিদ্র সংসার জীবন কল্পনা করে মঙ্গলকাব্যের আদলে এই কাব্যধারার উদ্ভব। শিবায়ন কাব্যে দুটি অংশ দেখা যায় – পৌরাণিক ও লৌকিক। মঙ্গলকাব্যের আদলে রচিত হলেও শিবায়ন মঙ্গলকাব্য নয়, মঙ্গলকাব্যের সঙ্গে এক কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এই কাব্যের দুটি ধারা দেখা যায়। প্রথমটি মৃগলুব্ধ-মূলক উপাখ্যান ও দ্বিতীয়টি শিবপুরাণ-নির্ভর শিবায়ন কাব্য। শিবায়নের প্রধান কবিরা হলেন রতিদেব, রামরাজা, রামেশ্বর ভট্টাচার্য, রামচন্দ্র কবিচন্দ্র ও শঙ্কর কবিচন্দ্র। শাক্তপদাবলি শাক্তপদাবলী হল কালী-বিষয়ক বাংলা ভক্তিগীতির একটি জনপ্রিয় ধারা। এই শ্রেণীর সঙ্গীত শাক্তপদাবলীর একটি বিশিষ্ট পর্যায়। শাক্তকবিরা প্রধানত তন্ত্রাশ্রয়ী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন বলে শাক্তপদাবলীতে তন্ত্রদর্শন নানাভাবে দ্যোতিত। শাক্তপদাবলীর পদগুলিতে কালী বা শ্যামা মাতৃরূপে ও ভক্ত সাধক সন্তানরূপে কল্পিত। ভক্তের প্রাণের আবেগ, আকুতি, আবদার, অনুযোগ, অভিযোগ, দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণার নিবেদন ছন্দোবদ্ধ হয়ে গীতধারায় প্রকাশিত হয়েছে এই পর্যায়ে। এই কারণে সাধনতত্ত্বের পাশাপাশি আত্মনিবেদনের ঘনিষ্ঠ আকুতি শাক্তপদাবলীর পদগুলিতে অপূর্ব কাব্যময় হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, সমাজজীবন ও লৌকিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ এই পদাবলির অধ্যাত্মতত্ত্ব শেষাবধি পর্যবসিত হয়েছে এক জীবনমুখী কাব্যে। শাক্তপদাবলী ধারাটি বিকাশলাভ করে খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। এই সময় বঙ্গদেশে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে এক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটকালে বৈষ্ণব ধর্মানুশীলনের পরিবর্তে শাক্তদর্শন ও শক্তিপূজা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। তার কারণ দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার সতীরুপের শক্তিপীঠগুলির অনেকগুলিই বঙ্গদেশে। সেই শক্তিপীঠগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে এসেছে শক্তিসাধনা। তারই ফলশ্রুতিতে উদ্ভূত হয় শাক্তসাহিত্য। শাক্তপদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি রামপ্রসাদ সেন এবং তার পরেই স্থান কমলাকান্ত ভট্টাচার্যের। এই দুই দিকপাল শাক্তপদকর্তা ছাড়াও অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট পদকর্তা এই ধারায় সংগীতরচনা করে শাক্তসাহিত্য ও সর্বোপরি শাক্তসাধনাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – কৃষ্ণচন্দ্র রায়, শম্ভুচন্দ্র রায়, নরচন্দ্র রায়, হরুঠাকুর অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, রামনিধি গুপ্ত (নিধুবাবু), কালী মির্জা, দাশরথি রায় (দাশুরায়) প্রমুখ। অনেক মুসলমান কবিও শাক্তপদাবলী ধারায় নিজ নিজ কৃতিত্ব স্থাপন করে গেছেন। বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ শ্যামাসঙ্গীত রচয়িতা হলেন কাজী নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে এই শতাব্দীর জনপ্রিয় শ্যামাসঙ্গীত গায়কদের অন্যতম হলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, রামকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। নাথসাহিত্য বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে নাথধর্মের কাহিনি অবলম্বনে রচিত আখ্যায়িকা কাব্য।প্রাচীনকালে শিব উপাসক এক সম্প্রাদয় ছিল,তাদের ধর্ম ছিল নাথধর্ম।হাজার বছর আগে ভারতে এই সম্প্রাদয় খ্যাতি লাভ করেছিল। তাদের গতিবিধির ব্যাপকতার জন্য সারা ভারতবর্ষে তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। নাথ অর্থ প্রভু,দীক্ষালাভের পর নামের সাথে তারা নাথ শব্দটি যোগ করত। তারা বিশেষ ক্ষমতার অধিকারি ছিল। বৌদ্ধ ও শৈব ধর্মের সমন্বয়ে এ ধর্ম গরে ওঠে। এই নাথ পন্থা বৌদ্ধ মহাযান আর শূন্যবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। অবিদ্যা ও অজ্ঞান থেকে মুক্তির জন্য এবং মহাজ্ঞান লাভ করাই নাথগনের লক্ষ্য ছিল।সাধনার মাধ্যমে দেহ পরিশুদ্ধ করে মহাজ্ঞান লাভের যোগ্য করলে তাকে পক্ক দেহ বলা হত। এই মতের প্রতিষ্ঠাতা মীননাথ। আর শিব হল আদি নাথ। সব নাথ তার অনুসারী। দশম-একাদশ শতকে নাথধর্মের প্রভাব বিস্তার লাভ করে। অই সময়ে নাথ সাহিত্য বিস্তার লাভ করে। প্রধান প্রধান নাথগন হলেন- মীননাথ,গোরখনাথ,প্রমুখ। বাউল সাহিত্য বাউল মতবাদের উপর ভিত্তি করে রচিত সাহিত্যই হল বাউল সাহিত্য। বাউল সাধকদের সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছেন জগন্মোহন গোসাঁই ও লালন সাঁই। লালন তার বিপুল সংখ্যক গানের মাধ্যমে বাউল মতের দর্শন এবং অসাম্প্রদায়িকতার প্রচার করেছিলেন। এছাড়াও বাউল কবিদের মধ্যে জালাল খাঁ, রশিদ উদ্দিন, হাছন রাজা, রাধারমণ, সিরাজ সাঁই, পাঞ্জু সাঁই, পাগলা কানাই, শীতলং সাঁই, দ্বিজদাস, হরিচরণ আচার্য, মনোমোহন দত্ত, লাল মাসুদ, সুলা গাইন, বিজয় নারায়ণ আচার্য, দীন শরৎ (শরৎচন্দ্র নাথ), রামু মালি, রামগতি শীল, মুকুন্দ দাস, আরকুন শাহ্‌, সিতালং ফকির, সৈয়দ শাহ্‌ নূর, শাহ আব্দুল করিম, উকিল মুন্সি, চান খাঁ পাঠান, তৈয়ব আলী, মিরাজ আলী, দুলু খাঁ, আবেদ আলী, উমেদ আলী, আবদুল মজিদ তালুকদার, আবদুস সাত্তার, খেলু মিয়া, ইদ্রিস মিয়া, আলী হোসেন সরকার, চান মিয়া, জামসেদ উদ্দিন, গুল মাহমুদ, প্রভাত সূত্রধর, আবদুল হেকিম সরকার, ক্বারী আমীর উদ্দিন আহমেদ, ফকির দুর্বিন শাহ, শেখ মদন, দুদ্দু সাঁই,কবি জয়দেব, কবিয়াল বিজয়সরকার, ভবা পাগলা, নীলকণ্ঠ, দ্বিজ মহিন, পূর্ণদাস বাউল, খোরশেদ মিয়া, মিরাজ উদ্দিন পাঠান, আব্দুল হাকিম, মহিলা কবি আনোয়ারা বেগম ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য। তাদের মাধ্যমেই বাউল মতবাদ বা বাউল সাহিত্য বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলা লোক সাহিত্য বাংলাদেশের লোক সাহিত্য বাংলা সাহিত্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। যদিও এর সৃষ্টি ঘটেছে অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রসার ঘটেছে মৌখিকভাবে, তথাপি বাংলা সাহিত্যকে এ লোক সাহিত্য ব্যাপ্তি প্রদান করেছে, করেছে সমৃদ্ধ। পৃথক পৃথক ব্যক্তি-বিশেষের সৃষ্টি পরিণত হয়েছে জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যে যার মাধ্যমে প্রকাশ ঘটেছে ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি ও চিন্তা চেতনার। লোক সাহিত্য মূলত মৌখিক সাহিত্য। ফলে এধরনের সাহিত্য স্মৃতিসহায়ক কৌশল, ভাষার গঠনকাঠামো এবং শৈলীর উপরও নির্ভর করে। এদেশের লোক সাহিত্য সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করছে। এগুলো হচ্ছে মহাকাব্য, কবিতা ও নাটক, লোক গল্প, প্রবাদ বাক্য, গীতি কাব্য প্রভৃতি। লোক সাহিত্যের এই সম্পদগুলো সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে অথবা অন্য কোন উপায়ে এখনো এই অঞ্চলে টিকে রয়েছে। বহুবছর ধরে এদেশে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। বাংলাদেশের লোক সাহিত্য এই জাতিগোষ্ঠীগুলো দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। ফলশ্রুতিতে বর্তমান বাংলাদেশের বহুমুখী বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশাল লোক সাহিত্যের একাংশের ব্যাখ্যায় ইতিহাসের প্রয়োজন পরে। বাংলাদেশের লোক সাহিত্য লোক সাহিত্যের প্রচলিত সকল শাখায় নিজেকে বিস্তার করেছে। এগুলো হচ্ছে গল্প, ছড়া, ডাক ও খনার বচন, সংগীত, ধাঁধা, প্রবাদ বাক্য, কুসংস্কার ও মিথ। লোকগীতি বাংলা লোক সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের সংগীত মূলত কাব্যধর্মী। এদেশীয় সংগীতে বাদ্যযন্ত্রের চেয়ে মৌখিক সুরের দক্ষতার উপর অধিক নির্ভরশীলতা লক্ষ করা যায়। লোকগীতিকে আমরা সাতটি শ্রেণীতে বিন্যস্ত করতে পারি। এগুলো হচ্ছেঃ প্রেম, ধর্মীয় বিষয়, দর্শন ও ভক্তি, কর্ম ও পরিশ্রম, পেশা ও জীবিকা, ব্যাঙ্গ ও কৌতুক এবং এসবের মিশ্রণ। অন্যদিকে এদেশীয় লোকসাহিত্যে আমরা গানের বিভিন্ন শাখা দেখতে পাই। এগুলো হচ্ছেঃ বাউল গান, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, গম্ভীরা, কবিগান, জারিগান, সারিগান, ঘাটু গান,যাত্রা গান ,ঝুমুর গান, জাগের গান,গাজী গান,উরি গান প্রভৃতি। বাংলা লোক সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হল: মৈমনসিংহ গীতিকা (ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রচলিত পালাগানগুলোকে একত্রে মৈমনসিংহ গীতিকা বলা হয়। এই গানগুলো প্রাচীন কাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসছে। তবে ১৯২৩-৩২ সালে ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন এই গানগুলো সম্পাদনা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রকাশ করেন। বর্তমান নেত্রকোণা জেলার আইথর নামক স্থানের আধিবাসী চন্দ্রকুমার দে এসব গাঁথা সংগ্রহ করছিলেন।) পূর্ববঙ্গ-গীতিকা (পূর্ববঙ্গ অঞ্চলের প্রচলিত লোকসাহিত্যকে একত্রে পূর্ববঙ্গ গীতিকা বলা হয়। প্রাচীন কাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে আসা পালাগুলি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। ১৯২৬ সালে ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সাহায্যে পালাগুলো সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন। পরে ১৯৭১-১৯৭৫ সালে ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক ও সাত খণ্ডে প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা প্রকাশ করেন।) ঠাকুরমার ঝুলি ঠাকুরদাদার ঝুলি বাংলা গদ্যের উন্মেষপর্ব চিঠিপত্র লেখা এবং দলিল-দস্তাবেজ লেখার প্রয়োজনে বাংলা গদ্যের সূত্রপাত। দলিল-দস্তাবেজ ইত্যাদি সংস্কৃত ও পার্সি - এই দুই ভাষার প্রভাবে পরিকীর্ণ। আদি সাহিত্যিক গদ্যে কথ্যভাষার প্রতিফলন সুস্পষ্ট। পর্তুগীজ ধর্মপ্রচারক মানোএল দা আস্‌সুম্পসাঁউ-এর রচনা রীতি বাংলা গদ্যের অন্যতম আদি নিদর্শন। ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত কৃপার শাস্ত্রের অর্থ ভেদ গ্রন্থ থেকে নিম্নরূপ উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। লক্ষ্যণীয় এই অংশে বৃহত্তর ঢাকা এলাকার কথ্য ভাষা প্রতিফলিতঃ– "ফ্লান্দিয়া দেশে এক সিপাই বড় তেজোবন্ত আছিল। লড়াই করিতে করিতে বড় নাম তাহার হইল, এবং রাজায় তাহারে অনেক ধন দিলেন। ধন পাইয়া তাহার পিতামাতার ঘরে গেল। তাহার দেশে রাত্রে পৌঁছিল। তাহার এক বইন আছিল ; তাহার পন্থে লাগাল পাইল ; ভাইয়ে বইনরে চিনিল, তাহারে বইনে না চিনিল। তখন সে বইনেরে কহিল, "তুমি কী আমারে চিন?" "না, ঠাকুর" বইনে কহিল। সে কহিল,"আমি তোমার ভাই।" ভাইয়ের নাম শুনিয়া উনি বড় প্রীত হইল। ভাইয়ে ঘরের খবর লইল, জিজ্ঞাস করিল, "আমারদিগের পিতামাতা কেমন আছেন?" বইনে কহিল, "কুশল।" দুইজনে কথাবার্তা কহিল।" প্যারীচাঁদ মিত্র রচিত আলালের ঘরে দুলাল বাংলা ভাষায় রচিত আদি গদ্যসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এটি ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত এই গ্রন্থের ভাষা 'আলাল ভাষা' নামে পরিচিত। এই গ্রন্থে কথ্যরূপী গদ্য একটি পৃথক লেখ্য রূপে উন্নীত হয়। "বেণীবাবু কহিলেন- অদ্য রাত্রে এখানে থাকো কল্য প্রাতে তোমাকে কলিকাতায় লইয়া স্কুলে ভর্তি করিয়া দিব। ক্ষণেক কাল পরে মতিলাল জলযোগ করিয়া দেখিল অনেক বেলা আছে। চঞ্চল স্বভাব- এক স্থানে কিছু কাল বসিতে দারুণ ক্লেশ বোধ হয়- এজন্য আস্তে আস্তে উঠিয়া বাটীর চতুর্দিকে দাঁদুড়ে বেড়াইতে লাগিল- কখন ঢেঁস্কেলের ঢেঁকিতে পা দিতেছে- কখন বা ছাতের উপর গিয়া দুপদুপ করিতেছে-কখন বা পথিকদিগকে ইঁট-পাটকেল মারিয়া পিট্টান দিতেছে ; এইরূপে দুপ-দাপ করিয়া বালী প্রদক্ষিণ করিতে লাগিল-কাহারো বাগানে ফুল ছেঁড়ে-কাহারো গাছের ফল পাড়ে-কাহারো মট্কার উপর উঠিয়া লাফায়- কাহারো জলের কলসি ভাঙিয়া দেয়।" বাংলা গদ্য শুরুতে ছিল সংস্কৃতি গদ্যের চালে রচিত যার প্রমাণ বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ। বলা যায়, বিশিষ্ট গদ্যকার প্রমথ চৌধুরী বাংলা গদ্যকে একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছেন। লেখার ভাষাকে জনবান্ধব ও সহজবোধ করে তোলা অর্থাৎ সাহিত্যে চলিত ভাষা প্রচলনের কৃতিত্ব অনেকাংশেই তার। বঙ্কিমসাহিত্য বাংলা সাহিত্যের মূল ধারা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরেই হয়েছিলো; ১৮৩৮ সালে জন্মগ্রহণকারী বঙ্কিম মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে ১৮৬২ সালে একটি উপন্যাস লেখার কাজ শুরু করেছিলেন, ঐ বছরই এক ইংরেজ নারী হানা ক্যাথেরিন মুলেন্স ফুলমণি ও করুণার বিবরণ (এটাকে ধরা হয় প্রথম বাংলা ভাষার উপন্যাস) নামের একটি উপন্যাস প্রকাশ করেছিলেন তা দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন বঙ্কিম এবং ১৮৫৮ সালে প্রকাশিত হয় প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল উপন্যাস যেটা ছিলো একজন বাঙালি রচিত প্রথম বাংলা ভাষার উপন্যাস। বঙ্কিমের প্রথম উপন্যাসের খসড়া শেষ হতে হতে তিন বছর লেগে যায় এবং তিনি ১৮৬৫ সালে দুর্গেশনন্দিনী নামের একটি উপন্যাস প্রকাশ করতে সক্ষম হন, তারপর তিনি পান 'বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক'-এর মর্যাদা কারণ দুর্গেশনন্দিনী ছিলো বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম যৌগিকতাময়, পরিস্রুতময়, সূচিতাযুক্ত বাংলা ভাষার শক্তির সীমামুক্ত উপন্যাস; উপন্যাসটিকে বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক উপন্যাস ধরা হচ্ছে সেই উনবিংশ শতক থেকে এখন পর্যন্ত। বঙ্কিম একজন সফল প্রেমমূলক উপন্যাসের রচয়িতা ছিলেন; তার উপন্যাস ভারতীয় বাঙালি তরুণ-তরুণীর মাঝে প্রেমবোধ জাগ্রত করতো সেই উনবিংশ শতাব্দীতেই। রবীন্দ্রসাহিত্য বাংলা সাহিত্যের আলোচনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (৭ই মে, ১৮৬১ - ৭ই আগস্ট, ১৯৪১) (২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) কথা অবধারিতভাবেই স্বতন্ত্র। তার জীবন ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে একটি সম্পূর্ণ নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তিনি ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। তার প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫২। তবে বাঙালি সমাজে তার জনপ্রিয়তা প্রধানত সংগীতস্রষ্টা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ প্রায় দুই হাজার গান লিখেছিলেন। কবিতা ও গান ছাড়াও তিনি ১৩টি উপন্যাস, ৯৫টি ছোটগল্প, ৩৬টি প্রবন্ধের বই এবং ৩৮টি নাটক রচনা করেছিলেন। আধুনিক বাংলা কবিতা ১৮০০- বর্তমান, চলমান। মধ্য ও আধুনিক যুগের মধ্যে যিনি সেতুবন্ধন তৈরি করেন তিনি হলেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে, মধ্যযুগের তিরোভাব এবং আধুনিক যুগের আবির্ভাবের সীমারেখার সময়ে কাব্যচর্চাকারীই হচ্ছেন যুগসন্ধিক্ষণের কবি। অর্থাৎ লেখায় মধ্যযুগের ক্ষয়িষ্ণু প্রভাব এবং আধুনিককালের ঈষৎ আভাস, দু'য়েরই উপস্থিতি লক্ষণীয়। উল্লেখযোগ্য যুগসন্ধিক্ষণের কবি হচ্ছেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯)। মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) মধ্যযুগীয় পয়ারমাত্রার ভেঙে কবি প্রবেশ করেন মুক্ত ছন্দে।রচনা করেন সনেট। লাভ করেন, আধুনিক কবিতার জনকের খ্যাতি। ইউরোপীয় ভাবধারার রোমান্টিক ও গীতি কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-১৮৯৪) ভোরের পাখি নামে পরিচিত ছিলেন। মহিরুহ বৃক্ষের ন্যায় বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)। মহাকাব্য ব্যতীত সাহিক্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে তিনি খ্যাতির স্তম্বটি প্রতিষ্ঠা করেননি। রবীন্দ্রানুসারী ভাবধারার অন্যান্য কবিরা হলেন: সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, যতীন্দ্রমোহন বাগচী বিশ শতকের শুরুতে কবিতায় পঞ্চপুরুষ রবীন্দ্রবিরোধিতার করেন, তারা হলেন: মোহিতলাল মজুমদার, কাজী নজরুল ইসলাম ও যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। আধুনিক কবিতার স্বর্ণযুগ: রবীন্দ্র ভাব ধারার বাইরে এসে দশক প্রথার চলু করেন তিরিশের পঞ্চপান্ডব কবি: অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-৮৭), জীবননান্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪), বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-৭৪), বিষ্ণু দে (১৯০৯-৮২), সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-৬০)। বাংলা কথাসাহিত্য বাংলা উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের নতুনতম অঙ্গ। এর সূত্রপাত ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। প্যারিচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরে দুলাল প্রকাশিত হয় ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে। এর আখ্যানভাগে এবং রচনাশৈলীতে উপন্যাসের মেজাজ পরিলক্ষিত হয়। বাংলা উপন্যাসের একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমচন্দ্র থেকে শুরু করে দীর্ঘ কাল বাংলা উপন্যাসে ইউরোপীয় উপন্যাসের ধাঁচ ছায়া ফেলেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি বাংলা সাহিত্যের সকল শাখাকে ঋদ্ধ করেছেন তার হাতেও উপন্যাস নতুন মাত্রা লাভ করেছে যদিও সমালোচকরা রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসকে রসোত্তীর্ণ মনে করেন না। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর আরেকজন প্রভাবশালী ঔপন্যাসিক। তবে এরা সবাই মানুষের ওপর তলের ওপর দৃষ্টি সীমাবদ্ধ রেখেছেন। বিংশ শতকের প্রথমভাগে বুদ্ধদেব বসু, অচ্যিন্তকুমার সেন প্রমুখের হাতে বাংলা কথাসাহিত্য একটি দৃঢ় ভিত্তি লাভ করে। তবে বাংলা উপন্যাস নতুন মাত্রা লাভ করে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জগদীশ গুপ্ত ও কমলকুমার মজুমদারের হাতে। এদের হাতে উপন্যাস বড় মাপের পরিবর্তে মানবিক অস্তিত্বের নানা দিকের ওপর আলোকপাত করে বিকশিত হয়। বস্তুত: রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে মানিক বন্দ্যেপাধ্যায় সম্ভবত সবচেয়ে কুশলী উপন্যাস শিল্পী। তারই পদরেখায় আমরা দেখতে পাই তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় কে। এরা উপন্যাসকে মানবিক অস্তিতের মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক জটিলতার ওপর নিবিড় আলোকপাত করেছেন, লেখনীশৈলীর জোরে উপন্যাসকে সাধারণ পাঠকের কাছকাছি নিয়ে গেছেন এবং একই সঙ্গে উপন্যাসের শিল্পশৈলীতে এনছেন দৃঢ় গদ্যের সক্ষমতা। সুমথনাথ ঘোষ ও গজেন্দ্রকুমার মিত্রের বাংলা কথাসাহিত্য নতুন মাত্রা লাভ করে ৷ সুমথনাথ ঘোষ শুধু সাহিত্যস্রষ্টাই ছিলেন না , প্রকাশক হিসাবেও ছিলেন স্বনামধন্য ৷ একশোরও বেশি বই লিখেছেন সুমথনাথ৷ প্রথম উপন্যাস , ‘বাঁকা স্রোত ’৷ তিনিই অভিন্নহূদয় বন্ধু ও সুসাহিত্যিক গজেন্দ্রকুমার মিত্রের সঙ্গে যৌথভাবে শুরু করলেন ‘মিত্র ও ঘোষ ’ প্রকাশনা ৷ শিশু -কিশোরদের জন্য লিখেছেন ‘মোহন সিং -এর বাঁশি ’, ‘ছোটদের বিশ্বসাহিত্য ’র মতো বই৷ অনুবাদ করেছেন আলেকসান্দার দুমার ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’, ওয়াল্টার স্কটের ‘আইভ্যান হো ’ বা চার্লস ডিকেন্সের ‘ডেভিড কপারফিল্ড ’। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলা উপন্যাসে সম্পূর্ণ নতুন করণকৌশল নিয়ে আবির্ভূত হলেন বাংলাদেশের হুমায়ূন আহমেদ। তিনি বাংলা উপন্যাসকে নতুন খাতে প্রবাহিত করলেন। বাংলা উপন্যাস দীর্ঘকাল পশ্চিমবঙ্গের কথাসাহিত্যিকদের হাতে পরিপুষ্ট হয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদ একাই শত বর্ষের খামতি পূরণ করে দিলেন। তার উপন্যাসের অবয়ব হলো সবজান্তা লেখকের বর্ণনার পরিবর্তে পাত্র-পাত্রীদের মিথস্ক্রিয়া অর্থাৎ সংলাপকে প্রাধান্য দিয়ে ছোট এবং স্বল্প পরিসরে অনেক কথা বলার পদ্ধতি প্রবর্তন করলেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদ দেখালেন যে ইয়োরোপীয় আদলের বাইরেও সফল, রসময় এবং শিল্পোত্তীর্ণ উপন্যাস লেখা সম্ভব। ১৯৮০’র দশকে হুমায়ূন আহমেদের সবল উপস্থিতি অনুভব করার আগে বাংলা উপন্যাস মূলত পশ্চিমবঙ্গের ঔপন্যাসিকদের হাতে গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের অবদান ছিল তুলনামূলক ভাবে কম, গুণগত মানও প্রশ্নাতীত ছিল না। এ সময়কার কয়েকজন প্রধান লেখক হলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বাণী রায়, হর্ষ দত্ত প্রমুখ। একবিংশ শতাব্দী শুরু হয়েছে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগের উত্তরাধিকার বহন করে। এ সময় কিছু কিছু নিরীক্ষাধর্মী উপন্যাসের স্বাক্ষর রেখেছেনি কতিপয় লেখক। উত্তরআধুনিক ধ্যানধারণা অবলম্বন করেও লিখেছেন কেউ কেউ। তবে নতুন কোন ধারা প্রবল বেগে ধাবিত করার মতো নতুন কারো আবির্ভাব এখনো হয় নি। তবে বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকটি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, নাসরীন জাহান, ইমদাদুল হক মিলন, আবুল বাশার,শহিদুল জহির, আবদুল মান্নান সৈয়দ সহ প্রমুখ শক্তিশালী ঔপন্যাসিকের সবল উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছে। পশ্চিমবঙ্গেও অনেক নতুন নতুন ঔপন্যাসিকের আবির্ভাব লক্ষ্য করা গেছে যদিও প্রচলিত রীতির বাইরে যাওয়ার শক্তিশালী হাতের দেখা পাওয়া যায়নি। এই একই সময়ে কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা ১৪টি উপন্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলি ১৯৩০-১৯৫০ কালপরিসরে লিখিত। জীবনানন্দ দাশের উপন্যাস সম্পূর্ণ নতুর ধাঁচের, চিন্তা-মননে এবং শৈলীতে। বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্য সাহিত্যে বর্ণনামূলক গদ্যকে প্রবন্ধ বলা হয়। প্রবন্ধ সাহিত্যের অন্যতম একটি শাখা। এর সমার্থক শব্দগুলো হল - সংগ্রহ, রচনা, সন্দর্ভ। প্রবন্ধের বিষয়বস্তু শৈল্পিক, কাল্পনিক, জীবনমুখী, ঐতিহাসিক কিম্বা আত্মজীবনীমূলক হয়ে থাকে। যিনি প্রবন্ধ রচনা করেন তাকে প্রবন্ধকার বলা হয়। প্রবন্ধে মূলত কোনো বিষয়কে তুলে ধরে তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্য খুবি সমৃদ্ধ। যুগে যুগে অনেক প্রাবন্ধিক তাদের প্রবন্ধের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হল বজ্ঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিবিধ প্রবন্ধ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিচিত্র প্রবন্ধ এবং প্রমথ চৌধুরীর প্রবন্ধ সংগ্রহ । তাছাড়া আরও অনেক প্রাবন্ধিক আছেন, যেমন- কাজী আবদুল ওদুদ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, আবদুল হক প্রমুখ। বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কবি-সাহিত্যিক মধ্যযুগ (১২০০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) মধ্যযুগের সমগ্র পরিসর জুড়েই কাব্যের একচ্ছত্র আধিপত্য লক্ষণীয়। বিবিধ শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত ছিলো এই সাহিত্যচর্চা। এখানে এ সময়ের বিভিন্ন শাখার উল্লেখযোগ্য কবির একটি সম্মিলিত তালিকা দেয়া হলো। তালিকা প্রস্তুতে কোনো ধরনের ক্রম অনুসরণ করা হয়নি। বড়ু চণ্ডীদাস শাহ মুহম্মদ সগীর আলাওল ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর শ্রীচৈতন্যদেব হেয়াত মামুদ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী দৌলত কাজী কৃত্তিবাস ওঝা সাবিরিদ খান চন্দ্রাবতী দৌলত উজির বাহরাম খান দুর্লভ মল্লিক শেখ ফয়জুল্লাহ ময়ূর ভট্ট আবদুল হাকিম মালাধর বসু বিদ্যাপতি দ্বিজ বংশীবদন চম্পাগাজী মাগন ঠাকুর মাধব কন্দলী রামানন্দ যতি দ্বিজ তুলসী মাণিকরাম দাস আধুনিক যুগের প্রথম ভাগের সাহিত্যিক (১৮০০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) এখানে সেসব কবি ও লেখকদের নাম দেয়া হয়েছে, যাঁরা লেখালেখির মাধ্যমে পরিচিত হয়েছেন দেশভাগের আগেই; যদিও এঁদের অনেকেই দেশবিভাগের পরও সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। কিন্তু এরপরও এঁদেরকে আধুনিক যুগের শুরুর দিককার সাহিত্যিক হিসেবেই ধরা যেতে পারে। তালিকাটি করা হয়েছে সাহিত্যিকদের জন্মসালের ক্রম অনুযায়ী। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯) প্যারীচাঁদ মিত্র (১৮১৪-১৮৮৩) অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০-১৮৮৬) মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) দীনবন্ধু মিত্র (১৮৩০-১৮৭৩) সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৪-১৮৮৯) বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-১৮৯৪) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪) কালীপ্রসন্ন সিংহ (১৮৪০-১৯৭০) মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১২) ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৪৭-১৯১৯) রমেশচন্দ্র দত্ত (১৮৪৮-১৯০৯) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৮৫৩-১৯৩১) স্বর্ণকুমারী দেবী (১৮৫৫-১৯৩২) কায়কোবাদ (১৮৫৮-১৯৫২) শ্রীশচন্দ্র মজুমদার (১৮৬০-১৯০৮) অক্ষয়কুমার বড়াল (১৮৬০-১৯১৯) মোহাম্মদ নজিবর রহমান (১৮৬০-১৯২৩) মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক (১৮৬০-১৯৩৩) অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় (১৮৬১-১৯৩০) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (১৮৬৩-১৯১৫) কামিনী রায় (১৮৬৪-১৯৩৩) প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৪৬) কুসুমকুমারী দাশ (১৮৭৫-১৯৪৮) শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৬-১৯৩৮) যতীন্দ্রমোহন বাগচী (১৮৭৮-১৯৪৮) সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী (১৮৭৯-১৯৩১) বেগম রোকেয়া (১৮৮০-১৯৩২) রাজশেখর বসু (১৮৮০-১৯৬০) শরৎচন্দ্র পণ্ডিত (১৮৮১-১৯৬৮) কাজী ইমদাদুল হক (১৮৮২-১৯২৬) সুকুমার রায় (১৮৮৭-১৯২৩) মোহিতলাল মজুমদার (১৮৮৮-১৯৫২) হেমেন্দ্রকুমার রায় (১৮৮৮-১৯৬৩) কালিদাস রায় (১৮৮৯-১৯৭৫) তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯১-১৯৭১) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০) ইবরাহীম খাঁ (১৮৯৪-১৯৭৮) বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৮৭) গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪) আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭৯) শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৯-১৯৭০) কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (১৮৯৯-১৯৭৯) জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-১৯৮৭) জসীম উদ্ দীন (১৯০২-১৯৭৭) শিবরাম চক্রবর্তী (১৯০৩-১৯৮০) অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত (১৯০৩-১৯৭৬) প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪-১৯৮৮) অন্নদাশঙ্কর রায় (১৯০৪-২০০২) বন্দে আলী মিয়া (১৯০৭-১৯৭৮) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮-১৯৫৬) সুবোধ ঘোষ(১৯০৯-১৯৮০) আশাপূর্ণা দেবী (১৯০৯-১৯৯৫) অদ্বৈত মল্লবর্মন (১৯১৪-১৯৫১) কমলকুমার মজুমদার (১৯১৪-১৯৭৯) সোমেন চন্দ (১৯২০-১৯৪২) সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৯২৬-১৯৪৭) সমসাময়িক সাহিত্যিক (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান) দেশবিভাগের পর দুই বাংলাতেই সাহিত্যচর্চার স্বতন্ত্র বলয় তৈরি হয়। তবে সাহিত্যের জগৎ সবসময়ই বৈশ্বিক, বিশেষতঃ ভাষার মিলের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি প্রকট। দেশভাগের পর থেকে শুরু করে অদ্যাবধি দুই বাংলার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিকদের সম্মিলিত নামের তালিকা এটি। প্রসঙ্গতঃ এই তালিকাটি করা হয়েছে বর্ণানুসারে, এবং এতে বিভিন্ন নাম প্রতিনিয়তই সংযুক্ত হচ্ছে এবং হবে। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৩০-২০১৯) অনিতা অগ্নিহোত্রী (১৯৫৬-) অনিল ঘড়াই (১৯৫৭-২০১৪) অবধূত (১৯১০-১৯৭৮) অমর মিত্র (১৯৫১-) আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (১৯৪৩-১৯৯৭) আনিসুল হক (১৯৬৫-) আবু ইসহাক (১৯২৬-২০০৩) আবু জাফর শামসুদ্দীন (১৯১১-১৯৮৮) আবুল বাশার (১৯৫১-) আবুল মনসুর আহমেদ (১৮৯৮-১৯৭৯) আবদুল মান্নান সৈয়দ (১৯৪৩-২০১০) আবিদ আনোয়ার (১৯৫০-) আল মাহমুদ (১৯৩৬-২০১৯) আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২-২০০৯) আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (১৯২০-১৯৮৯) আসাদ চৌধুরী (১৯৪৩-) আহমদ ছফা (১৯৪৩-২০০১) আহমাদ মোস্তফা কামাল (১৯৬৯-) আহসান হাবীব (১৯১৭-১৯৮৫) ইমদাদুল হক মিলন (১৯৫৫-) কামাল চৌধুরী (১৯৫৭-) গজেন্দ্রকুমার মিত্র (১৯০৮-১৯৯৪) জয় গোস্বামী (১৯৫৪-) জহির রায়হান (১৯৩৫-১৯৭২) জাকির তালুকদার (১৯৬৫-) তসলিমা নাসরিন (১৯৬২-) তিলোত্তমা মজুমদার (১৯৬৬-) দাউদ হায়দার (১৯৫২-) দিব্যেন্দু পালিত (১৯৩৯-২০১৯) দেবী রায় (১৯৪০-) দেবেশ রায় (১৯৩৬-২০২০) নবারুণ ভট্টাচার্য (১৯৪৮-২০১৪) নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (১৯১৮-১৯৭০) নারায়ণ সান্যাল (১৯২৪-২০০৫) নাসরীন জাহান (১৯৬৪-) নিমাই ভট্টাচার্য (১৯৩১-২০২০) নির্মলেন্দু গুণ (১৯৪৫-) নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (১৯২৪-২০১৮) পূরবী বসু (১৯৪৯-) পূর্ণেন্দু পত্রী (১৯৩১-১৯৯৭) প্রমথনাথ বিশী (১৯০১-১৯৮৫) প্রফুল্ল রায় (১৯৩৪-) প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪-১৯৮৮) ফররুখ আহমদ (১৯১৮-১৯৭৪) বশীর আল-হেলাল (১৯৩৬-২০২১) বাণী বসু (১৯৩৯-) বাসুদেব দাশগুপ্ত (১৯৩৮-২০০৫) বিমল কর (১৯২১-২০০৩) বিমল মিত্র (১৯১২-১৯৯১) বিনয় মজুমদার (১৯৩৪-২০০৬) বিষ্ণু দে (১৯০৯-১৯৮২) বুদ্ধদেব গুহ (১৯৩৬-২০২১) বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪) শংকর (১৯৩৩-) মতি নন্দী (১৯৩১-২০১০) মলয় রায়চৌধুরী (১৯৩৯-) মহাদেব সাহা (১৯৪৪-) মহাশ্বেতা দেবী (১৯২৬-২০১৬) মাহমুদুল হক (১৯৪১-২০০৮) মুহম্মদ জাফর ইকবাল (১৯৫২-) মোহাম্মদ নাসির আলী (১৯১০-১৯৭৫) মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান (১৯৪৩-) রবিশংকর বল (১৯৬২-২০১৭) রফিক আজাদ (১৯৪২-২০১৬) রাবেয়া খাতুন (১৯৩৫-২০২১) রাহাত খান (১৯৪০-২০২০) রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৯৫৬-১৯৯১) লীলা মজুমদার (১৯০৮-২০০৭) লুৎফর রহমান রিটন (১৯৬১-) শওকত ওসমান (১৯১৭-১৯৯৮) শওকত আলী (১৯৩৬-২০১৮) শক্তি চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৩-১৯৯৫) শক্তিপদ রাজগুরু (১৯২২-২০১৪) শঙ্খ ঘোষ (১৯৩২-১৯২১) শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৯-১৯৭০) শহীদ কাদরী (১৯৪২-২০১৬) শহীদুল জহির (১৯৫৩-২০০৮) শহীদুল্লা কায়সার (১৯২৭-১৯৭১) শামসুদ্দীন আবুল কালাম (১৯২৬-১৯৯৭) শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬) শাহাদুজ্জামান (১৯৬০-) শাহীন আখতার (১৯৬২-) শাহেদ আলী (১৯২৫-২০০১) শিবরাম চক্রবর্তী (১৯০৩-১৯৮০) শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (১৯৩৫-) শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৩৩-২০০১) সতীনাথ ভাদুড়ী (১৯০৬-১৯৬৫) সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২) সত্যেন সেন (১৯০৭-১৯৮১) সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৬-) সমরেশ বসু (১৯২৪-১৯৮৮) সমরেশ মজুমদার (১৯৪২-) সমীর রায়চৌধুরী (১৯৩৩-২০১৬) সিকান্‌দার আবু জাফর (১৯১৮-১৯৭৫) সুচিত্রা ভট্টাচার্য (১৯৫০-২০১৫) সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-১৯৬০) সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৩৪-২০১২) সুবিমল বসাক (১৯৩৯-) সুবোধ সরকার (১৯৫৮-) সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১৯১৯-২০০৩) সেলিনা হোসেন (১৯৪৭-) সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (১৯২২-১৯৭১) সৈয়দ মুজতবা আলী (১৯০৪-১৯৪৭) সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ (১৯৩০-২০১২) সৈয়দ শামসুল হক (১৯৩৫-২০১৬) স্বপ্নময় চক্রবর্তী (১৯৫১-) হরিশংকর জলদাস (১৯৫৩-) হাসান আজিজুল হক (১৯৩৯-২০২১) হাসান হাফিজুর রহমান (১৯৩২-১৯৮৩) হুমায়ুন আজাদ (১৯৪৭-২০০৪) হুমায়ূন আহমেদ (১৯৪৮-২০১২) হেলাল হাফিজ (১৯৪৮-) পুরস্কার ও সম্মাননা নোবেল পুরস্কার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দ (গীতাঞ্জলী গ্রন্থের জন্য) বাংলাদেশের সাহিত্য পুরস্কার বাংলা একাডেমী পুরস্কার একুশে পদক জেমকন সাহিত্য পুরস্কার প্রথম আলো বর্ষসেরা বই কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার কাব্যরত্ন/সাহিত্যরত্ন-বাসাসপ প্রবর্তিত আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার আলাওল সাহিত্য পুরস্কার সুনীল সাহিত্য পুরস্কার ফিলিপ্স সাহিত্য পুরস্কার মুক্তধারা একুশে সাহিত্য পুরস্কার লেখিকাসংঘ স্বর্ণপদক অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য অকাডেমি পুরস্কার আনন্দ পুরস্কার জ্ঞানপীঠ পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার‎ বঙ্কিম পুরস্কার সাহিত্য অকাদেমি ফেলোশিপ বিদ্যাসাগর পুরস্কার সোমেন চন্দ পুরস্কার নরসিংহদাস পুরস্কার সোপান পুরস্কার ভূয়ালকা পুরস্কার মাইকেল মধুসূধন পুরস্কার তারাশঙ্কর পুরস্কার সমরেশ বসু পুরস্কার ভরতব্যাস পুরস্কার দেবাংশু সাহিত্য সম্মাননা আরও দেখুন আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পরিষদ বাংলা একাডেমী বাংলা সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ লাইব্রেরি অব কংগ্রেস - বাংলা বিভাগ ভারতীয় সাহিত্য পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি বাংলাদেশী সংস্কৃতি ভারতীয় সংস্কৃতি বাঙালি সংস্কৃতি ভাষা অনুযায়ী ভারতীয় সাহিত্য জাতিগোষ্ঠী অনুযায়ী সাহিত্য
https://en.wikipedia.org/wiki/Bengali_literature
Bengali literature
Bengali literature (Bengali: বাংলা সাহিত্য, romanized: Bangla Sahityô) denotes the body of writings in the Bengali language and which covers Old Bengali, Middle- Bengali and Modern Bengali with the changes through the passage of time and dynastic patronization or non-patronization. Bengali has developed over the course of roughly 1,300 years. If the emergence of the Bengali literature supposes to date back to roughly 650 AD, the development of Bengali literature claims to be 1600 years old. The earliest extant work in Bengali literature is the Charyapada, a collection of Buddhist mystic songs in Old Bengali dating back to the 10th and 11th centuries. The timeline of Bengali literature is divided into three periods: ancient (650–1200), medieval (1200–1800) and modern (after 1800). Medieval Bengali literature consists of various poetic genres, including Hindu religious scriptures (e.g. Mangalkavya), Islamic epics (e.g. works of Syed Sultan and Abdul Hakim), Vaishnava texts (e.g. biographies of Chaitanya Mahaprabhu), translations of Arabic, Persian and Sanskrit texts, and secular texts by Muslim poets (e.g. works of Alaol). Novels were introduced in the mid-19th century. Nobel laureate Rabindranath Tagore is the best known figure of Bengali literature to the world. Kazi Nazrul Islam, notable for his activism and anti-British literature, was described as the Rebel Poet and is now recognised as the National poet of Bangladesh.
1099
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A2%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE
ঢাকা
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী ও মহানগর বা বৃহত্তম শহর। প্রশাসনিকভাবে এটি ঢাকা বিভাগের ও জেলার প্রধান শহর। ভৌগোলিকভাবে এটি বাংলাদেশের মধ্যভাগে বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে একটি সমতল অঞ্চলে অবস্থিত। ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ায় মুম্বাইয়ের পরে দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক শহর। ঢাকার জিডিপি ১৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০২০)। এছাড়া ঢাকার পিপিপি ২৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০২০)। ভৌগোলিকভাবে ঢাকা একটি অতিমহানগরী বা মেগাসিটি; ঢাকা মহানগরীর মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ১০৭ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ ভাগ। জনসংখ্যার বিচারে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম শহর। জনঘনত্বের বিচারে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর; ৩০৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৩ হাজার লোক বাস করে। ঢাকা শহর "মসজিদের শহর" নামেও সুপরিচিত। এখানে প্রায় দশ হাজারেরও বেশি মসজিদ আছে (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর তথ্য মতে)। এই শহরে রোজ প্রায় ৫ লক্ষ রিকশা চলাচল করে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বাণিজ্যকেন্দ্র। ঢাকা শহরের জলবায়ু ক্রান্তীয় আর্দ্র ও শুষ্ক প্রকৃতির। গড় তাপমাত্রা এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ প্রায় ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং জানুয়ারি মাসে সর্বনিম্ন প্রায় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই অঞ্চলে বর্ষাকাল, সেসময় প্রতি মাসে গড়ে ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে পুরান ঢাকা মুঘল সাম্রাজ্যের সুবা বাংলা (বাংলা প্রদেশ) এর প্রাদেশিক রাজধানী ছিল। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে এই শহর জাহাঙ্গীর নগর নামে পরিচিত ছিলো। বিশ্বব্যাপী মসলিন বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র ছিলো ঢাকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীগণ এখানে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আসতেন। ঢাকাতে বিশ্বের সেরা মসলিন কাপড় উৎপাদিত হতো। যদিও আধুনিক ঢাকা শহরের বিকাশ ঘটে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ শাসন আমলে, এই সময় নবাবগণ ঢাকা শাসন করতেন। এই সময় কলকাতার পরেই ঢাকা বাংলা প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হয়ে ওঠে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পরে ঢাকা নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের রাজধানী হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পরে ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনিক রাজধানীতে পরিণত হয়। ১৯৫০-১৯৬০ সালের মধ্যে এই শহর বিভিন্ন সামাজিক, জাতীয়তাবাদী ও গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে ঢাকা "স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজধানী" ঘোষিত হয়। ইতঃপূর্বে সামরিক আইন বলবৎ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, সামরিক দমন, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তাণ্ডবলীলার মতো একাধিক ঘটনার সাক্ষী হয় এই শহর। বাংলাদেশের সংবিধানের ৫(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। আধুনিক ঢাকাকে বাংলাদেশের আপামর জনতা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করে। এটির প্রশংসিত জাতীয় দর্শনীয় স্থানগুলো যেমনঃ জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ,মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, লালবাগের কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, হাতিরঝিল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, তারা মসজিদ, ঢাকেশ্বরী মন্দির, আর্মেনীয় গির্জা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান। এই শহরের অবকাঠামো বিশ্বের মধ্যে উন্নত হলেও দূষণ, যানজট এবং শহরমুখী মানুষের আধিক্যের কারণে জীবনমান উন্নয়নে ঋনাত্মক প্রভাব লক্ষ্যণীয়। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে ঢাকার পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, গণপূর্ত ব্যবস্থায় যে আধুনিকীকরণ হয়েছে, তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বর্তমানে এই শহর প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ টানতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। সারা দেশ থেকে প্রচুর মানুষ ঢাকায় আসেন জীবন ও জীবিকার সন্ধানে। এ কারণে ঢাকা হয়ে উঠেছে বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান নগরী, এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে মালয়েশিয়া, জাপান, চীন, ভারত সহ বিভিন্ন দেশ অর্থ সহযোগিতা ও বিনিয়োগ করছে। নামকরণের ইতিহাস ঢাকার নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। কথিত আছে যে, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ঐ এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো, তাই রাজা, মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে। আবার অনেক ঐতিহাসিকের মতে, মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন ঢাকাকে সুবাহ বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন; তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ শহরে "ঢাক" বাজানোর নির্দেশ দেন। এই ঢাক বাজানোর কাহিনী লোকমুখে কিংবদন্তির রূপ নেয় এবং তা থেকেই শহরের নাম ঢাকা হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, মোঘল সাম্রাজ্যের বেশ কিছু সময় ঢাকা সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর নামে পরিচিত ছিলো। ঢাকা নগরীকে বর্তমানে দু'ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে - ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর। ঢাকা দক্ষিণই হলো পুরাতন মূল নগরী। ঢাকা উত্তর ঢাকার নবীন বর্ধিত উপশহরগুলো নিয়ে গঠিত। ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণা করা হয়, কালের পরিক্রমায় ঢাকা প্রথমে সমতট, পরে বঙ্গ ও গৌড় প্রভৃতি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। খ্রিষ্টীয় ১৩শ শতাব্দীর শেষের দিকে মুসলমানেরা ঢাকা দখল করে। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের ফরমান অনুযায়ী ১৬ জুলাই ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকাকে সুবাহ বাংলার রাজধানী ঘোষণা করা হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীর-এর নাম অনুসারে রাজধানীর নাম জাহাঙ্গীরনগর রাখা হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীরের জীবিতকাল পর্যন্ত এ নাম বজায় ছিলো। এর আগে সম্রাট আকবরের আমলে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার প্রাদেশিক রাজধানী ছিলো বিহারের রাজমহল। সুবা বাংলায় তখন চলছিলো মোঘলবিরোধী স্বাধীন বারো ভূইঁয়াদের রাজত্ব। বারো ভূইয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে বাংলাকে করতলগত করতে ১৫৭৬ থেকে ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বারবার চেষ্টা চালানো হয়। এরপর সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে ইসলাম খান চিশতীকে রাজমহলের সুবেদার নিযুক্ত করেন। তিনি ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে রাজধানী রাজমহল থেকে সরিয়ে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। সুবেদার ইসলাম খান চিশতী দায়িত্ব নেবার মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে বারো ভূঁইয়ার পতন ঘটে ও বর্তমান চট্টগ্রামের কিছু অংশ বাদে পুরো সুবে বাংলা মোগল সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা সুবা বাংলার রাজধানী হলেও সুবাহ বাংলার রাজধানী বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে। ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে সুবেদার শাহ সুজা রাজধানী আবার রাজমহলে স্থানান্তর করেছিলেন। শাহ সুজার পতনের পর ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে সুবেদার মীর জুমলা আবার রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। এরপর বেশ কিছুকাল ঢাকা নির্বিঘ্নে রাজধানীর মর্যাদা ভোগ করার পর ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে সুবেদার মুর্শিদ কুলি খান রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন। এরপর ঢাকায় মোঘল শাসনামলে চলতো নায়েবে নাজিমদের শাসন, যা চলেছিল ১৭৯৩ সালে ব্রিটিশ শাসন শুরু হবার আগে পর্যন্ত। ব্রিটিশরা রাজধানী হিসেবে কলকাতাকে নির্বাচিত করলে ঢাকার গুরুত্ব আবারো কমতে থাকে। এরপর দীর্ঘকাল পরে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা আবার তার গুরুত্ব ফিরে পায়। বঙ্গভঙ্গের পর ১৯০৫ সালে ঢাকাকে আসাম ও বাংলার রাজধানী করা হয়। কংগ্রেসের বাধার মুখে ব্রিটিশ রাজ আবার ১৯১১ সালে রাজধানী কলকাতায় ফিরিয়ে নেয়। ভূগোল ঢাকা মধ্য বাংলাদেশে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ২৩°৪২' থেকে ২৩°৫৪' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২০' থেকে ৯০°২৮' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমিতে অবস্থিত এই শহরের মোট আয়তন । ঢাকায় মোট ৪৬ টি থানা আছে। এগুলো হলো - চকবাজার, লালবাগ, কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, হাজারীবাগ, রমনা, মতিঝিল, পল্টন, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, গুলশান, মিরপুর, পল্লবী, শাহ আলী, তুরাগ,খিলক্ষেত, সবুজবাগ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ডেমরা, শ্যামপুর, বাড্ডা, কাফরুল, কামরাঙ্গীর চর, খিলগাঁও ও উত্তরা। ঢাকা শহরটি মোট ১৩০টি ওয়ার্ড ও ৭২৫টি মহল্লায় বিভক্ত। ঢাকা জেলার আয়তন ১৪৬৩.৬০ বর্গ কিলোমিটার (৫৬৫ বর্গমাইল)। এই জেলাটি গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা দ্বারা বেষ্টিত। ক্রান্তীয় বৃক্ষ, আর্দ্র মৃত্তিকা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে সমান সমতলভূমি এই জেলার বৈশিষ্ট্য। এই কারণে বর্ষাকালে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ঢাকা জেলায় প্রায়শই বন্যা দেখা যায়। আবহাওয়া ও জলবায়ু ঢাকার জলবায়ু প্রধানত উষ্ণ, বর্ষণমুখর এবং আর্দ্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয়। কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগ এর অধীনে, ঢাকার জলবায়ু ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু। এই শহরের একটি স্বতন্ত্র মৌসুম রয়েছে, এখানে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস(৮১.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এবং জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে তাপমাত্রা ১৯.৫ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের(৬৭ থেকে ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) মধ্যে থাকে। মে থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে গড়ে প্রায় ২১২১ মিলিমিটার(৮৩.৫ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, যা সারাবছরের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮৭%। যানজট এবং এবং শিল্প কারখানার অপরিকল্পিত বর্জ্য নির্গমনের ফলে প্রতিনিয়ত বায়ু এবং পানি দূষণ বাড়ছে, ফলে শহরের জনস্বাস্থ্য এবং জীবন মান মারাত্বকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। ঢাকার চারপাশে জলাশয় এবং জলাভূমি গুলি ধ্বংসের সম্মুখীন কারণ, এগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে বহুতল ভবন এবং অন্যান্য আবাসন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে। দূষণের ফলে প্রকৃতির যে ক্ষতি হচ্ছে তার ফলে এই এলাকার জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন। যদিও বর্তমানে ঢাকাকে বসবাস উপযোগী করার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার ঢাকা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১ আগস্ট, ১৮৬৪ সালে এবং পরবর্তীকালে ১৯৭৮ সালে এটি "কর্পোরেশন"-এ উন্নীত করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নামের ২ টি স্ব-শাসিত সংস্থা ঢাকা শহরের পরিচালনের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। এই শহর অনেকগুলি প্রশাসনিক ওয়ার্ডে বিভক্ত এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন কমিশনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন। প্রতি ৫ বছর পরপর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে উভয় সিটি কর্পোরেশনে একজন করে মেয়র নির্বাচন করা হয়, যিনি প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী প্রধান হিসাবে কাজ করেন। ওয়ার্ড কমিশনারও ৫ বছরের জন্য সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এছাড়াও মহিলাদের জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ৩০টি সংরক্ষিত কমিশনার পদ রয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সকল সরকারি স্কুল এবং অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলের প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছে। তবে মাদ্রাসা এবং ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলসমূহ এই বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত নয়। বাংলাদেশের সকল মাদ্রাসা একটি কেন্দ্রীয় বোর্ডের মাধ্যমে এবং ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল সমূহ একটি পৃথক শিক্ষাবোর্ড এবং প্রশাসনিক কাঠামোর অধিনে পরিচালিত হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মোট ১২টি পুলিশ স্টেশনে প্রায় ৬০০০ এরও বেশি পুলিশ সদস্য ছিলেন। শহরের জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশবাহিনীতে সদস্য সংখ্যা ৩৪০০০ এ উন্নীত করা হয়, এবং এর কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় ৫০টি পুলিশ স্টেশন রয়েছে। ঢাকা শহর ২৫টি সংসদীয় এলাকায় বিভক্ত। এখানে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল হল আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। রমনায় সচিবালয় অবস্থিত এবং এখানেই সরকারের প্রায় সকল মন্ত্রণালয় রয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এবং ঢাকা হাই কোর্ট এই শহরে অবস্থিত। বঙ্গভবন ভারতের গভর্নর-জেনারেল ও পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর এর বাসভবন হিসেবে ব্যবহার হতো এবং বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বাসভবন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জাতীয় সংসদ ভবন বাংলাদেশ সরকারের এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ কার্যক্রমের কাজে ব্যবহৃত হয়। খ্যাতনামা স্থপতি লুইস কান এই জাতীয় সংসদ ভবনের স্থপতি ছিলেন।বায়তুল মুকাররম এদেশের জাতীয় মসজিদ, মক্কার কাবা শরিফের নকশায় অনুপ্রাণিত হয়ে এই মসজিদের ডিজাইন করা হয়েছে। এই শহরের অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান সমূহের মধ্যে রয়েছে বড় কাটরা, লালবাগ কেল্লা, হোসেনী দালান, আহসান মঞ্জিল, বাহাদুর শাহ পার্ক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইত্যাদি। ঢাকায় একটি কেন্দ্রীয় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকলেও মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৫% এই ব্যবস্থার আওতাভুক্ত, এর পাশাপাশি আরও ৩০% এই সুবিধা ব্যবহার করে সেপটিক ট্যাংকের মাধ্যমে। মাত্র দুই তৃতীয়াংশ লোক শহরে সরবরাহকৃত পানি ব্যবহার করতে পারে। এখানে প্রতি বছর ৯৭ লক্ষ টন কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। সরকারি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সফলতার সাথে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করা হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয়ভাবে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বেশ কয়েকটি স্থান রয়েছে, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো কাছাকাছি নিচু এলাকায় অথবা জলাশয়ে ফেলা হয়ে থাকে। পৌর প্রশাসন ঢাকা পৌরসভা ১৮৬৪ সালের ১লা আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং ১৯৭৮ সালে কর্পোরেশন অবস্থা উন্নীত হয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের একটি স্বায়ত্ত কর্পোরেশন যা শহর বিষয়াবলি পরিচালনা করে (অর্থাৎ ২০১১ সাল থেকে), ঢাকা সিটি করপোরেশন বর্তমানে দুই প্রশাসনিক অংশে বিভক্ত করা হয়েছে – এইগুলো হলো (১) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং (২) ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন – ভাল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য। এই দুটি কর্পোরেশন প্রশাসকদের দ্বারা চালিত হয়। অন্তর্ভুক্ত এলাকায়গুলো কয়েকটি পৌরসভায় বিভক্ত করা হয়েছে, যা কমিশনার নির্বাচিত করেছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্ব ও নির্দেশ অনুযায়ী সমস্ত সরকারি স্কুল এবং অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলগুলো চালানো হয়, শুধুমাত্র ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো এবং মাদ্রাসাগুলো ছাড়া। বাংলাদেশে সকল মাদ্রাসা একটি কেন্দ্রীয় বোর্ড দ্বারা পরিচালিত যখন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো পৃথক শিক্ষা ও শাসন কাঠামোর অধীনে হয়ে থাকে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেইসময় ৬,০০০ পুলিশ-বাহিনী মোট ১২টি পুলিশ থানায় কর্মরত ছিল। শহর দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, বর্তমানে পুলিশ-বাহিনী উত্থাপিত হয়েছে প্রায় ৩৪০০০ জনে এবং ৫০টি পুলিশ থানা স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ক্রমবর্ধমান যানজট এবং জনসংখ্যা সমস্যার মোকাবিলায় জাতীয় সরকার সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী এলাকার দ্রুত নগরায়নের একটি নীতি বাস্তবায়ন করেছে। ঢাকা মহানগরীকে কেন্দ্র করে বিশেষত বর্তমানে দ্রুত জনবিস্ফোরণের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে ২০৩৫ সালের মধ্যে নগরীর জনসংখ্যা ৩ কোটিকেও ছুঁয়ে ফেলতে পারে। ফলে স্বাভাবিক নাগরিক পরিষেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হবে। তাই ঢাকা শহরকে ঘিরে একদিকে বর্তমানে বিভিন্ন উপনগরীর প্রবর্তন করে ও অন্যদিকে সমগ্র দেশ জুড়েই দারিদ্রের যথাসাধ্য মোকাবিলা করে নগরমুখী লাগামছাড়া জনস্রোতকে কিছুটা মোকাবিলা করাই এই পরিকল্পনার লক্ষ্য। প্রশাসনিক সংস্থা ঢাকা বিশ্বের অন্যান্য মেগা শহরগুলো থেকে ভিন্ন, ঢাকা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চার বার সরকার প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সেবা নিয়েছে। দুই কর্পোরেশন, উত্তর এবং দক্ষিণ, দুই ক্ষমতাহীন মেয়রদের নেতৃত্বে চালিত হয় যখন তাদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তাছাড়া, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সকল ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন, একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি উন্নয়ন এবং তারা শহর রক্ষণাবেক্ষণ চালিয়ে যায়। পানি ব্যবস্থাপনা পানি ব্যবস্থাপনা ঢাকায় একটি জলবাহিত নিকাশী ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু ঢাকার জনসংখ্যার মাত্র ১৫% এই সেবা পায় এবং অপরদিকে ৩০% সেপটিক ট্যাংক সেবা পায়। অর্থনীতি ঢাকা শহরের প্রকৃত নমিনাল জিডিপি ১৬২ বিলিয়ান মার্কিন ডলার এবং শহরের পিপিপি প্রায় ২৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঢাকা বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। শহরে উঠতি মধ্যবিত্ত জনসংখ্যা বাড়ছে ঢাকা পাশাপাশি আধুনিক ভোক্তা এবং বিলাস পণ্যের বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবেই এই শহরে অভিবাসী শ্রমিকদের আকৃষ্ট করে আসছে। হকার, ছোটো দোকান, রিকশা, রাস্তার ধারের দোকান শহরের মোট জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ। শুধুমাত্র রিকশা চালকের সংখ্যাই ৫ লাখ এর বেশি। কর্মপ্রবাহের প্রায় অর্ধেকই গৃহস্থালি অথবা অপরিকল্পিত শ্রমজীবী হিসাবে কর্মরত আছেন। যদিও টেক্সটাইল শিল্পে প্রায় ৮০০,০০০ এরও বেশি মানুষ কাজ করছেন। তারপরও এখানে বেকারত্বের হার ছিলো প্রায় ১৯%। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী ঢাকা শহরের স্থাবর সম্পদের মূল্য প্রায় ১৪২ বিলিয়ন ডলার। যার প্রবৃদ্ধি ৬.৪%। ঢাকার বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১৩০০ মার্কিন ডলার এবং এখানে প্রায় ১৫% মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। এই জনসংখ্যার একটি বড় অংশ কর্মসংস্থানের সন্ধানে গ্রাম থেকে শহরে এসেছে এবং এদের অনেকেরই দৈনিক আয় ৫ মার্কিন ডলারের কম। শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকাগুলো হলো মতিঝিল, চকবাজার, নবাবপুর, নিউ মার্কেট, ফার্মগেট ইত্যাদি এবং প্রধান শিল্প এলাকা গুলো হল তেজগাঁও, হাজারীবাগ ও লালবাগ। বসুন্ধরা-বারিধারা একটি উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক এলাকা এবং আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই এলাকায় উচ্চ প্রযুক্তির শিল্পকারখানা, কর্পোরেশন এবং শপিং মল তৈরী করা হবে। ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল প্রধানত গার্মেন্টস, টেক্সটাইল এবং অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে উদ্বুদ্ধ করর লক্ষ্যে তৈরী করা হয়েছিল। ঢাকায় মোট দুটি ইপিজেড-এ মোট ৪১৩টি শিল্প স্থাপনা রয়েছে। এখানকার অধিকাংশ কর্মীই নারী। এই শহরের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ দেশের অন্যতম বৃহত স্টক এক্সচেঞ্জ, এখানে তালিকাভুক্ত বৃহত্তম আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটিগ্রুপ, এইচএসবিসি ব্যাঙ্ক বাংলাদেশ, জেপি মর্গান চেজ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্ক (বাংলাদেশ), আমেরিকান এক্সপ্রেস, শেভরন, এক্সন মবিল, টোটাল, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম, ইউনিলিভার, নেসলে, ডিএইচএল, ফেডএক্স, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো ইত্যাদি। স্থানীয় বড় আকারের শিল্পগ্রুপ যেমন কনকর্ড গ্রুপ, র‌্যাংগস গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, টি কে শিল্প গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, নাভানা গ্রুপ, জামান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, রহিম আফরোজ ইত্যাদি প্রতিষ্টানের প্রধান বাণিজ্যিক কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। এই শহরেই নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক এবং বাংলাদেশের প্রথম ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক প্রগতি কো-অপারেটিভ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (প্রগতি ব্যাংক) এর প্রধান কার্যালয় ঢাকা বিভাগেই অবস্থিত। নগরায়নের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে শহরের উন্নয়ন চলছে, নতুন নতুন বহুতল ভবন তৈরী হচ্ছে ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শহরের পরিবর্তন হয়েছে। ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং, শিল্পোৎপাদন, টেলিযোগাযোগ এবং সেবা খাতে বিশেষভাবে উন্নয়ন হচ্ছে। পাশাপাশি শহরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পর্যটন এবং হোটেল রেস্তোরাঁর উন্নয়নও সমান গুরুত্বপূর্ণ। পরিবহন ঢাকা বিশ্বের মধ্যে রিকশার রাজধানী নামে পরিচিত। প্রতিদিন গড়ে এখানে প্রায় ৪,০০,০০০ রিকশা চলাচল করে। রিকশা এবং ইঞ্জিন চালিত অটো রিকশা ঢাকার অন্যতম প্রধান বাহন, আর এই শহরে যে প্রায় ৪০০০০০০ এর বেশি রিকশা চলাচল করে, তা অন্য সকল দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ যদিও সরকারি হিসাব মতে ঢাকা শহরের জন্য মোট ৮৫,০০০ রিকশার নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। রিকশা ঢাকা শহরের রাস্তার যানজটের অন্যতম কারণ এবং কিছু বড় বড় রাস্তায় রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন পরিচালিত বাস ঢাকা শহরের পরিবহনের আরেকটি জনপ্রিয় উপায়। এছাড়া রয়েছে বহু বেসরকারি বাস সার্ভিস। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ঢাকা শহরে পেট্রোল ও ডিজেলচালিত কিছু যানবাহন (বেবি ট্যাক্সি, টেম্পো ইত্যাদি) বন্ধ করে দেওয়া হয় ও পরিবর্তে প্রাকৃতিক গ্যাস (Compressed Natural Gas – CNG) বা সিএনজিচালিত সবুজ অটোরিক্সা চালু হয়। এর ফলে পরিবেশ দূষণ অনেক কমে এসেছে। স্কুটার, ট্যাক্সি এবং ব্যক্তিগত মালিকানাধীন যানবাহনগুলো শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সরকার দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন বিশিষ্ট অটো রিকশার প্রতিস্থাপন করে "সবুজ অটোরিকশা" চালু করেছে যা সিএনজি অটোরিকশার বা বেবি-ট্যাক্সি নামে পরিচিত এগুলোতে পরিবেশ বান্ধব সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়। ঢাকা রাস্তা চলাচলকারী ট্যাক্সিগুলো দুই ধরনের হয়। হলুদ ট্যাক্সিগুলো কিছুটা উচ্চ মান সম্পন্ন হয়ে থাকে যদিও এটি ব্যয়বহুল। এই ট্যাক্সিগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত; টয়োটা করোলা এর, টয়োটা প্রিমিও এর এবং টয়োটা এলিয়ন মডেলের গাড়িগুলো ট্যক্সি হিসাবে ব্যবহার করা হয় এখানে। ২০১৩ সালে এই সেবাটি প্রথমে ২০০-২৫০০ টি ট্যক্সি নিয়ে শুরু করা হয়েছিলো। সরকার ১,৫০০সিসি ক্ষমতা বিশিষ্ট ইঞ্জিনের আরও ৫,০০০ নতুন ট্যাক্সি আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এই ধরনের ট্যাক্সির সংখ্যা ১৮,০০০ পর্যন্ত বাড়ানো হবে। , ঢাকার রাস্তাগুলো বাঁধানো ছিলো। সড়কপথ, রেলপথের মাধ্যমে ঢাকা শহর দেশের অন্যন্য অংশের সাথে সংযুক্ত আছে। ঢাকা থেকে ভারতের কলকাতা ও আগরতলা শহরে যাতায়াতের জন্য বিআরটিসি পরিচালিত নিয়মিত বাস সার্ভিস রয়েছে। ঢাকার রেলওয়ে স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে, বনানী রেলওয়ে স্টেশনে, তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন, ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে এবং গেন্ডারিয়া রেলওয়ে স্টেশন, রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ রেলওয়ে শহরতলি এবং জাতীয় রুটে সেবা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে একটি নিয়মিত আন্তর্জাতিক ট্রেন সার্ভিস পরিচালনা করে থাকে। ঢাকা থেকে অন্যান্য শহরতলি এলাকায় রেল যোগাযোগ রয়েছে, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে ডেমু (DEMU) ট্রেনের মাধ্যমে নিয়মিত রেলসেবা পরিচালনা করে আসছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সদরঘাট নৌবন্দরের মাধ্যমে নদীর অপর পারে এবং বাংলাদেশের অন্যান্য বিভিন্ন স্থানে যাত্রী এবং মালপত্র পরিবহন করা হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা শহরের কেন্দ্রে থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত, এটি দেশের বৃহত্তম এবং ব্যস্ততম বিমানবন্দর। দেশের মোট বিমান আগমন এবং প্রস্থানের ৫২% পরিচালনা করা হয় এখানে। চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, কক্সবাজার, যশোর, বরিশাল, সৈয়দপুরে অভ্যন্তরীণ সেবা এবং এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম ইউরোপের প্রধান শহরগুলোতে আন্তর্জাতিক সেবাপরিচালনা করা হয়। নাগরিক পরিষেবা ঢাকায় নাগরিক পরিষেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে। ঢাকা শহরের পানি চাহিদা পূরণের জন্য ঢাকা ওয়াসা, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বা বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ডেসা এবং ডেসকো, গ্যাস সরবারহ করার জন্য তিতাস গ্যাস প্রভৃতি সেবামূলক সংস্থা নিয়োজিত রয়েছে। জনগোষ্ঠী ঢাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহর যা বাঙালি সংস্কৃতির একটি ছবিও বলা চলে। ঢাকায় বসবাসকারীদের কিছু অংশের পূর্বপুরুষরা ভারতীয়। তারা অনেকেই ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশ বিভাগের সময় ভারত থেকে এসেছিলেন। এদের মধ্যে কিছু বিহারী মুসলমানও ছিলেন। এদের সংখ্যা বর্তমানে কয়েক লক্ষ। এখানকার বেশিরভাগ লোক মুসলমান সম্প্রদায়ের, এদের সংখ্যা শতকরা ৮৫%। কিন্তু সাথে বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস এই শহরে যারা জনসংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শতকরা ১০%। এছাড়াও খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং শিখ ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করেন। ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর মাঝে হরিজন, ঋষি ও বাহাই সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করে। ঢাকায় বসবাসকারী প্রায় সবাই বাংলা ভাষায় কথা বলেন, পুরান ঢাকা'র লোকেরা উর্দুতেও কথা বলে থাকেন। এই ভাষাকে ঢাকাইয়া উর্দু বলা হয়, যেটি উর্দু ভাষার একটি উপভাষা। বর্তমানে নতুন প্রজন্মের অনেকেই ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করে। ঢাকা নগরী অনেকগুলো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে যারা ইংরেজি ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। কিছু ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীরা হিন্দি, তামিল, তেলুগু ও ভোজপুরী ভাষাও ব্যবহার করে। পুরান ঢাকার স্থানীয় আদি অধিবাসীদের 'ঢাকাইয়া' বলা হয়। তাদের আলাদা উপভাষা এবং সংস্কৃতি রয়েছে। ঢাকা রাজধানী হওয়ায় সারা বাংলাদেশ থেকেই এখানে লোকজন উন্নত জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে আসে। সংস্কৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কে মূল ধরে তার পার্শ্ববর্তী এলাকা হচ্ছে ঢাকা শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা একাডেমি, চারুকলা ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় গণ গ্রন্থাগার ও জাতীয় জাদুঘর এলাকা সংস্কৃতি-কর্মীদের চর্চা ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর মূল ক্ষেত্র। এর বাইরে বেইলি রোডকে নাটকপাড়া বলা হয় সেখানকার নাট্যমঞ্চগুলোর জন্য। এছাড়াও নবনির্মিত শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল এবং অন্যান্য মঞ্চসমূহ নাট্য ও সঙ্গীত উৎসবে সব সময়ই সাংস্কৃতিক চর্চাকে অব্যাহত ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় বছরের বিভিন্ন সময়ে নাট্যোৎসব ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের পুরোটা জুড়ে বাংলা একাডেমিতে একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয়। বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে পহেলা বৈশাখে রমনা পার্কে ছায়ানটের অনুষ্ঠানসহ সারাদিন গোটা অঞ্চলে সাংস্কৃতিক উৎসব চলে। সাংস্কৃতিক হৃদ্যতার ধারাবাহিকতায় আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও সারা বছর ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের সময় হতেই ঢাকা এই প্রাদেশিক রাজধানীর শিক্ষার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এই সময়ই ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ১৯৮০'র দশক পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এর আশেপাশের এলাকাকে এডুকেশন ডিস্ট্রিক্ট বলা হতো। এই এডুকেশন ডিস্ট্রিক্টের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ,মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল,সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, ভিকারুননেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ, উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা কলেজ,ঢাকা সিটি কলেজ,হলিক্রস কলেজ, নটর ডেম কলেজ, তেজগাঁও কলেজ (পূর্বে নাইট কলেজ), ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুল, ইডেন মহিলা কলেজ, ইষ্ট এন্ড হাই স্কুল, অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয়, আজিমপুর গার্লস স্কুল, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা আর্ট কলেজ (চারুকলা ইন্সটিটিউট) প্রভৃতি। ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সৃষ্টি হয়েছিলো ব্রিটিশ শাসনামলে। তখন একে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। বুদ্ধদেব বসুর মতো ছাত্র এবং বিজ্ঞানী সত্যেন বোসের মতো শিক্ষক তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামকে উচ্চ শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলটি সভ্যতার স্বাক্ষর বহন করে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে আয়োজিত হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। অন্যদিকে পুরান ঢাকায় ১৮৫৮ সাল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে চলে আসছে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রধানত তিনটি মূল ধারা রয়েছে; এগুলোর প্রথমটি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত পাঠক্রম (যা বাংলা অথবা ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করা যায়), দ্বিতীয়টি হচ্ছে বেসরকারি কেজি লেভেল হতে এ লেভেল পর্যন্ত ইংরেজি মিডিয়ামের ব্রিটিশ পাঠক্রম এবং তুতীয়টি হচ্ছে মূলত আরবি, ফার্সি ও উর্দু ভাষানির্ভর মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা। মাদ্রাসাভিত্তিক এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটি সরকার নির্ধারিত পাঠক্রম এবং কোনো কোনোটি নিজস্ব পাঠক্রম ব্যবহার করে শিক্ষা প্রদান করে। শেষোক্ত এশ্রেণীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর সরকারের কোনো প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেই। এই একই চিত্র ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে প্রায় একশভাগ প্রযোজ্য। বলা বাহুল্য নয় যে, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই ঢাকায় অবস্থিত। আশির দশক পর্যন্ত ঢাকাসহ বাংলাদেশে পাবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই শিক্ষাক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তি ছিলো। এর পর হতেই বেসরকারি খাতে কিন্ডারগার্টেন ও স্কুলের প্রসার হতে শুরু করে। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তার সংশোধন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে এক বাঁধভাঙ্গা জোয়ার নিয়ে আসে। এযাবত প্রায় ৫৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। লক্ষণীয় বিষয় হলো এর মধ্যে প্রায় ৪৫টিই হলো ঢাকা বিভাগে। ঢাকার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বমোট ৫৩টির অধিক পাবলিক বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি হচ্ছে ঢাকা শহরে (তন্মধ্যে ২টি ক্যাম্পাস অস্থায়ী)। এগুলো হলো : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ১৯২১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ১৯৯৮) শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ২০০১) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ২০০৫) বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (স্থাপিত : ২০০৮) বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ২০১০) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় (অস্থায়ী ক্যাম্পাস) (স্থাপিত : ২০১৩) ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ২০১৪) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলোজি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভারসিটি বাংলাদেশ স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ প্রাইম ইউনিভার্সিটি ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগরিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ উত্তরা ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং পলিটেকনিক ইন্সটিউট প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান প্রসমূহ ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট গ্ৰাফিক্স আর্ট ইনস্টিটিউট গ্লাস এন্ড সিরামিক্স ইনস্টিটিউট ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আহসান উল্লাহ ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি সাইক ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি মটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি উনিসেপ ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি গণমাধ্যম ঢাকা থেকে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বাংলা দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইত্তেফাক, সংবাদ, প্রথম আলো, আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, জনকণ্ঠ, যুগান্তর, ইনকিলাব, নয়া দিগন্ত, সমকাল, মানবজমিন, পূর্বাঞ্চল, সংগ্রাম, কালের কণ্ঠ‌।ইংরেজি দৈনিক পত্রিকাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ অবজারভার, বাংলাদেশ টুডে, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, নিউ এইজ, নিউ নেশন, ডেইলি স্টার, নিউজ টুডে। ঢাকায় অবস্থিত সংবাদ সংস্থাগুলো হলো বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ, (ইউ.এন.বি)। সাহিত্য পত্রিকা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কালি ও কলম, সমুদিত (ত্রৈমাসিক সাহিত্য ডাক), সমধারা, অণুপ্রাণন, নান্দিক, কালাঞ্জলি, কথা, বাংলার কবিতাপত্র, জলধি। অনলাইন পত্রিকার গুলোর মদ্ধে উল্লেখযোগ্য বিডিনিউজ২৪.কম, বাংলানিউজ২৪.কম । স্থানীয় টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশন সম্প্রচার কেন্দ্র হলো বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি। এছাড়া স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিটিভি ওয়ার্ল্ড, মাই টিভি, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, এনটিভি, আরটিভি, বৈশাখী টিভি, বাংলাভিশন, দিগন্ত টিভি, দেশ টিভি, একুশে টেলিভিশন, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন, একাত্তর টিভি, আনন্দ টিভি। ঢাকার রেডিও চ্যানেল (সরকারি ও বেসরকারি), বাংলাদেশ বেতার (সরকারি রেডিও চ্যানেল), রেডিও ভূমি, রেডিও ফুর্তি, রেডিও টুডে, রেডিও আমার, এবিসি রেডিও, বাংলাদেশ বেতারের ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রম। খেলাধুলা ক্রিকেট এবং ফুটবল ঢাকার অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। এই খেলাগুলো শুধুমাত্র ঢাকাতেই নয়, বরং পুরো বাংলাদেশেই এই খেলাগুলোর জনপ্রিয়তা রয়েছে। মোহামেডান এবং আবাহনী ঢাকার দুটি বিখ্যাত ক্লাব যারা ফুটবল এমন ক্রিকেটে নিয়মিত সাফল্য অর্জন করে আসছে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট জাতীয় ক্রিকেট লীগে ঢাকার দল হিসাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্রিকেট দল অংশ নিয়ে থাকে। এছাড়া ঘরোয়া টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে এই শহরের দল ঢাকা প্লাটুন অংশ নিয়ে থাকে। সারা বাংলাদেশের খেলাধুলার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) (সাবেক ঢাকা স্টেডিয়াম) ও এর আশেপাশের এলাকা। বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি হলেও ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, হকি, হ্যান্ডবল সহ আরও অনেক খেলা ঢাকায় নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এক সময় প্রতি বছর ঢাকা স্টেডিয়ামে আগা খান গোল্ড কাপ-এর মতো আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট সারাদেশের মানুষকে উদ্দীপিত করে রাখতো। অল্প কিছু সময় প্রেসিডেন্টস গোল্ড কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এছাড়াও ঢাকা স্টেডিয়ামে উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়েছিলো এশিয়া কাপ, অনূর্ধ্ব ২১ ফুটবল টুর্নামেন্ট। বর্তমানে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তায় অন্যান্য খেলাধুলা ম্রীয়মান হয়ে গেছে বলা যায়। স্বাধীনতা পূর্বের ন্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম পুনরায় আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়াও শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই স্টেডিয়ামগুলোতে এখন নিয়মিতভাবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলাসমূহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের খেলাধুলার সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া কাউন্সিল। এর সদর দপ্তর ঢাকায় অবস্থিত। এছাড়াও প্রায় ৩০টি ক্রীড়া ফেডারেশন ঢাকার সদরদপ্তর হতেই জেলা ক্রীড়া সমিতিগুলোর মাধ্যমে সারা দেশের খেলাধুলার কার্যক্রম দেখাশোনা ও পরিচালনা করে। এই ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন যার সদরদপ্তরও ঢাকায় অবস্থিত। উল্লেখযোগ্য ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো হলো: বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন, বাংলাদেশ বাস্কেটবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ শ্যুটিং ফেডারেশন, বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন, বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন, বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন, বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন, বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন, বাংলাদেশ আর্চারী ফেডারেশন, বাংলাদেশ এ্যামেচার এথলেটিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ খো খো ফেডারেশন, বাংলাদেশ তাইকুন্ডু ফেডারেশন। ঢাকার উল্লেখযোগ্য খেলাধুলার কেন্দ্রগুলো হচ্ছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এলাকা সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়াম, ন্যাশনাল সুইমিংপুল, মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম, মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম, উডেনফ্লোর জিমনেশিয়াম, ঢাকা জেলা ক্রীড়া সমিতি; মিরপুর জাতীয় ষ্টেডিয়াম ও তা সংলগ্ন সুইমিংপুল কমপ্লেক্স; মিরপুর জাতীয় ইনডোর স্টেডিয়াম; বনানীর আর্মি স্টেডিয়াম ও নৌবাহিনীর সুইমিং কমপ্লেক্স। এছাড়াও ধানমন্ডির আবাহনী ক্লাব মাঠ, ধানমন্ডি ক্লাব মাঠ এবং কলাবাগান ক্লাব মাঠেও সারা বছর ধরে বিভিন্ন লীগ ও টুর্নামেন্টের খেলা চলে। দর্শনীয় স্থানসমূহ ঐতিহাসিক স্থানসমূহ: লালবাগের কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ হল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারিবাজার, হোসেনি দালান, ছোট কাটারা, বড় কাটরা, কার্জন হল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবন (পুরাতন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবন), ঢাকেশ্বরী মন্দির, তারা মসজিদ, মীর জুমলা গেট, পরিবিবির মাজার পার্ক, বিনোদন ও প্রাকৃতিক স্থানঃ রমনা পার্ক, বাহাদুর শাহ্‌ পার্ক- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঢাকা শিশু পার্ক, বুড়িগঙ্গা নদী, ঢাকা চিড়িয়াখানা, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বলধা গার্ডেন স্মৃতিসৌধ ও স্মারকঃ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, (রায়ের বাজার), অপরাজেয় বাংলা-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি (ভাস্কর্য) আসাদ গেইট আধুনিক স্থাপত্যঃ জাতীয় সংসদ ভবন, বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার, হজরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। হ্রদঃ ধানমন্ডি লেক, গুলশান লেক, বনানী লেক, দিয়াবাড়ি হ্রদ, ঝিল হাতিরঝিল ঢাকার প্রথম মসজিদ : ১৪৫৬-৫৭ সালে নির্মিত নারিন্দার বিনত বিবির মসজিদই সম্ভবত ঢাকার প্রথম মসজিদ। মুসলিম শিলালিপি : নারিন্দার বিনত বিবি মসজিদে প্রাপ্ত শিলালিপিটিই সম্ভবত ঢাকার প্রথম মুসলিম শিলালিপি। মন্দির : ঢাকার প্রথম মন্দির সম্ভবত বকশিবাজারের ঢাকেশ্বরী মন্দির। ধারণা করা হয় এ মন্দিরের নাম থেকেই এই শহরের নামকরণ হয়েছে 'ঢাকা'।এটির প্রতিষ্ঠাতা সেনবংশের রাজা বল্লাল সেন।এর মাধ্যমেই ঢাকার প্রাচীনত্ব প্রমাণিত হয়। গির্জা : আর্মেনীয় গির্জা পুরান ঢাকার একটি প্রাচীন খ্রিস্টধর্মীয় উপাসনালয়। এটি ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্বাক চলচ্চিত্র : ১৯৩১ সালে নির্মিত ঢাকার প্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাক চলচ্চিত্র দ্য লাস্ট কিস। পাবলিক মার্কেট : ঢাকা পৌরসভার চেয়ারম্যান নবাব ইউসুফজান ১৯১৩ সালে ঢাকায় প্রথম পাবলিক মার্কেট স্থাপন করেন। খেলাফত কমিটির অধিবেশন : নবাব সলিমুল্লার জ্যেষ্ঠপুত্র খাজা হাবিবুল্লাহর উদ্যোগে ডিসেম্বর ১৯২০ সালে আহসান মঞ্জিলে ঢাকা খেলাফত কমিটির প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। পৌরসভা : ১৮৬৪ সালে ঢাকায় প্রথম পৌরসভা গঠিত হয়। ব্যালট পেপারে নির্বাচন : ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯১৯ সালের পরের নির্বাচনে ঢাকায় প্রথম ব্যালট পেপার ব্যবহৃত হয়। ঘোড়াগাড়ির প্রবর্তক : আরমেনিয়ান জিএম সিরকোর প্রথম ঢাকায় ঘোড়াগাড়ি প্রবর্তন করেন বলে ধারণা করা হয়। তার প্রবর্তিত ঘোড়াগাড়ি ঢাকায় পরিচিতি পায় ঠিকাগাড়ি নামে। জেনারেটরে বৈদ্যুতিক বাতি : ৭ ডিসেম্বর ১৯০১ সালে নবাব আহসান উল্লাহর আমন্ত্রণে ছোট লাটের সেক্রেটারি বোলটন ঢাকায় আসেন। বোলটন আহসান মঞ্জিলে হেমন্তের এক শনিবার বিকাল ৫টার সময় সুইচ টিপে ব্যক্তিগত জেনারেটর চালু করে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালান। ম্যাজিস্ট্রেট : সম্ভবত ইংরেজ মি. ডে ঢাকার প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচিত চেয়ারম্যান : জনগণের ভোটে নির্বাচিত ঢাকার প্রথম চেয়ারম্যান আনন্দ চন্দ্র রায়। হাসপাতাল : কলকাতার দেশীয় হাসপাতালের শাখা হিসেবে ১৮০৩ সালে ঢাকার প্রথম হাসপাতাল স্থাপিত হয়। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর : ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা নাজিমউদ্দিন ও খাজা শাহাবউদ্দিন ২৩ মার্চ ১৯২৩ সালে ঢাকায় প্রথম ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খোলেন। জজ : ১৭৭৮ সালে ঢাকার প্রথম জজ নিযুক্ত হন মি. ডানকানসান। ইমামবাড়া : বেশ কয়েকটি প্রাচীন ইমামবাড়ার কথা জানা গেলেও ঢাকার প্রথম ইমামবাড়া সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। গুরুদুয়ারা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারের পশ্চিম পাশে তপুর শিখ সঙ্গত নামে স্থাপিত শিখ মন্দির। এটি গুরুদুয়ারা নানক শাহী নামে পরিচিত। ব্রাহ্মসমাজ মন্দির : পাটুয়াটুলীর মুখে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের পাশে ২২ আগস্ট ১৮৬৯ সালে ঢাকা ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরটি নির্মিত হয়। বিদ্যালয় : ১৮১৬ সালের এপ্রিলে ছোট কাটরায় স্থাপিত লিওনার্দোর স্কুল। সরকারি বিদ্যালয় : ১৫ জুলাই ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজিয়েট স্কুলটিই ঢাকার প্রথম সরকারি বিদ্যালয়। এটি তখনকার সময় বেশ সুপরিচিত একটি বিদ্যালয় ছিল। বুদ্ধদেব বসু, স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান প্রমুখ এই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন। বালিকা বিদ্যালয় : ১৮৭৩ সালে ব্রাহ্মসমাজের উদ্যোগে ফরাশগঞ্জের একটি বাড়িতে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকার প্রথম বালিকা বিদ্যালয়। কারিগরি বিদ্যালয় : ১৮৭৬ সালে ঢাকায় প্রথম সার্ভে স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটিই ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। সরকারি কলেজ : ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকার প্রথম সরকারি কলেজ ঢাকা কলেজ। বেসরকারি কলেজ : ঢাকার প্রথম বেসরকারি কলেজ জগন্নাথ কলেজ। নৈশ্য কলেজ : ১৯৬১ সালে স্থাপিত বকশিবাজারে অবস্থানরত নাইট কলেজ। বর্তমানে ফার্মগেটে স্থানান্তরিত তেজগাঁও কলেজ। মেডিকেল কলেজ : ঢাকার প্রথম মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল কলেজ। মাদ্রাসা-মক্তব : ঢাকা শহরে অনেক মসজিদের সঙ্গেই ছিল মক্তব ও মাদ্রাসা। সরকারের স্বীকৃত মাদ্রাসা হিসেবে ঢাকা মাদ্রাসাই সম্ভবত ঢাকার প্রথম মাদ্রাসা। বেতার কেন্দ্র : ১৬ ডিসেম্বর ১৯৩৯ সালে নাজিমউদ্দিন রোডে খান বাহাদুর নাজির উদ্দিন সাহেবের ভাড়া বাড়িতে দুটি স্টুডিও নিয়ে অল ইন্ডিয়া রেডিও ঢাকার বেতার সম্প্রচার শুরু করে। ফটোগ্রাফিক স্টুডিও : ১৯১০ সালে ১৬ নম্বর নবাবপুর রোডে আর সি দাস অ্যান্ড সন্স নামে ঢাকায় প্রথম ফটোগ্রাফিক স্টুডিও প্রতিষ্ঠিত হয়। মোটরগাড়ি : ১৯০৫ সালে ঢাকায় প্রথম মোটরগাড়ি চালু করেন নবাব সলিমুল্লাহ। রিকশা : সম্ভবত ১৯৩৬-৩৭ সালে ঢাকার মৌলভীবাজারের দুই ব্যক্তি ব্যবসায়িক উদ্দেশে কলকাতার চন্দননগর থেকে ১৮০ টাকায় ঢাকায় দুটি সাইকেল রিকশা আমদানি করেন। মুদ্রণযন্ত্র : ঢাকার প্রথম মুদ্রণযন্ত্র বাংলা মুদ্রণযন্ত্র। মুদ্রণযন্ত্রটি ঢাকায় ১৮৬০ সালে স্থাপন করা হয়। বই : মুনতাসীর মামুনের মতে, ঢাকার ছোট কাটরা থেকে ১৮৪৯ সালে কাটরা প্রেস থেকে ব্যাপটিস্ট মিশনারির প্রকাশিত The first report of the East bengal Missionary Society MDCC-CXL VIII, with an Appendix etc. রিপোর্টিই ঢাকার প্রকাশিত প্রথম বই। সংবাদপত্র : ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র ঢাকা নিউজ। বাংলা সংবাদপত্র : ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা সংবাদপত্র ঢাকা প্রকাশ। ইংরেজি সংবাদপত্র : ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র ঢাকা নিউজ। উর্দু সংবাদপত্র : ১৯০৬ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় উর্দু সংবাদপত্র আল মাশরিক। বিজ্ঞান পত্রিকা : জানুয়ারি ১৮৮১ সালে ঢাকার প্রথম বিজ্ঞান পত্রিকা ভিষক প্রকাশিত হয়। থিয়েটার : ঢাকার প্রথম থিয়েটার সম্ভবত পূর্ববঙ্গ রঙ্গভূমি। প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে মতভেদ থাকলেও ধারণা করা হয় ১৮৬১ সালের দিকে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। নাটক : ঢাকায় প্রথম মঞ্চস্থ নাটক নিয়ে দ্বিধা থাকলেও এক্ষেত্রে দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পণকেই প্রথম মানা হয়। যাত্রা : সম্ভবত 'সীতার বনবাস' যাত্রাপালাটি ঢাকায় প্রদর্শিত প্রথম যাত্রা। বায়োস্কোপ : ১৮৯৮ সালে নবাব আহসানউল্লাহ কলকাতা থেকে বায়োস্কোপ এনে পরিবার ও ঢাকাবাসীকে দেখানোর ব্যবস্থা করেন। সিনেমা হল : ঢাকার পিকচার হাউস নাট্যমঞ্চটি (শাবিস্তান হল) ১৯১৪ সালে সিনেমা হলে রূপান্তরিত হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংক : ঢাকার প্রথম বাণিজ্যিক ব্যাংক ছিল ঢাকা ব্যাংক। বিদ্যুৎ বাতি : ৭ ডিসেম্বর-১৯০১ সালে নবাব আহসানউল্লাহর অর্থায়নে ঢাকার বেশকিছু রাস্তায় বিদ্যুৎ বাতির ব্যবস্থা করা হয়। তেলের বাতি : ১৮৭১ সালে সাধারণ ঢাকাবাসীর চাঁদায় শহরে সর্বপ্রথম ১০০টি ল্যাম্পপোস্ট আর তেলের বাতি চালু করা হয়। শ্মশান : আদিতে ঢাকার নদী ও খালপাড়ে মরদেহ পোড়ানো হতো। ঢাকার আদি স্বীকৃত শ্মশানের মধ্যে দয়াগঞ্জ শ্মশানঘাট, পোস্তগোলা ও লালবাগের শ্মশানের কথা জানা যায়। কবরস্থান : আদি ঢাকায় যত্রতত্র কবর দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। ১৮৮২ সালে ঢাকার পুরনো নাখাসে মিউনিসিপ্যালিটির তত্ত্বাবধানে প্রথম কবরস্থান স্থাপন করা হয়। ডক্টরেট-পিএইচডি : নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায় বাংলার যাত্রাপালা নিয়ে গবেষণা করে সুইজারল্যান্ড থেকে প্রথম ঢাকাবাসী হিসেবে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। নায়েব নাজিম : ঢাকার প্রথম নায়েব নাজিম মুহম্মদ আলী খান। মুসলমান গ্র্যাজুয়েট : আদিনাথ সেনের মতে, ঢাকার প্রথম মুসলমান গ্র্যাজুয়েট খাজা মুহম্মদ আসগর। নারী চিত্রশিল্পী : নবাব পরিবারের মেহেরবানু খানমই সম্ভবত ঢাকার প্রথম নারী চিত্রশিল্পী। ঢাকার প্রথম চলচ্চিত্র : ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা আদিল ও খাজা আজমল ঢাকার প্রথম ছবি সুকুমারী নির্মাণ করেন। এ চলচ্চিত্রটি ছিল পরীক্ষামূলক। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার—১ : ১৭৮৮ সালে একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নির্মাণের মাধ্যমে এই কারাগারে যাত্রা শুরু করা হয় এবং ২০১৬ সালের ২৯ শে জুলাই এই কারাগারটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় এবং বন্ধ করা হয়। বিখ্যাত অধিবাসী মুহাম্মদ আজম শাহ : মুঘল সম্রাট শায়েস্তা খান : মুঘল গভর্নর, বাংলা অমর্ত্য সেন : নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মাহফুজুল হক : ইসলামি পণ্ডিত নূর হুসাইন কাসেমী : ইসলামি পণ্ডিত ইসলাম খান : মুঘল জেনারেল মীর জুমলা : মুঘল গভর্নর শান্তিরঞ্জন সোম : ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী উৎপলা সেন: গায়িকা আরও দেখুন বাংলাদেশের শহরের তালিকা ঢাকার সুউচ্চ ভবনসমূহের তালিকা পুরান ঢাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার শহরতলির তালিকা ঢাকা শহরের উপাসনালয়ের তালিকা বিশ্বের বৃহত্তম শহর এশিয়ার মহানগর এলাকার তালিকা চট্টগ্রাম তথ্যসূত্র আরও পড়ুন বহিঃসংযোগ ঢাকা জেলার সরকারি ওয়েবসাইট জেলা তথ্য বাতায়ন। বাংলাদেশের শহর এশিয়ার রাজধানী ঢাকা জেলার জনবহুল স্থান বাংলার রাজধানী ঢাকা ঢাকা বিভাগের জনবহুল স্থান দক্ষিণ এশিয়া
https://en.wikipedia.org/wiki/Dhaka
Dhaka
Dhaka ( DAH-kə or DAK-ə; Bengali: ঢাকা, romanized: Ḍhākā, pronounced [ˈɖʱaka] ), formerly known as Dacca, is the capital and largest city of Bangladesh. It is the ninth-largest and seventh-most densely populated city in the world. Dhaka is a megacity, and has a population of 10.2 million residents as of 2022, and a population of over 22.4 million residents in Dhaka Metropolitan Area. It is widely considered to be the most densely populated built-up urban area in the world. Dhaka is the most important cultural, economic, and scientific hub of Eastern South Asia, as well as a major Muslim-majority city. Dhaka ranks third in South Asia and 39th in the world in terms of GDP. Lying on the Ganges Delta, it is bounded by the Buriganga, Turag, Dhaleshwari and Shitalakshya rivers. Dhaka is also the largest Bengali-speaking city in the world. The area of Dhaka has been inhabited since the first millennium. An early modern city developed from the 17th century as a provincial capital and commercial centre of the Mughal Empire. Dhaka was the capital of a proto-industrialised Mughal Bengal for 75 years (1608–39 and 1660–1704). It was the hub of the muslin trade in Bengal and one of the most prosperous cities in the world. The Mughal city was named Jahangirnagar (The City of Jahangir) in honour of the erstwhile ruling emperor Jahangir. The city's wealthy Mughal elite included princes and the sons of Mughal emperors. The pre-colonial city's glory peaked in the 17th and 18th centuries when it was home to merchants from across Eurasia. The Port of Dhaka was a major trading post for both riverine and seaborne trade. The Mughals decorated the city with well-laid gardens, tombs, mosques, palaces, and forts. The city was once called the Venice of the East. Under British rule, the city saw the introduction of electricity, railways, cinemas, Western-style universities and colleges and a modern water supply. It became an important administrative and educational centre in the British Raj, as the capital of Eastern Bengal and Assam province after 1905. In 1947, after the end of British rule, the city became the administrative capital of East Pakistan. It was declared the legislative capital of Pakistan in 1962. In 1971, after the Liberation War, it became the capital of independent Bangladesh. In 2008, Dhaka celebrated 400 years as a municipal city. A beta-global city, Dhaka is the centre of political, economic and cultural life in Bangladesh. It is the seat of the Government of Bangladesh, many Bangladeshi companies, and leading Bangladeshi educational, scientific, research, and cultural organizations. Since its establishment as a modern capital city, the population, area and social and economic diversity of Dhaka have grown tremendously. The city is now one of the most densely industrialized regions in the country. The city accounts for 35% of Bangladesh's economy. The Dhaka Stock Exchange has over 750 listed companies. Dhaka hosts over 50 diplomatic missions; as well as the headquarters of BIMSTEC, CIRDAP, and the International Jute Study Group. Dhaka has a renowned culinary heritage. The city's culture is known for its rickshaws, Kachi Biryani, art festivals, street food, and religious diversity. Dhaka's most prominent architectural landmark is the modernist Jatiyo Sangshad Bhaban; while it has a heritage of 2000 buildings from the Mughal and British periods. The city is associated with two Nobel laureates. Dhaka's annual Bengali New Year parade, its Jamdani sari, and its rickshaw art have been recognized by UNESCO as the intangible cultural heritage of humanity. The city has produced many writers and poets in several languages, especially in Bengali and English.
1100
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9A%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম (চাটগাঁইয়া: চাটগাঁও) বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর ও বাণিজ্যিক রাজধানী। শহরটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বঙ্গোপসাগরের মধ্যবর্তী কর্ণফুলী নদীর তীরে চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম বিভাগ এবং জেলার প্রশাসনিক আসন। বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত পাহাড়, সমুদ্র এবং উপত্যকায় ঘেরা চট্টগ্রাম শহর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যে প্রাচ্যের রাণী হিসেবে বিখ্যাত। এটি বঙ্গোপসাগরের ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর। ২০২২ সালে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল ৫২ লাখেরও বেশি। শহরটি অনেক বড় স্থানীয় ব্যবসার আবাসস্থল, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঢাকা ও কলকাতার পর এটি বঙ্গীয় অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী। শতাব্দী ধরে কার্যকরী প্রাকৃতিক বন্দর সহ বিশ্বের প্রাচীনতম বন্দরগুলির মধ্যে চট্টগ্রাম প্রাচীন গ্রিক এবং রোমান মানচিত্রে টলেমির বিশ্ব মানচিত্রে উপস্থিত ছিল। এটি রেশম পথের দক্ষিণ ভাগে অবস্থিত ছিল। নবম শতাব্দীতে, আব্বাসীয় খিলাফতের বণিকরা চট্টগ্রামে একটি ব্যবসায়িক পোস্ট স্থাপন করছিল। ১৪শ শতাব্দীতে বাংলার মুসলিমরা বন্দরটি জয় করে। এটি দিল্লী সালতানাত, বাংলা সালতানাত এবং মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে একটি রাজকীয় টাকশালের স্থান ছিল। ১৫ এবং ১৭ শতকের মধ্যে, চট্টগ্রাম আরাকানের প্রশাসনিক, সাহিত্যিক, বাণিজ্যিক এবং সামুদ্রিক কার্যক্রমের একটি কেন্দ্র ছিল, বঙ্গোপসাগরের পূর্ব উপকূল বরাবর একটি সংকীর্ণ ভূখণ্ড হিসেবে ৩৫০০ বছর ধরে শক্তিশালী বাঙালি প্রভাবের অধীনে ছিল। ১৬শ শতাব্দীতে, বন্দরটি একটি পর্তুগিজ বাণিজ্য পোস্টে পরিণত হয়েছিল এবং জোয়াও ডি ব্যারোস এটিকে "বাংলা রাজ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং ধনী শহর" হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। ১৬৬৬ সালে মুঘল সাম্রাজ্য চট্টগ্রাম থেকে পর্তুগিজ এবং আরাকানিদের বিতাড়িত করে। বাংলার বাকি এলাকার মতো ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯৩ সালে চট্টগ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ১৮৮৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দর পুনর্গঠিত হয় এবং ব্রিটিশ বার্মার সাথে এর ব্যস্ততম শিপিং লিঙ্ক ছিল। ১৯২৮ সালে, চট্টগ্রামকে ব্রিটিশ ভারতের একটি "প্রধান বন্দর" ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, চট্টগ্রাম বার্মা অভিযানে নিয়োজিত মিত্রবাহিনীর ঘাঁটি ছিল। বন্দর শহরটি ১৯৪০-এর দশকে, বিশেষ করে ব্রিটিশ ভারতের বিভক্তির পরে প্রসারিত এবং শিল্পায়িত হতে শুরু করে। শহরটি ছিল আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে এবং পাকিস্তান ইস্টার্ন রেলওয়ের ঐতিহাসিক টার্মিনাস। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, চট্টগ্রাম ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার স্থান। বন্দর নগরটি বাংলাদেশে ভারী শিল্প, রসদ এবং উৎপাদনের বৃদ্ধি থেকে উপকৃত হয়েছে। ১৯৯০-এর দশকে এখানে ট্রেড ইউনিয়নবাদ শক্তিশালী ছিল। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের জিডিপির ১২%, শিল্প উৎপাদনের ৪০%, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৮০% এবং কর রাজস্বের ৫০% অবদান রাখে। বন্দর নগরে দেশের বহু প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম কোম্পানিগুলির প্রধান কার্যালয় আবস্থিত। চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ব্যস্ততম বন্দর। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিমান ঘাঁটি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গ্যারিসন এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের প্রধান ঘাঁটি সহ বৃহত্তম ঘাঁটি চট্টগ্রামে অবস্থিত। বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামে অবস্থিত। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ৭০০টিরও বেশি তালিকাভুক্ত কোম্পানি সহ বাংলাদেশের জমজ শেয়ার বাজারগুলির মধ্যে একটি। চট্টগ্রাম চা নিলাম হল একটি পণ্য বিনিময় প্রক্রিয়া যা বাংলাদেশী চা নিয়ে কাজ করে। সিইপিজেড এবং কেইপিজেড হল বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ সহ প্রধান শিল্প অঞ্চল। শহরটি অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত ফ্লাইটের জন্য শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দ্বারা পরিবেশিত হয়। বাঙালি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রামে বাংলাদেশের শহরগুলোর মধ্যে উচ্চ মাত্রার ধর্মীয় ও জাতিগত বৈচিত্র্য রয়েছে। সংখ্যালঘুদের মধ্যে রয়েছে বাঙালি হিন্দু, বাঙালি খ্রিস্টান, বাঙালি বৌদ্ধ, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরি, গারো এবং অন্যান্য। ব্যুৎপত্তি চট্টগ্রামের ব্যুৎপত্তি অনিশ্চিত। একটি ব্যাখ্যার কৃতিত্ব প্রথম আরব ব্যবসায়ীদের শাত ঘাংঘ () শব্দসমূহের সমন্বয়ের জন্য, যেখানে শাত অর্থ "ব-দ্বীপ" এবং ঘাং অর্থ গঙ্গা। আরাকানি ইতিহাসে বলা হয়েছে যে সু-লা-তাইং তসন্দায়া (সুলা তাইং চন্দ্র) নামে একজন রাজা বাংলা জয় করার পর, স্থানটিতে ট্রফি/স্মৃতিস্বরূপ একটি পাথরের স্তম্ভ স্থাপন করেছিলেন, যেহেতু এই স্থানটিকে জয়ের সীমা হিসাবে Tst-ta-gaung বলা হয়। এই আরাকানি রাজা ৩১১ আরাকান সালে, ৯৫২ খ্রিস্টাব্দের সাথে মিল রেখে, আরাকানে সিংহাসনে আরোহণ করেন। দুই বছর পরে তিনি এই স্থানটি জয় করেন। শিলালিপিযুক্ত এই পাথরের স্তম্ভটিতে লেখা ছিল সিট-তা-গাউং, যার অর্থ 'যুদ্ধ করা অনুচিত', যেটি কোনো মিথ হতে পারে না। যাইহোক, শহরের স্থানীয় নাম (বাংলা বা চাটগাঁইয়া) চাটগা, যা একটি অপভ্রংশ চাটগাঁও বা চাটিগাঁও থেকে আগত, এবং আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম শব্দটি "চট্ট (সম্ভবত একটি বর্ণ বা উপজাতি) গ্রাম বা শহর" অর্থ বহন করে। অতএব, বাংলা নাম চট্টগ্রাম, চীনা সা-তি-কিয়াং, চেহ-তি.গান এবং ইউরোপীয় চিটাগং আরাকানি সেট-তা-গাং নামের বিকৃত সংস্করণ। বন্দর নগরটি ইতিহাসে বিভিন্ন নামে পরিচিত, যার মধ্যে রয়েছে চাটিগাঁও, চাটগাঁ, চাতগাঁও, শ্যাৎগাঙ্গ, চৈত্যগ্রাম, চাটিগাম, চট্টগ্রাম, ইসলামাবাদ, চট্টল, চট্টলা, শ্রীচট্টল, চিতাগঞ্জ, চিৎ-তৌৎ-গৌং, সপ্তগ্রাম, জাটিগ্রাম, চার্টিগান চতকাঁও, চৈত্যভূমি, রোসাং, জ্বালনধারা এবং পোর্টো গ্র্যান্ডে দে বেঙ্গালা। নাম চট্টগ্রাম শব্দে, "-গ্রাম" প্রত্যয় রয়েছে। একটি কিংবদন্তি আনুসারে ইসলামের প্রসারে নামটি উল্লেখ করা হয়েছে যখন একজন মুসলিম শহরের একটি পাহাড়ের চূড়ায় একটি চাটি (বাতি) জ্বালিয়ে মানুষের জন্য আজান দিতেন। শহরটির নতুন নামকরণ করা হয় ইসলামাবাদ (ইসলামের শহর) এবং মুঘল আমলে পুরানো শহরে ব্যবহার করা অব্যাহত রয়েছে। মাণিক্য রাজার ছোট মাছ ধরার গ্রাম ছিল চট্টগ্রাম। "চটি" মানে "প্রদীপ" আর "গাম" মানে "ভালো"। পর্তুগিজরা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এখানে আসে এবং তারা ত্রিপুরার রাজার কাছে কিছু জমি চেয়ে নেয়। এবং ত্রিপুরার রাজা ব্যবসার উদ্দেশ্যে পর্তুগিজদের কিছু জমি প্রদান করে। চট্টগ্রাম বারো আউলিয়ার দেশ (বারো সুফি সাধকের দেশ) নামেও পরিচিত। ইতিহাস সীতাকুণ্ড এলাকায় পাওয়া প্রস্তরীভূত অস্ত্র এবং বিভিন্ন মানবসৃষ্ট প্রস্তর খণ্ড থেকে ধারণা করা হয় যে, এ অঞ্চলে নব্যপ্রস্তর যুগে অস্ট্রো-এশীয়াটিক জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। তবে, অচিরে মঙ্গোলদের দ্বারা তারা বিতাড়িত হয়। লিখিত ইতিহাসে সম্ভবত প্রথম উল্লেখ গ্রিক ভৌগোলিক প্লিনির লিখিত পেরিপ্লাস। সেখানে ক্রিস নামে যে স্থানের বর্ণনা রয়েছে ঐতিহাসিক নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মতে সেটি বর্তমানের সন্দ্বীপ। ঐতিহাসিক ল্যাসেনের ধারণা সেখানে উল্লিখিত পেন্টাপোলিশ আসলে চট্টগ্রামেরই আদিনাম। মৌর্য সাম্রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত নয় তবে পূর্ব নোয়াখালির শিলুয়াতে মৌর্য যুগের ব্রাহ্মী লিপিতে একটি মূর্তির পাদলিপি পাওয়া গেছে। তিব্বতের বৌদ্ধ ঐতিহাসিক লামা তারানাথের একটি গ্রন্থে চন্দ্রবংশের শাসনামলের কথা দেখা যায় যার রাজধানী ছিল চট্টগ্রাম। এর উল্লেখ আরাকানের সিথাং মন্দিরের শিলালিপিতেও আছে। তারানাথের গ্রন্থে দশম শতকে গোপীনাথ চন্দ্র নামের রাজার কথা রয়েছে।। সে সময় আরব বণিকদের চট্টগ্রামে আগমন ঘটে। আরব ভূগোলবিদদের বর্ণনার ‘সমুন্দর’ নামের বন্দরটি যে আসলে চট্টগ্রাম বন্দর তা নিয়ে এখন ঐতিহাসিকরা মোটামুটি নিশ্চিত। সে সময় পালবংশের রাজা ছিলেন ধর্মপাল। পাল বংশের পর এ অঞ্চলে একাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের সৃষ্টি হয়। ৯৫৩ সালে আরাকানের চন্দ্রবংশীয় রাজা সু-লা‌-তাইং-সন্দয়া চট্টগ্রাম অভিযানে আসলেও কোন এক অজ্ঞাত কারণে তিনি বেশি দূর অগ্রসর না হয়ে একটি স্তম্ভ তৈরি করেন। এটির গায়ে লেখা হয় ‘চেৎ-ত-গৌঙ্গ’ যার অর্থ ‘যুদ্ধ করা অনুচিৎ’। সে থেকে এ এলাকাটি চৈত্তগৌং হয়ে যায় বলে লেখা হয়েছে আরাকানি পুঁথি ‘রাজাওয়াং’-এ। এ চৈত্তগৌং থেকে কালক্রমে চাটিগ্রাম, চাটগাঁ, চট্টগ্রাম, চিটাগাং ইত্যাদি বানানের চল হয়েছে। চন্দ্রবংশের পর লালবংশ এবং এরপর কয়েকজন রাজার কথা কিছু ঐতিহাসিক উল্লেখ করলেও ঐতিহাসিক শিহাবুদ্দিন তালিশের মতে ১৩৩৮ সালে সুলতান ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের‌ চট্টগ্রাম বিজয়ের আগ পর্যন্ত ইতিহাস অস্পষ্ট। এ বিজয়ের ফলে চট্টগ্রাম স্বাধীন সোনারগাঁও রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। সে সময়ে প্রায় ১৩৪৬ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম আসেন বিখ্যাত মুর পরিব্রাজক ইবনে বতুতা। তিনি লিখেছেন - “বাংলাদেশের যে শহরে আমরা প্রবেশ করলাম তা হল সোদকাওয়াঙ (চট্টগ্রাম)। এটি মহাসমুদ্রের তীরে অবস্থিত একটি বিরাট শহর, এরই কাছে গঙ্গা নদী- যেখানে হিন্দুরা তীর্থ করেন এবং যমুনা নদী একসঙ্গে মিলেছে এবং সেখান থেকে প্রবাহিত হয়ে তারা সমুদ্রে পড়েছে। গঙ্গা নদীর তীরে অসংখ্য জাহাজ ছিল, সেইগুলি দিয়ে তারা লখনৌতির লোকেদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। ...আমি সোদওয়াঙ ত্যাগ করে কামরু (কামরূপ) পর্বতমালার দিকে রওনা হলাম।” ১৩৫২‌-১৩৫৩ সালে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের পুত্র ইখতিয়ার উদ্দিন গাজী শাহকে হত্যা করে বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলার মসনদ দখল করলে চট্টগ্রামও তার করতলগত হয়। তার সময়ে চট্টগ্রাম বাংলার প্রধান বন্দর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর হিন্দুরাজা গণেশ ও তার বংশধররা চট্টগ্রাম শাসন করেন। এরপরে বাংলায় হাবশি বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৪৯২ সালে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ বাংলার সুলতান হন। চট্টগ্রামের দখল নিয়ে তাকে ১৪১৩-১৪১৭ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরার রাজা ধনমানিকের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রাজা ধনমানিকের মৃত্যুর পর হোসেন শাহের রাজত্ব উত্তর আরাকান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তার সময়ে উত্তর চট্টগ্রামের নায়েব পরবগল খানের পুত্র ছুটি খানের পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রীকর নন্দী মহাভারতের একটি পর্বের বঙ্গানুবাদ করেন। পর্তুগিজদের আগমন ও বন্দরের কর্তৃত্ব লাভ ১৫১৭ সাল থেকে পর্তুগিজরা চট্টগ্রামে আসতে শুরু করে। বাণিজ্যের চেয়ে তাদের মধ্যে জলদস্যুতার বিষয়টি প্রবল ছিল। বাংলার সুলতান প্রবলভাবে তাদের দমনের চেষ্টা করেন। কিন্তু এ সময় আফগান শাসক শের শাহ বাংলা আক্রমণ করবেন শুনে ভীত হয়ে গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ পর্তুগিজদের সহায়তা কামনা করেন। তখন সামরিক সহায়তার বিনিময়ে ১৫৩৭ সালে পর্তুগিজরা চট্টগ্রামে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ করে। একই সঙ্গে তাদেরকে বন্দর এলাকার শুল্ক আদায়ের অধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। ১৫৩৮ সালে শের শাহের সেনাপতি চট্টগ্রাম দখল করেন। তবে ১৫৮০ সাল পর্যন্ত আফগান শাসনামলে সবসময় ত্রিপুরা আর আরাকানিদের সঙ্গে যুদ্ধ চলেছে। আরাকানি শাসন ১৫৮১ সাল থেকে ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম সম্পূর্ণভাবে আরাকানের রাজাদের অধীনে শাসিত হয়। তবে পর্তুগিজ জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য এ সময় খুবই বৃদ্ধি পায়। বাধ্য হয়ে আরাকান রাজা ১৬০৩ ও ১৬০৭ সালে শক্ত হাতে পর্তুগিজদের দমন করেন। ১৬০৭ সালেই ফরাসি পরিব্রাজক ডি লাভাল চট্টগ্রাম সফর করেন। তবে সে সময় পর্তুগিজ জলদস্যু গঞ্জালেস সন্দ্বীপ দখল করে রেখেছিলেন। পর্তুগিজ মিশনারি পাদ্রি ম্যানরিক ১৬৩০-১৬৩৪ সময়কালে চট্টগ্রামে উপস্থিতকালে চট্টগ্রাম শাসক আলামেনের প্রশংসা করে যান। ১৬৬৬ সালে চট্টগ্রাম মুঘলদের হস্তগত হয়। চট্টগ্রামে আরাকানি শাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম আরাকানিদের কাছ থেকে অনেক কিছুই গ্রহণ করে। জমির পরিমাণে মঘী কানির ব্যবহার এখনো চট্টগ্রামে রয়েছে। মঘী সনের ব্যবহারও দীর্ঘদিন প্রচলিত ছিল। সে সময়ে আরাকানে মুসলিম জনবসতি বাড়ে। আরকান রাজসভায় মহাকবি আলাওল, দৌলত কাজী এবং কোরেশী মাগণ ঠাকুর এর মতো বাংলা কবিদের সাধনা আর পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে বাংলা সাহিত্যের প্রভূত উন্নতি হয়। পদ্মাবতী আলাওলের অন্যতম কাব্য। মুঘল শাসনামল ১৬৬৬ সালে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খানকে চট্টগ্রাম দখলের নির্দেশ দেন। সুবেদারের পুত্র উমেদ খানের নেতৃত্বে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় আরাকানিদের পরাজিত করেন এবং আরাকানি দুর্গ দখল করেন। যথারীতি পর্তুগিজরা আরাকানিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে মুঘলদের পক্ষ নেয়। মুঘল সেনাপতি উমেদ খান চট্টগ্রামের প্রথম ফৌজদারের দায়িত্ব পান। শুরু হয় চট্টগ্রামে মুঘল শাসন। তবে মুঘলদের শাসনামলের পুরোটা সময় আরাকানিরা চট্টগ্রাম অধিকারের চেষ্টা চালায়। টমাস প্রাট নামে এক ইংরেজ আরাকানিদের সঙ্গে যোগ দিয়ে মুঘলদের পরাজিত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কোলকাতার গোড়াপত্তনকারী ইংরেজ জব চার্নকও ১৬৮৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দখলের ব্যর্থ অভিযান চালান। ১৬৮৮ সালে ক্যাপ্টেন হিথেরও অনুরূপ অভিযান সফল হয় নি। ১৬৭০ ও ১৭১০ সালে আরাকানিরা চট্টগ্রামের সীমান্তে ব্যর্থ হয়। নবাবি শাসনামল ১৭২৫ সালে প্রায় ৩০ হাজার মগ সৈন্য চট্টগ্রামে ঢুকে পড়ে চট্টগ্রামবাসীকে বিপদাপন্ন করে তোলে। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলার নবাব তাদের তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। এই সময় বাংলার নবাবদের কারণে ইংরেজরা চট্টগ্রাম বন্দর কোনভাবেই দখল করতে পারেনি। বাংলার নবাবরা পার্বত্য এলাকার অধিবাসীদের সঙ্গে, বিশেষ করে চাকমা সম্প্রদায়ের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে সদ্ভাব বজায় রাখেন। পলাশীর যুদ্ধ ও ইংরেজদের কাছে চট্টগ্রাম হস্তান্তর পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর ইংরেজরা চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য নবাব মীর জাফরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তবে, মীর জাফর কোনভাবেই ইংরেজদের চট্টগ্রাম বন্দরের কর্তৃত্ব দিতে রাজি হন নি। ফলে, ইংরেজরা তাকে সরিয়ে মীর কাশিমকে বাংলার নবাব বানানোর ষড়যন্ত্র করে। ১৭৬১ সালে মীর জাফরকে অপসারণ করে মীর কাশিম বাংলার নবাব হয়ে ইংরেজদের বর্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রাম হস্তান্তরিত করেন। চট্টগ্রামের শেষ ফৌজদার রেজা খান সরকারিভাবে চট্টগ্রামের শাসন প্রথম ইংরেজ চিফ ভেরেলস্ট-এর হাতে সমর্পণ করেন। শুরু হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন। কোম্পানির শাসনামলে চট্টগ্রামবাসীর ওপর করারোপ দিনে দিনে বাড়তে থাকে। তবে ১৮৫৭ সালের আগে চাকমাদের বিদ্রোহ আর সন্দ্বীপের জমিদার আবু তোরাপের বিদ্রোহ ছাড়া ইংরেজ কোম্পানিকে তেমন একটা কঠিন সময় পার করতে হয়নি। সন্দ্বীপের জমিদার আবু তোরাপ কৃষকদের সংগঠিত করে ইংরেজদের প্রতিরোধ করেন। কিন্তু ১৭৭৬ সালে হরিষপুরের যুদ্ধে তিনি পরাজিত ও নিহত হলে সন্দ্বীপের প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ে। অন্যদিকে ১৭৭৬ থেকে ১৭৮৯ সাল পর্যন্ত চাকমারা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সম্মুখ সমরে চাকমাদের কাবু করতে না পেরে ইংরেজরা তাদের বিরুদ্ধে কঠিন অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়ে শেষ পর্যন্ত চাকমাদের কাবু করে। ইংরেজরা আন্দরকিল্লা জামে মসজিদকে গোলাবারুদের গুদামে পরিণত করলে চট্টগ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। মসজিদের জন্য নবাবি আমলে প্রদত্ত লাখেরাজ জমি ১৮৩৮ সালের জরিপের সময় বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরে চট্টগ্রামের জমিদার খান বাহাদুর হামিদুল্লাহ খান কলিকাতায় গিয়ে গভর্নরের কাছে আবেদন করে এটি উদ্ধার করার ব্যবস্থা করেন। সিপাহি বিপ্লবে চট্টগ্রাম ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের সময় পুরো ভারতবর্ষের বিদ্রোহের ঢেউ চট্টগ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে। ৩৪তম বেঙ্গল পদাতিক রেজিমেন্টের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ কোম্পানীগুলি তখন চট্টগ্রামে মোতায়েন ছিল। ১৮ নভেম্বর রাতে উল্লিখিত তিনটি কোম্পানী হাবিলদার রজব আলীর নেতৃত্বে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। তারা ব্রিটিশ জেলখানায় আক্রমণ করে সকল বন্দীকে মুক্ত করেন। সিপাহী জামাল খান ছিলেন রজব আলীর অন্যতম সহযোগী। সিপাহিরা ৩টি সরকারি হাতি, গোলাবারুদ ও প্রয়োজনীয় অন্যান্ন রসদ নিয়ে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন। তারা পার্বত্য ত্রিপুরার সীমান্ত পথ ধরে এগিয়ে সিলেট ও কাছাড়ে পৌঁছেন। স্বাধীনতাকামী হিসেবে ত্রিপুরা রাজের সমর্থন কামনা করেন কিন্তু ত্রিপুরা রাজ ইংরেজদের হয়ে তাদের বাঁধা দেন। একই অবস্থা হয় আরো বিভিন্ন যায়গায়। এভাবে বিভিন্ন স্থানে লড়াই করতে গিয়ে একসময় রসদের অভাবে বিদ্রোহীরা শক্তিহীন হয়ে পড়েন। শেষে ১৮৫৮ সালের ৯ জানুয়ারি সিলেটের মনিপুরে ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে এক লড়াই-এই বিদ্রোহের অবসান হয়। প্রশাসন নগর প্রশাসন ১৮৬৩ সালের ২২শে জুন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি'র যাত্রা শুরু। তবে এর প্রশাসন ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৮ জন কমিশনার সমন্বয়ে পরিষদ গঠন করা হয় ১৮৬৪ সালে। ঐসময়ে চট্টগ্রাম শহরের সাড়ে চার বর্গমাইল এলাকা মিউনিসিপ্যালিটির আওতাধীন ছিল। প্রথমে ৪টি ওয়ার্ড থাকলেও ১৯১১ সালে ৫টি ওয়ার্ড সৃষ্টি করা হয়। চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি ১৯৮২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সিটি কর্পোরেশনে রুপান্তরিত হয়। বর্তমানে ওয়ার্ড সংখ্যা ৪১টি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় পৌর এলাকা পরিচালনার করে। এর নেতৃত্বে আছেন চট্টগ্রামের মেয়র। চট্টগ্রাম শহর এলাকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-এর অধীনস্থ। শহরবাসীদের সরাসরি ভোটে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং ওয়ার্ড কমিশনারগণ নির্বাচিত হন। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ফেব্রুয়ারি ২০২১ অনুযায়ী, বর্তমান মেয়র হলেন আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম চৌধুরী। সিটি কর্পোরেশনের ম্যান্ডেট মৌলিক নাগরিক পরিষেবাগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ, তবে, চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের অন্যতম পরিচ্ছন্ন এবং সবচেয়ে পরিবেশ-বান্ধব শহর রাখার জন্য চসিকের কৃতিত্ব রয়েছে৷ চসিকের রাজস্বের প্রধান উৎস হল মিউনিসিপ্যাল ট্যাক্স এবং কনজারভেন্সি চার্জ। নগরীর নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। জেলা ও দায়রা জজ বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে স্থানীয় বিচার বিভাগের প্রধান। বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত ঔপনিবেশিক আমলের চট্টগ্রাম আদালত ভবনে অবস্থিত।বাংলাদেশ সরকারের অংশ হিসাবে জেলা প্রশাসক এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় প্রশাসনের প্রধান। শহরের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নিযুক্ত রয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। এর সদর দপ্তর দামপাড়ায় অবস্থিত। পাশাপাশি রয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৭। বেসামরিক প্রশাসন চট্টগ্রাম বঙ্গোপসাগরে উপকূলে অবস্থিত কৌশলগতভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বন্দর। চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল হল বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি এবং অধিকাংশ বাংলাদেশী যুদ্ধজাহাজের মাতৃবন্দর। বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি এবং নৌবাহিনীর অভিজাত বিশেষ বাহিনী- স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ (সোয়াডস) এই শহরে অবস্থিত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম পদাতিক ডিভিশন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অবস্থিত, এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনী চট্টগ্রামে বিএএফ জহুরুল হক বিমান ঘাঁটির রক্ষণাবেক্ষণ করে। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এই শহরে আবস্থিত। কূটনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ১৮৬০-এর দশকে, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে মার্কিন কনস্যুলেট-জেনারেল চট্টগ্রামে একটি কনস্যুলার এজেন্সি অন্তর্ভুক্ত করে। বর্তমানে, চট্টগ্রামে ভারতের একটি সহকারী হাইকমিশন এবং রাশিয়ার কনস্যুলেট জেনারেলের কার্যালয় রয়েছে। এছাড়াও শহরে তুরস্ক, জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইতালি এবং ফিলিপাইনের অনারারি কনস্যুলেট রয়েছে। ভূগোল ভূসংস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্বে ২০°৩৫’ থেকে ২২°৫৯’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৭’থেকে ৯২°২২’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ বরাবর এর অবস্থান। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপকূলীয় পাদদেশকে বিস্তৃত করে। কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রাম শহর সহ ব্যবসায় জেলা দক্ষিণ তীর ধরে বয়ে চলেছে। নদীটি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে এবং ১২ কিলোমিটার মোহনা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মুল শহর বিস্তুৃত। চট্টগ্রামের উত্তরে সিলেট বিভাগ এবং ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্য এবং মেঘনা নদী, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে ভারতের মিজোরাম রাজ্য, ত্রিপুরা ও মায়ানমার এবং পশ্চিমে মেঘনা নদী, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগ। এছাড়াও চট্টগ্রামের পূর্বে পার্বত্য জেলাসমূহ এবং দক্ষিণে কক্সবাজার জেলা রয়েছে। চট্টগ্রাম শহর উত্তরে ফৌজদারহাট, দক্ষিণে কালুরঘাট এবং পূর্বে হাটহাজারী পর্যন্ত বিস্তৃত। বাটালি পাহাড় শহরের মধ্যকার সর্বোচ্চ স্থান, যার উচ্চতা । চট্টগ্রামে অনেক হ্রদ ও জলাধার রয়েছে যেগুলোর আনেকগুলি মুঘল শাসনামলে তৈরি হয়েছিল। ১৯২৪ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের একটি প্রকৌশলী দল এখানে ফয়েজ লেক খনন করেছিল। বাস্তুসংস্থানসংক্রান্ত পশ্চাদভূমি চট্টগ্রাম তার সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত। বাংলাদেশের ৬,০০০টি ফুলের গাছের মধ্যে ২,০০০ টিরও বেশি এই অঞ্চলে জন্মে। এর পাহাড় এবং জঙ্গল জলপ্রপাত, দ্রুত প্রবাহিত নদীর স্রোত এবং হাতির ভাণ্ডারে ভরা। পূর্বে, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি এই তিনটি পার্বত্য জেলার অবস্থান, যেখানে রয়েছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতমালা। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের প্রধান সমুদ্রসীমায়, শহর থেকে পশ্চিমে অবস্থিত। আবহাওয়া ও জলবায়ু দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত চট্টগ্রামেও ছয় ঋতু দেখা যায়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এ অঞ্চলে শীতকাল, মার্চ, এপ্রিল, মে-তে গ্রীষ্মকাল দেখা যায়। জুন, জুলাই, আগস্ট পর্যন্ত বর্ষাকাল। তবে ইদানীং আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়। কোপেন জলবায়ু শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী চট্টগ্রামে ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু (অ্যাম) বিদ্যমান। চট্টগ্রাম উত্তর ভারত মহাসাগরের ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। চট্টগ্রামে আঘাত হানা সবচেয়ে মারাত্মক ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ছিল ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, যার ফলে প্রায় ১৩৮,০০০ জন নিহত এবং ১০ মিলিয়নের মতো গৃহহীন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল। জনসংখ্যা জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর তথ্যমতে, চট্টগ্রাম শহরের জনসংখ্যা ১ কোটি ১১ লক্ষ ৭৫ হাজার ২৬ জন এবং নারী ও পুরুষের সংখ্যা যথাক্রমে ৫৫ লক্ষ ৭৭ হাজার ১৬৮ জন ও ৫৫ লক্ষ ৯৬ হাজার ৮২১ জন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধিন এলাকার জনসংখ্যা ৩২ লক্ষ ২৭ হাজার ২৪৬ জন। যেখানে নারী ও পুরুষের সংখ্যা যথাক্রমে ১৫ লক্ষ ৫৩ হাজার ২৫২ জন ও ১৬ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬২৭ জন। বাংলায় সুলতানি ও মুঘল শাসনামলে চট্টগ্রামের জাতিগোষ্ঠীর একটি বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়। সপ্তম শতাব্দীর প্রথমদিকে মুসলিম অভিবাসন শুরু হয়েছিল এবং মধ্যযুগীয় সময়ে উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনবসতি গড়ে উঠেছিল। পারস্য ও আরব থেকে আগত মুসলিম ব্যবসায়ী, শাসক এবং প্রচারকরা প্রথমদিকে মুসলমান বসতি স্থাপন করেছিলেন এবং তাদের বংশধররা এই শহরের বর্তমান মুসলিম জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ। শহরে ইসমাইলিস এবং যাযাবর শিয়া সহ অপেক্ষাকৃত ধনী এবং অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবিত শিয়া মুসলিম সম্প্রদায় রয়েছে। এই শহরে অনেক জাতিগত সংখ্যালঘুও রয়েছে, বিশেষত চাকমা, রাখাইন এবং ত্রিপুরী সহ চট্টগ্রাম বিভাগের সীমান্তবর্তী পাহাড়ের উপজাতি গোষ্ঠীর সদস্য; এবং তার পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছে। বড়ুয়া নামে পরিচিত এ অঞ্চলের বাংলাভাষী থেরবাদী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাচীন সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশের বৌদ্ধধর্মের সর্বশেষ অবশেষ। প্রায়শই ফিরিঙ্গি নামে পরিচিত, পর্তুগিজ জনগোষ্ঠীর বংশোদ্ভূত চট্টগ্রামের প্রাচীন ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়, যারা পাথরঘাটা পুরনো পর্তুগিজ ছিটমহলে বাস করেন। এখানে একটি ছোট্ট উর্দুভাষী বিহারি সম্প্রদায়ও রয়েছে, যারা বিহারি কলোনি নামে পরিচিত জাতিগত ছিটমহলে বসবাস করে। দক্ষিণ এশীয়ার অন্যান্য প্রধান নগর কেন্দ্রগুলির মতো, এ মহানগরেরও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ অঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলমুখি মানুষের ঢলের ফলস্বরূপ চট্টগ্রামের বস্তিগুলোর অবিচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের দারিদ্র্য বিমোচনের প্রকাশনার তথ্য অনুসারে, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১,৮১৪ টি বস্তি রয়েছে, যাতে প্রায় ১৮০,০০০ বস্তিবাসী বসবাস করে, যা রাজধানী ঢাকার পরে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বস্তিবাসীরা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রায়শই উচ্ছেদের মুখোমুখি হন এবং তাদের সরকারি জমিতে অবৈধ আবাসনের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। অর্থনীতি বাংলাদেশের জাতীয় জিডিপি-তের চট্টগ্রামের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। বন্দর নগরীটি দেশের অর্থনীতিতে ১২% অবদান রাখে। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদনের ৪০%, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৮০% এবং সরকারি রাজস্বের ৫০% অবদান রাখে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ৭০০ টিরও বেশি তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে, ২০১৫ সালের জুন মাসে যার বাজার মূলধন ছিল $৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই শহরটি দেশের বহু প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম কর্পোরেশনগুলির প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। ২০১১ সালে মুম্বই বন্দর এবং কলম্বো বন্দরের পরে চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় বন্দর হিসেবে বার্ষিক ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য পরিচালনা করে। বন্দরটি মেরিটাইম সিল্ক রোডের অংশ যা চীনা উপকূল থেকে সুয়েজ খাল হয়ে ভূমধ্যসাগরে এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের সাথে রেল সংযোগ সহ ত্রিয়েস্তের উচ্চ আড্রিয়াটিক অঞ্চলে চলাচল করে। আগ্রাবাদ শহরের প্রধান কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক এলাকা। চট্টগ্রামে প্রধান বাংলাদেশী কোম্পানিগুলোর সদর দফতরের মধ্যে রয়েছে এম. এম. ইস্পাহানি লিমিটেড, বিএসআরএম, এ কে খান এন্ড কোম্পানি, পিএইচপি গ্রুপ, জেমস ফিনলে, হাবিব গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, সিমার্ক গ্রুপ, কেডিএস গ্রুপ এবং টি কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর প্রধান কার্যালয়ের মধ্যে রয়েছে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ, যমুনা অয়েল কোম্পানি, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন এবং পদ্মা অয়েল কোম্পানি। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলকে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ম্যাগাজিন, ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট, বিশ্বের অন্যতম প্রধান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসাবে স্থান দিয়েছে। অন্যান্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী ইপিজেড এবং কোরিয়ান ইপিজেড। শহরের প্রধান শিল্প খাতের মধ্যে রয়েছে পেট্রোলিয়াম, ইস্পাত, জাহাজ নির্মাণ, রাসায়নিক, ফার্মাসিউটিক্যালস, বস্ত্র, পাট, চামড়াজাত পণ্য, উদ্ভিজ্জ তেল শোধনাগার, গ্লাস উত্পাদন, ইলেকট্রনিক্স এবং মোটর যানবাহন। বাংলাদেশ চায়ের দাম নির্ধারণ করে চট্টগ্রাম চা নিলাম। ইস্টার্ন রিফাইনারি বাংলাদেশের বৃহত্তম তেল শোধনাগার চট্টগ্রামে অবস্থিত। গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ১৯৬৭ সাল থেকে চট্টগ্রামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড একটি শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশি জাহাজ নির্মাতা এবং মাঝারি আকারের সমুদ্রগামী জাহাজের রপ্তানিকারক। ২০১১-১২ সালে, চট্টগ্রাম প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কর্ণফুলী পেপার মিল চট্টগ্রামে অবস্থিত। চট্টগ্রামে পরিচালিত আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, সিটিব্যাংক এনএ এবং হাবিব ব্যাংক লিমিটেড। বৈচিত্র্যময় শিল্প ভিত্তি এবং সমুদ্রবন্দরের কারণে চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয়। উত্তর-পূর্ব ভারত, বার্মা, নেপাল, ভুটান এবং দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের নিকটবর্তী হওয়ায় বন্দর শহরটির একটি বৈশ্বিক আর্থিক কেন্দ্র এবং আঞ্চলিক ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসাবে বিকাশের উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। পরিবহন চট্টগ্রামের পরিবহন রাজধানী ঢাকার মতোই। মহানগর জুড়ে বড় বড় সড়ক ও রাস্তা রয়েছে। এখানে বিভিন্ন বাস ব্যবস্থা এবং ট্যাক্সি পরিষেবা রয়েছে, সেইসাথে ছোট 'বেবি' বা 'সিএনজি' ট্যাক্সি রয়েছে, যা তিনচাকা-গঠিত মোটর যান। পাঠাও এবং উবারের মতো স্থানীয় ও বিদেশি রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো এই শহরে সেবা প্রদান করছে। ঐতিহ্যবাহী ম্যানুয়াল রিকশাও আছে, যেগুলো খুবই সাধারণ এবং সহজলভ্য। বিমান চলাচল দক্ষিণ পতেঙ্গায় অবস্থিত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর , চট্টগ্রামের একমাত্র বিমানবন্দর। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। বিমানবন্দরটি বার্ষিক ১.৫ মিলিয়ন যাত্রী এবং ৬,০০০ টন কার্গো পরিচালনা করতে সক্ষম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম এয়ারফিল্ড নামে পরিচিত, বিমানবন্দরটি ১৯৪৪-৪৫ সালের বার্মা অভিযানের সময় ইউনাইটেড স্টেটস আর্মি এয়ার ফোর্সের দশম বিমান বাহিনী একটি সাপ্লাই পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশী বিমানবন্দরে পরিণত হয়। আন্তর্জাতিক পরিষেবাগুলি আরব উপদ্বীপের প্রধান শহরগুলির পাশাপাশি ভারতীয় শহর কলকাতায় উড়ে যায়। বর্তমানে, মধ্যপ্রাচ্যের বিমান পরিবহন সংস্থা যেমন এয়ার এরাবিয়া, ফ্লাইদুবাই, জাজিরা এয়ারওয়েজ, ওমান এয়ার এবং সালামএয়ার বাংলাদেশের বিমান পরিবহন সংস্থাসমূহের সাথে এই গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে। সকল বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স ঢাকায় নিয়মিত অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করে। বিমানবন্দরটি পূর্বে এমএ হান্নান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামে পরিচিত ছিল কিন্তু সরকার কর্তৃক ২০০৫ সালের ২ এপ্রিল সুফি সাধক শাহ আমানতের নামে নামকরণ করা হয়। রেল রেলপথেও চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। এই শহরে একটি মিটারগেজে রেলস্টেশন রয়েছে, যেটি বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্ব অংশ, যার সদর দপ্তরও শহরের মধ্যেই অবস্থিত। স্টেশন রোডে এবং পাহাড়তলী থানায় দুটি প্রধান রেলস্টেশন রয়েছে। স্টেশন রোডে এবং পাহাড়তলীতে শহরের দুটি প্রধান রেলস্টেশন রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলার ট্রেন পাওয়া যায়। ২০১৩ সালে যানজট কমাতে এবং শহরের অভ্যন্তরে যাত্রীদের জন্য উন্নত গণপরিবহন পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য চট্টগ্রাম চক্ররেল চালু করা হয়েছিল। রেলওয়েতে ৩০০ জন যাত্রী বহন ক্ষমতা সহ উচ্চ-গতির ডেমু ট্রেন রয়েছে। এই ডেমু ট্রেনগুলি চট্টগ্রাম-লাকসাম রুটেও যাতায়াত করে যা শহরকে কুমিল্লার সাথে সংযুক্ত করে। রাস্তা জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) চট্টগ্রামের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে কিছু পরিবহনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনার আওতায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে চউক কয়েচকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ ও নগরীর মধ্যে বিদ্যমান সড়কগুলো নামমাত্র প্রশস্ত করেছে। এছাড়াও আরও কিছু প্রধান এক্সপ্রেসওয়ে এবং ফ্লাইওভার নির্মাণাধীন রয়েছে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড, যা চট্টগ্রাম শহরের উপকূল বরাবর চলে যাবে। এই রিং রোডে পাঁচটি ফিডার রোড সহ একটি মেরিন ড্রাইভ রয়েছে এবং এটি উপকূলের বাঁধ মজবুত করার জন্যও কেজ করবে বলা হয়। চট্টগ্রামের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে আরও ভালো যোগাযোগ নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলী নদীর মধ্য দিয়ে ডুবো এক্সপ্রেসওয়ে টানেল নির্মাণ করেছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ডুবো টানেল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, একটি প্রধান ধমনী জাতীয় মহাসড়ক, যেটি দেশের অন্যান্য অংশ থেকে মোটর গাড়ির মাধ্যমে শহরে প্রবেশের একমাত্র উপায়। এটি একটি জনাকীর্ণ এবং বিপজ্জনক মহাসড়ক হিসাবে বিবেচিত হয়। এই মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের এএইচ৪১ রুটেরও অংশ। এটিকে ৪ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এন১০৬ (চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক) হল আরেকটি প্রধান জাতীয় মহাসড়ক যা পার্বত্য চট্টগ্রামকে শহরের সাথে সংযুক্ত করে। বাদশাহ মিয়া চৌধুরী সড়ক বাদশাহ মিয়া চৌধুরী সড়ক বা বাদশা মিয়া চৌধুরী সড়ক চট্টগ্রাম শহরের মেহেদীবাগ এলাকায় অবস্থিত একটি সড়ক। চট্টগ্রামের তৎকালীন সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী বাদশা মিয়া চৌধুরীর নামে এ সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট, এবং চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি এ সড়কে অবস্থিত। শিক্ষা চট্টগ্রামে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে ভারতের অন্যান্য স্থানের মতো ধর্ম ভিত্তিক তিন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। আরবি নির্ভর মুসলমানদের জন্য মক্তব-মাদ্রাসা, সংস্কৃত ভাষা নির্ভর হিন্দুদের জন্য টোল-পাঠশালা‌-চতুষ্পাঠী এবং বৌদ্ধদের জন্য কেয়াং বা বিহার। সে সময় রাষ্ট্রাচারের ভাষা ছিল ফার্সি। ফলে হিন্দুদের অনেকে ফার্সি ভাষা শিখতেন। আবার রাষ্ট্র পরিচালনা এবং জনসংযোগের জন্য মুসলিম আলেমদের সংস্কৃত জানাটা ছিল দরকারি। এ সকল প্রতিষ্ঠানে হাতে লেখা বই ব্যবহৃত হতো। ইংরেজদের নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার আগ পর্যন্ত এই তিন ধারাই ছিল চট্টগ্রামের শিক্ষার মূল বৈশিষ্ট্য। ১৭৬০ সালে কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠত হলেও ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের কোন উদ্যোগ দেখা যায় নি, সমগ্র ভারত বর্ষে। ১৭৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা মাদ্রাসা ছাড়া শিক্ষা বিস্তারে কোম্পানির আর কোন উদ্যোগ ছিল না। ১৮১৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতে শিক্ষা বিস্তারের জন্য আইন পাশ করে। এর পর ভারতের বিভিন্ন স্থানে মিশনারী স্কুলের সংখ্যা বাড়ে তবে ১৮৩৬ এর আগে চট্টগ্রামে সে মাপের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে নি। ১৮৩৬ সালে জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন চট্টগ্রাম জেলা স্কুল নামে প্রথম ইংরেজি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান চালু করে। এলাকার খ্রীস্টান মিশনারীরা ১৮৪১ সালে সেন্ট প্লাসিড্‌স হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৪৪ সালে ভারতের বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ রাজকার্যে নিয়োগ পাওয়ার জন্য ইংরেজি জানা আবশ্যক ঘোষণা করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ে। ১৮৫৬ ও ১৮৭১ সালে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হলেও সেগুলো ছিল স্বল্পস্থায়ী। ১৮৬০ খ্রীস্টাব্দে মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুল প্রতিষ্ঠত হয়। ১৮৮৫ সালে শেখ‌-ই-চাটগাম কাজেম আলী চিটাগাং ইংলিশ স্কুল নামে একটি মধ্য ইংরেজি স্কুল (অর্থাৎ ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৮ সালে এটি হাই স্কুলে উন্নীত হয়। বর্তমান সময়ে আরো অনেক স্কুল চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ সাউথ ইস্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ সাহিত্য এবং সংস্কৃতি সাহিত্য চট্টগ্রামে বাংলা সাহিত্যের বিকাশ শুরু হয় ষোড়শ শতকে। সে সময়কার চট্টগ্রামের শাসক পরাগল খাঁ এবং তার পুত্র ছুটি খাঁর সভা কবি ছিলেন কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও শ্রীকর নন্দী। কবীন্দ্র পরমেশ্বর মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বের একটি সংক্ষিপ্ত বাংলা অনুবাদ করেন। আর শ্রীকর নন্দী জৈমিনি সংহিতা অবলম্বনে অশ্বমেধ পর্বের বিস্তারিত অনুবাদ করেন। সংস্কৃতি চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। জানা ইতিহাসের শুরু থেকে চট্টগ্রামে আরাকানী মঘীদের প্রভাব লক্ষনীয়। ফলে গ্রামীণ সংস্কৃতিতেও এর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। সে সময় এখানকার রাজারা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হওয়ায় তার প্রভাবও যথেষ্ট। সুলতানি, আফগান এবং মোগল আমলেও আরাকানীদের সঙ্গে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই ছিল। ফলে শেষ পর্যন্ত মঘীদের প্রভাব বিলুপ্ত হয়নি। এছাড়া চট্টগ্রামের মানুষ আতিথেয়তার জন্য দেশ বিখ্যাত। চট্টগ্রামের বর্তমান সংস্কৃতির উন্মেষ হয় ১৭৯৩ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর। এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে সামাজিক ধানোৎপাদন ও বণ্টনে পদ্ধতিগত আমূল পরিবর্তন হয়। অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রামেও একটি নতুন মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। নতুন এরই ফাঁকে ইংরেজরা প্রচলনা করে ইংরেজি শিক্ষা। মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে পাশ্চাত্যের সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের ইতিহাস সমৃদ্ধ। একাধারে নন্দীত গায়ক, সুরকার ও গীতিকার এম এন আখতার এর হাতে গড়া শেফালী ঘোষ এবং শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণবকে বলা হয় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাট ও সম্রাজ্ঞি। আর অসংখ্য আঞ্চলিক গান ও মাইজভান্ডারী গান এর রচয়িতা আবদুল গফুর হালী বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে গীত দরিয়া বা গানের সাগর নামে পরিচিত। আঞ্চলিক গান, মাইজভান্ডারী গান ও কবিয়াল গান চট্টগ্রামের অন্যতম ঐতিহ্য। কবিয়াল রমেশ শীল একজন বিখ্যাত কিংবদন্তি শিল্পী। জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলস, এল আর বি, রেঁনেসা, নগরবাউল এর জন্ম চট্টগ্রাম থেকেই। আইয়ুব বাচ্চু, কুমার বিশ্বজিৎ, রবি চৌধুরী, নকীব খান, পার্থ বডুয়া, সন্দিপন, নাসিম আলি খান, মিলা ইসলাম চট্টগ্রামের সন্তান। নৃত্যে চট্টগ্রামের ইতিহাস মনে রখার মত। রুনু বিশ্বাস জাতীয় পর্যায়ে বিখ্যাত নৃত্যগুরু। চট্টগ্রামের বিখ্যাত সাংস্কৃতিক সংগঠন হল দৃষ্টি চট্টগ্রাম, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা, "অঙ্গন" চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, আলাউদ্দিন ললিতকলা একাডেমি, প্রাপন একাডেমি, উদিচি, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, ফু্লকি, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা, রক্তকরবী, আর্য সঙ্গীত, সঙ্গীত পরিষদ। মডেল তারকা নোবেল, মৌটুসি, পূর্ণিমা,শ্রাবস্তীর চট্টগ্রামে জন্ম। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমি, মুসলিম হল, থিয়েটার ইন্সটিটিউটে। চিত্তবিনোদন খাদ্য চট্টগ্রামের মানুষ ভোজন রসিক হিসেবে পরিচিত। তারা যেমন নিজেরা খেতে পছন্দ করেন, তেমনি অতিথি আপ্যায়নেও সেরা। চট্টগ্রামের মেজবান হচ্ছে তার বড় উদাহরণ। শুঁটকি, মধুভাত, বেলা বিস্কুট, বাকরখানি, লক্ষিশাক,গরুর গোস্ত ভুনা, পেলন ডাল, কালাভুনা, বিরিয়ানি, মেজবানি মাংস, আফলাতুন হালুয়া, তাল পিঠা, নোনা ইলিশ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য। মেজবান মেজবান চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় ভোজন উৎসব। যেকোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামে মেজবান আয়োজন করা হয়ে থাকে। এইধরণের আয়োজনে ৫ শতাধিক মানুষকে আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে। মূলত গরম ভাত, গরুর মাংস, মুগ বা ছোলার ডালে মেশানো মাংস, গরুর নলা থাকে মেজবানের প্রধান মেন্যু। ১৫০০ শতকে কবি বিজয় গুপ্তের পদ্মপূরাণ কাব্যগ্রন্থে এই উৎসবের তথ্য পাওয়া যায়। ১৬০০ শতকে সৈয়দ সুলতানের নবীবংশ কাব্যগ্রন্থে ভোজন অর্থে 'মেজোয়ানি' শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ফারসি শব্দ মেজবান অর্থ অতিথি আপ্যায়নকারী, মেজবানি অর্থ আতিথেয়তা। যোগাযোগ ও গণমাধ্যম চট্টগ্রাম ভিত্তিক বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, বাণিজ্যিক পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়ে থাকে। দৈনিক সংবাদপত্রের মধ্যে দৈনিক আজাদী, দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য। উল্লেখযোগ্য সাপ্তাহিকের মধ্যে রয়েছে চট্টলা, জ্যোতি, সুলতান, চট্টগ্রাম দর্পণ এবং মাসিক সংশোধনী, পুরবী, মুকুলিকা এবং সিমন্তো। চট্টগ্রামের একমাত্র প্রেস কাউন্সিল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, যেটি ১৯৬২ সালে গঠিত হয়েছিল। সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ টেলিভিশন, পাহাড়তলীতে তাদের চট্টগ্রাম কেন্দ্র পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশ বেতারের চট্টগ্রাম ট্রান্সমিশন কেন্দ্রের মূল স্টুডিও আগ্রাবাদে অবস্থিত. এছাড়া কালুরঘাটে একটি বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র রয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে বাংলাদেশের প্রায় সব টেলিভিশন ও রেডিওর কভারেজ রয়েছে। বেসরকারি এফএম রেডিও রেডিও ফুর্তি এবং রেডিও টুডের চট্টগ্রাম সম্প্রচার কেন্দ্র রয়েছে। টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, জার্নাল, সঙ্গীত এবং বই সহ বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংস্কৃতির সব দিক থেকে চট্টগ্রামকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রখ্যাত বলিউড চলচ্চিত্র পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকর ১৯৩০ সালের চট্টগ্রাম বিদ্রোহের উপর ভিত্তি করে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন, যার নাম খেলে হাম জি জান সে, যেটিতে অভিষেক বচ্চন প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। পরিসেবাসমূহ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণাঞ্চল নগরবাসীকে বিদ্যুৎ সরবরাহের করে থাকে। শহরের মোট বিদ্যুৎ খরচ প্রায় ১০০০ মেগাওয়াট। যদিও পুরো চট্টগ্রাম নগর ও শহর জুড়ে সঠিকভাবে তা দাঁড়ায় প্রায়১ ৩০০ মেগাওয়াট। এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট আগামী বছর উৎপাদনে যাবে এবং এর উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১৩২০ মেগাওয়াট, এবং এটি চট্টগ্রাম শহরকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগ দ্বারা অগ্নি নির্বাপণ সেবা প্রদান করা হয়। চট্টগ্রাম ওয়াসা শহরে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা পরিচালনা করে থাকে। প্রাথমিকভাবে কর্ণফুলী নদী থেকে পানি উত্তোলন করা হয় এবং তারপর মোহরা পরিশোধন কেন্দ্রে তা পরিশোধিত করা হয়। চট্টগ্রামে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, টেলিটক এবং এয়ারটেল সহ দেশের সকল প্রধান মোবাইল অপারেটর দ্বারা পরিবেশিত ব্যাপক জিএসএম এবং সিডিএমএ কভারেজ রয়েছে। যদিও, ল্যান্ডলাইন টেলিফোন পরিষেবা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) পাশাপাশি কিছু বেসরকারি অপারেটরের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। বিটিসিএল ৪জি পরিষেবা প্রদানকারী বাংলালায়ন এবং কিউবি সহ কিছু ব্যক্তিগত আইএসপি-এর সাথে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাও প্রদান করে। স্বাস্থ্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চট্টগ্রামের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত হাসপাতাল। ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল শহরের প্রাচীনতম হাসপাতাল। শহরের অন্যান্য সরকার পরিচালিত চিকিৎসা কেন্দ্রগুলির মধ্যে রয়েছে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, টিবি হাসপাতাল, সংক্রামক রোগ হাসপাতাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল এবং পুলিশ হাসপাতাল। নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে এভারকেয়ার হাসপাতাল, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল, পার্ক ভিউ হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনসিস, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, মাউন্ট হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল, শেভরন ক্লিনিক, সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, সিএসসিআর, সেন্টার পয়েন্ট হাসপাতাল প্রভৃতি। এছাড়াও চট্টগ্রামের খুলশিতে এস এ কাদেরী টিচিং ভেটেরিনারি হাসপাতাল নামে একটি পশু হাসপাতাল রয়েছে। ক্রীড়া বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রামে বিভিন্ন জনপ্রিয় খেলা যেমন ফুটবল, ক্রিকেট, বিলিয়ার্ড, টেবিল টেনিস, অ্যাথলেটিক্স, সকার, দাবা, বাস্কেটবল, হকি, কাবাডি, ভলিবল ইত্যাদি প্রচলিত রয়েছে। ব্যাডমিন্টনও একটি অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিকগণ অবশ্য বেশ কিছু প্রাচীন খেলার কথা উল্লেখ করে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে বলীখেলা, গরুর লড়াই. তুম্বুরু, চুঁয়াখেলা, ঘাডুঘাডু, টুনি ভাইয়র টুনি, তৈইক্যা চুরি, হাতগুত্তি, কইল্যা, কড়ি, নাউট্টা চড়াই, ডাংগুলি, নৌকা বাইচ ইত্যাদি। এর মধ্যে জব্বারের বলীখেলার কারণে বলীখেলা, কুস্তি এবং নৌকা বাইচ এখনও চালু আছে। গ্রামাঞ্চলে বৈচি, ডাংগুলি এখনো দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তবে, অন্যগুলোর তেমন কোন প্রচলন দেখা যায় না। জাতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রামের খেলোয়াড়দের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। দেশের বাইরে থেকে সুনাম আনার ক্ষেত্রেও চট্টগ্রামের ক্রীড়াবিদদের অবদান উল্লেখযোগ্য। আইসিসি ট্রফি জেতা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দলনেতা ছিলেন আকরাম খান। কমনওয়েলথ গেমস থেকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম স্বর্ণপদক অর্জনকারী চট্টগ্রামের শুটার আতিকুর রহমান। চট্টগ্রামের স্প্রিন্টার মোশাররফ হোসেন শামীম জাতীয় পর্যায়ে পরপর ৭ বার ১০০ মিটার স্প্রিন্টে চ্যাম্পিয়ন হোন। এ কারণে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ দল যখন প্রথম বিশ্ব অলিম্পিকে অংশ নেয় তখন মোশাররফ হোসেন শামীম বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র ক্রীড়াবিদ ছিলেন। চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গণের মূল কেন্দ্র চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম। চট্টগ্রামের প্রধান ক্রীড়া সংগঠন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া পরিষদের প্রধান কার্যালয় এই স্টেডিয়ামে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম দেশের অন্যতম ক্রিকেট স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ভগিনী শহর গইয়ানিয়া, ব্রাজিল খুনমিং, চীন আরও দেখুন চট্টগ্রাম জেলা চট্টগ্রাম বিভাগ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পার্বত্য চট্টগ্রাম চট্টগ্রামের নাম চট্টগ্রামের ভাষা চট্টগ্রাম জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা চট্টগ্রাম জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান পাদটীকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ বঙ্গোপসাগর চট্টগ্রাম জেলা বাংলাদেশের শহর বাংলাদেশের জনবহুল উপকূলীয় স্থান এশিয়ার বন্দর শহর এশিয়ায় প্রাক্তন উপনিবেশ এশিয়ায় পর্তুগিজ উপনিবেশ সাবেক পর্তুগিজ উপনিবেশ চট্টগ্রাম বিভাগের জনবহুল স্থান
https://en.wikipedia.org/wiki/Chittagong
Chittagong
Chittagong ( CHIT-ə-gong), officially Chattogram (Bengali: চট্টগ্রাম, romanized: Côṭṭôgrām [ˈtʃɔʈːoɡram], Chittagonian: চাটগাঁও/চিটাং romanized: Sāṭgão/Šitang), is the second-largest city in Bangladesh. Home to the Port of Chittagong, it is the busiest port in Bangladesh and the Bay of Bengal. It is the administrative seat of an eponymous division and district. The city is located on the banks of the Karnaphuli River between the Chittagong Hill Tracts and the Bay of Bengal. The Greater Chittagong Area had a population of more than 5.2 million in 2022. In 2020, the city area had a population of more than 3.9 million. The city is home to many large local businesses and plays an important role in the Bangladeshi economy. One of the world's oldest ports with a functional natural harbor for centuries, Chittagong appeared on ancient Greek and Roman maps, including on Ptolemy's world map. It was located on the southern branch of the Silk Road. In the 9th century, merchants from the Abbasid Caliphate established a trading post in Chittagong. The port fell to the Muslim conquest of Bengal during the 14th century. It was the site of a royal mint under the Delhi Sultanate, Bengal Sultanate and Mughal Empire. Between the 15th and 17th centuries, Chittagong was also a center of administrative, literary, commercial and maritime activities in Arakan, a narrow strip of land along the eastern coast of the Bay of Bengal which was under strong Bengali influence for 350 years. During the 16th century, the port became a Portuguese trading post and João de Barros described it as "the most famous and wealthy city of the Kingdom of Bengal". The Mughal Empire expelled the Portuguese and Arakanese in 1666. The Nawab of Bengal ceded the port to the British East India Company in 1793. The Port of Chittagong was re-organized in 1887 and its busiest shipping links were with British Burma. In 1928, Chittagong was declared a "Major Port" of British India. During World War II, Chittagong was a base for Allied Forces engaged in the Burma Campaign. The port city began to expand and industrialize during the 1940s, particularly after the Partition of British India. The city was the historic terminus of the Assam Bengal Railway and Pakistan Eastern Railway. During the Bangladesh Liberation War in 1971, Chittagong was the site of the Bangladeshi declaration of independence. The port city has benefited from the growth of heavy industry, logistics, and manufacturing in Bangladesh. Trade unionism was strong during the 1990s. Chittagong accounts for 12% of Bangladesh's GDP, including 40% of industrial output, 80% of international trade, and 50% of tax revenue. The port city is home to many of the oldest and largest companies in the country. The Port of Chittagong is one of the busiest ports in South Asia. The largest base of the Bangladesh Navy is located in Chittagong, along with an air base of the Bangladesh Air Force, garrisons of the Bangladesh Army and the main base of the Bangladesh Coast Guard. The eastern zone of the Bangladesh Railway is based in Chittagong. The Chittagong Stock Exchange is one of the twin stock markets of Bangladesh with over 700 listed companies. The Chittagong Tea Auction is a commodity exchange dealing with Bangladeshi tea. The CEPZ and KEPZ are key industrial zones with foreign direct investments. The city is served by Shah Amanat International Airport for domestic and external flights. Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Tunnel, the first and only underwater road tunnel of South Asia, is located in Chittagong. The city is the hometown of prominent economists, a Nobel laureate, scientists, freedom fighters and entrepreneurs. Chittagong has a high degree of religious and ethnic diversity among Bangladeshi cities, despite having a great Muslim majority. Minorities include Hindus, Christians, Buddhists, Chakmas, Marmas, Tripuris, Garos and others. The people of Chittagong are generally considered a different ethnic group in contrast to Bengalis.
1101
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A7%80
রাজশাহী
বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মহানগরী। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ও পরিস্কার পরিছন্ন নগরী রাজশাহী। এটি সমস্ত উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় শহর। এবং সমগ্র বাংলাদেশে চতুর্থ বৃহত্তম ও জনবহুল শহর। রাজশাহী শহর পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় শহর। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর শহরের পাশাপাশি সিল্কসিটি, গ্রীণসিটি, ক্লিনসিটি ও শিক্ষা নগরী রাজশাহী। বাংলাদেশের শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম বায়ু দূষণের শহর রাজশাহী। রাজশাহী শহরের নিকটে প্রাচীন বাংলার বেশ কয়েকটি রাজধানী শহর অবস্থিত। এদের মাঝে লক্ষ্ণৌতি বা লক্ষণাবতী, মহাস্থানগড় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। রাজশাহী তার আকর্ষণীয় রেশমীবস্ত্র, আম, লিচু এবং মিষ্টান্নসামগ্রীর জন্য প্রসিদ্ধ। রেশমীবস্ত্রের কারণে রাজশাহীকে রেশম নগরী নামেও ডাকা হয়। রাজশাহী শহরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের অনেকগুলোর খ্যাতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশসেরা রাজশাহী কলেজ এ শহরে অবস্থিত। দেশের এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজশাহীতে পড়াশোনার জন্য অনেক শিক্ষার্থী আসেন। রাজশাহী শহরে এবং এর আশেপাশে বেশ কিছু বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক মসজিদ, মন্দির ও উপাসনালয় তথা ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। রাজশাহী বাংলাদেশের শহরগুলির মধ্যে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন এবং সবুজ। ইতিহাস রাজশাহী সুপ্রাচীন ঐতিহ্য মণ্ডিত একটি শহর। অনেক আগে থেকে এই শহরটি প্রাচীন বাংলায় পরিচিত ছিল। প্রাচীন ও মধ্যযুগ রাজশাহী ছিল প্রাচীন বাংলার পুন্ড্র সাম্রাজ্যের অংশ। বিখ্যাত সেন বংশের রাজা বিজয় সেনের সময়ের রাজধানী বর্তমান রাজশাহী শহর থেকে মাত্র ৯ কিমি দূরে অবস্থিত ছিল। মধ্যযুগে বর্তমান রাজশাহী পরিচিত ছিল রামপুর বোয়ালিয়া নামে। এর সূত্র ধরে এখনও রাজশাহী শহরের একটি থানার নাম বোয়ালিয়া। আধুনিক যুগ রাজশাহী শহরকে কেন্দ্র করে ১৭৭২ সালে জেলা গঠন করা হয়। ১৮৭৬ সালে গঠিত হয় রাজশাহী পৌরসভা। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হয়। ব্রিটিশ রাজত্বের সময়েও রাজশাহী বোয়ালিয়া নামে পরিচিত ছিল। তখন এটি ছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও আসাম অঞ্চলের অর্ন্তগত রাজশাহী জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র। রাজশাহীকে সে সময়ে রেশম চাষের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। তখন রাজশাহীতে একটি সরকারি কলেজ ও রেশম শিল্পের জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। সেসময় থেকে দেশবিভাগের পূর্ব পর্যন্ত পদ্মা নদীর উপর দিয়ে প্রতিদিন যাত্রীবাহী স্টিমার চলাচল করত। ১২ জুন ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে রাজশাহী শহরের বেশীরভাগ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে অনেক ভবন আবার নতুন করে স্থাপিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে রাজশাহী তথা সারা বাংলাদেশের সবচেয়ে স্মরণীয় এবং গৌরবময় অধ্যায় হচ্ছে রাজশাহী পুলিশ লাইনের রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধ যুদ্ধ। ১৯৭১ এর অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকেই তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় প্রতিটি জনপদে আন্দোলনরত ছাত্র জনতার সাথে সকল স্তরের পুলিশ সদস্যগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছিলেন। এ সকল ঘটনা সমূহ জেলা, মহকুমা ও থানা পর্যায়ের সংগ্রামী জনগণকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করে তোলে। ২৫শে মার্চের কালো রাত্রে রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণের সংবাদ সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। রাজশাহী পুলিশ লাইন সেনাবাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হতে পারে এমন আশঙ্কা বাঙালী পুলিশ সদস্যদের মনের মধ্যে কাজ করেছিল। এ সকল কারণে আগে থেকেই রাজশাহী পুলিশ লাইনের পুলিশ সদস্যগণ মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রাজশাহী পুলিশ লাইনের বাঙালী পুলিশ সদস্যগণ নিরাপত্তার জন্য পুলিশ লাইনের চতুর্দিকে পরিখা খনন করেন। কয়েকটি বাংকারও তৈরি করা হয়। নগর প্রশাসন রাজশাহী মহানগর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন যা রাসিক নামে পরিচিত। রাজশাহী মহানগরকে রাসিক এর আওতায় ৩০ টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান রাজশাহী শিক্ষা নগরী নামে খ্যাত। দেশের বেশ কিছু নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই শহরে অবস্থিত। রাজশাহীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী জেলাতে মোট ৩ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেগুলো হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী জেলাতে মোট ৪ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সেগুলো হলো: আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী স্বাস্থ্য বিষয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (সরকারি) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ রাজশাহী নার্সিং কলেজ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, রাজশাহী স্বাস্থ্য বিষয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বেসরকারি) রাজশাহী জেলাতে বেসরকারি ভাবে গড়ে উঠা স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ৩ টি মেডিকেল কলেজ, ১ টি ডেন্টাল কলেজ, ৫ টি নার্সিং কলেজ, ১১টি নার্সিং ইনস্টিটিউট, ১ টি ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজি এবং ১ টি কমিউনিটি প্যারামেডিকেল ইনস্টিটিউট রয়েছে। ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ বারিন্দ মেডিকেল কলেজ শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ উদয়ন ডেন্টাল কলেজ ইসলামী ব্যাংক নার্সিং কলেজ উদয়ন নার্সিং কলেজ মির্জা নার্সিং কলেজ ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন নার্সিং কলেজ শাহ মখদুম নার্সিং কলেজ নার্সিং ইনস্টিটিউট, খ্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতাল এম রহমান নার্সিং ইনস্টিটিউট শাহ মখদুম নার্সিং ইনস্টিটিউট ডাঃ জুবাইদা খাতুন নার্সিং ইনস্টিটিউট জননী নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রিমিয়ার নার্সিং ইনস্টিটিউট নগর নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রভাতী নার্সিং ইনস্টিটিউট মমতা নার্সিং ইনস্টিটিউট গ্লোবাল নার্সিং ইনস্টিটিউট বারিন্দ ইনস্টিটিউট অব নার্সিং সায়েন্স প্রাইম ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজি বাংলাদেশ কমিউনিটি প্যারামেডিকেল ইনস্টিটিউট কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (সরকারি) রাজশাহী কারিগরি ও জরীপ মহাবিদ্যালয় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বেসরকারি) ইউসেপ রাজশাহী টেকনিক্যাল স্কুল সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (সরকারি) রাজশাহী কলেজ রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রী কলেজ, রাজশাহী রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ শহীদ বুদ্ধিজীবী সরকারি কলেজ শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজ রাজশাহী সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল ও কলেজ রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল পি এন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় শহীদ নজমুল হক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় গভঃ ল্যাবরেটরী হাই স্কুল, রাজশাহী হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সিরোইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল এন্ড কলেজ রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ পুলিশ লাইনন্স স্কুল এন্ড কলেজ সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বেসরকারি) মেট্রোপলিটন কলেজ বিনোদপুর কলেজ শাহ্ মখদুম কলেজ ইডেন কিডস স্কুল অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় ইক্ষু গবেষণা উচ্চ বিদ্যালয় ধোকড়াকুল উচ্চ বিদ্যালয় ধোকড়াকুল উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং এষ্টেট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পুঠিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয বঙ্গবন্ধু কলেজ রাজশাহী গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ গ্রেটার রোড, শেরশাহ্ রোড, কাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গির রোড, স্টেশন রোড, কাজী নজরুল ইসলাম স্বরণী, বিমান-বন্দর রোড, বেগম রোকেয়া রোড, দোশর মন্ডল রোড, রাণীবাজার-টিকাপাড়া রোড, সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট-নিউমার্কেট নতুন সড়ক, তালাইমারি রোড, টিবি রোড, রাজশাহী সিটি বাইপাস সড়ক, আলিফ লাম মিম ভাটা-বাইপাস সড়ক, ক্যান্টনমেন্ট রোড, টিটিসি রোড, প্যারা মেডিকেল রোড, মহিলা কলেজ রোড, সিএনবি রোড, পুরাতন নাটোর রোড, মালোপাড়া-রাণীবাজার ভায়া সষ্টিতলা কানেকটিং রোড, ভদ্রা-কামরুজ্জামান চত্বর রোড। এছাড়াও আরও রাস্তা রয়েছে। উপরে উল্লিখিত রাস্তাসমূহ ৪ লেন ও মাঝখানে ডিভাইডার রয়েছে। রেলওয়ে যোগাযোগ রাজশাহী থেকে অনেকগুলো আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন সার্ভিস রয়েছে । এসব ট্রেন এ করে ঢাকা, খুলনা, চিলাহাটি, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, সৈয়দপুর, যশোর যাওয়া যায় । আব্দুলপুর ষ্টেশন হতে রাজশাহী এর দিকে শুধুমাত্র সিঙ্গেল ব্রডগেজ রেল লাইন হওয়ার কারণে রাজশাহী হতে বগুড়া ও রংপুর এর সরাসরি কোনো ট্রেন নেই । কারণ বগুড়া ও রংপুরে মিটারগেজ রেল লাইন বিদ্যমান । রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া কিছু গুরুত্বপুর্ণ আন্তঃনগর ট্রেন এর মধ্যে বনলতা এক্সপ্রেস , পদ্মা এক্সপ্রেস , সিল্কসিটি এক্সপ্রেস , ধূমকেতু এক্সপ্রেস , সাগরদাড়ি এক্সপ্রেস , কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস , তিতুমীর এক্সপ্রেস , বরেন্দ্র এক্সপ্রেস , বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস , ঢালারচর এক্সপ্রেস , মধুমতি এক্সপ্রেস ,টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস অন্যতম । রাজশাহী শহরে ৩ টি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে- রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন,বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশন, ও কোর্ট স্টেশন। শহরের উপকণ্ঠে হরিয়ান রেলস্টেশন বিদ্যমান। রাজশাহীর তথ্য ও প্রযুক্তি রাজশাহীর কোর্ট এলাকায় পদ্মা নদীর তীরে প্রায় ৩১ একর জমির উপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক অবস্থিত। এখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান করার লক্ষে পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া পার্কটিতে সাতটি প্লট রাখা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহীতে এখন প্রায় ১৫টি সফটওয়ার ফার্ম আছে। তাছাড়া এখানে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য প্রায় ১০টি ট্রেনিং সেন্টার আছে; যা দিন দিন বাড়ছে। উল্লেখযোগ্য স্থাপনা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর বাংলাদেশের প্রাচীনতম জাদুঘর হচ্ছে রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। ১৯১৩ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল এটি উদ্বোধন করেন। বাঙালি ইতিহাস, ঐতিহ্য আর স্থাপত্যশিল্পের বিশাল সম্ভার রয়েছে এই বরেন্দ্র যাদুঘরে। এই জাদুঘর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন ইতিহাস, সংস্কৃতি আর প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহশালা। প্রতিদিন প্রাচীন হিন্দু, বৌদ্ধ এবং মুসলিম সভ্যতার নিদর্শন দেখতে কয়েকশ' দর্শনার্থী আসেন এখানে। ১৯৬৪ সাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এই জাদুঘর পরিচালনা করে আসছে। সংবাদপত্র ও প্রেসক্লাব রাজশাহী জেলা থেকে সোনালী সংবাদ, সানশাইন, দৈনিক বার্তা, সোনার দেশ, নতুন প্রভাত এবং আমাদেের রাজশাহী সহ অনেকগুলি বাংলা দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল যেমন - উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস, দ্য ক্যাম্পাস, রাজশাহীর কন্ঠ, আজকের রাজশাহী ,সাহেব-বাজার টোয়েন্টিফোর ডটকম, সিল্কসিটিনিউজ ডটকম,পদ্মাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম, উত্তরকাল ইত্যাদি সংবাদপত্র রয়েছে। সরকার পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহীতে ট্রান্সমিশন কেন্দ্র রয়েছে। একটি স্থানীয় এফএম রেডিও স্টেশন, রেডিও পদ্মা ৯৯.২ মেগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি এবং রেডিও ফুর্তি ৮৮.০ মেগাহার্টজে সম্প্রচার করে। রাজশাহী মহানগরীতে ৫টি প্রেস ক্লাব রয়েছে - রাজশাহী প্রেসক্লাব, রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব, রাজশাহী মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাব,রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাব এবং রাজশাহী পদ্মা প্রেসক্লাব. শিল্প ও সাহিত্য প্রাচীন বাংলা থেকেই রাজশাহী অঞ্চলে শিল্প ও সাহিত্য চর্চা ব্যাপকতা লাভ করে। বিশেষ করে গৌড়ের আদিভূমি হবার কারণে বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলে নানা মাত্রার সাহিত্যচর্চা হয়েছে। এখানকার সিন্দুরী কুসুমী গ্রামের শুকুর মাহমুদ ১৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে যোগীর পুথি কাব্য রচনা করে সমাদৃত হন। সেই হিসাবে তিনি কবি ভারতচন্দ্রেরও (১৭১২-১৭৬০) পূর্বসুরি ছিলেন। আধুনিক বাংলা শিল্প-সাহিত্যেও রাজশাহীর অবদান অগ্রগণ্য। পঞ্চকবির একজন রজনীকান্ত সেন তার জীবদ্দশায় এখানেই কাব্যচর্চা করেছেন। ইতিহাসবিদ ও শিক্ষাবিদ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়ও ছিলেন এখানকার মানুষ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলনেও এখানকার শিল্প ও সাহিত্যচর্চা সমান তালে চলেছে। বাংলাভাষার অন্যতম শক্তিমান কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক তো ছিলেনই; সেলিনা হোসেন, জুলফিকার মতিন, রুহুল আমিন প্রমাণিক, ড. তসিকুল ইসলাম রাজা, মামুন হুসাইন, মনিরা কায়েস, আবু হাসান শাহরিয়ার, সালিম সাবরিন, আশরাফুল আলম পিন্‌টু, সিরাজদ্দৌলাহ বাহার, শামীম হোসেনের মতো কবি ও সাহিত্যিকও রাজশাহী থেকেই দীর্ঘ সময় তাদের সাহিত্যচর্চা করেছেন। কবি আরিফুল হক কুমার ও তার সঙ্গীদের উদ্যোগে কবিকুঞ্জ নামের একটি সংগঠন কাজ করছে এখানে। পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী, ওস্তাদ রবিউল হোসেনের মতো উপমহাদেশীয় ক্ল্যাসিকাল সংগীতে সিদ্ধ শিল্পীর পাশাপাশি বাংলাদেশের শক্তিমান প্লেব্যাক শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের শুরুটা হয় রাজশাহী থেকেই। মলয় ভৌমিক, কামারউল্লাহ সরকার, কাজী সাঈদ হোসেন দুলালের মতো অসংখ্য নাট্যকর্মীর প্রচেষ্টায় রাজশাহীর নাট্যাঙ্গনও যথেষ্ট শক্তিশালী। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ রাজশাহী মহানগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা E-Rajshahi রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ই-গভার্নমেন্ট পোর্টাল বাংলাদেশের শহর রাজশাহী বিভাগের জনবহুল স্থান
https://en.wikipedia.org/wiki/Rajshahi
Rajshahi
Rajshahi (Bengali: রাজশাহী, [radʒ.ʃaɦi]) is a metropolitan city and a major urban, administrative, commercial and educational centre of Bangladesh. It is also the administrative seat of the eponymous division and district. Located on the north bank of the Padma River, near the Bangladesh–India border, the city is surrounded by the satellite towns of Nowhata and Katakhali, which together build an urban agglomeration of about 1 million population. Modern Rajshahi lies in the ancient region of Pundravardhana. The foundation of the city dates to 1634, according to epigraphic records at the mausoleum of Sufi saint Shah Makhdum. The area hosted a Dutch settlement in the 18th century. The Rajshahi municipality was constituted during the British Raj in 1876. It was the divisional capital of the greater Rajshahi division which was the largest division in Bengal Province. Rajshahi is a historic center of silk production. Varendra Research Museum, the oldest of its kind in Bangladesh, is located in the city. Sometimes the city is referred as the City of Education. The city is home to many renowned educational institutions of Bangladesh. The head office of Rajshahi Agricultural Development Bank and Barind Multipurpose Development Authority (BMDA) is situated in the city. The Shah Makhdum Airport serves Rajshahi. According to The Guardian, Rajshahi is the cleanest city of Bangladesh.
1106
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%AB%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE
আফ্রিকা
আফ্রিকা আয়তন ও জনসংখ্যা উভয় বিচারে বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মহাদেশ (এশিয়ার পরেই)। পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলোকে গণনায় ধরে মহাদেশটির আয়তন ৩,০২,২১,৫৩২ বর্গ কিলোমিটার (১,১৬,৬৮,৫৯৮ বর্গমাইল)। এটি বিশ্বের মোট ভূপৃষ্ঠতলের ৬% ও মোট স্থলপৃষ্ঠের ২০.৪% জুড়ে অবস্থিত। এ মহাদেশের ৬১টি রাষ্ট্র কিংবা সমমানের প্রশাসনিক অঞ্চলে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ, অর্থাৎ বিশ্বের জনসংখ্যার ১৪% বসবাস করে। নাইজেরিয়া আফ্রিকার সর্বাধিক জনবহুল দেশ। আফ্রিকার প্রায় মাঝখান দিয়ে নিরক্ষরেখা টানা হয়। এর বেশির ভাগ অংশই ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত। মহাদেশটির উত্তরে ভূমধ্যসাগর, উত্তর-পূর্বে সুয়েজ খাল ও লোহিত সাগর, পূর্বে ভারত মহাসাগর, এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর। উত্তর-পূর্ব কোনায় আফ্রিকা সিনাই উপদ্বীপের মাধ্যমে এশিয়া মহাদেশের সাথে সংযুক্ত। আফ্রিকা একটি বিচিত্র মহাদেশ। এখানে রয়েছে নিবিড় সবুজ অরণ্য, বিস্তীর্ণ তৃণভূমি, জনমানবহীন মরুভূমি, সুউচ্চ পর্বত এবং খরস্রোতা নদী। এখানে বহু বিচিত্র জাতির লোকের বাস, যারা শত শত ভাষায় কথা বলে। আফ্রিকার গ্রামাঞ্চলে জীবন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একই রয়ে গেছে, অন্যদিকে অনেক শহরে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। ব্যুৎপত্তি আফ্রি ছিল একটি ল্যাটিন নাম যা নীলদের পশ্চিমে তৎকালীন উত্তর আফ্রিকার অধিবাসীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হত, ব্যাপক অর্থে ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণে (প্রাচীন লিবিয়া) সমস্ত ভূমিকে উল্লেখ করা হয়। এই নামটি মূলত লিবিয়ার একটি আদিবাসী উপজাতির, যাদেরকে আধুনিক বারবারদের পূর্বপুরুষ বলে মনে হয়। নামটি সাধারণত ফিনিশিয়ান শব্দ -এর সাথে যুক্ত ছিল যার অর্থ "ধুলো", কিন্তু ১৯৮১ সালের একটি অনুমান দাবি করেছে যে এটি বারবার শব্দ ইফ্রি (বহুবচন: ইফরান) থেকে এসেছে যার অর্থ "গুহা"। একই শব্দ আলজেরিয়া এবং ত্রিপোলিটানিয়া থেকে আসা বানু ইফরানের নামে পাওয়া যেতে পারে। বনু ইফরান হলো একটি বর্বর উপজাতি যারা মূলত উত্তর-পশ্চিম লিবিয়ার ইয়াফরান এবং মরক্কোর ইফরান শহরে বাস করত। রোমান শাসনের অধীনে, ১৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৃতীয় পিউনিক যুদ্ধে কার্থাজিনিয়ানদের পরাজয়ের পরে, এটি কার্থেজ প্রদেশের রাজধানী হয়ে ওঠে। তখন এটির নাম দেওয়া হয় আফ্রিকা প্রকনসুলারিস, যা আধুনিক লিবিয়ার উপকূলীয় অংশও অন্তর্ভুক্ত করে। ইফ্রিকিয়ার পরবর্তী মুসলিম অঞ্চলে, বাইজেন্টাইন (পূর্ব রোমান) সাম্রাজ্যের এক্সার্চাটাস আফ্রিকার বিজয়ের পরেও এটির নামের একটি রূপ অপরিবর্তিত ছিল। ইউরোপীয়রা মহাদেশের প্রকৃত ব্যাপ্তি বুঝতে পেরে, "আফ্রিকা" ধারণাটি তাদের জ্ঞানের সাথে প্রসারিত করেছিল। অন্যান্য ব্যুৎপত্তিগত অনুমানগুলি প্রাচীন নাম "আফ্রিকা" এর জন্য অনুমান করা হয়েছে: ১ম শতাব্দীর ইহুদি ঐতিহাসিক ফ্ল্যাভিয়াস জোসেফাস দাবি করেছেন যে এটির নামকরণ করা হয়েছিল "ইফার"। জেনেসিস ২৫:৪ অনুসারে ইফার হলেন আব্রাহামের নাতি, যার বংশধররা লিবিয়া আক্রমণ করেছিল বলে তিনি দাবি করেছিলেন। সেভিলের ইসিডোর তার ৭ ম শতাব্দীর এথিমোল্যোজিই এক্সয়াইভি.৫.২.-এ উল্লেখ করেন "আফ্রিকা শব্দটি এসেছে ল্যাটিন এপ্রিকা থেকে, যার অর্থ "রৌদ্রোজ্জ্বল"। রাজনীতি আফ্রিকান ইউনিয়ন আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) ৫৫টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি মহাদেশীয় ইউনিয়ন। ২৬ জুন ২০০১ তারিখে, আদ্দিস আবাবা, ইথিওপিয়ার সদর দপ্তর হিসাবে ইউনিয়নটি গঠিত হয়েছিল। অর্গানাইজেশন অফ আফ্রিকান ইউনিটি (ওএইউ) এর উত্তরসূরী হিসাবে ইউনিয়নটি আনুষ্ঠানিকভাবে ৯ জুলাই,২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জুলাই ২০০৪ সালে, আফ্রিকান ইউনিয়নের প্যান-আফ্রিকান পার্লামেন্ট (পিএপি) দক্ষিণ আফ্রিকার মিড্রান্ডে স্থানান্তরিত হয়েছিল, কিন্তু আফ্রিকান কমিশন অন হিউম্যান অ্যান্ড পিপলস রাইটস এর সদরদপ্তর আদ্দিস আবাবায় রয়ে গেছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশন আফ্রিকান ইউনিয়নের সাংবিধানিক আইন দ্বারা গঠিত, যার লক্ষ্য আফ্রিকান অর্থনৈতিক সম্প্রদায়কে একটি ফেডারেটেড কমনওয়েলথ প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কনভেনশনের অধীনে একটি রাষ্ট্রে রূপান্তর করা। আফ্রিকান ইউনিয়নের একটি সংসদীয় সরকার রয়েছে, যা আফ্রিকান ইউনিয়ন সরকার নামে পরিচিত, যা আইন প্রণয়ন, বিচার বিভাগীয় এবং নির্বাহী শাখাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। এটি আফ্রিকান ইউনিয়নের সভাপতি এবং রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা পরিচালিত হয়, যিনি প্যান-আফ্রিকান পার্লামেন্টেরও সভাপতি। একজন ব্যক্তি পিএপি-তে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে এবং পরবর্তীকালে পিএপি-তে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন লাভ করে এইউর প্রেসিডেন্ট হন। আফ্রিকান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সাংবিধানিক আইন এবং প্যান-আফ্রিকান পার্লামেন্টের প্রোটোকল থেকে প্রাপ্ত। এইউ-এর সরকার সর্ব-ইউনিয়ন, আঞ্চলিক, রাজ্য এবং পৌর কর্তৃপক্ষ, সেইসাথে শত শত প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত, যেগুলি একসাথে প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন বিষয়গুলি পরিচালনা করে থাকে। আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে এখনও ব্যাপক আকারে মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটে, এর বেশিরভাগই রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। এই ধরনের অধিকাংশ লঙ্ঘন রাজনৈতিক কারণে ঘটে থাকে। প্রায়ই গৃহযুদ্ধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব দেশে বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে রয়েছে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া, সুদান, জিম্বাবুয়ে এবং কোত দিভোয়ার। সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব আফ্রিকান রাষ্ট্রসমুহ দীর্ঘকাল যাবত আন্তর্জাতিক সীমান্ত নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে আছে। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত অর্গানাইজেশন অফ আফ্রিকান ইউনিটি (বর্তমানে আফ্রিকান ইউনিয়ন) আফ্রিকার প্রতিটি রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মানকে সংস্থাটির মূলনীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে স্থান দিয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আফ্রিকাতে খুব কমই সংঘাত হয়েছে,যা সেখানে রাষ্ট্র গঠনকে প্রভাবিত করেছে এবং কিছু রাষ্ট্রকে টিকে থাকতে সক্ষম করেছে যেগুলি অন্যদের দ্বারা পরাজিত এবং শোষিত হওয়ার ঝুঁকিতে ছিল। তবুও বিভিন্ন সময়ে প্রক্সি আর্মি বা বিদ্রোহী আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। রুয়ান্ডা, সুদান, অ্যাঙ্গোলা, সিয়েরা লিওন, কঙ্গো, লাইবেরিয়া, ইথিওপিয়া এবং সোমালিয়া সহ অনেক রাষ্ট্র গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছে। ভাষা আফ্রিকায় ৩৯০০ এর বেশি ভাষা আছে। এতে আছে আরবী,রুস,ইংরেজি এগুলো অন্যতম। আফ্রিকা মানবজাতির আতুড়ঘর। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে উত্তর-পূর্ব আফ্রিকায় বিশ্বের প্রথম মহান সভ্যতাগুলির একটি, মিশরীয় সভ্যতা, জন্মলাভ করে। এরপর আফ্রিকাতে আরও বহু সংস্কৃতি ও রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ও পতন হয়েছে। ৫০০ বছর আগেও সারা আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে সমৃদ্ধ নগর, বাজার, এবং শিক্ষাকেন্দ্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। বিগত ৫০০ বছরে ইউরোপীয় বণিক ও ঔপনিবেশিকেরা ক্রমান্বয়ে আফ্রিকার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। ইউরোপীয় বণিকেরা লক্ষ লক্ষ আফ্রিকানদের দাস হিসেবে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের প্ল্যান্টেশনগুলিতে পাঠায়। ইউরোপীয়রা আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ নিজেদের দেশের কলকারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য নিষ্কাশন করা শুরু করে। ১৯শ শতকের শেষ নাগাদ ইউরোপীয়রা প্রায় সমস্ত আফ্রিকা মহাদেশ দখল করে এবং একে ইউরোপীয় উপনিবেশে পরিণত করে। কোথাও সহিংস যুদ্ধ, আবার কোথাও বা ধীর সংস্কারের মাধ্যমে প্রায় সমস্ত আফ্রিকা ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জন করে। বিশ্ব অর্থনীতিতে উপনিবেশ-পরবর্তী আফ্রিকার অবস্থান দুর্বল। এখানকার যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা অণুন্নত এবং রাষ্ট্রগুলির সীমানা যথেচ্ছভাবে তৈরি। নতুন এই দেশগুলির নাগরিকদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিগত দিক থেকে একতা বলতে তেমন কিছুই ছিল না। আফ্রিকাতে ৫৩টি রাষ্ট্র আছে। এদের মধ্যে ৪৭টি আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডে এবং ৬টি আশেপাশের দ্বীপগুলিতে অবস্থিত। সাহারা মরুভূমির মাধ্যমে মহাদেশটিকে দুইটি অংশে ভাগ করা হয়। সাহারা বিশ্বের বৃহত্তম মরুভূমি; এটি আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর অংশের প্রায় পুরোটা জুড়ে বিস্তৃত। সাহারার উত্তরে অবস্থিত অঞ্চলকে উত্তর আফ্রিকা বলা হয়। সাহারার দক্ষিণে অবস্থিত আফ্রিকাকে সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা বলা হয়। সাহারা-নিম্ন আফ্রিকাকে অনেক সময় কৃষ্ণ আফ্রিকাও বলা হয়। উত্তর আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে আছে আলজেরিয়া, মিশর, লিবিয়া, মরক্কো, সুদান এবং তিউনিসিয়া। সাহার-নিম্ন আফ্রিকাকে আবার পশ্চিম আফ্রিকা, পূর্ব আফ্রিকা, মধ্য আফ্রিকা এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা অঞ্চলগুলিতে ভাগ করা হয়। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলি হল বেনিন, বুর্কিনা ফাসো, আইভরি কোস্ট, ঘানা, গিনি, গিনি-বিসাউ, লাইবেরিয়া, মালি, মৌরিতানিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, গাম্বিয়া এবং টোগো। পূর্ব আফ্রিকাতে আছে বুরুন্ডি, জিবুতি, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, মালাউই, মোজাম্বিক, সোমালিয়া, তানজানিয়া, এবং উগান্ডা। মধ্য আফ্রিকাতে আছে অ্যাঙ্গোলা, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, চাদ, বিষুবীয় গিনি, গাবন, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, এবং রুয়ান্ডা। দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে আছে বতসোয়ানা, লেসোথো, নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ইসোয়াতিনি ,জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে। আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্রগুলির মধ্যে আছে আটলান্টিক মহাসাগরের কেপ ভার্দ এবং সাঁউ তুমি ও প্রিন্সিপি; ভারত মহাসাগরের কোমোরোস, মাদাগাস্কার, মরিশাস এবং সেশেলস। ধর্ম আফ্রিকায় ৫০০ টির বেশি ধর্ম আছে। এর মধ্যে ইসলাম ধর্মের অনুসারী বেশি। যারা মোট জনসংখ্যায় ৪৭%।আরো আছে আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী ধর্ম।যারা জনসংখ্যায় ৬%।এ ছাড়া খ্রিষ্টানরা জনসংখ্যায় ৩৯%। আরও পড়ুন মিশরীয় সভ্যতা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ African & Middle Eastern Reading Room from the United States Library of Congress Africa South of the Sahara from Stanford University The Index on Africa from The Norwegian Council for Africa Aluka Digital library of scholarly resources from and about Africa Africa Interactive Map from the United States Army Africa মহাদেশ অঞ্চল
https://en.wikipedia.org/wiki/Africa
Africa
Africa is the world's second-largest and second-most populous continent after Asia. At about 30.3 million km2 (11.7 million square miles) including adjacent islands, it covers 20% of Earth's land area and 6% of its total surface area. With 1.4 billion people as of 2021, it accounts for about 18% of the world's human population. Africa's population is the youngest among all the continents; the median age in 2012 was 19.7, when the worldwide median age was 30.4. Despite a wide range of natural resources, Africa is the least wealthy continent per capita and second-least wealthy by total wealth, ahead of Oceania. Scholars have attributed this to different factors including geography, climate, corruption, colonialism, the Cold War, and neocolonialism. Despite this low concentration of wealth, recent economic expansion and the large and young population make Africa an important economic market in the broader global context. Africa has a large quantity of natural resources and food resources, including diamonds, sugar, salt, gold, iron, cobalt, uranium, copper, bauxite, silver, petroleum, natural gas, cocoa beans, and tropical fruit. The continent is surrounded by the Mediterranean Sea to the north, the Isthmus of Suez and the Red Sea to the northeast, the Indian Ocean to the southeast and the Atlantic Ocean to the west. The continent includes Madagascar and various archipelagos. It contains 54 fully recognised sovereign states, eight cities and islands that are part of non-African states, and two de facto independent states with limited or no recognition. This count does not include Malta and Sicily, which are geologically part of the African continent. Algeria is Africa's largest country by area, and Nigeria is its largest by population. African nations cooperate through the establishment of the African Union, which is headquartered in Addis Ababa. Africa straddles the equator and the prime meridian. It is the only continent to stretch from the northern temperate to the southern temperate zones. The majority of the continent and its countries are in the Northern Hemisphere, with a substantial portion and a number of countries in the Southern Hemisphere. Most of the continent lies in the tropics, except for a large part of Western Sahara, Algeria, Libya and Egypt, the northern tip of Mauritania, and the entire territories of Morocco, Ceuta, Melilla, and Tunisia, which in turn are located above the tropic of Cancer, in the northern temperate zone. In the other extreme of the continent, southern Namibia, southern Botswana, great parts of South Africa, the entire territories of Lesotho and Eswatini and the southern tips of Mozambique and Madagascar are located below the tropic of Capricorn, in the southern temperate zone. Africa is highly biodiverse; it is the continent with the largest number of megafauna species, as it was least affected by the extinction of the Pleistocene megafauna. However, Africa also is heavily affected by a wide range of environmental issues, including desertification, deforestation, water scarcity, and pollution. These entrenched environmental concerns are expected to worsen as climate change impacts Africa. The UN Intergovernmental Panel on Climate Change has identified Africa as the continent most vulnerable to climate change. The history of Africa is long, complex, and varied, and has often been under-appreciated by the global historical community. Africa, particularly Eastern Africa, is widely accepted to be the place of origin of humans and the Hominidae clade, also known as the great apes. The earliest hominids and their ancestors have been dated to around 7 million years ago, including Sahelanthropus, Australopithecus africanus, A. afarensis, Homo erectus, H. habilis and H. ergaster, the earliest Homo sapiens (modern human) remains, found in Ethiopia, South Africa, and Morocco, date to circa 233,000, 259,000, and 300,000 years ago, respectively, and Homo sapiens is believed to have originated in Africa around 350,000–260,000 years ago. Africa is also considered by anthropologists to be the most genetically diverse continent as a result of being the longest inhabited. Civilisations, such as Ancient Egypt, Kerma, Punt, and the Tichitt Tradition emerged in North, East and West Africa during the 4th and 3rd millennia BC, while the Bantu expansion from 4000 BC until 1000 AD was substantial in laying the foundations for societies and states in Central, East, and Southern Africa. A complex historical patchwork of civilisations, kingdoms, and empires followed, with most African societies recording their state apparatus, literature, and history via oral tradition. Many empires achieved hegemony in their respective regions, such as Ghana, Kanem, Mali, Songhai, and Sokoto in West Africa; Ancient Egypt, Kush, Carthage, the Fatimids, Almoravids, Almohads, Ayyubids, and Mamluks in North Africa; Aksum, Ethiopia, Adal, Kitara, Kilwa, and Imerina in East Africa; Kongo, Luba, and Lunda in Central Africa; and Mapungubwe, Zimbabwe, Mutapa, Rozvi, Maravi, Mthwakazi, and Zulu in Southern Africa. Within Africa slavery was historically widespread and internal slave markets were used to fuel various exporting slave trades, creating various diasporas, including in the Americas. From the late 19th century to early 20th century, driven by the Second Industrial Revolution, Africa was rapidly conquered and colonised by European nations, reaching a point when only Ethiopia and Liberia were independent polities. European rule had significant impacts on Africa's societies and the suppression of communal autonomy disrupted traditional local customary practices and caused the irreversible transformation of Africa's socioeconomic systems. Most present states in Africa emerged from a process of decolonisation following World War II, and established the Organisation of African Unity in 1963, the predecessor to the African Union. The nascent countries chose to keep their colonial borders, with traditional power structures often used in governance to varying degrees.
1107
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%85%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE
অ্যান্টার্কটিকা
অ্যান্টার্কটিকা (; পৃথিবীর দক্ষিণতম ও সবচেয়ে কম জনবহুল মহাদেশ। এটি কুমেরু বৃত্তের প্রায় সম্পূর্ণভাবে দক্ষিণে অবস্থিত এবং চারিদিকে দক্ষিণ মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত, যা কুমেরু মহাসাগর নামেও পরিচিত। এই মহাদেশটির উপর ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু অবস্থিত। অ্যান্টার্কটিকা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ এবং ইউরোপ মহাদেশের তুলনায় ৪০% বড়। এর আয়তন । অ্যান্টার্কটিকার বেশিরভাগ ভূখণ্ড বরফাবৃত, যার গড় বেধ । সাধারণভাবে অ্যান্টার্কটিকা অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় শীতল, শুষ্ক ও বায়ুপ্রবাহপূর্ণ এবং এর গড় উচ্চতা সর্বোচ্চ। এটি মূলত একটি মেরু মরুভূমি, যেখানে উপকূলীয় এলাকার বার্ষিক বৃষ্টিপাত -এর অধিক এবং অভ্যন্তরে বৃষ্টিপাত অনেক কম। বিশ্বের প্রায় ৭০% স্বাদু পানির ভাণ্ডার এখানে হিমায়িত অবস্থায় পাওয়া যায়, এবং একে গলালে বিশ্বের সমুদ্র সমতল প্রায় বেড়ে যাবে। অ্যান্টার্কটিকায় পৃথিবীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গ্রীষ্মকালে উপকূলীয় এলাকার তাপমাত্রা পর্যন্ত বাড়তে পারে। স্থানীয় প্রাণী প্রজাতির মধ্যে মাইট, সুতাকৃমি, পেঙ্গুইন, সামুদ্রিক সীল ও টারডিগ্রেড অন্তর্গত। যেখানে গাছপালা পাওয়া যায়, সেখানে উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে মূলত মস ও লাইকেন পাওয়া যায়। সম্ভবত ১৮২০ সালে ফাবিয়ান গটলিব ফন বেলিংসহাউসেন ও মিখাইল লাজারেফের নেতৃত্বে একটি রুশ অভিযানের সময়ে অ্যান্টার্কটিকার বরফের স্তূপ প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল। পরবর্তী দশকে ফরাসি, মার্কিন ও ব্রিটিশ অভিযানে মাধ্যমে অ্যান্টার্কটিকার আরও অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছিল। ১৮৯৫ সালে এক নরওয়েজীয় দল প্রথম নিশ্চিতভাবে অবতরণ করেছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মহাদেশের অভ্যন্তরে কিছু অভিযান সম্পন্ন হয়েছিল। ১৯০৯ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রীরা প্রথম চৌম্বক দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছেছিল, এবং ১৯১১ সালে নরওয়েজীয় অভিযাত্রীরা প্রথম ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছেছিল। অ্যান্টার্কটিকা প্রায় ৩০টি দেশ দ্বারা শাসিত, যার সবকটিই ১৯৫৯-এর অ্যান্টার্কটিক চুক্তি ব্যবস্থার অংশীদারি। চুক্তির শর্তাবলী অনুযায়ী, সামরিক কার্যকলাপ, খনি, পারমাণবিক বিস্ফোরণ ও পারমাণবিক বর্জ্য নিষ্পত্তি সবই অ্যান্টার্কটিকায় নিষিদ্ধ। পর্যটন, মাছধরা ও গবেষণা অ্যান্টার্কটিকার প্রধান মানব কার্যকলাপ। গ্রীষ্মের মরশুমে প্রায় ৫,০০০ জন লোক গবেষণা কেন্দ্রে বসবাস করে, যা শীতকালে প্রায় ১,০০০-এ নেমে আসে। মহাদেশটির দূর অবস্থানের সত্ত্বেও দূষণ, ওজোনস্তর ক্ষয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে মানব কার্যকলাপ অ্যান্টার্কটিকায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে। ব্যুৎপত্তি অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের নামটি মধ্য ফরাসি আন্তার্তিক্ ( বা ) হতে উদ্ভূত, যা আবার লাতিন আন্তার্ক্তিকুস্ (, "উত্তরের বিপরীত") থেকে প্রাপ্ত। আন্তার্ক্তিকুস্ শব্দটি গ্রিক আন্তি- (, "বিপরীত") ও আর্ক্তিকোস্ (, "সপ্তর্ষি, উত্তর") হতে উদ্ভূত। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল তাঁর মেতেওরোলজিকা গ্রন্থে আন্তার্ক্তিকোস্ অঞ্চল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। গ্রিক ভূগোলবিদ মারিনোস তাঁর খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর বিশ্ব মানচিত্রে এই নাম ব্যবহার করেছিলেন বলে জানা যায়, কিন্তু সেই মানচিত্র কালের সঙ্গে হারিয়ে গেছে। রোমান লেখক হাইজিনাস ও এপুলিয়াস গ্রিক নামটির রোমানীকৃত রূপ পোলুস্ আন্তার্ক্তিকুস্ () ব্যবহার করেছিলেন, যেখান থেকে প্রাচীন ফরাসি পোল্ আন্তার্তিক্ (; আধুনিক বানান ) আগত। প্রাচীন ফরাসি শব্দটি ১২৭০ সালে প্রথম পাওয়া যায় এবং সেখান থেকে মধ্য ইংরেজি পোল্ আন্টার্টিক্ () আগত, যা ইংরেজ লেখক জেফ্রি চসারের লেখা এক গ্রন্থে পাওয়া যায়। ধ্রুপদী সভ্যতার সময় থেকে ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে তেরা আউস্ত্রালিস্ (, ) নামক এক কাল্পনিক মহাদেশের ধারণা ছিল। তাদের ধারণা অনুযায়ী, তেরা আউস্ত্রালিস্ পৃথিবীর সুদূর দক্ষিণে এক বিশাল মহাদেশ যা ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার ভূখণ্ডের ভারসাম্য বজায় রাখে। এধরনের মহাদেশের বিশ্বাস ইউরোপীয়দের দ্বারা অস্ট্রেলিয়ার আবিষ্কার অবধি স্থায়ী ছিল। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে অন্বেষণকারী ম্যাথিউ ফ্লিন্ডার্স অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণে একটি বিচ্ছিন্ন মহাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, যাকে তখন নিউ হল্যান্ড বলা হয়েছিল, এবং এইভাবে অস্ট্রেলিয়ার পরিবর্তে "টেরা অস্ট্রালিস" নামটি ব্যবহার করার পক্ষে সমর্থন করেছিলেন। ১৮২৪ সালে সিডনির ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে নিউ হল্যান্ড মহাদেশের নাম পরিবর্তন করে অস্ট্রেলিয়া রাখে, অ্যান্টার্কটিকার উল্লেখ হিসাবে "টেরা অস্ট্রালিস" শব্দটি অনুপলব্ধ রেখেছিল। পরবর্তী দশকগুলিতে, ভূগোলবিদদেরকে "অ্যান্টার্কটিক মহাদেশ" এর মতো আনাড়ি বাক্যাংশ দিয়ে কাজ করতে হয়েছিল। তারা আলটিমা এবং অ্যান্টিপোডিয়ার মতো বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করে আরও কাব্যিক প্রতিস্থাপনের জন্য অনুসন্ধান করেছিল। ১৮৯০-এর দশকে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে একটি মহাদেশের নাম হিসাবে "অ্যান্টার্কটিকা" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। স্কটিশ মানচিত্রাঙ্কনবিদ জন জর্জ বার্থেলোমিউকে এই নামকরণের হোতা বলে মনে করা হয়। ভূগোল ইতিহাস অ্যান্টার্কটিক চুক্তি ব্যবস্থা টীকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চল অ্যান্টার্কটিকা http://www.ats.aq/ ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিকা সার্ভে যুক্তরাষ্ট্র অ্যান্টার্কটিকা প্রোগ্রাম অস্ট্রেলিয়া অ্যান্টার্কটিকা সার্ভে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় অ্যান্টার্কটিকা প্রোগ্রাম মহাদেশ পৃথিবীর চরম বিন্দু পৃথিবীর মেরু অঞ্চল
https://en.wikipedia.org/wiki/Antarctica
Antarctica
Antarctica ( ) is Earth's southernmost and least-populated continent. Situated almost entirely south of the Antarctic Circle and surrounded by the Southern Ocean (also known as the Antarctic Ocean), it contains the geographic South Pole. Antarctica is the fifth-largest continent, being about 40% larger than Europe, and has an area of 14,200,000 km2 (5,500,000 sq mi). Most of Antarctica is covered by the Antarctic ice sheet, with an average thickness of 1.9 km (1.2 mi). Antarctica is, on average, the coldest, driest, and windiest of the continents, and it has the highest average elevation. It is mainly a polar desert, with annual precipitation of over 200 mm (8 in) along the coast and far less inland. About 70% of the world's freshwater reserves are frozen in Antarctica, which, if melted, would raise global sea levels by almost 60 metres (200 ft). Antarctica holds the record for the lowest measured temperature on Earth, −89.2 °C (−128.6 °F). The coastal regions can reach temperatures over 10 °C (50 °F) in the summer. Native species of animals include mites, nematodes, penguins, seals and tardigrades. Where vegetation occurs, it is mostly in the form of lichen or moss. The ice shelves of Antarctica were probably first seen in 1820, during a Russian expedition led by Fabian Gottlieb von Bellingshausen and Mikhail Lazarev. The decades that followed saw further exploration by French, American, and British expeditions. The first confirmed landing was by a Norwegian team in 1895. In the early 20th century, there were a few expeditions into the interior of the continent. British explorers Robert Falcon Scott and Ernest Shackleton were the first to reach the magnetic South Pole in 1909, and the geographic South Pole was first reached in 1911 by Norwegian explorer Roald Amundsen. Antarctica is governed by about 30 countries, all of which are parties of the 1959 Antarctic Treaty System. According to the terms of the treaty, military activity, mining, nuclear explosions, and nuclear waste disposal are all prohibited in Antarctica. Tourism, fishing and research are the main human activities in and around Antarctica. During the summer months, about 5,000 people reside at research stations, a figure that drops to around 1,000 in the winter. Despite the continent's remoteness, human activity has a significant effect on it via pollution, ozone depletion, and climate change. The melting of the potentially unstable West Antarctic ice sheet causes the most uncertainty in century-scale projections of sea level rise, and the same melting also affects the Southern Ocean overturning circulation, which can eventually lead to significant impacts on the Southern Hemisphere climate and Southern Ocean productivity.
1108
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%8F%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
এশিয়া
এশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে জনবহুল মহাদেশ, প্রাথমিকভাবে পূর্ব ও উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। এটি ভূপৃষ্ঠের ৮.৭% ও স্থলভাগের ৩০% অংশ জুড়ে অবস্থিত। আনুমানিক ৪৩০ কোটি মানুষ নিয়ে এশিয়াতে বিশ্বের ৬০%-এরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। অধিকাংশ বিশ্বের মত, আধুনিক যুগে এশিয়ার বৃদ্ধির হার উচ্চ। উদাহরণস্বরূপ, বিংশ শতাব্দীর সময়, এশিয়ার জনসংখ্যা প্রায় চারগুণ বেড়ে গেছে, বিশ্ব জনসংখ্যার মত। এশিয়ার সীমানা সাংস্কৃতিকভাবে নির্ধারিত হয়, যেহেতু ইউরোপের সাথে এর কোনো স্পষ্ট ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা নেই, যা এক অবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডের গঠন যাকে একসঙ্গে ইউরেশিয়া বলা হয়। এশিয়ার সবচেয়ে সাধারণভাবে স্বীকৃত সীমানা হলো সুয়েজ খাল, ইউরাল নদী, এবং ইউরাল পর্বতমালার পূর্বে, এবং ককেশাস পর্বতমালা এবং কাস্পিয়ান ও কৃষ্ণ সাগরের দক্ষিণে। এটা পূর্ব দিকে প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং উত্তরে উত্তর মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। ইউরাল পর্বতমালা, ইউরাল নদী, কাস্পিয়ান সাগর, কৃষ্ণ সাগর এবং ভূমধ্যসাগর দ্বারা এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশ দুটি পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন। এছাড়া লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল এশিয়া মহাদেশকে আফ্রিকা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সংকীর্ণ বেরিং প্রণালী একে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ থেকে পৃথক করেছে। উল্লেখ্য, বেরিং প্রণালীর একদিকে অবস্থান করছে এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত রাশিয়ার উলেনা এবং অপর পাশে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অন্তর্গত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা। এই প্রণালীটির সংকীর্ণতম অংশটি মাত্র ৮২ কি•মি• চওড়া, অর্থাৎ বেরিং প্রণালীর এই অংশ হতে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দূরত্ব মাত্র ৮২ কি•মি•। এর আকার এবং বৈচিত্র্যের দ্বারা, এশিয়ার ধারণা – একটি নাম ধ্রুপদি সভ্যতায় পাওয়া যায় - আসলে ভৌত ভূগোলের চেয়ে মানবীয় ভূগোলের সাথে আরো বেশি সম্পর্কিত। এশিয়ার অঞ্চল জুড়ে জাতিগোষ্ঠী, সংস্কৃতি, পরিবেশ, অর্থনীতি, ঐতিহাসিক বন্ধন এবং সরকার ব্যবস্থার মাঝে ব্যাপকভাবে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সংজ্ঞা এবং সীমানা গ্রিক তিন-মহাদেশের ব্যবস্থা এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সীমান্ত ঐতিহাসিকভাবে শুধুমাত্র ইউরোপীয়দের দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে। দুইয়ের মধ্যে মূল পার্থক্য প্রাচীন গ্রিক দ্বারা তৈরি করা হয়। তারা এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সীমানা হিসেবে এজিয়ান সাগর, দারদানেলেস (Dardanelles), মার্মারা সাগর, বসফরাস, কৃষ্ণ সাগর, কেরচ প্রণালী (Kerch Strait), এবং আজভ সাগর ব্যবহার করে। নীল নদ প্রায়ই এশিয়া এবং আফ্রিকার মধ্যে সীমানা হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যদিও কিছু গ্রিক ভূগোলবিদ লোহিত সাগরকে একটি ভাল সীমানা হিসেবে মনে করে থাকে। নীল নদ এবং লোহিত সাগরের মধ্যে দারিউসের খাল এই ধারণায় যথেষ্ট প্রকরণ সৃষ্টি করে। রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে, দন নদী কৃষ্ণ সাগরে পড়ত, যা এশিয়ার পশ্চিম সীমান্ত। এটি ইউরোপীয় তীরে উত্তরদিকের নাব্য বিন্দু। ১৫ শতাব্দীতে লোহিত সাগর নীল নদের বদলে আফ্রিকা ও এশিয়ার মধ্যে সীমা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠে। এশিয়া–ইউরোপ সীমানা নদ-নদী উত্তর ইউরোপীয়দের কাছে অসন্তোষজনক হয়ে ওঠে, যখন রাশিয়ার রাজা পিটার পূর্ব খণ্ডে প্রতিপক্ষ সুইডেন ও উসমানীয় সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেন, এবং সাইবেরিয়ার উপজাতিদের সশস্ত্র প্রতিরোধ দমন করেন। এর দ্বারা ১৭২১ সালে একটি নতুন রাশিয়ান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ইউরাল পর্বতমালা ও তার পরেও ব্যপ্ত ছিল। সাম্রাজ্যের প্রধান ভৌগোলিক ত্বাত্তিক আসলে ছিল একজন প্রাক্তন সুইডিশ যুদ্ধবন্দী, যাকে ১৭০৯ সালের পোল্টাভা যুদ্ধ থেকে বন্দী করা হয়। তাকে তোবলস্কে নিযুক্ত করা হয়, যেখানে তিনি পিটারের সাইবেরিয়ার সরকারী, ভাসিলি তাতিসচেভ-এর সাথে সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং যে তাকে বইয়ের প্রস্তুতির জন্য ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিক গবেষণা করার অনুমতি ও স্বাধীনতা দেয়। সুইডেনে, পিটারের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর, ১৭৩০ সালে ফিলিপ জোহান ভন স্তারাহলেনবেরগ এশিয়ার সীমানা হিসেবে ইউরালকে প্রস্তাব করে একটি নতুন মানচিত্রাবলী প্রকাশ করে। রাশিয়ানরা ভূগোলে তাদের ইউরোপীয় পরিচয় রাখা অনুমোদিত করার ধারণা সম্পর্কে উৎসাহি ছিল। তাতিসচেভ ঘোষণা করেন যে, তিনি ভন স্তারাহলেনবেরগ ধারণাটি প্রস্তাব করেছিলেন। পরবর্তীরা নিম্ন সীমা হিসাবে এমবা নদী প্রস্তাব করে। মধ্য-১৯ শতকে ইউরাল নদী প্রকাশ হবার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রস্তাব করা হয়। কৃষ্ণ সাগরে থেকে কাস্পিয়ান সাগরে সীমানা সরানো হয়। সেই সময়কার মানচিত্রে, ট্রান্সককেশিয়া এশিয়ান বলে গণ্য হত। সেই অঞ্চলের অধিকাংশই সোভিয়েত ইউনিয়ন-এ অন্তর্গত হওয়া দক্ষিণ সীমানার মতামতকে প্রভাবিত করে। ইউরোপ থেকে তাদের পৃথক কল্পিত সীমানা নির্ধারণে এশিয়ান সংস্কৃতির কোনো ভূমিকা নেই। এশিয়া–ওশেনিয়া সীমানা এশিয়া ও ঢিলেঢালাভাবে সংজ্ঞায়িত অঞ্চল ওশেনিয়ার মধ্যকার সীমানা সাধারণত মালয় দ্বীপপুঞ্জের কোনো এক খানে স্থাপন করা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে উদ্ভাবিত দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও ওশেনিয়া শব্দের উৎপত্তি থেকেই বিভিন্ন ভৌগোলিক অর্থ বহন করে। মালয় দ্বীপপুঞ্জের কোন দ্বীপ এশিয়ার, তার প্রধান নির্ণয়াক হলো তার উপনিবেশিক অবস্থান বিভিন্ন সাম্রাজ্যের মধ্যে (সব ইউরোপীয় নয়)। লুইস এবং উইগেন বলেন "তার বর্তমান গণ্ডিতে 'দক্ষিণপূর্ব এশিয়া'-র কমিয়ে আনার একটি চলমান প্রক্রিয়া।" চলমান সংজ্ঞা ভৌগোলিক এশিয়া একটি সাংস্কৃতিক বস্তু, যা বিশ্বের ইউরোপীয় ধারণা অন্যান্য সংস্কৃতির উপর আরোপিত, একটি যথাযথ নয় ধারণা যার ফলে এটার মানে নিয়ে বিবাদ হয়। এশিয়া ইউরোপ চেয়ে বড় এবং আরো সাংস্কৃতিকভাবে বিচিত্র। এটা ঠিক বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক সীমানার উপাদানসমূহের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সাধারণ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভৌগোলিক মানের উপরন্তু, এশিয়া আরো সীমাবদ্ধ আগ্রহের ক্ষেত্রে কোনো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ও কার্যক্রমে সংস্থা ভেদে নির্দিষ্ট অর্থ বহন করে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিস অব কানাডা মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রশাসনিক বিভাগ ব্যবহার করে, তাদের "এশিয়া" সংজ্ঞা বৃহত্তর সংজ্ঞা থেকে যথেষ্ট ভিন্ন, এবং তা একইভাবে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য সংস্থার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। "এশিয়া" কিছু বিভিন্নমুখী ব্যবহার বর্তমান ঘটনা প্রতিবেদনের সময় সংবাদ মাধ্যম দ্বারা ঘোষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিবিসি নিউজের এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগ আছে, যা অস্ট্রালেশিয়া, ওশেনিয়া বা আমেরিকার প্রশান্ত অংশ (প্যাসিফিক) থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে। হিরোডোটাস-এর সময় থেকে, এক দল ক্ষুদ্র ভূগোলবিদ তিন-মহাদেশ ব্যবস্থা (ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া) প্রত্যাখ্যান করেন এই বলে তাদের মধ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক বিচ্ছেদ নেই। উদাহরণস্বরূপ, স্যার ব্যারি চুনলিফ, অক্সফোর্ডের ইউরোপীয় পুরাতত্ত্বের এমেরিটাস অধ্যাপক, যুক্তি দেন যে, ইউরোপ ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিকভাবে নিছক "এশিয়া মহাদেশের পশ্চিম বর্ধিতাংশ"। ভৌগোলিকভাবে, এশিয়া ভূখণ্ডের – বা আফ্রো-ইউরেশিয়ার অংশ ইউরেশিয়ার পূর্ব অংশ, যেখানে ইউরোপ উত্তর পশ্চিমাংশের উপদ্বীপ; ভূতাত্ত্বিকভাবে, এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকা (সুয়েজ খাল ছাড়া) একটি একক অবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড গঠন করে এবং একটি সাধারণ মহীসোপান ভাগ করে। প্রায় সব ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশির ভাগ অংশ ইউরেশীয় পাত-এর উপর অবস্থিত, দক্ষিণে আরবীয় ও ভারতীয় পাত দ্বারা সংযুক্ত এবং সাইবেরিয়ার পূর্বপ্রান্তিক অংশ উত্তর আমেরিকার পাতের উপর অবস্থিত। ব্যুৎপত্তি এশিয়া মূলত গ্রিক সভ্যতার একটি ধারণা। "এশিয়া", অঞ্চলের নাম, আধুনিক ভাষার বিভিন্ন আকারের মাঝে এর চূড়ান্ত উৎপত্তিস্থল অজানা। এর ব্যুৎপত্তি এবং উৎপত্তির ভাষা অনিশ্চিত। এটা নথিভুক্ত নামগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন নামের একটি। অনেকগুলো তত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে। ল্যাটিন সাহিত্য থেকে ইংরেজি সাহিত্যের গঠন হওয়ার সময়কালে ইংরেজি এশিয়ার খোঁজ পাওয়া যায়, তখনও একই গঠন ছিল এশিয়া। সমস্ত ব্যবহার এবং নামের গঠন রোমান সাম্রাজ্যের ল্যাটিন থেকে আহরণ করা কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলা যায় না। ধ্রুপদি সভ্যতা ল্যাটিন এশিয়া ও গ্রিক Ἀσία একই শব্দ বলে মনে করা হয়। রোমান লেখকগণ Ἀσία-র অনুবাদ এশিয়া করেছেন। রোমানরা একটি প্রদেশশের নামকরণ এশিয়া নামে করেছেন, যা প্রায় আধুনিক তুরস্কের কেন্দ্রীয় পশ্চিম অংশ। আধুনিক ইরাকে এশিয়া মাইনর ও এশিয়া মেজর অবস্থিত। নামটির প্রাচীনতম প্রমাণ গ্রিক, এটি সম্ভবত অবস্থাগতভাবে Ἀσία থেকে এশিয়া এসেছিল, কিন্তু প্রাচীন অনুবাদে, আক্ষরিক প্রসঙ্গের অভাবে, তা খুঁজে বের করা কঠিন। প্রাচীন ভূগোলবিদ এবং ঐতিহাসিকদের কাছেই জানা যায়, যেমন হিরোডোটাস, যারা সবাই গ্রিক ছিলো। রোমান সভ্যতা ব্যাপকভাবে গ্রীকের বশবর্তী ছিলো। প্রাচীন গ্রিক অবশ্যই নামের প্রাথমিক এবং সমৃদ্ধ ব্যবহারের নজির রাখে। হেরোডোটাস এশিয়ার প্রথম মহাদেশীয় ব্যবহার করেছেন (প্রায় ৪৪০ খ্রিস্টপূর্ব), তিনি তা উদ্ভাবন করেন সেই কারণে নয়, বরং তার ইতিহাস প্রাচীনতম পাওয়া গদ্য, যা তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে। তিনি সতর্কতার সাথে এটিকে সংজ্ঞায়িত করেন, পূর্ববর্তী ভূগোলবিদদের উল্লেখ করে যাদের লেখা তিনি পড়েছিলেন, কিন্তু যার কাজ এখন হারিয়ে গেছে। এর দ্বারা আনাতোলিয়া ও পারস্য সাম্রাজ্যকে বোঝান, গ্রিস ও মিশরের বিপরীতে। হেরোডোটাস আরোও বলেন, তিনি বিভ্রান্তবোধ করেন যে কেন তিন জন নারীর নামে "ভূভাগের নামকরণ করা হবে" ইউরোপা, এশিয়া, এবং লিবইয়া, আফ্রিকাকে নির্দেশ করে), অধিকাংশ গ্রিক মনে করেন দেবতা প্রমিথিউসের স্ত্রীর নামে (অর্থাৎ হেসিওয়ান, Hesione) এশিয়ার নামকরণ করা হয়, কিন্তু লিডিয়ানরা মনে করে, কট্যাসের (Cotys) ছেলে এশিজের (Asies) নামে এর নামকরণ করা হয়। গ্রিক পুরাণে, "এশিয়া" (Ἀσία) বা "এশিয়" (Asie) (Ἀσίη) নাইম্ফ বা লিডিয়ার দেবী তিতান-এর নাম। হেরোডোটাসের ভৌগোলিক বিভ্রান্তি সম্ভবত দ্বিমত প্রকাশ করার একটি রূপ, সকল শিক্ষিত লোকের মত তিনিও যেহেতু গ্রীক কাব্য পড়েছেন, তাই তিনি ভালভাবেই বুঝে থাকবেন যে, কেন অঞ্চলগুলোর নামে নারীদের নামে হবে। এথেন্স, মাইসিন, থিবেত এবং আরো অন্যান্য স্থানগুলোর নাম নারীদের নামে ছিলো। প্রাচীন গ্রিক ধর্মে, অঞ্চলগুলো নারী দেবদূতের অধীনে ছিলো, যা অভিভাবক দেবদূতের সমান্তরাল। কবিরা তাদের কার্যকলাপ বর্ণনা করেন এবং পরের প্রজন্ম তা রূপকধর্মী ভাষায় বিনোদনের গল্পে পরিণত করে, যা পরবর্তীকালে নাট্যকাররা ধ্রুপদী গ্রিক নাটক রুপান্তরিত করে এবং "গ্রিক পুরাণ" হয়ে উঠে। উদাহরণস্বরূপ, হেসিওড (Hesiod) তেথুস ও অকেয়ানোসের মেয়েদের কথা উল্লেখ করেন, যাদের মাঝে একটি "পবিত্র সঙ্গ" আছে, "যারা প্রভু অ্যাপোলোর সাথে এবং নদীরা তাদের তারুণ্য রেখে দিয়েছে।" এদের অনেকে ভৌগোলিক: ডোরিস, রোডা, ইউরোপ, এশিয়া। হেসিওড ব্যাখ্যা করেনঃ"তিন হাজার ঝরঝরে-গোড়ালির মহাসাগরের কন্যা, যারা ছড়িয়ে আছে দিগদিগন্তে এবং প্রতিটি জায়গায়, একইভাবে মাটি এবং গভীর জলের সেবা করে।" ইলিয়াড (প্রাচীন গ্রিক দ্বারা হোমার-এর উপর আরোপিত) ট্রোজান যুদ্ধে দুই ফ্রিজিয়ান (লিডিয়ায় লুভিয়ানের স্থলাভিষিক্ত গোত্র) কথা উল্লেখ করেঃ আসিউস (একটি বিশেষণ, অর্থ "এশিয়ান"); এবং লিডিয়ার একটি পানিবদ্ধ জলাভূমি বা নিম্নভূমি ασιος হিসেবে। ব্রোঞ্জ যুগ গ্রিক কবিতার আগে, এজিয়ান সাগর গ্রিক অন্ধকার যুগে ছিলো, যার প্রারম্ভে দলমাত্রিক লেখা হারিয়ে গেছে এবং বর্ণানুক্রমিক লেখা শুরু হয়নি। এর আগে ব্রোঞ্জ যুগের নথিতে আসিরীয়া সাম্রাজ্য, হিট্টিট সাম্রাজ্য ও গ্রিসের মাইসেরিয়ান রাজ্যের কথা উল্লেখ আছে, যা নিঃসন্দেহে এশিয়া, অবশ্যই আনাতোলিয়ায়, লিডিয়া সহ যদি অভিন্ন না হয়। এসব নথি প্রশাসনিক এবং কবিতায় অন্তর্ভুক্ত নয়। ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে অজানা অক্রমণকারী দ্বারা মাইসেরিয়ান রাজ্য ধ্বংস হয়। একদল চিন্তাবিদের মতে, একই সময়ে চলা ডরিয়ান আক্রমণ দায়ী করা হয়। প্রাসাদে পোড়ানোর ঘটনা, দৈনিক প্রশাসনিক নথির নিদর্শন গ্রিক দলমাত্রিক লিপিতে (লিনিয়ার বি) পোড়ামাটিতে লেখা আছে, যা অনেকে পাঠোদ্ধার করার চেষ্টা করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তরুণ সাংকেতিক লিপিকর মাইকেল ভেন্ট্রিস, সহায়তা করেন বিদ্বান জন চাদউইক। প্রাচীন পাইলস স্থলে কার্ল ব্লেজিন একটি উল্লেখযোগ্য গুপ্তভান্ডার আবিষ্কার করেন, যাতে বিভিন্ন পদ্ধতি দ্বারা গঠিত পুরুষ ও মহিলা নামের শত শত নমুনা অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে কিছু মহিলাকে দাসত্বে বন্দী করে রাখা হত (সমাজের গবেষণায় বিষয়বস্তু হিসাবে প্রকাশিত)। তাদের কাজে লাগানো হতো, যেমন কাপড় তৈরি, ও বাচ্চাসহ আসত। তাদের মধ্যে কিছু মহিলাদের সাথে যুক্ত বিশেষণ লাওইয়াইয়াই (lawiaiai), "বন্দী," তাদের উৎসকে নির্দেশ করে। তাদের কিছু জাতিগত নাম। বিশেষ করে, আশ্বিনি (aswiai), "এশিয়ার নারী" বলে চিহ্নিত। সম্ভবত তারা এশিয়ায় বন্দী হয়, কিন্ত অন্যান্য ক্ষেত্রে, মিলাতিয়াই (Milatiai), মিলেটাস থেকে আগত, একটি গ্রিক উপনিবেশ, যেখানে গ্রীক দ্বারা ক্রীতদাসদের জন্য অভিযান চালানো হয়নি। চাদউইক মনে করেন যে নামগুলো তাদের অবস্থান উল্লেখ করে, যেখান থেকে বিদেশি নারী কেনা হয়েছে। নামটি একবচন, আশ্বিয়া (Aswia), যা দ্বারা একটি দেশ ও তার অধিবাসী নারী উভয়কেই বোঝায়। এর একটি পুংলিঙ্গ আছে, আশ্বিওস (aswios)। এই আশ্বিয়া (Aswia) শব্দটি, হিট্টিটদের কাছে পরিচিত আশুয়া (Assuwa) নামের অঞ্চল থেকে আগত, লিডিয়ায় কেন্দ্রীভূত, বা "রোমান এশিয়া"। এই নাম, আশুয়া (Assuwa) থেকেই মহাদেশ "এশিয়া" নামের উৎপত্তি। আশুয়া লীগ পশ্চিম আনাতোলিয়ার একটি কনফেডারেশন রাজ্য, যা প্রথম তুদহালিয়ার নেতৃত্বে হিট্টিটদের কাছে প্রায় ১৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পরাজিত হয়। অথবা, শব্দটির উৎপত্তি আক্কাদীয় শব্দ , যার অর্থ 'বাইরে যাওয়া' বা 'আরোহণ করা', মধ্যপ্রাচ্যে সূর্যোদয়ের সময়ে সূর্যের দিক নির্দেশ করা এবং খুব সম্ভবত ফিনিশীয় শব্দ asa এর সাথে যুক্ত যার মানে পূর্ব। বিপরীতভাবে একই রকম উৎপত্তির ধরন ইউরোপের জন্য প্রস্তাব করা হয়, আক্কাদীয় শব্দ erēbu(m) 'প্রবেশ করা' বা 'ডোবা' (সূর্য)। টি.আর. রিড শব্দের উৎপত্তির দ্বিতীয় ধারণাটি সমর্থন করেন, asu শব্দটি থেকে প্রাচীন গ্রিক নামটি নামটি এসেছে, যার অর্থ আসিরীয়ায় 'পূর্ব' (ereb ইউরোপ-এর জন্য, অর্থ 'পশ্চিম'). পাশ্চাত্য (Occidental) ধারণাটি (লাতিন রূপ Occidens 'ডুবন্ত') এবং প্রাচ্য (Oriental) (লাতিন Oriens থেকে, অর্থ 'উঠন্ত') ইউরোপীয় উদ্ভাবন, পশ্চিমা ও পূর্ব এর সমার্থক। রিড আরও জোর দেন যে, এটি এশিয়ার সমস্ত মানুষ ও সংস্কৃতিকে একক শ্রেণিবিভাগে ফেলার পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাখ্যা করে, প্রায় যেন ইউরেশীয় মহাদেশের পশ্চিম এবং পূর্ব সভ্যতাগুলোর মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণের প্রয়োজন। এই বিষয়ে ওগুরা কুজকো ও তেনশিন ওকাকুরা দুই জন স্পষ্টভাষী জাপানি ব্যক্তিত্ব। ইতিহাস এশিয়ার ইতিহাস বিভিন্ন প্রান্তিক উপকূলীয় অঞ্চলের স্বতন্ত্র ইতিহাস হিসেবে দেখা যায়ঃ পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য, যা এশিয়ার মধ্য প্রান্তর দ্বারা যুক্ত। এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলগুলো পৃথিবীর প্রাচীনতম পরিচিত সভ্যতাগুলোর বিকাশস্থল, যা উর্বর নদী উপত্যকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। সভ্যতাগুলোতে মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু উপত্যকা ও হুয়াংহো অনেক মিল রয়েছে। এই সভ্যতাগুলো প্রযুক্তি এবং ধারণা বিনিময় করতে পারে, যেমন গণিত ও চাকা। অন্যান্য উদ্ভাবন, যেমন লিখন রিতি, প্রতিটি সভ্যতায় পৃথকভাবে বিকশিত হয়েছে বলে মনে হয়। শহর, রাজ্য এবং সাম্রাজ্য এসব নিম্নভূমিতে বিকশিত হয়। কেন্দ্রীয় প্রান্তীয় অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে অশ্বারোহী যাযাবর দ্বারা অধ্যুষিত ছিল, যারা কেন্দ্রীয় প্রান্তীয় অঞ্চল থেকে এশিয়ার সব অঞ্চল পৌঁছাতে পারতো। কেন্দ্রীয় প্রান্তীয় অঞ্চল থেকে প্রাচীনতম বংশের বিস্তার হলো ইন্দো-ইউরোপীয়, যারা তাদের ভাষা মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া, চীনের সীমানা পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছিলো। এশিয়ার উত্তরদিকের শেষ সীমায় অবস্থিত সাইবেরিয়া প্রান্তীয় যাযাবরদের জন্য দুর্গম ছিলো মূলত ঘন বন, জলবায়ু এবং তুন্দ্রার জন্য। এই এলাকা খুব জনবিরল ছিল। মধ্য এবং প্রান্তীয় অঞ্চল অধিকাংশই পর্বত ও মরুভূমি দ্বারা পৃথক ছিল। ককেশাস, হিমালয় পর্বতমালা ও কারাকোরাম, গোবি মরুভূমি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, যা প্রান্তীয় অশ্বারোহী কেবল পার হতে পারে। যখন শহুরে নগরবাসী আরো উন্নত ছিলো প্রযুক্তিগতভাবে ও সামাজিকভাবে, তখন অনেক ক্ষেত্রেই তারা প্রান্তীয় অশ্বারোহীর আক্রমণের বিরুদ্ধে সামরিক ভাবে সামান্যই করতে পারতো। যাইহোক, এসব নিম্নভূমিতে যথেষ্ট উন্মুক্ত তৃণভূমি নেই যা বিশাল অশ্বারোহী বাহিনীর যোগান দিতে পারবে; এই এবং অন্যান্য কারণে, যাযাবরেরা চীন, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ জয় করে তাদের স্থানীয় সমৃদ্ধিশালী সমাজে মিশে যেতে পেরেছিলো। ৭ম শতকে মুসলিম বিজয় চলাকালে, ইসলামিক খিলাফত মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া জয় করে। পরবর্তিতে ১৩শ শতকে মোঙ্গল সাম্রাজ্য এশিয়ার অনেক বড় অংশ জয় করে, যা চীন থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত। মোঙ্গল আক্রমণ করার আগে, চীন এ প্রায় ১২০ মিলিয়ন মানুষ ছিল; আক্রমণের পরবর্তি আদমশুমারিতে ১৩০০ সালে প্রায় ৬০ মিলিয়ন মানুষ ছিল। ব্ল্যাক ডেথ, পৃথিবীব্যাপী মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী মৃত্যু, মধ্য এশিয়ার অনুর্বর সমভূমিতে উদ্ভব হয়ে এটা সিল্ক রোড বরাবর চলে গেছে। রাশিয়ান সাম্রাজ্য ১৭শ শতক থেকে এশিয়া বিস্তৃত হয়, এবং শেষ পর্যন্ত ১৯শ শতকের শেষ নাগাদ সাইবেরিয়া এবং অধিকাংশ মধ্য এশিয়া নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ১৬শ শতক থেকে উসমানীয় সাম্রাজ্য আনাতোলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং বলকান অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। ১৭শ শতকে, মাঞ্চুরা চীন জয় করে এবং চিং রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে। এদিকে ১৬শ শতক থেকে ইসলামী মুঘল সাম্রাজ্য অধিকাংশ ভারত শাসন করতে থাকে। ভূগোল ও জলবায়ু এশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ। এটা পৃথিবীর মোট ভূপৃষ্ঠের ৮.৮% ভাগ (বা ৩০% ভাগ স্থল), এবং বৃহত্তম তটরেখা । এশিয়া সাধারণত ইউরেশিয়ার পাঁচ ভাগের চার ভাগ নিয়ে পূর্ব দিকে অবস্থিত। এটা সুয়েজ খাল ও ইউরাল পর্বতমালার পূর্বে, ককেশাস পর্বতমালা, কাস্পিয়ান সাগর ও কৃষ্ণ সাগরের দক্ষিণে অবস্থিত। এটা পূর্ব দিকে প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত, এবং উত্তরে উত্তর মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। এশিয়া মহাদেশে ৪৮টি দেশ আছে, এদের মধ্যে চারটি (রাশিয়া, কাজাখস্তান, তুরস্ক, এবং আজারবাইজান) দেশের ইউরোপে অংশ আছে। এশিয়ার অত্যন্ত বিচিত্র জলবায়ু এবং ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য আছে। জলবায়ুর পরিধি আর্কটিক, উপআর্কটিক (সাইবেরিয়া) থেকে দক্ষিণ ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ক্রান্তীয় অবধি বিস্তৃত। এর দক্ষিণ-পূর্ব অংশ জুড়ে আর্দ্র ও অভ্যন্তরে শুষ্ক। পশ্চিম এশিয়ায় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দৈনিক তাপমাত্রা পরিসর দেখা যায়।হিমালয় পর্বমালার কারণে মৌসুমি সঞ্চালন দক্ষিণ ও পূর্ব অংশ জুড়ে প্রাধান্য পায়। মহাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অংশ উষ্ণ। উত্তর গোলার্ধের মধ্যে সাইবেরিয়া অন্যতম শীতলতম অঞ্চল, এবং উত্তর আমেরিকা জন্য আর্কটিক বায়ুভরের একটি উৎস হিসাবে কাজ করে। ট্রপিকাল সাইক্লোনের জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে সক্রিয় জায়গা উত্তরপূর্বে ফিলিপাইন ও দক্ষিণ জাপান। মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমি ও আরব মরুভূমি মধ্যপ্রাচ্যের অনেকটা জুড়ে প্রসারিত। চীনের ইয়ানজে নদী মহাদেশের দীর্ঘতম নদী। নেপাল ও চীনের মধ্যকার হিমালয় পর্বতমালা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা পর্বতশ্রেণী। বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় বনাঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে প্রসারিত ও সরলবর্গীয়, পর্ণমোচী বনাঞ্চল উত্তরে প্রসারিত। জলবায়ু পরিবর্তন ম্যাপলক্রফট, বৈশ্বিক ঝুঁকি বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান, ২০১০ সালে সম্পাদিত একটি জরিপ ১৬টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তনে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে। প্রত্যেক জাতির ঝুঁকি ৪২টি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত সূচক দ্বারা নির্ণিত, যা পরবর্তী ৩০ বছর সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে। এশিয়ার দেশগুলো বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা, ১৬টি দেশের মধ্যে ছিল যারা জলবায়ু পরিবর্তনে চরম ঝুঁকির সম্মুখীন। কিছু পরিবর্তন ইতোমধ্যেই ঘটছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের ক্রান্তীয় অংশে আধা-শুষ্ক জলবায়ুতে, তাপমাত্রা ১৯০১ থেকে ২০০৩-এর মধ্যে ০.৪ °​সে বেড়েছে। ২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর সেমি-এ্যারিড ট্রপিক্স (ICRISAT) দ্বারা একটি গবেষণায়, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এশিয়ার কৃষি ব্যবস্থায় বৈজ্ঞানিক পন্থা ও কৌশল খোঁজার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়, যার ফলে দরিদ্র ও অসহায় কৃষকদের উপকার হবে। গবেষণায় সুপারিশ করা হয় স্থানীয় পরিকল্পনার মধ্যে জলবায়ু তথ্য ব্যবহারের উন্নতি এবং আবহাওয়া ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা শক্তিশালীকরণ, গ্রামীণ পরিবারের আয়ের বহুমুখীকরণ উৎসাহী করা, উন্নত প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ তথা ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি পূর্ণ করা, বন আচ্ছাদন করা, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করার জন্য কৃষকদের প্রণোদনা প্রদান। অর্থনীতি এশিয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম নমিনাল জিডিপি সব মহাদেশগুলোর মধ্যে ইউরোপের পরে, কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা সমতায় বৃহত্তম। ২০১১ সালের হিসাবে, এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি চীন, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া। বৈশ্বিক অফিস অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ২০১১-এ, অফিসে অবস্থানে এশিয়ার আধিপত্য ছিল, শীর্ষ ৫-এ ৪টিই এশিয়ার হংকং, সিঙ্গাপুর, টোকিও, সিওল ও সাংহাই। প্রায় ৬৮ শতাংশ আন্তর্জাতিক সংস্থার হংকং-এ অফিস আছে। ১৯৯০ দশকের শেষ দিকে এবং ২০০০-এর শুরুতে, চীনের অর্থনীতি এবং ভারতের অর্থনীতি দ্রুত হারে বাড়ছে, উভয়ের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৮% এর বেশি। এশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক খুব উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেশগুলোঃ ইসরায়েল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মঙ্গোলিয়া, উজবেকিস্তান, সাইপ্রাস ও ফিলিপাইন, এবং খনিজ সমৃদ্ধ দেশগুলির মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ইরান, ব্রুনাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইন এবং ওমান। অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ অ্যাঙ্গাস মাড্ডিসন তার বই দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি: এ মিলেনিয়াম পারর্স্পেক্টিভ-এ উল্লেখ করেন, ভারত ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ও ০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ছিল। চীন পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক সময়ের জন্য বৃহত্তম এবং সবচেয়ে উন্নত অর্থনীতি ছিল, মধ্য ১৯ শতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য (ব্রিটিশ ভারত বাদে) দখল করা আগ পর্যন্ত। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে কয়েক দশক ধরে, জাপান এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি এবং পৃথিবীর যেকোন একক জাতির দ্বিতীয় বৃহত্তম, ১৯৮৬-তে সোভিয়েত ইউনিয়নকে অতিক্রম করার পরে (নেট বস্তুগত পণ্য পরিমাপে) এবং ১৯৬৮-তে জার্মানিকে। (বিশেষ দ্রষ্টব্য: কিছু অতিপ্রাকৃত অর্থনীতি বৃহত্তম, যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (নাফটা) অথবা এপেক)। এটা ২০১০-এ শেষ হয় যখন চীন জাপানকে অতিক্রম করে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হয়। ১৯৮০ দশকের শেষভাগ ও ১৯৯০ দশকে শুরুতে, জাপানের জিডিপি শুধুমাত্র (বর্তমান বিনিময় হার পদ্ধতি), বাকি দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপির সমান ছিলো। ১৯৯৫ সালে জাপানের অর্থনীতি, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমান হয়ে গেছিলো এক দিনের জন্য, জাপানি মুদ্রা পরে ৭৯ ইয়েন/মার্কিন $ উচ্চ রেকর্ডে পৌঁছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৯০ দশক পর্যন্ত, এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জাপান কেন্দ্রীভূত ছিলো, এছাড়াও প্রশান্ত রিমের চারটি অঞ্চলে বিস্তৃত ছিলো, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং ও সিঙ্গাপুর। এই চারটি অঞ্চল এশিয়ান টাইগার্স পরিচিত, যারা সকলে উন্নত দেশ এবং এশিয়ার মাথাপিছু সর্বোচ্চ জিডিপি অর্জনকারী। পূর্বানুমান অনুসারে, ২০২০ সালে ভারত নমিনাল জিডিপিতে জাপানকে অতিক্রম করবে। গোল্ডম্যান শ্যাস অনুযায়ী, ২০২৭ সালে চীন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হবে। বিভিন্ন বাণিজ্য ব্লক আছে, যার মাঝে আসিয়ান সবচেয়ে উন্নত। এশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম মহাদেশ এবং এটা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ যেমন পেট্রোলিয়াম, বন, মৎস্য, পানি, তামা ও রূপা। এশিয়ায় উৎপাদন, পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ঐতিহ্যগতভাবে শক্তিশালী বিশেষ করে চীন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ভারত, ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুর। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বহুজাতিক কর্পোরেশনের আধিপত্য আছে, কিন্তু চীন ও ভারত ক্রমবর্ধমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে বহু কোম্পানি সস্তা শ্রমের প্রচুর যোগান এবং তুলনামূলকভাবে উন্নত অবকাঠামোর সুযোগ গ্রহণ করে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সিটিগ্রুপ অনুসারে, ১১-র মধ্যে ৯ টি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি উৎপাদক দেশ এশিয়ার, জনসংখ্যা এবং আয় বৃদ্ধির দ্বারা চালিত। তারা হলো বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনাম। এশিয়ার চারটি প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র আছেঃ টোকিও, হংকং, সিঙ্গাপুর ও সাংহাই। কল সেন্টার ও ব্যবসা প্রসেস আউটসোর্সিং (BPOs) ভারত ও ফিলিপাইনে প্রধান নিয়োগকারী হয়ে উঠছে, অত্যন্ত দক্ষ, ইংরেজি ভাষাভাষী কর্মীর সহজলভ্যতার কারণে। আউটসোর্সিং বর্ধিত ব্যবহারের কারণে আর্থিক কেন্দ্র হিসাবে ভারত ও চীনের উত্থানকে সহায়তা করে। বড় এবং প্রতিযোগিতামূলক তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের কারণে, ভারত আউটসোর্সিং জন্য প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ২০১০ সালে, এশিয়ায় ৩৩ লক্ষ মিলিওনেয়ার ছিল (বাড়ি ব্যতীত মার্কিন $১ মিলিয়ন বেশি আয়করা মানুষ), উত্তর আমেরিকার সামাণ্য নিচে ৩৪ লক্ষ মিলিওনেয়ার। গত বছর এশিয়া ইউরোপকে অতিক্রম করে। সম্পদ প্রতিবেদন ২০১২-এ সিটি গ্রুপ উল্লেখ করে যে এশীয় সেন্তা-মিলিওনেয়ার উত্তর আমেরিকার সম্পদ কব্জা করে প্রথমবারের মত, তা পূর্বে পাঠানো অব্যাহত থাকে। ২০১১-এর শেষ নাগাদ, ১৮,০০০ এশীয় মানুষ বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, চীন ও জাপানের যাদের কমপক্ষে $১০০ মিলিয়ন নিষ্পত্তিযোগ্য সম্পদ, যখন উত্তর আমেরিকায় তা ১৭,০০০ জন এবং পশ্চিম ইউরোপে ১৪,০০ জন। পর্যটন মাস্টারকার্ড বৈশ্বিক গন্তব্য শহর সূচক ২০১৩ প্রকাশ করে, যেকানে ২০টি শহরের মধ্যে ১০টি এশিয়ার এবং এশিয়ার কোনো শহর (ব্যাংকক) শীর্ষস্থানীয় অবস্থায় ছিলো, ১৫.৯৮ আন্তর্জাতিক পর্যটক নিয়ে। জনমিতি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আয় তথ্য প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পূর্ব এশিয়া সার্বিক মানব উন্নয়ন সূচকে (এইচডিআই) পৃথিবীর যেকোন অঞ্চলের চেয়ে বেশি উন্নতি সাধন করে, যা গত ৪০ বছরে দ্বিগুণ হয়। চীন, এইচডিআই উন্নতিতে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্জনকারী ১৯৭০ সাল থেকে, "টপ টেন মুভার্স" তালিকার একমাত্র দেশ যা স্বাস্থ্য বা শিক্ষার সফলতা জন্য নয় আয়ের কারণে। শেষ চার দশকে এর মাথাপিছু আয় অত্যাশ্চর্য ২১ গুণ বেড়ে, লক্ষ লক্ষ মানুষের আয়ের দারিদ্যতা থেকে মুক্তি দেয়। তবুও এটা স্কুল তালিকাভুক্তি এবং প্রত্যাশিত আয়ুতে অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় নয়। নেপাল, একটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ, প্রধানত কারণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে ১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বের দ্রুততম অগ্রসরমান। এর বর্তমান প্রত্যাশিত আয়ু ১৯৭০ সালের তুলনায় ২৫ বছর বেশি। নেপালে প্রতি পাঁচ জন শিশুদের মধ্যে চার জনের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়, যা ৪০ বছর আগে ১ জন ছিলো। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া মানব উন্নয়ন সূচকে সর্বোত্তম (১১ ও ১২ নং, যা "খুব উচ্চ মানব উন্নয়ন" বিভাগে পড়ে), অনুসরণ করে হংকং (২১) ও সিঙ্গাপুর (২১)। আফগানিস্তান (১৫৫) মূল্যায়ন ১৬৯টি দেশ থেকে, যা এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন স্থান। ভাষাসমূহ এশিয়া বিভিন্ন ভাষা পরিবার এবং বিচ্ছিন্ন ভাষার আবাস। বেশিরভাগ এশিয়ার দেশগুলোতে স্থানীয়ভাবে একাধিক ভাষায় কথা বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ এথ্‌নোলগ অনুযায়ী, ৬০০-র অধিক ভাষা ইন্দোনেশিয়ায়, ও ৮০০-র অধিক ভাষা ভারতে প্রচলিত। এবং ১০০-এর বেশি ফিলিপাইনে প্রচলিত। চীন বিভিন্ন প্রদেশে অনেক ভাষা এবং উপভাষা রয়েছে। ধর্ম বিশ্বের অনেক প্রধান ধর্মের উৎস এশিয়ায়। এশীয় পুরাণ জটিল এবং বিচিত্র। উদাহরণস্বরূপ মহাপ্লাবনের ঘটনা, খ্রিস্টানদের ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত, যা মেসপোটেমিয় পুরাণের প্রথম নিদর্শন। হিন্দু পুরাণে বলা আছে, অবতার বিষ্ণু মাছের বেশে মনুকে একটি ভয়ানক বন্যা সম্পর্কে সতর্ক করে। প্রাচীন চীনা পুরাণে, শান হ্যায় জিং, চীনা শাসক দা ইউ ১০ বছর অতিবাহিত করে মহাপ্লাবন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, যা প্রাচীন চীনের বেশির ভাগ অঞ্চল প্লাবিত করেছিলো। নুয়া দেবীর সহায়তায় আক্ষরিকভাবেই ভাঙা আকাশ ঠিক করে। ইব্রাহিমীয় ধর্মসমূহ ইব্রাহিমীয় ধর্মগুলো ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম, ইসলাম এবং বাহাই ধর্ম পশ্চিম এশিয়ায় উত্পত্তি। ইহুদি ধর্ম, ইব্রাহিমীয় ধর্মগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম, ইসরায়েলের মধ্যে প্রাথমিকভাবে চর্চা করা হয়, যা হিব্রু জাতির জন্মস্থান এবং ঐতিহাসিক স্বদেশ। ইহুদিদের বনী ইসরাইল বলা হয়, তারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, এশিয়া/উত্তর আফ্রিকা, প্রবাসী ইউরোপীয়, উত্তর আমেরিকায়, এবং অন্যান্য অঞ্চল। খ্রিস্ট ধর্ম এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত। ফিলিপাইন ও পূর্ব তিমুরে, রোমান ক্যাথলিক প্রধান ধর্ম; যা যথাক্রমে স্পেনীয় ও পর্তুগীজ দ্বারা পরিচিতি লাভ করে। আর্মেনিয়া, সাইপ্রাস, জর্জিয়া এবং এশীয় রাশিয়ায়, প্রাচ্যের অর্থোডক্স প্রধান ধর্ম। বিভিন্ন খ্রিস্টান গোষ্ঠীর প্রচারের জন্য এর অনুসারী মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও ভারতেও আছে। সন্ত টমাস ভারতে ১ম শতাব্দীতে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের চিহ্ন খুঁজে বের করেন। ইসলাম, সৌদি আরবে উদ্ভব, এশিয়ার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ছড়ানো ধর্ম। বিশ্ব মুসলিম জনসংখ্যার ১২.৭%, বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া, ক্রমহ্রাসমানভাবে পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, ইরান এবং তুরস্ক এশিয়ায় অবস্থিত। মক্কা, মদিনা এবং জেরুজালেম সারা বিশ্বে ইসলামের জন্য মহা পবিত্র শহর। এসব পবিত্র শহর সারা বিশ্বের অনুসারীদের প্রধান আকর্ষণ, বিশেষ করে হজ্জ ও উমরাহ মৌসুমে। ইরান বৃহত্তম শিয়া দেশ ও পাকিস্তানে বৃহত্তম আহমদীয়া জনসংখ্যা রয়েছে। বাহাই ধর্ম এশিয়ার ইরানে উদ্ভব, এবং সেখানে থেকে অটোমান সাম্রাজ্য, মধ্য এশিয়া, ভারত, এবং বার্মায় বাহাউল্লাহর জীবনদশায় ছড়িয়ে যায়। বিংশ শতকের মাঝামাঝিতে অনেক মুসলিম দেশেই বাহাই-এর প্রচার কার্যক্রম মারাত্মকভাবে কর্তৃপক্ষ দ্বারা ব্যাঘত হয়। লোটাস মন্দির নামে ভারতে বড় একটি বাহাই মন্দির রয়েছে। প্রাচ্য এশীয় ধর্মসমূহ প্রায় সব এশীয় ধর্মের দার্শনিক চরিত্র আছে এবং দার্শনিক চিন্তা এবং লেখার বৃহদাংশ এশীয় দার্শনিক ঐতিহ্য অন্তর্ভুক্ত করে। হিন্দু দর্শন ও বৌদ্ধ দর্শন ভারতীয় দর্শনের অন্তর্ভুক্ত। হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম এবং শিখধর্ম ভারত, দক্ষিণ এশিয়া থেকে উদ্ভূত। পূর্ব এশিয়ায় বিশেষ করে চীন ও জাপানে কনফুসীয় ধর্ম, তাওবাদ ও জেন বৌদ্ধ ধর্ম বিকাশ লাভ করে। ২০১২ সালের হিসাবে, হিন্দুধর্মের অনুসারী প্রায় ১.১ বিলিয়ন মানুষ। এই ধর্মবিশ্বাস এশিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ২৫% প্রতিনিধিত্ব করে এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। তবে, এটি বেশিরভাগই দক্ষিণ এশিয়ায় ঘনীভূত। ভারত ও নেপালের জনসংখ্যার ৮০% লোক এবং বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও বালি, ইন্দোনেশিয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এছাড়াও বার্মা, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে অনেক বিদেশী ভারতীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বী। দক্ষিণ পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ডে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর প্রাধান্য রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এমন দেশ গুলো হলোঃ কম্বোডিয়া (৯৬%), থাইল্যান্ড (৯৫%), মায়ানমার (৮০%-৮৯%), জাপান (৩৬%–৯৬%), ভুটান (৭৫%-৮৪%), শ্রীলঙ্কা (৭০%), লাওস (৬০%-৬৭%) এবং মঙ্গোলিয়া (৫৩%-৯৩%)। এছাড়াও বৃহৎ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী রয়েছে এমন দেশগুলো হলোঃ সিঙ্গাপুর (৩৩%-৫১%), তাইওয়ান (৩৫%–৯৩%), দক্ষিণ কোরিয়া (২৩%-৫০%), মালয়েশিয়া (১৯%-২১%), নেপাল (৯%-১১%), ভিয়েতনাম (১০%–৭৫%), চীন (২০%–৫০%), উত্তর কোরিয়া (১.৫%–১৪%), এবং ভারত ও বাংলাদেশে ছোট সম্প্রদায়। অনেক চীনা সম্প্রদায়ের মধ্যে, মহায়ানা বৌদ্ধ ধর্ম সহজে তাওবাদের সাথে সমন্বয় সাধন হয়েছে। ফলে সঠিক ধর্মীয় পরিসংখ্যান বের করা কঠিন এবং তা কম বা বেশি হতে পারে। চীন, ভিয়েতনাম ও উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট-শাসিত দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে নাস্তিক, তাই বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কম উল্লেখিত হতে পারে। জৈন ধর্ম মূলত ভারত এবং বিদেশী ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে যেমনঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মালয়েশিয়ায় দেখতে পাওয়া যায়। শিখধর্ম উত্তর ভারত এবং এশিয়া, বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিদেশি ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। কনফুসীয় ধর্ম চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এবং বিদেশী চীনা জনসংখ্যার মধ্যে প্রধানত পাওয়া যায়। তাওবাদ প্রধানত চীন, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের অধিবাসীদের মধ্যে পাওয়া যায়। তাওবাদ সহজে মহায়ানা বৌদ্ধ ধর্মের সাথে সমন্বয় সাধন হয়েছে। ফলে সঠিক ধর্মীয় পরিসংখ্যান বের করা কঠিন এবং তা কম বা বেশি হতে পারে। আধুনিক দ্বন্দ্ব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তিকালীন সময়ে বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কিত এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে কেন্দ্রীভূত গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা হলোঃ কোরীয় যুদ্ধ ভিয়েতনাম যুদ্ধ ইন্দোনেশিয়া–মালয়েশিয়া সংঘাত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ইওম কিপ্পুর যুদ্ধ ইরানি বিপ্লব সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ ইরান-ইরাক যুদ্ধ কম্বোডিয়ায় মাঠে হত্যাকাণ্ড শ্রীলঙ্কার গৃহ যুদ্ধ সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গন ১৯৯১-এর উপসাগরীয় যুদ্ধ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ২০০৬ থাই অভ্যুত্থান বার্মীজ গৃহযুদ্ধ আরব বসন্ত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত আরব-ইসরায়েলি সংঘাত সিরীয় গৃহযুদ্ধ ভারত-চীন যুদ্ধ ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট সংস্কৃতি নোবেল পুরস্কার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভারতীয় বাঙালি কবি, লেখক, কথাসাহিত্যিক, উপন্যাসিক এবং নাট্যকার, ১৯১৩ সালে প্রথম এশীয় হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতের লেখক। অন্যান্য এশীয় লেখকদের মধ্যে যারা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছে তারা হলোঃ ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা (জাপান, ১৯৬৮), কেন্‌জাবুরো ওহয়ে (জাপান, ১৯৯৪), কাও শিংচিয়েন (চীন, ২০০০), ওরহান পামুক (তুরস্ক, ২০০৬), এবং মো ইয়ান (চীন, ২০১২)। অনেকে মার্কিন লেখক, পার্ল এস বাককে, একজন এশিয়ান নোবেল বিজয়ী বিবেচনা করে। একজন ধর্মপ্রচারকের কন্যা হিসেবে চীনে উল্লেখ্যযোগ্য সময় কাটিয়েছেন, এবং তার উপন্যাস, যথা দ্য গুড আর্থ (১৯৩১) এবং মাদার (১৯৩৩) এছাড়াও তার বাবা-মার চীনে থাকাকালীন সময়ের জীবনী, দ্য এক্সসাইল ও ফাইটিং এঞ্জেল চীন প্রবাসের উপ ভিত্তি করে লেখা, যা তাকে ১৯৩৮ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার এনে দেয়। এছাড়াও, ভারতের মাদার টেরিজা এবং ইরানের শিরিন এবাদি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য তাদের উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের অধিকারের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এবাদি প্রথম ইরানি এবং প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত। আরেকজন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মায়ানমারে অং সান সু চি সামরিক একনায়কতন্ত্র বিরুদ্ধে তার শান্তিপূর্ণ ও অহিংস সংগ্রামের জন্য। তিনি একজন অহিংস গণতন্ত্রপন্থী কর্মী, ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমক্রেসি ইন বার্মা-এর নেতা এবং একজন উল্লেখ্যযোগ্য কারাবন্দী। তিনি একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। অতি সম্প্রতি, চীনা ভিন্নমতাবলম্বী লিউ জিয়াবো নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন, চীনে মৌলিক মানবাধিকারের জন্য তার দীর্ঘ ও অহিংস সংগ্রামের জন্য। তিনি চীন মধ্যে বসবাস করার সময় নোবেল পুরস্কার লাভকারী প্রথম চীনা নাগরিক। স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া প্রথম এশীয়। তিনি "আলোর বিক্ষিপ্ততার উপর তাঁর কাজের জন্য এবং রামন বিক্ষিপ্ততার আবিষ্কারের জন্য, (যা তাঁর নিজের নামে নামকরণ করা হয়)" পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। অমর্ত্য সেন, (জন্ম ৩ নভেম্বর, ১৯৩৩) একজন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ, যিনি কল্যাণ অর্থনীতি ও সামাজিক পছন্দ তত্ত্বে তার অবদানসমূহের জন্য অর্থনীতিতে ১৯৯৮ সালে নোবেল স্মারক পুরস্কার লাভ করেন। তার আগ্রহের বিষয়বস্তু সমাজের দরিদ্রতম সদস্যদের সমস্যা। অন্যান্য এশীয় নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছে সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর, আবদুস সালাম, রবার্ট আউমান, মেনাসেম বেগিন, এ্যারন চিচানোভার, আভরাম হেরর্সকো, ড্যানিয়েল কাহনেমান, শিমন পেরেজ, ইতযাক রাবিন, এডা ইয়োনাথ, ইয়াসির আরাফাত, হোজে র‍্যামন-হোর্তা, পূর্ব তিমুরের বিশপ কার্লোস ফিলিপ জিমেনেস বেলো, কিম দায়ে জং, এবং আরোও ১৩ জাপানি বিজ্ঞানী। বেশিরভাগ পুরস্কারপ্রাপ্ত জাপান এবং ইসরাইল থেকে, চন্দ্রশেখর ও রামন (ভারত), সালাম (পাকিস্তান), আরাফাত (ফিলিস্তিন), কিম (দক্ষিণ কোরিয়া), হোর্তা ও বেলো (পূর্ব তিমুর)। ব্যতীত। ২০০৬ সালে, বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক, যা একটি গোষ্ঠী উন্নয়ন ব্যাংক, (যা দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে বাংলাদেশের মহিলাদের টাকা ধার দেয়) প্রতিষ্ঠার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। ডঃ ইউনুস শহরের ভ্যান্দারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষুদ্র ঋণ ধারণার জন্য পরিচিত, যার মাধ্যমে সামান্য অথবা কোন সমান্তরালের সঙ্গে দরিদ্র ও নিঃস্ব লোক টাকা ধার করতে পারবে। সাধারণত ঋণগ্রহীতারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দেয় এবং ঋণ খেলাপের হার খুব কম। দালাই লামা তার আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক কর্মজীবনে প্রায় চুরাশিটি পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৬ সালের ২২ জুন, তিনি কানাডার গভর্নর জেনারেল কর্তৃক কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব লাভ করেন, যা তার আগে মাত্র তিন জন লাভ করে। ২০০৫ সালের ২৮ মে, তিনি যুক্তরাজ্যের বৌদ্ধ সোসাইটি থেকে ক্রিসমাস হামফ্রে পুরস্কার পান। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৮৯ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ। রাজনৈতিক সীমা আরও দেখুন বিশেষ বিষয়: এশিয়ান গেমস এশীয় রন্ধনশৈলী ইউরেশিয়া দূরপ্রাচ্য পূর্ব এশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া দক্ষিণ এশিয়া মধ্য এশিয়া পশ্চিম এশিয়া উত্তর এশিয়া এশিয়ার পতাকা মধ্যপ্রাচ্য লেভ্যান্ট নিকট প্রাচ্য তালিকা: এশিয়ার সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের তালিকা এশিয়ার মহানগর এলাকার তালিকা এশিয়ার শহরের তালিকা প্রকল্প আন্তঃএশিয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি আরও পড়ুন Higham, Charles. Encyclopedia of Ancient Asian Civilizations. Facts on File library of world history. New York: Facts On File, 2004. Kamal, Niraj. "Arise Asia: Respond to White Peril". New Delhi:Wordsmith,2002, Kapadia, Feroz, and Mandira Mukherjee. Encyclopaedia of Asian Culture and Society. New Delhi: Anmol Publications, 1999. Levinson, David, and Karen Christensen. Encyclopedia of Modern Asia. New York: Charles Scribner's Sons, 2002. বহিঃসংযোগ মহাদেশ
https://en.wikipedia.org/wiki/Asia
Asia
Asia ( AY-zhə, UK also AY-shə) is the largest continent in the world by both land area and population. It covers an area of more than 44 million square kilometers, about 30% of Earth's total land area and 8% of Earth's total surface area. The continent, which has long been home to the majority of the human population, was the site of many of the first civilizations. Its 4.7 billion people constitute roughly 60% of the world's population. Asia shares the landmass of Eurasia with Europe, and of Afro-Eurasia with both Europe and Africa. In general terms, it is bounded on the east by the Pacific Ocean, on the south by the Indian Ocean, and on the north by the Arctic Ocean. The border of Asia with Europe is a historical and cultural construct, as there is no clear physical and geographical separation between them. A commonly accepted division places Asia to the east of the Suez Canal separating it from Africa; and to the east of the Turkish straits, the Ural Mountains and Ural River, and to the south of the Caucasus Mountains and the Caspian and Black seas, separating it from Europe. Since the concept of Asia derives from the term for the eastern region from a European perspective, Asia is the remaining vast area of Eurasia minus Europe. Thefore, Asia is a region where various independent cultures coexist rather than sharing a single culture, and the boundary between Europe is somewhat arbitrary and has moved since its first conception in classical antiquity. The division of Eurasia into two continents reflects East–West cultural differences, some of which vary on a spectrum. China and India traded places as the largest economies in the world from 1 to 1800 CE. China was a major economic power for much of recorded history, with the highest GDP per capita until 1500. The Silk Road became the main east–west trading route in the Asian hinterlands while the Straits of Malacca stood as a major sea route. Asia has exhibited economic dynamism as well as robust population growth during the 20th century, but overall population growth has since fallen. Asia was the birthplace of most of the world's mainstream religions including Hinduism, Zoroastrianism, Judaism, Jainism, Buddhism, Confucianism, Taoism, Christianity, Islam, Sikhism, and many other religions. Asia varies greatly across and within its regions with regard to ethnic groups, cultures, environments, economics, historical ties, and government systems. It also has a mix of many different climates ranging from the equatorial south via the hot deserts in parts of West Asia, Central Asia and South Asia, temperate areas in the east and the continental centre to vast subarctic and polar areas in North Asia.
1109
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%AA
ইউরোপ
ইউরোপ একটি মহাদেশ যা বৃহত্তর ইউরেশিয়া মহাদেশীয় ভূখণ্ডের পশ্চিমের উপদ্বীপটি নিয়ে গঠিত। সাধারণভাবে ইউরাল ও ককেশাস পর্বতমালা, ইউরাল নদী, কাস্পিয়ান এবং কৃষ্ণ সাগর-এর জলবিভাজিকা এবং কৃষ্ণ ও এজিয়ান সাগর সংযোগকারী জলপথ ইউরোপকে এশিয়া মহাদেশ থেকে পৃথক করেছে। ইউরোপের উত্তরে উত্তর মহাসাগর, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর এবং দক্ষিণ-পূর্বে কৃষ্ণ সাগর ও সংযুক্ত জলপথ রয়েছে। যদিও ইউরোপের সীমানার ধারণা ধ্রুপদী সভ্যতায় পাওয়া যায়, তা বিধিবহির্ভূত; যেহেতু প্রাথমিকভাবে ভূ-প্রাকৃতিক শব্দ "মহাদেশ"-এ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উপাদান অন্তর্ভুক্ত। ইউরোপ ভূপৃষ্ঠের দ্বারা বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ; বা ভূপৃষ্ঠের ২% এবং তার স্থলভাগের ৬.৮% জুড়ে রয়েছে। ইউরোপের প্রায় ৫০টি দেশের মধ্যে, রাশিয়া মহাদেশের মোট আয়তনের ৪০% ভাগ নিয়ে এ পর্যন্ত আয়তন এবং জনসংখ্যা উভয়দিক থেকেই বৃহত্তম, অন্যদিকে ভ্যাটিকান সিটি আয়তনে ক্ষুদ্রতম। ৭৩৯–৭৪৩ মিলিয়ন জনসংখ্যা বা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১% নিয়ে ইউরোপ এশিয়া এবং আফ্রিকার তৃতীয় সবচেয়ে জনবহুল মহাদেশ। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মুদ্রা ইউরো। ইউরোপ, বিশেষ করে প্রাচীন গ্রিস, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির জন্মস্থান। এটি ১৫ শতকের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে উপনিবেশবাদ শুরু হবার পর থেকে। ১৬ থেকে ২০ শতকের মধ্যে, ইউরোপীয় দেশগুলির বিভিন্ন সময়ে আমেরিকা, অধিকাংশ আফ্রিকা, ওশেনিয়া, এবং অপ্রতিরোধ্যভাবে অধিকাংশ এশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। শিল্প বিপ্লব, যা ১৮ শতকের শেষেভাগে গ্রেট ব্রিটেনে শুরু হয়, পশ্চিম ইউরোপ এবং অবশেষে বৃহত্তর বিশ্বে আমূল অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এবং সামাজিক পরিবর্তন আনে। জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বৃদ্ধি বোঝায়, ১৯০০ সাল দ্বারা, বিশ্বের জনসংখ্যায় ইউরোপের ভাগ ২৫% ছিল। উভয় বিশ্বযুদ্ধ মূলত ইউরোপকে কেন্দ্র করে হয়, যার ফলে মধ্য ২০ শতকে বৈশ্বিক বিষয়াবলীতে পশ্চিম ইউরোপের আধিপত্যের অবসান ঘটে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের প্রাধান্য বিস্তার করে। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে, ইউরোপ লৌহ পরদা বরাবর পশ্চিমে ন্যাটো ও পূর্বে ওয়ারশ চুক্তি দ্বারা বিভক্ত ছিল। কাউন্সিল অব ইউরোপ এবং পশ্চিম ইউরোপে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউরোপীয় একীকরণে ফলে গঠিত হয়, ১৯৮৯ সালের বিপ্লব ও ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে উভয় সংগঠন পূর্বদিকে বিস্তৃত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আজকাল তার সদস্য দেশগুলোর উপর ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার করছে। অনেক ইউরোপীয় দেশ নিজেদের মাঝে সীমানা এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত করে। সংজ্ঞা ইউরোপের ক্লিকযুক্ত মানচিত্র, সবচেয়ে সাধারণভাবে ব্যবহৃত মহাদেশীয় সীমানা দেখাচ্ছে চাবি: নীল: পার্শ্ববর্তী আন্তর্মহাদেশীয় রাষ্ট্র; সবুজ: রাষ্ট্রগুলো ভৌগোলিকভাবে ইউরোপে নয়, কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত "ইউরোপ" শব্দটির ব্যবহার ইতিহাস জুড়ে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। প্রাচীনকালে, গ্রিক ঐতিহাসিক হিরোডোটাস উল্লেখ করে যে, অজানা ব্যক্তি দ্বারা বিশ্বকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, ইউরোপ, এশিয়া, এবং লিবিয়া (আফ্রিকা), নীল নদ এবং ফাসিস নদী তাদের সীমানা গঠন করে —যদিও তিনি আরোও উল্লেখ করেন যে, অনেকে ফাসিসের বদলে ডন নদীকে ইউরোপ ও এশিয়ার সীমানা হিসেবে মনে করে থাকে। ১ম শতকের ভূগোলবিদ স্ট্রাবো দ্বারা ডন নদীতে ইউরোপের পূর্ব সীমান্ত বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়। জুবিলিয়ম বইয়ে বর্ণিত যে, নূহ জমি হিসেবে মহাদেশগুলো তার তিন পুত্রকে দান করেন; ইউরোপ জিব্রাল্টার প্রণালীতে হারকিউলিসের স্তম্ভ পর্যন্ত প্রসারিত, উত্তর আফ্রিকা থেকে বিচ্ছিন্ন, ডনে এশিয়া থেকে পৃথক হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ৮ম শতাব্দীতে সমবেত লাতিন খ্রীষ্টানের দেশ হিসাবে ইউরোপের একটি সাংস্কৃতিক সংজ্ঞা, নতুন সাংস্কৃতিক ধারণার বোধক, যা জার্মানিক ঐতিহ্যের সঙ্গমস্থল এবং খ্রিস্টান-লাতিন সংস্কৃতির মাধ্যমে তৈরি এবং বাইজ্যান্টাইন ও ইসলামের আংশিক মিশ্রণে সঙ্গায়িত। এবং এই সংস্কৃতি, উত্তর আইবেরিয়া, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, ফ্রান্স, খ্রিষ্টীয় পশ্চিম জার্মানি, আলপাইন অঞ্চল এবং উত্তর ও মধ্য ইতালিতে সীমাবদ্ধ। এই ধারণা ক্যারোলিং রেনেসাঁসের অন্যতম স্থায়ী নিদর্শন: প্রায়ই শার্লেমনের দরবারের পণ্ডিত, আলচুইনের চিঠির চরিত্র ইউরোপা। এই বিভাগ—যতটা সাংস্কৃতিক ততটাই ভৌগোলিক—মধ্য যুগের শেষভাগের আগ পর্যন্ত, যখন এটা আবিষ্কারের যুগ দ্বারা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। অবশেষে ১৭৩০ সালে ইউরোপ পুনঃনির্ধারণের সমস্যা সমাধান হয়েছে, যখন জলপথ পরিবর্তে, সুইডীয় ভূগোলবিদ এবং মানচিত্রকার ভন স্ট্রাহ্লেনবেরগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব সীমানা হিসেবে ইউরাল পর্বতমালা প্রস্তাবিত করেন, যা রাশিয়া এবং পুরো ইউরোপ সমর্থন করে। ইউরোপ এখন ইউরেশিয়ার পশ্চিম উপদ্বীপ বলে সাধারণত ভূগোলবিদ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণে বড় জল সংস্থা দ্বারা তার সীমানা চিহ্নিত; দূর পূর্বে ইউরোপের সীমা সাধারণত ইউরাল পর্বত, ইউরাল নদী, এবং কাস্পিয়ান সাগর; দক্ষিণপূর্বে ককেশাস পর্বতমালা, কৃষ্ণ সাগর এবং ভূমধ্য সাগরের সাথে সংযোগকারী কৃষ্ণ সাগরের জলপথ। দ্বীপপুঞ্জগুলো সাধারণত সবচেয়ে কাছের মহাদেশীয় ভূখণ্ডের সঙ্গে দলবদ্ধ করা হয়, অতএব আইসল্যান্ড সাধারণত ইউরোপের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, অন্যদিকে এর কাছাকাছি দ্বীপ সময় গ্রিনল্যান্ড সাধারণত উত্তর আমেরিকায় বরাদ্দ করা হয়। যাইহোক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে কিছু ব্যতিক্রম আছে। সাইপ্রাস, আনাতোলিয়ার (বা এশিয়া মাইনর) নিকটস্থ, কিন্তু সাধারণত সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিকভাবে ইউরোপের অংশ বলে মনে করা হয় এবং বর্তমানে ইইউ-এর সদস্য রাষ্ট্র। মাল্টা শতাব্দী ধরে উত্তর আফ্রিকার একটি দ্বীপ বলে মনে করা হয়। ১৭৩০ সালে টানা ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে ভৌগোলিক সীমানা কোন আন্তর্জাতিক সীমারেখা অনুসরণ করেনি। এর ফলে, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক রেখায় ইউরোপকে সংগঠিত করার প্রচেষ্টায় ভূরাজনৈতিকভাবে এর নাম ব্যবহার উপায় সীমিত ভাবে শুধুমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি সদস্য রাষ্ট্রকে বোঝায়, বা আরোও বেশি একচেটিয়াভাবে, একটি সাংস্কৃতিক সংজ্ঞায়িত মূল হিসাবে। বিপরীতভাবে, ৪৭টি সদস্য রাষ্ট্রের কাউন্সিল অব ইউরোপ দ্বারা ইউরোপ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যার কিছু দেশ ইউরাল ও বসফরাস রেখা পার হয়ে যায়, সমস্ত সাইবেরিয়া এবং তুরস্ক এর অন্তর্ভুক্ত। উপরন্তু, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের মানুষ "মহাদেশীয়" বা "মূল ভূখণ্ড" ইউরোপকে ইউরোপ বলে বুঝিয়ে থাকে। ব্যুৎপত্তি প্রাচীন গ্রিক পুরাণে, ইউরোপা একটি ফিনিশীয় রাজকুমারী ছিল যাকে জিউস একটি উজ্জ্বল আকারের সাদা ষাঁড় মনে করে অপহরণ করে। তিনি তাকে ক্রীট দ্বীপে নিয়ে যান যেখানে তিনি মিনস, রাদামান্থুস, ও সার্পেদনের জন্ম দেন। হোমারের জন্য, ইউরোপ (, ce names]]) ক্রীটের পৌরাণিক রাণী, একটি ভৌগোলিক স্থান না। ইউরোপের ব্যুৎপত্তি নিশ্চিত নয়। একটি মতবাদ মনে করে এটি গ্রিক εὐρύς (eurus) থেকে এসেছে, যার অর্থ "ব্যাপক, বিস্তৃত" এবং ὤψ/ὠπ-/ὀπτ- (ōps/ōp-/opt-), যার অর্থ "চোখ, মুখ, মুখায়ব", সেহেতু , "প্রশস্ত দৃষ্টি", "বিস্তৃত মুখায়ব" (glaukōpis (γλαυκῶπις 'ধূসর নয়না') আথেনা বা boōpis (βοὠπις 'ষাঁড় নয়না') হেরার তুলনায়)। প্রশস্ত পুনর্নির্মিত প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ধর্মে পৃথিবী নিজেরই একটি বর্ণনামূলক আখ্যান উল্লেখ আছে। আরেকটি মতবাদ মনে করে যে এটি একটি সেমিটিক শব্দের উপর ভিত্তি করে উৎপত্তি যেমন আক্কাদীয় erebu যার অর্থ "নিচে যাওয়া, অস্ত" (সূর্য প্রসঙ্গে), ফিনিশীয় থেকে কগনাট 'ereb "সন্ধ্যা; পশ্চিম" এবং আরবি মাগরেব, হিব্রু ma'arav (আরোও দেখুন পিআইই *h1regʷos, "অন্ধকার")। তবে, মার্টিন লিচফিল্ড ওয়েস্ট বলেন "শব্দবিদ্যাগতভাবে, ইউরোপার নাম এবং যে কোনো আকারের সেমিটিক শব্দের মধ্যের মিল খুব খারাপ"। পৌরাণিক চরিত্রের নামের উৎপত্তি যাই হোক না কেন, Εὐρώπη সর্ব প্রথম খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে ভৌগোলিক শব্দ হিসাবে ব্যবহার করা হয় গ্রিক ভূগোলবিদ দ্বারা, আনাক্সিমান্দ্রোস এবং হেক্তায়েস। আনাক্সিমান্দ্রোস এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সীমানা স্থাপন করেন ককেশাসের ফাসিস নদী বরাবর (আধুনিক রাইওনি), একটি প্রচল যা খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে হেরোডোটাস দ্বারা অনুসৃত হয়। এই প্রচল মধ্যযুগ দ্বারা গৃহীত এবং আধুনিক ব্যবহারে রোমান যুগ পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো, কিন্তু সে যুগের লেখকগণ যেমন পসেদনিয়াস, স্ট্রাবো এবং টলেমি, টানাইসকে (আধুনিক ডন নদী) সীমানা হিসেবে গ্রহণ করেন। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে "ইউরোপ" শব্দটি প্রথম ৯ম শতাব্দীর ক্যারোলিং রেনেসাঁসয় ব্যবহার করা হয়। সে সময় থেকে, শব্দটি গোলকে পশ্চিম চার্চের প্রভাব বুঝাতে ব্যবহৃত, যার বিপরীতে উভয় ইস্টার্ন অর্থডক্স গির্জা এবং ইসলামী বিশ্ব রয়েছে। আধুনিক রীতি ১৯ শতকে "ইউরোপ"-এর আয়তন বাড়ায় কিছুটা পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে। বিশ্বের অধিকাংশ প্রধান ভাষাসমূহে "ইউরোপা" উৎদ্ভুত শব্দ "মহাদেশ" (উপদ্বীপ) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, চীনায়, (歐洲) শব্দটি ব্যবহার করে; একটি অনুরূপ চীনা-প্রাপ্ত শব্দ কখনও কখনও জাপানিজে ব্যবহার করা হয যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের জাপানি নাম, , তা সত্ত্বেও কানাকাতা আরো সাধারণভাবে ব্যবহৃত। যদিও, কিছু তুর্কি ভাষায় মূলত ফার্সি নাম ফ্রাঙ্গিস্তান (ফ্র্যাঙ্কসের দেশ) সাধারণভাবে ইউরোপ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, এছাড়াও কিছু দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে, যেমন আভরুপা বা ইভরোপা। ইতিহাস প্রাগৈতিহাসিক হোমো জর্জিকাস, যারা প্রায় ১৮ লক্ষ বছর আগে জর্জিয়ায় বাস করত, ইউরোপ আবিষ্কৃত হওয়া নিকটতম হোমিনিড। অন্যান্য হোমিনিডের অবশেষ, প্রায় ১০ লক্ষ বছর আগের, আতাপুয়ের্কা, স্পেনে আবিষ্কৃত হয়েছে। নিয়ানডার্থাল মানুষ (যা জার্মানির নিয়ানডার্থাল উপত্যকার নামে নামাঙ্কিত) দেড় লক্ষ বছর আগে ইউরোপে খোঁজ পাওয়া যায় এবং প্রায় ২৮,০০০ খ্রিষ্টপূর্বে জীবাশ্ম রেকর্ড থেকে হারিয়ে যায়, সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই বিলুপ্তি ঘটে, এবং তাদের চূড়ান্ত আশ্রয় ছিলো বর্তমান পর্তুগাল। নিয়ানডার্থাল প্রাক্মানব আধুনিক মানুষ (ক্রো-ম্যাগনন্স) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, যাদের ৪৩ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে ইউরোপে খোঁজ পাওয়া যায়। ইউরোপীয় নবপ্রস্তরযুগের সময়কাল—ফসল চাষ এবং পশু পালন, জনবসতির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মৃৎশিল্পের ব্যাপক ব্যবহার দ্বারা উল্লেখযোগ্য—গ্রিস ও বলকানে প্রায় ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বে শুরু হয়, সম্ভবত আনাতোলিয়া এবং নিকট প্রাচ্যে আগের চাষ চর্চা দ্বারা প্রভাবিত। এটা বলকান থেকে দানিউব এবং রাইনের উপত্যকার বরাবর (লিনিয়ার মৃৎশিল্পের সংস্কৃতি) এবং ভূমধ্য উপকূল বরাবর (কার্ডিয়াল সংস্কৃতি) ছড়িয়ে পড়ে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০০ থেকে ৩০০০-এর মধ্যে, এই কেন্দ্রীয় ইউরোপীয় নবপ্রস্তরযুগের সংস্কৃতি আরোও পশ্চিম ও উত্তরে বিকশিত হয় এবং সদ্য অর্জিত তামা শিল্পকর্ম উৎপাদনের দক্ষতা ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিম ইউরোপের নবপ্রস্তর যুগ বৃহৎ কৃষি জনবসতি ছাড়াও ক্ষেত্র সৌধ, যেমন মাটির পরিবেষ্টন, কবরের ঢিবি ও মেগালিথিক সমাধি দ্বারা চিহ্নিত। তন্ত্রীযুক্ত সংস্কৃতি নবপ্রস্তর যুগ থেকে তাম্র যুগে রূপান্তরের সময়ে বিকশিত হয়। এই সময়কালে পশ্চিম এবং দক্ষিণ ইউরোপ জুড়ে বড় মেগালিথিক সৌধ নির্মাণ হয়, যেমন মাল্টার মেগালিথিক মন্দির এবং স্টোনহেঞ্জ। খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০-এ গ্রিসে ইউরোপীয় ব্রোঞ্জ যুগ শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১২০০-এ ইউরোপীয় লৌহযুগ শুরু হয়। লৌহযুগে গ্রিকরা উপনিবেশ স্থাপন করে এবং ফিনিশীয়রা শুরুর দিকের ভূমধ্য শহরগুলো স্থাপন করে। খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে প্রারম্ভিক লৌহযুগের ইতালি ও গ্রিস ধীরে ধীরে ধ্রুপদি সভ্যতায় পদার্পণ করে। ধ্রুপদি সভ্যতা প্রাচীন গ্রিস পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা সংস্কৃতি ছিল। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ও ব্যক্তিত্ববাদী সংস্কৃতির জন্য প্রায়ই প্রাচীন গ্রিসকে দায়ী করা হয়। গ্রিসরা পোলিস, বা শহর-রাজ্য উদ্ভাবন করে, যা তাদের পরিচয়ের ধারণায় একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে। এই গ্রিক রাজনৈতিক আদর্শ ১৮ শতাব্দীর শেষভাগে ইউরোপীয় দার্শনিক এবং আদর্শবাদী দ্বারা পুনরাবিষ্কৃত হয়। গ্রিসের অনেক সাংস্কৃতিক অবদান ছিলো: এরিস্টটল, সক্রেটিস এবং প্লেটোর অধীনে দর্শন, মানবতাবাদ এবং যুক্তিবাদে; হিরোডোটাস এবং থুসিডাইডিসের সাথে ইতিহাসে; নাটকীয় এবং আখ্যান আয়াতে, হোমারের মহাকাব্য কবিতা দিয়ে শুরু করে; সফোক্লিস এবং ইউরিপিডিসের সাথে নাটক, চিকিৎসায় হিপোক্রেটিস এবং গ্যালেন; এবং বিজ্ঞানে পিথাগোরাস, আর্কিমিডিস এবং ইউক্লিড। আরেকটি প্রধান প্রভাব রোমান সাম্রাজ্য থেকে ইউরোপে এসে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে প্রভাবিত করে, যা পাশ্চাত্য সভ্যতায় তার চিহ্ন রেখে যায় আইন, রাজনীতি, ভাষা, প্রকৌশল, স্থাপত্য, সরকার এবং আরো অনেক দিকে। প্যাক্স রোমানার সময়, রোমান সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ ভূমধ্যসাগরীয় অববাহিকা এবং ইউরোপের অনেক অংশ পরিবেষ্টন করে। রোমান সম্রাটদের বৈরাগ্য পেত যেমন হাদ্রিয়ান, এন্তোনিনুস পিউস, ও মার্কাস উরেলাস, যারা জার্মানিক, পিক্তিস ও স্কটিশ গোষ্ঠীর যুদ্ধে সাম্রাজ্যের উত্তর সীমান্তে সব সময় অতিবাহিত করত। খ্রিষ্ট ধর্মকে প্রথম কনস্টান্টটাইন বৈধতা দেন তিন শতাব্দীর নির্যাতনের পরে। প্রারম্ভিক মধ্যযুগ রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সময়, "স্থানান্তরণের যুগের" কারণে ইউরোপ দীর্ঘকালব্যাপী পরিবর্তনের মধ্যে অতিবাহিত হয়। বিভিন্ন জাতি যেমন অস্ট্রোগথ, ভিজিগথ, গথ, ভ্যান্ডাল, হুন, ফ্রাঙ্ক, এঙ্গেল, স্যাক্সন, স্লাভ, আভার, বুলগার এবং, পরে, ভাইকিং, পেচেনেগ, চুমান ও মাগিয়ার-এর মধ্যে অসংখ্য আক্রমণ, অধিবাসন ঘটে থাকে। পেত্রারকের মত রেনেসাঁস চিন্তাবিদ পরে একে "অন্ধকার যুগ" বলে অভিহিত করে। পূর্বে বিচ্ছিন্ন যাজককেন্দ্রিক সম্প্রদায়ই লিখিত জ্ঞান সঙ্কলন ও সংরক্ষণ করার একমাত্র জায়গা ছিল; এর বাদে খুব কম লিখিত নথির খোঁজ পাওয়া যায়। ধ্রুপদী সভ্যতার আরো অনেক সাহিত্য, দর্শন, গণিত, ও অন্যান্য জ্ঞান পশ্চিম ইউরোপ থেকে হারিয়ে যায়, যদিও তা পূর্বে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে সংরক্ষিত করা হয়েছিলো। ৭ম শতাব্দী থেকে, মুসলিম আরব ঐতিহাসিকভাবে রোমান অঞ্চলের উপর অগ্রসর হওয়া শুরু করে। পরবর্তী শতাব্দী ধরে মুসলিম বাহিনী সাইপ্রাস, মাল্টা, ক্রীট, সিসিলি এবং দক্ষিণ ইতালি কিছু অংশ অধিকার করে নেয়। প্রাচ্যে, ভলগা বুলগেরিয়া ১০ম শতকের মধ্যে একটি ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে ওঠে। ৭১১ থেকে ৭২০ সালের মধ্যে, আইবেরিয়ান উপদ্বীপ মুসলিম শাসনাধীনে আনা হয় — উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের (আস্তুরিয়াস) এবং মূলত পিরেনের বাস্ক অঞ্চল। এই অঞ্চল, আরবি নাম আল-আন্দালুস নামে বিস্তৃত উমাইয়া সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে। অসফল কনস্ট্যান্টিনোপোলের দ্বিতীয় অবরোধ (৭১৭) উমাইয়া বংশকে দুর্বল করে এবং তাদের প্রতিপত্তি কমে যায়। তারপর ৭৩২ সালে ফ্রাঙ্কিস নেতা চার্লস মার্টেল পায্টৈযর্স যুদ্ধে উমাইয়াদের পরাজিত করে, যারফলে তাদের উত্তরাভিমুখে অগ্রযাত্রার সমাপ্তি ঘটে। অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে, পশ্চিমা রোমান সাম্রাজ্য বিভিন্ন গোত্রদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। জার্মানিক এবং স্লাভ গোত্ররা যথাক্রমে পশ্চিম এবং পূর্ব ইউরাপের উপর তাদের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। অবশেষে প্রথম ক্লোভিসের অধীনে ফ্রাঙ্কিস গোত্র ঐক্যবদ্ধ হয়। ক্যারোলিঞ্জিয়ান রাজবংশের ফ্রাঙ্কিস রাজা শার্লেমেন, যে অধিকাংশ পশ্চিম ইউরোপ জয় করে, ৮০০ সালে পোপ দ্বারা "পবিত্র রোমান সম্রাট" নামে অভিষিক্ত করা হয়। এর ফলেই ৯৬২ সালে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়, যা শেষ পর্যন্ত মধ্য ইউরোপের জার্মান প্রিন্সিপালিটি কেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। পূর্ব মধ্য ইউরোপে স্লাভিক রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয় এবং খ্রিস্ট ধর্ম গৃহীত হয় (১০০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ)। গ্রেট মোরাভিয়ার শক্তিশালী পশ্চিম স্লাভিক রাষ্ট্র দক্ষিণে বলকান স্লাভ পর্যন্ত তার সীমানা বৃদ্ধি করে। প্রথম ভাতপ্লুকের অধীনে মোরাভিয়া তার বৃহত্তম আঞ্চলিক ব্যাপ্তি পৌঁছে এবং পূর্ব ফ্রান্সিয়ার সাথে ধারাবাহিক সশস্ত্র দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিলো। আরোও দক্ষিণে, ফ্রাঙ্কিস সাম্রাজ্য এবং the বাইজেন্টাইনের মধ্যে অবস্থিত, প্রথম দক্ষিণ স্লাভিক রাজ্য ৭ম এবং ৮ম শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়: প্রথম বুলগেরীয় সাম্রাজ্য, সার্বীয় প্রিন্সিপালিটি (পরে রাজ্য এবং সাম্রাজ্য) এবং ক্রোয়েশিয়ার ডাচি (পরে ক্রোয়েশিয়া রাজ্য)। আরোও পূর্বে, কিয়েভান রুস তার রাজধানী প্রসারিত করে কিয়েভ পর্যন্ত, ১০ম শতাব্দীর মধ্যে ইউরোপের বৃহত্তম রাষ্ট্র হয়। ৯৮৮ সালে, গ্রেট ভ্লাদিমির রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে অর্থোডক্স খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে। গ্রিক ভাষী অধ্যুষিত পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য পশ্চিমে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। এর রাজধানী ছিলো কনস্টান্টিনোপল। সম্রাট প্রথম জুথিনিয়ান কনস্টান্টিনোপললের প্রথম স্বর্ণযুগে শাসন করেন: তিনি আইনগত নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেন, হাজিয়া সোফিয়া নির্মাণ তহবিল দেন এবং রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের অধীনে খ্রিস্ট গির্জা আনেন। বেশিরভাগ সময়ের জন্য, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এবং সামরিক বাহিনী ছিল। ১২০৪ সালে কনস্ট্যান্টিনোপোলের ধ্বংসসাধনে মারাত্মকভাবে দুর্বল, চতুর্থ ক্রুসেডের সময়, উসমানীয় সাম্রাজ্যের হাতে বাইজেন্টাইনের ১৪৫৩ সালে পতন ঘটে। মধ্যযুগ ইউরোপের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ইতিহাস প্রায় ১০০০ বছরের। মূল ভূখণ্ডে বাণিজ্যপথের নিরাপত্তার অভাবে ভূমধ্যসাগরের উপকূল বরাবর প্রধান বাণিজ্যপথ গড়ে উঠে। এই প্রসঙ্গে, কিছু উপকূলীয় শহরের অর্জিত ক্রমবর্ধমান স্বাধীনতা সামুদ্রিক প্রজাতন্ত্রকে ইউরোপীয় অঙ্গনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা এনে দিয়েছিলো। মধ্যযুগে ইউরোপেরর সামাজিক কাঠামো উপরের দুইটি স্তর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে: আভিজাত্য এবং পাদরীবর্গ। প্রারম্ভিক মধ্য যুগে ফ্রান্সে সামন্ততন্ত্র বিকশিত হয় এবং শীঘ্রই ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আভিজাত্য ও রাজতন্ত্রের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ম্যাগনা কার্টা লেখা এবং সংসদ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিলো। ঐ সময়কালে সংস্কৃতির প্রধান উৎস ছিলো রোমান ক্যাথলিক চার্চ মঠ ও ক্যাথেড্রাল স্কুলের মাধ্যমে, চার্চ বেশিরভাগ ইউরোপের শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে। ভরা মধ্যযুগে পোপের শাসন ক্ষমতার শিখরে পৌঁছে। ১০৫৪ সালে পূর্ব পশ্চিম বিভেদ সাবেক রোমান সাম্রাজ্যকে ধর্মীয় দিক দিয়ে বিভক্ত করে, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পূর্বের রক্ষণশীল চার্চ এবং প্রাক্তন পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে রোমান ক্যাথলিক চার্চ। ১০৯৫ সালে পোপ দ্বিতীয় আরবান মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধের ডাক দেয় জেরুসালেম ও পবিত্র ভূমি দখল করে রাখার জন্য। ইউরোপে চার্চের নিজেই ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তদন্তের আয়োজন করে। আইবেরিয় উপদ্বীপে সাত শতাব্দীর ইসলামী শাসন সমাপ্তি ঘটিয়ে ১৪৯২ সালে স্পেনে গ্রানাডা পতনের মাধ্যমে রিকনকুইসতার অবসিত হয়। ১১ ও ১২ শতাব্দীতে, যাযাবর তুর্কি উপজাতিদের দ্বারা অবিরত আক্রমণের ফলে, যেমন পেচেনেগ ও চুমান-কিপচাকে, উত্তরে নিরাপদ বনাঞ্চলে স্লাভিক জনসংখ্যার ব্যাপক অধিবাসন ঘটে। যার ফলে সাময়িকভাবে রুস' রাষ্ট্রের দক্ষিণ থেকে পূর্বে সম্প্রসারণ থেমে যায়। ইউরেশিয়ার অন্যান্য অনেক অংশের মতো, এই অঞ্চলও মঙ্গোল দ্বারা শাসিত হয়েছে। তাতার হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে আগ্রাসকরা বেশিরভাগই তুর্কি-ভাষী মঙ্গোল শাসনের অধীনে ছিলো। তারা ক্রিমিয়ায় রাজধানী স্থাপন করে গোল্ডেন হর্দে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে, পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আধুনিক দক্ষিণ ও মধ্য রাশিয়ায় তিন শতাব্দী বেশি সময় ধরে শাসন করেন। মঙ্গোল রাজত্ব পতনের পর, ১৪ শতাব্দীতে প্রথমে রোমানিয়ান রাজ্যগুলো উঠে আসে: মলদোভা এবং ওয়ালাচিয়া। পূর্বে, এই অঞ্চলগুলো পেচেনেগ এবং চুমানের অধীনে ছিলো। ১২ থেকে ১৫ শতাব্দীতে, মঙ্গোল শাসনের অধীনে মস্কোর গ্র্যান্ড ডিউকের জমিদারি ক্ষুদ্র রাজ্য থেকে ইউরোপের বৃহত্তম রাষ্ট্রে পরিণত হয়, ১৪৮০ সালে মঙ্গোল উৎখাত করে। পরবর্তীতে তারাই রাশিয়ার জার বংশে হয়ে উঠে। মহান তৃতীয় ইভান ও ভয়ানক ইভানের অধীনে দেশটি একত্রীত হয়, পরবর্তীতে শতকের পর শতক ধরে অটলভাবে পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত হয়। মধ্যযুগের শেষভাগে ইউরোপে আঘাত হানা প্রথম সংকট ছিলো ১৩১৫-১৩১৭ সালের মহাদুর্ভিক্ষ। ১৩৪৮ থেকে ১৪২০ সাল সময়কালে সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি হয়। ফ্রান্সের জনসংখ্যা অর্ধেকে পরিণত হয়। মধ্যযুগীয় ব্রিটেন ৯৫টি দুর্ভিক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হয়, এবং ফ্রান্সও একই সময়ের মধ্যে ৭৫টি বা তার বেশি দ্বারা আক্রান্ত হয়। মধ্য-১৪ শতাব্দীতে কালো মৃত্যুর কারণে ইউরোপ বিধ্বস্ত হয়, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক মহামারীর একটি, যার ফলে শুধুমাত্র ইউরোপের আনুমানিক আড়াই কোটি মানুষ মারা যায়—সে সময়ে তা ইউরোপীয় জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। প্লেগ ইউরোপের সামাজিক কাঠামোর উপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে ছিলো; এটা জিওভান্নি বোক্কাচ্চোর দেকামেরোনে (১৩৫৩) চিত্রিত অবস্থার মত মানুষ বর্তমান মুহূর্তের জন্য বেঁচে থাকতে প্রবৃত হয়। এটা রোমান ক্যাথলিক চার্চের জন্য একটি গুরুতর আঘাত এবং এর ফলে ইহুদি, বিদেশি, ভিক্ষুক ও কুষ্ঠরোগীদের উপর নির্যাতন বৃদ্ধি করে। ১৮ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত, প্রাবল্য ও মৃত্যুর হারের তারতাম্য নিয়ে প্লেগ প্রত্যেক প্রজন্মে ফিরে আসে বলে মনে করা হয়। এই সময়কালে পুরো ইউরোপ ১০০-এর অধিক প্লেগ মহামারীতে আক্রান্ত হয়। প্রারম্ভিক আধুনিক সময় সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সময়কাল রেনেসাঁস ফ্লোরেন্সে উদ্ভব হয়ে ১৪ শতাব্দীতে বাকি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। একটি নতুন মানবতাবাদের উত্থানের সাথে যাজককেন্দ্রিক পাঠাগার থেকে বিস্মৃত ধ্রুপদী গ্রিক এবং আরবি জ্ঞান পুনরুদ্ধার চলতে থাকে, যা প্রায়ই আরবী থেকে লাতিনে অনুবাদ করা হত। রেনেসাঁস ১৪ থেকে ১৬ শতাব্দীর মধ্যে ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। রাজকীয়, আভিজাত্য, রোমান ক্যাথলিক চার্চ, এবং একটি উঠতি বণিক শ্রেণীর যুগ্ম পৃষ্ঠপোষকতায় এতে শিল্প, দর্শন, সঙ্গীত, এবং বিজ্ঞানের উন্নতি সাধন হয়। ফ্লোরেনটাইনের ব্যাংকার পরিবার মেদিচি এবং রোমের পোপ সহ, ইতালির পৃষ্ঠপোষকরা, প্রতিভাবান কোয়াত্রোসেন্তো ও সিঙ্কেসেন্তো শিল্পীদের যেমন রাফায়েল, মাইকেলেঞ্জেলো, ও লিওনার্দো দা ভিঞ্চি পৃষ্ঠপোষকতা করেন। মধ্য ১৪ শতকের চার্চের রাজনৈতিক চক্রান্ত পশ্চিমা বিভেদ সৃষ্টি করে। এই চল্লিশ বছর সময়ে, দুই জন পোপ চার্চের শাসনভার দাবী করে—একটি আভিগনন ও অপরটি রোমে। এই বিভেদ অবশেষে ১৪১৭ সালে মিটমাট হয়ে গেলেও পোপের পদ আধ্যাত্মিক কর্তৃপক্ষ ব্যাপকভাবে ভুক্তভোগী হয়েছিলো। চার্চের ক্ষমতা প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারের (১৫১৭–১৬৪৮) ফলে আরোও দুর্বল হয়ে পড়ে, যা প্রথমে জার্মান ধর্মতত্ত্ববিদ মার্টিন লুথারের কাজের দ্বারা কাজ দ্বারা আলোচনায় আসে চার্চের মধ্যে সংস্কার অভাবের ফলে। এছাড়াও সংস্কার পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করে। জার্মান রাজপুত্রগণ প্রোটেস্ট্যান্ট এবং রোমান ক্যাথলিকে বিভক্ত হয়ে ওঠে। এটাই ঘটনাক্রমে ত্রিশ বছরের যুদ্ধের (১৬১৮–১৬৪৮) কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যার ফলে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য পঙ্গু হয় এবং অনেক জার্মানি বিধ্বস্ত হয়। জার্মানির জনসংখ্যার ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ লোক মারা যায়। ওয়েস্টফালিয়া শান্তির পরে, ইউরোপে ফ্রান্সের প্রাধান্য বেড়ে দাঁড়ায়> দক্ষিণ, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে ১৭ শতাব্দী সাধারণ পতনের সময়কাল। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে, ২০০ বছরে ১৫০১ সাল থেকে ১৭০০ সালের মধ্যে ১৫০-এর বেশি দুর্ভিক্ষ হয়। ১৫ থেকে ১৮ শতাব্দীতে, যখন রাশিয়া ভেঙ্গে যাওয়া গোল্ডেন হর্দের খানাত জয় করে, তখন ক্রিমিয়ান খানাতের তাতার দাস ধরার জন্য পূর্ব স্লাভিক ভূমিতে ঘন ঘন অভিযান চালায়। ১৬৮৩ সালে ভিয়েনার যুদ্ধ ইউরোপে উসমানীয় তুর্কিদের অগ্রসর হওয়া থামিয়ে দেয়, ও মধ্য ইউরোপের হাবসবুর্গ রাজবংশের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের জানান দেয়। নোগাই হর্দে ও কাজাখ খানাত অন্তত একশ বছর ধরে রাশিয়া, ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের স্লাভিক-ভাষী এলাকায় ঘন ঘন অভিযান চালায়, রুশ সম্প্রসারণ এবং অধিকাংশ উত্তর ইউরেশিয়া বিজিত না হওয়া পর্যন্ত(অর্থাৎ পূর্ব ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং সাইবেরিয়া)। আবিষ্কারের যুগ, অনুসন্ধানের সময়, উদ্ভাবন এবং বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের শুরু বলে রেনেসাঁস এবং নতুন রাজকীয় চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৬ এবং ১৭ শতাব্দীর পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের মহান ব্যক্তিদের মধ্যে কোপারনিকাস, কেপলার, গ্যালিলিও, এবং আইজ্যাক নিউটন ছিল। পিটার বারেটের মতে, "এটা ব্যাপকভাবে গৃহীত যে, 'আধুনিক বিজ্ঞান' ১৭ শতাব্দীর (রেনেসাঁসের শেষ দিকে) ইউরোপে বেড়ে উঠেছিলো, প্রাকৃতিক বিশ্ব বোঝার নতুন পরিচায়ক।" ১৫ শতাব্দীতে, সেসময় সর্বশ্রেষ্ঠ নৌ ক্ষমতার দুই দেশ পর্তুগাল এবং স্পেন, সারা বিশ্ব অন্বেষণে দ্বায়িত্ব নেয়। ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ সালে নিউ ওয়ার্ল্ডে পৌঁছান এবং ভাস্কো দা গামা ১৪৯৮ সালে পূর্বে সমুদ্রপথ খুঁজে বের করেন। পরে স্প্যানীয় ও পর্তুগিজ আমেরিকা এবং এশিয়ায় ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। শীঘ্রই ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড তাদের অনুসরণ করে আফ্রিকা, আমেরিকা, এশিয়ায় বিশাল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। ১৮ এবং ১৯ শতাব্দী ১৮ শতাব্দীতে, বৈজ্ঞানিক ও যুক্তি-ভিত্তিক চিন্তাধারা প্রচারে নবজাগরণের যুগ একটি শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন ছিল। ফ্রান্সের রাজনৈতিক ক্ষমতার উপর অভিজাততন্ত্র ও পাদরীবর্গের একচেটিয়া অধিকারের ফলে জন-অসন্তোষ বাড়তে থাকে, যার ফলে ফরাসি বিপ্লব ঘটে এবং প্রথম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়। এর ফলে প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসের রাজত্বে অনেক রাজকীয় এবং আভিজাত্য প্রাণ হারায়। ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তীকালে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় এবং প্রথম ফরাসি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা পায়। নেপলীয় যুদ্ধের সময় যা বেড়ে ইউরোপের বৃহৎ অংশ পরিবেষ্টন করে, ১৮১৫ সালে ওয়াটারলু যুদ্ধে পতন ঘটে। নেপোলিয়নের শাসনের ফলে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের আরও প্রচার পায়, যার মাঝে জাতি-রাষ্ট্রের সাথে সাথে প্রশাসন, আইন, এবং শিক্ষার ফরাসি মডেলের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়। নেপোলিয়নের পতনের পর ভিয়েনার কংগ্রেস সমবত হয় এবং ইউরোপের ক্ষমতার একটি নতুন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে, পাঁচ "বড় শক্তির" উপর কেন্দ্রীভূত করে: যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, প্রুশিয়া, অস্ট্রিয়া, এবং রাশিয়া। ১৮৪৮ সালের বিপ্লবের আগ পর্যন্ত এই ভারসাম্য বজায় থাকে, এই সময় উদারপন্থী বিদ্রোহ রাশিয়া ও গ্রেট ব্রিটেন ছাড়া সমস্ত ইউরোপকে প্রভাবিত করে। শেষ পর্যন্ত রক্ষণশীল উপাদান এবং কিছু সংস্কারের ফলে বিপ্লব থেমে যায়। ১৮৫৯ সালে ছোট রাজ্যগুলো থেকে রোমানিয়া জাতি-রাষ্ট্র রূপে একত্রিত হয়। ১৮৬৭ সালে, অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য গঠিত হয়; এবং ১৮৭১ সালে ছোট রাজ্যগুলো থেকে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে উভয় ইতালি ও জার্মানি একত্রীকরণ হয়। সমান্তরালভাবে, রুশ-তুর্কি যুদ্ধে (১৭৬৮-১৭৭৪) তুর্কিদের পরাজয়ের পর প্রাচ্য সমস্যা আরোও জটিল আকার ধারণ করে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের ভাঙ্গন আসন্ন মনে করে, বড় শক্তিগুলো উসমানীয় অংশে তাদের কৌশলগত ও বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করতে থাকে। এই পতন থেকে রুশ সাম্রাজ্য লাভবান হয়, অন্যদিকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সংরক্ষণ হাবসবুর্গ সাম্রাজ্য এবং ব্রিটেনের স্বার্থের অনূকুলে থাকবে। এদিকে, সার্বীয় বিপ্লব এবং গ্রিক স্বাধীনতা যুদ্ধ বলকানে জাতীয়তাবাদের জন্ম হিসেবে চিহ্নিত হয়। ১৮৭৮ সালে বার্লিনের কংগ্রেসে মন্টিনিগ্রো, সার্বিয়া এবং রোমানিয়ার কার্যত স্বাধীন রাজ্যের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়। গ্রেট ব্রিটেনে ১৮ শতাব্দীর শেষভাগে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়ে পুরো ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। উদ্ভাবন ও নতুন প্রযুক্তির বাস্তবায়নের ফলে দ্রুত শহুরে বৃদ্ধি, ব্যাপক কর্মসংস্থান, এবং একটি নতুন শ্রমিক শ্রেণীর উত্থান ঘটে। এর ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কার সাধিত হয়, যার মাঝে শিশু শ্রমের উপর প্রথম আইন, ট্রেড ইউনিয়ন বৈধকরণ, এবং দাসত্ব বিলুপ্তি ছিলো। ব্রিটেনে, ১৮৭৫ সালে জনস্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন করা হয়, যার ফলে অনেক ব্রিটিশ শহরে জীবনযাত্রার মানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। ইউরোপের জনসংখ্যা ১৭০০ সালের ১০ কোটি থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে ৪০ কোটিতে বেড়ে দাঁড়ায়। পশ্চিম ইউরোপের শেষ দুর্ভিক্ষ, আইরিশ আলু দুর্ভিক্ষের ফলে আইরিশ লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ও ব্যাপক দেশান্তর ঘটে। ১৯ শতাব্দীতে, ৭ কোটি মানুষ ইউরোপ ছেড়ে বিদেশে বিভিন্ন ইউরোপীয় উপনিবেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধিবাসিত হয়। বিংশ শতাব্দী থেকে বর্তমান দুইটি বিশ্বযুদ্ধ এবং একটি অর্থনৈতিক মন্দা বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে আধিপত্য বিস্তার করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪ থেকে ১৯১৮-এর মধ্যে সংঘটিত হয়। যুগোস্লাভ জাতীয়তাবাদী গাভ্রিলো প্রিন্সিপ দ্বারা অস্ট্রিয়ার আর্চডিউক ফ্রানজ ফার্দিনান্দ হত্যার মাধ্যমে এই যুদ্ধ শুরু হয়। অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশগুলো এই যুদ্ধে লড়াই করেছে, যা আঁতাত শক্তি (ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সার্বিয়া, পর্তুগাল, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, এবং পরে ইতালি, গ্রিস, রোমানিয়া, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং অক্ষ শক্তি (অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, জার্মানি, বুলগেরিয়া, এবং উসমানীয় সাম্রাজ্য) মধ্যে সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে ১৬০ লক্ষের বেশি মানুষ মারা যায়। ৬ কোটির বেশি ইউরোপীয় সৈন্য ১৯১৪ থেকে ১৯১৮-এর এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। রাশিয়ায় রুশ বিপ্লব ঘটে, যা জার রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে সাম্যবাদ সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিস্থাপন করে। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এবং উসমানীয় সামাজ্য ভেঙ্গে গিয়ে পৃথক দেশে ভাগ হয় এবং অন্যান্য অনেক দেশ তাদের সীমানা পুনরায় বিন্যস্ত করে। ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯১৯ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধর সমাপ্তি ঘটে। চুক্তিটি জার্মানির প্রতি কঠোর ছিল এবং যুদ্ধের জন্য পূর্ণ দায়িত্ব জার্মানির উপর চাপানো হয় এবং ভারী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সময়কাল এবং রুশ গৃহযুদ্ধ (যুদ্ধোত্তর দুর্ভিক্ষ সহ) মিলিয়ে রাশিয়া মোট মৃত্যুর পরিমাণ ১৮০ লক্ষে দাঁড়ায়। ১৯৩২–১৯৩৩-এ, স্তালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ শস্য বাজেয়াপ্ত করার ফলে দ্বিতীয় সোভিয়েত দুর্ভিক্ষ হয়, যাতে লক্ষ লক্ষ লোক মারা যায়; জীবিত কৃষক-মহাজনদের নির্যাতন করা হয় এবং অনেককে জোরপূর্বক শ্রম নিয়োজিত করতে গুলাগে পাঠানো হয়েছিলো। এছাড়াও ১৯৩৭–৩৮-এর গ্রেট পার্জের জন্য স্তালিন দায়ী, যাতে এনকেভিডি ৬৮১,৬৯২ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে; সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ বহিষ্কৃত ও নির্বাসিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঋণ এবং জার্মানিকে ঋণ দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে ইউরোপে ব্যাপক ধ্বংস সাধন করে। এটা এবং ১৯২৯-এর ওয়াল স্ট্রিট বিপর্যয় বিশ্বব্যাপী মহামন্দা ডেকে আনে। অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক অস্থিরতা, সাম্যবাদের হুমকি, ও ফ্যাসীবাদী আন্দোলনের সহায়তায় ইউরোপ জুড়ে নাৎসি জার্মানিতে আডলফ হিটলার, স্পেনে ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো, ইতালিতে বেনিতো মুসোলিনিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। ১৯৩৩ সালে, হিটলার জার্মানির নেতা হয়ে ওঠে এবং বৃহত্তর জার্মানি নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। জার্মানি পুনরায় প্রসারিত হয়ে ১৯৩৫ এবং ১৯৩৬ সালে সারল্যান্ড এবং রাইনল্যন্ড দখল করে নেয়। ১৯৩৮ সালে, আঞ্চলাসের পরে অস্ট্রিয়া জার্মানির একটি অংশ হয়ে ওঠে। পরে সেই বছরই, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং ইতালি মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষর করে। জার্মানি সুদেতেনল্যান্ড দ্বারা সংযুক্ত হয়, যা জাতিগত জার্মানরা দ্বারা অধ্যুষিত চেকোস্লোভাকিয়ার একটি অংশ ছিলো। ১৯৩৯ সালের প্রথম দিকে চেকোস্লোভাকিয়ার অবশিষ্টাংশ জার্মানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বোহেমিয়া ও মোরাভিয়ার প্রটেকটোরেট ও স্লোভাক প্রজাতন্ত্রে বিভক্ত হয়। ঐ সময়ে, ব্রিটেন ও ফ্রান্স তুষ্ট করার নীতি অবলম্বন করছিলো। ডানজিগের ভবিষ্যতকে কেন্দ্র করে জার্মানি ও পোল্যান্ডের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বাড়তে থাকে, জার্মানরা সোভিয়েত দিকে সরে গিয়ে এবং মলতভ-রিবেন্ত্রপ চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা সোভিয়েতকে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো এবং পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার অংশ আক্রমণ করার অনুমোদন দেয়। জার্মানি ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড আক্রমণ করে, যা ৩ সেপ্টেম্বর জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণায় ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যকে প্ররোচনা যোগায়। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইউরোপীয় রণক্ষেত্র উন্মুখ হয়। পোল্যান্ডে সোভিয়েত আক্রমণ ১৭ সেপ্টেম্বর শুরু করে এবং শীঘ্রই পোল্যান্ডের পতন ঘটে। ২৪ সেপ্টেম্বর, সোভিয়েত ইউনিয়ন বাল্টিক দেশগুলো ও পরে ফিনল্যান্ড আক্রমণ করে। ব্রিটিশ সৈন্য নারভিকে অবতরণ করে এবং ফিনল্যান্ডকে সাহায্য করার জন্য সৈন্য পাঠায়। কিন্তু তাদের অবতরণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো জার্মানিকে ঘিরে ফেলা এবং জার্মানদের স্ক্যান্ডেনেভীয় উৎস থেকে সাহায্য বন্ধ করা। প্রায় একই সময়, জার্মানি ডেনমার্কে সৈন্য প্রেরণ করে। এবং অপ্রকৃত যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। ১৯৪০ সালের মে-তে, জার্মানি নিচু দেশের মাধ্যমে ফ্রান্স আক্রমণ করে। ফ্রান্স ১৯৪০-এর জুনে শর্তাধীনভাবে আত্মসমর্পণ করে। আগস্ট দ্বারা জার্মানি ব্রিটেনে আক্রমণাত্মক বোমা বর্ষণ শুরু করে, কিন্তু ব্রিটেন দখল করতে ব্যর্থ হয়। ১৯৪১ সালে, জার্মানি অপারেশন বারবারোসার মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে। ১৯৪১ সালে ৭ ডিসেম্বর জাপানের পার্ল হারবার আক্রমণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মিত্র এবং অন্যান্য মিত্র বাহিনীকেও যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলে। ১৯৪৩ সালে স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধের পর, সোভিয়েত ইউনিয়নে জার্মান আক্রমণ ক্রমাগত পিছিয়ে যায়। ইতিহাসে বৃহত্তম ট্যাংক যুদ্ধে জড়িত কুর্স্কের যুদ্ধ পূর্ব রণাঙ্গনে শেষ বড় জার্মান আক্রমণ ছিলো। ১৯৪৪ সালে, ব্রিটিশ এবং মার্কিন বাহিনী ডি-ডে অবতরণের মাধ্যমে ফ্রান্স আক্রমণ করে জার্মানি বিপক্ষে নতুন যুদ্ধক্ষেত্র খোলে। ১৯৪৫ সালে বার্লিন পতনের মাধ্যমে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বৃহত্তম ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে পৃথিবী জুড়ে ৬ কোটি মানুষ মারা যায়। ইউরোপে ৪ কোটির বেশি মানুষ দ্বিতীয় যুদ্ধের ফলে মারা যায়, যার মাঝে ১১০ থেকে ১৭০ লক্ষ লোক হলোকস্টের দ্বারা মারা যায়। যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ২৭০ লক্ষ লোক হারায় (বেশিরভাগই বেসামরিক), দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হতাহতের প্রায় অর্ধেক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে, ইউরোপে ৪ কোটির বেশি লোক উদ্বাস্তু ছিলো। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু যুদ্ধোত্তর বিতাড়নের ফলে প্রায় মোট ২ কোটি লোক বাস্তুচ্যুত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পশ্চিম ইউরোপের প্রাধান্য খর্ব করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইয়াল্টা সম্মেলনে ইউরোপের মানচিত্রে প্রজাতন্ত্রগুলো পুনঃবিন্যস্ত হয় এবং দুই ব্লকে বিভক্ত করা হয়, পশ্চিমা দেশ এবং সাম্যবাদী পূর্ব ব্লক, যা পরে উইনস্টন চার্চিল একটি "লৌহ পর্দা" বলে অভিহিত করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপ ন্যাটো জোট প্রতিষ্ঠিত করে এবং পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মধ্য ইউরোপ ওয়ারশ চুক্তি সাক্ষর করে। নতুন দুটি পরাশক্তি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক বিস্তার কেন্দ্রীভূত, পঞ্চাশ বছরের দীর্ঘ স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত হয়। একই সময়ে উপনিবেশবাদ শেষ হতে শুরু করে, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই শুরু হয়, ধীরে ধীরে এশিয়া ও আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশিকতা শেষ হয়ে অঞ্চলগুলো স্বাধীনতা লাভ করতে শুরু করে। ১৯৮০ সালে মিখাইল গর্বাচেভের সংস্কার এবং পোল্যান্ডে সলিডারিটি আন্দোলনের ফলে পূর্ব ব্লকের পতন ঘটে এবং স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। দুই জার্মানি একত্রিত হয়, ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের মানচিত্রে আরো একবার প্রজাতন্ত্র গুলো বিন্যস্ত হয়। ইউরোপীয় একত্রীকরণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে শুরু হয়। একটি একক অর্থনৈতিক নীতি এবং সাধারণ বাজারে লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে রোম চুক্তির মাধ্যমে ছয় পশ্চিম ইউরোপের দেশের মধ্যে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৭ সালে ইইসি, ইউরোপীয় কয়লা ও ইস্পাত গোষ্ঠী এবং ইউরাটম, ইউরোপীয় গোষ্ঠী গঠন করে, যা ১৯৯৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রূপ নেয়। ইউ একটি সংসদ, আদালত এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে এবং একক মুদ্রা হিসেবে ইউরো চালু করে। ২০০৪ এবং ২০০৭ সালে, আরো মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো যোগ দান করে এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২৮-এ উন্নীত করে। ভূগোল ইউরোপীয় উপদ্বীপ ইউরেশীয় ভূখণ্ডের পশ্চিমা পঞ্চমাংশ গঠন করে। এটা অন্য যে কোনো মহাদেশ বা উপমহাদেশের চেয়ে ভূখণ্ডের তুলনায় উপকূলের উচ্চ অনুপাত রয়েছে। এর সমুদ্র সীমা উত্তরে আর্কটিক মহাসাগর, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর, এবং দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর, কৃষ্ণ, এবং কাস্পিয়ান সমুদ্র। ইউরোপের ভূমিতে অপেক্ষাকৃত ছোট এলাকার মধ্যে বেশি তারতম্য দেখা যায়। দক্ষিণাঞ্চল বেশি পর্বতময়, অন্যদিকে উত্তরে যেতে যেতে উঁচু আল্পস, পিরেনে, এবং কার্পেথীয় থেকে ভূখণ্ড নিচু হতে থাকে, উঁচু পাহাড়ি ভূমির মধ্য দিয়ে পূর্বে বিশাল, বিস্তৃত, কম উত্তর সমতলে। এই বর্ধিত নিম্নভূমি বড় ইউরোপীয় সমভূমি হিসাবে পরিচিত, এবং এর মূল উত্তর জার্মান সমভূমিতে অবস্থিত। গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ড দ্বীপের পশ্চিম অংশ থেকে শুরু হয়ে উঁচু একটা চাপ উত্তর-পশ্চিম সমুদ্রতীর বরাবর বিদ্যমান, এবং তা নরওয়ের পর্বতময়, সমুদ্রের খাঁড়ি কাটা বরাবর চলতে থাকে। এই বিবরণ সরলীকৃত। উপ-অঞ্চল যেমন আইবেরিয়ান উপদ্বীপ এবং ইতালীয় উপদ্বীপের নিজস্ব জটিল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তেমনি মূল ভূখণ্ডের মধ্য ইউরোপেরও আছে। যেখানে ভূখণ্ডের অনেক মালভুমি, নদী উপত্যকা এবং অববাহিকা রয়েছে যা সাধারণ গতিধারা জটিল করে তোলে। উপ-অঞ্চল যেমন আইসল্যান্ড, ব্রিটেন, এবং আয়ারল্যান্ড আলাদা বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। পূর্ববর্তী ভূখণ্ড উত্তর মহাসাগরের অবস্থিত যা ইউরোপের অংশ হিসাবে গণনা করা হয়, অপরদিকে পরবর্তী পাহাড় এলাকা মূল ভূখণ্ডে যোগ দিয়েছিলো, যা পরে ক্রমবর্ধমান সমুদ্র স্তরের বৃদ্ধির ফলে আলাদা হয়ে যায়। স্টেপ জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য ইউরোপ প্রধানত শীতপ্রধান জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত, এতে পশ্চিমা ঝঞ্ঝা বিরাজ করে। উপসাগরীয় প্রবাহের প্রভাবের কারণে পৃথিবী চারপাশে একই অক্ষাংশের অন্যান্য এলাকায় তুলনায় এর জলবায়ু বেশ নাতিশীতোষ্ণ ধরনের হয়। উপসাগরীয় প্রবাহের ডাক নাম "ইউরোপের কেন্দ্রীয় উষ্ণতা", কারণ এটা ইউরোপের জলবায়ু উষ্ণ এবং আর্দ্র করে তোলে। উপসাগরীয় প্রবাহ ইউরোপের উপকূল উষ্ণ আর্দ্রতা বয়ে আনার সাথে সাথে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে আসা পশ্চিমা ঝঞ্ঝাকে উষ্ণ করে তোলে। এর ফলে সারা বছর ধরে নেপলসের গড় তাপমাত্রা ১৬ °সে (৬০.৪ °ফা), যখন একই অক্ষাংশে অবস্থিত নিউ ইয়র্ক সিটিতে শুধুমাত্র ১২ °সে (৫৩.৬ °ফা)। বার্লিন, জার্মানি; কাল্গারি, কানাডা; এবং ইরখুটস্ক, রাশিয়ার এশীয় অংশ, প্রায় একই অক্ষাংশ অবস্থিত; জানুয়ারিতে বার্লিনের গড় তাপমাত্রা প্রায় ৮ °সি (৪৬.৪ °ফা), যা কালগারি থেকে বেশি, এবং ইরখুটস্ক গড় তাপমাত্রা থেকে প্রায় ২২ °সে (৭১.৬ °ফা) বেশি। তিন দিকে জলভাগের অবস্থান ইউরোপের ভূতত্ত্ব অতিশয় বৈচিত্রময় এবং জটিল, স্কটিয় উচ্চভূমি থেকে হাঙ্গেরির ঢালাই সমভূমি পর্যন্ত মহাদেশ জুড়ে বিভিন্ন ভূদৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উচ্চভূমি ও পার্বত্য দক্ষিণ ইউরোপ এবং পূর্বে ইউরাল পর্বতমালা থেকে পশ্চিমে একটি সুবিশাল, আংশিকভাবে সমুদ্রগর্ভপথে, উত্তর সমতল আয়ারল্যান্ডের মধ্যে বৈপরীত্য। এই দুই অংশ পিরেনে পর্বত চেইন এবং আল্পস/কার্পেথীয় দ্বারা বিভক্ত। উত্তর সমতল স্ক্যানডিনেভীয় পর্বতমালা এবং ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পর্বতময় অংশ দ্বারা পশ্চিমে চিহ্নিত করা হয়। উত্তর সমতলের প্রধান অগভীর জলাশয় হলো, কেল্টীয় সাগর, উত্তর সাগর, বাল্টিক সাগর এবং বারেন্ট সাগর। উত্তর সমতলে পুরোনো ভূতাত্ত্বিক বালটিকা মহাদেশ রয়েছে, এবং তাই ভূতাত্ত্বিকভাবে "প্রধান মহাদেশ" হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে, অন্যদিকে দক্ষিণ ও পশ্চিমে পেরিফেরাল উচ্চ ভূমি ও পার্বত্য অঞ্চল অন্যান্য বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক মহাদেশ থেকে খন্ডাংশ গঠন করে। পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ পুরোনো ভূতত্ত্ব সবচেয়ে প্রাচীন ক্ষুদ্র মহাদেশ আভালোনিয়ার অংশ হিসেবে ছিল। ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস প্রায় ২.২৫ বিলিয়ন বছর আগে, বাল্টিক শিল্ড (ফেনোস্ক্যান্ডিয়া) এবং সারমাতিয়ান ক্রাটন গঠনে ইউরোপের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। এর পর ভলগো-ইউরালিয়া শিল্ড, এই তিনটি একসঙ্গে পূর্ব ইউরোপীয় ক্রাটন (≈ বালটিকা) গঠন করে, যা অতিবিশাল মহাদেশ কলাম্বিয়ার একটি অংশ হয়ে ওঠে। প্রায় ১.১ বিলিয়ন বছর আগে, বালটিকা এবং আর্কটিকা (লাওরেন্টিয়া ব্লকের অংশ হিসেবে) রডিনিয়ায় যোগদান করে, পরে পুনঃবিভক্ত হয়ে প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন বছর আগে সংস্কার হয়ে বালটিকা রূপ ধারণ করে। প্রায় ৪৪০ মিলিয়ন বছর আগে, বালটিকা এবং লাওরেন্টিয়া থেকে ইউরামেরিকা গঠিত হয়; তারপরে গন্ডোয়ানা যুক্ত হয়ে পাঞ্জিয়া গঠন করে। প্রায় ১৯০ মিলিয়ন বছর আগে, গন্ডোয়ানা এবং লাওরাশিয়া আটলান্টিক মহাসাগরের প্রসারের কারণে বিভক্ত হয়। অবশেষে, এবং পরবর্তিতে খুব শীঘ্রই, লাওরাশিয়া নিজেই আবার লাওরেন্টিয়া (উত্তর আমেরিকা) এবং ইউরেশীয় মহাদেশ মধ্যে বিভক্ত হয়। এই দুইয়ের মাঝে গ্রীনল্যান্ডের মাধ্যমে যথেষ্ট সময় ধরে ভূ-সংযোগ থাকে, ফলে এদের মাঝে প্রাণীজগত আদানপ্রদান চলতে থাকে। প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর আগে থেকে, সমুদ্র স্তরের হ্রাস বৃদ্ধির ফলে ইউরোপের প্রকৃত আকৃতি এবং এর অন্যান্য মহাদেশ যেমন এশিয়ার সাথে সংযোগ নির্ধারিত হয়। ইউরোপের বর্তমান আকৃতি প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে টারশিয়ারি যুগের শেষ ভাগে দেখতে পাওয়া যায়। জীববৈচিত্র্য সহস্রাব্দ ধরে কৃষিজ মানুষের সাথে সাথে বসবাস করে, ইউরোপের প্রাণী ও উদ্ভিদ মানুষের উপস্থিতিও কার্যক্রম দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ফেনোস্ক্যান্ডিয়া এবং উত্তর রাশিয়া, বিভিন্ন জাতীয় উদ্যান ছাড়া, বর্তমানে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ইউরোপে কমই পাওয়া যায়। ইউরোপে মিশ্র বন বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এখানে বৃদ্ধির জন্য পরিবেশ খুব অনুকূল। উত্তরাঞ্চলে উপসাগরীয় প্রবাহ এবং উত্তর আটলান্টিক চালন মহাদেশকে উষ্ণ রাখে। দক্ষিণ ইউরোপকে একটি উষ্ণ, কিন্তু মৃদু জলবায়ু হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। এই অঞ্চলে প্রায়শই গ্রীষ্মকালে খরা হয়। এছাড়াও পর্বত ঢালের পরিবেশকে প্রভাবিত করে। কিছু পাহাড় (আল্পস, পাইরেনেস) পূর্ব-পশ্চিম ভিত্তিক এবং বায়ুকে মহাসাগর থেকে প্রচুর পানি অভ্যন্তর বহন করার সুযোগ করে দেয়। অন্যান্য গুলো (স্ক্যান্ডিনেভিয় পর্বতমালা, দিনারিদস, কার্পেথীয়, আপেন্নিস) দক্ষিণ-উত্তর ভিত্তিক এবং পাহাড়ে পড়া বৃষ্টি যেহেতু প্রাথমিকভাবে সমুদ্রের দিকে যায়, সেহেতু এই দিকে বনাঞ্চল ভালো হয়, আবার অপরদিকে পরিবেশ ততটা অনুকূল নয়। ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের প্রায়ই কোনো না কোনো সময়ে পশু পালিত হত, এবং প্রাক কৃষিজ কেটে ফেলায় মূল উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস্তুতন্ত্র ব্যাহত হয়। ইউরোপের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ সম্ভবত একসময় বন দ্বারা আবৃত ছিল। এটা ভূমধ্যসাগর থেকে আর্কটিক মহাসাগর পর্যন্ত প্রসারিত। যদিও ইউরোপের মূল বনের অর্ধেক বন শতাব্দী ধরে চলা অরণ্যবিনাশ-এর মাধ্যমে উজাড় হয়, তারপরেও ইউরোপে মোট জমির এক চতুর্থাংশে উপর বন আছে। যেমন স্ক্যান্ডিনেভিয়ার এবং রাশিয়ার তৈগা, ককেশাসের মিশ্র অতিবৃষ্টি অরণ্য এবং পশ্চিম ভূমধ্যসাগরের কর্ক ওক বন। সাম্প্রতিক সময়ে, বন উজাড় ক্রমশ কমে এসেছে এবং অনেক গাছ রোপণ করা হয়েছে। যাইহোক, অনেক ক্ষেত্রে মূল মিশ্র প্রাকৃতিক বন প্রতিস্থাপনে কনিফারে রোপিত হচ্ছে, কারণ তা দ্রুত বাড়ে। বৃক্ষরোপন এখন সুবিশাল এলাকা বিস্তার করে, কিন্তু বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখীর জন্য তা উৎকৃষ্ট আবাসস্থল নয়, কারণ তাতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও বৈচিত্র্যময় বন গঠন কাঠামো নেই। পশ্চিম ইউরোপে প্রাকৃতিক বনের পরিমাণ মাত্র ২–৩% বা তার কম, যা ইউরোপীয় রাশিয়ায় ৫–১০%। বনাঞ্চলে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম শতাংশের দেশ আইসল্যান্ড (১%), এবং বৃহত্তম ফিনল্যান্ড (৭৭%)। শীতপ্রধান ইউরোপে, উভয় সূঁচালো এবং সরলবর্গীয় গাছ দ্বারা মিশ্র বন আধিপত্য দেখা যায়। মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি হলো বীচ ও ওক গাছ। উত্তরাঞ্চলে তৈগা একটি স্পুস–পাইন–বার্চ দ্বারা মিশ্র বন; আরও উত্তরে রাশিয়া এবং উত্তর স্ক্যান্ডিনেভিয়ার মধ্যে, তৈগা তুন্দ্রাকে জায়গা করে দেয় যে আর্কটিক অগ্রসরমান হয়। ভূমধ্যসাগরে, অনেক জলপাই গাছ রোপণ করা হয়েছে, যা খুব ভালোভাবে ঊষর জলবায়ুতে অভিযোজিত হয়েছে; আরো ব্যাপকভাবে দক্ষিণ ইউরোপে ভূমধ্যসাগরীয় সরলবর্গীয় চিরহরিৎ রোপণ করা হয়। আধা শুষ্ক ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অনেক ঝোপঝাড় দেখতে পাওয়া যায়। ইউরেশীয় তৃণভূমির পূর্ব-পশ্চিমে একটি সংকীর্ণ অংশ পূর্বে ইউক্রেন, দক্ষিণে রাশিয়া প্রসারিত হয়ে হাঙ্গেরিতে শেষ হয় এবং উত্তরে তৈগার মধ্যে অনুপ্রস্থভাবে পার দেয়। সবচেয়ে সাম্প্রতিক তুষার যুগে হিমবাহ এবং মানুষের উপস্থিতি ইউরোপীয় প্রাণীজগতের বিস্তার প্রভাবিত করে। ইউরোপের বহু অংশে সবচেয়ে বড় প্রাণী এবং শীর্ষ শিকারী প্রজাতি শিকার করার মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পশমতুল্য ম্যামথ নব্য প্রস্তর যুগের শেষের আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। এসময়ে নেকড়ে (মাংসাশী) এবং ভালুক বিপন্ন। একদা এরা ইউরোপের অধিকাংশ অংশে পাওয়া যেত। তবে, বন উজাড় এবং শিকার এই পশুদের আরোও এবং আরোও দূরে ঠেলে দেয়। মধ্যযুগ দ্বারা, ভালুকের আবাসস্থল যথেষ্ট বন আচ্ছাদনসহ অনধিগম্য পর্বত মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়। আজ, বাদামী ভালুক বলকান উপদ্বীপ, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, এবং রাশিয়া প্রাথমিকভাবে বাস করে; কিছু সংখ্যক ভালুক ইউরোপের অন্যান্য দেশে (অস্ট্রিয়া, পিরেনে ইত্যাদি) দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু এইসব অঞ্চলে বাসস্থান ধ্বংস কারণে বাদামি ভালুকের জনসংখ্যা খণ্ডিত এবং প্রান্তিক। উপরন্তু, মেরু ভালুক স্বালবার্ড পাওয়া যেতে পারে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার উত্তরে একটি নরওয়েজীয় দ্বীপমালা। নেকড়ে, বাদামি ভালুক পর ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিকারি প্রাণী, প্রাথমিকভাবে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ ও বলকানে এবং কিছু সংখ্যক পশ্চিম ইউরোপে (স্ক্যান্ডিনেভিয়া, স্পেন, ইত্যাদি) দেখতে পাওয়া যায়। ইউরোপীয় বন্য বিড়াল, শিয়াল (বিশেষ করে লাল শিয়াল), বিভিন্ন প্রজাতির মার্টেনস, সজারু এবং বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ (যেমন সাপ) এবং উভচর, বিভিন্ন পাখি (পেঁচা, বাজপাখি এবং শিকারি পাখি) ইউরোপে দেখতে পাওয়া যায়। শামুক, শুককীট, মাছ, বিভিন্ন পাখি, এবং স্তন্যপায়ী যেমন তীক্ষ্ণদন্ত প্রাণী, হরিণ এবং শুয়োর গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় তৃণভোজী প্রাণী। এবং অন্যদের মধ্যে পাব্র্বত্য মূষিক, স্টেইনবক, হরিণসদৃশ পার্বত্য ছাগল পর্বতে বাস করে। বিভিন্ন পোকামাকড়, যেমন ছোট কচ্ছপের ত্বকের প্রজাপতি, জীব বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করে। বামন জলহস্তী এবং বামন হাতি বিলুপ্তি ভূমধ্য দ্বীপপুঞ্জের মানুষের নিকটতম আগমনের সাথে যুক্ত করা যায়। সামুদ্রিক প্রাণীসকল ইউরোপীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সামুদ্রিক উদ্ভিদ প্রধানত ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন। ইউরোপীয় সমুদ্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী জু প্ল্যাংকটন, বিভিন্ন চিংড়ি, স্কুইড, অক্টোপাস, মাছ, ডলফিন, এবং তিমি। কাউন্সিল অব ইউরোপের বার্ন কনভেনশন দ্বারা ইউরোপে জীব বৈচিত্র্য সুরক্ষিত হয়, যা ইউরোপীয় সম্প্রদায়ের সাথে সাথে অ-ইউরোপীয় দেশগুলো দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাজনৈতিক ভূগোল নিচের তালিকায় সমস্ত সত্তা বিভিন্ন সাধারণ সংজ্ঞা, এমনকি আংশিকভাবে পতিত, ভৌগোলিক বা রাজনৈতিকভাবে ইউরোপে রয়েছে। প্রদর্শিত তথ্য সূত্র প্রতি ক্রস রেফারেন্সড নিবন্ধ অনুসারে। নিচে উল্লিখিত রাষ্ট্রগুলো সীমাবদ্ধ বা শুন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দ্বারা কার্যত স্বাধীন দেশ। তাদের কেউ জাতিসংঘের সদস্য নয়ঃ বিস্তৃত স্বায়ত্তশাসন সহ বিভিন্ন ডিপেন্ডেন্সি এবং অনুরূপ ভূখণ্ড ইউরোপে রয়েছে। উল্লেখ্য যে, এই তালিকায় যুক্তরাজ্যের সাংবিধানিক দেশগুলো, জার্মানি ও অস্ট্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজ্য, এবং স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবংচ সোভিয়েত পরবর্তি প্রজাতন্ত্র ও সার্বিয়া প্রজাতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত নয়। একত্রীকরণ ইউরোপীয় একত্রীকরণ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ইউরোপে দেশগুলোর রাজনৈতিক, আইনত, অর্থনৈতিক (এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক) একত্রীকরণের প্রক্রিয়া। বর্তমান দিনে, ইউরোপীয় একত্রীকরণ প্রাথমিকভাবে পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপ এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের কমনওয়েলথভুক্ত স্বাধীন রাষ্ট্র এবং সাবেক সোভিয়েত অধিকাংশ দেশের মাঝে কাউন্সিল অব ইউরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে মাধ্যমে। অর্থনীতি মহাদেশ হিসেবে, ইউরোপের অর্থনীতি বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম এবং ব্যবস্থাপনার অধীনে সম্পদ দ্বারা পরিমাপে $৩২.৭ ট্রিলিয়ন সহকারে ২০০৮ সালে এটি সবচেয়ে ধনী অঞ্চল, যা উত্তর আমেরিকার $২৭.১ ট্রিলিয়নের তুলনায় বেশি। ২০০৯ সালেও ইউরোপ সবচেয়ে ধনী অঞ্চল ছিল। ব্যবস্থাপনার অধীনে এর $৩৭.১ ট্রিলিয়ন সম্পদ বিশ্বের মোট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিনিধিত্ব করে। এটা বিভিন্ন অঞ্চলে একটি যেথায় বছরের শেষ প্রাক-সংকট শিখর সম্পদ অতিক্রান্ত করে। অন্যান্য মহাদেশের মত, ইউরোপেও দেশগুলোর মধ্যে সম্পদের বৃহৎ প্রকরণ আছে। ধনী দেশগুলো পশ্চিমে অবস্থিত; কিছু মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় অর্থনীতিগুলো এখনও সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুগোস্লাভিয়ার পতন থেকে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ২৮টি ইউরোপীয় দেশ নিয়ে গঠিত একটি আন্তঃসরকারি গোষ্ঠী, যা বিশ্বের বৃহত্তম একক অর্থনৈতিক এলাকা। ১৮টি ইইউ দেশ তাদের সাধারণ মুদ্রা হিসাবে ইউরো ব্যবহার করে। জিডিপিতে জাতীয় অর্থনীতি (পিপিপি) অনুসারে বিশ্বের বৃহত্তম জাতীয় অর্থনীতির শীর্ষ দশে পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ রয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত (সিআইএ অনুসারে তালিকা): জার্মানি (৫), ইউকে (৬), রাশিয়া (৭), ফ্রান্স (৮), এবং ইতালি (১০)। আয়ের বিচারে ইউরোপের অনেক দেশের মধ্যে বিশাল বৈষম্য আছে। মাথাপিছু জিডিপির পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে ধনী মোনাকো তার মাথাপিছু জিডিপি মার্কিন $১৭২,৬৭৬ (২০০৯) এবং দরিদ্রতম মলদোভা তার মাথাপিছু জিডিপি মার্কিন $১,৬৩১ (২০১০)। মোনাকো বিশ্ব ব্যাংক রিপোর্ট অনুযায়ী মাথাপিছু জিডিপি পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ। প্রাক–১৯৪৫: শিল্পকৌশল বৃদ্ধি সামন্তবাদের শেষ থেকে পুঁজিবাদ পশ্চিমা বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করেছে। ব্রিটেন থেকে, এটি ধীরে ধীরে ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮ শতকের শেষে শিল্প বিপ্লব ইউরোপে বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে, এবং ১৯ শতকে পশ্চিম ইউরোপে শিল্পায়ন শুরু হয়। অর্থনীতি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে তা পুনরুউদ্ধার হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, আবারও, ইউরোপের শিল্প অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৪৫–১৯৯০: স্নায়ু যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ধ্বংসাবস্থায় ছিল, এবং পরবর্তি দশকগুলোতেও আপেক্ষিক অর্থনৈতিক পতন অব্যাহত থাকে। ইতালিও একটি দরিদ্র অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে ছিল কিন্তু ১৯৫০-এর দশকে তা উচ্চ স্তরের প্রবৃদ্ধির দ্বারা পুনরুদ্ধার করে। পশ্চিম জার্মানি দ্রুত উঠে দাঁড়ায় এবং ১৯৫০-এর দশকে যুদ্ধপূর্ব মাত্রা থেকে উৎপাদন দ্বিগুণ করে। ফ্রান্সও দ্রুত বৃদ্ধি এবং আধুনিকায়নের মাধ্যমে দারুণভাবে ফিরে আসে; পরে স্পেনে, ফ্রাঙ্কোর নেতৃত্বে উঠে আসে, তারা ১৯৬০-এর দশকে বিশাল অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নথিভুক্ত হয়, যাকে স্পেনীয় অলৌকিক ঘটনা বলা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে আসে এবং ফলে তারা পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহায়তা পরিষদ (COMECON)-এর সদস্য হয়। যে দেশগুলো মুক্ত বাজার ব্যবস্থা বজায় রাখে, তাদের মার্শাল পরিকল্পনার অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ পরিমাণ সাহায্য দেয়। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের অর্থনীতির সংযোগ একত্রিত করে, যা ইইউ-র ভিত্তি প্রদান করে এবং সীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধি করে। এটা দ্রুত অর্থনীতির উন্নতিতে সাহায্য করে, যখন কমকনের দেশগুলো সংগ্রাম করছিল, যা একটি বড় কারণ ছিলো স্নায়ু যুদ্ধের খরচ। ১৯৯০-এর আগ পর্যন্ত, ইউরোপীয় সম্প্রদায় ৬ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য থেকে ১২-তে প্রসারিত হয়। পশ্চিম জার্মানির অর্থনীতি পুনরুত্থিত হবার ফলে এটি যুক্তরাজ্যকে টপকে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে আবির্ভূত হয়। ১৯৯১–২০০৭: একত্রীকরণ ও পুনর্মিলন ১৯৯১ সালে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে কমিউনিজমের পতন দিয়ে পরবর্তি-সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মুক্ত বাজার সংস্কারের শুরু: পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, এবং স্লোভেনিয়া, যুক্তিসঙ্গতভাবে দ্রুত মানিয়ে নেয়, ইউক্রেন এবং রাশিয়ায় এই প্রক্রিয়াটি এখনও বিদ্যমান। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি ১৯৯০ সালে পুনরায় একত্রিত হবার পরে, পশ্চিম জার্মানির অর্থনীতি ধুঁকছিলো যেহেতু একে পূর্ব জার্মানিকে সহায়তা এবং অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করতে হয়েছিল। সহস্রাব্দের পরিবর্তনের সময়, ইইউ ইউরোপের অর্থনীতি আধিপত্য বিস্তার করে পাঁচটি বৃহত্তম ইউরোপীয় অর্থনীতির সমন্বয়ে গঠনের মাধ্যমে যেমন জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, ও স্পেন। ১৯৯৯ সালে, ইইউ-এর ১৫টি সদস্যের মধ্যে ১২টি সদস্য রাষ্ট্র ইউরোজোনে যোগদান করে, তাদের সাবেক জাতীয় মুদ্রা পরিবর্তন করে সাধারণ ইউরো গ্রহণ করার মাধ্যমে। ইউরোজোনের বাইরে থাকা বেছে নেওয়া তিনটি দেশ হলো: যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, এবং সুইডেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০০৮–২০১০: অর্থনৈতিক মন্দা ২০০৯-এর জানুয়ারিতে ইউরোস্ট্যাটের তথ্য প্রকাশ দ্বারা নিশ্চিত হয় যে, ২০০৮ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ইউরোজোন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়ে। অধিকাংশ অঞ্চলের এর প্রভাব পড়ে। ২০১০ সালের প্রথম দিকে, সার্বভৌম ঋণ সঙ্কটের ভয় ইউরোপের কিছু দেশে, বিশেষ করে গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগালে আক্রমণ করে। এর ফলে, ইউরোজোনের নেতৃস্থানীয় দেশগুলো কিছু পদক্ষেপ, বিশেষ করে গ্রিসের জন্য গ্রহণ করা হয়। ইইউ-২৭ এর বেকারত্বের হার ২০১২ সালের এপ্রিলে ১০.৩% ছিল। সাম্প্রতিক বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকরা কাজ খুঁজে পায় না। ২০১২ সালের এপ্রিলে, ইইউ২৭-এ ১৫–২৪ বছর বয়সী মধ্যে বেকারত্বের হার ২২.৪% ছিল। জনপরিসংখ্যান রেনেসাঁস থেকে, ইউরোপ বিশ্বের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও সামাজিক আন্দোলনে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছে। পশ্চিমা বিশ্বেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলো উদ্ভাবিত হয়, বিশেষ করে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রায় ৭০ মিলিয়ন (৭ কোটি) ইউরোপীয় ১৯১৪ থেকে ১৯৪৫-এর মধ্যে যুদ্ধ, সহিংসতা ও দুর্ভিক্ষে মারা যায়। ইউরোপীয় জনমিতি মধ্যে কিছু বর্তমান এবং অতীত বিষয়; ধর্মীয় প্রবাস, জাতি সম্পর্ক, অর্থনৈতিক অভিবাসন, নিম্নগামী জন্মহার এবং বার্ধক্যগ্রস্ত জনসংখ্যা অন্তর্ভুক্ত আছে। কিছু দেশে, যেমন আয়ারল্যান্ড এবং পোল্যান্ডে গর্ভপাত করার সুযোগ সীমাবদ্ধ। এটা মাল্টায় অবৈধ। উপরন্তু, তিনটি ইউরোপীয় দেশ (নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, এবং সুইজারল্যান্ড) এবং আন্দালুসিয়ার স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশে (স্পেন) অসুস্থ মানুষের জন্য স্বেচ্ছায় যন্ত্রণাহীন মৃত্যুর সীমিত আকারে অনুমতি দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে, ইউরোপে জনসংখ্যা জাতিসংঘের মতে ৭৩১ মিলিয়ন বলে অনুমান করা হয়েছিল, যা বিশ্বের জনসংখ্যার এক-নবমাংশে তুলনায় সামান্য বেশি। এক শতাব্দী আগে, ইউরোপ বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ ছিল। ইউরোপের জনসংখ্যা গত শতাব্দীতে বেড়েছে, কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে (বিশেষ করে আফ্রিকা এবং এশিয়ায়) জনসংখ্যা অনেক দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মহাদেশগুলোর মধ্যে, ইউরোপে জনসংখ্যার ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত উচ্চ, দ্বিতীয় অবস্থানে শুধুমাত্র এশিয়ার পরে। ইউরোপের (এবং বিশ্বের) সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ মোনাকো। প্যান ও ফেল (২০০৪) গণনা করে, ৮৭ স্বতন্ত্র "ইউরোপের জাতি", যার মাঝে ৩৩টি কমপক্ষে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী, অবশিষ্ট ৫৪টি জাতিগত সংখ্যালঘু। জাতিসংঘ জনসংখ্যা অভিক্ষেপ মতে, ইউরোপের জনসংখ্যা ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৭% হতে পারে, অথবা ৬৫৩ মিলিয়ন মানুষ (মাঝারি বৈকল্পিক, ৫৫৬ থেকে ৭৭৭ মিলিয়ন কম এবং উচ্চ রূপের মধ্যে যথাক্রমে)। এই প্রেক্ষাপটে উর্বরতা হার সম্পর্কিত বৈষম্য অঞ্চলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বিদ্যমান। শিশু জন্মদান জন্মদানে সক্ষম মহিলা প্রতি গড় শিশুর সংখ্যা ১.৫২। কিছু সূত্র মতে, এই হার ইউরোপের মুসলমানদের মধ্যে বেশি। জাতিসংঘ পূর্বানুমান মতে, দেশান্তর এবং নিম্ন জন্মহারের ফলে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের নিয়মিত জনসংখ্যা হ্রাস পাবে। আইওএম-এর রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বব্যাপী অভিবাসীদের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ৭০.৬ মিলিয়ন মানুষ ইউরোপে আসে। ২০০৫ সালে, ইইউ সামগ্রিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি ছিল অভিবাসন থেকে ১.৮ মিলিয়ন মানুষ। যা ইউরোপের মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রায় ৮৫%। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আফ্রিকা থেকে বৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য কাজ কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা করে। ২০০৮ সালে, ৬৯৬,০০০ জনকে ইউ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়, যা পূর্ববর্তী বছর থেকে কম (৭০৭,০০০)। ইউরোপ থেকে দেশান্তর হওয়া শুরু হয় ১৬ শতকে স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ বসতি স্থাপকারীদের মাধ্যমে, এবং ১৭ শতকের মধ্যে ফরাসি এবং ইংরেজি ঔপনিবেশিকদের সাথে। কিন্তু এর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ছিল, ১৯ শতকের মধ্যে ব্যাপক দেশান্তর শুরু হয় যখন লক্ষ লক্ষ দরিদ্র পরিবার ইউরোপ ছেড়ে যায়। আজ, ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত বিশাল জনসংখ্যা প্রতি মহাদেশে পাওয়া যায়। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূতরা উত্তর আমেরিকায় প্রাধান্য বিস্তার করে, ও দক্ষিণ আমেরিকায় কম মাত্রায় (বিশেষ করে উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা, চিলি এবং ব্রাজিলে, অন্যান্য অধিকাংশ ল্যাটিন আমেরিকান দেশে ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা আছে)। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে বৃহৎ ইউরোপীয় উদ্ভূত জনগোষ্ঠী আছে। আফ্রিকায় কোনো দেশেই ইউরোপীয়-উদ্ভূত সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, (ব্যতিক্রম কেপ ভার্দ এবং সম্ভবত সাঁউ তুমি ও প্রিন্সিপি বাদে, প্রসঙ্গের উপর নির্ভর করে), কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু আছে, যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ। এশিয়ায়, ইউরোপীয়-উদ্ভূত জনগোষ্ঠী উত্তর এশিয়ায় (বিশেষ করে রুশরা), উত্তর কাজাখস্তান ও ইসরাইলের কিছু অংশে প্রাধান্য বিস্তার করে। উপরন্তু, আন্তর্মহাদেশীয় বা ভৌগোলিক দিক থেকে এশিয়ার দেশগুলোতে যেমন জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, সাইপ্রাস এবং তুরস্ক-এ ঐতিহাসিকভাবে ইউরোপীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ, যথেষ্ট জেনেটিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য সঙ্গে সম্পর্কিত জনসংখ্যা আছে। ভাষা ইউরোপীয় ভাষাসমূহ বেশিরভাগই তিনটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে: রোমান্স ভাষাসমূহ, রোমান সাম্রাজ্যের লাতিন থেকে উদ্ভূত; জার্মানিয় ভাষাসমূহ, যার পূর্বপুরুষ ভাষা দক্ষিণ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার থেকে এসেছে; এবং স্লাভীয় ভাষাসমূহ। স্লাভীয় ভাষাসমূহ ইউরোপের স্থানীয়দের দ্বারা সবচেয়ে বেশি কথ্য, এসব ভাষায় মধ্য, পূর্ব, এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে কথা বলা হয়। রোমান্স ভাষায় মধ্য বা পূর্ব ইউরোপ এবং রোমানিয়া ও মলদোভা সহ, প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপে কথা বলা হয়। জার্মানিয় ভাষাসমূহ উত্তরাঞ্চলীয় ইউরোপ, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও মধ্য ইউরোপের কিছু অংশে কথ্য হয়। তিনটি প্রধান গোষ্ঠীর বাইরে অন্য অনেক ভাষা ইউরোপের মধ্যে বিদ্যমান। অন্যান্য ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা অন্তর্ভুক্ত বাল্টিক গোষ্ঠী (যা, লাটভীয় ও লিথুয়ানিয়), কেল্টীয় গোষ্ঠী (যা, আইরিশ, স্কট্‌স গ্যালিক, মানক্স, ওয়েলশ, কর্নিশ, ও ব্রেটন), গ্রিক, আর্মেনীয়, ও আলবেনীয়। উপরন্তু, উরালীয় ভাষাসমূহ-এর একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী (এস্তোনীয়, ফিনীয়, ও হাঙ্গেরীয়) ইস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ও হাঙ্গেরিতে প্রধানত কথিত হয়, যখন কার্তভেলিয়ান ভাষাসমূহ (জর্জিয়, মিনগ্রেলিয়ান, ও সভান), জর্জিয়ায় প্রাথমিকভাবে কথ্য হয়, এবং দুইটি অন্যান্য ভাষা পরিবারের উত্তর ককেশাসে বিদ্যমান (বলা হয় উত্তরপূর্ব ককেশীয়, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চেচেন, আভার ও লেযগিন এবং উত্তর-পশ্চিম ককেসীয়, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আদিগে)। মল্টিয় একমাত্র সেমিটিক ভাষা যা ইইউর দাপ্তরিক ভাষা, অন্যদিকে বাস্ক একমাত্র বিছিন্ন ইউরোপীয় ভাষা। তুর্কীয় ভাষাসমূহ-এর অন্তর্ভুক্ত আজারবাইজানি ও তুর্কি, এর সাথে রাশিয়ায় সংখ্যালঘু জাতির ভাষা। বহুভাষাবাদ এবং আঞ্চলিক ও সংখ্যালঘু ভাষার সুরক্ষা এসময়ে ইউরোপে রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃত। কাউন্সিল অব ইউরোপ ইউরোপে ভাষা অধিকারের জন্য একটি আইনি কাঠামো গঠন করে। ধর্ম ঐতিহাসিকভাবে, ইউরোপে ধর্ম এর শিল্প, সংস্কৃতি, দর্শন ও আইনের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। ইউরোপের বৃহত্তম ধর্ম খ্রিস্ট ধর্ম, ৭৬.২% ভাগ ইউরোপীয় খ্রিষ্টান, এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত ক্যাথলিক, ইস্টার্ন অর্থোডক্স এবং প্রোটেস্ট্যান্ট গীর্জা। এছাড়াও ইসলাম মূলত বলকান এবং পূর্ব ইউরোপের কেন্দ্রীভূত (বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, আলবেনিয়া, কসোভো, কাজাখস্তান, উত্তর সাইপ্রাস, তুরস্ক, আজারবাইজান, উত্তর ককেশাস, এবং ভলগা-ইউরাল অঞ্চল)। অন্যান্য ধর্মের মধ্যে ইহুদি ধর্ম, হিন্দুধর্ম, এবং বৌদ্ধ ধর্ম সংখ্যালঘু ধর্ম (যদিও তিব্বতী বৌদ্ধ রাশিয়ার কালমাকিয়া প্রজাতন্ত্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম)। ২০ শতকের আন্দোলন মাধ্যমে নিও প্যাগানবাদের পুনর্জন্ম হয়। ইউরোপ তুলনামূলকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ মহাদেশে পরিণত হয়েছে, ধর্মহীন, নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদী মানুষের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা অনুপাত মাধ্যমে, আসলে যা পশ্চিমা বিশ্বের মাঝে বৃহত্তম। বিপুল সংখ্যক স্ব-বর্ণিত ধর্মহীন মানুষ চেক প্রজাতন্ত্র, ইস্তোনিয়া, সুইডেন, জার্মানি (পূর্ব), এবং ফ্রান্সে রয়েছে। সংস্কৃতি ইউরোপের সংস্কৃতি একটি ধারাবাহিক সংস্কৃতির অধিক্রমণ হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে; সাংস্কৃতিক মিশ্রণ মহাদেশ জুড়ে বিদ্যমান। সাংস্কৃতিক উদ্ভাবন এবং আন্দোলন, কখনও কখনও একে অপরের সঙ্গে মতভেদ হয়। সুতরাং সাধারণ সংস্কৃতি বা অভিন্ন মূল্যবোধ-এর ব্যাপারটি বেশ জটিল। ঐতিহাসিক হিলারী বেলকের মতে, রোমান সংস্কৃতির অবশিষ্ট চিহ্ন এবং খ্রীষ্টান ধারণার উপর কয়েক শতাব্দী ধরে ইউরোপের মানুষ তাদের আত্ম-পরিচয় ভিত্তি করে গড়ে উঠে, কারণ অনেক ইউরোপীয় ব্যাপী সামরিক জোট ধর্মীয় প্রকৃতির ছিল, ক্রুসেড (১০৯৫–১২৯১), রিকনকুইসতার (৭১১–১৪৯২), লেপান্তোর যুদ্ধ (১৫৭১)। আরও দেখুন ইউরোপের ইতিহাস ইউরোপীয় দেশগুলোর তালিকা জনসংখ্যা অনুসারে ইউরোপের শহরের তালিকা নোট তথ্যসূত্র National Geographic Society (2005). National Geographic Visual History of the World. Washington, D.C.: National Geographic Society. . বহিঃসংযোগ কাউন্সিল অব ইউরোপ ইউরোপীয় ইউনিয়ন কলম্বিয়া গ্যাজেটার অব দ্য ওয়ার্ল্ড অনলাইন কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস "ইউরোপ পরিচিতি" লোনলি প্ল্যানেট ভ্রমণ গাইড এবং তথ্য থেকে। মহাদেশ সাংস্কৃতিক ধারণা
https://en.wikipedia.org/wiki/Europe
Europe
Europe is a continent located entirely in the Northern Hemisphere and mostly in the Eastern Hemisphere. It is bordered by the Arctic Ocean to the north, the Atlantic Ocean to the west, the Mediterranean Sea to the south, and Asia to the east. Europe shares the landmass of Eurasia with Asia, and of Afro-Eurasia with both Asia and Africa. Europe is commonly considered to be separated from Asia by the watershed of the Ural Mountains, the Ural River, the Caspian Sea, the Greater Caucasus, the Black Sea, and the waterway of the Bosporus Strait. Europe covers about 10.18 million km2 (3.93 million sq mi), or 2% of Earth's surface (6.8% of land area), making it the second-smallest continent (using the seven-continent model). Politically, Europe is divided into about fifty sovereign states, of which Russia is the largest and most populous, spanning 39% of the continent and comprising 15% of its population. Europe had a total population of about 745 million (about 10% of the world population) in 2021; the third-largest after Asia and Africa. The European climate is affected by warm Atlantic currents, such as the Gulf Stream, which produce a temperate climate, tempering winters and summers, on much of the continent. Further from the sea, seasonal differences are more noticeable producing more continental climates. European culture consists of a range of national and regional cultures, which form the central roots of the wider Western civilisation, and together commonly reference ancient Greece and ancient Rome, particularly through their Christian successors, as crucial and shared roots. Beginning with the fall of the Western Roman Empire in 476 CE, Christian consolidation of Europe in the wake of the Migration Period marked the European post-classical Middle Ages. The Italian Renaissance spread in the continent a new humanist interest in art and science which led to the modern era. Since the Age of Discovery, led by Spain and Portugal, Europe played a predominant role in global affairs with multiple explorations and conquests around the world. Between the 16th and 20th centuries, European powers colonised at various times the Americas, almost all of Africa and Oceania, and the majority of Asia. The Age of Enlightenment, the French Revolution, and the Napoleonic Wars shaped the continent culturally, politically, and economically from the end of the 17th century until the first half of the 19th century. The Industrial Revolution, which began in Great Britain In the 17th century, gave rise to radical economic, cultural, and social change in Western Europe and eventually the wider world. Both world wars began and were fought to a great extent in Europe, contributing to a decline in Western European dominance in world affairs by the mid-20th century as the Soviet Union and the United States took prominence and competed over dominance in Europe and globally. The resulting Cold War divided Europe along the Iron Curtain, with NATO in the West and the Warsaw Pact in the East. This divide ended with the Revolutions of 1989, the fall of the Berlin Wall, and the dissolution of the Soviet Union, which allowed European integration to advance significantly. European integration is being advanced institutionally since 1948 with the founding of the Council of Europe, and significantly through the realisation of the European Union (EU), which represents today the majority of Europe. The European Union is a supranational political entity that lies between a confederation and a federation and is based on a system of European treaties. The EU originated in Western Europe but has been expanding eastward since the dissolution of the Soviet Union in 1991. A majority of its members have adopted a common currency, the euro, and participate in the European single market and a customs union. A large bloc of countries, the Schengen Area, have also abolished internal border and immigration controls. Regular popular elections take place every five years within the EU; they are considered to be the second-largest democratic elections in the world after India's. The EU is the third-largest economy in the world.
1110
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B6%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%95
দার্শনিক
দার্শনিক হলো এমন একজন ব্যক্তি যিনি জ্ঞানের অন্তর্নিহিত ভিত্তি, প্রকৃতি এবং সীমাবদ্ধতা, সত্য, বাস্তবতা, নৈতিকতা, চেতনা, ভাষা এবং যুক্তি সম্পর্কে প্রশ্নের সাথে যুক্ত একটি শাখা অধ্যয়ন করেন, যাকে দর্শন বলা হয়। দার্শনিকরা সাধারণত এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজে পেতে যুক্তি, যুক্তি এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করেন। দর্শনের অনেকগুলি বিভিন্ন শাখা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: নৈতিকতা: ভাল এবং মন্দের প্রকৃতি, এবং সত্য এবং ন্যায়পরায়ণতার মানদণ্ড। যুক্তিবিদ্যা: যুক্তি এবং যুক্তি সম্পর্কে অধ্যয়ন। জ্ঞানতত্ত্ব: জ্ঞানের প্রকৃতি এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অধ্যয়ন। ভাষাতত্ত্ব: ভাষার প্রকৃতি এবং অর্থ সম্পর্কে অধ্যয়ন। সমাজবিজ্ঞান: সমাজ এবং সামাজিক আচরণের প্রকৃতি সম্পর্কে অধ্যয়ন। রাজনৈতিক দর্শন: সরকার এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতি সম্পর্কে অধ্যয়ন। প্রাকৃতিক দর্শন: বিশ্বের প্রকৃতি এবং এর অন্তর্নিহিত নীতি সম্পর্কে অধ্যয়ন। ধর্মতত্ত্ব: ধর্মের প্রকৃতি এবং এর ভূমিকা সম্পর্কে অধ্যয়ন। দার্শনিকরা প্রায়শই তাদের কাজের জন্য সমালোচিত হন, কারণ তারা প্রায়শই ঐতিহ্যগত ধারণাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং নতুন ধারণা প্রদান করেন। যাইহোক, দার্শনিকরা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, কারণ তারা আমাদের চিন্তাভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং আমাদের বিশ্বকে নতুনভাবে দেখতে সাহায্য করে এখানে কিছু বিখ্যাত দার্শনিকের নাম দেওয়া হল:Socratic Socrates (470-399 খ্রিস্টপূর্বাব্দ): তিনি " পদ্ধতি" নামে পরিচিত একটি পদ্ধতি বিকাশ করেছিলেন যা প্রশ্নের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের উপর ভিত্তি করে ছিল। Plato (428-348 খ্রিস্টপূর্বাব্দ): তিনি "আকাডেমি" নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। Aristotle (384-322 খ্রিস্টপূর্বাব্দ): তিনি "পলিটিক্স" এবং "মেটাফিজিক্স" নামে দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। Saint Augustine (354-430 খ্রিস্টাব্দ): তিনি "Confessions" নামে একটি বিখ্যাত আত্মজীবনী রচনা করেছিলেন। René Descartes (1596-1650): তিনি "Cogito, ergo sum" ("আমি চিন্তা করি, সুতরাং আমি আছি") নামে একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়েছিলেন। John Locke (1632-1704): তিনি "Two Treatises of Government" নামে একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রভাব ফেলেছিল। Immanuel Kant (1724-1804): তিনি "Critique of Pure Reason" নামে একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন যা আধুনিক দার্শনিক চিন্তার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। Friedrich Nietzsche (1844-1900): তিনি "Thus Spoke Zarathustra" নামে একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন যা আধুনিক জীবনের সমালোচনা করে। Simone de Beauvoir (1908-1986): তিনি "The Second Sex" নামে একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন যা নারীবাদী দর্শনের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। দার্শনিকরা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, কারণ তারা আমাদের চিন্তাভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং আমাদের বিশ্বকে নতুনভাবে দেখতে সাহায্য করে। দার্শনিকদের কাজ আমাদেরকে আমাদের চারপাশের বিশ্বকে আরও ভালভাবে বুঝতে এবং আমাদের জীবনে আরও সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। আরও দেখুন কিছু উল্লেখযোগ্য দার্শনিকদের মধ্যে রয়েছে: সক্রেটিস এরিস্টটল চাণক্য আল-কিন্দি শিবলী নোমানী আল ফারাবী পার্মেনিদিস শাবলু শাহাবউদ্দিন এলেয়ার জিনো টমাস আকুইনাস ইবন সিনা কনফুসিয়াস রনে দেকার্ত গেয়র্গ ভিলহেল্ম ফ্রিডরিখ হেগেল ইমানুয়েল কান্ট সারেন কিয়েরকেগর ফ্রিড্‌রিশ নিচে প্লেটো জঁ-পল সার্ত্র্‌ লুডভিগ ভিটগেনস্টাইন ফ্রান্সিস বেকন জর্জ বার্কলি বারুখ স্পিনোজা গট‌ফ্রিড লাইব‌নিৎস কার্ল পপার বারট্রান্ড রাসেল আলফ্রেড নর্থ হোয়াইটহেড গট্‌লব ফ্রেগে জন স্টুয়ার্ট মিল তথ্যসূত্র দার্শনিকদের তালিকা বহিঃসংযোগ দার্শনিক
https://en.wikipedia.org/wiki/Philosopher
Philosopher
1111
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE
ক্রীড়া
ক্রীড়া হচ্ছে একটি সংগঠিত, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, বিনোদনধর্মী এবং দক্ষতাসূচক শারীরিক কার্যকলাপ প্রদর্শনের উত্তম ক্ষেত্র। শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা, কলা-কৌশল এবং সুস্থ ক্রীড়া প্রদর্শন করে একজন বিজয়ী তার অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর নিদর্শন রাখতে পারেন। এটি পরিচালিত হয় একগুচ্ছ নিয়ম-কানুন বা নিজস্ব চিন্তা-চেতনার মাধ্যম। খেলার প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে শারীরিক সক্ষমতা, দক্ষতা ও মর্যাদা যাতে বিজয়ী এবং বিজিত পক্ষ নির্ধারিত হয়। শারীরিক সক্ষমতা হিসেবে মানুষ, প্রাণীসহ বল, যন্ত্র ইত্যাদি সরঞ্জামাদি জড়িত। এছাড়াও মনঃস্তাত্তিক খেলাধুলা হিসেবে কার্ড গেম এবং বোর্ড গেম রয়েছে। এগুলোর কিছু আবার আন্তর্জাতিক অলিম্পিক ক্রীড়া সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত। শারীরিক ইভেন্টগুলো যেমন গোল করা কিংবা নির্দিষ্ট রেখা অতিক্রম করলে খেলায় ফলাফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়াও, ডাইভিং, ফিগার স্কেটিংয়ে খুব ভাল করার দক্ষতা যাচাই ও প্রদর্শন করা অন্যতম বিচার্য বিষয়। ব্যতিক্রম হিসেবে বডি বিল্ডিংয়ের মতো ইভেন্টগুলোয় দক্ষতা প্রদশর্নকে গণ্য করা হয় না। প্রতিটি খেলার ফলাফলই রেকর্ড হিসেবে রাখা হয় এবং সর্বদাই অধিকাংশ খেলাগুলোতে সর্বোচ্চ পর্যায়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার মাধ্যমে খেলাধুলার সংবাদে প্রচার করা হয়। বেশীরভাগ খেলাধুলাই শুধুমাত্র নিছক আনন্দ, মজা অথবা মানুষের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট শারীরিক সক্ষমতার লক্ষ্যে ব্যয়ামের জন্য করা হয়। অধিকন্তু, পেশাদারী খেলাধুলা বিনোদনের অন্যতম মাধ্যমও বটে। খেলাধুলা চর্চার ফলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সুন্দর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলোয়ারসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আচরণগুলোর মধ্যে - ব্যক্তিগত আচরণ পরিবর্তনসহ প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, বিচারক(বৃন্দ)কে ধন্যবাদজ্ঞাপন এবং হেরে গেলে বিজয়ীকে অভিনন্দন প্রদান করা অন্যতম। উৎপত্তি ক্রীড়া শব্দটি এসেছে প্রাচীন ফরাসী শব্দ ডিস্পোর্টস থেকে যার অর্থ হচ্ছে অবসর। আমেরিকানরা স্পোর্টস শব্দটিকে নিছক বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং ক্রীড়ার একবচন শব্দ হিসেবে স্পোর্টস নামকরণ করেছে। ফার্সি শব্দ হিসেবে ক্রীড়ার ভাবার্থ দাঁড়ায় জয়ী। ক্রীড়াকে চীনা ভাষায় শারীরিক প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক গ্রীক শব্দে দৌঁড়বিদ হিসেবে দাবী করছে। ইতিহাস বিভিন্ন তথ্যসূত্র ঘেটে জানা গেছে, সর্বপ্রথম চীনের নাগরিকেরা খ্রীষ্ট পূর্ব ৪০০০ বছর আগে থেকে খেলাধুলার সাথে জড়িত। জিমন্যাস্টিকস্ প্রাচীন চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে স্থান পেয়েছিল। কয়েক হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন মিশরের ফারাও সাম্রাজ্যে বেশকিছু খেলা প্রচলিত ছিল। তন্মধ্যে সাঁতার কাটা, মাছ ধরা অন্যতম। এছাড়াও, মিশরীয় খেলাধুলার মধ্যে জ্যাভেলিন বা বর্শা নিক্ষেপ, উচ্চ লম্ফ এবং কুস্তির ব্যাপক প্রচলন ছিল। প্রাচীন ফারসী খেলার মধ্যে ইরানীয় মার্শাল আর্ট হিসেবে জোরখানে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। এছাড়াও, প্রাচীন ফারসী খেলা হিসেবে পোলো এবং জস্টিং রয়েছে। খেলোয়াড়সূলভ মনোভাব খেলোয়াড়সূলভ মনোভাব হচ্ছে এমন একটি ধারা যা সুস্থ, সুন্দর খেলার অংশবিশেষ। এতে দলীয় সঙ্গীর সাথে সৌজন্যপূর্ণ আচরণ প্রদর্শনসহ প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের নৈতিক আচরণ, স্বাধীনতা এবং জয়ী বা পরাজিত হলেও ব্যক্তি বা দলকে সম্মান দেখানো হয়ে থাকে। অখেলোয়াড়োচিত আচরণ সুস্থ, সুন্দর খেলাকে কলুষিত করে, খেলার মর্যাদাকে ধুলিস্মাৎ করে। ক্রীড়াবিদ, কোচ, সমর্থক, শুভ্যানুধ্যায়ীরাই মূলতঃ এর সাথে জড়িত। ফলে ব্যক্তি বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নষ্টসহ সংক্ষুদ্ধ জনতা সুন্দর সমাজ ও পরিবেশকে ধ্বংস করে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমস্যা তৈরী করে, দেশ ও দশের ভাবমূর্ত্তি ক্ষুণ্ন করে। পেশাগত খেলা এককালে খেলাধুলার মূল উদ্দেশ্যই ছিল মূলতঃ চিত্ত বিনোদন। কিন্তু গণমাধ্যম এবং অবসর সময় কাটানোয় পেশাগত খেলার জুড়ি মেলা ভার। এর ফলে খেলোয়াড়দের মধ্যে অর্থ উপার্জনই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেশাগত খেলায় বিনোদন নয়, বরং আর্থিকভাবে লাভবান এবং নিজ নিজ জনপ্রিয়তাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যা প্রাচীন রীতি-নীতি হিসেবে ক্রীড়া চর্চার নির্মল বিনোদনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এছাড়াও, চিত্ত বিনোদনের নতুন মাত্রা হিসেবে পুরুষ এবং মহিলা - উভয় খেলোয়াড়কেই জনপ্রিয় ও শীর্ষস্থানীয় তারকা খ্যাতি এনে দিয়েছে বর্তমানকালের গণমাধ্যম। বিশ্বের বিভিন্ন ক্রীড়া বা খেলার নাম ফুটবলই বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। এছাড়াও, হকি, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল, ভলিবল, সাঁতার, দৌঁড়, পোলভল্ট, পোলো, রাগবি, টেনিস, টেবিল টেনিস, খোঁ খোঁ, রোয়িং, ব্যাডমিন্টন, কুস্তি, মুষ্টিযুদ্ধ, দাবা, জুডু, ফ্যান্সিং, বাস্কেটবল ইত্যাদি বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় খেলা। মধ্যস্থতাকারী বিজয়ী ও বিজিত নির্ধারণে এক বা একাধিক বিচারক থাকেন। খেলার ধরন অনুযায়ী রেফারী বা মধ্যস্থতাকারীর নাম নির্ধারিত হয়। যেমনঃ হকি ও ক্রিকেটে আম্পায়ার, ফুটবলে রেফারী, দৌঁড়ে বিচারক ইত্যাদি। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত এবং খেলোয়াড়দের অবশ্য পালনীয়। আচরণবিধি প্রতিটি ক্রীড়াতেই কিছু লিখিত আকারে রুলস্ বা নিয়ম লিপিবদ্ধ থাকে, যা কোড অব কন্ডাক্ট নামে পরিচিত। নিয়ম বিরুদ্ধ কিছু ঘটলে রেফারী কর্তৃক সতর্কীকরণ চিহ্ন হিসেবে লাল, হলুদ কিংবা সবুজ রংয়ের কার্ড দেখানো হয়। খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে কার্ড প্রদর্শনের উপর নির্ভর করে যে পরবর্তী খেলায় খেলোয়াড়টি অংশ নিতে পারবে কি-না। মূল্যায়ন দৌঁড়জাতীয় খেলাগুলোতে নির্দিষ্ট একটি স্ট্যাণ্ডে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারীর মর্যাদা দিয়ে পদক প্রদান করা হয়। পূর্বে অলিম্পিক খেলায় খেজুর পাতার মুকুট পড়িয়ে মূল্যায়িত করা হতো। দলীয় খেলা হিসেবে ফুটবল, হকি, ক্রিকেটে সোনা, রূপার কাপ বা ট্রফি প্রদান করার পাশাপাশি সেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদা হিসেবে নির্দিষ্ট পুরস্কার প্রদান করা হয়। পাশাপাশি চেকের মাধ্যমে অর্থ কিংবা মোটর গাড়ীসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি উপহার হিসেবে দেয়া হয়। বাংলাদেশের জাতীয় খেলা সম্পূর্ণ দেশীয় খেলা হিসেবে কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলার মর্যাদা লাভ করেছে। তবে আইসিসি ট্রফি জয়ের পরবর্তী সময়ে ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশের সমধিক পরিচিত ও ব্যাপকভাবে প্রচলিত খেলারূপে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ The Meaning of Sports by Michael Mandel (PublicAffairs, ). Journal of the Philosophy of Sport Avedon, Elliot; Sutton-Smith, Brian, The Study of Games. (Philadelphia: Wiley, 1971), reprinted Krieger, 1979. ক্রীড়া মূল বিষয়ের নিবন্ধ ক্রীড়া সম্পর্কে বই সংস্কৃতি
https://en.wikipedia.org/wiki/Sport
Sport
Sport is a form of physical activity or game. Often competitive and organized, sports use, maintain, or improve physical ability and skills. They also provide enjoyment to participants and, in some cases, entertainment to spectators. Many sports exist, with different participant numbers, some are done by a single person with others being done by hundreds. Most sports take place either in teams or competing as individuals. Some sports allow a "tie" or "draw", in which there is no single winner; others provide tie-breaking methods to ensure one winner. A number of contests may be arranged in a tournament format, producing a champion. Many sports leagues make an annual champion by arranging games in a regular sports season, followed in some cases by playoffs. Sport is generally recognised as system of activities based in physical athleticism or physical dexterity, with major competitions admitting only sports meeting this definition. Some organisations, such as the Council of Europe, preclude activities without any physical element from classification as sports. However, a number of competitive, but non-physical, activities claim recognition as mind sports. The International Olympic Committee who oversee the Olympic Games recognises both chess and bridge as sports. SportAccord, the international sports federation association, recognises five non-physical sports: chess, bridge, draughts, Go and xiangqi. However, they limit the number of mind games which can be admitted as sports. Sport is usually governed by a set of rules or customs, which serve to ensure fair competition. Winning can be determined by physical events such as scoring goals or crossing a line first. It can also be determined by judges who are scoring elements of the sporting performance, including objective or subjective measures such as technical performance or artistic impression. Records of performance are often kept, and for popular sports, this information may be widely announced or reported in sport news. Sport is also a major source of entertainment for non-participants, with spectator sport drawing large crowds to sport venues, and reaching wider audiences through broadcasting. Sport betting is in some cases severely regulated, and in others integral to the sport. According to A.T. Kearney, a consultancy, the global sporting industry is worth up to $620 billion as of 2013. The world's most accessible and practised sport is running, while association football is the most popular spectator sport.
1112
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BE
দাবা
দাবা একটি জনপ্রিয় খেলা যা বোর্ড বা ফলকের উপর খেলা হয়। দাবা খেলার সর্বপ্রথম সূচনা হয় ভারতবর্ষে। যিনি দাবা খেলেন তাকে দাবাড়ু বলা হয়। দাবায় দু’জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে। দাবা খেলায় জিততে হলে বোর্ডের ওপর ঘুঁটি সরিয়ে বা চাল দিয়ে বিপক্ষের রাজাকে কোণঠাসা করে এমন স্থানে আনতে হয় যেখানে রাজা আক্রান্ত এবং আর স্থানান্তরিতও হতে পারবে না, দাবার পরিভাষায় একে বলে ‘কিস্তিমাত’। যুদ্ধংদেহী ফলকক্রীড়া রূপে দাবা খেলার সুনাম রয়েছে। খেলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিপক্ষের ঘুঁটি আয়ত্তে আনার মাধ্যমে নতস্বীকারে বাধ্য করা। ফলকের উপর খেলা যায় এমন খেলাগুলোর মধ্যে এ খেলার বিশ্বব্যাপী অসম্ভব জনপ্রিয়তা রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসরতা ও আক্রমণ চিহ্নিত করার দক্ষতার মাধ্যমে দাবাড়ুর শক্তিমত্তা যাচাই করা সম্ভবপর। প্রত্যেক খেলোয়াড়েরই রাজা, মন্ত্রী, হাতি, ঘোড়া, নৌকা ও বোড়ের সমন্বয়ে গঠিত ১৬ ঘুঁটির সৈনিকদল একে-অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়। প্রত্যেক ঘুঁটিরই ক্রীড়াফলকে স্থানান্তরের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। কোন কারণে ঘুঁটির মাধ্যমে প্রতিপক্ষের ঘুঁটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে তা অধিকৃত স্থানের পর্যায়ে পৌঁছে ও ক্রীড়াফলক থেকে সরিয়ে ফেলতে হয়। দাবার ইতিহাস বেশির ভাগ ঐতিহাসকগণই মনে করেন যে প্রাচীণ ভারতবর্ষেই দাবা খেলার জন্ম। ঠিক কোথায় সর্বপ্রথম দাবা খেলার উৎপত্তি, সেটি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কিছু প্রাচীন আমলের হরফে দাবা খেলার প্রারম্ভিক কাল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, পাশাপাশি খেলাটির আদি অস্তিত্বের প্রমাণস্বরূপ কিছু কিছু দাবার গুটিরও হদিশ মেলে। কিন্তু এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, তত্ত্ব ও মতামতের অভাব নেই। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদের ধারণা ভারত, পারস্য কিংবা চীনই দাবার জন্মস্থল। তবে দাবা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান এখানেই সীমিত নয়। ইউরোপে দাবার যে রূপ অনুপ্রবেশ করে তা আদপে প্রায় ১,৩৫০ বছর আগেই পারস্যে খেলা হতো। সেই সময় তথা সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সেই অঞ্চলে মুসলিম সেনাশক্তির অধীনে ছিল। মুসলিম বিশ্বে এই খেলাটি বিপুল জনপ্রিয়তা পায় এবং ইসলামের প্রচারের সাথে সাথে খেলাটি ছড়িয়ে যেতে যেতে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপেও চলে যায়। বিভিন্ন জাতির পক্ষেই নানারকম দাবি থাকলেও বহু গবেষণার পর গবেষকগণ একমত হয়েছেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশেই খেলাটির আদি উৎপত্তি স্থান। দাবার মতো এক ধরনের খেলার সন্ধান পাওয়া যায় প্রাচীন মিশরে খ্রিস্টপূর্ব ৩,০০০ অব্দে, যার নাম ছিল শতরঞ্জ। তবে ভারত বর্ষে চতুরঙ্গ নামক দাবা খেলাটির সূচনা হয় ষষ্ঠ শতাব্দীর আগেই, ভারতবর্ষে তখনও গুপ্ত সাম্রাজ্য বিরাজমান। তখন দাবাকে চতুরঙ্গ বলার কারণ ছিল—খেলাটিতে হাতি, ঘোড়া, রথ ও সৈন্য এই চারটি অংশ ছিল। কিন্তু চতুরঙ্গ খেলাটা ‘দাবা’ হয়ে উঠতে অনেক সময় চলে গেছে, পাড়ি দিতে হয়েছে সমুদ্র। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে খেলাটা ছড়িয়ে পড়ল কীভাবে? আসলে ওই সময়ে পারস্যের সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল দারুণ। পারস্যের বণিকেরা খেলাটি দেখেন এবং বেশ পছন্দ করে ফেলেন। অতি উৎসুক কয়েকজন বেশ শোরগোল করে নিয়মকানুন শিখেও ফেলেন। পরবর্তীতে, পারস্যে এই খেলার উন্নয়ন সাধিত হয় এবং চতুরঙ্গ নামটা বদলে সেটিই হয়ে ওঠে ‘শতরঞ্জ’ (, ফার্সী: شترنگ‎)। নাহ, নামটা বদলে গেছে বলাটা ঠিক হলো না। আসলে পারস্য বর্ণমালাতে ‘চ’ এবং ‘গ’ না থাকায় সেটাই কালক্রমে ‘শ’ এবং ‘জ’-তে পরিণত হয়। তবে প্রায় একই সময় ভারত থেকে খেলাটি চীনেও পাড়ি দেয়। চীনারা এই খেলার নামকরণ করে জিয়ানকি বা শিয়াংচি (চীনা: 象棋, পিনয়িন: xiàngqí; ইংরেজি: Xiangqi), যা কিনা দাবারই আরেক নামান্তর! তবে চীন দাবি করে, জিয়ানকি তাদের নিজেদের উদ্ভাবিত খেলা। শুধু তাই নয়, দাবা খেলাটাও নাকি ভারতে নয়, চীনেই উদ্ভাবিত হয়েছে! যদিও ইতিহাসবিদেরা চীনের সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পাননি। অন্যদিকে শতরঞ্জ কিন্তু পারস্যে অলস বসে ছিলো না, সুযোগ বুঝে ঠিক পাড়ি জমিয়েছিলো স্পেনে! সে সময় স্পেনে ছিলো মুসলিম শাসনামল, যার বদৌলতে পারস্য থেকে খেলাটি খুব সহজেই স্পেনে শক্ত আসন গেঁড়ে বসে। তবে নামটা এখানে এসে বদলে যায় আরেকবার, এবার সেটা পর্তুগীজ ভাষায় হয়ে যায় ‘Xadrez’, যাকে ইংরেজিতে ‘Ajedrez’, ‘Acedrex’, ‘Axedrez’ বিভিন্নভাবে লেখা হয়। পারস্যের ‘শাহ-মাৎ’ নামটিও রেহাই পায়নি রূপান্তর থেকে। গ্রিসে ‘শাহ’ তথা রাজা শব্দটির পরিভাষা হচ্ছে ইয়াট্রিকিওন (Zatrikion), আর এই নামেই খেলাটি সেখানে প্রচলিত হয়। এছাড়া ল্যাটিন ভাষায় Ludus Scacchorum, ইতালিয়ান ভাষায় scacchi, কাতালান ভাষায় escacs, ফ্রেঞ্চ ভাষায় échecs, ওলন্দাজ ভাষায় schaken, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে দাবা বিভিন্ন নাম ধারণ করেছে। পরে ইউরোপে ও রাশিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এই খেলা, তবে এখানে নতুন নাম ‘চেস’। শব্দটি পুরাতন ফরাসি ভাষা ‘échecs’ (অর্থ চেক) থেকে উদ্ভূত। তবে শুধু নামেই নয়, খেলাটিতেও পরিবর্তন আসে অনেকটাই। ইউরোপে আসার পরই দাবায় প্রথমবারের মতো ‘বিশপ’ (হাতি) যুক্ত হয়, আরও পরে যোগ হয় ‘কুইন’ (রানি)। ধীরে ধীরে ‘চেস’ বা দাবা ইউরোপীয়দের মাধ্যমেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বোর্ডের গঠন দাবা বোর্ডে বর্গাকৃতি ৬৪টি সাদা-কালো ঘর থাকে। ঘরগুলোতে প্রতিটি খেলোয়াড়ের একটি করে রাজা বা কিং, মন্ত্রী বা কুইন, দু’টি করে - নৌকা বা রুক, ঘোড়া বা নাইট ও গজ বা বিশপ এবং ৮টি করে বোড়ে (পেয়াদা সৈন্য) বা পন সহ মোট ১৬টি গুটি থাকে। অর্থাৎ, দু'জন খেলোয়াড়ের সর্বমোট ৩২টি গুটি থাকে। র‌্যাঙ্ক বা সারিগুলোকে ইংরেজি 'ওয়ান' (1) থেকে 'এইট' (8) সংখ্যা দিয়ে এবং ফাইল বা স্তম্ভগুলোকে ইংরেজি 'এ' (a) থেকে 'এইচ' (h) বর্ণ দিয়ে নির্দেশ করা হয়। ফলে দাবার ছকের প্রতিটি ঘরকেই একটি অনন্য বর্ণ-সংখ্যা প্রতীক দিয়ে প্রকাশ করা যায়। দাবার নোটেশন বা লিপিবদ্ধকরণের এই পদ্ধতি খুবই কাজে আসে, কেননা এটি ব্যবহার করে যে-কোন দাবা খেলার সমস্ত চাল লিপিবদ্ধ করে ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করে নিজের ভুলগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা যায়। উদ্দেশ্য প্রতিপক্ষের রাজার বিরুদ্ধে কিস্তি বা চেক দেবার পর যদি রাজা চেক সরাতে না পারে এবং পরবর্তীতে যদি নড়াতে না পারে তবে কিস্তিমাৎ হয়ে খেলা শেষ হবে। একে চেক মেট বলা হয়। উৎপত্তি দাবা খেলার জন্ম ভারতবর্ষে বলে সর্বাধিক প্রচলিত মতবাদ । এছাড়া, পারস্য (বর্তমান ইরান) দেশে ৩য় শতাব্দীতে প্রচলিত শতরঞ্জ এবং চীন -এ ২য় শতাব্দীতে প্রচলিত শিয়াংছী নামক খেলাকে দাবার পূর্বসূরী হিসেবে গণ্য করার পক্ষেও মতামত আছে। কথিত আছে যে রাবনের স্ত্রী মন্দোদরী যুদ্ধে নিবৃত করার জন্য রাবনের সাথে দাবা খেলতেন। পুরাণ অনুযায়ী রাবনের স্ত্রী মন্দোদরী এই খেলা আবিস্কার করেন। প্রাচীন ভারতীয় খেলা হিসেবে দাবার সংস্কৃত শব্দ শতরঞ্জ খেলাটি পরিবর্তিতরূপে পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপে পরিমার্জিত হয়ে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। ক্রীড়াবিদেরা দাবার কৌশল এবং বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগে খেলাটির ধারাই পরিবর্তন করে দিয়েছেন। অনেক বছর ধরে দাবা খেলার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে কম্পিউটারের সহযোগিতা নিচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। তেমনি একটি হলো – ডীপ ব্লু। এটিই ১ম যন্ত্রচালিত প্রোগ্রাম যা তৎকালীন বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভকে ১৯৯৭ সালে পরাজিত করে। বিশ্ব শিরোপা সংগঠিত ও নিয়ন্ত্রিত ক্রীড়া হিসেবে দাবা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ষোড়শ শতকে। বিশ্ব দাবা প্রতিযোগিতায় ১৮৮৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ১ম শিরোপাধারী হন উইলিয়াম স্টেইনজ। বর্তমান শিরোপাধারী হলেন –চীনের ডিং লিরেন। দাবা প্রতিযোগিতাসমূহ দাবা প্রতিযোগিতা হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপের পাশাপাশি প্রমিলা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ, জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ, বিশ্ব সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশীপ, করেসপন্ডেন্স দাবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ, বিশ্ব কম্পিউটার দাবা চ্যাম্পিয়নশীপ এবং ব্লিটজ এন্ড র‌্যাপিড ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশীপ (দ্রুতগতির দাবা) অন্যতম। তবে দাবা অলিম্পিয়াডে দলগতভাবে বিভিন্ন দেশের মধ্যেকার খেলা জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। অনলাইনভিত্তিক দাবা শৌখিন ও পেশাধারী প্রতিযোগিতা হিসেবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দাবা সংস্থার নিয়ন্ত্রক দাবা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত খেলা। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ও ফিদে আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বর্তমানে দাবা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাড়ীতে, ক্লাবে, টুর্ণামেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় লক্ষ লক্ষ দাবাড়ু অংশগ্রহণ করে। নির্দিষ্ট নিয়মের বাইরেও বিভিন্ন ধরনের নিয়ম-কানুন প্রয়োগ করে খেলা হয়ে থাকে। নিয়ম-কানুন বিশ্ব দাবা ফেডারেশন বা ফিদে কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম-কানুন দাবা খেলায় প্রয়োগ করা হয়। স্বীকৃত দাবা প্রতিযোগিতাগুলো ফিদে হ্যাণ্ডবুকে বর্ণিত নিয়মে পরিচালিত হয়। দাবা টুর্নামেন্টের নিয়মকানুন দিয়ে যেভাবে খেলতে হয় অনেক টুর্নামেন্টে সাধারণ ও একই রকম কিছু নিয়ম অনুসরণ করা হয়। বাসায় বা অনলাইনে খেলার ক্ষেত্রে এই নিয়মগুলো সাধারণত মানা হয়না, কিন্তু আপনি সেগুলো যেকোনো উপায়ে অনুশীলন করতে চাইতে পারেন। স্পর্শ-চাল- যদি কোনো খেলোয়াড় তার নিজের কোনো গুটি ধরেন, তাহলে তাকে ঐ গুটিই চালাতে হবে যদি কোনো বৈধ চাল থাকে। যদি একজন খেলোয়াড় তার প্রতিপক্ষের কোনো গুটি ধরেন তাহলে তাকে ঐ গুটি খেতে হবে। যদি কোনো খেলোয়াড় বোর্ডে সমন্বয় করার জন্য গুটি ধরতে চান, তাহলে তার ইচ্ছার কথা ঘোষণা দিয়ে নিতে হবে, সাধারণত ধরার আগে "সমন্বয়" বলে। ঘড়ি ও সময়ের মানদণ্ডঅধিকাংশ টুর্নামেন্টে ঘড়ি ব্যবহার করা হয় প্রতিটি খেলার সময় বেঁধে দেওয়ার জন্য, নির্দিষ্ট চালের সময় মাপার জন্য জন্য নয়। প্রত্যেক খেলোয়াড়কে পুরো খেলা শেষ করার জন্য সমান সময় বরাদ্দ করা হয় এবং তিনি নিজের ইচ্ছেমতো তা ব্যবহার করতে পারেন। একজন খেলোয়াড় নিজের চাল দেবার পর একটি বোতাম টিপে অথবা একটি হাতলে চাপ দিয়ে প্রতিপক্ষের ঘড়ি সচল করে দেন। যদি কোনো খেলোয়াড়ের নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে যায় এবং তার প্রতিপক্ষ সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তাহলে যার সময় শেষ হয়ে গেছে তিনি পরাজিত হবেন (এক্ষেত্রে তার প্রতিপক্ষের কাছে কিস্তিমাত করার মতো যথেষ্ট গুটি থাকতে হবে, নইলে খেলাটি ড্র হবে)। গুটি স্থাপনা দাবা খেলা বর্গাকৃতি ৮টি রো ও ৮টি কলামে মোট ৬৪টি ঘরের সমষ্টিতে তৈরী বোর্ডে হয়ে থাকে। রো-গুলো রেংক বা ‍সারি হিসেবে ১ থেকে ৮ সংখ্যায় নির্ধারিত এবং কলামগুলো ফাইল হিসেবে যা ইংরেজি অক্ষর এ থেকে এইচ পর্যন্ত হয়ে থাকে। দাবা বোর্ড কাগজের, কাঠের, প্লাস্টিকের তৈরী হয়ে থাকে। ৬৪টি বর্গাকৃতি ঘরগুলো দু’ধরনের হয়। একটি হালকা এবং অন্যটি গাঢ় কিংবা একটি সাদা এবং অন্যটি কালো। সাধারণতঃ ঘরগুলোর সাথে মিল রেখে ঘরগুলোর রং হয়। তবে দু’দলের মন্ত্রী বা কুইনের রং হবে নিজ ঘরের রংয়ে। গুটিগুলো দুই অংশে বিভক্ত। তাহলো সাদা এবং কালো সেট। খেলোয়াড়দের পরিচিতি হয় ‘সাদা’ এবং ‘কালো’। গুটি পরিচালনা পাশ্চাত্য নিয়ম মতে সাদা গুটি সর্বদা প্রথম চালানো হয়। এরপর থেকেই একটি গুটির পর অন্য দলের গুটি চালানো হয়। ব্যতিক্রম হিসেবে ক্যাসলিঙের সময় দু’টি গুটি পরিচালিত হয়। খালি জায়গায় গুটি চালাতে হয় অথবা প্রতিপক্ষের গুটি দখল করে ঘর থেকে বাইরে উচ্ছেদ করা হয়। একমাত্র অঁ পাঁসা নিয়ম ছাড়া, বাকি সব ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের গুটিকে উচ্ছেদ করতে গুটিটির অধিকৃত ঘর দখল করা হয়। যদি কোন কারণে গুটি পরিচালনা করা না যায় তাহলে অমীমাংসিত ভাবে খেলা শেষ হয়। প্রতিপক্ষের রাজা আক্রান্ত হয়ে কোন ঘরে যাওয়ার সুযোগ না থাকলে কিস্তিমাত বা চেকমেটের সাহায্যে খেলা শেষ করা হয়। প্রতিটি দাবার গুটির নিজস্ব চলাচলের শর্ত রয়েছে। রাজা শুধু তার ঘরের সাথে সংযুক্ত যে কোন একটি ঘরে যেতে পারে। তবে বিশেষ শর্তে নৌকা সাথে ঘর পরিবর্তন করতে পারে যা ক্যাসলিং নামে পরিচিত। নৌকা অন্য গুটিকে অতিক্রম না করে সোজাসুজি ভাবে যে কোন ঘরে যেতে পারে। তবে বিশেষ শর্তে রাজার সাথে ঘর পরিবর্তন করতে পারে যা ক্যাসলিং নামে পরিচিত গজ যে-কোনো অন্য গুটিকে অতিক্রম না করে আড়াআড়ি ঘরে যেতে পারে। মন্ত্রী, নৌকা এবং হাতির সমন্বিত শক্তি হিসেবে অন্য গুটিকে অতিক্রম না করে সোজাসুজি কিংবা আড়াআড়ি যে কোন ঘরে যেতে পারে। ঘোড়া কাছাকাছি দু’ঘর গিয়ে ডানে কিংবা বামের অন্য ঘরে যেতে পারে। ঘোড়ার চলন ইংরেজি এল অক্ষরের মতো। ঘোড়ার বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে যে একমাত্র এ গুটিই যে কোন গুটিকে অতিক্রম করে অন্য ঘরে যেতে পারে। বোড়ে নিজস্ব ফাইলে এক ঘর করে অগ্রসর হয়। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে নিজস্ব ঘর থেকে ইচ্ছে করলে দু’ঘর সামনে যেতে পারে যদি ঘরগুলো খালি থাকে কিংবা প্রতিপক্ষের গুটিকে কেটে আড়াআড়ি অন্য ঘরে যেতে পারে। তবে সামনে যদি প্রতিপক্ষের বোড়ে থাকে তবে আর অগ্রসর হতে পারবে না। বোড়ের অঁ পাঁসা ও পদোন্নতি নামে দুটি বিশেষ পরিচালনা পদ্ধতি আছে। বোড়ের পদোন্নতি যখন একটি বোড়ে ৮ম রাঙ্কে যায়, তখনই খেলোয়াড় ইচ্ছে করলে এর পরিবর্তে নিজ দলের মন্ত্রী, নৌকা, হাতি কিংবা ঘোড়ার গুটি বোর্ডে আনতে পারেন। সাধারণতঃ বোড়ে উত্তরিত হয়ে মন্ত্রীতে রুপান্তরিত হয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদি অন্য গুটি পছন্দ করা হয়, তখন তা আণ্ডার প্রমোশন নামে পরিচিত হয়। অঁ পাঁসা যখন একটি বোড়ে তার শুরুর দানে দুই ঘরে এগিয়ে যায় এবং সেই ঘরের পাশের ফাইলে প্রতিপক্ষের বোড়ে থাকে, তখন অঁ পাঁসা দানের সাহায্যে প্রতিপক্ষের বোড়ে প্রথম বোড়েকে উচ্ছেদ করতে পারে। এই দানে প্রতিপক্ষের বোড়েটিকে প্রথম বোড়ের পেছনের ঘরে আড়াআড়ি ভাবে নিয়ে যাওয়া হয়। এই দান প্রথম বোড়ের ঠিক পরের দানেই সম্ভব। ক্যাসলিং রাজা সাধারণতঃ শুধু তার ঘরের সাথে সংযুক্ত যে কোন একটি ঘরে যেতে পারে। তবে বিশেষ শর্তে প্রতি খেলায় মাত্র একবারের জন্য ক্যাসলিং নামক এক বিশেষ চালের সুযোগ পায়। প্রথম সারিতে থাকা রাজা প্রথম সারিতে থাকা নৌকার দিকে দুই ঘর যেতে পারে এবং ঐ একই দানে নৌকা রাজা দানটির সময় যে ঘর অতিক্রম করছিল, সেই ঘরে চলে যেতে পারে। ক্যাসলিং তখনই সম্ভব যখন নিম্নলিখিত পূর্বশর্তগুলি বজায় থাকে খেলা চলাকালে রাজা ও নৌকা কোন ঘরেই নড়াচড়া করলে ক্যাসলিং হবে না, রাজা ও নৌকার মাঝে অন্য কোন গুটি থাকতে পারবে না, রাজা কিস্তিপ্রাপ্ত অবস্থায় থাকতে পারবে না, বা সেই ঘরে যেতে পারবে না যে ঘরে গেলে কিস্তিপ্রাপ্ত হতে হয়, বা সেই ঘরগুলি অতিক্রম করতে পারবে না যেগুলি বিপক্ষের গুটি দ্বারা আক্রান্ত অবস্থায় আছে। আবার ক্যসলিং ২ প্রকারের হয়ে থাকে। ১) শর্ট/কিংসাইড ক্যাসলিংঃ রাজা তার নিজ পাশের নৌকার সাথে যখন ক্যাসলিং সম্পন্ন করে। এর নোটেশন O-O ভাবে করা হয়। ২) লং/কুইনসাইড ক্যাসলিংঃ রাজা যখন মন্ত্রীর পাশের নৌকার সাথে ক্যাসলিং সম্পন্ন করে। এর নোটেশন O-O-O ভাবে করা হয়। খেলা ড্র মাঝেমাঝে দাবা খেলায় জয় পরাজয় হয় না, ড্র হয়। দাবা খেলা ড্র হওয়ার কয়েকটি কারণ আছে: স্টেলমেট হয় তখন যখন একজন খেলোয়াড়ের চাল, কিন্তু তার রাজা চেক-এ না থাকার পরও তার কোন বৈধ চাল থাকেনা। অর্থাৎ রাজা নিজের ঘরে সুরক্ষিত, কিন্তু রাজা কোনো ঘরে এগোতে পারবেনা কারণ তার চারপাশে প্রত্যেকটি ঘর অসুরক্ষিত। খেলোয়াড়রা যেকোনো সময়ে ড্র-তে সম্মত হতে পারেন এবং খেলা থামিয়ে দিতে পারেন। দুই খেলোয়ারের কাছেই চালমাত করানোর জন্য যথেষ্ট গুটি বোর্ডে নেই (উদাহরণ: রাজা এবং হাতি বনাম শুধু রাজা) বা এক খেলোয়ারের কাছে চালমাত করানোর জন্য যথেষ্ট গুটি থাকলেও তার সময় শেষ হয়ে গেছে এবং প্রতিপক্ষের কাছে চালমাত করানোর জন্য যথেষ্ট গুটি নেই। একজন খেলোয়াড় হুবহু একই অবস্থান তিনবার পুনরাবৃত্তি করলে (সেটা পর পর তিনবার নাও হতে পারে) খেলায় ড্র ঘোষণা করা হয়। একজন খেলোয়াড়ের শুধু রাজা থাকা অবস্থায় ১৬ চালের মধ্যে খেলা শেষ করতে না পারলে ড্র ঘোষণা করা হয়। পরপর পঞ্চাশ চাল খেলা হয়েছে যেখানে কোন খেলোয়াড়ই কোন সৈন্য চালায়নি বা কোন গুটি খায়নি। সময় নিয়ন্ত্রণ অপেশাদার এবং ঘরোয়া দাবা খেলাতে কোনো নির্দিষ্ট সময় থাকে না। কিন্তু পেশাদার দাবা খেলায় নির্দিষ্ট সময় দেয়া থাকে। কিছু বিখ্যাত দাবা খেলার উদাহরণ অমর গেম: এডল্ফ এনডারসন এবং লিওনেল কিয়েসেরিতস্কি (১৮৫১) চিরসবুজ গেম: এডল্ফ এনডারসন এবং জঁ দুফ্রেস্নে (১৮৫২) অপেরা গেম: পল মর্ফি এবং দুই মিত্র, ব্রানস্‌উইক-এর ডিউক ও কাউন্ট ইসুয়ার্ড (১৮৫৮) লস্কর এবং বাওয়ার, এমস্টার্ড্যাম, ১৮৮৯, বিখ্যাত জোড়া হাতি বিসর্জনের প্রথম উদাহরণ শতাব্দীর সেরা গেম: ববি ফিশার এবং ডোনাল্ড বায়ার্ন (১৯৫৬) ডীপ ব্লু এবং কাসপারভ, ১৯৯৬, ১ম খেলা। ইতিহাসের প্রথম খেলা যাতে একটি কম্পিউটার বিশ্বসেরা দাবাড়ুকে পরাজিত করে (১৯৯৬) কাসপারভ বনাম বিশ্ব, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কাসপারভ ইন্টারনেটের সহায়তায় ঐক্যবদ্ধ বিশ্বের সাথে খেলেন (১৯৯৯) দাবা ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশে দাবা খেলার পথিকৃৎ হিসেবে আছেন কাজী মোতাহার হোসেন। তাকে স্মরণ করেই আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়। কয়েকজন গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ, জিয়াউর রহমান,রাণী হামিদ ও রিফাত বিন সাত্তার (বাংলাদেশ); বিশ্বনাথন আনন্দ, দিব্যেন্দু বড়ুয়া, সূর্য্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায় (ভারত); ববি ফিশার (যুক্তরাষ্ট্র); নাইজেল শর্ট (ইংল্যান্ড), কাসপারভ ও কারপভ (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন), ম্যাগনাস কার্লসেন (নরওয়ে) । বিবিধ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশসমূহ দাবাড়ুদের দেশ হিসেবে চিহ্নিত। সাধারণতঃ গণিতে অভিজ্ঞরাই দাবা খেলায় উন্নতি করতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা দাবী করে থাকেন। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, এ খেলায় নারীদের তুলনায় পুরুষদের অংশগ্রহণের হার খুব বেশি। শতকরা ৯৮ জন পুরুষ দাবা খেলায় অংশ নেন; যেখানে নারীদের অংশগ্রহণ মাত্র ২%। ব্যবহৃত পরিভাষা কিস্তি, বড়ে, পন, কিং, কুইন, রুক, বিশপ, ক্যাসলিং, নাইট, চেক, স্টেলমেট, গামবিট, র‌্যাংক, অঁ পাঁসা, বোর্ড। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ International organizations FIDE – World Chess Federation ICCF – International Correspondence Chess Federation খবর Chessbase news The Week in Chess ইতিহাস Chesshistory.com বিমূর্ত কৌশল খেলা একক ক্রীড়া ভারতীয় উদ্ভাবন ঐতিহ্যবাহী ছকের খেলা আংশিকভাবে সমাধান করা গেম চতুরঙ্গ সম্পর্কিত খেলা
https://en.wikipedia.org/wiki/Chess
Chess
Chess is a board game for two players. It is sometimes called international chess or Western chess to distinguish it from related games such as xiangqi (Chinese chess) and shogi (Japanese chess). Chess is an abstract strategy game that involves no hidden information and no elements of chance. It is played on a chessboard with 64 squares arranged in an 8×8 grid. The players, referred to as "White" and "Black", each control sixteen pieces: one king, one queen, two rooks, two bishops, two knights, and eight pawns. White moves first, followed by Black. The game is won by checkmating the opponent's king, i.e. threatening it with inescapable capture. There are several ways a game can end in a draw. The recorded history of chess goes back at least to the emergence of a similar game, chaturanga, in seventh-century India. After its introduction in Persia, it spread to the Arab world and then to Europe. The rules of chess as they are known today emerged in Europe at the end of the 15th century, with standardization and universal acceptance by the end of the 19th century. Today, chess is one of the world's most popular games and is played by millions of people worldwide. Organized chess arose in the 19th century. Chess competition today is governed internationally by FIDE (Fédération Internationale des Échecs; the International Chess Federation). The first universally recognized World Chess Champion, Wilhelm Steinitz, claimed his title in 1886; Ding Liren is the current World Champion. A huge body of chess theory has developed since the game's inception. Aspects of art are found in chess composition, and chess in its turn influenced Western culture and the arts, and has connections with other fields such as mathematics, computer science, and psychology. One of the goals of early computer scientists was to create a chess-playing machine. In 1997, Deep Blue became the first computer to beat the reigning World Champion in a match when it defeated Garry Kasparov. Today's chess engines are significantly stronger than the best human players and have deeply influenced the development of chess theory; however, chess is not a solved game.
1114
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE
ধর্ম
ধর্ম ( ধর্‌মো) হলো একাধিক অর্থবাচক একটি শব্দ; সাধারণত এটি দ্বারা সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার একটি পরিসরকে বোঝায়, যার মধ্যে রয়েছে মনোনীত আচরণ ও অনুশীলন, নৈতিকতা, বিশ্বাস, বিশ্বদর্শন, পাঠ্য, পবিত্র স্থান, ভবিষ্যদ্বাণী, নীতিশাস্ত্র বা সংগঠন, যা সাধারণত মানবতাকে অতিপ্রাকৃত, অতীন্দ্রিয় ও আধ্যাত্মিক উপাদানের সাথে সম্পর্কিত করে—যদিও ধর্ম সুনির্দিষ্টভাবে কীসের সমন্বয়ে গঠিত হয় তা নিয়ে পণ্ডিতদের মাঝে কোনো ঐক্যমত নেই। তবে ভারতীয় দর্শনে, ধর্ম বলতে সাধারণত প্রাকৃতিক ও মহাজাগতিক নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন, শৃঙ্খলা, আচরণ, নৈতিক গুণাবলি ও কর্তব্য, অনুশীলন এবং জীবনযাত্রাকে বোঝায়। বিভিন্ন ধর্মে ঐশ্বরিকতা, পবিত্রতা, আধ্যাত্মিক বিশ্বাস ও এক বা একাধিক অতিপ্রাকৃতিক সত্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপাদান থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। ধর্মীয় অনুশীলনের মধ্যে থাকতে পারে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, উপদেশ, স্মরণ বা উপাসনা (দেবতা বা সাধুদের), বলিদান, উৎসব, ভোজন, সমাধি, দীক্ষা, বিবাহ ও শেষকৃত্য, ধ্যান, প্রার্থনা, সঙ্গীত, শিল্পকলা, নৃত্য বা জনসেবামূলক কাজ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। বিভিন্ন ধর্মের পবিত্র ইতিহাস ও আখ্যান রয়েছে, যা পবিত্র গ্রন্থ, প্রতীক ও পবিত্র স্থানগুলোতে সংরক্ষিত হতে পারে, যার প্রাথমিকভাবে উদ্দেশ্য জীবনের অর্থ প্রদান। ধর্মে প্রতীকী গল্প থাকতে পারে যা হয়ত চেষ্টা করে জীবনের উৎপত্তি, মহাবিশ্ব ও অন্যান্য ঘটনা ব্যাখ্যা করতে; এ সকল ধর্মের কিছু অনুসারী এগুলোকে সত্য গল্প বলে বিশ্বাস করে; অন্যরা এগুলোকে পৌরাণিক কাহিনি হিসেবে বিবেচনা করে। ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বাস ও যুক্তি উভয়কেই ধর্মীয় বিশ্বাসের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ১০,০০০ টি স্বতন্ত্র ধর্ম রয়েছে, যদিও তন্মধ্যে প্রায় প্রত্যেকটি ধর্মই অঞ্চল ভিত্তিক, যেগুলোর অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র অনুসারী রয়েছে। চারটি ধর্ম—খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম, হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম—বিশ্বের জনসংখ্যার ৭৭% মানুষ অনুসরণ করে এবং বিশ্বের ৯২% মানুষ হয় এই চারটি ধর্মের যেকোনো একটি অনুসরণ করে নতুবা নিজেদের ধর্মহীন হিসেবে পরিচয় দেয়, অর্থাৎ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮% বাকি ৯,০০০+ বিশ্বাস অনুসরণ করে। ধর্মীয়ভাবে অসংলগ্ন লোকেদের মাঝে রয়েছে যাঁরা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন না, নাস্তিক ও অজ্ঞেয়বাদীরা, যদিও এদের অনেকেই তবু্ও বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী। অনেক বৈশ্বিক ধর্মসমূহ সংগঠিত ধর্মও বটে, যার মধ্যে রয়েছে খ্রিস্টান, ইসলাম ও ইহুদি ধর্মের মতো ইব্রাহিমীয় ধর্মসমূহ, যেখানে অন্যান্য ধর্মগুলো যৌক্তিকভাবে স্বল্প সংগঠিত, বিশেষ করে লোকধর্ম, আদিবাসী ধর্ম এবং কিছু প্রাচ্য ধর্ম। বিশ্বের জনসংখ্যার একটি অংশ নতুন ধর্মীয় আন্দোলনের অনুসারী। পণ্ডিতরা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ধর্মীয় দেশগুলোর সাধারণত উচ্চ জন্মহারের কারণে বিশ্বব্যাপী ধার্মিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্মের অধ্যয়নে ধর্মতত্ত্ব, ধর্মের দর্শন, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব ও সামাজিক বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শাখা রয়েছে। ধর্মের তত্ত্বসমূহ ধর্মীয় সত্তা ও বিশ্বাসের সত্তাতত্ত্বের ভিত্তিসহ এর উৎস ও কাজের জন্য বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করে। ব্যুৎপত্তি ও ধারণাটির বিকাশ ব্যুৎপত্তি বাংলায় ব্যবহৃত ধর্ম শব্দটি একটি তৎসম তথা সংস্কৃত শব্দ, এর উৎপত্তি √ধৃ ধাতু হতে, যার অর্থ "ধারণ" বা "বহন"। সংস্কৃত ধর্ম শব্দটিও প্রচলিত অর্থে ধর্মকে নির্দেশ করে, তবে এই দিক থেকে, এর অর্থ দাঁড়ায় "যা প্রতিষ্ঠিত বা দৃঢ়", অতএব এর অর্থ "আইন"। এটি একটি পুরাতন বৈদিক সংস্কৃত শব্দ ধর্মন্‌- (-ন্‌ কান্ডযুক্ত), যার আক্ষরিক অর্থ "ধারক, বাহক", এটি ধর্মীয় দৃষ্টিতে ঋতের একটি দিক হিসেবে কল্পিত হয়। সংস্কৃত ধর্ম ধর্ম শব্দটি ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্মের সময় থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে এবং এর অর্থ ও ধারণা বেশ কয়েক সহস্রাব্দ যাবত বিবর্তিত হয়েছে। ঋগ্বেদে, শব্দটি -ন্‌ কান্ডযুক্ত ধর্মন্‌ হিসেবে আবির্ভূত হয়, যার অর্থের একটি পরিসরের মাঝে রয়েছে "প্রতিষ্ঠিত বা দৃঢ় কিছু" (আক্ষরিক অর্থে শঙ্কু বা খুঁটি, রূপকার্থে "টেকসই" ও (দেবতাদের) "বাহক")। শাস্ত্রীয় সংস্কৃত ও অথর্ববেদের বৈদিক সংস্কৃতে শব্দটির শেষে -ন্‌ কান্ডের ব্যবহার বিষয়ভিত্তিক: ধর্ম (দেবনাগরী: धर्म)। প্রাকৃত ও পালি ভাষায় একে ধম্ম হিসেবে লেখা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে মৌর্য সম্রাট অশোক ধর্ম শব্দকে গ্রিক ও আরামীয় ভাষায় অনুবাদ করেন এবং তিনি কান্দাহার দ্বিভাষিক প্রস্তর শিলালিপি ও কান্দাহার গ্রিক অনুশাসনে ধর্ম-এর জন্য গ্রিক শব্দ ইউসেবিয়া (εὐσέβεια, ভক্তি, আধ্যাত্মিক পরিপক্কতা বা দেবানুগত্য) ব্যবহার করেন। কান্দাহার দ্বিভাষিক প্রস্তর শিলালিপিতে তিনি আরামীয় শব্দ קשיטא (qšyṭ'; সত্য, ন্যায়পরায়ণতা) ব্যবহার করেন। বৈশিষ্ট্য অর্থে ধর্ম বলতে কখনো কখনো কোনো প্রাণী বা বস্তুর বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়। তবে এর ব্যবহার বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র পর্যন্তই সীমাবদ্ধ, যেমন: মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম। "ধর্ম" ধারণাটির ইতিহাস ধর্ম একটি আধুনিক ধারণা। ধর্মের আধুনিক ও বৈশ্বিক ধারণাটি ইউরোপীয়দের নিকট থেকে উদ্ভুত হয়েছে। তবে ইউরোপীয়দের মাঝেও ধারণাটি সাম্প্রতিককালের।প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারের সময় খ্রিস্টীয় বিশ্বের বিভক্তি ও আবিষ্কারের যুগে বিশ্বায়নের মতো ঘটনার কারণে ১৭ শতকের ইউরোপীয় পাঠ্যগুলোতে "ধর্ম" শব্দটির আধুনিক ব্যবহার পাওয়া যায়, যা অ-ইউরোপীয়দের সাথে অসংখ্য বিদেশী সংস্কৃতির সাথে যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট ছিল। কেউ কেউ যুক্তি দেন যে এর সংজ্ঞা যাই হোক না কেন, অ-পশ্চিমা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ধর্ম শব্দটি প্রয়োগ করা উপযুক্ত নয়, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের কিছু অনুসারী তাঁদের নিজস্ব বিশ্বাস ব্যবস্থাকে বর্ণনা করার জন্য শব্দটি ব্যবহার করে তিরস্কার করেন। "প্রাচীন ধর্ম" এর ধারণাটি অনুশীলনের একটি পরিসরের আধুনিক ব্যাখ্যা থেকে উদ্ভূত যা ধর্মের একটি আধুনিক ধারণার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যা আধুনিক ও ১৯ শতকের প্রথম দিকের খ্রিস্টীয় বক্তৃতা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। ধর্মের ধারণাটি ১৬ ও ১৭ শতকে গঠিত হয়েছিল, যদিও বাইবেল, কুরআন ও অন্যান্য প্রাচীন পবিত্র গ্রন্থের মূল ভাষাগুলোতে ধর্মের জন্য কোনো শব্দ বা এমনকি এর কোনো ধারণাও ছিল না এবং যে সংস্কৃতি ও মানুষের মাঝে এই পবিত্র গ্রন্থগুলো লেখা হয়েছিল তাঁদের মাঝেও ধর্মের কোনো ধারণা ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, হিব্রুতে ধর্ম শব্দটির কোনো সুনির্দিষ্ট সমতুল্য নেই এবং ইহুদি ধর্মে ধর্ম, বর্ণ, জাতি বা জনগোষ্ঠী পরিচয়ের মধ্যে স্পষ্টভাবে পার্থক্য করা হয় না। ইহুদিদের কেন্দ্রীয় ধারণাগুলোর মধ্যে একটি হলো হালাখা, যার অর্থ হাঁটা বা পথ কখনো কখনো আইন হিসেবেও অনূদিত হয়, যা ধর্মীয় অনুশীলন ও বিশ্বাস এবং দৈনন্দিন জীবনের অনেক দিক নির্দেশ করে। যদিও ইহুদি ধর্মের বিশ্বাস ও ঐতিহ্যগুলো প্রাচীন বিশ্বে পাওয়া যায়, প্রাচীন ইহুদিরা তাঁদের ইহুদি পরিচয়কে একটি জাতিগত বা জাতীয় পরিচয় হিসেবে দেখতো এবং তাঁদের সংস্কৃতিতে একটি বাধ্যতামূলক বিশ্বাস ব্যবস্থা বা নিয়ন্ত্রিত আচার-অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হয় নি। খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দীতে, জোসেফাস গ্রিক শব্দ ioudaismos (ইহুদি ধর্ম)-কে একটি জাতিগত শব্দ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন এবং এটি ধর্মের আধুনিক বিমূর্ত ধারণা অথবা বিশ্বাসের একটি গুচ্ছে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল না। "ইহুদি ধর্ম"-এর ধারণাটি খ্রিস্টীয় চার্চ কর্তৃক উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং ১৯ শতকে ইহুদিরা তাঁদের পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতিকে খ্রিস্টধর্মের অনুরূপ একটি ধর্ম হিসেবে দেখতে শুরু করে। গ্রিক শব্দ threskeia, যা হেরোডোটাস ও জোসেফাসের মতো গ্রীক লেখকরা ব্যবহার করেছিলেন, বাইবেলের নতুন নিয়মে পাওয়া যায়। আজকের অনুবাদে threskeia কখনো কখনো "ধর্ম" হিসেবে অনূদিত হয়, তবে শব্দটি মধ্যযুগে সাধারণত "উপাসনা" হিসেবে অনূদিত হত। কুরআনে আরবি শব্দ দ্বীনকে প্রায়ই আধুনিক অনুবাদে ধর্ম হিসেবে অনূদিত হয়, কিন্তু ১৬০০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত অনুবাদকরা দ্বীনকে "আইন" হিসেবে অনুবাদ করতেন। তদ্রূপ সংস্কৃত শব্দ ধর্মকেও কখনো কখনো আধুনিক অর্থে ধর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়, এর অন্যতম অর্থ আইন। ধ্রুপদী যুগের দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে ধর্মশাস্ত্রে প্রায়শ্চিত্ত ও আচারের মতো ধারণাও ছিল। মধ্যযুগীয় জাপানে প্রথমে রাজকীয় আইন ও সার্বজনীন বা বৌদ্ধ আইনের মধ্যে একটি অনুরূপ সংযুক্তি তৈরি হয়, কিন্তু পরবর্তীতে এসব ক্ষমতার স্বাধীন উৎস হয়ে উঠে। যদিও প্রথা, পবিত্র গ্রন্থ ও অনুশীলনগুলো যুগব্যাপী বিদ্যমান ছিল, বেশিরভাগ সংস্কৃতি ধর্মের পাশ্চাত্য ধারণার সাথে সারিবদ্ধ ছিল না কারণ তারা পবিত্রতা থেকে দৈনন্দিন জীবনকে পৃথক করেনি। ১৮ ও ১৯ শতকে বৌদ্ধধর্ম, হিন্দুধর্ম, তাওবাদ, কনফুসীয়বাদ ও বিশ্বধর্ম শব্দগুলো প্রথম ইংরেজি ভাষায় প্রবেশ করে। নেটিভ আমেরিকানদেরও মনে করা হত যে, তাঁদের কোনো ধর্ম নেই এবং তাঁদের ভাষায়ও ধর্মের জন্য কোনো অনুরূপ শব্দ ছিল না। ১৮০০-এর আগে কেউ একজন হিন্দু বা বৌদ্ধ বা অন্যান্য অনুরূপ নামে স্ব-পরিচয় পায়নি। "হিন্দু" শব্দটি ঐতিহাসিকভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের আদিবাসীদের জন্য ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক ও পরবর্তীতে ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য শনাক্তকারী শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। জাপানের সুদীর্ঘ ইতিহাসে ধর্মের কোনো ধারণা ছিল না যেহেতু ধর্মের অনুরূপ কোনো জাপানি শব্দ ছিল না বা এর অর্থের কাছাকাছি কিছু ছিল না, কিন্তু ১৮৫৩ সালে যখন মার্কিন যুদ্ধজাহাজ জাপানের উপকূলে উপস্থিত হয়েছিল এবং জাপান সরকারকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ধর্মের স্বাধীনতার দাবিতে চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছিল, তখন দেশটির এই ধারণাটির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছিল। ১৯ শতকের সাংস্কৃতিক ভাষাতাত্ত্বিক ম্যাক্স মুলারের মতে ইংরেজি শব্দ religion লাতিন ক্রিয়ামূল religiō মূলত ঈশ্বর বা দেবতাদের প্রতি শ্রদ্ধা, ঐশ্বরিক জিনিসের যত্নশীল চিন্তাভাবনা, ধার্মিকতা বোঝাতে ব্যবহৃত হতো (যার থেকে সিসারো পরিশ্রম অর্থে আরও উদ্ভুত করেছেন)। মুলার মিশর, পারস্য ও ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য অনেক সংস্কৃতিকে ইতিহাসের এই বিষয়ে একই রকম অনুক্রমের বৈশিষ্ট্যযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেন। আজ যাকে প্রাচীন ধর্ম বলা হয়, তাঁরা কেবল তাকে আইন বলতো। সংজ্ঞা পণ্ডিতগণ ধর্মের সংজ্ঞা নিয়ে একমত হতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে, দুটি সাধারণ সংজ্ঞা ব্যবস্থা রয়েছে: সমাজতাত্ত্বিক/কার্যকরী এবং ঘটনাগত/দার্শনিক। আধুনিক পাশ্চাত্য মতবাদ ধর্মের ধারণার উৎপত্তি আধুনিক যুগে পাশ্চাত্য সভ্যতায়। বিভিন্ন দিক বিশ্বাস ধর্মীয় বিশ্বাসের উৎপত্তি একটি মুক্ত প্রশ্ন, যার সম্ভাব্য ব্যাখ্যাসমূহের মাঝে রয়েছে ব্যক্তিমৃত্যুর সচেতনতা, সাম্প্রদায়িক চেতনা ও স্বপ্ন। ঐতিহ্যগতভাবে, যুক্তির পাশাপাশি আধ্যাত্মিক বিশ্বাসও ধর্মীয় বিশ্বাসের উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বিশ্বাস ও যুক্তির মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিপাদন হিসেবে এদের ব্যবহার দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিকদের আগ্রহের বিষয়। পৌরাণিক কাহিনি পুরাণ শব্দের বিভিন্ন অর্থ রয়েছে: দৃশ্যত ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহের একটি ঐতিহ্যবাহী গল্প যা একজন মানুষের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি অংশকে উন্মোচন করে অথবা একটি অনুশীলন, বিশ্বাস বা প্রাকৃতিক ঘটনা ব্যাখ্যা করে; একজন ব্যক্তি বা একটি বস্তু যার কেবল একটি কাল্পনিক বা যাচাই-অযোগ্য অস্তিত্ব রয়েছে; বা মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক সম্ভাবনার জন্য একটি রূপক। প্রাচীন বহু-ঈশ্বরবাদী ধর্মসমূহ যেমন গ্রিস, রোম ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ধর্মসমূহকে সাধারণত পৌরাণিক কাহিনি শিরোনামে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। একইভাবে প্রাক-শিল্প জনগণের ধর্ম, বা উন্নত অর্থে সংস্কৃতিকে, ধর্মের নৃবিজ্ঞানে পুরাণ বলা হয়। পুরণ শব্দটি ধার্মিক ও অ-ধর্মীয় উভয় সম্প্রদায় কর্তৃক নিন্দনীয় অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে। কেউ অন্য ব্যক্তির ধর্মীয় গল্প ও বিশ্বাসকে পৌরাণিক কাহিনি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে বোঝাতে চায় যে সেগুলো তাঁর নিজের ধর্মীয় গল্প ও বিশ্বাসের চেয়ে কম বাস্তব বা সত্য। জোসেফ ক্যাম্পবেল মন্তব্য করেছেন, "পৌরাণিক কাহিনিকে প্রায়শই অন্যান্য মানুষের ধর্ম হিসেবে মনে হয়, এবং ধর্মকে ভুল ব্যাখ্যাকৃত পৌরাণিক কাহিনি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।" তবে সমাজবিজ্ঞানে, পুরাণ শব্দটির একটি অ-নিন্দনীয় অর্থ রয়েছে। সেখানে পুরাণকে একটি গল্প হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যা কোনো সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তা বস্তুনিষ্ঠ বা প্রমাণিত সত্য হোক বা না হোক। উদাহরণের মধ্যে রয়েছে খ্রিস্টানদের নিকট তাঁদের বাস্তব প্রতিষ্ঠাতা যিশুর পুনরুত্থান, যেখানে তাদের পাপ থেকে মুক্তির উপায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এটি মৃত্যুর উপর জীবনের শক্তির প্রতীকী এবং এটিকে তাঁরা একটি ঐতিহাসিক ঘটনাও বিবেচনা করে। কিন্তু একটি পৌরাণিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে, ঘটনাটি আসলে ঘটেছিল কিনা তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। পরিবর্তে, একটি পুরোনো জীবনের মৃত্যু এবং একটি নতুন জীবনের শুরুর প্রতীকীতা সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। ধর্মীয় বিশ্বাসীরা এই ধরনের প্রতীকী ব্যাখ্যা গ্রহণ করতেও পারে বা নাও করতে পারে। অনুশীলন একটি ধর্মের অনুশীলনের মধ্যে রয়েছে আচার-অনুষ্ঠান, উপদেশ, কোনো উপাস্যের (দেবতা বা দেবীর) স্মরণ বা পূজা, বলিদান, উৎসব, ভোজ, সমাধি, দীক্ষা, অন্তেষ্টিক্রিয়া, বিবাহ, ধ্যান, প্রার্থনা, ধর্মীয় সঙ্গীত, ধর্মীয় শিল্পকলা, পবিত্র নৃত্য, জনসেবা, বা মানব সংস্কৃতির অন্যান্য দিক। সামাজিক সংগঠন অনুসারী বা সংঘ গঠনের জন্য ধর্মের একটি সামাজিক ভিত্তি ও একটি সংজ্ঞা রয়েছে, হয় একটি জীবন্ত ঐতিহ্য হিসেবে সাধারণ ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা বাহিত হয়, অথবা একটি সংগঠিত পন্ডিতদের দ্বারা বাহিত হয়। শ্রেণিবিভাগ ১৯ ও ২০ শতকে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলনে ধর্মীয় বিশ্বাসকে দার্শনিকভাবে সংজ্ঞায়িত শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয় যাকে বৈশ্বিক ধর্ম বলে। এই বিষয়ে অধ্যয়নরত কিছু শিক্ষাবিদ ধর্মকে তিনটি বিস্তৃত ভাগে ভাগ করেছেন: বৈশ্বিক ধর্ম, একটি শব্দ যা বহুসংস্কৃতিব্যাপী, আন্তর্জাতিক ধর্মকে বোঝায়; আদিবাসী ধর্ম, যা ছোট, সংস্কৃতি-নির্দিষ্ট বা জাতি-নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীকে বোঝায়; এবং নতুন ধর্মীয় আন্দোলন, যা সাম্প্রতিক বিকশিত ধর্মগুলোকে বোঝায়। সাম্প্রতিক কিছু বিদ্যাবত্তা যুক্তি দেখিয়েছে যে সকল ধরনের ধর্মকে অবশ্যই পারস্পরিক বিশেষিত দর্শন দ্বারা পৃথক করা হয় না এবং উপরন্তু উল্লেখ করে যে একটি অনুশীলনকে একটি নির্দিষ্ট দর্শন হিসেবে বর্ণনা করার উপযোগিতা সীমিত, এমনকি একটি প্রদত্ত অনুশীলনকে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক ক্ষেত্রে ধর্মীয় বলার পরিবর্তে। ধর্মীয়তার প্রকৃতি সম্পর্কে মনস্তাত্ত্বিক অধ্যয়নের বর্তমান অবস্থায় ধারণা করা হয় যে ধর্মকে একটি বহুলাংশে অপরিবর্তনীয় ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করাই উত্তম যা সাংস্কৃতিক নিয়ম থেকে পৃথক হওয়া উচিত। রূপতাত্ত্বিক প্রকারভেদ কিছু ধর্মতত্ত্ববিদ ধর্মসমূহকে হয় সর্বজনীন ধর্ম হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেন যেগুলো বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা চায় এবং সক্রিয়ভাবে নতুন ধর্মান্তরিতদের গ্রহণ করে, যেমন বাহাই ধর্ম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইসলাম ও জৈন ধর্ম, যেখানে জাতিগত ধর্মগুলো একটি নির্দিষ্ট জাতিগত গোষ্ঠীর সাথে সংশ্লিষ্ট এবং ধর্মান্তরিতদের গ্রহণ করে না যেমন ইহুদি ধর্ম। অন্যরা এই ধরনের পার্থক্য প্রত্যাখ্যান করে, এই বলে যে সকল ধর্মীয় অনুশীলনই জাতিগত, তাঁদের দার্শনিক উৎস যাই হোক না কেন, কারণ তারা একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতি থেকে উদ্ভুত। জনসাংখ্যিক প্রকারভেদ বিশ্বের জনসংখ্যা অনুসারে পাঁচটি বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠী, যাদের আনুমানিক ৫৮০ কোটি মানুষ অনুসরণ এবং বিশ্বের জনসংখ্যার ৮৪%, হলো খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম, বৌদ্ধধর্ম, হিন্দুধর্ম (বৌদ্ধধর্ম ও হিন্দুধর্মের জন্য আপেক্ষিক সংখ্যাসমূহ সমন্বয়বাদের পরিমাণের উপর নির্ভর করে) এবং ঐতিহ্যগত লোকধর্ম। ২০১২ সালে একটি বৈশ্বিক জরিপে ৫৭ টি দেশে সমীক্ষা করা হয় এবং প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে বিশ্বের জনসংখ্যার ৫৯% ধার্মিক, ২৩% ধার্মিক নন ও ১৩% প্রতীত নাস্তিক হিসেবে পরিচয় দেন এবং মানুষকে ধার্মিক হিসেবে পরিচয় প্রদান করার মাত্রা ২০০৫ সালের ৩৯ টি দেশের গড় হিসাবের তুলনায় ৯% হ্রাস পেয়েছে। ২০১৫ সালে একটি ফলো-আপ জরিপে পাওয়া গেছে যে বিশ্বের ৬৩% ধার্মিক, ২২% ধার্মিক নন এবং ১১% প্রতীত নাস্তিক হিসেবে হিসেবে পরিচয় দেন। গড়ে নারীরা পুরুষদের তুলনায় অধিক ধার্মিক। কিছু মানুষ একই সময়ে একাধিক ধর্ম বা একাধিক ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করেন, ঐতিহ্যগতভাবে তাঁরা যে ধর্মীয় রীতিনীতিগুলো অনুসরণ করে তা নির্বিশেষে সমন্বয়বাদের অনুমতি দিক বা না দিক৷ জন্মহারের পার্থক্যের কারণে ধর্মীয়ভাবে অসংশ্লিষ্ট জনসংখ্যা হ্রাস পাবে বলে অনুমান করা হয়, এমনকি বিসম্বন্ধের হার বিবেচনায় নেওয়া হলেও। বিশেষজ্ঞরা ইঙ্গিত করেছেন যে ধর্মীয় দেশগুলোতে উচ্চ জন্মহারের কারণে বৈশ্বিক ধার্মিকতা বৃদ্ধি পেতে পারে। ধর্মের ইতিহাস ধর্মের ইতিহাস বিভিন্ন ধর্মমতে ভিন্ন ভিন্ন, তবে বর্তমান পৃথিবীর প্রধান তিনটি ধর্ম অর্থ্যাৎ খ্রিস্টান, ইসলাম ও ইহুদি ধর্মমতে পৃথিবীর সকল মানুষ একজন পিতা ও একজন মাতা থেকে জন্ম গ্রহণ করেছে। এই দুইজন আদি পিতা আদম (Adam) ও মাতা হাওয়া (Eve) এর মাধ্যমে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্ম। এই তিন ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ যথাক্রমে বাইবেল (নিউ টেস্টামেন্ট), কুরআন মাজিদ ও তাওরাহ (ওল্ড টেস্টামেন্ট) থেকে এই ঘটনার সুত্র পাওয়া যায়। মানব্জাতির সৃষ্টির পর থেকেই মুলত মানুষের ধর্মের সুত্রপাত। ইসলাম ধর্মমতে আদম (আলাইহিস সালাম) পৃথিবীতে আগমনের পর তার প্রাথমিক কাজ ছিল কীভাবে পৃথিবীতে জীবন ধারণ করতে হবে তা প্রতিপালন করা এবং এক্ষেত্রে ফেরেশতা জিবরাইল (আলাইহিস সালাম) (Gabrial) আদম (আলাইহিস সালাম) কে সহযোগিতা করেছেন। কীভাবে ঘর নির্মাণ করতে হবে, খাবার তৈরী করতে হবে, শিকার করতে হবে এসকল জিনিস ছিল তার প্রাথমিক ধর্ম। পরবর্তিতে আদম (আলাইহিস সালাম) ও হাওয়া (আলাইহিস সালাম) এর সন্তানসন্ততি জন্মগ্রহণ করলে তখনো তাদের জীবনধারণ করাটাই ছিল তাদের ধর্মের মূল বিধিবিধান। ধর্মীয় ধারণাগুলোর প্রাচীনতম প্রমাণ পাওয়া যায় কয়েক হাজার বছর আগে মধ্য ও নিম্ন প্যালিলিথিক যুগে। প্রত্নতাত্ত্বিকগণ প্রায় ৩০০,০০০ বছর আগে ধর্মীয় ধারণার প্রমাণ হিসাবে হোমো স্যাপিয়েনদের কবরস্থানের কথা উল্লেখ করেছেন। ধর্মীয় ধারণার অন্যান্য প্রমাণ আফ্রিকায় পাওয়া যায়, যার মধ্যে মধ্য পাথর যুগে হস্তনির্মিত বিভিন্ন প্রতীকী অন্তর্ভুক্ত। যাইহোক, প্রাথমিক প্যালিলিথিক যুগের হস্তনির্মিত বিভিন্ন প্রতীকীর ব্যাখ্যা, যা কীভাবে ধর্মীয় ধারণা সম্পর্কিত, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ কিছুটা কম বিতর্কিত। বিজ্ঞানীরা সাধারণত ধর্মীয় ধারণার প্রতিনিধিত্বকারী হিসাবে উর্ধ-প্যালোলিথিক (৫০,০০০-১৩,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) যুগ থেকে পাওয়া বেশ কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয় ব্যাখ্যা করে থাকেন। সেই যুগের ধর্মীয় বিশ্বাসগুলোর সাথে সম্পর্কিত উদাহরণগুলোর মধ্যে রয়েছে সিংহের মত দেখতে মানুষ, শুক্রের মূর্তি, চাউট গুহার সমাধি, গুহা চিত্র ইত্যাদি। উনিশ শতকের গবেষকগণ ধর্মের উৎস সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্ব প্রস্তাব করেছিলেন, যেটি খ্রিস্টান মতবাদকে বিতর্কিত করেছিলো। উদারতার আগে দাবিগুলো চ্যালেঞ্জ করেছিল। প্রারম্ভিক তত্ত্ববিদ এডওয়ার্ড বার্নেট টাইলর (১৮৩২-১৯১৭) এবং হার্বার্ট স্পেন্সার (১৮২০-১৯০৩) অ্যানিমিজমের ধারণা প্রস্তাব করেছিলেন। আর প্রত্নতত্ত্ববিদ জন লুবক (১৮৩৪-১৯১৩) শব্দটিকে "প্রতিমাবাদ" বলেন। এদিকে ধর্মীয় পণ্ডিত ম্যাক মুলার (১৮২৩-১৯০০) বলেন ধর্ম শুরু হয় হেডোনিজম থেকে। ফোকলোরিস্ট উইলহেলম মানহার্ড (১৯৩১-১৮৮০) বলেছিলেন, ধর্ম "প্রাকৃতিকতা" থেকে শুরু হয়েছিল, যার দ্বারা তিনি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর পৌরাণিক ব্যাখ্যা বোঝাতে চেয়েছিলেন। এই সব তত্ত্বগুলো ব্যাপকভাবে সমালোচনা করা হয়েছে। ধর্মের উৎপত্তি সংক্রান্ত কোন বিস্তৃত ঐক্যমত্য নেই। প্রাক-মৃৎপাত্র নিওলিথিক এ (পিপিএনএ) গোবেকলি তেপে, যা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রাচীনতম ধর্মীয় স্থান। এর মধ্যে রয়েছে বিশাল টি-আকৃতির প্রস্তর স্তম্ভ, যা বিশ্বের প্রাচীনতম মেগালিথ হিসেবে পরিচিত। এটি বিমূর্ত চিত্র, চিত্রগ্রন্থ এবং পশু ভাস্কর্য ইত্যাদি দ্বারা সজ্জিত। এটি তথাকথিত নিউলিথিক বিপ্লবের আগে নির্মিত হয়েছিল, যেমনঃ ৯০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কৃষি ও পশুপালন শুরু হয়েছিলো। কিন্তু গোবেকলি তেপের নির্মাণে একটি উন্নত সংগঠন বুঝায়, যা এখন পর্যন্ত প্যালিওলিথিক, পিপিএনএ বা পিপিএনবি সমাজগুলোর সাথে সম্পর্কিত নয়। জায়গাটি প্রথম কৃষি সমাজের শুরুতে প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে যায়। জায়গাটি এখনও খনন এবং বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এভাবে এই অঞ্চলের পুরনো সম্প্রদায়ের জন্য, সেইসাথে ধর্মের সাধারণ ইতিহাসের জন্য উল্লেখযোগ্য বিষয় সম্পর্কে জানা যাবে। ধর্মের উপকারিতা সংগঠিত ধর্ম নিম্নলিখিত উপায়ে বৃহত্তর জনসংখ্যার সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রদানের মাধ্যম হিসাবে উত্থাপিত হয়েছেঃ সংগঠিত ধর্ম একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষকে ন্যায্যতা প্রদান করে, যার ফলে রাষ্ট্রকে সামাজিক ও নিরাপত্তা পরিষেবা প্রদানের জন্য কর আদায় করার অধিকার লাভ করে। ভারত এবং মেসোপটেমিয়ার ধর্মশাসনে বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানগণ,রাজা, এবং সম্রাট রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করতেন। বিশ্বব্যাপী সমস্ত রাষ্ট্রীয় সমাজে অনুরূপ রাজনৈতিক কাঠামো রয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ঐশ্বরিক অনুমোদন দ্বারা ন্যায্যতা পায়। সংগঠিত ধর্ম সম্পর্কহীন ব্যক্তিদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার উপায় হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলো। তবে রাষ্ট্র ও দেশগুলোতে হাজার হাজার বা কোটি কোটি মানুষ পরস্পরের সাথে সাথে সম্পর্কহীন ছিলো। জারেড ডায়মন্ড যুক্তি দেখান যে, সংগঠিত ধর্ম অন্য কোনও সম্পর্কহীন ব্যক্তিদের মধ্যে বন্ধন তৈরী করে। অন্যথায় সেখানে শত্রুতার প্রবণতা প্রকাশ পাবে। কারণ হিসেবে তিনি যুক্তি দেন যে, ব্যান্ড ও উপজাতীয় সমাজের মধ্যে মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হত্যাকাণ্ড। বিভিন্ন ধর্ম এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন, বিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের তালিকা ইব্রাহামীয় ধর্মসমূহ ইসলাম খ্রিস্ট ধর্ম ইহুদি ধর্ম বাহাই ধর্ম দ্রুজ ধর্ম রাস্তাফারি ধর্ম ইয়াজিদি ধর্ম ভারতীয় ধর্মসমূহ সনাতন বা হিন্দু ধর্ম জৈন ধর্ম বৌদ্ধধর্ম শিখ ধর্ম পূর্ব এশীয় ধর্মসমূহ তাও ধর্ম শিন্তো ধর্ম কনফুসীয় ধর্ম কোরীয় শামানবাদ মঙ্গোলীয় শামানবাদ পার্সি (ইরানীয়) ধর্মসমূহ জরথুস্ট্রবাদ মানি ধর্ম অন্যন্যা ধর্মসমূহ মেন্ডীয়বাদ বিভিন্ন লৌকিক ধর্মসমূহ বিলুপ্ত ধর্ম প্রাচীন মিশরীয় ধর্ম সুমেরীয় ধর্ম ব্যবিলনীয় ধর্ম প্রাচীন গ্রিক ধর্ম রোমান ধর্ম মায়া ধর্ম ইনকা ধর্ম আজটেক ধর্ম ধর্মের সমালোচনা ধর্মের সমালোচনা হল রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব সহ ধর্মের ধারণা, সত্য বা অনুশীলনের সমালোচনা। আরও দেখুন ধর্মে নীতিশাস্ত্র ধর্মদর্শন সুখ ও ধর্ম সামাজিকীকরণ ধর্মরাষ্ট্র লোকধর্ম তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Religion Statistics from UCB Libraries GovPubs Major Religions of the World Ranked by Number of Adherents by Adherents.com August 2005 IACSR - International Association for the Cognitive Science of Religion Studying Religion - Introduction to the methods and scholars of the academic study of religion A Contribution to the Critique of Hegel’s Philosophy of Right - Marx's original reference to religion as the opium of the people. The Complexity of Religion and the Definition of “Religion” in International Law Harvard Human Rights Journal article from the President and Fellows of Harvard College(2003) ধর্ম সংস্কৃতি মূল বিষয়ের নিবন্ধ
https://en.wikipedia.org/wiki/Religion
Religion
Religion is a range of social-cultural systems, including designated behaviors and practices, morals, beliefs, worldviews, texts, sanctified places, prophecies, ethics, or organizations, that generally relate humanity to supernatural, transcendental, and spiritual elements—although there is no scholarly consensus over what precisely constitutes a religion. Different religions may or may not contain various elements ranging from the divine, sacredness, faith, and a supernatural being or beings. The origin of religious belief is an open question, with possible explanations including awareness of individual death, a sense of community, and dreams. Religions have sacred histories, narratives, and mythologies, preserved in oral traditions, sacred texts, symbols, and holy places, that may attempt to explain the origin of life, the universe, and other phenomena. Religious practices may include rituals, sermons, commemoration or veneration (of deities or saints), sacrifices, festivals, feasts, trances, initiations, matrimonial and funerary services, meditation, prayer, music, art, dance, or public service. There are an estimated 10,000 distinct religions worldwide, though nearly all of them have regionally based, relatively small followings. Four religions—Christianity, Islam, Hinduism, and Buddhism—account for over 77% of the world's population, and 92% of the world either follows one of those four religions or identifies as nonreligious, meaning that the remaining 9,000+ faiths account for only 8% of the population combined. The religiously unaffiliated demographic includes those who do not identify with any particular religion, atheists, and agnostics, although many in the demographic still have various religious beliefs. Many world religions are also organized religions, most definitively including the Abrahamic religions Christianity, Islam, and Judaism, while others are arguably less so, in particular folk religions, indigenous religions, and some Eastern religions. A portion of the world's population are members of new religious movements. Scholars have indicated that global religiosity may be increasing due to religious countries having generally higher birth rates. The study of religion comprises a wide variety of academic disciplines, including theology, philosophy of religion, comparative religion, and social scientific studies. Theories of religion offer various explanations for its origins and workings, including the ontological foundations of religious being and belief.
1115
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%A6
চাঁদ
চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং সৌর জগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব হচ্ছে ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার (প্রায় ২৩৮,৮৫৫ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ৩০ গুণ। এর অর্থ দাড়াচ্ছে, চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৫০ ভাগের ১ ভাগ। এর পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বল পৃথিবী পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বলের এক-ষষ্ঠাংশ। পৃথিবী পৃষ্ঠে কারও ওজন যদি ১২০ পাউন্ড হয় তা হলে চাঁদের পৃষ্ঠে তার ওজন হবে মাত্র ২০ পাউন্ড। পৃথিবী থেকে চাঁদের এই যে দূরত্ব এটা কিন্তু সবসময় এক থাকে না। কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। বর্তমান শতাব্দীতে চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে এসেছিল গত ১৯১২ সালের ৪ জানুয়ারি তারিখে। এই তারিখে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ছিল মাত্র ৩,৪৮,২৫৯ কিলোমিটার (২,১৬,৩৯৮ মাইল)। এই শতাব্দীতে চাঁদের সাথে পৃথিবীর দূরত্ব সর্বোচ্চ স্তরে গিয়েছিল ১৯৮৪ সালের ২রা মার্চে। এই দিনে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ছিল ৩,৯৮,৫৯৮ কিলোমিটার (২,৪৭,৬৭৫ মাইল)। চাঁদের বয়স প্রায় ৩৯০০ মিলিয়ন বছর। চাঁদের ব্যাস ৩,৪৭৪.২০৬ কিলোমিটার (২,১৫৯ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের এক-চতুর্থাংশের চেয়ে সামান্য বেশি। ওজন ৭.২৩×১০^১৯ (অর্থাৎ ১০ এর ডানে ১৯টি শূণ্য বসিয়ে তাকে ৭.২৩ দিয়ে গুণ করলে যা হয়)। ঘনত্ব জলের চেয়ে ৩,৩৪২ ভাগ ঘন। গতি ৩,৬৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় (২,২৮৭ মাইল)। এটি প্রতি ২৭.৩২১ দিনে পৃথিবীর চারদিকে একটি পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করে। প্রতি ২৯.৫ দিন পরপর চন্দ্র কলা ফিরে আসে অর্থাৎ একই কার্যক্রম আবার ঘটে। পৃথিবী-চাঁদ-সূর্য তন্ত্রের জ্যামিতিতে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের কারণেই চন্দ্র কলার এই পর্যানুক্রমিক আবর্তন ঘটে থাকে। বেরিকেন্দ্র নামে পরিচিত একটি সাধারণ অক্ষের সাপেক্ষে পৃথিবী এবং চন্দ্রের ঘূর্ণনের ফলে যে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সৃষ্টি হয় তা পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির জন্য অনেকাংশে দায়ী। জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির জন্য যে পরিমাণ শক্তি শোষিত হয় তার কারণে বেরিকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে পৃথিবী-চাঁদের যে কক্ষপথ রয়েছে তাতে বিভব শক্তি কমে যায়। এর কারণে এই দুইটি জ্যোতিষ্কের মধ্যে দূরত্ব প্রতি বছর ৩.৮ সেন্টিমিটার করে বেড়ে যায়। যতদিন না পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার উপর চাঁদের প্রভাব সম্পূর্ণ প্রশমিত হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত চাঁদ দূরে সরে যেতেই থাকবে এবং যেদিন প্রশমনটি ঘটবে সেদিনই চাঁদের কক্ষপথ স্থিরতা পাবে। ইতিহাস প্রাচীনকালে সংস্কৃতি ছিল বিরল, বেশির ভাগ মানুষেরই নির্দিষ্ট কোনো বাসস্থান ছিল না। তারা মনে করত, চাঁদ প্রত্যেক রাত্রি মরে ছায়ার জগতে চলে যায়। অন্যান্য সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করত যে চাঁদ সূর্যকে পিছু করছে। পিথাগোরাসের সময়ে, চাঁদকে একটি গ্রহ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। মধ্যযুগে কিছু মানুষ বিশ্বাস করত যে চাঁদ হয়তো একটি নির্ভুলভাবে মসৃণ গোলক যা অ্যারিস্টটলের তত্ত্ব সমর্থন করত এবং অন্যান্যরা মনে করত সেখানে সাগর আছে (সাগর বলতে চাঁদের উপরিতলের অন্ধকার অঞ্চলকে বোঝায় যা চিত্র শব্দতে এখনও ব্যবহার করে)। ১৬০৯ সালে গ্যালিলিও যখন তাঁর দূরবীক্ষণ চাঁদের দিকে ধরলেন, তিনি দেখলেন যে চাঁদের উপরিতল মসৃণ ছিল না। তা ক্ষুদ্র কালো রেখা, উপত্যকা, পর্বত এবং খাদের গঠিত হয়। সেই মুহূর্ত থেকে তিনি অনুভব করতে শুরু করেন যে এটি পৃথিবীর মতোই একটি কঠিন গলিত পদার্থ ছিল যা পরে এই রূপ নেয়। ১৯২০ সালেও মনে করত যে চাঁদের শ্বাস গ্রহণের উপযোগী বায়ুমণ্ডল আছে (অথবা ঐ সময় বিজ্ঞানের কাল্পনিক বানোয়াট গল্প বলত) এবং কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি ক্ষুদ্র বায়ু স্তরের উপস্থিতি আছে বলে অনুমান করত কারণ চাঁদ পর্যবেক্ষণ সময় তারা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু উড়ন্ত বস্তু দেখে ছিল। উদাহরণ হিসেবে জ্যোতির্বিজ্ঞানী আলফন্স ফ্রেসার তাঁর গবেষণামূলক আলোচনা-গ্রন্থে চাঁদের অনাকাঙ্ক্ষিত উড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে লিখেন: চাঁদের বসবাস করার সাথে জড়িয়ে আছে অমোচনীয় পানি এবং বায়ু অনুপস্থিতির সমস্যার এবং আলফন্স ফ্রেসা এই শর্তাবলিতে প্রতিবেদন করেছিলেন: চাঁদই একমাত্র জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু যাতে মানুষ ভ্রমণ করেছে এবং যার পৃষ্ঠতলে মানুষ অবতরণ করেছে। প্রথম যে কৃত্রিম বস্তুটি পৃথিবীর অভিকর্ষ অতিক্রম করেছিল এবং চাঁদের কাছ দিয়ে উড়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল তা হল সোভিয়েত ইউনিয়নের লুনা ১। লুনা ২ প্রথবারের মত চাঁদের পৃষ্ঠতলকে প্রভাবান্বিত করেছিল। চাঁদের দূরবর্তী যে অংশটা স্বাভাবিকভাবে লুকায়িত থাকে তার প্রথম সাধারণ ছবি তুলেছিল লুনা ৩। এই তিনটি ঘটনাই সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিচালনায় ১৯৫৯ সালে সংঘটিত হয়। ১৯৬৬ সালে লুনা ৯ প্রথমবারের মত চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে এবং লুনা ১০ প্রথমবারের মতো চাঁদের কক্ষপথ পরিক্রমণ করতে সমর্থ হয়। যুক্তরাষ্ট্র এদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে পাল্লা দিতে অ্যাপোলো প্রকল্প শুরু করে। পরে ১৯৬৯ সালে, অ্যাপোলো-১১ অভিযান প্রথমবারের মতো চাঁদে মনুষ্যবাহী নভোযান অবতরণ করাতে সমর্থ হয়। নিল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন ছিলেন প্রথম মানুষ যাঁরা চাঁদে হেঁটেছেন । পরে আরও ১০ মানুষ কেবল চাঁদে হেঁটেছিল। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ছয়টি নভোযান চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে। অ্যাপোলো অভিযানের পর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা চাঁদে মানুষ পাঠানোর সকল পরিকল্পনা ত্যাগ করে। ২০০৯ সালে প্রথম দিকে ভারত, চন্দ্রযান নামে একটি মহাকাশযান চাঁদে পাঠায়। কিন্তু প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়। মহাকাশযান চাঁদে পৌঁছার পর পরেই তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু অল্প সময়ে যে তথ্য পাঠিয়েছে তা মানব জাতিকে নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছে চাঁদে জীবের অস্তিত্ব থাকার কারণ সেখানে পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে৷ তবে ২০১৯ সালের ২২ জুলাই ভারতের ইসরো, চন্দ্রযান-২ নামে পুনরায় একটি মহাকাশযানের সফল উৎক্ষেপণ করে। আবর্তন চাঁদের আবর্তনের পর্যায়কাল এবং তার কক্ষপথের পর্যায়কাল একই হওয়ায় আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদের একই পৃষ্ঠ সবসময় দেখতে পাই। চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে ২৭ দিন ৭ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট ১১ সেকেন্ড সময় নেয়। কিন্তু সমসাময়িক আবর্তনের ফলে পৃথিবীর পর্যবেক্ষকরা প্রায় ২৯.৫ দিন হিসেবে গণনা করে। একটি ঘণ্টা আবর্তনের পর্যায়কাল অর্ধেক ডিগ্রি দূরত্ব অতিক্রম করে। চাঁদ পৃথিবীকে যে অক্ষরেখায় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে, সে অক্ষরেখায় চাঁদ একদিন বা ২৪ ঘণ্টায় ১৩°কোণ অতিক্রম করে। সুতরাং পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে চাঁদের সময় লাগে ২৭ দিন ৭ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট ১১ সেকেন্ড। এই জন্য আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদের একই পৃষ্ঠ দেখে থাকি। পৃথিবী থেকে আমরা চাঁদের শতকরা প্রায় ৫৯ ভাগ দেখতে পেয়ে থাকি। চাঁদ আকাশের সবসময় একটি অঞ্চল থাকে তাকে জৌডিঅ্যাক (zodiac) বলে। যা ক্রান্তিবৃত্তের প্রায় ৮ ডিগ্রি নিচে এবং গ্রহণরেখার উপরে অবস্থান করে। চাঁদ প্রতি ২ সপ্তাহে একে অতিক্রম করে ৷ সূর্য ও পৃথিবীর কক্ষপথের সাথে চাঁদ ও পৃথিবীর কক্ষপথ প্রায় ৫ ডিগ্রি হেলে থাকে। ফলে রাতের বেলাতেও সূর্যের আলো চাঁদে প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে আসে। নাম এবং ব্যুৎপত্তি বাংলায় চাঁদ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ চন্দ্র থেকে এসেছে। এছাড়াও শশধর, শশী প্রভৃতিও চাঁদের সমার্থক শব্দ। চন্দ্র পৃষ্ঠের ভূমিরূপকে পৃথিবী থেকে খালি চোখে খরগোশ বা শশকের ন্যায় লাগে। তাই শশক ধারক রূপে কল্পনা করে শশধর নামটি দেওয়া হয়েছে। ইংরেজি ভাষায় পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহটির The Moon ছাড়া অন্য কোনো নাম নেই। অবশ্য অন্যান্য গ্রহের উপগ্রহের আরও নাম থাকতে দেখা যায়। মুন শব্দটি জার্মান ভাষাগোষ্ঠীর কোনো একটি থেকে এসেছে যার সাথে সম্পর্কিত রয়েছে লাতিন শব্দ mensis। মেনসিস শব্দটি মূলত প্রাক-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার মূল me- থেকে এসেছে। এই একই মূল থেকে আবার ইংরেজি measure শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে। মিজার শব্দটিকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে, কারণ এর সাথে শব্দের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিমাপের প্রকাশের সম্পর্ক রয়েছে। যেমন: Monday, month এবং menstrual। ১৬৬৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত ইংরেজি ভাষায় মুন বলতে কেবল মাত্র চাঁদকেই বুঝাত। কিন্তু ১৬৬৫ সালে তখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত অন্যান্য গ্রহের প্রাকৃতিক উপগ্রহের ক্ষেত্রেও এই মুন শব্দটি প্রয়োগ করা শুরু হয়। মুনা শব্দের লাতিন প্রতিশব্দ হচ্ছে Luna। অন্য গ্রহের প্রাকৃতিক উপগ্রহের সাথে পৃথিবীর প্রাকৃতিক উপগ্রহের পার্থক্য করার জন্য চাঁদকে ইংরেজিতে মুন না বলে তাই অনেক সময়েই লুনা বলা হয়ে থাকে। ইংরেজিতে চাঁদের বিশেষণ হিসেবে লুনার শব্দটি ব্যবহৃত হয়। একই সাথে চাঁদের ক্ষেত্রে বিশেষণগত উপসর্গ হিসেবে seleno- এবং অনুসর্গ হিসেবে -selene ব্যবহৃত হয়। এই উপসর্গ এবং অনুসর্গ গ্রিক ভাষার শব্দ selene থেকে এসেছে যা এখন গ্রিক দেবতার নাম। পৃথিবী-চন্দ্র সমাহার পৃথিবীর সাথে চাঁদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক দূরত্বের দিক থেকে চিন্তা করলে এরা একে-অপরের বেশ নিকটে অবস্থিত, আর তাই মহাকর্ষীয় আকর্ষণজনিত প্রভাবও বেশি। এই প্রভাবের প্রধানতম অবদান হচ্ছে জোয়ার-ভাটা। জোয়ার-ভাটা পৃথিবী-চন্দ্র সমাহারের অবিরত পরিবর্তন হচ্ছে। জোয়ার-ভাটার সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। চাঁদের আকর্ষণে চাঁদের দিকে অবস্থিত সমুদ্রের জল তার নিচের মাটি অপেক্ষা বেশি জোরে আকৃষ্ট হয়। এ কারণে চাঁদের দিকে অবস্থিত জল বেশি ফুলে উঠে। আবার পৃথিবীর যে অংশে অবস্থিত জল চাঁদের বিপরীত দিকে থাকে, সেদিকের সমুদ্রের নিচের মাটি তার উপরের জল অপেক্ষা চাঁদ কর্তৃক অধিক জোরে আকৃষ্ট হয়। কারণ এই মাটি জল অপেক্ষা চাঁদের বেশি নিকটবর্তী। ফলে সেখানকার জল মাটি থেকে দূরে সরে যায় অর্থাৎ ছাপিয়ে উঠে। এক্ষেত্রে ফুলে উঠার কাহিনীটিই ঘটে। পৃথিবী যে সময়ের মধ্যে নিজ অক্ষের চারদিকে একবার আবর্তন করে (এক দিনে) সে সময়ের মধ্যে পৃথিবীর যে-কোন অংশ একবার চাঁদের দিকে থাকে এবং একবার চাঁদের বিপরীত দিকে থাকে। এ কারণে পৃথিবীর যে-কোন স্থানে দুইবার জোয়ার এবং দুইবার ভাটা হয়। তবে জোয়ার-ভাটার জন্য সূর্যের আকর্ষণও অনেকাংশে দায়ী। তবে অনেক দূরে থাকায় সূর্যের আকর্ষণ চাঁদের আকর্ষণের থেকে কম কার্যকর। সূর্য এবং চাঁদ যখন সমসূত্রে পৃথিবীর একই দিকে বা বিপরীত দিকে অবস্থান করে তখন উভয়ের আকর্ষণে সর্বাপেক্ষা উঁচু জোয়ার হয়, জোয়ারের জল বেশি ছাপিয়ে পড়ে। এই অবস্থাকে ভরা কাটাল বা উঁচু জোয়ার বলা হয়। আর পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য এবং চাঁদের মধ্য কৌণিক দূরত্ব যখন এক সমকোণ পরিমাণ হয় তখন একের আকর্ষণ অন্যের আকর্ষণ দ্বারা প্রশমিত হয়। তাই সবচেয়ে নিচু জোয়ার হয় যাকে মরা কাটাল বলে আখ্যায়িত করা হয়। জোয়ার বলতে আমরা শুধুমাত্র সমুদ্রের জলের স্ফীতিকেই বুঝি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চাঁদ-সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবীর স্থলভাগেও অনুরূপ প্রভাবের সৃষ্টি হয়। তাই বলা যায়, জোয়ার -ভাটার ক্ষেত্রে চাঁদ ও সূর্য এবং এদের মধ্যকার আকর্ষণ বল ও অবস্থান মুখ্য ভুমিকা পালন করে। দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি চন্দ্রপৃষ্ঠ চাঁদের সৃষ্টির পরপর, এর পৃষ্ঠ অনেক গরম ছিল এবং কোনো প্রকার গর্ত ছিল না। চাঁদে বিপুল পরিমাণে ধূমকেতু ও গ্রহানুর আঘাতে গর্তের সৃষ্টি হয়। এই সময়টি late heavy bombardment নামে পরিচিত। চাঁদের দুই পার্শ্ব চাঁদের ঘূর্ণনটি সঙ্কালিক অর্থাৎ ঘূর্ণনের সময় সবসময় চাঁদের একটি পৃষ্ঠই পৃথিবীর দিকে মুখ করা থাকে। চাঁদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এর ঘূর্ণন ধীরতর হতে হতে একটি নির্দিষ্ট গতিতে এসে locked হয়ে যায়। পৃথিবী দ্বারা সৃষ্ট জোয়ার-ভাটা সংক্রান্ত বিকৃতির সাথে সম্পর্কিত ঘর্ষণ ক্রিয়ার কারণেই এই লকিং সৃষ্টি হয়। উপরন্তু, চান্দ্র কক্ষপথের উৎকেন্দ্রিকতা থেকে যে ক্ষুদ্র পরিবর্তনের সৃষ্টি হয় তার কারণে পৃথিবী থেকে চন্দ্রপৃষ্ঠের শতকরা প্রায় ৫৯ ভাগ দৃশ্যমান হয়ে উঠে। এই পরিবর্তনের ক্রিয়াটিকে লাইব্রেশন বলা হয়। চাঁদের যে পৃষ্ঠটি পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকে তাকে নিকট পার্শ্ব বলা হয় এবং এর বিপরীত পৃষ্ঠটিকে বলা হয় দূর পার্শ্ব। দূর পার্শ্বের সাথে আবার অন্ধকারাচ্ছন্ন পার্শ্বের সাথে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। চাঁদের যে গোলার্ধে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের আলো পৌঁছায় না সে গোলার্ধকে অন্ধকারাচ্ছন্ন পার্শ্ব বলা হয়। ১৯৫৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের লুনা ৩ নামক নভোযান প্রথমবারের মতো চাঁদের দূর পার্শ্বের ছবি তুলেছিল। এই পার্শ্বের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে একেবারেই কোনো মারিয়া (চাঁদের বিশেষ ভূমিরূপ, আক্ষরিক অর্থে সাগর) নেই। মারিয়া পূর্ণিমার সময় মানুষ পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে চাঁদের অপেক্ষাকৃত অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং স্বতন্ত্র ধরনের যে পৃষ্ঠগুলো দেখতে পায় তাদেরকে বলা হয় মারিয়া (maria, একবচন – mare)। লাতিন ভাষায় মারে শব্দের অর্থ সাগর। প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই অংশগুলো পানি দ্বারা পূর্ণ বলে ভাবতেন বিধায়ই এ ধরনের নামকরণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আর নামের পরিবর্তন করা হয়নি। সুপ্রাচীন ব্যাসল্ট দ্বারা গঠিত কঠিন লাভার পুকুর হিসেবে এগুলোকে আখ্যায়িত করা যায়। চাঁদের পৃষ্ঠের সাথে উল্কা এবং ধূমকেতুর সংঘর্ষের ফলে অনেক ইমপ্যাক্ট অববাহিকার সৃষ্টি হয়েছে। চাঁদের ব্যাসাল্টিক লাভার অধিকাংশ উৎক্ষিপ্ত হয়ে এই অববাহিকাগুলোর সাথে সম্পর্কিত নিম্নভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম হল Oceanus Procellarum। কারণ এর সাথে কোন ইমপ্যাক্ট অববাহিকার সম্পর্ক নেই। মারিয়ার অধিকাংশ চাঁদের নিকট পার্শ্বে অবস্থিত। জলের অস্তিত্ব ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের অ্যাপোলো অভিযানে চাঁদ থেকে আনা পাথরখণ্ড পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা প্রথম দাবি করেছিলেন যে, চাঁদে পানি রয়েছে। তারপর ভারত তাদের প্রথম চন্দ্রাভিযানের (চন্দ্রযান-১) পর একই দাবি করে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা চন্দ্রযান-১ ছাড়াও দুটো মার্কিন নভোযানের (ডিপ ইমপ্যাক্ট ও ক্যাসিনি) পাঠানো উপাত্ত বিশ্লেষণ নিশ্চিত হয়ে এমন দাবি উত্থাপন করেন। ভারতীয় নভোযানটি নাসা'র সরবরাহকৃত চন্দ্রপৃষ্ঠের ২-৩ ইঞ্চি গভীরে অনুসন্ধানক্ষম মুন মিনারেলজি ম্যাপার (এম৩) নামক একটি যন্ত্রের সহায়তায় চন্দ্রপৃষ্ঠের মেরু অঞ্চলে সূর্যের প্রতিফলিত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরীক্ষা করে প্রমাণ পায় যে চাঁদের মাটির ১০,০০,০০০ কণায় পানির কণা হলো ১,০০০। গবেষণায় চন্দ্রপৃষ্ঠের পাথর ও মাটিতে প্রায় ৪৫% অক্সিজেনের প্রমাণ মিলেছে। তবে হাইড্রোজেনের পরিমাণ গবেষণাধীন রয়েছে (২০০৯)। অবশ্য গবেষণায় এও বলা হয় যে, চাঁদের মেরু অঞ্চলের নানা গর্তের তলদেশে বরফ থাকলেও চাঁদের অন্য অঞ্চল শুষ্ক। মানুষের অস্তিত্ব চাঁদে মানুষের ক্রিয়াকলাপের চিহ্নের পাশাপাশি কিছু স্থায়ী স্থাপনাও রয়েছে। যেমন মুন মিউজিয়াম আর্ট পিস, অ্যাপোলো ১১ শুভেচ্ছার বার্তা, লুনার ফলক, ফ্যালেন অ্যাস্ট্রোনট স্মৃতি এবং অন্যান্য নিদর্শন। অবকাঠামো বিভিন্ন এজেন্সি এবং কোম্পানি চাঁদে একটি দীর্ঘমেয়াদী মানব বসতি স্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে। যেখানে আর্টেমিস প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে বর্তমানে সবচেয়ে উন্নত প্রকল্প হিসেবে রয়েছে চন্দ্র গেটওয়ে। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ চাঁদ প্রাকৃতিক উপগ্রহ প্রাচীনকাল থেকে জ্ঞাত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু মূল বিষয়ের নিবন্ধ উপগ্রহ
https://en.wikipedia.org/wiki/Moon
Moon
The Moon is Earth's only natural satellite. It orbits at an average distance of 384,400 km (238,900 mi), about 30 times the diameter of Earth. Tidal forces between Earth and the Moon have over time synchronized the Moon's orbital period (lunar month) with its rotation period (lunar day) at 29.5 Earth days, causing the same side of the Moon to always face Earth. The Moon's gravitational pull – and to a lesser extent, the Sun's – are the main drivers of Earth's tides. In geophysical terms the Moon is a planetary-mass object or satellite planet. Its mass is 1.2% that of the Earth, and its diameter is 3,474 km (2,159 mi), roughly one-quarter of Earth's (about as wide as the United States from coast to coast). Within the Solar System, it is the largest and most massive satellite in relation to its parent planet, the fifth largest and most massive moon overall, and larger and more massive than all known dwarf planets. Its surface gravity is about one sixth of Earth's, about half of that of Mars, and the second highest among all Solar System moons, after Jupiter's moon Io. The body of the Moon is differentiated and terrestrial, with no significant hydrosphere, atmosphere, or magnetic field. It formed 4.51 billion years ago, not long after Earth's formation, out of the debris from a giant impact between Earth and a hypothesized Mars-sized body called Theia. The lunar surface is covered in lunar dust and marked by mountains, impact craters, their ejecta, ray-like streaks, rilles and, mostly on the near side of the Moon, by dark maria ("seas"), which are plains of cooled magma. These maria were formed when molten lava flowed into ancient impact basins. The Moon is, except when passing through Earth's shadow during a lunar eclipse, always illuminated by the Sun, but from Earth the visible illumination shifts during its orbit, producing the lunar phases. The Moon is the brightest celestial object in Earth's night sky. This is mainly due to its large angular diameter, while the reflectance of the lunar surface is comparable to that of asphalt. The apparent size is nearly the same as that of the Sun, allowing it to cover the Sun completely during a total solar eclipse. From Earth about 59% of the lunar surface is visible over time due to cyclical shifts in perspective (libration), making parts of the far side of the Moon visible. The Moon has been an important source of inspiration and knowledge for humans, having been crucial to cosmography, mythology, religion, art, time keeping, natural science, and spaceflight. In 1959, the first human-made objects to leave Earth and reach another body arrived at the Moon, with the flyby of the Soviet Union's Luna 1 and the intentional impact of Luna 2. In 1966, the Moon became the first extraterrestrial body where soft landings and orbital insertions were achieved. On July 20, 1969, humans for the first time landed on the Moon and any extraterrestrial body, at Mare Tranquillitatis with the lander Eagle of the United States' Apollo 11 mission. Five more crews were sent between then and 1972, each with two men landing on the surface. The longest stay was 75 hours by the Apollo 17 crew. Since then, exploration of the Moon has continued robotically, and crewed missions are being planned to return beginning in the late 2020s.
1116
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A7%83%E0%A6%A5%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A7%80
পৃথিবী
পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্ব অনুযায়ী তৃতীয়, সর্বাপেক্ষা অধিক ঘনত্বযুক্ত এবং সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ। সূর্য হতে এটির দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কি.মি।এটি সৌরজগতের চারটি কঠিন গ্রহের অন্যতম। পৃথিবীর অপর নাম "বিশ্ব" বা "নীলগ্রহ"। ইংরেজি ভাষায় পরিচিত আর্থ (Earth) নামে, গ্রিক ভাষায় পরিচিত গাইয়া (Γαῖα) নামে, লাতিন ভাষায় এই গ্রহের নাম "টেরা (Terra)। পৃথিবী হলো মানুষ সহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল। পৃথিবী এখন পর্যন্ত পাওয়া একমাত্র মহাজাগতিক স্থান যেখানে প্রাণের অস্তিত্বের কথা বিদিত। ৪৫৪ কোটি বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। এক বিলিয়ন বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বুকে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে। পৃথিবীর জীবমণ্ডল এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল ও অন্যান্য অজৈবিক অবস্থাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে একদিকে যেমন বায়ুজীবী জীবজগতের বংশবৃদ্ধি ঘটেছে, অন্যদিকে তেমনি ওজন স্তর গঠিত হয়েছে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে একযোগে এই ওজোন স্তরই ক্ষতিকর সৌর বিকিরণের গতিরোধ করে গ্রহের বুকে প্রাণের বিকাশ ঘটার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ ও এর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস ও কক্ষপথ এই যুগে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়ক হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, আরও ৫০ কোটি বছর পৃথিবী প্রাণধারণের সহায়ক অবস্থায় থাকবে। পৃথিবীর উপরিতল একাধিক শক্ত স্তরে বিভক্ত। এগুলিকে ভূত্বকীয় পাত বলা হয়। কোটি কোটি বছর ধরে এগুলি পৃথিবীর উপরিতলে এসে জমা হয়েছে। পৃথিবীতলের প্রায় ৭১% লবণাক্ত জলের মহাসাগর দ্বারা আবৃত। অবশিষ্টাংশ গঠিত হয়েছে মহাদেশ ও অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে। স্থলভাগেও রয়েছে অজস্র হ্রদ ও জলের অন্যান্য উৎস। এগুলি নিয়েই গঠিত হয়েছে বিশ্বের জলভাগ। জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় তরল জল এই গ্রহের ভূত্বকের কোথাও সমভার অবস্থায় পাওয়া যায় না। পৃথিবীর মেরুদ্বয় সর্বদা অ্যান্টার্কটিক বরফের চাদরের কঠিন বরফ বা আর্কটিক বরফের টুপির সামুদ্রিক বরফে আবৃত থাকে। পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ সর্বদা ক্রিয়াশীল। এই অংশ গঠিত হয়েছে একটি আপেক্ষিকভাবে শক্ত ম্যান্টেলের মোটা স্তর, একটি তরল বহিঃকেন্দ্র (যা একটি চৌম্বকক্ষেত্র গঠন করে) এবং একটি শক্ত লৌহ আন্তঃকেন্দ্র নিয়ে গঠিত। মহাবিশ্বের অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বিশেষ করে সূর্য ও চাঁদের সঙ্গে এই গ্রহের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবী নিজ কক্ষপথে মোটামুটি ৩৬৫.২৬ সৌর দিনে বা এক নক্ষত্র বর্ষে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী নিজ অক্ষের ৬৬.১/২ ডিগ্রি কোণে হেলে রয়েছে। এর ফলে এক বিষুবীয় বছর (৩৬৫.২৪ সৌরদিন) সময়কালের মধ্যে এই বিশ্বের বুকে ঋতুপরিবর্তন ঘটে থাকে। পৃথিবীর একমাত্র বিদিত প্রাকৃতিক উপগ্রহ হল চাঁদ। ৪.৩৫ বিলিয়ন বছর আগে চাঁদ পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু করেছিল। চাঁদের গতির ফলেই পৃথিবীতে সামুদ্রিক জোয়ারভাঁটা হয় এবং পৃথিবীর কক্ষের ঢাল সুস্থিত থাকে। চাঁদের গতিই ধীরে ধীরে পৃথিবীর গতিকে কমিয়ে আনছে। ৩.৮ বিলিয়ন থেকে ৪.১ বিলিয়ন বছরের মধ্যবর্তী সময়ে পরবর্তী মহাসংঘর্ষের সময় একাধিক গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষে গ্রহের উপরিতলের পরিবেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। গ্রহের খনিজ সম্পদ ও জৈব সম্পদ উভয়ই মানবজাতির জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। এই গ্রহের অধিবাসীরা প্রায় ২০০টি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে সমগ্র গ্রহটিকে বিভক্ত করে বসবাস করছে। এই সকল রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক কূটনৈতিক, পর্যটন, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। মানব সংস্কৃতি গ্রহ সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণার জন্মদাতা। এই সব ধারণার মধ্যে রয়েছে পৃথিবীকে দেবতা রূপে কল্পনা, সমতল বিশ্ব কল্পনা এবং পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্ররূপে কল্পনা। এছাড়া একটি সুসংহত পরিবেশ রূপে বিশ্বকে কল্পনা করার আধুনিক প্রবণতাও লক্ষিত হয়। এই ধারণাটি বর্তমানে প্রাধান্য অর্জন করেছে। নাম ও ব্যুৎপত্তি "পৃথিবী" শব্দটি সংস্কৃত। এ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত पृथिवी থেকে। এর অপর নাম "পৃথ্বী"। পৃথ্বী ছিল পৌরাণিক "পৃথুর" রাজত্ব। এর সমার্থক শব্দ হচ্ছে- বসুধা, বসুন্ধরা, ধরা, ধরনী, ধরিত্রী, ধরাতল, ভূমি, ক্ষিতি, মহী, দুনিয়া ইত্যাদি। পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস উৎপত্তি সৌরজগৎ সৃষ্টির মোটামুটি ১০০ মিলিয়ন বছর পর একগুচ্ছ সংঘর্ষের ফল হলো পৃথিবী। আজ থেকে ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী নামের গ্রহটি আকৃতি পায়, পায় লৌহের একটি কেন্দ্র এবং একটি বায়ুমণ্ডল। সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে দুটি গ্রহের তীব্র সংঘর্ষ হয়েছিল। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, এ সময় জুড়ে যায় গ্রহ দুটি। পৃথিবী নামক গ্রহের সঙ্গে চরম সংঘর্ষ হয়েছিল থিয়া নামে একটি গ্রহের। সংঘর্ষের সময় পৃথিবীর বয়স ছিল ১০ কোটি বছর। সংঘর্ষের জেরে থিয়া ও পৃথিবীর জুড়ে যায়, তৈরি হয় নতুন গ্রহ। সেই গ্রহটিতেই আমরা বাস করছি। তিনবার চন্দ্র অভিযানে পাওয়া চাঁদের মাটি এবং হাওয়াই অ্যারিজোনায় পাওয়া আগ্নেয়শিলা মিলিয়ে চমকে যান গবেষকরা। দুটি পাথরের অক্সিজেন আইসোটোপে কোনও ফারাক নেই। গবেষকদলের প্রধান অধ্যাপক এডওয়ার্ড ইয়ংয়ের কথায়, চাঁদের মাটি আর পৃথিবীর মাটির অক্সিজেন আইসোটোপে কোনও পার্থক্য পাইনি। থিয়া নামক গ্রহটি তখন পরিণত হচ্ছিল। ঠিক সেই সময়েই ধাক্কাটি লাগে এবং পৃথিবীর সৃষ্টি হয়। সৌরজগতের ভেতরে অবস্থিত সবচেয়ে পুরনো পদার্থের বয়স প্রায় ৪.৫৬ শত কোটি বছর। আজ থেকে ৪.৫৪ শত কোটি বছর আগে পৃথিবীর আদিমতম রূপটি গঠিত হয়। সূর্যের পাশাপাশি সৌরজগতের অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুগুলিও গঠিত হয় ও এগুলোর বিবর্তন ঘটতে থাকে। তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, একটি আণবিক মেঘ থেকে একটি সৌর নীহারিকা মহাকর্ষীয় ধসের মাধ্যমে কিছু আয়তন বের করে নেয়, যা ঘুরতে শুরু করে এবং চ্যাপ্টা হয়ে তৈরি হয় পরিনাক্ষত্রিক চাকতিতে, এবং এই চাকতি থেকেই সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহের উৎপত্তি ঘটে। একটি নীহারিকাতে বায়বীয় পদার্থ, বরফকণা এবং মহাজাগতিক ধূলি (যার মধ্যে আদিম নিউক্লাইডগুলিও অন্তর্ভুক্ত) থাকে। নীহারিকা তত্ত্ব অনুযায়ী সংযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অতিক্ষুদ্র গ্রহগুলি গঠিত হয়। এভাবে আদিম পৃথিবীটি গঠিত হতে প্রায় ১ থেকে ২ কোটি বছর লেগেছিল। চাঁদের গঠন নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে এবং বলা হয় চাঁদ প্রায় ৪.৫৩ বিলিয়ন বছর পূর্বে গঠিত হয়। একটি গবেষণারত অনুমানের তথ্য অনুসারে, মঙ্গল গ্রহ আকারের বস্তু থিয়ার সাথে পৃথিবীর আঘাতের পরে পৃথিবী থেকে খসে পড়া বস্তুর পরিবৃদ্ধি ফলে চাঁদ গঠিত হয়। এই ঘটনা থেকে বলা হয়ে থাকে যে, থিয়া গ্রহের ভর ছিল পৃথিবীর ভরের প্রায় ১০%, যা পৃথিবীকে আঘাত করে কৌনিক ভাবে, এবং আঘাতের পরে এটির কিছু ভর পৃথিবীর সাথে বিলীনও হয়ে যায়। প্রায় ৪.১ থেকে ৩.৫ বিলিয়ন বছরের মধ্যে অজস্র গ্রহাণুর আঘাত যা ঘটে, যার ফলে চাঁদের বৃহত্তর পৃষ্ঠতলের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, আর এর কারণ ছিল পৃথিবীর উপস্থিতি। ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও সাগরসমূহ আগ্নেয়গিরির উৎগিরণ ও জলীয় বাষ্প সমৃদ্ধ গ্যাসের অতিনির্গমনের (Outgassing) ফলে সৃষ্টি হয়েছে। গ্রহাণুপুঞ্জ, ক্ষুদ্র গ্রহ, ও ধুমকেতু থেকে আসা ঘনীভূত জল ও বরফের সম্মিলনে পৃথিবীর সাগরসমূহের উৎপত্তি হয়েছে। ফেইন্ট ইয়ং সান প্যারাডক্স মডেলে বলা হয়, যখন নব গঠিত সূর্যে বর্তমান সময়ের চেয়ে মাত্র ৭০% সৌর উজ্জ্বলতা ছিল তখন বায়ুমণ্ডলীয় "গ্রিনহাউজ গ্যাস" সাগরের পানি বরফ হওয়া থেকে বিরত রাখে। ৩.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র গঠিত হয়, যা সৌর বায়ুর ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। পৃথিবীর শক্ত বহিরাবণ সৃষ্টি হয়েছে যখন পৃথিবীর গলিত বাইরের অংশ ঠাণ্ডা হয়ে শক্ত হয়। দুটি মডেলে ব্যাখ্যা করা হয় যে, ভূমি ধীরে ধীরে বর্তমান অবস্থায় এসেছে, বা পৃথিবীর ইতিহাসের শুরুতে দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে মহাদেশীয় অঞ্চলসমূহ গঠিত হয়েছে। মহাদেশসমূহ পৃথিবীর অভ্যন্তরে লাগাতার তাপ হ্রাস পাবার ফলে ভূত্বকীয় পাত গঠিত হয়েছে। ভূতাত্ত্বিক সময় শত-মিলিয়ন বছর যাবত চলে এবং এ সময়ে মহামহাদেশসমূহ একত্রিত হয়েছে ও ভেঙ্গে আলাদাও হয়েছে। প্রায় ৭৫ কোটি বছর পূর্বে সবচেয়ে প্রাচীন মহামহাদেশ রোডিনিয়া ভাঙ্গতে শুরু করে। মহাদেশটি পরে পুনরায় ৬০ কোটি বছর থেকে ৫৪ কোটি বছর পূর্বে একত্রিত হয়ে প্যানোটিয়া, পরবর্তীতে প্যানজিয়ায় একত্রিত হয়, যাও পরে ১৮ কোটি বছর পূর্বে ভেঙ্গে যায়। বরফ যুগের বর্তমান রূপ শুরু হয় প্রায় ৪ কোটি বছর পূর্বে এবং ৩০ লক্ষ বছর পূর্বে প্লেইস্টোসিন সময়ে তা ঘনীভূত হয়। ৪০,০০০ থেকে ১০০,০০০ বছর পূর্বে হিমবাহ ও বরফ গলার কারণে উচ্চ-অক্ষাংশ অঞ্চলসমূহের উচ্চতা কমতে থাকে। শেষ মহাদেশীয় হিমবাহ শেষ হয় ১০,০০০ বছর পূর্বে। জীবনের আবির্ভাব ও বিবর্তন রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে প্রায় ৪০০ কোটি বছর পূর্বের প্রথম অণুর সন্ধান পাওয়া যায়। আরও ৫০ কোটি বছর পরে, সকল জীবের শেষ একক পূর্বপুরুষের সন্ধান মিলে। সালোকসংশ্লেষণের বিবর্তনের ফলে সৌর শক্তি সরাসরি জীবের জীবনধারণ ও বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে অক্সিজেন (O2) বায়ুমণ্ডলে একীভূত হয় এবং সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির সাথে মিথষ্ক্রিয়ার কারণে এ থেকে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য বায়ুমণ্ডলের উপরে রক্ষাকারী ওজোন স্তর (O3) সৃষ্টি হয়। বৃহৎ কোষের সাথে ক্ষুদ্র কোষের একত্রিত হওয়ার ফলে জটিল কোষ গঠিত হয় যাকে সুকেন্দ্রিক বলা হয়। কলোনির মধ্যে কোষসমূহ আরও বিশেষায়িত হতে থাকলে বহুকোষী জীব গঠিত হয়। ওজোন স্তরে ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণ শোষণের ফলে ভূপৃষ্ঠে জীবসমূহ একত্রিত হতে থাকে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন জীবের জীবাশ্মসমূহ হল পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্ত ৩.৪৮ বিলিয়ন বছর পূর্বের স্যান্ডস্টোন মাইক্রোবায়াল ম্যাট জীবাশ্ম, পশ্চিম গ্রিনল্যান্ডে প্রাপ্ত ৩.৭ বিলিয়ন বছর পূর্বের মেটাসেডিমেন্ট জৈব গ্রাফাইট, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্ত জৈব শিলার অংশবিশেষ। ৭৫ থেকে ৫৮ কোটি বছর পূর্বে নিউপ্রোটেরোজোয়িক সময়ে, পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশ বরফাচ্ছাদিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। এই ধারণাকে "স্নোবল আর্থ" বলা হয় এবং এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে কারণ এর পরে যখন জটিলভাবে বহুকোষী জীব গঠিত হওয়া শুরু হয় তখন ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ হয়েছিল। ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণের পরে ৫৩৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে আরও পাঁচটি বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়। সবচেয়ে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ হল ক্রেটাশাস-টার্টিয়ারি বিলুপ্তি, যা ৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে সংগঠিত হয়। এ সময়ে গ্রহাণুর প্রভাবে যেসব ডাইনোসর উড়তে পারে না এবং অন্যান্য বৃহৎ সরীসৃপসমূহ বিলুপ্ত হতে থাকে, কিন্তু ছোট প্রজাতির প্রাণীকুল, যেমন স্তন্যপায়ী প্রাণীসমূহ বেঁচে যায়। ৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত, স্তন্যপায়ীদের জীবনে ভিন্নতা দেখা দেয় এবং আরও কয়েক মিলিয়ন বছর পূর্বে আফ্রিকান বানর-সদৃশ্য প্রাণী, যেমন অরোরিন টিউজেনেন্সিস সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা লাভ করে। কৃষিকাজের উন্নয়ন এবং পরে সভ্যতার উন্নয়নের ফলে পরিবেশ ও প্রকৃতির উপর মানুষের প্রভাব বাড়তে থাকে এবং বর্তমান অবস্থায় আসে। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ পৃথিবীর প্রত্যাশিত দীর্ঘ-মেয়াদি ভবিষ্যৎ সূর্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আগামী ১.১ বিলিয়ন বছরের মধ্যে (১ বিলিয়ন বছর= ১০৯ বছর) সূর্যের আলোর উজ্জ্বলতা আরো ১০% বৃদ্ধি পেতে পারে এবং আগামী ৩.৫ বিলিয়ন বছরের তা আরও ৪০% বৃদ্ধি পেতে পারে। পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা অজৈব কার্বন চক্রকে ত্বরান্বিত করবে, যার ফলশ্রুতিতে বায়ুতে এটির ঘনত্ব উদ্ভিদের জন্য মারাত্নক ভাবে কমে আসবে (সি৪ ফটোসিন্থেসিসে মাত্র ১০পিপিএম হবে) প্রায় ৫০০ - ৯০০ মিলিয়ন বছর পরে (১ মিলিয়ন বছর= ১০৬ বছর)। উদ্ভিদহীনতার কারণে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন থাকবে না, এবং প্রাণী জগৎ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পরবর্তী বিলিয়ন বছরের মধ্যে ভূ-পৃষ্ঠের উপরের সকল পানি শুকিয়ে যাবে এবং সারা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭০°সে (১৫৮°ফা)। এই সময়ের পর থেকে, আশা করা হয় পরবর্তী ৫০০ মিলিয়ন বছর পৃথিবী বসবাসযোগ্য থাকবে, এটা ২.৩ বিলিয়ন বছর পর্যন্তও সম্ভব যদি বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন না থাকে। এমনকি যদি সূর্য শাশ্বত ও স্থিতিশীল থাকে, আধুনিক মহাসাগরগুলোতে থাকা ২৭% পানি ভূ-অভ্যন্তরের গুরুমন্ডল স্তরে হারিয়ে যাবে, এটির কারণ সাগরের মধ্যে অবস্থিত শৈলশ্রেণী থেকে নির্গত হওয়া বাষ্পের পরিমাণ কমে যাওয়া। ৫ বিলিয়ন বছরের মধ্যে সূর্যের আকারের পরিবর্তন হয়ে একটি রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানবে পরিনত হবে। বিভিন্ন মডেল থেকে এটা অনুমান করা যায় সূর্যের আকৃতি বৃদ্ধি পাবে প্রায় ১ এইউ (১৫,০০,০০,০০০ কি.মি), যা এটির বর্তমান পরিধির তুলনায় ২৫০ গুন বেশি। পৃথিবীর ভাগ্য খুব ভালভাবে পরিষ্কার এই সময়ে। লোহিত দানব হিসাবে, সূর্য এই সময় তার ভরের প্রায় ৩০% হারাবে। তাই, জোয়ার-ভাটা বিহীন পৃথিবী, একটি কক্ষপথে সূর্যকে প্রায় ১.৭ এইউ দূরত্বে প্রদক্ষিণ করবে, এই সময় নক্ষত্রটি তার সর্বোচ্চ পরিধিতে পরিণত হবে। বেঁচে থাকা বাকি জীব বৈচিত্র্যে বেশিরভাগ গুলো, কিন্তু সব নয় সূর্যের বাড়তে থাকা উজ্জ্বলতা কারণে মারা যাবে (উজ্জ্বলতার সর্বোচ্চ সীমা বর্তমান সীমার থেকে ৫,০০০ গুণ বেশি হবে)। ২০০৮ সালে করা একটি সিমুলেশনের ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে, জোয়ার-ভাটার প্রভাব না থাকার কারণে পৃথিবীর কক্ষপথ এক সময় হ্রাস পাবে এবং সূর্য এটিকে টেনে নিবে নিজের দিকে, ফলাফলস্বরূপ পৃথিবী সূর্যের পরিমণ্ডলে প্রবেশ করবে এবং এক সময় বাষ্পে পরিণত হবে। গাঠনিক বৈশিষ্ট্য আকৃতি পৃথিবী দেখতে পুরোপুরি গোলাকার নয়, বরং কমলালেবুর মত উপর ও নিচের দিকটা কিছুটা চাপা এবং মধ্যভাগ (নিরক্ষরেখার কাছাকাছি) স্ফীত। এ'ধরনের স্ফীতি তৈরি হয়েছে নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে এটির ঘূর্ণনের কারণে। একই কারণে বিষুব অঞ্চলের ব্যাস মেরু অঞ্চলের ব্যাসের তুলনায় প্রায় ৪৩ কি.মি. বেশি। পৃথিবীর আকৃতি অনেকটাই কমলাকার উপগোলকের মত। ঘূর্ণনের ফলে, পৃথিবীর ভৌগোলিক অক্ষ বরাবর এটি চ্যাপ্টা এবং নিরক্ষরেখা বরাবর এটি স্ফীত। নিরক্ষরেখা বরাবর পৃথিবীর ব্যাস মেরু থেকে মেরুর ব্যাসের তুলনায় বৃহৎ। তাই, পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর পৃথিবীর ভরকেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ দূরত্বটি হল নিরক্ষরেখার উপর অবস্থিত চিম্বরাজো আগ্নেয়গিরির সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি। আদর্শ মাপের উপগোলকের গড় ব্যাস হল । স্থানীয় ভূসংস্থানে ব্যাসের মান আদর্শ উপগোলকের ব্যাসের মানের চেয়ে ভিন্ন হয়, যদিওবা সারা বিশ্বের কথা বিবেচনা করলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধের তুলনায় এই বিচ্যুতির মান যৎ সামান্য: সর্বোচ্চ পরিমাণ বিচ্যুতির মান হল মাত্র ০.১৭%, যা পাওয়া যায় মারিয়ানা খাতে (যা সমুদ্র পৃষ্ঠতল থেকে নিচে), আর অপরদিকে মাউন্ট এভারেস্টে ( যা সমুদ্র পৃষ্ঠতলের থেকে উঁচুতে) বিচ্যুতির মান ০.১৪%। জিওডেসি প্রকাশ করে যে, পৃথিবীতে সমুদ্র তার প্রকৃত আকার ধারণ করবে যদি ভূমি ও অন্যান্য চাঞ্চলতা যেমন ঢেউ ও বাতাস না থাকে, আর একে সংজ্ঞায়িত করা হয় জিওইড দ্বারা। আরো স্পষ্ট ভাবে, জিওইডের পরিমাণ হবে গড় সমুদ্র পৃষ্টতলের উচ্চতায় অভিকর্ষীয় মানের সমান। রাসায়নিক গঠন পৃথিবীর ভর হল প্রায় ৫.৯৭ × ১০২৪ কিলোগ্রাম (৫,৯৭০ ইয়াটোগ্রাম)। এটি গঠিত যে সকল উপাদান দিয়ে তার মধ্যে সবচাইতে বেশি হল লোহা (৩২.১%), অক্সিজেন (৩০.১%), সিলিকন (১৫.১%), ম্যাগনেসিয়াম (১৩.৯%), সালফার (২.৯%), নিকেল (১.৮%), ক্যালসিয়াম (১.৫%), এবং অ্যালুমিনিয়াম (১.৪%), এ ছাড়া বাকি ১.২% এর মধ্যে রয়েছে অন্যান্য বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতি। ভরের পৃথকীকরণ ঘটার ফলে, অনুমান করা হয় পৃথিবীর কেন্দ্র অঞ্চলটি প্রধানত গঠিত লোহা (৮৮.৮%) দ্বারা, এর সাথে অল্প পরিমাণে রয়েছে নিকেল (৫.৮%), সালফার (৪.৫%), এবং এছাড়া অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে ১% এরও কম। সাধারণত পৃথিবীর ভূত্বকের শিলাগুলোর উপাদানসমূহের সবগুলোই হয়ে থাকে অক্সাইড ধরনের: তবে এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম হল এতে ক্লোরিন, সারফার, এবং ফ্লোরিনের উপস্থিতি এবং সাধারণত কোন শিলায় এগুলোর পরিমাণ হয়ে থাকে মোট পরিমাণের ১% এরও কম। মোট ভূত্বকের ৯৯% গঠিত হয়ে থাকে ১১ ধরনের অক্সাইড দ্বারা, যার মধ্যে প্রধান উপাদানগুলো হল সিলিকা, অ্যালুমিনা, আয়রন অক্সাইড, লাইম, ম্যাগনেসিয়া (ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড), পটাশ এবং সোডা। অভ্যন্তরীণ কাঠামো পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কাঠামো অন্যান্য বহুজাগতিক গ্রহের মত বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত, স্তরগুলোর গঠন এগুলোর রাসায়নিক ও ভৌত (রিওলজি) বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। সবচেয়ে বাইরের স্তরটি রাসায়নিকভাবে স্বতন্ত্র নিরেট সিলিকেট ভূত্বক, যার নিচে রয়েছে অধিক সান্দ্রতা সম্পন্ন নিরেট ম্যান্টেল বা গুরুমণ্ডল। ভূত্বকটি গুরুমণ্ডল থেকে পৃথক রয়েছে মোহোরোভিচিক বিচ্ছিন্নতা (Mohorovičić discontinuity) অংশ দ্বারা। ভূত্বকের পুরুত্ব মহাসাগরে নিচে প্রায় ৬ কিলোমিটার এবং মহাদেশের ক্ষেত্রে প্রায় ৩০-৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়ে থাকে। ভূত্বক এবং এর সাথে ঠান্ডা, দৃঢ় উপরের দিকের উর্দ্ধ গুরুমণ্ডলকে একসাথে বলা হয়ে থাকে লিথোস্ফিয়ার এবং লিথোস্ফিয়ার সেই অংশ যেখানে টেকটনিক প্লেটগুলো সংকুচিত অবস্থায় থাকে। লিথোস্ফিয়ারের পরের স্তরটি হল অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার, এটা এর উপরের স্তর থেকে কম সান্দ্রতা সম্পন্ন, এবং এর উপরে অবস্থান করে লিথোস্ফিয়ার নড়াচড়া করতে পারে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪১০ কি.মি. থেকে ৬৬০ কি.মি. গভীরতার মধ্যে গুরুমণ্ডলের ক্রিস্টাল কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়, এখানে রূপান্তর অঞ্চলের একটি বিস্তারে পাওয়া যায়, যা উর্দ্ধ গুরুমণ্ডল ও নিম্ন গুরুমণ্ডলকে পৃথক করে। গুরুমণ্ডলের নিচে, অত্যন্ত সান্দ্রতা পূর্ণ একটি তরল বহিঃ ভূকেন্দ্র থাকে, যা একটি নিরেট অন্তঃ ভূকেন্দ্রের উপরে অবস্থান করে। পৃথিবীর অন্তঃ ভূকেন্দ্রের ঘূর্ণনের কৌণিক বেগ বাদবাকি ভূখন্ডের তুলনায় সামান্য বেশি হতে পারে, এটি প্রতি বছর ০.১–০.৫° বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। অন্তঃ ভূকেন্দ্রের পরিধি পৃথিবীর পরিধির তুলনায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ হয়ে থাকে। বাহ্যিক গঠন পৃথিবীর উৎপত্তির সময় এটি ছিল একটি উত্তপ্ত গ্যাসের পিন্ড। উত্তপ্ত অবস্থা থেকে এটি শীতল ও ঘনীভূত হয়। এ সময় ভারী উপাদানগুলো এটির কেন্দ্রের দিকে জমা হয় আর হালকা উপাদানগুলো ভরের তারতম্য অনুসারে নিচ থেকে উপরে স্তরে স্তরে জমা হয়। পৃথিবীর এ সকল স্তর এক একটি মণ্ডল নামে পরিচিত। সবচেয়ে উপরে রয়েছে অশ্মমণ্ডল স্তর। অশ্মমণ্ডলের উপরের অংশকে ভূত্বক বলে। ভূত্বকের নিচের দিকে প্রতি কি.মি. বৃদ্ধিতে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ভূত্বকের উপরের ভাগে বাহ্যিক অবয়বগুলো যেমন -পর্বত, মালভূমি, সমভূমি ইত্যাদি থেকে থাকে। পৃথিবীর বাহ্যিক গঠন পৃথিবীর উপরিভাগের বৈচিত্রময় ভূমিরুপসমূহ নিয়ে সজ্জিত। পৃথিবীর প্রধান ভূমিরূপগুলো ভূপৃষ্ঠে সর্বত্র সমান নয়। আকৃতি, প্রকৃতি এবং গঠনগত দিক থেকে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে। ভূপৃষ্ঠে কোথাও রয়েছে উঁচু পর্বত, কোথাও পাহাড়, কোথাও মালভূমি। ভৌগোলিক দিক থেকে বিচার করলে পৃথিবীর সমগ্র ভূমিরূপকে ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলোঃ (১) পর্বত (২) মালভূমি (৩) সমভূমি। সমুদ্রতল থেকে অন্তত ১০০০ মিটারের বেশি উঁচু সুবিস্তৃত ও খাড়া ঢালবিশিষ্ট শিলাস্তূপকে পর্বত বলে। সাধারণত ৬০০ থেকে ১০০০ মি. উঁচু স্বল্প সুবিস্তৃত শিলাস্তূপ কে পাহাড় বলে। পর্বতের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হতে পারে। পর্বতের ভূপ্রকৃতি সাধারণত বন্ধুর প্রকৃতির হয়ে থাকে, এগুলোর ঢাল খুব খাড়া এবং সাধারণত চূড়াবিশিষ্ট হয়ে থাকে। পূর্ব আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারোর মত কিছু পর্বত বিছিন্নভাবে অবস্থান করে। আবার হিমালয় পর্বতমালার মত কিছু পর্বত অনেকগুলো পৃথক শৃঙ্গসহ ব্যাপক এলাকা জুড়ে অবস্থান করে। পর্বতের থেকে উঁচু কিন্তু সমভূমি থেকে উঁচু খাড়া ঢালযুক্ত ঢেউ খেলানো বিস্তীর্ণ সমতলভূমি কে মালভূমি বলে। মালভূমির উচ্চতা শত মিটার থেকে কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হতে পারে। পৃথিবীর বৃহত্তম মালভূমির উচ্চতা ৪,২৭০ থেকে ৫,১৯০ মিটার। সমুদ্রতল থেকে অল্প উঁচু মৃদু ঢালবিশিষ্ট সুবিস্তৃত ভূমিকে সমভূমি বলে। বিভিন্ন ভূপ্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেমন -নদী, হিমবাহ ও বায়ুর ক্ষয় ও সঞ্চয় ক্রিয়ার ফলে সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে। মৃদু ঢাল ও স্বল্প বন্ধুরতার জন্য সমভূমি কৃষিকাজ, বসবাস, রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য খুবই উপযোগী। তাই সমভূমিতে সবচেয়ে বেশি ঘন জনবসতি গড়ে উঠেছে। তাপ পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপের উৎপত্তি হয় গ্রহের পরিবৃদ্ধির (প্রায় ২০%) ফলে সৃষ্ট তাপের অবশিষ্ট অংশ এবং তেজস্ক্রিয়তার (৮০%) ফলে সৃষ্ট তাপের সংমিশ্রণে। পৃথিবীতে থাকা সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপাদনকারী আইসোটোপ গুলো হল পটাশিয়াম-৪০, ইউরেনিয়াম-২৩৮ এবং থোরিয়াম-২৩২ পৃথিবীর কেন্দ্রে তাপমাত্রা হতে পারে বা তারও বেশি, এবং চাপ গিয়ে পৌছাতে পারে ৩৬০ গিগা প্যাসকেল। যেহেতু অধিকাংশ তাপ সৃষ্টির মূল কারণ তেজস্ক্রিয়তা, তাই বিজ্ঞানীরা দাবি করেন যে পৃথিবীর ইতিহাসের শুরুর দিকে, তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ গুলোর অর্ধ-জীবন হ্রাসপাওয়ার পূর্বে, পৃথিবীর তাপ উৎপাদন ক্ষমতা আরও বেশি ছিল। প্রায় ৩ বিলিয়ন বছর আগে, বর্তমান সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন তাপ উৎপন্ন হত, ফলাফলস্বরূপ গুরুমণ্ডলীয় পরিচলন ও ভূত্বকীয় পাতসমূহের গঠন প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়েছিল, এবং একই সাথে কিছু বিরল আগ্নেয় শিলা যেমন কোমাটিটে তৈরি হয়েছিল, যা বর্তমানে কদাচিৎই তৈরি হয়। পৃথিবীর থেকে গড় তাপ হ্রাসের পরিমাণ হল , সারা বিশ্বের তাপ হ্রাসের মান যেখানে । কেন্দ্রের তাপীয় শক্তির একটি অংশ ভূত্বকের দিকে পরিবাহিত হয় গুরুমণ্ডলীয় তাপীয় শিলা দ্বারা, এটা হল এক ধরনের পরিচলন পদ্ধতিতে উচ্চতাপমাত্রার পাথরের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের উপরের দিকে তাপের প্রবাহ। এই তাপীয় শিলাগুলো হটস্পট এবং আগ্নেয় শিলার বন্যার সৃষ্টি করতে পারে। পৃথিবীর তাপ আরও নিঃসৃত হয় টেকটনিক প্লেটগুলোর ফাটলের মধ্য দিয়ে, মধ্য-সমুদ্র রিগের যে সকল স্থানের ক্ষেত্রে গুরুমণ্ডল উপরের দিকে ওঠে গেছে। তাপ হ্রাসের সর্বশেষ মাধ্যম হল লিথোস্ফিয়ার দিয়ে পরিবহন পদ্ধতিতে, আর এটির অধিকাংশটাই হয় সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে যেহেতু মহাদেশীয় ভূত্বকের তুলনায় সমুদ্রের ভূত্বকের পুরুত্ব কম হয়ে থাকে। ভূত্বকীয় পাতসমূহ পৃথিবীর কাঠামোর বাহিরের দিকের দৃঢ় অনমনীয় স্তর, যা লিথোস্ফিয়ার নামে পরিচিত, বেশ কিছু টুকরায় বিভক্ত, এগুলো হল টেকটনিক পাত বা ভূত্বকীয় পাত। এই পাতগুলি হল সুদৃঢ় অংশবিশেষ যা নড়াচড়া করতে পারে একটির সাপেক্ষে আরেকটি, মোট তিন ধরনের যে কোন এক ধরনের পাত সীমার মধ্যে থেকে, এই পাত সীমা গুলো হল: অভিসারমুখী সীমা, এ ক্ষেত্রে দুটি পাত একটি অপরটির দিকে পরস্পরগামী ভাবে অগ্রসর হয়, বিমুখগামী সীমা এ ক্ষেত্রে দুটি পাত পরস্পরের বিপরীতমুখী ভাবে অগ্রসর হতে থাকে এবং পরিবর্তক সীমা, দুটি টেকটনিক পাত যখন সমান্তরাল ভাবে একে অন্যের বিপরীতে সরতে থাকে। ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাত, পর্বত গঠন, এবং মহাসাগরীয় খাতের গঠন প্রক্রিয়া ঘটে থাকে এই তিনটি ধরনের পাত সীমার ক্রিয়ার ফলে। ভূত্বকীয় পাতগুলো চলাচল করে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার অঞ্চলের উপরে, এটি উর্দ্ধ গুরুমণ্ডলের কঠিন কিন্তু কম সান্দ্রতাপূর্ণ অংশ, যা সঞ্চালিত হতে পারে ও নড়াচড়া করতে পারে পাতগুলোর সাথে। ভূত্বকীয় পাতগুলোর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালনের সাথে সাথে, মহাসাগরীয় ভূত্বকে সাবডাকশন ঘটে অভিসারমুখী সীমায় ক্রিয়ারত পাতগুলোর সম্মুখভাগের চাপে। ঠিক একই সময়ে, গুরুমণ্ডলের উপাদানের প্রবাহের ফলে মধ্য-সমুদ্র রিগের সৃষ্টি হয় বিমুখগামী সীমার ক্রিয়ার ফলে। এই প্রক্রিয়াগুলির সংমিশ্রণ মহাসাগরীয় ভূত্বকের রিসাইকেল করে আবার গুরুমণ্ডলে পাঠিয়ে দেয়। এই রিসাইকেলের ফলে, মহাসাগরীয় ভূত্বকের বেশিরভাগের বয়স ১০০ মিলিয়ন বছরের বেশি নয়। সবচেয়ে পুরাতন মহাসাগরীয় ভূত্বকটির অবস্থান ওয়েস্টার্ন প্যাসিফিকে যার অনুমানিক বয়স ২০০ মিলিয়ন বছর। তুলনা করা হলে যেখানে সবচেয়ে পুরাতন মহাদেশীয় ভূত্বকের বয়স প্রায় ৪০৩০ মিলিয়ন বছর। সাতটি প্রধান টেকটনিক বা ভূত্বকীয় পাত হল প্রশান্ত মহাসাগরীয়, উত্তর আমেরিকান, ইউরেশীয়, আফ্রিকান, অ্যান্টার্কটিক, ইন্দো-অস্ট্রেলীয়, এবং দক্ষিণ আমেরিকান। অন্যান্য কিছু অপ্রধান পাত হল, আরবীয় পাত, ক্যারিবীয় পাত, নাজকা পাত যা দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত এবং দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের স্কটিয়া পাত। ৫০ থেকে ৫৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে অস্ট্রেলীয়ান পাতটি ভারতীয় পাতটির সাথে সুদৃঢ় ভাবে সংযুক্ত হয়ে যায়। সবচেয়ে দ্রুত সঞ্চলনশীল পাত হল মহাসাগরীয় পাত, যেমন কোকোস পাত, এটি সঞ্চালিত হচ্ছে ৭৫ মিলি/বছর বেগে ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত, যা সঞ্চালিত হচ্ছে ৫২–৬৯ মিলি/বছর বেগে। অপর দিকে, সবচেয়ে ধীর সঞ্চালনশীল পাত হল ইউরেশীয় পাত, এটির সঞ্চালনের সাধারণ গতি বেগ হল ২১ মিলি/বছর। ভূপৃষ্ঠ পৃথিবীর মোট পৃষ্ঠতলের আকার হল প্রায় ৫১০ মিলিয়ন বর্গ কি.মি. (বা ১৯৭ মিলিয়ন বর্গ মাইল)। যার মধ্যে, ৭০.৮%, বা ৩৬১.১৩ মিলিয়ন বর্গ কি.মি. (১৩৯.৪৩ মিলিয়ন বর্গ মাইল), হল সমুদ্র পৃষ্ঠতলের নিচে ও এই অংশ সমুদ্রের পানি দ্বারা আচ্ছাদিত। সমুদ্র পৃষ্ঠতলের নিচেই রয়েছে অধিকাংশ মহীসোপান, পর্বতমালা, আগ্নেয়গিরি, সামুদ্রিক খাত, ডুবো গিরিখাত, সামুদ্রিক মালভূমি, গভীর সামুদ্রিক সমতল, এবং সারা পৃথিবী ব্যাপী বিসৃত মধ্য-সমুদ্র রিগ সিস্টেম। আর বাকি ২৯.২% অংশ বা ১৪৮.৯৪ বর্গ কি.মি. (বা ৫৭.৫১ মিলিয়ন বর্গ মাইল) যা পানি দ্বারা আচ্ছাদিত নয় ভূখণ্ডটি স্থানে স্থানে পরিবর্তিত এবং এতে রয়েছে পর্বত, মরুভূমি, সমতল, মালভূমি ও অন্যান্য ভূমিরূপ। অপসারণ ও অবক্ষেপণ, বিভিন্ন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, বন্যা, মৃত্তিকা আবহবিকার, হিমবাহ ক্ষয়ীভবন, প্রবালপ্রাচীরের বৃদ্ধি এবং উল্কা পিন্ডের আঘাত ইত্যাদি হল সেই সকল ক্রিয়াশীল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের আকার পরিবর্তন ঘটছে ভূতাত্ত্বিক সময় যাওয়ার সাথে সাথে। মহাদেশীয় ভূত্বকে কম ঘনত্বের উপাদান পাওয়া যায়, আগ্নেয় শিলা যেমন: গ্রানাইট ও অ্যান্ডেসাইট। সবচেয়ে কম পাওয়া যায় ব্যাসল্ট, যা হল অধিক ঘনত্বের আগ্নেয় শিলা, এটি হল মহাসাগরীয় ভূত্বক গঠনের মূল উপাদান। পাললিক শিলা গঠনের ক্ষেত্রে, পলি ক্রমানয়ে সঞ্চিত হয়ে এক সময় অন্য শিলার চাপে দেবে যায় এবং এরপর এক সাথে জমাট বাঁধে যায়। মহাদেশীয় ভূত্বকের প্রায় ৭৫% পাললিক শিলা দ্বারা আচ্ছাদিত, যদিও তা পৃথিবীর মোট ভূত্বকের মাত্র ৫% অংশ। আর পৃথিবীতে পাওয়া যাওয়া তৃতীয় ধরনের শিলা হল রূপান্তরিত শিলা, উচ্চ চাপে, উচ্চ তাপে কিংবা উভয়ের একসাথে ক্রিয়ার ফলে আগ্নেয় শিলা ও পাললিক শিলা রূপান্তরিত হয়ে এটি গঠিত হয়। পৃথিবীতে অজস্র পরিমাণে পাওয়া যাওয়া যে সকল সিলিকেট খনিজ সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কোয়ার্জ, ফেল্ডস্পার, অ্যাম্ফিবোল, মাইকা, পাইরক্সিন এবং অলিভিন। সাধারণত পাওয়া যাওয়া কার্বনেট খনিজ গুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যালসাইট (যা পাওয়া যায় চুনাপাথর) ও ডলোমাইট উভয়ে। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা পরিবর্তিত হতে পারে সর্বনিম্ন ৪১৮ মিটার যার অবস্থান মৃত সাগর এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা হতে পারে ৮,৮৪৮ মিটার হিমালয় পর্বতের চূড়ায়। সমুদ্র পৃষ্ঠতলের উপরে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা ৮৪০ মিটার। প্যাডোস্ফিয়ার হল পৃথিবীর মহাদেশীয় পৃষ্ঠের বাইরের সর্বোচ্চ স্তর এবং এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত মাটি ও মাটির গঠন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিষয়। মোট ভূপৃষ্ঠের ১০.৯% ভূমি হল আবাদী জায়গা, এর মধ্যে ১.৩% হল স্থায়ী শস্যভূমি। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের প্রায় ৪০% অংশ ব্যবহার করা হয় শষ্যভূমি ও চরণভূমি হিসাবে, আবার অরেকটি হিসাব থেকে জানা যায় ১.৩ × ১০৬ কি.মি.২ হল শষ্যভূমি ও ৩.৪ × ১০৬ কি.মি.২ হল চরণভূমি। জলমণ্ডল পৃথিবী পৃষ্ঠে পানির প্রাচুর্য হল সেই অনন্য বৈশিষ্ট্য যা সৌর জগতের অন্যান্য গ্রহ থেকে এই "নীল গ্রহটি"কে পৃথক করেছে। পৃথিবীর জলমণ্ডলের মধ্যে বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত মহাসাগরগুলো, কিন্তু যৌক্তিকভাবে পৃথিবী পৃষ্ঠের সকল পানি জলমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত, এটির মধ্যে রয়েছে ভূমির ভেতর দিকে থাকা সমুদ্র, লেক, নদী এবং এমনকি মাটির নিচের ২,০০০ মিটার নিচে থাকা পানিও এটার অন্তর্ভুক্ত। পৃষ্ঠতলের নিচে থাকা পানির সবচেয়ে গভীরতমটি হল প্রশান্ত মহাসাগরে থাকা মারিয়ানা খাতের চ্যালেঞ্জার ডিপ যার গভীরতা হল ১০,৯১১.৪ মিটার। মহাসাগরগুলোর অনুমানিক ভর হল প্রায় ১.৩৫ মেট্রিক টন যা মোটামুটি পৃথিবীর মোট ভরের ১/৪৪০০ অংশ। মহাসাগরগুলোর মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল হল ৩.৬১৮ কি.মি.২, আর গড় গভীরতা হল ৩৬৮২ মিটার, ফলাফল হিসাবে এটির আয়তন হল ১.৩৩২ কি.মি.৩। যদি পৃথিবীর সমুদ্র উপকূলের পৃষ্ঠের উচ্চতা সব জায়গায় সমান হত মসৃণ উপগোলকের মত, তাহলে পৃথিবীর মহাসাগরগুলোর গভীরতা হত ২.৭ থেকে ২.৮ কি.মি. পৃথিবীর মোট পানির প্রায় ৯৭.৫% হল লবণাক্ত; আর বাদবাকি ২.৫% হল মিঠা পানি। বেশিরভাগ মিঠা পানি, প্রায় ৬৮.৭%, উপস্থিত রয়েছে বরফ হিসাবে আইস ক্যাপে এবং হিমবাহ রূপে। পৃথিবীর মহাসাগরগুলোর গড় লবণাক্ততা হল প্রায় ৩৫ গ্রাম লবণ প্রতি কিলোগ্রাম লবণাক্ত পানিতে (৩.৫% লবণ)। এই লবণের বেশিরভাগ পানিতে সংযুক্ত হয়েছে অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনার ফলে বা নির্গত হয়েছে ঠান্ডা আগ্ন্যেয় শীলা থেকে। মহাসাগরগুলি দ্রবীভূত বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাসগুলোর একটি আধারও বটে, যেগুলো অত্যন্ত অত্যাবশ্যকীয় বিভিন্ন জলজ জীবন ধারণের জন্য। সাগরের পানি বিশ্বের জলবায়ুর উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে, যেখানে এটি কাজ করে একটি বৃহৎ তাপীয় আধার হিসাবে। মহাসাগরের তাপমাত্রার বণ্টনের ক্ষেত্রে যে কোন পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য ভাবে পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন করতে পারে, উদাহারণস্বরূপ এল নিনো। বায়ুমণ্ডল বায়ুমণ্ডল গ্যাসের একটি আস্তরণ যা পর্যাপ্ত ভরসম্পন্ন কোন বস্তুর চারদিকে ঘিরে জড়ো হয়ে থাকতে পারে। বস্তুটির অভিকর্ষের কারণে এই গ্যাসপুঞ্জ তার চারদিকে আবদ্ধ থাকে। বস্তুর অভিকর্ষ যদি যথেষ্ট বেশি হয় এবং বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা যদি কম হয় তাহলে এই মণ্ডল অনেকদিন টিকে থাকতে পারে। গ্রহসমূহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস জড়ো হতে দেখা যায়। এ কারণে গ্রহের বায়ুমণ্ডল সাধারণ অপেক্ষাকৃত ঘন এবং গভীর হয়। পৃথিবীর চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত স্তরকে পৃথিবী তার মধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে, একে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বা আবহমণ্ডল বলে। এই বায়ুমণ্ডল সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব রক্ষা করে। এছাড়ও তাপ ধরে রাখার মাধ্যমে (গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়ায়) ভূপৃষ্টকে উওপ্ত রাখে এবং দিনের তুলনায় রাতের তাপমাত্রা হ্রাস রোধ করে। ৮.৫ কি.মি. উচ্চতা স্কেলযুক্ত বায়ুমণ্ডল পৃথিবী পৃষ্ঠে গড় বায়ুমণ্ডলীয় চাপ প্রয়োগ করছে ১০১.৩২৫ কিলো প্যাসকেল। এটা গঠিত হয়েছে ৭৮% নাইট্রোজেন এবং ২১% অক্সিজেন দ্বারা, এর সাথে সামান্য পরিমাণে রয়েছে জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্যাসীয় উপাদান। ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতার পরিবর্তন হয় অক্ষাংশ পরিবর্তনের সাথে সাথে, যার মান হতে পারে মেরু অংশে ৮ কি.মি. ও নিরক্ষরেখার ক্ষেত্রে ১৭ কি.মি.। তবে এই মানের কিছু বিচ্যুতি হয়ে থাকে আবহাওয়া ও ঋতু পরিবর্তনের কারণে। পৃথিবীর জীবমণ্ডল উল্লেখযোগ্যভাবে এটির বায়ুমণ্ডলের পরির্তন সাধন করেছে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের উৎপাদন বিকাশ লাভ করে ২.৭ বিলিয়ন বছর আগে, গঠন করে আজকের মূল নাইট্রোজেন-অক্সিজেন বায়ুমণ্ডল। এর ফলশ্রুতিতে বায়ুজীবী জীবদের বিকাশ লাভ ত্বরান্বিত হয় এবং পরোক্ষভাবে, এটি ওজোন স্তর গঠন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে, এটির কারণ হল পরবর্তীতে ঘটা বায়ুমণ্ডলীয় O2 থেকে O3 তে পরিবর্তন। ওজন স্তর সৌর বিকিরণের অতিবেগুনী রশ্মিকে আটকিয়ে দিয়ে, ভূমিতে প্রাণের বিকাশে সহায়তা করে। অন্যান্য বায়ুমণ্ডলীয় কর্মকাণ্ড যা জীবন ধারণের জন্য জরুরি তার মধ্যে রয়েছে জলীয় বাষ্পের সঞ্চালন, অতিপ্রয়োজনীয় গ্যাসগুলির সরবরাহ, ছোট উল্কাপিন্ড পৃথিবী পৃষ্ঠে আঘাত হানার পূর্বে তা পুড়িয়ে ফেলা এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। সর্বশেষ কর্মকান্ডটি পরিচিত গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া নামে: বায়ুমণ্ডলের চিহ্নিত কিছু গ্যাসীয় অণু ভূ-পৃষ্ঠ হতে বিকীর্ণ তাপ শক্তি শোষন করে পুনরায় বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরে বিকিরিত করে, বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে। জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, এবং ওজন হল বায়ুমণ্ডলের মূল গ্রীনহাইজ গ্যাস। এই তাপ ধারণের ঘটনাটি না থাকলে, ভূ-পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা হত −১৮ °সে, বিপরীত দিকে বর্তমান তাপমাত্রা হল +১৫ °সে, এবং এটা এর বর্তমান অবস্থায় না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটত না। মে ২০১৭ সালে, কক্ষপথে থাকা একটি স্যাটেলাইট থেকে এক মিলিয়ন মাইল দূরে হঠাৎ ক্ষণিকের জন্য একটি আলোর ঝলকানি দেখা যায়, পরে জানা যায় বায়ুমণ্ডলে থাকা বরফ স্ফটিক থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে এটি ঘটেছিল। আবহাওয়া এবং জলবায়ু আবহাওয়া হলো কোনো স্থানের স্বল্প সময়ের বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা। সাধারণত এক দিনের এমন রেকর্ডকেই আবহাওয়া বলে। আবার কখনও কখনও কোনো নির্দিষ্ট এলাকার স্বল্প সময়ের বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থাকেও আবহাওয়া বলা হয়। আবার কোনো স্থানের দীর্ঘ সময়ের আবহাওয়ার উপাত্তের ভিত্তিতে তৈরি হয় সে স্থানের জলবায়ু। আবহাওয়া নিয়ত পরিবর্তনশীল একটি চলক। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কোন সুনির্দিষ্ট সীমানা নেই, ধীরে ধীরে পাতলা এবং হালকা হয়ে বহিঃমহাকাশের সাথে মিশে গেছে। বায়ুমণ্ডলের তিন চতুর্থাংশের ভর রয়েছে এটির মোট অংশের প্রথম এর মধ্যে। এর সবচেয়ে নিচের স্তরটির নাম হল ট্রপোস্ফিয়ার। সূর্য থেকে আসা তাপের প্রভাবে এই স্তরটি এবং এর নিচে থাকা ভূ-পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়, ফলশ্রুতিতে বাতাসের সম্প্রসারণ ঘটে। এই নিম্ন ঘনত্বের বাতাস উপরের দিকে উঠে যায় এবং এটির জায়গা দখল করে ঠান্ডা, উচ্চ ঘনত্বের বাতাস। ফলে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, যা তাপমাত্রার পুনঃবিন্যাস করে আবহাওয়া ও জলবায়ুকে বিভিন্ন স্থানে সঞ্চালিত করে। মূল বায়ুপ্রবাহের ধারার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত অয়ন বায়ু (Trade Wind), নিরক্ষীয় অঞ্চলের ৩০° অক্ষাংশ নিচে এবং পশ্চিমা বায়ু (westerlies) মধ্য-অক্ষাংশ বরাবর ৩০° থেকে ৬০° এর মধ্যে। মহাসাগরীয় স্রোত জলবায়ু নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, থার্মোহ্যালাইন প্রবাহ (thermohaline circulation) যা তাপ শক্তিকে বিতরণ করে নিরক্ষীয় সমুদ্র অঞ্চল থেকে ঠান্ডা মেরু অঞ্চলে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে যে জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয় তা কিছু বিন্যাস অনুসরন করে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্থানে সঞ্চালিত হয়। যখন বায়ুমণ্ডলীয় পরিবেশ গরম, আদ্রর্তাযুক্ত বাতাসকে, উপরের দিকে উঠার সুযোগ করে দেয়, তখন এই পানি ঘনীভূত হয় এবং ভূ-পৃষ্ঠের দিকে অধ:ক্ষিপ্ত ভাবে পতিত হয়। বেশির ভাগ পানি এরপর নিম্নভূমির দিকে ধাবিত হয় নদী নালার মাধ্যমে এবং সাগরে পুনরায় পৌছায় কিংবা এটি জমা হয় কোন হ্রদে। ভূমিতে জীবন ধারণের জন্য এই পানি চক্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া এবং কোন একটি ভূতত্ত্বিক সময়ের মধ্যে ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন গঠনের ভূমিক্ষয়ের জন্য এটি মূল কারণ। বৃষ্টিপাত পতনের বিন্যাস পরিবর্তিত হয় ব্যাপক ভাবে, যার মাত্রা হতে পারে প্রতি বছর কয়েক মিটার থেকে এক মিলিমিটারের থেকেও কম। বায়ুপ্রবাহ, অবস্থানগত বৈশিষ্ট্য ও তাপমাত্রার পার্থক্য - নির্ধারন করে কোন অঞ্চলে পতিত হওয়া গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। পৃথিবী পৃষ্ঠে সৌর শক্তির পরিমাণ কমতে থাকে অক্ষাংশের মান বাড়তে থাকার সাথে সাথে। উচ্চ অক্ষাংশে, সূর্যের আলো ভূ-পৃষ্ঠে পৌছায় নিম্ন কোণে, এবং এটিকে পার করতে হয় বায়ুমণ্ডলের পুরু স্তর। ফলাফলস্বরূপ, নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে প্রতি ডিগ্রী অক্ষাংশ পরিবর্তনে সমুদ্র সমতল থেকে গড় বার্ষিক বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাস পায় প্রায় । পৃথিবী পৃষ্ঠকে কিছু সুনির্দিষ্ট অক্ষ রেখায় উপবিভাজন করা যায় যেখানে মোটামুটি একই রকম জলবায়ু বিরাজ করে। নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চল পর্যন্ত বিরাজমান এই জলবায়ুগুলো হল ক্রান্তীয় জলবায়ু (বা নিরক্ষীয়),উপক্রান্তীয় জলবায়ু (subtropical), নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু এবং পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের জলবায়ু। এই অক্ষাংশ নিয়মের কিছু ব্যতয় রয়েছেঃ জলবায়ু নিয়ন্ত্রিত হয় যদি কাছাকাছি কোথায় সমুদ্র থাকে। উদাহারণস্বরূপ, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান পেনিনসুলায় (Scandinavian Peninsula) অনেক সহনীয় জলবায়ু এটির সমগোত্রীয় উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত উত্তর কানাডার তুলনায়। বায়ু সহনীয় পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করে। ভূমির বায়ুবাহিত দিক এটির বায়ুপ্রবাহ বিহীন দিকের তুলনায় অনেক সহনীয় অবস্থা অনুভব করে। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে, বাতাস প্রবাহিত হয় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে, এবং পশ্চিম তীর কোমল হয়ে থাকে পূর্ব তীরের তুলনায়। এটা দেখা যায় উত্তর আমেরিকার পূর্বাংশে এবং পশ্চিম ইউরোপে, সমুদ্রের উভয় দিকে পাশাপাশি কোমল জলবায়ু থাকলেও অন্যদিকে বন্ধুর জলবায়ু দেখা যায় এটির পূর্ব তীরের দিকে। দক্ষিণ গোলার্ধে, বাতাস প্রবাহিত হয় পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে, এবং পূর্ব তীরের জলবায়ু কোমল হয়ে থাকে। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব পরিবর্তিত হয়। পৃথিবী সূর্যের সবচাইতে কাছে থাকে (অণুসূরবিন্দুতে) জানুয়ারি মাসে, যেটা দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল। পৃথিবী সূর্য থেকে সবচাইতে দূরে থাকে (অপদূরবিন্দুতে) জুলাই মাসে, যেটা উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল, এবং অনুসূরবিন্দুর তুলনায় সূর্য থেকে আসা সৌর বিকিরণের মাত্র ৯৩.৫৫% পতিত হয় ভূমির কোন নিদির্ষ্ট বর্গ এলাকায়। এটা সত্ত্বেও, উত্তর গোলার্ধে ভূমির আকার অনেক বড়, যা সমদ্রের তুলনায় অনেক সহজে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সুতরাং, গ্রীষ্মকাল উষ্ম হয়ে থাকে উত্তর গোলার্ধে, দক্ষিণ গোলার্ধের তুলনায় অনুরূপ পরিবেশ থাকা শর্তেও। সমুদ্র সমতল থেকে অধিক উচ্চ ভূমির ক্ষেত্রে জলবায়ু অনেক ঠান্ডা থাকে কারণ সেখানে বাতাসের ঘনত্ব কম থাকে। বহুল ব্যবহৃত কোপ্পেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগ (Köppen climate classification) পাঁচটি বৃহৎ ভাগে বিভক্ত (আর্দ্র ক্রান্তীয়, শুষ্ক, আর্দ্র মধ্য অক্ষাংশ, মহাদেশীয় এবং ঠান্ডা মেরু), যা পরবর্তীতে আরও বিভাজন করা হয় বিভিন্ন উপভাগে। কোপ্পান ব্যবস্থায় বিভিন্ন ভূ-অঞ্চলের মান প্রদান করে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের উপর পর্যবেক্ষণ করে। পৃথিবীতে বায়ুর সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছিল ফুরনেসা ক্রিক, ক্যালিফর্নিয়ার, ডেথ ভ্যালিতে, ১৯১৩ সালে। পৃথিবীতে কখনো সরাসরি মাপা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ভোস্টোক স্টেশন ১৯৮৩ সালে। কিন্তু উপগ্রহে থাকা রিমোট সেন্সর ব্যবহার করে পরিমাপ করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পূর্ব অ্যান্টারর্টিকা। এই তাপমাত্রার রেকর্ড হল শুধুমাত্র কিছু পরিমাপ যা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ২০শ শতকের শুরু থেকে মান নেয়া শুরু করা হয় এবং সৌভাগ্য বশত এটা পৃথিবীর তাপমাত্রা পূর্ণ মাত্রা প্রকাশ করে না। উচ্চতর বায়ুমণ্ডল ট্রপোমণ্ডলের উপরের বায়ুমণ্ডলকে সাধারণত স্ট্রাটোমণ্ডল, মেসোমণ্ডল ও তাপমণ্ডলে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি স্তরের ভিন্ন ভিন্ন ল্যাপস রেট থাকে, যা দ্বারা উচ্চতা পরিবর্তনের সাথে তাপমাত্রার পরিবর্তন নির্দেশ করে। এরপর থেকে এক্সোমণ্ডল হালকা হতে হতে চৌম্বকমণ্ডলে মিলিয়ে যায়, যেখানে ভূ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্রসমূহ সৌরবায়ুর সাথে মিথষ্ক্রিয়া করে থাকে। স্ট্রাটোমণ্ডলের মধ্যে রয়েছে ওজন স্তর, এটা হল সেই উপাদান যা ভূ-পৃষ্ঠকে সূর্যের অতিবেগুণী রশ্মির হাত হতে প্রকৃত পক্ষে রক্ষা করে এবং তাই, পৃথিবী প্রাণী জগতের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কার্মান রেখা, টিকে সংজ্ঞায়িত করা যায় এভাবে, এটি পৃথিবী পৃষ্ঠ হতে ১০০ কি.মি. উপরে থাকে, এবং এটা হল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং মহাকাশের মধ্যে কার্যকর সীমা রেখা। তাপশক্তির কারণে বায়ুমণ্ডলের বাইরের প্রান্তে থাকা কিছু অনুর ভেতর গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং এক পর্যায়ে এগুলো পৃথিবীর অভিকর্ষ শক্তিকে ছিন্ন করে মহাকাশে বেড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়। এই ঘটনার ফলে ধীরে কিন্তু নিয়মিতভাবে বায়ুমণ্ডল মহাকাশে হারিয়ে যায়। যেহেতু মুক্ত হাইড্রোজেনের আণবিক ভর সবচাইতে কম, এটা অতি দ্রুত নির্দ্ধিধায় মুক্তিবেগ অর্জন করতে পারে, এবং এটির অন্যান্য গ্যাসের তুলনায় অধিক হারে বাইরের মহাকাশে বহির্গমন ঘটে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তনের পিছনে মহাকাশে হাইড্রোজেন গ্যাসের হারিয়ে যাওয়া একটি অন্যতম কারণ এবং এটা প্রাথমিকভাবে ঘটে একটি জারণ বিক্রিয়া থেকে এটির বর্তমান বিজারণ বিক্রিয়ায় আসায়। সালোকসংশ্লেষনের ফলে অক্সিজেনের সৃষ্টি হয়, কিন্তু ধারণা করা হয় জারণের ফলে নির্গত উপাদান যেমন হাইড্রোজেন হল বায়ুমণ্ডলে ব্যাপক হারে অক্সিজেনের সঞ্চয়নের পেছনে মূল পূর্বশর্ত। অতএব, হাইড্রোজেনের বায়ুমণ্ডল থেকে মুক্ত হওয়ার ঘটনা হয়তোবা পৃথিবীতে প্রাণের যে বিকাশ ঘটেছে তার গতি-প্রকৃতির উপর প্রভাব রেখেছে। বর্তমানে অক্সিজেন সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডলের বেশিরভাগ হাইড্রোজেন পরিণত হয় পানিতে, এটি বায়ুমণ্ডল থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবার আগেই। এটির বদলে, হারিয়ে যাওয়া বেশিরভাগ হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয় উচ্চতর বায়ুমণ্ডলে পুড়ানো মিথেনের ফলশ্রুতিতে। অভিকর্ষজ ক্ষেত্র পৃথিবীর অভিকর্ষজ বল হল সেই ত্বরণ যা পৃথিবীর সাথে কোন একটি বস্তুর উপর ক্রিয়া করে বস্তুটির ভরের কারণে। ভূ-পৃষ্ঠের উপর, অভিকর্ষজ ত্বরণ হল প্রায় । কোন স্থানের ভূসংস্থান, ভূতত্ত্ব এবং গভীর ভূত্বকীয় গঠনের পার্থক্যের কারণে স্থানীয় ও বৃহৎ অঞ্চলের পৃথিবীর অভিকর্ষজ বলের মানের পরিবর্তন হয়ে থাকে, যাকে বলা হয়ে থাকে মাধ্যাকর্ষীয় ব্যত্যয়। চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মূল অংশটি উৎপন্ন হয় এর ভূ-কেন্দ্রে, ডায়নামো প্রক্রিয়ার, তাপীয় ভাবে ও গাঠিনিক ভাবে উৎপন্ন গতিশক্তির পরিবর্তন ঘটে পরিচলন পদ্ধতিতে পরিবাহিত হয় তড়িৎ শক্তি ও চৌম্বক শক্তিতে। চৌম্বক ক্ষেত্রটি ভূ-কেন্দ্রে থেকে পৃথিবীর বাইরের দিকে ছড়িয়ে যায়, গুরুমণ্ডল ভেদ করে, পৃথিবীর পৃষ্ঠ পর্যন্ত, যেখানে এটা মোটামুটি একটি ডাইপোল। ডাইপোলের মেরুগুলোর অবস্থান পৃথিবীর ভৌগোলিক মেরুর কাছাকাছি। ভূ-পৃষ্ঠের উপর নিরক্ষরেখা বরাবর, চৌম্বক ক্ষেত্রটির চৌম্বক শক্তির পরিমাণ হল , একই সাথে বৈশ্বিক চৌম্বকীয় ডাইপোল মোমেন্ট হল । ভূ-কেন্দ্রে হতে পরিচলন পদ্ধতিতে প্রবাহিত চৌম্বক শক্তি সুশৃঙ্খল ভাবে চারিদিকে ছড়ায় না; চৌম্বকীয় মেরুর স্থান পরিবর্তন হয় এবং পর্যায়ক্রমে এটির অ্যালাইনমেন্টের পরিবর্তন ঘটে। এর ফলশ্রুতিতে স্যাকুলার পরিবর্তন ঘটে মূল চৌম্বক ক্ষেত্রের এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের বিপর্যয় ঘটে একটি অনিয়মিত সময়ের ভেতরে, গড়ে প্রতি মিলিয়ন বছরে একবার। সবচেয়ে কাছাকাছি সময়ে ঘটা বিপর্যয়টি হয়েছিল প্রায় ৭০০,০০০ বছর আগে। চৌম্বকমণ্ডল মহাকাশে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের বিস্তৃতি দ্বারা চৌম্বকমণ্ডলকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সৌর বায়ুর আয়ন এবং ইলেকট্রনগুলি পৃথিবীর চৌম্বকমণ্ডল দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়; সৌর বায়ুর চাপে দিনের আলোর দিকে থাকা চৌম্বকমণ্ডলের দৈর্ঘ্য সংকুচিত হয়, প্রায় পৃথিবীর ব্যাসার্ধের ১০ গুণ পর্যন্ত এবং অন্ধকারের দিকের চৌম্বকমণ্ডলটি লম্বা করে প্রসারিত করে তোলে। এর কারণ হল তরঙ্গ যে বেগে সৌর বায়ুর দিকে অগ্রসর হয় তার থেকে সৌর বায়ুর গতিবেগ অনেক বেশি, একটি সুপারসনিক প্রচন্ড-আঘাত দিনের আলোর দিকে থাকা চৌম্বকমণ্ডলকে সৌর বায়ুর মধ্যে মিশিয়ে দেয়। চৌম্বকমণ্ডল আধানযুক্ত কণাগুলোকে ধারণ করে; প্লাসমামণ্ডলটিকে সংজ্ঞায়িত করা যায় এভাবে, এটি নিম্ন শক্তি সম্পন্ন কণা দ্বারা পূর্ণ থাকে যা পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে সাথে চৌম্বকমণ্ডলের রেখাগুলোকে অনুসরণ করে; রিং কারেন্টকে সংজ্ঞায়িত করা হয় এভাবে, এটি মধ্যম-শক্তির কণা দ্বারা পূর্ণ থাকে যা পৃথিবীর ভূচৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে তাল মিলিয়ে প্রবাহিত হয়, কিন্তু তা স্বত্তেও এটির প্রবাহ পথের উপর আধিপত্য রাখে চৌম্বক ক্ষেত্রটি, এবং ভ্যান এলেন রেডিয়েশন বেল্ট গঠিত হয় উচ্চ-শক্তি সম্পন্ন কণা দ্বারা, যার গতি প্রধানত এলোমেলো ধরনের হয়, কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে এটির অবস্থান চৌম্বকমণ্ডলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। চৌম্বকীয় ঝড় ও সাবস্ট্রোম যখন ঘটে, তখন বাইরের দিকের চৌম্বকমণ্ডল থেকে এবং বিশেষ করে ম্যাগনিটোটেইল থেকে আধানযুক্ত কণাগুলো বেরিয়ে যায়, যার দিক হতে পারে আয়নমণ্ডলের দিকে, যেখানে বায়ুমণ্ডলীয় অনুগুলো হয়ে থাকে উত্তেজিত ও আধানযুক্ত, এর ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয় আরোরা। বার্ষিক ও আহ্নিক গতি আহ্নিক গতি পৃথিবী নিজের অক্ষের চারিদিকে ঘূর্ণনকে পৃথিবীর আহ্নিক গতি বলে। এই গতি পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত অভিমুখে হয়ে থাকে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে। সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সময়কালকে — এটির গড় সৌর দিন বলা হয়—এটা হল ৮৬,৪০০ সেকেন্ড গড় সৌর সময় (৮৬,৪০০.০০২৫ এস আই সেকেন্ড)। এর কারণ হল পৃথিবীর সৌর দিন আজ সামান্য বড় ১৯ শতকের তুলনায় যার কারণ হল টাইডাল মন্দন, প্রতিটি দিন পরিবর্তিত হয়ে বড় হয়ে থাকে ০ থেকে ২ এস আই মিলি সেকেন্ড পর্যন্ত। পৃথিবীর আহ্নিক গতির পর্যায়কাল হিসাব করা হয় স্থির নক্ষত্র সমূহের সাপেক্ষে, যেটাকে ইন্টারন্যাশনাল আর্থ রোটেশন এন্ড রেফারেন্স স্টিস্টেম সার্ভিস (আই.ই.আর.এস) কর্তৃক বলা হয় এটির নাক্ষত্রিক দিন (stellar day), যা হল ৮৬,১৬৪.০৯৮৯ সেকেন্ড গড় সৌর দিন (ইউটি১), বা ২৩ ৫৬ ৪.০৯৮৯। অয়নকাল বা ঘূর্ণনরত গড় মহাবিষুবকালের সাপেক্ষে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সময়কালকে, পূর্বে ভুলনামে প্রচলিত ছিল নাক্ষত্র দিন (sidereal day) হিসাবে, যার মান হল ৮৬,১৬৪.০৯০৫ সেকেন্ড গড় সৌর সময় (ইউটি১) (২৩ ৫৬ ৪.০৯০৫) হতে। ফলাফল স্বরূপ, নাক্ষত্র দিন নাক্ষত্রিক দিনের তুলনায় ছোট প্রায় ৮.৪ মিলিসেকেন্ড। আই.ই.আর.এস কর্তৃক গড় সৌর দিনের দৈর্ঘ্যের মানের হিসাব এস.আই এককে পাওয়া যায় ১৬২৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৬২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উল্কাপিন্ড ও নিম্ন কক্ষীয় স্যাটেলাইট ছাড়া, জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুর (celestial bodies) আপাত মূল গতি লক্ষ্য করা যায় পৃথিবীর আকাশের পশ্চিম দিকে যার গতির হার হল ১৫°/ঘণ্টা = ১৫'/মিনিট। বস্তু যেগুলো খ-বিষুবের (celestial equator) কাছাকাছি থাকে, তা সূর্য বা চাঁদের আপাত পরিধির সমান হয়ে থাকে প্রতি দুই মিনিট অন্তর অন্তর; পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে, সূর্য ও চাঁদের আপাত মাপ প্রায় সমান হয়ে থাকে। বার্ষিক গতি যে গতির ফলে পৃথিবীতে দিনরাত ছোট বা বড় হয় এবং ঋতু পরিবর্তিত হয় তাকে পৃথিবীর বার্ষিক গতি বলে। পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে প্রায় গড় দূরত্বে প্রতি ৩৬৫.২৫৬৪ গড় সৌর দিন পরপর, বা এক সৌর বছরে। এর মাধ্যমে অন্যান্য তারার সাপেক্ষে পূর্বদিকে সূর্যের অগ্রসর হওয়ার একটি আপাত মান পাওয়া যায় যার হার হল প্রায় ১°/দিন, যা হল সূর্য বা চাঁদের আপাত পরিধি প্রতি ১২ ঘণ্টায়। এই গতির কারণে, গড়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টা লাগে—একটি সৌর দিনে—পৃথিবীকে তার অক্ষ বরাবব একটি পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে, যাতে করে সূর্য আবার মেরিডিয়ানে ফেরত যেতে পারে। পৃথিবীর গড় কক্ষীয় দ্রুতি হল , যা যথেষ্ট দ্রুত, এই গতিতে পৃথিবীর পরিধির সমান দূরত্ব, প্রায় , মাত্র সাত মিনিটে অতিক্রম করা যাবে, এবং পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব , অতিক্রম করা যাবে প্রায় ৩.৫ ঘণ্টায়। চাঁদ ও পৃথিবীর ঘূর্ণন করে একই বেরিকেন্দ্রকে অনুসর করে, প্রতি ২৭.৩২ দিনে এটির আশেপাশের তারাগুলোর সাপেক্ষে একবার চাঁদের প্রদক্ষিণ সম্পন্ন হয়। যখন সূর্যের চারিদিকে পৃথিবী ও চাঁদের যৌথ সাধারণ কক্ষপথ হিসাব করা হয়, এই সময়কালকে বলা চঁন্দ্র মাস, একটি পূর্ণিমা হতে অপর পূর্ণিমা পর্যন্ত, যা হল ২৯.৫৩ দিন। যদি খ-উত্তর মেরুর সাপেক্ষে হিসাব করা হয়, তাহলে পৃথিবীর গতি, চাঁদের গতি, এবং এদের কক্ষীয় নতি হবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে। যদি সূর্য বা পৃথিবীর উপরের কোন সুবিধাজনক অবস্থান থেকে দেখা হয়, তাহলে মনে হবে, পৃথিবী ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিক দিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। ঘূর্ণন তল এবং অক্ষীয় তল পরিপূর্ণভাবে সরলরৈখিক ভাবে সারিবদ্ধ নয়: পৃথিবীর অক্ষ বাঁকা রয়েছে প্রায় ২৩.৪৪ ডিগ্রী পৃথিবী-সূর্যের পরিক্রম পথ (ক্রান্তিবৃত্ত) থেকে উলম্ব বরাবর, এবং পৃথিবী-চাঁদের তল বাঁকা রয়েছে প্রায় ±৫.১ ডিগ্রী পর্যন্ত পৃথিবী-সূর্যের তলের তুলনায়। যদি এই বাঁকা ভাব না থাকত, তাহলে প্রতি দুই সপ্তাহে একটি করে গ্রহণ ঘটত, হয় চঁদ্রগ্রহণ হত, নয়তবা সূর্যগ্রহণ হত। হিল স্ফিয়ার, বা পৃথিবীর মহাকর্ষীয় শক্তির প্রভাবের ব্যাসার্ধ হল প্রায় । এটা হল সর্বোচ্চ দূরত্ব যেখান পর্যন্ত পৃথিবীর মহাকর্ষীয় প্রভাব আরও দূরে থাকা সূর্য ও অন্যান্য গ্রহের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এই ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা প্রতিটি বস্তু পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে বাধ্য, অথবা তারা সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে ছিটকে যেতে পারে। পৃথিবী, এবং একই সাথে সৌর জগৎ, অবস্থান করছে মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতে এবং এর কেন্দ্রে থেকে প্রদক্ষিণ করছে প্রায় ২৮,০০০ আলোক বর্ষ জুড়ে। এটার অবস্থান অরিয়ন আর্মের গ্ল্যাক্‌টিক তল হতে প্রায় ২০ আলোক বর্ষ উপরে। কক্ষের নতি এবং ঋতু পরিবর্তন পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের পরিমাণ হল প্রায় ২৩.৪৩৯ ২৮১°, যার কক্ষতলের অক্ষটি, সর্বাদা খ-মেরুর দিকে তাক হয়ে থাকে। পৃথিবীর অক্ষীয় ঢাল বা অক্ষ রেখাটি হেলানো থাকার কারণে, কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে যে পরিমাণ সূর্যের আলো আসে, তা সারা বছর ধরে সমান থাকে না, এর মান পরিবর্তিত হয়। এর ফলশ্রুতিতে প্রকৃতি তথা জলবায়ুতে ঋতুর পরিবর্তন হয়, উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালের সূচনা হয় যখন সূর্য সরাসরি কর্কটক্রান্তি রেখার দিকে তাক হয়ে থাকে এবং একই জায়গায় শীতকালের সূচনা ঘটে সূর্য যখন দক্ষিণ গোলার্ধে থাকা মকরক্রান্তি রেখার দিকে তাক হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে, দিনগুলো অনেক লম্বা হয়, ও সূর্য আকাশের অনেক উপরের দিকে থাকে। অপরদিকে শীতকালে, জলবায়ু ঠান্ডা হয়ে যায় ও এ সময় দিনগুলো হয় ছোট। উত্তরের নাতিশীতোষ্ণ অক্ষাংশে, গ্রীষ্মকালের অয়তান্ত-বিন্দু অংশে সূর্য উদয় হয় উত্তরের সঠিক পূর্ব দিকে এবং অস্ত যায় উত্তরের সঠিক পশ্চিম দিকে, যার ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটে শীতকালে। গ্রীষ্মকালের অয়তান্ত-বিন্দু অংশে সূর্য উদয় হয় দক্ষিণের সঠিক পূর্ব দিকে, দক্ষিণের নাতিশীতোষ্ণ অক্ষাংশে এবং অস্ত যায় দক্ষিণের সঠিক পশ্চিম দিকে। আর্কটিক সার্কেলের উপরে, একটি চরম অবস্থা দাঁড়ায় যেখানে বছরের কিছু সময় দিনের আলো পৌছায় না, শুধুমাত্র উত্তর মেরুতেই প্রায় ৬ মাসের উপরে এই অবস্থা থাকে, এটি মেরু রাত্রি নামে পরিচিত। দক্ষিণ গোলার্ধে, এই সময় এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ বিপরীত থাকে, দক্ষিণ মেরুর অবস্থান ও দিওক এসময় উত্তর মেরুর অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে থাকে। ছয় মাস পরে, এই মেরুটি অনুভব করে মধ্যরাতের সূর্য (midnight sun), যেখানে এক একটি দিন হয় ২৪ ঘণ্টা লম্বা, একই সময় বিপরীত ঘটনা ঘটে দক্ষিণ মেরুতে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের রেওয়াজ থেকে, অয়তান্ত-বিন্দু অনুসারে চারটি ঋতুর হিসাব করা যায়—এটা হল সেই বিন্দু যা থেকে পৃথিবীর অক্ষ রেখার অক্ষীয় ঢাল সূর্যের কত কাছে রয়েছে বা সূর্য থেকে কত দূরে রয়েছে তার হিসাব পাওয়া যায়—এবং বিষুব অনুসারে, যখন অক্ষীয় ঢালের দিক ও সূর্যের দিক সমান্তরালে থাকে। উত্তর গোলার্ধে, শীতকালীন অয়তান্ত-বিন্দু (winter solstice) বর্তমানে হয়ে থাকে ২১ ডিসেম্বর; গ্রীষ্মকালীন অয়তান্ত-বিন্দু হয়ে থাকে ২১ জুনের কাছাকাছি সময়ে, বসন্ত বিষুব হয়ে থাকে ২০ মার্চের কাছাকাছি এবং হেমন্তকালীন বিষুব হ্যে থাকে ২২ বা ২৩ সেপ্টেম্বর। দক্ষিণ গোলার্ধে এর বিপরীত ঘটনা ঘটে থাকে, যেখানে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন অয়তান্ত-বিন্দু গুলো নিজের মধ্যে পাল্টিয়ে যায় এবং বসন্ত বিষুব ও শারদীয় বিষুবের দিনও নিজেদের মধ্যে পাল্টিয়ে যায়। পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের মান আপেক্ষিকভাবে অনেক লম্বা সময় ধরে অপরিবর্তনীয় রয়েছে। গড়ে ১৮.৬ বছরে পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের অক্ষবিচলন ঘটে, সাধারণত অতি সামান্য, অনিয়মিত গতি পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও পৃথিবীর অক্ষের অভিমুখ (এর কোণের মান নয়) সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়, এটির অয়নচলনের বৃত্তটি পরিপূর্ণভাবে শেষ হয় প্রতি ২৫,৮০০ বছরে একবার; এই অয়নচলন গতিটি নাক্ষত্র বছর থেকে ট্রপিক্যাল বছর পৃথক হবার কারণ হিসাবে কাজ করে। এই উভয় গতি সৃষ্টি হয় পৃথিবীর নিরক্ষরেখার স্ফীতি বরাবর সূর্য ও চঁন্দ্রের ভিন্ন ধর্মী আকর্ষণের কারণে। মেরু দুটিও ভূপৃষ্ঠের জুড়ে কয়েক মিটার স্থানন্তরিত হতে পারে। এই মেরু গতির বেশ কিছু, পর্যায়ক্রমিক উপাদান রয়েছে, যেগুলোকে একসাথে বর্ণনা করা যায় কোয়াসিপিরিওডিক গতি হিসাবে। এই গতির বার্ষিক উপাদান ছাড়াও, ১৪ মাস সাইকেলের আরো একটি উপাদান রয়েছে যা চ্যান্ডলার উবল নামে পরিচিত। পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে দিন-রাত্রি ছোট বড় হবার ঘটনাও ঘটে থাকে। বর্তমান সময়ে, পৃথিবী অণুসূরবিন্দুতে অবস্থান করে ৩রা জানুয়ারির কাছাকাছি সময়ে, এবং অপসূরবিন্দুতে ৪ঠা জুলাইয়ের কাছাকাছি সময়ে। অয়নচলনের কারণে ও অক্ষীয় বিভিন্ন ঘটনার কারণে সময়ের সাথে সাথে এই দিনগুলো পরিবর্তিত হয়, যা চক্রাকার একটি প্যাটার্ন অনুসরণ করে যা মিলানকোভিটচ সাইকেল নামে পরিচিত। পৃথিবী ও সূর্যের এই পরিবর্তনশীল দূরুত্বের কারণে পৃথিবী পৃষ্ঠে পৌছানো সৌর শক্তি প্রায় ৬.৯% বৃদ্ধি পায় অণুসুরের অপেক্ষা অপসূরে। এর কারণ দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুকে থাকে ঠিক যখন পৃথিবী ও সূর্যের সবচাইতে কাছাকাছি বিন্দুতে পৌছায়, সারা বছর ব্যাপী পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ এটির উত্তর গোলার্ধের থেকে কিছুটা বেশি তাপ গ্রহণ করে সূর্য থেকে। এই ঘটনাটির তাৎপর্য পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের কারণে মোট শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার তুলনায় খুবই যৎসামান্য, এবং বেশিরভাগ অতিরিক্ত শক্তি গ্রহণ করে দক্ষিণ গোলার্ধে বেশি পরিমাণে থাকা সমুদ্রের পানি। বাসযোগ্যতা যে গ্রহে প্রাণী-জগৎ টিকে থাকতে পারে বসবাসযোগ্য বলা হয়, যদিওবা সেই গ্রহে প্রাণের সঞ্চার না ঘটে তাহলেও। পৃথিবীতে রয়েছে পানির প্রাচুর্য্য যা জটিল জৈব যৌগের পরস্পরের সাথে সংযুক্তি ও সংমিশ্রণের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে, ও একই সাথে বিপাক প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব, একই সাথে এর অক্ষীয় উপকেন্দ্রীকতা, কক্ষীয় ঘূর্ণনের গতি, অক্ষীয় ঢাল, ভূ-প্রাকৃতিক ইতিহাস, সহনীয় বায়ুমণ্ডল, ও চৌম্বকক্ষেত্র সবগুলো একসাথে ভূ-পৃষ্ঠের সামুগ্রিক বর্তমান জলবায়ু ও পরিবেশ বজায় থাকার পিছনে কাজ করছে। জীবমণ্ডল জীবমণ্ডল হচ্ছে পৃথিবীর সমগ্র ইকোসিস্টেমগুলির যোগফল। এটিকে বলা যেতে পারে পৃথিবীর জীবনের এলাকা, একটি সংযুক্ত প্রক্রিয়া (পৃথিবীর অভ্যন্তরের সৌর এবং মহাবৈশ্বিক রেডিয়েশন এবং তাপ থেকে বিযুক্ত) এবং বৃহত্তরভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত। অন্য কথায় পৃথিবীর বাইরের স্তরে অবস্থিত বায়ু, ভূমি, পানি ও জীবিত বস্তুসমূহের সমষ্টিকে জীবমণ্ডল বোঝায়। জীবনের অস্তিত্বের সঙ্গেই জীবমণ্ডলের সম্পর্ক। জীবমণ্ডলের বিস্তৃতি ওপর-নিচে ২০ কিলোমিটারের মতো ধরা হলেও মূলত অধিকাংশ জীবনের অস্তিত্ব দেখা যায় হিমালয় শীর্ষের উচ্চতা থেকে ৫০০ মিটার নিচের সামুদ্রিক গভীরতার মধ্যেই। এখানে জীবকুল ৪.১ বিলিয়ন বছর পূর্বে বসবাস শুরু করে। গ্রহের প্রাণী জগৎ একটি বাসযোগ্য বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলে, কখন কখনও এই সবগুলোকে একসাথে বলা হয়ে থাকে "জীবমণ্ডল"। ধারণা করা হয়ে থাকে পৃথিবীর জীবমণ্ডলের গঠন শুরু হয় প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে। এই জীবমণ্ডলটি বেশ কিছু বায়োম দ্বারা বিভক্ত, প্রচুর পরিমাণে একই ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণি একই বায়োমে বসবাস করে। ভূমিতে, মূলত বায়োমকে বিভক্ত করা যায় অক্ষাংশের পার্থক্য থেকে, সমুদ্রতল থেকে উচ্চতা থেকে এবং আর্দ্রতা থেকে। সুমেরু অঞ্চলের বা অ্যান্টারর্টিক বৃত্তের স্থলজ বায়োসের ক্ষেত্রে, অধিক উঁচু অক্ষাংশে বা অত্যন্ত শুষ্ক এলাকায় প্রাণি ও উদ্ভিদ তুলনামুলকভাবে নেই বললেই চলে বা এগুলো হল বিরান অঞ্চল; প্রজাতির বৈচিত্র্য সবচাইতে বেশি পরিমাণ দেখা যায় নিরক্ষীয় অঞ্চলের আদ্রতাপূর্ণ নিম্নভূমিতে। জুলাই ২০১৬তে, বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর সকল জীবিত জীবের উপর নিরীক্ষা চালিয়ে ৩৫৫ সেট জিনকে চিহ্নিত করেছেন লাস্ট ইউনিভার্সাল কমন এনসেস্টর হিসাবে। প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূমি ব্যবহার মানুষ পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছে। এদের মধ্যে যেগুলিকে অনবায়নযোগ্য সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়, যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি, এগুলি কেবল মাত্র ভূতাত্ত্বিক সময়ের নিরিখে পুনর্নবায়িত হয়। ভূত্বকে জীবাশ্ম জ্বালানির বিশাল ভাণ্ডার আহরণ করা হয়। এগুলির মধ্যে কয়লা, পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস উল্লেখযোগ্য। এই মজুদগুলি মানুষ কেবল শক্তি উৎপাদন নয়, রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহার করে। এছাড়া আকরিক সৃষ্টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূত্বকে খনিজ আকরিক মজুদও গঠিত হয়েছে। লাভা, ভূমিক্ষয় এবং পাতভিত্তিক ভূত্বকীয় গঠনের ফলে এই আকরিকগুলি তৈরি হয়েছে। এই আকরিক মজুদগুলি অনেক ধাতু এবং অন্যান্য উপকারী মৌলিক পদার্থের ঘনীভূত উৎস হিসেবে গণ্য হয়। পৃথিবীর জীবমণ্ডল মানুষের জন্য প্রচুর জীবতত্ত্বিক উপাদান তৈরি করে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত খাদ্য, কাঠ, ঔষধপত্র, অক্সিজেন, এবং বিভিন্ন জৈব বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলে। ভূমি ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র নির্ভর করে মাটির উপরের দিকের উপর ও পরিষ্কার পানির উপর, এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র নির্ভর করে এতে মিশ্রিত নিউট্রিয়েন্টের উপর যা ভূমি থেকে ধুয়ে সমুদ্রের পানিতে পৌছায়। ১৯৮০ সালের হিসাব অনুসারে, ৫,০৫৩ মেগাহেক্টর (৫০.৫৩ মিলিয়ন কি.মি.২) পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের এলাকা জুড়ে ছিল বনভূমি ও বনাঞ্চল, ৬,৭৮৮ মেগাহেক্টর (৬৭.৮৮ মিলিয়ন কি.মি.২) এলাকা ছিল তৃণভুমি ও চরণভুমি, এবং ১,৫০১ মেগাহেক্টর (১৫.০১ মিলিয়ন কি.মি.২) এলাকা ছিল খাদ্যশষ্য চাষের শষ্যভূমি। আনুমানিক সেচ ভূমির পরিমাণ ১৯৯৩ সালে ছিল । মানুষ ভূমিতে বসবাস করার জন্য নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে বাড়ি ঘর তৈরি করে। প্রাকৃতিক এবং পরিবেশগত সমস্যা পৃথিবী পৃষ্ঠের একটি বৃহত্তম এলাকায় চরম আবহাওয়া যেমন উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, হ্যারিকেন, বা টাইফুন দেখা যায়, যা ঐ সকল এলাকার জীবনযাত্রার উপর গাঢ় প্রভাব ফেলে। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত, এই ধরনের ঘটনায় প্রতি বছর গড়ে ১১,৮০০ জন মারা যায়। অসংখ্য স্থান রয়েছে যেখানে প্রায়শই ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, সুনামি, অগ্নুৎপাত, টর্নেডো, ভূমি চ্যুতি, প্রবল তুষারপাত, বন্যা, খরা, দাবানল ও অন্যান্য জলবায়ুর পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘটে। বিভিন্ন স্থানের বাতাস ও পানির দূষণ মানব সৃষ্ট দূষণ ঘটে থাকে, ফলে সৃষ্টি হয় অ্যাসিড বৃষ্টি ও বিষাক্ত উপাদান, বনভূমি ধ্বংসের কারণে (অধিক পশুচারণ ভূমি, অরণ্যবিনাশ, মরুকরণ, বণ্যপ্রাণীর বিনাশ, প্রজাতির বিলুপ্তি, মাটির অধঃপতন, ভূমির বিনাশ ও ভূমিক্ষয়। একটি বৈজ্ঞানিক ঐক্যমত্য রয়েছে মানব জাতির শিল্পায়নের ফলে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের কারণে বৈশ্বিক ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘটছে। ধারণা করা হয় যে এর ফলশ্রুতিতে জলবায়ুর পরিবর্তন যেমন হিমবাহ এবং বরফের স্তর গলে যাচ্ছে, আরও চরম তাপমাত্রার সীমা দেখা যাচ্ছে, একইসাথে আবহাওয়ারও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটছে এবং বিশ্বব্যাপী গড় সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবীয় ভূগোল মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা, মানচিত্র তৈরির অধ্যয়ন ও অনুশীলনের একটি বিদ্যা এবং ভূগোল হল ভূমি, বৈশিষ্ট্য, বাসবাসকারী এবং পৃথিবীর ঘটনাসমূহের অধ্যয়ন, একই সাথে এটি ঐতিহাসিকভাবে পৃথিবীকে চিত্রিত করার একটি নিয়মে পরিনত হয়েছে। মাপজোপ (Surveying), হল অবস্থান ও দুরত্বের পরিমাপ ব্যবস্থা, এবং ন্যাভিগেশন হল সুক্ষ পরিমাপ ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে অবস্থান ও দিক পরিমাপ করা যায়, মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা ও ভূগোলের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা এবং যথাযথভাবে নির্ণয়ের জন্য এটির উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। ৩১ অক্টোবর ২০১১ তারিখ পর্যন্ত পৃথিবীতে মানব সংখ্যার পরিমাণ আনুমানিক গিয়ে দাঁড়িয়েছে সাত বিলিয়ন। ভবিষ্যত বাণীগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যার পরিমাণ ৯.২ বিলিয়ন হবে। ধারণা করা হয় সবচাইতে বেশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। মানুষের জনসংখ্যার ঘনত্ব বিশ্বের সব জায়গায় সমান নয়, কিন্তু একটি বেশির ভাগ অংশ বাস করে এশিয়া মহাদেশে। ২০২০ সাল নাগাদ, আশা করা হয় বিশ্বের ৬০% মানুষ বাস করবে শহর এলাকায়, গ্রাম্য এলাকায় না থেকে । হিসাব করা যায় যে, পৃথিবীর পৃষ্ঠের আট ভাগের এক ভাগ জায়গা মানুষের বসবাসের জন্য উপযুক্ত – যেহেতু পৃথিবীর উপরিভাগের চার ভাগের তিন ভাগ সমুদ্র দ্বারা পরিবেষ্টিত, এর ফলে এর মাত্র এক ভাগ অংশ হল ভূমি। এই ভূমির অর্ধেক স্থান জুড়ে রয়েছে মরুভূমি (১৪%), উচ্চ পর্বতমালা (২৭%), বা অন্যান্য অনুপযুক্ত খাদ এলাকা। পৃথিবীর সর্বোচ্চ উত্তর দিকের স্থায়ী স্থাপনাটি রয়েছে এলার্টে, যা নুনাভুট, কানাডার এললেসমেয়ার আইল্যান্ডে অবস্থিত (৮২°২৮′ উত্তর), পৃথিবীর সর্বোচ্চ দক্ষিণ দিকের স্থায়ী স্থাপনাটি হল আমুন্ডসেন- স্কট সাউথ পোল স্টেশন, অ্যান্টারটিকায়, একেবারেই প্রায় দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি, (৯০°দক্ষিণ)। স্বাধীন সার্বভৌম দেশগুলো শুধু মাত্র কিছু অংশ বাদ দিয়ে গ্রহটির প্রায় পুরো ভূমির সবটাই নিজেদের বলে দাবী করে, বাদ দেয়া অংশ গুলোর মধ্যে হল অ্যান্টারটিকার কিছু অংশ, দানিউব নদীর পশ্চিম তীর বরাবর কয়েক খন্ড জমি, মিশর ও সুদানের সীমান্তের অদাবীকৃত এলাকা "বির টাউইল"। , ১৯৩ টি সার্বভৌম রাষ্ট্র রয়েছে পৃথিবীতে যা জাতিসংঘের সদস্য দেশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত, এছাড়াও দুটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র ও ৭২ টি নির্ভরশীল অঞ্চল এবং সীমিত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত রাষ্ট্র রয়েছে। পৃথিবীতে কখনই একটি একক সার্বভৌম সরকার তৈরি হয়নি যার পুরো বিশ্বের উপর কর্তৃত ছিল, যদিও বা কিছু জাতি-রাষ্ট্র বিশ্ব আধিপত্যের জন্য যুদ্ধ করেছে এবং ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘ বিশ্ব ব্যাপী আন্ত-রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসাবে কাজ করে, এটা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশগুলো মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার লক্ষ্যে নিয়ে, সশস্ত্র বিরোধ যাতে না ঘটে। ইউএন প্রধানত আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক আইনের ফোরাম হিসাবে কাজ করে। যদি সদস্য রাষ্ট্র সমূহ সম্মতি প্রদান করে, এটি সশস্ত্র হস্তক্ষেপের জন্যও ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা প্রথম মানুষ হলেন ইউরি গ্যাগারিন, ১২ এপ্রিল ১৯৬১ সালে। , সর্বমোট, প্রায় ৪৮৭ জন মানুষ মহাকাশে ও পৃথিবীর কক্ষপথে ভ্রমণ করেছেন, এবং, এদের মধ্যে, বার জন চাঁদের মাটিতে হেঁটেছেন। সাধারণ ভাবে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করা মানুষরাই একমাত্র মহাকাশের অবস্থান করা মানুষ। এই স্টেশনের কর্মীদলটি, গঠন করা হয় ৬ জন মানুষ নিয়ে, যাদের প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর পরিবর্তন করা হয়। পৃথিবী থেকে মানুষ সবচাইতে দূরের দূরত্ব ভ্রমণ করেছে ৪০০,১৭১ কি.মি., যা অর্জন করা হয়েছে অ্যাপোলো ১৩ অভিযানে ১৯৭০ সালে। চাঁদ পৃথিবীর প্রায় এক চতুর্থাংশ ব্যাসার্ধ-বিশিষ্ট চাঁদ একটি অপেক্ষাকৃত বড় শিলাময় প্রাকৃতিক উপগ্রহ। গ্রহের আকার বিবেচনায় এটিই সৌরজগতের বৃহত্তম চাঁদ; যদিও ক্যারন তার বামন গ্রহ প্লুটো থেকে আপেক্ষিকভাবে বৃহত। পৃথিবীর ন্যায় অন্যান্য গ্রহের প্রাকৃতিক উপগ্রহগুলোকেও "চাঁদ" হিসেবেও অভিহিত করা হয়। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং সৌর জগতের পঞ্চম বৃহৎ উপগ্রহ। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব হচ্ছে ৩৮৪,৪০৩ কিলোমিটার (২৩৮,৮৫৭ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ৩০ গুণ। চাঁদের ব্যাস ৩,৪৭৪ কিলোমিটার (২,১৫৯ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের এক-চতুর্থাংশের চেয়ে সামান্য বেশি। এর অর্থ দাড়াচ্ছে, চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৫০ ভাগের ১ ভাগ। এর পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বল পৃথিবী পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বলের এক-ষষ্ঠাংশ। পৃথিবী পৃষ্ঠে কারও ওজন যদি ১২০ পাউন্ড হয় তা হলে চাঁদের পৃষ্ঠে তার ওজন হবে মাত্র ২০ পাউন্ড। এটি প্রতি ২৭.৩ দিনে পৃথিবীর চারদিকে একটি পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করে। প্রতি ২৯.৫ দিন পরপর চন্দ্রকলা ফিরে আসে অর্থাৎ একই কার্যক্রিয় আবার ঘটে। পৃথিবী-চাঁদ-সূর্য তন্ত্রের জ্যামিতিতে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের কারণেই চন্দ্রকলার এই পর্যানুক্রমিক আবর্তন ঘটে থাকে। বেরিকেন্দ্র নামে পরিচিত একটি সাধারণ অক্ষের সাপেক্ষে পৃথিবী এবং চন্দ্রের ঘূর্ণনের ফলে যে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সৃষ্টি হয় তা পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির জন্য অনেকাংশে দায়ী। জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির জন্য যে পরিমাণ শক্তি শোষিত হয় তার কারণে বেরিকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে পৃথিবী-চাঁদের যে কক্ষপথ রয়েছে তাতে বিভব শক্তি কমে যায়। এর কারণে এই দুইটি জ্যোতিষ্কের মধ্যে দূরত্ব প্রতি বছর ৩.৮ সেন্টিমিটার করে বেড়ে যায়। যতদিন না পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার উপর চাঁদের প্রভাব সম্পূর্ণ প্রশমিত হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত চাঁদ দূরে সরে যেতেই থাকবে এবং যেদিন প্রশমনটি ঘটবে সেদিনই চাঁদের কক্ষপথ স্থিরতা পাবে। পৃথিবী ও চাঁদের মহাকর্ষীয় বলের ক্রিয়ার ফলে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা তৈরি হয়। এই সমরূপ ঘটনার ফলে চাঁদের টাইডাল লকিং তৈরি হয়: চাঁদের নিজের অক্ষে ঘূর্ণনের জন্য যে সময় লাগে সেই একই পরিমাণ সময় প্রয়োজন হয় পৃথিবীর কক্ষপথে আবর্তনের জন্য। যার ফলে পৃথিবীর দিকে সব সময় এটির একই পৃষ্ঠ থাকে। চাঁদের পৃথিবীকে আবর্তনের সময়, এটির বিভিন্ন অংশ সূর্যের আলো দ্বারা আলোকিত হয়, ফলশ্রুতিতে তৈরি হয় চন্দ্রকলার; এটির অন্ধকারচ্ছন্ন অংশটি আলোকিত অংশ থেকে পৃথক হয়ে থাকে সৌর টারমিনেটর দ্বারা। পৃথিবী ও চাঁদের আকর্ষণ ক্রিয়ায় সৃষ্ট জোয়ার-ভাটার ঘটনার ফলে, চাঁদ প্রতি বছর প্রায় ৩৮ মিমি/বছর হারে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যায়। মিমিয়ন বছর ধরে, এই ক্ষুদ্র পরিবর্তনের ফলে—এবং পৃথিবীর দিন বৃদ্ধি পাওয়া ২৩ মাইক্রোসেকেন্ড/বছর—পরিশেষে বৃহত্তর পরিবর্তন করেছে। ডেভোনিয়ান সময় কালে, উদাহারণস্বরূপ (প্রায় ৪১০ মিলিয়ন বছর আগে) এক বছর পূর্ণ হতে ৪০০ দিন লাগত, যেখাবে প্রতিটি দিন ছিল ২১.৮ ঘণ্টার। পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন সাধনে সহায়তা করে, এতে প্রাণের বিকাশ ঘটাতে চাঁদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জীবাশ্ম থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও কম্পিউটার সিমুলেশন থেকে জানা যায় যে, চাঁদের সাথে জোয়ার-ভাটার ঘটনার কারণে পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালটি সুস্থির রয়েছে। কিছু ত্বাত্তিক এটি ধারণা করে যে, পৃথিবীর নিরক্ষীয় স্ফিতি বরাবর অন্যান্য গ্রহ ও সূর্য দ্বারা প্রয়োগ করা সুস্থির টর্ক না থাকলে, পৃথিবীর ঘূর্ণনের অক্ষটি এলোমেলো ও অস্থির প্রকৃতির হত, প্রতি মিলিয়ন বছরে বিশৃঙ্খল পরিবর্তন নজরে আসত, যেটা দেখা যায় মঙ্গল গ্রহের ক্ষেত্রে। পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে দেখা হলে, চাঁদ ও সূর্য প্রায় সম দূরত্বে থাকা প্রায় একই আকারের গোলাকার চাকতির মত দেখায়। এই দুটি বস্তুর কৌনিক আকার (বা ঘনকোণ) মিলে যায় কারণ, যদিও বা সূর্যের চাঁদের তুলনায় প্রায় ৪০০ গুণ বড়, একই সাথে সূর্য চাঁদের তুলনায় পৃথিবী থেকে ৪০০ গুণ দূরে অবস্থিত। এর ফলে পৃথিবীতে পূর্ণ এবং বলয়াকার (আংটির মত) সূর্য গ্রহণ হয়ে থাকে। চাঁদের গঠন সম্পর্কে প্রচলিত সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তত্ত্বটি হলো বৃহদায়তন-প্রভাব তত্ত্ব, যেখানে বলা হয়েছে যে এটি গঠিত হয়েছে মঙ্গল গ্রহের সমান আকৃতির 'থিয়া' নামক একটি মহাজাগতিক কণার সাথে সংঘর্ষের ফলে। এই মতবাদটি ব্যাখ্যা করে (অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে) চাঁদে লৌহ এবং অস্থির উপাদানগুলির আপেক্ষিক অভাব এবং এর গঠন প্রকৃতি পৃথিবীর ভূত্বকের প্রায় অনুরূপ। গ্রহাণু এবং কৃত্রিম উপগ্রহ গ্রহাণু হল প্রধানত পাথর দ্বারা গঠিত বস্তু যা তার তারাকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে। আমাদের সৌরজগতে গ্রহাণুগুলো ক্ষুদ্র গ্রহ (Minor planet অথবা Planetoid) নামক শ্রেণীর সবচেয়ে পরিচিত বস্তু। এরা ছোট আকারের গ্রহ যেমন বুধের চেয়েও ছোট। বেশিরভাগ গ্রহাণুই মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত গ্রহাণু বেল্টে থেকে নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে আবর্তন করে। ধারণা করা হয় গ্রহাণুগুলো ভ্রূণগ্রহীয় চাকতির (Protoplanetary disc) অবশিষ্টাংশ। বলা হয় গ্রহাণু বেল্টের অঞ্চলে সৌরজগতের গঠনের প্রাথমিক সময় যেসকল ভ্রূণগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিলো তাদের অবশিষ্টাংশ বৃহস্পতির আবেশ দ্বারা সৃষ্ট মহাকর্ষীয় অক্ষ বিচলনের কারণে গ্রহের সাথ মিলিত হবার সুযোগ পায়নি। আর এই অবশিষ্টাংশই গ্রহাণু বেল্টের উৎপত্তির কারণ। কিছু গ্রহাণুর চাঁদও রয়েছে। “৩৭৫৩ ক্র্যুইথন” (3753 Cruithne) এবং “২০০২ এএ২৯” (2002 AA29) গ্রহাণুসহ পৃথিবীর রয়েছে অন্তত পাঁচটি সহ-কক্ষীয় গ্রহাণু। সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর কক্ষপথে স্বাধীন ক্রিকৌণিক বিন্দীয় পথে “২০১০ টিকে৭” (2010 TK7) সহযোগে একটি ট্রোজান গ্রহাণু “এল৪” (L4) পথে আবর্তন করছে। প্রতি বিশ বছর অন্তর ক্ষুদ্রতর নিকটতর-পৃথিবীর গ্রহাণু “২০০৬ আরএইচ১২০” (2006 RH120) পৃথিবী-চঁন্দ্র পদ্ধতিকে জটিল করে তোলে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন, এটি পৃথিবীকে প্রযোজ্য সময়ের চেয়েও সংক্ষিপ্তকালে আবর্তন করতে পারে। কৃত্রিম উপগ্রহ হলো মহাকাশে উৎক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত উপগ্রহ। এটা চাঁদের মতোই কিন্তু পার্থক্য কেবল এই যে চাঁদ প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত আর কৃত্রিম উপগ্রহ মানুষ তৈরি করেছে। , পৃথিবীর কক্ষপথে ১,৪১৯টি মানব কর্তৃক সৃষ্ট কার্যকরী কৃত্রিম উপগ্রহ ছিল। এছাড়াও সেখানে বর্তমানে আরো আছে সবচেয়ে প্রাচীন কৃত্রিম উপগ্রহ ভ্যানগার্ড-১ সহ ১৬,০০০ খন্ড অক্ষম উপগ্রহ এবং মহাকাশের জঞ্জাল। পৃথিবীর সর্ববৃহত কৃত্রিম উপগ্রহটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র। সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি পৃথিবীর আদর্শ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক প্রতীক হল বৃত্তের অভ্যন্তরে একটি ক্রস চিহ্ন, ; যা পৃথিবীর চার কোণকে নির্দেশ করে। মানব সংস্কৃতিতে এই গ্রহকে নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। পৃথিবীকে কখনো কখনো শ্বর হিসেবে ব্যক্তিরূপে প্রকাশ করা হয়। অনেক সংস্কৃতিতে পৃথিবী হল দেবমাতা, যা সন্তান জন্মদানের প্রাথমিক শ্বর হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে, গাইয়া তত্ত্বে পৃথিবীর পরিবেশ ও জীবনকে একক স্ব-নিয়ন্ত্রণকারী জীবের সাথে তুলনা করা হয় যা বসবাসযোগ্যতার স্থায়িত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক ধর্মের সৃষ্ট পুরাণে বলা হয় একজন অতিপ্রাকৃত শ্বর বা শ্বরবৃন্দ পৃথিবী সৃষ্টি করেছে। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ফলে এই গ্রহ সম্পর্কিত মানবীয় মতামতসমূহের কতক সাংস্কৃতিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। পশ্চিমে সমতল পৃথিবীর ধারণা পরিবর্তিত হয়ে গোলাকার পৃথিবী ধারণা সৃষ্টি হয়েছে; যা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে পিথাগোরাস কর্তৃক প্রবর্তিত। এছাড়া ১৬শ শতাব্দীর পূর্বে পৃথিবীকে ভূকেন্দ্রিক মডেল-এ মহাবিশ্বের কেন্দ্র বলে বিশ্বাস করা হত; পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীরা প্রথম তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখান যে এটি একটি আবর্তনকারী বস্তু এবং সৌর জগতের অন্যান্য গ্রহের সাথে তুলনীয়। বাইবেলের বংশতালিকা বিশ্লেষণ করে পৃথিবীর বয়স নির্ণয়-কারী জেমস উশার এবং আরো কয়েকজন খ্রিস্টান পণ্ডিত ও পাদ্রীর কারণে ১৯শ শতাব্দীর পূর্ব-পর্যন্ত পশ্চিমারা ধারণা করতো যে, পৃথিবীর বয়স কয়েক হাজার বছর। ১৯শ শতাব্দীতে এসে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে পৃথিবীর বয়স কমপক্ষে কয়েক মিলিয়ন বছর। ১৮৬৪ সালে লর্ড কেলভিন তাপগতিবিজ্ঞান ব্যবহার করে হিসাব করে দেখান যে পৃথিবীর বয়স ২০ মিলিয়ন থেকে ৪০০ মিলিয়ন বছর, যা বিতর্কের জন্ম দেয়; কিন্তু পরবর্তীতে ১৯শ শতাব্দীর শেষের দিকে ও ২০শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথিবীর বয়স নির্ধারণের নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি রেডিওএক্টিভিটি ও রেডিওমেট্রিক ডেটিং আবিষ্কারের পর প্রমাণিত হয় পৃথিবীর বয়স বিলিয়ন বছরেরও বেশি। পৃথিবী সম্পর্কিত মানুষের ধারণা পুনরায় পরিবর্তন হয় যখন ২০শ শতাব্দীতে মানুষ প্রথম কক্ষপথ থেকে পৃথিবীকে দেখে এবং বিশেষত অ্যাপোলো মহাশূন্য মিশনে তোলা ছবিগুলো দেখার পর। আরও দেখুন সৌরজগৎ খ-গোলক ভূবিজ্ঞান টীকা তথ্যসূত্র আরও পড়ুন বহিঃসংযোগ উইকিম্যাপিয়ার মাধ্যমে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত পৃথিবীর চিত্র USGS -এর ভূ-চুম্বকত্ব বিষয়ক অনুষ্ঠান NASA Earth Observatory The size of Earth compared with other planets/stars Beএইউtiful Views of Planet Earth Pictures of Earth from space Flash Earth A Flash-based viewer for satellite and aerial imagery of the Earth Java ৩D Earth's Globe Projectshum.org's Earth fact file (for younger folk) Geody Earth World's search engine that supports Google Earth, NASA World Wind, Celestia, GPS, and other applications. Planet Earth From AOL Research & Learn: Photos, quizzes and info about Earth's climate, creatures and science. Earth From Space Some Photos From the Exhibit গ্রহ ভূগোল ভূতত্ত্ব আবাসযোগ্য গ্রহ শিলাময় গ্রহ পৃথিবী প্রাচীনকাল থেকে জ্ঞাত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু মূল বিষয়ের নিবন্ধ বৈশ্বিক প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রকৃতি সৌরজগতের গ্রহ
https://en.wikipedia.org/wiki/Earth
Earth
Earth is the third planet from the Sun and the only astronomical object known to harbor life. This is enabled by Earth being an ocean world, the only one in the Solar System sustaining liquid surface water. Almost all of Earth's water is contained in its global ocean, covering 70.8% of Earth's crust. The remaining 29.2% of Earth's crust is land, most of which is located in the form of continental landmasses within Earth's land hemisphere. Most of Earth's land is somewhat humid and covered by vegetation, while large sheets of ice at Earth's polar deserts retain more water than Earth's groundwater, lakes, rivers and atmospheric water combined. Earth's crust consists of slowly moving tectonic plates, which interact to produce mountain ranges, volcanoes, and earthquakes. Earth has a liquid outer core that generates a magnetosphere capable of deflecting most of the destructive solar winds and cosmic radiation. Earth has a dynamic atmosphere, which sustains Earth's surface conditions and protects it from most meteoroids and UV-light at entry. It has a composition of primarily nitrogen and oxygen. Water vapor is widely present in the atmosphere, forming clouds that cover most of the planet. The water vapor acts as a greenhouse gas and, together with other greenhouse gases in the atmosphere, particularly carbon dioxide (CO2), creates the conditions for both liquid surface water and water vapor to persist via the capturing of energy from the Sun's light. This process maintains the current average surface temperature of 14.76 °C (58.57 °F), at which water is liquid under normal atmospheric pressure. Differences in the amount of captured energy between geographic regions (as with the equatorial region receiving more sunlight than the polar regions) drive atmospheric and ocean currents, producing a global climate system with different climate regions, and a range of weather phenomena such as precipitation, allowing components such as nitrogen to cycle. Earth is rounded into an ellipsoid with a circumference of about 40,000 km. It is the densest planet in the Solar System. Of the four rocky planets, it is the largest and most massive. Earth is about eight light-minutes away from the Sun and orbits it, taking a year (about 365.25 days) to complete one revolution. Earth rotates around its own axis in slightly less than a day (in about 23 hours and 56 minutes). Earth's axis of rotation is tilted with respect to the perpendicular to its orbital plane around the Sun, producing seasons. Earth is orbited by one permanent natural satellite, the Moon, which orbits Earth at 384,400 km (1.28 light seconds) and is roughly a quarter as wide as Earth. The Moon's gravity helps stabilize Earth's axis, causes tides and gradually slows Earth's rotation. Tidal locking has made the Moon always face Earth with the same side. Earth, like most other bodies in the Solar System, formed 4.5 billion years ago from gas and dust in the early Solar System. During the first billion years of Earth's history, the ocean formed and then life developed within it. Life spread globally and has been altering Earth's atmosphere and surface, leading to the Great Oxidation Event two billion years ago. Humans emerged 300,000 years ago in Africa and have spread across every continent on Earth. Humans depend on Earth's biosphere and natural resources for their survival, but have increasingly impacted the planet's environment. Humanity's current impact on Earth's climate and biosphere is unsustainable, threatening the livelihood of humans and many other forms of life, and causing widespread extinctions.
1117
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%20%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B6
প্রাকৃতিক পরিবেশ
প্রাকৃতিক পরিবেশ অথবা প্রাকৃতিক জগৎ বলতে সমগ্ৰ জীবিত এবং প্রাণহীন বস্তুর স্বাভাবিক অবস্থানকে বুঝায়, এক্ষেত্রে এটা মোটেও কৃত্রিম নয়।এই শব্দটি প্রায়শই পৃথিবীতে অথবা পৃথিবীর কিছু অংশে ব্যবহৃত হয়। সমস্ত প্রজাতি, জলবায়ু, আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক সম্পদ এই পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত যেটা মানুষের বাঁচা ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ধারণাকে নিম্নলিখিত উপাদানে ভাগ করা যায়: মানুষের বিশাল হস্তক্ষেপ ছাড়া সম্পূর্ণ পরিবেশগত এককসমূহ যেমন- গাছপালা, অণুজীবসমূহ, মাটি, শিলাসমূহ, বায়ুমণ্ডল । প্রাকৃতিক ঘটনাঃ যেগুলো তাদের সীমানা এবং তাদের প্রকৃতির মধ্যে ঘটে। বৈশ্বিক প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ এবং পদার্থবৈজ্ঞানিক ঘটনা যেগুলো পরিষ্কারভাবে পরিসীমাকে কমায়, যেমন, বায়ু, জল, এবং জলবায়ু, এছাড়া শক্তি, বিকিরণ, বৈদ্যুতিক আধান ও চৌম্বকত্ব ইত্যাদি প্রাকৃতিক পরিবেশের অংশ। প্রাকৃতিক পরিবেশের ঠিক বিপরীত হল নির্মিত পরিবেশ। কিছু এরকম অঞ্চল আছে যেখানে মানুষ শহর গঠন ও ভূমি রূপান্তরের মতো ভূদৃশ্যের মৌলিক পরিবর্তন ঘটায়; প্রাকৃতিক পরিবেশ বদল হয়ে একটা সরলীকৃত মানব পরিবেশে পরিণত হয়। এমনকি দেখা যায় যেটা চরম নয়, যেমন মাটি দিয়ে বানানো কুঁড়েঘর অথবা মরুভূমিতে ফটোভোল্টাইক পদ্ধতি, এই সংশোধিত পরিবেশ কৃত্রিম হয়ে যায়। যদিও মানুষ ছাড়া অনেক প্রাণী তাদের নিজেদের পরিবেশ ভালো করার জন্যে কিছু জিনিস তৈরি করে, সুতরাং, বীবর বাঁধ এবং উই ঢিবির কাজ, এগুলোকে প্রাকৃতিক হিসেবে ধরা হয়। পৃথিবীতে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষ কমই দেখে, এবং স্বাভাবিকতা সাধারণত একশ শতাংশ এক চরম অবস্থা থেকে শূন্য শতাংশ অন্যথায় আলাদা হয়। খুব জটিলভাবে আমরা একটা পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে অথবা উপাদান নিয়ে ভাবনা করতে পারি, এবং দেখা যায় যে, তাদের স্বাভাবিকতার মাত্রা সমান নয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটা কৃষি জমিতে খনিজ সংক্রান্ত উপাদান এবং মাটির কাঠামো নির্বিঘ্ন অরণ্যের মাটির সমান হয়, তাহলেও কাঠামো কিন্তু আলাদা হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশকে কখনো কখনো আবাসস্থলের সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা হয়, উদাহরণস্বরূপ, যখন আমরা বলি যে, জিরাফের প্রাকৃতিক পরিবেশ হল বিচরণ ভূমি। গঠন ভূবিজ্ঞানে সাধারণত চারটে পরিমণ্ডলের অবস্থান পাওয়া যায়, ভূত্বক, বারিমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল এবং জীবমণ্ডল যেগুলোর সঙ্গে যথাক্রমে (ভূবিদ্যা)শিলা, জল, বায়ু এবং জীবনের যোগসূত্র আছে। কয়েকজন বিজ্ঞানী বরফের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্রায়োস্ফিয়ার, এছাড়া মাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পেডোস্ফিয়ারকে একটা সক্রিয় এবং অন্তর্নির্মিত পরিমণ্ডল রূপে পৃথিবীর পরিমণ্ডলের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। পৃথিবী গ্রহের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সাধারণ শব্দ হল ভূবিজ্ঞান (ভূতত্ত্ব, ভৌগোলিক বিজ্ঞান অথবা ভূবিজ্ঞানসমূহও বলা হয়)। ভূবিজ্ঞানসমূহের চারটে প্রধান শাখা আছে; যথা, ভূগোল, ভূবিদ্যা, ভূপদার্থবিদ্যা এবং ভূগণিত। পৃথিবীর পরিমণ্ডলসমূহ অথবা এদের মূল ক্ষেত্রের একটা গুণগত এবং পরিমাণগত বোঝাপড়ার জন্যে এই সমস্ত প্রধান শাখায় পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, কালপঞ্জি এবং গণিত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ভূবিদ্যাগত কার্যকারিতা পৃথিবীর ক্রাস্ট অথবা ভূত্বক হল এই গ্রহের সবচেয়ে দূরের শক্ত পৃষ্ঠতল এবং এটা রাসায়নিক ও যান্ত্রিকভাবে নিচের আস্তরণ ম্যান্টল থেকে আলাদা। এটা আগ্নেয় পদ্ধতিতে ম্যাগমা ঠান্ডা ও শক্ত হয়ে বিশেষভাবে কঠিন শিলা তৈরি হয়। ভূত্বকের নিচে অবস্থানকারী ম্যান্টল তেজস্ক্রিয় উপাদানের ক্ষয় দ্বারা গরম হয়। ম্যান্টল কঠিন হলেও এটা রেইক সংশ্লেষ অবস্থানে থাকে। এই সংশ্লেষ প্রক্রিয়া খুব ধীরে হলেও ভূত্বক পাতগুলোকে সরায়। এর ফলে যা ঘটে তাকে বলে প্লেট টেকটনিক। আগ্নেয়গিরি থেকে প্রাথমিকভাবে ভূত্বক উপাদানের অবশিষ্ট গলিত অংশ অথবা মধ্য-মহাসাগর রিজ এবং ম্যান্টল প্লুমসমূহে উঠতি ম্যান্টল বেরিয়ে আসে। পৃথিবীতে জল বেশির ভাগ জল বিভিন্ন ধরনের জলাভূমিতে পাওয়া যায়। মহাসাগরসমূহ একটা মহাসাগর হল বেশির ভাগ লবণাক্ত জল এবং বারিমণ্ডলের উপাদান। পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় ৭১ শতাংশ (৩.৬২ কোটি বর্গকিলোমিটার অঞ্চল) মহাসাগর দিয়ে ঢাকা, একটা অবিচ্ছিন্ন জলভাগ যেটা প্রথাগতভাবে বিভিন্ন প্রধান মহাসাগর এবং সাগরসমূহে বিভক্ত। এই অঞ্চলের অর্ধেকের বেশি অংশ ৩,০০০ মিটারের ওপর (৯,৮০০ ফুট) গভীর। গড় মহাসাগরীয় লবণাক্ততা হল ৩৫ প্রতি-অংশ অঙ্কানুপাত (পিপিটি) (৩.৫ শতাংশ) এবং প্রায় সব সাগরজলের লবণাক্ততা হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৮ পিপিটি ধরনের। যদিও সাধারণত বিভিন্ন মহাসাগর আলাদাভাবে স্বীকৃত, এই জলভাগ পরস্পর সংযুক্ত লবণজলের আকর হিসেবে একই মহাসাগর অথবা বৈশ্বিক মহাসাগর বলা হয়ে থাকে। গভীর সাগরতলসমূহ হল পৃথিবীপৃষ্ঠের অর্ধেকের বেশি এবং সেগুলো স্বল্প-সংশোধিত প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। প্রধান মহাসাগরীয় বিভাগগুলোকে মহাদেশসমূহ, বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জ ও অন্যান্য মানদণ্ডের অংশ হিসেবে ভাগ করা হয়: এই বিভাগগুলো (আয়তনের অবতরণক্রমে) হল - প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর, ভারত মহাসাগর, দক্ষিণ মহাসাগর এবং উত্তর মহাসাগর। নদীসমূহ নদী হল প্রাকৃতিক একটা জলস্রোত; এটা সাধারণত মিঠাজলের হয়, এবং কোনো এক মহাসাগর, হ্রদ, সাগর অথবা অন্য নদীতে গিয়ে মিলিত হয়ে থাকে। কিছুসংখ্যক নদী মাটির ভিতর দিয়ে বয়ে চলে এবং অন্য কোনো জলাধারে না পৌঁছানোর ফলে পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। সাধারণত দুদিকে তীর, মাঝে প্রবাহ আধার নদীতে জল একটা খাত দিয়ে প্রবাহিত হয়। বড়ো বড়ো নদীতে প্রায়ই একটা চওড়া প্লাবনভূমি থাকে যা খাতের অতি-দোহনের দ্বারা জলের আকার নেয়। নদী-খাতের আকার অনুযায়ী প্লাবনভূমি অনেক বেশি চওড়া হতে পারে। নদীসমূহ জলবিজ্ঞান চক্রের একটা অংশ। নদীতে জলের উৎস হল পৃষ্ঠজলের মাধ্যমে বর্ষণ, ভূজল পুনর্সংযোজন, ঝরনাসমূহ এবং হিমবাহের বরফগলা জল। ছোটো ছোটো নদীগুলোর অন্য নামও দেওয়া হয়, যেমন, প্রবাহ, খাঁড়ি এবং নালা। আকর এবং প্রবাহ তীর এই দুয়ের মধ্যে তাদের স্রোত সীমাবদ্ধ। খণ্ডিত আবাস বিষয়ে সংযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ অববাহিকা ভূমিকা নিয়ে থাকে এবং এরূপেই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত হয়। প্রবাহ এবং জলপথের পরীক্ষাকে সাধারণভাবে বলা হয় পৃষ্ঠ জলবিজ্ঞান। হ্রদসমূহ একটা হ্রদ (লাতিন লকুস শব্দ থেকে এসেছে) হল অববাহিকার নিম্নে কেন্দ্রীভূত একটা জলের আকর। একটা জলের আকরকে তখনই হ্রদ বলা যাবে যখন এটা হবে অন্তর্দেশীয়, কোনো মহাসাগরের অংশ নয় এবং একটা পুকুরের থেকে বড়ো ও গভীর হয়। পৃথিবীতে প্রাকৃতিক হদ্রসমূহ সাধারণত দেখা যায় পর্বত সন্নিহিত অঞ্চল, ফাটল অঞ্চলসমূহ এবং বর্তমান অথবা সাম্প্রতিক হিমবাহ অঞ্চলে। অন্তর্হীন অববাহিকা অথবা পরিণত নদীর গতিপথের পাশে অন্যান্য হ্রদ দেখা যায়। শেষ তুষার যুগের শেষভাগ থেকে পৃথিবীর কিছু অংশে বিশৃংখল নিকাশি ধরনের কারণে অনেক হ্রদ আছে। ভূতাত্ত্বিক কালক্রমের ওপর সকল হ্রদই অস্থায়ী যেহেতু সেগুলো ধীরভাবে পলিসহ পূর্ণ হয় অথবা তাদের মধ্যে থাকা অববাহিকায় ছড়িয়ে পড়ে। পুকুরসমূহ একটা পুকুর হল প্রাকৃতিক কিংবা মানুষে-বানানো স্থির জলের একটা আকর; পুকুর সাধারণত হ্রদ অপেক্ষা ছোটো। একটা ব্যাপক মানুষে-বানানো জলাধারসমূহকে পুকুরের নানা রূপ দেওয়া হয়; যেমন, নান্দনিক অথবা সাজানো নকশা করা জলাশয় বাগান, ব্যবসায়িক মাছ চাষের নকশা করা মাছ পুকুর এবং তাপীয় শক্তি সঞ্চয়ের নকশা করা সৌর পুকুর। ধারার গতি থেকে পুকুর এবং হ্রদের পার্থক্য নির্ধারণ করা যায়। যখন প্রবাহের ধারা সহজেই বোঝা যায়, পুকুর ও হ্রদে তাপশক্তির দ্বারা এবং পরিমিত বায়ুতাড়িত ধারা থাকে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রবাহ পুকুর এবং ঢেউ পুকুর ইত্যাদি থেকে পুকুরকে আলাদা করে। জলে মানুষের প্রভাব মানুষ নানাভাবে জলের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।যেমনঃ মানুষ নদীগুলোতে সরাসরি খাল খনন করে নিজেদের কাজে লাগানোর মাধ্যমে পরিবর্তন ঘটায়।আমরা বাঁধ ও জলাধার বানাই এবং নদীগুলোর ও জলপথের অভিমুখ নিজেদের মতো করি। বাঁধগুলো কার্যকরভাবে জলাধার এবং জলবিদ্যুৎ শক্তি তৈরি করে। যাই হোক, জলাধার এবং বাঁধ থেকে পরিবেশ ও বন্যজীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। মাছেদের স্থানান্তরণ এবং স্রোত বরাবর জীবদের গতিবিধি বাঁধে আটকা পড়ে। নগরায়ন পরিবেশের ক্ষতি করে কারণ এর ফলে অরণ্য ধ্বংস হয় এবং হ্রদের জলতল, ভূজলের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। অরণ্য ধ্বংস এবং নগরায়ন হাত ধরাধরি করে চলে। অরণ্য ধ্বংসের ফলে বন্যা হতে পারে, জলপ্রবাহ হ্রাস পেতে পারে, এবং নদীতীরের গাছপালায় পরিবর্তন আসতে পারে। গাছপালার পরিবর্তন ঘটে কেননা তারা যথেষ্ট জল না পেয়ে অবস্থার অবনতি হয়, ফলস্বরূপ আঞ্চলিক বন্যজীবনের খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি পড়ে। উপরোক্ত কারণগুলো জলতল, ভূগর্ভে জলের অবস্থা, জল দূষণ, তাপীয় দূষণ এবং সামুদ্রিক দূষণ এসবের প্রভাব পড়ে। আবহমণ্ডল, জলবায়ু ও আবহাওয়া পৃথিবীর আবহমণ্ডল এই গ্রহের পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করে। গ্রহের মাধ্যাকর্ষণের টানে পাতলা গ্যাসসমূহের স্তর পৃথিবীকে আবৃত করে রেখেছে। শুকনো বায়ু ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন, ২১ শতাংশ অক্সিজেন, ১ শতাংশ আর্গন এবং অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাস, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড দিয়ে তৈরি। অন্যান্য গ্যাসগুলো প্রায়ই সামান্য হিসেবে ধরা হয়। আবহমণ্ডলে কতগুলো গ্রিনহাউস গ্যাস আছে; যেমন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড এবং ওজোন। পরিস্রুত বায়ুতে অন্যান্য রাসায়নিক যৌগ সামান্য পরিমাণে থাকে। বাতাসে আরো যেসব জিনিস থাকে সেগুলো হল: জলীয় বাষ্প এবং জলকণার প্রলম্বনসমূহ এবং মেঘ হিসেবে দেখা বরফ স্ফটিকের পরিবর্তনশীল পরিমাণ। অল্প পরিমাণ অপরিস্রুত বায়ুতে ধুলো, রেণু, জীবাণু, সাগর ফেনা, আগ্নেয় ছাই এবং উল্কাপিণ্ড থাকতে পারে। এছাড়া ক্লোরিন (প্রাথমিক বা যৌগ), ফ্লোরিন যৌগ, প্রাথমিক পারদ এবং গন্ধক যৌগ যেমন সালফার ডাইঅক্সাইড জাতীয় বিভিন্ন ধরনের শিল্প দূষকও থাকতে পারে। (SO2). পৃথিবীপৃষ্ঠে ধেয়ে আসা অতিবেগুনি রশ্মির মাত্রা কমিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ওজোন স্তর একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু ডিএনএ অতিবেগুনি রশ্মিতে সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এটা পৃষ্ঠতলের জীবনকে রক্ষার কাজ করে। এছাড়া আবহমণ্ডল রাতের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখে, যার ফলে দৈনিক চরম তাপমান হ্রাস হয়। পরিবেশের শ্রেণিবিভাগ প্রাকৃতিক পরিবেশ :প্রাকৃতিক পরিবেশ হচ্ছে সেই পরিবেশ যা প্রকৃতি নিজে নিজে তৈরি করে। এগুলো হচ্ছেঃ গাছ,পাহাড়-পর্বত,ঝর্ণা,নদী ইত্যাদি। এগুলো মানুষ সৃষ্টি করতে পারে না। এগুলো প্রাকৃতিক ভাবেই সৃষ্টি হয়। মানুষের তৈরি পরিবেশ :মানুষের তৈরি পরিবেশ হচ্ছে দালান-কোঠা,নগরায়ন,বন্দর ইত্যাদি। এগুলো মানুষ নিজের প্রয়োজনের তাগিদে তৈরি করে। পরিবেশ দূষণ ও অবক্ষয় পরিবেশের প্রতিটা উপাদানের সুসমন্বিত রূপই হলো সুস্থ পরিবেশ। এই সুসমন্বিত রূপের ব্যত্যয়ই পরিবেশের দূষণ ঘটায় এবং পরিবেশের স্বাভাবিক মাত্রার অবক্ষয় দেখা দেয়। পরিবেশ বিভিন্ন কারণে দূষিত হতে পারে।যেমনঃ প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কারণও এর সাথে দায়ী। পরিবেশ দূষণের জন্য বিশেষভাবে দায়ী ১২টি মারাত্মক রাসায়নিক দ্রব্যকে একত্রে ডার্টি ডজন বা নোংরা ডজন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই ১২টি রাসায়নিক দ্রব্যের মধ্যে ৮টি কীটনাশক [অলড্রিন (aldrin), ডায়েলড্রিন (dieldrin), ক্লোরডেন (chlordane), এনড্রিন (endrin), হেপ্টাক্লোর (heptachlor), ডিডিটি (DDT), মিরেক্স (mirex), এবং টক্সাফেন (toxaphene); দুটি শিল্পজাত রাসায়নিক দ্রব্য পিসিবি (PCBs) এবং হেক্সাক্লোরোবেনজিন (hexachlorobenzene); এবং অন্য দুটো হলো কারখানায় উৎপন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত উপজাত: ডাইওক্সিন (dioxin) এবং ফিউরান (furan)]; খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে পৃথিবীব্যাপী সব পরিবেশের সব ধরনের জীবজন্তুর উপর তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটায় এই বিষাক্ত পদার্থগুলো। ত্রুটিপূর্ণ শিশুর জন্ম, ক্যান্সার উৎপাদন, ভ্রুণ বিকাশের নানাবিধ সমস্যার মূলেই দায়ী থাকে এই ডার্টি ডজন। পরিবেশ আইন বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বিপন্ন পরিবেশের বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্তির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরিবেশ আইন। মূলত পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান তত্ত্বাবধান ও সংরক্ষণের আইনই পরিবেশ আইন। এই আইন স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য বিশ্ব আন্দোলনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাগরিক ও সরকারি সংস্থাসমূহের অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে। তথ্যসূত্র পরিবেশ প্রকৃতি আবাসভূমি পৃথিবী
https://en.wikipedia.org/wiki/Natural_environment
Natural environment
The natural environment or natural world encompasses all biotic and abiotic things occurring naturally, meaning in this case not artificial. The term is most often applied to Earth or some parts of Earth. This environment encompasses the interaction of all living species, climate, weather and natural resources that affect human survival and economic activity. The concept of the natural environment can be distinguished as components: Complete ecological units that function as natural systems without massive civilized human intervention, including all vegetation, microorganisms, soil, rocks, plateaus, mountains, the atmosphere, and natural phenomena that occur within their boundaries and their nature. Universal natural resources and physical phenomena that lack clear-cut boundaries, such as air, water, and climate, as well as energy, radiation, electric charge, and magnetism, not originating from civilized human actions. In contrast to the natural environment is the built environment. Built environments are where humans have fundamentally transformed landscapes such as urban settings and agricultural land conversion, the natural environment is greatly changed into a simplified human environment. Even acts which seem less extreme, such as building a mud hut or a photovoltaic system in the desert, the modified environment becomes an artificial one. Though many animals build things to provide a better environment for themselves, they are not human, hence beaver dams, and the works of mound-building termites, are thought of as natural. People cannot find absolutely natural environments on Earth, and naturalness usually varies in a continuum, from 100% natural in one extreme to 0% natural in the other. The massive environmental changes of humanity in the Anthropocene have fundamentally effected all natural environments: including from climate change, biodiversity loss and pollution from plastic and other chemicals in the air and water. More precisely, we can consider the different aspects or components of an environment, and see that their degree of naturalness is not uniform. If, for instance, in an agricultural field, the mineralogic composition and the structure of its soil are similar to those of an undisturbed forest soil, but the structure is quite different.
1119
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B7%E0%A6%BE
ভাষা
ভাষা ধারণাটির কোন সুনির্দিষ্ট, যৌক্তিক ও অবিতর্কিত সংজ্ঞা দেয়া কঠিন, কেননা যেকোন কিছুর সংজ্ঞা ভাষার মাধ্যমেই দিতে হয়। তাই ভাষার আত্মসংজ্ঞা প্রদান দুরূহ। তবে ভাষার একটি কার্যনির্বাহী সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায় যে, ভাষা মানুষের মস্তিষ্কজাত একটি মানসিক ক্ষমতা যা অর্থবাহী বাকসংকেতে রূপায়িত (বাগযন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বনিভিত্তিক রূপে বা রূপে) হয়ে মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করতে এবং একই সমাজের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করে। মানুষ তার মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করার জন্য কণ্ঠধ্বনি এবং হাত, পা, চোখ ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে ইঙ্গিত করে থাকে। কণ্ঠধ্বনির সাহায্যে মানুষ যত বেশি পরিমাণ মনোভাব প্রকাশ করতে পারে ইঙ্গিতের সাহায্যে ততটা পারে না। আর কণ্ঠধ্বনির সহায়তায় মানুষ মনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবও প্রকাশ করতে সমর্থ হয়। কণ্ঠধ্বনি বলতে মুখগহ্বর, কণ্ঠ, নাসিকা ইত্যাদির সাহায্যে উচ্চারিত বোধগম্য ধ্বনি বা ধ্বনি সৃষ্টি হয় বাগ্যন্ত্রের দ্বারা। গলনালি, মুখবিবর, কণ্ঠ, জিহ্বা, তালু, দন্ত, নাসিকা ইত্যাদি বাক্প্রত্যঙ্গকে এক কথায় বলে বাগযন্ত্র। এই বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে ভাষা বলে। সকল মানুষের ভাষাই বাগযন্ত্রের দ্বারা সৃষ্ট। তবুও একই ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টির অর্থ বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হতে পারে। এ কারণে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর জন্য আলাদা আলাদা ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত বাক্ সংকেতের সংগঠনকে ভাষা বলা হয়। অর্থাৎ বাগযন্ত্রের দ্বারা সৃষ্ট অর্থবোধক ধ্বনির সংকেতের সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমই হলো ভাষা। দেশ, কাল ও পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ও পরিবর্তন ঘটে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থান করে মানুষ আপন মনোভাব প্রকাশের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বস্তু ও ভাবের জন্য বিভিন্ন ধ্বনির সাহায্যে শব্দের সৃষ্টি করেছে। সেসব শব্দ মূলত নির্দিষ্ট পরিবেশে মানুষের বস্তু ও ভাবের প্রতীক (Symbol) মাত্র। এ জন্যই আমরা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষার ব্যবহার দেখতে পাই। সে ভাষাও আবার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়ে এসেছে। ফলে এ শতকে মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে যে ভাষা ব্যবহার করে, হাজার বছর আগেকার মানুষের ভাষা ঠিক এমনটি ছিল না।বর্তমান পৃথিবীতে ৭,০৯৯ টি ভাষা প্রচলিত আছে।(তথ্য সূত্রঃ ইথনোলগ ২০তম সংস্করণ)।তার মধ্যে বাংলা একটি ভাষা। ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ মাতৃভাষা। বাংলাদেশের অধিবাসীদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলাদেশ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণ এবং ত্রিপুরা, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামের কয়েকটি অঞ্চলের মানুষের ভাষা বাংলা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে বাংলা ভাষাভাষী জনগণ রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ত্রিশ কোটি লোকের মুখের ভাষা বাংলা। ভাষা মানুষে-মানুষে যোগাযোগের প্রধানতম বাহন। ভাষার কতটুকু মানুষের কোন জন্মগত বৈশিষ্ট্য আর কতটুকু পরিবেশনির্ভর সে ব্যাপারে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানীদের মতভেদ আছে। তবে সবাই একমত যে স্বাভাবিক মানুষমাত্রেই ভাষা অর্জনের মানসিক ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় এবং একবার ভাষার মূলসূত্রগুলি আয়ত্ত করে ফেলার পর বাকী জীবন ধরে মানুষ তার ভাষায় অসংখ্য নতুন নতুন বাক্য সৃষ্টি করতে পারে। এরকম অসীম প্রকাশক্ষমতাসম্পন্ন ভাষা একান্তই একটি মানবিক বৈশিষ্ট্য; মানুষ ছাড়া আর কোন প্রাণী এই ক্ষমতার অধিকারী নয়। প্রতিটি মানুষ ভাষা আয়ত্ত করার সহজাত বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্ম নেয় এবং ঐ মানুষটি যে নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক পর্যায়ের নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিবেশ-বেষ্টিত ভাষিক সমাজের অন্তর্গত, সেই সমাজে সে দৈনন্দিন ভাষাপ্রয়োগের মাধ্যমে তার নিজস্ব ভাষাজ্ঞান বিকশিত করে। ভাষা মূলত বাগযন্ত্রের মাধ্যমে কথিত বা "বলা" হয়, কিন্তু একে অন্য মাধ্যমে তথা লিখিত মাধ্যমেও প্রকাশ করা সম্ভব। এছাড়া প্রতীকী ভাষার মাধ্যমেও ভাবের আদান-প্রদান হতে পারে। ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল একটি ভাষিক প্রতীক এবং এর দ্বারা নির্দেশিত অর্থের মধ্যকার সম্পর্ক যাদৃচ্ছিক। একই বস্তু বা ধারণা কেন বিভিন্ন ভাষায় ভিন্ন ধরনের ধ্বনিসমষ্টি দ্বারা নির্দেশিত হয় (যেমন - একটি গৃহপালিত চতুষ্পদ প্রাণীর নাম বাংলা ভাষায় "গরু", ইংরেজি ভাষায় "Cow" কাও, ফরাসি ভাষায় "Vache" ভাশ্‌, ইত্যাদি কেন হয়), তার পেছনে একেকটি ভাষার বক্তাসমাজের ভেতর সমঝোতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা রীতিনীতি ছাড়া আর কোন কারণ নেই। মানুষের ভাষার সাথে অন্য প্রাণীদের যোগাযোগের "ভাষার" একটা বড় পার্থক্য হল ভাষার সাহায্যে মানুষ বিভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে, যা প্রাণীরা পারে না। যেমন - মৌমাছিদের নাচ কেবল মধু আহরণের সুবিধার জন্যই কাজে লাগে। আর উল্লুক জাতীয় বানরদের ভাষিক দক্ষতা অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে বেশি হলেও বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, সামগ্রিকভাবে তাদের ভাষা একটি দুই বছরের মনুষ্য শিশুর ভাষার চেয়ে উন্নত নয়। ভাষার প্রকৃতি মানসিক ব্যাকরণ, ভাষাবোধ ও ভাষাপ্রয়োগ সব মানুষই অন্তত একটি ভাষার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত। বিভিন্ন ধ্বনি পরপর সাজিয়ে তৈরি হয় শব্দ, আর অনেক শব্দ নানা বিন্যাসে সাজিয়ে গড়া অসংখ্য সব বাক্য নিয়ে তৈরি হয় একটি ভাষা। কিন্তু কোন ভাষায় কতগুলি বাক্য হতে পারে, তার কোনও সীমাবদ্ধতা নেই। ভাষার বক্তারা কতগুলি সীমিত সংখ্যক সূত্রকে কাজে লাগিয়ে অসীমসংখ্যক বাক্য বলতে ও বুঝতে পারেন। আধুনিক চম্‌স্কীয় ভাষাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এই সূত্রগুলিকে বলা হয় বক্তার "মানসিক ব্যাকরণ"। বক্তা যখন ছোটবেলায় ভাষা অর্জন করে, তখন তার মধ্যে এই মানসিক ব্যাকরণের বোধ গড়ে ওঠে। এই ব্যাকরণের অংশ হিসেবে আছে ভাষাটির ধ্বনিব্যবস্থা (ধ্বনিতত্ত্ব), শব্দের গঠন (রূপমূলতত্ত্ব), কীভাবে একাধিক শব্দ সংযুক্ত হয়ে পদগুচ্ছ বা বাক্য গঠন করে (বাক্যতত্ত্ব), ধ্বনি ও অর্থের মধ্যে সম্পর্ক (অর্থবিজ্ঞান), এবং ভাষার শব্দভাণ্ডার। ভাষার শব্দগুলির ধ্বনি ও অর্থের মধ্যে সম্পর্ক যাদৃচ্ছিক। ভাষা হল সেই ব্যবস্থা যা ধ্বনির সাথে অর্থের সম্পর্ক স্থাপন করে। ভাষা সম্পর্কে কোন মানুষের এই মানসিক বোধ, বাস্তব জীবনে তার ভাষার প্রয়োগ অপেক্ষা স্বতন্ত্র। মানুষ বাক বৈকল্যের শিকার হয়ে বা অন্য যেকোন কারণে "ভাষাপ্রয়োগে" ভুল করতে পারে, কিন্তু এতে তার "ভাষাবোধের" কিছু হয় না। ব্যাকরণের প্রকারভেদ ভাষার ব্যাকরণ বিভিন্ন রকম হতে পারে। বর্ণনামূলক ব্যাকরণে ভাষার বক্তার অচেতন ভাষিক জ্ঞানের একটি বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এটি ভাষার বক্তার মানসিক ব্যাকরণের একটি মডেল হিসেবে গণ্য করা যায়। বিধানমূলক ব্যাকরণে ভাষার ব্যাকরণ কী রকম হওয়া উচিত, তার বিধিবিধান দেয়ার চেষ্টা করা হয়। অনেক সময় বিদেশী ভাষা শেখানোর উদ্দেশ্যে শিক্ষামূলক ব্যাকরণ লেখা হয়। বিশ্বজনীন ব্যাকরণ ভাষাবিজ্ঞানীরা বিশ্বের হাজার হাজার ভাষা নিয়ে গবেষণা করে বের করেছেন যে এদের মধ্যে বহু পার্থক্য থাকলেও এই পার্থক্যের পরিমাণ সীমিত। সব ভাষার ব্যাকরণেই কিছু বিশ্বজনীন অংশ আছে। ভাষাবিজ্ঞানীরা ভাষাসমূহের এই বিশ্বজনীন বৈশিষ্ট্যগুলিকে কতগুলি নিয়মনীতির সাহায্যে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন। এই নিয়মনীতিগুলির সমষ্টিগত নাম দেয়া হয়েছে বিশ্বজনীন ব্যাকরণ। ভাষাবিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিশ্বজনীন ব্যাকরণ সব ভাষার ব্যাকরণের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে এবং এর মানুষের সহজাত ভাষা অর্জন ক্ষমতার সরাসরি সম্পর্ক আছে। শিশুদের ভাষা অর্জনের পদ্ধতি বিশ্বজনীন ব্যাকরণের অস্তিত্বের সাক্ষ্য দেয়। শিশুদেরকে জোর করে ভাষা শেখানো লাগে না। যেকোন মানব ভাষার উন্মুক্ত সংস্পর্শে আসলেই শিশুরা দ্রুত তা শিখে ফেলতে পারে। শিশুরা কতগুলি নির্দিষ্ট ধাপে ভাষা শেখে। খুব কম বয়সেই ভাষা অর্জনের প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। চার বা পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুরা ভাষার সম্পূর্ণ ব্যাকরণ (এখানে ব্যাকরণ বলতে স্কুলপাঠ্য ব্যাকরণ বই নয়, ভাষার বাক্য গঠনের অন্তর্নিহিত মানসিক নিয়মগুলি বোঝানো হয়েছে) আয়ত্ত করে ফেলে। এ থেকে বোঝা যায় যে, শিশুরা বংশগতভাবেই ভাষা অর্জন ও ব্যবহারের ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়, এবং এই ক্ষমতা বিশ্বজনীন ব্যাকরণের অংশ। বধির শিশুরা প্রতীকী ভাষা শেখার ক্ষেত্রেও অনুরূপ দক্ষতা দেখায়। অর্থাৎ ভাষা অর্জনের ক্ষেত্রে ধ্বনি শোনা বা উৎপাদন করা পূর্বশর্ত নয়। প্রতীকী ভাষাগুলি দৃষ্টি ও ইঙ্গিতভিত্তিক হলেও এগুলি কথ্য ভাষাগুলির চেয়ে কোন অংশে অনুন্নত বা গাঠনিক দিক থেকে কম জটিল নয়। ভাষার বিশ্বজনীন বৈশিষ্ট্যসমূহ ভাষাকে যদি কেবলমাত্র যোগাযোগের একটি উপায় হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তাহলে এটি মানুষের একান্ত নিজস্ব কোনও বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা যায় না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানুষের ভাষার এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা অন্য প্রাণীদের যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলিতে দেখা যায় না। মানুষের ভাষার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল তার সৃষ্টিশীলতা বা সঞ্জননী ক্ষমতা, অর্থাৎ মৌলিক ভাষিক এককগুলিকে (ধ্বনি, ধ্বনিদল, রূপমূল, শব্দ) সংযুক্ত করে অসীম সংখ্যক বৈধ বাক্য সৃষ্টির ক্ষমতা, যে বাক্যগুলির অনেকগুলিই হয়ত আজও কেউ বলেনি বা শোনেনি। ভাষাবিজ্ঞানীরা ভাষা সম্পর্কে গবেষণা করে অনেকগুলি সত্য বের করেছেন, যেগুলি সব ভাষার জন্য প্রযোজ্য: যেখানেই মানুষ আছে, সেখানেই ভাষা আছে। আদিম ভাষা বলে কিছু নেই। সব মনুষ্য ভাষাই সমান জটিল এবং মহাবিশ্বের যেকোন ধারণা প্রকাশে সমভাবে সক্ষম। যেকোন ভাষার শব্দভাণ্ডারকে নতুন ধারণা প্রকাশের সুবিধার্থে নতুন শব্দ গ্রহণ করিয়ে সমৃদ্ধ করা যায়। সব ভাষাই সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। কথ্য ভাষাগুলির ধ্বনি ও অর্থের মধ্যে সম্পর্ক এবং প্রতীকী ভাষাগুলির ইঙ্গিত ও অর্থের মধ্যে সম্পর্ক বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যাদৃচ্ছিক। সব মনুষ্য ভাষাতেই কতগুলি সসীম সংখ্যক ধ্বনি বা ইঙ্গিত থাকে যেগুলি জোড়া লাগিয়ে অর্থপূর্ণ একক বা শব্দ তৈরি করা হয়, এবং এই শব্দগুলিকে আবার জোড়া লাগিয়ে অসীম সংখ্যক সম্ভাব্য বাক্য তৈরি করা যায়। সব ভাষার শব্দ ও বাক্যগঠনের সূত্রগুলি প্রায় একই ধরনের। প্রতিটি কথ্য ভাষার বিচ্ছিন্ন ধ্বনি-একক আছে, যেগুলিকে কতগুলি ধ্বনিবৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা যায়। প্রতিটি কথ্য ভাষায় স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি আছে। সব ভাষাতেই ব্যাকরণিক পদশ্রেণী বা ক্যাটেগরি যেমন বিশেষ্য, ক্রিয়া, ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায়। সব ভাষাতেই পুং বা স্ত্রী, মানুষ, জীবিত, ইত্যাদি বিশ্বজনীন আর্থিক বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়। সব ভাষাতেই না-বাচকতা, প্রশ্ন করা, আদেশ দেওয়া, অতীত বা ভবিষ্যত নির্দেশ করা, ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে। মানুষের ভাষায় ভাষায় যে পার্থক্য, তার কোন জৈবিক কারণ নেই। যেকোন সুস্থ স্বাভাবিক মানব শিশু পৃথিবীর যেকোন ভৌগোলিক, সামাজিক, জাতিগত বা অর্থনৈতিক পরিবেশে যেকোন ভাষা শিখতে সক্ষম। ভাষার উপাদান মানুষের মুখের ভাষা অনেকগুলি ধ্বনি নিয়ে গঠিত। এই ধ্বনিগুলির নিজস্ব কোন অর্থ নেই। যেমন - ক্‌, অ, প্‌, আ, ল্‌ --- এই ধ্বনিগুলি উচ্চারণ করলে কোন কিছু বোঝা যায় না। কিন্তু ধ্বনিগুলি একত্রে যখন "কপাল" শব্দ হিসেবে উচ্চারণ করা হয়, তখন একজন বাংলাভাষী লোক এদের মধ্যে অর্থ খুঁজে পান। ভাষার আরেকটি বৈশিষ্ট্য এর জটিল আন্বয়িক বা বাক্যিক ব্যবস্থা, যার নিয়মগুলি ভাষার শব্দগুলি কোন্‌টির পর কোন্‌টি কী ক্রমে বসে বিভিন্ন পদগুচ্ছ, খণ্ডবাক্য ও বাক্য গঠন করবে, তার দিকনির্দেশ দেয়। ভাষা অর্জন ভাষা অর্জন বলতে সেই প্রক্রিয়াকে বোঝায় যার মাধ্যমে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা এক বা একাধিক ভাষা শিখে থাকে। এটি ভাষাবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাক্ষেত্র। মাতৃভাষা অর্জন মাতৃভাষা অর্জন একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং ভাষাবিজ্ঞানী এর প্রকৃতি সম্পর্কে এখনও পুরোপুরি জানতে পারেননি। ছোট শিশুদের মধ্যে প্রবৃত্তিগতভাবেই কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যা তাদেরকে শিশু বয়সেই মাতৃভাষা অর্জনের উপযোগী করে তোলে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে আছে বাগনালীর গঠন, যার মাধ্যমে শিশু তার মাতৃভাষার বিভিন্ন শব্দ উৎপাদন করে। এছাড়া শিশুদের সাধারণ ব্যাকরণিক মূলনীতিগুলি এবং বাক্যগঠনের স্তরগুলি বোঝার ক্ষমতা থাকে। শিশুরা কোন নির্দিষ্ট ভাষা শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হয় না। বরং যে ভাষা তাদের আশেপাশে বলা হয়, তারা সেই ভাষাই শিখে ফেলে, এমনকি যদি তাদের পিতামাতা অন্য কোন ভাষাতে কথা বলে, তা হলেও। প্রাথমিক ভাষা অর্জনের একটি কৌতূহলোদ্দীপক বৈশিষ্ট্য হল শিশুরা প্রথম প্রথম বাক্যের গঠনের চেয়ে অর্থের উপর বেশি জোর দেয়। যেই পর্যায়ে তারা সচেতনভাবে সুসংগঠিত বাক্য বলতে আরম্ভ করে, সেই পর্যায়েই মনুষ্য শিশুরা ভাষিক দক্ষতায় "এপ" (Ape) জাতীয় প্রাণীদের ছাড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় ভাষা অর্জন যদিও দ্বিতীয় ভাষা অর্জন বলতে আক্ষরিকভাবে মাতৃভাষা অর্জনের পরে অপর একটি ভাষা অর্জনকে বোঝায়, প্রায়শই এই পরিভাষাটি দিয়ে বয়ঃসন্ধিকালের পরে দ্বিতীয় একটি ভাষা অর্জনের ঘটনাকে বোঝানো হয়ে থাকে। শিশুরা একাধিক ভাষা অর্জনে তেমন কোন কষ্টের সম্মুখীন হয় না। কিন্তু বয়ঃসন্ধির পরে দ্বিতীয় কোন ভাষা শিখতে মানুষকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় এবং প্রায়শই সেই ভাষাতে সে উচ্চ স্তরের দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। মানুষ যদি দ্বিতীয় ভাষাটি বক্তা সম্প্রদায়ে ও তাদের সংস্কৃতিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়, তবেই সে ভাষাটি সবচেয়ে সফলভাবে আয়ত্তে আনতে পারে। এছাড়া যেসমস্ত সংস্কৃতিতে দ্বিতীয় ভাষা শেখার উপর জোর দেওয়া হয়, সেখানেও দ্বিতীয় ভাষা অর্জন সহজ হয়। উদাহরণস্বরূপ আফ্রিকান বহু দেশে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ফরাসি অর্জনের ঘটনাকে উল্লেখ করা যায়। দ্বিভাষিকতা ও বহুভাষিকতা দ্বিভাষিকতা বলতে দুইটি ভাষা দক্ষভাবে প্রয়োগের ক্ষমতা এবং বহুভাষিকতা বলতে দুইয়ের বেশি ভাষার দক্ষ প্রয়োগের ক্ষমতাকে বোঝায়। বিশ্বের বেশির ভাগ অঞ্চলেই দ্বিভাষিকতা প্রচলিত। দ্বিভাষী বা বহুভাষী মানুষদের মধ্যে বিভিন্ন ভাষার দক্ষতার তারতম্য পরিলক্ষিত হয়: কেউ হয়ত একটি ভাষায় ভাল লিখতে এবং অপরটিতে ভাল বলতে পারেন, ইত্যাদি। ভাষার রূপ বৈচিত্র্য চা-চিনি আমাকে চায়ের জন্মভূমি চীনে নিয়ে এসেছে। চীনারা চা-কে চা উচ্চারণ করে। এই চা-ই উর্দু ও হিন্দিতে ‘চায়ে’ এবং ফারসিতে ‘চাই’ উচ্চারিত হয়। চা যখন আরব ভূখণ্ডে পৌঁছল, তখন আরবরা এর ‘চ’-কে ‘শ’-তে পরিবর্তন করে ‘শাই’ বলতে লাগল। সংস্কৃত ভাষায় পেয়ালাকে বলা হয় কাসা। উর্দু এবং হিন্দিতেও, তবে এ দুই ভাষায় শব্দটির ব্যবহার খুবই কম। ফারসিতে এর উচ্চারণ ‘কাসাহ’। ফারসিভাষীরা কাসাহ শব্দের বহুবিধ ব্যবহার করে থাকে। আসমানকে তারা বলে ‘কাসাহ পুশত’ বা উল্টো পেয়ালা। ফারসির কাসাহ আরবে গিয়ে ‘কা’ছ’ রূপ ধারণ করল। এখান থেকেই আরবি ভাষায় বহুল ব্যবহৃত যুক্তশব্দ ‘কা’ছুল কিরাম’-এর উৎপত্তি, যার আক্ষরিক অর্থ—বরকতপূর্ণ কাপ। আরবিতে কাপের জন্য ‘কুব’ শব্দের ব্যবহারও খুব প্রচলিত। কুবের প্রতি ভালো করে ধ্যান দিলে ইংরেজি শব্দ ‘কাপ’-কে অত্যন্ত স্বচ্ছ দেখায়। ইংরেজিতে যেমন বলে, ওয়ার্ল্ড কাপ। আরবিতে এটিকেই ‘কা’ছুল আলাম’ বা বিশ্বকাপ বলা হয়। এবার মা শব্দের ওপর দৃষ্টি দিন। আশ্চর্যের বিষয়, পৃথিবীর নানা প্রান্তে ‘মা’ বোঝাতে যেসব শব্দ ব্যবহৃত হয়, তার বেশির ভাগ শব্দের মূল উচ্চারণে ‘ম’ পাওয়া যায়। যেমন—সংস্কৃত ভাষায় ‘মাতার’, উর্দু, হিন্দিতে ‘মাঁ, আম্মাঁ, উম্মি’, পশতুতে ‘মুর’, আরবিতে ‘উম্ম, উম্মি’, ফারসিতে ‘মাদার’, লাতিনে ‘ম্যাটার’, গ্রিকে ‘মেতিরা’, ইংরেজিতে ‘মাদার, মম, মাম্মি’, ফরাসিতে ‘মেখ’, জার্মানিতে ‘মোটার’ এবং চায়নিজ ভাষায় ‘মুচান’ উল্লেখযোগ্য। বিস্ময় এখানেই শেষ নয়; চায়নিজের মুচানের মধ্যে আরবি শব্দ ‘মুহসিন’ খুঁজে পাওয়া যায়, এর অর্থ—উপকারী ও কল্যাণকামী। সন্তানের প্রতি নিস্বার্থ ভালোবাসার ক্ষেত্রে মা ছাড়া বড় মুহসিন আর কে হতে পারে? পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় একটি ভাষা চিত্রালি বা কাহওয়ার। এ ভাষায় মায়ের প্রতিশব্দ ‘নান’। এর ওপর ভিত্তি করে ‘নানা-নানি’ শব্দ দুটি নিয়ে চিন্তা করলেই বোধগম্য হয় যে, ‘নান’ থেকেই শব্দ দুটির উৎপত্তি। মায়ের প্রতিশব্দ ‘নান’ যদিও অন্য কোনো ভাষায় ব্যবহার দেখা যায় না, তবে ‘নানা-নানি’ ইঙ্গিত দেয়, কোনো সময় হয়তো অনেক ভাষায় ‘নান’ প্রচলিত ছিল। সংস্কৃত ভাষায়ও মায়ের জন্য নানের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। এবার প্রশ্ন জাগতে পারে, ‘নান’ থেকে ‘নানা-নানি’র উৎপত্তি হলে ‘দাদা-দাদি’র উৎসস্থল হবে ‘দাদ’। এরূপ প্রশ্ন যথার্থ। কেননা সংস্কৃতে বাবার প্রতিশব্দ ‘তাত’। যা মূলত ‘দাদ’-এর আসল। এই ‘দাদ’ থেকেই ‘দাদা-দাদি’। ফারসিতে পিতাকে বলা হয় ‘পাদার’। এটিই সামান্য পরিবর্তন হয়ে ইংরেজিতে ‘ফাদার’ এবং স্প্যানিশ ভাষায় ‘পাদরি’ উচ্চারিত হয়। আবার ফারসিতে বাবার আরেক প্রতিশব্দ ‘বাব’। এটিই থেকেই ‘বাবা’র উৎপত্তি, যেটা ইংরেজিতে ‘পাপা’য় রূপান্তরিত হয়। অন্যদিকে ফারসির ‘বাব’ উর্দু ও হিন্দিতে উচ্চারিত হয় ‘বাপ’। একই সঙ্গে এই দুই ভাষায় পিতার প্রতিশব্দ হিসেবে ‘বাপু’ ও ‘বাবু’রও প্রচলন দেখা যায়। আরবিতে পিতাকে ডাকা হয় ‘আবু’ ও ‘আবি’ শব্দে। এটাই আবার উর্দুতে ‘আব্বু ও আব্বা’য় রূপান্তরিত হয়। ভাষার পরিবর্তন মানুষের মুখে মুখে বলা বা কথা বলার নতুন উপায় আবিষ্কারের ফলে সকল ভাষাতেই পরিবর্তন দেখা দেয়। এই পরিবর্তন এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে এমনকি অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যেও স্থানান্তরিত হয়। ধ্বনিগত দিক থেকে শুরু করে শব্দভান্ডার, অঙ্গসংস্থানবিদ্যা, পদবিন্যাস ও বক্তৃতায় ভাষার পরিবর্তন হয়ে থাকে। যদিও ভাষার এই পরিবর্তনকে শুরুর দিকে নেতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করা হতো এবং ভাষা বিষয়ক বক্তারা মনে করতেন এই পরিবর্তনের ফলে ভাষা ব্যবহারের বিনাশ হচ্ছে বা মূল বিষয় থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে, তবু এই পরিবর্তন প্রাকৃতিক উপায়ে সংঘটিত হয় এবং তা এড়ানো প্রায় দুস্কর। পরিবর্তনের ফলে নির্দিষ্ট শব্দ বা সম্পূর্ণ ধ্বনিগত পদ্ধতিতে প্রভাব দেখা যায়। শব্দগত পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে অন্য কোন শব্দ বা ধ্বনিগত বৈশিষ্ট্য দিয়ে একটি শব্দকে পুনঃস্থাপন, প্রভাবিত হওয়ার শব্দ সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, কিংবা যেখানে কোন শব্দ ছিল না সে স্থানে নতুন কোন শব্দ যুক্ত করা। যেমন - নিজেই নিজের ছবি তোলাকে "সেলফি" বলা হয়ে থাকে, যা পূর্বে ছিল না। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা বিশ্বের ১১টি সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা হল চীনা, ইংরেজি, হিন্দি-উর্দু, স্পেনীয়, আরবি, পর্তুগিজ, রুশ, বাংলা, জাপানি, জার্মান ও ফরাসি। চীনা ও জাপানি ভাষা ব্যতীত বাকি ৯টি ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং বিশ্বের ৪৬% মানুষ এই সব ভাষায় কথা বলেন। সবচেয়ে বেশি ভাষার আঁতুড়ঘর দুটি দেশ: পাপুয়া নিউ গিনি, যেখানে ৮৫০টিরও বেশি ভাষা রয়েছে; অপরটি ইন্দোনেশিয়া, যেখানে ৬৭০টি ভাষা লোকমুখে ফেরে। মহাদেশের বিচারে বিশ্বের ৬০০০টির মধ্যে ১৫ শতাংশ ভাষায় কথা বলা হয় দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকায়, আফ্রিকায় ৩০ শতাংশ, এশিয়াতেও শতাংশের হিসেব ৩০, সবচেয়ে কম ইউরোপে, সেখানে মাত্র ৩ শতাংশ। এদের মধ্যে অনেকগুলিই ভাষাই পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। আবার অনেকগুলি ভাষা আছে যেগুলি একটিই ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষই ব্যবহার করতেন। বংশধরদের অভাবে সেই ভাষা শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রতিনিয়ত ভাষা ও ভাষায় শব্দের ব্যবহার পাল্টে যাচ্ছে। অনেক ভাষা অস্তিত্ব রক্ষায় অন্যের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে নিচ্ছে। যার ফলে খর্ব হচ্ছে ভাষার স্বাতন্ত্র্যতা। সমীক্ষা বলছে, প্রতি ১৫ দিনের একটি করে ভাষা মুছে যাচ্ছে পৃথিবীর বুক থেকে। কয়েকটি ভাষা অবশ্য সরকারী বদান্যতায় স্বমহিমায় ফিরেও এসেছে। যেমন ওয়েলস, মাওরির মত ভাষা সরকারী আনুকূল্য পেয়েছে। প্রতীকী ভাষা ইশারা ভাষা বা সাংকেতিক ভাষা বা প্রতীকী ভাষা (ইংরেজি: Sign language) বলতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে হাত ও বাহু নড়ানোর মাধ্যমে যোগাযোগ করার পদ্ধতিকে বোঝানো হয়। মুখের ভাষাতে যোগাযোগ করা অসম্ভব বা অযাচিত হলে এই ভাষা ব্যবহার করা হয়। সম্ভবত মুখের ভাষার আগেই ইশারা ভাষার উদ্ভব ঘটে। মুখের বিকৃত ভঙ্গিমা, কাঁধের ওঠানামা কিংবা আঙুল তাক করাকে এক ধরনের মোটা দাগের ইশারা ভাষা হিসেবে গণ্য করা যায়। তবে প্রকৃত ইশারা ভাষাতে হাত ও আঙুল দিয়ে সৃষ্ট সুচিন্তিত ও সূক্ষ্ম দ্যোতনাবিশিষ্ট সংকেত সমষ্টি ব্যবহৃত হয়, এবং এর সাথে সাধারণত মুখমণ্ডলের অভিব্যক্তিও যুক্ত করা হয়। মূক ও বধির লোকেরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ইশারা ভাষার ব্যবহার করে থাকেন আরও দেখুন অভিব্যক্তি (মনোবিজ্ঞান) শারীরিক ভাষা হাস্যরস আন্তর্জাতিক সহায়ক ভাষা ভাষা নিয়ন্ত্রক সংস্থার তালিকা ভাষার তালিকাসমূহ ভাষাবিজ্ঞান মনোভাষাবিজ্ঞান তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ World Atlas of Language Structures: a large database of structural (phonological, grammatical, lexical) properties of languages Ethnologue: Languages of the World is a comprehensive catalog of all of the world's known living languages Beth Skwarecki, "Babies Learn to Recognize Words in the Womb", Science, 26 August 2013 ভাষা ভাষাবিজ্ঞান মানব যোগাযোগ মূল বিষয়ের নিবন্ধ
https://en.wikipedia.org/wiki/Language
Language
Language is a structured system of communication that consists of grammar and vocabulary. It is the primary means by which humans convey meaning, both in spoken and signed forms, and may also be conveyed through writing. Human language is characterized by its cultural and historical diversity, with significant variations observed between cultures and across time. Human languages possess the properties of productivity and displacement, which enable the creation of an infinite number of sentences, and the ability to refer to objects, events, and ideas that are not immediately present in the discourse. The use of human language relies on social convention and is acquired through learning. Estimates of the number of human languages in the world vary between 5,000 and 7,000. Precise estimates depend on an arbitrary distinction (dichotomy) established between languages and dialects. Natural languages are spoken, signed, or both; however, any language can be encoded into secondary media using auditory, visual, or tactile stimuli – for example, writing, whistling, signing, or braille. In other words, human language is modality-independent, but written or signed language is the way to inscribe or encode the natural human speech or gestures. Depending on philosophical perspectives regarding the definition of language and meaning, when used as a general concept, "language" may refer to the cognitive ability to learn and use systems of complex communication, or to describe the set of rules that makes up these systems, or the set of utterances that can be produced from those rules. All languages rely on the process of semiosis to relate signs to particular meanings. Oral, manual and tactile languages contain a phonological system that governs how symbols are used to form sequences known as words or morphemes, and a syntactic system that governs how words and morphemes are combined to form phrases and utterances. The scientific study of language is called linguistics. Critical examinations of languages, such as philosophy of language, the relationships between language and thought, how words represent experience, etc., have been debated at least since Gorgias and Plato in ancient Greek civilization. Thinkers such as Jean-Jacques Rousseau (1712–1778) have argued that language originated from emotions, while others like Immanuel Kant (1724–1804) have argued that languages originated from rational and logical thought. Twentieth century philosophers such as Ludwig Wittgenstein (1889–1951) argued that philosophy is really the study of language itself. Major figures in contemporary linguistics of these times include Ferdinand de Saussure and Noam Chomsky. Language is thought to have gradually diverged from earlier primate communication systems when early hominins acquired the ability to form a theory of mind and shared intentionality. This development is sometimes thought to have coincided with an increase in brain volume, and many linguists see the structures of language as having evolved to serve specific communicative and social functions. Language is processed in many different locations in the human brain, but especially in Broca's and Wernicke's areas. Humans acquire language through social interaction in early childhood, and children generally speak fluently by approximately three years old. Language and culture are codependent. Therefore, in addition to its strictly communicative uses, language has social uses such as signifying group identity, social stratification, as well as use for social grooming and entertainment. Languages evolve and diversify over time, and the history of their evolution can be reconstructed by comparing modern languages to determine which traits their ancestral languages must have had in order for the later developmental stages to occur. A group of languages that descend from a common ancestor is known as a language family; in contrast, a language that has been demonstrated not to have any living or non-living relationship with another language is called a language isolate. There are also many unclassified languages whose relationships have not been established, and spurious languages may have not existed at all. Academic consensus holds that between 50% and 90% of languages spoken at the beginning of the 21st century will probably have become extinct by the year 2100.
1121
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6
মহাদেশ
মহাদেশ বলতে পৃথিবীর বিভিন্ন বৃহৎ অঞ্চলক বোঝায়। মহাদেশগুলো সাধারণত কোনো সুনির্দিষ্ট মানদণ্ডের দ্বারা নির্ধারিত নয়, বরং কোনো প্রচলিত প্রথা দ্বারা নির্ধারিত হয়, যার ফলে মহাদেশের সংখ্যা ৪ থেকে ৭ পর্যন্ত হতে পারে। বেশিরভাগ ইংরেজিভাষী দেশ নিম্নলিখিত ৭টি অঞ্চলকে মহাদেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয় (বড় থেকে ছোট ক্রমানুযায়ী): এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, অ্যান্টার্কটিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়া। অন্যান্য প্রথায় এই ৭টি অঞ্চলের মধ্যে কিছু অঞ্চলকে একত্রিত করা হয়; যেমন উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাকে একত্রিত ক'রে আমেরিকা মহাদেশ, এশিয়া ও ইউরোপকে একত্রিত ক'রে ইউরেশিয়া মহাদেশ এবং এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপকে একত্রিত ক'রে আফ্রো-ইউরেশিয়া মহাদেশ। সামুদ্রিক দ্বীপকে অনেকসময় নিকটবর্তী মহাদেশের অন্তর্গত হিসাবে ধরা হয়, যার মাধ্যমে সমগ্র ভূপৃষ্ঠকে বিভিন্ন মহাদেশে ভাগ করা যায়। এই প্রথা অনুযায়ী প্রশান্ত মহাসাগরের বেশিরভাগ দ্বীপরাষ্ট্র ও অঞ্চলকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সাথে একত্রিত ক'রে ওশেনিয়া অঞ্চল গঠন করা হয়। ভূতত্ত্বে মহাদেশ বলতে পৃথিবীর এক প্রধান ভূখণ্ডকে বোঝায়, যার মধ্যে শুষ্ক ভূমি ও মহীসোপান উভয়ই অন্তর্গত। এই ভূতাত্ত্বিক মহাদেশগুলো বিভিন্ন ভূত্বকীয় পাতের অন্তর্গত সাতটি বৃহৎ মহাদেশীয় ভূত্বকের সাথে সম্পর্কিত। তবে এর মধ্যে মাদাগাস্কারের মতো মহাদেশীয় খণ্ড অন্তর্গত নয়। কেবল পৃথিবীতেই মহাদেশীয় ভূত্বকের অস্তিত্ব আছে বলে মনে করা হয়। বিংশ শতাব্দীতে মহাদেশীয় প্রবাহ তত্ত্ব স্বীকৃতি লাভ করেছিল, যার মতে কয়েক কোটি বছর আগে গঠিত প্যানজিয়া অতিমহাদেশ ভেঙে গিয়ে বর্তমান মহাদেশগুলো গঠিত হয়। সংজ্ঞা ও প্রয়োগ সংখ্যা ইন্দোনেশিয়া, চীন, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ, ভারত, পশ্চিম ইউরোপের কিছু অংশ এবং বেশিরভাগ ইংরেজিভাষী দেশ, যেমন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উপরোক্ত সাতটি মহাদেশ শেখানো হয়। রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের কিছু অংশে ইউরেশিয়াসহ ছয়টি মহাদেশের ধারণা প্রচলিত। গ্রিস এবং লাতিন আমেরিকাসহ বিভিন্ন রোমান্স-ভাষী দেশে একক আমেরিকাসহ ছয়টি মহাদেশের ধারণা প্রচলিত। অলিম্পিক ক্রীড়ার পতাকায় পাঁচটি বলয় একক আমেরিকাসহ পাঁচটি বসবাসযোগ্য মহাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে, যেখানে বসতিহীন অ্যান্টার্কটিকাকে বাদ দ্বয়া হয়েছে। ইংরেজিভাষী জগতে ভূগোলবিদরা অনেকসময় অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরের বেশিরভাগ দ্বীপরাষ্ট্র ও অঞ্চলকে একত্রিত করে ওশেনিয়া অঞ্চলের কথা বলেন। উচ্চতম ও নিম্নতম স্থান টীকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ মহাদেশ
https://en.wikipedia.org/wiki/Continent
Continent
A continent is any of several large geographical regions. Continents are generally identified by convention rather than any strict criteria. A continent could be a single landmass or a part of a very large landmass, as in the case of Asia or Europe. Due to this, the number of continents varies; up to seven or as few as four geographical regions are commonly regarded as continents. Most English-speaking countries recognize seven regions as continents. In order from largest to smallest in area, these seven regions are Asia, Africa, North America, South America, Antarctica, Europe, and Australia. Different variations with fewer continents merge some of these regions; examples of this are merging North America and South America into America, Asia and Europe into Eurasia, and Africa, Asia, and Europe into Afro-Eurasia. Oceanic islands are occasionally grouped with a nearby continent to divide all the world's land into geographical regions. Under this scheme, most of the island countries and territories in the Pacific Ocean are grouped together with the continent of Australia to form the geographical region Oceania. In geology, a continent is defined as "one of Earth's major landmasses, including both dry land and continental shelves". The geological continents correspond to seven large areas of continental crust that are found on the tectonic plates, but exclude small continental fragments such as Madagascar that are generally referred to as microcontinents. Continental crust is only known to exist on Earth. The idea of continental drift gained recognition in the 20th century. It postulates that the current continents formed from the breaking up of a supercontinent (Pangaea) that formed hundreds of millions of years ago.
1122
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%89%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%20%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE
উত্তর আমেরিকা
উত্তর আমেরিকা হল উত্তর এবং পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত একটি মহাদেশ। একে কখনো আমেরিকার উত্তর উপমহাদেশও ধরা হয়। মহাদেশটির উত্তরে উত্তর মহাসাগর, পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর এবং দক্ষিণ-পূর্বে দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় সাগর অবস্থিত। এর আয়তন ২৪,৭০৯,০০০ বর্গ কি.মি. (৯,৫৪০,০০০ বর্গ মাইল), যা পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় ৪.৮% এবং ভূ-পৃষ্ঠের ১৬.৫% জুড়ে বিস্তৃত এবং আয়তনের দিক থেকে উত্তর আমেরিকা এশিয়া ও আফ্রিকার পরে ৩য় বৃহত্তম এবং জনসংখ্যা হিসেবে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের পরে চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ। ২০০৭ সালে উত্তর আমেরিকা মহাদেশে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫২ কোটি। ২০১৩ সালের আদমশুমারি মতে নিকটবর্তী ক্যারিবীয় দ্বীপাঞ্চলসহ উত্তর আমেরিকার জনসংখ্যা ছিল ৫৬৫ মিলিয়ন, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭.৫ ভাগ। ইতিহাস মতে, সর্বশেষ বরফ যুগের সময় বেরিং ভূসেতু অতিক্রম করে উত্তর আমেরিকাতে প্রথম মানব বসতি শুরু হয় এবং তথাকথিত প্রত্ন-ভারতীয় যুগের সমাপ্তি হয় প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্বে মধ্য-ভারতীয় যুগের শুরুতে। ধ্রুপদী যুগ ৬ষ্ঠ শতাব্দী থেকে ১৩তম শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। প্রাক-কলাম্বীয় যুগের সমাপ্তি ঘটে ইউরোপীয়দের আগমনের সাথে সাথে আবিষ্কার যুগ এবং আধুনিক যুগের শুরুতে। বর্তমান অধিবাসিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও জাতিগত বিন্যাসে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক, আদিবাসী আমেরিকান, আফ্রিকীয় দাস ও তাদের বংশধরদের প্রভাব বিদ্যমান । তন্মধ্যে মহাদেশটির উত্তরাংশে ইউরোপীয় প্রভাব এবং দক্ষিণাংশে আদিবাসী আমেরিকান ও আফ্রিকীয় প্রভাব সুস্পষ্ট। মহাদেশটিতে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবে অধিকাংশ উত্তর আমেরিকীরা মূলত ইংরেজি, স্পেনীয় ও ফরাসি ভাষায় কথা বলে এবং সেখানকার চলমান সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাগুলি সাধারণত পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে। ব্যুৎপত্তি জার্মান মানচিত্রবিদ মার্টিন ওয়াল্ডসিমুলার এবং ম্যাথিয়াস রিংম্যান একত্রে ইতালীয় পরিব্রাজক আমিরিগো ভেসপুচ্চির নামানুসারে এই অঞ্চলটির নামকরণ করেন দ্যা আমেরিকাস। ভেসপুচ্চি ১৯৪৭ এবং ১৫০২ সালের কোন এক সময়ে দক্ষিণ আমেরিকা পরিভ্রমণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন প্রথম ইউরোপিয়ান পরিব্রাজক যিনি আমেরিকা এসেছিলেন। তার মতে, আমেরিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ নয়, বরং এটি একটি স্বতন্ত্র ভূমি যেটি ইউরোপিয়ানদের কাছে অজানা ছিল। ১৫০৭ সালে, ওয়াল্ডসিমুলার প্রদত্ত পৃথিবীর মানচিত্রে তিনি বর্তমান দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল অংশটিকে সর্বপ্রথম "আমেরিকা" নামকরণ করেন। তিনি তার কসমোগ্রাফি ইনট্রোডাকটো বইয়ে এই নামকরণের কারণ যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা সহ বর্ণনা করেন এভাবে: {{lang|la|... এবি আমেরিকো ইনভেন্টোরি ... কুয়েশি আমেরিকি সিভ আমেরিকাম}} (অর্থঃ পরিব্রাজক আমেরিকাস হতে বর্ণিত .. এটি ছিল আমেরিকাসের ভূমি, নাম আমেরিকা।)। ওয়াল্ডসিমুলারের নামকরণের পর এটা নিয়ে আর কেউ আপত্তি জানায়নি। যদিও তিনি ভেসপুচ্চির ল্যাটিন নামানুসারে (আমেরিকাস ভেসপুচ্চিয়াস), নামকরণ করেছিলেন তথাপি ইউরোপা, এশিয়া এবং আফ্রিকার মতো স্ত্রীবাচক নামকরণ করে আমেরিকা নামে বদলে ফেলা হয়। পরবর্তিতে অন্যান্য মানচিত্রবিদরা উত্তরের শেষ বিন্দু পর্যন্ত মহাদেশের নাম আমেরিকা প্রদান করে। ১৫৩৮ সালে, জেরার্ড মার্কেটোর তার প্রণিত মানচিত্রে পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধের পুরোটাকেই আমেরিকা নামে চিহ্নিত করেন। আমেরিকার নামকরণ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। অনেকের মতে আমেরিকার নামকরণ আমেরিগো ভেসপুচ্চির নামানুসারে হয়েছে, কিন্তু এই তত্ত্বে অনেকে বিশ্বাসী নয়। ১৯৪৯ সালে, রিকার্ডো পাল্মা একটি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন যাতে তিনি বলেন," মধ্য আমেরিকার আমেরিক পর্বতমালা এবং দক্ষিণ আমেরিকা উভয়য়েরই আবিস্কারক ভেসপু্চ্চি" যা কিনা ক্রিস্টোফার কলোম্বাস এর আবিস্কারের সাথে মিলে গেছে। আলফ্রেড ই. হুডের ১৯০৮ সালের তত্ত্ব মতে "মহাদেশগুলোর নামকরণ করা হয় রিচার্ড আমরিক নামের এক ব্রিস্টলের অধিবাসী বণিকের নামানুসারে। কেননা তিনি ১৪৯৭ সালে জন কবেট এর ইংল্যান্ড থেকে নতুন এলাকা আবিস্কারের প্রকল্পে অর্থায়ন করেন"। আরেকটি বিস্তারিত ব্যাখ্যায় বলা হয় আমেরিকার নামকরণ করা হয়েছিল একজন স্পানিশ নাবিকের নামে যিনি কিনা প্রাচীন ভিসিগোথিক গোষ্ঠীর আমেরিক। আরেকটি ব্যাখ্যায় বলা হয়, আদিবাসী আমেরিকান ভাষার শব্দ থেকেই মহাদেশটির নামকরণ করা হয়েছে। ব্যাপ্তি "উত্তর আমেরিকা" নামের অর্থ স্থানানুসারে এবং বিষয়ানুসারে আলাদা। কানাডিয়ান ইংরেজিতে, "উত্তর আমেরিকা" বলতে বুঝায় একসাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাকে। অন্যদিকে, মাঝে মাঝে গ্রীনল্যান্ড এবং মেক্সিকোর (নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট অনুসারে) পাশাপাশি সমুদ্র মধ্যবর্তি দ্বীপসমূহকেও বোঝানো হয়ে থাকে। জাতিসংঘের জিও স্কিম অনুসারে "নর্থ আমেরিকা"র অঞ্চলগুলো হলো মেক্সিকো থেকে উত্তরে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা পর্যন্ত, পাশাপাশি মধ্য আমেরিকার কিছু অঞ্চল সহ ক্যারিবিয়ান দেশসমূহ। এছাড়াও কানাডিয়ান আর্কটিক অঞ্চলসমূহের মধ্যে গ্রীনল্যান্ডকেও ধরা হয়ে থাকে নর্থ আমেরিকান টেকটোনিক প্লেট অনুসারে। ইরানসহ বেশকিছু রোমান ভাষাভাষী সংস্কৃতিতে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ বলতে বোঝান হয়ে থাকে মূলত কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং মাঝে মাঝে গ্রীনল্যান্ড, সেইন্ট প্যারি এট মিক্যুইলন এবং বারমুডাকে। উত্তর আমেরিকাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে ডাকা হত। যেমন স্পেনীয় নর্থ আমেরিকা (নিউ স্পেন) ছিল উত্তরাঞ্চলীয় আমেরিকার পূর্বনাম, এবং এটি ছিল মেক্সিকোর প্রথম সাংবিধানিক নাম। অঞ্চলসমূহ ভৌগলিকভাবে উত্তর আমেরিকা মহাদেশটি বেশকিছু অঞ্চল এবং উপঅঞ্চলে বিভক্ত। এদের মধ্যে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং ভৌগোলিক অঞ্চল অবস্থিত। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ মূলত বিভিন্ন বাণিজ্য এলাকা দিয়ে গঠিত, যেমন: নর্থ আমেরিকান বাণিজ্য চুক্তি এলাকা এবং সেন্ট্রাল আমেরিকান বাণিজ্য চুক্তি এলাকা ইত্যাদি। ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিকভাবে, মহাদেশটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় অ্যাঙ্গলো-আমেরিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকা। অ্যাঙ্গলো-আমেরিকা বলতে বুঝায় উত্তরাঞ্চলীয় আমেরিকা, বেলিজ, এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ সেই সাথে ইংরেজি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী (যদিও উপআঞ্চলিক এলাকা, যেমন লুইজিয়ানা এবং কিউবিক, আর ফ্রান্সোফনিক জনগোষ্ঠী এর আওতাধীন নয়)। ল্যাটিন আমেরিকা বলতে বোঝানো হয় সাধারনত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের অঞ্চল মেক্সিকো, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানা এবং ফকল্যান্ড দ্বীপপূঞ্জ ইত্যাদিকে। উত্তর আমেরিকা মহাদেশটির দক্ষিণাংশকে দুটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চল। একইভাবে মহাদেশটির উত্তরাংশকেও কিছু অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়। যদিও উত্তর আমেরিকার সংজ্ঞানুযায়ী পুরো মহাদেশটিকেই বোঝায় হয়। আবার উত্তর আমেরিকা বলতে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং গ্রীনল্যান্ডকেও বোঝায়। উত্তর আমেরিকা পরিভাষা দ্বারা বোঝায় পুরো উত্তরাঞ্চলীয় দেশসমূহ এবং উত্তর আমেরিকার অধীনস্থ অঞ্চলসমূহসহ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রীনল্যান্ড, বারমুডা, এবং সেন্ট প্যারি ও ম্যাকুইলন। যদিও খুব কম ব্যবহৃত , মিডল আমেরিকা বলতে মধ্য পশ্চিম আমেরিকা অর্থাৎ মধ্য আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান এবং মেক্সিকোকে বোঝায় না। মহাদেশটির সর্ববৃহৎ দেশ কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে সুনির্দিষ্ট অঞ্চল। যেমন কানাডার অঞ্চলগুলো হলো ব্রিটিশ কলম্বিয়া কোস্ট, কানাডিয়ান প্রেইরি, মধ্য কানাডা, আটলান্টিক কানাডা এবং উত্তর কানাডা। এই অঞ্চল গুলোর আবার কিছু উপাঞ্চল আছে। তেমনি ইউএস পরিসংখ্যান ব্যুরো মতে যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চলগুলো হলো: নিউ ইংল্যান্ড, মিড-আটলান্টিক, ইস্ট নর্থ সেন্ট্রাল স্টেস্টস্, ওয়েস্ট নর্থ সেন্ট্রাল স্টেস্টস্, সাউথ আটলান্টিক স্টেস্টস্, ই্স্ট সাউথ সেন্ট্রাল স্টেস্টস্, ওয়েস্ট সাউথ সেন্ট্রাল স্টেস্টস্, মাউন্টেইন স্টেস্টস্ এবং প্যাসিফিক স্টেস্টস্। দেশ দুটির মধ্যবর্তি অঞ্চলটি হলো গ্রেট লেক রিজিওন। প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট এবং গ্রেট লেক মেগারিজিওন এর মধ্যর্বতি মেগাপলিস গুলো মূলত কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশ নিয়েই গড়ে উঠেছে। ভূগোল ও ব্যাপ্তি দেশ, অঞ্চল, এবং অধীনস্থ অঞ্চলসমূহ জলবায়ূ যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রাকৃতিক প্রদেশ নিচের ৪৮টি মার্কিন রাজ্যকে পাঁচটি প্রাকৃতিক প্রদেশে ভাগ করা যায়: দ্য আমেরিকান কার্ডিলেরা। দ্য কানাডিয়ান শিল্ড। দ্য স্টেবল প্লাটফর্ম। দ্য কোস্টাল প্লেন। দ্য অ্যাপালাচেইন অর্গানিক বেল্ট। আলাস্কার বেশির ভাগ অঞ্চলই কর্ডিলেরা, অন্যদিকে হ্ওায়াইয়ের বেশির ভাগ দ্বীপ নিওজিন আগ্নেয়শিলার উদগিরনে তৈরী একটি উষ্ণস্থান। জনমিতি অর্থনৈতিক ভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা হলো উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে ধনী এবং উন্নত দেশ, এরপরেই আছে মেক্সিকো, যেটি নতুন শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিবেচিত। মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশ গুলোতে বৈচিত্রপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং মানব উন্নতি সূচক বিদ্যমান। উদাহরণ স্বরূপ, ছোট ছোট ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর (যেমনঃ বার্বাডোস, ট্রিনিদাদ এন্ড টোবাকো এবং অ্যান্টিগুয়া এন্ড বারমুডা) জিডিপি (পিপিপি) মেক্সিকোর চেয়েও বেশি, কারণ এসব দেশগুলোর জনসংখ্যা অনেক কম। অন্যদিকে পানামা এবং কোস্টারিকার মানব উন্নতি সূচক এবং জিডিপি অন্যান্ন ক্যারিবিয়ান দেশ গুলোর তুলনায় বেশি। উপরন্তু, গ্রীনল্যান্ডের খনিজ তেল এবং অন্যান্ন দামি খনিজদ্রব্য থাকা স্বত্ত্বেও দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে ডেনমার্কের মাছ ধরা, পর্যটন ইত্যাদির ওপর নির্ভর করতে হয়, কেননা গ্রীনল্যান্ডের খনিজদ্রব্যগুলো এখনও উত্তোলনের উদ্দোগ নেওয়া হয়নি, যদিও দ্বীপাঞ্চলটি অর্থনৈতিকভাবে উন্নত।। জনসংখ্যার ভিত্তিতে উত্তর আমেরিকায় অনেক জাতিগত বৈচিত্র পরিলক্ষিত হয়। এখানকার প্রধান তিনটি জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম হল ককেশিয়ান, মেস্টিজো এবং কৃষ্ণাঙ্গরা। অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মধ্যে ইন্ডিজিনিয়াস আমেরিকান এবং এশিয়ানরা উল্লেখযোগ্য। ভাষা উত্তর আমেরিকার প্রধান ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ইংরেজি, স্পেনীয় এবং ফরাসি। গ্রীনল্যান্ড এবং এর আশেপাশের অঞ্চল গুলোর প্রধান ভাষা ডেনিস, অন্যদিকে ডাচ ক্যারিবিয়ানরাও স্থানীয় ভাষা হিসেবে ডেনিস ভাষা ব্যবহার করে। অ্যাঙ্গলো-আমেরিকান শব্দটি ব্যবহার করা হয় সেই সব দেশ সমূহকে বোঝাত যাদের প্রধান ভাষা ইংরেজি: বিশেষত কানাডা (ইংরেজি এবং ফরাসি সেখানকার দুটি সরকারি ভাষা) এবং যুক্তরাষ্ট্র, এছাড়াও মধ্য আমেরিকা এবং ক্রান্তীয় দেশসমূহকে (যেমন কমনওয়েলথ ক্যারিবিয়ান)। ল্যাটিন আমেরিকা বলতে বোঝানো হয় সাধারনত যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঞ্চলকে (প্র্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের অঞ্চল), যেখানে ল্যাটিন, স্প্যানিস এবং পর্তূগীজ ভাষা হতে উদ্ভূত রোমান ভাষা প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত। এসব অঞ্চল গুলো হলো: মধ্য আমেরিকার কিছু দেশ (সবসময় ইংরেজি যাদের প্রধান ভাষা নয়), ক্যারিবিয়ানের কিছু দেশ (ওলন্দাজ, ইংরেজি এবং ফেঞ্চ ভাষাভাষী অঞ্চল সমূহ বাদে), মেক্সিকো, দক্ষিণ আমেরিকার বেশির ভাগ অঞ্চল গায়ানা, সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানা (ফ্রান্স) এবং ফকল্যান্ড দ্বীপপূঞ্জ(ব্রিটিশ)। ফেঞ্চ ভাষাটি উত্তর আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ একটি ঐতিহাসিক ভাষা, এমনকি কিছু কিছু ধর্মে এই ভাষাটি্কে মর্যাদার আসনে অধীন করা হয়েছে। কানাডার ২টি সরকারি ভাষা। কিউবিক প্রদেশের প্রধান ভাষা ফেঞ্চ, সেখানকার ৯৫% মানুষ হয় ফরাসি অথবা ইংরেজি ভাষায় কথা বলে। অন্যদিকে নিউ ব্রুন্সইউক প্রদেশে ইংরেজির পাশাপাশি ফেঞ্চ প্রধান ভাষা। অন্যান্য ফেঞ্চ ভাষাভাষী অঞ্চল গুলো হলোঃ অন্টারি‌ও প্রদেশ (সেখানকার সরকারি ভাষা ইংরেজি হলেও ৬০০,০০০ মানুষের ভাষা ফরাসি), ম্যানিটোবা প্রদেশ (সেখানকার ইংরেজির পাশাপাশি ফরাসি সরকারি ভাষা), ফরাসি পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং সাঁ পিয়ের এ মিক্যলোঁ, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা (এখানে ফরাসি একটি সরকারি ভাষা)। হাইতিকে ফরাসি ভাষা-ভাষী দেশ বলা যায় ঐতিহাসিক কারণে যদিও সেখানকার লোকেরা ফরাসির পাশাপাশি ক্রেওল ভাষাতেও কথা বলে। একইভাবে ইংরেজির পাশাপাশি ফরাসি এবং ফরাসি-অ্যান্টিলীয় ক্রেওল ভাষাতে কথা বলে সেন্ট লুসিয়া এবং ডমিনিকার কমনওয়েলথভূক্ত অঞ্চলসমূহ। ধর্ম ২০১২ সালের পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপানুযায়ী উত্তর আমেরিকার সর্ববৃহৎ ধর্ম খ্রিষ্টান। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোর প্রায় ৭৭.৪% মানুষের ধর্ম খ্রিষ্টান। তাছাড়া এই মহাদেশের বাকি ২৩ টি দেশের বেশিরভাগ মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি, প্রায় ২৪৭ মিলিয়ন (৭০%) খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মানুষের আবাসস্থল। যদিও কিছু কিছু দেশে মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি (শতকরা হারে) খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর বসবাস। ব্রাজিলের পর মেক্সিকোই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ক্যাথলিক খ্রিষ্টান জনগোষ্টির আবাসস্থল। এছাড়া কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৭.১% মানুষ ধর্মে বিশ্বাসী নয় (নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদীসহ)। যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার যথাক্রমে ২২.৮% এবং ২৩.৯% মানুষের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে উদাসিন( অর্থাৎ তারা সুনির্দিষ্ট কোন ধর্মের অণুসারী নয়)। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর প্রায় ৬ মিলিয়ন (১.৮%) মানুষ ইহুদি, প্রায় ৩.৮ মিলিয়ন (১.১%) মানুষ বৌদ্ধ এবং প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন (১%) মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ইহুদি ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস যুক্তরাষ্ট্র (৫.৪মিলিয়ন), কানাডা (৩৭৫,০০০) এবং মেক্সিকোতে (৬৭,৪৭৬)। উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস (প্রায় ২.৭ মিলিয়ন বা ০.৯%) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, অন্যদিকে কানাডায় প্রায় ১ মিলিয়ন ( মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩.২%) মুসলিম বসবাস করে এবং মেক্সিকোতে বসবাস করে ৩,৭০০জন। ২০১২ সালের ইউ-টি সান ডিয়াগোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ১.২ মিলিয়ন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রায় ৪০% এর বসবাস দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়াতে। মধ্য আমেরিকার প্রধান ধর্ম খ্রিষ্টান (প্রায় ৯৫.৬%)। বিংশ শতাব্দীর পূর্বপর্যন্ত, ১৬শ শতকে মধ্য আমেরিকায় স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের কল্যাণে রোমান ক্যাথলিক ধর্ম অন্যতম প্রধান ধর্মে পরিণত হয়। ১৯৬০ এর দশকে অন্যান্য খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বিশেষত প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদীদের ধর্মীয় সংগঠনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, পাশাপাশি ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে উদাসীন মানুষের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।তাছাড়া ক্যারিবিয়ান দেশসমূহে প্রধান ধর্ম খ্রিস্ট ধর্ম (প্রায় ৮৪.৭%) । ক্যারিবিয়াদের অন্যান্য ধর্মসমূহ হলো হিন্দুধর্ম, ইসলাম, রাস্তাফারি(জামাইকাতে )এবং অ্যাফ্রো–আমেরিকান ধর্মসমূহ যেমন সান্টারিয়া এবং ভোদোও। জনসাধারণ উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ৩১৮.৪ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে প্রধান জনবহুল দেশ। দ্বিতীয় জনবহুল দেশ মেক্সিকো (জনসংখ্যা প্রায় ১১২.৩২ মিলিয়ন) অন্যদিকে কানাডা তৃতীয় (জনসংখ্যা ৩২.৬২ মিলিয়ন)। কিউবা, ডোমিনিক রিপাবলিক, হাইতি, পুওটারিকো (যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ অঞ্চল), জ্যামাইকা এবং ট্রানিদাদ এন্ড টোবাকো ব্যতীত অন্যান্য ক্যারিবিয়ান দেশ গুলোর জনসংখ্যা ১ মিলিয়নের কম। যদিও গ্রীনল্যান্ডের আয়তন বিশাল (২,১৬৬,০০০ বর্গকি.মি.), তবুও সেখানকার জনসংখ্যা ঘনত্ব (০.০৩জন/বর্গকি.মি.) পৃথিবীর সবচেয়ে কম এবং গ্রীনল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৫৫,৯৮৫ জন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, এবং মেক্সিকোর জনসংখ্যা ঘনত্ব উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বেশি এবং বড় বড় শহর গুলো এই দেশগুলোতেই অবস্থিত। ক্যারিবিয়ান দেশ গুলোতেও বেশকিছু বড় শহর অবস্থিত। উত্তর আমেরিকার সর্ববৃহৎ শহর যথাসম্ভব মেক্সিকো সিটি এবং নিউ ইয়র্ক্। এই দু’টি শহরই হলো উত্তর আমেরিকার ৮ মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যা বসবাসকারী শহর, যদিও আমেরিকা অঞ্চলে এরকম আরো শহর রয়েছে। আয়তনের হিসেবে সবচেয়ে বড় শহর গুলো হলো লস অ্যাঞ্জেলস্, টরেন্টো, শিকাগো, হাভানা, সান্ট ডোমিংগ এবং মন্ট্রিল। যুক্তরাষ্ট্রের সানবেল্ট অঞ্চলসমূহের শহর গুলো (যেমন দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া, হুস্টন, ফনিক্স, মিয়ামী, আটলান্টা এবং লাস ভেগাস) দ্রুত বর্ধনশীল শহর হিসেবে পরিচিত। ফলশ্রুতিতে শহর গুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ১৯৪৫ দশকের বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তবর্তী মেক্সিকোর শহরগুলিও দ্রুত বর্ধনশীল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এসবের মধ্যে টিযুয়ানা শহর (সান ডিয়াগো সীমান্তবর্তী) এ শহরে পুরো ল্যাটিন আমেরিকার অভিবাসী পাশাপাশি ইউরোপ এবং এশিয়ার অভিবাসীরা অবস্থান গেড়েছে। ফলাফল হিসেবে এসব শহর গুলিতে পানিস্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। উত্তর আমেরিকার দশটি মেট্রোপলিটনের আটটিই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। মেট্রোপলিটন শহর গুলোর জনসংখ্যা ৫.৫ মিলিয়নের বেশি, তেমনি কিছু শহর হলো নিউ ইয়র্ক সিটি মেট্রোপলিটন এলাকা, লস অ্যাঞ্জেলস মেট্রোপলিটন এলাকা, শিকাগো মেট্রোপলিটন এলাকা এবং ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থ মেট্রোপ্লেক্স। গ্রেটার মেক্সিকো সিটি হলো যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর মধ্যবর্তি সর্বাধিক জনবহুল মেট্রোপলিটন শহর। অন্যদিকে কানাডার টরেন্টো মেট্রোপলিটন এলাকা দশটি বৃহৎ উত্তর আমেরিকান মেট্রোপলিটনের মধ্যে অন্যতম যার জনসংখ্যা ছয় মিলিয়ন। কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত এবং মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তবর্তী শহর গুলোতে আন্তর্জাতিক মেট্রোপলিটন শহর গড়ে উঠেছে। সীমান্তবর্তী শহরগুলোর মধ্যে ডেট্রয়েট-উইন্ডসোর এবং সান ডিয়াগো-টিযুয়ানা মেট্রোপলিটন গুলোর বাণিজ্যিক, অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক উন্নতি উল্লেখযোগ্য। এসব মেট্রোপলিটন গুলো মিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের জন্য বিশেষ উপযোগী। ২০০৪ সালের যোগাযোগ অংশিদারিত্ব গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, ডেট্রয়েট-উইন্ডসোর সীমান্ত দিয়ে প্রায় $১৩ বিলিয়ন বাণিজ্য এবং সানডিয়াগো-টিযুয়ানা সীমান্ত দিয়ে $২০ বিলিয়ন বাণিজ্য হয়েছে। উত্তর আমেরিকা মহাদেশ হল মেট্রোপলিটন শহর গুলোর উন্নতির প্রত্যক্ষদর্শী। যুক্তরাষ্ট্রে এগারোটি বড় অঞ্চল আছে যেগুলো কিনা মেক্সিকো এবং কানাডার সাথে সীমান্ত বিনিময় করে। এই অঞ্চল গুলো হলো অ্যারিজোনা সান করিডোর, কাসাডিয়া, ফ্লোরিডা, ফ্রন্টরেঞ্জ, গ্রেট লেক মেগারিজিয়ন, গালফ কোস্ট মেগারিজিয়ন, উত্তর-পূর্ব মেগারিজিয়ন, উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া, পিডমন্ট আটলান্টিক, সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া এবং টেক্সাস ট্রায়াঙ্গেল। কানাডা এবং মেক্সিকোতেও মেগারিজিয়ন রয়েছে। এদের মধ্যে কিউবিক সিটি- উইন্ডসোর করিডোর, গোল্ডেন হর্সহো দুটিকে ধরা হয় গ্রেট লেক মেগারিজিওন এবং মেগাপলিস অব সেন্ট্রাল মেক্সিকো। অন্যদিকে ঐতিহ্যগতভাবে মেগারিজিওন হিসেবে ধরা হয় বোস্টন ওয়াশিংটন ডিসি করিডোরকে। ২০০০ সালের মেগারিজিয়নের বৈশিষ্ট্য অনুসারে গ্রেটলেক মেগাপলিস এর জনসংখ্যা হলো প্রায় ৫৩,৭৬৮,১২৫ জন। ২০১৩ সালের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোর জনমিতি অনুসারে উত্তর আমেরিকার প্রধান দশটি মেট্রেপলিটন শহর গুলো হলোঃ ‌†২০১১ আদমশুমারি তথ্য থেকে অর্থনীতি কানাডা, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের বহুমূখী এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এই তিনটি দেশ, এমনকি সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড়। ২০১৪ সালের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু বার্ষিক আয় (জিডিপি, পিপিপি) ৫৪,৯৮০ ডলার এবং বাকি তিনদেশের তুলনায় অর্থনীতিতে প্রযুক্তিগতভাবেও উন্নত। ২০১০ সালের প্রাক্কলন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির ৭৬.৭% অবদান সেবাখাতের, ২২.২% অবদান বিভিন্ন শিল্পকারখানার এবং ১.২% অবদান কৃষিখাতের। কানাডা সেবাখাত, খনি এবং উৎপাদন খাতে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। ২০১৪ সালে ২০১৪ সালের তথ্যমতে, কানাডার মাথাপিছু আয় ছিল ৪৪,৬৫৬ ডলার এবং দেশটির ন্যুনতম জিডিপি ছিল সারা বিশ্বের মধ্যে ১১তম। ২০১০ সালের প্রাক্কলন অনুসারে, কানাডার জিডিপির শতকরা ৭৮ভাগ আসে সেবাখাত থেকে, ২০ ভাগ আসে কলকারখানার উদ্ভূত পণ্য থেকে এবং শতকরা ২ ভাগ আসে কৃষিখাত থেকে। অন্যদিকে ২০১৪ সালের তথ্যমতে, মেক্সিকোর মাথাপিছু আয় ছিল ১৬,১১১ ডলার এবং দেশটির ন্যুনতম জিডিপি ছিল সারা পৃথিবীর মধ্যে ১৫ তম। নতুন একটি শিল্পায়িত দেশ হিসেবে, মেক্সিকো তার অগ্রগতি ধরে রেখেছে আধুনিক এবং পুরাতন কারখানা, কৃষিপ্রযুক্তি এবং সেবাখাতের দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে। দেশটির আয়ের প্রধান উৎসগুলো হলো খনিজ তেল, কারখানাজাত দ্রব্যাদির রপ্তানী, মোটরগাড়ী নির্মাণ, ভারি কারখানা, খাদ্যদ্রব্য, ব্যাংকিং এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক সেবাখাত। উত্তর আমেরিকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মূলত তিনটি প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল। এই তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গুলো হলো: নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এনএএফটিএ), ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি এন্ড কমন মার্কেট(ক্যরিকম) এবং সেন্ট্রাল আমেরিকান কমন মার্কেট(সিএসিএম)। এই তিনটি অঞ্চলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র দুইটি অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এই অঞ্চলগুলো ছাড়াও আরো একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে, নাম কানাডা-কোস্টারিকা ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট। এটি বাদে বাকি অঞ্চলগুলো নিয়ে গঠিত, অবশ্য এই জোন গুলোতে ট্রেড ভূক্ত অন্যান্য দেশসমূহও রয়েছে, যেমন- মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশসমূহ। নর্থ আমেরিকান ফ্রী ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এনএএফটিএ) হলো পৃথিবীর প্রধান চারটি বাণিজ্যিক অঞ্চলের একটি। ১৯৯৪ সালে এই অঞ্চলটি গঠিত হয়, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডার মধ্যে বাণিজ্যিক সমতা এবং দেশগুলোর মাঝে আন্তঃবাণিজ্যিক সম্পর্ক সহজতর করার লক্ষে। কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইতোমধ্যে একটি দ্বিজাতী বাণিজ্যিক চুক্তি (পৃথিবীর সর্ববৃহৎ) বিদ্যমান রয়েছে, যার নাম কানাডা ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিলেশান, এই চুক্তির আওতায় দেশ দুটি নিজেদের মধ্যে বিনাশুল্কে আমদানি রপ্তানী করে থাকে, এনএফটিএ মেক্সিকোকেও বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার সুবিধা প্রদান করেছে। এই মুক্ত বাণিজ্য যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর মধ্যে বাণিজ্যকে বিনা শুল্কের পর্যায়ে উন্নিত করেছে। দেশগুলোর মধ্যে এই মুক্ত বাণিজ্যের পরিমাণ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, ২০১০ সালের তথ্য মতে, এনএফটিএ এর তিনটি দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়ে সর্বাধিক ২৪.৩% প্রবৃদ্ধি বা ৭৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌছায়। এনএফটিএ ভূক্ত অঞ্চলসমূহের জিডিপি (পিপিপি)- পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ প্রায় ১৭.৬১৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সাথে বলা যায়, ২০১০ এর তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি হলো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনীতি, পাশাপাশি দেশটির ন্যুনতম জিডিপির পরিমাণ ১৪.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এনএএফটিএ দেশ গুলো হলো নিজেদের মধ্যে সর্বাধিক বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশিদার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো মেক্সিকো এবং কানাডার সবচেয়ে বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার, যখন কিনা কানাডা এবং মেক্সিকো হলো নিজেদের তৃতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। ক্যারিবিয়ান বাণিজ্যিক অঞ্চল বা ক্যারিকম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৭৩ সালে, ১৫ টি ক্যারিবিয়ান দেশ সমূহের মধ্যে। ২০০০ সালের তথ্য মতে, ক্যারিকমের বাণিজ্যের পরিমাণ দাড়িয়েছে $৯৬ বিলিয়ন। ক্যারিকম দেশগুলো নিজেদের মধ্যে একটি সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহার করে। বিগত দশক গুলোতে এই বাণিজ্যিক এলাকাটি মূলত মুক্ত বাণিজ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং ক্যারিকম অফিস অব নেগোশিয়েশান (ওটিএন) মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দেশগুলোর জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। মধ্য আমেরিকার অর্থনীতিকে একত্রিত করার কাজ শুরু হয় মূলত, ১৯৬১ সালের সেন্ট্রাল আমেরিকান কমন মার্কেট চুক্তির আওতায়; এই চুক্তিটি ছিল প্রথম অর্থনৈতিক চুক্তি, যা কিনা দেশগুলোর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করার জন্য করা হয়। বর্তমানে এই সেন্ট্রাল আমেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (সিএএফটিএ) চুক্তির ভবিষ্যত খুব একটা পরিষ্কার নয়। সিএএফটিএ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল পাঁচটি মধ্য আমেরিকান দেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ডোমিনিকা রিপাবলিকের মধ্যে। চুক্তিটির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল এনএএফটিএ এর মতো একটি মুক্ত বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলা। যুক্তরাষ্ট্রের মতো কানাডাও এই বাণিজ্যিক অঞ্চলের অংশ। বর্তমানে প্রস্তাবিত কানাডা-সেন্ট্রাল আমেরিকা ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (সিএ৪) এর কাজ মূলত যুক্তরাষ্ট্রের মতোই হবে। এই দেশগুলো আন্ত:মহাদেশীয় বাণিজ্যিক এলাকার অংশ। মেক্সিকো যেমন কলম্বিয়া এবং ভেনিজুয়েলার সাথে জি৩ ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টে যুক্ত সাথে সাথে ইইউ এর সাথেও চুক্তিবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র কতৃর্ক প্রস্তাবিত এবং রক্ষনাবেক্ষনকৃত বাণিজ্যিক চুক্তিগুলো মূলত ট্রান্স-আটলান্টিক ফ্রি ট্রেড এরিয়া এবং ইইউ এর সাথে সম্পর্কিত, অন্যদিকে ইউএস-মধ্যপ্রাচ্য ফ্রি ট্রেড এরিয়া মূলত বিভিন্ন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে মুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা দেয়, এবং ট্রান্স-প্যাসিফিক স্ট্যাটেজিক ইকোনমিক পার্টনারশিপ মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে বিদ্যমান। পরিবহন ব্যবস্থা পুরো আমেরিকা জুড়ে বিদ্যমান প্যান আমেরিকান হাইওয়ে ছিল প্রায় ৪৮,০০০ কি.মি. (৩০,০০০ মাইল) লম্বা। রাস্তাটিকে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকো সরকার কখনোই স্বীকৃতি প্রদান করেনি, কেননা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে সীমান্ত বরাবর একাধিক সংযোগ সড়ক রয়েছে। তথাপি রাস্তাটি মেক্সিকো থেকে উত্তর আমেরিকার উত্তরের প্রান্তবিন্দু পর্যন্ত প্রায় ২৬,০০০ কি.মি. (১৬,০০০ মাইল) লম্বা। ১৮৬০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম 'আন্তঃমহাদেশীয় রেললাইন' নির্মাণ করে। রেললাইনটি পূর্ব যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরের তীর পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো নির্মাণ কাজ শেষ হয়, ১৮৬৯ সালের ১০ মে। সেদিন বিখ্যাত গোল্ডেন স্পাইক অণুষ্ঠানের মাধ্যমে ইউটার প্রমেন্টরি সামিটে উদ্বোধন করা হয়। এই আন্তঃমহাদেশীয় রেললাইনটি পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের জনসাধারণ এবং অর্থনীতির জন্য বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত করে এবং পূর্ববর্তি দশকের ওয়াগণ রেলকে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নিত করে। যদিও রেললাইনটি আমেরিকা মহাদেশে দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে পৃথিবীর সর্বাধিক লম্বা রেলপথ ছিলনা। ১৮৬৭ সালে নির্মিত তৎকালীন কানাডিয়ান গ্রান্ডট্রাঙ্ক রেলওয়ে (জিটিআর) লম্বা, অন্টারিও থেকে কানাডিয়ান আটলান্টিক প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত সেই রেললাইনটি ছিল পৃথিবীর সর্বাধিক লম্বা রেল লাইন। জিটিআর রেলপথটি অবশ্য পোর্টহুরন (মিশিগান) এবং সেরিনা (অন্টারিও) দিয়েও অতিক্রম করে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তর আমেরিকার ২৪টি দেশ, অঞ্চল এবং অধীনস্থ অঞ্চল, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর অধীনস্থ অঞ্চল, কানাডা, বারমুডা এবং ১৭টি ক্যারিবিয়ান দেশসমূহের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার লক্ষে একটি সমন্বিত টেলিফোন নাম্বারিং প্লান হাতে নেওয়া হয়েছে যার নাম নর্থ আমেরিকান নাম্বারিং প্লান (এনএএনপি)। সংস্কৃতি কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্র একসময় ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলশ্রুতিতে ইংরেজি ভাষাভাষী কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতিতে পারস্পারিক সাদৃশ্য লক্ষণীয়। যদিও গ্রীনল্যান্ডের সংস্কৃতিতে কানাডার ইন্ডিজেনিয়াস জনগনের সামান্য প্রভাব রয়েছে, তবে ডেনমার্ক ঔপনিবেশিকদের শতবর্ষী শাসনের ফলে প্রবল ডেনিশ প্রভাব বিদ্যমান। স্থানীয় ভাষাভাষী উত্তর আমেরিকানদের মধ্যে স্প্যানিস ঔপনিবেশিক প্রভাব লক্ষনীয়। মধ্য আমেরিকার দেশসমূহ এবং মেক্সিকোর জনগোষ্ঠির মধ্যে মায়া সভ্যতা এবং ইন্ডিজেনিয়াস জনগনের প্রভাব বিদ্যমান। মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশ সমূহের স্প্যানিস ভাষাভাষীদের ভূতাত্ত্বিক সাদৃশ্যের কারণে বেশ মিল খুজে পাওয়া যায়। উত্তর মেক্সিকো বিশেষ করে মন্ট্রে, টিজুয়ানা, চিউড্যাড ওয়ারেজ এবং মেক্সিক্যালি শহরগুলোর সংস্কৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় জীবনধারা এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় সমাজব্যবস্থা ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। উপরিউক্ত শহরগুলোর মধ্যে মন্ট্রেকে সবচেয়ে বেশি আমেরিকান শহর বলে ধরা হয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার বেশিরভাগ অভিবাসীগণ দেশসমূহের দক্ষিণ সীমান্তবর্তী দেশ থেকে আসা। অ্যাগ্রোফোন ক্যারিবিয়ান দেশসমূহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন এবং তাদের ওপর ব্রিটিশ শাসনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রভাবের প্রত্যক্ষদর্শী। ইংরেজি ভাষাভাষী বেশিরভাগ ক্যারিবিয়ান জনগনই নিজ দেশের বাইরে (প্রবাসে) অবস্থান করে এবং বাকিরা যারা রয়েছে তারা দেশে অবস্থান বসবাস করে। খেলাধুলা নিচের টেবিলে যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর (সর্বাধিক আয়ের ভিত্তিতে) উল্লেখযোগ্য কিছু স্পোর্টস লীগের তালিকা: আরও দেখুন আমেরিকান(পরিভাষা) আমেরিকায় ইউরোপিয়ান ঔপনিবেশিক শাসন উত্তর আমেরিকার দুর্গসমূহ মেকিং নর্থ আমেরিকা (চলচ্চিত্র) উত্তর আমেরিকার পর্বতশৃঙ্গ নিয়ার্কটিক ইকোজোন টর্টিল দ্বীপপূঞ্জ (উত্তর আমেরিকা) ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মহাকাশ অভিযান সংগঠন এবং চুক্তিসমূহ: ক্যারিবিয়ান সম্প্রদায়সমূহ কমিশন ফর ইনভায়রনমেন্টাল কর্পোরেশান নর্থ আমেরিকান ইনভায়রনমেন্টাল কর্পোরেশান নর্থ আমেরিকান অ্যারো স্পেস ডিফেন্স কমান্ড যুক্তরাষ্ট্রের সংগঠনসমূহ নোট তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Houghton Mifflin Company, "উত্তর আমেরিকা" মহাদেশ
https://en.wikipedia.org/wiki/North_America
North America
North America is a continent in the Northern and Western Hemispheres. North America is bordered to the north by the Arctic Ocean, to the east by the Atlantic Ocean, to the southeast by South America and the Caribbean Sea, and to the west and south by the Pacific Ocean. The region includes the Bahamas, Bermuda, Canada, the Caribbean, Central America, Clipperton Island, Greenland, Mexico, Saint Pierre and Miquelon, Turks and Caicos Islands, and the United States. North America covers an area of about 24,709,000 square kilometers (9,540,000 square miles), representing approximately 16.5% of the Earth's land area and 4.8% of its total surface area. It is the third-largest continent by size after Asia and Africa, and the fourth-largest continent by population after Asia, Africa, and Europe. As of 2021, North America's population was estimated as over 592 million people in 23 independent states, or about 7.5% of the world's population. In human geography, the terms "North America" and "North American" can refer to Canada, the United States, Mexico, and Greenland or, alternatively, Canada, Greenland and the US (Mexico being classified as part of Latin America) or simply Canada and the US (Greenland being classified as either Arctic or European (due to its political status as a part of Denmark) and Mexico classified as Latin American). It is unknown with certainty how and when first human populations first reached North America. People were known to live in the Americas at least 20,000 years ago, but various evidence points to possibly earlier dates. The Paleo-Indian period in North America followed the Last Glacial Period, and lasted until about 10,000 years ago when the Archaic period began. The classic stage followed the Archaic period, and lasted from approximately the 6th to 13th centuries. Beginning in 1000 AD, the Norse were the first Europeans to begin exploring and ultimately colonizing areas of North America. In 1492, the exploratory voyages of Christopher Columbus led to a transatlantic exchange, including migrations of European settlers during the Age of Discovery and the early modern period. Present-day cultural and ethnic patterns reflect interactions between European colonists, indigenous peoples, enslaved Africans, immigrants from Europe, Asia, and descendants of these respective groups. Europe's colonization in North America led to most North Americans speaking European languages, such as English, Spanish, and French, and the cultures of the region commonly reflect Western traditions. However, relatively small parts of North America in Canada, the United States, Mexico, and Central America have indigenous populations that continue adhering to their respective pre-European colonial cultural and linguistic traditions.
1123
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A6%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%A3%20%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE
দক্ষিণ আমেরিকা
দক্ষিণ আমেরিকা পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ। মহাদেশটির আয়তন ১,৭৮,২০,৯০০ বর্গকিলোমিটার, যা পৃথিবীর মোট স্থলভাগের ১২%। আয়তনের দিকে থেকে এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকার পরেই এর স্থান। বিষুবরেখা ও মকরক্রান্তির দুই পাশ জুড়ে এর বিস্তৃতি। মহাদেশটি উত্তরে পানামা স্থলযোটকের মাধ্যমে মধ্য ও উত্তর আমেরিকার সাথে যুক্ত। উত্তরে ক্যারিবীয় সাগর থেকে দক্ষিণে হর্ন অন্তরীপ পর্যন্ত মহাদেশটির দৈর্ঘ্য ৭,৪০০ কিলোমিটার। আর পূর্ব-পশ্চিমে এর সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য, আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত ব্রাজিলের পুন্তা দু সেইক্সাস থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত পেরুর পুন্তা পারিনিয়াস পর্যন্ত, ৫,১৬০ কিলোমিটার। ২০০৬ সালে দক্ষিণ আমেরিকার প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ছিল ৩৭ কোটি ৬০ লক্ষ, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৬%। এই মহাদেশে ১২টি রাষ্ট্র আছে। এদের মধ্যে ১০টি রাষ্ট্র লাতিন: আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, প্যারাগুয়ে, পেরু, উরুগুয়ে, এবং ভেনেজুয়েলা। দুইটি রাষ্ট্র লাতিন নয়। এই দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে গায়ানা যুক্তরাজ্যের এবং সুরিনাম নেদারল্যান্ডসের প্রাক্তন উপনিবেশ ছিল। ব্রাজিল ছিল পর্তুগালের উপনিবেশ। আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চিলি, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, প্যারাগুয়ে, পেরু, উরুগুয়ে, এবং ভেনেজুয়েলা এই ৯ টি দেশ ছিল স্পেনের উপনিবেশ। এসব দেশের ভাষাও স্পেনিস। ব্রাজিলের ভাষা পর্তুগিজ, সুরিনামের ভাষা ডাচ এবং গায়ানার ভাষা হচ্ছে ইংরেজি। এছাড়া দক্ষিণ আমেরিকাতে ফ্রেঞ্চ গায়ানা বা গুইয়ান নামে ফ্রান্সের একটি জেলা সমমর্যাদার দেপার্ত্যমঁ রয়েছে। এটি এক সময় ফ্রাঞ্চের উপনিবেশ ছিল। মহাদেশটি থেকে বিরাট দূরত্বে প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত অনেকগুলি প্রশাসনিক অঞ্চল আছে, যেগুলি দক্ষিণ আমেরিকান বিভিন্ন রাষ্ট্রের অংশ। এদের মধ্যে আছে চিলির হুয়ান ফের্নান্দেস দ্বীপপুঞ্জ ও ইস্টার দ্বীপ, এবং ইকুয়েডরের গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। উপকূলের কাছে অবস্থিত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলির মধ্যে আছে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ব্রাজিলের ফের্নান্দু দি নোরোনিয়া দ্বীপপুঞ্জ। দক্ষিণে আছে যুক্তরাজ্যের ফকল্যাণ্ড দ্বীপপুঞ্জ। এই দ্বীপপুঞ্জটিকে আর্জেন্টিনা ইসলাস মালবিনাস নামে ডাকে এবং এগুলিকে নিজেদের বলে দাবী করে। দক্ষিণ আমেরিকার তটরেখা তুলনামূলকভাবে নিয়মিত প্রকৃতির, তবে একেবারে দক্ষিণে ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অনেক ফিয়ডের্র উপস্থিতির কারণে তটরেখা অত্যন্ত ভগ্ন। মহাদেশ দক্ষিণ আমেরিকা
https://en.wikipedia.org/wiki/South_America
South America
South America is a continent entirely in the Western Hemisphere and mostly in the Southern Hemisphere, with a considerably smaller portion in the Northern Hemisphere. It can also be described as the southern subregion of the Americas. South America is bordered on the west by the Pacific Ocean and on the north and east by the Atlantic Ocean; North America and the Caribbean Sea lie to the northwest. The continent includes twelve sovereign states: Argentina, Bolivia, Brazil, Chile, Colombia, Ecuador, Guyana, Paraguay, Peru, Suriname, Uruguay, and Venezuela; two dependent territories: the Falkland Islands and South Georgia and the South Sandwich Islands; and one internal territory: French Guiana. Additionally the territories of the ABC islands of the Kingdom of the Netherlands (located north of Venezuela in the Western Caribbean), the British Overseas Territory of Ascension, Saint Helena, & Tristan da Cunha (located in the Southern Atlantic), Bouvet Island (a dependency of Norway), Panama, and the island Republic of Trinidad and Tobago may also be considered parts of South America. South America has an area of 17,840,000 square kilometers (6,890,000 sq mi). Its population as of 2021 has been estimated at more than 434 million. South America ranks fourth in area (after Asia, Africa, and North America) and fifth in population (after Asia, Africa, Europe, and North America). Brazil is by far the most populous South American country, with almost half of the continent's population, followed by Colombia, Argentina, Venezuela and Peru. In recent decades, Brazil has also generated half of the continent's GDP and has become the continent's first regional power. Most of the population lives near the continent's western or eastern coasts while the interior and the far south are sparsely populated. The geography of western South America is dominated by the Andes mountains; in contrast, the eastern part contains both highland regions and vast lowlands where rivers such as the Amazon, Orinoco and Paraná flow. Most of the continent lies in the tropics, except for a large part of the Southern Cone located in the middle latitudes. The continent's cultural and ethnic outlook has its origin with the interaction of Indigenous peoples with European conquerors and immigrants and, more locally, with African slaves. Given a long history of colonialism, the overwhelming majority of South Americans speak Spanish or Portuguese, and societies and states are rich in Western traditions. Relative to Europe, Asia and Africa, post-1900 South America has been a peaceful continent with few wars, although high rates of violent crime remain a concern in some countries.
1124
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%93%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
ওশেনিয়া
ওশেনিয়া ( ইংরেজি: Oceania) হল একটি ভৌগলিক অঞ্চল, যা বর্তমান বিশ্বে একটি মহাদেশ হিসাবে বর্ণনা করা হয়। মূলত প্রশান্ত মহাসাগরীয় সকল দ্বীপরাষ্ট্রকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত করে একটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চল হিসেবেই ওশেনিয়া সৃষ্টি করা হয়। এর মধ্যে আছে অস্ট্রেলিয়া, মেলানেশিয়া, পলিনেশিয়া ও মাইক্রোনেশিয়া। পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধে বিস্তৃত জল গোলার্ধের কেন্দ্রে ওশেনিয়ার ভূমির এলাকা প্রায় জুড়ে বিস্তৃত এবং ২০২২ সালের হিসাবে প্রায় ৪৪.৪ মিলিয়ন জনসংখ্যা এখানে বাস করে। ওশেনিয়াকে বেশিরভাগ ইংরেজি-ভাষী-বিশ্বের একটি ভৌগলিক অঞ্চল হিসাবে বর্ণনা করা হয়। বিশ্বের এই মডেলে, অস্ট্রেলিয়াকে হয় একটি দ্বীপ হিসাবে দেখা হয় বা ওশেনিয়া মহাদেশের অভ্যন্তরে থাকা একটি মহাদেশীয় ভূখণ্ড হিসাবে দেখা হয়। অন্যান্য মহাদেশের সাথে তুলনা করলে ওশেনিয়া স্থলভাগে সবচে' ছোট ও অ্যান্টার্কটিকার পর দ্বিতীয়-নিম্ন জনবহুল মহাদেশ। ওশেনিয়ায় অস্ট্রেলিয়া, ফরাসি পলিনেশিয়া, হাওয়াই, নিউ ক্যালেডোনিয়া ও নিউজিল্যান্ডের উচ্চ বিকশিত ও বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক আর্থিক বাজার থেকে অর্থনীতির একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ মিশ্রণ রয়েছে, যা জীবন যাত্রার মান ও মানব উন্নয়ন সূচকে উচ্চ স্থান অধিকার করে। তবে কিরিবাা, পাপুয়া নিউগিনি, টুভালু, ভানুয়াতু ও পশ্চিম নিউগিনির তুলনামূলক কম উন্নত অর্থনীতি রয়েছে, যেখানে ফিজি, পালাউ ও টোঙ্গার মত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলির মাঝারি আকারের অর্থনীতিও রয়েছে। ওশেনিয়ার বৃহত্তম এবং জনবহুল দেশ হলো অস্ট্রেলিয়া ও বৃহত্তম শহর সিডনি এবং ইন্দোনেশিয়ার পুঞ্চাক জায়া হলো ওশেনিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ । অস্ট্রেলিয়া, নিউ গিনি ও পূর্বদিকের বৃহৎ দ্বীপের প্রথম বসতি স্থাপনকারীরা ৬০,০০০ বছরেরও অধিক আগে এসেছিলেন। ১৬ শতকের পর থেকে ইউরোপীয়রা প্রথম ওশেনিয়া অন্বেষণ করে। পর্তুগিজ অভিযাত্রীরা ১৫১২ ও ১৫২৬ সালের মধ্যে তানিম্বার দ্বীপপুঞ্জ, কিছু ক্যারোলিন দ্বীপপুঞ্জ ও পশ্চিম নিউ গিনিতে পৌঁছোয়। স্পেনীয় ও ডাচ অভিযাত্রীরা তাদের অনুসরণ করেন, তারপর ব্রিটিশ ও ফরাসিরা। ১৮ শতকে নিজের প্রথম সমুদ্রযাত্রায় জেমস কুক, যিনি পরবর্তীতে হাওয়াইয়ান দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছেন, তাহিতিতে যান এবং প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল অনুসরণ করেন। পরবর্তী শতাব্দীতে ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীদের আগমনের ফলে ওশেনিয়ার সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূখণ্ডে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছিল। প্রশান্ত মহাসাগরীয় মঞ্চটি ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রধানত মিত্র শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন ( তৎকালীন একটি মার্কিন কমনওয়েলথ ) ও অস্ট্রেলিয়া এবং অক্ষ শক্তি জাপানের মধ্যে প্রধান লড়াই দেখেছিল। আদিবাসী অস্ট্রেলীয়দের পাথুরে শিল্পকর্ম হলো বিশ্বের দীর্ঘতম ক্রমাগত অনুশীলন করা শৈল্পিক ঐতিহ্য। বেশিরভাগ ওশেনীয় দেশই বহু-দলীয় প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় গণতন্ত্র। পর্যটন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলির আয়ের একটি বড় উৎস। ব্যুৎপত্তি Ocean শব্দ থেকে ওশিয়ানিয়া কথাটির উৎপত্তি। প্রাচীন জ্ঞাত মহাদেশ অর্থাৎ ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে বিস্তীর্ণ সমুদ্র দ্বারা বিচ্ছিন্ন এই মহাদেশ। ওশিয়ানিয়া মহাদেশের বৃহত্তম দেশ অস্ট্রেলিয়ার নাম অনুসারে এই মহাদেশটিকেও অনেকসময় অস্ট্রেলিয়া বলা হয়। বাস্তবে ওশিয়ানিয়া ও অস্ট্রেলিয়া এক নয়। সংজ্ঞা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের সকল দ্বীপকে একত্রে ওশেনিয়া বলে জনসংখ্যার উপাত্ত নিচের জনসংখ্যার উপাত্তের ছক ভূরাজনৈতিক ওশেনিয়ার উপ-অঞ্চল এবং দেশসমূহকে দেখায়। জাতিসংঘের ব্যবহৃত ভৌগোলিক উপঅঞ্চলের পরিকল্পনা মোতাবেক এই ছকের দেশ এবং অঞ্চলগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। দেখানো তথ্য প্রতিনির্দেশ বিধান মেনে উদ্ধৃত, আর যেখানে তথ্যসূত্র ভিন্ন, সেখানে অন্য নথিপত্র স্পষ্টভাবে দেয়া আছে। এই ভৌগোলিক এলাকা এবং অবস্থান অন্যান্য বাড়তি শ্রেণিবিভাগের আওতাধীন যা তথ্যসূত্র এবং প্রতিটি বিবরণের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে। সকল ধর্মের লোকজন একসাথে মিলেমিশে বসবাস করেন। আরও দেখুন ওশেনিয়ার দেশসমূহ অস্ট্রেলেশিয়া ওশেনিয়ার জন্য জাতিসংঘ ভূবিন্যাস তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ "Australia and Oceania" from National Geographic মহাদেশ প্রশান্ত মহাসাগর
https://en.wikipedia.org/wiki/Oceania
Oceania
Oceania (UK: OH-s(h)ee-AH-nee-ə, -⁠AY-, US: OH-shee-A(H)N-ee-ə) is a geographical region including Australasia, Melanesia, Micronesia, and Polynesia. Outside of the English-speaking world, Oceania is generally considered a continent, while Australia is regarded as an island or a continental landmass contained inside of the larger continent of Oceania. Spanning the Eastern and Western Hemispheres, at the centre of the water hemisphere, Oceania is estimated to have a land area of about 9,000,000 square kilometres (3,500,000 sq mi) and a population of around 44.4 million as of 2022. When compared to the continents (which it is often compared to, not including Australia), Oceania is the smallest in land area and the second-least populated after Antarctica. Oceania has a diverse mix of economies from the highly developed and globally competitive financial markets of Australia, French Polynesia, Hawaii, New Caledonia, and New Zealand, which rank high in quality of life and Human Development Index, to the much less developed economies of Kiribati, Papua New Guinea, Tuvalu, Vanuatu, and Western New Guinea, while also including medium-sized economies of Pacific islands such as Fiji, Palau, and Tonga. The largest and most populous country in Oceania is Australia, and the largest city is Sydney. Puncak Jaya in Highland Papua, Indonesia, is the highest peak in Oceania at 4,884 m (16,024 ft). The first settlers of Australia, New Guinea, and the large islands just to the east arrived more than 60,000 years ago. Oceania was first explored by Europeans from the 16th century onward. Portuguese explorers, between 1512 and 1526, reached the Tanimbar Islands, some of the Caroline Islands and west New Guinea. Spanish and Dutch explorers followed, then British and French. On his first voyage in the 18th century, James Cook, who later arrived at the highly developed Hawaiian Islands, went to Tahiti and followed the east coast of Australia for the first time. The arrival of European settlers in subsequent centuries resulted in a significant alteration in the social and political landscape of Oceania. The Pacific theatre saw major action during the First World War with the Japanese occupying many German territories. During the Second World War, Allied powers including the United States, the Philippines (a U.S. Commonwealth at the time), and Australia fought against Axis power Japan across various locations in Oceania. The rock art of Aboriginal Australians is the longest continuously practiced artistic tradition in the world. Most Oceanian countries are multi-party representative parliamentary democracies, with tourism being a large source of income for the Pacific island nations.
1125
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%B0
মহাসাগর
মহাসাগর (বা মহাসমুদ্র, মহাসিন্ধু) অতি প্রকাণ্ড ও লবণযুক্ত বিপুল জলরাশি যা পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ওসেন শব্দটির উৎস হল প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘ওকিআনোজ’ (Ὠκεανός)। স্বীকৃত ৫ টি মহাসাগর : প্রশান্ত, আটলান্টিক, ভারতীয়, আর্টিক, এবং দক্ষিণ। মহাসাগরগুলি একত্রে পৃথিবীর মোট আয়তনের (৩.৬১×১০১৪ বর্গ মিটার) প্রায় ৭০.৯% স্থান দখল করে আছে। এ বিপুল জলরাশি আবার অনেকগুলো মহাসাগর ও ছোট ছোট সমুদ্রে বিভক্ত। মহাসাগরের অর্ধেকেরও বেশি জায়গার গড় গভীরতা ৩,০০০ মিটারেরও (৯,৮০০ বর্গফুট) বেশি। মহাসাগরের জলের গড় লবণাক্ততা ৩.৫% এবং প্রায় সকল সমুদ্রের গড় লবণাক্ততা ৩% থেকে ৩.৮%৮। বৈজ্ঞানিকেরা হিসেব করে দেখেছেন যে, মহাসাগরে প্রায় ২,৩০,০০০ সামুদ্রিক ও জলজ প্রাণী রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সামুদ্রিক ও জলজ প্রাণীর সংখ্যা নির্ণিত সংখ্যার তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি। পরিচিতি প্রচলিতভাবে আমরা বিভিন্ন ধরনের মহাসাগরের নাম দেখতে পাই। একসময় বর্তমানকালের মহাসাগরগুলোর আন্তঃসংযোগকৃত লবণাক্ত জলরাশি ‘বৈশ্বিক মহাসাগর’ হিসেবে নির্দেশ করতো। মহাসাগর মূলতঃ একটি। এ ধারণাটি অবিচ্ছেদ্য ও পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত এবং মুক্ত জলরাশির আন্তঃসংযোগে মহাসাগরীয়বিদ্যার মৌলিক গুরুত্বকেই তুলে ধরে। পাশ্চাত্ত্য ভূগোলবিদরা তাদের নিজেদের সুবিধার্থে মহাসাগরকে ৫টি অংশে বিভক্ত করেছেন। মহাসাগরীয় বিভাজনসমূহ সংজ্ঞায়িত এবং মূল্যায়িত হয়েছে - মহাদেশ, মাটির স্তর এবং অন্যান্য শর্তাবলীর আলোকে। সেগুলো হলোঃ- প্রশান্ত মহাসাগর: এটি আমেরিকাকে এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে বিভক্ত করেছে। আটলান্টিক মহাসাগর: এটি আমেরিকাকে ইউরেশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে বিভক্ত করেছে। ভারত মহাসাগর: এটি দক্ষিণ এশিয়াকে ঘিরে রেখেছে এবং আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াকে বিভক্ত করেছে। দক্ষিণ মহাসাগর বা এন্টার্কটিকা মহাসাগর: এ মহাসাগর এন্টার্কটিকা মহাদেশকে ঘিরে রেখেছে এবং প্রশান্ত, আটলান্টিক এবং ভারত মহাসাগরের বহিরাংশ হিসেবে নির্দেশিত হচ্ছে। উত্তর মহাসাগর বা আর্কটিক মহাসাগর: এ মহাসাগরটি আটলান্টিক মহাসাগরের একটি সমুদ্র হিসেবে মর্যাদা পাচ্ছে যা আর্কটিকের অধিকাংশ এলাকা এবং উত্তর আমেরিকা ও ইউরেশিয়ার একাংশকে ঘিরে রেখেছে। প্রশান্ত এবং আটলান্টিক মহাসাগর বিষুবরেখা কর্তৃক উত্তরাংশ ও দক্ষিণাংশকে আন্তঃবিভাজন করেছে। ক্ষুদ্রতম এলাকাগুলোয় মহাসাগরকে সাগর, উপসাগর, উপত্যকা, প্রণালী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণে মহাসাগর বলতে সুবিশাল মহাসাগরীয় জলাধারকে বুঝায়। মহাসাগরীয় জলাধার হচ্ছে আগ্নেয়গিরির বাসাল্টের পাতলা স্তর যা পৃথিবীর অগ্নিকুণ্ডস্বরূপ। মহাসাগরীয় প্লেটের কঠিন আবরণের তুলনায় এর আবরণ পুরু হলেও কম ঘণপূর্ণ। এ দৃষ্টিকোণে পৃথিবীতে তিনটি মহাসাগর আছে যা বিশ্ব মহাসাগর, কাস্পিয়ান সাগর এবং কৃষ্ণ সাগর বা ব্ল্যাক সি নামে পরিচিত। শেষোক্ত দু’টি লওরেসিয়াসহ কাইমেরিয়া এলাকায় একত্রিত হয়েছে। ভূ-মধ্যসাগর ঐ সময়েই মহাসাগর থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, টেকটোনিক প্লেট নড়াচড়ার ফলে জিব্রাল্টার প্রণালী থেকে বিশ্ব মহাসাগরের সাথে সম্পর্কচ্যুত হয়। কৃষ্ণ সাগর বসফরাস প্রণালীর মাধ্যমে ভূ-মধ্যসাগরের সাথে সংযুক্ত হয়। কিন্তু বসফরাস প্রণালীর প্রাকৃতিক খালটি মহাদেশীয় শিলাচ্যুতির কারণে প্রায় ৭,০০০ বছর পূর্বে বিচ্ছিন্ন হয় এবং মহাসাগরীয় সাগরতলের একটি টুকরো জিব্রাল্টার প্রণালীর উদ্ভব ঘটে। মহাসাগরীয় সীমারেখা মহাসাগর এবং জীবনধারা ভূ-মণ্ডলে মহাসাগরের বিপুল প্রভাব লক্ষ করা যায়। মহাসাগরীয় বাষ্পীভবন যা পানিচক্রের একটি ধাপ, তা অনেক বৃষ্টিপাতের উৎসস্থল হিসেবে চিহ্নিত তা মহাসাগরীয় তাপমাত্রা জলবায়ু ও বাতাসের গতিপথের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। এটি ভূ-স্থিত জীবন ও জীবনধারায় বিরাট প্রভাব বিস্তার করে। মহাসাগর গঠনের ৩ বিলিয়ন বছরের মধ্যে ভূ-স্থিত জীবন গড়ে উঠে। উপকূলের গভীরতা এবং দূরত্ব উভয়ই বিরাটভাবে প্রভাবান্বিত করেছে বলেই সাগর উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা জন্মেছে এবং সংশ্লিষ্ট প্রাণীকূল বসবাস করছে। দৃষ্টিগ্রাহ্য বিষয়সমূহ বৈশ্বিক মহাসাগরের আয়তন প্রায় ৩৬১*১০৬ বর্গকিলোমিটার (১৩৯*১০৬ বর্গমাইল)। প্রতি ঘণকিলোমিটারে পানির আয়তন হচ্ছে ১,১১১ কিলোমিটার। মহাসাগরের গড় গভীরতা ৩,৭৯০ মিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ১০,৯২৩ মিটার। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জলরাশি ৩০০০ মিটারেরও গভীরে রয়েছে। মোট বাষ্পীভবন হচ্ছে ১.৪*১০২১ কেজি যা পৃথিবীর মাত্র ০.০২৩%। ৩ শতাংশের কম স্বাদুপানি; বাকী লবণাক্ত পানির প্রায় সবই মহাসাগরের। রং সাধারণের ধারণা যে, মহাসাগরের পানির রং নীল। এছাড়াও, পানিতে খুবই কম পরিমাণে নীল রং থাকে এবং যখন বিপুল জলরাশিকে একত্রে রাখা হয় তখনই মহাসাগরের পানি নীল দেখায়। এছাড়াও, আকাশে নীল রংয়ের প্রতিফলন এর জন্য দায়ী, যদিও তা মূখ্য বিষয় নয়। মূল কারণ হচ্ছে - পানির পরমাণুগুলোতে লাল রংয়ের নিউক্লিয়ার কণা থাকে যা আলো থেকে আসে এবং প্রকৃতি প্রদত্ত রংয়ের উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে ইলেকট্রনিক, ডাইনামিক বিষয়গুলোর তুলনায় প্রাকৃতিক অণুকম্পনকে ফলাফলকে ধরা হয়। রক্তিম আভা নাবিক এবং অন্যান্য নৌ-বিদদের প্রতিবেদনে জানা জায়, মহাসাগরে প্রায়শঃই দৃশ্যমান রক্তিম আভা, আলোকছটা মাইলের পর মাইল রাত্রে দেখা যায়। ২০০৫ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেন যে, আলোকচিত্রের মাধ্যমে গ্লো’র উপস্থিতি তারা নিশ্চিত করেছেন। এটি জৈব-আলোকছটার সাহায্যে ঘটতে পারে। আবিষ্কার মহাসাগরে ভ্রমণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অতিপ্রাচীনকাল থেকেই নৌকা যোগাযোগের একটি প্রধান পরিবহন হিসেবে সু-খ্যাতি অর্জন করেছে। কিন্তু আধুনিক যুগে জলের নীচ দিয়েও ভ্রমণ করা সম্ভবপর হয়েছে। গভীরতম স্থান হিসেবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ হিসেবে নর্দার্ন মারিয়ানা দ্বীপের মারিয়ানা খাতের স্থান নির্ণিত হয়েছে। এর গভীরতা ১০,৯৭১ মিটার। ব্রিটিশ নৌযান চ্যালেঞ্জার-২ ১৮৫১ সালে স্থানটি জরিপ করে এবং সবচেয়ে গভীর স্থানকে নামকরণ করেছে ‘চ্যালেঞ্জার ডিপ’ হিসেবে। ১৯৬০ সালে ট্রিস্ট দু’জন ক্রু-সহ ‘চ্যালেঞ্জার-২’-এর কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছতে সফলকাম হন। অধিকাংশ মহাসাগরের কেন্দ্রস্থল এখনো আবিস্কৃত হয়নি এবং স্থানও নির্ণিত হয়নি। ১৯৯৫ সালে মহাকর্ষীয় সূত্র প্রয়োগ করে ১০ কিলোমিটারেরও অধিক বৃহৎ ভূ-চিত্রাবলীর দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। আঞ্চলিকতা মহাসাগরবিশারদরা ভূ-গঠন এবং জীবনধারার উপযোগী পরিবেশকে উপজীব্য করে মহাসাগরকে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করেছেন। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ভূগোল মহাসাগর সমুদ্রবিজ্ঞান উপকূলীয় ও মহাসামুদ্রিক ভূমিরূপ জলরাশি
https://en.wikipedia.org/wiki/Ocean
Ocean
The ocean is the body of salt water that covers approximately 70.8% of Earth. In English, the term ocean also refers to any of the large bodies of water into which the world ocean is conventionally divided. The following names describe five different areas of the ocean: Pacific, Atlantic, Indian, Antarctic/Southern, and Arctic. The ocean contains 97% of Earth's water and is the primary component of Earth's hydrosphere; thus the ocean is essential to life on Earth. The ocean influences climate and weather patterns, the carbon cycle, and the water cycle by acting as a huge heat reservoir. Ocean scientists split the ocean into vertical and horizontal zones based on physical and biological conditions. The pelagic zone is the open ocean's water column from the surface to the ocean floor. The water column is further divided into zones based on depth and the amount of light present. The photic zone starts at the surface and is defined to be "the depth at which light intensity is only 1% of the surface value": 36  (approximately 200 m in the open ocean). This is the zone where photosynthesis can occur. In this process plants and microscopic algae (free floating phytoplankton) use light, water, carbon dioxide, and nutrients to produce organic matter. As a result, the photic zone is the most biodiverse and the source of the food supply which sustains most of the ocean ecosystem. Ocean photosynthesis also produces half of the oxygen in the Earth's atmosphere. Light can only penetrate a few hundred more meters; the rest of the deeper ocean is cold and dark (these zones are called mesopelagic and aphotic zones). The continental shelf is where the ocean meets dry land. It is more shallow, with a depth of a few hundred meters or less. Human activity often has negative impacts on marine life within the continental shelf. Ocean temperatures depend on the amount of solar radiation reaching the ocean surface. In the tropics, surface temperatures can rise to over 30 °C (86 °F). Near the poles where sea ice forms, the temperature in equilibrium is about −2 °C (28 °F). In all parts of the ocean, deep ocean temperatures range between −2 °C (28 °F) and 5 °C (41 °F). Constant circulation of water in the ocean creates ocean currents. Those currents are caused by forces operating on the water, such as temperature and salinity differences, atmospheric circulation (wind), and the Coriolis effect. Tides create tidal currents, while wind and waves cause surface currents. The Gulf Stream, Kuroshio Current, Agulhas Current and Antarctic Circumpolar Current are all major ocean currents. Such currents transport massive amounts of water, gases, pollutants and heat to different parts of the world, and from the surface into the deep ocean. All this has impacts on the global climate system. Ocean water contains dissolved gases, including oxygen, carbon dioxide and nitrogen. An exchange of these gases occurs at the ocean's surface. The solubility of these gases depends on the temperature and salinity of the water. The carbon dioxide concentration in the atmosphere is rising due to CO2 emissions, mainly from fossil fuel combustion. As the oceans absorb CO2 from the atmosphere, a higher concentration leads to ocean acidification (a drop in pH value). The ocean provides many benefits to humans such as ecosystem services, access to seafood and other marine resources, and a means of transport. The ocean is known to be the habitat of over 230,000 species, but may hold considerably more – perhaps over two million species. Yet, the ocean faces many environmental threats, such as marine pollution, overfishing, and the effects of climate change. Those effects include ocean warming, ocean acidification and sea level rise. The continental shelf and coastal waters are most affected by human activity.
1126
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%89%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%20%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%B0
উত্তর মহাসাগর
উত্তর মহাসাগর বা সুমেরু মহাসাগর উত্তর গোলার্ধের সুমেরু অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ও সর্বাপেক্ষা কম গভীর একটি মহাসাগর। এটি পৃথিবীর পাঁচটি প্রধান মহাসাগরের অন্যতম। আন্তর্জাতিক জললেখবিজ্ঞান সংস্থা (আইএইচও) তথা আন্তর্জাতিক জললেখচিত্রন সংস্থা এটিকে মহাসাগরের স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে কোনো কোনো সমুদ্রবিজ্ঞানী এটিকে সুমেরু ভূমধ্যসাগর (Arctic Mediterranean Sea) বা সুমেরু সাগর (Arctic Sea) বলে থাকেন। এটিকে প্রায় আটলান্টিক মহাসাগরের মোহনা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটিকে সর্বব্যাপী বিশ্ব মহাসাগরের উত্তরতম অংশ হিসাবেও দেখা হয়। উত্তর মহাসাগর উত্তর গোলার্ধের মাঝখানে উত্তর মেরু অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করে ও দক্ষিণে প্রায় ৬০°উ পর্যন্ত বিস্তৃত। উত্তর মহাসাগরের প্রায় সমগ্র অংশই ইউরেশিয়া ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশ দ্বারা বেষ্টিত এবং সীমানাগুলি স্থানবিবরণী বৈশিষ্ট্যগুলির অনুবর্তী হয়: প্রশান্ত মহাসাগরীয় দিকে বেরিং প্রণালী ও আটলান্টিকের দিকে গ্রিনল্যান্ড স্কটল্যান্ড শৈলশিরা। বছরের অধিকাংশ সময় এই মহাসাগরের অংশবিশেষ সামুদ্রিক বরফে ঢাকা থাকে। শীতকালে সম্পূর্ণ মহাসাগরটিই বরফে ঢাকা পড়ে যায়। উত্তর মহাসাগরের তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা ঋতু অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। সমুদ্রের বরফের আবরণীর গলন ও জমাট বাঁধার কারণেই এমনটি হয়ে থাকে। পাঁচটি প্রধান মহাসাগরের তুলনায় এই মহাসাগরের পানির লবণাক্ততা কম। এর কারণ, বাষ্পীভবনের নিম্ন হার, বিভিন্ন বড়ো ও ছোটো নদী থেকে এসে মেশা মিষ্টি জলের প্রবাহ এবং পার্শ্ববর্তী উচ্চ লবণাক্ততাযুক্ত মহাসাগরগুলির সঙ্গে সীমাবদ্ধ সংযোগ ও বহির্গমন স্রোত। গ্রীষ্মকালে প্রায় ৫০% বরফ গলে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশানাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার (এনএসআইডিসি) উপগ্রহ তথ্যের মাধ্যমে গড় সময়কাল ও নির্দিষ্ট পূর্ববর্ষের সঙ্গে তুলনা করার জন্য উত্তর মহাসাগরের বরফাবরণী ও বরফ গলনের দৈনিক তথ্য রাখে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে, সুমেরুর বরফের পরিমাণ একটি নতুন রেকর্ড সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। গড় পরিমাণের (১৯৭৯-২০০০) তুলনায় সমুদ্রের বরফ ৪৯% কমে গেছে। ইতিহাস উত্তর আমেরিকা উইসকনসিন হিমবাহের সময় উত্তর আমেরিকার মেরু অঞ্চলে মানুষের বসতি কমপক্ষে ১৭,০০০-৫০,০০০ বছরের পুরনো। এই সময়ে, সমুদ্র সমতলের স্তর হ্রাসের ফলে লোকেরা বেরিং ভূ-সেতু অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিল যা সাইবেরিয়ার সাথে উত্তর-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার (আলাস্কা) সাথে যুক্ত হয়ে আমেরিকায় বসতি স্থাপন দিকে নিয়ে যায়। প্রাথমিক প্যালিও-এস্কিমো গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রাক-ডরসেট (); গ্রিনল্যান্ডের সাক্কাক সংস্কৃতি (২৫০০-৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ); উত্তর-পূর্ব কানাডা ও গ্রিনল্যান্ডের প্রথম স্বাধীনতা ও দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংস্কৃতি ( ও ); এবং ল্যাব্রাডর ও নুনাভিকের গ্রোসওয়াটার। ডরসেট সংস্কৃতি খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সুমেরু উত্তর আমেরিকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। আধুনিক ইনুইটের পূর্বপুরুষ থুলে জাতির বর্তমান আলাস্কা থেকে পূর্বে অভিবাসনের আগে ডরসেট ছিল সুমেরুর সর্বশেষ প্রধান প্যালিও-এস্কিমো সংস্কৃতি। থুলে ঐতিহ্য প্রায় ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, যা বেরিং প্রণালীর আশেপাশে গড়ে উঠেছিল এবং পরে উত্তর আমেরিকার প্রায় পুরো সুমেরু অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। থুলে জাতি ইনুইটদের পূর্বপুরুষ ছিল, যারা এখন আলাস্কা, উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল, নুনাভুট, উত্তর কুইবেক, ল্যাব্রাডর ও গ্রিনল্যান্ডে বাস করে। ইউরোপ ইউরোপের প্রাচীন ইতিহাসে উত্তর মেরু অভিযানের নজির বিশেষ নেই। এই অঞ্চলের ভূগোল সম্পর্কে সঠিক ধারণাও সে যুগে কারো ছিল না। মাসিলিয়ার পাইথিয়াস ৩২৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে উত্তরদিকে "এসচ্যাট থুলে" নামে একটি স্থানে যাত্রার একটি বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এই অঞ্চলে সূর্য প্রতিদিন মাত্র তিন ঘণ্টার জন্য অস্ত যেত এবং পানি এখানে এমন এক থকথকে পদার্থে পরিণত হত "যার উপর দিয়ে হাঁটাও যেত না, আবার নৌকা চালানোও যেত না।" সম্ভবত তিনি "গ্রাওলার" বা "বার্গি বিটস" নামে পরিচিত হালকা সামুদ্রিক বরফের কথা লিখেছেন। তার বিবরণীর "থাল" সম্ভবত আইসল্যান্ড। যদিও কোনো কোনো মতে তিনি নরওয়ের কথা লিখেছেন। প্রথম যুগের মানচিত্রকারেরা সঠিকভাবে জানতেন না যে, উত্তর মেরু সংলগ্ন অঞ্চলটি জলভাগ (যেমন, মার্টিন ওয়াল্ডসিমুলারের ১৫০৭ সালের বিশ্বমানচিত্র) না স্থলভাগ (যেমন, জোহানেস রুইসের ১৫০৭ সালের মানচিত্র, গেরার্ডাস মেরক্যাটরের ১৫৯৫ সালের মানচিত্র)। "ক্যাথে" (চীন) পৌঁছানোর একটি উত্তরমুখী রাস্তা আবিষ্কারের প্রত্যাশায় অত্যুৎসাহী একদল নাবিকের আগ্রহে শেষপর্যন্ত এই অঞ্চলটিকে জলভাগ আখ্যা দেওয়া হয়। ১৭২৩ সাল নাগাদ জোহান হোম্যান প্রমুখ মানচিত্রকারেরা তার মানচিত্রের উত্তর সীমায় একটি "Oceanus Septentrionalis" আঁকতে শুরু করেন। এই যুগে সুমেরু বৃত্তের ভিতরে অল্প কয়েকটি অভিযান হলেও, তা কয়েকটি ছোটো দ্বীপেই সীমাবদ্ধ ছিল। নোভায়া জেমল্যা দ্বীপে একাদশ শতাব্দীতে ও স্পিটসবার্গেন দ্বীপে ১৫৯৬ সালে অভিযান চলে। কিন্তু এই সব দ্বীপ বরফ-পরিবৃত থাকায় এগুলির উত্তরসীমা সে সময় জানা যায়নি। সমুদ্র-মানচিত্র নির্মাতারা কোনো কোনো কল্পনাপ্রবণ মানচিত্রকারের ধারণার ধার ধরতেন না। তারা মানচিত্রে এই অঞ্চলটিকে শূন্য রেখে দিতেন। কেবল জ্ঞাত উপকূলরেখাটির চিত্র আঁকতেন। ঊনবিংশ শতাব্দী বরফের সঞ্চরণশীল ব্যারিয়ারের ওপারে কী আছে সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকায় এই সম্পর্কে নানারকম গালগল্প ছড়িয়ে পড়ে। ইংল্যান্ড সহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে "মুক্ত মেরু সাগর" ধারণাটি জনপ্রিয়তা পায়। ব্রিটিশ অ্যাডমিরাল্টির দীর্ঘকালের সেকেন্ড সেক্রেটারি জন বারো এই সমুদ্রের সন্ধানে ১৮১৮ থেকে ১৮৪৫ সালের মধ্যে একাধিক মেরু অভিযান প্রেরণ করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৫০-এর ও ১৮৬০-এর দশকে এলিশা কেন ও আইজ্যাক ইজরায়েল হায়েস নামে দুই অভিযাত্রী এই রহস্যময় বিরাট জলভাগ দেখেছেন বলে দাবি করেন। এই শতাব্দীর শেষভাগেও ম্যাথিউ ফনটেইন মুরে তার দ্য ফিজিক্যাল জিওগ্রাফি অফ দ্য সি (১৮৮৮) গ্রন্থে মুক্ত মেরু সাগরের এক বৃত্তান্ত অন্তর্ভুক্ত করেন। তবে সকল অভিযাত্রীই, যাঁরা মেরু অঞ্চলের দিকে আরও বেশি অগ্রসর হয়েছিলেন, তারা জানান যে মেরু অঞ্চলের বরফের টুপিটি বেশ মোটা ও তা সারাবছরই বজায় থাকে। ফ্রিডজোফ নানসেন ১৮৯৬ সালে উত্তর মহাসাগরের প্রথম একটি নৌ অতিক্রমণ তৈরি করেছিলেন। বিংশ শতাব্দী ১৯৬৯ সালে ওয়ালি হার্বার্টের নেতৃত্বে আলাস্কা থেকে সভালবার্দ পর্যন্ত একটি কুকুর স্লেজ অভিযানে সমুদ্রের উপরিতল প্রথম অতিক্রম করা হয়। উত্তর মেরুর প্রথম নৌ পরিবহন ১৯৫৮ সালে সাবমেরিন ইউএসএস নটিলাস দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল ও ১৯৭৭ সালে বরফভাঙ্গা জাহাজ এনএস আর্কটিকা প্রথম সাগরের উপরিতলে নৌ পরিবহন করেছিল। ১৯৩৭ সাল নাগাদ সোভিয়েত ও রাশিয়ান মানবচালিত ভাসমান বরফ স্টেশনগুলি উত্তর মহাসাগরের উপর ব্যাপক নজরদারি শুরু করে। এই সব ভাসমান বরফের উপর বৈজ্ঞানিক বসতিও স্থাপিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, উত্তর মহাসাগরের ইউরোপীয় অঞ্চলটি ব্যাপকভাবে বিবাদে জড়িয়েছিল: সোভিয়েত ইউনিয়নকে এর উত্তর বন্দর দিয়ে পুনরায় সরবরাহ করার মিত্র প্রতিশ্রুতি জার্মান নৌ ও বিমান বাহিনী বিরোধিতা করেছিল। ১৯৫৪ সাল থেকে বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলি উত্তর মহাসাগরের উপর দিয়ে তাদের বিমান উড়িয়েছে (পোলার পথ দেখুন)। ভূগোল বিস্তার উত্তর মহাসাগর মোটামুটি একটি বৃত্তাকার অববাহিকা জুড়ে অবস্থিত এবং এর আয়তন প্রায় , যা অ্যান্টার্কটিকার বিস্তারের সমান। এর উপকূলরেখার আয়তন । এটি রাশিয়ার চেয়ে ছোট একমাত্র মহাসাগর, যার স্থল আয়তন । পার্শ্ববর্তী ভূমি ও একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল উত্তর মহাসাগর ইউরেশিয়া (রাশিয়া ও নরওয়ে), উত্তর আমেরিকা (কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্য), গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড দ্বারা বেষ্টিত। দ্রষ্টব্য: সারণীতে তালিকাভুক্ত এলাকার কিছু অংশ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। অন্যটি উপসাগর, প্রণালী, চ্যানেল ও নির্দিষ্ট নাম ছাড়া অন্যান্য অংশ নিয়ে গঠিত ও একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বাদ দেয়। উপ-অঞ্চল ও সংযোগ বেরিং প্রণালী দ্বারা উত্তর মহাসাগর প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত। গ্রিনল্যান্ড সাগর ও লাব্রাডর সাগর আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে উত্তর মহাসাগরের সংযোগ রক্ষা করছে। (আইসল্যান্ড সাগরকে কখনও কখনও গ্রিনল্যান্ড সাগরের অংশ ও কখনও কখনও আলাদা বলে মনে করা হয়।) উত্তর মহাসাগরের অন্তর্ভুক্ত বৃহত্তম সাগরগুলি হল: বারেন্টস সাগর—১.৪ মিলিয়ন কিমি২ হাডসন উপসাগর—১.২৩ মিলিয়ন কিমি২ (কখনও কখনও অন্তর্ভুক্ত নয়) গ্রিনল্যান্ড সাগর—১.২০৫ মিলিয়ন কিমি২ পূর্ব সাইবেরীয় সাগর—৯৮৭,০০০ কিমি২ কারা সাগর—৯২৬,০০০ কিমি২ লাপ্তেভ সাগর—৬৬২,০০০ কিমি২ চুকচি সাগর—৬২০,০০০ কিমি২ বোফর্ট সাগর—৪৭৬,০০০ কিমি২ আমুন্ডসেন উপসাগর শ্বেত সাগর—৯০,০০০ কিমি২ পেচোরা সাগর—৮১,২৬৩ কিমি২ লিংকন সাগর—৬৪,০০০ কিমি২ প্রিন্স গুস্তাফ অ্যাডলফ সাগর কুইন ভিক্টোরিয়া সাগর ওয়ান্ডেল সাগর বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ উত্তর মহাসাগর বা আটলান্টিক মহাসাগরে বিভিন্ন প্রান্তিক সমুদ্রপথ স্থাপন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে: হাডসন উপসাগর, বাফিন উপসাগর, নরওয়েজিয়ান সাগর এবং হাডসন প্রণালী। দ্বীপ উত্তর মহাসাগরের প্রধান দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ পশ্চিম মূল মধ্যরেখা থেকে এসেছে: ইয়ান মায়েন (নরওয়ে) আইসল্যান্ড গ্রিনল্যান্ড উত্তর দ্বীপপুঞ্জ (কানাডা, রানী এলিজাবেথ দ্বীপপুঞ্জ ও বাফিন দ্বীপ অন্তর্ভুক্ত) ওয়ারেঞ্জেল দ্বীপ (রাশিয়া) নতুন সাইবেরীয় দ্বীপপুঞ্জ (রাশিয়া) সেভারনায়া জেমল্যা (রাশিয়া) নোভায়া জেমল্যা (রাশিয়া, সেভারনি দ্বীপ ও ইউজনি দ্বীপ অন্তর্ভুক্ত) ফ্রাঞ্জ জোসেফ ল্যান্ড (রাশিয়া) স্‌ভালবার্দ (নরওয়ে সহ বিয়ার দ্বীপ)) বন্দর উত্তর মহাসাগরে বেশ কয়েকটি বন্দর ও পোতাশ্রয় রয়েছে। আলাস্কা উতকিয়াগভিক (ব্যারো) প্রুধো সাগর কানাডা ম্যানিটোবা: চার্চিল (চার্চিলের বন্দর) নুনাভুত: নানিসিভিক (নানিসিভিক নৌ সুবিধা) উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে টুকটোয়াকটুক ও ইনুভিক গ্রীনল্যান্ড: নুউক (নুউক বন্দর ও হারবার) নরওয়ে মূল ভূখণ্ড: কিরকেনেস ও ভারডো স্‌ভালবার্দ: লংইয়ারবাইন আইসল্যান্ড আকুরেরি রাশিয়া বারেন্টস সাগর: বারেন্টস সাগরে মুরমানস্ক শ্বেত সাগর: আরখানগেলস্ক কারা সাগর: ল্যাবিটনাঙ্গি, সালেখার্ড, দুদিনকা, ইগারকা ও ডিকসন লাপ্তেভ সাগর: টিকসি পূর্ব সাইবেরীয় সাগর: পূর্ব সাইবেরীয় সাগরে পেভেক সমুদ্রগর্ভ লোমোনোসোভ শৈলশিরা নামে একটি সমুদ্রগর্ভস্থ শৈলশিরা গভীর সমুদ্রের তলায় অবস্থিত উত্তর মেরু সামুদ্রিক অববাহিকাটিকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। একটি হল ইউরেশীয় সামুদ্রিক অববাহিকা; এর গভীরতা । অপরটি হল আমেরেশীয় সামুদ্রিক অববাহিকা (এটি উত্তর আমেরিকান বা হাইপারবোরিয়ান সামুদ্রিক অববাহিকা নামেও পরিচিত); এর গভীরতা । সমুদ্রের তলদেশে অনেক ফল্ট-ব্লক শৈলশিরা, নিতলীয় সমভূমি, খাত ও অববাহিকা দেখা যায়। উত্তর মহাসাগরের গড় গভীরতা । গভীরতম বিন্দুটি অবস্থিত ফ্র‍্যাম প্রণালীর মোলোয় অববাহিকায়; এর গভীরতা । দুটি প্রধান অববাহিকা একাধিক শৈলশিরা দ্বারা ক্ষুদ্রতর অংশে বিভক্ত। এগুলি হল কানাডা সামুদ্রিক অববাহিকা (কানাডা/আলাস্কা ও আলফা শৈলশিরার মধ্যে অবস্থিত), মাকারোভ সামুদ্রিক অববাহিকা (আলফা ও লোমোনোসোভ শৈলশিরার মধ্যে অবস্থিত), ফ্রাম সামুদ্রিক অববাহিকা (লোমোনোসোভ ও গেক্কেল শৈলশিরার মধ্যে অবস্থিত) ও নানসেন সামুদ্রিক অববাহিকা (অ্যামান্ডসেন সামুদ্রিক অববাহিকা) (গেক্কেল শৈলশিরা ও ফ্রাঞ্জ জোসেফ ল্যান্ডের মহীসোপানের মধ্যে অবস্থিত)। মহীসোপান উত্তর মহাসাগর একাধিক উত্তর মেরু মহীসোপান দ্বারা বেষ্টিত। যার মধ্যে রয়েছে কানাডীয় মহীসোপান, কানাডীয় সুমেরু দ্বীপপুঞ্জের নিম্নাংশ ও রুশ মহাদেশীয় মহীসোপান; যাকে কখনও কখনও "উত্তর মেরু মহীসোপান" বলা হয় কারণ এটি বড়। রুশ মহাদেশীয় মহীসোপান তিনটি পৃথক, ছোট মহীসোপান নিয়ে গঠিত: ব্যারেন্টস মহীসোপান, চুকচি সাগর মহীসোপান ও সাইবেরীয় মহীসোপান। এগুলির মধ্যে রুশ মহাদেশীয় সাইবেরীয় মহীসোপানটি বিশ্বের বৃহত্তম মহীসোপান; এটি তেল ও গ্যাসের বিশাল মজুদ রাখে। ইউএসএসআর-ইউএসএ সামুদ্রিক সীমানা চুক্তিতে বলা হয়েছে চুকচি মহীসোপানটি রুশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমানা গঠন করে। সমগ্র এলাকা আন্তর্জাতিক আঞ্চলিক দাবির অধীন। চুকচি মালভূমি চুকচি সাগর মহীসোপান থেকে বিস্তৃত। ভূতত্ত্ব উত্তর মহাসাগরের আশেপাশের পর্বতের স্ফটিক বুনিয়াদ শিলাগুলি প্যালিওজোয়িক যুগে বৃহত্তর ক্যালেডোনিয়ান অরোজেনের আঞ্চলিক পর্যায়ে এলিসমেরিয়ান অরোজেনির সময় পুনরায় স্ফটিকিত বা গঠিত হয়েছিল। জুরাসিক ও ট্রায়াসিক যুগে আঞ্চলিক অবনমনের ফলে যথেষ্ট পলি জমেছিল, যা বর্তমান দিনের তেল ও গ্যাস জমার জন্য অনেক জলাধার তৈরি করেছিল। ক্রিটেসিয়াস সময়কালে কানাডীয় অববাহিকা উন্মুক্ত হয়েছিল ও আলাস্কার সমাবেশের কারণে টেকটোনিক কার্যকলাপের ফলে হাইড্রোকার্বন এখন প্রুধো উপসাগরের দিকে স্থানান্তরিত হয়। একই সময়ে ক্রমবর্ধমান কানাডীয় রকিজ থেকে পলি পড়ে বৃহৎ ম্যাকেঞ্জি বদ্বীপ তৈরি হয়। ট্রায়াসিক সময়কাল থেকে শুরু হওয়া সুপারমহাদেশ প্যানজিয়ার বিচ্ছিন্নতা প্রাথমিক আটলান্টিক মহাসাগরকে উন্মুক্ত করে দেয়। ফাটল তখন উত্তর দিকে প্রসারিত হয়ে উত্তর মহাসাগরে যাওয়া-আসার পথ উন্মুক্ত করে দেয় কারণ মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরার একটি শাখা থেকে ম্যাফিক মহাসাগরীয় ভূত্বক উপাদান বেরিয়ে আসে। রূপান্তর চ্যুতির মাধ্যমে চুকচি বর্ডারল্যান্ড উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাওয়ার সাথে সাথে আমেরাসিয়া অববাহিকা হয়ত প্রথমে উন্মেষিত হয়েছিল। অতিরিক্ত ব্যাপ্তিশীল ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষের দিকে আলফা-মেন্ডেলিভ শৈলশিরার "ত্রি-জংশন" তৈরি করতে সহায়তা করেছিল। সিনোজোয়িক যুগব্যাপী প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটের অধীনতা, ইউরেশিয়ার সাথে ভারতের সংঘর্ষ ও উত্তর আটলান্টিকের ক্রমাগত উন্মেষের ফলে নতুন হাইড্রোকার্বন কূট তৈরি হয়েছিল। প্যালিওসিন যুগ ও ইওসিন যুগের গাক্কেল শৈলশিরা থেকে সমুদ্রতল ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, যার ফলে লোমোনোসভ শৈলশিরা ভূমি থেকে দূরে সরে যায় ও তলিয়ে যায়। সমুদ্রের বরফ ও দূরবর্তী অবস্থার কারণে উত্তর মহাসাগরের ভূতত্ত্ব এখনও দুর্বলভাবে অনুসন্ধান করা হয়। আর্কটিক কোরিং এক্সপিডিশন ড্রিলিং লোমোনোসোভ শৈলশিরার উপর কিছুটা নজরে আনে যা প্যালিওসিনের ব্যারেন্টস-মহীসোপান থেকে বিচ্ছিন্ন মহাদেশীয় ভূত্বক বলে ধারণা করা হয় এবং এরপরে পলিতে পতিত হয়। এতে ১০ বিলিয়ন ব্যারেল পর্যন্ত তেল থাকতে পারে। গাক্কেল শৈলশিরা ফাটলটিও খুব রুগ্ন বলে ধারণা করা হয় ও এটি ল্যাপ্টেভ সাগর পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। সমুদ্রবিদ্যা জলপ্রবাহ উত্তর মহাসাগরের বৃহত্তর অংশের উপরিতলে (৫০-৫০ মিটার) উষ্ণতা ও লবণাক্ততার হার অপরাপর অংশের চেয়ে কম। এটি আপেক্ষিকভাবে স্থির। কারণ গভীরতার উপর লবণাক্ততার প্রভাব উষ্ণতার প্রভাবের চেয়ে বেশি। বড়ো বড়ো সাইবেরীয় ও কানাডীয় নদীর (ওব, ইয়েনিসে, লেনা, ম্যাককেঞ্জি) স্বাদু পানি এই মহাসাগরে পতিত হয়। এই স্বাদু পানি মহাসাগরের অধিক লবণাক্ত, অধিক ঘন ও অধিক গভীর পানির উপর ভেসে থাকে। এই কম লবণাক্তযুক্ত তল ও মহাসাগরীয় লবণাক্ত পানির মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত তথাকথিত হ্যালোক্লিন। অন্যান্য মহাসাগর থেকে আপেক্ষিক বিচ্ছিন্নতার কারণে উত্তর মহাসাগরে পানি প্রবাহের একটি অনন্য জটিল ব্যবস্থা রয়েছে। এটি ভূমধ্যসাগরের কিছু হাইড্রোলজিকাল বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যা আটলান্টিক অববাহিকার সাথে ফ্র্যাম প্রণালীর মাধ্যমে কেবল মাত্র এর সীমিত যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে বলেছে "যেখানে সঞ্চালন থার্মোহ্যালাইন বল আধিপত্য বিস্তার করে"। উত্তর মহাসাগরের মোট আয়তন ১৮.০৭×১০২ কিমি৩, যা বিশ্ব মহাসাগরের প্রায় ১.৩% এর সমান। গড় পৃষ্ঠের সঞ্চালন মূলত ইউরেশীয় দিকে ঘূর্ণিঝড়ের মতো ও কানাডীয় অববাহিকার দিকে ঘূর্ণিঝড় মুক্ত। প্রশান্ত ও আটলান্টিক উভয় মহাসাগর থেকে পানি উত্তর মহাসাগরে প্রবেশ করে এবং তিনটি অনন্য পানির ভরে বিভক্ত করা যেতে পারে। গভীরতম পানির ভরকে উত্তর পাদ পানি বলা হয় ও এটি প্রায় গভীরতায় শুরু হয়। এটি বিশ্ব মহাসাগরের সবচেয়ে ঘন পানির সমন্বয়ে গঠিত এবং এর দুটি প্রধান উৎস রয়েছে: সুমেরু মহীসোপান পানি ও গ্রীনল্যান্ড সাগরের গভীর পানি। প্রশান্ত মহাসাগর থেকে প্রবাহ হিসাবে শুরু হওয়া মহীসোপান অঞ্চলের পানি ০.৮ সেভার্ড্রুপের গড় হারে সংকীর্ণ বেরিং প্রণালীর মধ্য দিয়ে যায় ও চুকচি সাগরে পৌঁছায়। শীতকালে আলাস্কানের ঠান্ডা বাতাস চুকচি সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ফলে সমুদ্রস্তরের পানি জমাট বাঁধে এবং এই নবগঠিত বরফকে প্রশান্ত মহাসাগরে ঠেলে দেয়। বরফ প্রবাহের গতি প্রায় ১-৪ সেমি/সেকেন্ড। এই প্রক্রিয়াটি সমুদ্রে ঘন, লবণাক্ত পানি ছেড়ে দেয় যা মহাদেশীয় মহীসোপানের উপর দিয়ে পশ্চিম উত্তর মহাসাগরে নিমজ্জিত হয় এবং একটি হ্যালোক্লিন তৈরি করে। এই পানি গ্রিনল্যান্ড সাগরের গভীর পানির নিকটে মিলিত হয় যা শীতকালীন ঝড়ের উত্তরণের সময় তৈরি হয়। শীতকালে তাপমাত্রা নাটকীয়ভাবে ঠান্ডা হওয়ার সাথে সাথে বরফের গঠন ও তীব্র উল্লম্ব সংবহন পানিকে নীচের উষ্ণ লবণাক্ত পানির নীচে নিমজ্জিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট ঘন করে তোলে। সুমেরু পাদ পানি এর বহিঃপ্রবাহের কারণে সমালোচনীয় দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ, যা আটলান্টিক গভীর পানি গঠনে অবদান রাখে। এই পানির উল্টান বৈশ্বিক সঞ্চালন এবং জলবায়ু রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৫০-৯০০ মিটার (৪৯০-২,৯৫০ ফুট) গভীরতার পরিসরে পানির ভরকে আটলান্টিক পানি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। উত্তর আটলান্টিক স্রোত থেকে অন্তঃপ্রবাহ ফ্র্যাম প্রণালীর মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে, ঠান্ডা হয় ও নিমজ্জিত হ্যালোক্লিনের গভীরতম স্তর গঠন করে, যেখানে এটি সুমেরু অববাহিকাকে ঘড়ির বিপরীত দিকে প্রদক্ষিণ করে। এটি উত্তর মহাসাগরে সর্বোচ্চ আয়তনের অন্তঃপ্রবাহ যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অন্তঃপ্রবাহের প্রায় ১০ গুণ সমান ও এটি উত্তর মহাসাগরের সীমানা স্রোত তৈরি করে। এটি প্রায় ০.০২ মিটার/সেকেন্ডে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়। আটলান্টিকের পানিতে সুমেরু পাদ পানির মতো একই লবণাক্ততা রয়েছে তবে এটি অনেক বেশি উষ্ণ (৩°সে [৩৭°ফা] পর্যন্ত)। প্রকৃতপক্ষে, এই পানির ভর প্রকৃতপক্ষে পৃষ্ঠের পানির চেয়ে উষ্ণ ও শুধুমাত্র ঘনত্বে লবণাক্ততার ভূমিকার কারণে নিমজ্জিত থাকে। যখন পানি অববাহিকায় পৌঁছায় তখন প্রবল বাতাসের মাধ্যমে এটিকে বিউফোর্ট গায়ার নামক একটি বড় বৃত্তাকার স্রোতে ঠেলে দেওয়া হয়। বড় কানাডীয় ও সাইবেরীয় নদী থেকে অন্তঃপ্রবাহের কারণে বিউফোর্ট গায়ারের পানি চুকচি সাগরের তুলনায় অনেক কম লবণাক্ত। উত্তর মহাসাগরে চূড়ান্ত সংজ্ঞায়িত পানির ভরকে বলা হয় সুমেরু পৃষ্ঠ পানি এবং এটি গভীরতার পরিসরে পাওয়া যায়। এই পানি ভরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল একটি অংশ যাকে উপ-পৃষ্ঠের স্তর হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি আটলান্টিক পানির সৃষ্ট যা গভীর খাদের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে ও সাইবেরীয় মহীসোপানে তীব্র মিশ্রণে বশীভূত হয়। যেহেতু এটি প্রবেশ করে তাই এটি স্তরগুলির মধ্যে দুর্বল মিশ্রণের কারণে পৃষ্ঠস্তরের জন্য শীতল ও উষ্ণ ঢাল হিসাবে কাজ করে। যাইহোক, গত কয়েক দশক ধরে আটলান্টিকের পানির উষ্ণতা ও স্রোতের সংযোগ পূর্ব সুমেরু সমুদ্রের বরফ গলে আটলান্টিকের পানির তাপের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬-২০১৮ সালের সবচেয়ে সাম্প্রতিক অনুমানগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, পৃষ্ঠের মহাসাগরীয় তাপ প্রবাহ এখন পূর্ব ইউরেশীয় অববাহিকার বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহকে ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ের মধ্যে দুর্বল হ্যালোক্লিন স্তরবিন্যাস সামুদ্রিক বরফ হ্রাসের সাথে সম্পর্কিত বলে বিবেচিত এমন ক্রমবর্ধমান উচ্চ মহাসাগরীয় স্রোতের সাথে মিলিত হয়েছে যা এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান মিশ্রণের ইঙ্গিত করে। বিপরীতে পশ্চিম সুমেরুর মিশ্রণের প্রত্যক্ষ পরিমাপ ইঙ্গিত দেয় যে, ২০১২ সালের শক্তিশালী সুমেরু ঘূর্ণিঝড় 'নিখুঁত ঝড়' পরিস্থিতিতেও আটলান্টিকের পানির তাপ মধ্যবর্তী গভীরতায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে। প্রশান্ত ও আটলান্টিক উভয়ই মহাসাগর থেকে উদ্ভুত পানি গ্রিনল্যান্ড ও স্‌ভালবার্দ দ্বীপের মধ্যে ফ্র্যাম প্রণালী দিয়ে বেরিয়ে যায়, যা প্রায় গভীর ও প্রশস্ত। এই বহিঃপ্রবাহ প্রায় ৯ এসভি। ফ্র্যাম প্রণালীর প্রস্থে উত্তর মহাসাগরের আটলান্টিক অংশে অন্তঃপ্রবাহ ও বহিঃপ্রবাহ উভয়ই হয়ে থাকে। এই কারণে এটি কোরিওলিস প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়, যা পশ্চিম দিকে পূর্ব গ্রিনল্যান্ড স্রোতে বহিঃপ্রবাহকে কেন্দ্রীভূত করে এবং পূর্ব দিকে নরওয়েজিয়ান অন্তঃপ্রবাহে প্রবাহিত হয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় পানিও গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল ও হাডসন প্রণালী (১-২ এসভি) বরাবর বেরিয়ে যায়, যা কানাডীয় দ্বীপপুঞ্জে পরিপোষক পদার্থ সরবরাহ করে। উল্লিখিত হিসাবে, বরফের গঠন ও চলনের প্রক্রিয়াটি উত্তর মহাসাগরের সঞ্চালন ও পানির ভর গঠনের একটি মূল চালিকাশক্তি। এই সাপেক্ষতা সহ উত্তর মহাসাগরে সামুদ্রিক বরফ আচ্ছাদনে ঋতু পরিবর্তনের কারণে তারতম্য দেখা দেয়। সামুদ্রিক বরফের চলন বায়ুর চাপের ফলাফল, যা সুমেরুতে সারা বছর ধরে বেশ কয়েকটি আবহাওয়াগত অবস্থার সাথে সম্পর্কিত। উদাহরণস্বরূপ, বিউফোর্ট উচ্চ তল—সাইবেরীয় উচ্চ তল ব্যবস্থার একটি সম্প্রসারণ—একটি চাপ ব্যবস্থা যা বিউফোর্ট গায়ারের ঘূর্ণিঝড় মুক্ত গতিকে চালিত করে। গ্রীষ্মের সময় উচ্চ চাপের এই অঞ্চলটিকে এর সাইবেরীয় ও কানাডীয় পার্শ্ব ঘেঁষে প্রবল ধাক্কা দেওয়া হয়। উপরন্তু, গ্রিনল্যান্ডের উপর একটি সমুদ্রস্তর চাপ (এসএলপি) শৈলশিরা রয়েছে যা বরফ রফতানির সুবিধার্থে ফ্র্যাম প্রণালীর মধ্য দিয়ে শক্তিশালী উত্তর বায়ু চালিত করে। গ্রীষ্মে এসএলপি বৈপরীত্য ক্ষুদ্র হওয়ায় হালকা বায়ু উৎপাদন করে। মৌসুমী চাপ ব্যবস্থা চলনের একটি চূড়ান্ত উদাহরণ হল নিম্ন চাপ ব্যবস্থা যা নর্ডিক ও ব্যারেন্টস সাগরের উপরে বিদ্যমান। এটি আইসল্যান্ডীয় নিম্ন স্তরের একটি সম্প্রসারণ, যা এই এলাকায় মহাসাগরীয় ঘূর্ণিঝড় সঞ্চালন তৈরি করে। গ্রীষ্মে অগভীর অংশ উত্তর মেরুতে কেন্দ্রের দিকে সরে যায়। সুমেরুর এই সকল বৈচিত্র গ্রীষ্মের মাসগুলিতে বরফের প্রবাহকে এর দুর্বলতম বিন্দুতে পৌঁছাতে অবদান রাখে। এছাড়াও প্রমাণ রয়েছে যে, প্রবাহটি সুমেরু দোলন ও আটলান্টিক বহুদশকীয় দোলনের পর্যায়ের সাথে যুক্ত। উত্তর মহাসাগরের দক্ষিণ চুকচাই সাগরে একটি প্রধান রুদ্ধক বিন্দু রয়েছে। এই বিন্দুর মাধ্যমে আলাস্কা ও পূর্ব সাইবেরিয়ার মধ্যবর্তী বেরিং প্রণালী দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করা যায়। বরফের অবস্থা ভেদে, উত্তর মহাসাগর হল পূর্ব ও পশ্চিম রাশিয়ার মধ্যে নিকটতম সামুদ্রিক যোগসূত্র। উত্তর মহাসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অনেকগুলি ভাসমান গবেষণা স্টেশন রয়েছে। সারা বছরই এই মহাসাগরের উপরিতলের অধিকাংশ স্থান বরফে আবৃত থাকে। এর ফলে বায়ুর উষ্ণতাও হিমশীতল হয়। বিষুবরেখার দিকে প্রবাহিত শীতল বায়ুর একটি প্রধান উৎস হল উত্তর মহাসাগর। ৬০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে উষ্ণ বায়ুর সঙ্গে মিলিত হয়ে এই বায়ু বৃষ্টি ও তুষারপাত ঘটায়। মুক্ত অঞ্চলে, বিশেষ করে দক্ষিণ জলভাগে, প্রচুর সামুদ্রিক জীবজন্তু দেখা যায়। এই মহাসাগরের প্রধান বন্দরগুলি হল মুরমানস্ক, আরখানগেলস্ক ও প্রধো উপসাগর। বরফ টুপি উত্তর মহাসাগরের অধিকাংশ অঞ্চল একটি বরফের "টুপি" দ্বারা আবৃত থাকে। এটির ঋতু অনুযায়ী হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে থাকে। এই টুপির প্রসারক্ষেত্রটির (যা মূলত সামুদ্রিক বরফ দ্বারা গঠিত) আকার ১৯৮০ সালে ছিল । ২০১০ সালে তা কমে হয় । ঋতুভিত্তিক পার্থক্য প্রায় । সর্বোচ্চ প্রসার এপ্রিল মাসে এবং সর্বনিম্ন প্রসার সেপ্টেম্বরে। বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত বরফের বিরাট অঞ্চলকে স্থানান্তর বা ঘোরাতে সক্ষম হয়। চাপ অঞ্চলও সৃষ্টি হয়। সেখানে বরফের স্তুপ জমে প্যাক আইস গঠন করে।। উত্তর মহাসাগরীয় সামুদ্রিক বরফের প্রসার ও গভীরতা এবং বরফের মোট ঘনত্ব বিগত দশকগুলিতে হ্রাস পেয়েছে। হিমশৈল মাঝে মাঝে উত্তর এলেসমেয়ার দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পশ্চিম গ্রিনল্যান্ড ও প্রান্তবর্তী উত্তর-পূর্ব কানাডার হিমবাহ থেকে হিমশৈল তৈরি হয়। হিমশৈল সামুদ্রিক বরফ নয় তবে আচ্ছাদন বরফের মধ্যে অনুবিদ্ধ হয়ে যেতে পারে। হিমশৈল জাহাজের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে, যার মধ্যে টাইটানিকের ঘটনা অন্যতম বিখ্যাত। অক্টোবর থেকে জুন পর্যন্ত মহাসাগর কার্যত বরফে ঢাকা থাকে ও জাহাজের উপরি কাঠামো অক্টোবর থেকে মে পর্যন্ত বরফের সাপেক্ষে থাকে। আধুনিক বরফভাঙ্গা জাহাজের আবির্ভাবের আগে উত্তর মহাসাগরে যাত্রা করা জাহাজগুলি সামুদ্রিক বরফে আটকা পড়া বা চূর্ণ হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতো (যদিও এইসব বিপদ সত্ত্বেও বাইচিমো কয়েক দশক ধরে উত্তর মহাসাগরের মধ্য দিয়ে চলাচল করেছিল)। জলবায়ু উত্তর মহাসাগর একটি মেরু জলবায়ুতে রয়েছে যাকে ক্রমাগত ঠান্ডা ও তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ বার্ষিক তাপমাত্রা পরিসীমা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। শীতকালকে মেরু রাত্রি, প্রচণ্ড ঠান্ডা, ঘন ঘন নিম্ন-স্তরের তাপমাত্রার পরিবর্তন ও স্থিতিশীল আবহাওয়ার অবস্থা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ঘূর্ণিঝড় শুধুমাত্র আটলান্টিকের দিকে সাধারণ ঘটনা। গ্রীষ্মকালকে ক্রমাগত দিনের আলো (মধ্যরাতের সূর্য) দ্বারা চিহ্নিত করা হয় ও বাতাসের তাপমাত্রা -এর উপরে কিছুটা বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড় গ্রীষ্মে অধিক ঘন ঘন হয়ে থাকে এবং বৃষ্টি বা তুষারও হতে পারে। এখানে সারা বছর আকাশ মেঘলা থাকে, গড় মেঘের আবরণ শীতকালে ৬০% থেকে গ্রীষ্মকালে ৮০% পর্যন্ত থাকে। উত্তর মহাসাগরের পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা সমুদ্রের পানির হিমাঙ্কের কাছাকাছি প্রায় থাকে বলে মোটামুটি স্থিতিশীল। বিশুদ্ধ পানির বিপরীতে সমুদ্রের পানির ঘনত্ব হিমাঙ্কের কাছাকাছি আসার সাথে সাথে বৃদ্ধি পায় এবং এইভাবে এটি নিচের দিকে বাড়তে থাকে। এটা সাধারণত প্রয়োজনীয় যে সমুদ্রের উপরের পানি হিমাঙ্কে ঠাণ্ডা হয় যাতে সামুদ্রিক বরফ তৈরি হয়। শীতকালে তুলনামূলকভাবে উষ্ণ সমুদ্রের পানি এমনকি বরফে ঢাকা থাকলেও একটি পরিমিত প্রভাব পড়ে। এটি একটি কারণ যে সুমেরু অ্যান্টার্কটিক মহাদেশে লক্ষিত চরম তাপমাত্রা ধারণ করে না। সুমেরুর বরফ রাশির কত রাশি বরফ উত্তর মহাসাগরকে ঢেকে রাখে তার মধ্যে যথেষ্ট ঋতুগত তারতম্য রয়েছে। সুমেরুর বরফ রাশির বেশিরভাগ অংশ বছরের প্রায় ১০ মাস তুষারে ঢাকা থাকে। সর্বাধিক তুষার আচ্ছাদন মার্চ বা এপ্রিলে - প্রায় হিমায়িত সমুদ্রের উপরে থাকে। পৃথিবীর ইতিহাসে সুমেরুর জলবায়ু উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। প্যালিওসিন-ইওসিন তাপীয় সর্বোচ্চ ৫৫ মিলিয়ন বছর আগে যখন বৈশ্বিক জলবায়ু প্রায় উষ্ণতার মধ্য দিয়ে যায় তখন এই অঞ্চলটি গড় বার্ষিক তাপমাত্রায় পৌঁছেছিল। উত্তরাঞ্চলীয় উত্তর মহাসাগরের উপরিভাগের পানি ঋতুগতভাবে যথেষ্ট উষ্ণ হয় কারণ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জীবনরূপকে (ডাইনোফ্ল্যাজেলেটস অ্যাপেক্টোডিনিয়াম অগাস্টাম) গঠনের জন্য -এর বেশি তাপমাত্রার প্রয়োজন। বর্তমানে, সুমেরু অঞ্চল গ্রহের বাকি অংশের তুলনায় দ্বিগুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। জীবতত্ত্ব উত্তর মহাসাগরে সুস্পষ্ট ঋতুর জন্য ২-৬ মাসের নিশীথ সূর্য ও মেরু রাতের কারণে বরফ শৈবাল ও ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের মতো সালোকসংশ্লেষণকারী জীবের প্রাথমিক উৎপাদন বসন্ত ও গ্রীষ্মের মাসগুলিতে (মার্চ/এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) সীমাবদ্ধ। মধ্য উত্তর মহাসাগর ও সংলগ্ন মহীসোপান প্রাথমিক উৎপাদকের গুরুত্বপূর্ণ খাদকের মধ্যে রয়েছে জুপ্ল্যাঙ্কটন, বিশেষ করে কোপেপড (ক্যালানাস ফিনমার্চিকাস, ক্যালানাস গ্লাসিয়ালিস ও ক্যালানাস হাইপারবোরিয়াস) ও ইউফৌসিডস, পাশাপাশি বরফ-সম্পর্কিত প্রাণীকুল (যেমন অ্যাম্পিফডস)। এই প্রাথমিক খাদকরা প্রাথমিক উৎপাদক ও উচ্চতর ট্রফিক স্তরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ তৈরি করে। উত্তর মহাসাগরে উচ্চতর ট্রফিক স্তরের সংমিশ্রণ অঞ্চলভেদে (আটলান্টিক পার্শ্ব বনাম প্রশান্ত মহাসাগরীয় পার্শ্ব) ও সামুদ্রিক বরফের আচ্ছাদনের সাথে পরিবর্তিত হয়। আটলান্টিক-প্রভাবিত উত্তর মহাসাগরের মহীসোপানে ব্যারেন্টস সাগরের মাধ্যমিক খাদক মূলত হেরিং, ইয়ং কড ও ক্যাপেলিন সহ উপ-উত্তর প্রজাতি। মধ্য উত্তর মহাসাগরের বরফ আচ্ছাদিত অঞ্চলে মেরু কড হল প্রাথমিক খাদকের একটি মধ্য শিকারী। উত্তর মহাসাগরের শীর্ষ শিকারী হল - সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন সীল, তিমি ও মেরু ভালুক - যারা মাছ শিকার করে। উত্তর মহাসাগরের বিপন্ন সামুদ্রিক প্রজাতির মধ্যে রয়েছে ওয়ালরাস ও তিমি। অঞ্চলটির একটি ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্র রয়েছে ও এটি বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের সংস্পর্শে আসে কারণ এটি বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দ্রুত উষ্ণ হয়। উত্তরের পানিতে লায়ন্স মানি জেলিফিশ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ও ব্যান্ডেড গানেল হল সমুদ্রে বসবাসকারী একমাত্র প্রজাতির গানেল। প্রাকৃতিক সম্পদ পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র, প্লেসার মজুদ, পলিমেটালিক নোডুলস, বালি ও নুড়ি সমষ্টি, মাছ, সীল এবং তিমি এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সমুদ্রের মধ্যভাগের রাজনৈতিক মৃত অঞ্চলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, নরওয়ে ও ডেনমার্কের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু। এটি বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি বিশ্বের অনাবিষ্কৃত তেল ও গ্যাস সম্পদের ২৫% বা এরও বেশি ধারণ করতে পারে। পরিবেশগত উদ্বেগ সুমেরু বরফ গলন সুমেরু বরফ আচ্ছাদন পাতলা হচ্ছে ও ওজোন স্তরে একটি মৌসুমী ফাঁক প্রায়শই ঘটে। সুমেরু সামুদ্রিক বরফের আয়তন হ্রাস গ্রহের গড় অ্যালবেডো হ্রাস করে যা সম্ভবত একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রক্রিয়ায় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, সুমেরু ২০৪০ সালের মধ্যে মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মে বরফমুক্ত হতে পারে। শেষবার সুমেরু কখন বরফমুক্ত ছিল তার অনুমান নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে: ৬৫ মিলিয়ন বছর আগের জীবাশ্মগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, প্রায় ৫,৫০০ বছর আগেও সেখানে উদ্ভিদের অস্তিত্ব ছিল; বরফ ও সমুদ্রের অন্তঃস্থল চূড়ান্ত উষ্ণ সময়কাল থেকে ৮,০০০ বছর বা চূড়ান্ত আন্তঃগ্লাসিয়াল সময়কাল থেকে ১২৫,০০০ বছরেরও বেশি পুরনো। সুমেরুর উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ গলিত পানি উত্তর আটলান্টিকে প্রবেশ করতে পারে ফলস্বরূপ সম্ভবত বৈশ্বিক মহাসাগরের বর্তমান নিদর্শনগুলিকে ব্যাহত করতে পারে। তখন পৃথিবীর জলবায়ুতে সম্ভাব্য মারাত্মক পরিবর্তন ঘটতে পারে। সামুদ্রিক বরফের পরিমাণ হ্রাস ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উন্মুক্ত পানির উপর ২০১২ সালের শক্তিশালী সুমেরু ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঝড়ের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেমন ম্যাকেঞ্জি বদ্বীপের মতো স্থানে উপকূলে উদ্ভিদের সম্ভাব্য লবণাক্ত পানির ক্ষতি রয়ে যায় কারণ শক্তিশালী ঝড়ে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মেরু ভালুক ও মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ বাড়িয়েছে। সামুদ্রিক বরফ গলে যাওয়ার কারণে মেরু ভাল্লুকদের খাদ্যের নতুন উৎস খুঁজতে হচ্ছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এবং ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিস্থিতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যখন নোভায়া জেমলিয়ার দ্বীপপুঞ্জে মেরু ভাল্লুকের ব্যাপক আক্রমণের ফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। কয়েক ডজন মেরু ভালুককে বাড়ি, সরকারি ভবন ও বসতি এলাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ক্ল্যাথ্রেট ভাঙ্গন সামুদ্রিক বরফ ও এটি যে শীতল পরিস্থিতি বজায় রাখে তা উপকূলরেখায় ও এর কাছাকাছি মিথেন গ্যাস জমাকে স্থিতিশীল করতে কাজ করে, যা ক্ল্যাথ্রেট ভেঙ্গে যাওয়া ও বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস ছড়িয়ে পড়াকে প্রতিরোধ করে ফলে উষ্ণতা আরও বৃদ্ধি করে। এই বরফ গলে বায়ুমণ্ডলে একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউজ গ্যাস মিথেন প্রচুর পরিমাণে নির্গত হতে পারে, যার ফলে একটি শক্তিশালী ধনাত্মক প্রতিক্রিয়া চক্রে অধিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং সামুদ্রিক বংশ ও প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। অন্যান্য উদ্বেগ অন্যান্য পরিবেশগত উদ্বেগগুলি উত্তর মহাসাগরের তেজস্ক্রিয় দূষণের সাথে সম্পর্কিত উদাহরণস্বরূপ, কারা সাগরে রুশ তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ডাম্পের জায়গা, স্নায়ুযুদ্ধ পারমাণবিক পরীক্ষার জায়গা যেমন নোভায়া জেমল্যা, গ্রিনল্যান্ডে ক্যাম্প সেঞ্চুরির দূষণকারী ও ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিপর্যয় থেকে তেজস্ক্রিয় দূষণ। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই পাঁচটি দেশ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, নরওয়ে, ডেনমার্ক/গ্রিনল্যান্ড) উত্তর মেরুর নিকটবর্তী মধ্য উত্তর মহাসাগরের ১.১ মিলিয়ন বর্গমাইল অঞ্চল থেকে তাদের মাছ ধরার জাহাজ দূরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে। চুক্তিতে সামুদ্রিক সম্পদ সম্পর্কে অধিক ভাল বৈজ্ঞানিক জ্ঞান না থাকলে ও সেই সম্পদগুলিকে রক্ষা করার জন্য একটি নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এই দেশগুলিকে সেখানে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। আরও পড়ুন Neatby, Leslie H., Discovery in Russian and Siberian Waters 1973 Ray, L., and bacon, B., eds., The Arctic Ocean 1982 Thorén, Ragnar V. A., Picture Atlas of the Arctic 1969 তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ আর্কটিক কাউন্সিল Arctic Environmental Atlas Interactive map আর্কটিক গ্রেট রিভারস অবজারভেটরি (আর্কটিকজিআরও) উত্তর মহাসাগর। দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এনআইএসডিসি-তে সোভিয়েত ভাসমান বরফ স্টেশন থেকে উত্তর মহাসাগরের দৈনিক রাউইনসন্ডে তথ্য (১৯৫৪–১৯৯০) বসন্তকালে একটি বরফের ভাসমান তুষারস্তরে স্থাপন করা ওয়েব ক্যাম থেকে NOAA নর্থ পোল ওয়েব ক্যাম NOAA Near-realtime North Pole Weather Data Data from instruments deployed on an ice floe আন্তর্জাতিক পোলার ফাউন্ডেশন মহাসাগর পৃথিবীর চরম বিন্দু উত্তর মহাসাগরের ভূমিরূপ উত্তর আমেরিকার ভূগোল
https://en.wikipedia.org/wiki/Arctic_Ocean
Arctic Ocean
The Arctic Ocean is the smallest and shallowest of the world's five oceanic divisions. It spans an area of approximately 14,060,000 km2 (5,430,000 sq mi) and is the coldest of the world's oceans. The International Hydrographic Organization (IHO) recognizes it as an ocean, although some oceanographers call it the Arctic Mediterranean Sea. It has also been described as an estuary of the Atlantic Ocean. It is also seen as the northernmost part of the all-encompassing world ocean. The Arctic Ocean includes the North Pole region in the middle of the Northern Hemisphere and extends south to about 60°N. The Arctic Ocean is surrounded by Eurasia and North America, and the borders follow topographic features: the Bering Strait on the Pacific side and the Greenland Scotland Ridge on the Atlantic side. It is mostly covered by sea ice throughout the year and almost completely in winter. The Arctic Ocean's surface temperature and salinity vary seasonally as the ice cover melts and freezes; its salinity is the lowest on average of the five major oceans, due to low evaporation, heavy fresh water inflow from rivers and streams, and limited connection and outflow to surrounding oceanic waters with higher salinities. The summer shrinking of the ice has been quoted at 50%. The US National Snow and Ice Data Center (NSIDC) uses satellite data to provide a daily record of Arctic sea ice cover and the rate of melting compared to an average period and specific past years, showing a continuous decline in sea ice extent. In September 2012, the Arctic ice extent reached a new record minimum. Compared to the average extent (1979–2000), the sea ice had diminished by 49%.
1128
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%20%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%B0
ভারত মহাসাগর
ভারত মহাসাগর হল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। পৃথিবীর মোট জলভাগের ২০ শতাংশ এই মহাসাগর অধিকার করে আছে। এই মহাসাগরের উত্তর সীমায় রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশ; পশ্চিমে রয়েছে পূর্ব আফ্রিকা; পূর্বে রয়েছে ইন্দোচীন, সুন্দা দ্বীপপুঞ্জ ও অস্ট্রেলিয়া; এবং দক্ষিণে রয়েছে দক্ষিণ মহাসাগর সংজ্ঞান্তরে অ্যান্টার্কটিকা। ভারত মহাসাগর বিশ্ব মহাসাগরগুলির সঙ্গে আন্তঃসম্পর্কযুক্ত। ২০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে এবং ১৪৬°৫৫' পূর্ব দ্রাঘিমা প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগরকে বিচ্ছিন্ন করেছে। ভারত মহাসাগরের সর্ব-উত্তর অংশটি পারস্য উপসাগরের ৩০ ডিগ্রি অক্ষরেখায় অবস্থিত। দক্ষিণভাগে (আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত) ভারত মহাসাগরের প্রস্থ প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার (৬,২০০ মাইল)। লোহিত সাগর ও পারস্য উপসাগরসহ এই মহাসাগরের মোট আয়তন ৭৩,৫৫৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার (২৮,৩৫০,০০০ বর্গ মাইল)। ভারত মহাসাগরের ঘনত্ব ২৯২,১৩১,০০০ ঘন কিলোমিটার (৭০,০৮৬,০০০ ঘন মাইল)। মহাসাগরের মহাদেশীয় প্রান্তসীমায় অনেক ছোটো ছোটো দ্বীপ অবস্থিত। ভারত মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্রগুলি হল মাদাগাস্কার (বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপ), রিইউনিয়ন দ্বীপ, কোমোরোস, সেশেল, মালদ্বীপ, মরিশাস ও শ্রীলঙ্কা। ইন্দোনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জ এই মহাদেশের পূর্ব সীমায় অবস্থিত। ব্যুৎপত্তি কমপক্ষে ১৫১৫ সাল থেকে ভারত মহাসাগরের নামকরণ করা হয়েছে ভারত নাম থেকে (ওশেনাস ওরিয়েন্টালস ইনডিকাস)। ভারত, তখন, "সিন্ধু নদীর অঞ্চল" এর গ্রীক / রোমান নাম। প্রাচীন ভারতীয়রা একে সিন্ধু মহাসাগর বা সিন্ধুর বিশাল সমুদ্র বলে ডাকত, এই মহাসাগরকে বিভিন্ন ভাষায় হিন্দু মহাসাগর, ভারতীয় মহাসাগর ইত্যাদি বলা হত। আগে ভারত মহাসাগর 'পূর্ব মহাসাগর' নামেও পরিচিত ছিল, ১৮শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই শব্দটি ব্যবহৃত হত। বিপরীতভাবে, যখন ১৫শ শতাব্দীতে চীন ভারত মহাসাগরে অন্বেষণ করছিল, তারা এটিকে "পশ্চিম মহাসাগর" বলে অভিহিত করেছিল। প্রাচীন গ্রীক ভূগোল অনুযায়ী গ্রীকরা ভারত মহাসাগর অঞ্চলটিকে এরিথ্রিয়ান সাগর বলে জানত। "ভারত মহাসাগর বিশ্ব" এর তুলনামূলকভাবে নতুন ধারণা অনুযায়ী এবং এর ইতিহাস পুনরায় লেখার চেষ্টার ফলস্বরূপ নতুন নামের প্রস্তাব হয়েছে, যেমন 'এশিয়ান সাগর' এবং 'আফরাশিয়ান সাগর'। অবস্থান এর উত্তর দিকে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও ইরান; পশ্চিমে আরব উপদ্বীপ ও আফ্রিকা; পুর্বে রয়েছে মালয় উপদ্বীপ, অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা দ্বীপ এবং দক্ষিণ দিকে রয়েছে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ। ভারত সাগরের তিনটি প্রধান বাহু হচ্ছে: আরব সাগর, আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর। সীমান্তবর্তী দেশ এশিয়া </div> আফ্রিকা (মায়োত ও রেউনিওঁ) অস্ট্রেলিয়া আসমর ও কারটিয়ের দ্বীপপুঞ্জ এই দেশগুলির মাঝে দ্বীপ দেশ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, বাহরাইন, কমোরোস, মাদাগাস্কার, মরিশাস ও সেশেল। বাণিজ্য ভারত মহাসাগরের সমুদ্র লেনগুলি বিশ্বের সবচেয়ে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়। ভারত মহাসাগর এবং এর অত্যাবশ্যক চোকপয়েন্টগুলির মধ্য দিয়ে বিশ্বের সমুদ্রসীমায় ৮০ শতাংশেরও বেশি তেল পরিবহনের বাণিজ্য সম্পূর্ণ হয়। এই মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত হরমুজ প্রণালীর মধ্য দিয়ে ৪০ শতাংশ, মালাক্কা প্রণালীর মধ্য দিয়ে ৩৫ শতাংশ এবং বাব-মান্দাব প্রণালীর মধ্য দিয়ে ৮ শতাংশ তেল পরিবহন করা হয়। তথ্যসূত্র উৎস বহিঃসংযোগ ভারত মহাসাগর মহাসাগর পূর্ব আফ্রিকা দক্ষিণ এশিয়া পশ্চিম এশিয়া ভারত মহাসাগরের ভূমিরূপ
https://en.wikipedia.org/wiki/Indian_Ocean
Indian Ocean
The Indian Ocean is the third-largest of the world's five oceanic divisions, covering 70,560,000 km2 (27,240,000 sq mi) or approx. 20% of the water on Earth's surface. It is bounded by Asia to the north, Africa to the west and Australia to the east. To the south it is bounded by the Southern Ocean, or Antarctica, depending on the definition in use. Along its core, the Indian Ocean has large marginal, or regional seas, such as the Andaman Sea, the Arabian Sea, the Bay of Bengal, and the Laccadive Sea. It is named after India, which protrudes into it, and has been known by its current name since at least 1515. It is the only ocean to be named after a country. Previously, it was called the Eastern Ocean. It has an average depth of 3,741 m. All of the Indian Ocean is in the Eastern Hemisphere. Unlike the Atlantic and Pacific, the Indian Ocean is bordered by landmasses and an archipelago on three sides, making it more like an embayed ocean centered on the Indian Peninsula. Its coasts and shelves differ from other oceans, with distinct features, such as a narrower continental shelf. In terms of geology, the Indian Ocean is the youngest of the major oceans, with active spreading ridges and features like seamounts and ridges formed by hotspots. The climate of the Indian Ocean is characterized by monsoons. It is the warmest ocean, with a significant impact on global climate due to its interaction with the atmosphere. Its waters are affected by the Indian Ocean Walker circulation, resulting in unique oceanic currents and upwelling patterns. The Indian Ocean is ecologically diverse, with important marine life and ecosystems like coral reefs, mangroves, and sea grass beds. It hosts a significant portion of the world's tuna catch and is home to endangered marine species. It faces challenges like overfishing and pollution, including a significant garbage patch. Historically, the Indian Ocean has been a hub of cultural and commercial exchange since ancient times. It played a key role in early human migrations and the spread of civilizations. In modern times, it remains crucial for global trade, especially in oil and hydrocarbons. Environmental and geopolitical concerns in the region include the effects of climate change, piracy, and strategic disputes over island territories.
1129
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%20%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%B0
প্রশান্ত মহাসাগর
প্রশান্ত মহাসাগর পৃৃথিবীর মহাসাগর সম্বন্ধীয় বিভাগগুলির মধ্যে উপরি ক্ষেত্রফল ও গভীরতার বিচারে সর্বাধিক৷ এটি উত্তরে উত্তর মহাসাগর বা সুমেরু মহাসাগর থেকে দক্ষিণ মহাসাগর বা কুমেরু মহাসাগর, পক্ষান্তরে সংজ্ঞানুযায়ী অ্যান্টার্কটিকা পর্যন্ত বিস্তৃত৷ এর পশ্চিম সীমান্তে রয়েছে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া এবং পূর্ব সীমান্তে রয়েছে উভয় আমেরিকা৷ আয়তনে অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত (আন্টার্কটিকা সংলগ্ন কুমেরু সাগরের সীমা সংজ্ঞায়িত করে) প্রশান্ত মহাসাগর বিশ্ব মহাসাগরের উপক্ষেত্রগুলির মধ্যে সর্বাধিক এবং পৃথিবীর মোট জলভাগের উপরিতলের ৪৬ শতাংশ ও পৃথিবীর পৃষ্ঠতলের ৩২ শতাংশ অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত, যা পৃথিবীর একক স্থলভাগ ও জলভাগের ক্ষেত্রফলের তুলনায় বৃৃহত্তর তথা ১৪,৮০,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার৷ জল গোলার্ধ এবং পশ্চিম গোলার্ধ উভয়েরই কেন্দ্রবিন্দু রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরে৷ কোরিওলিস প্রভাবের ফলে উৎপন্ন মহাসাগরীয় প্রচলন প্রশান্ত মহাসাগরকে দুটি বৃহত্তর স্বতন্ত্র জলরাশিতে বিভক্ত করেছে, যা উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর নামে পরিচিত৷ ক্ষেত্রদুটি নিরক্ষরেখা অঞ্চলে মিলিত হয়৷ নিরক্ষরেখার নিকট দ্ব্যর্থকভাবে অবস্থান করা গালাপাগোস এবং গিলবার্ট দ্বীপপুঞ্জকে পুরোপুরিভাবে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের অংশ হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে৷ এটির গড় গভীরতা ৷ পশ্চিমা উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মারিয়ানা খাতেরচ্যালেঞ্জার ডিপ বিশ্বের গভীরতম বিন্দু, যার গভীরতা মোটামুটি . দক্ষিণ গোলার্ধের গভীরতম বিন্দু টোঙ্গা খাতের গভীর হরাইজন ডিপও প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত৷ পৃথিবীর তৃৃৃতীয় গভীরতম বিন্দু সিরেনা ডিপও মারিয়ানা খাতে অবস্থিত৷ পশ্চিম প্রশান্তত মহাসাগরে রয়েছে একাধিক বৃহত্তম পর্যন্তিক সাগর৷ এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সাগর হলো দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর, জাপান সাগর, ওখোৎস্ক সাগর, ফিলিপাইন সাগর, কোরাল সাগর এবং তাসমান সাগর৷ নামকরণ এশিয়া এবং ওশিয়ানিয়া তথা অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় মানুষজন প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই প্রশান্ত মহাসাগর অতিক্রম করে থাকলেও, এই মহাসাগরের পূর্ব অংশ ইউরোপীয়রাই দৃষ্টির অগোচরে আনেন। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকে ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে স্পেনীয় নাবিক তথা অনুসন্ধানকারী ভাস্কো নুয়েঁজ দে বালবোয়া পানামা যোজক অতিক্রম করেন এবং বিস্তারিত "দক্ষিণী সমুদ্র" আবিষ্কার করেন এবং স্পেনীয় ভাষায় তার নাম রাখেন মার দেল সুর। ১৫২১ খ্রিস্টাব্দে ওই মহাসাগরের বর্তমান নাম দিয়েছিলেন পর্তুগিজ নাবিক তথা অনুসন্ধানকারী ফার্ডিনান্ড ম্যাগেলান।সেই সময় নৌকাযোগে প্রদক্ষিণ করার ক্ষেত্রে স্পেনীয়দের জুড়ি মেলা ভার ছিল। সমুদ্রে বহু প্রতিকূল পরিস্থিতি অতিক্রম করে‌ ফার্ডিনান্ড ম্যাগেলান এই স্থানে এসে সামান্য প্রশস্তি পান। তিনি এই জলভাগের নাম রাখেন মার প্যাসেফিকো, পর্তুগিজ এবং স্প্যানিশ উভয় ভাষাতেই যার অর্থ প্রশান্ত মহাসাগর। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত বৃহত্তর সাগর আয়তনের বিচারে ছোট থেকে বড় আকারের সমুদ্রের তালিকা নিম্নরূপ: অস্ট্রেলীয় ভূমধ্যসাগর – ৯.০৮০ মিলিয়ন বর্গকিমি ফিলিপাইন সাগর - ৫.৬৯৫ মিলিয়ন বর্গকিমি কোরাল সাগর – ৪.৭৯১ মিলিয়ন বর্গকিমি দক্ষিণ চীন সাগর – ৩.৫ মিলিয়ন বর্গকিমি তাসমান সাগর – ২.৩ মিলিয়ন বর্গকিমি বেরিং সাগর – ২ মিলিয়ন বর্গকিমি ওখোৎস্ক সাগর – ১.৫৮৩ মিলিয়ন বর্গকিমি আলাস্কা উপসাগর – ১.৫৩৩ মিলিয়ন বর্গকিমি পূর্ব চীন সাগর – ১.২৪৯ মিলিয়ন বর্গকিমি গ্রাউর সাগর – ১.১৪ মিলিয়ন বর্গকিমি জাপান সাগর – ৯৭৮,০০০ বর্গকিমি সলোমন সাগর – ৭২০,০০০ বর্গকিমি বাণ্ডা সাগর – ৬৯৫,০০০ বর্গকিমি আরাফুরা সাগর – ৬৫০,০০০ বর্গকিমি তিমুর সাগর – ৬১০,০০০ বর্গকিমি পীতসাগর – ৩৮০,০০০ বর্গকিমি জাভা সাগর – ৩২০,০০০ বর্গকিমি থাইল্যান্ড উপসাগর – ৩২০,০০০ বর্গকিমি কারপেন্টারিয়া উপসাগর – ৩০০,০০০ বর্গকিমি সুলাবেসি সাগর – ২৮০,০০০ বর্গকিমি সুলু সাগর – ২৬০,০০০ বর্গকিমি আনাদির উপসাগর – ২০০,০০০ বর্গকিমি মালুকু সাগর – ২০০,০০০ বর্গকিমি ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগর – ১৬০,০০০ বর্গকিমি টোংকিন উপসাগর – ১২৬,২৫০ বর্গকিমি হালমাহিরা সাগর – ৯৫,০০০ বর্গকিমি বোহাই উপসাগর – ৭৮,০০০ বর্গকিমি বালি সাগর – ৪৫,০০০ বর্গকিমি বিসমার্ক সাগর – ৪০,০০০ বর্গকিমি সাভু সাগর - ৩৫,০০০ বর্গকিমি সেটো অন্তর্দেশীয় সাগর – ২৩,২০৩ বর্গকিমি সেরাম সাগর – ১২,০০০ বর্গকিমি ইতিহাস প্রাথমিক অভিগমন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রগৈতিহাসিক যুগ থেকেই বহু উল্লেখ্য অভিবাসন হয়ে এসেছে৷ ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তাইওয়ান দ্বীপের অস্ট্রোনেশীয় জনজাতি ডিঙি নৌকার মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে অভিগমনে পারদর্শী হয়ে ওঠে এবং দক্ষিণের ফিলিপাইনস, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর পূর্ব তিমুর প্রভৃতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিম দিকে মাদাগাস্কার এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে নিউগিনি মেলানেশিয়া মাইক্রোনেশিয়া ওশিয়ানিয়া এবং পলিনেশিয়া অবধি ছিল এদের সর্বাধিক বিস্তার৷ দূরবর্তী পণ্য বিপণন তথা ব্যবসা-বাণিজ্য মোজাম্বিকের তটরেখা থেকে শুরু করে জাপান অবধি বিস্তৃত ছিল। এই অস্ট্রোনেশীয় জাতির ব্যবসা-বাণিজ্য ও বাস্তব জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপগুলিতে প্রভাব বিস্তার করল অস্ট্রেলিয়ায় তার বিশেষ লক্ষণ দেখা যায় না। ২১৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নাবিক জু ফু প্রশান্ত মহাসাগরে অমৃত পরশমণির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন৷ ৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে কুয়াংচৌতে আরবি মুসলমানরা এই পথে বাণিজ্যে উন্নতি করা শুরু অবধি এই আধিপত্য ছিল৷ ১৪০৪ থেকে ১৪৩৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চেং হো প্রশান্ত মহাসাগর হয়ে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুবৃত্তি শুরু করেন৷ ইউরোপীয় অন্বেষণ ১৫১২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ পর্তুগিজ নাবিক তথা অন্বেষক অ্যান্টোনিও দে আব্রিউ এবং ফ্রান্সিস্কো সেরাওঁ বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার ক্ষুদ্রতর সুন্দা দ্বীপপুঞ্জ এবং মালুকু দ্বীপপুঞ্জে পদার্পণ করলে ইউরোপীয় নাবিকদের সাথে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তের অঞ্চল ও দ্বীপগুলির পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। প্রায় ওই একই সময় ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে জর্জ আলভারেজ দক্ষিণ চীন সাগরে অভিযান চালান, যদিও এ দুটি অভিযানই ছিল মালাক্কার আফোনসো দে আলবুকর্কের নির্দেশ। ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে স্পেনীয় নাবিক ভাস্কো নুয়েঁজ দে বালবোয়া অভিযান চালিয়ে পানামা যোজক অতিক্রম করে একটি নতুন সমুদ্রের খোঁজ পেলে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব অংশ ইউরোপীয়দের বছরে আসে। তিনি নতুন এই সাগরের নাম রাখেন মার দেল সুর বা দক্ষিণ সাগর বা দক্ষিণের সাগর, কারণ তার আবিস্কৃত সমুদ্র ছিল পানামা যোজকের দক্ষিণ দিকে। ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে নাবিক ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান এবং তার দলবল ইতিহাসের পাতায় প্রথম প্রশান্ত মহাসাগর পার করে। এই দলটি ছিল স্পেনীয় অভিযানের অংশ যারা মসলার জন্য বিখ্যাত মালুকু দ্বীপপুঞ্জ গমনের দ্বারা বিশ্বে সম্ভাব্য প্রথম জলপথে অভিযান শুরু করে। ম্যাগেলান এই মহাসাগরকে প্যাসিফিকো বা প্রশস্তি সূচক নামাঙ্কিত করেন। তার দলবল হর্ন অন্তরীপের ঝঞ্ঝাপূর্ণ আবহাওয়া অতিক্রম করে প্রশান্ত মহাসাগরের শান্তশ্রোতে প্রশস্তি পান। নাবিক ফার্দিনান্দ ম্যাগেলানের সম্মানে খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই মহাসাগর "ম্যাগেলানের সাগর" নামে পরিচিত ছিল। ১৫২১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে গুয়াম দ্বীপে গন্তব্য নির্দিষ্ট করার পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি নির্জন দ্বীপে নোঙর করেন। ১৫২১ খ্রিস্টাব্দে ম্যাগেলান ফিলিপাইনসে মারা গেলে অপর একজন স্পেনীয় নাবিক তথা তার সহচর জুয়ান সেবাস্তিয়ান ইলকানো তৎপরবর্তী গন্তব্য নির্দিষ্ট করেন। ১৫২২ খ্রিস্টানদের মধ্যে তিনি প্রশান্ত মহাসাগর হয় ভারত মহাসাগর ভ্রমণ করে উত্তমাশা অন্তরীপ অতিক্রম করে স্পেনের ফিরে আসলে বিশ্বব্যাপী জলপথে অভিযানের ইতিহাসে নতুন সময় তৈরি হয়। মালাক্কা অঞ্চলের পূর্ব প্রান্তে নৌ ভ্রমণ করতে করতে ১৫২৫ থেকে ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পর্তুগিজরা আবিষ্কার করে ক্যারোলাইন দ্বীপপুঞ্জ, আরু দ্বীপপুঞ্জ, এবং পাপুয়া নিউগিনি। ১৫৪২–৪৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তারা জাপান পর্যন্ত অগ্রসর হয়। ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে ৩৭৯ জন অনুসন্ধানীসম্বলিত ও মিগুয়েল লোপেজ দে লেগাজপির নেতৃত্বাধীন পাঁচটি স্পেনীয় জাহাজ মেক্সিকো থেকে প্রশান্ত মহাসাগর অতিক্রম করে ফিলিপাইন এবং মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জে আসেন। ষোড়শ শতাব্দীর বাকি সময় ধরে এই সকল অঞ্চলে স্পেনীয়দের আধিপত্য অগ্রাধিকার পেতে থাকে, তারা মেক্সিকো এবং পেরু থেকে প্রশান্ত মহাসাগর অতিক্রম করে গুয়াম দ্বীপ হয় ফিলিপাইন্সে আসেন এবং স্পেনীয় ইস্ট ইন্ডিজ প্রতিষ্ঠা করেন। আড়াই দশক ধরে চর্চিত ম্যানিলা গ্যালিওন ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘতম বিপণন পথ তথা ম্যানিলা থেকে আকাপলকো অবধি পথ নির্দেশ করে। স্পেনীয় অভিযানের ফলে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত টুভালু, মারকেইসাস, কুক দ্বীপপুঞ্জ, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, এবং এডমিরালটি দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তীকালে টেরা অস্ট্রালিস বা বৃহত্তর দক্ষিণ ভূমি অনুসন্ধানের সময়ে তথা খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে স্পেনীয় নাবিক পেড্রো ফার্নান্দেজ দে কুয়েরস পিটকার্ন ও ভানুয়াটু দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেন এবং অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ গিনির মধ্যবর্তী দূরত্ব অতিক্রম করে অপর এক নাবিক লুইস ভাজ দে টরেস-এর নাম অনুসারে এই অংশের নাম রাখেন টরেস প্রণালী। একই সময়ে ওলন্দাজ অনুসন্ধানী ও নাবিকরাও দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলে নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্যে বৃদ্ধি ঘটাতে থাকে। উইলেম জানসোন ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রেলিয়ার ইয়র্ক অন্তরীপ উপদ্বীপে পদার্পণ করেন এবং প্রথম সম্পূর্ণ নথিভূক্ত ইউরোপীয় উপনিবেশের বর্ণনা বিস্তার করেন। ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে আবেল তাসমান নৌপথে ভ্রমণে বেরিয়ে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সমুদ্র উপকূল বরাবর বিভিন্ন জায়গায় নোঙর করে‌ন ও তাসমানিয়া এবং নিউজিল্যান্ড দ্বীপ আবিষ্কার করেন। ষোড়শ থেকে সপ্তদশ শতাব্দীর সময়কালের মধ্যে স্পেনীয়রা প্রশান্ত মহাসাগরকে মেয়ার ক্লসাম বা অন্যান্য নৌশক্তি দ্বারা আবদ্ধ সাগর হিসেবে অভিহিত করতে থাকেন। তখনকার দিনে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর আসার জ্ঞাত পথ ছিল ম্যাজেলান প্রণালি, ফলে স্পেনীয়রা নিজেদের আধিপত্য অটুট রাখতে ও অস্পেনীয় নাবিক প্রবেশ আটকাতে এই প্রণালী নিয়ন্ত্রণে রাখত। আবার প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম দিক বরাবর এইসময় ওলন্দাজরা স্পেন অধিকৃত ফিলিপাইনের উপর ভীতিপ্রদর্শন শুরু করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরু থেকেই রাশিয়ানরা নতুন কিছু অনুসন্ধানে তৎপর হয়ে ওঠে, প্রথম কামচাটকা অভিযানে তারা আলাস্কা, অ্যালিউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেন। ডেনমার্কের রাশিয়ার নাবিক অধিকর্তা ভিটাস বেরিঙের দলপতিত্বে বৃহত্তর উত্তরা অভিযান সম্পন্ন হয়। স্পেনীয় নাবিকরা উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অভিযান সম্পাদন করেন ও ভ্যানকুভার দ্বীপসহ আলাস্কা ও দক্ষিণ কানাডা অবধি পৌঁছে যান। ফরাসিরা পলিনেশিয়া আবিষ্কার করেন এবং সেখানে থিতু হন। ব্রিটিশরা জেমস কুকের নেতৃত্বে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর এবং অস্ট্রেলিয়া, হাওয়াই ও উত্তর আমেরিকার দিকে প্রশান্ত উত্তর-পশ্চিমের দিকে তিনটি নৌযাত্রা করেন। ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে নবীন জ্যোতির্বিজ্ঞানী পিয়ার অন্তোইন ভেরন ও‌ নাবিক লুইস অন্তোইন দে বুগেনভিল নৌযাত্রা করে ইতিহাসে প্রথম প্রশান্ত মহাসাগরকে প্রস্থ বরাবর অতিক্রম করে। বিজ্ঞানভিত্তিক নৌ অভিযানের প্রথম ঐতিহাসিক নিদর্শন পাওয়া যায় ১৭৮৯-১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে স্পেনীয় মালাস্পিনা নৌ-অভিযানে। এই অভিযানের অন্তর্ভুক্ত ছিল আলাস্কা অন্তরীপ গুয়াম ফিলিপাইন নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। নব্য সাম্রাজ্যবাদ খ্রিস্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রথমে ব্রিটিশরা এবং পরে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় ওশিয়ানিয়ার বৃহত্তর অংশ দখল করে। চার্লস ডারউইনের নেতৃত্বে ১৮৩০ এর দশকে এইচএমএস বিগ্‌ল দ্বারা, ১৮৭০ এর দশকে এইচএমএস চ্যালেঞ্জার দ্বারা; ১৮৭৩-৭৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে‌ ইউএসএস টুস্কারোরা দ্বারা; এবং ১৮৭৪-৭৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জার্মান গ্যাজেল দ্বারা‌সফল ও গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের ফলে সাধারণের মধ্যে ওশিয়ানিয়া সম্পর্কিত জ্ঞান বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৮৪২ ও ১৮৫৩ যথাক্রমে তাহিতি এবং নিউ ক্যালেডোনিয়াতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার পর ফরাসিরা ওশিয়ানিয়াতে ঔপনিবেশিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১৮৭৫ ও ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে ইস্টার দ্বীপে‌ নৌ-সাক্ষাৎ সংঘটিত হওয়ার পর চিলির নৌসেনা অধ্যক্ষ পলিকার্পো টোরো ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে মধ্যস্থতা করে স্থানীয় রাপা নুই জনজাতিসহ ইস্টার দ্বীপ চিলির অন্তর্ভুক্ত করেন। এই দ্বীপভুক্তির মাধ্যমে চিলি উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রের তালিকায় নথিভূক্ত হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জগুলি ব্রিটেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান এবং চিলির ঔপনিবেশিক শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্র গুয়াম দ্বীপে আধিপত্য বিস্তার করে এবং ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের থেকে ফিলিপাইন দখল করে। ১৯১৪ শিক্ষকদের মধ্যে জাপান প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম দিকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে এবং প্রশান্ত মহাসাগর যুদ্ধে ঐ দ্বীপগুলির ওপর আধিপত্য বিস্তার করে৷ অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জাপান যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর নিকট পরাস্ত হলে মহাসাগর ব্যপী তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়৷ জাপান শাসিত উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের শাসনাধীন হয়৷ এই সময়েই বহু প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপনিবেশ দ্বীপ তথা দ্বীপপুঞ্জ স্বাধীন স্বতন্ত্রতা পায়৷ ভূগোল প্রশান্ত মহাসাগর ভৌগোলিকভাবে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে দুই আমেরিকাকে পৃথক করে। নিরক্ষরেখা সাপেক্ষে এটি আবার উত্তর গোলার্ধে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর ও দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে বিভক্ত। এটি দক্ষিণে কুমেরু থেকে উত্তরে সুমেরু অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবী পৃষ্ঠের এক তৃতীয়াংশের কিছু কম পৃষ্ঠতল দখল করে রয়েছে, এর উপরিতলের ক্ষেত্রফল , পৃথিবীর ভূতলের সর্বমোট ক্ষেত্রফলের থেকেও অধিক। প্রশান্ত মহাসাগর উত্তর-দক্ষিণে উত্তর দিকে সুমেরুর বেরিং সাগর থেকে দক্ষিণ দিকে কুমেরুর ষষ্টিতম দক্ষিণ অক্ষাংশে দক্ষিণ সাগর পর্যন্ত (পুরাতন সংজ্ঞা অনুসারে আন্টার্টিকার রস সাগর) প্রায় দীর্ঘ। তবে প্রশান্ত মহাসাগরের প্রসার উত্তর-দক্ষিণে তুলনায় পূর্ব-পশ্চিমে পঞ্চম উত্তর অক্ষাংশে অধিক। পূর্ব-পশ্চিমে ইন্দোনেশিয়া থেকে কলম্বিয়া পর্যন্ত দূরত্ব পৃথিবীর ওই অক্ষ সংলগ্ন পরিধির অর্ধেক ও চাঁদের ব্যাসের পাঁচগুণেরও অধিক। এখন অবধি জ্ঞাত পৃথিবীর গভীরতম বিন্দু মারিয়ানা খাত গড় সমুদ্রপৃষ্ঠের গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত। মহাসাগরের গড় গভীরতা প্রায় এবং মোট জলভাগের পরিমাণ প্রায় । ভূত্বকীয় পাত সংস্থানের ফলস্বরূপ প্রশান্ত মহাসাগর বর্তমানে তিন দিকে গড়ে প্রতিবছর প্রায় এবং সর্বমোট প্রায় আয়তন হারাচ্ছে। আবার একইভাবে এই পরিমাণ আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগরের। প্রশান্ত মহাসাগরের বিষম পশ্চিম সীমান্ত বরাবর রয়েছে একাধিক সাগর এগুলির মধ্যে বৃহত্তর সাগরগুলি হল সুলাওসি সাগর, কোরাল সাগর, পূর্ব চীন সাগর (পূর্ব সাগর), ফিলিপাইন সাগর, জাপান সাগর, দক্ষিণ চীন সাগর (দক্ষিণ সাগর), সুলু সাগর, তাসমান সাগর এবং পীত সাগর (কোরিয়ার পশ্চিম সাগর)। মালাক্কা প্রণালী ও টরেস প্রণালী সহ ইন্দোনেশীয় সমুদ্র ক্ষেত্র প্রশান্ত মহাসাগরকে পশ্চিম দিকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে এবং ড্রেক জলপথ ও ম্যাগেলান প্রণালী পূর্বদিকে আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। উত্তর দিকে বেরিং প্রণালী প্রশান্ত মহাসাগরকে উত্তর সাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। মূল মধ্যরেখা প্রশান্ত মহাসাগরকে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরকে যুক্ত করেছে, যেগুলি যথাক্রমে পূর্ব গোলার্ধ এবং পশ্চিম গোলার্ধের অংশ‌। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ দিক থেকে লঙ্ঘিত দক্ষিণ-পূর্ব ভারতীয় শৈলশিরা থেকে দক্ষিণ মেরুর উত্তরাংশ বরাবর প্রশান্ত-আটলান্টিক শৈলশিরা তথা দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণতম অংশে‌র পূর্ব প্রশান্ত চড়াই ও জুয়ান দে ফুকা শৈলশিরা ছাড়া উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ দিকের শৈলশিরা অবধি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর সীমাবদ্ধ। নাবিক ম্যাগেলানের নৌপথে ম্যাগেলান প্রণালী থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত যাত্রার অংশে তিনি দীর্ঘ মহাসাগর টিকে শান্ত অনুভব করেন। কিন্তু মূলত এই প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণাংশ একেবারে শান্ত হয় প্রতিবছর বহু ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলিতে আছড়ে পড়ে। অগ্নেয়গিরি দ্বারা নির্মিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় চক্রবেড়-এর অন্তর্গত ভূমিভাগ ভূমিকম্প প্রবণ। সমুদ্রের অভ্যন্তরে ভূমিকম্পের ফলে তৈরি জলোচ্ছ্বাস বহু দ্বীপ ও শহর তছনছ করে দেওয়ার প্রমাণ রেখেছে। উভয় আমেরিকা মহাদেশ দুটি স্বতন্ত্র মহাসাগরকে পৃথক করছে এমন রূপ প্রথম ফুটে ওঠে ১৫০৭ খ্রিস্টাব্দে তৈরি মার্টিন ওয়াল্ডসিমুলর মানচিত্রে। পরে ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে তৈরী ডিওগো রাইবেইরো মানচিত্রের প্রথম প্রশান্ত মহাসাগরের মোটামুটি সঠিক আকার পাওয়া যায়। সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র ও এলাকা সার্বভৌম রাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া ইকুয়েডর ইন্দোনেশিয়া উত্তর কোরিয়া এল সালভাদোর কম্বোডিয়া কলম্বিয়া কানাডা কিরিবাতি কুক দ্বীপপুঞ্জ কোস্টারিকা গণচীন গুয়াতেমালা চিলি জাপান টোঙ্গা তাইওয়ান তুভালু থাইল্যান্ড দক্ষিণ কোরিয়া নাউরু নিউজিল্যান্ড নিউয়ে নিকারাগুয়া পানামা পাপুয়া নিউগিনি পালাউ পূর্ব তিমুর পেরু ফিজি ফিলিপাইন ব্রুনেই ভানুয়াতু ভিয়েতনাম মাইক্রোনেশিয়া যুক্তরাজ্য মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ মালয়েশিয়া মেক্সিকো যুক্তরাজ্য রাশিয়া সলোমন দ্বীপপুঞ্জ সামোয়া সিঙ্গাপুর হন্ডুরাস এলাকা আমেরিকান সামোয়া (যুক্তরাজ্য) উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ (যুক্তরাজ্য) ওয়ালিস ও ফিউচুনা (ফ্রান্স) ওয়েক দ্বীপ (যুক্তরাজ্য) কিংম্যান প্রবাল প্রাচীর (যুক্তরাজ্য) ক্লিপারটন দ্বীপ (ফ্রান্স) কোরাল সাগর দ্বীপপুঞ্জ (অস্ট্রেলিয়া) গুয়াম (যুক্তরাজ্য) জনস্টোন প্রবালদ্বীপ (যুক্তরাজ্য) জারভিস দ্বীপ (যুক্তরাজ্য) টোকেলাউ (নিউজিল্যান্ড) নরফোক দ্বীপ (অস্ট্রেলিয়া) নিউ ক্যালেডোনিয়া (ফ্রান্স) পিটকের্ন দ্বীপপুঞ্জ (যুক্তরাষ্ট্র) প্যালমাইরা প্রবালদ্বীপ (যুক্তরাজ্য) ফরাসি পলিনেশিয়া (ফ্রান্স) বেকার দ্বীপ (যুক্তরাজ্য) মাকাও (গণচীন) মিডওয়ে প্রবালদ্বীপ (যুক্তরাজ্য) হংকং (গণচীন) হাউল্যান্ড দ্বীপ (যুক্তরাজ্য) ভূখণ্ড ও দ্বীপপুঞ্জ প্রশান্ত মহাসাগর রয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক দ্বীপ। সর্বমোট প্রায় ২৫,০০০ দ্বীপ রয়েছে এই মহাসাগরে। যেসকল দ্বীপ বা দ্বীপপুঞ্জ পুরোপুরিভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের অভ্যন্তরে অবস্থিত সেগুলিকে মোটামুটি তিনটি মূল ধারায় ভাগ করা যায় এগুলি হল মাইক্রোনেশিয়া, মেলানেশিয়া এবং পলিনেশিয়া। নিরক্ষরেখার উত্তর দিকে ও আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার পশ্চিম দিকে অবস্থিত দ্বীপগুলি হল মাইক্রোনেশিয়া। উত্তর-পশ্চিম দিকে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ, মধ্যভাগে ক্যারোলিন দ্বীপপুঞ্জ, পূর্বদিকে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কিরিবাতি রাষ্ট্রের একাধিক দ্বীপ নিয়ে গঠিত মাইক্রোনেশিয়া। গ্রীনল্যান্ড দ্বীপের পর আয়তনের ভিত্তিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ টি হল নিউগিনি। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত বৃহত্তম এই দ্বীপটি মেলানেশিয়ার দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত। উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত অন্যান্য মূল মেলানেশীয় দ্বীপগুলি হল বিসমার্ক দ্বীপপুঞ্জ, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, সান্তা ক্রুজ দ্বীপপুঞ্জ, ভানুয়াতু, ফিজি এবং নিউ ক্যালেডোনিয়া। সর্বাধিক প্রসারিত পলিনেশিয়ার বিস্তার উত্তরে হাওয়াই থেকে দক্ষিণে নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত। পশ্চিম প্রান্ত বরাবর রয়েছে তুভালু, টোকেলাউ, সামোয়া, টোঙ্গা এবং কেরম্যাডেক দ্বীপপুঞ্জ। কেন্দ্রীয় স্থানে রয়েছে কুক দ্বীপপুঞ্জ, সোসাইটি দ্বীপপুঞ্জ ও অস্ট্রাল দ্বীপপুঞ্জ এবং পূর্ব সীমান্ত বরাবর রয়েছে মার্কেইসাস দ্বীপপুঞ্জ, তুয়ামোটু দ্বীপপুঞ্জ, গ্যামবায়ার দ্বীপপুঞ্জ, এবং ইস্টার দ্বীপ। প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলি চার ধরনের: মহাদেশীয় দ্বীপ, উচ্চ দ্বীপ, প্রবাল প্রাচীর এবং উদ্বর্তিত প্রবাল ভূমি। মহাদেশীয় দ্বীপ অ্যান্ডিসাইট রেখার বহির্ভাগে অবস্থিত যেমন নিউগিনি, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন। এই দ্বীপগুলির বেশিরভাগই নিকটবর্তী মূল ভূভাগের মতোই ভূমিরূপ বিশিষ্ট। উচ্চ দ্বীপগুলির আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত। এরকম কিছু দ্বীপ হল বুগেনভিল, হাওয়াই এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জ। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রবাল প্রাচীরগুলি সমুদ্রতল নিমজ্জিত, আগ্নেয়গিরি ব্যাসলিসটিক লাভা সমুদ্র তলে জমে সৃষ্ট। এর মধ্যে সর্বাধিক নাটকীয় হলো অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব দিক বরাবর অবস্থিত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ পবাল প্রাচীরের সারি। উপদ্বীপীয় আকৃতির প্রবাল দ্বীপ হল উত্থিত প্রবাল ভূমি। এর কিছু প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল বানাবা এবং ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার তুয়ামোটু দ্বীপমালার অন্তর্গত মাকাটিয়া। প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন প্রকার স্রোত ১। কুমেরু স্রোত (শীতল): কুমেরু মহাসাগরের একটি শীতল স্রোত পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে শীতল কুমেরু স্রোত রূপে পশ্চিমদিক থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়। ২। পেরু স্রোত বা হ্যামবোল্ড স্রোত (শীতল): পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত বা নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে পৌঁছায় এবং দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ প্রান্তে বাধা পেয়ে চিলির উপকূল ধরে উত্তরদিকে পেরু উপকূলে এসে পেরু স্রোত বা শীতল হ্যামবোল্ড-স্রোত নামে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। ৩। দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ): পেরু স্রোত বা শীতল হ্যামবোল্ড স্রোত ক্রমশ উত্তরদিকে এগিয়ে নিরক্ষরেখার কাছাকাছি পৌঁছুলে দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত নামে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল থেকে পশ্চিমদিকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের দিকে প্রবাহিত হয়। ৪। নিঊ সাউথ ওয়েলস স্রোত বা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত (ঊষ্ণ): উষ্ণ দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত পশ্চিমদিকে গিয়ে ওশিয়ানিয়ার কাছে পৌঁছোলে এই স্রোত দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে এর একটি শাখা দক্ষিণদিকে ঘুরে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল ও নিঊজিল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত বা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিশে যায়। এর অপর শাখাটি উত্তর-পশ্চিমদিকে গিয়ে এশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে এবং পূর্ব-ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে বাধা পায় এবং উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। ৫। উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ): উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের উৎপত্তি হয়েছে। এই স্রোতটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল থেকে এশিয়া মহাদেশের দিকে প্রবাহিত হয়। ৬। জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো (উষ্ণ): উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ইন্দোনেশিয়ার কাছে এসে উত্তরমুখী হয়ে এশিয়া মহাদেশের জাপান ও তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল ধরে উষ্ণ জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোত নামে উত্তরে প্রবাহিত হয় । জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোতের একটি শাখা জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তর দিকে সুসিমা স্রোত নামে অগ্রসর হয়। ৭। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত (উষ্ণ): পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোতের অপর শাখাটি উষ্ণ উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত নামে জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলের দিকে প্রবাহিত হয়। ৮। ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত (শীতল): উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে পৌঁছানোর পর ক্যালিফোর্নিয়ার কাছে দক্ষিণমুখী হয়ে শীতল ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত নামে প্রবাহিত হয়। ৯। আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত (উষ্ণ): উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতের একটি শাখা আরও উত্তরে অগ্রসর হয়ে আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত নামে আলাস্কা উপকূল ও অ্যালুশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বরাবর প্রবাহিত হয়। এই স্রোত পরে শীতল বেরিং স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। ১০। বেরিং স্রোত (শীতল): অতি শীতল মেরুবায়ুর প্রভাবে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের সুমেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল বেরিং স্রোতটি বেরিং প্রণালীর মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোতের উত্তর শাখার সঙ্গে মিলিত হয়। দুটি আলাদা উষ্ণতার বাঊর মিলনে এই অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও ঝড়বৃষ্টির সৃষ্টি হয়। ১১। নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত বা প্রতিস্রোত (উষ্ণ): উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে একটি অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ও ক্ষীণ স্রোত পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় যা নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত বা প্রতি স্রোত নামে পরিচিত। ১২। প্রশান্ত মহাসাগরীয় শৈবাল সাগর: উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, জাপান স্রোত, উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত এবং ক্যালিফোর্নিয়া স্রোতের ডিম্বাকৃতি গতিপথের বিশাল অঞ্চল জুড়ে সৃষ্টি হওয়া সারকুলার কারেন্ট বা ঘূর্ণস্রোতের অভ্যন্তর ভাগের জলাবর্ত একেবারে স্রোতবিহীন সমুদ্রের সৃষ্টি হয়েছে। এই স্রোতহীন সমুদ্রের স্থির জলে নানারকম শৈবাল, আগাছা, তৃণ, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ জন্মায়। স্রোতহীন শৈবালে পরিপূর্ণ অঞ্চলকে শৈবাল সাগর বলা হয়। তথ্যসূত্র মহাসাগর প্রশান্ত মহাসাগর
https://en.wikipedia.org/wiki/Pacific_Ocean
Pacific Ocean
The Pacific Ocean is the largest and deepest of Earth's five oceanic divisions. It extends from the Arctic Ocean in the north to the Southern Ocean (or, depending on definition, to Antarctica) in the south, and is bounded by the continents of Asia and Australia in the west and the Americas in the east. At 165,250,000 square kilometers (63,800,000 square miles) in area (as defined with a southern Antarctic border), this largest division of the World Ocean and the hydrosphere covers about 46% of Earth's water surface and about 32% of the planet's total surface area, larger than its entire land area (148,000,000 km2 (57,000,000 sq mi)). The centers of both the Water Hemisphere and the Western Hemisphere, as well as the oceanic pole of inaccessibility, are in the Pacific Ocean. Ocean circulation (caused by the Coriolis effect) subdivides it into two largely independent volumes of water that meet at the equator, the North Pacific Ocean and the South Pacific Ocean (or more loosely the South Seas). The Pacific Ocean can also be informally divided by the International Date Line into the East Pacific and the West Pacific, which allows it to be further divided into four quadrants, namely the Northeast Pacific off the coasts of North America, the Southeast Pacific off South America, Northwest Pacific off Far Eastern/Pacific Asia, and the Southwest Pacific around Oceania. The Pacific Ocean's mean depth is 4,000 meters (13,000 feet). Challenger Deep in the Mariana Trench, located in the northwestern Pacific, is the deepest known point in the world, reaching a depth of 10,928 meters (35,853 feet). The Pacific also contains the deepest point in the Southern Hemisphere, the Horizon Deep in the Tonga Trench, at 10,823 meters (35,509 feet). The third deepest point on Earth, the Sirena Deep, is also located in the Mariana Trench. The western Pacific has many major marginal seas, including the Philippine Sea, South China Sea, East China Sea, Sea of Japan, Sea of Okhotsk, Bering Sea, Gulf of Alaska, Mar de Grau, Tasman Sea, and the Coral Sea.
1130
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B8
টেনিস
টেনিস বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রীড়া। লন টেনিস নামেও বিশ্বের অনেক দেশে এ খেলার পরিচিতি রয়েছে। যিনি এ খেলায় অংশগ্রহণ করেন, তিনি 'টেনিস খেলোয়াড়' নামে পরিচিতি পান। টেনিস খেলার জন্য প্রয়োজন হয় তারযুক্ত একটি দণ্ড যা 'র‌্যাকেট' নামে পরিচিত, একটি বল এবং জাল। উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন এবং ইউএস ওপেন - টেনিসের চারটি বড় প্রতিযোগিতা, যা প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রত্যেক প্রতিযোগিতাই গ্র্যান্ড স্ল্যাম প্রতিযোগিতা নামে পরিচিত। রাফায়েল নাদাল, পিট সাম্প্রাস, ইভান ল্যান্ডল, বরিস বেকার, রজার ফেদেরার, নোভাক জকোভিচ, ভেনাস উইলিয়ামস, সেরেনা উইলিয়ামস, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা, স্টেফি গ্রাফ, মনিকা সেলেস, মারিয়া শারাপোভা, মার্টিনা হিঙ্গিস প্রমূখ বিশ্বের খ্যাতনামা টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত হয়ে আছেন স্ব-মহিমায়। প্রকারভেদ সাধারণত দুইভাবে টেনিস খেলা হয়:- একক (একজন বনাম একজন) দ্বৈত (দুইজন বনাম দুইজন) এছাড়াও, ডাবলসে পুরুষ ও নারী নিয়ে গঠিত দল মিক্সড ডাবলস নামে পরিচিত। কোর্ট টেনিস খেলা যেখানে অনুষ্ঠিত হয় সেই জায়গাটিকে বলা হয় টেনিস কোর্ট। টেনিস বিভিন্ন কোর্টে খেলা হয়ে থাকে:- গ্রাস কোর্ট, ঘাস আচ্ছাদিত কোর্ট। ক্লে কোর্ট, লাল মাটির ন্যাড়া কোর্ট। হার্ড কোর্ট, অন্যান্য শক্ত কোর্ট। কোর্টের মাপ টেনিস কোর্ট দৈর্ঘ্যে ৭৮ ফুট এবং প্রস্থে ৩৯ ফুট হয়ে থাকে। তবে সিঙ্গেল কোর্ট প্রস্থে ২৭ ফুট হয়ে থাকে। চতুর্ভূজ আকৃতির কোর্টকে দুই ভাগে ভাগ করে মাঝে জাল টাঙানো হয় মাঝ খানে যার উচ্চতা ৩ ফুট। জালের দুই পাশে দু'টি করে চারটি সার্ভিস কোর্ট থাকে জাল থেকে যাদের দৈর্ঘ্য ২১ ফুট। লম্বায় দুই পাশে দুইটি নির্দিষ্ট মাপের ট্রাম লাইন থাকে। খেলার নিয়ম টেনিস খেলায় দুই পক্ষের খেলোয়াড় জালের বিপরীত দিকে একে-অপরের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। একদিকের খেলোয়াড় বলটি প্রথমে মারে তার অপর দিকের বিপরীত পাশের খেলোয়াড়ের দিকে। একে সার্ভ করা বলে। যে বল মারে তাকে সার্ভার এবং বিপরীত প্রান্তের খেলোয়াড়কে রিসিভার বলে। 'সার্ভার'-কে তার বেস লাইনের বাইরে থেকে বল মারতে হয়। তবে রিসিভার যে কোন জায়গায় অবস্থান নিতে পারে। সার্ভিসের বল খেলোয়াড়ের অপর পাশের বিপরীত দিকের সার্ভিস কোর্টে জাল না ছুঁয়ে পাঠাতে হয়। যদি সার্ভিসে কোনো ধরনের ভুল হয়, তবে 'সার্ভার' দ্বিতীয় সুযোগ পায় সার্ভিস করার। দ্বিতীয় সার্ভিস ভুল হলে 'ডবল ফল্ট' বলে এবং রিসিভার পয়েন্ট পায়। সঠিক সার্ভিস হলে খেলার মূল অংশ (র‌্যালী) শুরু হয় যেখানে প্রতিটি খেলোয়াড় বল মেরে ফেরত পাঠায় বিপক্ষ দলের কোর্টে। এভাবে বল দেয়া-নেয়া করে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার চেষ্টা করে যাতে প্রতিপক্ষ বলটি সঠিক ভাবে তাকে ফেরত পাঠাতে না পারে। যদি প্রতিপক্ষ সঠিকভাবে বল পাঠাতে ব্যর্থ হয় তবে খেলোয়াড় পয়েন্ট পায়। সঠিকভাবে বল পাঠাতে হলে খেলোয়াড়কে একবার আঘাত করে বল প্রতিপক্ষের কোর্টে নিয়ে ফেলতে হবে এবং সেটা করতে হয় প্রতিপক্ষের পাঠনো বল দুইবার মাটিতে পড়ার আগে। টেনিস খেলার জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় সেট জয়ের সংখ্যা দ্বারা। টেনিস খেলায় পয়েন্ট প্রাপ্তির ক্রম হয় "০","১৫", "৩০", "৪০" এভাবে যেখানে খেলোয়াড় "৪০" এর পর পয়েন্ট পেলে তার গেম জেতা হয়। যদি দুই খেলোয়াড় এক সাথে "৪০" পয়েন্ট পায়। তবে গেম জেতার জন্য কোনো খেলোয়াড়কে পর পর দুই পয়েন্ট পেতে হয়। এভাবে কোনো খেলোয়াড় যদি প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের সাথে কমপক্ষে দুই গেম ব্যবধান রেখে ছয়টি গেম জয় করতে পারে তবে সে একটি সেট জিতে নিতে সক্ষম হয়। যদি তারা সমান সংখ্যক গেমে জয়ী হয় তবে টাইব্রেকারের মাধ্যমে সেটের বিজয়ী নিশ্চিত হয়। এভাবে সর্বোচ্চ সেট জয়ী খেলোয়াড় খেলায় বিজয়ী হয়। বল টেনিস বল উত্তাপের দ্বারা পশম জমা করে প্রস্তুত বস্ত্রের আবরনযুক্ত ফাঁপা রাবার দিয়ে তৈরি। টেনিস খেলার ঐতিহ্যে বলের রং ছিল সাদা, যা বিংশ শতাব্দীর শেষোক্ত সময়ে দৃষ্টি-সম্বন্ধীয় কারণের জন্য হলুদ রঙে পরিণত হয়। আরো দেখুন মনিকা সেলেস পুরুষ টেনিস র‌্যাংকিং প্রমিলা টেনিস র‌্যাংকিং আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতা টেনিস খেলোয়াড়ের তালিকা (পুরুষ) সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতা টেনিস খেলোয়াড়ের তালিকা (নারী) সবচেয়ে বেশি টুর্নামেন্ট জয়ী টেনিস খেলোয়াড়ের তালিকা (নারী) সবচেয়ে বেশি টুর্নামেন্ট জয়ী টেনিস খেলোয়াড়ের তালিকা (পুরুষ) টেনিস ক্রীড়া অলিম্পিক ক্রীড়া বল খেলা ইংল্যান্ডের ক্রীড়া একক ক্রীড়া ইংল্যান্ডে উদ্ভাবিত ক্রীড়া গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া র‍্যাকেট ক্রীড়া অ্যাথলেটিক ক্রীড়া
https://en.wikipedia.org/wiki/Tennis
Tennis
Tennis is a racket sport that is played either individually against a single opponent (singles) or between two teams of two players each (doubles). Each player uses a tennis racket strung with a cord to strike a hollow rubber ball covered with felt over or around a net and into the opponent's court. The object of the game is to manoeuvre the ball in such a way that the opponent is not able to play a valid return. The player unable to return the ball validly will not gain a point, while the opposite player will. Playable at all levels of society and at all ages, tennis can be played by anyone who can hold a racket, including wheelchair users. The original forms of tennis developed in France during the late Middle Ages. The modern form of tennis originated in Birmingham, England, in the late 19th century as lawn tennis. It had close connections to various field (lawn) games such as croquet and bowls as well as to the older racket sport today called real tennis. The rules of modern tennis have changed little since the 1890s. Two exceptions are that until 1961 the server had to keep one foot on the ground at all times, and the adoption of the tiebreak in the 1970s. A recent addition to professional tennis has been the adoption of electronic review technology coupled with a point-challenge system, which allows a player to contest the line call of a point, a system known as Hawk-Eye. Tennis is played by millions of recreational players and is a popular worldwide spectator sport. The four Grand Slam tournaments (also referred to as the majors) are especially popular and are considered the highest level of competition for the sport. These tournaments are the Australian Open, played on hardcourts; the French Open, played on red clay courts; Wimbledon, played on grass courts; and the US Open, also played on hardcourts. Additionally, tennis was one of the original Olympic sports, and has been consistently competed in the Summer Olympic Games since 1988.
1131
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B0%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B0
রজার ফেদেরার
রজার ফেদেরার (জন্ম ৮ই আগস্ট, ১৯৮১) একজন সুইস পেশাদারী টেনিস খেলোয়াড়। তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে সফল টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম। তিনি ২০২২ সালে অবসর ঘোষণা করেন । পিট সাম্প্রাস সহ অনেক টেনিস কিংবদন্তি, টেনিস সমালোচক, তার সমসাময়িক খেলোয়াড়সহ অনেকেই মনে করেন তিনি সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড় । তিনি ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ তারিখ ত্থেকে ২০০৮ সালের শেষভাগ পর্যন্ত টানা ২৩৭ সপ্তাহ বিশ্বের ১ নম্বর খেলোয়াড় ছিলেন, যা একটি রেকর্ড ।চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদাল এর সাথে ডাবলস ম্যাচ খেলে টেনিস থেকে বিদায় নেন। ২০০৪ সালে ফেদেরার ম্যাট্‌স উইলান্ডারের পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে একই বছরে তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখান। ২০০৬ ও ২০০৭ সালে তিনি এই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি এ পর্যন্ত ২০ টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম, ৪টি টেনিস মাস্টার্স কাপ, ও ১৫টি টেনিস মাস্টার্স সিরিজ শিরোপা জিতেছেন। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি পরপর পাঁচ বছর উইম্বলডন (২০০৩-২০০৭) ও ইউ এস ওপেন (২০০৪-২০০৮) শিরোপা জিতেছেন। ফেদেরার ষষ্ঠ পুরুষ টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামই জয়ের কৃতিত্ব দেখান । ২০০৯ সালের উইম্বলডন ছিল তার ক্যারিয়ারের ১৫তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়। এর মাধ্যমে ওপেন যুগে পুরুষ এককে সাবেক নাম্বার ওয়ান পিট সাম্প্রাসের ১৪টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ের রেকর্ড তিনি ভেঙ্গে ফেলেন। বছরের পর বছর একের পর এক অবিস্মরণীয় অর্জনের কারণে তাকে "ফেড এক্সপ্রেস" বা "সুইস জাদুকর" হিসেবেও ডাকা হয়। ব্যক্তিগত জীবন শৈশব ও প্রারম্ভিক জীবন ফেদেরার সুইজারল্যান্ডের বাজেলের বাজেল ক্যান্টনাল হাসপাতালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা রবার্ট ফেদেরার একজন সুইজারল্যান্ডীয়, বার্নেক থেকে, যা সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও জার্মানির সীমান্তের কাছে, এবং তার মা, লাইনেট ফেদেরার (জন্ম ডুরান্ড), ক্যম্পটন পার্ক, গুতেঙ থেকে, একজন সাউথ আফ্রিকান যার পূর্বপুরুষ ডাচ ও ফরাসি প্রটেস্ট্যান্ট। ফেদেরার একজন বড় বোন আছে, ডায়ানা। তিনি সুইজারল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বৈত নাগরিক। তার শৈশব কাটে বিরস্ফেলদেন, রিহেন ও পরে মুনচেস্তেন, ফরাসি ও জার্মান সীমান্তের কাছে এবং তিনি সুইস জার্মান, ফরাসি, জার্মান ও ইংরেজি ভাষায় স্বাচ্ছন্দে কথা বলতে পারেন। ফেদেরার রোমান ক্যাথলিক হিসেবে বড় হন এবং ২০০৬ রোম মাস্টার্সে খেলার সময় ষোড়শ পোপ বেনেডিক্টের সাথে রোমে দেখা করেন। প্রত্যেক সুইস পুরুষ নাগরিকের মত, ফেদেরারও সুইস সশস্ত্রবাহিনীতে বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা দান করেন। যদিও তিনি ২০০৩ সালে অনুপযুক্ত গণ্য হন, পিঠের সমস্যার কারণে ও পরবর্তীকালে তার সামরিক বাধ্যবাধকতা পূরণ করা আবশ্যক নয়। তিনি ছোট থেকেই এফসি বাজেল ও সুইজারল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলকে সমর্থণ করে বড় হয়েছেন। ফেদেরার শিশুকালের নানা পরিধির খেলাধুলা করতেন। তিনি তার হাতে চোখের সমন্বয়ের জন্য ব্যাডমিন্টন এবং বাস্কেটবল খেলেছেন। ফেদেরার নানা সাক্ষাৎকারে নিজেকে একজন ক্রিকেটপ্রেমী বলে উল্লেখ করেছে এবং শচীন তেন্ডুলকরের তার দুই বার দেখা হয়। তিনি বলেন "আমি সবসময় অনেক বেশি আগ্রহী যদি একটি বল জড়িত থাকে,"। অধিকাংশ টেনিস প্রতিভাবান, বিপরীতভাবে, অন্যান্য সব খেলা বর্জন করে টেনিস খেলে। পরবর্তি জীবনে, ফেদেরারের সাথে গলফ ফেলোয়াড় টাইগার উডস-এর সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে। পরিবার সাবেক ডব্লিউটিএ খেলোয়াড় মিরোস্লাভা "মিরকা" ফেদেরার (মিরোস্লাভা ভাভরিনেচ) এর সাথে প্রায় ১০ বছর প্রণয়ের পর ১১ এপ্রিল,২০০৯ তারিখে বাসেলে ঘনিষ্ঠ কিছু পরিচিতজনের সান্নিধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফেদেরার। তাদের বর্তমানে দুটি যমজ মেয়েসন্তান রয়েছে,মিলা রোজ ও শারলিন রিভা। মিরকা বর্তমানে তার স্বামীর জনসংযোগ কাজের তত্ত্বাবধান করেন। ম্যানেজমেন্ট মানবহিতকর কর্মকাণ্ড টেনিস ক্যারিয়ার ১৯৯৮-এর পূর্ব:জুনিয়র বছর ১৯৯৮-২০০২: প্রারম্ভিক কর্মজীবন ও এটিপিতে অন্তর্ভুক্তি ২০০৩-২০০৭: যুগান্তকারী ও আধিপত্য ২০০৮ থেকে ২০১৩: বড় চারের আধিপত্য ২০০৮ ২০০৯ ২০১০ ২০১১ ২০১২ ২০১৩ ২০১৪ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফেদেরার বনাম নাদাল ফেদেরার বনাম রডিক ফেদেরার বনাম জকোভিচ্ ফেদেরার বনাম রডিক ফেদেরার বনাম হিউইট ফেদেরার বনাম সাফিন ফেদেরার বনাম নালবাল্ডিয়ান উপাখ্যান খেলার ধরন সাবেক ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান টেনিস গ্রেট জিমি কনরস ফেদেরারের খেলার ধরন সম্পর্কে একবার বলেছিলেনঃ "হয় তুমি একজন হার্ডকোর্ট স্পেশালিস্ট, না হয় একজন ক্লে কোর্ট স্পেশালিস্ট, না হয় একজন গ্রাসকোর্ট স্পেশালিস্ট....... অথবা তুমি রজার ফেদেরার !" ফেদেরার একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ খেলোয়াড় যার বিশেষ খ্যাতি আছে দুর্দান্ত শট খেলার ক্ষমতা ও শৈল্পিক ছন্দের জন্যে। জন ম্যাকেনরোর মতে, ফেদেরারের ফোরহ্যান্ড "টেনিসের সেরা শট"। সরঞ্জাম ও পোশাক সরঞ্জাম পোশাক বিজ্ঞাপনে উপস্থাপন সম্মাননা ~চারবার "লরিয়াস বর্ষসেরা খেলোয়াড়" : ২০০৫-২০০৮ ~আটবার এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর "Fans' Favourite" : ২০০৩-২০১০ ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্স টাইমলাইন {|class=wikitable style=text-align:center; |- !টুর্নামেন্ট!!১৯৯৮!!১৯৯৯!!২০০০!!২০০১!!২০০২!!২০০৩!!২০০৪!!২০০৫!!২০০৬!!২০০৭!!২০০৮!!২০০৯!!২০১০!!২০১১!!২০১২!!২০১৩!!২০১৪!! !! !!জয় % |- |align=left|অস্ট্রেলিয়ান ওপেন |অনু |বা.হে |bgcolor=afeeee|৩রা |bgcolor=afeeee|৩রা |bgcolor=afeeee|৪রা |bgcolor=afeeee|৪রা | style="background:lime;"|[[২০০৪ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন – পুরুষ একক|'জয়ী]] | style="background:yellow;"|সেমি | style="background:lime;"|জয়ী]] | style="background:lime;"|[[২০০৭ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন – পুরুষ একক|জয়ী | style="background:yellow;"|সেমি | style="background:thistle;"|ফাই | style="background:lime;"|জয়ী]] | style="background:yellow;"|সেমি | style="background:yellow;"|সেমি | style="background:yellow;"|সেমি | style="background:yellow;"|সেমি |৪ / ১৫ |৭৩–১১ |৮৬.৯০ |- |align=left|ফ্রেঞ্চ ওপেন |অনু |bgcolor=afeeee|১রা |bgcolor=afeeee|৪রা |bgcolor=ffebcd|কো.ফা |bgcolor=afeeee|১রা |bgcolor=afeeee|১রা |bgcolor=afeeee|৩রা | style="background:yellow;"|সেমি | style="background:thistle;"|ফাই | style="background:thistle;"|ফাই | style="background:thistle;"|ফাই | style="background:lime;"|[[২০০৯ ফ্রেঞ্চ ওপেন – পুরুষ একক|জয়ী |bgcolor=ffebcd|কো.ফা | style="background:thistle;"|ফাই | style="background:yellow;"|সেমি |bgcolor=ffebcd|কো.ফা |bgcolor=afeeee|৪রা |১ / ১৬ |৬১–১৫ |৮০.২৬ |- |align=left|উইম্বলডন |অনু |bgcolor=afeeee|১রা |bgcolor=afeeee|১রা |bgcolor=ffebcd|কো.ফা |bgcolor=afeeee|১রা | style="background:lime;"|জয়ী]] | style="background:lime;"|[[২০০৪ উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ – পুরুষ একক|জয়ী | style="background:lime;"|জয়ী]] | style="background:lime;"|[[২০০৬ উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ – পুরুষ একক|জয়ী | style="background:lime;"|জয়ী]] | style="background:thistle;"|ফাই | style="background:lime;"|[[২০০৯ উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ – পুরুষ একক|জয়ী |bgcolor=ffebcd|কো.ফা |bgcolor=ffebcd|কো.ফা |bgcolor=lime|জয়ী]] | style="background:lime;"|২রা | style="background:thistle;"|ফাই |৭ / ১৬ |৭৩–৯ |৮৯.০২ |- |align=left|ইউএস ওপেন |অনু |বা.হে |bgcolor=afeeee|৩রা |bgcolor=afeeee|৪রা |bgcolor=afeeee|৪রা |bgcolor=afeeee|৪রা | style="background:lime;"|[[২০০৪ ইউএস ওপেন – পুরুষ একক|জয়ী | style="background:lime;"|জয়ী]] | style="background:lime;"|[[২০০৬ ইউএস ওপেন – পুরুষ একক|জয়ী | style="background:lime;"|জয়ী]] | style="background:lime;"|[[২০০৮ ইউএস ওপেন – পুরুষ একক|জয়ী | style="background:thistle;"|ফাই | style="background:yellow;"|সেমি | style="background:yellow;"|সেমি |bgcolor=ffebcd|কো.ফা |bgcolor=afeeee|৪রা | |৫ / ১৪ |৬৭–৯ |৮৮.১৬ |- !style=text-align:left|জয়–পরাজয় !০–০ !০–২ !৭–৪ !১৩–৪ !৬–৪ !১৩–৩ !২২–১ !২৪–২ !২৭–১ !২৬–১ !২৪–৩ !২৬–২ !২০–৩ !২০–৪ !১৯–৩ !১৩–৪ !১৪–৩ !১৭ / ৬১ !২৭৪–৪৪ !৮৬.১৯ |} ফাইনাল: ২৫ (১৭–৮) বছর অনুযায়ী পারফরম্যান্স টাইমলাইন ফাইনাল: ৮ (৬–২) অলিম্পিক গেমস ফাইনাল: ২ (১ স্বর্ণ পদক, ১ রৌপ্য পদক) একক: ১ (০–১) দ্বৈত: ১ (১–০) রেকর্ডস সকল সময় টুর্নামেন্ট রেকর্ড ওপেন যুগে রেকর্ড টীকা তথ্যসূত্র আরও পড়ুন ভিডিও Wimbledon Classic Match: Federer vs Sampras Standing Room Only, DVD Release Date: 31 October 2006, Run Time: 233 minutes, ASIN: B000ICLR98. Wimbledon 2007 Final: Federer vs. Nadal (2007) Kultur White Star, DVD Release Date: 30 October 2007, Run Time: 180 minutes, ASIN: B000V02CU0. Wimbledon — The 2008 Finals: Nadal vs. Federer'' Standing Room Only, DVD Release Date: 19 August 2008, Run Time: 300 minutes, ASIN: B001CWYUBU. বহিঃসংযোগ Official website Roger Federer Foundation প্রোফাইল ১৯৮১-এ জন্ম জীবিত ব্যক্তি অলিম্পিক পদক বিজয়ী ক্রীড়াবিদ লরিয়াস বিশ্ব ক্রীড়া পুরস্কার বিজয়ী হপম্যান কাপের প্রতিযোগী অস্ট্রেলিয়ান ওপেন বিজয়ী বিশ্বের ১নং টেনিস খেলোয়াড় ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের পদক বিজয়ী ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের পদক বিজয়ী সুইজারল্যান্ডীয় ক্রীড়াবিদ সুইস পুরুষ টেনিস খেলোয়াড় ফ্রেঞ্চ ওপেন বিজয়ী ইউএস ওপেন বিজয়ী উইম্বলডন বিজয়ী টেনিসে অলিম্পিক পদক বিজয়ী ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত উইম্বলডন জুনিয়র বিজয়ী সুইজারল্যান্ডের অলিম্পিক রৌপ্যপদক বিজয়ী পুরুষদের এককে গ্র্যান্ড স্ল্যাম (টেনিস) চ্যাম্পিয়ন আফ্রিকানার বংশোদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রীড়ায় বিশ্বরেকর্ডধারী ২০০০ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের টেনিস খেলোয়াড় ২০০৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের টেনিস খেলোয়াড় ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের টেনিস খেলোয়াড় ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের টেনিস খেলোয়াড়
https://en.wikipedia.org/wiki/Roger_Federer
Roger Federer
Roger Federer (German pronunciation: [ˈrɔdʒər ˈfeːdərər]; born 8 August 1981) is a Swiss former professional tennis player. He was ranked world No. 1 in singles by the Association of Tennis Professionals (ATP) for 310 weeks, including a record 237 consecutive weeks, and finished as the year-end No. 1 five times. He won 103 singles titles on the ATP Tour, the second most of all time, including 20 major men's singles titles (among which a record eight men's singles Wimbledon titles, and an Open Era joint-record five men's singles US Open titles) and six year-end championships. A Wimbledon junior champion in 1998 and former ball boy, Federer won his first major singles title at Wimbledon in 2003 at age 21. Between 2003 and 2009, Federer played in 21 out of 28 major singles finals. He won three of the four majors and the ATP Finals in 2004, 2006, and 2007 as well as five consecutive titles at both Wimbledon and the US Open. He completed the career Grand Slam at the 2009 French Open after three consecutive runner-up finishes to Rafael Nadal, his main rival until 2010. At age 27, he surpassed Pete Sampras's record of 14 major men's singles titles at Wimbledon in 2009. Federer and Stan Wawrinka led the Switzerland Davis Cup team to their first title in 2014, following their Olympic doubles gold victory at the 2008 Beijing Olympics. Federer also won a silver medal in singles at the 2012 London Olympics, finishing runner-up to Andy Murray. After a half-year hiatus in late 2016 to recover from knee surgery, Federer returned to tennis, winning three more majors over the next two years, including the 2017 Australian Open over Nadal and an eighth singles title at the 2017 Wimbledon Championships. At the 2018 Australian Open, Federer became the first man to win 20 major singles titles and shortly after the oldest ATP world No. 1 at the time, at age 36. In September 2022, he retired from professional tennis following the Laver Cup. A versatile all-court player, Federer's grace on the court made him popular among tennis fans. Originally lacking self-control as a junior, he transformed his on-court demeanor to become well-liked for his graciousness, winning the Stefan Edberg Sportsmanship Award 13 times. He also won the Laureus World Sportsman of the Year award a joint-record five times. Outside of competition, Federer played an instrumental role in the creation of the Laver Cup team competition. He is also an active philanthropist. He established the Roger Federer Foundation, which targets impoverished children in southern Africa, and has raised funds in part through the Match for Africa exhibition series. By the end of his career, Federer was routinely one of the top-ten highest-paid athletes in any sport, and ranked first among all athletes with $100 million in endorsement income in 2020.
1133
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AB%E0%A7%81%E0%A6%9F%E0%A6%AC%E0%A6%B2
ফুটবল
ফুটবল, যা সাধারণত ফুটবল বা সকার নামে পরিচিত,একটি দলগত খেলা যা ১১ জন খেলোয়াড়ের দুটি দলের মধ্যে খেলা হয় যারা প্রাথমিকভাবে একটি আয়তক্ষেত্রাকার মাঠের চারপাশে বল চালাতে তাদের পা ব্যবহার করে।খেলার উদ্দেশ্য হলো গোল লাইনের বাইরে বলটিকে প্রতিপক্ষের দ্বারা সুরক্ষিত আয়তক্ষেত্রাকার ফ্রেমযুক্ত গোলে সরিয়ে বিপরীত দলের চেয়ে বেশি গোল করা।ঐতিহ্যগতভাবে, খেলাটি ৪৫ মিনিট করে দুই অংশের খেলা হয়ে থাকে, মোট ম্যাচের সময় ৯০ মিনিটের জন্য।আনুমানিক ২৫০ মিলিয়ন খেলোয়াড় ২০০ টির ও বেশি দেশ এবং অঞ্চলে চলমান, এছাড়া ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হিসেবেই পরিচিত। খেলার নিয়মাবলী (সংক্ষেপে) ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, ফুটবল খেলার আইনগুলি সতেরোটি পৃথক আইন নিয়ে গঠিত, প্রতিটি আইনে বেশ কয়েকটি নিয়ম এবং নির্দেশ রয়েছে। নিচে ১৭ টি আইনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল: আইন ১: খেলার ক্ষেত্র এই আইন ফুটবল মাঠের আকার এবং চিহ্ন নির্ধারণ করে, যাকে বলা হয় একটি ফুটবল পিচ বা ফুটবল মাঠ। পিচ প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম ঘাস দ্বারা গঠিত হতে পারে। গোল লাইনের সমান্তরালে চলে এবং খেলার পৃষ্ঠকে চিহ্নিত করে এমন একটি লাইন দ্বারা পিচ দুটি সমান ভাগে বিভক্ত। এই রেখাটি কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে এবং এর চারপাশে ৯.১৫ মিটার একটি বৃত্ত আঁকা হয়।টাচলাইনগুলি অবশ্যই ৯০-১২০ মিটার দীর্ঘ এবং দৈর্ঘ্যে একই হতে হবে। গোল লাইন ৪৫-৯০ মিটার চওড়া এবং প্রস্থের সমান হতে হবে। আইন ২: বল এই আইনটি বলের আকৃতি, আকার এবং উপাদান গঠন নির্দিষ্ট করে। আইনটি বলে যে একটি আকার ৫ বলের আদর্শ ব্যাস প্রায় ২২ সেমি এবং পরিধি ৬৮-৭০ সেমি হতে হবে। ফুটবল বলটির ওজন ৪১০-৪৫০ গ্রামের মধ্যে হতে হবে। আইন ৩: খেলোয়াড় প্রতিটি দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকতে হবে। ১১ জনের মধ্যে একজনকে অবশ্যই গোলকিপার হতে হবে। একটি দলকে সম্পূর্ণরূপে বিবেচনা করার জন্য কমপক্ষে সাতজন খেলোয়াড় থাকতে হবে। খেলোয়াড়দের তাদের পা বা ধড় দিয়ে বল আঘাত করা উচিত। গোলরক্ষক ব্যতীত কোন খেলোয়াড়কে বল স্পর্শ করার জন্য তাদের হাত বা বাহু ব্যবহার করার অনুমতি নেই। আইন ৪: খেলোয়াড়দের সরঞ্জাম প্রত্যেক খেলোয়াড়কে অবশ্যই নিয়মানুযায়ী একটি শার্ট, হাফপ্যান্ট, মোজা, জুতা এবং সঠিক শিন সুরক্ষা পরতে হবে। খেলোয়াড়দের এমন কোনো সরঞ্জাম ব্যবহার বা পরিধান করার অনুমতি নেই যা তাদের বা অন্যদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, যেমন রিং। গোলরক্ষককে অবশ্যই অন্যান্য খেলোয়াড় এবং ম্যাচ কর্মকর্তাদের থেকে আলাদা রঙের পোশাক পরতে হবে যাতে সহজে তাদের বোঝা যায়। আইন ৫: রেফারি একজন রেফারি একটি ফুটবল খেলা তদারকি করেন। বিরোধসহ সব বিষয়েই তাদের শেষ কথা। তাদের কাছে একজন খেলোয়াড়কে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, ফাউলের ক্ষেত্রে একটি ম্যাচ বন্ধ করার এবং খেলাটি তদারকি করার সাধারণ দায়িত্ব রয়েছে যাতে এটি কোনও বাধা ছাড়াই চলে। আইন ৬: অন্যান্য ম্যাচ কর্মকর্তারা একজন সহকারী রেফারি খেলার সাজ-সজ্জা বজায় রাখতে রেফারিকে সাহায্য করেন। সহকারী রেফারিদের মাঠের উভয় পাশে স্থাপন করা হয় এবং অপরাধ সংঘটনে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। আইন ৭: ম্যাচের সময়কাল একটি সাধারণ ফুটবল ম্যাচে খেলার সময় ৯০ মিনিট, যা প্রতিটি ৪৫ মিনিটে দুটি অর্ধে বিভক্ত। দুই অর্ধের মধ্যে, ১৫ মিনিটের হাফটাইম বিরতি আছে। পূর্ণ-সময় খেলার সমাপ্তি চিহ্নিত করে। অর্থাৎ, ৪৫ মিনিট খেলা + ১৫ মিনিট বিরতি + ৪৫ মিনিট খেলা আইন ৮: খেলার শুরু এবং পুনঃসূচনা প্রতিটি ফুটবল খেলা শুরু হয় টস দিয়ে। দুই দলের অধিনায়ক ম্যাচ রেফারির সঙ্গে মাঠের মাঝখানে দেখা করেন। বিজয়ী দলের অধিনায়ক (টস বিজয়ী) প্রথমার্ধে কোন গোলপোস্টটি অনুসরণ করবেন তা বেছে নেন। তখন টস পরাজিত অধিনায়কে অপর অধিনায়কের বিপরীত পছন্দ বেছে নিতে হয়। দ্বিতীয়ার্ধে, বিপরীত গোলপোস্টটি নিয়ে দলদুটি আবারও খেলা শুরু করে। আইন ৯: খেলার মধ্যে এবং বাইরে বল খেলার মধ্যে বল এবং খেলার বাইরে বল একটি ফুটবল খেলার সময় খেলার দুটি প্রাথমিক স্তর। বলটিকে প্রতিটি খেলার সময়কালের শুরু থেকে খেলার সময়কাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত একটি কিক-অফ সহ খেলায় বলা হয়। শুধুমাত্র বিরল ক্ষেত্রে বল খেলার মাঠ ছেড়ে যায় বা রেফারি খেলা বন্ধ করে দেয়। আইন ১০: একটি ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করা ফুটবলের উদ্দেশ্য হল প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে বলকে লাথি মেরে বা পাস দিয়ে গোল লাইনের উপর দিয়ে গোল করা। একটি গোল বলা হয়, যদি বলটি গোলপোস্ট বা ক্রসবারের মধ্যে দিয়ে গোল লাইন অতিক্রম করে এবং স্কোরকারী দলের দ্বারা কোন অপরাধ সংঘটিত না হয়। আইন ১১: অফসাইড যদি বল ছোড়া বা কিক করার সময়, একজন খেলোয়াড় বল ব্যতীত বিপক্ষ দলের অর্ধেক মাঠে সর্বশেষ প্রতিরক্ষকের থেকে এগিয়ে অবস্থান করে তাহলে খেলোয়াড়টিকে অফসাইড অবস্থানে বলা হয়। আইন ১২: ফাউল এবং অসদাচরণ একটি ফাউল সংঘটিত হয় যখন একজন খেলোয়াড় খেলার নিয়মের বিরুদ্ধে যায় এবং পরবর্তীতে খেলাটি খেলতে বাধা দেয়। ফাউলকারী খেলোয়াড়ের প্রতিপক্ষ দলকে শাস্তি হিসেবে ফ্রি কিক দেওয়া হয়। একজন খেলোয়াড়ের যে কোনো কাজ যা রেফারি নির্ধারণ করে একটি শাস্তিমূলক পরিণতি প্রয়োজন তা একটি অসদাচরণ বলে বিবেচিত হয়। যে খেলোয়াড় এটা করবে সে হয় সতর্কবাণী পাবে অথবা মাঠ ছেড়ে চলে যাবে। বরখাস্ত হওয়া খেলোয়াড়কে প্রতিস্থাপন করা যাবে না। আইন ১৩: ফ্রি কিক এগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে: পরোক্ষ ফ্রি কিক: এগুলি "নন-পেনাল" ফাউলের পরে বিপরীত পক্ষকে দেওয়া হয়, বা যখন কোনও নির্দিষ্ট ফাউল না ঘটিয়ে প্রতিপক্ষকে সতর্ক বা বের করার জন্য খেলা থামানো হয়। এর ফলে গোল হতে পারে বা নাও হতে পারে। প্রত্যক্ষ বা সরাসরি ফ্রি কিক: একটি দল পরোক্ষ ফ্রি কিক পাওয়ার পরে আবারও ফাউল করা দলকে এগুলি দেওয়া হয়। এটি দিয়ে একটি গোল সরাসরি করা যেতে পারে। আইন ১৪: পেনাল্টি কিক ফাউলের পর ফাউল করা দলকে পেনাল্টি কিক দেওয়া হয় যা সাধারণত সরাসরি ফ্রি কিকের পরিণতি হয় কিন্তু পার্থক্য হল এটি প্রতিপক্ষের পেনাল্টি এলাকার মধ্যে ঘটে। আইন ১৫: থ্রো-ইন বল খেলার মাঠ ছেড়ে যাওয়ার পরে একটি থ্রো-ইন দেওয়া হয়। যে খেলোয়াড় শেষবার বল স্পর্শ করেছে তার প্রতিপক্ষ একটি থ্রো-ইন পায়। আইন ১৬: গোল কিক এগুলি দেওয়া হয় যখন পুরো বলটি গোল লাইন অতিক্রম করে, মাটিতে বা বাতাসে, আক্রমণকারী পক্ষের একজন সদস্যকে শেষবার স্পর্শ করে এবং গোল হয় না। বলটি গোলরক্ষক দ্বারা একটি গোল কিক দেওয়া হয়। আইন ১৭: কর্নার কিক একটি কর্নার কিক দেওয়া হয় যখন পুরো বল গোল লাইন অতিক্রম করে, মাটিতে হোক বা বাতাসে, শেষবার একজন ডিফেন্ডারকে স্পর্শ করলেও কোন গোল হয় না। শুধুমাত্র বিপরীত পক্ষ কর্নার কিক থেকে সরাসরি গোল করতে পারে; বল কিকারের গোলে প্রবেশ করলে, প্রতিপক্ষকে কর্নার কিক দেওয়া হয়। কোচ ফুটবল খেলার স্তর এবং দেশভেদে কোচের ভূমিকা ও দায়িত্ব-কর্তব্যের রূপরেখা ভিন্নতর হতে পারে। যুব ফুটবলে কোচের প্রধান ভূমিকা হচ্ছে খেলোয়াড়দেরকে উদ্বুদ্ধ করা এবং তাদের দক্ষতাকে কাগজে-কলমে দেখিয়ে উত্তরণ ঘটানো। শারীরিক অথবা কৌশলগত উত্তরণের তুলনায় প্রাণবন্ত এবং সুন্দর খেলা উপহার দেয়াকে প্রাধান্য দেয়া। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন দেশের ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো তাদের প্রশিক্ষণের ছকে এ সংক্রান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কোচদেরকেও খেলোয়াড়দের উন্নয়ন এবং বিজয়ের লক্ষ্যে আনন্দ উপভোগের জন্যে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেছে। । ঘরোয়া প্রতিযোগিতা প্রত্যেক দেশের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা প্রতি মৌসুমে ঘরোয়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সাধারণত এতে বেশ কয়েকটি বিভাগ থাকে এবং দলগুলো পুরো মৌসুম জুড়ে খেলার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পয়েন্ট অর্জন করে থাকে। দলগুলোকে একটি তালিকায় তাদের অর্জিত পয়েন্টের ক্রমানুসারে সাজানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, দলগুলো প্রতি মৌসুমে তার লীগের অন্য সকল দলের সাথে ঘরের মাঠে এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঠে ম্যাচ খেলে। এরপর মৌসুমের শেষে শীর্ষ দলটিকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। শীর্ষ কয়েকটি দল এমনকি উপরের বিভাগে খেলার সুযোগও পেতে পারে। অনুরূপভাবে, একেবারে পয়েন্ট তালিকার নিচে মৌসুম শেষ করা কয়েকটি দল নিচের বিভাগে অবনমিত হয়। শীর্ষ এক বা একাধিক দল পরবর্তী মৌসুমে আন্তর্জাতিক ক্লাব প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগও পেতে পারে। এই নিয়মের প্রধান ব্যতিক্রম দেখা যায় লাতিন আমেরিকার কয়েকটি লীগে। বেশিরভাগ দেশেই লীগ ব্যবস্থার সাথে এক বা একাধিক "কাপ" প্রতিযোগিতা যুক্ত থাকে। কিছু দেশের সর্বোচ্চ বিভাগে বিপুল পারিশ্রমিকে তারকা খেলোয়াড়েরা খেলেন। তেমনি কিছু দেশে এবং নিচু বিভাগের খেলোয়াড়েরা অ-পেশাদার এবং মৌসুমভিত্তিক হয়ে থাকতে পারেন। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচটি লীগ হল - প্রিমিয়ার লীগ (ইংল্যান্ড), লা লিগা (স্পেন), সিরি এ (ইতালি), বুন্দেসলিগা (জার্মানি) এবং লিগ ১ (ফ্রান্স)। এই লীগগুলো বিশ্বের বেশিরভাগ শীর্ষ খেলোয়াড়কে আকর্ষণ করে এবং এদের প্রত্যেকটিতে খরচ হয় ৬০০ মিলিয়ন পাউন্ড-স্টার্লিং বা ৭৬৩ মিলিয়ন ইউরো বা ১.১৮৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। রেফারী একজন রেফারীর মাধ্যমে ফুটবল খেলা পরিচালিত হয়। তিনি খেলায় মূল কর্তৃপক্ষ হিসেবে যাবতীয় আইন-কানুন প্রয়োগ করেন। দুইজন সহকারী রেফারী বা লাইন্সম্যান এবং কখনো কখনো চতুর্থ রেফারীও তাকে খেলায় সহায়তা করে থাকেন। তবে ইউইএফএ ফুটবল প্রতিযোগিতায় ৬জন রেফারী অংশগ্রহণ করেন। দুইজন গোলপোস্টের বাইরে থেকে বলের অবস্থান চিহ্নিত করেন যে তা গোললাইন অতিক্রম করেছে কি-না (এদেরকে গোললাইন রেফারীও বলা হয়)। খেলা নির্দিষ্ট সময়ে সমাপন কিংবা অতিরিক্ত সময় যুক্তকরণ তার দায়িত্ব। মাঠে অবস্থানকালে যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় পরখপূর্বক খেলোয়াড় সংখ্যার সঠিকতা, অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের সংশ্লিষ্টতা, ইত্যাদি ঘটনার বিবরণ নোটবহিতে লিপিবদ্ধসহ খেলাশেষে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পেশ করেন। এছাড়াও, খেলোয়াড় আহত ও এর গুরুত্বতা অণুধাবনপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মাঠে তিনি কোন খেলোয়াড়, এমনকি দলীয় কোচকে হলুদ কিংবা লাল কার্ডের প্রয়োগের মাধ্যমে যথাক্রমে সতর্কীকরণ, শাস্তি কিংবা বহিস্কার করতে পারেন। বিশ্বব্যাপী ফুটবল খেলার মানোন্নয়নে সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী সংস্থা ফিফা ১৭টি আইনের কথা উল্লেখ করেছে। তন্মধ্যে ৫নং ধারার মাধ্যমে খেলা পরিচালনার জন্য রেফারী এবং সহকারী রেফারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। যথাযথভাবে খেলা পরিচালনার জন্য প্রতিযোগিতা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে রেফারীদের প্যানেল সৃষ্টি করতে পারেন। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ ম্যাচ রেফারীকে সাহায্য করার জন্য ৫ম বিচারকের ব্যবস্থা রেখেছিল। আরো দেখুন সবচেয়ে বেশি গোলকারী ফুটবলারের তালিকা সবচেয়ে বেশি লীগ শিরোপাজয়ী ফুটবল ক্লাবের তালিকা বিশ্বকাপ ফুটবল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Federation Internationale de Football Association (FIFA) The Current Laws of the Game (LOTG) The Rec.Sport.Soccer Statistics Foundation (RSSSF) ফুটবল দলগত ক্রীড়া ইংল্যান্ডে উদ্ভাবিত ক্রীড়া বল খেলা ফুটবল পরিভাষা ফুটবল কোড ফুটবলের আইন শারীরিক শিক্ষা গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া ইংরেজ উদ্ভাবন
https://en.wikipedia.org/wiki/Association_football
Association football
Association football, more commonly known as football or soccer, is a team sport played between two teams of 11 players each, who primarily use their feet to propel a ball around a rectangular field called a pitch. The objective of the game is to score more goals than the opposing team by moving the ball beyond the goal line into a rectangular-framed goal defended by the opposing team. Traditionally, the game has been played over two 45-minute halves, for a total match time of 90 minutes. With an estimated 250 million players active in over 200 countries and territories, it is the world's most popular sport. The game of association football is played in accordance with the Laws of the Game, a set of rules that has been in effect since 1863 and maintained by the IFAB since 1886. The game is played with a football that is 68–70 cm (27–28 in) in circumference. The two teams compete to score goals by getting the ball into the other team's goal (between the posts, under the bar, and fully across the goal line). When the ball is in play, the players mainly use their feet, but may also use any other part of their body, such as their head, chest and thighs, except for their hands or arms, to control, strike, or pass the ball. Only the goalkeepers may use their hands and arms, and only then within the penalty area. The team that has scored more goals at the end of the game is the winner. There are situations where a goal can be disallowed, such as an offside call or a foul in the build-up to the goal. Depending on the format of the competition, an equal number of goals scored may result in a draw being declared, or the game goes into extra time or a penalty shoot-out. Internationally, association football is governed by FIFA. Under FIFA, there are six continental confederations: AFC, CAF, CONCACAF, CONMEBOL, OFC, and UEFA. Of these confederations, CONMEBOL is the oldest one, being founded in 1916. National associations (e.g. The FA or JFA) are responsible for managing the game in their own countries both professionally and at an amateur level, and coordinating competitions in accordance with the Laws of the Game. The most senior and prestigious international competitions are the FIFA World Cup and the FIFA Women's World Cup. The men's World Cup is the most-viewed sporting event in the world, surpassing the Olympic Games. The two most prestigious competitions in European club football are the UEFA Champions League and the UEFA Women's Champions League, which attract an extensive television audience throughout the world. Since 2009, the final of the men's tournament has been the most-watched annual sporting event in the world.
1134
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B9%E0%A6%95%E0%A6%BF
হকি
হকি দুই দলের মধ্যে খেলা হয় এমন খেলার গোত্রীয় একটি খেলা। উপধরন ফিল্ড হকি ফিল্ড হকি নুড়ি, প্রাকৃতিক ঘাস, বালি বা পানি আচ্ছাদিত কৃত্রিম মাটির উপর ৭৩ মিলিমিটার পরিসীমা বিশিষ্ট ছোট ও শক্ত বল দিয়ে খেলা হয়। এটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে ইউরোপ, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আর্জেন্টিনায় পুরুষ ও নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় একটি খেলা। বেশির ভাগ দেশেই যেকোন এক লিঙ্গের অর্থাৎ পুরুষ বা নারীদের মধ্যে আলাদা আলাদাভাবে খেলা হয়, যদিও খেলাটি দুই লিঙ্গের সমন্বয়েও খেলা যায়। আইস হকি আইস হকি বৃহৎ বরফাচ্ছাদিত এলাকায় তিন ইঞ্চি পরিসীমা বিশিষ্ট তাপ দিয়ে সংযুক্ত রাবার ডিস্ক দিয়ে স্কেটারদের দুই দলের মধ্যে খেলা হয়ে থাকে। এই রাবার ডিস্ককে পাক বলা হয়। এই পাকটিকে উচ্চ স্তরের খেলার পূর্বে ঠাণ্ডা করা হয় যাতে এর বাউন্সিংয়ের মাত্রা কমে ও বরফে ঘর্ষণ কম হয়। এই খেলাটি উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সর্বত্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিভিন্ন মাত্রায় খেলা হয়। এই খেলাটি কানাডা, ফিনল্যান্ড, লাটভিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয়। আইস হকি লাটভিয়ার জাতীয় খেলা এবং কানাডার শীতকালীন জাতীয় খেলা। তথ্যসূত্র ক্রীড়া
https://en.wikipedia.org/wiki/Hockey
Hockey
Hockey is a term used to denote a family of various types of both summer and winter team sports which originated on either an outdoor field, sheet of ice, or dry floor such as in a gymnasium. While these sports vary in specific rules, numbers of players, apparel, and playing surface, they share broad characteristics of two opposing teams using sticks to propel a ball or disk into a goal. There are many types of hockey. Some games make the use of skates, either wheeled or bladed, while others do not. In order to help make the distinction between these various games, the word hockey is often preceded by another word i.e. field hockey, ice hockey, roller hockey, rink hockey, or floor hockey. In each of these sports, two teams play against each other by trying to manoeuvre the object of play, either a type of ball or a disk (such as a puck), into the opponent's goal using a hockey stick. Two notable exceptions use a straight stick and an open disk (still referred to as a puck) with a hole in the center instead. The first case is a style of floor hockey whose rules were codified in 1936 during the Great Depression by Canada's Sam Jacks. The second case involves a variant which was later modified in roughly the 1970s to make a related game that would be considered suitable for inclusion as a team sport in the newly emerging Special Olympics. The floor game of gym ringette, though related to floor hockey, is not a true variant due to the fact that it was designed in the 1990s and modelled off of the Canadian ice skating team sport of ringette, which was invented in Canada in 1963. Ringette was also invented by Sam Jacks, the same Canadian who codified the rules for the open disk style of floor hockey 1936. Certain sports which share general characteristics with the forms of hockey, but are not generally referred to as hockey include lacrosse, hurling, camogie, and shinty.
1135
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4
ভারত
ভারত (), যার সরকারি নাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। ভৌগোলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। অন্যদিকে, জনসংখ্যার বিচারে এটি বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল রাষ্ট্র এবং পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান উত্তর-পূর্বে চীন, নেপাল ও ভুটান এবং পূর্বে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার অবস্থিত। এছাড়া, ভারত মহাসাগরে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া হল ভারতের নিকটবর্তী কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র। দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত ভারতের উপকূলরেখার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার (৪,৬৭১ মাইল)। সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতা এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে এখানেই স্থাপিত হয়েছিল বিশালাকার একাধিক সাম্রাজ্য। নানা ইতিহাস-প্রসিদ্ধ বাণিজ্যপথ এই অঞ্চলের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রক্ষা করত। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ—বিশ্বের এই চার ধর্মের উৎসভূমি ভারত। খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে জরথুস্ত্রীয় ধর্ম (পারসি ধর্ম), ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম এ দেশে প্রবেশ করে এবং ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয়। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই দেশ পুরোদস্তুর একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়ে ওঠে। অতঃপর, এক সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে ভারত একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। বর্তমানে ভারত ২৮টি রাজ্য ও আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বিশিষ্ট একটি সংসদীয় সাধারণতন্ত্র। ভারতীয় অর্থব্যবস্থা বাজারি বিনিময় হারের বিচারে বিশ্বে দ্বাদশ ও ক্রয়ক্ষমতা সমতার বিচারে বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম। ১৯৯১ সালে ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত আর্থিক সংস্কার নীতির ফলশ্রুতিতে আজ আর্থিক বৃদ্ধিহারের বিচারে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলির মধ্যে দ্বিতীয়। ভারত ১৯৫০ সাল থেকে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র, এবং গণতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে শাসিত একটি রাষ্ট্র। এটি একটি বহুত্ববাদী, বহুভাষিক এবং বহু-জাতিগত সমাজ। ভারতের জনসংখ্যা ১৯৫১ সালে ৩৬১ মিলিয়ন থেকে ২০২২ সালে প্রায় ১.৪ বিলিয়নে বেড়েছে। একই সময়ে, এর নামমাত্র মাথাপিছু আয় বার্ষিক US$৬৪ থেকে US$২,৬০১ বেড়েছে এবং এর সাক্ষরতার হার ১৬.৬% থেকে ৭৪% হয়েছে। ভারত একটি দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে এবং একটি বিস্তৃত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাথে তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবার একটি কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। ভারতের বেশ কয়েকটি পরিকল্পিত বা সম্পূর্ণ বহির্জাগতিক মিশন সহ একটি মহাকাশ কর্মসূচি রয়েছে। এটি চতুর্থ দেশ যেটি চাঁদে একটি নৈপুণ্য অবতরণ করেছে এবং চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুর লুনার পয়েন্টে ৬০০ কিলোমিটার (৩৭০ মা.) যার মধ্যে এটি করা প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ভারতীয় চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষা বিশ্ব সংস্কৃতিতে ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করে। ভারত তার দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে, যদিও অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধির মূল্যে। ভারত একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র, যেটি সামরিক ব্যয়ের দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় দেশ গুলোর মধ্যে একটি। কাশ্মীর নিয়ে তার প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চীনের সাথে বিরোধ রয়েছে, যা বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে এখনো অমীমাংসিত। আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে লিঙ্গ বৈষম্য, শিশুর অপুষ্টি, এবং ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণ। চারটি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট সহ ভারতের ভূমি মেগাবৈচিত্র্যময়। এর মোট আয়তনের ২১.৭% বনভূমি। ভারতের বন্যপ্রাণী, যা ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের সংস্কৃতিতে সহনশীলতার সাথে দেখা হয়, এই বনের মধ্যে এবং অন্যত্র সুরক্ষিত আবাসস্থলে সমর্থিত। উৎপত্তি ভারত ( ) নামটির উৎপত্তি চন্দ্রবংশীয় পৌরাণিক রাজা ভরতের নামানুসারে হয়েছিল। কথিত আছে এই বর্ষ বা অঞ্চলটি রাজা ভরতকে দান করা হয়েছিল বলে এর নাম ভারতবর্ষ। ভারত শব্দটি, ভারতীয় মহাকাব্য ও ভারতের সংবিধান উভয়েই উল্লিখিত, অনেক ভারতীয় ভাষায় শব্দটি ভিন্নতর উচ্চারণে ব্যবহৃত হয়। এটি ঐতিহাসিক নাম ভারতবর্ষ-এর একটি আধুনিক উপস্থাপনা, যা মূলত উত্তর ভারতে প্রযোজ্য, ভারত ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ভারতের একটি স্থানীয় নাম হিসেবে বর্ধিত প্রচলন অর্জন করে। অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধান (তৃতীয় সংস্করণ, ২০০৯) অনুসারে ইংরেজি "ইন্ডিয়া" ( ইন্ডিঅ্য) নামটি ধ্রুপদী লাতিন শব্দ ইন্দিআ (India) থেকে নেওয়া হয়েছে, এটি দক্ষিণ এশিয়া এবং এর পূর্ব দিকের একটি অনিশ্চিত অঞ্চলকে উল্লেখ করে। শব্দটি ধারাবাহিকভাবে হেলেনিস্টিক গ্রিক ভাষায় ইন্দিআ (Ἰνδία), প্রাচীন গ্রিক ভাষায় ইন্দোস্ (Ἰνδός), ফার্সি ভাষা ভাষায় আকিমিনীয় সাম্রাজ্যের একটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ হিসাবে হিন্দুশ এবং শেষ পর্যন্ত সগোত্রীয় সংস্কৃত শব্দ সিন্ধু থেকে উদ্ভূত হয়, সিন্ধু শব্দটি দ্বারা বিশেষত সিন্ধু নদ ও এর জনবসতি যুক্ত দক্ষিণ অববাহিকাকে উল্লেখ করা হয়। প্রাচীন গ্রিকরা ভারতীয়দের ইন্দোই (Ἰνδοί) হিসাবে উল্লেখ করেছিল, যার বঙ্গানুবাদ হল "সিন্ধু অঞ্চলের মানুষ"। "হিন্দুস্তান" () মুঘল সাম্রাজ্যের সময় প্রবর্তিত ভারতের একটি মধ্য ফার্সি নাম, এবং তখন থেকে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শব্দটির অর্থ বৈচিত্র্যময়, বর্তমানের উত্তর ভারত এবং পাকিস্তান বা তার নিকটবর্তী ভারতের সমগ্র অঞ্চলকে বোঝায়। ইতিহাস প্রাচীন ভারত মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভীমবেটকা প্রস্তর ক্ষেত্র ভারতে মানববসতির প্রাচীনতম নিদর্শন। এক লক্ষ বছর আগেও এখানে মানুষের বসবাস ছিল। প্রায় ৯০০০ বছর আগে এদেশে স্থায়ী মানববসতি গড়ে উঠে; যা কালক্রমে পশ্চিম ভারতের ইতিহাস-প্রসিদ্ধ সিন্ধু সভ্যতার রূপ ধারণ করে। এই সভ্যতার আনুমানিক সময়কাল ৩৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এরপর ভারতে বৈদিক যুগের সূত্রপাত হয়। এই যুগেই হিন্দুধর্ম তথা প্রাচীন ভারতীয় সমাজের অন্যান্য সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলির আবির্ভাব ঘটে। বৈদিক যুগের সমাপ্তিকাল আনুমানিক ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। আনুমানিক ৫৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয় মহাজনপদ নামে অনেকগুলি স্বাধীন রাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজ্য। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রতিষ্ঠিত ও মহামতি অশোকের শাসিত মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে দক্ষিণ এশিয়ার সিংহভাগ অঞ্চল একত্রিত হয়। মধ্যযুগীয় ভারত খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকে গুপ্ত সম্রাটদের শাসনকাল প্রাচীন ভারতের সুবর্ণ যুগ নামে আখ্যাত হয়। এছাড়া পূর্ব ভারতে পাল এবং দাক্ষিণাত্যে চালুক্য, চোল ও বিজয়নগর প্রভৃতি সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। এই সকল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্পকলা, সাহিত্য, জ্যোতির্বিদ্যা ও দর্শন সমৃদ্ধি লাভ করে। খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে মধ্য এশিয়া থেকে ভারতে ইসলামের অনুপ্রবেশ ঘটে। এর ফলে সমগ্র উত্তর ভারত প্রথমে সুলতানি ও পরে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। মহামতি আকবরের রাজত্বকালে দেশে একাধারে যেমন সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচনা হয়, তেমনই প্রতিষ্ঠিত হয় হিন্দু-মুসলমানের ধর্মীয় সম্প্রীতি। ক্রমে ক্রমে মুঘল সম্রাটগণ উপমহাদেশের এক বৃহৎ অংশে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপনে সক্ষম হন। যদিও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রাধান্যকারী অসমের অহোম রাজশক্তি এবং আরও কয়েকটি রাজ্য মুঘল আগ্রাসন সফলভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছিল। প্রারম্ভিক আধুনিক ভারত ষোড়শ শতক থেকে পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের মতো ইউরোপীয় শক্তিগুলি ভারতে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করতে শুরু করে। পরবর্তীকালে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোলযোগের সুযোগ নিয়ে তারা ভারতে উপনিবেশ স্থাপন করতেও সক্ষম হয়। আধুনিক ভারত ১৮৫৬ সালের মধ্যেই ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হস্তগত হয়েছিল। এর এক বছর পরেই ঘটে ভারতীয় সিপাহি ও দেশীয় রাজ্যগুলির সম্মিলিত এক জাতীয় গণ-অভ্যুত্থান। ভারতের ইতিহাসে এই ঘটনা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বা সিপাহি বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও তা দেশে কোম্পানির শাসনের দুর্বলতার দিকগুলি উন্মোচিত করে দেয়। তাই ভারতকে আনা হয় ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে। বিংশ শতকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলি দেশজুড়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। ভারতীয় নেতা মহাত্মা গান্ধী লক্ষাধিক মানুষকে সঙ্গে নিয়ে অহিংস গণ-আইন অমান্য জাতীয় আন্দোলন শুরু করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষলগ্নে সুভাষচন্দ্র বসু ও তার আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রাম ভারতের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত ব্রিটিশ শাসনজাল থেকে মুক্তিলাভ করে। একই সঙ্গে দেশের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মুসলমান-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি বিভক্ত হয়ে গঠন করে পাকিস্তান রাষ্ট্র। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি নতুন সংবিধান প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে ভারতে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয়। স্বাধীনতার পরে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, জাতপাত, নকশাল আন্দোলন, সন্ত্রাসবাদ এবং জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভুত্থান দেশে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৯০-এর দশক থেকে ভারতের শহরাঞ্চলগুলি এই হানাহানির শিকার হতে থাকে। ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের ফলে চীনের সঙ্গে এবং ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত নিয়ে বিরোধ তীব্র হয়। ভারত রাষ্ট্রসংঘ (ব্রিটিশ ভারত হিসাবে) ও জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৭৪ সালে একটি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষণ ও ১৯৯৮ সালে আরও পাঁচটি পরমাণু পরীক্ষা চালিয়ে ভারত নিজেদের একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশ করে। ১৯৯১ সালে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক সংস্কারের ফলে বর্তমানে পৃথিবীর অতিদ্রুত-বর্ধনশীল এক অর্থব্যবস্থা হিসাবে ভারত সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতেও সক্ষম হয়েছে। ভূগোল ভারতীয় উপমহাদেশের সিংহভাগ নিয়ে গঠিত ভারতীয় ভূখণ্ডটি ভারতীয় টেকটোনিক পাত ও ইন্দো-অস্ট্রেলীয় পাতের মধ্যস্থিত একটি গৌণ পাতের উপর অবস্থিত। এই ভূখণ্ড গঠনের প্রধান ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াটি শুরু হয় আজ থেকে ৭৫ কোটি বছর পূর্বে, যখন দক্ষিণের অতিমহাদেশ গন্ডোয়ানার অংশ হিসাবে ভারতীয় উপমহাদেশ উত্তর-পূর্ব দিকে সরতে শুরু করে। তৎকালীন অসংগঠিত ভারত মহাসাগরব্যাপী এই সরণ স্থায়ী হয় ৫০ কোটি বছর। এর পরে উপমহাদেশটির সঙ্গে ইউরেশীয় পাতের সংঘর্ষ ঘটে এবং উপমহাদেশের পাতটি ইউরেশীয় পাতের তলায় অবনমিত হয়ে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতমালা হিমালয়ের উত্থান ঘটায়। এই পর্বতমালা বর্তমানে ভারতের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক বেষ্টন করে আছে। উত্থানশীল হিমালয়ের দক্ষিণ পাদদেশে অবস্থিত সমুদ্রে পাতসঞ্চরণের ফলে একটি বৃহৎ খাত সৃষ্টি হয়, এবং কালক্রমে নদীর পলি জমে এই খাতটি গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে পরিণত হয়। এই সমভূমির পশ্চিমে আরাবল্লী পর্বতশ্রেণী কর্তৃক বিচ্ছিন্ন হয়ে অবস্থান করছে থর মরুভূমি। মূল ভারতীয় পাতটি আজ ভারতীয় উপদ্বীপ রূপে অবস্থান করছে। এটিই ভারতের প্রাচীনতম ও ভৌগোলিকভাবে সর্বাপেক্ষা দৃঢ় অংশ। উত্তরদিকে মধ্য ভারতে অবস্থিত সাতপুরা ও বিন্ধ্য পর্বতমালা পর্যন্ত এই উপদ্বীপ বিস্তৃত। এই সমান্তরাল পর্বতমালাদুটি পশ্চিমে গুজরাটের আরব সাগর উপকূল থেকে পূর্বে ঝাড়খণ্ডের কয়লা-সমৃদ্ধ ছোটনাগপুর মালভূমি পর্যন্ত ব্যাপ্ত। দক্ষিণে উপদ্বীপীয় ভূখণ্ডে দাক্ষিণাত্য মালভূমি বামে ও ডানে যথাক্রমে পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতমালাদ্বয় দ্বারা উপকূলীয় সমভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন। এই মালভূমিতেই ভারতের প্রাচীনতম প্রস্তরগঠনটি পরিলক্ষিত হয়; যার কিয়দংশের বয়স ১০০ কোটি বছরেরও বেশি। এইভাবে ভারত বিষুবরেখার উত্তরে ৬°৪৪' ও ৩৫°৩০' উত্তর অক্ষাংশ ও ৬৮°৭' ও ৯৭°২৫' পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। ভারতীয় উপকূলরেখার দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার (৪,৬৭১ মাইল)। এর মধ্যে ৫,৪২৩ কিলোমিটার (৩,৩৭০ মাইল) ভারতীয় উপদ্বীপের এবং ২,০৯৪ কিলোমিটার (১,৩০১ মাইল) আন্দামান, নিকোবর ও লাক্ষাদ্বীপের অন্তর্গত। ভারতীয় নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফিক চার্ট অনুসারে মূল অঞ্চলের উপকূলভূমি ৪৩% বালুকাময় সৈকত, ১১% পাথুরে উপকূল ও ভৃগু (উঁচু খাড়া পাড় বা ক্লিফ), ৪৬% জলাজমিপূর্ণ উপকূল দ্বারা গঠিত। হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদনদীগুলির মধ্যে প্রধান গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র। উভয়েই বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। গঙ্গার প্রধান উপনদীগুলি হল যমুনা ও কোশী নদী। কোশী নদীতে নাব্যতা অত্যন্ত কম থাকায় প্রতি বছর ভয়াল বন্যা দেখা দেয়। উপদ্বীপের প্রধান নদীগুলি হল গোদাবরী, মহানদী, কৃষ্ণা, ও কাবেরী। এই নদীগুলির খাত অত্যন্ত নাব্য হওয়ায় বন্যা কম হয়ে থাকে। এই নদীগুলিও বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। অন্যদিকে নর্মদা ও তাপ্তি পতিত হয়েছে আরব সাগরে। ভারতীয় উপকূলভূমির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল পশ্চিম ভারতে কচ্ছের রাণ ও পূর্বভারতে সুন্দরবনের পলিগঠিত বদ্বীপ অঞ্চল, যা ভারত ও বাংলাদেশে বিস্তৃত। ভারতে দুটি দ্বীপপুঞ্জ দেখা যায়: ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলভাগের নিকটে প্রবালদ্বীপ লাক্ষাদ্বীপ এবং আন্দামান সাগরের আগ্নেয় দ্বীপমালা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। জলবায়ু ভারতের বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক ও ভূতাত্ত্বিক উপাদানগুলি দেশের জলবায়ুকে অনেকাংশেই প্রভাবিত করে। কর্কটক্রান্তি রেখা ভারতের মাঝবরাবর প্রসারিত। কিন্তু দেশের উত্তর সীমান্ত বরাবর অবস্থিত হিমালয় পর্বতমালা মধ্য এশিয়া থেকে আগত ক্যাটাবেটিক বায়ুপ্রবাহকে প্রতিরোধ করে দেশে ক্রান্তীয় জলবায়ু বজায় রাখতে সহায়তা করে। হিমালয় পর্বতমালা ও থর মরুভূমি দেশে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহকেও নিয়ন্ত্রণ করে। থর মরুভূমি গ্রীষ্মকালীন আর্দ্র দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ুকে আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যবর্তী সময়ে আগত এই বায়ুপ্রবাহই ভারতে বর্ষার মূল কারণ। ভারতে চারটি প্রধান ঋতু দেখা যায়: শীত (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি), গ্রীষ্ম (মার্চ থেকে মে), বর্ষা (জুন থেকে সেপ্টেম্বর), এবং শরৎ ও হেমন্ত (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর)। ক্রান্তীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য অনুসারে বর্ষা ও অন্যান্য আবহাওয়াগত পরিস্থিতি দেশে খরা, বন্যা, সাইক্লোন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। এর ফলে প্রতি বছর দেশটির লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ও সম্পত্তি হানি হয়। বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণায়ণের ফলে ভারতের জলবায়ুতে নানাপ্রকার অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। জীববৈচিত্র্য ইন্দোমালয় পরিবেশক্ষেত্রে অবস্থিত ভারত জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। ১৮টি মহাবৈচিত্র্যপূর্ণ রাষ্ট্রের একটি এই দেশ পৃথিবীর ৭.৬% স্তন্যপায়ী, ১২.৬% পাখি, ৬.২% সরীসৃপ, ৪.৪% উভচর, ১১.৭% মাছ ও ৬.০% সপুষ্পক উদ্ভিদের বাসস্থান। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার শোলা বর্ষণারণ্যের মতো ভারতের অনেক অঞ্চলেই স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রাচুর্য দেখা যায়। ৩৩% ভারতীয় বৃক্ষপ্রজাতি স্বাভাবিক উদ্ভিদশ্রেণীর অন্তর্গত। ভারতের প্রধান অরণ্যক্ষেত্রগুলি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিষুবীয় বর্ষণারণ্য থেকে হিমালয়ের চিরহরিৎ অরণ্যক্ষেত্র পর্যন্ত বিস্তৃত। এছাড়া পূর্ব ভারতের শাল-অধ্যুষিত, মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের টিক-অধ্যুষিত ও মধ্য দাক্ষিণাত্য ও গাঙ্গেয় সমভূমির বাবুল অধ্যুষিত বনাঞ্চলও উল্লেখযোগ্য। গ্রামীণ ভারতে নিম গাছ ওষধি রূপে ব্যবহৃত হয়। পিপল গাছ মহেঞ্জোদাড়োর প্রতীকচিহ্নে দেখা গেছে। এই গাছের তলাতেই গৌতম বুদ্ধ সিদ্ধি বা বোধিলাভ করেছিলেন ও তার নাম হয়েছিল 'গৌতম বুদ্ধ'। তাই বু্দ্ধগয়ায় অবস্থিত ওই বৃক্ষটিকে বলা হয় 'বোধিবৃক্ষ'। বহু ভারতীয় প্রজাতি গন্ডোয়ানায় জাত টেক্সা থেকে উদ্ভূত। উপদ্বীপীয় ভারতের ক্রমসরণ ও ইউরেশীয় ভূমিভাগের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে প্রজাতিগুলির মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়। যদিও অগ্ন্যুৎপাত ও অন্যান্য জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে বিগত ২ কোটি বছরে বহু দেশজ প্রজাতিই অবলুপ্ত হয়ে যায়। এর ঠিক পরেই দুটি প্রাণীভৌগোলিক পথে উত্থানশীল হিমালয়ের দুই পাশ দিয়ে ভারতে স্তন্যপায়ী প্রাণীরা প্রবেশ করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতের মোট স্তন্যপায়ী ও পাখিদের যথাক্রমে মাত্র ১২.৬% ও ৪.৫% দেশজ; যেখানে দেশের সরীসৃপ ও উভচরদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৪৫.৮% ও ৫৫.৮%। উল্লেখযোগ্য দেশীয় প্রাণী হল নীলগিরি লেঙ্গুর, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বাদামি ও গাঢ় লাল রঙের বেডোমি ব্যাঙ। ভারত ১৭২টি (২.৯%) প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন-গণিত লুপ্তপ্রায় প্রাণীর আবাসস্থল। এর মধ্যে রয়েছে এশীয় সিংহ, বাংলা বাঘ, ভারতীয় শ্বেতপৃষ্ঠ শকুন (বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত)। বিগত দশকগুলিতে মানুষের অরণ্য আগ্রাসন বন্যপ্রাণী অবলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ১৯৩৫ সালে চালু হওয়া জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষিত স্থানের ব্যবস্থাটিকে ব্যাপ্ত করা হয়। ১৯৭২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও বাঘ সংরক্ষণের জন্য ব্যাঘ্র প্রকল্প চালু হয়। এর সঙ্গে ১৯৮০ সালে প্রবর্তিত হয় অরণ্য সংরক্ষণ আইন ভারতে অভয়ারণ্যের সংখ্যা পাঁচশোর অধিক। সঙ্গে দেশে ১৩টি জৈবক্ষেত্র সংরক্ষণও করা হয়। এর মধ্যে চারটি বিশ্ব জৈবক্ষেত্র সংরক্ষণ নেটওয়ার্কের অন্তর্গত। রামসর কনভেনশন অনুসারে ভারতে পঁচিশটি জলাভূমি আছে; যার একটি কলকাতা মহানগরীর পূর্বভাগে অবস্থিত। রাজনীতি ও সরকার রাজনীতি ভারতীয় প্রজাতন্ত্র বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। স্বাধীনোত্তর কালে অধিকাংশ সময় জুড়েই এদেশের শাসনকর্তৃত্ব ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আওতাধীন। অন্যদিকে ভারতের রাজ্য-রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করেছে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (সংক্ষেপে "কংগ্রেস"), ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) (সিপিআই(এম)) প্রভৃতি জাতীয় দল ও একাধিক আঞ্চলিক পার্টি। দুটি সংক্ষিপ্ত পর্যায় বাদে ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল অবধি জাতীয় কংগ্রেস সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মর্যাদা ভোগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ঘোষিত জরুরি অবস্থা-জনিত গণঅসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করে জনতা পার্টি সরকার গঠন করে। ১৯৮৯ সালে জনতা দলের নেতৃত্বে জাতীয় ফ্রন্ট বামফ্রন্টের সহযোগিতায় নির্বাচনে জয়লাভ করে দু-বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে। ১৯৯১ সালে কোনও পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ না করতে পারায় কংগ্রেস পি ভি নরসিমা রাওয়ের প্রধানমন্ত্রিত্বে একটি সংখ্যালঘু সরকার গঠন করে। এই সরকার অবশ্য পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সক্ষম হয়। ১৯৯৬-১৯৯৮ সালটি কেন্দ্রীয় সরকারের অস্থিরতার যুগ। এই সময় একাধিক স্বল্পকালীন জোট কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালে সংক্ষিপ্ত সময়কালের জন্য বিজেপি সরকার গঠন করে। তারপর কংগ্রেস ও বিজেপি-বিরোধী যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে বিজেপির নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) ক্ষমতা দখল করে। এই সরকারই ভারতের প্রথম পূর্ণ সময়কালের অকংগ্রেসি সরকার। ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট (ইউপিএ) লোকসভায় বিপুল সংখ্যক আসনে জয়লাভ করেছিল এবং বিজেপি-বিরোধী বাম সাংসদদের সহায়তায় সরকার গঠন করেছিল। ইউপিএ ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় এসেছিল। তবে বামদলগুলি আর এই জোটের সমর্থক নয়। ২০১৪-এ বিজেপি-র নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) পুনরায় কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় এসেছে এবং এর ফলে নরেন্দ্র মোদী ভারতের চতুর্দশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৯ সালে মোদী দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন। সরকার ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রবর্তিত ভারতীয় সংবিধান বিশ্বের বৃহত্তম ও সর্বাধিক বিস্তারিত ব্যাখ্যাসমৃদ্ধ সংবিধান। সংবিধানের প্রস্তাবনা অংশে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র রূপে বর্ণিত হয়েছে। ভারতে প্রচলিত দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ওয়েস্টমিনিস্টার-ধাঁচের একটি সংসদ ব্যবস্থা। এদেশের সরকার প্রথাগতভাবে ‘আধা-যুক্তরাষ্ট্রীয়’ সরকার ব্যবস্থা হিসাবে বর্ণিত হয়; যার বৈশিষ্ট্য হল একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল একাধিক রাজ্য সরকারের সহাবস্থান। যদিও ১৯৯০-এর দশকের শেষভাগ থেকে রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক সংস্কার ও পরিবর্তনের ফলে রাজ্য সরকারগুলির ক্ষমতার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি দেশকে চালিত করছে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার দিকে। রাষ্ট্রপতি হলেন ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি পরোক্ষভাবে একটি নির্বাচক মণ্ডলী কর্তৃক পাঁচ বছরের সময়কালের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। অন্যদিকে ভারতের সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। অধিকাংশ শাসনক্ষমতা ন্যস্ত থাকে তার হাতেই। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীকে প্রথাগতভাবে সংসদের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ট আসনপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দল বা জোটের সমর্থন লাভ করতে হয়। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রী পরিষদ (যার কার্যনির্বাহী সমিতি হল ক্যাবিনেট)—এই নিয়ে গঠিত ভারতের শাসনবিভাগ। দপ্তরযুক্ত মন্ত্রীদের সকলকেই সংসদের কোনও না কোনও কক্ষের সদস্য হতে হয়। ভারতীয় সংসদীয় ব্যবস্থায় শাসনবিভাগ আইনবিভাগের অধস্তন। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রী পরিষদকে সংসদের নিম্নকক্ষের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়। ভারতের আইনবিভাগ হল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ। এটি গঠিত হয়েছে রাজ্যসভা নামক একটি উচ্চকক্ষ ও লোকসভা নামক একটি নিম্নকক্ষ নিয়ে। রাজ্যসভার সদস্যসংখ্যা ২৪৫; এঁদের দপ্তরকাল ছয় বছর। এঁদের অধিকাংশই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির বিধানসভা থেকে রাজ্যের জনসংখ্যার ভিত্তিতে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয়ে আসেন। অন্যদিকে লোকসভার ৫৪৫ জন সদস্যের মধ্যে ৫৪৩ জন পাঁচ বছরের মেয়াদে নিজ নিজ নির্বাচন কেন্দ্র থেকে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এছাড়া রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে সংসদে ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায় এর যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি নেই, তবে তিনি দুই জন সদস্যকে উক্ত সম্প্রদায় থেকে সাংসদ মনোনীত করতে পারেন। ভারতে এককেন্দ্রিক ত্রি-স্তর বিচারব্যবস্থা প্রচলিত। এই বিচারব্যবস্থা প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সর্বোচ্চ আদালত, ২১টি উচ্চ আদালত ও অসংখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতের সমন্বয়ে গঠিত। মৌলিক অধিকার, কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিবাদ ও উচ্চ আদালতের আপিল বিচার এক্তিয়ার সংক্রান্ত মামলাগুলির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের মূল বিচার এক্তিয়ারের অন্তর্গত। এই বিচারব্যবস্থা স্বতন্ত্র এবং আইন ঘোষণা এবং সংবিধান-বিরোধী কেন্দ্রীয় বা রাজ্য আইন প্রতিহত করার ক্ষমতাযুক্ত। সংবিধানের অভিভাবকত্ব ও ব্যাখ্যাদান সুপ্রিম কোর্টের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার অন্তর্গত। রাজনৈতিক বিভাগ ভারত ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলবিশিষ্ট একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সাধারণতন্ত্র। ভারতে প্রত্যেক রাজ্যে নির্বাচিত রাজ্য সরকার অধিষ্ঠিত রয়েছে; পুদুচেরি ও দিল্লি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেও নির্বাচিত সরকার রয়েছে। অপর পাঁচটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রাষ্ট্রপতির প্রত্যক্ষ শাসনাধীন; এই অঞ্চলগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার উপরাজ্যপাল বা প্রশাসক নিয়োগ করে থাকেন। ১৯৫৬ সালে রাজ্য পুনর্গঠন আইন বলে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যগুলি স্থাপিত হয়। তারপর থেকে এই কাঠামোটি মোটামুটি অপরিবর্তিত রয়েছে। গ্রাসরুট স্তরে শাসন ও প্রশাসন পরিচালনার লক্ষ্যে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি মোট ৭৩৯টি জেলায় বিভক্ত। জেলাগুলি আবার তহশিল, তালুক বা মহকুমায় বিভক্ত, যা আবার পৌরসভা ও পঞ্চায়েতে বিভক্ত। বৈদেশিক সম্পর্ক ও সামরিক বাহিনী ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আন্তরিক। ১৯৫০-এর দশকে ভারত আফ্রিকা ও এশিয়ার ইউরোপীয় উপনিবেশগুলির স্বাধীনতার স্বপক্ষে সওয়াল করে। শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ ও মালদ্বীপে অপারেশন ক্যাকটাস—এই দুই ক্ষেত্রে ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সামরিক মধ্যস্থতায় অংশ নেয়। কমনওয়েলথের এক সদস্য ভারত, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ভারত-চীন যুদ্ধ ও ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আন্তরিক হয়ে ওঠে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়। ঠান্ডা যুদ্ধের সমাপ্তি পর্যন্ত সেই সম্পর্ক একই রকম থাকে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের তিনটি যুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় মিত্র বাহিনী বাংলাদেশকে সহায়তা করে। এছাড়াও ১৯৮৪ সালে সিয়াচেন হিমবাহ ও ১৯৯৯ সালে কার্গিলকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। বর্তমানকালে, ভারত যে সকল প্রতিষ্ঠানে নিজ প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে সেগুলি হল অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান), সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওন্যাল কো-অপারেশন (সার্ক) ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। ভারত চারটি মহাদেশে রাষ্ট্রসংঘের ৩৫টি শান্তিরক্ষা অভিযানে প্রায় ৫৫,০০০ সেনা ও পুলিশ প্রেরণ করেছে। ব্যাপক সমালোচনা ও সামরিক অনুমোদন সত্ত্বেও পরমাণু কর্মসূচির উপর সার্বভৌমত্ব রক্ষার খাতিরে ভারত সর্বব্যাপী পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি (সিটিবিটি) ও পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ চুক্তি (এনপিটি)-তে সই করতে উপর্যুপরি অস্বীকার করছে। ভারত সরকারের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলির সঙ্গেও ভারত সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। স্থলসেনা, বায়ুসেনা ও নৌসেনা নিয়ে গঠিত ভারতের সামরিক বাহিনী বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনী। এই সামরিক বাহিনীর সমান্তরালে কাজ করে থাকে একাধিক সহকারী বাহিনী; যথা: আধাসামরিক বাহিনী, উপকূলরক্ষী বাহিনী ও স্ট্রাটেজিক ফোর্সেস কম্যান্ড। রাষ্ট্রপতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক। রাশিয়া, ফ্রান্স ও ইসরায়েল ভারতের প্রধান অস্ত্রসরবরাহকারী রাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা সহকারী দেশ। প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গ্যানাইজেশন বা ডিআরডিও) ব্যালিস্টিক মিসাইল, যুদ্ধবিমান, যুদ্ধট্যাঙ্ক সহ দেশজ অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের কাজ তত্ত্ববধান করে, যাতে সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে ভারতকে অধিক মাত্রায় বিদেশি আমদানির উপর নির্ভর করতে না হয়। ১৯৭৪ সালে স্মাইলিং বুদ্ধ ও ১৯৯৮ সালে পোখরান-২ নামে মোট ছয়টি প্রাথমিক পরমাণু পরীক্ষণের মাধ্যমে ভারত পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। যদিও ভারতের ঘোষিত পরমাণু নীতি হল “প্রথম প্রয়োগ নয়”। ১০ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে ভারত-মার্কিন বেসামরিক পরমাণু চুক্তি সাক্ষরিত হয়। তার পূর্বেই আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা ও পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী ভারতের উপর থেকে পরমাণু প্রযুক্তি ক্রয়বিক্রয়ের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ফলে ভারত কার্যত পরিণত হয় বিশ্বের ষষ্ঠ পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে। অর্থনীতি ১৯৫০-এর দশক থেকে ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত ভারত সমাজতান্ত্রিক-ধাঁচের অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করে চলে। স্বাধীনতা-উত্তর যুগের অধিকাংশ সময় জুড়ে ভারতে যে আধা-যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল, তাতে বেসরকারি উদ্যোগ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ওপর কঠোর সরকারি বিধিনিষেধ আরোপিত থাকত। ১৯৯১ সালে অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে ভারত তার বাজার উন্মুক্ত করে দেয়। বিদেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উপর সরকারি কর্তৃত্ব শিথিল করা হয়। এর ধনাত্মক প্রভাবে মার্চ ১৯৯১ সালে ৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় ৪ জুলাই, ২০০৮ তারিখে বেড়ে দাঁড়ায় ৩০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ঘাটতি কমে আসে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য বাজেটগুলিতে। যদিও সরকারি মালিকানাধীন সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণ এবং কোনও কোনও সরকারি খাত বেসরকারি ও বৈদেশিক অংশীদারদের নিকট মুক্ত করে দেওয়ায় রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ভারতের মোট স্থুল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি $১.২৪৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ক্রয়ক্ষমতা সমতার (পিপিপি) পরিমাপে $৪.৭২৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতূল্য। জিডিপি'র মানদণ্ডে ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। চলতি মূল্যে ভারতের মাথাপিছু আয় $৯৭৭ মার্কিন ডলার (বিশ্বে ১২৮তম) যা ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) ভিত্তিক পরিমাপে $২,৭০০ মার্কিন ডলারের সমতূল্য (বিশ্বে ১১৮তম)। বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে কৃষি প্রধান দেশ হিসাবে পরিচিত ভারতের বর্তমান জিডিপিতে পরিষেবা খাতের অবদান ৫৪ শতাংশ; ইতোমধ্যে কৃষিখাতের অবদান হ্রাস পেয়ে ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে এবং শিল্পখাতের অবদান মাত্র ১৮ শতাংশ। বিগত দুই দশকে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি ভারতের গড় বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৭ শতাংশ। ৫১ কোটি ৬৩ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমশক্তির দেশ। এই শক্তির ৬০ শতাংশ নিয়োজিত কৃষিখাতে ও কৃষিসংক্রান্ত শিল্পগুলিতে, ২৮ শতাংশ পরিষেবা ও পরিষেবা-সংক্রান্ত শিল্পে এবং ১২ শতাংশ নিযুক্ত শিল্পখাতে। প্রধান কৃষিজ ফসলগুলি হল ধান, গম, তৈলবীজ, তুলা, পাট, চা, আখ ও আলু। প্রধান শিল্পগুলি হল অটোমোবাইল, সিমেন্ট, রাসায়নিক, বৈদ্যুতিন ভোগ্যপণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, যন্ত্রশিল্প, খনি, পেট্রোলিয়াম, ভেষজ, ইস্পাত, পরিবহন উপকরণ ও বস্ত্রশিল্প। ভারতের প্রাকৃতিক সম্পদগুলি হল আবাদি জমি, বক্সাইট, ক্রোমাইট, কয়লা, হীরক, আকরিক লোহা, চুনাপাথর, ম্যাঙ্গানিজ, অভ্র, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল ও টাইটানিয়াম আকরিক। ভারতের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শক্তির চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে, ভারত খনিজ তেলজাত পণ্যের ষষ্ঠ বৃহত্তম ও কয়লার তৃতীয় বৃহত্তম ভোক্তা। বিগত দুই দশকের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারত বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দারিদ্র্যপীড়িত রাষ্ট্র। শিশু-অপুষ্টির হারও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় ভারতে সর্বাধিক: ২০০৭ সালের হিসেব অনুযায়ী ৪৬ শতাংশ)। তবে বিশ্বব্যাঙ্ক নির্ধারিত দৈনিক ১.২৫ মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখার (২০০৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, ক্রয়ক্ষমতা সমতা নামমাত্র হিসেবে নগরাঞ্চলে দৈনিক ২১.৬ টাকা ও গ্রামাঞ্চলে দৈনিক ১৪.৩ টাকা) নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ১৯৮১ সালে ৬০ শতাংশ থেকে ২০০৫ সালে ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে ভারত মন্বন্তর প্রতিরোধ করতে পারলেও, দেশের অর্ধেক শিশু ওজন ঘাটতিতে ভুগছে। এই হার সারা বিশ্বের নিরিখে কেবল উচ্চই নয়, এমনকী সাব-সাহারান আফ্রিকার হারের প্রায় দ্বিগুণ। সাম্প্রতিককালে, ভারতের বহুসংখ্যক শিক্ষিত ইংরেজি-পটু প্রশিক্ষিত পেশাদারগণ বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা, মেডিক্যাল পর্যটন ও বিজ্ঞাপনের কাজে নিযুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে ভারত সফটওয়্যার ও অর্থসংক্রান্ত, গবেষণাসংক্রান্ত ও প্রকৌশলগত পরিষেবার এক বৃহৎ রপ্তানিকারক। ২০০৭ সালে রফতানি ও আমদানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে $১৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও $২১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বস্ত্র, রত্ন, ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্যাদি ও সফটওয়্যার ভারতের প্রধান রপ্তানি পণ্য। প্রধান প্রধান আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত তেল, যন্ত্রপাতি, সার ও রাসায়নিক দ্রব্য। ভারতের প্রধানতম বাণিজ্য সহযোগী হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সদরদপ্তর দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী নামে খ্যাত মুম্বই মহানগরীতে অবস্থিত। জনপরিসংখ্যান ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাষ্ট্র। ২০১৮ সালে দেশটির আনুমানিক জনসংখ্যা প্রায় ১৩৫ কোটি। ভারতের জনসংখ্যা পৃথিবীর মোট জন সংখ্যার প্রায় ১৭.৭৪ শতাংশ। সাম্প্রতিক কালে বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রতি হাজার জনে ১১.১০ জন বা ১.১১ শতাংশ। গড়ে প্রতি দুই সেকেন্ডে জনসংখ্যা একজন করে বাড়ে। যদিও সাম্প্রতিক দশকগুলিতে গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসনের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতে শহরাঞ্চলীয় জনসংখ্যা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, তথাপি প্রায় ৬৬.৮০ শতাংশ ভারতবাসী গ্রামাঞ্চলে বাস করেন। জনসংখ্যার ৩৩.২০ শতাংশ শহরে বসবাস করে। এ দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনবসতি ৪৫৫ জন। ভারতের বৃহত্তম মহানগরগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মুম্বই (পূর্বনাম বম্বে বা বোম্বাই), নয়াদিল্লি, বেঙ্গালুরু (পূর্বনাম ব্যাঙ্গালোর), কলকাতা, হায়দ্রাবাদ ও আহমেদাবাদ। ২০১৩-১৫ কালপর্বে জাতীয় পর্যায়ে লিঙ্গানুপাত প্রতি হাজার পুরুষের বিপরীতে ৯০০ জন নারী। ২০১১-এর জনমিতি অনুযায়ী ভারতে সাক্ষরতার হার ৭৪.০৪ শতাংশ, যা পুরুষদের মধ্যে ৮২.১৪ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৬৫.৪৬ শতাংশ। সাক্ষরতার সর্বনিম্ন হার বিহার রাজ্যে: ৬৩.৮২ শতাংশ। শহর-গ্রাম স্বা‌ক্ষরতার পার্থ‌ক্য ২০০১ সালে ছিল ২১.২ শতাংশ, যা ২০১১ সালে নেমে আসে ১৬.১ শতাংশে। গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে স্বা‌ক্ষরতা বৃদ্ধির হার শহর এলাকার তুলনায় দ্বিগুণ। সাক্ষরতার হার সর্বাধিক কেরল রাজ্যে (৯১%)। ভাষা ভারতের দুটি প্রধান ভাষাগোষ্ঠী হল ইন্দো-আর্য (মোট জনসংখ্যার ৭৪%) ও দ্রাবিড় (মোট জনসংখ্যার ২৪%)। অপরাপর ভাষাগোষ্ঠীগুলি হল অস্ট্রো-এশিয়াটিক ও তিব্বতি-বর্মী ভাষাগোষ্ঠী। ভারতের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীয় ভাষা হিন্দি যা কি-না কেন্দ্রীয় সরকারের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে নির্ধারিত। "সহকারী সরকারি ভাষা" ইংরেজি প্রশাসন ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ইংরেজির প্রাধান্য প্রশ্নাতীত। ভারতের সংবিধান বাংলা-সহ ২২টি ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। এগুলি হয় প্রচলিত, নয় ধ্রুপদি ভাষা। প্রাচীনকাল থেকেই ভারতে ধ্রুপদি ভাষার মর্যাদা পেয়ে আসা তামিল ও সংস্কৃত এবং কন্নড় ও তেলুগু ভাষাকে ভারত সরকার নিজস্ব একটি যোগ্যতাসূচকবলে ধ্রুপদি ভাষার মর্যাদা দান করেছে। ভারতে উপ-ভাষার সংখ্যা ১,৬৫২টি। ধর্ম‌ ১১০ কোটিরও বেশি (৭৯.৮%) ভারতবাসী হিন্দু, যদিও হিন্দু বলতে সিন্ধু নদের অববাহিকায় বসবাসরত সকলকেই বোঝায়। অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়গুলোর মধ্যে রয়েছে মুসলমান (১৪.২%), খ্রিস্টান (২.৩%), শিখ (১.৭%), বৌদ্ধ (০.৭%), জৈন (০.৪%), বাকি (০.৯%) ইহুদি, পারসি ও বাহাই, আদিবাসী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষ। উল্লেখ্য, ভারতে বিশ্বের বৃহত্তম হিন্দু, শিখ, জৈন, জরাথ্রুষ্টবাদী ও বাহাই ধর্মা‌বলম্বী জনসংখ্যা রয়েছে এবং ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা সমগ্র বিশ্বের নিরিখে তৃতীয়-বৃহত্তম এবং অ-মুসলমান প্রধান দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তম। দেশে আদিবাসী জনসংখ্যা ৮.১%, যার মধ্যে ৯৮% আদিবাসীরা হিন্দুধর্ম পালন করে থাকে। সংস্কৃতি আফ্রিকা মহাদেশের পরেই ভারত সংস্কৃতি, ভাষা ও জাতিগতভাবে বিশ্বে সর্বাধিক বৈচিত্র্যপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল। "সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য" ভারতীয় সংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই সংস্কৃতি স্বকীয় ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি বৈদেশিক আক্রমণকারী ও বহিরাগত জাতিগুলির থেকে গ্রহণ করা রীতিনীতির সমন্বয়, সংস্কৃতি ,ঐতিহ্য ও ধারণা অঙ্গীভূত হয়ে এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের সংস্কৃতির ওপর নিজের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। স্থাপত্য ভারতীয় স্থাপত্য এমন একটি বিষয় যার মধ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্যময় রূপটি ধরা পড়ে। তাজমহল ও অন্যান্য মুঘল স্থাপত্য নিদর্শন তথা দ্রাবিড় স্থাপত্য নিদর্শনগুলির মধ্যে ভারত ও বহির্ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাচীন ও স্থানীয় ঐতিহ্যের সম্মিলন লক্ষ করা যায়। ভারতের স্থানীয় স্থাপত্যশৈলিগুলিও দেশের এক-একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক স্থাপত্য-বৈচিত্র্যের সাক্ষী। পরিবেশন শিল্পকলা ভারতীয় সঙ্গীতের জগৎটি গঠিত হয়েছে ধ্রুপদি ও আঞ্চলিক সঙ্গীত ধারার সংমিশ্রণে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত দুটি ধারায় বিভক্ত – উত্তর ভারতের হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকী সঙ্গীত। এই দুই প্রধান সঙ্গীত ধারা থেকে আবার উৎসারিত হয়েছে অনেক উপধারা। আঞ্চলিক জনপ্রিয় সঙ্গীতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রসঙ্গীত, হিন্দি ফিল্মি গান ও ইন্ডি-পপ এবং বাউল ও অন্যান্য বিভিন্ন প্রকার লোকসঙ্গীত। ভারতীয় নৃত্যকলাও "লোক" ও "ধ্রুপদী" — এই দুই প্রধান ভাগে বিভক্ত। ভারতের বিখ্যাত লোকনৃত্যগুলি হল পাঞ্জাবের ভাংড়া, আসাম বিহু নৃত্য, পশ্চিমবঙ্গের ছৌ নাচ এবং রাজস্থানের ঘুমার। ভারতের সঙ্গীত নাটক অকাদেমি দেশের আটটি নৃত্যকলাকে ধ্রুপদি ভারতীয় নৃত্য আখ্যা দিয়েছে। এগুলি হল তামিলনাড়ুর ভরতনাট্যম, উত্তর প্রদেশের কত্থক, কেরলের কথাকলি ও মোহিনীআট্টম, অন্ধ্রপ্রদেশের কুচিপুড়ি, মণিপুরের মণিপুরি, ওড়িশার ওড়িশি এবং আসামের সত্রিয় নাচ। এই নৃত্যশৈলিগুলি বর্ণনাত্মক ও পৌরাণিক ঘটনাকেন্দ্রিক। সাহিত্য ভারতীয় নাটকের বৈশিষ্ট্য হল সঙ্গীত, নৃত্য ও তাৎক্ষণিক বা লিখিত সংলাপের যুগলবণ্দি। এর বিষয়বস্তু কখনও পুরাণ থেকে, কখনো মধ্যযুগীয় প্রেমকাহিনিগুলি থেকে, কখনো আবার একালের সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাবলি থেকে গৃহীত। ভারতের লোকনাট্যের মধ্যে গুজরাটের ভাবাই, পশ্চিমবঙ্গের যাত্রা, উত্তর ভারতের নৌটঙ্কি ও রামলীলা, মহারাষ্ট্রের তামাশা, অন্ধ্রপ্রদেশের বুরাকথা, তামিলনাড়ুর তেরুককুত্তু ও কর্ণাটকের যক্ষগণ উল্লেখযোগ্য। ভারতের প্রাচীনতম সাহিত্য প্রথমে মৌখিকভাবে ও পরে লিখিত আকারে প্রচলিত হয়। এই রচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেদ, ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারত, নাটক অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ ইত্যাদি সংস্কৃত সাহিত্যের ধ্রুপদী কীর্তিসমূহ এবং তামিলে রচিত সঙ্গম সাহিত্য। আধুনিক কালের ভারতীয় সাহিত্যিকদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য হলেন ১৯১৩ সালে দেশের প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এছাড়াও ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যরচনার জন্য ভারতীয় অথবা ভারতীয় বংশোদ্ভুত যেসকল লেখকগণ সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছেন তারা হলেন অমিতাভ ঘোষ, সালমান রুসদি, মার্কিন-প্রবাসী বাঙালি সাহিত্যিক ঝুম্পা লাহিড়ী, নোবেলজয়ী ব্রিটিশ-ভারতীয় সাহিত্যিক ভি এস নাইপল প্রমুখ। চলচ্চিত্র ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প সমগ্র বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্প। বাণিজ্যিক হিন্দি সিনেমা প্রস্তুতকারক বলিউড বিশ্বের সর্বাপেক্ষা সৃষ্টিশীল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। এছাড়াও বাংলা, কন্নড়, মালয়ালম, মারাঠি, তামিল ও তেলুগু ভাষায় ঐতিহ্যবাহী চলচ্চিত্র শিল্পের আছে। ভারতের প্রথম সারির চলচ্চিত্র শিল্প কেন্দ্রগুলি হল বলিউড (হিন্দি), টলিউড (বাংলা ও তেলুগু), কলিউড (তামিল), মলিউড (মালয়ালম), স্যান্ডেলউড বা চন্দনবন (কন্নড়), ও ভোজিউড (ভোজপুরি)। রন্ধনশৈলী ভারতীয় রন্ধনশৈলীর বিশেষত্ব হল বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ আঞ্চলিক রন্ধনপ্রণালী এবং ভেষজ ও মশলার অভিজাত প্রয়োগ। দেশের প্রধান খাদ্য ভাত (পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে) ও রুটি (মূলত উত্তর ভারতে)। পোশাক ভারতে পোশাকের ঐতিহ্য রং, ধরন ও জলবায়ুর মতো বিভিন্ন কারণে অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন। থানকাপড়ের পোশাক হিসাবে মহিলাদের ক্ষেত্রে শাড়ি ও পুরুষদের ক্ষেত্রে ধুতি বা লুঙ্গি বিশেষ জনপ্রিয়। এছাড়া সেলাই-করা পোশাকের মধ্যে মহিলাদের সালোয়ার-কামিজ ও পুরুষদের কুর্তা-পাজামা বা ইউরোপীয়-ধাঁচে ট্রাউজার্স ও শার্ট বিশেষভাবে প্রচলিত। উৎসব ভারতে উৎসব প্রকৃতিগতভাবে ধর্মীয়। যদিও অনেক ধর্ম ও জাতি নিরপেক্ষ উৎসবও পালিত হয়ে থাকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব এবং পূজা-পার্বণ গুলোর মধ‍্যে দীপাবলি, গণেশ চতুর্থী, হোলি, ওণম্, দুর্গাপূজা, রথযাত্রা, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, মকরসংক্রান্তি, শিবরাত্রি, রামনবমী; মুসলমান সম্প্রদায়ের ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা; খ্রিষ্টানদের বড়দিন, বুদ্ধজয়ন্তী, বৈশাখী প্রভৃতি কয়েকটি জনপ্রিয় উৎসব। ভারতে তিনটি জাতীয় উৎসব পালিত হয়; এগুলি হল স্বাধীনতা দিবস, সাধারণতন্ত্র দিবস ও গান্ধী জয়ন্তী। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক উৎসবও যথেষ্ট উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়। ধর্মাচরণও দৈনন্দিন ও গণজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে গণ্য হয়। সমাজ-ব্যবস্থা ভারতে সনাতন পারিবারিক মূল্য বিশেষ সম্মানের অধিকারী। একাধিক প্রজন্মের মিলনক্ষেত্র পিতৃতান্ত্রিক যৌথ পরিবারগুলিই ভারতীয় পরিবারতন্ত্রের আদর্শ বলে বিবেচিত হয়। যদিও আজকাল নগরাঞ্চলগুলিতে ছোটো ছোটো নিউক্লিয়ার পরিবারের উদ্ভব ঘটতে দেখা যায়। ভারতে বিবাহ আয়োজিত হয় পাত্র ও পাত্রীর পিতামাতা ও অন্যান্য গুরুজনস্থানীয় আত্মীয়বর্গের সম্মতিক্রমে। আয়োজিত বিবাহ ভারতে এক অতিমাত্রায় লক্ষিত বিবাহরীতি। বিবাহবন্ধন সারাজীবনের বন্ধন বলে বিবেচিত হয়। তাই এদেশে বিবাহবিচ্ছেদের হারও অত্যন্ত কম। ভারতে বাল্যবিবাহ প্রথা আজও প্রচলিত যদিও বাল্যবিবাহের হার ক্রমহাসমান। ইউনিসেফের স্যাম্পেল সার্ভে এবং ভারতের জনগণনা অনুযায়ী ২০০৬-এ যেখানে ৪৭% নারীর বিবাহ হত ১৮ বছর বয়সের আগে, ২০১৬ সালে সেই স্ংখ্যা ২৭%। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে অতি প্রাচীন কাল থেকেই ভারত তার নিজস্ব স্বাক্ষর রেখে এসেছে। খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকে ভারতীয় ধাতুবিদগণ দিল্লির লৌহস্তম্ভটি নির্মাণ করেন। বেদাঙ্গ জ্যোতিষ গ্রন্থে সেযুগের মহাকাশ পর্যবেক্ষণের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিকতাবাদ প্রস্তাবনার ১০০০ বছর আগেই ভারতীয় গণিতবিদ তথা জ্যোতির্বিদ আর্যভট্ট প্রাচীন বিশ্বধারণার ভ্রান্ততা প্রমাণ করেছিলেন। প্রাচীন বিশ্বে একমাত্র ভারতেই গড়ে উঠেছিল হীরের খনি। ভারতীয় গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতবিদদের অন্যতম বলে বিবেচিত হন। ১৯২৮ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন ভারতীয় পদার্থবিদ চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন। স্বাধীনোত্তর ভারতকে একটি দরিদ্র রাষ্ট্র বলে বিবেচনা করা হলেও, স্বাধীনতা অর্জনের পাঁচ দশকের মধ্যেই এই দেশ প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার এক মহাশক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সাক্ষরতার হার ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নগরকেন্দ্রের উদ্ভব ভারতের এই প্রযুক্তিগত উত্থানের কারণ। ১৯৭৫ সালে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ আর্যভট্টের উৎক্ষেপণ, তার পূর্ববর্তী বছরে স্মাইলিং বুদ্ধ নামে এক ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষণ, দূরসংযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পারমাণবিক চুল্লি ও হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা পরিচালিত ভাভা পরমাণু অনুসন্ধান কেন্দ্রের মতো গবেষণা কেন্দ্রের বিকাশ ভারতের উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক সাফল্য বলে বিবেচিত হয়। লো-আর্থ, মেরু ও জিওস্টেশনারি কক্ষপথে উপগ্রহ উৎক্ষেপণের এক দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে ভারত। এএসএলভি, পিএসএলভি, জিএসএলভি ও সর্বোপরি ভারতীয় জাতীয় উপগ্রহ ব্যবস্থা কৃত্রিম উপগ্রহ সিরিজগুলি ভারতের সফল মহাকাশ-কর্মসূচির স্বাক্ষর। ২০০৮ সালে চাঁদের মাটিতে অবতীর্ণ হয় প্রথম ভারতীয় মহাকাশযান চন্দ্রযান-১। চন্দ্রযান-১-এর পাঠানো তথ্য থেকে নাসার তত্ত্বাবধানে ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে মুন মিনারেলজি ম্যাপার যন্ত্রে বিস্ময়করভাবে প্রভূত পরিমাণ হাইড্রক্সিল আয়ন এবং বরফের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। দেশীয় বিমানশক্তির ক্ষেত্রে বৈকল্পিক শক্তি হিসেবে অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার ও এলসিএ তেজস-এর নাম করা যায়। লারসেন অ্যান্ড টাব্রো, ডিএফএল-এর মতো কোম্পানিগুলির সাহায্যে আবাসন ও পরিকাঠামো শিল্পেও ভারত আজ উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রসর। ২০০৩ সালে সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অফ অ্যাডভান্সড কম্পিউটিং তৈরি করে ভারতের প্রথম সুপারকম্পিউটার পরম পদ্ম। এটি পৃথিবীর দ্রুততম সুপারকম্পিউটারগুলির অন্যতম। ১৯৯০-এর দশকে অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লব তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় এক অগ্রণী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে বিশ্বের মঞ্চে উপস্থাপিত করে। বর্তমানে আইবিএম, মাইক্রোসফট, সিসকো সিস্টেমস, ইনফোসিস, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস, উইপ্রো ও অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলি ভারতের বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই প্রভৃতি শহরে তাদের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেছে। খেলাধুলা ভারতের সুনির্দিষ্ট জাতীয় খেলা নেই। আনেকে একে কাবাডি কিংবা ফিল্ড হকি মনে করেন। কিন্তু বিষয়টি সুস্পষ্ট নয়। কাবাডি বিশ্বকাপে ভারত জয়ের হ্যাটট্রিকও করেছে। ইন্ডিয়ান হকি ফেডারেশনের উপর এদেশের হকি পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত। ভারতীয় হকি দল ১৯৭৫ সালের পুরুষদের হকি বিশ্বকাপ এবং পুরুষদের অলিম্পিক গেমসে পাঁচবার স্বর্ণপদক বিজয়ী। ফুটবল খেলা ভারতে জনপ্রিয়। ২০১৮-তে কলকাতার বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রথম অনূর্ধ্ব ১৭ যুব বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলায় ইংল্যান্ড বিজয়ী হয়। আয়োজক দেশ হিসেবে ভারত খেলতে পেয়েও উল্লেখযোগ্য ফল পায়নি। ভারতের ফুটবল প্রতিযোগিতাগুলো হল: জাতীয় ফুটবল সন্তোষ ট্রফি, নেহেরু কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা, ফেডারেশন কাপ, নেহেরু কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা, ডুরান্ড কাপ এবং ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। ভারতে ফুটবল খেলা পরিচালনা করে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)। যদিও ভারতে সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা হল ক্রিকেট। ভারত জাতীয় ক্রিকেট দল ১৯৮৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ, ২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্ব টোয়েন্টি-২০ এবং ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ বিজয়ী। এছাড়াও ২০০৩ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ও ২০১৪ সালে আইসিসি বিশ্ব টোয়েন্টি-২০ তে ফাইনালে পরাজিত হয়। ভারতে ক্রিকেট পরিচালিত হয় ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই) কর্তৃক। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রঞ্জি ট্রফি, দিলীপ ট্রফি, দেওধর ট্রফি, ইরানি কাপ ও চ্যালেঞ্জার সিরিজ। ভারতের জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা দেশে প্রভূত জনপ্রিয়তা ও নানাবিধ বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী। ভারতীয় দলের ডেভিস কাপ বিজয়ের পর থেকে ভারতে টেনিসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে ফুটবল পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব ভারত, গোয়া ও কেরলে বেশ জনপ্রিয়। ভারত জাতীয় ফুটবল দল বহুবার সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন কাপ জিতেছে। ভারত ১৯৫১ ও ১৯৮২ সালে এশিয়ান গেমস আয়োজন করেছিল। এছাড়াও ভারত ছিল ১৯৮৭ ও ১৯৯৬ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক দেশ ছিল; ভারত ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক দেশ। দাবা খেলার উদ্ভবও হয়েছিল ভারতে। দেশে গ্রান্ডমাস্টার দাবাড়ুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ দাবা ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় একটি খেলা। এছাড়াও দেশের অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় খেলা হল কাবাডি, খো খো, ও গুলি ডান্ডা ইত্যাদি। ভারতে প্রাচীন যোগব্যয়াম এবং বিভিন্ন ভারতীয় মার্শাল আর্ট, কালারিপ্পায়াত্তু, বার্মা কলাই ইত্যাদি আজও জনপ্রিয়। ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক ক্রীড়া পুরস্কার হল রাজীব গান্ধী খেলরত্ন ও অর্জুন পুরস্কার (খেলোয়াড়দের জন্য) এব দ্রোণাচার্য পুরস্কার (কোচিং-এর জন্য)। আরও দেখুন ভারতের রূপরেখা টীকা গ্রন্থপঞ্জি ইতিহাস রাজনীতি ও সমাজ Amrita Basu, Atul Kohli: Community Conflicts and the State in India. Oxford University Press, 2000, Paul R. Brass: The Politics of India Since Independence. Cambridge University Press, 1994, Paul R. Brass: The Production of Hindu-Muslim Violence in Contemporary India. University of Washington Press, 2003, John Keay: India: A History. HarperCollins, London 2000, Subrata K. Mitra, V. B. Singh: Democracy and Social Change in India. Sage, 1999, Peter Seele: Brains and Gold. Global Transformation Processes and Institutional Change in South Asia. Academia Verlag, 2007, Ramesh Chandra Thakur: The Government and Politics of India. MacMillan, 1995, Voll, Klaus; Beierlein, Dooren: Rising India – Europe´s partner? Berlin, 2006, Weißensee Verlag, ভূগোল উদ্ভিদ ও প্রাণী সংস্কৃতি . Yves Thoraval: The Cinemas of India (1896–2000). MacMillan, 2000, তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ভারত সরকারের সরকারি ওয়েবসাইট ভারতীয় অর্থ মন্ত্রকের সরকারি ওয়েবসাইট ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সরকারি ওয়েবসাইট ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের সরকারি ওয়েবসাইট ভারতীয় দূতাবাস ইকোনমিকস টাইমস – ভারতীয় অর্থনীতি সংক্রান্ত একটি অগ্রণী সংবাদপত্র ভারতের পর্যটনশিল্প টাইমস ফাউন্ডেশন – ভারতের একটি অগ্রণী সংবাদ সংস্থা কালচারোপিডিয়া - ভারতীয় সংস্কৃতি সংক্রান্ত বিশ্বকোষ ভারত (সিআইএ ফ্যাক্টবুক থেকে) ভারতের জনসংখ্যা (ভারত সরকারের জনগণনা সংক্রান্ত সরকারি ওয়েবসাইট) ভারতে সাক্ষরতার প্রসার ভারত (ইন্ডেক্সমন্ডি ডট কম থেকে) ভারতের ভাষাসমূহ (ভারতীয় ভাষা সংস্থানের সরকারি ওয়েবসাইট) ভারতের বিদেশনীতি ভারত সার্কের সদস্য রাষ্ট্র ব্রিক্‌স রাষ্ট্র এশিয়ার রাষ্ট্র ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রীয় দেশ প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ জি১৫ রাষ্ট্র জি২০ সদস্য উদারপন্থী গণতন্ত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কমনওয়েলথ প্রজাতন্ত্র ১৯৪৭-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল ভারতীয় উপমহাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ নির্বাচিত দেশ নিবন্ধ কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র ই৭ রাষ্ট্র সার্বভৌম রাষ্ট্র ফেডারেল প্রজাতন্ত্র এশিয়ায় প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ ও আশ্রিত রাজ্য সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/India
India
India, officially the Republic of India (ISO: Bhārat Gaṇarājya), is a country in South Asia. It is the seventh-largest country by area; the most populous country with effect from June 2023; and from the time of its independence in 1947, the world's most populous democracy. Bounded by the Indian Ocean on the south, the Arabian Sea on the southwest, and the Bay of Bengal on the southeast, it shares land borders with Pakistan to the west; China, Nepal, and Bhutan to the north; and Bangladesh and Myanmar to the east. In the Indian Ocean, India is in the vicinity of Sri Lanka and the Maldives; its Andaman and Nicobar Islands share a maritime border with Thailand, Myanmar, and Indonesia. Modern humans arrived on the Indian subcontinent from Africa no later than 55,000 years ago. Their long occupation, initially in varying forms of isolation as hunter-gatherers, has made the region highly diverse, second only to Africa in human genetic diversity. Settled life emerged on the subcontinent in the western margins of the Indus river basin 9,000 years ago, evolving gradually into the Indus Valley Civilisation of the third millennium BCE. By 1200 BCE, an archaic form of Sanskrit, an Indo-European language, had diffused into India from the northwest. Its evidence today is found in the hymns of the Rigveda. Preserved by an oral tradition that was resolutely vigilant, the Rigveda records the dawning of Hinduism in India. The Dravidian languages of India were supplanted in the northern and western regions. By 400 BCE, stratification and exclusion by caste had emerged within Hinduism, and Buddhism and Jainism had arisen, proclaiming social orders unlinked to heredity. Early political consolidations gave rise to the loose-knit Maurya and Gupta Empires based in the Ganges Basin. Their collective era was suffused with wide-ranging creativity, but also marked by the declining status of women, and the incorporation of untouchability into an organised system of belief. In South India, the Middle kingdoms exported Dravidian-languages scripts and religious cultures to the kingdoms of Southeast Asia. In the early medieval era, Christianity, Islam, Judaism, and Zoroastrianism became established on India's southern and western coasts. Muslim armies from Central Asia intermittently overran India's northern plains, eventually founding the Delhi Sultanate, and drawing northern India into the cosmopolitan networks of medieval Islam. In the 15th century, the Vijayanagara Empire created a long-lasting composite Hindu culture in south India. In the Punjab, Sikhism emerged, rejecting institutionalised religion. The Mughal Empire, in 1526, ushered in two centuries of relative peace, leaving a legacy of luminous architecture. Gradually expanding rule of the British East India Company followed, turning India into a colonial economy, but also consolidating its sovereignty. British Crown rule began in 1858. The rights promised to Indians were granted slowly, but technological changes were introduced, and modern ideas of education and the public life took root. A pioneering and influential nationalist movement emerged, which was noted for nonviolent resistance and became the major factor in ending British rule. In 1947 the British Indian Empire was partitioned into two independent dominions, a Hindu-majority Dominion of India and a Muslim-majority Dominion of Pakistan, amid large-scale loss of life and an unprecedented migration. India has been a federal republic since 1950, governed through a democratic parliamentary system. It is a pluralistic, multilingual and multi-ethnic society. India's population grew from 361 million in 1951 to almost 1.4 billion in 2022. During the same time, its nominal per capita income increased from US$64 annually to US$2,601, and its literacy rate from 16.6% to 74%. From being a comparatively destitute country in 1951, India has become a fast-growing major economy and a hub for information technology services, with an expanding middle class. India has a space programme with several planned or completed extraterrestrial missions. Indian movies, music, and spiritual teachings play an increasing role in global culture. India has substantially reduced its rate of poverty, though at the cost of increasing economic inequality. India is a nuclear-weapon state, which ranks high in military expenditure. It has disputes over Kashmir with its neighbours, Pakistan and China, unresolved since the mid-20th century. Among the socio-economic challenges India faces are gender inequality, child malnutrition, and rising levels of air pollution. India's land is megadiverse, with four biodiversity hotspots. Its forest cover comprises 21.7% of its area. India's wildlife, which has traditionally been viewed with tolerance in India's culture, is supported among these forests, and elsewhere, in protected habitats.
1136
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8
পাকিস্তান
পাকিস্তান (), সরকারিভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান (), দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। ২১,২৭,৪২,৬৩১-র অধিক জনসংখ্যা নিয়ে এটি জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম রাষ্ট্র এবং আয়তনের দিক থেকে ৩৩তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। পাকিস্তানের দক্ষিণে আরব সাগর , ওমান উপসাগরীয় উপকূলে ১০৪৬ কিলোমিটার (৬৫০ মাইল) উপকূল রয়েছে , এটি পূর্ব দিকে ভারতের দিকে, আফগানিস্তান থেকে পশ্চিমে, ইরান দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং উত্তর-পূর্ব দিকে চীন সীমান্তে অবস্থিত। এটি উত্তর-পশ্চিমে আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডোরের দ্বারা তাজিকিস্তান থেকে সংকীর্ণভাবে বিভক্ত এবং ওমানের সাথে সমুদ্রের সীমান্ত ভাগ করে। নামকরণ ফার্সি ও উর্দু ভাষায় 'পাকিস্তান' অর্থ পবিত্র স্থান বা এলাকা। ফার্সি ও পশতু শব্দ 'পাক' অর্থ পবিত্র। আর শব্দাংশ ـستان (-স্তান) একটি তৎসম-ফার্সি শব্দ যার অর্থ স্থান বা এলাকা। চৌধুরী রহমত আলী "নাও অর নেভার" পুস্তকে এ নামটির প্রস্তাব দেন। আরবি ভাষায় এর অর্থ 'মদিনা-এ-তৈয়্যেবা' বা পবিত্র স্থান, মদিনা শব্দের অর্থ এলাকা এবং তৈয়্যেবা অর্থ পবিত্র। আর একটি মত অনুসারে, ইংরেজি ভাষায় PAKISTAN (পাকিস্তানের) নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থানের আদ্যাক্ষর দিয়ে: P - পাঞ্জাব A - আফগানিয়া (খাইবার পাখতুনখোয়া ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল) K - কাশ্মীর I - ইন্দাস অর্থাৎ সিন্ধু উপত্যকার ভাটি অঞ্চল STAN - বেলুচিস্তান এর শেষ চার বর্ণ অর্থাৎ এই কয়টি নির্দিষ্ট অঞ্চল জুড়ে হিন্দুস্তান থেকে পৃথক হওয়া রাষ্ট্রটি গঠিত হওয়ায় এর নাম হয় 'পাকিস্তান'। উল্লেখ্য, সে সময় পূর্ব বাংলা পৃথক আরেকটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সমূহ সম্ভাবনা থাকায়, এই নামটির প্রস্তাবক পূর্ব বাংলাকে এই নাম রাখার ক্ষেত্রে বিবেচনায় না আনার অবকাশ পান। ইতিহাস প্রারম্ভিক এবং মধ্যযুগীয় সময়কাল প্রাচীন সিন্ধু অঞ্চল যা মোটামুটি বর্তমান পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ ছাড়া বাকিটা নিয়ে গঠিত, প্রাচীন কালে নব্য প্রস্তর যুগীয় মেহেরগড় সহ অনেক উন্নত সভ্যতার উৎপত্তিস্থল ছিল। ব্রোঞ্জ যুগে সিন্ধু সভ্যতায় (২৮০০- ১৮০০খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) হরপ্পা ও মহেঞ্জো-দাড়ো নামে দুটি উন্নত নগর ছিল। বৈদিক যুগে (১৫০০ - ৫০০খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) ইন্দো আর্যদের মাধ্যমে এখানে হিন্দুদের গোড়াপত্তন হয়, যা পরবর্তীতে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। মুলতান শহর হিন্দুদের গুরুত্বপূর্ণ তীর্থযাত্রা কেন্দ্রে পরিণত হয়। ঔপনিবেশিক আমল ভারতীয় অঞ্চলে ঔপনিবেশিক আমলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় যথা: ১. ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামল, ২. ব্রিটিশ সরকারের শাসনামল। তবে পাকিস্তান প্রথম থেকেই ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীনে যায়নি। কারণ তখনও এই অঞ্চলে স্বাধীনভাবে রাজারা শাসন করতো । তারপর ধীরে ধীরে পাকিস্তান অঞ্চল ব্রিটিশ অধিভুক্ত হয়। স্বাধীনতা এবং পরাধীনতা ১৯৪৭ সালে দখলদার বৃটিশ রাজশক্তি ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হলে থেকে এই উপমহাদেশ বিভাজনের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান এ দু'টি দেশের জ‌ন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখোয়া, সিন্ধু, পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব বাংলা (বাংলাদেশ), এই রাজ্যগুলো নিয়ে গঠিত হয়। পরবর্তীতে প্রতিবেশী রাজতান্ত্রিক কাশ্মীর রাজ্যের পশ্চিমাংশ পাকিস্তান রাষ্ট্রের অধিকারে আসে এবং ১৯৭১ সালে নিজ ভুলের কারণে পূর্ব বাংলা (বাংলাদেশ) হাতছাড়া হয়। অপরদিকে মূলতঃ হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যগুলো নিয়ে অধুনা ভারত রাষ্ট্রটি গঠিত হয়। রাজনীতি পাকিস্তানের রাজনীতি বর্তমানে একটি অর্ধ-রাষ্ট্রপতিশাসিত যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সম্পাদিত হয়, যদিও অতীতে বিভিন্ন সময়ে সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারপ্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রধানত আইনসভার উপর ন্যস্ত। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ভারতের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান । এযাবৎ কোনো প্রধানমন্ত্রী তার কার্যকাল সম্পূর্ণ করতে পারেনি। দীর্ঘ মেয়াদি প্রধানমন্ত্রীরা হলেন বেনজীর ভুট্টো , নওয়াজ শরীফ ও ইউসুফ রেজা গিলানি। ২০১৩ সালের মে মাসের ১১ তারিখে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন নওয়াজ শরীফ। একই বছর জুলাইয়ের ৩১ তারিখ হতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন মামনুন হোসাইন । নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসার ফলে পরে নওয়াজ শরীফ প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একসময়কার বিখ্যাত ক্রিকেটার ইমরান খান।কিন্তু ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।ফলে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।তার জায়গায় পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন) এর সভাপতি শেহবাজ শরীফ । প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডটি কয়েকটি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত। যথা- পাঞ্জাব সিন্ধু খাইবার পাখতুনখোয়া বেলুচিস্তান আজাদ কাশ্মীর গিলগিত-বালতিস্তান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল ভূগোল পাকিস্তানকে তিনটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়: উত্তরের উচ্চভূমি, সিন্ধু নদের অববাহিকা (যেটিকে পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে উপবিভক্ত করা যায়) এবং বেলুচিস্তান মালভূমি। অরণ্য বনাঞ্চল কম—এশিয়ার এমন দেশের তালিকায় একদম পেছনে রয়েছে পাকিস্তান। দেশটির মোট আয়তনের মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ বনাঞ্চল। ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বনাঞ্চল নিয়ে পাকিস্তানের সামনেই রয়েছে মঙ্গোলিয়া। পেছন থেকে তৃতীয় অবস্থান বাংলাদেশের। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, এডিবির তালিকায় সর্বশেষ অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে ১৯৯০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে খোয়া গেছে ৮ লাখ ৪০ হাজার হেক্টরের বনভূমি। গড়ে বছরপ্রতি এই হ্রাসের হার ৪২ হাজার হেক্টর। অর্থনীতি পাকিস্তান একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বিবেচিত হয় সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ২০১৩-এর দশক ধরে সামাজিক অস্থিতিশীলতার পরে, রেল পরিবহন এবং বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন, যেমন মৌলিক পরিষেবায় ম্যাক্রোম্যানেজমেন্ট এবং ভারসাম্যহীন সামষ্টিক অর্থনীতিতে গুরুতর ঘাটতিগুলি বিকাশ লাভ করেছে। সিন্ধু নদীর তীরে বর্ধনকেন্দ্রগুলি'সহ দেশের অর্থনীতিকে অর্ধ-শিল্পোন্নত বলে মনে করা হয়। করাচী এবং পাঞ্জাবের নগর কেন্দ্রগুলির দেশের অন্যান্য অঞ্চলে, বিশেষত বেলুচিস্তানে কম উন্নত অঞ্চলের সাথে বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি রয়েছে। অর্থনৈতিক জটিলতা সূচক অনুসারে, পাকিস্তান বিশ্বের ৬৭ তম বৃহত্তম রফতানি অর্থনীতি এবং ১০৬ তম সবচেয়ে জটিল অর্থনীতি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পাকিস্তানের রফতানি দাঁড়িয়েছে ২০.৮১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আমদানি হয়েছে ৪৪.৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার ফলে নেতিবাচক বাণিজ্য ভারসাম্য হয়েছে ২৩.৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৬ সালের হিসাবে, পাকিস্তানের আনুমানিক নামমাত্র জিডিপি $২৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পিপিপির জিডিপি ৯,৪৬,৬৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মাথাপিছু জিডিপি আনুমানিক নামমাত্র $১,৫৬১ মার্কিন ডলার, মাথাপিছু মার্কিন জিডিপি (পিপিপি) ৫,০১০ ডলার (আন্তর্জাতিক ডলার) এবং ঋণ ও জিডিপি অনুপাত ৬৬.৫০%। বিশ্বব্যাংকের মতে, পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পদ ও উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তানের যুবকের ক্রমবর্ধমান অনুপাত দেশকে একটি সম্ভাব্য জনসংখ্যার উপাত্ত এবং উভয়ই পর্যাপ্ত পরিষেবা এবং কর্মসংস্থান সরবরাহ করে। জনসংখ্যার ২১.০৪% আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যাদের প্রতিদিনের আয় ১.২৫ মার্কিন ডলারের কম। ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫.৫%। পাকিস্তানের প্রায় ৪০ মিলিয়ন মধ্যবিত্ত নাগরিক রয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে তা বেড়ে ১০ কোটিতে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ২০১৫ সালের একটি প্রতিবেদনে ক্রয়ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে পাকিস্তানের অর্থনীতিকে বিশ্বের ২৪ তম বৃহত্তম ও পরম শর্তে ৪১ ম বৃহত্তমের স্থান দিয়েছে। দেশটির স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন মান ভারতের এক দশমাংশ। জনসংখ্যা ২০১৭ সালের আদমশুমারীর প্রদেশের তথ্য অনুসারে, বর্তমান জনসংখ্যা ২০.৭৮ কোটি যা গত ১৯ বছরে ৫৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। যা পৃথিবীর জনসংখ্যায় ২.৬% অবদান রেখেছে। ধর্ম জন-অভিবাসন পাকিস্তানের জনগণ বেশিরভাগ মুসলিম। পাকিস্তানে জন-অনুপ্রবেশ ও বহির্গমণ দুই ধরনেরই অভিবাসন দেখা যায়। অনুপ্রবেশ মূলত মুসলিম জনগোষ্ঠীর যারা আফগানিস্তান এবং ভারত থেকে। প্রায় ৩.৬ মিলিয়ন অনুপ্রবেশ ও ৬.৩ মিলিয়ন বহির্গমণ পর্যবেক্ষিত হয়েছে। ভাষাসমূহ পাকিস্তানের সরকারি ভাষা ইংরেজি এবং জাতীয় ভাষা উর্দু। এছাড়াও দেশটিতে পাঞ্জাবি, সিন্ধি, সারাইকি, পশতু, বেলুচি, ব্রাহুই ইত্যাদি ভাষা প্রচলিত। অনেক ভাষাই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারের বিভিন্ন শাখার অন্তর্গত। উর্দু, পাঞ্জাবি ও সিন্ধি -আর্য ভাষাসমূহ, পশতু ও বেলুচি ইরানীয় ভাষাসমূহ, ব্রাহুই দ্রাবিড় ভাষাসমূহের অন্তর্গত। এছাড়া উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন দার্দীয় ভাষা যেমন খোওয়ার ও শিনা প্রচলিত। জাতীয় পতাকা পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার নকশা প্রণয়ন করেন সৈয়দ আমিরুদ্দিন কেদোয়াই। এই নকশাটি অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের ১৯০৬ সালের পতাকার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করার ৫ দিন আগে ১৯৪৭ সালের ১১ই আগস্ট তারিখে এই পতাকাটির নকশা গৃহীত হয়। পতাকাটিকে পাকিস্তানে সাব্‌জ হিলালি পারচাম বলা হয়। উর্দু ভাষার এই বাক্যটির অর্থ হলো "নতুন চাঁদ বিশিষ্ট সবুজ পতাকা"। এছাড়াও এটাকে "পারচাম-ই-সিতারা আও হিলাল" অর্থাৎ "চাঁদ ও তারা খচিত পতাকা" বলা হয়ে থাকে। তাৎপর্য পতাকাটির খুঁটির বিপরীত দিকের গাঢ় সবুজ অংশটি ইসলাম ধর্মের প্রতীক। খুঁটির দিকে সাদা অংশ রয়েছে, যা পাকিস্তানে বসবাসরত সংখ্যালঘু অমুসলিমদের প্রতীক। পতাকার মধ্যস্থলে রয়েছে একটি সাদা নতুন চাঁদ, যা প্রগতির প্রতীক; এবং একটি পাঁচ কোনা তারকা, যা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের প্রতীক। আকার ও ব্যবহার আকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য. ২১' x ১৪', ১৮' x ১২', ১০' x ৬-২/৩' বা ৯' x ৬ ১/৪. ভবনে ব্যবহারের জন্য. ৬' x ৪' or ৩' x ২'. গাড়িতে ব্যবহারের জন্য ১২" x ৮". টেবিলে ব্যবহারের জন্য ৬ ১/৪" x ৪ ১/৪". যেসব অনুষ্ঠানে পতাকা উড্ডয়ন করা হয় পাকিস্তান দিবস (মার্চ ২৩) মাদার-ই-মিল্লাত এর জন্মদিন (জুলাই ৩০) পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস (আগস্ট ১৪) আল্লামা ইকবাল এর জন্মদিন (নভেম্বর ৯) মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এর জন্মদিন (ডিসেম্বর ২৫) অন্যান্য যেসব দিনে সরকারি নির্দেশ রয়েছে। যেসব দিনে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয আল্লামা ইকবালের মৃত্যু বার্ষিকী (এপ্রিল ২১) মাদার-ই-মিল্লাতের মৃত্যু বার্ষিকী (জুলাই ৮) মুহাম্মদ আলী জিন্নাহের মৃত্যু বার্ষিকী (সেপ্টেম্বর ১১) নওয়াবজাদা লিয়াকত আলি খান এর মৃত্যু বার্ষিকী (অক্টোবর ১৬) অন্য যেসব দিনে সরকারি নির্দেশ রয়েছে। সংস্কৃতি এবং সমাজ পাকিস্তানের নাগরিক সমাজ মূলত শ্রেণিবদ্ধ, স্থানীয় ও সাংস্কৃতিক শিষ্টাচার এবং ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবন পরিচালিত ঐতিহ্যবাহী ইসলামী মূল্যবোধের উপর জোর দেয়। প্রাথমিক ভাবে পারিবারিকগুলি হ'ল বৃহৎ পরিবার, যদিও আর্থ-সামাজিক কারণে ক্ষুদ্র পরিবার গঠনের দিকে ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখা দিয়েছে। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্য ঐতিহ্যবাহী পোশাক হ'ল শালওয়ার কামিজ; ট্রাউজার্স, জিন্স এবং শার্টও পুরুষদের মধ্যে জনপ্রিয়। আরও দেখুন পাকিস্তান ক্রিকেট দল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মামনুন হুসাইন শহীদ আফ্রিদি তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতীয় উপমহাদেশ ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র কমনওয়েলথ প্রজাতন্ত্র সার্কের সদস্য রাষ্ট্র ইসলামি প্রজাতন্ত্র ১৯৪৭-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র সার্বভৌম রাষ্ট্র ফেডারেল প্রজাতন্ত্র কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য ১৯৪৭-এ পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত এশিয়ার রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Pakistan
Pakistan
Pakistan, officially the Islamic Republic of Pakistan, is a country in South Asia. It is the fifth-most populous country, with a population of over 241.5 million, having the second-largest Muslim population as of 2023. Islamabad is the nation's capital, while Karachi is its largest city and financial centre. Pakistan is the 33rd-largest country by area. Bounded by the Arabian Sea on the south, the Gulf of Oman on the southwest, and the Sir Creek on the southeast, it shares land borders with India to the east; Afghanistan to the west; Iran to the southwest; and China to the northeast. It shares a maritime border with Oman in the Gulf of Oman, and is separated from Tajikistan in the northwest by Afghanistan's narrow Wakhan Corridor. Pakistan is the site of several ancient cultures, including the 8,500-year-old Neolithic site of Mehrgarh in Balochistan, the Indus Valley Civilisation of the Bronze Age, and the ancient Gandhara civilisation. The regions that compose the modern state of Pakistan were the realm of multiple empires and dynasties, including the Achaemenid, the Maurya, the Kushan, the Gupta; the Umayyad Caliphate in its southern regions, the Samma, the Hindu Shahis, the Shah Miris, the Ghaznavids, the Delhi Sultanate, the Mughals, and most recently, the British Raj from 1858 to 1947. Spurred by the Pakistan Movement, which sought a homeland for the Muslims of British India, and election victories in 1946 by the All-India Muslim League, Pakistan gained independence in 1947 after the Partition of the British Indian Empire, which awarded separate statehood to its Muslim-majority regions and was accompanied by an unparalleled mass migration and loss of life. Initially a Dominion of the British Commonwealth, Pakistan officially drafted its constitution in 1956, and emerged as a declared Islamic republic. In 1971, the exclave of East Pakistan seceded as the new country of Bangladesh after a nine-month-long civil war. In the following four decades, Pakistan has been ruled by governments whose descriptions, although complex, commonly alternated between civilian and military, democratic and authoritarian, relatively secular and Islamist. Pakistan is considered a middle power nation, with the world's sixth-largest standing armed forces. It is a declared nuclear-weapons state, and is ranked amongst the emerging and growth-leading economies, with a large and rapidly-growing middle class. Pakistan's political history since independence has been characterized by periods of significant economic and military growth as well as those of political and economic instability. It is an ethnically and linguistically diverse country, with similarly diverse geography and wildlife. The country continues to face challenges, including poverty, illiteracy, corruption, and terrorism. Pakistan is a member of the United Nations, the Shanghai Cooperation Organisation, the Organisation of Islamic Cooperation, the Commonwealth of Nations, the South Asian Association for Regional Cooperation, and the Islamic Military Counter-Terrorism Coalition, and is designated as a major non-NATO ally by the United States.
1138
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B2
নেপাল
নেপাল (), আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী নেপাল () হিমালয় অধ্যুষিত একটি দক্ষিণ এশিয়ার স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। যার সাথে উত্তরে চীন এবং দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। এর শতকরা ৮১ ভাগ জনগণই হিন্দু ধর্মের অনুসারী। বেশ ছোট আয়তনের একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও নেপালের ভূমিরূপ অত্যন্ত বিচিত্র। আর্দ্র আবহাওয়া বিশিষ্ট অঞ্চল, তরাই থেকে শুরু করে সুবিশাল হিমালয়; সর্বত্রই এই বৈচিত্র্যের পরিচয় পাওয়া যায়। নেপাল এবং চীনের সীমান্ত জুড়ে যে অঞ্চল সেখানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ১০ টি পর্বতের ৮ টিই অবস্থিত। এখানেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট অবস্থিত। নামকরণ নেপাল নামটির সঠিক উৎপত্তি সম্বন্ধে জানা যায়নি, তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় মত অনুসারে নেপাল নামটি দুটি শব্দ নে এবং পাল থেকে এসেছে যাদের অর্থ যথাক্রমে পবিত্র এবং গুহা। তাহলে নেপাল শব্দের অর্থ দাঁড়াচ্ছে পবিত্র গুহা। ইতিহাস নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর উপত্যকায় প্রাপ্ত নিওলিথিক যুগের বেশকিছু উপাদান এটিই নির্দেশ করে যে হিমালয়ান অঞ্চলে প্রায় ৯০০০ বছর থেকে মানুষ বসবাস করছে। এটি প্রতিষ্ঠিত যে প্রায় ২৫০০ বছর পূর্বে নেপালে তিব্বতী-বার্মীয় জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। ১৫০০ খৃস্টপূর্বাব্দে ইন্দো ইরানীয় বা আর্য জাতিগোষ্ঠী এই হিমালয়ান উপত্যকায় প্রবেশ করে। ১০০০ খৃস্টপূর্বাব্দের দিকে এই অঞ্চলটিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য স্বতন্ত্র রাজ্য ও কনফেডারেশন গড়ে উঠে। এরকমই একটি কনফেডারেশন ছিল সাকিয়া যার একসময়কার রাজা ছিলেন সিদ্ধার্থ গৌতম (৫৬৩-৪৮৩ খৃস্টাপূর্বাব্দ) যিনি গৌতম বুদ্ধ বা শুধু বুদ্ধ নামেই পরিচিত। তিনি পবিত্র ও সাধনাময় জীবনযাপনের জন্য তার রাজত্ব ত্যাগ করেছিলেন। ২৫০ খৃস্টপূর্বাব্দে এই অঞ্চলটি উত্তর ভারতের মৌর্য সম্রাজ্যের অধীনে আসে এবং পরবর্তীতে ৪র্থ শতাব্দীতে এটি গুপ্ত সম্রাজ্যের অধীনে একটি পুতুল রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পঞ্চম শতাব্দীর শেষ হতে শুরু করে পরবর্তী বেশ কিছুটা সময় শাসন করে একদল শাসক যারা সাধারণভাবে লিচ্ছবি নামে পরিচিত। লিচ্ছভি সাম্রাজ্যের পতন ঘটে অষ্টম শতাব্দীতে এবং এরই সাথে শুরু হয় নেওয়ারি যুগের। ৮৭৯ সালে নেওয়ারিদের রাজত্ব শুরু হলেও সমগ্র রাষ্ট্রের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই অনিশ্চিত ছিল। একাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে নেপালের দক্ষিণাংশ দক্ষিণ ভারতের চালুক্য সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। চালুক্যদের রাজত্বকালে নেপালের ধর্মে ব্যাপক পরিবর্তন আসে কারণ সব রাজাই হিন্দু ধর্মের পৃ্ষ্ঠপোষকতা করতেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারের বিপরীতে হিন্দু ধর্মের প্রচারে অবদান রাখেন। দ্বাদশ শতাব্দীতে যেসব রাজা অধিষ্ঠান করেন তাদের নামের শেষে সাধারণ একটি শব্দ ছিল আর তা হল মল্ল যার অর্থ হচ্ছে কুস্তিগির। গোর্খারাজ পৃথ্বীনারায়ণ শাহ কয়েক দশক ধরে যুদ্ধের পর কাঠমান্ডু উপত্যকা দখল করে ছোটবড় রাজ্যে বিভক্ত নেপালকে একটি রাষ্ট্রীয় সংহতি দান করেন। নেপালের ইতিহাসে এই সময় থেকে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে হিমালয় কন্যা নেপালের যাত্রা শুরু বলা যায়। এই পৃথ্বীনারায়ণ শাহকে আজকের নেপালের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়। রাজনীতি বর্তমানে নেপালের রাজনীতি একটি বহুদলীয় প্রজাতন্ত্রের কাঠামোতে সংঘটিত হয়। প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান। সরকারের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত। আইনসভার উপর আইন প্রণয়নের দায়িত্ব ন্যস্ত। বর্তমানে রাম চন্দ্র পাউডেল নেপালের রাষ্ট্রপতি এবং পুষ্প কমল দাহাল প্রধানমন্ত্রী। ২০০৮ সালের মে মাস পর্যন্ত নেপাল একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ছিল। ঐ মাসের ২৮ তারিখে নেপালের আইনসভা সংবিধানে সংশোধন আনে এবং নেপালকে একটি প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করে। নেপালের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল গুলো হলো: মধ্যম থেকে ডানপন্থী জাতীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি মধ্যমপন্থী- নেপালি কংগ্রেস মধ্যম-বামপন্থী- জাতীয় জনতা পার্টি মধ্যম থেকে বামপন্থী - নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (একীকৃত মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (সংযুক্ত মার্কসবাদী) সঙ্ঘীয় সমাজবাদী ফোরাম পূর্ণ বামপন্থী- নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী-কেন্দ্র) নেপাল মজদুর কিসান পার্টি সামরিক বাহিনী নেপালী সেনাবাহিনী ১৭৬২ সালে গঠিত হয় এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত নেপালের সেনাবাহিনীর নাম 'রাজকীয় নেপালি সেনা' ছিলো। নেপালে কোনো বিমান বাহিনী নেই আর যেহেতু নেপালের কোনো সমুদ্র সীমানা নেই তাই নৌবাহিনীও নেই। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ নেপালকে ১৪টি প্রশাসনিক অঞ্চলে (নেপালি ভাষায় अञ्चल) ভাগ করা হয়েছে, যেগুলি আবার ৭৫টি জেলায় (নেপালি ভাষায় जिल्ला) বিভক্ত। নেপাল ১৪ টি জোনে ভাগ করা। ৭৫ টি জেলা। পূর্বাঞ্চল মেচী অঞ্চল কোশী অঞ্চল সগরমাথা অঞ্চল মধ্যাঞ্চল জনকপুর অঞ্চল বাগমতী অঞ্চল নারায়ণী অঞ্চল পশ্চিমাঞ্চল গণ্ডকী অঞ্চল লুম্বিনী অঞ্চল ধলাগিরি অঞ্চল মধ্যপশ্চিমাঞ্চল রাপ্তী অঞ্চল কর্ণালী অঞ্চল ভেরী অঞ্চল সুদুর পশ্চিমাঞ্চল সেতী অঞ্চল মহাকালী অঞ্চল ভূগোল নেপালের ভূ-প্রকৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ নেপালের আকৃতি অনেকটা চতুর্ভুজের মত, প্রায় ৮০০ কিমি (৫০০মাইল) দৈর্ঘ্য এবং ২০০ কিমি (১২৫ মাইল) প্রস্থ। নেপালের মোট আয়তন প্রায় ১৪৭,১৮১ বর্গকিমি (৫৬,৮২৭ বর্গমাইল)। ভূ-প্রকৃতির বৈচিত্র্য অনুসারে নেপাল তিন ভাগে বিভক্ত- পর্বত, পাহাড়ী উঁচু ভূমি(Hill and Siwalik region) এবং নিচু সমতল ভূমি অর্থাৎ তরাই।প্রধান ভৌগোলিক ক্ষেত্র- হিমালয় পাহাড় তরাই দক্ষিণে ভারতের সীমান্তঘেঁষা তরাই নিম্নভূমি নারায়ণী ও কর্ণালী নদীবিধৌত। অর্থনীতি নেপালের অর্থনীতি মূলত পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো মানুষ নেপাল ভ্রমণ করে। জনসংখ্যা সাম্প্রতিক সময়ে প্রচুর লোক দক্ষিণের সমতল ভূমি অর্থাৎ তরাই-এ বসবাস শুরু করলেও এখনো দেশের সিংহভাগ মানুষ বাস করে মধ্য উচ্চভূমিতে। উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল জনবিরল। রাজধানী কাঠমান্ডু দেশের সবচেয়ে বড় শহর এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ৮০০,০০০ (মেট্রোপলিটন এলাকায়: ১৫ লক্ষ)। নেপালি ভাষা নেপালের সরকারি ভাষা। এখানকার প্রায় ৬০% লোক নেপালি ভাষাতে কথা বলেন। এছাড়াও নেপালে আরও প্রায় ১২০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে মৈথিলী ভাষা (প্রায় ১১% বক্তা), ভোজপুরি ভাষা (প্রায় ৮%), মুর্মি ভাষা, নেওয়ারি ভাষা, এবং মগর ভাষা উল্লেখযোগ্য। আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। ধর্ম নেপালের মানুষ বিভিন্ন ধর্ম, গোষ্ঠী এবং বিশ্বাসকে ধারণ করে থাকে। নেপাল একটি ধর্মনিরপেক্ষ জাতির দেশ এবং অন্তর্বর্তী সংবিধানের অধীনে নেপালে ধর্মনিরপেক্ষতাকে (পর্ব ১, অনুচ্ছেদ ৪) "অনাদিকাল থেকে প্রদত্ত ধর্ম ও সংস্কৃতির সুরক্ষা সহ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অর্থাৎ, "রাষ্ট্রীয় সরকার মৌলিক অধিকার হিসাবে সমগ্র জাতি জুড়ে "ধর্মীয়" এবং "সাংস্কৃতিক" স্বাধীনতা বজায় রেখে হিন্দুধর্ম কে রক্ষা ও লালন করতে বাধ্য থাকবে।" নেপালে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই দুটি ধর্মই নেপালে সবচেয়ে বেশি অনুগামী রয়েছে। ২০২১ সালে, এই দুটি ধর্ম যথাক্রমে জাতীয় জনসংখ্যার ৮১.৩% এবং ৮.২১% প্রতিনিধিত্ব করেছিল। ভারতের পরে দ্বিতীয়, নেপালও বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম হিন্দু জনসংখ্যার আবাসস্থল। বিশিষ্ট হিন্দু তীর্থস্থানগুলির সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে অবস্থিত। শিবকে নেপালের অভিভাবক দেবতা হিসেবে গণ্য করা হয়। নেপাল বিশ্ববিখ্যাত পশুপতিনাথ মন্দিরের আবাসস্থল, একটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট যেখানে সারা বিশ্বের হিন্দুরা তীর্থযাত্রার উদ্দেশ্যে আসে। হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ অনুসারে, দেবী সীতার জন্ম রাজা জনকের মিথিলা রাজ্যে। নেপালের জাতীয় পশু হচ্ছে গরু, যা হিন্দু ধর্মে পবিত্র প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। যার জন্য নেপালে গো-হত্যা আইনত নিষিদ্ধ এবং দন্ডনীয় অপরাধ। সংস্কৃতি নেপালের সংস্কৃতি হিন্দু এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতির মিশ্রণে হয়েছে। নেপালের প্রধান পর্ব বিজয়া দশমী, বুদ্ধ জয়ন্তী, তিহার, ল্হোসার আদি।নেপালের রাষ্ট্রীয় পোশাক দৌরা সুরুৱাল (পুরুষ) এবং সারী (মহিলা)। নেপালের সংস্কৃতি অনেকগুলো দেশীয়, আদিবাসী গোষ্ঠীর সংস্কৃতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে, ফলে নেপাল এক বহুসাংস্কৃতিক রাষ্ট্র। নেপালের সংস্কৃতি বেশ সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ, বিশেষকরে নেওয়ার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি। নেওয়ার জনগোষ্ঠী অনেকগুলো পার্বণ পালন করে এবং তারা তাদের গান ও নাচের জন্য সুপরিচিত। নেপালের সাধারণ খাদ্যতালিকা- ডাল-ভাত-তরকারি, এর সাথে থাকে আচার বা চাটনী। নিচু সমতল ভূমিতে ঘরের কাঠামো তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ, গোবর মিশ্রিত কাদা দিয়ে ঘরের দেয়াল তৈরি করা হয়। এধরনের ঘর শীতের দিনে বেশ গরম এবং গরমের দিনে বেশ ঠান্ডা থাকে। নেপালী বৎসর ১২ মাসে বিভক্ত এবং বছরের শুরু হয় মধ্য এপ্রিলে। নেপালে সাপ্তহিক ছুটির দিন হচ্ছে শনিবার। নেওয়ারী সঙ্গীতে ঐকতান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহৃত হয়, অধিকাংশই বাজাতে হয় ঘষে ঘষে, তবে বাঁশি ও বাঁশিজাতীয় আরো কিছু বাদ্যযন্ত্র রয়েছে। তারযুক্ত বাদ্যযন্ত্র খুব কম ব্যবহৃত হয়। সঙ্গীত রয়েছে বিভিন্ন ব্যঞ্জনার, যা ভিন্ন ভিন্ন ঋতু এবং উৎসবকে মূর্ত করে তোলে। যেমন, পাহান চারে সঙ্গীত পরিবেশিত হয় অত্যন্ত দ্রুত লয়ে এবং ডাপা সঙ্গীত পরিবেশিত হয় খুব ধীর লয়ে। কিছু বাদ্যযন্ত্র আছে যেগুলো শুধুমাত্র যন্ত্রসঙ্গীতেই ব্যবহৃত হয়, যেমন- ধিমাই ও ভুসিয়া। ধিমাই বাজে সবচেয়ে উচ্চগ্রামে। পাহাড়গুলোতে ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সঙ্গীত রয়েছে, লোকগীত বা লোক দোহারী অত্যন্ত জনপ্রিয়। লোকগাঁথা নেপালী সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। চিরায়ত লোকগল্পগুলোর মূলে রয়েছে দৈনন্দিন বাস্তবতা, প্রেম-ভালবাসা, যুদ্ধ-বিগ্রহ, দানব, দেবতা যার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় প্রচলিত বিশ্বাস ও সংস্কৃতি। অনেক নেপালী লোককাহিনী গান ও নাচ সহযোগে পরিবেশিত হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ বন্যপ্রাণী বৈচিত্র্যা নেপালের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ঠ।অত্যন্ত ঠান্ডা থেকে উষ্ণপ্রধান আবহাওয়ার তারতম্যের জন্য ,নেপালে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতে এক বিরাট বিভিন্নতা বা বৈচিত্র আছে। বন্যপ্রাণী পর্যটন এই দেশের অন্যতম পর্যটন। এখানে কিছু বন্যপ্রাণী আছে যা একমাত্র নেপালে দেখা যায় যেমন স্পিনি ব্যাব্লার। নেপালেই বিভিন্ন প্রজাতির রডোডেন্ড্রন দেখা যায়। নেপালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য অনেকগুলি জাতীয় উদ্যান স্থাপন করা হয়। যার মধ্যে গুরত্বপূর্ণ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হল সাগরমাথা জাতীয় উদ্যান ও চিতওয়ান জাতীয় উদ্যান গণমাধ্যম নেপাল থেকে প্রকাশিত কয়েকটি জনপ্রিয় পত্রিকার নাম হচ্ছে,কান্তিপুর ন্যাশনাল,ডেইলি নেপাল,সমাচারপত্র,দ্য কাঠমন্ডু পোস্ট,দ্য হিমালয়ান টাইমস,রাজধানি,মজদুর,দ্য রাইজিং নেপাল,ডেইলী বুধবার সাপ্তাহিক,জন আস্থা জাতীয় সাপ্তাহিক৷ দর্শনীয় স্থান নাগরকট,পোখরা,কাঠমান্ডু তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ নেপাল সরকারের নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের এশিয়ার রাষ্ট্র এশিয়ার প্রাক্তন রাজতন্ত্র সার্কের সদস্য রাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার দেশ স্বল্পোন্নত দেশ ঐতিহাসিক হিন্দু রাজ্য জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র নেপাল ঐতিহাসিক হিন্দু সাম্রাজ্য স্থলবেষ্টিত দেশ প্রজাতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Nepal
Nepal
Nepal, officially the Federal Democratic Republic of Nepal, is a landlocked country in South Asia. It is mainly situated in the Himalayas, but also includes parts of the Indo-Gangetic Plain. It borders the Tibet Autonomous Region of China to the north, and India to the south, east, and west, while it is narrowly separated from Bangladesh by the Siliguri Corridor, and from Bhutan by the Indian state of Sikkim. Nepal has a diverse geography, including fertile plains, subalpine forested hills, and eight of the world's ten tallest mountains, including Mount Everest, the highest point on Earth. Kathmandu is the nation's capital and the largest city. Nepal is a multi-ethnic, multi-lingual, multi-religious and multi-cultural state, with Nepali as the official language. The name "Nepal" is first recorded in texts from the Vedic period of the Indian subcontinent, the era in ancient Nepal when Hinduism was founded, the predominant religion of the country. In the middle of the first millennium BC, Gautama Buddha, the founder of Buddhism, was born in Lumbini in southern Nepal. Parts of northern Nepal were intertwined with the culture of Tibet. The centrally located Kathmandu Valley is intertwined with the culture of Indo-Aryans, and was the seat of the prosperous Newar confederacy known as Nepal Mandala. The Himalayan branch of the ancient Silk Road was dominated by the valley's traders. The cosmopolitan region developed distinct traditional art and architecture. By the 18th century, the Gorkha Kingdom achieved the unification of Nepal. The Shah dynasty established the Kingdom of Nepal and later formed an alliance with the British Empire, under its Rana dynasty of premiers. The country was never colonised but served as a buffer state between Imperial China and British India. Parliamentary democracy was introduced in 1951 but was twice suspended by Nepalese monarchs, in 1960 and 2005. The Nepalese Civil War in the 1990s and early 2000s resulted in the establishment of a secular republic in 2008, ending the world's last Hindu monarchy. The Constitution of Nepal, adopted in 2015, affirms the country as a secular federal parliamentary republic divided into seven provinces. Nepal was admitted to the United Nations in 1955, and friendship treaties were signed with India in 1950 and China in 1960. Nepal hosts the permanent secretariat of the South Asian Association for Regional Cooperation (SAARC), of which it is a founding member. Nepal is also a member of the Non-Aligned Movement and the Bay of Bengal Initiative.
1140
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%AA
মালদ্বীপ
মালদ্বীপ ( ; , ), আনুষ্ঠানিকভাবে মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র (, ) দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ দেশ। এর রাজধানীর নাম মালে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক জোট সার্ক এর সদস্য। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ দেশ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ। পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এ দেশের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র দুই দশমিক তিন মিটার এবং গড় উচ্চতা মাত্র এক দশমিক পাঁচ মিটার। এক হাজার দুই শ’রও বেশি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ। মালদ্বীপ নামটি সম্ভবত "মালে দিভেহী রাজ্য" হতে উদ্ভূত যার অর্থ হল মালে অধিকৃত দ্বীপরাষ্ট্র। কারো কারো মতে সংস্কৃত 'মালা দ্বীপ' অর্থ দ্বীপ-মাল্য বা 'মহিলা দ্বীপ' অর্থ নারীদের দ্বীপ হতে মালদ্বীপ নামটি উদ্ভূত। প্রাচীন সংস্কৃতে যদিও এরকম কোনও অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে প্রাচীন সংস্কৃতে লক্ষদ্বীপ নামক এক অঞ্চলের উল্লেখ রয়েছে। লক্ষদ্বীপ বলতে মালদ্বীপ ছাড়াও লাক্কাদ্বীপ পুঞ্জ অথবা চাগোস দ্বীপপুঞ্জকেও বোঝানো হয়ে থাকতে পারে। অপর একটি মতবাদ হল তামিল ভাষায় 'মালা তিভু' অর্থ দ্বীপমাল্য হতে মালদ্বীপ নামটি উদ্ভূত । মধ্যযুগে ইবন বতুতা ও অন্যান্য আরব পর্যটকেরা এই অঞ্চলকে 'মহাল দিবিয়াত' নামে উল্লেখ করেছেন। আরবীতে মহাল অর্থ প্রাসাদ। বর্তমানে এই নামটিই মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় প্রতীকে লেখা হয়। অবস্থান শ্রীলঙ্কা হতে আনুমানিক ৪০০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে ১০১০টি প্রবাল দ্বীপ নিয়ে মালদ্বীপ দেশটি গঠিত। মালদ্বীপ নামকরণ মালদ্বীপের নামকরণ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ লক্ষ করা যায়। কেউ কেউ দাবি করেন মালদ্বীপ অর্থ হচ্ছে ‘মেল দ্বীপ রাজ’ বা পুরুষশাসিত রাজ্য। মূলত ‘দ্বীপ’ একটি সংস্কৃত শব্দ আর ‘মাল’ শব্দটি দেশটির রাজধানীর নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ঔপনিবেশিক আমলে ডাচ্রা তাদের নথিপত্রে এ দ্বীপপুঞ্জের নাম মালদ্বীপ বলে উল্লেখ করেন। পরে ব্রিটিশরাও একই নাম ব্যবহার করেন, যা দেশটির স্থানীয় নাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। শ্রীলঙ্কান প্রাচীন সাহিত্য ‘মহাবংশ’-এ মালদ্বীপকে বলা হয়েছে ‘মহিলাদ্বীপ’ বা নারীদের দ্বীপ। তবে কিছু কিছু পণ্ডিত মনে করেন, মালদ্বীপ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত মালাদ্বীপ থেকে যার অর্থ ফুলের মালার দ্বীপ। তবে প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে এ দ্বীপকে বলা হয়েছে ‘লাক্কাদ্বীপ’ বা শত হাজার দ্বীপ। তবে মালদ্বীপে এক হাজারের বেশি দ্বীপ থাকলেও এক লাখ দ্বীপ নেই। আবার আরব পর্যটক ইবনে বতুতা এ দ্বীপকে বলেছেন ‘মহল দ্বীপ’ বা রাজপ্রাসাদের দ্বীপ। আর মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় প্রতীকে ইবনে বতুতার ব্যাখ্যার নিরিখে এখনো মহল বা রাজপ্রাসাদের ছবি ব্যবহৃত হয়। ইতিহাস মালদ্বীপ বা দ্বীপের মালা; সংস্কৃত শব্দ ‘দ্বীপমালা’ শব্দ থেকেই মালদ্বীপ। আবার কেউ কেউ বলে যে- ‘মালে দিভেই রাজে’-এই কথা থেকে মালদ্বীপ শব্দটির উদ্ভব। ‘মালে দিভেই রাজে’-এই কথার অর্থ, ‘দ্বীপরাজ্য’। অনেকে মালদ্বীপকে মহলদ্বীপও বলে। মহল মানের (আরবিতে ) প্রাসাদ। দ্বাদশ শতক থেকেই মালদ্বীপের মুসলিম শাসন। ইবনে বতুতা মালদ্বীপ গিয়েছিলেন ১৩৪৩ খ্রিস্টাব্দে। কাজী ছিলেন। সংস্কৃতে মালদ্বীপকে লক্ষদ্বীপও বলা হয়েছে। এর অর্থ লক্ষ দ্বীপের সমাহার। আসলে মালদ্বীপ লক্ষ দ্বীপের সমাহার নয়; রয়েছে ২৬টি অ্যাটোল। (অ্যাটোল মানে লেগুন ঘেরা প্রবালদ্বীপ) ২৬টি অ্যাটোল আর ১১৯২টি ক্ষুদ্র দ্বীপ। যার মধ্যে কেবল ২০০টি বাসযোগ্য। প্রাচীন শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক গ্রন্থে মালদ্বীপকে বলা হয়েছে মহিলা দ্বীপ। সম্রাট অশোকের সময়েই অর্থাৎ সেই খ্রিষ্ট ৩য় শতকেই কতিপয় বৌদ্ধ ভিক্ষু নাকি গিয়েছিল লক্ষদ্বীপে । এরপর দ্রাবিড় ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী ওই দ্বীপে গিয়ে বাস করতে থাকে। দ্রাবিড় ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী সম্ভবত ওখানে গিয়েছিল দক্ষিণ ভারত থেকে। এর পর সিংহলীরা মালদ্বীপ যায়। এরা ছিল বৌদ্ধ। এরপর মুসলিমরা ঐ দ্বীপে মুসলিম সংস্কৃতি প্রোথিত করে। সময়টা দ্বাদশ শতক। ১১৫৩ থেকে ১৯৫৩ অবধি -এই ৮০০ বছর ৯২ জন সুলতান নিরবিচ্ছিন্নভাবে শাসন করে দ্বীপটি । ১৫০৭ সালে পর্তুগীজ পর্যটক দম লোরেনকো দে আলামেইদা মালদ্বীপে পৌঁছায়। সে সময় পশ্চিম ভারতের গোয়ায় ছিল পর্তুগীজদের বাণিজ্য কুঠি। পর্তুগীজরা বলপূর্বক কর আদায় করত । ১৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দ। মালদ্বীপের সুলতান হলেন সুলতান থাকুরুফানি আল-আযম। তিনি পর্তুগিজ দের মালদ্বীপ থেকে বহিস্কার করেন। সুলতান থাকুরুফানি আল-আযম মালদ্বীপের নবযুগের দ্রষ্টা। তিনিই নতুন লেখনির প্রচলন করেন। গড়ে তুলেন সামরিক বাহিনী। ব্রিটিশরা ১৮১৫ সালে শ্রীলঙ্কা পদানত করে। এরপর পদানত করে মালদ্বীপও। যা হোক। ১৯৫৩ সালে সালতানাতএর অবসান হয় ও মালদ্বীপ হয়ে ওঠে রিপাবলিক। মালদ্বীপের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন আমিন দিদি। তিনি নারীস্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। গোঁড়ারা পিছু লাগল। ফলে আমিন দিদি উৎখাত হয়ে যান। এরপর আইনসভা পুনরায় সালতানাত এর পক্ষে রায় দেয়। নতুন সুলতান হন মোহাম্মদ দিদি। ইনি ব্রিটিশদের সামরিক ঘাঁটি তৈরির অনুমতি দিলে ব্যাপক জনবিক্ষোভ সংগঠিত হয়। ১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই মালদ্বীপ ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ন স্বাধীনতা লাভ করে। রাজনীতি দেশটিতে বর্তমানে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সরকারপ্রধান। প্রেসিডেন্টই ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের নিয়োগ দেন এবং তিনি হচ্ছেন তাদের প্রধান। প্রেসিডেন্ট পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তবে দেশটিতে অমুসলিমদের কোনো ভোটাধিকার নেই। দেশটিতে ৫০ সদস্যের একটি মজলিসে সুরা আছে। এরা পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এই ৫০ সদস্যের মধ্যে আটজন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক মনোনীত হন। এই একটি উপায়েই মহিলারা সংসদে প্রবেশের সুযোগ পান। দেশটিতে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে ২০০৫ সালে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইউম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এ দলের নাম ‘দ্য মালদ্বীপিয়ান পিপলস পার্টি’। একই বছর আরেকটি রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয় ‘মালদ্বীপিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’ হিসেবে। এভাবেই দেশটিতে বহুদলীয় রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষুদ্র হলে দেশটিতে আছে নূন্যতম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। মালদ্বীপ জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী (এমএনডিএফ) নামে যৌথ প্রতিরক্ষা বাহিনী আছে। এই বাহিনীর মূল কাজ দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা। এ বাহিনীর হাতে দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে পূর্বানুমোদন দেয়া আছে। কোস্টগার্ড, ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস, ইনফেন্ট্রি সার্ভিস, ডিফেন্স ইনস্টিটিউট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো এমএনডিএফ’র বাহিনী পরিচালনা করে থাকে। সমুদ্রবেষ্টিত হওয়া সত্ত্বেও মালদ্বীপের কোনো নৌবাহিনী নেই। মূলত পড়শি দেশ বিশেষত ভারতের ওপর এই ব্যাপারে নির্ভরশীল। ভূগোল অর্থনীতি প্রাচীনকাল থেকেই সামুদ্রিক মাছ হচ্ছে দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি। তবে বর্তমানে দেশটি পর্যটন শিল্পেও যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বলা যায়, দেশটির সবচেয়ে বড় শিল্প এখন পর্যটন। মোট আয়ের ২৮ শতাংশ এবং মোট বৈদেশিক আয়ের ৬০ শতাংশই আসে পর্যটন শিল্প থেকে। ১৯৮৯ সালে দেশটির সরকার প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ সময় বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদারনীতি গ্রহণ করা হয়। গত এক দশক যাবৎ দেশটির জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি গড়ে 7.8 শতাংশের বেশি। ”জনসংখ্যা” মালদ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় তিন লক্ষ । শতকরা ১০০ ভাগ মুসলমান। যেটা বিশ্বের মধ্যে শতকরা হিসাবে সবচেয়ে বেশি। ধিবেহী ভাষা বা মালদ্বীপীয় ভাষা মালদ্বীপের সরকারি ভাষা। এই দ্বীপগুলির প্রায় সবাই ধিবেহী ভাষার বিভিন্ন উপভাষায় কথা বলেন। এছারাও এখানে সিংহলি ভাষা, আরবি ভাষা এবং বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার প্রচলন আছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। সংস্কৃতি যেহেতু মালদ্বীপে দীর্ঘ ৮০০ বছর যাবত ইসলামি সালতানাত প্রতিষ্ঠিত ছিল তাই স্বভাবতই মালদ্বীপের বর্তমান সংস্কৃতি অনেকটাই ইসলাাম দ্বারা প্রভাবিত । পরিবহন ইব্রাহিম নাসির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মালদ্বীপ প্রধান প্রবেশদ্বার । সরকারি মালিকানাধীন আইল্যান্ড এভিয়েশন সার্ভিসেস ( মালদ্বীভিয়ান ) চেন্নাই ও তিরুবনন্তপুরম , ভারত ও বাংলাদেশ এ আন্তর্জাতিক পরিবহন করে থাকে । আরও দেখুন তথ্যসূত্র এশিয়ার রাষ্ট্র‎ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র সার্কের সদস্য রাষ্ট্র ১৯৬৫-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল মালদ্বীপ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ১৯৬৫-এ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত ভারত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ দ্বীপ রাষ্ট্র ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার ভূমিরূপ কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য প্রজাতন্ত্র কমনওয়েলথ প্রজাতন্ত্র ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র প্রাক্তন রাজ্য প্রাক্তন সালতানাত সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Maldives
Maldives
The Maldives, officially the Republic of Maldives, and historically known as the Maldive Islands, is a country and archipelagic state in South Asia in the Indian Ocean. The Maldives is southwest of Sri Lanka and India, about 750 kilometres (470 miles; 400 nautical miles) from the Asian continent's mainland. The Maldives' chain of 26 atolls stretches across the equator from Ihavandhippolhu Atoll in the north to Addu Atoll in the south. The Maldives is the smallest country in Asia. Including the sea, the territory spans roughly 90,000 square kilometres (35,000 sq mi), with a land area of 298 square kilometres (115 sq mi). The Maldives is one of the world's most geographically dispersed sovereign states, and the smallest Muslim country by land area. With a population of 515,132 in the 2022 census, it is the 2nd least populous country in Asia and the ninth-smallest country in the world by area. Malé is the capital and the most populated city, traditionally called the "King's Island", where the ancient royal dynasties ruled from its central location. The Maldivian Archipelago is located on the Chagos–Laccadive Ridge, a vast submarine mountain range in the Indian Ocean; this also forms a terrestrial ecoregion with the Chagos Archipelago and Lakshadweep. The Maldives has an average ground-level elevation of 1.5 metres (4 ft 11 in) above sea level, and a highest natural point of only 2.4 metres (7 ft 10 in), making it the world's lowest-lying country. Some sources state the highest point, Mount Villingili, as 5.1 metres or 17 feet. The Maldives has been inhabited for over 2,500 years. Documented contact with the outside world began around 947 AD when Arab travelers began visiting the islands. In the 12th century, partly due to the importance of the Arabs and Persians as traders in the Indian Ocean, Islam reached the Maldivian Archipelago. The Maldives was soon consolidated as a sultanate, developing strong commercial and cultural ties with Asia and Africa. From the mid-16th century, the region came under the increasing influence of European colonial powers, with the Maldives becoming a British protectorate in 1887. Independence from the United Kingdom came in 1965, and a presidential republic was established in 1968 with an elected People's Majlis. The ensuing decades have seen political instability, efforts at democratic reform, and environmental challenges posed by climate change and rising sea levels. The Maldives became a founding member of the South Asian Association for Regional Cooperation (SAARC). The Maldives is a member of the United Nations, the Commonwealth of Nations, the Organisation of Islamic Cooperation, and the Non-Aligned Movement. The World Bank classifies the Maldives as having an upper-middle income economy. The Maldives is a Dialogue Partner of the Shanghai Cooperation Organisation. Fishing has historically been the dominant economic activity, and remains the largest sector by far, followed by the rapidly growing tourism industry. The Maldives rates "high" on the Human Development Index, with per capita income significantly higher than other SAARC nations. The Maldives was a member of the Commonwealth of Nations from July 1982 until withdrawing from the organisation in October 2016 in protest of allegations by other nations of its human rights abuses and failing democracy. The Maldives rejoined the Commonwealth on 1 February 2020 after showing evidence of functioning democratic processes and popular support.
1143
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8
ইতিহাস
ইতিহাস হলো, অতীত বৃত্তান্ত বা কালানুক্রমিক অতীত কাহিনি ও কার্যাবলির লিখন, বিশ্লেষণ ও অধ্যয়ন। তবে কোনো কোনো দার্শনিক (যেমন- বেনেদেত্তো ক্রোচে) মনে করেন যে, ইতিহাস হলো বর্তমান। কারণ অতীত ঘটনাগুলোই বর্তমানে "ইতিহাস" হিসাবে অধ্যয়ন করা হয়। বৃহৎ একটি বিষয় হওয়া সত্ত্বেও এটি কখনো মানবিক বিজ্ঞান এবং কখনো বা সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে আলোচিত হয়েছে। অনেকেই ইতিহাসকে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে দেখেন। কারণ ইতিহাসে এই উভয়বিধ শাস্ত্র থেকেই পদ্ধতিগত সাহায্য ও বিভিন্ন উপাদান নেওয়া হয়। ইতিহাসের উদ্দেশ্য হলো, বর্তমানের সাথে অতীতকে প্রাসঙ্গিক করে তোলা। একটি শাস্ত্র হিসেবে ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অনেকগুলো উপবিভাগের নাম চলে আসে। তার মধ্যে রয়েছে, দিনপঞ্জি, ইতিহাস লিখন (হিস্ট্রিওগ্রাফি), কুলজি শাস্ত্র, প্যালিওগ্রাফি, ক্লায়োমেট্রিক্স ইত্যাদি। স্বাভাবিক প্রথা অনুসারে, ইতিহাসবেত্তাগণ ইতিহাসের লিখিত উপাদানের মাধ্যমে বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন, যদিও কেবল লিখিত উপাদান হতে ইতিহাসে সকল তত্ত্ব উদ্ধার করা সম্ভব নয়। ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে যে উৎসগুলো বিবেচনা করা হয়, সেগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়– লিখিত, মৌখিক ও শারীরিক বা প্রত্যক্ষকরণ। ইতিহাসবেত্তারা সাধারণত তিনটি উৎসই বিশ্লেষণ করে দেখেন। তবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে লিখিত উপাদান সর্বজনস্বীকৃত। এই উৎসটির সাথে লিখন পদ্ধতির ইতিহাস অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। শব্দের উৎপত্তি ইংরেজি "হিস্ট্রি" (History) শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে "ইতিহাস" শব্দটি এসেছে। ইংরেজি History শব্দটি এসেছে গ্রিক ও লাতিন শব্দ ἱστορία - Historia থেকে, যার অর্থ সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা। ইতিহাসের জনক হিসেবে খ্যাত গ্রিসের হেরোডোটাস তাঁর গ্রিক ও পারসিকদের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষের ঘটনাসম্বলিত গ্রন্থের নামকরণ করেন Historia (যার ইংরেজি অনুবাদ করা হয়েছে "Histories")। মূলত ঘটনার অনুসন্ধান অর্থে হেরোডোটাস Historia শব্দটি ব্যবহার করেন। বাংলা ভাষায় "ইতিহাস" শব্দটি এসেছে ‘ইতিহ’ শব্দমূল থেকে, যার অর্থ ঐতিহ্য। এটি হলো একটি তৎসম শব্দ, অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত। ইতিহাস শব্দটির রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়- ইতহ + √অস্ + অ – যার অর্থ হলো "এমনটিই ছিল বা এমনটিই ঘটেছিল।" লিখনধারা ইতিহাস লিখনধারার সম্পর্কিত বেশ কিছু অর্থ রয়েছে। প্রথমত, এটি দিয়ে বুঝানো হয় কীভাবে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে, যেমন- পদ্ধতি ও অনুশীলনের বিকাশের গল্প। দ্বিতীয়ত, এটি বুঝায় কী সৃষ্টি করেছে, যেমন- ইতিহাস লিখনরীতির নির্দিষ্ট বিষয়। তৃতীয়ত, এটি দিয়ে বুঝানো হয় কীভাবে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে, যেমন- ইতিহাসের দর্শন। অতীতের বর্ণনার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তৃতীয় ধারণাটি প্রথম দুটি ধারণার সাথে সম্পর্কযুক্ত করা যায়, যা মূলত বর্ণনা, ব্যাখ্যা, বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ, সাক্ষ্য বা প্রমাণের ব্যবহার, বা অন্যান্য ইতিহাসবেত্তাদের উপস্থাপন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে। ইতিহাস কি একক বর্ণনা নাকি ধারাবাহিক বর্ণনা হিসেবে শিখানো হবে তা নিয়ে পেশাদারী ইতিহাসবেত্তাদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। দর্শন ইতিহাসের দর্শন হলো দর্শনের একটি শাখা যেখানে ঘটনাবলির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়, বিশেষ করে মানবীয় ইতিহাস। এছাড়া এই শাখায় এর বিকাশের সম্ভাব্য পরমকারণমূলক সমাপ্তির কথা বিবেচনা করা হয়, যেমন- মানবীয় ইতিহাসের পদ্ধতিতে কোনো নকশা, কারণ, নীতি, বা সমাপ্তি রয়েছে কিনা। ইতিহাসের দর্শনকে ইতিহাস লিখনধারার সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। ইতিহাস লিখনধারায় ইতিহাসের পদ্ধতি ও অনুশীলন এবং ইতিহাসকে একটি নির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় হিসেবে এর বিকাশের উপর জোড় দেওয়া হয়। আবার ইতিহাসের দর্শনকে দর্শনের ইতিহাসের সাথে গুলিয়ে ফেলা যাবে না, কারণ দর্শনের ইতিহাস হলো একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে দর্শনের ধারণাসমূহের বিকাশ নিয়ে অধ্যয়ন। অধ্যয়নের ক্ষেত্র যুগ নির্ধারণ ইতিহাস এক নির্দিষ্ট সময়ে ঘটা ঘটনাবলি ও উন্নয়নকে কেন্দ্র করে লিখিত হয়। ইতিহাসবেত্তাগণ সেই সময় বা যুগকে একটি নির্দিষ্ট নাম দিয়ে চিহ্নিত করেন। ভৌগোলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে এই নামসমূহ ভিন্ন হতে পারে, যেমন- সেই যুগের শুরুর সময় ও সমাপ্তির সময়। শতাব্দী ও দশক হলো বহুল ব্যবহৃত যুগ নির্দেশক এবং কালপঞ্জি অনুসারে এই যুগ নির্ধারিত হয়। বেশিরভাগ যুগ পূর্ববর্তী ঘটনার উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয় এবং এর ফলে এতে পূর্ববর্তী সময়ে ব্যবহৃত মৌলিক ধারণা ও বিচারবুদ্ধির প্রতিফলন দেখা যায়। যে পদ্ধতিতে যুগসমূহের নাম দেওয়া হয় তা এই যুগসমূহকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে এবং কীভাবে অধ্যয়ন করা হচ্ছে তাকে প্রভাবিত করে। সহস্রাব্দ শতাব্দী দশক সময়কালভিত্তিক প্রাক-ইতিহাস প্রাচীন ইতিহাস মধ্যযুগ আধুনিক বিশ্ব সমসাময়িক ভৌগোলিক অবস্থান নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থান, যেমন- মহাদেশ, দেশ ও শহরও ইতিহাস অধ্যয়নের ক্ষেত্র। ঐতিহাসিক ঘটনাবলি কেন ঘটেছিল তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণ জানার জন্য ইতিহাসবেত্তাগণ ভূগোল অধ্যয়ন করে থাকেন। অঞ্চলভিত্তিক অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাস রচনা শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার উত্তর উপকূলে স্থানীয় অস্ট্রেলীয়দের সাথে মাকাসারের বাণিজ্যের নথি থেকে। আফ্রিকার ইতিহাস শুরু হয় এই মহাদেশে আধুনিক মানব সভ্যতার প্রথম বিকাশের মধ্য দিয়ে এবং বিভিন্ন রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে আধুনিক বর্তমান কাল পর্যন্ত চলতে থাকে। আমেরিকার ইতিহাস হলো উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার একত্রিত ইতিহাস তথা সমগ্র আমেরিকা অঞ্চলের ইতিহাস, এছাড়া এতে মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবীয় ইতিহাসও অন্তর্ভুক্ত থাকে। উত্তর আমেরিকার ইতিহাস হলো পৃথিবীর উত্তর ও পশ্চিম গোলার্ধের ইতিহাস। দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস হলো পৃথিবীর দক্ষিণ ও পশ্চিম গোলার্ধের ইতিহাস। মধ্য আমেরিকার ইতিহাস হলো পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধের ইতিহাস। ক্যারিবীয় ইতিহাস শুরু হয় ৭,০০০ বছরের পূর্বে। ইউরেশিয়ার ইতিহাস হলো মধ্য এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের ইতিহাস। ইউরোপের ইতিহাস ইউরোপ মহাদেশে মানব সভ্যতার বসবাসের শুরুর সময় থেকে বর্তমান সময়। এশিয়ার ইতিহাস হলো কয়েকটি উপকূলীয় অঞ্চল, যথা- পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও মধ্য প্রাচ্যের সম্মিলিত ইতিহাস। পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস হলো পূর্ব এশিয়ার প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ইতিহাস। দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস হলো দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের আঞ্চলিক ও বৈদেশিক ক্ষমতার ইতিহাস। মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস হলো খ্রিস্টপূর্ব ৩,০০০ অব্দে বিকাশ লাভ করা সর্বপ্রাচীন সভ্যতার মেসোপটেমিয়া (ইরাক) থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত চলমান মধ্য প্রাচ্যের ইতিহাস। ভারতের ইতিহাস উপ-হিমালয় অঞ্চলের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ইতিহাস। অ্যান্টার্কটিকার ইতিহাস ধারণার বিকাশ ঘটে প্রারম্ভিক পশ্চিমা তত্ত্ব তেরা আউস্ত্রালিস নামক বৃহৎ মহাদেশের ধারণা থেকে, এবং ধারণা করা হতো তা পৃথিবীর দক্ষিণে অবস্থিত। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস শুরু হয় যখন ৭০০ বছর পূর্বে পলিনেশীয় কর্তৃক আবিষ্কৃত এবং তাঁরা সেখানে বসতি স্থাপন করে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপসমূহের ইতিহাস হলো প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপসমূহের ইতিহাস। অর্থনৈতিক ইতিহাস যদিও অর্থনৈতিক ইতিহাস উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে প্রতিষ্ঠা লাভ করে, বর্তমান সময়ে অর্থনীতি বিভাগে এই বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং তা প্রথাগত ইতিহাস বিভাগ থেকে ভিন্ন। ব্যবসায় তত্ত্বে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক কৌশল, সরকারি নিয়মকানুন, শ্রম বিভাগের সম্পর্কের ইতিহাস ও সমাজে এর প্রভাব বর্ণিত হয়। এছাড়া এতে নির্দিষ্ট কোম্পানি, নির্বাহী, ও উদ্যোক্তাদের জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হয়। ব্যবসায় তত্ত্ব অর্থনৈতিক ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত এবং তা ব্যবসায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ দান করা হয়। ধর্মের ইতিহাস ধর্মের ইতিহাস শতাব্দীকাল ধরে ধর্মবহির্ভূত ও ধার্মিক দুই শ্রেণির ইতিহাসবেত্তাদের কাছে প্রধান বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, এবং ধর্মীয় শিক্ষালয় ও সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে তা শিখানো হচ্ছে। এই ধরনের ইতিহাস বিষয়ক প্রধান সাময়িকীসমূহ হলো চার্চ হিস্টরি, দ্য ক্যাথলিক হিস্টরিক্যাল রিভিউ, এবং হিস্টরি অফ রিলিজিয়ন্স। সাধারণত এর বিষয়বস্তু হয়ে থাকে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক দিক, এমনকি ধর্মতত্ত্ব ও প্রার্থনার বিধিও। এই বিষয়ের অধীনে পৃথিবীর যে সকল অঞ্চল ও এলাকায় মানুষ বসবাস করেছে, সে সকল অঞ্চল ও এলাকার ধর্ম নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়। পরিবেশগত ইতিহাস পরিবেশগত ইতিহাস হলো ইতিহাসের একটি নবীন ক্ষেত্র, যা ১৯৮০-এর দশকে বিকাশ লাভ করে। এতে পরিবেশের ইতিহাস এবং পরিবেশের উপর মানুষের কর্মকাণ্ডের প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করা হয়। বিশ্বের ইতিহাস বিশ্বের ইতিহাস হলো গত ৩০০০ বছর ধরে প্রধান প্রধান সভ্যতার বিকাশের অধ্যয়ন। বিশ্বের ইতিহাস মূলত শিক্ষার একটি ক্ষেত্র। বিষয়টি ১৯৮০-এর দশকের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অন্যান্য দেশে বিশ্বায়নের ফলশ্রুতিতে জনপ্রিয়তা লাভ করে। সংস্কৃতির ইতিহাস সংস্কৃতির ইতিহাস হলো সমাজে শিল্পকলা ও মানুষের চিত্র ও দৃশ্য ধারণার অধ্যয়ন। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে এটি সামাজিক ইতিহাসের স্থলাভিষিক্ত হয়। এটি মূলত নৃবিজ্ঞান ও ইতিহাসের সমন্বিত রূপ যেখানে ভাষা, জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক প্রথা ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে। এতে অতীতে মানুষের জ্ঞানচর্চা, প্রথা ও শিল্পের নথি ও বর্ণনা পরীক্ষা করা হয়। অতীতে মানুষ কীভাবে তাদের স্মৃতি ধরে রেখেছিল তা সাংস্কৃতিক ইতিহাসের আলোচনার প্রধান বিষয়। সেনাবাহিনীর ইতিহাস সেনাবাহিনীর ইতিহাস হলো যুদ্ধবিগ্রহ, যুদ্ধ কৌশল, যুদ্ধ, অস্ত্র ও যুদ্ধের মনস্তত্ত্ব বিষয়ক ধারণা। ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে আবির্ভূত হওয়া নব্য সেনাবাহিনীর ইতিহাস সেনাপ্রধানদের চেয়ে সৈন্যদের প্রতি বেশি আলোকপাত করে, বিশেষ করে রণকৌশলের চেয়ে তাঁদের মনস্তত্ত্ব এবং সমাজ ও সংস্কৃতিতে যুদ্ধ বিগ্রহের বিরূপ প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে। ইতিহাসবেত্তা পেশাদার ও অপেশাদার ইতিহাসবেত্তগণ পূর্ববর্তী ঘটনাবলি আবিষ্কার, সংগ্রহ, সংগঠিত ও উপস্থাপন করেন। তাঁরা প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ, পূর্বের লিখিত মৌলিক উৎস ও অন্যান্য উপায়ে, যেমন- স্থানের নামের তথ্য আবিষ্কার করেন। ইতিহাসবেত্তাদের তালিকায় ঐতিহাসিক যুগের কালক্রম অনুযায়ী তাদের বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়, বিশেষ করে তাদের ইতিহাস লেখার সময় অনুসারে কারণ তিনি যে সময়ে বর্তমান ছিলেন সেই সময়ের ইতিহাস না লিখে অন্য কোনো সময়ের ইতিহাস রচনায় বিশেষজ্ঞ হতে পারেন। কালনিরূপক ও আখ্যানকারগণ যদিও ইতিহাসবেত্তা নন, তবে কিছু ক্ষেত্রে তাঁদেরকেও ইতিহাসবেত্তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। ছদ্মইতিহাস ছদ্মইতিহাস হলো এমন লিখিত রূপ যার সারমর্ম ঐতিহাসিক প্রকৃতির, কিন্তু ইতিহাস লিখনধারার চিরাচরিত রূপ থেকে ভিন্ন এবং এতে পরিণতি ভিন্ন হয়ে থাকে। এটি ঐতিহাসিক নেতিবাচকতার সাথে সম্পৃক্ত এবং জাতীয়, রাজনৈতিক, সেনাবাহিনী ও ধর্ম বিষয়ে নতুন, কল্পনাপ্রসূত ও বিরোধপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রমাণের মাধ্যমে উপসংহার টেনে থাকে। প্রাগৈতিহাস মানব সভ্যতার ইতিহাস প্রকৃতপক্ষে মানুষের বিকাশের ইতিহাস, কিন্তু প্রশ্নটি সবসময় বিতর্কিত ছিল যে আদিমানুষ ও তাঁদের সভ্যতা কখন ও কোথায় বিকশিত হয়েছিল। ইতিহাসের এই অধ্যয়নকে বলা হয় প্রাগৈতিহাস। অর্থাৎ ইতিহাসের আগের ইতিহাস। প্রাগৈতিহাসিক সময়ের মানবসভ্যতা চারটি ভাগে বিভক্ত- আদিপ্রস্তর যুগ প্রাথমিক প্রস্তর যুগ প্রয়াত প্যালিওলিথিক যুগ ধাতু সময়কাল প্রাচীনতম মানবসভ্যতা বিষয়ক অধ্যয়ন হাজার বছর বর্বরতা থেকে অর্ধসভ্যতা এবং অর্ধসভ্যতা থেকে সভ্যতার প্রথম স্তর পর্যন্ত আবৃত থাকে। কিন্তু পৃথিবীর কোন সময়ে, কীভাবে এই সভ্যতাগুলো বিকশিত হয়েছিল, সে সম্পর্কে আজও কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। তবে এটা নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, প্রাচীন বিশ্বের সকল সভ্যতা নদীর উপত্যকায় উদ্ভূত এবং সমৃদ্ধ হয়েছিল। সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা ও অ্যাসিরীয় সভ্যতা দজলা-ফুরাত নদী উপত্যকায়, নীলনদ উপত্যকায় প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা এবং সিন্ধু নদী উপত্যকায় সিন্ধু সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। আরও দেখুন ইতিহাসের রূপরেখা উদ্ধৃতি টীকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ "ইতিহাস" - বাংলাপিডিয়া Best history sites .net BBC History Site Internet History Sourcebooks Project See also Internet History Sourcebooks Project. Collections of public domain and copy-permitted historical texts for educational use The History Channel Online History Channel UK মূল বিষয়ের নিবন্ধ মানববিদ্যা
https://en.wikipedia.org/wiki/History
History
History (derived from Ancient Greek ἱστορία (historía) 'inquiry; knowledge acquired by investigation') is the systematic study and documentation of human past. The period of events before the invention of writing systems is considered prehistory. "History" is an umbrella term comprising past events as well as the memory, discovery, collection, organization, presentation, and interpretation of these events. Historians seek knowledge of the past using historical sources such as written documents, oral accounts or traditional oral histories, art and material artifacts, and ecological markers. History is incomplete and still has debatable mysteries. History is an academic discipline which uses a narrative to describe, examine, question, and analyze past events, and investigate their patterns of cause and effect. Historians debate which narrative best explains an event, as well as the significance of different causes and effects. Historians debate the nature of history as an end in itself, and its usefulness in giving perspective on the problems of the present. Stories common to a particular culture, but not supported by external sources (such as the tales surrounding King Arthur), are usually classified as cultural heritage or legends. History differs from myth in that it is supported by verifiable evidence. However, ancient cultural influences have helped create variant interpretations of the nature of history, which have evolved over the centuries and continue to change today. The modern study of history is wide-ranging, and includes the study of specific regions and certain topical or thematic elements of historical investigation. History is taught as a part of primary and secondary education, and the academic study of history is a major discipline in universities. Herodotus, a 5th-century BCE Greek historian, is often considered the "father of history", as one of the first historians in the Western tradition, though he has been criticized as the "father of lies". Along with his contemporary Thucydides, he helped form the foundations for the modern study of past events and societies. Their works continue to be read today, and the gap between the culture-focused Herodotus and the military-focused Thucydides remains a point of contention or approach in modern historical writing. In East Asia a state chronicle, the Spring and Autumn Annals, was reputed to date from as early as 722 BCE, though only 2nd-century BCE texts have survived. The title "father of history" has also been attributed, in their respective societies, to Sima Qian and Ibn Khaldun.
1148
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8
ব্রাজিলের ইতিহাস
১৫০০ থেকে ১৮২২ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল একটি পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল। ১৮২২ সালে এটি স্বাধীনতা অর্জন করে। দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় অনেক শান্তিপূর্ণভাবে উপনিবেশ থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ব্রাজিলের উত্তরণ ঘটে। এসময় দেশে কোন রক্তপাত বা অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেনি। স্বাধীন হবার পর একজন সম্রাট ব্রাজিল শাসন করতেন। ১৮৮৮ সালে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। ১৮৮৯ সালে সামরিক অফিসারেরা রক্তপাতহীন কু-এর মাধ্যমে সম্রাটকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করে ব্রাজিলে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র স্থাপন করেন। ১৯৩০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলির জমিদারেরা দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। সেই বছর ব্রাজিলে আরেকটি অভ্যুত্থান ঘটে যার ফলে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সামরিক স্বৈরশাসকেরা ব্রাজিল শাসন করেন। ১৯৪৫ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৪ সালে অর্থনৈতিক সমস্যা ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের রেশ ধরে আরেকটি সামরিক কু ঘটে। এই সামরিক জান্তাটি ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল শাসন করে। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এই সরকার বিরোধীদের উপর বেশ নিপীড়ন চালায়। ১৯৮০-র দশকের শুরুতে জান্তাটি কঠোরতা হ্রাস করে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে এগোতে থাকে। প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাস যখন ব্রাজিলে পর্তুগিজ অভিযাত্রী আসেন, তখন এই এলাকাটি শত বিভিন্ন ধরনের জাকুবু উপজাতিরা বসবাস করত। পর্তুগিজরা মিনাস গেরিসের উচ্চভূমিতে কমপক্ষে ১০,০০০ বছর আগের "ইন্ডিয়ানস" (یndios) নামে পরিচিত প্রথম বাসিন্দাদের বসতি খুজে পেয়েছিলেন, যা এখনও প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে বিরোধের বিষয়। পশ্চিমাঞ্চলীয় গোলার্ধে পাওয়া প্রাচীন দ্রব্যগুলি রেডিও কার্বন পরিক্ষায় প্রমাণ হয়েছে সেগুলি প্রায় ৮,০০০ বছর বয়সী । ব্রাজিলের আমাজন উপত্যকায় সান্তেরার নিকটবর্তী অঞ্চলে খনন করা হয়েছে এবং "উষ্ণ অঞ্চলটি সম্পদের সমৃদ্ধ ছিল না" এই ধারণাটি পাল্টে ফেলার প্রমাণ পাওয়া যায় সেখান। নৃতাত্ত্বিক, ভাষাবিদ ও জেনেটিক্সবাদীদের বর্তমান সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য দৃষ্টিকোণ হল যে প্রারম্ভিক গোষ্ঠী অভিবাসী শিকারীদের প্রথম অংশ ছিল যারা এশিয়া থেকে আমেরিকায় এসেছিলেন, বেরিং প্রণালি অতিক্রম করে বা প্রশান্ত মহাসাগর বরাবর উপকূলবর্তী সমুদ্র পথ দ্বারা অথবা উভয় পথ ধরে। আন্দিজ পর্বতমালা এবং দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর অঞ্চলের পর্বতশ্রেণীগুলি মহাদেশঝির পশ্চিম উপকূলে স্থায়ী কৃষি সভ্যতা এবং পূর্বের আধা-ভ্রাম্যমাণ উপজাতির মানুষের মধ্যে একটি তাতক্ষণিক ধারালো সাংস্কৃতিক সীমা তৈরি করেছিল, যারা কখনো লিখিত তথ্য বা স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভের স্থাপনা তৈরী করেনি। এই কারণে, ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের আগে ব্রাজিলের ইতিহাস সম্পর্কে খুব সামান্যই জানা যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ (প্রধানত মৃৎপাত্র), অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের একটি জটিল নমুনা আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং মাঝে মাঝে বড় রাষ্ট্রের মত ফেডারেশনগুলির নির্দেশ করে। ঔপনিবেশিক ব্রাজিল ইউরোপীয়দের দ্বারা ব্রাজিল আবিষ্কারের সময় ও তার আগে বর্তমান সময়ের ব্রাজিলে প্রায় ,০০০ টি আদিবাসী উপজাতি ছিল। আদিবাসী জনগোষ্ঠী ঐতিহ্যগতভাবে বেশিরভাগই আধা-খাদকপূর্ণ উপজাতি ছিল যারা শিকার, মাছ ধরার, সংগ্রহ ও অভিবাসী কৃষিকাজে দ্বারা জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করত। যখন ১৫০০ সালে পর্তুগিজরা এসেছিল, সেই সময় মূলত উপকূলে এবং প্রধান নদীগুলির তীরে উপজাতির মানুষেরা বাস করত। উপজাতীযগুলির মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ, নরহত্যা এবং ব্রাজিলউডের ধনতান্ত্রিক লাল রঙের পেছনে পর্তুগিজরা বিশ্বাস করেছিল যে ব্রাজিলের উপজাতী নাগরিকদেরকে খ্রিস্টধর্মে নিয়ে আসা উচিত। কিন্তু পর্তুগিজরা দক্ষিণ আমেরিকাতে স্প্যানিশদের মত অজ্ঞাতসারে তাদের সাথে রোগ নিয়ে আসে, যার ফলে চিকিৎসার অভাবের কারণে অনেক স্থানীয় মানুষ তথা আদিবাসী অসহায় ছিল। হাজার হাজার আদিবাসী মানুষের মৃত্যু হয় হাম, গুটিবসন্ত, যক্ষ্মা, গনোরিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার ফলে। আদিবাসীদের মধ্যে বাণিজ্য রুটগুলির দ্বারা দ্রুত এই সব রোগ ছড়িয়ে পড়ে এবং সমগ্র উপজাতির মানুষেরা ইউরোপীয়দের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ না করেই ধ্বংস হয়ে যায়। ব্রাজিল সাম্রাজ্য পুনঃরায়গণতন্ত্র থেকে বর্তমান সময় (১৯৮৫ থেকে বর্তমান) জাতিসংঘের দ্বারা শরণার্থীদের ফিরে আসার পর ১৯৮৫ সালে তান্দ্রো নেভস একটি পরোক্ষ নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। শপথ গ্রহণের আগেই তিনি মারা যান এবং নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জোসে সার্নি তার জায়গায় রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৮৯ সালের সামরিক শাসনের পর জনপ্রিয় ফার্নান্ডো কোলার ডি মেলো নির্বাচনের দ্বারা প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাকে দুই-দফা চূড়ান্ত রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে ৩৫ মিলিয়ন ভোটে পরাজিত করেন। কোলার সাও পাওলো রাজ্যে অনেক বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে জিতেছে। ২৯ বছর বয়সে ব্রাজিলের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি "কোলার" ও তার সরকারের প্রাথমিক যুগের বেশিরভাগ সময় উচ্চ-মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল, এই মুদ্রাস্ফীতির কখনো কখনো প্রতি মাসে ২৫% হারে পৌঁছেছিল। [45] তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ব্রাজিলের ইতিহাস
https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_Brazil
History of Brazil
Before the arrival of the Europeans, the lands that now constitute Brazil were occupied, fought over and settled by diverse tribes. Thus, the history of Brazil begins with the indigenous people in Brazil. The Portuguese arrived to the land that would become Brazil on April 22, 1500, commanded by Pedro Álvares Cabral, an explorer on his way to India under the sponsorship of the Kingdom of Portugal and the support of the Catholic Church. From the 16th to the early 19th century, Brazil was created and expanded as a colony, kingdom and an integral part of the Portuguese Empire. Brazil was briefly named "Land of the Holy Cross" by Portuguese explorers and crusaders before being named "Land of Brazil" by the Brazilian-Portuguese settlers and merchants dealing with brazilwood. The country expanded south along the coast and west along the Amazon and other inland rivers from the original 15 hereditary captaincy colonies established on the northeast Atlantic coast east of the Tordesillas Line of 1494 that divided the Portuguese domain to the east from the Spanish domain to the west. The country's borders were only finalized in the early 20th century, with most of the expansion occurring before the independence, resulting in the largest contiguous territory in the Americas. On September 7, 1822, prince regent Pedro de Alcântara declared Brazil's independence from Portugal and so the Kingdom of Brazil became the Empire of Brazil. The country became a dictatorial republic in 1889 following a military coup d'état. An authoritarian military junta came to power in 1964 and ruled until 1985, after which civilian governance and democracy resumed. Brazil is a democratic federal republic. Due to its rich culture and history, the country ranks thirteenth in the world by number of UNESCO World Heritage Sites. Brazil is a founding member of the Community of Portuguese Language Countries, Mercosul, United Nations, the G20, BRICS, Organization of Ibero-American States and the Organization of American States.
1149
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%B0%20%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8
চিলির ইতিহাস
চিলি ১৬শ শতক থেকে স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৯শ শতকের শুরুর দিকে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। গোটা ১৯শ শতক ধরে রপ্তানির মাধ্যমে এটি সমৃদ্ধি লাভ করে, কিন্তু এতে মূলত জমিদার উচ্চ শ্রেণীর লোকেরাই লাভবান হন। এখনও চিলিতে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত চিলিতে কোন সামরিক কু (coup) ঘটেনি, যা ছিল লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় ব্যতিক্রম। ১৯৭৩ সালে এক সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখন করে এবং ১৯৮৯ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চিলি শাসন করে। ২১শ শতকের শুরুতে এসেও চিলি সামরিক শাসনের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। চিলির ইতিহাস দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস
https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_Chile
History of Chile
The territory of Chile has been populated since at least 3000 BC. By the 16th century, Spanish invaders began to raid the region of present-day Chile, and the territory was a colony between 1540 and 1818, when it gained independence from Spain. The country's economic development was successively marked by the export of first agricultural produce, then saltpeter and later copper. The wealth of raw materials led to an economic upturn, but also led to dependency, and even wars with neighboring states. Chile was governed during most of its first 150 years of independence by different forms of restricted government, where the electorate was carefully vetted and controlled by an elite. Failure to address the economic and social increases and increasing political awareness of the less-affluent population, as well as indirect intervention and economic funding to the main political groups by the CIA, as part of the Cold War, led to a political polarization under Socialist president Salvador Allende. This in turn resulted in the 1973 coup d'état and the military dictatorship of General Augusto Pinochet, whose subsequent 17-year regime was responsible for many human rights violations and deep market-oriented economic reforms. In 1990, Chile made a peaceful transition to democracy and initiate a succession of democratic governments.
1153
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8
প্যারাগুয়ের ইতিহাস
প্যারাগুয়ের পূর্বাংশে আদিতে স্থানীয় আদিবাসী গুয়ারানি জাতির লোকেরা বাস করত। ১৬শ শতকে এখানে স্পেনীয় ঔপনিবেশিকদের আগমন ঘটে। বর্তমানে প্যারাগুয়ে স্পেনীয় ও গুয়ারানি সংস্কৃতির মিলনস্থল। প্যারাগুয়ে ১৮১১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। এর আগে এটি একটি স্পেনীয় উপনিবেশ ছিল। প্যারাগুয়ের স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাস সংঘাতময় এবং কর্তৃত্বপরায়ণ শাসন এর মূল বৈশিষ্ট্য। দেশটি দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশের ইতিহাসের তিনটি প্রধান যুদ্ধে দুইটিতে অংশ নেয়। প্রথমটি ছিল ১৮৬৫ সাথে শুরু হওয়া ত্রি-মৈত্রী যুদ্ধ। ঐ বছর প্যারাগুয়ে তার শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্র আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও উরুগুয়ের সাথে একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ১৮৭৯ সালে এই সহিংস যুদ্ধের অবসান ঘটলেও এতে প্যারাগুয়ের অর্ধেক লোকই মৃত্যবরণ করে। এছাড়াও যুদ্ধের ফলস্বরূপ প্যারাগুয়ে তার ভূ-আয়তনের এক-চতুর্থাংশ হারায়। ১৯৩২ সাল থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত প্যারাগুয়ে বলিভিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, যার নাম ছিল চাকো যুদ্ধ। ১৯৪৭ সালে দেশটিতে একটি গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ২০শ শতকের মাঝামাঝি প্যারাগুয়ে সামরিক প্রধান আলফ্রেদো স্ত্রোসনারের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের জন্য কুখ্যাত হয়ে ওঠে। স্ত্রোসনার ১৯৫৪ সালে ক্ষমতা দখল করেন এবং তার সময়ে অনেক ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক এবং জার্মানির নাৎসি রাজনৈতিক দলের প্রাক্তন সদস্যরা প্যারাগুয়েতে রাজনৈতিক আশ্রয়লাভ করে। স্ত্রোসনার ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন, যে বছর একটি সামরিক অভ্যুত্থানে তার পতন ঘটে। তখন থেকে প্যারাগুয়ে ধীরে ধীরে গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা শুরু করে। স্ত্রোসনার প্যারাগুয়ের জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ও নিজমত চেপে রাখার যে সংস্কৃতি সৃষ্টি করেন, তা থেকে তারা কেবল ২১শ শতকে এসেই উত্তরণ করতে শুরু করেছে। ১৯৯৩ সালে দেশটিতে ১৯৫৪ সালের পর প্রথমবারের মত একজন বেসামরিক রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তবে প্যারাগুয়ে এখনও রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে নিমজ্জিত। ১৯৯৯ সালে উপরাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হয়। এছাড়া দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুয়ান কার্লোস ওয়াসমোসি (১৯৯৩-১৯৯৮) এবং লুইস গোনসালেস মাকচি (১৯৯৯-২০০৩)-র বিচারে শাস্তি হয়। ২০০৮ সালে প্যারাগুয়ের কোলোরাদো পার্টি ১৯৪৭ সালের পরে প্রথমবারের মত ক্ষমতা হারায়; তার আগে এটি অবিচ্ছিন্নভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে দেশ শাসনকারী রাজনৈতিক দল ছিল। তবে ২০১৩ সালে দলটি আবার ক্ষমতায় ফেরত আসে। তথ্যসূত্র প্যারাগুয়ের ইতিহাস
https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_Paraguay
History of Paraguay
The history of Paraguay encompasses thousands of years of human habitation. Both agricultural and nomadic Guaycuruan lived in the region at the time of the Spanish Conquest. It became a relatively neglected part of the Spanish Empire due to its isolation and lack of mineral wealth, nonetheless a small group of Spanish settlers came to reside in the area, increasingly intermarrying with native women to produce a mestizo population. In the 17th and 18th centuries, Jesuit missionaries organized the natives into planned communities known as reducciones, and the experiment gained notable attention in Enlightenment Era Europe. In the early nineteenth century, Paraguay participated in the uprisings across the Spanish Empire against Spanish rule, and newly independent Paraguay came under the domination of Jose Gaspar Rodriguez, who in his absolute rule almost entirely cut off the new nation from the world. After Dr. Francia's death in 1840, Paraguay eventually came under the rule of Francisco Solano Lopez in 1862, who proceeded to embroil the nation in wars against Brazil, Argentina, and Uruguay which culminated in a Paraguayan defeat with massive population and territorial losses. Military rule continued into the 20th century, which in the 1930s also saw Paraguay embroil itself in the Chaco War with Bolivia, which ended in a Paraguayan victory. General Alfredo Stroessner came to power in 1954, and military rule continued until 1989 upon which the nation moved toward a multi party democracy with a new constitution adopted in 1992. Paraguay in the 21st century has largely avoided the political strife and strong-man rule that characterizes much of its history. The Economist Intelligence Unit rated Paraguay a "hybrid regime" in 2022.
1154
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B0%20%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8
পেরুর ইতিহাস
পেরুর ইতিহাস ১০ সহস্রাব্দ সময়কাল পর্যন্ত বিস্তৃত। পেরুর ইতিহাস পর্বত অঞ্চল এবং হ্রদ অঞ্চল সমূহে সাংস্কৃতিক বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রসারিত হয়েছে। পেরু ছিল নর্তে চিকো সভ্যতার আবাসস্থল, যা ছিল আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতা এবং বিশ্বের ছয়টি প্রাচীনতম সভ্যতার মধ্যে একটি। ইনকা সাম্রাজ্যের সময় পেরু ছিল প্রাক-কলম্বিয়ান আমেরিকার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে উন্নত রাষ্ট্র। ১৬ শতকে পেরু স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, যার ফলে এখানে দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ অঞ্চলের এখতিয়ার সহ একটি ভাইসরয়্যালিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৮২১ সালে পেরু স্পেন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং তিন বছর ধরে চলা আয়াকুচো যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়। প্রাক কলম্বিয়ান সংস্কৃতি ১১,০০০ বছরেরও বেশি সময় আগের শিকারের সরঞ্জামগুলি পাচাকামাক, টেলারমাচে, জুনিন এবং লরিকোচা গুহাগুলির মধ্যে পাওয়া গেছে। আনুমানিক ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চিলকা, প্যারাকাসের উপকূলীয় অঞ্চল এবং ক্যালেজন দে হুয়ালাস প্রদেশে প্রাচীনতম কিছু সভ্যতা আবির্ভূত হয়েছিল। পরবর্তী তিন হাজার বছরে, বাসিন্দারা যাযাবর জীবনধারা থেকে জমি চাষের দিকে চলে যায়, যেমন জিস্কাইরুমোকো, কোতোশ এবং হুয়াকা প্রিয়াতা প্রভৃতি স্থান থেকে প্রমাণিত। ভুট্টা এবং তুলা জাতীয় উদ্ভিদের চাষ (গোসিপিয়াম বারবাডেন্স) শুরু হয়েছিল। ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ক্যাল্লাল্লির মোলেপুঙ্কো গুহাগুলিতে অঙ্কিত ক্যামেলিড রিলিফ পেইন্টিংগুলি হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেইসময় হতে লামা, আলপাকা এবং গিনিপিগের বন্য পূর্বপুরুষের মতো প্রাণীদের গৃহপালিত পশু হিসেবে পালন করা শুরু হয়েছিল। বাসিন্দারা তুলা এবং উল, ঝুড়ি এবং মৃৎশিল্পের চরকা এবং বুনন অনুশীলন করত। যেহেতু এই বাসিন্দারা বসতিহীন হয়ে পড়েছিল, চাষাবাদ তাদের বসতি গড়ে তুলতে দেয়। ফলস্বরূপ, উপকূল বরাবর এবং আন্দিয়ান পর্বতমালায় নতুন সমাজের উদ্ভব হয়। আমেরিকা মহাদেশের প্রথম পরিচিত শহরটি ছিল ক্যারাল, লিমা থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তরে সুপে উপত্যকায় অবস্থিত। এটি আনুমানিক ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত হয়েছিল। এই সভ্যতার অবশিষ্টাংশ, নর্তে চিকো নামেও পরিচিত, প্রায় ৩০টি পিরামিডাল কাঠামো নিয়ে গঠিত যা একটি সমতল ছাদে শেষ হয়ে যাওয়া পিরামিড টেরেসগুলিতে নির্মিত; তাদের মধ্যে কিছু কাঠামোর উচ্চতা ২০ মিটার পর্যন্ত পরিমাপ করা হয়েছে। কারালকে সভ্যতার অন্যতম বাহক হিসেবে বিবেচনা করা হত। ২১ শতকের গোড়ার দিকে, প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রাচীন প্রাক-সিরামিক যুগের সংস্কৃতির নতুন কিছু প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। ২০০৫ সালে, টম ডি. ডিলেহে এবং তার দল উত্তর পেরুর জানা উপত্যকায় ৫৪০০ বছর পুরানো তিনটি সেচ খাল এবং একটি সম্ভাব্য চতুর্থটি ৬৭০০ বছর পুরানো সেচের খাল আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। এটি ছিল সম্প্রদায়ের কৃষি উন্নতির প্রমাণ যা পূর্বে বিশ্বাস করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক আগের তারিখে ঘটেছে। ২০০৬ সালে, রবার্ট বেনফার এবং একটি গবেষণা দল বুয়েনা ভিস্তাতে একটি ৪২০০ বছরের পুরানো মানমন্দির আবিষ্কার করেছিল, যা বর্তমান লিমা থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে আন্দিজের একটি স্থান। তারা বিশ্বাস করে যে মানমন্দিরটি কৃষির উপর সমাজের নির্ভরতা এবং ঋতু বোঝার সাথে সম্পর্কিত ছিল। এই নিদর্শনটিতে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া প্রাচীনতম ত্রিমাত্রিক ভাস্কর্য রয়েছে। ২০০৭ সালে, প্রত্নতাত্ত্বিক ওয়াল্টার আলভা এবং তার দল উত্তর-পশ্চিম ভেনতাররনে আঁকা ম্যুরাল সহ একটি ৪০০০ বছরের পুরনো মন্দির খুঁজে পান। একটি মন্দির হতে পেরুভিয়ান জঙ্গল সমাজের সাথে বিনিময়ের মাধ্যমে অর্জিত আনুষ্ঠানিক নৈবেদ্য পাওয়া গেছে। এই ধরনের আবিষ্কারগুলি পরিশীলিত স্মারক নির্মাণের জন্য বৃহৎ মাপের শ্রম সংগঠনের প্রয়োজন দেখায়, যা পরামর্শ দেয় যে পণ্ডিতদের ধারণার চেয়ে অনেক আগে দক্ষিণ আমেরিকায় শ্রেণিবদ্ধ জটিল সংস্কৃতির উদ্ভব হয়েছিল। সে সময়ে অন্যান্য অনেক সভ্যতা বিকশিত হয়েছিল, যেমন কোটোশ, শ্যাভিন, প্যারাকাস, লিমা, নাসকা, মোচে, টিওয়ানাকু, ওয়ারী, লাম্বায়েক, চিমু ও চিঞ্চা প্রমুখ। ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে দক্ষিণ উপকূলে প্যারাকাস সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। তারা সূক্ষ্ম বস্ত্র উৎপাদন করার জন্য শুধুমাত্র তুলার পরিবর্তে ভিকুনা ফাইবার ব্যবহারের জন্য পরিচিত— এ উদ্ভাবনটি পেরুর উত্তর উপকূলে কয়েক শতাব্দী পরে পৌছিয়েছিল। মোচে এবং নাজকার মতো উপকূলীয় সংস্কৃতিগুলি প্রায় ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে প্রায় ৭০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিকাশ লাভ করেছিল: মোচে চিত্তাকর্ষক ধাতুর কাজ তৈরি করেছিল, সেইসাথে প্রাচীন বিশ্বে দেখা সেরা কিছু মৃৎপাত্রের নির্মাতা ছিল তারা। অপরদিকে নাজকা তাদের টেক্সটাইল এবং রহস্যময় নাজকা লাইনের জন্য পরিচিত। পুনরাবৃত্তিমূলক এল নিনোর বন্যা এবং খরার ফলে এই উপকূলীয় সংস্কৃতিগুলি অবশেষে হ্রাস পেতে শুরু করে। ফলস্বরূপ, হুয়ারি এবং টিওয়ানাকু, যারা আন্দিজের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে বসবাস করত, তারা এই অঞ্চলের প্রধান সংস্কৃতি বাহক হিসেবে পরিণত হয়েছিল যেগুলি আধুনিক দিনের পেরু এবং বলিভিয়ার বেশিরভাগ অংশকে অন্তর্ভুক্ত করে। তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল শক্তিশালী শহর-রাজ্য যেমন চ্যাঙ্কে, সিপান, কাজামার্কা এবং দুটি সাম্রাজ্য : চিমোর ও চাচাপোয়াস। এই সংস্কৃতিগুলি চাষের তুলনামূলকভাবে উন্নত কৌশল , সোনা ও রূপার কারুশিল্প, ধাতুবিদ্যা , মৃৎশিল্প ও বুনন রপ্ত করেছিল ‌। ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি, তারা সামাজিক সংগঠনের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল যা ইনকা সভ্যতার পূর্বসূরি ছিল। পার্বত্য অঞ্চলে, পেরু এবং বলিভিয়া উভয়ের কাছে অবস্থিত টিটিকাকা হ্রদের কাছে টিয়াহুয়ানাকো সভ্যতা এবং বর্তমান সময়ের আয়াকুচো শহরের কাছে ওয়ারি সভ্যতা, ৫০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিশাল নগর বসতি এবং বিস্তৃত রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। ইনকা সাম্রাজ্য প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে এটি চাচাপোয়াস সংস্কৃতির মতো অসহযোগী আন্দিয়ান সংস্কৃতিকে পরাজিত ও আত্মসাৎ করে। গ্যাব্রিয়েল প্রিয়েটোর নেতৃত্বে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ১৪০ টিরও বেশি শিশু কঙ্কাল এবং ২০০ লামার কঙ্কাল পেয়েছিলেন। তারা চিমু সংস্কৃতির দ্বারা করা বৃহত্তম গণশিশু বলির কথা প্রকাশ করেছিলেন যখন তাকে জানানো হয়েছিল যে ২০১১ সালে প্রিয়েটোর ফিল্ডওয়ার্কের কাছাকাছি একটি টিলায় কিছু শিশু হাড় খুঁজে পেয়েছে। গবেষণায় গবেষকদের নোট অনুসারে, স্টারনা বা স্তনের হাড়ে কিছু শিশু এবং লামাদের কাটা দাগ ছিল। অনুষ্ঠানের সময় বাচ্চাদের বুক কেটে ফেলার আগে মুখ লাল রঞ্জক দিয়ে মেখে দেওয়া হয়েছিল। সম্ভবত তাদের হৃৎপিন্ড কেটে ফেলার জন্য বাচ্চাদের বুক কেটে ফেলা হয়েছিল। দেহাবশেষে দেখা গেছে, এই শিশুরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছে এবং যখন শিশু ও লামাদের বলি দেওয়া হয়, তখন এলাকাটি জলে ভিজানো হয়। “আমাদের মনে রাখতে হবে যে চিমুর অধিবাসীদের আজকের পশ্চিমাদের চেয়ে খুব আলাদা বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। মৃত্যু এবং মহাবিশ্বে প্রতিটি ব্যক্তি যে ভূমিকা পালন করে সে সম্পর্কে তাদের খুব আলাদা ধারণাও ছিল, সম্ভবত ক্ষতিগ্রস্তরা স্বেচ্ছায় তাদের দেবতাদের কাছে বার্তাবাহক হিসাবে গিয়েছিল, অথবা সম্ভবত চিমু সমাজ বিশ্বাস করেছিল যে এটিই আরও বেশি মানুষকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায়” বলেছেন নৃবিজ্ঞানী রায়ান উইলিয়ামস। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, প্রত্নতাত্ত্বিকরা চিলকা শহরের কাছাকাছি ৮০০ বছর বয়সী আটটি মৃতদেহের অবশেষ প্রাপ্তির ঘোষণা করেছিলেন। মৃতদেহের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুরা অন্তর্ভুক্ত ছিল যারা কবর দেওয়ার আগে উদ্ভিদের উপাদানে আবৃত ছিল। কিছু খাবার এবং বাদ্যযন্ত্রও উন্মোচিত হয়েছে। গবেষকরা মনে করেন যে অবশিষ্টাংশগুলি চিলকা সংস্কৃতির অন্তর্গত, যা এই এলাকার অন্যান্য প্রাক-হিস্পানিক সংস্কৃতি থেকে আলাদা ছিল।==প্রাক কলম্বিয়ান সংস্কৃতি == ১১,০০০ বছরেরও বেশি সময় আগের শিকারের সরঞ্জামগুলি পাচাকামাক, টেলারমাচে, জুনিন এবং লরিকোচা গুহাগুলির মধ্যে পাওয়া গেছে। আনুমানিক ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চিলকা, প্যারাকাসের উপকূলীয় অঞ্চল এবং ক্যালেজন দে হুয়ালাস প্রদেশে প্রাচীনতম কিছু সভ্যতা আবির্ভূত হয়েছিল। পরবর্তী তিন হাজার বছরে, বাসিন্দারা যাযাবর জীবনধারা থেকে জমি চাষের দিকে চলে যায়, যেমন জিস্কাইরুমোকো, কোতোশ এবং হুয়াকা প্রিয়াতা প্রভৃতি স্থান থেকে প্রমাণিত। ভুট্টা এবং তুলা জাতীয় উদ্ভিদের চাষ (গোসিপিয়াম বারবাডেন্স) শুরু হয়েছিল। ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ক্যাল্লাল্লির মোলেপুঙ্কো গুহাগুলিতে অঙ্কিত ক্যামেলিড রিলিফ পেইন্টিংগুলি হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেইসময় হতে লামা, আলপাকা এবং গিনিপিগের বন্য পূর্বপুরুষের মতো প্রাণীদের গৃহপালিত পশু হিসেবে পালন করা শুরু হয়েছিল। বাসিন্দারা তুলা এবং উল, ঝুড়ি এবং মৃৎশিল্পের চরকা এবং বুনন অনুশীলন করত। যেহেতু এই বাসিন্দারা বসতিহীন হয়ে পড়েছিল, চাষাবাদ তাদের বসতি গড়ে তুলতে দেয়। ফলস্বরূপ, উপকূল বরাবর এবং আন্দিয়ান পর্বতমালায় নতুন সমাজের উদ্ভব হয়। আমেরিকা মহাদেশের প্রথম পরিচিত শহরটি ছিল ক্যারাল, লিমা থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তরে সুপে উপত্যকায় অবস্থিত। এটি আনুমানিক ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত হয়েছিল। এই সভ্যতার অবশিষ্টাংশ, নর্তে চিকো নামেও পরিচিত, প্রায় ৩০টি পিরামিডাল কাঠামো নিয়ে গঠিত যা একটি সমতল ছাদে শেষ হয়ে যাওয়া পিরামিড টেরেসগুলিতে নির্মিত; তাদের মধ্যে কিছু কাঠামোর উচ্চতা ২০ মিটার পর্যন্ত পরিমাপ করা হয়েছে। কারালকে সভ্যতার অন্যতম বাহক হিসেবে বিবেচনা করা হত। ২১ শতকের গোড়ার দিকে, প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রাচীন প্রাক-সিরামিক যুগের সংস্কৃতির নতুন কিছু প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। ২০০৫ সালে, টম ডি. ডিলেহে এবং তার দল উত্তর পেরুর জানা উপত্যকায় ৫৪০০ বছর পুরানো তিনটি সেচ খাল এবং একটি সম্ভাব্য চতুর্থটি ৬৭০০ বছর পুরানো সেচের খাল আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। এটি ছিল সম্প্রদায়ের কৃষি উন্নতির প্রমাণ যা পূর্বে বিশ্বাস করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক আগের তারিখে ঘটেছে। ২০০৬ সালে, রবার্ট বেনফার এবং একটি গবেষণা দল বুয়েনা ভিস্তাতে একটি ৪২০০ বছরের পুরানো মানমন্দির আবিষ্কার করেছিল, যা বর্তমান লিমা থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে আন্দিজের একটি স্থান। তারা বিশ্বাস করে যে মানমন্দিরটি কৃষির উপর সমাজের নির্ভরতা এবং ঋতু বোঝার সাথে সম্পর্কিত ছিল। এই নিদর্শনটিতে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া প্রাচীনতম ত্রিমাত্রিক ভাস্কর্য রয়েছে। ২০০৭ সালে, প্রত্নতাত্ত্বিক ওয়াল্টার আলভা এবং তার দল উত্তর-পশ্চিম ভেনতাররনে আঁকা ম্যুরাল সহ একটি ৪০০০ বছরের পুরনো মন্দির খুঁজে পান। একটি মন্দির হতে পেরুভিয়ান জঙ্গল সমাজের সাথে বিনিময়ের মাধ্যমে অর্জিত আনুষ্ঠানিক নৈবেদ্য পাওয়া গেছে। এই ধরনের আবিষ্কারগুলি পরিশীলিত স্মারক নির্মাণের জন্য বৃহৎ মাপের শ্রম সংগঠনের প্রয়োজন দেখায়, যা পরামর্শ দেয় যে পণ্ডিতদের ধারণার চেয়ে অনেক আগে দক্ষিণ আমেরিকায় শ্রেণিবদ্ধ জটিল সংস্কৃতির উদ্ভব হয়েছিল। সে সময়ে অন্যান্য অনেক সভ্যতা বিকশিত হয়েছিল, যেমন কোটোশ, শ্যাভিন, প্যারাকাস, লিমা, নাসকা, মোচে, টিওয়ানাকু, ওয়ারী, লাম্বায়েক, চিমু ও চিঞ্চা প্রমুখ। ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে দক্ষিণ উপকূলে প্যারাকাস সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। তারা সূক্ষ্ম বস্ত্র উৎপাদন করার জন্য শুধুমাত্র তুলার পরিবর্তে ভিকুনা ফাইবার ব্যবহারের জন্য পরিচিত— এ উদ্ভাবনটি পেরুর উত্তর উপকূলে কয়েক শতাব্দী পরে পৌছিয়েছিল। মোচে এবং নাজকার মতো উপকূলীয় সংস্কৃতিগুলি প্রায় ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে প্রায় ৭০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিকাশ লাভ করেছিল: মোচে চিত্তাকর্ষক ধাতুর কাজ তৈরি করেছিল, সেইসাথে প্রাচীন বিশ্বে দেখা সেরা কিছু মৃৎপাত্রের নির্মাতা ছিল তারা। অপরদিকে নাজকা তাদের টেক্সটাইল এবং রহস্যময় নাজকা লাইনের জন্য পরিচিত। পুনরাবৃত্তিমূলক এল নিনোর বন্যা এবং খরার ফলে এই উপকূলীয় সংস্কৃতিগুলি অবশেষে হ্রাস পেতে শুরু করে। ফলস্বরূপ, হুয়ারি এবং টিওয়ানাকু, যারা আন্দিজের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে বসবাস করত, তারা এই অঞ্চলের প্রধান সংস্কৃতি বাহক হিসেবে পরিণত হয়েছিল যেগুলি আধুনিক দিনের পেরু এবং বলিভিয়ার বেশিরভাগ অংশকে অন্তর্ভুক্ত করে। তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল শক্তিশালী শহর-রাজ্য যেমন চ্যাঙ্কে, সিপান, কাজামার্কা এবং দুটি সাম্রাজ্য : চিমোর ও চাচাপোয়াস। এই সংস্কৃতিগুলি চাষের তুলনামূলকভাবে উন্নত কৌশল , সোনা ও রূপার কারুশিল্প, ধাতুবিদ্যা , মৃৎশিল্প ও বুনন রপ্ত করেছিল ‌। ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি, তারা সামাজিক সংগঠনের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল যা ইনকা সভ্যতার পূর্বসূরি ছিল। পার্বত্য অঞ্চলে, পেরু এবং বলিভিয়া উভয়ের কাছে অবস্থিত টিটিকাকা হ্রদের কাছে টিয়াহুয়ানাকো সভ্যতা এবং বর্তমান সময়ের আয়াকুচো শহরের কাছে ওয়ারি সভ্যতা, ৫০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিশাল নগর বসতি এবং বিস্তৃত রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। ইনকা সাম্রাজ্য প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে এটি চাচাপোয়াস সংস্কৃতির মতো অসহযোগী আন্দিয়ান সংস্কৃতিকে পরাজিত ও আত্মসাৎ করে। গ্যাব্রিয়েল প্রিয়েটোর নেতৃত্বে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ১৪০ টিরও বেশি শিশু কঙ্কাল এবং ২০০ লামার কঙ্কাল পেয়েছিলেন। তারা চিমু সংস্কৃতির দ্বারা করা বৃহত্তম গণশিশু বলির কথা প্রকাশ করেছিলেন যখন তাকে জানানো হয়েছিল যে ২০১১ সালে প্রিয়েটোর ফিল্ডওয়ার্কের কাছাকাছি একটি টিলায় কিছু শিশু হাড় খুঁজে পেয়েছে। গবেষণায় গবেষকদের নোট অনুসারে, স্টারনা বা স্তনের হাড়ে কিছু শিশু এবং লামাদের কাটা দাগ ছিল। অনুষ্ঠানের সময় বাচ্চাদের বুক কেটে ফেলার আগে মুখ লাল রঞ্জক দিয়ে মেখে দেওয়া হয়েছিল। সম্ভবত তাদের হৃৎপিন্ড কেটে ফেলার জন্য বাচ্চাদের বুক কেটে ফেলা হয়েছিল। দেহাবশেষে দেখা গেছে, এই শিশুরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছে এবং যখন শিশু ও লামাদের বলি দেওয়া হয়, তখন এলাকাটি জলে ভিজানো হয়। “আমাদের মনে রাখতে হবে যে চিমুর অধিবাসীদের আজকের পশ্চিমাদের চেয়ে খুব আলাদা বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। মৃত্যু এবং মহাবিশ্বে প্রতিটি ব্যক্তি যে ভূমিকা পালন করে সে সম্পর্কে তাদের খুব আলাদা ধারণাও ছিল, সম্ভবত ক্ষতিগ্রস্তরা স্বেচ্ছায় তাদের দেবতাদের কাছে বার্তাবাহক হিসাবে গিয়েছিল, অথবা সম্ভবত চিমু সমাজ বিশ্বাস করেছিল যে এটিই আরও বেশি মানুষকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায়” বলেছেন নৃবিজ্ঞানী রায়ান উইলিয়ামস। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, প্রত্নতাত্ত্বিকরা চিলকা শহরের কাছাকাছি ৮০০ বছর বয়সী আটটি মৃতদেহের অবশেষ প্রাপ্তির ঘোষণা করেছিলেন। মৃতদেহের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুরা অন্তর্ভুক্ত ছিল যারা কবর দেওয়ার আগে উদ্ভিদের উপাদানে আবৃত ছিল। কিছু খাবার এবং বাদ্যযন্ত্রও উন্মোচিত হয়েছে। গবেষকরা মনে করেন যে অবশিষ্টাংশগুলি চিলকা সংস্কৃতির অন্তর্গত, যা এই এলাকার অন্যান্য প্রাক-হিস্পানিক সংস্কৃতি থেকে আলাদা ছিল। ইনকা সাম্রাজ্য (১৪৩৮-১৫৩২) ইনকারা প্রাক-কলম্বিয়ান আমেরিকার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে উন্নত সাম্রাজ্য এবং রাজবংশ তৈরি করেছিল। ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে এটি এর সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণে পৌঁছেছিল। এটি এমন একটি অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেছিল যেটিতে (উত্তর থেকে দক্ষিণে) ইকুয়েডরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ, কলম্বিয়ার অংশ, পেরুর প্রধান অঞ্চল, চিলির উত্তর অংশ এবং আর্জেন্টিনার উত্তর-পশ্চিম অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। পূর্ব থেকে পশ্চিমে, বলিভিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ থেকে আমাজনীয় বন পর্যন্তও ইনকা সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সাম্রাজ্যটি কুসকোতে অবস্থিত একটি উপজাতি থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, যা রাজধানী হয়ে ওঠে। পাচাকুটেক প্রথম ইনকা ছিলেন না, তবে তিনিই প্রথম শাসক যিনি কুসকো রাজ্যের সীমানা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করেছিলেন। তাকে সম্ভবত আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট (ম্যাসিডন থেকে), জুলিয়াস সিজার (রোমান সাম্রাজ্যের), আটিলা (হুন উপজাতি থেকে) এবং চেঙ্গিস খান (মঙ্গোল সাম্রাজ্য থেকে) এর সাথে তুলনা করা যেতে পারে। তার বংশধররা পরবর্তীতে সহিংস আক্রমণ এবং শান্তিপূর্ণ বিজয় উভয়ের মাধ্যমে একটি সাম্রাজ্য শাসন করে, অর্থাৎ ছোট রাজ্যের শাসক এবং বর্তমান ইনকা শাসকের মধ্যে আন্তঃবিবাহ। কুসকোতে, রাজকীয় শহরটি একটি কুগারের ন্যায় তৈরি করা হয়েছিল। প্রধান রাজকীয় কাঠামো, যা এখন সাসক্যায়হুয়েমেন নামে পরিচিত। সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক কেন্দ্র ছিল কুসকোতে। সাম্রাজ্যটি চার ভাগে বিভক্ত ছিল: চিনচায়সুয়ু , এন্টিসুয়ু , কুন্তিসুয়ু এবং কুল্লাসুয়ু। অফিসিয়াল ভাষা ছিল কেচুয়া, সাম্রাজ্যের মূল উপজাতির একটি প্রতিবেশী উপজাতির ভাষা। বিজিত জনসংখ্যা-উপজাতি, রাজ্য, রাজ্য এবং শহরগুলি-কে তাদের নিজস্ব ধর্ম এবং জীবনধারা অনুশীলন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাদের নিজেদের থেকে উচ্চতর হিসাবে ইনকা সাংস্কৃতিক অনুশীলনকে স্বীকৃতি দিতে হয়েছিল। ইন্তি, সূর্য দেবতা, সাম্রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেবতা হিসাবে উপাসনা করা হত। পৃথিবীতে তার প্রতিনিধিত্ব করতেন ইনকা সম্রাট। তাওয়ান্তিনসুয়ু একটি স্তরীভূত সমাজের সাথে আধিপত্যে সংগঠিত হয়েছিল যেখানে শাসক ছিলেন ইনকা। এটি জমির যৌথ সম্পত্তির উপর ভিত্তি করে একটি অর্থনীতি দ্বারা সমর্থিত ছিল। সাম্রাজ্য বেশ বড় হওয়ায় সাম্রাজ্যের সমস্ত পয়েন্টে ইনকা ট্রেইল এবং চাসকুইস নামে রাস্তার একটি চিত্তাকর্ষক পরিবহন ব্যবস্থা ছিল।অনেক বার্তা বাহক ছিলেন যারা সাম্রাজ্যের যে কোনও জায়গা থেকে কুসকোতে তথ্য পাঠাত। মাচু পিচু (কেচুয়া ভাষায় মাচু পিচু অর্থ পুরাতন শহর ; কখনও কখনও "ইনকাদের হারিয়ে যাওয়া শহর" বলা হয়) হল একটি সুসংরক্ষিত প্রাক-কলম্বিয়ান ইনকা ধ্বংসাবশেষ যা উরুবাম্বা উপত্যকার উপরে একটি উচ্চ পর্বত শৃঙ্গে অবস্থিত, কুসকোর প্রায় ৭০ কিমি (৪৪ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। উচ্চতা পরিমাপ পরিবর্তিত হয় কিনা তার উপর নির্ভর করে তথ্যটি পরিবর্তিত হয়। মাচু পিচু পর্যটক তথ্যে উচ্চতা ২,৩৫০ মিটার (৭,৭১১ ফুট) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে বহির্বিশ্বের দ্বারা ভুলে যাওয়া (যদিও স্থানীয়দের দ্বারা নয়) শহরটি ইয়েলের প্রত্নতাত্ত্বিক হিরাম বিংহাম তৃতীয় দ্বারা আন্তর্জাতিক মনোযোগের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। বিংহাম, প্রায়শই ইন্ডিয়ানা জোন্সের অনুপ্রেরণা হিসাবে উল্লেখ করা হয়, ১৯১১ সালে এটিকে "বৈজ্ঞানিকভাবে পুনঃআবিষ্কার" করেন এবং তার সর্বাধিক বিক্রিত বই দিয়ে সাইটটির প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পেরু হাজার হাজার নিদর্শন পুনরুদ্ধার করার জন্য আইনি প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যা বিংহাম সাইট থেকে সরিয়ে দিয়েছে এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান মালিকদের কাছে বিক্রি করেছে। যদিও মাচু পিচু এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে সুপরিচিত, পেরু আরও অনেক সাইট নিয়ে গর্ব করে যেখানে আধুনিক দর্শনার্থীরা ব্যাপক এবং সু-সংরক্ষিত ধ্বংসাবশেষ, ইনকা-যুগের অবশিষ্টাংশ এবং এমনকি পুরানো নির্মাণগুলি দেখতে পায়। এই সাইটগুলিতে পাওয়া বেশিরভাগ ইনকা স্থাপত্য এবং পাথরের কাজ প্রত্নতাত্ত্বিকদের বিভ্রান্ত করে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, সাকসেওয়ামান কুসকোতে, জিগ-জ্যাগ-আকৃতির দেয়ালগুলি একে অপরের অনিয়মিত, কৌণিক আকারে অবিকল লাগানো বিশাল বোল্ডার দ্বারা গঠিত। কোন মর্টার তাদের একত্রে ধরে রাখে না, কিন্তু তবুও তারা বহু শতাব্দী ধরে শক্ত রয়ে গেছে। ভূমিকম্প কুসকোর অনেক ঔপনিবেশিক নির্মাণকে সমতল করে দিয়েছে। বর্তমানে দৃশ্যমান দেয়ালের ক্ষতি প্রধানত স্প্যানিশ এবং ইনকাদের মধ্যে যুদ্ধের সময়, সেইসাথে পরবর্তীতে, ঔপনিবেশিক যুগে হয়েছিল। কুসকো বড় হওয়ার সাথে সাথে সাকসেওয়ামানের দেয়াল আংশিকভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছিল, সাইটটি শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্য নির্মাণ সামগ্রীর একটি সুবিধাজনক উৎস হয়ে উঠেছে। কীভাবে এই পাথরগুলোকে আকৃতি ও মসৃণ করা হয়েছিল, একে অপরের ওপরে তোলা হয়েছিল বা ইনকাদের দ্বারা একসাথে লাগানো হয়েছিল তা এখনও জানা যায়নি; এটাও অজানা কীভাবে তারা পাথরগুলোকে প্রথম স্থানে নিয়ে গিয়েছিল। ইউরোপীয় উপনিবেশ হিসেবে পেরু (১৫৩২-১৫৭২) পেরুর ব্যুৎপত্তি পেরু শব্দটি বিরু থেকে উদ্ভূত হতে পারে, একজন স্থানীয় শাসকের নাম যিনি ১৬ শতকের গোড়ার দিকে পানামার সান মিগুয়েল উপসাগরের কাছে বাস করতেন। ১৫২২ সালে যখন স্প্যানিশ অভিযাত্রীরা তার সম্পদ পরিদর্শন করেন, তখন তারা ইউরোপীয়দের কাছে নতুন বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষিণের অংশ ছিল। এইভাবে, ফ্রান্সিসকো পিজারো যখন দক্ষিণে অঞ্চলগুলি অন্বেষণ করেন, তখন তারা বিরু বা পেরু নামে পরিচিত হয়। একটি বিকল্প ইতিহাসের অবতারণা করেছেন সমসাময়িক লেখক ইনকা গার্সিলাস্কো দে লা ভেগা, একজন ইনকা রাজকুমারীর পুত্র। তিনি বলেছেন যে বিরু নামটি ছিল একজন সাধারণ ভারতীয় যা গভর্নর পেড্রো আরিয়াস দে আভিলার জন্য একটি অনুসন্ধানী মিশনে জাহাজের ক্রু দ্বারা ঘটেছিল এবং একটি সাধারণ ভাষার অভাবের কারণে ভুল বোঝাবুঝির আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে। স্প্যানিশ ক্রাউন ১৫২৯ সালে ক্যাপিটুলেশিয়ন ডে টলেডো- এর সাথে নামটিকে আইনি মর্যাদা দেয়, যার দ্বারা নবগঠিত ইনকা সাম্রাজ্য পেরুকে প্রদেশ হিসাবে মনোনীত করে। স্প্যানিশ শাসনের অধীনে, দেশটি পেরুর ভাইসারয়্যালিটি গ্রহণ করে, যা স্বাধীনতার পর পেরু প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। ১৫৩১ সালে যখন স্প্যানিশরা অবতরণ করে, তখন পেরুর অঞ্চলটি ছিল অত্যন্ত উন্নত ইনকা সভ্যতার মধ্যমণি। কুসকোতে কেন্দ্রীভূত, ইনকা সাম্রাজ্য দক্ষিণ-পশ্চিম ইকুয়েডর থেকে উত্তর চিলি পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল। ফ্রান্সিসকো পিজারো এবং তার ভাইয়েরা একটি ধনী এবং কল্পিত রাজ্যের খবরে আকৃষ্ট হয়েছিল। ১৫৩২ সালে, তারা পেরু নামে দেশটিতে পৌঁছায়। ( বিরু , পিরু এবং বেরু নামগুলিও প্রাথমিক রেকর্ডগুলিতে দেখা যায়।) রাউল পোরাস ব্যারেনেচিয়ার মতে , পেরু একটি কেচুয়ান বা ক্যারিবিয়ান শব্দ নয়, তবে ইন্দো-হিস্পানিক বা হাইব্রিড। ১৫২৪ থেকে ১৫২৬ সালের মধ্যে, পানামার বিজয়ীদের কাছ থেকে এবং পেরুতে স্প্যানিশ বিজয়ীদের আগে স্থানীয়দের মধ্যে সংক্রমণের মাধ্যমে গুটিবসন্তের প্রচলন, ইনকা সাম্রাজ্যের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। গুটিবসন্ত ইনকা শাসক হুয়ানা ক্যাপাকের মৃত্যু ঘটায় এবং তার উত্তরাধিকারী সহ তার পরিবারের অধিকাংশের মৃত্যু ঘটায়, ইনকা রাজনৈতিক কাঠামোর পতন ঘটায় এবং ভাই আতাহুয়ালপা এবং হুয়াস্কারের মধ্যে গৃহযুদ্ধে অবদান রাখে। এর সুযোগ নিয়ে, পিজারো একটি অভ্যুত্থান ঘটান। ১৫৩২ সালের ১৬ নভেম্বর, যখন আতাহুয়ালপার বিজয়ী সেনাবাহিনী একটি নিরস্ত্র উদযাপনে ছিল , তখন কাজামার্কা যুদ্ধের সময় স্প্যানিশরা আতাহুয়ালপাকে ফাঁদে ফেলে। সুসজ্জিত ১৬৮ স্প্যানিয়ার্ডরা হাজার হাজার সবে সশস্ত্র ইনকা সৈন্যদের হত্যা করে এবং নতুন ইনকা শাসককে বন্দী করে, যা স্থানীয়দের মধ্যে একটি বড় আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং যুদ্ধের ভবিষ্যত গতিপথকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন হুয়াস্কারকে হত্যা করা হয়, তখন স্প্যানিশরা আতাহুয়ালপাকে হত্যার বিচার করে এবং তাকে শ্বাসরোধ করে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিছু সময়ের জন্য, পিজারো আতাহুয়ালপার মৃত্যুর পর তুপাক হুয়ালপাকে সাপা ইনকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ইনকার দৃশ্যমান কর্তৃত্ব বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু বিজয়ীর গালাগালি এই সম্মুখভাগকে খুব স্পষ্ট করে তুলেছে। ক্রমাগত আদিবাসী বিদ্রোহ রক্তাক্তভাবে দমন করায় স্প্যানিশ আধিপত্য নিজেকে সুসংহত করে। ২৩ মার্চ ১৫৩৪ সালের মধ্যে, পিজারো এবং স্প্যানিশরা একটি নতুন স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক বন্দোবস্ত হিসাবে কুসকোর ইনকা শহর পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। একটি স্থিতিশীল ঔপনিবেশিক সরকার প্রতিষ্ঠা কিছু সময়ের জন্য বিলম্বিত হয়েছিল স্থানীয় বিদ্রোহ এবং কনকুইস্টাডোরস (পিজারো এবং ডিয়েগো দে আলমাগ্রোর নেতৃত্বে ) দলগুলি নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের কারণে। একটি দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ গড়ে ওঠে, যেখান থেকে পিজারো লাস স্যালিনাসের যুদ্ধে বিজয়ী হন। ১৫৪১ সালে, পিজারোকে ডিয়েগো ডি আলমাগ্রো দ্বিতীয় ( এল মোজো ) এর নেতৃত্বে একটি দল দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল এবং পরবর্তী গৃহযুদ্ধে মূল ঔপনিবেশিক শাসনের স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়েছিল। এই সত্ত্বেও, স্প্যানিশরা উপনিবেশ প্রক্রিয়াটিকে অবহেলা করেনি। এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক ছিল ১৫৩৫ সালের জানুয়ারিতে লিমার ভিত্তি, যেখান থেকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলি সংগঠিত হয়েছিল। নতুন শাসকরা এনকোমিন্ডা সিস্টেম চালু করেছিলেন, যার মাধ্যমে স্প্যানিশরা স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিল, যার একটি অংশ স্থানীয়দের খ্রিস্টান ধর্মে রূপান্তরিত করার বিনিময়ে সেভিলে পাঠানো হয়েছিল। ভূমির শিরোনাম খোদ স্পেনের রাজার কাছেই ছিল। পেরুর গভর্নর হিসাবে, পিজারো এনকোমিন্ডা ব্যবহার করেছিলেন। এটি ছিল তার সৈনিক সঙ্গীদের স্থানীয় পেরুভিয়ানদের উপর কার্যত সীমাহীন কর্তৃত্ব প্রদানের ব্যবস্থা। এইভাবে তারা ঔপনিবেশিক ভূমি-কাল কাঠামো গঠন করে। পেরুর আদিবাসীরা তাদের জমিদারদের জন্য ওল্ড ওয়ার্ল্ড গবাদি পশু, হাঁস -মুরগি এবং শস্য সংগ্রহ করবে বলে আশা করা হয়েছিল। " ব্ল্যাক লিজেন্ড " এর জন্ম দিয়ে প্রতিরোধকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। এই অঞ্চলগুলির উপর স্প্যানিশ রাজকীয় কর্তৃত্ব একত্রিত করার প্রয়োজনীয়তা একটি বাস্তব শ্রোতা (রাজকীয় শ্রোতা) তৈরির দিকে পরিচালিত করেছিল। পরের বছর, ১৫৪২ সালে, স্প্যানিশ শাসিত দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশের উপর কর্তৃত্ব সহ পেরুর ভাইসরয়্যালিটি ( ভিররেইনেটো ডেল পেরু) প্রতিষ্ঠিত হয়। কলোম্বিয়া, ইকুয়েডর, পানামা এবং ভেনিজুয়েলা ১৭১৭ সালে নিউ গ্রানাডা ( ভিরেইনাতো দে নুয়েভা গ্রানাডা ) এর ভাইসরয়্যালিটি হিসাবে বিভক্ত হয়েছিল। আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে এবং উরুগুয়ে এই চারটি অংশ নিয়ে ১৭৭৬ সালে রিও দে লা প্লাতার ভাইসরয়্যালিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পিজারোর মৃত্যুর পর, অসংখ্য অভ্যন্তরীণ সমস্যা দেখা দেয় এবং অবশেষে স্পেন ১৫৪৪ সালে পেরুর প্রথম ভাইসরয় হিসেবে ব্লাস্কো নুনেজ ভেলাকে পাঠায়। পরে পিজারোর ভাই গঞ্জালো পিজারো তাকে হত্যা করেন, কিন্তু একজন নতুন ভাইসরয় পেড্রো দে লা গাসকা শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সক্ষম হন। তিনি গঞ্জালো পিজারোকে বন্দী করেন এবং মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন। সর্বশেষ কুইপুকামায়োক দ্বারা নেওয়া একটি আদমশুমারি ইঙ্গিত দেয় যে ইনকা পেরুর ১২ মিলিয়ন বাসিন্দা ছিল। ৪৫ বছর পর, ভাইসরয় টলেডোর অধীনে, আদমশুমারির পরিসংখ্যান ছিল ১১,০০,০০০ ইনকা। ইতিহাসবিদ ডেভিড এন. কুক অনুমান করেন যে তাদের জনসংখ্যা ১৫২০-এর আনুমানিক ৯ মিলিয়ন থেকে ১৬২০-এ প্রায় ৬,০০,০০০-এ নেমে আসে মূলত সংক্রামক রোগের কারণে। যদিও এটি গণহত্যার একটি সংগঠিত প্রচেষ্টা ছিল না , ফলাফল একই রকম ছিল। পণ্ডিতরা এখন বিশ্বাস করেন যে, বিভিন্ন কারণের মধ্যে মহামারী রোগ যেমন গুটিবসন্ত (স্প্যানিশদের বিপরীতে, আমেরিন্ডিয়ানদের এই রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল না) আমেরিকান নেটিভদের জনসংখ্যা হ্রাসের অপ্রতিরোধ্য কারণ ছিল। ইনকা শহরগুলিকে স্প্যানিশ খ্রিস্টান নাম দেওয়া হয়েছিল এবং স্প্যানিশ শহরগুলিকে কেন্দ্র করে একটি গির্জা বা ক্যাথেড্রাল একটি সরকারী বাসভবনের মুখের চারপাশে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। কুসকোর মতো কয়েকটি ইনকা শহর তাদের দেয়ালের ভিত্তির জন্য স্থানীয় রাজমিস্ত্রি ধরে রেখেছে। অন্যান্য ইনকা শহর যেমন হুয়ানুকো ভিজো নিম্ন উচ্চতার জন্য পরিত্যক্ত হয়েছিল। পেরুর ভাইসরয়্যালিটি (১৫৪২-১৮২৪) ১৫৪২ সালে, স্প্যানিশ ক্রাউন পেরুর ভাইসরয়্যালিটি তৈরি করে, যা ১৫৭২ সালে ভাইসরয় ফ্রান্সিসকো ডি টলেডোর আগমনের পরে পুনর্গঠিত হয়েছিল। তিনি ভিলকাবাম্বাতে আদিবাসী নিও-ইনকা রাজ্যের অবসান ঘটান এবং টুপাক আমারু প্রথমকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এছাড়াও তিনি বাণিজ্যিক একচেটিয়া এবং খনিজ উত্তোলনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন চেয়েছিলেন, প্রধানত পোটোসির রৌপ্য খনি থেকে। খনির কাজের জন্য স্থানীয় সম্প্রদায়কে একত্রিত করার জন্য তিনি ইনকা মিতা (একটি জোরপূর্বক শ্রম কর্মসূচি) পুনঃব্যবহার করেন। এই সংগঠনটি পেরুকে দক্ষিণ আমেরিকায় স্প্যানিশ সম্পদ ও ক্ষমতার প্রধান উৎসে রূপান্তরিত করেছে। লিমা শহর, ১৮ জানুয়ারী ১৫৩৫ সালে "সিউদাদ দে রেয়েস" (রাজাদের শহর) হিসাবে পিজারো দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, নতুন ভাইসরয়্যালিটির আসনে পরিণত হয়েছিল। এটি স্প্যানিশ দক্ষিণ আমেরিকার বেশির ভাগের এখতিয়ার সহ একটি শক্তিশালী শহরে পরিণত হয়েছিল। মূল্যবান ধাতুগুলি লিমার মধ্য দিয়ে পানামার ইস্তমাস এবং সেখান থেকে আটলান্টিক পথে স্পেনের সেভিলে চলে যায়, কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরের জন্য এটি মেক্সিকোতে চলে যায় এবং আকাপুল্কো বন্দর থেকে অবতরণ করে এবং অবশেষে ফিলিপাইনে পৌঁছে। ১৮ শতকের মধ্যে, লিমা একটি বিশিষ্ট এবং অভিজাত ঔপনিবেশিক রাজধানী, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন এবং আমেরিকার প্রধান স্প্যানিশ দুর্গে পরিণত হয়েছিল। পেরু ধনী এবং অত্যন্ত জনবহুল ছিল। পানামার গভর্নর সেবাস্তিয়ান হুর্তাডো ডি করকুয়েরা, ফিলিপাইনের জাম্বোয়াঙ্গা শহরে বসতি স্থাপন করেছিলেন এবং সেখানে পেরুর শহর থেকে নিয়োগকৃত সৈন্য এবং উপনিবেশবাদীদের নিয়োগ করেছিলেন। সেখানে অধিবাসীরা স্প্যানিশ ক্রেওল ভাষায় কথা বলে। তা সত্ত্বেও, অষ্টাদশ শতাব্দী জুড়ে, লিমা থেকে আরও দূরে প্রদেশগুলিতে, স্প্যানিশদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল না। স্থানীয় অভিজাতদের সাহায্য ছাড়া স্প্যানিশরা প্রদেশগুলি পরিচালনা করতে পারত না। এই স্থানীয় অভিজাত, যারা কুরাকা শিরোনামে শাসন করেছিল, তারা ইনকা সাম্রাজ্য ইতিহাসে গর্বভরে কর্মের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। উপরন্তু, অষ্টাদশ শতাব্দী জুড়ে, আদিবাসীরা স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিদ্রোহ ছিল ১৭৪২ সালে আন্দিয়ান জঙ্গল প্রদেশের অংশ টারমা এবং জাউজাতে জুয়ান সান্তোস আতাহুয়ালপা কর্তৃক পরিচালিত বিদ্রোহ, যা স্প্যানিশদের একটি বিশাল এলাকা থেকে বিতাড়িত করেছিল এবং ১৭৮০ সালে কুজকোর কাছাকাছি উচ্চভূমির আশেপাশে তুপাক আমারু দ্বিতীয় এর বিদ্রোহ। সেই সময়ে, নিউ গ্রানাডা এবং রিও দে লা প্লাতার ভাইসরয়্যালটি তৈরির কারণে একটি অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হচ্ছিল (এটির অঞ্চলের ব্যয়ে)। শুল্ক ছাড়ের ফলে বাণিজ্যিক কেন্দ্রটি লিমা থেকে কারাকাস এবং বুয়েনস আইরেসে স্থানান্তরিত করেছিল এবং খনি বস্ত্র উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল। এই সংকট দ্বিতীয় টুপাক আমরু-এর আদিবাসী বিদ্রোহের পক্ষে অনুকূল প্রমাণিত হয়েছিল এবং পেরুর ভাইসরয়্যালিটির ক্রমাগত ক্ষয় ত্বরান্বিত করেছিল। ১৮০৮ সালে, নেপোলিয়ন আইবেরিয়ান উপদ্বীপ আক্রমণ করেন এবং রাজা ফার্দিনান্দ সপ্তমকে জিম্মি করেন। পরে ১৮১২ সালে, ক্যাডিজ কর্টেস, স্পেনের জাতীয় আইনসভা, কাডিজের একটি উদার সংবিধান জারি করে। এই ঘটনাগুলি সমগ্র স্প্যানিশ আমেরিকা জুড়ে স্প্যানিশ ক্রিওলো জনগণের মধ্যে মুক্তির ধারণাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। পেরুতে, হুয়ানুকোর ক্রেওল বিদ্রোহ ১৮১২ সালে এবং কুসকোর বিদ্রোহ ১৮১৪ থেকে ১৮১৬ সালের মধ্যে দেখা দেয়। এই বিদ্রোহ সত্ত্বেও, পেরুর ক্রিওলো অলিগার্চি বেশিরভাগই স্প্যানিশ অনুগত ছিল, যা পেরুর ভাইসরয়্যালিটির জন্য দায়ী।দক্ষিণ আমেরিকায় স্প্যানিশ আধিপত্যের শেষ সন্দেহে পরিণত হয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধ (১৮১১-১৮২৪) আর্জেন্টিনার হোসে দে সান মার্টিন এবং ভেনিজুয়েলার সিমন বোলিভারের নেতৃত্বে স্প্যানিশ-আমেরিকান জমির মালিক এবং তাদের বাহিনীর একটি বিদ্রোহের মাধ্যমে পেরুর স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সান মার্টিন, যিনি চাকাবুকোর যুদ্ধের পরে চিলির রাজকীয়দের বাস্তুচ্যুত করেছিলেন এবং ১৮১৯ সালে প্যারাকাসে নেমেছিলেন, তিনিই ৪,২০০ সৈন্যের সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অভিযানের মধ্যে যে যুদ্ধজাহাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল তা চিলি দ্বারা সংগঠিত এবং অর্থায়ন করা হয়েছিল এবং তা ১৮২০ সালের আগস্ট মাসে ভালপারাইসো থেকে যাত্রা করেছিল। সান মার্টিন ১৮২১ সালের ২৮ জুলাই লিমাতে পেরুর স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, ...এই মুহূর্ত থেকে, পেরু স্বাধীন এবং স্বাধীন, জনগণের সাধারণ ইচ্ছা এবং তার কারণের ন্যায়বিচার দ্বারা যা ঈশ্বর রক্ষা করেন। দীর্ঘজীবী হোক স্বদেশ! স্বাধীনতা দীর্ঘজীবী হোক! আমাদের স্বাধীনতা দীর্ঘজীবী হোক! স্প্যানিশদের কাছ থেকে পেরুকে আংশিকভাবে মুক্ত করার পর ১৮২১ সালের আগস্টে সান মার্টিন "পেরুর স্বাধীনতা রক্ষাকারী" উপাধি পেয়েছিলেন। ১৮২২ সালের ২৬ এবং ২৭ জুলাই, বোলিভার সান মার্টিনের সাথে গুয়াকিল সম্মেলন আয়োজন করে এবং পেরুর রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণের চেষ্টা করে। সান মার্টিন একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র বেছে নিয়েছিলেন, যখন বোলিভার (উত্তর অভিযানের প্রধান) একটি প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন। তবুও, তারা উভয়েই এই ধারণাটি অনুসরণ করেছিল যে এটি স্পেন থেকে স্বাধীন হতে হবে। সাক্ষাৎকারের পর, সান মার্টিন ১৮২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পেরু ত্যাগ করেন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরো কমান্ড সিমন বোলিভারের কাছে ছেড়ে দেন। পেরুর কংগ্রেস ১০ ফেব্রুয়ারী ১৮২৪ সালে পেরুর শাসক হিসেবে বোলিভারের নামকরণ করে, যা তাকে রাজনৈতিক ও সামরিক প্রশাসনকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্গঠিত করার অনুমতি দেয়। জেনারেল আন্তোনিও জোসে দে সুক্রের সহায়তায়, বলিভার স্প্যানিশ অশ্বারোহী বাহিনীকে ৬ আগস্ট ১৮২৪ সালে জুনিনের যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে। সুক্রে ৯ ডিসেম্বর ১৮২৪ সালে আয়াকুচোতে স্প্যানিশ বাহিনীর বাকি অংশ ধ্বংস করে। যুদ্ধ তখন পর্যন্ত শেষ হয়নি যতক্ষণ পর্যন্ত রাজকীয় হোল্ডআউটরা ১৮২৬ সালে রিয়েল ফেলিপ দুর্গ আত্মসমর্পণ করে। বিজয় রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে আসে, কিন্তু রাজতন্ত্রের আদিবাসী এবং মেস্টিজো সমর্থক থেকে যায় এবং হুয়ানতা প্রদেশে, তারা ১৮২৫-১৮২৮ সালে বিদ্রোহ করে, যা পুনাসের যুদ্ধ বা হুয়ান্টা বিদ্রোহ নামে পরিচিত। স্পেন তার প্রাক্তন উপনিবেশগুলি পুনরুদ্ধারের জন্য নিরর্থক প্রচেষ্টা করেছিল, যেমন ক্যালাওর যুদ্ধ (১৮৬৬)। তারা ১৮৭৯ সালে পেরুর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়। পেরু প্রজাতন্ত্র আঞ্চলিক বিরোধ (১৮২৪-১৮৮৪) স্বাধীনতার পর, পেরু এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলো মাঝে মাঝে আঞ্চলিক বিরোধে লিপ্ত হয়। ১৮২৮ সালের শুরুর দিকে, পেরু বলিভারিয়ান প্রভাবের অবসান ঘটাতে বলিভিয়ার বিরুদ্ধে একটি অভিযান শুরু করে যেখানে এটি অবশেষে কলম্বিয়ানদের বলিভিয়া ছেড়ে যেতে বাধ্য করে। এটি গ্রান কলম্বিয়া-পেরু যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করে যা উভয় দেশের মধ্যে অচলাবস্থায় শেষ হয়। ১৮৩৬-১৮৩৯ সময়কালে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ডি সান্তা ক্রুজ যখন পেরু-বলিভিয়ান কনফেডারেশন অস্তিত্বে আসে তখন পেরু ও বলিভিয়াকে একত্রিত করার একটি প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। তীব্র অভ্যন্তরীণ বিরোধিতার জন্য কনফেডারেশনের যুদ্ধে এর ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে যা অগাস্টিন গামারার দ্বারা বলিভিয়াকে সংযুক্ত করার একটি পেরুভিয়ান প্রয়াসে পরিণত হয়েছিল যা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে পরিণত হয়। ১৮৫৭ এবং ১৮৬০ সালের মধ্যে আমাজনের বিতর্কিত অঞ্চলগুলির জন্য ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে পেরুর বিজয় ইকুয়েডরীয়দের এই এলাকায় বসতি স্থাপনের দাবিতে বাধা দেয়। ১৮৮২-১৮৮৩ সিয়েরা ক্যাম্পেইন উপলক্ষে পেরু একটি রেলপথ নির্মাণ কর্মসূচি শুরু করেছে। আমেরিকান উদ্যোক্তা হেনরি মেইগস আন্দিজ জুড়ে ক্যালাও থেকে অভ্যন্তরীণ, হুয়ানকায়ো পর্যন্ত একটি স্ট্যান্ডার্ড গেজ লাইন তৈরি করেছিলেন ; তিনি লাইন তৈরি করেছিলেন এবং কিছু সময়ের জন্য এর রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন; শেষ পর্যন্ত, তিনি নিজেকে এবং দেশকে দেউলিয়া করেছেন। রাষ্ট্রপতি টমাস গার্দিয়া ১৮৭১ সালে আটলান্টিক পর্যন্ত একটি রেলপথ নির্মাণের জন্য মেইগসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। আর্থিক সমস্যা ১৮৭৪ সালে সরকারকে দায়িত্ব নিতে বাধ্য করে। শ্রম পরিস্থিতি জটিল ছিল, উত্তর আমেরিকান, ইউরোপীয়, কৃষ্ণাঙ্গ এবং চীনাদের মধ্যে বিভিন্ন স্তরের দক্ষতা এবং সংগঠনের দ্বন্দ্বের কারণে। পরিস্থিতিগুলি চীনাদের জন্য অত্যন্ত নৃশংস ছিল এবং ধর্মঘট এবং সহিংস দমনের দিকে পরিচালিত করেছিল। ১৮৭৯ সালে, পেরু প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধে প্রবেশ করে যা ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত চলে। বলিভিয়া চিলির বিরুদ্ধে পেরুর সাথে তার মৈত্রী আহ্বান করে। পেরুর সরকার চিলি সরকারের সাথে আলোচনার জন্য একটি কূটনৈতিক দল পাঠিয়ে বিরোধের মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কমিটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল যে যুদ্ধ অনিবার্য। ১৪ মার্চ ১৮৭৯-এ, বলিভিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং চিলি, প্রতিক্রিয়া হিসাবে, ৫ এপ্রিল ১৮৭৯-এ বলিভিয়া এবং পেরুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং পরের দিন পেরু যুদ্ধ ঘোষণা করে। প্রায় পাঁচ বছরের যুদ্ধ শেষ হয় আতাকামা অঞ্চলের টারাপাকা বিভাগ এবং টাকনা এবং আরিকা প্রদেশ হারানোর মাধ্যমে। মূলত, চিলি তাদের জাতীয় অধিভুক্তি নির্ধারণের জন্য আরিকা এবং টাকনা শহরগুলির জন্য একটি গণভোটের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল যা বছর পরে অনুষ্ঠিত হবে। যাইহোক, চিলি চুক্তিটি প্রয়োগ করতে অস্বীকার করে এবং উভয় দেশ বিধিবদ্ধ কাঠামো নির্ধারণ করতে পারেনি। সালিশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে গণভোট গ্রহণ করা অসম্ভব ছিল, তাই পক্ষগুলির মধ্যে সরাসরি আলোচনার ফলে একটি চুক্তির ( লিমা চুক্তি, ১৯২৯) হয়েছিল, যেখানে আরিকাকে চিলির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল এবং তাকনা রয়ে গিয়েছিল। ২৯ আগস্ট ১৯২৯ তারিখে তাকনা পেরুতে ফিরে আসে। চিলির সৈন্যদের দ্বারা আঞ্চলিক ক্ষতি এবং পেরুর শহরগুলির ব্যাপক লুটপাট চিলির সাথে দেশের সম্পর্কের উপর দাগ ফেলে যা এখনও পুরোপুরি নিরাময় হয়নি। ১৯৪১ সালের ইকুয়েডর-পেরুভিয়ান যুদ্ধের পর, রিও প্রোটোকল ঐ দুটি দেশের মধ্যে সীমানাকে আনুষ্ঠানিক করার চেষ্টা করেছিল। চলমান সীমানা মতবিরোধের কারণে ১৯৮১ সালের প্রথম দিকে একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধ এবং ১৯৯৫ সালের শুরুর দিকে চেনেপা যুদ্ধ হয়, কিন্তু ১৯৯৮ সালে উভয় দেশের সরকার একটি ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা তাদের মধ্যে স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক সীমানা চিহ্নিত করে। ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে, পেরু এবং চিলির সরকারগুলি তাদের ১৯২৯ সালের সীমান্ত চুক্তির শেষ অসামান্য নিবন্ধটি বাস্তবায়ন করে। ১৯৮০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পেরু এবং চিলি উভয়ই একটি সামুদ্রিক বিরোধে জড়িত ছিল যা ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে উত্থাপন না হওয়া পর্যন্ত কয়েক দশক ধরে অমীমাংসিত ছিল, যা ২০১৪ সালে পেরুর পক্ষে বিরোধের সমাধান করে এবং এটিকে তার দাবিকৃত অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ প্রদান করে। পুনর্গঠন, অভিজাত প্রজাতন্ত্র, এবং লেগুয়ের ১১ বছরের শাসন (১৮৮৪-১৯৩০) প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধের পরে, পুনর্নির্মাণের একটি অসাধারণ প্রচেষ্টা শুরু হয়। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার বেশ কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু করে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা শুধুমাত্র ১৯০০ এর দশকের গোড়ার দিকে অর্জিত হয়েছিল। ১৮৯৪ সালে, নিকোলাস দে পিয়েরোলা লিমা দখল করার জন্য গেরিলা যোদ্ধাদের সংগঠিত করার জন্য পেরুর সিভিল পার্টির সাথে তার দলের মিত্রতা গঠনের পর, আন্দ্রেস অ্যাভেলিনো ক্যাসেরেসকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং ১৮৯৫ সালে আবার পেরুর রাষ্ট্রপতি হন। একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের পরে যেখানে সামরিক বাহিনী আবার নিয়ন্ত্রণ করে। ১৮৯৫ সালে পিয়েরলার নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটিতে স্থায়ীভাবে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯৯ সালে তার দ্বিতীয় মেয়াদ সফলভাবে সম্পন্ন হয় এবং আর্থিক, সামরিক, ধর্মীয় এবং বেসামরিক সংস্কার শুরু করার মাধ্যমে একটি বিধ্বস্ত পেরুর পুনর্গঠনের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ১৯২০ এর দশক পর্যন্ত, এই সময়টিকে "অভিজাত প্রজাতন্ত্র" বলা হত, কারণ দেশটি শাসনকারী বেশিরভাগ রাষ্ট্রপতিই সামাজিক অভিজাত শ্রেণীর ছিলেন। এই সময়ে, কর্নেল এবং লোরেটো এমিলিও ভিজকারার প্রিফেক্ট পেরু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জঙ্গল রিপাবলিক নামের একটি রাষ্ট্র ঘোষণা করেন, একটি অস্বীকৃত বিচ্ছিন্নতাবাদী রাষ্ট্র যার ঘোষিত সীমানা লরেটো বিভাগের (আজ লোরেটো, সান মার্টিন এবং উকায়ালি বিভাগ ) এর সাথে মিলে যায়। রাষ্ট্রপতি এডুয়ার্ডো লোপেজ দে রোমানা অবিলম্বে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সৈন্য প্রেরণ করেন এবং ১৯০০ সালে এই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বন্ধ হয়ে যায়। এই বিদ্রোহের আগে ১৮৯৬ সালে অনুরূপ একটি বিদ্রোহ হয়েছিল, যেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পেরু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং স্বল্পস্থায়ী ফেডারেল স্টেট প্রতিষ্ঠা করে। লরেটো যার বিদ্রোহ একইভাবে শেষ হয়েছিল; এবং ১৯২১ সালে আরেকটি বিদ্রোহও একই রকম ভাগ্য দেখেছিল। অগাস্টো বি. লেগুয়ার সরকারের সময়কালে (১৯০৮-১৯১২ এবং ১৯১৯-১৯৩০), পরবর্তীটি "Oncenio" ("একাদশ") নামে পরিচিত, আমেরিকান পুঁজির প্রবেশদ্বার হয়ে ওঠে এবং বুর্জোয়াদের পক্ষপাতী হয়। এই নীতি বিদেশী বিনিয়োগের উপর বর্ধিত নির্ভরতা সহ পেরুর সমাজের সবচেয়ে প্রগতিশীল ক্ষেত্রগুলি থেকে জমির মালিক অলিগার্কির বিরুদ্ধে বিরোধিতাকে কেন্দ্রীভূত করেছিল। ১৯২৯ সালে একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি হয়েছিল, যা পেরু এবং চিলির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং এই লিমা চুক্তি বলে অভিহিত করা হয় যার মাধ্যমে টাকনা পেরুতে ফিরে আসে এবং পেরু স্থায়ীভাবে আরিকা এবং তারাপাকা প্রদেশের পূর্বে সমৃদ্ধ প্রদেশগুলি লাভ করে, কিন্তু আরিকাতে বন্দর কার্যক্রমের কিছু অধিকার রাখে এবং চিলি এই অঞ্চলগুলিতে কি করতে পারে তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ১৯২২ সালে সালোমন-লোজানো চুক্তি পেরু এবং কলম্বিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ‌, যেখানে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে একটি বিশাল পরিমাণ ভূখণ্ড কলম্বিয়াকে অর্পণ করা হয়েছিল যাতে তারা আমাজন নদীতে প্রবেশ করতে পারে এবং পেরুর অঞ্চলকে আরও হ্রাস করে। ১৯২৪ সালে মেক্সিকো থেকে পেরুর বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার নেতারা যারা সরকার কর্তৃক নির্বাসনে বাধ্য হয়েছিল তারা আমেরিকান পিপলস রেভোলিউশনারি অ্যালায়েন্স (আপরা) প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা দেশের রাজনৈতিক জীবনে একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল। আপরা মূলত ১৯১৮-১৯২০ সালের বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার এবং শ্রমিকদের সংগ্রামের একটি রাজনৈতিক অভিব্যক্তি। এই আন্দোলনটি মেক্সিকান বিপ্লব এবং এর ১৯১৭ সালের সংবিধান থেকে বিশেষ করে কৃষিবাদ এবং আদিবাসীদের ইস্যুতে এবং রাশিয়ান বিপ্লব থেকে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। মার্কসবাদের কাছাকাছি (এর নেতা, হায়া দে লা টোরে, ঘোষণা করে যে "আরপা হল আমেরিকান বাস্তবতার মার্কসবাদী ব্যাখ্যা"), তবুও এটি শ্রেণী সংগ্রামের প্রশ্নে এবং লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক ঐক্যের সংগ্রামকে দেওয়া গুরুত্বের ভিত্তিতে এটি থেকে সরে যায়। ১৯২৮ সালে, পেরুভিয়ান সোশ্যালিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, বিশেষত হোসে কার্লোস মারিয়াতেগুই -এর নেতৃত্বে, যিনি নিজে আরপা-এর একজন প্রাক্তন সদস্য ছিলেন। এর কিছুদিন পরে, ১৯২৯ সালে, পার্টি জেনারেল কনফেডারেশন অফ ওয়ার্কার্স তৈরি করে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুইস মিগুয়েল সানচেজ সেরো এবং তার সহানুভূতিশীলদের দ্বারা পরিচালিত একটি অভ্যুত্থানের পরে এই সময়কাল শেষ হয়, জেনারেল ম্যানুয়েল মারিয়া পন্স ব্রুসেট সানচেজ সেরোর আরেকুইপা থেকে লিমায় ফিরে না আসা পর্যন্ত দুই দিনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। দেশটির সরকার তখন একটি একক রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র থেকে সামরিক সরকারে পরিণত হয়। মাত্র দুই বছর পর সানচেজ সেরোকে হত্যার সাথে সাথে কলম্বিয়ার সাথে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। গণতন্ত্র এবং সামরিকবাদের মধ্যে বিকল্প (১৯৩০-১৯৭০) ১৯২৯ সালের বিশ্বব্যাপী সংকটের পর, অসংখ্য সংক্ষিপ্ত সরকার একে অপরকে অনুসরণ করেছিল। আরপা পার্টির রাজনৈতিক কর্মের মাধ্যমে সিস্টেম সংস্কার করার সুযোগ ছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি। ১৯২৪ সালে ভিক্টর রাউল হায়া দে লা টোরের নেতৃত্বে এটি একটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, জনতাবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী দল হয়ে উঠে। পেরুর সোশ্যালিস্ট পার্টি (পরে পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি) চার বছর পরে তৈরি হয়েছিল এবং এটির নেতৃত্বে ছিলেন হোসে সি. মারিয়াতেগুই। ১৯৩০-এর দশকের গোড়ার দিকে দমন-পীড়ন ছিল নৃশংস এবং কয়েক হাজার আপরা অনুসারী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বা কারারুদ্ধ হয়েছিল। এই সময়কালটি আকস্মিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নগরায়ন বৃদ্ধির দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল। আলবার্তো ফ্লোরেস গ্যালিন্ডোর মতে, "১৯৪০ সালের আদমশুমারি দ্বারা, সর্বশেষ যেটি জাতিগত বিভাগগুলি ব্যবহার করেছিল, মেস্টিজোসকে শ্বেতাঙ্গদের সাথে গোষ্ঠীভুক্ত করা হয়েছিল, এবং দুটি জনসংখ্যা ৫৩ শতাংশেরও বেশি গঠন করেছিল৷ মেস্টিজোস সম্ভবত আদিবাসীদের চেয়ে বেশি এবং জনসংখ্যার বৃহত্তম গোষ্ঠী ছিল৷" ব্রাজিল ২২ আগস্ট ১৯৪২, বলিভিয়া ৭ এপ্রিল ১৯৪৩ এবং কলম্বিয়া ১৯৪৩ সালের ২৬ নভেম্বর এবং ১৯৪৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে পেরু অক্ষবাহিনীর বিরুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সাথে যুদ্ধে যোগদান করে। ২রা সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর বিজয়ের পর, ভিক্টর রাউল হায়া দে লা টোরে (আপরা-এর প্রতিষ্ঠাতা), হোসে কার্লোস মারিয়াতেগুই ( পেরুভিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ) পেরুর রাজনীতিতে দুটি প্রধান শক্তি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। আদর্শগতভাবে বিরোধিতা করে, তারা উভয়েই প্রথম রাজনৈতিক দল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল যা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি মোকাবেলা করেছিল। যদিও মারিয়াতেগুই অল্প বয়সে মারা যান, হায়া দে লা টোরে দুবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন, কিন্তু সামরিক বাহিনী তাকে যোগদান করতে বাধা দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, দেশটি তার জাপানি অভিবাসী জনসংখ্যার প্রায় ২০০০ জনকে রাউন্ড আপ করেছিল এবং জাপানি-আমেরিকান ইন্টার্নমেন্ট প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরণ করেছিল। প্রেসিডেন্ট বুস্তামান্তে ওয়াই রিভেরো আশা করেছিলেন যে সামরিক এবং অলিগার্কির ক্ষমতা সীমিত করে আরও গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করবেন। আপরা এর সহযোগিতায় নির্বাচিত শীঘ্রই রাষ্ট্রপতি এবং হায়া দে লা টোরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। আপরা পার্টির সমর্থন ছাড়া বুস্তামান্তে ওয়াই রিভেরো তার রাষ্ট্রপতির পদ গুরুতরভাবে সীমিত হিসেবে খুঁজে পান। রাষ্ট্রপতি তার এপ্রিস্টা মন্ত্রিসভা ভেঙে দেন এবং বেশিরভাগ সামরিক মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভায় প্রতিস্থাপন করেন। ১৯৪৮ সালে, মন্ত্রী ম্যানুয়েল এ. ওড্রিয়া এবং মন্ত্রিসভার অন্যান্য ডানপন্থী মন্ত্রী আরপাকে নিষিদ্ধ করার জন্য বুস্তামান্তে ওয়াই রিভেরোকে অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু রাষ্ট্রপতি প্রত্যাখ্যান করলে ওড্রিয়া তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২৯ অক্টোবর একটি সামরিক অভ্যুত্থানে, জেনারেল ম্যানুয়েল এ. ওড্রিয়া নতুন রাষ্ট্রপতি হন। ওড্রিয়ার প্রেসিডেন্সি ওচেনিও নামে পরিচিত ছিল। তিনি আপরাকে কঠোরভাবে দমন করেছিলেন, মুহূর্তের জন্য অলিগার্কি এবং ডানদিকের অন্য সকলকে খুশি করেছিলেন, কিন্তু একটি পপুলিস্ট পথ অনুসরণ করেছিলেন যা তাকে দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের কাছে দারুণ অনুগ্রহ লাভ করতে সহায়তা করেছিল। একটি উন্নতিশীল অর্থনীতি তাকে ব্যয়বহুল কিন্তু সামাজিক নীতিতে লিপ্ত হতে দেয়। তবে নাগরিক অধিকার কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ ছিল এবং তার শাসনামলে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। এটা আশঙ্কা করা হয়েছিল যে তার একনায়কত্ব অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে, তাই ওড্রিয়া নতুন নির্বাচনের অনুমতি দিলে এটি আশ্চর্যজনক ছিল। এই সময়ে ফার্নান্দো বেলাউন্ডে টেরি তার রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু করেন এবং ন্যাশনাল ফ্রন্ট অফ ডেমোক্রেটিক ইয়ুথের নেতৃত্ব দেন। জাতীয় নির্বাচন বোর্ড তার প্রার্থীতা গ্রহণ করতে অস্বীকার করার পরে, তিনি একটি ব্যাপক প্রতিবাদের নেতৃত্ব দেন এবং পতাকা নিয়ে বেলাউন্দের হাঁটার আকর্ষণীয় চিত্রটি পরের দিন "Así Nacen Los Lideres" শিরোনামের একটি নিবন্ধে নিউজ ম্যাগাজিন দ্বারা প্রদর্শিত হয় ("এভাবে নেতারা কি জন্মগ্রহণ করেন")। বেলাউন্দের ১৯৫৬ সালের প্রার্থীতা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছিল, কারণ ম্যানুয়েল প্রাডো উগারতেচে স্বৈরাচার-অনুগ্রহপ্রদত্ত ডানপন্থী প্রার্থীতা প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। ১৯৬২ সালের জাতীয় নির্বাচনে বেলাউন্ডে আবারও রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন; এবার তার নিজের দল, Acción Popular (পপুলার অ্যাকশন) নিয়ে। ফলাফল খুব টাইট ছিল; তিনি ভিক্টর রাউল হায়া দে লা টোরকে অনুসরণ করে ১৪,০০০ ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেছেন। যেহেতু প্রার্থীদের মধ্যে কেউই সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ন্যূনতম এক তৃতীয়াংশ ভোট সরাসরি জয়লাভ করতে সক্ষম হয়নি, তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কংগ্রেসের কাছে হওয়া উচিত ছিল; সামরিক বাহিনী এবং আরপা-এর মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে চলা বৈরী সম্পর্ক হায়া দে লা টোরেকে প্রাক্তন স্বৈরশাসক ওড্রিয়ার সাথে একটি চুক্তি করতে প্ররোচিত করেছিল, যিনি তৃতীয় স্থানে ছিলেন, যার ফলে ওড্রিয়া একটি জোট সরকারে প্রেসিডেন্সি গ্রহণ করত। যাইহোক, প্রতারণার ব্যাপক অভিযোগ পেরুর সামরিক বাহিনীকে প্রাডোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং রিকার্ডো পেরেজ গোডয়ের নেতৃত্বে একটি সামরিক জান্তা স্থাপন করতে প্ররোচিত করে। গডয় একটি সংক্ষিপ্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনা করেছিলেন এবং ১৯৬৩ সালে নতুন নির্বাচন করেছিলেন, যেগুলি বেলাউন্ডে আরও আরামদায়ক কিন্তু এখনও পাঁচ শতাংশের ব্যবধানে জিতেছিল। ১৯৬০-এর দশকে ল্যাটিন আমেরিকা জুড়ে, কিউবার বিপ্লব দ্বারা অনুপ্রাণিত কমিউনিস্ট আন্দোলন গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা জয় করতে চেয়েছিল। বিপ্লবী বাম আন্দোলন (পেরু) বা এমআইআর একটি বিদ্রোহ শুরু করেছিল যা ১৯৬৫ সালের মধ্যে চূর্ণ হয়েছিল, কিন্তু পেরুর অভ্যন্তরীণ বিবাদ কেবল ১৯৯০-এর দশকে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত ত্বরান্বিত হবে। পেরুর ইতিহাসে সামরিক বাহিনী বিশিষ্ট অভ্যুত্থান বারবার বেসামরিক সাংবিধানিক সরকারকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সামরিক শাসনের সাম্প্রতিকতম সময়কাল (১৯৬৮-১৯৮০) শুরু হয়েছিল যখন জেনারেল জুয়ান ভেলাস্কো আলভারাডো পপুলার অ্যাকশন পার্টি (এপি) এর নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ফার্নান্দো বেলাউন্ডে টেরিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। সামরিক সরকারের জাতীয়তাবাদী কর্মসূচীর "প্রথম পর্যায়" বলা হয় তার অংশ হিসেবে, ভেলাসকো একটি ব্যাপক কৃষি সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং মাছের খাবার শিল্প, কিছু পেট্রোলিয়াম কোম্পানি এবং বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও খনির সংস্থাকে জাতীয়করণ করে। জেনারেল ফ্রান্সিসকো মোরালেস বারমুডেজ ১৯৭৫ সালে ভেলাস্কোর স্থলাভিষিক্ত হন, ভেলাস্কোর অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যের অবনতির কথা উল্লেখ করে। মোরালেস বারমুডেজ বিপ্লবকে আরও রক্ষণশীল "দ্বিতীয় পর্বে" নিয়ে যান, প্রথম পর্যায়ের র‍্যাডিক্যাল পদক্ষেপগুলিকে টেম্পারিং করেন এবং দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে একটি সাংবিধানিক সমাবেশ তৈরি করা হয়েছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন ভিক্টর রাউল হায়া দে লা টোরে। মোরালেস বারমুডেজ ১৯৭৯ সালে প্রণীত একটি নতুন সংবিধান অনুসারে বেসামরিক সরকারে প্রত্যাবর্তনের সভাপতিত্ব করেন। বেসামরিক শাসন পুনরুদ্ধার এবং নির্বাচন (১৯৭৯-বর্তমান) ১৯৮০ এর দশক ১৯৮০-এর দশকে, পূর্ব অ্যান্ডিয়ান ঢালের বিশাল এলাকায় অবৈধ কোকা চাষ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গ্রামীণ বিদ্রোহী আন্দোলন, যেমন শাইনিং পাথ ( সেন্ডারো লুমিনোসো বা এসএল) এবং টুপাক আমারো রেভ্যুলেশনারি মুভমেন্ট (এমারটিএ) মাদক পাচারকারীদের সাথে জোট থেকে উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পেরুতে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের দিকে নিয়ে গেছে। মে ১৯৮০ সালের নির্বাচনে, প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দো বেলাউন্ডে টেরি বহুল জনসমর্থন লাভ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার প্রথম পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি ছিল বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র তাদের নিজ নিজ মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। এভাবে বাক স্বাধীনতা আবারও পেরুর রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধীরে ধীরে, তিনি ভেলাস্কো কর্তৃক সূচিত কৃষি সংস্কারের কিছু সবচেয়ে আমূল প্রভাবকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা করেন এবং ভেলাস্কোর সামরিক সরকারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যে স্বাধীন অবস্থান ছিল তা উল্টে দেন। বেলাউন্দের দ্বিতীয় মেয়াদটি ১৯৮২ সালে চালু হয়। যুক্তরাজ্যের সাথে ফকল্যান্ড যুদ্ধের সময় আর্জেন্টিনা বাহিনীর জন্য পেরু নিঃশর্ত সমর্থন দেয়। বেলাউন্ডে ঘোষণা করেছিলেন যে "পেরু আর্জেন্টিনাকে প্রয়োজনীয় সমস্ত সংস্থান দিয়ে সমর্থন করতে প্রস্তুত"। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ফাইটার প্লেন এবং সম্ভবত পেরুভিয়ান এয়ার ফোর্সের কর্মী, সেইসাথে জাহাজ এবং মেডিকেল টিম অন্তর্ভুক্ত ছিল। বেলাউন্ডের সরকার দুই দেশের মধ্যে একটি শান্তি বন্দোবস্তের প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু উভয় পক্ষের দ্বারা তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, কারণ উভয়ই এই অঞ্চলের অবিকৃত সার্বভৌমত্ব দাবি করেছিল। যুক্তরাজ্যের প্রতি চিলির সমর্থনের প্রতিক্রিয়ায়, বেলাউন্ডে লাতিন আমেরিকান ঐক্যের আহ্বান জানান। পূর্ববর্তী সামরিক সরকারের থেকে রয়ে যাওয়া অস্বস্তিকর অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি টিকে ছিল, ১৯৮২-১৯৮৩ সালে " এল নিনো " আবহাওয়ার ঘটনার দ্বারা আরও খারাপ হয়, যা দেশের কিছু অংশে ব্যাপক বন্যা, অন্যগুলিতে মারাত্মক খরা এবঃ সমুদ্রের মাছসমূহের আবাসস্থল ধ্বংস করে, যা দেশের অন্যতম প্রধান সম্পদ। একটি প্রতিশ্রুতিশীল শুরুর পরে, মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক কষ্ট এবং সন্ত্রাসবাদের চাপে বেলাউন্দের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। ১৯৮৫ সালে, আমেরিকান পপুলার রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স (আপরা) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভ করে, অ্যালান গার্সিয়াকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে। ২৮ জুলাই ১৯৮৫ তারিখে বেলাউন্ডে কর্তৃক গার্সিয়ার নিকট রাষ্ট্রপতির পদ হস্তান্তর ছিল পেরুর ৪০ বছরের মধ্যে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন নেতা থেকে অন্য নেতার কাছে ক্ষমতার প্রথম বিনিময়। আপরা এর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে, অ্যালান গার্সিয়া একটি উন্নত ভবিষ্যতের আশা নিয়ে তার প্রশাসন শুরু করেছিলেন। যাইহোক, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত হাইপারইনফ্লেশনের দিকে পরিচালিত করে। গার্সিয়ার কার্যকাল হাইপারইনফ্লেশনের দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল, যা ১৯৯০ সালে ৭,৬৪৯% এ পৌঁছেছিল এবং জুলাই ১৯৮৫ এবং জুলাই ১৯৯০ এর মধ্যে ক্রমবর্ধমান হারটি মোট ২২,০০,০০০% পর্যন্ত পৌছে যায়, যা ১৯৯০ সালের জুলাই মাসে অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে। এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী মুদ্রাস্ফীতির কারণে, পেরুর মুদ্রা সল, ১৯৮৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইন্টি নামক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল, যেটি নিজেই ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে নুয়েভো সল ("নতুন সূর্য") দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল, সেই সময়ে নতুন সল একটি ক্রমবর্ধমান মুদ্রা ছিল। এক নতুন সোলের মূল্যমান এক বিলিয়ন পুরানো সোলের মূল্যমানের সমান ছিল। তার প্রশাসনের সময়, পেরুভিয়ানদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় $৭২০ (১৯৬০ এর স্তরের নিচে) এবং পেরুর মোট দেশজ উৎপাদন ২০% কমে যায়। তার মেয়াদ শেষে, জাতীয় রিজার্ভ ছিল ঋণাত্মক $৯০০ মিলিয়ন। সেই সময়ের অর্থনৈতিক অস্থিরতা পেরুর সামাজিক উত্তেজনাকে বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং আংশিকভাবে সহিংস বিদ্রোহী আন্দোলন শাইনিং পাথের উত্থানে অবদান রেখেছিল। গার্সিয়া প্রশাসন অসফলভাবে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদের একটি সামরিক সমাধান চেয়েছিল এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে যা এখনও তদন্তাধীন। জুন ১৯৭৯ সালে, বিনামূল্যে শিক্ষার জন্য বিক্ষোভগুলিকে সেনাবাহিনী দ্বারা কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল: সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে ১৮ জন নিহত হয়েছিল, কিন্তু বেসরকারী অনুমান অনুযায়ী কয়েক ডজন মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনাটি গ্রামাঞ্চলে রাজনৈতিক প্রতিবাদের একটি ধারার দিকে পরিচালিত করে এবং শেষ পর্যন্ত শাইনিং পাথের সশস্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রাদুর্ভাবের দিকে পরিচালিত করে। ফুজিমোরির প্রেসিডেন্সি এবং ফুজিশক (১৯৯০-২০০০) অর্থনীতি, সেন্ডেরো লুমিনোসো এবং এমআরটিএ থেকে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী হুমকি এবং অফিসিয়াল দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন ভোটাররা ১৯৯০ সালে একজন তুলনামূলকভাবে অজানা গণিতবিদ-রাজনীতিবিদ আলবার্তো ফুজিমোরিকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। নির্বাচনের প্রথম রাউন্ড ভালভাবে জিতেছিলেন একজন সুপরিচিত লেখক মারিও ভার্গাস লোসা, একজন রক্ষণশীল প্রার্থী যিনি পরবর্তীতে ২০১০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, কিন্তু ফুজিমোরি তাকে দ্বিতীয় রাউন্ডে পরাজিত করেছিলেন। ফুজিমোরি সরকার কঠোর পদক্ষেপগুলি বাস্তবায়ন করেছে যার ফলে মুদ্রাস্ফীতি ১৯৯০ সালে ৭,৬৫০% থেকে ১৯৯১ সালে ১৩৯% এ নেমে এসেছে। মুদ্রার ২০০% অবমূল্যায়ন‌ করা হয়েছে, দাম দ্রুত বাড়ছে (বিশেষত পেট্রল, যার মূল্য ৩০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে), শত শত পাবলিক কোম্পানিগুলি বেসরকারীকরণ করা হয়েছে। এবং তিন লক্ষ চাকরি হারিয়ে যাচ্ছে।জনসংখ্যার অধিকাংশই শক্তিশালী বৃদ্ধির বছরগুলি থেকে উপকৃত হয়নি, যা শেষ পর্যন্ত ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধানকে প্রসারিত করেছে। দারিদ্র্যের হার প্রায় ৫০% এ রয়ে গেছে।  অন্যান্য স্বৈরশাসকদের মতো, ফুজিমোরি পেরুর সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫ এপ্রিল ১৯৯২ -এর অটো-গোল্পে কংগ্রেস ভেঙে দেন। এরপর তিনি সংবিধান বাতিল করেন; নতুন কংগ্রেস নির্বাচন বলা হয়; এবং অনেক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির বেসরকারীকরণ, বিনিয়োগ-বান্ধব জলবায়ু সৃষ্টি এবং অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সহ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন করেছে। ফুজিমোরির প্রশাসনকে বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী দল, বিশেষ করে সেন্ডেরো লুমিনোসো (শাইনিং পাথ) দ্বারা প্ররোচিত করা হয়েছিল, যারা ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশক জুড়ে গ্রামাঞ্চলে সন্ত্রাসী অভিযান চালিয়েছিল। তিনি বিদ্রোহীদের উপর দমন করেন এবং ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে তাদের দমন করতে সফল হন, কিন্তু লড়াইটি পেরুর নিরাপত্তা বাহিনী এবং বিদ্রোহী উভয়ের দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ব্যারিওস আলতোস গণহত্যা এবং লা ক্যান্টুটা গণহত্যা সরকারী আধাসামরিক গোষ্ঠী দ্বারা সংঘটিত হয়। শাইনিং পাথ দ্বারা তারাতা এবং ফ্রিকুয়েনসিয়া ল্যাটিনার বোমা হামলা সংঘটিত হয়। এই উদাহরণগুলি পরবর্তীকালে সহিংসতার শেষ বছরগুলিতে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতীক হিসাবে দেখা যায়। ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে আবিমায়েল গুজমান (শাইনিং পাথের প্রেসিডেন্ট গনজালো নামে পরিচিত ) গ্রেপ্তার হওয়ার পর শাইনিং পাথ একটি গুরুতর আঘাত পেয়েছিল যা কার্যত সংগঠনটিকে ধ্বংস করে দেয়। ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে, এমআরটিএ -এর অন্তর্গত বিদ্রোহীদের একটি দল লিমাতে জাপানি দূতাবাস দখল করে  এবং বাহাত্তর জনকে জিম্মি করে। সামরিক কমান্ডোরা ১৯৯৭ সালের মে মাসে দূতাবাসের কম্পাউন্ডে হামলা চালায়, যার ফলে ১৫ জন জিম্মিকারী, একজন জিম্মি এবং দুজন কমান্ডো নিহত হয়। পরে এটা উঠে আসে যে, ফুজিমোরির নিরাপত্তা প্রধান ভ্লাদিমিরো মন্টেসিনোস আত্মসমর্পণ করার পর অন্তত আটজন বিদ্রোহীকে হত্যার নির্দেশ দিয়ে থাকতে পারেন। ২০০০ সালের জুনে তৃতীয় মেয়াদে এবং পরবর্তীকালে কলঙ্কিত বিজয়ের জন্য ফুজিমোরির সাংবিধানিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে আসে। একটি ঘুষ কেলেঙ্কারি, যা জুলাইয়ে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে ফাঁস হয়ে যায়, তা ফুজিমোরিকে নতুন নির্বাচন করতে বাধ্য করে যেখানে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এই কেলেঙ্কারিতে ভ্লাদিমিরো মন্টেসিনোস জড়িত ছিল, যাকে টিভিতে সম্প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখানো হয়েছিল যে একজন রাজনীতিবিদকে পক্ষ পরিবর্তন করতে ঘুষ দিচ্ছেন। মন্টেসিনোস পরবর্তীকালে সেন্ডেরো লুমিনোসোর বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় আত্মসাৎ, দুর্নীতি, মাদক পাচার, সেইসাথে মানবাধিকার লঙ্ঘন সহ অবৈধ কার্যকলাপের একটি বিশাল অংশের কেন্দ্র হিসাবে আবির্ভূত হয়। টলেডো, গার্সিয়া, হুমালা, কুকজিনস্কি, ভিজকারা এবং কাস্টিলো প্রেসিডেন্সি (২০০১-বর্তমান) ২০০০ সালের নভেম্বরে, ফুজিমোরি অফিস থেকে পদত্যাগ করেন এবং পেরুর নতুন কর্তৃপক্ষের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগের জন্য বিচার এড়িয়ে স্ব-আরোপিত নির্বাসনে জাপানে যান। তার প্রধান গোয়েন্দা প্রধান, ভ্লাদিমিরো মন্টেসিনোস , কিছুক্ষণ পরেই পেরু থেকে পালিয়ে যান। ২০০১ সালের জুন মাসে ভেনেজুয়েলার কর্তৃপক্ষ তাকে কারাকাসে গ্রেপ্তার করে এবং তাকে পেরুভিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। তিনি এখন কারারুদ্ধ এবং ফুজিমোরির প্রশাসনের সময় দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত। ভ্যালেন্টিন প্যানিয়াগুয়ার সভাপতিত্বে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুন রাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেসের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এপ্রিল ২০০১ সালে; পর্যবেক্ষকরা তাদের অবাধ ও ন্যায্য বলে মনে করেন। আলেজান্দ্রো টলেডো (যিনি ফুজিমোরির বিরুদ্ধে বিরোধী দলের নেতৃত্ব দেন) প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অ্যালান গার্সিয়াকে পরাজিত করেন। নবনির্বাচিত সরকার ২৮ জুলাই ২০০১ তারিখে কার্যভার গ্রহণ করে। ফুজিমোরি এবং গার্সিয়া উভয় সরকারকে জর্জরিত করা কর্তৃত্ববাদ এবং দুর্নীতি নির্মূল করে টলেডো প্রশাসন পেরুতে কিছু পরিমাণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় (১৯৮০-২০০০) সামরিক আদালতে ভুলভাবে বিচার করা নির্দোষদের বেসামরিক আদালতে নতুন বিচার পাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ২৮ আগস্ট ২০০৩-এ, ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন (সিভিআর), যাকে ১৯৮০-২০০০ সময়ের সহিংসতার শিকড় সম্বন্ধে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, রাষ্ট্রপতির কাছে তার আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন পেশ করে। রাষ্ট্রপতি টলেডোকে মন্ত্রিসভায় বেশ কয়েকটি পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয়েছিল, বেশিরভাগ ব্যক্তিগত কেলেঙ্কারির প্রতিক্রিয়া হিসাবে। টলেডোর শাসক জোটের কংগ্রেসে সংখ্যালঘু আসন ছিল এবং একটি অ্যাডহক নিয়ে আলোচনা করতে হয়েছিল আইন প্রণয়নের প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা গঠনের জন্য অন্যান্য দলের সাথে ভিত্তি করে। ভোটে টলেডোর জনপ্রিয়তা তার শাসনামলের শেষ বছরগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আংশিকভাবে পারিবারিক কেলেঙ্কারির কারণে এবং পেরুর সামষ্টিক অর্থনৈতিক সাফল্যের সুবিধার অংশ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষের কারণে। ২০০৩ সালের মে মাসে শিক্ষক ও কৃষি উৎপাদনকারীদের ধর্মঘট দেশব্যাপী রাস্তা অবরোধের দিকে পরিচালিত করার পর, টলেডো জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে যা কিছু নাগরিক স্বাধীনতা স্থগিত করে এবং ১২টি অঞ্চলে আদেশ কার্যকর করার জন্য সামরিক ক্ষমতা দেয়। জরুরী অবস্থা পরে শুধুমাত্র কয়েকটি এলাকায় হ্রাস করা হয়েছিল যেখানে শাইনিং পাথ কাজ করছিল। ২৮ জুলাই ২০০৬-এ, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অ্যালান গার্সিয়া আবারও পেরুর রাষ্ট্রপতি হন। ২০০৬ সালের নির্বাচনে তিনি ওলান্টা হুমালার বিরুদ্ধে রানঅফে জয়লাভ করেন। মে ২০০৮ সালে, রাষ্ট্রপতি গার্সিয়া দক্ষিণ আমেরিকান নেশনস ইউনিয়নের ইউএনএএসইউআর সাংবিধানিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ছিলেন। পেরু চুক্তিটি অনুমোদন করেছে। ৫ জুন ২০১১-এ, ওলান্টা হুমালা ২০১১ সালের নির্বাচনে আলবার্তো ফুজিমোরির কন্যা কেইকো ফুজিমোরির বিরুদ্ধে রান-অফে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন, যা তাকে জুয়ান ভেলাস্কো আলভারাডোর পর পেরুর প্রথম বামপন্থী রাষ্ট্রপতি করে তোলে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে, কিছু বড় খনির প্রকল্পের জনপ্রিয় বিরোধিতা এবং পরিবেশগত উদ্বেগের কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। পেদ্রো পাবলো কুজিনস্কি জুলাই ২০১৬-এর সাধারণ নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তার বাবা-মা ছিলেন নাৎসিবাদ থেকে পালিয়ে আসা ইউরোপীয় উদ্বাস্তু। কুজিনস্কি পেরুর আদিবাসী জনসংখ্যাকে একীভূত করতে এবং স্বীকার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলেন, এবং রাষ্ট্র-চালিত টিভি কেচুয়া এবং আয়মারায় দৈনিক সংবাদ সম্প্রচার শুরু করেছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেইকো ফুজিমোরির বিপরীতে দেয়া প্রচারাভিযানের প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে গিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফুজিমোরিকে ক্ষমা করার জন্য কুজিনস্কি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে, রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করতে ব্যর্থ হওয়ার পরে, কুজিনস্কি আবারও ওডেব্রেখট কর্পোরেশনের সাথে ভোট কেনার দুর্নীতি এবং ঘুষের ভিত্তিতে অভিশংসনের হুমকির সম্মুখীন হন। ২৩ মার্চ ২০১৮-এ, কুজিনস্কিকে প্রেসিডেন্সি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল, এবং তারপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। তার উত্তরসূরি ছিলেন তার প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন ভিজকাররা। ভিজকাররা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে রাজনৈতিক সঙ্কট এবং অস্থিতিশীলতার মধ্যে পুনরায় নির্বাচন করার জন্য তার কোন পরিকল্পনা নেই। যাইহোক, কংগ্রেস ২০২০ সালের নভেম্বরে রাষ্ট্রপতি মার্টিন ভিজকারার অভিশংসন করেছিল। তার উত্তরসূরি, অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতি ম্যানুয়েল মেরিনো, মাত্র পাঁচ দিন অফিসে থাকার পর পদত্যাগ করেন। মেরিনোর স্থলাভিষিক্ত হন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিসকো সাগাস্টি, এক সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয় রাষ্ট্রপ্রধান। ২৮ জুলাই ২০২১-এ একটি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রান-অফ নির্বাচনে সংকীর্ণ ব্যবধানে জয়ের পর বামপন্থী পেদ্রো কাস্তিলো পেরুর নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। আরও পড়ুন Dobyns, Henry F. and Paul L. Doughty, Peru: A cultural history. New York : Oxford University Press, 1976. Higgins, James. A history of Peruvian literature (Francis Cairns, 1987) Werlich, David P. Peru: a short history (Southern Illinois Univ Pr, 1978) বিজয় Cieza de León, Pedro de. The Discovery and Conquest of Peru: Chronicles of the New World Encounter. Ed. and trans., Alexandra Parma Cook and David Noble Cook. Durham: Duke University Press 1998. Hemming, John. The Conquest of the Incas. New York: Harcourt Brace Janovich, 1970. Lockhart, James. The Men of Cajamarca; a social and biographical study of the first conquerors of Peru, Austin, Published for the Institute of Latin American Studies by the University of Texas Press [1972] Yupanqui, Titu Cusi. An Inca Account of the Conquest of Peru. Trans. Ralph Bauer. Boulder: University Press of Colorado 2005. ঔপনিবেশিক আমল Andrien, Kenneth J. Crisis and Decline: The Viceroyalty of Peru in the Seventeenth Century. Albuquerque: University of New Mexico Press 1985. Andrien, Kenneth J. Andean Worlds: Indigenous History, Culture, and Consciousness under Spanish Rule, 1532–1825. Albuquerque: University of New Mexico Press 2001. Bakewell, Peter J. Silver and Entrepreneurship in Seventeenth-Century Potosí: The Life and times of Antonio López de Quiroga. Albuquerque: University of New Mexico Press 1988. Baker, Geoffrey. Imposing Harmony: Music and Society in Colonial Cuzco. Durham: Duke University Press 2008. Bowser, Frederick P. The African Slave in Colonial Peru, 1524–1650. Stanford: Stanford University Press 1973. Bradley, Peter T. Society, Economy, and Defence in Seventeenth-Century Peru: The Administration of the Count of Alba de Liste (1655–61). Liverpool: Institute of Latin American Studies, University of Liverpool 1992. Bradley, Peter T. The Lure of Peru: Maritime Intrusion into the South Sea, 1598–1701. New York: St Martin's Press 1989. Burns, Kathryn. Colonial Habits: Convents and the Spiritual Economy of Cuzco, Peru (1999), on the crucial role that convents played in the Andean economy as lenders and landlords; nuns exercised economic & spiritual power. Cahill, David. From Rebellion to Independence in the Andes: Soundings from Southern Peru, 1750–1830. Amsterdam: Aksant 2002. Chambers, Sarah C. From Subjects to Citizens: Honor, Gender, and Politics in Arequipa, Peru, 1780–1854. University Park: Penn State Press 1999. Charnay, Paul. Indian Society in the Valley of Lima, Peru, 1532–1824. Blue Ridge Summit: University Press of America 2001. Dean, Carolyn. Inka Bodies and the Body of Christ: Corpus Christi in Colonial Cuzco, Peru. Durham: Duke University Press 1999. Fisher, John. Bourbon Peru, 1750–1824. Liverpool: Liverpool University Press 2003. Fisher, John R., Allan J. Kuethe, and Anthony McFarlane, eds. Reform and Insurrection in Bourbon New Granada and Peru. Baton Rouge: Louisiana State University Press 2003. Garrett, David T. Shadows of Empire: The Indian Nobility of Cusco, 1750–1825. New York: Cambridge University Press 2005. Griffiths, Nicholas. The Cross and the Serpent: Religious Repression and Resurgence in Colonial Peru. Norman: University of Oklahoma Press 1996. Hyland, Sabine. The Jesuit and the Incas: The Extraordinary Life of Padre Blas Valera, S.J. Ann Arbor: University of Michigan Press 2003. Jacobsen, Nils. Mirages of Transition: The Peruvian Altiplano, 1780–1930 (1996) Lamana, Gonzalo. Domination Without Dominance: Inca-Spanish Relations in Early Colonial Peru. Durham: Duke University Press 2008. Lockhart, James. Spanish Peru, 1532–1560: A Social History (1968), a detailed portrait of the social and economic lives of the first generation of Spanish settlers in Peru & the development of Spanish colonial society in the generation after conquest MacCormack, Sabine. Religion in the Andes: Vision and Imagination in Colonial Peru. Princeton: Princeton University Press 1991. Mangan, Jane E. Trading Roles: Gender, Ethnicity, and the Urban Economy in Colonial Potosí. Durham: Duke University Press 2005. Marks, Patricia. Deconstructing Legitimacy: Viceroys, Merchants, and the Military in Late Colonial Peru. University Park: Penn State Press 2007. Means, Philip Ainsworth. Fall of the Inca Empire and the Spanish Rule in Peru: 1530–1780 (1933) Miller, Robert Ryal, ed. Chronicle of Colonial Lima: The Diary of Joseph and Francisco Mugaburu, 1640–1697. Norman: University of Oklahoma Press 1975. Mills, Kenneth. Idolatry and Its Enemies: Colonial Andean Religion and Extirpation, 1640–1750. Princeton: Princeton University Press 1997. Osorio, Alejandra B. Inventing Lima: Baroque Modernity in Peru's South Sea Metropolis. New York: Palgrave 2008. Poma de Ayala, Felipe Guaman, The First New Chronicle and Good Government: On the History of the World and the Incas up to 1615. Ed. and trans. Roland Hamilton. Austin: University of Texas Press 2009. Premo, Bianca. Children of the Father King: Youth, Authority, and Legal Minority in Colonial Lima. Chapel Hill: University of North Carolina Press 2005. Ramírez, Susan Elizabeth. The World Turned Upside Down: Cross-Cultural Contact and Conflict in Sixteenth-Century Peru. Stanford: Stanford University Press 1996. Serulnikov, Sergio. Subverting Colonial Authority: Challenges to Spanish Rule in Eighteenth-Century Southern Andes. Durham: Duke University Press 2003. Spalding, Karen. Huarochirí: An Andean Society Under Inca and Spanish Rule. Stanford: Stanford University Press 1984. Stavig, Ward. The World of Tupac Amaru: Conflict, Community, and Identity in Colonial Peru (1999), an ethnohistory that examines the lives of Andean Indians, including diet, marriage customs, labor classifications, taxation, and the administration of justice, in the eighteenth century. Tandeter, Enrique. Coercion and Market: Silver Mining in Colonial Potosí, 1692–1826. Albuquerque: University of New Mexico Press 1993. TePaske, John J., ed. and trans. Discourse and Political Reflections on the Kingdom of Peru by Jorge Juan and Antonio Ulloa. Norman: University of Oklahoma Press 1978. Thomson, Sinclair. We Alone Will Rule: Native Andean Politics in the Age of Insurgency. Madison: University of Wisconsin Press 2003. Van Deusen, Nancy E. Between the Sacred and the Worldly: the Institutional and Cultural Practice of Recogimiento in Colonial Lima. Stanford: Stanford University Press 2001. Varón Gabai, Rafael. Francisco Pizarro and His Brothers: The Illusion of Power in Sixteenth-Century Peru. Trans. by Javier Flores Espinosa. Norman: University of Oklahoma Press 1997. Walker, Charles F. Shaky Colonialism: The 1746 Earthquake-Tsunami in Lima, Peru, and Its Long AftermathStay (2008) Wightman, Ann M. Indigenous Migration and Social Change: The Forasteros of Cuzco, 1570–1720. Durham: Duke University Press 1990. স্বাধীনতা পরবর্তী যুগ Blanchard, Peter. Slavery and Abolition in Early Republican Peru. Wilmington: Scholarly Resources 1992. Bonilla, Heraclio. "The War of the Pacific and the national and colonial problem in Peru". Past & Present 81#.1 (1978): 92–118. Cueto, Marcos. The return of epidemics: health and society in Peru during the twentieth century (Ashgate, 2001) Hünefeldt, Christine. Paying the Price of Freedom: Family and Labor Among Lima's Slaves, 1800–1854. trans. by Alexandra Minna Stern. Berkeley and Los Angeles: University of California Press 1994. Kenney, Charles Dennison. Fujimori's coup and the breakdown of democracy in Latin America (Univ of Notre Dame Press, 2004) Larson, Brooke. Trials of Nation Making: Liberalism, Race, and Ethnicity in the Andes, 1810–1910. New York: Cambridge University Press 2004. Méndez G., Cecilia. The plebeian republic : the Huanta rebellion and the making of the Peruvian state, 1820–1850. Durham: Duke University Press, 2005. Miller, Rory. Region and Class in Modern Peruvian History (1987) Pike, Frederick B. The Modern History of Peru (1967) Starn, Orin. "Maoism in the Andes: The Communist Party of Peru-Shining Path and the refusal of history". Journal of Latin American Studies 27#2 (1995): 399–421. Walker, Charles F. Smoldering Ashes: Cuzco and the Creation of Republican Peru, 1780–1840. Durham: Duke University Press 1999. অর্থনৈতিক ও শ্রম ইতিহাস De Secada, C. Alexander G. "Arms, guano, and shipping: the WR Grace interests in Peru, 1865–1885". Business History Review 59#4 (1985): 597–621. Drake, Paul. "International Crises and Popular Movements in Latin America: Chile and Peru from the Great Depression to the Cold War", in Latin America in the 1940s, David Rock, ed. Berkeley and Los Angeles: University of California Press 1994, 109–140. Gootenberg, Paul, Between silver and guano: commercial policy and the state in postindependence Peru. Princeton, N.J.: Princeton University Press, 1989. Gootenberg, Paul, Andean cocaine: the making of a global drug. Chapel Hill: University of North Carolina Press, 2008. Greenhill, Robert G., and Rory M. Miller. "The Peruvian Government and the nitrate trade, 1873–1879". Journal of Latin American Studies 5#1 (1973): 107–131. Keith, Robert G. Conquest and Agrarian Change: The Emergence of the Hacienda System on the Peruvian Coast (1979) Peloso, Vincent C. Peasants on Plantations: Subaltern Strategies of Labor and Resistance in the Pisco Valley, Peru (Duke University Press, 1999) Purser, Michael, and W. F. C. Purser. Metal-mining in Peru, past and present (1971) Quiroz, Alfonso W. Domestic and foreign finance in modern Peru, 1850–1950: financing visions of development (University of Pittsburgh Press, 1993) Stewart, Watt. Henry Meiggs: Yankee Pizarro (Duke University Press, 1946), on 1870s প্রাথমিক উৎস Higgins, James (editor). The Emancipation of Peru: British Eyewitness Accounts (2014). ইতিহাস Bonilla, Heraclio. "The New Profile of Peruvian History", Latin American Research Review Vol. 16, No. 3 (1981), pp. 210–224 in JSTOR Fryer, Darcy R. "A Taste of Spanish America: Reading Suggestions for Teachers of Colonial North America", Common-Place 15#2 (2015) * Heilman, Jaymie Patricia. "From the Inca to the Bourbons: New writings on pre-colonial and colonial Peru", Journal of Colonialism and Colonial History Volume 12, Number 3, Winter 2011 Restall, Matthew. Seven Myths of the Spanish Conquest (Oxford University Press, 2003) Thurner, Mark. History's Peru: The Poetics of Colonial and Postcolonial Historiography (University Press of Florida; 2010) 302 pages; a study of Peruvian historiography from Inca Garcilaso de la Vega (1539–1616) to Jorge Basadre (1903–80). full text online তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Machu Picchu information, photos, maps and more U.S. State Department Background Note: Peru WorldStatesmen State of Fear is a documentary that tells the story of Peru's war on terror based on the findings of the Peruvian Truth and Reconciliation Commission. "An Account of a Voyage up the River de la Plata, and Thence over Land to Peru: With Observations on the Inhabitants, as Well as Indians and Spaniards, the Cities, Commerce, Fertility, and Riches of That Part of America" from 1698 পেরুর ইতিহাস
https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_Peru
History of Peru
The history of Peru spans 15 millennia, extending back through several stages of cultural development along the country's desert coastline and in the Andes mountains. Peru's coast was home to the Norte Chico civilization, the oldest civilization in the Americas and one of the six cradles of civilization in the world. When the Spanish arrived in the sixteenth century, Peru was the homeland of the highland Inca Empire, the largest and most advanced state in pre-Columbian America. After the conquest of the Incas, the Spanish Empire established a Viceroyalty with jurisdiction over most of its South American domains. Peru declared independence from Spain in 1821, but achieved independence only after the Battle of Ayacucho three years later. Modern historiography of Peru divides its history into three main periods: A pre-Hispanic period, which lasts from the first civilizations of the region to the Spanish conquest of the Inca Empire. A viceregal or colonial period, which lasts from the aforementioned conquest to the Peruvian declaration of independence. A republican period, which lasts from the war of independence to the current day.
1155
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8
সুরিনামের ইতিহাস
ইউরোপীয়দের আগমনের আগে বর্তমান সুরিনাম এলাকাটিতে আরাওয়াক, কারিব ও ওয়ার্‌রাউ নামের আদিবাসী আমেরিকান গোত্রগুলি বাস করত। বেশির ভাগ আদিবাসী আমেরিকান ছোট ছোট স্বাধীন গ্রামে বাস করত, যেখানে আত্মীয়তার বন্ধনে গঠিত হত সম্প্রদায়। এরা শিকার করে ও ক্ষেতখামার করে জীবন চালাত। মূলত কন্দ জাতীয় ফসলের আবাদ হত, যেমন কাসাভা। উপকূলের লোকেরা আরাওয়াক ভাষায় এবং অভ্যন্তরভাগের লোকেরা কারিবীয় ভাষায় কথা বলত। ইউরোপীয়দের বসতি স্থাপন ১৬শ শতকের শেষভাগে এসে ওলন্দাজ, ফরাসি ও ইংরেজ বণিকেরা সুরিনামের উপকূলে বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করে। ১৭শ শতকের প্রথমার্ধে ইংরেজ বণিকেরা দেশটিতে বসতি স্থাপন শুরু করে। ১৬৫০ সালে সুরিনাম নদীর তীরে একটি ব্রিটিশ দল প্রথম স্থায়ী ইউরোপীয় বসতি স্থাপন করে। পরবর্তীতে ওলন্দাজ পশ্চিম ভারতীয় কোম্পানির একটি নৌবহর এই বসতিটি দখল করে। ১৬৬৭ সালে ব্রেডার চুক্তির মাধ্যমে ইংরেজরা উত্তর আমেরিকায় নিউ অ্যামস্টার্ডাম (বর্তমান নিউ ইয়র্ক শহর)-এর বিনিময়ে এই উপনিবেশটির একাংশ ওলন্দাজদের দিয়ে দেয়। ফলে সুরিনাম সরকারীভাবে ওলন্দাজ নিয়ন্ত্রণে আসে। তখন থেকে ওলন্দাজরা সুরিনামকে একটি উপনিবেশ হিসেবে শাসন করতে থাকে। তবে ১৭৯৫-১৮০২ এবং ১৮০৪-১৮১৬ যুদ্ধচলাকালে ব্রিটিশরা সাময়িকভাবে সুরিনামের দখল নিয়েছিল। ঔপনিবেশিক প্ল্যান্টেশন ব্যবস্থা সুরিনামে ওলন্দাজ উপনিবেশের অর্থনীতির প্রাথমিক ভিত্তি ছিল প্ল্যান্টেশন কৃষি। ওলন্দাজেরা সুরিনামে অনেক প্ল্যান্টেশন স্থাপন করে এবং আফ্রিকা থেকে বিরাট সংখ্যক ক্রীতদাসকে এগুলিতে কাজ করাতে নিয়ে আসে। প্ল্যান্টেশনে চাষ করা শস্যের মধ্যে প্রধান ছিল আখ। তবে কিছু কিছু প্ল্যান্টেশনে কফি, কাকাও, নীল, তুলা, খাদ্যশস্য ও কাঠ উৎপাদনী বৃক্ষও উৎপাদন করা হত। ১৭৮৫ সাল পর্যন্ত প্ল্যান্টেশন অর্থনীতি প্রসার লাভ করে। সেসময় এখানে ৫৯১টি প্ল্যান্টেশন ছিল, যাদের মধ্যে ৪৫২টি চিনি ও অন্যান্য বাণিজ্যিক শস্য উৎপাদন করত এবং এবং ১৩৯টি খাদ্যশস্য ও কাঠ উৎপাদন করত। ১৭৮৫ সালের পর কৃষি উৎপাদন হ্রাস পেতে থাকে। প্ল্যান্টেশনের মালিকেরা অন্যত্র আরও বেশি আয় করা শুরু করে, এবং দাসদের মুক্তিলাভের ফলে প্ল্যান্টেশনের খরচ বেড়ে যায়। ১৮৬০ সাল নাগাদ মাত্র ৮৭টি চিনির খামার অবশিষ্ট ছিল এবং ১৯৪০ সালে এসে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪। চিনি উৎপাদনকারী অন্যান্য দাসভিত্তিক উপনিবেশগুলির মত সুরিনামেও সমাজব্যবস্থা তিনটি স্তরে বিভক্ত ছিল। সবচেয়ে উপরের স্তরে ছিল একটি ক্ষুদ্র অভিজাত ইউরোপীয় শ্রেণী। এরা ছিল মূলত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, প্ল্যান্টেশনের মালিকেরা, যারা তাদের প্ল্যান্টেশনে বসবাস করত এবং প্ল্যান্টেশনের প্রশাসকেরা, যারা মালিকের অনুপস্থিতিতে সেগুলির দেখাশোনা করত। ইউরোপীয়দের সিংহভাগই ছিল ওলন্দাজ, তবে কেউ কেউ জার্মান, ফরাসি, বা ইংরেজও ছিলেন। অভিজাত শ্রেণীর ঠিক নিচের স্তরটিতে ছিল মুক্ত নাগরিকদের নিয়ে গঠিত মধ্যস্তর। জাতিগতভাবে বিচিত্র এই দলটির সদস্য ছিল সুরিনামে জন্ম নেওয়া ইউরোপীয় বংশদ্ভূত লোক, দাসী মহিলদের গর্ভে ইউরোপীয়দের ঔরসজাত সন্তানাদি, এবং যেসমস্ত দাসকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল বা যারা মুক্তি কিনে নিয়েছিল। সমাজের একেবারে নিম্নস্তরে ছিল দাসেরা, এবং এরাই ছিল সমাজের বৃহদংশ। সুরিনামের দাসপ্রথা ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির। দাসদেরকে সম্পত্তির মত ব্যবহার করা হত, এবং তাদের কোন আইনি অধিকার ছিল না। ঔপনিবেশিক আইন অনুসারে দাসদের মালিকদের ছিল সর্বময় একচ্ছত্র ক্ষমতা। কোন কোন দাস নদীপথে পালিয়ে দেশের অভ্যন্তরভাগের অতিবৃষ্টি অরণ্যে স্বাধীন গ্রাম স্থাপন করে বিছিন্নভাবে বসবাস করত। উপনিবেশের সেনাদল দিয়ে এদের ধরে আনার অনেক চেষ্টা করা হলেও তারা তাদের স্বাধীনতা বজায় রাখে। এদের বংশধরেরা আজও সেসব এলাকায় বসবাস করে। ১৯শ শতকের শুরুর দিকে ইউরোপীয় মনোভাব দাসপ্রথা অবসানের প্রতি অনুকূল হয়। ১৯শ শতকের মধ্যভাগে ইংরেজ ও ফরাসিরা আইন করে তাদের দাসদের মুক্তির ব্যবস্থা করে। তখন ওলন্দাজেরাও তাদের উপনিবেশগুলিতে দাসদের মুক্তির ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে থাকে। সুরিনামের প্ল্যান্টেশন মালিকেরা ভয় করছিল যে মুক্তিপ্রাপ্ত দাসেরা আর প্ল্যান্টেশনে কাজ করতে চাইবে না। তাই আইন করে মুক্তির পরেও ১০ বছর ন্যূনতম ভাড়ায় সরকারী নির্দেশনায় দাসদের প্ল্যান্টেশনে কাজ করা বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৮৬৩ সালে পূর্ণ মুক্তির পর প্রাক্তন দাসেরা ভাল বেতনের চাকরি ও উন্নত শিক্ষার আশায় পারামারিবো শহরে ভিড় জমাতে থাকে। এই স্থানান্তরের ফলে সুরিনামের প্ল্যান্টেশনগুলিতে কর্মীর যে অভাব দেখা দেয়, তা পূরণ করতে এশিয়া থেকে শ্রমিক আমদানি করে নিয়ে আসা হয়। ১৮৫৩ ও ১৮৭৩ সালের মধ্যে ২৫০২ জন চীনা শ্রমিক এবং ১৮৭৩ থেকে ১৯২২ সালের ভেতর ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আরও প্রায় ৩৪ হাজার, এবং ১৮৯১ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩২,৯৬৫ জন শ্রমিক নিয়ে আসা হয়। এই শ্রমিকেরা নির্দিষ্ট সংখ্যক বছরের জন্য প্ল্যান্টেশনে কাজ করার প্রতিশ্রুতি সংবলিত চুক্তি স্বাক্ষর করে এখানে কাজ করতে আসে। এদের অধিকাংশই কৃষিকাজে নিয়োজিত ছিল। বর্তমানে এই এশীয় শ্রমিকদের বংশোদ্ভূতরা সুরিনামের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি অংশ গঠন করেছে। ঔপনিবেশিক সরকার ঔপনিবেশিক পর্বের অধিকাংশ সময় জুড়ে একজন ওলন্দাজ-নিযুক্ত গভর্নর সুরিনাম শাসন করতেন এবং তাকে এই কাজে দুইটি কোর্ট সাহায্য করত। এই কোর্টগুলির উপনিবেশের ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে থেকে ওলন্দাজরা কর্মচারী বেছে নিত। ১৮৬৬ সালে কোর্টগুলি বিলুপ্ত করে একটি আইনসভা গঠন করা হয়, যদিও গভর্নরের আইনসভার নির্দেশের বিরুদ্ধে ভেটো প্রদানের ক্ষমতা ছিল। সম্পত্তি ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে কঠোর নিয়মের কারণে প্ল্যান্টেশনের মালিকেরাই সুরিনামের আইনসভায় প্রথমদিকে আধিপত্য বিস্তার করতেন। ওলন্দাজ সরকার যোগ্যতার নিয়ম শিথিল করার সাথে সাথে উচ্চ- ও নিম্ন-শ্রেণীর ক্রেওলেরা ১৯০০ সালের পর থেকে আইনসভায় আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। তবে ১৯৪৯ সাল পর্যন্তও যোগ্য ভোটারের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২%-এর বেশি ছিল না। ১৯৪৯ সালে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ককে ভোটপ্রদানের ক্ষমতা দেয়া হয়। ১৯২২ সালে সুরিনাম নেদারল্যান্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। ১৯৫৪ সালে একটি নতুন সংবিধান করে এটিকে ওলন্দাজ রাজ্যের অন্যান্য সদস্যদের সমমানের একটি সদস্যের মর্যাদা দেয়া হয়। অন্য সদস্যগুলি ছিল নেদারল্যান্ড্‌স নিজে এবং ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থিত নেদারল্যান্ড্‌স অ্যান্টিল দ্বীপপুঞ্জ। এই নতুন সংবিধান মোতাবেক ওলন্দাজ সরকার সুরিনামের প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্কের দেখাশোনা করত এবং সুরিনামের গভর্নর নিয়োগ করত, আর সুরিনামবাসীরা একটি আইনসভা নির্বাচন করত, যা সুরিনামের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারগুলি দেখাশোনা করত। স্বাধীনতা ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে নেদারল্যান্ড্‌স থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা সমর্থনকারী একটি কোয়ালিশন জয়লাভ করে এবং প্রধানমন্ত্রী হেন্‌ক আরনের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। এই সরকার ওলন্দাজ সরকারের সাথে স্বাধীনতার বিষয়ে কথাবার্তা বলা শুরু করে। ১৯৭৫ সালের ২৫শে নভেম্বর ওলন্দাজ সরকার সুরিনামকে স্বাধীনতা প্রদান করে। তবে প্রায় ৪০,০০০ লোক ওলন্দাজ নাগরিকত্বেই থেকে যান এবং সুরিনাম থেকে নেদারল্যান্ড্‌সে ফেরত চলে যান। ১৯৭৭ সালে নতুন স্বাধীন সুরিনাম প্রজাতন্ত্রের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে হেন্‌ক আরন তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখেন। সামরিক শাসন ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে আরন ক্ষমতাচ্যুত হন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেজিরে বুতের্সে-র নেতৃত্বে একদল সেনা অফিসার জাতীয় সেনা কাউন্সিল গঠন করেন। ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই কাউন্সিল আইনসভা বিলোপ করে এবং সংবিধান স্থগিত করে। কাউন্সিল রাষ্ট্রপতি হেঙ্ক চিন সেনকেও ক্ষমতাচ্যুত করে। সেন ও আরও হাজার হাজার লোক নেদারল্যান্ড্‌সে পালিয়ে যান। বুতের্সে সুরিনামের জাতীয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন এবং সেনাপ্রধান হিসেবে দেশ চালাতে থাকেন। ১৯৮০ ও ১৯৮১ সালে পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা এবং ১৯৮২ সালে একটি গণতান্ত্রিক বিরোধী জোট গঠনের প্রচেষ্টাকে নিষ্ঠুর হাতে দমন করা হয়। ১৯৮৫ সালে সেনাবাহিনী ১৫ জন নাগরিকের উপর অত্যাচার চালায় ও তাদের হত্যা করে। এ ঘটনার পর নেদারল্যান্ড্‌স সুরিনামকে সাহায্য দেয়া বন্ধ করে দেয়। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সেনাবাহিনী একটি নতুন আইনসভা গঠনে সায় দেয়। রাজনৈতিক দলগুলির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেয়া হয় এবং আরন আবার জাতীয় কাউন্সিলে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে দেশটিতে গেরিলা যুদ্ধ আরম্ভ হয় এবং অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। সুরিনামীয় মুক্তিবাহিনী নামের এই বিদ্রোহীরা সাংবিধানিক অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালায়। কয়েক মাসের মধ্যে তারা প্রধান প্রধান বক্সাইট খনি ও শোধনকারী শিল্পগুলি বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়। এই সময় একটি নতুন সংবিধান রচনা করা হয় এবং ১৯৮৭ সালের গণভোটে ৯৩% ভোট পেয়ে এটি পাশ হয়। বেসামরিক সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ১৯৮৭ সালের সংবিধান নাগরিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে। নভেম্বরের নির্বাচনে বুতের্সের দল ৫১টি আসনের মধ্যে মাত্র ২টিতে জয়লাভ করে, অন্যদিকে ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামের বহুজাতিক দল ৪০টি আসন জেতে। ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় আইনসভা প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী রামসেওয়াক শংকরকে রাষ্ট্রপতি এবং আরনকে উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে। ১৯৮৮ সালে ওলন্দাজেরা আবার সুরিনামকে সাহায্য পাঠাতে শুরু করে এবং পরবর্তী সাত থেকে আট বছর ধরে ৭২১ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। বক্সাইট খনিগুলিতে আবার কাজ শুরু হয়। সাংবিধানিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও বুতের্সে সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখেন। তিনি ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে শংকরের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ১৯৯১ সালে নতুন করে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং নিউ ফ্রন্ট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামের একটি কোয়ালিশন সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও নিউ ফ্রন্ট কোয়ালিশনের নেতা রোনাল্ড ভেনেতিয়ান রাষ্ট্রপতি পদ লাভ করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচিনে ভেনেতিয়ানের কোয়ালিশন স্বল্প ব্যবধানে পরাজিত হয়। ন্যাশনাল ডেমোক্র‌্যাটিক পার্টির জুল উইডেনবশ নতুন রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, সরকারী চাকুরেদের বেতন প্রদানে ব্যর্থতা, এবং ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক ঋণের মত অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং দলে উইডেনবশের সরকারের উপর অনাস্থার সৃষ্টি হয়। ১৯৯৯ সালের মে মাসে দেশব্যাপী এক ধর্মঘট হয় ও মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। উইডেনবশ এক বছর আগেই ২০০০ সালের মে-তে নির্বাচন দেন। এই নির্বাচনে ভেনেতিয়ানের নিউ ফ্রন্ট কোয়ালিশন বিজয়ী হয় এবং ২০০০ সালের আগস্টে ভেনেতিয়ান আবার রাষ্ট্রপতি পদলাভ করেন। জাতীয় সংসদে ভেনেতিয়ানের মূল বিরোধী দল ছিল মিলেনিয়াম কম্বিনেশন, যার নেতৃত্বে ছিলেন বুতের্সে। ১৯৯৭ সালে ওলন্দাজ সরকার বুতের্সের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক গ্রেফতার ওয়ারেন্ট জারি করে। তার বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসে বিপুল পরিমাণে কোকেন পাচারের অভিযোগ আনা হয়। সুরিনাম বুতের্সেকে নেদারল্যান্ডসের হাতে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে। ২০০০ সালের জুনে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের এক আদালতে বুতের্সেকে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার ও শাস্তি প্রদান করা হয়। ২০০৪ সালে ওলন্দাজ ও সুরিনাম সরকার মাদক চোরাচালানি বন্ধের ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতার ব্যাপারে একমত হয়। ২০০৫ সালে সুরিনামের সর্বশেষ আইনসভা নির্বাচনে ভেনেতিয়ানের নিউ ফ্রন্ট কোয়ালিশন দশটি আসন হারায় এবং এর ফলে সংসদে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ক্ষুণ্ণ হয়। জুলাই মাসে ৫১-সদস্যবিশিষ্ট আইনসভা দুই দফা ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্ণয়ের চেষ্টা করে, কিন্তু ভেনেতিয়ান কিংবা বিরোধী প্রার্থী রাবিন পারমেসার কেউই দরকারি দুই-তৃতীয়াংশ ভোট অর্জনে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে ৮৯১ সদস্যবিশিষ্ট প্রাদেশিক কাউন্সিলের সভায় এক বিশেষ ভোটে ভেনেতিয়ান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তথ্যসূত্র সুরিনামের ইতিহাস দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস
https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_Suriname
History of Suriname
The early history of Suriname dates from 3000 BCE when Native Americans first inhabited the area. The Dutch acquired Suriname from the English, and European settlement in any numbers dates from the 17th century, when it was a plantation colony utilizing slavery for sugar cultivation. With abolition in the late 19th century, planters sought labor from China, Madeira, India, and Indonesia, which was also colonized by the Dutch. Dutch is Suriname's official language. Owing to its diverse population, it has also developed a creole language, Sranan Tongo.
1160
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%20%28%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%A4%E0%A6%BE%20%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A6%A8%29
দেশ (দ্ব্যর্থতা নিরসন)
দেশ দ্বারা বোঝাতে যেতে পারে: দেশ হল একটি ভৌগোলিক অঞ্চল। রাষ্ট্র, এক রাজনৈতিক সংগঠনকে বোঝায় যা কোন একটি ভৌগোলিক এলাকা ও তৎসংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার সার্বভৌম ক্ষমতা রাখে। দেশ (পত্রিকা) - ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকার, সাময়িকী।
https://en.wikipedia.org/wiki/Desh
Desh
Desh may refer to:
1161
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AD%E0%A7%8C%E0%A6%AE%20%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE
সার্বভৌম রাষ্ট্রের তালিকা
এটি একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের তালিকা যা সারাবিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের রাজনৈতিক অবস্থান ও সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতির ওপর তথ্যসহ তাদের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরে| তালিকাটিতে ২০৬টি দেশ লিপিভুক্ত আছে| দেশগুলো বিভক্ত করা হয়েছে দুটি পদ্ধতির ব্যবহার করে: জাতিসংঘ ব্যবস্থায় সদস্যপদ কলামটি দেশগুলোকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করে: জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশ ও ২টি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র, এবং ১১টি অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহ| সার্বভৌমত্বে দ্বন্দ্ব কলামটি দেশগুলোকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করে: ১৬টি রাষ্ট্রসমূহ যাদের সার্বভৌমত্ব বিষয়ে দ্বন্দ্ব আছে এবং ১৯০টি অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহ| এমন একটি তালিকা তৈরি করা একটি দুরূহ ও বিতর্কিত প্রক্রিয়া যেহেতু এমন কোনো সংজ্ঞা নেই যা জাতিগোষ্ঠীর ওপর রাষ্ট্রত্বের মানদণ্ড বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করে| এই তালিকাটির বিষয়বস্তু নির্ধারণে ব্যবহৃত মানদণ্ড সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্যের জন্যে অনুগ্রহ করে নিচের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মানদণ্ড অনুচ্ছেদটি দেখুন| সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের তালিকা দেশের তালিকা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মানদণ্ড রাষ্ট্রীয়তার আধিপত্যবাদী আন্তর্জাতিক আইন মানা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়তার ঘোষণামূলক তত্ত্ব, যা রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইনের একজন ব্যক্তি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে। যদি নিম্নলিখিত যোগ্যতার অধিকারী হয়: (ক) স্থায়ী জনসংখ্যা; (খ) একটি নির্ধারিত অঞ্চল; ( গ) সরকার এবং (ঘ) অন্যান্য রাজ্যের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা। " রাষ্ট্রীয়তার মানদণ্ড হিসাবে স্বীকৃতিটি যে ডিগ্রিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত সে বিষয়ে বিতর্ক বিদ্যমান। রাজ্যত্বের ঘোষণামূলক তত্ত্ব, যার একটি উদাহরণ মন্টেভিডিও কনভেনশনে পাওয়া যায়, যুক্তি দেখায় যে রাষ্ট্রীয়তা নিখুঁতভাবে উদ্দেশ্য এবং অন্য রাজ্যগুলির দ্বারা রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অপ্রাসঙ্গিক। বর্ণালীটির অপর প্রান্তে, রাষ্ট্রক্ষেত্রের গঠনমূলক তত্ত্বটি কেবলমাত্র রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ব্যক্তিরূপে সংজ্ঞায়িত করে কেবল যদি তা অন্য রাজ্যগুলির দ্বারা সার্বভৌম হিসাবে স্বীকৃত হয়। এই তালিকার উদ্দেশ্যে, অন্তর্ভুক্ত সমস্ত রাজ্য যে হয়: (ক) স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে এবং প্রায়শই স্থায়ী জনবহুল অঞ্চলগুলির নিয়ন্ত্রণ হিসাবে বিবেচিত হয় বা (খ) কমপক্ষে অন্য একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের দ্বারা সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃত মনে রাখবেন যে কিছু ক্ষেত্রে প্রথম দফার ব্যাখ্যার উপর মতামতের একটি বিভ্রান্তি রয়েছে, এবং কোনও সত্তা এটি বিতর্কিত কিনা তা সন্তুষ্ট কিনা। উপরের মানদণ্ডের ভিত্তিতে, এই তালিকায় নিম্নলিখিত 206 সত্তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: কমপক্ষে একটি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র দ্বারা স্বীকৃত ২০৩ টি রাষ্ট্র দুটি রাজ্য যা স্থায়ীভাবে জনবহুল অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে এবং কেবল জাতিসংঘের অ-সদস্য সদস্যদের দ্বারা স্বীকৃত: নাগর্নো-কারাবাখ প্রজাতন্ত্র, ট্রান্সনিস্ট্রিয়া এমন একটি রাষ্ট্র যা স্থায়ীভাবে জনবহুল অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে এবং অন্য কোনও রাষ্ট্রের দ্বারা স্বীকৃত নয়: সোমালিল্যান্ড আরও দেখুন সার্বভৌম রাষ্ট্র ক্লিকযোগ্য বিশ্বের মানচিত্র টীকা তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি দেশের তালিকা রাষ্ট্র + ইউরেশিয়া আফ্রিকা আমেরিকা ওশেনিয়া দেশ
https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_sovereign_states
List of sovereign states
The following is a list providing an overview of sovereign states around the world with information on their status and recognition of their sovereignty. The 205 listed states can be divided into three categories based on membership within the United Nations System: 193 UN member states, two UN General Assembly non-member observer states, and ten other states. The sovereignty dispute column indicates states having undisputed sovereignty (188 states, of which there are 187 UN member states and one UN General Assembly non-member observer state), states having disputed sovereignty (15 states, of which there are six UN member states, one UN General Assembly non-member observer state, and eight de facto states), and states having a special political status (two states, both in free association with New Zealand). Compiling a list such as this can be a complicated and controversial process, as there is no definition that is binding on all the members of the community of nations concerning the criteria for statehood. For more information on the criteria used to determine the contents of this list, please see the criteria for inclusion section below. The list is intended to include entities that have been recognised as having de facto status as sovereign states, and inclusion should not be seen as an endorsement of any specific claim to statehood in legal terms.
1162
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
আবখাজিয়া
আবখাজিয়া (আবখাজ ভাষায়: Аҧсны; জর্জীয় ভাষায়: აფხაზეთი; রুশ ভাষায়: Абха́зия) ককেসাস পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত আইনত একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রশাসনিক অঞ্চল এবং কার্যত একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র। তবে এটি এখনও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। অঞ্চলটি কৃষ্ণ সাগরের পূর্ব উপকূলে জর্জিয়ার সীমান্তের অভ্যন্তরে অবস্থিত; উত্তরে এটি রাশিয়ার সাথে সীমান্ত গঠন করেছে। এর রাজধানী সুখুমি। আবখাজিয়া জর্জিয়ার অভ্যন্তরে একটি স্বায়ত্বশাসিত সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। ১৯৯১ সালের আগস্টে এটি জর্জিয়ার অংশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু আবখাজিয়ার মুসলিম (মোট জনসংখ্যার ১৭.৮% ) এবং রুশ (১৪.৩%) সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দুইটি এই বন্দোবস্তের পক্ষে ছিল না। প্রতিবেশী স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রজাতন্ত্র চেচনিয়ার মুসলিম স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় আবখাজিয়ার জর্জিয়া-বিরোধীরা জর্জিয়ার সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। তারা আবখাজিয়ার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আবখাজিয়ায় বসবাসরত সংখ্যাগুরু জর্জীয় জনগোষ্ঠীকে (৪৫%) সেখান থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়। ১৯৯৪ সাল নাগাদ আবখাজিয়াতে জর্জীয় লোক তেমন অবশিষ্ট ছিল না। জর্জিয়া পরাজয় স্বীকার করে এবং আবখাজিয়াকে সম্পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়। বর্তমানে আবখাজিয়া একটি দ্বৈত শাসন চলছে। এখানকার ৮৩% এলাকা রুশ মদদ নিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী আবখাজ সরকার শাসন করছে; এদের সদর দফতর সুখুমিতে অবস্থিত। উত্তর আবখাজিয়াতে প্রায় ১৭% এলাকায় জর্জীয় সরকারকে প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রাদেশিক সরকার শাসন করছে; এদের সদর দফতর কোদোরি উপত্যকায় অবস্থিত। বর্তমানে অঞ্চলটির ভবিষ্যত নিয়ে জর্জিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব্ব্ব চলছে। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Photos from Abchazia রাষ্ট্রপতির সরকারি ওয়েবসাইট জর্জিয়া (রাষ্ট্র) রুশ ভাষী দেশ ও অঞ্চল
https://en.wikipedia.org/wiki/Abkhazia_(region)
Abkhazia (region)
1163
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%AB%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8
আফগানিস্তান
আফগানিস্তান (পশতু ভাষা/দারি: , ), সরকারি নাম আফগানিস্তান ইসলামি আমিরাত, হলো পাহাড়ি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এটি ইরান, পাকিস্তান, চীন, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যস্থলে একটি ভূ-বেষ্টিত মালভূমির উপর অবস্থিত। আফগানিস্তানকে অনেক সময় দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের অংশ হিসেবেও গণ্য করা হয়। আফগানিস্তানের পূর্বে ও দক্ষিণে পাকিস্তান , পশ্চিমে ইরান, উত্তরে তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান এবং উত্তর-পূর্বে চীন। আফগানিস্তান শব্দটির অর্থ "আফগান (তথা পশতুন) জাতির দেশ"। আফগানিস্তান একটি রুক্ষ এলাকা যার অধিকাংশ এলাকা পর্বত ও মরুভূমি আবৃত।শুধু পার্বত্য উপত্যকা এবং উত্তরের সমভূমিতে গাছপালা দেখা যায়। এখানকার গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া গরম ও শুষ্ক এবং শীতকালে প্রচণ্ড শীত পড়ে। কাবুল দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। আফগানিস্তান প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বহু প্রাচীন বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণ এই দেশের মধ্য দিয়েই সংঘটিত হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু লোক আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে চলাচল করেছেন এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসতি স্থাপন করেছেন। দেশটির বর্তমান জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্য এই ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়। আফগানিস্তানে বসবাসরত সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হল পশতুন জাতি। এরা আগে আফগান নামেও পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে আফগান বলতে কেবল পশতু নয়, বরং জাতি নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিককেই বোঝায়। ইতিহাস প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান খনন করে দেখা গেছে উত্তর আফগানিস্তানে প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে মনুষ্যবসতি ছিল। ধারণা করা হয় আফগানিস্তানের কৃষি খামার সম্প্রদায় বিশ্বের প্রাচীনতম খামারগুলোর একটি। আফগানিস্তানে অনেক সাম্রাজ্য ও রাজ্য ক্ষমতায় এসেছিল, যেমন গ্রেকো-বারট্রিয়ান, কুশান, হেফথালিটিস, কাবুল শাহী, সাফারি, সামানি, গজনবী, ঘুরি, খিলজি, কারতি, মুঘল, ও সবশেষে হুতাক ও দুররানি সাম্রাজ্য। "স্ট্যান" অর্থ জমি। আফগানিস্তান মানে আফগানদের দেশ। "স্টান" শব্দটি কুর্দিস্তান এবং উজবেকিস্তানের নামেও ব্যবহৃত হয়। প্রাক-ইসলামি পর্ব ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পর মধ্য এশিয়া থেকে এই এলাকায় লোক আসতে শুরু করে। এদের অধিকাংশই ছিল আর্য, যারা ইরান ও ভারতেও বসতি স্থাপন করেছিল। তখন এই এলাকার নাম ছিল আরিয়ানা। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে হাখমানেশি সাম্রাজ্য আরিয়ানা দখল করে। ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহান আলেকজান্ডার পারস্যের সম্রাটকে পরাজিত করে আরিয়ানার পূর্ব সীমান্ত ও তারও পূর্বে চলে যেতে সক্ষম হন। ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর অনেকগুলি রাজ্য তার এশীয় সাম্রাজ্যের দখল নেয়ার চেষ্টা করে। এদের মধ্যে সেলুসিদ সাম্রাজ্য, বাকত্রিয়া সাম্রাজ্য ও ভারতীয় মৌর্য সাম্রাজ্য উল্লেখযোগ্য। খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দীতে মধ্য এশীয় কুশান জাতি আরিয়ানা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। ৩য় থেকে ৮ম শতাব্দী পর্যন্ত বৌদ্ধধর্ম ছিল এখানকার প্রধান ধর্ম। এই পর্বের অনেক বৌদ্ধমন্দিরের ধ্বংসস্তুপ আজও আফগানিস্তানে দেখতে পাওয়া যায়। হুন নামের মধ্য এশীয় এক তুর্কীয় জাতি ৪র্থ শতাব্দীতে এসে কুশানদের পতন ঘটায়। ইসলামি পর্ব খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে আরব সৈন্যরা আফগানিস্তানে ইসলাম ধর্ম নিয়ে আসে। পশ্চিমের হেরাত ও সিস্তান প্রদেশ আরবদের নিয়ন্ত্রণে আসে, কিন্তু আরব সৈন্য চলে যাওয়া মাত্রই সেখানকার জনগণ তাদের পুরনো ধর্মে ফেরত যায়। ১০ম শতকে বর্তমান উজবেকিস্তানের বোখারা থেকে সামানিদ নামের মুসলিম শাসকবংশ আফগান এলাকায় প্রভাব বিস্তার করা শুরু করেন। ১০ম শতাব্দীতে গজনীতে গজনবী রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে এর পূর্ব পর্যন্ত মুসলমান ও অ-মুসলমানরা তখনও কাবুলে পাশাপাশি অবস্থান করত। গজনীর সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা মাহমুদ গজনভি ৯৯৮ থেকে ১০৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ এলাকা শাসন করেন এবং তার সময়েই তিনি কাফিরিস্তান ব্যতীত বাকি হিন্দু রাজাদের পরাজিত করে সমগ্র আফগানিস্তানে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। গজনী সাহিত্য ও শিল্পের কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং মাহমুদ বুদ্ধিজীবীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন, তন্মধ্যে রয়েছে ইতিহাসবিদ আল-বিরুনি ও কবি ফেরদৌসী। মাহমুদের মৃত্যুর পর গজনীর প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে এবং ১২শ শতাব্দীতে পশ্চিম-মধ্য আফগানিস্তানের ঘোর প্রদেশ শহরে ঘুরি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ঘুরিরা আবার ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে মধ্য এশিয়ার খোয়ারিজমি শাহদের কাছে পরাজিত হন। ১২১৯ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গোল সেনাপতি চেঙ্গিজ খান তার সৈন্যদল নিয়ে খোয়ারিজমি শহর হেতাত ও বালখ এবং বামিয়ানে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেন। মোঙ্গলদের এই ক্ষতিসাধনের ফলে অনেক স্থানীয় লোকজন কৃষিজমি পরিপূর্ণ গ্রামীণ এলাকায় চলে যেতে বাধ্য হয়। ১৪শ শতাব্দীর শেষে মধ্য এশীয় সেনাপতি তৈমুর লং আফগানিস্তান জয় করেন ও ভারতে অগ্রসর হন। তার সন্তান ও পৌত্রেরা তার সাম্রাজ্যের পুরোটা ধরে রাখতে পারেনি, তবে তারা বর্তমান আফগানিস্তানের অধিকাংশ হেরাত থেকে শাসন করতে সক্ষম হয়। ঘুরি থেকে তিমুরীয় সাম্রাজ্যের শাসনামলে এখানে ইসলামী স্থাপত্যের বিকাশ ঘটে। এসময় তৈরি বহু মসজিদ ও মিনার আজও হেরাত, গজনি ও মাজার-ই-শরিফে দাঁড়িয়ে আছে। হেরাতে ১৫শ শতাব্দীতে ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারার বিকাশ ঘটে। মায়ের দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর আর বাবার দিক থেকে তৈমুর লঙের বংশধর জহিরুদ্দীন মুহম্মদ বাবর ১৬শ শতাব্দীর প্রারম্ভে ১৫০৪ সালে আরঘুন রাজবংশের নিকট থেকে কাবুল দখল করেন। তারপর ১৫২৬ সালে তিনি ভারতে গিয়ে দিল্লি সালতানাতে আক্রমণ চালিয়ে লোদি রাজবংশকে পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। বাবর। ১৬শ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর পুরোটা জুড়ে ভারতে অবস্থিত মুঘল সাম্রাজ্য, উজবেক বুখারা খানাত এবং পারস্যের সাফাভি রাজবংশের রাজারা আফগানিস্তানের দখল নিয়ে যুদ্ধ করেন। সাধারণত মুঘলেরা কাবুলের দখল রাখতো এবং পারসিকেরা হেরাত দখলে রাখতো আর কান্দাহারের শাসনভার প্রায়ই হাতবদল হত। এসময় পশতুন জাতি তাদের শক্তিবৃদ্ধি করে, তবে স্বাধীনতা লাভে ব্যর্থ হয়। হুতাক রাজবংশ ও দুররানি সাম্রাজ্য ১৭০৯ সালে স্থানীয় ঝিলজাই গোত্রের নেতা মিরওয়াইস হুতাক সাফাভিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং গুরগিন খানকে পরাজিত করে স্বাধীন আফগানিস্তান স্থাপন করেন। মিরওয়াইস ১৭১৫ সালে মারা যান এবং তার স্থলে তার ভাই আবদুল আজিজ সিংহাসনে আরোহণ করেন। মিরওয়াইসের পুত্র মাহমুদ হুতাক তাকে রাষ্ট্রদোহিতার জন্য হত্যা করে। মাহমুদ ১৭২২ সালে পারস্যের রাজধানী ইস্পাহানে আক্রমণ চালান এবং গুলনাবাদের যুদ্ধের পর নগরীটি দখল করে নিজেকে পারস্যের রাজা হিসেবে ঘোষণা দেন। ১৭৪৭ সালে আহমদ শাহ দুররানি কান্দাহার শহরকে রাজধানী করে এখানে দুররানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৭২ সালের অক্টোবরে দুররানির মৃত্যু হয় এবং তাকে কান্দাহারে সমাহিত করা হয়। তার পুত্র তৈমুর শাহ দুররানি তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং তিনি আফগানিস্তানের রাজধানী কান্দাহার থেকে কাবুলে স্থানান্তরিত করেন। এই সময় থেকে দেশটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির কাছে অনেক অঞ্চল হারাতে শুরু করে। ১৭৯৩ সালে তৈমুরের মৃত্যুর পর তার পুত্র জামান শাহ দুররানি ক্ষমতায় আসেন, এবং ধারাবাহিকভাবে মাহমুদ শাহ দুররানি, সুজা শাহ ও অন্যান্যরা সিংহাসনে আরোহণ করেন। বারাকজাই রাজবংশ 19 শতকের প্রথম দিকে, আফগান সাম্রাজ্য পশ্চিমে পারস্য এবং পূর্বে শিখ সাম্রাজ্য থেকে হুমকির মুখে ছিল। বারাকজাই উপজাতির নেতা ফতেহ খান তার অনেক ভাইকে নিয়ে সাম্রাজ্য জুড়ে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। ১৮১৮ সালে দুরানি সাম্রাজ্যের মাহমুদ শাহ ফতেহ খানকে নির্মমভাবে হত্যা করেন । ফলস্বরূপ, ফতেহ খান এবং বারাকজাই উপজাতির ভাইরা বিদ্রোহ করে এবং একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই উত্তাল সময়কালে, আফগানিস্তান কান্দাহারের প্রিন্সিপ্যালিটি , হেরাতের এমিরেট , কুন্দুজের খানাতে, মাইমানা খানাতে এবং অন্যান্য অনেক যুদ্ধরত রাজনীতি সহ অনেক রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বিশিষ্ট রাষ্ট্র ছিল দোস্ত মোহাম্মদ খান শাসিত কাবুলের আমিরাত । দুররানি সাম্রাজ্যের পতনের সাথে এবং সদোজাই রাজবংশের নির্বাসনে হেরাত শাসন করতে , পাঞ্জাব এবং কাশ্মীরকে শিখ সাম্রাজ্যের শাসক রঞ্জিত সিংয়ের কাছে শাসন করার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল , যিনি ১৮২৩ সালের মার্চ মাসে খাইবার পাখতুনখোয়া আক্রমণ করেছিলেন এবং নওশেরার যুদ্ধের পর পেশোয়ার শহরটি দখল করেছিলেন। 1834 সালে, দোস্ত মোহাম্মদ খান অসংখ্য অভিযানের নেতৃত্ব দেন, প্রথমে জালালাবাদে প্রচারণা চালান এবং তারপরে সুজা উল-মুলকের অভিযানে শাহ সুজা দুররানি এবং ব্রিটিশদের পরাজিত করার জন্য কান্দাহারে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইদের সাথে মিত্রতা করেন । 1837 সালে, দোস্ত মোহাম্মদ খান পেশোয়ার জয় করার চেষ্টা করেন এবং তার পুত্র ওয়াজির আকবর খানের অধীনে একটি বড় বাহিনী প্রেরণ করেন, যা জামরুদের যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয় । আকবর খান এবং আফগান সেনাবাহিনী শিখ খালসা আর্মির কাছ থেকে জামরুদ দুর্গ দখল করতে ব্যর্থ হয় , কিন্তু শিখ কমান্ডার হরি সিং নালওয়াকে হত্যা করে , এইভাবে আফগান-শিখ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে । এই সময়ের মধ্যে ব্রিটিশরা পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর হচ্ছিল, শিখ সাম্রাজ্যের পতনকে পুঁজি করে রঞ্জিত সিং- এর মৃত্যুর পর তাদের নিজস্ব অশান্তির সময় ছিল , যা " দ্য গ্রেট গেম"-এর সময় প্রথম বড় সংঘর্ষে কাবুলের আমিরাতকে জড়িত করেছিল। 1839 সালে, একটি ব্রিটিশ অভিযাত্রী বাহিনী আফগানিস্তানে অগ্রসর হয়, কান্দাহারের প্রিন্সিপ্যালিটি আক্রমণ করে এবং 1839 সালের আগস্টে কাবুল দখল করে । দোস্ত মোহাম্মদ খান পারওয়ান অভিযানে ব্রিটিশদের পরাজিত করেন , কিন্তু তার বিজয়ের পর আত্মসমর্পণ করেন। তিনি প্রাক্তন দুররানি শাসক শাহ সুজা দুররানির সাথে কাবুলের নতুন শাসক হিসাবে প্রতিস্থাপিত হন , যা ব্রিটিশদের একটি বাস্তবিক পুতুল । একটি বিদ্রোহের পরে যা শাহ সুজার হত্যাকাণ্ড দেখেছিল , 1842 সালে ব্রিটিশ-ভারতীয় বাহিনীর কাবুল থেকে পশ্চাদপসরণ এবং এলফিনস্টোনের সেনাবাহিনীর বিনাশ , এবং কাবুলের যুদ্ধের শাস্তিমূলক অভিযান যা এর বরখাস্তের নেতৃত্ব দেয়। , ব্রিটিশরা তাদের আফগানিস্তানকে পরাধীন করার প্রচেষ্টা ছেড়ে দেয়, যা দোস্ত মোহাম্মদ খানকে শাসক হিসাবে ফিরে আসতে দেয়। দোস্ত মোহাম্মদ তার শাসনামলে আফগানিস্তানের বেশিরভাগ রাজ্যকে একত্রিত করেন, আফগানিস্তানে আশেপাশের রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে অসংখ্য প্রচারাভিযান শুরু করেন যেমন হাজারাজাত অভিযান , বলখ বিজয় , কুন্দুজ বিজয় , কান্দাহার বিজয় এবং অবশেষে শেষ প্রধান রাজ্যটি সুরক্ষিত করা। , হেরাত , তার চূড়ান্ত প্রচারণায় । পুনঃ একীকরণের প্রচারাভিযানের সময়, তিনি ব্রিটিশদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেছিলেন এবং 1857 সালের দ্বিতীয় অ্যাংলো-আফগান চুক্তিতে তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করেছিলেন , যখন বুখারা এবং অভ্যন্তরীণ নেতারা আফগানদের ভারত আক্রমণ করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা লাভ ১৯শ শতাব্দীতে দেশটি ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ও রুশ সাম্রাজ্যের মধ্যকার দ্বন্দ্বে মধ্যবর্তী ক্রীড়ানক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ১৯৭৩ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে সামরিক কর্মকর্তাগণ রাজার পতন ঘটান এবং প্রজাতন্ত্র গঠন করেন। ১৯১৯ সালে তৃতীয় ব্রিটিশ-আফগান যুদ্ধশেষে আফগানিস্তান যুক্তরাজ্য থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে।১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে আফগানিস্তানে এক দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিপ্রায়ে ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং সোভিয়েত–আফগান যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েতরা আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং এর সাথে সাথে দেশটিতে আবার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে তালেবান নামের একটি ইসলামিক গোষ্ঠী কাবুলের দখল নেয়। তালেবান ইসলামিক আরেকটি দল আল-কায়েদাকে আফগানিস্তানে আশ্রয় দেয়। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর কথিত সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং ২০০১-এর শেষে তালেবানদের উৎখাত করে। ২০০৪ সালে আফগানিস্তানের সংবিধান নতুন করে লেখা হয় এবং একটি রাষ্ট্রপতি-ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত আফগানিস্তানের রাজা ও তার আত্মীয়েরা কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে রক্ষণশীল গোষ্ঠীগত ও ধর্মীয় নেতারাও শাসনব্যবস্থায় প্রভাব বিস্তার করতেন। ১৯৬৩ সালে প্রথমবারের মত রাজপরিবারের বাইরের একজনকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেয়া হয় যাতে রাজপরিবার আইন প্রণয়নের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পায়। ১৯৬৪ সালের নতুন সংবিধানে দেশটিতে আরও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে রাজা কেবল নির্বাচিত আইনসভার সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে এসময় যাতে জাতিগত ও বামপন্থী দল যাতে গঠিত হতে না পারে সেজন্য রাজা রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা করেন। পিডিপিএ সামরিক অভ্যুত্থান ও সোভিয়েত যুদ্ধ ১৯৭৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং প্রজাতন্ত্র হিসেবে আফগানিস্তানের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৭৮ সালে আরেকটি অভ্যুত্থানে নিষিদ্ধ বামপন্থী দল পিপল্‌স ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ আফগানিস্তান (পিডিপিএ) ক্ষমতায় আসে। এই দলের সাম্যবাদী শাসন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আফগানিস্তানের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে। তবে মুসলিম মুজাহিদগণ এই শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে। পিডিপিএ-কে সমর্থন করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে একটি পূর্ণমাপের আক্রমণ (দখলদারী আগ্রাসন) পরিচালনা করে। এই আক্রমণের পরে একজন মধ্যপন্থী পিডিপিএ নেতাকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়, যাতে মুজাহিদিনেরা শান্ত হয়। কিন্তু মুজাহিদিনেরা সোভিয়ত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গেরিলা হামলা অব্যাহত রাখে। পিডিপিএ সরকার সোভিয়েত সরকারের কাছ থেকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা পেত, অন্যদিকে মুজাহেদিনেরা মুসলিম জনগোষ্ঠি থেকে পূর্ণমাত্রায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, সৌদি আরব ও অন্যান্য দেশ থেকে অল্প সাহায্য পেত। আফগানিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্র (২০০২-২০২১) ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। মুজাহেদিনরা পিডিপিএ সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করে। অবশেষে ১৯৯২ সালে সরকারের পতন ঘটে, কিন্তু মুজাহেদিনদের একাধিক দলের মাঝে কোন্দলের কারণে গৃহযুদ্ধ শেষ হয়নি। একদল মুজাহেদিন তালেবান নামের একটি ইসলামী দল গঠন করে এবং ১৯৯৬ সালে কাবুল দখল করে। পরবর্তীতে ২০০১-এর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হস্তক্ষেপে উত্তরাঞ্চলীয় জোট তালেবানদের ইসলামী সরকারের পতন ঘটায়। তালেবানদের ইসলামী সরকারের পতনের পর জাতিসংঘ দেশটিতে বহুজাতিগোষ্ঠীয় সরকার স্থাপনে উৎসাহ দেয়। জার্মানির বন শহরে এ নিয়ে সম্মেলনের পর ২০০১-এর ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। তার ৬ মাস পরে একটি মধ্যবর্তী সরকার গঠিত হয় যা ২০০৪ সালে একটি নতুন সংবিধান পাশ করে। নতুন সংবিধান অনুযায়ী আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট-শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৪ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আফগানিস্তানের প্রথম সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণ করেন। বর্তমান ইতিহাস (২০২১-বর্তমান) ভূগোল ভূমিবেষ্টিত সুউচ্চ পর্বতময় এবং উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্তে সমভূমিবেষ্টিত আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত। আয়তন-বিশিষ্ট দেশটি পৃথিবীর ৪১তম বৃহত্তম দেশ। এর পূর্ব-পশ্চিমে এর সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১,২৪০ কিমি (৭৭০ মাইল); উত্তর-দক্ষিণে সর্বোচ্চ ১,০১৫ কিমি (৬৩০ মাইল)। উত্তর-পশ্চিম, পশ্চিম ও দক্ষিণের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি মূলত মরুভূমি ও পর্বতশ্রেণী। উত্তর-পূর্বে দেশটি ধীরে ধীরে উঁচু হয়ে হিমবাহ-আবৃত পশ্চিম হিমালয়ের হিন্দুকুশ পর্বতের সাথে মিশে গেছে। আমু দরিয়া নদী ও এর উপনদী পাঞ্জ দেশটির উত্তর সীমান্ত নির্ধারণ করেছে। আফগানিস্তানের উত্তর সীমানায় তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান; পূর্বে চীন এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীর; দক্ষিণে পাকিস্তান এবং পশ্চিমে ইরান। আফগানিস্তানের প্রায় অর্ধেক এলাকার উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে ২,০০০ মিটার বা তার চেয়ে উঁচুতে অবস্থিত। ছোট ছোট হিমবাহ ও বছরব্যাপী তুষারক্ষেত্র প্রায়ই পরিলক্ষিত হয়। উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত উচ্চতা বিশিষ্ট নওশাক আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ও সর্বোচ্চ বিন্দু। এটি পাকিস্তানের তিরিচ মির পর্বতশৃঙ্গের একটি নিচু পার্শ্বশাখা। পর্বতটি আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বে হিন্দুকুশ পর্বতমালার অংশ, যেটি আবার পামির মালভূমির দক্ষিণে অবস্থিত। হিন্দুকুশ থেকে অন্যান্য নিচু পর্বতসারি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে প্রধান শাখাটি দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রসারিত হয়ে পশ্চিমের ইরান সীমান্ত অবধি চলে গেছে। এই নিচু পর্বতমালাগুলির মধ্যে রয়েছে পারোপামিসুস পর্বতমালা, যা উত্তর আফগানিস্তান অতিক্রম করেছে, এবং সফেদ কোহ পর্বতমালা, যা পাকিস্তানের সাথে পূর্ব সীমান্ত তৈরি করেছে। সফেকদ কোহ-তেই রয়েছে বিখ্যাত খাইবার গিরিপথ, যা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে সংযুক্তকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ। অপেক্ষাকৃত নিম্নভূমিগুলি দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমে অবস্থিত। এদের মধ্যে রয়েছে উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের হেরাত-ফেরা নিম্নভূমি, দক্ষিণ-পশ্চিমের সিস্তান ও হেলমন্দ নদী অববাহিকা এবং দক্ষিণের রিগেস্তান মরুভূমি। সিস্তান অববাহিকাটি বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক এলাকার একটি। আফগানিস্তানের সর্বনিম্ন বিন্দু জওজান প্রদেশের আমু নদীর তীরে অবস্থিত, যা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে উচ্চতা বিশিষ্ট। নদী উপত্যকা ও কিছু ভূগর্ভস্থ পানিবিশিষ্ট নিম্নভূমি ছাড়া অন্য কোথাও কৃষিকাজ হয় না বললেই চলে। মাত্র ১২ শতাংশ এলাকা পশু চারণযোগ্য। দেশটির মাত্র ১ শতাংশ এলাকা বনাঞ্চল, এবং এগুলি মূলত পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তানে অবস্থিত। যুদ্ধ ও জ্বালানি সংকটের কারণে বনভূমি দ্রুত বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আফগানিস্তান এত পর্বতময় যে এগুলির মধ্যকার রাস্তাগুলি দেশটির বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহামতি আলেকজান্ডার কুশান পাসের ভেতর দিয়ে এসে দেশটি আক্রমণ করেন এবং খাইবার পাস দিয়ে বের হয়ে গিয়ে ভারত আক্রমণ করেন। এই একই পথ ধরে মোঘল সম্রাট বাবর ১৫শ শতকে এসে আফগানিস্তান ও ভারত দুই-ই করায়ত্ত করেন। অন্যদিকে সোভিয়েতরা সালাং পাস ও কেন্দ্রীয় হিন্দুকুশে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান দখল করে। নদী ও জলাশয় আফগানিস্তানের বেশির ভাগ প্রধান নদীর উৎপত্তি পার্বত্য জলধারা থেকে। দীর্ঘস্থায়ী শুষ্ক মৌসুমে বেশির ভাগ নদী শীর্ণ ধারায় প্রবাহিত হয়। বসন্তে পর্বতের বরফ গলা শুরু হলে এগুলিতে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। বেশির ভাগ নদীই হ্রদ, জলাভূমি কিংবা নোনাভূমিতে পতিত হয়। এদের মধ্যে কাবুল নদী ব্যতিক্রম; এটি পূর্বে প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানের সিন্ধু নদের সাথে মেশে, যা পরে ভারত মহাসাগরে গিয়ে পতিত হয়। দেশটির একমাত্র নৌ-পরিবহনযোগ্য নদীটি হল উত্তর সীমান্তের আমু দরিয়া। তবে ফেরি নৌকার সাহায্যে অন্যান্য নদীর গভীর এলাকায় যাওয়া যায়। পামির মালভূমি থেকে উৎপন্ন পাঞ্জ ও বখ্‌শ্‌ উপনদী থেকে পানি আমু দরিয়ায় গিয়ে মেশে। হারিরুদ নদী মধ্য আফগানিস্তানে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে ইরানের সাথে সীমান্ত সৃষ্টি করেছে। হারিরুদের পানি হেরাত অঞ্চলে সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়। হেলমান্দ নদী কেন্দ্রীয় হিন্দুকুশ পর্বতমালায় উৎপন্ন হয়ে দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত ইরানে প্রবেশ করেছে। এই নদীটি ব্যাপকভাবে সেচকাজে ব্যবহৃত হয়, তবে ইদানীং এর পানিতে খনিজ লবণের আধিক্য দেখা যাওয়ায় শস্যে পানি দেয়ার কাজে এর উপযোগিতা কমে এসেছে। আফগানিস্তানের হ্রদগুলি সংখ্যায় ও আকারে ছোট। এদের মধ্যে আছে তাজিকিস্তান সীমান্তে ওয়াখান করিডোরে অবস্থিত জার্কোল হ্রদ, বাদাখশানে অবস্থিত শিভেহ হ্রদ এবং গজনীর দক্ষিণে অবস্থিত লবণাক্ত হ্রদ ইস্তাদেহ-ইয়ে মোকোর। সিস্তান হ্রদ বা হামুন-ই-হেলমান্দ হেলমান্দ নদীর শেষসীমায় লবণাক্ত জলা এলাকায় ইরানের সীমান্তে অবস্থিত। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কিছু কিছু নদীতে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিম জলাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। এদের মধ্যে আছে কাবুল শহরের পূর্বে কাবুল নদীর উপরে নির্মিত সারোবি ও নাগলু বাঁধ, হেলমান্দ নদীর উপর নির্মিত কাজাকি জলাধার, এবং কান্দাহার শহরের কাছে হেলমান্দ নদীর একটি উপনদীর উপর নির্মিত আর্গান্দাব বাঁধ। প্রাণী ও জীবজন্তু আফগানিস্তানের উদ্ভিদরাজি সংখ্যায় অল্প কিন্তু বিচিত্র। পর্বতে চিরসবুজ বন, ওক, পপলার, হেজেলনাট ঝাড়, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি দেখা যায়। উত্তরের সমতলভূমি মূলত শুষ্ক, বৃক্ষহীন ঘাসভূমি, আর দক্ষিণ-পশ্চিমের সমভূমি বসবাসের অযোগ্য মরুভূমি। শুষ্ক অঞ্চলের গাছের মধ্যে আছে ক্যামেল থর্ন, লোকোউইড, মিমোসা, ওয়ার্মউড, সেজব্রাশ ইত্যাদি। আফগানিস্তানের বন্য এলাকায় দেখতে পাওয়া প্রাণীর মধ্যে আছে আর্গালি (মার্কো পোলো ভেড়া নামেও পরিচিত), উরিয়াল (মাঝারি আকারের বন্য ভেড়া), আইবেক্স বা বুনো ছাগল, ভালুক, নেকড়ে, শেয়াল, হায়েনা ও বেঁজি। এছাড়াও বন্য শূকর, শজারু, ছুঁচা, বন্য খরগোশ, বাদুড় এবং অনেক তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কিছু কিছু স্তন্যপায়ী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মুখীন গ্যাজেল হরিণ, চিতা, বরফ চিতা, মার্কর ছাগল, এবং বাকত্রীয় হরিণ। আফগানিস্তানে প্রায় ২০০ জাতের পাখিরও দেখা মেলে। ফ্লেমিংগো ও অন্যান্য জলচর পাখি গজনীর উত্তরে ও দক্ষিণে হ্রদ এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়। হাঁস ও তিতিরজাতীয় পাখিও চোখে পড়ে। তবে পাখি অনেক শিকার করা হয় এবং ফলে কিছু কিছু পাখির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন, যেমন - সাইবেরীয় বক। জলবায়ু আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকাতেই অধঃ-সুমেরুদেশীয় পার্বত্য জলবায়ু বিদ্যমান। এখানে শীতকাল শুষ্ক। নিম্নভূমিতে জলবায়ু ঊষর ও অর্ধ-ঊষর। পর্বতগুলিতে ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী কিছু উপত্যকায় মৌসুমী বায়ু নিরক্ষদেশীয় সামুদ্রিক ভেজা বাতাস বহন করে নিয়ে আসে। আফগানিস্তানে মূলত দুইটি ঋতু। গরম গ্রীষ্মকাল এবং অত্যন্ত শীতল শীতকাল। উত্তরের উপত্যকায় গ্রীষ্মে ৪৯° সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শীতকালের মাঝামাঝি সময়ে হিন্দুকুশ ও আশেপাশের ২০০০ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট অঞ্চলে তাপমাত্রা -৯° সেলসিয়াসে নেমে পড়ে। অন্যান্য উঁচু এলাকায় উচ্চতাভেদে তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে। এমনকি একই দিনে তাপমাত্রার ব্যাপক তারতম্য ঘটতে পারে। বরফজমা ভোর থেকে দুপুরে ৩৫° তাপমাত্রা ওঠা বিচিত্র নয়। অক্টোবর ও এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টিপাত হয়। মরুভূমি এলাকায় বছরে ৪ ইঞ্চিরও কম বৃষ্টি পড়ে। অন্যদিকে পর্বত এলাকায় বছরে জলপাতের পরিমাণ ৪০ ইঞ্চিরও বেশি, তবে এর বেশির ভাগই তুষারপাত। পশ্চিমের হাওয়া মাঝে মাঝে বিরাট ধূলিঝড়ের সৃষ্টি করে, আর সূর্যের উত্তাপে স্থানীয় ঘূর্ণিবায়ু ওঠাও সাধারণ ঘটনা। প্রাকৃতিক সম্পদ আফগানিস্তানে ছোট আকারে মণি, সোনা, তামা ও কয়লা উত্তোলনের ইতিহাস থাকলেও প্রণালীবদ্ধভাবে খনিজ আহরণ ১৯৬০-এর দশকের আগে শুরু হয়নি। ১৯৭০-এর দশকে দেশটির উত্তরাঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাসের উল্লেখযোগ্য মজুদ আবিষ্কৃত হয়। এছাড়া পেট্রোলিয়াম ও কয়লাও এখানে পাওয়া যায়। দেশটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তামা, লোহা, বেরাইট, ক্রোমাইট, সীসা, দস্তা, গণ্ধক, লবণ, ইউরেনিয়াম ও অভ্রের মজুদ আছে। তবে সোভিয়েত আক্রমণ এবং তৎপরবর্তী গৃহযুদ্ধের কারণে আফগানিস্তান এই খনিজ ও জ্বালানি সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি। অদূর ভবিষ্যতে এগুলি নিষ্কাশনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে আফগানিস্তান দুষ্প্রাপ্য ও অর্ধ-দুষ্প্রাপ্য পাথরেরও একটি উৎসস্থল, যাদের মধ্যে আছে নীলকান্তমণি, চুনি, নীলা ও পান্না। পাঞ্জশির প্রদেশ দুষ্প্রাপ্য পান্না পাথরের বিশাল খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। জনপরিসংখ্যান আফগানিস্তানে বহু বিচিত্র জাতির বসবাস। এদের প্রায় সবাই মুসলিম। মধ্য এশিয়া, চীন, ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইরান - এই চার সাংস্কৃতিক অঞ্চলের মিলন ঘটেছে এখানে। ফলে দেশটিতে সৃষ্টি হয়েছে বিপুল ভাষাগত ও জাতিগত বৈচিত্র্য। আফগানিস্তানের মানুষ ইরান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, মঙ্গোলিয়া, চীন, আরব উপদ্বীপ ও আরও বহু জায়গা থেকে এসেছেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের চলাচল, রাজনৈতিক বিপ্লব, আক্রমণ, রাজ্যবিজয় ও যুদ্ধ বহু মানুষকে এই অঞ্চলে নিয়ে আসে। এদেরই কেউ কেউ আফগানিস্তানকে নিজের মাতৃভূমি বানিয়ে নেয়। রাজনৈতিক দল ও জাতিসত্তার ধারণা বহু পরে এই বিচিত্র জাতি-সমাহারের ওপর অনেকটা চাপিয়ে দেয়া হয়। আফগানিস্তানের বর্তমান সীমারেখা ১৮শ শতকের শেষ দিকে দেশটিকে রুশ ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যবর্তী "বাফার" অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয়। এই কৃত্রিম সীমান্ত বহু জাতির ঐতিহ্যবাহী বাসস্থলকে ভাগ করে ফেলে, যাদের মধ্যে আছে পশতু, তাজিক ও উজবেক। বহু যুদ্ধ আফগানিস্তানে জাতিগত বিদ্বেষ জিইয়ে রাখে। এমনকি এখনও আফগানিস্তানে অনেকে জাতি ও আত্মীয়তার বন্ধন রাষ্ট্রীয় বন্ধনের চেয়ে বড় হিসেবে গণ্য করেন। আফগানিস্তানে এ পর্যন্ত একটিমাত্র সরকারি আদমশুমারি সম্পন্ন হয়েছে, ১৯৭৯ সালে। সেটি অনুযায়ী আফগানিস্তানের জনসংখ্যা ছিল প্রায় দেড় কোটি। ২০০৬ সালে এই জনসংখ্যা ৩ কোটি ১০ লক্ষে গিয়ে পৌঁছেছে বলে ধারণা করে হয়। ১৯৭৯ সালের সোভিয়েত আক্রমণের ফলে অনেক আফগান দেশের বাইরে উদ্বাস্তু হিসেবে পাড়ি জমান। এদের মধ্যে ৩০ লক্ষ যান পাকিস্তানে, এবং প্রায় ১৫ লক্ষ চলে যান ইরানে। এছাড়া প্রায় দেড় লাখ আফগান স্থায়ীভাবে বিদেশে পাড়ি জমান এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে বসতি স্থাপন করেন। ২০০১ সালে তালেবান সরকারের পতনের পর অনেক উদ্বাস্তু দেশে ফেরত আসতে থাকেন। ২০০২ সাল নাগাদ প্রায় ১৫ লক্ষ উদ্বাস্তু পাকিস্তান থেকে এবং প্রায় ৪ লক্ষ উদ্বাস্তু ইরান থেকে ফেরত আসেন। তবে এদের সঠিক পুনর্বাসন আফগান সরকারের জন্য সংকটের সৃষ্টি করেছে। বহু উদ্বাস্তু স্থলমাইন-সঙ্কুল, বিমান-আক্রমণে বিধ্বস্ত ও পানির অভাবগ্রস্ত খরা এলাকায় বাস করছেন। ২০০৬ সালে আফগানিস্তানের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধরা হয় ২.৬৭%। আফগানিস্তানের শিশু মৃত্যুর হার বিশ্বে সর্বোচ্চ - ১০০০-এ ১৬০ টি শিশু জন্মেই মারা যায়। এখানে গড় আয়ুষ্কাল ৪৩ বছর। আফগানিস্তানের প্রায় ৭৭ শতাংশ লোক গ্রামে বসবাস করেন। শহরবাসীর অর্ধেক থাকেন রাজধানী কাবুলে। সরকার ব্যবস্থা প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ আফগানিস্তান প্রশাসনিকভাবে ৩৪টি প্রদেশ বা ওয়েলায়েত-এ বিভক্ত। প্রতি প্রদেশের নিজস্ব রাজধানী আছে। প্রদেশগুলি আবার জেলায় বিভক্ত। একেকটি জেলা সাধারণত একটি করে শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল নিয়ে গঠিত। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী প্রতিটি প্রদেশে একজন করে গভর্নর নিয়োগ করেন। গভর্নর কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রদেশের পুলিশ প্রধানকেও অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী নিয়োগ দেন। শুধুমাত্র কাবুল শহরে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। সেখানে শহরের মেয়রকে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন এবং শহরটির প্রশাসন কাবুল প্রদেশ থেকে স্বাধীন। নিচে আফগানিস্তানের সবগুলি প্রদেশের নাম দেয়া হল (প্রদেশগুলির ক্রমিক সংখ্যা পাশের মানচিত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ)। ১. বাদাখশান, ২. বাদগিস, ৩. বাগলান, ৪. বাল্‌খ, ৫. বামিয়ান, ৬. দাইকুন্ডি, ৭. ফারাহ, ৮. ফারিয়াব, ৯. গজনি, ১০. ঘাওর, ১১. হেলমান্দ, ১২. হেরাত, ১৩. জোওয্‌জান, ১৪. কাবুল, ১৫. কান্দাহার, ১৬. কাপিসা, ১৭. খোস্ত, ১৮. কুনার, ১৯. কুন্দুজ, ২০. লাগমান, ২১. লোওগার, ২২. নানকারহার, ২৩. নিমরুজ, ২৪. নুরেস্তান, ২৫. ওরুজ্‌গান, ২৬. পাক্‌তিয়া, ২৭. পাক্তিকা, ২৮. পাঞ্জশির, ২৯. পারভান, ৩০. সামাংগান, ৩১. সারে বোল, ৩২. তাখার, ৩৩. ওয়ার্দাক, ৩৪. জাবুল শহর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দেশটির পূর্ব-কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত। অন্যান্য প্রধান শহরের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণের কান্দাহার, পশ্চিমের হেরত এবং উত্তরের মাজরে শরীফ। ছোট শহরগুলির মধ্যে আছে পূর্বের জালালাবাদ, কাবুলের উত্তরে অবস্থিত চারিকার, এবং উত্তরের কন্দোজ ও ফয়েজাবাদ। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময়ে ও ১৯৮৯ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার ঠিক পরে গ্রামাঞ্চল থেকে বহু মানুষ জনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে এসে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেয়। ১৯৮০-এর শেষের দিকে কাবুলের জনসংখ্যা বেড়ে প্রায় ২০ লক্ষ হয়ে যায়। তবে ১৯৯০-এর শুরুর দিকের গৃহযুদ্ধের সময় অনেক লোক বিধ্বস্ত কাবুল ছেড়ে পালিয়ে যায়; ফলে ১৯৯৩ সালে এর জনসংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ৭ লক্ষ। তবে ২০০১ সালের পর এর জনসংখ্যা আবার বেড়ে ২০ লক্ষে গিয়ে পৌঁছেছে। বেশির ভাগ শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, পানি শোধন ব্যবস্থা ও জনপরিবহন ব্যবস্থা নেই। অর্থনীতি সোভিয়েত অধিকৃতির আগেই আফগানিস্তানে জীবনযাত্রার মান ছিল বিশ্বের সর্বনিম্ন। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ ও তার পরে গৃহযুদ্ধ দেশটির অর্থনীতির চূড়ান্ত বিপর্যয় ঘটায়। সোভিয়েত আমলে শহরকেন্দ্রিক বাণিজ্য ও শিল্প সুযোগ সুবিধা গ্রামীণ অর্থনীতিকে শুরু থেকে আলাদা করে ফেলে। মাদকদ্রব্য ও অস্ত্রের চোরাচালান চরমে পৌঁছে। আফগানরা মূলত কৃষক ও পশুপালক। ২০শ শতকে খনি ও ভারী শিল্পের উন্নতি ঘটে, তবে স্থানীয় হস্তশিল্প গুরুত্ব হারায়নি। ১৯৫৬ সালে সরকার অনেকগুলি পাঁচসালা পরিকল্পনার প্রথমটি শুরু করে। ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপানের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্যোগে নেয়া প্রকল্পগুলি সাফল্যের মুখ দেখে। অন্যান্য বড় দেশের সহায়তায় আফগানিস্তান রাস্তা, বাঁধ, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, বিমানবন্দর, কারখানা ও সেচ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েতরা আসার পর পশ্চিমী সাহায্য বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯৯১ সালে সোভিয়েত শাসনের মুক্তির পর আবার সাহায্য আসা শুরু হয়। ২০০১ সালে তালেবানদের পতনের পর আফগানিস্তানে নতুন করে আন্তর্জাতিক সাহায্য নিয়ে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। শ্রমশক্তি ২০০৩ সালে আফগানিস্তানের মোট শ্রমিক সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ। এদের প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষিকাজ বা পশুপালনের সাথে জড়িত। যুদ্ধের কারণে আরও অনেক ধরনের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বেকারত্ব এবং দক্ষ শ্রমিক ও প্রশাসকের অভাব সবচেয়ে বড় সমস্যা। কৃষি আফগানিস্তানের খুবই সামান্য এলাকায়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উপত্যকায় কৃষিকাজ সম্ভব এবং এই কৃষিভূমির সবগুলোতেই ব্যাপক সেচের প্রয়োজন হয়। ঝর্ণা ও নদী থেকে খাল (কারেজ বা গানাত) খুঁড়ে পানি আনা হয়। গম আফগানিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শস্য। এরপর রয়েছে যব, ভুট্টা, ও ধান। তুলাও ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। আফগানিস্তান থেকে রপ্তানিকৃত দ্রব্যের মধ্যে ফল ও বাদাম গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের আঙ্গুর ও তরমুজ খুব মিষ্টি হয়; এগুলি দক্ষিণ-পশ্চিমে, হিন্দুকুশের উত্তরে ও হেরাতের আশেপাশের অঞ্চলে জন্মে। আফগানিস্তান কিশমিশও রপ্তানি করে। অন্যান্য ফলের মধ্যে রয়েছে এপ্রিকট, চেরি, ডুমুর, তুঁত, ও বেদানা। উত্তর আফগানিস্তানে বিপুল পরিমাণে কারাকুল ভেড়া পালন করা হয়। এই ভেড়ার শক্ত, কোঁকড়া লোম দিয়ে পারসিক ভেড়ার কোট তৈরি করা হয়। অন্যান্য জাতের ভেড়া ও ছাগলও পালন করা হয়। আফগানিস্তানের আরেকটি পরিচয় অবৈধ আফিম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে এটি মায়ানমারকে হটিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিমাণ আফিম উৎপাদক দেশে পরিণত হয়। এছাড়াও হাশিশও তৈরি হতো। ২০০০ সালের জুলাই মাসে তালেবান সরকার ইসলামে আফিমের ব্যবহার নিষিদ্ধ বলে পপি গাছের চাষ বন্ধ করে দেয়। ২০০১ সালে তালেবানের পতনের গ্রামাঞ্চলের অনেক স্থানীয় দরিদ্র কৃষক আবার আফিম চাষ করা শুরু করে, যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আফিম পপি চাষ নিষিদ্ধ করেছিল। হস্তশিল্প তুর্কমেন ও উজবেকরা কার্পেট বানিয়ে থাকে। বালুচীরা জায়নামাজ, পশমের কার্পেট ইত্যাদি বানায়। উটের লোম ও তুলাও মাঝে মাঝে ব্যবহৃত হয়। বিয়ের কনের সাজপোষাকের সুন্দর সূচির কাজ দেখতে পাওয়া যায়। খননশিল্প ১৯৬৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় উত্তর আফগানিস্তানে বড় আকারের প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস আহরণ শুরু হয়। ১৯৮০-র দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে বিপুল পরিমাণে গ্যাস রপ্তানি করা হত, তবে ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের পর তা থেমে যায়। একবিংশ শতকের প্রথম দশকে শেবেরগান শহরের কাছে অবস্থিত মূল গ্যাসক্ষেত্রগুলিতে আবার গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। আফগানিস্তান বিশ্বের উচ্চমানের নীলকান্তমণির অন্যতম সরবরাহকারী। এছাড়াও দেশটিতে অন্যান্য দামী পাথর যেমন পান্না, চুনি ইত্যাদি এবং খনিজ তামা ও লোহা পাওয়া যায়। একাধিক দশকব্যাপী যুদ্ধের কারণে আফগানিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদের আহরণ ও ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত ছিল। বর্তমানে এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ২০০৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপসংস্থা (United States Geological Survey বা USGS) প্রাক্কলন করে যে উত্তর আফগানিস্তানে গড়ে ২৯০ শত কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত খনিজ তেল, ১৫.৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস এবং ৫৬ কোটি ব্যারেল প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে প্রাপ্ত তরল আছে। ২০১১ সালে আফগানিস্তান সরকার গণচীনের জাতীয় পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের সাথে একটি খনিজ তেল অনুসন্ধান সংক্রান্ত ৭ শত কোটি ডলারের একটি চুক্তি সম্পাদন করে, যেখানে দেশটির উত্তরাংশে আমু দরিয়া নদীর পাড় ধরে তিনটি তেলক্ষেত্র স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। আফগানিস্তানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লিথিয়াম রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সংস্থা পেন্টাগনের একটি অভ্যন্তরীণ পত্রে বলা হয় যে আফগানিস্তান "লিথিয়ামের সৌদি আরবে" পরিণত হতে পারে। এছাড়াও দেশটিতে তামা, সোনা, কয়লা, লোহার আকরিক এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ আছে। হেলমান্দ প্রদেশের খানাশিন এলাকার কার্বোনাটাইট শিলাতে ১ কোটি মেট্রিক টনের মত দুর্লভ ধাতু রয়েছে। ২০০৭ সালে চীনের ধাতুগলন গোষ্ঠী নামক সংস্থাকে ৩ শত কোটি টাকার বিনিময়ে ৩০ বছরের জন্য আইনাক তামার খনিটি ভাড়া দেওয়া হয়। এটি আফগানিস্তানের ইতিহাসে বৃহত্তম বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগ ও বেসরকারী ব্যবসা প্রকল্প। ভারতের রাষ্ট্র-পরিচালিত ইস্পাত প্রশাসন কেন্দ্রীয় আফগানিস্তানের হাজিগাক গিরিপথে অবস্থিত বিশাল লৌহ আকরিকের খনিটি খননকাজের অধিকার অর্জন করে। আফগানিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা অনুমান করেন যে দেশটির ৩০% অব্যবহৃত খনিজ সম্পদের মূল্য কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। একজন কর্মকর্তার মতে খনিজ সম্পদ আফগান অর্থনীতির মেরুদণ্ডে পরিণত হবে। উৎপাদন শিল্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী বছরগুলিতে আফগানিস্তানে ভারি শিল্পের বিকাশ ঘটে। ১৯৬৫ সালে পশ্চিম জার্মানি একটি পশম কারখানা স্থাপনের পর পশমের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের আগে আফগানিস্তানে প্রায় ২০০টি সরকারি কারখানা ছিল। এদের মধ্যে ছিল টেক্সটাইল, খাবার (বিশেষত শুকনা খাবার ও ফল), রাসায়নিক সার, সিমেন্ট, চামড়ার দ্রব্য, এবং কয়লার ইট বা চাপড়া বানানোর কারখানা। যুদ্ধের কারণে এগুলির সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শক্তিসম্পদ পেট্রোলিয়াম, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস ও জলবিদ্যুৎ আফগানিস্তানের প্রধান শক্তি-উৎস। পেট্রোলিয়াম মূলত ইরান ও তুর্কমেনিস্তান থেকে আমদানি করা হয়। আফগানিস্তানের নিজস্ব সামান্য তেল সম্পদ উত্তরে আমুদরিয়ার কাছে অবস্থিত। দেশটি কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর বেশি নির্ভরশীল। কাঠের লাকড়িও অনেক ঘরে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তবে বন উচ্ছেদের ফলে এগুলি পাওয়া এখন দোষ্কর হয়ে পড়েছে। কন্দুজ, কাবুল, আর্গান্দবাদ ও হেলমান্দ নদীর উপরের বাঁধগুলি মূলত শহরগুলিতে জলবিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এগুলি সেচের জন্য পানিও ধরে রাখে। গৃহযুদ্ধের আগে দেশটির জলবিদ্যুৎ-ক্ষমতার মাত্র ১০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছিল। যুদ্ধের সময় টারবাইন, ফ্লাডগেট, ট্রান্সমিশন লাইন ইত্যাদি ধ্বংস করে ফেলা হয়। ব্যক্তিগত ডিজেল-চালিত জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হত। ২০০২ সালে তালেবান পতনের পর দেশের পাওয়ার নেটওয়ার্ক আবার নতুন করে তৈরি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। বৈদেশিক বাণিজ্য আফগানিস্তানের রপ্তানিকৃত দ্রব্যের মধ্যে শুকনা ফল ও বাদাম, হস্তনির্মিত কার্পেট, পশম, তুলা, চামড়া, ও নানা ধরনের মণিপাথর প্রধান। আফগানিস্তান বিদেশ থেকে খাদ্য, মোটর যান, পেট্রোলিয়াম, ও কাপড় আমদানি করে। সোভিয়েত রাশিয়া ১৯৭৯-এর সোভিয়েত আগ্রাসনের অনেক আগে থেকেই আফগানিস্তানের প্রধান বাণিজ্যবন্ধু ছিল। ১৯৮০-এর দশকে এই বন্ধুত্ব তীব্রতা পায়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলি, পাকিস্তান, ভারত, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি আফগান পণ্যের প্রধান ক্রেতায় পরিণত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৬ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের সাথে বাণিজ্য স্থগিত রেখেছিল। ২০০০ সালে আফগানিস্তানের মোট রপ্তানি ছিল ১২৫ মিলিয়ন ডলার এবং আমদানির মোট পরিমাণ ছিল ৫২৪ মিলিয়ন ডলার। মুদ্রা ও ব্যাংকিং আফগানিস্তানের মুদ্রার নাম আফগানি। ১০০ পুলে ১ আফগানি। আফগানির বিনিময় হার বহুবার ওঠা নামা করেছে। ১৯৮১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত মূদ্রাস্ফীতি আফগানির ক্রয়ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত করে দেয় এবং তালেবান শাসনামলেও এই ধারা বজায় ছিল। যুদ্ধজনিত মুদ্রাস্ফীতির কারণে আফগানির মূল্য এত কমে যায় যে সরকার নতুন অধিক মূল্যের আফগানি আবার ইস্যু করেন। ২০০২ সালের শেষে এসে আফগানির মূল্য স্থিতিশীল হয় এবং ২০০৭ সালে ১ মার্কিন ডলারে প্রায় ৫০ নতুন আফগানি পাওয়া যেত। আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৯৩৮ সালে স্থাপিত হয়। এটি দেশটির বৃহত্তম ব্যাংক। ১৯৭৫ সালে আফগানিস্তানের সমস্ত বেসরকারী ব্যাংকের জাতীয়করণ করা হয়। আফগানিস্তানে কোন স্টক মার্কেট বা অন্যান্য আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নেই। সাধারণত টাকার "বাজারে" টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন হয়। অনেকেই টাকা ধার নিয়ে থাকেন, যেগুলোর কোন হিসাব রাখা হয় না। যোগাযোগ ব্যবস্থা সড়ক পরিবহন রুক্ষ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং যথাযথ পরিবহন কাঠামোর অভাবে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে ভ্রমণ অত্যন্ত দুরূহ। দেশের প্রায় ২৪ শতাংশ রাস্তা কাঁচা। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি বৃত্তাকারে প্রধান প্রধান শহরগুলিকে সংযুক্ত করেছে। কাবুল থেকে শুরু হয়ে এই মহাসড়কটি উত্তরে সালাং সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে গিয়ে তাশকুরঘান যায়, তারপর পশ্চিমে মাজরে শরীফ হয়ে মেইমানেহ ও হেরাতে পৌঁছে; এরপর এটি দক্ষিণ-পূর্বে মোড় নিয়ে কান্দাহার যায় ও তারপর আবার উত্তর-পূর্বে গিয়ে কাবুলে ফেরত আসে। আফগানিস্তানের সড়ক ব্যবস্থা দেশটিকে পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত করেছে। উত্তরে জালালাবাদ ও পাকিস্তানের পেশাওয়ার শহর সংযুক্ত, অন্যদিকে দক্ষিণে কান্দাহার ও চামান শহর সংযুক্ত। আরেকটি বড় রাস্তা হেরাত থেকে ইরানে প্রবেশ করেছে। যুদ্ধের কারণে অনেক রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাবুল ও দেশের উত্তরের সাথে যোগসূত্র স্থাপনকারী সালাং সুড়ঙ্গ ১০ বছর বন্ধ থাকার পর ২০০২-এর শুরুতে আবার খুলে দেয়া হয়। কিছু কিছু রাস্তা শীতকালে ও বসন্তকালে বরফ পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। শহরগুলিতে তিন চাকার অটোরিক্সা সাধারণ যানবাহন। অনেক জায়গায় ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়। গ্রামাঞ্চলে আফগানিরা পায়ে হেঁটে, গাধা বা ঘোড়ার কিংবা মাঝে মাঝে উটের পিঠে চড়ে ভ্রমণ করে। আফগানিস্তানের কোন সমুদ্র বন্দর নেই, তাই স্থলপথেই অন্যান্য দেশের সাথে আমদানি-রপ্তানি সম্পন্ন হয়। রেল পরিবহন নগণ্য, তাই দেশের ভেতরে মাল পরিবহন মূলত সড়কপথেই সম্পন্ন হয়। আফগানিস্তানে বাসে ভ্রমণ করা জঙ্গি কার্যকলাপের কারণে বিপজ্জনক। বাসগুলি সাধারণত পুরনো আদলের মার্সেডিজ-বেঞ্জ জাতীয় এবং এগুলি বেসরকারি কোম্পানির মালিকানাধীন। কাবুল-কান্দাহার এবং কাবুল-জালালাবাদ মহাসড়ক গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক দুর্ঘটনা আফগান সড়ক ও মহাসড়কগুলিতে সাধারণ ঘটনা। সড়ক ও মহাসড়কগুলির পুনর্নির্মাণের পরে সম্প্রতি নতুন অটোমোবাইলগুলি আরও ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। তারা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্য দিয়ে আমদানি করা হয়। ২০১২ সালে ১০ বছরের বেশি পুরনো যানবাহন দেশে আমদানি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যের কারণে অর্থনীতির জন্য দেশের রাস্তাঘাটের উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য হল। আফগানিস্তানে ডাক পরিষেবাগুলি জনসাধারণের মালিকানাধীন আফগান পোস্ট এবং ফেডএক্স, ডিএইচএল এবং অন্যান্যদের মতো ব্যক্তিগত কোম্পানি দ্বারা সরবরাহ করা হয়। নৌপরিবহন নৌপরিবহন মূলত আমু দরিয়া নদীতেই সীমাবদ্ধ। আমু দরিয়ার ওপর কেলেফ্‌ত, খয়রাবাদ ও শির খান নদীবন্দরগুলি অবস্থিত। বিমান পরিবহন কাবুল ও কান্দাহারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে। ২০০১ সালে মার্কিনী বোমা হামলায় কাবুল বিমানবন্দর ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু পুনরায় বিমান পরিবহন ব্যবস্থা নির্মাণ প্রকল্পে এটিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। বর্তমানে এই বিমানবন্দরটিই বহির্বিশ্বের সাথে আফগানিস্তানের যোগসূত্র। দেশের ভেতরে আরও কিছু ছোট ছোট বিমানবন্দর আছে। আরিয়ানা আফগান এয়ারলাইন্স জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা। প্রথম বেসরকারী বিমান সংস্থা কাম এয়ার ২০০৩ সালে অভ্যন্তরীণ উড্ডয়ন বা ফ্লাইট চলাচল শুরু করে। আফগানিস্তানে বিমান পরিবহন এয়ারিয়া আফগান এয়ারলাইন্স (এএএ) জাতীয় ক্যারিয়ার, এবং আফগান জেট ইন্টারন্যাশনাল, ইস্ট হরিজন এয়ারলাইন্স, কাম এয়ার, পানির এয়ারওয়েজ এবং সাফী এয়ারওয়েজের মতো বেসরকারি কোম্পানিগুলির দ্বারা সরবরাহ করা হয়। বহির্বিশ্বের কয়েকটি দেশের বিমান পরিবহন সংস্থাও দেশটিতে সেবা প্রদান করে। এর মধ্যে রয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া, এমিরেটস, গালফ এয়ার, ইরান আসেমান এয়ারলাইন্স, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স এবং তুর্কি এয়ারলাইন্স দেশের চারটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (পূর্বে কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর), কান্দাহার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, হেরাত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং মাযার-ই-শরীফ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কাবুল এবং অন্যান্য বড় বড় শহরগুলির সাথে উড়ানের সাথে প্রায় এক ডজন গার্হস্থ্য বিমানবন্দর রয়েছে। রেল পরিবহন ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী আফগানিস্তানে শুধু দুইটি রেলপথ আছে। একটি বালখ প্রদেশের খেইরাবাদ থেকে আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান সীমান্ত পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেলপথ। অন্যটি তোরাগুন্দি থেকে তুর্কমেনিস্তান সীমান্ত পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেলপথ। দুইটি রেলপথই শুধুমাত্র মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং এখন পর্যন্ত যাত্রীবাহী কোন রেলগাড়ি চলাচল করে না। দেশটিতে আরও রেলপথ নির্মাণের বিভিন্ন প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৩ সালে আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতিরা একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে তুর্কমেনিস্তান-আন্দখভোই-মাজার-ই-শরিফ-খেইরাবাদ-এর মধ্যে একটি ২২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক রেলপথ নির্মাণের গোড়াপত্তন করা হয়। এই রেলপথটি উজবেকিস্তান সীমান্তের কাছে খেইরাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত ইতোমধ্যে বিদ্যমান রেলপথের সাথে সংযুক্ত হবে। অন্য আরেকটি পরিকল্পনা অনুসারে আরেকটি রেলপথ রাজধানী কাবুল থেকে পূর্ব দিকে সীমান্ত শহর তোরখাম পর্যন্ত চলে যাবে,যেখানে গিয়ে পথটি পাকিস্তানি রেলব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত হবে। এছাড়াও ইরানের খাফ শহরে থেকে আফগানিস্তানের হেরাত শহর পর্যন্ত একটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষা আফগানিস্তানে দুই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা বিদ্যমান। একটি হল প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত মাদ্রাসা ব্যবস্থা, যেখানে উলামাগণ কুরআন পড়া ও লেখা এবং প্রাথমিক গণিত শিক্ষা দেন। অন্য শিক্ষাব্যবস্থাটি ১৯৬৪ সালে আফগান সংবিধান অনুসারে পশ্চিমা শিক্ষাব্যবস্থার অনুসরণে প্রবর্তন করা হয়, যেখানে সমস্ত বয়স স্তরে শিক্ষাগ্রহণ বিনামূল্য ও বাধ্যতামূলক ছিল। তবে এই ব্যবস্থার লক্ষ্য পূর্ণ হয়নি। পাঁচ বছরের প্রাথমিক শিক্ষার উপর জোর দেয়া হয়। কাবুল ও অন্যান্য বড় শহরগুলিতে মাধ্যমিক স্কুলের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বেশির ভাগ আফগানই এমন এলাকায় বসবাস করতেন যেখানে কোন স্কুল ছিল না। একাধিক দশকব্যাপী যুদ্ধ দেশটির শিক্ষাব্যবস্থায় ধ্স নামায় এবং একটি প্রজন্ম কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই বড় হয়ে উঠে। গৃহযুদ্ধের কারণে দেশের প্রায় সমস্ত বিদ্যালয় ও উচ্চতর বিদ্যাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বেশির ভাগ শিক্ষক চাকরি ছেড়ে আফগানিস্তান থেকে চলে যান। এর পরে তালেবানেরা এসে মাদ্রাসা ব্যতীত সকল ধরনের স্কুল বন্ধ ঘোষণা করে এবং মহিলাদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করে। কেবল কুরআন শরীফ মুখস্থ করা অণুমোদিত ছিল। ২০০১ সালে তালিবানের পতনের পর দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা আবার নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় নতুন করে শুরু হয়। ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৪০ লাখ ছেলেমেয়ে দেশটির প্রায় ৯,৫০০ স্কুলে শিক্ষাগ্রহণ করে। প্রাথমিক শিক্ষা বিনামূল্য ঘোষণা করা হয়েছে। ১৫ বছরের বেশি বয়সের আফগানদের মধ্যে সাক্ষরতার হার প্রায় ৩৬ শতাংশ হিসাব করা হয়েছে। তবে পুরুষদের সাক্ষরতার হার (৫১%) নারীদের (২১%) চেয়ে অনেক বেশি। আফগান স্কুলগুলিতে দারি, পশতু ও অন্যান্য ভাষা, যেমন- উজবেক ভাষায় পড়ানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সগুলি মূলত দারি ভাষায় পড়ানো হয়। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় দেশটির বৃহত্তম ও সবচেয়ে সম্মানিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯৩৮ থেকে ১৯৬৭ সালের মধ্যে আরও নয়টি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। জালালাবাদে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত ননগরহার বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা ও অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয়। এছাড়া কান্দাহার, হেরাত, বাল্‌খ ও বামিয়ানে ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। ১৯৬১ সালের আগে কেবল পুরুষেরাই স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা লাভ করতে পারতেন। এরপর থেকে সমস্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মহিলাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ২০০৬ সালে সহশিক্ষামূলক আফগানিস্তান মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়; এখানে শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি ভাষা। মাজার-ই-শরীফ শহরে ৬০০ একর এলাকা জুড়ে বাল্‌খ বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সমাজ ও সংস্কৃতি আফগানিস্তানের জনগণ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত। এই জাতিগুলির কতগুলি আবার আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলিতে বসবাস করে। পশতুন জাতি আফগানিস্তানের বৃহত্তম জাতি। তারা বহুদিন ধরে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় ছিল। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের পর তাজিক, উজবেক, হাজারা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগুলির একটি কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় আসে। তবে ১৯৯৬ সালে তালেবানেরা ক্ষমতা দখল করে পশতুন আধিপত্য পুনরায় প্রতিষ্ঠা করে। ২০০১ সালের শেষে তালেবানদের পতনের পর দেশটির প্রধান প্রধান জাতিগত সম্প্রদায়গুলি সরকারি ক্ষমতা অংশীদারী করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৪ সালের আফগান সংবিধানে আফগানিস্তানের বৈচিত্র্যময় জাতিগুলির অধিকার সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ এতে সংখ্যালঘুদের যথেষ্ট ভাষাগত স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ভাষা যেমন উজবেক ও তুর্কমেনীয় ভাষাকে তাদের ভাষাভাষী স্থানীয় এলাকায় সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। দেশটির সবচেয়ে বেশি কথিত ভাষা পশতু ভাষা ও দারি ভাষাকে রাষ্ট্রীয় সরকারি ভাষার মর্যদা দেয়া হয়েছে। আফগানিস্তানের প্রায় দুই-পঞ্চমাংশ জনগণ পশতুন জাতির লোক। হিন্দুকুশ পর্বতের দক্ষিণে এদের ঐতিহ্যবাহী আবাসস্থল। যদিও পশতুনরা আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে বাস করে, তাদের মূল শক্তিকেন্দ্র দেশের দক্ষিণে কান্দাহার প্রদেশে। এছাড়া অনেক পশতুন উত্তর-পশ্চিমে পাকিস্তান সীমান্তে বাস করেন। পুরুষ পশতুনরা প্রাচীন জাতিগত আচার মেনে চলেন, যে আচারে সাহস, ব্যক্তিগত সম্মান, প্রতিজ্ঞা, স্বনির্ভরতা ও আতিথেয়তাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। পশতুনদের মাতৃভাষা পশতু, একটি ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর ভাষা। ধর্ম ধর্মই আফগানিস্তানের বিভক্ত জাতিসত্তার দৃঢ়তম বন্ধন। আফগানদের প্রায় ৯৯ শতাংশই মুসলিম। এদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ সুন্নি এবং প্রায় ১৫ শতাংশ শিয়া মুসলিম। শহরগুলিতে অল্পসংখ্যক হিন্দু, শিখ, পারসিক ও ইহুদী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। ১৯৬০-এর দশক থেকে অনেক আফগান ইহুদী ইসরায়েলে পাড়ি দিয়েছেন। হযরত আলির কবর মাজার-এ-শরিফ অনেক মুসলিমের তীর্থস্থল। আফগান জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হলেন মোল্লা। যেকোন পুরুষ যিনি কুরআন শরীফ মুখস্থ বলতে পারেন, তিনি মোল্লা হওয়ার যোগ্য । মোল্লারা শুক্রবারের প্রার্থনা, বিয়ে ও দাফনকাজ পরিচালনা করেন। মোল্লারা মানুষদের ইসলামের বিধিবিধান শিক্ষা দেন। তারা ইসলামী আইননুসারে সংঘাত নিরসন করেন এবং শারীরিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান দেন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় মোল্লা ও স্থানীয় জমিদার (খান) মিলে নির্ধারণ করেন তাদের অনুসারীরা কী করতে পারবে বা পারবে না। সাহিত্য আফগানিস্তানে গল্প-গাঁথা বলার শিল্প এখনও সগৌরবে বিরাজমান, সম্ভবত ব্যাপক নিরক্ষরতার কারণেই এই শিল্পটি হারিয়ে যায়নি। সঙ্গীতের সাথে লোকগাঁথা বর্ণনা করার ঐতিহ্য আজও আদৃত। এই লোকগাথাগুলি বর্তমানের আফগানদেরকে অতীতের কথা মনে করিয়ে দেয়। আফগান জীবনের সমস্ত দিক নিয়েই এই গাথাগুলি রচিত এবং এগুলির মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও আচরণ শিক্ষা দেয়া হয়। ইসলামী পর্বে দারি ও পশতু উভয় ভাষার সাহিত্যের বিকাশ ঘটে এবং আরবি লিপির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। ১০১০ সালে ফেরদৌসী তার মহাকাব্য শাহনামা রচনা শেষ করেন। এতে দারি ভাষায় লেখা প্রায় ৬০,০০০ দুই-পঙক্তির ছড়া আছে। দারি ও তুর্কি-জাতীয় ভাষায় আরও অনেক কাব্য ও গাথা রচিত হয়। ১৩শ শতকে সুফীসাধক ও কবি জালাল আল-দীন রুমি মহাকাব্য মসনবী-ইয়ে মানাবী রচনা করেন, যা ইসলামী সাহিত্য ও চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব ফেলে। ১৭শ শতকের বিখ্যাত যোদ্ধা ও কবি খুশহাল কাট্টাক কবিতার মাধ্যমে উপজাতীয় আচার-আচরণের নিয়ম প্রদান করতেন। আধুনিক আফগান সাহিত্যে আধুনিক বিশ্বের নানা ধারণা স্থান পেয়েছে। ১৯৭২ সালে সৈয়দ বোরহানউদ্দীন মাজরুহ বহুখণ্ডবিশিষ্ট ধ্রুপদী, ছন্দময় দারি গদ্য রচনা করেন, যাতে কারণ, যুক্তি, বিজ্ঞান ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ আলোচিত হয়। সোভিয়েতদের সাথে যুদ্ধের সময় ইসলাম ও মুক্তি বিষয় হিসেবে প্রাধান্য পায়। ১৯৮৩-তে গুলজারাক জাদরান পশতু ভাষায় জিহাদের ওপর বই লেখেন। আফগানিস্তান ইতিহাস সোসাইটি ও পশতু অ্যাকাডেমি নতুন লেখকদের উৎসাহিত করার জন্য সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করতেন, তবে গৃহযুদ্ধের কারণে তাদের প্রচেষ্টা অনেকাংশেই ব্যাহত হয়। শিল্পকলা ও স্থাপত্য আফগানিস্তানে সব যুগের স্থাপত্যকলার নিদর্শন পাওয়া যায়, যাদের মধ্যে আছে গ্রিক ও বৌদ্ধ স্থাপত্যের ধ্বংসস্তুপ, মন্দির, খিলান, স্তম্ভ, সূক্ষ্ম কারুকাজময় ইসলামী মিনার ও দুর্গ। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হেরাত ও মাজার-ই-শরিফের মসজিদদ্বয়, পশ্চিম-মধ্য উঁচু এলাকার জাম শহরের একটি মসজিদের মিনার, ১০০০ বছরের পুরনো কালে-ইয়ে বোস্তের মহান খিলান, চেল জিনা (চল্লিশ ধাপ), কান্দাহারের সম্রাট বাবরের রেখে যাওয়া পাথরের খোদাইকর্ম, বামিয়ানের বুদ্ধ (যা ২০০১ সালের মার্চে তালেবানরা ধ্বংস করে ফেলে), গজনীর বিজয় চূড়া, বাবরের সমাধি ও কাবুলের বালা হিস্‌সার। ক্ষুদ্র আকারের শিল্পকলার মধ্যে হেরাতের হালকা নীল-সবুজ টাইলের কাজ, রঙিন ক্যালিগ্রাফি বা হস্তলেখাশিল্প উল্লেখ্য। সোনা ও রূপার গয়না, সূচিশিল্প, ও চামড়ার বিভিন্ন দ্রব্য আজও ঘরে ঘরে বানানো হয়। তবে আফগানিস্তানের সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্পকর্ম হল পারসিক-ধাঁচে বানানো কার্পেট। সঙ্গীত আফগানিস্তানের সঙ্গীত মূলত ঐতিহ্যবাহী লোক সঙ্গীত, গাথা ও নৃত্য। তার দিয়ে তৈরি বাদ্যযন্ত্র রোহাবকে পশ্চিমের ভায়োলিন বা চেল্লোর পুরানো রূপ হিসেবে মনে করা হয়। অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে আছে সন্তুর, হারমোনিয়াম, চং, এবং তবলা ও ঢোল। পশতুন অঞ্চলের আত্তান নৃত্য জাতীয় নৃত্য। এতে নর্তকেরা একটি বড় বৃত্তে দাঁড়িয়ে হাততালি দেন এবং দ্রুত লয়ে সঙ্গীতের ছন্দের সাথে পা নাড়ান। ছুটির দিনে বা সপ্তাহের শেষে আফগানেরা নদীর তীরে বা বনে পিকনিকে গিয়ে গান গাইতে ও শুনতে পছন্দ করেন। গ্রন্থাগার ও জাদুঘর স্বল্পসংখ্যক প্রধান গ্রন্থাগারগুলি কাবুলে অবস্থিত। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ১৯৩১ সালে স্থাপিত হয় এবং সোভিয়েতদের সাথে যুদ্ধে ও পরবর্তীকালে গৃহযুদ্ধের সময় এর বহু বই চুরি হয়ে যায়। জাতীয় আর্কাইভও লুট হয়। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত কাবুল জাতীয় জাদুঘর দেশটির সর্ববৃহৎ জাদুঘর এবং এটি প্রাচীন বৌদ্ধ নিদর্শনের সংগ্রহের জন্য এককালে পরিচিত ছিল। এই সংগ্রহ থেকে কিছু উচ্চমূল্যের বৌদ্ধ নিদর্শন সোভিয়েত ইউনিয়নে পাচার হয়ে যায়। ১৯৯৩ সালে রকেট হামলা করে যাদুঘরটি খুলে লুট করা হয়। বেশির ভাগ দোষ্প্রাপ্য দ্রব্য পাকিস্তান হয়ে চলে যায় এবং অন্য দেশের ধনী সংগ্রাহকদের কাছে বেচা হয়। আফগান প্রাচীন নিদর্শনের অবৈধ ব্যবসা এ সময় অবৈধ ড্রাগসের ব্যবসার পরেই সবচেয়ে বেশি অর্থের ব্যবসা ছিল। ২০০০ সালে তালেবান পুলিশ জাদুঘরের অবশিষ্ট ২৭০০ শিল্পকর্ম, যাদের মধ্যে অনেক প্রাচীন সাংস্কৃতিক সম্পদ ছিল, মূর্তিপূজা আখ্যা দিয়ে ইসলামের নামে ধ্বংস করে ফেলে। তালেবানের পতনের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলিতে আরেক দফা লুটতরাজ ঘটে। গণমাধ্যম ১৯৭৮ সালে জাপানি অর্থানুকূল্যে কাবুলে আফগানিস্তানের প্রথম টেলিভিশন স্টেশন আফগানিস্তান জাতীয় টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু করে। তবে তালিবানেরা ক্ষমতায় আসার পর টেলিভিশন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০০১ সালে তালিবানদের পতনের পর আবার কাবুলে টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু হয়। ১৮৭৫ সালে আফগানিস্তানে প্রথম সংবাদপত্র ছাপা হয়, এবং ১৯০০ সালের ঠিক পরে আরও দুইটি ছোট ছোট সংবাদপত্র প্রকাশিত হত। ১৯১৯ সালে রাজা আমানুল্লাহ শাসনভার হাতে নেওয়ার পর প্রায় ১৫টি সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন বিকাশ লাভ করে। ১৯৫০-এর দিকে আফগানিস্তানের ৯৫% ছাপা বই ও সংবাদ সরকারিভাবে প্রকাশিত হত। ১৯৬২ সালে প্রথম ইংরেজি দৈনিক হিসেবে কাবুল টাইম্‌স আত্মপ্রকাশ করে। এছাড়া বাখতার সংবাদ সংস্থাও অনেক বিদেশী খবর পরিবেশন করত। ১৯৭৮ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর কাবুল টাইম্‌সের নাম বদলে কাবুল নিউ টাইম্‌স রাখা হয় এবং এতে সাম্যবাদী ধারার খবরাখবর প্রকাশিত হত। এই পত্রিকাটি ছিল ঘোর-পাশ্চাত্যবিরোধী। এর প্রতিবাদে গোপনে শবনম নামে একটি সরকারবিরোধী পত্রিকা কাবুলে প্রকাশিত হত। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে ১২টি দৈনিক পত্রিকা ছিল, কিন্তু তালিবানেরা ক্ষমতায় আসার পর এগুলির সবই বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৮ সালে তালিবানেরা এদের মধ্য থেকে দুইটিকে নিজস্ব প্রচারমাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার জন্য আবার চালু করে। ২০০২ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রদানকারী আইন পাশ করে। এর পর প্রায় ১০০টি সংবাদপত্র আফগানিস্তানে প্রকাশিত হতে শুরু করে। বর্তমানে সাপ্তাহিক কাবুল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সংবাদপত্র। টীকা ২। আফগানিস্তান সার্কভুক্ত একটি দেশ। তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি বহিঃসংযোগ General information BBC News Country Profile - Afghanistan Afghanistan's Paper Money সরকার ও প্রতিষ্ঠানসমূহ Offical Website of Afghanistan Official Website of the President of Afghanistan Laws of Afghanistan Afghanistan Customs Da Afghanistan Bank (Central Bank) Afghanistan National Development Strategy (ANDS) Afghanistan Investment Support Agency (AISA) Royal House of Afghanistan সংস্কৃতি Afghanistan Cultural Profile - Afghanistan national cultural portal News from Afghanistan Afghanistan Online News, Information, Pictures from Afghanistan Local Afghan News Bakhtar News Agency (Official Afghan Agency) General Afghan Information and Entertainment Portal অন্যান্য Picture galleries from Kabul and Afghanistan Old photos of Afghanistan Return to Afghanistan - Short films by the Washington Post on the New Afghanistan British Royal College for Defense Studies analyses and proposes a war in August 2001 এশিয়ার রাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র সার্কের সদস্য রাষ্ট্র স্বল্পোন্নত দেশ ইসলামি রাষ্ট্র মধ্য এশীয় রাষ্ট্র আমিরাত ইরানীয় মালভূমি স্থলবেষ্টিত দেশ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ধর্মশাসক সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Afghanistan
Afghanistan
Afghanistan, officially the Islamic Emirate of Afghanistan, is a landlocked country located at the crossroads of Central Asia and South Asia. Referred to as the Heart of Asia, it is bordered by Pakistan to the east and south, Iran to the west, Turkmenistan to the northwest, Uzbekistan to the north, Tajikistan to the northeast, and China to the northeast and east. Occupying 652,864 square kilometers (252,072 sq mi) of land, the country is predominantly mountainous with plains in the north and the southwest, which are separated by the Hindu Kush mountain range. Kabul is the country's largest city and serves as its capital. According to the World Population review, as of 2023, Afghanistan's population is 43 million. The National Statistics Information Authority of Afghanistan estimated the population to be 32.9 million as of 2020. Human habitation in Afghanistan dates to the Middle Paleolithic era. Popularly referred to as the graveyard of empires, the land has historically been home to various peoples and has witnessed numerous military campaigns, including those by the Persians, Alexander the Great, the Maurya Empire, Arab Muslims, the Mongols, the British, the Soviet Union, and a US-led coalition. Afghanistan also served as the source from which the Greco-Bactrians and the Mughals, among others, rose to form major empires. The various conquests and periods in both the Iranian and Indian cultural spheres. the area was a center for Zoroastrianism, Buddhism, Hinduism, and later Islam. The modern state of Afghanistan began with the Durrani Afghan Empire in the 18th century, although Dost Mohammad Khan is sometimes considered to be the founder of the first modern Afghan state. Dost Mohammad died in 1863, days after his last campaign to unite Afghanistan, and Afghanistan was consequently thrown back into civil war. During this time, Afghanistan became a buffer state in the Great Game between the British Empire and the Russian Empire. From India, the British attempted to subjugate Afghanistan but were repelled in the First Anglo-Afghan War. However, the Second Anglo-Afghan War saw a British victory and the successful establishment of British political influence. Following the Third Anglo-Afghan War in 1919, Afghanistan became free of foreign political hegemony, and emerged as the independent Kingdom of Afghanistan in June 1926 under Amanullah Khan. This monarchy lasted almost half a century, until Zahir Shah was overthrown in 1973, following which the Republic of Afghanistan was established. Since the late 1970s Afghanistan's history has been dominated by extensive warfare, including coups, invasions, insurgencies, and civil wars. The conflict began in 1978 when a communist revolution established a socialist state, and subsequent infighting prompted the Soviet Union to invade Afghanistan in 1979. Mujahideen fought against the Soviets in the Soviet–Afghan War and continued fighting among themselves following the Soviets' withdrawal in 1989. The Islamic fundamentalist Taliban controlled most of the country by 1996, but their Islamic Emirate of Afghanistan received little international recognition before its overthrow in the 2001 US invasion of Afghanistan. The Taliban returned to power in 2021 after capturing Kabul and overthrowing the government of the Islamic Republic of Afghanistan, ending the 2001–2021 war. In September 2021 the Taliban re-established the Islamic Emirate of Afghanistan. The Taliban government remains internationally unrecognized. Afghanistan is rich in natural resources, including lithium, iron, zinc, and copper. It is the second-largest producer of cannabis resin, and third largest of both saffron and cashmere. The country is a member of the South Asian Association for Regional Cooperation and a founding member of the Organization of Islamic Cooperation. Due to the effects of war in recent decades, the country has dealt with high levels of terrorism, poverty, and child malnutrition. Afghanistan remains among the world's least developed countries, ranking 180th in the Human Development Index. Afghanistan's gross domestic product (GDP) is $81 billion by purchasing power parity and $20.1 billion by nominal values. Per capita, its GDP is among the lowest of any country as of 2020.
1164
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
আলবেনিয়া
আলবেনিয়া (আলবেনীয় ভাষায়: Shqipëri শ্চিপ্যরি) দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বলকান উপদ্বীপের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। দেশটি পশ্চিম দিক থেকে আদ্রিয়াতিক সাগর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে আইওনীয় সাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত; উপকূলীয় তটরেখার দৈর্ঘ্য ৩৬২ কিলোমিটার। দেশটির পূর্ণ সরকারি নাম আলবেনিয়া প্রজাতন্ত্র। আলেবেনীয় ভাষার দেশটির নাম "শ্চিপ্যরি", যার অর্থ "ঈগলদের দেশ"। এর রাজধানী ও বৃহত্তম নগরীর নাম তিরানা। এখানে প্রায় ২৯ লক্ষ লোক বাস করে। দেশটির আয়তন ২৮৭৪৮ বর্গকিলোমিটার । জনঘনত্ব প্রতি বর্গমাইলে ২৭৪ জন। দুই সাগরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এই দেশটির ৭০ শতাংশ ভূমিই খুব বন্ধুর। দেশটির সর্বোচ্চ স্থান দিবারের কোরাব সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৭৫৩ মিটার ওপরে অবস্থিত। আলবেনিয়াতে আদ্রিয়াতিক সাগরের তীরে একটি সরু উপকূলীয় সমভূমি অবস্থিত। দেশের অভ্যন্তরভাগ মূলত পাহাড়-পর্বতে পূর্ণ। দেশের প্রায় ৪০% অংশ অরণ্য ও স্ক্রাবে আবৃত। দেশটির জলবায়ু ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় প্রকৃতির। গ্রীষ্মকালগুলি উষ্ণ এবং শীতকালগুলি শীতল। পার্বত্য অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টি বা তুষারপাত হয়। আলবেনিয়া ইতিহাসে বহুবার পূর্বের ইতালীয় শক্তি ও পশ্চিমের বলকান শক্তির কাছে নত হয়েছে। ১৫শ শতকে আলবেনিয়া উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে আসে এবং শেষ পর্যন্ত ১৯১২ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। ইস্কান্দর বে আলবেনীয় জাতির পিতা হিসেবে পরিচিত। ১৯৪৪ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এটি একটি সাম্যবাদী রাষ্ট্র ছিল। ১৯৯১ সালে দেশটি গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতি ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে রূপান্তর শুরু করে এবং পূর্ব ইউরোপের সর্বশেষ দেশ হিসেবে অর্থনীতির উদারীকরণ সম্পন্ন করে। ১৯৯০-এর দশকে দেশটিতে আঞ্চলিক সংঘাতের কারণে দেশটির জীবনযাত্রায় সমস্যার সৃষ্টি করেছে। দেশটির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও বিচারবিভাগীয় সংস্কারের গতি অত্যন্ত মন্থর। দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে ২০১৪ সালে প্রার্থী হয়। একসময় আলবেনিয়া বিশ্বের একমাত্র সরকারীভাবে নাস্তিক রাষ্ট্র ছিল। বর্তমানে এখানে আবার মসজিদ ও গির্জা খুলেছে। দেশের দক্ষিণভাগে অবস্থিত সংখ্যালঘু গ্রিক সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রচুর বৈষম্যের শিকার। আলবেনিয়ার জনগণ আলবেনীয় ভাষাতে কথা বলে, যা দেশটির সরকারি ভাষা। এছাড়া গ্রিক ভাষার প্রচলন আছে। দেশের ৬৮% জনগণ সুন্নি মতাদর্শের ইসলাম ধর্মাবলম্বী। ১২% লোক ক্যাথলিক মণ্ডলীর খ্রিষ্টান, ৮% আলবেনীয় প্রথানুবর্তী খ্রিষ্টান এবং ৬% অধার্মিক। জাতিগতভাবে ৯৮% আলবেনীয় জাতির লোক এবং ১% গ্রিক। এখানে একটি সংসদীয় শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান। আলবেনিয়ার অবকাঠামো খুবই প্রাথমিক পর্যায়ের। বিদেশি বিনিয়োগও কম। সংগঠিত অপরাধীরা দেশের একটি বড় সমস্যা। তবে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। দেশটির মুদ্রার নাম লেক; ১ লেক ১০০ কিনদার্কার সমান। ইতিহাস আলবেনিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে বলকান উপদ্বীপে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। প্রাচীন ইতিহাস বর্তমান আলবেনীয়রা সম্ভবত ইলিরীয় জাতির লোকদের বংশধর। দক্ষিণ বলকান অঞ্চলে গ্রিক, রোমান ও স্লাভ জাতির লোকেরা অভিবাসন করার অনেক আগে থেকেই ইলিরীয় জাতির লোকেরা বাস করত। খ্রিস্টপূর্ব ৭ম ও ৬ষ্ঠ শতকে গ্রিকেরা আলবেনিয়ার উপকূলে অনেকগুলি বসতি স্থাপন করে; এগুলির মধ্যে ছিল এপিদামনুস (বর্তমান দুররেস) এবং আপোল্লোনিয়া (বর্তমান ভ্‌লোরে)। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতক নাগাদ এই বসতিগুলির পতন হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত এগুলি বিলীন হয়ে যায়। গ্রিকেরা চলে যাবার পর এই এলাকায় আদিকাল থেকে বসবাসকারী ইলিরীয় সমাজের বিবর্তন ঘটে এবং এতে জটিলতর রাজনৈতিক সংগঠন যেমন ফেডারেশন, রাজ্য, ইত্যাদির আবির্ভাব ঘটে। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইলিরীয় রাজ্যটি খ্রিস্টপূর্ব ৫ম ও ২য় শতকের মধ্যবর্তী সময়ে টিকে ছিল। একই সময়ে আড্রিয়াটিক সাগরের অপর তীরে ইতালীয় উপদ্বীপে রোমের বিস্তার ঘটছিল। রোমানরা ইলিরিয়াকে পূর্ব দিকের দেশগুলি বিজয়ের একটি আরম্ভকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করত। ২২৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দেই রোমানরা আড্রিয়াটিক সাগর পাড়ি দিয়ে ইলিরিয়া আক্রমণ করে। ১৬৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ ইলিরিয়াতে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। তারা এটিকে রোম সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত করে এবং নাম দেয় ইলিরিকুম। রোমানরা এর পর প্রায় ৬ শতাব্দী ধরে এলাকাটি শাসন করে। কিন্তু ইলিরীয়রা রোমান সংস্কৃতির সাথে মিশে না গিয়ে নিজেদের স্বকীয় সংস্কৃতি ও ভাষা ধরে রাখে। তা সত্ত্বেও অনেক ইলিরীয় রোমান সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জনে সক্ষম হন। অনেক ইলিরীয় বংশোদ্ভূত পরবর্তীকালে রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাটও হন। এদের মধ্যে আছেন আউরেলিয়ান (২৭০-২৭৫ খ্রিষ্টাব্দ), দিওক্লেতিয়ান (২৮৪-৩০৫ খ্রিষ্টাব্দ), এবং মহান কন্সতান্তিন (৩০৬-৩৩৭ খ্রিষ্টাব্দ)। ১ম শতকের মাঝামাঝি নাগাদ ইলিরিকুমে খ্রিস্টধর্ম প্রভাব ফেলতে থাকে এবং ৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সাধু পল এপিদামনুস নগরের জন্য একজন যাজক নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে আপোল্লোনিয়া এবং স্কোদ্রা (বর্তমান শ্‌কোদার) শহরে বিশপদের কর্মস্থল নির্মাণ করা হয়। বাইজেন্টীয় শাসন ৩৯৫ সালে রোমান সাম্রাজ্য পূর্ব ও পশ্চিমে দুইটি সাম্রাজ্যে ভাগ হয়ে যায়। আধুনিক আলবেনিয়া এলাকাটি পূর্ব অংশে তথা বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্যে পড়ে। অনেক ইলিরীয় পরবর্তীতে বাইজেন্টীয় সম্রাট হন। এদের মধ্যে ১ম জুস্তিনিয়ান (৫২৭-৫৬৫) অন্যতম। ৫ম শতক নাগাদ এখানে খ্রিস্টধর্ম একটি প্রতিষ্ঠিত ধর্মে পরিণত হয়। আলেবেনিয়ার খ্রিস্টানেরা বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্যের প্রজা হয়েও রোমান পোপের অধীনে ছিলেন। ৫ম শতকে ভিজিগথ, হুন এবং অস্ট্রোগথেরা অঞ্চলটি আক্রমণ করে এর অশেষ ক্ষতিসাধন করে। ৬ষ্ঠ ও ৮ম শতকের মধ্যবর্তী সময়ে ইলিরিয়া অঞ্চলটিতে স্লাভ জাতির লোকেরা বসতি স্থাপন করে। বহু ইলিরীয় স্লাভদের সাথে মিশে যায় এবং বর্তমান স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, সার্বিয়া এলাকাগুলির মানুষদের পূর্বপুরুষ গঠন করে। কিন্তু দক্ষিণ ইলিরীয় অঞ্চলের লোকেরা, যার মধ্যে আধুনিক আলবেনিয়াও পড়েছে, স্লাভদের সাথে মিশ্রণ রোধ করে। ৭৩২ খ্রিষ্টাব্দে বাইজেন্টীয় সম্রাট ৩য় লিও আলবেনীয় গির্জার সাথে রোমের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং একে কন্সতান্তিনোপলের (বর্তমান ইস্তানবুল) ধর্মগুরুর অধীনে আনেন। ৮ম থেকে ১১শ শতকের মধ্যে ইলিরিয়া ধীরে ধীরে আলবেনিয়া নামে পরিচিত হতে শুরু করে। নামটি এসেছে মধ্য আলবেনিয়াতে বসবাসকারী আলবানোস জাতির লোকদের নাম থেকে। বর্তমান আলবেনীয়রা নিজেদের দেশকে শকিপারিয়া (ঈগলের দেশ) নামে ডাকে, কিন্তু এই নামটির উৎস নির্ধারণ করা যায়নি। তবে পণ্ডিতেরা একমত যে শকিপারিয়া নামটি ১৬শ শতকে আলবেনিয়া নামটিকে প্রতিস্থাপন করে। ৯ম শতকে বাইজেন্টীয় সম্রাটের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হতে শুরু করে। ফলে প্রথমে বুলগেরীয় স্লাভ, নর্মান ক্রুসেডার, ইতালীয় আঙ্গেভিন, সার্ব এবং ভেনিসীয় জাতির লোকেরা পর্যায়ক্রমে অঞ্চলটি আক্রমণ করে। ১০ম শতকের পরে এখানে একটি জমিদারী প্রথা গড়ে ওঠে। কৃষক সৈন্যরা যারা আগে সামরিক নেতাদের অধীনে যুদ্ধ করেছিল, তারা জমিদারদের খামারে কাজ করা শুরু করে। এসময় অঞ্চলটির কিছু প্রদেশ কন্সতানিনোপল থেকে প্রায় সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে চলতে থাকে। ১০৫৪ সালে যখন খ্রিস্টান গির্জা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পূর্ব ও পশ্চিম গির্জায় ভাগ হয়ে যায়, তখন দক্ষিণ আলবেনিয়া পূর্ব বা অর্থডক্স গির্জার সাথে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখে। অন্যদিকে উত্তর আলবেনিয়া রোমের রোমান ক্যাথলিক গির্জার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে। মধ্যযুগে (৫ম থেকে ১৫শ শতক) আলবেনিয়ার শহরগুলির প্রসার ঘটে এবং বাণিজ্যেরও উন্নতি হয়, বিশেষ করে আড্রিয়াটিক অঞ্চলে। শহরের উন্নতির সাথে সাথে শিল্পকলা, সংস্কৃতি, এবং শিক্ষারও উন্নতি ঘটে। আলবেনীয় ভাষা বেঁচে থাকলেও গির্জা, সরকার ও শিক্ষাব্যবস্থায় এটির ব্যবহার ছিল না। বরং গ্রিক ও লাতিন ভাষাই সাহিত্য ও সংস্কৃতির সরকারি ভাষা হিসেবে থেকে যায়। উসমানীয়দের বিজয় ১৩৪৭ সালে স্তেফান দুসানের অধীনে সার্বীয়রা আলবেনিয়া দখল করলে আলবেনীয়রা গণহারে গ্রিসে পালিয়ে যায়। ১৪শ শতকের মাঝামাঝি সময়েই বাইজেন্টীয় শাসনের পতন ঘটে এবং বর্তমান তুরস্ক-অঞ্চলভিত্তিক উসমানীয়রা ১৩৮৮ সালে আলবেনিয়া আক্রমণ করে। ১৪৩০ সালের মধ্যেই উসমানীয়রা আলবেনিয়া বিজয়ে সক্ষম হয়। কিন্তু ১৪৪০-এর দশকে গিয়ের্গি কাস্ত্রিওতি দেশটির জমিদারদের একত্রিত ও সংগঠিত করে উসমানীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। রোম, নাপোলি, এবং ভেনিসের সামরিক সাহায্য নিয়ে কাস্ত্রিওতি প্রায় ২৫ বছর সফলভাবে উসমানীয়দের ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর আলেবেনিয়ার প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে এবং ১৫০৬ সালে উসমানীয়রা পুনরায় আলবেনিয়া দখলে সক্ষম হয়। দেশটির জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ লোক ইতালি, সিসিলি, এবং আড্রিয়াটিক সাগরের ডালমেশীয় উপকূলে পালিয়ে যায়। কাস্ত্রিওতি তথা স্কেন্দারবেগকে আজও আলবেনীয়রা তাদের জাতীয় ঐক্য ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে পরম শ্রদ্ধা করে। উসমানীয়রা চার শতাব্দী ধরে শাসন করলেও সম্পূর্ণ আলবেনিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে কখনোই সক্ষম হয়নি। উচ্চভূমি অঞ্চলে উসমানীয়দের নিয়ন্ত্রণ ছিল দুর্বল; সেখানকার আলবেনীয়রা কর প্রদানে এবং সামরিক সেবায় অংশ নিতে অসম্মতি প্রকাশ করত। আলবেনীয়রা অনেকগুলি বিদ্রোহে অংশ নেয়; খ্রিস্টধর্মের উপর বিশ্বাস রক্ষা করা এগুলির পেছনে আংশিক কারণ হিসেবে কাজ করেছিল। ১৬শ শতকের শেষে উসমানীয়রা ভবিষ্যৎ বিদ্রোহ প্রতিরোধের লক্ষ্যে আলবেনীয়দের ইসলামীকরণের নীতি গ্রহণ করে। ১৭শ শতকের মাঝামাঝি আলবেনীয় জনগণের দুই-তৃতীয়াংশ ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে যায়। অনেকেই খ্রিস্টানদের উপর ধার্য অতিরিক্ত করের বোঝা এড়াতেই এমনটি করে। উসমানীয়রা একটি সামন্ত-সামরিক মিশ্র ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারিত করে; এই ব্যবস্থায় যেসব সামরিক নেতারা সাম্রাজ্যের অণুগত ছিলেন, তারা জমিদারি লাভ করতেন। ১৮শ শতকে উসমানীয় ক্ষমতার ক্ষয় ঘটতে শুরু করে এবং ফলে আলবেনিয়ার কিছু সামরিক নেতার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৭৫০ থেকে ১৮৩১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে উত্তর আলবেনিয়ার অধিকাংশ এলাকা ছিল বুশাতি পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে আলি পাশা তেপেলিন ১৭৮৮ থেকে ১৮২২ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আলবেনিয়া ও উত্তর গ্রিস নিয়ন্ত্রণ করেন। এই স্থানীয় শাসকেরা নিজেদের আলাদা রাজ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু উসমানীয় সুলতান ২য় মাহমুদ তাদেরকে পরাজিত করেন। ১৮শ ও ১৯শ শতকে অনেক আলবেনীয় উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রশাসনে উচ্চপর্যায়ে অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়। দুই ডজনেরও বেশি আলবেনীয় বংশোদ্ভূত লোক উসমানীয় সুলতানের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। আলবেনিয়ার স্বাধীনতা ১৯শ শতকে বলকান অঞ্চলের অনেক পরাধীন মানুষ নিজেদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ১৮৭৮ সালে আলবেনীয় নেতারা কসভোর প্রিজরেন শহরে মিলিত হন এবং প্রিজরেনের লিগ তথা আলবেনীয় লিগ গঠন করেন। লিগের উদ্দেশ্য ছিল সমস্ত আলবেনীয় অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে একটি একত্রিত আলবেনিয়া গঠন। লিগ আলবেনীয় ভাষা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নেরও লক্ষ্য হাতে নেয়। ১৯০৮ সালে আলবেনীয় নেতারা লাতিন লিপির উপর ভিত্তি করে একটি জাতীয় বর্ণমালা প্রবর্তন করেন। ১৯১০ থেকে ১৯১২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আলবেনীয় জাতীয়তাবাদীরা উসমানীয়দের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়। প্রথম বলকান যুদ্ধ নামে পরিচিত এই যুদ্ধে সার্ব, গ্রিক ও বুলগেরীয় সেনারাও যোগ দেয় এবং উসমানীয়রা এতে পরাজয় বরণ করে। যুদ্ধ শেষ হবার পর পরই আলবেনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে। যুদ্ধের পর যুক্তরাজ্য, জার্মানি, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স ও ইতালি (মহাশক্তিসমূহ) একটি সম্মেলনে আলবেনিয়ার স্বাধীনতা মেনে নেয়, কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলির প্রবল চাপের মুখে তারা আলবেনীয় অধ্যুষিত কসোভো অঞ্চলটি সার্বিয়াকে এবং কামেরিয়া অঞ্চলটির অধিকাংশ গ্রিসকে দিয়ে দেয়। এর ফলে আলবেনীয় জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই সদ্যপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের সীমানার বাইরে পড়ে যায়। মহাশক্তি রাষ্ট্রগুলি একজন জার্মান রাজপুত্র ভিলহেল্ম ৎসু ভিডকে আলবেনিয়ার শাসক নিয়োগ করে, কিন্তু তিনি মাত্র ছয় মাস ক্ষমতায় ছিলেন। এর পরই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এসময় অস্ট্রীয়, ফরাসি, ইতালীয়, গ্রিক, মন্টেনেগ্রীয় এবং সার্বীয় সেনারা আলবেনিয়া দখল করে। দেশটিতে রাজনৈতিক নেতৃত্বহীনতা দেখা দেয়। বিশ্বযুদ্ধের পরে প্যারিস শান্তি সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন আলবেনিয়াকে ভাগ করে তার প্রতিবেশিদের দিয়ে দিয়ে দেবার ব্রিটিশ-ফরাসি-ইতালীয় পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ভেটো দেন। ১৯২০ সালে আলবেনিয়াকে সদ্য সংগঠিত লিগ অফ নেশন্‌স-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়, ফলে দেশটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯২০-এর দশকে আলবেনিয়ার জনগণ দুইটি বিরুদ্ধ রাজনৈতিক শক্তির অধীনে গভীরভাবে দ্বিধাভক্ত ছিল। আহমেদ বেই জোগুর নেতৃত্বে জমিদার ও গোত্রপ্রধানদের একটি রক্ষণশীল শ্রেণী অতীতের সমাজকাঠামো ধরে রাখতে চাচ্ছিল। অন্যদিকে উদারপন্থী বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, ও ব্যবসায়ীরা আলবেনিয়ার আধুনিকীকরণ চেয়েছিলেন। উদারপন্থীদের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাপ্রাপ্ত অর্থডক্স গির্জার বিশপ ফান নোলি। ১৯২৪ সালে রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে এক গণবিপ্লবের ফলে জোগু ইউগোস্লাভিয়াতে পালিয়ে যান। নোলি নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন এবং পশ্চিমা ধাঁচের একটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মন দেন। কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মাথায়, আন্তর্জাতিক সমর্থনের অভাবে ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার হয়ে নোলি ক্ষমতাচ্যুত হন ও জোগু ইউগোস্লাভিয়ার সহায়তায় আবার ক্ষমতায় আসেন। জোগু এরপর ১৪ বছর শাসন করেন। প্রথমে রাষ্ট্রপতি হিসেবে (১৯২৫-১৯২৮) এবং তারপর রাজা প্রথম জোগ হিসেবে (১৯২৮-১৯৩৯)। জোগের স্বৈরশাসনে আলবেনিয়ার অর্থনীতি ছিল স্থবির, তবে তিনি আলবেনিয়াতে একটি আধুনিক স্কুল ব্যবস্থা দিয়ে যান এবং দেশটিতে স্থিতিশীলতা আনেন। কিন্তু ভূমি সংস্কারের সমস্যা সমাধানে তিনি ব্যর্থ হন এবং কৃষকেরা দরিদ্র থেকে যায়। জোগের শাসনের সময় আলবেনিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ইতালির এতটাই প্রভাব ছিল যে এ সময় আলবেনিয়া দৃশ্যত ইতালির একটি প্রদেশে পরিণত হয়। ১৯৩৯ সালের এপ্রিলে ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার সামান্য আগে ইতালি আলবেনিয়া আক্রমণ ও দখল করে। জোগ পালিয়ে গ্রিসে চলে যান। ১৯৪১ সালে নাৎসি জার্মানি ইউগোস্লাভিয়া ও গ্রিসকে পরাজিত করলে কসোভো ও কামেরিয়াকে ঐ দেশগুলি থেকে নিয়ে আলবেনিয়ার সাথে যুক্ত করা হয়। এই যুদ্ধকালীন আলবেনিয়া ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত ইতালির অধীনে ছিল। এরপর জার্মান সেনারা এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। ১৯৪৪ সালের নভেম্বরে জার্মানরা পিছু হটে গেলে এই যুদ্ধকালীন রাষ্ট্রের পতন ঘটে। কসোভোকে সার্বিয়ার কাছে এবং কামেরিয়াকে গ্রিসের কাছে ফেরত দিয়ে দেয়া হয়। সাম্যবাদী শাসন যুদ্ধের সময় জাতীয়তাবাদী, রাজতন্ত্রী ও সাম্যবাদীরা আলবেনিয়াতে সক্রিয়ভাবে ইতালীয়, জার্মান, ও আলেবেনীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছিল। সাম্যবাদীরা শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়, এবং ১৯৪৪ সালের নভেম্বর মাসে তারা আলবেনিয়ার ক্ষমতা দখল করে। এ ব্যাপারে তারা ইউগোস্লাভিয়ার সাম্যবাদীদের সাহায্য নেয়। সাম্যবাদী দলের মহাসচিব এনভার হোক্সহা দেশের নতুন নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। দরিদ্র কৃষক এবং কিছু বুদ্ধিজীবীর সাহায্য নিয়ে সাম্যবাদী দল একটি আমূল সংস্কার প্রকল্প হাতে নেয় যা জমিদারদের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয় এবং শিল্প, ব্যাংক, এবং বাণিজ্যিক সম্পত্তি জাতীয়তাকরণ করা হয়। এভাবে সাম্যবাদীরা তাদের শাসন শক্ত করে এবং রাষ্ট্রশাসিত একটি সমাজতন্ত্রবাদী সমাজ গঠন করে। সোভিয়েত রাশিয়াতে স্তালিনের শুরু করা মডেল অণুসরণে কৃষির সমবায়ীকরণ করা হয়, এবং ১৯৬৭ সাল নাগাদ প্রায় সব কৃষক এই প্রকল্পের আওতায় আসে। হোক্সহার সরকার উত্তরের উচ্চভূমিতে শক্ত নিয়ন্ত্রণ স্থাপনে সক্ষম হয় এবং ঐতিহ্যবাহী পিতৃতান্ত্রিক বংশ ও গোত্রের প্রধানদের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। নতুন শাসনব্যবস্থায় আইনের চোখে নারীরা পুরুষদের সমমর্যাদা লাভ করে। শুরুর দিকে আলবেনিয়া আর্থিক ও সামরিক সাহায্যের জন্য ইউগোস্লাভিয়ার উপর নির্ভর করত। কিন্তু দেশটি ইউগোস্লাভিয়ার রাজনৈতিক আগ্রাসনের ব্যাপারে ভীত ছিল। ১৯৪৮ সালে যখন স্তালিন ইউগোস্লাভিয়াকে সাম্যবাদী ব্লক থেকে আদর্শগত কারণে বহিস্কার করেন, আলবেনিয়া স্তালিনকে সমর্থন দেয়। হোক্সহা আলবেনিয়ার ইউগোস্লাভ-সমর্থক দলগুলিকে নিষিদ্ধ করেন। এই দলগুলির নেতৃত্বে ছিল কোসি খোখে, হোক্সহার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্ব্বী। তবে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন ১৯৬০-এর দশকের শুরুর দিকে বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্ব্বী ভূমিকায় লিপ্ত হয়, আলবেনিয়া চীনকে সমর্থন দেয়, কেননা হোহক্সা চীনের আদর্শকে বেশি খাঁটি বলে মনে করতেন। হোহক্সা অন্যান্য সাম্যবাদী বন্ধু দেশের প্রতিও আস্থা হারিয়ে ফেলেন। তিনি তাদেরকে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ত্যাগ করার পুঁজিবাদী পশ্চিমের সাথে হাত মেলানোর অভিযোগ করেন। ১৯৬১ সালে আলবেনিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। যে সোভিয়েত সাহায্য ও কারগরি সহায়তা নিয়ে আলবেনিয়াতে আধুনিক শিল্প ও কৃষির ভিত্তি গড়ে উঠেছিল এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান বেড়ে গিয়েছিল, সেগুলি বন্ধ হয়ে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের জায়গায় চীন আলবেনিয়ার প্রধান বাণিজ্য অংশীদার ও অর্থনৈতিক সাহায্যদাতায় পরিণত হয়। ১৯৬০-এর দশকের শেষ পর্যন্ত আলবেনিয়া বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৯৬৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন চেকোস্লোভাকিয়া দখল করলে আলবেনিয়া নিজেকে রক্ষার জন্য পার্শ্ববর্তী ইউরোপীয় দেশগুলির সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং সোভিয়েত-নেতৃত্বাধীন ওয়ারশ চুক্তি থেকে সরে আসে। ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের আঁতাতের প্রেক্ষিতে চীনের সাথে আলবেনিয়ার সম্পর্ক খারাপের দিকে মোড় নেয়। ১৯৭৮ সালে চীন আলবেনিয়ার সাথে বাণিজ্য চুক্তি ও সাহায্য রদ করে দেয়। আলবেনিয়া এরপর ইউরোপের সাথে ঘনিষ্ঠতর অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে ১৯৯০-এর দশকের শুরু পর্যন্তও আলবেনিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন একটি রাষ্ট্র ছিল। হোক্সহার অধীনে রাজনৈতিক নিপীড়নের পরিমাণ ছিল ভয়াবহ। বিরুদ্ধ মত দূর করার জন্য সাম্যবাদী দল বাদে বাকী সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সাম্যবাদী দলের অভ্যন্তরীণ বিরুদ্ধবাদীদেরও পর্যায়ক্রমিকভাবে নিষ্ক্রিয় করা হয়। হাজার হাজার লোককে চাকুরিচ্যুত করা হয়, শ্রম ক্যাম্পে অন্তরীণ করা হয়, কিংবা মেরে ফেলা হয়। সমস্ত সরকারি সংস্থার উপর সেন্সরশিপ জারি করা হয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক সিগুরিমি সব লোকের উপর নজরদারি করত এবং যেকোন ধরনের বিদ্রোহ দেখলেই তা দমন করত। ১৯৬৭ সালে সমস্ত ধর্মীয় সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়, খ্রিস্টান ও মুসলিম ধর্মালয়গুলির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং দেশটিকে বিশ্বের প্রথম নাস্তিক রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। শাসক দলের মধ্যেই বিরোধিতার আভাস দেখা দেয়। ১৯৮১ সালে প্রধানমন্ত্রী মেহমেট শেহু অজানা রহস্যময় কারণে মারা যান। ধারণা করা হয় তিনি হোক্সহাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পাঁয়তারা করছিলেন। ১৯৮৩ সালে সিগুরিমি বেশ কয়েকজন দলীয় কর্মকর্তাকে ফাঁসি দেন। ১৯৮৫ সালের এপ্রিলে হোক্সহা মারা গেলে দলের প্রথম সচিব রামিজ আলিয়া তার পদে আসেন। আলিয়া সাম্যবাদী ব্যবস্থা বজায় রেখে অবনতিশীল অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সংস্কারকাজ উপস্থাপন করেন। গণতন্ত্রের শুরু ১৯৮৯ সালে পূর্ব ইউরোপে যখন সাম্যবাদী শাসনের অবসান ঘটে, তখন কিছু কিছু আলবেনীয় আরও সুদূরপ্রসারী সংস্কারের দাবী তোলেন। এদের মধ্যে ছিলেন বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক শ্রেণির সদস্য, এবং অসন্তুষ্ট তরুণেরা। বর্ধমান অশান্তি ও গণবিক্ষোভের মুখে আলিয়া ধর্মীয় স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনেন, সিগুরিমির ক্ষমতা খর্ব করেন এবং কিছু বাজার সংস্কার ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ হাতে নেন। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে সরকার স্বাধীন রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি বৈধ ঘোষণা করে, ফলে রাজনীতিতে সাম্যবাদী দলের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ শেষ হয়। বিচার ব্যবস্থা সংস্কার করে আইন মন্ত্রণালয় তৈরি করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ডের পরিমাণ হ্রাস করা হয়। আলবেনীয়দের বিদেশ গমনের অনুমতি দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে হাজার হাজার আলবেনীয় পশ্চিমা দেশগুলির দূতাবাসের মাধ্যমে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ৫০০০ আলবেনীয়কে নিরাপদে সরিয়ে নিতে বহুদেশীয় ত্রাণ অপারেশন হাতে নেওয়া হয়। আরও ২০ হাজার আলবেনীয় নৌকায় করে অবৈধভাবে ইতালিতে পাড়ি জমায়। একই সময়ে আলবেনিয়াতে গণপ্রতিবাদ চলতে থাকে। ফলে সরকার ও সাম্যবাদী দল থেকে অনেক চরম সাম্যবাদী নেতাকে বহিস্কার করা হয়। ১৯৯১ সালের এক মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে অনেকে নিহত হয়। মার্চে সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। একই মাসে আইনসভার জন্য বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সাম্যবাদী দল ও তাদের মিত্ররা ২৫০টি আসনের মধ্যে ১৬৯টি আসন জেতে। অন্যদিকে নবগঠিত ডেমোক্র্যাট দল ৭৫টি আসন জেতে। সাম্যবাদীদের বিজয়ের পর আরেক দফা বিক্ষোভ শুরু হয়। এবার শকোডার শহরে পুলিশের গুলিতে চার জন মারা যায়। ১৯৯১ সালের এপ্রিলে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান পাস করা হয় এবং দেশের নাম গণপ্রজাতন্ত্রী আলবেনিয়ার পরিবর্তে আলবেনিয়া প্রজাতন্ত্র রাখা হয়। আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সাম্যবাদীরা আলিয়াকে নব্যসৃষ্ট রাষ্ট্রপতি পদে বসায় এবং অর্থনীতিবিদ ফাতোস নানো প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু হাজার হাজার শ্রমিকের সাধারণ ধর্মঘটের মুখে এই সরকার পদত্যাগ করেন এবং জুনে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করা হয়। এতে সাম্যবাদী, গণতন্ত্রী, প্রজাতন্ত্রী এবং সামাজিক গণতন্ত্রীরা অন্তর্ভুক্ত হন। কিন্তু রাস্তায় মিছিল চলতে থাকে এবং প্রতিবাদকারীরা প্রাক্তন সাম্যবাদী নেতাদের গ্রেপ্তার ও গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবী করতে থাকে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে কোয়ালিশন সরকারের পতন ঘটে এবং একটী অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালের মার্চে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে গণতন্ত্রীরা আইনসভার ১৪০টি আসনের মধ্যে ৯২টিতে বিজয়ী হয়। সমাজতন্ত্রবাদীরা ৩৮টি, সমাজতন্ত্রবাদী গণতন্ত্রীরা ৭টি এবং গ্রিক সংখ্যালঘু একতা দল ২টি আসন জেতে। আইনসভা গণতন্ত্রী দলের নেতা সালি বেরিশাকে রাষ্ট্রপতি বানায় এবং বেরিশা আলেক্সান্দর মেক্‌সিকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন। বেরিশার অধীনে বেশ কিছু প্রাক্তন সাম্যবাদী কর্মকর্তাকে, যাদের মধ্যে আলিয়া ও নানো-ও ছিলেন, গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির দায়ে বিচার করা হয় এবং দীর্ঘমেয়াদের শাস্তি দেয়া হয়। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন এই বিচারগুলি ন্যায়বিচার ছিল না, বরং বেরিশা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্ব্বীদের সরিয়ে ফেলতে এগুলি ব্যবহার করেন। আলিয়া ও নানো উভয়েই কয়েক বছরের মধ্যেই ছাড়া পান। ১৯৯৪ সালের নভেম্বরে গণতন্ত্রীরা একটি নতুন সংবিধান প্রস্তাব করে কিন্তু জনগণ একটি গণভোটে তা প্রত্যাখ্যান করেন। বিরোধীরা বলে যে এই প্রস্তাবটিতে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতির হাতে আরও ক্ষমতা কুক্ষিগত করত। রাষ্ট্রপতিকে স্বৈরাচারী আখ্যা দেয়া হয় এই বলে যে তিনি প্রেসের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, প্রাক্তন সাম্যবাদী নেতাদের জুলুম এবং আদালতসমূহ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সরকারের সমর্থকেরা পাল্টা দাবি করে যে সমাজতন্ত্রবাদীরা দেশের নতুন গণতন্ত্র বানচাল করে দিতে চাচ্ছে। প্রাক্তন ইউগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রগুলির সাথে সম্পর্কও খারাপের দিকে মোড় নেয়, বিশেষ করে সার্বীয় প্রদেশ কসোভোর সংখাগরিষ্ঠ আলবেনীয় জনগণের উপর নিপীড়ন প্রসঙ্গে। ১৯৮৯ সালে সার্বিয়া কসভোর স্বায়ত্বশাসন রদ করে এবং ১৯৯১ সালে কসভোর আলবেনীয় নেতারা প্রদেশটির স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে কসোভো স্বীকৃতি পায়নি, আলবেনিয়া কসোভোকে সমর্থন দেয় এবং জাতিসংঘকে প্রদেশটিতে পর্যবেক্ষক পাঠাতে অণুরোধ জানায়। কিন্তু জাতিসংঘ এই অনুরোধে সাড়া দেয়নি। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি আলবেনিয়া ভয় করতে শুরু করে যে অশান্ত কসোভোতে সামরিক ধরপাকড় শুরু হবে এবং বহু লোক উদ্বাস্তু হয়ে গোটা বলকান অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। এছাড়া ম্যাসিডোনিয়াতে আলবেনীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারেও আলবেনিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি আলবেনিয়াতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু রাষ্ট্রপতি সালি বেরিশার গণতন্ত্রী দল বিজয় লাভ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়। বিরোধী দলগুলি সংসদ বর্জন করে। ১৯৯৭ সালে এই সংসদ বেরিশাকে আরও ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত করে। ১৯৯৭ সালের শুরুতে অনেকগুলি জাল বিনিয়োগ স্কিম ধরা পড়ে, যাতে হাজার হাজার আলবেনীয় তাদের সঞ্চয় হারান। সরকার বহু বিনিয়গকারীকে আংশিক ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও অর্থনীতিতে বিপর্যয় ও রাজনৈতিক স্ক্যান্ডালের প্রেক্ষিতে আলবেনীয়রা প্রথমে বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ শুরু করে ও পরে সেগুলি রায়টে রূপ নেয়। ১৯৯৭ সালের মার্চের মধ্যে দেহসব্যাপী বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশের অনেক অংশে প্রশাসন বিকল হয়ে যায়। দেশের দক্ষিণাংশ, বিশেষ করে ভলোরে এবং সারান্দে শহর, স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনী ও সশস্ত্র নাগরিকেরা লুটেরাদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা নিজেদের হাতে তুলে নেন। দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয় এবং রাষ্ট্রপতি বেরিশা একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করেন, যার প্রধান ছিলেন সমাজতন্ত্রবাদী বাশকিম ফানো। বেরিশা জুনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন এবং তার দল হেরে গেলে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগের প্রতিশ্রুতি দেন। নতুন সরকার দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য কামনা করে। তবে ইতালীয় কমান্ডারের অধীনে আগত বহুজাতিক বাহিনীটিকে কেবল আলবেনিয়ার দুর্গম এলাকাগুলিতে ত্রাণ সরবরাহেই কাজে লাগানো হয়। ১৯৯৭ সালের জুনের নির্বাচনে সমাজতন্ত্রবাদীরা ৬৫% ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসে। বেরিশা জুলাইয়ে পদত্যাগ করেন। কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত নেতা ফাতোস নানো প্রধানমন্ত্রী হন। রেক্সহেপ মেজদানী নামের আরেকজন সমাজতন্ত্রবাদী নেতাকে রাষ্ট্রপতি পদ দেওয়া হয়। গণতন্ত্রীরা ১৯৯৮ সালের মার্চ পর্যন্ত সংসদ বয়কট করেন। ১৯৯৭ সালের আগস্টে সরকার ঘোষণা দেন যে ভলোরে শহরে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সেই মাসেই বহুজাতিক বাহিনী আলবেনিয়া ত্যাগ করে। ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নানো কোয়ালিশন সরকারের সাথে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের ব্যাপারে মতভেদের কারণে পদত্যাগ করেন। পান্ডেলি মাজকো নামের একজন সমাজতন্ত্রবাদী নেতাকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হয়। কসোভোতে জাতিগত আলবেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বহু সার্বীয় পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করলে এর জের ধরে ১৯৯৮ সালের শুরুতে তৎকালীন ইউগোস্লাভিয়ার (বর্তমান সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রো) সাথে আলবেনিয়ার সম্পর্ক খারাপের দিকে মোড় নেয়। সার্বীয় পুলিশ ও ইউগোস্লাভ সেনাবাহিনীর দল কসোভোর সাধারণ জনগণের উপর হামলা করে এবং ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালের শুরুর অধিকাংশ সময় জুড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী কসভো মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে। ইউগোস্লাভিয়া কসোভোর ব্যাপারে শান্তিচুক্তিতে আসতে অসম্মতি জানালে ১৯৯৯ সালের মার্চে ন্যাটো ইউগোস্লাভ সামরিক স্থাপনাগুলিতে বিমান হামলা চালানো শুরু করে। এর জবাবে সার্বীয় সেনারা কসোভোর গ্রামগুলিতে আরও বেশি আক্রমণ শুরু করে, ফলে লাখ লাখ লোক নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে চলে যায়। ১৯৯৮ সাল থেকেই আলবেনিয়া কসোভো-আগত উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিয়ে আসছিল, কিন্তু ১৯৯৯- এর বিমান হামলার ফলে উদ্বাস্তুর ঢেউ সামলাতে আলবেনিয়া হিমশিম খেয়ে যায়। দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতিতে চাপের সৃষ্টি হয়। জুন মাসের মধ্যেই প্রায় সাড়ে চার লাখ কসোভোবাসী আলবেনিয়াতে আশ্রয় নেয়। ঐ মাসেই ইউগোস্লাভ সরকার একটি আন্তর্জাতিক শান্তি চুক্তিতে সম্মত হয়। চুক্তির শর্ত অনুসারে কসোভোতে একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনী স্থাপন করা হয় যাতে উদ্বাস্তুরা নিরাপদে দেশে ফিরে আসতে পারে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে মাজকো সাম্যবাদী দলের অভ্যন্তরীণ আস্থা হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অবসর নেন। তার স্থানে আসেন ইলির মেতা, একজন তরুণ ও সংস্কারপন্থী নেতা। মেতা মাজকো সরকারের নীতি ধরে রাখার ব্যাপারে শপথ করেন; এই নীতিগুলির মধ্যে ছিল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নেটোতে আলবেনিয়ার সদস্যপদ প্রাপ্তির ব্যাপারে কাজ করা। ২০০১ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে সমাজতান্ত্রিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখে। কিন্তু ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে ফাতোস নানোর সাথে তিক্ত বিবাদের জের ধরে মেতা হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অবসর নেন। সমাজতান্ত্রিক দলও এতে দুই ভাগ হয়ে যায়। নানো মেতার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন এবং মন্ত্রিসভাতে আমূল পরিবর্তন আনতে বলেন। মেতার পদত্যাগের পর পরই গণতন্ত্রী দলের সদস্যরা সাত মাসের বয়কট শেষ করে সংসদে ফেরত আসেন। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সমাজতান্ত্রিক দলের নেতারা মাজকোকে মেতার উত্তরসূরী হিসেবে নির্বাচিত করেন এবং জুন মাসে সংসদ বিদায়ী রেক্সহেপ মেজদানির স্থলে আলফ্রেড মোইসিউ-কে রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ দেয়। মোইসিউ একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তিনি জুলাই মাসে পদ গ্রহণ করেন। একই মাসে মাজকোকে সরিয়ে নানো প্রধানমন্ত্রী হন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয় এবং আশা করা হয় সেটি সমাজতান্ত্রিক দলের অন্তর্কোন্দল বন্ধ করবে। রাজনীতি আলবেনিয়ার রাজনীতি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের কাঠামোয় পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী সরকার ও একটি বহু-দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতা সরকার ও আইনসভা উভয়ের হাতে ন্যস্ত। আলবেনিয়ার আইনসভার নাম Kuvendi i Republikës së Shqipërisë। ১৯৯১ সাল থেকে দেশটিতে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রচলিত। তবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ আলবেনিয়া এবং সোশালিস্ট পার্টি অফ আলবেনিয়া নামের দুইটি দল আলবেনিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে। প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশটি ১৯৮৮ সালের ৬৫ হাজার সেনাসদস্য থেকে ২০০৯ সালে এ সংখ্যা নামিয়ে নিয়ে আসে ১৪ হাজার ৫০০-তে। ১৯৯০ সালে পুরনো বেশ কিছু অস্ত্র তারা ধ্বংস করে। ২০০৮ সালে দেশটি তার জিডিপি’র ২.৭ শতাংশ এ খাতে খরচ করেছিল। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটি ন্যাটোর সাথে কাজ করতে শুরু করে। ভূগোল আলবেনিয়ার এক-তৃতীয়াংশের বেশি অংশজুড়ে আছে বনাঞ্চল। আর এর আয়তন হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এই পুরো অংশটিই বেশ ঘন বনে আচ্ছাদিত। আলবেনিয়ায় তিন হাজারের অধিক প্রজাতির গাছ পাওয়া গেছে। এগুলোর অনেকগুলোই ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মধ্যসাগরীয় শান্ত জলবায়ুই এখানে বিরাজ করে থাকে। আলবেনিয়ার শীতকালটি তুলনামূলক উষ্ণ এবং রৌদ্রময়। আর গ্রীষ্মকাল সাধারণত অধিকতর শুষ্ক থাকে। যদিও অন্যান্য অংশের আবহাওয়া ঋতুর ওপর নির্ভর করে কিন্তু দেশটির এক হাজার ৫০০ মিটার ওপরের এলাকাগুলোতে শীতকালসহ বেশির ভাগ সময়েই তীব্র শীত অণুভূত হয়, অবিরাম তুষারপাতও দেখা যায় সেখানে। দেশের নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্র্তী এলাকাগুলোতে দুপুরে তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেলেও রাতে সবসময়ই শীতল থাকে। অর্থনীতি আলবেনিয়া একটি দরিদ্র দেশ। বর্তমানে মুক্তবাজার অর্থনীতির সুবাদে দেশটি নতুন নতুন ব্যবসা খুলে নিজের অর্থনীতি চাঙ্গা করার দিকে এগোচ্ছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের হিসাব অনুযায়ী ২০১০ সালে এর প্রবৃদ্ধি হবে ২.৬ শতাংশ, যা ২০১১ সালে গিয়ে দাঁড়াবে ৩.২ শতাংশে। আলবেনিয়াতে এখন বিনিয়োগ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আলবেনিয়া ও ক্রোশিয়া মিলিতভাবে মন্টেনেগ্রোর সীমান্তে একটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৯ সালের ফেব্র“য়ারিতে একটি ইতালীয় কোম্পানি আলবেনিয়াতে ৮০০ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দেয়। আর এগুলোর সাহায্যে আলবেনিয়া তার রফতানি খাতে বিদ্যুৎকে যুক্ত করতে চাইছে। দেশটিতে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি রয়েছে। তবে এখানে দৈনিক তেল উৎপাদনের হারটি বেশ কম। মাত্র ছয় হাজার ৪২৫ ব্যারেল। তবে প্রাকৃতিক গ্যাসের যে মজুদের খবর পাওয়া গেছে তাতে দেশের জনগণের চাহিদা আপাতত মিটে যাওয়ার কথা। এর বাইরে দেশটিতে কয়লা, বক্সাইট, কপার এবং লোহার খনি রয়েছে। আলবেনিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে কৃষিরও। এ খাতে দেশটির ৫৮ শতাংশ লোক নিয়োজিত আর তা জিডিপিতে অবদান রাখছে ২১ শতাংশ । আলবেনিয়ার গম, ভুট্টা, তামাক, ডুমুর এবং জলপাইয়ের উৎপাদন মোটামুটি আলোচনায় আসার মতো। যোগাযোগব্যবস্থা দেশটির সার্বিক যোগাযোগব্যবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সড়ক, রেল ও বিমান সব দিক দিয়েই যোগাযোগব্যবস্থায় ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে তারা। তবে সম্প্রতি দেশটির সরকার কসভো, মেসিডোনিয়া, বুলগেরিয়া, ক্রোশিয়া ও গ্রিসের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে মনোযোগ দিয়েছে। এ প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আলবেনিয়ার ৭৫৯ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক তৈরি হবে। এরই পাশাপাশি দেশটির অভ্যন্তরীণ সড়ক উন্নয়নেরও ব্যবস্থা নিচ্ছে। জনসংখ্যা জানুয়ারী ২০১০-এর উপাত্ত অনুযায়ী আলবেনিয়ার জনসংখ্যা ৩১,৯৫,০০০। বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৫৪৬%। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনবসতির ঘনত্ব ১১১ জন।মাত্র ৩৫ লক্ষ লোকের দেশ আলবেনিয়ায় শতকরা ৯৫% শতাংশ লোক আলবেনীয় ভাষার কোন উপভাষায় (তোস্ক বা ঘেগ) কথা বলে থাকে। আলবেনীয়ার বাকী জনগণ সবচেয়ে বেশি যে ভাষায় কথা বলে, তা হল গ্রিক। এছাড়া ম্যাসিডোনীয় ভাষা ও সার্বো-ক্রোটীয় ভাষাতেও স্বল্পসংখ্যক লোক কথা বলেন। যাদের মাতৃভাষা আলবেনীয়, তারা মূলত দুইটি উপভাষার একটিতে কথা বলেন। এগুলি হল উত্তরের ঘেগ আলবেনীয় এবং দক্ষিণের তোস্ক আলবেনীয়। তোস্ক আলবেনীয় উপভাষা উপর ভিত্তি করে আদর্শ আলবেনীয় ভাষা গঠিত হয়েছে। আলবেনিয়ার বাইরে ম্যাসিডোনিয়া ও কসোভোতেও আলবেনীয় ভাষার প্রচলন আছে। ১৯৯০-এর দশকে যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধের সময় প্রায় ৫ লক্ষ আলবেনীয়ভাষী কসোভোবাসী আলবেনিয়াতে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নেন। আলবেনিয়ার গণমাধ্যমের ভাষা আলবেনীয়। তবে রেডিও তিরানা আটটি ভাষায় প্রোগ্রাম সম্প্রচার করে। এছাড়া অনেক আলবেনীয় স্যাটেলাইটের সাহায্যে ইতালীয় ও গ্রিক টিভির অণুষ্ঠান দেখে থাকেন। ভাষা আলবেনিয়ার সরকারি ভাষা আলবেনীয় ভাষা। গেগ ও তোস্কের মিলিত রূপই হচ্ছে আলবেনীয় ভাষা। এখানে সংখ্যালঘু গ্রিকদের ভাষাও বেশ প্রচলিত। এর পাশাপাশি সার্বিয়ান, মেসিডোনিয়ান, রোমানি এবং অ্যারোমেনিয়ান ভাষা দেশটিতে চালু আছে। ধর্ম সরকারিভাবে আলবেনিয়ার জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের দেয়া তথ্য মতে, দেশটিতে ৭০ শতাংশ জনগণ মুসলমান, ২০ শতাংশ আলবেনীয় সনাতনপন্থী খ্রিস্টান এবং ১০ শতাংশ রোমান ক্যাথলিক মন্ডলীর খ্রিস্টান। ১১ শতকের সময়ের প্রথম যে ইতিহাস পাওয়া যায় তখন এ আলবেনিয়া পুরোটাই খ্রিস্টান অধ্যুষিত ছিল। কিন্তু পরে তুর্কি সাম্রাজ্যের অধীনে আসার পর দেশটিতে ধীরে ধীরে মুসলমানদের সংখ্যা খ্রিস্টানদের ছাড়িয়ে যায়। ১৯১২ সালে তুর্কি সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দেশটিতে বিভিন্ন মতাদর্শের শাসন বিশেষ করে কমিউনিস্ট শাসন চলায় দেশটিতে সেকুলার আদর্শ অনেকর মধ্যে প্রভাব ফেলে। ফলে মুসলমান বা খ্রিস্টান থাকার পরও অনেকে সাম্যবাদী আদর্শ লালন করেন। দেশটিতে সব ধর্ম পালনেরই সমান স্বাধীনতা রয়েছে। দেশটির পুরো অংশতেই মুসলমানদের ব্যাপক বিচরণ থাকলেও রোমান ক্যাথলিকরা তাদের জন্য দেশটির উত্তরাঞ্চল এবং সনাতনপন্থী খ্রিস্টানরা নিজেদের জন্য দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে বেছে নিয়েছে। শিক্ষা আলবেনিয়া তুর্কি সাম্রাজ্যের অধীনে থাকার সময় দেশটিতে শিক্ষার হার ছিল ৮৫ শতাংশ। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়টুকুতে দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এ দেশের শাসকরা আবার দেশটির শিক্ষার হার বাড়াতে ব্যাপকাকারে উদ্যোগ নেন। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১২ থেকে ৪০ বয়সসীমার মধ্যে থাকা সবাইকেই শিক্ষিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর ফলাফল হিসেবে দেশটিতে বর্তমান শিক্ষার হার ৯৮.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষদের শিক্ষার হার ৯৯.২ শতাংশ এবং নারীদের শিক্ষার হার ৯৮.৩ শতাংশ। দেশটির প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে তিরানার ইউনিভার্সিটি অব আলবেনিয়া। ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে এটি যাত্রা শুরু করে। সংস্কৃতি আলবেনিয়ার স্বকীয় সংস্কৃতি কালান্তরে গ্রিক, রোমান, বাইজেন্টীয়, তুর্কি, স্লাভীয় ও ইতালীয় সংস্কৃতি থেকে বহু উপাদান ধার করেছে। ঐসব দেশ ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বলকান অঞ্চল শাসন করত। এসব ভিন্ন ভিন্ন বৈদেশিক প্রভাব সত্ত্বেও আলবেনীয় সংস্কৃতি বেশ সমসত্ত্ব। ঐতিহ্যবাহী পোশাকের মধ্যে আছে রঙিন, সূচির কারুকাজময় শার্ট ও মহিলাদের পোশাক। কোন কোন অঞ্চলে মহিলারা ঢিলেঢালা প্যান্ট পরেন। সাম্যবাদী শাসনের সময় এইসব ঐতিহ্যবাহী পোশাকের পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় কারখানায় নির্মিত কমদামী, আধুনিক পোশাক পরাকে উৎসাহিত করা হয়। গণতন্ত্রের আগমনের পর থেকে লোকজন এসব ব্যাপারে আরও বেশি পছন্দ করার সুযোগ পেয়েছে। এখনও গ্রামাঞ্চলে ও উচ্চভূমি অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী পোশাকের চল দেখা যায়, বিশেষত মহিলাদের মধ্যে। খেলাধুলা সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের জন্য দেশটি ১৯৩০ সালে গঠন করেছে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অব আলবেনিয়া। দেশটি ফিফার সদস্য এবং উয়েফার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম। দেশটিতে অন্যান্য খেলাধুলার মধ্যে বাস্কেটবল, ভলিবল, রাগবি এবং জিমন্যাস্টিক উল্লেখযোগ্য। আরও দেখুন আলবেনীয় জাতীয় পর্যটন সংস্থা - আলবেনিয়ার সরকারি ভ্রমণ ও পর্যটন তথ্যের ওয়েবসাইট। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সরকার আলবেনিয়ার সরকার (মন্ত্রীর পরিষদ) আলবেনিয়ার পার্লামেন্ট আলবেনিয়ার সাংবিধানিক কোর্ট আলবেনিয়ার পরিসংখ্যানের সংস্থা Chief of State and Cabinet Members সাধারণ তথ্য আলবেনিয়া আমেরিকার রাষ্ট্র বিভাগ। আলবেনিয়া from UCB Libraries GovPubs আলবেনিয়া থেকে জাতীয় বৃত্তান্ত ধর্ম ডেটা আর্কাইভের সমিতি। পর্যটন জাতীয় পর্যটন সংস্থা ভ্রমণ এবং পর্যটন তথ্যের জন্য সরকারি ওয়েবসাইট। পর্যটন, ইতিহাস ভ্রমণ ফটোগ্রাফ ফটো এবং মানচিত্রের সঙ্গে। আলবেনিয়ার বিবিধ তোপোগ্রাফিক মানচিত্র সংগ্রহ (১৮ জানুয়ারি ২০০৯ হালনাগাদ করা হয়েছে।) GPS Basemap for Albania VIVAlbania, hospitality and ecotourism in Albania সহায়িকা থেকে আলবেনিয়া (ছবির সঙ্গে) আলবেনিয়ার জাতীয় পর্যটক সংস্থার ওয়েবসাইট অন্যান্য আলবেনিয়ার জাতীয় পাঠাগারের ধনদৌলত আলবেনিয়া তথ্য The Royal House of Zogu Books about Albania and the Albanian people (scribd.com) Reference of books (and some journal articles) about Albania and the Albanian people; their history, language, origin, culture, literature, etc. Public domain books, fully accessible online. ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র ইউরোপের রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ইউরোপ কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র ভূমধ্যসাগরীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বলকান রাষ্ট্র প্রজাতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Albania
Albania
Albania ( a(w)l-BAY-nee-ə; Albanian: Shqipëri or Shqipëria), officially the Republic of Albania (Albanian: Republika e Shqipërisë), is a country in Southeast Europe. It is in the Balkans, on the Adriatic and Ionian Seas within the Mediterranean Sea, and shares land borders with Montenegro to the northwest, Kosovo to the northeast, North Macedonia to the east and Greece to the south. With an area of 28,748 km2 (11,100 sq mi), it has a varied range of climatic, geological, hydrological and morphological conditions. Albania's landscapes range from rugged snow-capped mountains in the Albanian Alps and the Korab, Skanderbeg, Pindus and Ceraunian Mountains, to fertile lowland plains extending from the Adriatic and Ionian seacoasts. Tirana is the capital and largest city in the country, followed by Durrës, Vlorë, and Shkodër. In ancient times, the Illyrians inhabited northern and central regions of Albania, whilst Epirotes inhabited the south. Several important ancient Greek colonies were also established on the coast. The Illyrian kingdom centered in what is now Albania was the dominant power before the Rise of Macedon. In the 2nd century BC, the Roman Republic annexed the region, and after the division of the Roman Empire it became part of Byzantium. The first known Albanian autonomous principality, Arbanon, was established in the 12th century. The Kingdom of Albania, Principality of Albania and Albania Veneta were formed between the 13th and 15th centuries in different parts of the country, alongside other Albanian principalities and political entities. In the late 15th century, Albania became part of the Ottoman Empire. In 1912, the modern Albanian state declared independence. In 1939, Italy invaded the Kingdom of Albania, which became Greater Albania, and then a protectorate of Nazi Germany during World War II. After the war, the People's Socialist Republic of Albania was formed, which lasted until the Revolutions of 1991 concluded with the fall of communism in Albania and eventually the establishment of the current Republic of Albania. Since its independence in 1912, Albania has undergone a diverse political evolution, transitioning from a monarchy to a communist regime before becoming a sovereign parliamentary constitutional republic. Governed by a constitution prioritizing the separation of powers, the country's political structure includes a parliament, a ceremonial president, a functional prime minister and a hierarchy of courts. Albania is a developing country with an upper-middle income economy driven by the service sector, with manufacturing and tourism also playing significant roles. After the dissolution of its communist system the country shifted from centralized planning to an open market economy. Albanian citizens benefit from universal health care access and free primary and secondary education.
1165
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
আলজেরিয়া
আলজেরিয়া উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। এর পূর্ণ সরকারি নাম আলজেরিয়া গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্র। দেশটির আয়তন প্রায় ২৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৭৪১ বর্গকিলোমিটার । আয়তনের বিচারে আলজেরিয়া আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম ও বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। আলজেরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৩৬ লক্ষ; জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৬ জন। আলজেরিয়ার আরবি নাম আলজাজাইর (অর্থাৎ দ্বীপসমূহ); নামটি রাজধানীর তীর সংলগ্ন দ্বীপগুলিকে নির্দেশ করছে। ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত আলজিয়ার্স দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী; এছাড়া ওরান, কন্সটান্টিন ও আন্নাবা কিছু গুরুত্বপূর্ণ নগরী। ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা ও ধর্মের কারণে আলজেরিয়াকে আরব বিশ্বের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। আলজেরিয়ার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে তিউনিসিয়া, পূর্বে লিবিয়া। পশ্চিমে মরক্কো ও পশ্চিম সাহারা প্রজাতন্ত্র, এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে মালি ও মোরিতানিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্বে নাইজার অবস্থিত। আলজেরিয়ার নাগরিকদেরকে আলজেরীয় বলা হয়। উত্তর আলজেরিয়ার ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলটির নাম তেল। এখানেই দেশের সিংহভাগ লোক বাস করে। আলজেরিয়ার তটরেখায় অনেক খাঁড়ি ও উপসাগর আছে। এখানে উর্বর সমভূমি ও অনুচ্চ পাহাড় আছে। নদীগুলি ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ধরনের। উত্তর আলজেরিয়াতে গ্রীষ্মকালীন জলবায়ু উষ্ণ ও শুষ্ক এবং শীতকালগুলি মৃদু ও বৃষ্টিবহুল। উত্তরের তেল অঞ্চলটির ঠিক দক্ষিণে অ্যাটলাস পর্বতমালা উত্তর আলজেরিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রসারিত হয়েছে; এর সর্বোচ্চ বিন্দু চেলিয়া পর্বত (২৩২৮ মিটার)। অ্যাটলাস পর্বতমালা দুইটি সমান্তরাল পর্বতমালা নিয়ে গঠিত, উত্তরের তেলীয় অ্যাটলাস এবং দক্ষিণের সাহারা অ্যাটলাস। অ্যাটলাস পর্বতমালার দক্ষিণে অবস্থিত মধ্য ও দক্ষিণ আলজেরিয়া মূলত সাহারা মরুভূমির উত্তরাংশ নিয়ে গঠিত। সাহারা মরুভূমি আলজেরিয়ার প্রায় নয়-দশমাংশ এলাকা গঠন করেছে। সাহারাতে কিছু মালভূমি এবং মধ্য আলজেরিয়াতে আর্গ নামের বিশাল সুউচ্চ অনেক বালিয়াড়ি (বালির পাহাড়) আছে। আলজেরিয়ার সর্বোচ্চ বিন্দু তাহাত পর্বত (২৯১৮ মিটার) এখানেই অবস্থিত। সাহারা মরুভূমির জলবায়ু ঋতু বা দিবসের অহ্ন অনুযায়ী অত্যন্ত শীতল বা অত্যন্ত উত্তপ্ত হতে পারে; এখানে বৃষ্টিপাত অত্যন্ত বিরল। আলজেরিয়ার উদ্ভিদগুলি পানি ছাড়াই বহুদিন বেঁচে থাকতে পারে। উত্তরের তেল অঞ্চলে চিরসবুজ গুল্ম ও অনুচ্চ বিভিন্ন বৃক্ষের দেখা মেলে। মরুভূমি অঞ্চলে গুচ্ছ গুচ্ছ ঘাস, গুল্ম, আকাসিয়া বৃক্ষ ও জুজুবে বৃক্ষের আবাস। আলজেরিয়ার স্থানীয় হায়েনা, খ্যাঁকশিয়াল, বানর, বাজপাখি ও সাপ আছে। আরও আছে অ্যান্টিলোপ হরিণ, বুনো খরগোশ, তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণী ও বন্য শূকর। সাহারা কাঁকড়াবিছার উপস্থিতি খুবই সাধারণ। আলজেরিয়ার সিংহভাগ (৭৫%) জনগণ নৃতাত্ত্বিকভাবে ও ভাষাগতভাবে আরব জাতির লোক; এছাড়া এখানে বার্বার (আমাজিগ) জাতির একটি বৃহৎ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বাস করে, যারা জনসংখ্যার প্রায় ২৪%। এখানে আরবদের আগমনের পূর্বে বার্বার জাতির লোকেরাই বাস করত। বর্তমানে বার্বার জাতির লোকেরা দেশের উত্তর-পূর্বভাগের কাবিলিয়া অঞ্চলে ঘনীভূত। সংখ্যালঘু বার্বারেরা ইসলাম গ্রহণ করলেও নিজ ভাষা ও রীতিনীতি বিসর্জন দেয় নি। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বার্বারদেরকে অধিকতর জাতিগত অধিকার প্রদান করা হয়েছে। সাহারা অঞ্চলে মাত্র ৫ লক্ষ লোক বাস করে। এরা হয় খনিজ তেলখনির শ্রমিক, অথবা মেষপালক বা ছাগলপালক যাযাবর তুয়ারেগ জাতির লোক। আরবি ও বার্বার (তামাজিগত) দুইটি সরকারি ভাষা। তবে ঔপনিবেশিক কারণে প্রশাসন, ব্যবসা ও উচ্চশিক্ষার ভাষা হিসেবে ফরাসি ভাষা এখনও বহুল প্রচলিত। সরকারি ধর্ম ইসলাম, প্রায় সবাই (৯৯%) মুসলমান এবং সিংহভাগ মুসলমান সুন্নি মতাদর্শী। কুসকুস (গমের সুজিভিত্তিক পদ) ও ত্বজিন (মাটির পাত্রে অল্প পানিতে সিদ্ধ মসলা, বাদাম ও শুকনো ফল দেয়া মাছ, মাংস ও সবজির মিশ্রণ) দুইটি প্রধান স্থানীয় পদ। খেজুরের বীজ ভেজে গুঁড়ো করে কফি বানিয়ে খাওয়া হয়। আলজেরিয়া একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র যার একটি দ্বিকাক্ষিক আইনসভা আছে। রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থাতে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান। আলজেরিয়া একটি উন্নয়নশীল দেশ, যার অর্থনীতি মূলত সাহারা মরুভূমি থেকে উত্তোলিত খনিজ তেল (পেট্রোলিয়াম) ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ও রপ্তানির উপরে নির্ভরশীল, এই দুইটি দ্রব্য দেশটির রপ্তানিকৃত পণ্যের ৯৭% গঠন করেছে। আলজেরিয়া মূলত ফ্রান্স ও ইতালিতে গ্যাস রপ্তানি করে। দেশটির মুদ্রার নাম আলজেরীয় দিনার, যা আবার ১০০ সঁতিমে বিভক্ত। স্বাধীনতা লাভের পর দেশটি অর্থনীতির সিংহভাগ রাষ্ট্রায়ত্তধীন করলেও ১৯৮০-র দশক থেকে কিছু কিছু খাতের আংশিক বেসরকারিকরণ ঘটেছে। বেশিরভাগ আলজেরীয় সরকারি চাকুরি, সামরিক বাহিনী বা কৃষিখাতে (শ্রমশক্তির এক-চতুর্থাংশ) নিয়োজিত। এখানে গম, আলু, টমেটো, যব, খেজুর, ডুমুর, পেঁয়াজ, কমলা, জলপাই ও আঙুরের চাষ হয়। আলজেরিয়া খেজুর ও কর্ক (কর্ক ওক বৃক্ষের ছাল) উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলির একটি। গবাদি পশু হিসেবে মূলত ভেড়া ও ছাগল পালন করা হয়। তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে আলজেরিয়াকে তিন-চতুর্থাংশ খাদ্য আমদানি করতে হয়। শিল্পখাতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, তামাকজাত দ্রব্য, সিমেন্ট, ইট, টালি, লোহা ও ইস্পাতের দ্রব্য উৎপাদন করা হয়।.২০১৯ সালে মাথাপিছু স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) ছিল ৪২২৯ মার্কিন ডলার, যা বিশ্বে ১০৯তম। দেশটির মানব উন্নয়ন সূচক ০.৭৫৯ (অর্থাৎ উচ্চ), যা বিশ্বে ৮২তম। প্রাচীন যুগ থেকেই এখানে বার্বার জাতির লোকেরা বাস করত; বার্বারেরাই সম্ভবত প্রথম উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় বসতি স্থাপন করেছিল। এরপর এখানে পালাক্রমে বিভিন্ন আক্রমণকারী জাতিদের আগমন ঘটে। খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দে আলজেরিয়া অঞ্চলে ফিনিসীয় বণিকেরা বসতি স্থাপন করেছিল। এরপর কার্থেজীয় জাতিরাও এখানে আক্রমণ করে। এর কয়েক শতাব্দী পরে রোমানরা অঞ্চলটি আক্রমণ করে এবং খ্রিস্টপূর্ব ৪০ অব্দ নাগাদ সমগ্র ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় অঞ্চলটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। খ্রিস্টীয় ৫ম শতকে রোমের পতন ঘটলে ভ্যান্ডাল জাতির লোকেরা অঞ্চলটি আক্রমণ করে। পরে বাইজেন্টীয় (পূর্ব রোমান) সাম্রাজ্য অঞ্চলটি পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। খ্রিস্টীয় ৭ম শতকে এখানে মুসলমানদের আক্রমণ শুরু হয় এবং ৭১১ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সমগ্র দক্ষিণ আফ্রিকা উমাইদ রাজবংশীয় খলিফাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আরব মুসলমানেরা এখানে ইসলাম ধর্ম ও আরবি ভাষার প্রচলন করে। এরপর বেশ কয়েকটি বার্বার মুসলমান রাজবংশ অঞ্চলটি শাসন করে; এদের মধ্যে আলমোরাভিদ রাজবংশটি সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। আলমোরাভিদরা ১০৫৪ থেকে ১১৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন এবং তাদের সাম্রাজ্য ইউরোপের স্পেন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এরপরে আলমোহাদ রাজবংশটিও ১১৩০-১২৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন। ১৫১৮ সালে তুর্কি উসমানীয় সাম্রাজ্য উত্তর আলজেরিয়া দখলে নেয়। বার্বার উপকূলের জলদস্যুরা বহু শতাব্দী ধরে ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যের জন্য হুমকি ছিল। জলদস্যুদের আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে তাদেরকে দমনের মিথ্যা কারণ দেখিয়ে ফরাসিরা ১৮৩০ সালে আলজেরিয়া আক্রমণ করে। ১৮৪৭ সালের মধ্যে ফ্রান্স অঞ্চলটির সিংহভাগ এলাকায় সামরিক শাসন জারি করে; আলজেরিয়া একটি ফরাসি উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৯শ শতকের শেষে এসে ফরাসিরা আলজেরিয়াতে বেসামরিক শাসন চালু করে। এসময় প্রায় ১০ লক্ষ শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় (মূলত ফরাসি, স্পেনীয় ও ইতালীয়) আলজেরিয়াতে অভিবাসন করে। কিন্তু বিংশ শতাব্দীত ১৯২০-এর দশক থেকে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আলজেরীয়দের বিদ্রোহ দানা বেঁধে ওঠে, তারা আরও বেশি অধিকার দাবী করতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৪ সালে "ফ্রোঁ দ্য লিবেরাসিওঁ নাসিওনাল" (এফএলএন, "জাতীয় স্বাধীনতা ফ্রন্ট") নামের একটি দলের নেতৃত্বে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর যুদ্ধ চলে। শেষ পর্যন্ত ১৯৬২ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। আট বছর ধরে সংঘটিত স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশটির অশেষ ক্ষতিসাধন হয়, প্রায় ১০ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয় এবং যুদ্ধশেষে কয়েক হাজার বাদে প্রায় সব ইউরোপীয় আলজেরিয়া ছেড়ে চলে যায়। ফ্রোঁ দ্য লিবেরাসিওঁ নাসিওনাল নতুন সরকার গঠন করে। স্বাধীনতার সময়ে আলজেরিয়ার অর্থনীতি ছিল অনুন্নত ও কৃষিনির্ভর, তবে সরকার শীঘ্রই এটি আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেন। বর্তমানে আলজেরিয়া আফ্রিকার ধনী দেশগুলির একটি, এবং এর অন্যতম কারণ পেট্রোলিয়ামের রপ্তানি। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো আলজেরিয়াতে গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এদের মধ্যে ইসলামপন্থী দল 'ফ্রোঁ ইসলামিক দে সালভাসিওঁ' (এফইএস); তারা আলজেরিয়াতে একটি একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। যখন প্রতিভাত হয় যে এফইএস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করবে, তখন তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার সামরিক বাহিনীর সাহায্য নিয়ে নির্বাচন বাতিল করে দেয় এবং দেশের শাসন করায়ত্ত করে। এর ফলে অবশম্ভাবী ভাবে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। দেশটিতে সামরিক বাহিনী ও ইসলামী দলের মধ্যে এক বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। বহু হাজার আলজেরীয় নাগরিক গৃহযুদ্হাধে ও সামরিক বাহিনীর হামলায় মারা যায়। আলজেরীয় ঐ সরকার ইসলামী দল ফ্রোঁ ইসলামিক দে সালভাসিওঁ' (এফইএস); কে রাষ্ট্র পরিচালনা ও ইসলামী রাষ্ট্র গঠনে বাধা প্রদান করে। ও এই নিমিত্তেই নির্বাচন বাতিল করে। সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে তৎকালীন সরকার নির্বাচন বাতিল করে দেয়া আলজেরিয়ার ইতিহাসের ও রাজনীতির কালো অধ‍্যায় এবং ইসলামী দলসমূহের উপর ঐ সরকারের নির্যাতন অব‍্যাহত থাকে এবং এই অবস্থা এখনো বিদ‍্যমান। ১৯৯৯ সালে আরেকটি নির্বাচনে আলজেরীয়রা আবদেলাজিজ বুতেফিকাকে ১৯৬৫ সালের পরে প্রথমবারের মতো একজন বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত করে এবং বিভিন্ন ইসলামী দলসমূহের সাথে সরকার সংঘাত অব্যাহত রাখে। সরকার আলজেরিয়ায় ইসলামী বিধানানুযায়ী শাসন প্রতিষ্ঠায় ও পূর্ণ ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্থ করে। রাজনৈতিক গণ্ডগোলের কারণে বহুসংখ্যক দক্ষ বিদেশী শ্রমিক আলজেরিয়া ত্যাগ করেছে। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো আলজেরিয়াতে যে গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিলো তা তৎকালীন সরকার অবৈধ ভাবে ও সামরিক বাহিনীর সহায়তায় বাতিল না করলে ইসলামপন্থী দল 'ফ্রোঁ ইসলামিক দে সালভাসিওঁ' (এফইএস) সরকার গঠন করতো এবং আলজেরিয়া একটি ইসলামী বিধান সম্পন্ন দেশ তথা ইসলামী দলের শাসনাধীন দেশ হিসেবে গর্বিত হওয়ার সুযোগ পেতো। ত‍ৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের অবৈধ কাজের ফলশ্রূতিতে বহু হাজার আলজেরীয় নাগরিক মৃত‍্যু বরণ করে। আলজেরিয়ার প্রায় সকল ব্যক্তি ইসলাম ধর্মাবলম্বী এবং প্রায় সকলেই সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী । সামরিক বাহিনী আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি আলজেরিয়ার সামরিক বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক। ২০০৪ সালে আলজেরিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল ১,৩৭,৫০০। এদের মধ্যে স্থল সামরিক বাহিনীতে আছেন প্রায় ১,২০,০০০ জন সেনা। আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়েই সামরিক বাহিনী গঠন করা হয়। এই সামরিক বাহিনী উত্তর আফ্রিকার ২য় বৃহত্তম,যার আগে রয়ছে মিশর। আলজেরিয়ার বিমানবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১০ হাজার। এরা সোভিয়েত, চেক, মার্কিন ও ফরাসি-নির্মিত জেট বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। নৌবাহিনীতে প্রায় ৭,৫০০ জন কর্মরত আছেন। ভূগোল আলজেরিয়ার উত্তরে ভূমধ্যসাগর, পূর্বে তিউনিসিয়া ও লিবিয়া, দক্ষিণে নাইজার, মালি এবং মোরিতানিয়া, পশ্চিমে মরক্কো ও পশ্চিম সাহারা। এটি একটি বিশাল দেশ। এটি আফ্রিকার বৃহত্তম এবং বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। দেশটিকে দুইটি সুস্পষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়। উত্তরপ্রান্তে অবস্থিত অঞ্চলটি তেল নামে পরিচিত। এটি মূলত তেল অ্যাটলাস পর্বতমালাটি নিয়ে গঠিত, যা উপকূলীয় সমভূমিগুলিকে দক্ষিণের দ্বিতীয় অঞ্চলটি থেকে আলাদা করেছে। এখানকার জলবায়ু ভূমধ্যসাগর দ্বারা প্রভাবিত। দক্ষিণের দ্বিতীয় অঞ্চলটি প্রায় সম্পূর্ণই মরুভূমি আবৃত। এই অঞ্চলটি আলজেরিয়ার আয়তনের সিংহভাগ গঠন করেছে। এটি মূলত গোটা উত্তর আফ্রিকা জুড়ে বিস্তৃত সাহারা মরুভূমির পশ্চিম অংশ। ভূমিরূপ আলজেরিয়ার ভূমিরূপের মূল গাঠনিক বৈশিষ্ট্যগুলি আফ্রিকান ও ইউরেশীয় ভূত্বকীয় পাতগুলির মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ভূমধ্যসাগরীয় সীমারেখা বরাবর সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেশটি দুইটি ভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত। উত্তরের তেল নামক অঞ্চলটিতে দেশের বেশির ভাগ নাগরিক বাস করেন। এখানে দুইটি ভৌগোলিকভাবে নবীন স্তুপপর্বতমালা রয়েছে: তেল অ্যাটলাস পর্বতমালা এবং সাহারান অ্যাটলাস পর্বতমালা। এগুলি সমান্তরালভাবে পূর্ব-পশ্চিমে চলে গেছে এবং উচ্চ মালভূমি দ্বারা এরা নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন। দক্ষিণের সাহারা মরুভূমি অঞ্চলটি একটি কঠিন, প্রাচীন, আনুভূমিক ও সুষম শিলাস্তরের উপর অবস্থিত। বেশ কিছু মরূদ্যান ছাড়া এখানে তেমন কোন জনবসতি নেই। তবে এখানে প্রচুর লুক্কায়িত খনিজ সম্পদ আছে, যার মধ্যে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস অন্যতম। মৃত্তিকা ক্রমাগত বৃক্ষ ও উদ্ভিদ নিধন এবং ভূমিক্ষয়ের কারণে উর্বর বাদামী মাটিযুক্ত এলাকার আয়তন কমে গেছে। কেবল কিছু উচ্চভূমিতেই এরকম উর্বর মাটি দেখতে পাওয়া যায়; সেখানে এখনও চিরহরিৎ ওকে অরণ্যের দেখা মেলে। উত্তর তেল পর্বতমালার অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চলগুলিতে মূলত ভূমধ্যসাগরীয় লাল মাটি পাওয়া যায়। দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হবার সাথে সাথে আর্দ্রতা ও মাটির পরিপক্কতা ক্রমাগত কমতে থাকে। এই অঞ্চলে আবহাওয়ার কারণে রাসায়নিক উপায়ে শিলাভাঙ্গন ও জৈবিক বস্তুর সঞ্চয় খুবই কম। মরু অঞ্চলগুলিতে প্রায় সার্বক্ষণিক শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহজনিত ভূমিক্ষয়ের কারণে মাটি সৃষ্টির প্রক্রিয়া আরও ব্যহত হয়। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সাহারা মরুভূমির উত্তরমুখী দখল ঠেকানোর জন্য একটি সবুজ প্রতিবন্ধক বলয় তৈরির একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প শুরু হয়েছিল। প্রকল্পটিতে প্রায় ২০ কিমি প্রশস্ত এবং প্রায় ১৬০০ কিমি দীর্ঘ একটি ফিতাসদৃশ ভূমিকে বনে রূপান্তরিত করার কথা ছিল। প্রকল্পটি আংশিকভাবে সফল হয়। ১৯৮০-র দশকের মধ্যভাগে আরও প্রায় ৩৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বনায়ন করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। জনসংখ্যা ভাষা ১৯৯০ সালে আরবি ভাষাকে সরকারিভাবে আলজেরিয়ার জাতীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সিংহভাগ আলজেরীয় মানুষ প্রচলিত কথ্য আরবি ভাষার একাধিক উপভাষাগুলির কোনও একটিতে কথা বলেন। মরক্কো ও তিউনিসিয়ার যে অঞ্চলগুলি আলজেরিয়ার সীমানার কাছে অবস্থিত সেখানকার উপভাষাগুলির সাথে এই উপভাষাগুলির মোটামুটি মিল আছে। বিদ্যালয়গুলিতে আধুনিক আদর্শ বা প্রমিত আরবি ভাষা শেখানো হয়। আলজেরিয়ার ইমাজিগেন নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা আমাজিগ ভাষার বিভিন্ন ভৌগোলিক উপভাষাতে কথা বলে, তবে এদের বেশিরভাগই আরবি ভাষাতেও সমানভাবে কথা বলতে পারে। স্বাধীনতার পর থেকেই আলজেরিয়ার সরকারের নীতি ছিল "আরবিকরণ", অর্থাৎ স্থানীয় আরবি ভাষাকে উৎসাহিত করা এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলি সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া। এর ফলশ্রুতিতে জাতীয় ভাষামাধ্যম হিসেবে আরবি ভাষা ফরাসি ভাষাকে প্রতিস্থাপিত করেছে। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষাদানের মূল ভাষা হিসেবে এখন আরবি ব্যবহার করা হয়। কিছু আমাজিক জাতিদল এই নীতির জোর বিরোধিতা করেছে, কেননা তাদের আশঙ্কা হল এর ফলে দেশে সংখ্যাগুরু আরবিভাষী জনগণ তাদেরকে দমন করবে। ২০০২ সালে আমিজাগ ভাষাকে জাতীয় ভাষা এবং ২০১৬ সালে এটিকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। ধর্ম আলজেরিয়ার সকল ব্যক্তি ইসলাম ধর্মাবলম্বী । সকলেই প্রায় সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী । শিয়া অনুসারী সংখ্যালঘু । সংস্কৃতি আলজেরিয়ার সংস্কৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূ্র্ণ। এখানের মানুষ আরবি,ফরাসি,বার্বার ভাষাসহ চতুর্থ ও পঞ্চম ভাষাতেও পারদর্শী হয়। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সরকার El Mouradia সরকারি ওয়েবসাইট (ফরাসি এবং আরবিতে) জাতীয় জনগণর বিধানসভা সংসদীয় ওয়েবসাইট। রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ সাধারণ তথ্য আলজেরিয়া from UCB Libraries GovPubs Ministère de l'Aménagement du Territoire, de l'Environnement et du Tourisme আলজেরিয়ার মানচিত্র আফ্রিকার রাষ্ট্র ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র ১৯৬২-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল আরব লিগের সদস্য রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র ওপেকের সদস্য রাষ্ট্র ভূমধ্যসাগরীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল প্রজাতন্ত্র আরবিভাষী দেশ ও অঞ্চল জি১৫ রাষ্ট্র সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Algeria
Algeria
Algeria, officially the People's Democratic Republic of Algeria, is a country in the Maghreb region of North Africa. It is bordered to the northeast by Tunisia; to the east by Libya; to the southeast by Niger; to the southwest by Mali, Mauritania, and Western Sahara; to the west by Morocco; and to the north by the Mediterranean Sea. The capital and largest city is Algiers, located in the far north on the Mediterranean coast. Inhabited since prehistory, Algeria has been at the crossroads of numerous cultures and civilizations, including the Phoenicians, Romans, Vandals, Byzantine Greeks, and Turks. Following a succession of Islamic Arab and Berber dynasties between the eighth and 15th centuries, the Regency of Algiers was established in 1516 as a largely independent tributary state of the Ottoman Empire. After nearly three centuries as a major power in the Mediterranean, the country was invaded by France in 1830 and formally annexed in 1848, though it was not fully conquered and pacified until 1903. French rule brought mass European settlement that displaced the local population, which was reduced by up to one-third due to warfare, disease, and starvation. The Sétif and Guelma massacre in 1945 catalysed local resistance that culminated in the outbreak of the Algerian War in 1954. Algeria gained its independence in 1962. The country descended into a bloody civil war from 1991 to 2002. Spanning 2,381,741 square kilometres (919,595 sq mi), Algeria is the world's tenth-largest nation by area, and the largest nation in Africa. It has a semi-arid climate, with the Sahara desert dominating most of the territory except for its fertile and mountainous north, where most of the population is concentrated. With a population of 44 million, Algeria is the tenth-most populous country in Africa, and the 32nd-most populous country in the world. Algeria's official languages are Arabic and Tamazight; French is used in media, education, and certain administrative matters. Sunni Islam is the official religion and practised by 99 percent of the population. Algeria is a semi-presidential republic composed of 58 provinces (wilayas) and 1,541 communes. It is a regional power in North Africa and a middle power in global affairs. The country has the second-highest Human Development Index in continental Africa and one of the largest economies in Africa, due mostly to its large petroleum and natural gas reserves, which are the sixteenth and ninth-largest in the world, respectively. Sonatrach, the national oil company, is the largest company in Africa and a major supplier of natural gas to Europe. The Algerian military is one of the largest in Africa, with the highest defence budget on the continent and among the highest in the world (ranks 22nd globally). Algeria is a member of the African Union, the Arab League, the OIC, OPEC, the United Nations, and the Arab Maghreb Union, of which it is a founding member.
1166
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%85%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A1%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%BE
অ্যান্ডোরা
আন্দোর্‌রা দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ মহাদেশের একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। দেশটি পূর্ব পিরিনীয় পর্বতমালায় ফ্রান্স ও স্পেনের মাঝে অবস্থিত। আন্দোর্‌রা বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্রগুলির একটি। এর আয়তন ৪৬৮ বর্গকিমি ও জনসংখ্যা প্রায় ৮৪ হাজার। আন্দোর্‌রা লা ভেল্যা রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। আন্দোর্‌রা একটি রুক্ষ এলাকা; গভীর গিরিখাত, সরু উপত্যকা ও সুউচ্চ পর্বত এর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য। এর সর্বনিম্ন এলাকা সমুদ্র সমতল থেকে ৯১৪ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। শীতকালে প্রচুর বরফ পড়ে এর পাহাড়ি রাস্তাগুলি প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়, বিশেষত ফ্রান্সের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী রাস্তাটি। গ্রীষ্মে এর আবহাওয়া শীতল, শুষ্ক ও রোদেলা। আন্দোর্‌রা বহু বছর ধরে অবহেলিত ছিল। ১৯৫০-এর দশকে এসে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়। ক্ষুদ্র হলেও আন্দোর্‌রাতে পিরিনীয় পর্বতমালার সেরা স্কি ও স্নোবোর্ডিঙের ব্যবস্থা আছে। হাইকিং, বাইকিং ও আল্প্‌স পর্বতমালার অসাধারণ দৃশ্যাবলী গরমকালে পর্যটকদের ডেকে আনে। তবে আন্দোর্‌রার বেশির ভাগ অতিথিই দৈনিক ভিত্তিতে স্পেন বা ফ্রান্স থেকে প্রবেশ করেন, বিশেষত দেশটির করমুক্ত কেনাকাটার সুবিধা গ্রহণের জন্য। ব্যবসায়ীরা আন্দোর্‌রা লা ভেল্যা ও অন্যান্য শহরের রাস্তায় রাস্তায় ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, মদ, তামাক ও অন্যান্য বিলাসদ্রব্য বিক্রি করেন। পর্যটন আন্দোর্‌রার আয়ের মূল উৎস, তবে কিছু কিছু অ্যান্ডোরান আদিকালের মত এখনও ভেড়া ও গবাদি পশু পালন করেন। গ্রীষ্মে গ্রামের লোকেরা গবাদিপশুদের পর্বতের উঁচুতে আল্পীয় চারণভূমিতে নিয়ে যায়। আবাদযোগ্য জমিগুলোতে মূলত তামাকের চাষ হয়। প্রায় ৭০০ বছর ধরে আন্দোর্‌রা ফ্রান্সের নেতা ও উত্তর-পশ্চিম স্পেনের উর্গেল অঞ্চলের বিশপ একত্রে শাসন করতেন। তাদেরকে একত্রে "আন্দোর্‌রার যুবরাজগণ" উল্লেখ করা হত। ১৯৩৩ সালে আন্দোর্‌রাবাসী স্বাধীন গণতান্ত্রিক এলাকা তাদের প্রথম সংবিধান পাশ করে। বর্তমানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও উর্গেলের বিশপ দেশটির কেবল নামেই শাসক। রাজনীতি আন্দোর্‌রার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের কাঠামোয় পরিচালিত। সরকার প্রধান দেশটির প্রধান নির্বাহী এবং বহুদলীয় ব্যবস্থার নেতা। সরকার ও আইনসভা উভয়ের হাতে আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ন্যস্ত। নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা থেকে বিচার বিভাগ স্বাধীন। ১৯৯৩ সালে রচিত আন্দোর্‌রার নতুন সংবিধান অনুযায়ী আন্দোর্‌রা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র, যার রাষ্ট্রপ্রধান ফ্রান্স ও স্পেনের দুই "রাজপুত্র", কিন্তু প্রকৃত নির্বাহী ক্ষমতা সরকারপ্রধানের হাতে ন্যস্ত। ভূগোল আন্দোর্‌রা স্পেন ও ফ্রান্সের সীমান্তে পিরিনীয় পর্বতমালার পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি ভূমিবেষ্টিত রাষ্ট্র। দেশটির অধিকাংশই পর্বতময়। সমুদ্রসমতল থেকে দেশটির গড় উচ্চতা ১৯৯৬ মিটার। এর সর্বোচ্চ বিন্দু কোমা পেদ্রোসার উচ্চতা ২৯৪৬ মিটার। আন্দোর্‌রার পাহাড়ী এলাকা ইংরেজি ওয়াই-আকৃতির তিনটি নদী উপত্যকা দ্বারা বিভক্ত, এবং এই নদীগুলি একত্রিত হয়ে ভালিরা নদী নামে স্পেনে প্রবেশ করেছে। অর্থনীতি অ্যান্ডোরার জিডিপি ১৯৯৮ সালে $১, ২ বিলিয়ন, যার প্রধান বাণিজ্য খাত হচ্ছে পর্যটন শিল্প। ফ্রান্স ও স্পেনের দোকানীদের কাছে আকর্ষণীয় এবং একটি উন্মুক্ত বন্দর হিসেবে গণ্য। দেশটি গ্রীষ্মকাল এবং শীতকালের জন্য সক্রিয় পর্যটক রিসোর্ট ও হোটেল বিকশিত করেছে। কিছু ২৭০ হোটেল সহ ৪০০ রেস্টুরেন্টে, অনেক দোকান নিয়ে এই পর্যটক বাণিজ্য চাকরিতে ঘরোয়া শ্রম হিসেবে একটি বাড়ন্ত অংশ। এতে আনুমানিক ১১ ৬০০ হাজার পর্যটক বার্ষিক পরিদর্শন করে। জনসংখ্যা অ্যান্ডোরার সরকারি নথিপত্র ও অণুষ্ঠানের একমাত্র ভাষা কাতালান ভাষা। তবে সাধারণ জনগণ স্পেনীয় ভাষায় প্রচুর কথা বলে। এছাড়া পর্তুগিজ ও ফরাসি ভাষাতেও লোকেরা কথা বলে। অ্যান্ডোরাতে মূলত অ্যান্ডোরার নিজস্ব কাতালানভাষী অধিবাসী, এবং স্পেনীয়, পর্তুগিজ ও ফরাসি অভিবাসীরা বসবাস করেন। এই চার সম্প্রদায়ের ভাষার ব্যবহারও ভিন্ন। কাতালান অ্যান্ডোরার সরকারি ভাষা হলেও ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদানে স্পেনীয় ভাষাই বহুল প্রচলিত। তাই কাতালান না জেনেও অ্যান্ডোরাতে বসবাস করা সম্ভব। তবে শুমারিতে দেখা গেছে অ্যান্ডোরার ৯৭% জনগণই কাতালান বুঝতে পারেন। অ্যান্ডোরার নিজস্ব কাতালান-ভাষী, স্পেনীয়, পর্তুগিজ -- সবাই ঘরের বাইরে হাটে-বাজারে স্পেনীয় ভাষাতেই কথাবার্তা বলেন। তবে অ্যান্ডোরার শিক্ষাব্যবস্থা ফরাসি শিক্ষা ব্যবস্থার মডেল অনুকরণ করে বলে এখানে ফরাসি ভাষারও যথেষ্ট সাংস্কৃতিক প্রভাব রয়েছে। বিশেষত ফ্রান্স ও অ্যান্ডোরার সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্যে ফরাসির প্রভাব বেশি। অ্যান্ডোরার স্কুল-কলেজে বিদেশী ভাষা হিসেবে ফরাসি, স্পেনীয় ও ইংরেজি ভাষার শিক্ষা দেয়া হয়। অ্যান্ডোরার বেশির ভাগ লোক সাতটি শহরে বাস করেন। এদের মধ্যে আন্দোররা লা বেল্লা রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এর জনসংখ্যা ২২ হাজার। শহরটি পশ্চিম কেন্দ্রীয় অ্যান্ডোরায় ভালিরা নদীর তীরে অবস্থিত। অন্যান্য শহরগুলির মধ্যে আছে এস্কালদেস-এনগোর্দানি, এনকাম্প, সাঁ জুলিয়া দ্য লোরিয়া, এবং লা মাস্‌সানা। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Govern d'Andorra - সরকারি সাইট (কাতালান ভাষায়) রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ পৃথিবীতে ফাটলগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে Library of Congress অ্যান্ডোরা from UCB Libraries GovPubs অ্যান্ডোরার ইতিহাস: প্রাথমিক ডকুমেন্ট from EuroDocs ইউরোপের রাষ্ট্র বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল খ্রিস্টান রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ইউরোপ কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র স্পেনীয় ভাষী রাষ্ট্র ও অঞ্চল ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল স্থলবেষ্টিত দেশ ইউরোপের রাজতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Andorra
Andorra
Andorra, officially the Principality of Andorra, is a sovereign landlocked country on the Iberian Peninsula, in the eastern Pyrenees, bordered by France to the north and Spain to the south. Believed to have been created by Charlemagne, Andorra was ruled by the count of Urgell until 988, when it was transferred to the Roman Catholic Diocese of Urgell. The present principality was formed by a charter in 1278. It is currently headed by two co-princes: the bishop of Urgell in Catalonia, Spain and the president of France. Its capital and largest city is Andorra la Vella. Andorra is the sixth-smallest state in Europe, with an area of 468 square kilometres (181 sq mi) and a population of approximately 79,034. The Andorran people are a Romance ethnic group closely related to Catalans. Andorra is the world's 16th-smallest country by land and 11th-smallest by population. Its capital, Andorra la Vella, is the highest capital city in Europe, at an elevation of 1,023 metres (3,356 feet) above sea level. The official language is Catalan, but Spanish, Portuguese, and French are also commonly spoken. Tourism in Andorra brings an estimated 10.2 million visitors to the country annually. Andorra is not a member state of the European Union. It has been a member of the United Nations since 1993.
1167
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%85%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%BE
অ্যাঙ্গোলা
অ্যাঙ্গোলা (, ) সরকারি হিসেব মতে অ্যাঙ্গোলা প্রজাতন্ত্র (, ) আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের পশ্চিম তীরে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। মোট আয়তন এবং জনসংখ্যার বিচারে (দুক্ষেত্রেই ব্রাজিলের ঠিক পরেই) এটি দ্বিতীয় সর্বোবৃহত্তম লিউসোফোন (পর্তুগীজ ভাষাভাষী) দেশ এবং আফ্রিকার সপ্তম সর্ববৃহৎ দেশ। এর দক্ষিণ সীমান্তে নামিবিয়া, উত্তরে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, পূর্বে জাম্বিয়া এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর। অ্যাঙ্গোলার একটি ছিটমহল প্রদেশ রয়েছে, ক্যাবিন্ডা প্রদেশ, যা প্রজাতন্ত্রী কঙ্গো ও গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোকে ঘিরে রেখেছে। লুয়ান্ডা হচ্ছে অ্যাঙ্গোলার রাজধানী এবং সবচেয়ে জনবহুল শহর। প্যালিওলিথিক যুগ থেকেই অ্যাঙ্গোলায় বসবাস করছে মানুষ। পর্তুগীজ উপনিবেশন থেকেই জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে এর উদ্ভব যা ষোড়শ শতকে প্রাথমিকভাবে উপকূলীয় বসতি ও স্থান বাণিজ্যের মাধ্যমে শুরু হয়েছিলো। উনিশ শতকে ইউরোপীয়ান দখলদাররা অন্তর্ভাগে নিজেদের অধিষ্ঠিত করতে থাকে। বিংশ শতকের আগ পর্যন্ত পর্তুগীজ উপনিবেশের, যা পরবর্তীতে অ্যাঙ্গোলায় রুপ নেয়, কোনো সীমানা ছিলো না। মূলত কুয়েমাটো, কোয়ানয়ামা ও বুন্দার মতো স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর বিরোধীতাই এর প্রধান কারণ। দীর্ঘস্থায়ী উপনিবেশ-বিরোধী সংগ্রামের পর ১৯৭৫ সালে অ্যাঙ্গোলা মার্কসবাদী-লেনিনবাদী একদলীয় প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা অর্জন করে। সেই একই বছর ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধের শুরু হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও কিউবা সমর্থিত অ্যাঙ্গোলা স্বাধীনতাবাদী গন-আন্দোলন এবং জায়ার সমর্থিত অ্যাঙ্গোলার ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের মধ্যে। ১৯৭৫ সাল থেকেই অ্যাঙ্গোলা স্বাধীনতাবাদী গণ-আন্দোলন দল দ্বারা শাসনক্ষমতায় রয়েছে। ২০০২ সালে যুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকেই অ্যাঙ্গোলা তুলনামূলক স্থিতিশীল একক, রাষ্ট্রপতিশাসিত, সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রাকাশ করেছে। অ্যাঙ্গোলার বিশাল খনিজ ও পেট্রোলিয়াম মজুদ রয়েছে এবং এর অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল, বিশেষ করে গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে। তবে এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত অসম ও দেশের অধিকাংশ সম্পদ জনসংখ্যার একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ক্ষুদ্র অংশে কেন্দ্রীভূত। এর বৃহত্তম বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য অংশীদার হচ্ছে চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বেশিরভাগ অ্যাঙ্গোলানদের জীবনযাত্রার মান এখনো নিম্ন পর্যায়ের; আয়ু পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম, যেখানে শিশুমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। ২০১৭ সাল থেকে, জোয়াও লরেঙ্কো -এর সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে তার মূল লক্ষ্য বানিয়েছে, এতটাই যে আগের সরকারের অনেক ব্যক্তিকেই হয় জেলে পাঠানো হয়েছে নয়তো তাঁরা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও বিদেশী কূটনীতিকরা এই প্রচেষ্টাকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন, কিছু সংশয়বাদীরা এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন। অ্যাঙ্গোলা জাতিসংঘ, ওপেক, আফ্রিকান ইউনিয়ন, পর্তুগিজ ভাষার দেশগুলির সম্প্রদায় এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উন্নয়ন সম্প্রদায়ের সদস্য। ২০২১ সালের হিসাবে, অ্যাঙ্গোলার আনুমানিক জনসংখ্যা ধরা হয় ৩২.৮৭ মিলিয়ন। অ্যাঙ্গোলা বহুসাংস্কৃতিক এবং বহুজাতিক। অ্যাঙ্গোলান সংস্কৃতি বহু শতাব্দীর পর্তুগিজ শাসনকে প্রতিফলিত করে, যাতে পর্তুগিজ ভাষা এবং ক্যাথলিক চার্চের প্রাধান্যই বেশি এবং বিভিন্ন দেশীয় রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের সাথে সম্মিলিত। ব্যুৎপত্তি অ্যাঙ্গোলা নামটি পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক নাম রেইনো ডি অ্যাঙ্গোলা ('কিংডম অফ অ্যাঙ্গোলা') থেকে এসেছে, যা পাওলো ডায়াস ডি নোভাইসের ১৫৭১ সালের সনদের মতই বেশ পুরনো। এনডোঙ্গো এবং মাতাম্বার রাজাদের এনগোলা উপাধি থেকে পর্তুগীজরা এই নামটি নিয়েছেন। এনডোঙ্গো কঙ্গো রাজ্যের অধীনে কোয়াঞ্জা এবং লুকালা নদীর মধ্যবর্তী উচ্চভূমিতে ছিল। কিন্তু ষোড়শ শতকে বৃহত্তর স্বাধীনতার দাবী শুরু করে। ইতিহাস অ্যাঙ্গোলা দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ। কিমবুন্ডু, যার মানে হচ্ছে রাজা, শব্দটি থেকে দেশটির নাম এসেছে। অ্যাঙ্গোলায় প্রথমে সান শিকারী-সংগ্রাহক সমাজ দ্বারা বসতি স্থাপিত হয়েছিল উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চল কঙ্গো এবং এনডোঙ্গোর মতো বান্টু রাজ্যের শাসনের অধীনে আসার আগে। রাজনীতি অ্যাঙ্গোলান সরকার মূলত তিনটি শাখা নিয়ে গঠিত। এগুলো হল- নির্বাহী, আইনসভা এবং বিচার বিভাগ।  সরকারের নির্বাহী শাখা রাষ্ট্রপতি, ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রী পরিষদের সমন্বয়ে গঠিত। আইনসভা শাখায় রয়েছে ২২০ সিটের এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা- অ্যাঙ্গোলার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি, যা প্রাদেশিক এবং দেশব্যাপী উভয় নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়।  দশকের পর দশক ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে প্রেসিডেন্সিতে। ৩৮ বছরের শাসনের পর, ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি ডস সান্তোস MPLA নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।  ২০১৭ সালের আগস্টে সংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ী দলের নেতা অ্যাঙ্গোলার পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হন।  এমপিএলএ প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জোয়াও লরেঙ্কোকে সান্তোসের নির্বাচিত উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচিত করেছে। যাকে রাজনৈতিক শুদ্ধি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে তার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে এবং ডস সান্তোস পরিবারের প্রভাব কমানোর জন্য লরেনকো পরবর্তীতে জাতীয় পুলিশের প্রধান, অ্যামব্রোসিও দে লেমোস এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান অ্যাপোলিনারিও জোসেকে বরখাস্ত করেন।  উভয়ই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডস সান্তোসের সহযোগী হিসাবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতির কন্যা ইসাবেল ডস সান্তোসকে দেশটির রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সোনাঙ্গোলের প্রধান পদ থেকে সরিয়ে দেন। সামরিক বাহিনী অ্যাঙ্গোলার সামরিক বাহিনী একজন সেনাপ্রধান দ্বারা পরিচালিত, যিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করেন। অ্যাঙ্গলার প্রতিরক্ষা বাহিনী তিনটি বিভাগ নিয়ে গঠিত - স্থলসেনাবাহিনী, নৌবাহিনী (মারিনিয়া দি গেররা) এবং বিমান বাহিনী। মোট সেনাসংখ্যা প্রায় ১,১০,০০০। এদের মধ্যে স্থলসেনাবাহিনীতেই ১ লক্ষ নারী-পুরুষ কর্মরত। নৌবাহিনীতে ৩ হাজার এবং বিমানবাহিনীতে ৭ হাজার সেনা কর্মরত আছেন। বিমানবাহিনীতে রুশ-নির্মিত ফাইটার ও পরিবহন বিমান ব্যবহার করা হয়। অ্যাঙ্গোলার স্থলসেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশ কঙ্গো ও গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে নিয়োজিত আছে। জনসংখ্যা ভাষা ধর্ম আরও দেখুন অ্যাঙ্গোলাতে পরিবহন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সরকার অ্যাঙ্গোলার প্রজাতন্ত্র সরকারী ওয়েবসাইট (পর্তুগিজ ভাষায়) অ্যাঙ্গোলার জাতীয় বিধানসভা (পর্তুগিজ ভাষায়) রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ সাধারণ তথ্য Angola from UCB Libraries GovPubs পর্যটন আফ্রিকার রাষ্ট্র প্রজাতন্ত্র মধ্য আফ্রিকার রাষ্ট্র ১৯৭৫-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র পর্তুগিজ ভাষী দেশগুলির সম্প্রদায়ের সদস্য রাষ্ট্র ওপেকের সদস্য রাষ্ট্র সাবেক পর্তুগিজ উপনিবেশ স্বল্পোন্নত দেশ পর্তুগিজভাষী দেশ ও অঞ্চল সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Angola
Angola
Angola, officially the Republic of Angola, is a country on the west-central coast of Southern Africa. It is the second-largest Lusophone (Portuguese-speaking) country in both total area and population and is the seventh-largest country in Africa. It is bordered by Namibia to the south, the Democratic Republic of the Congo to the north, Zambia to the east, and the Atlantic Ocean to the west. Angola has an exclave province, the province of Cabinda, that borders the Republic of the Congo and the Democratic Republic of the Congo. The capital and most populous city is Luanda. Angola has been inhabited since the Paleolithic Age. Its formation as a nation-state originates from the Kingdom of Kongo, the hegemonic state of a number of other Kikongo-speaking kingdoms that flourished in and after the 14th century. The Kingdom of Kongo became extremely wealthy and powerful through establishing the Atlantic slave trade with the Portuguese Empire. Its first explorers established relations with Kongo in 1483, and additional migrants gradually began building coastal settlements and trading posts. The banning of the slave trade in the 19th century severely disrupted Kongo's undiversified economic system. European settlers gradually began to establish themselves in the interior. The Portuguese colony that became Angola did not achieve its present borders until the early 20th century. There had been strong resistance by native groups such as the Cuamato, the Kwanyama, and the Mbunda. After a protracted anti-colonial struggle (1961-1974), Angola achieved independence in 1975 as a one-party Republic. But competing movements still struggled for power in the new nation. The country descended into a devastating civil war the same year, between the ruling People's Movement for the Liberation of Angola (MPLA), backed by the Soviet Union and Cuba; the insurgent National Union for the Total Independence of Angola, an originally Maoist and later anti-communist group supported by the United States and South Africa; and the militant organization National Liberation Front of Angola, backed by Zaire. The MPLA stayed in power. Since the end of the civil war in 2002, Angola has emerged as a relatively stable constitutional republic.
1169
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE
আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনা () দক্ষিণ আমেরিকার একটি রাষ্ট্র। বুয়েনোস আইরেস দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। দেশটি দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশের প্রায় পুরোটা জুড়ে অবস্থিত। আয়তনের দিক থেকে এটি দক্ষিণ আমেরিকার ২য় বৃহত্তম এবং বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। আর্জেন্টিনায় ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ু বিচিত্র। উত্তরের নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে দক্ষিণের মেরু-উপদেশীয় অঞ্চল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার বিস্তার। এর মধ্যেই আছে রুক্ষ আন্দেস পর্বতমালা ও তার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আকোনকাগুয়া। তবে বেশির ভাগ লোক দেশটির মধ্যভাগে অবস্থিত বিশাল উর্বর প্রেইরি সমভূমির (যার নাম পাম্পাস) শহরগুলিতে বাস করেন। পাম্পাসেই দেশটির অধিকাংশ কৃষিসম্পদ উৎপন্ন হয় এবং এখানেই দক্ষিণ আমেরিকার বিখ্যাত কাউবয় "গাউচো"-দের আবাসস্থল। আর্জেন্টিনায় আরও আছে অরণ্যভূমি, মরুভূমি, তুন্দ্রাভূমি, সুউচ্চ সব পর্বতশৃঙ্গ, নদনদী এবং হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ আটলান্টিক মহাসাগরীয় উপকূলভূমি। এছাড়া দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের অনেকগুলি দ্বীপ আর্জেন্টিনা নিজেদের বলে দাবী করে, যার মধ্যে ব্রিটিশ-শাসিত ফকল্যাণ্ড দ্বীপপুঞ্জ অন্যতম (আর্জেন্টিনীয়রা এগুলিকে মালবিনাস দ্বীপপুঞ্জ নামে ডাকে)। এর বাইরে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের একটি অংশও আর্জেন্টিনা নিজের বলে দাবী করে। আর্জেন্টিনাতে আদি প্রস্তর যুগে মানব বসতির নিদর্শন পাওয়া গেছে। আধুনিক আর্জেন্টিনার ইতিহাস ১৬শ শতকে স্পেনীয় উপনিবেশীকরণের মাধ্যমে সূচিত হয়। ১৭৭৬ সালে এখানে স্পেনীয় সাম্রাজ্যের অধীনে রিও দে লা প্লাতা উপরাজ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে এই উপরাজ্যের উত্তরসূরী রাষ্ট্র হিসেবে আর্জেন্টিনার উত্থান ঘটে। প্রায় তিন শতাব্দী ধরে ঔপনিবেশিক শাসনের পর ১৮১০ সালে আর্জেন্টিনা স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ১৮১৮ সালে স্পেনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধবিজয় শেষ হয়। আর্জেন্টিনার জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীরা দক্ষিণ আমেরিকার অন্যত্রও বিপ্লবে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এরপরে দেশটিতে অনেকগুলি গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়। শেষ পর্যন্ত ১৮৬১ সালে অনেকগুলি অঙ্গরাজ্যের একটি ফেডারেশন হিসেবে দেশটি পুনর্গঠিত হয়, যার রাজধানী নির্ধারিত হয় বুয়েনোস আইরেস। এর পরে দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরত আসে এবং ইউরোপ থেকে বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর আগমন ঘটে, যার ফলে সাংস্কৃতিক ও জনসংখ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে দেশটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ১৯শ শতকের শেষ ভাগ থেকে আর্জেন্টিনা প্রচুর পরিমাণে কৃষিদ্রব্য যেমন মাংস, পশম, গম, ইত্যাদি রপ্তানি করা শুরু করে। দক্ষিণ আমেরিকায় আর্জেন্টিনাতেই প্রথম শিল্পায়ন শুরু হয় এবং এটি বহুদিন ধরে এই মহাদেশের সবচেয়ে ধনী দেশ ছিল। সে সময় এখানকার অধিবাসীরা ইউরোপীয় দেশগুলির সমমানের জীবনযাত্রা নির্বাহ করত। ব্যাপক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করে দেশটি বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বের ৭ম ধনী দেশে পরিণত হয়। তবে ১৯৪০-এর দশকের পর থেকে আর্জেন্টিনা ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি, উচ্চ বেকারত্ব ও বড় আকারের জাতীয় ঋণের সমস্যায় জর্জরিত। আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক ইতিহাস সংঘাতময়। দেশটির সবচেয়ে বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট হুয়ান পেরন শ্রমিক শ্রেণী ও দরিদ্রদের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু তিনি ছিলেন একজন একনায়ক এবং সমস্ত বিরোধিতা কঠোর হাতে দমন করতেন। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ১৯৫৫ সালে পেরনের পতন ঘটে। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত কুখ্যাত সামরিক শাসনের সময় বহু আর্জেন্টিনীয়কে বিচার ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ১৯৮৩ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছেড়ে দেবার পর আর্জেন্টিনায় আবার গণতন্ত্র স্থাপিত হয় কিন্তু দেশটি অর্থনৈতিক সমস্যায় তখনও হাবুডুবু খেতে থাকে। ২১শ শতকের প্রথম দশকেও আর্জেন্টিনা তার অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাম্পাস এবং বিস্তীর্ণ ঊষর পাতাগোনীয় ভূপ্রকৃতির রোমান্টিক হাতছানি সত্ত্বেও আর্জেন্টিনা মূলত একটি নগরকেন্দ্রিক রাষ্ট্র। দেশটির রাজধানী বুয়েনোস আইরেসকে ঘিরে থাকা আধুনিক ও ব্যস্ত শহরতলীগুলি পাম্পাসের পূর্ব অংশে ছড়িয়ে পড়েছে। বুয়েনোস আইরেস দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ ও আন্তর্জাতিক শহরগুলির একটি। উচ্ছল রাত্রিজীবন এবং স্থাপত্যশৈলীর কারণে এটিকে প্রায়ই প্যারিস ও রোমের সাথে তুলনা করা হয়। ১৯শ শতকের শেষভাগে ও ২০শ শতকের শুরুর দিকে ইতালি, স্পেন ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ অভিবাসী এখানকার শিল্পকারখানাগুলিতে জীবিকা নির্বাহ করার লক্ষ্যে দেশান্তরী হন। বৃহত্তর বুয়েনোস আইরেস এলাকাতে আর্জেন্টিনার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনগণ বাস করে। দেশটির অন্যান্য প্রধান শহরগুলির মধ্যে আছে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলস্থিত মার দেল প্লাতা, লা প্লাতা ও বাইয়া ব্লাঙ্কা এবং দেশের অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত রোসারিও, সান মিগেল দে তুকুমান, কর্দোবা ও নেউকেন। ভূগোল আর্জেন্টিনার আয়তন দেশটি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণাংশের প্রায় পুরোটা জুড়ে অবস্থিত। আন্দেস পর্বতমালা দেশটির পশ্চিম সীমানা নির্ধারণ করেছে, যার অপর পার্শ্বে চিলি অবস্থিত। দেশটি উত্তরে বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ে, উত্তর-পূর্বে ব্রাজিল, পূর্বে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর। এবং দক্ষিণে ড্রেক প্রণালী। সব মিলিয়ে দেশটির স্থলসীমান্তের দৈর্ঘ্য । রিও দে লা প্লাতা ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে দেশটির তটরেখার দৈর্ঘ্য মেন্দোসা প্রদেশে অবস্থিত আকোনকাগুয়া আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ পর্বত। এটি সমুদ্রতল থেকে ( উচ্চতায় অবস্থিত। এছাড়াও আকোনকাগুয়া দক্ষিণ গোলার্ধ ও পশ্চিম গোলার্ধের সর্বোচ্চ পর্বত। আর্জেন্টিনার সর্বনিম্ন বিন্দু হচ্ছে সান্তা ক্রুস প্রদেশে অবস্থিত লাগুনা দেল কার্বন, যা সান হুলিয়ান বৃহত্‌ অবনমনের একটি অংশ। এটি সমুদ্র সমতল থেকে ( নিচে অবস্থিত। এছাড়াও এটি দক্ষিণ গোলার্ধ ও পশ্চিম গোলার্ধের সর্বনিম্ন বিন্দু, এবং পৃথিবীর ৭ম সর্বনিম্ন বিন্দু। আর্জেন্টিনার উত্তরতম বিন্দুটি রিও গ্রান্দে দে সান হুয়ান ও রিও মোহিনেতে নদী দুটির সঙ্গমস্থলে, হুহুই প্রদেশে অবস্থিত। দেশটির দক্ষিণতম বিন্দু হল তিয়ের্‌রা দেল ফুয়েগো প্রদেশের সান পিও অন্তরীপ। সর্বপূর্ব বিন্দুটি মিসিওনেস প্রদেশের বেরনার্দো দে ইরিগোইয়েন শহরের উত্তর-পূর্বে এবং সর্বপশ্চিম বিন্দুটি সান্তা ক্রুস প্রদেশের লোস গ্লাসিয়ারেস জাতীয় উদ্যানের মধ্যে পড়েছে। উত্তর থেকে দক্ষিণে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য প্রায় ; এর বিপরীতে পূর্ব থেকে পশ্চিমে দেশটির সর্বোচ্চ প্রশস্ততা প্রায় . আর্জেন্টিনার প্রধান প্রধান নদীর মধ্যে রয়েছে পারানা নদী ও উরুগুয়াই নদী (নদী দুটি একত্র হয়ে রিও দে লা প্লাতা নদী গঠন করেছে), সালাদো নদী, রিও নেগ্রো নদী, সান্তা ক্রুস নদী, পিকোমাইয়ো নদী, বের্মেহো নদী ও কোলোরাদো নদী। এই সব নদীর পানি আর্জেন্টিনীয় সাগরে গিয়ে পড়েছে। আটলান্টিক সাগরের যে অগভীর অংশটি আর্জেন্টিনীয় শেলফ বা সমুদ্র-তাকের উপরে অবস্থিত, তাকেই আর্জেন্টিনীয় সাগর নামে ডাকা হয়। এটি একটি অস্বাভাবিকভাবে প্রশস্ত মহাদেশীয় মঞ্চ। এই সাগরের পানি দুইটি প্রধান মহাসাগরীয় স্রোতের প্রভাবাধীন: উষ্ণ ব্রাজিল স্রোত এবং শীতল ফকল্যান্ডস স্রোত। দক্ষিণে অবস্থিত ইসলা গ্রান্দে দে তিয়েররা দেল ফুয়েগো নামক দ্বীপের পূর্ব অর্ধাংশ আর্জেন্টিনার অন্তর্গত। এছাড়াও পূর্বের বেশ কিছু সামুদ্রিক দ্বীপ যেমন ইসলা দে লোস এস্তাদোস আর্জেন্টিনার অধীন। আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। জনসংখ্যা ২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ীে মোট জনসংখ্যা ৪০,১১৭,০৯৬ জন, যা ২০০১ সাল থেকে ৩৬,২৬০,১৩০ জন বেশি। মোট জনসংখ্যায় আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকায় তৃতীয়, ল্যাটিন আমেরিকায় চতুর্থ এবং বিশ্বব্যাপী ৩৩তম। এর জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটার ভূমি এলাকায় ১৫ জন, যা বিশ্বের গড় ৫০ জনের চেয়ে অনেক কম। ২০১০ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল আনুমানিক ১.০৩%, প্রতি ১,০০০ জন বাসিন্দার মধ্যে জীবিত জন্মের হার ১৭.৭ এবং প্রতি ১,০০০ জন বাসিন্দার মধ্যে মৃত্যুর হার ৭.৪। ধর্ম আর্জেন্টিনা মূলত খ্রিস্টধর্ম প্রধান দেশ। আর্জেন্টিনার ৭৮ শতাংশ খ্রিস্টান,২০ শতাংশ নাগরিক কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নন এবং বাকি ২ শতাংশ অন্যান্য ধর্মালম্বী। ইতিহাস সাম্প্রতিক যুগ আলফোনসিন সরকার রাউল আলফোনসিন (Raúl Alfonsín) ১৯৮৩ সালের আর্জেন্টিনার সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তিনি একনায়কতান্ত্রিক প্রোসেসো (Proceso) পর্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের পক্ষে প্রচারণা চালান। এর ফলশ্রুতিতে আলফোনসিনের শাসনামলে সামরিক জান্তা এবং অন্যান্য সামরিক আদালতের বিচার হয়, যাতে সামরিক ক্যু-এর সমস্ত নেতাদের শাস্তি হয়। তবে সামরিক চাপের মুখে আলফোনসিন ১৯৮৬ সালে শেষ বিন্দু বা “পুন্তো ফিনাল” ও ১৯৮৭ সালে প্রাপ্য আনুগত্য বা “ওবেদিয়েন্সিয়া দেবিদা” নামের আইন দুটি প্রবর্তন করেন যার ফলে নিম্নস্তরের কর্মচারীদের বিচার রহিত হয়। অর্থনৈতিক সংকট খারাপ হতে শুরু করলে ও অতিমুদ্রাস্ফীতি ঘটলে আলফোনসিনের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে পেরনবাদী রাজনীতিবিদ কার্লোস মেনেম জয়লাভ করেন। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে বিক্ষুব্ধ জনগণ দাঙ্গা শুরু করলে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই আলফোনসিন পদত্যাগ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। মেনেম সরকার নির্বাচিত হয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি মেনেম নব্য-উদারবাদী অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রয়োগ করেন: সুনির্দিষ্ট মুদ্রা বিনিময় হার, ব্যবসাসমূহের উপর নিয়ন্ত্রণ হ্রাস (deregulation), ব্যক্তিমালিকানাধীনকরণ (privatization) এবং সংরক্ষণবাদী বাধাগুলি দূরীকরণের মাধ্যমে অর্থনীতি কিছুদিনের জন্য স্বাভাবিক হয়ে আসে। আলফোনসিন সরকারের যেসব সামরিক অফিসারদের শাস্তি হয়েছিল, তাদের তিনি ক্ষমা করে দেন। ১৯৯৪ সালে আর্জেন্টিনার সংবিধানের সংশোধনী আনা হয়, যার বদৌলতে ১৯৯৫ সালে মেনেম দ্বিতীয়বারের মত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৯৫ সাল থেকে আর্জেন্টিনার অর্থনীতি আবার খারাপের দিকে যেতে শুরু করে, বেকারত্বের হার বাড়তে থাকে এবং দেশটি অর্থনৈতিক মন্দার নিমজ্জিত হয়। ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে ফের্নান্দো দে লা রুয়ার নেতৃত্বে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আলফোনসিনের রাজনৈতিক দল উনিওন সিবিকা রাদিকাল আবার ক্ষমতায় ফেরত আসে। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ আর্জেন্টিনার সরকারি ওয়েবসাইট আর্জেন্টিনা at UCB Libraries GovPubs LANIC আর্জেন্টিনা ওয়েবসাইট খ্রিস্টান রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র জি২০ সদস্য মার্কোসুরের সদস্য রাষ্ট্র স্পেনীয় ভাষী রাষ্ট্র ও অঞ্চল দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্র প্রাক্তন স্পেনীয় উপনিবেশ জি১৫ রাষ্ট্র সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Argentina
Argentina
Argentina, officially the Argentine Republic, is a country in the southern half of South America. Argentina covers an area of 2,780,400 km2 (1,073,500 sq mi), making it the second-largest country in South America after Brazil, the fourth-largest country in the Americas, and the eighth-largest country in the world. It shares the bulk of the Southern Cone with Chile to the west, and is also bordered by Bolivia and Paraguay to the north, Brazil to the northeast, Uruguay and the South Atlantic Ocean to the east, and the Drake Passage to the south. Argentina is a federal state subdivided into twenty-three provinces, and one autonomous city, which is the federal capital and largest city of the nation, Buenos Aires. The provinces and the capital have their own constitutions, but exist under a federal system. Argentina claims sovereignty over the Falkland Islands, South Georgia and the South Sandwich Islands, the Southern Patagonian Ice Field, and a part of Antarctica. The earliest recorded human presence in modern-day Argentina dates back to the Paleolithic period. The Inca Empire expanded to the northwest of the country in Pre-Columbian times. The country has its roots in Spanish colonization of the region during the 16th century. Argentina rose as the successor state of the Viceroyalty of the Río de la Plata, a Spanish overseas viceroyalty founded in 1776. The declaration and fight for independence (1810–1818) was followed by an extended civil war that lasted until 1861, culminating in the country's reorganization as a federation. The country thereafter enjoyed relative peace and stability, with several waves of European immigration, mainly Italians and Spaniards, influencing its culture and demography. Following the death of President Juan Perón in 1974, his widow and vice president, Isabel Perón, ascended to the presidency, before being overthrown in 1976. The following military junta, which was supported by the United States, persecuted and murdered thousands of political critics, activists, and leftists in the Dirty War, a period of state terrorism and civil unrest that lasted until the election of Raúl Alfonsín as president in 1983. Argentina is a regional power, and retains its historic status as a middle power in international affairs. A major non-NATO ally of the United States, Argentina is a developing country with the second-highest HDI (human development index) in Latin America after Chile. It maintains the second-largest economy in South America, and is a member of G-15 and G20. Argentina is also a founding member of the United Nations, World Bank, World Trade Organization, Mercosur, Community of Latin American and Caribbean States and the Organization of Ibero-American States.
1170
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
আর্মেনিয়া
আর্মেনিয়া ( হায়াস্তান্‌) পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। জর্জিয়া ও আজারবাইজানের সাথে এটি দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের স্থলযোজকের উপর অবস্থিত। ইয়েরেভান দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। আর্মেনীয় জাতি। জাতিগত আর্মেনীয়রা নিজেদের "হায়" (Հայ) বলে ডাকে এবং আর্মেনিয়ার ৯০% লোক হায় জাতির লোক। ১৯২২ সালে এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৯১ সালে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৯৫ সালে দেশটির প্রথম সোভিয়েত-পরবর্তী সংবিধান পাশ হয়। ইতিহাস আর্মেনিয়ার প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ অব্দে, উরার্তু বা ভান রাজ্যের অংশ হিসেবে। রাজ্যটি ককেসাস অঞ্চল ও পূর্ব এশিয়া মাইনর এলাকাতে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। সেলেউসিদ সাম্রাজ্যের ধ্বংসের পর ১৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম আর্মেনীয় রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৯৫ থেকে ৬৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এই নবগঠিত রাষ্ট্রের চরম উৎকর্ষের সময়। এসময় আর্মেনিয়া সমগ্র ককেসাস অঞ্চল তো বটেই, এরও বাইরে বর্তমান পূর্ব তুরস্ক, সিরিয়া এবং লেবানন পর্যন্ত সীমানা বিস্তার করে। কিছু সময়ের জন্য আর্মেনিয়া ছিল রোমান পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্য। ৬৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এটি রোমান সাম্রাজ্যের অংশে পরিণত হয় এবং রাজনৈতিক, দার্শনিক ও ধর্মীয়ভাবে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি অণুসরণ করা শুরু করে। ৩০১ খ্রিষ্টাব্দে আর্মেনিয়া ইতিহাসের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে এবং আর্মেনীয় গির্জাব্যবস্থার পত্তন করে। আজও আর্মেনীয় গির্জা রোমান ক্যাথলিক গির্জাব্যবস্থা এবং পূর্ব অর্থডক্স গির্জাব্যবস্থা অপেক্ষা স্বাধীন একটি গির্জাব্যবস্থা হিসেবে বিদ্যমান। পরবর্তীতে আর্মেনিয়ার রাজনৈতিক সংকটের সময় এই গির্জা আর্মেনিয়ার অদ্বিতীয় জাতীয় সত্তা সংরক্ষণে সাহায্য করে। আনুমানিক ১১০০ থেকে ১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আর্মেনীয় জাতীয়তাবাদের কেন্দ্র দেশের দক্ষিণদিকে সরে যায়। এসময় আর্মেনীয় সিলিসিয়া রাজ্য ইউরোপীয় ক্রুসেডার রাজ্যগুলির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মাইনর এলাকাতে সমৃদ্ধি অর্জন করে, যদিও রাজ্যটি শেষ পর্যন্ত মুসলমানদের করায়ত্ত হয়। ৪র্থ থেকে ১৯শ শতক পর্যন্ত আর্মেনিয়া বিভিন্ন বড় শক্তির শাসনাধীনে আসে। এদের মধ্যে পারসিক, বাইজেন্টীয়, আরব, মোঙ্গল এবং তুর্কি জাতি উল্লেখযোগ্য। ১৯১৫ সালে সংঘটিত আর্মেনিয় গণহত্যা দেশটির এক উল্লেখযোগ্য কালো অধ্যায়। ১৯১৮ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত ক্ষুদ্র সময়ের জন্য এটি একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র ছিল। ১৯২০ সালে স্থানীয় সাম্যবাদীরা ক্ষমতায় আসে এবং সোভিয়েত সেনাবাহিনী দেশটি দখল করে। ১৯২২ সালে আর্মেনিয়া আন্তঃককেশীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের অংশে পরিণত হয়। ১৯৩৬ সালে এটি আর্মেনীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। ১৯৯১ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর আর্মেনিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। রাজনীতি আর্মেনিয়ায় ২০১৭ সালে একটি সাংবিধানিক গণভোট আয়োজিত হয়। সেখানে আর্মেনীয়রা সংসদীয় শাসনব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। অতঃপর রাষ্ট্রপতি সার্জ সার্জিসান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে তীব্র সরকারবিরোধী আন্দোলন হয়, যা আর্মেনীয় ভেলভেট বিপ্লব নামে পরিচিতি লাভ করেছে। সার্জিসান পদত্যাগ করলে বিরোধী নেতা নিকোল পাশিনিয়ান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তঁার দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ভূগোল আর্মেনিয়া রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের অন্তর্বর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। উত্তর আর্মেনিয়া জুড়ে রয়েছে ক্ষুদ্রতর ককেশাস পর্বতমালা, যেটি সেভান হ্রদ ও আজারবাইজানের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত হয়েছে এবং আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সীমান্ত হয়ে ইরানে চলে গেছে। এই পর্বতগুলির কারণে আর্মেনিয়ার দক্ষিণ থেকে উত্তরে ভ্রমণ করা কষ্টকর। আর্মেনিয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্প হয় এবং এর ফলে অনেক প্রাণহানি ঘটে। আর্মেনিয়ার প্রায় অর্ধেক এলাকা সমুদ্র সমতল থেকে ২০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় অবস্থিত। দেশটির মাত্র ৩% ৬৫০ মিটারের নিম্ন উচ্চতায় অবস্থিত। আরাস নদী ও দেবেত নদীর উপত্যকাগুলি দেশের নিম্নতম এলাকা, এবং এগুলিও যথাক্রমে ৩৮০ মিটার ও ৪৩০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। ককেশাস পর্বতমালার দক্ষিণে আছে আর্মেনীয় মালভূমি, যা দক্ষিণ-পশ্চিমে আরাস নদীর দিকে ঢালু হয়ে গেছে। মালভূমিটিতে পাহাড় পর্বত ও মৃত আগ্নেয়গিরি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এদের মধ্যে ৪৪৩০ মিটার উঁচু আরাগাৎস পর্বত আর্মেনিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। ৩৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও সর্বোচ্চ ৭২.৫ কিলোমিটার প্রস্থবিশিষ্ট সেভান হ্রদ আর্মেনিয়ার ভূগোলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হ্রদটি সমুদ্রতল থেকে ২০৭০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। আরাস নদী প্রধানতম নদী। সেভান হ্রদ থেকে উপনদী রাজদান প্রবাহিত হয়ে আরাসে পড়েছে। উল্লেখ্য বিতর্কিত নাগার্নো-কারাবাগ অঞ্চল নিয়ে আজারবাইজানের সাথে আর্মেনিয়ার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে সামরিক সংঘাত চলে আসছে।এতে এ পর্যন্ত দু দেশের প্রায় ৩০০ এর বেশি বেসামরিক লোকজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। সামরিক শক্তি চারদিকে স্থলবেষ্টিত হওয়ায় দেশটিতে মূলত স্থল বাহিনী ও বিমানবাহিনী রয়েছে। ভারতীয় সুখই-৩০ এর উন্নত ধরন সুখই-৩০এসএম এর ৪টি বিমান রয়েছে বাহিনীর কাছে। ৫০০ কিমি পরিসীমার 9K720 ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্রো ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থনীতি ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর আর্মেনিয়াতে অর্থনৈতক মন্দা দেখা দিলেও দেশটি ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে উঠছে। তবে ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং ১৯৯০-এর দশকে আজারবাইজানের সাথে নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে যুদ্ধ আর্মেনিয়ার অর্থনীতিতে আজও প্রভাব রেখে চলেছে। ২৭-০৯-২০ যুদ্ধে কারাবাখ আজারভাইজানের হাতে চলে যাবে.. আর্মেনিয়াতে নগরায়নের হার উচ্চ। এখানে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লোক শহরে বাস করে। নদী উপত্যকায়, বিশেষত হ্রাজদান নদীর তীরে বসতির ঘনত্ব বেশি। হ্রাজদান নদীর তীরেই আর্মেনিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী ইয়েরেভান অবস্থিত। আর্মেনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হল গিয়ুম্‌রি। ১৯৮৮ সালে গিয়ুম্‌রি শহর এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের শিকার হয়। ভাষা আর্মেনিয়ার ৯৮% অধিবাসী আর্মেনীয় ভাষায় কথা বলে থাকেন। আর্মেনীয় ভাষা দেশটির রাষ্ট্রভাষা। আর্মেনীয় ভাষাকে পূর্ব ও পশ্চিম এই দুইটি সাহিত্যিক আদর্শ ভাষায় ভাগ করা যায়। এদের মধ্যে পূর্ব আর্মেনীয়কেই বর্তমানে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ১৯১৫ সালে আর্মেনিয়ার গণহত্যার সময় অনেক আর্মেনীয় পশ্চিম আর্মেনিয়াতে (বর্তমান তুরস্ক) পালিয়ে যান এবং বর্তমান আর্মেনিয়ার বাইরে বসতি স্থাপন করেন। তাদের ব্যবহৃত ভাষাই পশ্চিম আর্মেনীয় ভাষা। এছাড়াও আর্মেনীয় গির্জাগুলিতে গ্রাবার নামের একটি প্রাচীন লিখিত আর্মেনীয় ভাষা ব্যবহৃত হয়। সংখ্যালঘুদের মধ্যে প্রচলিত ভাষাগুলির মধ্যে আছে রুশ ভাষা, কুর্মান্‌জি (ইয়েজিদীয়) নামের একটি কুর্দি উপভাষা, নব্য-আসিরীয়, গ্রিক ও ইউক্রেনীয় ভাষা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেদের ভাষা ছাড়াও রুশ কিংবা আর্মেনীয়তে কথা বলতে পারে। আর্মেনিয়ায় দ্বিবিধ ভাষারীতি (diglossia) বিদ্যমান। লিখিত মাধ্যমে, নথিপত্রে ও শিক্ষাক্ষেত্রে আর্মেনীয়রা আদর্শ পূর্ব আর্মেনীয় ভাষা ব্যবহার করে। কিন্তু প্রাত্যহিক কাজেকর্মে ও কথাবার্তায় স্থানীয় উপভাষাই বেশি চলে। আর্মেনীয়দের ভাষার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল প্রায় ৯০% আর্মেনীয় আর্মেনীয় ও রুশ উভয় ভাষাতেই স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারেন। আর্মেনিয়া যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল তখন রুশ ভাষার এখানে একটি বিশেষ অবস্থান ছিল। রুশ ভাষার সাথে তুলনায় আর্মেনীয় ভাষার মর্যাদা ছিল কম। তবে আর্মেনিয়ার স্বাধীনতার পর দৃশ্যপট বদলেছে। বর্তমানে আর্মেনীয় ভাষাই দেশের মূল ভাষা। আর্মেনীয়রা স্কুলে রুশ ও ইংরেজি এই দুই বিদেশী ভাষা সম্পর্কেই ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে। তবে ইদানীং ইংরেজির আধিপত্য বেড়েছে। জনসংখ্যা ২০১১ এর আদমশুমারি অনুযায়ী আর্মেনিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ ১৮ হাজার। ধর্ম খ্রিস্টানধর্ম, আরো বিশেষ করে বলতে গেলে, আর্মেনিয় অ্যাপসল গির্জার ধর্ম, আর্মেনিয়ার প্রায় ৯৫% অধিবাসীর ধর্ম। যিশুর দুই শিষ্য বার্থেলেমিউ ও থাদেউস প্রথম শতকেই এখানে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করেন। ৩য় শতকে আর্মেনিয়ার রাজা খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং একে দেশটির রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রচলিত করেন। এছাড়া দেশটিতে স্বল্পসংখ্যক ইহুদি, ইয়াজিদি ও মুসলমান অধিবাসী বসবাস করেন। সংস্কৃতি আর্মেনীয়রা সাধারণত পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখে এবং তাদের বিশেষ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখে। আর্মেনীয় সঙ্গীত ও রান্না অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যীয় দেশগুলির মত। খাবারের মধ্যে দোলমা বা শর্মা এবং পানীয়ের মধ্যে ওয়াইন ও ব্র‌্যান্ডি গুরুত্বপূর্ণ। উৎসবের সময় আর্মেনীয়রা ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীত গাইতে এবং বৃত্তাকারে গাইতে পছন্দ করে। বাস্কেটবল, ফুটবল ও টেনিস জনপ্রিয় খেলা। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে আর্মেনীয়রা কুস্তি, মুষ্টিযুদ্ধ, ভারোত্তোলন এবং জিমন্যাস্টিক্‌সে সাফল্য লাভ করেছে। আর্মেনীয়রা অবসর সময়ে দাবা ও অন্যান্য বোর্ড খেলা খেলতেও পছন্দ করে। শহরের বেশির ভাগ অধিবাসী সোভিয়েত আমলে নির্মিত অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করে; যেগুলির বর্তমান অবস্থা তেমন ভাল নয়। গ্রামের লোকেরা সাধারণত এক পরিবারের জন্য নির্মিত বাড়িতে বাস করে। অনেক সময় যৌথ পরিবারের অনেক সদস্য একই ছাদের নিচে বাস করে। পরিবার ও বন্ধুবান্ধব সামাজিক জীবনের কেন্দ্র। আর বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রজন্মে প্রজন্মে সংযোগ স্থাপিত হয়। বিখ্যাত ভারতীয় শাস্রীয় সঙ্গীত গায়িকা গওহর জান ছিলেন আর্মেনিয়ান বংশোদ্ভূত। আরও দেখুন •ককেশাসের ইতিহাস •জর্জিয়া •আজারবাইজান তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সরকারী আর্মেনিয়ার সরকার সরকারী ওয়েবসাইট আর্মেনিয়ার জাতীয় বিধানসভা আর্মেনিয়ার রাষ্ট্রপতি আর্মেনিয়ার বিচারবিভাগ মন্ত্রণালয় এবং সংস্থা আর্মেনীয় পরমাণবিক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আর্মেনিয়ার জাতীয় পরিসংখ্যান সংক্রান্ত পরিসেবা আর্মেনীয় রীতিনীতি পরিসেবা অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয় রাজস্ব মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কমিশন রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ সাধারণ তথ্য Armenia at UCB Libraries GovPubs পর্যটন Armeniainfo.am official government Tourist Board Electronic Visa (eVisa) for tourists অন্যান্য Armeniapedia.org - আর্মেনীয়ন উইকি (ইংরেজি) পৃথিবী বুদ্ধিজীবী বৈশিষ্ট্য গাইডবই: আর্মেনিয়া এশিয়ার রাষ্ট্র ইউরোপের রাষ্ট্র প্রজাতন্ত্র ১৯১৮-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল ১৯৯১-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল খ্রিস্টান রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র স্বাধীন রাষ্ট্রের কমনওয়েলথের সদস্য রাষ্ট্র ইউরোপ কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্র যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র রুশ ভাষী দেশ ও অঞ্চল আন্তঃমহাদেশীয় রাষ্ট্র ১৯১৮-এ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত ১৯৯১-এ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত ১৯৯১-এ ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত ককেশাস স্থলবেষ্টিত দেশ পশ্চিম এশিয়ার রাষ্ট্র সীমিত স্বীকৃতির রাষ্ট্র সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Armenia
Armenia
Armenia ( ar-MEE-nee-ə), officially the Republic of Armenia, is a landlocked country in the Armenian Highlands of West Asia. It is a part of the Caucasus region and is bordered by Turkey to the west, Georgia to the north and Azerbaijan to the east, and Iran and the Azerbaijani exclave of Nakhchivan to the south. Yerevan is the capital, largest city and financial center. Armenia is a unitary, multi-party, democratic nation-state with an ancient cultural heritage. The Armenian Highlands has been home to the Hayasa-Azzi, Shupria and Nairi. By at least 600 BC, an archaic form of Proto-Armenian, an Indo-European language, had diffused into the Armenian Highlands. The first Armenian state of Urartu was established in 860 BC, and by the 6th century BC it was replaced by the Satrapy of Armenia. The Kingdom of Armenia reached its height under Tigranes the Great in the 1st century BC and in the year 301 became the first state in the world to adopt Christianity as its official religion. Armenia still recognises the Armenian Apostolic Church, the world's oldest national church, as the country's primary religious establishment. The ancient Armenian kingdom was split between the Byzantine and Sasanian Empires around the early 5th century. Under the Bagratuni dynasty, the Bagratid Kingdom of Armenia was restored in the 9th century before falling in 1045. Cilician Armenia, an Armenian principality and later a kingdom, was located on the coast of the Mediterranean Sea between the 11th and 14th centuries. Between the 16th and 19th centuries, the traditional Armenian homeland composed of Eastern Armenia and Western Armenia came under the rule of the Ottoman and Persian empires, repeatedly ruled by either of the two over the centuries. By the 19th century, Eastern Armenia had been conquered by the Russian Empire, while most of the western parts of the traditional Armenian homeland remained under Ottoman rule. During World War I, up to 1.5 million Armenians living in their ancestral lands in the Ottoman Empire were systematically exterminated in the Armenian genocide. In 1918, following the Russian Revolution, all non-Russian countries declared their independence after the Russian Empire ceased to exist, leading to the establishment of the First Republic of Armenia. By 1920, the state was incorporated into the Soviet Union as the Armenian SSR. The modern Republic of Armenia became independent in 1991 during the dissolution of the Soviet Union. Armenia is a developing country and ranks 85th on the Human Development Index (2021). Its economy is primarily based on industrial output and mineral extraction. While Armenia is geographically located in the South Caucasus, it is generally considered geopolitically European. Since Armenia aligns itself in many respects geopolitically with Europe, the country is a member of numerous European organizations including the Organization for Security and Co-Operation in Europe, the Council of Europe, the Eastern Partnership, Eurocontrol, the Assembly of European Regions, and the European Bank for Reconstruction and Development. Armenia is also a member of certain regional groups throughout Eurasia, including the Asian Development Bank, the Collective Security Treaty Organization, the Eurasian Economic Union, and the Eurasian Development Bank. Armenia supported the once de facto independent Republic of Artsakh (Nagorno-Karabakh), which was proclaimed in 1991 on territory internationally recognized as part of Azerbaijan, until the republic's dissolution in September 2023.
1171
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%85%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া বা কমন‌ওয়েলথ অফ অস্ট্রেলিয়া হলো ওশেনিয়া মহাদেশের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। ওশেনিয়া মহাদেশের মূল ভূখণ্ড ও তাসমানিয়াসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া গঠিত হয়েছে। দেশটির মোট আয়তন ৭৬,১৭,৯৩০ বর্গ কি.মি. ( ২৯,৪৪,৩০০ ব.মা)। আয়তনের দিক থেকে এটি ওশেনিয়ার সর্ব বৃহ‌ৎ রাষ্ট্র ও পৃথিবীর ৬ষ্ঠ বৃহত্তম রাষ্ট্র। দেশটির উত্তরে তিমুর সাগর, আরাফুরা সাগর, ও টরেস প্রণালী; পূর্বে প্রবাল সাগর ও তাসমান সাগর; দক্ষিণে ব্যাস প্রণালী এবং পশ্চিমে ভারত মহাসাগর। বৃহৎ আকৃতির কারণে অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু বেশ বিচিত্র এবং এর মধ্যবর্তী অঞ্চলে রয়েছে বৃহৎ মরুভূমি, উত্তর-পূর্বে বনাঞ্চল ও দক্ষিন-পশ্চিমে পর্বতমালা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বসতিস্থাপক ছিল এখানকার আদিবাসী জাতিগুলি। তারা প্রায় ৬৫,০০০ বছর আগে এই মহাদেশে বসতি স্থাপন করেছিল। ১৭শ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত বহির্বিশ্বের কাছে দ্বীপটি অজানা ছিল। ১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট জ্যাকসনে প্রথম স্থায়ী উপনিবেশ নিউ সাউথ ওয়েল্স সৃষ্টি করা হয়; এটি ছিল ব্রিটিশ কয়েদিদের উপনিবেশ। এটিই পরবর্তীকালে বড় হয়ে সিডনী শহরে পরিণত হয়। প্রথম উপনিবেশ স্থাপনের গুরুত্ব হিসেবে ২৬ জানুয়ারিকে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। পরবর্তী বেশ কয়েক যুগ ধরে অস্ট্রেলিয়ায় ইউরোপীয় জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৮৫০-এর দশকে গোল্ড রাশের আগেই ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীরা মহাদেশের অধিকাংশ স্থান আবিষ্কার করে ফেলেছিল এবং গ্রেট ব্রিটেন আরও পাঁচটি স্বায়ত্তশাসিত উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। ১৯শ শতক জুড়ে অস্ট্রেলিয়া এক গুচ্ছ ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে কাজ করত। ১৯০১ সালের ১লা জানুয়ারি এই ছয়টি উপনিবেশ একত্রিত করে কমনওয়েলথ অব অস্ট্রেলিয়া গঠন করা হয়েছিল। সেই থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্র এবং বাজার অর্থনীতি অব্যাহত রয়েছে। রাজনৈতিক দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। এটি ছয়টি রাজ্য এবং দশটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ, যার অধিকাংশই পূর্ব উপকূলবর্তী শহরাঞ্চলে বসবাস করেন। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০% অভিবাসী; এই অনুপাত বৃহৎ পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত ক্যানবেরা এবং সিডনী হলো দেশটির দুই বৃহত্তম শহর। অন্যান্য বৃহৎ শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, পার্থ, অ্যাডিলেড। অস্ট্রেলিয়া একটি উন্নত দেশ এবং উচ্চ আয়ের অর্থনীতি। এটি পৃথিবীর ১২তম বৃহত্তম অর্থনীতি, মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে দশম এবং মানব উন্নয়ন সূচকের মান অনুযায়ী অষ্টম। প্রাকৃতিক সম্পদ এবং উন্নত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দেশটির অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অস্ট্রেলিয়ার আয়ের প্রধান খাতসমূহ হলো পরিষেবা, খনিজ রপ্তানি, ব্যাংকিং, উত্পাদন, কৃষি এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও অন্যান্য। অস্ট্রেলিয়া একটি আঞ্চলিক শক্তি, এবং সামরিক ব্যয়ের দিক থেকে বিশ্বের দ্বাদশ অবস্থানে রয়েছে। শব্দের ব্যুৎপত্তি অস্ট্রেলিয়া (উচ্চারণ ) শব্দটি লাতিন টেরা অস্ট্রেলিস থেকে উদ্ভুত, যার অর্থ "দক্ষিণ ভূমি"। প্রাচীনকাল থেকেই দক্ষিণ গোলার্ধের একটি অনুকল্পিত মহাদেশের নাম বুঝাতে টেরা অস্ট্রেলিস ব্যবহার করা হতো। ১৭ শতকে যখন ইউরোপীয়রা প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া এবং এর মানচিত্র তৈরি করা শুরু করে, তখন এই নতুন আবিষ্কৃত ভুমির নাম হিসেবে টেরা অস্ট্রালিসই ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া নিউ হল্যান্ড নামেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিল। ওলন্দাজ অভিযাত্রী আবেল তাসমান ১৬৪৪ সালে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম নিউ-হল্যান্ড হিসাবে নামকরণ করেছিলেন। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গ্রন্থে টেরা অস্ট্রালিসের ব্যবহার তখনও অব্যাহত ছিল। অভিযাত্রী ম্যাথিউ ফ্লিন্ডার্স অস্ট্রেলিয়া নামটিকে জনপ্রিয় করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "এটি অধিক শ্রুতিমধুর এবং পৃথিবীর অন্যান্য বৃহৎ অংশের নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ"। বেশ কিছু বিখ্যাত প্রারম্ভিক কার্টোগ্রাফাররাও তাদের মানচিত্রে অস্ট্রেলিয়া শব্দটি ব্যবহার করেছেন। জেরারডাস মারকেটর তার ১৫৩৮ সালে প্রকাশিত বিশ্বের ডাবল কর্ডিফর্ম মানচিত্রে ক্লাইমাটা অস্ট্রেলিয়া শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। মারকেটরের শিক্ষক এবং সহযোগী জেমা ফ্রিজিয়াস ১৫৪০ সালে তার নিজস্ব কর্ডিফর্ম মানচিত্রেও একই শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। ইতিহাস অস্ট্রেলীয় আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ায় মানুষের বসবাস শুরু হয়েছিল প্রায় ৬৫,০০০ বছর পূর্বে। বর্তমানের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে মানুষ ভূ-সেতু ব্যবহার করে এবং ক্ষুদ্র সমুদ্র পারাপারের মাধ্যমে এই মহাদেশে এসেছিল। আর্নহেম ল্যান্ডের মাজেদবেবে গুহা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে মানবজাতির অস্তিত্বের সবচেয়ে প্রাচীন প্রমান। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাচীন মানব দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছে লেক মুঙ্গোতে, যা প্রায় ৪১,০০০ বছর পুরনো। এরাই ছিলেন বর্তমান আদিবাসী অস্ট্রেলীয়দের পূর্বপুরুষ। আদিবাসী অস্ট্রেলী সংস্কৃতি পৃথিবীর প্রাচীনতম সংস্কৃতিগুলির মধ্যে একটি। ইউরোপীয়দের সাথে যোগাযোগের আগেই বেশিরভাগ আদিবাসী অস্ট্রেলীয়দের সমাজব্যবস্থা শিকারি পর্যায়ে ছিল এবং তাদের মধ্যে জটিল অর্থনীতি বিদ্যমান ছিল। সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান অনুযায়ী তাদের জনসংখ্যা প্রায় ৭,৫০,০০০ এর কাছাকাছি ছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। আদিবাসী অস্ট্রেলীয়দের ভূমির প্রতি শ্রদ্ধা ও স্বপ্নের প্রতি বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ এবং মৌখিক প্রথা রয়েছে। টরেস প্রণালির দ্বীপবাসীরা (জাতিগতভাবে মেলানেশীয়) মৌসুমী উদ্যানপালন এবং প্রবাল ও সমুদ্রের সম্পদ থেকে তাদের জীবিকা অর্জন করতো। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার মাকাসান জেলেরা বাণিজ্যের জন্য অস্ট্রেলিয়ার উত্তর উপকূল বিক্ষিপ্তভাবে পরিদর্শন করেছিল। ইউরোপীয় উপনিবেশ অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডে সর্বপ্রথম নথিভুক্ত ইউরোপীয় উপস্থিতি এবং অবতরণের কৃতিত্ব ওলন্দাজদের। যে জাহাজটির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার উপকূলের মানচিত্র তৈরি করা হয়েছিল তার নাম হলো ডুইফকেন, এবং এর কাপ্তেন ছিলেন ওলন্দাজ নাবিক উইলিয়াম জ্যানসন। তিনি ১৬০৬ সালের গোড়ার দিকে কেপ ইয়র্ক উপদ্বীপের উপকূলটি দেখেছিলেন এবং ১৬০৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কেপ ইয়র্কের বর্তমান শহর ওয়েইপার কাছে পেনেফাদার নদীতে অবতরণ করেছিলেন। সেই বছরের শেষের দিকে স্পেনীয় অভিযাত্রী লুইস ভাজ দে টরেস টরেস প্রণালীর দ্বীপপুঞ্জের মধ্য দিয়ে যাত্রা করেছিলেন। ওলন্দাজরা সমগ্র পশ্চিম এবং উত্তর উপকূলরেখার নকশা তৈরি করেছিল এবং ১৭ শতকে এই দ্বীপ মহাদেশের নাম দেয় "নিউ হল্যান্ড"। যদিও বসতি স্থাপনের কোনো প্রচেষ্টা করা হয়নি, তবে বেশ কয়েকটি জাহাজডুবির কারণে মানুষ আটকা পড়ে এবং ১৬২৯ সালে বিদ্রোহ এবং হত্যার জন্য কয়েদীদের বাতাভিয়ায় আবদ্ধ করার মাধ্যমে এই মহাদেশে স্থায়ীভাবে প্রথম ইউরোপীয় বসবাস শুরু হয়। ১৭৭০ সালে ক্যাপ্টেন জেমস কুক অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং পূর্ব উপকূলের নকশা তৈরি করেন। তিনি এই উপকূলের নাম দেন "নিউ সাউথ ওয়েলস" এবং এটি গ্রেট ব্রিটেনের জন্য দাবি করেন। ১৭৮৩ সালে আমেরিকার উপনিবেশগুলো হারানোর পর ব্রিটিশ সরকার নিউ সাউথ ওয়েলসে একটি নতুন পেনাল কলোনি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ক্যাপ্টেন আর্থার ফিলিপের নেতৃত্বে জাহাজের একটি বহর পাঠায়। একটি ক্যাম্প স্থাপন করে ১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি পোর্ট জ্যাকসনের সিডনি কোভে ইউনিয়ন জ্যাক উত্তোলন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই দিনটিকে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রথমদিকে ছোটোখাটো অপরাধের জন্যও অপরাধীদের স্থানান্তর করে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে আসা হতো এবং মুক্ত বসতি স্থাপনকারীদের (স্বেচ্ছায় অভিবাসী) অধীনে শ্রমিক অথবা দাসি হিসেবে নিযুক্ত করা হতো। যদিও বেশিরভাগ আসামীরাই মুক্তি পেয়ে ঔপনিবেশিক সমাজে বসতি স্থাপন করেছিল, তবে আসামীদের কর্তৃক কিছু বিদ্রোহও সংগঠিত হয়েছিল, কিন্তু সামরিক আইন জারি করার মাধ্যমে তা দমন করা হয়েছিল। ১৮০৮ সালের রম বিদ্রোহ অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে একমাত্র সফল সশস্ত্র সরকার দখল, যার মাধ্যমে দুই বছরের সামরিক শাসনের সূচনা হয়েছিল। পরের দশকে গভর্নর ল্যাচলান ম্যাককুয়ারি কর্তৃক সূচিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার নিউ সাউথ ওয়েলসকে শাস্তিমূলক উপনিবেশ থেকে একটি সুশীল সমাজে রূপান্তরিত করেছিল। উল্লেখ না করলেই নয়, সাধারন অপরাধীদের চেয়ে রাজবন্দিদের সংখ্যই বেশী ছিল অষ্ট্রেলিয়ায়। এরমধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছেন ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্ট। তাকে ছোট্ট একটি কুঠরিতে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, যেখানে নেপোলিয়ান দাড়ানো জায়গাটাও পাননি। কেবলমাত্র শুয়ে বসে থাকেতে পরেতেন। বসতি স্থাপনের পর ১৫০ বছর ধরে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের কারণে আদিবাসী জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। বসতি স্থাপনকারীদের সাথে সীমান্ত সংঘর্ষের ফলে আরও হাজার হাজার আদিবাসী মারা গেছেন। উপনিবেশ সম্প্রসারণ ব্রিটিশ উপনিবেশগুলো প্রথমদিকে কেবল সমুদ্রতীরের নিকটবর্তী এলাকা বরাবর বৃদ্ধি পেলেও ১৯শ শতাব্দীর তারা মহাদেশের অভ্যন্তরে বসতি স্থাপন করা শুরু করে। ১৮০৩ সালে তাসমানিয়ায় বসতি স্থাপন করা হয়েছিল। ১৮১৩ সালে গ্রেগরি ব্ল্যাক্সল্যান্ড, উইলিয়াম লসন এবং উইলিয়াম ওয়েন্টওয়ার্থ সিডনীর পশ্চিমে ব্লু পর্বতমালা অতিক্রম করলে পর ইউরোপীয় বসতি মহাদেশের ভিতরের দিকে প্রসারিত হতে শুরু করে। ১৮২৭ সালে মেজর এডমন্ড লকিয়ার কিং জর্জ সাউন্ডে (বর্তমানে আলবানি) একটি বসতি স্থাপন করার মাধ্যমে ব্রিটিশরা সমগ্র অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ তাদের বলে দাবী করেছিল। ১৮২৯ সালে সোয়ান রিভার কলোনি (বর্তমান পার্থ) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে আয়তনের দিক থেকে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে ১৮২৫ সালে তাসমানিয়া, ১৮৩৬ সালে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, ১৮৪১ সালে নিউজিল্যান্ড, ১৮৫১ সালে ভিক্টোরিয়া এবং ১৮৫৯ সালে কুইন্সল্যান্ড নামের পৃথক উপনিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া একটি "মুক্ত প্রদেশ" হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি কখনই শাস্তিমূলক উপনিবেশ ছিল না। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়াও মুক্ত প্রদেশ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হলেও পরে অপরাধীদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল। ১৮৬৮ সালে এখানে সর্বশেষ অপরাধি স্থানান্তর করা হয়েছিল, যার কয়েক দশক আগেই অন্যান্য উপনিবেশে অপরাধি স্থানান্তর বন্ধ করা হয়েছিল। ১৮২৩ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসের গভর্নর কর্তৃক মনোনীত একটি আইন পরিষদ ও একটি নতুন সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ঔপনিবেশিক গভর্নরদের ক্ষমতাকে সীমিত করে ফেলে। ১৫৮৮ এবং ১৮৯০ সালের মধ্যে ছয়টি উপনিবেশ পৃথকভাবে দায়িত্বশীল সরকার অর্জন করেছিল এবং এভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ থাকাবস্থায় উপনিবেশগুলো বেশিরভাগ বিষয়বস্তু নিজস্বভাবে পরিচালনা করার পাশাপাশি নির্বাচনী গণতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল। লন্ডনের উপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে কিছু বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ সংরক্ষিত ছিল, বিশেষ করে বৈদেশিক সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা। ১৯শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বার্ক এবং উইলসের মতো অনুসন্ধানকারীরা এই মহাদেশের কৃষি সম্ভাবনা নির্ধারণ করতে এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের উত্তর খুজতে মহাদেশের আরও অভ্যন্তরীণ অংশে ভ্রমণ করেন। ১৮৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে সোনা সন্ধানী কতগুলো অভিযানের ফলে চীন, উত্তর আমেরিকা এবং মহাদেশীয় ইউরোপ থেকে নতুন অভিবাসীদের আগমন ঘটে, সেইসাথে বুশরাঙ্গিং এবং নাগরিক অস্থিরতার প্রাদুর্ভাব ঘটে; ১৮৫৪ সালে যখন ব্যালারাট খনির শ্রমিকরা সোনার লাইসেন্স ফি এর বিরুদ্ধে ইউরেকা বিদ্রোহ শুরু করে তখন এই স্বর্ণ অভিযান শীর্ষে উঠে গিয়েছিল। বিশ্বযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেশন বহুযুগের পরিকল্পনা, সংবিধানিক অধিবেশন ও সংশোধনীর পর ১৯০১ সালের ১লা জানুয়ারি উপনিবেশসমূহের ফেডারেশন অর্জনের মাধ্যমে কমনওয়েলথ অব অস্ট্রেলিয়া রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল এবং অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল। ১৯০৭ এর ইম্পেরিয়াল কনফারেন্সের পর অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত স্বায়ত্তশাসিত উপনিবেশের এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের, এবং ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। ব্রিটেনের ওয়েস্টমিনস্টারের ১৯৩১ সালের সংবিধি আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে বেশিরভাগ সাংবিধানিক সংযোগের সমাপ্তি ঘটায়। ১৯৪২ সালে অস্ট্রেলিয়া এটি গ্রহণ করেছিল, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্ট কর্তৃক পাসকৃত আইনের বৈধতা নিশ্চিত করার জন্য এটি ১৯৩৯ সালে পেছানো হয়েছিল। সরকার ও রাজনীতি এখানে পার্লামেন্টেরিও গণতান্ত্রিক রাজতন্ত্র রয়েছে যেখানে তৃতীয় চার্লস রাজা হিসেবে স্বীকৃত। রাজার প্রতিনিধি হিসেবে একজন গভর্নর জেনারেল থাকেন। প্রতি ৩ বছর সাধারণ নিবার্চন অনুষ্ঠিত হয়। বৈদেশিক সম্পর্ক দেশটির সঙ্গে অন্যান্য দেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই দেশের পাসপোর্টে ১০৯টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করা যায়, যা পাসপোর্ট শক্তি সূচকে ৭ম স্থানে রয়েছে। অর্থনীতি উন্নত অর্থনীতির দেশ এটি। দেশটির স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন মান ভারতের অর্ধেক। আরও দেখুন কন্টিনেন্টাল ইউনিয়ন তথ্যসূত্র টীকা তালিকা বহিঃসংযোগ অস্ট্রেলিয়ার সম্বন্ধে থেকে বিদেশ ব্যাপার এবং বাণিজ্যের বিভাগ অস্ট্রেলিয়ার সরকারি এন্ট্রি পয়েন্ট (কেন্দ্রীয়, রাজ্য এবং ভূখণ্ড) অস্ট্রেলিয়ার সরকারি এন্ট্রি ওয়েবসাইট অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট: মন্ত্রণালয় তালিকা Australian Bureau of Statistics সম্প্রদায় সংস্থা ওয়েবসাইট সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান পর্যটন অস্ট্রেলিয়া অস্ট্রেলিয়া at UCB Libraries GovPubs ওশেনিয়া জি২০ সদস্য অস্ট্রেলিয়া (মহাদেশ) ওশেনিয়ার রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র অস্ট্রেলেশিয়ার রাষ্ট্র ওইসিডি সদস্য আন্তঃমহাদেশীয় রাষ্ট্র ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Australia
Australia
Australia, officially the Commonwealth of Australia, is a country comprising the mainland of the Australian continent, the island of Tasmania, and numerous smaller islands. It is the largest country by area in Oceania and the world's sixth-largest country. Australia is the oldest, flattest, and driest inhabited continent, with the least fertile soils. It is a megadiverse country, and its size gives it a wide variety of landscapes and climates including deserts and tropical rainforests. The ancestors of Aboriginal Australians began arriving from south-east Asia 50,000 to 65,000 years ago, during the last glacial period. They settled on the continent and formed approximately 250 distinct language groups by the time of European settlement, maintaining some of the longest known continuing artistic and religious traditions in the world. Australia's written history commenced with Dutch exploration of most of the coastline in the 17th-century. British colonisation began in 1788 with the establishment of the penal colony of New South Wales. By the mid-19th century, most of the continent had been explored by European settlers and five additional self-governing British colonies were established, each gaining responsible government by 1890. The colonies federated in 1901, forming the Commonwealth of Australia. This continued a process of increasing autonomy from the United Kingdom, highlighted by the Statute of Westminster Adoption Act 1942, and culminating in the Australia Acts of 1986. Australia is a federal parliamentary constitutional monarchy comprising six states and ten territories. Its population of over 27 million is highly urbanised and heavily concentrated on the eastern seaboard. Canberra is the nation's capital, while its most populous cities are Sydney and Melbourne, both with a population of over 5 million. Australia is culturally diverse and has one of the highest foreign-born populations in the world. It has a highly developed market economy and one of the highest per capita incomes globally. Its abundant natural resources and well-developed international trade relations are crucial to the country's economy. It ranks highly for quality of life, health, education, economic freedom, civil liberties and political rights. Australia is a middle power, and has the world's thirteenth-highest military expenditure. It is a member of international groups including the United Nations; the G20; the OECD; the World Trade Organization; Asia-Pacific Economic Cooperation; the Pacific Islands Forum; the Pacific Community; the Commonwealth of Nations; and the defence and security organisations ANZUS, AUKUS, and the Five Eyes. It is also a major non-NATO ally of the United States.
1172
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%85%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
অস্ট্রিয়া
অস্ট্রিয়া ( ও্যস্টারাইশ্‌, ক্রোয়েশীয় ভাষায়: Austrija আউস্ত্রিয়া, হাঙ্গেরীয় ভাষায়: Ausztria অউস্ত্রিয়, স্লোভেনীয় ভাষায: Avstrija আভ্‌স্ত্রিয়া) পশ্চিম ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। স্থলবেষ্টিত এই দেশের উত্তরে জার্মানি ও চেক প্রজাতন্ত্র, পূর্বে স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি, দক্ষিণে স্লোভেনিয়া ও ইতালি, এবং পশ্চিমে সুইজারল্যান্ড ও লিশ্‌টেন্‌ষ্টাইন। অস্ট্রিয়া মূলত আল্পস পর্বতমালার উপরে অবস্থিত। দেশটির তিন-চতুর্থাংশ এলাকাই পর্বতময়। অস্ট্রিয়া একটি সংসদীয় গণতন্ত্র। এখানে ৯টি ফেডারেল রাজ্য রয়েছে। এটি ইউরোপের ৬টি রাষ্ট্রের অন্যতম যারা স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষতা ঘোষণা করেছে। অস্ট্রিয়া ১৯৫৫ থেকে জাতিসংঘের এবং ১৯৯৫ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। অস্ট্রিয়া অতীতে হাবসবুর্গ রাজাদের অধীনস্থ একটি বিস্তৃত শক্তিশালী সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র ছিল। ভিয়েনা ছিল সেই সাম্রাজ্যের রাজকীয় রাজধানী। ভিয়েনা এখনও বিশ্বের অন্যতম প্রধান শহর হিসেবে আদৃত। এর রাজকীয় রূপ, অসাধারণ বারোক স্থাপত্য, সঙ্গীত ও নাট্যকলা জগদ্বিখ্যাত। ভিয়েনা বর্তমানে অস্ট্রিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) শেষে অস্ট্রিয়ার অধীনস্থ বহুজাতিক সাম্রাজ্যটি ভেঙে যায় এবং তার স্থানে একাধিক জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। অস্ট্রিয়া নিজে একটি ক্ষুদ্র স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। নতুন রাষ্ট্রগুলি বাণিজ্য বাধার সৃষ্টি করলে অস্ট্রিয়া তার প্রাক্তন বৈদেশিক বাজার এবং জ্বালানির উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দেশটির অর্থনীতি বৈদেশিক সাহায্যের পর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অস্ট্রিয়াতে রক্ষণশীল শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৩০-এর দশকের অর্থনৈতিক মন্দা দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়। যে সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি ভিয়েনাকে সামাজিক গণতন্ত্রের মডেল হিসেবে গড়ে তুলেছিল, ১৯৩৪ সালে তাদের পতন ঘটে এবং ডানপন্থী স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৯ সালে নাৎসি জার্মানি অস্ট্রিয়াকে নিজেদের সাথে সংযুক্ত করে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) জার্মানির পরাজয়ের পর মিত্রশক্তি অস্ট্রিয়া দখল করে। এসময় মার্কিন ও সোভিয়েত সেনারা এখানে অবস্থান করছিল। ১৯৫৫ সালে অস্ট্রিয়া আবার স্বাধীন হয় এবং তারপর থেকে দেশটির অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে। বর্তমানে দেশটি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। রপ্তানি ও পর্যটন শিল্প দেশটির আয়ের বড় উৎস। ভিয়েনার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং অস্ট্রিয়ার অসাধারণ সৌন্দর্যময় পার্বত্য ভূদৃশ্যাবলীর টানে এখানে বহু পর্যটক বেড়াতে আসেন। ইতিহাস অস্ট্রিয়ার ইতিহাস ৯৭৬ সালে শুরু হয়। ঐ বছর লেওপোল্ড ফন বাবেনবের্গ বর্তমান অস্ট্রীয় এলাকার বেশির ভাগ অংশের শাসকে পরিণত হন। ১২৭৬ সালে রাজা প্রথম রুডলফ হাব্‌স্‌বুর্গ বংশের প্রথম রাজা হিসেবে অস্ট্রিয়ার শাসক হন। হাব্‌স্‌বুর্গ রাজবংশের রাজারা প্রায় ৭৫০ বছর অস্ট্রিয়া শাসন করেন। রাজনৈতিক বিবাহ সম্পাদনের মাধ্যমে হাব্‌স্‌বুর্গেরা মধ্য ইউরোপের এক বিরাট এলাকা দখলে সক্ষম হন। তাদের ভূসম্পত্তি এমনকি আইবেরীয় উপদ্বীপ (বর্তমান স্পেন) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ১৬শ ও ১৭শ শতকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের আক্রমণের ফলে অস্ট্রীয় এলাকাটি ধীরে ধীরে দানিউব নদীর অববাহিকার কেন্দ্রীয় ইউরোপীয় অংশটিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ১৮৪৮ সালে প্রথম ফ্রান্‌ৎস ইয়োজেফ সিংহাসনে আরোহণ করেনে এবং ১৯১৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তার আমলে অস্ট্রীয় ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। ১৮৬৭ সালে অস্ট্রীয় সাম্রাজ্যের ভেতরে হাঙ্গেরি আগের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক স্বাধীনতা পায়, ফলে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় দ্বৈত রাজ্যব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটে। ২০শ শতকে এসে রাজনৈতিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি পায় এবং ১ম বিশযুদ্ধ শেষে সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে। ঐ সময় অস্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র স্বাধীনতা ঘোষণা করে, যার সীমানা ও বর্তমান অস্ট্রিয়ার সীমানা মোটামুটি একই রকম। ১৯১৯ সালে সাঁ জেরমাঁ-র চুক্তির ফলে হাব্‌স্‌বুর্গ রাজবংশ সরকারিভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং অস্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৮ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত অস্ট্রিয়াতে রাজনৈতিক সংঘাত বৃদ্ধি পায়। ১৯২০-এর দশকের শেষে এবং ১৯৩০-এর দশকের শুরুতে আধা-সামরিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলি হরতাল ও সহিংস সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। বেকারত্বের হার বেড়ে ২৫% হয়ে যায়। ১৯৩৪ সালে একটি কর্পোরেশনবাদী স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় আসে। ১৯৩৪ সালের জুলাই মাসে অস্ট্রীয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক (নাৎসি) দল কু-এর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ১৯৩৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মানির সামরিক আগ্রাসনের হুমকির মুখে অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কুর্ট শুশনিগ অস্ট্রীয় নাৎসিদের সরকারে নিতে বাধ্য হন। ১৯৩৮ সালের ১২ই মার্চ জার্মানি অস্ট্রিয়াতে সৈন্য পাঠায় এবং দেশটিকে জার্মানির অংশভুক্ত করে নেয়। এই ঘটনাটির ঐতিহাসিক নাম দেয়া হয়েছে আন্‌শ্লুস (জার্মান ভাষায় Anschluss)। সেসময় বেশির ভাগ অস্ট্রীয় এই আনশ্লুস সমর্থন করেছিল। ১৯৩৮ সালের মার্চ থেকে ১৯৪৫ সালের এপ্রিলের মধ্যে অস্ট্রিয়ার অধিকাংশ ইহুদীকে হয় হত্যা করা হয় অথবা নির্বাসনে যেতে বাধ্য করা হয়। সিন্তি, জিপসি, সমকামী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্ব্বীদেরও একই পরিণাম ঘটে। ১৯৩৮ সালের আগে অস্ট্রিয়াতে ২ লক্ষ ইহুদী বাস করত। ১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে এদের অর্ধেকের বেশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। জার্মানরা ইহুদীদের ব্যবসা ও দোকানপাটে লুটতরাজ চালায়। প্রায় ৩৫ হাজার ইহুদীকে পূর্ব ইউরোপে গেটো বা বস্তিতে পাঠানো হয়। প্রায় ৬৭ হাজার ইহুদীকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়; যুদ্ধশেষে এদের মাত্র ২ হাজার বেঁচে ছিল। ১৯৪৫ সালে জার্মানির পরাজয়ের পর মিত্রশক্তিরা অস্ট্রিয়াকে চারভাগে ভাগ করে। ১৯৫৫ সালের ২৫শে অক্টোবর নাগাদ এরা সবাই অস্ট্রিয়া ত্যাগ করে এবং অস্ট্রিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা পায়। রাজনীতি অস্ট্রিয়ার রাজনীতি-র ভিত্তি একটি কেন্দ্রীয় সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রী প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থা, যেখানে চ্যান্সেলর হলেন সরকারপ্রধান। এটি একটি বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা। সরকার নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী। আইন প্রণয়ন ক্ষমতা দ্বি-কাক্ষিক সংসদ (জাতীয় কাউন্সিল ও কেন্দ্রীয় কাউন্সিল) ও সরকার, উভয়ের হাতে ন্যস্ত। ১৯৪৯ সাল থেকে রক্ষণশীল দল Austrian People's party ও সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল Social Democratic Party of Austria দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রাধান্য বিস্তার করে আসছে। ভূগোল অস্ট্রিয়াকে তিনটি অসম ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়। এদের মধ্যে বৃহত্তম অংশটি (৬২%) হল আল্পস পর্বতমালার অপেক্ষাকৃত নবীন পাহাড়গুলি। এদের পূর্বে আছে পানোনীয় সমভূমি, এবং দানিউব নদীর উত্তরে আছে বোহেমীয় অরণ্য নামের একটি পুরানো কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিচু গ্রানাইট পাথরে নির্মিত পার্বত্য অঞ্চল। দানিউব নদী দানিউব নদী দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির ডোনাএশিঙেনের কাছ থেকে উৎপত্তি লাভ করে অস্ট্রিয়ার ভেতর দিয়ে পূর্বমুখে প্রবাহিত হয়ে কৃষ্ণসাগরে পতিত হয়েছে। আল্পসের উত্তরের ইন নদী, ৎসালজাখ নদী ও এন্স নদী দানিউবের উপনদী। অন্যদিকে আল্পসের দক্ষিণের অর্থাৎ মধ্য ও পূর্ব অস্ট্রিয়ার গাইল নদী, ড্রাভা নদী, ম্যুর্ৎস নদী ও মুরা নদী সার্বিয়াতে গিয়ে দানিউবে পতিত হয়েছে। আল্পস পর্বতমালা আল্পসের তিনটি প্রধান শাখা, উত্তর চুনাপাথরীয় আল্পস, কেন্দ্রীয় আল্পস, ও দক্ষিণ চুনাপাথরীয় আল্পস অস্ট্রিয়ার পশ্চিম থেকে পূর্ব জুড়ে বিস্তৃত। ৩৭৯৭ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট গ্রোস্‌গ্লকনার অস্ট্রিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। অস্ট্রিয়ার মাত্র ২৮% অঞ্চল সমতল বা অপেক্ষাকৃত কম পাহাড়ি। বোহেমীয় অরণ্য দানিউব উপত্যকার উত্তরে অস্ট্রিয়ার প্রায় ১০% এলাকা জুড়ে অবস্থিত একটি গ্রানাইট মালভূমি এলাকা। অর্থনীতি অস্ট্রিয়ার অর্থনীতি ব্যবস্থাকে একটি সামাজিক বাজার অর্থনীতি হিসেবে গণ্য করা হয়। এর গঠন প্রতিবেশী জার্মানির অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মতন। ২০০৪ সালের তথ্য অনুযায়ী অস্ট্রিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪র্থ ধনী দেশ। এখানকার মাথাপিছু স্থুল জাতীয় উৎপাদন প্রায় ২৭,৬৬৬ ইউরো। কেবন লুক্সেমবুর্গ, আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ড্‌স এই দিক থেকে অস্ট্রিয়ার চেয়ে এগিয়ে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ২০০২-২০০৬ সময়সীমাতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ১ থেকে ৩.৩%-এর মধ্যে স্থিতিশীল ছিল। মধ্য ইউরোপে অবস্থিত বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন সদস্যরাষ্ট্রগুলির (যেগুলি বেশির ভাগই পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত) প্রবেশদ্বার হিসেবে অস্ট্রিয়া গুরুত্ব লাভ করেছে। জনসংখ্যা অস্ট্রিয়ার জনসংখ্যা বর্তমানে ৮,৭২৫,৯৩১ জন। ধর্মবিশ্বাস অস্ট্রিয়াতে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্ম প্রধান। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৭৩.৬% লোক এই ধর্মে বিশ্বাসী। প্রায় ১১.৫% লোক প্রতি রোববারে গির্জায় যান। তবে গির্জায় যাওয়ার পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। লুথেরান খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা ২০০৬ সালে জনসংখ্যার ৪.৭% গঠন করেছে; এরা বেশির ভাগই দক্ষিণ অস্ট্রিয়ার কের্নটেন অঙ্গরাজ্যে বাস করে। অস্ট্রিয়াতে মুসলিম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বর্তমানে এরা জনসংখ্যার ৪.২%। এছাড়াও অস্ট্রিয়াতে স্বল্পসংখ্যক হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ ও ইহুদীবাস করেন। ভাষা অস্ট্রিয়াতে মূলত জার্মান ভাষার একটি পরিবর্তিত রূপ ব্যবহৃত হয়। এর নাম অস্ট্রীয় জার্মান। জার্মান ভাষায় এর নাম Schönbrunner Deutsch (শ্যোনব্রুনার ডয়চ অর্থাৎ রাজকীয় প্রাসাদের জার্মান)। অস্ট্রীয় জার্মান বর্তমান আদর্শ জার্মান ভাষা থেকে বেশ কিছু দিকে থেকে আলাদা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে সমস্ত স্বরধ্বনি আদর্শ জার্মান ভাষায় উচ্চারিত হয়, অস্ট্রীয় জার্মান ভাষায় সেগুলি উচ্চারিত হয় না; কিংবা সামান্য ভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়। অস্ট্রীয় জার্মান ভাষায় নিজস্ব প্রত্যয়েরও (suffix) ব্যবহার আছে। এছাড়া বলা হয়ে থাকে যে অস্ট্রীয় জার্মান খানিকটা নাসিক্য স্বরে (nasalized) বলা হয়ে থাকে। অস্ট্রীয় জার্মান ভাষার উপভাষাগুলিকে আলেমানীয় উপভাষা ও দক্ষিণ বাভারীয় উপভাষা - এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। আলেমানীয় উপভাষা দেশটির পূর্ব এক-তৃতীয়াংশে প্রচলিত (ফোরার্লবের্গ প্রদেশে)। আর দক্ষিণ বাভারীয় উপভাষাগুলি দেশের বাকি অংশে ব্যবহৃত। আলেমানীয় উপভাষাগুলি সুইজারল্যান্ডের জার্মান ও দক্ষিণ-পূর্ব জার্মানির ভাষাগুলির সাথে তুলনীয়। আর দক্ষিণ বাভারীয় উপভাষাগুলি জার্মানির বাভারিয়ার বা বায়ার্নের ভাষাগুলির সাথে তুলনীয়। এছাড়াও অস্ট্রিয়ায় অনেকগুলি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজস্ব ভাষায় কথা বলে থাকে। এগুলির মধ্যে অন্যতম হল ক্রোয়েশীয়, স্লোভেনীয়, হাঙ্গেরীয়, চেক, স্লোভাক এবং জিপসি ভাষাসমূহ। শহর অস্ট্রিয়ার পাঁচটি প্রধান শহর হল ভিয়েনা, গ্রাৎস, লিন্‌ৎস, জাল্‌ৎসবুর্গ এবং ইন্স‌ব্রুক। ভিয়েনা অস্ট্রিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এটি অস্ট্রিয়ার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র। শহরটি দানিউব নদীর দুই তীরে অবস্থিত। এর শহরতলীগুলি পশ্চিমে বিখ্যাত ভিয়েনা অরণ্য পর্যন্ত চলে গেছে। ভিয়েনা ইউরোপের সবচেয়ে রাজকীয় শহরগুলির একটি। এখানে অনেক জমকালো বাসভবন, রাজপ্রাসাদ, পার্ক ও গির্জা আছে। শহরের জনসংখ্যা ১৬ লক্ষের বেশি। গ্রাৎস অস্ট্রিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এটি ষ্টাইয়ারমার্ক প্রদেশের রাজধানী। শহরটি একটি উর্বত উপত্যকায় মুর নদীর তীরে অবস্থিত। গ্রাৎস একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, বাণিজ্য ও শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে প্রায় আড়াই লক্ষ লোকের বাস। লিন্‌ৎস ওবারঅস্টাররাইখ প্রদেশের রাজধানী। এটি দানিউব নদীর তীরে অবস্থিত বন্দর শহর ও শিল্পকেন্দ্র। জাল্‌ৎসবুর্গ অস্ট্রিয়ার সবচেয়ে নয়নাভিরাম শহরগুলির একটি। এটি জাল্‌ৎসাখ নদীর তীরে আল্পস পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত। শহরটি বিখ্যাত সুরকার ভোলফগাং আমাদেউস মোৎসার্টের জন্মস্থান। এখানকার বাৎসরিক সঙ্গীত উৎসবগুলি সারা বিশ্বে পরিচিত। এখানে অনেক পর্যটক বেড়াতে আসেন। ইন্সব্রুক টিরোলিয়ান আল্পস পর্বতমালায় সমুদ্র সমতল থেকে বহু উঁচুতে অবস্থিত একটি শীতকালীন অবকাশ যাপন কেন্দ্র। এটি টিরোল প্রদেশের রাজধানী ও ইন নদীর তীরে অবস্থিত। ইন্সব্রুকের অবস্থান ও সৌন্দর্যের কারণে এখানেও অনেক পর্যটক বেড়াতে আসেন। তথ্যসূত্র আরও দেখুন ইউরোপের রাষ্ট্র ১৯৫৫-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র ওইসিডি সদস্য অর্থনীতি থ্রি সিস ইনিশিয়েটিভের সদস্য রাষ্ট্র ভূমধ্যসাগরীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র ওইসিডি সদস্য সার্বভৌম রাষ্ট্র স্থলবেষ্টিত দেশ
https://en.wikipedia.org/wiki/Austria
Austria
Austria, formally the Republic of Austria, is a country in Central Europe, lying in the Eastern Alps. It is a federation of nine states, one of which is the capital, Vienna, the most populous city and state. Austria is bordered by Germany to the northwest, the Czech Republic to the north, Slovakia to the northeast, Hungary to the east, Slovenia and Italy to the south, and Switzerland and Liechtenstein to the west. The landlocked country occupies an area of 83,879 km2 (32,386 sq mi) and has a population of around 9 million. The area of today's Austria has been inhabited since at least the Paleolithic period. Around 400 BC, it was inhabited by the Celts and then annexed by the Romans in the late 1st century BC. Christianization in the region began in the 4th and 5th centuries, during the late Roman period, followed by the arrival of numerous Germanic tribes during the Migration Period. Austria, as a unified state, emerged from the remnants of the Eastern and Hungarian March at the end of the first millennium, first as a frontier march of the Holy Roman Empire, it then developed into a duchy in 1156, and was made an Archduchy in 1453. Being the heartland of the Habsburg monarchy since the late 13th century, Austria was a major imperial power in Central Europe for centuries and from the 16th century, Vienna was also serving as the Holy Roman Empire's administrative capital. Before the dissolution of the empire two years later, in 1804, Austria established its own empire, which became a great power and one of the largest states in Europe. The empire's defeat in wars and the loss of territories in the 1860s paved the way for the establishment of Austria-Hungary in 1867. After the assassination of Archduke Franz Ferdinand in 1914, Emperor Franz Joseph declared war on Serbia, which ultimately escalated into World War I. The empire's defeat and subsequent collapse led to the proclamation of the Republic of German-Austria in 1918 and the First Austrian Republic in 1919. During the interwar period, anti-parliamentarian sentiments culminated in the formation of an Austrofascist dictatorship under Engelbert Dollfuss in 1934. A year before the outbreak of World War II, Austria was annexed into Nazi Germany by Adolf Hitler, and it became a sub-national division. After its liberation in 1945 and a decade of Allied occupation, the country regained its sovereignty and declared its perpetual neutrality in 1955. Austria is a semi-presidential representative democracy with a popularly elected president as head of state and a chancellor as head of government and chief executive. Austria has the 13th highest nominal GDP per capita with high standards of living. The country has been a member of the United Nations since 1955 and of the European Union since 1995. It hosts the Organization for Security and Co-operation in Europe (OSCE) and the Organization of the Petroleum Exporting Countries (OPEC) and is a founding member of the Organisation for Economic Co-operation and Development (OECD) and Interpol. It also signed the Schengen Agreement in 1995, and adopted the euro currency in 1999.
1173
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8
আজারবাইজান
আজারবাইজান (আজারবাইজানি ভাষায়: Azərbaycan আজ়্যার্বায়জান্‌), সরকারী নাম আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র (আজারবাইজানি ভাষায়: Azərbaycan Respublikası) পূর্ব ইউরোপের একটি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র। এটি কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের মধ্যবর্তী স্থলযোটক দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত রাষ্ট্র। আয়তন ও জনসংখ্যার দিকে থেকে এটি ককেশীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বৃহত্তম। দেশটির উত্তরে রাশিয়া, পূর্বে কাস্পিয়ান সাগর, দক্ষিণে ইরান, পশ্চিমে আর্মেনিয়া, উত্তর-পশ্চিমে জর্জিয়া। এছাড়াও ছিটমহল নাখশিভানের মাধ্যমে তুরস্কের সাথে আজারবাইজানের একচিলতে সীমান্ত আছে। আর্মেনিয়ার পর্বতের একটি সরু সারি নাখশিভান ও আজারবাইজানকে পৃথক করেছে। আজারবাইজানের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের একটি এলাকা নাগোর্নো-কারাবাখের আনুগত্য বিতর্কিত। কাস্পিয়ান সাগরে অবস্থিত অনেকগুলি দ্বীপও আজারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত। আজারবাইজানের রাষ্ট্রভাষা আজারবাইজানি। কাস্পিয়ান সাগরতীরে অবস্থিত বন্দর শহর বাকু আজারবাইজানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। ১৮শ ও ১৯শ শতকে ককেশীয় এই দেশটি পর্যায়ক্রমে রুশ ও পারস্যদেশের শাসনাধীন ছিল। রুশ গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে ১৯১৮ সালের ২৮শে মে তৎকালীন আজারবাইজানের উত্তর অংশটি একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কিন্তু মাত্র ২ বছরের মাথায় ১৯২০ সালে বলশেভিক লাল সেনারা এটি আক্রমণ করে আবার রুশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে এবং ১৯২২ সালে দেশটি আন্তঃককেশীয় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৩৬ সালে আন্তঃককেশীয় সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রটি ভেঙে তিনটি আলাদা প্রজাতন্ত্র আজারবাইজান, জর্জিয়া ও আর্মেনিয়াতে ভেঙে দেওয়া হয়। তখন থেকেই আজারবাইজানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং নাগোর্নো-কারাবাখ এলাকার খ্রিস্টান আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব্বের সূত্রপাত। নাগোর্নো-কারাবাখের জনগণ আর্মেনিয়ার সাথে একত্রিত হতে চায়। ১৯৯১ সালের ২০শে অক্টোবর আজারবাইজান স্বাধীনতা লাভ করলে এই দ্বন্দ্ব্ব সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নেয়। ফলে নতুনভাবে স্বাধীন দেশটির প্রথম বছরগুলি রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক অবনতি, এবং নাগোর্নো-কারাবাখের যুদ্ধে অতীবাহিত হয়। ১৯৯৪ সালের মে মাসে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর দীর্ঘ ২৮ বৎসর নগোর্নো কারাবাখ এবং সংলগ্ন ৭টি আজারবাইজানি জেলা বিচ্ছিন্নতাবাদী আর্মেনীয়দের নিয়ন্ত্রনাধীন ছিল,কিন্তু ২০২০ সালের ২৮শে অক্টোবর থেকে আজারবাইজান তাঁদের দখল হয়ে যাওয়া এলাকা উদ্ধারে সামরিক অভিযান শুরু করলে ৪৮ দিন পর এলাকাটি তাঁদের নিয়ন্ত্রনে আসে ।বর্তমানে নাগোর্নো-কারাবাখের কিছু অংশ এবং ১৯৯৪ সালে আর্মেনিয়া কর্তৃক দখল হয়ে যাওয়া ৭টি আজারবাইজানি জেলা আজারবাইজানের সামরিক নিয়ন্ত্রণে আছে। ১৯৯৫ সালে আজারবাইজানে প্রথম আইনসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ঐ বছরই সোভিয়েত-উত্তর নতুন সংবিধান পাস করা হয়। আজারবাইজানের বাকু তেলক্ষেত্রগুলি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেলক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। কিন্তু দুর্নীতি, সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ এবং দুর্বল সরকারের কারণে দেশটি খনিজ সম্পদ থেকে সম্ভাব্য মুনাফা অর্জনে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। রাজনীতি আজারবাইজানে রাজনীতি-র ভিত্তি একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতন্ত্র, যেখানে আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রপ্রধান, এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারপ্রধান। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে, আইন প্রণয়ন ক্ষমতা সরকার ও সংসদ উভয়ের হাতে ন্যস্ত। বিচার বিভাগ স্বাধীন। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ আজারবাইজান ১০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল;৬৬ টি রেয়ন এবং ৭৭ টি শহরে বিভক্ত। সামরিক শক্তি বিমান বাহিনী : ১৩টি মিগ্-২৯ বিমান রয়েছে বাহিনীর কাছে। স্থল বাহিনী : ৪০০ কিমি পরিসীমার LORA ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা রয়েছে। ভূগোল আজারবাইজান ইউরেশিয়ার ককেশাস অঞ্চলে অবস্থিত। এই দেশটির ভূগোলে তিনটি মূল বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়: কাস্পিয়ান সাগর, যার তটরেখা দেশটির পূর্বে একটি প্রাকৃতিক সীমানা সৃষ্টি করেছে। উত্তরের বৃহত্তর ককেশাস পর্বতমালা। দেশটির কেন্দ্রভাগের বিস্তীর্ণ সমতলভূমি। আজারবাইজান মোটামুটি পর্তুগাল বা মার্কিন অঙ্গরাজ্য মেইন-এর সম-আয়তনবিশিষ্ট। দেশটির আয়তন প্রায় ৮৬,৬০০ বর্গকিলোমিটার। রাজদান প্রবাহিত হয়ে আরাসে পড়েছে। উল্লেখ্য বিতর্কিত নাগার্নো- কারাবাগ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়ার সাথে আজারবাইজানের ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে সামরিক সংঘাত চলে আসছে।এতে এ পর্যন্ত দু দেশের প্রায় ৩০০ এর বেশি বেসামরিক লোকজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে অর্থনীতি আজারবাইজানের অর্থনীতি বর্তমানে একটি সন্ধি পর্যায়ে বিদ্যমান, যেখানে সরকার এখনও একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে চলেছে। আজারবাইজানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ তেলের ভাণ্ডার। বৈচিত্র‌্যময় জলবায়ু অঞ্চলের উপস্থিতির কারণে দেশটির কৃষি খাতের উন্নতির সম্ভাবনাও প্রচুর। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের সহযোগিতায় আজারবাইজান একটি সফল অর্থনৈতিক সুস্থিতিকরণ প্রকল্প হাতে নেয়, যার ফলশ্রুতিতে ২০০০ সাল থেকে দেশটির অর্থনীতি ১০% হারে প্রবৃদ্ধি লাভ করে চলেছে। ২০০৭ সালে আজারবাইজানের স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন প্রায় ২৫% বৃদ্ধি পায়। মূলত তেল খাতই এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। ২০০৭ সালের স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (GDP) ৫২.৮% খনিজ তেল খাত থেকে আসে। আজারবাইজানের মুদ্রার নাম মানাত। পরিবহন গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরগুলো জনমিতি জাতিগোষ্ঠী আজারবাইজানে প্রায় ৯৮ লক্ষ ২৪ হাজার ৯০০ লোকের বাস। এদের মধ্যে ৯৫% লোক জাতিগতভাবে আজারবাইজানি। অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির লোকের মধ্যে লেজগীয়, রুশ, আর্মেনীয় ও তালিশ জাতির লোক প্রধান। ধর্ম আজারবাইজানের ৯৭ ভাগ মানুষ মুসলমান। এর মধ্যে ৮৫% শিয়া এবং ১৫% সুন্নি। আজারবাইজান বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক শিয়াবহুল দেশ। দেশটির বৈচিত্র্যময় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষও রয়েছে। সংবিধানের ৪৮ তম ধারা অনুযায়ী আজারবাইজান একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র যা সকল মতাবলম্বীদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করে থাকে। ২০০৬–২০০৮ সালের একটি গ্যালআপ ভোটগ্রহণ অনুসারে, অংশগ্রহণকারীদের মাত্র ২১% মনে করেন যে ধর্ম তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দেশটির সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা প্রায় ২৮০,০০০ (৩.১%) যাদের বেশিরভাগ রুশ ও জর্জীয় অর্থডক্স এবং আর্মেনীয় প্রেরিতীয়। ২০০৩ সালে রোমান ক্যাথলিকদের সংখ্যা ছিল ২৫০। ২০০২ সালের জরিপমতে অন্যান্য খ্রিষ্টান মণ্ডলীগুলোর মধ্যে রয়েছে লুথারবাদী, বাপ্তিস্মবাদী ও মলোকান। এছাড়া দেশটিতে ছোট একটি প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ও রয়েছে। আজারবাইজানে একটি প্রাচীন ইহুদি সম্প্রদায়েরও বসবাস রয়েছে যাদের ইতিহাস অন্ততপক্ষে ২০০০ বছর পুরনো। ইহুদি সংগঠনসমূহের অনুমানমতে আজারবাইজানে মোট ইহুদিসংখ্যা ১২,০০০। এছাড়াও আজারবাইজানে বাহাই ধর্ম, ইস্কন ও জেহোভার সাক্ষীর পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। কিছু ধর্মীয় সম্প্রদায় ধর্মীয় স্বাধীনতার উপভোগের ক্ষেত্রে অদাপ্তরিক বাধার সম্মুখীন হয়। ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি রিপোর্ট মতে নির্দিষ্ট কিছু মুসলমান ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজারবাইজানে ধরপাকড়ের শিকার হন এবং অনেক ধর্মীয় গোষ্ঠী আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের ধর্মীয় সংগঠন বিষয়ক জাতীয় পরিষদে (এসসিডাব্লিউআরএ) নিবন্ধিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হয়। সংস্কৃতি তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সরকার Global Integrity Report: Azerbaijan has information on anti-corruption efforts State Statistical Committee of Azerbaijan রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ United Nations Office in Azerbaijan সংস্কৃতি এবং পর্যটন মন্ত্রণালয় সংবাদ মিডিয়া আজকের আজারবাইজান Trend News আজারবাইজান প্রেস সংস্থা AzerNEWS পর্যটন আজারবাইজান পর্যটন ওয়েবসাইট সাধারণ তথ্য আজারবাইজান কোম্পানি আজারবাইজান হোটেল আজারবাইজানের সম্বন্ধে দেশ বৃত্তান্ত বিবিসি সংবাদ থেকে। আজারবাইজান at UCB Libraries GovPubs অন্যান্য আন্তর্জাতিক আজারবাইজান ম্যাগাজিন। এশিয়ার রাষ্ট্র ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র ১৯৯১-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র স্বাধীন রাষ্ট্রের কমনওয়েলথের সদস্য রাষ্ট্র ইউরোপ কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্র তুর্কি সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য রুশ ভাষী দেশ ও অঞ্চল তুর্কি রাষ্ট্র সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র আন্তঃমহাদেশীয় রাষ্ট্র ককেশাস ইউরোপের রাষ্ট্র পশ্চিম এশিয়ার রাষ্ট্র স্থলবেষ্টিত দেশ প্রজাতন্ত্র ১৯৯১-এ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত ১৯৯১-এ ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Azerbaijan
Azerbaijan
Azerbaijan, officially the Republic of Azerbaijan, is a transcontinental country located at the boundary of Eastern Europe and West Asia. It is a part of the South Caucasus region and is bounded by the Caspian Sea to the east, Russia's republic of Dagestan to the north, Georgia to the northwest, Armenia and Turkey to the west, and Iran to the south. Baku is the capital and largest city. The territory of what is now Azerbaijan was first ruled by Caucasian Albania and later various Persian empires. Until the 19th century, it remained part of Qajar Iran, but the Russo-Persian wars of 1804–1813 and 1826–1828 forced the Qajar Empire to cede its Caucasian territories to the Russian Empire; the treaties of Gulistan in 1813 and Turkmenchay in 1828 defined the border between Russia and Iran. The region north of the Aras was part of Iran until it was conquered by Russia in the 19th century, where it was administered as part of the Caucasus Viceroyalty. By the late 19th century, an Azerbaijani national identity emerged when the Azerbaijan Democratic Republic proclaimed its independence from the Transcaucasian Democratic Federative Republic in 1918, a year after the Russian Empire collapsed, and became the first secular democratic Muslim-majority state. In 1920, the country was conquered and incorporated into the Soviet Union as the Azerbaijan SSR. The modern Republic of Azerbaijan proclaimed its independence on 30 August 1991, shortly before the dissolution of the Soviet Union in the same year. In September 1991, the ethnic Armenian majority of the Nagorno-Karabakh region formed the self-proclaimed Republic of Artsakh, which became de facto independent with the end of the First Nagorno-Karabakh War in 1994, although the region and seven surrounding districts remained internationally recognized as part of Azerbaijan. Following the Second Nagorno-Karabakh War in 2020, the seven districts and parts of Nagorno-Karabakh were returned to Azerbaijani control. An Azerbaijani offensive in 2023 ended the Republic of Artsakh and resulted in the flight of Nagorno-Karabakh Armenians. Azerbaijan is a unitary semi-presidential republic. It is one of six independent Turkic states and an active member of the Organization of Turkic States and the TÜRKSOY community. Azerbaijan has diplomatic relations with 182 countries and holds membership in 38 international organizations, including the United Nations, the Council of Europe, the Non-Aligned Movement, the OSCE, and the NATO PfP program. It is one of the founding members of GUAM, the CIS, and the OPCW. Azerbaijan is also an observer state of the WTO. The vast majority of the country's population (97%) is nominally Muslim, but the constitution does not declare an official religion and all major political forces in the country are secular. Azerbaijan is a developing country and ranks 91st on the Human Development Index. The ruling New Azerbaijan Party, in power since 1993, has been accused of authoritarianism under president Heydar Aliyev and his son Ilham Aliyev, and deteriorating the country's human rights record, including increasing restrictions on civil liberties, particularly on press freedom and political repression.
1174
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%20%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%AA%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9C
বাহামা দ্বীপপুঞ্জ
বাহামা দ্বীপপুঞ্জ( ), অফিসিয়ালি কমনওয়েলথ অফ দ্য বাহামাস নামে পরিচিত, আটলান্টিক মহাসাগরের ওয়েস্ট ইন্ডিজের লুকায়ান দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত একটি দেশ। এটি লুকায়ান দ্বীপপুঞ্জের ভূমির ৯৭% জুড়ে অবস্থিত এবং দ্বীপপুঞ্জের ৮৮% জনসংখ্যার বাসস্থান । সমগ্র দ্বীপপুঞ্জ ৭০০এর বেশি দ্বীপ, অণুদ্বীপ, প্রবালদ্বীপ নিয়ে গঠিত। দ্বীপটি আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে, কিউবার উত্তরে অবস্থিত, হিস্পানিওলা (হাইতি এবং ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র )এবং তুর্কস ও কাইকোস দ্বীপপুঞ্জের উত্তর-পশ্চিমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্ ফ্লোরিডার দক্ষিণ-পূর্বে এবং ফ্লোরিডা র পূর্বে অবস্থিত। এর রাজধানী নাসাউ নিউ প্রভিডেন্স দ্বীপে অবস্থিত। দ্য রয়েল বাহামাস ডিফেন্স ফোর্সের তথ্য অনুযায়ী বাহামা ৪,৭০,০০০ কিমি২ (১,৮০,০০০ মা২) সমুদ্রপৃষ্ঠ জুড়ে রয়েছে । বাহামা দ্বীপপুঞ্জের আদি বাসিন্দাদের বলা হয় লুকায়ান যারা ছিল আরকান ভাষী তাইনোদের একটি শাখা। লুকায়ানরা ছিল নিরীহ শান্তিপ্রিয় জাতি। কলম্বাসই প্রথম ইউরোপীয় যিনি ১৪৯২ সালে "নতুন পৃথিবী " হিসেবে এ দ্বীপ আবিষ্কার করেন। কলম্বাসকে অনুসরণ করে পরবর্তীকালে যে সব স্প্যানিশরা বাহামায় আসে তারা স্থানীয় লুকায়ানদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাদের দূরের দ্বীপে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রী করে দেয়। যার ফলে বাহামা দ্বীপপুঞ্জ ১৫১৩ থেকে ১৬৪৮ সাল পর্যন্ত প্রায় জনমানবহীন ছিল যতদিন না ইংরেজ ঔপনিবেশিকরা এখানে বসতি স্থাপন শুরু করে। ইংরেজরা বাহামা সংলগ্ন সমুদ্রপথে জলদস্যুদের উপদ্রব বন্ধ করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়। ১৭১৮ সালে বাহামা দ্বীপপুঞ্জ ব্রিটিশ রয়েল কলোনী হিসেবে স্বীকৃতি পায়। মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধে ইংরাজদের পরাজয়ের পর হাজার হাজার ইংরাজ অনুগামী তাদের ক্রীতদাসদের নিয়ে আমেরিকা থেকে বাহামায় চলে আসে ও বৃটিশ সরকারের অনুদান পাওয়া জমিতে আবাদের, প্রধানত তুলাচাষের, কাজ শুরু করে। সেই আফ্রিকান ক্রীতদাস ও তাদের বংশধররাই বর্তমান বাহামার সিংহভাগ জনসংখ্যা গঠন করে । ১৮০৭ সালে বৃটিশ সরকার আন্তর্দেশীয় দাসব্যবসায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এসময় অবৈধভাবে দাসব্যবসায়ে লিপ্ত এরকম বহু জাহাজ থেকে ইংরাজ রয়েল নেভি ক্রীতদাসদের মুক্ত করে ও তাদের বাহামায় পুনর্বাসিত করা হয়। ১৮২০ সালে সেমিনোল যুদ্ধের সময় কিছু উত্তর আমেরিকান ক্রীতদাস ও সেমিনোল ফ্লোরিডা থেকে পালিয়ে বাহামায় চলে আসে। তবে বাহামার অভ্যন্তরে, প্রধানত আবাদগুলিতে, ক্রীতদাসপ্রথা চালু ছিল ১৮৩৪ সাল পর্যন্ত। ১৮৩৪ সালে বৃটিশ সরকার আইন করে দাসপ্রথার সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটালে বাহামাতেও এর অবসান ঘটে। বর্তমানে আফ্রো-বাহামিয়ানদের সংখ্যা ৩৩২,৬৩৪ জন যা মোট জনসংখ্যার ৯০%। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বাহামা ইংরাজ শাসনের অধীনে ছিল যদিও স্বায়ত্তশাসনের দাবি প্রধানত কৃষ্ণাঙ্গদের তরফ থেকে ক্রমশই বাড়ছিল। ১৯৭৩ সালের ১০ জুলাই বাহামা স্বাধীনতা অর্জন করে ও স্যার লিনডেন পিন্ডলিং এর নেতৃত্বে মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। বাহামা কমনওয়েল্থ রিয়াল্মসের সদস্য় যাদের শীর্ষপদে রয়েছেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। বাহামা আমেরিকার অন্যতম ধনী রাষ্ট্র(মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পরই এর স্থান)। এর অর্থনৈতিক উন্নতির মূল কারণ হচ্ছে পর্যটন শিল্প ও আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা। বাহামা নামের উৎস দক্ষিণ আমেরিকার ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের আদিবাসী লুকায়ানরা হল বাহামা দ্বীপের মূল অধিবাসী। লুকায়ান ভাষায় বাহামা শব্দের অর্থ হল “বিরাট দ্বীপ” (লার্জ আপার মিডল আইল্যাণ্ড)। সম্ভবতঃ তা থেকেই দ্বীপের এই নাম।ইংরেজরা পরে এর নামকরণ করে গ্র্যাণ্ড বাহামা। বাহামার ট্যুরিস্ট গাই়ড বইগুলিতে হামেশাই বলা হয়ে থাকে বাহামা নামটি এসেছে স্প্যানিশ শব্দ “বাজা-মার” থেকে যার অর্থ কিনা “অগভীর সমুদ্র”। অধ্যাপক উল্ফগ্যাং অবশ্যই একথা মানতে রাজী নন। তিনি বলেন, সমুদ্রের থেকে দ্বীপ শব্দটির সংগেই বাহামার সাদৃশ্য বেশি। পুরাতত্ত্ববিদ আইজ্যাক টেলর মনে করেন বাহামা নামটি এসেছে “বিমানি” বা “বিমিনি” থেকে। বিমিনি হল বাহামার পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত যমজ দ্বীপ। হাইতির স্প্যানিয়ার্ডদের ধারণা জন ম্যান্ডেভিলের ভ্রমণকাহিনীতে উল্লিখিত “ফাউন্টেন অফ ইউথ” (যে ঝর্ণার জলে স্নান করলে যৌবন পুনরুদ্ধার হয়)এই দ্বীপেই রয়েছে। ইতিহাস প্রাক-ঔপনিবেশিক যুগ আনুমানিক ৮০০ খৃষ্টাব্দে আরাওয়াক জাতির একটি শাখা ক্য়ারিবিয়ান সমুদ্র পেরিয়ে বাহামা দ্বীপে এসে উপস্থিত হয় ও বসতি স্থাপন করে। এখানে তাদের পরিচয় হয় লুকায়ান নামে। লুকায়ানরাই বাহামার আদিমতম অধিবাসী। আরাওয়াক জাতির অন্য়ান্য় শাখা ক্য়ারিবিয়ান সাগরের কিউবা, জামাইকা, হিসপানিওলা প্রভৃতি দ্বীপে ছড়িয়ে পড়ে। তারা তাইনো নামে পরিচিত। লুকায়ানরা ছিল শান্তিপ্রিয়, সুসংগঠিত সমাজবদ্ধ মানুষ। ১৪৯২ খৃষ্টাব্দে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আগমনের সময় বাহামায় আনুমানিক লুকায়ান জনসংখ্য়া ছিল ৪০,০০০। স্পেনীয়দের আগমন আমেরিকার যে দ্বীপে কলম্বাস প্রথম পা রাখেন, তিনি তার নাম রেখেছিলেন স্যান স্যালভাডর। যদিও দ্বীপটির সঠিক অবস্থান জানা যায় না, তবে এটি যে বাহামা দ্বীপপুন্জের অন্তর্গত তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।, অনেক গবেষক মনে করেন এটি দক্ষিণ-পূর্ব বাহামার সান সালভেদর দ্বীপ (পূর্ব নাম ওয়েটিং আইল্যাণ্ড)। আবার ১৯৮৬তে কলম্বাসের লগবুকের ভিত্তিতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকার লেখক-সম্পাদক জোসেফ জাজ গণনা করে দেখান যে দ্বীপে কলম্বাস পদার্পণ করেছিলেন সেটি হল দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের সামানা ক্য দ্বীপে পদার্পণ করে কলম্বাস প্রথমে লুকায়ানদের রাজার সংগে যোগাযোগ করেন, উপহার বিনিময় করেন ও নিকটবর্তী গ্রেটার অ্যান্টিলেসের অন্যান্য দ্বীপে অভিযানের পূর্বে এই দ্বীপে স্প্যানিশ রাজার “ক্রাউন অফ ক্যাস্টিল”-এর অধিকার ঘোষণা করে যান । ১৪৯৪ খৃষ্টাব্দে স্পেন এবং পর্তুগাল, তৎকালীন ইউরোপের দুই বৃহত্তম শক্তি-র মধ্য়ে ইতিহাস প্রখ্য়াত চুক্তি ট্রিটি অফ টরডেসিলা স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী নবাবিষ্কৃত আমেরিকার ভূমি সম্পদ, সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের অধিকার সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য় করে, স্পেন এবং পর্তুগাল নিজেদের মধ্য়ে ভাগ করে নেয়। স্পেনের ভাগে আসে বাহামা দ্বীপপুন্জ। স্প্য়ানিশরা এসেই লুকায়ানদের সংগে নানা অসদাচারণ করতে শুরু করে, তাদের সম্পত্তি কেড়ে নেয় এবং অনেককে ক্রীতদাসে পরিণত করে হিস্পানিওলা, কিউবা প্রভৃতি দ্বীপে রুপার খনিতে মজদুরের কাজে বা সমুদ্রে মুক্তা-ডুবুরীর কাজে যেতে বাধ্য করে। সেখানকার কঠিন পরিশ্রমে,অস্বাস্থ্য়কর পরিবেশে, নানারকম ব্য়াধিতে বহু শ্রমিকের মৃত্য়ু হয়। অচিরে বাহামা একটি প্রায় জনমানবহীন স্থানে পর্যবসিত হয়। ইংরেজদের আগমন লুকায়ানদের বিলুপ্তির পর প্রায় ১৫০ বছর বাহামা পরিত্য়ক্ত অবস্থায় ছিল। সেসময় বাহামা সংলগ্ন সমুদ্রপথ জলদস্য়ুদের স্বর্গভূমি হয়ে ওঠে। ইউরোপ থেকে আমেরিকাগামী মালবাহী জাহাজগুলি এদের লক্ষ্য ছিল। ১৬২৯ খৃষ্টাব্দে ইংল্যাণ্ডের সম্রাট প্রথম চার্লস্ অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট হীথকে বাহামার উপস্বত্ব দান করেন যার অন্য়তম প্রধান উদ্দেশ্য় ছিল জলদস্যুদের উপদ্রব বন্ধ করা। কিন্তু রবার্ট হীথ বাহামায় বসতি স্থাপনের কোনো উৎসাহ দেখাননি । ১৬৪০ খৃষ্টাব্দে ইংল্য়াণ্ডে রাজশক্তির সংগে ধর্মীয় সংঘাতের ফলে পিউরিটান গোষ্ঠীর একটি শাখা বৃটিশ অধিকৃত বারমুডা ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য় হয় এবং উইলিয়াম সেইলের নেতৃত্বে তারা বাহামায় এসে পৌঁছায়। যে দ্বীপে তারা প্রথম আসে তার নাম রাখে এলিউথেরা, গ্রিক ভাষায় যার অর্থ হল স্বাধীনতা। গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দের কারণে সেইল পরে অনুগামীদের নিয়ে অন্য একটি দ্বীপে চলে আসেন, দ্বীপটি বর্তমানে নিউ প্রভিডেন্স নামে পরিচিত। এটি বাহামার সবচেয়ে জনবহুল দ্বীপ, বাহামার রাজধানী নাসাউ এই দ্বীপে অবস্থিত। বাহামার অভিজ্ঞতা সেইলস বা তার সংগীদের পক্ষে সুখকর হয়নি। সেখানকার কঠোর প্রাকৃতিক পরিবেশের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সেইলস সহ অনেকেই অবশেষে বারমুডা ফিরে যান ১৬৭০ খৃষ্টাব্দে রাজা দ্বিতীয় চার্লস উত্তর আমেরিকায় বৃটিশ উপনিবেশের ক্য়ারোলিনা প্রভিন্সের শাসককে (লর্ড প্রোপাইটর)- বাণিজ্য় রাজস্ব এবং প্রশাসনের অধিকার সহ বাহামা দ্বীপপুন্জের ইজারা দেন। কিন্তু প্রোপাইটর জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণ বা দেশের প্রতিরক্ষা কার্যে ব্যর্থ হন। রাজধানী নাসাউ উপর্যুপরি বিদেশী, প্রধানত স্প্যানিশ, আক্রমণের শিকার হয়। ১৬৮৪ সালের স্প্যানিশ হামলা ও ১৭০৩ সালের স্পেন ও ফ্রান্সের যৌথ হামলা এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য । অষ্টাদশ শতাব্দী ১৭১৮ সালে প্রধানত জলদস্য়ুদের উৎপাত বন্ধ করবার তাগিদে বাহামাকে সরাসরি বৃটিশ রাজশাসনের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং উড্স রজার্সকে বাহামার শাসক নিযুক্ত করা হয়। রজার্স ব্য়ক্তিগত জীবনে একজন দুর্ধর্ষ ও অভিজ্ঞ নাবিক ছিলেন। তিনি কঠোর হস্তে শাসনভার গ্রহণ করেন এবং দক্ষতার সঙ্গে বিদেশি ও জলদস্য়ুদের আক্রমণ প্রতিহত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হন । ১৭১৮ সালে স্পেনের সঙ্গে বৃটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া এবং হল্য়ান্ড- ইউরোপের এই চার সম্মিলিত শক্তির যে যুদ্ধ বাধে (ওয়ার অব্ কোয়াড্রপল অ্যালিয়ান্স) তার জের হিসাবে ১৭২০ সালে স্প্য়ানিশ শক্তি পুনরায় নিউ প্রভিডেন্স দখলের উদ্দেশ্য়ে নাসাউ আক্রমণ করে। কিন্তু তাদের সে অভিযান ব্য়র্থ হয়। ১৭২৮ সালে গভর্নর জর্জ ফেনি বাহামার বৃটিশ অধিবাসিদের জন্য় স্বায়ত্ত্বশাসনের উদ্য়োগ নেন যার ফলে ১৭২৯ সালে বাহামায়একটি স্থানীয় সংসদ গঠিত হয়। ১৭৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমেরিকার নৌবাহিনী বাহামায় হামলা চালায় ও সাময়িকভাবে নাসাউ আমেরিকার অধীনে চলে আসে। আবার ১৭৮২ সালে স্প্য়ানিশরা যখন মেক্সিকো থেকে বৃটিশদের উৎখাত করতে যুদ্ধ চালাচ্ছে সেসময় স্প্য়ানিশ নৌবাহিনী নাসাউর উপকুলে হাজির হয় এবং বাহামা বিনাযুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে। পরে ১৭৮৩ সালের প্য়ারিস চুক্তির ভিত্তিতে ফ্লোরিডার বিনিময়ে বাহামা বৃটিশ অধিকারে আসে। ১৭৮৪ সালে বাহামাকে বৃটিশ উপনিবেশ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। আমেরিকার স্বাধীনতালাভের পর নবনির্মিত যুক্তরাষ্ট্র থেকে দক্ষিণের ধনশালী জোতদারসহ বহু বৃটিশ অনুগামী তাদের নিগ্রো ক্রীতদাসদের নিয়ে বাহামায় চলে আসে। এদের মধ্য়ে স্কটল্য়ান্ডের অভিজাতবংশীয় লর্ড ডানমোর বা ডেভেনক্সের মতন সম্ভ্রান্ত ব্য়ক্তিরাও ছিলেন। এদের আসার ফলে বাহামা জনবহুল হয়ে ওঠে। বৃটিশ সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ তাদের বাহামার বিভিন্ন দ্বীপে জমির মালিকানা দেওয়া হয় যেখানে তারা প্রথমে তুলা চাষ ও পরে কৃষিনির্ভর অন্য়ান্য় কাজ শুরু করে। শীঘ্রই এরা একটি উল্লেখযোগ্য় রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। কিন্তু তাদের সঙ্গে যে আফ্রিকান-আমেরিকান ক্রীতদাসেরা এসেছিল তাদের উত্তরসূরীরাই ক্রমে সংখ্য়াগরিষ্ঠতা লাভ করে। ঊনবিংশ শতাব্দী অষ্টাদশ- ঊনবিংশ শতাব্দীতে উত্তর আমেরিকা ও সংলগ্ন ক্য়ারিবিয়ান অঞ্চলে ব্য়াপক ক্রীতদাসপ্রথা প্রচলিত ছিল, বাহামাও তার ব্য়তিক্রম ছিল না। দাসেদের মধ্য়ে একাধিক বিদ্রোহের ঘটনা ইংল্য়ান্ড পার্লামেন্টের সদস্য়দের দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলে।১৮৩০ সালে এক্জুমা দ্বীপের পম্পেই আবাদের দাসবিদ্রোহ ও ১৮৩১ সালে ক্য়াট আইল্য়ান্ডের গোল্ডেন গ্রোভ আবাদের দাসবিদ্রোহ এর মধ্য়ে উল্লেখযোগ্য়। ১৮০৭ সালে ইংল্য়ান্ড আংশিকভাবে, প্রধানত আন্তর্জাতিক স্তরে, দাসব্য়বসায় বন্ধ করে দেয়। বৃটিশ যুক্তরাষ্ট্র এই প্রথার বিলুপ্তির জন্য় ক্রীতদাস ব্য়বসায়ে নিযুক্ত অন্য়ান্য় দেশগুলির ওপরেও চাপ সৃষ্টি করতে থাকে এবং তাদের নৌবাহিনী রয়াল নেভিকে সমুদ্রপথে বিভিন্ন ক্রীতদাসবাহী জাহাজগুলি থেকে ক্রীতদাসদের উদ্ধার করার পরওয়ানা দেয়। এইভাবে বহু আফ্রিকান ক্রীতদাসকে উদ্ধার করে তাদের বাহামায় পুনর্বাসিত করা হয়। ১৮২০ সালে ফ্লোরিডায় আমেরিকানদের সঙ্গে আদিবাসী সেমিনোলদের সংঘর্ষের সময়, যা সেমিনোল বা ফ্লোরিডা ওয়ার নামে পরিচিত. বহু ক্রীতদাস ও আফ্রিকান-সেমিনোল বাহামায় পালিয়ে আসে। এদের অধিকাংশ উত্তরপশ্চিমে বাহামার বৃহত্তম দ্বীপ অ্যান্ড্রস দ্বীপে আশ্রয় নেয় এবং পরবর্তীকালে সেখানে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি সমৃদ্ধ রেড-বে গ্রাম গড়ে তোলে। প্রত্য়ক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী ১৮২৩ সালে ৩০০ জনের এরকম একটি দল বাহামিয়ান ডিঙি বা ভেলায় চড়ে এখানে এসে পৌঁছেছিল। এদের অনেকে এখনো তাদের সনাতন ঝুড়ি বানানো বা সমাধি নির্মাণের কাজে নিযুক্ত। ১৮১৮ সালে ইংল্য়ান্ড ঘোষণা করে বৃটিশ অধিকৃত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বহির্ভূত যেসব ক্রীতদাস বাহামায় আসবে তাদের দাসত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। ১৮৩০ থেকে ১৮৩৫ সালের মধ্য়ে বিভিন্ন ঘটনায় প্রায় ৩০০ জন আমেরিকান ক্রীতদাস এবং ১৮৩০ থেকে ১৮৪২ সালের মধ্য়ে ৪৪৭ জন ক্রীতদাস মুক্তি পায়। কমেট এবং এনকোমিয়াম নামে আমেরিকার দুটি ক্রীতদাসপণ্য়বাহী জাহাজ- যথাক্রমে ডিসেম্বর ১৮৩০ ও ফেব্রুয়ারি ১৮৩৪ সালে বাহামার আবাকো দ্বীপের কাছে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়। যাত্রীদের মধ্য়ে কমেটে ১৬৫ ও এনকোমিয়ামে ৪৮ জন ক্রীতদাস ছিল। উদ্ধারকার্যের শেষে মালিকদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও জাহাজের দাসেদের মুক্তি দেওয়া হয়। যদিও পরে ১৮৫৫ সালে ইংল্য়ান্ড- আমেরিকার এক চুক্তির ভিত্তিতে এ বাবদ তাদের কিছু ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়। ১৮৩৪ সালে ইংল্য়ান্ড সরকার দাসব্য়বসায়কে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৮৩৫ সালে আমেরিকার আর একটি ক্রীতদাসপণ্য়বাহী জাহাজ “এন্টারপ্রাইজ” যখন বাহামায় আসে জাহাজের ৭৮জন দাসকে মুক্ত করা হয়। অনুরূপে হারমোজা জাহাজ যখন ১৮৪০ সালে আবাকো দ্বীপের কাছে ভেঙে পড়ে তখন জাহাজের ৩৮জন ক্রীতদাসযাত্রীকে মুক্ত করা হয়। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য় ঘটনাটি ঘটে ১৮৪১ সালের নভেম্বর মাসে ক্রিওল জাহাজে। ১৩৫ জন ক্রীতদাস নিয়ে জাহাজটি ভার্জিনিয়া থেকে নিউ অর্লিন্সের উদ্দেশ্য়ে পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু পথে দাসেরা বিদ্রোহ করে ও জাহাজটিকে নাসাউ যেতে বাধ্য় করে। পরিশেষে বাহামিয়ান কর্তৃপক্ষ ১২৮ জন দাসকে মুক্ত করে যারা দ্বীপেই থেকে যায়। ক্রিওলের ঘটনা আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দাসবিদ্রোহের ঘটনা বলে মনে করা হয়। ১৮৬০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় যখন রাষ্ট্রযন্ত্র দক্ষিণের রাজ্য়গুলির জন্য় সমুদ্রপথ বন্ধ করে দেয় তখন তারা বাহামা করিডরকে জাহাজ চলাচলের জন্য় ব্য়বহার করত, এর ফলে বাহামার অর্থনীতির প্রসার ঘটে। বিংশ শতাব্দী- প্রথম ভাগ বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকগুলি ছিল বাহামার পক্ষে এক কঠিন পরীক্ষার সময়। ১৯৩৯ সালে বাহামার অন্য়তম প্রধান শিল্প স্পন্জ শিল্প ধরাশায়ী হয় এবং বহু মানুষ প্রধানত কৃষ্ণাঙ্গ মানুষেরা তাদের কর্মসংস্থান হারায়। বিদেশি ব্য়াংকগুলির বাণিজ্য় বিস্তার লাভ করে কিন্তু সেখানে প্রধানত সংখ্য়ালঘিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গরাই চাকরি পেত। মন্দা অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য়ের মাঝে অধিবাসিরা কোনোমতে কৃষি অথবা মৎস্য়শিকারের মাধ্য়মে দিন গুজরান করত। ১৯৪০ সালে ইংল্য়ান্ডের (প্রাক্তন) রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড বা ডিউক অব্ উইন্ডসর বাহামার গভর্নর নিযুক্ত হন ও এই পদে ১৯৪৫ অবধি আসীন থাকেন। শাসনভার নিয়ে ডিউক বাহামার দারিদ্র্য় দূরীকরণের জন্য় নানা প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নেন। ১৯৪০ সালের ২৯শে অক্টোবর বাহামার প্রশাসন পরিচালনার জন্য় স্থানীয় সংসদ গঠিত হয়। ১৯৪২ সালের নাসাউ রায়ট-বর্ধিত বেতনের দাবিতে কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গদের যে সংঘর্ষ বাধে- তার সমাধানেও তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দেন। ১৯৪৫ সালে ডিউক পদত্য়াগ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়(১৯৪৫-১৯৭৩) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নূতন রাজনৈতিক যুগের সূচনা হয়। ১৯৫০ সালে বাহামায় দুটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। এদের মধ্য়ে "ইউনাইটেড বাহামিয়ান পার্টি" বা "ইউবিপি" ছিল ইংরেজ-বাহামিয়ানদের মুখপাত্র। অপরপক্ষে প্রগ্রেসিভ লিবারাল পার্টি বা পিএলপি ছিল সংখ্য়াগরিষ্ঠ অ্যাফ্রো-বাহামিয়ানদের মুখপাত্র। বাহামাকে আভ্য়ন্তরীণ স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার দিয়ে নতুন সংবিধান গঠিত হয় ৭ জানুয়ারী, ১৯৬৪ সালে। ইউবিপি দলের সার রোলান্ড সিমোনেট হলেন প্রথম মুখ্য়মন্ত্রী। ১৯৬৭ সালে পিএলপি দলের লিন্ডেন পিন্ডলিং বাহামার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মুখ্য়মন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে রাষ্ট্রপ্রধান পদের নাম মুখ্য়মন্ত্রীর পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ঐবছরই পিন্ডলিং বাহামার জন্য় পূর্ণ স্বাধীনতা দাবী করেন। আভ্য়ন্তরীণ বিষয়ে বাহামাকে অধিকতর প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে নতুন সংবিধান রচিত হয়। ১৯৭১ সালে পিএলপি দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী ফ্রী ন্য়াশনাল মুভমেন্ট বা এফএনএম নামে মধ্য়পন্থী নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে, ইউবিপি দল তার সাথে যুক্ত হয়। এফএনএম হয়ে দাঁড়ায় পিএলপি-র প্রধান প্রতিপক্ষ। বৃটিশ হাউস অফ লর্ডস ২২ জুন ১৯৭৩ তারিখে বাহামার স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়। ১০ জুলাই ১৯৭৩ প্রিন্স চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে বাহামাকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র ঘোষণা করেন ও প্রধানমন্ত্রী লিন্ডেন পিন্ডলিংএর হাতে সরকারী নথি তুলে দেন। এই তারিখটি বাহামার স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়। একই দিনে বাহামা কমনওয়েলথ অফ নেশনস-এ যোগদান করে।বর্তমানে বাহামা কমনওয়েলথ রিয়ালমের সদস্য় (কমনওয়েলথ অন্তর্ভুক্ত এমন ১৫টি রাষ্ট্র যাদের শীর্ষপ্রধান ইংল্য়ান্ডের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ)। স্যার মিলো বাটলার রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সরকারী প্রতিনিধি স্বরূপ বাহামার প্রথম গভর্নর-জেনারেল নিযুক্ত হন। স্বাধীনতা-উত্তর কাল ১৯৭৩ সালের ২২ আগস্ট বাহামা ইন্টারনেশনাল মনিটরি ফান্ড, বিশ্বব্যাংক এবং ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে যোগদান করে। পরবর্তী দুই দশক একাধিক নির্বাচনে জয়লাভের ফলে বাহামার রাজনৈতিক পটভূমিতে পিএলপি-র প্রাধান্য় অক্ষুণ্ণ থাকে। নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ পিন্ডলিংএর জনপ্রিয়তায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। এই সময় পর্যটন ও বৈদেশিক ব্য়াংকিং- প্রধানত এই দুই শিল্পের উপর নির্ভর করে বাহামার অর্থনীতির প্রভূত প্রসার ঘটে ও জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। বাহামার সমৃদ্ধিতে আকৃষ্ট হয়ে প্রতিবেশি দেশগুলি, প্রধানত হাইতি থেকে, বহু লোক এখানে বসবাস করতে চলে আসে। ১৯৯২ সালে পিন্ডলিং এফএনএম-এর হাবার্ট ইনগ্রাহামের কাছে পরাজিত হন। ইনগ্রাহাম পরবর্তী ১৯৯৭-র নির্বাচনেও জয়লাভ করেন কিন্তু ২০০২-র নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন এবং পিএলপি পেরি ক্রিস্টির নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফিরে আসে। এরপর থেকে বাহামার রাজনৈতিক ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে পিএলপি এবং এফএনএম-এর মধ্য়ে হস্তান্তরিত হতে থাকে। ২০০৭ থেকে ২০১২ পুনরায় হাবার্ট ইনগ্রাহামের নেতৃত্বে এফএনএম-, ২০১২ থেকে ২০১৭ পেরি ক্রিস্টির নেতৃত্বে পিএলপি এবং ২০১৭ থেকে ২০২১ অবধি হাবার্ট মিনিসের নেতৃত্বে এফএনএম ক্ষমতাসীন থাকে। সেপ্টেম্বর ২০২১ এ বিধ্বস্ত অর্থনীতির ধাক্বা সামলাতে এক অন্তর্বর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এফএনএম বিরোধী পিএলপির কাছে পরাজিত হয়। ফিলিপ ডেভিস ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। ভূগোল অসংখ্য় ছোট বড় দ্বীপের সমষ্টি বাহামা দ্বীপমালা। অতলান্তিক মহাসাগরের ৮০০কিলোমিটার (৫০০মাইল) ধরে এই দ্বীপগুলি ছড়িয়ে রয়েছে। পশ্চিমে রয়েছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, দক্ষিণে কিউবা ও হিস্পানিওয়ালা, পূবে বৃটিশ অধিকৃত টার্ক এবং কাইকো দ্বীপ। ২০ ডিগ্রী থেকে ২৮ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭২ ডিগ্রী থেকে ৮০ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ এর সীমানা নির্দেশ করছে। সর্বসমেত ৭০০টি গ্বীপ ও ২৪০০টি প্রবালদ্বীপ বাহামা দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্ভুক্ত, এদের মধ্য়ে মাত্র ত্রিশটিতে জনবসতি রয়েছে।মোট আয়তন ১০০১০ বর্গ কিলোমিটার। বাহামার সবচেয়ে ঘনবসতি পূর্ণ দ্বীপ হল নিউ প্রভিডেন্স। এই দ্বীপেই বাহামার রাজধানী নাসাউ অবস্থিত। অন্য় জনঅধ্য়ুষিত দ্বীপগুলির মধ্য়ে গ্র্য়ান্ড বাহামা, ইলিউথেরা, ক্য়াট আইল্য়ান্ড, রাম ক্য়ে, লং আইল্য়ান্ড, স্য়ান স্য়ালভাডর, রাগেড আইল্য়ান্ড, অ্যাকলিন্স, ক্রুকেড আইল্য়ান্ড, এক্জিউমা, বেরি আইল্য়ান্ড, মায়াগুয়ানা, বিমিনি, গ্রেট অ্যাবাকো, গ্রেট ইনাগুয়া উল্লেখযোগ্য়। বৃহত্তম দ্বীপ হল অ্যান্ড্রোস। সবকটি দ্বীপই অনুচ্চ সমতলভূমির উপর অবস্থিত। পাড়ের খাড়াই কোনোখানেই ১৫ থেকে ২০মিটার (৪৯ থেকে৬৬ ফুট) –এর বেশি নয়। ক্য়াট আইল্য়ান্ডের মাউন্ট অ্যালভার্নিয়া (পূর্বের নাম কোমো পাহাড় বা কোমো হিল) হল দ্বীপপুন্জের সর্বোচ্চ স্থান যা কিনা ৬৪মি বা ২১০ ফুট। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভিত্তিতে সমগ্র দ্বীপপুন্জকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, শুষ্ক বনাঞ্চল, পাইন মোজাইক অঞ্চল ও উপকূলবর্তী লোনা মাটির ম্য়ানগ্রোভ বনাঞ্চল। ২০১৯ এর তথ্য় অনুযায়ী বাহামার ফরেস্ট ল্যান্ডস্কেপ ইন্টিগ্রিটি ইনডেক্স ৭.৩৫/১০, অর্থাৎ বাহামার বনভূমির উপর মনুষ্য়কৃত পরিবর্তনের প্রভাব কম। জলবায়ু কোপেনের জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী বাহামার জলবায়ু মুখ্য়তঃ ক্রান্তীয় অঞ্চলের সাভানা তৃণভূমির জলবায়ু সদৃশ। উষ্ণ এবং আর্দ্র অথবা শীতল এবং শুষ্ক- এই দুই ধরনের আবহাওয়া বাহামার ঋতুচক্রের বৈশিষ্ট্য়। বিষুবরেখার নিকটবর্তীতা, ক্রান্তীয় উষ্ণ প্রস্রবণ এবং নিম্ন উচ্চতার দরুণ বাহামার আবহাওয়া সর্বদাই উষ্ণ থাকে, শীতের উপস্থিতি বিশেষ টের পাওয়া যায় না। ক্রান্তীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য় অনুযায়ী এখানে বর্ষা নামে গ্রীষ্মকালে এবং গ্রীষ্মই এখানে আর্দ্রতম ঋতু। বাহামার দ্বীপগুলিতে উষ্ণতম ও শীতলতম মাসগুলির মধ্য়ে তাপমাত্রার পার্থক্য় বড়জোর ৭ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। উত্তর আমেরিকা থেকে আগত শৈত্য়প্রবাহ মাঝে মাঝে বাহামার তাপমাত্রাকে ১০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের নীচে নামিয়ে নিয়ে যায়, তবে তুষারপাতের কথা কখনো শোনা যায় না, কেবল ১৯৭৭ সালের ১৯শে জানুয়ারি তারিখে একবারই বাহামার বাতাসে বর্ষার জলকণার সঙ্গে তুষারকণাও ভাসতে দেখা গিয়েছিল। বছরের অধিকাংশ সময়ে বাহামার প্রকৃতি থাকে শুষ্ক এবং রৌদ্রোজ্জ্বল। ক্রান্তীয় ঝঞ্ঝা-ঘূর্ণিবাত্য়া কখনো কখনো বাহামার উপর আছড়ে পড়ে। ১৯৯২ সালে হারিকেন অ্যান্ড্রিয়ু বাহামার উত্তর ভূখন্ডের উপর আর ১৯৯৯ সালে হারিকেন ফ্লয়েড পূর্ব ভূখন্ডের উপর দিয়ে বয়ে যায়। ২০১৯এর সেপ্টেম্বর মাসে কুখ্য়াত হারিকেন ডোরিয়ান তীব্র গতিতে আবাকো ও গ্রান্ড বাহামা দ্বীপকে আঘাত করে, বাহামার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল কার্যতঃ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ধ্বংসের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার, নিহতের সংখ্য়া অন্তত ৫০ বা তারও বেশি। ১৩০০ জনের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ভূতত্ত্ব বাহামার নির্মাণকার্য শুরু হয়েছিল প্রত্নতাত্তিক যুগে, আনুমানিক ২০ কোটি বছর আগে, যখন ভূপৃষ্ঠতলে সবেমাত্র ফাটল ধরতে শুরু করেছে। বর্তমানে এটি ৭০০ দ্বীপ, প্রবালদ্বীপ ও বালিয়াড়ির সমষ্টি এক দ্বীপপুন্জ। এর পাড়ের কাছের যে চুনাপাথরের স্তর, তা জমতে শুরু করেছিল অন্ততঃ ক্রিটেশাস যুগ থেকে (মেসোজোইক যুগের শেষভাগ অর্থাৎ ১৪৪ মিলিয়ন বছর আগে) এবং সম্ভবতঃ জুরাসিক যুগ থেকে (ট্রায়াসিক যুগের শেষভাগ অর্থাৎ ২০০ মিলিয়ন বছর আগে)। বর্তমানে এই স্তরের ঘনত্ব ৪.৫ কিলেমিটারেরও বেশি (২.৮মাইল) । সমগ্র স্তরটি নিজের ভরে প্রতি হাজার বছরে ৩.৬সেমি গতিতে সমুগ্রগর্ভে নেমে যাচ্ছে। বাহামা দ্বীপপুন্জ বৃহত্তর লুকায়ান দ্বীপপুন্জের অংশবিশেষ। বৃটিশ অধিকৃত টার্ক এবং কাইকো দ্বীপ, সমুদ্র-নিমজ্জিত মৌচির, সিলভার ও নাভিদাদ ব্যাংকও লুকায়ান দ্বীপপুন্জের অন্তর্ভুক্ত।। অতীতে ১৫ কোটি বছর আগে, উত্তর অতলান্তিক মহাসাগর সৃষ্টির গোড়ার দিকে, যখন বাহামা প্ল্য়াটফর্ম প্রথম গঠিত হয় তখন মূল বাহামা ছাড়াও দক্ষিণ ফ্লোরিডা, উত্তর কিউবা, টার্ক, কাইকো এবং বর্তমানে সমুদ্রমগ্ন ব্লেক উপত্য়কাও এর সংগে যুক্ত ছিল। যে ৬.৪ কিলোমিটার গভীর চুনাপাথরের স্তর বাহামার বৈশিষ্ট্য় তা অতীতে ক্রিটেশাস যুগে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মূল ভূখন্ডের থেকে প্রসারিত একটি অগভীর অংশের উপর জমা হতে শুরু করে। যেমন যেমন চুনাপাথর মিশ্রিত পলি জমতে থাকে তেমন তেমন অংশটি নিজের ভারেই নীচে নেমে যেতে থাকে। এইভাবে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সমুদ্রতল ও কিছু বিচ্ছিন্ন দ্বীপ গড়ে ওঠে। এরপরে প্রায় ৮কোটি বছর আগে উপসাগরীয় প্রবাহ অঞ্চলটিকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এর ফলে ব্লেক উপত্য়কা সাগরে ডুবে যায় আর বাহামা কিউবা, ফ্লোরিডা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসে। , দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে একাধিক বেলাভূমির সৃষ্টি হয়। এদের মধ্য়ে কে সাল, লিটল ও গ্রেট বাহামা উল্লেখযোগ্য়।চুনামিশ্রিত পলি অথবা প্রবালকীট এখনো বাহামার সমুদ্রতট ধরে হাজার বছরে ২০ মিমি হারে জমা হয়ে চলেছে। প্রবালপ্রাচীর এদের ধরে রাখে। এই প্রবাল সঞ্চয় প্রক্রিয়ার বেশিটাই সম্পন্ন হয়েছিল টার্সিয়ারি যুগ অর্থাৎ ছয় থেকে আড়াই কোটি বছর আগে।এরপরে হিমযুগ শুরু হলে প্রক্রিয়াটি ব্য়াহত হয়। এই কারণে সমুদ্রতল থেকে নীচে অন্ততঃ ৩৬ মিটার গভীরে গেলে প্রবালস্তরের প্রাচুর্য দেখতে পাওয়া যায়। সাগরের লোনা জল বালির মধ্য়ে ঢুকে পড়ে তার তাপমাত্রা এবং লবনাক্ততা বাড়িয়ে দেয় যার ফলে উলাইট, সিমেন্টেড উইডস বা গ্রেপস্টোন, দানব স্ট্রোমাটোলাইট প্রভৃতি পাললিক শিলার সৃষ্টি হয়। তীরের উলাইট কণাগুলি বায়ুবাহিত হয়ে দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে স্তূপাকারে জমা হয় ও পরস্পর সংলগ্ন একাধিক বালিয়াড়ির সৃষ্টি করে। তীরের কাছে এগুলি প্রধানত বালিয়াড়ি হিসাবে থাকলেও দ্বীপের অভ্য়ন্তরে কণাগুলি বৃষ্টির জলের প্রভাবে দ্রুত প্রস্তরীভূত হয়ে যায় ও অনুচ্চ শৈলশ্রেণী বা টিলা গঠন করে যাকে ইওলিয়ানাইট বলা হয় বেশিরভাগ দ্বীপে এগুলির উচ্চতা 30 থেকে 45 মিটার (98 থেকে 148 ফুট) যদিও ক্যাট আইল্যান্ডের টিলার উচ্চতা 60 মিটার (200 ফুট)। টিলাগুলির মধ্যবর্তী জমি হ্রদ এবং জলাভূমি গঠনের জন্য উপযোগী। বাহামায় কোনো নদী নেই কিন্তু বেশ কয়েকটি বড়বড় হ্রদ রয়েছে। নিউ প্রভিডেন্স, সান সালভাডর, গ্রেট ইনাগুয়া দ্বীপের হ্রদ উল্লেখযোগ্য়।বাহামার মাটি চুনাপাথর সমৃদ্ধ।আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শে চুনাপাথরের দ্রুত ক্ষয় হওয়ার প্রবণতা বাহামার ভূপৃষ্ঠকে একটি বৈশিষ্ট্য় প্রদান করেছে যা "বাহামিয়ান কার্স্ট" নামে পরিচিত। এদের মধ্যে রয়েছে ভূগর্ভস্থিত কন্দর বা পটহোল, সামুদ্রিক গহ্বর বা ব্লু হোল, সিংকহোল, তটভূমির ভঙ্গুর নুড়িপথ বা বীচরক প্রভৃতি। দক্ষিণ অ্যান্ড্রস দ্বীপে কয়েকটি ব্লু হোল দেখতে পাওয়া যায়। লং আইল্য়ান্ড দ্বীপে ডিনের ব্লু হোল গভীরতায় বিশ্বের দ্বিতীয়। বীচরকের মধ্য়ে রয়েছে বিমিনি দ্বীপের ০.৮কিমি দৈর্ঘের সুদীর্ঘ বিমিনি রোড ("পেভমেন্ট অব আটলান্টিস")।টাইডাল ফ্ল্য়াট বা টাইডাল ক্রীকই সচরাচর দেখা যায় যাদের মধ্য় দিয়ে জোয়ার ভাঁটার জল বয়ে যায় তবে জল নিষ্কাশনের জন্য় ক্য়ানিয়নগুলি যথা গ্রেট বাহামা ক্য়ানিয়ন নিঃসন্দেহে অনেক বেশি চিত্তাকর্ষক। বাহামা দ্বীপগুলির স্তরবিন্যাস তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম স্তরে প্লেইস্টোসিন বা হিমযুগের মধ্যভাগে গঠিত ঘুলঘুলি সদৃশ আউলস হোল দেখা যায়। দ্বিতীয় স্তরে আছে হিমযুগের শেষভাগে গঠিত গ্রোটো বিচ যা প্রথম স্তরকে আচ্ছাদিত ও সুরক্ষিত করেছে।শেষ স্তরে রয়েছে হলোসিন যুগের রাইস বে ফর্মেশন যখন কৃষিকার্যের উন্মেষ ঘটেছিল। তবে এমন নয় যে স্তরগুলি নিয়ম মেনে সময়ানুযায়ী পরপর সাজানো।বরং পাশাপাশিও অবস্থিত হতে পারে। গ্রোটো বিচের উপস্থিতি সর্বাধিক দেখা যায়।টেরা রোসা প্যালিওসয়েলকেও গ্রোটো বিচের মতন প্রথম স্তরের আউলস হোলকে ঢেকে থাকতে দেখা গিয়েছে। সরকার এবং রাজনীতি বাহামা একটি সংসদীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, যেখানে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে রয়েছেন। স্থানীয়ভাবে একজন গভর্নর-জেনারেল তাঁর প্রতিনিধিত্ব করেন। রাজনৈতিক এবং আইনগত নিয়মগুলি ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্টমিনস্টার প্রথাকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করে। বাহামা কমনওয়েলথ রিয়ালমসের সদস্য। প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারের প্রধান এবং সংসদে সংখ্য়াগরিষ্ঠ দলের নেতা।প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের সদস্য়দের মধ্য় থেকে মন্ত্রি নির্বাচন করে মন্ত্রিসভা গঠন করেন। দেশের পরিচালন ব্য়বস্থার দায়িত্ব ও ক্ষমতা মন্ত্রিসভার উপর ন্য়স্ত থাকে। বর্তমান গভর্নর-জেনারেল হলেন মাননীয় কর্নেলিয়াস এ. স্মিথ, এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হলেন মাননীয় ফিলিপ ডেভিস এমপি। আইন প্রণয়নের জন্য় দেশে বাইকামেরাল বা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় শাসনব্য়বস্থা চালু।এর ৩৮-সদস্যের নিম্নকক্ষ বা হাউস অফ অ্যাসেম্বলি প্রতি জেলা থেকে একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত, এবং ১৬-সদস্যের উচ্চকক্ষ বা সেনেট, গভর্নর-জেনারেল মনোনীত ১৬জন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত। ১৬জন প্রতিনিধিদের মধ্য়ে গভর্নর-জেনারেল, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে নয়জন, বিরোধী দলের নেতার পরামর্শে চারজন এবং বিরোধী নেতার সাথে পরামর্শের পর প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে তিনজনকে মনোনয়ন করেন। ওয়েস্টমিনস্টার সিস্টেমের মতন এখানেও প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভেঙে দিতে পারেন এবং পাঁচ বছরের মেয়াদের মধ্যে যেকোনো সময় একটি সাধারণ নির্বাচন আহ্বান করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মাচরণ, আন্দোলন এবং সম্মেলনের স্বাধীনতা বাহামার নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার।সংবিধান অনুযায়ী বাহামার বিচার বিভাগ সংসদ ও প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত সম্পূর্ণ পৃথক ব্য়বস্থা। রাজনৈতিক পরিবেশ বাহামাতে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল- বামপন্থী প্রগ্রেসিভ লিবারেল পার্টি (পিএলপি) এবং মধ্য়পন্থী ফ্রী ন্য়াশনাল মুভমেন্ট(এফ এনএম)। অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলও রয়েছে যারা সংসদ নির্বাচনে জিততে পারেনি; এর মধ্যে রয়েছে বাহামাস ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, কোয়ালিশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্ম, বাহামিয়ান ন্যাশনালিস্ট পার্টি এবং ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স। বৈদেশিক সম্পর্ক বাহামার সঙ্গে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট বৃটেনের ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে।ওয়াশিংটনে একজন রাষ্ট্রদূত এবং লন্ডনে হাইকমিশনার বাহামার প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। 'হারিকেন ডোরিয়ান'-এর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস দুর্যোগ প্রস্তুতি, ব্যবস্থাপনা, পুনর্গঠন, মডুলার আশ্রয়কেন্দ্র, মেডিকেল ইভাকুয়েশন বোট প্রভৃতির জন্য় বাহামাকে $৩.৬ মিলিয়ন অর্থসাহা্য্য় দেয়।। বাহামা প্রতিবেশি ক্যারিবিয়ান রাষ্ট্রগুলির সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে। সেনা বাহিনী বাহামিয়ান সেনাবাহিনীকে বলা হয় রয়্যাল বাহামা ডিফেন্স ফোর্স (RBDF)। ১৯৮০ সালে এটি গঠিত হয়।দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করা ও সীমান্তের অধিকার সুনিশ্চিত করা, জলসীমায় টহল দেওয়া, দুর্যোগের সময়ে সহায়তা এবং ত্রাণ সরবরাহ করা, মাদক চোরাচালান বন্ধ করা, সমুদ্রপথের নাবিকদের সাহায্য় করা প্রভৃতি সেনাবাহিনীর দায়িত্ব ।এটি ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি (CARICOM) এর আঞ্চলিক নিরাপত্তা টাস্ক ফোর্সের সদস্য।[92] বাহামার নৌবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত একটি স্থল ইউনিট যার নাম কমান্ডো স্কোয়াড্রন (রেজিমেন্ট) এবং একটি এয়ার উইং (এয়ার ফোর্স)। প্রশাসনিক বিভাগ বাহামার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জেলা হল নিউ প্রভিডেন্স- জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ এখানে বাস করে এবং এখানেই রাজধানী নাসাউ অবস্থিত। এর প্রশাসন সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়।বাকী জেলাগুলি স্থানীয় সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ১৯৯৬ সালে, বাহামিয়ান সংসদ বিভিন্ন দ্বীপের জন্য "স্থানীয় সরকার আইন" প্রণয়ন করে।এই আইনের বলে ফ্য়ামিলি আইল্য়ান্ড বা প্রান্তিক দ্বীপগুলির জন্য় পৃথক প্রশাসক পদের, বিভিন্ন জেলার জন্য় স্থানীয় জেলা কাউন্সিলর পদের সৃষ্টি হয় এবং স্থানীয় শহর কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই আইনের সামগ্রিক লক্ষ্য হল কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই বিভিন্ন নির্বাচিত নেতাদের তাদের নিজ নিজ জেলার বিষয়গুলি পরিচালনা ও তদারকি করবার ক্ষমতা দেওয়া। মোট ৩২টি জেলা রয়েছে, যেখানে প্রতি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হয়। বর্তমানে ১১০ জন কাউন্সিলর এবং ২৮১ জন টাউন কমিটির সদস্য বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলর এবং টাউন কমিটির সদস্যদের অন্য়তম দায়িত্ব হল প্রত্য়েকের নিজ নিজ নির্বাচন কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য় বরাদ্দ অর্থের সঠিক ব্য়বহার সুনিশ্চিত করা। নিউ প্রভিডেন্স ভিন্ন বাহামার অন্য় জেলাগুলি হল- ১. অ্যাকলিনস . ২.বেরি আইল্য়ান্ড, ৩. বিমিনি ৪. ব্ল্য়াক পয়েন্ট একজুমা ৫. ক্য়াট আইল্য়ান্ড ৬. সেন্ট্রাল আবাকো ৭. সেন্ট্রাল অ্যান্ড্রস ৮.সেন্ট্রাল এলিউথেরা ৯. গ্র্য়ান্ড বাহামা(সিটি অব ফ্রী পোর্ট)১০. ক্রুকেড আইল্য়ান্ড ১১. ইস্ট গ্র্য়ান্ড বাহামা ১২. একজুমা ১৩. গ্র্য়ান্ড কে আবাকো১৪ . হার্বার আইল্য়ান্ড এলিউথেরা ১৫. হোপ টাউন আবাকো ১৬. ইনাগুয়া ১৭. লং আইল্য়ান্ড ১৮. ম্য়ানগ্রোভ সিটি অ্যান্ড্রস ১৯. মায়াগুনা ২০. মুর আইল্য়ান্ড, আবাকো ২১. নর্থ আবাকো ২২. নর্থ অ্যান্ড্রস ২৩.নর্থ এলিউথেরা ২৪.রাগড আইল্য়ান্ড ২৫.রাম কে ২৬. সান সালভাডর ২৭. সাউথ আবাকো ২৮. সাউথ অ্যান্ড্রস ২৯. সাউথ এলিউথেরা ৩০. স্প্য়ানিশ ওয়েলস এলিউথেরা ৩১. ওয়েস্ট গ্র্য়ান্ড বাহামা অর্থনীতি জনপ্রতি জিডিপির ভিত্তিতে বাহামা আমেরিকার অন্যতম ধনী দেশ। বাহামার অর্থনীতি পর্যটনের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল । বাহামিয়ান জিডিপির প্রায় ৫0% পর্যটন শিল্পের অবদান। দেশের প্রায় অর্ধেক জনসাধারণের কর্মসংস্থানের উৎসও পর্যটন শিল্প। নিউ প্রভিডেন্স এবং গ্র্য়ান্ড বাহামা দ্বীপ দুটি পর্যটনের মূল কেন্দ্র। পর্যটকরা অধিকাংশই আসেন আমেরিকা থেকে। বিভিন্ন প্রমোদ ভ্রমণের মধ্য়ে বাহামার নৌকাবিহার পর্যটকদের অন্য়তম আকর্ষণ। ২০১২সালে বাহামা ৫.৮ মিলিয়ন দর্শক আকর্ষণ করেছিল, যাদের মধ্যে ৭০% এরও বেশি ছিল জলবিহারের দর্শক। পর্যটনের পরে, দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হল আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা বা অফশোর ফিনান্স। জিডিপির প্রায় ১৫% এখান থেকে আসে। বাহামায় কোনো আয়কর বা কর্পোরেট ট্যাক্স নেই এবং এখানে আর্থিক লেনদেনের গোপনীয়তাও বজায় রাখা হয়।এই কারণে শতাধিক বিদেশি ব্য়াংক এবং ট্রাস্ট কোম্পানি বাহামায় তাদের শাখা খুলেছে‍। জাতীয় ব্যাঙ্ক হল সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ দ্য বাহামাস, ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। জাতীয় মুদ্রা হল বাহামিয়ান ডলার; দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে মার্কিন মুদ্রাও গৃহীত হয়। বাহামায় কম্পিটিটিভ ট্য়াক্স রেজিম চালু রয়েছে যে ব্য়বস্থায় বিভিন্ন ব্য়ক্তিগত করে হ্রাস ঘটিয়ে উপভোক্তা করের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। বাহামায় কোনো ব্য়ক্তিগত কর যথা আয়কর, কর্পোরেট কর, মূলধন লাভ কর, বা সম্পদ কর নেই। সরকারী ব্যয়গুলি পরোক্ষ করের উপর নির্ভরশীল যা প্রাথমিকভাবে পর্যটন এবং বহির্বাণিজ্যের উপর আরোপ করা হয়। সরকার আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, লাইসেন্স ফি, এবং স্ট্যাম্প ট্যাক্স থেকে তার রাজস্ব সংগ্রহ করে। সামাজিক সুরক্ষার ভার বহন করে বেতনকর যার ৩.৯% দেয় কর্মচারীরা ও ৫.৯% দেয় নিয়োগকর্তা। হয়।২০১০ সালে, জিডিপির শতাংশ হিসাবে সামগ্রিক করের পরিমাণ ছিল ১৭.২%। কৃষি বাহামাবাসিদের সনাতন জীবিকা হলেও বর্তমান অর্থনীতিতে এর অবদান সামান্য়, জিডিপির মাত্র ৫-৭% এবং কর্মসংস্থানেও ক্ষেত্রটির ভূমিকা সীমিত। বাহামার জমি সাধারণত অনুর্বর এবং মাটি অগভীর। দেশের প্রায় সব খাদ্যসামগ্রী আমদানি করা হয় বিদেশ থেকে, মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তবে রৌদ্রোজ্জ্বল জলবায়ু নানারকম ফলের চাষের পক্ষে সহায়ক। প্রধান ফলের মধ্যে রয়েছে টমেটো, আনারস, কলা, আম, পেয়ারা, স্যাপোডিলা (একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় চিরহরিৎ গাছের ফল), সোরসপ, জাম্বুরা এবং সামুদ্রিক আঙ্গুর । গলদা চিংড়ি প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছকে কেন্দ্র করে সংক্ষিপ্তাকারে মৎস্য়শিল্প গড়ে উঠেছে। কিছু শূকর, ভেড়া এবং গবাদি পশু পালন করা হয়। শিল্প ও বাণিজ্য়ের মধ্য়ে রয়েছে রম এবং অন্যান্য মদের উৎপাদন কেন্দ্র সহ সিমেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যালস,টিনজাত ফল এবং প্রসেস্ড স্পাইনি লবস্টার প্রভৃতির উৎপাদন শিল্প। বাহামার বহির্বাণিজ্য়ের সিংহভাগ অধিকার করে আছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। অন্যান্য ব্যবসায়িক অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে চীন, পানামা, আয়ারল্যান্ড, ইউএস ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, তুর্কস এবং কাইকোস, যুক্তরাজ্য এবং জাপান। প্রধান আমদানির মধ্যে রয়েছে যন্ত্রপাতি ও পরিবহন সরঞ্জাম, খাদ্য পণ্য এবং খনিজ জ্বালানি। প্রধান রপ্তানি হল পেট্রোলিয়াম এবং রক লবস্টার। পরিবহন নাসাউ, ফ্রিপোর্ট এবং অধিকাংশ জনবসতিপূর্ণ দ্বীপে পাকা রাস্তা ব্যবস্থা রয়েছে। বাহামাতে প্রায় ১৬২০ কিমি (১০১০ মাইল) পাকা রাস্তা রয়েছে। আন্তঃদ্বীপ পরিবহন প্রধানত জাহাজ ও আকাশপথে পরিচালিত হয়। মেইল বোট নামে পরিচিত ছোট মোটর জাহাজের একটি বহর নাসাউ এবং আউট দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে যাত্রী, মালবাহী এবং ডাক পরিবহন করে। নাসাউ এবং ফ্রিপোর্ট দেশের প্রধান দুটি বন্দর। ফ্রিপোর্টে একটি বড় কন্টেইনার ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টও রয়েছে। প্রতি বছর অসংখ্য বিদেশী যাত্রী ও মালবাহী জাহাজ বাহামিয়ান বন্দর পরিদর্শন করে। দেশের 61টি বিমানবন্দর রয়েছে,যেখানে বিভিন্ন থাকার ব্যবস্থা এবং সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই কেবল অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবা দেয়, তবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলি নাসাউ, ফ্রিপোর্ট এবং এক্সুমাতে অবস্থিত এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলি অন্যান্য বাহামিয়ান দ্বীপগুলির সাথেও সংযোগ করে।প্রধান বিমানবন্দর হল নিউ প্রভিডেন্সের লিন্ডেন পিন্ডলিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গ্র্যান্ড বাহামা দ্বীপের গ্র্যান্ড বাহামা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং অ্যাবাকো দ্বীপে লিওনার্ড এম. থম্পসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (পূর্বে মার্শ হারবার বিমানবন্দর)।<ref>https://www.britannica.com/place/The-Bahamas</</ref> জনতত্ত্ব বাহামার আনুমানিক জনসংখ্যা ৩,৮৫,৬৩৭ যার মধ্যে ১৪ বছর বা অনূর্ধ ১৪~ ২৫.৯% ১৫ বছর থেকে ৬৪ বছর~ ৬৭.২% ৬৫ বছর বা তার বেশি~ ৬.৯% ২০১০সালের পরিসংখ্য়ান অনুযায়ী- জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৯২৫% জন্মহার ১৭.৮১/১,000 মৃত্যুহার ৯.৩৫/১,000, শিশুমৃত্যুর হার ২৩.২১/১,000 এবং অভিবাসন হার −২.১৩ /১,000। জীবিত জন্ম। গড় আয়ু ৬৯.৮৭ বছর: মহিলাদের জন্য ৭৩.৪৯ বছর, পুরুষদের জন্য ৬৬.৩২ বছর। জাতিগত এবং বর্ণগত গোষ্ঠী ২০১০ সালে জনগণনায় জনসংখ্যার ৯০.৬% নিজেদেরকে কালো, ৪.৭% সাদা এবং ২.১% মিশ্র (আফ্রিকান এবং ইউরোপীয়) হিসাবে চিহ্নিত করে। প্রসংগত,বাহামায় বর্ণনির্নয়ের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিধি নেই, নাগরিকের অভিমতই চূড়ান্ত। == শ্বেতাঙ্গরা যথাক্রমে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে আগত ইংরেজ ঔপনিবেশিক ও আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের বৃটিশভক্তদের বংশধর। কিছু গ্রীক রয়েছেন যারা ১৯০০ সালে স্পন্জ শিল্পে সাহায্য করতে এসেছিল। কৃষ্ণাঙ্গদের পূর্বসূরীরা ছিলেন দাস,শ্রমিক অথবা অভিবাসী। ধর্ম বাহামার অধিবাসীরা প্রধানত খ্রিস্টান, যার মধ্যে প্রোটেস্ট্যান্ট ৭০% ও রোমান ক্যাথলিক ১৪%। প্রোটেস্ট্যান্টদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপ্টিস্টরা ৩৫%, অ্যাংলিকান ১৫%, পেন্টেকোস্টাল ৮%, চার্চ অফ গড ৫ %, সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট ৫% এবং মেথডিস্ট ৪%। ইহুদিদের একটি ছোট সম্প্রদায় রয়েছে। কলম্বাস অভিযানের দোভাষী একজন ইহুদি ছিলেন বলে মনে করা হয়। আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, দ্বীপে ইহুদি সংখ্যা ২০০,মতভেদে ৩০০ | মুসলমানদেরও স্বল্প উপস্থিতি রয়েছে। ঔপনিবেশিক যুগে কিছু ক্রীতদাস এবং মুক্ত আফ্রিকানরা মুসলিম ছিল, বর্তমানে দ্বীপের প্রায় ৩০০ অধিবাসী মুসলিম। এছাড়াও বাহাই, হিন্দু, রাস্তাফেরিয়ান এবং পুরাতন আফ্রিকান ধর্ম ওবেহের অনুসরণকারীদের ছোট ছোট সম্প্রদায় রয়েছে। ভাষা বাহামার সরকারী ভাষা ইংরেজি। অনেক মানুষ একটি ইংরেজি ভিত্তিক ক্রিওল ভাষায় কথা বলে যাকে বলা হয় বাহামিয়ান ইংরেজি বা শুধুই "বাহামিয়ানিজ"।"বাহামিয়ানিজ" নামটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন লরেন্টে গিবস নামে একজন বাহামিয়ান লেখক এবং অভিনেতা, তাঁর একটি কবিতায়। তারপর থেকে নামটির ব্যবহার প্রচলিত হয়েছে । হাইতিয়ান ক্রিওল, একটি ফরাসি-ভিত্তিক ক্রিওল ভাষা যা বাহামার হাইতিয়ানরা ব্যবহার করে থাকে। হাইতিয়ানরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫%। এটিকে বাহামিয়ান ইংরেজি থেকে আলাদা করার জন্য সহজভাবে ক্রিওল বলা হয় । শিক্ষা ২০১১ সালের তথ্যানুসারে, বাহামায় প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৯৫% সাক্ষর। জাতীয় উচ্চশিক্ষা বা বিদ্যালয় পরবর্তী শিক্ষার জন্য রয়েছে বাহামা বিশ্ববিদ্যায় বা ইউনিভার্সিটি অফ দ্য বাহামাস (ইউবি)।ইউবি স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং তুলনীয় ডিগ্রী প্রদান করে । ইউবি-র তিনটি ক্যাম্পাস এবং দেশ জুড়ে অনেক শিক্ষাদান ও গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি বাহামা কলেজ নামে কাজ শুরু করে কিন্তু ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর বাহামা বিশ্ববিদ্যালয় পদে উন্নীত হয়। সংস্কৃতি বাহামার সংস্কৃতি হল আফ্রিকান, ব্রিটিশ এবং আমেরিকান- এই তিন দেশের সংস্কৃতির মিশ্রণ। বাহামিয়ান খাদ্য়তালিকায় ক্যারিবিয়ান, আফ্রিকান এবং ইউরোপীয় প্রভাব লক্ষ্য়করা যায়। কিছু অঞ্চলের উৎসব সেই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ফসল, ফল বা খাবারের সাথে যুক্ত থাকে, যেমন গ্রেগরি টাউন, এলিউথেরাতে "আনারস ফেস্ট" বা অ্যান্ড্রোসে "ক্র্যাব ফেস্ট"। বাহামিয়ান সাহিত্য কবিতা, ছোটগল্প, নাটক এবং কল্প-কাহিনী সমৃদ্ধ।পারিপার্শ্বিক জগৎ ও সাধারণ মানুষের মনোজগতের বিবিধ প্রতিক্রিয়া রচনাগুলির উপাদান। সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব, পরিশীলনের অদম্য প্রচেষ্টা, আত্ম অনুসন্ধান, অতীতেরস্মৃতিচারণ এবং সর্বোপরি সৌন্দর্যের উপলব্ধি রচনাগুলিরমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সাহিত্যিকদের মধ্যে সুসান ওয়ালেস, পার্সিভাল মিলার, রবার্ট জনসন, রেমন্ড ব্রাউন, ও.এম. স্মিথ, উইলিয়াম জনসন, এডি মিনিস এবং উইনস্টন সন্ডার্সের নাম উল্লেখযোগ্য।বাহামার বিভিন্ন দ্বীপের জনপ্রিয় লোককাহিনী এবং কিংবদন্তির মধ্যে রয়েছে অ্যান্ড্রোস দ্বীপের “লুসকা” এবং “চিকচার্নি” প্রাণী, এক্সুমা দ্বীপের “প্রিটি মলি” এবং বিমিনি দ্বীপের হারিয়ে যাওয়া শহর “আটলান্টিস”।গল্প কথন বাহামার আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহ্য। জুনকানু হল সঙ্গীত, নৃত্য সমৃদ্ধ একটি ঐতিহ্যবাহী আফ্রো-বাহামিয়ান কুচকাওয়াজ যা প্রতি বক্সিংডে, নববর্ষের দিনে এবং অন্যান্য ছুটির দিন যেমন মুক্তি দিবস উদযাপন করতে নাসাউ প্রভৃতি কয়েকটি স্থানে অনুষ্ঠিত। বাহামার প্রান্তিক দ্বীপগুলিতে, যা ফ্য়ামিলি আইল্য়ান্ড নামে পরিচিত, রেগাটাস বা নৌ প্রতিযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান। এই দ্বীপগুলি প্রধানত কৃষ্ণাঙ্গদের বাসভূমি। পুরানো দিনের নৌকায় চড়ে জলবিহার ও তৎসঙ্গে নানা আমোদ-প্রমোদের আয়োজন এই উৎসবের অঙ্গ। কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত প্রান্তিক দ্বীপগুলিতে নানা হস্তশিল্পের প্রচলন রয়েছে যা এখানকার লোকসংস্কৃতির অঙ্গ।খড় বা গাছের পাতা থেকে তৈরি ঝুড়ি, টুপি, ব্যাগ, "ভুডু পুতুল" প্রভৃতি পণ্যদ্রব্য পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। ওবেহ একধরনের আফ্রিকান-বাহামিয়ান জাদুবিদ্যা, পরের অশুভকামনায় ব্যবহৃত হয়, যার অনুশীলন বর্তমানে বাহামায় আইনত নিষিদ্ধ । প্রতীক বাহামিয়ান পতাকা ১৯৭৩ সালে গৃহীত হয়েছিল। এর রং বাহামিয়ান জনগণের শক্তির প্রতীক; এর নকশা প্রাকৃতিক পরিবেশ (সূর্য এবং সমুদ্র) এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের দিকগুলিকে প্রতিফলিত করে। পতাকাটি তিনটি আনুভূমিক সমান্তরাল ভাগে বিভক্ত। উপর ও নীচের নীলরং সমুদ্রের প্রতীক ও মধ্যের হলুদ রং সূর্যের। একটি কালো সমবাহু ত্রিভুজ মাস্তুলের সূচক। বাহামার সম্মানসূচক পদক বা কোট অফ আর্মস এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি ঢাল এবং তার দুইপাশে রয়েছে একটি মার্লিন এবং একটি ফ্ল্যামিঙ্গো, যথাক্রমে বাহামার জাতীয় পশু এবং পাখি।। ফ্ল্যামিঙ্গো ভূমিতে এবং মার্লিন সমুদ্রে অবস্থিত ।ঢালের উপরিভাগে সূর্য, নিম্নে সমুদ্র, মধ্যে জাহাজ এবং সবার উপরে একটি শঙ্খের খোল, যা দ্বীপের বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে। ঢালের নীচে উদ্ধৃত রয়েছে জাতীয় নীতিবাক্য:"ফরওয়ার্ড, আপওয়ার্ড, অনওয়ার্ড টুগেদার।" বাহামার জাতীয় ফুল ইয়েলো এল্ডার।বাহামার সর্বত্র এবং সম্বৎসর এই ফুল ফুটতে দেখা যায়।১৯৭০-এ নিউ প্রভিডেন্সের চারটি গার্ডেন ক্লাবের সদস্যদের সম্মিলিত জনপ্রিয় ভোটের মাধ্যমে এটিকে নির্বাচন করা হয়েছিল ‍ খেলাধুলা খেলাধুলা বাহামিয়ান সংস্কৃতির অন্য়তম প্রধান অঙ্গ। জাতীয় ক্রীড়া ক্রিকেট। এটিই দেশের প্রাচীনতম ক্রীড়াওৢ বটে। ১৮৪৬ সাল থেকে বাহামায় এই খেলা শুরু হয়।১৯৩৬ সালে বাহামা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের পত্তনি হয়। বাহামা ওয়েস্ট ইণ্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের সদস্য় না হওয়ায় বাহামার খেলোয়াড়রা ওয়েস্ট ইণ্ডিজ ক্রিকেট টীমে খেলবার সুযোগ পায় না। তবু ১৯৪০ থেকে ১৯৭০ সাল অবধি দেশে ক্রিকেটের যথেষ্ট প্রাধান্য় ছিল। ১৯৭০ সাল থেকে খেলাটির জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে শুরু করে কারণ তখন থেকে ক্রীড়া শিক্ষকদের পদে পূর্বের ইংল্যান্ডের ক্রিকেট অনুরাগী শিক্ষকদের পরিবর্তে নিযুক্ত করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের তেমন জনপ্রিয়তা না থাকায় বাহামার খেলায় ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড, বাস্কেটবল, বেসবল, সফটবল,ভলিবল, অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল প্রভৃতির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। এই খেলাগুলি বর্তমানে অধিক জনপ্রিয় এবং এদের দর্শকের সংখ্যাও বেশি। অ্যাথলেটিক্স, সাধারণত দেশে 'ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড' নামে পরিচিত, বাহামিয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে সফল খেলা। এতে বাহামিয়ানদের বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে সাফল্যের কারণে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড সম্ভবত বাস্কেটবলের পাশে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। নাসাউ এবং প্রান্তিক দ্বীপপুঞ্জে ট্রায়াথলনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফুটবল লিগগুলি বাহামা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা পরিচালিত হয়। ক্রিকেট এখনও কিছু স্থানীয় স্তরে খেলা হয়। উইন্ডসর পার্ক এবং হেইন্স ওভালে শনিবার ও রবিবার ক্রিকেট খেলা হয়। আরেকটি খেলা হল ঘোড়দৌড়, যা ক্রিকেটের আগে ১৭৯৬ সালে শুরু হয়েছিল। অন্যান্য জনপ্রিয় খেলা হল সাঁতার, টেনিস এবং বক্সিং, যেখানে বাহামিয়ানরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু সাফল্য উপভোগ করেছে। অন্যান্য খেলা যেমন গল্ফ, রাগবি লীগ, রাগবি ইউনিয়ন, সকার, এবং নেটবলেরও আকর্ষণ ক্রমশ বাড়ছে। বাহামা ১৯৫২ সালে অলিম্পিক গেমসে প্রথম অংশগ্রহণ করে এবং তারপর থেকে প্রতিটি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। ১৯৮০ সালে আমেরিকার নেতৃত্বে বাহামা অলিম্পিক বয়কট করেছিল। এপর্যন্ত বাহামিয়ান খেলোয়াড়রা মোট ষোলটি পদক জিতেছে, সবগুলোই অ্যাথলেটিক্স এবং সেলিংয়ে। বাহামা দশ লাখের নিচে জনসংখ্যা সহ অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি অলিম্পিক পদক জিতেছে। ২০১৭ সালে ক্যারিবিয়ানে অনুষ্ঠিত প্রথম পুরুষদের সিনিয়র ফিফা টুর্নামেন্ট “ফিফা বিচ সকার বিশ্বকাপ”-এর, আয়োজক ছিল বাহামা। এছাড়া বাহামা তিনবার আন্তর্জাতিক রিলেরেসের আয়োজন করেছে । তথ্যসূত্র উত্তর আমেরিকার রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল আটলান্টিক মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ ক্যারিবীয় রাষ্ট্র এইচঅডিওর মাইক্রোবিন্যাসের সাথে নিবন্ধসমূহ ক্যারিবীয় সম্প্রদায়ের সদস্য রাষ্ট্র বাহামা দ্বীপ রাষ্ট্র ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র সার্বভৌম রাষ্ট্র ১৯৭৩-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল ১৯৭৩-এ উত্তর আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত ইংল্যান্ডের প্রাক্তন উপনিবেশ
https://en.wikipedia.org/wiki/The_Bahamas
The Bahamas
The Bahamas ( bə-HAH-məz), officially the Commonwealth of The Bahamas, is an island country within the Lucayan Archipelago of the Atlantic Ocean. It contains 97% of the Lucayan Archipelago's land area and 88% of its population. The archipelagic country consists of more than 3,000 islands, cays, and islets in the Atlantic Ocean, and is located north of Cuba and northwest of the island of Hispaniola (split between the Dominican Republic and Haiti) and the Turks and Caicos Islands, southeast of the U.S. state of Florida, and east of the Florida Keys. The capital is Nassau on the island of New Providence. The Royal Bahamas Defence Force describes The Bahamas' territory as encompassing 470,000 km2 (180,000 sq mi) of ocean space. The Bahama islands were inhabited by the Arawak and Lucayans, a branch of the Arawakan-speaking Taíno, for many centuries. Christopher Columbus was the first European to see the islands, making his first landfall in the "New World" in 1492 when he landed on the island of San Salvador. Later, the Spanish shipped the native Lucayans to Hispaniola and enslaved them there, after which the Bahama islands were mostly deserted from 1513 until 1648, nearly all native Bahamians having been forcibly removed for enslavement or having died of diseases that Europeans brought with them from Europe. In 1649, English colonists from Bermuda, known as the Eleutheran Adventurers, settled on the island of Eleuthera. The Bahamas became a British crown colony in 1718, when the British clamped down on piracy. After the American Revolutionary War, the Crown resettled thousands of American Loyalists to The Bahamas; they took enslaved people with them and established plantations on land grants. Enslaved Africans and their descendants constituted the majority of the population from this period on. The slave trade was abolished by the British in 1807. Although slavery in The Bahamas was not abolished until 1834, The Bahamas became a haven of manumission for African slaves, from outside the British West Indies, in 1818. Africans liberated from illegal slave ships were resettled on the islands by the Royal Navy, while some North American slaves and Seminoles escaped to The Bahamas from Florida. Bahamians were even known to recognise the freedom of enslaved people carried by the ships of other nations which reached The Bahamas. Today Black-Bahamians make up 90% of the population of 400,516. The country gained independence from the United Kingdom in 1973, led by Sir Lynden O. Pindling. It shares its monarch with the other Commonwealth realms. The Bahamas has the third-largest gross domestic product per capita in the Americas, after the United States and Canada. Its economy is based on tourism and offshore finance.
1175
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%A8
বাহরাইন
বাহরাইন মধ্যপ্রাচ্যের একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বীপ রাষ্ট্র। বাহরাইন পারস্য উপসাগরের পশ্চিম অংশের ৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এর পূর্বে কাতার ও পশ্চিমে সৌদী আরব। সবচেয়ে বড় দ্বীপটিও বাহরাইন নামে পরিচিত এবং এতে দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী মানামা অবস্থিত। প্রায় ৫,০০০ বছর আগেও বাহরাইন একটি বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। সবসময়ই এটি শক্তিশালী প্রতিবেশীদের অধীনস্থ ছিল। ১৭শ শতকে এটি ইরানের দখলে আসে। ১৭৮৩ সালে মধ্য সৌদী আরবের আল-খলিফা পরিবার নিজেদেরকে বাহরাইনের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে এবং তখন থেকে তারাই দেশটিকে শাসন করে আসছে। ১৯শ শতকের কিছু সন্ধিচুক্তির ফলে যুক্তরাজ্য দেশটির প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব পায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত বাহরাইন ব্রিটিশ প্রভাবাধীন ছিল। বাহরাইনের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি সেখানেই জন্ম-নেওয়া। এছাড়া বাহরাইনে শিয়া মুসলিমদের সংখ্যা সুন্নী মুসলিমদের প্রায় দ্বিগুণ। তবে সুন্নীরা বাহরাইনের সরকার নিয়ন্ত্রণ করেন। ১৯৩০-এর দশকে বাহরাইন পারস্য উপসাগরের প্রথম দেশ হিসেবে তেল-ভিত্তিক অর্থনীতি গঠন করে, কিন্তু ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকেই এর সমস্ত তেল ফুরিয়ে যায়। তবে দেশটি এই পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগ করে রেখেছিল এবং দেশটির অর্থনীতি এখনও উন্নতি করে যাচ্ছে।বাহারাইনি দিনার বিশ্বের দ্বিতীয় সব থেকে দামি মুদ্রা। ইতিহাস বর্তমান বাহরাইন অঞ্চলে ব্রোঞ্জ যুগে দিলমুন নামক সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল। ৫ হাজার বছর আগেও বাহরাইন সিন্ধু অববাহিকা ও মেসোপটেমিয়ার সভ্যতাগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২০০০ অব্দের দিকে ভারত থেকে বাণিজ্য আসা বন্ধ হয়ে গেলে দিলমুন সভ্যতার পতন ঘটা শুরু করে। ৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে আসিরীয় রাজার বাহরাইনকে ক্রমাগত নিজেদের বলে দাবী করতে শুরু করে। ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কিছু পরে দিলমুন আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। এরপর অনেক দিন যাবৎ বাহরাইনের কোন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতকে পারস্য উপসাগরে মহাবীর আলেকজান্ডারের পদার্পণ ঘটলে আবার এর হদিস পাওয়া যায়। যদিও আরব গোত্র বনি ওয়াএল এবং পারসিক গভর্নরেরা অঞ্চলটি শাসন করতেন, খ্রিস্টীয় ৭ম শতক পর্যন্তও এটি গ্রিক নাম তিলোস (Tylos) নামে পরিচিত ছিল। ঐ শতকে এখানকার অধিবাসীরা ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। বাহরাইন ছিল আঞ্চলিক বাণিজ্য ও মুক্তা আহরণ কেন্দ্র। ৭ম শতক থেকে বিভিন্ন পর্বে এলাকাটি সিরিয়ার উমাইয়া বংশীয় খলিফাগণ, বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফাগণ, পারসিক, ওমানি এবং পর্তুগিজদের দ্বারা শাসিত হয়। শেষ পর্যন্ত বনি উতবাহ গোত্রের আল খালিফা পরিবার ১৭৮৩ সালে ইরানীদের কাছ থেকে অঞ্চলটি দখল করে এবং তখন থেকে আজ পর্যন্ত তারা বাহরাইনের শাসক। ১৮৩০-এর দশকে আল খালিফা পরিবার একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাহরাইনকে একটি ব্রিটিশ প্রটেক্টোরেটে পরিণত করে, অর্থাৎ যুক্তরাজ্য বহিরাক্রমণ থেকে দেশটির সুরক্ষার দায়িত্ব নেয় এবং এর বিনিময়ে বাহরাইন যুক্তরাজ্যের অনুমতি ছাড়া অন্য কোন বিদেশী শক্তির সাথে সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ হারায়। বাহরাইনে বড় আকারে খনিজ তেলের উৎপাদন শুরু হবার কিছু পরেই ১৯৩৫ সালে পারস্য উপসাগর অঞ্চলে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর প্রধান ঘাঁটিটি বাহরাইনে নিয়ে আসা হয়। ১৯৬৮ সালে যুক্তরাজ্য সরকার পারস্য উপসাগরের শেখশাসিত রাজ্যগুলির সাথে ইতোমধ্যে করা চুক্তিগুলি রদ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় বাহরাইন কাতার এবং বর্তমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৭টি শেখরাজ্যের সাথে মিলে একটি বৃহৎ সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ১৯৭১ সাল নাগাদ এই নয় রাজ্য সংযুক্তিকরণের বিভিন্ন ব্যাপারে একমত হতে পারেনি। ফলে ১৯৭১ সালের ১৫ই আগস্ট বাহরাইন একক রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। নতুন রাষ্ট্র বাহরাইনের জন্য একটি সংবিধান রচনা করা হয় এবং ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচিত হয়, কিন্তু মাত্র দুই বছর পরে ১৯৭৫ সালে বাহরাইনের আমির সংসদ ভেঙে দেন, কেননা নির্বাচিত সংসদ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আল-খলিফা শাসনের অবসান এবং মার্কিন নৌবাহিনীকে সেখান থেকে বিতাড়নের প্রচেষ্টা করছিল। ১৯৯০-এর দশকে বাহরাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া সম্প্রদায়ের অসন্তুষ্টি বিভিন্ন রাজনৈতিক সংঘাতের আকারে প্রকাশ পায়। এর প্রেক্ষিতে বাহরাইনের আমির প্রায় ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত, ১৯৯৫ সালে, বাহরাইনের মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনেন, এবং আইন পর্যালোচনাকারী কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা ৩০ থেকে ৪০-এ বৃদ্ধি করেন। এর ফলে সংঘাতের পরিমাণ প্রথমে কিছু কমলেও ১৯৯৬ সালের শুরুর দিকে বেশ কিছু হোটেল ও রেস্তোরাঁ-তে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে এবং এতে অনেকে নিহত হয়। পুলিশ প্রায় ১ হাজার লোককে এর জের ধরে গ্রেফতার করে এবং কোন বিচার ছাড়াই এদের শাস্তি দেয়া হয়। সম্প্রতি বাহরাইন সরকার এদের অনেককে ছেড়ে দিয়েছে। বাহরাইন ১৯৭১ সালে স্বধীনতা লাভ করে। বাহার শব্দের অর্থ সাগর আর বাহরাইন হচ্ছে দু'টি সাগর। এটি একটি দ্বীপ রাষ্ট্র এর চারদিকে সাগর I রাজনীতি বাহরাইনের রাজনীতি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র কাঠামোতে সংঘটিত হয়। রাজা শাইখ হামাদ বিন ইসা আল খালিফা সরকার চালানোর জন্য একজন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। বাহরাইনের আইনসভা দুই-কক্ষবিশিষ্ট। নিম্ন কক্ষের সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেন। ঊর্ধ্বকক্ষ তথা শুরা কাউন্সিলের সদস্যদের রাজা নিয়োগ দেন। বর্তমানে খালিফা ইবন সুলমান আল-খালিফা দেশের প্রধানমন্ত্রী। রাজপুত্র শাইখ সালমান বাহরাইনের সেনাবাহিনীর কমান্ডার। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ: ভূগোল বাহরাইন রাষ্ট্রটি আরব উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল থেকে ২৪ কিমি দূরে পারস্য উপসাগরে অবস্থিত ৩২টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাষ্ট্র। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বীপটির নাম বাহরাইন দ্বীপ। দ্বীপটির বেশির ভাগ অংশ মরুময় ঊষর নিম্নভূমি। কেবল উত্তরের উপকূলে এক চিলতে সমভূমি আছে যেখানে রাজধানী মানামা অবস্থিত। অর্থনীতি বাহরাইনের অর্থনীতি প্রধানত পেট্টোলিয়াম উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও রিফাইনিং এর উপর নির্ভরশীল। এই খাত ৬০% রপ্তানিতে ও ৩০% জিডিপিতে অবদান রাখে। এদেশের শ্রমবাজারের ৫ ভাগের ৩ ভাগ দখল করে আছে বিদেশি শ্রমিকেরা। যোগাযোগব্যবস্থা ভাল হওয়ায় পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এখানে সদরদপ্তর স্থাপন করেছে। পর্যটন খাত অনেক উন্নতি সাধন করেছে। এই খাত জিডিপিতে ৯% অবদান রাখছে। শুধুমাত্র ১% ভূমি চাষযোগ্য হওয়ায় তারা প্রয়োজনীয় খাদ্য নিজেরা উৎপাদনে অক্ষম। তারা এক্ষেত্রে আমদানির উপর নির্ভর করে। তাদের মাথাপিছু আয়ও অনেক বেশি। প্রায় ৫১,৯৫৬ মা.ডলার(২০১৭ অনুযায়ী) জনমিতি ২০১০ সালে বাহরাইনের জনসংখ্যা ১.২ মিলিয়ন হয়ে দাঁড়ায় যার মধ্যে ৫৬৮,৩৯৯ জন বাহরাইনি নাগরিক এবং ৬৬৬,১৭২ জন অনাগরিক। ২০০৭ সালে তা ১.০৫ মিলিয়ন (৫১৭,৩৬৮ অনাগরিক) অতিক্রম করে। ২০২০ সালের জানুয়ারি নাগাদ বাহরাইনের জনসংখ্যা ১.৬৯ মিলিয়নেরও উপরে গিয়ে দাঁড়ায়। যদিও জনসংখ্যার অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের লোক, তথাপি বাহরাইনিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দক্ষিণ এশীয়। ২০০৮ সালে প্রায় ২৯০,০০০ ভারতীয় নাগরিক বাহরাইনে বসবাস করেন, যা তাদের দেশটির একক বৃহত্তম প্রবাসী জনগোষ্ঠীতে পরিণত করে। এদের বেশিরভাগই ভারতের কেরল রাজ্য থেকে আগত। বাহরাইন বিশ্বের চতুর্থ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ যার জনসংখ্যার ঘনত্ব ২০১০ সালে ছিল প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,৬৪৬ জন। জনসংখ্যার একটি বড় অংশই দেশটির উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে, দক্ষিণাঞ্চল তুলনামূলক কম জনবহুল। দেশটির উত্তরাঞ্চল এতটাই নগরায়িত যে অনেকে একে একটি বৃহৎ মেট্রোপলিটন এলাকা বলে বিবেচনা করে। জাতিগোষ্ঠী বাহরাইনিরা জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময়। শিয়া বাহরাইনিরা দুটি প্রধান জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত: বাহরানা এবং আজম। বাহরানারা হল আরব শিয়া, অন্যদিকে আজমরা হল পারসিক শিয়া। মানামা ও মুহররকের জনসাধারণের বড় অংশই পারসিক শিয়া। শিয়া বাহরাইনিদের একটি ক্ষুদ্র অংশ হল আল-হাসা অঞ্চলের হাওয়াসি জনগোষ্ঠী। সুন্নি বাহরাইনিরাও মূলত দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত: আরব ও হুওয়ালা। আরব সুন্নিরা বাহরাইনের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠী, তারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত এবং বাহরাইনি রাজতন্ত্রও আরব সুন্নিদের নিয়ন্ত্রণাধীন। সুন্নি আরবেরা ঐতিহ্যগতভাবে জাল্লাক, মুহররক, রিফা ও হাওয়ার দ্বীপসমূহে বসবাস করে আসছে। হুওয়ালারা হল ইরানি সুন্নিদের বংশধর; তাদের কেউ কেউ পারসিক সুন্নি, আর বাকিরা আরব সুন্নি। সুন্নিদের মধ্যে বেলুচি জাতিগোষ্ঠীর লোকেরাও রয়েছে। আফ্রিকান বাহরাইনিদের অধিকাংশই পূর্ব আফ্রিকা থেকে আগত এবং ঐতিহ্যগতভাবে মুহররক দ্বীপ ও রিফাতে বসবাস করে। ধর্ম বাহরাইনের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং অধিকাংশ বাহরাইনি মুসলমান। বাহরাইনি মুসলমানদের বেশিরভাগই শিয়া। এটি মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি শিয়াপ্রধান দেশের অন্যতম, অন্য দুটি দেশ হল ইরাক ও ইরান। ২০১৭ সালের একটি আদমশুমারি অনুযায়ী বাহরাইনি জনগণের ৬২% শিয়া এবং ৩৮% সুন্নি। শিয়ারা বাহরাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হলেও রাজপরিবার এবং অভিজাতদের বেশিরভাগই সুন্নি মতাবলম্বী। দেশটির এই প্রধান দুই মুসলিম সম্প্রদায় কিছু ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তীব্র মতবিরোধ ধারণ করে। শিয়ারা প্রায়শই রাজনৈতিক নিপীড়ন ও অর্থনৈতিক প্রান্তীকরণের অভিযোগ তুলেছে; ফলে ২০১১ সালের বাহরাইনি অভ্যুত্থানের অধিকাংশ বিক্ষোভকারীই ছিল শিয়া। ২০১০ সালের আদমশুমারি মতে, বাহরাইনের মুসলিম জনসংখ্যা ৮৬৬,৮৮৮। বাহরাইনে স্থানীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। ২০১০ সালের শুমারি অনুযায়ী অমুসলিম বাহরাইনিদের সংখ্যা ৩৬৭,৬৮৩, যাদের বেশিরভাগই খ্রিস্টধর্মাবলম্বী। বাহরাইনের খ্রিস্টানদের বড় অংশই প্রবাসী, স্থানীয় খ্রিস্টান বাহরাইনিরা সে তুলনায় সংখ্যালঘু। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সাবেক বাহরাইনি রাষ্ট্রদূত আলীদ সামান একজন স্থানীয় খ্রিস্টান। বাহরাইনে একটি ক্ষুদ্র স্থানীয় ইহুদি সম্প্রদায়ও রয়েছে যাদের সংখ্যা ৩৭। বিভিন্ন সূত্রমতে বাহরাইনি ইহুদিদের সংখ্যা ৩৬ থেকে ৫০। বাহরাইনি লেখিকা ন্যান্সি খেদুরির মতে, বাহরাইনের ইহুদি সম্প্রদায় পৃথিবীর অন্যতম নবীন জনগোষ্ঠী। ১৮৮০-র দশকে তৎকালীন ইরাক ও ইরান থেকে বাহরাইন দ্বীপে অভিবাসন করা কয়েকটি ইহুদি পরিবার থেকে এই জনগোষ্ঠীর উৎপত্তিলাভ করে। সাএশীয় দেশসমূহ থেকে, বিশেষত ভারত, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা থেকে, আগত অভিবাসী কর্মীদের ক্রমাগত আগমনের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাহরাইনের সামগ্রিক মুসলিম সংখ্যার হার হ্রাস পেয়েছে। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, বাহরাইনের জনসংখ্যার ৮১.২% মুসলমান, ১০% খ্রিস্টান এবং ৯.৮% হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। বাহরাইনের জনসংখ্যার ১% বাহাই ধর্মাবলম্বী। ভাষা শিক্ষা স্বাস্থ্য সংস্কৃতি ইসলাম মূল ধর্ম এবং বাহরাইনীরা অন্যান্য ধর্মের অনুশীলনের প্রতি সহনশীলতার জন্য পরিচিত।বাহরাইনি এবং প্রবাসীদের মধ্যে বিবাহ অস্বাভাবিক নয়। ফিলিপিনো শিশু অভিনেত্রী মোনা মারবেলা আল-আলাওয়ের মতো অনেক ফিলিপিনো-বাহরাইনি রয়েছে। মহিলাদের পোশাক সম্পর্কে বিধিগুলি সাধারণত আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের তুলনায় শিথিল করা হয়; মহিলাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক সাধারণত হিজাব বা আবায়ায় অন্তর্ভুক্ত থাকে। যদিও ঐতিহ্যবাহী পুরুষদের পোশাকটি থোবে যাতে কেফিয়েহ, ঘুতরা, তবে পশ্চিমা পোশাকগুলিও এ দেশে প্রচলিত। যদিও বাহরাইন সমকামিতাকে বৈধতা দিয়েছে। সঙ্গীত বাহরাইনের সঙ্গীত অনেকটা এর প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের মতই। খালিজি (Khaliji) , এক প্রকার লোক সঙ্গীত সমগ্র বাহরাইন জুড়ে জনপ্রিয়। এছাড়া শহুরে ঘরানার সাওত (sawt) সঙ্গীতও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আলি বাহার বাহরাইনের বিখ্যাত গায়কদের মধ্যে একজন। Al Ekhwa (আরবি অনুবাদ- দ্যা ব্রাদার্স) তার সঙ্গীত দলের নাম। অ্যারাবস গট ট্যালেন্ট কর্তৃক ২০১১ সালে নির্বাচিত ক্ষুদে সংগীত শিল্পী হালা আল তুরক বাহরাইনে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাহরাইন ছাড়াও সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। এছাড়াও তার ইউটিউব মিউজিক ভিডিও সমূহ খুবই জনপ্রিয়। উল্লেখ্য, পারসিয়ান গালফ স্টেটস সমূহের মধ্যে বাহরাইনেই সর্বপ্রথম recording studio স্থাপন করা হয়। পরিবহন বাহরাইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শহরের তথা দেশের প্রধান ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর। এটি অন্যতম হাব বিমানবন্দর। তথ্যসূত্র 4. http://www.everyculture.com/A-Bo/Bahrain.html বহিঃসংযোগ বাহরাইন তথ্য ওয়েবসাইট বাহরাইনের রাজ্য সরকারি ওয়েবসাইট। রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ দেশ বৃত্তান্ত বিবিসি সংবাদ থেকে Bahrain at UCB Libraries GovPubs ChooseBahrain.com বাহরাইনের মানচিত্র বাহরাইন উইকি এশিয়ার রাষ্ট্র‎ মধ্যপ্রাচ্য ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র ইসলামি রাজতন্ত্র ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বাহরাইন জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র আরব লিগের সদস্য রাষ্ট্র উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র আরব উপদ্বীপ আরবিভাষী দেশ ও অঞ্চল ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল দ্বীপ রাষ্ট্র রাজ্য মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র নিকট প্রাচ্যের রাষ্ট্র ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র পশ্চিম এশিয়ার রাষ্ট্র সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Bahrain
Bahrain
Bahrain ( bah-RAYN, ; Arabic: البحرين, romanized: al-Baḥrayn, lit. 'Two Seas', locally [æl bɑħˈreːn] ), officially the Kingdom of Bahrain, is an island country in West Asia. It is situated on the Persian Gulf, and comprises a small archipelago made up of 50 natural islands and an additional 33 artificial islands, centered on Bahrain Island which makes up around 83 percent of the country's landmass. Bahrain is situated between Qatar and the northeastern coast of Saudi Arabia, to which it is connected by the King Fahd Causeway. The population of Bahrain is 1,501,635 as of May 14, 2023, based on elaborations of the United Nations data, of whom 712,362 are Bahraini nationals. Bahrain spans some 760 square kilometres (290 sq mi), and is the third-smallest nation in Asia after the Maldives and Singapore. The capital and largest city is Manama. Bahrain is the site of the ancient Dilmun civilization. It has been famed since antiquity for its pearl fisheries, which were considered the best in the world into the 19th century. Bahrain was one of the earliest areas to be influenced by Islam, during the lifetime of Muhammad in 628 AD. Following a period of Arab rule, Bahrain was ruled by the Portuguese Empire from 1521 until 1602, when they were expelled by Shah Abbas the Great of the Safavid Iran. In 1783, the Bani Utbah and allied tribes captured Bahrain from Nasr Al-Madhkur and it has since been ruled by the Al Khalifa royal family, with Ahmed al Fateh as Bahrain's first hakim. In the late 1800s, following successive treaties with the British, Bahrain became a protectorate of the United Kingdom. In 1971, it declared independence. Formerly an emirate, Bahrain was declared a semi-constitutional monarchy in 2002, and Article 2 of the newly adopted constitution made Sharia a principal source for legislation. Bahrain developed the first post-oil economy in the Persian Gulf, the result of decades of investing in the banking and tourism sectors; many of the world's largest financial institutions have a presence in the country's capital. It is recognized by the World Bank as a high-income economy. Bahrain is a member of the United Nations, Non-Aligned Movement, Arab League, Organisation of Islamic Cooperation and the Gulf Cooperation Council. Bahrain is a Dialogue partner of the Shanghai Cooperation Organization.
1176
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A1%E0%A7%8B%E0%A6%B8
বার্বাডোস
বার্বাডোস () ক্যারিবীয় সাগরে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। ক্যারিবীয় সাগরের দ্বীপগুলির মধ্যে এটি সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত। বার্বাডোস প্রায় তিন শতাব্দী ধরে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। ১৯৬৬ সালে এটি যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। অ্যাংলিকান গির্জা থেকে শুরু করে জাতীয় খেলা ক্রিকেট পর্যন্ত দেশটির সর্বত্র ব্রিটিশ ঐতিহ্যের ছাপ সুস্পষ্ট। বার্বাডোসের বর্তমান অধিবাসীদের বেশির ভাগই চিনির প্ল্যান্টেশনে কাজ করানোর জন্য নিয়ে আসা আফ্রিকান দাসদের বংশধর। দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত ব্রিজটাউন দেশটির বৃহত্তম শহর, প্রধান বন্দর ও রাজধানী। বার্বাডোসের শুভ্র বালুর সৈকত ও দ্বীপের চারদিক ঘিরে থাকা প্রবাল প্রাচীর বিখ্যাত। বহু বছর ধরে আখ ছিল অর্থনীতির প্রধান পণ্য। ১৯৭০-এর দশকে পর্যটন শিল্প প্রধান শিল্পে পরিণত হয়। দ্বীপটি এই অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটক গন্তব্যস্থলের একটি। দ্বীপের সরকার বার্বাডোসলে অফশোর ব্যাংকিং এবং তথ্যপ্রযুক্তির একটি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। ইতিহাস প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে মানুষ সম্ভবত 1600 খ্রিস্টপূর্বাব্দে দ্বীপটিতে প্রথম বসতি বা পরিদর্শন করেছিল। কোন ইউরোপীয় জাতি বার্বাডোসে প্রথম এসেছিল তা অনিশ্চিত, যা সম্ভবত ১৫ শতক বা ১৬ শতকের কোন এক সময়ে হয়েছিল। রাজনীতি রাষ্ট্রের প্রধান হলেন বার্বাডোসের রাষ্ট্রপতি - বর্তমানে সান্দ্রা ম্যাসন - বার্বাডোসের সংসদ দ্বারা চার বছরের মেয়াদের জন্য নির্বাচিত, এবং বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী , যিনি সরকার প্রধান , দ্বারা বার্বাডিয়ান রাজ্যের বিষয়ে পরামর্শ দেন । সংসদের নিম্নকক্ষ, হাউস অফ অ্যাসেম্বলির মধ্যে 30 জন প্রতিনিধি রয়েছেন। সিনেটে , পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে 21 জন সিনেটর রয়েছে। বার্বাডোস একটি দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা হিসাবে কাজ করে । প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলি হল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টি এবং বর্তমান বার্বাডোস লেবার পার্টি । প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ বার্বাডোস 11টি প্যারিশে বিভক্ত ভূগোল অর্থনীতি মাথাপিছু জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) এর পরিপ্রেক্ষিতে বার্বাডোস হল বিশ্বের 52 তম ধনী দেশ। জনসংখ্যা বার্বাডোসের বর্তমান জনসংখ্যা ২৮৭,৪৩২(২৭/০৭/২০২০-সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী)।প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বাস করেন ৬৬৮ জন। (উৎসঃ https://www.worldometers.info/world-population/barbados-population/) সংস্কৃতি খেলাধুলা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের অন্যান্য ক্যারিবীয় দেশগুলির মতো, দ্বীপে ক্রিকেট খুবই জনপ্রিয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলে সাধারণত অনেক বার্বাডিয়ান খেলোয়াড় থাকে। বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ এবং ছয়টি "সুপার এইট" ম্যাচ ছাড়াও, দেশটি 2007 সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল আয়োজন করেছিল কেনসিংটন ওভাল-এ । বার্বাডোস স্যার গারফিল্ড সোবার্স , স্যার ফ্রাঙ্ক ওয়ারেল , স্যার ক্লাইড ওয়ালকট , স্যার এভারটন উইকস , গর্ডন গ্রিনিজ , ওয়েস হল , চার্লি গ্রিফিথ , জোয়েল গার্নার , ডেসমন্ড হেইনস সহ অনেক মহান ক্রিকেটার তৈরি করেছে ।ম্যালকম মার্শাল । আরও দেখুন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বার্বাডোস সরকারি ওয়েবসাইট বার্বাডোস সরকারি তথ্য পরিসেবা বার্বাডোস সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ বার্বাডোস বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন কর্পোরেশন বার্বাডোস জাদুঘর এবং ঐতিহাসিক সমাজ বার্বাডোস পরিসংখ্যান পরিসেবা বার্বাডোস পর্যটন কর্তৃপক্ষ- পর্যটন মন্ত্রণালয়। ২০০৮ এবং ২০০৯ এর জন্য ভ্রমণ করা ওয়েবসাইট- সম্পূর্ণভাবে বার্বাডোস বার্বাডোসের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইট বার্বাডোসের পার্লামেন্টের ওয়েবসাইট বার্বাডোসের হলুদ পাতা এবং সাদা পাতার টেলিফোন ডাইরেকটরি উত্তর আমেরিকার রাষ্ট্র দ্বীপ রাষ্ট্র ক্যারিবীয় দ্বীপ বার্বাডোস প্রাক্তন কমনওয়েলথ রাজ্য ১৯৬৬-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ক্যারিবীয় সম্প্রদায়ের সদস্য রাষ্ট্র ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল ক্যারিবীয় রাষ্ট্র লিওয়ার্ড দ্বীপ (ক্যারিবীয়) সাবেক পর্তুগিজ উপনিবেশ কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র কমনওয়েলথ প্রজাতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্র ১৬২৭-এ উত্তর আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত ১৯৬৬-এ উত্তর আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত ইংল্যান্ডের প্রাক্তন উপনিবেশ
https://en.wikipedia.org/wiki/Barbados
Barbados
Barbados (UK: bar-BAY-doss; US: bar-BAY-dohss; locally bar-BAY-dəss) is an island country in the Lesser Antilles of the West Indies, in the Caribbean region next to North America and north of South America, and is the most easterly of the Caribbean islands. It lies on the boundary of the South American and the Caribbean Plates. Its capital and largest city is Bridgetown. Inhabited by Kalinago people since the 13th century, and prior to that by other Indigenous peoples, Spanish navigators took possession of Barbados in the late 15th century, claiming it for the Crown of Castile. It first appeared on a Spanish map in 1511. The Portuguese Empire claimed the island between 1532 and 1536, but abandoned it in 1620 with their only remnants being an introduction of wild boars for a good supply of meat whenever the island was visited. An English ship, the Olive Blossom, arrived in Barbados on 14 May 1625; its men took possession of the island in the name of King James I. In 1627, the first permanent settlers arrived from England, and Barbados became an English and later British colony. During this period, the colony operated on a plantation economy, relying on the labour of African slaves who worked on the island's plantations. Slavery continued until it was phased out through most of the British Empire by the Slavery Abolition Act 1833. On 30 November 1966, Barbados moved towards political independence and assumed the status of a Commonwealth realm, becoming a separate jurisdiction with Elizabeth II as the Queen of Barbados. On 30 November 2021, Barbados later transitioned to a republic within the Commonwealth, replacing its monarchy with a ceremonial president. Barbados's population is predominantly of African ancestry. While it is technically an Atlantic island, Barbados is closely associated with the Caribbean and is ranked as one of its leading tourist destinations.
1177
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B6
বেলারুশ
{{Infobox country | latd = 53 | latm = 55 | latNS = N | longd = 27 | longm = 33 | longEW = E | conventional_long_name = বেলারুশ প্রজাতন্ত্র | native_name = | image_flag = Flag of Belarus.svg | image_coat = Coat of arms of Belarus (official).svg | common_name = বেলারুশ | symbol_type = জাতীয় প্রতীক | national_anthem = | image_map = Europe-Belarus.svg | map_caption = | capital = মিন্‌স্ক | largest_city = রাজধানী | official_languages = | ethnic_groups = {{unbulleted list | ৭৬.৭% বেলারুশীয় | ১০.০৬℅ বৌদ্ধ' | ৫.৩% রুশী | ৩.১% পোল | ১.৭% ইউক্রেনীয় | ০.১% তাতার | ০.১% ইহুদী | ৩.০% অন্যান্য }} | demonym = বেলারুশীয় | government_type = Unitary presidential republic | leader_title1 = রাষ্ট্রপতি | leader_name1 = আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো | leader_title2 = প্রধানমন্ত্রী | leader_name2 = আন্দ্রেই কোবিকোভ | legislature = জাতীয় অধিবেশন | upper_house = প্রজাতন্ত্র পরিষদ | lower_house = | sovereignty_type = গঠন | sovereignty_note = | established_event1 = Principality of Polotsk | established_date1 = ৯৮৭ | established_event2 = লিথুয়ানিয়ার গ্র্যান্ড ডিউক | established_date2 = প্রায় ১২৩৬ | established_event3 = পোলিশ-লিথুয়েনীয় কমনওয়েলথ | established_date3 = ১লা জুলাই ১৫৬৯ | established_event4 = রুশ সাম্রাজ্যের মধ্যে রাজ্যভুক্ত | established_date4 = ১৭৯৫ | established_event5 = রুশ সাম্রাজ্যের থেকে স্বাধীন; বেলারুশিয়ান গণপ্রজাতন্ত্রী | established_date5 = ২৫শে মার্চ ১৯১৮ | established_event6 = লিথুয়েনীয়-বেলোরুশিয়ান এসএসআর | established_date6 = ১৭ই ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ | established_event7 = বেলোরুশিয়ান এসএসআর | established_date7 = ৩১শে জুলাই ১৯২০ | established_event8 = পশ্চিমা বেলারুশের সোভিয়েত আত্মসাৎ | established_date8 = ১৫ই নভেম্বর ১৯৩৯ | established_event9 = রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ঘোষণা | established_date9 = ২৭শে জুলাই ১৯৯০ | established_event10 = | established_date10 = ২৫শে আগস্ট ১৯৯১ | established_event11 = স্বাধীনতা স্বীকৃত | established_date11 = ২৬শে ডিসেম্বর ১৯৯১ | established_event12 = বর্তমান সংবিধান | established_date12 = ১৫ই মার্চ ১৯৯৪ | area_km2 = 207595 | area_rank = ৮৫তম | area_sq_mi = 80155 | percent_water = 1.4% () | population_estimate = 9,498,700 | population_estimate_year = ২০১৬ | population_census_rank = ৮৭তম | population_density_km2 = 45.8 | population_density_rank = ১৪২তম | population_density_sq_mi = 120.8 | GDP_PPP = $১৬৪.৮৩৭ বিলিয়ন | GDP_PPP_year = ২০১৬ | GDP_PPP_rank = | GDP_PPP_per_capita = $১৭,৪৪০ | GDP_PPP_per_capita_rank = | GDP_nominal = $৪৫.৮৮৭ বিলিয়ন | GDP_nominal_year = ২০১৬ | GDP_nominal_rank = | GDP_nominal_per_capita = $৪,৮৫৫ | GDP_nominal_per_capita_rank = | Gini = 26.5 | Gini_year = ২০১১ | Gini_change = decrease | Gini_ref = | Gini_rank = ১১তম | HDI = 0.798 | HDI_year = ২০১৪ | HDI_change = increase | HDI_ref = | HDI_rank = ৫০তম | currency = New Belarusian rubled | currency_code = BYN | time_zone = FET | utc_offset = +৩ | date_format = dd.mm.yyyy | drives_on = ডান | calling_code = +৩৭৫ | cctld = | footnote_a = | footnote_b = | footnote_c = | footnote_d = Replaced the Belarusian ruble (BYR) on 1 July 2016. | continent = ইউরোপ | Dependency Ratio_year = ২০১৪ | Dependency Ratio = ২০ | Dependency Ratio_ref = }}বেলারুশ (, বিয়েলারুস্য্‌;), সরকারী নাম বেলারুশ প্রজাতন্ত্র (Рэспубліка Беларусь রেস্‌পুব্‌লিকা বিয়েলারুস্য্‌‌), মধ্য পূর্ব ইউরোপের একটি স্থলবেষ্টিত প্রজাতন্ত্র। এর উত্তরে ও পূর্বে রাশিয়া, দক্ষিণে ইউক্রেন, পশ্চিমে পোল্যান্ড, এবং উত্তর-পশ্চিমে বাল্টিক প্রজাতন্ত্র লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়া। বেলারুশ মূলত অরণ্য (দেশের এক-তৃতীয়াংশ), হ্রদ ও জলাভূমিতে পূর্ণ একটি সমতল ভূমি। বেলারুশের প্রায় ৯৯ লক্ষ লোকের ৮০%-ই জাতিগতভাবে বেলারুশীয়; অন্যান্য জাতির মধ্যে পোলীয়, রুশ ও ইউক্রেনীয় উল্লেখযোগ্য। তিন-চতুর্থাংশ জনগণ নগর অঞ্চলে বাস করেন। দেশের মধ্যভাগে অবস্থিত মিন্‌স্ক রাজধানী ও বৃহত্তম নগর। অন্যান্য বড় শহরগুলির মধ্যে আছে ব্রেস্ত, হ্রোদনা, হোমিয়েল, মোগিলেফ, ভিতেভ্‌স্ক এবং বাব্‌রুইস্ক। ১৯৯৫ সালের একটি গণভোটের মাধ্যমে রুশ ও বেলারুশ ভাষা দেশের সরকারি ভাষা। রুশ অর্থডক্স খ্রিস্টধর্ম দেশের মানুষের প্রধান ধর্ম। বেলারুশে একটি কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত অর্থনীতি বিদ্যমান; সরকার নিয়ন্ত্রিত ভারী শিল্পকারখানাগুলি এই অর্থনীতির চালিকাশক্তি, তবে কৃষিও একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। মধ্যযুগ থেকে বেলারুশ অঞ্চলটি বিভিন্ন বিদেশী শাসনের অধীনে ছিল। এদের মধ্যে আছে পোল্যান্ডের ডিউক রাজত্ব, লিথুয়ানিয়ার ডিউক রাজত্ব, এবং পোলীয়-লিথুয়ানীয় কমনওয়েলথ। ১৮শ শতকে এটিকে রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কেবল মধ্য-১৯শ শতকে এসে বেলারুশে জাতীয়তাবাদী ও সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটে। ১৯১৯ সালে বেলোরুশীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে বেলারুশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২২ সালে এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের চারটি প্রতিষ্ঠাকারী রাষ্ট্রের একটি ছিল। ১৯৩০ সালে ২য় পোলীয় প্রজাতন্ত্রের বেলারুশ জাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলি আধুনিক সীমান্তের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বেলারুশীয় ভূমিগুলির সম্পূর্ণ একত্রীকরণ সংঘটিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দেশটির প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হয়; এ সময় বেলারুশের এক-চতুর্থাংশ জনসংখ্যার মৃত্যু ঘটে এবং দেশটি অর্ধেকেরও বেশি অর্থনৈতিক সম্পদ হারায়। যুদ্ধপরবর্তী বছরগুলিতে বেলারুশ ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠে। এটি জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরাষ্ট্রগুলির একটি ছিল। ১৯৯১ সালের ২৭শে জুলাই বেলারুশের আইনসভা দেশটির সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেন। আগস্ট মাসে দেশটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং এর মাধ্যমে ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে ভূমিকা রাখে। বর্তমান বেলারুশ সরকার একটি রাষ্ট্রপতিভিত্তিক প্রজাতন্ত্র। ১৯৯৪ সাল থেকে আলেক্সান্দর লুকাশেঙ্কো দেশটির রাষ্ট্রপতি। বেলারুশ ও রাশিয়াকে একত্রিত করে একটি মাত্র রাষ্ট্র রুশ ও বেলারুশ ইউনিয়ন করার ব্যাপারে ১৯৯৬ সাল থেকে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা চলছে। ইতিহাস রাজনীতি বেলারুশের রাজনীতি''' একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারপ্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দ্বিকাক্ষিক আইনসভার উপর ন্যস্ত। তবে রাষ্ট্রপতি আইনের মতই অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্যকর অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতা রাখেন। বেলারুশের দুটি বড় দলের নাম হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক দল ও গণ ফ্রন্ট। এছাড়াও সেখানে আরও কিছু ছোট দলও রয়েছে। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ ভূগোল পূর্ব ইউরোপের স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র বেলারুশ মূলত একটি সমতল ভূমি যার কোন প্রাকৃতিক সীমানা নেই। দেশের মধ্যভাগে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বে চলে গেছে বেলারুশ পর্বতশ্রেণী। দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা জনবিরল অরণ্যে আবৃত। প্রায় ৩ হাজার নদী ও প্রায় ৪ হাজার হ্রদ দেশটির ভূগোলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অর্থনীতি জনসংখ্যা বেলারুশ এবং রুশ ভাষা বেলারুশ প্রজাতন্ত্রের সরকারি ভাষা। এর মধ্যে বেলারুশীয় ভাষাতে প্রায় ৯৮% জনগণ কথা বলে। ১০% লোক রুশ ভাষাতে কথা বলতে পারে। পশ্চিম সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পোলীয় এবং জার্মান ভাষার প্রচলন আছে। সংস্কৃতি তথ্যসূত্র আরও দেখুন বহিঃসংযোগ সরকারী বেলারুশের ই-সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেলারুশের দূতাবাস Global Integrity Report: Belarus has information on Belarus anti-corruption efforts. বেলারুশের সরকার বৈদেশিক মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপতির সরকারি ওয়েবসাইট সংবাদ এবং গণমাধ্যম বেলারুশীয় টেলিগ্রাফ সংস্থা- খবর, ঘটনা, ঘটনা Minsk Post | Daily diary of Belarus বেলারুশ সংবাদ বেলারুশের মিডিয়া বেলারুশের সংবাদ বেলারুশ থেকে রাজনীতি এবং সংবাদ সাধারণ তথ্য বেলারুশের প্রজাতন্ত্রের আধিকারিক ওয়েবসাইট Belarus at UCB Libraries GovPubs'' Belarus Miscellany প্রথম বেলারুশীয় শিল্প গ্যালারি বেলারুশের ভার্চুয়াল সহায়িকা The World Bank in Belarus FAO Country Profiles: Belarus মানচিত্র বেলারুশ, topographic map সাধারণ পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা, বেলারুশের পিডিএফ মানচিত্র ডাউনলোডযোগ্য ইউরোপের রাষ্ট্র প্রজাতন্ত্র ১৯৯১-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র স্বাধীন রাষ্ট্রের কমনওয়েলথের সদস্য রাষ্ট্র যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র রুশ ভাষী দেশ ও অঞ্চল একাধিক দাপ্তরিক ভাষা সহ ইউরোপের দেশ স্থলবেষ্টিত দেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Belarus
Belarus
Belarus, officially the Republic of Belarus, is a landlocked country in Eastern Europe. It is bordered by Russia to the east and northeast, Ukraine to the south, Poland to the west, and Lithuania and Latvia to the northwest. Belarus spans an area of 207,600 square kilometres (80,200 sq mi) with a population of 9.1 million, The country has a hemiboreal climate and is administratively divided into six regions. Minsk is the capital and largest city; it is administered separately as a city with special status. Between the medieval period and the 20th century, different states at various times controlled the lands of modern-day Belarus, including Kievan Rus', the Principality of Polotsk, the Grand Duchy of Lithuania, the Polish–Lithuanian Commonwealth, and the Russian Empire. In the aftermath of the Russian Revolution in 1917, different states arose competing for legitimacy amid the Civil War, ultimately ending in the rise of the Byelorussian SSR, which became a founding constituent republic of the Soviet Union in 1922. After the Polish-Soviet War, Belarus lost almost half of its territory to Poland. Much of the borders of Belarus took their modern shape in 1939, when some lands of the Second Polish Republic were reintegrated into it after the Soviet invasion of Poland, and were finalized after World War II. During World War II, military operations devastated Belarus, which lost about a quarter of its population and half of its economic resources. In 1945, the Byelorussian SSR became a founding member of the United Nations, along with the Soviet Union. The republic was home to a widespread and diverse anti-Nazi insurgent movement which dominated politics until well into the 1970s, overseeing Belarus' transformation from an agrarian to industrial economy. The parliament of the republic proclaimed the sovereignty of Belarus on 27 July 1990, and during the dissolution of the Soviet Union, Belarus gained independence on 25 August 1991. Following the adoption of a new constitution in 1994, Alexander Lukashenko was elected Belarus's first president in the country's first and only free election after independence, serving as president ever since. Lukashenko heads a highly centralized authoritarian government. Belarus ranks low in international measurements of freedom of the press and civil liberties. It has continued a number of Soviet-era policies, such as state ownership of large sections of the economy. Belarus is the only European country that continues to use capital punishment. In 2000, Belarus and Russia signed a treaty for greater cooperation, forming the Union State. The country has been a member of the United Nations since its founding and has joined the CIS, the CSTO, the EAEU, the OSCE, and the Non-Aligned Movement. It has shown no aspirations of joining the European Union but nevertheless maintains a bilateral relationship with the bloc, and also participates in the Baku Initiative.
1178
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%AE
বেলজিয়াম
বেলজিয়াম ( বেল্‌য়া, ব্যল্‌ঝ়িক্‌, বেল্‌গিয়েন্‌) উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশ। এটি ইউরোপের ক্ষুদ্রতম ও সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলির একটি। এটি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। বেলজিয়াম ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ব্রুসেল শহরটি বেলজিয়ামের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। ইউরোপীয় কমিশন, ন্যাটো এবং বিশ্ব শুল্ক সংস্থার সদর দপ্তর ব্রাসেল্‌স-এ অবস্থিত। এছাড়া ইউরোপীয় পার্লমেন্টের নতুন ভবন এখানে অবস্থিত। ইউরোপীয় পার্লমেন্টের আদি ভবন ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে অবস্থিত। বেলজিয়াম ইউরো জোন-এ অবস্থিত এবং এর মুদ্রা ইউরো। ইউরো প্রবর্তনের পূর্বে বেলজিয়ামের মূদ্রার নাম ছিল বেলজিয়াম ফ্রাঁ । এটি ইউরোপের সর্বাধিক নগরায়িত দেশ; এখানকার ৯৭% লোক শহরে বাস করে। নেদারল্যান্ডস ও লুক্সেমবুর্গের সাথে মিলে বেলজিয়াম নিচু দেশগুলি গঠন করেছে। ফ্রান্স এবং উত্তর ইউরোপের সমভূমির মধ্যস্থলে অবস্থিত। এর উত্তরে উত্তর সাগর। ইউরোপের একটি ভৌগোলিক সঙ্গমস্থলে অবস্থিত হওয়ায় দেশটি মধ্যযুগ থেকেই একটি প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। উত্তর সাগরের মাধ্যমে দেশটি বাকী বিশ্বের সাথে বাণিজ্য চালায়। বেলজিয়ামের অবস্থান সামরিক কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বহু যুদ্ধ হয়েছে। ১৮৩০ সালে বেলজিয়াম স্বাধীনতা লাভ করে। ইতিহাস দেশটির নাম বেল্গায়ে নামের এক কেল্টীয় জাতির নাম থেকে এসেছে। এই জাতিটি এখানকার আদি অধিবাসী ছিল; খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দে জুলিয়াস সিজার এলাকাটি দখল করে নেন। ভাষা ভাষার জন্য বেলজিয়ানরা যুদ্ধ-বিগ্রহে পর্যন্ত লিপ্ত হয়েছে। প্রধান ভাষা দুটি যথাঃ ফ্লেমিশ এবং ফরাসী। তৃতীয় প্রচলিত ভাষা জার্মান। কেবল ব্রুসেল শহরে ফ্লেমিশ এবং ফরাসি উভয় ভাষাই সরকারীভাবে ব্যবহৃত হয়। ফ্ল্যান্ডার্স এলাকায় অবিমিশ্রভাবে ফ্লেমিশ ভাষা প্রচলিত ; ওয়ালোনিয়া এলাকায় প্রচলিত ফরাসি ভাষা। তবে দূতাবাসের শহর ব্রুসেলে ইংরেজি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। বেলজিয়ামে দুইটি সরকারি ভাষা প্রচলিত: ওলন্দাজ এবং ফরাসি। বেলজিয়ামের প্রায় ৫৭% লোক ওলন্দাজ ভাষার একটি উপভাষা ফ্লেমিশে কথা বলে। ফরাসি ভাষা প্রায় ৩৩% লোকের মাতৃভাষা এবং ফরাসিভাষীরা মূলত দেশের দক্ষিণাংশে ওয়ালুন অঞ্চলের বাস করে। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেল্‌স একটি দ্বিভাষিক এলাকা। এছাড়া পূর্বের অয়পেন-মালমেডি-সাংক্ত ভিট প্রদেশগুলিতে প্রায় দেড় লক্ষ জার্মান ভাষাভাষী বাস করে। বেলজিয়ামের সংখ্যালঘু ভাষাগুলির মধ্যে আরবী, তুর্কি, কাবিলে, স্পেনীয়, পর্তুগিজ এবং লেৎসেবুর্গেশ ভাষা অন্যতম। রাজনীতি বেলজিয়ামের রাজনীতি একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাজা বা রাণী হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারপ্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং দ্বিকাক্ষিক আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ বেলজিয়াম প্রশাসনিক ভাবে তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত যথা ফ্ল্যান্ডার্স, ওয়ালোনিয়া এবং ব্রাসেলস ক্যাপিটাল সিটি। ফ্ল্যান্ডার্স অঞ্চলটি ব্রাসেলসের উত্তর ও পশ্চিমে অবস্থিত; এখানে বেশির ভাগ লোক ওলন্দাজ (ফ্লেমিশ) ভাষায় কথা বলে এবং এরা ফ্লেমিং নামে পরিচিত। ওয়ালোনিয়া ব্রাসেলসের পূর্বে ও দক্ষিণে অবস্থিত এবং এখানকার বেশির ভাগ লোক ফরাসি ভাষায় কথা বলে। এরা ওয়ালোন নামে পরিচিত। ব্রাসেলস ক্যাপিটাল সিটি অঞ্চলে উভয় জাতের লোকের বাস। প্রতিটি অঞ্চলই প্রায় স্বায়ত্তশাসিত; কিন্তু ফ্লেমিং ও ওয়ালোনদের মধ্যে এখনও তীব্র দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। ফ্ল্যান্ডার্স এলাকা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে আগ্রহী। ভূগোল বেলজিয়ামকে তিনটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়: উত্তর-পশ্চিমের উপকূলীয় সমভূমি, মধ্যভাগের মালভূমি এবং দক্ষিণ-পূর্বের আর্দেন পর্বতমালা। অর্থনীতি জনসংখ্যা সংস্কৃতি তথ্যসূত্র আরও দেখুন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বেলজিয়াম বহিঃসংযোগ সরকারী বেলজিয়াম রাজতন্ত্রের সরকারি ওয়েবসাইট বেলজিয়ামের কেন্দ্রীয় সরকারি ওয়েবসাইট রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ সাধারণ তথ্য Belgium entry at Encyclopædia Britannica Belgium at UCB Libraries GovPubs বেলজিয়াম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দপ্তরের তথ্য। Portals to the World from the United States Library of Congress FAO Country Profiles: Belgium পর্যটন Official Site of the Belgian Tourist Office in the Americas and GlobeScope,– its links to sites of Belgian Tourist Offices in Belgium– its links to sites of Belgian Tourist Offices worldwide Other বেলজিয়াম, entry on the Catholic Encyclopedia 1913, republished on Wikisource বেলজিয়াম , entry on the Public Diplomacy wiki monitored by the USC Center on Public Diplomacy বেলজিয়ামের ইতিহাস: প্রাথমিক ডকুমেন্ট EuroDocs: Online Sources for European History ইউরোপের রাষ্ট্র বেলজিয়াম জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র ইউরোপ কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্র ওলন্দাজ ভাষার ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র ভূমধ্যসাগরীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র ওইসিডি সদস্য ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল একাধিক দাপ্তরিক ভাষা সহ ইউরোপের দেশ রাজ্য সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Belgium
Belgium
Belgium, officially the Kingdom of Belgium, is a country in Northwestern Europe. The country is bordered by the Netherlands to the north, Germany to the east, Luxembourg to the southeast, France to the south, and the North Sea to the west. It covers an area of 30,689 km2 (11,849 sq mi) and has a population of more than 11.7 million, making it the 22nd most densely populated country in the world and the 6th most densely populated country in Europe, with a density of 383/km2 (990/sq mi). Belgium is part of an area known as the Low Countries, historically a somewhat larger region than the Benelux group of states, as it also included parts of northern France. The capital and largest metropolitan region is Brussels; other major cities are Antwerp, Ghent, Charleroi, Liège, Bruges, Namur, and Leuven. Belgium is a sovereign state and a federal constitutional monarchy with a parliamentary system. Its institutional organization is complex and is structured on both regional and linguistic grounds. It is divided into three highly autonomous regions: the Flemish Region (Flanders) in the north, the Walloon Region (Wallonia) in the south, and the Brussels-Capital Region. Brussels is the smallest and most densely populated region, as well as the richest region in terms of GDP per capita. Belgium is also home to two main linguistic communities: the Flemish Community, which constitutes about 60 percent of the population, and the French Community, which constitutes about 40 percent of the population. A small German-speaking Community, making up around one percent of the population, exists in the East Cantons. The Brussels-Capital Region is officially bilingual in French and Dutch, although French is the majority language and lingua franca. Belgium's linguistic diversity and related political conflicts are reflected in its complex system of governance, made up of six different governments. Since the Middle Ages, Belgium's central location has meant that the area has been relatively prosperous, connected commercially and politically to its bigger neighbours. The country as it exists today was established following the 1830 Belgian Revolution, when it seceded from the United Kingdom of the Netherlands, which had incorporated the Southern Netherlands (which comprised most of modern-day Belgium) after the Congress of Vienna in 1815. The name chosen for the new state is derived from the Latin word Belgium, used in Julius Caesar's "Gallic Wars", to describe a nearby region in the period around 55 BCE. Belgium has also been the battleground of European powers, earning the moniker "the Battlefield of Europe", a reputation reinforced in the 20th century by both world wars. Belgium participated in the Industrial Revolution, and during the course of the 20th century, possessed a number of colonies, notably the Belgian Congo and Ruanda-Urundi. These colonies gained independence between 1960 and 1962. The second half of the 20th century was marked by rising tensions between the Dutch-speakers and French-speakers, fueled by differences in language and culture and the unequal economic development of Flanders and Wallonia. This continuing antagonism has led to several far-reaching state reforms, resulting in the transition from a unitary to a federal arrangement between 1970 and 1993. Despite the reforms, tensions have persisted: there is particularly significant separatist sentiment among the Flemish, language laws such as the municipalities with language facilities have been the source of much controversy, and the government formation period following the 2010 federal election set the world record at 589 days. Unemployment in Wallonia is more than double that of Flanders, which boomed after the Second World War. Belgium is a developed country, with an advanced high-income economy. The country is one of the six founding members of the European Union, and its capital, Brussels, is the de facto capital of the European Union itself, hosting the official seats of the European Commission, the Council of the European Union, and the European Council, as well as one of two seats of the European Parliament (the other being Strasbourg). Belgium is also a founding member of the Eurozone, NATO, OECD, and WTO, and a part of the trilateral Benelux Union and the Schengen Area. Brussels also hosts the headquarters of many major international organizations, such as NATO.
1179
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%9C
বেলিজ
বেলিজ মধ্য আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অংশে, ক্যারিবীয় সাগরের উপকূলে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। বেলিজ মধ্য আমেরিকার সবচেয়ে ক্ষুদ্র ও স্বল্পবসতিপূর্ণ দেশগুলির একটি। এর উত্তরে মেক্সিকো, পশ্চিমে ও দক্ষিণে গুয়াতেমালা এবং পূর্বে ক্যারিবীয় সাগর। দেশটির তটরেখার দৈর্ঘ্য ২৮০ কিলোমিটার। উপকূল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে সমুদ্রের মধ্যে একটি প্রবাল বাধ আছে, যার নাম বেলিজ প্রবাল বাধ। ভৌগোলিকভাবে বেলিজ ইউকাতান উপদ্বীপের দক্ষিণে অবস্থিত। বেলিজের উত্তর অর্ধাংশ নিম্ন জলাভূমি প্রকৃতির; এখানে কৃষিকাজ দুরূহ। বেলিজের দক্ষিণ অংশটিতে একটি সরু উপকূলীয় সমভূমি আছে, যার পাশে হঠাৎ অনেক উঁচু পাহাড় ও পর্বত উঠে গেছে; পার্বত্য অঞ্চলটির নাম মায়া পর্বতমালা। দেশের তিন-চতুর্থাংশ এলাকা অরণ্যে আবৃত। উপকূলীয় শহর বেলিজ সিটি দেশের বৃহত্তম শহর ও দেশের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এটি দেশটির রাজধানী ছিল। ১৯৬১ সালে একটি হারিকেন ঘূর্ণিঝড়ে শহরটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করলে দেশের অভ্যন্তরে বেলিজ সিটি থেকে ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে বেলমোপান শহরে নতুন রাজধানী নির্মাণ করা হয়। বেলিজ জাতিগত ও সাংস্কৃতিকভাবে বিচিত্র দেশ। এখানকার অনেক লোক কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা মিশ্র আফ্রিকান-ইউরোপীয় রক্তের লোক, যাদেরকে ক্রেওল ডাকা হয়। এছাড়াও এখানে বহু মায়া আদিবাসী ও মেস্তিসো (আদিবাসী আমেরিকান ও ইউরোপীয়দের মিশ্র জাতি) লোকের বাস। এছাড়াও এখানে ইউরোপীয় ও এশীয়রা স্বল্প সংখ্যায় বাস করেন। ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে কৃষাঙ্গ ও অর্ধ-কৃষ্ণাঙ্গ ক্রেওলদের তুলনায় মেস্তিসোদের অনুপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেস্তিসোরা বর্তমানে বেলিজের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি প্রতিনিধিত্ব করছে। বর্তমান বেলিজ এলাকাটি অতীতে মায়া সভ্যতার অংশ ছিল। মায়া সভ্যতা ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিকাশ লাভ করে এবং ১৫৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। মায়ারা ছিল দক্ষ কৃষক; তারা তখনকার যুগের সবচেয়ে অগ্রসর একটি সভ্যতা নির্মাণ করেছিল। তারা অনেক কারুকার্যময় মন্দির নির্মাণ করে। মায়া সভ্যতার প্রাচীন নগরগুলির ধ্বংসাবশেষ দেখতে অনেক পর্যটক এখন বেলিজে বেড়তে আসে। দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্য ও মনোরম সৈকতগুলিও পর্যটকদেরকে আকৃষ্ট করে। বেলিজ প্রায় দুই শতক ধরে ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল। এটি আমেরিকা মহাদেশের মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত সর্বশেষ ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। ১৯৭৩ পর্যন্ত এর নাম ছিল ব্রিটিশ হন্ডুরাস। প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুয়াতেমালা ঐতিহাসিক কারণে বেলিজকে নিজের অংশ বলে দাবী করে আসলেও বেলিজ নিজের স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রচারণা চালায়। ১৯৮১ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর এটি স্বাধীনতা অর্জন করে। বর্তমানে এটি কমনওয়েলথ অফ নেশনসের একটি সদস্য হিসেবে যুক্তরাজ্যের সাথে সম্পর্ক জিইয়ে রেখেছে। বেলিজের প্রধান ভাষা ইংরেজি। বেলিজের সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি ভাষা তাই ইংরেজি ভাষাভাষী ব্রিটিশ ক্যারিবীয় দ্বীপগুলির মত। কিন্তু এর সংস্কৃতি আবার মধ্য আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলির মত। বেলিজের রাজনৈতিক ব্যবস্থাটি মধ্য আমেরিকার দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক। ১৬৩৮ সালে পিটার ওয়ালেস নামের একজন স্কটল্যান্ডীয় জলদস্যু বেলিজ নদীর মোহনাতে একটি লোকালয় স্থাপন করেন বলে ধারণা করা হয়। ওয়ালেসের নামের স্পেনীয় উচ্চারণ থেকেই "বেলিজ" নামটি এসেছে বলে অনুমান করা হয়। আরেকটি তত্ত্ব অনুযায়ী মায়া ভাষার শব্দ বেলিক্স থেকে এসেছে যার অর্থ "কাদাপানি" অথবা অন্য আরেকটি মায়া শব্দ বেলিকিন থেকে এসেছে যার অর্থ "সমুদ্রমুখী দেশ"। বেলিজের অর্থনীতি মুক্তবাজার প্রকৃতির। ২০শ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত কাঠ রপ্তানি ছিল এর অর্থনীতির মেরুদণ্ড। বর্তমানে চিনি ও লেবু জাতীয় ফল রপ্তানি দেশটির আয়ের প্রধান উৎস। বর্তমানে সেবাখাত দেশটির বৃহত্তম অর্থনৈতিক খাত। এছাড়া পর্যটন বিদেশী আয়ের অন্যতম একটি উৎস। বেলিজের মুদ্রার নাম বেলিজ ডলার। ইতিহাস রাজনীতি প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ ভূগোল অর্থনীতি জনসংখ্যা সংস্কৃতি সরকার এবং রাজনীতি বেলিজ একটি সংসদীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র । সরকারের কাঠামো ব্রিটিশ সংসদীয় ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে এবং আইনি ব্যবস্থা ইংল্যান্ডের সাধারণ আইনের আদলে তৈরি। রাষ্ট্রের প্রধান হলেন তৃতীয় চার্লস, যিনি বেলিজের রাজা । তিনি যুক্তরাজ্যে থাকেন এবং বেলিজে গভর্নর-জেনারেল এর দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করেন। মন্ত্রীসভা নির্বাহী কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে, গভর্নর-জেনারেলকে পরামর্শ দেয় এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ করে , যিনি সরকার প্রধান। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের সদস্যরা মন্ত্রিপরিষদে মন্ত্রী হন এবং সাধারণত তাদের মন্ত্রিসভা পদের সাথে একযোগে নির্বাচিত আসনে অধিষ্ঠিত হন। বেলিজের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় পরিষদ একটি প্রতিনিধি পরিষদ এবং একটি সেনেট নিয়ে গঠিত। প্রতিনিধি পরিষদের 31 জন সদস্য সর্বাধিক পাঁচ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হন এবং বেলিজের উন্নয়নকে প্রভাবিত করে এমন আইন প্রবর্তন করেন। গভর্নর-জেনারেল সিনেটের ১২ জন সদস্যকে নিয়োগ করেন । সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত একজন সেনেট সভাপতি হন। সেনেটের দায়িত্ব হলো প্রতিনিধি পরিষদের পাস করা বিল গুলি নিয়ে আলোচনা করা ও অনুমোদন দেওয়া। আইন প্রণয়ন ক্ষমতা বেলিজের সরকার এবং সংসদ উভয়ের উপর ন্যস্ত। সাংবিধানিক সুরক্ষার মধ্যে রয়েছে বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্র, উপাসনা, আন্দোলন এবং সমিতি। বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা থেকে স্বাধীন। স্বাধীন বিচার বিভাগের সদস্যদের নিয়োগ করা হয়। বিচার ব্যবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীনে গোষ্ঠীভুক্ত স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটরা অন্তর্ভুক্ত থাকে, যারা কম গুরুতর মামলার শুনানি করে। সুপ্রিম কোর্ট (প্রধান বিচারক) হত্যা এবং ও অন্যান্য গুরুতর মামলার শুনানি করে এবং আপিল আদালত দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের আপিলের শুনানি করে যাতে তাদের সাজা বাতিল হবে কিনা সাব্যস্ত হয়। বিবাদীরা, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে, ক্যারিবিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসে তাদের মামলার আপিল করতে পারে৷ রাজনৈতিক সংস্কৃতি ১৯৩৫ সালে, নির্বাচন পুনর্বহাল করা হয়েছিল, কিন্তু তখন জনসংখ্যার মাত্র ১.৮ শতাংশ ভোট দেওয়ার যোগ্য ছিল। ১৯৫৪ সালে মহিলারা ভোট দেওয়ার অধিকার অর্জন করেন । 1974 সাল থেকে, বেলিজের রাজনীতিতে পিপলস ইউনাইটেড পার্টি এবং ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক পার্টি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য ছোট দল অতীতে সব স্তরের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তবে এই ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর কোনোটিই কখনো কোনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন বা পদে জয়লাভ করতে পারেনি । বিদেশী সম্পর্ক বেলিজ জাতিসংঘের , কমনওয়েলথ অফ নেশনস এর; আমেরিকান স্টেটস অর্গানাইজেশনের (OAS); সেন্ট্রাল আমেরিকান ইন্টিগ্রেশন সিস্টেমের (SICA); ক্যারিবিয়ান সম্প্রদায় (CARICOM) এর; অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্যারিবিয়ান স্টেটস (ACS) এর; এবং ক্যারিবিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস ( বর্তমানে শুধুমাত্র বার্বাডোস, বেলিজ, গায়ানা এবং সেন্ট লুসিয়ার জন্য আপিলের চূড়ান্ত আদালত হিসাবে কাজ করে )এর পূর্ণ অংশগ্রহণকারী সদস্য । ২০০১ সালে ক্যারিবিয়ান সম্প্রদায়ের সরকারপ্রধানরা ভোট দিয়ে ঘোষণা করে যে এই অঞ্চলে আপিলের চূড়ান্ত আদালত হিসাবে যুক্তরাজ্যের প্রিভি কাউন্সিলের বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রতিস্থাপন করা উচিত ক্যারিবিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস দিয়ে। বেলিজ এখনও বাণিজ্য এবং একক বাজার চুক্তি সহ CARICOM চুক্তিতে যোগদানের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বেলিজ ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন এর সদস্য ১৯৯৫ সাল থেকে এবং এর কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এই চুক্তিতে আফ্রিকান, ক্যারিবিয়ান এবং প্যাসিফিক স্টেটস (ACP) গ্রুপের ক্যারিবিয়ান ফোরাম ( CARIFORUM ) সাবগ্রুপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। CARIFORUM বর্তমানে বৃহত্তর ACP-ব্লকের একমাত্র অংশ যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সম্পূর্ণ আঞ্চলিক বাণিজ্য-চুক্তি সমাপ্ত করেছে। বেলিজে ব্রিটিশ আর্মি গ্যারিসন প্রাথমিকভাবে জঙ্গল যুদ্ধ প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।১৩,০০০ বর্গকিলোমিটার এর অধিক জঙ্গল ভূখন্ডে তাদের প্রবেশাধিকার আছে। বেলিজ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধির একটি পক্ষ। সশস্ত্র বাহিনী বেলিজ ডিফেন্স ফোর্স (বিডিএফ) দেশের সামরিক বাহিনী হিসেবে কাজ করে। BDF, বেলিজ ন্যাশনাল কোস্ট গার্ড এবং ইমিগ্রেশন বিভাগ প্রতিরক্ষা এবং অভিবাসন মন্ত্রকের অংশ। ১৯৯৭ সালে নিয়মিত সেনার সংখ্যা ছিল ৯০০, রিজার্ভ আর্মি ৩৮১, এয়ার উইং ৪৫ এবং মেরিটাইম উইং ৩৬, সামগ্রিক শক্তি ছিল প্রায় ১,৪০০। 2005 সালে, মেরিটাইম উইং বেলিজের কোস্ট গার্ডের অংশ হয়ে ওঠে। ২০১২ সালে, বেলিজ সরকার সামরিক খাতে প্রায় $১৭ মিলিয়ন ব্যয় করেছে, যা দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১.০৮% । ১৯৮১ সালে বেলিজ স্বাধীনতা অর্জনের পর যুক্তরাজ্য গুয়াতেমালার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য দেশে একটি প্রতিরোধকারী বাহিনী (ব্রিটিশ ফোর্সেস বেলিজ) বজায় রেখেছিল ( বেলিজীয় অঞ্চলে গুয়াতেমালার দাবি দেখুন)। ১৯৮০ এর দশকে এর মধ্যে একটি ব্যাটালিয়ন এবং ১৪১৭ নং ফ্লাইট আরএএফ হ্যারিয়াস অন্তর্ভুক্ত ছিল। মূল ব্রিটিশ বাহিনী ১৯৯৪ সালে চলে যায়, গুয়াতেমালা বেলিজের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার তিন বছর পর ।কিন্তু যুক্তরাজ্য ২০১১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড সাপোর্ট ইউনিট বেলিজ (BATSUB) এবং 25 ফ্লাইট AAC-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণের উপস্থিতি বজায় রেখেছিল যখন শেষ ব্রিটিশ বাহিনী লেডিভিল ব্যারাক ত্যাগ করে ( ব্যতিক্রম সেকেন্ডেড উপদেষ্টারা)। প্রশাসনিক বিভাগ বেলিজ ছয়টি জেলায় বিভক্ত। এই জেলাগুলি আবার ৩১ টি নির্বাচনী এলাকায় বিভক্ত। বেলিজের স্থানীয় সরকার চার ধরনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিয়ে গঠিত: সিটি কাউন্সিল, টাউন কাউন্সিল, গ্রাম কাউন্সিল এবং কমিউনিটি কাউন্সিল । দুটি সিটি কাউন্সিল ( বেলিজ সিটি এবং বেলমোপান ) এবং সাতটি টাউন কাউন্সিল দেশের শহুরে জনসংখ্যাকে কভার করে, গ্রাম এবং কমিউনিটি কাউন্সিলগুলি গ্রামীণ জনসংখ্যাকে কভার করে। গুয়াতেমালার সঙ্গে সীমানাবিরোধ বেলিজের ইতিহাস জুড়ে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে গুয়াতেমালা বেলিজের সমগ্র বা কিছু অংশের উপর সার্বভৌমত্ব দাবি করেছে । এই দাবিটি মাঝে মাঝে গুয়াতেমালার সরকার দ্বারা অঙ্কিত মানচিত্রগুলিতে প্রতিফলিত হয়, যাতে বেলিজকে গুয়াতেমালার তেইশতম বিভাগ হিসাবে দেখানো হয়েছে। গুয়াতেমালার দাবিতে বেলিজের মূল ভূখণ্ডের প্রায় 53% জড়িত, যার মধ্যে চারটি জেলার উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে: বেলিজ, কায়ো, স্ট্যান ক্রিক এবং টলেডো। দেশের জনসংখ্যার প্রায় 43% (≈১,৫৪,৯৪৯ বেলিজবাসী) এই অঞ্চলে বাস করেন। দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাটির নিষ্পত্তির জন্য দেশটি বেলিজের উপর তার দাবি আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) নিয়ে যাওয়া উচিত কিনা তা নির্ধারণ করতে। গুয়াতেমালানরা এই বিষয়ে 95% ইতিবাচক ভোট দিয়েছে। ১০ এপ্রিল ২০১৯ -এ বেলিজে অনুরূপ গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু একটি আদালতের রায়ে সেটি স্থগিত করা হয়। ৮ মে ২০১৯-এ গণভোট অনুষ্ঠিত হয় এবং ৫৫.৪% ভোটার বিষয়টি আইসিজে-তে পাঠানোর পক্ষে মত দেন।উভয় দেশই ICJ-তে (যথাক্রমে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে) অনুরোধ জমা দিয়েছে এবং ICJ গুয়াতেমালার প্রাথমিক সংক্ষিপ্ত বিবরণ ডিসেম্বর ২০২০ এবং বেলিজের প্রতিক্রিয়া ২০২২ সালের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ৭ জুন ২০২৩-এ, লিখিত জমা দেওয়ার পর্যায়টি শেষ হয়, পরবর্তী পদক্ষেপ হলো উভয় দেশের আইনি দলগুলির মৌখিক যুক্তি। আদিবাসীদের জমির দাবি বেলিজ ২০০৭ সালে আদিবাসীদের অধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের (UN) ঘোষণাকে সমর্থন করেছিল, যা আদিবাসী গোষ্ঠীর জন্য আইনি ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। অন্যান্য আদালতের মামলাগুলি এই অধিকারগুলিকে নিশ্চিত করেছে যেমন বেলিজের সুপ্রিম কোর্টের ২০১৩ সালের রায় বহাল রাখার সিদ্ধান্ত যা ২০১০ সালে প্রথাগত জমির শিরোনামগুলিকে আদিবাসীদের জন্য সাম্প্রদায়িক ভূমি হিসাবে স্বীকার করেছিল। এরকম আরেকটি কেস হল বেলিজ সরকারের উপর ক্যারিবিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের (CCJ) ২০১৫ সালের আদেশ, যেখানে বলা হয়েছে যে দেশটিকে মায়ান ভূমিতে শ্রেণীবদ্ধকরণ এবং ঐতিহ্যগত শাসনের অনুশীলন করার জন্য একটি ভূমি রেজিস্ট্রি তৈরি করতে হবে। এই নিয়মগুলি সত্ত্বেও, বেলিজ আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভূমি অধিকারকে সমর্থন করার জন্য সামান্য চেষ্টা করেছে; উদাহরণস্বরূপ, CCJ-এর সিদ্ধান্তের পর দুই বছরে পরেও বেলিজের সরকার মায়ান জমি রেজিস্ট্রি চালু করতে ব্যর্থ হয়, গ্রুপটিকে তার নিজের হাতে ব্যবস্থা নিতে প্ররোচিত করে। এসব ঘটনার সঠিক প্রভাব খতিয়ে দেখা দরকার। , বেলিজ এখনো আদিবাসী জনজাতিদের প্রাপ্য অধিকার দিতে সমস্যায় পড়ে। ৫০-পৃষ্ঠার স্বেচ্ছাসেবী জাতীয় প্রতিবেদন অনুসারে বেলিজ জাতিসংঘের 2030 টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দিকে তার অগ্রগতির উপর তৈরি করেছে যদিও আদিবাসী গোষ্ঠীগুলিকে দেশের সূচকগুলিতে কোনও উপাদানই দেওয়া হয় না। সম্পূর্ণ প্রতিবেদনে বেলিজের মায়া জনসংখ্যা শুধুমাত্র একবার উল্লেখ করা হয়েছে। আরও দেখুন কমনওয়েলথ অব নেশন্স তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বেলিজের সরকার - সরকারি ওয়েবসাইট। রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ বেলিজ জাতীয় জরুরী অবস্থা ব্যবস্থাপনা সংস্থা - সরকারি ওয়েবসাইট। বেলিজ পর্যটন বোর্ড- সরকারি পর্যটন ওয়েবসাইট। Belize Wildlife Conservation Network - Belize Wildlife Conservation Network Belize information on globalEDGE Country Page from Encyclopaedia Britannica LANIC Belize page Belize at UCB Libraries GovPubs বেলিজ ক্যারিবীয় দ্বীপ মধ্য আমেরিকা ১৯৮১-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ক্যারিবীয় সম্প্রদায়ের সদস্য রাষ্ট্র স্পেনীয় ভাষী রাষ্ট্র ও অঞ্চল উত্তর আমেরিকার রাষ্ট্র ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল ক্যারিবীয় রাষ্ট্র মধ্য আমেরিকার রাষ্ট্র প্রাক্তন স্পেনীয় উপনিবেশ কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Belize
Belize
Belize ( , bih-LEEZ, beh-; Belize Kriol English: Bileez) is a country on the north-eastern coast of Central America. It is bordered by Mexico to the north, the Caribbean Sea to the east, and Guatemala to the west and south. It also shares a water boundary with Honduras to the southeast. Belize is a member of CARICOM - Caribbean Community, and is considered part of the Caribbean region and the historical British West Indies. The Maya civilization spread into the area of Belize between 1500 BC and AD 300 and flourished until about 1200. European contact began in 1502–04 when Christopher Columbus sailed along the Gulf of Honduras. European exploration was begun by English settlers in 1638. Spain and Britain both laid claim to the land until Britain defeated the Spanish in the Battle of St. George's Caye (1798). It became a British colony in 1840, and a Crown colony in 1862. Belize achieved its independence from the United Kingdom on 21 September 1981. It is the only mainland Central American country which is a Commonwealth realm, with King Charles III as its monarch and head of state, represented by a governor-general. Belize's abundance of terrestrial and marine plants and animals and its diversity of ecosystems, including extensive coral reefs, give it a key place in the globally significant Mesoamerican Biological Corridor. It is considered a Central American and Caribbean nation with strong ties to both the American and Caribbean regions. It has an area of 22,970 square kilometres (8,867 sq mi) and a population of 397,483 (2022). Its mainland is about 290 km (180 mi) long and 110 km (68 mi) wide. It is the least populated and least densely populated country in Central America. Its population growth rate of 1.87% per year (2018 estimate) is the second-highest in the region and one of the highest in the Western Hemisphere. Its capital is Belmopan, and its largest city is the namesake city of Belize City. The country has a diverse society composed of many cultures and languages. It is the only Central American country where English is the official language, while Belizean Creole is the most widely spoken dialect. Spanish is the second-most-commonly-spoken language, followed by the Mayan languages, German dialects, and Garifuna. Over half the population is multilingual due to the diverse linguistic backgrounds of the population. It is known for its September Celebrations and punta music.
1180
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%A8
বেনিন
{{Infobox Country |native_name = République du Béninরেপ্যুব্লিক্‌ দ্যু বেনিন্‌|conventional_long_name = বেনিন প্রজাতন্ত্র |common_name = বেনিন |image_flag = Flag of Benin.svg |image_coat = Coat of arms of Benin.svg |image_map = Benin in its region.svg |national_motto = ফরাসি: Fraternité, Justice, Travail(অনুবাদ: বন্ধুভাব, ন্যায়পরায়ণতা, শ্রম) |national_anthem = L'Aube Nouvelle (ফরাসি)(অনুবাদ: একটি নতুন দিনের ভোর) |official_languages = ফরাসি |demonym = বেনিনীয় |capital = পর্তো নোভো |latd= 6|latm=28 |latNS=N |longd=2 |longm=36 |longEW=E |largest_city = কোতোনু |government_type = বহুদল বিশিষ্ট গণতন্ত্র |leader_title1 = রাষ্ট্রপতি |leader_name1 = প্যাট্রিশ টেলন |sovereignty_type = স্বাধীনতা |sovereignty_note = ফ্রান্স হতে |established_event1 = তারিখ |established_date1 = ১লা আগস্ট ১৯৬০ |area_rank = ১০১তম |area_magnitude = |area = ১১২,৬২২ |areami² = ৪৩,৪৮৪ |percent_water = ১.৮ |population_estimate = ৮,৯৩৫,০০০ |population_estimate_rank = ৯০তম |population_estimate_year = ২০০৯ |population_census = 10,008,749 |population_census_year = 2013 |population_density_km2 = 94.8 |population_density_sq_mi= |population_density_rank = 120th |GDP_PPP = $26.177 billion |GDP_PPP_rank = |GDP_PPP_year = 2017 |GDP_PPP_per_capita = $2,297 |GDP_PPP_per_capita_rank = |GDP_nominal = $9.605 billion |GDP_nominal_year = 2017 |GDP_nominal_per_capita = $842 |Gini_year = 2003 |Gini_change = |Gini = 36.5 |Gini_ref = |Gini_rank = |HDI_year = 2015 |HDI_change = increase |HDI = 0.485 |HDI_ref = |HDI_rank = 167th | currency = পশ্চিম আফ্রিকান সিএফএ ফ্রাঙ্ক | currency_code = XOF |country_code = |time_zone = WAT |utc_offset = +১ |time_zone_DST = not observed|utc_offset_DST = +১ |cctld = .বিজে |calling_code = ২২৯ |footnote1 = কোটনিউ সরকারের আসন। |footnote2 = Estimates for this country explicitly take into account the effects of excess mortality due to AIDS; this can result in lower life expectancy, higher infant mortality and death rates, lower population and growth rates, and changes in the distribution of population by age and sex than would otherwise be expected. |footnote3 = Rank based on 2005 estimate. }} বেনিন (ফরাসি: Bénin বেনিন্‌) পশ্চিম আফ্রিকার একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এর পূর্ব নাম ছিল দাহোমি। গিনি উপসাগরে দেশটির প্রায় ১২১ কিমি দীর্ঘ তটরেখা বিদ্যমান। কীলক আকারের দেশটি উত্তর দিকে আফ্রিকার অভ্যন্তরে প্রায় ৬৭০ কিলোমিটার প্রবেশ করেছে। এটি আফ্রিকার ক্ষুদ্রতর দেশগুলির একটি। বেনিনের জলবায়ু ক্রান্তীয়। এর অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক। দেশের বেশির ভাগ কৃষক দিনমজুরি করেন। ১৯৯০-এর দশকে বেনিনের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটলেও এটি আফ্রিকার দরিদ্রতম দেশগুলির একটি। বেনিনে বিভিন্ন জাতের লোকের বাস। এদের ফন, ইয়োরুবা, ও আজা জাতির লোক সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফরাসি ভাষা দেশটির সরকারি ভাষা। তবে ফন এবং অন্যান্য আফ্রিকান ভাষা বহুল প্রচলিত। ১৮৯৯ সাল থেকে বেনিন ফরাসি পশ্চিম আফ্রিকার অংশ হিসেবে একটি ফরাসি উপনিবেশ ছিল। ১৯৬০ সালে দাহোমি নামে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। দাহোমি ১৮শ ও ১৯শ শতকে আফ্রিকার একটি বড় রাজ্য ছিল, যার কেন্দ্র ছিল বেনিন। স্বাধীনতা লাভের পর অনেকগুলি সামরিক শাসক দেশটি শাসন করেন। ১৯৭২ সালে একটি মার্ক্সবাদী সরকার ক্ষমতায় আসে। ১৯৭৫ সালে দেশটির নাম বদলে গণপ্রজাতন্ত্রী বেনিন করা হয়। ১৯৮০র দশকে অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত বেনিন পশ্চিমের দেশগুলির কাছে সাহায্য চায়। ১৯৮৯ সালে সরকার মার্কসবাদ পরিত্যাগ করে। ১৯৯০ সালে নতুন সংবিধান পাস করা হয় ও গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধন করা হয়। বর্তমানে বেনিন একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা; রাষ্ট্রপতি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। নামকরণ ঔপনিবেশিক সময়ে এবং স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে এই দেশটির নাম ছিলো দাহোমি। ১৯৭৫ সালের ৩০শে নভেম্বর তারিখে দেশটির নাম পালটে বেনিন রাখা হয়। এই নামটি এসেছে এই দেশের তীরের কাছের বেনিন উপসাগর থেকে, যার নাম আবার এসেছিলো বেনিন রাজ্য হতে। নতুন নাম বেনিন বেছে নেয়া হয় নিরপেক্ষতার খাতিরে। দাহোমি নামটি এসেছিলো দাহোমি রাজ্য হতে, যা দেশটির দক্ষিণের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা জুড়ে ছিলো। কাজেই উত্তর-পশ্চিমের রাজ্য আতাকোরা কিংবা উত্তর পূর্বের রাজ্য বোর্গুর কোনো নিদর্শন দেশের নামে ছিলো না। সেজন্য দেশটির নাম রাখা হয় বেনিন। ইতিহাস রাজনীতি প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ ভূগোল অর্থনীতি জনসংখ্যা বেনিনে জনসংখ্যা ১১,৩৯৬,৩৮০ (২০১৭) সংস্কৃতি আরও দেখুন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সরকার বেনিনের সরকার (ফরাসীতে সরকারী ওয়েবসাইট) রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ সার্বিক শুদ্ধতা প্রতিবেদন: বেনিন সাধারণ তথ্য দেশ বৃত্তান্ত বিবিসি সংবাদ থেকে Benin from UCB Libraries GovPubs'' বেনিন রাজনীতি সংবাদ মিডিয়া বেনিন খবর উৎসের ডাইরেকটরি স্টানফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিহ্মার উদ্যোগগুলো Benin Education Fund (BEF) Provides educational support and scholarships. ভ্রমণ Benin Travel Guide from Word Travels আফ্রিকার রাষ্ট্র ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র ১৯৬০-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বেনিন জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল সাবেক পর্তুগিজ উপনিবেশ স্বল্পোন্নত দেশ প্রজাতন্ত্র পশ্চিম আফ্রিকার রাষ্ট্র সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Benin
Benin
Benin ( ben-EEN, bin-EEN; French: Bénin [benɛ̃] , Fon: Benɛ, Fula: Benen), officially the Republic of Benin (French: République du Bénin), and also known as Dahomey, is a country in West Africa. It is bordered by Togo to the west, Nigeria to the east, Burkina Faso to the north-west, and Niger to the north-east. The majority of its population lives on the southern coastline of the Bight of Benin, part of the Gulf of Guinea in the northernmost tropical portion of the Atlantic Ocean. The capital is Porto-Novo, and the seat of government is in Cotonou, the most populous city and economic capital. Benin covers an area of 114,763 km2 (44,310 sq mi), and its population in 2021 was estimated to be approximately 13 million. It is a tropical country with an economy heavily dependent on agriculture, and is an exporter of palm oil and cotton. From the 17th to the 19th century, political entities in the area included the Kingdom of Dahomey, the city-state of Porto-Novo, and other states to the north. This region was referred to as the Slave Coast of West Africa from the early 17th century due to the high number of people who were sold and trafficked during the Atlantic slave trade to the New World. France took over the territory in 1894, incorporating it into French West Africa as French Dahomey. In 1960, Dahomey gained full independence from France. As a sovereign state, Benin has had democratic governments, military coups, and military governments. A self-described Marxist–Leninist state called the People's Republic of Benin existed between 1975 and 1990. In 1991, it was replaced by the multi-party Republic of Benin. The official language of Benin is French, with indigenous languages such as Fon, Bariba, Yoruba and Dendi also spoken. The largest religious group in Benin is Christianity (52.2%), followed by Islam (24.6%) and African Traditional Religions (17.9%). Benin is a member of the United Nations, the African Union, the Economic Community of West African States, the Organisation of Islamic Cooperation, the South Atlantic Peace and Cooperation Zone, Francophonie, the Community of Sahel–Saharan States, the African Petroleum Producers Association and the Niger Basin Authority.
1181
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AD%E0%A7%81%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A8
ভুটান
ভুটান (; ), আনুষ্ঠানিকভাবে ভুটান রাজ্য (), দক্ষিণ এশিয়ার স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। ভুটানের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে মাতৃভাষা জংখা ভাষায় 'দ্রুক ইয়ুল' বা 'বজ্র ড্রাগনের দেশ' নামে ডাকে। দেশটি ভারতীয় উপমহাদেশে হিমালয় পর্বতমালার পূর্বাংশে অবস্থিত। ভুটান উত্তরে চীনের তিব্বত অঞ্চল, পশ্চিমে ভারতের সিকিম ও তিব্বতের চুম্বি উপত্যকা, পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ এবং দক্ষিণে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ দ্বারা পরিবেষ্টিত। ভুটান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ "ভূ-উত্থান" থেকে যার অর্থ "উঁচু ভূমি"।সংস্কৃত ভাষায় ভোট বা ভোটান্ত বলতেও ভুুুটান দেশটিকে বোঝানো হয়। ভুটান সার্কের একটি সদস্য রাষ্ট্র এবং মালদ্বীপের পর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ। ভুটানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর থিম্ফু। ফুন্টসলিং ভুটানের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র। অতীতে ভুটান পাহাড়ের উপত্যকায় অবস্থিত অনেকগুলি আলাদা আলাদা রাজ্য ছিল। ১৬শ শতকে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসেবে এর আবির্ভাব ঘটে। ১৯০৭ সাল থেকে ওয়াংচুক বংশ দেশটি শাসন করে আসছেন। ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত ভুটান একটি বিচ্ছিন্ন দেশ ছিল। ১৯৬০-এর দশকে ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য নিয়ে দেশটি একটি আধুনিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। তবে এখনও এটি বিশ্বের সবচেয়ে অনুন্নত দেশগুলির একটি। নামকরণ ভুটানের নাম এসেছে সংস্কৃত শব্দ "ভূ-উত্থান" (উচ্চভূমি) হতে। অন্য মতে, ভুটান এসেছে ভোটস-আন্ত, অর্থাৎ "তিব্বতের শেষ সীমানা" হতে, যেহেতু ভুটান তিব্বতের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত। ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন সময়ে ভুটান বিভিন্ন নামে খ্যাত ছিলো। যেমন, লো মন (দক্ষিণের অন্ধকারাচ্ছন্ন রাজ্য), লো সেন্দেঞ্জং (সেন্দেন সাইপ্রেস বৃক্ষমন্ডিত দক্ষিণের রাজ্য), লোমেন খাঝি (দক্ষিণের রাজ্য যাতে চারটি প্রবেশ পথ রয়েছে), ও লো মেন জং (দক্ষিণের রাজ্য যেখানে ওষধি বৃক্ষ পাওয়া যায়। ইতিহাস ভুটানের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে সেখানে প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনীর চেয়ে বেশি সুস্পষ্ট কিছু জানা যায় না। এখানে হয়ত খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দেও বসতি ছিল, তবে ৯ম শতকে এখানে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের প্রচলনের পরেই এলাকাটির সম্পর্কে আরও জানা যায়। সেসময় বহু তিব্বতি বৌদ্ধ ভিক্ষু পালিয়ে ভুটানে চলে আসেন। ১২শ শতকে এখানে দ্রুকপা কাগিউপা নামের বৌদ্ধধর্মের একটি ধারা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটিই বর্তমানে ভুটানের বৌদ্ধধর্মের প্রধান রূপ। ভুটানের বৌদ্ধ মন্দির ও ধর্মশিক্ষালয় দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসের উপর সবসময় প্রভাব ফেলেছে। ১৬১৬ সালে নগাওয়ানা নামগিয়াল নামের এক তিব্বতি লামা তিনবার ভুটানের উপর তিব্বতের আক্রমণ প্রতিহত করলে ভুটান এলাকাটি একটি সংঘবদ্ধ দেশে পরিণত হতে শুরু করে। নামগিয়াল বিরোধী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলিকে পদানত করেন, একটি ব্যাপক ও সূক্ষ্ম বিবরণসমৃদ্ধ আইন ব্যবস্থা প্রচলন করেন এবং একটি ধর্মীয় ও সিভিল প্রশাসনের উপর নিজেকে একনায়ক বা শাবদ্রুং হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর অন্তর্কোন্দল ও গৃহযুদ্ধের কারণে পরবর্তী ২০০ বছর শাবদ্রুঙের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে। ১৮৮৫ সালে উগিয়েন ওয়াংচুক শক্ত হাতে ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম হন এবং ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসনের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। ১৯০৭ সালে উগিয়েন ওয়াংচুক ভুটানের রাজা নির্বাচিত হন এবং ঐ বছর ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার উপাধি ছিল দ্রুক গিয়ালপো বা ড্রাগন রাজা। ১৯১০ সালে রাজা উগিয়েন ও ব্রিটিশ শক্তি পুনাখার চুক্তি স্বাক্ষর করে যেখানে ব্রিটিশ ভারত ভুটানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক না গলানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। উগিয়েন ওয়াংচুক ১৯২৬ সালে মারা গেলে তার পুত্র জিগমে ওয়াংচুক পরবর্তী শাসক হন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর ভুটানকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে গণ্য করে। ১৯৪৯ সালে ভুটান ও ভারত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যেখানে ভুটান ভারতের কাছ থেকে বৈদেশিক সম্পর্কের ব্যাপারে পথনির্দেশনা নেবার ব্যাপারে সম্মত হয় এবং পরিবর্তে ভারত ভুটানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ১৯৫২ সালে জিগমে ওয়াংচুকের ছেলে জিগমে দর্জি ওয়াংচুক ক্ষমতায় আসেন। তার আমলে ভুটান পরিকল্পিত উন্নয়নের পথে এগোতে থাকে এবং ১৯৭১ সালে জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তার সময়েই ভুটানে একটি জাতীয় সংসদ, নতুন আইন ব্যবস্থা, রাজকীয় ভুটানি সেনাবাহিনী এবং একটি উচ্চ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭২ সালে ১৬ বছর বয়সে জিগমে সিঙিয়ে ওয়াংচুক ক্ষমতায় আসেন। তিনি আধুনিক শিক্ষা, সরকারের বিকেন্দ্রীকরণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, পর্যটন এবং পল্লী উন্নয়নের মত ব্যাপারগুলির উপর জোর দেন। তিনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি জনগণের সামগ্রিক সুখের একজন প্রবক্তা; উন্নয়ন সম্পর্কে তার দর্শন কিছুটা ভিন্ন এবং এই ভিন্নতার কারণে তিনি আন্তর্জাতিক পরিচিত পেয়েছেন। তার আমলে ধীরে ধীরে ভুটান গণতন্ত্রায়নের পথে এগোতে থাকে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি রাজার পদ ছেড়ে দেন এবং তার ছেলে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ভুটানের রাজা হন। ২০০৮ সালের ১৮ই জুলাই ভুটানের সংসদ একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। এই ঐতিহাসিক দিন থেকে ভুটানে পরম রাজতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটে এবং ভুটান একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্রে পরিণত হয়। রাজনীতি ভুটান হল একটি রাজতন্ত্র বিশিষ্ট দেশ। এখানে বর্তমানে রাজতন্ত্র বিদ্যমান। ভুটানে অতীতে একটি পরম রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। বর্তমানে এটি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। ভুটানের রাজা, যার উপাধি ড্রাগন রাজা, হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। মন্ত্রীদের একটি কাউন্সিল রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনা করে। সরকার ও জাতীয় সংসদ উভয়ের হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ন্যস্ত। এছাড়াও যে খেনপো উপাধিবিশিষ্ট দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা রাজার সবচেয়ে কাছের পরামর্শদাতার একজন। ২০০৭ সালে একটি রাজকীয় আদেশবলে রাজনৈতিক দল নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়। বর্তমান সংবিধানে দেশটিতে একটি দুই-দলবিশিষ্ট গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। জিগমে খেসার নামগিয়াল ওয়াংচুক বর্তমানে ভুটানের রাজা। ভূগোল ভুটানের আয়তন ৪৬,৫০০ বর্গকিলোমিটার। থিম্পু এর রাজধানী শহর এবং এটি দেশের মধ্য-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। অন্যান্য শহরের মধ্যে পারো, ফুন্টসলিং, পুনাখা ও বুমথং উল্লেখযোগ্য। ভুটানের ভূপ্রকৃতি পর্বতময়। উত্তরে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালা, মধ্য ও দক্ষিণভাগে নিচু পাহাড় ও মালভূমি এবং দক্ষিণ প্রান্তসীমায় সামান্য কিছু সাভানা তৃণভূমি ও সমভূমি আছে। মধ্যভাগের মালভূমির মধ্যকার উপত্যকাগুলিতেই বেশির ভাগ লোকের বাস। ভুটানের জলবায়ু উত্তরে আল্পীয়, মধ্যে নাতিশীতোষ্ণ এবং দক্ষিণে উপক্রান্তীয়; জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। স্থলবেষ্টিত দেশ ভুটানের আকার, আকৃতি ও পার্বত্য ভূ-প্রকৃতি সুইজারল্যান্ডের সদৃশ বলে দেশটিকে অনেক সময় এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ডাকা হয়। বহির্বিশ্ব থেকে বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ভুটান প্রাণী ও উদ্ভিদের এক অভয়ারণ্য। এখানে বহু হাজার দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। ভুটানের প্রায় ৭০% এলাকা অরণ্যাবৃত। এই অরণ্যই ভুটানের জীব বৈচিত্র‍্য সংরক্ষণ করে চলেছে যুগ যুগ ধরে। অর্থনীতি ভুটানের রাষ্ট্রীয় মুদ্রা গুলট্রাম এবং এর বিনিময় হার ভারতীয় টাকার সাথে সম্পর্কিত। ভুটানে ভারতীয় টাকারও প্রচলন রয়েছে। ভুটানের অর্থনীতি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র অর্থনীতিগুলির একটি। ২০১২ পর্যন্ত ভুটানের মাথাপিছু আয় ছিল ২,৪২০ মার্কিন ডলার। ভুটানের অর্থনীতি কৃষি, বনজ, পর্যটন এবং ভারতে জলবিদ্যুৎ বিক্রির উপর নির্ভরশীল। জনসংখ্যার ৫৫.৪ শতাংশের জন্য কৃষিকাজ মূল জীবিকা সরবরাহ করে। কৃষিকাজ মূলত খামার এবং পশুপালন নিয়ে গঠিত। হস্তশিল্পগুলি, বিশেষত তাঁত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পার্বত্য ও পাহাড়ী অঞ্চল হবার ফলে রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কঠিন এবং ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। সমুদ্রবন্দর না থাকায় ভুটান ব্যবসা বাণিজ্যতে ভালো করতে পারেনি। ভুটানের কোনও রেলপথ নেই, যদিও ভারতীয় রেলপথ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির আওতায় দক্ষিণ ভুটানকে তার বিশাল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে। ২০০৮ সালে ভুটান এবং ভারত একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে,যা বিশ্বের যেকোনো বাজার থেকে ভুটানে আমদানি ও রফতানি শুল্ক ছাড়াই অনুমতি দেয় ট্রানজিট এর মাধ্যমে । ১৯৬০ সাল নাগাদ ভুটানের সাথে চীনের স্বায়ত্তশাসিত তিব্বত অঞ্চলের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল। শরণার্থীদের আগমনের পরে চীনের সাথে তার সীমানা বন্ধ করে দেয়। শিল্প খাতটি একটি নবজাতক পর্যায়ে রয়েছে, যদিও বেশিরভাগ উৎপাদন কুটির শিল্প থেকে আসে, বৃহত্তর শিল্পগুলিকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে এবং সিমেন্ট, ইস্পাত এবং ফেরো এলয় এর মতো কয়েকটি শিল্প স্থাপন করা হয়েছে। বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্প, যেমন রাস্তা নির্মাণ, ভারতীয় চুক্তি শ্রমের উপর নির্ভর করে। কৃষি উৎপাদনের মধ্যে চাল, মরিচ, দুগ্ধ (কিছু ইয়াক, বেশিরভাগ গাভী) পণ্য, বেকওয়েট, বার্লি, সাইট্রাস এবং ভুট্টা পাহাড়ি নিম্ন ভূমিতে হয় । শিল্পের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, কাঠের পণ্য, প্রক্রিয়াজাত ফল, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড। জনসংখ্যা ভুটানের অধিবাসীরা ভুটানি নামে পরিচিত। ২০০৫ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভুটানে ৬,৭২,৪২৫ জনের বাস। প্রতি বছর জনসংখ্যা ২% হারে বাড়ছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৫ জন। ভুটানে দ্রুপকা জাতির লোক প্রায় ৫০%। এর পরেই আছে নেপালি (৩৫%) এবং অন্যান্য আদিবাসী বা অভিবাসী জাতি। দেশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ লোক লামাবাদী বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী। বাকীরা ভারত ও নেপালি ধারার হিন্দু ধর্ম পালন করে। জংখা  ভুটানের সরকারি ভাষা। এছাড়া বুমথাং-খা, শারচোপ-খা ও নেপালি ভাষা প্রচলিত। ইংরেজি ভাষাতে শিক্ষা দেওয়া হয়। ভুটানের সাক্ষরতার হার প্রায় ৬০%। জনগণের প্রায় ৯৪% শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত। বেকারত্বের হার ৩.১% (২০০৫ সালের প্রাক্কলন)।জংখা ভাষা বা ভুটানি ভাষা ভুটানের সরকারি ভাষা। এছাড়াও এখানে আরও প্রায় ১০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে বহু লক্ষাধিক বক্তাবিশিষ্ট নেপালি ভাষা অন্যতম। আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। সংস্কৃতি ভুটানের বাসিন্দারা মূলত বৌদ্ধ ধর্ম পালন করে। ভুটানের একটি সমৃদ্ধ এবং অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে যা বিশ শতকের মধ্যভাগ অবধি বিশ্বব্যাপী বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে মূলত অক্ষত রয়েছে। পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল দেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। ভুটানদের ঐতিহ্য তার বৌদ্ধ ঐতিহ্যে গভীরভাবে বিস্তৃত। দক্ষিণ অঞ্চলে সর্বাধিক প্রচলিত হিন্দু ধর্ম ভুটানের দ্বিতীয় সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্ম। সরকার দেশের বর্তমান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বজায় রাখার জন্য ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এর জন্য ভুটান কে সর্বশেষ শ্যাংগ্রি-লা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ভুটানের নাগরিকরা বিদেশ ভ্রমণে ক্ষেত্রে স্বাধীন, অনেক বিদেশী ভুটানকে ভ্রমণযোগ্য হিসেবে দেখে। এটি অজনপ্রিয় গন্তব্য হওয়ার অন্য কারণ হল ব্যয়, যা কঠোর বাজেটের পর্যটকদের জন্য বেশি। প্রবেশাধিকার ভারত, বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপের নাগরিকদের জন্য নিখরচায়, তবে অন্য সমস্ত বিদেশিদের একটি ভুটান ট্যুর অপারেটরের সাথে সাইন আপ করতে হবে এবং তারা দেশে থাকতে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ ডলার দিতে হবে, যদিও এই ফি বেশিরভাগ ভ্রমণ, থাকার ব্যবস্থা এবং খাবারের ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করে। ভুটান ধূমপান নিষিদ্ধ করার জন্য বিশ্বের প্রথম দেশ। ভুটানের ২০১০ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে প্রকাশ্যে ধূমপান করা বা তামাক বিক্রি করা আইনত অবৈধ হয়েছে। গণমাধ্যম ১৯৬০ এর দশকের প্রথম দিকে জিগমে দর্জি ওয়াংচুক মধ্যযুগীয় রাজতন্ত্রে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে প্রথম ত্রিশ মিনিটের জন্য বেতার সম্প্রচার হয়। টেলিভিশন সম্প্রচার আরম্ভ হয় ১৯৯০-এর দশকে, যদিও মাত্র কয়েকটি ধনী পরিবার তখন স্যাটেলাইট ডিশ এন্টেনা কিনতে সক্ষম ছিল। ২০০০ সালে ইন্টারনেট সেবা চালু হয়। খাদ্য ভুটানের প্রধান খাবার হলো লাল চাল (বাদামী চালের মতো, কিন্তু এতে বাদামী স্বাদ থাকে, ধানের একমাত্র প্রকার যেটি উঁচু এলাকায় জন্মায়।), বাজরা, ভুট্টা ইত্যাদি। পাহাড়াঞ্চলের খাবারের তালিকায় আছে মোরগ, চমরী গাইয়ের মাংস, শুকনো গরুর মাংস, শূকরের মাংস এবং চর্বি এবং মেষশাবক ইত্যাদি। স্যুপ এবং সিদ্ধ মাংস, চাল, ফার্ন, মসুর ডাল, এবং শুকনো সবজি, লাল মরিচ এবং পনিরের সাথে মশলা ইত্যাদি ভুটানে শীতকালের প্রিয় খাবার। দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে গরু এবং চমরী গাইয়ের দুধের তৈরি মাখন এবং পনির অত্যন্ত জনপ্রিয়, প্রকৃতপক্ষে বেশির ভাগ দুধ দিয়েই মাখন এবং পনির বানানো হয়। জনপ্রিয় পানীয়র মধ্যে আছে: মাখন চা, কালো চা, স্থানীয় ভাবে প্রস্তুতকৃত আরা (ভাতের মদ) এবং বিয়ার। জনপ্রিয় মশলার মধ্যে আছে: এলাচ, আদা, থিংগে (সিচুয়ান মরিচ), রসুন, হলুদ, এবং কেওড়া। যখন কেউ খাবারের জন্য অনুরোধ করে, তখন বলে মেশু মেশু, এবং ভুটানের ভদ্রতা অনুযায়ী অপরজন বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করে, তখন দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার অনুরোধ করা হয়। ভ্রমণ ভুটান ভ্রমণ করার জন্য একটি সুন্দর জায়গা ৷ ভুটানের ভূ-প্রকতি প্রাকৃতিক ভাবেই খুব সুন্দর । আরও দেখুন বজ্র ড্রাগনের দেশ নামে পরিচিত ভুটান এশিয়ার সবচেয়ে সুখী দেশ। ভুটানের রাজার উপাধি ‘ড্রাগন রাজা’। স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র ভুটানের আকার, আকৃতি ও পার্বত্য ভূ-প্রকৃতি সুইজারল্যান্ডের সদৃশ বলে দেশটিকে এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ডাকা হয়। ভুটানের প্রায় ৭০% এলাকা অরণ্যাবৃত। বহির্বিশ্ব থেকে বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ভুটান প্রাণী ও উদ্ভিদের এক অভয়ারণ্য। এখানে বহু হাজার দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। ভুটানের রাষ্ট্রীয় মুদ্রা গুলট্রাম এবং এর বিনিময় হার ভারতীয় টাকার সাথে সম্পর্কিত। ভুটানের সাক্ষরতার হার প্রায় ৬০%। জনগণের প্রায় ৯৪% শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত। জংখা ভাষা ভুটানের সরকারি ভাষা। নেপালি ভাষাতেও তাদের দক্ষতা রয়েছে। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ভুটান সরকারের ওয়েবসাইট রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ ভুটানিকা দেশ বৃত্তান্ত এবং টাইমলাইন বিবিসি সংবাদ থেকে। ভুটান লিঙ্ক ভুটানের জাতীয় লাইব্রেরী Bhutan from UCB Libraries GovPubs ভুটানের পর্যটন পরিষদ সরকারী ওয়েবসাইট। 'Datsi in the Druk Highlands,' An introduction to Bhutanese cuisine in Sunday Mid-Day,01-02-2009, by Arjun Razdan এশিয়ার রাষ্ট্র ভুটান দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সার্কের সদস্য রাষ্ট্র স্বল্পোন্নত দেশ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র স্থলবেষ্টিত দেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Bhutan
Bhutan
Bhutan officially the Kingdom of Bhutan, is a landlocked country in South Asia situated in the Eastern Himalayas between China in the north and India in the south. With a population of over 727,145 and a territory of 38,394 square kilometres (14,824 sq mi), Bhutan ranks 133rd in land area and 160th in population. Bhutan is a constitutional monarchy with a king (Druk Gyalpo) as the head of state and a prime minister as the head of government. The Je Khenpo is the head of the state religion, Vajrayana Buddhism. The subalpine Himalayan mountains in the north rise from the country's lush subtropical plains in the south. In the Bhutanese Himalayas, there are peaks higher than 7,000 metres (23,000 ft) above sea level. Gangkhar Puensum is Bhutan's highest peak and is the highest unclimbed mountain in the world. The wildlife of Bhutan is notable for its diversity, including the Himalayan takin and golden langur. The capital and largest city is Thimphu, holding close to 15% of the population. Bhutan and neighbouring Tibet experienced the spread of Buddhism, which originated in the Indian subcontinent during the lifetime of Gautama Buddha. In the first millennium, the Vajrayana school of Buddhism spread to Bhutan from the southern Pala Empire of Bengal. During the 16th century, Ngawang Namgyal unified the valleys of Bhutan into a single state. Namgyal defeated three Tibetan invasions, subjugated rival religious schools, codified the Tsa Yig legal system, and established a government of theocratic and civil administrators. Namgyal became the first Zhabdrung Rinpoche and his successors acted as the spiritual leaders of Bhutan, like the Dalai Lama in Tibet. During the 17th century, Bhutan controlled large parts of northeast India, Sikkim and Nepal; it also wielded significant influence in Cooch Behar State. Bhutan ceded the Bengal Duars to British India during the Bhutan War in the 19th century. The House of Wangchuck emerged as the monarchy and pursued closer ties with Britain in the subcontinent. In 1910, a treaty guaranteed British advice in foreign policy in exchange for internal autonomy in Bhutan. The arrangement continued under a new treaty with India in 1949 (signed at Darjeeling) in which both countries recognised each other's sovereignty. Bhutan joined the United Nations in 1971. It has since expanded relations with 55 countries. While dependent on the Indian military, Bhutan maintains its own military units. The 2008 Constitution established a parliamentary government with an elected National Assembly and a National Council. Bhutan is a founding member of the South Asian Association for Regional Cooperation (SAARC). In 2020, Bhutan ranked third in South Asia after Sri Lanka and the Maldives in the Human Development Index, and 21st on the Global Peace Index as the most peaceful country in South Asia as of 2024, as well as the only South Asian country in the list's first quartile. Bhutan is also a member of the Climate Vulnerable Forum, the Non-Aligned Movement, BIMSTEC, the IMF, the World Bank, UNESCO and the World Health Organization (WHO). Bhutan ranked first in SAARC in economic freedom, ease of doing business, peace and lack of corruption in 2016. Bhutan has one of the largest water reserves for hydropower in the world. Melting glaciers caused by climate change are a growing concern in Bhutan.
1182
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
বলিভিয়া
{{Infobox Country |native_name = |conventional_long_name = বলিভিয়ার বহুজাতিক রাজ্য |common_name = বলিভিয়া |image_flag = Flag of Bolivia (state).svg |image_coat = Coat of arms of Bolivia.svg |image_map = Bolivia in its region.svg |national_motto = "¡La unión es la fuerza!""Unity is strength!"</small> |national_anthem = বলিভিয়ানোস, এল হাদো প্রোপিচিও |capital = বলিভিয়া (স্পেনীয়: Bolivia বোলিব‌্‌য়া, কেচুয়া: Bulibya বুলিব্‌য়্যা, আইমারা: Wuliwya উলিউয়া) দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যভাগের একটি দেশ। আন্দেস পর্বতমালায় অনেক উঁচুতে অবস্থিত বলে দেশটিকে পৃথিবীর ছাদ নামেও অনেক সময় ডাকা হয়। বলিভিয়াতে আছে বরফাবৃত বহু পর্বতশৃঙ্গ, আর দেশটির উন্মুক্ত মালভূমির উপর দিয়ে বয়ে যায় দুরন্ত হাওয়া। পর্বতমালার পূর্বে রয়েছে সবুজ তৃণভূমি এবং তারও নিম্নে আছে ক্রান্তীয় বনাঞ্চল। সরকারীভাবে বলিভিয়ার রাজধানীর নাম সুক্রে। তবে লা পাজ দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী ও সরকারের প্রধান কর্মস্থল। ৩,৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত লা পাজ বিশ্বের উচ্চতম রাজধানী। বলিভিয়া দক্ষিণ আমেরিকার দরিদ্রতম দেশগুলির একটি। দেশের অধিকাংশ লোক আদিবাসী আমেরিকান। কিন্তু একটি ক্ষুদ্র স্পেনীয়ভাষী অভিজাত শ্রেণী ঐতিহ্যগতভাবে দেশটির রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে এবং দেশের বেশির ভাগ সম্পদ এদের হাতে কুক্ষিগত। প্রথমে আন্দেস পর্বতমালায় প্রাপ্ত খনিজ ছিল এই সম্পদের উৎস। ১৯৯০-এর দশকে শেষের দিকে এসে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস বলিভিয়ার প্রধান খনিজ সম্পদ। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে দেশটি কোকেনের উপকরণ কোকা পাতাও রপ্তানি শুরু করে। বলিভিয়ার বেশির ভাগ লোক আন্দেস পর্বতমালার দুইটি পর্বতশ্রেণীর মাঝখানে অবস্থিত একটি মালভূমিতে বাস করেন। দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা জুড়ে আন্দেস পর্বতমালা অবস্থিত। তবে ১৯৫০-এর দশক থেকে পূর্বের নিচু সমভূমিগুলিতে ধীরে ধীরে ঘনবসতিপূর্ণ জনপদ গড়ে উঠেছে। বিশেষত ঐ এলাকায় খনিজ তেল ও গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হবার পর এটি ঘটেছে। এছাড়াও দেশটির উর্বর খামারভূমিগুলি বসতির জন্য খুলে দেওয়া হয়। ২০০০-এর দশকের শুরুতে এই অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা লা পাজকে ছাড়িয়ে বলিভিয়ার বৃহত্তম শহরে পরিণত হয়। ১৬শ শতক থেকে ১৯শ শতকের শুরু পর্যন্ত বলিভিয়া স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৮২৫ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৫২ সালে এখানে একটি রাজনৈতিক বিপ্লব ঘটে যার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। বিপ্লবী নেতারা আদিবাসী আমেরিকানদের অধিকতর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের প্রকল্প গ্রহণ করেন। সরকার তাদের ভোট দেবার সুযোগ দেন, এবং পল্লী এলাকাগুলিতে শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। বড় বড় জমিদারীগুলি ভেঙে দেয়া হয় এবং আদিবাসী আমেরিকান চাষীদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমি দেওয়া হয়। তবে এই সংস্কারগুলি বলিভিয়ার অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। পরবর্তী সরকারগুলি অর্থনীতির বড় অংশ বেসরকারীকরণের চেষ্টা করলেও এখনও বলিভিয়া সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্র। ইতিহাস রাজনীতি ডিপার্টমেন্ট ও প্রদেশসমূহ বলিভিয়া মোট ৯টি ডিপার্মেন্টে (departamentos) বিভক্ত। এর রাজধানীগুলোকে বন্ধনীর মধ্যে দেখানো হয়েছে: Beni (ত্রিনিদাদ) Chuquisaca (সুক্রে) Cochabamba (Cochabamba) La Paz (লা পাজ) Oruro (Oruro) Pando (Cobija) Potosí (Potosí) Santa Cruz (সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা) Tarija (Tarija) ভূগোল বলিভিয়ার এলাকার ক্ষেত্রফল ১,০৯৮,৫৮০ বর্গকিলোমিটার। এলাকার দিক থেকে এটি পৃথিবীতে ২৮তম। ১৮৭৯ হতে বলিভিয়া একটি ভূবেষ্টিত (land-locked) দেশ। ঐ বছর চিলির সাথে প্রশান্ত মহাসাগরের যুদ্ধে বলিভিয়া উপকূলবর্তী আন্তোফাগাস্তা এলাকাটির দখল হারায়। তবে প্যারাগুয়ে নদীর মাধ্যমে বলিভিয়া অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত। বলিভিয়ার পরিবেশে ব্যাপক বৈচিত্র রয়েছে। পশ্চিমের পাহাড়ী এলাকা আন্দেজ পর্বতমালায় অবস্থিত। এখানে বলিভীয় আলতিপ্লানো এলাকা রয়েছে। পূর্বের সমতলভূমিতে আমাজন বনাঞ্চল এর চিরহরিৎ (??) বৃক্ষরাজি রয়েছে। বলিভিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশিখর হলো নেভাদো সাজামা যার উচ্চতা ৬৫৪২ মিটার। টিটিকাকা হ্রদ বলিভিয়া ও পেরুর সীমান্তে অবস্থিত। পৃথিবীর বৃহত্তম লবনাক্ত ভূমি সালার দি উইয়ুনি বলিভ্যার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ অবস্থিত। বলিভিয়ার বৃহৎ শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে লা পাজ, এল্‌ অল্টো, সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা, এবং কোচাবাম্বা। অর্থনীতি মাথাপিছু আয় ৪,৪৪৪ মা,ডলার জনসংখ্যা বলিভিয়ার মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লক্ষ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৬% সংস্কৃতি আরও দেখুন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্র প্রজাতন্ত্র বলিভিয়া জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র স্পেনীয় ভাষী রাষ্ট্র ও অঞ্চল দক্ষিণ আমেরিকান নেশনস ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র প্রাক্তন স্পেনীয় উপনিবেশ স্থলবেষ্টিত দেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Bolivia
Bolivia
Bolivia, officially the Plurinational State of Bolivia, is a landlocked country located in central South America. It is bordered by Brazil to the north and east, Paraguay to the southeast, Argentina to the south, Chile to the southwest, and Peru to the west. The seat of government and administrative capital is La Paz, which contains the executive, legislative, and electoral branches of government, while the constitutional capital is Sucre, the seat of the judiciary. The largest city and principal industrial center is Santa Cruz de la Sierra, located on the Llanos Orientales (eastern tropical lowlands), a mostly flat region in the east of the country with a diverse non-Andean culture. The sovereign state of Bolivia is a constitutionally unitary state divided into nine departments. Its geography varies as the elevation fluctuates, from the western snow-capped peaks of the Andes to the eastern lowlands, situated within the Amazon basin. One-third of the country is within the Andean mountain range. With an area of 1,098,581 km2 (424,164 sq mi), Bolivia is the fifth-largest country in South America after Brazil, Argentina, Peru and Colombia, and, alongside Paraguay, is one of two landlocked countries in the Americas. It is the 27th largest country in the world, the largest landlocked country in the Southern Hemisphere, and the seventh largest landlocked country on earth, after Kazakhstan, Mongolia, Chad, Niger, Mali, and Ethiopia. The country's population, estimated at 12 million, is multiethnic, including Amerindians, Mestizos, Europeans, Asians, Africans and some other mixtures throughout. Spanish is the official and predominant language, although 36 indigenous languages also have official status, of which the most commonly spoken are Guaraní, Aymara, and Quechua. Well before Spanish colonization, the Andean region of Bolivia was part of the great Incan Empire, while the northern and eastern lowlands were inhabited by independent tribes. Spanish conquistadores, arriving from Cusco, Peru, and Asunción, Paraguay, forcibly took control of the region in the 16th century. During the subsequent Spanish colonial period, Bolivia was administered by the Real Audiencia of Charcas. Spain built its empire, in large part, upon the silver that was extracted from Bolivia's mines. After the first call for independence in 1809, sixteen years of fighting would follow before the establishment of the Republic, named for Simón Bolívar. Over the course of the 19th and early 20th centuries, Bolivia lost control of several peripheral territories to neighboring countries, such as Brazil's of the Acre territory, and the War of the Pacific (1879), in which Chile seized the country's Pacific coastal region. Bolivia experienced a succession of military and civilian governments until Hugo Banzer led a CIA-supported coup d'état in 1971, replacing the socialist government of Juan José Torres with a military dictatorship. Banzer's regime cracked-down on left-wing and socialist opposition parties, and other perceived forms of dissent, resulting in the torturing and murders of countless Bolivian citizens. Banzer was ousted in 1978 and, twenty years later, returned as the democratically elected President of Bolivia (1997–2001). Under the 2006–2019 presidency of Evo Morales, the country saw significant economic growth and political stability, but was also widely accused of democratic backsliding and was described as a competitive authoritarian regime. Freedom House classifies Bolivia as a partly-free democracy as of 2023, with a 66/100 score. Modern Bolivia is a charter member of the UN, IMF, NAM, OAS, ACTO, Bank of the South, ALBA, and USAN. Bolivia remains a developing country, and the second-poorest in South America, though it has slashed poverty rates and now has one of the fastest-growing economies on the continent (in terms of GDP). Its main economic resources include agriculture, forestry, fishing, mining, and goods such as textiles and clothing, refined metals, and refined petroleum. Bolivia is very geologically rich, with mines producing tin, silver, lithium, and copper. The country is also known for its production of coca plants and refined cocaine. In 2021, estimated coca cultivation and cocaine production was 39,700 hectares and 317 metric tons, respectively.
1183
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%20%E0%A6%93%20%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%97%E0%A7%8B%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা (বসনীয় ও ক্রোয়েশীয় ভাষায়: Bosna i Hercegovina, সার্বীয় ভাষায়: Босна и Херцеговина বস্‌না ই খ়ের্ত্‌সেগভ়িনা) ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে বলকান উপদ্বীপে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। অতীতে এটি যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্রের একটি অংশ ছিল। ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। এর পরপরই বসনীয় মুসলমান, ক্রোয়েশীয় ও সার্বীয় জাতির লোকদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৫ সালে যুদ্ধ শেষে সার্বীয়রা দেশের ৪৯% এলাকা দখলে সক্ষম হয় এবং এর নাম দেয় সার্ব প্রজাতন্ত্র। বসনীয় ও ক্রোয়েশীয়রা দেশের বাকী অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয় যার নাম বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ফেডারেশন। এই ফেডারেশন ও সার্ব প্রজাতন্ত্র একত্রে বর্তমানে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা রাষ্ট্র নামে পরিচিত। তবে বাস্তবে দেশটির বসনীয়, ক্রোয়েশীয় ও সার্বীয় জাতির লোকদের মধ্যে প্রবল বিভাজন ও বিদ্বেষ বর্তমান, যদিও এটি নিরসনের জন্য বহুবার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। যে এলাকাটি এখন বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, সেখানে অন্তত উচ্চ প্যালিওলিথিক যুগ থেকে মানুষ বসবাস করছে। কিন্তু প্রমাণ থেকে জানা যায় যে নিওলিথিক যুগে, বুটমির, কাকাঞ্জ এবং ভুচেডোল সংস্কৃতির সময়কালে এখানে স্থায়ী মানব বসতি স্থাপন করা হয়েছিল। প্রথম ইন্দো-ইউরোপীয়দের আগমনের পর, এলাকাটি বেশ কয়েকটি ইলিরিয়ান ও কেল্টিক সভ্যতার দ্বারা জনবহুল ছিল। সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে দেশটির একটি সমৃদ্ধ ও জটিল ইতিহাস রয়েছে। দক্ষিণ স্লাভিক মানুষের পূর্বপুরুষরা যারা আজ এই এলাকায় জনবসতি করেছে তারা ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শতকের মধ্যে এসেছিলেন। ১২ শতকে বসনিয়ার ব্যানেট অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৪ শতকের মধ্যে এটি বসনিয়া রাজ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ১৫ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, এটি অটোমান সাম্রাজ্যের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছিল, যার শাসনের অধীনে এটি ১৯ শতকের শেষ পর্যন্ত ছিল। অটোমানরা এই অঞ্চলে ইসলাম নিয়ে আসে এবং দেশের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির অনেকটাই পরিবর্তন করে। ১৯ শতকের শেষ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত, দেশটি অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান রাজতন্ত্রের সাথে যুক্ত ছিল। আন্তঃযুদ্ধের সময়, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ছিল যুগোস্লাভিয়া রাজ্যের অংশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, নবগঠিত সমাজতান্ত্রিক ফেডারেল রিপাবলিক অফ যুগোস্লাভিয়াতে এটিকে পূর্ণ প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯২ সালে, যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ার পর, প্রজাতন্ত্র স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এর পরে বসনিয়ান যুদ্ধ শুরু হয়, যেটি ১৯৯৫ সালের শেষ পর্যন্ত চলে এবং ডেটন চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে। আজ, দেশটি তিনটি প্রধান জাতি গোষ্ঠীর আবাসস্থল, দেশেে "সংবিধান জনগণ" মনোনিত সংবিধান। বসনিয়াকরা তিনটির মধ্যে সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী, সার্বরা দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং ক্রোয়াটরা তৃতীয় বৃহত্তম৷  ইংরেজিতে, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সকলকে আদিবাসী, জাতি নির্বিশেষে বসনিয়ান বলা হয়। সংখ্যালঘু শ্রেণির যারা সংবিধানের অধীনে "অন্যান্য" হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ইহুদি, রোমানিয়ান, আলবেনিয়ান, মন্টেনিগ্রিন, ইউক্রেনীয় এবং তুর্কি। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা রয়েছে এবং তিনটি প্রধান জাতিগোষ্ঠীর প্রত্যেকের একজন সদস্য নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের রাষ্ট্রপতি পদ রয়েছে। যাইহোক, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত, কারণ দেশটি মূলত বিকেন্দ্রীকৃত। এটি দুটি স্বায়ত্তশাসিত সত্ত্বা নিয়ে গঠিত—ফেডারেশন অফ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং রিপাবলিকা শ্রপস্কা —এবং একটি তৃতীয় ইউনিট, ব্র্যাকো জেলা, যেটি নিজস্ব স্থানীয় সরকার দ্বারা শাসিত। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার ফেডারেশন আরও ১০টি ক্যান্টন নিয়ে গঠিত। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং মানব উন্নয়নে ৭৩তম স্থানে রয়েছে। এর অর্থনীতি শিল্প এবং কৃষি দ্বারা প্রভাবিত, পর্যটন এবং পরিষেবা খাত দ্বারা অনুসরণ করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পর্যটন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে একটি সামাজিক-নিরাপত্তা এবং সর্বজনীন-স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা রয়েছে এবং প্রাথমিক- এবং মাধ্যমিক-স্তরের শিক্ষা টিউশন-মুক্ত। ব্যুৎপত্তি "বসনিয়া" নামের একটি ফর্মের প্রথম সংরক্ষিত ব্যাপকভাবে স্বীকৃত উল্লেখ রয়েছে De Administrando Imperio, একটি রাজনৈতিক-ভৌগলিক হ্যান্ডবুক যা বাইজান্টাইন সম্রাট আইসিইন্স আইসিড  ১০ শতকের মাঝামাঝি (৯৪৮ এবং ৯৫২ এর মধ্যে) "বোসোনা" (Βοσώνα) এর "ছোট ভূমি" (χωρίον গ্রীক) বর্ণনা করে, যেখানে সার্বরা বাস করে।  বসনিয়াকে DAI (χωριον βοσονα, বসনিয়ার ছোট ভূমি) বাপ্তিকৃত সার্বিয়ার একটি অঞ্চল হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।. এই নামটি বসনিয়ান হার্টল্যান্ডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বসনা নদীর হাইড্রোনিম থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়। ফিলোলজিস্ট এন্টন মায়ারের মতে, বোসনা নামটি ইলিরিয়ান *"বাস-আন-আস" থেকে এসেছে, যা পরবর্তীতে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় মূল bʰegʷ- থেকে উদ্ভূত হতে পারে।  অর্থ "বহমান জল". ইংরেজ মধ্যযুগীয় উইলিয়াম মিলার এর মতে, বসনিয়ায় স্লাভিক বসতি স্থাপনকারীরা "ল্যাটিন উপাধিকে অভিযোজিত করেছিল ... বসন্তে, স্রোতকে বোসনা এবং নিজেদেরকে বসনিয়াক বলে অভিহিত করে তাদের নিজস্ব বাগধারায়". হার্জেগোভিনা নামের অর্থ "হারজোগের [ভূমি]", এবং "হার্জোগ" জার্মান শব্দ "ডিউক" থেকে এসেছে". এটি ১৫ শতকের বসনিয়ান ম্যাগনেট, স্টেপান ভিউসিস কোসাকা-এর উপাধি থেকে উদ্ভূত, যিনি ছিলেন "হাম অ্যান্ড দ্য কোস্টের হেরসেগ [হেরজোগ]" (১৪৪৮)। হাম (পূর্বে বলা হত জাক্লুমিয়া) একটি প্রাথমিক মধ্যযুগীয় রাজত্ব যা ১৪ শতকের প্রথমার্ধে বসনিয়ান বানাতে দ্বারা জয় করা হয়েছিল।  অটোমানরা যখন এই অঞ্চলের শাসনভার গ্রহণ করে, তখন তারা একে হার্জেগোভিনার সানজাক (হার্সেক) বলে।  এটি বসনিয়া আইলেট পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯২-এ স্বাধীনতার প্রাথমিক ঘোষণার সময়, দেশটির সরকারী নাম ছিল বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা প্রজাতন্ত্র, কিন্তু ১৯৯৫ ডেটন চুক্তির অনুসরণে, এটি চুক্তি এবং নতুন চুক্তি  অফিসিয়াল নাম পরিবর্তন করে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা করা হয়। ইতিহাস গ্রন্থপঞ্জি তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ স্রেব্রেনিচা গণহত্যা বার্ষিকীতে সার্ব প্রধানমন্ত্রীকে ধাওয়া ইউরোপের রাষ্ট্র ১৯৯২-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল ইউরোপ কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্র ভূমধ্যসাগরীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Bosnia_and_Herzegovina
Bosnia and Herzegovina
Bosnia and Herzegovina (Serbo-Croatian: Bosna i Hercegovina, Босна и Херцеговина), sometimes known as Bosnia-Herzegovina and informally as Bosnia, is a country in Southeast Europe, situated on the Balkan Peninsula. It borders Serbia to the east, Montenegro to the southeast, and Croatia to the north and southwest. In the south it has a 20 kilometres (12 miles) long coast on the Adriatic Sea, with the town of Neum being its only access to the sea. Bosnia has a moderate continental climate with hot summers and cold, snowy winters. In the central and eastern regions, the geography is mountainous, in the northwest it is moderately hilly, and in the northeast it is predominantly flat. Herzegovina, the smaller, southern region, has a Mediterranean climate and is mostly mountainous. Sarajevo is the capital and the largest city. The area has been inhabited since at least the Upper Paleolithic, but evidence suggests that during the Neolithic age, permanent human settlements were established, including those that belonged to the Butmir, Kakanj, and Vučedol cultures. After the arrival of the first Indo-Europeans, the area was populated by several Illyrian and Celtic civilizations. The ancestors of the South Slavic peoples that populate the area today arrived during the 6th through the 9th century. In the 12th century, the Banate of Bosnia was established; by the 14th century, this had evolved into the Kingdom of Bosnia. In the mid-15th century, it was annexed into the Ottoman Empire, under whose rule it remained until the late 19th century; the Ottomans brought Islam to the region. From the late 19th century until World War I, the country was annexed into the Austro-Hungarian monarchy. In the interwar period, Bosnia and Herzegovina was part of the Kingdom of Yugoslavia. After World War II, it was granted full republic status in the newly formed Socialist Federal Republic of Yugoslavia. In 1992, following the breakup of Yugoslavia, the republic proclaimed independence. This was followed by the Bosnian War, which lasted until late 1995 and ended with the signing of the Dayton Agreement. The country is home to three main ethnic groups: Bosniaks are the largest group, Serbs the second-largest, and Croats the third-largest. Minorities include Jews, Roma, Albanians, Montenegrins, Ukrainians and Turks. Bosnia and Herzegovina has a bicameral legislature and a three-member presidency made up of one member from each of the three major ethnic groups. However, the central government's power is highly limited, as the country is largely decentralized. It comprises two autonomous entities—the Federation of Bosnia and Herzegovina and Republika Srpska—and a third unit, the Brčko District, which is governed by its own local government. Bosnia and Herzegovina is a developing country and ranks 74th in the Human Development Index. Its economy is dominated by industry and agriculture, followed by tourism and the service sector. Tourism has increased significantly in recent years. The country has a social-security and universal-healthcare system, and primary and secondary level education is free. It is a member of the UN, the Organization for Security and Co-operation in Europe, the Council of Europe, the Partnership for Peace, and the Central European Free Trade Agreement; it is also a founding member of the Union for the Mediterranean, established in July 2008. Bosnia and Herzegovina is an EU candidate country and has also been a candidate for NATO membership since April 2010.
1185
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B2
ব্রাজিল
{{Infobox country | conventional_long_name = সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী ব্রাজিল | native_name = | common_name = ব্রাজিল | image_flag = Flag of Brazil.svg | alt_flag = | image_coat = Coat of arms of Brazil.svg | alt_coat = | symbol_type = সীলমোহর | national_motto = | national_anthem = {{vunblist |ইনো নাসিওনাউ ব্রাজিলিয়েরু"| |}} | other_symbol_type = জাতীয় সীল | other_symbol = | image_map = BRA orthographic.svg | alt_map = | map_caption = | image_map2 = | capital = ব্রাসিলিয়া | latd = 15 | latm = 47 | latNS = S | longd = 47 | longm = 52 | longEW = W | largest_city = সাও পাওলো | official_languages = পর্তুগিজ | ethnic_groups = | ethnic_groups_year = ২০১০ | demonym = ব্রাজিলীয় | government_type = ফেডারেল রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র | leader_title1 = রাষ্ট্রপতি | leader_name1 = লুইজ ইনাসিউ লুলা দা সিলভা | leader_title2 = উপ-রাষ্ট্রপতি | leader_name2 = হ্যামিল্টন মুরাও | leader_title3 = | leader_name3 = (পিএমডিবি) | leader_title4 = সেনেটের সভাপতি | leader_name4 = (পিএমডিবি) | leader_title5 = সুপ্রিম ফেডারেল কোর্টের সভাপতি | leader_name5 = Ricardo Lewandowski | legislature = জাতীয় কংগ্রেস | upper_house = ফেডারেল সেনেট | lower_house = ডেপুটি চেম্বার | sovereignty_type = স্বাধীনতা | sovereignty_note = কিংডম অফ পর্তুগালের কাছ থেকে (বর্তমানে পর্তুগাল) | established_event1 = ঘোষণা | established_date1 = ৭ সেপ্টেম্বর ১৮২২ | established_event2 = স্বীকৃতি লাভ | established_date2 = ২৯ আগস্ট ১৮২৫ | established_event3 = প্রজাতন্ত্র | established_date3 = ১৫ নভেম্বর ১৮৮৯ | established_event4 = বর্তমান সংবিধান | established_date4 = ৫ অক্টোবর ১৯৮৮ | area_rank = ৫ম | area_magnitude = 1 E12 | area_km2 = 8515767 | area_sq_mi = 3287597 | percent_water = 0.65 | area_label = মোট | population_estimate = 212,688,125 | population_estimate_year = 2022 | population_estimate_rank = 6th | population_density_km2 = 25 | population_density_sq_mi = 63 | population_density_rank = 199th | GDP_PPP = $3.389 trillion | GDP_PPP_year = 2018 | GDP_PPP_rank = 8th | GDP_PPP_per_capita = $16,199 | GDP_PPP_per_capita_rank = 81th | GDP_nominal = $2.139 trillion | GDP_nominal_year = 2018 | GDP_nominal_rank = 9th | GDP_nominal_per_capita = $10,224 | GDP_nominal_per_capita_rank = 65th | Gini = 51.3 | Gini_year = 2015 | Gini_change = decrease | Gini_ref = | Gini_rank = | HDI = 0.754 | HDI_year = 2015 | HDI_change = steady | HDI_ref = | HDI_rank = 79th | currency = রিয়েল (R$) | currency_code = BRL | time_zone = BRT | utc_offset = −২ থেকে −৫ | time_zone_DST = BRST | utc_offset_DST = −২ থেকে −৫ | DST_note = | antipodes = | date_format = dd/mm/yyyy (CE) | drives_on = right | calling_code = +৫৫ | iso3166code = | cctld = .br | footnote_a = Multiracial. | languages_type = | languages2_type = | leader_name6 = | leader_name7 = | leader_name8 = | leader_name9 = | FR_total_population_estimate_year = | FR_foot = | FR_total_population_estimate = | FR_total_population_estimate_rank = | FR_metropole_population_estimate_rank = }} সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী ব্রাজিল (, বা হেপুব্লিকা ফ়েদেরাচিভ়া দু ব্রাজ়িউ ), যা প্রচলিতভাবে ব্রাজিল (, বা ব্রাজিউ) নামে পরিচিত, হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র। এছাড়াও জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। ৮,৫১৪,৮৭৭ বর্গকিলোমিটার (৫,২৯০,৮৯৯ বর্গমাইল) আয়তনের এই দেশটিতে বসবাসকৃত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি। এটি আমেরিকার একমাত্র পর্তুগিজভাষী দেশ, এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ পর্তুগিজভাষী রাষ্ট্র। ব্রাজিলে পূর্বভাগ আটলান্টিক মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। যার উপকূলীয়ভাগের দৈর্ঘ্য প্রায় । ব্রাজিলের উত্তরে রয়েছে ভেনেজুয়েলা, গায়ানা, সুরিনাম, ও ফ্রান্সের সামুদ্রিক দেপার্ত্যমঁ ফরাসি গায়ানা। এছাড়াও এর উত্তর-পশ্চিমভাগে কলম্বিয়া; পশ্চিমে বলিভিয়া ও পেরু; দক্ষিণ-পশ্চিমে আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে, এবং সর্ব-দক্ষিণে দক্ষিণে উরুগুয়ে অবস্থিত। ব্রাজিলীয় সীমানায় আটলান্টিক মহাসাগরের বেশকিছু দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে ফের্নান্দু জি নরোনিঁয়া, রোকাস অ্যাটল, সেন্ট পিটার ও সেন্ট পল রকস, এবং ত্রিনিদাজি এ মার্চিঁ ভাজ। ব্রাজিলের সাথে চিলি ও ইকুয়েডর ব্যতীত দক্ষিণ আমেরিকার সকল দেশেরই সীমান্ত-সংযোগ রয়েছে। ১৫০০ সালে পর্তুগিজ অভিযাত্রী পেদ্রু আলভারেজ কাবরাউয়ের ব্রাজিলে এসে পৌঁছানোর পর থেকে ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্রাজিল ছিলো একটি পর্তুগিজ উপনিবেশ। ১৮১৫ সালে এটি যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, ও আলগ্রেভিজের সাথে একত্রিত হয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা গঠন করে। মূলত ১৮০৮ সালেই ব্রাজিলের ‘পর্তুগিজ উপনিবেশ’ পরিচয়ে ফাটল ধরে, কারণ নেপোলিয়নের পর্তুগাল আক্রমণের রেশ ধরে পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের কেন্দ্র লিসবন থেকে ব্রাজিলের রিও দি জানেইরুতে সরিয়ে নওয়া হয়। ১৮২২ সালে ব্রাজিল, পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। প্রাথমিক ভাগে এটি ব্রাজিলীয় সাম্রাজ্য হিসেবে সার্বভৌমত্ব অর্জন করলেও ১৮৮৯ সাল থেকে এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে শাসিত হয়ে আসছে। ১৮২৪ সালে ব্রাজিলের প্রথম সংবিধান পাশ হওয়ার পর থেকে দেশটিতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সরকার ব্যবস্থা চলে আসছে, যা বর্তমানে কংগ্রেস নামে পরিচিত। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ব্রাজিল একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র। একটি ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট, ২৬টি প্রদেশ, ও ৫,৫৬৪টি মিউনিসিপ্যালিটি নিয়ে এর যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়েছে। ক্রয়ক্ষমতা সমতা ও মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ভিত্তিতে ব্রাজিলের অর্থনীতি বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতি। ব্রাজিলের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। এর অর্থনৈতিক সংস্কার আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশটিকে একটি নতুন পরিচিতি দিয়েছে। ব্রাজিল জাতিসংঘ, জি-২০, সিপিএলপি, লাতিন ইউনিয়ন, অর্গানাইজেশন অফ ইবেরো-আমেরিকান স্টেটস, মার্কুসাউ ও ইউনিয়ন অফ সাউথ আমেরিকান নেশন্স, এবং ব্রিক দেশগুলোর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ব্রাজিল জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশের দিকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান একটি দেশ হিসেবে বিবেচিত। ব্রাজিলে বিভিন্ন প্রকারের প্রকৃতি সংরক্ষণকেন্দ্র ও অভয়ারণ্য বিদ্যমান। এছাড়াও দেশটি সমৃদ্ধ খনিজসম্পদের অধিকারী, যা বিভিন্ন সময়ে এর অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। ব্রাজিলে বিভিন্ন জাতের লোকের বাস। আদিবাসী আমেরিকান, পর্তুগিজ বসতিস্থাপক এবং আফ্রিকান দাসদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ব্রাজিলের জাতিসত্তাকে দিয়েছে বহুমুখী রূপ। ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র পর্তুগিজ উপনিবেশ। ১৬শ শতকে পর্তুগিজদের আগমনের আগে বহু আদিবাসী আমেরিকান দেশটির সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ১৬শ শতকের মধ্যভাগে পর্তুগিজেরা কৃষিকাজের জন্য আফ্রিকা থেকে দাস নিয়ে আসা শুরু করে।Skidmore, p. 34. এই তিন জাতির লোকেদের মিশ্রণ ব্রাজিলের সংস্কৃতি, বিশেষ করে এর স্থাপত্য ও সঙ্গীতে এমন এক ধরনের স্বাতন্ত্র্য এনেছে কেবল ব্রাজিলেই যার দেখা মেলে। ১৯শ শতকের শেষ দিকে ও ২০শ শতকের গোড়ার দিকে ব্রাজিলে আগমনকারী অন্যান্য ইতালীয়, জার্মান, স্পেনীয়, আরব, ও জাপানি অভিবাসীরাও ব্রাজিলের সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছে। মিশ্র সংস্কৃতির দেশ হলেও কিছু কিছু আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ব্রাজিলীয়, ইউরোপ ও এশিয়া থেকে আগত অ-পর্তুগিজ অভিবাসী, এবং আদিবাসী আমেরিকানদের অংশবিশেষ এখনও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও রীতিনীতি ধরে রেখেছে। তবে পর্তুগিজ সংস্কৃতির প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। পর্তুগিজ এখানকার প্রধান ভাষা এবং রোমান ক্যাথলিক প্রধান ধর্ম। ব্যুৎপত্তি ব্রাজিল নামটির ব্যুৎপত্তি পরিষ্কার নয়। ঐতিহ্যগতভাবে ধারণা করা হয় ‘ব্রাজিল’ নামটি এসেছে ব্রাজিলউড থেকে, যা এক প্রকার কাঠ উৎপাদনকারী গাছ। ১৬ শতকের দিকে ব্রাজিল থেকে নাবিকরা ইউরোপে এই কাঠ রপ্তানি করতো। পর্তুগিজ ভাষায় ব্রাজিলউডকে ‘পাউ-ব্রাজিউ’ (pau-brasil) নামে ডাকা হয়, আর ‘ব্রাজিউ’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি হয়েছে ‘জলন্ত কয়লার মতো লাল’ শব্দগুচ্ছ থাকে। লাতিন ভাষায় ‘ব্রাজা’ (brasa) শব্দের অর্থ কয়লা এবং শেষের ‘-il’ উপসর্গটি লাতিন ‘-iculum’ বা ‘-ilium’ থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।Michaelis – Moderno Dicionário da Língua Portuguesa পরবর্তীতে পর্তুগিজ ‘ব্রাজিউ’ শব্দটি থেকে ইংরেজিতে ব্রাজিল নামটি এসেছে। ব্যুৎপত্তির এই তত্ত্বটি ব্রাজিল ও পর্তুগালের স্কুলগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে পড়ানো হয়। ব্রাজিলীয় পণ্ডিত জুসে আদেলিনু দা সিলভা আজেভেদুর স্বীকার্য অনুসারে ‘ব্রাজিল’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিস্থল আরও অনেক পুরোনো এবং এর উৎপত্তি হয়েছে মূলত কেল্টিক বা ফিনিসিয়ীয় থেকে। ফিনিসিয়ীরা কেল্টিক দ্বীপগুলোর খনি থেক প্রাপ্ত এক প্রকার খনিজ দ্রব্য থেকে উৎপন্ন লাল রঞ্জন ইবেরিয়া থেকে আয়ারল্যান্ডে রপ্তানি করতো। আয়ারল্যান্ডীয় পুরাণে হাই-ব্রাজিল নামে পশ্চিমে অবস্থিত একটি দ্বীপের কথা উল্লেখ করা রয়েছে। টলকিনসহ কারও কারও মতে এই দ্বীপটির নাম থেকেই ‘ব্রাজিল’ শব্দটির উৎপত্তি। ষোড়শ শতকে বিভিন্ন পণ্ডিতগণও এই তত্ত্বটিকে সমর্থন করেছেন। দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসী ভাষা গুয়ারানিতে ব্রাজিলকে ‘পিন্দুরামা’ নামে ডাকা হয়। অতীতে ব্রাজিল অঞ্চলটি আদিবাসীদের কাছে এই নামেই পরিচিত হতো। পিন্দুরামা শব্দের অর্থ ‘তাল গাছের ভূমি’। ইতিহাস পর্তুগিজ উপনিবেশ ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে পর্তুগিজ অভিযাত্রী পেদ্রু আলভারেজ কাবরাউ পরিচালিত একটি পর্তুগিজ নৌবহর বর্তমানের ব্রাজিলে এসে পৌঁছায় এবং পর্তুগালের রাজা প্রথম মানুয়েলের নামে ভূখণ্ডটিতে পর্তুগালের অধিকার দাবি করে। সে সময় পর্তুগিজরা ব্রাজিলে বসবাসরত প্রস্তর যুগের আদিবাসীদের সাথে পরিচিত হয়। এসকল আদিবাসীদের বেশিরভাগ-ই কথা বলতো তুপি-গুয়ারানি পরিবারের বিভিন্ন ভাষায়, এবং আদিবাসী গোত্রগুলো পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত ছিল। ১৫৩২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাজিলে প্রথম পর্তুগিজ উপনিবেশটি গোড়াপত্তন হয়। তবে ১৫৩৪ সালে ডম তৃতীয় জোয়াউঁ কর্তৃক সমগ্র অঞ্চলটি ১২টি পৃথক বংশানুক্রমিক নেতৃত্বে ভাগ করে দেওয়ার মাধ্যমে কার্যকরভাবে ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।Skidmore, p. 27. কিন্তু পরবর্তীতে এই প্রথাটি সমস্যাপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়, এবং ১৫৪৯ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগালের রাজা পুরো উপনিবেশ প্রশাসনের জন্য একজন গভর্নর-জেনারেল নিয়োগ দেন।Boxer, p. 101. পর্তুগিজরা কিছু আদিবাসী গোত্রকে নিজেদের দলে নেয়। অপরদিকে বাকিদেরকে তঁরা দাস হিসেবে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করে। এছাড়াও কিছু কিছু গোত্রকে দীর্ঘ যুদ্ধে হারিয়ে ও রোগ বিস্তারের মাধ্যমে নিঃশেষ করে দেয়। ইউরোপীয় রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় সেসকল আদিবাসীদের জানা ছিল না, তাই খুব সহজেই তারা রোগাক্রান্ত হয়।Skidmore, pp. 30, 32. ১৬শ শতকের মধ্যভাগে ঔপনিবেশিকেরা উত্তর-পূর্ব উপকূলের ভালো মাটি ও ক্রান্তীয় জলবায়ুর সুযোগ নিয়ে সেখানে চিনির প্ল্যান্টেশন স্থাপন করে। সে সময় চিনি ছিল ব্রাজিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য।Skidmore, p. 36. আন্তজার্তিক বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদারSkidmore, pp. 32–33. সাথে তাল মিলিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পর্তুগিজরা আফ্রিকান দাসদেরও ব্রাজিলে নিয়ে আসা শুরু করে। ফরাসিদের সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে পর্তুগিজরা তাদের দখলকৃত ভূখণ্ড ধীরে ধীরে আরও বিস্তৃত করতে থাকে। ১৯৫৭ সালে তারা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত রিউ দি জানেইরু ও ১৬১৫ সালে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাউঁ লুইসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ১৬৬৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তারা আমাজন অরণ্য অভিমূখে অভিযান শুরু করে ও ঐ অঞ্চলে অবস্থিত ব্রিটিশ ও ওলন্দাজ উপনিবেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। নিয়ন্ত্রণ লাভের পর পর্তুগিজরা অঞ্চলগুলোতে নিজেদের গ্রাম ও দুর্গ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণকে আরও সুসংহত করে। ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে তাদের এ অভিযান সর্ব দক্ষিণে বিস্তৃত হয়। সেখানে রিও দে লা প্লাতা নদীর তীরে তারা সাক্রামেন্তো শহরের গোড়াপত্তন করে, বর্তমানে যা উরুগুয়ের অংশ। ১৭ শতকের শেষভাগে ব্রাজিলের চিনি রপ্তানির পরিমাণ কমতে থাকে, তবে ১৬৯০-এর দশকে ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্ব ভাগে বেশ কিছু স্বর্ণখনি আবিষ্কৃত হয়। পর্তুগিজ ভাষায় বান্দিরাঞ্চিস (Bandeirantes) নামে পরিচিত এই পর্তুগিজ স্কাউটরা বর্তমান ব্রাজিলের মাতু গ্রসো ও গোইয়াস অঞ্চলে স্বর্ণখনির সন্ধান পান। তৎকালীন সময়ে জায়গাটির নামকরণ করা হয় মিনাজ জেরাইস (বাংলা অর্থ ‘সাধারণ খনি’), যা বর্তমানে ব্রাজিলের একটি প্রদেশ। স্বর্ণখনি আবিস্কারের ফলে চিনি রপ্তানি কমে যাওয়া থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে পর্তুগিজ উপনিবেশ রক্ষা পায়। এছাড়াও স্বর্ণখনিতে কাজের উদ্দেশ্যে সমগ্র ব্রাজিলসহ পর্তুগাল থেকে হাজার হাজার অভিবাসী এ অঞ্চলে পাড়ি জমায়। এই সময় দেশের অভ্যন্তরভাগে বসতি স্থাপিত হয় এবং অর্থনীতি ও জনসংখ্যার প্রধান কেন্দ্র দেশের উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পূর্ব অংশে স্থানান্তরিত হয়। স্পেনীয় ঔপনিবেশিক শাসকগণ এ অঞ্চলে পর্তুগিজ উপনিবেশের সম্প্রসারণে বাঁধা প্রদান করে আসছিল। ১৪৯৪ সালে স্পেন অধিকৃত ভূখণ্ডে পর্তুগিজদের উপনিবেশ সম্প্রসারণ রোধে উভয়পক্ষের মধ্যে তোর্দিজিলাস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭৭ সালে স্পেনীয়রা পর্তুগিজ অধিকৃত বান্দা ওরিয়েন্টাল নিজেদের দখলে আনতে সমর্থ হয়। যদিও পরবর্তীকালে এ বিজয় নিষ্ফল বলে প্রতীয়মান হয়, কারণ ঐ বছরেই পর্তুগিজ ও স্পেনীয় সাম্রাজ্যের ভেতর প্রথম সান লিদিফোনসো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি অনুসারে এ অঞ্চলের পর্তুগিজদের সম্প্রসারিত সকল অঞ্চলে পর্তুগালের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হয়। বর্তমান ব্রাজিলের সীমানাও মূলত এই সম্প্রসারিত ভূখণ্ডের সীমানার প্রতি লক্ষ্য রেখেই নির্ধারিত হয়েছে। ১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজ রাজ পরিবার, পর্তুগালে অনুপ্রবেশকৃত নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীকে তাড়ানোর চেষ্টা করছিল। সে সময় নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী পর্তুগালসহ মধ্য ইউরোপের বেশিরভাগ স্থানেই নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছিল। প্রতিকুল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে রাজ পরিবার নিজেদেরকে ব্রাজিলের রিউ দি জানেইরুতে সরিয়ে নেয়। ফলশ্রুতিতে এটি সম্পূর্ণ পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ১৮১৫ সালে ডম ষষ্ঠ জোয়াউঁ, তার অকর্মক্ষম মায়ের পক্ষে রিজেন্ট হিসেবে ব্রাজিলকে পর্তুগিজ উপনিবেশ থেকে উন্নীত করে পর্তুগালের সাথে একত্রিত একটি সার্বভৌম যুক্তরাজ্যীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম হয় ইউনাইটেড কিংডম অফ পর্তুগাল, ব্রাজিল, অ্যান্ড দি আলগ্রাভিস। ১৮০৯ সালে পর্তুগিজরা ফরাসি গায়ানা দখল করে (যদিও পরবর্তীকালে ১৮১৭ সালে তা ফ্রান্সের কাছে ফিরিয়ে দেয়)। এছাড়ারও ১৮১৬ সালে ইস্টার্ন স্ট্রিপও তারা নিজেদের দখলে নেয়, ও কিসপ্লাতিনা নামে নামকরণ করে। কিন্তু ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাজিল এ অঞ্চলটির ওপর তার নিয়ন্ত্রণ হারায়, এবং অঞ্চলটিতে উরুগুয়ে নামের একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়। স্বাধীনতা ও সাম্র্যাজ্য ১৮২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজা ষষ্ঠ জোয়াউঁ ইউরোপে ফিরে যান, ও যাবার পূর্বে তার বড় ছেলে পেদ্রু জি কান্তারাকে ব্রাজিলের রিজেন্ট হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করেন। পরবর্তীতে পর্তুগিজ সরকার ব্রাজিলকে পুনরায় পর্তুগিজ উপনিবেশে পরিণত করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ১৮০৮ সাল থেকে চলে আসা অঞ্চলটির নিজেদের অর্জন থেকে বঞ্চিত ব্রাজিলীয়রা পুরনায় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা করে। রিজেন্ট পেদ্রু পর্তুগালে ফিরতে অস্বীকৃত জানান ও ব্রাজিলীয়দের দাবির পক্ষে অবস্থান নেন। ১৮২২ সালের ৭ নভেম্বর পেদ্রু আনুষ্ঠানিকভাবে পর্তুগালের কাছে থেকে ব্রাজিলের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। একই বছরের ১২ অক্টোবর ডম পেদ্রু ব্রাজিলের প্রথম সম্রাট হিসাবে স্থলাভিষিক্ত হন, এবং ১৮২২ সালের ১ ডিসেম্বর সিংহাসনে আরোহণ করেন। এর মাধ্যমেই ব্রাজিলে ৩২২ বছর ধরে চলে আসা পর্তুগিজ শাসনের অবসান ঘটে। তৎকালীন সময়ে ব্রাজিলীয়রা রাজতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন, এবং গণতন্ত্র ততোটা জনপ্রিয় ছিল না।Sérgio Buarque de Holanda, O Brasil Monárquico: o processo de emancipação, 4th ed. (São Paulo: Difusão Européia do Livro, 1976), p. 403 স্বাধীনতার ঘোষণার ফলস্বরূপ ব্রাজিলের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়, যা ব্রাজিলের উত্তর, উত্তর-পূর্ব, ও দক্ষিণাঞ্চলসহ পর্তুগিজ অধিকৃত প্রায় সম্পূর্ণ অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়েছিল। অবেশেষে ১৮২৪ সালের ৮ মার্চ পর্তুগিজ সৈন্যরা ব্রাজিলীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করে, এবং ১৮২৫ সালের ২৯ আগস্ট পর্তুগাল ব্রাজিলের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়। ১৮২৪ সালের ১৫ মার্চ ব্রাজিলের প্রথম সংবিধানটি জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করার পূর্বে এটি মিউনিসিপ্যালিটি কাউন্সিলগুলোর অনুমোদন লাভ করে।José Murilo de Carvalho, A Monarquia brasileira (Rio de Janeiro: Ao Livro Técnico, 1993), p. 23Vainfas, p. 170 ১৮৩১ সালের ১ এপ্রিল প্রথম পেদ্রু সিংহাসন ছেড়ে দেন ও তার কন্যার রাজত্ব পুনরায় দাবি করার উদ্দেশ্যে পর্তুগালে পাড়ি জমান। যাবার পূর্বে তিনি তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে নির্বাচিত করে যান, যিনি পরবর্তীতে ডম দ্বিতীয় পেদ্রু নামে সিংহাসনে আরোহণ করেন। যেহেতু নতুন সম্রাটের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত সাবালকত্ব অর্জনের জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল, তাই এ সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার উদ্দেশ্যে রিজেন্সি পদ্ধতি চালু করা হয় ও সম্রাটের পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রিজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। রিজেন্সি চালুর পর ব্রাজিলের বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্রোহে রূপ নেয়। এটি রিজেন্সি ব্যবস্থাটিকে বেশ অস্থিতিশীল করে তোলে ও রিজেন্টদের শাসনে ব্রাজিল প্রায় অরাজক একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। বিদ্রোহের ফলস্বরূপ কিছু কিছু প্রদেশ ব্রাজিল থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের স্বাধীন প্রজাতন্ত্র গঠন করে, যদিও এসকল গোষ্ঠীর বিদ্রোহটি সত্যিকার অর্থে রাজতন্ত্রের বিপক্ষে ছিল না।Souza, p. 326 তবে এসব কিছুই বলবৎ ছিল যতোদিন দ্বিতীয় পেদ্রু নিজে রাষ্ট্রভার গ্রহণে অসমর্থ ছিলেন। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় পেদ্রুর আইনগত সাবালকত্ব অর্জনের বয়স কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়, এবং তিনি শাসনভার গ্রহণ করেন। ১৪ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণের পর তিনি এক টানা ৫৮ বছর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার রাজত্বকালে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকার পাশাপাশি ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নও সাধিত হয়। দ্বিতীয় পেদ্রুর ৫৮ বছরের শাসনামলে ব্রাজিল তিনটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধে জয়লাভ করে। যুদ্ধগুলো ছিল প্লেটাইন যুদ্ধ, উরুগুয়েইয়ান যুদ্ধ, এবং ওয়ার অফ ট্রিপল অ্যালায়েন্স। এছাড়াও পেদ্রুর শাসনামলেই ব্রাজিল রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হয়। মূলত সফল নির্বাচন ও স্বাধীন গণমাধ্যমের ফলেই এ অর্জন সম্ভব হয়। এই ৫৮ বছরের শাসনামলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনটি ছিল দাস প্রথার বিলোপ সাধন। ১৮৫০ সালে আন্তর্জাতিকভাবে দাস পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। এর পরেই ব্রাজিল ধীরে ধীরে দাস প্রথা বিলোপের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, ও শেষ পর্যন্ত ১৮৮৮ সালে সম্পূর্ণরূপে দাস প্রথার বিলোপ সাধিত হয়। অবশ্য স্বাধীনতার পর থেকেই ব্রাজিলে দাসদের সংখ্যা ধীরে কমতে শুরু করেছিল। ১৮২৩ সালে মোট জনগণের ২৩% ছিল দাস, আর ১৮৮৭ সালে এই হার নেমে আসে মাত্র ৫%-এ। ১৮৮৯ সালে রাজতন্ত্রের অবলোপনের পর সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে কেউ ততোটা আগ্রহী ছিল না। দ্বিতীয় পেদ্রু তখনও জনসাধারণের মাঝে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন,Vainfas, p. 201 কিন্তু তার নিজের ইচ্ছাতেই রাজতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটে। তার দুই ছেলের মৃত্যুর পর পেদ্রুর মনে হয়েছিল এই রাজত্ব তার মৃত্যুর সাথেই শেষ হয়ে যাবে। রাজত্ব রক্ষার ব্যাপারে তিনি খুব আগ্রহী ছিলেন না।Barman (1999), p. 361 তাই তিনি নিজে এটি রক্ষার ব্যাপারে কিছু করেন নি ও কাউকে কিছু করতেও দেন নি। দাস প্রথা বিলোপের সময় এর বিরোধীতাকারীরা সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করে যাতে কোনো প্রকার সামরিক ক্যু ঘটাতে না পার তা ঠেকাতেই মূলত তিনি গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হন।Lyra (v.3), p. 99 প্রজাতন্ত্রের প্রাথমিক সময় সমসাময়িক যুগ ভূ-তত্ত্ব ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলভাগের সবচেয়ে বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে, সেই সাথে মহাদেশটির সবচেয়ে বেশি অংশটিও এই দেশটির আওতাধীন। ব্রাজিলের দক্ষিণে উরুগুয়ে; দক্ষিণ-পশ্চিমে আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে; পশ্চিমে বলিভিয়া ও পেরু; উত্তর-পশ্চিমে কলম্বিয়া; এবং উত্তরে ভেনেজুয়েলা, সুরিনাম, গায়ানা, এবং ফরাসি দেপার্ত্যমঁ ফরাসি গায়ানা অবস্থিত। ব্রাজিলের সাথে ইকুয়েডর ও চিলি ব্যতীত দক্ষিণ আমেরিকার সকল দেশের সাথেই সীমান্ত সংযোগ রয়েছে। ব্রাজিলীয় সীমানায় বেশকিছু দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে ফের্নান্দু জি নরোনিঁয়া, রোকাস অ্যাটল, সেন্ট পিটার ও সেন্ট পল রকস, এবং ত্রিনিদাজি এ মার্চিঁ ভাজ। এর সুবিশাল আকৃতি, জলবায়ু, এবং খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য ব্রাজিলকে ভূ-তাত্ত্বিকভাবে একটি বৈচিত্রময় দেশে পরিণত করেছে। দেশটির আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জগুলো ধরলে ব্রাজিলের সীমানা ২৮° পশ্চিম থেকে ৭৪° পশ্চিম অক্ষরেখা থেকে, ৬° উত্তর থেকে ৩৪° দক্ষিণ দ্রাঘিমা রেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ হিসেবে রাশিয়া, কানাডা, চীন, ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ব্রাজিলের অবস্থান। কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর এটি আমেরিকা মহাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। এর সর্বমোট আয়তন , যার ভেতর জলভাগের আয়তন প্রায় । দেশটিতে মোট তিনটি সময় অঞ্চল অবস্থিত। পশ্চিমের প্রদেশগুলো ইউটিসি-৪, পূর্বের প্রদেশগুলো ইউটিসি-৩ (এটি একই সাথে ব্রাজিলের সরকারি সময়), এবং আটলান্টিক দ্বীপপুঞ্জগুলো ইউটিসি-২ সময় অঞ্চলের অন্তর্গত। ব্রাজিলে টপোগ্রাফি যথেষ্ট বৈচিত্রময়। দেশটিতে পাহাড়, পর্বত, সমভূমি, উচ্চভূমি, চরণভূমি প্রভৃতি বৈচিত্রের ভূভাগ বিদ্যমান। এর ভূখণ্ডের বেশিরভাগের উচ্চতা থেকে -এর মধ্যে। দেশটির দক্ষিণ অর্ধাংশেই বেশিরভাগে উচ্চভূমি অবস্থিত। উত্তর-পশ্চিম অংশের সমভূমিগুলো ঢালু ও ভাঙা ভাঙা পাহাড় দিয়ে ঘেরা। দেশটির দক্ষিণাঞ্চল বেশ অমসৃণ, এবং বেশিরভাগ অঞ্চলই রিজ ও পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত। এ অঞ্চলের গড় উচ্চতা পর্যন্ত। এসকল পর্বতমালার মধ্যে রয়েছে মান্তিকিরা, এসপিনাসো পর্বতT এবং সেরা দু মার। উত্তরে গুয়াইয়ানা উচ্চভূমি একটি বড় নিষ্কাশন বিভক্তির মাধ্যমে আমাজন বেসিনের দিকে প্রবাহিত নদীগুলো থেকে ভেনেজুয়েলা থেকে উত্তর দিকের ওরিনোকো নদী ব্যবস্থায় এসে সমাপ্ত হওয়া নদীগুলোকে পৃথক করেছে। ব্রাজিলের সর্বোচ্চ পর্বত হচ্ছে পিকু দা নেবলিনা যার উচ্চতা প্রায় , এবং সর্বনিম্ন অঞ্চল হচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগর। ব্রাজিলে ঘন ও বেশ জটিল নদী ব্যবস্থা বিদ্যমান, যা বিশ্বের অন্যতম জটিল নদী ব্যবস্থা। ব্রাজিলে মোট আটটি নদী নিষ্কাশন ব্যবস্থা অবস্থিত, যার সবকটি-ই আটলান্টিক মহাসাগরে এসে শেষ হয়েছে। ব্রাজিলের উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে আমাজন, যা বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী ও নিষ্কাশিত জলের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী। এছাড়াও আছে পারান ও এর গুরুত্বপূর্ণ শাখানদী ইগুয়াসু (ইগুয়াসু জলপ্রপাত সহ), নিগ্রো, সাউঁ ফ্রান্সিসকু, শিজু, মেদেইরা, ও টাপাজুস নদী। জলবায়ু জীববৈচিত্র পরিবেশ রাজনীতি আইন বৈদেশিক সম্পর্ক দেশটির সঙ্গে অন্যান্য দেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই দেশের পাসপোর্টে ১১০টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করা যায়, যা পাসপোর্ট শক্তি সূচকে ১২তম স্থানে রয়েছে। সামরিক বাহিনী প্রশাসনিক বিভাগ অর্থনীতি আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল ও বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ব্রাজিলের অর্থনীতি দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ, বাজার বিনিময়ের ভিত্তিতে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম, ও ক্রয়ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ব্রাজিলের অর্থনীতি একটি মিশ্র অর্থনীতি। দেশটির যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, যা এর অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ভিত্তিতে ধারণা করা হয়, সামনের কয়েক দশকে ব্রাজিলের অর্থনীতি বিশ্বের পাঁচটি বৃহত্তম অর্থনীতির একটি হিসেবে পরিণত হবে। এর বর্তমান গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হচ্ছে ১০,২০০ মার্কিন ডলার, যা বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে ৬৪তম। ব্রাজিলের বৃহৎ ও উন্নত কৃষি, খনিশিল্প, উৎপাদন ব্যবস্থা, এবং সেবাখাত রয়েছে। সেই সাথে দেশটিতে শ্রমিকের প্রাচুর্যও বিদ্যমান। ব্রাজিলের রপ্তানিখাত অত্যন্তু দ্রুত বিস্তৃত ও বিকশিত হচ্ছে, এবং টাইকুনের একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করছে। ব্রাজিলের মূল রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে উড়োজাহাজ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, গাড়ি, ইথানল, টেক্সটাইল, পাদুকা, লৌহ আকরিক, ইস্পাত, কফি, কমলার রস, সয়াবিন, এবং কর্নড বিফ। দেশটি ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক অর্থ ও পণ্যবাজারে নিজের উপস্থিতি আরও বিস্তৃত করে চলেছে। এছাড়াও ব্রাজিল উত্থানশীল অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোর সংগঠন ব্রিকের সদস্য। ১৯৯৪ সাল থেকে মুদ্রা হিসেবে ব্রাজিলীয় রিয়াল ব্যবহার করে আসছে। ১৯৯৭ সালে পূর্ব এশিয়া, ১৯৯৮ সালে রাশিয়া, এবং এর রেশ ধরে বহুস্থানে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর মুদ্রা নীতি সাময়িকভাবে পরিবর্তন করে। বিনিময়ের হারের অব্যাহত দরপতনের ফলে সৃষ্ট মুদ্রা সংকট মোকাবেলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাময়িকভাবে মুদ্রা বিনিময় হার নির্দিষ্ট করে দেয়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে ব্রাজিল পুনরায় মুক্তবাজার বিনিয়ময় হারে ফিরে যায়। অর্থনৈতিক জটিলতা কাটিয়ের ওঠার জন্য ব্রাজিল ২০০২-এর মধ্যভাগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ৩০.৪ বিলিয়ন ডলারের একটি রেকর্ড পরিমাণ ঋণ সহায়তা লাভ করে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই ঋণ পরিশোধের সুযোগ থাকলেও ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যংক ২০০৫ সালেই আইএমএফ-এই ঋণ পরিশোধ করে। সাম্প্রতিককালে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশটির যেসকল বিষয় মোকাবেলা করেছে তার মধ্যে রয়েছে স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের পুজির পরিমাণ আনুমানের চেয়ে বেশি হারে বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট জটিলতা। এর ফলেই ঐ সময়কালে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রাজিলীয় রিয়ালের দরপতন ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকৃত অর্থ অনুমানের চেয়ে কম হারে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলেছিল। ২০০৭ সালে এর আনুমানিক পরিমাণ ছিল ১৯৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে স্বল্পমেয়াদী ঋণে সুদের পরিমাণ মুদ্রানীতির আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে দেশটির মুদ্রস্ফীতির হার পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ। বিষয়বস্তু ও শক্তিখাত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরিবহন ব্রাজিলে বিস্তুত ও বৈচিত্রময় পরিবহন ব্যবস্থা বিদ্যমান। জনপরিহন ও পণ্যপরিবহনে মূলত সড়ক পথই ব্যবহৃত হয়। ২০০২ সালের হিসাব অনুযায়ী ব্রাজিলের বিদ্যমান সড়ক পথের মোট দৈর্ঘ্য্য ১৯ লক্ষ ৯০ হাজার কিলোমিটার (১২ লক্ষ ৩০ হাজার মাইল)। ১৯৬৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছরে দেশটিতে পাকাকৃত সড়কের দৈর্ঘ্য্য ৩৫,৪৯৬ কিলোমিটার (২২,০৫৬ মাইল) থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৮৪,১৪০ কিলোমিটার (১,১৪,৪২৫ মাইল)। সড়ক পথের সম্প্রসারণের দিকে বেশি নজর দেওয়ায় ১৯৪৫ সাল থেকে ধীরে ধীরে ব্রাজিলের রেলপরিবহন ব্যবস্থার পরিধি সংকুচিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে দেশটির রেললাইনের সর্বমোট দৈর্ঘ্য্য ছিলো ৩১,৮৪৮ কিলোমিটার (১৯,৭৮৯ কিলোমিটার), এবং ২০০২ সালে এসে এই দৈর্ঘ্য্য হয় ৩০,৮৭৫ কিলোমিটার (১৯,১৮৬)। রেলওয়ে ব্যবস্থার বেশিরভাগ অংশ সরকারি মালিকানাধীন ফেডারেল রেইলরোড কর্পোরেশনের আয়ত্তাধীন। কিন্তু ১৯৯৭ সালে সরকার ৭টি লাইন বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেয়। সাঁউ পাইলু মেট্রা ব্রাজিলের প্রথম পাতাল রেল পরিবহন ব্যবস্থা। অন্যান্য পাতাল রেল পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে আছে রিউ দি জানেইরু, পর্তু আলেগ্রে, হেসিফি, বেলু হরাইজন্তে, ব্রাসিলিয়া, তেরেসিনা, ফর্তালিজা, এবং সালভাদোর। ব্রাজিলে প্রায় ২,৫০০ বিমানবন্দর ও বিমান অবতরণের স্থান রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সাঁউ পাউলু শহরে কাছে অবস্থিত সাঁউ পাউলু-গুয়ারুলহোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্রাজিলের সর্ববৃহৎ ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর। দেশটির অভ্যন্তরীন জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিক পরিবহনের একটি বড় ও বৈচিত্রময় অংশ এই বিমানবন্দরে সম্পন্ন হয়। এছাড়াও আন্তজার্তিকভাবে এই বিমান বন্দরটি ব্রাজিলকে বিশ্বের সকল বড় শহরগুলোর সাথে যুক্ত করেছে। উপকূলের পরিবহন সংযোগগুলো দেশটির স্বত্বন্ত্র অংশ। বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ের সান্তোশের বন্দরগুলো মুক্তভাবে ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। ব্রাজিলের ৩৬টি গভীর-জল বন্দর রয়েছে যার মধ্যে সান্তোশ, ইতাজাই, রিউ গ্রাঁদ, পারানাগুয়া, রিউ দি জানেইরু, সেপেতিবা, ভিতোরিয়া, সাউপে, মানাউশ, এবং সাঁউ ফ্রান্সিসকো দু সুই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জনপরিসংখ্যান ২০০৮ সালের গণনা অনুযায়ী ব্রাজিলের জনসংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি কিলোমিটারে ২২.৩১ জন, এবং পুরুষ ও নারীর অনুপাত ০.৯৫:১। মোট জনসংখ্যার ৮৩.৭৫% ভাগ শহরাঞ্চলে বসবাস করে। ব্রাজিলের বেশিরভাগ মানুষ বাস দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব (৭ কোটি ৯৮ লক্ষ) ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (৫ কোটি ৩৫ লক্ষ)। যদিও ভৌগোলিকভাবে দেশটির সবচেয়ে বড় অংশ হচ্ছে এর মধ্য-পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চল, যা ব্রাজিলের মোট ভূখণ্ডের ৬৪.১২% ভাগ দখল করে আছে, কিন্তু সে অঞ্চলগুলোতে বসবাসকৃত মানুষের সংখ্যা মাত্র ২ কোটি ৯১ লক্ষ। মৃত্যুহার কমে যাওয়ায় ১৯৪০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে ব্রাজিলের জনসংখ্যা বেশ বেড়ে যায়। যদিও এ সময় জন্মহারও সামান্য পরিমাণে হ্রাস পায়। ১৯৪০-এর দশকে দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ২.৪%। ১৯৫০-এর দশকে এসে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩.০%; ও ১৯৬০-এর দশকে এই হার ছিল ২.৯%। এ বছরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৪৪ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪ বছরে উন্নীত হয়। ২০০৭ সালে এসে ব্রাজিলের মানুষের গড় আয়ু হয় ৭২.৬ বছর। ১৯৬০-এর দশকের পর থেকে ব্রাজিলের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৫০-৫০-এর মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ৩.০৪%। ২০০৮ সালে এসে এ হার দাঁড়ায় মাত্র ১.০৫%-এ। ধারণা করা হয়, এমনভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ ব্রাজিলের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক অঙ্কে পৌঁছাবে, এবং হার হবে -০.২৯%।Magno de Carvalho, "Crescimento populacional e estrutura demográfica no Brasil," pp. 7–8. ব্রাজিলের ইন্সটিটিউট অফ জিওগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্সের ২০০৮ সালের গণনা অনুসারে মোট জনসংখ্যার ৪৮.৪৩% ভাগ (প্রায় ৯ কোটি ২০ লক্ষ) নিজেদেরকে শেতাঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করেছে; এবং ৪৩.৮০% ভাগ বাদামী (মিশ্র) (প্রায় ৮ কোটি ৩০ লক্ষ), ৬.৮৪% কৃষ্ণাঙ্গ (১ কোটি ৩০ লক্ষ), ০.৫৮% এশীয় (১১ লক্ষ), এবং ০.২৮% নিজেদের আমেরিন্ডিয়ান (৫ লক্ষ ৩৬ হাজার) হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। অপরদিকে ০.০৭% (প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার) মানুষ নিজেদের বর্ণ পরিচয় দেয়নি। ২০০৭ সালে জাতীয় ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে ব্রাজিলে ৬৭টি ভিন্ন উপজাতীয় গোত্রের অবস্থান উল্লেখ করা হয়, যাঁদের সাথে কোনো রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ নেই। ২০০৪ সালে যোগাযোগহীন এসকল গোত্রের সংখ্যা ছিল ৪০। ব্রাজিলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অযোগাযোগকৃত মানুষের বাস করে বলে ধারণা করা হয়। ব্রাজিলের বেশিরভাগ মানুষ দেশটির আদিবাসী জনগণ, পর্তুগিজ উপনিবেশক, এবং আফ্রিকান দাসদের বংশদ্ভূত। ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজদের আগমনের পর থেকে এই তিন জাতির মাঝে বৈবাহিক সম্পর্কের সৃষ্টি হতে থাকে, যা ব্রাজিলকে একটি বৈচিত্রময় জাতিসত্ত্বা উপহার দিয়েছে। ব্রাজিলের বাদামী বর্ণের জনগোষ্ঠীর (পর্তুগিজ ভাষায় এদেরকে ‘প্রাদু’ (prado) নামে সম্বোধন করা হয়Vesentini (1988), p. 117.) বিভিন্ন ভাগের সৃষ্টি হয়েছে। এই ভাগ গুলোর মধ্যে আছে শেতাঙ্গ ও ইন্ডিয়ান বংশদ্ভূত ‘কাবোক্লু’ (Caboclo), শেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ বংশদ্ভূত ‘মুলাতু’ (Mulatto), এবং কৃষ্ণাঙ্গ ও ইন্ডিয়ান বংশদ্ভূত ‘কাফুজু’ (Cafuzo)।Adas, Melhem. Panorama geográfico do Brasil, 4th ed (São Paulo: Moderna, 2004), p. 268Moreira (1981), p. 108. বেশিরভাগ কাবোক্লু জনগণ দেশটির উত্তর, উত্তর-পূর্ব, এবং মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে। গরিষ্ঠ সংখ্যাক মুলাতু জনগণ বাস করে বায়া ও থেকে পারাইবা পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঘেঁষে চলে আসা পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল,Azevedo (1971), pp. 74–75. উত্তর মারানাউঁ,Azevedo (1971), p. 74. দক্ষিণ মিনাস জেরাইস এবং পূর্ব রিউ দি জানেইরু অঞ্চলে। ১৯শ শতক থেকে অভিবাসীদের জন্য ব্রাজিলের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে ১৮০৮ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ব্রাজিলে বিশ্বের ৬০টি দেশ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের আগমন ঘটে। এসকল অভিবাসীর বেশিরভাগই এসেছিল পর্তুগাল, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, জাপান, এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। ২০০৮ সালে ব্রাজিলে সার্বিক নিরক্ষরতার হার ছিল ১১.৪৮%, এবং তরুণদের ভেতর (বয়স ১৫–১৯) এই হার ছিল ১.৭৪%। এই হার সবচেয়ে বেশি ছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (২০.৩০%), যেখানে বেশ বড় সংখ্যক গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাস। গড় হিসাবে নিরক্ষতার হার গ্রামীণ জনগণের মাছে বেশি (২৪.১৮%) ও শহুরে জনগোষ্ঠীর মাঝে কম (৯.০৫%)। নগরায়ণ ভাষা সংস্কৃতি তিনশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পতুগিজ ঔপনিবেশকদের শাসনের ফলে, ব্রাজিলের সংস্কৃতির মূল অংশটি এসেছে পর্তুগালের সংস্কৃতি থেকে। পর্তুগিজরা ব্রাজিলের সংস্কৃতির যেসকল স্থানে প্রভাব ফেলেছে তার মধ্যে আছে পর্তুগিজ ভাষা, ক্যাথলিক ধর্ম, এবং ঔপনিবেশিক স্থাপত্যশিল্প। এছাড়াও ব্রাজিলের সংস্কৃতি আফ্রিকান, ও আদিবাসী ইন্ডিয়ানের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য দ্বারাও বেশ প্রভাবান্বিত হয়েছে। এছাড়া ব্রাজিলে অভিবাসী হিসেবে আসা ইতালীয়, জার্মান, ও অন্যান্য ইউরোপীয় অভিবাসীদের সংস্কৃতিও ব্রাজিলীয় সংস্কৃতিতে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করেছে। ১৮-১৯শত শতকের দিকে দলে দলে আসা এ সকল অভিবাসীরা ব্রাজিলের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বসবাস করা শুরু করেছিল, এবং বর্তমানেও ঐ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাদের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তবে সামগ্রিকভাবে আদিবাসী আমেরিন্ডিয়ানরা ব্রাজিলের ভাষা ও রন্ধনশিল্পে প্রভাব ফেলেছে; অপরদিকে আফ্রিকানরা প্রভাব ফেলেছে ব্রাজিলের রন্ধনশৈলী, সঙ্গীত, নৃত্যকলা, ও ধর্মে। ১৬শ শতকের পর থেকে ব্রাজিলীয় চিত্রকলা বিভিন্ন ধারায় বিস্তৃত হতে থাকে। পূর্বে ব্রাজিলের চিত্রকলায় বারুকি ধারার প্রভাব ছিল খুব বেশি,"The Brazilian Baroque ," Encyclopaedia Itaú Cultural কিন্তু ১৬শ শতকের পর বারুকি থেকে তা রোমান্টিকতা, আধুনিকতা, অভিব্যক্তিবাদ, কিউবিজম, পরাবাস্তবাদ, বিমূর্তবাদ প্রভৃতি দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ব্রাজিলীয় চলচ্চিত্রের গোড়াপত্তন হয় ১৯শ শতকের শেষ দিকে। অনেক অভ্যন্তরীণ চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রাজিলের চলচ্চিত্র দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেছে। সঙ্গীত সাহিত্য ব্রাজিলীয় সাহিত্য বিশ্বে অন্যতম আলোড়ন তোলা সাহিত্য।ব্রাজিলের লেখক পাওলো কোয়েলহো বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত লেখক।এছাড়া মাচাদো দ্যে অ্যাসিস ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা লেখক হিসেবে সুপরিচিত। রন্ধনশিল্প খেলাধুলা ফুটবল খেলাই ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া হিসেবে পরিচিত। ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দল ফিফা বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানীয় দল হিসেবে চিহ্নিত। দলটি এ পর্যন্ত পাঁচবার বিশ্বকাপ জয়লাভ করেছে যা একটি রেকর্ড। ভলিবল, বাস্কেটবল, অটো রেসিং এবং মার্শাল আর্ট ক্রীড়াও ব্যাপকভাবে দর্শকপ্রিয়। ব্রাজিলের পুরুষ জাতীয় ভলিবল দলটি ওয়ার্ল্ড লীগ, বিশ্ব ভলিবল গ্রাঁ চ্যাম্পিয়ন্স কাপ, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ এবং বিশ্বকাপের বর্তমানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। ব্রাজিলের অন্যান্য খেলার মধ্যে রয়েছে - টেনিস, হ্যান্ডবল, সুইমিং এবং জিমন্যাসটিক্‌স যা গত কয়েক দশক ধরে চর্চা হচ্ছে। ব্রাজিলে বেশকিছু ক্রীড়ার উদ্ভব ঘটেছে। তন্মধ্যে - বীচ ভলিবল, ফুটসাল এবং ফুটভলি অন্যতম। মার্শাল আর্টে ক্যাপোইরা, ভ্যালে টুডো এবং ব্রাজিলিয়ান জি-জিতসু ক্রীড়ার প্রচলন ঘটিয়েছে। অটো রেসিংয়ে এ পর্যন্ত তিনজন ব্রাজিলীয় ড্রাইভার ফর্মুলা ওয়ানে আটবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করেছে। শহর আরও দেখুন ব্রাজিলের সূচি - সম্পর্কিত নিবন্ধসমূহ তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি Azevedo, Aroldo. O Brasil e suas regiões. São Paulo: Companhia Editora Nacional, 1971. Barman, Roderick J. Citizen Emperor: Pedro II and the Making of Brazil, 1825–1891. Stanford: Stanford University Press, 1999. Boxer, Charles R.. O império marítimo português 1415–1825. São Paulo: Companhia das Letras, 2002. Bueno, Eduardo. Brasil: uma História. São Paulo: Ática, 2003. Calmon, Pedro. História da Civilização Brasileira. Brasília: Senado Federal, 2002. Carvalho, José Murilo de. D. Pedro II. São Paulo: Companhia das Letras, 2007. Coelho, Marcos Amorim. Geografia do Brasil. 4th ed. São Paulo: Moderna, 1996. Diégues, Fernando. A revolução brasílica. Rio de Janeiro: Objetiva, 2004. Enciclopédia Barsa. Volume 4: Batráquio – Camarão, Filipe. Rio de Janeiro: Encyclopædia Britannica do Brasil, 1987. Fausto, Boris and Devoto, Fernando J. Brasil e Argentina: Um ensaio de história comparada (1850–2002), 2nd ed. São Paulo: Editoria 34, 2005. Gaspari, Elio. A ditadura envergonhada. São Paulo: Companhia das Letras, 2002. Janotti, Aldo. O Marquês de Paraná: inícios de uma carreira política num momento crítico da história da nacionalidade. Belo Horizonte: Itatiaia, 1990. Lyra, Heitor. História de Dom Pedro II (1825–1891): Ascenção (1825–1870). v.1. Belo Horizonte: Itatiaia, 1977. Lyra, Heitor. História de Dom Pedro II (1825–1891): Declínio (1880–1891). v.3. Belo Horizonte: Itatiaia, 1977. Lustosa, Isabel. D. Pedro I: um herói sem nenhum caráter. São Paulo: Companhia das letras, 2006. Moreira, Igor A. G. O Espaço Geográfico, geografia geral e do Brasil. 18. Ed. São Paulo: Ática, 1981. Munro, Dana Gardner. The Latin American Republics; A History. New York: D. Appleton, 1942. Schwarcz, Lilia Moritz. As barbas do Imperador: D. Pedro II, um monarca nos trópicos. 2nd ed. São Paulo: Companhia das Letras, 1998. Skidmore, Thomas E. Uma História do Brasil. 4th ed. São Paulo: Paz e Terra, 2003. Souza, Adriana Barreto de. Duque de Caxias: o homem por trás do monumento. Rio de Janeiro: Civilização Brasileira, 2008. Vainfas, Ronaldo. Dicionário do Brasil Imperial. Rio de Janeiro: Objetiva, 2002. Vesentini, José William. Brasil, sociedade e espaço – Geografia do Brasil. 7th Ed. São Paulo: Ática, 1988. Vianna, Hélio. História do Brasil: período colonial, monarquia e república, 15th ed. São Paulo: Melhoramentos, 1994. আরও পড়ুন Alves, Maria Helena Moreira (1985). State and Opposition in Military Brazil. Austin, TX: University of Texas Press. Amann, Edmund (1990). The Illusion of Stability: The Brazilian Economy under Cardoso. World Development (pp. 1805–1819). ‘Background Note: Brazil’. US Department of State. Retrieved 2011-06-16. Bellos, Alex (2003). Futebol: The Brazilian Way of Life. London: Bloomsbury Publishing plc. Bethell, Leslie (1991). Colonial Brazil. Cambridge: CUP. Costa, João Cruz (1964). A History of Ideas in Brazil. Los Angeles, CA: University of California Press. Fausto, Boris (1999). A Concise History of Brazil. Cambridge: CUP. Furtado, Celso. The Economic Growth of Brazil: A Survey from Colonial to Modern Times. Berkeley, CA: University of California Press. Leal, Victor Nunes (1977). Coronelismo: The Municipality and Representative Government in Brazil. Cambridge: CUP. Malathronas, John (2003). Brazil: Life, Blood, Soul. Chichester: Summersdale. Martinez-Lara, Javier (1995). Building Democracy in Brazil: The Politics of Constitutional Change. Macmillan. Prado Júnior, Caio (1967). The Colonial Background of Modern Brazil. Los Angeles, CA: University of California Press. Schneider, Ronald (1995). Brazil: Culture and Politics in a New Economic Powerhouse. Boulder Westview. Skidmore, Thomas E. (1974). Black Into White: Race and Nationality in Brazilian Thought. Oxford: Oxford University Press. Wagley, Charles (1963). An Introduction to Brazil. New York, New York: Columbia University Press. The World Almanac and Book of Facts: Brazil. New York, NY: World Almanac Books. 2006. বহিঃসংযোগ পর্যটকদের জন্য ব্রাজিলের গাইড ব্রাজিলের ব্যবসায়িক গাইড ব্রাজিলীয় সংযুক্ত প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রাদেশিক প্রধান ও কেবিনেট সদস্যবৃন্দ ব্রাজিলীয় ভূ-তত্ত্ব ও পরিসংখ্যান ইন্সটিটিউট ব্রাজিলের তথ্য ও ছবিভিত্তিক পর্যটন ইউসিবি লাইব্রেরিজ গভপাবস''-এ ব্রাজিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস থেকে প্রাপ্ত ব্রাজিলের বৃত্তান্ত (১৯৯৭) ১৯৬১ সালে ব্রাজিলের ওপর প্রণীত একটি ভিডিও রিপোর্ট ব্রাজিল প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র পর্তুগিজভাষী রাষ্ট্র সাবেক পর্তুগিজ উপনিবেশ জি১৫ রাষ্ট্র জি২০ সদস্য জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ব্রিক্‌স রাষ্ট্র পর্তুগিজ ভাষী দেশগুলির সম্প্রদায়ের সদস্য রাষ্ট্র ই৭ রাষ্ট্র মার্কোসুরের সদস্য রাষ্ট্র দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্র পর্তুগিজভাষী দেশ ও অঞ্চল সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Brazil
Brazil
Brazil, officially the Federative Republic of Brazil, is the largest and easternmost country in South America and Latin America. It is the world's fifth-largest country by area and the seventh most populous. Its capital is Brasília, and its most populous city is São Paulo. Brazil is a federation composed of 26 states and a Federal District. It is the only country in the Americas where Portuguese is an official language. Brazil is among the world's most multicultural and ethnically diverse nations, due to over a century of mass immigration from around the world. Bounded by the Atlantic Ocean on the east, Brazil has a coastline of 7,491 kilometers (4,655 mi). Covering roughly half of South America's land area, it borders all other countries and territories on the continent except Ecuador and Chile. Brazil's Amazon basin includes a vast tropical forest home to diverse wildlife, a variety of ecological systems, and extensive natural resources spanning numerous protected habitats. This unique environmental heritage positions Brazil at number one of 17 megadiverse countries. The country's natural richness is also the subject of significant global interest, as environmental degradation (through processes such as deforestation) has direct impacts on global issues such as climate change and biodiversity loss. The territory of present-day Brazil was inhabited by numerous tribal nations prior to the landing of explorer Pedro Álvares Cabral in 1500. Subsequently claimed by the Portuguese Empire, Brazil remained a Portuguese colony until 1808, when the capital of the empire was transferred from Lisbon to Rio de Janeiro. In 1815, the colony was elevated to the rank of kingdom upon the formation of the United Kingdom of Portugal, Brazil and the Algarves. Independence was achieved in 1822 with the creation of the Empire of Brazil, a unitary state governed under a constitutional monarchy and a parliamentary system. The ratification of the first constitution in 1824 led to the formation of a bicameral legislature, now called the National Congress. Slavery was abolished in 1888. The country became a presidential republic in 1889 following a military coup d'état. An authoritarian military dictatorship emerged in 1964 and ruled until 1985, after which civilian governance resumed. Brazil's current constitution, formulated in 1988, defines it as a democratic federal republic. Due to its rich culture and history, the country ranks thirteenth in the world by number of UNESCO World Heritage Sites. Brazil is a regional and middle power that is an emerging power and a major non-NATO ally of the United States. Categorized as a developing country with a high Human Development Index, Brazil is considered an advanced emerging economy, having the eighth largest GDP in the world in both nominal and PPP terms—the largest in Latin America and the Southern Hemisphere. Classified as an upper-middle income economy by the World Bank, and a newly industrialized country by the IMF, Brazil has the largest share of wealth and the most complex economy in South America. It is also one of the world's major breadbaskets, being the largest producer of coffee for the last 150 years. Despite its growing economic and global profile, the country continues to face high levels of corruption, crime and social inequality. Brazil is a founding member of the United Nations, the G20, BRICS, G4, Mercosul, Organization of American States, Organization of Ibero-American States and the Community of Portuguese Language Countries. Brazil is also an observer state of the Arab League.
1186
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%87
ব্রুনাই
ব্রুনাই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। বন্দর সেরি বেগাওয়ান ব্রুনাই এর রাজধানী। এটি একটি রাজতান্ত্রিক ইসলামী দেশ। দেশটি বোর্নিও দ্বীপের উত্তর উপকূলে অবস্থিত। এর উত্তরে দক্ষিণে চীন সাগর, এবং বাকী সব দিকে মালয়শিয়া। লিমবাং এর সারাওয়াক জেলা দ্বারা এটি দুটি ভাগে বিভক্ত। এদের মধ্যে পশ্চিমেরটি বৃহত্তর। দুই এলাকাতেই সমুদ্র বন্দর আছে। তবে দুইটিকেই মালয়শিয়ার সারাওয়াক প্রদেশ ঘিরে রেখেছে। ব্রুনাই আয়তন মাত্র ৫,৭৬৫ বর্গকিলোমিটার। ব্রুনাই হল একমাত্র সার্বভৌম রাষ্ট্র যা সম্পূর্ণভাবে বোর্নিওতে অবস্থিত; দ্বীপের অবশিষ্টাংশ মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে বিভক্ত। সরকার একটি নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র যা এর সুলতান বা ইয়াং ডি-পার্টুয়ান দ্বারা শাসিত, এবং ইংরেজি সাধারণ আইন এবং শরিয়া আইন, সেইসাথে সাধারণ ইসলামিক অনুশীলনের সমন্বয় বাস্তবায়ন করে। ২০২০ সালে ব্রুনাইয়ের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪,৩৭,০০০ থেকে কিছুটা বেশি, যাদের মধ্যে প্রায় ১০০,০০০ রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর বন্দর সেরি বেগাওয়ানে বাস করে। দাবি করা হয় যে ব্রুনিয়ান সাম্রাজ্যের শীর্ষে, সুলতান বলকিয়াহ (শাসনকাল ১৪৮৫-১৫২৮) বোর্নিওর বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ছিল, যার মধ্যে আধুনিক দিনের সারাওয়াক এবং সাবাহ, পাশাপাশি বোর্নিওর উত্তর-পূর্ব প্রান্তের সুলু দ্বীপপুঞ্জ এবং বোর্নিওর উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত দ্বীপগুলি। দাবিগুলি আরও বলে যে সেলুডং (বা মেনিলার রাজ্য, যেখানে আধুনিক ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা এখন দাঁড়িয়ে আছে) তাদের নিয়ন্ত্রণ ছিল কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় পণ্ডিতরা বিশ্বাস করেন যে এটি ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট সেলুরং একটি বসতিকে নির্দেশ করে। ১৫২১ সালে স্পেনের ম্যাগেলান অভিযানে ব্রুনাইয়ের সামুদ্রিক রাজ্য পরিদর্শন করা হয়েছিল এবং ১৫৭৮ সালের ক্যাস্টিলিয়ান যুদ্ধে স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। ১৯ শতকের সময় ব্রুনিয়ান সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়। সালতানাত সারাওয়াক (কুচিং) কে জেমস ব্রুকের কাছে হস্তান্তর করে এবং তাকে শ্বেতাঙ্গ রাজা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং এটি সাবাহকে ব্রিটিশ নর্থ বোর্নিও চার্টার্ড কোম্পানির হাতে তুলে দেয়। ১৮৮৮ সালে, ব্রুনাই একটি ব্রিটিশ প্রটেক্টরেট হয়ে ওঠে এবং ১৯০৬ সালে একজন ব্রিটিশ বাসিন্দাকে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি দখলের পর, ১৯৫৯ সালে একটি নতুন সংবিধান লেখা হয়। ১৯৬২ সালে, ব্রিটিশদের সহায়তায় রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি ছোট সশস্ত্র বিদ্রোহ শেষ হয়েছিল। ব্রুনাই ১৯৬৭ সাল থেকে ব্রুনাই হাসানাল বলকিয়াহের সালতানাতের নেতৃত্বে রয়েছে এবং ১ জানুয়ারী ১৯৮৪-এ একটি ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্য হিসাবে এর স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। দেশটি একটি স্বৈরাচারী নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র। ১৯৯০ এবং ২০০০ এর দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত জিডিপি ৫৬% বৃদ্ধির সাথে, ব্রুনাইকে একটি শিল্পোন্নত দেশে রূপান্তরিত করেছে। এটি ব্যাপক পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র থেকে সম্পদ তৈরি করেছে। সিঙ্গাপুরের পরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ব্রুনাইয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মানব উন্নয়ন সূচক রয়েছে এবং এটি একটি উন্নত দেশ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) অনুসারে, ক্রয় ক্ষমতার সমতা অনুযায়ী মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের দিক থেকে ব্রুনাই বিশ্বের পঞ্চম স্থানে রয়েছে। আইএমএফ ২০১১ সালে অনুমান করেছিল যে ব্রুনাই দুটি দেশের মধ্যে একটি ছিল (অন্যটি হল লিবিয়া) যার পাবলিক ঋণ জাতীয় জিডিপির ০%। বুৎপত্তি স্থানীয় ইতিহাসগ্রন্থ অনুসারে, ব্রুনাই আওয়াং অলক বেতাতার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, পরবর্তীকালে সুলতান মুহাম্মদ শাহ, ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে রাজত্ব করেছিলেন। তিনি টেম্বুরং জেলার গারাং থেকে ব্রুনাই নদীর মোহনায় আসেন এবং ব্রুনাই আবিষ্কার করেন। কিংবদন্তি অনুসারে, অবতরণ করার সময় তিনি চিৎকার করে বলেছিলেন, বারু না (আসলভাবে অনুবাদ করা হয়েছে "এটাই!" বা "সেখানে"), যেখান থেকে "ব্রুনাই " নামটি এসেছে। তিনি ছিলেন ব্রুনাইয়ের প্রথম মুসলিম শাসক।মুসলিম বলকিয়া রাজবংশের অধীনে ব্রূনিয়ান সাম্রাজ্যের উত্থানের আগে, ব্রুনাই বৌদ্ধ শাসকদের অধীনে ছিল বলে মনে করা হয়। সম্ভবত সংস্কৃত শব্দ " " ( ) দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ১৪ শতকে এর নামকরণ করা হয়েছিল "বরুণই" ), যার অর্থ "নাবিক"। " বোর্নিও " শব্দটি একই উৎসের। দেশটির পুরো নাম, । ( ) মানে "শান্তির আবাস", আর নেগরা মানে "দেশ" মালয় ভাষায়। মালয় সরকারি নাম, "ব্রুনাই দারুসসালাম" এর একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণও সাধারণ ব্যবহারে প্রবেশ করেছে, বিশেষ করে সরকারি প্রসঙ্গে, এবং এটি জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের ভৌগোলিক নামের ভৌগোলিক ডাটাবেসে উপস্থিত রয়েছে, পাশাপাশি সরকারি ভাবে আসিয়ানে এর তালিকায়। এবং কমনওয়েলথ ব্রুনাই সম্পর্কে পশ্চিমের প্রথম নথিভুক্ত নথিটি লুডোভিকো ডি ভার্থেমা নামে একজন ইতালীয় দ্বারা, যিনি আরও বলেছিলেন যে "মলুকু দ্বীপপুঞ্জে যে লোকেদের সাথে তার দেখা হয়েছিল তার চেয়ে ব্রুনিয়ার লোকদের ত্বকের রঙ ফর্সা"। ১৫৫০ সালে তার লিখিত নথি থেকে : আমরা বোর্নেই (ব্রুনেই বা বোর্নিও) দ্বীপে পৌঁছেছি, যেটি মালুচ থেকে প্রায় , এবং আমরা দেখতে পেলাম যে এটি পূর্বোক্তের চেয়ে কিছুটা বড় এবং অনেক কম। লোকেরা পৌত্তলিক এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। তাদের রঙ অন্য ধরনের রঙের চেয়ে সাদা... এই দ্বীপে ন্যায়বিচার ভালভাবে পরিচালিত হয়... ইতিহাস প্রাথমিক ইতিহাস বিজয়পুরা নামে পরিচিত বসতিটি বৌদ্ধ শ্রীবিজয়া সাম্রাজ্যের একটি ভাসাল-রাজ্য ছিল এবং এটি বোর্নিওর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বলে মনে করা হয়েছিল যা ৭ম শতাব্দীতে বিকাশ লাভ করেছিল। এই বিকল্প শ্রীবিজয়া ব্রুনাইকে উল্লেখ করে, আরবি উৎসের কাছে "শ্রীবুজা" নামে পরিচিত ছিল। আরবি লেখক আল ইয়াকুবি ৮০০ সালে লিখেছিলেন যে মুসার রাজ্য (মুজা, যা পুরানো ব্রুনাই) চীনা সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে মেদ রাজ্যের (হয় মা-ই বা মাদজা-যেমন ফিলিপাইনের সাথে) জোটবদ্ধ ছিল। যার বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধ করেছে। শ্রীবিজয়ায় ভারতীয় চোল আক্রমণের পর, দাতু পুতি সুমাত্রা এবং বোর্নিও থেকে কিছু ভিন্নমতের দাতুকে রাজা মাকাতুনাওয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন, যিনি ছিলেন চোল নিযুক্ত স্থানীয় রাজা বা সেরি মহারাজের বংশধর (চীনা রেকর্ড অনুযায়ী)। ভিন্নমতাবলম্বী এবং তাদের দল ফিলিপাইনের ভিসায়াস দ্বীপপুঞ্জের (শ্রীবিজয়ের নামে একটি দ্বীপপুঞ্জ) মাদজা নামে একটি নতুন দেশে শ্রীবিজয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিল। অগাস্টিনিয়ান ফ্রিয়ার রেভের মতে, ১০ ডাটাস পানায়ে এবং দক্ষিণ লুজনে অনেকগুলি শহর প্রতিষ্ঠা করে। বোর্নিওতে একটি স্বাধীন রাজ্যের প্রথমদিকের চীনা থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডগুলির মধ্যে একটি বনির শাসকের কাছ থেকে চীনা সম্রাটের কাছে ৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের চিঠি যা কিছু পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে বোর্নিওকে উল্লেখ করা হয়েছে বলে। জাভানিজ-সুমাত্রান যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে ব্রুনিয়ানরা শ্রীবিজয়া থেকে তাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে। ১২২৫ সালে, চীনা কর্মকর্তা ঝাও রুকুও জানান যে বনির বাণিজ্য রক্ষার জন্য ১০০টি যুদ্ধজাহাজ এবং রাজ্যে প্রচুর সম্পদ ছিল। মার্কো পোলো তার স্মৃতিকথায় বলেছেন যে গ্রেট খান বা মঙ্গোল সাম্রাজ্যের শাসক, "গ্রেট জাভা" আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিলেন এবং ব্যর্থ হন যা ব্রুনিয়ান নিয়ন্ত্রিত বোর্নিওর ইউরোপীয় নাম ছিল। ১৩০০-এর দশকে চীনা ইতিহাস, নানহাই ঝি, রিপোর্ট করেছে যে ব্রুনাই সারাওয়াক এবং সাবাহ এবং সেইসাথে বুটুয়ান, সুলু, মা-ই (মিন্দোরো), মালিলু 麻裏蘆 (এর ফিলিপাইন রাজ্যগুলি আক্রমণ করেছে বা পরিচালনা করেছে) বর্তমান ম্যানিলা ), শাহুচং 沙胡重 (বর্তমান সিওকন), ইয়াচেন 啞陳 ( ওটন ), এবং 文杜陵 ওয়েন্ডুলিং (বর্তমান মিন্দানাও ), যা পরবর্তী সময়ে তাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে। সেরা ভিসায়ান গায়করা প্রায়শই তাদের যোদ্ধা জাতির সদস্যও হন। যাইহোক, ইসলামিক ব্রুনাইয়ের শক্তি বোর্নিওতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না কারণ দক্ষিণে কুটাই নামক ভারতীয়দের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি রাজ্যে এটির একটি হিন্দু প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল যাকে তারা পরাজিত করেছিল কিন্তু ধ্বংস করেনি। ফিলিপাইনে ব্রুনাইয়ের আধিপত্যকে দুটি ভারতীয় রাজ্য, সেবু এবং বুটুয়ানের রাজাহানেটস চ্যালেঞ্জ করেছিল যেগুলি কাকতালীয়ভাবে কুতাইয়ের সাথে মিত্র ছিল এবং ব্রুনাইয়ের নির্ভরতার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল; সুলু এবং ম্যানিলা পাশাপাশি তাদের পারস্পরিক মিত্র, মাগুইন্দানাওয়ের সালতানাত। মাদজা-আস এবং দাপিতানের কেদাতুয়ানরাও ব্রুনাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিল কারণ তারা মাগুইন্দানাও এবং টারনেট থেকে সংগঠিত ক্রমাগত মুসলিম আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল, ওশেনিয়ার আশেপাশে অবস্থিত একটি পাপুয়া ভাষী রাজ্য যা মশলা উৎপাদনে একচেটিয়াভাবে সম্পদশালী হয়ে উঠেছিল। তবুও, ১৬ শতকের মধ্যে, ব্রুনাইয়ে ইসলাম দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়েছিল এবং দেশটি তার বৃহত্তম মসজিদগুলির মধ্যে একটি তৈরি করেছিল। ১৫৭৮ সালে, একজন স্প্যানিশ ভ্রমণকারী অ্যালোনসো বেল্টরান এটিকে পাঁচ তলা লম্বা এবং জলের উপর নির্মিত বলে বর্ণনা করেছিলেন। এই প্রাক-স্প্যানিশ কিংবদন্তি ইতিহাসের স্প্যানিশ যুগে সান্তারেন রেকর্ড করে যে, দাতু ম্যাকাতুনাও বা রাজা মাকাতুনাও যিনি ছিলেন "মরোসের সুলতান" এবং দাতু পুতির একজন আত্মীয় যিনি দশটি দাতুর সম্পত্তি এবং সম্পদ দখল করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করা হয়েছিল। লাবাওডুঙ্গন এবং পায়বার নামের যোদ্ধারা, তাদের শ্বশুর পাইবুরং থেকে এই অবিচারের কথা জানতে পেরে, বোর্নিওতে ওডটোজানে রওনা হন যেখানে মাকাতুনাউ শাসন করতেন। যোদ্ধারা শহরটি বরখাস্ত করে, মাকাতুনাউ এবং তার পরিবারকে হত্যা করে, ১০টি ডাটাসের চুরি হওয়া সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করে, ওডটোজানের অবশিষ্ট জনসংখ্যাকে ক্রীতদাস করে এবং পানায়ে ফিরে যায়। দাঁড়াও দঙ্গন এবং তার স্ত্রী, ওজায়তানায়ন, পরে মোরোবোরো নামক একটি জায়গায় বসতি স্থাপন করেন। ১৪ শতকে, জাভানিজ পাণ্ডুলিপি নগরক্রেতাগামা, ১৩৬৫ সালে প্রপাঞ্চ দ্বারা লিখিত, বরুণকে হিন্দু মাজাপাহিতের উপাদান রাষ্ট্র হিসাবে উল্লেখ করেছে, যাকে বার্ষিক ৪০টি কর্পূরের শ্রদ্ধা জানাতে হয়েছিল। ১৩৬৯ সালে, সুলু যেটি পূর্বে মাজাপাহিতের অংশ ছিল, সফলভাবে বিদ্রোহ করেছিল এবং তারপরে বনি আক্রমণ করেছিল এবং বোর্নিওর উত্তর-পূর্ব উপকূলে আক্রমণ করেছিল এবং তারপরে দুটি পবিত্র মুক্তা বস্তাসহ এর ধন ও সোনার রাজধানী লুট করেছিল। মাজাপাহিতের একটি নৌবহর সুলুসকে তাড়িয়ে দিতে সফল হয়, কিন্তু আক্রমণের পর বনি দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৩৭১ সালের একটি চীনা প্রতিবেদনে বণিকে দরিদ্র এবং সম্পূর্ণরূপে মাজাপাহিত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ১৫ শতকের সময়, বনি মাজাপাহিত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন এবং তারপরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।এভাবে ব্রুনাইয়ের স্বাধীন সালতানাতে রূপান্তরিত হয়।ব্রুনাই একটি হাশেমি রাষ্ট্রে পরিণত হয় যখন তিনি মক্কার আরব আমির শরীফ আলীকে তার তৃতীয় সুলতান হওয়ার অনুমতি দেন। পণ্ডিতরা দাবি করেন যে ব্রুনাই সালতানাতের ক্ষমতা ১৫ এবং ১৭ শতকের মধ্যে শীর্ষে ছিল, এর ক্ষমতা উত্তর বোর্নিও থেকে দক্ষিণ ফিলিপাইন (সুলু) পর্যন্ত এবং এমনকি উত্তর ফিলিপাইন (ম্যানিলা) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল যা ব্রুনাই আঞ্চলিক অধিকারের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করেছিল যা রাজকীয় বিয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন। রাজনৈতিক কারণে, মায়নিলার ঐতিহাসিক শাসকরা ব্রুনাইয়ের সালতানাতের শাসক গোষ্ঠীগুলির সাথে আন্তঃবিবাহের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ জ্ঞানগত সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, কিন্তু ময়নিলার উপর ব্রুনাইয়ের রাজনৈতিক প্রভাব সামরিক বা রাজনৈতিক শাসনে প্রসারিত বলে মনে করা হয় না। ব্রুনাইয়ের মতো বৃহৎ থ্যালাসোক্র্যাটিক রাজ্যের (সামুদ্রিক রাজ্য) তাদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য এবং মায়নিলার মতো স্থানীয় শাসকদের জন্য আভিজাত্যের প্রতি তাদের পারিবারিক দাবিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করার জন্য আন্তঃবিবাহ ছিল একটি সাধারণ কৌশল। সুলতান বলকিয়াহ ম্যানিলা এবং সুলুকে জয় করার সময় ব্রুনাইয়ের ক্ষমতাকে সর্বাধিক পরিমাণে প্রসারিত করেছিলেন যদিও তিনি চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ভিসায়াস দ্বীপপুঞ্জ জয় করতে ব্যর্থ হন যদিও সুলতান বলকিয়াহ নিজে একজন ভিসায়ান মায়ের বংশধর ছিলেন এবং তিনি সুলতান রাগাম নামে পরিচিত ছিলেন। " দ্য সিংগিং ক্যাপ্টেন", তার শক্তিশালী বাদ্যযন্ত্রের কণ্ঠস্বর ছিল একটি বৈশিষ্ট্য যা তিনি তার ভিসায়ান বংশ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন যেহেতু ভিসায়ানরা সাংস্কৃতিকভাবে গান গাওয়ার প্রতি আচ্ছন্ন ছিল, সেরা ভিসায়ান গায়করা প্রায়শই তাদের যোদ্ধা জাতির সদস্যও হন। যাইহোক, ইসলামিক ব্রুনাইয়ের শক্তি বোর্নিওতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না কারণ দক্ষিণে কুটাই নামক ভারতীয়দের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি রাজ্যে এটির একটি হিন্দু প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল যাকে তারা পরাজিত করেছিল কিন্তু ধ্বংস করেনি।ফিলিপাইনে ব্রুনাইয়ের আধিপত্যকে দুটি ভারতীয় রাজ্য, সেবু এবং বুটুয়ানের রাজাহানেটস দ্বারাও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল যেগুলি কাকতালীয়ভাবে কুতাইয়ের সাথে মিত্র ছিল এবং ব্রুনাইয়ের নির্ভরতার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল; সুলু এবং ম্যানিলা পাশাপাশি তাদের পারস্পরিক মিত্র, মাগুইন্দানাওয়ের সালতানাত। মাদজা-আস এবং দাপিতানের কেদাতুয়ানরাও ব্রুনাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিল কারণ তারা মাগুইন্দানাও এবং টারনেট থেকে সংগঠিত ক্রমাগত মুসলিম আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল, ওশেনিয়ার আশেপাশে অবস্থিত একটি পাপুয়া ভাষী রাজ্য যা মশলা উৎপাদনে একচেটিয়াভাবে সম্পদশালী হয়ে উঠেছিল।তবুও, ১৬ শতকের মধ্যে, ব্রুনাইয়ে ইসলাম দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়েছিল এবং দেশটি তার বৃহত্তম মসজিদগুলির মধ্যে একটি তৈরি করেছিল। ১৫৭৮ সালে, একজন স্প্যানিশ ভ্রমণকারী অ্যালোনসো বেল্টরান এটিকে পাঁচ তলা লম্বা এবং জলের উপর নির্মিত বলে বর্ণনা করেছিলেন। স্পেনের সাথে যুদ্ধ এবং পতন পর্তুগিজরা মালাক্কা দখল করলে ব্রুনাই সংক্ষিপ্তভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রাধান্য বেড়ে যায় হয়ে এবং এর ফলে সেখানকার ধনী এবং শক্তিশালী কিন্তু বাস্তুচ্যুত মুসলিম উদ্বাস্তুদের আচেহ এবং ব্রুনাইয়ের মতো নিকটবর্তী সালতানাতে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করে। ব্রুনেয়ির সুলতান তখন ফিলিপাইনের হিন্দু টোন্ডো এবং মুসলিম ম্যানিলার মধ্যে একটি আঞ্চলিক দ্বন্দ্বে হস্তক্ষেপ করেন ম্যানিলার ব্রুনিয়ান বংশোদ্ভূত রাজা আচেকে টোন্ডোর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্রুনিয়ান নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল হিসাবে এবং ফিলিপাইনে ব্রুনিয়ান স্বার্থের প্রয়োগকারী হিসাবে নিযুক্ত করে। পরবর্তীকালে তিনি ম্যাগেলান অভিযানের সম্মুখীন হন যেখানে আন্তোনিও পিগাফেট্টা উল্লেখ করেন যে তার পিতামহ ব্রুনাইয়ের সুলতানের নির্দেশে আচে পূর্বে পুরাতন ধর্মের প্রতি বিশ্বস্ত এবং সালতানাতের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম বোর্নিওর বৌদ্ধ শহর লুকে বরখাস্ত করেছিলেন।যাইহোক, ইউরোপীয় প্রভাব ধীরে ধীরে ব্রুনাইয়ের আঞ্চলিক ক্ষমতার অবসান ঘটায়, কারণ একটি সময়ে ব্রুনাই রাজকীয় উত্তরাধিকার নিয়ে অভ্যন্তরীণ কলহের কারণে পতনের শুরু হয়। ইউরোপীয় খ্রিস্টান শক্তির এই আক্রমণের মুখে, অটোমান খিলাফত আচেহকে একটি সংরক্ষিত রাজ্য বানিয়ে এবং স্থানীয় মুজাহিদিনদের শক্তিশালীকরণ, প্রশিক্ষণ ও সজ্জিত করার জন্য অভিযান প্রেরণ করে বিপর্যস্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সালতানাতদের সাহায্য করেছিল। ম্যানিলা ওইডোর মেলচোর দাভালোসের অভিযোগের প্রমাণ হিসাবে তুর্কিরা নিয়মিতভাবে ব্রুনাইতে চলে যাচ্ছিল, যারা তার ১৫৮৫ সালের প্রতিবেদনে বলেছে যে তুর্কিরা প্রতি বছর সুমাত্রা, বোর্নিও এবং টেরনেটে আসছিল, লেপান্তোর যুদ্ধের পরাজিত প্রবীণরা সহ। হ্যাবসবার্গ স্পেনের বিরুদ্ধে ব্রুনাইকে সাহায্যকারী তুর্কিদের উপস্থিতি পরবর্তী ক্যাস্টিল যুদ্ধকে অটোমান-হ্যাবসবার্গ যুদ্ধের একটি অংশ করে তোলে। স্পেন ১৫৭৮ সালে যুদ্ধ ঘোষণা করে, সেই সময়ে ব্রুনাইয়ের রাজধানী কোটা বাতু আক্রমণ ও দখল করার পরিকল্পনা করে। এটি দুটি ব্রুনিয়ান সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি, পেঙ্গিরান সেরি লেলা এবং পেঙ্গিরান সেরি রত্ন-এর সহায়তার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। প্রাক্তন ম্যানিলায় ভ্রমণ করেছিলেন, তখন স্প্যানিশ উপনিবেশের কেন্দ্রস্থল। ম্যানিলা নিজেই ব্রুনাই থেকে বন্দী হয়েছিল, খ্রিস্টান ধর্ম‌ নিয়েছিল এবং মেক্সিকো সিটিতে কেন্দ্রীভূত নিউ স্পেনের ভাইসারয়্যালিটির একটি অঞ্চল তৈরি করেছিল। পেঙ্গিরান সেরি লেলা তার ভাই সাইফুল রিজাল কর্তৃক দখল করা সিংহাসন পুনরুদ্ধার করতে সাহায্যের জন্য ব্রুনাইকে স্পেনের উপনদী হিসেবে প্রস্তাব করতে এসেছিলেন। স্প্যানিশরা সম্মত হয়েছিল ব্রুনাই জয় সফল হলে, পেঙ্গিরান সেরি লেলাকে সুলতান হিসেবে নিযুক্ত করা হবে, আর পেঙ্গিরান সেরি রত্ন হবেন নতুন বেন্দাহারা। ১৫৭৮ সালের মার্চ মাসে, একটি নতুন স্প্যানিশ নৌবহর মেক্সিকো থেকে এসে ফিলিপাইনে বসতি স্থাপন করেছিল, ডি স্যান্ডে, ক্যাপিটান-জেনারেল নেতৃত্বে, তিনি ম্যানিলা থেকে ব্রুনাইয়ের উদ্দেশ্যে একটি অভিযানের আয়োজন করেছিলেন। এই অভিযানে ৪০০ জন স্প্যানিয়ার্ড এবং মেক্সিকান, ১,৫০০ ফিলিপিনো নেটিভ এবং ৩০০ জন বোর্নিয়ান ছিল। প্রচারণাটি ছিল অনেকের মধ্যে একটি, যার মধ্যে মিন্দানাও এবং সুলুতেও অ্যাকশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। খ্রিস্টান পক্ষের জাতিগত গঠন বৈচিত্র্যময় ছিল কারণ এটি সাধারণত মেস্টিজোস, মুলাটোস এবং আমেরিন্ডিয়ান ( আজটেক, মায়ান এবং ইনকান ) দ্বারা গঠিত যারা মেক্সিকো থেকে একত্রিত এবং পাঠানো হয়েছিল এবং তাদের নেতৃত্বে ছিল স্প্যানিশ অফিসাররা যারা স্থানীয় ফিলিপিনোদের সাথে একসাথে কাজ করেছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে সামরিক অভিযানে। যদিও মুসলিম দিকটিও সমানভাবে বর্ণগতভাবে বৈচিত্র্যময় ছিল।স্থানীয় মালয় যোদ্ধাদের পাশাপাশি, অটোমানরা বারবার নিকটবর্তী আচেহতে সামরিক অভিযান পাঠিয়েছিল।অভিযানগুলো মূলত তুর্কি, মিশরীয়, সোয়াহিলি, সোমালি, সিন্ধি, গুজরাটি এবং মালাবারদের নিয়ে গঠিত। এই অভিযাত্রী বাহিনী ব্রুনাইয়ের মতো কাছাকাছি অন্যান্য সুলতানিতেও ছড়িয়ে পড়েছিল এবং কামান তৈরির সম্পর্কে নতুন যুদ্ধের কৌশল ও শিখিয়েছিল। অবশেষে, স্প্যানিশরা ১৫৭৮ সালের ১৬ এপ্রিল পেঙ্গিরান সেরি লেলা এবং পেঙ্গিরান সেরি রত্ন-এর সহায়তায় রাজধানী আক্রমণ করে, শহরগুলি পুড়িয়ে দেয় এবং জনসংখ্যাকে ধর্ষণ করে।সুলতান সাইফুল রিজাল এবং পাদুকা সেরি বেগাওয়ান সুলতান আব্দুল কাহার মেরাগাং তারপর জেরুডং -এ পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।জেরুডং-এ, তারা ব্রুনাই থেকে দূরে বিজয়ী সেনাবাহিনীকে তাড়া করার পরিকল্পনা করেছিল। কলেরা বা আমাশয় প্রাদুর্ভাবের কারণে উচ্চ প্রাণহানির শিকার, স্প্যানিশরা ব্রুনাই ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ৭২ দিন পর ২৬ জুন ১৫৭৮ সালে ম্যানিলায় ফিরে আসে। তারা মসজিদটির পাঁচ স্তরের ছাদ সহ একটি উঁচু কাঠামো পুড়িয়ে দেয়। পেঙ্গিরান সেরি লেলা আগস্ট বা সেপ্টেম্বর ১৫৭৮ সালে মারা যান, সম্ভবত তার স্প্যানিশ মিত্রদের দ্বারা ভোগা একই অসুস্থতা থেকে। সন্দেহ ছিল যে তিনি বৈধ সুলতানকে ক্ষমতাসীন সুলতান দ্বারা বিষ প্রয়োগ করা হতে পারে। সেরি লেলার কন্যা, একজন ব্রুনিয়ান রাজকুমারী, "পুত্রি", স্প্যানিশদের সাথে চলে গিয়েছিলেন, তিনি মুকুটের প্রতি তার দাবি পরিত্যাগ করেছিলেন এবং তারপর তিনি অগাস্টিন দে লেগাজপি দে টোন্ডো নামে একজন খ্রিস্টান তাগালগকে বিয়ে করেছিলেন। অগাস্টিন ডি লেগাস্পি তার পরিবার এবং সহযোগীদের সাথে শীঘ্রই মহারলিকাদের ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েন, ফিলিপিনোরা ফিলিপাইন থেকে স্পেনীয়দের বিতাড়িত করার জন্য ব্রুনাই সালতানাত এবং জাপানি শোগুনেটের সাথে সংযোগ স্থাপনের একটি প্রচেষ্টা। যাইহোক, ষড়যন্ত্রের স্প্যানিশ দমনের উপর, প্রাক-ঔপনিবেশিক ম্যানিলার ব্রুনিয়ান বংশোদ্ভূত অভিজাতদেরকে গুয়েরেরো, মেক্সিকোতে নির্বাসিত করা হয়েছিল যা পরবর্তীকালে স্পেনের বিরুদ্ধে মেক্সিকান স্বাধীনতা যুদ্ধের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। কাস্টিলিয়ান যুদ্ধের স্থানীয় ব্রুনাই অ্যাকাউন্ট ঘটনাগুলির সাধারণভাবে গৃহীত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনেকটাই আলাদা।কাস্টিলিয়ান যুদ্ধকে বীরত্বপূর্ণ পর্ব হিসেবে দেখা হয়েছিল, যেখানে স্প্যানিয়ার্ডদের বিতাড়িত করা হয়েছিল বেন্দাহারা সাকাম, কথিতভাবে ক্ষমতাসীন সুলতানের ভাই এবং এক হাজার স্থানীয় যোদ্ধা।বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ এটিকে একটি লোক-নায়কের বিবরণ বলে মনে করেন, যা সম্ভবত কয়েক দশক বা শতাব্দী পরে বিকাশ লাভ করেছে। ব্রুনাই শেষ পর্যন্ত নৈরাজ্যের মধ্যে পড়ে। দেশটি ১৬৬০ থেকে ১৬৭৩ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধের শিকার হয়েছিল। ব্রিটিশ হস্তক্ষেপ ব্রিটিশরা বেশ কয়েকবার ব্রুনাইয়ের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে।১৮৪৬ সালের জুলাইয়ে ব্রিটেন ব্রুনাই আক্রমণ করে কারণ সঠিক সুলতান কে ছিল তা নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে। ১৮৮০ এর দশকে, ব্রুনিয়ান সাম্রাজ্যের পতন অব্যাহত ছিল। সুলতান জেমস ব্রুককে জমি (বর্তমানে সারাওয়াক) দিয়েছিলেন, যিনি তাকে একটি বিদ্রোহ দমন করতে সাহায্য করেছিলেন এবং তাকে সারাওয়াকের রাজ প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছিলেন। সময়ের সাথে সাথে, ব্রুক এবং তার ভাগ্নেরা (যারা তার উত্তরসূরি হয়েছিলেন) আরও জমি লিজ বা সংযুক্ত করে। ব্রুনাই তার এবং তার রাজবংশের কাছে তার অনেক অঞ্চল হারিয়েছিল, যা সাদা রাজা নামে পরিচিত। সুলতান হাশিম জলিলুল আলম আকামাদ্দিন ব্রিটিশদের কাছে ব্রুকসের আরও দখল বন্ধ করার আবেদন জানান। "সুরক্ষার চুক্তি" স্যার হিউ লো দ্বারা আলোচনা করা হয় এবং ১৭ সেপ্টেম্বর ১৮৮৮ সালে কার্যকর হয়। চুক্তিতে বলা হয়েছিল যে সুলতান "ব্রিটিশ সম্মতি ব্যতীত বিদেশী শক্তির কাছে কোন অঞ্চল হস্তান্তর বা ইজারা দিতে পারবেন না"; এটি ব্রুনাইয়ের বাহ্যিক বিষয়ে ব্রিটেনকে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে, এটিকে একটি ব্রিটিশ সুরক্ষিত রাষ্ট্রে পরিণত করে (যা ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল)। কিন্তু, ১৮৯০ সালে যখন সারাওয়াকের রাজ ব্রুনাইয়ের পান্ডারুয়ান জেলাকে সংযুক্ত করে, তখন ব্রিটিশরা এটি বন্ধ করার জন্য ব্রুনাই বা সারাওয়াকের রাজকে 'বিদেশি' (সুরক্ষা চুক্তি অনুসারে) বলে গণ্য করেনি। সারওয়াকের এই চূড়ান্ত সংযোজন ব্রুনাইকে তার বর্তমান ক্ষুদ্র ভূমির ভর এবং দুটি ভাগে বিভক্ত করে ছেড়ে যায়। ব্রিটিশ বাসিন্দাদের ১৯০৬ সালে সম্পূরক সুরক্ষা চুক্তির অধীনে ব্রুনাইতে প্রবর্তন করা হয়েছিল। বাসিন্দাদের প্রশাসনের সমস্ত বিষয়ে সুলতানকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।সময়ের সাথে সাথে, বাসিন্দা সুলতানের চেয়ে বেশি নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।আবাসিক ব্যবস্থা ১৯৫৯ সালে শেষ হয়। তেল আবিষ্কার বহু ব্যর্থ প্রচেষ্টার পরে ১৯২৯ সালে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কৃত হয়েছিল। দুই ব্যক্তি, এফএফ ম্যারিয়ট এবং টিজি কোচরান, ১৯২৬ সালের শেষের দিকে সেরিয়া নদীর কাছে তেলের গন্ধ পেয়েছিলেন। তারা একজন ভূ-পদার্থবিদকে অবহিত করেছিলেন, যিনি সেখানে একটি জরিপ পরিচালনা করেছিলেন। ১৯২৭ সালে, এলাকায় গ্যাসের ক্ষরণের খবর পাওয়া গেছে। সেরিয়া ওয়েল নাম্বার ওয়ান (S-1) ১২ জুলাই ১৯২৮ সালে ড্রিল করা হয়েছিল। ৫ এপ্রিল, ১৯২৯ এ তেল পাওয়া যায়। সেরিয়া ওয়েল নম্বর ২টি ১৯ আগস্ট ১৯২৯ সালে ড্রিল করা হয়েছিল এবং , তেল উৎপাদন অব্যাহত। ১৯৩০-এর দশকে আরও তেলক্ষেত্রের বিকাশের সাথে সাথে তেল উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ১৯৪০ সালে, তেল উৎপাদন ছিল ছয় মিলিয়ন ব্যারেলেরও বেশি। ব্রিটিশ মালয়ান পেট্রোলিয়াম কোম্পানি (বর্তমানে ব্রুনাই শেল পেট্রোলিয়াম কোম্পানি) ২২ জুলাই ১৯২২ সালে গঠিত হয়েছিল। প্রথম অফশোর কূপ ১৯৫৭ সালে খনন করা হয়েছিল। ২০ শতকের শেষের দিক থেকে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ব্রুনাইয়ের উন্নয়ন এবং সম্পদের ভিত্তি। জাপানিদের দখলে পার্ল হারবার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে তাদের আক্রমণের আট দিন পর ১৯৪১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাপানিরা ব্রুনাই আক্রমণ করে।তারা কাওয়াগুচি ডিট্যাচমেন্টের ১০,০০০ সৈন্যকে কুয়ালা বেলাইতে ক্যাম রণ বে থেকে অবতরণ করে।ছয় দিনের যুদ্ধের পর তারা সমগ্র দেশ দখল করে নেয়।এই অঞ্চলে একমাত্র মিত্রবাহিনী ছিল সারওয়াকের কুচিং-এ অবস্থিত ১৫তম পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ২য় ব্যাটালিয়ন। জাপানিরা ব্রুনাই দখল করার পর তারা সুলতান আহমদ তাজউদ্দীনের সাথে দেশ পরিচালনার চুক্তি করে।ইঞ্চে ইব্রাহীম (পরে পেহিন দাতু পের্দানা মেন্টেরি দাতো লায়লা উতামা আওয়াং হাজি ইব্রাহিম নামে পরিচিত), ব্রিটিশ বাসিন্দার প্রাক্তন সেক্রেটারি, আর্নেস্ট এডগার পেঙ্গিলি, জাপানি গভর্নরের অধীনে প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিযুক্ত হন।জাপানিরা প্রস্তাব করেছিল যে পেঙ্গিলি তাদের প্রশাসনের অধীনে তার অবস্থান ধরে রাখবে, কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।তিনি এবং ব্রুনাইয়ে থাকা অন্যান্য ব্রিটিশ নাগরিকদেরকে জাপানিরা সারাওয়াকের বাতু লিন্টাং ক্যাম্পে বন্দী করে রেখেছিল। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা যখন জাপানি পাহারায় ছিলেন, তখন ইব্রাহিম ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেককে হাত নেড়ে তার মঙ্গল কামনা করেন। সুলতান তার সিংহাসন ধরে রাখেন এবং জাপানিরা তাকে পেনশন এবং সম্মান প্রদান করেন।দখলের পরবর্তী সময়ে, তিনি লিমবাংয়ের তানতুয়ায় বসবাস করতেন এবং জাপানিদের সাথে তার তেমন কোনো সম্পর্ক ছিল না।বেশিরভাগ মালয় সরকারি কর্মকর্তাকে জাপানিরা ধরে রেখেছিল।ব্রুনাইয়ের প্রশাসনকে পাঁচটি প্রিফেকচারে পুনর্গঠিত করা হয়েছিল, যার মধ্যে ব্রিটিশ উত্তর বোর্নিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।প্রিফেকচারের মধ্যে বারাম, লাবুয়ান, লাওয়াস এবং লিমবাং অন্তর্ভুক্ত ছিল।ইব্রাহিম দখলের সময় জাপানিদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি লুকিয়ে রেখেছিলেন। পেঙ্গিরান ইউসুফ (পরে ইয়াএম পেঙ্গিরান সেটিয়া নেগারা পেঙ্গিরান হাজি মোহম্মদ ইউসুফ ) অন্যান্য ব্রুনিয়ানদের সাথে প্রশিক্ষণের জন্য জাপানে পাঠানো হয়েছিল।যদিও হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলার দিন ওই এলাকায়, ইউসুফ বেঁচে যান। ব্রিটিশরা একটি জাপানি আক্রমণের পূর্বাভাস করেছিল, কিন্তু ইউরোপে যুদ্ধে জড়িত থাকার কারণে এলাকাটি রক্ষা করার জন্য তাদের সম্পদের অভাব ছিল।পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সৈন্যরা ১৯৪১ সালের সেপ্টেম্বরে সেরিয়া তেলক্ষেত্র তেলওয়েলগুলিকে কংক্রিট দিয়ে ভরাট করে জাপানিদের ব্যবহার অস্বীকার করার জন্য।জাপানিরা মালায়া আক্রমণ করলে অবশিষ্ট যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়।যুদ্ধের শেষের দিকে, মিরি এবং সেরিয়াতে ১৬টি কূপ পুনরায় চালু করা হয়েছিল, যার উৎপাদন যুদ্ধ-পূর্ব স্তরের প্রায় অর্ধেক পৌঁছেছিল। মুয়ারায় কয়লা উৎপাদনও পুনরায় শুরু করা হয়েছিল, কিন্তু সামান্য সাফল্যের সাথে। দখলের সময়, জাপানিদের তাদের ভাষা স্কুলে শেখানো হতো এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জাপানি ভাষা শেখার প্রয়োজন ছিল। স্থানীয় মুদ্রা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল যা ডুইট পিসাং (কলার টাকা) নামে পরিচিত হয়েছিল। ১৯৪৩ সাল থেকে অতি-মুদ্রাস্ফীতি মুদ্রার মান ধ্বংস করে এবং যুদ্ধের শেষে এই মুদ্রাটি মূল্যহীন হয়ে পড়ে।শিপিংয়ের উপর মিত্রবাহিনীর আক্রমণের ফলে শেষ পর্যন্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।খাদ্য ও ওষুধের সরবরাহ কমে যায় এবং জনগণ দুর্ভিক্ষ ও রোগের শিকার হয়। বিমানবন্দরের রানওয়েটি জাপানিরা দখলের সময় তৈরি করেছিল এবং ১৯৪৩ সালে জাপানি নৌ ইউনিটগুলি ব্রুনাই বে এবং লাবুয়ানে অবস্থিত ছিল।মিত্রবাহিনীর বোমা হামলায় নৌঘাঁটি ধ্বংস হয়ে গেলেও বিমানবন্দরের রানওয়ে বেঁচে যায়।সুবিধাটি একটি পাবলিক বিমানবন্দর হিসাবে উন্নত করা হয়েছিল। ১৯৪৪ সালে মিত্ররা দখলদার জাপানিদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা শুরু করে, যার ফলে শহর এবং কুয়ালা বেলাইত অনেকাংশ ধ্বংস হয়ে যায়, কিন্তু কাম্পং আয়ার মিস হয়। ১৯৪৫ সালের ১০ জুন, অস্ট্রেলিয়ান ৯ম ডিভিশন জাপানিদের কাছ থেকে বোর্নিও পুনরুদ্ধার করতে অপারেশন ওবো সিক্সের অধীনে মুয়ারায় অবতরণ করে। তাদের আমেরিকান বিমান এবং নৌ ইউনিট সমর্থন করেছিল। ব্রুনাই শহরে ব্যাপকভাবে বোমাবর্ষণ করা হয় এবং তিন দিনের প্রবল যুদ্ধের পর পুনরায় দখল করা হয়। ব্রিটিশ সামরিক প্রশাসন জাপানিদের কাছ থেকে শাসনভার গ্রহণ করে এবং ১৯৪৬ সালের জুলাই পর্যন্ত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ব্রিটিশ সামরিক প্রশাসনের (বিএমএ) অধীনে ব্রুনাইতে একটি নতুন সরকার গঠিত হয়।এটি প্রধানত অস্ট্রেলিয়ান অফিসার এবং সার্ভিসম্যানদের নিয়ে গঠিত। ১৯৪৫ সালের ৬ জুলাই ব্রুনাইয়ের প্রশাসন সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ব্রুনাই স্টেট কাউন্সিলও সেই বছর পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল। BMA-কে ব্রুনিয়ার অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, যা তাদের দখলের সময় জাপানিদের দ্বারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।তাদের সেরিয়ার কূপের আগুনও নিভিয়ে দিতে হয়েছিল, যা তাদের পরাজয়ের আগে জাপানিদের দ্বারা লাগানো হয়েছিল। ১৯৪১ সালের আগে, সিঙ্গাপুরে অবস্থিত স্ট্রেইট সেটেলমেন্টের গভর্নর ব্রুনাই, সারাওয়াক এবং উত্তর বোর্নিও (বর্তমানে সাবাহ ) এর জন্য ব্রিটিশ হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করতেন। ব্রুনাইয়ের প্রথম ব্রিটিশ হাইকমিশনার ছিলেন সারাওয়াকের গভর্নর স্যার চার্লস আরডন ক্লার্ক। বারিসান পেমুদা ("ইয়ুথ মুভমেন্ট"; সংক্ষেপে BARIP) হল প্রথম রাজনৈতিক দল যেটি ব্রুনাইতে ১২ এপ্রিল ১৯৪৬ সালে গঠিত হয়েছিল। দলটির উদ্দেশ্য ছিল "সুলতান ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং মালয়দের অধিকার রক্ষা করা"। BARIP দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচনায়ও অবদান রেখেছে। ১৯৪৮ সালে নিষ্ক্রিয়তার কারণে দলটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯৫৯ সালে, ব্রুনাইকে একটি স্ব-শাসিত রাষ্ট্র ঘোষণা করে একটি নতুন সংবিধান লেখা হয়েছিল, যখন এর পররাষ্ট্র বিষয়ক, নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা যুক্তরাজ্যের দায়িত্ব ছিল।১৯৬২ সালে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি ছোট বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল, যা যুক্তরাজ্যের সহায়তায় দমন করা হয়েছিল।ব্রুনাই বিদ্রোহ নামে পরিচিত, এটি উত্তর বোর্নিও ফেডারেশন গঠনে ব্যর্থতায় অবদান রাখে।বিদ্রোহ আংশিকভাবে মালয়েশিয়ান ফেডারেশন থেকে বেরিয়ে আসার ব্রুনাইয়ের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছিল। ব্রুনাই ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।সরকারি জাতীয় দিবস, যা দেশের স্বাধীনতা উদযাপন করে, ঐতিহ্য অনুসারে ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধান রচনা ১৯৫৩ সালের জুলাই মাসে, সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন তৃতীয় ব্রুনাইয়ের লিখিত সংবিধান সম্পর্কে নাগরিকদের মতামত জানতে তুজুহ সেরাংকাই নামে একটি সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেন। ১৯৫৪ সালের মে মাসে, সুলতান, আবাসিক এবং হাই কমিশনার কমিটির ফলাফল নিয়ে আলোচনা করার জন্য মিলিত হন।তারা সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের অনুমোদন দিতে সম্মত হয়েছে। ১৯৫৯ সালের মার্চ মাসে, সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন তৃতীয় প্রস্তাবিত সংবিধান নিয়ে আলোচনার জন্য লন্ডনে একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ব্রিটিশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন উপনিবেশের সেক্রেটারি অফ স্টেট স্যার অ্যালান লেনক্স-বয়েড।ব্রিটিশ সরকার পরবর্তীকালে খসড়া সংবিধান গ্রহণ করে। ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫৯ তারিখে, ব্রুনাই শহরে সংবিধান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন তৃতীয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কমিশনার-জেনারেল স্যার রবার্ট স্কট।এটি নিম্নলিখিত বিধান অন্তর্ভুক্ত: সুলতানকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রধান করা হয়। ব্রুনাই এর অভ্যন্তরীণ প্রশাসনের জন্য দায়ী ছিল। ব্রিটিশ সরকার শুধুমাত্র পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক দায়বদ্ধ ছিল। রেসিডেন্টের পদটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল এবং একজন ব্রিটিশ হাইকমিশনার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। পাঁচটি কাউন্সিল স্থাপন করা হয়: কার্যনির্বাহী পরিষদ ব্রুনাইয়ের আইন পরিষদ প্রিভি কাউন্সিল উত্তরাধিকার পরিষদ রাজ্য ধর্মীয় পরিষদ জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্রুনাইয়ের ২৮তম সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন তৃতীয় জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি সিরিজ শুরু করেছিলেন। প্রথমটি ১৯৫৩ সালে চালু হয়েছিল। মোট B$১০০ মিলিয়ন ব্রুনাই স্টেট কাউন্সিল এই পরিকল্পনার জন্য অনুমোদিত হয়েছিল। ফিজির ঔপনিবেশিক অফিস থেকে ইআর বেভিংটনকে এটি বাস্তবায়নের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। পরিকল্পনার অধীনে একটি মার্কিন ডলার ১৪ মিলিয়ন গ্যাস প্ল্যান্ট নির্মিত হয়েছিল। ১৯৫৪ সালে, ব্রুনাই শেল পেট্রোলিয়াম অফশোর এবং অনশোর উভয় ক্ষেত্রেই জরিপ ও অনুসন্ধানের কাজ হাতে নেয়। ১৯৫৬ সাল নাগাদ, উৎপাদন ১১৪,৭০০ bpd এ পৌঁছেছিল। পরিকল্পনাটি জনশিক্ষার উন্নয়নেও সহায়তা করেছে। ১৯৫৮ সাল নাগাদ, শিক্ষার ব্যয় ছিল $৪ মিলিয়ন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছিল, কারণ নতুন রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল এবং ১৯৫৪ সালে বেরাকাস বিমানবন্দরের পুনর্গঠন সম্পন্ন হয়েছিল। দ্বিতীয় জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ১৯৬২ সালে চালু করা হয়েছিল। ১৯৬৩ সালে একটি প্রধান তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল।তেল ও গ্যাস সেক্টরে উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে এবং তারপর থেকে তেল উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিকল্পনাটি নাগরিকদের খাওয়ার জন্য মাংস ও ডিমের উৎপাদনকেও প্রচার করে। মাছ ধরার শিল্প পরিকল্পনার পুরো সময় জুড়ে তার উৎপাদন ২৫% বৃদ্ধি করেছে। মুয়ারার গভীর পানির বন্দরও এই সময়ে নির্মিত হয়েছিল।বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা হয়েছিল, এবং গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য গবেষণা করা হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় এই অঞ্চলের একটি স্থানীয় রোগ ম্যালেরিয়া নির্মূল করার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। স্বাধীনতা ১৪ নভেম্বর ১৯৭১ সালে, সুলতান হাসানাল বলকিয়া ১৯৫৯ সালের সংবিধানের সংশোধনী সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করার জন্য লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১৯৭১ সালের ২৩ নভেম্বর ব্রিটিশ প্রতিনিধি অ্যান্থনি রয়েলের সাথে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির অধীনে, নিম্নলিখিত শর্তাবলীতে সম্মত হয়েছিল: ব্রুনাইকে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ স্ব-শাসন দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাজ্য এখনও বহিরাগত বিষয় এবং প্রতিরক্ষার জন্য দায়ী থাকবে। ব্রুনাই এবং যুক্তরাজ্য নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ভাগাভাগি করতে সম্মত হয়েছে। এই চুক্তির কারণে গুর্খা ইউনিটগুলি ব্রুনাইতে মোতায়েন করা হয়েছিল, যেখানে তারা আজ অবধি রয়ে গেছে। ৭ জানুয়ারি ১৯৭৯-এ, ব্রুনাই এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি লর্ড গরনউই-রবার্টস যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি হিসাবে স্বাক্ষরিত করেছিল। এই চুক্তি ব্রুনাইকে একটি স্বাধীন জাতি হিসাবে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব গ্রহণের অনুমতি দেয়। ব্রিটেন ব্রুনাইকে কূটনৈতিক বিষয়ে সহায়তা করতে রাজি হয়েছে। মে ১৯৮৩ সালে, যুক্তরাজ্য ঘোষণা করেছিল যে ব্রুনাইয়ের স্বাধীনতার তারিখ হবে ১ জানুয়ারি ১৯৮৪। ১৯৮৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর, দেশের চারটি জেলার প্রধান মসজিদে একটি গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি মধ্যরাতে সুলতান হাসানাল বলকিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। সুলতান পরবর্তীকালে পূর্ববর্তী " হিজ রয়্যাল হাইনেস " এর পরিবর্তে " হিজ ম্যাজেস্টি " উপাধি গ্রহণ করেন। ব্রুনাই ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৮৪ তারিখে জাতিসংঘে ভর্তি হয়, সংস্থার ১৫৯তম সদস্য হয়। ভূগোল ব্রুনাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ যা দুটি সংযোগহীন অংশ নিয়ে গঠিত এবং বোর্নিও দ্বীপএ অবস্থিত। মোট এলাকা । এটির উপকূলরেখা দক্ষিণ চীন সাগরের পাশে, এবং মালয়েশিয়ার সাথে সীমান্ত ভাগ করে। এটির আঞ্চলিক জলের, এবং একটি একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল। জনসংখ্যার প্রায় ৯৭% বৃহত্তর পশ্চিম অংশে ( বেলাইত, টুটং এবং ব্রুনাই-মুয়ারা )-তে বাস করে, যেখানে কেবলমাত্র ১০,০০০ মানুষ পাহাড়ী পূর্ব অংশে ( টেম্বুরং জেলা ) বাস করে। ব্রুনাইয়ের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪০৮,০০০ যার মধ্যে প্রায় ১৫০,০০০ বাস করে রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানে। অন্যান্য প্রধান শহরগুলি হল বন্দর শহর মুয়ারা, তেল উৎপাদনকারী শহর সেরিয়া এবং এর পার্শ্ববর্তী শহর কুয়ালা বেলাইত, বেলাইত জেলায়। পানাগা এলাকায় প্রচুর পরিমাণে ইউরোপীয় প্রবাসীদের বাসস্থান, রয়্যাল ডাচ শেল এবং ব্রিটিশ আর্মি আবাসনের কারণে, সেখানে বেশ কিছু বিনোদনমূলক সুবিধা রয়েছে। ব্রুনাইয়ের বেশির ভাগই বোর্নিও নিম্নভূমি রেইন ফরেস্ট ইকোরিজিয়নের মধ্যে, যা দ্বীপের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে। পর্বত রেইন ফরেস্টের এলাকা অভ্যন্তরীণভাবে অবস্থিত। ব্রুনাইয়ের জলবায়ু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় নিরক্ষীয় যেটি একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইনফরেস্ট জলবায়ু বাণিজ্য বায়ুর তুলনায় আন্তঃক্রান্তীয় অভিসারী অঞ্চলের অধীন এবং কোন বা বিরল ঘূর্ণিঝড় নেই। ব্রুনাই অন্যান্য আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলির সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত ঝুঁকির মুখোমুখি। জনসংখ্যার উপাত্ত ব্রুনাইয়ের আদিবাসীদের মধ্যে রয়েছে বেলাইত, ব্রুনাই বিসায়া (আশেপাশের ফিলিপাইনের বিসায়া/ভিসায়ার সাথে বিভ্রান্ত হবেন না), আদিবাসী ব্রুনিয়ান মালয়, দুসুন, কেদায়ান, লুন বাওয়াং, মুরুত এবং টুটং। ব্রুনাইয়ের জনসংখ্যা সালে ছিল,যার মধ্যে ৭৬% শহরাঞ্চলে বাস করে। ২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত প্রতি বছর নগরায়নের হার ২.১৩% অনুমান করা হয়েছে। গড় আয়ু ৭৭.৭ বছর। ২০২০ সালে, জনসংখ্যার ৬৫.৭% মালয়, ১০.৩% চীনা, ৩.৪% আদিবাসী, বাকি ২০.৬% ছোট ছোট গোষ্ঠী ছিল। এখানে অপেক্ষাকৃত বড় প্রবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। বেশিরভাগ প্রবাসী অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং ভারতের মতো অ- মুসলিম দেশ থেকে আসে। ধর্ম ইসলাম হল ব্রুনাইয়ের সরকারী ধর্ম, বিশেষ করে সুন্নি সম্প্রদায়ের এবং শাফি'র ইসলামিক আইনশাস্ত্রের ধর্ম। জনসংখ্যার ৮০% এর বেশি, যার মধ্যে বেশিরভাগ ব্রুনিয়ান মালয় এবং কেদায়ানরা মুসলিম হিসাবে চিহ্নিত। চর্চা করা অন্যান্য ধর্ম হল বৌদ্ধধর্ম (৭%, প্রধানত চীনাদের দ্বারা) এবং খ্রিস্টধর্ম (৭.১%)। ফ্রিথিঙ্কাররা, বেশিরভাগই চীনা, জনসংখ্যার প্রায় ৭%। যদিও তাদের বেশিরভাগই বৌদ্ধধর্ম, কনফুসিয়ানিজম এবং তাওবাদের উপাদানগুলির সাথে কিছু ধরনের ধর্ম পালন করে, তারা নিজেদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন ধর্ম পালন করেনি বলে উপস্থাপন করতে পছন্দ করে, তাই সরকারী আদমশুমারিতে নাস্তিক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। আদিবাসী ধর্মের অনুসারী জনসংখ্যার প্রায় ২%। ভাষা ব্রুনাইয়ের সরকারী ভাষা হল স্ট্যান্ডার্ড মালয়, যার জন্য ল্যাটিন বর্ণমালা ( রুমি ) এবং আরবি বর্ণমালা ( জাউই ) উভয়ই ব্যবহৃত হয়। ১৯৪১ সালের দিকে লাতিন বর্ণমালায় পরিবর্তনের আগে মালয় ভাষা জাভি লিপিতে লেখা হত। প্রধান কথ্য ভাষা হল মেলায়ু ব্রুনাই ( ব্রুনাই মালয় )। ব্রুনাই মালয় প্রমিত মালয় এবং বাকি মালয় উপভাষাগুলি থেকে বরং ভিন্ন, প্রায় ৮৪% প্রমিত মালয়ের সাথে পরিচিত, এবং এটির সাথে বেশিরভাগই পারস্পরিকভাবে বোধগম্য। ইংরেজি একটি ব্যবসায়িক এবং অফিসিয়াল ভাষা হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এটি ব্রুনাইয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা এতে কথা বলে। ইংরেজি একটি কাজের ভাষা এবং প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার ভাষা হিসাবে ব্যবসায় ব্যবহৃত হয়। চীনা ভাষাগুলিও ব্যাপকভাবে বলা হয় এবং ব্রুনাইয়ের চীনা সংখ্যালঘুরা বিভিন্ন ধরনের চীনা ভাষায় কথা বলে। আরবি মুসলমানদের ধর্মীয় ভাষা। তাই, স্কুলে, বিশেষ করে ধর্মীয় স্কুলে এবং উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানেও আরবি পড়ানো হয়। ২০০৪ সালের হিসাবে, ব্রুনাইতে ছয়টি আরবি স্কুল এবং একটি ধর্মীয় শিক্ষকের কলেজ রয়েছে। ব্রুনাইয়ের মুসলিম জনসংখ্যার একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ তাদের ধর্মীয় শিক্ষার অংশ হিসেবে আরবি ভাষার পঠন, লেখা এবং উচ্চারণে কিছু আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেছে। অন্যান্য ভাষা ও উপভাষার মধ্যে রয়েছে কেদায়ন মালয় উপভাষা, টুটং মালয় উপভাষা, মুরুত এবং দুসুন । সংস্কৃতি ব্রুনাইয়ের সংস্কৃতি প্রধানত মালয় (এটির জাতিসত্তাকে প্রতিফলিত করে), ইসলামের ব্যাপক প্রভাব সহ, কিন্তু ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার তুলনায় এটিকে অনেক বেশি রক্ষণশীল হিসাবে দেখা হয়। ব্রুনিয়ান সংস্কৃতির প্রভাব মালয় দ্বীপপুঞ্জের মালয় সংস্কৃতি থেকে আসে। সাংস্কৃতিক প্রভাবের চারটি সময়কাল ঘটেছে: অ্যানিমিস্ট, হিন্দু, ইসলামিক এবং পাশ্চাত্য। ইসলামের খুব শক্তিশালী প্রভাব ছিল, এবং ব্রুনাইয়ের মতাদর্শ ও দর্শন হিসাবে গৃহীত হয়েছিল। একটি শরিয়া দেশ হিসাবে, অ্যালকোহল বিক্রি এবং প্রকাশ্যে সেবন নিষিদ্ধ। অমুসলিমদের তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে তাদের যাত্রার স্থান থেকে সীমিত পরিমাণে অ্যালকোহল আনার অনুমতি দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্রুনাইয়ের মিডিয়াকে সরকারপন্থী বলা হয়; সরকার ও রাজতন্ত্রের প্রেস সমালোচনা বিরল। ফ্রিডম হাউস কর্তৃক গণমাধ্যমে দেশটিকে "মুক্ত নয়" হিসাবে স্থান দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও, প্রেসগুলি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি স্পষ্টতই বিদ্বেষী নয় এবং শুধুমাত্র সরকার সম্পর্কিত নিবন্ধ প্রকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সরকার ১৯৫৩ সালে ব্রুনাই প্রেস পিএলসি নামে একটি মুদ্রণ ও প্রকাশনা সংস্থা গঠনের অনুমতি দেয়। সংস্থাটি ইংরেজি দৈনিক বোর্নিও বুলেটিন মুদ্রণ অব্যাহত রেখেছে। এই কাগজটি একটি সাপ্তাহিক সম্প্রদায়ের কাগজ হিসাবে শুরু হয়েছিল এবং 1990 সালে একটি দৈনিকে পরিণত হয়েছিল দ্য বোর্নিও বুলেটিন ছাড়াও, মিডিয়া পারমাটা এবং পেলিটা ব্রুনেই রয়েছে, স্থানীয় মালয় সংবাদপত্র যা প্রতিদিন প্রচারিত হয়। ব্রুনাই টাইমস ২০০৬ সাল থেকে ব্রুনাই থেকে প্রকাশিত আরেকটি ইংরেজি স্বাধীন সংবাদপত্র। ব্রুনাই সরকার DVB-T (RTB Perdana, RTB Aneka এবং RTB Sukmaindera) এবং পাঁচটি রেডিও স্টেশন (ন্যাশনাল এফএম, পিলিহান এফএম, নুর ইসলাম এফএম, হারমনি এফএম এবং পেলাঙ্গি এফএম) ব্যবহার করে ডিজিটাল টিভি চালু করার সাথে তিনটি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক ও পরিচালনা করে। . একটি প্রাইভেট কোম্পানি কেবল টেলিভিশন উপলব্ধ করেছে (অ্যাস্ট্রো-ক্রিস্টাল) পাশাপাশি একটি বেসরকারী রেডিও স্টেশন, ক্রিস্টাল এফএম। এটির একটি অনলাইন ক্যাম্পাস রেডিও স্টেশনও রয়েছে, UBD FM, যেটি তার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, Universiti Brunei Darussalam থেকে প্রবাহিত হয়। খেলা ব্রুনাইয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হল অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল । ব্রুনাই জাতীয় ফুটবল দল 1969 সালে ফিফায় যোগ দেয়, কিন্তু খুব বেশি সাফল্য পায়নি। শীর্ষ দুই ফুটবল লিগ হল ব্রুনাই সুপার লিগ এবং ব্রুনাই প্রিমিয়ার লিগ । ব্রুনাই ১৯৯৬ সালে অলিম্পিকে আত্মপ্রকাশ করেছিল; এটি ২০০৮ ব্যতীত পরবর্তী সমস্ত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। দেশটি ব্যাডমিন্টন, শুটিং, সাঁতার এবং ট্র্যাক-এন্ড-ফিল্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, কিন্তু এখনও কোনো পদক জিততে পারেনি। ব্রুনাই এশিয়ান গেমসে সামান্য বেশি সাফল্য পেয়েছে, চারটি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে। প্রথম বড় আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্ট যেটি ব্রুনাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা ছিল 1999 সালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান গেমস । সর্বকালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান গেমসের পদক টেবিল অনুসারে, ব্রুনিয়ার ক্রীড়াবিদরা গেমসে মোট ১৪টি স্বর্ণ, ৫৫টি রৌপ্য এবং ১৬৩টি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে। অর্থনীতি সিঙ্গাপুরের পরে দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ব্রুনাইয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মানব উন্নয়ন সূচক রয়েছে এবং এটি একটি উন্নত দেশ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ। অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন এর জিডিপির প্রায় ৯০%। প্রতিদিন প্রায় তেল উৎপাদিত হয়, যার ফলে ব্রুনাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। এটি প্রায় উৎপাদন করে প্রতিদিন তরল প্রাকৃতিক গ্যাস, ব্রুনাই বিশ্বের নবম বৃহত্তম গ্যাস রপ্তানিকারক। ফোর্বস পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রের ভিত্তিতে ব্রুনাইকে ১৮২ টির মধ্যে পঞ্চম ধনী দেশ হিসাবে স্থান দিয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগ থেকে আয় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন আয়ের পরিপূরক। এই বিনিয়োগের বেশিরভাগই ব্রুনাই ইনভেস্টমেন্ট এজেন্সি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি শাখা দ্বারা করা হয়। সরকার সকল চিকিৎসা সেবা প্রদান করে, এবং চাল এবং বাসস্থানে ভর্তুকি দেয়। জাতীয় বিমান বাহক, রয়্যাল ব্রুনাই এয়ারলাইন্স, ব্রুনাইকে ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়া/নিউজিল্যান্ডের মধ্যে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এই কৌশলটির কেন্দ্রবিন্দু হল লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে এয়ারলাইনটি তার অবস্থান বজায় রাখে। এটি উচ্চ ক্ষমতা-নিয়ন্ত্রিত বিমানবন্দরে একটি দৈনিক স্লট ধারণ করে, যা এটি বন্দর সেরি বেগাওয়ান থেকে দুবাই হয়ে পরিবেশন করে। এয়ারলাইনটির সাংহাই, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর এবং ম্যানিলা সহ প্রধান এশিয়ান গন্তব্যে পরিষেবা রয়েছে। ব্রুনাই অন্যান্য দেশ থেকে কৃষি পণ্য (যেমন চাল, খাদ্য পণ্য, পশুসম্পদ ইত্যাদি), যানবাহন এবং বৈদ্যুতিক পণ্যের মতো আমদানির উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। ব্রুনাই তার খাদ্যের ৬০% আমদানি করে; এই পরিমাণের, প্রায় ৭৫% অন্যান্য আসিয়ান দেশ থেকে আসে। ব্রুনাইয়ের নেতারা উদ্বিগ্ন যে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান একীকরণ অভ্যন্তরীণ সামাজিক সংহতিকে দুর্বল করবে এবং তাই তারা একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতি অনুসরণ করেছে।যাইহোক, এটি 2000 এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (APEC) ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আরও বিশিষ্ট খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে।ব্রুনাইয়ের নেতারা শ্রমশক্তিকে আপগ্রেড করার, বেকারত্ব কমানোর পরিকল্পনা করেছেন, যা 2014 সালে 6.9% ছিল; ব্যাংকিং এবং পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করা এবং সাধারণভাবে, অর্থনৈতিক ভিত্তি প্রসারিত করা। একটি দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার লক্ষ্য বৃদ্ধির বৈচিত্র্য আনা। ব্রুনাই সরকারও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বৃদ্ধি করেছে, বিশেষ করে চালে। এপ্রিল ২০০৯ সালে ওয়াসান পাড়ি মাঠে "ব্রুনাই দারুসসালামে ধান উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দিকে পাড়ি রোপণ" অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের সময় ব্রুনাই তার ব্রুনাই দারুসসালাম রাইস ১ এর নাম পরিবর্তন করে লায়লা রাইস রাখে।২০০৯ সালের আগস্টে, রাজপরিবার স্থানীয় ধানের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বছরের পর বছর প্রচেষ্টার পর প্রথম কয়েকটি লায়লা পাড়ির ডালপালা কাটে, একটি লক্ষ্য প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে প্রথম প্রকাশ করা হয়েছিল। জুলাই ২০০৯ সালে বিদেশী বাজারে রপ্তানি করার লক্ষ্যে ব্রুনাই তার জাতীয় হালাল ব্র্যান্ডিং স্কিম, ব্রুনাই হালাল চালু করে। ২০২০ সালে, ব্রুনাইয়ের বিদ্যুৎ উৎপাদন মূলত জীবাশ্ম জ্বালানির উপর ভিত্তি করে ছিল; দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ১% এরও কম জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য দায়ী। রাজনীতি ও সরকার প্রশাসনিক বিভাগ ব্রুনাই চারটি জেলায় ( ) বিভক্ত, যথা ব্রুনাই-মুয়ারা, বেলাইত, টুটং এবং টেম্বুরং। ব্রুনাই-মুয়ারা জেলাটি সবচেয়ে ছোট অথচ সবচেয়ে জনবহুল এবং দেশটির রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানের অবস্থান। বেলাইত দেশের তেল ও গ্যাস শিল্পের জন্মস্থান এবং কেন্দ্র। তেম্বুরং একটি এক্সক্লেভ এবং ব্রুনাই উপসাগর এবং মালয়েশিয়ান রাজ্য সারাওয়াক দ্বারা দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন। টুটং দেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক হ্রদ তাসেক মেরিম্বুনের অবস্থান। প্রতিটি জেলাকে কয়েকটি মুকিমে ভাগ করা হয়েছে। ব্রুনাইতে মোট ৩৯ টি মুকিম রয়েছে। প্রতিটি মুকিম বেশ কয়েকটি গ্রাম ( বা ) নিয়ে গঠিত। বন্দর সেরি বেগাওয়ান এবং দেশের শহরগুলি ( মুয়ারা এবং বাঙ্গার ব্যতীত) মিউনিসিপ্যাল বোর্ড এলাকা হিসাবে শাসিত হয় ( )।প্রতিটি পৌর এলাকা আংশিক বা সামগ্রিকভাবে গ্রাম বা মুকিম গঠন করতে পারে।বন্দর সেরি বেগাওয়ান এবং কয়েকটি শহর যেখানে তারা অবস্থিত সেই জেলাগুলির রাজধানী হিসাবে কাজ করে। একটি জেলা এবং এর উপাদান মুকিম এবং গ্রামগুলি একটি জেলা কার্যালয় দ্বারা পরিচালিত হয় ( ) ইতোমধ্যে, পৌর এলাকাগুলি পৌর বিভাগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ( ) জেলা অফিস এবং পৌর বিভাগ উভয়ই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি বিভাগ। ব্রুনাইয়ের রাজনীতি একটি পরম রাজতন্ত্র কাঠামোতে সংঘটিত হয়। ব্রুনাইয়ের সুলতান হলেন একাধারে রাষ্ট্র ও সরকারের প্রধান। সরকারের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত। ব্রুনাইয়ে ২০ সদস্যবিশিষ্ট একটি আইন প্রণয়ন কাউন্সিল আছে, তবে এর সদস্যেরা আইন প্রণয়নে কেবল পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৯ সালের সংবিধান অনুযায়ী পাদুকা সেরি বাগিন্দা সুলতান হাজি হাসানাল বোলকিয়াহ মুইযাদ্দিন ওয়াদ্দাউল্লাহ হলেন দেশের প্রধান। ১৯৬০-এর বিপ্লবের পর থেকে ব্রুনাইয়ে মার্শাল ল' জারি হয়ে আছে। ব্রুনাইয়ের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সংবিধান এবং মালয় ইসলামী রাজতন্ত্রের জাতীয় ঐতিহ্য ( মেলায়ু ইসলাম বেরাজা; এমআইবি) দ্বারা পরিচালিত হয়। MIB এর তিনটি উপাদান মালয় সংস্কৃতি, ইসলাম ধর্ম এবং রাজতন্ত্রের অধীনে রাজনৈতিক কাঠামোকে কভার করে। ইংরেজি সাধারণ আইনের উপর ভিত্তি করে এটির একটি আইনি ব্যবস্থা রয়েছে, যদিও কিছু ক্ষেত্রে ইসলামী আইন ( শরিয়াহ ) এটিকে অগ্রাহ্য করে। ব্রুনাইয়ের সংসদ আছে কিন্তু নির্বাচন নেই; সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬২ সালে। ব্রুনাইয়ের ১৯৫৯ সালের সংবিধানের অধীনে, মহামান্য পাদুকা সেরি বাগিন্দা সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ সম্পূর্ণ নির্বাহী কর্তৃত্ব সহ রাষ্ট্রের প্রধান। ১৯৬২ সাল থেকে, এই কর্তৃপক্ষ জরুরি ক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা প্রতি দুই বছর পর পর নবায়ন করা হয়। ১৯৬২ সালের ব্রুনাই বিদ্রোহের পর থেকে ব্রুনাই প্রযুক্তিগতভাবে সামরিক আইনের অধীনে রয়েছে।হাসানাল বলকিয়া রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেন। বিদেশী সম্পর্ক ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত, ব্রুনাইয়ের বৈদেশিক সম্পর্ক যুক্তরাজ্য সরকার পরিচালিত করতো। এর পরে, তারা ব্রুনাই কূটনৈতিক পরিষেবা দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতার পর, এই পরিষেবাটি মন্ত্রী পর্যায়ে উন্নীত হয় এবং এখন এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিসাবে পরিচিত। আনুষ্ঠানিকভাবে, ব্রুনাইয়ের পররাষ্ট্র নীতি নিম্নরূপ: অন্যের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্মান; জাতির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা; অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা; এবং এই অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং প্রচার করা। যুক্তরাজ্যের সাথে তার ঐতিহ্যগত সম্পর্কের সাথে, ব্রুনাই ১ জানুয়ারি ১৯৮৪-এ স্বাধীনতার দিনে অবিলম্বে কমনওয়েলথের ৪৯তম সদস্য হয়ে ওঠে। আঞ্চলিক সম্পর্কের উন্নতির দিকে তার প্রথম উদ্যোগগুলির মধ্যে একটি, ব্রুনাই ৭ জানুয়ারি ১৯৮৪-এ আসিয়ানে যোগদান করে, ষষ্ঠ সদস্য হয়ে। তার সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার স্বীকৃতি অর্জনের জন্য, এটি একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হিসাবে যোগদান করে। একটি ইসলামী দেশ হিসাবে, ব্রুনাই ১৯৮৪ সালের জানুয়ারিতে মরক্কোতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কনফারেন্সের (বর্তমানে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা ) পূর্ণ সদস্য হয়। ১৯৮৯ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন ফোরামে (APEC) যোগদানের পর, ব্রুনাই নভেম্বর ২০০০ সালে APEC ইকোনমিক লিডারস মিটিং এবং জুলাই ২০০২ সালে ASEAN রিজিওনাল ফোরাম (ARF) আয়োজন করে। ব্রুনাই ১ জানুয়ারি ১৯৯৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয় এবং ২৪ মার্চ ১৯৯৪-এ ফিলিপাইনের দাভাওতে মন্ত্রীদের উদ্বোধনী বৈঠকের সময় গঠিত BIMP-EAGA- এর একজন প্রধান খেলোয়াড়। সিঙ্গাপুর এবং ফিলিপাইনের সাথে ব্রুনাইয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এপ্রিল ২০০৯-এ, ব্রুনাই এবং ফিলিপাইন একটি সমঝোতা স্মারক (MOU) স্বাক্ষর করেছে যা কৃষি এবং খামার-সম্পর্কিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করতে চায়। বিরোধপূর্ণ স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের কিছু দাবি করার জন্য ব্রুনাই অনেক দেশগুলির মধ্যে একটি। সারওয়াকের অংশ হিসেবে লিমবাং -এর মর্যাদা নিয়ে ব্রুনাই বিতর্কিত হয়েছে যেহেতু এলাকাটি ১৮৯০ সালে প্রথম সংযুক্ত করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে ইস্যুটি নিষ্পত্তি হয়েছিল বলে জানা গেছে, মালয়েশিয়া ব্রুনিয়ার জলসীমায় তেলক্ষেত্রগুলির দাবি ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে ব্রুনাই সীমান্ত মেনে নিতে সম্মত হয়েছিল। ব্রুনাই সরকার এটি অস্বীকার করে এবং বলে যে লিমবাংয়ের উপর তাদের দাবি কখনও বাদ দেওয়া হয়নি। ২০১৩ সালে ব্রুনাই আসিয়ানের চেয়ার ছিল।একই বছর এটি আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনেরও আয়োজন করেছিল। প্রতিরক্ষা ব্রুনাই সারা দেশে অবস্থানরত তিনটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন রক্ষণাবেক্ষণ করে। ব্রুনাই নৌবাহিনীর বেশ কয়েকটি "ইজতিহাদ"-শ্রেণীর টহল নৌকা রয়েছে যা একটি জার্মান নির্মাতার কাছ থেকে কেনা হয়েছে। যুক্তরাজ্য সেরিয়াতেও একটি ঘাঁটি বজায় রাখে, ব্রুনাইয়ের তেল শিল্পের কেন্দ্র। ১,৫০০ জন কর্মী নিয়ে গঠিত একটি গুর্খা ব্যাটালিয়ন সেখানে অবস্থান করছে।দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির অধীনে যুক্তরাজ্যের সামরিক কর্মীরা সেখানে অবস্থান করছে। বিমান বাহিনী দ্বারা পরিচালিত একটি বেল ২১২ ২০ জুলাই ২০১২ তারিখে কুয়ালা বেলাইতে বিধ্স্ত হয় এবং ১৪ জন ক্রূর মধ্যে ১২ জন নিহত হয়। দুর্ঘটনার কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দুর্ঘটনাটি ব্রুনাইয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ বিমান চলাচলের ঘটনা। সেনাবাহিনী বর্তমানে ইউএভি এবং S-৭০ ব্ল্যাক হকস সহ নতুন সরঞ্জামগুলি অর্জন করছে। ব্রুনাইয়ের আইন পরিষদ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে ৫৬৪ মিলিয়ন ব্রুনাই ডলার ($৪০৮ মিলিয়ন) করার প্রস্তাব করেছে।এটি রাজ্যের মোট জাতীয় বার্ষিক ব্যয়ের প্রায় দশ শতাংশ এবং জিডিপির প্রায় ২.৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। আইনি ব্যবস্থা ব্রুনাই এর বিচার বিভাগীয় শাখায় অসংখ্য আদালত রয়েছে।সর্বোচ্চ আদালত হল সুপ্রিম কোর্ট, যা আপিল আদালত এবং হাইকোর্ট নিয়ে গঠিত।এই দুটিতে একজন প্রধান বিচারপতি এবং দুজন বিচারপতি রয়েছেন। নারী ও শিশু মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বলেছে যে ব্রুনাইয়ে নারীদের প্রতি বৈষম্য একটি সমস্যা। আইন যৌন হয়রানি নিষিদ্ধ করে এবং শর্ত দেয় যে যে কেউ আক্রমণ করে বা অপরাধমূলক শক্তি ব্যবহার করে, এর মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশের উদ্দেশ্যে বা এটি কোনও ব্যক্তির শালীনতাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে তা জেনে, তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং বেত্রাঘাতের শাস্তি দেওয়া হবে।আইনে ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ধর্ষণের জন্য ১২টির কম স্ট্রোক সহ বেত্রাঘাতের বিধান রয়েছে।আইন স্বামী-স্ত্রী ধর্ষণকে অপরাধী করে না; এটি স্পষ্টভাবে বলে যে একজন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে যৌন মিলন, যদি না তার বয়স ১৩ বছরের কম না হয়, তা ধর্ষণ নয়।সংশোধিত ইসলামিক পারিবারিক আইন আদেশ ২০১০ এবং বিবাহিত নারী আইন আদেশ ২০১০ এর অধীনে স্বামী/স্ত্রীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে।একটি সুরক্ষা আদেশ লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা হল জরিমানা BN$2,000 এর বেশি নয় বা ছয় মাসের বেশি নয়।আইন অনুসারে, ১৪ বছরের কম বয়সী কোনও মহিলার সাথে যৌন মিলন ধর্ষণ বলে গণ্য হয় এবং এর জন্য কমপক্ষে আট বছরের কারাদণ্ড এবং ৩০ বছরের বেশি নয় এবং বেতের ১২টি আঘাতের কম নয়।আইনের উদ্দেশ্য হল মেয়েদের পতিতাবৃত্তি এবং পর্নোগ্রাফি সহ "অন্যান্য অনৈতিক উদ্দেশ্য" এর মাধ্যমে শোষণ থেকে রক্ষা করা। ব্রুনিয়ার নাগরিকত্ব জুস সোলির পরিবর্তে পিতামাতার জাতীয়তার মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়।রাষ্ট্রহীন অবস্থার অভিভাবকদের দেশে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের জন্য একটি বিশেষ পাসের জন্য আবেদন করতে হবে। একটি শিশু নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে শিশুটিকে স্কুলে ভর্তি করা কঠিন হতে পারে। এলজিবিটি অধিকার ব্রুনাইয়ে নারী-পুরুষ সমকামিতা অবৈধ।পুরুষদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক মৃত্যু বা বেত্রাঘাত দ্বারা শাস্তিযোগ্য; নারীদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক বেত বা কারাদণ্ডের দ্বারা দণ্ডনীয়। ২০১৯ সালের মে মাসে, ব্রুনাই সরকার শরিয়া ফৌজদারি কোডে মৃত্যুদণ্ডের উপর বিদ্যমান স্থগিতাদেশ প্রসারিত করেছিল এবং সেইসাথে সমকামী কাজগুলিকে পাথর ছুঁড়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল। ধর্মীয় অধিকার ব্রুনাইয়ের আইনে, অমুসলিমদের তাদের বিশ্বাস অনুশীলন করার অধিকার 1959 সালের সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে।যাইহোক, উদযাপন এবং প্রার্থনা অবশ্যই উপাসনালয় এবং ব্যক্তিগত বাসস্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।শরিয়া দণ্ডবিধি গৃহীত হওয়ার পর, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পাবলিক প্লেসে ক্রিসমাস সাজসজ্জা নিষিদ্ধ করেছিল, কিন্তু উপাসনালয় এবং ব্যক্তিগত প্রাঙ্গনে ক্রিসমাস উদযাপন নিষিদ্ধ করেনি।২৫ ডিসেম্বর ২০১৫-এ, ১৮,০০০ আনুমানিক স্থানীয় ক্যাথলিকদের মধ্যে ৪,০০০ জন ক্রিসমাস ডে এবং ক্রিসমাস ইভের গণসংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।২০১৫ সালে, ব্রুনাইয়ের ক্যাথলিক চার্চের তৎকালীন প্রধান ব্রুনাই টাইমসকে বলেছিলেন, "সত্যি বলতে এই বছর আমাদের জন্য কোন পরিবর্তন হয়নি; কোন নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি, যদিও আমরা বিদ্যমানকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করি এবং মেনে চলি। প্রবিধান যে আমাদের উদযাপন এবং উপাসনা গির্জার যৌগ এবং ব্যক্তিগত বাসস্থানের মধ্যে [সীমাবদ্ধ] থাকবে"। ব্রুনাইয়ের সংশোধিত দণ্ডবিধি পর্যায়ক্রমে কার্যকর হয়েছে, ২২ এপ্রিল ২০১৪ থেকে শুরু হয়েছে জরিমানা বা কারাদণ্ডের শাস্তিযোগ্য অপরাধ।সম্পূর্ণ কোড, পরে চূড়ান্ত বাস্তবায়নের জন্য, অসংখ্য অপরাধের (হিংসাত্মক এবং অহিংস উভয়ই) জন্য মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করে, যেমন মুহাম্মদের অবমাননা বা মানহানি, কোরআন ও হাদিসের কোনো আয়াতকে অবমাননা করা, ব্লাসফেমি করা, নিজেকে একজন নবী ঘোষণা করা বা অমুসলিম, ডাকাতি, ধর্ষণ, ব্যভিচার, ব্যভিচার, মুসলমানদের জন্য বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক এবং হত্যা।পাথর ছুড়ে হত্যা ছিল নির্দিষ্ট "যৌন প্রকৃতির অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পদ্ধতি"।জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের (ওএইচসিএইচআর) অফিসের মুখপাত্র রুপার্ট কলভিল ঘোষণা করেছেন যে, "এ ধরনের বিস্তৃত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।" পশু অধিকার ব্রুনাই হল এশিয়ার প্রথম দেশ যে দেশব্যাপী হাঙ্গর পাখনা নিষিদ্ধ করেছে। বোর্নিও দ্বীপের প্রতিবেশীদের তুলনায় ব্রুনাই তার বেশিরভাগ বন ধরে রেখেছে।প্যাঙ্গোলিনকে রক্ষা করার জন্য একটি জনসাধারণের প্রচারণা চালানো হচ্ছে যা ব্রুনেইতে হুমকিস্বরূপ ধন হিসেবে বিবেচিত। অবকাঠামো ২০১৯ সালের হিসাবে, দেশের সড়ক নেটওয়ার্কের মোট দৈর্ঘ্য , যার মধ্যে পাকা ছিল। মুয়ারা টাউন থেকে কুয়ালা বেলাইত পর্যন্ত হাইওয়ে একটি ডুয়েল ক্যারেজওয়ে। ব্রুনাই বিমান, সমুদ্র এবং স্থল পরিবহন দ্বারা অ্যাক্সেসযোগ্য।ব্রুনাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশটির প্রধান প্রবেশপথ।রয়্যাল ব্রুনাই এয়ারলাইন্স জাতীয় বাহক।আরেকটি এয়ারফিল্ড আছে, আন্দুকি এয়ারফিল্ড, সেরিয়াতে অবস্থিত।মুয়ারার ফেরি টার্মিনাল লাবুয়ান (মালয়েশিয়া) এর সাথে নিয়মিত সংযোগ প্রদান করে।স্পিডবোট টেম্বুরং জেলায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করে।ব্রুনাই জুড়ে চলমান প্রধান হাইওয়ে হল টুটং-মুয়ারা হাইওয়ে।দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। ব্রুনাইয়ের একটি প্রধান সমুদ্র বন্দর মুয়ারাতে অবস্থিত। ব্রুনাইয়ের বিমানবন্দরটি বর্তমানে ব্যাপকভাবে আপগ্রেড করা হচ্ছে।চাঙ্গি এয়ারপোর্ট ইন্টারন্যাশনাল এই আধুনিকীকরণে কাজ করছে পরামর্শক, যার পরিকল্পিত ব্যয় বর্তমানে $১৫০ মিলিয়ন।এই প্রকল্পে যোগ করার কথা রয়েছে নতুন ফ্লোরস্পেস এবং একটি নতুন টার্মিনাল এবং আগমন হল সহ। এই প্রকল্পের সমাপ্তির সাথে, বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী ধারণক্ষমতা ১.৫ থেকে ৩ মিলিয়ন দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতি ২.০৯ জন ব্যক্তির জন্য একটি ব্যক্তিগত গাড়ি সহ, ব্রুনাই বিশ্বের সর্বোচ্চ গাড়ি মালিকানার হারগুলির মধ্যে একটি।এটি বিস্তৃত পরিবহন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, কম আমদানি কর এবং লিটার প্রতি B$০.৫৩ আনলেড পেট্রোলের মূল্যকে দায়ী করা হয়েছে। নতুন ব্রুনাইয়ের মুয়ারা এবং টেম্বুরং জেলার সাথে সংযোগকারী সড়কপথটি ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই সড়কপথটির চৌদ্দ কিলোমিটার (৯ মা) ব্রুনাই উপসাগর অতিক্রম করবে। সেতুটির ব্যয় $১.৬ বিলিয়ন। ব্যাংকিং ব্যাংক অফ চায়না এপ্রিল ২০১৬ সালে ব্রুনাইতে একটি শাখা খোলার অনুমতি পেয়েছিল। সিটি ব্যাংক, যা ১৯৭২ সালে প্রবেশ করেছিল, ২০১৪ সালে ব্রুনাইয়ে তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এইচএসবিসি, যেটি ১৯৪৭ সালে প্রবেশ করেছিল, ২০১৭ সালের নভেম্বরে ব্রুনাইতে তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। মে ব্যাঙ্ক অফ মালয়েশিয়া, আরএইচবি ব্যাঙ্ক অফ মালয়েশিয়া, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্ক অফ ইউনাইটেড কিংডম, ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাঙ্ক অফ সিঙ্গাপুর এবং ব্যাঙ্ক অফ চায়না বর্তমানে ব্রুনেইতে কাজ করছে। তথ্যসূত্র ব্রুনাই এশিয়ার দেশসমুহ ও আঞ্চলিক বিষয় কমনওয়েলথ রাজতন্ত্র ১৯৮৪-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্র এশিয়ার রাষ্ট্র ইসলামি রাষ্ট্র ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র এশিয়ায় প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ ও আশ্রিত রাজ্য দ্বীপ রাষ্ট্র ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র সালতানাত সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Brunei
Brunei
Brunei, officially Brunei Darussalam, is a country in Southeast Asia, situated on the northern coast of the island of Borneo. Apart from its coastline on the South China Sea, it is completely surrounded by the Malaysian state of Sarawak, with its territory bifurcated by the Sarawak district of Limbang. Brunei is the only sovereign state entirely on Borneo; the remainder of the island is divided between its multi-landmass neighbours of Malaysia and Indonesia. As of 2023, the country had a population of 455,858, of whom approximately 180,000 resided in the capital and largest city of Bandar Seri Begawan. Its official language is Malay and Islam is the state religion of the country, although other religions are nominally tolerated. The government of Brunei is a constitutional absolute monarchy ruled by the Sultan, and it implements a fusion of English common law and jurisprudence inspired by Islam, including sharia. At the Bruneian Empire's peak during the reign of Sultan Bolkiah (1485–1528), the state is claimed to have had control over the most of Borneo, including modern-day Sarawak and Sabah, as well as the Sulu archipelago and the islands off the northwestern tip of Borneo. There are also claims to its historical control over Seludong, the site of the modern Philippine capital of Manila, but Southeast Asian scholars believe the name of the location in question is actually in reference to Mount Selurong, in Indonesia. The maritime state of Brunei was visited by the surviving crew of the Magellan Expedition in 1521, and in 1578 it fought against Spain in the Castilian War. During the 19th century, the Bruneian Empire began to decline. The Sultanate ceded Sarawak (Kuching) to James Brooke and installed him as the White Rajah, and it ceded Sabah to the British North Borneo Chartered Company. In 1888, Brunei became a British protectorate and was assigned a British resident as colonial manager in 1906. After the Japanese occupation during World War II, a new constitution was written in 1959. In 1962, a small armed rebellion against the monarchy which was indirectly related to the Indonesia–Malaysia confrontation was ended with British assistance and led to the ban of the pro-independent Brunei People's Party. The revolt had also influenced the Sultan's decision not to join the Malaysian Federation while it was being formed. Britain's protectorate over Brunei would eventually end on 1 January 1984, becoming a fully sovereign state. Brunei has been led by Sultan Hassanal Bolkiah since 1967, and the country's unicameral legislature, the Legislative Council, is simply consultative and are all appointed by the Sultan. The country's wealth derives from its extensive petroleum and natural gas fields. Economic growth during the 1990s and 2000s has transformed Brunei into an industrialised country, with its GDP increasing 56% between 1999 and 2008. Political stability is maintained by the House of Bolkiah by providing a welfare state for its citizens, with free or significant subsidies in regards to housing, healthcare and education. It ranks "very high" on the Human Development Index (HDI)—the second-highest among Southeast Asian states after Singapore, which it maintains close relations with including a Currency Interchangeability Agreement. According to the International Monetary Fund (IMF), Brunei is ranked ninth in the world by gross domestic product per capita at purchasing power parity. Brunei is a member of the United Nations, the World Trade Organization, the East Asia Summit, the Organisation of Islamic Cooperation the Non-Aligned Movement, the Commonwealth of Nations, and ASEAN.
1187
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
বুলগেরিয়া
বুলগেরিয়া (বুলগেরীয় ভাষায়: България ব্যেল্‌গারিয়া আ-ধ্ব-ব: [bɤlˈgarijə]), সরকারী নাম বুলগেরিয়া প্রজাতন্ত্র (বুলগেরীয় ভাষায়: Република България রেপুব্লিকা ব্যেল্‌গারিয়া আ-ধ্ব-ব: [rɛˈpubliˌkə bɤlˈgarijə]), দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ মহাদেশের একটি রাষ্ট্র। দেশটি বলকান উপদ্বীপের পূর্ব পার্শ্বে ইউরোপ ও এশিয়ার ঐতিহাসিক সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। এর পূর্বে কৃষ্ণ সাগর, দক্ষিণে গ্রিস ও তুরস্ক, পশ্চিমে সার্বিয়া ও মন্টিনেগ্রো এবং ম্যাসিডোনিয়া, এবং রোমানিয়া অবস্থিত। এখানে প্রায় ৭৭ লক্ষ লোকের বাস। সোফিয়া বুলগেরিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। বুলগেরিয়া পর্বত, নদনদী ও সমভূমির দেশ। উত্তর বুলগেরিয়ার পূর্ব-পশ্চিম বরাবর বলকান পর্বতমালা প্রসারিত। বলকান পর্বতমালার নামেই অঞ্চলটির নাম হয়েছে বলকান। তবে বুলগেরীয়রা এগুলিকে Stara Planina বা প্রাচীন পর্বতমালা নামে ডাকে। ইউরোপের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী দানিউব বুলগেরিয়ার উত্তর সীমান্ত গঠন করেছে। পশ্চিমে সোফিয়া এবং পূর্বে কৃষ্ণ সাগর পর্যন্ত নিম্নভূমিটি গোলাপের উপত্যকা নামে পরিচিত। তিন শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এখানকার কৃষকেরা কাজালনুক গোলাপের চাষ করে আসছেন। এই গোলাপের তৈল নির্যাস অত্যন্ত দুর্লভ এবং বুলগেরিয়ার অন্যতম রপ্তানি পণ্য। বুলগেরিয়ার পূর্বে কৃষ্ণ সাগরের উপকূল উত্তরে খাড়া পার্বত্য ঢাল থেকে দক্ষিণে বালুকাময় সৈকতে নেমে এসেছে। এখানকার পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে সারা বিশ্ব থেকে লোক বেড়াতে আসে। উত্তরের পর্বতমালাতে শীতকালে ভারী বরফ পড়ে; ফলে শীতকালীন ক্রীড়ার জমজমাট আসর বসে এখানে। ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যস্থলে অবস্থিত হওয়ায় বুলগেরিয়াকে নিয়ে বহু শক্তির প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা হয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে এটি একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। মধ্যযুগে এসে দীর্ঘ সময় ধরে একটি প্রধান শক্তি ছিল। প্রথম বুলগেরীয় সাম্রাজ্যের সময় (৬৩২/৬৮১—১০১৮) এখানকার শাসকেরা বলকান উপদ্বীপের অধিকাংশ এলাকা শাসন করেছেন। এখানকার খ্রিস্টান অর্থডক্স ধর্ম, সংস্কৃতি দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপীয় বহু স্লাভীয় জাতিকে প্রভাবিত করেছে। পূর্ব ইউরোপের ভাষাগুলির লিখন পদ্ধতিতে প্রচলিত সিরিলীয় লিপি বুলগেরিয়াতেই উদ্ভাবিত হয়। দ্বিতীয় বুলগেরীয় সাম্রাজ্যের অবক্ষয়ের শেষে ১৩৯৩ সালে দেশটি উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। প্রায় ৫০০ বছর উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে শাসিত হবার পর ১৮৭৮ সালে সান স্তেফানোর চুক্তির মাধ্যমে বুলগেরিয়া একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯১২-১৯১৩ সালের প্রথম বলকান যুদ্ধে জয়ী হলেও ২য় বলকান যুদ্ধে দেশটি হেরে যায় এবং গ্রিস, সার্বিয়া ও রোমানিয়ার কাছে অনেক এলাকা হারায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনারা দেশটির দখলে ছিল। এসময় সোভিয়েত সরকারের সমর্থনে একটি সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সাম্যবাদী শাসনের সময় বুলগেরীয় নেতারা প্রধানত কৃষিভিত্তিক দেশটির অর্থনীতির আধুনিকায়নের লক্ষ্যে একটি শিল্পায়ন প্রকল্প শুরু করেন। ১৯৮৯ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কারের আগ পর্যন্ত বুলগেরিয়া একটি সাম্যবাদী রাষ্ট্র ছিল। ১৯৯০ সালে বুলগেরিয়াতে যুদ্ধের পর প্রথমবারের মত বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এর নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বুলগেরিয়া থেকে বদলে বুলগেরিয়া প্রজাতন্ত্র রাখা হয়। গণতন্ত্র ও মুক্ত বাণিজ্যের পথে রূপান্তর বুলগেরিয়ার জন্য সুখপ্রদ হয়নি। সাম্যবাদের পতন এবং বুলগেরীয় পণ্যের সোভিয়েত বাজারের বিলোপ ঘটায় দেশটির অর্থনীতির প্রবল সংকোচন ঘটে। মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের ঊর্ধগতি, অবারিত দুর্নীতি, এবং সমাজকল্যাণ ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটায় জীবনযাত্রার মানের চরম পতন ঘটে। অনেক বুলগেরীয় দেশ ছেড়ে চলে যান। বুলগেরীয় সরকার ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে গৃহীত সংস্কারগুলির ব্যাপারে অটল থাকলে ধীরে ধীরে বৃহত্তর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়। দেশটি ২০০৪ সালের মার্চে নেটোর এবং ২০০৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়। রাজনীতি প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ ভূগোল অর্থনীতি জনসংখ্যা বুলগেরিয়ার ৮০%-এর বেশি লোক বুলগেরীয় অর্থোডক্স গির্জার খ্রিস্টধর্মের অনুসারী বা এর সাথে সম্পর্কিত। প্রায় ১২% লোক ইসলাম ধর্মের অনুসারী। মূলত উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসনামলে আগত তুর্কি বসতিস্থাপকদের মধ্যে ইসলাম প্রচলিত। বুলগেরীয় ভাষা বুলগেরিয়ার সরকারি ভাষা এবং এই ভাষাতে দেশটির প্রায় ৮৫% লোক কথা বলে। সংখ্যালঘু ভাষাগুলির মধ্যে তুর্কি, আলবেনীয়, আর্মেনীয়, গাগাউজ, গ্রিক, ম্যাসেডোনীয় এবং রোমানীয় ভাষা উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বুলগেরিয়াতে জিপসি বা রোমানি ভাষা ব্যবহারকারী একটি উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী বাস করে। আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে রুশ, জার্মান এবং ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। সংস্কৃতি আরও দেখুন ইক্সাইন-কোলকিক পলিটিক্স বন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ইউরোপের রাষ্ট্র প্রজাতন্ত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র থ্রি সিস ইনিশিয়েটিভের সদস্য রাষ্ট্র ভূমধ্যসাগরীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বুলগেরিয়া বলকান রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ১৯৯০-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Bulgaria
Bulgaria
Bulgaria, officially the Republic of Bulgaria, is a country in Southeast Europe. Located west of the Black Sea and south of the Danube river, Bulgaria is bordered by Greece and Turkey to the south, Serbia and North Macedonia to the west, and Romania to the north. It covers a territory of 110,994 square kilometres (42,855 sq mi) and is the 16th largest country in Europe. Sofia is the nation's capital and largest city; other major cities include Burgas, Plovdiv, and Varna. One of the earliest societies in the lands of modern-day Bulgaria was the Karanovo culture (6,500 BC). In the 6th to 3rd century BC, the region was a battleground for ancient Thracians, Persians, Celts and Macedonians; stability came when the Roman Empire conquered the region in AD 45. After the Roman state splintered, tribal invasions in the region resumed. Around the 6th century, these territories were settled by the early Slavs. The Bulgars, led by Asparuh, attacked from the lands of Old Great Bulgaria and permanently invaded the Balkans in the late 7th century. They established the First Bulgarian Empire, victoriously recognised by treaty in 681 AD by the Byzantine Empire. It dominated most of the Balkans and significantly influenced Slavic cultures by developing the Cyrillic script. The First Bulgarian Empire lasted until the early 11th century, when Byzantine emperor Basil II conquered and dismantled it. A successful Bulgarian revolt in 1185 established a Second Bulgarian Empire, which reached its apex under Ivan Asen II (1218–1241). After numerous exhausting wars and feudal strife, the empire disintegrated and in 1396 fell under Ottoman rule for nearly five centuries. The Russo-Turkish War of 1877–78 resulted in the formation of the third and current Bulgarian state, which declared independence from the Ottoman Empire in 1908. Many ethnic Bulgarians were left outside the new nation's borders, which stoked irredentist sentiments that led to several conflicts with its neighbours and alliances with Germany in both world wars. In 1946, Bulgaria came under the Soviet-led Eastern Bloc and became a socialist state. The ruling Communist Party gave up its monopoly on power after the revolutions of 1989 and allowed multiparty elections. Bulgaria then transitioned into a democracy and a market-based economy. Since adopting a democratic constitution in 1991, Bulgaria has been a unitary parliamentary republic composed of 28 provinces, with a high degree of political, administrative, and economic centralisation. Bulgaria has a high-income economy. Its market economy is part of the European Single Market and is largely based on services, followed by industry—especially machine building and mining—and agriculture. The country faces a demographic crisis; its population peaked at 9 million in 1989, and has since decreased to under 6.4 million as of 2024. Bulgaria is a member of the European Union, the Schengen Area, NATO, and the Council of Europe. It is also a founding member of the OSCE and has taken a seat on the United Nations Security Council three times.
1188
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%20%E0%A6%AB%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8B
বুর্কিনা ফাসো
বুর্কিনা ফাসো (; ) আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমভাগে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। এটি পূর্বে আপার ভোল্টা (ইংরেজি: Upper Volta) নামে পরিচিত ছিল। ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা অর্জনের আগ পর্যন্ত এটি একটি ফরাসি উপনিবেশ ছিল। ১৯৮৫ সালে দেশটির নাম বদলে রাখা হয় বুর্কিনা ফাসো, যার অর্থ "নৈতিক জাতির দেশ"। এর উত্তরে ও পশ্চিমে মালি, পূর্বে নাইজার, এবং দক্ষিণে বেনিন, টোগো, ঘানা ও কোত দিভোয়ার। ওয়াগাদুগু (ফরাসি Ouagadougou উয়াগাদুগু, মোরে ভাষায় উয়াগ্যড্যগ্য) দেশের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। বুর্কিনা ফাসো আফ্রিকার সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির একটি। প্রতি বছর এই দেশের হাজার হাজার লোক পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে, যেমন ঘানা বা আইভরি কোস্টে কাজ খুঁজতে বিশেষ করে মৌসুমী কৃষিকাজের জন্য পাড়ি জমায়। বুর্কিনা ফাসো পশ্চিম আফ্রিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত খরাপ্রবণ তৃণভূমি নিয়ে গঠিত। এই স্থলবেষ্টিত দেশটির উত্তরাংশে সাহারা মরুভূমি এবং দক্ষিণে ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য। বুর্কিনাবে জাতির লোকেরা দেশের প্রধান জনগোষ্ঠী এবং এরা মূলত দেশের ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ ভাগে বাস করে। মাটির মান খারাপ এবং প্রচুর খরা হলেও এরা মূলত কৃষিকাজেই নিজেদের নিয়োজিত রাখে। বুরকিনা ফাসোর মোসসি জাতির লোকেরা বহু শতাব্দী আগে এখানে যে রাজ্য স্থাপন করেছিল, তা ছিল আফ্রিকার সবচেয়ে প্রাচীন রাজ্যগুলির একটি। ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটিতে বারংবার সামরিক অভ্যুথান বা কু (coup) ঘটে এবং সামরিক শাসন চলে। ১৯৯১ সালে নতুন সংবিধান পাস হবার পর দেশটিতে বর্তমানে গণতন্ত্র বিদ্যমান। ইতিহাস প্রাচীন ইতিহাস ইউরোপীয়দের অভিযান ও ঔপনিবেশীকরণ স্বাধীনতা ও তার পরবর্তী যুগ রাজনীতি প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ বুর্কিনা ফাসো প্রশাসনিকভাবে বেশ কিছু রেজিওঁ (ফরাসি Région) বা অঞ্চলে বিভক্ত। প্রতিটি রেজিওঁ আবার কিছু প্রোভঁস (Provence) বা প্রদেশে বিভক্ত। প্রদেশগুলি একইভাবে কিছু দেপার্তমঁ (Département) বা জেলায় বিভক্ত। প্রতিটি রেজিওঁ একজন গভর্নর এবং প্রতিটি প্রোভঁস একজন উচ্চ-কমিশনার দ্বারা শাসিত হয়। ভূগোল সীমানা বুর্কিনা ফাসো উত্তরে ও পশ্চিমে মালি, উত্তর-পূর্বে নাইজার, দক্ষিণ-পূর্বে বেনিন এবং দক্ষিণে কোত দিভোয়ার, ঘানা এবং টোগো দ্বারা সীমাবদ্ধ। এটি একটি ভূমিবেষ্টিত রাষ্ট্র। ভূমিরূপ ও মৃত্তিকা দেশটি একটি বিস্তৃত মালভূমির উপর অবস্থিত, যা দক্ষিণ দিকে হালকা ঢালু হয়ে গিয়েছে। মালভূমিটির গভীরে রয়েছে কেলাসিত শিলার স্তর, যাকে উপরে আবৃত করে রেখেছে লাল ও লৌহসমৃদ্ধ ল্যাটেরাইটিক (lateritic) শিলাস্তর। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে কিছু বেলেপাথরের শিলা দিয়ে গঠিত মালভূমি রয়েছে। বানফোরা প্রবণভূমি (Banfora Escarpment) যাদের সীমানা নির্ধারণ করেছে। এটি দক্ষিণমুখী এবং প্রায় ৫০০ ফুট বা ১৫০ মিটার উঁচু। বুর্কিনা ফাসোর বেশির ভাগ মাটি অনুর্বর। নদনদী ও জলাশয় মালভূমিটিকে গভীরে চিরে দেশটির তিনটি প্রধান নদী প্রবাহিত হচ্ছে - মুওঁ বা কালো ভল্টা, নাজিনোঁ বা লাল ভোল্টা এবং নাকাম্বে বা শ্বেত ভোল্টা। এই তিনটি নদীই দক্ষিণে ঘানাতে গিয়ে মিলিত হয়ে ভোল্টা নদী গঠন করেছে। ভোল্টা নদীর আরেকটি উপনদী ওতি নদী বুর্কিনা ফাসোর দক্ষিণ-পূর্বে উৎপত্তি লাভ করেছে। ঋতুভেদে নদীগুলির জলপ্রবাহে ব্যাপক তারতম্য ঘটে। শুস্ক মৌসুমে অনেক নদীই পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। জলবায়ু বুর্কিনা ফাসোর জলবায়ু মূলত রৌদ্রোজ্জ্বল, উষ্ণ এবং শুষ্ক। দেশটিকে দুইটি প্রধান জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করা যায়। উত্তরের সহিলীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণের সুদানীয় অঞ্চল। সহিলীয় অঞ্চলটি মূলত একটি অর্ধ-অনুর্বর স্টেপ জাতীয় তৃণভূমি। এখানে তিন থেকে পাঁচ মাস অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হয়। সুদানীয় অঞ্চলের জলবায়ু দক্ষিণের দিকে ক্রমান্বয়ে ক্রান্তীয় আর্দ্র-শুষ্ক জাতীয় হয়ে থাকে। এখানে তাপমাত্রার বৈচিত্র্য এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণের তারতম্য বেশি। উত্তরের চেয়ে এখানে সব মিলিয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। বুর্কিনা ফাসোতে চারটি ঋতু দেখা যায়। মধ্য-নভেম্বর থেকে মধ্য-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুষ্ক শীতকাল, যখন রাত্রীকালীন তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে। মধ্য-ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল, যখন ছায়াতেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি চলে যায়। এসময় সাহারা মরুভূমি থেকে হারমাতান নামের উত্তপ্ত, শুষ্ক, ধূলিময় বায়ুপ্রবাহ ধেয়ে আসে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস হচ্ছে বর্ষাকাল। এর পরে আসে একটি অন্তর্বর্তীকালীন ঋতু, যা সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর পর্যন্ত বিরাজ করে। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দক্ষিণে ১০০০ মিমি বা ৪০ ইঞ্চি থেকে উত্তরে ২৫০ মিমি বা ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। উদ্ভিদ ও প্রাণী বুর্কিনা ফাসোর উত্তর অংশে সাভানা তৃণভূমি অবস্থিত, যেখানে কাঁটাময় ঝোপঝাড় এবং বামনবৃক্ষ দেখতে পাওয়া যায়; এগুলি মূলত বর্ষা মৌসুমে জন্মায় ও বৃদ্ধি পায়। দক্ষিণের দিকে এগোলে ঝোপঝাড়ের বদলে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন বনভূমির আবির্ভাব ঘটে এবং এই বনভূমিগুলি চিরপ্রবহমান নদীগুলির তীরে আরও ঘন আকার ধারণ করে। ক্যারাইট বা শেয়া বৃক্ষ এবং বাওবাব বা হিবিস্কাস বৃক্ষ এই অঞ্চলের স্বজাত উদ্ভিদ। প্রাণীর মধ্যে মহিষ, কৃষ্ণশার হরিণ, সিংহ, জলহস্তী, হাতি, কুমির ও বানরের দেখা মেলে। পাখী ও কীটপতঙ্গগুলি সমৃদ্ধ ও বিচিত্র। নদীগুলিতে বহু প্রজাতির মাছ রয়েছে। দেশেটিতে অনেক জাতীয় উদ্যান আছে যার মধ্যে দক্ষিণ-মধ্য অংশে অবস্থিত "পো", দক্ষিণ-পূর্বে "আর্লি" এবং পূর্বে বেনিন-নাইজার সীমান্তে অবস্থিত "উয়" উদ্যান উল্লেখযোগ্য। অর্থনীতি বুর্কিনা ফাসোর নয়-দশমাংশ মানুষ খাদ্যসংস্থানমূলক কৃষিকাজ এবং গবাদিপশুপালনের কাজে জড়িত। অর্থনৈতিক মন্দা, কিছুদিন পর পর অতিখরা, ইত্যাদি কারণে এখানকার বহু মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে কিংবা অন্যান্য দেশে, বিশেষত কোত দিভোয়ার ও ঘানাতে পাড়ি জমিয়েছে। দেশের কর্মশক্তি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা প্রায় ১৫ লক্ষ লোক কোনও না কোন সময় বিদেশে গিয়ে কাজ করেছে। ২১শ শতকের শুরুর দিকে পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে, বিশেষ করে কোত দিভোয়ারে গণ্ডগোল শুরু হলে, বুর্কিনাবেদের চাকরি পেতে সমস্যা হয়। বাজার অর্থনীতির আকার ছোট বলে এবং সমুদ্রের সাথে সরাসরি সংযুক্ত পথ না থাকায় এখানকার শিল্পক্ষেত্রের উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে সরকার কিছু সরকার-নিয়ন্ত্রিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ করেন যার লক্ষ্য ছিল বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। কৃষি কৃষিকাজ মূলত খাদ্যশস্য উৎপাদনে নিয়োজিত। উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য অর্থকরী শস্য হিসেবে বিক্রি করা হয়। উওৃত্ত তুলা, শেয়া বাদাম, তিসি এবং আখ রপ্তানি করা হয়। অন্যদিকে সোরগোম, জোয়ার, ভুট্টা, চিনাবাদাম এবং ধান স্থানীয় ভোগের জন্য উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও ফোনিও নামের এক ধরনের ঘাস, যার বিজদানাগুলি খাদ্যশস্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কাসাভা, মিষ্টি আলু এবং শীম জাতীয় বীচিও চাষ করা হয়। পশুপালন জীবিকার অন্যতম উৎস। গবাদি পশু, ভেড়া, শূকর, গাধা, ঘোড়া, উট, মুরগী, হাঁস ও গিনি মুরগী পালন করা হয়। প্রাকৃতিক সম্পদ বুর্কিনা ফাসোতে বেশ কিছু খনিজের সন্ধান মেলে, যাদের মধ্যে ম্যাঙ্গানিজ এবং স্বর্ণ অন্যতম। এগুলি দেশটির সম্পদের অন্যতম সম্ভাব্য উৎস। কুদুগু শহরের দক্ষিণ-পুর্বে পুরা শহরে স্বর্ণখনি আছে। এছাড়া দেশের উত্তরে সেব্বা এবং দোরি-ইয়লোগোতে তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র আয়তনের স্বর্ণমজুদ আছে। এছাড়াও দেশটিতে নিকেল, বক্সাইট, দস্তা, সীসা এবং রূপার মজুদের সন্ধান পাওয়া গেছে। উত্তর-পূর্বে তামবাও শহরের কাছে অবস্থিত ম্যাঙ্গানিজের যে বিশাল মজুদ আছে, সেটি সম্ভবত দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এটি সারা বিশ্বেই ম্যাঙ্গানিজের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাণ্ডারগুলির একটি। তবে বিদ্যমান পরিবহন ব্যবস্থার অকার্যকারিতার কারণে এটি উত্তোলন-নিষ্কাশন এখনও সীমিত। উৎপাদন শিল্পখাত উৎপাদন শিল্পকারখানাগুলি সংখ্যায় সীমিত। এগুলি মূলত নগরী ও অপেক্ষাকৃত বড় শহরগুলিতে অবস্থিত। প্রধানত খাদ্যদ্রব্য, পানীয়, বস্ত্র, জুতা এবং বাইসাইকেলের যন্ত্রাংশ নির্মাণের কারখানা আছে। অর্থসংস্থান বুর্কিনা ফাসোর মুদ্রার নাম সিএফএ ফ্রঁ (Communauté Financière Africaine franc) অর্থাৎ আফ্রিকান আর্থিক সম্প্রদায়ের ফ্রঁ। মুদ্রাটি সরকারীভাবে ইউরোর সাথে সংযুক্ত (peg) করা হয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকান রাষ্ট্রসমূহের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই মুদ্রাটি ছাপায়। ব্যাংকটি পশ্চিম আফ্রিকান অর্থনৈতিক ও মুদ্রা ইউনিয়নের একটি সংস্থা। এই ইউনিয়নে বুর্কিনা ফাসোসহ মোট আটটি দেশ আছে, যারা হল বেনিন, কোত দিভোয়ার, গিনি-বিসাউ, মালি, নাইজার, সেনেগাল এবং টোগো। এই সবগুলি দেশই অতীতে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। এই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখাগুলি বুর্কিনা ফাসোর উয়াগাদুগু এবং বোবো দিউলাসো শহর দুইটিতে অবস্থিত। এছাড়াও আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে সরকার-নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক আছে, যাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বুর্কিনা আন্তর্জাতিক ব্যাংক (Banque Internationale du Burkina); এটি উয়াগাদুগুতে অবস্থিত। এছাড়া বুর্কিনা ফাসো পশ্চিম আফ্রিকান রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের একটি সদস্যরাষ্ট্র। পশ্চিম আফ্রিকার অধিকাংশ রাষ্ট্র এই সম্প্রদায়ের সদস্য; অঞ্চলটির অর্থনৈতিক ব্যাপারগুলির সমন্বয় সাধন এবং সুষমীকরণ এই সম্প্রদায়ের লক্ষ্য। বুর্কিনা ফাসো বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলির একটি। তাই এটি ব্যাপকভাবে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া বিদেশে অবস্থিত অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থও দেশটির হিসাবের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। বাণিজ্য ২১শ শতকে এসে বুর্কিনা ফাসো মূলত তুলা, স্বর্ণ, গবাদি পশু, চিনি এবং ফল রপ্তানি করছে। বেশিরভাগ দ্রব্যই পার্শ্ববর্তী আফ্রিকান দেশগুলিতে রপ্তানি করা হয়। তবে কিছু কিছু পণ্য, যেমন তুলা এবং খনিজ পদার্থসমূহ চীন, সিংগাপুর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে রপ্তানি হয়। আমদানিকৃত প্রধান পণ্যগুলি হল পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি এবং খাদ্যদ্রব্য। এগুলি মূলত পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ এবং ফ্রান্স থেকে আমদানি করা হয়। আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম বলে দেশটির পরিশোধন-বিবরণীতে (balance of payments) ঘাটতি আছে। রপ্তানিকৃত দ্রব্যের অর্থমূল্য ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় আমদানি করা দ্রব্যের অর্থমূল্যের জন্য যথেষ্ট নয় বলে এমনটি ঘটেছে। পরিবহন উয়াগাদুগু শহর রেলপথের মাধ্যমে কোত দিভোয়ারের আবিজান বন্দরের সাথে যুক্ত। রেলপথটি প্রায় ১১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ, যার প্রায় ৫-- কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বুর্কিনা ফাসোর ভেতর দিয়ে চলে গেছে। ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে কোত দিভোয়ারের গৃহযুদ্ধের কারণে রেলপথটি একাধিক বছর বন্ধ ছিল। রেলপথটি বুর্কিনা ফাসোর ভেতরে দিয়ে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর প্রসারিত এবং কুদুগু, বোবো দিউলাসো এবং বানফোরা শহরগুলির সাথে এটি সংযুক্ত। এছাড়াও রাজধানী শহর উয়াগাদুগু সড়কপথের মাধ্যমে দেশের প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলির সাথে এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলির রাজধানীগুলির সাথে সংযুক্ত। বুর্কিনা ফাসোর সড়ক ব্যবস্থাটি অনুন্নত; এর খুব ছোট একটি অংশ সারা বছর ধরে ব্যবহারোপযোগী থাকে। অবশিষ্টাংশ মূলত কাঁচা গ্রামীণ রাস্তা। উয়াগাদুগু ও বোবো দিউলাসো শহরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে। এছাড়ে দেশের বিভিন্ন অংশে বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নক্ষেত্র আছে। জনসংখ্যা জাতি ও ভাষা বুর্কিনা ফাসোতে দশটিরও বেশি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী আছে। দেশটির প্রধান ভাষাভিত্তিক গোষ্ঠীটি হল মোসি, যারা জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। তারা মোরে নামের একটি ভাষাতে কথা বলে। মোসি জাতির লোকেরা বহু শতাব্দী ধরে এই অঞ্চলে বাস করে। গুর্মা ও ইয়ার্সে নামের দুইটি জাতির মোসি জাতির সাথে মিলিত হয়ে গিয়েছে। ইয়ার্সে জাতির লোকেরা মূল মান্দে জাতি থেকে আসলেও এখন মোসি ভাষাতে কথা বলে। মোসি বা মোরে ভাষাটি নাইজার-কঙ্গো ভাষা পরিবারের গুর শাখার একটি ভাষা। এছাড়াও গুরুনসি, সেনুফো, বোয়া এবং লোবি নামের জাতিগুলি বিভিন্ন গুর ভাষাতে কথা বলে। নাইজার-কঙ্গো ভাষাপরিবারের আরেকটি শাখা মান্দে ভাষাগুলিতে একাধিক জাতিগোষ্ঠী কথা বলে; এরা হল সামো, মারকা, বুসানসি এবং দিউলা। এছাড়াও দেশটিকে আফ্রো-এশীয় ভাষা হাউসা ও তুয়ারেগভাষী জাতি, এবং ফুলা ভাষাতে (নাইজার-কঙ্গো পরিবারের আটলান্টিক শাখার ভাষা) কথা বলা ফুলানি জাতির লোকেরা বাস করে। বুর্কিনা ফাসোর নাগরিকেরা জাতি নির্বিশেষে "বুর্কিনাবে" নামে পরিচিত। ফরাসি ভাষা সরকারি ভাষা হলেও মুখের ভাষা হিসেবে ব্যাপক প্রচলিত নয়। বেশির ভাগ লোক মোরে ভাষাতে কথা বলেন। ব্যবসা বাণিজ্যে দিউলা ভাষাটি অনেক ব্যবহৃত হয়। ধর্ম দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মুসলমান। প্রায় এক-পঞ্চমাংশ রোমান ক্যাথলিক খিস্টান এবং প্রায় এক-ষষ্ঠাংশ প্রথাগত ধর্মগুলি পালন করে। বাকীরা মূলত প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টান বা অধার্মিক। উয়াগাদুগু শহরে রোমান ক্যাথলিক আর্চবিশপের গির্জা অবস্থিত। এছাড়া সারা দেশজুড়ে অনেক বিশপশাসিত ধর্মীয় অঞ্চল রয়েছে। জনবসতির বিন্যাস বুর্কিনা ফাসোর জনসংখ্যা দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে অসমভাবে বণ্টিত। পূর্বের ও কেন্দ্রের অঞ্চলগুলি ঘনবসতিপূর্ণ এবং এখানে দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বাস। দেশের বাকী অঞ্চলগুলিতে জনসংখ্যা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে। জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ গ্রামে বাস করে। গ্রামগুলি ভোল্টা নদীগুলির উপত্যকা থেকে দূরে উঁচু ভূমিতে অবস্থিত। ভোল্টা নদীগুলির দুই তীরের প্রায় বেশ কিছু মাইল ভেতর পর্যন্ত এলাকাতে কোন জনবসতি নেই, কেননা এই এলাকাতে ঘুমন্ত রোগের জীবাণু বহনকারী ৎসেৎসে মাছি এবং নদী অন্ধত্ব রোগের জীবাণু বহনকারী সিমুলিয়াম মাছির ব্যাপক প্রাদুর্ভাব রয়েছে। উয়াগাদুগু দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী এবং সরকারের মূল কার্যালয় এখানেই অবস্থিত। এটি একটি আধুনিক শহর। এখানে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর অবস্থিত। এখানেই মোসি জাতির লোকদের মহান গুরু "মোরহো নাবা" বাস করেন। আফ্রিকাতে আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রকল্পগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবেও শহরটি পরিচিত। উয়াগাদুগু শহর ছাড়া অন্যান্য প্রধান শহরগুলি হল বোবো দিউলাসো, কুদুগু, বানফোরা, উয়াইগুইয়া, পুইতেংগা এবং কায়া। বোবো দিউলাসো শহরটি দেশের পশ্চিমে অবস্থিত। এটি অতীতে দেশের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক কেন্দ্র ছিল; কোত দিভোয়ারের আবিজান শহর থেকে আসা রেলপথ এই শহরেই শেষ হয়েছিল। তবে ১৯৫৫ সালের পরে রেলপথটি সম্প্রসারিত করে উয়াগাদুগু পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। তখন থেকে বোবো দিউলাসোর গুরুত্ব কিছু গুরুত্ব কমে গেলেও এখনও এটি দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র। জনসাঙ্খ্যিক ভাবধারা ২১শ শতকের শুরুর দিকে বাৎসরিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার গড়ে প্রায় ৩ শতাংশ ছিল। দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স ১৫ বছরের নিচে। গড় প্রত্যাশিত আয়ু ৫০ বছরের সামান্য বেশি, যা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে কম হলেও পার্শ্ববর্তী দেশগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সংস্কৃতি আরও দেখুন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Premier Ministère সরকারি ওয়েবসাইট। রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ Burkina Faso from UCB Libraries GovPubs News headline links from AllAfrica.com বুর্কিনা ফাসোর ছবি আফ্রিকার রাষ্ট্র ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল প্রাক্তন ফরাসি উপনিবেশ স্থলবেষ্টিত দেশ স্বল্পোন্নত দেশ ১৯৬০-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল পশ্চিম আফ্রিকার রাষ্ট্র প্রজাতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Burkina_Faso
Burkina Faso
Burkina Faso is a landlocked country in West Africa. It covers an area of 274,223 km2 (105,878 sq mi), bordered by Mali to the northwest, Niger to the northeast, Benin to the southeast, Togo and Ghana to the south, and Ivory Coast to the southwest. As of 2021, the country had an estimated population of 23,674,480. Previously called the Republic of Upper Volta (1958–1984), it was renamed Burkina Faso by President Thomas Sankara. Its citizens are known as Burkinabè, and its capital and largest city is Ouagadougou. The largest ethnic group in Burkina Faso is the Mossi people, who settled the area in the 11th and 13th centuries. They established powerful kingdoms such as the Ouagadougou, Tenkodogo, and Yatenga. In 1896, it was colonized by the French as part of French West Africa; in 1958, Upper Volta became a self-governing colony within the French Community. In 1960, it gained full independence with Maurice Yaméogo as president. Since it gained its independence, the country has been subject to instability, droughts, famines and corruption. There have also been various coups, in 1966, 1980, 1982, 1983, 1987, and twice in 2022 (January and September). There were also unsuccessful coup attempts in 1989, 2015, and 2023. Thomas Sankara came to power following a successful coup in 1983. As president, Sankara embarked on a series of ambitious socioeconomic reforms which included a nationwide literacy campaign, land redistribution to peasants, vaccinations for over 2 million children, railway and road construction, equalized access to education, and the outlawing of female genital mutilation, forced marriages, and polygamy. He served as the country's president until 1987 when he was deposed and assassinated in a coup led by Blaise Compaoré, who became president and ruled the country until his removal on 31 October 2014. Burkina Faso has been severely affected by the rise of Insurgencies in the Sahel since the mid-2010s. Several militias, partly allied with the Islamic State (IS) or al-Qaeda, operate in Burkina Faso and across the border in Mali and Niger. More than one million of the country's 21 million inhabitants are internally displaced persons. Burkina Faso's military seized power in a coup d'état on 23–24 January 2022, overthrowing President Roch Marc Kaboré. On 31 January, the military junta restored the constitution and appointed Paul-Henri Sandaogo Damiba as interim president, but he was himself overthrown in a second coup on 30 September and replaced by military captain Ibrahim Traoré. Burkina Faso remains one of the least developed countries in the world, with a GDP of $16.226 billion in 2022. Approximately 63.8% of its population practices Islam, while 26.3% practice Christianity. The country's official language of government and business was formerly French; its status was relegated by a constitutional amendment ratified in January 2024, turning French into a "working language" of the country, alongside English. There are 60 indigenous languages officially recognized by the Burkinabè government, with the most common language, Mooré, spoken by over half the population. Its territory is geographically biodiverse, with plentiful reserves of gold, manganese, copper and limestone. Due to its diverse multicultural make-up, Burkinabè art has a rich and long history, and is globally renowned for its orthodox style. The country is governed as a semi-presidential republic with executive, legislative and judicial powers. Burkina Faso is a member of the United Nations, La Francophonie and the Organisation of Islamic Cooperation. Burkina Faso announced on 2024-01-18 its exit from ECOWAS and the African Union.
1189
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A1%E0%A6%BF
বুরুন্ডি
বুরুন্ডি ( or ), আনুষ্ঠানিকভাবে বুরুন্ডি প্রজাতন্ত্র ( ; ; ) হচ্ছে পূর্ব আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এর উত্তরে রুয়ান্ডা, পূর্বে ও দক্ষিণে তানজানিয়া, পশ্চিমে তাংগানিকা হ্রদ ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (প্রাক্তন জায়ার)। এলাকাটি অতীতে গোত্র রাজারা শাসন করত। ১৯শ শতকের শেষে এসে জার্মানি অঞ্চলটি দখল করে উপনিবেশ স্থাপন করে। ১৯৬২ সালে স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত এটি প্রথমে জার্মান ও পরবর্তীতে বেলজীয় উপনিবেশ ছিল। দেশটির মধ্যভাগে অবস্থিত গিতেগা (Gitega) এর রাজনৈতিক রাজধানী এবং বুজুম্বুরা অর্থনৈতিক রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। বুরুন্ডি বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র একটি দেশ। নামকরণ আধুনিক বুরুন্ডির নামকরণ করা হয়েছে বুরুন্ডির রাজার নামে, যিনি ষোড়শ শতকে এই অঞ্চল শাসন শুরু করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলের হা জনগোষ্ঠী থেকে এর নামটি প্রাপ্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যাদের উৎপত্তিস্থল বুহা নামে পরিচিত ছিল। ইতিহাস বুরুন্ডি ১৬ শতকে আফ্রিকান গ্রেট লেক অঞ্চলে একটি ছোট রাজ্য হিসাবে উদ্ভূত হয়েছিল। ইউরোপীয় যোগাযোগের পরে এটি রুয়ান্ডা রাজ্যের সাথে একত্রিত ছিল এবং রুয়ান্ডা-উরুন্ডির উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল। এরপর প্রথমে জার্মানি এবং পরে বেলজিয়াম দ্বারা উপনিবেশ করা হয়েছিল। উপনিবেশটি ১৯৬২ সালে স্বাধীনতা লাভ করে এবং আবার রুয়ান্ডা এবং বুরুন্ডিতে বিভক্ত হয়। এটি আফ্রিকার কয়েকটি দেশের মধ্যে (যেমন রুয়ান্ডা, বতসোয়ানা, লেসোথো এবং এসওয়াতিনি) একটি প্রাক-ঔপনিবেশিক যুগের আফ্রিকান রাষ্ট্রের সরাসরি আঞ্চলিক ধারাবাহিকতা। বুরুন্ডিয়ান রাজ্যের প্রথম প্রমাণ মেলে ষোড়শ শতকের শেষের দিকে যেখানে এটি পূর্ব পাদদেশে আবির্ভূত হয়েছিল। পরবর্তী শতাব্দীতে এটি ছোট প্রতিবেশীকে সংযুক্ত করে আরও বিস্তৃত হয়। গ্রেট লেক অঞ্চলের বুরুন্ডি কিংডম বা উরুন্ডি একটি প্রথাগত রাজা কর্তৃক শাসিত একটি রাষ্ট্র ছিল এবং তার অধীনে বেশ কয়েকজন রাজকুমার ছিল; এবং উত্তরাধিকার সংগ্রাম ছিল সাধারণ। মওয়ামি (শাসক) নামে পরিচিত এই রাজা একটি রাজকীয় অভিজাততন্ত্রের (গানওয়া) নেতৃত্ব দিতেন যারা বেশিরভাগ জমির মালিক ছিল। মওয়ামি রাজা তৎকালীন স্থানীয় কৃষক (প্রধানত হুতু) এবং পশুপালকদের (প্রধানত তুতসি) কাছ থেকে চাঁদা বা ট্যাক্স আদায় করত। বুরুন্ডি কিংডম ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তুতসি রাজপরিবার উবুগাবাইরের বিকাশের সাথে ভূমি, উৎপাদন এবং বন্টনের উপর কর্তৃত্ব একীভূত করে—এটি একটি পৃষ্ঠপোষক-ক্লায়েন্ট সম্পর্ক, যেখানে জনগণ শ্রদ্ধাভক্তি এবং জমির মেয়াদের বিনিময়ে রাজকীয় সুরক্ষা পায়। এই সময়ের মধ্যে রাজদরবার তুতসি-বান্যারুগুরুর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। তুতসি-হিমারদের মতো অন্যান্য যাজকদের তুলনায় তাদের সামাজিক মর্যাদা বেশি ছিল। এই সমাজের নিম্ন স্তরে সাধারণত হুতু জাতিরা ছিল এবং স্তরের একেবারে নীচে ছিল ত্বোয়া (Twa) জনগোষ্ঠী। কিছু হুতু জনগণ আভিজাত্যের অন্তর্গত ছিল এবং এইভাবে রাষ্ট্রের কাজকর্মেও তাঁদের গুরুত্ব বাড়তেছিল। হুতু বা তুতসির শ্রেণিবিভাগ শুধুমাত্র জাতিগত মানদণ্ডের ভিত্তিতে ছিল না। হুতু চাষীরা মূলত সম্পদ এবং গবাদি পশু পালন করত তাই তাদেরকে তুতসির উচ্চ সামাজিক মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে, তুতসিদের এমনও খবর রয়েছে যারা তাদের সমস্ত গবাদি পশু হারিয়েছে এবং পরবর্তীকালে তাদের উচ্চ মর্যাদাও হারিয়েছে, তাই তাদেরকে হুতু বলা হত। এইভাবে হুতু এবং তুতসির মধ্যে পার্থক্যটিও একটি বিশুদ্ধ জাতিগত ধারণার পরিবর্তে একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ধারণায় রূপ নেয়। হুতু এবং তুতসি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহের প্রচলনটি অনেক পুরনো। ইউরোপীয় শাসন ১৮৮৪ সাল থেকে জার্মান ইস্ট আফ্রিকা কোম্পানি আফ্রিকান গ্রেট লেক অঞ্চলে সক্রিয় ছিল। জার্মান ইস্ট আফ্রিকা কোম্পানি, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং জাঞ্জিবার সালতানাতের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা এবং সীমান্ত বিরোধের ফলে জার্মান সাম্রাজ্যকে আবুশিরি বিদ্রোহ দমন এবং এই অঞ্চলে সাম্রাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। জার্মান ইস্ট আফ্রিকা কোম্পানি ১৮৯১ সালে জার্মান সাম্রাজ্যের কাছে তাদের অধিকার হস্তান্তর করে, এইভাবে জার্মানরা পূর্ব আফ্রিকায় জার্মান উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে, যার মধ্যে বুরুন্ডি (উরুন্ডি), রুয়ান্ডা (রুয়ান্ডা) এবং তানজানিয়ার মূল ভূখণ্ডের অংশ (পূর্বে টাঙ্গানিকা নামে পরিচিত ছিল)। জার্মান সাম্রাজ্য ১৮৮০ -এর শেষের দিকে রুয়ান্ডা এবং বুরুন্ডিতে সশস্ত্র বাহিনী স্থাপন করেছিল। বর্তমান সময়ের গিতেগা শহরের অবস্থান রুয়ান্ডা-উরুন্ডি অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পূর্ব আফ্রিকা অভিযানকালে আফ্রিকান গ্রেট লেক অঞ্চলকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। মিত্রশক্তির বেলজিয়াম ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বাহিনী জার্মান উপনিবেশের উপর সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। বুরুন্ডিতে অবস্থানরত জার্মান সেনাবাহিনী বেলজিয়ান সেনাবাহিনীর সংখ্যাগত শ্রেষ্ঠত্বের কারণে পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং ১৭ জুন ১৯১৬ সাল নাগাদ বুরুন্ডি ও রুয়ান্ডা দখল করে নেয়। যুদ্ধের পর, ভার্সাই চুক্তির রূপরেখা অনুসারে জার্মানি পূর্ব আফ্রিকার পশ্চিম অংশের নিয়ন্ত্রণ বেলজিয়ামের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। ২০ অক্টোবর, ১৯২৪ সালে রুয়ান্ডা-উরুন্ডি একটি বেলজিয়ান লীগ অফ নেশনস ম্যান্ডেট টেরিটরিতে পরিণত হয়, যার রাজধানী ছিল উসুম্বুরা। ব্যবহারিক দিক থেকে এটি বেলজিয়ান ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত হত। বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা-উরুন্ডির অংশ হিসেবে ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের উপস্থিতি সত্ত্বেও তারা রাজবংশ অব্যাহত রাখে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, রুয়ান্ডা-উরুন্ডি অঞ্চল বেলজিয়ামের প্রশাসনিক কর্তৃত্বের অধীনে জাতিসংঘের ট্রাস্ট টেরিটরি হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ হয়। ১৯৪০-এর দশকে একাধিক নীতির কারণে সারা দেশে বিভাজন ঘটে। ১৯৪৩ সালের ৪ অক্টোবর বুরুন্ডি সরকারের আইনী বিভাগে প্রধান এবং নিম্ন প্রধানদের মধ্যে ক্ষমতা বিভক্ত হয়। ১৯৪৮ সালে বেলজিয়াম অঞ্চলটিকে রাজনৈতিক দল গঠনের অনুমতি দেয়। এই দলগুলোই পরবর্তীতে (১ জুলাই ১৯৬২ সালে) বেলজিয়াম থেকে বুরুন্ডির স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রাখে। স্বাধীনতা ২০ জানুয়ারী, ১৯৫৯ সালে বুরুন্ডির শাসক মোয়ামি মোয়াবুস্তা ৪ (Mwami Mwambutsa IV) বেলজিয়াম থেকে বুরুন্ডির স্বাধীনতা এবং রুয়ান্ডা-উরুন্ডি ইউনিয়ন বিলুপ্ত করার অনুরোধ জানান। পরের কয়েকমাসে বুরুন্ডির রাজনৈতিক দলগুলো বেলজিয়ামের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান এবং রুয়ান্ডা ও বুরুন্ডিকে আলাদা করার পক্ষে সমর্থন দিতে শুরু করে। এই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রথম এবং বৃহত্তম দল ছিল ইউনিয়ন ফর ন্যাশনাল প্রোগ্রেস বা (UPRONA)। বুরুন্ডির স্বাধীনতায় প্রথম ধাক্কা লাগে রুয়ান্ডার বিপ্লব এবং এর সাথে সংঘটিত অস্থিতিশীলতা ও জাতিগত সংঘাত। রুয়ান্ডার এ বিপ্লবের ফলে ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সময়কালে অনেক রুয়ান্ডার তুতসি শরণার্থী বুরুন্ডিতে এসেছিলেন। বুরুন্ডির প্রথম নির্বাচন ১৯৬১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুবরাজ লুই রোগাসোরের নেতৃত্বে ইউনিয়ন ফর ন্যাশনাল প্রোগ্রেস দলটি ৮০% এর বেশি ভোটে জয়লাভ করে। নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ অক্টোবর, ২৯ বছর বয়সী যুবরাজ লুই রোগাসোরকে হত্যা করা হয়। দেশটি ১ জুলাই, ১৯৬২ সালে স্বাধীনতা দাবি করে এবং আইনত তার নাম রুয়ান্ডা-উরুন্ডি থেকে বুরুন্ডিতে পরিবর্তন করে। এরপর বুরুন্ডি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত হলে যুবরাজ রোগাসোরের পিতা মোয়ামি মোয়াবুস্তা -৪ দেশের রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৬২ সালে বুরুন্ডি জাতিসংঘে যোগদান করে। সরকার ও রাজনীতি বুরুন্ডির রাজনৈতিক ব্যবস্থা হলো একটি বহুদলীয় রাষ্ট্রের উপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্রপতি প্রতিনিধি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। বুরুন্ডির রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান এবং সরকার প্রধান। বুরুন্ডিতে বর্তমানে ২১টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। ১৩ মার্চ ১৯৯২, তুতসি অভ্যুত্থান নেতা পিয়েরে বুয়োয়া একটি সংবিধান প্রতিষ্ঠা করেন, যা একটি বহু-দলীয় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া প্রদান এবং বহু-দলীয় প্রতিযোগিতা প্রতিফলিত করে। ছয় বছর পর, ৬ জুন ১৯৯৮-এ সংবিধান পরিবর্তন করা হয়, জাতীয় পরিষদের আসন প্রসারিত করা হয় এবং দুই ভাইস-প্রেসিডেন্টের জন্য বিধান করা হয়। আরুশা অ্যাকর্ডের কারণে, বুরুন্ডি ২০০০ সালে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রণয়ন করে। বুরুন্ডির আইনসভা শাখা হলো একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট, যা ট্রানজিশনাল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি এবং ট্রানজিশনাল সেনেট নিয়ে গঠিত। ২০০৪ সালের হিসাবে ট্রানজিশনাল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ১৭০ সদস্য নিয়ে গঠিত। বুরুন্ডিতে ফ্রন্ট ফর ডেমোক্রেসির ৩৮ শতাংশ আসন রয়েছে এবং ইউপিআরওএনএ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সমাবেশের ১০ শতাংশ রয়েছে। বাকি ৫২টি আসন অন্য দলগুলোর দখলে। বুরুন্ডির সংবিধান ৬০% হুতু, ৪০% তুতসি, এবং ৩০ শতাংশ মহিলা সদস্য, পাশাপাশি তিনজন বাটোয়া সদস্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে ট্রানজিশনাল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে প্রতিনিধিত্বকে বাধ্যতামূলক করে। জাতীয় পরিষদের সদস্যরা জনপ্রিয়তার ভোটে নির্বাচিত হন এবং পাঁচ বছরের মেয়াদে থাকেন। ট্রানজিশনাল সেনেটে ৫১জন সদস্য রয়েছে এবং তিনটি আসন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিদের জন্য সংরক্ষিত। বুরুন্ডির সংবিধানের শর্তাবলীর কারণে সিনেট সদস্যদের ৩০% মহিলা হতে হবে। সিনেটের সদস্যরা ইলেক্টোরাল কলেজ দ্বারা নির্বাচিত হয়, যা বুরুন্ডির প্রতিটি প্রদেশ এবং কমিউনের সদস্যদের নিয়ে গঠিত। বুরুন্ডির ১৮টি প্রদেশের প্রতিটির জন্য একজন হুতু এবং একজন তুতসি সিনেটর বেছে নেওয়া হয়ে থাকে। ট্রানজিশনাল সেনেটের মেয়াদ পাঁচ বছর। একত্রে, বুরুন্ডির আইনসভা শাখা পাঁচ বছরের মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। বুরুন্ডির রাষ্ট্রপতি তার মন্ত্রী পরিষদে কর্মকর্তাদের নিয়োগ করেন, যা নির্বাহী শাখারও অংশ। রাষ্ট্রপতি মন্ত্রী পরিষদে পরিবেশন করার জন্য ট্রানজিশনাল সেনেটের চৌদ্দ (১৪) সদস্যকেও বেছে নিতে পারেন। মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের অবশ্যই বুরুন্ডির আইনসভার দুই-তৃতীয়াংশ দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। রাষ্ট্রপতি দুই ভাইস-প্রেসিডেন্টও বেছে নেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনের পর, বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট ছিলেন পিয়েরে নকুরুনজিজা। প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন থেরেন্স সিনুনগুরুজা, এবং দ্বিতীয় ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন গেরভাইস রুফিকিরি। কোর সুপ্রেম (সুপ্রিম কোর্ট) হলো বুরুন্ডির সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের সরাসরি নীচে তিনটি আপিল আদালত রয়েছে। প্রথম দৃষ্টান্তের ট্রাইব্যুনালগুলো বুরুন্ডির প্রতিটি প্রদেশে বিচার বিভাগীয় আদালতের পাশাপাশি ১২৩টি স্থানীয় ট্রাইব্যুনাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মানবাধিকার সাংবাদিক জিন-ক্লদ কাভুমবাগুকে একাধিকবার গ্রেফতার ও বিচারের জন্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো দ্বারা বুরুন্ডির সরকার বারবার সমালোচিত হয়েছে। সেজন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (এআই) তাকে 'বিবেকের বন্দী' হিসেবে নাম দিয়েছে। এপ্রিল, ২০০৯ সালে, বুরুন্ডি সরকার সমকামিতাকে অপরাধী করার আইন পরিবর্তন করে। সম্মতিমূলক সমকামী সম্পর্কের জন্য দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিরা দুই থেকে তিন বছরের জেল এবং ৫০,০০০ থেকে ১০০,০০০ বুরুন্ডিয়ান ফ্রাঙ্কের জরিমানা গুনতে হবে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই কর্মের নিন্দা করেছে, এটিকে তারা আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক মানবাধিকার আইনের অধীনে বুরুন্ডির বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। এটি সংবিধানের বিরুদ্ধে, যা গোপনীয়তা অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। বুরুন্ডি আনুষ্ঠানিকভাবে ২৭ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) ত্যাগ করে। জাতিসংঘ কর্তৃক সেপ্টেম্বর, ২০১৭ -এর রিপোর্টে বিভিন্ন অপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন, যেমন বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং যৌন সহিংসতার জন্য দেশটিকে অভিযুক্ত করার পরে এই পদক্ষেপ গৃহীত হয়। আইসিসি ৯ নভেম্বর, ২০১৭-এ ঘোষণা করেছিল যে বুরুন্ডি সদস্য হওয়ার সময় থেকে এখনও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে এবং এখন পর্যন্ত তারা বিচারের আওতায় রয়েছে। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ বুরুন্ডি ১৮টি প্রদেশে বিভক্ত, এরমধ্যে ১১৯টি কমিউন এবং ২,৬৩৮টি কোলাইন (পাহাড়)। প্রতিটি প্রাদেশিক সরকার এই সীমানাগুলোর উপর গঠিত। বুরুন্ডির প্রদেশ এবং কমিউনগুলো ১৯৫৯ সালে ক্রিসমাসের দিনে একটি বেলজিয়ান ঔপনিবেশিক ডিক্রি দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। তারা সর্দারদের পূর্ব-বিদ্যমান ব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করেছে। ২০০০ সালে বুজুম্বুরাকে ঘিরে প্রদেশ ব্যবস্থা বুজুম্বুরা গ্রামীণ এবং বুজুম্বুরা মাইরি নামে দুটি প্রদেশে বিভক্ত হয়। ২০২২ সালের জুলাই মাসে বুরুন্ডি সরকার দেশের আঞ্চলিক মহকুমাগুলোর একটি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ঘোষণা করেছে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনটি প্রদেশের পরিমাণ ১৮ থেকে কমিয়ে ৫-এ নামিয়ে আনবে এবং কমিউনের পরিমাণ ১১৯ থেকে কমিয়ে ৪২-এ নামিয়ে আনবে বলে জানা যায়। পরিবর্তনটি কার্যকর করার জন্য এখন শুধু বুরুন্ডির সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন। ভূগোল আফ্রিকার ক্ষুদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি বুরুন্ডি। দেশটি স্থলবেষ্টিত এবং একটি নিরক্ষীয় জলবায়ু রয়েছে। বুরুন্ডি আলবার্টিন রিফটের একটি অংশ, পূর্ব আফ্রিকান রিফটের পশ্চিম সম্প্রসারণ। এটি আফ্রিকার কেন্দ্রে একটি ঘূর্ণায়মান মালভূমিতে অবস্থিত। বুরুন্ডির উত্তরে রুয়ান্ডা, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে তানজানিয়া এবং পশ্চিমে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো। এটি আলবার্টিন রিফ্ট মন্টেন বন, সেন্ট্রাল জাম্বেজিয়ান মিওম্বো বনভূমি এবং ভিক্টোরিয়া বেসিন বন-সাভানা মোজাইক ইকোরিজিয়নের মধ্যে অবস্থিত। কেন্দ্রীয় মালভূমির গড় উচ্চতা হলো ১,৭০৭ মিটার (৫,৬০০ ফুট), সীমানায় নিম্ন উচ্চতা রয়েছে। সর্বোচ্চ শিখর মাউন্ট হেহা ২,৬৮৫ মিটার (৮,৮১০ ফুট), যেটির বৃহত্তম শহর এবং অর্থনৈতিক রাজধানী বুজুম্বুরার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। নীল নদের উৎস বুরুরি প্রদেশে, এবং ভিক্টোরিয়া হ্রদ থেকে রুভিরোঞ্জা নদীর মাধ্যমে এর প্রধান জলের সাথে যুক্ত। আরেকটি প্রধান হ্রদ হলো লেক টাঙ্গানিকা, বুরুন্ডির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অনেকাংশে এটির অবস্থান। বুরুন্ডিতে দুটি জাতীয় উদ্যান রয়েছে: উত্তর-পশ্চিমে কিবিরা ন্যাশনাল পার্ক (রুয়ান্ডার নিয়ংওয়ে ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্কের সংলগ্ন রেইনফরেস্টের একটি ছোট অঞ্চল), এবং উত্তর-পূর্বে রুবুবু ন্যাশনাল পার্ক (রুরুবু নদীর ধারে, রুভুবু বা রুভুউ নামেও পরিচিত)। উভয়ই ১৯৮২ সালে বন্যপ্রাণী সংখ্যা সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শারীরিক ভূতত্ত্ব বুরুন্ডি ২৭,৮৩০ বর্গ কিলোমিটার (১০,৭৫০ বর্গ মাইল) আয়তনের সমান একটি এলাকা জুড়ে আছে, যার মধ্যে ২৫,৬৮০ বর্গ কিলোমিটার (৯,৯২০ বর্গ মাইল) ভূমি। দেশটির ১,১৪০ কিলোমিটার (৭১০ মাইল) স্থল সীমান্ত রয়েছে: এরমধ্যে ২৩৬ কিলোমিটার (১৪৭ মাইল) কঙ্গোর সাথে, ৩১৫ কিলোমিটার (১৯৬ মাইল) রুয়ান্ডার সাথে এবং ৫৮৯ কিলোমিটার (৩৬৬ মাইল) তানজানিয়ার সাথে সীমানা ভাগ করা হয়েছে। একটি স্থলবেষ্টিত দেশ হিসাবে বুরুন্ডির কোন উপকূলরেখা নেই। এটি কঙ্গো-নীল ডিভাইডের চূড়ায় বিস্তৃত, যা কঙ্গো এবং নীল নদের অববাহিকাকে পৃথক করেছে। নীল নদের সবচেয়ে দূরবর্তী হেডওয়াটার রুভিরোঞ্জা নদীর উৎস বুরুন্ডিতে। ভূখণ্ড: বুরুন্ডির ভূখণ্ডটি পাহাড়ি এবং পূর্বে একটি মালভূমিতে নেমে গেছে। সেন্ট্রাল জাম্বেজিয়ান মিওম্বো বনভূমি ইকোরিজিয়নের অংশ হিসেবে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার দ্বারা দক্ষিণ ও পূর্ব সমভূমিকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। দেশের সর্বনিম্ন বিন্দু টাঙ্গানিকা হ্রদে অবস্থিত, যেটির উচ্চতা ৭৭২ মিটার (২,৫৩৩ ফুট)। দেশটির সর্বোচ্চ বিন্দুটি হেহা পর্বতে, এর উচ্চতা ২,৬৮৪ মিটার (৮,৮০৬ ফুট)। বুরুন্ডিতে বন্যা ও ভূমিধসের কারণে প্রায়ই প্রাকৃতিক বিপত্তি দেখা দেয়। প্রাকৃতিক সম্পদ: বুরুন্ডির মজুদ রয়েছে: নিকেল, ইউরেনিয়াম, বিরল আর্থ অক্সাইড, পিট, কোবাল্ট, তামা, প্ল্যাটিনাম (এখনও শোষিত হয়নি), ভ্যানাডিয়াম, নাইওবিয়াম, ট্যানটালাম, সোনা, টিন, টংস্টেন, কাওলিন এবং চুনাপাথর। দেশটিতে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি এবং জলবিদ্যুতের সম্ভাবনাও রয়েছে। বুরুন্ডিতে ২১৪.৩ বর্গ কিলোমিটার (৮২.৭ বর্গ মাইল) সেচযোগ্য জমি রয়েছে। পরিবেশ মাটির ক্ষয় বুরুন্ডির জন্য একটি সমস্যা। অতিমাত্রায় চারণ এবং প্রান্তিক জমিতে কৃষি সম্প্রসারণের ফলে মাটির ক্ষয় হয়ে থাকে। অন্যান্য সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে: জ্বালানীর জন্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাছ কাটার কারণে বন উজাড়; এবং অতিমাত্রায় আবাসস্থল তৈরির কারণে বন্যপ্রাণী হুমকির মুখে। বন্যপ্রাণী বুরুন্ডির বন্যপ্রাণী তার উদ্ভিদ ও প্রাণীর সমন্বয়ে গঠিত। ছোট, স্থলবেষ্টিত দেশটিতে ২,৯৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৫৯৬টি প্রজাতির পাখি, ১৬৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫২ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৬ প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং ২১৫টি মাছের প্রজাতি রয়েছে। বন্যপ্রাণী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। প্রধানত তীব্র জনসংখ্যার চাপ, বনের বৃহৎ এলাকাকে কৃষি জমিতে রূপান্তর এবং ব্যাপকভাবে পশুপালনের কারণে বন্যপ্রাণী হ্রাস পাচ্ছে। দেশটির বন্যপ্রাণী সংরক্ষিত এলাকা দেশের মোট আয়তনের ৫% এর কিছু বেশি জুড়ে বিস্তৃত। আইনি অবস্থা: বেলজিয়ামের ঔপনিবেশিক শাসনের সময় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য কোনো জাতীয় আইন ছিল না বা কোনো জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শুধু ব্যতিক্রম ছিল একটি বন সংরক্ষিত, যা ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৮০ সালের আগে বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য সামান্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। জারি করা প্রথম আইনটি ছিল ডিক্রি নং ১/৬, তারিখ ৩ মার্চ ১৯৮০, যার অধীনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও সংরক্ষণের জন্য জাতীয় উদ্যান (Parc Nationalaux) সংরক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই ডিক্রির অধীনে বনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। ২৫ মার্চ ১৯৮৫ এর ফরেস্ট কোড ছিল একটি কার্যকরী আইন যার অধীনে সংরক্ষিত বনাঞ্চল নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং সংরক্ষিত এলাকাগুলো নির্দিষ্ট করা হয়। সংরক্ষণের জন্য একটি জাতীয় ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ১৯৮০ সালের মার্চের ডিক্রির অধীনে প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য জাতীয় ইনস্টিটিউট; যা এখন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড কনজারভেশন অফ নেচার নামে নামকরণ করা হয়েছে। এটি জাতীয় উদ্যান এবং সংরক্ষণাগার স্থাপনের দায়িত্ব রয়েছে। এটি উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি ইকোট্যুরিজম প্রচার করে থাকে। বাসস্থান, তাপমাত্রা ও অন্যান্য: বুরুন্ডির বন্যপ্রাণী আবাসস্থল, তার ১৫টি প্রদেশ জুড়ে বিস্তৃত। যা মধ্যম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত এবং উচ্চতাগত পার্থক্য দ্বারা প্রভাবিত হয়। মালভূমি অঞ্চলে গড় বার্ষিক তাপমাত্রা 20 °C (68 °F) রেকর্ড করা হয় যখন রিফট ভ্যালিতে 23 °C (73 °F) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এই তাপমাত্রা শুষ্ক মৌসুম জুন থেকে আগস্ট এবং আবার ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী হয়। বর্ষাকাল অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, যার বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৫০০-২,০০০ মিলিমিটার (২০-৭৯ ইঞ্চি)। পশ্চিম পর্বত অঞ্চলে গড় বৃষ্টিপাত হয় ১,৩৭৫ মিলিমিটার (৫৪.১ ইঞ্চি); যদিও পূর্ব মালভূমিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাত হয় ১,১০০-১,২৫০ মিলিমিটার (৪৩-৪৯ ইঞ্চি)। দেশটি পাহাড়ি মালভূমি দ্বারা অধ্যুষিত। মালভূমিতে উচ্চতা ১,৪০০-১,৮০০ মিটার (৪,৬০০-৫,৯০০ ফুট) থেকে পরিবর্তিত হয় এবং দেশের পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে হ্রাসের প্রবণতা রেকর্ড করা হয়। এর জীববৈচিত্র্য বিস্তৃতভাবে স্থলজ বাস্তুতন্ত্র এবং জলজ ও আধা-জলজ বাস্তুতন্ত্রের অধীনে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।দেশের পশ্চিম অঞ্চলটি সংকীর্ণ এবং তাঙ্গানিকা হ্রদের সীমানা, রিফ্ট উপত্যকা এবং রুসিজি নদী (কঙ্গোর সীমান্ত) দ্বারা গঠিত। দেশের পশ্চিমাঞ্চল কঙ্গো-নীল ডিভাইডের পাহাড়ি ভূখণ্ড দ্বারা গঠিত, যেখানে অনেক পাহাড় ২,৫০০ মিটার (৮,২০০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত; এখানকার সর্বোচ্চ পর্বতমালা হলো মাউন্ট তেজা ২,৬৬৫ মিটার (৮,৭৪৩ ফুট) এবং হেহা পর্বত ২,৬৭০ মিটার (৮,৭৬০ ফুট)। বুরুন্ডিতে অবস্থিত টাঙ্গানিকা হ্রদ, বিশ্বের দ্বিতীয় গভীরতম হ্রদ। দেশটিতে মাত্র 8% জলের বিস্তার রয়েছে। নীল নদ এখানকার প্রধান নদ এবং অন্যান্য নদীগুলো হলো মালাগারিসি এবং রুভুউ। নীল নদের প্রধান প্রবাহ হলো রুভিয়ারোঞ্জা, যা কাগেরা নদীর একটি উপরের শাখা। দেশের নদী ব্যবস্থা নীল নদ এবং কঙ্গো অববাহিকার দুটি প্রধান হাইড্রোগ্রাফিক্যাল অববাহিকার অধীনে পড়ে। সুরক্ষিত এলাকাসমূহ: বুরুন্ডিতে তিনটি জাতীয় উদ্যান রয়েছে: কিবিরা জাতীয় উদ্যানের আয়তন ৪০,০০০ হেক্টর (৯৯,০০০ একর) এবং এটি দেশের বৃহত্তম রেইনফরেস্ট। রুভুবু ন্যাশনাল পার্ক (৫০,৮০০ হেক্টর (১২৬,০০ একর), এটি দেশের বৃহত্তম পার্ক এবং হাইকিং ট্রেইলের জন্য এটি বেশ পরিচিত। রুসিজি ন্যাশনাল পার্ক (৯,০০০ হেক্টর (২২,০০০ একর), বুজুম্বুরা থেকে ১৫ কিলোমিটার (৯.৩ মাইল) দূরের জলাভূমি, যেখানে জলহস্তী, সিতাতুঙ্গা (জলজল হরিণ) এবং অনেক প্রজাতির পাখি রয়েছে। ১৯৯০ সালে এটিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়, এটি বুজুম্বুরার বাইরের সীমানায় রুসিজি নদীর বন্যার সমভূমিতে অবস্থিত। জাতীয় উদ্যান ছাড়াও চারটি রিজার্ভ এলাকা রয়েছে: লাখ রুহিন্দা প্রকৃতি সংরক্ষণ (৮,০০০ হেক্টর), বুরুরি ফরেস্ট নেচার রিজার্ভ (৩,৩০০ হেক্টর), রুমঙ্গে নেচার রিজার্ভ (৫,০০০ হেক্টর), কিগওয়েনা ফরেস্ট নেচার রিজার্ভ (৮০০ হেক্টর)। এছাড়াও, এখানে দুটি প্রাকৃতিক স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে: চুটস দে লা কাগেরা এবং নায়াকাজু গর্জ। উদ্ভিদ জগত বুরুন্ডির উদ্ভিদজগতকে পূর্ব আফ্রিকার চিরহরিৎ গুল্মভূমি এবং গৌণ তৃণভূমি, সেইসাথে পশ্চিম পর্বত অঞ্চলের অন্তর্বর্তীকালীন রেইনফরেস্ট সহ আফ্রোমন্টেন গাছপালা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। হাইফেন-বাবলা এবং ব্র্যাকিস্টেজিয়া গাছ হ্রদের তীরে উল্লেখ করা হয়েছে। Brachystegia-Julbernardia (miombo) গাছ দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত এলাকায় দেখা যায়। উত্তরে বুগেসেরা অঞ্চল এবং পূর্ব দিকে কুমোসো নিম্নচাপে বাবলা-কমব্রেটাম গাছ এবং ব্র্যাকিস্টেজিয়া গাছ প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এখানকার বন্য উদ্ভিদের অনেক প্রজাতি স্থানীয় বলে জানা যায়; এই শ্রেণীতে ৭০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। পাখি বুরুন্ডিতে রিপোর্ট করা পাখির (avifauna) মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ৫৯৬ প্রজাতি (৪৩৯ আবাসিক এবং ১০৯ মৌসুমী অভিবাসী)। কোন স্থানীয় পাখির প্রজাতি নেই। দেশে বার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক ঘোষিত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পাখি সংরক্ষণ এলাকা রয়েছে, যা ১,০১৮ বর্গ কিলোমিটার (৩৯৩ বর্গ মাইল) এলাকা জুড়ে এবং এটি আয়তনে দেশের মোট ৩.৭%। বার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনালের মতে, বিশ্বব্যাপী সংরক্ষণ উদ্বেগের ১৩টি প্রজাতি রয়েছে (ছয়টি অ-প্রজননকারী অভিবাসী, অ্যালবার্টিন রিফ্ট এবং প্যাপিরাস জলাভূমি থেকে প্রজননের ভারসাম্য)। এর মধ্যে রয়েছে ফিনিকপ্টেরাস মাইনর (এনটি), সার্কাস ম্যাক্রোরাস (এনটি), ফ্যালকো নাউমান্নি (ভিইউ), গ্যালিনাগো মিডিয়া (এনটি), গ্ল্যারিওলা নর্ডমানি (এনটি), আরদেওলা আইডিয়া (এনটি), লিবিয়াস রুব্রিফেসিস (এনটি), কুপিওর্নিস রুফোসিনকটাস (এনটি), ল্যানিয়ারিয়াস মুফুম্বিরি (এনটি), বালেনিসেপস রেক্স (এনটি), অ্যাপালিস আর্জেনটিয়া (ভিইউ), ব্র্যাডিপ্টেরাস গ্রাউরি (ভিইউ), ক্রিপ্টোস্পিজা শেলেই (ভিইউ), ক্যালামোনাস্টাইডস গ্র্যাসিলিরোস্ট্রিস (ভিইউ), এবং বুগেরানাস কারুনকুলাটাস (ভিইউ)। অর্থনীতি বুরুন্ডি একটি স্থলবেষ্টিত দরিদ্র রাষ্ট্র দেশ এবং এর উৎপাদন খাত অনুন্নত। দেশটির অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর। ২০১৭ সালে জিডিপির ৫০% কৃষিনির্ভর এবং জনসংখ্যার ৯০% এরও বেশি কৃষি কাজ করে জীবিকানির্বাহ করে থাকে। এর মধ্যে প্রাথমিক রপ্তানি হলো কফি এবং চা, যা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মোট ৯০ শতাংশ, যদিও এটি রপ্তানি জিডিপির অংশে তুলনামূলকভাবে কম। অন্যান্য কৃষি পণ্যের মধ্যে রয়েছে তুলা, চা, ভুট্টা, ঝাল, মিষ্টি আলু, কলা, ম্যানিওক (টেপিওকা); গরুর মাংস, দুধ এবং চামড়া। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রতম দেশটির ভৌগোলিক অবস্থা প্রায় পুরোটাই স্থলবেষ্টিত। শিক্ষার সুযোগের অভাব এবং এইচআইভি/এইডসের বিস্তারের কারণে দেশে দরিদ্রতা বিস্তার করে আছে। বুরুন্ডি এর জনসংখ্যার প্রায় ৮০% দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। বিংশ শতাব্দিতে দেশজুড়ে বিরাট দুর্ভিক্ষ এবং খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি অনুসারে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৫৬.৮% দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টিতে ভোগে। মজুরি বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির সাথে তাল মিলিয়ে না থাকায় বেশিরভাগ বুরুন্ডিয়ানদের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। দারিদ্র্যের গভীরতার ফলে তারা দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক দাতাদের কাছ থেকে সাহায্যের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। বিদেশী সাহায্য বুরুন্ডি জাতীয় আয়ের ৪২% প্রতিনিধিত্ব করে, সাব-সাহারান আফ্রিকায় যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হার। বুরুন্ডি ২০০৯ সালে পূর্ব আফ্রিকান সম্প্রদায়ে যোগদান করে, যার ফলে তার আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি $৭০০ মিলিয়ন ঋণ ত্রাণ লাভ করে।২০১৮ সালে ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী বুরুন্ডিয়রা বিশ্বের সবচেয়ে কম সুখী জনগণ হিসেবে চিহ্নিত। বুরুন্ডির কিছু প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে ইউরেনিয়াম, নিকেল, কোবাল্ট, তামা এবং প্ল্যাটিনাম। কৃষি ছাড়াও অন্যান্য শিল্পের মধ্যে রয়েছে: আমদানিকৃত উপাদানের সমাবেশ; গণপূর্ত নির্মাণ; খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং হালকা ভোগ্যপণ্য যেমন কম্বল, জুতা এবং সাবান। আর্থিক পরিষেবাগুলোতে অ্যাক্সেসের অভাব সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার জন্য একটি গুরুতর সমস্যা, বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামীণ এলাকায়। দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ২% মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে এবং ০.৫% এরও কম ব্যাংক ঋণ পরিষেবা ব্যবহার করে। তবে, সেখানে ক্ষুদ্রঋণ একটি বৃহত্তর ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে বুরুন্ডিয়ীদের ৪ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার সদস্য। ২৬টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান (MFIs) ঋণ গ্রহণে ইচ্ছুক জনগণের মধ্যে সঞ্চয়, আমানত এবং স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী ঋণ প্রদান করে থাকে। বুরুন্ডি পূর্ব আফ্রিকান সম্প্রদায়ের অংশ এবং পরিকল্পিত পূর্ব আফ্রিকান ফেডারেশনের সম্ভাব্য সদস্য। দেশটিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্থির, ফলে তারা এখনও প্রতিবেশী দেশগুলোর পিছনে রয়েছে। মুদ্রা বুরুন্ডির মুদ্রা হলো বুরুন্ডিয়ান ফ্রাঙ্ক (ISO 4217 কোড BIF)। এটি নামমাত্র ১০০ সেন্টিমে বিভক্ত, যদিও স্বাধীন বুরুন্ডিতে কয়েন কখনও সেন্টিমে জারি করা হয়নি; যখন বুরুন্ডি বেলজিয়ান কঙ্গো ফ্রাঙ্ক ব্যবহার করতো তখন থেকে সেন্টিটাইম মুদ্রা প্রচলন করা হয়। বুরুন্ডির মুদ্রানীতি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক অফ দ্য রিপাবলিক অফ বুরুন্ডি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পরিবহন বুরুন্ডির পরিবহন নেটওয়ার্ক সীমিত এবং অনুন্নত। একটি ২০১২ সালের DHL গ্লোবাল কানেক্টেডনেস ইনডেক্স অনুযায়ী, বুরুন্ডি ১৪০টি জরিপকৃত দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। বুজুম্বুরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলো একমাত্র বিমানবন্দর যেখানে একটি পাকা রানওয়ে রয়েছে এবং মে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এটি চারটি এয়ারলাইন্স (ব্রাসেলস এয়ারলাইনস, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস, কেনিয়া এয়ারওয়েজ এবং রুয়ান্ডএয়ার) দ্বারা পরিসেবা করা হয়েছে। কিগালি হলো বুজুম্বুরার সাথে সবচেয়ে দৈনিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সংযোগের শহর। দেশে একটি সড়ক নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশের রাস্তার মাত্র ১০ শতাংশের কম পাকা ছিল। ২০১২ সাল পর্যন্ত বেসরকারী বাস কোম্পানিগুলো রুয়ান্ডার কিগালি যাওয়ার আন্তর্জাতিক রুটে বাসের প্রধান অপারেটর ছিল; তবে অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে কোন বাস সংযোগ ছিল না (তানজানিয়া এবং কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র)। বুজুম্বুরা তানজানিয়ার কিগোমার সাথে একটি যাত্রী ও পণ্যবাহী ফেরি (এমভি এমওয়ানগোজো) দ্বারা সংযুক্ত। ভবিষ্যতে কিগালি ও উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা এবং কেনিয়ার সাথে রেলের মাধ্যমে দেশটিকে সংযুক্ত করার একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে। জনপরিসংখ্যান ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বুরুন্ডির জনসংখ্যা ১২,৩৪৬,৮৯৩ জন, যা ১৯৫০ সালে মাত্র ২,৪৫৬,০০০ জন ছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রতি বছর ২.৫ শতাংশ, এটি গড় বৈশ্বিক গতির দ্বিগুণেরও বেশি। একজন বুরুন্ডিয়ান মহিলার গড়ে ৫.১০ সন্তান রয়েছে, যেটি আন্তর্জাতিক প্রজনন হারের দ্বিগুণেরও বেশি। ২০২১ সালে বুরুন্ডি বিশ্বের দশম সর্বোচ্চ মোট উর্বরতার হার ছিল, এর অবস্থান সোমালিয়ার ঠিক পরে। গৃহযুদ্ধের ফলে অনেক বুরুন্ডিয়ান অন্য দেশে চলে গেছে। ২০০৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুমানিক ১০,০০০ বুরুন্ডিয়ান শরণার্থীকে গ্রহণ করেছিল। বুরুন্ডিতে একটি অপ্রতিরোধ্য গ্রামীণ সমাজ রয়ে গেছে, যেখানে ২০১৩ সালে জনসংখ্যার মাত্র ১৩% শহরাঞ্চলে বসবাস করে। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৩১৫ জন (প্রতি বর্গ মাইল ৭৫৩), সাব-সাহারান আফ্রিকায় এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জনসংখ্যার প্রায় ৮৫% হুতু জাতিগত, ১৫% তুতসি এবং ১% এরও কম আদিবাসী ত্বোয়া। ভাষা বুরুন্ডিতে ঐতিহ্যগতভাবে দুটি সরকারী ভাষা ছিল: কিরুন্ডি এবং ফরাসি। ২০১৪ সালে ইংরেজি দেশটির তৃতীয় সরকারী ভাষা হয়ে ওঠে। এর মধ্যে শুধুমাত্র কিরুন্ডি ভাষাই অধিকাংশ জনসংখ্যা ব্যবহার করে থাকে। এটি ২০০৫ সালের বুরুন্ডিয়ান সংবিধান দ্বারা জাতীয় ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পায়। বুরুন্ডি আফ্রিকান রাজ্যগুলোর মধ্যে অস্বাভাবিক একটি একক আদিবাসী ভাষা যার সমগ্র জনসংখ্যা ভাগ করে নিয়েছে। ধারণানুযায়ী, বুরুন্ডিয়ানদের ৯৮ শতাংশ কিরুন্ডি ভাষায় কথা বলে এবং মাত্র ১০% এর কম ফরাসি ভাষায় কথা বলে। অতীতে বেলজিয়ান ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে (১৯১৯-৬২) কিরুন্ডি শেখানো হয়েছিল, যেখানে আবার জার্মান শাসনের অধীনে (১৮৯৪-১৯১৬) সোয়াহিলিকে উৎসাহিত করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বুরুন্ডিয়ান সরকার দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে একত্রিত করার উপায় হিসাবে কিরুন্ডি ভাষার ব্যবহারকে উন্নীত করেছে। দেশটিকে ফ্রাঙ্কোফোনির অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বেলজিয়ামের ঔপনিবেশিক শাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে সরকার, ব্যবসায় এবং শিক্ষিত শ্রেণিতে ফরাসিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে কিন্তু জনসংখ্যার মাত্র ৩ থেকে ১০ শতাংশই সাবলীল ভাষায় কথা বলে। বুরুন্ডিয়ান আঞ্চলিক ফরাসিও প্রায়শই কিরুন্ডি, লিঙ্গালা এবং অন্যান্য ভাষার শব্দগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফরাসি একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু দ্বারা কথ্য এবং প্রধানত একটি দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে দেশের অভিবাসী বাসিন্দারা কথা বলে থাকে। ২০০৭ সালের পরে পূর্ব আফ্রিকান সম্প্রদায়ের সাথে আঞ্চলিক একীকরণের দিকে পদক্ষেপের অংশ হিসাবে ইংরেজি গৃহীত হয়েছিল কিন্তু দেশে এর কার্যকর উপস্থিতি এখন খুবই কম। বুরুন্ডিতে কথ্য ভাষার মধ্যে সোয়াহিলি যা গ্রেট লেক অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি বিশেষ করে বাণিজ্যে এবং দেশের মুসলিম সংখ্যালঘুদের সাথে বা পূর্ব আফ্রিকার অন্য কোথাও থেকে অভিবাসন করা জনগনের ক্ষেত্রে অধিক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ধর্ম বুরুন্ডিতে ধর্ম বৈচিত্র্যময়। খ্রিস্টান ধর্ম তাদের প্রধান বিশ্বাস। সিআইএ ফ্যাক্টবুকের ২০০৮ সালের হিসাব অনুসারে, বুরুন্ডির জনসংখ্যার প্রায় ৮৬ শতাংশ খ্রিস্টান (৬২.১% রোমান ক্যাথলিক, ২৩.৯% প্রোটেস্ট্যান্ট), ৭.৯% ঐতিহ্যগত ধর্ম অনুসরণ করে এবং ২.৫ শতাংশ মুসলিম (প্রধানত সুন্নি)। বিপরীতে, ২০১০ সালে এনসাইক্লোপিডিয়া অফ আফ্রিকার আরেকটি অনুমান বলে যে, বুরুন্ডির ৬৭ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান, ২৩% সনাতন ধর্ম অনুসরণ করে এবং ১০% ইসলাম বা অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। এরমধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ২-৫%, যাদের অধিকাংশই সুন্নি এবং শহরাঞ্চলে বসবাস করে। স্বাস্থ্য় বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা সূচকে র‍্যাঙ্ক করা ১২০টি দেশের মধ্যে বুরুন্ডির অবস্থান সবচেয়ে ক্ষুধা ও অপুষ্টির তালিকায় রয়েছে। ১৯৬২ সালে গৃহযুদ্ধের ফলে দেশে চিকিৎসার অগ্রগতি বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোর মতো বুরুন্ডিরা বায়োমেডিসিন ছাড়াও কিছু দেশীয় ওষুধ ব্যবহার করে থাকে। ১৯৮০-এর দশকে বুরুন্ডির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মান নিয়ন্ত্রণের বিকাশ এবং ঔষধি গাছ থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস নিয়ে নতুন গবেষণা শুরু করতে সহায়তার জন্য জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির কাছে অনুরোধ করেছিল। একই সময়ে বুরুন্ডিতে অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্র্যাডিশনাল প্র্যাকটিশনারস (ATRADIBU) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা বুরুন্ডিতে ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের গবেষণা ও প্রচার কেন্দ্র (CRPMT) স্থাপনের জন্য সরকারী সংস্থার সাথে যুক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সাহায্যের সাম্প্রতিক প্রবাহ বুরুন্ডিতে বায়োমেডিকেল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাজকে সমর্থন করেছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য কর্মীরা বুরুন্ডিতে ঐতিহ্যগত দেশীয় ওষুধ ব্যবহার পরিহারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ২০১৫ সালের হিসাবে, বুরুন্ডিতে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন শিশু ৫ বছর বয়সের আগেই নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া এবং ম্যালেরিয়া প্রতিরোধযোগ্য এবং চিকিৎসাযোগ্য অসুস্থতা থেকে মারা যায়। ২০১৫ সালের হিসাবে বুরুন্ডির গড় আয়ু ৬০.১ বছর। ২০১৩ সালে বুরুন্ডি স্বাস্থ্যসেবাতে তাদের জিডিপির ৮% ব্যয় করেছে। দেশটিতে মৃত্যুর হার প্রতি ১,০০০ জীবিত জন্মের জন্য ৬১.৯ মৃত্যু এবং জন্মহার প্রতি মহিলার ৬.১ জন শিশু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুযায়ী, দেশে গড় আয়ু ৫৮/৬২ বছর। বুরুন্ডির সাধারণ রোগের মধ্যে রয়েছে ম্যালেরিয়া এবং টাইফয়েড জ্বর। সংস্কৃতি বুরুন্ডির সংস্কৃতি স্থানীয় ঐতিহ্য এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রভাবের উপর ভিত্তি করে, যদিও নাগরিক অস্থিরতার কারণে সাংস্কৃতিক প্রাধান্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির প্রধান শিল্প কৃষি এবং সাধারণ বুরুন্ডিয়ান খাবারের মধ্যে রয়েছে মিষ্টি আলু, ভুট্টা, চাল এবং মটর। অতিরিক্ত খরচের কারণে মাসে মাত্র কয়েকবার মাংস খাওয়া হয়। কারুশিল্প বুরুন্ডিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ফর্ম এবং অনেক পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় উপহার। ঝুড়ি বয়ন বা বাস্কেট ওয়েভিং স্থানীয় কারিগরদের জন্য একটি জনপ্রিয় নৈপুণ্য। অন্যান্য কারুশিল্প যেমন মুখোশ, ঢাল, মূর্তি এবং মৃৎপাত্র বুরুন্ডিতে তৈরি হয়। ঢোল বাজানো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বুরুন্ডির বিশ্ব-বিখ্যাত রয়্যাল ড্রামার্স, যারা ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পারফর্ম করেছে। তারা কারিন্ডা, আমাশাকো, ইবিশিকিসো এবং ইকিরন্য ড্রাম ব্যবহার করে ঐতিহ্যবাহী ড্রামিং এর জন্য বিখ্যাত। নাচ প্রায়ই ড্রামিং পারফরম্যান্সের সাথে থাকে, যা প্রায়শই উদযাপন এবং পারিবারিক সমাবেশে দেখা যায়। দেশের মৌখিক ঐতিহ্য গুলোর মধ্যে গল্প, কবিতা ও গানের মাধ্যমে ইতিহাস ও জীবনের শিক্ষা তুলে ধরে। ইমিগানি, ইন্দিরিম্বো, আমাজিনা এবং আইভিভুগো হলো বুরুন্ডির সাহিত্যের প্রধান ধারা। বাস্কেটবল, ট্র্যাক এবং ফিল্ড উল্লেখযোগ্য খেলা। মার্শাল আর্টও বুরুন্ডিতে বেশ জনপ্রিয়। অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল সারা দেশে একটি জনপ্রিয় বিনোদন, যেমন মানকাল গেম। অধিকাংশ খ্রিস্টান ধর্মীয় ছুটির দিন পালিত হয় বড়দিনের সাথে। বুরুন্ডিয়ান স্বাধীনতা দিবস প্রতি বছর ১ জুলাই পালিত হয়। ২০০৫ সালে, বুরুন্ডিয়ান সরকার ঈদ-উল-ফিতরকে মুসলমানদের জন্য সরকারী ছুটি ঘোষণা করেছে। মিডিয়া বুরুন্ডির বেশিরভাগ গণমাধ্যম সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। দেশটিতে রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সক্রিয় রয়েছে। রেডিও: বুরুন্ডির জাতীয় মালিকানাধীন রেডিও স্টেশনগুলো হলঃ রেডিও বুন্টু ইজউই রি'ইম্পফুভি নাবাপফাকাজি, রেডিও বেনা এফএম, রেডিও সিসিআইবি এফএম+, রেডিও আগাকিজা, রেডিও কলম্ব এফএম, রেডিও সংস্কৃতি, রেডিও ডেসটিনি এফএম, রেডিও ঈগল স্পোর্ট এফএম, রেডিও ফ্রিকোয়েন্স মেনিয়া, রেডিও ইজউই রাই’ উমুকেনয়েজি, রেডিও মারিয়া বিডিআই, রেডিও রেমা এফএম, রেডিও স্টার এফএম ইত্যাদি। এবং আন্তর্জাতিক মালিকানাধীন রেডিও স্টেশনের মধ্যে রয়েছে- আরএফআই, রেডিও হিট আফ্রিকা, রেডিও রয়্যাল মিডিয়া। টেলিভিশন: বুরুন্ডিতে টেলিভিশন ১৯৮৪ সালে প্রথম চালু হয়েছিল, যার কভারেজ ১৯৯২ সালে জাতীয় নাগালের মধ্যে ছিল। ২০০৪ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র একটি টেলিভিশন পরিষেবা ছিল, সরকারি মালিকানাধীন টেলিভিশন ন্যাশানাল ডু বুরুন্ডি। ২০২১ সালে নিবন্ধিত টেলিভিশন স্টেশনগুলো হলো (টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ): টেলিভিশন ন্যাশনাল ডু বুরুন্ডি, হেরিটেজ টিভি, রেমা টিভি, টেলিভিশন সালামা, সিটিজেন টিভি (স্যাটেলাইট) প্রভৃতি। ইন্টারনেট: বুরুন্ডি একটি ফাইবার-অপটিক তারের নেটওয়ার্কে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস প্রশস্ত করতে $২৫ মিলিয়ন বিনিয়োগ প্রকল্প চালু করেছে। সংবাদপত্র: বুরুন্ডিতে জনপ্রিয় সংবাদপত্রের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত: আর্ক-এন-সিয়েল, বুরুন্ডি ক্রেটিয়ান, বুরুন্ডি ট্রিবিউন প্রভৃতি। ইওয়াকু, ১৯৯৩ সালে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত এবং তারা ২০০৮ সালে বুরুন্ডিতে একটি সাপ্তাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করে। এটি দ্রুত বুরুন্ডিতে সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্র হয়ে ওঠে এবং ২০১৬ সাল পর্যন্ত এটিই একমাত্র ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। শিক্ষা ২০০৯ সালে, বুরুন্ডিতে প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতার হার অনুমান করা হয়েছিল ৬৭% (৭৩% পুরুষ এবং ৬১% মহিলা), যার সাক্ষরতার হার যথাক্রমে ৭৭% এবং ৭৬%, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য। ২০১৫ সাল নাগাদ, এটি ৮৫.৬% (৮৮.২% পুরুষ এবং ৮৩.১% মহিলা) বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০২ সাল থেকে প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের মধ্যে সাক্ষরতা ১৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। বুরুন্ডির অতিমাত্রায় দারিদ্র্যতার ফলে স্কুলে অনুপস্থিতির কারণে তুলনামূলকভাবে স্বাক্ষরতার হার কিছুটা কম। বুরুন্ডিতে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, বুরুন্ডি বিশ্ববিদ্যালয়। শহরগুলোতে জাদুঘর রয়েছে, যেমন বুজুম্বুরার বুরুন্ডি ভূতাত্ত্বিক যাদুঘর এবং বুরুন্ডি জাতীয় যাদুঘর এবং গিতেগায় বুরুন্ডি মিউজিয়াম অফ লাইফ অবস্থিত। ২০১০ সালে ওয়েস্টউড হাই স্কুল, যা কানাডার ছাত্রদের দ্বারা অর্থায়ন করা ছোট গ্রামে একটি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হয়েছিল। ২০১৮ সালের হিসাবে, বুরুন্ডি শিক্ষায় তাদের মোট জিডিপির ৫.১% এর সমতুল্য বিনিয়োগ করেছে। আরও দেখুন গিতেগা বুজুম্বুরা আফ্রিকান দেশগুলোর তালিকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বুরুন্ডির সরকারি ওয়েবসাইট Books4burundi (is korean) রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ Burundi from UCB Libraries GovPubs Burundi National Consultations website আফ্রিকার রাষ্ট্র প্রজাতন্ত্র মধ্য আফ্রিকার রাষ্ট্র ১৯৬২-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল পূর্ব আফ্রিকার রাষ্ট্র স্থলবেষ্টিত দেশ স্বল্পোন্নত দেশ প্রাক্তন রাজতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Burundi
Burundi
Burundi, officially the Republic of Burundi, is a landlocked country in the Great Rift Valley at the junction between the African Great Lakes region and Southeast Africa. It is bordered by Rwanda to the north, Tanzania to the east and southeast, and the Democratic Republic of the Congo to the west; Lake Tanganyika lies along its southwestern border. The capital city is Gitega and the largest city is Bujumbura. The Twa, Hutu and Tutsi peoples have lived in Burundi for at least 500 years. For more than 200 of those years, Burundi was an independent kingdom. In 1885, it became part of the German colony of German East Africa. After the First World War and Germany's defeat, the League of Nations mandated the territories of Burundi and neighboring Rwanda to Belgium in a combined territory called Rwanda-Urundi. After the Second World War, this transformed into a United Nations Trust Territory. Burundi gained independence in 1962 and initially retained the monarchy; a 1966 coup replaced the monarchy with a one-party republic. Over the next 27 years, Burundi was ruled by a series of Tutsi dictators and notably experienced a genocide of Hutus in 1972. In July 1993, Melchior Ndadaye became Burundi's first Hutu president following the country's first multi-party presidential election. His assassination three months later during a coup attempt provoked the 12-year Burundian Civil War. In 2000, the Arusha Agreement was adopted, which was largely integrated in a new constitution in 2005. Since the 2005 post-war elections, the country's dominant party has been the National Council for the Defense of Democracy – Forces for the Defense of Democracy (CNDD–FDD), widely accused of authoritarian governance and perpetuating the country's poor human rights record. Burundi remains primarily a rural society, with just 13.4% of the population living in urban areas in 2019. Burundi is densely populated, and many young people emigrate in search of opportunities elsewhere. Roughly 85% of the population are of Hutu ethnic origin, 15% are Tutsi, and fewer than 1% are Twa. The official languages of Burundi are Kirundi, French, and English—Kirundi being officially recognised as the sole national language. English was made an official language in 2014. One of the smallest countries in Africa, Burundi's land is used mostly for subsistence agriculture and grazing. Deforestation, soil erosion, and habitat loss are major ecological concerns. As of 2005, the country was almost completely deforested. Less than 6% of its land was covered by trees, and over half of that being for commercial plantations. Burundi is the poorest country in the world by nominal GDP per capita, and is one of the least developed countries. It faces widespread poverty, corruption, instability, authoritarianism, and illiteracy. The 2018 World Happiness Report ranked the country as the world's least happy with a rank of 156. Burundi is a member of the African Union, Common Market for Eastern and Southern Africa, United Nations, East African Community (EAC), and the Non-Aligned Movement.
1190
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0
মানচিত্র
মানচিত্র ভূমির সাংকেতিক প্রতিচ্ছবি। দেশের সার্ভে বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত নির্ধারিত রং এর ব্যবহারে কোন এলাকার ভূমির উল্লেখ যোগ্য প্রাকৃতিক ও কৃত্তিম বস্তু সমূহকে নির্দিষ্ট সাংকেতিক চিহ্নের মাধ্যমে কাগজ বা কাপড়ের উপর ক্ষুদ্রাকারে মাপনী অনুযায়ী অঙ্কন করাকে ম্যাপ বা মানচিত্র বলে। কোন স্থানে অবস্থিত বস্তু সমূহের অবস্থান এবং সম্পর্কের দৃষ্টিগ্রাহ্য সাধারণ প্রকাশ হচ্ছে মানচিত্র। অনেক মানচিত্র স্থির, ত্রি-মাত্রিক স্থানের দ্বি-মাত্রিক প্রতিরূপ; আবার কিছু মানচিত্র পরিবর্তনশীল, এমনকি ত্রিমাত্রিকও হতে পারে। মানচিত্র বলতে সাধারণত ভৌগোলিক মানচিত্রকেই বোঝানো হয়, তবে মানচিত্র হতে পারে কোন স্থানের - বাস্তব বা কাল্পনিক, এতে স্কেল বা অন্যান্য অনুষঙ্গের প্রয়োজনীয়তা নাও থাকতে পারে; যেমন, ব্রেন মানচিত্রকরণ, ডিএনএ মানচিত্রকরণ এবং মহাকাশের মানচিত্রকরণ। ইতিহাস ভৌগোলিক মানচিত্র মানচিত্র মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা ভূগোল
https://en.wikipedia.org/wiki/Map
Map
A map is a symbolic depiction emphasizing relationships between elements of some space, such as objects, regions, or themes. Many maps are static, fixed to paper or some other durable medium, while others are dynamic or interactive. Although most commonly used to depict geography, maps may represent any space, real or fictional, without regard to context or scale, such as in brain mapping, DNA mapping, or computer network topology mapping. The space being mapped may be two dimensional, such as the surface of the Earth, three dimensional, such as the interior of the Earth, or even more abstract spaces of any dimension, such as arise in modeling phenomena having many independent variables. Although the earliest maps known are of the heavens, geographic maps of territory have a very long tradition and exist from ancient times. The word "map" comes from the medieval Latin: Mappa mundi, wherein mappa meant 'napkin' or 'cloth' and mundi 'the world'. Thus, "map" became a shortened term referring to a two-dimensional representation of the surface of the world.
1191
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0
চলচ্চিত্র
চলচ্চিত্র এক প্রকারের দৃশ্যমান বিনোদন মাধ্যম। চলমান চিত্র তথা "মোশন পিকচার" থেকে চলচ্চিত্র শব্দটি এসেছে। এটি একটি বিশেষ শিল্প মাধ্যম। বাস্তব জগতের চলমান ছবি ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণ করে বা এনিমেশনের মাধ্যমে কাল্পনিক জগৎ তৈরি করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। চলচ্চিত্রের ধারণা অনেক পরে এসেছে, ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে। আর এনিমেশন চিত্রের ধারণা এসেছে আরও পরে। বাংলায় চলচ্চিত্রের প্রতিশব্দ হিসেবে ছায়াছবি, সিনেমা, মুভি বা ফিল্ম শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়। চলচ্চিত্রের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ। যে সংস্কৃতিতে তা নির্মিত হয় তাকেই প্রতিনিধিত্ব করে চলচ্চিত্রটি। শিল্পকলার প্রভাবশালী মাধ্যম, শক্তিশালী বিনোদন মাধ্যম এবং শিক্ষার অন্যতম সেরা উপকরণ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে চলচ্চিত্রের। ছায়াছবির সাথে ভিজ্যুয়াল বিশ্বের সমন্বয় থাকায় সাধারণ মানুষের সাথে সবচেয়ে ভালো যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। অন্য কোন শিল্পমাধ্যম সাধারণের সাথে এতোটা যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম নয়। অন্য ভাষার চলচ্চিত্রের ডাবিং বা সাবটাইটেল করার মাধ্যমে নিজ ভাষায় নিয়ে আসার প্রচলনও রয়েছে। প্রথাগতভাবে চলচ্চিত্র নির্মিত হয় অনেকগুলো একক ছবি তথা ফ্রেমের ধারাবাহিক সমন্বয়ের মাধ্যমে। এই স্থিরচিত্রগুলি যখন খুব দ্রুত দেখানো হয় তখন দর্শক মনে করেন তিনি চলমান কিছু দেখছেন। প্রতিটি ছবির মাঝে যে বিরতি তা একটি বিশেষ কারণে দর্শকের চোখে ধরা পড়ে না। ধরা না পড়ার এই বিষয়টাকে দৃষ্টির স্থায়িত্ব বলে। সহজ কথা বলা যায়, ছবির উৎস সরিয়ে ফেলার পরও এক সেকেন্ডের ১০ ভাগের ১ ভাগ সময় ধরে দর্শকের মনে তার রেশ থেকে যায়। এভাবে চলমান ছবির ধারণা লাভের বিষয়টাকে মনোবিজ্ঞানে বিটা চলন নামে আখ্যায়িত করা হয়। ইতিহাস কৃত্রিমভাবে দ্বিমাত্রিক চলমান ছবি তৈরির কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৮৬০-এর দশকে। তখন জোট্রোপ এবং প্র্যাক্সিনোস্কোপ নামক যন্ত্র দিয়ে এ ধরনের ছবি তৈরি করা যেতো। একেবারে সাধারণ আলোক যন্ত্রের (ম্যাজিক লণ্ঠন) উন্নতি সাধন করে এগুলো তৈরি করা হয়েছিল। এগুলোর মাধ্যমে ধারাবাহিক কতগুলো স্থিরচিত্র একটার পর একটা এতো দ্রুত পরিবর্তন করা যেতো যে দর্শকের চোখে পরিবর্তন খুব একটা ধরা পড়তো না। ছবিগুলোকে খুব যত্ন সহকারে ডিজাইন করতে হতো যাতে কোন খুঁত না থাকে। এই ধারণাটিই পরবর্তীতে এনিমেশন চিত্র নির্মাণের মূলনীতি হয়ে দেখা দিয়েছিলো। স্থির চিত্রগ্রহণে সেলুলয়েড ফিল্ম আসার পর চলমান বস্তুর সরাসরি ছবি তোলা সম্ভব হলো। প্রাথমিক যুগে একটি ড্রামের মধ্যে বেশ কিছু ছবি লাগিয়ে ড্রামটিকে জোড়ে ঘুরানো হতো। একটা বিশেষ দিক থেকে দর্শক ড্রামের দিকে তাকালে চলমান চিত্র দেখতে পেতো। ড্রামের গতি ছিল সাধারণত সেকেন্ডে ৫ বা ১০ বার এবং ড্রামগুলো কয়েনের মাধ্যমে অর্থ আদায় করতো। ১৮৮০'র দশকে চলচ্চিত্র ক্যামেরা উদ্ভাবিত হয়। এর মাধ্যমে অনেকগুলো স্থিরচিত্রকে একটি মাত্র রিলে সংরক্ষণ করা যেতো। এই রিলগুলোকে পরবর্তীতে চলচ্চিত্র রূপে দেখানো হতো প্রজেক্টরের মাধ্যমে। প্রজেক্টরের আলো রিলের উপর ফেলা হতো এবং রিলের ছবিগুলোকে বিবর্ধিত করে একটি বড় পর্দার উপর ফেলা হতো যা দর্শকরা দেখতে পেতো। প্রথম দিককার চলচ্চিত্রগুলো সবই ছিল বাস্তব ঘটনার সরাসরি দৃশ্যায়ন এবং প্রদর্শন। সেখানে কোন সম্পাদনা বা চলচ্চিত্ররূপী উপস্থাপনার সুযোগ ছিল না। ১৮৯৪ সালের দিকেই ডিকসন শব্দ এবং ছবি একসাথে ধারণের পরীক্ষা শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার সে প্রচেষ্টাকে এড়িয়ে গিয়ে নির্বাক চলচ্চিত্র প্রাধান্য বিস্তার করে এবং জনমনে বিশেষ ছাপ ফেলতে সক্ষম হয়। ঊনবিংশ শতকের শেষ পর্যন্ত নির্বাক চলচ্চিত্রই ছিল একমাত্র চলমান শিল্প মাধ্যম। বিংশ শতকের শুরুতে চলচ্চিত্র বর্ণনামূলক ধারায় রূপ নিতে শুরু করে। অনেকগুলো দৃশ্যকে একসাথে জোড়া লাগিয়ে এবং প্রত্যেকটির জন্য বর্ণনাভঙ্গি নির্দিষ্ট করে, প্রচার করা হতে থাকে। ধীরে ধীরে দৃশ্যগুলোকে বিভিন্ন আক্র এবং কোণ থেকে নেয়া অনেকগুলো শটে ভাগ করা হয়। এছাড়া চলমান ক্যামেরার মাধ্যমে চলচ্চিত্র গল্প ফুটিয়ে তোলার কৌশল আবিষ্কৃত হয়। তখনও ছবি নির্বাক ছিল। কিন্তু, প্রতিটি শটের সাথে মিল রেখে সঙ্গীত এবং বাজনা বাজানোর জন্য সিনেমা হলে বা মঞ্চে অর্কেস্ট্রা দল থাকতো। বড় বড় প্রযোজনা কোম্পানিগুলো এসবের ব্যবস্থা করতো। হলিউডের উত্থানের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলচ্চিত্র বিকশিত হয়ে উঠলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ইউরোপে এই শিল্পটি ততোটা বিকশিত হয়ে উঠতে পারেনি। অবশ্য ১৯২০-এর দশক থেকে সের্গে আইজেনস্টাইন, এফ ডব্লিউ মার্নো এবং ফ্রিৎস ল্যাং এর মতো ইউরোপীয় পরিচালকরা ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ, চার্লি চ্যাপলিন, বুস্টার কিটন প্রমুখ মার্কিন পরিচালক ও অভিনেতাদের সাথে মিলে ইউরোপে চলচ্চিত্র বিস্তারের কাজ শুরু করেন। এই দশকেই প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে চলচ্চিত্রের শটগুলোর সাথে ঐকতান বজায় রেখে শব্দ, সঙ্গীত এবং কথোপকথন যুক্ত করা সম্ভব হয়। উদ্ভব হয় সবাক চলচ্চিত্রের। ইংরেজতে এগুলোকে "টকিং পিকচার" বা সংক্ষেপে "টকি" (talky) বলা হতো। এর পরে চলচ্চিত্র শিল্পে সবচেয়ে বড় সংযোজন ছিল "প্রাকৃতিক রঙ" যুক্ত করা। শব্দ যুক্ত করার পর খুব দ্রুত নির্বাক চলচ্চিত্র এবং মঞ্চের বাদ্য-বাজনা বিলীন হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু সাদাকালোর বদলে চলচ্চিত্র রঙের ব্যবহার করার প্রচলন অনেক ধীরে ধীরে হয়েছে। এর মূল কারণ ছিল রঙিন চলচ্চিত্রের খরচ এবং সামঞ্জস্য। প্রথমদিকে সাদা-কালো এবং রঙিন চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকদের দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম ছিল। কিন্তু ক্রমাগত বেশি বেশি রঙিন চলচ্চিত্র নির্মিত হতে থাকে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় রঙিন চলচ্চিত্রই প্রাধান্য বিস্তার করে। কারণ প্রযোজকরা বুঝতে পারছিলেন, রঙিনের দিকে দর্শকদের ঝোঁক বেশি। আরও একটি কারণ ছিল, টেলিভিশন ১৯৬০-এর দশকের আগে রঙিন হয়নি। তাই টিভির সাদাকালোকে হারানোর জন্য চলচ্চিত্র রঙের সংযোজন আবশ্যক ছিল। ১৯৬০-এর দশকের পরে রঙিন চলচ্চিত্রই নির্মাতাদের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠে। ১৯৬০ এর দশকে স্টুডিও পদ্ধতির পতনের পর কয়েক দশক জুড়ে চলচ্চিত্র জগতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে চলচ্চিত্র শিক্ষা গুরুত্ব অর্জন করে। নব হলিউড, ফরাসি নবকল্লোল এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র স্কুলের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এটি ত্বরান্বিত হয়। আর ১৯৯০-এর দশকের পর ডিজিটাল প্রযুক্তি চলচ্চিত্র নির্মাণের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠে। চলচ্চিত্র তত্ত্ব এই চলচ্চিত্রের সুসংক্ষিপ্ত, সুষ্ঠু এবং পদ্ধতিগত ধারণা তৈরি করার নামই চলচ্চিত্র তত্ত্ব। এসব তত্ত্বের মূল উদ্দেশ্য চলচ্চিত্রকে একটি শিল্প হিসেবে অধ্যয়নের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা। Ricciotto Canudo ১৯১১ সালে প্রকাশিত তার "The Birth of the Sixth Art" নামক মেনিফেস্টোতে প্রথম চলচ্চিত্র তত্ত্বের উল্লেখ করেন। এরপরে ফর্মালিস্ট তত্ত্ব দিয়ে এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন Rudolf Arnheim, Béla Balázs এবং Siegfried Kracauer। এই তাত্ত্বিকেরা চলচ্চিত্রকে দেখেছেন বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন একটি প্রকৃত শিল্প মাধ্যম হিসেবে। André Bazin এই তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, চলচ্চিত্রের সার্থকতা যান্ত্রিক উপায়ে বাস্তবতাকে পুনঃনির্মাণ করার মধ্যে নিহিত। বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা কখনও চলচ্চিত্রের লক্ষ্য হতে পারে না। এই চিন্তাধারার ফলে চলচ্চিত্র রিয়েলিস্ট তথা বাস্তবিকতা তত্ত্বের জন্ম হয়। বর্তমানে Lacan এর মনোবিশ্লেষণ এবং Ferdinand de Saussure এর সেমিওটিক্স এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র নতুন কিছু তত্ত্বের জন্ম হয়েছে। এগুলো হল মনোবিশ্লেষণমূলক চলচ্চিত্র তত্ত্ব, স্ট্রাকচারালিস্ট চলচ্চিত্র তত্ত্ব, নারীবাদী চলচ্চিত্র তত্ত্ব ইত্যাদি। সমালোচনা ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে চলচ্চিত্রের আবির্ভাব হয়। ১৯০০ এর দশকের প্রথম দিকে চলচ্চিত্রের প্রথমদিকের শৈল্পিক সমালোচনার আবির্ভাব হয়। চলচ্চিত্র সমালোচনার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় দ্য অপটিক্যাল ল্যান্টার্ন এণ্ড সিনেমাটোগ্রাফ নামক সাময়িকীতে, পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে বায়োস্কোপ পত্রিকা চলচ্চিত্র সমালোচনা প্রকাশ করে। প্রাচীনকাল থেকে শিল্প হিসেবে সংগীত, সাহিত্য, চিত্রকর্মের অস্তিত্ব থাকলেও চলচ্চিত্র তুলনামূলকভাবে নতুন ধরনের শিল্প। এজন্য চলচ্চিত্র নিয়ে প্রথমদিককার রচনাগুলোতে এটা নিয়েই যুক্তি দেখানো হত যে চলচ্চিত্রকেও শিল্প হিসেবে সম্মান করা যেতে পারে। ১৯১১ সালে রিকশিওত্তো ক্যানুডো একটি ইসতেহার লেখেন যেখানে চলচ্চিত্রকে ষষ্ঠ শিল্প (পরবর্তীতে "সপ্তম শিল্প") হিসেবে দাবি করা হয়। এরপরও কয়েক দশক ধরে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত শিল্পের চেয়ে চলচ্চিত্রকে কম সম্মানের শিল্প হিসেবে মূল্যায়ন করা হত। চলচ্চিত্রের ধরন বিষয়বস্তু, পরিপ্রেক্ষিত, পটভূমি আর অবস্থানের উপর ভিত্তি করে যেকোন সাহিত্য মাধ্যমেরই ধরন নির্দিষ্ট করা যায়। চলচ্চিত্রেরও এরকম কিছু ধরন রয়েছে যাদেরকে ইংরেজিতে জনরা (genre) বলে। এই ধরনগুলো মূলত সারণীকরণের মাধ্যমে করা হয়। ধরন দিয়ে একটি চলচ্চিত্রকে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। একটি চলচ্চিত্র আবার একাধিক ধরনের মধ্যে পড়তে পারে। জনপ্রিয় কিছু ধরনের মধ্যে রয়েছে হরর, রোমাঞ্চ, অ্যাকশন, থ্রিলার, ঐতিহাসিক, মহাকাব্যিক, রূপকথা, অপরাধ, কমেডি ইত্যাদি। আরও দেখুন চলচ্চিত্র উৎসবের তালিকা চলচ্চিত্রের তালিকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Allmovie – Information on films: actors, directors, biographies, reviews, cast and production credits, box office sales, and other movie data. Film Site – Reviews of classic films Rottentomatoes.com – Movie reviews, previews, forums, photos, cast info, and more. The Internet Movie Database (IMDb) – Information on current and historical films and cast listings. দৃশ্যকলা মাধ্যম মাধ্যম বিন্যাস ফরাসি উদ্ভাবন মূল বিষয়ের নিবন্ধ ১৯শ শতাব্দীর উদ্ভাবন
https://en.wikipedia.org/wiki/Film
Film
A film (British English) – also called a movie (American English), motion picture, moving picture, picture, photoplay or (slang) flick – is a work of visual art that simulates experiences and otherwise communicates ideas, stories, perceptions, feelings, beauty, or atmosphere through the use of moving images. These images are generally accompanied by sound and, more rarely, other sensory stimulations. The word "cinema", short for cinematography, is often used to refer to filmmaking and the film industry, and the art form that is the result of it.
1192
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%A8
আইন
মানুষকে সুষ্ঠু, স্বাধীন এবং সুশৃংখলভাবে জীবন পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন তৈরি এবং প্রয়োগ করা হয় তাকে আইন বলে। আইনের ইংরেজি প্রতিশব্দ Law (ল) যা Lag (ল্যাগ) নামক শব্দ থেকে উদ্ভূত। Lag এর আভিধানিক অর্থ স্থির, অপরিবর্তনীয় এবং যা সর্বত্র সমানভাবে প্রযোজ্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইন হলো সার্বভৌম শক্তি কর্তৃক বলবৎযোগ্য বিধান, যা সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়। আইন হলো সামাজিক রীতিনীতি সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত বিশেষ জ্ঞান বা দক্ষতা। আইন হলো নিয়মের এক পদ্ধতি যাকে নাগরিক বাধ্যতা, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজের ভিত্তি নির্মাণ করতে ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যকরী করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া আইন বলতে সামাজিকভাবে স্বীকৃত লিখিত ও অলিখিত বিধিবিধান ও রীতিনীতিকে বোঝায়।হুগো গ্রোশিয়াস (১০ এপ্রিল ১৫৮৩ - ২৮ আগস্ট ১৬৪৫) ছিলেন ওলন্দাজ প্রজাতন্ত্রের একজন আইনজ্ঞ। তিনি ফ্রান্সিসকো দে ভিতোরিয়া আর আলবার্তো জেন্তিলির সাথে মিলে প্রাকৃতিক আইনের উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিষ্টটল লিখেছিলেন, "আইনের শাসন যেকোন ব্যক্তি শাসনের চেয়ে ভাল।" সামাজিক জীবনে যে রীতিনীতি বা বিধিবিধান মানুষ মেনে চলে তা হলো সামাজিক আইন। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় আইন হলো রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বিভিন্ন জাতীয় নীতিমালার প্রেক্ষিতে সমাজে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে সার্বজনীনভাবে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন নির্দেশ। সংজ্ঞা মূলধারার সংজ্ঞা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আইনের অসংখ্য সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মেরিয়াম-ওয়েস্টার হতে তৃতীয় নতুন আন্তর্জাতিক অভিধান আইনটিকে এইভাবে সংজ্ঞায়িত করেন: আইন একটি সম্প্রদায়ের বাধ্যতামূলক রীতি; একটি নিয়ম বা আচরণের পদ্ধতি বা পদক্ষেপ যা একটি সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ দ্বারা বাধ্যতামূলক হিসাবে নির্ধারিত বা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত ; নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত, স্বীকৃত বা প্রয়োগের দ্বারা অনুমোদনের (বাধ্যতামূলক, ডিক্রি, রিসক্রিপ্ট, আদেশ, অধ্যাদেশ, আইন, সমাধান, বিধি, বিচারিক সিদ্ধান্ত বা ব্যবহার হিসাবে) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৯৭৩ সালে স্ক্রিবনার দ্বারা প্রকাশিত আইডিয়াস অফ হিস্ট্রি অফ আইডিয়াস আইন অনুসারে সংজ্ঞাটিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিল: "একটি আইনি ব্যবস্থা হলো মানব আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে সুস্পষ্ট, প্রাতিষ্ঠানিক এবং জটিল পদ্ধতি, একই সাথে এটি কেবল একটি অংশে ভূমিকা পালন করে, কম প্রাতিষ্ঠানিক ধরনের সামাজিক ও নৈতিক বিধিগুলির জন্য আচরণকে প্রভাবিত করে৷ আইনের দর্শন আইনের দর্শন সাধারণত আইনশাস্ত্র নামে পরিচিত। আদর্শিক আইনশাস্ত্র প্রশ্ন করে "আইন কী হওয়া উচিত?"। অপরদিকে বিশ্লেষণমূলক আইনশাস্ত্র প্রশ্ন করে "আইন কী?" বিশ্লেষণাত্মক আইনশাস্ত্র "আইনের সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা" তৈরি করার জন্য বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। ১৯৭১ সালে, ব্যারন হ্যাম্পস্টেড পরামর্শ দেন যে এই ধরনের কোনো সংজ্ঞা তৈরি করা যাবে না। ম্যাককুব্রে এবং হোয়াইট বলেন যে "আইন কি?" এই প্রশ্নের কোনো সহজ উত্তর নেই। গ্লানভিল উইলিয়ামস বলেছিলেন, "আইন" শব্দের অর্থ সেই শব্দটি কোন প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেছিলেন, " প্রাথমিক প্রথাগত আইন " ও " পৌর আইনের " মধ্যে "আইন" শব্দের দুটি ভিন্ন এবং অপরিবর্তনীয় অর্থ বিদ্যমান। থারম্যান আর্নল্ড বলেছিলেন ,"এটি স্পষ্ট যে "আইন" শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করা অসম্ভব এবং এটিও সমানভাবে স্পষ্ট যে এই শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করার সংগ্রাম কখনই পরিত্যাগ করা উচিত নয়।" "আইন" শব্দটি সংজ্ঞায়িত করার প্রয়োজন নেই এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা সম্ভব। (যেমন "আসুন সাধারণ বিষয়গুলো ভুলে যাই এবং মামলায় নেমে যাই")। একটি সংজ্ঞায় বলা হয় "আইন হলো নিয়ম ও নির্দেশিকার একটি ব্যবস্থা যা আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়"। দ্য কনসেপ্ট অফ ল- এ, এইচএলএ হার্ট যুক্তি দিয়েছিলেন যে আইন হলো একটি "নিয়মের ব্যবস্থা"; জন অস্টিন বলেন, আইন হলো "একটি সার্বভৌম ক্ষমতার আদেশ, যা অনুমোদনের হুমকির মাধ্যমে সমর্থিত"; রোনাল্ড ডোয়ার্কিন আইনের সাম্রাজ্য শিরোনামে তার পাঠ্যে আইনকে ন্যায়বিচার অর্জনের জন্য একটি "ব্যাখ্যামূলক ধারণা" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জোসেফ রাজ যুক্তি দেন যে আইন মানুষের স্বার্থের মধ্যস্থতা করার জন্য একটি "কর্তৃপক্ষ"। অলিভার ওয়েন্ডেল হোমস আইনকে "আদালত বাস্তবে কী করবে তার ভবিষ্যদ্বাণী, এবং এর চেয়ে বেশি ছলনাময় কিছু নয়।" বলে সম্বোধন করেছেন। টমাস অ্যাকুইনাস তার আইন সম্পর্কিত গ্রন্থে যুক্তি দেন যে আইন হলো জিনিসগুলোর একটি যুক্তিসঙ্গত ক্রম, যা সাধারণ ভালোর সাথে সম্পর্কিত, যেটি সম্প্রদায়ের যত্ন নেওয়ার জন্য দায়ী এমন কারো মাধ্যমে তা প্রবর্তিত হয়। এই সংজ্ঞায় ইতিবাচক এবং প্রকৃতিবাদী উভয় প্রকার উপাদানই রয়েছে। আরও দেখুন আইন প্রণয়ন রাষ্ট্রবিজ্ঞান আইনের শ্রেণিবিভাজন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Company Registration Law কর্তৃপক্ষ মানববিদ্যা সামাজিক ধারণা মূল বিষয়ের নিবন্ধ বিচার
https://en.wikipedia.org/wiki/Law
Law
Law is a set of rules that are created and are enforceable by social or governmental institutions to regulate behavior, with its precise definition a matter of longstanding debate. It has been variously described as a science and as the art of justice. State-enforced laws can be made by a group legislature or by a single legislator, resulting in statutes; by the executive through decrees and regulations; or established by judges through precedent, usually in common law jurisdictions. Private individuals may create legally binding contracts, including arbitration agreements that adopt alternative ways of resolving disputes to standard court litigation. The creation of laws themselves may be influenced by a constitution, written or tacit, and the rights encoded therein. The law shapes politics, economics, history and society in various ways and also serves as a mediator of relations between people. Legal systems vary between jurisdictions, with their differences analysed in comparative law. In civil law jurisdictions, a legislature or other central body codifies and consolidates the law. In common law systems, judges may make binding case law through precedent, although on occasion this may be overturned by a higher court or the legislature. Historically, religious law has influenced secular matters and is, as of the 21st century, still in use in some religious communities. Sharia law based on Islamic principles is used as the primary legal system in several countries, including Iran and Saudi Arabia. The scope of law can be divided into two domains: public law concerns government and society, including constitutional law, administrative law, and criminal law; while private law deals with legal disputes between parties in areas such as contracts, property, torts, delicts and commercial law. This distinction is stronger in civil law countries, particularly those with a separate system of administrative courts; by contrast, the public-private law divide is less pronounced in common law jurisdictions. Law provides a source of scholarly inquiry into legal history, philosophy, economic analysis and sociology. Law also raises important and complex issues concerning equality, fairness, and justice.
1193
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%BF%E0%A6%A4
গণিত
গণিত হল জ্ঞানের একটি ক্ষেত্র যাতে সংখ্যা, সূত্র এবং সম্পর্কিত কাঠামো, আকার এবং সেগুলির মধ্যে থাকা স্থানগুলি এবং পরিমাণ এবং তাদের পরিবর্তনগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই বিষয়গুলি যথাক্রমে সংখ্যা তত্ত্বের প্রধান উপশাখা, বীজগণিত,  জ্যামিতি, এবং বিশ্লেষণ। তবে একাডেমিক শৃঙ্খলার জন্য একটি সাধারণ সংজ্ঞা সম্পর্কে গণিতবিদদের মধ্যে কোন সাধারণ ঐকমত্য নেই। গণিতে সংখ্যা ও অন্যান্য পরিমাপযোগ্য রাশিসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়। গণিতবিদগন বিশৃঙ্খল ও অসমাধানযুক্ত সমস্যাকে শৃঙ্খলভাবে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া খুঁজে বেড়ান ও তা সমাধানে নতুন ধারণা প্রদান করে থাকেন। গাণিতিক প্রমাণের মাধ্যমে এই ধারণাগুলির সত্যতা যাচাই করা হয়। গাণিতিক সমস্যা সমাধান সম্পর্কিত গবেষণায় বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ বা শত শত বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। গণিতের সার্বজনীন ভাষা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা একে অপরের সাথে ধারণার আদান-প্রদান করেন। গণিত তাই বিজ্ঞানের ভাষা। ১৭শ শতক পর্যন্ত কেবল পাটীগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতিকে গাণিতিক শাস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হত। সেসময় গণিত দর্শন ও বিজ্ঞানের চেয়ে কোন পৃথক শাস্ত্র ছিল না। আধুনিক যুগে এসে গণিত বলতে যা বোঝায়, তার গোড়াপত্তন করেন প্রাচীন গ্রিকেরা, পরে মুসলমান পণ্ডিতেরা এগুলি সংরক্ষণ করেন, অনেক গবেষণা করেন এবং খ্রিস্টান পুরোহিতেরা মধ্যযুগে এগুলি ধরে রাখেন। তবে এর সমান্তরালে ভারতে এবং চীন-জাপানেও প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগে স্বতন্ত্রভাবে উচ্চমানের গণিতচর্চা করা হত। ভারতীয় গণিত প্রাথমিক ইসলামী গণিতের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ১৭শ শতকে এসে আইজাক নিউটন ও গটফ্রিড লাইবনিৎসের ক্যালকুলাস উদ্ভাবন এবং ১৮শ শতকে অগুস্তঁ লুই কোশি ও তার সমসাময়িক গণিতবিদদের উদ্ভাবিত কঠোর গাণিতিক বিশ্লেষণ পদ্ধতিগুলির উদ্ভাবন গণিতকে একটি একক, স্বকীয় শাস্ত্রে পরিণত করে। তবে ১৯শ শতক পর্যন্ত কেবল পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিদ ও প্রকৌশলীরাই গণিত ব্যবহার করতেন। ১৯শ শতকের শুরুতে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের যে আধুনিক ধারা সূচিত হয়, সে-সংক্রান্ত গবেষণাগুলির ফলাফল প্রকাশের জন্য জটিল গাণিতিক মডেল উদ্ভাবন করা হয়। বিশুদ্ধ গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণায় জোয়ার আসে। অন্যদিকে ২০শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কম্পিউটারের আবিষ্কার এ-সংক্রান্ত সাংখ্যিক পদ্ধতিগুলির গবেষণা বৃদ্ধি করে। গণিতের ইতিহাস ইতিহাস ও গণিতবিশ্ব গণনা করা ছিল আদিমতম গাণিতিক কর্মকাণ্ড। আদিম মানুষেরা পশু ও বাণিজ্যের হিসাব রাখতে গণনা করত। আদিম সংখ্যা ব্যবস্থাগুলি প্রায় নিশ্চিতভাবেই ছিল এক বা দুই হাতের আঙুল ব্যবহার করে সৃষ্ট। বর্তমানের ৫ ও ১০-ভিত্তিক সংখ্যা ব্যবস্থার বিস্তার এরই সাক্ষ্য দেয়। মানুষ যখন সংখ্যাগুলিকে বাস্তব বস্তু থেকে পৃথক ধারণা হিসেবে গণ্য করা শিখল এবং যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ --- এই চারটি মৌলিক অপারেশন বা প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করল, তখনই পাটীগণিতের যাত্রা শুরু হল। আর জ্যামিতির শুরু হয়েছিল রেখা ও বৃত্তের মত সরল ধারণাগুলি দিয়ে। গণিতের পরবর্তী উন্নতির জন্য চলে যেতে হবে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে, যখন ব্যাবিলনীয় ও মিশরীয় সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলনীয়রা এবং নীল নদের অববাহিকায় প্রাচীন মিশরীয়রা সুশৃঙ্খল গণিতের প্রাচীনতম নিদর্শন রেখে গেছে। তাদের গণিতে পাটীগণিতের প্রাধান্য ছিল। জ্যামিতিতে পরিমাপ ও গণনাকে প্রাধান্য দেয়া হয়, স্বতঃসিদ্ধ বা প্রমাণের কোন নিদর্শন এগুলিতে পাওয়া যায় না। প্রাচীন ব্যাবিলনীয়দের গণিত ব্যাবিলনিয়ার গণিত সম্পর্কে আমরা জানতে পারি এই সভ্যতার নিদর্শনবাহী কাদামাটির চাঙড় থেকে, যেগুলির উপর ব্যাবিলনীয়রা কীলক আকৃতির খোদাই করে করে লিখত। এই লেখাগুলিকে কিউনিফর্ম বলা হয়। সবচেয়ে প্রাচীন চাঙড়গুলি খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ সালের বলে ধারণা করা হয়। খোদাইগুলির বেশির ভাগ গণিতই ছিল বাণিজ্য বিষয়ক। ব্যাবিলনীয়রা অর্থ ও পণ্যদ্রব্য আদানপ্রদানের জন্য পাটীগণিত ও সরল বীজগণিত ব্যবহার করত। তারা সরল ও যৌগিক সুদ গণনা করতে পারত, কর গণনা করতে পারত, এবং রাষ্ট্র, ধর্মালয় ও জনগণের মধ্যে সম্পদ কীভাবে বন্টিত হবে তা হিসাব করতে পারত। খাল কাটা, শস্যাগার নির্মাণ ও অন্যান্য সরকারি কাজকর্মের জন্য পাটীগণিত ও জ্যামিতির ব্যবহার হত। শস্য বপন ও ধর্মীয় ঘটনাবলির জন্য পঞ্জিকা নির্ধারণেও গণিতের ব্যবহার ছিল। বৃত্তকে ৩৬০টি ভাগে বা ডিগ্রীতে বিভক্ত করা এবং প্রতি ডিগ্রী ও মিনিটকে আরও ৬০টি ভাগে বিভক্ত করার রীতি ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকে এসেছে। ব্যাবিলনীয়রাই একেক দিনকে ২৪ ঘণ্টায়, প্রতি ঘণ্টাকে ৬০ মিনিট ও প্রতি মিনিটকে ৬০ সেকেন্ডে ভাগ করে। তাদের সংখ্যা ব্যবস্থা ছিল ৬০-ভিত্তিক। ১-কে একটি কীলকাকৃতি খাঁজ দিয়ে নির্দেশ করা হত এবং এটি বারবার লিখে ৯ পর্যন্ত নির্দেশ করা হত। ১১ থেকে ৫৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলি ১ এবং ১০-এর জন্য ব্যবহৃত চিহ্ন ব্যবহার করে নির্দেশ করা হত। ৬০-এর চেয়ে বড় সংখ্যার জন্য ব্যাবিলনীয়রা একটি স্থাননির্দেশক চিহ্ন ব্যবহার করত। স্থানিক মানের এই ধারণার উদ্ভাবন গণনাকে অনেক এগিয়ে দেয়। এর ফলে একই প্রতীক বিভিন্ন স্থানে বসিয়ে একাধিক মান নির্দেশ করা সম্ভব হয়। ব্যাবলিনীয়দের সংখ্যা ব্যবস্থায় ভগ্নাংশও নির্দেশ করা যেত। তবে তাদের ব্যবস্থায় শূন্য ছিল না, এবং এর ফলে দ্ব্যর্থতার সৃষ্টি হয়। ব্যাবিলনীয়রা বিপরীত সংখ্যা, বর্গ সংখ্যা, বর্গমূল, ঘন সংখ্যা ও ঘনমূল, এবং যৌগিক সুদের সারণী প্রস্তুত করেছিল। তারা ২-এর বর্গমূলের একটি ভাল আসন্ন মান নির্ধারণ করতে পেরেছিল। কিউনিফর্ম চাঙড়গুলি থেকে আরও প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ব্যাবিলনীয়রা দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানের সূত্র আবিষ্কার করেছিল এবং তারা দশটি অজানা রাশি বিশিষ্ট দশটি সমীকরণের ব্যবস্থা সমাধান করতে পারত। খিস্টপূর্ব ৭০০ অব্দে এসে ব্যাবিলনীয়রা গণিত ব্যবহার করে চাঁদ ও গ্রহসমূহের গতি নিয়ে গবেষণা আরম্ভ করে। এর ফলে তারা গ্রহগুলির দৈনিক অবস্থান পূর্বাভাসে সক্ষম হয়, যা জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্র --- দুই ক্ষেত্রেই তাদের কাজে আসে। জ্যামিতিতে ব্যাবিলনীয়রা সদৃশ ত্রিভুজের একই বাহুগুলির মধ্যে সমানুপাতিকতার সম্পর্কের ব্যাপারে অবহিত ছিল। তারা পীথাগোরাসের উপপাদ্য ব্যবহার করে সমস্যা সমাধান করতে পারত এবং অর্ধবৃত্তের উপর অঙ্কিত কোণ যে সমকোণ হয়, তা জানত। তারা সরল সমঢতলীয় বিভিন্ন চিত্র যেমন সুষম বহুভুজ, ইত্যাদির ক্ষেত্রফলের সূত্র এবং সরল ঘনবস্তুগুলির আয়তনের সূত্র বের করেছিল। তারা পাই-এর জন্য ৩-কে আসন্ন মান হিসেবে ব্যবহার করত। প্রাচীন মিশরীয়দের গণিত মিশরীয়রা তাদের স্তম্ভগুলিতে হায়ারোগ্লিফের মাধ্যমে সংখ্যা অঙ্কিত করেছিল, কিন্তু মিশরীয় গণিতের আসল নিদর্শন হল আনুমানিক ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দুইটি প্যাপিরাস। এগুলিতে পাটীগণিত ও জ্যামিতির নানা সমস্যা আছে, যার মধ্যে বাস্তব সমস্যা যেমন নির্দিষ্ট পরিমাণ মদ তৈরির জন্য কতটুকু শস্য লাগবে, এক জাতের শস্য ব্যবহার করে মদের যে মান পাওয়া যায়, অন্য জাতের শস্য কতটুকু কাজে লাগিয়ে সেই একই মান পাওয়া যায়, তার সমস্যা। মিশরীয় বেতন নির্ণয়ে, শস্যক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ও শস্যাগারের আয়তন নির্ণয়ে, কর নির্ণয়ে ও নির্দিষ্ট কাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় ইটের সংখ্যা বের করতে গণিতকে কাজে লাগাত। এছাড়াও পঞ্জিকা গণনাতেও তারা গণিতভিত্তিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ব্যবহার করত। পঞ্জিকার সাহায্যে তারা ধর্মীয় ছুটির তারিখ ও নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের সময় নির্দেশ করতে পারত। মিশরীয়দের সংখ্যা ব্যবস্থা ছিল ১০-ভিত্তিক। তারা ১০-এর বিভিন্ন ঘাতের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হায়ারোগ্লিফ প্রতীক ব্যবহার করত। তারা ১-এর প্রতীক পাঁচবার লিখে ৫, ১০-এর প্রতীক ৬ বার লিখে ৬০, আর ১০০-র প্রতীক ৩ বার লিখে ৩০০ নির্দেশ করত। একসাথে এই প্রতীকগুলি ৩৬৫ নির্দেশ করত। সমসাময়িক যুগে গণিত ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গণিত সম্মেলনে জার্মান গণিতবিদ ডাভিড হিলবের্ট একটি বক্তৃতায় তার তত্ত্বগুলি ব্যাখ্যা করেন। হিলবের্ট গোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক আসনপ্রাপ্ত গণিতবিদ ছিলেন, যে আসনে এর আগে গাউস ও রিমান অধিষ্ঠিত ছিলেন। হিলবের্ট গণিতের প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। জ্যামিতির ভিত্তি (১৮৯৯) নিয়ে তার ধ্রুপদী গবেষণা যেমন ছিল, তেমনি অন্যান্য গণিতবিদদের সাথে গণিতের ভিত্তি নিয়ে গবেষণাতেও তিনি অবদান রাখেন। প্যারিসের বক্তৃতায় হিলবের্ট ২৩টি গাণিতিক সমস্যা উপস্থাপন করেন এবং তার বিশ্বাস ছিল ২০শ শতকের গাণিতিক গবেষণার উদ্দেশ্য হবে এই সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজে বের করা। বাস্তবিকপক্ষেই এই সমস্যাগুলি ২০শ শতকের সিংহভাগ গাণিতিক গবেষণাকর্মের জন্য উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছিল। যখনই কোনও গণিতবিদ একটি করে হিলবের্টের সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়ার ঘোষণা দিতেন, আন্তর্জাতিক গণিতবিদ সম্প্রদায় অধৈর্যের সাথে সেই সমাধানের বিশদ বিবরণের অপেক্ষায় থাকত। যদিও উপরের সমস্যাগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা সত্ত্বেও হিলবের্ট একটি ব্যাপার কল্পনায় আনতে পারেন নি, আর তা হল ডিজিটাল প্রোগ্রামযোগ্য গণকযন্ত্র তথা কম্পিউটারের উদ্ভাবন। কম্পিউটার গণিত নিয়ে গবেষণার প্রকৃতি পালটে দেয়। কম্পিউটারের উৎস হিসেবে পাস্কাল ও লাইবনিৎসের গণনাযন্ত্রিকা বা ক্যালকুলেটরকে গণ্য করা হলেও কেবল ১৯শ শতকে এসে ইংরেজ বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজ এমন একটি যন্ত্র নকশা করতে সক্ষম হন যা কাগজের টুকরা বা ফিতাতে লেখা নির্দেশমালা অনুসরণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাণিতিক ক্রিয়া সম্পাদন করতে সক্ষম ছিল। ব্যাবেজের কল্পনাপ্রসূত যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সঠিক প্রযুক্তি তার আমলে লভ্য ছিল না। রিলে, বায়ুশূন্য নল ও ট্রানজিস্টরের উদ্ভাবনের পরে বড় মাপের প্রোগ্রামযোগ্য গণনা সম্পাদন করা সম্ভবপর হয়। এই প্রযুক্তিগত উন্নতি গণিতের বেশ কিছু শাখায় বড় ধরনের সাহায্য করে, যেমন সাংখ্যিক বিশ্লেষণ ও সসীম গণিতের মতো ক্ষেত্রগুলিতে। এছাড়া এর ফলে গণিতের নতুন নতুন শাখারও উদ্ভব হয়, যেমন অ্যালগোরিদমসমূহের গবেষণা। সংখ্যাতত্ত্ব, ব্যবকলনীয় সমীকরণ ও বিমূর্ত বীজগণিতের মত বিচিত্র সব ক্ষেত্রে কম্পিউটার প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। এছাড়া কম্পিউটারের সুবাদে এমন সব গাণিতিক সমস্যা সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়, যেগুলি অতীতে করা সম্ভব ছিল না। যেমন ১৯শ শতকের মধ্যভাগে প্রস্তাবিত চার বর্ণ টপোগাণিতিক সমস্যাটি সমাধান করা সম্ভব হয়। চার বর্ণ উপপাদ্যটিতে বলা হয় যে যেকোনও মানচিত্র অঙ্কনের জন্য চারটি বর্ণ বা রঙই যথেষ্ট, সাথে শর্ত হল দুইটি পাশাপাশি দেশের বর্ণ ভিন্ন হতে হবে। ১৯৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উচ্চ গণনক্ষমতাবিশিষ্ট কম্পিউটার ব্যবহার করে উপপাদ্যটি প্রমাণ করে দেখানো হয়। আধুনিক বিশ্বে গণিতের ক্ষেত্রে জ্ঞান যে গতিতে অগ্রসর হয়েছে, তা অতীতে কখনও ঘটেনি। যেসমস্ত তত্ত্ব অতীতে একে অপর থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র হিসেবে গণ্য করা হত, সেগুলিকে একীভূত করে সম্পূর্ণতর ও আরও বিমূর্ত তত্ত্ব গঠন করা হয়েছে। যদিও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির সিংহভাগই সমাধান করা হয়েছে, বেশ কিছু সমস্যা যেমন রিমানের অনুমিতিটি এখনও মীমাংসিত হয়নি। একই সময়ে নতুন নতুন উদ্দীপনামূলক সমস্যা আবির্ভূত হয়ে চলেছে। আপাতদৃষ্টিতে গণিতের সবচেয়ে বিমূর্ত তত্ত্বগুলিও বাস্তবে প্রয়োগ খুঁজে পাচ্ছে। গণিতের মৌলিক ধারণাসমূহ অঙ্ক গণিতে অঙ্ক হলো সংখ্যা প্রকাশক চিহ্ন। কোনো সংখ্যায় একটি অঙ্কের দুধরনের মান থাকে, নিজস্ব মান ও স্থানীয় মান। দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে ০ থেকে শুরু করে ৯ পর্যন্ত দশটি অঙ্ক আছে। এছাড়াও রয়েছে আরও নানা ধরনের সংখ্যা পদ্ধতি যেমনঃ বাইনারি( দুই ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি), অক্টাল ( আট ভিত্তিক), হেক্সাডেসিমাল ( ষোলো ভিত্তিক)। তবে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিই বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংখ্যা পদ্ধতি । গণিতের প্রধান ক্ষেত্রসমূহ পরিমাণ পরিমাণ বিষয়ক গবেষণার ভিত্তি হচ্ছে সংখ্যা। শুরুতেই আলোচিত হয় স্বাভাবিক সংখ্যা ও পূর্ণ সংখ্যা এবং এদের উপর সম্পন্ন বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়া বা অপারেশন আলোচিত হয় পাটীগণিতে। পূর্নসংখ্যাগুলির গভীরতর ধর্মগুলি আলোচিত হয় সংখ্যাতত্ত্ব শাখায়। ফার্মার শেষ উপপাদ্য এই শাখার একটি বিখ্যাত ফলাফল। এখনও সমাধান হয়নি এরকম দুইটি সমস্যা হচ্ছে দ্বৈত মৌলিক সংখ্যা অনুমান এবং গোল্ডবাখের অনুমান। আরও উন্নত সংখ্যাব্যবস্থায় পূর্ণসংখ্যাগুলি মূলদ সংখ্যার উপসেট হিসেবে পরিগণিত হয়। মূলদ সংখ্যাগুলি আবার বাস্তব সংখ্যার অন্তর্গত। বাস্তব সংখ্যাগুলি অবিচ্ছিন্ন রাশি বর্ণনা করতে ব্যবহার করা হয়। বাস্তব সংখ্যাগুলিকে আবার জটিল সংখ্যাতে সাধারণীকৃত করা হয়। জটিল সংখ্যাগুলিকে কোয়ার্টানায়ন ও অক্টোনায়োন-বিশিষ্ট সংখ্যাব্যবস্থায় সম্প্রসারিত করা যায়। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="20" ||||||||| |- | স্বাভাবিক সংখ্যা|| পূর্ণ সংখ্যা || ভগ্নাংশ || বাস্তব সংখ্যা || জটিল সংখ্যা |} সংখ্যা • হাইপারকমপ্লেক্স সংখ্যা • কোয়ার্টারনিয়ন • অক্টোনিয়ন • সেডেনিয়ন • হাইপাররিয়াল সংখ্যা • পরাবাস্তব সংখ্যা • পূরণবাচক সংখ্যা • অঙ্কবাচক সংখ্যা • পি-এডিক সংখ্যা • পূর্ণসাংখ্যিক অনুক্রম • গাণিতিক ধ্রুবক • সংখ্যার নাম • অসীম • ভিত্তি গঠন আকার, প্রতিসাম্য এবং গাণিতিক গঠন সংক্রান্ত আলোচনা। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="15" ||| || || || |-| পাটিগণিত || সংখ্যা তত্ত্ব || Abstract algebra || দল তত্ত্ব || ক্রম তত্ত্ব |} Monoids • Rings • ফীল্ড • রৈখিক বীজগণিত • বীজগাণিতিক জ্যামিতি • সার্বজনীন জ্যামিতি স্থান স্থান নিয়ে গবেষণা মানব মনে গণিতের বীজ বপন করেছিল। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="15" | || || || || |- |জ্যামিতি || ত্রিকোণমিতি || সমাকলন জ্যামিতি || টপোগণিত || ফ্র্যাক্টাল জ্যামিতি |} বীজগাণিতিক জ্যামিতি • স্থানাংক পদ্ধতি • অন্তরক টপোগণিত • বীজগাণীতিক টপোগণিত • রৈখিক বীজগণিত • গুচ্ছবিন্যাসতাত্ত্বিক জ্যামিতি • বহুধা পরিবর্তন গাণিতিক ফাংশন এবং সংখ্যার মানসমূহের পরিবর্তনের প্রকাশ। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="20" | || |||| || || |- | ক্যালকুলাস || ভেক্টর ক্যালকুলাস|| ব্যবকলনীয় সমীকরণ || গতিশীল সিস্টেম || বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব || জটিল-সাংখ্যিক বিশ্লেষণ |} গাণিতিক বিশ্লেষণ • বাস্তব বিশ্লেষণ • জটিল বিশ্লেষণ • ফাংশনাল এনালিসিস • বিশেষ ফাংশন • পরিমাপন তত্ত্ব • ফুরিয়ার বিশ্লেষণ • পরিবর্তনশীল ক্যালকুলাস ভিত্তি এবং পদ্ধতি গণিতের স্বভাব ও ধর্ম বুঝার জন্য সহায়ক। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="15" ||| || |- | গাণিতিক যুক্তি || সেট তত্ত্ব || ক্যাটাগরি তত্ত্ব || |} গণিতের ভিত্তি • গণিতের দর্শন • প্রাতিষ্ঠানিকতা • কনস্টাক্টিভিজম • প্রমাণ তত্ত্ব • মডেল তত্ত্ব • রিভার্স গণিত বিচ্ছিন্ন গণিত বিচ্ছিন্ন গণিত {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="15" ||| || || |- | কম্বিনেটরিক্স ||গণনার তত্ত্ব || ক্রিপ্টোগ্রাফি || লেখ তত্ত্ব |} কম্পিউটিবিলিটি তত্ত্ব • কম্পিটেশনাল কমপ্লেক্স থিওরি • উপাত্ত তত্ত্ব ফলিত গণিত ফলিত গণিত গণিতের সাহায্যে বাস্তব-বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান নির্দেশ করে। • বলবিদ্যা • গাণিতিক অর্থনীতি • গাণিতিক জীববিজ্ঞান • ক্রিপটোগ্রাফি • অপারেশনস রিসার্চ পেশা হিসাবে গণিত ফিল্ডস পদক হচ্ছে গণিতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার যেটি ১৯৩৬ সালে যাত্রা শুরু করে, বর্তমানে প্রতি চার বছর পরপর এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এই পুরষ্কারটিকে গণিতে নোবেল পুরষ্কারের সমতুল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তেইশটি উন্মুক্ত সমস্যার একটি বিখ্যাত তালিকা ১৯০০ সালে জার্মান গণিতবিদ ডাভিড হিলবের্ট তৈরি করেন যেটাকে বলা হয় "Hilbert's problems". এই তালিকাটি গণিতবিদদের মধ্যে অনেক বড় আলোড়ন তৈরি করে। এই সমস্যা গুলোর মধ্যে নয়টি সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। সাতটি গুরুত্বর্পূণ সমস্যার একটি নতুন তালিকা "Millennium Prize Problems" নামে ২০০০ সালে প্রকাশিত হয়। এর প্রত্যেকটি সমস্যার সমাধানের জন্য এক মিলিয়ন ইউএস ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্য দেখুন উপপাদ্যের তালিকা পিথাগোরাসের উপপাদ্য • ফার্মির ভাগশেষ উপপাদ্য • গোডেলের অসম্পূর্ণতার তত্ত্ব • পাটীগণিতের মৌলিক উপপাদ্য • বীজণিতের মৌলিক উপপাদ্য • ক্যালকুলাসের মৌলিক উপপাদ্য • ক্যান্টরের কর্ণ-বৃদ্ধি • চার রঙ উপপাদ্য • যোরনের লেমা • অয়লারের অভেদ • গাউস-বনেট তত্ত্ব • কোয়াড্রাটিক রিসিপ্রোসিটি • রিম্যান-রখ তত্ত্ব। গুরুত্বপূর্ণ অনুমান বেশ কিছু গাণিতিক সমস্যা আছে, যা আজও সমাধান হয়নি। গোল্ডবাখ অনুমান • দ্বৈত মৌলিক অনুমান • রিম্যান প্রকল্প • কোলাজ অনুমান • P=NP? • open হিলবার্টের সমস্যাগুচ্ছ। আরও দেখুন গণিতের ইতিহাস •গণিতের দর্শন• গণিতবিদ তালিকা • ফিল্ডস্ মেডাল • অ্যাবেল পুরস্কার •গণিতের ইতিহাসের তারিখ • Millennium Prize Problems (Clay Math Prize) • ইন্টারনেশনাল ম্যাথেম্যাটিক্যাল ইউনিয়ন • গণিতের প্রতিযোগিতাসমূহ • Lateral thinking • গাণিতিক শিক্ষা • গাণিতিক যোগ্যতা এবং লৈঙ্গিক ইস্যুসমূহ তথ্যসূত্র গ্রন্থসূত্র Benson, Donald C., The Moment of Proof: Mathematical Epiphanies, Oxford University Press, USA; New Ed edition (December 14, 2000). . Boyer, Carl B., A History of Mathematics, Wiley; 2 edition (March 6, 1991). . — A concise history of mathematics from the Concept of Number to contemporary Mathematics. Courant, R. and H. Robbins, What Is Mathematics? : An Elementary Approach to Ideas and Methods, Oxford University Press, USA; 2 edition (July 18, 1996). . Davis, Philip J. and Hersh, Reuben, The Mathematical Experience. Mariner Books; Reprint edition (January 14, 1999). . — A gentle introduction to the world of mathematics. Eves, Howard, An Introduction to the History of Mathematics, Sixth Edition, Saunders, 1990, . Gullberg, Jan, Mathematics — From the Birth of Numbers. W. W. Norton & Company; 1st edition (October 1997). . — An encyclopedic overview of mathematics presented in clear, simple language. Hazewinkel, Michiel (ed.), Encyclopaedia of Mathematics. Kluwer Academic Publishers 2000. — A translated and expanded version of a Soviet mathematics encyclopedia, in ten (expensive) volumes, the most complete and authoritative work available. Also in paperback and on CD-ROM, and online. Jourdain, Philip E. B., The Nature of Mathematics, in The World of Mathematics, James R. Newman, editor, Dover Publications, 2003, . Kline, Morris, Mathematical Thought from Ancient to Modern Times, Oxford University Press, USA; Paperback edition (March 1, 1990). . Oxford English Dictionary, second edition, ed. John Simpson and Edmund Weiner, Clarendon Press, 1989, . The Oxford Dictionary of English Etymology, 1983 reprint. . Pappas, Theoni, The Joy Of Mathematics, Wide World Publishing; Revised edition (June 1989). . JSTOR. Peterson, Ivars, Mathematical Tourist, New and Updated Snapshots of Modern Mathematics, Owl Books, 2001, . বহিঃসংযোগ Nrich, a prize-winning site for students from age five from Cambridge University Weisstein, Eric et al.: MathWorld: World of Mathematics. An online encyclopedia of mathematics. রৌপ বিজ্ঞান মূল বিষয়ের নিবন্ধ
https://en.wikipedia.org/wiki/Mathematics
Mathematics
Mathematics is a field of study that discovers and organizes methods, theories and theorems that are developed and proved for the needs of empirical sciences and mathematics itself. There are many areas of mathematics, which include number theory (the study of numbers), algebra (the study of formulas and related structures), geometry (the study of shapes and spaces that contain them), analysis (the study of continuous changes), and set theory (presently used as a foundation for all mathematics). Mathematics involves the description and manipulation of abstract objects that consist of either abstractions from nature or—in modern mathematics—purely abstract entities that are stipulated to have certain properties, called axioms. Mathematics uses pure reason to prove properties of objects, a proof consisting of a succession of applications of deductive rules to already established results. These results include previously proved theorems, axioms, and—in case of abstraction from nature—some basic properties that are considered true starting points of the theory under consideration. Mathematics is essential in the natural sciences, engineering, medicine, finance, computer science, and the social sciences. Although mathematics is extensively used for modeling phenomena, the fundamental truths of mathematics are independent of any scientific experimentation. Some areas of mathematics, such as statistics and game theory, are developed in close correlation with their applications and are often grouped under applied mathematics. Other areas are developed independently from any application (and are therefore called pure mathematics) but often later find practical applications. Historically, the concept of a proof and its associated mathematical rigour first appeared in Greek mathematics, most notably in Euclid's Elements. Since its beginning, mathematics was primarily divided into geometry and arithmetic (the manipulation of natural numbers and fractions), until the 16th and 17th centuries, when algebra and infinitesimal calculus were introduced as new fields. Since then, the interaction between mathematical innovations and scientific discoveries has led to a correlated increase in the development of both. At the end of the 19th century, the foundational crisis of mathematics led to the systematization of the axiomatic method, which heralded a dramatic increase in the number of mathematical areas and their fields of application. The contemporary Mathematics Subject Classification lists more than sixty first-level areas of mathematics.
1194
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE
গণিতবিদদের তালিকা
গণিতবিদদের তালিকা উল্লেখযোগ্য গণিতবিদ জাতীয়তা, জাতিগত, ধর্ম, পেশা এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দ্বারা তৈরি বর্ণানুক্রমিক তালিকা। জাতীয়তা, জাতিগততা বা ধর্ম অনুসারে তালিকা পেশা দ্বারা তালিকা অক্টোরিয়াসদের তালিকা গেম তাত্ত্বিকদের তালিকা জ্যামিতিক তালিকা যুক্তিবাদীদের তালিকা গাণিতিক সম্ভাবনার তালিকা পরিসংখ্যানবিদদের তালিকা পরিমাণগত বিশ্লেষকদের তালিকা গণিতবিদদের অন্যান্য তালিকা অপেশাদার গণিতবিদদের তালিকা 19 শতকে জন্মগ্রহণকারী গণিতবিদদের তালিকা শতবর্ষীদের তালিকা (বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ) গণিতবিদ সম্পর্কে চলচ্চিত্রের তালিকা গণিতে মহিলাদের তালিকা দ্য গণিত বংশবৃদ্ধি প্রকল্প;- গণিতবিদদের একাডেমিক বংশতালিকা জন্য ডাটাবেস গাণিতিক শিল্পীদের তালিকা বহিঃসংযোগ গণিত সংরক্ষণাগারের ম্যাকটিউটার ইতিহাস - বিস্তারিত জীবনী ব্যাপক তালিকা দ্য ওবারওয়লফাচ ফটো সংগ্রহ - সারা বিশ্ব থেকে গণিতবিদদের ফটোগ্রাফ গণিতবিদদের ছবি - আন্দ্রে বাউয়ার দ্বারা তৈরি গণিতবিদ (এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী)এর ফটো সংগ্রহ৷ বিখ্যাত গণিতবিদ গণিতবিদদের জন্মদিন এবং মৃত্যু বার্ষিকীর ক্যালেন্ডার গণিতবিদদের তালিকা
https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_mathematicians
List of mathematicians
1197
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%20%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A6%A8
শ্রীনিবাস রামানুজন
শ্রীনিবাস রামানুজন (২২ ডিসেম্বর ১৮৮৭ – ২৬ এপ্রিল ১৯২০) অসামান্য প্রতিভাবান একজন ভারতীয় গণিতবিদ। খুব অল্প সময় বাঁচলেও তিনি গণিতে সুদূরপ্রসারী অবদান রেখে গেছেন। প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় তিনি গণিতের বিভিন্ন শাখায়, বিশেষ করে গাণিতিক বিশ্লেষণ, সংখ্যাতত্ত্ব, অসীম ধারা ও আবৃত্ত ভগ্নাংশ শাখায়, গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁর রেখে যাওয়া নোটবুক বা ডায়েরি হতে পরবর্তীতে আরও অনেক নতুন সমাধান পাওয়া গেছে। ইংরেজ গণিতবিদ জি এইচ হার্ডি রামানুজনকে অয়েলার ও গাউসের সমপর্যায়ের গণিতবিদ মনে করেন। অবিভক্ত ভারতের মাদ্রাজের এক গরিব ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান রামানুজন ১০ বছর বয়সে গণিতের সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁকে এস এল লোনি লিখিত ‘’’ত্রিকোণমিতি’’’ পুস্তকটি দেওয়া হয় এবং তখন থেকে তিনি গণিতে সহজাত প্রতিভা প্রদর্শন করেন। ১২ বছরের মধ্যে তিনি ওই পুস্তকের বিষয়গুলোতে দক্ষতা অর্জন করেন। এমন কি তিনি নিজে কিছু উপপাদ্য আবিষ্কার করেন এবং স্বতন্ত্রভাবে অয়েলারের এককত্ব পুনরাবিষ্কার করেন। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি গণিতে বিশেষ দক্ষতা দেখিয়ে পুরস্কার ও প্রশংসা লাভ করেন। ১৭ বছর বয়সে রামানুজন বার্নোলির সংখ্যা ও অয়েলার-মাসেরনি ধ্রুবকের ওপর নিজের গবেষণা সম্পন্ন করেন। কুম্বাকোটম সরকারি কলেজে পড়ার জন্য বৃত্তি পেলেও অ-গাণিতিক বিষয়ে ফেল করার কারণে তাঁর বৃত্তি বাতিল হয়ে যায়। এরপর তিনি অন্য একটি কলেজে নিজের গাণিতিক গবেষণা শুরু করেন। এই সময় জীবন ধারণের জন্য তিনি মাদ্রাজ বন্দর ট্রাস্টের মহা হিসাবরক্ষকের কার্যালয়ে কেরানি পদে যোগ দেন। জীবনী জন্ম ও বংশপরিচয় রামানুজন ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রদেশের তাঞ্জোর জেলার ইরেভদ শহরের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কে শ্রীনিবাস ইয়েঙ্গার ছিলেন শহরের একটি কাপড়ের দোকানের হিসাবরক্ষক। তার মা কোমালাটাম্মাল একজন গৃহিণী ছিলেন এবং একটি স্থানীয় মন্দিরে গান গাইতেন। তিনি ছিলেন তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন মহিলা। প্রচলিত আছে যে, রামানুজনের মায়ের বিয়ের পর বেশ কয়েকবছর কোন সন্তান না হওয়ায়, রামানুজনের মাতামহ নামাক্কল শহরের বিখ্যাত নামগিরি দেবীর নিকট নিজ কন্যা সন্তানের জন্য প্রার্থনা করেন। এরপরই জ্যেষ্ঠ সন্তান রামানুজন জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল পাঁচ বছর বয়সে রামানুজনকে পাড়ার পাঠশালায় ভর্তি করা হয়। সাত বছর বয়সে তাকে কুম্ভকোনাম শহরের টাউন হাই স্কুলে ভর্তি করানো হয়। রামানুজন সাধারণত কম কথা বলতেন এবং মনে হতো তিনি কিছুটা ধ্যানমগ্ন থাকতেন। তার অসাধারণ প্রতিভা স্কুল কর্তৃপক্ষের গোচরে আসে এবং তার প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে বৃত্তি দেওয়া হয়। তিনি বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে বিভিন্ন গাণিতিক উপপাদ্য, গণিতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। তিনি ও এর মান যে কোন সংখ্যক দশমিক স্থান পর্যন্ত বলতে পারতেন। প্রথমে নিজের এই অদ্ভুত প্রতিভার বিচার তিনি নিজেই করতে পারেননি। তার এক বন্ধু তাকে জি. এস. কার (G S Carr)-এর লেখা সিনপসিস অফ এলিম্যনটারি রেজাল্ট ইন পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড ম্যাথেম্যাটিক্‌স (Synopsis of elementary results in Pure and Applied Mathematics) বইটি পড়তে দেন। মূলত এই বইটি পড়েই তার গাণিতিক প্রতিভার বিকাশ ঘটতে শুরু করে। রামানুজন এই বইয়ে প্রদত্ত বিভিন্ন গাণিতিক সূত্রগুলির সত্যতা পরীক্ষা শুরু করেন। তার কাছে এগুলো ছিল মৌলিক গবেষণার মত, কারণ তার কাছে অন্য কোন সহায়ক গ্রন্থ ছিল না। গবেষণা কর্মের সূচনা তিনি ম্যাজিক স্কোয়ার গঠনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এরপর তিনি জ্যামিতিক বিভিন্ন বিষয়ের উপর কাজ শুরু করেন। বৃত্তের বর্গসম্পর্কীয় তাঁর গবেষণা পৃথিবীর বিষুবরৈখিক পরিধির দৈর্ঘ্য নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পদ্ধতিতে নির্ণীত বিষুবরৈখিক পরিধির দৈর্ঘ্য এবং প্রকৃত মানের পার্থক্য মাত্র কয়েক ফুট ছিল। জ্যামিতির সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে তিনি বীজগণিতের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। শোনা যায়, রামানুজন সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাঁর নোট বুকে কিছু লিখতেন। কী লিখছেন জিজ্ঞাসা করলে বলতেন যে, নামাক্কলের দেবী স্বপ্নে তাঁকে এই সব সূত্র দিয়ে প্রেরণা দিচ্ছেন। স্বপ্নের মাধ্যমে প্রাপ্ত এ সকল সূত্র তিনি পরীক্ষণ করতেন, যদিও তাঁর পরীক্ষা পদ্ধতি খুব আনুষ্ঠানিক ছিলনা। যৌবনকাল ১৬ বছর বয়সে রামানুজন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ও জুনিয়র শুভ্রামানায়াম বৃত্তি লাভ করে কুম্ভকোনাম সরকারি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু গণিতের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়ার ফলে পরের পরীক্ষায় ইংরেজিতে অকৃতকার্য হন এবং তাঁর বৃত্তি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি কুম্ভকোনাম ত্যাগ করে প্রথমে বিশাখাপত্তনম এবং পরে মাদ্রাজ যান। ১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি ফার্স্ট এক্সামিনেশন ইন আর্টস (F.A. বা I.A.) পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন এবং অকৃতকার্য হন। তিনি আর এই পরীক্ষা দেননি। এরপর কয়েক বছর তিনি নিজের মত গণিত বিষয়ক গবেষণা চালিয়ে যান। বিবাহ ও কর্মজীবন ১৯০৯ সালে রামানুজন বিবাহ করেন। কিন্তু তাঁর কোন স্থায়ী কর্মসংস্থান ছিলনা। প্রয়োজনের তাগিদেই তিনি স্বভাবের বিপরীতে জীবিকা অন্বেষণের চেষ্টা চালাতে থাকেন। এ সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ একজন একটি পরিচয়পত্র দিয়ে চাকুরির সুপারিশ করে তাঁকে মাদ্রাজ শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে নেলোর শহরের কালেক্টর দেওয়ান বাহাদুর রামচন্দ্র রাও-এর কাছে প্রেরণ করেন। রামচন্দ্র রাও গণিতের ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। রামানুজনের দুটি নোটবুক তার সকল গাণিতিক সূত্রের প্রতিপাদ্য ও এ-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় লিপিবদ্ধ ছিল। রামানুজন সম্পর্কে রামচন্দ্র রাও নিজের ভাষায় বর্ণনা করেছেন। নিচে কিছুটা তুলে ধরা হলো, রামচন্দ্র রাও কিছুদিনের জন্য রামানুজনের সকল ব্যয়ভার বহন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু তার জন্য কোন বৃত্তির ব্যবস্থা না হওয়ায় এবং রামানুজন দীর্ঘকাল অপরের গলগ্রহ হয়ে থাকতে সম্মত না হওয়ায় তিনি মাদ্রাজ পোর্ট ট্রাস্টের অধীনে একটি সামান্য পদের চাকুরিতে যোগদান করেন। কিন্তু তার গবেষণা কর্ম এসবের জন্য কখনো ব্যহত হয়নি। পোর্ট ট্রাস্টে কাজ করার সময় কিছু লোকের সাথে তার পরিচয় হয় যারা তার নোটবুক নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেন। এর সূত্র ধরে গণিত বিষয়ে কিছু বিশেষজ্ঞের সাথে তার যোগাযোগ হয়। ১৯১১ সালে তার প্রথম গবেষণা প্রবন্ধ Journal of the Mathematical Society পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সংখ্যাতত্ত্বের উপর তার গবেষণালব্ধ Some Properties of Bernoulli's Numbers নামে তার প্রথম দীর্ঘ প্রবন্ধ একই বছর প্রকাশিত হয়। ১৯১২ সালে একই পত্রিকায় তার আরো দুটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় এবং সমাধানের জন্য কিছু প্রশ্নও প্রকাশিত হয়। প্রতিভার স্বীকৃতি রামচন্দ্র রাও মাদ্রাজ প্রকৌশল মহাবিদ্যালয়ের মি. গ্রিফিথ-কে রামানুজনের ব্যাপারে বলেন। মাদ্রাজ পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান স্যার ফ্রান্সিস স্প্রিং-এর সঙ্গে মি. গ্রিফিথ এর আলাপ হওয়ার পর থেকেই রামানুজনের প্রতিভার স্বীকৃতি শুরু হয়। মাদ্রাজ শহরের বিশিষ্ট পণ্ডিত শেশা আইয়ার এবং অন্যান্যদের পরামর্শে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের ফেলো জি.এইচ. হার্ডির সঙ্গে রামানুজন যোগাযোগ শুরু করেন এবং তার বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে ইংরেজি ভাষায় একটি পত্র লেখেন। এই পত্রের সঙ্গে ১২০ টি উপপাদ্য সংযোজিত ছিল, তার ভিতর থেকে নমুনাস্বরূপ হার্ডি ১৫টি নির্বাচন করেন। হার্ডি মন্তব্য করেন এরপর হার্ডি ওই ১২০ টির মধ্যে কয়েকটি ইতিপূর্বে অন্য কোন গণিত বিশারদ প্রমাণ করেছেন বলে উল্লেখ করেন। একটি গাণিতিক পদের জন্য ব্যবহৃত প্রতীক (notation) ১৯০৮ সালে এডমুন্ড ল্যান্ডাউ প্রথম উদ্ভাবন করেন। ল্যান্ডাউয়ের মত এত কিছু রামানুজনের ছিলনা। তিনি ফরাসী বা জার্মান ভাষায় কোন পুস্তক কখনো দেখেন নি, এমন কি ইংরেজি ভাষায় তাঁর জ্ঞান এত দুর্বল ছিল যে কোন ডিগ্রির জন্য কোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াও তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিলনা। তিনি এমন কিছু বিষয় ও সমস্যার উপস্থাপনা করেছেন যা ইউরোপের অসামান্য প্রতিভাধর বিজ্ঞানীরা ১০০ বছর ধরে সমাধান করেছেন- এমন কি কিছু এখনো সমাধান হয়নি। ইংল্যান্ড যাত্রা অনেকদিন ধরে হার্ডি রামানুজনকে ইংল্যান্ড নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন । রামানুজনের অনেক বন্ধু ও হিতৈষীর প্রচেষ্টায় ১৯১৩ সালের মে মাসে মাদ্রাজ পোর্ট ট্রাস্টের কেরানির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং একটি বৃত্তি মঞ্জুর করা হয়। ঠিক এমনি সময়ে তিনি কেমব্রিজ থেকে একটি আমন্ত্রণ পান। চাকুরিগত সমস্যার সমাধান হলেও জাতিপ্রথা ও মায়ের অনুমতির অভাবে প্রথমে রামানুজন দেশের বাইরে যেতে অসম্মতি জানান। হার্ডি লিখেছেন, কেমব্রিজ এর আমন্ত্রণে বিদেশে আসার অল্পদিন পরই রামানুজন ট্রিনিটি কলেজের ফেলোশিপ পেয়ে যান। এই সময় মাদ্রাজ থেকে প্রাপ্ত বৃত্তির পরিমাণ ছিল বার্ষিক ২৫০ পাউন্ড; তার ৫০ পাউন্ড দেশে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহের জন্য দিতে হত। এছাড়া ট্রিনিটি কলেজ থেকে ভাতা বাবদ ৫০ পাউন্ড পেতেন। রামানুজন সম্পর্কে হার্ডি লিখেছেন, গণিতবহির্ভূত বিষয়ে রামানুজনের আগ্রহে অদ্ভুত বৈপরীত্য ছিল। শিল্প ও সাহিত্যে তার প্রায় কোনরূপ উৎসাহ ছিলনা। ধর্মীয় জীবন তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু। ধর্মীয় অনুশাসন পালনে তিনি যথেষ্ট কঠোরতা অবলম্বন করতেন। তার মতে, পৃথিবীর সব ধর্মই কমবেশি সত্য। তিনি নিরামিষভোজী ছিলেন। তিনি যতদিন কেমব্রিজ ছিলেন, সবসময় স্বপাক আহার করতেন এবং বাইরের পোশাক পরিধান করতেন। শেষ জীবন ১৯১৭ সালের বসন্তকালের প্রথমে রামানুজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে কেমব্রিজের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। এরপর তিনি আর কখনো সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেন নি। তাকে ওয়েলস, ম্যালটক এবং লন্ডন শহরের স্বাস্থ্যনিবাসে ভর্তি করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ এক বছর তার শারীরিক কোন উন্নতি দেখা যায়নি। এই সময় রামানুজন রয়েল সোসাইটি-র সদস্য নির্বাচিত হন। গবেষণা কাজে অধিক মনোযোগ দেওয়ার ফলে তার সবচেয়ে মূল্যবান উপপাদ্যগুলো এই সময় আবিষ্কৃত হয়। তিনি নির্বাচিত ট্রিনিটি ফেলো ছিলেন। ১৯১৯ সালে রামানুজন ভারতবর্ষে ফিরে আসেন। কিছুকাল যক্ষ্মারোগে ভোগার পর ১৯২০ সালের ২৬ই এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। রামানুজনের প্রসঙ্গে হার্ডির আলোচনা রামানুজনের কিছু গোপন রহস্য ছিল ধারণা করা হলেও হার্ডি তার মন্তব্যে এ কথা ভিত্তিহীন বলেছেন। তবে একথা হার্ডি অস্বীকার করেন নি যে রামানুজনের স্মৃতিশক্তি ছিল অসাধারণ। রামানুজন অদ্ভুত উপায়ে বিভিন্ন ধরনের সংখ্যার প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য মনে রাখতে পারতেন। মি. লিট্‌লউড মন্তব্য করেছেন যে, প্রত্যেক ধনাত্নক সংখ্যা রামানুজনের বন্ধু ছিল। হার্ডি লিখেছেন গণিতে অবদান গণিতের ক্ষেত্রে, পর্যবেক্ষণ ও প্রমাণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। রামানুজন এমন অনেক গাণিতিক সূত্রের উদ্ভাবন করেন যেগুলো বহুকাল পরে প্রমাণ হয়। প্রমাণ করতে গিয়ে গবেষণার অনেক নতুন দিকের সূচনা হয়। রামানুজন এর অনন্ত ধারা উদ্ভাবন করেন। রামানুজনের এর ধারা সম্পর্কীয় সকল ধারাকে এত দ্রুত একত্রিত করেছে যে, আধুনিক অ্যালগরিদমের সকল ক্ষেত্রে তার ধারা-ই ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, তার সংজ্ঞা তাকে কিছু ইতঃপূর্বে অজানা অভেদ প্রতিপাদন করতে সাহায্য করেছে। উদাহরণস্বরূপ, সকল -র মানের জন্য, যেখানে (z) হলো গামা ফাংশন। , এবং এর সহগ সমীকৃত করার মাধ্যমে অধিবৃত্তীয় ছেদকের কিছু তাৎপর্যপূর্ণ সূচক পাওয়া যায়। তত্ত্ব এবং উদ্ভাবন রামানুজনের উদ্ভাবনসমূহ ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। রামানুজনের নিজের মৌলিক উদ্ভাবনসমূহ এবং হার্ডির সাথে তার গবেষণার ফসলসমূহ নিম্নরূপঃ খ্যাসমূহের বৈশিষ্ট্য। বিভাজন ফাংশন এবং এর অসীমতট সম্পর্কীয় তত্ত্বসমূহ।নিম্নোক্ত ক্ষেত্রেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে: গামা ফাংশন মডুলার রূপ (Modular forms) রামানুজনের অবিচ্ছিন্ন ভগ্নাংশসমূহ (Ramanujan's continued frations) অপসারী ধারা (Divergent series) অধিজ্যামিতীয় ধারা (Hypergeometric series) মৌলিক সংখ্যা তত্ত্ব। রামানুজনের মৌলিক সংখ্যা সমূহ ১৯১৯ সালে রামানুজন কর্তৃক প্রকাশিত হয়। মক থেটা ফাংশন (Mock theta functions) রামানুজনের অনুমিতি এবং এদের অবদান রামানুজনের বিপুল সংখ্যক তত্ত্ব তার অনুমান হিসেবে পরিচিত হলেও পরবর্তীকালে এগুলো গবেষণা ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রেখেছে। রামানুজনের অনুমিতি ছিল (Ramanujan conjecture) টাউ ফাংশনের (tau function) আকার নিয়ে একটা পূর্বানুমান, যেটা (q) এর মডুলার রূপের পার্থক্য নিরূপণ করে। পিয়ের ডেলিগনি কর্তৃক ওয়েলের অনুমিতি (Weil conjectures) প্রমাণের ফলাফল স্বরূপ এটি প্রমাণিত হয়। রামানুজনের নোটখাতা প্রথম থেকেই রামানুজন তার সকল গবেষণালব্ধ ফলাফল তার নোটখাতায় লিখে রাখতেন। কিন্তু তিনি কোন প্রতিপাদন লিখতেন না। ফলে এমন একটি ধারণার জন্ম হলো যে, রামানুজন তার তত্ত্বসমূহ প্রমাণ করতে সমর্থ ছিলেন না। গণিতবিদ ব্রুস বেন্ডিট রামানুজন এবং তার নোটখাতা সম্পর্কিত আলোচনায় একথা বলেছেন যে, রামানুজন তার তত্ত্বসমূহ প্রমাণ করতে পারতেন কিন্তু কোন কারণে তিনি সেটা আনুষ্ঠানিকতায় রূপ দিতেন না। এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। রামানুজন আর্থিক ভাবে সচ্ছল ছিলেন না, আর তখন কাগজের মূল্য ছিল চড়া। তাই রামানুজন শ্লেটে লিখে কোন তত্ত্ব প্রমাণ করতেন এবং নোটখাতায় শুধুমাত্র ফলাফল লিখে রাখতেন। রামানুজনের প্রথম নোটখাতার পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৩৫১। এটি ১৬ টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত ছিল এবং কিছু অগোছালো পৃষ্ঠাও পাওয়া যায়। তার দ্বিতীয় নোটখাতার পৃষ্ঠাসংখ্যা ছিল ২৫৬। অধ্যায় ছিল ২১ টি এবং এতে ১০০ টি অগোছালো পৃষ্ঠা ছিল। তৃতীয় নোটখাতাতেও এরকম ৩৩ টি অবিন্যস্ত পৃষ্ঠা ছিল। তার এসব নোটখাতা পরবর্তীতে গণিতবিদদের গবেষণায় বিরাট অবদান রাখে। হার্ডি নিজেও এসব নোটখাতা থেকে অনেক তত্ত্ব উদ্ধার করেছিলেন। পরবর্তীতে বি এম উইলসন, জি এন ওয়াটসন এবং ব্রুস বেন্ডিট রামানুজনের এসব নোটখাতার উপরে কাজ করেন। রামানুজনের অন্য একটি নোটখাতা, যেটি 'হারানো নোটখাতা' নামে পরিচিত, ১৯৭৬ সালে আবিষ্কৃত হয়। স্বীকৃতি রামানুজন এবং তার অবদানের কথা স্মরণ করে তামিলনাড়ু প্রদেশে রামানুজনের জন্মদিন ২২শে ডিসেম্বর 'প্রাদেশীয় আই.টি.দিবস' হিসেবে পালিত হয়। ১৯৬২ সালে রামানুজনের ৭৫তম জন্মদিনে ভারত সরকার একটি স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করে। International Centre for Theoritical Physics (ICTP) এবং IMU যৌথভাবে, উন্নয়নশীল দেশসমূহের তরুণ গণিতবিদের জন্য একটি বার্ষিক পুরস্কারের ব্যবস্থা নিয়েছে যেটি রামানুজনের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৮৭ সালে স্প্রিঙ্গার-নারোসা কর্তৃক সম্পাদিত ' রামানুজনের হারানো নোটখাতা' প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী কর্তৃক প্রকাশিত হয়। তিনি এর প্রথম কপি রামানুজনের বিধবা স্ত্রী এস জানাকী আম্মাল রামানুজন এবং দ্বিতীয় কপি জর্জ অ্যান্ড্রুজকে সংখ্যাতত্ত্বে তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রদান করেন। সংস্কৃতিতে রামানুজন Good Will Hunting চলচ্চিত্রে রামানুজনকে গণিতের একজন অসাধারণ প্রতিভা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভের্নার ভিঞ্জ রচিত 'দ্য পিস ওয়ার' এবং ডগলাস হফষ্টেডারের গ্যোডেল, এশ্যর, বাখ গ্রন্থসমূহে রামানুজনের জীবনী আলোচনা করা হয়েছে। CBS টিভি ধারাবাহিক Numb3rs এর 'আমিতা রামানুজন' চরিত্রটি রামানুজনের নামানুসারে নামাকৃত হয়েছে।(সূত্র: IMDB's trivia for 'Numb3rs') সাইরিল কর্ণব্লুথ রচিত ছোটগল্প গোমেজ" এ রামানুজনকে স্বশিক্ষিত একজন গণিত প্রতিভা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। আইজাক আসিমভের 'Prelude to Foundation' গ্রন্থের ' ইয়োগো আমাইরাল' চরিত্রটি রামানুজনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। 'কম্পলিকেট' নাট্যশালা রামানুজনের জীবনের উপর ভিত্তি করে ' A Disappearing Number' নামে একটি প্রকাশনা করে। এটির পরিচালক ছিলেন 'সিমন ম্যাকবার্ণী'। চলচ্চিত্র তামিল নাডু প্রদেশ এবং কেমব্রীজে রামানুজনের জীবন নিয়ে একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ধারণ করা হবে। এটি একটি ভারত-ব্রিটিশ শিল্পকেন্দ্র কর্তৃক প্রযোজিত হবে। পরিচালনা করবেন স্টিফেন ফ্রাই এবং ডেভ বিনিগাল। রবার্ট কানিগেল কর্তৃক রচিত গ্রন্থ 'The Man Who Knew Infinity: A Life of the Genius Ramanujan'-এর উপর ভিত্তি করে এডওয়ার্ড প্রেসমেন এবং ম্যাথিউ ব্রাউন ২০১৫ সালে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দ্য ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি নির্মাণ করেন। এতে রামানুজনের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন ব্রিটিশ অভিনেতা দেব পাটেল। রামানুজনের প্রকাশিত রচনাবলি 'কালেক্টেড পেপারস অফ শ্রীনিবাস রামানুজন'- শ্রীনিবাস রামানুজন, জি.এইচ.হার্ডি, পি.ভি.সেশু আইয়ার, বি.এম.উইলসন, ব্রুস বার্নডিট। এই বইটি রামানুজনের মৃত্যুর পর ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয়। এটি বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত রামানুজনের ৩৭ টি প্রবন্ধের একটি সংকলন। এর তৃতীয় মুদ্রণে ব্রুস বার্নডিটের কিছু মন্তব্য সংযোজিত ছিল। 'নোটবুকস্‌'(২ খন্ড), শ্রীনিবাস রামানুজন, টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ, বোম্বাই, ১৯৫৭। এই বইটিতে রামানুজনের নোটখাতা গুলোর ফটোকপি সম্পাদিত হয়েছে। 'দি লস্ট নোটবুক এন্ড আদার আনপাবলিশ্‌ড পেপারস্‌- এস. রামানুজন, নারোসা, নিউ দিল্লী, ১৯৮৮। এই বইটিতে রামানুজনের 'লস্ট নোটবুক' এর ফটোকপি সংকলিত হয়েছে। রামানুজনের কর্মের উপর প্রকাশনা সমূহ রামানুজন: টুয়েল্‌ভ লেকচারস্‌ অন সাবজেক্টস সাজেসটেড বাই হিস লাইফ এবং ওয়ার্ক বাই জি.এইচ. হার্ডি। রামানুজন: লেটারস এন্ড কামেন্টারি ( হিস্টরি অফ ম্যাথ্‌মেটিক্‌স )- ব্রুস সি. বার্নডিট এবং রবার্ট এ. রান্‌কিন। রামানুজন'স নোটবুকস, প্রথম খন্ড - ব্রুস সি. বার্নডিট। রামানুজন'স নোটবুকস, দ্বিতীয় খন্ড - ব্রুস সি. বার্নডিট। রামানুজন'স নোটবুকস, তৃতীয় খন্ড - ব্রুস সি. বার্নডিট। রামানুজন'স নোটবুকস, চতুর্থ খন্ড - ব্রুস সি. বার্নডিট। রামানুজন'স নোটবুকস, পঞ্চম খন্ড - ব্রুস সি. বার্নডিট। রামানুজন'স লস্ট নোটবুকস, প্রথম খন্ড - জর্জ এন্ড্রুস এবং ব্রুস সি. বার্নডিট। নাম্বার থিউরি ইন দ্য স্পিরিট অফ রামানুজন- ব্রুস সি. বার্নডিট। এন ওভারভিউ অফ রামানুজন'স নোটবুকস- ব্রুস সি. বার্নডিট। মডার্ন ম্যাথ্‌মেটিকস - হ্যারি হ্যান্ডারসন। দি ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি: এ লাইফ অফ দি জিনিয়াস রামানুজন - রবার্ট কেনিজেল। আরও দেখুন ভারতীয় গণিতবিদদের তালিকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Biographical essay on Ramanujan Biography of this mathematical genius at World of Biography A Study Group For Mathematics: Srinivasa Ramanujan Iyengar Srinivasan Ramanujan in One Hundred Tamils of 20th Century The Ramanujan Journal - An international journal devoted to Ramanujan Jai Maharaj, Computing the Mathematical Face of God: S. Ramanujan Srinivasa Aiyangar Ramanujan A short biography of Ramanujan International Math Union Prizes, including a Ramanujan Prize. A biographical song about Ramanujan's life Feature Film on Math Genius Ramanujan by Dev Benegal and Stephen Fry A magical genius Norwegian and Indian mathematical geniuses RAMANUJAN — Essays and Surveys Ramanujan's growing influence Ramanujan's mentor A biography of Ramanujan set to music "A passion for numbers" BBC radio programme about Ramanujan - episode 5 Bruce C. Berndt, Robert A. Rankin. The Books Studied by Ramanujan in India American Mathematical Monthly, Vol. 107, No. 7 (Aug. - Sep., 2000), pp. 595–601 doi:10.2307/2589114 "Ramanujan's mock theta function puzzle solved" ১৮৮৭-এ জন্ম ১৯২০-এ মৃত্যু ভারতীয় গণিতবিদ তামিলনাড়ুর বিজ্ঞানী সংখ্যা তাত্ত্বিক মানসিক গণনাকারী ভারতীয় সমন্বয়বাদী ভারতীয় সংখ্যা তাত্ত্বিক পাই-সম্পর্কিত ব্যক্তি রয়েল সোসাইটির সভ্য ভারতীয় হিন্দু ভারতে সংক্রামক রোগে মৃত্যু মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী তাঞ্জাবুর জেলার ব্যক্তি ১৯শ শতাব্দীর হিন্দু ১৯শ শতাব্দীর ভারতীয় গণিতবিদ ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় গণিতবিদ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
https://en.wikipedia.org/wiki/Srinivasa_Ramanujan
Srinivasa Ramanujan
Srinivasa Ramanujan (22 December 1887 – 26 April 1920) was an Indian mathematician. Though he had almost no formal training in pure mathematics, he made substantial contributions to mathematical analysis, number theory, infinite series, and continued fractions, including solutions to mathematical problems then considered unsolvable. Ramanujan initially developed his own mathematical research in isolation. According to Hans Eysenck, "he tried to interest the leading professional mathematicians in his work, but failed for the most part. What he had to show them was too novel, too unfamiliar, and additionally presented in unusual ways; they could not be bothered". Seeking mathematicians who could better understand his work, in 1913 he began a mail correspondence with the English mathematician G. H. Hardy at the University of Cambridge, England. Recognising Ramanujan's work as extraordinary, Hardy arranged for him to travel to Cambridge. In his notes, Hardy commented that Ramanujan had produced groundbreaking new theorems, including some that "defeated me completely; I had never seen anything in the least like them before", and some recently proven but highly advanced results. During his short life, Ramanujan independently compiled nearly 3,900 results (mostly identities and equations). Many were completely novel; his original and highly unconventional results, such as the Ramanujan prime, the Ramanujan theta function, partition formulae and mock theta functions, have opened entire new areas of work and inspired further research. Of his thousands of results, most have been proven correct. The Ramanujan Journal, a scientific journal, was established to publish work in all areas of mathematics influenced by Ramanujan, and his notebooks—containing summaries of his published and unpublished results—have been analysed and studied for decades since his death as a source of new mathematical ideas. As late as 2012, researchers continued to discover that mere comments in his writings about "simple properties" and "similar outputs" for certain findings were themselves profound and subtle number theory results that remained unsuspected until nearly a century after his death. He became one of the youngest Fellows of the Royal Society and only the second Indian member, and the first Indian to be elected a Fellow of Trinity College, Cambridge. In 1919, ill health—now believed to have been hepatic amoebiasis (a complication from episodes of dysentery many years previously)—compelled Ramanujan's return to India, where he died in 1920 at the age of 32. His last letters to Hardy, written in January 1920, show that he was still continuing to produce new mathematical ideas and theorems. His "lost notebook", containing discoveries from the last year of his life, caused great excitement among mathematicians when it was rediscovered in 1976.
1198
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%B8
আর্কিমিডিস
আর্কিমিডিস (প্রাচীন গ্রিক ভাষায়: Ἀρχιμήδης আর্খিম্যাদ্যাস্‌, বর্তমান গ্রিক ভাষায় Αρχιμήδης আর্খ়িমিদ়িস্‌) বা সিরাকাসের আর্কিমিডিস (খ্রি.পূ. ২৮৭-২১২) একজন গ্রিক গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক। প্রাচীন গ্রিক সভ‍্যতা তার উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে পৌছেছিলো প্রাচীন কালের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ আর্কিমিডিস এর সময়ে। যদিও তার জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে, তবুও তাকে ক্ল্যাসিক্যাল যুগের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পদার্থবিদ্যায় তার উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে স্থিতিবিদ্যা আর প্রবাহী স্থিতিবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন এবং লিভারের কার্যনীতির বিস্তারিত ব্যাখ্যাপ্রদান। পানি তোলার জন্য আর্কিমিডিসের স্ক্রু পাম্প, যুদ্ধকালীন আক্রমণের জন্য সীজ (ইংরেজি: siege সীঝ়্‌) ইঞ্জিন ইত্যাদি মৌলিক যন্ত্রপাতির ডিজাইনের জন্যও তিনি বিখ্যাত। আধুনিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় তার নকশাকৃত আক্রমণকারী জাহাজকে পানি থেকে তুলে ফেলার যন্ত্র বা পাশাপাশি রাখা একগুচ্ছ আয়নার সাহায্যে জাহাজে অগ্নিসংযোগের পদ্ধতি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। আর্কিমিডিসকে সাধারণত প্রাচীন যুগের সেরা এবং সর্বাকালের অন্যতম সেরা গণিতজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি মেথড অফ এক্সহশন ব্যবহার করে অসীম ধারার সমষ্টিরূপে প্যারাবোলার বক্ররেখার অন্তগর্ত ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করেন এবং পাই -এর প্রায় নিখুঁত একটি মান নির্ণয় করেন। এছাড়াও তিনি আর্কিমিডিসের স্পাইরালের সংজ্ঞা দেন, বক্রতলের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র প্রদান করেন এবং অনেক বড় সংখ্যাকে সহজে প্রকাশ করার একটি চমৎকার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। যদিও রোমানরা আর্কিমিডিসের কোন ক্ষতি করার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, কিন্তু রোমানদের সিরাকিউজ অবরোধের সময় এক রোমান সৈন্যের হাতেই আর্কিমিডিস নিহত হন। রোমান দার্শনিক সিসেরো আর্কিমিডিসের সমাধীর উপরে একটি সিলিন্ডারের ভেতরে আবদ্ধ একটি গোলকের উল্লেখ করেছেন। আর্কিমিডিস প্রমাণ করেছিলেন যে সিলিন্ডারের ভেতর আবদ্ধ গোলকটির আয়তন এবং ভূমির ক্ষেত্রফল উভয়ই সিলিন্ডারের দুই তৃতীয়াংশ, যা আর্কিমিডিসের সেরা গাণিতিক অর্জনগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত। প্রাচীনকালে আর্কিমিডিসের গাণিতিক রচনাগুলি তার উদ্ভাবনগুলোর মত পরিচিত ছিল না। আলেকজান্দ্রিয়ার গণিতবিদরা তার লেখা পড়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখও করেছেন, কিন্তু আনুমানিক ৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে গ্রিক স্থপতি ইসেডোর অফ মিলেতাস সর্বপ্রথম তার সকল রচনা একত্রে লিপিবদ্ধ করেন। পরবর্তীতে ষষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রিক গণিতবিদ ইউতোশিয়াস আর্কিমিডিসের কাজের উপর একটি বিবরণ প্রকাশ করেন, যা তাকে প্রথমবারের মত বৃহত্তর পাঠকসমাজের কাছে পরিচিত করে তোলে। আর্কিমিডিসের কাজের খুব কম লিখিত দলিল মধ্যযুগের পর অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু সেই অল্পকিছু দলিলই পরবর্তীকালে রেনেসাঁ যুগের বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই উপকারী বলে বিবেচিত হয়। ১৯০৬ সালে আর্কিমিডিসের একটি নতুন পাণ্ডুুুলিপি আবিষ্কৃত হয় যা তার গাণিতিক সমস্যা সমাধানের পদ্ধতির উপর নতুনভাবে আলোকপাত করে। জীবনী আর্কিমিডিস আনুমানিক ২৮৭ খৃস্টপূর্বাব্দে তৎকালীন বৃহত্তর গ্রিসের উপনিবেশ সিসিলি দ্বীপের সিরাকিউজ নামের বন্দর নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। বাইজান্টাইন গ্রিক ঐতিহাসিক জন যেতজেসের বিবরণ অনুযায়ী আর্কিমিডিস পঁচাত্তর বছর বয়সে মারা যান, সেখান থেকে তার জন্মসাল সম্পর্কে ধারণা করা হয়। দ্য স্যান্ড রেকোনার নামক দলিলে আর্কিমিডিস তার বাবার নাম ফিডিয়াস বলে উল্লেখ করেন। ফিডিয়াস একজন জ্যোতির্বিদ ছিলেন, যাঁর সম্পর্কে আর কিছু জানা সম্ভব হয়নি। ঐতিহাসিক প্লুটার্খ তার দ্য প্যারালাল লাইভস নামক জীবনী গ্রন্থে আর্কিমিডিসকে সিরাকিউজের রাজা দ্বিতীয় হিয়েরোর আত্মীয় বলে উল্লেখ করেন। আর্কিমিডিসের বন্ধু হেরাক্লিডিস তার একটি জীবনী লিখেছিলেন, কিন্তু সেটি পরবর্তীতে হারিয়ে যায়। আর্কিমিডিসের জীবনের অনেক খুঁটিনাটি তথ্য তাই আর জানা যায়নি। যেমন তিনি বিয়ে করেছিলেন কিনা, তার কোন সন্তান ছিল কিনা এগুলো এখনো অজানা। যৌবনে আর্কিমিডিস সম্ভবত মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় পড়াশুনা করেছিলেন, যেখানে কোনোন অভ সামোস এবং এরাতোস্থেনেস অফ সিরেন তার সহপাঠী ছিলেন। তিনি কোনোন অভ সামোসকে তার বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন; অপরদিকে তার দুটি কাজের ( দ্য মেথোড অভ মেকানিক্যাল থিওরেমস এবং দ্য ক্যাটল প্রবলেম) শুরুতে এরাতোস্থেনেসের উদ্দেশ্যে কিছু নির্দেশনা ছিল। ২১২ খৃস্টপূর্বাব্দে দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধের সময় আর্কিমিডিস নিহত হন, যখন রোমান সেনাপতি জেনারেল মার্কাস ক্লডিয়াস মার্সেলাস দুই বছর ধরে অবরোধের পর সিরাকিউজ শহর দখল করেন। প্লুটার্খের বিবরণ অনুযায়ী, সিরাকিউজের পতনের সময় আর্কিমিডিস একটি গাণিতিক চিত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এক রোমান সৈন্য তাকে কাজ বন্ধ করে জেনারেল মার্সেলাসের সাথে দেখা করতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। আর্কিমিডিস তার কাজ শেষ না করে যেতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত সৈনিক তার তলোয়ার দিয়ে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করে। অন্য একটি স্বল্প প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, আর্কিমিডিস এক রোমান সৈন্যের কাছে আত্মসমর্পণের সময় নিহত হন। এই মতবাদ অনুসারে, তিনি কিছু গাণিতিক সরঞ্জাম বহন করছিলেন যেগুলোকে সৈন্যটি মূল্যবান সম্পদ ভেবে বিভ্রান্ত হয় এবং লোভে পড়ে তাকে হত্যা করে। বলা হয়ে থাকে যে, জেনারেল মার্সেলাস আর্কিমিডিসের বৈজ্ঞানিক প্রতিভা সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং তিনি তার কোন ক্ষতি না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর্কিমিডিসের মৃত্যুসংবাদ তাই তাকে ক্ষুব্ধ করে। আর্কিমিডিসের সমাধিফলকে একটি ভাস্কর্য রয়েছে যা সমান উচ্চতা ও ব্যাসের একটি গোলক ও একটি সিলিন্ডার নিয়ে গঠিত, যা তার সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কারগুলোর একটিকে নির্দেশ করে। তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে সমান উচ্চতা ও ব্যাসবিশিষ্ট একটি গোলক ও একটি সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে গোলকটির আয়তন ও পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল সিলিন্ডারের আয়তন ও পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলের দুই তৃতীয়াংশ। আর্কিমিডিসের মৃত্যুর ১৩৭ বছর পর ৭৫ খ্রিষ্টাব্দে রোমান বক্তা সিসেরো সিরাকিউজের এগ্রিজেনটিন গেইটের কাছে ঝোপঝাড় পরিবেষ্টিত অবস্থায় আর্কিমিডিসের কবর আবিষ্কার করেন। আবিষ্কার ও উদ্ভাবনসমূহ সোনার মুকুট আর্কিমিডিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটি ছিল অনিয়মিত আকারের বস্তুর আয়তন পরিমাপের পদ্ধতি। ভিট্রুভিয়াসের বিবরণ অনুযায়ী, রাজা দ্বিতীয় হিয়েরোর জন্য লরেল পাতার মুকুটের মত দেখতে একটি সোনার মুকুট প্রস্তুত করা হয়েছিল। আর্কিমিডিসকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মুকুটটি খাঁটি সোনার কিনা সেটা নিশ্চিত করার। সহজ পদ্ধতি ছিল মুকুটটি গলিয়ে তার ঘনত্ব নির্ণয় করা, কিন্তু রাজা মুকুটটি নষ্ট করতে রাজি ছিলেন না। আর্কিমিডিস যখন এ সমস্যা নিয়ে ভাবছিলেন, তখন হঠাৎ গোসল করতে গিয়ে তিনি লক্ষ করেন যে তিনি পানিতে নামা মাত্র বাথটাবের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বুঝতে পারেন যে পানির এই ধর্মকে ঘনত্ব পরিমাপে ব্যবহার করা সম্ভব। যেহেতু ব্যবহারিক কাজের জন্য পানি অসংকোচনশীল, তাই পানিতে নিমজ্জিত মুকুট তার আয়তনের সমান পরিমাণ পানি স্থানচ্যুত করবে। এই অপসারিত পানির আয়তন দ্বারা মুকুটের ভরকে ভাগ করে মুকুটের ঘনত্ব পরিমাপ করা সম্ভব। যদি মুকুটের উপাদানে সোনার সাথে অন্য কোন কম ঘনত্বের সস্তা ধাতু যোগ করা হয় তাহলে তার ঘনত্ব খাঁটি সোনার ঘনত্বের চেয়ে কম হবে। বলা হয়ে থাকে যে এই আবিষ্কার আর্কিমিডিসকে এতই উত্তেজিত করেছিল যে তিনি নগ্ন অবস্থায় শহরের রাস্তায় "ইউরেকা" (গ্রিক: "εὕρηκα!" ; অর্থ "আমি পেয়েছি!") বলে চিৎকার করতে করতে দৌড়াতে শুরু করেছিলেন। বাস্তবে আর্কিমিডিসের আবিষ্কৃত এই পদ্ধতিটি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিল, ঘনত্বের পার্থক্যের কারণে যে পরিমাণ পানি অপসারিত হবে সেটি সঠিকভাবে নির্নয় করা একটি কষ্টসাধ্য কাজ। এই সমস্যার সমাধান করা হয় fluid statics এর মাধ্যমে যেটি আর্কিমিডিস তত্ত্ব নামে পরিচিত। তত্ত্বটি তার On Floating Bodies প্রবন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে। তত্ত্বে বলা হয়েছে যে , কোন বস্তুর ওজন এটি দ্বারা অপসারিত পানির ওজনের সমান। আর্কিমিডিসের স্ক্রু আর্কিমিডিসের প্রকৌশল কাজের অধিকাংশই ছিল তার নিজ শহর সিরাকিউজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য। গ্রিক লেখক অথেনিয়াস অভ নক্রেটিসের বর্ণনা অনুযায়ী, রাজা দ্বিতীয় হিয়েরো আর্কিমিডিসকে একটি বিশাল জাহাজ তৈরি করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সিরাকিউসা নামের এই জাহাজটিকে প্রয়োজনানুযায়ী প্রমোদতরী, রসদ-সরবরাহকারী এবং রণতরী হিসেবে ব্যবহার করে যেত। বলা হয়ে থাকে যে ক্লাসিকাল যুগে নির্মাণ করা সকল জাহাজের মধ্যে সিরাকিউসা ই ছিল সর্ববৃহৎ। অথেনিয়াসের ধারণামতে, এই জাহাজে একসাথে ছয়শো যাত্রী বহন করা যেত এবং জাহাজটিতে সাজানো বাগান, একটি ব্যায়ামাগার এবং দেবী আফ্রোদিতির মন্দির ছিল। স্বাভাবিকভাবেই এত বৃহদাকৃতির একটি জাহাজে প্রচুর পানি চুঁইয়ে ঢুকতো। সেই পানি নির্গমণের জন্য আর্কিমিডিস তার বিখ্যাত আর্কিমিডিসের স্ক্রু তৈরি করেন। এটি ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি সিলিন্ডারের ভেতরে আবদ্ধ একটি স্ক্রু আকৃতির ঘূর্ণায়মান ধাতব ব্লেড যাকে হাত দিয়ে ঘুরানো হত। এই যন্ত্রটি খাল থেকে উঁচু জমিতে সেচের জন্যও ব্যবহার করা হত। বর্তমানকালেও পানি এবং কয়লা, শস্যদানা জাতীয় ক্ষুদ্রাকৃতির পদার্থ উত্তোলনের জন্য আর্কিমিডিসের স্ক্রু ব্যবহার করা হয়। ভিট্রুভিয়াসের বিবরণ অনুযায়ী, আর্কিমিডিসের স্ক্রু সম্ভবত প্রাচীন ব্যবিলনের শুন্যোদ্যানে জলসেচনের জন্য ব্যবহৃত স্ক্রু পাম্পের একটি উন্নততর রূপ ছিল। আর্কিমিডিসের থাবা "দ্য ক্ল অভ আর্কিমিডিস" বা "আর্কিমিডিসের থাবা" একটি অস্ত্র যা আর্কিমিডিস তার শহর সিরাকিউজকে বহিঃস্থ আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য উদ্ভাবন করেছিলেন বলে বলা হয়ে থাকে। এ যন্ত্রটিতে একটি ক্রেনের ন্যায় বাহু এবং তাতে ঝুলানো একটি বিশাল ধাতব আংটা ছিল। এই আংটার সাহায্যে আক্রমণকারী জাহাজকে উল্টে ফেলা হত। আধুনিককালে এই যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে। ২০০৫ সালে "সুপারউইপনস অভ দ্য এনসিয়েন্ট ওয়ার্ল্ড" নামের একটি টেলিভিশন ডকুমেণ্টারীতে এমন একটি যন্ত্র প্রস্তুত করা হয় এবং সিদ্ধান্ত দেয়া হয় যে এটি প্রস্তুত এবং সার্থকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। আর্কিমিডিসের উত্তপ্ত রশ্মিঃ সত্য নাকি জনশ্রুতি? দ্বিতীয় শতকের লেখক লুসিয়ানের বর্ণনা অনুযায়ী, সিরাকিউজ যখন আক্রান্ত হয়, আর্কিমিডিস শত্রুপক্ষের জাহাজ আগুনে ভস্মীভূত করেন। ট্রেলসের এনথেমিয়াসের বিবরণ অনুযায়ী, আর্কিমিডিস অনেকগুলি আয়নার সাহায্যে আক্রমণকারী জাহাজের উপর সূর্যরশ্মি কেন্দ্রীভূত করে সেগুলোতে অগ্নিসংযোগ করেন। রেনেসাঁ যুগ থেকেই অবশ্য এই জনশ্রুতির সত্যতা নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে। রেনে দেকার্ত একে অসত্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন, যদিও বর্তমানকালের বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র আর্কিমিডিসের যুগে সহজলভ্য যন্ত্রপাতির সাহায্যে এই প্রক্রিয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অনেকের ধারণা, সারিবদ্ধভাবে সাজানো অনেকগুলো চকচকে পলিশ করা ব্রোঞ্জ বা তামার পাতের সাহায্যে জাহাজের উপর সূর্যরশ্মি কেন্দ্রীভূত করা সম্ভব। এতে প্রকৃতপক্ষে সৌরচুল্লীতে ব্যবহৃত পরাবৃত্তিক প্রতিফলনের নীতি ব্যবহার করা হবে। ১৯৭৩ সালে গ্রিক বিজ্ঞানী ইওয়ান্নিস সাক্কাস আর্কিমিডিসের সূর্যরশ্মি নিয়ে একটি পরীক্ষা চালান। এ পরীক্ষায় তিনি সত্তুরটি আয়না ব্যবহার করেন। প্রতিটি আয়নার আকার ছিল পাঁচ ফুট বনাম তিন ফুট এবং এগুলো তামা দ্বারা পালিশ করা ছিল। আয়নাগুলো একশো ষাট ফুট দূরবর্তী একটি প্লাইউড নির্মিত জাহাজের দিকে তাক করা ছিল। আয়নাগুলো ঠিকমত ফোকাস করার মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। অবশ্য জাহাজটিতে আলকাতরার প্রলেপ ছিল, যা সম্ভবত অগ্নিসংযোগের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। ২০০৫ এর অক্টোবরে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অভ টেকনোলজির একদল ছাত্র ১২৭টি এক ফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বিশিষ্ট আয়না প্রায় ১০০ ফুট দূরবর্তী একটি কাঠের ডামি জাহাজের উপর ফোকাস করে একটি পরীক্ষা চালায়। প্রায় দশ মিনিট উজ্জ্বল সূর্যালোকে এক জায়গায় থাকার পর জাহাজটিতে আগুন জ্বলে ওঠে। এ পরীক্ষা থেকে সিদ্ধান্তে আসা হয় যে এ প্রক্রিয়ায় অগ্নিসংযোগ সম্ভব তবে তা শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে। মিথবাস্টার্স টেলিভিশন শোতে এমআইটির এই শিক্ষার্থীরা পুনরায় একই পরীক্ষা চালায়, এবার সানফ্রান্সিসকো ঊপকূলে একটি কাঠের মাছধরা নৌকার উপর। এবারও বেশ কিছু সময় পর ছোট আকারে নৌকাটিতে আগুন জ্বলে ওঠে। প্রকৃতপক্ষে আগুন জ্বলে ওঠার জন্য কাঠকে তার দহন তাপমাত্রায় পৌছতে হয় যা প্রায় তিনশো ডিগ্রি সেলসিয়াসের সমান। ২০০৬ এর জানুয়ারিতে অণুষ্ঠানটি সম্প্রচারের সময় মীথবাস্টার্স সিদ্ধান্ত দেয় যে এটি প্রকৃতপক্ষে জনশ্রুতি, সত্য নয়। এর স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে অগ্নিসংযোগের জন্য দীর্ঘ সময় এবং ঊজ্জ্বল সূর্যালোকের প্রয়োজনীয়তার দিকে নির্দেশ করা হয়। এছাড়াও বলা হয় যে সিরাকিউজ পূর্বদিক থেকে আক্রান্ত হয়েছিল, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র সকাল বেলার আক্রমণই এ পদ্ধতিতে মোকাবেলা করা সম্ভব। মীথবাস্টার্সে এ কথাও মনে করিয়ে দেয়া হয় যে সেসময় প্রচলিত অন্যান্য অস্ত্র, যেমন অগ্নিসংযোগ করা তীর অথবা ক্যাটাপোল্টের বোল্ট ব্যবহার করে আরো সহজে কোন জাহাজে দূর থেকে অগ্নিসংযোগ করা সম্ভব ছিল। অন্যান্য আবিষ্কার ও উদ্ভাবন যদিও আর্কিমিডিস নিজে লিভার উদ্ভাবন করেননি, তিনিই প্রথম লিভারের কার্যনীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। পাপ্পাস অভ আলেকজান্দ্রিয়ার কথা অনুযায়ী, লিভারের মূলনীতি বোঝাতে গিয়ে আর্কিমিডিস বলেছিলেন, "আমাকে একটা দাঁড়ানোর জায়গা দাও, আমি পৃথিবীকে তুলে সরিয়ে দেব"। প্লুটার্খ ব্যাখ্যা করেছেন আর্কিমিডিস কীভাবে ব্লক-এন্ড-ট্যাকল পুলি ডিজাইন করেন, যা নাবিকদের লিভারের মুলনীতি ব্যবহার করে অনেক ভারী বস্তু সরাতে সাহায্য করে। এছাড়াও আর্কিমিডিস ক্যাটাপোল্টের ক্ষমতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করেন এবং প্রথম পিউনিক যুদ্ধের সময় ওডোমিটার আবিষ্কার করেন। প্রচলিত বিবরণ অনুযায়ী, ওডোমিটার ছিল একটি গীয়ারযুক্ত ঠেলাগাড়ি যা প্রতি মাইল চলার পর একটি পাত্রে ছোট একটি গোলক ফেলে দিত। সিসেরো (খৃষ্টপূর্ব ১০৬ - ৪৩) তার De re publica নামক কাল্পনিক কথোপকথনে আর্কিমিডিসের উল্লেখ করেন। সিরাকিউজ দখলের পর রোমান সেনাপতি মার্কাস ক্লদিয়াস মার্সেলাস রোমে দুটি যন্ত্র নিয়ে যান। এই যন্ত্রগুলির সাহায্যে সূর্য, চাঁদ এবং পাঁচটি গ্রহের স্থান পরিবর্তন দেখানো যেত, যা জ্যোতির্বিদ্যায় ব্যবহৃত হত। একসময় ধারণা করা হত যে এমন যন্ত্র তৈরি করার জন্য যে পরিমাণ যন্ত্রকৌশলগত জ্ঞান থাকা লাগে তা এত প্রাচীনকালে ছিল না, কিন্তু ১৯০২ সালে এন্টিকাইথেরা মেকানিজমের খোঁজ পাওয়ার পর বোঝা যায় যে প্রাচীন গ্রিকদের এসব বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। গণিত যদিও আর্কিমিডিসকে বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কারের জন্য সবচেয়ে বেশি মনে রাখা হয়, কিন্তু তিনি গণিতেও অনেক অবদান রাখেন। প্লুটার্খ লিখেছেন, "তাঁর সমুদয় ভালোবাসা এবং উচ্চাকাঙ্খা ছিল সেসব তাত্ত্বিক বিষয়ের প্রতি যেখানে তাঁকে বাস্তব জীবনের প্রয়োজন নিয়ে মাথা ঘামাতে হতো না।" আর্কিমিডিস বর্তমানে ইন্টিগ্র্যাল ক্যালকুলাসে ব্যবহৃত অতিক্ষুদ্র সংখ্যার ধারণা ব্যবহার করতে সক্ষম ছিলেন। প্রুফ অভ কন্ট্রাডিকশন ব্যবহার করে তিনি নিখুঁতভাবে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারতেন, সেই সাথে সেসব সমাধানের লিমিটও উল্লেখ করতেন। এই পদ্ধতিকে বলা হয় মেথড অভ এক্সহশন, যার সাহায্যে তিনি পাইয়ের মান যথেষ্ট নিখুঁতভাবে নির্ণয় করেন। তিনি এই কাজের জন্য বৃত্তের বাইরে একটি বড় বহুভুজ এবং ভেতরে একটি ছোট বহুভুজ আঁকেন। বহভুজের বাহুর সংখ্যা যত বৃদ্ধি পায়, তা আকৃতিতে বৃত্তের তত কাছাঁকাছি আসতে থাকে। যখন প্রতিটি বহুভুজের ৯৬টি করে বাহু, তিনি বহুগুলির দৈর্ঘ্য নির্ণয় করেন এবং দেখান যে পাইয়ের মান ২২/৭ (প্রায় ৩.১৪২৯) এবং ২২৩/৭১ (প্রায় ৩.১৪০৮) এর মাঝে, যা প্রকৃত মান ৩.১৪১৬ এর খুবই কাছাঁকাছি। তিনি আরও প্রমাণ করেন যে বৃত্তের ক্ষেত্রফল তার ব্যাসার্ধের বর্গের পাই গুণিতকের সমান। অন দ্য স্ফীয়ার এন্ড সিলিন্ডার বইতে তিনি মতবাদ প্রদান করেন যে, যে কোন মানকে তার নিজের সাথে যথেষ্ট সংখ্যক বার যোগ করলে তা যে কোন নির্দিষ্ট মানকে অতিক্রম করবে। এই মতবাদ বাস্তব সংখ্যার আর্কিমিডিয়ান বৈশিষ্ট্য নামে পরিচিত। মেজারমেন্ট অভ সার্কেল বইতে আর্কিমিডিস ৩ এর বর্গমূল ২৬৫/১৫৩ (প্রায় ১.৭৩২০২৬১) এবং ১৩৫১/৭৮০ (প্রায় ১.৭৩২০৫১২) এর মাঝে বলে উল্লেখ করেন, যা প্রকৃত মান ১.৭৩২০৫৮ এর খুবই কাছাঁকাছি। তিনি অবশ্য কোন পদ্ধতিতে এই মান নির্ণয় করেছিলেন সে প্রসঙ্গে কোন কিছুই উল্লেখ করেননি। কোয়াড্রেচার অভ প্যারাবোলা বইতে আর্কিমিডিস প্রমাণ করেন যে একটি পরাবৃত্ত এবং একটি সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রে ক্ষেত্রফল একই ক্ষেত্রের অন্তঃস্থ ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের ৪/৩ গুণিতকের সমান, যা পাশের চিত্রে দেখানো হয়েছে। তিনি এ সমস্যার সমাধানটিকে একটি অসীম ধারা হিসেবে প্রকাশ করেন যার সাধারণ অণুপাত ১/৪। দ্য স্যান্ড রেকোনার বইতে আর্কিমিডিস এই মহাবিশ্ব মোটা কতগুলো ধূলিকণা ধারণ করতে সক্ষম তা গণনা করার চেষ্টা করেন। এর মাধ্যমে তিনি ধূলিকণার সংখ্যা গণনা করার জন্য অনেক বেশি বড় এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেন। এ সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে তিনি মিরিয়াডের ভিত্তিতে গণনা করার একটি পদ্ধতি বের করেন। মিরিয়াড শব্দটি গ্রিক μυριάς murias থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ১০,০০০। তিনি ১০০ মিলিয়নকে (মিরিয়াডের মিরিয়াড) ভিত্তি করে একটি নাম্বার সিস্টেম প্রস্তাব করেন এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে মহাবিশ্বকে সম্পূর্ণভাবে পূর্ণ করতে ৮ ভিজিনটিলিয়ন ( ৮ x ১০৬৩) ধূলিকণা প্রয়োজন। লেখালেখি আর্কিমিডিস তার কাজের লিখিত রূপের জন্য ডরিক গ্রিক ভাষা ব্যবহার করতেন, যা প্রাচীন সিরাকিউজের আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে প্রচলিত ছিল। . আর্কিমিডিসের অধিকাংশ কাজ ইউক্লিডের কাজের মত সংরক্ষিত হয়নি; তার সাতটি থীসিসের কথা জানা যায় কেবলমাত্র অন্যদের কাজের রেফারেন্স থেকে। পাপ্পাস অভ আলেকজান্দ্রিয়া আর্কিমিডিসের "অন স্ফীয়ার মেকিং" এবং বহুতল বিশিষ্ট বস্তুর উপর আরএকটি কাজের কথা উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে থেরন অভ আলেকজান্দ্রিয়া প্রতিসরণ সম্পর্কে আর্কিমিডিসের হারিয়ে যাওয়া একটি লেখনী "Catoptrica" এর উল্লেখ করেন। জীবদ্দশায় আর্কিমিডিস তার কাজের প্রচারের জন্য আলেকজান্দ্রিয়ার গণিতবিদদের উপর নির্ভর করতেন। বাইজান্টাইন স্থপতি ইসিডোর অভ মিলেতাস আর্কিমিডিসের লেখনীগুলোকে একত্রিত করেন; পরবর্তীতে ষষ্ঠ শতকে ইউতোশিয়াস অভ আসকালোন তার কাজের উপর লিখিত বিবরণ প্রকাশ করার পর আর্কিমিডিসের কাজ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। আর্কিমিডিসের কাজ থাবিত ইবনে কুররা (৮৩৬-৯০১ খ্রিষ্টাব্দ) আরবিতে এবং জেরার্ড অভ ক্রেমোনা (১১৪৭-১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দ) ল্যাটিনে অনুবাদ করেন। রেনেসাঁর সময় ১৫৪৪ সালে জোহান হেরওয়াগেন সুইজারল্যান্ডের বাজল শহর থেকে গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষায় আর্কিমিডিসের কাজ সহ এডিটিও প্রিন্সেপস (Editio Princeps) বইয়ের প্রথম সংস্করণ প্রকাশ করেন। ১৫৮৬ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি বাতাস ও পানিতে ধাতব বস্তুর ওজন নির্ণয়ের জন্য একটি হাইড্রোস্ট্যাটিক নিক্তি উদ্ভাবন করেন, যা আর্কিমিডিসের কাজ দ্বারা অণুপ্রাণিত বলে বলা হয়ে থাকে। অক্ষত কাজসমূহ অন দ্য ইকুইলিব্রিয়াম অভ প্লেইনস (On the Equilibrium of Planes) (দুই খন্ড) প্রথম খণ্ডে পনেরটি উপপাদ্য আর সাতটি অণুসিদ্ধান্ত রয়েছে, অপরদিকে দ্বিতীয় খণ্ডে দশটি উপপাদ্য পাওয়া যায়। এই বইতে আর্কিমিডিস লিভারের মূলনীতি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, "লিভারের দুই বাহুতে প্রযুক্ত ওজন বাহু দুইটির দৈর্ঘ্যের ব্যস্তানুপাতিক।" এই বইয়ে উল্লিখিত মূলনীতির সাহায্যে আর্কিমিডিস বিভিন্ন জ্যামিতিক আকারের বস্তু, যেমন ত্রিভুজ, সামান্তরিক, পরাবৃত্তের ক্ষেত্রফল এবং ভরকেন্দ্র নির্ণয় করেন। অন দ্য মেজারমেন্ট অভ আ সার্কেল (On the Measurement of a Circle) কোনন অভ সামোস (Conon of Samos) এর ছাত্র ডোসিথিস অভ পেলুসিয়ামের (Dositheus of Pelusium) সাথে যৌথভাবে লিখিত এই নিবন্ধে তিনটি উপপাদ্য রয়েছে। দ্বিতীয় উপপাদ্যে আর্কিমিডিস দেখান যে পাইয়ের মান ২২৩/৭১ এর চেয়ে বড় এবং ২২/৭ এর চেয়ে ছোট। ২২/৭ কে পাইয়ের আসন্ন মান হিসেবে মধ্যযুগে গ্রহণ করা হয় এবং বর্তমানেও অত্যন্ত নিখুঁত হিসাবের প্রয়োজন না থাকলে ২২/৭ কেই পাইয়ের মান হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। "অন স্পাইরালস (On Spirals)" আঠাশটি উপপাদ্য নিয়ে গঠিত এই কাজটিও ডোসিথিসকে উদ্দেশ্য করে লেখা। এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে আর্কিমিডিয়ান স্পাইরালকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, পোলার স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় ("r",θ) স্পাইরালকে নিচের সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়ঃ যেখানে "a" এবং "b" দুটি বাস্তব সংখ্যা। "অন দ্য স্ফীয়ার এ্যাণ্ড দ্য সিলিন্ডার (On the Sphere and the Cylinder)" (দুই খন্ড) ডোসিথিসকে উদ্দেশ্য করে লেখা এই উপপাদ্যে আর্কিমিডিস সমান উচ্চতা এবং ব্যাস বিসিষ্ট গোলক এবং সিলিন্ডারের মধ্যবর্তী সম্পর্ক প্রকাশ করেন। এই উপপাদ্য অনুযায়ী, "r" ব্যাসার্ধবিশিষ্ট গোলক এবং সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে, গোলকের আয়তন πr3 এবং সিলিন্ডারের আয়তন 2πr3। অপরদিকে, গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল 4πr2 এবং সিলিন্ডারের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল 6πr2। গোলকটির আয়তন এবং পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল যথাক্রমে সিলিন্ডারের আয়তন এবং পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলের অংশ। উল্লেখ্য, আর্কিমিডিস নিজের এই কাজটি নিয়ে সর্বাপেক্ষা বেশি গর্ববোধ করতেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অণুরোধে তাঁর সমাধিফলকের উপর একটি গোলক এবং একটি সিলিন্ডার স্থাপন করা হয়। "অন কোনয়েডস এ্যাণ্ড স্পেরোয়েডস (On Conoids and Spheroids)" বত্রিশটি উপপাদ্য সংবলিত এই কাজটিও ডোসিথিয়াসকে উদ্দ্যেশ্য করে লেখা। এতে আর্কিমিডিস কোণক, গোলক এবং পরাবৃত্তিক গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল এবং আয়তন পরিমাপ করেন। "অন ফ্লোটিং বডিজ (On Floating Bodies)" (দুই খন্ড) প্রথম খণ্ডে আর্কিমিডিস প্রবাহী পদার্থের সাম্যাবস্থার সূত্র বিবৃত করেন এবং প্রমাণ করেন যে পানি একটি ভারকেন্দ্রের চারপাশে গোলকীয় আকার ধারণ করবে। তাঁর এই কাজটি সমসাময়িক গ্রিক জ্যোতির্বিদদের (যেমন এরাতোস্থেনিস) "পৃথিবী গোল" মতবাদের ব্যাখ্যা করার চেষ্টা থেকে হয়ে থাকতে পারে। তিনি এমন একটি বিন্দু কল্পনা করেছিলেন যার দিকে সকল পদার্থ পতিত হয় এবং গোলকীয় আকার লাভের চেষ্টা করে। দ্বিতীয় খণ্ডে তিনি পরাবৃত্তিক গোলকের বিভিন্ন অংশের সাম্যাবস্থামূলক অবস্থান পরিমাপ করেন। সম্ভবত তাঁর চেষ্টা ছিল জাহাজের হালের একটি আদর্শ আকৃতি নির্ণয় করা। তাঁর কাজ করা পরাবৃত্তিক গোলকগুলির মধ্যে কিছু তাদের ভূমি পানির নিচে এখন শীর্ষ পানির উপরে রেখে ভাসতে পারতো, যেভাবে হিমশৈল সাগরে ভেসে বেড়ায়। আর্কিমিডিস এই বইয়ে তাঁর প্লবতার নীতি বিবৃত করেন এভাবেঃ "দ্য কোয়াড্রেচার অভ প্যারাবোলা(The Quadrature of the Parabola)" ডোসিথিয়াসকে উদ্দেশ্য করে লেখা চব্বিশটি উপপাদ্য সংবলিত এই রচনায় আর্কিমিডিস দুইটি ভিন্ন পদ্ধতিতে প্রমাণ করেন যে একটি পরাবৃত্ত এবং একটি সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল সমান ভূমি ও উচ্চতাবিশিষ্ট ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের ৪/৩ গুণ। এই প্রমাণের জন্য তিনি একটি জ্যামিতিক ধারার অসীম পর্যন্ত যোগফল নির্ণয় করেন। তথ্যসূত্র আর্কিমিডিসের কাজগুলি অনলাইনে দেখুন প্রাচীন গ্রিকভাষায় লেখা: PDF scans of Heiberg's edition of the Works of Archimedes, now in the public domain ইংরেজি অনুবাদ : The Works of Archimedes, trans. T.L. Heath; supplemented by The Method of Mechanical Theorems, trans. L.G. Robinson আরও জানুন Republished translation of the 1938 study of Archimedes and his works by an historian of science. Complete works of Archimedes in English. বহিঃসংযোগ Archimedes—The Greek mathematician and his Eureka moments—In Our Time, broadcast in 2007 (requires RealPlayer) The Archimedes Palimpsest project at The Walters Art Museum in Baltimore, Maryland The Mathematical Achievements and Methodologies of Archimedes Article examining how Archimedes may have calculated the square root of 3 at MathPages Archimedes On Spheres and Cylinders at MathPages Photograph of the Sakkas experiment in 1973 Testing the Archimedes steam cannon Stamps of Archimedes খ্রিষ্টপূর্ব ২৮৭-এ জন্ম খ্রিষ্টপূর্ব ২১২-এ মৃত্যু গ্রিক প্রকৌশলী গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রিক দার্শনিক গ্রিক গণিতবিদ গ্রিক পদার্থবিজ্ঞানী প্রবাহী গতিবিজ্ঞানী
https://en.wikipedia.org/wiki/Archimedes
Archimedes
Archimedes of Syracuse ( AR-kim-EE-deez; c. 287 – c. 212 BC) was an Ancient Greek mathematician, physicist, engineer, astronomer, and inventor from the ancient city of Syracuse in Sicily. Although few details of his life are known, he is regarded as one of the leading scientists in classical antiquity. Considered the greatest mathematician of ancient history, and one of the greatest of all time, Archimedes anticipated modern calculus and analysis by applying the concept of the infinitely small and the method of exhaustion to derive and rigorously prove a range of geometrical theorems. These include the area of a circle, the surface area and volume of a sphere, the area of an ellipse, the area under a parabola, the volume of a segment of a paraboloid of revolution, the volume of a segment of a hyperboloid of revolution, and the area of a spiral. Archimedes's other mathematical achievements include deriving an approximation of pi, defining and investigating the Archimedean spiral, and devising a system using exponentiation for expressing very large numbers. He was also one of the first to apply mathematics to physical phenomena, working on statics and hydrostatics. Archimedes' achievements in this area include a proof of the law of the lever, the widespread use of the concept of center of gravity, and the enunciation of the law of buoyancy known as Archimedes' principle. He is also credited with designing innovative machines, such as his screw pump, compound pulleys, and defensive war machines to protect his native Syracuse from invasion. Archimedes died during the siege of Syracuse, when he was killed by a Roman soldier despite orders that he should not be harmed. Cicero describes visiting Archimedes' tomb, which was surmounted by a sphere and a cylinder that Archimedes requested be placed there to represent his mathematical discoveries. Unlike his inventions, Archimedes's mathematical writings were little known in antiquity. Mathematicians from Alexandria read and quoted him, but the first comprehensive compilation was not made until c. 530 AD by Isidore of Miletus in Byzantine Constantinople, while commentaries on the works of Archimedes by Eutocius in the 6th century opened them to wider readership for the first time. The relatively few copies of Archimedes' written work that survived through the Middle Ages were an influential source of ideas for scientists during the Renaissance and again in the 17th century, while the discovery in 1906 of previously lost works by Archimedes in the Archimedes Palimpsest has provided new insights into how he obtained mathematical results.
1199
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%8F%E0%A6%A1%E0%A6%93%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A1%20%E0%A6%89%E0%A6%87%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%A8
এডওয়ার্ড উইটেন
এডওয়ার্ড উইটেন () (জন্ম ২৬শে আগস্ট, ১৯৫১) গণিতে ফিল্ড্‌স পদক বিজয়ী একজন মার্কিন গণিতবিদ ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন শহরের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিদ্যালয়ের একজন অবসরোত্তর সাম্মানিক (ইমেরিটাস) অধ্যাপক। উইটেন স্ট্রিং তত্ত্ব, কোয়ান্টাম অভিকর্ষ, অতিপ্রতিসম কোয়ান্টাম ক্ষেত্রে তত্ত্বসমূহে ও গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রের একজন গবেষক। উইটেনের গবেষণাকর্ম বিশুদ্ধ গণিতশাস্ত্রের উপরে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক গণিত সংঘ তাঁকে প্রথম পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে গণিতে ফিল্ডস পদক প্রদান করে। পদার্থবিজ্ঞানে অন্তর্দৃষ্টির জন্য (যেমন সাধারণ আপেক্ষিকতা ক্ষেত্রে ১৯৮১ সালে ধনাত্মক শক্তি উপপাদ্যটির প্রমাণ) এবং জোনসের অপরিবর্তনীয়গুলিকে ফাইনম্যান সমগ্রক হিসেবে ব্যাখ্যা করার জন্য তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তাঁকে কার্যত এম-তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়। জীবনী উইটেন ম্যারিল্যান্ডের বাল্টিমোরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ব্যাচেলর্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ১৯৭৪ সালে এমএ এবং ১৯৭৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার পিএইচডি উপদেষ্টা ছিলেন নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড জোনাথন গ্রস। তিনি ১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত প্রিন্সটনে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিতে উইটেনের মুখ্যপাতা ArXiv-এ সংরক্ষিত উইটেনের প্রকাশনাসমূহ arxiv.org এ উইটেন থিম ট্রি ফিউচারামা পর্বের তথ্য পোপ বেনেডিক্ট XVI কর্তৃক পনটিফিসিয়াল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ উইটেন'কে নিয়োগদান গণিতবিদ মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী মার্কিন গণিতবিদ ১৯৫১-এ জন্ম ফিল্ডস পদক বিজয়ী ন্যাশনাল মেডেল অফ সাইন্স বিজয়ী আলবার্ট আইনস্টাইন পদক বিজয়ী লরেন্টজ মেডেল বিজয়ী হার্ভি পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের বিশিষ্ট সভ্য ২০শ শতাব্দীর মার্কিন পদার্থবিদ ব্র্যান্ডেস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আমেরিকান ম্যাথমেটিকাল সোসাইটির সভ্য আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির বিশিষ্ট সভ্য রয়েল সোসাইটি অব এডিনবার্গের সভ্য রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য হার্ভার্ড সভ্য ইহুদি মার্কিন বিজ্ঞানী জীবিত ব্যক্তি গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানী মার্কিন ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্য ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
https://en.wikipedia.org/wiki/Edward_Witten
Edward Witten
Edward Witten (born August 26, 1951) is an American theoretical physicist known for his contributions to string theory, topological quantum field theory, and various areas of mathematics. He is a professor emeritus in the school of natural sciences at the Institute for Advanced Study in Princeton. Witten is a researcher in string theory, quantum gravity, supersymmetric quantum field theories, and other areas of mathematical physics. Witten's work has also significantly impacted pure mathematics. In 1990, he became the first physicist to be awarded a Fields Medal by the International Mathematical Union, for his mathematical insights in physics, such as his 1981 proof of the positive energy theorem in general relativity, and his interpretation of the Jones invariants of knots as Feynman integrals. He is considered the practical founder of M-theory.
1200
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A6%A8%20%E0%A6%AD%E0%A6%A8%20%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%89%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8
জন ভন নিউম্যান
জন ভন নিউমান ( ; , [; ২৮শে ডিসেম্বর, ১৯০৩  - ৮ ফেব্রুয়ারি , ১৯৫৭ ) একজন হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান গণিতবিদ, পদার্থবিদ, কম্পিউটার বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং পলিম্যাথ ছিলেন। ভন নিউমানকে সাধারণত তাঁর সময়ের শীর্ষস্থানীয় গণিতবিদ হিসাবে গণ্য করা হত এবং তাকে বলা হত "মহান গণিতবিদদের সর্বশেষ প্রতিনিধি"। তিনি খাঁটি এবং প্রায়োগিক বিজ্ঞানকে সংহত করেছিলেন। ভন নিউমান গণিত ( গণিতের ভিত্তি, কার্যকরী বিশ্লেষণ, এরগোডিক তত্ত্ব, উপস্থাপনা তত্ত্ব, অপারেটর বীজগণিত, জ্যামিতি, টপোলজি এবং সংখ্যাসূচক বিশ্লেষণ ), পদার্থবিজ্ঞান ( কোয়ান্টাম মেকানিক্স, হাইড্রোডাইনামিক্স এবং কোয়ান্টাম স্ট্যাটিস্টিকাল মেকানিক্স ) অর্থনীতি ( গেম তত্ত্ব ), কম্পিউটিং ( ভন নিউম্যান আর্কিটেকচার, লিনিয়ার প্রোগ্রামিং, স্ব-প্রতিলিপি মেশিন, স্টোকাস্টিক কম্পিউটিং ) এবং পরিসংখ্যান সহ অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তিনি কার্যকরী বিশ্লেষণের বিকাশে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জন্য অপারেটর তত্ত্বের প্রয়োগের পথিকৃৎ এবং গেম তত্ত্বের বিকাশ এবং সেলুলার অটোমাতা, সার্বজনীন নির্মাতা এবং ডিজিটাল কম্পিউটারের ধারণাগুলির একজন মূল ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ভন নিউমান তার জীবনের প্রায় দেড় শতাধিক নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন: গণিতে প্রায় ৬০, প্রয়োগিত গণিতে ৬০, পদার্থবিদ্যায় ২০ টি এবং বাকীগলো বিশেষ গাণিতিক বিষয় বা অ-গাণিতিক বিষয়ে। তাঁর শেষ রচনা, তিনি হাসপাতালে থাকাকালীন লিখিত একটি অসম্পূর্ণ পান্ডুলিপি, পরবর্তীকালে দ্য কম্পিউটার এবং ব্রেন নামে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। স্ব-প্রতিরূপের কাঠামো সম্পর্কে তাঁর বিশ্লেষণ ডিএনএর কাঠামো আবিষ্কারের পূর্ববর্তী। তিনি ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ জমা দেয়া তার জীবন সম্পর্কে তথ্যের সংক্ষিপ্ত তালিকায় তিনি লিখেছেন, "আমার যে কাজটি আমি সবচেয়ে জরুরি বলে বিবেচনা করি তা হ'ল কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর, যা ১৯২৬ সালে গ্যাটিনজেন এবং পরে বার্লিনে ১৯২৭–১৯২৯ সালে বিকশিত হয়েছিল। এছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের অপারেটর তত্ত্ব, বার্লিন ১৯৩০ এবং প্রিন্সটন ১৯৩৫-১৯৩৯; অরগোডিক উপপাদ্যে, প্রিন্সটন, ১৯৩১-১৯৩২ সম্পর্কে আমার কাজ।" দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভন নিউমান ম্যানহাটন প্রকল্পে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড টেলার, গণিতবিদ স্ট্যানিসলাউ উলাম এবং অন্যদের সাথে, থার্মোনিউক্লিয়াল বিক্রিয়ায় জড়িত পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের সমস্যা সমাধানের মূল পদক্ষেপ এবং হাইড্রোজেন বোমা নিয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি প্রসারণ-ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহৃত বিস্ফোরক লেন্সগুলির পিছনে গাণিতিক মডেলগুলি তৈরি করেছিলেন এবং উৎপন্ন বিস্ফোরক শক্তির পরিমাপ হিসাবে "কিলোটন" ( টিএনটি-এর) শব্দটি তৈরি করেছিলেন। যুদ্ধের পরে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সাধারণ উপদেষ্টা কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনীর ব্যালিস্টিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি, সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ অস্ত্র প্রকল্প এবং লরেন্স লিভারমোর জাতীয় পরীক্ষাগার সহ সংস্থাগুলির জন্য পরামর্শ দেন। হাঙ্গেরীয় আমেরিকান হিসাবে যে সোভিয়েতরা পারমাণবিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি অস্ত্রের সীমাবদ্ধ করার জন্য পারস্পরিক আশ্বাসপ্রাপ্ত ধ্বংসের নীতিটি তৈরি ও প্রচার করেছিলেন। প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা পারিবারিক ইতিহাস এক ধনী, সমৃদ্ধ এবং অ-পর্যবেক্ষক ইহুদি পরিবারে নিউম্যান জ্যানোস লাজোসের জন্ম হয়েছিল। হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় পরিবারের নামটি প্রথমে আসে এবং তাঁর প্রদত্ত নামগুলি ইংরেজিতে জন লুইসের সমতুল্য। ভন নিউমানের জন্ম হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে, যা তখন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। তিনি তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন; তাঁর দুই ছোট ভাইবোন হলেন মিহলি (ইংরেজি: মাইকেল ভন নিউমানান; ১৯০৭-১৯৮৯) এবং মিক্লাস (নিকোলাস ভন নিউমান, ১৯১১-২০১১)। তাঁর পিতা, নিউমান মিক্সা (ম্যাক্স ভন নিউমান, ১৮৭৩–১৯২৮) একজন ব্যাংকার ছিলেন, যিনি আইন বিষয়ে ডক্টরেট করেছিলেন। তিনি ১৮৮০ এর দশকের শেষে প্যাকস থেকে বুদাপেস্টে চলে এসেছিলেন। মিক্সার বাবা এবং দাদা দু'জনেরই উত্তর হাঙ্গেরির জেম্প্লেন কাউন্টি ওন্ডে (বর্তমানে সেজেরেন্স শহরের অংশ) জন্ম হয়েছিল। জন এর মা ছিলেন কান মার্গিট (ইংরেজি: মার্গারেট কান); তার বাবা-মা ছিলেন জাকব কান এবং মাইসেলস পরিবারের কাতালিন মিজেলস। কান পরিবারের তিন প্রজন্ম বুদাপেস্টে কান-হেলারের অফিসের উপরে প্রশস্ত অ্যাপার্টমেন্টে বাস করত; ভন নিউমানের পরিবার উপরের তলায় একটি ১৮ কক্ষের অ্যাপার্টমেন্টে থাকত। ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৩ এ সম্রাট ফ্রানজ জোসেফ জন পিতাকে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যে তাঁর কাজের জন্য হাঙ্গেরিয়ান আভিজাত্যের দিকে উন্নীত করেছিলেন। নিউমান পরিবার এভাবে বংশানুক্রমিকমার্গিটটাই অর্জন করেছিল, যার অর্থ "মার্গিট্টা" (আজকের মারঘিটা, রোমানিয়া )। শহরের সাথে পরিবারের কোনও যোগাযোগ ছিল না; মার্গারেটের প্রসঙ্গে এই আবেদনটি বেছে নেওয়া হয়েছিল, যেমনটি তাদের বেছে নেওয়া তিনটি মার্গুইরাইট চিত্রযুক্ত কোট। নিউমান জানোস মার্গিটটাই নিউউম্যান জানোস (জন নিউম্যান ডি মারজিটা) হয়েছিলেন, যা থেকে পরে তিনি জার্মান জোহান ফন নিউমানের হয়ে ওঠেন। শিশু বয়সেই পরম বিস্ময়কর ব্যক্তি ভন নিউমান একটি শিশু বয়স থেকেই পরম বিস্ময়কর ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যখন ছয় বছর বয়সী ছিলেন, তখন তিনি মাথার মধ্যেই দুটি আট-অঙ্কের সংখ্যা ভাগ করতে পারতেন এবং প্রাচীন গ্রিক ভাষায় কথা বলতে পারেন। ছয় বছর বয়সী ভন নিউমান যখন তার মাকে লক্ষ্যহীনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "আপনি কী হিসাব করছেন?"। তারা যখন ছোট ছিল, পরিচারিকারা ভন নিউমন, তার ভাই এবং তার চাচাত ভাইদের শিক্ষা দিত। ম্যাক্স বিশ্বাস করতেন যে হাঙ্গেরিয়ান ছাড়াও অন্য ভাষার জ্ঞানও অপরিহার্য, তাই বাচ্চাদের ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান এবং ইতালীয় ভাষাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। আট বছর বয়সের মধ্যে ভন নিউউমন ডিফারেনশিয়াল এবং অবিচ্ছেদ্য ক্যালকুলাসের সাথে পরিচিত ছিলেন, তবে তিনি ইতিহাসে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। তিনি মাধ্যমে তার উপায় পড়া উইলহেম ওঙ্কেন এর আইনজেল্ডারস্টেলুঞ্জেনে এলজেমাইন গেসিচিট এর ৪৬টি ভলিয়ম পড়েছিলেন। ম্যাক্সের ক্রয় করা একটি অনুলিপি একটি ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে ছিল। অ্যাপার্টমেন্টের একটি কক্ষ একটি লাইব্রেরি এবং পাঠকক্ষে রূপান্তরিত হয়েছিল, যেখানে সিলিং থেকে মেঝে পর্যন্ত বইয়ের তাক ছিল। ভন নিউমানান ১৯১৪ সালে লুথেরান ফ্যাসরি এভাঙ্গালিকাস জিমনজিয়ামে প্রবেশ করেছিলেন। ইউজিন উইগনার লুথেরান স্কুলে ভন নিউমানের এক বছর আগে ছিলেন এবং শীঘ্রই তাঁর বন্ধু হন। এটি বুদাপেস্টের অন্যতম সেরা স্কুল এবং এটি অভিজাতদের জন্য নকশাকৃত একটি উজ্জ্বল শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ ছিল। হাঙ্গেরীয় সিস্টেমের অধীনে, শিশুরা তাদের সমস্ত শিক্ষা একটি জিমনেসিয়ামে পেয়েছিল। হাঙ্গেরিয়ান স্কুল ব্যবস্থা বৌদ্ধিক কৃতিত্বের জন্য খ্যাতিযুক্ত একটি প্রজন্ম তৈরি করেছিল, যার মধ্যে থিওডোর ভন কার্মেন (জন্ম ১৮৮১), জর্জ ডি হেভেসি (জন্ম ১৮৮৫), মাইকেল পোলানাই (জন্ম ১৮৯১), লে লে সিজিলার্ড (জন্ম ১৮৯৮), ডেনিস গ্যাবার (জন্ম ১৯০০), ইউজিন উইগনার (জন্ম ১৯০২), এডওয়ার্ড টেলার (জন্ম ১৯০৮), এবং পল এরদেস (জন্ম ১৯১৩)। সম্মিলিতভাবে, তারা কখনও কখনও " দ্যা মার্শিয়ান " নামে পরিচিত ছিল। যদিও ম্যাক্স তার বয়সের উপযুক্ত গ্রেড স্তরে ভন নিউমানকে স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য জোর দিয়েছিল, তবে তিনি যে অঞ্চলে ছিলেন সেখানে তাকে প্রাইভেট টিউটর নিয়োগের বিষয়ে সম্মত হন। ১৫ বছর বয়সে, তিনি বিশিষ্ট বিশ্লেষক গ্যাবার সেজিগের অধীনে উন্নত ক্যালকুলাস অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন। প্রথম সাক্ষাতে, ছেলের গাণিতিক প্রতিভার সাথে সেজিগ এতটাই অবাক হয়েছিলেন যে তিনি অশ্রুসিক্ত হয়েছিলেন। ভন নিউমানের ক্যালকুলাসে যে সমস্যাগুলির উদ্ভব হয়েছিল তার কয়েকটির তাৎক্ষ্ণিক সমাধান তার বাবার স্টেশনারিতে আঁকা এবং এখনও বুদাপেস্টের ভন নিউমান আর্কাইভে প্রদর্শিত হচ্ছে। ১৯ বছর বয়সে ভন নিউমান দু'টি বড় অঙ্কের গাণিতিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন, এর মধ্যে দ্বিতীয়টি অর্ডিনাল সংখ্যার আধুনিক সংজ্ঞা দেয় যা গেয়র্গ ক্যান্টরের সংজ্ঞাটিকে বহিষ্কার করে। জিমনেসিয়ামে তাঁর পড়াশোনা শেষে ভন নিউউমন গণিতের জন্য জাতীয় পুরস্কার এটভিস পুরস্কার জিতেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা তাঁর বন্ধু থিওডোর ভন কার্মানের মতে, ভন নিউমানের বাবা চেয়েছিলেন যে জন তাকে শিল্পে অনুসরণ করে এবং এর মাধ্যমে তার সময় গণিতের চেয়ে আরও আর্থিকভাবে কার্যকর প্রচেষ্টাতে ব্যয় করতে পারে। আসলে, তার বাবা ভন কার্মন তার ছেলেকে গণিতকে তার প্রধান হিসাবে গ্রহণ না করার জন্য রাজি হবার জন্য বলেছিলেন। ভন নিউমান এবং তাঁর বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে সেরা ক্যারিয়ারের পথটি একজন রাসায়নিক প্রকৌশলী হওয়া। ভন নিউমানের এ বিষয়ে তেমন জ্ঞান ছিল না, তাই তাকে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নে দুই বছর, নন-ডিগ্রি কোর্স করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, এরপরে তিনি সম্মানজনক ইটিএইচ জুরিখের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন, যা তিনি ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বরে পাস করেছিলেন। একই সময়ে ভন নিউমানও বুদাপেস্টের পজমেনি পেটার বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে পিএইচডি করতে যান। তাঁর থিসিসের জন্য, তিনি ক্যান্টরের সেট তত্ত্বটির একটি অডিওম্যাটাইজেশন তৈরি করতে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি ১৯২৬ সালে ইটিএইচ জুরিখ থেকে রাসায়নিক প্রকৌশলী হিসাবে স্নাতক হন (যদিও উইগনার বলেছেন যে ভন নিউম্যান কখনও রসায়ন বিষয়ের সাথে খুব বেশি সংযুক্ত ছিলেন না), এবং পিএইচডি করার জন্য তাঁর শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। গণিতে একই সাথে তার রাসায়নিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির সাথে, যার মধ্যে উইগনার লিখেছিলেন, "সম্ভবত পিএইচডি থিসিস এবং পরীক্ষা একটি প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা গঠন করেনি।" এরপরে তিনি রকিফেলার ফাউন্ডেশনের ডেভিড হিলবার্টের অধীনে গণিত অধ্যয়নের জন্য অনুদানে গুটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। গ‍্যালারি সম্মাননা অপারেশনস রিসার্চ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের জন ভন নিউমন থিয়োরি পুরস্কার (আইএনএফওএমএস, পূর্বে টিআইএমএস-ওআরএসএ) অপারেশন গবেষণা এবং পরিচালন বিজ্ঞানের তত্ত্বের ক্ষেত্রে মৌলিক এবং টেকসই অবদান রেখেছেন এমন একজন ব্যক্তিকে (বা গোষ্ঠী) বার্ষিক পুরস্কার দেওয়া হয়। কম্পিউটার সম্পর্কিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অসামান্য সাফল্যের জন্য আইইইই জন ভন নিউমন মেডেল প্রতি বছর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইইই) ইনস্টিটিউট কর্তৃক ভূষিত করা হয়।" জন ভন নিউমান লেকচারটি প্রতি বছর সোসাইটি ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিক্সে (এসআইএএম) দেওয়া হয় এমন একজন গবেষক যিনি প্রায়োগিক গণিতে অবদান রেখেছিলেন এবং নির্বাচিত প্রভাষককে একটি আর্থিক পুরস্কারও দেওয়া হয়। চাঁদের ক্রেটার ভন নিউমন তার নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে। গ্রহাণু ২২৮২৪ ভন নিউমান তার সম্মানে নামকরণ করা হয়েছিল। নিউ জার্সির প্লিনসবোরো টাউনশিপের জন ভন নিউমন সেন্টারকে তার সম্মানে নামকরণ করা হয়েছিল। হাঙ্গেরীয় কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের পেশাদার সমাজ, জন ভন নিউম্যান কম্পিউটার সোসাইটির নাম ভন নিউমানের নামে রাখা হয়েছিল। এটি ১৯৮৯ সালের এপ্রিলে বন্ধ ছিল। ৪ মে, ২০০৫ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাক পরিষেবা আমেরিকান বিজ্ঞানীদের স্মারক ডাকটিকিট সিরিজ জারি করে, শিল্পী ভিক্টর স্টাবিনের নকশাকৃত বেশ কয়েকটি কনফিগারেশনে চারটি ৩৭-স্ব স্ব আঠালো স্ট্যাম্পের সেট। চিত্রিত বিজ্ঞানীরা হলেন ভন নিউম্যান, বারবারা ম্যাকক্লিনটক, জোসিহিয়া উইলার্ড গিবস এবং রিচার্ড ফেনম্যান। রাজক লসল্লি কলেজ ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের জন ভন নিউমান অ্যাওয়ার্ডটি তাঁর সম্মানে নামকরণ করা হয়েছিল এবং ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর এমন প্রফেসরদের দেওয়া হয় যারা সঠিক সামাজিক বিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রেখেছিল এবং তাদের কাজের মধ্য দিয়ে পেশাদার বিকাশের উপর দৃঢ়ভাবে প্রভাব ফেলেছে এবং কলেজ সদস্যদের চিন্তা। কেকস্কেমেট কলেজের একটি উত্তরাধিকারী হিসাবে হাঙ্গেরিতে ২০১৬ সালে জন ভন নিউম্যান বিশ্ববিদ্যালয় ( হু: নিউম্যান জেনোস এগিইয়েটেম ) স্থাপিত হয়। নির্বাচিত কাজ ১৯২৩। স্থানান্তরিত নম্বরগুলির প্রবর্তনের সময়, ৩৪৬-৫৪। ১৯২৫। সেট তত্ত্বের একটি অডিওম্যাটাইজেশন, ৩৯৩-৪১৩। ১৯৩২। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের গাণিতিক ভিত্তি, বায়ার, আরটি, ট্রান্স।, প্রিন্সটন ইউনিভ। টিপুন। ১৯৯৬ সংস্করণ:। ১৯৩৭। ১৯৪৪। থিওরি অফ গেমস এবং ইকোনমিক আচরণ, মরগেনস্টার্ন, ও।, প্রিন্সটন ইউনিভ সহ। সংরক্ষণাগার ..org এ অনলাইনে চাপুন। ২০০৭ সংস্করণ:। ১৯৪৫। ইডিভিএসি-তে একটি প্রতিবেদনের প্রথম খসড়া ১৯৪৮। "আচরণের সেরিব্রাল মেকানিজমে: " অটোমেটার সাধারণ এবং যৌক্তিক তত্ত্ব : হিকসন সিম্পোজিয়াম, জেফ্রেস, এলএ এড।, জন উইলে অ্যান্ড সন্স, নিউ ইয়র্ক, এন। ওয়াই, ১৯৫১, পিপি। ১-৩১, এমআর ০০৪৫৪৪৬। ১৯৯৬০। ১৯৬৩। জন ভন নিউমান, সংগৃহীত রচনাগুলি, তাউব, এএইচ, এডি।, পেরগ্যামন প্রেস।আইএসবিএন 0-08-009566-6 ১৯৬৬। ইলিনয় প্রেস ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় প্রেসের আত্ম-প্রজনন অটোমাতা, বার্কস, এডাব্লু, এডি।আইএসবিএন 0-598-37798-0 আরও দেখুন মন্তব্য তথ্যসূত্র আরও পড়ুন বই জনপ্রিয় সাময়িকী Good Housekeeping Magazine, September 1956, "Married to a Man Who Believes the Mind Can Move the World" ভিডিও John von Neumann, A Documentary (60 min.), Mathematical Association of America বহিঃসংযোগ গুগল স্কলারে ভন নিউমানের প্রোফাইল অ্যালিস আর বার্কস এবং আর্থার ডব্লু বার্কস, চার্লস ব্যাবেজ ইনস্টিটিউট, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিনিয়াপলিসের সাথে মৌখিক ইতিহাসের সাক্ষাৎকার। এলিস বার্কস এবং আর্থার বার্কস এনিয়াক, এডভ্যাক, এবং আইএএস কম্পিউটারগুলি এবং কম্পিউটার উন্নয়নে জন ভন নিউমানের অবদানের বর্ণনা দিয়েছেন। মিজিনিপিসের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্লস ব্যাবেজ ইনস্টিটিউট ইউজিন পি। উইগনারের সাথে মৌখিক ইতিহাস সাক্ষাৎকার। মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্লস ব্যাবেজ ইনস্টিটিউট নিকোলাস সি মেট্রোপলিসের সাথে মৌখিক ইতিহাসের সাক্ষাৎকার। ভন নিউমান বনাম ডাইরাক - দর্শনশাস্ত্রের স্ট্যানফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে গণিতবিদ প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য রয়্যাল নেদারল্যান্ডস কলা ও বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য ইহুদি উদ্ভাবক ইহুদি মার্কিন বিজ্ঞানী হাঙ্গেরীয় গণিতবিদ হাঙ্গেরীয় ইহুদি হাঙ্গেরীয় উদ্ভাবক আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির বিশিষ্ট সভ্য এনরিকো ফের্মি পুরস্কার প্রাপক মার্কিন রোমান ক্যাথলিক মার্কিন নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানী মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ১৯৫৭-এ মৃত্যু ১৯০৩-এ জন্ম অপর্যালোচিত অনুবাদসহ পাতা ২০শ শতাব্দীর মার্কিন গণিতবিদ ২০শ শতাব্দীর মার্কিন পদার্থবিদ কম্পিউটার বিজ্ঞানী প্রবাহী গতিবিজ্ঞানী ইহুদি সমাজতান্ত্রিক বিরোধী গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানী মার্কিন ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্য কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানী তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী মানসিক গণনাকারী
https://en.wikipedia.org/wiki/John_von_Neumann
John von Neumann
John von Neumann ( von NOY-mən; Hungarian: Neumann János Lajos [ˈnɒjmɒn ˈjaːnoʃ ˈlɒjoʃ]; December 28, 1903 – February 8, 1957) was a Hungarian and American mathematician, physicist, computer scientist and engineer. He had perhaps the widest coverage of any mathematician of his time, integrating pure and applied sciences and making major contributions to many fields, including mathematics, physics, economics, computing, and statistics. He was a pioneer in building the mathematical framework of quantum physics, in the development of functional analysis, and in game theory, introducing or codifying concepts including cellular automata, the universal constructor and the digital computer. His analysis of the structure of self-replication preceded the discovery of the structure of DNA. During World War II, von Neumann worked on the Manhattan Project. He developed the mathematical models behind the explosive lenses used in the implosion-type nuclear weapon. Before and after the war, he consulted for many organizations including the Office of Scientific Research and Development, the Army's Ballistic Research Laboratory, the Armed Forces Special Weapons Project and the Oak Ridge National Laboratory. At the peak of his influence in the 1950s, he chaired a number of Defense Department committees including the Strategic Missile Evaluation Committee and the ICBM Scientific Advisory Committee. He was also a member of the influential Atomic Energy Commission in charge of all atomic energy development in the country. He played a key role alongside Bernard Schriever and Trevor Gardner in the design and development of the United States' first ICBM programs. At that time he was considered the nation's foremost expert on nuclear weaponry and the leading defense scientist at the U.S. Department of Defense. Von Neumann's contributions and intellectual ability drew praise from colleagues in physics, mathematics, and beyond. Accolades he received range from the Medal of Freedom to a crater on the Moon named in his honor.
1202
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%8F%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%20%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
এভারিস্ত গালোয়া
এভারিস্ত গালোয়া (ফরাসি ভাষায়: Évariste Galois) (অক্টোবর ২৫, ১৮১১ - মে ৩১, ১৮৩২) একজন ফরাসি গণিতবিদ। তিনি গ্রুপ থিওরীর প্রবর্তন করেন। তিনি একটি মাত্র চিঠিতে (কোশির কাছে লেখা) প্রমাণ করেন যে, পঞ্চম বা তার বেশি মাত্রার বহুপদীর সাধারণ সমাধান মূলকের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আবিষ্কারটি যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তিনি যে উপায়ে প্রমাণ করেন সেই উপায়টি। গ্যালোয়ার জন্ম ২৫ অক্টোবর, ১৮১১। তাঁর বয়স যখন ১৪ তখন প্রথমবারের মত পরিচয় ঘটে গণিতের সাথে। যেদিন প্রথম ক্লাসে গণিত পড়ানো হয়, তাঁর মধ্যে যেন একটা বিপর্যয় ঘটে যায়। তিনি গণিতে এতই মজে ছিলেন যে, অন্য সব কিছু পড়া একেবারে ছেড়ে দিলেন। সব কিছুতে খুব খারাপ করতে লাগলেন। আগে তেমন খারাপ ছাত্র ছিলেন না, ল্যাটিন ভাষায় দক্ষতার জন্য পুরস্কারও পেয়েছিলেন, কিন্তু এখন অন্য বিষয়গুলোতে তাঁর পাশ করা বেশ কঠিন হয়ে গেল। গণিত চর্চায় এতই এগিয়েছিলেন যে তাঁর হঠাৎ মনে হওয়া শুরু হলো, গণিতে তাকে শেখানোর মতো স্কুলের শিক্ষকদের কাছে আর অবশিষ্ট কিছুই নেই। ফলে নিজেই নিজের মত বই কিনে গণিত চর্চা শুরু করলেন। কিন্তু এইবার ভিন্ন সমস্যা শুরু হল। গ্যালোয়া যেই পরিমাণে গণিত বুঝেন, সেই পরিমাণ গণিত আসলে তাঁর শিক্ষকরাও বুঝতেন না। ফলে পরীক্ষার খাতায় গ্যালোয়া যা উত্তর করেন তাঁর কিছুই তাঁদের বোধগম্য হয় না। এবার গ্যালোয়া গণিতেও খারাপ করা শুরু করলেন। ১৮২৮ সালে তিনি École Polytechnique নামক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেন। এটা ছিলো গণিতের জন্য তৎকালীন ফ্রান্সের সবচেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে তিনি পড়ে ফেলেছেন Adrien Marie Legendre' এর Éléments de Géométrie, Joseph Louis Lagrange এর Réflexions sur la résolution algébrique des équations (এটি পরবর্তিতে তাঁকে ইকুয়েশন থিওরীতে কাজ করতে আগ্রহী করে তোলে), Leçons sur le calcul des fonctions ইত্যাদি। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় গিয়ে তিনি পরীক্ষকদের কোনো প্রশ্নের উত্তরেই সন্তুষ্ট করতে পারলেন না। আসলে তিনি তাঁদেরকে উত্তর এমন অল্প কথায় ব্যাখ্যা ছাড়া দিয়েছিলেন যে কেউ তা বুঝতে পারেনি। ফলে তিনি École Polytechnique তে ভর্তি হতে ব্যর্থ হন। পরে সেই বছর তিনি অপেক্ষাকৃত নিম্ন র‍্যাংকিং এর বিশ্ববিদ্যালয় École préparatoire তে ভর্তি হন। স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ব্যর্থ গ্যালোয়া তাঁর সমস্ত জিদ যেন ঢেলে দেন গণিতের উপরে। তুমুল উৎসাহে মেতে ওঠেন ত্রিঘাত, চতুর্ঘাত আর পঞ্চঘাত সমীকরনে। ১৮২৯ সালে তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশ হয় Annales de mathematiques এ continuous fraction এর উপরে। অনেক পরিশ্রম করে ২টি রিসার্চ পেপার তৈরি করে জমা দেন Academy of Sciences এ। তখন Academy of Sciences এর প্রধান ছিলেন বিখ্যাত গণিতবিদ Augustin Louis Cauchy। তিনি পেপার দুটির নিজেই সুপারিশ করেছিলেন, একই সাথে তিনি গ্যালোয়ার কাছে পেপার দুটি ফেরত পাঠান পুনর্বিন্যাস ও ব্যাখ্যা করে লেখার জন্য। বছর ঘুরতেই (১৮২৯) রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গ্যালোয়ার বাবা আত্মহত্যা করেন। পিতার মৃতদেহ সৎকার করে গ্যালোয়া প্যারিস ফিরলেন, অসমাপ্ত কাজ শেষ করে তার পেপার দুটি জমা দিলেন একাডেমির সেক্রেটারি স্যার জসেফ ফুরিয়ারে কাছে। কিন্তু সেবার গ্যালোয়া পুরস্কার পান নি। পুরস্কার ঘোষণার কিছু দিন আগে ফুরিয়ার মারা যান এবং তার পেপার যে জমা হয়েছে এমন কোন ডকুমেন্টের অস্তিত্বই ছিল না। ফলে রাজনৈতিক কারণে গ্যালোয়ার পেপার গায়েব হয়েছে বলে তাঁর সন্দেহ হয়। এই সন্দেহ পুরোপুরি বাস্তবে প্রমাণিত হলো যখন অযৌক্তিক ও অবোধ্য এর খোড়া যুক্তি দেখিয়ে একাডেমি অফ সায়েন্স তার একাধিক গবেষণাপত্র ফেরত পাঠায় (১৮৩০)। সে বছর গ্যালোয়া মোট ৩টি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন, যার মধ্যে একটি বিখ্যাত Galois theory এর ভিত্তি গড়ে দেয়, অন্য দুইটি ছিল আধুনিক উপায়ে সমীকরনের মুল নির্ণয় সম্পর্কিত এবং নাম্বার থিওরি নিয়ে। শেষোক্তটি বেশ গুরুত্ববাহি, কারণ finite field এর ধারণা প্রথম এখানেই পাওয়া যায়। সে বছর গ্যালোয়া তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টরকে গালিগালাজ করে একটি প্রতিবেদন লেখেন। ডিরেক্টর ছিলেন প্রজাতন্ত্রের সমর্থক। সুতরাং তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয় । এরপর তিনি যেন পুরোই উচ্ছনে গেলেন। বছর ঘুরতেই (১৮৩১) মদ আর সন্ত্রাস তার নিত্যসঙ্গী হয়ে যায়। কখনও চাকু হাতে সম্রাটকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন খোলা রাস্তায়, তো পরক্ষনে গ্রেফতার। ছাড়া পেয়ে আবার নিষিদ্ধ ন্যাশনাল গার্ডের পোশাক পরে রাস্তায় বের হলে তাঁর জেল হয়ে যায়। এক মাস পর গ্যালোয়া জেল থেকে ছাড়া পান। কিছুদিন পর তাঁর প্রনয়ের খবর চাঊর হয়ে যায়, প্রেয়সী স্টাফানি ফেলিসি। স্টাফানি এক বিখ্যাত ডাক্তারের মেয়ে, প্যারিসের এক সম্ভ্রান্ত বংশের ছেলে পেশ্চু ডি’হেরবিনভিল এর বাগদত্তা। পেশ্চু এই ঘটনায় খুব রেগে গেলেন। অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে শুটিং ডুয়েলের চ্যালেঞ্জ দেন গ্যালোয়াকে। ডুয়েলের আগের রাতে (১৮৩২) নিজের মৃত্যু সম্পর্কে গ্যালোয়া এতই নিশ্চিত ছিলেন যে সারারাত জেগে তার থিওরেমগুলো লিখে ফেলেন। তাঁর সে রাতের কাজের মধ্যে দিয়ে আলোর মুখ দেখে গ্রুপ থিওরি। সাথে একটি চিঠি লিখেন যে তাঁর যদি পরদিন ডুয়েলে মৃত্যু হয়, তাহলে যেন তাঁর কাজগুলোকে ইউরোপের বড় বড় গণিতবিদদের কাছে পৌছে দেওয়া হয়। পরদিন, ৩০ মে ১৮৩২ সাল, ডুয়েলে গ্যালোয়াকে নিখুঁত নিশানায় ভুলুন্ঠিত করে পেশ্চু। ৩১ মে মৃত্যু হয় গ্যালোয়ার। কিন্তু মাত্র একরাতে গ্যালোয়া যা লিখছিলেন তার মর্ম উদ্ধার করতে গাউস, জ্যাকোবিদের অনেক গলদঘর্ম হতে হয়েছে। গ্যালোয়ার মৃত্যুর ১৪ বছর পর, ১৮৪৬ সালে লিউভিল সেই কাগজগুলো থেকে যে থিওরি উদ্ধার করেন তা তিনি গ্যালোয়ার থিওরি নামে প্রকাশ করেন। তাঁর কাজের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে গ্যালোয়া থিওরি এবং গ্রুপ থিওরি, যা কিনা বিমূর্ত বীজগণিত এর দুটি প্রধান শাখাঁ। তথ্যসূত্র পাদটীকা গণিতবিদ ফরাসি গণিতবিদ ১৮১১-এ জন্ম ১৮৩২-এ মৃত্যু ১৯শ শতাব্দীর ফরাসি গণিতবিদ
https://en.wikipedia.org/wiki/%C3%89variste_Galois
%C3%89variste_Galois
null
1203
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A1%20%E0%A6%B9%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%82
রিচার্ড হ্যামিং
রিচার্ড হ্যামিং (ফেব্রুয়ারি ১১, ১৯১৫ – জানুয়ারি ৭, ১৯৯৮) একজন মার্কিন গণিতবিদ ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী। শিক্ষাজীবন তিনি ১৯৩৭ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর্স ডিগ্রি, ১৯৩৯ সালে নেব্রেস্কা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ১৯৪২ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। টুরিং পুরস্কার, অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং মেশিনারি, ১৯৬৮. ফেলো অব দ্য ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স, 1968. IEEE Emanuel R. Piore Award, 1979. মেম্বার অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমী অব ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৯৮০. Harold Pender Award, University of Pennsylvania, 1981. IEEE Richard W. Hamming Medal, 1988. ফেলো অব দ্য অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং মেশিনারি, ১৯৯৪. Basic Research Award, Eduard Rhein Foundation, 1996. Certificate of Merit, Franklin Institute, 1996 তথ্যসূত্র ১৯১৫-এ জন্ম ১৯৯৮-এ মৃত্যু মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন শিক্ষার্থী ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্সের সভ্য ২০শ শতাব্দীর মার্কিন গণিতবিদ নিউ ইয়র্কের সিটি কলেজের অনুষদ অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং মেশিনারির সভ্য টুরিং পুরস্কার বিজয়ী শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
https://en.wikipedia.org/wiki/Richard_Hamming
Richard Hamming
Richard Wesley Hamming (February 11, 1915 – January 7, 1998) was an American mathematician whose work had many implications for computer engineering and telecommunications. His contributions include the Hamming code (which makes use of a Hamming matrix), the Hamming window, Hamming numbers, sphere-packing (or Hamming bound), Hamming graph concepts, and the Hamming distance. Born in Chicago, Hamming attended University of Chicago, University of Nebraska and the University of Illinois at Urbana–Champaign, where he wrote his doctoral thesis in mathematics under the supervision of Waldemar Trjitzinsky (1901–1973). In April 1945, he joined the Manhattan Project at the Los Alamos Laboratory, where he programmed the IBM calculating machines that computed the solution to equations provided by the project's physicists. He left to join the Bell Telephone Laboratories in 1946. Over the next fifteen years, he was involved in nearly all of the laboratories' most prominent achievements. For his work, he received the Turing Award in 1968, being its third recipient. After retiring from the Bell Labs in 1976, Hamming took a position at the Naval Postgraduate School in Monterey, California, where he worked as an adjunct professor and senior lecturer in computer science, and devoted himself to teaching and writing books. He delivered his last lecture in December 1997, just a few weeks before he died from a heart attack on January 7, 1998.
1204
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%95%20%E0%A6%86%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0
জাক আদামার
জাক আদামার () (ডিসেম্বর ৮, ১৮৬৫ – অক্টোবর ১৭, ১৯৬৩) একজন ফরাসি গণিতবিদ। তিনি ১৮৯৬ সালে করা তার মৌলিক সংখ্যা উপপাদ্যের প্রমাণের জন্য বিখ্যাত। পাদটীকা গণিতবিদ ১৮৬৫-এ জন্ম ১৯৬৩-এ মৃত্যু ফরাসি গণিতবিদ ১৯শ শতাব্দীর ফরাসি গণিতবিদ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফরাসি নাস্তিক ইহুদি নাস্তিক ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য রয়্যাল নেদারল্যান্ডস কলা ও বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য পাঠ্যপুস্তক লেখক
https://en.wikipedia.org/wiki/Jacques_Hadamard
Jacques Hadamard
Jacques Salomon Hadamard (French: [adamaʁ]; 8 December 1865 – 17 October 1963) was a French mathematician who made major contributions in number theory, complex analysis, differential geometry, and partial differential equations.
1205
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%A1%20%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9F
ডাভিড হিলবের্ট
ডাভিড হিলবের্ট ( ডাভ়িট্‌ হিল্‌বেয়াট্‌, জানুয়ারি ২৩, ১৮৬২ - ফেব্রুয়ারি ১৪, ১৯৪৩) একজন জার্মান গণিতবিদ, যাঁকে ঊনবিংশ শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগের সবচেয়ে প্রভাবশালী গণিতবিদদের অন্যতম হিসাবে গণ্য করা হয়। ফরাসি গণিতবিদ অঁরি পোয়াঁকারের সাথে হিলবের্টকে গাণিতিক বিশ্বজনীনবাদীদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। হিলবের্ট গণিতের বিভিন্ন শাখায় অবদান রেখেছেন, যেমন অব্যয় তত্ত্ব (Invariant theory), হিলবের্টের প্রস্তাবনা, এবং হিলবার্ট জগতের ধারণা। তিনি বিশুদ্ধ গণিতের বিভিন্ন শাখা যেমন বীজগণিত, সংখ্যাতত্ত্ব, জ্যামিতি, ব্যবকলন সমীকরণসমূহ ও ব্যবকলনীয় বিশ্লেষণ, যুক্তিবিজ্ঞান ও গণিতের ভিত্তি, ইত্যাদিতে অবদান রাখেন। তিনি প্রমাণ তত্ত্ব ও গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞানের অন্যতম স্রষ্টা এবং গেয়র্গ কান্টরের সেট তত্ত্বের সমর্থক। ১৮৯৯ সালে তিনি গ্রুন্ডলাগেন ডের গেওমেট্রিক ("জ্যামিতির মৌলিক ধারণাসমূহ") নামের একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যাতে ১৯শ শতকের শেষে জ্যামিতি অধ্যয়নে যে পরিবর্তনগুলি এসেছিল, তা লিপিবদ্ধ আছে। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ২৩টি অমীমাংসিত গাণিতিক সমস্যার একটি তালিকা প্রদান করেন, যার নাম হিলবের্টের সমস্যাতালিকা। তালিকাটি বিংশ শতকের গাণিতিক গবেষণার দিক নির্দেশনা করেছে। এগুলির অনেকগুলির জন্য আজও সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়নি। হিলবের্ট তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ব্যাপারেও আগ্রহী ছিলেন। হিলবের্ট ও তার ছাত্ররা কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান ও সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্যবহৃত গণিত উদ্ভাবন করে গেছেন। হিলবের্ট পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্বগুলির স্বতঃসিদ্ধ নির্মাণের যে প্রকল্পটি পরিচালনা করেন, তার ফলে গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের মধ্যে যোগসূত্র রচিত হয়। হিলবের্ট ও আইনস্টাইনের মধ্যে আলোচনার সূত্র ধরেই ১৯১৫ সালে মহাকর্ষের ক্ষেত্র সমীকরণগুলির সূত্রায়ন সম্ভব হয়। হিলবের্ট ১৮৬২ সালে ভেলাউ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্যোনিগসবের্গ ও হাইডেলবের্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৮৮৫ সালে তিনি ডক্টরেট সনদ লাভ করেন। ১৮৯৫ সালে তিনি গোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৩০ সালে অবসরগ্রহণের আগ পর্যন্ত সেখানেই কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। জীবন প্রথম জীবন এবং শিক্ষা অটো ও মারিয়া টেরেজা (এর্টমান) হিলবের্টের দুই সন্তানের প্রথম এবং একমাত্র পুত্র সন্তান হিসেবে হিলবের্ট জন্মগ্রহণ করেন; তার জন্মস্থান প্রুশিয়া সাম্রাজ্যের প্রুশিয়া প্রদেশের ক্যোনিগসবের্গ শহরে হতে পারে (হিলবের্টের নিজের বক্তব্য অনুসারে) অথবা ক্যোনিগসবের্গের কাছে ভেলাউতেও (১৯৪৬ সাল থেকে যা নামেনস্ক হিসেবে পরিচিত) হতে পারে যেখানে তার বাবা তার জন্মের সময়ে কাজ করতেন। ১৮৭২ সালের শেষের দিকে, হিলবের্ট ফ্রিডরিখ কোলেগে গ্যুমনাজিউম (কলেজিয়াম ফ্রিডেরিসিয়ানাম, ১৪০ বছর আগে ইমানুয়েল কান্ট একই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন) নামক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন; কিন্তু একটা খারাপ অবস্থার পর, তিনি ঐ স্কুল ছেড়ে অধিকতর বিজ্ঞানমুখী ভিলহেল্ম গ্যুমনাজিউমে ভর্তি হন (১৮৭৯র শেষে) এবং সেখান থেকেই উত্তীর্ণ হন (১৮৮০র শুরুতে)। স্নাতকপাঠ শেষ করে ১৮৮০ সালের শরৎ মাসে তিনি ক্যোনিগসবের্গ, “আলবার্টিনা”য় ভর্তি হন। ১৮৮২ সালের শুরুতে হেরমান মিংকফ্‌স্কি (হিলবের্টের থেকে দুবছরের ছোট এবং ক্যোনিগসবের্গের বাসিন্দা, কিন্তু দেড় বছরের জন্য বার্লিনে গেছিলেন) ক্যোনিগসবের্গে ফিরে আসেন এবং উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। হিলবের্ট লাজুক, প্রতিভাধর মিংকভস্কির সাথে আজীবন বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। কর্মজীবন ১৮৮৪ সালে,আডলফ হুরভিৎস গ্যোটিঙেন থেকে একজন এক্সট্রাঅর্ডিনারিয়াস (অর্থাৎ একজন সহ-অধ্যাপক) হিসেবে আসেন। এই তিন ব্যক্তিত্বের মধ্যে একটি নিবিড় এবং ফলদায়ী বৈজ্ঞানিক ধারণার বিনিময় শুরু হয় এবং মিংকফ্‌স্কি ও হিলবের্ট তাঁদের বৈজ্ঞানিক কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় পরস্পরের ওপর বিপরীত প্রভাব ফেলার চেষ্টা করতেন। হিলবের্ট ১৮৮৫ সালে ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন; তিনি ফার্দিনান্দ ভন লিন্ডেম্যানের অধীনে গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছিলেন যার নাম ছিল উবের ইনভারিয়ান্তে আইজেন্সচ্যাফেন স্পেজিলার বাইনারার ফরমেন, ইন্সবেসোন্ডেরে ডার কুগেলফাঙ্কশনেন (“অন দি ইনভ্যারিয়ান্ট প্রপার্টিস অফ স্পেশাল বাইনারি ফর্মস, ইন পার্টিকুলার দি স্ফেরিকাল হার্মোনিক ফাংশানস্”)। হিলবের্ট ক্যোনিগসবের্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৮৬ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত প্রিভাট-ডোৎসেন্ট (বরিষ্ঠ প্রভাষক) হিসেবে ছিলেন। ১৮৯৫ সালে ফেলিক্স ক্লাইন তার জায়গায় আসার ফলে, তিনি গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপকের পদ লাভ করেন। ক্লাইন এবং হিলবের্টের সময়ে গ্যোটিঙেন গণিতের দুনিয়ায় একটি প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তিনি সেখানে আজীবন কাজ করে যান। গ্যোটিঙেন ঘরানা হিলবের্টের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছিলেন হেরমান ভাইল, দাবাড়ু ইমানুয়েল লাস্কার, এর্ন্সট জারমেলো, এবং কার্ল গুস্টাভ হেম্পেল, জন ভন নিউম্যান ছিলেন তার সহকারী। গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, হিলবের্ট এমি নোয়েদার এবং আলোঞ্জো চার্চের মতো বিংশ শতকের সবচেয়ে বিখ্যাত গণিতবিদদের সাথে একটি সামাজিক বৃত্তে বেষ্টিত ছিলেন। তার ৬৯ জন পিএইচডি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন যাঁরা পরবর্তীকালে বিখ্যাত গণিতবিদ হয়েছিলেন; যেমন (গবেষণাপত্রের সালের উল্লেখ রয়েছে) : অটো ব্লুমেন্থাল (১৮৯৮), ফেলিক্স বার্নস্টিন (১৯০১), হেরমান ভাইল (১৯০৮), রিচার্ড কোর‍্যান্ট (১৯১০), এরিক হেকে (১৯১০), হুগো ষ্টাইনহাউস (১৯১১) এবং ভিলহেল্ম আকারমান (১৯২৫)। ১৯০২ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত হিলবের্ট মাটেমাটিশে আনালেন নামক তৎকালীন মুখ্য গণিত গবেষণা সাময়িকীর সম্পাদক ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবন ১৮৯২ সালে, হিলবের্ট ক্যাথি জেরস্ককে (১৮৬৪ – ১৯৪৫) বিয়ে করেন যিনি ক্যোনিগসবের্গের একজন ব্যবসায়ীর মেয়ে ছিলেন। স্বাধীনচেতা স্পষ্টবাদী এই মহিলার সাথে হিলবের্টের মিল ছিল। ক্যোনিগসবের্গে থাকাকালীন তাঁদের এক সন্তান হয়, ফ্রান্স হিলবের্ট (১৮৯৩ – ১৯৬৯)। ফ্রান্স সারাজীবন ধরে এক অনির্ণীত মানসিক রোগে ভুগতো। তার এই হীনবুদ্ধিতা তার বাবার কাছে একটা ভয়াবহ হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং এই দুর্ভাগ্য গ্যোটিঙেনের গণিতবিদ এবং ছাত্রছাত্রীদের এক প্রধান সমস্যা ছিল। হিলবের্ট গণিতবিদ হেরমান মিংকফ্‌স্কিকে তার “সবচেয়ে ভালো এবং সত্যিকারের বন্ধু” বলে গণ্য করতেন। হিলবের্ট খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন এবং প্রুশীয় ইভাঞ্জেলিকাল মণ্ডলীতে কালভাঁপন্থী হয়ে পড়েন। পরে তিনি চার্চ পরিত্যাগ করেন এবং একজন অজ্ঞেয়বাদী হয়ে যান। তিনি বলেন গণিতের সত্য ঈশ্বরের অস্তিত্ব অথবা অন্য কোন পূর্বকৃত ধারণার দ্বারা প্রভাবিত হয় না। যখন সৌরকেন্দ্রিক মতবাদের ওপর তার প্রতিষ্ঠিত সত্যের হয়ে দাঁড়াতে পারেননি বলে গ্যালিলিও গ্যালিলেইকে সমালোচনা করা হয়, হিলবের্ট তার প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, “কিন্তু [গ্যালিলিও] বোকা ছিলেন না। বোকারাই মনে করে বৈজ্ঞানিক সত্যের জন্য শহীদ হতে হয়; এটা ধর্মে প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক ফলাফল নিজেই একসময় প্রমাণিত হয়।” পরবর্তী জীবন ১৯২৫ সাল নাগাদ, হিলবের্টের পার্নিসিয়াস অ্যানিমিয়া হয়, তৎকালীন সময়ে এটি ছিল একটি দুরারোগ্য ব্যাধি; ভিটামিনের অভাবে এই রোগ হয় যার প্রাথমিক লক্ষণ হল ক্লান্তি; তার সহকারী ইউজিন উইগনার তাঁকে “প্রচণ্ড ক্লান্ত” এক ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং যেভাবে তাঁকে “বৃদ্ধ মনে হয়” এবং তার রোগের নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরেও, তিনি “১৯২৫ সালের পর থেকে একজন নামমাত্র বিজ্ঞানী ছিলেন এবং অবশ্যই একজন হিলবের্ট নন।” ১৯৩৩ সালে হিলবের্ট দেখেছিলেন গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত সকল শিক্ষকদের নাৎসীরা বিতাড়িত করে দিচ্ছে। যাদের চলে যেতে বাধ্য হতে হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলেন হেরম্যান ওয়েইল (যিনি ১৯৩০ সালে যখন হিলবের্ট অবসর নেন তখন তার পদ পান), এমি নোয়েদার এবং এডমন্ড ল্যান্ডো। পল বার্নেস নামে এক ব্যক্তি যিনি হিলবের্টের সাথে গাণিতিক যুক্তি নিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন এবং গ্রান্ডল্যাগেন ডার ম্যাথেমেটিক নামে বিখ্যাত বইটি (যেটি ১৯৩৪ এবং ১৯৩৯ সালে দুটি খণ্ডে বের হয়েছিল) দুজনে একসাথে লিখেছিলেন, তাঁকেও জার্মানি ছাড়তে হয়। উক্ত বইটি হিলবের্ট-আকারম্যানের লেখা বই প্রিন্সিপলস অফ ম্যাথেমেটিকাল লজিকের (১৯২৮) একটি সিক্যুয়েল। হেরম্যান ওয়েইলের পরে আসেন হেলমাট হেসে। প্রায় একবছর পরে, হিলবের্ট একটি ভোজসভায় আমন্ত্রিত হয়ে আসেন এবং নতুন শিক্ষামন্ত্রী বার্নহার্ড রাস্টের পাশেই বসেন। রাস্ট জিগ্যেস করেছিলেন “ইহুদীদের চলে যাওয়ার ফলে কি গণিত প্রতিষ্ঠান কি সত্যিই খুব দুরবস্থার মুখে পড়েছে?” উত্তরে হিলবার্ট বলেছিলেন, “দুরবস্থা? এর তো আর কোন অস্তিত্বই নেই, আছে কি?” মৃত্যু ১৯৪৩ সালে যখন হিলবের্ট মারা যান, নাৎসিরা সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদেরই বদলি করে দিয়েছিল কারণ আগেকার প্রায় সমস্ত শিক্ষরাই হয় ছিলেন ইহুদি অথবা ইহুদিকে বিয়ে করেছিলেন। হিলবের্টের শেষযাত্রায় ডজনখানেকেরও কম লোক ছিল, তার মধ্যে কেবলমাত্র দুজন ছিল তার বন্ধু সহকারী, তাঁদের একজন আর্নল্ড সমারফেল্ড, এক তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এবং ক্যোনিগসবের্গের বাসিন্দা। তার মৃত্যুর ছ’মাস পরে সেই খবর বাইরের বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। গ্যোটিঙেনে তার সমাধিলিপিতে ১৯৩০ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর সোসাইটি অফ জার্মান সায়েন্টিস্টস অ্যান্ড ফিজিশিয়ান্সে তার প্রদত্ত অবসরকালীন বক্তৃতার শেষ বিখ্যাত লাইনটি উদ্ধৃত করা হয়। ল্যাটিন প্রবাদ “ইগনোরামাস এট ইগনোরাবিমাস” অথবা “আমরা জানি না, আমরা জানব না”-এর উত্তরে বলেছিলেনঃ ভির মুসেন ভিসেন ভির ভের্ডেন ভিসেন। বাংলায়                     আমদেরকে জানতে হবে আমরা জানব। ১৯৩০ সালে সোসাইটি অফ জার্মান সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড ফিজিশিয়ান্সে বার্ষিক অধিবেশনে তার উপরিউক্ত কথা বলার আগের দিন, কুর্ট গোডেল – জ্ঞানতত্ত্বের ওপরে সভা চলাকালীন গোলটেবিল বৈঠকে সোসাইটির সভার সাথে – পরীক্ষামূলকভাবে তার অসম্পূর্ণ উপপাদ্যের প্রথম অভিব্যক্তি ঘোষণা করেছিলেন। গোডেলের অসম্পূর্ণ উপপাদ্য দেখায় যে মৌলিক স্বতঃসিদ্ধমূলক ব্যবস্থাগুলোও (যেমন পিয়ানো অ্যারিথমেটিক) হয় স্বতঃবিরোধী অথবা এমন যৌক্তিক পক্ষ মেনে চলে যা প্রমাণ অথবা অপ্রমাণ করা অসম্ভব। গণিত এবং পদার্থবিদ্যায় অবদান হিলবের্টের গর্ডানের সমস্যার সমাধান ইনভ্যারিয়ান্ট অপেক্ষকের ওপরে হিলবের্টের প্রথম কাজের ফলে ১৮৮৮ সালে তার বিখ্যাত ফাইনাইটনেস থিওরেম প্রদর্শন করা সম্ভব হয়েছিল। কুড়ি বছর আগে, পল গর্ডান একটি জটিল গাণিতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে দ্বিমিক রূপের উৎপাদকের ফাইনাইটনেসের এই থিওরেমটি প্রদর্শন করেছিলেন। তার পদ্ধতির সাধারণীকরণ করার সময় দুটি চলরাশির অধিক অপেক্ষক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হন, কারণ গণনাটিতে একটি প্রকাণ্ড জটিল গণনাপদ্ধতির অবতারণা করা হয়েছিল। গর্ডান সমস্যা নামে পরিচিত এই বিষয়টির সমাধান করতে গিয়ে হিলবের্ট বুঝেছিলেন এর সমাধান করতে গেলে সম্পূর্ণ অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এর ফলে তিনি হিলবার্টের বেসিস থিওরেম প্রকাশ করলেন, যেখানে দেখালেন যেকোন সংখ্যক চলরাশিতে কোয়ান্টিক্সের ইনভ্যারিয়ান্টের জন্য জেনারেটরের নির্দিষ্ট সেটের অস্তিত্ব থাকে, কেবলমাত্র বিমূর্ত (অ্যাবস্ট্র্যাক্ট) রূপে। অর্থাৎ, এইধরনের সেটের অস্তিত্ব প্রদর্শনের ক্ষেত্রে, একটা গঠনমূলক প্রমাণ থাকতেই হবে এমন মানে নেই – এটি “একটা বস্তু” হিসেবে প্রদর্শিত হয় না – কিন্তু এর অস্তিত্বের প্রমাণ আছে এবং এক্ষত্রে হিলবের্ট একটি অসমাপ্ত এক্সটেনশনের ক্ষেত্রে ল অফ এক্সক্ল্যুডেড মিডল পদ্ধতির ওপর নির্ভর করেছিলেন। হিলবের্ট তার প্রাপ্ত ফল ম্যাথমেটিসচে আন্নালেনে পাঠিয়েছিলেন। গর্ডান ম্যাথমেটিসচে আন্নালেনের ইনভ্যারিয়ান্ট তত্ত্বের বিশেষজ্ঞ হিসেবে হিলবের্টের উপপাদ্যের বৈপ্লবিক বিষয়টির প্রশংসা করতে পারেননি এবং নিবন্ধটিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন এই তত্ত্বটি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিস্তৃত নয়। তার মন্তব্যটি ছিলঃ ডাস ইস্ট নিচ্‌ট মাথেমেটিক। ডাস ইস্ট থিওলজি। (এটা গণিত নয়। এটা ধর্মতত্ত্ব।) অন্যদিকে ক্লিন এই কাজটির গুরুত্ব সম্বন্ধে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এবং এই ব্যাপারে নিশ্চিত করেছিলেন যে এটি কোনরকম পরিবর্তন ছাড়াই প্রকাশিত হবে। ক্লিনের বক্তব্যে উৎসাহিত হয়ে, হিলবের্ট তার পদ্ধতিটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় একটি নিবন্ধ বের করেন যেখানে তিনি জেনারেটরের ন্যুনতম সেটের সর্বোচ্চ ঘাতের ধারণা দিয়েছিলেন এবং তিনি সেটিকে আরও একবার আন্নালেনে পাঠান। পাণ্ডুলিপিটি পড়ে, ক্লিন তাঁকে লিখেছিলেন, নিঃসন্দেহে এটি সাধারণ বীজগণিতের ওপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ যা আন্নালেনে প্রথমবার প্রকাশিত হল। পরে, হিলবের্টের পদ্ধতির উপযোগিতা বিশ্বের সর্বত্র স্বীকৃতি পেলে, গর্ডান নিজেই বলতেনঃ                আমি নিজেকে এটা বিশ্বাস করিয়েছি যে ধর্মতত্ত্বের মধ্যেও প্রতিভা থাকে। তার সমস্ত সাফল্যের পেছনে তার প্রমাণের প্রকৃতি প্রভূত সমস্যা সৃষ্টি করেছিল যা হিলবের্টও কল্পনা করতে পারেননি। যদিও ক্রোনেকার প্রাথমিকভাবে হিলবের্টের তত্ত্ব মেনে নিয়েছিলেন, কিন্তু হিলবের্টকে পরবর্তীকালে অন্যান্যদের একই সমালোচনার প্রত্যুত্তর দিতে হয়েছিল এই বলে যে “ভিন্ন ভিন্ন অনেক গঠনগুলো (কনস্ট্রাকশন্স) একই মৌলিক ধারণার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে” – অন্য কথায় (রিডের কথা উদ্ধৃত করলে): “অস্তিত্বের প্রমাণের মধ্যে দিয়ে, হিলবের্ট একটা গঠনকে (কনস্ট্রাকশন্) পেয়েছেন”; “প্রমাণ” (অর্থাৎ পাতায় ব্যবহৃত চিহ্ন) হল “বস্তু (অবজেক্ট)”। এতে সকলের বিশ্বাস উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। এর কয়েকদিন পরেই ক্রোনেকার মারা যান, কিন্তু তার গঠনমূলক (কনস্ট্রাকটিভিস্ট) দর্শন যুবক ব্রোয়ার এবং তার উন্নয়নশীল স্বজ্ঞা (ইন্ট্যুইশনিস্ট) ধারার ব্যক্তিবর্গ বহন করে যেতে লাগলেন যার ফলে হিলবের্টের পরবর্তী জীবনে প্রভূত পীড়নের শিকারে হতে হয়। প্রকৃতপক্ষে, হিলবের্ট তার “প্রতিভাধর ছাত্র” ওয়েইলকে হারান যে স্বজ্ঞার (ইন্ট্যুইশনিজম) দিকে ঝুঁকে পড়ে – “প্রাক্তন ছাত্র ব্রোয়ারের ধারণার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ায় হিলবের্ট বিরক্ত হন, এর ফলে ক্রোনেকারের স্মৃতিও তার ফিরে আসে।” স্বজ্ঞা ধারার ব্রোয়ার বিশেষ করে অসীম সেটের (ইনফাইনাইট সেট) ক্ষেত্রে ল্য অফ এক্সক্লুডেড মিডলের বিরোধীতা করেন (যা হিলবের্ট ব্যবহার করেছিলেন)। হিলবের্ট প্রত্যুত্তর দেনঃ          গণিতবিদের থেকে প্রিন্সিপল অফ এক্সক্লুডেড মিডল কেড়ে নেওয়া….তার সাথে তুলনীয়….একজন বক্সারকে তার মুঠো ব্যবহার করতে নিষেধ করার মতো। জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধতা গ্রুন্ডলাগেন ডার জিওমেট্রি (অনু. জ্যামিতির ভিত্তি) নামে বইটি হিলবের্ট ১৮৯৯ সালে হিলবের্ট প্রকাশ করেন যেখানে তিনি চিরাচরিত ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধতাকে পরিত্যাগ করে একটি ফর্ম্যাল সেটের অবতারণা করেন যাকে হিলবের্ট স্বতঃসিদ্ধতা (অ্যাক্সিওমস্‌) বলা হয়। এটি ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধতার দুর্বলতাগুলোর থেকে মুক্তি দিয়েছিল; যদিও ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধতা সেসময়কার পাঠ্যক্রমে তখনও পড়ানো হত। হিলবের্ট তার স্বতঃসিদ্ধতাকে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন এবং সংশোধন করেছিলেন এবং সেই কারণে গ্রুন্ডলাগেনের ইতিহাসের পাঠ না করে হিলবের্টের স্বতঃসিদ্ধতা বোঝা খুবই দুরূহ। আসল মনোগ্রাফটির পরেই এর ফরাসী অনুবাদ বেরিয়ে যায় যেখানে হিলবের্ট ভি.২, দি কমপ্লিটনেস্‌ অ্যাক্সিওমস্‌ কথাটি যোগ করেন। হিলবের্টের অনুমোদনে ই.জে. টাউনসেন্ড এর একটি ইংরেজি অনুবাদ বের করেন যার স্বত্তাধিকার করা হয়েছিল ১৯০২ সালে। ফরাসী অনুবাদের পরিবর্তনগুলোকে এই অনুবাদে ঢোকানো হয় এবং তাই একে দ্বিতীয় সংস্করণ বলে গণ্য করা হয়। হিলবের্ট এর পরেও বইটির অদলবদল করেন এবং জার্মান ভাষায় এর আরও কয়েকটি সংস্করণ বেরিয়েছিল। হিলবের্টের জীবদ্দশায় এর ৭ম সংস্করণই শেষবারের মত বেরোয়। ৭ম সংস্করণের পরেও নতুন সংস্করণ বেরিয়েছিল, কিন্তু তার মূলপাঠের বিশেষ পরিবর্তন করা হয়নি। হিলবের্টের অবলম্বিত পন্থা আধুনিক স্বতঃসিদ্ধমূলক পদ্ধতি (অ্যাক্সিওমেটিক মেথড) দিকে যেতে আমাদের সাহায্য করে। ১৮৮২ সালে মরিট্‌জ পাস্কের কাজ থেকে হিলবের্টের মধ্যে ধারণাটি আসে। স্বতঃসিদ্ধতাকে কখনোই স্ব-প্রমাণ সত্য বলে ধরা যায় না। জ্যামিতি এমন সকল বস্তুকে নিয়ে কাজ করতে পারে, যা সম্বন্ধে আমাদের শক্তিশালী স্বজ্ঞা রয়েছে, কিন্তু অসংজ্ঞায়িত ধারণার ওপর সুস্পষ্ট অর্থ চাপিয়ে দেওয়া যায় না। শোয়েনফ্লাইস এবং কোটারকে হিলবের্ট এইভাবে বলেছিলেন যে বিন্দু, রেখা, তল এবং অন্যান্য উপাদানগুলোকে টেবিল, চেয়ার, মদের গ্লাস এবং এইধরনের অন্যান্য বস্তু দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা যায়। কেবলমাত্র সংজ্ঞায়িত সম্পর্ক নিয়েই আমরা আলোচনা করতে পারি। হিলবের্ট প্রথমে অসংজ্ঞায়িত ধারণার গণনা শুরু করেনঃ বিন্দু, রেখা, তল, উপরিপাতন (বিন্দু এবং রেখা, বিন্দু ও তল, রেখা ও তলের মধ্যেকার সম্পর্ক), মধ্যবর্তীতা, বিন্দুর (রেখাংশ) জোড়ার সঙ্গতি (কংগ্রুয়েন্স), এবং কোণের সঙ্গতি। স্বতঃসিদ্ধগুলো প্লেন জিওমেট্রি এবং ইউক্লিডের সলিড জিওমেট্রিকে একটি একক ব্যবস্থার মধ্যে একত্রিত করেছিল। ২৩টি সমস্যা ১৯০০ সালে প্যারিস শহরে ইন্টারন্যাশানাল কংগ্রেস অফ ম্যাথমেটিসিয়ান্সে হিলবের্ট সবচেয়ে প্রভাবশালী ২৩টি অমীমাংসিত প্রশ্নের অবতারণা করেন। এটিকে একজন একক গণিতবিদ কর্তৃক উপস্থাপিত সবথেকে সফল এবং গভীরভাবে বিবেচিত মুক্ত সমস্যার সংকলন বলা হয়। চিরাচরিত জ্যামিতির ভিত্তির ওপরে পুনরায় কাজ করে, হিলবের্ট গণিতের অন্যান্য দিক সম্বন্ধেও অবহিত হতে পেরেছিলেন। তার অবলম্বিত পন্থাটি যদিও পরবর্তীকালে ‘ভিত্তিবাদী’ রাসেল হোয়াইটহেড অথবা ‘বিশ্বকোষবিদ্‌’ নিকোলাস বোরবাকি এবং তার সমসাময়িক জিওসেপ্পি পিয়ানোর থেকে আলাদা ছিল। গোটা গণিতের দুনিয়াকেই এইসকল সমস্যার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারত, যে সমস্যাগুলোকে তিনি গণিতের বিভিন্ন শাখার গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন এবং যার চাবিকাঠিটি ছিলেন তিনি নিজেই। প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক গণিতবিদের সম্মেলন চলাকালীন “গণিতের সমস্যা” শীর্ষক বক্তৃতায় এই সমস্যা রাশিটির অবতারণা করা হয়। হিলবের্ট এর ভূমিকাতে যা বলেছিলেন তা হলঃযে পর্দার পেছনে ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে, তাকে উন্মোচিত করলে কে না খুশী হয়; কে না খুশী হয় আমাদের বিজ্ঞানের আসন্ন উন্নতির দিকে এবং আগামী শতাব্দীর উন্নতির গোপন রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতে? গণিতজ্ঞদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে দিকে এগিয়ে চলতে চায় তার শেষ কোথায়? গাণিতিক চিন্তার বিস্তীর্ণ ও সমৃদ্ধ ভূমিতে কোন পদ্ধতি, নতুন কোন ঘটনা নতুন শতাব্দী এনে দেবে?সম্মেলনে তিনি অর্ধেকেরও কম সমস্যা উত্থাপন করেছিলেন, এবং সেগুলি সম্মেলনের কাজের তালিকায় পরে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী প্রকাশনে, তিনি ক্ষেত্রটিকে আরও বিস্তৃত করেন এবং বিখ্যাত সূত্র তৈরি করেন যা বর্তমানে হিলবের্টের ২৩টি সমস্যা নামে পরিচিত। আরও দেখুন হিলবের্টের চব্বিশতম সমস্যা। এর সম্পূর্ণ বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যখনই প্রশ্ন করা হয় কতগুলো প্রশ্নের সমাধান করা গেছে, তখনই প্রশ্নের ব্যাখ্যা করতে গেলে এটি অনিবার্য বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এগুলোর কোন কোনটি স্বল্প সময়ে সমাধান করা হয়েছে। অন্যান্যগুলো ২০শ শতক জুড়ে বহু আলোচিত হয়েছে, যার মধ্যে কিছু এতোটাই উন্মুক্ত যে এখন সেগুলোকে নিয়ে আর চর্চা হয় না। কিছু প্রশ্ন আজও গণিতবিদদের কাছে রীতিমত চ্যালেঞ্জ। ফর্ম্যালিজম মধ্য-শতাব্দীতে এসে হিলবের্টের সমস্যার সেটটি একটি মানদণ্ডে পরিণত হয়েছিল এবং এটি একধরনের ঘোষণাপত্র হয়ে উঠেছিল যা গণিতে ফর্ম্যালিস্ট ধারার উন্নতির রাস্তা খুলে দেয় যে ধারা ছিল বিংশ শতকের অন্যতম সেরা তিনটির মধ্যে একটি। ফর্ম্যালিস্টদের মতে, গণিত হল নির্দিষ্ট করে দেওয়া নিয়মানুযায়ী কিছু চিহ্নের খেলা। এটি তাই একটি স্বয়ংশাসিত চিন্তাভাবনার কার্যকলাপ। যদিও এই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে যে হিলবের্টের নিজের ধারণাও কি এমনই সহজ ফর্ম্যালিস্টদের মত ছিল। হিলবের্টের কর্মসূচী ১৯২০ সালে হিলবের্ট স্পষ্টভাবে একটি গবেষণামূলক প্রকল্পের (গণিতে, এটিকে এই নামেই তখন বলা হত) কথা বলেন যা হিলবের্টের কর্মসূচী নামে পরিচিত হয়। তিনি চাইতেন গণিত একটি শক্ত এবং সম্পূর্ণ যৌক্তিক ভিত্তির ওপর তৈরি হোক। তিনি বিশ্বাস করতেন যে নিয়মানুযায়ী এটা করা যেতে পারে; তিনি দেখালেনঃ ১. সঠিকভাবে নির্বাচিত সীমিত স্বতঃসিদ্ধতার ব্যবস্থা থেকেই সমস্ত গণিত অনুসৃত হয়; এবং ২. কিছু এইধরনের স্বতঃসিদ্ধ ব্যবস্থা কিছু অর্থে তুলনীয় বলে প্রমাণ করা যায়, যেমন এপসিলন কলনবিদ্যা। মনে হয়, তার এই প্রস্তাবনাটিকে সূত্রায়িত করার পিছনে প্রায়োগিক এবং দার্শনিক কারণ ছিল। ইগনোরাবিমাস হিসেবে যা পরিচিত ছিল তা হিলবের্ট অপছন্দ করতেন যদিও এটি তার সময়কালে জার্মানদের চিন্তাভাবনায় একটি সক্রিয় সমস্যা ছিল, এবং এই সূত্রটি এমিল ডু বোয়ে-রেমন্ডের সময় থেকে প্রচলিত ছিল। এই প্রোগ্রামটি গণিতের দর্শনে সবথেকে জনপ্রিয় ফর্ম্যালিজম হিসেবে। উদাহরণস্বরূপ, বোরবাকি গোষ্ঠী তাদের প্রকল্পদ্বয়ের প্রয়োজনে এর একটি জলীয় ও নির্বাচিত সংস্করণ গ্রহণ করেছিলেন; তাদের প্রকল্পগুলো ছিল (অ) বিশ্বকোষীয় ভিত্তিমূলক কাজের লিখন, এবং (আ) গবেষণার বিষয় হিসেবে স্বতঃসিদ্ধ পদ্ধতিকে সহায়তা করা। এই পদ্ধতিটি সফল হয়েছিল এবং বীজগণিতে এবং অপেক্ষকের বিশ্লেষণে হিলবের্টের কাজকে আরও প্রভাবশালী করেছিল, কিন্তু পদার্থবিদ্যা এবং যুক্তিবিজ্ঞানের দুনিয়ায় একই পদ্ধতিতে তার প্রভাব বৃদ্ধি করতে অসমর্থ হয়। হিলবের্ট ১৯১৯ সালে লিখেছিলেনঃআমরা কোন অর্থেই এখানে স্বেচ্ছাচারিতার কথা বলছি না। গণিত এমন কোন খেলা নয় যার কাজ কিছু নির্বিচারে নির্ধারিত নিয়ম দ্বারা স্থিরীকৃত হবে। বরং, এটি এমন একটি ধারণাগত ব্যবস্থা যার অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং যেটি কেবলমাত্র এমনই হতে পারে এবং কোন অর্থেই এর অন্যথা হয় না।গণিতের ভিত্তির ওপরে লেখা গ্রুন্ডলাগেন ডার ম্যাথমেটিক নামে দুই খণ্ডের বইয়ে হিলবের্ট তার বক্তব্য প্রকাশ করেন। গোডেলের কাজ হিলবের্ট এবং অন্যান্য গণিতবিদরা যাঁরা তার সাথে তার এই উদ্যোগে কাজ করেছেন তারা প্রত্যেকেই এই প্রকল্পটিতে নিজেদের নিয়োজিত করে দিয়েছেন। তিনি স্বতঃসিদ্ধ গণিতকে নির্দিষ্ট নীতির সাহায্যে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, যা যাবতীয় তাত্ত্বিক অনিশ্চয়তাকে নস্যাৎ করে দিতে পারতো, সেটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। গোডেল দেখিয়েছিলেন যে পরস্পরবিরোধী নয় এমন যেকোন ফর্ম্যাল ব্যবস্থা, যা অন্তত পাটিগণিতকে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে যথেষ্ট বিস্তৃত, তা কিন্তু তার নিজের স্বতঃসিদ্ধতার দ্বারাই নিজের সম্পূর্ণতাকে প্রদর্শন করতে পারে না। ১৯৩১ সালে তিনি তার অসম্পূর্ণতার উপপাদ্যে দেখিয়েছিলেন যে যে হিলবের্টের মহান পরিকল্পনা যেমনভাবে বলা হয়েছে সেভাবে হওয়া অসম্ভব। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বতঃসিদ্ধ ব্যবস্থাটি সত্যসত্যই নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়, ততক্ষণ হিলবের্টের এই কাজটির প্রথম ক্ষেত্রটির সঙ্গে দ্বিতীয়টিকে কোনভাবেই যুক্তিযুক্তভাবে মেলানো যায় না। তৎসত্ত্বেও, প্রমাণ তত্ত্ব পরবর্তীতে খুব সামান্য সঙ্গতি ব্যাখ্যা করতে পেরেছিল যা গণিতজ্ঞদের মুখ্য ভাবনাযুক্ত তত্ত্বের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। এই ব্যাখ্যাকালীন সময়ে হিলবের্টের কাজ যুক্তিপ্রয়োগ শুরু করে; গোডের কাজ বোঝার প্রয়োজনীয়তা এরপর থেকে পুনরাবৃত্তি তত্ত্বের বিকাশ ঘটাতে শুরু করে এবং ১৯৩০এর দশক থেকে গাণিতিক যুক্তি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শাখা হিসেবে গড়ে ওঠে। তাত্ত্বিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভিত্তিও এই ‘বিতর্ক’ থেকেই সরাসরি জন্ম নিয়েছিল যে কম্পিউটার বিজ্ঞান আলোঞ্জো চার্চ এবং অ্যালান ট্যুরিং শুরু করেন। অপেক্ষকের বিশ্লেষণ ১৯০৯ সাল নাগাদ, হিলবের্ট ডিফারেনশিয়াল এবং ইন্টিগ্রাল সমীকরণের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন; তার কাজ আধুনিক অপেক্ষকের বিশ্লেষণের গুরুত্বপূর্ণ অংশে সরাসরি প্রভাব ফেলেছিল। এইসকল কাজ করার সময়ে, হিলবের্ট অসীম মাত্রাযুক্ত ইউক্লিডিয় স্থানের ধারণার অবতারণা করেন যা পরে হিলবের্ট স্থান নামে পরিচিত হয়। বিশ্লেষণের এই অংশটিতে তার কাজ পরবর্তী দুই দশক ধরে পদার্থবিদ্যার গণিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের ভিত্তিভূমি প্রস্তুত করেছিল, যদিও সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত দিক থেকে এমনটা সম্ভব হয়েছিল। পরবর্তীকালে, স্টিফান বানাচ ধারণাটিকে আরও প্রসারিত করেন যার নাম দেন বানাচ স্থান। হিলবের্ট স্থান অপেক্ষকের বিশ্লেষণের কাজের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণীর বিষয় বলে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে ২০শ শতকে গড়ে ওঠা সেলফ-অ্যাডজয়েন্ট লিনিয়ার অপারেটরের স্পেক্ট্রাল তত্ত্বের ক্ষেত্রে। পদার্থবিদ্যা ১৯১২ সাল পর্যন্ত হিলবের্ট প্রায় একান্তভাবে একজন “বিশুদ্ধ” গণিতজ্ঞ ছিলেন। বন শহরে হিলবের্টের সহকারী গণিতজ্ঞ ও বন্ধু হেরমান মিংকফ্‌স্কি পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনায় মগ্ন ছিলেন; সেখান থেকে ফিরে আসবার পরিকল্পনা করার সময় তিনি মজা করে বলেছিলেন যে হিলবের্টের সঙ্গে দেখা করার আগে তাঁকে দশদিনের জন্য সঙ্গনিরোধ হয়ে থাকতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, ১৯১২ সালের আগে হিলবের্টের পদার্থবিদ্যা গবেষণার বেশিরভাগ অংশের জন্যই মিংকফ্‌স্কিকে দায়ী করা হয়; ১৯০৫ সালে তারা দুজন এই বিষয়ের ওপর যৌথ সেমিনারেও অংশগ্রহণ করেন। হিলবের্ট তার বন্ধুর মৃত্যুর তিন বছর পরে ১৯১২ সালে পদার্থবিদ্যার প্রতি সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করেন। তিনি তার জন্য “পদার্থবিদ্যার শিক্ষক” নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি গ্যাসের গতিতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন এবং সেখান থেকে প্রাথমিক বিকিরণ তত্ত্ব এবং পদার্থের আণবিক তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করে যান। এমনকি ১৯১৪ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে, তিনি তার সেমিনার এবং ক্লাস চালিয়ে যান যেখানে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এবং অন্যান্যদের গবেষণামূলক কাজ খুব কাছ থেকে অনুসরণ করা হত। ১৯০৭ সালের মধ্যে আইনস্টাইন মৌলিক মহাকর্ষ তত্ত্বের অবতারণা করেন, কিন্তু একটি বিভ্রান্তিকর সমস্যার কারণে এরপর প্রায় ৮ বছর ধরে তাঁকে তত্ত্বটির সর্বশেষ রূপ প্রদান করার জন্য চেষ্টা করে যেতে হয়। ১৯১৫ সালের গ্রীষ্মের শুরুতে হিলবের্টের পদার্থবিদ্যার প্রতি আগ্রহ সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের প্রতি নিবিষ্ট হয়, এবং তিনি আইনস্টাইনকে গ্যোটিঙেনে এই বিষয়ের ওপর এক সপ্তাহের ভাষণ দেবার জন্য আমন্ত্রণ জানান। আইনস্টাইন এই আমন্ত্রণ খুবই উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন। গ্রীষ্মের সময়, আইনস্টাইন জানতে পারেন যে হিলবের্টও ক্ষেত্র সমীকরণের ওপরে কাজ করছেন যার ফলে তিনি নিজের কাজে দ্বিগুণ শ্রম বাড়িয়ে দেন। ১৯১৫ সালের নভেম্বর মাসে, আইনস্টাইন মহাকর্ষের ক্ষেত্র সমীকরণের সর্বশেষ রূপদান করে কিছু গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন (আইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণ দেখুন)। প্রায় একইসাথে, ডাভিড হিলবের্টও প্রকাশ করলেন “পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি”, যা ছিল ক্ষেত্র সমীকরণের একটি স্বতঃসিদ্ধ উদ্ভাবনা (দেখুন, আইনস্টাইন-হিলবের্ট কাজ)। হিলবের্ট তত্ত্বটির প্রবর্তক হিসেবে আইনস্টাইনকেই সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের জীবদ্দশায় ক্ষেত্র সমীকরণ নিয়ে এই দুটি মানুষের মধ্যে কখনোও কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। আরও দেখুন অগ্রাধিকার। এছাড়াও, হিলবের্টের কাজ কোয়ান্টাম বলবিদ্যার গাণিতিক সূত্রায়নের ক্ষেত্রে কিছু পূর্বানুমান করেছিল এবং এর অগ্রগতিতে সহায়তা করেছিল। ওয়ার্নার হাইজেনবার্গের ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যা এবং আরউইন শ্রয়েডিংগারের তরঙ্গ সমীকরণের গাণিতিক তুলনীয়তার ওপরে হেরমান ওয়েইল এবং জন ভন নিউম্যানের কাজের প্রধান একটি দিক ছিল হিলবের্টের কাজ; এছাড়াও তার নামে নামাঙ্কিত হিলবের্ট স্থান কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করে। ১৯২৬ সালে, ভন নিউম্যান দেখিয়েছিলেন যে যদি কোয়ান্টাম অবস্থাকে হিলবের্ট স্থানের ভেক্টরের সঙ্গে একইসাথে অনুধাবন করা হয়, তবে তারা শ্রয়েডিংগারের তরঙ্গ ফাংশান তত্ত্ব এবং হাইজেনবার্গের ম্যাট্রিক্সের সাথে সঙ্গতি রেখে চলে। পদার্থবিদ্যার চর্চায় এইভাবে ডুব দিয়ে, হিলবের্ট পদার্থবিদ্যার গণিতে কঠোরতা অবলম্বন করার ওপরে কাজ করেছিলেন। উচ্চতর গণিতের ওপরে নির্ভরশীল হওয়ার কারণে, পদার্থবিদরা এটির সম্বন্ধে “অযত্নশীল” ছিলেন। হিলবের্টের মত একজন “বিশুদ্ধ” গণিতবিদের কাছে এটি যেমন জঘন্য ছিল তেমনই এটি বোঝাও ছিল কঠিন। পদার্থবিদ্যা এবং কীভাবে পদার্থবিদরা গণিতকে ব্যবহার করে, তা তিনি একদিকে যেমন বুঝতে শুরু করেছিলেন, তেমনিভাবে অন্যদিকে তিনি একটি সুসঙ্গত গাণিতিক তত্ত্ব গড়ে তোলেন যার কারণে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে ইন্টিগ্রাল সমীকরণের ক্ষেত্রে উন্নতি করেন। যখন তার সহকর্মী রিচার্ড কোরান্ট মেথোডেন ডার ম্যাথমেটিশ্চেন ফিজিক [গাণিতিক পদার্থবিদ্যার পদ্ধতি] নামক অধুনা ক্লাসিক বইটি লেখেন এবং হিলবের্টের ধারণাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেন, উক্ত বইটিতে তিনি লেখকের নাম হিসেবে হিলবের্টের নাম লেখেন যদিও বইটির রচনায় হিলবের্টের কোন প্রত্যক্ষ অবদান ছিল না। হিলবের্ট বলেছিলেন “পদার্থবিদ্যা পদার্থবিদদের কাছে অত্যন্ত কঠিন”, অর্থাৎ তিনি এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে প্রয়োজনীয় গণিতকে তারা এখনও দূরে সরিয়ে রেখেছে; কোরান্ট-হিলবের্টের বই এই বিষয়টিকে তাঁদের কাছে সহজ করে দিয়েছে। সংখ্যাতত্ত্ব হিলবের্ট তার ১৮৯৭ সালে লেখা জালবেরিখট্‌ (আক্ষরিক অর্থে “সংখ্যার ওপরে প্রতিবেদন”) নামক বইয়ে বীজগাণিতিক সংখ্যা তত্ত্বের ক্ষেত্রটিকে একত্রিত করেছিলেন। ১৭৭০ সালে ওয়েরিং দ্বারা কৃত গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যাতত্ত্বের সমস্যার তিনি সমাধান করেছিলেন। ফাইনাইটনেস থিওরেম দ্বারা, তিনি অস্তিত্বের প্রমাণ ব্যবহার করেছিলেন যা দেখায় সমস্যার উত্তর পাওয়ার একটি পদ্ধতি না থাকলেও নির্দিষ্ট সমাধান থাকবেই। এই বিষয়ের ওপরে তার সামান্যই বিষয় প্রকাশ করার ছিল; কিন্তু তার একজন ছাত্র কর্তৃক প্রস্তুত গবেষণাপত্রে হিলবের্ট মডিউলার ফর্মের দাবী আসার সঙ্গে সঙ্গে হিলবের্টের নাম আরও বড়ো ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল। ক্লাস ফিল্ড তত্ত্বের ওপর তিনি বেশ কিছু অনুমান প্রস্তুত করেন। ধারণাগুলো অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং তার এই অবদান হিলবের্ট ক্লাস ফিল্ড এবং হিলবের্ট সিম্বল অফ লোকাল ক্লাস ফিল্ড থিওরি নামে পরিচিত হয়ে রয়েছে। এর ফলাফলগুলোর বেশিরভাগই তেইজি তাকাগির কাজের পরে ১৯৩০ সালের মধ্যে প্রমাণিত হয়ে যায়। হিলবের্ট বিশ্লেষণী সংখ্যাতত্ত্বের কেন্দ্রীয় ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করেননি, কিন্তু তার নাম হিলবের্ট-পোলভা কনজেকচারের কারণে পরিচিত হয়ে আছে, যার কারণ অজানা। কাজ তার সম্মিলিত কাজ (গেসাম্মেল্টে আভান্দলুনজেন) কয়েকবার প্রকাশিত হয়। তার গবেষণাপত্রের প্রকৃত সংস্করণটায় “বিভিন্ন মাত্রার অনেক প্রায়োগিক ত্রুটি ছিল”; যখন এই সংকলনটি প্রথম প্রকাশিত হয়, এর ত্রুটিগুলো দূর করা হয় তখন এটা বোঝা যায় যে এর উপপাদ্যগুলোর বর্ণনায় কোন গুরুতর পরিবর্তন না এনেই তা করা যাবে; এর মধ্যে শুধু একটি ব্যতিক্রম ছিল – কন্টিন্যুয়াম হাইপোথিসিসের একটি প্রমাণের দাবী। তৎসত্ত্বেও, এর ত্রুটিগুলো সংখ্যায় এতোই বেশি ছিল এবং এতোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে সেগুলোকে সংশোধন করতে ওলগা তৌস্কি-টডের তিন বছর সময় লেগেছিল। আরও দেখুন ধারণা ডাভিড হিলবের্ট নামাঙ্কিত বস্তুর তালিকা জ্যামিতির ভিত্তি হিলবের্ট C*-মডিউল হিলবের্ট ঘনক হিলবের্ট বক্র হিলবের্ট ম্যাট্রিক্স হিলবের্ট মেট্রিক হিলবের্ট-মামফোর্ড ক্রাইটেরিয়ন হিলবের্ট সংখ্যা হিলবের্ট বলয় হিলবের্ট-পয়েনকেয়ার শ্রেণী হিলবের্ট শ্রেণী ও হিলবের্ট পলিনোমিয়াল হিলবের্ট স্পেক্ট্রাম হিলবের্ট সিস্টেম হিলবের্ট ট্রান্সফর্ম হিলবের্টস অ্যারিথমেটিক অফ এন্ডস গ্র্যান্ড হোটেল সংক্রান্ত হিলবের্টের প্যারাডক্স হিলবের্ট-স্কিম্‌ডট অপারেটর হিলবের্ট-স্মিথ কনজেকচার উপপাদ্য হিলবের্ট-বার্চ উপপাদ্য হিলবের্টস ইরিড্যুসিবিলিটি থিয়োরেম হিলবের্ট নালস্টেলেনসাট্‌জ হিলবের্টের উপপাদ্য (ডিফারেনশিয়াল জ্যামিতি) হিলবের্টের উপপাদ্য ৯০ হিলবের্টের সিজিগি উপপাদ্য হিলবের্ট-স্পিজার উপপাদ্য অন্যান্য ব্রোয়ার-হিলবের্ট বিতর্ক জ্যামিতি এবং কল্পনা আপেক্ষিকতাবাদের অগ্রাধিকার বিতর্ক পাদটীকা তথ্যসূত্র উৎস ইংরেজি অনুবাদে মুখ্য গ্রন্থ ১৯১৮। "অ্যাক্সিওমেটিক থট," ১১১৪-১১১৫। ১৯২২। "দি নিউ গ্রাউন্ডিং অফ ম্যাথমেটিক্সঃ ফার্স্ট রিপোর্ট," ১১১৫-১১৩৩। ১৯২৩। "দি লজিক্যাল ফাউন্ডেশন্স অফ ম্যাথমেটিক্স," ১১৩৪-১১৪৭। ১৯৩০। "লজিক অ্যান্ড নলেজ অফ নেচার," ১১৫৭-১১৬৫। ১৯৩১। "দি গ্রাউন্ডিং অফ এলিমেন্টারি নাম্বার থিওরি," ১১৪৮-১১৫৬। ১৯০৪। "অন দি ফাউন্ডেশন্স অফ লজিক অ্যান্ড অ্যারিথমেটিক," ১২৯-১৩৮। ১৯২৫। "অন দি ইনফাইনাইট," ৩৬৭-৩৯২। ১৯২৭। "দি ফাউন্ডেশন্স অফ ম্যাথমেটিক্স," ওয়েইলের টীকা এবং বার্নেসের পরিশিষ্টসহ, ৪৬৪-৪৮৯। পরবর্তী গ্রন্থ , গালিকায় উপলব্ধ। ফ্রেঞ্চ অ্যাকাডেমিতে ১৯৪৩ সালের ২০ ডিসেম্বরে গ্যাব্রিয়েল বার্ট্রান্ডের "অ্যাড্রেস": সম্প্রতি মৃত সদস্যদের একটি জীবনী নকশা তিনি প্রস্তুত করেন যার মধ্যে ছিলেন পিটার জেমান, ডাভিড হিলবের্ট এবং জর্জেস গিরড। বোট্টাজানি উমবের্তো, ২০০৩। Il ফ্লটো ডি হিলবের্ট। স্টোরিয়া ডেলা মাটেমেটিকা। UTET, কোরি, এল., রেন, জে., এবং স্টাচেল, জে., ১৯৯৭, "হিলবের্ট-আইনস্টাইনের অগ্রাধিকার বিতর্কের বিলম্বিত সিদ্ধান্ত," সায়েন্স ১৭৮: এনএন-এনএন। ডসন, জন ডব্লিউ. জুনিয়র ১৯৯৭। লজিকাল ডিলেমাস: দি লাইফ অ্যান্ড ওয়ার্ক অফ কুর্ট গোডেল। ওয়েলেসলি এমএ: এ. কে. পিটার্স। . ফলসিং, আলব্রেখট, ১৯৯৮। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। পেঙ্গুইন। গ্রত্তন-গ্রিনিচ, আইভর, ২০০০। দি সার্চ ফর ম্যাথমেটিকাল রুটস ১৮৭০-১৯৪০। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস। গ্রে, জেরেমি, ২০০০। দি হিলবের্ট চ্যালেঞ্জ। মেহরা, জগদীশ, ১৯৭৪। আইনস্টাইন, হিলবের্ট, অ্যান্ড দি থিওরি অফ গ্র্যাভিটেশন। রিডেল। পিয়ারজিওর্জিও ওডিফ্রেডি, ২০০৩। ডাইভারটিমেন্টো জিওমেট্রিকো - ডা ইউক্লিড অ্যাড হিলবের্ট। বোল্লাটি বোরিংঘেরি, . ইউক্লিডের "ত্রুটির" একটি স্বচ্ছ ব্যাখ্যা এবং তার সমাধান গ্রুন্ডলাগেন ডার জিওমেট্রি বইটিতে অ-ইউক্লিডিয় জ্যামিতির প্রসঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে। রিড, কনস্টান্স, ১৯৯৬। হিলবের্ট, স্পিঙ্গার, . ইংরেজি ভাষায় হিলবের্টের একটি চূড়ান্ত জীবনী বিষয়ক গ্রন্থ। সিগ, উইলফ্রিড, অ্যান্ড রাভাগলিয়া, মার্ক, ২০০৫ "গ্রুন্ডলাগেন ডার ম্যাথমেটিক" ইন গ্রাট্টান-গিনেস, I., স. ল্যান্ডমার্ক রাইটিংস ইন ওয়েস্টার্ন ম্যাথমেটিক্স। এলসেভিয়ার: ৯৮১-৯৯। (ইংরেজিতে) থর্ন, কিপ, ১৯৯৫। ব্ল্যাক হোলস অ্যান্ড টাইম ওয়ার্পস্‌: আইনস্টাইনস্‌ আউটরেজিয়াস লেগেসি, ডব্লিউ. ডব্লিউ. নর্টন অ্যান্ড কোম্পানি; পুনর্মুদিত সংস্করণ। . বহিঃসংযোগ হিলবের্ট-বার্নিস প্রজেক্ট হিলবের্টস ২৩ প্রবলেমস্‌ অ্যাড্রেস আইসিএমএম ২০১৪ ডেডিকেটেড টু দি মেমোরি অফ ডি. হিলবের্ট ১৯৩০ সালে ক্যোনিগসবের্গে হিলবের্টের রেডিও বার্তার রেকর্ড (জার্মান ভাষায়) ইংরেজি অনুবাদসহ উলফ্রাম ম্যাথওয়ার্ল্ড - হিলবের্ট'কনস্ট্যান্ট ফ্রম হিলবের্টস প্রবলেমস টু দি ফিউচার' অধ্যাপক রবিন উইলসন কর্তৃক প্রদত্ত ভাষণ, গ্রেশাম কলেজ, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ (টেক্সট, অডিও, ভিডিও ফর্ম্যাটে উপলব্ধ) ১৮৬২-এ জন্ম ১৯৪৩-এ মৃত্যু জার্মান গণিতবিদ জ্যামিতিবিদ রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য রৌপবাদ (অবরোহী) গাণিতিক বিশ্লেষক মার্কিন ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্য
https://en.wikipedia.org/wiki/David_Hilbert
David Hilbert
David Hilbert (; German: [ˈdaːvɪt ˈhɪlbɐt]; 23 January 1862 – 14 February 1943) was a German mathematician and philosopher of mathematics and one of the most influential mathematicians of his time. Hilbert discovered and developed a broad range of fundamental ideas including invariant theory, the calculus of variations, commutative algebra, algebraic number theory, the foundations of geometry, spectral theory of operators and its application to integral equations, mathematical physics, and the foundations of mathematics (particularly proof theory). He adopted and defended Georg Cantor's set theory and transfinite numbers. In 1900, he presented a collection of problems that set a course for mathematical research of the 20th century. Hilbert and his students contributed to establishing rigor and developed important tools used in modern mathematical physics. He was a cofounder of proof theory and mathematical logic.
1208
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%89%E0%A6%87%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
উইকিপিডিয়া
উইকিপিডিয়া হলো সম্মিলিতভাবে সম্পাদিত, বহুভাষিক, মুক্ত প্রবেশাধিকার, মুক্ত বিষয়বস্তু সংযুক্ত অনলাইন বিশ্বকোষ যা উইকিপিডিয়ান বলে পরিচিত স্বেচ্ছাসেবক সম্প্রদায় কর্তৃক লিখিত এবং রক্ষণাবেক্ষণকৃত। স্বেচ্ছাসেবকেরা মিডিয়াউইকি নামে একটি উইকি -ভিত্তিক সম্পাদনা ব্যবস্থা ব্যবহার করে সম্পাদনা করেন। এটি ধারাবাহিকভাবে সিমিলারওয়েব এবং পূর্বে আলেক্সা কর্তৃক র‍্যাঙ্ককৃত ১০টি জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে একটি; উইকিপিডিয়া বিশ্বের ৫ম জনপ্রিয় সাইট হিসেবে স্থান পেয়েছে। ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায় উইকিপিডিয়া সমস্ত ওয়েবসাইটের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে, "মাসিক প্রায় ১৮ বিলিয়ন পৃষ্ঠা প্রদর্শন এবং প্রায় ৫০০ মিলিয়ন স্বতন্ত্র পরিদর্শক রয়েছে। উইকিপিডিয়ায় ইয়াহু, ফেসবুক, মাইক্রোসফট এবং গুগলের পথানুসরণ করে, সর্বাধিক ১.২ বিলিয়ন স্বতন্ত্র পরিদর্শক রয়েছে।" উইকিপিডিয়া উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন কর্তৃক হোস্টকৃত, যা একটি আমেরিকান অলাভজনক সংস্থা যা মূলত অনুদানের মাধ্যমে অর্থায়ন করে। ১৫ জানুয়ারি ২০০১ সালে জিমি ওয়েলস এবং ল্যারি স্যাঙ্গার উইকিপিডিয়া চালু করেন। উইকি এবং এনসাইক্লোপিডিয়ার মিশ্রণ করে স্যাঙ্গার এর নামটি তৈরি করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে এটি ইংরেজিতে উপলব্ধ ছিল। পরবরতীতে একটি পিন্ডারিশব্দে উইকি (এটি সম্মিলিত ওয়েবসাইটের এক প্রকার নাম, হাওয়াইয়ান ভাষায় "হাঁটা") এবং বিশ্বকোষ। 'উইকি উইকি' মানে দাঁড়িয়ে ছোট-ছোট পায়ে হাঁটা। উইকি ওয়েব সংস্কৃতিতে সবার ছোট-ছোট অবদান যুক্ত হয়েই এই সাইটটির মত ক্রমবর্ধমান সংগ্রহে গড়ে ওঠে। বর্তমানে এটি সব থেকে বড় এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্টারনেট ভিত্তিক তথ্যসূত্র হিসাবে ব্যবহার হয়। ইংরেজি উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠার পর ধীরে ধীরে অন্যান্য ভাষায় উইকিপিডিয়ার দ্রুত বিকাশ করা হয়। উইকিপিডিয়া সম্প্রদায় বিশ্বব্যাপী সম্মিলিতভাবে টি ভাষার উইকিপিডিয়ায় প্রায় ৪০০ লক্ষ নিবন্ধ রচনা করেছেন, যার মধ্যে শুধুমাত্র ইংরেজি উইকিপিডিয়াতেই রয়েছে ৬৬ লক্ষের অধিক নিবন্ধ। উইকিপিডিয়াতে প্রায় প্রতি মাসে ২ বিলিয়ন বার প্রদর্শিত হয় এবং প্রতি মাসে ১৫ মিলিয়নেরও বেশি সম্পাদনা (প্রায় গড়ে প্রতি সেকেন্ডে ৫.৭ টা সম্পাদনা) করা হয় ()। ২০০৬ সালে, টাইম ম্যাগাজিন বলে যে কাউকে সম্পাদনা করার অনুমতি দেওয়ার নীতি উইকিপিডিয়াকে "বিশ্বের বৃহত্তম (এবং সেরা) বিশ্বকোষ" করে তুলেছে। উইকিপিডিয়া ওয়েবসাইট উন্মুক্ত প্রকৃতির হওয়ায় এখানে লেখার মান, ধ্বংসপ্রবণতা এবং তথ্যের নির্ভুলতা রক্ষা করতে বিভিন্ন উদ্যোগ পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে, কিছু নিবন্ধে অপরীক্ষিত বা অযাচাইকৃত বা অসঙ্গত তথ্য থাকতে পারে। উইকিপিডিয়া জ্ঞানের গণতন্ত্রীকরণ, কভারেজের পরিধি, অনন্য কাঠামো, সংস্কৃতি এবং বাণিজ্যিক পক্ষপাত হ্রাস করার জন্য প্রশংসিত হয়েছে। আবার এটি পদ্ধতিগত পক্ষপাত প্রদর্শনের জন্য সমালোচিত হয়েছে, বিশেষ করে নারীর প্রতি লিঙ্গ পক্ষপাত এবং কথিত আদর্শগত পক্ষপাতিত্বের জন্য। ২০০০-এর দশকে উইকিপিডিয়ার নির্ভরযোগ্যতা প্রায়শই সমালোচিত হয়েছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি হ্রাস পেয়েছে, কারণ উইকিপিডিয়া সাধারণত ২০১০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ২০২০-এর দশকের শুরুতে প্রশংসিত হয়েছে। ইতিহাস উইকিপিডিয়া শুরু করা হয়েছিল নুপিডিয়া'র একটি বর্ধিত প্রকল্প হিসাবে। নুপিডিয়া হল ইংরেজি ভাষার একটি মুক্ত বিশ্বকোষ যেখানে অভিজ্ঞরা লিখে থাকেন এবং একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুযায়ী লেখাগুলি সম্পাদনা করা হয়। Bomis, Inc নামের একটি ওয়েব পোর্টাল প্রতিষ্ঠান ৯ মার্চ ২০০০ নুপিডিয়ার কার্যক্রম শুরু করে। এখানে মূল ব্যক্তিত্ব ছিলেন Bomic-এর নির্বাহী পরিচালক জিমি ওয়েলস এবং প্রধান সম্পাদক ল্যারি স্যাঙ্গার, যারা পরবর্তীকালে উইকিপিডিয়া কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হন। নিউপিডিয়া মুক্ত তথ্য লাইসেন্সের অধীনে পরিচালনা করা হচ্ছিল; তবে রিচার্ড স্টলম্যান উইকিপিডিয়া কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হবার পর গণ্যু মুক্ত ডকুমেন্টেশন লাইসেন্সে পরিবর্তন করা হয়। ল্যারি স্যাঙ্গার এবং জিমি ওয়েলস হলেন উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা। সকলে সম্পাদনা করতে পারে এমন একটি বিশ্বকোষ তৈরির জন্য এর লক্ষ্যগুলি নির্ধারণের কাজটি করেন জিমি ওয়েলস এবং উইকি প্রকল্প প্রয়োগের মাধ্যমে এটি সার্থকভাবে সম্পাদনের কৌশল নির্ধারণের কৃতিত্ব দেয়া হয় ল্যারি স্যাঙ্গারকে। ১০ জানুয়ারি ২০০১ জিমি ওয়েলস নুপিডিয়ার মেইলিংলিস্টে নুপিডিয়ার সহপ্রকল্প হিসাবে একটি উইকি তৈরির প্রস্তাব করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০১ সালের ১৫ জানুয়ারি শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষার জন্য www.wikipedia.com ওয়েবসাইটটি চালু করা হয় এবং স্যাঙ্গার এটি নুপিডিয়ার মেইলিংলিস্টে ঘোষণা করেন। উইকিপিডিয়া কাজ শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই "নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি" সংক্রান্ত নিয়মটি চালু করা হয়, এই নিয়মটি নুপিডিয়ার "পক্ষপাত এড়িয়ে চলা" সংক্রান্ত নিয়মটির সাথে অনেক সাদৃশ্যপূর্ণ। এছাড়াও এই বিশ্বকোষটি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রাথমিকভাবে আরও কিছু নীতিমালা ও নির্দেশাবলী তৈরি করা হয়েছিল এবং সেইসাথে উইকিপিডিয়া নুপিডিয়া থেকে আলাদা একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের মত কাজ শুরু করেছিল। উইকিপিডিয়ার প্রথমদিকের নিবন্ধগুলি নুপিডিয়া, স্ল্যাসডট পোস্টিং এবং সার্চ ইঞ্জিন ইনডেক্সিং-এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়। ২০০১ সালের মধ্যে উইকিপিডিয়ায় ১৮ ভাষার প্রায় ২০,০০০ নিবন্ধ তৈরি করা হয়। ২০০৩ সালের শেষের দিকে ২৬টি ভাষায় কাজ শুরু হয় এবং ২০০৩ সালের মধ্যে মোট ৪৬ ভাষার উইকিপিডিয়া চালু হয়। ২০০৪ সাল শেষ হবার আগেই ১৬১টি ভাষার উইকিপিডিয়া প্রকল্প শুরু করা হয়। ২০০৩ সালে সার্ভারে সমস্যা হবার আগ পর্যন্ত নিউপিডিয়া ও উইকিপিডিয়া আলাদা ছিল এবং এরপর সকল নিবন্ধ উইকিপিডিয়ার সাথে সমন্বয় করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ইংরেজি উইকিপিডিয়া ২০ লক্ষ নিবন্ধের সীমানা পার করে। এটি তখন ১৪০৭ সালে তৈরি করা ইয়ংলে এনসাইক্লোপিডিয়াকে ম্লান করে দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষে পরিণত হয়। গত ৬০০ বছরের মধ্যে ইয়ংলে এনসাইক্লোপিডিয়া ছিল পৃথিবী সবচেয়ে সমৃদ্ধ বিশ্বকোষ। প্রকৃতি সম্পাদনা প্রথাগত অন্যান্য বিশ্বকোষ থেকে ভিন্ন, উইকিপিডিয়ায় শুধুমাত্র বিভিন্ন মাত্রায় "সুরক্ষিত" বিশেষ স্পর্শকাতর এবং/অথবা ধ্বংসপ্রবণ পাতা ব্যতীত অন্যান্য যে কোন পাতায় সম্পাদনা করা যায়, এমনকি কোনো অ্যাকাউন্ট ব্যতীত যে-কোনো পাঠক অনুমতি ছাড়াই যে-কোন লেখা সম্পাদনা করতে পারেন। যদিও, বিভিন্ন ভাষার সংস্করণে এই নীতি কিছুটা সংশোধিত বা পরিবর্তিত হয়ে থাকে; উদাহরণস্বরূপ, ইংরেজি সংস্করণে শুধুমাত্র নিবন্ধিত ব্যবহারকারী একটি নতুন নিবন্ধ তৈরি করতে পারেন। কোন নিবন্ধই, উক্ত নিবন্ধ সৃষ্টিকারী বা অন্য কোন সম্পাদকের মালিকানাধীন হিসেবে গণ্য হয় না। পরিবর্তে, মূলত সম্পাদকদের ক্ষমতাপ্রদানের মাধ্যমে নিবন্ধের বিষয়বস্তু ও কাঠামো সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। ধ্বংসপ্রবণতা সম্প্রদায় মুক্ত সহযোগিতা ভাষা সংস্করণ {{Pie chart | caption = বিভিন্ন ভাষা সংস্করণে নিবন্ধের বিতরণ ( তারিখ অনুযায়ী)| other = yes | label1 = ইংরেজি | value1 = | color1 = blue | label2 = ওলন্দাজ | value2 = | color2 = #764F8A | label3 = জার্মান | value3 = | color3 = lightblue | label4 = সুয়েডীয় | value4 = | color4 = #7B7D7D | label5 = ফরাসি | value5 = | label6 = ইতালীয় | value6 = | color6 = #764f8B | label7 = রুশ | value7 = | color7 = red | label8 = স্পেনীয় | value8 = | color8 = #99f6ff | label9 = পোলিশ | value9 = | color9 = #2a2a2a | label10 = ওয়ারে ওয়ারে | value10 = | color10 = #55ff77 | label11 = বাংলা | value11 = | Color11 = Black }} উইকিপিডিয়ায় বর্তমানে টি ভাষা সংস্করণ রয়েছে; এর মধ্যে, পনেরটি ভাষার প্রতিটিতে এক মিলিয়নের বেশি নিবন্ধ রয়েছে (ইংরেজি, সুইডিশ, ওলন্দাজ, জার্মান, ফরাসি, ইতালীয়, পোলিশ, স্পেনীয়, রুশ, সুইডিশ, ভিয়েতনামী, জাপানি, চীনা, পর্তুগীজ, ওয়ারে-ওয়ারে এবং বাংলা), আরও চারটি ভাষায় ৭০০,০০০-এর বেশি নিবন্ধ রয়েছে (সেবুয়ানো, চীনা, জাপানি, পর্তুগিজ), ৩৭টি ভাষায় ১০০,০০০-এর বেশি নিবন্ধ রয়েছে, এবং ৭৩টি ভাষায় রয়েছে ১০,০০০ নিবন্ধ।List of Wikipedias ইংরেজি উইকিপিডিয়ায়, সর্বাধিক ৪.৫ মিলিয়নের বেশি নিবন্ধ রয়েছে। জুন, ২০১৩ সালে আলেক্সা অনুযায়ী, ইংরেজি সাবডোমেন (en.wikipedia.org; ইংরেজি উইকিপিডিয়া) উইকিপিডিয়ার সর্বমোট ৫৬% ট্রাফিক গ্রহণ করে, অন্যান্য ভাষার মধ্যে যথাক্রমে (স্পেনীয়: ৯%; জাপানি: ৮%; রুশ: ৬%; জার্মান: ৫%; ফরাসি: ৪%; ইতালিয়: ৩%)। ডিসেম্বর ২০১৩ অনুযায়ী, ছয়টি বৃহত্তম ভাষা সংস্করণের মধ্যে রয়েছে (নিবন্ধ গণনা অনুযায়ী) ইংরেজি, ওলন্দাজ, জার্মান, সুয়েডীয়, ফরাসি এবং ইতালীয়। উইকিপিডিয়ার বহুভাষিক কন্টেন্ট সহাবস্থান মূলত ইউনিকোডের মাধ্যমে তৈরি হয়ে থাকে। এই সুবিধা জানুয়ারি ২০০২ সাল থেকে উইকিপিডিয়ায় বিরন ভিকার কর্তৃক প্রথম চালু করা হয়। {{Bar chart | title =উইকিপিডিয়ার শীর্ষ ২০টি ভাষা সংস্করণে নিবন্ধের সংখ্যা(ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪ তারিখ অনুযায়ী)<ref> কার্যক্রম উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন এবং উইকিমিডিয়া চ্যাপ্টার উইকিপিডিয়া প্রতিষ্ঠা করেছে উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি উইকিপিডিয়ার অন্যান্য সহপ্রকল্পগুলি পরিচালনা করে, যেমন: উইকিবই, উইকিঅভিধান। উইকিমিডিয়া চ্যাপ্টার হল উইপিডিয়ানদের স্থানীয় সংগঠন। যার মাধ্যমে প্রচার, প্রসার এবং প্রকল্প পরিচালনার জন্য তহবিল সংগ্রহের মত কাজগুলি করা হয়। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার উইকিপিডিয়ার কাজগুলি মিডিয়াউইকির উপর নির্ভর করে করা হয়ে থাকে। মিডিয়াউইকি হল একটি মুক্ত এবং ওপেন সোর্স উইকি সফটওয়্যার প্লাটফর্ম যেটি পিএইচপি প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা এবং এটি তথ্যভান্ডারের ভিত্তি হিসাবে মাইসিকোয়েল ব্যবহার করা হয়েছে। সফটওয়্যারটিতে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং বৈশিষ্ট একত্রিত করা হয়েছে, যেমন ম্যাক্রো ভাষা, চলক, টেমপ্লেট এর সমন্বয়করণের মাধ্যমে ব্যবহার এবং ইউআরএল পুনর্নির্দেশনা ইত্যাদি। মিডিয়াউইকি গণু জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স এর অধিনে প্রকাশ করা হয়েছে যা সকল উইকিমিডিয়া প্রকল্পে এবং প্রায় সবধরনের উইকি প্রকল্পেই ব্যবহার করা হয়। বিশেষভাবে বলতে গেলে উইকিপিডিয়া Clifford Adams এর পার্ল প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা ইয়ুজমোডউইকি নামের একটি সফটওয়্যার দিলে চালানো হতো (ধাপ ১)। প্রবন্ধের হাইপারলিংক সঠিক ভাবে কাজ করানোর জন্য প্রাথমিকভাবে একটি বিশেষ পদ্ধতি অণুসরন করা হয়েছিল। তখন একাধিক শব্দের কোন হাইপারলিংক তৈরি করার সময় শব্দগুলির মাঝের ফাকা জায়গাগুলি মুছে দিয়ে একটি শব্দ তৈরি কর সেটির সাথে লিংক তৈরি করা হত। দুই জোড়া তৃতীয় বন্ধনি ব্যবহার করে লিংক তৈরির পদ্ধতিটি পরবর্তীকালে সফটওয়্যারটিতে সংযুক্ত করা হয়। জানুয়ারি ২০০২ সালে উইকিপিডিয়াতে পিএইচপি উইকি ইঞ্জিন এবং মাইসিকোয়েল ডাটাবেজ ব্যবহার শুরু করা হয় (ধাপ ২)। উইকিপিডিয়ার জন্য বিশেষ এই পদ্ধতিটি তৈরি করে দেন Magnus Manske। ক্রমবর্ধমান চাহিদা অনুযায়ী এই সর্বশেষ সংস্করণের সফটওয়্যারটিতে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন করা হয়েছে। জুলাই ২০০২-এ উইকিপিডিয়াতে Lee Daniel Crocker এর লেখা মিডিয়াউইকি নামের তৃতীয় প্রজন্মের এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার শুরু করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী মিডিয়াউইকির বৈশিষ্ট বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের বর্ধিতাংশ ব্যবহার করা হচ্ছে। এপ্রিল ২০০৫ -এ মিডিয়াউইকি সার্চ অপশনের জন্য Lucene এর একটি বর্ধিতাংশ যুক্ত করা হয়, এবং তথ্য খোঁজার এই বিশেষ এই সুবিধার জন্য উইকিপিডিয়া মাইসিকোয়েল এর পরিবর্তে Lucene ব্যবহার শুরু করে। বর্তমানে উইকিপিডিয়াতে জাভা প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা Lucene Search 2 ব্যবহার করা হচ্ছে যেটি Lucene library 2.0 এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। উইকিপিডিয়ায় তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্য লিনাক্সের (প্রধানত উবুন্টু)বহুস্তর বিশিষ্ট বিস্তৃত একগুচ্ছ সার্ভার ব্যবহার করা হয়, তবে ZFS এর বিশেষ সুবিধার জন্য কিছু ওপেন সোলারিস সার্ভারও ব্যবহার করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি ২০০৮ পর্যন্ত এই সার্ভারগুলির ৩০০টি ছিল ফ্লোরিডায়, ২৬টি আর্মস্টার্ডাম এবং ২৩টিইয়াহুর কোরিয়ান হোস্টিং সুবিধার আওতায় সিউলে ছিল। ২০০৪ সালের আগ পর্যন্ত উইকিপিডিয়া একটি মাত্র সার্ভার থেকে পরিচালনা করা হত। এর পরপরই বহুস্তর বিশিষ্ট বিস্তৃত গঠনকৌশল ব্যবহার শুরু করা হয়। জানুয়ারি ২০০৫ এ প্রকল্প পরিচালনার জন্য ফ্লোরিডাতে ৩৯টি সার্ভার ছিল। এরমধ্যে ছিল একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী সার্ভার যেটি মাইসিকোয়েল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল। এছাড়াও ছিল অ্যাপাচি এইচটিটিপি সার্ভার এর উপর ভিত্তি করে ২১টি ওয়েব সার্ভার ব্যবহার করা হচ্ছিল এবং ৭টি ছিল স্কুইড ওয়েব প্রক্সি ক্যাশ সার্ভার। উইকিপিডিয়ায় দিনের বিভিন্ন সময় প্রতি সেকেন্ডে ২৫০০০ থেকে ৬০০০০ পর্যন্ত পাতা দেখার অনুরোধ আসে। এই সকল অনুরোধ একটি স্কুইড ওয়েব প্রক্সি ক্যাশ সার্ভারের কাছে আসে এবং এখান থেকেই অনুরোধকারীকে নির্দিষ্ট পাতা দেখার ব্যবস্থা করা হয়। যেসব অনুরোধ এখানে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না সেগুলি load-balancing সার্ভারে পাঠানো হয়। লিনাক্স ভার্চুয়াল সার্ভার সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত এই সার্ভার অনুরোধগুলি অ্যাপাচি ওয়েব সার্ভারের পাঠিয়ে দেয়। এই ওয়েবসার্ভরগুলি মূল তথ্যভান্ডার থেকে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটি প্রদর্শন করে। উইকিপিডিয়ার সকল ভাষার সংস্করণের জন্য এই একই পদ্ধতি অনুসরন করা হয়। পাতাগুলি দ্রুত ওপেন করার জন্য প্রদর্শন যোগ্য পাতাগুলি একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর ক্যাশ মেমরীতে রেখে দেয়া হয়। এমন কিছু পাতা রয়েছে যেগুলির জন্য অনেক বেশি পরিমাণ অনুরোধ এসে থাকে তাই সেগুলি যদি প্রতিবার উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি অনুযায়ী তথ্যভান্ডার খুজে প্রদর্শন করতে হয় তাহলে অনেক বেশি সময় লাগবে। সেকারণে ক্যাশ মেমরীতে রেখে দেয়ার পদ্ধতিটি অনুসরন করা হয়। নেদারল্যান্ড ও কোরিয়াতে উইকিপিডিয়ার সবথেকে বড় দুটি গুচ্ছ সার্ভার রয়েছে যেগুলি উইকিপিডিয়ার অধিকাংশ ওয়েব ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে। অভ্যন্তরীণ মান নিয়ন্ত্রণ ও গুরুত্ব মূল্যায়ন বিতর্কসমূহ শিক্ষাক্ষেত্রে অনুৎসাহিতকরণ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ছাত্রদেরকে একাডেমিক কাজে কোন বিশ্বকোষ থেকে তথ্যসূত্র দিতে নিষেধ করেন, এর বদলে প্রাথমিক উৎসকে একাজে বেছে নিতে বলেন, অনেকে আবার সুস্পষ্টভাবে উইকিপিডিয়া থেকেই তথ্যসূত্র দিতে নিষেধ করেন। ওয়েলস জোর দিয়ে বলেন, যে কোন প্রকারের বিশ্বকোষ সাধারণত তথ্যসূত্র উদ্ধৃতির জন্য সঠিক নয়, এবং প্রামাণ্য হিসেবে এগুলোর উপর নির্ভর করা উচিত নয়। ওয়েলস একবার (২০০৬ বা তার আগে) বলেন তিনি প্রতি সপ্তাহে দশ হাজার ইমেইল পাচ্ছেন যারা বলে তারা তাদের পেপারে ফেল গ্রেড পাচ্ছে কারণ তারা উইকিপিডিয়া থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছিল; তিনি ছাত্রদেরকে বলেন তারা তাদের প্রাপ্য নম্বরই পেয়েছে।" ঈশ্বরের দোহাই লাগে, তোমরা এখন কলেজে পড়ছো, উইকিপিডিয়া থেকে উদ্ধৃতি দিও না।" তিনি বলেন। খোলামেলা বিষয়বস্তু সচিত্র যৌন বিষয়বস্তু অনুমোদনের জন্য উইকিপিডিয়া সমালোচিত হয়েছে। শিশু নিরাপত্তা অধিকারকর্মীগণ বলেন উইকিপিডিয়ার অনেক পাতাতেই সচিত্র যৌন বিষয়বস্তু দেখা যায়, কোন সতর্কবার্তা বা বয়স যাচাইয়ের ব্যবস্থা ছাড়াই। আরও দেখুন উইকিপিডিয়ার রূপরেখা জ্ঞানের গণতন্ত্রায়নের ইন্টারপিডিয়া, সহযোগীতা ইন্টারনেট বিশ্বকোষের জন্য একটি প্রাথমিক প্রস্তাব অনলাইন বিশ্বকোষের তালিকা উইকির তালিকা নেটওয়ার্ক প্রভাব উইকিপিডিয়া প্রতিরক্ষা উইকিপিডিয়া পর্যালোচনা উইকিপিডিয়া:উইকিপিডিয়া আসক্তি উইকিপিডিয়া:উইকিপিডিয়ায় আসক্তদের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র ডোপামিন উপবাস বিশেষ অণুসন্ধান টীকা তথ্যসূত্র অতিরিক্ত তথ্যসূত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা Priedhorsky, Reid, Jilin Chen, Shyong (Tony) K. Lam, Katherine Panciera, Loren Terveen, and John Riedl. "Creating, Destroying, and Restoring Value in Wikipedia". Proc. GROUP 2007, doi: 1316624.131663. বই (See book rev. by Baker, as listed below.) বই রিভিউ এবং অন্যান্য প্রবন্ধ Crovitz, L. Gordon. "Wikipedia's Old-Fashioned Revolution: The online encyclopedia is fast becoming the best." (Originally published in Wall Street Journal online - April 6, 2009, 8:34 A.M. ET) Baker, Nicholson. "The Charms of Wikipedia". The New York Review of Books, March 20, 2008. Accessed December 17, 2008. (Book rev. of The Missing Manual, by John Broughton, as listed above.) Rosenzweig, Roy. Can History be Open Source? Wikipedia and the Future of the Past. (Originally published in Journal of American History 93.1 (June 2006): 117-46.) Learning resources Wikiversity list of learning resources. (Includes related courses, Web-based seminars, slides, lecture notes, text books, quizzes, glossaries, etc.) তথ্যভান্ডার তথ্যের অন্যান্য মাধ্যম Is Wikipedia Cracking Up?, The Independent, February 3, 2009 The Wiki-snobs Are Taking Over, The Sunday Times, timesonline.co.uk, February 8, 2009 বহিঃসংযোগ  – বহুভাষিক পোর্টাল (এখানে সকলভাষার উইকিপিডিয়ার সবগুলি সংস্করনের লিংক পাওয়া যাবে) উইকিপিডিয়া — রেডিট উইকিট্রেন্ডস্: সর্বাধিক পরিদর্শিত উইকিপিডিয়া নিবন্ধ উইকিপিডিয়া বিষয় পাতা — দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস'' উইকিপিডিয়া জন্মে জিমি ওয়েলসের দ্য টেড আলাপের ভিডিও সাধারণভাবে উইকিপিডিয়া সম্পর্কে জিমি ওয়েলসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের অডিও — ইকনটক পডকাস্ট Wikipedia and why it matters – ল্যারি স্যাঙ্গার'র ২০০২ আলাপ — স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়; ভিডিও সংরক্ষাণাগার এবং আলাপ প্রতিলিপি , উইকিপিডিয়া বুদ্ধিমত্তা প্রকল্পের ব্যবহার বর্ণনা, এবং কীভাবে উইকিপিডিয়া নিবন্ধ ওয়েব সামগ্রী থেকে স্বয়ংক্রিয় উৎপন্ন হয়। উইকিপেপারস্ – সম্মেলন কাগজপত্রের সংকলন, জার্নাল নিবন্ধ, থিসিস, বই, ডেটাসেট এবং উইকিপিডিয়া এবং উইকি সম্পর্কে সরঞ্জাম সহযোগিতামূলক প্রকল্প উইকিমিডিয়া প্রকল্প বহুভাষিক ওয়েবসাইট অনলাইন বিশ্বকোষ সাধারণ বিশ্বকোষ ২০০১-এ প্রতিষ্ঠিত ইন্টারনেট সম্পত্তি সামাজিক তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ভার্চুয়াল সম্প্রদায় উইকিসমূহ বিজ্ঞাপন মুক্ত ওয়েবসাইট ক্রিয়েটিভ কমন্স-লাইসেন্সপ্রাপ্ত ওয়েবসাইট জিমি ওয়েলস
https://en.wikipedia.org/wiki/Wikipedia
Wikipedia
Wikipedia is a free content online encyclopedia written and maintained by a community of volunteers, known as Wikipedians, through open collaboration and the wiki software MediaWiki. Wikipedia is the largest and most-read reference work in history, and is consistently ranked among the ten most visited websites; as of July 2024, it was ranked fifth by Semrush, and seventh by Similarweb. Founded by Jimmy Wales and Larry Sanger on January 15, 2001, Wikipedia has been hosted since 2003 by the Wikimedia Foundation, an American nonprofit organization funded mainly by donations from readers. Initially only available in English, editions of Wikipedia in more than 300 other languages have been developed. The English Wikipedia, with its almost 6.9 million articles, is the largest of the editions, which together comprise more than 63 million articles and attract more than 1.5 billion unique device visits and 13 million edits per month (about 5 edits per second on average) as of April 2024. In July 2024, over 25% of Wikipedia's traffic was from the United States, followed by Japan at 6.2%, the United Kingdom at 5.8%, Russia at 5.2%, Germany at 5%, and the remaining 51% split among other countries, according to Similarweb. Wikipedia has been praised for its enablement of the democratization of knowledge, extent of coverage, unique structure, and culture. It has been criticized for exhibiting systemic bias, particularly gender bias against women and geographical bias against the Global South (Eurocentrism). While the reliability of Wikipedia was frequently criticized in the 2000s, it has improved over time, receiving greater praise from the late 2010s onward while becoming an important fact-checking site. Wikipedia has been censored by some national governments, ranging from specific pages to the entire site. Articles on breaking news are often accessed as sources for frequently updated information about those events.
1209
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%B7
বিশ্বকোষ
বিশ্বকোষ () হলো সকল শাখা বা কোনো নির্দিষ্ট শাখার সমন্বিত কীর্তি বা একটি নির্দেশক কাজ, যাতে জ্ঞানের সারসংক্ষেপ রয়েছে। বিশ্বকোষে সাধারণত নিবন্ধ বা এন্ট্রি থাকে, যা নামের প্রথম অক্ষরানুসারে বা কখনো কখনো বিষয়ের ভিত্তিতে সাজানো হয়। অভিধানের চেয়ে বিশ্বকোষের নিবন্ধগুলোর আকার বড় এবং বিস্তৃত হয়। অন্যকথায় অভিধান যেখানে কেন্দ্র হচ্ছে শব্দের বুৎপত্তি, উচ্চারণ, ব্যবহার এবং ব্যাকরণভিত্তিক রূপের মতো ভাষাবিজ্ঞানের বিষয়গুলো সেখানে বিশ্বকোষে নিবন্ধের বিষয়ের বাস্তব সত্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিশ্বকোষ প্রায় ২০০০ বছর ধরে বিদ্যমান রয়েছে এবং ভাষা (কোনো আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় ভাষায় লেখা), আকার (অল্প বা অনেক অংশ), অভিপ্রায় (বৈশ্বিক বা স্থানীয় সীমিত জ্ঞানের উপস্থাপনা), সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি (প্রামাণিক, নীতিগত, আদর্শগত এবং হিতবাদসংক্রান্ত), লেখকতা (মানের ধরন), পাঠকতা (শিক্ষাগত যোগ্যতা, পারিপাশ্বিক অবস্থা, আগ্রহ এবং যোগ্যতা), বিশ্বকোষ তৈরিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং বণ্টন (হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি, বড় বা ছোট প্রিন্ট অনুলীপি এবং ইন্টারনেট) এর ক্ষেত্রে সেই সময় থেকেই বিবর্তিত হতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের প্রদত্ত তথ্যের একটি মূল্যবান উৎস হওয়ায় এটিকে অনেক গন্থাগার, বিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ স্থান দেওয়া হয়। ২১ শতাব্দিতে, উইপিডিয়ার মতো বিশ্বকোষ ডিজিটাল এবং ওপেন সোর্স সংস্করণের উৎপত্তির কারণে প্রবেশাধিকার, লেখকতা, পাঠকতা এবং লেখার বিভিন্ন ধরনের বিস্তৃতি ঘটেছে। বুৎপত্তি দুটো গ্রিক শব্দ একটি শব্দ হিসেবে ভুলবসত বিবেচনা করা হয়েছে বিশ্বকোষের ইংরেজি প্রতিশব্দ, “encyclopedia” (encyclo|pedia) কোইন গ্রিক শব্দ, ἐγκύκλιος παιδεία থেকে এসেছে। “এনকাইকিওস পিডিয়া” -এর অর্থ “সাধারণ শিক্ষা”, যেখানে বৃত্তাকার, পুনরাবৃত্তিক, নিয়মিত প্রয়োজন এবং সাধারণ এবং পেইডিয়া (παιδεία) অর্থ সন্তান হিসেবে লালনপালন করা। একত্রে তাদের অনুবাদ করা যায়, “পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান” বা পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা। ১৪৭০ সালের কুইন্টিলিয়ান সংস্করণের একটি লাতিন পান্ডুলীপির নকলকারীদের লেখায় একটি ভুলের কারণে এই দুটো পৃথক শব্দ এক হয়ে যায়। সেই নকলকারী এই দুটি শব্দকে একটি শব্দ, এরকাইক্লোপিডিয়া (enkyklopaedia) হিসেবে মনে করেন, যদিও এটির অর্থ একই বলে বিবেচনা করেন। এই সমস্যাযুক্ত শব্দটিতে থেকে নতুন লাতিন শব্দ, এনসাইকেলপিডিয়া (encyclopaedia) -এর উৎপত্তি হয় এবং পরবর্তীকালে সেটি ইংরেজি ভাষায় যুক্ত হয়। এই যৌগিক শব্দের কারণে ১৫ শতাব্দির পাঠকেরা এবং তখন থেকে অনেকের রোমান লেখক কুইন্টিলিয়ান এবং প্লিনি কোনো প্রাচীন রীতি ব্যাখ্যা করেছেন বলে ভুল ধারণা ছিল। ১৬ শতাব্দিতে সংযুক্ত শব্দের ব্যবহারসমূহ ১৬ শতাব্দিতে এই নতুন সংযুক্ত শব্দটি কীভাবে ব্যবহার করা উচিত তা নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা দেখা দেয়। বিভিন্ন শিরোনাম থেকে দেখা যায় যে, শব্দটির বানান এবং নামবাচক শব্দ হিসেবে স্বীকৃতি নিয়ে বিতর্ক চলছিল, যেমন: জাকোবাস ফিলোমুসাস এর মার্গারিটা ফিলোসোফিকা এনসাইক্লেওপেইডিয়াম (encyclopaediam) এক্সিবেন (১৫০৮), হোয়ানাস আভেনটিনা এর এনসাইকেলপিডিয়া (Encyclopedia) অরবিস্কে ডকট্রিনারুম, হোক এস্ট ডোমনিউম আরটিউম, ইপসিওস ফিলোসোফাইয়ে ইনডেক্স এসি ডিভিসিও, ইযোয়াহিমুস ফোটিয়াস রিঙ্গেলবার্গ এর লুকুব্রেসনস ভেল পর্চিয়স অ্যাবসোলটিসিমা কিক্লোপিডিয়া (১৫৩৮, ১৫৪১), পোল স্কেলিছ এর “এনসাইক্লোপেইডিয়া, সেউ অবলিস ডিসিপনারুম, তাম সাকরারুম কুয়াম প্রোফানারুম, এপিস্টেমোন”, জর্জ রেইচ এর মার্গারিটা ফিলোসোফিকা (১৫০৩ সালে প্রকাশিত এবং ১৫৮৩ সালে নাম পরিবর্তন করে এনসাইকেলপিডিয়া নাম রাখা হয়।) এবং সেমুয়েল আইজেনম্যাঙ্গার এর সাইকেলপিডিয়া প্যারাসেলসিকা (১৫৮৫)। এই যৌগিক শব্দটির দুটো ভার্নাকুলার ব্যবহারের উদাহরণ রয়েছে। সম্ভবত ১৪৯০ সালে, ফ্রান্সিয়াস পুসিয়াস পলিটিয়ানুসকে একটি চিঠি পাঠান, যেখানে তিনি এটিকে এনসাইকেলপিডিয়া (encyclopedia) বলেছেন। প্রায়ই ফ্রাঁসোয়া রাবলেকে তার পেন্টাগ্রুয়েল -এ এই শব্দটির ব্যবহারের জন্য প্রায়ই উল্লেখ করা হয়। পিডিয়া (-p(a)edia) প্রত্যয় সম্পর্কে অনেক বিশ্বকোষের নামে পিডিয়া (-p(a)edia) প্রত্যয়টি যুক্ত থাকে, যাতে বোঝা যায় যে, লেখাটি বিশ্বকোষ শ্রেণিভূক্ত, যেমন: বাংলাপিডিয়া (বাংলাদেশের জন্য সঙ্গতিপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে)। সমসাময়িক ব্যবহার বর্তমানে ইংরেজিতে সাধারণত এই শব্দটির বানান হলো: encyclopedia, যদিও encyclopaedia (encyclopædia -শব্দটিতে থেকে এসেছে) বানানটি ব্রিটেনে প্রায়ই ব্যবহার করা হয়। বৈশিষ্ট্য বিশ্বকোষ ১৮ শতাব্দিতে অভিধান থেকে বিকশিত হয়। অভিধান এবং বিশ্বকোষ দুটোই উচ্চ শিক্ষিত এবং খুবই অবগত বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করেছেন, তবে গঠনের দিক থেকে দুটোর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। অভিধান ভাষা সংক্রান্ত কীর্তি, যেখানে মূলত শব্দের বর্ণানুক্রমিক তালিকা এবং সেগুলো সঙ্গার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিধানে সমার্থক শব্দ এবং বিষয়বস্তুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ শব্দগুলো বিছিন্নভাবে থাকে এবং সেগুলোর গভীরে যাওয়ার কোনো সুয়োগ থাকে না। যদিও অভিধানে শব্দগুলোর তথ্য, বিশ্লেষণ এবং পটভূমি সীমিতভাবে থাকে। অভিধানে একটি সংজ্ঞা দেওয়া হলেও, এটি থেকে শব্দের সম্পূর্ণ অর্থ, সীমাবদ্ধতা এবং যেভাবে শব্দগুলো জ্ঞানের কোনো প্রসস্থ ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত থাকে তা পাঠক সম্পূর্ণভাবে বুঝতে না পারতেও পারে। এই সমস্যা সমাধানে, বিশ্বকোষের নিবন্ধগুলো শুধু সরল সঙ্গা বা কোনো নির্দিষ্ট শব্দের সঙ্গা দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এতে কোনো বিষয় বা শিক্ষার বিষয়ের একটি আরও বিস্তৃত অর্থ থাকে। কোনো বিষয়ের সমার্থক শব্দগুলো সঙ্গায়িত এবং সেগুলোর তালিকা করা ছাড়াও বিশ্বকোষের নিবন্ধগুলো বিষয়ের আরও বিস্তৃত অর্থ নিয়ে গভীরভাবে কাজ কর এবং সেই বিষয়ে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ পুঞ্জীভূত জ্ঞান বহন করে। একটি নিবন্ধে প্রায়ই মানচিত্র, চিত্র, গ্রন্থপঞ্জি এবং পরিসংখ্যান থাকতে পারে। তত্ত্বানুসারে বিশ্বকোষ কাউকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে লেখা হয় না, যদিও এর একটি উদ্দেশ্য পাঠকদের এটির সত্যতায় সন্তুষ্ট করা। চারটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান দ্বারা একটি বিশ্বকোষকে ব্যাখ্যা করা হয়। যেগুলো হলো: বিষয়বস্তু, প্রসার, বিন্যাসের পদ্ধতি এবং তৈরির পদ্ধতি। কোনো বিশ্বকোষ সাধারণ বিশ্বকোষ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে যদি সেটিতে সকল ক্ষেত্রের সকল বিষয় নিয়ে নিবন্ধ থাকে। কোনো সাধারণ বিশ্বকোষে সেটি ব্যবহারের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা, অভিধান এবং ভৌগোলিক অভিধান থাকতে পারে। দ্যা গ্রেট সোভিয়েত এনসাইকেলপিডিয়া এবং এনসাইকেলপিডিয়া জুদাইকা -এর মতো বিশ্বকোষও রয়েছে, যেখানে কোনো সাংস্কৃতিক, জাতিগত এবং জাতীয়তা সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনেক বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান বা আইনের বিশ্বকোষের মতো বিশ্বকোষীয় প্রসারের কীর্তিগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে নির্দিষ্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুঞ্জীভূত জ্ঞান ধারণ করা। নির্দিষ্ট পাঠক শ্রেণির উপর ভিত্তি করে এগুলো বিষয়বস্তুর বিস্তার এবং আলোচনার গভীরতার দিক থেকে ভিন্ন। কোনো বিশ্বকোষকে সেটির নির্দিষ্ট কাজের জন্য ব্যবহার করতে বিন্যাসের কোনো শৃঙ্খলাবদ্ধ পদ্ধতির প্রয়োজন। মুদ্রিত বিশ্বকোষ বিন্যাসের জন্য ঐতিহাসিকভাবে দুটো পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলো হলো: বর্ণানুক্রমিক (এতে প্রত্যেকটি নিবন্ধের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকতে পারে বা নিবন্ধগেুলোকে বর্ণানুক্রমিকভাবে সাজানো হতে পারে) এবং হায়ারার্কি পদ্ধতি। আগের পদ্ধতি এখন আরও প্রচলিত, বিশেষ করে সাধারণ বিশ্বকোষগুলোর ক্ষেত্রে। ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমের জন্য একই বস্তু আরও পদ্ধতিতে বিন্যাস করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও, ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমের কারণে অনুসন্ধান, ইনডেক্স করার এবং ক্রোস রেফারেন্স -এর জন্য নতুন উপায় তৈরি হয়েছে। ১৮ শতাব্দির ওনসিক্লোপিডি -এর প্রথম পৃষ্ঠার হোরাস এর এপিগ্রাফ একটি বিশ্বকোষ কাঠামের গুরুত্ব বর্ণনা করছে। যেখানে তিনি লিখেছেলেন: “সাধারণ বিষয়ে নিয়ম এবং সংযুক্তির শক্তিতে কি আকর্ষণ যুক্ত হতে পারে”। আধুনিক মাল্টিমিডিয়া এবং তথ্য যুগের সাথে সব ধরনের তথ্যের সংগ্রহ, যাচাইকরণ, সংমিশ্রণ এবং উপস্থাপনায় নতুন পদ্ধতির আবির্ভাব হয়েছে। এভরিথিং২, এনকার্টা, এইচ২জি২ এবং উইকিপিডিয়া -এর মতো প্রকল্পগুলো তথ্য সংগ্রহ তথ্য সংগ্রহ সহজতর হওয়ার সাথে সাথে নতুন ধরনের বিশ্বকোষ আবির্ভূত বিশ্বকোষের উদাহরণ। ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বকোষ তৈরির পদ্ধতি উভয় লাভজনক ও অলাভজনক দিক থেকে সমর্থিত। উপরে উল্লেখিত গ্রেট সোভিয়েত এনসাইকেলপিডিয়া নামক বিশ্বকোষটি রাষ্ট্র সমর্থিত এবং ব্রিটানিকা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের নামক সংস্থার অধীনে একটি অলাভজনক পরিবেশে সেচ্ছাসেবকগণ অবদান রাখার মাধ্যমে উইকিপিডিয়া গড়ে তুলেছে। কিছু অভিধান নামক কীর্তি বিশ্বকোষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, বিশেষ করে, যেগুলো কোনো বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে (যেমন: মধ্যযুগের অভিধান, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজের অভিধান এবং ব্ল্যাকের আইন অভিধান)। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় অভিধান, ম্যককুয়ারি অভিধান সেটির প্রথম সংস্করণের পর সাধারণ নিবন্ধে যথার্থ নামবাচক শব্দ এবং সেই যথার্থ নামবাচক শব্দগুলো থেকে পাওয়া শব্দের ব্যবহারের জন্য একটি বিশ্বকোষ অভিধানে পরিণত হয়। বিশ্বকোষ এবং অভিধানের মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বকোষের নিবন্ধগুলো অধিকাংশ সাধারণ উদ্দেশ্যে তৈরি অভিধানের চেয়ে বেশি দীর্ঘ, পরিপূর্ণ এবং বিস্তৃত। বিশ্বকোষ এবং অভিধানের বিষয়বস্তুর মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ ভাষায় অভিধানে শব্দের ভাষাগত তথ্য থাকে কিন্তু বিশ্বকোষ যে জন্য ব্যবহার করা হয় সেটির ‍উপর বেশি গুরুত্ব দেয়। অভিধানের লেখাগুলো শব্দের বর্ণনার সাথে অবিচ্ছিন্ন কিন্তু বিশ্বকোষের নিবন্ধগুলোর ভিন্ন নাম দেওয়া যায়। এ কারণে, অভিধানের লেখাগুলো অন্য ভাষায় সম্পূর্ণভাবে অনুবাদ করা যায় না কিন্তু বিশ্বকোষের নিবন্ধগুলোর ক্ষেত্রে এটি সম্ভব। বাস্তবভিত্তিক বিশ্বকোষীয় তথ্য এবং ভাষাগত তথ্যের (যেমনটা অভিধানে থাকে) সুস্পষ্ট কোনো পার্থক্য না থাকায় ব্যবহারিকভাবে পার্থক্যগুলো সদৃশ নয়। এ কারণে, বিশ্বকোষেে এমন কোনো বিষয়বস্তু থাকতে পারে যা অভিধান এবং অন্যান্য সাদৃশ্যপূর্ণ কিছুতেও আছে। বিশেষ করে, কোনো শব্দের মাধ্যমে যে বিষয়টি অভিহিত করা হয় অভিধানে প্রায়ই সেই বিষয়টি সম্পর্কে বাস্তবভিত্তিক তথ্য থাকে। ইতিহাস প্রাচীনকালে যেখানে বিশ্বকোষগুলো হাতে লেখা হতো, বর্তমানে সেখানে এগুলো মুদ্রিত হয়। এখন এগুলোকে ইলেক্ট্রনিকভাবে বণ্টন এবং প্রদর্শনও করা যায়। প্রাচীনকাল প্রথম শতাব্দি খ্রিষ্টাব্দের একজন রোমান রাষ্ট্রনায়ক, প্লিনি দ্য এল্ডার এর নাতুরালিস ইসতোরিয়ে হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীয় বিশ্বকোষীয় কীর্তিগুলোর মধ্যে একটি, যা আধুনিক সময় পর্যন্ত অক্ষত রয়েছে। তিনি ৩৭ পরিচ্ছেদের একটি কীর্তি তৈরি করেন, যেখানে তিনি প্রাকৃতিক ইতিহাস, স্থাপত্য, চিকিৎসা বিজ্ঞান, ভূগোল, ভূতত্ত্ব এবং তার আশেপাশে থাকা পৃথিবীর অন্যান্য বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি সেটির ভূমিকায় লিখেছেলেন যে, ২০০ এর বেশি লেখকের কীর্তি থেকে তিনি ২০,০০০টি সত্য একত্রিত করেছেন এবং অনেকগুলো তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যুক্ত করেন। তার কীর্তি ৭৭-৭৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। তিনি ৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতের সময়ে মৃত্যুবরণ করেন এবং সম্ভবত তিনি তার জীবনে কীর্তিটির সম্পাদনা শেষ করেননি। মধ্যযুগ মধ্যযুগের প্রথম দিকের একজন মহান জ্ঞানী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন, সেভিয়ার ইসিদোরে -কে এটিমোলোজিআই (দ্য এটিমোলোজিআই) বা অরিজিনেস (৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে) নামক মধ্যযুগের প্রথম বিশ্বকোষ লেখার জন্য স্বীকৃত। তিনি সেখানে তিনি সেই সময়ে বিদ্যমান থাকা উভয় প্রাচীন এবং সমসাময়িক শিক্ষার বড় অংশ এতে সংযুক্ত করেন। এতে ২০টি খণ্ডে বিভক্ত ৪৪৮টি পরিচ্ছেদ রয়েছে। এটিতে থাকা অন্য লেখকদের বক্তব্য এবং লেখার অংশগুলোর জন্য এটি মূল্যবান, কারণ তিনি সেগুলো সংগ্রহ না করলে হয়তো সেগুলো হারিয়ে যেত। ক্যারোলিংগিয়ান যুগের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিশ্বকোষ ছিল রাবাউনুস মাউরুস ৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে এটিমোলোজিআই এর উপর ভিত্তি করে লেখা দে উনিভার্সো এবং দে রেরুম নাতুরিস। দশম শতাব্দি খ্রিষ্টাব্দের বাইজেনটাইন সম্রাজ্যের সুদা নামক বিস্তৃত বিশ্বকোষটিতে ৩০,০০০ এর বেশি লেখা ছিল, যার অনেকগুলো প্রাচীন উৎস থেকে এসেছে, যেগুলো তখন থেকে হারিয়ে গেছে এবং অনেক সময় খ্রিষ্টান সংকলকদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। লেখাগুলো বর্ণানুক্রমে বিন্যাস করা ছিল, যাতে স্বরবর্ণের ক্রম এবং গ্রিক বর্ণমালায় সেগুলোর স্থানে একটু বিচ্যুতি ছিল। মধ্যযুগের মুসলিমদের প্রথমদিকের জ্ঞানের সংকলনের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি ছিল। ৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বসরা শহরের ইখওয়ান আল সাফা ইখওয়ান আল সাফা বিশ্বকোষের সাথে সংযুক্ত হয়। উল্লেখযোগ্য কীর্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে আবু বকর আল রাযী এর বিজ্ঞানের বিশ্বকোষ, মুতাজিলা অনুসরণকারী আল-কিন্দি এর ২৭০টি বই এবং ইবনে সিনা এর চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশ্বকোষ, যা কয়েক শতাব্দি জুড়ে একটি মানসম্মত নির্দেশক কীর্তি ছিল। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কীর্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে: আশআরিদের বৈশ্বিক ইতিহাস, আত তাবারি, আল-মাসুদী, আত তাবারি এর নবী এবং রাজাদের ইতিহাস,আমজাদ ইবনে রুস্তাহ, আলি ইবনে আসির এবং ইবনে খালদুন, যাদের মুকাদ্দিমায় বিশ্বাসের সতর্কতা সম্পর্কে লেখা আছে, যা আজও সম্পর্ণভাবে প্রযোজ্য। চীনের সোং সাম্রাজ্যের প্রথম দিকে (৯৬০-১২৭৯ খ্রিষ্টাব্দ) ১১ শতাব্দির মধ্যে সংকলিত ফোর গ্রেট বুকস অব সোং নামক মহান কীর্তিটি ছিল সেই সময়ের একটি ব্যাপক প্রতিশ্রুতি। এই চারটির সর্বশেষ বিশ্বকোষ, দ্য প্রাইম টোরটোইস ইন দ্য রেকর্ড ব্যুরো -এর ১০০০টি লেখা খণ্ডে ৯.৪ মিলিয়ন পর্যন্ত চীনা অক্ষর ছিল। ১০ থেকে ১৭ শতক পর্যন্ত বিশ্বকোষবিদদের যুগ স্থায়ী হয়, যেসময়ে চীনা সরকার শতশত জ্ঞানী ব্যক্তিদের ব্যাপক কিছু বিশ্বকোষ তৈরির জন্য নিয়োগ করে। ইয়ংগল বিশ্বকোষ ছিল এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষ। এটি ১৪০৮ সালে সম্পন্ন হয়। এটি প্রায় ২৩,০০০টি হাতে লেখা অংশে বিভক্ত। ২০০৭ সালে উইকিপিডিয়ার বৃহত্তম বিশ্বকোষে পরিণত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত উইকিপিডিয়ার এটি ইতিহাসের বৃহত্তম বিশ্বকোষ হিসেবে ছিল। মধ্যযুগের শেষের দিকে ইউরোপে কোনো বিষয়ে বা সকল ক্ষেত্রে পৃথিবীর মানুষের জ্ঞানের সমষ্টি একত্রিত করা অনেকের লক্ষ্য ছিল। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইংল্যান্ডের বার্থোলোমেও, বোভে -এর ভিনসেন্ট, রাডুলফুস আর্ডেনস, সাইদ্রাক, ব্রুনেতো লাটিনি, গোভালনী দ্য সাঙ্গিমিয়ানো, পিয়েে বেরসুয়ার এবং বিঙেনের হিলডেগার্ড ও ল্যান্ডবার্গ এর হ্যারাড এর মতো নারীরা। বোভে -এর ভিনসেন্ট এর স্পেকুলুম মায়উস (বড় দর্পন) এবং ইংল্যান্ডের বার্থোলোমেও এর দে প্রোপিয়েটাটিবুস রেরুম (বস্তুসমুহের বৈশিষ্ট্য) ছিল এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সফল বিশ্বকোষ। মধ্যযুগে দে প্রোপিয়েটাটিবুস রেরুম -কে ফরাসি, জার্মান, প্রুভেনাল, ইংরেজি, অ্যাংলো-নরম্যান এবং স্পেনীয় ভাষায় অনুবাদ করা হয় (অথবা গ্রহণ করা হয়)। দুটো বিশ্বকোষই ১৩ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে লেখা হয়। মধ্যযুগের কোনো বিশ্বকোষ “বিশ্বকোষ” শিরোনামটি ব্যবহার করেনি, বরং সেগুলো “অন নেচার” (দে নাতুরা, দে নাতুরিস রেরুম), দর্পন (স্পেকুলুম মায়উস, স্পেকুলুম ইউনিভার্সাল) বা গুপ্তধন (ট্রেসর) নামে অভিহিত ছিল। জেমস লে পালমার এর ১৪ শতকের ওমনে বনুম -এ প্রথম বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখার একক বর্ণানুক্রমিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। রেনেসাঁ মধ্যযুগের বিশ্বকোষগুলো সব হাতে সম্পাদিত ছিল এবং শুধু ধনী বা জ্ঞান পিপাসু মানুষদের কাছে থাকত। সেগুলো ব্যয়বহুল ছিল এবং যারা জ্ঞান বৃদ্ধির করতে চাইত তাদের জন্য লেখা হতো, সকল ব্যবহারকারীদের জন্য নয়। ১৪৯৩ সালে, নুরেমবার্গ ক্রনিকল তৈরি হয়, যেখানে ঐতিহাসিক মানুষ, ঘটনা এবং ভৌগোলিক স্থানসমুহের শতশত চিত্র ছিল। এটি একটি বিশ্বকোষীয় ধারাবিবরণী হিসেবে লেখা এই কীর্তিটি সবচেয়ে ভালো নথিভূক্ত মুদ্রিত বই ছিল (একটি ইনকুনাবুলা) এবং লেখার সাথে চিত্র যোগ করতে সক্ষম হওয়া প্রথম দিকের বিশ্বকোষগুলোর একটি। এই চিত্রগুলো আগে কখনো চিত্রিত না হওয়া ইউরোপ এবং পূর্ব কাছাকাছির বড় শহরগুলোকে চিত্রিত করে। এগুলো চিত্রিত করতে ৬৪৫টি কাঠে খোদাই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। রেনেসাঁর সময়ে মুদ্রণের আবিষ্কারের কারণে বিশ্বকোষ আরও প্রসারিত এবং প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তি নিজস্ব একটি সংস্করণ রাখতে পারত। জর্জি ভায়া এর দে এক্সপেডেনন্টিজ এট ফুজানডিস রেবুস তার মৃত্যুর পর ১৫০১ সালে ভেনিসে আলদুজ মানুসিয়স কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এই কীর্তিটি স্বাধীন শিল্পের একটি ঐতিহ্যবাহী উদাহরণ। ভায়া সদ্য আবিস্কৃত এবং অনুবাদ করা গণিতের উপর গ্রিকদের কীর্তিগুলোর (প্রথমে আর্কিমিডিস এর) অনুবাদ যুক্ত করেন। ১৫০৩ সালে মুদ্রিত গ্রেগর রাইচের মার্গারিটা ফিলোসোফিকা ছিল একটি সম্পন্ন বিশ্বকোষ, যেখানে সাতটি স্বাধীন শিল্পের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। ১৬ শতকের মানবতাবাদীরা প্লিনি এবং কুইন্টিলিয়ান এর লেখাগুলো ভুলভাবে পড়েন এবং “এনকাইক্লস” “পেইডিয়া” শব্দ দুটিকে শব্দ (έγκυκλοπαιδεία) বলে মনে করলে এনসাক্লেওপেইডিয়া শব্দটির উদ্ভব হয়। প্লুটার্ক “এনকাইক্লস পেইডিয়া” শব্দটি ব্যবহার করেন (ἐγκύκλιος παιδεία) এবং লাতিন শব্দ, এনসাইক্লোপেইডিয়া (encyclopaedia) প্রবর্তন করেন। এই শব্দটি ব্যবহার করে নাম দেওয়া প্রথম কীর্তিগুলো ছিল এনসাইকেলপিডিয়া অরবিস্কে ডকট্রিনারুম, হোক এস্ট ওমনিউম আরটিউম, সিনটিয়ারুম এবং হোয়ানাস আভেনটিনা এর ১৫১৭ সালে প্রকাশিত ইপসিওস ফিলোসোফাইয়ে ইনডেক্স এসি ডিভিসিও। ইংরেজ চিকিৎসক এবং দার্শনিক, স্যার থোমাস ব্রাউন ১৬৪৬ সালে তার সিউডোডক্সিয়া এপিডেমিক -এর ভূমিকায় এনসাইক্লোপেইডিয়া শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যা ১৭ শতাব্দির বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি। রেনেসাঁর “সৃষ্টির মাপকাঠি” নামক সম্মানজনক প্রথাটির সময়ের উপর ভিত্তি করে তিনি তার বিশ্বকোষটি তৈরি করেছেন। সিউডোডক্সিয়া এপিডেমিকাস সর্বোচ্চ বিক্রি হওয়া কীর্তিগুলোর একটি ছিল এবং এটি জার্মান, লাতিন, ফরাসি এবং ডাচ ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এটির কমপক্ষে পাঁচটি সংস্করণ বের হয় এবং সর্বোশেষ সংস্করণটি ১৬৭২ সালে প্রকাশিত হয়। অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং আইনীসহ বিভিন্ন বিষয়ের কারণে বিশ্বকোষের আকার পরিবর্তিত হয়েছে। রেনেসাঁর সময়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের পড়ার বেশি সময় ছিল এবং বিশ্বকোস তাদের আরও জানতে সাহায্য করে। প্রকাশকরা তাদের প্রকাশনা বৃদ্ধি করতে চেয়েছিল, তাই জার্মানির মতো দেশগুলো দ্রুত প্রকাশনার জন্য বর্ণানুক্রমিক অংশ বাদ দিয়ে বই প্রকাশ করা শুরু করে। প্রকাশকরা একাই তাদের সকল ব্যয় বহন করতে পারত না। এজন্য একাধিক প্রকাশক যৌথভাবে একটি ভালো বিশ্বকোষ তৈরি করতে অর্থ ব্যয় করত। যখন একই মূল্যে প্রকাশনা অসম্ভব হয়ে পড়ে তখন প্রকাশকরা সাবস্ক্রিপসশন এবং সিরিয়াল প্রকাশনা পদ্ধতি ব্যবহার করা শুরু করল। এই পদ্ধতি কার্যকর হলে মূলধন বৃদ্ধি পায় এবং বিশ্বকোষের জন্য একটি স্থির শুরু হয়। প্রতিদ্বন্দ্বীতার সৃষ্টি হলে, দুর্বল অনুন্নত আইনের কারণে কটিরাইট হওয়া শুরু হয়। বেশি বিত্রি করার জন্য এবং যাতে খদ্দেরদের বেশি অর্থ খরচ না করতে হয় তাই দ্রুততর এবং কম খরচে বিশ্বকোষ তৈরির জন্য কিছু প্রকাশক অন্যান্য প্রকাশকের কীর্তি নকল করেন। মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে থাকা গ্রন্থগারে বিশ্বকোষ রাখা থাকত। ইউরোপিওরা তাদের আশেপাশের সমাজ সম্পর্কে বিস্মিত হতে থাকে, ফলে সরকারের বিরূদ্ধে বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ঐতিহ্যবাহী বিশ্বকোষ সাধারণ উদ্দেশ্যে তৈরি ব্যাপকভাবে বণ্টন করা মুদ্রিত বিশ্বকোষের আধুনিক ধারণা ১৮ শতকের বিশ্বকোষবিদের পূর্বেই এসেছে। চেম্বারের ক্লাইকোপিডিয়া, ইউনিভার্সাল ডিকশনারি অব আর্ট এন্ড সাইয়েন্সেস (১৭২৮), ডেনি দিদেহো (১৭৫০) ও যিন দে রোন্ড দা’লেম্বার্ট (১৭৫১ থেকে) এর এনসাইক্লোপেডি, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (১৭৬৮) এবং কনভার্সেসন লেক্সিকন বর্তমানে আমাদের পরিচিত রূপে প্রকাশিত হয়। এগুলোতে অনেক বিষয় গভীরভাবে আলোচনা করা হয় এবং লেখাগুলো একটি বোধগোম্য, নিয়মানুগ পদ্ধতিতে সাজানো হয়।১৭২৮ সালে, চেম্বার এর ১৭০৪ সালে জন হারিস কর্তৃক প্রকাশিত লেক্সিকুম টেকনিকুম এবং তার পরবর্তী কীর্তিগুলো অনুসরণ করেন। চেম্বারের কীর্তিটি নাম এবং বিষয়বস্তু অনুযায়ী ছিল শিল্প এবং বিজ্ঞানের একটি ইংরেজি অভিধান, যাতে শুধু শিল্পের শর্তগুলোই নয়, বরং শিল্পগুলোরও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। ১৯২০ এর দশকে হামর্সওর্য়থ এর সার্বজনীন বিশ্বকোষ এবং শিশুদের বিশ্বকোষের মতো জনপ্রিয় এবং সাশ্রয়ী বিশ্বকোষগুলোর আবির্ভাব হয়। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে কিছু ব্যাপক জনপ্রিয় বিশ্বকোষ প্রকাশিত হয়, যেগুলো কিস্তিতে বিক্রি করা হয়। ফাঙ্ক এন্ড ওয়াগনালস এবং ওয়ার্ল্ড বুক ছিল এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। এগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়িতে-বাড়িতে গিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। জেক লিঞ্চ তার বইয়ের মধ্যে লিখেছেন যে, বিশ্বকোষ বিক্রেতারা এত সুলভ ছিল যে তারা কৌতুকের কেন্দ্র হয়ে যায়। “তারা শুধু বই নয়, বরং তারা একটি জীবনব্যবস্থা, একটি ভবিষ্যৎ এবং সামাজিক গতিশীলতার একটি প্রতিজ্ঞা বিক্রি করছেন” বলে তিনি তাদের কাজের ক্ষেত্রকে ব্যাখ্যা করেন। ১৯৬১ সালে ওয়ার্ল্ড বুক এর একটি বিজ্ঞাপনে একজন নারীর হাতে একটি অর্ডার ফর্ম দেখিয়ে বলা হয়েছে, “আপনি এখন আপনার হাতে আপনার পরিবারের ভবিষ্যৎ ধরে রেখেছেন”। বিংশ শতাব্দির ২য় অংশে অনেকগুলো বিশেষায়িত বিশ্বকোষ প্রকাশিত হয়, যেখানে মূলত নির্দিষ্ট কোনো শিল্প বা পেশাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের বিষয়গুলো সংকলিত করা হয়। এই প্রচলনটি স্থায়ী হয়। বর্তমানে কমপক্ষে এক খন্ড আকারের বিশ্বকোষ রয়েছে, যাতে শিক্ষার সকল ক্ষেত্রগুলো না থাকলেও জীবনীতিশাস্ত্রের মতো ছোট বিষয়গুলো ছিল। ডিজিটাল এবং অনলাইন বিশ্বকোষের উত্থান ২০ শতাব্দির মধ্যে নিজস্ব কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য সিডি-রোমে বিশ্বকোষ প্রকাশ করা হয়। মাইক্রোসফট -এর এনকার্টা এর কোনো মুদ্রিত সংকলন না থাকায় এটি এরকম বিশ্বকোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এর নিবন্ধগুলোতে ভিডিও, অডিও ফাইল এবং অসংখ্য উচ্চ মানসম্মত চিত্র ব্যবহার করা হয়. ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং অনলাইন ক্রাউডসোর্সিং এর কারণে বিশ্বকোষগেুলো বিষয়ের বিস্তৃতি এবং গভীরতার দিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠেছে। ওপেন সোর্স মিডিয়াউইকি সফটওয়্যার এবং উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন সমর্থিত একটি বহুভাষাভিত্তিক মুক্ত লাইসেন্স ইন্টারনেট বিশ্বকোষ, উইকিপিডিয়া ২০০১ সালে স্থাপিত হয়। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনলাইন এর মতো বিশেষজ্ঞদের লেখা বাণিজ্যিক বিশ্বকোষ সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণভাবে সেচ্ছাসেবক সম্পাদকরা যৌথভাবে উইকিপিডিয়া গড়ে তুল এবং পরিচালনা করে। উইপিডিয়া যৌথভাবে সম্মত নিয়মকানুন এবং ব্যবহারকারীদের যৌথ অবদানে পরিচালিত হয়। এর অধিকাংশ অবদানকারীরা চদ্মনাম ব্যবহার করে নিজেকে গোপন রাখে। অন্তর্নিহিত মান এবং বাইরের উৎসের সমর্থনের উপর ভিত্তি করে এর উপাদানগুলো পর্যালোচনা, চেক, রাখা এবং অপসারণ করা হয়। ঐতিহ্যবাহী বিশ্বকোষগুলোর নির্ভরযোগ্যতা রচয়িতা এবং সংযুক্ত পেশাদার বিশেষজ্ঞদের উপর নির্ভর করে। অনেক শিক্ষাবিদ, শিক্ষক এবং সাংবাদিকরা উইকিপিডিয়ার মতো ক্রাউডসোর্সড বিশ্বকোষকে তথ্যের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে মনে করেন না এবং উইকিপিডিয়ার উন্মুক্ত সম্পাদনা ব্যবস্থা এবং গোপন ক্রাউডসোর্সিং কাঠামোর জন্য সেটি নিজের মানের দিক থেকেও কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস নয়। ২০০৫ সালে, নেচার এর করা একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে, উইকিপিডিয়ার নিবন্ধগুলো এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা এর নিবন্ধগুলোর সাথে মোটামুটিভাবে তুলনাযোগ্য, যেগুলোতে একই সংখ্যক বড় ভুল এবং বাস্তবিকতার আরও ১/৩ বেশি ভুল রয়েছে তবে উইকিপিডিয়ার নিবন্ধগুলো বিভ্রান্তিকর এবং কম পাঠযোগ্য হতে পারে। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা গবেষণাটিতে সমস্যা ছিল বলে বিবেচনা করে সেটি প্রত্যাখ্যান করে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত উইকিপিডিয়ার পৃষ্ঠা দেখা সংখ্যা ছিল ১৮ বিলিয়ন এবং প্রতি মাসে ৫০০ মিলিয়ন নতুন পরিদর্শক ছিল। সমালোচকরা বিতর্ক করে যে, উইকিপিডিয়া এ বিষয়ে পদ্ধতিগত পক্ষপাতমূলক তথ্য প্রদর্শন করে। বিভিন্ন বিষয়ের উপর আরও ছোট, সাধারণত আরও বিশেষায়িত কিছু বিশ্বকোষ আছে, যেগুলোর কয়েকটি কোনো নির্দিষ্ট স্থান বা সময়ের জন্য নির্দিষ্ট থাকতে পারে। এ রকম বিশ্বকোষের একটি উদাহরণ হলো স্ট্যানফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ফিলোসফি। সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষসমুহ ২০২০ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষগুলোর মধ্যে রয়েছে: চীনা বাইডু বাইকে (১৬ মিলিয়ন নিবন্ধ), হুডোং বাইকে (১৩ মিলিয়ন নিবন্ধ), ইংরেজি (৬ মিলিয়ন নিবন্ধ), জার্মান (২ মিলিয়ন নিবন্ধ) এবং ফরাশি (২ মিলিয়ন নিবন্ধ) উইকিপিডিয়া। আরও ১২টিরও বেশি উইকিপিডিয়ায় ১ মিলিয়ন বা তার চেয়ে বেশি নিবন্ধ বিভিন্ন মান এবং দৈর্ঘের নিবন্ধ রয়েছে। কোনো বিশ্বকোষের আকার সেটির নিবন্ধ দিয়ে পরিমাপ করা একটি অনিশ্চিত উপায়, যেমন: উপরে উল্লেখিত অনলাইন চীনা বিশ্বকোষগুলোতে কোনো বিষয়ে মাত্র একাধিক নিবন্ধ থাকতে পারে যেখানে উইকিপিডিয়ায় প্রতি বিষয়ে মাত্র একটি নিবন্ধ গ্রহণযোগ্য, যদিও উইকিপিডিয়ায় প্রায় শূন্য নিবন্ধ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হতে পারে। বাংলা ভাষায় বিশ্বকোষ নগেন্দ্রনাথ বসু সম্পাদিত 'বিশ্বকোষ' নামে বিশ্বকোষের কাজ ১৯০২ সালে শুরু হয় এবং ১৯১১ সালে প্রকাশিত হয়। প্রায় সতের সহস্র পৃষ্ঠার এই বিশ্বকোষটি ২২ খণ্ডে সঙ্কলিত হয়েছিল। তবে বাংলা ভাষায় 'ভারতকোষ' (প্রকাশকাল: ১৮৯৬-১৯০৬)একটি বিশ্বকোষ আছে, যা তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়। ভারতকোষ এর সঙ্কলক ছিলেন রাজকৃষ্ণ রায় ও শরচ্চন্দ্র দেব। এছাড়াও ১৯৭২ সালে খান বাহাদুর আবদুল হাকিমের সম্পাদনায় ঢাকায় প্রকাশিত ৪ খণ্ডে বিভক্ত মুক্তধারার বাংলা বিশ্বকোষ উল্লেখযোগ্য। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্বকোষ প্রকাশ করে। এটির কাজ শুরু হয় ১৯৮০ সালে এবং প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে। বিভিন্ন বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা এনকার্টা এনসাইক্লোপিডিয়া অ্যামেরিকানা ব্রিটানিকা ম্যাক্রোপিডিয়া ইসলামী বিশ্বকোষ বাংলাপিডিয়া কিতাবুশ শিফা গ্রেট বুক্‌স অফ দ্য ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড আরও দেখুন টীকা তথ্যসূত্র C. Codoner, S. Louis, M. Paulmier-Foucart, D. Hüe, M. Salvat, A. Llinares, L'Encyclopédisme. Actes du Colloque de Caen, A. Becq (dir.), Paris, 1991. বহিঃসংযোগ Encyclopaedia and Hypertext Internet Accuracy Project – Biographical errors in encyclopedias and almanacs Encyclopedia – Diderot's article on the Encyclopedia from the original Encyclopédie. De expetendis et fugiendis rebus – First Renaissance encyclopedia Errors and inconsistencies in several printed reference books and encyclopedias Digital encyclopedias put the world at your fingertips CNET article Encyclopedias online University of Wisconsin Stout listing by category Chambers' Cyclopaedia, 1728, with the 1753 supplement Encyclopædia Americana, 1851, Francis Lieber ed. (Boston: Mussey & Co.) at the University of Michigan Making of America site Encyclopædia Britannica, articles and illustrations from 9th ed., 1875–89, and 10th ed., 1902–03. নগেন্দ্রনাথ বসু সঙ্কলিত বিশ্বকোষের কিছু খণ্ডের PDF সংষ্করণ বিশ্বকোষ অভিধান মুক্তকোষ ইতিহাস বিষয়ক সৃষ্টিকর্ম
https://en.wikipedia.org/wiki/Encyclopedia
Encyclopedia
An encyclopedia (American English) or encyclopaedia (British English) is a reference work or compendium providing summaries of knowledge, either general or special, in a particular field or discipline. Encyclopedias are divided into articles or entries that are arranged alphabetically by article name or by thematic categories, or else are hyperlinked and searchable. Encyclopedia entries are longer and more detailed than those in most dictionaries. Generally speaking, encyclopedia articles focus on factual information concerning the subject named in the article's title; this is unlike dictionary entries, which focus on linguistic information about words, such as their etymology, meaning, pronunciation, use, and grammatical forms. Encyclopedias have existed for around 2,000 years and have evolved considerably during that time as regards language (written in a major international or a vernacular language), size (few or many volumes), intent (presentation of a global or a limited range of knowledge), cultural perspective (authoritative, ideological, didactic, utilitarian), authorship (qualifications, style), readership (education level, background, interests, capabilities), and the technologies available for their production and distribution (hand-written manuscripts, small or large print runs, Internet). As a valued source of reliable information compiled by experts, printed versions found a prominent place in libraries, schools and other educational institutions. The appearance of digital and open-source versions in the 21st century, such as Wikipedia (combining with the wiki website format), has vastly expanded the accessibility, authorship, readership, and variety of encyclopedia entries.
1210
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%9F
ইন্টারনেট
আন্তৰ্জাল বা ইন্টারনেট হলো সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত, পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং যেখানে আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদান করা হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে অনেকে ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবকে সমার্থক শব্দ হিসেবে গণ্য করলেও প্রকৃতপক্ষে শব্দদ্বয় ভিন্ন বিষয় নির্দেশ করে। পরিভাষা আন্তর্জালের ইংরেজি পরিভাষা "ইন্টারনেট" কথাটি "ইন্টারকানেক্টেড নেটওয়ার্ক" (Interconnected network আন্তঃসংযুক্ত জালিকাব্যবস্থা) শব্দগুচ্ছটির সংক্ষিপ্ত রূপ। এটা বিশেষ গেটওয়ে বা রাউটারের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলো একে-অপরের সাথে সংযোগ করার মাধ্যমে গঠিত হয়। ইন্টারনেটকে প্রায়ই নেট বলা হয়ে থাকে। যখন সম্পূর্ণ আইপি নেটওয়ার্কের আন্তর্জাতিক সিস্টেমকে উল্লেখ করা হয়, তখন ইন্টারনেট শব্দটিকে একটি নামবাচক বিশেষ্য মনে করা হয়। ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব দৈনন্দিন আলাপচারিতায় প্রায়ই কোন পার্থক্য ছাড়া ব্যবহৃত হয়। যাইহোক, ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব একই নয়। ইন্টারনেটের হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার পরিকাঠামো কম্পিউটারসমূহের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে। বিপরীতে, ওয়েব ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রদত্ত পরিষেবাগুলির একটি। এটা পরস্পরসংযুক্ত কাগজপত্র এবং অন্যান্য সম্পদ সংগ্রহের, হাইপারলিংক এবং URL-দ্বারা সংযুক্ত। ইতিহাস ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর গবেষণা সংস্থা অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি বা আরপা (ARPA) পরীক্ষামূলকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে তৈরি করা এই নেটওয়ার্ক আরপানেট (ARPANET) নামে পরিচিত ছিল। এতে প্রাথমিকভাবে যুক্ত ছিল। ইন্টারনেট ১৯৮৯ সালে আইএসপি দ্বারা সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৯০ এর মাঝামাঝি থেকে ১৯৯০ এর পরবর্তি সময়ের দিকে পশ্চিমাবিশ্বে ইন্টারনেট ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত হতে থাকে। তথ্যসূত্র আরও দেখুন ইন্টারনেট সম্পর্কিত নিবন্ধসমূহের তালিকা ইন্টারনেটস ইন্টারনেটের রুপরেখা আউটারনেট আরও পড়ুন First Monday, a peer-reviewed journal on the Internet established in 1996 as a Great Cities Initiative of the University Library of the University of Illinois at Chicago, Rise of the Network Society, Manual Castells, Wiley-Blackwell, 1996 (1st ed) and 2009 (2nd ed), "The Internet: Changing the Way We Communicate" in America's Investment in the Future, National Science Foundation, Arlington, Va. USA, 2000 “Lessons from the History of the Internet” , Manuel Castells, in The Internet Galaxy, Ch. 1, pp 9–35, Oxford University Press, 2001, "Media Freedom Internet Cookbook" by the OSCE Representative on Freedom of the Media Vienna, 2004 The Internet Explained, Vincent Zegna & Mike Pepper, Sonet Digital, November 2005, Pages 1 – 7. "How Much Does The Internet Weigh?", by Stephen Cass, Discover, 2007 "The Internet spreads its tentacles", Julie Rehmeyer, Science News, Vol. 171, No. 25, pp. 387–388, 23 June 2007 Internet, Lorenzo Cantoni & Stefano Tardini, Routledge, 2006, বহিঃসংযোগ দ্য ইন্টারনেট সোসাইটি Berkman সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটি ইউরোপিয়ান কমিশন ইনফরমেশন সোসাইটি লিভিং ইন্টারনেট, ইন্টারনেটের ইতিহাস এবং এ সম্পর্কিত তথ্য, ইন্টারনেট প্রণেতাদের সম্পর্কিত তথ্য দ্য ইন্টারনেট (ন্যাশনাল সায়েন্স মিউজিয়াম) "১০ ইয়ার্স দ্যাট চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড" — ওয়ার্ড লুকস ব্যাক অ্যাট দি এভোল্যুশন অব দ্য ইন্টারনেট ওভার লাস্ট ১০ ইয়ার্স সিবিসি ডিজিটাল আর্কাইভস—ইনভেন্টিং দ্য ইন্টারনেট এইজ ইন্টারনেট কীভাবে আসল RFC 801, planning the TCP/IP সুইচওভার মার্কিন উদ্ভাবন ডিজিটাল প্রযুক্তি বৈজ্ঞানিক বিপ্লব গণমাধ্যম প্রযুক্তি জনসেবা সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন অসদ বাস্তবতা প্রসার ও বিপণন যোগাযোগ পরিবহনকারী ব্যবস্থা মূল বিষয়ের নিবন্ধ ১৯৬৯-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত টেলিযোগাযোগ নব্য যোগাযোগ মাধ্যম
https://en.wikipedia.org/wiki/Internet
Internet
The Internet (or internet) is the global system of interconnected computer networks that uses the Internet protocol suite (TCP/IP) to communicate between networks and devices. It is a network of networks that consists of private, public, academic, business, and government networks of local to global scope, linked by a broad array of electronic, wireless, and optical networking technologies. The Internet carries a vast range of information resources and services, such as the interlinked hypertext documents and applications of the World Wide Web (WWW), electronic mail, telephony, and file sharing. The origins of the Internet date back to research that enabled the time-sharing of computer resources and the development of packet switching in the 1960s which led to the design of computer networks for data communication. The set of rules (communication protocols) to enable internetworking on the Internet arose from research and development commissioned in the 1970s by the Defense Advanced Research Projects Agency (DARPA) of the United States Department of Defense in collaboration with universities and researchers across the United States and in the United Kingdom and France. The ARPANET initially served as a backbone for the interconnection of regional academic and military networks in the United States to enable resource sharing. The funding of the National Science Foundation Network as a new backbone in the 1980s, as well as private funding for other commercial extensions, encouraged worldwide participation in the development of new networking technologies and the merger of many networks using DARPA's Internet protocol suite. The linking of commercial networks and enterprises by the early 1990s, as well as the advent of the World Wide Web, marked the beginning of the transition to the modern Internet, and generated sustained exponential growth as generations of institutional, personal, and mobile computers were connected to the network. Although the Internet was widely used by academia in the 1980s, the subsequent commercialization in the 1990s and beyond incorporated its services and technologies into virtually every aspect of modern life. Most traditional communication media, including telephone, radio, television, paper mail, and newspapers, are reshaped, redefined, or even bypassed by the Internet, giving birth to new services such as email, Internet telephone, Internet television, online music, digital newspapers, and video streaming websites. Newspapers, books, and other print publishing have adapted to website technology or have been reshaped into blogging, web feeds, and online news aggregators. The Internet has enabled and accelerated new forms of personal interaction through instant messaging, Internet forums, and social networking services. Online shopping has grown exponentially for major retailers, small businesses, and entrepreneurs, as it enables firms to extend their "brick and mortar" presence to serve a larger market or even sell goods and services entirely online. Business-to-business and financial services on the Internet affect supply chains across entire industries. The Internet has no single centralized governance in either technological implementation or policies for access and usage; each constituent network sets its own policies. The overarching definitions of the two principal name spaces on the Internet, the Internet Protocol address (IP address) space and the Domain Name System (DNS), are directed by a maintainer organization, the Internet Corporation for Assigned Names and Numbers (ICANN). The technical underpinning and standardization of the core protocols is an activity of the Internet Engineering Task Force (IETF), a non-profit organization of loosely affiliated international participants that anyone may associate with by contributing technical expertise. In November 2006, the Internet was included on USA Today's list of the New Seven Wonders.
1211
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A6%A8
টেলিভিশন
টেলিভিশন (সংক্ষেপে টিভি) এমন একটি যন্ত্র যা থেকে একই সঙ্গে ছবি দেখা যায় এবং শব্দও শোনা যায়। টেলিভিশন শব্দটি ইংরেজি থেকে এসেছে, মূলতঃ প্রাচীন গ্রিক শব্দ "τῆλε" (ত্যালে অর্থাৎ "দূর") এবং লাতিন শব্দ "Vision" (ভ়িসিওন্‌, অর্থাৎ "দর্শন") মিলিয়ে তৈরি হয়ে। তাই টেলিভিশনকে বাংলায় কখনও দূরদর্শন যন্ত্র বা সংক্ষেপে দূরদর্শন বলা হয়। আবিষ্কার গ্রিক শব্দ 'টেলি' অর্থ দূরত্ব , আর ল্যাটিন শব্দ 'ভিশন' অর্থ দেখা। ১৮৬২ সালে তারের মাধ্যমে প্রথম স্থির ছবি পাঠানো সম্ভব হয়। এরপর ১৮৭৩ সালে বিজ্ঞানী মে ও স্মিথ ইলেকট্রনিক সিগনালের মাধ্যমে ছবি পাঠানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ব্রিটিশবিজ্ঞানী জন লগি বেয়ার্ড ১৯২৬ সালে প্রথম টেলিভিশন আবিষ্কার করেন এবং সাদা কালো ছবি দূরে বৈদ্যুতিক সম্প্রচারে পাঠাতে সক্ষম হন। এর পর রুশ বংশোদ্ভুত প্রকৌশলী আইজাক শোয়েনবারগের কৃতিত্বে ১৯৩৬ সালে প্রথম টিভি সম্প্রচার শুরু করে বিবিসি। টেলিভিশন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু হয় ১৯৪০ সালে। অতপর ১৯৪৫ সালে যন্ত্রটি পূর্ণতা লাভ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টেলিভিশনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সূচিত হয়। গত শতাব্দীর ৫০ এর দশকে টেলিভিশন গনমাধ্যমের ভূমিকায় উঠে আসে। সম্প্রচার কৌশল টেলিভিশনের মূল ধারণা হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে ট্রান্সমিট করা। মূলত তিনটি প্রযুক্তির সমন্বয়ে সৃষ্ট হয় টেলিভিশনের আউটপুট : টিভি ক্যামেরা যার কাজ হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে তড়িৎ-চৌম্বকীয় সংকেতে রূপান্তর করা, টিভি ট্রান্সমিটার যার কাজ হচ্ছে এই সংকেতকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করা এবং টিভি সেট (রিসিভার) যার কাজ হচ্ছে এই সংকেত গ্রহণ করে তাকে আগের ছবি ও শব্দে রুপান্তরিত করা। সাধারনত ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়: স্থিরচিত্র ও চলচ্চিত্র। স্থিরচিত্রের জন্য সাধারণ ক্যামেরা ও চলচ্চিত্রের জন্য মুভি/ভিডিও ক্যামেরার ব্যবহার হয়। প্রকৃতপক্ষে অনেকগুলো স্থিরচিত্রের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় চলচ্চিত্র। ভিডিও ক্যামেরা দ্রুত গতিতে পরপর অনেকগুলো স্থিরচিত্র (২৪ ছবি/সে) গ্রহণ করে। এই ছবিগুলোকে যখন একই গতিতে পরপর প্রদর্শন করা হয় তখন আমাদের চোখে এগুলো চলচ্চিত্র বলে মনে করে। ফ্রেমে এই দ্রুতগতিতে ছবি পরিবর্তনের কারগরি কৌশলটি আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। চলচ্চিত্রকে খুবই ধীর গতিতে দেখলে এইসব স্থিরচিত্রগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। অ্যানালগ টিভি ক্যামেরা এইসব ছবির পিক্সেলকে সাধারনত ৫২৫টি লাইনে ভাগ করে লাইন বাই লাইন বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করে। একইসাথে শব্দ তরঙ্গকে আলাদা সিগনালের মাধ্যমে প্রেরণ করে। ছবি ও শব্দের সিগনাল অ্যান্টেনা/কেবল/স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টিভি গ্রহণ করে বিশেষ পদ্ধতিতে আবার ছবি ও শব্দে রুপান্তরিত করে। টেলিভিশন হতে গামা রশ্মি নির্গত হয়। টেলিভিশনের শ্রেণিবিভাগ ডিসপ্লে বা প্রদর্শনীর প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে টেলিভিশনকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। যেমন : সিআরটি (CRT), প্লাজমা (Plasma), এলসিডি (LCD), এলইডি (LED) ইত্যাদি। সম্প্রচার থেকে প্রদর্শন পর্যন্ত টেলিভিশনের সম্পূর্ণ পদ্ধতিকে আবার তিনভাগে ভাগ করা যায় : এনালগ টেলিভিশন (সনাতন পদ্ধতি), ডিজিটাল টেলিভিশন (DTV) ও এইচডিটিভি (HDTV)। এনালগ টেলিভিশন এনালগ তথা সনাতন টিভি পদ্ধতি অর্থাৎ টিভি ক্যামেরা, ট্রান্সমিটিং সিস্টেম এবং টিভিসেট সবগুলোই কাজ করে এনালগ পদ্ধতিতে। এ ধরনের টিভিতে PAL স্ট্যান্ডার্ড ছবির পিক্সেল হয় মাত্র (720×576) 414,720 এবং ছবির aspect ratio 4 : 3 যার অর্থ স্ক্রীনে ছবির সাইজ ৪ একক প্রশস্ত ও ৩ একক উচ্চতার। অর্থাৎ ২৫ ইঞ্চি ডায়াগোনাল টিভি স্ক্রীনে ২০×১৫ ইঞ্চি হবে। তথ্যসূত্র টেলিভিশন টেলিভিশন পরিভাষা সম্প্রচার ভোক্তা ইলেকট্রনীয় দ্রব্য ডিজিটাল প্রযুক্তি পরিবেশন শিল্পকলা মার্কিন উদ্ভাবন ব্রিটিশ উদ্ভাবন ২০শ শতাব্দীর উদ্ভাবন মাধ্যম বিন্যাস মাধ্যম অনুযায়ী বিজ্ঞাপন ভিডিও হার্ডওয়্যার জার্মান উদ্ভাবন রুশ উদ্ভাবন টেলিভিশন শিল্প
https://en.wikipedia.org/wiki/Television
Television
Television (TV) is a telecommunication medium for transmitting moving images and sound. Additionally, the term can refer to a physical television set rather than the medium of transmission. Television is a mass medium for advertising, entertainment, news, and sports. The medium is capable of more than "radio broadcasting," which refers to an audio signal sent to radio receivers. Television became available in crude experimental forms in the 1920s, but only after several years of further development was the new technology marketed to consumers. After World War II, an improved form of black-and-white television broadcasting became popular in the United Kingdom and the United States, and television sets became commonplace in homes, businesses, and institutions. During the 1950s, television was the primary medium for influencing public opinion. In the mid-1960s, color broadcasting was introduced in the U.S. and most other developed countries. The availability of various types of archival storage media such as Betamax and VHS tapes, LaserDiscs, high-capacity hard disk drives, CDs, DVDs, flash drives, high-definition HD DVDs and Blu-ray Discs, and cloud digital video recorders has enabled viewers to watch pre-recorded material—such as movies—at home on their own time schedule. For many reasons, especially the convenience of remote retrieval, the storage of television and video programming now also occurs on the cloud (such as the video-on-demand service by Netflix). At the beginning of the 2010s, digital television transmissions greatly increased in popularity. Another development was the move from standard-definition television (SDTV) (576i, with 576 interlaced lines of resolution and 480i) to high-definition television (HDTV), which provides a resolution that is substantially higher. HDTV may be transmitted in different formats: 1080p, 1080i and 720p. Since 2010, with the invention of smart television, Internet television has increased the availability of television programs and movies via the Internet through streaming video services such as Netflix, Amazon Prime Video, iPlayer and Hulu. In 2013, 79% of the world's households owned a television set. The replacement of earlier cathode-ray tube (CRT) screen displays with compact, energy-efficient, flat-panel alternative technologies such as LCDs (both fluorescent-backlit and LED), OLED displays, and plasma displays was a hardware revolution that began with computer monitors in the late 1990s. Most television sets sold in the 2000s were flat-panel, mainly LEDs. Major manufacturers announced the discontinuation of CRT, Digital Light Processing (DLP), plasma, and even fluorescent-backlit LCDs by the mid-2010s. LEDs are being gradually replaced by OLEDs. Also, major manufacturers have started increasingly producing smart TVs in the mid-2010s. Smart TVs with integrated Internet and Web 2.0 functions became the dominant form of television by the late 2010s. Television signals were initially distributed only as terrestrial television using high-powered radio-frequency television transmitters to broadcast the signal to individual television receivers. Alternatively, television signals are distributed by coaxial cable or optical fiber, satellite systems, and, since the 2000s, via the Internet. Until the early 2000s, these were transmitted as analog signals, but a transition to digital television was expected to be completed worldwide by the late 2010s. A standard television set consists of multiple internal electronic circuits, including a tuner for receiving and decoding broadcast signals. A visual display device that lacks a tuner is correctly called a video monitor rather than a television.
1212
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0
বেতার
বেতার হল তার ব্যতীত যোগাযোগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এতে তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ বা গ্রহণ করা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দির শেষপ্রান্তে অনেক দেশের বিজ্ঞানী প্রায় একই সময়ে বেতার আবিষ্কার করলেও গুগলিয়েলমো মার্কোনিকে বেতারের আবিষ্কারক হিসাবে ধরা হয়। পূর্বে শুধু রেডিওতে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে বেতার প্রযুক্তির ব্যবহার চলছে সর্বত্র। রেডিও (বেতার), টেলিভিশন (দূরদর্শন), মোবাইল ফোন, ইত্যাদিসহ তারবিহীন যেকোনো যোগাযোগের মূলনীতিই হল বেতার। বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে মহাকাশ পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয় বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা রেডিও টেলিস্কোপ। রেডিও হল রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে সংকেত প্রেরণ ও যোগাযোগের প্রযুক্তি। রেডিও তরঙ্গ হল ৩ হার্টজ (Hz) এবং ৩০০ গিগাহার্টজ (GHz) কম্পাঙ্কের মধ্যকার তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ। এগুলি অ্যান্টেনার সাথে সংযুক্ত ট্রান্সমিটার নামক একটি  বৈদ্যুতিক যন্ত্র দ্বারা উৎপন্ন হয় যা তরঙ্গ বিকিরণ করে এবং একটি রেডিও রিসিভারের সাথে সংযুক্ত অন্য একটি অ্যান্টেনা দ্বারা গৃহীত হয়। আধুনিক প্রযুক্তি, রেডিও যোগাযোগ, রাডার, রেডিও নেভিগেশন, রিমোট কন্ট্রোল (দূরবর্তী নিয়ন্ত্রণ), রিমোট সেন্সিং এবং অন্যান্য কাজে রেডিও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। রেডিও যোগাযোগে, রেডিও এবং টেলিভিশন সম্প্রচারে, সেল ফোন, দ্বিমুখী (টু ওয়ে) রেডিও, বেতার নেটওয়ার্কিং এবং স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন, অন্যান্য অনেক ব্যবহারের মধ্যে, ট্রান্সমিটারে রেডিও সংকেত পরিবর্তন করে তরঙ্গগুলি শুন্য মাধ্যমে একটি ট্রান্সমিটার থেকে রিসিভারে তথ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত। রাডার এর মাধ্যমে  বিমান, জাহাজ, মহাকাশযান এবং ক্ষেপণাস্ত্রের মতো বস্তুগুলি সনাক্ত এবং ট্র্যাক করতে ব্যবহৃত হয়, একটি রাডার ট্রান্সমিটার দ্বারা নির্গত রেডিও তরঙ্গের একটি লক্ষ্যবস্তুকে প্রতিফলিত করে এবং প্রতিফলিত তরঙ্গগুলি বস্তুর অবস্থান প্রকাশ করে। রেডিও নেভিগেশন সিস্টেম যেমন জিপিএস এবং ভিওআর-এ, মোবাইল রিসিভার ইত্যাদি নেভিগেশনাল রেডিও বীকন (যার অবস্থান জানা যায়) থেকে রেডিও সংকেত গ্রহণ করে এবং রেডিও তরঙ্গের আগমনের সময় সঠিকভাবে পরিমাপ করে রিসিভার পৃথিবীতে তার অবস্থান গণনা করতে পারে। ওয়্যারলেস রেডিও রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস যেমন ড্রোন, গ্যারেজ ডোর ওপেনার এবং চাবিহীন এন্ট্রি সিস্টেমে, কন্ট্রোলার ডিভাইস থেকে প্রেরিত রেডিও সংকেত একটি দূরবর্তী ডিভাইসের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। রেডিও তরঙ্গের প্রয়োগ তরঙ্গসমুহকে  উল্লেখযোগ্য দূরত্বে প্রেরণের সাথে সম্পর্কিত নয়, যেমন শিল্প প্রক্রিয়াকরণএবং মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ব্যবহৃত RF হিটিং(রেডিও তরঙ্গ উত্তাপন) এবং ডায়াথার্মি এবং এমআরআই মেশিনের মতো মেডিকেল ব্যবহারগুলিকে সাধারণত রেডিও বলা হয় না। রেডিও বিশেষ্যটি একটি সম্প্রচারক রেডিও রিসিভার (যন্ত্র) বোঝাতেও  ব্যবহৃত হয়। বেতার তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রথম প্রমাণ করেছিলেন জার্মান পদার্থবিদ হেনরিখ হার্টজ ১১ নভেম্বর, ১৮৮৬ সালে । ১৮৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, পদার্থবিজ্ঞানীরা তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ অধ্যয়ন করার জন্য যে কৌশলগুলি ব্যবহার করছিলেন তার উপর ভিত্তি করে, গুগলিয়েলমো মার্কনি দূর-দূরত্বের রেডিও যোগাযোগের জন্য প্রথম যন্ত্র তৈরি করেছিলেন,[5] ১৮৯৫ সালে যা এক কিলোমিটার দূরের  একটি উৎসে বেতার মোর্স কোড বার্তা পাঠাতে সক্ষম এবং এটি ছিল ১২ ডিসেম্বর, ১৯০১-এর প্রথম ট্রান্সআটলান্টিক সংকেত। প্রথম বাণিজ্যিক রেডিও সম্প্রচার করা হয়েছিল ২ নভেম্বর, ১৯২০-এ হার্ডিং-কক্সের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের লাইভ রিটার্নগুলি পিটসবার্গের ওয়েস্টিংহাউস ইলেকট্রিক অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, কল সাইন কেডিকেএর অধীনে। রেডিও তরঙ্গের নির্গমন ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (ITU) কর্তৃক প্রণীত আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা বিভিন্ন কাজের ধরনের ভিত্তিতে  রেডিও স্পেকট্রামে ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড বরাদ্দ করে। প্রযুক্তি বৈদ্যুতিক চার্জএর দ্বারা  ত্বরণের মধ্য দিয়ে বেতার তরঙ্গ বিকিরণ করা হয়। এগুলি একটি অ্যান্টেনা নামক একটি ধাতব পরিবাহীতে  বিভিন্ন সময়ে সামনে পিছনে প্রবাহিত ইলেকট্রন সমন্বিত বৈদ্যুতিক স্রোত (time varying electric currents)দ্বারা কৃত্রিমভাবে উৎপন্ন করা হয়। যখন  রেডিও তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে  অর্থাৎ ট্রান্সমিটিং অ্যান্টেনা থেকে দূরে যায়, তরঙ্গের সংকেত শক্তি (প্রতি বর্গ মিটারে ওয়াটের তীব্রতা) হ্রাস পায়, তাই রেডিও ট্রান্সমিশন শুধুমাত্র ট্রান্সমিটারের সীমিত পরিসরের মধ্যে গ্রহণ করা যেতে পারে। ট্রান্সমিটারের শক্ত দূরত্ব, অ্যান্টেনা বিকিরণ প্যাটার্ন, রিসিভারের সংবেদনশীলতা, শব্দের মাত্রা এবং ট্রান্সমিটার এবং রিসিভারের মধ্যে বাধার উপস্থিতি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে । একটি সর্বমুখী অ্যান্টেনা সমস্ত দিক থেকে রেডিও তরঙ্গ প্রেরণ বা গ্রহণ করে, যখন একটি দিকনির্দেশক অ্যান্টেনা বা উচ্চ-লাভ(high-gain) অ্যান্টেনা একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে রেডিও তরঙ্গ প্রেরণ করে বা কেবল একটি দিক থেকে তরঙ্গ গ্রহণ করে। রেডিও তরঙ্গ শূন্যে আলোর গতিতে ভ্রমণ করে। রেডিও তরঙ্গ, ইনফ্রারেড, দৃশ্যমান আলো, অতিবেগুনী, এক্স-রে এবং গামা রশ্মি ছাড়াও অন্যান্য ধরনের তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ সমূহের  তথ্যও বহন করতে পারে এবং যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। টেলিযোগাযোগের জন্য রেডিও তরঙ্গের ব্যাপক ব্যবহারের কারণ মূলত ইহার কাম্য বৈশিষ্ট্য থেকে উৎপন্ন বৃহৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্য । ব্যান্ডউইথ তথ্য সংকেত বহনকারী একটি মড্যুলেটেড রেডিও তরঙ্গ বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি দখল করে। একটি রেডিও সিগন্যালে তথ্য (মডুলেশন) সাধারণত ক্যারিয়ার ফ্রিকোয়েন্সির ঠিক উপরে এবং নীচে সাইডব্যান্ডস (SB) নামক সংকীর্ণ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলিতে কেন্দ্রীভূত হয়। রেডিও সংকেত দখল করে ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের হার্টজে প্রস্থ, সর্বোচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি বিয়োগ সর্বনিম্ন ফ্রিকোয়েন্সি, এর ব্যান্ডউইথ (BW) বলা হয়। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকট্রামের যেখানেই থাকুক না কেন, যেকোন প্রদত্ত সংকেত থেকে শব্দ অনুপাতের জন্য, একটি পরিমাণ ব্যান্ডউইথ একই পরিমাণ তথ্য বহন করতে পারে (বিট প্রতি সেকেন্ডে ডেটার হার)। তাই ব্যান্ডউইথ হল তথ্য বহনের একটি পরিমাপ। এটি ব্যান্ডউইথের প্রতিটি কিলোহার্টজে কত ডেটা প্রেরণ করতে পারে সেটি নির্ভর করে তথ্যের ডেটা রেট (মডুলেশন সিগন্যাল) এবং ব্যবহৃত মডুলেশন পদ্ধতির বর্ণালী দক্ষতার উপর। রেডিও দ্বারা বাহিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংকেতের বিভিন্ন ডেটা হার থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একটি টেলিভিশন (ভিডিও) সংকেতের একটি অডিও সংকেতের চেয়ে বেশি ডেটা হার রয়েছে। এনালগ থেকে ডিজিটাল রেডিও ট্রান্সমিশন প্রযুক্তিতে ধীরগতির পরিবর্তন ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে শুরু হয়। এর একটি কারণ হল ডিজিটাল মড্যুলেশন প্রায়শই ডেটা কম্প্রেশন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে প্রদত্ত ব্যান্ডউইথের মধ্যে অ্যানালগ মডুলেশনের চেয়ে বেশি তথ্য (বৃহত্তর ডেটা রেট) প্রেরণ করতে পারে, যা পাঠানো ডেটার অপ্রয়োজনীয়তা (redundancy) হ্রাস করে এবং আরও দক্ষ মডুলেশন ব্যবহার করে। ট্রানজিশনের অন্যতম কারণ হল ডিজিটাল মড্যুলেশনে অ্যানালগের চেয়ে বেশি কোলাহল (noise) প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং চিপগুলির অ্যানালগ সার্কিটের চেয়ে বেশি শক্তিশালী, এটি বেশি নমনীয়তা  প্রদর্শন করে এবং একই ডিজিটাল মড্যুলেশন ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রেরণ করা যেতে পারে। যদিও রেডিও তরঙ্গ একটি সীমিত সম্পদ যার চাহিদা ক্রমবর্ধমান, অনেক রেডিও উদ্ভাবন যেমন ট্রাঙ্কড রেডিও সিস্টেম, স্প্রেড স্পেকট্রাম, (আল্ট্রা-ওয়াইডব্যান্ড) ট্রান্সমিশন, ফ্রিকোয়েন্সি পুনঃব্যবহার, গতিশীল বর্ণালী ব্যবস্থাপনা, ফ্রিকোয়েন্সি পুলিং, কগনিটিভ রেডিও, রেডিও স্পেকট্রাম সাম্প্রতিক দশকগুলিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে  ফলে এটিকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা  বেড়েছে। প্রয়োগ নিচে রেডিওর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছেঃ সম্প্রচার সম্প্রচার হল একটি ট্রান্সমিটার থেকে পাবলিক শ্রোতার অন্তর্গত রিসিভারের কাছে তথ্যের একমুখী প্রবাহ। যেহেতু রেডিও তরঙ্গ দূরত্বের সাথে দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই একটি সম্প্রচার কেন্দ্র শুধুমাত্র তার ট্রান্সমিটারের সীমিত দূরত্বের মধ্যে প্রেরণ  করা যায়। স্যাটেলাইট থেকে সম্প্রচার করা সিস্টেমগুলি সাধারণত একটি সমগ্র দেশ বা মহাদেশ জুড়ে প্রেরণ   করা যেতে পারে। পুরানো টেরেস্ট্রিয়াল রেডিও এবং টেলিভিশনের জন্য বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন বা সরকার দ্বারা অর্থ প্রদান করা হয়। স্যাটেলাইট টেলিভিশন এবং স্যাটেলাইট রেডিওর মতো সাবস্ক্রিপশন সিস্টেমে গ্রাহক একটি মাসিক ফি প্রদান করে। এই সিস্টেমগুলিতে, রেডিও সংকেত এনক্রিপ্ট করা হয় এবং শুধুমাত্র রিসিভার দ্বারা ডিক্রিপ্ট করা যায়, যা কোম্পানির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং কোন বর্তমান সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান না থাকলে নিষ্ক্রিয় করা যেতে পারে। সম্প্রচার রেডিও স্পেকট্রামের বিভিন্ন অংশের  ব্যবহার প্রেরিত সংকেতের ধরন এবং কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য শ্রোতাদের উপর নির্ভর করে। লংওয়েভ এবং মাঝারি তরঙ্গ সংকেতগুলি কয়েকশ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নির্ভরযোগ্য কভারেজ দিতে পারে, তবে আরও সীমিত তথ্য বহন করার ক্ষমতা রয়েছে এবং তাই অডিও সিগন্যাল (বক্তৃতা এবং সঙ্গীত) এর সাথে সর্বোত্তম কাজ করে এবং প্রাকৃতিক থেকে রেডিও শব্দ দ্বারা শব্দের গুণমান হ্রাস পেতে পারে। শর্টওয়েভ ব্যান্ডগুলির একটি বৃহত্তর সম্ভাব্য পরিসীমা রয়েছে তবে দূরবর্তী স্টেশন এবং বিভিন্ন বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতি যা অভ্যর্থনাকে প্রভাবিত করে তার হস্তক্ষেপের বিষয় বেশি। খুব উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড যেমন ৩০ মেগাহার্টজের বেশি হলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সিগন্যালের পরিসরে কম প্রভাব ফেলে এবং লাইন-অফ-সাইট প্রচার প্রধান মোড হয়ে ওঠে। এই উচ্চতর ফ্রিকোয়েন্সিগুলি টেলিভিশন সম্প্রচারের জন্য প্রয়োজনীয় বৃহৎ ব্যান্ডউইথকে অনুমতি দেয়। যেহেতু এই ফ্রিকোয়েন্সিটি  প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম শব্দের উৎস কম উপস্থিত থাকে, তাই ফ্রিকোয়েন্সি মডুলেশন ব্যবহার করে উচ্চ-মানের অডিও ট্রান্সমিশন করা সম্ভব। শ্রুত্যঃ বেতার সম্প্রচার মূল নিবন্ধ: রেডিও সম্প্রচার (https://en.wikipedia.org/wiki/Radio_broadcasting) বেতার সম্প্রচারের অর্থ হল শ্রোতার অন্তর্গত রেডিও রিসিভারের কাছে অডিও (শব্দ) প্রেরণ। অ্যানালগ অডিও হল বেতার সম্প্রচারের প্রাচীনতম রূপ। এএম(AM) সম্প্রচার শুরু হয় ১৯২০ সালের দিকে। ১৯৩০ এর দশকের শেষের দিকে উন্নত কর্তব্যনিষ্ঠার সাথে এফএম(FM) সম্প্রচার চালু হয়। একটি ব্রডকাস্ট রেডিও তরঙ্গ রিসিভারকে বেতার বলা হয়। বেশিরভাগ বেতার এএম এবং এফএম উভয়ই গ্রহণ করতে পারে। এএম (এম্পলিটিউড মড্যুলেশন) - এএম-এ, রেডিও ক্যারিয়ার তরঙ্গের প্রশস্ততা (শক্তি) অডিও সংকেত দ্বারা পরিবর্তিত হয়। এএম ব্রডকাস্টিং, প্রাচীনতম সম্প্রচার প্রযুক্তি, এএম ব্রডকাস্টিং ব্যান্ডগুলিতে, লংওয়েভ সম্প্রচারের জন্য নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সি (LF) ব্যান্ডে ১৪৮-২৮৩ kHz এবং মাঝারি তরঙ্গের জন্য মাঝারি ফ্রিকোয়েন্সি (MF) ব্যান্ডে ৫২৬-১৭০৬ kHz-এর মধ্যে অনুমোদিত। সম্প্রচার [43] যেহেতু এই ব্যান্ডগুলির তরঙ্গগুলি ভূখণ্ড অনুসরণ করে স্থল তরঙ্গ হিসাবে ভ্রমণ করে, তাই AM রেডিও স্টেশনগুলি দিগন্ত ছাড়িয়ে কয়েকশ মাইল দূরত্বে গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে AM-এর FM এর চেয়ে কম বিশ্বস্ততা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এএম স্টেশনগুলির বিকিরণকারী শক্তি (ইআরপি) সাধারণত সর্বাধিক ১০ কিলোওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যদিও কয়েকটি (ক্লিয়ার-চ্যানেল স্টেশন) ৫০ কিলোওয়াট এ প্রেরণ করার অনুমতি দেওয়া হয়। এএম স্টেশনগুলি মনোরাল অডিওতে সম্প্রচারিত হয়; এএম স্টেরিও সম্প্রচার মান অধিকাংশ দেশে বিদ্যমান, কিন্তু রেডিও শিল্প চাহিদার অভাবের কারণে তাদের আপগ্রেড করতে ব্যর্থ হয়েছে। শর্টওয়েভ ব্রডকাস্টিং - লিগ্যাসি রেডিও স্টেশনগুলির দ্বারা শর্টওয়েভ ব্যান্ডগুলিতেও AM সম্প্রচার অনুমোদিত৷ যেহেতু এই ব্যান্ডগুলির রেডিও তরঙ্গগুলি স্কাইওয়েভ বা "এড়িয়ে যান" প্রচার ব্যবহার করে আয়নোস্ফিয়ার থেকে প্রতিফলিত হয়ে আন্তঃমহাদেশীয় দূরত্ব ভ্রমণ করতে পারে, তাই শর্টওয়েভ আন্তর্জাতিক স্টেশনগুলি ব্যবহার করে, অন্যান্য দেশে সম্প্রচার করে। এফএম (ফ্রিকোয়েন্সি মড্যুলেশন) - এফএম-এ রেডিও বাহক সিগন্যালের ফ্রিকোয়েন্সি অডিও সিগন্যাল দ্বারা সামান্য পরিবর্তিত হয়। খুব উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি (VHF) পরিসরে প্রায় ৬৫ এবং ১০৮ MHz এর মধ্যে FM সম্প্রচার ব্যান্ডে FM সম্প্রচার অনুমোদিত। এই ব্যান্ডের রেডিও তরঙ্গগুলি লাইন-অফ-সাইট দ্বারা ভ্রমণ করে তাই এফএম অভ্যর্থনা চাক্ষুষ দিগন্ত দ্বারা প্রায় ৩০-৪০ মাইল (৪৮-৬৪ কিমি) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ এবং পাহাড় দ্বারা অবরুদ্ধ করা যেতে পারে। তবে এটি রেডিও নয়েজ (RFI, sferics, স্থিতিশীল) থেকে হস্তক্ষেপের জন্য কম সংবেদনশীল এবং উচ্চ বিশ্বস্ততা, ভাল ফ্রিকোয়েন্সি প্রতিক্রিয়া এবং AM এর তুলনায় কম অডিও বিকৃতি রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, এফএম স্টেশনগুলির বিকিরণ শক্তি (ERP) ৬-১০০ কিলোওয়াট থেকে পরিবর্তিত হয়। ডিজিটাল রেডিও বাতাসে ডিজিটাল রেডিও সংকেত সম্প্রচারের জন্য বিভিন্ন মান এবং প্রযুক্তি জড়িত। কিছু সিস্টেম, যেমন এইচডি রেডিও এবং ডিআরএম, অ্যানালগ সম্প্রচারের মতো একই ওয়েভব্যান্ডে কাজ করে, হয় অ্যানালগ স্টেশনগুলির প্রতিস্থাপন হিসাবে বা একটি পরিপূরক পরিষেবা হিসাবে। অন্যান্য, যেমন DAB/DAB+ এবং ISDB_Tsb, ঐতিহ্যগতভাবে টেলিভিশন বা স্যাটেলাইট পরিষেবার জন্য ব্যবহৃত ওয়েভব্যান্ডে কাজ করে। ডিজিটাল অডিও ব্রডকাস্টিং (ডিএবি) 1998 সালে কিছু দেশে আত্মপ্রকাশ করে। এটি এএম এবং এফএম-এর মতো অ্যানালগ সংকেতের পরিবর্তে একটি ডিজিটাল সংকেত হিসাবে অডিও প্রেরণ করে। DAB-এর FM-এর তুলনায় উচ্চ মানের সাউন্ড প্রদানের সম্ভাবনা রয়েছে (যদিও অনেক স্টেশন এই ধরনের উচ্চ মানের ট্রান্সমিট করতে পছন্দ করে না), রেডিও শব্দ এবং হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, দুর্লভ রেডিও স্পেকট্রাম ব্যান্ডউইথের আরও ভাল ব্যবহার করে এবং উন্নত ব্যবহারকারী বৈশিষ্ট্যগুলি প্রদান করে যেমন ইলেকট্রনিক প্রোগ্রাম গাইড। এর অসুবিধা হল যে এটি পূর্ববর্তী রেডিওগুলির সাথে বেমানান যাতে একটি নতুন DAB রিসিভার কিনতে হবে। বেশ কয়েকটি দেশ DAB/DAB+ এর পক্ষে অ্যানালগ এফএম নেটওয়ার্ক বন্ধ করার তারিখ নির্ধারণ করেছে, বিশেষ করে ২০১৭ সালে নরওয়ে[50] এবং ২০২৪ সালে সুইজারল্যান্ড। একটি একক DAB স্টেশন একটি ১,৫00 kHz ব্যান্ডউইথ সংকেত প্রেরণ করে যা OFDM দ্বারা সংশোধিত ডিজিটাল অডিওর 9-12টি চ্যানেল থেকে বহন করে যেখান থেকে শ্রোতা বেছে নিতে পারেন। সম্প্রচারকারীরা একটি চ্যানেলকে বিভিন্ন বিট হারে প্রেরণ করতে পারে, তাই বিভিন্ন চ্যানেলের বিভিন্ন অডিও গুণমান থাকতে পারে। বিভিন্ন দেশে DAB স্টেশনগুলি UHF পরিসরে ব্যান্ড III (১৭৪–২৪০ MHz) বা L ব্যান্ড (১.৪৫২–১.৪৯২ GHz) তে সম্প্রচার করে, তাই FM অভ্যর্থনা চাক্ষুষ দিগন্ত দ্বারা প্রায় ৪০ মাইল (৬৪ কিমি) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। 52][49] এইচডি রেডিও হল একটি বিকল্প ডিজিটাল রেডিও স্ট্যান্ডার্ড যা উত্তর আমেরিকায় ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়। একটি ইন-ব্যান্ড অন-চ্যানেল প্রযুক্তি, এইচডি রেডিও একটি স্টেশনের এনালগ এফএম বা এএম সিগন্যালের একটি সাবক্যারিয়ারে একটি ডিজিটাল সংকেত সম্প্রচার করে। স্টেশনগুলি সাবক্যারিয়ারে একাধিক অডিও সিগন্যাল মাল্টিকাস্ট করতে সক্ষম, যা বিভিন্ন বিটরেটে একাধিক অডিও পরিষেবার সংক্রমণ সমর্থন করে। ডিজিটাল সিগন্যালটি HDC (হাই-ডেফিনিশন কোডিং) মালিকানাধীন অডিও কম্প্রেশন ফর্ম্যাটের সাথে OFDM ব্যবহার করে প্রেরণ করা হয়। HDC ভিত্তিক, কিন্তু MPEG-4 মান HE-AAC এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটি একটি পরিবর্তিত বিযুক্ত কোসাইন ট্রান্সফর্ম (MDCT) অডিও ডেটা কম্প্রেশন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। ডিজিটাল রেডিও মন্ডিয়েল (ডিআরএম) হল একটি প্রতিযোগী ডিজিটাল টেরিস্ট্রিয়াল রেডিও স্ট্যান্ডার্ড যা মূলত সম্প্রচারকদের দ্বারা উত্তরাধিকার AM এবং FM সম্প্রচারের জন্য উচ্চতর বর্ণালী দক্ষতা প্রতিস্থাপন হিসাবে বিকাশ করা হয়েছে। ফরাসি এবং ইতালীয় ভাষায় Mondiale মানে "বিশ্বব্যাপী"; DRM ২০০১ সালে বিকশিত হয়েছিল, এবং বর্তমানে ২৩টি দেশ দ্বারা সমর্থিত, এবং ২০০৩ থেকে শুরু হওয়া কিছু ইউরোপীয় এবং পূর্ব সম্প্রচারকদের দ্বারা গৃহীত হয়েছে। DRM30 মোডটি ৩০ MHz এর নিচে বাণিজ্যিক সম্প্রচার ব্যান্ড ব্যবহার করে, এবং এটি স্ট্যান্ডার্ড AM সম্প্রচারের প্রতিস্থাপন হিসাবে তৈরি করা হয়েছে। লংওয়েভ, মিডিয়ামওয়েভ এবং শর্টওয়েভ ব্যান্ড। ডিআরএম+ মোড এফএম সম্প্রচার ব্যান্ডের চারপাশে কেন্দ্রীভূত ভিএইচএফ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে এবং এটি এফএম সম্প্রচারের প্রতিস্থাপন হিসেবে তৈরি। এটি বিদ্যমান রেডিও রিসিভারগুলির সাথে বেমানান, তাই এটির জন্য শ্রোতাদের একটি নতুন ডিআরএম রিসিভার কিনতে হবে৷ ব্যবহৃত মডুলেশন হল COFDM নামক OFDM-এর একটি ফর্ম যেখানে, 4টি বাহক পর্যন্ত একটি চ্যানেলে প্রেরণ করা হয় যা পূর্বে একটি একক AM বা FM সংকেত দ্বারা দখল করা হয়, যা চতুর্ভুজ প্রশস্ততা মড্যুলেশন (QAM) দ্বারা পরিমিত হয়। [57][45] ডিআরএম সিস্টেমটি বিদ্যমান এএম এবং এফএম রেডিও ট্রান্সমিটারের সাথে যথাসম্ভব সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে বিদ্যমান রেডিও স্টেশনগুলির বেশিরভাগ সরঞ্জামগুলি ডিআরএম মড্যুলেশন সরঞ্জামগুলির সাথে বর্ধিত ব্যবহারে চালিয়ে যেতে পারে। স্যাটেলাইট রেডিও হল একটি সাবস্ক্রিপশন রেডিও পরিষেবা যা পৃথিবীর উপরে ২২,000 মাইল (৩৫,000 কিমি) জিওস্টেশনারি কক্ষপথে সরাসরি সম্প্রচারিত যোগাযোগ উপগ্রহ থেকে মাইক্রোওয়েভ ডাউনলিংক সিগন্যাল ব্যবহার করে গ্রাহকদের রিসিভারে সরাসরি সিডি মানের ডিজিটাল অডিও সম্প্রচার করে। এটি বেশিরভাগ যানবাহনে রেডিওর জন্য উদ্দেশ্যে করা হয়। স্যাটেলাইট রেডিও উত্তর আমেরিকায় ২.৩ GHz S ব্যান্ড ব্যবহার করে, বিশ্বের অন্যান্য অংশে, এটি DAB-এর জন্য বরাদ্দকৃত ১.৪ GHz L ব্যান্ড ব্যবহার করে।[58][59](https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/2/2e/SiriusXM_Display_on_Volkswagen%27s_RNS-510_Receiver.png/330px-SiriusXM_Display_on_Volkswagen%27s_RNS-510_Receiver.png) দৃশ্য-রেকর্ড দূরদর্শন সম্প্রচার মূল নিবন্ধ: (https://en.wikipedia.org/wiki/Television_broadcasting) টেলিভিশন সম্প্রচার হল রেডিওর মাধ্যমে চলমান চিত্রের সংক্রমণ, যা স্থির চিত্রগুলির ক্রম নিয়ে গঠিত, যা একটি টেলিভিশন রিসিভারের (একটি "টেলিভিশন" বা টিভি) একটি সিঙ্ক্রোনাইজড অডিও (শব্দ) চ্যানেলের সাথে পর্দায় প্রদর্শিত হয়। টেলিভিশন (ভিডিও) সংকেত ব্রডকাস্ট রেডিও (অডিও) সংকেতের চেয়ে ব্যাপক ব্যান্ডউইথ দখল করে। এনালগ টেলিভিশন অর্থাৎ  মূল টেলিভিশন প্রযুক্তির জন্য ৬ মেগাহার্টজ প্রয়োজন, তাই টেলিভিশন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলিকে 6 মেগাহার্টজ চ্যানেলে বিভক্ত করা হয়েছে, যাকে এখন "আরএফ চ্যানেল" বলা হয়। বর্তমান টেলিভিশন স্ট্যান্ডার্ড যা ২০০৬ সালে শুরু হয়, হাই-ডেফিনিশন টেলিভিশন (HDTV) নামে একটি ডিজিটাল বিন্যাস। এটি উচ্চতর রেজোলিউশন, সাধারণত ১০৮০ পিক্সেল উচ্চ বাই ১৯২০ পিক্সেল চওড়া এবং প্রতি সেকেন্ডে ২৫ বা ৩০ ফ্রেম হারে ছবি প্রেরণ করে। ডিজিটাল টেলিভিশন (ডিটিভি) ট্রান্সমিশন সিস্টেম, যা ২০০৬ সালে শুরু হওয়া একটি ট্রানজিশনে পুরানো অ্যানালগ টেলিভিশনকে প্রতিস্থাপন করে, ইমেজ কম্প্রেশন এবং উচ্চ-দক্ষ ডিজিটাল মডুলেশন যেমন OFDM এবং 8VSB ব্যবহার করে HDTV ভিডিও পুরানো অ্যানালগ চ্যানেলগুলির তুলনায় একটি ছোট ব্যান্ডউইথের মধ্যে প্রেরণ করতে, দুর্লভ রেডিও বর্ণালী স্থান সাশ্রয় করে । তাই, ৬ MHz এনালগ RF চ্যানেলের প্রতিটি এখন ৭ টি DTV চ্যানেল বহন করে – এগুলোকে "ভার্চুয়াল চ্যানেল" বলা হয়। ডিজিটাল টেলিভিশন রিসিভারগুলি এনালগ টেলিভিশনের তুলনায় প্রতিবন্ধকতার(noise) উপস্থিতিতে ভিন্ন আচরণ করে, যাকে "ডিজিটাল ক্লিফ" প্রভাব বলা হয়। এনালগ টেলিভিশনের ক্ষেত্রে যেখানে ক্রমবর্ধমান দুর্বল সিগনাল গ্রহণ ছবির গুণমানকে ধীরে ধীরে অবনমিত করে, ডিজিটাল টেলিভিশনে ছবির গুণমান সিগনাল গ্রহণ(reception) দ্বারা প্রভাবিত হয় না যতক্ষণ না, একটি নির্দিষ্ট সময়ে, রিসিভার কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং স্ক্রীন কালো হয়ে যায়। ভৌম(Terrestrial) টেলিভিশন( :en:Terrestrial_television) বা ওভার-দ্য-এয়ার (ওটিএ) টেলিভিশন বা সম্প্রচার টেলিভিশন বা প্রাচীনতম টেলিভিশন প্রযুক্তি হল ল্যান্ড-ভিত্তিক টেলিভিশন স্টেশন থেকে দর্শকদের বাড়িতে টেলিভিশন রিসিভারে (টেলিভিশন বা টিভি বলা হয়) টেলিভিশন সংকেতগুলিকে প্রেরণ করার মাধ্যম। টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশন ব্রডকাস্টিং ব্যান্ড ৪১ – 88 MHz (VHF লো ব্যান্ড বা ব্যান্ড I, RF চ্যানেল ১-৬ বহন করে), ১৭৪ – ২৪০ MHz, (VHF হাই ব্যান্ড বা ব্যান্ড III; RF চ্যানেল ৭-১৩ বহন করে), এবং ৪৭০ – ৬১৪ MHz (UHF ব্যান্ড IV এবং ব্যান্ড V; RF চ্যানেল ১৮ এবং তার উপরে বহন করে)। সঠিক ফ্রিকোয়েন্সি সীমানা বিভিন্ন দেশে পরিবর্তিত হয়। এর বিস্তার হয় লাইন-অফ-সাইট {দৃষ্টি সীমানার মধ্যে} দ্বারা, তাই সিগনাল গ্রহন চাক্ষুষ দিগন্ত দ্বারা সীমাবদ্ধ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টেলিভিশন ট্রান্সমিটারের কার্যকর বিকিরণ শক্তি (ERP) গড় ভূখণ্ডের উপরে উচ্চতা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়। টেলিভিশন ট্রান্সমিটারের কাছাকাছি দর্শকরা টিভির উপরে একটি সাধারণ "খরগোশের কান(rabbit ears)" দ্বীপোল অ্যান্টেনা ব্যবহার করতে পারে, তবে ফ্রিঞ্জ রিসেপশন এলাকায় দর্শকদের সাধারণত পর্যাপ্ত সিগনাল পাওয়ার জন্য ছাদে মাউন্ট করা একটি বহিরঙ্গন অ্যান্টেনা প্রয়োজন।(https://en.wikipedia.org/wiki/File:Sharp-portable-tv.jpg) স্যাটেলাইট টেলিভিশন - একটি সেট-টপ বক্স হল সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে স্যাটেলাইট টেলিভিশন থেকে সরাসরি-সম্প্রচার গ্রহণ করে একটি সাধারণ টেলিভিশনে প্রদর্শন করার যন্ত্র। পৃথিবীর নিরক্ষরেখা থেকে ২২,২০০মাইল (৩৫,৭০০ কিমি) উপরে জিওস্টেশনারি{ভূস্থির} কক্ষপথে একটি সরাসরি সম্প্রচার উপগ্রহ একটি ১২.২ থেকে ১২.৭ গিগাহার্টজ কু ব্যান্ড মাইক্রোওয়েভ ডাউনলিংক সংকেত ছাদের পাশের সাবস্ক্রাইব করার জন্য অনেকগুলি চ্যানেল (৯০০ পর্যন্ত) প্রেরণ করে। মাইক্রোওয়েভ সিগন্যালটি ডিশের একটি নিম্ন মধ্যবর্তী ফ্রিকোয়েন্সিতে রূপান্তরিত হয় এবং গ্রাহকের টিভির সাথে সংযুক্ত একটি সেট-টপ বক্সে একটি সমাক্ষ তারের মাধ্যমে বিল্ডিংয়ে সঞ্চালিত হয়, যেখানে এটি ডিমোডুলেট করে প্রদর্শিত হয়। গ্রাহক এই সুবিধার জন্য একটি মাসিক ফি প্রদান করে। প্রকার বেতারযন্ত্র সাধারণত দুই প্রকার; যথাঃ স্থির বেতারযন্ত্রঃ যে বেতার যন্ত্রগুলো কোন নির্দিষ্ট স্থানে রেখে বা কোন নির্দিষ্ট বস্তুর উপর রেখে যোগাযোগ সম্পন্ন করা হয়, তাকে স্থির বেতারযন্ত্র বলে। ওয়াকি-টকি বেতারযন্ত্রঃ যে বেতার যন্ত্রগুলো ওজনে হালকা, হাতে বহনযোগ্য ও হেঁটে হেঁটে কথা বলা যায়, তাকে ওয়াকি-টকি বেতার যন্ত্র বলে। তথ্যসূত্র প্রযুক্তি বেতার শব্দ (ধ্বনি) মাধ্যম বিন্যাস ব্রিটিশ উদ্ভাবন ইতালীয় উদ্ভাবন প্রসার ও বিপণন যোগাযোগ অবকাঠামো যোগাযোগ
https://en.wikipedia.org/wiki/Radio
Radio
Radio is the technology of communicating using radio waves. Radio waves are electromagnetic waves of frequency between 3 hertz (Hz) and 300 gigahertz (GHz). They are generated by an electronic device called a transmitter connected to an antenna which radiates oscillating electrical energy, often characterized as a wave. They can be received by other antennas connected to a radio receiver, this is the fundamental principle of radio communication. In addition to communication, radio is used for radar, radio navigation, remote control, remote sensing, and other applications. In radio communication, used in radio and television broadcasting, cell phones, two-way radios, wireless networking, and satellite communication, among numerous other uses, radio waves are used to carry information across space from a transmitter to a receiver, by modulating the radio signal (impressing an information signal on the radio wave by varying some aspect of the wave) in the transmitter. In radar, used to locate and track objects like aircraft, ships, spacecraft and missiles, a beam of radio waves emitted by a radar transmitter reflects off the target object, and the reflected waves reveal the object's location to a receiver that is typically colocated with the transmitter. In radio navigation systems such as GPS and VOR, a mobile navigation instrument receives radio signals from multiple navigational radio beacons whose position is known, and by precisely measuring the arrival time of the radio waves the receiver can calculate its position on Earth. In wireless radio remote control devices like drones, garage door openers, and keyless entry systems, radio signals transmitted from a controller device control the actions of a remote device. The existence of radio waves was first proven by German physicist Heinrich Hertz on 11 November 1886. In the mid-1890s, building on techniques physicists were using to study electromagnetic waves, Guglielmo Marconi developed the first apparatus for long-distance radio communication, sending a wireless Morse Code message to a recipient over a kilometer away in 1895, and the first transatlantic signal on 12 December 1901. The first commercial radio broadcast was transmitted on 2 November 1920, when the live returns of the Harding-Cox presidential election were broadcast by Westinghouse Electric and Manufacturing Company in Pittsburgh, under the call sign KDKA. The emission of radio waves is regulated by law, coordinated by the International Telecommunication Union (ITU), which allocates frequency bands in the radio spectrum for various uses.
1213
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A6%BE%E0%A6%A8
যুক্তিবিজ্ঞান
যুক্তিবিজ্ঞান (গ্রিক λογικήLog baবা লোগোস,ইংরেজি Logic) দুটি অর্থ আছে: প্রথমত, এতে কিছু কার্যকলাপ বৈধ যুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে; দ্বিতীয়ত, এটি যুক্তি আদর্শ গবেষণা বা তার একটি শাখার নাম, যেখানে ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা সম্পর্কে যুক্তিসম্মত আলোচনা বা যুক্তিতর্ক করা হয়। আধুনিক অর্থে- দর্শন, গণিত ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্টরূপে যুক্তিবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যগুলি উপস্থিত রয়েছে। যুক্তিবিজ্ঞান ভারতের বেশ কয়েকটি প্রাচীন সভ্যতাগুলির মধ্যে চর্চিত হয়, চীন, পারস্য এবং গ্রীস। পশ্চিমের দেশগুলোতে যুক্তিবিদ্যাকে একটি প্রথাগত শৃঙ্খলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ও দর্শন এর মধ্যে এটি একটি মৌলিক জায়গা দিয়েছেন এরিস্টটল। যুক্তি গবেষণা শাস্ত্রীয় ট্রিভিয়ামের অংশ ছিল। পূর্বের দেশগুলোতে, যুক্তিবিজ্ঞান বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মাবলম্বিদের দ্বারা উন্নত হয়েছিল। যুক্তিবিজ্ঞান প্রায়ই তিনটি অংশে- আবেশক যুক্তি, মনন যুক্তি, এবং ন্যায়িক যুক্তি- বিভক্ত করা হয়। যুক্তিবিজ্ঞানের গবেষণা যৌক্তিক রুপ বা বিন্যাস হলো যুক্তিবিজ্ঞানের কেন্দ্র। কোনো আলোচনা বা যুক্তিতর্কের বৈধতা বা দৃঢ়তা নির্ধারিত হয় এর যৌক্তিক বিন্যাস এর উপর নির্ভর করে, এর বিষয়বস্তুর উপর নয়। পরম্পরাগত এরিস্টটলিয় আনুমানিক যুক্তিবিজ্ঞান ও আধুনিক প্রতীকমূলক যুক্তিবিজ্ঞান হলো প্রথাগত যুক্তির উদাহরণ। প্রথাগত যুক্তি সাধারণত বিষয়ের মূলে এবং কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়। এটা পাঠকের বই ও লেখকের কলম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। অপ্রথাগত যুক্তিবিজ্ঞান হলো সাধারণ ভাষায় করা যুক্তিতর্কের গবেষণা। সামান্য বিষয়ে যেই যুক্তিতর্ক করা হয় তার চর্চা করা অপ্রথাগত যুক্তিবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এটি মূলত আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যুক্তিতর্ক ও আলোচনায় কোন কিছু প্রমাণ বা অপ্রমাণ করার কাজেও ব্যাবহার করে থাকি। প্লেটো-র কিছু উদ্ধৃতি এই যুক্তিবিজ্ঞানের উপযুক্ত উদাহরণ। যৌক্তিক রুপ বা বিন্যাস যুক্তি সাধারণত আনুষ্ঠানিক রুপে বিবেচিত হয়, যখন এটি বিশ্লেষিত ও প্রতিনিধিত্ব করে কোনো বৈধ আলোচনার। একটি আলোচনার প্রকৃতি প্রদর্শিত হয় তখনই, যখন এর বাক্যগুলো কোনো যৌক্তিক ভাষার প্রথাগত ব্যাকরণ ও প্রকৃতি মেনে চলে, যেন আলোচনাটির বিষয়বস্তু সাধারণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। কেউ যদি "যৌক্তিক বিন্যাস"-এর ধারণাটিকে দার্শনিকতায় ভরপুর মনে করে অর্থাৎ এই ধারনাটি যদি তার জন্য জটিল হয় তবে সেই ক্ষেত্রে, সহজভাবে "বিন্যাস" করা হলো কোন বাক্যকে সরাসরি 'যুক্তির ভাষায়' অনুবাদ করা। এটিই কোন আলোচনার যৌক্তিক রূপ। এটি প্রয়োজনীয় কারণ সাধারণত যে কোন ভাষায় ব্যাক্ত একটি বাক্য নানান বিভিন্নতা ও জটিলতা প্রদর্শন করে থাকে, যা তাদের অর্থের পরিবর্তন ঘটায় এবং বাক্যটি যেই অর্থ প্রকাশ করতে ব্যাক্ত হয়েছে তার চেয়ে অবাস্তব রুপে পরিনত হয়। বাক্যকে যৌক্তিক রুপে বিবেচনা করার জন্য কিছু ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য উপেক্ষা করা প্রয়োজন- যেসব শব্দ যুক্তির সাথে সম্পৃক্ত নয় (যেমন, একটি লাতিন আলোচনায় লিঙ্গ ও বিশেষ্য-বিশেষন অপ্রয়োজনীয়) তাদের উপেক্ষা করা, কিছু সংযুক্তি শব্দ প্রতিস্থাপন করা (যেমন, "কিন্তু" অযৌক্তিক। এর পরিবর্তে "এবং" ব্যবহার করা) এবং সাধারণত যেসব অভিব্যক্তি (সকল বা সর্বজনীন ইত্যাদি)এর পরিবর্তে কিছু যৌক্তিক অভিব্যক্তি (কোন, প্রতি ইত্যাদি) বা দ্ব্যর্থক শব্দ ব্যবহার করা। ইতিহাস লজিক গ্রীক শব্দ লোগোস থেকে এসেছে, যার অর্থ "শব্দ" বা "যা বলা হয়", তবে এর অর্থ আদতে "চিন্তা" বা "কারণ"। পশ্চিমা বিশ্বে, যুক্তি প্রথমে অ্যারিস্টটল বিকাশ করেছিলেন, যিনি বিষয়টিকে 'বিশ্লেষণ' বলে অভিহিত করেছিলেন। অ্যারিস্টটোলিয়ান যুক্তি বিজ্ঞান ও গণিতে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে এবং ১৯ শতকের গোড়ার দিকে পশ্চিমে বিস্তৃতভাবে ব্যবহৃত হয়। অ্যারিস্টটলের লজিক সিস্টেমটি অনুমানমূলক সিলোজিস্ম, টেম্পোরাল মডেল যুক্তি এবং ইন্ডাকটিভ যুক্তি - পাশাপাশি প্রভাবশালী শব্দভাণ্ডার যেমন বিভিন্ন টার্ম, প্রেডিক্টেবল, সিলোজিস্ম এবং প্রোপোজিশনের অগ্রদূত ছিল। স্টোয়িক যুক্তিবিজ্ঞান এর বিপরীতে ছিল। ভারতে মেধাতিথি খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে আনভিকসিকি যুক্তি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। আরও দেখুন সুবিবেচক চিন্তন তথ্যসূত্র গণিতের দর্শন দর্শনের শাখা যুক্তি বিমূর্তন মূল বিষয়ের নিবন্ধ যুক্তিবিজ্ঞান রৌপ বিজ্ঞান
https://en.wikipedia.org/wiki/Logic
Logic
Logic is the study of correct reasoning. It includes both formal and informal logic. Formal logic is the study of deductively valid inferences or logical truths. It examines how conclusions follow from premises due to the structure of arguments alone, independent of their topic and content. Informal logic is associated with informal fallacies, critical thinking, and argumentation theory. Informal logic examines arguments expressed in natural language while formal logic uses formal language. When used as a countable noun, the term "a logic" refers to a logical formal system that articulates a proof system. Logic plays a central role in many fields, such as philosophy, mathematics, computer science, and linguistics. Logic studies arguments, which consist of a set of premises together with a conclusion. An example is the argument from the premises "it's Sunday" and "if it's Sunday then I don't have to work" to the conclusion "I don't have to work". Premises and conclusions express propositions or claims that can be true or false. An important feature of propositions is their internal structure. For example, complex propositions are made up of simpler propositions linked by logical vocabulary like ∧ {\displaystyle \land } (and) or → {\displaystyle \to } (if...then). Simple propositions also have parts, like "Sunday" or "work" in the example. The truth of a proposition usually depends on the meanings of all of its parts. However, this is not the case for logically true propositions. They are true only because of their logical structure independent of the specific meanings of the individual parts. Arguments can be either correct or incorrect. An argument is correct if its premises support its conclusion. Deductive arguments have the strongest form of support: if their premises are true then their conclusion must also be true. This is not the case for ampliative arguments, which arrive at genuinely new information not found in the premises. Many arguments in everyday discourse and the sciences are ampliative arguments. They are divided into inductive and abductive arguments. Inductive arguments are statistical generalizations, such as inferring that all ravens are black based on many individual observations of black ravens. Abductive arguments are inferences to the best explanation, for example, when a doctor concludes that a patient has a certain disease which explains the symptoms they suffer. Arguments that fall short of the standards of correct reasoning often embody fallacies. Systems of logic are theoretical frameworks for assessing the correctness of arguments. Logic has been studied since antiquity. Early approaches include Aristotelian logic, Stoic logic, Nyaya, and Mohism. Aristotelian logic focuses on reasoning in the form of syllogisms. It was considered the main system of logic in the Western world until it was replaced by modern formal logic, which has its roots in the work of late 19th-century mathematicians such as Gottlob Frege. Today, the most used system is classical logic. It consists of propositional logic and first-order logic. Propositional logic only considers logical relations between full propositions. First-order logic also takes the internal parts of propositions into account, like predicates and quantifiers. Extended logics accept the basic intuitions behind classical logic and extend it to other fields, such as metaphysics, ethics, and epistemology. Deviant logics, on the other hand, reject certain classical intuitions and provide alternative explanations of the basic laws of logic.
1214
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%9C%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%BF%E0%A6%A4
বীজগণিত
বীজগণিত (নামটি এসেছে আল-জাবর থেকে, যার অর্থ "ভাঙ্গা অংশসমূূহের পুনর্মিলন" এবং "হাড়সংযুক্তকরণ") গণিতের সংখ্যাতত্ত্ব, জ্যামিতি এবং গাণিতিক বিশ্লেষণের একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র। অতি সাধারণ রূপে বীজগণিত হলো গাণিতিক চিহ্নগুলির অধ্যয়ন এবং এই চিহ্নগুলো নিপূণভাবে ব্যবহার করার নিয়ম; এটি গণিতের প্রায় সমস্ত শাখার সেতুবন্ধন স্বরূপ। এতে প্রাথমিক সমীকরণ সমাধান থেকে শুরু করে গ্রুপ, রিং এবং ক্ষেত্রগুলির মতো বিমূর্ত বিষয়সমূহের অধ্যয়ন পর্যন্ত সমস্ত কিছুই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বীজগণিতের মৌলিক অংশগুলিকে প্রাথমিক বীজগণিত বলা হয়ে থাকে এবং বিমূর্ত অংশগুলিকে বিমূর্ত বীজগণিত বা আধুনিক বীজগণিত বলা হয়। প্রাথমিক বীজগণিতকে সাধারণত গণিত, বিজ্ঞান বা প্রকৌশল বিষয়ক অধ্যয়নের জন্য; এমনকি ঔষধ, অর্থনীতি সম্পর্কিত প্রয়োগের জন্যও অপরিহার্য বলে মনে করা হয়ে থাকে। বিমূর্ত বীজগণিত হল উন্নত গণিতের একটি প্রধান ক্ষেত্র, যা মূলত পেশাদার গণিতবিদরা অধ্যয়ন করে থাকে। প্রাথমিক বীজগণিতের বিমূর্ত ব্যবহার পাটীগণিত থেকে পৃথক, যেমনঃ বীজগণিতে অজানা সংখ্যার মান নির্ণয়ের জন্য যে অক্ষর ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তা একাধিক মান গ্রহণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তে অক্ষরটি অজানা, তবে যোগাত্মক বিপরীত সংখ্যার ধারণা প্রয়োগের মাধ্যমে এর মান নির্ণয় করা যেতে পারে: । তে, এবং অক্ষরসমূহ চলক এবং অক্ষর একটি ধ্রুবক, যা শূন্যে আলোর গতি নির্দেশ করে। বীজগণিতে সূত্র লেখার এবং সমীকরণগুলি সমাধান করার জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে, যা কথায় সমস্ত কিছু লেখার পুরনো পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট এবং সহজ। বীজগণিত শব্দটি নির্দিষ্ট কিছু বিশেষ পদ্ধতিতেও ব্যবহৃত হয়। বিমূর্ত বীজগণিতের একটি বিশেষ ধরনের গাণিতিক বস্তুকে "বীজগণিত" বলা হয় এবং শব্দটি ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, রৈখিক বীজগণিত, বীজগাণিতিক টপোলজি ইত্যাদি বীজগাণিতিক শাখাসমূহের নামে। একজন গণিতবিদ যিনি বীজগণিতে গবেষণা করেন, তাকে বীজগণিতবিদ বলা হয়।বহু বীজগণিতবিদ মিলে এই বীজগণিতকে আরও অনেক সমৃদ্ধ করেছেন।যেমন,"রেনে দেকারতে"সেরকমই একজন বীজগণিতবিদ। ব্যুৎপত্তি বীজগণিত আরবি ( অর্থ "ভাঙা জিনিস পুনঃগঠিত করা") শব্দ থেকে এসেছে এবং শব্দটি ফার্সি গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী আল খারিজমি রচিত নবম শতাব্দীর প্রথম দিকের বই ইলমুল জাবর ওয়াল মুকাবালাহ্ ("পুনর্গঠন এবং ভারসাম্যের বিজ্ঞান") শিরোনাম থেকে এসেছে। আল-জাবর শব্দটি দিয়ে তার রচনায় তিনি সমীকরণের এক দিক থেকে পদ অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপকে বুঝিয়েছিলেন, المقابلة (আল-মুকাবালাহ্, অর্থগ "ভারসাম্য") দ্বারা উভয় পক্ষে সমান পদ যুক্ত করার বিষয়টিকে তিনি বুঝিয়েছিলেন। লাতিন ভাষায় আলজেবার অথবা আলজেবরা নামে সংক্ষিপ্ত হয়ে, অবশেষে পঞ্চদশ শতাব্দীতে স্পেনীয়, ইতালীয় বা মধ্যযুগীয় লাতিন ভাষা হয়ে ইংরেজি ভাষায় প্রবেশ করে। এটি প্রকৃতপক্ষে, ভাঙা বা স্থানচ্যুত হাড় স্থাপনের শল্য চিকিৎসার পদ্ধতিকে বোঝায়। গাণিতিক অর্থ (ইংরেজিতে) ষোড়শ শতাব্দীতে প্রথম নথিভূক্ত করা হয়েছিল। বীজগণিত শব্দের বিভিন্ন অর্থ "বীজগণিত" এর একক শব্দ বা পরিবর্ধকবাচক শব্দসহ গণিতে বেশ কয়েকটি সম্পর্কিত অর্থ রয়েছে। কোনও পদাশ্রিত নির্দেশক (article) ব্যতীত, একক শব্দ হিসেবে "বীজগণিত" গণিতের একটি বিস্তৃত অংশের নাম। একটি পদাশ্রিত নির্দেশক বা বহুবচনসহ একক শব্দ হিসেবে, "একটি বীজগণিত" বা "বীজগণিত" একটি নির্দিষ্ট গাণিতিক কাঠামো বোঝায়, যার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রসঙ্গের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, কাঠামোর একটি যোগ, গুণ এবং স্কেলার গুণ রয়েছে (একটি ক্ষেত্রের উপরে বীজগণিত দেখুন)। কিছু লেখক যখন "বীজগণিত" শব্দটি ব্যবহার করেন, তখন তারা নিম্নলিখিতঃ সংযোজন, বিনিময়,অভেদক , এবং / অথবা, সসীম-মাত্রার অতিরিক্ত অনুমানের একটি উপসেট ব্যবহার করে থাকেন। সর্বজনীন বীজগণিতে, "বীজগণিত" শব্দটি উপরের ধারণার একটি সাধারণীকরণকে বোঝায়, যা এন-অ্যারি ক্রিয়াকলাপের অনুমতি দিয়ে থাকে। একটি পরিবর্ধকবাচক শব্দসহ, এখানে একই ধরনের পার্থক্য দেখা যায়: পদাশ্রিত নির্দেশক ব্যতীত নামটি বীজগণিতের একটি অংশকে বোঝায়, যেমনঃ রৈখিক বীজগণিত, প্রাথমিক বীজগণিত (প্রতীক-নিপুণভাবে ব্যবহার বিধি গণিতের প্রাথমিক কোর্সে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার অংশ হিসাবে শেখানো হয়), বা বিমূর্ত বীজগণিত (বিমূর্ত বীজগণিত অধ্যয়নকারীদের জন্য)। একটি পদাশ্রিত নির্দেশকসহ এর দ্বারা উদাহরণস্বরূপঃ কিছুটা বিমূর্ত কাঠামোকে বোঝায়, যেমনঃ একটি লাই বীজগণিত, একটি সহযোগী বীজগণিত, বা একটি শীর্ষ অপারেটর বীজগণিত। কখনও কখনও উভয় অর্থ একই যোগ্যতার জন্য উপস্থিত থাকে। যেমনঃ এক বাক্যে: বিনিময় বীজগণিত হল বিনিময় রিংগুলির অধ্যয়ন, যা পূর্ণসংখ্যার উপর বিনিময় বীজগণিত। গণিতের একটি শাখা হিসেবে "বীজগণিত" বীজগণিত পাটিগণিতের মতো হিসাব-নিকাশ দিয়ে শুরু হয়েছিল, যেখানে অক্ষর সংখ্যার মান ধারণ করতে পারে। যা যেকোন সংখ্যার জন্য ধর্মসমূহের প্রমাণ করতে সাহায্য করে। যে কোনও সংখ্যা হতে পারে (তবে, = হতে পারবে না), এবং দ্বিঘাত সূত্রটি অজানা চলক এর মানগুলি দ্রুত এবং সহজেই বের করতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা সমীকরণকে সিদ্ধ করবে। এর অর্থ, সমীকরণের সমস্ত সমাধান সন্ধান করা। ঐতিহাসিকভাবে এবং বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় বীজগণিতের অধ্যয়ন উপরের দ্বিঘাত সমীকরণের মতো সমীকরণের সমাধানের মাধ্যমে শুরু হয়। তারপরে আরও সাধারণ প্রশ্ন যেমন "একটি সমীকরণের সমাধান আছে কি?", "একটি সমীকরণের কতগুলি সমাধান আছে?", "সমাধানগুলির প্রকৃতি সম্পর্কে কী বলা যেতে পারে?" বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এই প্রশ্নগুলো পরবর্তীতে বীজগণিতকে বিভিন্ন অ-সংখ্যাসূচক বিষয়সমূহ যেমনঃ বিন্যাস, ভেক্টর, ম্যাট্রিক্স এবং বহুপদী তে ব্যাপ্ত করে। এই অ-সংখ্যাসূচক বিষয়সমূহের কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যগুলি তখন গ্রুপ, রিং এবং ক্ষেত্রের মতো বীজগণিতক কাঠামোতে বিমূর্ত হয়। ষোড়শ শতাব্দীর আগে, গণিত কেবল দুটি উপ-ক্ষেত্র, পাটিগণিত এবং জ্যামিতিতে বিভক্ত ছিল। যদিও কিছু কিছু পদ্ধতি, যা অনেক আগে বিকশিত হয়েছিল, যা আজকাল বীজগণিত হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে, বীজগণিতের উত্থান এবং এরপরেই কেবল ১৬শ বা ১৭শ শতকের দিকে অগণিত ক্যালকুলাস গণিতের শাখা হিসাবে আবির্ভূত হয় । উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে, গণিতের অনেকগুলি নতুন ক্ষেত্র আবির্ভূত হয়েছিল, যার বেশিরভাগই পাটিগণিত এবং জ্যামিতি উভয়ই ব্যবহার করেছিল এবং প্রায় সবগুলিই বীজগণিত ব্যবহার করেছিল। আজ, বীজগণিত বৃদ্ধি পেয়েছে যতক্ষণ না এতে গণিতের অনেকগুলি শাখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে , যেমনটি গণিতের বিষয় শ্রেণীবদ্ধকরণে দেখা যায়। যেখানে প্রথম স্তরের কোন অংশকে (দুটি অঙ্কের সংখ্যা) বীজগণিত বলা হতো না। আজ বীজগণিতের মধ্যে রয়েছে, ০৮-সাধারণ বীজগাণিতিক প্রক্রিয়া , ১২- ক্ষেত্র তত্ত্ব এবং বহুপদী, ১৩- বিনিময় বীজগণিত, ১৫- রৈখিক এবং বহুরেখা বীজগণিত ; ম্যাট্রিক্স তত্ত্ব, ১৬- সংযোজন রিং এবং বীজগণিত , ১৭- অসংযোজন রিং এবং বীজগণিত, ১৮- শ্রেণী তত্ত্ব ; সমসংস্থানিক বীজগণিত, ১৯- কে-তত্ত্ব এবং ২০- গ্রুপ তত্ত্ব । ১১- সংখ্যা তত্ত্ব এবং ১৪- বীজগাণিতিক জ্যামিতিতে বীজগণিত ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ইতিহাস বীজগণিতের আদি ইতিহাস বীজগণিতের উৎপত্তি প্রাচীন ব্যাবিলনীয়দের কাছে শনাক্ত করা যায়, যারা একটি উন্নত পাটিগণিত ব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যার সাহায্যে তারা একটি অ্যালগরিদমিক প্রক্রিয়ায় গণনা করতে সক্ষম হয়েছিল। ব্যাবিলনীয়রা রৈখিক সমীকরণ, দ্বিঘাত সমীকরণ এবং অনির্দিষ্ট রৈখিক সমীকরণ ব্যবহার করে বর্তমানে সমাধান করা সমস্যাগুলির সমাধান করার জন্য সূত্র তৈরি করেছিল। বিপরীতে, এই যুগের বেশিরভাগ মিশরীয়রা, পাশাপাশি গ্রীক ও চীনা গণিতও খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দে, সাধারণত জ্যামিতিক পদ্ধতি দ্বারা সমীকরণগুলি সমাধান করেছিল। যেমন রিহিন্দ ম্যাথমেটিক্যাল পাপিরাস, ইউক্লিডের উপাদানসমূহ এবং দ্য ম্যাথমেটিকাল আর্টস এর নবম অধ্যায়ে যার উল্লেখ পাওয়া যায় । গ্রীকদের জ্যামিতিক কাজ সূত্রকে সাধারণীকরণের জন্য নির্দিষ্ট সূত্রকে আরও সাধারণ পদ্ধতিতে উল্লেখকরণ ও সমীকরণের সমাধানের বাইরে সূত্রকে সাধারণীকরণের কাঠামো সরবরাহ করেছিল, যদিও মধ্যযুগীয় ইসলামে গণিতের বিকাশ না হওয়া পর্যন্ত এটি উপলব্ধি করা সম্ভব হয়নি। প্লেটোর সময়কালে গ্রিক গণিতের ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে । গ্রীকরা একটি জ্যামিতিক বীজগণিত তৈরি করেছিল যেখানে পদগুলি জ্যামিতিক বস্তুর পক্ষ দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হতো, সাধারণত রেখা যেগুলির সাথে অক্ষর যুক্ত ছিল। দাওফান্তাস (খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দী) ছিলেন আলেকজান্দ্রীয় গ্রিক গণিতবিদ এবং অ্যারিথমেটিকা নামে একাধিক বইয়ের লেখক। এই গ্রন্থগুলি বীজগাণিতিক সমীকরণগুলি সমাধান করার বিষয়ে আলোচনা করে, এবং সংখ্যা তত্ত্বকে ডায়োফান্তাইন সমীকরণের আধুনিক ধারণার দিকে নিয়ে গেছে। উপরে আলোচিত পূর্ববর্তী ঐতিহ্যসমূহ ফার্সি গণিতবিদ মুহম্মদ ইবনে মুসা আল-খোয়ারিজমি (সি. ৭৮০-৮৫০) -এর উপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলেছিল। পরবর্তীতে, তিনি কমপ্লেশিয়াস বুক অন ক্যালকুলেশন বাই কমপ্লেশন অ্যান্ড ব্যালান্সিং লিখেছিলেন, যা বীজগণিতকে একটি গাণিতিক নিয়ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে;যা জ্যামিতি এবং পাটিগণিত থেকে স্বতন্ত্র। হেলেনিস্টিক গণিতবিদ আলেকজান্দ্রিয়ার নায়ক এবং ডিওফ্যান্টাসের গণিতবিদগণ পাশাপাশি ব্রহ্মগুপ্তের মতো ভারতীয় গণিতবিদরা মিশর এবং ব্যাবিলনের ঐতিহ্য অব্যাহত রেখেছিলেন, যদিও ডিওফ্যান্টাসের অ্যারিথমেটিকা এবং ব্রহ্মগুপ্তের ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত উচ্চ স্তরে রয়েছে।   উদাহরণস্বরূপ,৬২৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিঘাত সমীকরণের জন্য শূন্য ও ঋণাত্মক সমাধানসহ শব্দের মাধ্যমে প্রথম সম্পূর্ণ গাণিতিক সমাধানটি ব্রহ্মগুপ্ত তাঁর "ব্রহ্মসুফাসিদ্ধন্ত" গ্রন্থে বর্ণনা করেছিলেন। পরবর্তীতে,ফার্সি ও আরবি গণিতবিদগণ বীজগণিত পদ্ধতিগুলি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উন্নত করেছিলেন। যদিও ডিওফান্টাস এবং ব্যাবিলনীয়রা সমীকরণগুলি সমাধানের জন্য বেশিরভাগ বিশেষ অ্যাডহক পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল, আল-খয়ারিজমির অবদানটি ছিল মৌলিক। তিনি বীজগাণিতিক প্রতীক, ঋণাত্মক সংখ্যা বা শূন্য ছাড়াই রৈখিক এবং দ্বিঘাত সমীকরণগুলি সমাধান করেছিলেন, সুতরাং তাকে বিভিন্ন ধরনের সমীকরণকে আলাদা করতে হয়েছিল। যেখানে বীজগণিতকে সমীকরণ তত্ত্বের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে,সেখানে গ্রিক গণিতবিদ ডিওফ্যান্টাস ঐতিহ্যগতভাবে "বীজগণিতের জনক" হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন এবং যেখানে সমীকরণগুলি পরিচালনা ও সমাধানের নিয়মগুলির সাথে সম্পৃক্ত , সেখানে ফার্সি গণিতবিদ আল-খোয়ারিজমিকে "বীজগণিতের জনক" হিসাবে বিবেচনা করা হয় । কে (সাধারণ অর্থে) "বীজগণিতের জনক" হিসাবে পরিচিত হওয়ার অধিক অধিকারপ্রাপ্ত তা নিয়ে এখন বিতর্ক রয়েছে। আল-জাবরের মধ্যে পাওয়া বীজগণিতটি অ্যারিথমেটিকাতে পাওয়া বীজগণিতের তুলনায় কিছুটা বেশি প্রাথমিক এবং অ্যারিথমেটিকা বাকবিতণ্ডিত, যেখানে আল-জাবর সম্পূর্ণরূপে আলংকারিক । যারা আল-খুয়ারিজমিকে সমর্থন করেন তারা এই বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করেন যে তিনি " পক্ষান্তর " এবং "ভারসাম্য"র পদ্ধতিগুলি চালু করেছিলেন (সমীকরণের এক দিক থেকে অন্য দিকে পদের স্থানান্তর, অর্থাৎ, সমীকরণ এর বিপরীত দিকে একই পদের বাতিলকরণ) যা 'আল-জাবর শব্দটি দ্বারা মূলত বোঝানো হয়েছে, এবং তিনি দ্বিঘাত সমীকরণগুলি সমাধান করার একটি বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়েছেন, এছাড়া তাঁর বীজগণিত আর মাথাব্যথার কারণ ছিল না " সমস্যার একটি সিরিজ পুনঃমীমাংসা করার সাথে , কিন্তু একটি বর্ণনামূলক বর্ণনা যা আদি পদের সমন্বয়ে গঠিত হয়,যেখানে সকল বিন্যাস সমীকরণ গঠনের জন্য সকল নিয়ম কানুন অবশ্যই দিবে,যা অতঃপর স্পষ্টভাবে অধ্যয়নের সত্য বস্তু গঠন করে"। তিনি একটি সমীকরণের স্বার্থে সমীকরণটি অধ্যয়নও করেছিলেন এবং "সাধারণ পদ্ধতিতে, কারণ এটি কোনও সমস্যার সমাধান করার ক্ষেত্রে কেবল উত্থিত হয় না, তবে এটি একটি অসীম শ্রেণীর সমস্যার সংজ্ঞা দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে কাজে আসে"। অপর ফার্সি গণিতবিদ ওমর খৈয়ামকে বীজগাণিতিক জ্যামিতির ভিত্তি শনাক্ত করার জন্য সম্মানিত করা হয় এবং তিনি ঘন সমীকরণের সাধারণ জ্যামিতিক সমাধান আবিষ্কার করেছিলেন।তাঁর গ্রন্থ ট্রিটাইজ অন ডেমোনস্টেশনস অফ প্রবলেমস অফ অ্যালজেবরা (১০৭০)এ বীজগণিতের নীতিমালা রচনা করেন, যা ফার্সি গণিতের অংশ যা শেষ পর্যন্ত ইউরোপে স্থানান্তরিত হয়েছিল। তবুও আরেক ফার্সি গণিতবিদ শারাফ আল দিন আল তুসি ঘন সমীকরণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বীজগাণিতিক এবং সংখ্যাসূচক সমাধান খুঁজে পেয়েছিলেন । তিনি একটি ফাংশনের ধারণাও বিকাশ করেছিলেন।ভারতীয় গণিতবিদ মহাবীর এবং দ্বিতীয় ভাস্কর ফারসি গণিতবিদ আল-কারাজি, এবং চীনা গণিতবিদ চু শি-চিয়ে, ঘনের বিভিন্ন ঘটনা সমাধান , দ্বিঘাত সমীকরণ, কুইন্টিক এবং উচ্চতর-পর্যায়ের বহুপদী সমীকরণ সমাধানের জন্য সংখ্যাগত একটা পদ্ধতি ব্যবহার করেন।১৩তম শতকে, একটি ঘন সমীকরণ গণিতবিদ ফিবোনাচ্চি দ্বারা সমাধান ইউরোপীয় বীজগণিতে রেনেসাঁ শুরুর একটি প্রতিনিধি। আবু আল-আসান ইবন আলি-আল-কালাসাদি (১৪১২-১৪৮৬) "বীজগণিতে প্রতীকবাদের প্রবর্তনের দিকে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন"।তিনি ∑ n 2, ∑ n 3 গণনা করেছিলেন এবং বর্গমূল নির্ধারণের জন্য ক্রমাগত আনুমানিক পদ্ধতিটি ব্যবহার করেছিলেন। বীজগণিতের আধুনিক ইতিহাস ১৬শ শতাব্দীর শেষের দিকে নতুন বীজগণিত নিয়ে ফ্রান্সোইস ভিয়েটের কাজ আধুনিক বীজগণিতের দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। ১৬৩৭ সালে, র‍্যনে দেকার্ত স্থানাঙ্ক জ্যামিতি আবিষ্কার করেন এবং আধুনিক বীজগাণিতিক চিহ্ন প্রবর্তন করে লা জিওম্যাট্রি প্রকাশ করেছিলেন।বীজগণিতের আরও বিকাশের আরেকটি মূল ঘটনা হল ঘন এবং দ্বিঘাত সমীকরণগুলির সাধারণ বীজগাণিতিক সমাধান,যা ১৬তম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিকশিত হয়েছিল।নির্ণায়কের ধারণাটি ১৭তম শতাব্দীতে জাপানি গণিতবিদ সেকি কোওয়া বিকাশ করেছিলেন এবং ম্যাট্রিক্স ব্যবহার করে এক সাথে রৈখিক সমীকরণের সিস্টেমগুলি সমাধানের উদ্দেশ্যে দশ বছর পরে গটফ্রাইড লাইবনিজ স্বাধীনভাবে তার অনুসরণ করেছিলেন। জোসেফ-লুই ল্যাঞ্জরেজ বিন্যাস অধ্যয়ন করেছিলেন,তিনি তার ১৭৭০-এর গবেষণাপত্র " রেফ্লেকশনস সুর লা রিসুলিউশন অ্যালজেব্রিক ডেস অ্যাকুয়েশনস বাংলায় "বীজগাণিতিক সমীকরণ সমাধানের জন্য নিবেদিত" যেখানে তিনি ল্যাঞ্জরেজ রেসলভেন্টস প্রবর্তন করেছিলেন।পাওলো রুফিনি প্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি বিন্যাসের গ্রুপ তত্ত্বটি বিকাশ করেছিলেন এবং তাঁর পূর্বসূরীদের মতো বীজগণিত সমীকরণ সমাধানের প্রসঙ্গেও তিনি অবদান রেখেছিলেন। সমীকরণ সমাধানে আগ্রহ , প্রাথমিকভাবে গ্যালোয়া তত্ত্ব এবং গঠনমূলক বিষয়ের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার কারণে ১৯তম শতাব্দীতে বিমূর্ত বীজগণিত উন্নতি সাধন করেছিল। জর্জ পিইকক্ গণিত এবং বীজগণিত মধ্যে অচলিত চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠাতা করেছিলেন। অগাস্টাস ডি মরগান তার প্রস্তাবিত যুক্তির সিস্টেমে রিলেশনাল বীজগণিত আবিষ্কার করেছিলেন। জোসিয়াহ উইলার্ড গিবস ত্রি-মাত্রিক স্থানের ভেক্টরগুলির একটি বীজগণিত বিকাশ করেছিলেন এবং আর্থার কেলি ম্যাট্রিক্সের একটি বীজগণিত বিকাশ করেছিলেন (এটি একটি অনিয়মিত বীজগণিত)। বীজগণিত শব্দটিসহ গণিতের ক্ষেত্রসমূহ গণিতের কিছু ক্ষেত্র যা বিমূর্ত বীজগণিতের শ্রেণিবিন্যাসের আওতায় আসে তাদের নামে বীজগণিত শব্দটি রয়েছে; রৈখিক বীজগণিত এর একটি উদাহরণ। অন্যদের নামে অবশ্য বীজগণিত শব্দটি নেই : গ্রুপ তত্ত্ব, রিং তত্ত্ব এবং ক্ষেত্র তত্ত্ব তার উদাহরণ। এই বিভাগে, আমরা গণিতের কিছু ক্ষেত্র তালিকাভুক্ত করেছি যাদের নামের সাথে "বীজগণিত" শব্দটি রয়েছে । প্রাথমিক বীজগণিত, বীজগণিতের অংশ যা সাধারণত গণিতের প্রাথমিক পাঠ্যক্রমগুলিতে শেখানো হয়। বিমূর্ত বীজগণিত, যার মধ্যে গ্রুপ, রিং এবং ক্ষেত্রের মতো বীজগণিত কাঠামো স্বতঃসিদ্ধ ব্যবস্থায় সংজ্ঞায়িত এবং গবেষণা করা হয়। রৈখিক বীজগণিত, যেখানে রৈখিক সমীকরণের সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, ভেক্টর স্পেস এবং ম্যাট্রিক্স অধ্যয়ন করা হয়। বুলিয়ান বীজগণিত, বীজগণিত একটি শাখা সত্য মান মিথ্যা এবং সত্য এর দ্বারা সংক্ষিপ্ত হিসাব করে । বিনিময় বীজগণিত, বিনিময় রিংগুলির অধ্যয়ন। কম্পিউটার বীজগণিত , অ্যালগরিদম এবং কম্পিউটার প্রোগ্রাম হিসাবে বীজগাণিতিক পদ্ধতিসমূহের প্রয়োগ। হোমোলজিকাল বীজগণিত, বীজগণিত কাঠামোর অধ্যয়ন যা টপোলজিকাল স্পেসগুলি অধ্যয়নের জন্য মৌলিক। সর্বজনীন বীজগণিত, যেখানে সমস্ত বীজগণিত কাঠামোর সাধারণ বৈশিষ্ট্য অধ্যয়ন করা হয়। বীজগণিত সংখ্যা তত্ত্ব, যেখানে সংখ্যার বৈশিষ্ট্যগুলি বীজগাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অধ্যয়ন করা হয়। বীজগাণিতিক জ্যামিতি, জ্যামিতির একটি শাখা, এর আদি আকারে বক্ররেখা এবং পৃষ্ঠতলকে বীজগাণিতিক সমীকরণের সমাধানের সাথে সম্পৃক্ত করে। বীজগণিত সম্মিলন, যেখানে সংযুক্তি প্রশ্নগুলি অধ্যয়নের জন্য বীজগণিত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। রিলেশনাল বীজগণিত : অন্বয়ের একটি সেট যা নির্দিষ্ট অপারেটরের অধীনে বন্ধ থাকে অনেক গাণিতিক কাঠামোকে বীজগণিত বলা হয়: একটি ক্ষেত্রের উপরে বীজগণিত বা আরও সাধারণতভাবে একটি রিংয়ের উপরে বীজগণিত ক্ষেত্র বা রিংয়ের মধ্যে বীজগণিতগুলির অনেক শ্রেণীর একটি নির্দিষ্ট নাম থাকে: সহযোগী বীজগণিত অ-সহযোগী বীজগণিত মিথ্যা বীজগণিত হফ বীজগণিত সি * -বীজগণিত প্রতিসম বীজগণিত বাহ্যিক বীজগণিত টেনসর বীজগণিত পরিমাপ তত্ত্ব , সিগমা-বীজগণিত একটি সেটের উপর বীজগণিত বিভাগ তত্ত্বে এফ-বীজগণিত এবং এফ-সহযোগী বীজগণিত টি-বীজগণিত যুক্তিবিদ্যায় , রিলেশন বীজগণিত, একটি অবশিষ্ট বুলিয়ান বীজগণিত যেটি কনভার্স নামে পরিচিতি লাভ করে প্রসারিত হয়েছিল। বুলিয়ান বীজগণিত, একটি পরিপূরক বিতরণ কাঠামো হেইটিং বীজগণিত প্রাথমিক বীজগণিত প্রাথমিক বীজগণিত বীজগণিতের সর্বাধিক প্রাথমিক রূপ।এটা ঐ সকল ছাত্রদের শেখানো হয় যাদের পাটিগণিতের সাধারণ নীতিসমূহের বাইরে গণিতের কোন ধারণা নেই। পাটিগণিতে , কেবলমাত্র সংখ্যা এবং পাটিগণিত সংক্রান্ত প্রক্রিয়া চিহ্ন (যেমন +, −, ×, ÷) ব্যবহার করা হয়ে থাকে । বীজগণিতে , সংখ্যা অনেক সময় চলক এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় (যেমন a, n, x, y অথবা z)। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ : এটি পাটিগণিতের সূত্রসমূহের সাধারণ সূত্রে পরিণত করতে সাহায্য করে (যেমনঃ a + b = b + a;যা সকল a এবং b এর জন্য সত্য ) এবং বাস্তব সংখ্যার সিস্টেমের ধর্ম সমূহের পর্যায়ক্রমিক আবিষ্কারের এটি প্রথম পদক্ষেপ ছিল। এটি "অজানা" সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা , সমীকরণের সূচনা এবং এগুলি কীভাবে সমাধান করা যাবে; সে বিষয়ে অধ্যয়নের অনুমতি দেয়। (উদাহরণস্বরূপ, "একটি সংখ্যা x বের কর, যাতে 3x + 1 = 10 হয়"। অথবা, আরও কিছুটা এগিয়ে "একটি সংখ্যা x বের কর যাতে ax + b =c হয় " । এটি আমাদের এই সিদ্ধান্তে নিয়ে যায় যে, নির্দিষ্ট সংখ্যার প্রকৃতির নয়, যা আমাদের সমীকরণটি সমাধান করতে দেয়। বরং এক্ষেত্রে সমীকরণ এর অন্তর্ভুক্ত অপারেশনগুলিই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে । এটি ফাংশনসম্পর্কিত সম্পর্ক গঠন করতে অনুমতি দেয়। (উদাহরণস্বরূপ , "যদি তুমি x টিকিট বিক্রি করো , তবে তোমার মুনাফা হবে 3x − 10 টাকা , অথবা f(x) = 3x − 10, সেখানে f হল ফাংশন , এবং x হল ঐ সংখ্যা যার উপর ফাংশনটি কাজ করছে। ") বহুপদী একটি বহুপদী হলো এমন একটি রাশি যা সসীম সংখ্যক অশূন্য পদের যোগফল , যেখানে প্রত্যেক পদ ধ্রুবক এবং পূর্ণসাংখ্যিক ঘাতে উন্নত সসীম সংখ্যক চলকের গুণফল ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ , x2 + 2x − 3;একটি x চলকবিশিষ্ট বহুপদী। একটি বহুপদী রাশি হলো এমন একটি রাশি যাকে বিনিময় বিধি ,সংযোজন বিধি ,যোগ এবং গুণের বণ্টন বিধি দ্বারা বহুপদী হিসেবে পুনরায় লেখা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, (x− 1)(x + 3) হলো একটি বহুপদী রাশি।আসলে, সঠিকভাবে বলতে গেলে , এটি কিন্তু বহুপদী রাশি না। একটি বহুপদী ফাংশন হল এমন একটি ফাংশন যা বহুপদী , অথবা , একইভাবে , একটি বহুপদী রাশি দ্বারা সংজ্ঞায়িত। পূর্ববর্তী দুটি উদাহরণ একই বহুপদী ফাংশনকে সংজ্ঞায়িত করে। দুটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্পর্কিত বীজগাণিতিক সমস্যা হল বহুপদীর উৎপাদকে বিশ্লেষণ ,যাতে কোন বহুপদীকে অপর এক বা একাধিক বহুপদীর গুণফল আকারে প্রকাশ করা হয়,যাদের আর উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যাবে না , এবং বহুপদীর গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয়। উপরে উদাহরণে বর্ণিত বহুপদীটিকে (x − 1)(x + 3) আকারে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা সম্ভব। একই ধরনের সম্পর্কিত একটি সমস্যা হল এক চলকবিশিষ্ট বহুপদীর বর্গমূলের জন্য বীজগাণিতিক রাশি নির্ণয় করা। বিমূর্ত বীজগণিতবিমূর্ত বীজগণিত প্রাথমিক বীজগণিতে প্রাপ্ত পরিচিত ধারণাসমূহ এবং সংখ্যার পাটিগণিতকে সাধারণ ধারণায় আরও বিস্তৃত করে । নিম্নে বিমূর্ত বীজগণিতের মৌলিক ধারণাসমূহ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সেট: কেবলমাত্র বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা বিবেচনা করার পরিবর্তে , বিমূর্ত বীজগণিত সেটের আরও সাধারণ ধারণা নিয়ে কাজ করে সেট : সকল বস্তুসমূহের একটি সংগ্রহ (যাদের উপাদান নামে ডাকা হয়)যা সেটের জন্য নির্দিষ্ট করা শর্তের ভিত্তিতে বেছে নেওয়া হয়।একই জাতীয় সকল সংখ্যাসমূহের সংগ্রহই হলো সেট। সেটের অন্যান্য উদাহরণগুলোর মধ্যে রয়েছে সকল ২×২ আকারের ম্যাট্রিক্স ,সকল দ্বিঘাত বিশিষ্ট বহুপদী (ax2 + bx + c) এর সেট ,একই সমতলে অবস্থিত সকল দুই মাত্রার ভেক্টরসমূহের সেট এবং বৃত্তাকার গ্রুপের মতো বিভিন্ন ধরনের সসীম গ্রুপ , যা পূর্ণসংখ্যার মডুলার n এর গ্রুপ। সেট তত্ত্ব যুক্তিবিদ্যার একটি শাখা এবং প্রায়োগিকভাবে বলতে গেলে এটি বীজগণিতের শাখা নয়।বাইনারি অপারেশন :বাইনারি যোগ এর জন্য বলতে গেলে ∗, যোগের ধারণাটি আলাদা করে তুলে আনা হয়েছে। যে সেটের উপর অপারেশনটি সংজ্ঞায়িত তাছাড়া বাইনারি যোগের ধারণা অর্থহীন। S সেটের দুটি উপাদান a এবং b এর জন্য , a ∗ b সেটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আরেকটি উপাদান ; এই শর্তটিকে বলা হয় আবদ্ধকরণ। যোগ (+), বিয়োগ (−), গুণ (×), ভাগ বায়োনারি অপারেশন হতে পারে যদি তা বিভিন্ন সিটের উপর সংজ্ঞায়িত করা হয় ,যেমনঃ ম্যাট্রিক্স, ভেক্টর, বহুপদীর যোগ এবং গুনের মতো।অভেদক উপাদান :কোন অপারেশনে অভেদক উপাদানের ধারণা দেওয়ার জন্য ০ এবং ১ কে পৃথক করা হয়েছে। ০ যোগের জন্য অভেদক উপাদান এবং ১ গুণের জন্য অভেদক উপাদান। একটি সাধারণ বাইনারি অপারেটর ∗ এর জন্য অভেদক উপাদানটি হল e যা অবশ্যই a ∗ e = a এবং e ∗ a = a,এবং যদি এর অস্তিত্ব থাকে,তবে অবশ্যই এটিকে অনন্য হতে হবে। এটি যোগের জন্য এভাবে কাজ করে a + 0 = a এবং 0 + a = a এবং গুণের জন্য এভাবে a × 1 = a এবং 1 × a = a ।সকল সেট এবং অপারেটরসমূহের সমাবেশের অভেদক উপাদান থাকে না ; উদাহরণস্বরূপ , স্বাভাবিক ধনাত্মক সংখ্যার সেটটি হলো (1, 2, 3, ...) যার যোগের জন্য কোন অভেদক উপাদান নেই।বিপরীত্মক উপাদান :ঋণাত্মক সংখ্যা প্রথম বিপরীত্মক উপাদান এর ধারণাটি তুলে ধরে।. যোগের জন্য , a এর বিপরীত্মককে লেখা হয় −a, এবং গুণাত্মক বিপরীত্মককে লেখা হয় a−1। a−1একটি সাধারণ উভধর্মী বিপরীত্মক উপাদান ,যা a ∗ a−1 = e এবং a−1 ∗ a = e এই ধর্মটিকে সমর্থন করে, যেখানে e একটি অভেদক উপাদান।সহযোজন বিধি :পূর্ণসংখ্যার যোগফলের একটি ধর্ম রয়েছে একে সহযোজন বিধি বলে।এটিতে মূলত,সংখ্যাসমূহের গ্রুপ করা হয় যাতে যোগফলের মানের কোনো পরিবর্তন হয় না। উদাহরণস্বরূপ : । সাধারণ অর্থে , (a ∗ b) ∗ c = a ∗ (b ∗ c) হয়ে থাকে।এই ধর্মটি অধিকাংশ বাইনারি অপারেশনে ব্যবহার করা হয়,কিন্তু বিয়োগ অথবা ভাগ অথবা অক্টোনিয়ান গুণ বাইনারি অপারেশনে ব্যবহার করা হয় না। বিনিময় বিধি: বাস্তব সংখ্যার যোগ এবং গুণ উভয়ই বিনিময়যোগ্য। এক্ষেত্রে , সংখ্যার অবস্থানের ক্রম ফলাফলকে প্রভাবিত করে না। উদাহরণস্বরূপ : 2 + 3 = 3 + 2. সাধারণ অর্থে , a ∗ b = b ∗ aহয়ে থাকে। এই ধর্মটি সকল বাইনারি অপারেশনের জন্য কাজ করে না। উদাহরণস্বরূপ, ম্যাট্রিক্স গুণ এবং কোয়াটারনিয়ন গুণ উভয়ই অ-বিনিময়যোগ্য। গ্রুপ উপর্যুক্ত ধারণাসমূহকে একত্রিত করে গণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো গঠিত হয় : a গ্রুপ।একটা গ্রুপ হলো একটি সেট S এবং একটি বাইনারি অপারেটর ∗ এর সমাবেশ , তুমি যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করো না কেন , কিন্তু নিম্নোক্ত ধর্মসমূহ তার মধ্যে থাকতে হবে : একটি অভেদক উপাদান e এর অস্তিত্ব রয়েছে , যেন S এর অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক সদস্য a এর জন্য , e ∗ a এবং a ∗ e উভয়ই a এর প্রতি অভিন্ন হয় । প্রত্যেক উপাদানের একটি বিপরীত্মক রয়েছে : S এর অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক সদস্য a এর জন্য, একটি সংখ্যা a−1 রয়েছে; যেন a ∗ a−1 এবং a−1 ∗ a উভয়ই অভেদক উপাদানের প্রতি অভিন্ন। সংযোজন বিধি : যদি a, b এবং c ;S সেটের সদস্য হয়ে থাকে। তবে (a ∗ b) ∗ c এবং a ∗ (b ∗ c) অভিন্ন। যদি একটি গ্রুপও বিনিময়যোগ্য হয় – যাতে, S এর অন্তর্ভুক্ত যেকোনো দুটি উপাদান a এবং b এর জন্য , a ∗ b এবং b ∗ a অভিন্ন হলে –এই গ্রুপটিকে বলা হবে আবেলিয়ান উদাহরণস্বরূপ, যোগ অপারেশনের অধীনে সকল পূর্ণ সংখ্যার সেট একটি গ্রুপ। এই গ্রুপটিতে , অভেদক উপাদানটি হলো 0 এবং যেকোনো উপাদান a এর বিপরীত্মক হলো এর ঋণাত্মক , −a। সহযোজন বিধিটি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে ,কারণ যেকোন পূর্ণ সংখ্যা a, b এবং cএর জন্য, (a + b) + c = a + (b + c) অশূন্য মূলদ সংখ্যা গুনের অধীনে একটি গ্রুপ তৈরি করে। এখানে , 1 হল অভেদক উপাদান , যেহেতু যেকোনো মূলদ সংখ্যা a এর জন্য 1 × a = a × 1 = a। a এর বিপরীত্মক হলো 1/a, যেহেতু a × 1/a = 1. যদিও, পূর্ণসংখ্যা গুন অপারেশনের অধীনে গ্রুপ তৈরি করে না। এটা এ কারণে যে,সাধারণত ,একটি পূর্ণসংখ্যার গুণাত্মক বিপরীত্মক পূর্ণসংখ্যা হয় না। উদাহরণস্বরূপ , 4 একটি পূর্ণ সংখ্যা , কিন্তু এর গুণাত্মক বিপরীত্মক সংখ্যা হলো ¼, যা পূর্ণসংখ্যা নয়। গ্রুপ তত্ত্বে গ্রুপ সমূহের তথ্য নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়। সসীম সাধারণ গ্রপসমূহের শ্রেণিবিভাগ হচ্ছে এ তত্ত্বের একটি বড় ফলাফল , যার অধিকাংশ ১৯৫৫ এবং ১৯৮৩ এর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিল ,যা সসীম সাধারণ গ্রুপকে আপাতত ৩০টি মূল ধরনে বিভক্ত করে। অর্ধ-গ্রুপ , কোয়াসি-গ্রুপ, এবং মনোয়েড এর গঠন কাঠামো গ্রুপের মত , তবে আরও সাধারণ ধরনের।এরা সেট এবং একটি বদ্ধ বাইনারি অপারেশন গঠন করে কিন্তু অন্যান্য শর্তগুলো প্রয়োজনমতো পূরণ করে না। একটি অর্ধ-গ্রুপের একটি সহযোজন বাইনারি অপারেশন রয়েছে কিন্তু এটির অভেদক উপাদান নাও থাকতে পারে। একটি মনোয়েড হলো একটি অর্ধ-গ্রুপ যার একটি অভেদক রয়েছে কিন্তু প্রত্যেক উপাদানের জন্য বিপরীত্মক নাও থাকতে পারে। একটি কোয়াসি-গ্রুপ একটি প্রয়োজন পূরণ করে, যাতে একটি উপাদানকে ওপর আরেকটি উপাদানে হয় অনন্য বাম-গুণ অথবা ডান-গুণ দ্বারা পরিণত করা যেতে পারে। ; যদিও , বাইনারি অপারেশনটি সহযোজন যোগ্য নাও হতে পারে। সকল গ্রুপগুলো হলো মনোয়েড এবং সকল মনোয়েড হলো অর্ধ-গ্রুপ। রিং এবং ক্ষেত্র গ্রুপ সমূহের কেবল একটি মাত্র বাইনারি অপারেশন রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা এবং কাঠামো সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যার জন্য দুটি অপারেটর সম্পর্কে অধ্যয়ন করা একান্ত প্রয়োজন। এই তত্ত্বসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি তত্ত্ব হলো রিং তত্ত্ব এবং ক্ষেত্র তত্ত্ব। একটি রিংয়ের দুটি বাইনারি অপারেটর (+) এবং (×) রয়েছে। যেখানে, × , + এর সাথে বণ্টনযোগ্য। প্রথম অপারেটর (+) এর অধীনে এটি আবেলিয়ান গ্রুপ গঠন করে। দ্বিতীয় অপারেটর (×) এর অধীনে এটি সংযোজনযোগ্য , কিন্তু এটির অভেদক অথবা বিপরীত্বক থাকার কোন দরকার নেই , সুতরাং ভাগের কোন দরকার নেই। যোগাত্মক(+) অভেদক উপাদানটিকে লেখা হয় 0 এবং a এর যোগাত্মক বিপরীত্বককে লেখা হয় −a।বণ্টনযোগ্যতা বণ্টন সূত্রকে সংখ্যার জন্য সাধারণ করে। পূর্ণসংখ্যার জন্য এবং এবং × কে + এর সাথে বণ্টনযোগ্য বলা হয়ে থাকে। পূর্ণসংখ্যাসমূহ রিং এর একটি উদাহরণ। পূর্ণসংখ্যাসমূহের একটি অতিরিক্ত ধর্ম রয়েছে যা তাকে পূর্ণসাংখ্যিক ডোমেইন এ পরিণত করেছে। একটি ক্ষেত্র''' হল অতিরিক্ত ধর্মসহ একটি রিং যাতে 0 বাদে সকল উপাদান × এর অধীনে একটি আবেলিয়ান গ্রুপ গঠন করে । a এর গুণাত্বক (×) অভেদককে লেখা হয় 1 এবং a এর গুণাত্বক বিপরীত্বককে লেখা হয় a''−1। মূলদ সংখ্যাসমূহ , বাস্তব সংখ্যাসমূহ এবং জটিল সংখ্যাসমূহ সবই ক্ষেত্র(ফিল্ড) এর উদাহরণ। বহিঃসংযোগ খান একাডেমি: ধারণামূলক ভিডিও এবং কাজের উদাহরণ খান একাডেমি: বীজগণিতের উৎপত্তি , বিনামূল্যে অনলাইন ক্ষুদ্র লেকচার অ্যালজেবরা রুলস ডটকম: বীজগণিতের মৌলিক বিষয়গুলি শেখার জন্য একটি মুক্ত উৎস বীজগণিতের ৪০০০ বছর,গ্রিশাম কলেজে, রবিন উইলসনের বক্তৃতা, অক্টোবর ১৭, ২০০৭ (এমপি৩ এবং এমপি৪ ডাউনলোডের জন্য উপলব্ধ, পাশাপাশি একটি টেক্সট ফাইল হিসেবেও)। আরও দেখুন বীজগণিতের রূপরেখা রৈখিক বীজগণিতের রূপরেখা বীজগাণিতিক টাইল সেট বহুপদী বহুপদী সমীকরণ দ্বিপদী উপপাদ্য আরও পড়ুন তথ্যসূত্র গণিত মূল বিষয়ের নিবন্ধ
https://en.wikipedia.org/wiki/Algebra
Algebra
Algebra is the branch of mathematics that studies certain abstract systems, known as algebraic structures, and the manipulation of statements within those systems. It is a generalization of arithmetic that introduces variables and algebraic operations other than the standard arithmetic operations such as addition and multiplication. Elementary algebra is the main form of algebra taught in school and examines mathematical statements using variables for unspecified values. It seeks to determine for which values the statements are true. To do so, it uses different methods of transforming equations to isolate variables. Linear algebra is a closely related field investigating variables that appear in several linear equations, called a system of linear equations. It tries to discover the values that solve all equations in the system at the same time. Abstract algebra studies algebraic structures, which consist of a set of mathematical objects together with one or several binary operations defined on that set. It is a generalization of elementary and linear algebra since it allows mathematical objects other than numbers and non-arithmetic operations. It distinguishes between different types of algebraic structures, such as groups, rings, and fields, based on the number of operations they use and the laws they follow. Universal algebra constitutes a further level of generalization that is not limited to binary operations and investigates more abstract patterns that characterize different classes of algebraic structures. Algebraic methods were first studied in the ancient period to solve specific problems in fields like geometry. Subsequent mathematicians examined general techniques to solve equations independent of their specific applications. They described equations and their solutions using words and abbreviations until the 16th and 17th centuries, when a rigorous symbolic formalism was developed. In the mid-19th century, the scope of algebra broadened beyond a theory of equations to cover diverse types of algebraic operations and structures. Algebra is relevant to many branches of mathematics, like geometry, topology, number theory, and calculus, and other fields of inquiry, like logic and the empirical sciences.
1215
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%BF%E0%A6%A4
পাটিগণিত
পাটিগণিত হচ্ছে গণিতের অন্যতম প্রাচীন একটি শাখা যা সংখ্যা সম্পর্কিত জ্ঞান নিয়ে, বিশেষকরে সংখ্যার যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, সূচকীকরণ ও মূল নির্ণয়ের প্রথাগত গাণিতিক প্রক্রিয়াসমূহের গুণাবলীর সাথে জড়িত জ্ঞানের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। এটি গণিতের সেই শাখা যেখানে গণনা সংক্রান্ত হিসাব-নিকাশ যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ও অন্যান্য গাণিতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরাসরি সম্পাদন করা হয়। পাটিগণিত হলো সংখ্যাতত্ত্বের একটি মৌলিক অংশ, আর বীজগণিত, জ্যামিতি ও বিশ্লেষণী গণিতের সাথে সংখ্যাতত্ত্বকেও আধুনিক গণিতের শীর্ষ-পর্যায়ের শাখাগুলোর একটি গণ্য করা হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুর আগ পর্যন্ত arithmetic (পাটিগণিত) এবং higher arithmetic (উচ্চতর পাটিগণিত) পরিভাষা দুটি সংখ্যাতত্ত্ব-এর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি অদ্যাবধি কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংখ্যাতত্ত্বের একটি বিস্তৃত অংশকে বোঝাতে এই পরিভাষা দুটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পরিভাষা পাটিগণিতে পাটি (√পট্‌+ই) শব্দটি সংখ্যা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। পাটিগণিত শব্দটি ইংরেজি Arithmetic এর বাংলা পারিভাষিক শব্দরূপে স্বীকৃত। Arithmetic শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রিক ভাষার ἀριθμός (arithmos) ও τική [τέχνη] (tiké [téchne]) থেকে, যেগুলোর অর্থ যথাক্রমে সংখ্যা, শিল্পকলা ও শিল্পকর্ম (craft)। এই নিবন্ধে গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য যেসব পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে: Arithmetic operations বা operations — গাণিতিক ক্রিয়া বা পাটিগাণিতিক ক্রিয়া বা গাণিতিক প্রক্রিয়া Positional notation — স্থানিক অঙ্কপাতন Place-value — স্থানীয় মান Single unit — অনন্য বা অভগ্ন একক Compound unit — সংযুক্ত বা ভগ্ন একক Normalization — আদর্শীকরণ On-going normalization method — চলমান আদর্শীকরণ পদ্ধতি উৎপত্তি পাটীগণিত গণিতের একটি শাখা। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ নানান রকমের হিসাব-নিকাশ করেছে বিভিন্ন পদ্ধতিতে । পাটীগণিত সেসব পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম। প্রাচীন কালের অনেক মণীষী পাটিগণিতের উৎকর্ষ সাধন করে। তাদের মধ্যে পিথাগোরাস, গ্যালিলিও, মহাবীর, রামানুজন প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। ইতিহাস পাটিগণিতের প্রাক-ইতিহাস কেবল অল্প সংখ্যক নিদর্শনের মধ্যেই পাওয়া যায়। মধ্য আফ্রিকার কঙ্গোয় আবিষ্কৃত সর্বাধিক পরিচিত ইশাংগো হাড় হলো সেই প্রাক-ইতিহাসের একটি প্রমাণ। ২০,০০০ থেকে ১৮,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই নিদর্শনটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এটা সেই সময়ের যোগ ও বিয়োগের ধারণাকে ইঙ্গিত দেয়। প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শুরুর দিকে মিশরীয় ও ব্যাবিলীয়রা যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ এই মৌলিক পাটিগাণিতিক প্রক্রিয়াগুলোর সবগুলোই যে ব্যবহার করত, সবচেয়ে প্রাচীন লিখিত নথিগুলো থেকে সেটারই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সমস্যা সমাধানে ঠিক কোন কোন পদ্ধতির প্রয়োগ করা হতো তা এই নিদর্শনগুলো থেকে সব সময় উদঘাটন করা না গেলেও, এসব পদ্ধতির জটিলতা বা দুর্বোধ্যতাকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছে যে স্বতন্ত্র সংখ্যাপদ্ধতি সেটার বৈশিষ্ট্যগুলো এসব নিদর্শন থেকে উন্মোচিত হয়। মিশরীয় সংখ্যাব্যবস্থায় ব্যবহৃত হায়ারোগ্লিফিক পদ্ধতি পরবর্তী যুগের রোমান সংখ্যার মতোই গণনার কাজে ব্যবহৃত টালি চিহ্নের উত্তরসূরী। উভয় ক্ষেত্রেই আদি এই সংখ্যাগুলোর মান এমনভাবে বের করা হতো যেগুলোতে একটি "দশমিক ভিত্তি" ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে এই সংখ্যা ব্যবস্থা দুটির কোনটিতেই অঙ্কের অবস্থানভিত্তিক ব্যবস্থা তথা স্থানিক অঙ্কপাতনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। রোমান সংখ্যা দিয়ে জটিল গণনাগুলোর ফলাফল বের করতে গেলে একটি কাউন্টিং বোর্ডের বা রোমান অ্যাবাকাসের সহায়তা নেওয়ার প্রয়োজন হতো। আবার, প্রাচীন যে সংখ্যাপদ্ধতিগুলোতে স্থানিক অঙ্কপাতনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, সেগুলো দশমিক পদ্ধতির (দশভিত্তিক) ছিল না। যেমন: ব্যাবীলনীয় সংখ্যা ছিল ষষ্টিক (ষাটভিত্তিক) এবং মায়া সংখ্যা ছিল বিংশীয় (বিশ-ভিত্তিক)। স্থানীয় মানের এই ধারণার ফলস্বরূপ, ভিন্ন ভিন্ন মানের জন্য একই অঙ্কের পুনর্ব্যবহারযোগ্যতার বিষয়টি গণনার জন্য সরলতর ও আরও কার্যকর পদ্ধতিগুলোর ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পেরেছে। আধুনিক পাটিগণিতের উৎপত্তি ব্যাবিলনীয় ও মিশরীয় নজিরগুলোর অনেক পরে হলেও এর চলমান ঐতিহাসিক উন্নয়ন শুরু হয় প্রাচীন গ্রিসের হেলেনিস্টিক সভ্যতার যাত্রার সাথে। ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে ইউক্লিড যে কাজগুলো করেছিলেন তার সেই কাজগুলোর পূর্ববর্তী সময়ে গ্রিক গণিতের যে শাখাগুলো ছিল সেগুলো দার্শনিক এবং অতীন্দ্রিয় বিশ্বাসের সাথে মিশে গিয়েছিল। যেমন: সংখ্যার ব্যাপারে প্রাচীন পিথাগোরাসীয় চিন্তাধারার কী দৃষ্টিভঙ্গি, সেইসঙ্গে এই দৃষ্টিভঙ্গি ও সংখ্যার পারস্পরিক সম্পর্কসমূহ নিকোমাকোস তার অ্যারিথমিতিকি ইসাগোইয়ি-তে (পাটিগণিতের সাথে পরিচয়) সংক্ষিপ্ত আকারে বিবৃত করে গেছেন। আর্কিমিডিস, ডিওফ্যান্টাস এবং অন্যান্য পণ্ডিতগণ যে স্থানিক অঙ্কপাতনে গ্রিক সংখ্যাসমূহ প্রয়োগ করেছিলেন, সেটি আধুনিক অঙ্কপাতনের তুলনায় খুব বেশি ভিন্ন ছিল না। হেলেনিস্টিক সভ্যতার আবির্ভাবের পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত প্রাচীন গ্রীকরা শূন্যের জন্য প্রয়োজনীয় একটি প্রতীকের অভাবে ভুগেছিল। সে সময় সংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় অঙ্ক হিসেবে তারা পরস্পর আলাদা তিন সেট প্রতীক ব্যবহার করতো: প্রতীকের এই গুচ্ছ তিনটির একটি ব্যবহার করা হতো একক স্থানের জন্য, আরেকটি ব্যবহার করা হতো দশক স্থানের জন্য এবং অবশিষ্ট গুচ্ছটি শতকের জন্য। সহস্রের ঘরের জন্য তারা একক স্থানের প্রতীকগুলো পুনরায় ব্যবহার করত এবং অন্যান্য ঘরের ক্ষেত্রে তারা একইভাবে কাজ চালাত। যোগের জন্য তারা যে অ্যালগরিদম ব্যবহার করত, তা আধুনিক পদ্ধতির মতই ছিল। আর তাদের ব্যবহৃত গুণের অ্যালগরিদমে কেবল সামান্য পার্থক্যই ছিল। ভাগের জন্য তারা যে দীর্ঘ অ্যালগরিদম ব্যবহার করত সেটাও ছিল একই ধরনের। বর্গমূল নির্ণয়ে অঙ্ক ধরে ধরে (Digit by digit calculation) যে গণনা পদ্ধতি, যা বিংশ শতাব্দীর মতো সাম্প্রতিক সময়গুলোতে জনপ্রিয়, সেই নিয়মটি আর্কিমিডিস জানতেন এবং সম্ভবত তিনি এর আবিষ্কারকও ছিলেন। বর্গমূল নির্ণয়ের ধারাবাহিক আসন্নায়ন নিয়মটি যা হিরনের নিয়ম বা ব্যাবিলনীয় নিয়ম নামে পরিচিত সেটি অপেক্ষা অঙ্ক ধরে ধরে বর্গমূল বের করার নিয়মটিই আর্কিমিডিসের নিকট অধিক পছন্দের ছিল। কারণ হলো, একবার হিসাব করা হলে এখানে অঙ্কের পরিবর্তন ঘটে না এবং এই নিয়মে পূর্ণবর্গ সংখ্যার বর্গমূল খুব দ্রুতই বের হয়; (যেমন: ৭৪৮৫৬৯৬ এর মতো বড় সংখ্যার বর্গমূল ২৭৩৬ খুব সহজেই বের করা যায়)। ভগ্নাংশযুক্ত সংখ্যার (যেমন: ৫৪৬.৯৩৪) বর্গমূল বের করার ক্ষেত্রে গ্রিকরা ভগ্নাংশযুক্ত অংশের (.৯৩৪) জন্য ১০-এর ঋণাত্মক ঘাতের পরিবর্তে ৬০-এর ঋণাত্মক ঘাত ব্যবহার করত। প্রাচীন চীনে শাং রাজবংশ থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে তাং রাজবংশের সময়ে, চীনাদের মৌলিক সংখ্যা থেকে শুরু করে উন্নত বীজগণিতসহ উচ্চতর পাটিগণিতে যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। প্রাচীন চীনারা গ্রিকদের মতই একটি স্থানিক অঙ্কপাতনের ব্যবহার করত। যেহেতু চীনারাও শূন্যের জন্য একটি প্রয়োজনীয় চিহ্নের অভাবে ছিল, তাই তারা সংখ্যার একক স্থানের জন্য এক গুচ্ছ প্রতীক ব্যবহার করত, দশক স্থানের জন্য ব্যবহার করত দ্বিতীয় আরেক সেট প্রতীক। শতক স্থানের জন্য তারা এককের ঘরের প্রতীকগুলো পুনরায় ব্যবহার করত এবং অন্যান্য স্থানীয় মানের জন্য একইভাবে কাজ চালাত। তাদের এই প্রতীকগুলো ছিল প্রাচীন গণনা কাঠিভিত্তিক। চীনারা ঠিক কখন সংখ্যাকে স্থানের (অঙ্কপাতনের) দ্বারা উপস্থাপনের মাধ্যমে গণনা শুরু করে তা অজানা। তবে এই অধিগ্রহণ ৪০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। সর্বপ্রথম প্রাচীন চীনারাই ঋণাত্মক সংখ্যার অর্থপূর্ণ আবিষ্কার ঘটায়, এটি হৃদয়ঙ্গম করে এবং এর প্রয়োগ করে। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকে লাইয়ু হুই-এর লেখা গাণিতিক শিল্পকলার নয়টি অধ্যায়-এ (Jiuzhang Suanshu) এর ব্যাখ্যা রয়েছে। হিন্দু-আরবীয় সংখ্যা পদ্ধতির ধারাবাহিক বিকাশ স্বতন্ত্রভাবে স্থানীয় মানের ধারণার এবং স্থানিক অঙ্কপাতনের উদ্ভাবন ঘটিয়েছে, যেখানে এই পদ্ধতিটির সাথে একটি দশমিক ভিত্তির সহজতর গণনা পদ্ধতির এবং ০-এর প্রতিনিধিত্বকারী একটি অঙ্কের প্রয়োগের সমন্বয় ঘটেছে। এর ফলে সুস্পষ্টভাবেই এই পদ্ধতির মাধ্যমে ছোট ও বড় উভয় সংখ্যার প্রতিনিধিত্বের সুযোগ তৈরি হয়েছিল — এটি এমনই এক অর্জন যা ঘটনাক্রমে অন্যান্য সকল পদ্ধতির জায়গা দখল করে ফেলে। খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতকের প্রথম দিকে, ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্ট সেই সময়ে এই নিয়মটির একটি প্রচলিত সংস্করণ তার কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেন এবং ভিন্ন অঙ্কপাতনের মাধ্যমে পরীক্ষা চালান। ৭ম শতকে ব্রহ্মগুপ্ত ০-কে একটি পৃথক সংখ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই প্রথম শূন্যকে সংখ্যার মর্যাদা দেন। এছাড়া শূন্য এবং অন্যান্য সমস্ত সংখ্যার গুণ, ভাগ, যোগ ও বিয়োগের ফলাফল কী হবে তিনি সেগুলোও নির্ধারণ করেন। তবে শূন্য দ্বারা ভাগের ফলাফল কী হবে তা তিনি সুস্পষ্টভাবে বলতে পারেন নি। শূন্য দ্বারা ভাগের ব্যাপারে তার দেওয়া মত আধুনিক গণিতের সাথে মিলে না। সে যাই হোক, ব্রহ্মগুপ্তের সমসাময়িক সিরিয়াক বিশপ সেভেরাস সেবোখট (৬৫০ খ্রিস্টাব্দ) বলেছেন, "ভারতীয়দের এমন একটি গণনা পদ্ধতি রয়েছে, কোনো ভাষা দিয়েই যার যথাযথ প্রশংসা করা সম্ভব নয় — তা হলো গণিতে তাদের বুদ্ধিদীপ্ত পদ্ধতি, অর্থাৎ তাদের বুদ্ধিদীপ্ত গণনা পদ্ধতি। আমি বলতে চাচ্ছি তাদের সেই নিয়মটির কথা, যেটাতে নয়টি প্রতীক ব্যবহার করা হয়।" আরবরাও এই নতুন নিয়মটি শিখে নেয় আর তারা একে হেসাব নামে অভিহিত করে। ৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের পূর্বেই কোডেক্স ভিজিল্যানাস ০-কে বাদ দিয়ে আরবীয় অঙ্কবাচক সংখ্যাগুলোর আদি গঠনের ওপর একটি বিবরণ দিলেও, পিসার লিওনার্দোর (ফিবোনাচ্চি) লিবার অ্যাবাসি প্রকাশের পর মূলত তার (ফিবোনাচ্চি) হাত ধরেই সমগ্র ইউরোপে দশভিত্তিক এই সংখ্যা ব্যবস্থা ছড়িয়ে পড়ে, ইউরোপে এই অঙ্কগুলো ছড়িয়ে পড়ার পেছনে কৃতিত্ব লিওনার্দোরই। তিনি লিখেছেন, "মোডাস ইন্ডোরাম তথা ভারতীয়দের এই পদ্ধতিটি গণনার অন্য সকল পরিচিত পদ্ধতিকে ছাড়িয়ে গেছে। এটি বিস্ময়কর একটি পদ্ধতি। তারা নয়টি অঙ্ক এবং শূন্য প্রতীকটি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের গণনার কাজ করে"। মধ্যযুগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে সাতটি মুক্ত শিল্পকলার (liberal arts education) শিক্ষা শিক্ষার্থীদের দেওয়া হতো পাটিগণিত ছিলো সেগুলোর একটি। মধ্যযুগে মুসলিম বিশ্বে বীজগণিতের বর্ধিষ্ণু উত্থান বা ক্রমবর্ধমান উন্নতি, অধিকন্তু ইউরোপে সংঘটিত রেনেসাঁ এগুলোর সবই ছিল দশমিক অঙ্কপাতনের মাধ্যমে গণনার অসাধারণ সরলীকরণের এক বাড়তি ফসল। সাংখ্যিক হিসাব-নিকাশে সহায়তার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামের উদ্ভাবন হয়েছে এবং ব্যাপকহারে সেগুলোর প্রয়োগ ঘটেছে। রেনেসাঁর আগে বিভিন্ন ধরনের অ্যাবাকাসের দেখা মিলত। সাম্প্রতিকতম গণনা যন্ত্রের উদাহরণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্লাইড রুল, নোমোগ্রাম এবং বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর (যেমন: প্যাসকেলের ক্যালকুলেটর)। বর্তমানে, এই সরঞ্জামগুলোর জায়গায় ইলেকট্রনিক ক্যালকুলেটর এবং কম্পিউটার স্থান দখল করে নিয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে পাটিগণিতের ইতিহাস ভারতীয় উপমহাদেশের বিশিষ্ট গণিতবিদ ছিলেন যাদব চন্দ্র চক্রবর্তী যিনি সচারচর যাদব বাবু নামে অভিহিত ছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে “গণিত সম্রাট” উপাধি দিয়েছিল। ১৮৯০ সালে তিনি প্রকাশ করেন গণিতশাস্ত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বই “Arithmetic”। এটি সাধারণ্যে “যাদবের পাটিগণিত” হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয় এবং বিভিন্ন দেশে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে গৃহীত হয়। পাটিগাণিতিক ক্রিয়াসমূহ পাটিগণিতে ব্যবহৃত মৌলিক গাণিতিক ক্রিয়াগুলোর মধ্যে যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগের নাম থাকলেও শতকরা, বর্গমূল, সূচকীকরণ, লগারিদমিক ফাংশনের মতো উচ্চতর গাণিতক প্রক্রিয়াসমূহও এর অন্তর্ভুক্ত। উপরন্তু একইভাবে লগারিদমের মতো (প্রোস্টাফেরেসিস) ত্রিকোণমিতিক ফাংশনও এর অন্তর্ভুক্ত। পাটিগাণিতিক রাশিমালার (যেমন: ৪+৬–১÷৩ একটি পাটিগাণিতিক রাশিমালা) মান বের করতে হলে তাকে অবশ্যই গাণিতিক ক্রিয়াসমূহের কাঙ্ক্ষিত ক্রম অনুসারে নির্ধারিত হতে হবে। একটি রাশিমালায় সংখ্যা এবং ক্রিয়া চিহ্নগুলোর (+, –,×, ÷ ইত্যাদি) অবস্থান নির্ধারণের জন্য বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে, যার প্রতিটিই বহুল প্রচলিত। এগুলো মধ্যে রয়েছে ইনফিক্স নোটেশন, প্রিফিক্স নোটেশন বা পোলিশ নোটেশন, পোস্টফিক্স নোটেশন বা বিপরীত পোলিশ নোটেশন ইত্যাদি। ইনফিক্স নোটেশনের মাধ্যমে রাশিমালা লেখার ক্ষেত্রে বন্ধনী চিহ্নকে সুস্পষ্টভাবে ব্যবহার করতে হয় এবং এই পদ্ধতিটি গাণিতিক ক্রিয়ার ক্রমের নিয়ম মেনে চলে, অর্থাৎ ক্রিয়া চিহ্নের ধারাবাহিকতা মেনে চলতে হয়। মূলত এ নিয়মেই আমরা রাশিমালা লিখে এসেছি। যেমন: ৪ + ৬ – ১ ÷ ৩ রাশিমালাটি ইনফিক্স নোটেশনের মাধ্যমে লেখা হয়েছে। অপরদিকে প্রিফিক্স ও পোস্টফিক্স নোটেশনের ক্ষেত্রে রাশিমালার গাণিতিক ক্রিয়াগুলোর নির্বাহের বেলায় এদের নিজ নিজ ধারাবাহিকতা রয়েছে। যেমন: ইনফিক্স নোটেশনে লেখা (৭ − ৪) × ৩ রাশিমালাটিকে প্রিফিক্স বা পোলিশ নোটেশনে লিখলে হবে: × (− ৭ ৪) ৩ বা × − ৭ ৪ ৩। এবং (৭ − ৪) × ৩ কে পোস্টফিক্স নোটেশনে লিখলে এটি ৭৪ – ৩ × হয়ে যাবে। যে সেটের ওপর চারটি পাটিগাণিতিক ক্রিয়ার সবগুলোই (শূন্য দ্বারা ভাগ ব্যতীত) প্রয়োগ করা যেতে পারে এবং যে সেটে এই ক্রিয়াসমূহ বণ্টন বিধিসহ অন্যান্য সাধারণ বিধিগুলো মেনে চলে গণিতের ভাষায় তাকে ক্ষেত্র বলা হয়। যোগ যোগ হলো পাটিগণিতের সবচেয়ে মৌলিক গাণিতিক ক্রিয়া যাকে প্রতীকের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। যোগের প্রক্রিয়া এই সাধারণ চিহ্নটির মাধ্যমে দুটি সংখ্যাকে (যোজ্য ও যোজক) একটি একক সংখ্যায় সমন্বিত করে। এই সমন্বিত বা একীভূত সংখ্যাটিকে বলা হয় যোগফল বা সমষ্টি। যেমন:  ৫ + ২ = ৭। উল্লেখ্য যে,  ৫ + ২ রাশিমালায় যোজ্য ও যোজকের স্থানের পরিবর্তন ঘটলেও যোগফল অপরিবর্তিত থাকবে এবং যোগফল অপরিবর্তিত থাকার এই ব্যাপারটি যেকোনো রাশিমালার ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য হবে। সসীম সংখ্যক অনেকগুলো পদের যোগকে সাধারণ যোগের (দুটি সংখ্যা বা পদের) পুনরাবৃত্তিরূপে দেখা যেতে পারে এবং অসীম বা সসীম যেকোনো সংখ্যক অনেকগুলো পদের যোগকেও সমষ্টি নামে অভিহিত করা হয়। তবে ধারার ক্ষেত্রে (এর সমষ্টির বেলায়) এর পদগুলোকে সাধারণ অন্তর, সাধারণ অনুপাত অথবা অন্যান্য বাড়তি শর্তও মেনে চলতে হয়। ১ সংখ্যাটির বারংবার যোগের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যা বের করার নিয়মটি হলো গণনার আদি ও সবচেয়ে মৌলিক রূপ। ১ সংখ্যাটি যোগ করে যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় তাকে মূল সংখ্যাটির উত্তরসূরি (Successor) বলা হয় এবং এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় উত্তরসূরি ফাংশন (Successor function)। যেমন: স্বাভাবিক সংখ্যা n-এর উত্তরসূরি ফাংশন হলো S(n) = n + ১। যোগের প্রক্রিয়া বিনিময় ও সংযোগ বৈশিষ্ট্যযুক্ত হওয়ায় অর্থাৎ যোগের প্রক্রিয়া বিনিময় ও সংযোগ বিধি মেনে চলায় সসীম সংখ্যক অনেকগুলো পদ নিয়ে গঠিত রাশিমালায় পদগুলোর ক্রম কী হলো তা যোগফলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। শূন্য (০) সংখ্যাটির একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর তা হলো, যে সংখ্যার সাথেই শূন্য যোগ করা হোক না কেন সংখ্যাটি একই থাকবে। তাই শূন্য হলো যোগের অভেদ উপাদান বা যোগাত্মক অভেদ। বাস্তব সংখ্যার জন্য গুণের অভেদ উপাদান বা গুণাত্মক অভেদ হলো ১। প্রতিটি সংখ্যা -এর জন্য দ্বারা চিহ্নিত একটি সংখ্যা রয়েছে যাকে -এর যোগাত্মক বিপরীত সংখ্যা (additive inverse) বলা হয়, যেখানে এবং । সুতরাং, হলো যোগের সাপেক্ষে -এর বিপরীত সংখ্যা। এবং হলো পরস্পরের যোগাত্মক বিপরীত। যোগাত্মক বিপরীতকে সংক্ষেপে শুধু বিপরীত বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৬ এর বিপরীত হল −৬, যেহেতু ৬ + (−৬) = ০। যোগকে জ্যামিতিক উপায়েও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, যেমনটি পরবর্তী উদাহরণটিতে করা হয়েছে। যদি ২ ও ৫ একক দৈর্ঘ্যের দুটি কাঠি নেওয়া হয় এবং একটি কাঠির পর আরেকটি কাঠি সারিবদ্ধ করা হয়, তাহলে তাহলে সম্মিলিতভাবে কাঠিটির দৈর্ঘ্য হবে ৭ একক। কারণ ২ + ৫ = ৭। বিয়োগ বিয়োগ হলো যোগের বিপরীত প্রক্রিয়া, যা প্রতীকটির দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। বিয়োগে দুটি সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য অর্থাৎ বিয়োগফল (D) তথা বিয়োজন (M) বিয়োগ বিয়োজ্য (S) বের করা হয়: । ইতিপূর্বে প্রতিষ্ঠিত যোগের অলোকে এটা বলতে হয় যে, বিয়োগফল হলো সেই সংখ্যা, যার সাথে বিয়োজ্য যোগ করা হলে বিয়োজন সংখ্যাটি পাওয়া যায়: ধনাত্মক গাণিতিক যুক্তির ক্ষেত্রে   এবং -এর এই বৈশিষ্ট্য থাকবে: বিয়োজন বিয়োজ্যের চেয়ে বড় হলে বিয়োগফল  ধনাত্মক হবে। যদি বিয়োজন বিয়োজ্যের চেয়ে ছোট হয়, তাহলে বিয়োগফল  ঋণাত্মক হবে। কোন ক্ষেত্রে যদি বিয়োজন ও বিয়োজ্য সমান হয়, তাহলে বিয়োগফল শূন্য হবে। বিয়োগের প্রক্রিয়া বিনিময় ও সংযোগ বৈশিষ্ট্যের কোনোটিই মানে না। এই কারণে, আধুনিক বীজগণিতে যোগের বিপরীত এই প্রক্রিয়া তথা বিয়োগকে বিপরীত উপাদানের ধারণার সূচনার সুবিধার্থে প্রায়ই বাতিল করা হয় এবং -এর অধীনে চিত্রায়িত করা হয়। এক্ষেত্রে, বিয়োগকে বিয়োজনের সাথে বিয়োজ্যের যোগাত্মক বিপরীতের যোগরূপে গণ্য করা হয়, যেখানে, । বিয়োগের দ্বিমিক ক্রিয়া বাতিলের তাৎক্ষণিক ফল হিসেবে যেকোনো নির্দিষ্ট সংখ্যার যোগাত্মক বিপরীতের আবির্ভাব ঘটার মাধ্যমে এবং তাৎক্ষণিকভাবে পার্থক্যের ধারণার অ্যাক্সেস হ্রাস পাওয়ার মাধ্যমে "নগণ্য ইউনারি অপারেশনের" সূচনা ঘটে, ঋণাত্মক যুক্তির অন্তর্ভুক্তি করা হলে যা সম্ভাব্যরূপেই একটি বিভ্রান্তিকর বিষয়। সংখ্যার যেকোনো উপস্থাপনার ক্ষেত্রে ফলাফল গণনার জন্য কিছু পদ্ধতি রয়েছে। প্রক্রিয়ার নির্বাহ বা প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কয়েকটি বিশেষরকম জুতসই ও একটি অপারেশনের জন্য সক্রিয়। সামান্য এদিক-সেদিক করলে সেগুলো অন্য অপারেশনগুলোতেও একইরকম। উদাহরণস্বরূপ, ডিজিটাল কম্পিউটার যোগের সক্রিয় সার্কিট ব্যবস্থাকে (adding-circuitry) পুনর্ব্যবহার করতে পারে এবং একটি বিয়োগের বাস্তবায়ন বা সম্পাদনার জন্য অতিরিক্ত সার্কিট সংরক্ষণ করতে পারে। যোগাত্মক বিপরীত-এর উপস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত দুইয়ের পূরক বা two's complement (সেকেন্ড কমপ্লিমেন্ট) পদ্ধতির প্রয়োগের মাধ্যম, এই সার্কিট হার্ডওয়্যারে বাস্তবায়ন বা সম্পাদনা করা অত্যন্ত সহজ। নির্দিষ্ট শব্দ-দৈর্ঘ্যের সংখ্যার সীমাকে অর্ধেক করার প্রক্রিয়াকে ট্রেড-অফ বলা হয়। বকেয়া এবং প্রদানকৃত অর্থের পরিমাণ জেনে সঠিকভাবে এর পরিবর্তনের পরিমাণ বের করার একটি পদ্ধতি হলো কাউন্টিং আপ পদ্ধতি (counting up method), যা অতীতে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছিল। সুস্পষ্টতই, এই পদ্ধতিতে পার্থক্যের পরিমাণ (অর্থাৎ অর্থের পরিবর্তনের পরিমাণ) বের করা হয় না। উদাহরণ হিসেবে ধরাযাক, Q পরিমাণ অর্থ পরিশোধের জন্য P পরিমাণ অর্থ এমনভাবে দেওয়া হলো যেখানে, P-এর পরিমাণ Q-এর চেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে, সরাসরি P − Q = C বিয়োগটি না করে এবং C অর্থের পরিবর্তনের কাউন্টিং আউট বের না করে, বরং Q-এর আগের হিসাব দিয়ে অর্থের পরিমাণের কাউন্ট আউট শুরু করা হয় এবং P-এ না পৌঁছানো পর্যন্ত মুদ্রার হিসাব ধাপে ধাপে চালিয়ে যাওয়া হয়। কাউন্ট আউটকৃত অর্থের পরিমাণ অবশ্যই P − Q এর অন্তরফলের সমান হবে। তাসত্ত্বেও এই পদ্ধতিতে P − Q বিয়োগটি কিন্তু একেবারেই করা হয়নি এবং এই পদ্ধতিটা P − Q এর কথাও বলে না। গুণ গুণ হলো পাটিগণিতে ব্যবহৃত দ্বিতীয় মৌলিক গাণিতিক ক্রিয়া, যাকে ও প্রতীক দুটির মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। যোগের মতো গুণও দুটি সংখ্যাকে একটি একক সংখ্যায় রূপান্তর করে, যাকে বলা হয় গুণফল। যে দুটি সংখ্যার ওপর এই প্রক্রিয়াটি প্রয়োগ করা হয় তাদেরকে বলা হয় গুণ্য ও গুণক। মূলত গুণ্য ও গুণকের উভয়কেই গুণজ বা উৎপাদক (factors) সাধারণ নামগুলো দিয়েও সম্বোধন করা হয়। গুণকে একটি স্কেলিং অপারেশনরূপে দেখা যেতে পারে। সংখ্যাকে যদি কোনো রেখা বরাবর স্থাপিত কল্পনা করা হয়, তাহলে ১-এর চেয়ে বড় একটি সংখ্যা (ধরাযাক x) দ্বারা গুণনকে, ০ থেকে সবকিছুর সুষমভাবে সম্প্রসারিত হওয়ার অনুরূপ কল্পনা করা যায়, যেখানে এই সম্প্রসারণ এমনভাবে ঘটে যে, স্বয়ং সংখ্যাটি x-এর অবস্থানের দিকে সম্প্রসারিত হয়। একইভাবে, ১-এর চেয়ে ছোট একটি সংখ্যা দ্বারা গুণ করাকে ০-এর দিকে সংকোচনরূপে কল্পনা করা যেতে পারে, যেখানে এই সংকোচন এমনভাবে সম্পন্ন হয় যেন, ১ সংখ্যাটি গুণজটির দিকে ধাবিত হয়। পূর্ণসংখ্যার গুণনকে আরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যেতে পারে, যেখানে এই ধারণাটি পূর্ণসংখ্যার পাশাপাশি মূলদ সংখ্যার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও, এটি অন্যান্য বাস্তব সংখ্যার বেলায় খুব সহজভাবে ব্যবহারের উপযুক্ত নয়। এই দৃষ্টিকোণের আলোকে, গুণকে পুনঃপুন যোগ হিসেবে গণ্য করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, গুণন প্রক্রিয়াটি একটি -কে বার যোগ করার অনুরূপ অথবা, এটি একটি -কে বার যোগ করার অনুরূপ, যেখানে উভয় ক্ষেত্রেই ফলাফল বের হয় একই। গণিত শিক্ষণের ক্ষেত্রে গুণের এই দৃষ্টান্তগুলোর (paradigm) উপকারিতার ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে। যোগের মতো গুণও বিনিময় ও সংযোগবিধি মেনে চলে, উপরন্তু গুণের প্রক্রিয়া যোগ ও বিয়োগের বণ্টন বিধিও মেনে চলে। এছাড়াও গুণ সূচক বিধিও মেনে চলে। যেকোনো সংখ্যাকে ১ দ্বারা গুণ করলে যেহেতু একই সংখ্যা পাওয়া যায়, তাই গুণাত্মক অভেদ যে সংখ্যাটি হবে তা হলো ১। শূন্য (০) ব্যতীত যেকোনো সংখ্যার গুণাত্মক বিপরীত হলো ঐ সংখ্যারই ব্যাস্তানুপাত, কারণ যেকোনো সংখ্যার ব্যাস্তানুপাতকে ঐ সংখ্যাটি দ্বারা গুণ করলে গুণাত্মক অভেদ ১ পাওয়া যাবে। ০ হলো একমাত্র সংখ্যা যার গুণাত্মক বিপরীত নেই এবং যেকোন সংখ্যাকে ০ দ্বারা গুণ করলে পুনরায় ০ হবে। কোনো কোনো পণ্ডিতের মতে ০ সংখ্যাটি সংখ্যার গুণাত্মক গ্রুপেরর সদস্য নয়। a এবং b-এর গুণফলকে আকারে অথবা, আকারে লেখা হয়। a এবং b রাশিদুটি যদি কোনো অঙ্ক না হয়, অর্থাৎ এগুলো শুধু চলককে নির্দেশ করে, সেক্ষেত্রে একটি সাধারণ সংযোজন পদ্ধতিতে অর্থাৎ, রাশিগুলো পাশাপাশি বসিয়ে গুণফলটি লেখা হয়: ab। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ভাষায় এবং সফ্টওয়্যার প্যাকেজগুলোতে (যেক্ষেত্রে কীবোর্ডে সাধারণভাবে উপলব্ধ অক্ষরগুলোই কেবল ব্যবহারের সুযোগ থাকে), গুণকে প্রায়শই একটি তারকাচিহ্ন দিয়ে লেখা হয়: a * b। বিভিন্ন ধাচের সংখ্যার ক্ষেত্রে গুণ প্রক্রিয়াটির বাস্তবায়নকারী অ্যালগরিদমগুলো যোগের প্রক্রিয়ার তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল এবং শ্রমসাধ্য। হাতে-কলমে হিসাব-নিকাশের (manual computation) এসব সহজসাধ্যতা নির্ভর করে গুণজকে একক স্থানীয় মানে ভেঙে ফেলার ওপর ও পুনঃপুনঃ যোগ করার ওপর, অথবা এগুলো নির্ভর করে গাণিতিক সারণী ও স্লাইড স্ক্যালের ব্যবহারের ওপর। এর ফলে, গুণের মানচিত্রায়ন নির্ভর করে যোগের ওপর এবং তদ্বিপরীতভাবে যোগের মানচিত্রায়ন নির্ভর করে গুণের মানচিত্রায়নের ওপর। এই পদ্ধতিগুলো সেকেলে আর বহনযোগ্য যন্ত্রাংশসমূহ (mobile devices) ধীরে ধীরে এগুলোর জায়গা দখল করে নিচ্ছে৷ কম্পিউটার সিস্টেম সংখ্যার যে বিভিন্ন ধাচসমূহ (number format) সমর্থন করে, কম্পিউটারে সেগুলোর গুণ ও ভাগ প্রক্রিয়ার বাস্তবায়নের জন্য নানাবিধ অত্যাধুনিক, বাস্তবধর্মী ও পরিশীলিত (sophisticated) এবং অত্যন্ত কার্যকরভাবে এবং সুচারুভাবে প্রয়োগকৃত (highly optimized) অ্যালগরিদমসমূহ ব্যবহার করা হয়। ভাগ ভাগকে এবং প্রতীকদুটির মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। ভাগ আবশ্যিকভাবেই গুণের বিপরীত প্রক্রিয়া। ভাগের মাধ্যমে ভাগফল তথা ভাজ্য ভাগ ভাজক বের করা হয়। সাধারণ নিয়মাবলির আলোকে ভাজ্যকে শূন্য দ্বারা ভাগ একটি অসংজ্ঞায়িত বিষয়। স্বতন্ত্র ধনাত্মক সংখ্যার ক্ষেত্রে যদি ভাজ্য ভাজক অপেক্ষা বড় হয়, তাহলে ভাগফল ১-এর চেয়ে বড় হবে; অন্যথায়, ভাগফল হবে ১-এর চেয়ে ছোট অথবা ১-এর সমান। ঋণাত্মক সংখ্যার ক্ষেত্রে এধরনেরই একটি নিয়ম ব্যবহার করা হয়। ভাগফলকে ভাজক দ্বারা গুণ করা হলে সর্বদা ভাজ্য বের হবে। ভাগের প্রক্রিয়া বিনিময় বিধি ও সংযোগ বিধির কোনোটিই মানে না। একারণে, -এর ক্ষেত্রে যেমনটা ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেরূপভাবেই আধুনিক বীজগণিতে ভাগের প্রক্রিয়াকে, গুণের বিপরীত উপাদানটির সুবিধার্থে অর্থাৎ গুণের বিপরীত উপাদানের পক্ষে বর্জন করা হয়, যেমনটা -এর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। এই কারণে, ভাগ হলো ভাজকের ব্যাস্তানুপাত তথা গুণাত্মক বিপরীতের সাথে ভাজ্যের গুণ, যেখানে এই গুণাত্মক বিপরীতটি একটি গুণজরূপে ভূমিকা পালন করে। আলোচনা অনুসারে, ভাগের প্রক্রিয়াকে লেখা যায় এভাবে: । স্বাভাবিক সংখ্যার ভাগের ক্ষেত্রে, ইউক্লিডীয় ভাগ নামে একটি ভিন্ন কিন্তু সম্পর্কযুক্ত একটি ধারণারও দেখা যায়, যেখানে স্বাভাবিক সংখ্যা -কে (লব) একটি স্বাভাবিক সংখ্যা  (হর) দ্বারা "ভাগ করা" হলে দুটি সংখ্যা বের হয়: যার প্রথমটি হবে একটি স্বাভাবিক সংখ্যা (ভাগফল), এবং অপরটি হবে ভিন্ন আরেকটি স্বাভাবিক সংখ্যা (ভাগশেষ), যাতে করে এবং হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে (যার মধ্যে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এবং উচ্চতর পাটিগণিতও রয়েছে), ভাগের প্রক্রিয়াকে ভাগশেষের ক্ষেত্রে ভিন্ন আরেকভাবে সম্প্রসারণ করা হয়। এই পদ্ধতিটিকে সচরাচর স্বতন্ত্র একটি প্রক্রিয়ারূপে গণ্য করা হয়, যাকে মডিউলো অপারেশন নামে অভিহিত করা হয় এবং একে চিহ্নিত করা হয় প্রতীকটির দ্বারা অথবা শব্দটির দ্বারা। তবে এই পদ্ধতিটিকে কখনো কখনো "divmod" অপারেশনের একটি দ্বিতীয় আউটপুটরূপেও গণ্য করা হয়। উভয় ক্ষেত্রেই, মডুলার পাটিগণিতের প্রয়োগ-ক্ষেত্রের একটি বৈচিত্র্য রয়েছে। ভাগের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার (যেমন: ফ্লোর ভাগ, ট্রাঙ্কেটেড ভাগ, ইউক্লিডীয় ভাগ ইত্যাদি) বাস্তবায়ন নির্ভর করে মডুলাসের ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবায়নের ওপর। পাটিগণিতের মৌলিক উপপাদ্য পাটিগণিতের মৌলিক উপপাদ্য হচ্ছে এমন একটি উপপাদ্য যেখানে, একটি পূর্ণ সংখ্যাকে মৌলিক সংখ্যাসমূহের গুণফল আকারে উপস্থাপন করা হয়। এই উপপাদ্য অনুসারে, ১-এর চেয়ে বড় যেকোনো পূর্ণসংখ্যাকে মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা হলে কেবল একটিই (অনন্য) মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ পাওয়া যাবে, যদি উৎপাদকে বিশ্লেষণটিতে উৎপাদকগুলোর ক্রমকে অগ্রাহ্য করা হয়। অর্থাৎ, ১-এর চেয়ে বড় যেকোনো পূর্ণসংখ্যার একটি অনন্য মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২৫২-কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা হলে শুধু একটি মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ পাওয়া যাবে: ২৫২ = ২ × ৩ × ৭ ইউক্লিডের এলিমেন্টসে প্রথম এই উপপাদ্যটি উপস্থাপন করা হয়েছিল এবং এতে এর একটি আংশিক প্রমাণও দেওয়া হয়েছে, যাকে ইউক্লিডের লেমা বলা হয়। পাটিগণিতের মৌলিক উপপাদ্যটির প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রমাণ দেন জার্মান গণিতবিদ কার্ল ফ্রেডরিখ গাউস। ১-কে যেসব কারণে মৌলিক সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, পাটিগণিতের মৌলিক উপপাদ্য হলো সেই কারণগুলোর মধ্যে একটি। অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরাটোস্থেনসের ছাকনি এবং স্বয়ং মৌলিক সংখ্যার সংজ্ঞা। সংজ্ঞানুসারে, মৌলিক সংখ্যা হলো, ১-এর চেয়ে বড় এমন একটি স্বাভাবিক সংখ্যা যাকে ঐ সংখ্যাটির চেয়ে ছোট দুটি স্বাভাবিক সংখ্যার গুণফল আকারে করে উপস্থাপন করা যায় না। দশমিক সংখ্যার পাটিগণিত সাধারণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে, বলতে মূলত আরবি সংখ্যা সহযোগে লিখিত সংখ্যাপদ্ধতিকে বোঝানো হয়, যেখানে এই সংখ্যাগুলো (আরবি সংখ্যা) দশভিত্তিক ("দশমিক") একটি স্থানিক অঙ্কপাতনের (positional notation) অঙ্করূপে ব্যবহার করা হয়। এমনকি, ১০-এর ঘাতভিত্তিক গ্রিক, সিসিলীয়, রোমান অথবা চৈনিক সংখ্যাগুলোকেও ধারণাগতভাবে "দশমিক অঙ্কপাতন" অথবা "দশমিক পদ্ধতিতে সংখ্যার উপস্থাপন" হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। মৌলিক চারটি গাণিতিক ক্রিয়ার (যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ) জন্য আধুনিক পদ্ধতির পরিকল্পনার পেছনে সর্বপ্রথম ভারতীয় গণিতবিদ ব্রহ্মগুপ্ত তার বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করেন। এটি মধ্যযুগীয় ইউরোপে "মোডাস ইন্ডোরাম" অর্থাৎ ভারতীয়দের পদ্ধতি নামে পরিচিত ছিল। অবস্থানের ভিত্তিতে অঙ্কপাতন তথা স্থানিক অঙ্কপাতন "স্থানীয় মানের মাধ্যমে অঙ্কপাতন" (place-value notation) নামেও পরিচিত। শর্তাধীনে যেকোনো সংখ্যা -কে আকারে প্রকাশ করা হলে -এর মানকে ঐ সংখ্যাটির মানানুক্রম (orders of magnitude) বলা হয়, যা হবে শূন্যসহ যেকোনো পূর্ণ সংখ্যা। পৃথক পৃথক মানানুক্রমের (যেমন: এককের ঘর, দশকের ঘর, শতকের ঘর ইত্যাদি) জন্য একই প্রতীক সহযোগে, উপরন্তু ভগ্নাংশসমূহ (যেমন: দশমাংশের ঘর, শতাংশের ঘর ইত্যাদি) নির্দেশের ক্ষেত্রেও দশমিক বিন্দুসহকারে ঐ প্রতীকগুলোকেই কাজে লাগানোর মাধ্যমে কোনো সংখ্যার উপস্থাপনকেই অর্থাৎ এইভাবে কোনো সংখ্যাকে সংকেতে রূপান্তরকেই (encoding) স্থানিক অঙ্কপাতন নামে নির্দেশ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৫০৭.৩৬ সংখ্যাটির অঙ্কপাতনে দেখা যায় এটি ৫ টি শতক (১০২), ০ টি দশ বা দশক (১০১), ৭ টি একক (১০০), ৩ টি দশমাংশ (১০−১) এবং ৬ টি শতাংশের (১০−২) সমষ্টিকে নির্দেশ করছে। ভারতীয়দের পূর্বে অন্য কোনো সভ্যতার ইতিহাসে স্থানিক অঙ্কপাতনে শূন্যকে ঠাই দেওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায় না। অন্যান্য অঙ্কের ন্যায় শূন্যকেও স্থানিক অঙ্কপাতনে স্থান (যেমন: দশমিক পদ্ধতির ক্ষেত্রে একক, দশক, শতক ইত্যাদি ঘরে) দিয়ে সংখ্যায় একে প্রয়োগের ধারণা, উপরন্তু কোনো সংখ্যাকে ০ দ্বারা গুণ এবং সংখ্যার সাথে ০ যোগের সংজ্ঞা যেমন অত্যাবশ্যক, তেমনইভাবে এই অঙ্কপাতনে অন্যান্য মৌলিক অঙ্কের মতোই ০-কেও একটি সংখ্যারূপে গণ্য করার ধারণা থাকা অত্যাবশ্যক। সংখ্যায় নির্দিষ্ট স্থানে  ০-এর প্রয়োগের অর্থাৎ শূন্য যে স্থান দখল করতে পারে তার এবং এর মাধ্যমে সংখ্যার উপস্থাপনের নিমিত্তে একটি স্থানিক অঙ্কপাতনের প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ৪৫৮ খৃস্টাব্দের লোকবিভাগ শিরোনামের একটি ভারতীয় ও জৈন পুস্তকে। আর কেবল ১৩শ শতকের প্রথম ভাগই ছিল সেই সময় যখন এই ধারণাগুলো আরব দুনিয়ার পণ্ডিতদের মাধ্যমে বাহিত হয়ে ফিবোনাচ্চির হাত ধরে ইউরোপে পরিচিতি লাভ করে, যেখানে ফিবোনাচ্চি এই কাজটি করেছিলেন হিন্দু-আরবি সংখ্যা পদ্ধতি প্রয়োগ ঘটানোর মাধ্যমে। এই ধরনের লিখিত সংখ্যা সহযোগে গাণিতিক হিসাব সম্পাদনের জন্য ব্যবহৃত সকল নিয়ম নিয়েই অ্যালগোরিজম গড়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, যোগের প্রক্রিয়ায় দুটি অবাধ সংখ্যার যোগফল বা সমষ্টিই বের করা হয়। ডান থেকে বাম দিকে অগ্রসর হয়ে প্রতিটি সংখ্যার একই স্থানে (অর্থাৎ, একক, দশক, শতক ইত্যাদির ঘরে) থাকা প্রতিটি স্বতন্ত্র অঙ্ক যোগ করে, এবং একইভাবে পরবর্তী স্থানের (বাম সারির) অঙ্কগুলো যোগের মাধ্যমে এই ফলাফল গণনা করা হয়। দশটি সারি ও দশটি কলামযুক্ত যোগের সারণী থেকে প্রতিটি যোগফলের জন্য সকল সম্ভাব্য মান পাওয়া যায়। যদি কোন যোগফলের মান  ৯-এর চেয়ে বেশি হয়, তবে যোগফলটি দুটি অঙ্ক সহযোগে উপস্থাপন করা হয়। সর্বডানের অঙ্কটি হলো বর্তমান স্থানের মান এবং পরবর্তী ধাপে বামদিকের অঙ্কগুলোর যোগের ফল দ্বিতীয় (সর্ববাম) অঙ্কের মানের সমপরিমাণ বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় অঙ্কটি সর্বদা এক হবে যদি না এটি শূন্য হয়। এই সমন্বয়কে একটি হাতে রাখা ১ বলা হয় ("carry" of the value 1)। দুটি অবাধ সংখ্যা গুণের প্রক্রিয়াটি যোগের প্রক্রিয়ার অনুরূপ। দশটি সারি ও দশটি কলামযুক্ত একটি গুণের সারণীতে প্রতিটি জোড়া অঙ্কের গুণফলকে তালিকাভুক্ত করা হয়। যদি এক জোড়া অঙ্কের গুণফল ৯-এর বেশি হয়, তাহলে সমন্বয়ের জন্য হাতে রাখা মান পরবর্তী ধাপের বামদিকের অঙ্কগুলোর গুণফলে দ্বিতীয় (সর্ববাম) অঙ্কের মানের সমপরিমাণ বৃদ্ধি ঘটায়, যেখানে দ্বিতীয় অঙ্কটি () পর্যন্ত যেকোনো মানের হবে। আরও কয়েকটি ধাপ অগ্রসর হলে চূড়ান্ত ফল বের হবে। বিয়োগ ও ভাগের জন্যও একই ধরনের কৌশল বিদ্যমান। সন্নিহিত অঙ্ক দুটির মানগুলোর মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান, সেই সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে গুণের জন্য সঠিক একটি প্রক্রিয়া তৈরির ব্যাপারটি। অঙ্কবাচক সংখ্যায় বিদ্যমান যেকোনো একটি একক অঙ্কের মান ঐ সংখ্যায় তার অবস্থানের উপর নির্ভর করে। উপরন্তু, বাম দিকের প্রতিটি স্থান এর ডানদিকের সন্নিহিত স্থানের চেয়ে দশগুণ বড় একটি মান উপস্থাপন করে। গাণিতিক ভাষায় বলা যায়, দশমিক সংখ্যার বাম থেকে ডানে গেলে ভিত্তি ১০-এর সূচক এক করে বাড়ে এবং বাম থেকে ডানে গেলে তা এক করে কমে। তাই, সংখ্যায় বিদ্যমান কোনো অবাধ অঙ্কের (স্থানীয়) মান পেতে হলে অঙ্কটিকে  10n আকারের মান দিয়ে গুণ করতে হয়, যেখানে  n হলো একটি পূর্ণসংখা। কোনো সংখ্যায় একটি একক অঙ্ক যে সমস্ত সম্ভাব্য স্থান দখল করে তাদের মানগুলোর তালিকাকে } আকারে লেখা যায়, যা শব্দে প্রকাশ করলে হবে {..., হাজার, শতক, দশক, একক, দশমাংশ, শতাংশ, সহস্রাংশ,...}। এই তালিকার যেকোনো মানকে বারবার ১০ দ্বারা গুণ করা হলে যে পৃথক মানসমূহ পাওয়া যাবে সেগুলোও এই তালিকায় বিদ্যমান। গাণিতিক পরিভাষায় এই বৈশিষ্ট্যটিকে ক্লোজার নামে সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং পূর্ববর্তী তালিকাটিকে গুণের অধীনে বদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। পূর্ববর্তী কৌশলটি গুণের ফলাফল সঠিকভাবে বের করার ক্ষেত্রে ভিত্তিরূপে কাজ করে। সংখ্যাতত্ত্বের ব্যবহারের একটি উদাহরণ হলো এই ফলাফলটি। সংযুক্ত এককের গণিত সংযুক্ত (Compound) একক হলো রাশির পরিমাপের সেই একক যেখানে রাশিটিকে কেবল একটি এককের দ্বারা প্রকাশ না করে একাধিক এককের সমন্বয়ে প্রকাশ করা হয়। যেমন: ২.৫০ টাকা না লিখে যদি ২ টাকা ৫০ পয়সা লেখা হয় তবে এটাকে সংযুক্ত এককে প্রকাশ বলা যায়, পক্ষান্তরে ২.৫০ টাকা হলো একটি অনন্য এককে (single unit) প্রকাশ। ফুট ও ইঞ্চি; গ্যালন ও পিন্ট; পাউন্ড, শিলিং ও পেন্স এবং একইভাবে অন্যান্য মিশ্র ভিত্তিযুক্ত (mixed radix) রাশিসমূহের ওপর পাটিগাণিতিক প্রক্রিয়াদির প্রয়োগই হচ্ছে সংযুক্ত এককের গণিত। অর্থ এবং পরিমাপের এককের দশভিত্তিক অর্থাৎ দশমিক পদ্ধতি চালুর আগে বাণিজ্য ও শিল্পক্ষেত্রে সংযুক্ত এককের হিসাব ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হতো। মৌলিক পাটিগাণিতিক ক্রিয়াসমূহ সংযুক্ত এককের গণনায় ব্যবহৃত কৌশলগুলো বহু শতাব্দী ধরে বিকশিত হয়েছে, বিভিন্ন ভাষার অনেক পাঠ্যপুস্তকে যেগুলো ভালোভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। দশমিক সংখ্যার পাটিগণিত ও সংযুক্ত এককের পাটিগণিতের সংশ্লিষ্ট মৌলিক পাটিগাণিতিক ফাংশনে আরও তিনটি ফাংশনের প্রয়োগ করা হয়। এগুলো হলো: : এখানে একটি সংযুক্ত রাশিকে একক রাশিতে সংকুচিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, গজ, ফুট এবং ইঞ্চি একক তিনটির সমন্বয়ে পরিমাপকৃত দূরত্বকে কেবল ইঞ্চিতে রূপান্তর। : এটা হলো রিডাকশনের বিপরীত। এখানে পরিমাপের অনন্য একককে (single unit) একটি সংযুক্ত এককে রূপান্তর করা হয়। ৫০ সেরকে রূপান্তর হলো এককের সম্প্রসারণের একটি উদাহরণ। : সংযুক্ত এককের একটি সেটকে একটি আদর্শ আকারে রূপান্তরই আদর্শীকরণ। উদাহরণস্বরূপ, ""-কে "" লেখা হলো নর্মালাইজেশন। পরিমাপের বিভিন্ন একক, তাদের গুণিতক এবং তাদের উপগুণিতকগুলোর মধ্যে সম্পর্কজনিত যে জ্ঞান, তা সংযুক্ত এককের গণিতের জন্য একটি অপরিহার্য অংশ গঠন করেছে। সংযুক্ত এককের গণিতের মূলনীতিসমূহ সংযুক্ত এককের গণনার জন্য দুটি মৌলিক ধারা রয়েছে: : এখানে সংযুক্ত এককযুক্ত সমস্ত চলককে অনন্য এককের চলকে সংকোচন করা হয়, এরপর গণনা করা হয় এবং ফলাফলকে পুনরায় সংযুক্ত এককে সম্প্রসারণ করা হয়। এই পদ্ধতিটি স্বয়ংক্রিয় গণনার জন্য উপযুক্ত। এই পদ্ধতির একটি সাধারণ উদাহরণ হিসেবে মাইক্রোসফ্ট এক্সেলের মাধ্যমে সময়ের গণনার কথা বলা যায়, যেখানে সময়ের সকল প্রকার ব্যাপ্তিকে অভ্যন্তরীণভাবে দিনের এবং দিনের দশমিক আকারে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, কিন্ত ফলাফল দেখানো হয় দিন-ঘণ্টা-মিনিট-সেকেন্ড ইত্যাদি ব্যাপ্তি সহযোগে বিস্তারিতভাবে। : এখানে প্রতিটি একককে পৃথক-পৃথকভাবে নির্বাহ করা হয় এবং সমাধানটি এগোনোর সাথে সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে সমস্যাটির আদর্শীকরণ করা হয়। চিয়ারত গ্রন্থগুলোতে বিস্তারিতভাবে আলোচিত এই পদ্ধতিটি হাতে-কলমে অর্থাৎ ম্যানুয়াল পদ্ধতির গণনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। যোগের ক্ষেত্রে অনগোয়িং নর্মালাইজেশন পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়েছে এমন একটি উদাহরণ নীচে দেখানো হলো: এখানে যোগের প্রক্রিয়াটি ডান থেকে বামে চালনা করা হয়েছে এবং d দ্বারা পেনি, s দ্বারা সিলিং ও £ দ্বারা পাউন্ড নির্দেশ করা হয়েছে। এই যোগে প্রথমে পেনি যোগ করা হয়েছে, তারপরে শিলিং এবং পাউন্ড। "উত্তরের সারি"র নীচের যে সংখ্যাগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সামগ্রিক যোগ প্রক্রিয়াটির মধ্যবর্তী ফলাফল নির্দেশ করছে। পেনির কলামের সংখ্যাগুলো যোগ করা হলে মোট হয় ২৫। এক শিলিংয়ে  ১২ পেনি হওয়ায়  ২৫-কে ১২ দিয়ে ভাগ দিলে ভাগফল হয় ২, এবং ভাগশেষ হয় ১। ভাগশেষ ১-কে উত্তরের সারিতে লেখা হয়েছে এবং ভাগফল হয় ২-কে (হাতে রাখা মান) শিলিংয়ের কলামে স্থানান্তর করা হয়েছে। এরপর শিলিংয়ের কলামের মানগুলো যোগ করলে মোট হয় ২৬; এর সঙ্গে পূর্বের হাতে রাখা মানটি (ভাগফল ২) যোগ করা হলে অনাদর্শ মোট হয় ২৮। যেহেতু, ২০ সিলিংয়ে ১ পাউন্ড হয়, তাই আগের মতোই এবার  ২৮-কে ২০ দিয়ে ভাগ দিলে বের হয় ১ পাউন্ড (হাতে) এবং অবশিষ্ট থাকে ৮ সিলিং, যা উত্তরের সারিতে সিলিংয়ের কলামে বসেছে। সবশেষে পাউন্ডের কলামের মানগুলো যোগ করলে পাওয়া যায় ১২। এর সঙ্গে হাতে রাখা ১ যোগ করলে অনাদর্শ মোট হয় ১৩ পাউন্ড। যেহেতু, এই গণনাটিতে ব্যবহৃত এককগুলোর মধ্যে পাউন্ড সবচেয়ে বড় একক, তাই এরপর আর হাতে রাখার দরকার হয়নি এবং "অনাদর্শ মোট  ১৩"-কে উত্তরের সারিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। উদাহরণরূপে বেছে নেওয়া এই গণনাটিতে সহজবোধ্যতার স্বার্থে ফার্দিংকে (ব্রিটিশ মুদ্রাবিশেষ) বাদ দেওয়া হয়েছে। পাটিগাণিতিক প্রক্রিয়াসমূহের প্রয়োগ বিভিন্ন কাজে সংযুক্ত এককগুলোর ব্যবহারের ক্ষেত্রে, বিশেষতঃ এগুলোর বাণিজ্যিক প্রয়োগের নিমিত্তে সহায়তার উদ্দেশ্যে ১৯শ এবং ২০শ শতাব্দীতে বিভিন্ন সহায়ক উপকরণের উন্নয়ন ঘটানো হয়েছিল। এসব সহায়ক উপকরণের মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত ছিল যান্ত্রিক ক্যাশ রেজিস্টারসমূহ, যেগুলো যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতে পাউন্ড, শিলিং, পেনি এবং ফার্দিংয়ের সমন্বয়ের জন্য অভিযোজন করা হয়েছিল। সবচেয়ে প্রচলিত সহায়ক উপকরণগুলোর মধ্যে আরেকটি ছিল রেডি রেকনার। রেডি রেকনার আদতে একপ্রকার মুদ্রিত বই, যেখানে ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে নিয়মমাফিক বিভিন্ন গণনা যেমন বিভিন্ন অঙ্কের মুদ্রার শতকরা বা গুণিতকের ফলাফল কী হবে সেগুলো তালিকাভুক্ত করা থাকত। ১৫০ পৃষ্ঠার সাধারণ এই পুস্তিকায় "এক ফার্দিং থেকে শুরু করে এক পাউন্ডের বিভিন্ন মূল্যমানেরর এক থেকে দশ হাজার" পর্যন্ত গুণিতক তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। মানুষ বহু বছর ধরেই সংযুক্ত এককের গণনার জটিল প্রকৃতির কথা জানত। ১৫৮৬ সালে ফ্লেমিশ গণিতবিদ সাইমন স্টিভোন একটি প্যাম্ফলেট প্রকাশ করেছিলেন। ভবিষ্যতে যে দশমিক পদ্ধতির মুদ্রা, পরিমাপ ও ওজন যে চালু হবেই হবে তার সর্বজনীন ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ডি থিয়েন্ডে ("দশম") নামের তার এই ছোট পুস্তিকায়। আধুনিক যুগে মাইক্রোসফ্ট উইন্ডোজ সেভেন অপারেটিং সিস্টেম চালিত ক্যালকুলেটরসহ একক রূপান্তরের অনেক প্রোগ্রামেই সংযুক্ত একককে সম্প্রসারিত আকারে না দেখিয়ে বরং দশমিক ব্যবহার করে সংকুচিত আকারে একটি অনন্য একক দিয়ে প্রদর্শন করা হয়। যেমন: না দেখিয়ে বরং "২.৫ ফুট" দেখানো হয়। সংখ্যাতত্ত্ব ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত "পাটিগণিত"-এর প্রতিশব্দরূপে সংখ্যাতত্ত্ব শব্দটি ব্যবহৃত হতো। পাটিগণিতের এই সমস্যাগুলো মৌলিক গাণিতিক প্রক্রিয়াগুলোর সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত ছিল। আর এগুলো ছিল মৌলিকত্ব, বিভাজ্যতা এবং ফের্মার শেষ উপপাদ্যের মতো পূর্ণসংখ্যার সমীকরণসমূহের সমাধান বিষয়ক। এটা লক্ষ্য করা গেছে যে, অবস্থার দিক থেকে এই সমস্যাগুলোর বেশিরভাগই খুবই প্রাথমিক পর্যায়ের হলেও এগুলো খুব কঠিন এবং গণিতের অন্যান্য অনেক শাখার ধারণা এবং পদ্ধতির সাথে জড়িত খুব গভীর গণিত ছাড়া এগুলোর সমাধান করা সম্ভব নয়। এই বিষয়টি সংখ্যাতত্ত্বের নতুন নতুন শাখা যেমন: বিশ্লেষণী সংখ্যাতত্ত্ব, বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্ব, ডিওফ্যান্টাইন জ্যামিতি এবং পাটিগাণিতিক বীজগণিতীয় জ্যামিতির উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেয়। ফের্মার শেষ উপপাদ্যের ওপর ওয়াইলসের প্রমাণ হলো অত্যাধুনিক ও বাস্তবধর্মী (sophisticated) পদ্ধতিগুলোর প্রয়োজনীয়তার একটি সাধারণ উদাহরণ, যা প্রাথমিক পাটিগণিতের জন্য উল্লেখ করা যেতে পারে এমন সমস্যাগুলোর সমাধানের ক্ষেত্রে পাটিগণিতের চিরায়ত পদ্ধতিগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। শিক্ষার অংশরূপে পাটিগণিত পদ্যে রচিত পাটিগণিতের একটি সমস্যা এ রকম: চৌবাচ্চা ছিল এক প্রকাণ্ড বিশাল দুই নলে জল আসে সকাল-বিকাল এক নলে পূর্ণ হতে বিশ মিনিট লাগে অন্য নলে পূর্ণ হয় না আধা ঘণ্টার আগে চৌবাচ্চা পূর্ণের সময় করোগো নির্ণন দুই নল খুলে দিলে লাগে কতক্ষণ। গণিতে হাতেখড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে সচরাচর স্বাভাবিক সংখ্যা, পূর্ণ সংখ্যা ও ভগ্নাংশের পাটিগণিতের অ্যালগরিদমের ওপর এবং দশমিক পদ্ধতির স্থানীয় মানের দ্বারা লিখিত দশমিক সংখ্যার পাটিগণিতের অ্যালগরিদমের ওপর অর্থাৎ উল্লেখিত সংখ্যাগুলো হিসাব করার ওপর ভালভাবে নজর দেওয়া হয়। জ্ঞানের এই শাখা কখনও কখনও অ্যালগরিজম (algorism) নামেও পরিচিতি পেয়ে থাকে। এই অ্যালগরিদমগুলোর দুঃসাধ্যতা এবং নিরুৎসাহী দৃষ্টিগোচরতা শিক্ষাবিদমহলে এই পাঠ্যক্রমকে নিয়ে প্রশ্ন করার দীর্ঘ এক সুযোগ এনে দেয়। আরও কেন্দ্রীয় এবং স্বজ্ঞাত যে গাণিতিক ধারণাগুলো অতীতে শেখানো হতো সেগুলোর পক্ষে শিক্ষাবিদদের দীর্ঘদিন ওকালতি করার পেছনের কারণও ছিল এই দুঃসাধ্যতা এবং নিরুৎসাহী দৃষ্টিগোচরতা। নিউ ম্যাথমেটিক্স নামের নতুন এক পদ্ধতির উদ্ভাবন ছিল এই ধারাবাহিকতার অন্তর্ভুক্ত একটি উল্লেখযোগ্য আন্দোলন, যা স্পুটনিক সংকটের অল্পকিছুদিন পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা কাঠামোয় পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেট তত্ত্বের স্বতঃসিদ্ধ যে বিকাশ, তার আলোকে পাটিগণিত শেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল গণিত শেখানোর নতুন এই নিয়মে, যা আবার ছিল উচ্চতর গণিতের প্রচলিত রীতির অনুরূপ। এছাড়াও, যাকাত ও মুসলিম উত্তরাধিকার সম্পর্কিত আইনসমূহের প্রয়োগ সংক্রান্ত শিক্ষার কাজেও পাটিগণিতের প্রয়োগ ঘটেছিল মুসলিম পণ্ডিতদের হাত ধরে। আবদুল ফাত্তাহ আল দুমিয়াতি-এর দ্য বেস্ট অফ অ্যারিথমেটিক শিরোনামের একটি বইয়ে এ সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়েছে। বইটির শুরুতে গণিতের ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এর প্রয়োগ দেখানো হয়েছে পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে। বিস্তার আরও দেখুন বীজগণিত যোগাত্মক বিপরীত সংখ্যা সমান্তর প্রগমন বিনিময় বৈশিষ্ট্য পূর্ণ সংখ্যা সংখ্যারেখা তথ্যসূত্র সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি Cunnington, Susan, The Story of Arithmetic: A Short History of Its Origin and Development, Swan Sonnenschein, London, 1904 Dickson, Leonard Eugene, History of the Theory of Numbers (3 volumes), reprints: Carnegie Institute of Washington, Washington, 1932; Chelsea, New York, 1952, 1966 Euler, Leonhard, Elements of Algebra, Tarquin Press, 2007 Fine, Henry Burchard (1858–1928), The Number System of Algebra Treated Theoretically and Historically, Leach, Shewell & Sanborn, Boston, 1891 Karpinski, Louis Charles (1878–1956), The History of Arithmetic, Rand McNally, Chicago, 1925; reprint: Russell & Russell, New York, 1965 Ore, Øystein, Number Theory and Its History, McGraw–Hill, New York, 1948 Weil, André, Number Theory: An Approach through History, Birkhauser, Boston, 1984; reviewed: Mathematical Reviews 85c:01004 গণিত পাটিগণিত গণিত শিক্ষা মূল বিষয়ের নিবন্ধ
https://en.wikipedia.org/wiki/Arithmetic
Arithmetic
Arithmetic is an elementary branch of mathematics that studies numerical operations like addition, subtraction, multiplication, and division. In a wider sense, it also includes exponentiation, extraction of roots, and taking logarithms. Arithmetic systems can be distinguished based on the type of numbers they operate on. Integer arithmetic is about calculations with positive and negative integers. Rational number arithmetic involves operations on fractions of integers. Real number arithmetic is about calculations with real numbers, which include both rational and irrational numbers. Another distinction is based on the numeral system employed to perform calculations. Decimal arithmetic is the most common. It uses the basic numerals from 0 to 9 and their combinations to express numbers. Binary arithmetic, by contrast, is used by most computers and represents numbers as combinations of the basic numerals 0 and 1. Computer arithmetic deals with the specificities of the implementation of binary arithmetic on computers. Some arithmetic systems operate on mathematical objects other than numbers, such as interval arithmetic and matrix arithmetic. Arithmetic operations form the basis of many branches of mathematics, such as algebra, calculus, and statistics. They play a similar role in the sciences, like physics and economics. Arithmetic is present in many aspects of daily life, for example, to calculate change while shopping or to manage personal finances. It is one of the earliest forms of mathematics education that students encounter. Its cognitive and conceptual foundations are studied by psychology and philosophy. The practice of arithmetic is at least thousands and possibly tens of thousands of years old. Ancient civilizations like the Egyptians and the Sumerians invented numeral systems to solve practical arithmetic problems in about 3000 BCE. Starting in the 7th and 6th centuries BCE, the ancient Greeks initiated a more abstract study of numbers and introduced the method of rigorous mathematical proofs. The ancient Indians developed the concept of zero and the decimal system, which Arab mathematicians further refined and spread to the Western world during the medieval period. The first mechanical calculators were invented in the 17th century. The 18th and 19th centuries saw the development of modern number theory and the formulation of axiomatic foundations of arithmetic. In the 20th century, the emergence of electronic calculators and computers revolutionized the accuracy and speed with which arithmetic calculations could be performed.
1216
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%BF
জ্যামিতি
জ্যামিতি গণিতের একটি শাখা যেখানে আকার ও আকৃতি এবং পরিমান এতদসম্পর্কিত বিভিন্ন আঙ্গিকের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা হয়। জ্যামিতিকে স্থান বা জগতের বিজ্ঞান হিসেবে গণ্য করা যায়। পাটিগণিতে যেমন গণনা সংক্রান্ত আমাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করা হয়, তেমনি জ্যামিতিতে স্থান বা জগৎ নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়। প্রাথমিক জ্যামিতিকে কাজে লাগিয়ে দ্বি-মাত্রিক বিভিন্ন আকারের ক্ষেত্রফল ও পরিসীমা এবং ত্রিমাত্রিক বস্তুসমূহের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় করা সম্ভব। জ্যামিতিক বিশ্লেষণের পদ্ধতি জ্যামিতিতে কতগুলি সরল ধারণা ব্যবহার করে যুক্তিভিত্তিক জটিলতর কাঠামো গঠন করা হয়। এই সরল ধারণাগুলিকে মোটামুটি তিনটি বড় শ্রেণীতে ভাগ করা সম্ভব - অসংজ্ঞায়িত পদসমূহ, সংজ্ঞায়িত পদসমূহ এবং স্বতঃসিদ্ধসমূহ। অসংজ্ঞায়িত পদসমূহ জ্যামিতির কিছু কেন্দ্রীয় ধারণার কোন সরল সংজ্ঞা নেই। এই অসংজ্ঞায়িত ধারণাগুলির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হল বিন্দু, রেখা ও তলের ধারণা। এই মৌলিক ধারণাগুলি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত। একটি বস্তু কোথায়? - এই প্রশ্নের উত্তরে আমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট, স্থির অবস্থানের কথা চিন্তা করতে হয়। "বিন্দু" পদটি দিয়ে আমাদের এই স্বজ্ঞাভিত্তিক (intuitive) স্থির, নির্দিষ্ট অবস্থানের ধারণাকেই নির্দেশ করা হয়। অনেক ভৌত বস্তুই বিন্দুর ধারণা নির্দশ করে। যেমন কোন ব্লক আকৃতির বস্তুর কোনা, পেন্সিলের ডগা, কিংবা কাগজের উপর ফুটকি। এই জিনিসগুলিকে বিন্দু নামক মানসিক, বিমূর্ত ধারণাটির বাস্তব, মূর্ত প্রতিরূপ বা মডেল হিসেবে গণ্য করা হয়। একইভাবে একটি টানটান সুতা, টেবিলের ধার, পতাকাবাহী দণ্ড, ইত্যাদি পরপর সাজানো অনেকগুলি বিন্দুকে নির্দেশ করে। যদি কল্পনা করা যায় যে এই বিন্দুসারি দুই দিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত, তবে আমরা যে মানসিক ধারণাতে উপনীত হই, জ্যামিতিতে তার নাম দেয়া হয়েছে "রেখা"। আর "তল" পদটি কোন চ্যাপ্টা পৃষ্ঠ যেমন- মেঝে, টেবিলের উপরিভাগ, কিংবা ব্ল্যাকবোর্ড ইত্যাদি ভৌত বস্তু দিয়ে নির্দেশ করা যায়। কিন্তু আমাদেরকে কল্পনা করে নিতে হবে যে এটি চারিদিকে অসীম পর্যন্ত সম্প্রসারিত, অর্থাৎ রেখার যেমন কোন শেষবিন্দু নেই, ঠিক তেমনি তলের কোন ধার নেই। জ্যামিতির অন্যান্য অসংজ্ঞায়িত পদগুলি বিন্দু, রেখা ও তলের মধ্যে সম্পর্কের বর্ণনা দেয়। যেমন - "একটি রেখার উপর অবস্থিত একটি বিন্দু" বাক্যাংশটি একটি অসংজ্ঞায়িত সম্পর্ক। অর্থাৎ এটিকে আরও কোন সরলতর ধারণার সাহায্য নিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। সংজ্ঞায়িত পদসমূহ অসংজ্ঞায়িত পদগুলিকে একত্র করে অন্যান্য পদের সংজ্ঞা দেয়া সম্ভব, যেগুলিকে বলা হয় সংজ্ঞায়িত পদ। যেমন অসমরেখ বিন্দু বলতে সেইসব বিন্দুকে বোঝায় যারা একই রেখার উপর অবস্থিত নয়। একটি রেখাংশ বলতে বোঝায় কোন দুইটি নির্দিষ্ট বিন্দু ও এদের মধ্যবর্তী সমস্ত বিন্দু নিয়ে গঠিত কোন রেখার অংশ। আবার রশ্মি বলতে বোঝায় একটি আংশিক রেখাকে বোঝায় যার একটিমাত্র শেষবিন্দু আছে এবং বাকি সমস্ত বিন্দু ঐ শেষবিন্দু থেকে কোন এক দিকে অসীম পর্যন্ত প্রসারিত। সংজ্ঞায়িত পদগুলিকে একে অপরের সাথে এবং অসংজ্ঞায়িত পদের সাথে একত্র করে আরও অনেক পদের সংজ্ঞা দেয়া যায়। যেমন - কোণ বলতে দুইটি রশ্মিকে বোঝায় যাদের একটি সাধারণ শেষবিন্দু আছে। একইভাবে ত্রিভুজ ধারণাটিকে তিনটি অসমরেখ বিন্দু এবং এদের মধ্যে অবস্থানকারী রেখাংশের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা যায়। স্বতঃসিদ্ধসমূহ স্বীকার্য বা স্বতঃসিদ্ধগুলি হচ্ছে অপ্রমাণিত কিন্তু সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত কিছু অনুমান, যেমন - "দুইটি ভিন্ন বিন্দুর মধ্য দিয়ে একটি এবং কেবলমাত্র একটি রেখা গমন করতে পারে"। যে ব্যবস্থা বা সংশ্রয়ে বিন্দু, রেখা ও তল সম্পর্কিত কতগুলি বিরোধিতাহীন স্বতঃসিদ্ধ প্রস্তাব করা হয় এবং এই স্বতঃসিদ্ধগুলি থেকে বিভিন্ন উপপাদ্য প্রমাণ করা হয়, সেই সংশ্রয়কে একটি জ্যামিতিক ব্যবস্থা (বা সংক্ষেপে জ্যামিতি) বলা হয়। স্বতঃসিদ্ধসমূহের বিভিন্ন সেট ব্যবহার সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন জ্যামিতিক ব্যবস্থায় উপনীত হওয়া সম্ভব। যদি ভৌত স্থান বা জগতের অভিজ্ঞতার সাথে স্বতঃসিদ্ধগুলির মিল থাকে, তবে যৌক্তিকভাবে আশা করা যায় যে ঐ স্বতঃসিদ্ধগুলি ব্যবহার করে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তগুলিও ভৌত জগতের অভিজ্ঞতার সাথে মিলে যাবে। তবে যেহেতু যেকোন স্বতঃসিদ্ধের সেটই খণ্ডিত, অসম্পূর্ণ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে পছন্দ করা হয়, সুতরাং তাদের সিদ্ধান্তগুলিও বাস্তব জগতের সাথে পুরোপুরি মিলে যাবে না। তাই কিছু কিছু জ্যামিতিক ব্যবস্থা বাস্তব জগতে সম্পূর্ণ প্রয়োগ না-ও করা যেতে পারে। উপপাদ্যসমূহ উপপাদ্যগুলি স্বতঃসিদ্ধগুলি থেকে যুক্তিভিত্তিক আরোহী পদ্ধতিতে বের করা হয়। আর এই আরোহী পদ্ধতিকে বলা হয় উপপাদ্যটির প্রমাণ। কোন প্রমাণের প্রতিটি ধাপকে হয় কোন স্বতঃসিদ্ধ অথবা কোন পূর্ব-প্রমাণিত উপপাদ্য দিয়ে সমর্থিত হতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি উপপাদ্য বলে যে, যদি একটি রেখা কোন সমান্তরাল রেখাজোড়ের যেকোন একটির সাথে সমান্তরাল হয়, তবে সেটি রেখাজোড়ের অপর রেখাটির সাথেও সমান্তরাল। এখানে সমান্তরাল রেখা বলতে সেই সব রেখাকে বোঝায় যারা একে অপরের থেকে তাদের গোটা দৈর্ঘ্য বরাবর সমান দূরত্ব বজায় রাখে। আমরা যখন জ্যামিতিতে কোন উপপাদ্য প্রমাণ করি, তখন আমরা কতগুলি অনুমানের একটি সেট থেকে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হই। ইউক্লিডীয় জ্যামিতি বিভিন্ন জ্যামিতিক ব্যবস্থার মধ্যে ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সাথেই আমরা বেশি পরিচিত। ইউক্লিডীয় জ্যামিতি আমাদের চারপাশের প্রাত্যহিক জগতের বেশির ভাগ অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করতে পারে। প্রাচীন গ্রিক গণিতবিদ ইউক্লিডের নামে এই জ্যামিতিক ব্যবস্থার নামকরণ করা হয়েছে, কেননা তিনিই প্রথম এই জ্যামিতিক ব্যবস্থার বিবরণ দেন। যদিও ইউক্লিডীয় জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধগুলির সাথে বাস্তব জগতের অনেক মিল পাওয়া যায়, প্রমাণ পাওয়া গেছে যে এগুলি পুরোপুরি নিখুঁত নয়। দ্বি-মাত্রিক ইউক্লিডীয় জ্যামিতিকে অনেকসময় সমতলীয় জ্যামিতি এবং ত্রি-মাত্রিক ইউক্লিডীয় জ্যামিতিকে অনেক সময় ঘন জ্যামিতি নামে ডাকা হয়। সমতলীয় জ্যামিতিতে কেবল সেইসব জ্যামিতিক বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয় যেগুলি কেবল একটি তলের উপর অবস্থিত। এগুলির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ - এই দুইটি মাত্রা আছে। অন্যদিকে ঘন জ্যামিতিতে সেইসব জ্যামিতিক বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয় যেগুলির তিনটি মাত্রা আছে: দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা। ত্রিমাত্রিক ফাঁপা কোণককে একটি তল দিয়ে কাটলে যে দ্বিমাত্রিক রেখা পাওয়া যায়, তাকে কনিক ছেদ বলে; এটি জ্যামিতির একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয়। ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধসমূহ ইউক্লিড খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকের জ্যামিতিবিদ ছিলেন। তিনি বুঝতে পারেন যে তার সময়কার বিভিন্ন জ্যামিতিক উপপাদ্যগুলিকে খুবই অল্প সংখ্যক স্বতঃসিদ্ধের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। তিনি নির্ণয় করেন যে নিচের মাত্র পাঁচটি স্বতঃসিদ্ধ থেকে সমস্ত উপপাদ্যতে উপনীত হওয়া যায়: যেকোন দুইটি প্রদত্ত বিন্দুর মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র একটি সরলরেখা আঁকা সম্ভব। কোন সরলরেখাকে অসীম পর্যন্ত প্রসারিত করা যায় কিংবা যেকোন বিন্দুতে সীমাবদ্ধ করা যায়। যেকোন বিন্দুকে কেন্দ্র ধরে ও যেকোন ব্যাসার্ধ (বৃত্তের যেকোন বিন্দু থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব) নিয়ে একটিমাত্র বৃত্ত আঁকা সম্ভব। সব সমকোণ সবসময় সমান। একটি প্রদত্ত সরলরেখার বহিঃস্থ একটি প্রদত্ত বিন্দু দিয়ে প্রথম সরলরেখার সমান্তরাল কেবলমাত্র একটি সরলরেখা আঁকা সম্ভব। উপরের পাঁচটি স্বতঃসিদ্ধকে অন্যান্য সংজ্ঞায়িত পদের সাথে বিভিন্নভাবে সমন্বিত করে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিক বস্তুর ধর্মগুলি (যেমন ক্ষেত্রফল, পরিধি, ইত্যদি) প্রমাণ করা সম্ভব। এই ধর্মগুলি আবার আরও জটিল জ্যামিতিক উপপাদ্যের প্রমাণে ব্যবহার করা যায়। দ্বিমাত্রিক ইউক্লিডীয় আকৃতি দ্বিমাত্রিক জ্যামিতিতে প্রায়শই দেখা যায় এমন জ্যামিতিক আকৃতির মধ্যে আছে বৃত্ত, বহুভুজ, ত্রিভুজ, এবং চতুর্ভুজসমূহ। ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজ দুইটি বিশেষ ধরনের বহুভুজ। বৃত্ত বৃত্ত একটি সমতলীয় বক্ররেখা যার প্রতিটি বিন্দু একই সমতলের উপর অবস্থিত একটি নিদিষ্ট বিন্দু থেকে সমদূরবর্তী, এই নির্দিষ্ট বিন্দুকে বৃত্তের কেন্দ্র বলে।তিনটি অসমরেখ বিন্দুর মধ্য দিয়ে কেবলমাত্র একটি বৃত্ত আঁকা সম্ভব। অনেকসময় বৃত্ত বলতে শুধু বক্ররেখাটিকে না বুঝিয়ে রেখাটি দ্বারা সম্পূর্ণ ক্ষেত্রকেও বোঝানো হয়। যেসব বৃত্তের একটি সাধারণ কেন্দ্র আছে তাদেরকে সমকেন্দ্রিক বৃত্ত বলা হয়। যেসব কোণের শীর্ষবিন্দু বৃত্তের কেন্দ্র এবং দুই বাহু বৃত্তের দুইটি ব্যাসার্ধ, সেগুলিকে বৃত্তের কেন্দ্রীয় কোণ বলে। বৃত্তের পরিধিকে ৩৬০টি সমান ভাগ বা ডিগ্রিতে ভাগ করা হয় এবং কোন কেন্দ্রীয় কোণের ডিগ্রি পরিমাপ ঐ কোণটি বৃত্ত থেকে যে চাপ ছেদ করে তাতে অন্তর্গত ডিগ্রির সংখ্যার সমান। বৃত্তের পরিধি (C) ও ব্যাসের (d) গুণফলকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে এর ক্ষেত্রফল A পাওয়া যায় অর্থাৎ । পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতের আসন্ন মান ৩.১৪১৫৯২৬৫। দশমিকের পরে অসীমসংখ্যক অ-পর্যায়বৃত্ত অঙ্কবিশিষ্ট এই ধ্রুবকটিকে পাই নামে ডাকা হয়। বৃত্তের ক্ষেত্রফলকে আকারেও লেখা যায়, যেখানে r হল ব্যাসার্ধ। একইভাবে, বৃত্তের পরিধি হল ব্যাস ও পাই-এর গুণফল । বহুভুজ সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ সমতল যেকোন চিত্রকে বহুভুজ বলা হয়। যদি বহুভুজের সবগুলি বাহু ও কোণ সমান হয়, তবে সেটিকে সুষম বহুভুজ বলে। সুষম বহুভুজের কেন্দ্র থেকে যেকোন বাহুর দূরত্বকে apothem বলে। কোন সুষম বহুভুজের ক্ষেত্রফল হল এর apothem (a) ও পরিসীমার (p) গুণফলের অর্ধেক, অর্থাৎ । ত্রিভুজ ত্রিভুজ হল সমতলের উপর অঙ্কিত একটি চিত্র যা তিনটি সরলরেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ। যদি ত্রিভুজের তিনটি বাহুই অসম হয়, তবে একে বিষমবাহু ত্রিভুজ বলে। আর কেবল দুই বাহু সমান হলে তাকে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ এবং তিনটি বাহুই সমান হলে তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলা হয়। সমদ্বিবাহু ত্রিভুজে সমান বাহুদ্বয়ের বিপরীত কোণগুলি সমান। আর সমবাহু ত্রিভুজের সবগুলি কোণ সমান। যে ত্রিভুজের একটি কোন সমকোণ তাকে সমকোণী ত্রিভুজ বলে। সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণের বিপরীত বাহুর নাম অতিভুজ। পিথাগোরাসের বিখ্যাত উপপাদ্য অনুযায়ী সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ত্রিভুজটির সমকোণ-সংলগ্ন দুই বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্র দুটির ক্ষেত্রফলের যোগফলের সমান। অর্থাৎ যেখানে c অতিভুজের দৈর্ঘ্য এবং a ও b হলো সমকোণ-সংলগ্ন বাহুদুটির দৈর্ঘ্য৷ ত্রিভুজের ভিতরের কোনগুলিকে অন্তঃস্থ কোণ বলে, আর ত্রিভুজের বাহুগুলিকে বাড়িয়ে দিয়ে যে কোণগুলি পাওয়া যায়, তাদেরকে হলে বহিঃস্থ কোণ। ত্রিভুজের তিনটি অন্তঃস্থ কোণের সমষ্টি ১৮০°। এছাড়াও, যেকোন বহিঃস্থ এর অন্তঃস্থ বিপরীত কোণদ্বয়ের সমষ্টির সমান। ত্রিভুজের কোন শীর্ষবিন্দু থেকে বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দু পর্যন্ত আঁকা রেখাকে বলা হয় ত্রিভুজটির একটি মধ্যমা। ত্রিভুজের তিনটি মধ্যমা একই বিন্দুতে ছেদ করে এবং এটি প্রতিটি মধ্যমার শীর্ষবিন্দু থেকে দুই-তৃতীয়াংশ দূরত্বে অবস্থিত। ত্রিভুজের কোন শীর্ষবিন্দু থেকে বিপরীত বাহুর উপর অঙ্কিত লম্বকে ঐ ত্রিভুজের উচ্চতা বলে। দুইটি ত্রিভুজকে সর্বসম বলা হয় যদি এগুলি নিচের তিনটি শর্তের যেকোনটি পূরণ করে: (১) একটি ত্রিভুজের এক বাহু ও দুইটি কোণ অন্যটির অনুরূপ বাহু ও দুইটি কোণের সমান; (২) কোন একটি ত্রিভুজের দুই বাহু এবং এদের অন্তর্ভুক্ত কোণ অন্য ত্রিভুজটির দুই বাহু ও অন্তর্ভুক্ত কোণের সমান; অথবা (৩) একটি ত্রিভুজের তিনটি বাহু অপর ত্রিভুজের তিন বাহুর সমান। যদি একই সমতলে অবস্থিত দুইটি ত্রিভুজকে নিখুঁতভাবে একটির উপর আরেকটিকে বসিয়ে দেয়া যায়, তবে তারা সরাসরি সর্বসম। আর যদি বসানোর আগে একটিকে উল্টে নিতে হয়, তবে ত্রিভুজ দুটি বিপরীতভাবে সর্বসম। যদি দুইটি ত্রিভুজের একটির সবগুলি কোণ অন্যটির সবগুলি কোণের সমান হয়, তবে তাদেরকে সদৃশ ত্রিভুজ বলা হয় এবং এদের অনুরূপ বাহুগুলি সমানুপাতিক হয়। ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল এর ভূমি (b) ও এই ভূমির উপর অঙ্কিত উচ্চতার (h) গুণফলের অর্ধেক ()। যেকোন বাহুকেই ভূমি ধরা যায়। যদি ত্রিভুজটি সমবাহু হয়, তবে এর ক্ষেত্রফল , যেখানে a যেকোন বাহুর দৈর্ঘ্য। যদি কোন ত্রিভুজের তিনটি বাহু a, b এবং c হয়, তবে গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিসের দেয়া সূত্র অনুযায়ী এর ক্ষেত্রফল , যেখানে s ত্রিভুজের পরিসীমার অর্ধেক । চতুর্ভুজ চতুর্ভুজ হল চারটি সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ সমতল ক্ষেত্র। যেসব বিভিন্ন চতুর্ভুজের সাথে আমরা অতিপরিচিত তাদের মধ্যে আছে ট্রাপিজিয়াম, যার দুইটি সমান্তরাল কিন্তু অসমান। সামান্তরিকের বিপরীত বাহুগুলি সমান ও সমান্তরাল। রম্বস এক ধরনের সামান্তরিক যার সবগুলি বাহু সমান। আয়তক্ষেত্র এক ধরনের সামান্তরিক যার কোণগুলি সমকোণ। বর্গক্ষেত্র হল সমান বাহুবিশিষ্ট আয়তক্ষেত্র। সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে। আয়োতক্ষেত্রের কর্ণদ্বয় সমান। যেসব চতুর্ভুজের বাহুগুলি অসমান ও অসমান্তরাল, তাদেরকে বিষম চতুর্ভুজ বলে। ট্রাপিজিয়ামের ক্ষেত্রফল এর সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের সমষ্টি ও উচ্চতার গুণফলের অর্ধেক: A = [(b1 + b2)/2]h। সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল এর ভূমি ও উচ্চতার গুণফলের সমান: A = bh। বিষম চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল গণনার জন্য চতুর্ভুজটিকে সাধারণত কর্ণের সাহায্যে দুইটি ত্রিভুজে ভাগ করে নেয়া হয় এবং তারপর ত্রিভুজ দুইটির ক্ষেত্রফল আলাদা করে বের করে যোগ করে সম্পূর্ণ চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল বের করা হয়। ত্রিমাত্রিক ইউক্লিডীয় আকৃতিসমূহ ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে যে বস্তুগুলি প্রায়োই আলোচিত হয় তাদের মধ্যে আছে গোলক, বহুতলক, ত্রিশিরা বা প্রিজম, বেলন বা সিলিন্ডার, ও কোণক। বেলন আসলে প্রিজমেরই একটি বিশেষ রূপ; আর কোণক পিরামিডের বিশেষ রূপ। গোলক গোলক একটি তল যার সমস্ত বিন্দু কেন্দ্র নামের একটি বিন্দু থেকে সমদূরত্বে অবস্থিত। গোলককে একটি সমতল দিয়ে ছেদ করলে ছেদবিন্দুগুলি একটি বৃত্ত গঠন করে। তলটি গোলকের কেন্দ্র দিয়ে গেলে এরূপ বৃহত্তম বৃত্তটি পাওয়া যায়। পৃথিবীর বিষুবরেখা এরকম একটি বৃহত্তম বৃত্ত (যদি পৃথিবীকে একটি গোলক কল্পনা করি)। গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল A = 4pr2, এবং আয়তন V = 4/3pr3 সমীকরণ দিয়ে পাওয়া যায়। বহুতলক সমতল পৃষ্ঠ দ্বারা আবদ্ধ যেকোন ঘনবস্তুকে বহুতলক বলে। যদি কোন বহুতলকের পৃষ্ঠগুলির প্রতিটি সর্বসম সুষম বহুভুজ হয়, তবে এটিকে সুষম বহুতলক বলা হয়। প্রমাণ করা হয়েছে যে কেবল পাঁচ রকমের বহুতলকের জন্য সুষম বহুতলক সম্ভব। এগুলি হল চতুস্তলক (চারটি তল), ঘনক (ছয়টি তল), অষ্টতলক (আটটি তল), দ্বাদশতলক (১২টি তল), এবং বিশতলক (২০টি তল)। প্রাচীন গ্রিক জ্যামিতিবিদেরা এই পাঁচটি বহুতলক সম্পর্কে জানতেন। সুষম কিংবা অসম, যেকোন বহুতলকের একটি বিশেষ ধর্ম হচ্ছে এর তলের সংখ্যা ও শীর্ষবিন্দুর সংখ্যা যোগ করে ২ বিয়োগ করলে এর ধারের সংখ্যা পাওয়া যায়। সাম্প্রতিককাল পর্যন্তও বহুতলকগুলির সাথে প্রকৃতির রহস্যময়তার সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করা হত। ত্রিশিরা বা প্রিজম প্রিজম হচ্ছে এমন এক ধরনের বহুতলক যার দুইটি পৃষ্ঠ পরস্পর সমান্তরাল ও সর্বসম (এদেরকে ভূমি বলে) এবং যার অন্য সব পৃষ্ঠ সামান্তরিক। parallelepiped এক ধরনের প্রিজম যার ভূমিদ্বয় সামান্তরিক। একটি সমকোণী প্রিজমের তলগুলি আয়তাকার(ভূমিগুলি আয়তাকার হতেও পারে নাও হতে পারে)। প্রিজমের আয়তন এর যেকোন ভূমির ক্ষেত্রফল ও উচ্চতার গুণফল: V = bh. পিরামিড পিরামিড একটি বহুতলক যার ভূমি একটি বহুভুজ এবং পার্শ্বগুলি একই শীর্ষবিন্দুবিশিষ্ট ত্রিভুজ। যদি কোন পিরামিডের ভূমি সুষম বহুভুজ হয় এবং এর শীর্ষ ও ভূমির কেন্দ্রবিন্দুকে সংযোগকারী রেখা ভূমির উপর লম্ব হয়, তবে এটিকে সুষম সমকোণী পিরামিড বলে। পিরামিডের ক্ষেত্রফল এর ভূমির ক্ষেত্রফলের এক-তৃতীয়াংশ ও এর উচ্চতার গুণফলের সমান। বেলন বা সিলিন্ডার ও কোণক বেলন বা সিলিন্ডার হল বৃত্তাকার ভূমিবিশিষ্ট প্রিজম। এর আয়তনের সূত্রও তাই প্রিজমের মত ভূমির ক্ষেত্রফল ও উচ্চতার গুণফল দিয়ে বের করা হয়। যদি দুইটি ভূমির কেন্দ্রকে সংযোগকারী রেখা ভূমিদ্বয়ের উপর লম্ব হয়, তবে সেই সিলিন্ডারকে সমকোণী সিলিন্ডার বলা হয়। নতুবা একে তির্যক সিলিন্ডার বলে। কোণক (cone) হল বৃত্তাকার ভূমিবিশিষ্ট পিরামিড। পিরামিডের শীর্ষ ও ভূমির কেন্দ্রকে সংযোগকারী রেখা ভূমির উপর লম্ব হলে তাকে সমকোণী কোণক বলে। b ক্ষেত্রফলের ভূমি ও h উচ্চতার কোণকের আয়তনের সূত্র পিরামিডের অনুরূপ: V = €bh কনিক ছেদ কোণকের পৃষ্ঠতলকে সমতল একটি তল দিয়ে ছেদ করলে যে বক্ররেখা পাওয়া যায়, তাকে কনিক ছেদ বলে (উল্লেখ্য এখানে কোণক বলতে আসলে দুইটি সমকোণী বৃত্তভূমিক কোণকের একটিকে উল্টিয়ে দুই শীর্ষবিন্দু একত্রে স্থাপন করলে যে জ্যামিতিক চিত্রটি তৈরি হয়, তাকে বোঝাচ্ছে)। শীর্ষবিন্দুর দুইপাশের কোণকের যেকোন পৃষ্ঠকে nappe বলে। যদি কোণকের অক্ষ ও এর পৃষ্ঠের অন্তর্বর্তী কোণ A হয় এবং কোণকটিকে একটি তল A-এর চেয়ে বড় কোণে ছেদ করে, তবে ছেদরেখাটি হয় একটি বদ্ধ বক্ররেখা যার নাম উপবৃত্ত। যদি তলটি কোণককে অক্ষের সাথে লম্বভাবে ছেদ করে, তবে যে আবদ্ধ বক্ররেখাটি পাওয়া যায়, তার নাম বৃত্ত। বৃত্ত তাই উপবৃত্তের একটি বিশেষ রূপ। যদি তলটি অক্ষের সাথে A কোণের সমান কোণ করে ছেদ করে, অর্থাৎ কোণকের পৃষ্ঠতলের সমান্তরালে ছেদ করে, তবে যে উন্মুক্ত ও অসীমে বিস্তৃত বক্ররেখাটি ছেদরেখা হিসেবে পাওয়া যায়, তাকে পরাবৃত্ত বলে। আর যদি তলটি অক্ষের সমান্তরালে বা A কোণের চেয়ে ক্ষুদ্রতর কোণে ছেদ করে, তবে যে বক্ররেখাটি পাওয়া যায়, তাকে অধিবৃত্ত বলে। এইক্ষেত্রে কোণকটির উভয় nappe-ই ছিন্ন হয়, ফলে অধিবৃত্তের দুইটি শাখা থাকে, যাদের প্রতিটি অসীম পর্যন্ত প্রসারিত। যেহেতু কনিক ছেদগুলি দ্বিমাত্রিক বক্ররেখা, তাই এদের সংজ্ঞায় ত্রিমাত্রিক কোণকের উল্লেখ না করে অন্য উপায়ে সংজ্ঞা দেয়া হয়। দ্বিমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোণকীয় ছেদ হল সেই সমস্ত বিন্দুর চলনপথ একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে যেগুলির দূরত্ব এবং ঐ নির্দিষ্ট বন্দুর বহিঃস্থ একটি নির্দিষ্ট রেখা থেকে ঐ একই বিন্দুগুলির দূরত্ব একটি ধ্রুব অনুপাত বজায় রাখে। নির্দিষ্ট বিন্দুটিকে বলা হয় ফোকাস বা উপকেন্দ্র, এবং নির্দিষ্ট রেখাটিকে বলা হয় নিয়ামক বা দিগাক্ষ। ধ্রুব অনুপাতটিকে বলা হয় কনিক ছেদের উৎকেন্দ্রিকতা এবং একে e দিয়ে নির্দেশ করা হয়। যদি P একটি বিন্দু হয় এবং Q বিন্দুটি P থেকে দিগাক্ষরেখার উপর অঙ্কিত লম্বের পাদবিন্দু হয়, তবে P বিন্দুটির F ফোকাসবিশিষ্ট একটি কনিক ছেদের উপর অবস্থিত হওয়ার একমাত্র শর্ত হল [FP] = e[QP]। যখন e = ১ তখন কনিকটি একটি পরাবৃত্ত; যখন e > ১, তখন এটি অধিবৃত্ত; এবং যখন e < ১, এটি একটি উপবৃত্ত। কনিকের অনেক গাণিতিক বৈশিষ্ট্য গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানে কাজে আসে। উদাহরণস্বরূপ, কোন কনিকের আকারে নির্মিত দর্পণে আলো নির্দিষ্ট ধর্ম অনুযায়ী প্রতিফলিত হয়। বৃত্তাকার দর্পণের ফোকাস থেকে উৎসারিত রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে আবার ফোকাসে ফিরে আসে। উপবৃত্তাকার দর্পণের দুইটি ফোকাসের যেকোন একটি থেকে উৎসারিত রশ্মি প্রতিফলনের পর অন্য ফোকাসটি দিয়ে গমন করে। পরাবৃত্তীয় দর্পণে ফোকাস থেকে উৎসারিত আলো প্রতিফলনের পর সমান্তরাল রেখায় গমন করে, এ কারণে স্পটলাইটে পরাবৃত্তীয় দর্পণ ব্যবহার করা হয়, যেন আলো চারপাশে বিক্ষিপ্ত না হয়। অধিবৃত্তের একটি ফোকাস থেকে উৎসারিত আলোকরশ্মি প্রতিফলনের পর এমনভাবে গমন করে যেন মনে হয় এগুলি অন্য ফোকাসটি থেকে উৎসারিত হচ্ছে। বিশ্লেষণী জ্যামিতি কিছু কিছু সাংখ্যিক ও বীজগাণিতিক সমীকরণ দিয়ে বিন্দু, রেখা এবং অন্যান্য জ্যামিতিক আকৃতি নির্দেশ করা যায়, এই উপলব্ধি থেকেই বিশ্লেষণী জ্যামিতির জন্ম। অক্ষ ও স্থানাঙ্ক ব্যবহার করে সমীকরণগুলির চিত্রলেখ অঙ্কনের মাধ্যমে বিন্দু, রেখা ও অন্যান্য আকৃতি নির্দেশ করা সম্ভব। যেমন, লম্বভাবে অবস্থিত দুইটি অক্ষ থেকে দূরত্ব নির্দেশ করে কোন একটি বিন্দুর অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব। যদি কোনো বিন্দু x-অক্ষ থেকে ৫ একক দূরে এবং y-অক্ষ থেকে ৭ একক দূরে অবস্থিত হয়, তবে এটির অবস্থান x = 7, y = 5, এই সমীকরণ দুইটি দিয়ে নির্দেশ করা সম্ভব। একইভাবে, একটি সরলরেখাকে সবসময় ax + by + c = 0 আকারের একটি সমীকরণ দিয়ে নির্দেশ করা যায়। বৃত্ত, উপবৃত্ত, কোণীয় ছেদ ও অন্যান্য আকৃতির জন্য আরও জটিল সমীকরণ আছে। বিশ্লেষণী জ্যামিতিতে দুই ধরনের সমস্যা খুবই সাধারণ। প্রথম ধরনের সমস্যাতে কতগুলি বিন্দুর জ্যামিতিক বিবরণ দেয়া থাকে, এবং সেখান থেকে এই বিন্দুগুলিকে সিদ্ধ করে এমন বীজগাণিতিক সমীকরণ করতে হয়। দ্বিতীয় ধরনের সমস্যা এর বিপরীত: প্রদত্ত বীজগাণিতিক সমীকরণ থেকে এমন কোন বিন্দু সমাহার বের করতে হয় যেগুলি একটি জ্যামিতিক বিবৃতি মেনে চলে। উদাহরণস্বরূপ ৩ ব্যাসার্ধবিশিষ্ট একটি বৃত্ত যার কেন্দ্র x ও y অক্ষের ছেদবিন্দু তথা মূলবিন্দুতে অবস্থিত, সেটির সমস্ত বিন্দু সমীকরণ মেনে চলবে। এই ধরনের সমীকরণ ব্যবহার করে জ্যামিতিক অন্যান্য সমস্যা যেমন কোন কোণ বা রেখাংশের সমদ্বিখণ্ডক বের করা, বা কোন রেখার নির্দিষ্ট বিন্দুতে লম্ব আঁকা, তিনটি প্রদত্ত অসমরেখ বিন্দুর মধ্য দিয়ে বৃত্ত আঁকা, ইত্যাদি সম্পাদন করা যায়। একইভাবে তিনটি অক্ষ ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক জগতে বিন্দু, রেখা ও অন্যান্য চিত্র নির্দেশ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে তৃতীয় অক্ষ বা z অক্ষটি পর দুইটি অক্ষের উপর লম্বভাবে অবস্থিত থাকে। গণিতের উন্নয়নে বিশ্লেষণী জ্যামিতি মূল্যবান ভূমিকা রাখে। এটি সংখ্যার সম্পর্ক তথা বিশ্লেষণী গণিতের সাথে জ্যামিতি তথা স্থানিক সম্পর্কের যোগসূত্র স্থাপন করে। বিশ্লেষণী জ্যামিতির কৌশলগুলি সংখ্যা ও বীজগাণিতিক রাশিমালার জ্যামিতিক উপস্থাপন সম্ভব করে। ফলে ক্যালকুলাস, ফাংশনের তত্ত্ব, ও উচ্চতর গণিতের অন্যান্য সমস্যা নতুন আলোকে দেখার সুযোগ হয়। বিশ্লেষণী জ্যামিতি ছাড়া অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি ও তিনের অধিক মাত্রার জ্যামিতির আলোচনা সম্ভবপর হত না। অন্তরক জ্যামিতি জার্মান গণিতবিদ কার্ল ফ্রিড্‌রিশ গাউস ভূমি জরিপ ও প্রভূমিতি (geodesy) সংক্রান্ত ব্যাবহারিক সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে অন্তরক জ্যামিতি শাখা শুরু করেন। এতে তিনি অন্তরক ক্যালকুলাস ব্যবহার করে বক্ররেখা ও বক্রতলসমূহের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যগুলি চিহ্নিত করেন। উদাহরণস্বরূপ তিনি গাণিতিকভাবে দেখান যে একটি বেলনের স্বকীয় বক্রতা ও একটি সমতলের স্বকীয় বক্রতা একই, কেননা একটি ফাঁপা বেলনকে অক্ষ বরাবর কেটে চ্যাপ্টা করলে এটি একটি সমতলে পরিণত হয়, কিন্তু গোলকের ক্ষেত্রে রূপবিকার না করে এটি করা যায় না। অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধ বলে যে কোনো প্রদত্ত রেখার বহিঃস্থ একটি বিন্দু দিয়ে ঐ রেখার সমান্তরাল কেবল একটি রেখা আঁকা সম্ভব এবং এই সমান্তরাল রেখা কখনোই প্রদত্ত রেখাটিকে স্পর্শ করবে না, অসীম পর্যন্ত সমান্তরালে চলতে থাকবে। ১৯শ শতকের শুরুর দিকে জার্মান গণীতবিদ কার্ল ফ্রিড্‌রিশ গাউস, রুশ গণিতবিদ নিকলাই ইভানভিচ লোবাচেভ্‌স্কি এবং হাঙ্গেরীয় গণিতবিদ ইয়ানোশ বলিয়ই একে অপরের থেকে স্বাধীনভাবে দেখান যে এমন একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্যামিতিক ব্যবস্থা গঠন করা সম্ভব যেখানে ইউক্লিডের এই পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধটিকে অন্য একটি স্বতঃসিদ্ধ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব যেটি বলে যে কোন প্রদত্ত রেখার বহিঃস্থ কোন বিন্দু দিয়ে রেখাটির সমান্তরাল অসীম সংখ্যক রেখা আঁকা সম্ভব। পরবর্তীতে ১৮৬০ সালে জার্মান গণিতবিদ গেয়র্গ ফ্রিড্‌রিশ বের্নহার্ট রিমান দেখান যে আরেকটি জ্যামিতিক ব্যবস্থা গঠন করা সম্ভব যেখানে এরকম কোনো সমান্তরাল রেখাই আঁকা সম্ভব নয়। উপরের দুই ধরনের অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির বিস্তারিত বিবরণ বেশ জটিল, তবে দুটিকেই সহজ মডেলের মাধ্যমে দেখানো সম্ভব। বলিয়াই-লোবাচেভ্‌স্কি জ্যামিতিতে (যাকে অনেক সময় অধিবৃত্তীয় জ্যামিতিও বলা হয়) এমন একটি জ্যামিতিক ব্যবস্থা আলোচনা করা হয় যার সমস্ত বিন্দু একটি বৃত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং যার সমস্ত সম্ভাব্য রেখা বৃত্তটির জ্যা। যেহেতু সংজ্ঞা অনুসারে দুইটি সমান্তরাল রেখাকে যতই প্রসারিত করা হোক না কেন, এর কখনোই মিলবে না, এবং অধিবৃত্তীয় জ্যামিতিতে যেহেতু রেখাগুলি বৃত্তের ধারের বাইরে প্রসারিত করা সম্ভব নয়, সে কারণে যেকোন রেখার সমান্তরাল অসীম সংখ্যক রেখা রেখাটির বহিঃস্থ বিন্দু দিয়ে আঁকা সম্ভব। একইভাবে রিমানীয় বা উপবৃত্তীয় অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে জ্যামিতিক "বিশ্ব" বা "জগত" একটি বিশাল গোলকের পৃষ্ঠ যেখানে সব সরলরেখা একেকটি বৃহত্তম বৃত্ত। এই জ্যামিতিতে এক জোড়া সমান্তরাল রেখা আঁকা অসম্ভব। অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বের জন্য, অর্থাৎ আমাদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে, ইউক্লিডীয় ও অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে মহাজাগতিক দূরত্ব এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সমস্যা যেমন আপেক্ষিকতার সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য ইউক্লিডীয় জ্যামিতির চেয়ে অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি পর্যবেক্ষণকৃত ঘটনাবলির আরও সূক্ষ্ম ও সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বক্রতলের একটি রিমানীয় জ্যামিতির উপর ভিত্তি করে সম্পাদিত। অভিক্ষেপী জ্যামিতি বিভিন্ন জ্যামিতিক বস্তু ও এদের অভিক্ষেপের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করতে গিয়ে ১৭শ শতকে জ্যামিতির আরেকটি শাখা শুরু হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কনিকগুলিকে অভিক্ষেপের মাধ্যমে একটি থেকে আরেকটিতে রূপান্তরিত করা যায়। কোন ফ্ল্যাশলাইটকে দেয়ালের সাথে লম্বভাবে ধরলে বৃত্তাকার আলোকপট্টি ফেলে, কিন্তু কোণ করে হেলিয়ে ধরলে দেয়ালে উপবৃত্তাকার আলোকপট্টির সৃষ্টি হয়। অভিক্ষেপী রূপান্তরের পরেও জ্যামিতিক চিত্রের কিছু কিছু ধর্ম অপরিবর্তনশীল থাকে। এই অপরিবর্তনশীল ধর্মগুলি কী, তাই অভিক্ষেপী জ্যামিতির বিভিন্ন উপপাদ্যের আলোচ্য। চার বা তার বেশি মাত্রার জ্যামিতি অভিক্ষেপী ও বিশ্লেষণী জ্যামিতির উন্নয়ন গণিতবিদদেরকে তিনের বেশি মাত্রার জগতের জ্যামিতি অধ্যয়নে উৎসাহী করে। অনেকে মনে করেন এ ধরনের বহুমাত্রিক জগৎ নিয়ে চিন্তা করা খুব কঠিন। কিন্তু আসলে গণিতবিদেরা এগুলি আরও সহজ উপায়ে কল্পনা করেন। ভৌত বিশ্বের যেকোন বিন্দুর অবস্থান তিনটি অক্ষের (সাধারণত x, y, ও z-অক্ষ নামে পরিচিত) সাপেক্ষে নির্দেশ করা সম্ভব। ভৌত বিশ্বের স্থান বিষয়ক জ্যামিতি তাই ত্রিমাত্রিক। এই ত্রিমাত্রিক জগতের প্রতিটি বিন্দুকে কল্পনায় যদি একটি গোলক দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে নেওয়া হয়, তবে এটি একটি চতুর্মাত্রিক জগতে পরিণত হয়। কেননা তখন প্রতিটি বিন্দু-গোলকের অবস্থান নির্দেশ করার জন্য চারটি নির্দেশক লাগবে: গোলকের কেন্দ্র নির্দেশকারী x, y, ও z-স্থানাংক এবং গোলকটির ব্যাসার্ধের দৈর্ঘ্য। একইভাবে দ্বিমাত্রিক জগৎ দিয়ে একটি ত্রিমাত্রিক জগতকে উপস্থাপন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে দ্বিমাত্রিক জগতের প্রতিটি বিন্দুকে একটি বৃত্ত দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হয়, এবং ত্রিমাত্রিক জগতের তিনটি মাত্রা হল বৃত্তের কেন্দ্র নির্দেশক দুইটি স্থানাংক এবং এর ব্যাসার্ধ। তিনের বেশি মাত্রার জগৎ নিয়ে জ্যামিতিক ধারণাগুলি ভৌত বিজ্ঞানে, বিশেষ করে আপেক্ষিকতা তত্ত্বের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চার বা তার বেশি মাত্রার জগতের সুষম জ্যামিতিক বস্তুগুলির অধ্যয়নে বিশ্লেষণী জ্যামিতির পদ্ধতিও প্রয়োগ করা হয়। এই জ্যামিতিকে বলে সাংগঠনিক জ্যামিতি (structural geometry)। সাংগঠনিক জ্যামিতির একটি সরল উদাহরণ হল শুন্য, এক, দুই, তিন, চার বা তার বেশি মাত্রার জগতের সরলতম জ্যামিতিক বস্তুটির সংজ্ঞা বের করা, যাকে সবচেয়ে কম সংখ্যক শীর্ষ, ধার ও পৃষ্ঠ দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এদের মধ্যে শুন্য, এক, দুই ও তিন মাত্রার জন্য বস্তুগুলি হচ্ছে আমাদের পরিচিত বিন্দু, রেখা, ত্রিভুজ ও চতুস্তলক। চার মাত্রার জগতের জন্য দেখানো যায় যে সরলতম জ্যামিতিক বস্তুটির পাঁচটি শীর্ষ, ১০টি ধার এবং ১০টি পৃষ্ঠ আছে। জ্যামিতিশাস্ত্রের ইতিহাস প্রাচীন জ্যামিতিবিদেরা ভূমিক্ষেত্রসমূহের ক্ষেত্রফল ও ঘরবাড়ি নির্মাণের সময় সঠিকভাবে সমকোণ নির্ণয়ের সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতেন। প্রাচীন মিশরে প্রতি বছর নীল নদের বন্যায় জমিসমূহের সীমানা নষ্ট হয়ে যেত এবং এই সীমানাগুলি পুনরুদ্ধারের জন্য জ্যামিতির সাহায্য নেয়া হত। এই ধরনের অভিজ্ঞতাভিত্তিক জ্যামিতি প্রাচীন মিশর, সুমের এবং ব্যাবিলনিয়াতে বিকাশ লাভ করে এবং পরবর্তীতে গ্রিকদের হাতে পরিশীলিত ও নিয়মাবদ্ধ হয়। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া এবং মিশরে জ্যামিতির প্রথম নথিভুক্ত সূচনা পাওয়া যায়। জ্যামিতির প্রাচীনতম পাঠ্যগুলি হল মিশরীয় রিন্ড প্যাপিরাস (২০০০ খ্রিস্টপূর্ব ),মস্কো প্যাপিরাস (c. ১৮৯০ খ্রিস্টপূর্ব ), এবং ব্যাবিলনীয় মাটির ট্যাবলেট, যেমন Plimpton ৩২২ (১৯০০ খ্রিস্টপূর্ব )। মস্কো প্যাপিরাস ছোট পিরামিড বা ফ্রাস্টামের আয়তন গণনার জন্য একটি সূত্র দেয়। মাটির ট্যাবলেটগুলি (৩৫০-৫০ খ্রিস্টপূর্ব ) দেখায় যে ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সময়-বেগ স্থানের মধ্যে বৃহস্পতির অবস্থান এবং গতি গণনা করার জন্য ট্র্যাপিজয়েড পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলেন। প্রাচীন গ্রিসের জ্যামিতি ইতিহাসের সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ জ্যামিতিবিদ হিসেবে যার নাম পাওয়া যায়, তিনি হলেন মিলেতুসের থালেস। থালেস ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে গ্রিসে বাস করতেন। থালেসকে অনেকগুলি সরল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্যের জনক হিসেবে গণ্য করা হয়; এদের মধ্যে অন্যতম হল অর্ধবৃত্তস্থিত কোণ যে সমকোণ, তার প্রমাণ। থালেসই প্রথম দেখান যে কতগুলি সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত বিবৃতি তথা স্বতঃসিদ্ধ থেকে যৌক্তিকভাবে অগ্রসর হয়ে একটি জ্যামিতিক সত্য প্রতিষ্ঠা করা যায়। এই স্বতঃসিদ্ধগুলিকে থালেস ও তার পরবর্তী গ্রিক জ্যামিতিবিদেরা স্ব-প্রমাণিত সত্য বলে মনে করতেন। তবে আধুনিক গাণিতিক চিন্তাধারায় এগুলিকে কতগুলি সুবিধাজনক কিন্তু যথেচ্ছ অনুমান বলে গণ্য করা হয়। থালেসের এই আরোহী পদ্ধতির ধারণা সমস্ত জ্যামিতিক গবেষণায়, এমনকি সমস্ত গাণিতিক গবেষণায় বর্তমান কাল পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করেছে। থালেসের এক বিখ্যাত ছাত্র ছিলেন পিথাগোরাস। পিথাগোরাস ও তার সহযোগীরা ত্রিভুজ, বৃত্ত, অনুপাত, ও কিছু কিছু ঘনবস্তুর জন্য অনেক নতুন নতুন উপপাদ্য প্রমাণ করেন। পিথাগোরাসের সবচেয়ে বিখ্যাত উপপাদ্যটি বর্তমানে তার নামে নামান্বিত এবং বলে যে, সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের বর্গ বাকি বাহুদ্বয়ের বর্গের যোগফলের সমষ্টি। গ্রিকদের প্রস্তাবিত ও স্বীক্রৃত স্বতঃসিদ্ধগুলি ছিল এই জাতীয়: “দুইটি বিন্দুর মধ্যবর্তী ক্ষুদ্রতম পথ সরলরেখা।” এই ধরনের স্বতঃসিদ্ধ থেকে বিন্দু, রেখা, কোণ, বক্ররেখা ও তলসমূহ সম্পর্কে বিভিন্ন উপপাদ্যে যৌক্তিকভাবে উপনীত হওয়া যেত। তবে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে ইউক্লিডই সর্বপ্রথম বিভিন্ন ছড়িয়ে থাকা উপপাদ্য ও স্বতঃসিদ্ধগুলি একটি সমন্বিত ব্যবস্থার অধীনে এনে তার Elements গ্রন্থতে প্রকাশ করেন। ১৩টি পার্চমেন্ট রোল বা পুস্তকে লেখা এই গ্রন্থ মানবমনের চরম উৎকর্ষের একটি নিদর্শন। প্রকাশের প্রায় ১০০০ বছর গণিতবিদের এগুলোতে সামান্যই কোন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন যোগ করতে পেরেছিলেন। বিংশ শতাব্দীতেও জ্যামিতির প্রাথমিক পাঠ্য হিসেবে ইউক্লিডের বইটি অবিকৃতভাবে ব্যবহার করা হত। ইউক্লিডের কাজের গুরুত্ব তার ফলাফলে নয়, বরং তার পদ্ধতিতে। তার প্রমাণিত বেশির ভাগ উপপাদ্যই বহু বছর আগেই জানা ছিল, কিন্তু তার আগে কেউই দেখাতে পারেনি যে এগুলি সব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত এবং সামান্য কিছু প্রাথমিক স্বতদঃসিদ্ধ থেকে এগুলিতে উপনীত হওয়া সম্ভব। ইউক্লিড এভাবে তার কাজের মাধ্যমে আরোহী পদ্ধতির গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত করেন। গ্রিকরা কেবল রুলার ও কাঁটা-কম্পাস ব্যবহার করে জ্যামিতিক চিত্র আঁকার সমস্যা (সমপাদ্য) উদ্ভাবন করেছিল। সরল সমস্যাগুলির মধ্যে আছে কোন প্রদত্ত রেখাংশের দ্বিগুণ দৈর্ঘ্যের রেখাংশ আঁকা, কোন একটি কোণকে সমদ্বিখণ্ডিত করা, ইত্যাদি। গ্রিকদের এ সংক্রান্ত তিনটি বিখ্যাত সমস্যা বহু বছর ধরে গণিতবিদেরা সমাধান করতে পারেন নি: প্রদত্ত ঘনকের দ্বিগুণ আয়তনের ঘনক আঁকা, প্রদত্ত বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সমান ক্ষেত্রফলের বর্গ আঁকা, এবং একটি কোণকে সমত্রিখণ্ডিত করা। এগুলির কোনটিই রুলার ও কাঁটাকম্পাসের সাহায্য নিয়ে আঁকা সম্ভব নয়। এদের মধ্যে বৃত্তের বর্গীকরণের অসম্ভাব্যতা ১৮৮২ সালের আগে প্রমাণিত হয়নি। গ্রিক গণিতবিদ পের্গার আপোল্লনিয়ুস কনিক ছেদগুলি নিয়ে গবেষণা করেন এবং এগুলির অনেক মৌলিক ধর্ম খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দেই আবিষ্কার করেন। কনিকগুলি ভৌত বিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রে কাজে আসে। যেমন যেকোন খ-বস্তুর কক্ষপথ, যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এমন গ্রহ বা ধূমকেতুর গতিপথ সবসময় কোন এক ধরনের কনিকের উপর অবস্থান করে। ক্রৃত্রিম উপগ্রহগুলিও পৃথিবীকে উপবৃত্তাকার পথে প্রদক্ষিণ করে। মহান গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিদিস খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে জ্যামিতিতে অনেকগুলি অবদান রাখেন। তিনি অনেকগুলি বক্ররেখাবদ্ধ আকৃতির ক্ষেত্রফল এবং বক্রতলাবদ্ধ ঘনবস্তুর, যেমন সিলিন্ডারের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় করার সূত্র বের করেন। এছাড়াও পাই-এর আসন্ন মান নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি বের করেন এবং বলেন যে এই মান ৩ ১০/৭০ ও ৩ ১০/৭১ এর মধ্যবর্তী। মধ্যযুগে জ্যামিতি ৫ম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ১৫শ শতক পর্যন্ত ইউরোপে জ্যামিতির তেমন উন্নতিসাধন হয়নি।এসময় ইউরোপ অন্ধকার যুগে প্রবেশ করে এবং উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানেরা এবং ভারতের হিন্দুরা জ্যামিতির বেশির ভাগ উন্নতি সাধন করেন।গ্রিক গণিতের বেশির ভাগই ছড়িয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। তবে এদের কিছু কিছু, যেমন ইউক্লিডের এলিমেন্টস মুসলমান ও হিন্দুরা অনুবাদ করে সংরক্ষণ করেন ও অধ্যয়ন করেন। ভারতীয় গণিতবিদরাও জ্যামিতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। শতপথ ব্রাহ্মণ (খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতক) ও সুল্ব সূত্রে জ্যামিতিক নির্মাণের নিয়ম রয়েছে।সুলবা সূত্রে,পিথাগোরিয়ান থিওরেমের প্রাচীনতম বিদ্যমান মৌখিক অভিব্যক্তি রয়েছে। তারা পিথাগোরিয়ান ট্রিপলের তালিকা তৈরি করে, যেগুলো মূলত ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণ। আর্যভট্টের “আর্যভটিয়া”(৪৯৯), ক্ষেত্র এবং আয়তনের গণনা অন্তর্ভুক্ত করে। ৬ষ্ঠ শতকের ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্ট সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র পুনরাবিষ্কার করেন। এছাড়াও তিনি পাই-এর অত্যন্ত সঠিক মানের একটি সূত্র দান করেন; তিনি পাই-এর মান ধরেন ৬২৮৩২/২০০০০, বা ৩.১৪১৬, যা দশমিকের পর চার ঘর পর্যন্ত পাইয়ের সঠিক মান। ব্রহ্মগুপ্ত তার জ্যোতির্বিদ্যা রচনা ”ব্রহ্মস্ফটসিদ্ধান্ত” লিখেছিলেন ৬২৮সালে যা ১২অধ্যায়, ৬৬টি সংস্কৃত শ্লোক সম্বলিত। এতে চক্রীয় চতুর্ভুজের কর্ণ,চক্রীয় চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র (হেরনের সূত্রের একটি সাধারণীকরণ), মূলদ ত্রিভুজের সম্পূর্ণ বিবরণ অন্তর্ভুক্ত আছে। ৪র্থ ও ১৩শ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে জ্যামিতির জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ত্রিকোণমিতি শাস্ত্রের উন্নতি সাধন করা হয়। আল-মাহানি (৮৫৩) জ্যামিতিক সমস্যা যেমন বীজগণিতের সমস্যাগুলির সাথে ঘনকের প্রতিলিপি করার ধারণাটি কল্পনা করেছিলেন। থাবিত ইবনে কুররা (ল্যাটিনে থিবিট নামে পরিচিত) (৮৩৬-৭০১) জ্যামিতিক পরিমাণের অনুপাতের উপর পাটিগণিতিক ক্রিয়াকলাপ প্রয়োগ নিয়ে কাজ করেছিলেন এবং বিশ্লেষণাত্মক জ্যামিতির বিকাশে অবদান রেখেছিলেন। ওমর খৈয়াম (১০৪৮-১১৩১) ঘন সমীকরণের জ্যামিতিক সমাধান খুঁজে পান। ১২শ ও ১৩শ শতকে ইউক্লিডের এলিমেন্টস গ্রিক ও আরবি থেকে লাতিনে ও আধুনিক ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ করা হয় এবং ধর্মীয় শিক্ষালয়ে জ্যামিতি শিক্ষা যোগ করা হয়। ১৭শ ও ১৮শ শতকের জ্যামিতি ফরাসি দার্শনিক ও গণিতবিদ রেনে দেকার্তে জ্যামিতিকে সামনের দিকে এগিয়ে দেন। ১৬৩৭ সালে তার প্রভাবশালী রচনা Discourse on Method প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার সাহায্যে জ্যামিতিক আকৃতি প্রকাশের পদ্ধতি উপস্থাপন করেন। তার কাজ জ্যামিতি ও বীজগণিতের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। এই যোগসূত্রই বিশ্লেষণী জ্যামিতি এবং আধুনিক জ্যামিতির ভিত্তি। ১৭শ শতকের জ্যামিতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল অভিক্ষেপী জ্যামিতির উদ্ভাবন। অভিক্ষেপী জ্যামিতিতে কোন জ্যামিতিক বস্তুর এক তল থেকে আরেক তলে অভিক্ষেপ ফেললে এর ধর্মের কী পরিবর্তন ঘটে তা নিয়ে গবেষণা করা হয়। জেরার দ্যজার্গ নামের এক ফরাসি প্রকৌশলী perspective নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অভিক্ষেপী জ্যামিতি উদ্ভাবন করেন। ১৮শ শতকে গাসপার মোঁজ নামের ফরাসি এক গণিতের অধ্যাপক বিবরণমূলক জ্যামিতি নামে জ্যামিতির আরেকটি শাখা উদ্ভাবন করেন। বিবরণমূলক জ্যামিতিতে দ্বি-মাত্রিক চিত্রের সাহায্যে ত্রিমাত্রিক বস্তুসমূহকে কীভাবে ত্রুটিহীনভাবে উপস্থাপন করা যায় এবং এর সাহায্যে কীভাবে ত্রিমাত্রিক জ্যামিতির নানা সমস্যা সমাধান করা যায়, তার আলোচনা করা হয়। প্রকৌশল ও স্থাপত্যের অঙ্কনের ভিত্তি হল এই বিবরণমূলক জ্যামিতি। আধুনিক জ্যামিতি ইউক্লিডীয় জ্যামিতির কাঠামোর ভেতরেই বিশ্লেষণী, অভিক্ষেপী ও বিবরণমূলক জ্যামিতির আবর্ভাব ঘটে। বহু শতাব্দী ধরে গণিতবিদেরা বিশ্বাস করতেন যে অনন্য সমান্তরাল রেখা সংক্রান্ত ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধটি বাকী চারটি স্বতঃসিদ্ধ থেকে প্রমাণ করা যাবে, কিন্তু এই প্রমাণ বের করার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিন্তু ১৯শ শতকে এসে নতুন নতুন জ্যামিতিক ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা হয় যেগুলিতে ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধটিকে অন্য কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। এইসব নতুন ধরনের অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেন কার্ল ফ্রিড্‌রিশ গাউস, ইয়ানোশ বলিয়ই, নিকলাই লবাচেভ্‌‌স্কি এবং গেয়র্গ ফ্রিড্‌রিশ বের্নহার্ট রিমান। ১৮৭২ সালে জার্মান গণিতবিদ ফেলিক্স ক্লাইন গণিতের একটি অপেক্ষাকৃত নবীন শাখা গ্রুপ তত্ত্ব ব্যবহার করে তার সময়কার সমস্ত জ্যামিতিক ব্যবস্থাগুলিকে এক ব্যবস্থার অধীনে আনেন। ১৮৯৯ সালে আরেকজন জার্মান গণিতবিদ ডাভিড হিলবের্ট তার Foundations of Geometry বইটি প্রকাশ করেন, যাতে ইউক্লিডীয় জ্যামিতির জন্য স্বতঃসিদ্ধসমূহের একটি সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা প্রদান করা হয় এবং এটি গণিতের অন্যান্য শাখায় গভীর প্রভাব ফেলে। ১৯১৬ সালে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুসারে দেখা যায় অনেক ভৌত ঘটনা জ্যামিতিক মূলনীতি থেকে উপনীত হওয়া সম্ভব। এই তত্ত্বের সাফল্য অন্তরক জ্যামিতি ও টপোগণিতের গবেষণায় জোয়ার আনে। ১৯শ শতকের ব্রিটিশ গণিতবিদ আর্থার কেলি চার বা তারও বেশি মাত্রার জ্যামিতি প্রবর্তন করেন। ১৯শ শতকে ফ্র্যাক্টাল মাত্রার আলোচনা শুরু হয়। ১৯৭০-এর দশকে ফ্র্যাক্টালের ধারণা কাজে লাগিয়ে জ্যামিতির নতুন শাখা ফ্র্যাক্টাল জ্যামিতির উদ্ভব হয়। তথ্যসূত্র জ্যামিতি মূল বিষয়ের নিবন্ধ
https://en.wikipedia.org/wiki/Geometry
Geometry
Geometry (from Ancient Greek γεωμετρία (geōmetría) 'land measurement'; from γῆ (gê) 'earth, land' and μέτρον (métron) 'a measure') is a branch of mathematics concerned with properties of space such as the distance, shape, size, and relative position of figures. Geometry is, along with arithmetic, one of the oldest branches of mathematics. A mathematician who works in the field of geometry is called a geometer. Until the 19th century, geometry was almost exclusively devoted to Euclidean geometry, which includes the notions of point, line, plane, distance, angle, surface, and curve, as fundamental concepts. Originally developed to model the physical world, geometry has applications in almost all sciences, and also in art, architecture, and other activities that are related to graphics. Geometry also has applications in areas of mathematics that are apparently unrelated. For example, methods of algebraic geometry are fundamental in Wiles's proof of Fermat's Last Theorem, a problem that was stated in terms of elementary arithmetic, and remained unsolved for several centuries. During the 19th century several discoveries enlarged dramatically the scope of geometry. One of the oldest such discoveries is Carl Friedrich Gauss's Theorema Egregium ("remarkable theorem") that asserts roughly that the Gaussian curvature of a surface is independent from any specific embedding in a Euclidean space. This implies that surfaces can be studied intrinsically, that is, as stand-alone spaces, and has been expanded into the theory of manifolds and Riemannian geometry. Later in the 19th century, it appeared that geometries without the parallel postulate (non-Euclidean geometries) can be developed without introducing any contradiction. The geometry that underlies general relativity is a famous application of non-Euclidean geometry. Since the late 19th century, the scope of geometry has been greatly expanded, and the field has been split in many subfields that depend on the underlying methods—differential geometry, algebraic geometry, computational geometry, algebraic topology, discrete geometry (also known as combinatorial geometry), etc.—or on the properties of Euclidean spaces that are disregarded—projective geometry that consider only alignment of points but not distance and parallelism, affine geometry that omits the concept of angle and distance, finite geometry that omits continuity, and others. This enlargement of the scope of geometry led to a change of meaning of the word "space", which originally referred to the three-dimensional space of the physical world and its model provided by Euclidean geometry; presently a geometric space, or simply a space is a mathematical structure on which some geometry is defined.
1217
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%89%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A6%BE%E0%A6%A8
কম্পিউটার বিজ্ঞান
কম্পিউটার বিজ্ঞান হল বিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে পরিগণক যন্ত্র তথা কম্পিউটারে প্রয়োগের জন্য পরিগণনা এবং ব্যবহারিক কৌশলগুলির তাত্ত্বিক ভিত্তি নিয়ে কাজ করা হয়। কম্পিউটার বিজ্ঞান (ইংরেজি: Computer Science) জ্ঞানের একটি শাখা যেখানে তথ্য ও পরিগণনার তাত্ত্বিক ভিত্তির গবেষণা করা হয় এবং পরিগণক যন্ত্র তথা কম্পিউটার নামক যন্ত্রে এসব পরিগণনা সম্পাদনের ব্যবহারিক পদ্ধতির প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। কম্পিউটার বিজ্ঞান ক্ষেত্রে গবেষণাকারী বিজ্ঞানীদেরকে কম্পিউটার বিজ্ঞানী বলা হয়। একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী পরিগণনার তত্ত্ব ও সফটওয়্যার পদ্ধতির নকশার ব্যবহার সম্পর্কে অধ্যয়ন করেন। কম্পিউটার বিজ্ঞানকে প্রায়শই অ্যালগরিদমীয় পদ্ধতির একটি বিধিবদ্ধ অধ্যয়ন হিসেবে অভিহিত করা হয়, যে পদ্ধতির সাহায্যে তথ্য সৃষ্ট, বর্ণিত ও পরিবর্তিত হয়। কম্পিউটার বিজ্ঞানের অনেক উপশাখা আছে। কিছু শাখা, যেমন কম্পিউটার গ্রাফিক্‌সে নির্দিষ্ট ফলাফল পরিগণনাই মূল লক্ষ্য। আবার কিছু শাখা, যেমন: পরিগণনামূলক জটিলতা তত্ত্বে বিভিন্ন পরিগণনামূলক সমস্যার বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ করাই আলোচ্য। এছাড়াও কিছু শাখা আছে যেখানে বিভিন্ন ভৌত ব্যবস্থায় পরিগণনা বাস্তবায়ন করার পদ্ধতিসমূহ আলোচিত হয়; যেমন: প্রোগ্রামিং ভাষা তত্ত্বে একটি পরিগণনামূলক পদ্ধতিকে কীভাবে কম্পিউটারের ভাষায় প্রকাশ করা যায় তা আলোচনা করা হয়। কম্পিউটার প্রোগ্রামাররা বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট পরিগণনামূলক সমস্যা সমাধান করে থাকেন। অন্যদিকে, মানুষ-কম্পিউটার মিথস্ক্রিয়ার মূল লক্ষ্য হলো কম্পিউটার এবং পরিগণনার ফলাফলসমূহ ব্যবহারোপযোগী, কার্যকর এবং মানুষের কাছে সার্বিকভাবে সহজলভ্য করা। সাধারণ মানুষ অনেক সময় কম্পিউটার বিজ্ঞানকে কম্পিউটার সম্পর্কিত অন্যান্য পেশার (যেমন: তথ্যপ্রযুক্তি) সাথে মিলিয়ে ফেলে, অথবা, তারা মনে করে এটা কম্পিউটার সম্পর্কিত তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা যেমন: গেমিং, ওয়েব ব্রাউজিং এবং ওয়ার্ডপ্রসেসিং ঘরানার কিছু। কিন্তু কম্পিউটার বিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যেসব প্রোগ্রামের সাহায্যে কম্পিউটার গেম, ওয়েব ব্রাউজার ধরনের সফটওয়্যারসমূহ তৈরি করা, তাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ করা এবং এ থেকে অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করে এখনকার চেয়ে ভালো নতুন নতুন প্রোগ্রাম সৃষ্টি করা। ইতিহাস কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রাথমিক ভিত্তি আধুনিক দ্বি-আংকিক পরিগণক যন্ত্র তথা ডিজিটাল কম্পিউটারের উদ্ভাবনের অনেক আগেই স্থাপিত হয়। গুণ এবং ভাগের মতো গণনামূলক প্রক্রিয়াগুলিকে সহায়তা করতে অ্যাবাকাসের মতো গণনামূলক যন্ত্রগুলি প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান ছিল। উপরন্তু, পরিগণন বা কম্পিউটিং সম্পাদনের জন্য কলনবিধি বা অ্যালগরিদমগুলি অত্যাধুনিক পরিগণন সরঞ্জামগুলির বিকাশের আগেই প্রাচীনকাল থেকে বিদ্যমান ছিল। ১৬২৩ সালে জার্মান উদ্ভাবক ভিলহেল্ম শিকার্ড প্রথম যান্ত্রিক গণনাযন্ত্র বা ক্যালকুলেটর তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়, যদিও এটি পূর্বলেখযোগ্য (প্রোগ্রামযোগ্য) ছিল না। ১৬৭৩ সালে জার্মান গণিতবিদ গট‌ফ্রিড লাইব‌নিৎস একটি দ্বি-আংকিক যান্ত্রিক গণনাযন্ত্র (ডিজিটাল ক্যালকুলেটর) তৈরি করেন যা "ধাপবিশিষ্ট হিসাবযন্ত্র" নামে পরিচিত ছিল। দ্বি-আংকিক সংখ্যা পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করার জন্য তাঁকে প্রথম কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও তথ্য তাত্ত্বিক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ১৮২০ সালে চার্লস জেভিয়ার টমাস কার্যালয়ে ব্যবহার করার উপযোগী একটি যান্ত্রিক গণনাযন্ত্র বাজারে ছাড়েন যার নাম ছিল "অ্যারিথোমিটার"। আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের উৎস হিসেবে ইংরেজ বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজের কাজ বিশেষভাবে উল্লেখ্য। ব্যাবেজ ১৮৩৭ সালে একটি পূর্বলেখযোগ্য যান্ত্রিক গণকযন্ত্র তথা প্রোগ্রামযোগ্য যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর প্রস্তাব করেছিলেন। ১৯ শতকে জর্জ বুল উদ্ভাবিত বুলিয়ান বীজগণিত দ্বিমিক বা বাইনারি পদ্ধতি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ বর্তনী তৈরির গাণিতিক ভিত্তি প্রদান করে। ১৯৪০-এর দশকে ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটারের আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত কম্পিউটার বিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বা প্রকৌশলবিদ্যার চেয়ে একটি আলাদা শাস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হত না। তবে এর পর থেকে এটি অনেক শাখা প্রশাখার জন্ম দিয়েছে, যেগুলো একান্তই কম্পিউটার বিজ্ঞান সম্বন্ধীয়। অ্যালগোরিদম তত্ত্ব, গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞান, ও প্রোগ্রাম সংরক্ষণের ক্ষমতাবিশিষ্ট ইলেকট্রনীয় কম্পিউটারের উদ্ভাবন - এই তিনের সম্মিলনে ১৯৪০-এর দশকের শুরুতে কম্পিউটার বিজ্ঞান নামক উচ্চশিক্ষায়তনিক শাস্ত্রটির জন্ম হয়। ১৯৩০-এর দশকে অ্যালান টুরিং, আলোন্‌জো চার্চ ও কুর্ট গ্যোডেলের কলনবিধি বা অ্যালগোরিদম বিষয়ক তত্ত্বসমূহ ও এগুলি যন্ত্রে বাস্তবায়ন সংক্রান্ত গবেষণা, তারও ৬০ বছর আগে অগাস্টা অ্যাডা কিং (কাউন্টেস অফ লাভলেস)-এর উদ্ভাবিত কলনবিধি, ১৯২০-এর দশকে ভ্যানিভার বুশের উদ্ভাবিত সদৃশ পরিগণক যন্ত্র (অ্যানালগ কম্পিউটার), এবং ১৯৩০-এর দশকে হাওয়ার্ড আইকেন ও কনরাড ৎসুজে কর্তৃক উদ্ভাবিত ইলেকট্রনীয় পরিগণক যন্ত্র (ইলেকট্রনিক কম্পিউটার) - এ সবই কম্পিউটার বিজ্ঞানের জন্মে ভূমিকা রাখে। ১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে জন ভন নিউম্যানের রচনাবলি নতুন এই শাস্ত্রের তাত্ত্বিক ভিত্তি সুদৃঢ় করে। মার্কিন তড়িৎ প্রকৌশলী জন প্রেস্‌পার একার্ট ও মার্কিন পদার্থবিদ জন মক্‌লি ১৯৪৬ সালে বিশ্বের সর্বপ্রথম টুরিং-সম্পূর্ণ সাধারণ ব্যবহারোপযোগী ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার এনিয়াক উদ্ভাবন করেন। তারা ১৯৫১ সালে বিশ্বের সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক কম্পিউটার ইউনিভ্যাক-১-ও তৈরি করেন। এর আগে জন প্রেস্‌পার একার্ট ১৯৪৬ সালে পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা স্তরে ইতিহাসের সর্বপ্রথম একটি কম্পিউটার বিজ্ঞান-বিষয়ক পাঠক্রম পরিচালনা করেন; এটি মুর স্কুল লেকচার্স (মুর বিদ্যালয়ের বক্তৃতামালা) নামে বিখ্যাত। ১৯৪০-এর দশকের শেষে ও ১৯৫০-এর দশকের শুরুর দিকে কম্পিউটার বিজ্ঞানের আদি পর্যায়ে গবেষণার লক্ষ্য ছিল বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের জন্য ব্যবহৃত পরিগণনা করার প্রক্রিয়াগুলোকে স্বয়ংক্রিয় রূপ দেওয়া। কোন প্রক্রিয়ায় পরিগণনা করলে তাড়াতাড়ি সঠিক ফল পাওয়া যাবে, তা বের করার জন্য বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা পরিগণনার বিভিন্ন তাত্ত্বিক প্রতিমান (মডেল) তৈরি করেন। এসময় কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং গণিতের সাংখ্যিক বিশ্লেষণ নামক শাখার মধ্যে বহু মিল ছিল, যে শাখায় পরিগণনার নির্ভুলতা ও যথার্থতা নিয়ে গবেষণা করা হত। ১৯৫০ ও ১৯৭০-এর দশকের মধ্যবর্তী সময়ে কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা এসময় কম্পিউটারের ব্যবহার সরল করার উদ্দেশ্যে এক ধরনের কৃত্রিম ভাষা তথা প্রোগ্রামিং ভাষাসমূহের উদ্ভাবন করেন এবং কম্পিউটার ও কম্পিউটার ব্যবহারকারীর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী অপারেটিং সিস্টেম প্রোগ্রামের প্রচলন করেন। তারা কম্পিউটারের নতুন ব্যবহারিক ক্ষেত্র সন্ধান ও নতুন ধরনের কম্পিউটার নকশায়ন নিয়েও গবেষণা চালান। এসময় প্রথম কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করা হয় এবং পরিগণনা ও মনের চিন্তাধারার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। ১৯৫৩ সালে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার পরীক্ষাগারে পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার বিজ্ঞানে সনদ প্রদানকারী এক বছর মেয়াদী একটি শিক্ষাক্রম চালু হয়। ১৯৬২ সালের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সনদ এবং ১৯৬৮ সালে স্নাতক পর্যায়ে সনদ প্রদানকারী শিক্ষাক্রম চালু হয়। ১৯৭০-এর দশকে কম্পিউটার চিপ প্রস্তুতকারকেরা ব্যাপকভাবে মাইক্রোপ্রসেসর উৎপাদন করতে শুরু করেন। মাইক্রোপ্রসেসর হল কম্পিউটারের ভেতরে অবস্থিত প্রধান তথ্য প্রক্রিয়াকারী কেন্দ্র। এই নতুন প্রযুক্তি কম্পিউটার শিল্পব্যবস্থায় বিপ্লব আনে; কম্পিউটার তৈরির খরচ বহুলাংশে কমে যায় এবং কম্পিউটার তথ্য প্রক্রিয়াকরণের দ্রুতি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। মাইক্রোপ্রসেসরের ওপর ভিত্তি করেই সৃষ্টি হয় ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা পিসি। পিসি-র আবির্ভাবের পর কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার বহুগুণে বেড়ে যায়। ১৯৭০-এর শুরু থেকে ১৯৮০-র দশকের পুরোটা জুড়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানের পরিধির ব্যাপক প্রসার ঘটে। কম্পিউটিং শিল্পে উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রযুক্তি চালনার জন্য এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটারে ব্যবহার্য নতুন অ্যাপ্লিকেশনগুলো তৈরির জন্য এর কোন বিকল্প ছিল না। এভাবে কম্পিউটার বিজ্ঞানের অতীতের গবেষণাগুলোর ফলাফল ব্যক্তিগত কম্পিউটারের প্রসারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছাতে শুরু করে। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা অনবরত কম্পিউটার ও তথ্য ব্যবস্থাসমূহের উন্নতি সাধন করে চলেছেন। তারা আরও জটিল, নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী কম্পিউটার নকশা করছেন, এমন সব কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করছেন যেগুলো দিয়ে বিপুল পরিমাণ তথ্য দক্ষতার সাথে আদান প্রদান করা যায় এবং কম্পিউটারকে কীভাবে বুদ্ধিমান সত্তার মত আচরণ করানো যায়, তার উপায়গুলো খুঁজে বের করছেন। কম্পিউটার ক্রমে আধুনিক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হচ্ছে, ফলে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা বর্তমান সমস্যাগুলোর আরও ভাল সমাধান উদ্ভাবন করছেন এবং নতুন নতুন সমস্যার রসদও পাচ্ছেন। লক্ষ্য কম্পিউটার বিজ্ঞানের লক্ষ্য বিচিত্র। জনসাধারণকে বর্তমান কম্পিউটারগুলো চালনা শিক্ষা দেয়া থেকে শুরু করে ভবিষ্যতমুখী প্রযুক্তি, যেগুলো কয়েক দশকেও বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নেই, সেগুলো নিয়ে গবেষণা – এ সবই কম্পিউটার বিজ্ঞানের আওতায় পড়ে। সব বিশেষ বিশেষ লক্ষ্যেরই মূল লক্ষ্য তথ্যের উন্নত ব্যবহারের মাধ্যমে মানবজাতির বর্তমান ও ভবিষ্যতের উন্নতিসাধন। তত্ত্ব, প্রকৌশল ও পরীক্ষা নিরীক্ষা – এ তিনের সমন্বয়েই কম্পিউটার বিজ্ঞান। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা একটি তত্ত্ব দাঁড় করান, তারপর সেই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে একটি কম্পিউটার ব্যবস্থা তৈরি করেন এবং তারপর সেটি পরীক্ষা করে দেখেন। অনেকের মনে হতে পারে যে কম্পিউটার পরীক্ষানিরীক্ষার আবার প্রয়োজন কি? কম্পিউটারকে যা আদেশ দেওয়া হয় তা-ই সে পালন করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাস্তব বিশ্বে কম্পিউটারের নানা জটিল ব্যবহারের সময় কম্পিউটারের অনেক অজানা আচরণ পরিলক্ষিত হয় যেগুলোর পূর্বাভাস দেওয়া যায় না। পরীক্ষা নিরীক্ষা আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ তাই কম্পিউটার বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শাখা কম্পিউটার বিজ্ঞানকে কতগুলি বৃহত্তর শাখায় ভাগ করা যায়। যেমন - বিচ্ছিন্ন গণিত, অ্যালগোরিদম ও উপাত্ত সংগঠন, প্রোগ্রামিং ভাষা, কম্পিউটার স্থাপত্য, অপারেটিং সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, সফটওয়্যার প্রকৌশল, ডাটাবেস ও তথ্য আনয়ন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটবিজ্ঞান, কম্পিউটার গ্রাফিক্‌স, মানুষ-কম্পিউটার মিথষ্ক্রিয়া, পরিগণনামূলক বিজ্ঞান, প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যবিজ্ঞান, এবং জৈব-তথ্যবিজ্ঞান। নিচে এগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হল। বিচ্ছিন্ন গণিত বিচ্ছিন্ন গণিতের ধারণাগুলি কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভিত্তি। খুব কম সংখ্যক কম্পিউটার বিজ্ঞানীই বিচ্ছিন্ন গণিতের উপর বিশেষ জোর দিয়ে গবেষণা করেন, কিন্তু কম্পিউটার বিজ্ঞানের বহু এলাকায় বিচ্ছিন্ন গণিতের ধারণাগুলি ঘুরেফিরে আসে। সেট তত্ত্ব, গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞান, গ্রাফ তত্ত্ব, এবং গুচ্ছবিন্যাসতত্ত্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারণা বিচ্ছিন্ন গণিতের আলোচ্য। উপাত্ত সংগঠন এবং অ্যালগোরিদমের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন গণিতের ধারণাগুলির সর্বাধিক প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায়। তবে কম্পিউটার বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও এর ব্যবহার আছে। যেমন বিধিবদ্ধ সংজ্ঞায়ন, প্রোগ্রামের যাচাইকরণ এবং তথ্যগুপ্তিবিদ্যায় গাণিতিক প্রমাণ সৃষ্টি ও অনুধাবনের ক্ষমতা অত্যন্ত দরকারি একটি দক্ষতা। গ্রাফ তত্ত্বের ধারণাগুলি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, অপারেটিং সিস্টেম এবং কম্পাইলারের গবেষণায় কাজে আসে। সেট তত্ত্বের ধারণাগুলি সফটওয়্যার প্রকৌশল এবং ডাটাবেজের গবেষণায় কাজে লাগে। বিচ্ছিন্ন গণিতে আলোচ্য বিষয়গুলির মধ্যে আছে: ফাংশন, অন্বয়, সেট, পায়রাখোপ নীতি, উপাদান সংখ্যা, গণনযোগ্যতা গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞান, প্রতিজ্ঞামূলক যুক্তিবিজ্ঞান, যৌক্তিক সংযোগ, সত্যক সারণি, স্বাভাবিক রূপ, বৈধতা, বিধেয় যুক্তিবিজ্ঞান, সার্বজনীন মানকরণ ও অস্তিত্ববাচক মানকরণ, গ্রহণমূলক ধারা, বর্জনমূলক ধারা। গাণিতিক প্রমাণ, শর্তাবদ্ধতা, আবর্ত, উদ্দেশ্য নিষেধন, ব্যাবর্ত, নিষেধন, স্ববিরোধিতা, প্রত্যক্ষ প্রমাণ, বাধক দৃষ্টান্ত দ্বারা প্রমাণ, ব্যাবর্তন দ্বারা প্রমাণ, স্ববিরোধিতা দ্বারা প্রমাণ, গাণিতিক আরোহ, শক্তিশালী আরোহ, পুরোগনির্দেশী গাণিতিক সংজ্ঞা, সুবিন্যস্তকরণ। পরিগণনা, পরিগণনার যুক্তি (যোগ ও গুণন নিয়ম, গ্রহণ-বর্জন নীতি), সমান্তর ও গুণোত্তর ধারা, ফিবোনাচ্চি সংখ্যা, পায়রাখোপ নীতি, বিন্যাস ও সমাবেশ, প্যাসকেলের অভেদ, দ্বিপদী উপপাদ্য, পুনরাবর্তন সম্পর্ক, মাস্টার উপপাদ্য। ট্রি, অদিকনির্দেশী গ্রাফ, দিকনির্দেশী গ্রাফ, প্রজনন বৃক্ষ, গমন কৌশল। বিচ্ছিন্ন সম্ভাব্যতা, সসীম সম্ভাব্যতা জগৎ, সম্ভাব্যতা পরিমাপ, ঘটনা, সাপেক্ষ সম্ভাব্যতা, স্বাধীনতা, বেইজের উপপাদ্য, পূর্ণসাংখ্যিক দৈব চলক, প্রত্যাশা]]। অ্যালগোরিদম ও উপাত্ত সংগঠনসমূহ অ্যালগোরিদম ও উপাত্ত সংগঠনসমূহ ব্যবহার করেই কম্পিউটার প্রোগ্রাম রচনা করা হয়। প্রথীতযশা কম্পিউটার বিজ্ঞানী নিকলাউস ভির্টের একটি সুবিখ্যাত বইয়ের নাম ছিল Algorithms + Data Structures = Programs (১৯৭৫)। অ্যালগোরিদম (algorithm) হল সুনির্দিষ্ট ও সসীম সংখ্যক ধাপবিশিষ্ট পদ্ধতি, যা সসীম সময়ের মধ্যে ও সসীম পরিমাণ কম্পিউটার মেমরি ব্যবহার করে কোন সমস্যার সমাধান করে। অতিব্যবহৃত অ্যালগোরিদমগুলোর মধ্যে আছে কোন উপাত্ত সংগ্রহ অনুসন্ধান (searching), উপাত্ত বিন্যস্তকরণ (sorting), ম্যাট্রিক্স গুণন ও অন্যান্য সাংখ্যিক অপারেশনসমূহ, ইত্যাদি। কোন উপাত্ত সংগঠন (data structure) হল তথ্যের একটি নির্দিষ্ট ধরনের সুবিন্যস্ত রূপ, যা উপাত্তের বিভিন্ন মানের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। লিস্ট, অ্যারে, রেকর্ড, স্ট্যাক, কিউ, ট্রি, ইত্যাদি কিছু বহু-ব্যবহৃত উপাত্ত সংগঠন। অ্যালগোরিদম কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি মৌলিক বিষয়। কোন্‌ অ্যালগোরিদম পছন্দ করা হয়েছে এবং সেটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে --- এই দুইটি বিষয় বাস্তব বিশ্বে যেকোন সফটওয়্যার ব্যবস্থার কর্মদক্ষতা নির্ধারণ করে। ভাল অ্যালগোরিদমের নকশায়ন তাই সফটওয়্যারের সাফল্যের চাবিকাঠি। তাছাড়া অ্যালগোরিদম নিয়ে গবেষণা প্রোগ্রামিং ভাষা, ঘরানা, কিংবা কম্পিউটার হার্ডওয়্যার নির্বিশেষে বিভিন্ন সমস্যার অন্তর্নিহিত প্রকৃতি বুঝতে সহায়তা করে। কম্পিউটার বিজ্ঞানের অন্যতম একটি লক্ষ্য হল কোন একটি বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য কোন্‌ অ্যালগোরিদমটি সবচেয়ে শক্তিশালী ও উপযোগী, কিংবা এরকম আদৌ কোন অ্যালগোরিদম আছে কি না, তা বের করা। অ্যালগোরিদমের সব ধরনের আলোচনায় তাই দক্ষতার পরিমাপের ব্যাপারটি ঘুরে ফিরে আসে। অ্যালগোরিদম তত্ত্বের মধ্যে রয়েছে পরিগণনীয়তার তত্ত্ব, পরিগণনামূলক জটিলতা, তথ্য-ভিত্তিক জটিলতা, সহবর্তমানতা তত্ত্ব, সম্ভাবনাভিত্তিক অ্যালগোরিদম, আরোহী ডাটাবেস তত্ত্ব ও সাম্পর্কিক ডাটাবেস তত্ত্ব, দৈবকৃত অ্যালগোরিদম, বিন্যাস-মিলানো অ্যালগোরিদম, গ্রাফ ও নেটওয়ার্ক অ্যালগোরিদম, বীজগাণিতিক অ্যালগোরিদম, গুচ্ছবিন্যাসতাত্ত্বিক সর্বোচ্চ অনুকূলীকরণ, এবং তথ্যগুপ্তিবিদ্যা। অ্যালগোরিদম তত্ত্ব অন্যান্য যেসব জ্ঞানের শাখার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে সেগুলো হল বিচ্ছিন্ন গণিত (যার মধ্যে পড়ে গ্রাফ তত্ত্ব, পৌনঃপুনিক ফাংশন, পুনর্ঘটন সম্পর্কসমূহ, গুচ্ছবিন্যাস তত্ত্ব), ক্যালকুলাস, আরোহী পদ্ধতি, বিধেয় যুক্তিবিজ্ঞান, সময়ভিত্তিক যুক্তিবিজ্ঞান, অর্থবিজ্ঞান, সম্ভাবনা ও পরিসংখ্যান। জটিল অ্যালগোরিদম এবং বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সহায়তা নেয়া হয়। অ্যালগোরিদমসমূহকে টেস্ট কেসের সুইট দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। বিভক্তি-ও-বিজয় অ্যালগোরিদম, লোভী অ্যালগোরিদম, ডাইনামিক প্রোগ্রামিং, সসীম অবস্থার যন্ত্র ইন্টারপ্রেটার, স্ট্যাক যন্ত্র ইন্টারপ্রেটার, অভিজ্ঞতাভিত্তিক অনুসন্ধান ও দৈবকৃত অ্যালগোরিদমের আচরণ নির্ধারণে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যাপক সাহায্য করেছে। এছাড়াও পরীক্ষার মাধ্যমে সমান্তরাল ও বিতরণকৃত অ্যালগোরিদমের কর্মদক্ষতা সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা সম্ভব হয়েছে। অ্যালগোরিদম ও উপাত্ত সংগঠন এলাকায় আলোচিত বিষয়গুলির মধ্যে আছে: প্রাথমিক অ্যালগোরিদম বিশ্লেষণ: জটিলতার ঊর্ধ্ব ও গড় সীমার অসীমতটীয় বিশ্লেষণ; সর্বোৎকৃষ্ট, গড় ও সর্বনিকৃষ্ট আচরণের পার্থক্য; বৃহৎ ওমেগা, ক্ষুদ্র ওমেগা, ওমেগা ও থেটা লিখনপদ্ধতি, আদর্শ জটিলতা শ্রেণীসমূহ, কর্মদক্ষতার অভিজ্ঞতাবাদী পরিমাপ, অ্যালগোরিদমের সময় ও স্থান-বিষয়ক মূল্য, পুনরাবর্ত অন্বয় ব্যবহার করে পুনরাবৃত্তিমূলক অ্যালগোরিদম বিশ্লেষণ ব্রুট-ফোর্স অ্যালগোরিদম, লোভী অ্যালগোরিদম, বিভাজন-ও-বিজয়, পশ্চাদপসরণ, শাখায়ন-ও-বন্ধন, অভিজ্ঞতাভিত্তিক নিয়ম, বিন্যাস মিলানো অ্যালগোরিদম, স্ট্রিং অ্যালগোরিদম, সাংখ্যিক আসন্নীকরণ অ্যালগোরিদম। সাংখ্যিক অ্যালগোরিদম, ধারাবাহিক ও বাইনারি অনুসন্ধান অ্যালগোরিদম, দ্বিঘাত সর্টিং অ্যালগোরিদম (বাছাই, অনুপ্রবেশ), O(NlogN) অ্যালগোরিদম (কুইকসর্ট, হিপসর্ট, মার্জসর্ট), হ্যাশ টেবিল (সংঘর্ষ এড়ানোর কৌশল), বাইনারি অনুসন্ধান বৃক্ষ, গ্রাফের উপস্থাপন (সংলগ্নতা তালিকা, সংলগ্নতা মেট্রিক্স), গভীরতা-ভিত্তিক ও প্রস্থ-ভিত্তিক বিচরণ, ক্ষুদ্রতম পথ অ্যালগোরিদম (ডিয়েকস্ট্রা ও ফ্লয়েডের অ্যালগোরিদসমূহ), অনুবর্তী আবদ্ধতা, সর্বনিম্ন প্রজনন বৃক্ষ (প্রিম ও ক্রুস্কালের অ্যালগোরিদমসমূহ), টপোগাণিতিক সর্ট। বিতরণকৃত অ্যালগোরিদম, ঐকমত্য এবং নির্বাচন, সমাপ্তি নিরূপন, ত্রুটি সহনশীলতা, স্থিতিশীলকরণ। গণনীয়তা, সসীম অবস্থা যন্ত্র, প্রসঙ্গমুক্ত ব্যাকরণ, নিয়ন্ত্রণযোগ্য ও অনিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা, অগণনীয় ফাংশন, বিরতি সমস্যা। পি এবং এনপি শ্রেণী, এনপি-সম্পূর্ণতা, আদর্শ এনপি-সম্পূর্ণ সমস্যাসমূহ, লঘূকরণ কৌশল। স্বয়ংক্রিয়া তত্ত্ব, নিষ্পত্তিমূলক সসীম স্বয়ক্রিয় যন্ত্র, অ-নিষ্পত্তিমূলক সসীম স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র, নিয়মিত এক্সপ্রেশন, পাম্পিং সহায়িকা, নিম্নগামী স্বয়ংক্রিয়ক, টুরিং যন্ত্র, নিয়মিত ভাষা, চম্‌স্কি অনুক্রম, চার্চ-টুরিং বিবৃতি। প্রাগসর অ্যালগোরিদম বিশ্লেষণ: অ্যামর্টাইজ্‌ড বিশ্লেষণ, অনলাইন ও অফলাইন অ্যালগোরিদম, দৈবকৃত অ্যালগোরিদম, ডায়নামিক প্রোগ্রামিং, গুচ্ছবিন্যাসীয় সর্বানুকূলীকরণ। তথ্যগুপ্তিবিদ্যা-সংক্রান্ত অ্যালগোরিদম: ব্যক্তিগত-চাবি তথ্যগুপ্তি, চাবি-হস্তান্তর সমস্যা, উন্মুক্ত-চাবি তথ্যগুপ্তি, ডিজিটাল স্বাক্ষর, নিরাপত্তা প্রোটোকল, শূন্য-জ্ঞান প্রমাণ, বৈধতা নির্ণয়। জ্যামিতিক অ্যালগোরিদম: রেখাংশের ধর্ম, ছেদ, উত্তল হাল অনুসন্ধান অ্যালগোরিদম সমান্তরাল অ্যালগোরিদম: প্র্যাম প্রতিমান (মডেল), এক্সক্লুসিভ/কনকারেন্ট রিড/রাইট, পয়েন্টার লাফানো, ব্রেন্টের উপপাদ্য। প্রোগ্রামিং ভাষাসমূহ অ্যালগোরিদম ও উপাত্ত সংগঠনগুলো কম্পিউটারে বাস্তবায়িত করার জন্য সফ্‌টওয়্যার প্রকৌশলীরা প্রোগ্রাম রচনা করেন। এই প্রোগ্রামগুলো লিখতে গিয়ে তারা যেসব কৃত্রিম ভাষার সাহায্য নেন, তাদেরকে প্রোগ্রামিং ভাষা বলা হয়। মানুষের মুখের স্বাভাবিক ভাষা দ্ব্যর্থবোধক এবং এ ভাষার পদসংগঠন ও শব্দার্থ বহুভাবে অনুধাবন করা যায়, তাই এটি প্রোগ্রাম লেখার জন্য উপযুক্ত নয়। এর পরিবর্তে সরল ও দ্ব্যর্থহীন কৃত্রিম প্রোগ্রামিং ভাষার আশ্রয় নেয়া হয়। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা এমন প্রোগ্রামিং ভাষা উদ্ভাবনের চেষ্টা করেন, যা দিয়ে সহজে প্রোগ্রাম লেখা যায় এবং প্রোগ্রামে ভুলের পরিমাণ কম হয়। প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোকে যন্ত্রের ভাষায় ভাষান্তরিত করে নিতে হয়, যাতে কম্পিউটার প্রোগ্রামের নির্দেশগুলো পালন করতে পারে। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা আরও ভাল ভাষান্তরকরণ অ্যালগোরিদম বের করার চেষ্টা করেন, যাতে যন্ত্রের ভাষায় ভাষান্তরিত প্রোগ্রামগুলো আরও দক্ষভাবে সম্পাদন করা যায়। কম্পিউটার বিজ্ঞানের একেবারে আদি পর্যায়ে বাইনারী সংখ্যাভিত্তিক যান্ত্রিক ভাষায় (machine language) কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে নির্দেশ দেয়া হত। এরপর কাজের সুবিধার জন্য প্রথম যেসব প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করা হয়, তাদের নাম অ্যাসেম্বলি ভাষা। এগুলি যান্ত্রিক ভাষা থেকে খুব একটা বেশি পৃথক ছিল না। ১৯৫০-এর দশক থেকে ব্যবহারকারীরা আরও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ী প্রোগ্রামিং ভাষা লেখা শুরু করেন। এদের মধ্যে ফোরট্রান ভাষাটি ছিল অন্যতম। ফোরট্রান প্রোগ্রামারদেরকে গাণিতিক অপারেশন ছাড়াও বীজগাণিতিক এক্সপ্রেশন লেখার সুযোগ দেয়। ১৯৬০-এর দশকে ফোরট্রানের একটি সরলীকৃত সংস্করণ বেসিক তৈরি করা হয়, এবং এটি নতুনদের শেখার জন্য প্রথম প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে স্কুল-কলেজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফোরট্রান উদ্ভাবনের কাছাকাছি সময়ে আরেকটি ভাষা কোবোল তৈরি করা হয়, যেটি সাধারণ ব্যবসায়িক রেকর্ড, নথিপত্র, ও অন্যান্য ব্যাবসায়িক প্রক্রিয়া দেখাশোনা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। কোবোল ও ফোরট্রান এবং এদের উত্তরসূরী প্যাসকাল ও সি হল নির্দেশমূলক ভাষা (Imperative language)। অর্থাৎ এগুলোতে কম্পিউটারকে কতগুলি প্রত্যক্ষ নির্দেশ দেয়ার মাধ্যমে কাজ করানো হয়; এটা যান্ত্রিক ভাষার সাথে অনেকটাই তুলনীয়। এই ধারার আরও দুটি ভাষা হল অ্যাডা ও অ্যালগল। এছাড়াও আরেক ধরনের ভাষা আছে যেগুলি ফাংশনভিত্তিক (Functional), অর্থাৎ প্রোগ্রামের ভিতরের অংশবিশেষ বা ফাংশন কল করে প্রোগ্রামিং-এর লক্ষ্য পূরণ করা হয়। ফাংশনভিত্তিক ভাষার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হচ্ছে লিস্প; এমএল ও হ্যাস্কেল-ও ফাংশনভিত্তিক ভাষা। পরবর্তীকালে অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং (Object Oriented অব্জেক্ট-ওরিয়েন্টেড) ভাষা উদ্ভাবন করা হয় যেখানে উপাত্ত ও মেথড আধারে আবৃত করা হয়, এবং এই আধারকে বলা হয় অবজেক্ট বা বস্তু। এই ধারায় একাধিক অবজেক্টের মধ্যে বার্তা আদানপ্রদান করে প্রোগ্রামিঙের লক্ষ্য পূরণ করা হয়। স্মলটক, সি++, আইফেল, ভিজুয়াল বেসিক, জাভা, ইত্যাদি বস্তু-সংশ্লিষ্ট ভাষার উদাহরণ। এছাড়াও আছে উপাত্ত-প্রবাহ (Dataflow ডাটাফ্লো) ভাষা যেমন সিসাল, ভাল, ইদ নুভো, লজিক প্রোগ্রামিং ভাষা যেমন প্রোলগ, স্ট্রিং প্রসেসিং ভাষা যেমন - স্নোবল ও আইকন, এবং সহবর্তমানতাভিত্তিক (concurrency-based) প্রোগ্রামিং ভাষা যেমন - কনকারেন্ট প্যাসকাল, অকাম, এসআর, মডুলা-৩। প্রোগ্রামিং ভাষার তত্ত্বে আলোচিত বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে: উপাত্ত টাইপ, অপারেশন, অপার‍্যান্ড, নিয়ন্ত্রণ কাঠামোসমূহ, সম্প্রসারণযোগ্য ভাষাকৌশল যার সাহায্যে নতুন উপাত্ত টাইপ ও অপারেশন সৃষ্টি করা যায়। উচ্চস্তরের ভাষা থেকে মেশিন ভাষায় অনুবাদ, কম্পাইলার, ভাষা প্রক্রিয়াকারক। বিমূর্তন, সিনট্যাক্স বা অন্বয়তত্ত্ব, সেমান্টিক্‌স বা অর্থবিজ্ঞান, প্র্যাগম্যাটিক্‌স বা প্রয়োগতত্ত্ব। ব্যাকরণ, বিধিগত ভাষাসমূহ, স্বয়ংক্রিয়ক তত্ত্ব, টুরিং যন্ত্র, ল্যাম্‌ডা ক্যালকুলাস, পাই ক্যালকুলাস, বিধেয়মূলক যুক্তিবিজ্ঞান। নিয়মিত এক্সপ্রেশন, টাইপ তত্ত্ব, চম্‌স্কি স্তরক্রম স্থির টাইপিং, চলমান টাইপিং ফাংশনভিত্তিক প্রোগ্রামিং, পদ্ধতিভিত্তিক প্রোগ্রামিং, বস্তু-সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামিং, যুক্তি নির্ধারণ, উপাত্ত ধারা। কম্পিউটার স্থাপত্য কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কম্পিউটার নামের যন্ত্র। কম্পিউটার না থাকলে কম্পিউটার বিজ্ঞান গণিতের একটি তাত্ত্বিক শাখা হয়ে থাকত। কম্পিউটার বিজ্ঞানীদেরকে তাই কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ, তাদের কাজ ও পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয়। কম্পিউটার স্থাপত্য সম্পর্কে ধারণা থাকলে কোন প্রোগ্রামের কাঠামো যাতে এটি একটি একটি বাস্তব মেশিনে দ্রুত নির্বাহ করা যায়। কোন কাজের জন্য কম্পিউটার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিপিইউ ক্লকের দ্রুতি, মেমরির আকার, ইত্যাদি ব্যাপার বুঝতেও কম্পিউটার স্থাপত্যের জ্ঞান কাজে আসে। কম্পিউটার স্থপতিরা নতুন নতুন কম্পিউটার ব্যবস্থা নকশায়ন ও বিশ্লেষণ করেন। তারা কম্পিউটারের গতি, সংরক্ষণ ক্ষমতা ও নির্ভরযোগ্যতা কীভাবে বাড়ানো যায় এবং খরচ ও শক্তির ব্যবহার কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা করেন। এ কাজে তারা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার প্রতিমানের (মডেল) সাহায্য নেন। অনেক ক্ষেত্রেই তারা কম্পিউটার হার্ডওয়্যার প্রকৌশলীদের সাথে মিলে নতুন কম্পিউটার বানানোয় অংশ নেন, কেননা তাদের স্থাপত্য প্রতিমানগুলি (মডেলগুলি) অনেকাংশেই কম্পিউটারের বর্তনীবিন্যাসের ওপর নির্ভর করে। অনেক কম্পিউটার স্থপতি বিশেষায়িত প্রয়োগ যেমন ছবি প্রক্রিয়াকরণ, সিগনাল প্রক্রিয়াকরণ, ইত্যাদির জন্য কম্পিউটার নকশায়ন করেন, যাতে বেশি কর্মক্ষমতা, নিম্ন দাম কিংবা উভয়ই সম্ভব হয়। কম্পিউটার স্থাপত্যে আলোচিত বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে: ডিজিটাল যুক্তিবিজ্ঞান: বুলিয়ান বীজগণিত, লজিক গেট, ফ্লিপ ফ্লপ, কাউন্টার, রেজিস্টার, পিএলএ, লজিক এক্সপ্রেশন, লঘিষ্ঠকরণ, গুণফলের সমষ্টি রূপ, রেজিস্টার স্থানান্তর লিপিপদ্ধতি, গেট বিলম্ব, ফ্যান-ইন, ফ্যান-আউট। যান্ত্রিক স্তরে উপাত্তের উপস্থাপন: বিট, বাইট, ওয়ার্ড, সংখ্যার উপস্থাপন (বাইনারি, অক্টাল, হেক্সাডেসিমাল) ও ভিত্তি, স্থিরবিন্দু, ভাসমান বিন্দু, চিহ্নিত উপস্থাপন, ২-এর পূরক উপস্থাপন, ক্যারেক্টার কোড, গ্রাফিকাল উপাত্ত, রেকর্ড, অ্যারে। অ্যাসেম্বলি স্তর: ভন নিউম্যান যন্ত্র, নিয়ন্ত্রণ ইউনিট, নির্দেশ আনয়ন, বিসংকেতায়ন, এবং নির্বাহকরণ, অ্যাসেম্বলি ভাষা প্রোগ্রামিং, নির্দেশ ফরম্যাট, অ্যাড্রেসিং মোড, সাবরুটিন কল ও রিটার্ন, ইনপুট-আউটপুট, ইন্টেরাপ্ট মেমরি: স্টোরেজ ব্যবস্থা, কম্পিউটার মেমরি, কোডিং তত্ত্ব, উপাত্ত সংকোচন, উপাত্ত শুদ্ধতা, মেমরি স্তরক্রম, বিলম্ব, চক্রকাল, ব্যান্ডউইডথ, ইন্টারলিভিং, ক্যাশ মেমরি, ভার্চুয়াল মেমরি। রিস্ক, সিস্ক, ত্রুটি চিহ্নিতকারী ও সংশোধনকারী কোড, কম্পিউটার-সহায়িত নকশায়ন। পাইপলাইন, বহুপ্রসেসর। অপারেটিং সিস্টেম অপারেটিং সিস্টেম হল কম্পিউটারের সার্বিক পরিচালনায় নিয়োজিত বিশেষ প্রোগ্রামসমষ্টি বা সফটওয়্যার। অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারী ও কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের মধ্যকার যোগসূত্র (interface) প্রদান করে, কম্পিউটারের স্মৃতিতে অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম স্থাপন করতে সাহায্য করে, কম্পিউটার কীভাবে অ্যাপ্লিকেশনগুলি চালাবে তা দেখাশোনা করে, কম্পিউটারের বিভিন্ন সম্পদ (resource), যেমন - ডিস্ক পরিসর (disk space) ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে, অননুমোদিত ব্যবহার থেকে কম্পিউটারকে রক্ষা করে, এবং সংরক্ষিত উপাত্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অপারেটিং সিস্টেম ও তাদের সাথে সম্পর্কিত বিমূর্তনগুলি সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের তুলনায় জটিলতর রূপ পেয়েছে। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা কীভাবে অপারেটিং ব্যবস্থা আরও সহজে ব্যবহার করা যায়, সংবেদনশীল উপাত্তের ব্যবহারাধিকার প্রতিরোধ করে কীভাবে অন্যান্য উপাত্ত অংশীদারযোগ্য করা যায়, কীভাবে কম্পিউটারের স্মৃতি ও সময়ের আরও দক্ষ ব্যবহার করা যায়, তার চেষ্টা করেন। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক একাধিক কম্পিউটার সংযুক্ত হলে একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গঠিত হয়। নেটওয়ার্কের কম্পিউটারগুলি কীভাবে একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে ও তথ্যের আদান-প্রদান সম্পাদন করে, তার বিভিন্ন প্রোটোকল নিয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন। এ ব্যাপারে তারা টেলিযোগাযোগ, তথ্য প্রযুক্তি ও হার্ডওয়্যার প্রকৌশল ক্ষেত্রগুলি থেকে অনেক তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক সাহায্য নেন। ল্যান, ওয়্যান, তারহীন (ওয়্যারলেস) নেটওয়ার্ক --- এই তিন ধরনের নেটওয়ার্কই বেশি দেখা যায়। ইন্টারনেট বিশ্বের সর্ববৃহৎ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা পুরানো নেটওয়ার্কসমূহ ও ইন্টারনেটের বিবর্তন অধ্যয়ন করেন। তারা বিভিন্ন নেটওয়ার্ক অ্যাপ্লিকেশন যেমন ইমেইল, টেলনেট, এফটিপি, নিউজগ্রুপ, ওয়েব ব্রাউজার, ইন্সট্যান্ট মেসেজিং, ইত্যাদি কীভাবে কাজ করে তার সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন। তারা নেটওয়ার্ক স্থাপত্যের স্তরক্রমিক গঠন ও বিভিন্ন নেটোওয়ার্ক স্টান্ডার্ড বা মান সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করেন। তারা আধুনিক উদীয়মান নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিগুলির উপযোগিতা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও সীমা সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে অধীত বিষয়গুলির মধ্যে আছে: বিভিন্ন নেটওয়ার্ক আদর্শ ও নেটওয়ার্ক প্রোটোকলসমূহ। সার্কিট সুইচিং ও প্যাকেট সুইচিং ট্রান্সমিশন ত্রুটি শনাক্তকরণ ও দূরীকরণ। রাউটারের মাধ্যমে কীভাবে একটি প্যাকেট নেটওয়ার্কে পরিভ্রমণ করে। নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় যেমন - পাবলিক-কী তথ্যগুপ্তি, প্রাইভেট-কী তথ্যগুপ্তি, এবং এ সংক্রান্ত অ্যালগোরিদমগুলির বাস্তবায়ন। বিভিন্ন ওয়েব প্রযুক্তি: সার্ভার-সাইড প্রোগ্রাম ও ক্লায়েন্ট-সাইড স্ক্রিপ্ট, ওয়েব প্রোটোকলসমূহ, ওয়েবসাইট ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন নির্মাণ, ডাটাবেস-চালিত ওয়েবসাইট, ইত্যাদি। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা: কম্পিউটার ভাইরাস, ওয়ার্ম, ট্রোজান হর্স, ডিনাইয়াল-অফ-সার্ভিস আক্রমণ, নেটওয়ার্ক ফায়ারওয়াল বড় আকারের অডিও ও ভিডিও ফাইল সংকোচন ও প্রসারণের কৌশল ও অ্যালগোরিদমসমূহ, নেটওয়ার্ক দিয়ে মাল্টিমিডিয়া আদানপ্রদানের বিভিন্ন স্টান্ডার্ড বা আদর্শ। ওয়্যারলেস বা তারহীন নেটওয়ার্ক-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রোটোকল, স্ট্যান্ডার্ড ও এগুলির মধ্যে কম্প্যাটিবিলিটি; মোবাইল আইপ ও সাধারণ আইপি-র পার্থক্য, মিডলওয়্যার ও ওয়ারলেস যোগাযোগের জন্য বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের প্রকৃতি। সফটওয়্যার প্রকৌশল ব্যবহারকারী ও ক্রেতাদের চাহিদা মিটিয়ে কীভাবে দক্ষ ও কার্যকরী উপায়ে সফটওয়্যার ব্যবস্থাসমূহ নির্মাণ করা যায়, সফটওয়্যার বিজ্ঞানে সে-সম্পর্কিত তত্ত্ব ও কৌশল আলোচিত হয়। সফটওয়্যার প্রকৌশলীরা সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও সহজে ভেঙ্গে পড়ে না, এমন প্রোগ্রাম তৈরির পদ্ধতি ও কলাকৌশল নিয়ে গবেষণা করেন। এতে সফটওয়্যারের জীবনচক্রের সমস্ত দশা, যথা - বিধিগত পদ্ধতিতে সমস্যার বিবরণ তৈরি, সমাধানের নকশায়ন, প্রোগ্রাম আকারে সমাধানটির বাস্তবায়ন, প্রোগ্রামটির ভুলত্রুটি পরীক্ষা, ও প্রোগ্রামটির রক্ষণাবেক্ষণ - এই সব কিছু আলোচনা করা হয়। সফটওয়্যার প্রকৌশলীরা প্রোগ্রামিং পরিবেশ নামের হাতিয়ার-সংগ্রহ বানিয়ে থাকেন, যার সাহায্যে দ্রুত ও উন্নত উপায়ে প্রোগ্রাম লেখা যায়। সফটওয়্যার বিজ্ঞানীরা প্রকৌশলের বিভিন্ন পদ্ধতি, প্রক্রিয়া, কলাকৌশল ও পরিমাপ পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। সফটওয়্যার উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যবস্থাপনা, সফটওয়্যারের বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ ও প্রতিমান (মডেল) নির্মাণ, মান যাচাই ও নিয়ন্ত্রণ, সফটওয়্যারের বিবর্তন ও পুনর্ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি সংক্রান্ত বিভিন্ন সরঞ্জাম ও উপকরণ তারা ব্যবহার করেন। কোন্‌ শরনের সফটওয়ার উন্নয়নে কোন্‌ ধরনের সরঞ্জাম, পদ্ধতি ও দৃষ্টিভঙ্গি সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য, তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজও করে থাকেন তারা। কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নের যেসব ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব, মান, শিডিউল ও ব্যয়ের গুরুত্ব বেশি, সেসমস্ত ক্ষেত্রে সফটওয়্যার প্রকৌশল অবশ্য-প্রয়োজনীয়। ডাটাবেস ও তথ্য আনয়ন ব্যবস্থাসমূহ কীভাবে বিপুল পরিমাণ স্থায়ী ও অংশীদারযোগ্য উপাত্ত সুবিন্যস্ত করা যায়, যাতে এগুলো দক্ষভাবে ব্যবহার করা যায় ও হালনাগাদ করা যায়, তা-ই এই শাখার আলোচ্য। ডাটাবেস (database) হচ্ছে একাধিক রেকর্ডের সমষ্টি যা বিভিন্ন উপায়ে অনুসন্ধান ও হালনাগাদ করা যায়। তথ্য আনয়ন ব্যবস্থা (information retrieval system) বলতে এক ধরনের ডকুমেন্ট-সমষ্টিকে বোঝায় যে ডকুমেন্টগুলো পরিষ্কারভাবে বিন্যস্ত নয়,অথচ এগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য বা উপাত্ত অনুসন্ধান করা প্রয়োজন,যেমন - কোন সংবাদপত্রে প্রকাশিত বহু নিবন্ধের সমষ্টি। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা এই ডকুমেন্টগুলো থেকে উপাত্তের নির্ঘণ্ট (index) বের করার অ্যালগোরিদম রচনা করেন। নির্ঘণ্ট রচনার পর এগুলো থেকে সহজে উপাত্ত ও তথ্য আনয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের কৌশল প্রয়োগ করা হয়। তথ্য আনয়ন ব্যাবস্থার সাথে সম্পর্কিত আরেকটি ক্ষেত্র হচ্ছে উপাত্ত খনন (data mining), যেখানে বিপুল পরিমাণ উপাত্তের মধ্য থেকে বিভিন্ন বিন্যাস (pattern) শনাক্ত করার উপায়গুলো বের করা হয়; এই শনাক্তকৃত বিন্যাসগুলো পরবর্তীকালে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। ডাটাবেস ও আনয়ন ব্যবস্থাসমূহের গবেষণায় যে সমস্ত তত্ত্ব প্রয়োগ করা হয়, তাদের মধ্যে আছে সাম্পর্কিক বীজগণিত (relational algebra), সাম্পর্কিক ক্যালকুলাস (relational calculus), সহবর্তমানতা তত্ত্ব (concurrency theory), ক্রমায়নযোগ্য আদান-প্রদান (serialiable transaction), ডেডলক প্রতিরোধ (deadlock prevention), সময়-সামঞ্জস্যীকৃত হালনাগাদ (synchronized upadte), নিয়ম-ভিত্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণ (rule-based inference), বিন্যস্তকরণ (sorting), অনুসন্ধান (searching), নির্ঘণ্ট তৈরিকরণ (indexing), কর্মদক্ষতা বিশ্লেষণ (performance analysis), তথ্যের গোপনীয়তা (information privacy) ও তথ্য ব্যবহারকারীর পরিচয় যাচাইকরণ (authentication)। উপাত্তের যৌক্তিক গঠন ও বিভিন্ন উপাত্ত উপাদানের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার জন্য বিভিন্ন উপাত্ত প্রতিমান (মডেল) ব্যবহার করা হয়, যেমন - বস্তুভিত্তিক, রেকর্ডভিত্তিক ও বস্তু-সাম্পর্কিক। প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের কর্মপ্রক্রিয়ায় এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতায় সহায়তাকারী তথ্যব্যবস্থাসমূহ প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। বিশ্ববাজারে সাফল্য লাভের জন্য যেকোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে তথ্যব্যবস্থার ব্যবহার অপরিহার্য। যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম মানুষেরা করে থাকেন, তাই তথ্যব্যবস্থাসমূহের নকশায়নের সময় মানুষের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে গভীর ধারণা থাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে কম্পিউটার বিজ্ঞানের নানা তত্ত্ব প্রাতিষ্ঠানিক সুবিন্যস্তকরণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে পারে। সিদ্ধান্ত বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, বাজারজাতকরণ, নৃবিজ্ঞান, বোধ বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, প্রাতিষ্ঠানিক গতিবিদ্যা, ইত্যাদি সবই কর্মক্ষেত্রে মানুষের আচরণ অনুধাবনে সহায়তা করে, এবং এই-সংক্রান্ত বেশির ভাগ তত্ত্বই কম্পিউটার প্রতিমান (মডেল), বিমূর্তন ও ছদ্মায়নে ব্যবহার করে পূর্বাভাস বের করতে কাজে লাগানো হয়। জীব-তথ্যবিজ্ঞান জীব-তথ্যবিজ্ঞান কম্পিউটার বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত একটি নতুন আন্তঃশাস্ত্রীয় ক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রের বিজ্ঞানীরা এমন সব প্রতিমান (মডেল) ও স্থাপত্য নিয়ে কাজ করছেন যেগুলো কম্পিউটিং, জীববিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব আনতে পারে। ডিএনএ রসায়ন ব্যবহার করে গুচ্ছবিন্যাসতাত্ত্বিক সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। স্ট্রিং বিশ্লেষক অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে মনুষ্য জিনোম প্রকল্পের বিরাট ডাটাবেস খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন খণ্ডাংশের সমন্বয়ে মানুষের পূর্ণাঙ্গ জিনোম পাওয়া গেছে। কম্পিউটার স্থাপত্যবিদ ও চিকিৎসকেরা একসাথে বিভিন্ন কৃত্রিম জীব-যান্ত্রিক বা বায়োনিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করছেন। জিন প্রকৌশলে কম্পিউটার বিশ্লেষণ ব্যবহার করে রোগ প্রতিষেধক এনজাইমের সঠিক রাসায়নিক গঠন বের করা হচ্ছে। এমনকি বর্তমানে কম্পিউটারে ব্যবহৃত স্মৃতির চেয়ে বহুগুণ বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ধরনের জৈব স্মৃতি নিয়েও গবেষণা চলছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও ইন্দ্রিয়ের কার্যপদ্ধতি কীভাবে কম্পিউটার ও যন্ত্রের সাহায্যে অনুকরণ করা যায়, তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাখার আলোচ্য বিষয়। বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও উন্নত করার জন্য এই শাখায় মানুষের আচরণের কম্পিউটার প্রতিমান (মডেল) তৈরি করা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাখার বিভিন্ন উপশাখার মধ্যে রয়েছে যান্ত্রিক জ্ঞানার্জন (machine learning), সিদ্ধান্ত উপনয়ন (inference), সংজ্ঞান (cognition), জ্ঞান উপস্থাপন (knowledge representation), সমস্যা সমাধান (problem solving), ঘটনাভিত্তিক যুক্তিপ্রদান (case based reasoning), স্বাভাবিক ভাষা অনুধাবন (natural language understanding), বচন শনাক্তকরণ (speech recognition), কম্পিউটার দর্শন (computer vision), কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক (artificial neural network), ইত্যাদি। রোবটবিজ্ঞান রোবট বা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রসমূহ নকশায়ন ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিদ্যা হল রোবটবিজ্ঞান। খেলনা রোবট কিংবা কারখানায় ব্যবহৃত স্বয়ংক্রিয় পণ্য নির্মাণ ব্যবস্থা - এ সবই রোবটবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত। রোবট বানানোর অন্যতম উদ্দেশ্য মানুষকে পুনরাবৃত্তিমূলক, বিপজ্জনক ও কঠোর পরিশ্রমের কাজ থেকে রেহাই দেওয়া এবং যেসব কাজে দ্রুতি, নির্ভুলতা ও পরিচ্ছন্নতা জরুরি, সেগুলো রোবটকে দিয়ে করিয়ে নেওয়া। রোবটবিজ্ঞানীরা রোবটের ভৌত বিশিষ্ট্য নির্ধারণ, রোবটের কাজের পরিবেশের প্রতিমান (মডেল) বানানো, রোবটের কর্মপন্থা নির্ধারণ, রোবটের যান্ত্রিক কর্মকৌশলের দক্ষতা বৃদ্ধি, রোবটের আচরণ ও মানুষের নিরাপত্তা, ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করেন। তারা রোবট নিয়ন্ত্রক প্রোগ্রাম লেখেন, এই প্রোগ্রাম কীভাবে সরল করা যায় তার চেষ্টা করেন এবং সেন্সরের ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক প্রোগ্রামের কাছে ফিডব্যাক প্রদানের ব্যবস্থা করেন। তারা রোবটদেরকে দিয়ে কীভাবে মানুষের মত কোন কিছু সুচারুভাবে সম্পাদন করা ও পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলার ক্ষমতা অনুকরণ করানো যায়, তা নিয়েও গবেষণা করেন, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাখার বিজ্ঞানীদের সাথে এ নিয়ে মিলিতভাবে কাজ করেন। কম্পিউটার গ্রাফিক্‌স ভৌত এবং কাল্পনিক বস্তু ও তাদের গতি দ্বিমাত্রিক পর্দা বা ত্রিমাত্রিক হলোগ্রামে কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রদর্শনের গবেষণাকে কম্পিউটার গ্রাফিক্‌স বলা হয়। কীভাবে দক্ষভাবে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে বস্তুসমূহের ছবি তৈরি করা যায়, কীভাবে বাস্তব সময়ে (real time) জটিল বস্তুসমূহের চলন পর্দায় দেখানো যায়, কীভাবে তথ্যসেটসমূহ প্রদর্শন করা যায় যাতে মানুষের বুঝতে সুবিধা হয়, কীভাবে এমন ছদ্মায়ন তৈরি করা যায় যাকে বাস্তব থেকে আলাদা করতে কষ্ট করতে হয়, ইত্যাদি এই শাখার আলোচ্য বিষয়। কম্পিউটার গ্রাফিক্‌স গণিতের পরিগণনামূলক জ্যামিতি শাখার প্রভূত সহায়তা নিয়ে থাকে। প্রদর্শন পর্দায় কীভাবে বস্তুসমূহের অভিক্ষেপ ফেলা যায়, অভিক্ষেপ থেকে লুকানো রেখাগুলি কী করে সরানো যায়, কীভাবে মসৃণতা, ছায়া, প্রতিফলন ও স্বচ্ছতা সৃষ্টি করা যায়, ইত্যাদি সংক্রান্ত নতুন নতুন অ্যালগোরিদম এ শাখায় উদ্ভাবন করার চেষ্টা করা হয়। জটিল প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর অনুকরণ করার জন্য বিশৃঙ্খলা তত্ত্বের সাহায্য নেয়া হয়। পর্দায় আলোর রঙের ব্যাপারে রঙ তত্ত্বের সাহায্য নেয়া হয়। নমুনা তত্ত্ব ব্যবহার করে অবাঞ্ছিত কোলাহল দূর করে পরিচ্ছন্ন ছবি তৈরি করা হয়। এছাড়া রৈখিক বীজগণিত, পদার্থবিজ্ঞান, গাণিতিক বিশ্লেষণ, অরৈখিক ব্যবস্থা, এ সবই কম্পিউটার গ্রাফিক্‌সে কাজে আসে। মনিটরের পর্দায় ছবি বা বর্ণ-সাংখ্যিক ক্যারেক্টার (Alphanumeric) দুই-ই প্রদর্শিত হতে পারে। কম্পিউটারের মেমরিতে যেকোন ছবি সাধারণত দুইভাবে সংরক্ষিত হতে পারে: র‌্যাস্টার গ্রাফিক্‌স ও ভেক্টর গ্রাফিক্‌স। র‌্যাস্টার গ্রাফিক্‌সে যেকোন ছবি অনেকগুলি বিন্দুসমষ্টির একটি মেট্রিক্স হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতিটি বিন্দুর রঙ, উজ্জ্বলতা ও অন্যান্য তথ্য মেমরিতে এক বা একাধিক বিট আকারে রক্ষিত থাকে। একেকটি ছবির জন্য এভাবে যে বিপুল সংখ্যক মেমরির প্রয়োজন হয়, তা দক্ষভাবে ব্যবহারের জন্য কম্পিউটার গ্রাফিক্‌সের বিশেষায়িত প্রোগ্রামগুলিতে বিশেষ ধরনের অ্যালগোরিদম ব্যবহার করা হয়। ভেক্টর গ্রাফিক্‌সে একটি ছবি অনেকগুলি রেখার সমষ্টি হিসেবে পরিগণিত হয়। প্রতিটি রেখা-সংক্রান্ত তথ্য মেমরিতে রক্ষিত থাকে। ৯০-এর দশক থেকে কম্পিউটার মনিটরে র‌্যাস্টার প্রযুক্তিই ব্যবহৃত হয়। এমনকি ভেক্টর প্রযুক্তিতে তৈরি ছবিও র‌্যাস্টারে পরিণত করে নেয়া হয়। র‌্যাস্টার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা হল এতে কোনাকুনি রেখাগুলি কাছ থেকে খাঁজ-কাটা দেখায়। কম্পিউটার গ্রাফিক্‌সের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় বিনোদন শিল্পে। স্পেশাল ইফেক্ট, কম্পিউটার অ্যানিমেশন, ছদ্মায়ন, ইত্যাদি কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই শাখার অবদান। কম্পিউটার গ্রাফিক্‌সের গবেষণা বেশ কিছু গ্রাফিক্‌স মান বা স্ট্যান্ডার্ডের জন্ম দিয়েছে যেমন GKS, PHIGS, VDI, ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে মান প্রিন্টার ভাষা যেমন- পোস্টস্ক্রিপ্ট। ওয়েব পেজে অপ্রকৃত বাস্তবতার জন্য মান ভাষা VRML সৃষ্টি করা হয়েছে। চিকিৎসকদের সাহায্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে ত্রিমাত্রিক ভিজুয়ালাইজার। মানুষ-কম্পিউটার আন্তঃক্রিয়া মানুষ কীভাবে ইন্টারঅ্যাকটিভ অর্থাৎ আন্তঃক্রিয়াশীল বস্তুর সাথে আচরণ করে, তার উপর ভিত্তি করে মানুষের দ্বারা সহজে ব্যবহারযোগ্য সফটওয়্যার নকশায়ন, নির্মাণ ও মূল্যায়নের নীতিগুলি মানুষ-কম্পিউটার আন্তঃক্রিয়া নামের ক্ষেত্রে আলোচিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার ও ব্যবহারকারীর মধ্যবর্তী চিত্রলৈখিক পৃষ্ঠতল (গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস বা গুই) নকশায়ন, মাল্টিমিডিয়া আন্তঃক্রিয়া, উক্তি শনাক্তকরণ ও অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক উপায়সমূহ, কম্পিউটার-জালের (নেটওয়ার্কের) মাধ্যমে যোগাযোগ ও সহযোগিতা, ইত্যাদি ব্যাপারগুলি। পরিগণনা বিজ্ঞান কম্পিউটার বিজ্ঞানের আদি যুগ থেকেই বৈজ্ঞানিক কম্পিউটিং-এর বিভিন্ন কলাকৌশল এবং পরিগণনামূলক পদ্ধতিসমূহ কম্পিউটার বিজ্ঞানের গবেষণার একটি বড় অংশ। সময়ের সাথে কম্পিউটারসমূহের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এই ক্ষেত্রটির গুরুত্ব ও প্রসার দুই-ই বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক কম্পিউটিং একটি আলাদা শাস্ত্র হিসেবে স্বীকৃত হলেও কম্পিউটার বিজ্ঞানের সাথে এর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। পরিগণনামূলক বিজ্ঞানে আগ্রহী কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধারণা ও কলাকৌশল নিয়ে অধ্যয়ন করেন, যাদের মধ্যে রয়েছে সাংখ্যিক উপস্থাপনের যথার্থতা, ত্রুটি বিশ্লেষণ, সাংখ্যিক কলাকৌশল, সমান্তরাল স্থাপত্য ও অ্যালগোরিদমসমূহ, প্রতিমানির্মাণ ও ছদ্মায়ন, এবং বৈজ্ঞানিক দৃশ্যায়ন (ভিজুয়ালাইজেশন)। তারা এই জ্ঞান বিভিন্ন ব্যবহারিক ক্ষেত্র যেমন - আণবিক গতিবিজ্ঞান, প্রবাহী বলবিজ্ঞান, জ্যোতিষ্কসমূহের বলবিজ্ঞান, অর্থনৈতিক পূর্বাভাস, অপটিমাইজেশন সমস্যা, পদার্থের গাঠনিক বিশ্লেষণ, জীবতথ্যবিদ্যা, পরিগণনামূলক জীববিজ্ঞান, ভূতাত্ত্বিক প্রতিমানির্মাণ, কম্পিউটারায়িত টমোগ্রাফি, ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার সুযোগ পান। পরিগণনামূলক বিজ্ঞানে অধীত বিষয়গুলির মধ্যে আছে: সাংখ্যিক বিশ্লেষণ: ফ্লোটিং-পয়েন্ট বা ভাসমান বিন্দু পাটীগণিত; ত্রুটি, স্থিরতা, অভিসৃতি; টেইলর ধারা, নিউটনের পদ্ধতি; বক্ররেখার ফিটিং, ফাংশনের আসন্নীকরণ; সাংখ্যিক অন্তরকলন ও যোগজকলন, সিম্পসনের নিয়ম; অয়লারের পদ্ধতি; যোগাশ্রয়ী বীজগণিত; সসীম পার্থক্য। অপারেশন্‌স গবেষণা: যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রামিং, পূর্ণসংখ্যা প্রোগ্রামিং, সিম্পলেক্স পদ্ধতি; সম্ভাবনাভিত্তিক প্রতিমানির্মা; কিউইং তত্ত্ব, পেট্রি নেট, মার্কভ প্রতিমা ও শৃঙ্খল; অপ্টিমাইজেশন; সিদ্ধান্ত বিশ্লেষণ, পূর্বাভাস, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, সংবেদনশীলতা বিশ্লেষণ; ডায়নামিক প্রোগ্রামিং। প্রতিমানির্মাণ ও ছদ্মায়ন: দৈব সংখ্যাসমূহ, ছদ্মদৈবসংখ্যা সৃষ্টি ও পরীক্ষা, মন্টি কার্লো পদ্ধতি, বণ্টন ফাংশন; বিচ্ছিন্ন-ঘটনা ছদ্মায়ন, অবিচ্ছিন্ন ছদ্মায়ন; ছদ্মায়নের যাচাইকরণ ও বৈধতা প্রদান। উচ্চ-দক্ষতার কম্পিউটিং: প্রসেসর স্থাপত্য, মেমরি ব্যবস্থা, পাইপলাইন, সমান্তরাল ভাষা ও স্থাপত্য; বৈজ্ঞানিক ভিজুয়ালাইজেশন, উপাত্ত ফরম্যাট, ফলাফলের উপস্থাপন, ভিজুয়ালাইজেশন টুলস। আরও দেখুন কম্পিউটার স্থাপত্য কম্পিউটার প্রকৌশল তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ কম্পিউটার বিজ্ঞান নির্দেশিকা - কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রতি নিবেদিত অনুসন্ধান যন্ত্র ও নির্দেশিকা। কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় লেকচারের সংকলন কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ক বইয়ের সংগ্রহ তড়িৎ প্রকৌশল ইলেকট্রনিক প্রকৌশল কম্পিউটার প্রকৌশল মূল বিষয়ের নিবন্ধ
https://en.wikipedia.org/wiki/Computer_science
Computer science
Computer science is the study of computation, information, and automation. Computer science spans theoretical disciplines (such as algorithms, theory of computation, and information theory) to applied disciplines (including the design and implementation of hardware and software). Algorithms and data structures are central to computer science. The theory of computation concerns abstract models of computation and general classes of problems that can be solved using them. The fields of cryptography and computer security involve studying the means for secure communication and preventing security vulnerabilities. Computer graphics and computational geometry address the generation of images. Programming language theory considers different ways to describe computational processes, and database theory concerns the management of repositories of data. Human–computer interaction investigates the interfaces through which humans and computers interact, and software engineering focuses on the design and principles behind developing software. Areas such as operating systems, networks and embedded systems investigate the principles and design behind complex systems. Computer architecture describes the construction of computer components and computer-operated equipment. Artificial intelligence and machine learning aim to synthesize goal-orientated processes such as problem-solving, decision-making, environmental adaptation, planning and learning found in humans and animals. Within artificial intelligence, computer vision aims to understand and process image and video data, while natural language processing aims to understand and process textual and linguistic data. The fundamental concern of computer science is determining what can and cannot be automated. The Turing Award is generally recognized as the highest distinction in computer science. The 1980 Turing Award was given to Tony Hoare who in an essay about Computer Science wrote: What is the central core of the subject [computer science]? What is it that distinguishes it from the separate subjects with which it is related? What is the linking thread which gathers these disparate branches into a single discipline. My answer to these questions is simple -it is the art of programming a computer.