title
stringlengths
1
251
url
stringlengths
31
281
text
stringlengths
0
785k
বাংলা ভাষা
https://bn.wikipedia.org/wiki/বাংলা_ভাষা
প্রধান পাতা
https://bn.wikipedia.org/wiki/প্রধান_পাতা
22px|alt=নির্বাচিত নিবন্ধ|link=উইকিপিডিয়া:নির্বাচিত নিবন্ধ|নির্বাচিত নিবন্ধ নির্বাচিত নিবন্ধ 22px|alt=আপনি জানেন কি?|link=উইকিপিডিয়া:আপনি জানেন কি|আপনি জানেন কি? আপনি জানেন কি... 22px|alt=ভালো নিবন্ধ|link=উইকিপিডিয়া:ভালো নিবন্ধ|ভালো নিবন্ধ ভালো নিবন্ধ 22px|alt=নির্বাচিত ছবি|link=উইকিপিডিয়া:আজকের নির্বাচিত ছবি|আজকের নির্বাচিত ছবি আজকের নির্বাচিত ছবি বিষয় অনুযায়ী বাংলা উইকিপিডিয়া 22px|alt=সম্পর্কিত সংস্থা|link= সম্পর্কিত সংস্থা 25px|alt=অবদানকারীর জন্য পাঠ্য|link= অবদানকারীর জন্য পাঠ্য উইকিপিডিয়ার সহপ্রকল্প অন্যান্য ভাষায় উইকিপিডিয়া
বাংলাদেশ
https://bn.wikipedia.org/wiki/বাংলাদেশ
সুমন চট্টোপাধ্যায়
https://bn.wikipedia.org/wiki/সুমন_চট্টোপাধ্যায়
REDIRECTকবীর সুমন
দুর্গা
https://bn.wikipedia.org/wiki/দুর্গা
দুর্গা (; অর্থাৎ "যিনি দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন"; এবং "যে দেবী দুর্গম নামক অসুরকে বধ করেছিলেন")বাঙ্গালা ভাষার অভিধান, প্রথম ভাগ, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ১৯৮৬ হলেন হিন্দু দেবী পার্বতীর এক উগ্র রূপ। হিন্দু সংস্কৃতিতে তিনি জনপ্রিয় এক দেবী। তাঁকে আদ্যাশক্তির রণরঙ্গিনী এক মহাদেবীর রূপ বলে মান্য করেন। তিনি চণ্ডিকা, যোগমায়া, অম্বিকা, বৈষ্ণবী, মহিষাসুরসংহন্ত্রী, নারায়ণী, মহামায়া, কাত্যায়নী, দাক্ষায়ণী, অদ্রিজা, নগনন্দিনী, সিংহবাহিনী, শারদা, আনন্দময়ী ইত্যাদি নামেও পরিচিতা। দুর্গার বাহুসংখ্যা অনেক। তাঁর সহস্রভুজা, ত্রিংশতিভুজা, বিংশতিভুজা, অষ্টাদশভুজা, ষোড়শভুজা, দশভুজা, অষ্টভুজা ও চতুর্ভুজা মূর্তির উল্লেখ পুরাণ গ্রন্থাদিতে পাওয়া যায় বা বিভিন্ন স্থাপত্য-ভাস্কর্যে দেখা যায়। তবে দশভুজা রূপটিই সমধিক জনপ্রিয়। তাঁর বাহন সিংহ (উত্তর ও পশ্চিমভারতে আঞ্চলিকভাবে বাঘ)। মহিষাসুরমর্দিনী-মূর্তিতে তাঁকে মহিষাসুর নামে এক অসুরকে বধরত অবস্থায় দেখা যায়। তাঁর অনেক রূপ, যার মধ্যে কালী রূপটি অন্যতম জনপ্রিয়‌। সনাতন ধর্মে দেবী দুর্গা পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ।<ref name="ReferenceA">পৌরাণিকা, প্রথম খণ্ড, অমলকুমার মুখোপাধ্যায়, ফার্মা কেএলএম প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০০১</ref> তিনি শিবের স্ত্রী পার্বতীর উগ্র রূপ, কার্তিক ও গণেশের জননী, এবং কালীর অন্যরূপ। বাংলা মঙ্গলকাব্য গুলোতে এবং আগমনী গানে দুর্গারূপে শিবজায়া হিমালয়দুহিতা পার্বতীর সপরিবারে পিতৃগৃহে অবস্থানের আনন্দময় দিনগুলোর (দুর্গাপূজা) এবং তাঁর বিবাহিত জীবনের অপূর্ব বর্ণনা পাওয়া যায়। মহাদেবী দেবতাদের অনুরোধে দুর্গম অসুরকে বধ করেন তাই দেবী পার্বতী দুর্গা নামে অভিহিত হন। দুর্গার আরাধনা বাংলা (পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ), আসাম, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এবং বিহারের কোনো কোনো অঞ্চলে প্রচলিত। ভারতের অন্যত্র দুর্গাপূজা মূলত নবরাত্রি ব্রত রূপে উদযাপিত হয়। বছরে দুইবার দুর্গোৎসবের প্রথা রয়েছে – আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয়া এবং চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে বাসন্তী দুর্গাপূজা। সম্ভবত খ্রিস্টীয় দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বাংলায় দুর্গোৎসব প্রবর্তিত হয়। জনশ্রুতি আছে, রাজশাহীর তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রথম সাড়ম্বরে শারদীয়া দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন এবং তারপর নেত্রকোনা জেলার, মেন্দিপুর গ্রামের মঠবাড়িতে দূর্গা পূজার সূচনা হয়। দুর্গা নামের উৎপত্তি থাম্ব|মহিষাসুরমর্দিনী-দুর্গা, কালীঘাট পটচিত্র, ১৮৮০ দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে হিরণ্যাক্ষ পুত্র রুরুর বংশধর দুর্গম সমুদ্র মন্থনকালীন অসুরদের বঞ্চনা তথা তার পিতৃহত্যার প্রতিশোধ কামনায় ব্রহ্মার তপস্যা করে। সেই কঠোর সাধনায় সন্তুষ্ট ব্রহ্মার কাছে দুর্গম এই বর প্রার্থনা করে যে তাকে এমন এক নারী বধ করবেন যিনি অনাবদ্ধকে আবদ্ধ করতে পটিয়সী। বরলাভের অহংকারে মত্ত দুর্গম এর পর শুরু করে চরম বিশৃঙ্খলা, মাৎস্যন্যায়। তার অত্যাচার আর ধ্বংসলীলায় ত্রিভুবন বিধ্বস্ত। ক্ষমতা আর বিজয়গর্বে মত্ত অসুর এবার চতুর্বেদকে হস্তগত করলে সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষায় দেবী মহামায়া এক দশভুজারূপী মঙ্গলময়ী দেবী রূপে আবির্ভূতা হন আর দুর্গমাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করেন। বিন্ধ্যাচলে ১০ দিন ব্যাপী ঘোরযুদ্ধে দেবী ও তাঁর অংশোদ্ভূতা গুহ্যকালী, ছিন্নমস্তা, ত্রিপুরা, ভৈরবী প্রভৃতি দেবীগণ দুর্গমাসুরের কোটি সৈন্যকে নিধন করেন। এরপর দেবী দুর্গমাসুরকে সুতীক্ষ্ণ শূলের আঘাতে বধ করেন এবং চতুর্বেদ ও সকল মন্ত্র উদ্ধার করেন। দেবী তাই সর্বমন্ত্রময়ী। ক্ষমাশীলা পরমাজননী দেবী এরপর অনুতাপদগ্ধ দুর্গমাসুরকে অদ্বৈত ব্রহ্মের জ্ঞান প্রদান করে মোক্ষলাভ করান। দেবী দুর্গা স্বয়ং সচ্চিদানন্দময়ী পরব্রহ্মস্বরূপা আদ্যাশক্তি মহামায়া। যে সময় বা কাল সৃষ্টিতে একমাত্র আবদ্ধ নয়,যে কাল চিরন্তন সত্য, সেই কালকে পিষ্ট করেন মহাকাল শিব আর মহাকালকে পদতলে রেখেছেন দেবী মহামায়া। তিনি পরমাপ্রকৃতি; দেবী ভিন্ন শিব কেবল জড় বস্তু , দেবীর শক্তিতেই ব্রহ্মা সৃজন, বিষ্ণু পালন এবং রুদ্র সংহার করেন। মহিষাসুরমর্দিনী চণ্ডী ও দুর্গতিনাশিনী দুর্গাকে এক অভেদ মূর্তিকল্পে প্রতিষ্ঠিতা। নানা রূপে দেবী দুর্গা মূলত শক্তি দেবী। ঋগ্বেদে দুর্গার বর্ণনা নেই, তবে ঋগ্বেদোক্ত দেবীসূক্তকে দেবী দুর্গার সূক্ত হিসাবেই মান্যতা দেওয়া হয়। দেবী দুর্গা নির্গুণ অবস্থায় এই জগৎসংসারে বিরাজ করেন। তার জন্ম হয়না, আবির্ভাব ঘটে। দুর্গা সপ্তশতী তে বর্ণিত আছে, যে মহাশক্তি ব্রহ্মার ব্রহ্মত্ব, শিবের শিবত্ব, বিষ্ণুর বিষ্ণুত্ব প্রদান করেছেন, সেই দেবী দেবতাদের সমষ্টিভূত তেজপুঞ্জ থেকে স্বরূপ ধারণ করেন। দুর্গার বিশেষ আলোচনা ও পূজাবিধি তন্ত্র ও পুরাণেই প্রচলিত। যেসকল পুরাণ ও উপপুরাণে দুর্গা বা দেবী সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে সেগুলো হল: মৎস্যপুরাণ ,মার্কণ্ডেয় পুরাণ, দেবীপুরাণ, বামনপুরাণ, কালিকাপুরাণ, স্কন্দপুরাণ, বরাহপুরাণ, শিবপুরাণ ও দেবী ভাগবত। তিনি জয়দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, গন্ধেশ্বরী, বনদুর্গা, চণ্ডী, নারায়ণী, কালী, গৌরী, উমা, মহাদুর্গা, অগ্নিদুর্গা, শূলিনী দুর্গা, সিন্ধুদুর্গা, মূলা দুর্গা, মহামায়া, মহিষমর্দিনী, চামুণ্ডা প্রভৃতি নামে ও রূপেও পূজিতা হন। তিনিই জগদীশ্বরী, আপন মহিমায় দ্যাবাপৃথিবীতে পরিব্যাপ্ত হয়ে আছেন প্রতিটি কণায়। তিনি ঘটন-অঘটন পটিয়সী, দুর্গা দুর্গতিনাশিনী। তিনিই জগতকে চালান ও প্রতিপালন করেন জগদ্ধাত্রী রূপে, আবার প্রলয়কালে তিনিই কালিকা রূপে জগৎকে গ্রাস করেন। বঙ্গ দেশে এবং উৎকলে এই দেবীকে নবপত্রিকার মাধ্যমে নটার রূপকে পূজা করা হয়। যা অনেকাংশে কলা বউ নামে পরিচিত। যদিও কলা বউটা লোক ভাষায় পরিচিত যার কোন পুরাণগত ব্যাখ্যা নেই। thumb|চন্দনকাঠের দুর্গা মূর্তি, মুর্শিদাবাদ থেকে প্রাপ্ত, বর্তমানে ভারতীয় জাদুঘর, কলকাতায় রক্ষিত আছে দেবী দুর্গা শাক্তমতে সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবী, বৈষ্ণব মতে তাকে ভগবান বিষ্ণুর অনন্ত মায়া হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয় এবং শৈবমতে দুর্গাকে শিবের অর্ধাঙ্গিনী পার্বতী । বৈদিক সাহিত্যে দুর্গার উল্লেখ পাওয়া যায়। কেনোপনিষদে বর্ণিত উমা(পার্বতী) হৈমবতীকে দুর্গা হিসাবেই আখ্যায়িত করা হয়েছে। ভাগবতে শ্রীকৃষ্ণের যোগমায়াকে দুর্গার একটি স্বরূপ আখ্যা দেওয়া হয়েছে যিনি হরির সহায়িকা শক্তি তথা শিবভক্তিপ্রদায়িনী। এইগুলো ছাড়াও দুর্গাদেবীর বর্ণনা মহাভারতের বিরাট পর্ব ও অন্যান্য পুরাণে পাওয়া যায়। দেবী দুর্গার ভিন্ন ভিন্ন অবতার সমূহ হল: কালিকা, নন্দা, ভ্রামরী, শাকম্ভরী, রক্তদন্তিকা, কৌশিকী, ভীমা, উগ্রচণ্ডা, ভদ্রকালী, কাত্যায়নী, শান্তা দুর্গা, অজিতা, অপরাজিতা ইত্যাদি। ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে থাম্ব|দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেবী দুর্গা, বাম থেকে: ৭ম-৮ম শতাব্দীর কম্বোডিয়া, ১০ম-১১দশ শতকের ভিয়েতনাম, ৮ম-৯ম শতাব্দীর ইন্দোনেশিয়া। জাপানি দুর্গা বা “জুনতেই ক্যানন (Juntei Kannon)” ১৮ হাতের দুর্গা রূপ। মহাযান পরিব্রাজকদের হাত ধরে দেবীর এই রূপ জাপানে পৌঁছায় ৭০০ শতাব্দীর কাছাকাছি। ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতায় মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড় জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন ছিল। আর্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবতাদের। অনার্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবীদের, তারা পূজিত হতেন আদ্যাশক্তির প্রতীক রূপে। সিন্ধু সভ্যতায় তথা ব্যবিলনীয় সভ্যতায় উল্লেখ পাওয়া যায় এই মাতৃ পূজার। মাতৃপূজাকেন্দ্রিক সংস্কৃতির আদি পর্ব থেকে শুরু সিংহবাহিনী দেবীর পূজা। মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় সভ্যতায় খোঁজ পাওয়া যায় সিংহবাহিনী দেবী ইনান্না-র। কুশান সম্রাট কনিষ্কের মুদ্রাতেও খোঁজ পাওয়া যায় সিংহবাহিনী দেবী নানা-র। তুর্কমেনিস্তান ও আফগানিস্তানে প্রচলিত ছিল এই দেবীর মাহাত্ম্য। এখনও দেবী চণ্ডী “বিবি নানা” হিসেবে এইসব অঞ্চলে পূজিত হন। শাক্ত ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ হয় খ্রিষ্টীয় ৪০০ – ৫০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে। খ্রিষ্টীয় ৪০০ অব্দে রচিত হয় শাক্ত মহাপুরাণের অন্যতম গ্রন্থ দেবীমাহাত্ম্যম্।  এই সময়েই মার্কণ্ডেয় পুরাণের ৮১-৯৩ অধ্যায়গুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় এই গ্রন্থ। দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থেই প্রথম বিভিন্ন নারী দেবতা সংক্রান্ত নানান পুরাণ-কথা, সাংস্কৃতিক ও ধর্মতাত্ত্বিক উপাদানগুলি একত্রিত করা হয়। দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থে বৈদিক পুরুষতান্ত্রিক দেবমণ্ডলীর সঙ্গে সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব নবম অব্দ থেকে বিদ্যমান নৃতাত্ত্বিক মাতৃপূজাকেন্দ্রিক সংস্কৃতির এক সম্মিলনের প্রয়াস লক্ষিত হয়। এর পরবর্তী হাজার বছর এই ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। মহাযান বৌদ্ধধর্মের হাত ধরে দেবী চণ্ডীর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশ, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, তিব্বত, ভুটান, মালয়েশিয়া ও মঙ্গোলিয়ায়। কম্বোডিয়া আর ইন্দোনেশিয়া দেবী চণ্ডীর মাহাত্ম্য পূজিত হতে শুরু করে হিন্দু ধর্মের প্রসারের সাথে। অ্যাংকর যুগের (১০১০ শতাব্দের) পূর্বে কম্বোডিয়ায় মহিষাসুরমর্দিনীর পূজার প্রচলন ছড়িয়ে পরে হিন্দুধর্মের হাত ধরে। এই সময়ের যে দুর্গা মূর্তিগুলি কম্বোডিয়া থেকে উদ্ধারকমত হয়েছে, অধিকাংশ চতুর্ভুজা এবং মহিষাসুরমর্দিনী। মূর্তিগুলির বৈশিষ্ট্যাবলি যে এখানে মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা বিষ্ণুর মতো চতুর্ভুজা এবং শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম ধারণকারী। জাভা ও ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অংশ থেকে উদ্ধার হয়েছে অনেক মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তির প্রত্নতাত্ত্বিকধ্বংসাবশেষ। এই মূর্তিগুলো মধ্যে প্রাচীনতম তারিখ অনুমান অষ্টম শতাব্দীর। ইন্দোনেশিয়ার সেন্ট্রাল জাভাতে রয়েছে নবম শতাব্দীর বিখ্যাত হিন্দু মন্দির প্রাম্বানান। এই মন্দিরে রয়েছে এক জগৎ বিখ্যাত মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি। এটি একটি ইউনেস্কো-স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, ইন্দোনেশিয়ায় বৃহত্তম হিন্দু মন্দির, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বড় মন্দির প্রাঙ্গণ।১৫শ থেকে ১৬শ শতাব্দীর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় মহিষাসুরমর্দিনীর পূজা সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইসলামের আগমনের পর দুর্গার আরাধনা পাড়ি জমায় আরও পূর্বদিকে হিন্দু বালিতে। দুর্গাপূজা 160px|left|মা দুর্গা দুর্গাপূজা হল শক্তির অধিষ্ঠাত্রী পার্বতীদেবীর দুর্গা রূপের উপাসনার উৎসব। দুর্গাপূজা শরৎ (আশ্বিন) এবং বসন্ত (চৈত্র) ঋতুর শুক্লপক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। মার্কণ্ডেয় চণ্ডী অনুযায়ী, দুর্গাপূজার প্রথম প্রচলন হয়েছিল বসন্ত ঋতুতে রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি কর্তৃক। দেবী ভাগবত ও কালিকাপুরাণে উল্লেখ আছে, শরৎকালে শ্রীরামচন্দ্র দেবী পার্বতীর দুর্গতিনাশিনী দুর্গা রূপের পূজা করেছিলেন রাবণ বধের নিমিত্তে; এজন্য একে, ‘অকালবোধন’ও বলা হয়ে থাকে। পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম, বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ডে দুর্গাপূজা বহুলভাবে উদ্‌যাপন করা হয়; উত্তর ভারতে এটি নবরাত্রি হিসাবে পালন করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের একাধিক রাষ্ট্র দুর্গাপূজা পালন করে এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরাও সকলে দুর্গাপূজা পালন করে। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন তথা ষষ্ঠীর থেকে আরম্ভ করে দশমী পর্যন্ত হয়ে থাকে এই দুর্গোৎসব। এই পাঁচ দিন যথাক্রমে দুর্গা ষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। এই পক্ষটিকে দেবীপক্ষ নামেও জানা যায়। পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন এই দেবীপক্ষের সূচনা হয়, একে মহালয়াও বলা হয়ে থাকে; আর পূর্ণিমার দিনটিকে লক্ষ্মী পূজার দিন হিসাবে গণ্য করা হয় । thumb|ঢাকার একটি মন্দিরে দেবী দুর্গার প্রতিমা। নাম ব্যুৎপত্তি হিন্দুশাস্ত্রে "দুর্গা" শব্দটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে: অর্থাৎ, "দ" অক্ষরটি দৈত্য বিনাশ করে, উ-কার বিঘ্ন নাশ করে, রেফ রোগ নাশ করে, "গ" অক্ষরটি পাপ নাশ করে এবং অ-কার শত্রু নাশ করে। এর অর্থ, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।" অন্যদিকে শব্দকল্পদ্রুম বলেছে, "দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা"। অর্থাৎ, যিনি দুর্গ নামে অসুরকে বধ করেছিলেন, তিনি সব সময় দুর্গা নামে পরিচিত।শব্দকল্পদ্রুম ৩।১৬৬৬; পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৪৪ দেবী পার্বতী দেবগণের অনুরোধে ও শিবের আদেশে এক উগ্র রূপ ধারণ করে দুর্গম অসুর কে বধ করেন তাই তিনি দুর্গা নামে অভিহিত হন। প্রভাব ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বন্দে মাতরম গানের পিছনে অনুপ্রেরণা দেবী হিসেবে দুর্গা, পরে ভারতের সরকারী জাতীয় গান। দুর্গা ভারতীয় জাতীয়তাবাদে উপস্থিত যেখানে ভারত মাতা অর্থাৎ ভারত মাতাকে দুর্গার একটি রূপ হিসাবে দেখা হয়। এটি সম্পূর্ণরূপে ধর্মনিরপেক্ষ এবং ভারতীয়দের জন্য মা এবং রক্ষক হিসাবে দুর্গার প্রাচীন আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তিনি পপ সংস্কৃতি এবং জয় সন্তোষী মা- এর মতো ব্লকবাস্টার বলিউড সিনেমায় উপস্থিত রয়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী হিন্দুস্তানি বাক্যাংশ ব্যবহার করে যেমন "দুর্গা মাতা কি জয়!" এবং " কালীমাতা কি জয়!"। যে কোনও মহিলা যে ভাল এবং ন্যায়ের জন্য লড়াই করার জন্য একটি কারণ গ্রহণ করে তার মধ্যে দুর্গার আত্মা রয়েছে বলে বলা হয়। আরও দেখুন দুর্গাপূজা জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে দুর্গা পাদটীকা গ্রন্থপঞ্জি বাংলা/সংস্কৃত " শ্রী দেবী ভাগবত" মার্কণ্ডেয় পুরাণ ইংরেজি Durga Puja: Yesterday, Today and Tomorrow, Sudeshna Banerjee, Rupa and Co, Calcutta, 2004. () Hindu Goddesses: Vision of the Divine Feminine in the Hindu Religious Traditions, David Kinsley. () Grace and Mercy in Her Wild Hair : Selected Poems to the Mother Goddess, Ramprasad Sen (1720-1781). () Durga Puja Beginner, Swami Satyananda Saraswati, Devi Mandir, 2001. () "Chandi Path", Swami Satyananda Saraswati, Devi Mandir () "Chandi Path: Study of Chapter One", Swami Satyananda Saraswati, Devi Mandir () "Chandi Path: Study of Chapter Two", Swami Satyananda Saraswati, Devi Mandir () Offering Flowers, Feeding Skulls: Popular Goddess Worship in West Bengal, June McDaniel, Oxford University Press, 2004. () "Pronunciation and the Chandi Samputs", Swami Satyananda Saraswati, Devi Mandir () "Devi Gita", Swami Satyananda Saraswati, Devi Mandir () The Bond Between Women: A Journey to Fierce Compassion, China Galland, Riverhead Trade Publishing, U.S., 1999. Mahishasura Mardini Stotram'' (Prayer to the Goddess who killed Mahishasura), Sri Sri Sri Shankara Bhagavatpadacharya বহিঃসংযোগ 108 names of Durga Quelle Source: Durgāsaptaśatī বিষয়শ্রেণী:দুর্গাপূজা বিষয়শ্রেণী:পার্বতীর রূপ বিষয়শ্রেণী:হিন্দু দেবদেবী বিষয়শ্রেণী:দেবী মা বিষয়শ্রেণী:শাক্তধর্ম বিষয়শ্রেণী:যুদ্ধের দেবী বিষয়শ্রেণী:হিন্দু দেবী বিষয়শ্রেণী:লক্ষ্মী
আনন্দমঠ
https://bn.wikipedia.org/wiki/আনন্দমঠ
আনন্দমঠ ঊনবিংশ শতাব্দীর ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি বাংলা উপন্যাস। এর প্রকাশকাল ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দ । ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে এর একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। এই উপন্যাসটি ছাপার বিরূদ্ধে ব্রিটিশ সরকার আইন পাশ করে, তবে এর হস্তলিখিত গুপ্ত সংস্করণ জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। উপন্যাসটি মুসলমান-বিরোধী মতধারার জন্য বিতর্কিত। এই উপন্যাসের কাহিনী ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত উত্তরবঙ্গের ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে রচিত। এই উপন্যাসেই বঙ্কিমচন্দ্র বন্দে মাতরম্‌ গানটি লেখেন। পরবর্তীকালে ভারতীয় স্বদেশপ্রেমীরা "বন্দে মাতরম" বাক্যটি জাতীয়তাবাদী শ্লোগান হিসাবে গ্রহণ করেন। এটিকে বাংলা ও ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কাহিনী উপন‍্যাসটির শুরু মহেন্দ্র এবং কল্যাণী নামে এক দম্পতির পরিচয় দিয়ে, যারা দুর্ভিক্ষের সময় খাবার ও জল ছাড়া তাদের গ্রাম পদচিহ্নে আটকে রয়েছে।  তারা তাদের গ্রাম ছেড়ে নিকটতম শহরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেখানে বেঁচে থাকার ভাল সম্ভাবনা রয়েছে।  ঘটনা চলাকালীন, দম্পতি আলাদা হয়ে যায় এবং ডাকাতদের হাতে ধরা না পড়ার জন্য দৌড়াতে থাকে এবং এক পর্যায়ে নদীর তীরে চেতনা হারায়। সত্যানন্দ নামে একজন হিন্দু সন্ন্যাসী কল‍্যাণী ও তার শিশুপুত্রীকে তাঁর আশ্রমে নিয়ে যান এবং তিনি এবং অন্যান্য সন্ন্যাসীরা তার স্বামীর সাথে পুনরায় মিলন না হওয়া পর্যন্ত তার এবং তার সন্তানের যত্ন নেন। স্বামী মহেন্দ্র এই মুহূর্তে সন্ন্যাসীদের আশ্রমে যোগদান এবং মাতৃজাতির সেবা করার দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন।  কল্যাণী নিজেকে হত্যা করার চেষ্টা করে তাঁর স্বপ্ন অর্জনে সহায়তা দিতে চায়, যাতে তিনি পার্থিব কর্তব্য থেকে মুক্তি পান।  এই সময়ে সত্যানন্দ তার সাথে যোগ দেন তবে তিনি তাকে সাহায্য করার আগে তাঁকে ব্রিটিশ সেনারা গ্রেপ্তার করে, কারণ অন্যান্য অনেক সন্ন্যাসী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সূত্রপাত করেছিলেন।  টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি অন্য এক সন্ন্যাসীকে লক্ষ্য করেন যিনি তাঁর সন্ন্যাসীর পোশাকে ছিলেন না। সত্যানন্দ তাঁকে লক্ষ্য করে একটি গান করেন। অন্য সন্ন্যাসী গানটির অর্থ অনুধাবন করে কল্যাণী এবং শিশুপুত্রীটিকে উদ্ধার করে বিদ্রোহী সন্ন্যাসীদের আস্তানায় নিয়ে যান।  একই সাথে কল্যাণীর স্বামী মহেন্দ্রকেও ভিক্ষুরা আশ্রয় দিয়েছিলেন। কল‍্যাণী ও মহেন্দ্র আবার একত্রিত হয়।  বিদ্রোহীদের নেতা মহেন্দ্রকে ভারত-মাতার (মাদার ইন্ডিয়া) তিনটি মুখ দেখান যে পর পর তিনটি ঘরে তিন দেবীর পূজা করা হচ্ছে: জগদ্ধাত্রী, কালী ও দুর্গা। ধীরে ধীরে, বিদ্রোহী প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং তাদের সদস্যসংখ্যা বেড়ে যায়।  উৎসাহিত হয়ে তারা তাদের সদর দফতর একটি ছোট ইটের দুর্গে স্থানান্তরিত করে।  ব্রিটিশরা একটি বিশাল বাহিনী নিয়ে দুর্গ আক্রমণ করে।  বিদ্রোহীরা নিকটবর্তী নদীর উপর ব্রিজ অবরোধ করলেও আর্টিলারি তথা সামরিক প্রশিক্ষণের অভাব উপলব্ধি করে।  লড়াইয়ে ব্রিটিশরা সেতুর উপর থেকে কৌশলগত পশ্চাদপসরণ করে।  সন্ন্যাসীদের অপ্রস্তুত সেনা সামরিক অভিজ্ঞতার অভাব সত্ত্বেও ব্রিটিশদের ফাঁদে ফেলে।  ব্রিজটি বিদ্রোহীদের দ্বারা পূর্ণ হয়ে গেলে ব্রিটিশ আর্টিলারি গুলি চালিয়ে দেয় এবং অনেকে গুরুতর হতাহত হন। তবে কিছু বিদ্রোহী কিছু কামান দখল করে এবং আগুনটিকে ব্রিটিশ লাইনে ফিরিয়ে দেয়।  ব্রিটিশরা পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হয়, বিদ্রোহীরা তাদের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভ করে।  মহেন্দ্র এবং কল্যাণী বাড়ি ফিরে আসে। তাদের আবার বাড়ি তৈরির মধ্য দিয়ে গল্পটি শেষ হয়েছে। মহেন্দ্র বিদ্রোহীদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছিলেন। এই উপন্যাসটিতে বন্দে মাতরম্ গানটি গাওয়া হয়েছে।  বন্দে মাতরমের অর্থ "মা, আমি তোমাকে প্রণাম করি মা"।  এটি বিংশ শতাব্দীতে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলে এবং এর প্রথম দুটি স্তবক স্বাধীনতার পরে ভারতের জাতীয় গানে পরিণত হয়। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:বাংলা সাহিত্য বিষয়শ্রেণী:বাংলা ভাষার উপন্যাস বিষয়শ্রেণী:বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস বিষয়শ্রেণী:বাংলা ভাষার ভারতীয় উপন্যাস বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সাহিত্য বিষয়শ্রেণী:ভারতের পটভূমিতে উপন্যাস বিষয়শ্রেণী:চলচ্চিত্রে গৃহীত ভারতীয় উপন্যাস বিষয়শ্রেণী:১৯শ শতাব্দীর ভারতীয় উপন্যাস
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
https://bn.wikipedia.org/wiki/সৌরভ_গঙ্গোপাধ্যায়
থাম্ব|লর্ডসে সৌরভের জার্সি সংরক্ষিত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা সৌরভ গাঙ্গুলী (; জন্ম ৮ জুলাই ১৯৭২) একজন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার এবং ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন ৮ই জুলাই, ১৯৭২ সালে, কলকাতার বেহালায় একটি প্রতিষ্ঠিত পরিবারে। তার বাবার নাম চণ্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায় ও মাতার নাম নিরুপা গঙ্গোপাধ্যায়। সৌরভ মূলত তার দাদার সাহায্যে ক্রিকেট জীবনে প্রতিষ্ঠিত হন। বাঁহাতি ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অদ্যাবধি ভারতের সফলতম টেস্ট অধিনায়ক বলে বিবেচিত হন; তার অধিনায়কত্বে ভারত ৪৯টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ২১টি ম্যাচে জয়লাভ করে। ২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে তার অধিনায়কত্বেই ভারত ফাইনালে পৌঁছে যায়।Performance of India's Test Captains সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কেবলমাত্র একজন আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন অধিনায়কই ছিলেন না, তার অধীনে যে সকল তরুণ ক্রিকেটারেরা খেলতেন, তাদের কেরিয়ারের উন্নতিকল্পেও তিনি প্রভূত সহায়তা করতেন।http://news.bbc.co.uk/sport3/cwc2003/hi/newsid_2870000/newsid_2870400/2870451.stmhttp://www.tribuneindia.com/2003/20031112/sports.htm একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিশেষ খ্যাতিসম্পন্ন ক্রিকেটার। একদিনের ক্রিকেটে তার মোট রানসংখ্যা এগারো হাজারেরও বেশি। একদিনের ক্রিকেটে তার সাফল্য সত্ত্বেও ক্যারিয়ারের শেষদিকে একদিনের ক্রিকেটে তার স্থলে দলে তরুণ ক্রিকেটারদের নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। ২০০৮ সালের ৭ অক্টোবর সৌরভ ঘোষণা করেন যে সেই মাসে শুরু হতে চলা টেস্ট সিরিজটিই হবে তার জীবনের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ। ২০০৮ সালের ২১ অক্টোবর সৌরভ তার সর্বশেষ প্রথম-সারির ক্রিকেট ম্যাচটি খেলেন। Retrieved 22 December. প্রারম্ভিক জীবন ৮ জুলাই, ১৯৭২ সালে, চন্ডীদাস ও নিরুপা গঙ্গোপাধ্যায় দম্পতির কনিষ্ঠ পুত্র সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতার বেহালায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা, চন্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায় মুদ্রণ এর ব্যবসা ছিল এবং তিনি শহরের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন।সৌরভের শৈশবকাল অত্যন্ত সুখকর ছিল এবং তার ডাক নাম ছিল 'মহারাজা'। তার পিতা, চন্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায় দীর্ঘ অসুস্থতার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে ৭৩ বছর বয়সে মারা যান। কলকাতা শহরে বেশির ভাগ লোকের প্রিয় খেলা 'ফুটবল' ছিল এবং তার ফলে সৌরভও প্রাথমিকভাবে এই খেলায় আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তবে খেলাধুলার প্রতি তার ভালবাসায় বাধ সাধল পড়াশুনো এবং তার মা ক্রিকেট বা কোনও খেলাধুলা পেশা হিসাবে গ্রহণের পক্ষে সৌরভকে খুব একটা সমর্থন করেননি। তবে ততক্ষণে তার বড় ভাই স্নেহাশিস ইতিমধ্যে বেঙ্গল ক্রিকেট দলের একজন প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার ছিলেন। তিনি সৌরভের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নকে সমর্থন করেছিলেন এবং তাঁদের পিতাকে গ্রীষ্মের ছুটিতে সৌরভকে একটি ক্রিকেট কোচিং শিবিরে ভর্তি করতে বলেন, সেই সময় সৌরভ দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছিলেন। ডানহাতি হওয়া সত্ত্বেও সৌরভ বাম হাতে ব্যাটিং করতে শিখেছিলেন যাতে তিনি তার ভাইয়ের ক্রিকেট সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারেন। ব্যাটসম্যান হিসাবে কিছু প্রতিশ্রুতি দেখানোর পরে, তাঁকে একটি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করা হয়েছিল সাথে সাথে সৌরভের বাড়িতে একটি ইনডোর মাল্টিম-জিম এবং কংক্রিট উইকেট নির্মিত হয়েছিল যাতে তিনি এবং স্নেহাশিস ক্রিকেটের অনুশীলন করতে পারেন। দুই ভাই অনেকগুলি পুরানো ক্রিকেটের ম্যাচের ভিডিওগুলি দেখতেন, বিশেষত সৌরভের পছন্দ ছিল ডেভিড গাওয়ারের ভিডিওগুলি। ওড়িশার অনূর্ধ্ব ১৫ দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পরে সৌরভকে তার স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্সের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক করা হয়েছিল, যেখানে তার বেশ কয়েকজন সতীর্থ অভিযোগ করেছিলেন যে সৌরভ অধিনায়ক ছিল বলে তার অহংকার ছিল। কোনও এক সময় জুনিয়র দলের সাথে সফরকালে, সৌরভে দ্বাদশতম ব্যক্তি হিসাবে দলে থাকতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কারণ তিনি মনে করেছিলেন যে খেলোয়াড়দের জন্য সরঞ্জাম এবং পানীয় সরবরাহ করার দায়িত্ব, তার কাজ নয়। তার কাছে তার দলীয় সতীর্থদের এমনভাবে সহায়তা কাজগুলির করা মানে হল তার সামাজিক মর্যাদা থাকবে না এবং তিনি এমন কাজগুলি করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে তার খেলোয়াড়ীত্ব তাকে ১৯৮৯ সালে বাংলার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশের সুযোগ দিয়েছিল এবং একই বছরই তার ভাই বাংলার দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। ক্রিকেট জীবন অধিনায়ক তিনি শুধু একজন খেলোয়াড়ই নন, একজন বিখ্যাত অধিনায়কও ছিলেন। তিনি তার ক্রিকেট জীবনে সর্বমোট ৩১১টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন এবং ১১,৩৬৩ রান সংগ্রহ করেছেন। পাশাপাশি তিনি ১১৩টি টেস্ট খেলেছেন ও ৭,২১২ রান সংগ্রহ করেছেন। ভারতকে তিনি ৪৯টি টেস্ট ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যার মধ্যে ভারত জিতেছিল ২১টি ম্যাচে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভারতকে ১৪৬টি একদিনের আন্তজার্তিক ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যার মধ্যে ভারত জিতেছিল ৭৬ টি ম্যাচে। তিনি ভারতের একজন মিডিয়াম পেসার বোলারও ছিলেন। তিনি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০টি এবং টেস্টে ৩২টি উইকেট দখল করেন। এছাড়া তিনি একদিনের আন্তর্জাতিকে ১০০টি ও টেস্টে ৭১টি ক্যাচ নিয়েছেন। ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলার পর তিনি ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। এরপরে ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০-এ আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেন এবং ২০০৮ ও ২০১০-এ এই দলকে নেতৃত্ব দেন। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত আইপিএলের চতুর্থ সিজনে নিলামে তিনি অবিক্রীত থেকে গেলেও শেষ পর্যন্ত পুনে ওয়ারিয়র্সের দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। বর্তমানে তিনি দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের মেন্টর। অবসর পরবর্তী জীবন বর্তমানে সৌরভ গাঙ্গুলী সিএবি (CAB) এর সভাপতি এবং বিসিসিআই - উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। সৌরভ আইএসএল ফুটবল দল অ্যাটলেটিকো দি কলকাতার (ATK) অন্যতম কর্ণধর। থাম্ব|কেরিয়ার পারফর্মেন্সের পরিসংখ্যান সৌরভ গাঙ্গুলী বর্তমানে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল-এর প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছেন সেই সাথে তিনি ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। এর আগে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সফল এই অধিনায়ক বিসিসিআইয়ের টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। অভিনয় জি বাংলার জনপ্রিয় আপাতবাস্তব টেলিভিশন অনুষ্ঠান দাদাগিরিতে তিনি উপস্থাপক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। বকুল কথা জি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিকে তাকে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল বকুলের আইডল হিসাবে৷ ২০১৮ সালে দূর্গা পূজার গান "জয় জয় দূর্গা মা" তে তাকে লক্ষ্য করা যায়। অধিনায়কত্বের পরিসংখ্যান ওয়ানডে ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব পরিসংখ্যান মাঠ সময়কাল খেলার সংখ্যা জয় পরাজয় টাই ড্রনিজ মাঠে ২০০০-২০০৫ ২১ ১০ ৩ ০ ৮বিদেশের মাঠে ২০০০-২০০৫ ৫১ ২৪ ২৪ ০ ৩নিরপেক্ষ মাঠে ১৯৯৯-২০০৫ ৫৯ ৩৪ ২৩ ০ ২ সর্বমোট ১৯৯৯-২০০৫ ১৪৬ ৭৬ ৬৫ ০ ৫ পুরস্কার সৌরভ মোট ৩১টি আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান। ওডিআই ম্যান অব দ্য ম্যাচ প্রতিপক্ষভেন্যুতারিখম্যাচ পারফরমেন্সফলাফলউৎস দক্ষিণ আফ্রিকা বাফেলো পার্ক, ইস্ট লন্ডন ফেব্রুয়ারি ৪,১৯৯৭ ৮৩ রান(৬x৪, ১x৬) হার বাংলাদেশ সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ড, কলম্বো জুলাই ২৪, ১৯৯৭ ৭৩* রান (৮x৪, ২x৬); ১টি ক্যাচজয় পাকিস্তান টরন্টো ক্রিকেট, স্কেটিং এবং কার্লিন ক্লাব সেপ্টম্বর ২, ১৯৯৭ ৩২ রান (৪x৪); ১টি ক্যাচ ও ১টি উইকেট জয় পাকিস্তান টরন্টো ক্রিকেট, স্কেটিং এবং কার্লিন ক্লাব সেপ্টেম্বর ১৮, ১৯৯৭ ২ রান ; ১টি ক্যাচ ও ৫টি উইকেট জয় পাকিস্তান টরন্টো ক্রিকেট, স্কেটিং এবং কার্লিন ক্লাব সেপ্টম্বর ২০, ১৯৯৭ ৭৩* রান (৮x৪, ১x৬); ২টি উইকেট জয় পাকিস্তান টরন্টো ক্রিকেট, স্কেটিং এবং কার্লিন ক্লাব সেপ্টম্বর ২১, ১৯৯৭ ৯৬ রান (৫x৪, ২x৬); ২টি উইকেট হার পাকিস্তান টরন্টো ক্রিকেট, স্কেটিং এবং কার্লিন ক্লাব সেপ্টম্বর ৩০, ১৯৯৭ ৮৯ রান (১১x৪);জয় পাকিস্তান জাতীয় স্টেডিয়াম,ঢাকা জানুয়ারী ১৮, ১৯৯৮ ১২৪ রান (১১x৪, ১x৬);জয় স্বাস্থ্য ২ জানুয়ারী ২০২১-এ, গাঙ্গুলি ব্যায়াম করার সময় বুকে ব্যথার অভিযোগ করেছিলেন এবং পরে তিনটি অবরুদ্ধ করোনারি ধমনীতে ধরা পড়েছিল যার ফলে একটি হালকা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল। একই দিনে একটি ব্লকেজের জন্য তার প্রাথমিক এনজিওপ্লাস্টি করা হয়েছিল।Martin A (2020) Zak Crawley ready to stake his claim for England's No 3 berth against West Indies, The Guardian, 2020-06-25. Retrieved 2020-06-25. তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Cumulative Career Averages Fastest To Reach Multiples Sourav Ganguly News Articles বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:১৯৭২-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:জীবিত ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:ভারতের টেস্ট ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকে সেঞ্চুরি করা ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিষয়শ্রেণী:ভারতের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:২০০৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:এসিসি এশীয় একাদশের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:ল্যাঙ্কাশায়ারের ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:গ্ল্যামারগনের ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:নর্দাম্পটনশায়ারের ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার বিষয়শ্রেণী:কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়ার ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:বঙ্গবিভূষণ প্রাপক বিষয়শ্রেণী:বাঙালি ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় হিন্দু বিষয়শ্রেণী:বাঙালি হিন্দু বিষয়শ্রেণী:ভারতের টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ক বিষয়শ্রেণী:মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসক বিষয়শ্রেণী:বাংলার ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:কলকাতা থেকে আগত ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:ক্রীড়ায় পদ্মশ্রী প্রাপক বিষয়শ্রেণী:ইন্ডিয়া গ্রিনের ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় ক্রীড়া নির্বাহী ও প্রশাসক বিষয়শ্রেণী:পূর্বাঞ্চলের ক্রিকেটার বিষয়শ্রেণী:অর্জুন পুরস্কার প্রাপক
শেখ হাসিনা
https://bn.wikipedia.org/wiki/শেখ_হাসিনা
শেখ হাসিনা ওয়াজেদ (জন্ম: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭) বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় প্রধান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা প্রধানমন্ত্রী। তিনি মোট ৮ বার সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তার রাজনৈতিক কর্মজীবন প্রায় চার দশকেরও বেশি সময়ব্যাপী বিস্তৃত। তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ ও ১৯৯১-১৯৯৫ পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা এবং ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮১ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালে জনগণের বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে একটি বিরোধীদলবিহীন নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন। নির্বাচনটি বিরোধীদল কর্তৃক বর্জিত এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি সহিংসতায় দুষ্ট ও বিরোধীদল কর্তৃক সাজানো নির্বাচন হিসেবে সমালোচিত একটি নির্বাচনে চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চম মেয়াদে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন। শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০২০ সালে তার অবস্থান ছিল ৩৯তম, ২০১৯ সালে তার অবস্থান ছিল ২৯তম, ২০১৮ সালে ২৬তম এবং ২০১৭ সালে ৩০তম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ফরেইন পলিসি নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদদের তালিকায় শেখ হাসিনা জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি বিশ্ব নারী নেত্রী পরিষদ-এর একজন সদস্য, যা বর্তমান ও প্রাক্তন নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। প্রারম্ভিক জীবন শেখ হাসিনা পূর্ব পাকিস্তানের টুঙ্গিপাড়ায় (বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া) ১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা। তিনি পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। তিনি টুঙ্গিপাড়াতে বাল্যশিক্ষা নেন। ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি ঢাকায় পরিবারের সাথে মোগলটুলির রজনী বোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে স্থানান্তরিত হন। ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে থাকা শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালে এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে তার বিয়ে হয় এবং ওয়াজেদ মিয়া ৯ মে, ২০০৯ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের সংসারে সজীব ওয়াজেদ জয় (পুত্র) ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (কন্যা) নামে দুই সন্তান রয়েছেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী গ্রেপ্তারের সময় তিনি ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাসায় পিতার পাশেই ছিলেন। শেখ মুজিবের গ্রেপ্তারের পর তিনি মায়ের সঙ্গে ভাই-বোনদের নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ও তার বোন শেখ রেহানা বাদে পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়। বোনদ্বয় সেইসময় পড়াশোনার জন্য পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। এরপর তিনি ভারত, বেলজিয়াম সহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করতে থাকেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব প্রদানের লক্ষ্যে তিনি ১৯৮১তে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে প্রত্যাবর্তন করেন। রাজনৈতিক জীবন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের (সাবেক ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজে) ছাত্রী থাকা অবস্থায় ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী, ১৯৮৬-১৯৮৭ পরবর্তীকালে তিনি এবং তার দল এরশাদ বিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেন ও ১৯৯০ সালে অভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। ১৯৯১-এর নির্বাচন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৮৮ টি সংসদীয় আসন লাভ করে এবং প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্ম প্রকাশ করে । মোট প্রদত্ত ভোটের ৩০.১ % লাভ করে , যা সরকার গঠন কারী দল থেকে মাত্র ০.৭% কম । ১৯৯১-১৯৯৬ ১৯৯১ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের তৎকালীন বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে প্রকাশ পায়। ১৯৯১ সালের স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মেয়াদকাল, ১৯৯৬-২০০১ ১৯৯৬ সালে তার দল আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বামপন্থী দলগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বাধ্য করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তার দল আন্দোলনে জয়ী হওয়ায় পরবর্তীতে তার দল জাতীয় নির্বাচনেও জয়লাভ করে এবং ঐ বছর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বড় ব্যবধানে হেরে যায়। বিরোধীদলীয় সময়কাল, ২০০১-২০০৮ বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি (নাজিউর রহমান মঞ্জু) ও ইসলামী ঐক্যজোট এর নির্বাচনী জোটের কাছে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। শেখ হাসিনা দলের এই পরাজয়ের জন্য তারই মনোনীত তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদকে দায়ী করেন। আন্দোলন-সংগ্রাম আওয়ামী লীগ ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতায় আরোহণকে অবৈধ ঘোষণা করে। এবং তার শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে এবং সামরিক শাসকের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে তার দল ১৯৮৬ সালে এই সামরিক শাসকের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। হত্যাচেষ্টা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় এক জনসভায় বক্তৃতাদানকালে গ্রেনেড হামলায় তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। উক্ত হামলায় তার ঘনিষ্ঠজন এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ১৯ জন মৃত্যুবরণ করেন ও শতাধিক আহত হন। বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে এই হামলাকে বিদেশি ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করা হয়। এই গ্রেনেড হামলার তদন্তকে ভিন্ন খাতে করার জন্য 'জজ মিয়া' নাটক সহ বেশকিছু প্রহসন সৃষ্টি করেছিল তৎকালীন চারদলীয় ঐক্যজোট প্রশাসন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে আসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (বর্তমানে বাংলাদেশে বিলুপ্ত) নেতা মুফতি হান্নান সহ বেশকিছু তৎকালীন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে তিনি পুনরায় আন্দোলন শুরু করেন কিছু নতুন সমস্যা নিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ও গ্রেফতার, অক্টোবর ২০০৬-২০০৮ দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হন ২০০৭ সালে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সকাল ৭:৩১-এ যৌথবাহিনী শেখ হাসিনাকে তার বাসভবন "সুধা সদন" থেকে গ্রেফতার করে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। সেখানে আদালত তার জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করে। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনকে সাব-জেল হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে অন্তরীণ রাখা হয়। গ্রেফতারের পূর্বে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা জিল্লুর রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে যান। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। একটি হল ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে রাজনৈতিক সংঘর্ষের জন্য হত্যা মামলা এবং অন্যটি হল প্রায় তিন কোটি টাকার চাঁদাবাজি মামলা।বিডি নিউজ, জুলাই ১৬, ২০০৭, দুপুর ১.১২ এর মাঝে একটির বাদী ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মামলাটি তুলে নেন। জেল থেকে মুক্তিলাভের পরে তিনি চিকিৎসার্থে কয়েক মাস বিদেশে অবস্থান করেন। এরপর দেশে ফিরে দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদকাল, ২০০৯-২০১৪ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়লাভ করে। বিজয়ী দলের সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে তিনি জানুয়ারি ৬, ২০০৯-এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তার দল আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে ২৬০টি আসন লাভ করে। অপরদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি পায় মাত্র ৩২টি আসন।বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এডি/ইএইচবি/এমআই/১৮৫৫ ঘ. তৃতীয় মেয়াদকাল (২০১৪-২০১৯) ইতোপূর্বে সপ্তম, অষ্টম এবং নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ড.ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ক্ষমতা ধরে রাখা এবং রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমনের নামে মামলা ও নির্যাতনের অভিযোগ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক এ ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষিত হওয়া প্রভৃতি কারণে সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিলের উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীতে নবম সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাশের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ৫ই জানুয়ারি ২০১৪ সালে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ৫ই জানুয়ারি রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাকী ১৪৭টি আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।দৈনিক প্রথম আলো, মুদ্রিত সংস্করণ, প্রথম পাতা, ৬ জানুয়ারী, ২০১৪ইং এর আগে গত ১৮ নভেম্বর, ২০১৩ নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠিত হয়।দৈনিক সমকাল, মুদ্রিত সংস্করণ, প্রথম পাতা, ১৯ নভেম্বর, ২০১৩ ইং চতুর্থ মেয়াদকাল (২০১৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৮৮টি সংসদীয় আসনে জয়লাভ করলে শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত নির্বাচনে জয়ী হন। এটি ছিল একাধারে তৃতীয়বারের জন্য তার মেয়াদকাল। বিরোধীদলীয় প্রধান নেতা কামাল হোসেন নির্বাচনকে "প্রহসনমূলক" বলে ঘোষণা করেন এবং ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। নির্বাচনের পূর্বে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অন্যান্য অধিকার সংগঠন সরকারকে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস সম্পাদকীয় নির্বাচনকে প্রহসনমূলক বলে বর্ণনা করে, সম্পাদকীয়তে বলা হয়, পরিস্থিতি এমন ছিল যে, ভোট কারচুপি ছাড়াই হয়তো হাসিনা জিতে যেতেন, তবে কেন তিনি এমন করলেন? পঞ্চম মেয়াদকাল (২০২৪-বর্তমান) সমালোচনা পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি হল বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সরকারের শাসনামলে সংঘটিত একটি ঘটনা, যাতে সরকার কানাডীয় কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনকে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। অভিযোগটি পরবর্তীকালে ভুল ও ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয় এবং কানাডার আদালত এরপর মামলাটি খারিজ করে দেয়। অভিযোগের একটি ফলস্বরূপ, বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করে ৬ কিমি লম্বা বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর রেলপথ ও মহাসড়ক বিশিষ্ট পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প হতে নিজেদের $১.২ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের অর্থায়ন পরিকল্পনা বাতিল করে। মামলা খারিজ হওয়ার তিন মাস পর শেখ হাসিনা যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদ থেকে অপসারণ করেন। ২০১২ সালের ১১ জুলাই, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত বিশ্বব্যাংকের পাঠানো চিঠিটি প্রকাশ করা, যেখানে বিশ্বব্যাংক শেখ হাসিনা এবং অন্য তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ এনেছে। ২০১৬ সালের ১৭ই জানুয়ারি, শেখ হাসিনা দাবি করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যাংকের একজন এমডি বিশ্বব্যাংককে ঋণ বাতিল করার জন্য উসকানি দিয়েছে। ২০১৭ সালের ২৪শে জানুয়ারি, সংসদে নিজ বক্তব্যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প থেকে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তা তুলে নেওয়ার জন্য মুহাম্মদ ইউনুসকে দায়ী করেন। তার মতে, ইউনুস প্রাক্তন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট হিলারি ক্লিনটন-এর সঙ্গে তদবির করেছিলেন বিশ্বব্যাংকে লোন বাতিল করতে প্ররোচিত করার জন্য। ২০১৭ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি কানাডার অন্টারিওতে সুপিরিয়র কোর্টের বিচারপতি ঘুষ-ষড়যন্ত্রের এই কেসটি কোন প্রমাণের অভাবে খারিজ করে দেয়। ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বাংলাদেশ সরকারের সমসাময়িক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকটবর্তী উচ্চপদস্থ নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যার শিরোনাম ছিলো "ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক"। তবে ২রা ফেব্রুয়ারি আইএসপিআর এর একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদনকে ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন বলে নিন্দা জানানো হয়। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) ২০২১ সালের ‘প্রেস ফ্রিডম প্রিডেটর্স’ বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় কঠোর হস্তক্ষেপ করা ৩৭ জন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে। সৃষ্টিকর্ম গ্রন্থ রাজনীতির বাইরে লেখক হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩০টি গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; শেখ মুজিব আমার পিতা সামরিক বনাম গণতন্ত্র ওরা টোকাই কেন বিপন্ন গণতন্ত্র সাদা কালো বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম অসমাপ্ত আত্মজীবনী (গ্রন্থে রূপান্তর) People and Democracy The Quest for Vision 2021 আমাদের ছোট রাসেল সোনা </div> সম্মাননা যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়া ফ্রান্সের ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিপ্লোমা প্রদান করে। ইউএন উইমেন থেকে "প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন" গ্লোবাল পার্টনারশীপ ফোরাম থেকে এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার ৷ ফোর্বস-এ প্রথম ১০০ সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে ৫৯ তম স্থান অর্জন৷ ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ সালে বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ল ডিগ্রি প্রদান৷ ৪ জুলাই ১৯৯৭ সালে জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ল সম্মাননা৷ অ্যবার্টয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৫ অক্টোবর ১৯৯৭ সালে ডক্টর অব ফিলোসপী সম্মাননা। ইউনেসকো থেকে ১৯৯৮ সালে ‘‘হুপে-বোয়ানি’’ শান্তি পুরস্কার৷ সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ থেকে ১৯৯৮ সালে মাদার তেরেসা পুরস্কার। মহাত্মা গান্ধী ফাউন্ডেশন কর্তৃক ১৯৯৮ সালে এম কে গান্ধী পুরস্কার গ্রহণ ৷ আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে ‘‘Medal of Distinction” পদক ও ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে “Head of State” পদক লাভ। ২৪ জানুয়ারি ১৯৯৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'ডেসিকোটাম' (ডক্টর অব লিটারেচার, হনোরিস কাউজা) লাভ ১৯৯৯ সালে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা থেকে চেরেস পদক লাভ। ২০ অক্টোবর ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অফ ল ডিগ্রি লাভ ১৮ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ ল ডিগ্রি লাভ ৫ সেপ্টেম্বর ২০০০ সালে ব্রিজপয়েন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ হিউম্যান লেটার লাভ। ৯ এপ্রিল ২০০০ সালে রানডলপ ম্যাকন উইমেন্স কলেজ কর্তৃক পার্ল এস. বাক পুরস্কার রোটারি ফাউন্ডেশন কর্তৃক পল হ্যারিস ফেলো ২০০৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার। ৩০ ডিসেম্বর, ২০১১ সালে বাংলা ভাষার ধারক ও বাহক হিসেবে বাংলা একাডেমি তাদের বার্ষিক সাধারণ সভায় সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। ১২ জানুয়ারি, ২০১২ সালেদক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি এবং উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ডক্টর অব লিটারেচার বা ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করে।কালের কণ্ঠ, মুদ্রিত সংস্করণ, প্রথম পাতা, ৯ জানুয়ারি, ২০১২ইং নারী ও কন্যাশিশুদের শিক্ষা প্রসারের স্বীকৃতি হিসাবে ২০১৪ সালে ইউনেস্কো ‘শান্তিবৃক্ষ’ পুরস্কার। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেতৃত্বের জন্য ইউএন পরিবেশ পুরস্কার (চ্যাম্পিয়নস অব দি আর্থ) লাভ। ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা জয়ের জন্য তিনি সাউথ সাউথ পুরস্কার লাভ করেন ৷ ১৬ নভেম্বর ২০১৫ সালে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডক্টর অব দ্য ইউনিভার্সিটি’ ডিগ্রি। ২৬ মে ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক 'ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট)' ডিগ্রি। ২৭ এপ্রিল ২০১৮ সালে বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্বদানের জন্য গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এওয়ার্ড লাভ করেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি ও তার মানবিকতার জন্য আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট এওয়ার্ড এবং ২০১৮ স্পেশাল ডিসটিংশন এওয়ার্ড ফর লিডারশিপ গ্রহণ করেন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সি ‘দি ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস) এবং নিউইয়র্ক, জুরিখ ও হংকং ভিত্তিক তিনটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে দুটি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। মার্চ ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট এ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে ইনস্টিটিউট অব সাউফ এশিয়ান উইমেন। 'ভ্যাকসিন হিরো' –টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতা জন্য পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’-জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে তাকে এই পুরস্কারে প্রদান করেন। ক্ষমতাধর নারী বিশ্ব পর্যায়ে শেখ হাসিনা ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় ৭ম স্থানে ছিলেন। তার পূর্বে এবং পশ্চাতে ছিলেন যথাক্রমে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট অ্যালেন জনসন সার্লেফ এবং আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জোহানা সিগার্ডারডটির । যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নারী নেতৃত্বের ১২জনের নাম নির্বাচিত করে। উল্লেখ্য যে, ২০১০ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে তিনি বিশ্বের সেরা দশ ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থানে ছিলেন। ঐ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের ঠিক পিছনে ছিলেন এবং ব্যাপক প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করেছিলেন। ২০১৫ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫৯তম স্থানে আছেন। ২০১৪ সালে এই তালিকায় শেখ হাসিনার অবস্থান ছিল ৪৭তম। এশীয় পর্যায়ে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা সিএনএন ক্ষমতাধর ৮ এশীয় নারীর তালিকা প্রকাশ করেছিল। উক্ত তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা। জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে চলচ্চিত্র ২০১৮ সালে পিপলু খানের পরিচালনায় আওয়ামী লীগের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের সহায়তায় নির্মিত হাসিনা: এ ডটার'স টেল নামক তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনার জীবনীর বিভিন্ন দিক সরাসরি তুলে ধরা হয়। ২০২১ সালের আল জাজিরার ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক- প্রামান্যচিত্রে শেখ হাসিনাকে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এর দন্ডপ্রাপ্ত ভাইদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায় জেনারেল আজিজ আহমেদের দন্ডপ্রাপ্ত ভাইদের মধ্যে একজন যিনি হারিস নামে পরিচিত তিনি প্রধানমন্ত্রীর থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পাবার কথা বলছেন। স্থাপনা বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করা হয়েছে; যার প্রায় সবই শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ |- বিষয়শ্রেণী:১৯৪৭-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:জীবিত ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ বিষয়শ্রেণী:২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী নারী রাজনীতিবিদ বিষয়শ্রেণী:২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী নারী রাজনীতিবিদ বিষয়শ্রেণী:বাঙালি রাজনীতিবিদ বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিষয়শ্রেণী:নারী প্রধানমন্ত্রী বিষয়শ্রেণী:মহিলা সরকার প্রধান বিষয়শ্রেণী:মহিলা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বিষয়শ্রেণী:জাতীয় সংসদের মহিলা সদস্য বিষয়শ্রেণী:তৃতীয় জাতীয় সংসদ সদস্য বিষয়শ্রেণী:পঞ্চম জাতীয় সংসদ সদস্য বিষয়শ্রেণী:সপ্তম জাতীয় সংসদ সদস্য বিষয়শ্রেণী:অষ্টম জাতীয় সংসদ সদস্য বিষয়শ্রেণী:নবম জাতীয় সংসদ সদস্য বিষয়শ্রেণী:দশম জাতীয় সংসদ সদস্য বিষয়শ্রেণী:একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য বিষয়শ্রেণী:দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ বিষয়শ্রেণী:রাজনীতিতে বাংলাদেশী নারী বিষয়শ্রেণী:বিরোধীদলীয় নেত্রী বিষয়শ্রেণী:বিরোধীদলীয় নেতা (বাংলাদেশ) বিষয়শ্রেণী:জাতীয় নেতার সন্তান বিষয়শ্রেণী:বাঙালি মুসলিম বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী সুন্নি মুসলিম বিষয়শ্রেণী:শেখ পরিবার বিষয়শ্রেণী:গোপালগঞ্জ জেলার রাজনীতিবিদ বিষয়শ্রেণী:ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:বাংলা একাডেমির সম্মানিত ফেলো বিষয়শ্রেণী:আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:ইডেন মহিলা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:গোপালগঞ্জ জেলার ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর বাঙালি বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর মুসলিম বিষয়শ্রেণী:২১শ শতাব্দীর বাঙালি বিষয়শ্রেণী:আরব বংশোদ্ভূত বাংলাদেশী বিষয়শ্রেণী:দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য
শেখ মুজিবুর রহমান
https://bn.wikipedia.org/wiki/শেখ_মুজিবুর_রহমান
কথ্য ভাষা
https://bn.wikipedia.org/wiki/কথ্য_ভাষা
থাম্ব|ইতালিতে কথা বলা ভাষা আমরা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে দেখি মানুষে যে ভাষাগুলোতে কথা বলে, সেগুলো কথ্য ভাষা। বর্তমানে, বিশ্বের সব দেশ মিলে কথ্য ভাষার সংখ্যা ৬,০০০-র বেশি। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজস্ব কথ্য ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণের নিয়ম থাকে, কিন্তু এই নিয়মগুলো আর সমাজস্বীকৃত লিখিত ভাষার নিয়মগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। বাংলা ভাষার কথ্যরূপ এবং লিখিত রূপের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখযোগ্য। আঞ্চলিকতা ছাড়াও বাচনভঙ্গী এবং প্রকাশভঙ্গীতে ব্যাপক রূপান্তর লক্ষ্য করা যায়। যেমন ঢাকার প্রমিত সমাজে কথ্যভাষায় তৎসম শব্দের ব্যবহারে অনীহা লক্ষ্য করা যায়। বিষয়শ্রেণী:ভাষা বিষয়শ্রেণী:কথন বিষয়শ্রেণী:ভাষার ধরন ও শৈলী
ইউনিকোড
https://bn.wikipedia.org/wiki/ইউনিকোড
ইউনিকোড (যা আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনিকোড মান নামে পরিচিত) তথ্য প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত একটি মান বা আদর্শ যার উদ্দেশ্যে বিশ্বের সিংহভাগ লিখন পদ্ধতি দ্বারা সৃষ্ট পাঠ্যবস্তুকে দ্বি-আংকিক পরিগণক যন্ত্র (ডিজিটাল কম্পিউটার) ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় সঙ্গতিপূর্ণভাবে সংকেতায়ন, উপস্থাপন ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা। ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম নামক একটি অলাভজনক সংস্থা এই মানটির রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত আছে। এটিতে ১৫৯টি আধুনিক ও ঐতিহাসিক লিপির লিখনপ্রতীকগুলি ছাড়াও অন্যান্য অনেক প্রতীক, ইমোজি (আবেগ-অনুভূতিজ্ঞাপক চিত্রপ্রতীক) এবং অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ ও বিন্যাস সংকেতের জন্য ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৭৬২টি পরিগণনীয় প্রতীক সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ইউনিকোড মানে ব্যবহৃত প্রতীক সম্ভারটি সর্বদা আইএসও/আইইসি ১০৬৪৬ নামক আন্তর্জাতিক মানটিতে সংজ্ঞায়িত সর্বজনীন সংকেতায়িত প্রতীক সেটটি ব্যবহার করে; এই দুইটিতে সংজ্ঞায়িত সংকেতগুলি সম্পূর্ণ অভিন্ন। তবে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের দাপ্তরিক প্রকাশনাটিতে শুধু ঐ প্রতীকগুলির সংকেতায়ন-ই সংজ্ঞায়িত করা হয়নি, বরং এর পাশাপাশি লিপিগুলি সম্পর্কে ও এগুলিকে কীভাবে প্রদর্শন করতে হবে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে আদর্শীকরণ নিয়মাবলি, বিশ্লিষ্টকরণ, আদর্শ ক্রমবিন্যস্তকরণ, চিত্রায়ন, বহুভাষিক পাঠ্যবস্তুর জন্য দ্বিমুখী পাঠ্যবস্তু প্রদর্শন ক্রম, ইত্যাদি উল্লেখ্য। অধিকিন্তু ইউনিকোড মানে সফটওয়্যার নির্মাতা ও নকশাবিদদের প্রতীকসম্ভারটিকে সঠিকভাবে বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য উপাত্ত নথি ও দৃশ্যমান রেখাচিত্রের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতীকের সেটগুলিকে ঐক্যবদ্ধকরণে ইউনিকোডের সাফল্যের কারণে পরিগণক নির্দেশনাসামগ্রী বা কম্পিউটার সফটওয়্যারের আন্তর্জাতিকীকরণ ও স্থানীয়করণে এটির ব্যাপক ও আধিপত্য বিস্তারকারী প্রয়োগ ঘটেছে। বহুসংখ্যক সাম্প্রতিক তথ্য প্রযুক্তিতে এটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যাদের মধ্যে আধুনিক পরিগণক পরিচালক ব্যবস্থা (অপারেটিং সিস্টেম), এক্সএমএল, জাভা প্রোগ্রামিং ভাষা (ও অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষা) এবং ডট নেট পরিকাঠামোর নাম উল্লেখ্য। ইউনিকোড মানটিকে কেবল একটি নয়, বরং একাধিক প্রতীক সংকেতায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। ইউনিকোড মানে যে প্রতীক সংকেতায়ন পদ্ধতিগুলি সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশ কিছু ইউনিকোড রূপান্তর বিন্যাস (ইউটিএফ) যেমন ইউটিএফ-৮, ইউটিএফ-১৬, ইউটিএফ-৩২ ছাড়াও আরও বেশ কিছু প্রতীক সংকেতায়ন পদ্ধতি আছে। ইউনিকোডের সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় বাস্তবায়িত সংকেতায়ন পদ্ধতিগুলি হল ইউটিএফ-৮, ইউটিএফ-১৬ এবং অধুনা বিলুপ্ত ইউসিএস-২। জিবি ১৮০৩০ নামের একটি অনানুষ্ঠানিক আদর্শ আছে, যেটি ইউনিকোডকে সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করেছে এবং যেটি চীনে মান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইতিহাস ১৯৮৭ সালে জিরক্স (Xerox) কোম্পানির জো বেকার (Joe Becker) এবং অ্যাপল (Apple) কোম্পানির লি কলিন্স (Lee Collins) ও মার্ক ডেভিস (Mark Davis) একত্রে মিলে ইউনিকোডের কাজ শুরু করেছিলেন। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল সকল ভাষাকে একটি সর্বজনীন সংকেতায়নের মানদণ্ডে নিয়ে আসা। ফলশ্রুতিতে পরবর্তী বছরের (১৯৮৮) আগস্ট মাসে জো বেকার "International/multilingual text character encoding system, tentatively called Unicode." (বাংলা অনুবাদ: "আন্তর্জাতিক/বহুভাষিক পাঠ্যপ্রতীক সংকেতায়ন পদ্ধতি, যাকে আপাতত 'ইউনিকোড' নামে ডাকা হচ্ছে") নামে একটি খসড়া প্রস্তবনা তৈরি করেন। এই প্রস্তাবনাটি ছিল একটি ১৬ বিটের প্রতীক সংকেতায়ন পদ্ধতি। Unicode is intended to address the need for a workable, reliable world text encoding. Unicode could be roughly described as "wide-body ASCII" that has been stretched to 16 bits to encompass the characters of all the world's living languages. In a properly engineered design, 16 bits per character are more than sufficient for this purpose. ১৬ বিটের প্রতীক সংকেতায়ন পদ্ধতি পছন্দ করার কারণ ছিল এই যে তাঁরা মনে করেছিলেন যে শুধু আধুনিক ভাষার বর্ণগুলি ব্যবহৃত হবে। Unicode gives higher priority to ensuring utility for the future than to preserving past antiquities. Unicode aims in the first instance at the characters published in modern text (e.g. in the union of all newspapers and magazines printed in the world in 1988), whose number is undoubtedly far below 214 = 16,384. Beyond those modern-use characters, all others may be defined to be obsolete or rare; these are better candidates for private-use registration than for congesting the public list of generally-useful Unicodes. পরবর্তীতে অনেক পুরাতন ভাষার জন্যও অন্যান্য বহু প্রতীক তালিকাভুক্ত করার প্রয়োজন পড়ে। এদের মাঝে এমন ভাষাও রয়েছে যেগুলি বর্তমানে আর ব্যবহৃত হয় না। (যেমন: মিশরীয় চিত্রলিপি, লিনিয়ার-এ, লিনিয়ার-বি ইত্যাদি) ১৯৮৯ সালে মেটাফোর (Metaphor) কোম্পানির কেন হুইসলার (Ken Whistler) এবং মাইক কার্নাগান (Mike Kernaghan), আর.এল.জি (RLG) কোম্পানির ক্যারেন স্মিথ-ইয়োশিমুরা (Karen Smith-Yoshimura) ও জোন আলিপ্র্যান্ড (Joan Aliprand) এবং সান মাইক্রোসিস্টেমস (Sun Microsystems) কোম্পানির গ্লেন রাইট (Glenn Wright) ইউনিকোড উন্নয়ন দলে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে মাইক্রোসফট (Microsoft) কোম্পানির মিশেল সুইগনার্ড (Michel Suignard) ও অ্যাস্মাস ফ্রাইট্যাগ (Asmus Freytag) এবং নেক্সট (NeXT) কোম্পানির রিক ম্যাকগোয়ান (Rick McGowan) যোগদান করেন। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে ইউনিকোডের খসড়া প্রস্তাবনা সম্পন্ন হয়। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে ইউনিকোড মানের প্রথম খণ্ডটি এবং ১৯৯২ সালের জুন মাসে এর দ্বিতীয় খণ্ডটি প্রকাশিত হয়। ইউনিকোডের গঠনইউনিকোড কী? বুলীয় বীজগণিতের নিয়মে গণনা করায় কম্পিউটার কেবলমাত্র শূন্য বা ০ বা অফ এবং এক বা ১ বা অন এই দুটি অবস্থা বোঝে । এক-একটি সংখ্যাকে বোঝানোর জন্য কম্পিউটারে ০ এবং ১ এর বিভিন্ন ক্রম ব্যবহার করা হয় । কম্পিউটারে লিপি বা অন্যান্য অক্ষর সংরক্ষিত হয় সেই অক্ষরগুলির প্রতিটির জন্য ০ ও ১-এর অদ্বিতীয় একটি ক্রম দিয়েCharacter Encoding । একটি প্রতীক সংকেতায়ন পদ্ধতি এরূপ একটি অদ্বিতীয় ক্রমের সঙ্গে একটি অক্ষরকে সংযুক্ত করে । এই সমস্ত ক্রমগুলিকে একত্রে বলা হয় কোডস্পেস্ইউনিকোডের পরিভাষা সূচী এবং কোডস্পেসের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটি ক্রমকে ক‌োড পয়েন্ট বলা হয় । কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য একাধিক বর্ণসংকেতায়ন ব্যবস্থা রয়েছে । প্রত্যেকটি অক্ষরের জন্য বিভিন্ন বর্ণসংকেতায়ন ব্যবস্থায় ওই অদ্বিতীয় সংখ্যার মান ভিন্ন হওয়ায় তথ্য আদানপ্রদানে অসুবিধা দেখা দেয় । ইউনিকোডে প্রত্যেকটি পরিচিত অক্ষরের জন্য একটি করে কোডপয়েন্ট বরাদ্দ করা হয় এবং প্রত্যেকটি কোডপয়েন্টকে একটি অদ্বিতীয় ষষ্ঠদশনিধান বিশিষ্ট পূর্ণসংখ্য দ্বারা চিহ্নিত করা হয় । "U+" এর পর কোডপয়েন্টটির ষষ্ঠদশনিধান বিশিষ্ট সংখ্যাটিকে লিখে কোডপয়েন্টটিকে চিহ্নিত করা হয় । ইউনিকোডে বর্তমানে ১১,১৪,১১২ সংখ্যক ক‌োডপয়েন্ট রয়েছে, যেগুলিকে 016 থেকে 10FFFF16 পর্যন্ত সংখ্যগুলি দ্বারা চিহ্নিত করা হয় । যদিও প্রত্যেকটি কোডপয়েন্ট লিখনযোগ্য অক্ষরকে নির্দেশ করে না । উদাহরণস্বরূপ, U+200F কোডপয়েন্টটি Zero Width Non-Joiner অক্ষরটিকে চিহ্নিত করে, যেটিকে মুদ্রিত করা বা কম্পিউটারের মনিটরে দেখানো সম্ভব নয় । ইউনিকোডে অন্তর্ভুক্ত লিপিসমূহ আরবি সিলোটি আর্মেনীয় ইংরেজি হিন্দি বাংলা ব্রাই বা ব্রেইল কানাডীয় আদিবাসী চেরোকী কপ্টীয় সিরিলীয় দেবনাগরী ইথিওপীয় জর্জীয় গ্রিক গুজরাটি গুরুমুখী (পাঞ্জাবি) হান (কাঞ্জি, হাঞ্জা, হাঞ্জি) হাঙ্গুল (কোরীয়) হিব্রু হিরাগানা ও কাতাকানা (জাপানি) আ-ধ্ব-ব খমের (ক্যাম্বোডীয়) কন্নড় লাও লাতিন মালয়ালম মঙ্গোলীয় বর্মী ওড়িয়া সিরীয় তামিল তেলুগু থাই তিব্বতি টিফিনাঘ য়ি ঝুয়িন আরও দেখুন গ্নু ইউনিফন্ট তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ The Unicode Consortium Alan Wood's Unicode Resources Contains lists of word processors with Unicode capability; fonts and characters are grouped by type; characters are presented in lists, not grids বিষয়শ্রেণী:মুদ্রণবিদ্যা বিষয়শ্রেণী:অক্ষর এনকোডিং
ক্রিকেট
https://bn.wikipedia.org/wiki/ক্রিকেট
thumb|300px|২০০৫ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের মধ্যে একটি টেস্ট ম্যাচ। ডানে কালো প্যান্ট পরা ব্যক্তিরা হলেন আম্পায়ার। টেস্ট ক্রিকেট, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ও ক্লাব ক্রিকেট প্রথাগত সাদা পোশাকে ও লাল বলে খেলা হয়। অধুনা একদিনের খেলাসহ দিবা-রাত্রির খেলাতে রঙ্গিন পোশাক ও সাদা বল ব্যবহার করা হয়। thumb|300px|মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা। ব্যাটসম্যানের পরনে হলুদ পোশাক, ফিল্ডারদের পরনে নীল।thumb|300px|হ্যাম্পশায়ারে অনুষ্ঠিত ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি টুয়েন্টি২০ খেলা। ২০ ওভারের টুয়েন্টি২০ খেলাগুলো সাধারণত‍ঃ সন্ধ্যায় শুরু হয় ও আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয়। ক্রিকেট হচ্ছে ব্যাট ও বলের একটি দলীয় খেলা যাতে এগারোজন খেলোয়াড়বিশিষ্ট দুইটি দল অংশ নেয়। এই খেলাটির উদ্ভব হয় ইংল্যান্ডে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোসহ অন্যান্য দেশগুলোতে এই খেলা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার লাভ করে চলছে। বর্তমানে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৫ দিনের টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ খেলে থাকে। ২০০৫ সাল থেকে জিম্বাবুয়ে স্বেচ্ছায় টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে ২০১১ সালে আবার খেলায় ফিরে আসে। এছাড়া, আরো বেশ কিছু দেশ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসি'র সদস্য। টেস্টখেলুড়ে দেশগুলি ছাড়াও আইসিসি অনুমোদিত আরো দু’টি দেশ অর্থাৎ মোট ১২টি দেশ একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। খেলোয়াড় হিসেবে যিনি ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করেন বা খেলে থাকেন, তিনি ক্রিকেটার নামে পরিচিত।Kirkpatrick, E. M., ed. (1983). Chambers 20th Century Dictionary (New Edition 1983 ed.). Edinburgh: W & R Chambers Ltd. p. 296. . ক্রিকেট খেলা ঘাসযুক্ত মাঠে (সাধারণত ওভাল বা ডিম্বাকৃতির) খেলা হয়, যার মাঝে ২২ গজের ঘাসবিহীন অংশ থাকে, তাকে পিচ বলে। পিচের দুই প্রান্তে কাঠের তিনটি করে লম্বা লাঠি বা স্ট্যাম্প থাকে। ঐ তিনটি স্ট্যাম্পের উপরে বা মাথায় দুইটি ছোট কাঠের টুকরা বা বেইল থাকে। স্ট্যাম্প ও বেইল সহযোগে এই কাঠের কাঠামোকে উইকেট বলে। ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী দু’টি দলের একটি ব্যাটিং ও অপরটি ফিল্ডিং করে থাকে। ব্যাটিং দলের পক্ষ থেকে মাঠে থাকে দুইজন ব্যাটসম্যান। তবে কোন কারণে ব্যাটসম্যান দৌড়াতে অসমর্থ হলে ব্যাটিং দলের একজন অতিরিক্ত খেলোয়াড় মাঠে নামতে পারে। তিনি রানার নামে পরিচিত। ফিল্ডিং দলের এগারজন খেলোয়াড়ই মাঠে উপস্থিত থাকে। ফিল্ডিং দলের একজন খেলোয়াড় (বোলার) একটি হাতের মুঠো আকারের গোলাকার শক্ত চামড়ায় মোড়ানো কাঠের বা কর্কের বল বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ের (ব্যাটসম্যান) উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করে। সাধারণত নিক্ষেপকৃত বল মাটিতে একবার পড়ে লাফিয়ে সুইং করে বা সোজাভাবে ব্যাটসম্যানের কাছে যায়। ব্যাটসম্যান একটি কাঠের ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে ডেলিভারীকৃত বলের মোকাবেলা করে, যাকে বলে ব্যাটিং করা। যদি ব্যাটসম্যান না আউট হয় দুই ব্যাটসম্যান দুই উইকেটের মাঝে দৌড়িয়ে ব্যাটিং করার জন্য প্রান্ত বদল করে রান করতে পারে। বল নিক্ষেপকারী খেলোয়াড়বাদে অন্য দশজন খেলোয়াড় ফিল্ডার নামে পরিচিত। এদের মধ্যে দস্তানা বা গ্লাভস হাতে উইকেটের পিছনে যিনি অবস্থান করেন, তাকে বলা হয় উইকেটরক্ষক। যে দল বেশি রান করতে পারে সে দল জয়ী হয়। একদিনের ক্রিকেটে জয়লাভ দু'ধরনের হয়:- (ক) রানের ব্যবধানে এবং (খ) উইকেটের ব্যবধানে। রানের ব্যবধানে জয়লাভের উদাহরণ হচ্ছে - প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ দল ৫০ ওভারে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ৩১১ রান করে। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া দল ৪৭ ওভারে সবক'টি উইকেট বা ১০ উইকেটের বিনিময়ে ২১০ রান করে। ফলে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০১ রানে জয়ী হবে। উইকেটের ব্যবধানে জয়লাভের উদাহরণ হচ্ছে - প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া দল ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রান করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ দল ৩৭•৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৩৯ রান করে। ফলে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ উইকেটে জয়ী হবে। কয়েকশ’ বছর ধরে ক্রিকেট একটি দলীয় খেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটির আধুনিক রূপের সূত্রপাত হয় ইংল্যান্ডে এবং কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যেই এই খেলা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন: বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও আফগানিস্তানে ক্রিকেটই অধিক জনপ্রিয় খেলা। বিভিন্ন অঞ্চল যেমনঃ ইংল্যান্ড ও ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, বারমুডা এবং ক্যারিবিয়ানের ইংরেজিভাষী দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহে ক্রিকেট একটি প্রধান খেলা। ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলো একত্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে বিশ্বে ক্রিকেট খেলে থাকে। নেদারল্যান্ডস, কেনিয়া, নেপাল ও আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশে বিভিন্ন অ-পেশাদার ক্রিকেট ক্লাব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া একশর বেশি ক্রিকেট-খেলুড়ে দেশ রয়েছে যারা বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইসিসি'র সদস্য। ক্রিকেটে বিভিন্ন সময়ে অনেক রাজনৈতিক বিতর্ক উঠেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত হচ্ছে ব্যাসিল ডি’অলিভিয়েরা কেলেঙ্কারি যার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্ব ক্রিকেট থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের বডিলাইন সিরিজ এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে আন্ডারআর্ম বোলিংয়ের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। বর্ণনা thumb|150px|একটি ক্রিকেট বল। সাদা সেলাইকৃত অংশ সিম নামে পরিচিতএকদিনের খেলায় সাধারণত সাদা বল ব্যবহৃত হয়। right|thumb|150px|একটি ক্রিকেট ব্যাট ব্যাটিং দলের উদ্দেশ্য হচ্ছে যত বেশি ও যত দ্রুত পারা যায় রান করা। রান হয় যখন উভয় ব্যাটসম্যান উইকেটে নিজেদের মধ্যে প্রান্ত পরিবর্তন করেন। (সাধারণত ব্যাটসম্যান বল মোকাবেলার পরই রান নিতে চেষ্টা করেন, তবে এটি জরুরি নয়।) এছাড়া ব্যাটসম্যান যদি বলকে মাঠের সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারেন তখনও রান হয়। যদি মাঠ স্পর্শ না করে বল সীমানার বাইরে চলে যায় তবে ছয় রান এবং মাঠ স্পর্শ করে সীমানা পার হলে চার রান দেয়া হয়। এছাড়া বোলার নিয়ম মোতাবেক বল না করলেও রান দেয়া হয়। বোলিং দলের উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যাটিং দলের সব ব্যাটসম্যানদের আউট (উইকেট, অথবা ডিসমিসাল নামেও পরিচিত) করে দেয়া। ব্যাটসম্যান বিভিন্নভাবে আউট হতে পারে। সবচেয়ে ভাল পথ হচ্ছে বোলারের এমনভাবে বল নিক্ষেপ করা যাতে ব্যাটসম্যান বলকে ঠিকমত খেলতে পারে না এবং বল স্ট্যাম্পে আঘাত করে বেইল ফেলে দেয়। এ ধরনের আউটকে বোল্ড বলে। ব্যাটসম্যানেরা যখন দৌড়ে রান নেয় তখন ফিল্ডাররা বল নিক্ষেপ করে ব্যাটসম্যান কর্তৃক ঠিকমত ক্রিজে পোঁছার আগেই স্ট্যাম্প থেকে বেইল ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। এটি রান আউট নামে পরিচিত। অন্যান্য আউট করার পদ্ধতির মধ্যে আছে ব্যাটসম্যানের মোকাবেলাকৃত বল মাটিতে পরার আগেই ক্যাচ ধরা যা কট আউট নামে পরিচিত এবং ব্যাটসম্যানের পায়ে বল লাগানোর ফলে এল.বি.ডব্লিউ. বা লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে আউট করা হয়। কোন বল মোকাবেলা ও রান নেয়ার পর ব্যাটসম্যান যখন আর কোন রান করার চেষ্টা করেন না তখন বলকে "মৃত (dead)" ঘোষণা করা হয় এবং এর পরিবর্তে আরেকটি বল নিক্ষেপ করা হয়। খেলাটি ছয়টি (বৈধ) বলের ওভারে খেলা হয়। বিভিন্ন ধরনের খেলায় ওভারসংখ্যার বিভিন্নতা রয়েছে। ওভার শেষে ব্যাটিং ও বোলিং করা দল প্রান্ত বদল করে এবং ফিল্ডিং দলকে বোলার পরিবর্তন করতে হয়। এসময় আম্পায়ারদ্বয় তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেন। একজন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেলে তার স্থানে আরেকজন ব্যাটসম্যান ব্যাট করতে নামে। যখন ব্যাটিং দলের দশম ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায় তখন সে দলের ইনিংস শেষ হয়। দশ জন ব্যাটসম্যান আউট হওয়াকে বলে অল আউট। (সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইনিংস শেষ হয় যদি কোন দল অলআউট হয় অথবা দল পূর্বনির্ধারিত সংখ্যক ওভার খেলে ফেলে।) ইনিংস শেষে ব্যাটিং করা দল ফিল্ডিং এবং ফিল্ডিং করা দল ব্যাটিং করতে নামে। সাধারণত যে দল বেশি রান করে সে দল বিজয়ী হয়। তবে বিভিন্ন অবস্থায় জয়ের সংজ্ঞা বিভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় বৃষ্টির কারণে সীমিত ওভারের খেলার ওভার সংখ্যা কমিয়ে আনা হতে পারে, অথবা ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি অবলম্বন করে বিজয়ী নির্ধারন করা হতে পারে। ফলাফল যদি শেষে ব্যাট করা দলের বিপক্ষ দলের করা রানের চেয়ে কম রান করে সবাই আউট হয়ে যায় তবে সে দল "(n) রানে হেরেছে" বলা হয় (যেখানে (n) দুই দলের রানের পার্থক্য নির্দেশ করে)। যদি শেষে ব্যাট করা দল সবাই আউট হওয়ার আগেই বিপক্ষ দলের করা রানের চেয়ে বেশি রান করে তখন সে দল "(n) উইকেটে জিতেছে" বলা হয় (যেখানে (n) ১০ ও জয়ী দলের কতটি উইকেট পড়েছে তার পার্থক্য নির্দেশ করে)। যেসব খেলায় প্রতি দলের দু'টি ইনিংস থাকে তাদের ক্ষেত্রে যদি কোন দল প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংস মিলিয়ে বিপক্ষ দলের প্রথম ইনিংসের সমান রান করতে না পারে তবে এবং ২য় ইনিংসে সবাই আউট হয়ে যায় তবে বিপক্ষ দলকে আর ব্যাট করতে হয় না ও তারা ইনিংস ও (n) রানে জিতেছে বলা হয় (যেখানে (n) দুই দলের রানের পার্থক্য নির্দেশ করে)। যদি সব ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর দুই দলের রান সমান হয় তাহলে টাই হয়। প্রতি দলে দুই ইনিংসের খেলাতে টাই প্রায় দেখাই যায় না। গতানুগতিক খেলাতে যদি বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কোন দল জিততে না পারে তবে খেলাটিকে ড্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যেসব খেলায় একটি দল কেবল একটি ইনিংস খেলে সেসব খেলাতে সাধারণত নির্দিষ্ট সংখ্যক ওভারের বাধ্যবাধকতা দেয়া থাকে। এগুলো সীমিত ওভারের অথবা একদিনের খেলা হিসেবে পরিচিত। এতে যে দল বেশি রান করে তারাই জিতে এবং এই খেলার ফলাফলে উইকেটের কোন মূল্য নেই বলে এসব খেলায় ড্র হয় না। যদি আবহাওয়ার কারণে এই খেলায় সাময়িক বিঘ্ণ ঘটে তাহলে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি নামে একটি সূত্রের মাধ্যমে খেলার জেতার লক্ষ্যমাত্রা পুনঃনির্ধারিত হয়। একদিনের খেলার ফলাফল অমীমাংসিত হতে পারে যদি কোন দলই একটি সর্বনিম্ন সংখ্যক ওভার খেলতে না পারে। আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণেই সাধারণত এ ঘটনা ঘটে। ক্রিকেটের আইন ক্রিকেট খেলায় ৪২টি ক্রিকেট আইন আছে, যা বিভিন্ন প্রধান ক্রিকেট-খেলুড়ে দেশের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে প্রণয়ন করেছে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব। কোন বিশেষ খেলাতে দলগুলো সর্বসম্মতিক্রমে কোন আইন পরিবর্তন বা লঙ্ঘন করতে পারে। অন্যান্য আইনগুলো প্রধান আইনের সম্পূরক এবং বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলাতে ব্যবহৃত হয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, সাম্প্রতিক সময়ে সীমিত ওভারের খেলায় পুরনো আদল থেকে বেরিয়ে ক্রিকেটকে আরো আকর্ষনীয় করতে ফিল্ডিং দলের ওপর কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হচ্ছে। খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা খেলোয়াড় একটি দল এগারজন খেলোয়াড় নিয়ে গঠিত হয়। খেলার দক্ষতার উপর নির্ভর করে এদেরকে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান অথবা বোলার হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। যে-কোন ভারসাম্যপূর্ণ দলে সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় জন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান এবং চার থেকে পাঁচ জন বিশেষজ্ঞ বোলার থাকে। প্রতি দলেই একজন বিশেষজ্ঞ উইকেট রক্ষক থাকে। সাম্প্রতিককালে বিশেষজ্ঞ ফিল্ডারের ধারণা চালু হয়েছে এবং সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রতি দলে একজন অধিনায়ক থাকেন যিনি মাঠে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। যে খেলোয়াড় বোলিং এবং ব্যাটিং উভয় ক্ষেত্রেই সমান পারদর্শী তিনি অল-রাউন্ডার হিসেবে পরিচিত। যিনি ব্যাটসম্যান ও উইকেটরক্ষণের কাজে পারদর্শী তিনি উইকেট-রক্ষক কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত, যা কখনও কখনও বিশেষ ধরনের অল-রাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়। সত্যিকারের অল-রাউন্ডার দলের মূল্যবান খেলোয়াড় তবে এদের দেখা কমই মেলে। অধিকাংশ খেলোয়াড়ই হয় ব্যাটিং, না হয় বোলিংয়েই বেশি মনোযোগ দেন। আম্পায়ার প্রতি খেলায় মাঠে দুইজন আম্পায়ার থাকেন যারা খেলা পরিচালনা করেন। একজন আম্পায়ার (ফিল্ড আম্পায়ার) বোলার যে প্রান্ত থেকে বল করেন সেই প্রান্তে উইকেটের পিছনে অবস্থান করেন। মাঠে তিনিই অধিকাংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অন্য আম্পায়ার (স্কয়ার লেগ আম্পায়ার) মাঠে স্কয়ার লেগ অবস্থানে থাকেন, যাতে তিনি ব্যাটসম্যানকে পাশ থেকে দেখতে পারেন এবং তিনি যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে ফিল্ড আম্পায়ারকে সাহায্য করেন। পেশাদার খেলায় মাঠের বাইরে একজন অতিরিক্ত আম্পায়ার থাকেন যিনি তৃতীয় আম্পায়ার বা থার্ড আম্পায়ার নামে পরিচিত। মাঠের আম্পায়ারেরা কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রয়োজনবোধে তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য নিতে পারেন যিনি টেলিভিশনে পুণঃপ্রচার দেখে সিদ্ধান্ত নেন। আন্তর্জাতিক খেলাগুলোতে মাঠের বাইরে একজন ম্যাচ রেফারি থাকেন, যিনি খেলাটি ক্রিকেটের আইনানুযায়ী হচ্ছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করেন। স্কোরার সাধারণত প্রতিটি দল একজন করে দুইজন স্কোরার নিয়োগ করে থাকে। ক্রিকেটের আইন অনুসারে অফিসিয়াল স্কোরার কত রান হয়েছে, কত উইকেট পড়েছে, এবং কত ওভার খেলা হয়েছে তা লিপিবদ্ধ করে রাখে। তারা আম্পায়ারের সংকেত দেখে এবং খেলার বিরতিতে আম্পায়ারের সাথে স্কোর মিলিয়ে দেখে তা ঠিক আছে কিনা। বাস্তবে স্কোরাররা আরো অনেক ব্যাপার লিপিবদ্ধ করে, যেমনঃ বোলারের বোলিং পরিসংখ্যান, কোন দল কি হারে বোলিং করেছে এবং দলগুলোর বিভিন্ন গড় ও পরিসংখ্যান ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় গণমাধ্যমকে বিভিন্ন রেকর্ড ও পরিসংখ্যান জানতে হয়, তাই ধারাভাষ্যকার, সাংবাদিক ও সম্প্রচারের জন্য বিভিন্ন সময়ে আনঅফিসিয়াল স্কোরার রাখা হয়। অফিসিয়াল স্কোরাররা মাঝে মাঝে ভুল করে, তবে আম্পায়ারের ভুলের সাথে এটির তফাৎ হলো ঘটনার পর এটিকে সংশোধন করা যায়। খেলার মাঠ ক্রিকেট মাঠ একটি বিশাল বৃত্তাকার অথবা ডিম্বাকার ঘাসবহুল জমিনের উপর নির্মিত হয়। যদিও মাঠের আকারের বেলায় সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই তবে এটির ব্যাস সাধারণত ৪৫০ ফুট (১৩৭ মি) থেকে ৫০০ ফুট (১৫০ মি) এর মধ্যে হয়ে থাকে। অধিকাংশ মাঠেই দড়ি দিয়ে মাঠের পরিসীমা ঘেরা দেয়া থাকে যা সীমানা নামে পরিচিত। পিচ right|thumb|150px|একটি উইকেট তিনটি মাটিতে পোতা স্ট্যাম্পের সমন্বয়ে গঠিত। স্ট্যাম্পের উপরে দুইটি বেইল থাকে 150px|বোলারের প্রান্ত থেকে ক্রিকেট পিচের দৃশ্য450px|ক্রিকেট পিচের মাপজোখ ক্রিকেট খেলার বেশিরভাগ ঘটনা ঘটে থাকে মাঠের মাঝে যা সাধারণত ছোট করে ছাটা ঘাস অথবা ঘাসবিহীন চতুর্ভুজাকৃতির অংশ। এটিকে পিচ বলা হয়। পিচের পরিমাপ হচ্ছে ১০ × ৬৬ ফুট (৩.০৫ × ২০.১২ মি)। পিচের দুইপ্রান্তে তিনটি করে খাড়া কাঠের দন্ড মাটিতে গাঁথা থাকে, যা স্টাম্প নামে পরিচিত। স্টাম্পের উপরে দুটি কাঠের টুকরা থাকে যা বেইল নামে পরিচিত।, তিনটি স্ট্যাম্পের উপর দুটি বেইল স্ট্যাম্পগুলোকে সংযুক্ত করে। ক্রিকেটে স্ট্যাম্পে লেগে আউট হওয়ার ক্ষেত্রে যেকোন একটি বেইল ফেলা বাধ্যতামূলক। তিনটি স্ট্যাম্প ও দুটি বেইলের সমষ্টিগত সেট নামে উইকেট নামে পরিচিত। পিচের একপ্রান্তের নাম ব্যাটিং প্রান্ত, যে প্রান্তে ব্যাটসম্যান দাঁড়ায় এবং অপর প্রান্তের নাম বোলিং প্রান্ত যেখান থেকে বোলার দৌড়ে এসে বল করে। দুটি উইকেটের সংযোগকারী রেখার মাধ্যমে মাঠটি দুটি অংশে বিভক্ত হয়; তার মধ্যে যেদিকে ব্যাটসম্যান ব্যাট ধরেন সেদিকটিকে অফ সাইড এবং যে দিকে ব্যাটসম্যানের পা থাকে সেদিকটিকে বলে অন সাইড। অন্যভাবে বলা যায় ডান-হাতি ব্যাটসম্যানের ডান দিক এবং বাম-হাতি ব্যাটসম্যানের বাম দিক হচ্ছে অফ সাইড এবং অন্যটি অন সাইড বা লেগ সাইড। পিচে যে রেখা আঁকা থাকে তাকে বলে ক্রিজ। ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন কিনা তা যাচাই করার জন্য ক্রিজ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বোলার বৈধ বল করেছেন কি না তা যাচাইয়ের জন্যও ক্রিজ ব্যবহৃত হয়। right|thumb|150px|একটি প্রমিত ক্রিকেট মাঠ খেলোয়াড়ের অবস্থান ম্যাচের গঠন টস খেলার শুরুতে মুদ্রার নিক্ষেপের মাধ্যমে কোন দল আগে ব্যাটিং করবে এবং কোন দল বোলিং করবে সেটা নির্ধারণ করা হয়। একে টস বলে। ওভার প্রতি ৬ বৈধ বলে একটি ওভারের সফল সমাপ্তি ঘটে। ছয়টি বল করার পর আম্পায়ার ‘ওভার’ বলে থাকেন; তাই ওভার নামকরণ করা হয়েছে। পিচের একপ্রান্তে অবস্থান নিয়ে বোলার বোলিং করেন। ওভার শেষে উইকেটের অপর প্রান্ত থেকে অন্য আরেকজন বোলার বল করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। এরফলে ফিল্ডিংয়ের অবস্থান পরিবর্তনসহ স্কয়ার লেগে অবস্থানকারী আম্পায়ারও পরিবর্তন হয়ে উইকেটের পিছনে অবস্থান করেন। তবে, ব্যাটসম্যান তার নিজ অবস্থানে থেকেই বোলারকে মোকাবেলা করে থাকেন। তখন ব্যাটসম্যান ‘স্ট্রাইকার’ ও পিচের অন্য প্রান্তে অবস্থানকারী ব্যাটসম্যান ‘নন-স্ট্রাইকার’ নামে পরিচিত। কোনো বোলার পরপর ২ ওভার বোলিং করতে পারেন না। কিন্তু একপ্রান্তে থেকে তিনি অসংখ্য ওভার করতে সক্ষম। ৫০-ওভারের একদিনের আন্তর্জাতিকে একজন বোলার সর্বোচ্চ ২০% বা ১০ ওভার এবং ২০-ওভারের টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ২০% বা ৪ ওভার করতে পারে। তবে, টেস্ট ক্রিকেটে ওভার সংখ্যা অসীম থাকায় ওভার সংখ্যার কোন সীমারেখা নেই। পাওয়ার প্লে ১৯৯১ সালে প্রথম এ নিয়ম চালু করা হয় তবে সাম্প্রতিক সময় এ নিয়মের ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এটি শুধুমাত্র একদিনের ম্যাচে প্রযোজ্য। প্রথম ১০ ওভারের পাওয়ার প্লেতে সর্বোচ্চ দুজন ফিল্ডার ৩০গজ বৃত্তের বাইরে থাকতে পারে। এরপর ১৬ থেকে ৪০ ওভারের মধ্যে যেকোনো সময় ব্যাটিং দল ৫ ওভার এবং বোলিং দল ৫ ওভার পাওয়ার প্লে বেছে নিতে পারে,এ সময় সর্বোচ্চ ৩ জন ৩০ গজের বাইরে থাকতে পারে।http://static.icc-cricket.yahoo.net/ugc/documents/DOC_BB1EB9635DEBBF50590D506FE7937343_1317276292184_861.pdf . ইনিংসের পরিসমাপ্তি খেলার সময় ব্যাটিং ও রান করা ব্যাটিং রান করা অতিরিক্ত বোলিং এবং আউট বোলিং ব্যাটসম্যানের আউট হওয়া ফিল্ডিং ও উইকেট-রক্ষণ অন্যান্য ভূমিকা অধিনায়ক রানার যদি কোন ব্যাটসম্যান ব্যাট করার জন্য সক্ষম কিন্তু দৌড়াতে অসমর্থ হয় তবে আম্পায়ার ও ফিল্ডিং দলের অধিনায়ক ব্যাটিং দলের আরেক খেলোয়াড়কে অসমর্থ খেলোয়াড়ের রানার হিসেবে মাঠে নামার অনুমতি দেন। সম্ভব হলে রানারকে অবশ্যই আগে ব্যাট করে আউট হয়েছে এমন হতে হয়। রানারের একমাত্র কাজ উইকেটের মাঝে দুর্বল খেলোয়াড়ের বদলে দৌড়ানো। রানারকে অবশ্যই যে ব্যাটসম্যানের হয়ে মাঠে নেমেছে, সেই ব্যাটসম্যানের ব্যবহৃত সকল উপকরন ধারণ করতে হয়। ২০১১ সালের জুনে, আইসিসির এক ঘোষণার ফলে ১ অক্টোবর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রানার প্রথাটি বাতিল হয়ে যায়। বদলী খেলোয়াড় টেষ্ট ক্রিকেটের সাম্প্রতিক নিয়মে (২০১৯) আইসিসি অনুমোদন করেছে কোনো খেলোয়াড়ের মাথায় আঘাত লাগলে তার বদলে আরেকজন পূর্ণ খেলোয়াড় নামতে পারে।কিন্তু কোনো খেলোয়াড় বিশ্রামের জন্য মাঠ থেকে উঠে বদলি খেলোয়াড় নামলে সে শুধু ফিল্ডিং করতে পারে। ইতিহাস থাম্ব|ধারণা করা হয় মধ্যযুগীয় "ক্লাব বল" খেলা থেকে ক্রিকেটের উৎপত্তি এর তেমন কোনো ইতিহাস জানা যায়নি। তবে প্রথম ইংল্যান্ডে এ খেলা হয় বলে জানা যায়। ক্রিকেটের ধরন বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের ক্রিকেট খেলা হয়; আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পেশাদার ক্রিকেটের মধ্যে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আই উল্লেখযোগ্য। টেস্ট ক্রিকেট টেস্ট ক্রিকেট সাধারণত ৫ দিনে হয়। প্রতি দল দু’টি করে ইনিংস খেলে। এ খেলায় ৪ রকমভাবে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। একদিনের আন্তর্জাতিক একদিনের আন্তর্জাতিকে দুই দল ৫০ ওভার করে ব্যাটিং করে থাকে। এ খেলাগুলোয় সাদা রঙের বল ব্যবহার করা হয়। টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার নবীনতম সংস্করণ।এখানে প্রতিটি দল ২০ ওভার করে ব্যাটিং করে। প্রথম-শ্রেণীর খেলা ক্রিকেটের অন্যান্য ধরন আন্তর্জাতিক গঠন আরও দেখুন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল টেস্ট ক্রিকেট টেস্ট ক্রিকেট রেকর্ড টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস (১৮৮৪ - ১৮৮৯) ক্রিকেটের ইতিহাস ১৭২৬ - ১৭৬৩ ক্রিকেটের ইতিহাস ১৬৯৬ পর্যন্ত ক্রিকেট বিশ্বকাপ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০০৭ রেকর্ডঃ বিশ্বকাপ ক্রিকেট একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Explanation of Cricket Cricket Explained (An American Viewpoint) Wisden Cricinfo CricketArchive International Cricket Council ICC World Cup বিষয়শ্রেণী:ক্রিকেট বিষয়শ্রেণী:ইংল্যান্ডে উদ্ভাবিত ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:বল খেলা বিষয়শ্রেণী:প্রাক্তন গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:দলগত ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:বল এবং ব্যাটের ক্রীড়া
বাংলা সাহিত্য
https://bn.wikipedia.org/wiki/বাংলা_সাহিত্য
বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্য নামে পরিচিত। আনুমানিক খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার সূত্রপাত হয়। খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত বৌদ্ধ দোহা-সংকলন চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। আবিষ্কারক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আরও তিনটি গ্রন্থের সঙ্গে চর্যাগানগুলো নিয়ে সম্পাদিত গ্রন্থের নাম দেন "হাজার বছরের পুরনো বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোহা "। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য ছিল কাব্যপ্রধান। ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম ও বাংলার লৌকিক ধর্মবিশ্বাসগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এই সময়কার বাংলা সাহিত্য। ইসলামি ধর্মসাহিত্য,পীরসাহিত্য,বাউল পদাবলি,পবিত্র কুরআনের বঙ্গানুবাদ,মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলি, শাক্তপদাবলি, বৈষ্ণব সন্তজীবনী, রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবতের বঙ্গানুবাদ, নাথসাহিত্য ইত্যাদি ছিল এই সাহিত্যের মূল বিষয়। বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত হয় খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণের যুগে কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। এই সময় থেকে ধর্মীয় বিষয়বস্তুর বদলে মানুষ, মানবতাবাদ ও মানব-মনস্তত্ত্ব বাংলা সাহিত্যের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভাগের পর বাংলা সাহিত্যও দুটি ধারায় বিভক্ত হয়: ঢাকা-কেন্দ্রিক বাংলাদেশের সাহিত্য ও কলকাতা-কেন্দ্রিক পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য। পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য ভারতীয় সাহিত্যের একটি শাখা। বর্তমানে বাংলা সাহিত্য বিশ্বের একটি অন্যতম, সমৃদ্ধ সাহিত্যধারা হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। যুগ বিভাজন বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের ইতিহাস প্রধানত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত:বাংলা সাহিত্য পরিচয়, ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তুলসী প্রকাশনী, কলকাতা, ২০০৮, পৃ. xxiiiলাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী, হুমায়ুন আজাদ, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ২০০৫, পৃ. ১৯ আদিযুগ বা প্রাচীন যুগ (আনুমানিক ৬৫০ খ্রি. মতান্তরে ৯৫০ খ্রি.–১২০০ খ্রি.) মধ্যযুগ (১২০১ খ্রি.–১৮০০ খ্রি.) আধুনিক যুগ (১৮০১ খ্রি.–বর্তমান কাল) প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজনৈতিক ইতিহাসের মতো নির্দিষ্ট সালতারিখ অনুযায়ী সাহিত্যের ইতিহাসের যুগ বিভাজন করা সম্ভব নয়। যদিও সাহিত্যের ইতিহাস সর্বত্র সালতারিখের হিসেব অগ্রাহ্য করে না। সাহিত্যকর্মের বৈচিত্র্যে ও বৈশিষ্ট্যে নির্দিষ্ট যুগের চিহ্ন ও সাহিত্যের বিবর্তনের ধারাটি বিশ্লেষণ করেই সাহিত্যের ইতিহাসে যুগবিভাগ করা হয়ে থাকে। আদিযুগ বা প্রাচীন যুগ thumb|বিষ্ণুর সম্মুখে প্রণত জয়দেব; বাংলার বৈষ্ণব সাহিত্যে তাঁর গীতগোবিন্দম্ কাব্যের প্রভাব অনস্বীকার্য। এমনকি রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনে রচিত কাব্যেও জয়দেবের প্রভাব ছিল অত্যন্ত গভীর। বাংলা সাহিত্যের উন্মেষের পূর্বে বাংলায় সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অবহট্‌ঠ ভাষায় সাহিত্য রচনার রীতি প্রচলিত ছিল। এই সাহিত্যের মাধ্যমেই বাংলা সাহিত্যের আদি অধ্যায়ের সূচনা হয়।বাংলা সাহিত্য পরিচয়, পৃ. ৮ ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তুর্কি আক্রমণের বহু পূর্বেই বাঙালিরা একটি বিশেষ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উন্মেষ ঘটে বাংলা ভাষারও। তবে প্রথম দিকে বাংলায় আর্য ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি ও অনার্য সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটেনি। সংস্কৃত ভাষায় লেখা অভিনন্দ ও সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত, শরণ, ধোয়ী, গোবর্ধন, উমাপতি ধরের কাব্যকবিতা, জয়দেবের গীতগোবিন্দম্, কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয় ও সদুক্তিকর্ণামৃত নামক দুটি সংস্কৃত শ্লোকসংগ্রহ; এবং অবহট্‌ঠ ভাষায় রচিত কবিতা সংকলন প্রাকৃত-পৈঙ্গল বাঙালির সাহিত্য রচনার আদি নিদর্শন। এই সকল গ্রন্থ বাংলা ভাষায় রচিত না হলেও সমকালীন বাঙালি সমাজ ও মননের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়।"বিদ্যায় সাহিত্যে শিল্পে", বঙ্গভূমিকা, সুকুমার সেন, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, পৃ. ১৪৫-৯৬বাংলা সাহিত্যের সমগ্র ইতিহাস, ক্ষেত্র গুপ্ত, গ্রন্থনিলয়, কলকাতা, ২০০১, পৃ. ৩৭-৪৩ পরবর্তীকালের বাংলা বৈষ্ণব সাহিত্যে গীতগোবিন্দম্ কাব্যের প্রভাব অনস্বীকার্য। বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন হল চর্যাপদ। খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত চর্যা পদাবলি ছিল সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের সাধনসংগীত। আধুনিক ভাষাতাত্ত্বিকগণ বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণের সাহায্যে প্রমাণ করেছেন যে চর্যার ভাষা প্রকৃতপক্ষে হাজার বছর আগের বাংলা ভাষা। সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্র এই পদগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছে। সাহিত্যমূল্যের বিচারে কয়েকটি পদ কালজয়ী। মধ্যযুগ মধ্যযুগ ১২০০ থেকে ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সম্প্রসারিত। মধ্যযুগের প্রথম নিদর্শন বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’। আনুমানিক চৌদ্দ শতকের শেষার্ধে বা পনেরো শতকের প্রথমার্ধে বড়ু চণ্ডীদাস রাধাকৃষ্ণের প্রেমকাহিনি অবলম্বনে এ কাব্য রচনা করেন। এ সময় মৈথিলি কবি বিদ্যাপতি ব্রজবুলি ভাষায় রাধাকৃষ্ণের প্রেমবিষয়ক পদ রচনা করেছিলেন। মধ্যযুগের প্রথম মুসলমান কবি শাহ মুহম্মদ সগীর পঞ্চদশ শতকে প্রণয়োপখ্যান জাতীয় কাব্য “ইউসুফ-জোলেখা” রচনা করেন। এর বাইরে অনুবাদসাহিত্য মধ্যযুগের অনেকখানি অংশজুড়ে আছে। এ ধারার সূত্রপাত হয় কবি কৃত্তিবাস কর্তৃক রামায়ণের বঙ্গানুবাদের মাধ্যমে। পরবর্তীতে বাংলায় আরও অনূদিত হয়েছে অসংখ্য গ্রন্থ। মধ্যযুগের বিশাল পরিসর জুড়ে ছিলো মঙ্গলকাব্য। দেবদেবীর মাহাত্ম্যসূচক এই কাব্যধারার সূত্রপাত হয় পনের শতকে। তবে ষোল শতকে এর সর্বাধিক প্রসার ঘটে। ধর্মমঙ্গল, মনসামঙ্গল, শিবমঙ্গল বা শিবায়ন, চণ্ডীমঙ্গল ইত্যাদি এ পর্যায়েরই নানা শাখা। এই ধারার অন্যতম কবি মাণিক দত্ত, কানাহরি দত্ত, বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস পিপিলাই, কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর প্রমুখ। শ্রীচৈতন্যদেবের (১৪৮৬-১৫৩৩) আবির্ভাবের ফলে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ সমৃদ্ধির পথে অনেকখানি এগিয়ে যায়। মধ্যযুগেই আরাকানের রাজসভায় বাংলা সাহিত্যের চর্চা আরম্ভ হয়। এছাড়া শাক্ত পদাবলী, নাথসাহিত্য, বাউল ও অপরাপর লোকসঙ্গীত, ময়মনসিংহ গীতিকা, পূর্ববঙ্গ-গীতিকা ইত্যাদি অমূল্য সাহিত্য মধ্যযুগেরই সৃষ্টি। মধ্যযুগীয় বাংলা অনুবাদ সাহিত্য মধ্যযুগীয় বাংলা অনুবাদ সাহিত্য মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃত অঙ্গন জুড়ে অনুবাদ সাহিত্যের চর্চা হয়েছিল এবং পরিণামে এ সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধিসাধনে অনুবাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সকল সাহিত্যের পরিপুষ্টিসাধনে অনুবাদমূলক সাহিত্যকর্মের বিশিষ্ট ভূমিকা আছে। বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয় না। সমৃদ্ধতর নানা ভাষা থেকে বিচিত্র নতুন ভাব ও তথ্য সঞ্চয় করে নিজ নিজ ভাষার বহন ও সহন ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলাই অনুবাদ সাহিত্যের প্রাথমিক প্রবণতা। উন্নত ও সমৃদ্ধ ভাষা-সাহিত্যের সান্নিধ্যে এলে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিশব্দ তৈরি করা সম্ভব হয়, অন্য ভাষা থেকে প্রয়োজনীয় শব্দও গ্রহণ করা যায়। অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বক্তব্য আয়ত্তে আসে। ভাষা ও সাহিত্যের যথার্থ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্পদশালী ভাষায় উৎকর্ষপূর্ণ সাহিত্যসৃষ্টির অনুবাদ একটি আবশ্যিক উপাদান। জ্ঞানবিজ্ঞানের বিষয়ের বেলায় শুদ্ধ অনুবাদ অভিপ্রেত। কিন্তু সাহিত্যের অনুবাদ শিল্পসম্মত হওয়া আবশ্যিক বলেই তা আক্ষরিক হলে চলে না। ভিন্ন ভাষার শব্দ সম্পদের পরিমাণ, প্রকাশক্ষমতা ও বাগভঙ্গি অনুযায়ী ভিন্ন ভাষায় ব্যক্ত কথায় সংকোচন, প্রসারণ, বর্জন ও সংযোজন আবশ্যিক হয়। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে যে অনুবাদের ধারাটি সমৃদ্ধি লাভ করে তাতে সৃজনশীল লেখকের প্রতিভা কাজ করেছিল। সে কারণে মধ্যযুগের এই অনুবাদকর্ম সাহিত্য হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। ত্রয়োদশ শতাব্দী: বাংলা সাহিত্যের "অন্ধকার যুগ" বাংলা সাহিত্যের ১২০১-১৩৫০ খ্রি. পর্যন্ত সময়কে “অন্ধকার যুগ” বা “বন্ধ্যা যুগ” বলে কেউ কেউ মনে করেন। হুমায়ুন আজাদ তার “লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী” গ্রন্থে (পৃ. ১৭) লিখেছেন- “১২০১ থেকে ১৩৫০ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রচিত কোন সাহিত্য কর্মের পরিচয় পাওয়া যায়না বলে এ-সময়টাকে বলা হয় ‘অন্ধকার যুগ’। পণ্ডিতেরা এ-সময়টাকে নিয়ে অনেক ভেবেছেন, অনেক আলোচনা করেছেন, কিন্তু কেউ অন্ধকার সরিয়ে ফেলতে পারেন নি।এ- সময়টির দিকে তাকালে তাই চোখে কোন আলো আসেনা, কেবল আঁধার ঢাকা চারদিক।” কিন্তু, ওয়াকিল আহমদ তাঁর ‘বাংলা সাহিত্যের পুরাবৃত্ত’ (পৃ. ১০৫)-এ লিখেছেন- “বাংলা সাতিহ্যের কথিত ‘অন্ধকার যুগ’ মোটেই সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্বের যুগ ছিল না। ধর্ম -শিক্ষা শিল্প চর্চার দায়িত্ব যাদের উপর ন্যস্ত ছিল, তারা সীমিত আকারে হলেও শিক্ষা সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। তবে, কি হিন্দু কি মুসলমান কেউ লোকভাষা বাংলাকে গ্রহণ করেননি। বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন না থাকার এটাই মুখ্য কারণ।” এসময়ের সাহিত্য নিদর্শন: ১. প্রাকৃত ভাষার গীতি কবিতার সংকলিত গ্রন্থ ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’ ২. রামাই পণ্ডিত রচিত ‘শূন্যপুরাণ’ (গদ্যপদ্য মিশ্রিত) ৩. হলায়ুধ মিশ্র রচিত ‘সেক শুভোদয়া’ (গদ্যপদ্য মিশ্রিত) ৪. ডাক ও খনার বচন ‘নিরঞ্জনের উষ্মা’ শূন্যপুরাণ এর অন্তর্গত একটি কবিতা।লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী- হুমায়ুন আজাদ; বাংলা সাহিত্যের পুরাবৃত্ত- ওয়াকিল আহমদ; বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস- মাহবুবুল আলম আধুনিক যুগ মূলত বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগ নিয়ে মত পার্থক্য থাকলেও,মোটামুটি ভাবে ১৭৬০ খ্রীষ্টাব্দে ভারত চন্দ্রের মৃত্যুর পর থেকেই বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের সূত্রপাত বলে নানা সমালোচক মতপ্রকাশ করেছেন। কালের দিক থেকে আধুনিক যুগকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করা যায়- ১৭৬০-১৭৯৯খ্রিঃ(আধুনিক যুগের প্রথম পর্ব) ১৮০০-১৮৫৮খ্রিঃ(আধুনিক যুগের দ্বিতীয় পর্ব) ১৮৫৯-১৯০০খ্রিঃ(আধুনিক যুগের তৃতীয় পর্ব) ১৯০১-১৯৪৭খ্রিঃ(আধুনিক যুগের চতুর্থ পর্ব) ১৯৪৮-২০০০খ্রিঃ(আধুনিক যুগের পঞ্চম পর্ব) ২০০১খ্রিঃ- বর্তমানকাল(আধুনিক যুগের ষষ্ঠ পর্ব) বিভিন্ন সময়ের বিশেষায়িত সাহিত্যধারা-সমূহ চর্যাপদ thumb|400px|চর্যাপদ পুঁথির একটি পৃষ্ঠা চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম কাব্য তথা সাহিত্য নিদর্শন। নব্য ভারতীয় আর্যভাষারও প্রাচীনতম রচনা এটি।বাংলা সাহিত্যের সমগ্র ইতিহাস, ক্ষেত্র গুপ্ত, গ্রন্থনিলয়, কলকাতা, ২০০১, পৃ. ৪৪ খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ়ার্থ সাংকেতিক রূপবন্ধে ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তারা পদগুলি রচনা করেছিলেন। বাংলা সাধন সংগীতের শাখাটির সূত্রপাতও এই চর্যাপদ থেকেই। এই বিবেচনায় এটি ধর্মগ্রন্থ স্থানীয় রচনা। একই সঙ্গে সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্রাবলি এই পদগুলিতে উজ্জ্বল। এর সাহিত্যগুণ আজও চিত্তাকর্ষক। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। চর্যার প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন বড়ুচণ্ডীদাস নামক জনৈক মধ্যযুগীয় কবি রচিত রাধাকৃষ্ণের প্রণয়কথা বিষয়ক একটি আখ্যানকাব্য। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন বড়ুচণ্ডীদাস বিরচিত, ডঃ মিহির চৌধুরী কামিল্যা, শিলালিপি, কলকাতা, ২০০৫ (২য় প্রকাশ), প্রবেশক পৃষ্ঠা ৪ ১৯০৯ সালে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ বাঁকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রাম থেকে এই কাব্যের একটি পুথি আবিষ্কার করেন। ১৯১৬ সালে তারই সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামে পুথিটি প্রকাশিত হয়।বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, প্রথম খণ্ড, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মডার্ণ বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০০৬, পৃ. ২২৮-২৯ যদিও কারও কারও মতে মূল গ্রন্থটির নাম ছিল শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ। কৃষ্ণের জন্ম, বৃন্দাবনে রাধার সঙ্গে তার প্রণয় এবং অন্তে বৃন্দাবন ও রাধা উভয়কে ত্যাগ করে কৃষ্ণের চিরতরে মথুরায় অভিপ্রয়াণ – এই হল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মূল উপজীব্য। আখ্যানভাগ মোট ১৩ টি খণ্ডে বিভক্ত। পুথিটি খণ্ডিত বলে কাব্যরচনার তারিখ জানা যায় না। তবে কাব্যটি আখ্যানধর্মী ও সংলাপের আকারে রচিত বলে প্রাচীন বাংলা নাটকের একটি আভাস মেলে এই কাব্যে। গ্রন্থটি স্থানে স্থানে আদিরসে জারিত ও গ্রাম্য অশ্লীলতাদোষে দুষ্ট হলেও আখ্যানভাগের বর্ণনানৈপূণ্য ও চরিত্রচিত্রণে মুন্সিয়ানা আধুনিক পাঠকেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চর্যাপদের পর ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ বাংলা ভাষার দ্বিতীয় প্রাচীনতম আবিষ্কৃত নিদর্শন। বাংলা ভাষাতত্ত্বের ইতিহাসে এর গুরুত্ব তাই অপরিসীম। অপরদিকে এটিই প্রথম বাংলায় রচিত কৃষ্ণকথা বিষয়ক কাব্য। মনে করা হয়, এই গ্রন্থের পথ ধরেই বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলির পথ সুগম হয়। মধ্যযুগীয় বাংলা অনুবাদ সাহিত্য মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃত অঙ্গন জুড়ে অনুবাদ সাহিত্যের চর্চা হয়েছিল এবং পরিণামে এ সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধিসাধনে অনুবাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অপরিসীম।সকল সাহিত্যের পরিপুষ্টিসাধনে অনুবাদমূলক সাহিত্যকর্মের বিশিষ্ট ভূমিকা আছে।বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এর ব্যতীক্রম পরিলক্ষিত হয় না।"সমৃদ্ধতর নানা ভাষা থেকে বিচিত্র নতুন ভাব ও তথ্য সঞ্চয় করে নিজ নিজ ভাষার বহন ও সহন ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলাই অনুবাদ সাহিত্যের প্রাথমিক প্রবণতা।"ভাষার মান বাড়ানোর জন্য ভাষার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হয়,আর তাতে সহায়তা করে অনুবাদকর্ম।উন্নত সাহিত্য থেকে ঋণ গ্রহণ করা কখনো অযৌক্তিক বিবেচিত হয়নি।উন্নত ও সমৃদ্ধ ভাষা-সাহিত্যের সান্নিধ্যে এলে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিশব্দ তৈরি করা সম্ভব হয়,অন্য ভাষা থেকে প্রয়োজনীয় শব্দও গ্রহণ করা যায়।অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বক্তব্য আয়ত্তে আসে।ভাষা ও সাহিত্যের যথার্থ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্পদশালী ভাষায় উৎকর্ষপূর্ণ সাহিত্যসৃষ্টির অনুবাদ একটি আবশ্যিক উপাদান। জ্ঞানবিজ্ঞানের বিষয়ের বেলায় শুদ্ধ অনুবাদ অভিপ্রেত।কিন্তু সাহিত্যের অনুবাদ শিল্পসম্মত হওয়া আবশ্যিক বলেই তা আক্ষরিক হলে চলে না।ভিন্ন ভাষার শব্দ সম্পদের পরিমাণ, প্রকাশক্ষমতা ও বাগভঙ্গি অনুযায়ী ভিন্ন ভাষায় ব্যক্ত কথায় সংকোচন, প্রসারণ, বর্জন ও সংযোজন আবশ্যিক হয়।মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে যে অনুবাদের ধারাটি সমৃদ্ধি লাভ করে তাতে সৃজনশীল লেখকের প্রতিভা কাজ করেছিল।সে কারণে মধ্যযুগের এই অনুবাদকর্ম সাহিত্য হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। বুলিকে লেখ্য ভাষার তথা সাহিত্যের ভাষায় উন্নীত করার সহজ উপায় হচ্ছে অনুবাদ।অন্যভাষা থেকে সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান প্রভৃতি জ্ঞান-মননের বিভিন্ন বিসয় অনুবাদ করতে হলে সে বিষয়ক ভাব-চিন্তা-বস্তুর প্রতিশব্দ তৈরী করা অনেক সময় সহজ হয়,তৈরী সম্ভব না হলে মূল ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করতে হয়।এভাবেই সভ্য জাতির ভাষা-সাহিত্য মাত্রই গ্রহণে-সৃজনে ঋদ্ধ হয়েছে।এ ঋণে লজ্জা নেই।যে জ্ঞান বা অনুভব আমাদের দেশে পাঁচশ বছরেও লভ্য হত না,তা আমরা অনুবাদের মাধ্যমে এখনই পেতে পারি।যেমনঃ বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলো,শ্রেষ্ঠ দার্শনিক চিন্তাগুলো,বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো,সমাজতত্ত্বগুলো-মানবচিন্তার শ্রেষ্ঠ সম্পদগুলো এভাবে আয়ত্তে আসে। চৌদ্দ পনেরো শতকে আমাদের লেখ্য সাহিত্যও তেমনি সংস্কৃত-অবহটঠ থেকে ভাব-ভাষা-ছন্দ গ্রহণ করেছে,পুরাণাদি থেকে নিয়েছে বর্ণিত বিষয় ও বর্ণনাভঙ্গি এবং রামায়ণ-মহাভারত-ভাগবত-প্রণয়োপাখ্যান-ধর্মশাস্ত্র প্রভৃতি সংস্কৃত-ফারসী-আরবী-হিন্দি থেকে অনূদিত হয়েছে আমাদের ভাষায়।এভাবেই আমাদের লিখিত বা শিষ্ট বাংলা ভাষাসাহিত্যের বুনিয়াদ নির্মিত হয়েছিল। আদর্শ অনুবাদকের একটা বিশেষ যোগ্যতা অপরিহার্য। ভাষান্তর করতে হলে উভয় ভাষার গতিপ্রকৃতি, বাকভঙ্গি ও বাকবিধির বিষয়ে অনুবাদকের বিশেষ ব্যুৎপত্তির দরকার।তাহলেই ভাষান্তর নিখুঁত ও শিল্পগুণান্বিত হয়।তাই ভাষাবিদ কবি ছাড়া অন্য কেউ কাব্যের সুষ্ঠু অনুবাদে সমর্থ হয় না।মধ্যযুগে অ-কবিও অনুবাদ কর্মে উৎসাহী ছিলেন।তাই অনুবাদে নানা ত্রুটি দেখা যায়।এছাড়া এঁরা নিজেদের সামর্থ্য রুচিবুদ্ধি ও প্রয়োজন অনুসারে মূল পাঠের গ্রহণ-বর্জন ও সংক্ষেপ করেছেন।এজন্য মধ্যযুগের বাংলা ভাষায় কোন তথাকথিত অনুবাদই নির্ভরযোগ্য নয়।সবগুলোই কিছু কায়িক,কিছু ছায়িক,কিছু ভাবিক অনুবাদ এবং কিছু স্বাধীন রচনা।কাব্য সাহিত্যের অনুবাদ আক্ষরিক হতেই পারে না। বৈষ্ণব পদাবলি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য একটি বিস্তৃত কালপর্ব জুড়ে বিন্যস্ত। প্রাকচৈতন্যযুগে বিদ্যাপতি,চণ্ডীদাস এবং চৈতন্য ও চৈতন্য পরবর্তী যুগে গোবিন্দদাস,জ্ঞানদাস বিশেষভাবে খ্যাতিমান হলেও আরও বহু কবি বৈষ্ণব ধর্মাশ্রিত পদ লিখেছেন। তবে ধর্মবর্ণনির্বিশেষে পদাবলি চর্চার এই ইতিহাস চৈতন্যের ধর্মান্দোলনের পরই ছড়িয়েছিল। বৈষ্ণব পদাবলির মূল বিষয়বস্তু হল কৃষ্ণের লীলা এবং মূলত মাধুর্যলীলা। অবশ্য এমন নয় যে কৃষ্ণের ঐতিহ্যলীলার চিত্রণ হয়নি। তবে সংখ্যাধিক্যের হিসেবে কম। আসলে বৈষ্ণব পদাবলির মধ্যে রাধাকৃষ্ণের প্রণয়লীলা স্তরে স্তরে এমন গভীর ও বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে যে অনেকের ধারণা বাংলা সাহিত্যে এ আসলে একটি রোমান্টিক প্রণয়কাব্যের নমুনা। বস্তুত পৃথিবীর অন্যান্য মধ্যযুগীয় সাহিত্যের মতনই এও বিশেষভাবে ধর্মাশ্রিত ও বৈষ্ণব ধর্মের তত্ত্ববিশ্বের উপরে প্রতিষ্ঠিত। তবে যে কোন ধর্মের মতনই বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বেরও আনেকগুলি ঘরানা ছিল। এর মধ্যে তাত্ত্বিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিল বৃন্দাবনের বৈষ্ণবগোষ্ঠী। এদের ধর্মীয় দর্শনের প্রভাব পড়েছে চৈতন্যপরবর্তী পদকর্তাদের রচনায়। প্রাকচেতন্যযুগের পদাবলিকারদের রচনায় তন্ত্র বা নানা সহজিয়া সাধনপন্থার প্রভাব রয়েছে। ভারতীয় সাধনপন্থা মূলত দ্বিপথগামী- স্মার্ত ও তান্ত্রিকী। শশীভূষণ দাশগুপ্ত এই দুই পথকেই বলেছেন "উল্টাসাধন"শশীভূষণ দাশগুপ্ত, ভারতীয় সাধনার ঐক্য তন্ত্রও হল এই উল্টাসাধনই। দেহভান্ডই হল ব্রহ্মান্ড এই বিশ্বাস সহজিয়া ও তান্ত্রিক পন্থীদের। সেই কারণে চন্ডীদাস ও বিদ্যাপতির সঙ্গে জ্ঞানদাস বা গোবিন্দদাসদের মূলগত প্রভেদ রয়েছে। বৃন্দাবনের বৈষ্ণবগোষ্ঠী যে তত্ত্ববিশ্ব নির্মাণ করলেন তাতে কৃষ্ণলীলার মূল উৎস ভাগবত ও আন্যান্য পুরাণ হলেও,আসলে কৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলা, সর্বোপরি রাধাকৃষ্ণের প্রণয়লীলা প্রাধান্য পেল। কেননা এঁদের মতে কৃষ্ণের দুই রূপ। প্রথমটি ঐশ্বর্যস্বরূপ ঈশ্বর, যিনি সর্বশক্তিমান। কৃষ্ণের ঘনিষ্ঠ প্রতিটি লোক সে তার মাতা-পিতা বা, স্ত্রী বা সখা যেই হোক না কেন- কৃষ্ণকে তারা ভগবান বলে জানেন, সেভাবেই তাকে দেখেন। দ্বিতীয়টি হল মাধুর্যস্বরূপ কৃষ্ণ। এইরূপে কৃষ্ণের লীলার যে বিচিত্র প্রকাশ অর্থাৎ প্রভুরূপে,পুত্ররূপে,সখারূপে, প্রেমিকরূপে সর্বোপরি রাধামাধবরূপে তাতে কোথাও কৃষ্ণের মনে বা কৃষ্ণলীলাসহকারদের মনে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যমূর্তির জাগরণ ঘটেনা। ঐশ্বর্যমূর্তি নেই বলে কৃষ্ণভক্তি এখানে শুদ্ধ থেকে শুদ্ধতর হয়ে শুদ্ধতম হয়েছে। তাই এই মতাবলম্বী বৈষ্ণব কবিসাধকরা কেউ প্রভু, কেউ পুত্র, কেউ সখা, আর কেউবা প্রেমিকরূপে কৃষ্ণকে প্রার্থনা করেছেন। শেষোক্ত কবিসাধকের সংখ্যাই বেশি। বৃন্দাবনের ষড়গোস্বামীর অন্যতম রূপ গোস্বামী উজ্জ্বলনীলমণি-তে কৃষ্ণভক্তিকেই একমাত্র রসপরিনতি বলা হয়েছে। এর স্হায়ীভাব হল দুপ্রকারের- বিপ্রলম্ভ শৃঙ্গার সম্ভোগ শৃঙ্গার আবার এই দুটি প্রকারও আবার চারটি করে উপবিভাগে বিন্যস্ত। বিপ্রলম্ভ পূর্বরাগ মান (এরও দুটি ভাগ- সহেতু আর নির্হেতু) প্রেমবৈচিত্ত প্রবাস (এরও দুটি ভাগ- সুদূর আর অদূর) সম্ভোগ সংক্ষিপ্ত সংকীর্ণ সম্পূর্ণ সমৃদ্ধিমান বৈষ্ণব পদাবলিতে কৃষ্ণের লীলাবিলাস এই বিষয়পর্যায়ে বিন্যস্ত। অবশ্য,উপর্যুক্ত চারটি ছাড়াও বিপ্রলম্ভকে আরও সূক্ষাতিসূক্ষভাগে ভাগ করা হয়েছে নানাসময়। যেমন- অনুরাগ, আক্ষেপানুরাগ কিংবা, বিপ্রলব্ধা, খন্ডিতা বা, বাসরসজ্জিতা অথবা অভিসার। পুরাণ ছাড়া সাহিত্যে বা কাব্যে বাংলা বৈষ্ণব পদাবলির উৎস হল- সংস্কৃত পদসংকলন গ্রন্থগুলি। যথা, গাথা সপ্তশতী,....... তাছাড়া জয়দেবের গীতগোবিন্দের কথা তো এ প্রসঙ্গে বলতেই হয়। বিদ্যাপতি মূলত মৈথিলি ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলি রচনা করেছেন। তবে অনেকে এই পদাবলিগুলির ভাষার বিশেষ মাধুর্যের জন্য একে ব্রজবুলি ভাষা বলে কল্পনা করতে চেয়েছেন। প্রাচীন এই মতটিকে পরবর্তীকালের আধুনিক সমালোচক শংকরীপ্রসাদ বসু স্বীকার করে নিয়েছেন এবং বিদ্যাপতিকে একটি সাহিত্যিক ভাষার মহান সর্জক বলে মনে করেছেন।শংকরীপ্রসাদ বসু, বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাস সে যাই হোক ভাষাগত এই প্রভাব যে পরবর্তীকালের কবিদেরও বিরাট প্রভাবিত করেছিল তার প্রমাণ গোবিন্দদাস। জ্ঞানদাসের কিছু কিছু পদও এই তথাকথিত ব্রজবুলি ভাষাতেই রচিত। মধ্যযুগের বহু কবি এই ভাষাতেই পদরচনা করেছেন। এমনকি আধুনিক কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও যখন ' ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী ' লেখেন তখন তিনি লেখেন ব্রজবুলি ভাষাতেই। বৈষ্ণব পদাবালি সাহিত্যে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দ দাস ছাড়াও যশোরাজ খান, চাঁদকাজী, রামচন্দ বসু, বলরাম দাস, নরহরি দাস, বৃন্দাবন দাস, বংশীবদন, বাসুদেব, অনন্ত দাস, লোচন দাস, শেখ কবির, সৈয়দ সুলতান, হরহরি সরকার, ফতেহ পরমানন্দ, ঘনশ্যাম দাশ, গয়াস খান, আলাওল, দীন চণ্ডীদাস, চন্দ্রশেখর, হরিদাস, শিবরাম, করম আলী, পীর মুহম্মদ, হীরামনি, ভবানন্দ প্রমুখ উল্লেখ্যযোগ্য কবি। বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যিক গুণে আসামান্য। বিভিন্ন কবির লেখা কিছু পদ এখানে উল্লেখ করা হল- ১.সই কেমনে ধরিব হিয়া।/আমার বঁধুয়া আন বাড়ি যায়/ আমার আঙিনা দিয়া।।/সে বধুঁ কালিয়া না চাহে ফিরিয়া/ এমতি করিল কে।/আমার অন্তর যেমন করিছে/তেমনি করুক সে।।/যাহার লাগিয়া সব তেয়াগিনু/ লোকে অপযশ কয়।/সেই গুণনিধি ছাড়িয়া পিরীতি/আর যেন কার হয়।।/যুবতী হইয়া শ্যাম ভাঙাইয়া/এমত করিল কে।/আমার পরাণ যেমতি করিছে/তেমতি হউক সে।। (চণ্ডীদাস) ২.চলে নীল সাড়ি নিঙারি নিঙারি/পরান সহিতে মোর।/সেই হৈতে মোর হিয়া নহে থির/মন্মথ জ্বরে ভোর । (চণ্ডীদাস) ৩.এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর/এ ভরা বাদর মাহ ভাদর/শূন্য মন্দির মোর।।/ঝম্পি ঘণ গন — জন্তি সন্ততি/ভুবন ভরি বরি খন্তিয়া।/কান্ত পাহুন কাম দারুন/সঘনে খন শর হন্তিয়া।।/কুলিশ শত শত পাত-মোদিত/ময়ূর নাচত মাতিয়া।/মও দাদুরী ডাকে ডাহুকী/ফাটি যাওত ছাতিয়া।।/তিমির দিক ভরি ঘোর যামিনী/অথির বিজুরিক পাঁতিয়া।/বিদ্যাপতি কহ কৈছে গোঙায়াবি/হরি বিনে দিন রাতিয়া।। (বিদ্যাপতি) মঙ্গলকাব্য মধ্যযুগের বাংলা কাব্যধারার একবিশিষ্ট শাখা হল মঙ্গলকাব্য। মঙ্গল শব্দের আভিধানিক অর্থ হল কল্যাণ। মধ্যযুগে বিভিন্ন দেব-দেবীর মহিমা ও মাহাত্ম্যকীর্তন এবং পৃথিবীতে তাদের পূজা প্রতিষ্ঠার কাহিনী নিয়ে যেসব কাব্য রচিত হয়েছে সেগুলোই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মঙ্গল কাব্য নামে পরিচিত।মঙ্গলকাব্যের তিনটি প্রধান ঐতিহ্যের মধ্যে মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল ও ধর্মমঙ্গল ছিল অন্যতম । এই কাব্য তিনটির প্রধান চরিত্র হল যথাক্রমে মনসা, চণ্ডী ও ধর্মঠাকুর যারা বাংলার সকল স্থানীয় দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়। এছাড়াও কিছু ছোট মঙ্গলকাব্য রয়েছে, যেমন- শিবমঙ্গল, কালিকা মঙ্গল, রায় মঙ্গল, শশী মঙ্গল, শীতলা মঙ্গল ও কমলা মঙ্গল প্রভৃতি নামে পরিচিত। মঙ্গলকাব্যের প্রচলিত প্রধান কবিরা হলেন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, বিজয়গুপ্ত, রূপরাম চক্রবর্তী প্রমুখ। রাজসভার সাহিত্য রাজসভার সাহিত্য হল রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত সাহিত্য। মধ্যযুগের প্রধান রাজসভার কবি ছিলেন আলাওল (১৫৯৭-১৬৭৩) এবং ভারত চন্দ্র প্রমুখ। মহাকবি আলাওল ছিলেন আরাকান রাজসভার প্রধান কবি। তিনি আরবি ও ফার্সি ভাষায় কাব্য রচনা করেছিলেন। ব্রজবুলি ও মঘী ভাষাও তার আয়ত্তে ছিল। প্রাকৃতপৈঙ্গল, যোগশাস্ত্র, কামশাস্ত্র, অধ্যাত্মবিদ্যা, ইসলাম ও হিন্দু ধর্মশাস্ত্র-ক্রিয়াপদ্ধতি, যুদ্ধবিদ্যা, নৌকা ও অশ্ব চালনা প্রভৃতিতে বিশেষ পারদর্শী হয়ে আলাওল মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। আলাওলের পদ্মাবতী (১৬৪৮ খৃ:) ছিল সবচেয়ে বিখ্যাত মহাকাব্য। তাছাড়া : সতীময়না লোরচন্দ্রানী (১৬৫৯খৃঃ) সপ্ত পয়কর (১৬৬৫ খৃঃ) সয়ফুলমুলুক-বদিউজ্জামাল (১৬৬৯খৃঃ) সিকান্দরনামা (১৬৭৩খৃঃ) তোহফা (১৬৬৪ খৃঃ) রাগতালনামা মধ্যযুগের শেষ এবং আধুনিক যুগের প্রধান কবি ছিল ভারত চন্দ্র। তিনি তার অন্নদামঙ্গল কাব্যের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। এই কাব্যের বিখ্যাত উক্তি হল, "আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে"। শিবায়ন কাব্য শিবায়ন কাব্য মধ্যযুগীয় বাংলা আখ্যানকাব্যের একটি ধারা। শিব ও দুর্গার দরিদ্র সংসার জীবন কল্পনা করে মঙ্গলকাব্যের আদলে এই কাব্যধারার উদ্ভব। শিবায়ন কাব্যে দুটি অংশ দেখা যায় – পৌরাণিক ও লৌকিক। মঙ্গলকাব্যের আদলে রচিত হলেও শিবায়ন মঙ্গলকাব্য নয়, মঙ্গলকাব্যের সঙ্গে এক কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এই কাব্যের দুটি ধারা দেখা যায়। প্রথমটি মৃগলুব্ধ-মূলক উপাখ্যান ও দ্বিতীয়টি শিবপুরাণ-নির্ভর শিবায়ন কাব্য। শিবায়নের প্রধান কবিরা হলেন রতিদেব, রামরাজা, রামেশ্বর ভট্টাচার্য, রামচন্দ্র কবিচন্দ্র ও শঙ্কর কবিচন্দ্র। শাক্তপদাবলি শাক্তপদাবলী হল কালী-বিষয়ক বাংলা ভক্তিগীতির একটি জনপ্রিয় ধারা। এই শ্রেণীর সঙ্গীত শাক্তপদাবলীর একটি বিশিষ্ট পর্যায়। শাক্তকবিরা প্রধানত তন্ত্রাশ্রয়ী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন বলে শাক্তপদাবলীতে তন্ত্রদর্শন নানাভাবে দ্যোতিত। শাক্তপদাবলীর পদগুলিতে কালী বা শ্যামা মাতৃরূপে ও ভক্ত সাধক সন্তানরূপে কল্পিত। ভক্তের প্রাণের আবেগ, আকুতি, আবদার, অনুযোগ, অভিযোগ, দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণার নিবেদন ছন্দোবদ্ধ হয়ে গীতধারায় প্রকাশিত হয়েছে এই পর্যায়ে। এই কারণে সাধনতত্ত্বের পাশাপাশি আত্মনিবেদনের ঘনিষ্ঠ আকুতি শাক্তপদাবলীর পদগুলিতে অপূর্ব কাব্যময় হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, সমাজজীবন ও লৌকিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ এই পদাবলির অধ্যাত্মতত্ত্ব শেষাবধি পর্যবসিত হয়েছে এক জীবনমুখী কাব্যে। শাক্তপদাবলী ধারাটি বিকাশলাভ করে খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। এই সময় বঙ্গদেশে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে এক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটকালে বৈষ্ণব ধর্মানুশীলনের পরিবর্তে শাক্তদর্শন ও শক্তিপূজা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। তার কারণ দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার সতীরুপের শক্তিপীঠগুলির অনেকগুলিই বঙ্গদেশে। সেই শক্তিপীঠগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে এসেছে শক্তিসাধনা। তারই ফলশ্রুতিতে উদ্ভূত হয় শাক্তসাহিত্য। শাক্তপদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি রামপ্রসাদ সেন এবং তার পরেই স্থান কমলাকান্ত ভট্টাচার্যের। এই দুই দিকপাল শাক্তপদকর্তা ছাড়াও অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট পদকর্তা এই ধারায় সংগীতরচনা করে শাক্তসাহিত্য ও সর্বোপরি শাক্তসাধনাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – কৃষ্ণচন্দ্র রায়, শম্ভুচন্দ্র রায়, নরচন্দ্র রায়, হরুঠাকুর অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, রামনিধি গুপ্ত (নিধুবাবু), কালী মির্জা, দাশরথি রায় (দাশুরায়) প্রমুখ। অনেক মুসলমান কবিও শাক্তপদাবলী ধারায় নিজ নিজ কৃতিত্ব স্থাপন করে গেছেন। বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ শ্যামাসঙ্গীত রচয়িতা হলেন কাজী নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে এই শতাব্দীর জনপ্রিয় শ্যামাসঙ্গীত গায়কদের অন্যতম হলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, রামকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। নাথসাহিত্য বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে নাথধর্মের কাহিনি অবলম্বনে রচিত আখ্যায়িকা কাব্য।প্রাচীনকালে শিব উপাসক এক সম্প্রাদয় ছিল,তাদের ধর্ম ছিল নাথধর্ম।হাজার বছর আগে ভারতে এই সম্প্রাদয় খ্যাতি লাভ করেছিল। তাদের গতিবিধির ব্যাপকতার জন্য সারা ভারতবর্ষে তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। নাথ অর্থ প্রভু,দীক্ষালাভের পর নামের সাথে তারা নাথ শব্দটি যোগ করত। তারা বিশেষ ক্ষমতার অধিকারি ছিল। বৌদ্ধ ও শৈব ধর্মের সমন্বয়ে এ ধর্ম গরে ওঠে। এই নাথ পন্থা বৌদ্ধ মহাযান আর শূন্যবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। অবিদ্যা ও অজ্ঞান থেকে মুক্তির জন্য এবং মহাজ্ঞান লাভ করাই নাথগনের লক্ষ্য ছিল।সাধনার মাধ্যমে দেহ পরিশুদ্ধ করে মহাজ্ঞান লাভের যোগ্য করলে তাকে পক্ক দেহ বলা হত। এই মতের প্রতিষ্ঠাতা মীননাথ। আর শিব হল আদি নাথ। সব নাথ তার অনুসারী। দশম-একাদশ শতকে নাথধর্মের প্রভাব বিস্তার লাভ করে। অই সময়ে নাথ সাহিত্য বিস্তার লাভ করে। প্রধান প্রধান নাথগন হলেন- মীননাথ,গোরখনাথ,প্রমুখ। বাউল সাহিত্য বাউল মতবাদের উপর ভিত্তি করে রচিত সাহিত্যই হল বাউল সাহিত্য। বাউল সাধকদের সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছেন জগন্মোহন গোসাঁই ও লালন সাঁই। লালন তার বিপুল সংখ্যক গানের মাধ্যমে বাউল মতের দর্শন এবং অসাম্প্রদায়িকতার প্রচার করেছিলেন। এছাড়াও বাউল কবিদের মধ্যে জালাল খাঁ, রশিদ উদ্দিন, হাছন রাজা, রাধারমণ, সিরাজ সাঁই, পাঞ্জু সাঁই, পাগলা কানাই, শীতলং সাঁই, দ্বিজদাস, হরিচরণ আচার্য, মনোমোহন দত্ত, লাল মাসুদ, সুলা গাইন, বিজয় নারায়ণ আচার্য, দীন শরৎ (শরৎচন্দ্র নাথ), রামু মালি, রামগতি শীল, মুকুন্দ দাস, আরকুন শাহ্‌, সিতালং ফকির, সৈয়দ শাহ্‌ নূর, শাহ আব্দুল করিম, উকিল মুন্সি, চান খাঁ পাঠান, তৈয়ব আলী, মিরাজ আলী, দুলু খাঁ, আবেদ আলী, উমেদ আলী, আবদুল মজিদ তালুকদার, আবদুস সাত্তার, খেলু মিয়া, ইদ্রিস মিয়া, আলী হোসেন সরকার, চান মিয়া, জামসেদ উদ্দিন, গুল মাহমুদ, প্রভাত সূত্রধর, আবদুল হেকিম সরকার, ক্বারী আমীর উদ্দিন আহমেদ, ফকির দুর্বিন শাহ, শেখ মদন, দুদ্দু সাঁই,কবি জয়দেব, কবিয়াল বিজয়সরকার, ভবা পাগলা, নীলকণ্ঠ, দ্বিজ মহিন, পূর্ণদাস বাউল, খোরশেদ মিয়া, মিরাজ উদ্দিন পাঠান, আব্দুল হাকিম, মহিলা কবি আনোয়ারা বেগম ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য। তাদের মাধ্যমেই বাউল মতবাদ বা বাউল সাহিত্য বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলা লোক সাহিত্য বাংলাদেশের লোক সাহিত্য বাংলা সাহিত্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। যদিও এর সৃষ্টি ঘটেছে অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রসার ঘটেছে মৌখিকভাবে, তথাপি বাংলা সাহিত্যকে এ লোক সাহিত্য ব্যাপ্তি প্রদান করেছে, করেছে সমৃদ্ধ। পৃথক পৃথক ব্যক্তি-বিশেষের সৃষ্টি পরিণত হয়েছে জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যে যার মাধ্যমে প্রকাশ ঘটেছে ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি ও চিন্তা চেতনার। লোক সাহিত্য মূলত মৌখিক সাহিত্য। ফলে এধরনের সাহিত্য স্মৃতিসহায়ক কৌশল, ভাষার গঠনকাঠামো এবং শৈলীর উপরও নির্ভর করে। এদেশের লোক সাহিত্য সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করছে। এগুলো হচ্ছে মহাকাব্য, কবিতা ও নাটক, লোক গল্প, প্রবাদ বাক্য, গীতি কাব্য প্রভৃতি। লোক সাহিত্যের এই সম্পদগুলো সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে অথবা অন্য কোন উপায়ে এখনো এই অঞ্চলে টিকে রয়েছে। বহুবছর ধরে এদেশে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। বাংলাদেশের লোক সাহিত্য এই জাতিগোষ্ঠীগুলো দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। ফলশ্রুতিতে বর্তমান বাংলাদেশের বহুমুখী বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশাল লোক সাহিত্যের একাংশের ব্যাখ্যায় ইতিহাসের প্রয়োজন পরে। বাংলাদেশের লোক সাহিত্য লোক সাহিত্যের প্রচলিত সকল শাখায় নিজেকে বিস্তার করেছে। এগুলো হচ্ছে গল্প, ছড়া, ডাক ও খনার বচন, সংগীত, ধাঁধা, প্রবাদ বাক্য, কুসংস্কার ও মিথ। লোকগীতি বাংলা লোক সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের সংগীত মূলত কাব্যধর্মী। এদেশীয় সংগীতে বাদ্যযন্ত্রের চেয়ে মৌখিক সুরের দক্ষতার উপর অধিক নির্ভরশীলতা লক্ষ করা যায়। লোকগীতিকে আমরা সাতটি শ্রেণীতে বিন্যস্ত করতে পারি। এগুলো হচ্ছেঃ প্রেম, ধর্মীয় বিষয়, দর্শন ও ভক্তি, কর্ম ও পরিশ্রম, পেশা ও জীবিকা, ব্যাঙ্গ ও কৌতুক এবং এসবের মিশ্রণ। অন্যদিকে এদেশীয় লোকসাহিত্যে আমরা গানের বিভিন্ন শাখা দেখতে পাই। এগুলো হচ্ছেঃ বাউল গান, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, গম্ভীরা, কবিগান, জারিগান, সারিগান, ঘাটু গান,যাত্রা গান ,ঝুমুর গান, জাগের গান,গাজী গান,উরি গান প্রভৃতি। বাংলা লোক সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হল: মৈমনসিংহ গীতিকা (ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রচলিত পালাগানগুলোকে একত্রে মৈমনসিংহ গীতিকা বলা হয়। এই গানগুলো প্রাচীন কাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসছে। তবে ১৯২৩-৩২ সালে ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন এই গানগুলো সম্পাদনা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রকাশ করেন। বর্তমান নেত্রকোণা জেলার আইথর নামক স্থানের আধিবাসী চন্দ্রকুমার দে এসব গাঁথা সংগ্রহ করছিলেন।) পূর্ববঙ্গ-গীতিকা (পূর্ববঙ্গ অঞ্চলের প্রচলিত লোকসাহিত্যকে একত্রে পূর্ববঙ্গ গীতিকা বলা হয়। প্রাচীন কাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে আসা পালাগুলি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। ১৯২৬ সালে ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সাহায্যে পালাগুলো সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন। পরে ১৯৭১-১৯৭৫ সালে ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক ও সাত খণ্ডে প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা প্রকাশ করেন।) ঠাকুরমার ঝুলি ঠাকুরদাদার ঝুলি বাংলা গদ্যের উন্মেষপর্ব চিঠিপত্র লেখা এবং দলিল-দস্তাবেজ লেখার প্রয়োজনে বাংলা গদ্যের সূত্রপাত। দলিল-দস্তাবেজ ইত্যাদি সংস্কৃত ও পার্সি - এই দুই ভাষার প্রভাবে পরিকীর্ণ। আদি সাহিত্যিক গদ্যে কথ্যভাষার প্রতিফলন সুস্পষ্ট। পর্তুগীজ ধর্মপ্রচারক মানোএল দা আস্‌সুম্পসাঁউ-এর রচনা রীতি বাংলা গদ্যের অন্যতম আদি নিদর্শন। ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত কৃপার শাস্ত্রের অর্থ ভেদ গ্রন্থ থেকে নিম্নরূপ উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। লক্ষ্যণীয় এই অংশে বৃহত্তর ঢাকা এলাকার কথ্য ভাষা প্রতিফলিতঃ– "ফ্লান্দিয়া দেশে এক সিপাই বড় তেজোবন্ত আছিল। লড়াই করিতে করিতে বড় নাম তাহার হইল, এবং রাজায় তাহারে অনেক ধন দিলেন। ধন পাইয়া তাহার পিতামাতার ঘরে গেল। তাহার দেশে রাত্রে পৌঁছিল। তাহার এক বইন আছিল ; তাহার পন্থে লাগাল পাইল ; ভাইয়ে বইনরে চিনিল, তাহারে বইনে না চিনিল। তখন সে বইনেরে কহিল, "তুমি কী আমারে চিন?" "না, ঠাকুর" বইনে কহিল। সে কহিল,"আমি তোমার ভাই।" ভাইয়ের নাম শুনিয়া উনি বড় প্রীত হইল। ভাইয়ে ঘরের খবর লইল, জিজ্ঞাস করিল, "আমারদিগের পিতামাতা কেমন আছেন?" বইনে কহিল, "কুশল।" দুইজনে কথাবার্তা কহিল।" প্যারীচাঁদ মিত্র রচিত আলালের ঘরে দুলাল বাংলা ভাষায় রচিত আদি গদ্যসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এটি ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত এই গ্রন্থের ভাষা 'আলাল ভাষা' নামে পরিচিত। এই গ্রন্থে কথ্যরূপী গদ্য একটি পৃথক লেখ্য রূপে উন্নীত হয়। "বেণীবাবু কহিলেন- অদ্য রাত্রে এখানে থাকো কল্য প্রাতে তোমাকে কলিকাতায় লইয়া স্কুলে ভর্তি করিয়া দিব। ক্ষণেক কাল পরে মতিলাল জলযোগ করিয়া দেখিল অনেক বেলা আছে। চঞ্চল স্বভাব- এক স্থানে কিছু কাল বসিতে দারুণ ক্লেশ বোধ হয়- এজন্য আস্তে আস্তে উঠিয়া বাটীর চতুর্দিকে দাঁদুড়ে বেড়াইতে লাগিল- কখন ঢেঁস্কেলের ঢেঁকিতে পা দিতেছে- কখন বা ছাতের উপর গিয়া দুপদুপ করিতেছে-কখন বা পথিকদিগকে ইঁট-পাটকেল মারিয়া পিট্টান দিতেছে ; এইরূপে দুপ-দাপ করিয়া বালী প্রদক্ষিণ করিতে লাগিল-কাহারো বাগানে ফুল ছেঁড়ে-কাহারো গাছের ফল পাড়ে-কাহারো মট্কার উপর উঠিয়া লাফায়- কাহারো জলের কলসি ভাঙিয়া দেয়।" বাংলা গদ্য শুরুতে ছিল সংস্কৃতি গদ্যের চালে রচিত যার প্রমাণ বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ। বলা যায়, বিশিষ্ট গদ্যকার প্রমথ চৌধুরী বাংলা গদ্যকে একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছেন। লেখার ভাষাকে জনবান্ধব ও সহজবোধ করে তোলা অর্থাৎ সাহিত্যে চলিত ভাষা প্রচলনের কৃতিত্ব অনেকাংশেই তার। বঙ্কিমসাহিত্য thumb|left|100px|১৯৬৯ সালের একটি ভারতীয় ডাকটিকিটে বঙ্কিমের ছবি (বঙ্কিমের প্রতি সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক এই ডাকটিকিট তৈরি করা হয়) বাংলা সাহিত্যের মূল ধারা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরেই হয়েছিলো; ১৮৩৮ সালে জন্মগ্রহণকারী বঙ্কিম মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে ১৮৬২ সালে একটি উপন্যাস লেখার কাজ শুরু করেছিলেন, ঐ বছরই এক ইংরেজ নারী হানা ক্যাথেরিন মুলেন্স ফুলমণি ও করুণার বিবরণ (এটাকে ধরা হয় প্রথম বাংলা ভাষার উপন্যাস) নামের একটি উপন্যাস প্রকাশ করেছিলেন তা দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন বঙ্কিম এবং ১৮৫৮ সালে প্রকাশিত হয় প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল উপন্যাস যেটা ছিলো একজন বাঙালি রচিত প্রথম বাংলা ভাষার উপন্যাস। বঙ্কিমের প্রথম উপন্যাসের খসড়া শেষ হতে হতে তিন বছর লেগে যায় এবং তিনি ১৮৬৫ সালে দুর্গেশনন্দিনী নামের একটি উপন্যাস প্রকাশ করতে সক্ষম হন, তারপর তিনি পান 'বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক'-এর মর্যাদা কারণ দুর্গেশনন্দিনী ছিলো বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম যৌগিকতাময়, পরিস্রুতময়, সূচিতাযুক্ত বাংলা ভাষার শক্তির সীমামুক্ত উপন্যাস; উপন্যাসটিকে বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক উপন্যাস ধরা হচ্ছে সেই উনবিংশ শতক থেকে এখন পর্যন্ত। বঙ্কিম একজন সফল প্রেমমূলক উপন্যাসের রচয়িতা ছিলেন; তার উপন্যাস ভারতীয় বাঙালি তরুণ-তরুণীর মাঝে প্রেমবোধ জাগ্রত করতো সেই উনবিংশ শতাব্দীতেই। বঙ্কিমের প্রেমমূলক উপন্যাস উপন্যাস প্রকাশের বছর "দুর্গেশনন্দিনী" ১৮৬৫ "কপালকুণ্ডলা" ১৮৬৬ "মৃণালিনী" ১৮৬৯ "যুগলাঙ্গুরীয়" ১৮৭৪ "চন্দ্রশেখর" ১৮৭৫ "রাজসিংহ" ১৮৮১ "আনন্দমঠ" ১৮৮২ "দেবী চৌধুরানী" ১৮৮৪ "রাধারাণী" ১৮৮৬ "সীতারাম" ১৮৮৭ রবীন্দ্রসাহিত্য বাংলা সাহিত্যের আলোচনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (৭ই মে, ১৮৬১ - ৭ই আগস্ট, ১৯৪১) (২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) কথা অবধারিতভাবেই স্বতন্ত্র। তার জীবন ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে একটি সম্পূর্ণ নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তিনি ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। তার প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫২। তবে বাঙালি সমাজে তার জনপ্রিয়তা প্রধানত সংগীতস্রষ্টা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ প্রায় দুই হাজার গান লিখেছিলেন। কবিতা ও গান ছাড়াও তিনি ১৩টি উপন্যাস, ৯৫টি ছোটগল্প, ৩৬টি প্রবন্ধের বই এবং ৩৮টি নাটক রচনা করেছিলেন। আধুনিক বাংলা কবিতা ১৮০০- বর্তমান, চলমান। মধ্য ও আধুনিক যুগের মধ্যে যিনি সেতুবন্ধন তৈরি করেন তিনি হলেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে, মধ্যযুগের তিরোভাব এবং আধুনিক যুগের আবির্ভাবের সীমারেখার সময়ে কাব্যচর্চাকারীই হচ্ছেন যুগসন্ধিক্ষণের কবি। অর্থাৎ লেখায় মধ্যযুগের ক্ষয়িষ্ণু প্রভাব এবং আধুনিককালের ঈষৎ আভাস, দু'য়েরই উপস্থিতি লক্ষণীয়। উল্লেখযোগ্য যুগসন্ধিক্ষণের কবি হচ্ছেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯)। মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) মধ্যযুগীয় পয়ারমাত্রার ভেঙে কবি প্রবেশ করেন মুক্ত ছন্দে।রচনা করেন সনেট। লাভ করেন, আধুনিক কবিতার জনকের খ্যাতি। ইউরোপীয় ভাবধারার রোমান্টিক ও গীতি কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-১৮৯৪) ভোরের পাখি নামে পরিচিত ছিলেন। মহিরুহ বৃক্ষের ন্যায় বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)। মহাকাব্য ব্যতীত সাহিক্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে তিনি খ্যাতির স্তম্বটি প্রতিষ্ঠা করেননি। রবীন্দ্রানুসারী ভাবধারার অন্যান্য কবিরা হলেন: সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, যতীন্দ্রমোহন বাগচী বিশ শতকের শুরুতে কবিতায় পঞ্চপুরুষ রবীন্দ্রবিরোধিতার করেন, তারা হলেন: মোহিতলাল মজুমদার, কাজী নজরুল ইসলাম ও যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। আধুনিক কবিতার স্বর্ণযুগ: রবীন্দ্র ভাব ধারার বাইরে এসে দশক প্রথার চলু করেন তিরিশের পঞ্চপান্ডব কবি: অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-৮৭), জীবননান্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪), বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-৭৪), বিষ্ণু দে (১৯০৯-৮২), সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-৬০)। বাংলা কথাসাহিত্য বাংলা উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের নতুনতম অঙ্গ। এর সূত্রপাত ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। প্যারিচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরে দুলাল প্রকাশিত হয় ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে। এর আখ্যানভাগে এবং রচনাশৈলীতে উপন্যাসের মেজাজ পরিলক্ষিত হয়। বাংলা উপন্যাসের একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমচন্দ্র থেকে শুরু করে দীর্ঘ কাল বাংলা উপন্যাসে ইউরোপীয় উপন্যাসের ধাঁচ ছায়া ফেলেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি বাংলা সাহিত্যের সকল শাখাকে ঋদ্ধ করেছেন তার হাতেও উপন্যাস নতুন মাত্রা লাভ করেছে যদিও সমালোচকরা রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসকে রসোত্তীর্ণ মনে করেন না। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর আরেকজন প্রভাবশালী ঔপন্যাসিক। তবে এরা সবাই মানুষের ওপর তলের ওপর দৃষ্টি সীমাবদ্ধ রেখেছেন। বিংশ শতকের প্রথমভাগে বুদ্ধদেব বসু, অচ্যিন্তকুমার সেন প্রমুখের হাতে বাংলা কথাসাহিত্য একটি দৃঢ় ভিত্তি লাভ করে। তবে বাংলা উপন্যাস নতুন মাত্রা লাভ করে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জগদীশ গুপ্ত ও কমলকুমার মজুমদারের হাতে। এদের হাতে উপন্যাস বড় মাপের পরিবর্তে মানবিক অস্তিত্বের নানা দিকের ওপর আলোকপাত করে বিকশিত হয়। বস্তুত: রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে মানিক বন্দ্যেপাধ্যায় সম্ভবত সবচেয়ে কুশলী উপন্যাস শিল্পী। তারই পদরেখায় আমরা দেখতে পাই তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় কে। এরা উপন্যাসকে মানবিক অস্তিতের মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক জটিলতার ওপর নিবিড় আলোকপাত করেছেন, লেখনীশৈলীর জোরে উপন্যাসকে সাধারণ পাঠকের কাছকাছি নিয়ে গেছেন এবং একই সঙ্গে উপন্যাসের শিল্পশৈলীতে এনছেন দৃঢ় গদ্যের সক্ষমতা। সুমথনাথ ঘোষ ও গজেন্দ্রকুমার মিত্রের বাংলা কথাসাহিত্য নতুন মাত্রা লাভ করে ৷ সুমথনাথ ঘোষ শুধু সাহিত্যস্রষ্টাই ছিলেন না , প্রকাশক হিসাবেও ছিলেন স্বনামধন্য ৷ একশোরও বেশি বই লিখেছেন সুমথনাথ৷ প্রথম উপন্যাস , ‘বাঁকা স্রোত ’৷ তিনিই অভিন্নহূদয় বন্ধু ও সুসাহিত্যিক গজেন্দ্রকুমার মিত্রের সঙ্গে যৌথভাবে শুরু করলেন ‘মিত্র ও ঘোষ ’ প্রকাশনা ৷ শিশু -কিশোরদের জন্য লিখেছেন ‘মোহন সিং -এর বাঁশি ’, ‘ছোটদের বিশ্বসাহিত্য ’র মতো বই৷ অনুবাদ করেছেন আলেকসান্দার দুমার ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’, ওয়াল্টার স্কটের ‘আইভ্যান হো ’ বা চার্লস ডিকেন্সের ‘ডেভিড কপারফিল্ড ’। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলা উপন্যাসে সম্পূর্ণ নতুন করণকৌশল নিয়ে আবির্ভূত হলেন বাংলাদেশের হুমায়ূন আহমেদ। তিনি বাংলা উপন্যাসকে নতুন খাতে প্রবাহিত করলেন। বাংলা উপন্যাস দীর্ঘকাল পশ্চিমবঙ্গের কথাসাহিত্যিকদের হাতে পরিপুষ্ট হয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদ একাই শত বর্ষের খামতি পূরণ করে দিলেন। তার উপন্যাসের অবয়ব হলো সবজান্তা লেখকের বর্ণনার পরিবর্তে পাত্র-পাত্রীদের মিথস্ক্রিয়া অর্থাৎ সংলাপকে প্রাধান্য দিয়ে ছোট এবং স্বল্প পরিসরে অনেক কথা বলার পদ্ধতি প্রবর্তন করলেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদ দেখালেন যে ইয়োরোপীয় আদলের বাইরেও সফল, রসময় এবং শিল্পোত্তীর্ণ উপন্যাস লেখা সম্ভব। ১৯৮০’র দশকে হুমায়ূন আহমেদের সবল উপস্থিতি অনুভব করার আগে বাংলা উপন্যাস মূলত পশ্চিমবঙ্গের ঔপন্যাসিকদের হাতে গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের অবদান ছিল তুলনামূলক ভাবে কম, গুণগত মানও প্রশ্নাতীত ছিল না। এ সময়কার কয়েকজন প্রধান লেখক হলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বাণী রায়, হর্ষ দত্ত প্রমুখ। একবিংশ শতাব্দী শুরু হয়েছে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগের উত্তরাধিকার বহন করে। এ সময় কিছু কিছু নিরীক্ষাধর্মী উপন্যাসের স্বাক্ষর রেখেছেনি কতিপয় লেখক। উত্তরআধুনিক ধ্যানধারণা অবলম্বন করেও লিখেছেন কেউ কেউ। তবে নতুন কোন ধারা প্রবল বেগে ধাবিত করার মতো নতুন কারো আবির্ভাব এখনো হয় নি। তবে বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকটি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, নাসরীন জাহান, ইমদাদুল হক মিলন, আবুল বাশার,শহিদুল জহির, আবদুল মান্নান সৈয়দ সহ প্রমুখ শক্তিশালী ঔপন্যাসিকের সবল উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছে। পশ্চিমবঙ্গেও অনেক নতুন নতুন ঔপন্যাসিকের আবির্ভাব লক্ষ্য করা গেছে যদিও প্রচলিত রীতির বাইরে যাওয়ার শক্তিশালী হাতের দেখা পাওয়া যায়নি। এই একই সময়ে কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা ১৪টি উপন্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলি ১৯৩০-১৯৫০ কালপরিসরে লিখিত। জীবনানন্দ দাশের উপন্যাস সম্পূর্ণ নতুর ধাঁচের, চিন্তা-মননে এবং শৈলীতে। বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্য সাহিত্যে বর্ণনামূলক গদ্যকে প্রবন্ধ বলা হয়। প্রবন্ধ সাহিত্যের অন্যতম একটি শাখা। এর সমার্থক শব্দগুলো হল - সংগ্রহ, রচনা, সন্দর্ভ। প্রবন্ধের বিষয়বস্তু শৈল্পিক, কাল্পনিক, জীবনমুখী, ঐতিহাসিক কিম্বা আত্মজীবনীমূলক হয়ে থাকে। যিনি প্রবন্ধ রচনা করেন তাকে প্রবন্ধকার বলা হয়। প্রবন্ধে মূলত কোনো বিষয়কে তুলে ধরে তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্য খুবি সমৃদ্ধ। যুগে যুগে অনেক প্রাবন্ধিক তাদের প্রবন্ধের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হল বজ্ঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিবিধ প্রবন্ধ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিচিত্র প্রবন্ধ এবং প্রমথ চৌধুরীর প্রবন্ধ সংগ্রহ । তাছাড়া আরও অনেক প্রাবন্ধিক আছেন, যেমন- কাজী আবদুল ওদুদ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, আবদুল হক প্রমুখ। বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কবি-সাহিত্যিক মধ্যযুগ (১২০০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) মধ্যযুগের সমগ্র পরিসর জুড়েই কাব্যের একচ্ছত্র আধিপত্য লক্ষণীয়। বিবিধ শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত ছিলো এই সাহিত্যচর্চা। এখানে এ সময়ের বিভিন্ন শাখার উল্লেখযোগ্য কবির একটি সম্মিলিত তালিকা দেয়া হলো। তালিকা প্রস্তুতে কোনো ধরনের ক্রম অনুসরণ করা হয়নি। বড়ু চণ্ডীদাস শাহ মুহম্মদ সগীর আলাওল ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর শ্রীচৈতন্যদেব হেয়াত মামুদ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী দৌলত কাজী কৃত্তিবাস ওঝা সাবিরিদ খান চন্দ্রাবতী দৌলত উজির বাহরাম খান দুর্লভ মল্লিক শেখ ফয়জুল্লাহ ময়ূর ভট্ট আবদুল হাকিম মালাধর বসু বিদ্যাপতি দ্বিজ বংশীবদন চম্পাগাজী মাগন ঠাকুর মাধব কন্দলী রামানন্দ যতি দ্বিজ তুলসী মাণিকরাম দাস আধুনিক যুগের প্রথম ভাগের সাহিত্যিক (১৮০০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) এখানে সেসব কবি ও লেখকদের নাম দেয়া হয়েছে, যাঁরা লেখালেখির মাধ্যমে পরিচিত হয়েছেন দেশভাগের আগেই; যদিও এঁদের অনেকেই দেশবিভাগের পরও সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। কিন্তু এরপরও এঁদেরকে আধুনিক যুগের শুরুর দিককার সাহিত্যিক হিসেবেই ধরা যেতে পারে। তালিকাটি করা হয়েছে সাহিত্যিকদের জন্মসালের ক্রম অনুযায়ী। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯) প্যারীচাঁদ মিত্র (১৮১৪-১৮৮৩) অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০-১৮৮৬) মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) দীনবন্ধু মিত্র (১৮৩০-১৮৭৩) সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৪-১৮৮৯) বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-১৮৯৪) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪) কালীপ্রসন্ন সিংহ (১৮৪০-১৯৭০) মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১২) ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৪৭-১৯১৯) রমেশচন্দ্র দত্ত (১৮৪৮-১৯০৯) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৮৫৩-১৯৩১) স্বর্ণকুমারী দেবী (১৮৫৫-১৯৩২) কায়কোবাদ (১৮৫৮-১৯৫২) শ্রীশচন্দ্র মজুমদার (১৮৬০-১৯০৮) অক্ষয়কুমার বড়াল (১৮৬০-১৯১৯) মোহাম্মদ নজিবর রহমান (১৮৬০-১৯২৩) মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক (১৮৬০-১৯৩৩) অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় (১৮৬১-১৯৩০) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (১৮৬৩-১৯১৫) কামিনী রায় (১৮৬৪-১৯৩৩) প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৪৬) কুসুমকুমারী দাশ (১৮৭৫-১৯৪৮) শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৬-১৯৩৮) যতীন্দ্রমোহন বাগচী (১৮৭৮-১৯৪৮) সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী (১৮৭৯-১৯৩১) বেগম রোকেয়া (১৮৮০-১৯৩২) রাজশেখর বসু (১৮৮০-১৯৬০) শরৎচন্দ্র পণ্ডিত (১৮৮১-১৯৬৮) কাজী ইমদাদুল হক (১৮৮২-১৯২৬) সুকুমার রায় (১৮৮৭-১৯২৩) মোহিতলাল মজুমদার (১৮৮৮-১৯৫২) হেমেন্দ্রকুমার রায় (১৮৮৮-১৯৬৩) কালিদাস রায় (১৮৮৯-১৯৭৫) তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯১-১৯৭১) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০) ইবরাহীম খাঁ (১৮৯৪-১৯৭৮) বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৮৭) গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪) আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭৯) শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৯-১৯৭০) কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (১৮৯৯-১৯৭৯) জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-১৯৮৭) জসীম উদ্ দীন (১৯০২-১৯৭৭) শিবরাম চক্রবর্তী (১৯০৩-১৯৮০) অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত (১৯০৩-১৯৭৬) প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪-১৯৮৮) অন্নদাশঙ্কর রায় (১৯০৪-২০০২) বন্দে আলী মিয়া (১৯০৭-১৯৭৮) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮-১৯৫৬) সুবোধ ঘোষ(১৯০৯-১৯৮০) আশাপূর্ণা দেবী (১৯০৯-১৯৯৫) অদ্বৈত মল্লবর্মন (১৯১৪-১৯৫১) কমলকুমার মজুমদার (১৯১৪-১৯৭৯) সোমেন চন্দ (১৯২০-১৯৪২) সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৯২৬-১৯৪৭) সমসাময়িক সাহিত্যিক (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান) দেশবিভাগের পর দুই বাংলাতেই সাহিত্যচর্চার স্বতন্ত্র বলয় তৈরি হয়। তবে সাহিত্যের জগৎ সবসময়ই বৈশ্বিক, বিশেষতঃ ভাষার মিলের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি প্রকট। দেশভাগের পর থেকে শুরু করে অদ্যাবধি দুই বাংলার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিকদের সম্মিলিত নামের তালিকা এটি। প্রসঙ্গতঃ এই তালিকাটি করা হয়েছে বর্ণানুসারে, এবং এতে বিভিন্ন নাম প্রতিনিয়তই সংযুক্ত হচ্ছে এবং হবে। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৩০-২০১৯) অনিতা অগ্নিহোত্রী (১৯৫৬-) অনিল ঘড়াই (১৯৫৭-২০১৪) অবধূত (১৯১০-১৯৭৮) অমর মিত্র (১৯৫১-) আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (১৯৪৩-১৯৯৭) আনিসুল হক (১৯৬৫-) আবু ইসহাক (১৯২৬-২০০৩) আবু জাফর শামসুদ্দীন (১৯১১-১৯৮৮) আবুল বাশার (১৯৫১-) আবুল মনসুর আহমেদ (১৮৯৮-১৯৭৯) আবদুল মান্নান সৈয়দ (১৯৪৩-২০১০) আবিদ আনোয়ার (১৯৫০-) আল মাহমুদ (১৯৩৬-২০১৯) আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২-২০০৯) আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (১৯২০-১৯৮৯) আসাদ চৌধুরী (১৯৪৩-) আহমদ ছফা (১৯৪৩-২০০১) আহমাদ মোস্তফা কামাল (১৯৬৯-) আহসান হাবীব (১৯১৭-১৯৮৫) ইমদাদুল হক মিলন (১৯৫৫-) কামাল চৌধুরী (১৯৫৭-) গজেন্দ্রকুমার মিত্র (১৯০৮-১৯৯৪) জয় গোস্বামী (১৯৫৪-) জহির রায়হান (১৯৩৫-১৯৭২) জাকির তালুকদার (১৯৬৫-) তসলিমা নাসরিন (১৯৬২-) তিলোত্তমা মজুমদার (১৯৬৬-) দাউদ হায়দার (১৯৫২-) দিব্যেন্দু পালিত (১৯৩৯-২০১৯) দেবী রায় (১৯৪০-) দেবেশ রায় (১৯৩৬-২০২০) নবারুণ ভট্টাচার্য (১৯৪৮-২০১৪) নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (১৯১৮-১৯৭০) নারায়ণ সান্যাল (১৯২৪-২০০৫) নাসরীন জাহান (১৯৬৪-) নিমাই ভট্টাচার্য (১৯৩১-২০২০) নির্মলেন্দু গুণ (১৯৪৫-) নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (১৯২৪-২০১৮) পূরবী বসু (১৯৪৯-) পূর্ণেন্দু পত্রী (১৯৩১-১৯৯৭) প্রমথনাথ বিশী (১৯০১-১৯৮৫) প্রফুল্ল রায় (১৯৩৪-) প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪-১৯৮৮) ফররুখ আহমদ (১৯১৮-১৯৭৪) বশীর আল-হেলাল (১৯৩৬-২০২১) বাণী বসু (১৯৩৯-) বাসুদেব দাশগুপ্ত (১৯৩৮-২০০৫) বিমল কর (১৯২১-২০০৩) বিমল মিত্র (১৯১২-১৯৯১) বিনয় মজুমদার (১৯৩৪-২০০৬) বিষ্ণু দে (১৯০৯-১৯৮২) বুদ্ধদেব গুহ (১৯৩৬-২০২১) বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪) শংকর (১৯৩৩-) মতি নন্দী (১৯৩১-২০১০) মলয় রায়চৌধুরী (১৯৩৯-) মহাদেব সাহা (১৯৪৪-) মহাশ্বেতা দেবী (১৯২৬-২০১৬) মাহমুদুল হক (১৯৪১-২০০৮) মুহম্মদ জাফর ইকবাল (১৯৫২-) মোহাম্মদ নাসির আলী (১৯১০-১৯৭৫) মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান (১৯৪৩-) রবিশংকর বল (১৯৬২-২০১৭) রফিক আজাদ (১৯৪২-২০১৬) রাবেয়া খাতুন (১৯৩৫-২০২১) রাহাত খান (১৯৪০-২০২০) রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৯৫৬-১৯৯১) লীলা মজুমদার (১৯০৮-২০০৭) লুৎফর রহমান রিটন (১৯৬১-) শওকত ওসমান (১৯১৭-১৯৯৮) শওকত আলী (১৯৩৬-২০১৮) শক্তি চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৩-১৯৯৫) শক্তিপদ রাজগুরু (১৯২২-২০১৪) শঙ্খ ঘোষ (১৯৩২-১৯২১) শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৯-১৯৭০) শহীদ কাদরী (১৯৪২-২০১৬) শহীদুল জহির (১৯৫৩-২০০৮) শহীদুল্লা কায়সার (১৯২৭-১৯৭১) শামসুদ্দীন আবুল কালাম (১৯২৬-১৯৯৭) শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬) শাহাদুজ্জামান (১৯৬০-) শাহীন আখতার (১৯৬২-) শাহেদ আলী (১৯২৫-২০০১) শিবরাম চক্রবর্তী (১৯০৩-১৯৮০) শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (১৯৩৫-) শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৩৩-২০০১) সতীনাথ ভাদুড়ী (১৯০৬-১৯৬৫) সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২) সত্যেন সেন (১৯০৭-১৯৮১) সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৬-) সমরেশ বসু (১৯২৪-১৯৮৮) সমরেশ মজুমদার (১৯৪২-) সমীর রায়চৌধুরী (১৯৩৩-২০১৬) সিকান্‌দার আবু জাফর (১৯১৮-১৯৭৫) সুচিত্রা ভট্টাচার্য (১৯৫০-২০১৫) সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-১৯৬০) সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৩৪-২০১২) সুবিমল বসাক (১৯৩৯-) সুবোধ সরকার (১৯৫৮-) সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১৯১৯-২০০৩) সেলিনা হোসেন (১৯৪৭-) সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (১৯২২-১৯৭১) সৈয়দ মুজতবা আলী (১৯০৪-১৯৪৭) সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ (১৯৩০-২০১২) সৈয়দ শামসুল হক (১৯৩৫-২০১৬) স্বপ্নময় চক্রবর্তী (১৯৫১-) হরিশংকর জলদাস (১৯৫৩-) হাসান আজিজুল হক (১৯৩৯-২০২১) হাসান হাফিজুর রহমান (১৯৩২-১৯৮৩) হুমায়ুন আজাদ (১৯৪৭-২০০৪) হুমায়ূন আহমেদ (১৯৪৮-২০১২) হেলাল হাফিজ (১৯৪৮-) পুরস্কার ও সম্মাননা নোবেল পুরস্কার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দ (গীতাঞ্জলী গ্রন্থের জন্য) বাংলাদেশের সাহিত্য পুরস্কার বাংলা একাডেমী পুরস্কার একুশে পদক জেমকন সাহিত্য পুরস্কার প্রথম আলো বর্ষসেরা বই কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার কাব্যরত্ন/সাহিত্যরত্ন-বাসাসপ প্রবর্তিত আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার আলাওল সাহিত্য পুরস্কার সুনীল সাহিত্য পুরস্কার ফিলিপ্স সাহিত্য পুরস্কার মুক্তধারা একুশে সাহিত্য পুরস্কার লেখিকাসংঘ স্বর্ণপদক অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য অকাডেমি পুরস্কার আনন্দ পুরস্কার জ্ঞানপীঠ পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার‎ বঙ্কিম পুরস্কার সাহিত্য অকাদেমি ফেলোশিপ বিদ্যাসাগর পুরস্কার সোমেন চন্দ পুরস্কার নরসিংহদাস পুরস্কার সোপান পুরস্কার ভূয়ালকা পুরস্কার মাইকেল মধুসূধন পুরস্কার তারাশঙ্কর পুরস্কার সমরেশ বসু পুরস্কার ভরতব্যাস পুরস্কার দেবাংশু সাহিত্য সম্মাননা আরও দেখুন আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পরিষদ বাংলা একাডেমী বাংলা সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ লাইব্রেরি অব কংগ্রেস - বাংলা বিভাগ * বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় সাহিত্য বিষয়শ্রেণী:পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী সংস্কৃতি বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় সংস্কৃতি বিষয়শ্রেণী:বাঙালি সংস্কৃতি বিষয়শ্রেণী:ভাষা অনুযায়ী ভারতীয় সাহিত্য বিষয়শ্রেণী:জাতিগোষ্ঠী অনুযায়ী সাহিত্য
ঢাকা
https://bn.wikipedia.org/wiki/ঢাকা
চট্টগ্রাম
https://bn.wikipedia.org/wiki/চট্টগ্রাম
রাজশাহী
https://bn.wikipedia.org/wiki/রাজশাহী
বাংলাদেশের নদীসমূহ
https://bn.wikipedia.org/wiki/বাংলাদেশের_নদীসমূহ
REDIRECT বাংলাদেশের নদীর তালিকা
আফ্রিকা
https://bn.wikipedia.org/wiki/আফ্রিকা
আফ্রিকা আয়তন ও জনসংখ্যা উভয় বিচারে বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মহাদেশ (এশিয়ার পরেই)। পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলোকে গণনায় ধরে মহাদেশটির আয়তন ৩,০২,২১,৫৩২ বর্গ কিলোমিটার (১,১৬,৬৮,৫৯৮ বর্গমাইল)। এটি বিশ্বের মোট ভূপৃষ্ঠতলের ৬% ও মোট স্থলপৃষ্ঠের ২০.৪% জুড়ে অবস্থিত। Sayre, April Pulley. (1999) Africa, Twenty-First Century Books. . এ মহাদেশের ৬১টি রাষ্ট্র কিংবা সমমানের প্রশাসনিক অঞ্চলে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ, অর্থাৎ বিশ্বের জনসংখ্যার ১৪% বসবাস করে। নাইজেরিয়া আফ্রিকার সর্বাধিক জনবহুল দেশ। আফ্রিকার প্রায় মাঝখান দিয়ে নিরক্ষরেখা টানা হয়। এর বেশির ভাগ অংশই ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত। মহাদেশটির উত্তরে ভূমধ্যসাগর, উত্তর-পূর্বে সুয়েজ খাল ও লোহিত সাগর, পূর্বে ভারত মহাসাগর, এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর। উত্তর-পূর্ব কোনায় আফ্রিকা সিনাই উপদ্বীপের মাধ্যমে এশিয়া মহাদেশের সাথে সংযুক্ত। আফ্রিকা একটি বিচিত্র মহাদেশ। এখানে রয়েছে নিবিড় সবুজ অরণ্য, বিস্তীর্ণ তৃণভূমি, জনমানবহীন মরুভূমি, সুউচ্চ পর্বত এবং খরস্রোতা নদী। এখানে বহু বিচিত্র জাতির লোকের বাস, যারা শত শত ভাষায় কথা বলে। আফ্রিকার গ্রামাঞ্চলে জীবন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একই রয়ে গেছে, অন্যদিকে অনেক শহরে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। ব্যুৎপত্তি থাম্ব|অ্যাপোলো ১৭ ক্রু দ্বারা আফ্রিকা আফ্রি ছিল একটি ল্যাটিন নাম যা নীলদের পশ্চিমে তৎকালীন উত্তর আফ্রিকার অধিবাসীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হত, ব্যাপক অর্থে ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণে (প্রাচীন লিবিয়া) সমস্ত ভূমিকে উল্লেখ করা হয়। এই নামটি মূলত লিবিয়ার একটি আদিবাসী উপজাতির, যাদেরকে আধুনিক বারবারদের পূর্বপুরুষ বলে মনে হয়। নামটি সাধারণত ফিনিশিয়ান শব্দ -এর সাথে যুক্ত ছিল যার অর্থ "ধুলো", Venter & Neuland, NEPAD and the African Renaissance (2005), p. 16 কিন্তু ১৯৮১ সালের একটি অনুমান দাবি করেছে যে এটি বারবার শব্দ ইফ্রি (বহুবচন: ইফরান) থেকে এসেছে যার অর্থ "গুহা"। একই শব্দ আলজেরিয়া এবং ত্রিপোলিটানিয়া থেকে আসা বানু ইফরানের নামে পাওয়া যেতে পারে। বনু ইফরান হলো একটি বর্বর উপজাতি যারা মূলত উত্তর-পশ্চিম লিবিয়ার ইয়াফরান Edward Lipinski, Itineraria Phoenicia , Peeters Publishers, 2004, p. 200. এবং মরক্কোর ইফরান শহরে বাস করত। রোমান শাসনের অধীনে, ১৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৃতীয় পিউনিক যুদ্ধে কার্থাজিনিয়ানদের পরাজয়ের পরে, এটি কার্থেজ প্রদেশের রাজধানী হয়ে ওঠে। তখন এটির নাম দেওয়া হয় আফ্রিকা প্রকনসুলারিস, যা আধুনিক লিবিয়ার উপকূলীয় অংশও অন্তর্ভুক্ত করে। ইফ্রিকিয়ার পরবর্তী মুসলিম অঞ্চলে, বাইজেন্টাইন (পূর্ব রোমান) সাম্রাজ্যের এক্সার্চাটাস আফ্রিকার বিজয়ের পরেও এটির নামের একটি রূপ অপরিবর্তিত ছিল। ইউরোপীয়রা মহাদেশের প্রকৃত ব্যাপ্তি বুঝতে পেরে, "আফ্রিকা" ধারণাটি তাদের জ্ঞানের সাথে প্রসারিত করেছিল। অন্যান্য ব্যুৎপত্তিগত অনুমানগুলি প্রাচীন নাম "আফ্রিকা" এর জন্য অনুমান করা হয়েছে: ১ম শতাব্দীর ইহুদি ঐতিহাসিক ফ্ল্যাভিয়াস জোসেফাস দাবি করেছেন যে এটির নামকরণ করা হয়েছিল "ইফার"। জেনেসিস ২৫:৪ অনুসারে ইফার হলেন আব্রাহামের নাতি, যার বংশধররা লিবিয়া আক্রমণ করেছিল বলে তিনি দাবি করেছিলেন। সেভিলের ইসিডোর তার ৭ ম শতাব্দীর এথিমোল্যোজিই এক্সয়াইভি.৫.২.-এ উল্লেখ করেন "আফ্রিকা শব্দটি এসেছে ল্যাটিন এপ্রিকা থেকে, যার অর্থ "রৌদ্রোজ্জ্বল"। রাজনীতি আফ্রিকান ইউনিয়ন থাম্ব|আফ্রিকান ইউনিয়নের অঞ্চল: আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) ৫৫টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি মহাদেশীয় ইউনিয়ন। ২৬ জুন ২০০১ তারিখে, আদ্দিস আবাবা, ইথিওপিয়ার সদর দপ্তর হিসাবে ইউনিয়নটি গঠিত হয়েছিল। অর্গানাইজেশন অফ আফ্রিকান ইউনিটি (ওএইউ) এর উত্তরসূরী হিসাবে ইউনিয়নটি আনুষ্ঠানিকভাবে ৯ জুলাই,২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জুলাই ২০০৪ সালে, আফ্রিকান ইউনিয়নের প্যান-আফ্রিকান পার্লামেন্ট (পিএপি) দক্ষিণ আফ্রিকার মিড্রান্ডে স্থানান্তরিত হয়েছিল, কিন্তু আফ্রিকান কমিশন অন হিউম্যান অ্যান্ড পিপলস রাইটস এর সদরদপ্তর আদ্দিস আবাবায় রয়ে গেছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশন আফ্রিকান ইউনিয়নের সাংবিধানিক আইন দ্বারা গঠিত, যার লক্ষ্য আফ্রিকান অর্থনৈতিক সম্প্রদায়কে একটি ফেডারেটেড কমনওয়েলথ প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কনভেনশনের অধীনে একটি রাষ্ট্রে রূপান্তর করা। আফ্রিকান ইউনিয়নের একটি সংসদীয় সরকার রয়েছে, যা আফ্রিকান ইউনিয়ন সরকার নামে পরিচিত, যা আইন প্রণয়ন, বিচার বিভাগীয় এবং নির্বাহী শাখাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। এটি আফ্রিকান ইউনিয়নের সভাপতি এবং রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা পরিচালিত হয়, যিনি প্যান-আফ্রিকান পার্লামেন্টেরও সভাপতি। একজন ব্যক্তি পিএপি-তে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে এবং পরবর্তীকালে পিএপি-তে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন লাভ করে এইউর প্রেসিডেন্ট হন। আফ্রিকান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সাংবিধানিক আইন এবং প্যান-আফ্রিকান পার্লামেন্টের প্রোটোকল থেকে প্রাপ্ত। এইউ-এর সরকার সর্ব-ইউনিয়ন, আঞ্চলিক, রাজ্য এবং পৌর কর্তৃপক্ষ, সেইসাথে শত শত প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত, যেগুলি একসাথে প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন বিষয়গুলি পরিচালনা করে থাকে। আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে এখনও ব্যাপক আকারে মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটে, এর বেশিরভাগই রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। এই ধরনের অধিকাংশ লঙ্ঘন রাজনৈতিক কারণে ঘটে থাকে। প্রায়ই গৃহযুদ্ধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব দেশে বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে রয়েছে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া, সুদান, জিম্বাবুয়ে এবং কোত দিভোয়ার। সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব আফ্রিকান রাষ্ট্রসমুহ দীর্ঘকাল যাবত আন্তর্জাতিক সীমান্ত নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে আছে। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত অর্গানাইজেশন অফ আফ্রিকান ইউনিটি (বর্তমানে আফ্রিকান ইউনিয়ন) আফ্রিকার প্রতিটি রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মানকে সংস্থাটির মূলনীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে স্থান দিয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আফ্রিকাতে খুব কমই সংঘাত হয়েছে,যা সেখানে রাষ্ট্র গঠনকে প্রভাবিত করেছে এবং কিছু রাষ্ট্রকে টিকে থাকতে সক্ষম করেছে যেগুলি অন্যদের দ্বারা পরাজিত এবং শোষিত হওয়ার ঝুঁকিতে ছিল। তবুও বিভিন্ন সময়ে প্রক্সি আর্মি বা বিদ্রোহী আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। রুয়ান্ডা, সুদান, অ্যাঙ্গোলা, সিয়েরা লিওন, কঙ্গো, লাইবেরিয়া, ইথিওপিয়া এবং সোমালিয়া সহ অনেক রাষ্ট্র গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছে। ভাষা আফ্রিকায় ৩৯০০ এর বেশি ভাষা আছে। এতে আছে আরবী,রুস,ইংরেজি এগুলো অন্যতম। আফ্রিকা মানবজাতির আতুড়ঘর। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে উত্তর-পূর্ব আফ্রিকায় বিশ্বের প্রথম মহান সভ্যতাগুলির একটি, মিশরীয় সভ্যতা, জন্মলাভ করে। এরপর আফ্রিকাতে আরও বহু সংস্কৃতি ও রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ও পতন হয়েছে। ৫০০ বছর আগেও সারা আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে সমৃদ্ধ নগর, বাজার, এবং শিক্ষাকেন্দ্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। বিগত ৫০০ বছরে ইউরোপীয় বণিক ও ঔপনিবেশিকেরা ক্রমান্বয়ে আফ্রিকার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। ইউরোপীয় বণিকেরা লক্ষ লক্ষ আফ্রিকানদের দাস হিসেবে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের প্ল্যান্টেশনগুলিতে পাঠায়। ইউরোপীয়রা আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ নিজেদের দেশের কলকারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য নিষ্কাশন করা শুরু করে। ১৯শ শতকের শেষ নাগাদ ইউরোপীয়রা প্রায় সমস্ত আফ্রিকা মহাদেশ দখল করে এবং একে ইউরোপীয় উপনিবেশে পরিণত করে। কোথাও সহিংস যুদ্ধ, আবার কোথাও বা ধীর সংস্কারের মাধ্যমে প্রায় সমস্ত আফ্রিকা ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জন করে। বিশ্ব অর্থনীতিতে উপনিবেশ-পরবর্তী আফ্রিকার অবস্থান দুর্বল। এখানকার যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা অণুন্নত এবং রাষ্ট্রগুলির সীমানা যথেচ্ছভাবে তৈরি। নতুন এই দেশগুলির নাগরিকদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিগত দিক থেকে একতা বলতে তেমন কিছুই ছিল না। আফ্রিকাতে ৫৩টি রাষ্ট্র আছে। এদের মধ্যে ৪৭টি আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডে এবং ৬টি আশেপাশের দ্বীপগুলিতে অবস্থিত। সাহারা মরুভূমির মাধ্যমে মহাদেশটিকে দুইটি অংশে ভাগ করা হয়। সাহারা বিশ্বের বৃহত্তম মরুভূমি; এটি আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর অংশের প্রায় পুরোটা জুড়ে বিস্তৃত। সাহারার উত্তরে অবস্থিত অঞ্চলকে উত্তর আফ্রিকা বলা হয়। সাহারার দক্ষিণে অবস্থিত আফ্রিকাকে সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা বলা হয়। সাহারা-নিম্ন আফ্রিকাকে অনেক সময় কৃষ্ণ আফ্রিকাও বলা হয়। উত্তর আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে আছে আলজেরিয়া, মিশর, লিবিয়া, মরক্কো, সুদান এবং তিউনিসিয়া। সাহার-নিম্ন আফ্রিকাকে আবার পশ্চিম আফ্রিকা, পূর্ব আফ্রিকা, মধ্য আফ্রিকা এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা অঞ্চলগুলিতে ভাগ করা হয়। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলি হল বেনিন, বুর্কিনা ফাসো, আইভরি কোস্ট, ঘানা, গিনি, গিনি-বিসাউ, লাইবেরিয়া, মালি, মৌরিতানিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, গাম্বিয়া এবং টোগো। পূর্ব আফ্রিকাতে আছে বুরুন্ডি, জিবুতি, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, মালাউই, মোজাম্বিক, সোমালিয়া, তানজানিয়া, এবং উগান্ডা। মধ্য আফ্রিকাতে আছে অ্যাঙ্গোলা, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, চাদ, বিষুবীয় গিনি, গাবন, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, এবং রুয়ান্ডা। দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে আছে বতসোয়ানা, লেসোথো, নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ইসোয়াতিনি ,জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে। আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্রগুলির মধ্যে আছে আটলান্টিক মহাসাগরের কেপ ভার্দ এবং সাঁউ তুমি ও প্রিন্সিপি; ভারত মহাসাগরের কোমোরোস, মাদাগাস্কার, মরিশাস এবং সেশেলস। ধর্ম আফ্রিকায় ৫০০ টির বেশি ধর্ম আছে। এর মধ্যে ইসলাম ধর্মের অনুসারী বেশি। যারা মোট জনসংখ্যায় ৪৭%।আরো আছে আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী ধর্ম।যারা জনসংখ্যায় ৬%।এ ছাড়া খ্রিষ্টানরা জনসংখ্যায় ৩৯%। আরও পড়ুন মিশরীয় সভ্যতা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ African & Middle Eastern Reading Room from the United States Library of Congress Africa South of the Sahara from Stanford University The Index on Africa from The Norwegian Council for Africa Aluka Digital library of scholarly resources from and about Africa Africa Interactive Map from the United States Army Africa বিষয়শ্রেণী:মহাদেশ বিষয়শ্রেণী:অঞ্চল
অ্যান্টার্কটিকা
https://bn.wikipedia.org/wiki/অ্যান্টার্কটিকা
থাম্ব|অ্যান্টার্কটিকার কম্পোজিট উপগ্রহ চিত্র, ২০০২। অ্যান্টার্কটিকা (; পৃথিবীর দক্ষিণতম ও সবচেয়ে কম জনবহুল মহাদেশ। এটি কুমেরু বৃত্তের প্রায় সম্পূর্ণভাবে দক্ষিণে অবস্থিত এবং চারিদিকে দক্ষিণ মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত, যা কুমেরু মহাসাগর নামেও পরিচিত। এই মহাদেশটির উপর ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু অবস্থিত। অ্যান্টার্কটিকা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ এবং ইউরোপ মহাদেশের তুলনায় ৪০% বড়। এর আয়তন । অ্যান্টার্কটিকার বেশিরভাগ ভূখণ্ড বরফাবৃত, যার গড় বেধ । সাধারণভাবে অ্যান্টার্কটিকা অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় শীতল, শুষ্ক ও বায়ুপ্রবাহপূর্ণ এবং এর গড় উচ্চতা সর্বোচ্চ। এটি মূলত একটি মেরু মরুভূমি, যেখানে উপকূলীয় এলাকার বার্ষিক বৃষ্টিপাত -এর অধিক এবং অভ্যন্তরে বৃষ্টিপাত অনেক কম। বিশ্বের প্রায় ৭০% স্বাদু পানির ভাণ্ডার এখানে হিমায়িত অবস্থায় পাওয়া যায়, এবং একে গলালে বিশ্বের সমুদ্র সমতল প্রায় বেড়ে যাবে। অ্যান্টার্কটিকায় পৃথিবীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গ্রীষ্মকালে উপকূলীয় এলাকার তাপমাত্রা পর্যন্ত বাড়তে পারে। স্থানীয় প্রাণী প্রজাতির মধ্যে মাইট, সুতাকৃমি, পেঙ্গুইন, সামুদ্রিক সীল ও টারডিগ্রেড অন্তর্গত। যেখানে গাছপালা পাওয়া যায়, সেখানে উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে মূলত মস ও লাইকেন পাওয়া যায়। সম্ভবত ১৮২০ সালে ফাবিয়ান গটলিব ফন বেলিংসহাউসেন ও মিখাইল লাজারেফের নেতৃত্বে একটি রুশ অভিযানের সময়ে অ্যান্টার্কটিকার বরফের স্তূপ প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল। পরবর্তী দশকে ফরাসি, মার্কিন ও ব্রিটিশ অভিযানে মাধ্যমে অ্যান্টার্কটিকার আরও অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছিল। ১৮৯৫ সালে এক নরওয়েজীয় দল প্রথম নিশ্চিতভাবে অবতরণ করেছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মহাদেশের অভ্যন্তরে কিছু অভিযান সম্পন্ন হয়েছিল। ১৯০৯ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রীরা প্রথম চৌম্বক দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছেছিল, এবং ১৯১১ সালে নরওয়েজীয় অভিযাত্রীরা প্রথম ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছেছিল। অ্যান্টার্কটিকা প্রায় ৩০টি দেশ দ্বারা শাসিত, যার সবকটিই ১৯৫৯-এর অ্যান্টার্কটিক চুক্তি ব্যবস্থার অংশীদারি। চুক্তির শর্তাবলী অনুযায়ী, সামরিক কার্যকলাপ, খনি, পারমাণবিক বিস্ফোরণ ও পারমাণবিক বর্জ্য নিষ্পত্তি সবই অ্যান্টার্কটিকায় নিষিদ্ধ। পর্যটন, মাছধরা ও গবেষণা অ্যান্টার্কটিকার প্রধান মানব কার্যকলাপ। গ্রীষ্মের মরশুমে প্রায় ৫,০০০ জন লোক গবেষণা কেন্দ্রে বসবাস করে, যা শীতকালে প্রায় ১,০০০-এ নেমে আসে। মহাদেশটির দূর অবস্থানের সত্ত্বেও দূষণ, ওজোনস্তর ক্ষয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে মানব কার্যকলাপ অ্যান্টার্কটিকায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে। ব্যুৎপত্তি থাম্ব|alt=কুমেরু অঞ্চলের সপ্তদশ শতাব্দীর মানচিত্র|অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের এক কাল্পনিক উপস্থাপনা। ইয়ান ইয়ানসোনিউসের ১৬৫৭ সালের জ়েকার্ট্ ভ়ান্ হেট্ জ়ুইডপোল্গেবীড্ () মানচিত্রে একে তেরা আউস্ত্রালিস্ ইন্‌কোগ্নিতা () নাম দেওয়া হয়েছে। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের নামটি মধ্য ফরাসি আন্তার্তিক্ ( বা ) হতে উদ্ভূত, যা আবার লাতিন আন্তার্ক্তিকুস্ (, "উত্তরের বিপরীত") থেকে প্রাপ্ত। আন্তার্ক্তিকুস্ শব্দটি গ্রিক আন্তি- (, "বিপরীত") ও আর্ক্তিকোস্ (, "সপ্তর্ষি, উত্তর") হতে উদ্ভূত। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল তাঁর মেতেওরোলজিকা গ্রন্থে আন্তার্ক্তিকোস্ অঞ্চল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। গ্রিক ভূগোলবিদ মারিনোস তাঁর খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর বিশ্ব মানচিত্রে এই নাম ব্যবহার করেছিলেন বলে জানা যায়, কিন্তু সেই মানচিত্র কালের সঙ্গে হারিয়ে গেছে। রোমান লেখক হাইজিনাস ও এপুলিয়াস গ্রিক নামটির রোমানীকৃত রূপ পোলুস্ আন্তার্ক্তিকুস্ () ব্যবহার করেছিলেন, যেখান থেকে প্রাচীন ফরাসি পোল্ আন্তার্তিক্ (; আধুনিক বানান ) আগত। প্রাচীন ফরাসি শব্দটি ১২৭০ সালে প্রথম পাওয়া যায় এবং সেখান থেকে মধ্য ইংরেজি পোল্ আন্টার্টিক্ () আগত, যা ইংরেজ লেখক জেফ্রি চসারের লেখা এক গ্রন্থে পাওয়া যায়। ধ্রুপদী সভ্যতার সময় থেকে ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে তেরা আউস্ত্রালিস্ (, ) নামক এক কাল্পনিক মহাদেশের ধারণা ছিল। তাদের ধারণা অনুযায়ী, তেরা আউস্ত্রালিস্ পৃথিবীর সুদূর দক্ষিণে এক বিশাল মহাদেশ যা ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার ভূখণ্ডের ভারসাম্য বজায় রাখে। এধরনের মহাদেশের বিশ্বাস ইউরোপীয়দের দ্বারা অস্ট্রেলিয়ার আবিষ্কার অবধি স্থায়ী ছিল। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে অন্বেষণকারী ম্যাথিউ ফ্লিন্ডার্স অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণে একটি বিচ্ছিন্ন মহাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, যাকে তখন নিউ হল্যান্ড বলা হয়েছিল, এবং এইভাবে অস্ট্রেলিয়ার পরিবর্তে "টেরা অস্ট্রালিস" নামটি ব্যবহার করার পক্ষে সমর্থন করেছিলেন। ১৮২৪ সালে সিডনির ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে নিউ হল্যান্ড মহাদেশের নাম পরিবর্তন করে অস্ট্রেলিয়া রাখে, অ্যান্টার্কটিকার উল্লেখ হিসাবে "টেরা অস্ট্রালিস" শব্দটি অনুপলব্ধ রেখেছিল। পরবর্তী দশকগুলিতে, ভূগোলবিদদেরকে "অ্যান্টার্কটিক মহাদেশ" এর মতো আনাড়ি বাক্যাংশ দিয়ে কাজ করতে হয়েছিল। তারা আলটিমা এবং অ্যান্টিপোডিয়ার মতো বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করে আরও কাব্যিক প্রতিস্থাপনের জন্য অনুসন্ধান করেছিল। ১৮৯০-এর দশকে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে একটি মহাদেশের নাম হিসাবে "অ্যান্টার্কটিকা" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। স্কটিশ মানচিত্রাঙ্কনবিদ জন জর্জ বার্থেলোমিউকে এই নামকরণের হোতা বলে মনে করা হয়।John George Bartholomew and the naming of Antarctica, CAIRT Issue 13, National Library of Scotland, July 2008, ISSN 1477-4186, and also ভূগোল থাম্ব|অ্যান্টার্কটিকায় অ্যাডিলি পেঙ্গুইন ইতিহাস অ্যান্টার্কটিক চুক্তি ব্যবস্থা টীকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চল অ্যান্টার্কটিকা http://www.ats.aq/ ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিকা সার্ভে যুক্তরাষ্ট্র অ্যান্টার্কটিকা প্রোগ্রাম অস্ট্রেলিয়া অ্যান্টার্কটিকা সার্ভে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় অ্যান্টার্কটিকা প্রোগ্রাম বিষয়শ্রেণী:মহাদেশ বিষয়শ্রেণী:পৃথিবীর চরম বিন্দু বিষয়শ্রেণী:পৃথিবীর মেরু অঞ্চল
এশিয়া
https://bn.wikipedia.org/wiki/এশিয়া
এশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে জনবহুল মহাদেশ, প্রাথমিকভাবে পূর্ব ও উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। এটি ভূপৃষ্ঠের ৮.৭% ও স্থলভাগের ৩০% অংশ জুড়ে অবস্থিত। আনুমানিক ৪৩০ কোটি মানুষ নিয়ে এশিয়াতে বিশ্বের ৬০%-এরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। অধিকাংশ বিশ্বের মত, আধুনিক যুগে এশিয়ার বৃদ্ধির হার উচ্চ। উদাহরণস্বরূপ, বিংশ শতাব্দীর সময়, এশিয়ার জনসংখ্যা প্রায় চারগুণ বেড়ে গেছে, বিশ্ব জনসংখ্যার মত।. এশিয়ার সীমানা সাংস্কৃতিকভাবে নির্ধারিত হয়, যেহেতু ইউরোপের সাথে এর কোনো স্পষ্ট ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা নেই, যা এক অবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডের গঠন যাকে একসঙ্গে ইউরেশিয়া বলা হয়। এশিয়ার সবচেয়ে সাধারণভাবে স্বীকৃত সীমানা হলো সুয়েজ খাল, ইউরাল নদী, এবং ইউরাল পর্বতমালার পূর্বে, এবং ককেশাস পর্বতমালা এবং কাস্পিয়ান ও কৃষ্ণ সাগরের দক্ষিণে। "Europe" (pp. 68–9); "Asia" (pp. 90–1): "A commonly accepted division between Asia and Europe is formed by the Ural Mountains, Ural River, Caspian Sea, Caucasus Mountains, and the Black Sea with its outlets, the Bosporus and Dardanelles." এটা পূর্ব দিকে প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং উত্তরে উত্তর মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। ইউরাল পর্বতমালা, ইউরাল নদী, কাস্পিয়ান সাগর, কৃষ্ণ সাগর এবং ভূমধ্যসাগর দ্বারা এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশ দুটি পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন। এছাড়া লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল এশিয়া মহাদেশকে আফ্রিকা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সংকীর্ণ বেরিং প্রণালী একে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ থেকে পৃথক করেছে। উল্লেখ্য, বেরিং প্রণালীর একদিকে অবস্থান করছে এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত রাশিয়ার উলেনা এবং অপর পাশে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অন্তর্গত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা। এই প্রণালীটির সংকীর্ণতম অংশটি মাত্র ৮২ কি•মি• চওড়া, অর্থাৎ বেরিং প্রণালীর এই অংশ হতে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দূরত্ব মাত্র ৮২ কি•মি•। এর আকার এবং বৈচিত্র্যের দ্বারা, এশিয়ার ধারণা – একটি নাম ধ্রুপদি সভ্যতায় পাওয়া যায় - আসলে ভৌত ভূগোলের চেয়ে মানবীয় ভূগোলের সাথে আরো বেশি সম্পর্কিত। এশিয়ার অঞ্চল জুড়ে জাতিগোষ্ঠী, সংস্কৃতি, পরিবেশ, অর্থনীতি, ঐতিহাসিক বন্ধন এবং সরকার ব্যবস্থার মাঝে ব্যাপকভাবে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সংজ্ঞা এবং সীমানা গ্রিক তিন-মহাদেশের ব্যবস্থা থাম্ব|ডান|300px|এশিয়া ও পার্শ্ববর্তী স্থলভূমিগুলির দুই বিন্দু সমদূরবর্তী অভিক্ষেপ। থাম্ব|এশিয়ার মানুষদের জাতিগত বৈচিত্র্য, নরডিস্ক ফ্যামিলজেকব (১৯০৪) এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সীমান্ত ঐতিহাসিকভাবে শুধুমাত্র ইউরোপীয়দের দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে। দুইয়ের মধ্যে মূল পার্থক্য প্রাচীন গ্রিক দ্বারা তৈরি করা হয়। তারা এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সীমানা হিসেবে এজিয়ান সাগর, দারদানেলেস (Dardanelles), মার্মারা সাগর, বসফরাস, কৃষ্ণ সাগর, কেরচ প্রণালী (Kerch Strait), এবং আজভ সাগর ব্যবহার করে। নীল নদ প্রায়ই এশিয়া এবং আফ্রিকার মধ্যে সীমানা হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যদিও কিছু গ্রিক ভূগোলবিদ লোহিত সাগরকে একটি ভাল সীমানা হিসেবে মনে করে থাকে। নীল নদ এবং লোহিত সাগরের মধ্যে দারিউসের খাল এই ধারণায় যথেষ্ট প্রকরণ সৃষ্টি করে। রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে, দন নদী কৃষ্ণ সাগরে পড়ত, যা এশিয়ার পশ্চিম সীমান্ত। এটি ইউরোপীয় তীরে উত্তরদিকের নাব্য বিন্দু। ১৫ শতাব্দীতে লোহিত সাগর নীল নদের বদলে আফ্রিকা ও এশিয়ার মধ্যে সীমা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠে। এশিয়া–ইউরোপ সীমানা নদ-নদী উত্তর ইউরোপীয়দের কাছে অসন্তোষজনক হয়ে ওঠে, যখন রাশিয়ার রাজা পিটার পূর্ব খণ্ডে প্রতিপক্ষ সুইডেন ও উসমানীয় সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেন, এবং সাইবেরিয়ার উপজাতিদের সশস্ত্র প্রতিরোধ দমন করেন। এর দ্বারা ১৭২১ সালে একটি নতুন রাশিয়ান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ইউরাল পর্বতমালা ও তার পরেও ব্যপ্ত ছিল। সাম্রাজ্যের প্রধান ভৌগোলিক ত্বাত্তিক আসলে ছিল একজন প্রাক্তন সুইডিশ যুদ্ধবন্দী, যাকে ১৭০৯ সালের পোল্টাভা যুদ্ধ থেকে বন্দী করা হয়। তাকে তোবলস্কে নিযুক্ত করা হয়, যেখানে তিনি পিটারের সাইবেরিয়ার সরকারী, ভাসিলি তাতিসচেভ-এর সাথে সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং যে তাকে বইয়ের প্রস্তুতির জন্য ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিক গবেষণা করার অনুমতি ও স্বাধীনতা দেয়। সুইডেনে, পিটারের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর, ১৭৩০ সালে ফিলিপ জোহান ভন স্তারাহলেনবেরগ এশিয়ার সীমানা হিসেবে ইউরালকে প্রস্তাব করে একটি নতুন মানচিত্রাবলী প্রকাশ করে। রাশিয়ানরা ভূগোলে তাদের ইউরোপীয় পরিচয় রাখা অনুমোদিত করার ধারণা সম্পর্কে উৎসাহি ছিল। তাতিসচেভ ঘোষণা করেন যে, তিনি ভন স্তারাহলেনবেরগ ধারণাটি প্রস্তাব করেছিলেন। পরবর্তীরা নিম্ন সীমা হিসাবে এমবা নদী প্রস্তাব করে। মধ্য-১৯ শতকে ইউরাল নদী প্রকাশ হবার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রস্তাব করা হয়। কৃষ্ণ সাগরে থেকে কাস্পিয়ান সাগরে সীমানা সরানো হয়। সেই সময়কার মানচিত্রে, ট্রান্সককেশিয়া এশিয়ান বলে গণ্য হত। সেই অঞ্চলের অধিকাংশই সোভিয়েত ইউনিয়ন-এ অন্তর্গত হওয়া দক্ষিণ সীমানার মতামতকে প্রভাবিত করে। ইউরোপ থেকে তাদের পৃথক কল্পিত সীমানা নির্ধারণে এশিয়ান সংস্কৃতির কোনো ভূমিকা নেই। এশিয়া–ওশেনিয়া সীমানা এশিয়া ও ঢিলেঢালাভাবে সংজ্ঞায়িত অঞ্চল ওশেনিয়ার মধ্যকার সীমানা সাধারণত মালয় দ্বীপপুঞ্জের কোনো এক খানে স্থাপন করা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে উদ্ভাবিত দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও ওশেনিয়া শব্দের উৎপত্তি থেকেই বিভিন্ন ভৌগোলিক অর্থ বহন করে। মালয় দ্বীপপুঞ্জের কোন দ্বীপ এশিয়ার, তার প্রধান নির্ণয়াক হলো তার উপনিবেশিক অবস্থান বিভিন্ন সাম্রাজ্যের মধ্যে (সব ইউরোপীয় নয়)। লুইস এবং উইগেন বলেন "তার বর্তমান গণ্ডিতে 'দক্ষিণপূর্ব এশিয়া'-র কমিয়ে আনার একটি চলমান প্রক্রিয়া।" চলমান সংজ্ঞা থাম্ব|বাম|সবুজ অংশে আফ্রো-ইউরেশিয়া ভৌগোলিক এশিয়া একটি সাংস্কৃতিক বস্তু, যা বিশ্বের ইউরোপীয় ধারণা অন্যান্য সংস্কৃতির উপর আরোপিত, একটি যথাযথ নয় ধারণা যার ফলে এটার মানে নিয়ে বিবাদ হয়। এশিয়া ইউরোপ চেয়ে বড় এবং আরো সাংস্কৃতিকভাবে বিচিত্র। এটা ঠিক বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক সীমানার উপাদানসমূহের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সাধারণ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভৌগোলিক মানের উপরন্তু, এশিয়া আরো সীমাবদ্ধ আগ্রহের ক্ষেত্রে কোনো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ও কার্যক্রমে সংস্থা ভেদে নির্দিষ্ট অর্থ বহন করে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিস অব কানাডা মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রশাসনিক বিভাগ ব্যবহার করে, তাদের "এশিয়া" সংজ্ঞা বৃহত্তর সংজ্ঞা থেকে যথেষ্ট ভিন্ন, এবং তা একইভাবে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য সংস্থার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। "এশিয়া" কিছু বিভিন্নমুখী ব্যবহার বর্তমান ঘটনা প্রতিবেদনের সময় সংবাদ মাধ্যম দ্বারা ঘোষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিবিসি নিউজের এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগ আছে, যা অস্ট্রালেশিয়া, ওশেনিয়া বা আমেরিকার প্রশান্ত অংশ (প্যাসিফিক) থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে। হিরোডোটাস-এর সময় থেকে, এক দল ক্ষুদ্র ভূগোলবিদ তিন-মহাদেশ ব্যবস্থা (ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া) প্রত্যাখ্যান করেন এই বলে তাদের মধ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক বিচ্ছেদ নেই। উদাহরণস্বরূপ, স্যার ব্যারি চুনলিফ, অক্সফোর্ডের ইউরোপীয় পুরাতত্ত্বের এমেরিটাস অধ্যাপক, যুক্তি দেন যে, ইউরোপ ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিকভাবে নিছক "এশিয়া মহাদেশের পশ্চিম বর্ধিতাংশ"। ভৌগোলিকভাবে, এশিয়া ভূখণ্ডের – বা আফ্রো-ইউরেশিয়ার অংশ ইউরেশিয়ার পূর্ব অংশ, যেখানে ইউরোপ উত্তর পশ্চিমাংশের উপদ্বীপ; ভূতাত্ত্বিকভাবে, এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকা (সুয়েজ খাল ছাড়া) একটি একক অবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড গঠন করে এবং একটি সাধারণ মহীসোপান ভাগ করে। প্রায় সব ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশির ভাগ অংশ ইউরেশীয় পাত-এর উপর অবস্থিত, দক্ষিণে আরবীয় ও ভারতীয় পাত দ্বারা সংযুক্ত এবং সাইবেরিয়ার পূর্বপ্রান্তিক অংশ উত্তর আমেরিকার পাতের উপর অবস্থিত। ব্যুৎপত্তি থাম্ব|300px|টলেমির এশিয়া এশিয়া মূলত গ্রিক সভ্যতার একটি ধারণা।Reid, T.R. Confucius Lives Next Door: What living in the East teaches us about living in the west Vintage Books(1999). "এশিয়া", অঞ্চলের নাম, আধুনিক ভাষার বিভিন্ন আকারের মাঝে এর চূড়ান্ত উৎপত্তিস্থল অজানা। এর ব্যুৎপত্তি এবং উৎপত্তির ভাষা অনিশ্চিত। এটা নথিভুক্ত নামগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন নামের একটি। অনেকগুলো তত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে। ল্যাটিন সাহিত্য থেকে ইংরেজি সাহিত্যের গঠন হওয়ার সময়কালে ইংরেজি এশিয়ার খোঁজ পাওয়া যায়, তখনও একই গঠন ছিল এশিয়া। সমস্ত ব্যবহার এবং নামের গঠন রোমান সাম্রাজ্যের ল্যাটিন থেকে আহরণ করা কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলা যায় না। ধ্রুপদি সভ্যতা ল্যাটিন এশিয়া ও গ্রিক Ἀσία একই শব্দ বলে মনে করা হয়। রোমান লেখকগণ Ἀσία-র অনুবাদ এশিয়া করেছেন। রোমানরা একটি প্রদেশশের নামকরণ এশিয়া নামে করেছেন, যা প্রায় আধুনিক তুরস্কের কেন্দ্রীয় পশ্চিম অংশ। আধুনিক ইরাকে এশিয়া মাইনর ও এশিয়া মেজর অবস্থিত। নামটির প্রাচীনতম প্রমাণ গ্রিক, এটি সম্ভবত অবস্থাগতভাবে Ἀσία থেকে এশিয়া এসেছিল, কিন্তু প্রাচীন অনুবাদে, আক্ষরিক প্রসঙ্গের অভাবে, তা খুঁজে বের করা কঠিন। প্রাচীন ভূগোলবিদ এবং ঐতিহাসিকদের কাছেই জানা যায়, যেমন হিরোডোটাস, যারা সবাই গ্রিক ছিলো। রোমান সভ্যতা ব্যাপকভাবে গ্রীকের বশবর্তী ছিলো। প্রাচীন গ্রিক অবশ্যই নামের প্রাথমিক এবং সমৃদ্ধ ব্যবহারের নজির রাখে। হেরোডোটাস এশিয়ার প্রথম মহাদেশীয় ব্যবহার করেছেন (প্রায় ৪৪০ খ্রিস্টপূর্ব), তিনি তা উদ্ভাবন করেন সেই কারণে নয়, বরং তার ইতিহাস প্রাচীনতম পাওয়া গদ্য, যা তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে। তিনি সতর্কতার সাথে এটিকে সংজ্ঞায়িত করেন,Book IV, Articles 37–40. পূর্ববর্তী ভূগোলবিদদের উল্লেখ করে যাদের লেখা তিনি পড়েছিলেন, কিন্তু যার কাজ এখন হারিয়ে গেছে। এর দ্বারা আনাতোলিয়া ও পারস্য সাম্রাজ্যকে বোঝান, গ্রিস ও মিশরের বিপরীতে। হেরোডোটাস আরোও বলেন, তিনি বিভ্রান্তবোধ করেন যে কেন তিন জন নারীর নামে "ভূভাগের নামকরণ করা হবে" ইউরোপা, এশিয়া, এবং লিবইয়া, আফ্রিকাকে নির্দেশ করে), অধিকাংশ গ্রিক মনে করেন দেবতা প্রমিথিউসের স্ত্রীর নামে (অর্থাৎ হেসিওয়ান, Hesione) এশিয়ার নামকরণ করা হয়, কিন্তু লিডিয়ানরা মনে করে, কট্যাসের (Cotys) ছেলে এশিজের (Asies) নামে এর নামকরণ করা হয়।Book IV, Article 45. গ্রিক পুরাণে, "এশিয়া" (Ἀσία) বা "এশিয়" (Asie) (Ἀσίη) নাইম্ফ বা লিডিয়ার দেবী তিতান-এর নাম। হেরোডোটাসের ভৌগোলিক বিভ্রান্তি সম্ভবত দ্বিমত প্রকাশ করার একটি রূপ, সকল শিক্ষিত লোকের মত তিনিও যেহেতু গ্রীক কাব্য পড়েছেন, তাই তিনি ভালভাবেই বুঝে থাকবেন যে, কেন অঞ্চলগুলোর নামে নারীদের নামে হবে। এথেন্স, মাইসিন, থিবেত এবং আরো অন্যান্য স্থানগুলোর নাম নারীদের নামে ছিলো। প্রাচীন গ্রিক ধর্মে, অঞ্চলগুলো নারী দেবদূতের অধীনে ছিলো, যা অভিভাবক দেবদূতের সমান্তরাল। কবিরা তাদের কার্যকলাপ বর্ণনা করেন এবং পরের প্রজন্ম তা রূপকধর্মী ভাষায় বিনোদনের গল্পে পরিণত করে, যা পরবর্তীকালে নাট্যকাররা ধ্রুপদী গ্রিক নাটক রুপান্তরিত করে এবং "গ্রিক পুরাণ" হয়ে উঠে। উদাহরণস্বরূপ, হেসিওড (Hesiod) তেথুস ও অকেয়ানোসের মেয়েদের কথা উল্লেখ করেন, যাদের মাঝে একটি "পবিত্র সঙ্গ" আছে, "যারা প্রভু অ্যাপোলোর সাথে এবং নদীরা তাদের তারুণ্য রেখে দিয়েছে।"Theogony, Line 345 ff. এদের অনেকে ভৌগোলিক: ডোরিস, রোডা, ইউরোপ, এশিয়া। হেসিওড ব্যাখ্যা করেনঃTheogony, Line 364ff."তিন হাজার ঝরঝরে-গোড়ালির মহাসাগরের কন্যা, যারা ছড়িয়ে আছে দিগদিগন্তে এবং প্রতিটি জায়গায়, একইভাবে মাটি এবং গভীর জলের সেবা করে।" ইলিয়াড (প্রাচীন গ্রিক দ্বারা হোমার-এর উপর আরোপিত) ট্রোজান যুদ্ধে দুই ফ্রিজিয়ান (লিডিয়ায় লুভিয়ানের স্থলাভিষিক্ত গোত্র) কথা উল্লেখ করেঃ আসিউস (একটি বিশেষণ, অর্থ "এশিয়ান");Μ95, Π717. এবং লিডিয়ার একটি পানিবদ্ধ জলাভূমি বা নিম্নভূমি ασιος হিসেবে।Β461. ব্রোঞ্জ যুগ গ্রিক কবিতার আগে, এজিয়ান সাগর গ্রিক অন্ধকার যুগে ছিলো, যার প্রারম্ভে দলমাত্রিক লেখা হারিয়ে গেছে এবং বর্ণানুক্রমিক লেখা শুরু হয়নি। এর আগে ব্রোঞ্জ যুগের নথিতে আসিরীয়া সাম্রাজ্য, হিট্টিট সাম্রাজ্য ও গ্রিসের মাইসেরিয়ান রাজ্যের কথা উল্লেখ আছে, যা নিঃসন্দেহে এশিয়া, অবশ্যই আনাতোলিয়ায়, লিডিয়া সহ যদি অভিন্ন না হয়। এসব নথি প্রশাসনিক এবং কবিতায় অন্তর্ভুক্ত নয়। ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে অজানা অক্রমণকারী দ্বারা মাইসেরিয়ান রাজ্য ধ্বংস হয়। একদল চিন্তাবিদের মতে, একই সময়ে চলা ডরিয়ান আক্রমণ দায়ী করা হয়। প্রাসাদে পোড়ানোর ঘটনা, দৈনিক প্রশাসনিক নথির নিদর্শন গ্রিক দলমাত্রিক লিপিতে (লিনিয়ার বি) পোড়ামাটিতে লেখা আছে, যা অনেকে পাঠোদ্ধার করার চেষ্টা করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তরুণ সাংকেতিক লিপিকর মাইকেল ভেন্ট্রিস, সহায়তা করেন বিদ্বান জন চাদউইক। প্রাচীন পাইলস স্থলে কার্ল ব্লেজিন একটি উল্লেখযোগ্য গুপ্তভান্ডার আবিষ্কার করেন, যাতে বিভিন্ন পদ্ধতি দ্বারা গঠিত পুরুষ ও মহিলা নামের শত শত নমুনা অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে কিছু মহিলাকে দাসত্বে বন্দী করে রাখা হত (সমাজের গবেষণায় বিষয়বস্তু হিসাবে প্রকাশিত)। তাদের কাজে লাগানো হতো, যেমন কাপড় তৈরি, ও বাচ্চাসহ আসত। তাদের মধ্যে কিছু মহিলাদের সাথে যুক্ত বিশেষণ লাওইয়াইয়াই (lawiaiai), "বন্দী," তাদের উৎসকে নির্দেশ করে। তাদের কিছু জাতিগত নাম। বিশেষ করে, আশ্বিনি (aswiai), "এশিয়ার নারী" বলে চিহ্নিত।. সম্ভবত তারা এশিয়ায় বন্দী হয়, কিন্ত অন্যান্য ক্ষেত্রে, মিলাতিয়াই (Milatiai), মিলেটাস থেকে আগত, একটি গ্রিক উপনিবেশ, যেখানে গ্রীক দ্বারা ক্রীতদাসদের জন্য অভিযান চালানো হয়নি। চাদউইক মনে করেন যে নামগুলো তাদের অবস্থান উল্লেখ করে, যেখান থেকে বিদেশি নারী কেনা হয়েছে। নামটি একবচন, আশ্বিয়া (Aswia), যা দ্বারা একটি দেশ ও তার অধিবাসী নারী উভয়কেই বোঝায়। এর একটি পুংলিঙ্গ আছে, আশ্বিওস (aswios)। এই আশ্বিয়া (Aswia) শব্দটি, হিট্টিটদের কাছে পরিচিত আশুয়া (Assuwa) নামের অঞ্চল থেকে আগত, লিডিয়ায় কেন্দ্রীভূত, বা "রোমান এশিয়া"। এই নাম, আশুয়া (Assuwa) থেকেই মহাদেশ "এশিয়া" নামের উৎপত্তি।Bossert, Helmut T., Asia, Istanbul, 1946. আশুয়া লীগ পশ্চিম আনাতোলিয়ার একটি কনফেডারেশন রাজ্য, যা প্রথম তুদহালিয়ার নেতৃত্বে হিট্টিটদের কাছে প্রায় ১৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পরাজিত হয়। অথবা, শব্দটির উৎপত্তি আক্কাদীয় শব্দ , যার অর্থ 'বাইরে যাওয়া' বা 'আরোহণ করা', মধ্যপ্রাচ্যে সূর্যোদয়ের সময়ে সূর্যের দিক নির্দেশ করা এবং খুব সম্ভবত ফিনিশীয় শব্দ asa এর সাথে যুক্ত যার মানে পূর্ব। বিপরীতভাবে একই রকম উৎপত্তির ধরন ইউরোপের জন্য প্রস্তাব করা হয়, আক্কাদীয় শব্দ erēbu(m) 'প্রবেশ করা' বা 'ডোবা' (সূর্য)। টি.আর. রিড শব্দের উৎপত্তির দ্বিতীয় ধারণাটি সমর্থন করেন, asu শব্দটি থেকে প্রাচীন গ্রিক নামটি নামটি এসেছে, যার অর্থ আসিরীয়ায় 'পূর্ব' (ereb ইউরোপ-এর জন্য, অর্থ 'পশ্চিম'). পাশ্চাত্য (Occidental) ধারণাটি (লাতিন রূপ Occidens 'ডুবন্ত') এবং প্রাচ্য (Oriental) (লাতিন Oriens থেকে, অর্থ 'উঠন্ত') ইউরোপীয় উদ্ভাবন, পশ্চিমা ও পূর্ব এর সমার্থক। রিড আরও জোর দেন যে, এটি এশিয়ার সমস্ত মানুষ ও সংস্কৃতিকে একক শ্রেণিবিভাগে ফেলার পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাখ্যা করে, প্রায় যেন ইউরেশীয় মহাদেশের পশ্চিম এবং পূর্ব সভ্যতাগুলোর মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণের প্রয়োজন। এই বিষয়ে ওগুরা কুজকো ও তেনশিন ওকাকুরা দুই জন স্পষ্টভাষী জাপানি ব্যক্তিত্ব। ইতিহাস থাম্ব|বাম|220px|সিল্ক রোড এশিয়া জুড়ে সভ্যতাগুলোকে যুক্ত করে।ANCIENT SILK ROAD TRAVELLERS থাম্ব|ডান|220px|মোঙ্গল সাম্রাজ্য, ১৩০০ সালে, ধূসর অঞ্চল পরবর্তিতে তিমুরিদ সাম্রাজ্য।থাম্ব|ডান|220px|এশিয়ার মানচিত্র, ১৮৯০ সালেথাম্ব|ডান|১৮৮৫ সালের পশ্চিম দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার মানচিত্র এশিয়ার ইতিহাস বিভিন্ন প্রান্তিক উপকূলীয় অঞ্চলের স্বতন্ত্র ইতিহাস হিসেবে দেখা যায়ঃ পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য, যা এশিয়ার মধ্য প্রান্তর দ্বারা যুক্ত। এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলগুলো পৃথিবীর প্রাচীনতম পরিচিত সভ্যতাগুলোর বিকাশস্থল, যা উর্বর নদী উপত্যকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। সভ্যতাগুলোতে মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু উপত্যকা ও হুয়াংহো অনেক মিল রয়েছে। এই সভ্যতাগুলো প্রযুক্তি এবং ধারণা বিনিময় করতে পারে, যেমন গণিত ও চাকা। অন্যান্য উদ্ভাবন, যেমন লিখন রিতি, প্রতিটি সভ্যতায় পৃথকভাবে বিকশিত হয়েছে বলে মনে হয়। শহর, রাজ্য এবং সাম্রাজ্য এসব নিম্নভূমিতে বিকশিত হয়। কেন্দ্রীয় প্রান্তীয় অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে অশ্বারোহী যাযাবর দ্বারা অধ্যুষিত ছিল, যারা কেন্দ্রীয় প্রান্তীয় অঞ্চল থেকে এশিয়ার সব অঞ্চল পৌঁছাতে পারতো। কেন্দ্রীয় প্রান্তীয় অঞ্চল থেকে প্রাচীনতম বংশের বিস্তার হলো ইন্দো-ইউরোপীয়, যারা তাদের ভাষা মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া, চীনের সীমানা পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছিলো। এশিয়ার উত্তরদিকের শেষ সীমায় অবস্থিত সাইবেরিয়া প্রান্তীয় যাযাবরদের জন্য দুর্গম ছিলো মূলত ঘন বন, জলবায়ু এবং তুন্দ্রার জন্য। এই এলাকা খুব জনবিরল ছিল। মধ্য এবং প্রান্তীয় অঞ্চল অধিকাংশই পর্বত ও মরুভূমি দ্বারা পৃথক ছিল। ককেশাস, হিমালয় পর্বতমালা ও কারাকোরাম, গোবি মরুভূমি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, যা প্রান্তীয় অশ্বারোহী কেবল পার হতে পারে। যখন শহুরে নগরবাসী আরো উন্নত ছিলো প্রযুক্তিগতভাবে ও সামাজিকভাবে, তখন অনেক ক্ষেত্রেই তারা প্রান্তীয় অশ্বারোহীর আক্রমণের বিরুদ্ধে সামরিক ভাবে সামান্যই করতে পারতো। যাইহোক, এসব নিম্নভূমিতে যথেষ্ট উন্মুক্ত তৃণভূমি নেই যা বিশাল অশ্বারোহী বাহিনীর যোগান দিতে পারবে; এই এবং অন্যান্য কারণে, যাযাবরেরা চীন, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ জয় করে তাদের স্থানীয় সমৃদ্ধিশালী সমাজে মিশে যেতে পেরেছিলো। ৭ম শতকে মুসলিম বিজয় চলাকালে, ইসলামিক খিলাফত মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া জয় করে। পরবর্তিতে ১৩শ শতকে মোঙ্গল সাম্রাজ্য এশিয়ার অনেক বড় অংশ জয় করে, যা চীন থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত। মোঙ্গল আক্রমণ করার আগে, চীন এ প্রায় ১২০ মিলিয়ন মানুষ ছিল; আক্রমণের পরবর্তি আদমশুমারিতে ১৩০০ সালে প্রায় ৬০ মিলিয়ন মানুষ ছিল।Ping-ti Ho. "An Estimate of the Total Population of Sung-Chin China", in Études Song, Series 1, No 1, (1970). pp. 33–53. ব্ল্যাক ডেথ, পৃথিবীব্যাপী মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী মৃত্যু, মধ্য এশিয়ার অনুর্বর সমভূমিতে উদ্ভব হয়ে এটা সিল্ক রোড বরাবর চলে গেছে। রাশিয়ান সাম্রাজ্য ১৭শ শতক থেকে এশিয়া বিস্তৃত হয়, এবং শেষ পর্যন্ত ১৯শ শতকের শেষ নাগাদ সাইবেরিয়া এবং অধিকাংশ মধ্য এশিয়া নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ১৬শ শতক থেকে উসমানীয় সাম্রাজ্য আনাতোলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং বলকান অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। ১৭শ শতকে, মাঞ্চুরা চীন জয় করে এবং চিং রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে। এদিকে ১৬শ শতক থেকে ইসলামী মুঘল সাম্রাজ্য অধিকাংশ ভারত শাসন করতে থাকে। ভূগোল ও জলবায়ু থাম্ব|ডান|হিমালয় পর্বতমালা, যেখানে গ্রহের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আছে। এশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ। এটা পৃথিবীর মোট ভূপৃষ্ঠের ৮.৮% ভাগ (বা ৩০% ভাগ স্থল), এবং বৃহত্তম তটরেখা । এশিয়া সাধারণত ইউরেশিয়ার পাঁচ ভাগের চার ভাগ নিয়ে পূর্ব দিকে অবস্থিত। এটা সুয়েজ খাল ও ইউরাল পর্বতমালার পূর্বে, ককেশাস পর্বতমালা, কাস্পিয়ান সাগর ও কৃষ্ণ সাগরের দক্ষিণে অবস্থিত। এটা পূর্ব দিকে প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত, এবং উত্তরে উত্তর মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। এশিয়া মহাদেশে ৪৮টি দেশ আছে, এদের মধ্যে চারটি (রাশিয়া, কাজাখস্তান, তুরস্ক, এবং আজারবাইজান) দেশের ইউরোপে অংশ আছে। এশিয়ার অত্যন্ত বিচিত্র জলবায়ু এবং ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য আছে। জলবায়ুর পরিধি আর্কটিক, উপআর্কটিক (সাইবেরিয়া) থেকে দক্ষিণ ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ক্রান্তীয় অবধি বিস্তৃত। এর দক্ষিণ-পূর্ব অংশ জুড়ে আর্দ্র ও অভ্যন্তরে শুষ্ক। পশ্চিম এশিয়ায় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দৈনিক তাপমাত্রা পরিসর দেখা যায়।হিমালয় পর্বমালার কারণে মৌসুমি সঞ্চালন দক্ষিণ ও পূর্ব অংশ জুড়ে প্রাধান্য পায়। মহাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অংশ উষ্ণ। উত্তর গোলার্ধের মধ্যে সাইবেরিয়া অন্যতম শীতলতম অঞ্চল, এবং উত্তর আমেরিকা জন্য আর্কটিক বায়ুভরের একটি উৎস হিসাবে কাজ করে। ট্রপিকাল সাইক্লোনের জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে সক্রিয় জায়গা উত্তরপূর্বে ফিলিপাইন ও দক্ষিণ জাপান। মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমি ও আরব মরুভূমি মধ্যপ্রাচ্যের অনেকটা জুড়ে প্রসারিত। চীনের ইয়ানজে নদী মহাদেশের দীর্ঘতম নদী। নেপাল ও চীনের মধ্যকার হিমালয় পর্বতমালা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা পর্বতশ্রেণী। বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় বনাঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে প্রসারিত ও সরলবর্গীয়, পর্ণমোচী বনাঞ্চল উত্তরে প্রসারিত। জলবায়ু পরিবর্তন ম্যাপলক্রফট, বৈশ্বিক ঝুঁকি বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান, ২০১০ সালে সম্পাদিত একটি জরিপ ১৬টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তনে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে। প্রত্যেক জাতির ঝুঁকি ৪২টি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত সূচক দ্বারা নির্ণিত, যা পরবর্তী ৩০ বছর সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে। এশিয়ার দেশগুলো বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা, ১৬টি দেশের মধ্যে ছিল যারা জলবায়ু পরিবর্তনে চরম ঝুঁকির সম্মুখীন। কিছু পরিবর্তন ইতোমধ্যেই ঘটছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের ক্রান্তীয় অংশে আধা-শুষ্ক জলবায়ুতে, তাপমাত্রা ১৯০১ থেকে ২০০৩-এর মধ্যে ০.৪ °​সে বেড়েছে। ২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর সেমি-এ্যারিড ট্রপিক্স (ICRISAT) দ্বারা একটি গবেষণায়, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এশিয়ার কৃষি ব্যবস্থায় বৈজ্ঞানিক পন্থা ও কৌশল খোঁজার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়, যার ফলে দরিদ্র ও অসহায় কৃষকদের উপকার হবে। গবেষণায় সুপারিশ করা হয় স্থানীয় পরিকল্পনার মধ্যে জলবায়ু তথ্য ব্যবহারের উন্নতি এবং আবহাওয়া ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা শক্তিশালীকরণ, গ্রামীণ পরিবারের আয়ের বহুমুখীকরণ উৎসাহী করা, উন্নত প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ তথা ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি পূর্ণ করা, বন আচ্ছাদন করা, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করার জন্য কৃষকদের প্রণোদনা প্রদান।Vulnerability to Climate Change: Adaptation Strategies and layers of Resilience , ICRISAT, Policy Brief No. 23, February 2013 অর্থনীতি থাম্ব|বাম|250px|সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বন্দর এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিময় বাণিজ্য কেন্দ্র। ক্রম দেশ জিডিপি (PPP, 2014)millions of ইউএসডি ১ ১৮,০৮৮,০৫৪ ২ ৭,৪১১,০৯৩ ৩ ৪,৭৬৭,১৫৭ ৫ ২,৬৮৫,৮৯৩ ৬ ১,৭৮৩,৯৫০ ৭ ১,৬০৯,৬২৮ ৮ ১,৫১৪,৮৫৯ ৯ ১,৩৫৭,০২৮ ১০ ১,০৭৮,৭৯২ ক্রম দেশ জিডিপি (nominal, 2014)millions of ইউএসডি ১ ১০,৩৬০,১০৫ ২ ৪,৬০২,৩৬৭ ৩ ২,০৬৬,৯০২ ৫ ১,৪১০,৩৮৩ ৬ ৮৮৮,৬৪৮ ৭ ৭৯৯,৫৩৫ ৮ ৭৪৬,২৪৯ ৯ ৫২৯,৫৯৭ ১০ ৪১৬,৪৯০ এশিয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম নমিনাল জিডিপি সব মহাদেশগুলোর মধ্যে ইউরোপের পরে, কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা সমতায় বৃহত্তম। ২০১১ সালের হিসাবে, এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি চীন, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া। বৈশ্বিক অফিস অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ২০১১-এ, অফিসে অবস্থানে এশিয়ার আধিপত্য ছিল, শীর্ষ ৫-এ ৪টিই এশিয়ার হংকং, সিঙ্গাপুর, টোকিও, সিওল ও সাংহাই। প্রায় ৬৮ শতাংশ আন্তর্জাতিক সংস্থার হংকং-এ অফিস আছে। ১৯৯০ দশকের শেষ দিকে এবং ২০০০-এর শুরুতে, চীনের অর্থনীতিFive Years of China's WTO Membership. EU and US Perspectives on China's Compliance with Transparency Commitments and the Transitional Review Mechanism, Legal Issues of Economic Integration, Kluwer Law International, Volume 33, Number 3, pp. 263–304, 2006. by Paolo Farah এবং ভারতের অর্থনীতি দ্রুত হারে বাড়ছে, উভয়ের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৮% এর বেশি। এশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক খুব উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেশগুলোঃ ইসরায়েল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মঙ্গোলিয়া, উজবেকিস্তান, সাইপ্রাস ও ফিলিপাইন, এবং খনিজ সমৃদ্ধ দেশগুলির মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ইরান, ব্রুনাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইন এবং ওমান। অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ অ্যাঙ্গাস মাড্ডিসন তার বই দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি: এ মিলেনিয়াম পারর্স্পেক্টিভ-এ উল্লেখ করেন, ভারত ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ও ০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ছিল।The World Economy: Historical Statistics, Angus Maddisonhttp://www.theworldeconomy.org/MaddisonTables/MaddisontableB-18.pdf চীন পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক সময়ের জন্য বৃহত্তম এবং সবচেয়ে উন্নত অর্থনীতি ছিল,Chris Patten. Financial Times. Comment & Analysis: Why Europe is getting China so wrong. Accessed 30 January 2008. মধ্য ১৯ শতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য (ব্রিটিশ ভারত বাদে) দখল করা আগ পর্যন্ত। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে কয়েক দশক ধরে, জাপান এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি এবং পৃথিবীর যেকোন একক জাতির দ্বিতীয় বৃহত্তম, ১৯৮৬-তে সোভিয়েত ইউনিয়নকে অতিক্রম করার পরে (নেট বস্তুগত পণ্য পরিমাপে) এবং ১৯৬৮-তে জার্মানিকে। (বিশেষ দ্রষ্টব্য: কিছু অতিপ্রাকৃত অর্থনীতি বৃহত্তম, যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (নাফটা) অথবা এপেক)। এটা ২০১০-এ শেষ হয় যখন চীন জাপানকে অতিক্রম করে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হয়। ১৯৮০ দশকের শেষভাগ ও ১৯৯০ দশকে শুরুতে, জাপানের জিডিপি শুধুমাত্র (বর্তমান বিনিময় হার পদ্ধতি), বাকি দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপির সমান ছিলো। ১৯৯৫ সালে জাপানের অর্থনীতি, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমান হয়ে গেছিলো এক দিনের জন্য, জাপানি মুদ্রা পরে ৭৯ ইয়েন/মার্কিন $ উচ্চ রেকর্ডে পৌঁছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৯০ দশক পর্যন্ত, এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জাপান কেন্দ্রীভূত ছিলো, এছাড়াও প্রশান্ত রিমের চারটি অঞ্চলে বিস্তৃত ছিলো, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং ও সিঙ্গাপুর। এই চারটি অঞ্চল এশিয়ান টাইগার্স পরিচিত, যারা সকলে উন্নত দেশ এবং এশিয়ার মাথাপিছু সর্বোচ্চ জিডিপি অর্জনকারী। থাম্ব|290px|মুম্বই মহাদেশের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর একটি। শহরের পরিকাঠামো এবং পর্যটন, ভারতের অর্থনীতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পূর্বানুমান অনুসারে, ২০২০ সালে ভারত নমিনাল জিডিপিতে জাপানকে অতিক্রম করবে। গোল্ডম্যান শ্যাস অনুযায়ী, ২০২৭ সালে চীন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হবে। বিভিন্ন বাণিজ্য ব্লক আছে, যার মাঝে আসিয়ান সবচেয়ে উন্নত। এশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম মহাদেশ এবং এটা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ যেমন পেট্রোলিয়াম, বন, মৎস্য, পানি, তামা ও রূপা। এশিয়ায় উৎপাদন, পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ঐতিহ্যগতভাবে শক্তিশালী বিশেষ করে চীন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ভারত, ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুর। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বহুজাতিক কর্পোরেশনের আধিপত্য আছে, কিন্তু চীন ও ভারত ক্রমবর্ধমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে বহু কোম্পানি সস্তা শ্রমের প্রচুর যোগান এবং তুলনামূলকভাবে উন্নত অবকাঠামোর সুযোগ গ্রহণ করে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সিটিগ্রুপ অনুসারে, ১১-র মধ্যে ৯ টি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি উৎপাদক দেশ এশিয়ার, জনসংখ্যা এবং আয় বৃদ্ধির দ্বারা চালিত। তারা হলো বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনাম। এশিয়ার চারটি প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র আছেঃ টোকিও, হংকং, সিঙ্গাপুর ও সাংহাই। কল সেন্টার ও ব্যবসা প্রসেস আউটসোর্সিং (BPOs) ভারত ও ফিলিপাইনে প্রধান নিয়োগকারী হয়ে উঠছে, অত্যন্ত দক্ষ, ইংরেজি ভাষাভাষী কর্মীর সহজলভ্যতার কারণে। আউটসোর্সিং বর্ধিত ব্যবহারের কারণে আর্থিক কেন্দ্র হিসাবে ভারত ও চীনের উত্থানকে সহায়তা করে। বড় এবং প্রতিযোগিতামূলক তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের কারণে, ভারত আউটসোর্সিং জন্য প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ২০১০ সালে, এশিয়ায় ৩৩ লক্ষ মিলিওনেয়ার ছিল (বাড়ি ব্যতীত মার্কিন $১ মিলিয়ন বেশি আয়করা মানুষ), উত্তর আমেরিকার সামাণ্য নিচে ৩৪ লক্ষ মিলিওনেয়ার। গত বছর এশিয়া ইউরোপকে অতিক্রম করে। সম্পদ প্রতিবেদন ২০১২-এ সিটি গ্রুপ উল্লেখ করে যে এশীয় সেন্তা-মিলিওনেয়ার উত্তর আমেরিকার সম্পদ কব্জা করে প্রথমবারের মত, তা পূর্বে পাঠানো অব্যাহত থাকে। ২০১১-এর শেষ নাগাদ, ১৮,০০০ এশীয় মানুষ বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, চীন ও জাপানের যাদের কমপক্ষে $১০০ মিলিয়ন নিষ্পত্তিযোগ্য সম্পদ, যখন উত্তর আমেরিকায় তা ১৭,০০০ জন এবং পশ্চিম ইউরোপে ১৪,০০ জন। পর্যটন থাম্ব|ডান|alt=A Thai temple complex with several ornate buildings and a stupa, and a lot of visitors|গ্র্যান্ড প্যালেসের ওয়াত ফ্রা কা ব্যাংককের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। মাস্টারকার্ড বৈশ্বিক গন্তব্য শহর সূচক ২০১৩ প্রকাশ করে, যেকানে ২০টি শহরের মধ্যে ১০টি এশিয়ার এবং এশিয়ার কোনো শহর (ব্যাংকক) শীর্ষস্থানীয় অবস্থায় ছিলো, ১৫.৯৮ আন্তর্জাতিক পর্যটক নিয়ে। জনমিতি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আয় তথ্য প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পূর্ব এশিয়া সার্বিক মানব উন্নয়ন সূচকে (এইচডিআই) পৃথিবীর যেকোন অঞ্চলের চেয়ে বেশি উন্নতি সাধন করে, যা গত ৪০ বছরে দ্বিগুণ হয়। চীন, এইচডিআই উন্নতিতে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্জনকারী ১৯৭০ সাল থেকে, "টপ টেন মুভার্স" তালিকার একমাত্র দেশ যা স্বাস্থ্য বা শিক্ষার সফলতা জন্য নয় আয়ের কারণে। শেষ চার দশকে এর মাথাপিছু আয় অত্যাশ্চর্য ২১ গুণ বেড়ে, লক্ষ লক্ষ মানুষের আয়ের দারিদ্যতা থেকে মুক্তি দেয়। তবুও এটা স্কুল তালিকাভুক্তি এবং প্রত্যাশিত আয়ুতে অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় নয়। নেপাল, একটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ, প্রধানত কারণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে ১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বের দ্রুততম অগ্রসরমান। এর বর্তমান প্রত্যাশিত আয়ু ১৯৭০ সালের তুলনায় ২৫ বছর বেশি। নেপালে প্রতি পাঁচ জন শিশুদের মধ্যে চার জনের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়, যা ৪০ বছর আগে ১ জন ছিলো। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া মানব উন্নয়ন সূচকে সর্বোত্তম (১১ ও ১২ নং, যা "খুব উচ্চ মানব উন্নয়ন" বিভাগে পড়ে), অনুসরণ করে হংকং (২১) ও সিঙ্গাপুর (২১)। আফগানিস্তান (১৫৫) মূল্যায়ন ১৬৯টি দেশ থেকে, যা এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন স্থান। ভাষাসমূহ এশিয়া বিভিন্ন ভাষা পরিবার এবং বিচ্ছিন্ন ভাষার আবাস। বেশিরভাগ এশিয়ার দেশগুলোতে স্থানীয়ভাবে একাধিক ভাষায় কথা বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ এথ্‌নোলগ অনুযায়ী, ৬০০-র অধিক ভাষা ইন্দোনেশিয়ায়, ও ৮০০-র অধিক ভাষা ভারতে প্রচলিত। এবং ১০০-এর বেশি ফিলিপাইনে প্রচলিত। চীন বিভিন্ন প্রদেশে অনেক ভাষা এবং উপভাষা রয়েছে। ধর্ম থাম্ব|জেরুসালেমে টেম্পল মাউন্টটনে ডোম অব রক, ইসলাম জেরুসালেম ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম, ধর্মের জন্য একটি পবিত্র শহর। থাম্ব|ডান|মক্কার কাবায় হজ্জের তীর্থযাত্রীরা থাম্ব|ডান|চীনের লুশান কাউন্টি, হেনানে বসন্ত মন্দির বুদ্ধ, যা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মূর্তি। বিশ্বের অনেক প্রধান ধর্মের উৎস এশিয়ায়। এশীয় পুরাণ জটিল এবং বিচিত্র। উদাহরণস্বরূপ মহাপ্লাবনের ঘটনা, খ্রিস্টানদের ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত, যা মেসপোটেমিয় পুরাণের প্রথম নিদর্শন। হিন্দু পুরাণে বলা আছে, অবতার বিষ্ণু মাছের বেশে মনুকে একটি ভয়ানক বন্যা সম্পর্কে সতর্ক করে। প্রাচীন চীনা পুরাণে, শান হ্যায় জিং, চীনা শাসক দা ইউ ১০ বছর অতিবাহিত করে মহাপ্লাবন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, যা প্রাচীন চীনের বেশির ভাগ অঞ্চল প্লাবিত করেছিলো। নুয়া দেবীর সহায়তায় আক্ষরিকভাবেই ভাঙা আকাশ ঠিক করে। ইব্রাহিমীয় ধর্মসমূহ ইব্রাহিমীয় ধর্মগুলো ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম, ইসলাম এবং বাহাই ধর্ম পশ্চিম এশিয়ায় উত্পত্তি। ইহুদি ধর্ম, ইব্রাহিমীয় ধর্মগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম, ইসরায়েলের মধ্যে প্রাথমিকভাবে চর্চা করা হয়, যা হিব্রু জাতির জন্মস্থান এবং ঐতিহাসিক স্বদেশ। ইহুদিদের বনী ইসরাইল বলা হয়, তারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, এশিয়া/উত্তর আফ্রিকা, প্রবাসী ইউরোপীয়, উত্তর আমেরিকায়, এবং অন্যান্য অঞ্চল। খ্রিস্ট ধর্ম এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত। ফিলিপাইন ও পূর্ব তিমুরে, রোমান ক্যাথলিক প্রধান ধর্ম; যা যথাক্রমে স্পেনীয় ও পর্তুগীজ দ্বারা পরিচিতি লাভ করে। আর্মেনিয়া, সাইপ্রাস, জর্জিয়া এবং এশীয় রাশিয়ায়, প্রাচ্যের অর্থোডক্স প্রধান ধর্ম। বিভিন্ন খ্রিস্টান গোষ্ঠীর প্রচারের জন্য এর অনুসারী মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও ভারতেও আছে। সন্ত টমাস ভারতে ১ম শতাব্দীতে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের চিহ্ন খুঁজে বের করেন।The Encyclopedia of Christianity, Volume 5 by Erwin Fahlbusch. Wm. B. Eerdmans Publishing - 2008, Page 285. . ইসলাম, সৌদি আরবে উদ্ভব, এশিয়ার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ছড়ানো ধর্ম। বিশ্ব মুসলিম জনসংখ্যার ১২.৭%, বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া, ক্রমহ্রাসমানভাবে পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, ইরান এবং তুরস্ক এশিয়ায় অবস্থিত। মক্কা, মদিনা এবং জেরুজালেম সারা বিশ্বে ইসলামের জন্য মহা পবিত্র শহর। এসব পবিত্র শহর সারা বিশ্বের অনুসারীদের প্রধান আকর্ষণ, বিশেষ করে হজ্জ ও উমরাহ মৌসুমে। ইরান বৃহত্তম শিয়া দেশ ও পাকিস্তানে বৃহত্তম আহমদীয়া জনসংখ্যা রয়েছে। বাহাই ধর্ম এশিয়ার ইরানে উদ্ভব, এবং সেখানে থেকে অটোমান সাম্রাজ্য, মধ্য এশিয়া, ভারত, এবং বার্মায় বাহাউল্লাহর জীবনদশায় ছড়িয়ে যায়। বিংশ শতকের মাঝামাঝিতে অনেক মুসলিম দেশেই বাহাই-এর প্রচার কার্যক্রম মারাত্মকভাবে কর্তৃপক্ষ দ্বারা ব্যাঘত হয়। লোটাস মন্দির নামে ভারতে বড় একটি বাহাই মন্দির রয়েছে। প্রাচ্য এশীয় ধর্মসমূহ প্রায় সব এশীয় ধর্মের দার্শনিক চরিত্র আছে এবং দার্শনিক চিন্তা এবং লেখার বৃহদাংশ এশীয় দার্শনিক ঐতিহ্য অন্তর্ভুক্ত করে। হিন্দু দর্শন ও বৌদ্ধ দর্শন ভারতীয় দর্শনের অন্তর্ভুক্ত। হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম এবং শিখধর্ম ভারত, দক্ষিণ এশিয়া থেকে উদ্ভূত। পূর্ব এশিয়ায় বিশেষ করে চীন ও জাপানে কনফুসীয় ধর্ম, তাওবাদ ও জেন বৌদ্ধ ধর্ম বিকাশ লাভ করে। ২০১২ সালের হিসাবে, হিন্দুধর্মের অনুসারী প্রায় ১.১ বিলিয়ন মানুষ। এই ধর্মবিশ্বাস এশিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ২৫% প্রতিনিধিত্ব করে এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। তবে, এটি বেশিরভাগই দক্ষিণ এশিয়ায় ঘনীভূত। ভারত ও নেপালের জনসংখ্যার ৮০% লোক এবং বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও বালি, ইন্দোনেশিয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এছাড়াও বার্মা, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে অনেক বিদেশী ভারতীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বী। দক্ষিণ পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ডে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর প্রাধান্য রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এমন দেশ গুলো হলোঃ কম্বোডিয়া (৯৬%), থাইল্যান্ড (৯৫%), মায়ানমার (৮০%-৮৯%), জাপান (৩৬%–৯৬%), ভুটান (৭৫%-৮৪%), শ্রীলঙ্কা (৭০%), লাওস (৬০%-৬৭%) এবং মঙ্গোলিয়া (৫৩%-৯৩%)। এছাড়াও বৃহৎ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী রয়েছে এমন দেশগুলো হলোঃ সিঙ্গাপুর (৩৩%-৫১%), তাইওয়ান (৩৫%–৯৩%), দক্ষিণ কোরিয়া (২৩%-৫০%), মালয়েশিয়া (১৯%-২১%), নেপাল (৯%-১১%), ভিয়েতনাম (১০%–৭৫%), চীন (২০%–৫০%),Travel China Guide – Han Chinese, Windows on Asia – Chinese Religions উত্তর কোরিয়া (১.৫%–১৪%), এবং ভারত ও বাংলাদেশে ছোট সম্প্রদায়। অনেক চীনা সম্প্রদায়ের মধ্যে, মহায়ানা বৌদ্ধ ধর্ম সহজে তাওবাদের সাথে সমন্বয় সাধন হয়েছে। ফলে সঠিক ধর্মীয় পরিসংখ্যান বের করা কঠিন এবং তা কম বা বেশি হতে পারে। চীন, ভিয়েতনাম ও উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট-শাসিত দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে নাস্তিক, তাই বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কম উল্লেখিত হতে পারে। জৈন ধর্ম মূলত ভারত এবং বিদেশী ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে যেমনঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মালয়েশিয়ায় দেখতে পাওয়া যায়। শিখধর্ম উত্তর ভারত এবং এশিয়া, বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিদেশি ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। কনফুসীয় ধর্ম চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এবং বিদেশী চীনা জনসংখ্যার মধ্যে প্রধানত পাওয়া যায়। তাওবাদ প্রধানত চীন, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের অধিবাসীদের মধ্যে পাওয়া যায়। তাওবাদ সহজে মহায়ানা বৌদ্ধ ধর্মের সাথে সমন্বয় সাধন হয়েছে। ফলে সঠিক ধর্মীয় পরিসংখ্যান বের করা কঠিন এবং তা কম বা বেশি হতে পারে। আধুনিক দ্বন্দ্ব থাম্ব|আলেপ্পোতে আহত বেসামরিক হাসপাতালে, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ চলাকালে, অক্টোবর ২০১২ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তিকালীন সময়ে বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কিত এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে কেন্দ্রীভূত গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা হলোঃ কোরীয় যুদ্ধ ভিয়েতনাম যুদ্ধ ইন্দোনেশিয়া–মালয়েশিয়া সংঘাত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ইওম কিপ্পুর যুদ্ধ ইরানি বিপ্লব সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ ইরান-ইরাক যুদ্ধ কম্বোডিয়ায় মাঠে হত্যাকাণ্ড শ্রীলঙ্কার গৃহ যুদ্ধ সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গন ১৯৯১-এর উপসাগরীয় যুদ্ধ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ২০০৬ থাই অভ্যুত্থান বার্মীজ গৃহযুদ্ধ আরব বসন্ত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত আরব-ইসরায়েলি সংঘাত সিরীয় গৃহযুদ্ধ ভারত-চীন যুদ্ধ ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট সংস্কৃতি নোবেল পুরস্কার থাম্ব|ডানে_উপরে|রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে প্রথম এশীয় হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভারতীয় বাঙালি কবি, লেখক, কথাসাহিত্যিক, উপন্যাসিক এবং নাট্যকার, ১৯১৩ সালে প্রথম এশীয় হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতের লেখক। অন্যান্য এশীয় লেখকদের মধ্যে যারা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছে তারা হলোঃ ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা (জাপান, ১৯৬৮), কেন্‌জাবুরো ওহয়ে (জাপান, ১৯৯৪), কাও শিংচিয়েন (চীন, ২০০০), ওরহান পামুক (তুরস্ক, ২০০৬), এবং মো ইয়ান (চীন, ২০১২)। অনেকে মার্কিন লেখক, পার্ল এস বাককে, একজন এশিয়ান নোবেল বিজয়ী বিবেচনা করে। একজন ধর্মপ্রচারকের কন্যা হিসেবে চীনে উল্লেখ্যযোগ্য সময় কাটিয়েছেন, এবং তার উপন্যাস, যথা দ্য গুড আর্থ (১৯৩১) এবং মাদার (১৯৩৩) এছাড়াও তার বাবা-মার চীনে থাকাকালীন সময়ের জীবনী, দ্য এক্সসাইল ও ফাইটিং এঞ্জেল চীন প্রবাসের উপ ভিত্তি করে লেখা, যা তাকে ১৯৩৮ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার এনে দেয়। এছাড়াও, ভারতের মাদার টেরিজা এবং ইরানের শিরিন এবাদি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য তাদের উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের অধিকারের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এবাদি প্রথম ইরানি এবং প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত। আরেকজন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মায়ানমারে অং সান সু চি সামরিক একনায়কতন্ত্র বিরুদ্ধে তার শান্তিপূর্ণ ও অহিংস সংগ্রামের জন্য। তিনি একজন অহিংস গণতন্ত্রপন্থী কর্মী, ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমক্রেসি ইন বার্মা-এর নেতা এবং একজন উল্লেখ্যযোগ্য কারাবন্দী। তিনি একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। অতি সম্প্রতি, চীনা ভিন্নমতাবলম্বী লিউ জিয়াবো নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন, চীনে মৌলিক মানবাধিকারের জন্য তার দীর্ঘ ও অহিংস সংগ্রামের জন্য। তিনি চীন মধ্যে বসবাস করার সময় নোবেল পুরস্কার লাভকারী প্রথম চীনা নাগরিক। স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া প্রথম এশীয়। তিনি "আলোর বিক্ষিপ্ততার উপর তাঁর কাজের জন্য এবং রামন বিক্ষিপ্ততার আবিষ্কারের জন্য, (যা তাঁর নিজের নামে নামকরণ করা হয়)" পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। অমর্ত্য সেন, (জন্ম ৩ নভেম্বর, ১৯৩৩) একজন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ, যিনি কল্যাণ অর্থনীতি ও সামাজিক পছন্দ তত্ত্বে তার অবদানসমূহের জন্য অর্থনীতিতে ১৯৯৮ সালে নোবেল স্মারক পুরস্কার লাভ করেন। তার আগ্রহের বিষয়বস্তু সমাজের দরিদ্রতম সদস্যদের সমস্যা। থাম্ব|ইয়াসির আরাফাত, শিমন পেরেজ, ইতযাক রাবিন, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অন্যান্য এশীয় নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছে সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর, আবদুস সালাম, রবার্ট আউমান, মেনাসেম বেগিন, এ্যারন চিচানোভার, আভরাম হেরর্সকো, ড্যানিয়েল কাহনেমান, শিমন পেরেজ, ইতযাক রাবিন, এডা ইয়োনাথ, ইয়াসির আরাফাত, হোজে র‍্যামন-হোর্তা, পূর্ব তিমুরের বিশপ কার্লোস ফিলিপ জিমেনেস বেলো, কিম দায়ে জং, এবং আরোও ১৩ জাপানি বিজ্ঞানী। বেশিরভাগ পুরস্কারপ্রাপ্ত জাপান এবং ইসরাইল থেকে, চন্দ্রশেখর ও রামন (ভারত), সালাম (পাকিস্তান), আরাফাত (ফিলিস্তিন), কিম (দক্ষিণ কোরিয়া), হোর্তা ও বেলো (পূর্ব তিমুর)। ব্যতীত। ২০০৬ সালে, বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক, যা একটি গোষ্ঠী উন্নয়ন ব্যাংক, (যা দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে বাংলাদেশের মহিলাদের টাকা ধার দেয়) প্রতিষ্ঠার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। ডঃ ইউনুস শহরের ভ্যান্দারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষুদ্র ঋণ ধারণার জন্য পরিচিত, যার মাধ্যমে সামান্য অথবা কোন সমান্তরালের সঙ্গে দরিদ্র ও নিঃস্ব লোক টাকা ধার করতে পারবে। সাধারণত ঋণগ্রহীতারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দেয় এবং ঋণ খেলাপের হার খুব কম। দালাই লামা তার আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক কর্মজীবনে প্রায় চুরাশিটি পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৬ সালের ২২ জুন, তিনি কানাডার গভর্নর জেনারেল কর্তৃক কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব লাভ করেন, যা তার আগে মাত্র তিন জন লাভ করে। ২০০৫ সালের ২৮ মে, তিনি যুক্তরাজ্যের বৌদ্ধ সোসাইটি থেকে ক্রিসমাস হামফ্রে পুরস্কার পান। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৮৯ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ। রাজনৈতিক সীমা + পতাকা প্রতীক দেশের নাম জনসংখ্যা আয়তন(কিমি²) রাজধানী 20px আফগানিস্তান ৩০,৪১৯,৯২৮ ৬৪৭,৫০০ কাবুল 20px আর্মেনিয়া ২,৯৭০,৪৯৫ ২৯,৭৪৩ ইয়েরেভান 20px আজারবাইজান ৯,৪৯৩,৬০০ ৮৬,৬০০ বাকু 20px বাহরাইন ১,২৪৮,৩৪৮ ৭৬০ মানামা 20px বাংলাদেশ ১৬৫,০৪৯,৩৬০ ১৪৭,৫৭০ ঢাকা 20px ভুটান ৭১৬,৮৯৬ ৩৮,৩৯৪ থিম্পু 20px ব্রুনাই ৪০৮,৭৮৬ ৫,৭৬৫ বন্দর সেরি বেগাওয়ান 20px মায়ানমার ৫৪,৫৮৪,৬৫০ ৬৭৬,৫৭৮ নেপিডো 20px কম্বোডিয়া ১৪,৯৫২,৬৬৫ ১৮১,০৩৫ প্‌নম পেন 20px গণচীন ১,৩৪৩,২৩৯,৯২৩ ৯,৫৯৬,৯৬১ বেইজিং সাইপ্রাস ১,০৯৯,৩৪১ ৯,২৫১ নিকোসিয়া 20px পূর্ব তিমুর ১,১৪৩,৬৬৭ ১৪,৮৭৪ দিলি 20px জর্জিয়া ৪,৫৭০,৯৩৪ ৬৯,৭০০ তিবি‌লিসি 20px ভারত ১,২০৫,০৭৩,৬১২ ৩,২৮৭,২৬৩ নয়াদিল্লি 20px ইন্দোনেশিয়া ২৪৮,৬৪৫,০০৮ ১,৯০৪,৫৬৯ জাকার্তা 20px ইরান ৭৮,৮৬৮,৭১১ ১,৬৪৮,১৯৫ তেহরান 20px ইরাক ৩১,১২৯,২২৫ ৪৩৮,৩১৭ বাগদাদ 20px ইসরায়েল ৭,৫৯০,৭৫৮ ২০,৭৭০ জেরুসালেম 20px জাপান ১২৭,৩৬৮,০৮৮ ৩৭৭,৯১৫ টোকিও 20px জর্দান ৬,৫০৮,৮৮৭ ৮৯,৩৪২ আম্মান 20px কাজাখস্তান ১৭,৫২২,০১০ ২,৭২৪,৯০০ আস্তানা 20px কুয়েত ২,৬৪৬,৩১৪ ১৭,৮১৮ কুয়েত সিটি 20px কিরগিজিস্তান ৫,৪৯৬,৭৩৭ ১৯৯,৯৫১ বিশকেক 20px লাওস ৬,৫৮৬,২৬৬ ২৩৬,৮০০ ভিয়েনতিয়েন 20px লেবানন ৪,১৪০,২৮৯ ১০,৪০০ বৈরুত 20px মালয়েশিয়া ২৯,১৭৯,৯৫২ ৩২৯,৮৪৭ কুয়ালালামপুর 20px মালদ্বীপ ৩৯৪,৪৫১ ২৯৮ মালে 20px মঙ্গোলিয়া ৩,১৭৯,৯৯৭ ১,৫৬৪,১১৬ উলানবাটর নেপাল ২৯,৮৯০,৬৮৬ ১৪৭,১৮১ কাঠমান্ডু 20px উত্তর কোরিয়া ২৪,৫৮৯,১২২ ১২০,৫৩৮ পিয়ং ইয়াং 20px ওমান ৩,০৯০,১৫০ ৩০৯,৫০০ মাস্কাট 20px পাকিস্তান ১৯০,২৯১,১২৯ ৭৯৬,০৯৫ ইসলামাবাদ 20px ফিলিস্তিন ৪,২৭৯,৬৯৯ ৬,২২০ গাজা/রামাল্লাহ 20px ফিলিপাইন ৯৯,৮৩৩,৬০০ ৩০০,০০০ ম্যানিলা 20px কাতার ১,৯৫১,৫৯১ ১১,৫৮৬ দোহা 20px সৌদি আরব ২৬,৫৩৪,৫০৪ ২,১৪৯,৬৯০ রিয়াদ 20px সিঙ্গাপুর ৫,৩৫৩,৪৯৪ ৬৯৭ সিঙ্গাপুর 20px শ্রীলঙ্কা ২১,৪৮১,৩৩৪ ৬৫,৬১০ কলম্বো 20px দক্ষিণ কোরিয়া ৫০,০০৪,৪৪১ ১০০,২১০ সিওল 20px সিরিয়া ২২,৫৩০,৭৪৬ ১৮৫,১৮০ দামেস্ক 20px তাজিকিস্তান ৭,৭৬৮,৩৮৫ ১৪৩,১০০ দুশান্‌বে 20px থাইল্যান্ড ৬৭,০৯১,০৮৯ ৫১৩,১২০ ব্যাংকক 20px তুরস্ক ৭৯,৭৪৯,৪৬১ ৭৮৩,৫৬২ আঙ্কারা 20px তুর্কমেনিস্তান ৫,০৫৪,৮২৮ ৪৮৮,১০০ আশখাবাদ 20px সংযুক্ত আরব আমিরাত ৫,৩১৪,৩১৭ ৮৩,৬০০ আবুধাবি 20px উজবেকিস্তান ২৮,৩৯৪,১৮০ ৪৪৭,৪০০ তাশখন্দ 20px ভিয়েতনাম ৯১,৫১৯,২৮৯ ৩৩১,২১২ হ্যানয় 20px ইয়েমেন ২৪,৭৭১,৮০৯ ৫২৭,৯৬৮ সানা আরও দেখুন বিশেষ বিষয়: এশিয়ান গেমস এশীয় রন্ধনশৈলী ইউরেশিয়া দূরপ্রাচ্য পূর্ব এশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া দক্ষিণ এশিয়া মধ্য এশিয়া পশ্চিম এশিয়া উত্তর এশিয়া এশিয়ার পতাকা মধ্যপ্রাচ্য লেভ্যান্ট নিকট প্রাচ্য তালিকা: এশিয়ার সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের তালিকা এশিয়ার মহানগর এলাকার তালিকা এশিয়ার শহরের তালিকা প্রকল্প আন্তঃএশিয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি আরও পড়ুন Higham, Charles. Encyclopedia of Ancient Asian Civilizations. Facts on File library of world history. New York: Facts On File, 2004. Kamal, Niraj. "Arise Asia: Respond to White Peril". New Delhi:Wordsmith,2002, Kapadia, Feroz, and Mandira Mukherjee. Encyclopaedia of Asian Culture and Society. New Delhi: Anmol Publications, 1999. Levinson, David, and Karen Christensen. Encyclopedia of Modern Asia. New York: Charles Scribner's Sons, 2002. বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:মহাদেশ
ইউরোপ
https://bn.wikipedia.org/wiki/ইউরোপ
ইউরোপ একটি মহাদেশ যা বৃহত্তর ইউরেশিয়া মহাদেশীয় ভূখণ্ডের পশ্চিমের উপদ্বীপটি নিয়ে গঠিত। সাধারণভাবে ইউরাল ও ককেশাস পর্বতমালা, ইউরাল নদী, কাস্পিয়ান এবং কৃষ্ণ সাগর-এর জলবিভাজিকা এবং কৃষ্ণ ও এজিয়ান সাগর সংযোগকারী জলপথ ইউরোপকে এশিয়া মহাদেশ থেকে পৃথক করেছে। "Europe" (pp. 68–9); "Asia" (pp. 90–1): "A commonly accepted division between Asia and Europe ... is formed by the Ural Mountains, Ural River, Caspian Sea, Caucasus Mountains, and the Black Sea with its outlets, the Bosporus and Dardanelles." ইউরোপের উত্তরে উত্তর মহাসাগর, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর এবং দক্ষিণ-পূর্বে কৃষ্ণ সাগর ও সংযুক্ত জলপথ রয়েছে। যদিও ইউরোপের সীমানার ধারণা ধ্রুপদী সভ্যতায় পাওয়া যায়, তা বিধিবহির্ভূত; যেহেতু প্রাথমিকভাবে ভূ-প্রাকৃতিক শব্দ "মহাদেশ"-এ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উপাদান অন্তর্ভুক্ত। ইউরোপ ভূপৃষ্ঠের দ্বারা বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ; বা ভূপৃষ্ঠের ২% এবং তার স্থলভাগের ৬.৮% জুড়ে রয়েছে। ইউরোপের প্রায় ৫০টি দেশের মধ্যে, রাশিয়া মহাদেশের মোট আয়তনের ৪০% ভাগ নিয়ে এ পর্যন্ত আয়তন এবং জনসংখ্যা উভয়দিক থেকেই বৃহত্তম, অন্যদিকে ভ্যাটিকান সিটি আয়তনে ক্ষুদ্রতম। ৭৩৯–৭৪৩ মিলিয়ন জনসংখ্যা বা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১% নিয়ে ইউরোপ এশিয়া এবং আফ্রিকার তৃতীয় সবচেয়ে জনবহুল মহাদেশ।"World Population Prospects: The 2012 Revision ". UN Department of Economic and Social Affairs. সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মুদ্রা ইউরো। ইউরোপ, বিশেষ করে প্রাচীন গ্রিস, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির জন্মস্থান। এটি ১৫ শতকের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে উপনিবেশবাদ শুরু হবার পর থেকে। ১৬ থেকে ২০ শতকের মধ্যে, ইউরোপীয় দেশগুলির বিভিন্ন সময়ে আমেরিকা, অধিকাংশ আফ্রিকা, ওশেনিয়া, এবং অপ্রতিরোধ্যভাবে অধিকাংশ এশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। শিল্প বিপ্লব, যা ১৮ শতকের শেষেভাগে গ্রেট ব্রিটেনে শুরু হয়, পশ্চিম ইউরোপ এবং অবশেষে বৃহত্তর বিশ্বে আমূল অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এবং সামাজিক পরিবর্তন আনে। জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বৃদ্ধি বোঝায়, ১৯০০ সাল দ্বারা, বিশ্বের জনসংখ্যায় ইউরোপের ভাগ ২৫% ছিল। উভয় বিশ্বযুদ্ধ মূলত ইউরোপকে কেন্দ্র করে হয়, যার ফলে মধ্য ২০ শতকে বৈশ্বিক বিষয়াবলীতে পশ্চিম ইউরোপের আধিপত্যের অবসান ঘটে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের প্রাধান্য বিস্তার করে।National Geographic, 534. স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে, ইউরোপ লৌহ পরদা বরাবর পশ্চিমে ন্যাটো ও পূর্বে ওয়ারশ চুক্তি দ্বারা বিভক্ত ছিল। কাউন্সিল অব ইউরোপ এবং পশ্চিম ইউরোপে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউরোপীয় একীকরণে ফলে গঠিত হয়, ১৯৮৯ সালের বিপ্লব ও ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে উভয় সংগঠন পূর্বদিকে বিস্তৃত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আজকাল তার সদস্য দেশগুলোর উপর ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার করছে। অনেক ইউরোপীয় দেশ নিজেদের মাঝে সীমানা এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত করে। থাম্ব|ফিনল্যান্ডের ট্যাম্পিয়ার হ'ল ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ শহর সংজ্ঞা ইউরোপের ক্লিকযুক্ত মানচিত্র, সবচেয়ে সাধারণভাবে ব্যবহৃত মহাদেশীয় সীমানা দেখাচ্ছেThe map shows one of the most commonly accepted delineations of the geographical boundaries of Europe, as used by National Geographic and Encyclopædia Britannica. Whether countries are considered in Europe or Asia can vary in sources, for example in the classification of the CIA World Factbook or that of the BBC. Note also that certain countries in Europe, such as France, have territories lying geographically outside Europe, but which are nevertheless considered integral parts of that country. চাবি: নীল: পার্শ্ববর্তী আন্তর্মহাদেশীয় রাষ্ট্র; সবুজ: রাষ্ট্রগুলো ভৌগোলিকভাবে ইউরোপে নয়, কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্তডেনমার্কের অংশ হিসেবে গ্রিনল্যান্ড, ইইউ-এর সদস্য হিসেবে সাইপ্রাস, কাউন্সিল অব ইউরোপ-এর সদস্য হিসেবে আর্মেনিয়া থাম্ব|বাম|হিরোডোটাসের বিশ্ব মানচিত্রের পুনর্গঠন থাম্ব|১৪৭২ সালের একটি মধ্যযুগীয় টি এবং ও মানচিত্র, নূহের পুত্রদের রাজ্য হিসেবে তিনটি মহাদেশ দেখাচ্ছে — সামের এশিয়া, ইয়াফিছের (য়েফতের) ইউরোপ, এবং হামের আফ্রিকা থাম্ব|অনেক ইউরোপীয়ান ইউরোপকে উচ্চবংশজাত নারী হিসেবে দেখে। ইউরোপা রেজিনা ('রানী ইউরোপ') ও খ্রিষ্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীর পৌরাণিক ইউরোপা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। "ইউরোপ" শব্দটির ব্যবহার ইতিহাস জুড়ে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। প্রাচীনকালে, গ্রিক ঐতিহাসিক হিরোডোটাস উল্লেখ করে যে, অজানা ব্যক্তি দ্বারা বিশ্বকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, ইউরোপ, এশিয়া, এবং লিবিয়া (আফ্রিকা), নীল নদ এবং ফাসিস নদী তাদের সীমানা গঠন করে —যদিও তিনি আরোও উল্লেখ করেন যে, অনেকে ফাসিসের বদলে ডন নদীকে ইউরোপ ও এশিয়ার সীমানা হিসেবে মনে করে থাকে।Herodotus, 4:45 ১ম শতকের ভূগোলবিদ স্ট্রাবো দ্বারা ডন নদীতে ইউরোপের পূর্ব সীমান্ত বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়।Strabo Geography 11.1 জুবিলিয়ম বইয়ে বর্ণিত যে, নূহ জমি হিসেবে মহাদেশগুলো তার তিন পুত্রকে দান করেন; ইউরোপ জিব্রাল্টার প্রণালীতে হারকিউলিসের স্তম্ভ পর্যন্ত প্রসারিত, উত্তর আফ্রিকা থেকে বিচ্ছিন্ন, ডনে এশিয়া থেকে পৃথক হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ৮ম শতাব্দীতে সমবেত লাতিন খ্রীষ্টানের দেশ হিসাবে ইউরোপের একটি সাংস্কৃতিক সংজ্ঞা, নতুন সাংস্কৃতিক ধারণার বোধক, যা জার্মানিক ঐতিহ্যের সঙ্গমস্থল এবং খ্রিস্টান-লাতিন সংস্কৃতির মাধ্যমে তৈরি এবং বাইজ্যান্টাইন ও ইসলামের আংশিক মিশ্রণে সঙ্গায়িত। এবং এই সংস্কৃতি, উত্তর আইবেরিয়া, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, ফ্রান্স, খ্রিষ্টীয় পশ্চিম জার্মানি, আলপাইন অঞ্চল এবং উত্তর ও মধ্য ইতালিতে সীমাবদ্ধ।Norman F. Cantor, The Civilization of the Middle Ages, 1993, ""Culture and Society in the First Europe", pp185ff. এই ধারণা ক্যারোলিং রেনেসাঁসের অন্যতম স্থায়ী নিদর্শন: প্রায়ই শার্লেমনের দরবারের পণ্ডিত, আলচুইনের চিঠির চরিত্র ইউরোপা।Noted by Cantor, 1993:181. এই বিভাগ—যতটা সাংস্কৃতিক ততটাই ভৌগোলিক—মধ্য যুগের শেষভাগের আগ পর্যন্ত, যখন এটা আবিষ্কারের যুগ দ্বারা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। অবশেষে ১৭৩০ সালে ইউরোপ পুনঃনির্ধারণের সমস্যা সমাধান হয়েছে, যখন জলপথ পরিবর্তে, সুইডীয় ভূগোলবিদ এবং মানচিত্রকার ভন স্ট্রাহ্লেনবেরগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব সীমানা হিসেবে ইউরাল পর্বতমালা প্রস্তাবিত করেন, যা রাশিয়া এবং পুরো ইউরোপ সমর্থন করে। ইউরোপ এখন ইউরেশিয়ার পশ্চিম উপদ্বীপ বলে সাধারণত ভূগোলবিদ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণে বড় জল সংস্থা দ্বারা তার সীমানা চিহ্নিত; দূর পূর্বে ইউরোপের সীমা সাধারণত ইউরাল পর্বত, ইউরাল নদী, এবং কাস্পিয়ান সাগর; দক্ষিণপূর্বে ককেশাস পর্বতমালা, কৃষ্ণ সাগর এবং ভূমধ্য সাগরের সাথে সংযোগকারী কৃষ্ণ সাগরের জলপথ। দ্বীপপুঞ্জগুলো সাধারণত সবচেয়ে কাছের মহাদেশীয় ভূখণ্ডের সঙ্গে দলবদ্ধ করা হয়, অতএব আইসল্যান্ড সাধারণত ইউরোপের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, অন্যদিকে এর কাছাকাছি দ্বীপ সময় গ্রিনল্যান্ড সাধারণত উত্তর আমেরিকায় বরাদ্দ করা হয়। যাইহোক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে কিছু ব্যতিক্রম আছে। সাইপ্রাস, আনাতোলিয়ার (বা এশিয়া মাইনর) নিকটস্থ, কিন্তু সাধারণত সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিকভাবে ইউরোপের অংশ বলে মনে করা হয় এবং বর্তমানে ইইউ-এর সদস্য রাষ্ট্র। মাল্টা শতাব্দী ধরে উত্তর আফ্রিকার একটি দ্বীপ বলে মনে করা হয়। ১৭৩০ সালে টানা ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে ভৌগোলিক সীমানা কোন আন্তর্জাতিক সীমারেখা অনুসরণ করেনি। এর ফলে, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক রেখায় ইউরোপকে সংগঠিত করার প্রচেষ্টায় ভূরাজনৈতিকভাবে এর নাম ব্যবহার উপায় সীমিত ভাবেSee, e.g., Merje Kuus, 'Europe's eastern expansion and the re-inscription of otherness in East-Central Europe' Progress in Human Geography, Vol. 28, No. 4, 472–489 (2004), József Böröcz, 'Goodness Is Elsewhere: The Rule of European Difference', Comparative Studies in Society and History, 110–36, 2006, or Attila Melegh, On the East-West Slope: Globalisation, nationalism, racism and discourses on Central and Eastern Europe , Budapest: Central European University Press, 2006. শুধুমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি সদস্য রাষ্ট্রকে বোঝায়, বা আরোও বেশি একচেটিয়াভাবে, একটি সাংস্কৃতিক সংজ্ঞায়িত মূল হিসাবে। বিপরীতভাবে, ৪৭টি সদস্য রাষ্ট্রের কাউন্সিল অব ইউরোপ দ্বারা ইউরোপ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যার কিছু দেশ ইউরাল ও বসফরাস রেখা পার হয়ে যায়, সমস্ত সাইবেরিয়া এবং তুরস্ক এর অন্তর্ভুক্ত। উপরন্তু, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের মানুষ "মহাদেশীয়" বা "মূল ভূখণ্ড" ইউরোপকে ইউরোপ বলে বুঝিয়ে থাকে।Falconer, William; Falconer, Thomas. Dissertation on St. Paul's Voyage, BiblioLife (BiblioBazaar), 1872. (1817.), p 50, These islands Pliny, as well as Strabo and Ptolemy, included in the African sea ব্যুৎপত্তি থাম্ব|ইউরোপা এবং একটি গ্রিক দানির উপর ষাঁড়। টারকুইনিয়া জাদুঘর, ৪৮০ খ্রিস্টপূর্ব প্রাচীন গ্রিক পুরাণে, ইউরোপা একটি ফিনিশীয় রাজকুমারী ছিল যাকে জিউস একটি উজ্জ্বল আকারের সাদা ষাঁড় মনে করে অপহরণ করে। তিনি তাকে ক্রীট দ্বীপে নিয়ে যান যেখানে তিনি মিনস, রাদামান্থুস, ও সার্পেদনের জন্ম দেন। হোমারের জন্য, ইউরোপ (, ce names]]) ক্রীটের পৌরাণিক রাণী, একটি ভৌগোলিক স্থান না। ইউরোপের ব্যুৎপত্তি নিশ্চিত নয়।Minor theories, such as the (probably folk-etymological) one deriving Europa from εὐρώς (gen.: εὐρῶτος) "mould" are not discussed in the section একটি মতবাদ মনে করে এটি গ্রিক εὐρύς (eurus) থেকে এসেছে, যার অর্থ "ব্যাপক, বিস্তৃত"εὐρύς, Henry George Liddell, Robert Scott, A Greek-English Lexicon, on Perseus এবং ὤψ/ὠπ-/ὀπτ- (ōps/ōp-/opt-), যার অর্থ "চোখ, মুখ, মুখায়ব",ὤψ, Henry George Liddell, Robert Scott, A Greek-English Lexicon, on Perseus সেহেতু , "প্রশস্ত দৃষ্টি", "বিস্তৃত মুখায়ব" (glaukōpis (γλαυκῶπις 'ধূসর নয়না') আথেনা বা boōpis (βοὠπις 'ষাঁড় নয়না') হেরার তুলনায়)। প্রশস্ত পুনর্নির্মিত প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ধর্মে পৃথিবী নিজেরই একটি বর্ণনামূলক আখ্যান উল্লেখ আছে। আরেকটি মতবাদ মনে করে যে এটি একটি সেমিটিক শব্দের উপর ভিত্তি করে উৎপত্তি যেমন আক্কাদীয় erebu যার অর্থ "নিচে যাওয়া, অস্ত""Europe". Online Etymology Dictionary. (সূর্য প্রসঙ্গে), ফিনিশীয় থেকে কগনাট 'ereb "সন্ধ্যা; পশ্চিম" এবং আরবি মাগরেব, হিব্রু ma'arav (আরোও দেখুন পিআইই *h1regʷos, "অন্ধকার")। তবে, মার্টিন লিচফিল্ড ওয়েস্ট বলেন "শব্দবিদ্যাগতভাবে, ইউরোপার নাম এবং যে কোনো আকারের সেমিটিক শব্দের মধ্যের মিল খুব খারাপ"। পৌরাণিক চরিত্রের নামের উৎপত্তি যাই হোক না কেন, Εὐρώπη সর্ব প্রথম খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে ভৌগোলিক শব্দ হিসাবে ব্যবহার করা হয় গ্রিক ভূগোলবিদ দ্বারা, আনাক্সিমান্দ্রোস এবং হেক্তায়েস। আনাক্সিমান্দ্রোস এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সীমানা স্থাপন করেন ককেশাসের ফাসিস নদী বরাবর (আধুনিক রাইওনি), একটি প্রচল যা খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে হেরোডোটাস দ্বারা অনুসৃত হয়।Histories 4.38. C.f. James Rennell, The geographical system of Herodotus examined and explained, Volume 1, Rivington 1830, p. 244 এই প্রচল মধ্যযুগ দ্বারা গৃহীত এবং আধুনিক ব্যবহারে রোমান যুগ পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো, কিন্তু সে যুগের লেখকগণ যেমন পসেদনিয়াস,W. Theiler, Posidonios. Die Fragmente, vol. 1. Berlin: De Gruyter, 1982, fragm. 47a. স্ট্রাবোI. G. Kidd (ed.), Posidonius: The commentary, Cambridge University Press, 2004, , p. 738. এবং টলেমি,Geographia 7.5.6 (ed. Nobbe 1845, vol. 2, p. 178) "And [Asia] is connected to Europe by the land-strait between Lake Maiotis and the Sarmatian Ocean where the river Tanais crosses through." টানাইসকে (আধুনিক ডন নদী) সীমানা হিসেবে গ্রহণ করেন। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে "ইউরোপ" শব্দটি প্রথম ৯ম শতাব্দীর ক্যারোলিং রেনেসাঁসয় ব্যবহার করা হয়। সে সময় থেকে, শব্দটি গোলকে পশ্চিম চার্চের প্রভাব বুঝাতে ব্যবহৃত, যার বিপরীতে উভয় ইস্টার্ন অর্থডক্স গির্জা এবং ইসলামী বিশ্ব রয়েছে। আধুনিক রীতি ১৯ শতকে "ইউরোপ"-এর আয়তন বাড়ায় কিছুটা পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে। বিশ্বের অধিকাংশ প্রধান ভাষাসমূহে "ইউরোপা" উৎদ্ভুত শব্দ "মহাদেশ" (উপদ্বীপ) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, চীনায়, (歐洲) শব্দটি ব্যবহার করে; একটি অনুরূপ চীনা-প্রাপ্ত শব্দ কখনও কখনও জাপানিজে ব্যবহার করা হয যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের জাপানি নাম, , তা সত্ত্বেও কানাকাতা আরো সাধারণভাবে ব্যবহৃত। যদিও, কিছু তুর্কি ভাষায় মূলত ফার্সি নাম ফ্রাঙ্গিস্তান (ফ্র্যাঙ্কসের দেশ) সাধারণভাবে ইউরোপ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, এছাড়াও কিছু দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে, যেমন আভরুপা বা ইভরোপা। ইতিহাস প্রাগৈতিহাসিক থাম্ব|100px|ডান|ভিঙ্কার মহিলা, সার্বিয়ার নবপ্রস্তরযুগীয় মৃৎশিল্প থাম্ব|100px|ডান|ব্রোঞ্জ যুগ জার্মানি থেকে নেব্রা স্কাই ডিস্ক হোমো জর্জিকাস, যারা প্রায় ১৮ লক্ষ বছর আগে জর্জিয়ায় বাস করত, ইউরোপ আবিষ্কৃত হওয়া নিকটতম হোমিনিড। অন্যান্য হোমিনিডের অবশেষ, প্রায় ১০ লক্ষ বছর আগের, আতাপুয়ের্কা, স্পেনে আবিষ্কৃত হয়েছে।The million year old tooth from Atapuerca, Spain, found in June 2007 নিয়ানডার্থাল মানুষ (যা জার্মানির নিয়ানডার্থাল উপত্যকার নামে নামাঙ্কিত) দেড় লক্ষ বছর আগে ইউরোপে খোঁজ পাওয়া যায় এবং প্রায় ২৮,০০০ খ্রিষ্টপূর্বে জীবাশ্ম রেকর্ড থেকে হারিয়ে যায়, সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই বিলুপ্তি ঘটে, এবং তাদের চূড়ান্ত আশ্রয় ছিলো বর্তমান পর্তুগাল। নিয়ানডার্থাল প্রাক্মানব আধুনিক মানুষ (ক্রো-ম্যাগনন্স) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, যাদের ৪৩ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে ইউরোপে খোঁজ পাওয়া যায়।National Geographic, 21. ইউরোপীয় নবপ্রস্তরযুগের সময়কাল—ফসল চাষ এবং পশু পালন, জনবসতির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মৃৎশিল্পের ব্যাপক ব্যবহার দ্বারা উল্লেখযোগ্য—গ্রিস ও বলকানে প্রায় ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বে শুরু হয়, সম্ভবত আনাতোলিয়া এবং নিকট প্রাচ্যে আগের চাষ চর্চা দ্বারা প্রভাবিত। এটা বলকান থেকে দানিউব এবং রাইনের উপত্যকার বরাবর (লিনিয়ার মৃৎশিল্পের সংস্কৃতি) এবং ভূমধ্য উপকূল বরাবর (কার্ডিয়াল সংস্কৃতি) ছড়িয়ে পড়ে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০০ থেকে ৩০০০-এর মধ্যে, এই কেন্দ্রীয় ইউরোপীয় নবপ্রস্তরযুগের সংস্কৃতি আরোও পশ্চিম ও উত্তরে বিকশিত হয় এবং সদ্য অর্জিত তামা শিল্পকর্ম উৎপাদনের দক্ষতা ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিম ইউরোপের নবপ্রস্তর যুগ বৃহৎ কৃষি জনবসতি ছাড়াও ক্ষেত্র সৌধ, যেমন মাটির পরিবেষ্টন, কবরের ঢিবি ও মেগালিথিক সমাধি দ্বারা চিহ্নিত। তন্ত্রীযুক্ত সংস্কৃতি নবপ্রস্তর যুগ থেকে তাম্র যুগে রূপান্তরের সময়ে বিকশিত হয়। এই সময়কালে পশ্চিম এবং দক্ষিণ ইউরোপ জুড়ে বড় মেগালিথিক সৌধ নির্মাণ হয়, যেমন মাল্টার মেগালিথিক মন্দির এবং স্টোনহেঞ্জ।Atkinson, R J C, Stonehenge (Penguin Books, 1956) খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০-এ গ্রিসে ইউরোপীয় ব্রোঞ্জ যুগ শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১২০০-এ ইউরোপীয় লৌহযুগ শুরু হয়। লৌহযুগে গ্রিকরা উপনিবেশ স্থাপন করে এবং ফিনিশীয়রা শুরুর দিকের ভূমধ্য শহরগুলো স্থাপন করে। খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে প্রারম্ভিক লৌহযুগের ইতালি ও গ্রিস ধীরে ধীরে ধ্রুপদি সভ্যতায় পদার্পণ করে। ধ্রুপদি সভ্যতা থাম্ব|বাম|এথেন্সে পার্থেনন প্রাচীন গ্রিস পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা সংস্কৃতি ছিল। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ও ব্যক্তিত্ববাদী সংস্কৃতির জন্য প্রায়ই প্রাচীন গ্রিসকে দায়ী করা হয়।National Geographic, 76. গ্রিসরা পোলিস, বা শহর-রাজ্য উদ্ভাবন করে, যা তাদের পরিচয়ের ধারণায় একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে।National Geographic, 82. এই গ্রিক রাজনৈতিক আদর্শ ১৮ শতাব্দীর শেষভাগে ইউরোপীয় দার্শনিক এবং আদর্শবাদী দ্বারা পুনরাবিষ্কৃত হয়। গ্রিসের অনেক সাংস্কৃতিক অবদান ছিলো: এরিস্টটল, সক্রেটিস এবং প্লেটোর অধীনে দর্শন, মানবতাবাদ এবং যুক্তিবাদে; হিরোডোটাস এবং থুসিডাইডিসের সাথে ইতিহাসে; নাটকীয় এবং আখ্যান আয়াতে, হোমারের মহাকাব্য কবিতা দিয়ে শুরু করে; সফোক্লিস এবং ইউরিপিডিসের সাথে নাটক, চিকিৎসায় হিপোক্রেটিস এবং গ্যালেন; এবং বিজ্ঞানে পিথাগোরাস, আর্কিমিডিস এবং ইউক্লিড।Pedersen, Olaf. Early Physics and Astronomy: A Historical Introduction. 2nd edition. Cambridge: Cambridge University Press, 1993. থাম্ব|ডান|সর্বোচ্চ পরিধিতে রোমান সাম্রাজ্য আরেকটি প্রধান প্রভাব রোমান সাম্রাজ্য থেকে ইউরোপে এসে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে প্রভাবিত করে, যা পাশ্চাত্য সভ্যতায় তার চিহ্ন রেখে যায় আইন, রাজনীতি, ভাষা, প্রকৌশল, স্থাপত্য, সরকার এবং আরো অনেক দিকে।National Geographic, 76–77. প্যাক্স রোমানার সময়, রোমান সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ ভূমধ্যসাগরীয় অববাহিকা এবং ইউরোপের অনেক অংশ পরিবেষ্টন করে। রোমান সম্রাটদের বৈরাগ্য পেত যেমন হাদ্রিয়ান, এন্তোনিনুস পিউস, ও মার্কাস উরেলাস, যারা জার্মানিক, পিক্তিস ও স্কটিশ গোষ্ঠীর যুদ্ধে সাম্রাজ্যের উত্তর সীমান্তে সব সময় অতিবাহিত করত।National Geographic, 123.Foster, Sally M., Picts, Gaels, and Scots: Early Historic Scotland. Batsford, London, 2004. খ্রিষ্ট ধর্মকে প্রথম কনস্টান্টটাইন বৈধতা দেন তিন শতাব্দীর নির্যাতনের পরে। প্রারম্ভিক মধ্যযুগ রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সময়, "স্থানান্তরণের যুগের" কারণে ইউরোপ দীর্ঘকালব্যাপী পরিবর্তনের মধ্যে অতিবাহিত হয়। বিভিন্ন জাতি যেমন অস্ট্রোগথ, ভিজিগথ, গথ, ভ্যান্ডাল, হুন, ফ্রাঙ্ক, এঙ্গেল, স্যাক্সন, স্লাভ, আভার, বুলগার এবং, পরে, ভাইকিং, পেচেনেগ, চুমান ও মাগিয়ার-এর মধ্যে অসংখ্য আক্রমণ, অধিবাসন ঘটে থাকে। পেত্রারকের মত রেনেসাঁস চিন্তাবিদ পরে একে "অন্ধকার যুগ" বলে অভিহিত করে।Journal of the History of Ideas, Vol. 4, No. 1. (Jan. 1943), pp. 69–74. পূর্বে বিচ্ছিন্ন যাজককেন্দ্রিক সম্প্রদায়ই লিখিত জ্ঞান সঙ্কলন ও সংরক্ষণ করার একমাত্র জায়গা ছিল; এর বাদে খুব কম লিখিত নথির খোঁজ পাওয়া যায়। ধ্রুপদী সভ্যতার আরো অনেক সাহিত্য, দর্শন, গণিত, ও অন্যান্য জ্ঞান পশ্চিম ইউরোপ থেকে হারিয়ে যায়, যদিও তা পূর্বে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে সংরক্ষিত করা হয়েছিলো।Norman F. Cantor, The Medieval World 300 to 1300. ৭ম শতাব্দী থেকে, মুসলিম আরব ঐতিহাসিকভাবে রোমান অঞ্চলের উপর অগ্রসর হওয়া শুরু করে। পরবর্তী শতাব্দী ধরে মুসলিম বাহিনী সাইপ্রাস, মাল্টা, ক্রীট, সিসিলি এবং দক্ষিণ ইতালি কিছু অংশ অধিকার করে নেয়।Kennedy, Hugh (1995). "The Muslims in Europe". In McKitterick, Rosamund, The New Cambridge Medieval History: c.500-c.700, pp. 249–272. Cambridge University Press. 052136292X. প্রাচ্যে, ভলগা বুলগেরিয়া ১০ম শতকের মধ্যে একটি ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে ওঠে।Gerald Mako, "The Islamization of the Volga Bulghars: A Question Reconsidered", Archivum Eurasiae Medii Aevi 18, 2011, 199–223. ৭১১ থেকে ৭২০ সালের মধ্যে, আইবেরিয়ান উপদ্বীপ মুসলিম শাসনাধীনে আনা হয় — উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের (আস্তুরিয়াস) এবং মূলত পিরেনের বাস্ক অঞ্চল। এই অঞ্চল, আরবি নাম আল-আন্দালুস নামে বিস্তৃত উমাইয়া সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে। অসফল কনস্ট্যান্টিনোপোলের দ্বিতীয় অবরোধ (৭১৭) উমাইয়া বংশকে দুর্বল করে এবং তাদের প্রতিপত্তি কমে যায়। তারপর ৭৩২ সালে ফ্রাঙ্কিস নেতা চার্লস মার্টেল পায্টৈযর্স যুদ্ধে উমাইয়াদের পরাজিত করে, যারফলে তাদের উত্তরাভিমুখে অগ্রযাত্রার সমাপ্তি ঘটে। অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে, পশ্চিমা রোমান সাম্রাজ্য বিভিন্ন গোত্রদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। জার্মানিক এবং স্লাভ গোত্ররা যথাক্রমে পশ্চিম এবং পূর্ব ইউরাপের উপর তাদের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।National Geographic, 143–145. অবশেষে প্রথম ক্লোভিসের অধীনে ফ্রাঙ্কিস গোত্র ঐক্যবদ্ধ হয়।National Geographic, 162. ক্যারোলিঞ্জিয়ান রাজবংশের ফ্রাঙ্কিস রাজা শার্লেমেন, যে অধিকাংশ পশ্চিম ইউরোপ জয় করে, ৮০০ সালে পোপ দ্বারা "পবিত্র রোমান সম্রাট" নামে অভিষিক্ত করা হয়। এর ফলেই ৯৬২ সালে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়, যা শেষ পর্যন্ত মধ্য ইউরোপের জার্মান প্রিন্সিপালিটি কেন্দ্রিক হয়ে ওঠে।National Geographic, 166. পূর্ব মধ্য ইউরোপে স্লাভিক রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয় এবং খ্রিস্ট ধর্ম গৃহীত হয় (১০০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ)। গ্রেট মোরাভিয়ার শক্তিশালী পশ্চিম স্লাভিক রাষ্ট্র দক্ষিণে বলকান স্লাভ পর্যন্ত তার সীমানা বৃদ্ধি করে। প্রথম ভাতপ্লুকের অধীনে মোরাভিয়া তার বৃহত্তম আঞ্চলিক ব্যাপ্তি পৌঁছে এবং পূর্ব ফ্রান্সিয়ার সাথে ধারাবাহিক সশস্ত্র দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিলো। আরোও দক্ষিণে, ফ্রাঙ্কিস সাম্রাজ্য এবং the বাইজেন্টাইনের মধ্যে অবস্থিত, প্রথম দক্ষিণ স্লাভিক রাজ্য ৭ম এবং ৮ম শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়: প্রথম বুলগেরীয় সাম্রাজ্য, সার্বীয় প্রিন্সিপালিটি (পরে রাজ্য এবং সাম্রাজ্য) এবং ক্রোয়েশিয়ার ডাচি (পরে ক্রোয়েশিয়া রাজ্য)। আরোও পূর্বে, কিয়েভান রুস তার রাজধানী প্রসারিত করে কিয়েভ পর্যন্ত, ১০ম শতাব্দীর মধ্যে ইউরোপের বৃহত্তম রাষ্ট্র হয়। ৯৮৮ সালে, গ্রেট ভ্লাদিমির রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে অর্থোডক্স খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে। গ্রিক ভাষী অধ্যুষিত পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য পশ্চিমে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। এর রাজধানী ছিলো কনস্টান্টিনোপল। সম্রাট প্রথম জুথিনিয়ান কনস্টান্টিনোপললের প্রথম স্বর্ণযুগে শাসন করেন: তিনি আইনগত নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেন, হাজিয়া সোফিয়া নির্মাণ তহবিল দেন এবং রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের অধীনে খ্রিস্ট গির্জা আনেন।National Geographic, 135. বেশিরভাগ সময়ের জন্য, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এবং সামরিক বাহিনী ছিল। ১২০৪ সালে কনস্ট্যান্টিনোপোলের ধ্বংসসাধনে মারাত্মকভাবে দুর্বল, চতুর্থ ক্রুসেডের সময়, উসমানীয় সাম্রাজ্যের হাতে বাইজেন্টাইনের ১৪৫৩ সালে পতন ঘটে।National Geographic, 211. মধ্যযুগ ইউরোপের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ইতিহাস প্রায় ১০০০ বছরের। মূল ভূখণ্ডে বাণিজ্যপথের নিরাপত্তার অভাবে ভূমধ্যসাগরের উপকূল বরাবর প্রধান বাণিজ্যপথ গড়ে উঠে। এই প্রসঙ্গে, কিছু উপকূলীয় শহরের অর্জিত ক্রমবর্ধমান স্বাধীনতা সামুদ্রিক প্রজাতন্ত্রকে ইউরোপীয় অঙ্গনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা এনে দিয়েছিলো। থাম্ব|বাম|তৃতীয় ক্রুসেডের সময় সিসিলির তাঙ্ক্রেড ও ফ্রান্সের দ্বিতীয় ফিলিপ মধ্যযুগে ইউরোপেরর সামাজিক কাঠামো উপরের দুইটি স্তর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে: আভিজাত্য এবং পাদরীবর্গ। প্রারম্ভিক মধ্য যুগে ফ্রান্সে সামন্ততন্ত্র বিকশিত হয় এবং শীঘ্রই ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।National Geographic, 158. আভিজাত্য ও রাজতন্ত্রের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ম্যাগনা কার্টা লেখা এবং সংসদ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিলো।National Geographic, 186. ঐ সময়কালে সংস্কৃতির প্রধান উৎস ছিলো রোমান ক্যাথলিক চার্চ মঠ ও ক্যাথেড্রাল স্কুলের মাধ্যমে, চার্চ বেশিরভাগ ইউরোপের শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে। ভরা মধ্যযুগে পোপের শাসন ক্ষমতার শিখরে পৌঁছে। ১০৫৪ সালে পূর্ব পশ্চিম বিভেদ সাবেক রোমান সাম্রাজ্যকে ধর্মীয় দিক দিয়ে বিভক্ত করে, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পূর্বের রক্ষণশীল চার্চ এবং প্রাক্তন পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে রোমান ক্যাথলিক চার্চ। ১০৯৫ সালে পোপ দ্বিতীয় আরবান মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধের ডাক দেয় জেরুসালেম ও পবিত্র ভূমি দখল করে রাখার জন্য।National Geographic, 192. ইউরোপে চার্চের নিজেই ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তদন্তের আয়োজন করে। আইবেরিয় উপদ্বীপে সাত শতাব্দীর ইসলামী শাসন সমাপ্তি ঘটিয়ে ১৪৯২ সালে স্পেনে গ্রানাডা পতনের মাধ্যমে রিকনকুইসতার অবসিত হয়।National Geographic, 199. থাম্ব|ইউরোপে মঙ্গোল আক্রমণের সময় ১২৩৮ সালে বাটু খান দ্বারা সুযদালের বরখাস্ত হওয়া। ১১ ও ১২ শতাব্দীতে, যাযাবর তুর্কি উপজাতিদের দ্বারা অবিরত আক্রমণের ফলে, যেমন পেচেনেগ ও চুমান-কিপচাকে, উত্তরে নিরাপদ বনাঞ্চলে স্লাভিক জনসংখ্যার ব্যাপক অধিবাসন ঘটে। যার ফলে সাময়িকভাবে রুস' রাষ্ট্রের দক্ষিণ থেকে পূর্বে সম্প্রসারণ থেমে যায়। ইউরেশিয়ার অন্যান্য অনেক অংশের মতো, এই অঞ্চলও মঙ্গোল দ্বারা শাসিত হয়েছে। তাতার হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে আগ্রাসকরা বেশিরভাগই তুর্কি-ভাষী মঙ্গোল শাসনের অধীনে ছিলো। তারা ক্রিমিয়ায় রাজধানী স্থাপন করে গোল্ডেন হর্দে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে, পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আধুনিক দক্ষিণ ও মধ্য রাশিয়ায় তিন শতাব্দী বেশি সময় ধরে শাসন করেন।"Golden Horde", in Encyclopædia Britannica, 2007. মঙ্গোল রাজত্ব পতনের পর, ১৪ শতাব্দীতে প্রথমে রোমানিয়ান রাজ্যগুলো উঠে আসে: মলদোভা এবং ওয়ালাচিয়া। পূর্বে, এই অঞ্চলগুলো পেচেনেগ এবং চুমানের অধীনে ছিলো।Spinei, Victor. The Romanians and the Turkic Nomads North of the Danube Delta from the Tenth to the Mid-Thirteenth Century, Brill, 2009, ১২ থেকে ১৫ শতাব্দীতে, মঙ্গোল শাসনের অধীনে মস্কোর গ্র্যান্ড ডিউকের জমিদারি ক্ষুদ্র রাজ্য থেকে ইউরোপের বৃহত্তম রাষ্ট্রে পরিণত হয়, ১৪৮০ সালে মঙ্গোল উৎখাত করে। পরবর্তীতে তারাই রাশিয়ার জার বংশে হয়ে উঠে। মহান তৃতীয় ইভান ও ভয়ানক ইভানের অধীনে দেশটি একত্রীত হয়, পরবর্তীতে শতকের পর শতক ধরে অটলভাবে পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত হয়। মধ্যযুগের শেষভাগে ইউরোপে আঘাত হানা প্রথম সংকট ছিলো ১৩১৫-১৩১৭ সালের মহাদুর্ভিক্ষ।The Late Middle Ages . Oglethorpe University. ১৩৪৮ থেকে ১৪২০ সাল সময়কালে সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি হয়। ফ্রান্সের জনসংখ্যা অর্ধেকে পরিণত হয়।Baumgartner, Frederic J. France in the Sixteenth Century. London: MacMillan Publishers, 1995. .Don O'Reilly. "Hundred Years' War: Joan of Arc and the Siege of Orléans ". TheHistoryNet.com. মধ্যযুগীয় ব্রিটেন ৯৫টি দুর্ভিক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হয়,Poor studies will always be with us . By James Bartholomew. Telegraph. 7 August. 2004. এবং ফ্রান্সও একই সময়ের মধ্যে ৭৫টি বা তার বেশি দ্বারা আক্রান্ত হয়।Famine. Encyclopædia Britannica. মধ্য-১৪ শতাব্দীতে কালো মৃত্যুর কারণে ইউরোপ বিধ্বস্ত হয়, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক মহামারীর একটি, যার ফলে শুধুমাত্র ইউরোপের আনুমানিক আড়াই কোটি মানুষ মারা যায়—সে সময়ে তা ইউরোপীয় জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। প্লেগ ইউরোপের সামাজিক কাঠামোর উপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে ছিলো; এটা জিওভান্নি বোক্কাচ্চোর দেকামেরোনে (১৩৫৩) চিত্রিত অবস্থার মত মানুষ বর্তমান মুহূর্তের জন্য বেঁচে থাকতে প্রবৃত হয়। এটা রোমান ক্যাথলিক চার্চের জন্য একটি গুরুতর আঘাত এবং এর ফলে ইহুদি, বিদেশি, ভিক্ষুক ও কুষ্ঠরোগীদের উপর নির্যাতন বৃদ্ধি করে।National Geographic, 223. ১৮ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত, প্রাবল্য ও মৃত্যুর হারের তারতাম্য নিয়ে প্লেগ প্রত্যেক প্রজন্মে ফিরে আসে বলে মনে করা হয়। এই সময়কালে পুরো ইউরোপ ১০০-এর অধিক প্লেগ মহামারীতে আক্রান্ত হয়। প্রারম্ভিক আধুনিক সময় থাম্ব|240px|বাম|রাফায়েলের এথেন্সের বিদ্যালয়: সমসাময়িকেরা যেমন মাইকেলেঞ্জেলো ও লিওনার্দো দা ভিঞ্চি (কেন্দ্রে) শাস্ত্রীয় পণ্ডিত হিসাবে চিত্রিত করা হয় সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সময়কাল রেনেসাঁস ফ্লোরেন্সে উদ্ভব হয়ে ১৪ শতাব্দীতে বাকি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। একটি নতুন মানবতাবাদের উত্থানের সাথে যাজককেন্দ্রিক পাঠাগার থেকে বিস্মৃত ধ্রুপদী গ্রিক এবং আরবি জ্ঞান পুনরুদ্ধার চলতে থাকে, যা প্রায়ই আরবী থেকে লাতিনে অনুবাদ করা হত।Weiss, Roberto (1969) The Renaissance Discovery of Classical Antiquity, রেনেসাঁস ১৪ থেকে ১৬ শতাব্দীর মধ্যে ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। রাজকীয়, আভিজাত্য, রোমান ক্যাথলিক চার্চ, এবং একটি উঠতি বণিক শ্রেণীর যুগ্ম পৃষ্ঠপোষকতায় এতে শিল্প, দর্শন, সঙ্গীত, এবং বিজ্ঞানের উন্নতি সাধন হয়।National Geographic, 254.Jensen, De Lamar (1992), Renaissance Europe, ফ্লোরেনটাইনের ব্যাংকার পরিবার মেদিচি এবং রোমের পোপ সহ, ইতালির পৃষ্ঠপোষকরা, প্রতিভাবান কোয়াত্রোসেন্তো ও সিঙ্কেসেন্তো শিল্পীদের যেমন রাফায়েল, মাইকেলেঞ্জেলো, ও লিওনার্দো দা ভিঞ্চি পৃষ্ঠপোষকতা করেন।National Geographic, 292. মধ্য ১৪ শতকের চার্চের রাজনৈতিক চক্রান্ত পশ্চিমা বিভেদ সৃষ্টি করে। এই চল্লিশ বছর সময়ে, দুই জন পোপ চার্চের শাসনভার দাবী করে—একটি আভিগনন ও অপরটি রোমে। এই বিভেদ অবশেষে ১৪১৭ সালে মিটমাট হয়ে গেলেও পোপের পদ আধ্যাত্মিক কর্তৃপক্ষ ব্যাপকভাবে ভুক্তভোগী হয়েছিলো।National Geographic, 193. থাম্ব|ডানে_উপরে|ডান|মার্টিন লুথার প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার শুরু করে। চার্চের ক্ষমতা প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারের (১৫১৭–১৬৪৮) ফলে আরোও দুর্বল হয়ে পড়ে, যা প্রথমে জার্মান ধর্মতত্ত্ববিদ মার্টিন লুথারের কাজের দ্বারা কাজ দ্বারা আলোচনায় আসে চার্চের মধ্যে সংস্কার অভাবের ফলে। এছাড়াও সংস্কার পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করে। জার্মান রাজপুত্রগণ প্রোটেস্ট্যান্ট এবং রোমান ক্যাথলিকে বিভক্ত হয়ে ওঠে।National Geographic, 256–257. এটাই ঘটনাক্রমে ত্রিশ বছরের যুদ্ধের (১৬১৮–১৬৪৮) কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যার ফলে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য পঙ্গু হয় এবং অনেক জার্মানি বিধ্বস্ত হয়। জার্মানির জনসংখ্যার ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ লোক মারা যায়।History of Europe – Demographics. Encyclopædia Britannica. ওয়েস্টফালিয়া শান্তির পরে, ইউরোপে ফ্রান্সের প্রাধান্য বেড়ে দাঁড়ায়>National Geographic, 269. দক্ষিণ, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে ১৭ শতাব্দী সাধারণ পতনের সময়কাল। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে, ২০০ বছরে ১৫০১ সাল থেকে ১৭০০ সালের মধ্যে ১৫০-এর বেশি দুর্ভিক্ষ হয়।"Food, Famine And Fertilizers". Seshadri Kannan (2009). APH Publishing. p.51. ১৫ থেকে ১৮ শতাব্দীতে, যখন রাশিয়া ভেঙ্গে যাওয়া গোল্ডেন হর্দের খানাত জয় করে, তখন ক্রিমিয়ান খানাতের তাতার দাস ধরার জন্য পূর্ব স্লাভিক ভূমিতে ঘন ঘন অভিযান চালায়।W. G. Clarence-Smith (2006). "Islam And The Abolition Of Slavery". Oxford University Press. p.13. — "Lands to the north of the Black Sea probably yielded the most slaves to the Ottomans from 1450. A compilation of estimates indicates that Crimean Tartars seized about 1,750,000 Ukrainians, Poles, and Russians from 1468 to 1694." ১৬৮৩ সালে ভিয়েনার যুদ্ধ ইউরোপে উসমানীয় তুর্কিদের অগ্রসর হওয়া থামিয়ে দেয়, ও মধ্য ইউরোপের হাবসবুর্গ রাজবংশের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের জানান দেয়। নোগাই হর্দে ও কাজাখ খানাত অন্তত একশ বছর ধরে রাশিয়া, ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের স্লাভিক-ভাষী এলাকায় ঘন ঘন অভিযান চালায়, রুশ সম্প্রসারণ এবং অধিকাংশ উত্তর ইউরেশিয়া বিজিত না হওয়া পর্যন্ত(অর্থাৎ পূর্ব ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং সাইবেরিয়া)। আবিষ্কারের যুগ, অনুসন্ধানের সময়, উদ্ভাবন এবং বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের শুরু বলে রেনেসাঁস এবং নতুন রাজকীয় চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৬ এবং ১৭ শতাব্দীর পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের মহান ব্যক্তিদের মধ্যে কোপারনিকাস, কেপলার, গ্যালিলিও, এবং আইজ্যাক নিউটন ছিল।"Scientific Revolution: Chronological Timeline: Copernicus to Newton ". Retrieved 23 June 2012. পিটার বারেটের মতে, "এটা ব্যাপকভাবে গৃহীত যে, 'আধুনিক বিজ্ঞান' ১৭ শতাব্দীর (রেনেসাঁসের শেষ দিকে) ইউরোপে বেড়ে উঠেছিলো, প্রাকৃতিক বিশ্ব বোঝার নতুন পরিচায়ক।"Peter Barrett (2004), Science and Theology Since Copernicus: The Search for Understanding, pp. 14–18, Continuum International Publishing Group, ১৫ শতাব্দীতে, সেসময় সর্বশ্রেষ্ঠ নৌ ক্ষমতার দুই দেশ পর্তুগাল এবং স্পেন, সারা বিশ্ব অন্বেষণে দ্বায়িত্ব নেয়।National Geographic, 296. ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ সালে নিউ ওয়ার্ল্ডে পৌঁছান এবং ভাস্কো দা গামা ১৪৯৮ সালে পূর্বে সমুদ্রপথ খুঁজে বের করেন। পরে স্প্যানীয় ও পর্তুগিজ আমেরিকা এবং এশিয়ায় ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।National Geographic, 338. শীঘ্রই ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড তাদের অনুসরণ করে আফ্রিকা, আমেরিকা, এশিয়ায় বিশাল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। ১৮ এবং ১৯ শতাব্দী থাম্ব|220px|বাম|১৮১২ সালে রাশিয়া থেকে নেপোলিয়নের পশ্চাদপসরণ। নেপোলিয়নের গ্র্যান্ডে আর্মি ৫ লক্ষ সৈন্য হারিয়েছিলো। ১৮ শতাব্দীতে, বৈজ্ঞানিক ও যুক্তি-ভিত্তিক চিন্তাধারা প্রচারে নবজাগরণের যুগ একটি শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন ছিল।National Geographic, 255. ফ্রান্সের রাজনৈতিক ক্ষমতার উপর অভিজাততন্ত্র ও পাদরীবর্গের একচেটিয়া অধিকারের ফলে জন-অসন্তোষ বাড়তে থাকে, যার ফলে ফরাসি বিপ্লব ঘটে এবং প্রথম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়। এর ফলে প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসের রাজত্বে অনেক রাজকীয় এবং আভিজাত্য প্রাণ হারায়। ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তীকালে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় এবং প্রথম ফরাসি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা পায়। নেপলীয় যুদ্ধের সময় যা বেড়ে ইউরোপের বৃহৎ অংশ পরিবেষ্টন করে, ১৮১৫ সালে ওয়াটারলু যুদ্ধে পতন ঘটে।National Geographic, 360. নেপোলিয়নের শাসনের ফলে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের আরও প্রচার পায়, যার মাঝে জাতি-রাষ্ট্রের সাথে সাথে প্রশাসন, আইন, এবং শিক্ষার ফরাসি মডেলের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়।National Geographic, 350. নেপোলিয়নের পতনের পর ভিয়েনার কংগ্রেস সমবত হয় এবং ইউরোপের ক্ষমতার একটি নতুন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে, পাঁচ "বড় শক্তির" উপর কেন্দ্রীভূত করে: যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, প্রুশিয়া, অস্ট্রিয়া, এবং রাশিয়া।National Geographic, 367. ১৮৪৮ সালের বিপ্লবের আগ পর্যন্ত এই ভারসাম্য বজায় থাকে, এই সময় উদারপন্থী বিদ্রোহ রাশিয়া ও গ্রেট ব্রিটেন ছাড়া সমস্ত ইউরোপকে প্রভাবিত করে। শেষ পর্যন্ত রক্ষণশীল উপাদান এবং কিছু সংস্কারের ফলে বিপ্লব থেমে যায়।National Geographic, 371–373. ১৮৫৯ সালে ছোট রাজ্যগুলো থেকে রোমানিয়া জাতি-রাষ্ট্র রূপে একত্রিত হয়। ১৮৬৭ সালে, অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য গঠিত হয়; এবং ১৮৭১ সালে ছোট রাজ্যগুলো থেকে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে উভয় ইতালি ও জার্মানি একত্রীকরণ হয়। সমান্তরালভাবে, রুশ-তুর্কি যুদ্ধে (১৭৬৮-১৭৭৪) তুর্কিদের পরাজয়ের পর প্রাচ্য সমস্যা আরোও জটিল আকার ধারণ করে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের ভাঙ্গন আসন্ন মনে করে, বড় শক্তিগুলো উসমানীয় অংশে তাদের কৌশলগত ও বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করতে থাকে। এই পতন থেকে রুশ সাম্রাজ্য লাভবান হয়, অন্যদিকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সংরক্ষণ হাবসবুর্গ সাম্রাজ্য এবং ব্রিটেনের স্বার্থের অনূকুলে থাকবে। এদিকে, সার্বীয় বিপ্লব এবং গ্রিক স্বাধীনতা যুদ্ধ বলকানে জাতীয়তাবাদের জন্ম হিসেবে চিহ্নিত হয়।, Ottoman Empire – 19th century, Historyworld ১৮৭৮ সালে বার্লিনের কংগ্রেসে মন্টিনিগ্রো, সার্বিয়া এবং রোমানিয়ার কার্যত স্বাধীন রাজ্যের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়। থাম্ব|180px|মার্শালের টেম্পল ওয়ার্কস, গ্রেট ব্রিটেনে শিল্প বিপ্লব শুরু গ্রেট ব্রিটেনে ১৮ শতাব্দীর শেষভাগে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়ে পুরো ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। উদ্ভাবন ও নতুন প্রযুক্তির বাস্তবায়নের ফলে দ্রুত শহুরে বৃদ্ধি, ব্যাপক কর্মসংস্থান, এবং একটি নতুন শ্রমিক শ্রেণীর উত্থান ঘটে। এর ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কার সাধিত হয়, যার মাঝে শিশু শ্রমের উপর প্রথম আইন, ট্রেড ইউনিয়ন বৈধকরণ, এবং দাসত্ব বিলুপ্তি ছিলো।Slavery, Historical survey – Ways of ending slavery, Encyclopædia Britannica ব্রিটেনে, ১৮৭৫ সালে জনস্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন করা হয়, যার ফলে অনেক ব্রিটিশ শহরে জীবনযাত্রার মানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। ইউরোপের জনসংখ্যা ১৭০০ সালের ১০ কোটি থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে ৪০ কোটিতে বেড়ে দাঁড়ায়।Modernisation – Population Change. Encyclopædia Britannica. পশ্চিম ইউরোপের শেষ দুর্ভিক্ষ, আইরিশ আলু দুর্ভিক্ষের ফলে আইরিশ লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ও ব্যাপক দেশান্তর ঘটে।"The Irish Famine". BBC – History. ১৯ শতাব্দীতে, ৭ কোটি মানুষ ইউরোপ ছেড়ে বিদেশে বিভিন্ন ইউরোপীয় উপনিবেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধিবাসিত হয়।The Atlantic: Can the US afford immigration?. Migration News. December 1996. বিংশ শতাব্দী থেকে বর্তমান থাম্ব|285px| থাম্ব|180px|ডান|সার্বিয় যুদ্ধ প্রচেষ্টার ফলে দেশটি তার জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ হারায়Asserts Serbians face extinctionSerbia restored দুইটি বিশ্বযুদ্ধ এবং একটি অর্থনৈতিক মন্দা বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে আধিপত্য বিস্তার করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪ থেকে ১৯১৮-এর মধ্যে সংঘটিত হয়। যুগোস্লাভ জাতীয়তাবাদী গাভ্রিলো প্রিন্সিপ দ্বারা অস্ট্রিয়ার আর্চডিউক ফ্রানজ ফার্দিনান্দ হত্যার মাধ্যমে এই যুদ্ধ শুরু হয়।National Geographic, 407. অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশগুলো এই যুদ্ধে লড়াই করেছে, যা আঁতাত শক্তি (ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সার্বিয়া, পর্তুগাল, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, এবং পরে ইতালি, গ্রিস, রোমানিয়া, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং অক্ষ শক্তি (অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, জার্মানি, বুলগেরিয়া, এবং উসমানীয় সাম্রাজ্য) মধ্যে সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে ১৬০ লক্ষের বেশি মানুষ মারা যায়।National Geographic, 440. ৬ কোটির বেশি ইউরোপীয় সৈন্য ১৯১৪ থেকে ১৯১৮-এর এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। থাম্ব|গুয়ের্নিকার ধ্বংসাবশেষ (১৯৩৭)। স্পেনীয় গৃহযুদ্ধে ৫ লক্ষের বেশি মানুষ মারা যায়। রাশিয়ায় রুশ বিপ্লব ঘটে, যা জার রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে সাম্যবাদ সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিস্থাপন করে।National Geographic, 480. অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এবং উসমানীয় সামাজ্য ভেঙ্গে গিয়ে পৃথক দেশে ভাগ হয় এবং অন্যান্য অনেক দেশ তাদের সীমানা পুনরায় বিন্যস্ত করে। ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯১৯ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধর সমাপ্তি ঘটে। চুক্তিটি জার্মানির প্রতি কঠোর ছিল এবং যুদ্ধের জন্য পূর্ণ দায়িত্ব জার্মানির উপর চাপানো হয় এবং ভারী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।National Geographic, 443. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সময়কাল এবং রুশ গৃহযুদ্ধ (যুদ্ধোত্তর দুর্ভিক্ষ সহ) মিলিয়ে রাশিয়া মোট মৃত্যুর পরিমাণ ১৮০ লক্ষে দাঁড়ায়। ১৯৩২–১৯৩৩-এ, স্তালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ শস্য বাজেয়াপ্ত করার ফলে দ্বিতীয় সোভিয়েত দুর্ভিক্ষ হয়, যাতে লক্ষ লক্ষ লোক মারা যায়;"Legacy of famine divides Ukraine". BBC News. November 24, 2006. জীবিত কৃষক-মহাজনদের নির্যাতন করা হয় এবং অনেককে জোরপূর্বক শ্রম নিয়োজিত করতে গুলাগে পাঠানো হয়েছিলো। এছাড়াও ১৯৩৭–৩৮-এর গ্রেট পার্জের জন্য স্তালিন দায়ী, যাতে এনকেভিডি ৬৮১,৬৯২ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে; সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ বহিষ্কৃত ও নির্বাসিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঋণ এবং জার্মানিকে ঋণ দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে ইউরোপে ব্যাপক ধ্বংস সাধন করে। এটা এবং ১৯২৯-এর ওয়াল স্ট্রিট বিপর্যয় বিশ্বব্যাপী মহামন্দা ডেকে আনে। অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক অস্থিরতা, সাম্যবাদের হুমকি, ও ফ্যাসীবাদী আন্দোলনের সহায়তায় ইউরোপ জুড়ে নাৎসি জার্মানিতে আডলফ হিটলার, স্পেনে ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো, ইতালিতে বেনিতো মুসোলিনিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে।National Geographic, 438. ১৯৩৩ সালে, হিটলার জার্মানির নেতা হয়ে ওঠে এবং বৃহত্তর জার্মানি নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। জার্মানি পুনরায় প্রসারিত হয়ে ১৯৩৫ এবং ১৯৩৬ সালে সারল্যান্ড এবং রাইনল্যন্ড দখল করে নেয়। ১৯৩৮ সালে, আঞ্চলাসের পরে অস্ট্রিয়া জার্মানির একটি অংশ হয়ে ওঠে। পরে সেই বছরই, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং ইতালি মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষর করে। জার্মানি সুদেতেনল্যান্ড দ্বারা সংযুক্ত হয়, যা জাতিগত জার্মানরা দ্বারা অধ্যুষিত চেকোস্লোভাকিয়ার একটি অংশ ছিলো। ১৯৩৯ সালের প্রথম দিকে চেকোস্লোভাকিয়ার অবশিষ্টাংশ জার্মানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বোহেমিয়া ও মোরাভিয়ার প্রটেকটোরেট ও স্লোভাক প্রজাতন্ত্রে বিভক্ত হয়। ঐ সময়ে, ব্রিটেন ও ফ্রান্স তুষ্ট করার নীতি অবলম্বন করছিলো। থাম্ব|হামবুর্গের পোড়া ভবন, ১৯৪৪ বা ৪৫ ডানজিগের ভবিষ্যতকে কেন্দ্র করে জার্মানি ও পোল্যান্ডের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বাড়তে থাকে, জার্মানরা সোভিয়েত দিকে সরে গিয়ে এবং মলতভ-রিবেন্ত্রপ চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা সোভিয়েতকে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো এবং পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার অংশ আক্রমণ করার অনুমোদন দেয়। জার্মানি ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড আক্রমণ করে, যা ৩ সেপ্টেম্বর জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণায় ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যকে প্ররোচনা যোগায়। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইউরোপীয় রণক্ষেত্র উন্মুখ হয়।National Geographic, 465. পোল্যান্ডে সোভিয়েত আক্রমণ ১৭ সেপ্টেম্বর শুরু করে এবং শীঘ্রই পোল্যান্ডের পতন ঘটে। ২৪ সেপ্টেম্বর, সোভিয়েত ইউনিয়ন বাল্টিক দেশগুলো ও পরে ফিনল্যান্ড আক্রমণ করে। ব্রিটিশ সৈন্য নারভিকে অবতরণ করে এবং ফিনল্যান্ডকে সাহায্য করার জন্য সৈন্য পাঠায়। কিন্তু তাদের অবতরণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো জার্মানিকে ঘিরে ফেলা এবং জার্মানদের স্ক্যান্ডেনেভীয় উৎস থেকে সাহায্য বন্ধ করা। প্রায় একই সময়, জার্মানি ডেনমার্কে সৈন্য প্রেরণ করে। এবং অপ্রকৃত যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। ১৯৪০ সালের মে-তে, জার্মানি নিচু দেশের মাধ্যমে ফ্রান্স আক্রমণ করে। ফ্রান্স ১৯৪০-এর জুনে শর্তাধীনভাবে আত্মসমর্পণ করে। আগস্ট দ্বারা জার্মানি ব্রিটেনে আক্রমণাত্মক বোমা বর্ষণ শুরু করে, কিন্তু ব্রিটেন দখল করতে ব্যর্থ হয়।National Geographic, 510. ১৯৪১ সালে, জার্মানি অপারেশন বারবারোসার মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে।National Geographic, 532. ১৯৪১ সালে ৭ ডিসেম্বর জাপানের পার্ল হারবার আক্রমণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মিত্র এবং অন্যান্য মিত্র বাহিনীকেও যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলে।National Geographic, 511.National Geographic, 519. থাম্ব|১৯৪৫ সালের ইয়াল্টা সম্মেলনে "বড় তিন"; (বাম থেকে) উপবিষ্ট: উইনস্টন চার্চিল, ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট, এবং ইওসিফ স্তালিন ১৯৪৩ সালে স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধের পর, সোভিয়েত ইউনিয়নে জার্মান আক্রমণ ক্রমাগত পিছিয়ে যায়। ইতিহাসে বৃহত্তম ট্যাংক যুদ্ধে জড়িত কুর্স্কের যুদ্ধ পূর্ব রণাঙ্গনে শেষ বড় জার্মান আক্রমণ ছিলো। ১৯৪৪ সালে, ব্রিটিশ এবং মার্কিন বাহিনী ডি-ডে অবতরণের মাধ্যমে ফ্রান্স আক্রমণ করে জার্মানি বিপক্ষে নতুন যুদ্ধক্ষেত্র খোলে। ১৯৪৫ সালে বার্লিন পতনের মাধ্যমে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বৃহত্তম ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে পৃথিবী জুড়ে ৬ কোটি মানুষ মারা যায়।National Geographic, 439. ইউরোপে ৪ কোটির বেশি মানুষ দ্বিতীয় যুদ্ধের ফলে মারা যায়,"Europe honours war dead on VE Day". BBC News. 9 May 2005. যার মাঝে ১১০ থেকে ১৭০ লক্ষ লোক হলোকস্টের দ্বারা মারা যায়।Niewyk, Donald L. and Nicosia, Francis R. The Columbia Guide to the Holocaust, Columbia University Press, 2000, pp. 45–52. যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ২৭০ লক্ষ লোক হারায় (বেশিরভাগই বেসামরিক), দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হতাহতের প্রায় অর্ধেক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে, ইউরোপে ৪ কোটির বেশি লোক উদ্বাস্তু ছিলো।"Refugees: Save Us! Save Us! ". Time. 9 July 1979. মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু যুদ্ধোত্তর বিতাড়নের ফলে প্রায় মোট ২ কোটি লোক বাস্তুচ্যুত হয়।Postwar Population Transfers in Europe: A Survey, by Joseph B. Schechtman প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পশ্চিম ইউরোপের প্রাধান্য খর্ব করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইয়াল্টা সম্মেলনে ইউরোপের মানচিত্রে প্রজাতন্ত্রগুলো পুনঃবিন্যস্ত হয় এবং দুই ব্লকে বিভক্ত করা হয়, পশ্চিমা দেশ এবং সাম্যবাদী পূর্ব ব্লক, যা পরে উইনস্টন চার্চিল একটি "লৌহ পর্দা" বলে অভিহিত করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপ ন্যাটো জোট প্রতিষ্ঠিত করে এবং পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মধ্য ইউরোপ ওয়ারশ চুক্তি সাক্ষর করে।National Geographic, 530. নতুন দুটি পরাশক্তি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক বিস্তার কেন্দ্রীভূত, পঞ্চাশ বছরের দীর্ঘ স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত হয়। একই সময়ে উপনিবেশবাদ শেষ হতে শুরু করে, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই শুরু হয়, ধীরে ধীরে এশিয়া ও আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশিকতা শেষ হয়ে অঞ্চলগুলো স্বাধীনতা লাভ করতে শুরু করে। ১৯৮০ সালে মিখাইল গর্বাচেভের সংস্কার এবং পোল্যান্ডে সলিডারিটি আন্দোলনের ফলে পূর্ব ব্লকের পতন ঘটে এবং স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। দুই জার্মানি একত্রিত হয়, ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের মানচিত্রে আরো একবার প্রজাতন্ত্র গুলো বিন্যস্ত হয়। ইউরোপীয় একত্রীকরণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে শুরু হয়। একটি একক অর্থনৈতিক নীতি এবং সাধারণ বাজারে লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে রোম চুক্তির মাধ্যমে ছয় পশ্চিম ইউরোপের দেশের মধ্যে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠিত হয়।National Geographic, 536. ১৯৬৭ সালে ইইসি, ইউরোপীয় কয়লা ও ইস্পাত গোষ্ঠী এবং ইউরাটম, ইউরোপীয় গোষ্ঠী গঠন করে, যা ১৯৯৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রূপ নেয়। ইউ একটি সংসদ, আদালত এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে এবং একক মুদ্রা হিসেবে ইউরো চালু করে।National Geographic, 537. ২০০৪ এবং ২০০৭ সালে, আরো মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো যোগ দান করে এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২৮-এ উন্নীত করে।National Geographic, 535. ভূগোল থাম্ব|ডান|ইউরোপ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানচিত্র ইউরোপীয় উপদ্বীপ ইউরেশীয় ভূখণ্ডের পশ্চিমা পঞ্চমাংশ গঠন করে। এটা অন্য যে কোনো মহাদেশ বা উপমহাদেশের চেয়ে ভূখণ্ডের তুলনায় উপকূলের উচ্চ অনুপাত রয়েছে। এর সমুদ্র সীমা উত্তরে আর্কটিক মহাসাগর, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর, এবং দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর, কৃষ্ণ, এবং কাস্পিয়ান সমুদ্র।Europe. Encyclopædia Britannica. ইউরোপের ভূমিতে অপেক্ষাকৃত ছোট এলাকার মধ্যে বেশি তারতম্য দেখা যায়। দক্ষিণাঞ্চল বেশি পর্বতময়, অন্যদিকে উত্তরে যেতে যেতে উঁচু আল্পস, পিরেনে, এবং কার্পেথীয় থেকে ভূখণ্ড নিচু হতে থাকে, উঁচু পাহাড়ি ভূমির মধ্য দিয়ে পূর্বে বিশাল, বিস্তৃত, কম উত্তর সমতলে। এই বর্ধিত নিম্নভূমি বড় ইউরোপীয় সমভূমি হিসাবে পরিচিত, এবং এর মূল উত্তর জার্মান সমভূমিতে অবস্থিত। গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ড দ্বীপের পশ্চিম অংশ থেকে শুরু হয়ে উঁচু একটা চাপ উত্তর-পশ্চিম সমুদ্রতীর বরাবর বিদ্যমান, এবং তা নরওয়ের পর্বতময়, সমুদ্রের খাঁড়ি কাটা বরাবর চলতে থাকে। থাম্ব|বাম|ইউরোপের ভূমি ব্যবহারের মানচিত্র, হলুদ: কৃষিজমি এবং আবাদী, হালকা সবুজ: তৃণভূমি এবং তৃণক্ষেত্র, গাঢ় সবুজ: বন, গাড় হলুদ: তুন্দ্রা বা বগস এই বিবরণ সরলীকৃত। উপ-অঞ্চল যেমন আইবেরিয়ান উপদ্বীপ এবং ইতালীয় উপদ্বীপের নিজস্ব জটিল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তেমনি মূল ভূখণ্ডের মধ্য ইউরোপেরও আছে। যেখানে ভূখণ্ডের অনেক মালভুমি, নদী উপত্যকা এবং অববাহিকা রয়েছে যা সাধারণ গতিধারা জটিল করে তোলে। উপ-অঞ্চল যেমন আইসল্যান্ড, ব্রিটেন, এবং আয়ারল্যান্ড আলাদা বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। পূর্ববর্তী ভূখণ্ড উত্তর মহাসাগরের অবস্থিত যা ইউরোপের অংশ হিসাবে গণনা করা হয়, অপরদিকে পরবর্তী পাহাড় এলাকা মূল ভূখণ্ডে যোগ দিয়েছিলো, যা পরে ক্রমবর্ধমান সমুদ্র স্তরের বৃদ্ধির ফলে আলাদা হয়ে যায়। স্টেপ জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য ফ্রেম|ইউরোপ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বায়োম: ইউরোপ প্রধানত শীতপ্রধান জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত, এতে পশ্চিমা ঝঞ্ঝা বিরাজ করে। উপসাগরীয় প্রবাহের প্রভাবের কারণে পৃথিবী চারপাশে একই অক্ষাংশের অন্যান্য এলাকায় তুলনায় এর জলবায়ু বেশ নাতিশীতোষ্ণ ধরনের হয়। উপসাগরীয় প্রবাহের ডাক নাম "ইউরোপের কেন্দ্রীয় উষ্ণতা", কারণ এটা ইউরোপের জলবায়ু উষ্ণ এবং আর্দ্র করে তোলে। উপসাগরীয় প্রবাহ ইউরোপের উপকূল উষ্ণ আর্দ্রতা বয়ে আনার সাথে সাথে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে আসা পশ্চিমা ঝঞ্ঝাকে উষ্ণ করে তোলে। এর ফলে সারা বছর ধরে নেপলসের গড় তাপমাত্রা ১৬ °সে (৬০.৪ °ফা), যখন একই অক্ষাংশে অবস্থিত নিউ ইয়র্ক সিটিতে শুধুমাত্র ১২ °সে (৫৩.৬ °ফা)। বার্লিন, জার্মানি; কাল্গারি, কানাডা; এবং ইরখুটস্ক, রাশিয়ার এশীয় অংশ, প্রায় একই অক্ষাংশ অবস্থিত; জানুয়ারিতে বার্লিনের গড় তাপমাত্রা প্রায় ৮ °সি (৪৬.৪ °ফা), যা কালগারি থেকে বেশি, এবং ইরখুটস্ক গড় তাপমাত্রা থেকে প্রায় ২২ °সে (৭১.৬ °ফা) বেশি। তিন দিকে জলভাগের অবস্থান ইউরোপের ভূতত্ত্ব অতিশয় বৈচিত্রময় এবং জটিল, স্কটিয় উচ্চভূমি থেকে হাঙ্গেরির ঢালাই সমভূমি পর্যন্ত মহাদেশ জুড়ে বিভিন্ন ভূদৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। থাম্ব|ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বত এলব্রুস পর্বত। থাম্ব|আড্রিয়াটিক সাগরে ১৩০০ দ্বীপ ও ইসলেট রয়েছে। থাম্ব|300px|ইউরোপা পয়েন্ট জিব্রাল্টার প্রণালী থেকে দেখা যায়। ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উচ্চভূমি ও পার্বত্য দক্ষিণ ইউরোপ এবং পূর্বে ইউরাল পর্বতমালা থেকে পশ্চিমে একটি সুবিশাল, আংশিকভাবে সমুদ্রগর্ভপথে, উত্তর সমতল আয়ারল্যান্ডের মধ্যে বৈপরীত্য। এই দুই অংশ পিরেনে পর্বত চেইন এবং আল্পস/কার্পেথীয় দ্বারা বিভক্ত। উত্তর সমতল স্ক্যানডিনেভীয় পর্বতমালা এবং ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পর্বতময় অংশ দ্বারা পশ্চিমে চিহ্নিত করা হয়। উত্তর সমতলের প্রধান অগভীর জলাশয় হলো, কেল্টীয় সাগর, উত্তর সাগর, বাল্টিক সাগর এবং বারেন্ট সাগর। উত্তর সমতলে পুরোনো ভূতাত্ত্বিক বালটিকা মহাদেশ রয়েছে, এবং তাই ভূতাত্ত্বিকভাবে "প্রধান মহাদেশ" হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে, অন্যদিকে দক্ষিণ ও পশ্চিমে পেরিফেরাল উচ্চ ভূমি ও পার্বত্য অঞ্চল অন্যান্য বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক মহাদেশ থেকে খন্ডাংশ গঠন করে। পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ পুরোনো ভূতত্ত্ব সবচেয়ে প্রাচীন ক্ষুদ্র মহাদেশ আভালোনিয়ার অংশ হিসেবে ছিল। ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস প্রায় ২.২৫ বিলিয়ন বছর আগে, বাল্টিক শিল্ড (ফেনোস্ক্যান্ডিয়া) এবং সারমাতিয়ান ক্রাটন গঠনে ইউরোপের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। এর পর ভলগো-ইউরালিয়া শিল্ড, এই তিনটি একসঙ্গে পূর্ব ইউরোপীয় ক্রাটন (≈ বালটিকা) গঠন করে, যা অতিবিশাল মহাদেশ কলাম্বিয়ার একটি অংশ হয়ে ওঠে। প্রায় ১.১ বিলিয়ন বছর আগে, বালটিকা এবং আর্কটিকা (লাওরেন্টিয়া ব্লকের অংশ হিসেবে) রডিনিয়ায় যোগদান করে, পরে পুনঃবিভক্ত হয়ে প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন বছর আগে সংস্কার হয়ে বালটিকা রূপ ধারণ করে। প্রায় ৪৪০ মিলিয়ন বছর আগে, বালটিকা এবং লাওরেন্টিয়া থেকে ইউরামেরিকা গঠিত হয়; তারপরে গন্ডোয়ানা যুক্ত হয়ে পাঞ্জিয়া গঠন করে। প্রায় ১৯০ মিলিয়ন বছর আগে, গন্ডোয়ানা এবং লাওরাশিয়া আটলান্টিক মহাসাগরের প্রসারের কারণে বিভক্ত হয়। অবশেষে, এবং পরবর্তিতে খুব শীঘ্রই, লাওরাশিয়া নিজেই আবার লাওরেন্টিয়া (উত্তর আমেরিকা) এবং ইউরেশীয় মহাদেশ মধ্যে বিভক্ত হয়। এই দুইয়ের মাঝে গ্রীনল্যান্ডের মাধ্যমে যথেষ্ট সময় ধরে ভূ-সংযোগ থাকে, ফলে এদের মাঝে প্রাণীজগত আদানপ্রদান চলতে থাকে। প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর আগে থেকে, সমুদ্র স্তরের হ্রাস বৃদ্ধির ফলে ইউরোপের প্রকৃত আকৃতি এবং এর অন্যান্য মহাদেশ যেমন এশিয়ার সাথে সংযোগ নির্ধারিত হয়। ইউরোপের বর্তমান আকৃতি প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে টারশিয়ারি যুগের শেষ ভাগে দেখতে পাওয়া যায়। জীববৈচিত্র্য ডান|থাম্ব|300px|ইউরোপ এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জীবভৌগোলিক অঞ্চল সহস্রাব্দ ধরে কৃষিজ মানুষের সাথে সাথে বসবাস করে, ইউরোপের প্রাণী ও উদ্ভিদ মানুষের উপস্থিতিও কার্যক্রম দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ফেনোস্ক্যান্ডিয়া এবং উত্তর রাশিয়া, বিভিন্ন জাতীয় উদ্যান ছাড়া, বর্তমানে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ইউরোপে কমই পাওয়া যায়। ইউরোপে মিশ্র বন বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এখানে বৃদ্ধির জন্য পরিবেশ খুব অনুকূল। উত্তরাঞ্চলে উপসাগরীয় প্রবাহ এবং উত্তর আটলান্টিক চালন মহাদেশকে উষ্ণ রাখে। দক্ষিণ ইউরোপকে একটি উষ্ণ, কিন্তু মৃদু জলবায়ু হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। এই অঞ্চলে প্রায়শই গ্রীষ্মকালে খরা হয়। এছাড়াও পর্বত ঢালের পরিবেশকে প্রভাবিত করে। কিছু পাহাড় (আল্পস, পাইরেনেস) পূর্ব-পশ্চিম ভিত্তিক এবং বায়ুকে মহাসাগর থেকে প্রচুর পানি অভ্যন্তর বহন করার সুযোগ করে দেয়। অন্যান্য গুলো (স্ক্যান্ডিনেভিয় পর্বতমালা, দিনারিদস, কার্পেথীয়, আপেন্নিস) দক্ষিণ-উত্তর ভিত্তিক এবং পাহাড়ে পড়া বৃষ্টি যেহেতু প্রাথমিকভাবে সমুদ্রের দিকে যায়, সেহেতু এই দিকে বনাঞ্চল ভালো হয়, আবার অপরদিকে পরিবেশ ততটা অনুকূল নয়। ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের প্রায়ই কোনো না কোনো সময়ে পশু পালিত হত, এবং প্রাক কৃষিজ কেটে ফেলায় মূল উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস্তুতন্ত্র ব্যাহত হয়। ইউরোপের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ সম্ভবত একসময় বন দ্বারা আবৃত ছিল। এটা ভূমধ্যসাগর থেকে আর্কটিক মহাসাগর পর্যন্ত প্রসারিত। যদিও ইউরোপের মূল বনের অর্ধেক বন শতাব্দী ধরে চলা অরণ্যবিনাশ-এর মাধ্যমে উজাড় হয়, তারপরেও ইউরোপে মোট জমির এক চতুর্থাংশে উপর বন আছে। যেমন স্ক্যান্ডিনেভিয়ার এবং রাশিয়ার তৈগা, ককেশাসের মিশ্র অতিবৃষ্টি অরণ্য এবং পশ্চিম ভূমধ্যসাগরের কর্ক ওক বন। সাম্প্রতিক সময়ে, বন উজাড় ক্রমশ কমে এসেছে এবং অনেক গাছ রোপণ করা হয়েছে। যাইহোক, অনেক ক্ষেত্রে মূল মিশ্র প্রাকৃতিক বন প্রতিস্থাপনে কনিফারে রোপিত হচ্ছে, কারণ তা দ্রুত বাড়ে। বৃক্ষরোপন এখন সুবিশাল এলাকা বিস্তার করে, কিন্তু বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখীর জন্য তা উৎকৃষ্ট আবাসস্থল নয়, কারণ তাতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও বৈচিত্র্যময় বন গঠন কাঠামো নেই। পশ্চিম ইউরোপে প্রাকৃতিক বনের পরিমাণ মাত্র ২–৩% বা তার কম, যা ইউরোপীয় রাশিয়ায় ৫–১০%। বনাঞ্চলে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম শতাংশের দেশ আইসল্যান্ড (১%), এবং বৃহত্তম ফিনল্যান্ড (৭৭%)। থাম্ব|বাম|300px|উলফগ্যাং ফ্রেই এবং রাইনার লসচ অনুযায়ী, ইউরোপ এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার ফ্লোরিস্টিক অঞ্চল শীতপ্রধান ইউরোপে, উভয় সূঁচালো এবং সরলবর্গীয় গাছ দ্বারা মিশ্র বন আধিপত্য দেখা যায়। মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি হলো বীচ ও ওক গাছ। উত্তরাঞ্চলে তৈগা একটি স্পুস–পাইন–বার্চ দ্বারা মিশ্র বন; আরও উত্তরে রাশিয়া এবং উত্তর স্ক্যান্ডিনেভিয়ার মধ্যে, তৈগা তুন্দ্রাকে জায়গা করে দেয় যে আর্কটিক অগ্রসরমান হয়। ভূমধ্যসাগরে, অনেক জলপাই গাছ রোপণ করা হয়েছে, যা খুব ভালোভাবে ঊষর জলবায়ুতে অভিযোজিত হয়েছে; আরো ব্যাপকভাবে দক্ষিণ ইউরোপে ভূমধ্যসাগরীয় সরলবর্গীয় চিরহরিৎ রোপণ করা হয়। আধা শুষ্ক ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অনেক ঝোপঝাড় দেখতে পাওয়া যায়। ইউরেশীয় তৃণভূমির পূর্ব-পশ্চিমে একটি সংকীর্ণ অংশ পূর্বে ইউক্রেন, দক্ষিণে রাশিয়া প্রসারিত হয়ে হাঙ্গেরিতে শেষ হয় এবং উত্তরে তৈগার মধ্যে অনুপ্রস্থভাবে পার দেয়। সবচেয়ে সাম্প্রতিক তুষার যুগে হিমবাহ এবং মানুষের উপস্থিতি ইউরোপীয় প্রাণীজগতের বিস্তার প্রভাবিত করে। ইউরোপের বহু অংশে সবচেয়ে বড় প্রাণী এবং শীর্ষ শিকারী প্রজাতি শিকার করার মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পশমতুল্য ম্যামথ নব্য প্রস্তর যুগের শেষের আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। এসময়ে নেকড়ে (মাংসাশী) এবং ভালুক বিপন্ন। একদা এরা ইউরোপের অধিকাংশ অংশে পাওয়া যেত। তবে, বন উজাড় এবং শিকার এই পশুদের আরোও এবং আরোও দূরে ঠেলে দেয়। মধ্যযুগ দ্বারা, ভালুকের আবাসস্থল যথেষ্ট বন আচ্ছাদনসহ অনধিগম্য পর্বত মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়। আজ, বাদামী ভালুক বলকান উপদ্বীপ, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, এবং রাশিয়া প্রাথমিকভাবে বাস করে; কিছু সংখ্যক ভালুক ইউরোপের অন্যান্য দেশে (অস্ট্রিয়া, পিরেনে ইত্যাদি) দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু এইসব অঞ্চলে বাসস্থান ধ্বংস কারণে বাদামি ভালুকের জনসংখ্যা খণ্ডিত এবং প্রান্তিক। উপরন্তু, মেরু ভালুক স্বালবার্ড পাওয়া যেতে পারে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার উত্তরে একটি নরওয়েজীয় দ্বীপমালা। নেকড়ে, বাদামি ভালুক পর ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিকারি প্রাণী, প্রাথমিকভাবে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ ও বলকানে এবং কিছু সংখ্যক পশ্চিম ইউরোপে (স্ক্যান্ডিনেভিয়া, স্পেন, ইত্যাদি) দেখতে পাওয়া যায়। থাম্ব|একদা ইউরেশিয়ার বড় নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চলে বিচরণ করা ইউরোপীয় বাইসন এখন পোল্যান্ড এবং বেলারুশের সীমান্তের বিয়ালওেযা বনে বাস করে।European bison, Wisent ইউরোপীয় বন্য বিড়াল, শিয়াল (বিশেষ করে লাল শিয়াল), বিভিন্ন প্রজাতির মার্টেনস, সজারু এবং বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ (যেমন সাপ) এবং উভচর, বিভিন্ন পাখি (পেঁচা, বাজপাখি এবং শিকারি পাখি) ইউরোপে দেখতে পাওয়া যায়। শামুক, শুককীট, মাছ, বিভিন্ন পাখি, এবং স্তন্যপায়ী যেমন তীক্ষ্ণদন্ত প্রাণী, হরিণ এবং শুয়োর গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় তৃণভোজী প্রাণী। এবং অন্যদের মধ্যে পাব্র্বত্য মূষিক, স্টেইনবক, হরিণসদৃশ পার্বত্য ছাগল পর্বতে বাস করে। বিভিন্ন পোকামাকড়, যেমন ছোট কচ্ছপের ত্বকের প্রজাপতি, জীব বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করে।BRYANT, S., THOMAS, C. and BALE, J. (1997), Nettle-feeding nymphalid butterflies: temperature, development and distribution. Ecological Entomology, 22: 390–398. বামন জলহস্তী এবং বামন হাতি বিলুপ্তি ভূমধ্য দ্বীপপুঞ্জের মানুষের নিকটতম আগমনের সাথে যুক্ত করা যায়। সামুদ্রিক প্রাণীসকল ইউরোপীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সামুদ্রিক উদ্ভিদ প্রধানত ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন। ইউরোপীয় সমুদ্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী জু প্ল্যাংকটন, বিভিন্ন চিংড়ি, স্কুইড, অক্টোপাস, মাছ, ডলফিন, এবং তিমি। কাউন্সিল অব ইউরোপের বার্ন কনভেনশন দ্বারা ইউরোপে জীব বৈচিত্র্য সুরক্ষিত হয়, যা ইউরোপীয় সম্প্রদায়ের সাথে সাথে অ-ইউরোপীয় দেশগুলো দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাজনৈতিক ভূগোল থাম্ব|ডান|250px| থাম্ব|ডান|250px|আধুনিক রাজনৈতিক মানচিত্রে ইউরোপ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ডান|থাম্ব|250px|জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বিভাগের দ্বারা ব্যবহৃত আঞ্চলিক গোষ্ঠী। ডান|থাম্ব|250px|ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক অনুযায়ী আঞ্চলিক গোষ্ঠী থাম্ব|ডান|250px|ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং তার পদপ্রার্থী দেশ থাম্ব|250px|ইউরোভোক (ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্ঞানভাণ্ডার) অনুযায়ী ইউরোপ:নীল – উত্তর ইউরোপসবুজ – পশ্চিম ইউরোপলাল – মধ্য ও পূর্ব ইউরোপহলুদ – দক্ষিণ ইউরোপধূসর – অঞ্চলসমূহ যা ইউরোপের অংশ বলে মনে হয় না থাম্ব|ডান|250px|মানচিত্রে কাউন্সিল অব ইউরোপ-এর সদস্য জাতি নীলে এবং প্রতিষ্ঠাকালীন জাতি হলুদে দেখাচ্ছে থাম্ব|250px|মানচিত্রে ইইউ-র ইউরোপীয় সদস্যপদ এবং ন্যাটো দেখাচ্ছে থাম্ব|বাম|সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ইউরোপের উপবিভাগhttp://www.gla.ac.uk/0t4/crcees/files/summerschool/readings/school10/reading_list/Sinnhuber.pdf নিচের তালিকায় সমস্ত সত্তা বিভিন্ন সাধারণ সংজ্ঞা, এমনকি আংশিকভাবে পতিত, ভৌগোলিক বা রাজনৈতিকভাবে ইউরোপে রয়েছে। প্রদর্শিত তথ্য সূত্র প্রতি ক্রস রেফারেন্সড নিবন্ধ অনুসারে। পতাকা প্রতীক নাম আয়তন(কিমি²) জনসংখ্যা জনসংখ্যার ঘনত্ব(প্রতি কিমি²) রাজধানী দাপ্তরিক ভাষায় নাম আলবেনিয়া ২৮,৭৪৮ ২,৮৩১,৭৪১ ৯৮.৫ তিরানা Shqipëria অ্যান্ডোরা ৪৬৮ ৬৮,৪০৩ ১৪৬.২ আন্দরা লা ভেলিয়া Andorra আর্মেনিয়া ২৯,৮০০ ৩,২২৯,৯০০ ১০১ ইয়েরেভান Hayastan অস্ট্রিয়া ৮৩,৮৫৮ ৮,১৬৯,৯২৯ ৯৭.৪ ভিয়েনা Österreich আজারবাইজান ৮৬,৬০০ ৯,১৬৫,০০০ ১০৫.৮ বাকু Azǝrbaycan বেলারুশ ২০৭,৫৬০ ৯,৪৫৮,০০০ ৪৫.৬ মিন্‌স্ক Belarus বেলজিয়াম ৩০,৫২৮ ১১,০০৭,০০০ ৩৬০.৬ ব্রাসেল্‌স België/Belgique/Belgien বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ৫১,১২৯ ৩,৮৪৩,১২৬ ৭৫.২ সারায়েভো Bosna i Hercegovina বুলগেরিয়া ১১০,৯১০ ৭,৬২১,৩৩৭ ৬৮.৭ সফিয়া Bălgarija ক্রোয়েশিয়া ৫৬,৫৪২ ৪,৪৩৭,৪৬০ ৭৭.৭ জাগরেব Hrvatska সাইপ্রাস ৯,২৫১ ৭৮৮,৪৫৭ ৮৫ নিকোসিয়া Kýpros/Kıbrıs চেক প্রজাতন্ত্র ৭৮,৮৬৬ ১০,২৫৬,৭৬০ ১৩০.১ প্রাগ Česká republika ডেনমার্ক ৪৩,০৯৪ ৫,৫৬৪,২১৯ ১২৯ কোপেনহেগেন Danmark ইস্তোনিয়া ৪৫,২২৬ ১,৩৪০,১৯৪ ২৯ তাল্লিন Eesti ফিনল্যান্ড ৩৩৬,৫৯৩ ৫,১৫৭,৫৩৭ ১৫.৩ হেলসিঙ্কি Suomi/Finland ফ্রান্স ৫৪৭,০৩০ ৬৩,১৮২,০০০ ১১৫.৫ প্যারিস France জর্জিয়া ৬৯,৭০০ ৪,৬৬১,৪৭৩ ৬৪ তিবি‌লিসি Sakartvelo জার্মানি ৩৫৭,০২১ ৮৩,২৫১,৮৫১ ২৩৩.২ বার্লিন Deutschland গ্রিস ১৩১,৯৫৭ ১১,১২৩,০৩৪ ৮০.৭ অ্যাথেন্স Elláda হাঙ্গেরি ৯৩,০৩০ ১০,০৭৫,০৩৪ ১০৮.৩ বুদাপেস্ট Magyarország আইসল্যান্ড ১০৩,০০০ ৩০৭,২৬১ ২.৭ রেইকিয়াভিক Ísland আয়ারল্যান্ড ৭০,২৮০ ৪,২৩৪,৯২৫ ৬০.৩ ডাবলিন Éire/Ireland ইতালি ৩০১,২৩০ ৫৯,৫৩০,৪৬৪ ১৯৭.৭ রোম Italia কাজাখস্তান ২,৭২৪,৯০০ ১৫,২১৭,৭১১ ৫.৬ আস্তানা Qazaqstan/Kazahstan লাতভিয়া ৬৪,৫৮৯ ২,০৬৭,৯০০ ৩৪.২ রিগা Latvija লিশটেনস্টাইন ১৬০ ৩২,৮৪২ ২০৫.৩ ফাডুৎস Liechtenstein লিথুয়ানিয়া ৬৫,২০০ ২,৯৮৮,৪০০ ৪৫.৮ ভিলনিউস Lietuva লুক্সেমবুর্গ ২,৫৮৬ ৪৪৮,৫৬৯ ১৭৩.৫ লুক্সেমবুর্গ Lëtzebuerg/Luxemburg/Luxembourg ম্যাসেডোনিয়া ২৫,৭১৩ ২,০৫৪,৮০০ ৮১.১ স্কপইয়ে Makedonija মাল্টা ৩১৬ ৩৯৭,৪৯৯ ১,২৫৭.৯ ভাল্লেত্তা Malta মলদোভা ৩৩,৮৪৩ ৪,৪৩৪,৫৪৭ ১৩১.০ কিশিনেভ Moldova মোনাকো ১.৯৫ ৩১,৯৮৭ ১৬,৪০৩.৬ মোনাকো Monaco মন্টিনিগ্রো ১৩,৮১২ ৬১৬,২৫৮ ৪৪.৬ পোডগোরিকা Crna Gora নেদারল্যান্ডস ৪১,৫২৬ ১৬,৯০২,১০৩ ৩৯৩.০ আমস্টারডাম Nederland নরওয়ে ৩৮৫,১৭৮ ৫,০১৮,৮৩৬ ১৫.৫ অসলো Norge/Noreg পোল্যান্ড ৩১২,৬৮৫ ৩৮,৬২৫,৪৭৮ ১২৩.৫ ওয়ার্সা Polska পর্তুগাল ৯১,৫৬৮ ১০,৪০৯,৯৯৫ ১১০.১ লিসবন Portugal রোমানিয়া ২৩৮,৩৯১ ২১,৬৯৮,১৮১ ৯১.০ বুখারেস্ট România রাশিয়া ১৭,০৭৫,৪০০ ১৪২,২০০,০০০ ৮.৩ মস্কো Rossiya সান মারিনো ৬১ ২৭,৭৩০ ৪৫৪.৬ সান মারিনো San Marino সার্বিয়া ৮৮,৩৬১ ৭,১২০,৬৬৬ ৯১.৯ বেলগ্রেড Srbija স্লোভাকিয়া ৪৮,৮৪৫ ৫,৪২২,৩৬৬ ১১১.০ ব্রাতিস্লাভা Slovensko স্লোভেনিয়া ২০,২৭৩ ২,০৫০,১৮৯ ১০১ লিউব্লিয়ানা Slovenija স্পেন ৫০৪,৮৫১ ৪৭,০৫৯,৫৩৩ ৯৩.২ মাদ্রিদ España সুইডেন ৪৪৯,৯৬৪ ৯,০৯০,১১৩ ১৯.৭ স্টকহোম Sverige সুইজারল্যান্ড ৪১,২৯০ ৭,৫০৭,০০০ ১৭৬.৪ বের্ন Schweiz/Suisse/Svizzera/Svizra তুরস্ক ৭৮৩,৫৬২ ৭৫,৬২৭,৩৮৪ ৯৮ আঙ্কারা Türkiye ইউক্রেন ৬০৩,৭০০ ৪৮,৩৯৬,৪৭০ ৮০.২ কিয়েভ Ukrajina যুক্তরাজ্য ২৪৪,৮২০ ৬১,১০০,৮৩৫ ২৪৪.২ লন্ডন United Kingdom ভ্যাটিকান সিটি ০.৪৪ ৯০০ ২,০৪৫.৫ ভ্যাটিকান সিটি Città del Vaticano মোট ১০,১৮০,০০০ ৭৪২,০০০,০০০ ৭০ নিচে উল্লিখিত রাষ্ট্রগুলো সীমাবদ্ধ বা শুন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দ্বারা কার্যত স্বাধীন দেশ। তাদের কেউ জাতিসংঘের সদস্য নয়ঃ পতাকা প্রতীক Name আয়তন(কিমি²) জনসংখ্যা(২০০২-এর ১ জুলাই আনু.) জনসংখ্যার ঘনত্ব(প্রতি কিমি²) রাজধানী আবখাজিয়া ৮,৪৩২ ২১৬,০০০ ২৯ সুখুমি কসোভো ১০,৮৮৭১,৮০৪,৮৩৮ ২২০ প্রিস্টিনা নাগর্নো-কারাবাখ ১১,৪৫৮ ১৩৮,৮০০ ১২ স্তেপানাকের্ট উত্তর সাইপ্রাস ৩,৩৫৫ ২৬৫,১০০ ৭৮ নিকোসিয়া N/A দক্ষিণ ওশেটিয়া ৩,৯০০ ৭০,০০০ ১৮ স্খিনভালি N/A ট্রান্সনিস্ট্রিয়া ৪,১৬৩ ৫৩৭,০০০ ১৩৩ তিরাস্পোল বিস্তৃত স্বায়ত্তশাসন সহ বিভিন্ন ডিপেন্ডেন্সি এবং অনুরূপ ভূখণ্ড ইউরোপে রয়েছে। উল্লেখ্য যে, এই তালিকায় যুক্তরাজ্যের সাংবিধানিক দেশগুলো, জার্মানি ও অস্ট্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজ্য, এবং স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবংচ সোভিয়েত পরবর্তি প্রজাতন্ত্র ও সার্বিয়া প্রজাতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত নয়। পতাকা সহ ভূখণ্ডের নাম আয়তন(কিমি²) জনসংখ্যা(২০০২-এর ১ জুলাই আনু.) জনসংখ্যার ঘনত্ব(প্রতি কিমি²) রাজধানী (ফিনল্যান্ড) ১৩,৫১৭ ২৬,০০৮ ১৬.৮ মারিহাম (ডেনমার্ক) ১,৩৯৯ ৪৬,০১১ ৩২.৯ তোরশাভ (যু.রা.) ৫.৯ ২৭,৭১৪ ৪,৬৯৭.৩ জিব্রাল্টার (যু.রা.) ৭৮ ৬৪,৫৮৭ ৮২৮.০ সেন্ট পিটার পোর্ট (যু.রা.) ৫৭২ ৭৩,৮৭৩ ১২৯.১ ডগলাস (যু.রা.) ১১৬ ৮৯,৭৭৫ ৭৭৩.৯ সেন্ট হেলিয়ার একত্রীকরণ থাম্ব|ডান|300px|ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কমনওয়েলথভুক্ত স্বাধীন রাষ্ট্র ইউরোপীয় একত্রীকরণ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ইউরোপে দেশগুলোর রাজনৈতিক, আইনত, অর্থনৈতিক (এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক) একত্রীকরণের প্রক্রিয়া। বর্তমান দিনে, ইউরোপীয় একত্রীকরণ প্রাথমিকভাবে পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপ এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের কমনওয়েলথভুক্ত স্বাধীন রাষ্ট্র এবং সাবেক সোভিয়েত অধিকাংশ দেশের মাঝে কাউন্সিল অব ইউরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে মাধ্যমে। অর্থনীতি থাম্ব|300px|European and bordering nations by GDP (nominal) per capita in 2012 মহাদেশ হিসেবে, ইউরোপের অর্থনীতি বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম এবং ব্যবস্থাপনার অধীনে সম্পদ দ্বারা পরিমাপে $৩২.৭ ট্রিলিয়ন সহকারে ২০০৮ সালে এটি সবচেয়ে ধনী অঞ্চল, যা উত্তর আমেরিকার $২৭.১ ট্রিলিয়নের তুলনায় বেশি। ২০০৯ সালেও ইউরোপ সবচেয়ে ধনী অঞ্চল ছিল। ব্যবস্থাপনার অধীনে এর $৩৭.১ ট্রিলিয়ন সম্পদ বিশ্বের মোট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিনিধিত্ব করে। এটা বিভিন্ন অঞ্চলে একটি যেথায় বছরের শেষ প্রাক-সংকট শিখর সম্পদ অতিক্রান্ত করে। অন্যান্য মহাদেশের মত, ইউরোপেও দেশগুলোর মধ্যে সম্পদের বৃহৎ প্রকরণ আছে। ধনী দেশগুলো পশ্চিমে অবস্থিত; কিছু মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় অর্থনীতিগুলো এখনও সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুগোস্লাভিয়ার পতন থেকে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ২৮টি ইউরোপীয় দেশ নিয়ে গঠিত একটি আন্তঃসরকারি গোষ্ঠী, যা বিশ্বের বৃহত্তম একক অর্থনৈতিক এলাকা। ১৮টি ইইউ দেশ তাদের সাধারণ মুদ্রা হিসাবে ইউরো ব্যবহার করে। জিডিপিতে জাতীয় অর্থনীতি (পিপিপি) অনুসারে বিশ্বের বৃহত্তম জাতীয় অর্থনীতির শীর্ষ দশে পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ রয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত (সিআইএ অনুসারে তালিকা): জার্মানি (৫), ইউকে (৬), রাশিয়া (৭), ফ্রান্স (৮), এবং ইতালি (১০)। আয়ের বিচারে ইউরোপের অনেক দেশের মধ্যে বিশাল বৈষম্য আছে। মাথাপিছু জিডিপির পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে ধনী মোনাকো তার মাথাপিছু জিডিপি মার্কিন $১৭২,৬৭৬ (২০০৯) এবং দরিদ্রতম মলদোভা তার মাথাপিছু জিডিপি মার্কিন $১,৬৩১ (২০১০)।The World Bank DataBank | Explore . Create . Share মোনাকো বিশ্ব ব্যাংক রিপোর্ট অনুযায়ী মাথাপিছু জিডিপি পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ। প্রাক–১৯৪৫: শিল্পকৌশল বৃদ্ধি সামন্তবাদের শেষ থেকে পুঁজিবাদ পশ্চিমা বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করেছে।Capitalism . Encyclopædia Britannica. ব্রিটেন থেকে, এটি ধীরে ধীরে ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮ শতকের শেষে শিল্প বিপ্লব ইউরোপে বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে, এবং ১৯ শতকে পশ্চিম ইউরোপে শিল্পায়ন শুরু হয়। অর্থনীতি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে তা পুনরুউদ্ধার হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, আবারও, ইউরোপের শিল্প অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৪৫–১৯৯০: স্নায়ু যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ধ্বংসাবস্থায় ছিল,Dornbusch, Rudiger; Nölling, Wilhelm P.; Layard, Richard G. Postwar Economic Reconstruction and Lessons for the East Today, pg. 117 এবং পরবর্তি দশকগুলোতেও আপেক্ষিক অর্থনৈতিক পতন অব্যাহত থাকে। ইতালিও একটি দরিদ্র অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে ছিল কিন্তু ১৯৫০-এর দশকে তা উচ্চ স্তরের প্রবৃদ্ধির দ্বারা পুনরুদ্ধার করে। পশ্চিম জার্মানি দ্রুত উঠে দাঁড়ায় এবং ১৯৫০-এর দশকে যুদ্ধপূর্ব মাত্রা থেকে উৎপাদন দ্বিগুণ করে।Dornbusch, Rudiger; Nölling, Wilhelm P.; Layard, Richard G. Postwar Economic Reconstruction and Lessons for the East Today, pg. 29 ফ্রান্সও দ্রুত বৃদ্ধি এবং আধুনিকায়নের মাধ্যমে দারুণভাবে ফিরে আসে; পরে স্পেনে, ফ্রাঙ্কোর নেতৃত্বে উঠে আসে, তারা ১৯৬০-এর দশকে বিশাল অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নথিভুক্ত হয়, যাকে স্পেনীয় অলৌকিক ঘটনা বলা হয়।Harrop, Martin. Power and Policy in Liberal Democracies, pg. 23 সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে আসে এবং ফলে তারা পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহায়তা পরিষদ (COMECON)-এর সদস্য হয়।"Germany (East)", Library of Congress Country Study, Appendix B: The Council for Mutual Economic Assistance থাম্ব|ডান|১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতন। যে দেশগুলো মুক্ত বাজার ব্যবস্থা বজায় রাখে, তাদের মার্শাল পরিকল্পনার অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ পরিমাণ সাহায্য দেয়। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের অর্থনীতির সংযোগ একত্রিত করে, যা ইইউ-র ভিত্তি প্রদান করে এবং সীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধি করে। এটা দ্রুত অর্থনীতির উন্নতিতে সাহায্য করে, যখন কমকনের দেশগুলো সংগ্রাম করছিল, যা একটি বড় কারণ ছিলো স্নায়ু যুদ্ধের খরচ। ১৯৯০-এর আগ পর্যন্ত, ইউরোপীয় সম্প্রদায় ৬ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য থেকে ১২-তে প্রসারিত হয়। পশ্চিম জার্মানির অর্থনীতি পুনরুত্থিত হবার ফলে এটি যুক্তরাজ্যকে টপকে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে আবির্ভূত হয়। ১৯৯১–২০০৭: একত্রীকরণ ও পুনর্মিলন ১৯৯১ সালে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে কমিউনিজমের পতন দিয়ে পরবর্তি-সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মুক্ত বাজার সংস্কারের শুরু: পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, এবং স্লোভেনিয়া, যুক্তিসঙ্গতভাবে দ্রুত মানিয়ে নেয়, ইউক্রেন এবং রাশিয়ায় এই প্রক্রিয়াটি এখনও বিদ্যমান। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি ১৯৯০ সালে পুনরায় একত্রিত হবার পরে, পশ্চিম জার্মানির অর্থনীতি ধুঁকছিলো যেহেতু একে পূর্ব জার্মানিকে সহায়তা এবং অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করতে হয়েছিল। থাম্ব|ডান|ইউরোস্ট্যাট অনুযায়ী ২০১০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বেকারত্ব। সহস্রাব্দের পরিবর্তনের সময়, ইইউ ইউরোপের অর্থনীতি আধিপত্য বিস্তার করে পাঁচটি বৃহত্তম ইউরোপীয় অর্থনীতির সমন্বয়ে গঠনের মাধ্যমে যেমন জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, ও স্পেন। ১৯৯৯ সালে, ইইউ-এর ১৫টি সদস্যের মধ্যে ১২টি সদস্য রাষ্ট্র ইউরোজোনে যোগদান করে, তাদের সাবেক জাতীয় মুদ্রা পরিবর্তন করে সাধারণ ইউরো গ্রহণ করার মাধ্যমে। ইউরোজোনের বাইরে থাকা বেছে নেওয়া তিনটি দেশ হলো: যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, এবং সুইডেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০০৮–২০১০: অর্থনৈতিক মন্দা ২০০৯-এর জানুয়ারিতে ইউরোস্ট্যাটের তথ্য প্রকাশ দ্বারা নিশ্চিত হয় যে, ২০০৮ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ইউরোজোন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়ে। অধিকাংশ অঞ্চলের এর প্রভাব পড়ে।Thanks to the Bank it's a crisis; in the eurozone it's a total catastrophe. Telegraph. 8 March 2009. ২০১০ সালের প্রথম দিকে, সার্বভৌম ঋণ সঙ্কটের ভয় ইউরোপের কিছু দেশে, বিশেষ করে গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগালে আক্রমণ করে। এর ফলে, ইউরোজোনের নেতৃস্থানীয় দেশগুলো কিছু পদক্ষেপ, বিশেষ করে গ্রিসের জন্য গ্রহণ করা হয়। ইইউ-২৭ এর বেকারত্বের হার ২০১২ সালের এপ্রিলে ১০.৩% ছিল। সাম্প্রতিক বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকরা কাজ খুঁজে পায় না।Europe's New Lost Generation . Foreign Policy. 13 July 2009. ২০১২ সালের এপ্রিলে, ইইউ২৭-এ ১৫–২৪ বছর বয়সী মধ্যে বেকারত্বের হার ২২.৪% ছিল।Unemployment statistics. Eurostat. April 2012. জনপরিসংখ্যান থাম্ব|260px|বাম|২০১০ সালে ইউরোপ জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং হ্রাসCIA.gov CIA population growth rankings, CIA World Factbook রেনেসাঁস থেকে, ইউরোপ বিশ্বের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও সামাজিক আন্দোলনে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছে। পশ্চিমা বিশ্বেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলো উদ্ভাবিত হয়, বিশেষ করে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।Encyclopædia Britannica's Great Inventions , Encyclopædia Britannica"101 gadgets that changed the world ". The Independent. 3 November 2007. প্রায় ৭০ মিলিয়ন (৭ কোটি) ইউরোপীয় ১৯১৪ থেকে ১৯৪৫-এর মধ্যে যুদ্ধ, সহিংসতা ও দুর্ভিক্ষে মারা যায়।Gary Rodger Weaver (1998). Culture, Communication, and Conflict. Simon & Schuster. p.474. . ইউরোপীয় জনমিতি মধ্যে কিছু বর্তমান এবং অতীত বিষয়; ধর্মীয় প্রবাস, জাতি সম্পর্ক, অর্থনৈতিক অভিবাসন, নিম্নগামী জন্মহার এবং বার্ধক্যগ্রস্ত জনসংখ্যা অন্তর্ভুক্ত আছে। কিছু দেশে, যেমন আয়ারল্যান্ড এবং পোল্যান্ডে গর্ভপাত করার সুযোগ সীমাবদ্ধ। এটা মাল্টায় অবৈধ। উপরন্তু, তিনটি ইউরোপীয় দেশ (নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, এবং সুইজারল্যান্ড) এবং আন্দালুসিয়ার স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশে (স্পেন)"Andalucía permitirá por ley la eutanasia pasiva para enfermos incurables", 20 Minutos. 31 May 2008."Andalusia euthanasia law unnecessary, expert warns" , Catholic News Agency. 26 June 2008. অসুস্থ মানুষের জন্য স্বেচ্ছায় যন্ত্রণাহীন মৃত্যুর সীমিত আকারে অনুমতি দেওয়া হয়। থাম্ব|ডানে_উপরে|উৎসবের সময় মোরাভিয়ান স্লোভাক পোশাক ২০০৫ সালে, ইউরোপে জনসংখ্যা জাতিসংঘের মতে ৭৩১ মিলিয়ন বলে অনুমান করা হয়েছিল, যা বিশ্বের জনসংখ্যার এক-নবমাংশে তুলনায় সামান্য বেশি। এক শতাব্দী আগে, ইউরোপ বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ ছিল।World Population Growth, 1950–2050 . Population Reference Bureau. ইউরোপের জনসংখ্যা গত শতাব্দীতে বেড়েছে, কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে (বিশেষ করে আফ্রিকা এবং এশিয়ায়) জনসংখ্যা অনেক দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মহাদেশগুলোর মধ্যে, ইউরোপে জনসংখ্যার ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত উচ্চ, দ্বিতীয় অবস্থানে শুধুমাত্র এশিয়ার পরে। ইউরোপের (এবং বিশ্বের) সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ মোনাকো। প্যান ও ফেল (২০০৪) গণনা করে, ৮৭ স্বতন্ত্র "ইউরোপের জাতি", যার মাঝে ৩৩টি কমপক্ষে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী, অবশিষ্ট ৫৪টি জাতিগত সংখ্যালঘু।Christoph Pan, Beate Sibylle Pfeil, Minderheitenrechte in Europa. Handbuch der europäischen Volksgruppen (2002). Living-Diversity.eu, English translation 2004. জাতিসংঘ জনসংখ্যা অভিক্ষেপ মতে, ইউরোপের জনসংখ্যা ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৭% হতে পারে, অথবা ৬৫৩ মিলিয়ন মানুষ (মাঝারি বৈকল্পিক, ৫৫৬ থেকে ৭৭৭ মিলিয়ন কম এবং উচ্চ রূপের মধ্যে যথাক্রমে)। এই প্রেক্ষাপটে উর্বরতা হার সম্পর্কিত বৈষম্য অঞ্চলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বিদ্যমান। শিশু জন্মদান জন্মদানে সক্ষম মহিলা প্রতি গড় শিশুর সংখ্যা ১.৫২। কিছু সূত্র মতে, See also: এই হার ইউরোপের মুসলমানদের মধ্যে বেশি। জাতিসংঘ পূর্বানুমান মতে, দেশান্তর এবং নিম্ন জন্মহারের ফলে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের নিয়মিত জনসংখ্যা হ্রাস পাবে।UN predicts huge migration to rich countries. Telegraph. 15 March 2007. থাম্ব|210px|স্পেনে গ্যালিশিয় ব্যাগপাইপার বা গাইতেরস আইওএম-এর রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বব্যাপী অভিবাসীদের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ৭০.৬ মিলিয়ন মানুষ ইউরোপে আসে।"Rich world needs more foreign workers: report", FOXNews.com. 2 December 2008. ২০০৫ সালে, ইইউ সামগ্রিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি ছিল অভিবাসন থেকে ১.৮ মিলিয়ন মানুষ। যা ইউরোপের মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রায় ৮৫%। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আফ্রিকা থেকে বৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য কাজ কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা করে।"EU job centres to target Africans". BBC News, 8 February 2007."50 million invited to Europe". Daily Express, 3 January 2009. ২০০৮ সালে, ৬৯৬,০০০ জনকে ইউ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়, যা পূর্ববর্তী বছর থেকে কম (৭০৭,০০০)।"EU27 Member States granted citizenship to 696 000 persons in 2008 " (PDF). Eurostat. 6 July 2010. ইউরোপ থেকে দেশান্তর হওয়া শুরু হয় ১৬ শতকে স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ বসতি স্থাপকারীদের মাধ্যমে, এবং ১৭ শতকের মধ্যে ফরাসি এবং ইংরেজি ঔপনিবেশিকদের সাথে। কিন্তু এর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ছিল, ১৯ শতকের মধ্যে ব্যাপক দেশান্তর শুরু হয় যখন লক্ষ লক্ষ দরিদ্র পরিবার ইউরোপ ছেড়ে যায়। আজ, ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত বিশাল জনসংখ্যা প্রতি মহাদেশে পাওয়া যায়। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূতরা উত্তর আমেরিকায় প্রাধান্য বিস্তার করে, ও দক্ষিণ আমেরিকায় কম মাত্রায় (বিশেষ করে উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা, চিলি এবং ব্রাজিলে, অন্যান্য অধিকাংশ ল্যাটিন আমেরিকান দেশে ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা আছে)। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে বৃহৎ ইউরোপীয় উদ্ভূত জনগোষ্ঠী আছে। আফ্রিকায় কোনো দেশেই ইউরোপীয়-উদ্ভূত সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, (ব্যতিক্রম কেপ ভার্দ এবং সম্ভবত সাঁউ তুমি ও প্রিন্সিপি বাদে, প্রসঙ্গের উপর নির্ভর করে), কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু আছে, যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ। এশিয়ায়, ইউরোপীয়-উদ্ভূত জনগোষ্ঠী উত্তর এশিয়ায় (বিশেষ করে রুশরা), উত্তর কাজাখস্তান ও ইসরাইলের কিছু অংশে প্রাধান্য বিস্তার করে।Robert Greenall, Russians left behind in Central Asia, BBC News, 23 November 2005 উপরন্তু, আন্তর্মহাদেশীয় বা ভৌগোলিক দিক থেকে এশিয়ার দেশগুলোতে যেমন জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, সাইপ্রাস এবং তুরস্ক-এ ঐতিহাসিকভাবে ইউরোপীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ, যথেষ্ট জেনেটিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য সঙ্গে সম্পর্কিত জনসংখ্যা আছে। ভাষা থাম্ব|মানচিত্রে প্রধান ইউরোপীয় ভাষার বণ্টন ইউরোপীয় ভাষাসমূহ বেশিরভাগই তিনটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে: রোমান্স ভাষাসমূহ, রোমান সাম্রাজ্যের লাতিন থেকে উদ্ভূত; জার্মানিয় ভাষাসমূহ, যার পূর্বপুরুষ ভাষা দক্ষিণ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার থেকে এসেছে; এবং স্লাভীয় ভাষাসমূহ। স্লাভীয় ভাষাসমূহ ইউরোপের স্থানীয়দের দ্বারা সবচেয়ে বেশি কথ্য, এসব ভাষায় মধ্য, পূর্ব, এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে কথা বলা হয়। রোমান্স ভাষায় মধ্য বা পূর্ব ইউরোপ এবং রোমানিয়া ও মলদোভা সহ, প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপে কথা বলা হয়। জার্মানিয় ভাষাসমূহ উত্তরাঞ্চলীয় ইউরোপ, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও মধ্য ইউরোপের কিছু অংশে কথ্য হয়। তিনটি প্রধান গোষ্ঠীর বাইরে অন্য অনেক ভাষা ইউরোপের মধ্যে বিদ্যমান। অন্যান্য ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা অন্তর্ভুক্ত বাল্টিক গোষ্ঠী (যা, লাটভীয় ও লিথুয়ানিয়), কেল্টীয় গোষ্ঠী (যা, আইরিশ, স্কট্‌স গ্যালিক, মানক্স, ওয়েলশ, কর্নিশ, ও ব্রেটন), গ্রিক, আর্মেনীয়, ও আলবেনীয়। উপরন্তু, উরালীয় ভাষাসমূহ-এর একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী (এস্তোনীয়, ফিনীয়, ও হাঙ্গেরীয়) ইস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ও হাঙ্গেরিতে প্রধানত কথিত হয়, যখন কার্তভেলিয়ান ভাষাসমূহ (জর্জিয়, মিনগ্রেলিয়ান, ও সভান), জর্জিয়ায় প্রাথমিকভাবে কথ্য হয়, এবং দুইটি অন্যান্য ভাষা পরিবারের উত্তর ককেশাসে বিদ্যমান (বলা হয় উত্তরপূর্ব ককেশীয়, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চেচেন, আভার ও লেযগিন এবং উত্তর-পশ্চিম ককেসীয়, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আদিগে)। মল্টিয় একমাত্র সেমিটিক ভাষা যা ইইউর দাপ্তরিক ভাষা, অন্যদিকে বাস্ক একমাত্র বিছিন্ন ইউরোপীয় ভাষা। তুর্কীয় ভাষাসমূহ-এর অন্তর্ভুক্ত আজারবাইজানি ও তুর্কি, এর সাথে রাশিয়ায় সংখ্যালঘু জাতির ভাষা। বহুভাষাবাদ এবং আঞ্চলিক ও সংখ্যালঘু ভাষার সুরক্ষা এসময়ে ইউরোপে রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃত। কাউন্সিল অব ইউরোপ ইউরোপে ভাষা অধিকারের জন্য একটি আইনি কাঠামো গঠন করে। ধর্ম থাম্ব|ভ্যাটিকান সিটিতে সান পিয়েত্রোর বাসিলিকা, ইউরোপের বৃহত্তম রোমান ক্যাথলিক গির্জা ঐতিহাসিকভাবে, ইউরোপে ধর্ম এর শিল্প, সংস্কৃতি, দর্শন ও আইনের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। ইউরোপের বৃহত্তম ধর্ম খ্রিস্ট ধর্ম, ৭৬.২% ভাগ ইউরোপীয় খ্রিষ্টান, এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত ক্যাথলিক, ইস্টার্ন অর্থোডক্স এবং প্রোটেস্ট্যান্ট গীর্জা। এছাড়াও ইসলাম মূলত বলকান এবং পূর্ব ইউরোপের কেন্দ্রীভূত (বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, আলবেনিয়া, কসোভো, কাজাখস্তান, উত্তর সাইপ্রাস, তুরস্ক, আজারবাইজান, উত্তর ককেশাস, এবং ভলগা-ইউরাল অঞ্চল)। অন্যান্য ধর্মের মধ্যে ইহুদি ধর্ম, হিন্দুধর্ম, এবং বৌদ্ধ ধর্ম সংখ্যালঘু ধর্ম (যদিও তিব্বতী বৌদ্ধ রাশিয়ার কালমাকিয়া প্রজাতন্ত্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম)। ২০ শতকের আন্দোলন মাধ্যমে নিও প্যাগানবাদের পুনর্জন্ম হয়। ইউরোপ তুলনামূলকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ মহাদেশে পরিণত হয়েছে, ধর্মহীন, নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদী মানুষের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা অনুপাত মাধ্যমে, আসলে যা পশ্চিমা বিশ্বের মাঝে বৃহত্তম। বিপুল সংখ্যক স্ব-বর্ণিত ধর্মহীন মানুষ চেক প্রজাতন্ত্র, ইস্তোনিয়া, সুইডেন, জার্মানি (পূর্ব), এবং ফ্রান্সে রয়েছে। সংস্কৃতি থাম্ব|পিয়ের-অগাস্ট রেনয়র-এর Dance at Le Moulin de la Galette, ১৮৭৬ ইউরোপের সংস্কৃতি একটি ধারাবাহিক সংস্কৃতির অধিক্রমণ হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে; সাংস্কৃতিক মিশ্রণ মহাদেশ জুড়ে বিদ্যমান। সাংস্কৃতিক উদ্ভাবন এবং আন্দোলন, কখনও কখনও একে অপরের সঙ্গে মতভেদ হয়। সুতরাং সাধারণ সংস্কৃতি বা অভিন্ন মূল্যবোধ-এর ব্যাপারটি বেশ জটিল। ঐতিহাসিক হিলারী বেলকের মতে, রোমান সংস্কৃতির অবশিষ্ট চিহ্ন এবং খ্রীষ্টান ধারণার উপর কয়েক শতাব্দী ধরে ইউরোপের মানুষ তাদের আত্ম-পরিচয় ভিত্তি করে গড়ে উঠে, কারণ অনেক ইউরোপীয় ব্যাপী সামরিক জোট ধর্মীয় প্রকৃতির ছিল, ক্রুসেড (১০৯৫–১২৯১), রিকনকুইসতার (৭১১–১৪৯২), লেপান্তোর যুদ্ধ (১৫৭১)।Hilarie Belloc, Europe and the Faith, Chapter I আরও দেখুন ইউরোপের ইতিহাস ইউরোপীয় দেশগুলোর তালিকা জনসংখ্যা অনুসারে ইউরোপের শহরের তালিকা নোট তথ্যসূত্র National Geographic Society (2005). National Geographic Visual History of the World. Washington, D.C.: National Geographic Society. . বহিঃসংযোগ কাউন্সিল অব ইউরোপ ইউরোপীয় ইউনিয়ন কলম্বিয়া গ্যাজেটার অব দ্য ওয়ার্ল্ড অনলাইন কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস "ইউরোপ পরিচিতি" লোনলি প্ল্যানেট ভ্রমণ গাইড এবং তথ্য থেকে। বিষয়শ্রেণী:মহাদেশ বিষয়শ্রেণী:সাংস্কৃতিক ধারণা
দার্শনিক
https://bn.wikipedia.org/wiki/দার্শনিক
দার্শনিক হলো এমন একজন ব্যক্তি যিনি জ্ঞানের অন্তর্নিহিত ভিত্তি, প্রকৃতি এবং সীমাবদ্ধতা, সত্য, বাস্তবতা, নৈতিকতা, চেতনা, ভাষা এবং যুক্তি সম্পর্কে প্রশ্নের সাথে যুক্ত একটি শাখা অধ্যয়ন করেন, যাকে দর্শন বলা হয়। দার্শনিকরা সাধারণত এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজে পেতে যুক্তি, যুক্তি এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করেন। দর্শনের অনেকগুলি বিভিন্ন শাখা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: থাম্ব|231x231পিক্সেল| Aristotle নৈতিকতা: ভাল এবং মন্দের প্রকৃতি, এবং সত্য এবং ন্যায়পরায়ণতার মানদণ্ড। যুক্তিবিদ্যা: যুক্তি এবং যুক্তি সম্পর্কে অধ্যয়ন। জ্ঞানতত্ত্ব: জ্ঞানের প্রকৃতি এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অধ্যয়ন। ভাষাতত্ত্ব: ভাষার প্রকৃতি এবং অর্থ সম্পর্কে অধ্যয়ন। সমাজবিজ্ঞান: সমাজ এবং সামাজিক আচরণের প্রকৃতি সম্পর্কে অধ্যয়ন। রাজনৈতিক দর্শন: সরকার এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতি সম্পর্কে অধ্যয়ন। প্রাকৃতিক দর্শন: বিশ্বের প্রকৃতি এবং এর অন্তর্নিহিত নীতি সম্পর্কে অধ্যয়ন। ধর্মতত্ত্ব: ধর্মের প্রকৃতি এবং এর ভূমিকা সম্পর্কে অধ্যয়ন। দার্শনিকরা প্রায়শই তাদের কাজের জন্য সমালোচিত হন, কারণ তারা প্রায়শই ঐতিহ্যগত ধারণাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং নতুন ধারণা প্রদান করেন। যাইহোক, দার্শনিকরা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, কারণ তারা আমাদের চিন্তাভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং আমাদের বিশ্বকে নতুনভাবে দেখতে সাহায্য করে এখানে কিছু বিখ্যাত দার্শনিকের নাম দেওয়া হল:Socratic Socrates (470-399 খ্রিস্টপূর্বাব্দ): তিনি " পদ্ধতি" নামে পরিচিত একটি পদ্ধতি বিকাশ করেছিলেন যা প্রশ্নের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের উপর ভিত্তি করে ছিল। Plato (428-348 খ্রিস্টপূর্বাব্দ): তিনি "আকাডেমি" নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। Aristotle (384-322 খ্রিস্টপূর্বাব্দ): তিনি "পলিটিক্স" এবং "মেটাফিজিক্স" নামে দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। Saint Augustine (354-430 খ্রিস্টাব্দ): তিনি "Confessions" নামে একটি বিখ্যাত আত্মজীবনী রচনা করেছিলেন। René Descartes (1596-1650): তিনি "Cogito, ergo sum" ("আমি চিন্তা করি, সুতরাং আমি আছি") নামে একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়েছিলেন। John Locke (1632-1704): তিনি "Two Treatises of Government" নামে একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রভাব ফেলেছিল। Immanuel Kant (1724-1804): তিনি "Critique of Pure Reason" নামে একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন যা আধুনিক দার্শনিক চিন্তার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। Friedrich Nietzsche (1844-1900): তিনি "Thus Spoke Zarathustra" নামে একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন যা আধুনিক জীবনের সমালোচনা করে। Simone de Beauvoir (1908-1986): তিনি "The Second Sex" নামে একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন যা নারীবাদী দর্শনের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। দার্শনিকরা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, কারণ তারা আমাদের চিন্তাভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং আমাদের বিশ্বকে নতুনভাবে দেখতে সাহায্য করে। দার্শনিকদের কাজ আমাদেরকে আমাদের চারপাশের বিশ্বকে আরও ভালভাবে বুঝতে এবং আমাদের জীবনে আরও সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।thumb|right|প্লেটো অন্যতম বিখ্যাত দার্শনিক thumb|right|ইংরেজ দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন right|thumb|কনফুসিয়াস একজন খ্যাতিমান দার্শনিক আরও দেখুন কিছু উল্লেখযোগ্য দার্শনিকদের মধ্যে রয়েছে: সক্রেটিস এরিস্টটল চাণক্য আল-কিন্দি শিবলী নোমানী আল ফারাবী পার্মেনিদিস শাবলু শাহাবউদ্দিন এলেয়ার জিনো টমাস আকুইনাস ইবন সিনা কনফুসিয়াস রনে দেকার্ত গেয়র্গ ভিলহেল্ম ফ্রিডরিখ হেগেল ইমানুয়েল কান্ট সারেন কিয়েরকেগর ফ্রিড্‌রিশ নিচে প্লেটো জঁ-পল সার্ত্র্‌ লুডভিগ ভিটগেনস্টাইন ফ্রান্সিস বেকন জর্জ বার্কলি বারুখ স্পিনোজা গট‌ফ্রিড লাইব‌নিৎস কার্ল পপার বারট্রান্ড রাসেল আলফ্রেড নর্থ হোয়াইটহেড গট্‌লব ফ্রেগে জন স্টুয়ার্ট মিল তথ্যসূত্র দার্শনিকদের তালিকা বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:দার্শনিক
ক্রীড়া
https://bn.wikipedia.org/wiki/ক্রীড়া
thumb|upright=1.35|right|শৈশবে খেলাধুলা। ফুটবল, উপরে প্রদর্শিত, একটি দলগত খেলা যা শারীরিক সক্ষমতা এবং সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা তৈরিতে সহায়তা করে। ক্রীড়া হচ্ছে একটি সংগঠিত, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, বিনোদনধর্মী এবং দক্ষতাসূচক শারীরিক কার্যকলাপ প্রদর্শনের উত্তম ক্ষেত্র। শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা, কলা-কৌশল এবং সুস্থ ক্রীড়া প্রদর্শন করে একজন বিজয়ী তার অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর নিদর্শন রাখতে পারেন। এটি পরিচালিত হয় একগুচ্ছ নিয়ম-কানুন বা নিজস্ব চিন্তা-চেতনার মাধ্যম। খেলার প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে শারীরিক সক্ষমতা, দক্ষতা ও মর্যাদা যাতে বিজয়ী এবং বিজিত পক্ষ নির্ধারিত হয়। শারীরিক সক্ষমতা হিসেবে মানুষ, প্রাণীসহ বল, যন্ত্র ইত্যাদি সরঞ্জামাদি জড়িত। এছাড়াও মনঃস্তাত্তিক খেলাধুলা হিসেবে কার্ড গেম এবং বোর্ড গেম রয়েছে। এগুলোর কিছু আবার আন্তর্জাতিক অলিম্পিক ক্রীড়া সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত। শারীরিক ইভেন্টগুলো যেমন গোল করা কিংবা নির্দিষ্ট রেখা অতিক্রম করলে খেলায় ফলাফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়াও, ডাইভিং, ফিগার স্কেটিংয়ে খুব ভাল করার দক্ষতা যাচাই ও প্রদর্শন করা অন্যতম বিচার্য বিষয়। ব্যতিক্রম হিসেবে বডি বিল্ডিংয়ের মতো ইভেন্টগুলোয় দক্ষতা প্রদশর্নকে গণ্য করা হয় না। প্রতিটি খেলার ফলাফলই রেকর্ড হিসেবে রাখা হয় এবং সর্বদাই অধিকাংশ খেলাগুলোতে সর্বোচ্চ পর্যায়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার মাধ্যমে খেলাধুলার সংবাদে প্রচার করা হয়। বেশীরভাগ খেলাধুলাই শুধুমাত্র নিছক আনন্দ, মজা অথবা মানুষের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট শারীরিক সক্ষমতার লক্ষ্যে ব্যয়ামের জন্য করা হয়। অধিকন্তু, পেশাদারী খেলাধুলা বিনোদনের অন্যতম মাধ্যমও বটে। খেলাধুলা চর্চার ফলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সুন্দর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলোয়ারসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আচরণগুলোর মধ্যে - ব্যক্তিগত আচরণ পরিবর্তনসহ প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, বিচারক(বৃন্দ)কে ধন্যবাদজ্ঞাপন এবং হেরে গেলে বিজয়ীকে অভিনন্দন প্রদান করা অন্যতম। উৎপত্তি ক্রীড়া শব্দটি এসেছে প্রাচীন ফরাসী শব্দ ডিস্পোর্টস থেকে যার অর্থ হচ্ছে অবসর। আমেরিকানরা স্পোর্টস শব্দটিকে নিছক বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং ক্রীড়ার একবচন শব্দ হিসেবে স্পোর্টস নামকরণ করেছে। ফার্সি শব্দ হিসেবে ক্রীড়ার ভাবার্থ দাঁড়ায় জয়ী। ক্রীড়াকে চীনা ভাষায় শারীরিক প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক গ্রীক শব্দে দৌঁড়বিদ হিসেবে দাবী করছে। ইতিহাস বিভিন্ন তথ্যসূত্র ঘেটে জানা গেছে, সর্বপ্রথম চীনের নাগরিকেরা খ্রীষ্ট পূর্ব ৪০০০ বছর আগে থেকে খেলাধুলার সাথে জড়িত। জিমন্যাস্টিকস্ প্রাচীন চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে স্থান পেয়েছিল। কয়েক হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন মিশরের ফারাও সাম্রাজ্যে বেশকিছু খেলা প্রচলিত ছিল। তন্মধ্যে সাঁতার কাটা, মাছ ধরা অন্যতম। এছাড়াও, মিশরীয় খেলাধুলার মধ্যে জ্যাভেলিন বা বর্শা নিক্ষেপ, উচ্চ লম্ফ এবং কুস্তির ব্যাপক প্রচলন ছিল। প্রাচীন ফারসী খেলার মধ্যে ইরানীয় মার্শাল আর্ট হিসেবে জোরখানে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। এছাড়াও, প্রাচীন ফারসী খেলা হিসেবে পোলো এবং জস্টিং রয়েছে।খেলাধুলার ইতিহাস খেলোয়াড়সূলভ মনোভাব খেলোয়াড়সূলভ মনোভাব হচ্ছে এমন একটি ধারা যা সুস্থ, সুন্দর খেলার অংশবিশেষ। এতে দলীয় সঙ্গীর সাথে সৌজন্যপূর্ণ আচরণ প্রদর্শনসহ প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের নৈতিক আচরণ, স্বাধীনতা এবং জয়ী বা পরাজিত হলেও ব্যক্তি বা দলকে সম্মান দেখানো হয়ে থাকে। অখেলোয়াড়োচিত আচরণ সুস্থ, সুন্দর খেলাকে কলুষিত করে, খেলার মর্যাদাকে ধুলিস্মাৎ করে। ক্রীড়াবিদ, কোচ, সমর্থক, শুভ্যানুধ্যায়ীরাই মূলতঃ এর সাথে জড়িত। ফলে ব্যক্তি বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নষ্টসহ সংক্ষুদ্ধ জনতা সুন্দর সমাজ ও পরিবেশকে ধ্বংস করে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমস্যা তৈরী করে, দেশ ও দশের ভাবমূর্ত্তি ক্ষুণ্ন করে। পেশাগত খেলা এককালে খেলাধুলার মূল উদ্দেশ্যই ছিল মূলতঃ চিত্ত বিনোদন। কিন্তু গণমাধ্যম এবং অবসর সময় কাটানোয় পেশাগত খেলার জুড়ি মেলা ভার। এর ফলে খেলোয়াড়দের মধ্যে অর্থ উপার্জনই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেশাগত খেলায় বিনোদন নয়, বরং আর্থিকভাবে লাভবান এবং নিজ নিজ জনপ্রিয়তাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যা প্রাচীন রীতি-নীতি হিসেবে ক্রীড়া চর্চার নির্মল বিনোদনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এছাড়াও, চিত্ত বিনোদনের নতুন মাত্রা হিসেবে পুরুষ এবং মহিলা - উভয় খেলোয়াড়কেই জনপ্রিয় ও শীর্ষস্থানীয় তারকা খ্যাতি এনে দিয়েছে বর্তমানকালের গণমাধ্যম। thumb|আধুনিক খেলাগুলোর নিয়ম-কানুন সুনির্দিষ্ট এবং জটিল বিশ্বের বিভিন্ন ক্রীড়া বা খেলার নাম ফুটবলই বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। এছাড়াও, হকি, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল, ভলিবল, সাঁতার, দৌঁড়, পোলভল্ট, পোলো, রাগবি, টেনিস, টেবিল টেনিস, খোঁ খোঁ, রোয়িং, ব্যাডমিন্টন, কুস্তি, মুষ্টিযুদ্ধ, দাবা, জুডু, ফ্যান্সিং, বাস্কেটবল ইত্যাদি বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় খেলা। মধ্যস্থতাকারী বিজয়ী ও বিজিত নির্ধারণে এক বা একাধিক বিচারক থাকেন। খেলার ধরন অনুযায়ী রেফারী বা মধ্যস্থতাকারীর নাম নির্ধারিত হয়। যেমনঃ হকি ও ক্রিকেটে আম্পায়ার, ফুটবলে রেফারী, দৌঁড়ে বিচারক ইত্যাদি। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত এবং খেলোয়াড়দের অবশ্য পালনীয়। আচরণবিধি প্রতিটি ক্রীড়াতেই কিছু লিখিত আকারে রুলস্ বা নিয়ম লিপিবদ্ধ থাকে, যা কোড অব কন্ডাক্ট নামে পরিচিত। নিয়ম বিরুদ্ধ কিছু ঘটলে রেফারী কর্তৃক সতর্কীকরণ চিহ্ন হিসেবে লাল, হলুদ কিংবা সবুজ রংয়ের কার্ড দেখানো হয়। খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে কার্ড প্রদর্শনের উপর নির্ভর করে যে পরবর্তী খেলায় খেলোয়াড়টি অংশ নিতে পারবে কি-না। মূল্যায়ন দৌঁড়জাতীয় খেলাগুলোতে নির্দিষ্ট একটি স্ট্যাণ্ডে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারীর মর্যাদা দিয়ে পদক প্রদান করা হয়। পূর্বে অলিম্পিক খেলায় খেজুর পাতার মুকুট পড়িয়ে মূল্যায়িত করা হতো। দলীয় খেলা হিসেবে ফুটবল, হকি, ক্রিকেটে সোনা, রূপার কাপ বা ট্রফি প্রদান করার পাশাপাশি সেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদা হিসেবে নির্দিষ্ট পুরস্কার প্রদান করা হয়। পাশাপাশি চেকের মাধ্যমে অর্থ কিংবা মোটর গাড়ীসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি উপহার হিসেবে দেয়া হয়। thumb|আধুনিককালে মোটর গাড়ির রেস একটি জনপ্রিয় খেলা বাংলাদেশের জাতীয় খেলা সম্পূর্ণ দেশীয় খেলা হিসেবে কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলার মর্যাদা লাভ করেছে।কাবাডি banglapedia.org তবে আইসিসি ট্রফি জয়ের পরবর্তী সময়ে ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশের সমধিক পরিচিত ও ব্যাপকভাবে প্রচলিত খেলারূপে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ The Meaning of Sports by Michael Mandel (PublicAffairs, ). Journal of the Philosophy of Sport Avedon, Elliot; Sutton-Smith, Brian, The Study of Games. (Philadelphia: Wiley, 1971), reprinted Krieger, 1979. বিষয়শ্রেণী:ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ বিষয়শ্রেণী:ক্রীড়া সম্পর্কে বই বিষয়শ্রেণী:সংস্কৃতি
দাবা
https://bn.wikipedia.org/wiki/দাবা
ডান|থাম্ব দাবা একটি জনপ্রিয় খেলা যা বোর্ড বা ফলকের উপর খেলা হয়। দাবা খেলার সর্বপ্রথম সূচনা হয় ভারতবর্ষে। যিনি দাবা খেলেন তাকে দাবাড়ু বলা হয়। দাবায় দু’জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে। দাবা খেলায় জিততে হলে বোর্ডের ওপর ঘুঁটি সরিয়ে বা চাল দিয়ে বিপক্ষের রাজাকে কোণঠাসা করে এমন স্থানে আনতে হয় যেখান থেকে রাজা আর স্থানান্তরিত হতে পারে না, দাবার পরিভাষায় একে বলে ‘কিস্তিমাত’। যুদ্ধংদেহী ফলকক্রীড়া রূপে দাবা খেলার সুনাম রয়েছে। খেলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিপক্ষের ঘুঁটি আয়ত্তে আনার মাধ্যমে নতস্বীকারে বাধ্য করা। ফলকের উপর খেলা যায় এমন খেলাগুলোর মধ্যে এ খেলার বিশ্বব্যাপী অসম্ভব জনপ্রিয়তা রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসরতা ও আক্রমণ চিহ্নিত করার দক্ষতার মাধ্যমে দাবাড়ুর শক্তিমত্তা যাচাই করা সম্ভবপর। প্রত্যেক খেলোয়াড়েরই রাজা, মন্ত্রী, হাতি, ঘোড়া, নৌকা ও বোড়ের সমন্বয়ে গঠিত ১৬ ঘুঁটির সৈনিকদল একে-অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়। প্রত্যেক ঘুঁটিরই ক্রীড়াফলকে স্থানান্তরের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। কোন কারণে ঘুঁটির মাধ্যমে প্রতিপক্ষের ঘুঁটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে তা অধিকৃত স্থানের পর্যায়ে পৌঁছে ও ক্রীড়াফলক থেকে সরিয়ে ফেলতে হয়। দাবার ইতিহাস থাম্ব|দাবার ইতিহাস বেশির ভাগ ঐতিহাসকগণই মনে করেন যে প্রাচীণ ভারতবর্ষেই দাবা খেলার জন্ম। ঠিক কোথায় সর্বপ্রথম দাবা খেলার উৎপত্তি, সেটি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কিছু প্রাচীন আমলের হরফে দাবা খেলার প্রারম্ভিক কাল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, পাশাপাশি খেলাটির আদি অস্তিত্বের প্রমাণস্বরূপ কিছু কিছু দাবার গুটিরও হদিশ মেলে। কিন্তু এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, তত্ত্ব ও মতামতের অভাব নেই। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদের ধারণা ভারত, পারস্য কিংবা চীনই দাবার জন্মস্থল। তবে দাবা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান এখানেই সীমিত নয়। ইউরোপে দাবার যে রূপ অনুপ্রবেশ করে তা আদপে প্রায় ১,৩৫০ বছর আগেই পারস্যে খেলা হতো। সেই সময় তথা সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সেই অঞ্চলে মুসলিম সেনাশক্তির অধীনে ছিল। মুসলিম বিশ্বে এই খেলাটি বিপুল জনপ্রিয়তা পায় এবং ইসলামের প্রচারের সাথে সাথে খেলাটি ছড়িয়ে যেতে যেতে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপেও চলে যায়। বিভিন্ন জাতির পক্ষেই নানারকম দাবি থাকলেও বহু গবেষণার পর গবেষকগণ একমত হয়েছেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশেই খেলাটির আদি উৎপত্তি স্থান। দাবার মতো এক ধরনের খেলার সন্ধান পাওয়া যায় প্রাচীন মিশরে খ্রিস্টপূর্ব ৩,০০০ অব্দে, যার নাম ছিল শতরঞ্জ। তবে ভারত বর্ষে চতুরঙ্গ নামক দাবা খেলাটির সূচনা হয় ষষ্ঠ শতাব্দীর আগেই, ভারতবর্ষে তখনও গুপ্ত সাম্রাজ্য বিরাজমান। তখন দাবাকে চতুরঙ্গ বলার কারণ ছিল—খেলাটিতে হাতি, ঘোড়া, রথ ও সৈন্য এই চারটি অংশ ছিল। কিন্তু চতুরঙ্গ খেলাটা ‘দাবা’ হয়ে উঠতে অনেক সময় চলে গেছে, পাড়ি দিতে হয়েছে সমুদ্র। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে খেলাটা ছড়িয়ে পড়ল কীভাবে? আসলে ওই সময়ে পারস্যের সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল দারুণ। পারস্যের বণিকেরা খেলাটি দেখেন এবং বেশ পছন্দ করে ফেলেন। অতি উৎসুক কয়েকজন বেশ শোরগোল করে নিয়মকানুন শিখেও ফেলেন। পরবর্তীতে, পারস্যে এই খেলার উন্নয়ন সাধিত হয় এবং চতুরঙ্গ নামটা বদলে সেটিই হয়ে ওঠে ‘শতরঞ্জ’ (, ফার্সী: شترنگ‎)। নাহ, নামটা বদলে গেছে বলাটা ঠিক হলো না। আসলে পারস্য বর্ণমালাতে ‘চ’ এবং ‘গ’ না থাকায় সেটাই কালক্রমে ‘শ’ এবং ‘জ’-তে পরিণত হয়। তবে প্রায় একই সময় ভারত থেকে খেলাটি চীনেও পাড়ি দেয়। চীনারা এই খেলার নামকরণ করে জিয়ানকি বা শিয়াংচি (চীনা: 象棋, পিনয়িন: xiàngqí; ইংরেজি: Xiangqi), যা কিনা দাবারই আরেক নামান্তর! তবে চীন দাবি করে, জিয়ানকি তাদের নিজেদের উদ্ভাবিত খেলা। শুধু তাই নয়, দাবা খেলাটাও নাকি ভারতে নয়, চীনেই উদ্ভাবিত হয়েছে! যদিও ইতিহাসবিদেরা চীনের সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পাননি। অন্যদিকে শতরঞ্জ কিন্তু পারস্যে অলস বসে ছিলো না, সুযোগ বুঝে ঠিক পাড়ি জমিয়েছিলো স্পেনে! সে সময় স্পেনে ছিলো মুসলিম শাসনামল, যার বদৌলতে পারস্য থেকে খেলাটি খুব সহজেই স্পেনে শক্ত আসন গেঁড়ে বসে। তবে নামটা এখানে এসে বদলে যায় আরেকবার, এবার সেটা পর্তুগীজ ভাষায় হয়ে যায় ‘Xadrez’, যাকে ইংরেজিতে ‘Ajedrez’, ‘Acedrex’, ‘Axedrez’ বিভিন্নভাবে লেখা হয়। পারস্যের ‘শাহ-মাৎ’ নামটিও রেহাই পায়নি রূপান্তর থেকে। গ্রিসে ‘শাহ’ তথা রাজা শব্দটির পরিভাষা হচ্ছে ইয়াট্রিকিওন (Zatrikion), আর এই নামেই খেলাটি সেখানে প্রচলিত হয়। এছাড়া ল্যাটিন ভাষায় Ludus Scacchorum, ইতালিয়ান ভাষায় scacchi, কাতালান ভাষায় escacs, ফ্রেঞ্চ ভাষায় échecs, ওলন্দাজ ভাষায় schaken, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে দাবা বিভিন্ন নাম ধারণ করেছে। পরে ইউরোপে ও রাশিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এই খেলা, তবে এখানে নতুন নাম ‘চেস’। শব্দটি পুরাতন ফরাসি ভাষা ‘échecs’ (অর্থ চেক) থেকে উদ্ভূত। তবে শুধু নামেই নয়, খেলাটিতেও পরিবর্তন আসে অনেকটাই। ইউরোপে আসার পরই দাবায় প্রথমবারের মতো ‘বিশপ’ (হাতি) যুক্ত হয়, আরও পরে যোগ হয় ‘কুইন’ (রানি)। ধীরে ধীরে ‘চেস’ বা দাবা ইউরোপীয়দের মাধ্যমেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বোর্ডের গঠন থাম্ব|দাবা বোর্ড দাবা বোর্ডে বর্গাকৃতি ৬৪টি সাদা-কালো ঘর থাকে। ঘরগুলোতে প্রতিটি খেলোয়াড়ের একটি করে রাজা বা কিং, মন্ত্রী বা কুইন, দু’টি করে - নৌকা বা রুক, ঘোড়া বা নাইট ও গজ বা বিশপ এবং ৮টি করে পন বা পেয়াদা সহ মোট ১৬টি গুটি থাকে। অর্থাৎ, দু'জন খেলোয়াড়ের সর্বমোট ৩২টি গুটি থাকে। র‌্যাঙ্ক বা সারিগুলোকে ইংরেজি 'ওয়ান' (1) থেকে 'এইট' (8) সংখ্যা দিয়ে এবং ফাইল বা স্তম্ভগুলোকে ইংরেজি 'এ' (a) থেকে 'এইচ' (h) বর্ণ দিয়ে নির্দেশ করা হয়। ফলে দাবার ছকের প্রতিটি ঘরকেই একটি অনন্য বর্ণ-সংখ্যা প্রতীক দিয়ে প্রকাশ করা যায়। দাবার নোটেশন বা লিপিবদ্ধকরণের এই পদ্ধতি খুবই কাজে আসে, কেননা এটি ব্যবহার করে যে-কোন দাবা খেলার সমস্ত চাল লিপিবদ্ধ করে ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করে নিজের ভুলগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা যায়। উদ্দেশ্য প্রতিপক্ষের রাজার বিরুদ্ধে কিস্তি বা চেক দেবার পর যদি রাজা চেক সরাতে না পারে এবং পরবর্তীতে যদি নড়াতে না পারে তবে কিস্তিমাৎ হয়ে খেলা শেষ হবে। একে চেক মেট বলা হয়। উৎপত্তি দাবা খেলার জন্ম ভারতবর্ষে বলে সর্বাধিক প্রচলিত মতবাদ । এছাড়া, পারস্য (বর্তমান ইরান) দেশে ৩য় শতাব্দীতে প্রচলিত শতরঞ্জ এবং চীন -এ ২য় শতাব্দীতে প্রচলিত শিয়াংছী নামক খেলাকে দাবার পূর্বসূরী হিসেবে গণ্য করার পক্ষেও মতামত আছে। কথিত আছে যে রাবনের স্ত্রী মন্দোদরী যুদ্ধে নিবৃত করার জন্য রাবনের সাথে দাবা খেলতেন। পুরাণ অনুযায়ী রাবনের স্ত্রী মন্দোদরী এই খেলা আবিস্কার করেন। প্রাচীন ভারতীয় খেলা হিসেবে দাবার সংস্কৃত শব্দ শতরঞ্জ খেলাটি পরিবর্তিতরূপে পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপে পরিমার্জিত হয়ে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। ক্রীড়াবিদেরা দাবার কৌশল এবং বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগে খেলাটির ধারাই পরিবর্তন করে দিয়েছেন। অনেক বছর ধরে দাবা খেলার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে কম্পিউটারের সহযোগিতা নিচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। তেমনি একটি হলো – ডীপ ব্লু। এটিই ১ম যন্ত্রচালিত প্রোগ্রাম যা তৎকালীন বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভকে ১৯৯৭ সালে পরাজিত করে। বিশ্ব শিরোপা সংগঠিত ও নিয়ন্ত্রিত ক্রীড়া হিসেবে দাবা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ষোড়শ শতকে। বিশ্ব দাবা প্রতিযোগিতায় ১৮৮৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ১ম শিরোপাধারী হন উইলিয়াম স্টেইনজ। বর্তমান শিরোপাধারী হলেন –চীনের ডিং লিরেন। দাবা প্রতিযোগিতাসমূহ দাবা প্রতিযোগিতা হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপের পাশাপাশি প্রমিলা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ, জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ, বিশ্ব সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশীপ, করেসপন্ডেন্স দাবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ, বিশ্ব কম্পিউটার দাবা চ্যাম্পিয়নশীপ এবং ব্লিটজ এন্ড র‌্যাপিড ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশীপ (দ্রুতগতির দাবা) অন্যতম। তবে দাবা অলিম্পিয়াডে দলগতভাবে বিভিন্ন দেশের মধ্যেকার খেলা জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। অনলাইনভিত্তিক দাবা শৌখিন ও পেশাধারী প্রতিযোগিতা হিসেবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দাবা সংস্থার নিয়ন্ত্রক দাবা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত খেলা। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ও ফিদে আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বর্তমানে দাবা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাড়ীতে, ক্লাবে, টুর্ণামেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় লক্ষ লক্ষ দাবাড়ু অংশগ্রহণ করে। নির্দিষ্ট নিয়মের বাইরেও বিভিন্ন ধরনের নিয়ম-কানুন প্রয়োগ করে খেলা হয়ে থাকে। নিয়ম-কানুন বিশ্ব দাবা ফেডারেশন বা ফিদে কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম-কানুন দাবা খেলায় প্রয়োগ করা হয়। স্বীকৃত দাবা প্রতিযোগিতাগুলো ফিদে হ্যাণ্ডবুকে বর্ণিত নিয়মে পরিচালিত হয়। দাবা টুর্নামেন্টের নিয়মকানুন দিয়ে যেভাবে খেলতে হয় অনেক টুর্নামেন্টে সাধারণ ও একই রকম কিছু নিয়ম অনুসরণ করা হয়। বাসায় বা অনলাইনে খেলার ক্ষেত্রে এই নিয়মগুলো সাধারণত মানা হয়না, কিন্তু আপনি সেগুলো যেকোনো উপায়ে অনুশীলন করতে চাইতে পারেন। স্পর্শ-চাল- যদি কোনো খেলোয়াড় তার নিজের কোনো গুটি ধরেন, তাহলে তাকে ঐ গুটিই চালাতে হবে যদি কোনো বৈধ চাল থাকে। যদি একজন খেলোয়াড় তার প্রতিপক্ষের কোনো গুটি ধরেন তাহলে তাকে ঐ গুটি খেতে হবে। যদি কোনো খেলোয়াড় বোর্ডে সমন্বয় করার জন্য গুটি ধরতে চান, তাহলে তার ইচ্ছার কথা ঘোষণা দিয়ে নিতে হবে, সাধারণত ধরার আগে "সমন্বয়" বলে। ঘড়ি ও সময়ের মানদণ্ডঅধিকাংশ টুর্নামেন্টে ঘড়ি ব্যবহার করা হয় প্রতিটি খেলার সময় বেঁধে দেওয়ার জন্য, নির্দিষ্ট চালের সময় মাপার জন্য জন্য নয়। প্রত্যেক খেলোয়াড়কে পুরো খেলা শেষ করার জন্য সমান সময় বরাদ্দ করা হয় এবং তিনি নিজের ইচ্ছেমতো তা ব্যবহার করতে পারেন। একজন খেলোয়াড় নিজের চাল দেবার পর একটি বোতাম টিপে অথবা একটি হাতলে চাপ দিয়ে প্রতিপক্ষের ঘড়ি সচল করে দেন। যদি কোনো খেলোয়াড়ের নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে যায় এবং তার প্রতিপক্ষ সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তাহলে যার সময় শেষ হয়ে গেছে তিনি পরাজিত হবেন (এক্ষেত্রে তার প্রতিপক্ষের কাছে কিস্তিমাত করার মতো যথেষ্ট গুটি থাকতে হবে, নইলে খেলাটি ড্র হবে)। গুটি স্থাপনা দাবা খেলা বর্গাকৃতি ৮টি রো ও ৮টি কলামে মোট ৬৪টি ঘরের সমষ্টিতে তৈরী বোর্ডে হয়ে থাকে। রো-গুলো রেংক বা ‍সারি হিসেবে ১ থেকে ৮ সংখ্যায় নির্ধারিত এবং কলামগুলো ফাইল হিসেবে যা ইংরেজি অক্ষর এ থেকে এইচ পর্যন্ত হয়ে থাকে। দাবা বোর্ড কাগজের, কাঠের, প্লাস্টিকের তৈরী হয়ে থাকে। ৬৪টি বর্গাকৃতি ঘরগুলো দু’ধরনের হয়। একটি হালকা এবং অন্যটি গাঢ় কিংবা একটি সাদা এবং অন্যটি কালো। সাধারণতঃ ঘরগুলোর সাথে মিল রেখে ঘরগুলোর রং হয়। তবে দু’দলের মন্ত্রী বা কুইনের রং হবে নিজ ঘরের রংয়ে। গুটিগুলো দুই অংশে বিভক্ত। তাহলো সাদা এবং কালো সেট। খেলোয়াড়দের পরিচিতি হয় ‘সাদা’ এবং ‘কালো’। গুটি পরিচালনা পাশ্চাত্য নিয়ম মতে সাদা গুটি সর্বদা প্রথম চালানো হয়। এরপর থেকেই একটি গুটির পর অন্য দলের গুটি চালানো হয়। ব্যতিক্রম হিসেবে ক্যাসলিঙের সময় দু’টি গুটি পরিচালিত হয়। খালি জায়গায় গুটি চালাতে হয় অথবা প্রতিপক্ষের গুটি দখল করে ঘর থেকে বাইরে উচ্ছেদ করা হয়। একমাত্র এন পাসান্ট নিয়ম ছাড়া, বাকি সব ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের গুটিকে উচ্ছেদ করতে গুটিটির অধিকৃত ঘর দখল করা হয়। যদি কোন কারণে গুটি পরিচালনা করা না যায় তাহলে অমীমাংসিত ভাবে খেলা শেষ হয়। প্রতিপক্ষের রাজা আক্রান্ত হয়ে কোন ঘরে যাওয়ার সুযোগ না থাকলে কিস্তিমাত বা চেকমেটের সাহায্যে খেলা শেষ করা হয়। প্রতিটি দাবার গুটির নিজস্ব চলাচলের শর্ত রয়েছে। রাজা শুধু তার ঘরের সাথে সংযুক্ত যে কোন একটি ঘরে যেতে পারে। তবে বিশেষ শর্তে নৌকা সাথে ঘর পরিবর্তন করতে পারে যা ক্যাসলিং নামে পরিচিত। নৌকা অন্য গুটিকে অতিক্রম না করে সোজাসুজি ভাবে যে কোন ঘরে যেতে পারে। তবে বিশেষ শর্তে রাজার সাথে ঘর পরিবর্তন করতে পারে যা ক্যাসলিং নামে পরিচিত গজ যে-কোনো অন্য গুটিকে অতিক্রম না করে আড়াআড়ি ঘরে যেতে পারে। মন্ত্রী, নৌকা এবং হাতির সমন্বিত শক্তি হিসেবে অন্য গুটিকে অতিক্রম না করে সোজাসুজি কিংবা আড়াআড়ি যে কোন ঘরে যেতে পারে। ঘোড়া কাছাকাছি দু’ঘর গিয়ে ডানে কিংবা বামের অন্য ঘরে যেতে পারে। ঘোড়ার চলন ইংরেজি এল অক্ষরের মতো। ঘোড়ার বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে যে একমাত্র এ গুটিই যে কোন গুটিকে অতিক্রম করে অন্য ঘরে যেতে পারে। বোড়ে নিজস্ব ফাইলে এক ঘর করে অগ্রসর হয়। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে নিজস্ব ঘর থেকে ইচ্ছে করলে দু’ঘর সামনে যেতে পারে যদি ঘরগুলো খালি থাকে কিংবা প্রতিপক্ষের গুটিকে কেটে আড়াআড়ি অন্য ঘরে যেতে পারে। তবে সামনে যদি প্রতিপক্ষের বোড়ে থাকে তবে আর অগ্রসর হতে পারবে না। বোড়ের অঁ পাঁসা ও পদোন্নতি নামে দুটি বিশেষ পরিচালনা পদ্ধতি আছে। বোড়ের পদোন্নতি thumb|250px|বোড়ের পদোন্নতি (বাম) এবং অঁ পাঁসা (ডান) যখন একটি বোড়ে ৮ম রাঙ্কে যায়, তখনই খেলোয়াড় ইচ্ছে করলে এর পরিবর্তে নিজ দলের মন্ত্রী, নৌকা, হাতি কিংবা ঘোড়ার গুটি বোর্ডে আনতে পারেন। সাধারণতঃ বোড়ে উত্তরিত হয়ে মন্ত্রীতে রুপান্তরিত হয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদি অন্য গুটি পছন্দ করা হয়, তখন তা আণ্ডার প্রমোশন নামে পরিচিত হয়। অঁ পাঁসা যখন একটি বোড়ে তার শুরুর দানে দুই ঘরে এগিয়ে যায় এবং সেই ঘরের পাশের ফাইলে প্রতিপক্ষের বোড়ে থাকে, তখন অঁ পাঁসা দানের সাহায্যে প্রতিপক্ষের বোড়ে প্রথম বোড়েকে উচ্ছেদ করতে পারে। এই দানে প্রতিপক্ষের বোড়েটিকে প্রথম বোড়ের পেছনের ঘরে আড়াআড়ি ভাবে নিয়ে যাওয়া হয়। এই দান প্রথম বোড়ের ঠিক পরের দানেই সম্ভব। ক্যাসলিং thumb|250px|left|ক্যাসলিং রাজা সাধারণতঃ শুধু তার ঘরের সাথে সংযুক্ত যে কোন একটি ঘরে যেতে পারে। তবে বিশেষ শর্তে প্রতি খেলায় মাত্র একবারের জন্য ক্যাসলিং নামক এক বিশেষ চালের সুযোগ পায়। প্রথম সারিতে থাকা রাজা প্রথম সারিতে থাকা নৌকার দিকে দুই ঘর যেতে পারে এবং ঐ একই দানে নৌকা রাজা দানটির সময় যে ঘর অতিক্রম করছিল, সেই ঘরে চলে যেতে পারে। ক্যাসলিং তখনই সম্ভব যখন নিম্নলিখিত পূর্বশর্তগুলি বজায় থাকে খেলা চলাকালে রাজা ও নৌকা কোন ঘরেই নড়াচড়া করলে ক্যাসলিং হবে না, রাজা ও নৌকার মাঝে অন্য কোন গুটি থাকতে পারবে না, রাজা কিস্তিপ্রাপ্ত অবস্থায় থাকতে পারবে না, বা কোন গুটি দ্বারা আক্রান্ত অবস্থায় থাকতে পারবে না বা সেই ঘরে যেতে পারবে না, যে ঘরে গেলে কিস্তিপ্রাপ্ত হতে হয়। আবার ক্যসলিং ২ প্রকারের হয়ে থাকে। ১) শর্ট/কিংসাইড ক্যাসলিংঃ রাজা তার নিজ পাশের নৌকার সাথে যখন ক্যাসলিং সম্পন্ন করে। এর নোটেশন O-O ভাবে করা হয়। ২) লং/কুইনসাইড ক্যাসলিংঃ রাজা যখন মন্ত্রীর পাশের নৌকার সাথে ক্যাসলিং সম্পন্ন করে। এর নোটেশন O-O-O ভাবে করা হয়। খেলা ড্র মাঝেমাঝে দাবা খেলায় জয় পরাজয় হয় না, ড্র হয়। দাবা খেলা ড্র হওয়ার কয়েকটি কারণ আছে: স্টেলমেট হয় তখন যখন একজন খেলোয়াড়ের চাল, কিন্তু তার রাজা চেক-এ না থাকার পরও তার কোন বৈধ চাল থাকেনা। খেলোয়াড়রা যেকোনো সময়ে ড্র-তে সম্মত হতে পারেন এবং খেলা থামিয়ে দিতে পারেন। চালমাত করানোর জন্য যথেষ্ট গুটি বোর্ডে নেই (উদাহরণ: রাজা এবং হাতি বনাম শুধু রাজা) একজন খেলোয়াড় হুবহু একই অবস্থান তিনবার পুনরাবৃত্তি করলে (সেটা পর পর তিনবার নাও হতে পারে) খেলায় ড্র ঘোষণা করা হয়। একজন খেলোয়াড়ের শুধু রাজা থাকা অবস্থায় ১৬ চালের মধ্যে খেলা শেষ করতে না পারলে ড্র ঘোষণা করা হয়। পরপর পঞ্চাশ চাল খেলা হয়েছে যেখানে কোন খেলোয়াড়ই কোন সৈন্য চালায়নি বা কোন গুটি খায়নি। সময় নিয়ন্ত্রণ অপেশাদার এবং ঘরোয়া দাবা খেলাতে কোনো নির্দিষ্ট সময় থাকে না। কিন্তু পেশাদার দাবা খেলায় নির্দিষ্ট সময় দেয়া থাকে। কিছু বিখ্যাত দাবা খেলার উদাহরণ অমর গেম: এডল্ফ এনডারসন এবং লিওনেল কিয়েসেরিতস্কি (১৮৫১) চিরসবুজ গেম: এডল্ফ এনডারসন এবং জঁ দুফ্রেস্নে (১৮৫২) অপেরা গেম: পল মর্ফি এবং দুই মিত্র, ব্রানস্‌উইক-এর ডিউক ও কাউন্ট ইসুয়ার্ড (১৮৫৮) লস্কর এবং বাওয়ার, এমস্টার্ড্যাম, ১৮৮৯, বিখ্যাত জোড়া হাতি বিসর্জনের প্রথম উদাহরণ শতাব্দীর সেরা গেম: ববি ফিশার এবং ডোনাল্ড বায়ার্ন (১৯৫৬) ডীপ ব্লু এবং কাসপারভ, ১৯৯৬, ১ম খেলা। ইতিহাসের প্রথম খেলা যাতে একটি কম্পিউটার বিশ্বসেরা দাবাড়ুকে পরাজিত করে (১৯৯৬) কাসপারভ বনাম বিশ্ব, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কাসপারভ ইন্টারনেটের সহায়তায় ঐক্যবদ্ধ বিশ্বের সাথে খেলেন (১৯৯৯) দাবা ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশে দাবা খেলার পথিকৃৎ হিসেবে আছেন কাজী মোতাহার হোসেন। তাকে স্মরণ করেই আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়। কয়েকজন গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ, জিয়াউর রহমান,রাণী হামিদ ও রিফাত বিন সাত্তার (বাংলাদেশ); বিশ্বনাথন আনন্দ (ভারত); ববি ফিশার (যুক্তরাষ্ট্র); নাইজেল শর্ট (ইংল্যান্ড), কাসপারভ ও কারপভ (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন), ম্যাগনাস কার্লসেন (নরওয়ে) । বিবিধ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশসমূহ দাবাড়ুদের দেশ হিসেবে চিহ্নিত। সাধারণতঃ গণিতে অভিজ্ঞরাই দাবা খেলায় উন্নতি করতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা দাবী করে থাকেন। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, এ খেলায় নারীদের তুলনায় পুরুষদের অংশগ্রহণের হার খুব বেশি। শতকরা ৯৮ জন পুরুষ দাবা খেলায় অংশ নেন; যেখানে নারীদের অংশগ্রহণ মাত্র ২%। ব্যবহৃত পরিভাষা কিস্তি, বড়ে, পন, কিং, কুইন, রুক, বিশপ, ক্যাসলিং, নাইট, চেক, স্টেলমেট, গামবিট, র‌্যাংক, অঁ পাঁসা, বোর্ড। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ International organizations FIDE – World Chess Federation ICCF – International Correspondence Chess Federation খবর Chessbase news The Week in Chess ইতিহাস Chesshistory.com বিষয়শ্রেণী:বিমূর্ত কৌশল খেলা বিষয়শ্রেণী:একক ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় উদ্ভাবন বিষয়শ্রেণী:ঐতিহ্যবাহী ছকের খেলা বিষয়শ্রেণী:আংশিকভাবে সমাধান করা গেম বিষয়শ্রেণী:চতুরঙ্গ সম্পর্কিত খেলা
ধর্ম
https://bn.wikipedia.org/wiki/ধর্ম
চাঁদ
https://bn.wikipedia.org/wiki/চাঁদ
চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং সৌর জগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব হচ্ছে ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার (প্রায় ২৩৮,৮৫৫ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ৩০ গুণ। এর অর্থ দাড়াচ্ছে, চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৫০ ভাগের ১ ভাগ। এর পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বল পৃথিবী পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বলের এক-ষষ্ঠাংশ। পৃথিবী পৃষ্ঠে কারও ওজন যদি ১২০ পাউন্ড হয় তা হলে চাঁদের পৃষ্ঠে তার ওজন হবে মাত্র ২০ পাউন্ড। পৃথিবী থেকে চাঁদের এই যে দূরত্ব এটা কিন্তু সবসময় এক থাকে না। কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। বর্তমান শতাব্দীতে চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে এসেছিল গত ১৯১২ সালের ৪ জানুয়ারি তারিখে। এই তারিখে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ছিল মাত্র ৩,৪৮,২৫৯ কিলোমিটার (২,১৬,৩৯৮ মাইল)। এই শতাব্দীতে চাঁদের সাথে পৃথিবীর দূরত্ব সর্বোচ্চ স্তরে গিয়েছিল ১৯৮৪ সালের ২রা মার্চে। এই দিনে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ছিল ৩,৯৮,৫৯৮ কিলোমিটার (২,৪৭,৬৭৫ মাইল)। চাঁদের বয়স প্রায় ৩৯০০ মিলিয়ন বছর। চাঁদের ব্যাস ৩,৪৭৪.২০৬ কিলোমিটার (২,১৫৯ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের এক-চতুর্থাংশের চেয়ে সামান্য বেশি। ওজন ৭.২৩×১০^১৯ (অর্থাৎ ১০ এর ডানে ১৯টি শূণ্য বসিয়ে তাকে ৭.২৩ দিয়ে গুণ করলে যা হয়)। ঘনত্ব জলের চেয়ে ৩,৩৪২ ভাগ ঘন। গতি ৩,৬৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় (২,২৮৭ মাইল)। এটি প্রতি ২৭.৩২১ দিনে পৃথিবীর চারদিকে একটি পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করে। প্রতি ২৯.৫ দিন পরপর চন্দ্র কলা ফিরে আসে অর্থাৎ একই কার্যক্রম আবার ঘটে। পৃথিবী-চাঁদ-সূর্য তন্ত্রের জ্যামিতিতে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের কারণেই চন্দ্র কলার এই পর্যানুক্রমিক আবর্তন ঘটে থাকে। বেরিকেন্দ্র নামে পরিচিত একটি সাধারণ অক্ষের সাপেক্ষে পৃথিবী এবং চন্দ্রের ঘূর্ণনের ফলে যে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সৃষ্টি হয় তা পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির জন্য অনেকাংশে দায়ী। জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির জন্য যে পরিমাণ শক্তি শোষিত হয় তার কারণে বেরিকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে পৃথিবী-চাঁদের যে কক্ষপথ রয়েছে তাতে বিভব শক্তি কমে যায়। এর কারণে এই দুইটি জ্যোতিষ্কের মধ্যে দূরত্ব প্রতি বছর ৩.৮ সেন্টিমিটার করে বেড়ে যায়। যতদিন না পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার উপর চাঁদের প্রভাব সম্পূর্ণ প্রশমিত হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত চাঁদ দূরে সরে যেতেই থাকবে এবং যেদিন প্রশমনটি ঘটবে সেদিনই চাঁদের কক্ষপথ স্থিরতা পাবে। thumb|বাংলাদেশ থেকে চন্দ্রের ছবি ইতিহাস প্রাচীনকালে সংস্কৃতি ছিল বিরল, বেশির ভাগ মানুষেরই নির্দিষ্ট কোনো বাসস্থান ছিল না। তারা মনে করত, চাঁদ প্রত্যেক রাত্রি মরে ছায়ার জগতে চলে যায়। অন্যান্য সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করত যে চাঁদ সূর্যকে পিছু করছে। পিথাগোরাসের সময়ে, চাঁদকে একটি গ্রহ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। মধ্যযুগে কিছু মানুষ বিশ্বাস করত যে চাঁদ হয়তো একটি নির্ভুলভাবে মসৃণ গোলক যা অ্যারিস্টটলের তত্ত্ব সমর্থন করত এবং অন্যান্যরা মনে করত সেখানে সাগর আছে (সাগর বলতে চাঁদের উপরিতলের অন্ধকার অঞ্চলকে বোঝায় যা চিত্র শব্দতে এখনও ব্যবহার করে)। ১৬০৯ সালে গ্যালিলিও যখন তাঁর দূরবীক্ষণ চাঁদের দিকে ধরলেন, তিনি দেখলেন যে চাঁদের উপরিতল মসৃণ ছিল না। তা ক্ষুদ্র কালো রেখা, উপত্যকা, পর্বত এবং খাদের গঠিত হয়। সেই মুহূর্ত থেকে তিনি অনুভব করতে শুরু করেন যে এটি পৃথিবীর মতোই একটি কঠিন গলিত পদার্থ ছিল যা পরে এই রূপ নেয়। ১৯২০ সালেও মনে করত যে চাঁদের শ্বাস গ্রহণের উপযোগী বায়ুমণ্ডল আছে (অথবা ঐ সময় বিজ্ঞানের কাল্পনিক বানোয়াট গল্প বলত) এবং কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি ক্ষুদ্র বায়ু স্তরের উপস্থিতি আছে বলে অনুমান করত কারণ চাঁদ পর্যবেক্ষণ সময় তারা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু উড়ন্ত বস্তু দেখে ছিল। উদাহরণ হিসেবে জ্যোতির্বিজ্ঞানী আলফন্স ফ্রেসার তাঁর গবেষণামূলক আলোচনা-গ্রন্থে চাঁদের অনাকাঙ্ক্ষিত উড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে লিখেন: চাঁদের বসবাস করার সাথে জড়িয়ে আছে অমোচনীয় পানি এবং বায়ু অনুপস্থিতির সমস্যার এবং আলফন্স ফ্রেসা এই শর্তাবলিতে প্রতিবেদন করেছিলেন: চাঁদই একমাত্র জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু যাতে মানুষ ভ্রমণ করেছে এবং যার পৃষ্ঠতলে মানুষ অবতরণ করেছে। প্রথম যে কৃত্রিম বস্তুটি পৃথিবীর অভিকর্ষ অতিক্রম করেছিল এবং চাঁদের কাছ দিয়ে উড়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল তা হল সোভিয়েত ইউনিয়নের লুনা ১। লুনা ২ প্রথবারের মত চাঁদের পৃষ্ঠতলকে প্রভাবান্বিত করেছিল। চাঁদের দূরবর্তী যে অংশটা স্বাভাবিকভাবে লুকায়িত থাকে তার প্রথম সাধারণ ছবি তুলেছিল লুনা ৩। এই তিনটি ঘটনাই সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিচালনায় ১৯৫৯ সালে সংঘটিত হয়। ১৯৬৬ সালে লুনা ৯ প্রথমবারের মত চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে এবং লুনা ১০ প্রথমবারের মতো চাঁদের কক্ষপথ পরিক্রমণ করতে সমর্থ হয়। যুক্তরাষ্ট্র এদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে পাল্লা দিতে অ্যাপোলো প্রকল্প শুরু করে। পরে ১৯৬৯ সালে, অ্যাপোলো-১১ অভিযান প্রথমবারের মতো চাঁদে মনুষ্যবাহী নভোযান অবতরণ করাতে সমর্থ হয়। নিল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন ছিলেন প্রথম মানুষ যাঁরা চাঁদে হেঁটেছেন । পরে আরও ১০ মানুষ কেবল চাঁদে হেঁটেছিল। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ছয়টি নভোযান চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে। অ্যাপোলো অভিযানের পর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা চাঁদে মানুষ পাঠানোর সকল পরিকল্পনা ত্যাগ করে। ২০০৯ সালে প্রথম দিকে ভারত, চন্দ্রযান নামে একটি মহাকাশযান চাঁদে পাঠায়। কিন্তু প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়। মহাকাশযান চাঁদে পৌঁছার পর পরেই তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু অল্প সময়ে যে তথ্য পাঠিয়েছে তা মানব জাতিকে নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছে চাঁদে জীবের অস্তিত্ব থাকার কারণ সেখানে পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে৷ তবে ২০১৯ সালের ২২ জুলাই ভারতের ইসরো, চন্দ্রযান-২ নামে পুনরায় একটি মহাকাশযানের সফল উৎক্ষেপণ করে।https://www.prothomalo.com/international/article/1605611/%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A7%A8-%E0%A6%8F%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AB%E0%A6%B2-%E0%A6%89%E0%A7%8E%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A7%87%E0%A6%AA%E0%A6%A3-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%B2-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4 আবর্তন thumb|200px|left|চাঁদের আবর্তন চাঁদের আবর্তনের পর্যায়কাল এবং তার কক্ষপথের পর্যায়কাল একই হওয়ায় আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদের একই পৃষ্ঠ সবসময় দেখতে পাই। চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে ২৭ দিন ৭ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট ১১ সেকেন্ড সময় নেয়। কিন্তু সমসাময়িক আবর্তনের ফলে পৃথিবীর পর্যবেক্ষকরা প্রায় ২৯.৫ দিন হিসেবে গণনা করে। একটি ঘণ্টা আবর্তনের পর্যায়কাল অর্ধেক ডিগ্রি দূরত্ব অতিক্রম করে। চাঁদ পৃথিবীকে যে অক্ষরেখায় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে, সে অক্ষরেখায় চাঁদ একদিন বা ২৪ ঘণ্টায় ১৩°কোণ অতিক্রম করে। সুতরাং পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে চাঁদের সময় লাগে ২৭ দিন ৭ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট ১১ সেকেন্ড। এই জন্য আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদের একই পৃষ্ঠ দেখে থাকি। পৃথিবী থেকে আমরা চাঁদের শতকরা প্রায় ৫৯ ভাগ দেখতে পেয়ে থাকি। চাঁদ আকাশের সবসময় একটি অঞ্চল থাকে তাকে জৌডিঅ্যাক (zodiac) বলে। যা ক্রান্তিবৃত্তের প্রায় ৮ ডিগ্রি নিচে এবং গ্রহণরেখার উপরে অবস্থান করে। চাঁদ প্রতি ২ সপ্তাহে একে অতিক্রম করে ৷ সূর্য ও পৃথিবীর কক্ষপথের সাথে চাঁদ ও পৃথিবীর কক্ষপথ প্রায় ৫ ডিগ্রি হেলে থাকে। ফলে রাতের বেলাতেও সূর্যের আলো চাঁদে প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে আসে। নাম এবং ব্যুৎপত্তি বাংলায় চাঁদ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ চন্দ্র থেকে এসেছে। এছাড়াও শশধর, শশী প্রভৃতিও চাঁদের সমার্থক শব্দ। চন্দ্র পৃষ্ঠের ভূমিরূপকে পৃথিবী থেকে খালি চোখে খরগোশ বা শশকের ন্যায় লাগে। তাই শশক ধারক রূপে কল্পনা করে শশধর নামটি দেওয়া হয়েছে। ইংরেজি ভাষায় পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহটির The Moon ছাড়া অন্য কোনো নাম নেই। অবশ্য অন্যান্য গ্রহের উপগ্রহের আরও নাম থাকতে দেখা যায়। মুন শব্দটি জার্মান ভাষাগোষ্ঠীর কোনো একটি থেকে এসেছে যার সাথে সম্পর্কিত রয়েছে লাতিন শব্দ mensis। মেনসিস শব্দটি মূলত প্রাক-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার মূল me- থেকে এসেছে। এই একই মূল থেকে আবার ইংরেজি measure শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে। মিজার শব্দটিকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে, কারণ এর সাথে শব্দের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিমাপের প্রকাশের সম্পর্ক রয়েছে। যেমন: Monday, month এবং menstrual। ১৬৬৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত ইংরেজি ভাষায় মুন বলতে কেবল মাত্র চাঁদকেই বুঝাত। কিন্তু ১৬৬৫ সালে তখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত অন্যান্য গ্রহের প্রাকৃতিক উপগ্রহের ক্ষেত্রেও এই মুন শব্দটি প্রয়োগ করা শুরু হয়। মুনা শব্দের লাতিন প্রতিশব্দ হচ্ছে Luna। অন্য গ্রহের প্রাকৃতিক উপগ্রহের সাথে পৃথিবীর প্রাকৃতিক উপগ্রহের পার্থক্য করার জন্য চাঁদকে ইংরেজিতে মুন না বলে তাই অনেক সময়েই লুনা বলা হয়ে থাকে। ইংরেজিতে চাঁদের বিশেষণ হিসেবে লুনার শব্দটি ব্যবহৃত হয়। একই সাথে চাঁদের ক্ষেত্রে বিশেষণগত উপসর্গ হিসেবে seleno- এবং অনুসর্গ হিসেবে -selene ব্যবহৃত হয়। এই উপসর্গ এবং অনুসর্গ গ্রিক ভাষার শব্দ selene থেকে এসেছে যা এখন গ্রিক দেবতার নাম। পৃথিবী-চন্দ্র সমাহার পৃথিবীর সাথে চাঁদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক দূরত্বের দিক থেকে চিন্তা করলে এরা একে-অপরের বেশ নিকটে অবস্থিত, আর তাই মহাকর্ষীয় আকর্ষণজনিত প্রভাবও বেশি। এই প্রভাবের প্রধানতম অবদান হচ্ছে জোয়ার-ভাটা। জোয়ার-ভাটা পৃথিবী-চন্দ্র সমাহারের অবিরত পরিবর্তন হচ্ছে। জোয়ার-ভাটার সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। চাঁদের আকর্ষণে চাঁদের দিকে অবস্থিত সমুদ্রের জল তার নিচের মাটি অপেক্ষা বেশি জোরে আকৃষ্ট হয়। এ কারণে চাঁদের দিকে অবস্থিত জল বেশি ফুলে উঠে। আবার পৃথিবীর যে অংশে অবস্থিত জল চাঁদের বিপরীত দিকে থাকে, সেদিকের সমুদ্রের নিচের মাটি তার উপরের জল অপেক্ষা চাঁদ কর্তৃক অধিক জোরে আকৃষ্ট হয়। কারণ এই মাটি জল অপেক্ষা চাঁদের বেশি নিকটবর্তী। ফলে সেখানকার জল মাটি থেকে দূরে সরে যায় অর্থাৎ ছাপিয়ে উঠে। এক্ষেত্রে ফুলে উঠার কাহিনীটিই ঘটে। পৃথিবী যে সময়ের মধ্যে নিজ অক্ষের চারদিকে একবার আবর্তন করে (এক দিনে) সে সময়ের মধ্যে পৃথিবীর যে-কোন অংশ একবার চাঁদের দিকে থাকে এবং একবার চাঁদের বিপরীত দিকে থাকে। এ কারণে পৃথিবীর যে-কোন স্থানে দুইবার জোয়ার এবং দুইবার ভাটা হয়। তবে জোয়ার-ভাটার জন্য সূর্যের আকর্ষণও অনেকাংশে দায়ী। তবে অনেক দূরে থাকায় সূর্যের আকর্ষণ চাঁদের আকর্ষণের থেকে কম কার্যকর। সূর্য এবং চাঁদ যখন সমসূত্রে পৃথিবীর একই দিকে বা বিপরীত দিকে অবস্থান করে তখন উভয়ের আকর্ষণে সর্বাপেক্ষা উঁচু জোয়ার হয়, জোয়ারের জল বেশি ছাপিয়ে পড়ে। এই অবস্থাকে ভরা কাটাল বা উঁচু জোয়ার বলা হয়। আর পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য এবং চাঁদের মধ্য কৌণিক দূরত্ব যখন এক সমকোণ পরিমাণ হয় তখন একের আকর্ষণ অন্যের আকর্ষণ দ্বারা প্রশমিত হয়। তাই সবচেয়ে নিচু জোয়ার হয় যাকে মরা কাটাল বলে আখ্যায়িত করা হয়। জোয়ার বলতে আমরা শুধুমাত্র সমুদ্রের জলের স্ফীতিকেই বুঝি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চাঁদ-সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবীর স্থলভাগেও অনুরূপ প্রভাবের সৃষ্টি হয়। তাই বলা যায়, জোয়ার -ভাটার ক্ষেত্রে চাঁদ ও সূর্য এবং এদের মধ্যকার আকর্ষণ বল ও অবস্থান মুখ্য ভুমিকা পালন করে। দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি চন্দ্রপৃষ্ঠ চাঁদের সৃষ্টির পরপর, এর পৃষ্ঠ অনেক গরম ছিল এবং কোনো প্রকার গর্ত ছিল না। চাঁদে বিপুল পরিমাণে ধূমকেতু ও গ্রহানুর আঘাতে গর্তের সৃষ্টি হয়। এই সময়টি late heavy bombardment নামে পরিচিত। চাঁদের দুই পার্শ্ব চাঁদের ঘূর্ণনটি সঙ্কালিক অর্থাৎ ঘূর্ণনের সময় সবসময় চাঁদের একটি পৃষ্ঠই পৃথিবীর দিকে মুখ করা থাকে। চাঁদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এর ঘূর্ণন ধীরতর হতে হতে একটি নির্দিষ্ট গতিতে এসে locked হয়ে যায়। পৃথিবী দ্বারা সৃষ্ট জোয়ার-ভাটা সংক্রান্ত বিকৃতির সাথে সম্পর্কিত ঘর্ষণ ক্রিয়ার কারণেই এই লকিং সৃষ্টি হয়। উপরন্তু, চান্দ্র কক্ষপথের উৎকেন্দ্রিকতা থেকে যে ক্ষুদ্র পরিবর্তনের সৃষ্টি হয় তার কারণে পৃথিবী থেকে চন্দ্রপৃষ্ঠের শতকরা প্রায় ৫৯ ভাগ দৃশ্যমান হয়ে উঠে। এই পরিবর্তনের ক্রিয়াটিকে লাইব্রেশন বলা হয়। thumb|200px|right|চাঁদের নিকট পার্শ্ব thumb|200px|right|চাঁদের দূর পার্শ্ব চাঁদের যে পৃষ্ঠটি পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকে তাকে নিকট পার্শ্ব বলা হয় এবং এর বিপরীত পৃষ্ঠটিকে বলা হয় দূর পার্শ্ব। দূর পার্শ্বের সাথে আবার অন্ধকারাচ্ছন্ন পার্শ্বের সাথে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। চাঁদের যে গোলার্ধে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের আলো পৌঁছায় না সে গোলার্ধকে অন্ধকারাচ্ছন্ন পার্শ্ব বলা হয়। ১৯৫৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের লুনা ৩ নামক নভোযান প্রথমবারের মতো চাঁদের দূর পার্শ্বের ছবি তুলেছিল। এই পার্শ্বের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে একেবারেই কোনো মারিয়া (চাঁদের বিশেষ ভূমিরূপ, আক্ষরিক অর্থে সাগর) নেই। thumb|right|250px|চাঁদের লাইব্রেশন মারিয়া পূর্ণিমার সময় মানুষ পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে চাঁদের অপেক্ষাকৃত অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং স্বতন্ত্র ধরনের যে পৃষ্ঠগুলো দেখতে পায় তাদেরকে বলা হয় মারিয়া (maria, একবচন – mare)। লাতিন ভাষায় মারে শব্দের অর্থ সাগর। প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই অংশগুলো পানি দ্বারা পূর্ণ বলে ভাবতেন বিধায়ই এ ধরনের নামকরণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আর নামের পরিবর্তন করা হয়নি। সুপ্রাচীন ব্যাসল্ট দ্বারা গঠিত কঠিন লাভার পুকুর হিসেবে এগুলোকে আখ্যায়িত করা যায়। চাঁদের পৃষ্ঠের সাথে উল্কা এবং ধূমকেতুর সংঘর্ষের ফলে অনেক ইমপ্যাক্ট অববাহিকার সৃষ্টি হয়েছে। চাঁদের ব্যাসাল্টিক লাভার অধিকাংশ উৎক্ষিপ্ত হয়ে এই অববাহিকাগুলোর সাথে সম্পর্কিত নিম্নভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম হল Oceanus Procellarum। কারণ এর সাথে কোন ইমপ্যাক্ট অববাহিকার সম্পর্ক নেই। মারিয়ার অধিকাংশ চাঁদের নিকট পার্শ্বে অবস্থিত। জলের অস্তিত্ব ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের অ্যাপোলো অভিযানে চাঁদ থেকে আনা পাথরখণ্ড পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা প্রথম দাবি করেছিলেন যে, চাঁদে পানি রয়েছে। তারপর ভারত তাদের প্রথম চন্দ্রাভিযানের (চন্দ্রযান-১) পর একই দাবি করে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা চন্দ্রযান-১ ছাড়াও দুটো মার্কিন নভোযানের (ডিপ ইমপ্যাক্ট ও ক্যাসিনি) পাঠানো উপাত্ত বিশ্লেষণ নিশ্চিত হয়ে এমন দাবি উত্থাপন করেন। ভারতীয় নভোযানটি নাসা'র সরবরাহকৃত চন্দ্রপৃষ্ঠের ২-৩ ইঞ্চি গভীরে অনুসন্ধানক্ষম মুন মিনারেলজি ম্যাপার (এম৩) নামক একটি যন্ত্রের সহায়তায় চন্দ্রপৃষ্ঠের মেরু অঞ্চলে সূর্যের প্রতিফলিত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরীক্ষা করে প্রমাণ পায় যে চাঁদের মাটির ১০,০০,০০০ কণায় পানির কণা হলো ১,০০০। গবেষণায় চন্দ্রপৃষ্ঠের পাথর ও মাটিতে প্রায় ৪৫% অক্সিজেনের প্রমাণ মিলেছে। তবে হাইড্রোজেনের পরিমাণ গবেষণাধীন রয়েছে (২০০৯)। অবশ্য গবেষণায় এও বলা হয় যে, চাঁদের মেরু অঞ্চলের নানা গর্তের তলদেশে বরফ থাকলেও চাঁদের অন্য অঞ্চল শুষ্ক। মানুষের অস্তিত্ব থাম্ব|চন্দ্রপৃষ্ঠে অ্যাপোলো ১৭ অভিযানের পর মানুষের কাজের অবশিষ্টাংশ চাঁদে মানুষের ক্রিয়াকলাপের চিহ্নের পাশাপাশি কিছু স্থায়ী স্থাপনাও রয়েছে। যেমন মুন মিউজিয়াম আর্ট পিস, অ্যাপোলো ১১ শুভেচ্ছার বার্তা, লুনার ফলক, ফ্যালেন অ্যাস্ট্রোনট স্মৃতি এবং অন্যান্য নিদর্শন। থাম্ব|পতিত নভোচারী অবকাঠামো বিভিন্ন এজেন্সি এবং কোম্পানি চাঁদে একটি দীর্ঘমেয়াদী মানব বসতি স্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে। যেখানে আর্টেমিস প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে বর্তমানে সবচেয়ে উন্নত প্রকল্প হিসেবে রয়েছে চন্দ্র গেটওয়ে। থাম্ব|২০২৪ সালের কল্পিত চন্দ্র গেটওয়ের মডেল তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:চাঁদ বিষয়শ্রেণী:প্রাকৃতিক উপগ্রহ বিষয়শ্রেণী:প্রাচীনকাল থেকে জ্ঞাত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ বিষয়শ্রেণী:উপগ্রহ
পৃথিবী
https://bn.wikipedia.org/wiki/পৃথিবী
পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্ব অনুযায়ী তৃতীয়, সর্বাপেক্ষা অধিক ঘনত্বযুক্ত এবং সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ। সূর্য হতে এটির দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কি.মি।এটি সৌরজগতের চারটি কঠিন গ্রহের অন্যতম। পৃথিবীর অপর নাম "বিশ্ব" বা "নীলগ্রহ"। ইংরেজি ভাষায় পরিচিত আর্থ (Earth) নামে, গ্রিক ভাষায় পরিচিত গাইয়া (Γαῖα) নামে, লাতিন ভাষায় এই গ্রহের নাম "টেরা (Terra)। Oxford English Dictionary, 1st ed. "terra, n." Oxford University Press (Oxford), 1911. পৃথিবী হলো মানুষ সহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল। পৃথিবী এখন পর্যন্ত পাওয়া একমাত্র মহাজাগতিক স্থান যেখানে প্রাণের অস্তিত্বের কথা বিদিত।"Age of the Earth". U.S. Geological Survey. 1997. ৪৫৪ কোটি বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। এক বিলিয়ন বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বুকে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে।Dalrymple, G. Brent (2001). "The age of the Earth in the twentieth century: a problem (mostly) solved". Special Publications, Geological Society of London. 190 (1): 205–221. Bibcode:2001GSLSP.190..205D. doi:10.1144/GSL.SP.2001.190.01.14. পৃথিবীর জীবমণ্ডল এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল ও অন্যান্য অজৈবিক অবস্থাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে একদিকে যেমন বায়ুজীবী জীবজগতের বংশবৃদ্ধি ঘটেছে, অন্যদিকে তেমনি ওজন স্তর গঠিত হয়েছে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে একযোগে এই ওজোন স্তরই ক্ষতিকর সৌর বিকিরণের গতিরোধ করে গ্রহের বুকে প্রাণের বিকাশ ঘটার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে।Burton, Kathleen (2002-11-29). "Astrobiologists Find Evidence of Early Life on Land" পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ ও এর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস ও কক্ষপথ এই যুগে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়ক হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, আরও ৫০ কোটি বছর পৃথিবী প্রাণধারণের সহায়ক অবস্থায় থাকবে।Kunin, W.E.; Gaston, Kevin, eds. (31 December 1996). The Biology of Rarity: Causes and consequences of rare—common differences. পৃথিবীর উপরিতল একাধিক শক্ত স্তরে বিভক্ত। এগুলিকে ভূত্বকীয় পাত বলা হয়। কোটি কোটি বছর ধরে এগুলি পৃথিবীর উপরিতলে এসে জমা হয়েছে। পৃথিবীতলের প্রায় ৭১% লবণাক্ত জলের মহাসাগর দ্বারা আবৃত।National Oceanic and Atmospheric Administration. "Ocean". NOAA.gov. অবশিষ্টাংশ গঠিত হয়েছে মহাদেশ ও অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে। স্থলভাগেও রয়েছে অজস্র হ্রদ ও জলের অন্যান্য উৎস। এগুলি নিয়েই গঠিত হয়েছে বিশ্বের জলভাগ। জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় তরল জল এই গ্রহের ভূত্বকের কোথাও সমভার অবস্থায় পাওয়া যায় না। পৃথিবীর মেরুদ্বয় সর্বদা অ্যান্টার্কটিক বরফের চাদরের কঠিন বরফ বা আর্কটিক বরফের টুপির সামুদ্রিক বরফে আবৃত থাকে। পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ সর্বদা ক্রিয়াশীল। এই অংশ গঠিত হয়েছে একটি আপেক্ষিকভাবে শক্ত ম্যান্টেলের মোটা স্তর, একটি তরল বহিঃকেন্দ্র (যা একটি চৌম্বকক্ষেত্র গঠন করে) এবং একটি শক্ত লৌহ আন্তঃকেন্দ্র নিয়ে গঠিত। মহাবিশ্বের অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বিশেষ করে সূর্য ও চাঁদের সঙ্গে এই গ্রহের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবী নিজ কক্ষপথে মোটামুটি ৩৬৫.২৬ সৌর দিনে বা এক নক্ষত্র বর্ষে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।Yoder, Charles F. (1995). T. J. Ahrens, ed. Global Earth Physics: A Handbook of Physical Constants. Washington: American Geophysical Union. p. 8. পৃথিবী নিজ অক্ষের ৬৬.১/২ ডিগ্রি কোণে হেলে রয়েছে। এর ফলে এক বিষুবীয় বছর (৩৬৫.২৪ সৌরদিন) সময়কালের মধ্যে এই বিশ্বের বুকে ঋতুপরিবর্তন ঘটে থাকে।Williams, David R. (2004-09-01). "Earth Fact Sheet". পৃথিবীর একমাত্র বিদিত প্রাকৃতিক উপগ্রহ হল চাঁদ। ৪.৩৫ বিলিয়ন বছর আগে চাঁদ পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু করেছিল। চাঁদের গতির ফলেই পৃথিবীতে সামুদ্রিক জোয়ারভাঁটা হয় এবং পৃথিবীর কক্ষের ঢাল সুস্থিত থাকে। চাঁদের গতিই ধীরে ধীরে পৃথিবীর গতিকে কমিয়ে আনছে। ৩.৮ বিলিয়ন থেকে ৪.১ বিলিয়ন বছরের মধ্যবর্তী সময়ে পরবর্তী মহাসংঘর্ষের সময় একাধিক গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষে গ্রহের উপরিতলের পরিবেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। গ্রহের খনিজ সম্পদ ও জৈব সম্পদ উভয়ই মানবজাতির জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। এই গ্রহের অধিবাসীরা প্রায় ২০০টি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে সমগ্র গ্রহটিকে বিভক্ত করে বসবাস করছে। এই সকল রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক কূটনৈতিক, পর্যটন, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। মানব সংস্কৃতি গ্রহ সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণার জন্মদাতা। এই সব ধারণার মধ্যে রয়েছে পৃথিবীকে দেবতা রূপে কল্পনা, সমতল বিশ্ব কল্পনা এবং পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্ররূপে কল্পনা। এছাড়া একটি সুসংহত পরিবেশ রূপে বিশ্বকে কল্পনা করার আধুনিক প্রবণতাও লক্ষিত হয়। এই ধারণাটি বর্তমানে প্রাধান্য অর্জন করেছে। নাম ও ব্যুৎপত্তি "পৃথিবী" শব্দটি সংস্কৃত। এ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত पृथिवी থেকে। এর অপর নাম "পৃথ্বী"। পৃথ্বী ছিল পৌরাণিক "পৃথুর" রাজত্ব। এর সমার্থক শব্দ হচ্ছে- বসুধা, বসুন্ধরা, ধরা, ধরনী, ধরিত্রী, ধরাতল, ভূমি, ক্ষিতি, মহী, দুনিয়া ইত্যাদি। পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস উৎপত্তি সৌরজগৎ সৃষ্টির মোটামুটি ১০০ মিলিয়ন বছর পর একগুচ্ছ সংঘর্ষের ফল হলো পৃথিবী। আজ থেকে ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী নামের গ্রহটি আকৃতি পায়, পায় লৌহের একটি কেন্দ্র এবং একটি বায়ুমণ্ডল। সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে দুটি গ্রহের তীব্র সংঘর্ষ হয়েছিল। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, এ সময় জুড়ে যায় গ্রহ দুটি। পৃথিবী নামক গ্রহের সঙ্গে চরম সংঘর্ষ হয়েছিল থিয়া নামে একটি গ্রহের। সংঘর্ষের সময় পৃথিবীর বয়স ছিল ১০ কোটি বছর। সংঘর্ষের জেরে থিয়া ও পৃথিবীর জুড়ে যায়, তৈরি হয় নতুন গ্রহ। সেই গ্রহটিতেই আমরা বাস করছি। তিনবার চন্দ্র অভিযানে পাওয়া চাঁদের মাটি এবং হাওয়াই অ্যারিজোনায় পাওয়া আগ্নেয়শিলা মিলিয়ে চমকে যান গবেষকরা। দুটি পাথরের অক্সিজেন আইসোটোপে কোনও ফারাক নেই। গবেষকদলের প্রধান অধ্যাপক এডওয়ার্ড ইয়ংয়ের কথায়, চাঁদের মাটি আর পৃথিবীর মাটির অক্সিজেন আইসোটোপে কোনও পার্থক্য পাইনি। থিয়া নামক গ্রহটি তখন পরিণত হচ্ছিল। ঠিক সেই সময়েই ধাক্কাটি লাগে এবং পৃথিবীর সৃষ্টি হয়।http://www.eurobdnews.com/IT/16219/----#sthash.pzOLnVE4.dpuf thumb|left|শিল্পীর দৃষ্টিতে প্রথম দিকের সৌর জগৎ ও এর গ্রহসমূহের চাকতি। সৌরজগতের ভেতরে অবস্থিত সবচেয়ে পুরনো পদার্থের বয়স প্রায় ৪.৫৬ শত কোটি বছর।Bowring, S.; Housh, T. (1995). "The Earth's early evolution". Science. 269 (5230): 1535–40. Bibcode:1995Sci...269.1535B. doi:10.1126/science.7667634. PMID 7667634. আজ থেকে ৪.৫৪ শত কোটি বছর আগে পৃথিবীর আদিমতম রূপটি গঠিত হয়। সূর্যের পাশাপাশি সৌরজগতের অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুগুলিও গঠিত হয় ও এগুলোর বিবর্তন ঘটতে থাকে। তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, একটি আণবিক মেঘ থেকে একটি সৌর নীহারিকা মহাকর্ষীয় ধসের মাধ্যমে কিছু আয়তন বের করে নেয়, যা ঘুরতে শুরু করে এবং চ্যাপ্টা হয়ে তৈরি হয় পরিনাক্ষত্রিক চাকতিতে, এবং এই চাকতি থেকেই সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহের উৎপত্তি ঘটে। একটি নীহারিকাতে বায়বীয় পদার্থ, বরফকণা এবং মহাজাগতিক ধূলি (যার মধ্যে আদিম নিউক্লাইডগুলিও অন্তর্ভুক্ত) থাকে। নীহারিকা তত্ত্ব অনুযায়ী সংযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অতিক্ষুদ্র গ্রহগুলি গঠিত হয়। এভাবে আদিম পৃথিবীটি গঠিত হতে প্রায় ১ থেকে ২ কোটি বছর লেগেছিল।Yin, Qingzhu; Jacobsen, S. B.; Yamashita, K.; Blichert-Toft, J.; Télouk, P.; Albarède, F. (2002). "A short timescale for terrestrial planet formation from Hf-W chronometry of meteorites". Nature. 418 (6901): 949–52. Bibcode:2002Natur.418..949Y. doi:10.1038/nature00995. PMID 12198540. চাঁদের গঠন নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে এবং বলা হয় চাঁদ প্রায় ৪.৫৩ বিলিয়ন বছর পূর্বে গঠিত হয়।Kleine, Thorsten; Palme, Herbert; Mezger, Klaus; Halliday, Alex N. (24 November 2005). "Hf-W Chronometry of Lunar Metals and the Age and Early Differentiation of the Moon". Science. 310 (5754): 1671–74. Bibcode:2005Sci...310.1671K. doi:10.1126/science.1118842. PMID 16308422. একটি গবেষণারত অনুমানের তথ্য অনুসারে, মঙ্গল গ্রহ আকারের বস্তু থিয়ার সাথে পৃথিবীর আঘাতের পরে পৃথিবী থেকে খসে পড়া বস্তুর পরিবৃদ্ধি ফলে চাঁদ গঠিত হয়।Reilly, Michael (22 October 2009). "Controversial Moon Origin Theory Rewrites History". এই ঘটনা থেকে বলা হয়ে থাকে যে, থিয়া গ্রহের ভর ছিল পৃথিবীর ভরের প্রায় ১০%,Canup, R. M.; Asphaug, E. (2001). An impact origin of the Earth-Moon system. American Geophysical Union, Fall Meeting 2001. Abstract #U51A-02. Bibcode:2001AGUFM.U51A..02C. যা পৃথিবীকে আঘাত করে কৌনিক ভাবে,Canup, R.; Asphaug, E. (2001). "Origin of the Moon in a giant impact near the end of the Earth's formation". Nature. 412 (6848): 708–12. Bibcode:2001Natur.412..708C. doi:10.1038/35089010. PMID 11507633. এবং আঘাতের পরে এটির কিছু ভর পৃথিবীর সাথে বিলীনও হয়ে যায়। প্রায় ৪.১ থেকে ৩.৫ বিলিয়ন বছরের মধ্যে অজস্র গ্রহাণুর আঘাত যা ঘটে, যার ফলে চাঁদের বৃহত্তর পৃষ্ঠতলের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, আর এর কারণ ছিল পৃথিবীর উপস্থিতি। ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস thumb|একটি প্রাকৃতিক শিলাগঠিত খিলান, শিলার স্তর প্রদর্শন করছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও সাগরসমূহ আগ্নেয়গিরির উৎগিরণ ও জলীয় বাষ্প সমৃদ্ধ গ্যাসের অতিনির্গমনের (Outgassing) ফলে সৃষ্টি হয়েছে। গ্রহাণুপুঞ্জ, ক্ষুদ্র গ্রহ, ও ধুমকেতু থেকে আসা ঘনীভূত জল ও বরফের সম্মিলনে পৃথিবীর সাগরসমূহের উৎপত্তি হয়েছে।Morbidelli, A.; et al. (2000). "Source regions and time scales for the delivery of water to Earth". Meteoritics & Planetary Science. 35 (6): 1309–20. Bibcode:2000M&PS...35.1309M. doi:10.1111/j.1945-5100.2000.tb01518.x. ফেইন্ট ইয়ং সান প্যারাডক্স মডেলে বলা হয়, যখন নব গঠিত সূর্যে বর্তমান সময়ের চেয়ে মাত্র ৭০% সৌর উজ্জ্বলতা ছিল তখন বায়ুমণ্ডলীয় "গ্রিনহাউজ গ্যাস" সাগরের পানি বরফ হওয়া থেকে বিরত রাখে।Guinan, E. F.; Ribas, I. Benjamin Montesinos, Alvaro Gimenez and Edward F. Guinan, ed. Our Changing Sun: The Role of Solar Nuclear Evolution and Magnetic Activity on Earth's Atmosphere and Climate. ASP Conference Proceedings: The Evolving Sun and its Influence on Planetary Environments. San Francisco: Astronomical Society of the Pacific. Bibcode:2002ASPC..269...85G. . ৩.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র গঠিত হয়, যা সৌর বায়ুর ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।"Oldest measurement of Earth's magnetic field reveals battle between Sun and Earth for our atmosphere". Physorg.news. 4 March 2010. পৃথিবীর শক্ত বহিরাবণ সৃষ্টি হয়েছে যখন পৃথিবীর গলিত বাইরের অংশ ঠাণ্ডা হয়ে শক্ত হয়। দুটি মডেলেRogers, John James William; Santosh, M. (2004). Continents and Supercontinents. Oxford University Press US. p. 48. . ব্যাখ্যা করা হয় যে, ভূমি ধীরে ধীরে বর্তমান অবস্থায় এসেছে,Hurley, P. M.; Rand, J. R. (June 1969). "Pre-drift continental nuclei". Science. 164 (3885): 1229–42. Bibcode:1969Sci...164.1229H. doi:10.1126/science.164.3885.1229. PMID 17772560. বা পৃথিবীর ইতিহাসের শুরুতেArmstrong, R. L. (1968). "A model for the evolution of strontium and lead isotopes in a dynamic earth". Reviews of Geophysics. 6 (2): 175–99. Bibcode:1968RvGSP...6..175A. doi:10.1029/RG006i002p00175. দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছেDe Smet, J.; Van Den Berg, A.P.; Vlaar, N.J. (2000). "Early formation and long-term stability of continents resulting from decompression melting in a convecting mantle". Tectonophysics. 322 (1–2): 19–33. Bibcode:2000Tectp.322...19D. doi:10.1016/S0040-1951(00)00055-X. এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে মহাদেশীয় অঞ্চলসমূহ গঠিত হয়েছে।Harrison, T.; et al. (December 2005). "Heterogeneous Hadean hafnium: evidence of continental crust at 4.4 to 4.5 ga". Science. 310 (5756): 1947–50. Bibcode:2005Sci...310.1947H. doi:10.1126/science.1117926. PMID 16293721.Hong, D.; Zhang, Jisheng; Wang, Tao; Wang, Shiguang; Xie, Xilin (2004). "Continental crustal growth and the supercontinental cycle: evidence from the Central Asian Orogenic Belt". Journal of Asian Earth Sciences. 23 (5): 799–813. Bibcode:2004JAESc..23..799H. doi:10.1016/S1367-9120(03)00134-2.Armstrong, R. L. (1991). "The persistent myth of crustal growth". Australian Journal of Earth Sciences. 38 (5): 613–30. Bibcode:1991AuJES..38..613A. doi:10.1080/08120099108727995. মহাদেশসমূহ পৃথিবীর অভ্যন্তরে লাগাতার তাপ হ্রাস পাবার ফলে ভূত্বকীয় পাত গঠিত হয়েছে। ভূতাত্ত্বিক সময় শত-মিলিয়ন বছর যাবত চলে এবং এ সময়ে মহামহাদেশসমূহ একত্রিত হয়েছে ও ভেঙ্গে আলাদাও হয়েছে। প্রায় ৭৫ কোটি বছর পূর্বে সবচেয়ে প্রাচীন মহামহাদেশ রোডিনিয়া ভাঙ্গতে শুরু করে। মহাদেশটি পরে পুনরায় ৬০ কোটি বছর থেকে ৫৪ কোটি বছর পূর্বে একত্রিত হয়ে প্যানোটিয়া, পরবর্তীতে প্যানজিয়ায় একত্রিত হয়, যাও পরে ১৮ কোটি বছর পূর্বে ভেঙ্গে যায়।Murphy, J. B.; Nance, R. D. (1965). "How do supercontinents assemble?". American Scientist. 92 (4): 324–33. doi:10.1511/2004.4.324. বরফ যুগের বর্তমান রূপ শুরু হয় প্রায় ৪ কোটি বছর পূর্বে এবং ৩০ লক্ষ বছর পূর্বে প্লেইস্টোসিন সময়ে তা ঘনীভূত হয়। ৪০,০০০ থেকে ১০০,০০০ বছর পূর্বে হিমবাহ ও বরফ গলার কারণে উচ্চ-অক্ষাংশ অঞ্চলসমূহের উচ্চতা কমতে থাকে। শেষ মহাদেশীয় হিমবাহ শেষ হয় ১০,০০০ বছর পূর্বে।"Paleoclimatology – The Study of Ancient Climates". Page Paleontology Science Center. জীবনের আবির্ভাব ও বিবর্তন alt=|বাম|থাম্ব|আরআরএনএ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পৃথিবীতে জীবনের কাল্পনিক ফাইলোজেনেটিক ট্রি। রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে প্রায় ৪০০ কোটি বছর পূর্বের প্রথম অণুর সন্ধান পাওয়া যায়। আরও ৫০ কোটি বছর পরে, সকল জীবের শেষ একক পূর্বপুরুষের সন্ধান মিলে।Doolittle, W. Ford; Worm, Boris (February 2000). "Uprooting the tree of life" (PDF). Scientific American. 282 (6): 90–95. doi:10.1038/scientificamerican0200-90. PMID 10710791. সালোকসংশ্লেষণের বিবর্তনের ফলে সৌর শক্তি সরাসরি জীবের জীবনধারণ ও বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে অক্সিজেন (O2) বায়ুমণ্ডলে একীভূত হয় এবং সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির সাথে মিথষ্ক্রিয়ার কারণে এ থেকে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য বায়ুমণ্ডলের উপরে রক্ষাকারী ওজোন স্তর (O3) সৃষ্টি হয়। বৃহৎ কোষের সাথে ক্ষুদ্র কোষের একত্রিত হওয়ার ফলে জটিল কোষ গঠিত হয় যাকে সুকেন্দ্রিক বলা হয়।Berkner, L. V.; Marshall, L. C. (1965). "On the Origin and Rise of Oxygen Concentration in the Earth's Atmosphere". Journal of Atmospheric Sciences. 22 (3): 225–61. Bibcode:1965JAtS...22..225B. doi:10.1175/1520-0469(1965)022<0225:OTOARO>2.0.CO;2. কলোনির মধ্যে কোষসমূহ আরও বিশেষায়িত হতে থাকলে বহুকোষী জীব গঠিত হয়। ওজোন স্তরে ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণ শোষণের ফলে ভূপৃষ্ঠে জীবসমূহ একত্রিত হতে থাকে।Burton, Kathleen (29 November 2002). "Astrobiologists Find Evidence of Early Life on Land". NASA. এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন জীবের জীবাশ্মসমূহ হল পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্ত ৩.৪৮ বিলিয়ন বছর পূর্বের স্যান্ডস্টোন মাইক্রোবায়াল ম্যাট জীবাশ্ম,Schopf, JW, Kudryavtsev, AB, Czaja, AD, and Tripathi, AB. (2007). Evidence of Archean life: Stromatolites and microfossils. Precambrian Research 158:141–155.Schopf, JW (2006). Fossil evidence of Archaean life. Philos Trans R Soc Lond B Biol Sci 29;361(1470) 869-85. পশ্চিম গ্রিনল্যান্ডে প্রাপ্ত ৩.৭ বিলিয়ন বছর পূর্বের মেটাসেডিমেন্ট জৈব গ্রাফাইট, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্ত জৈব শিলার অংশবিশেষ।Borenstein, Seth (19 October 2015). "Hints of life on what was thought to be desolate early Earth". Excite. Yonkers, NY: Mindspark Interactive Network. Associated Press.Bell, Elizabeth A.; Boehnike, Patrick; Harrison, T. Mark; et al. (19 October 2015). "Potentially biogenic carbon preserved in a 4.1 billion-year-old zircon" (PDF). Proc. Natl. Acad. Sci. U.S.A. Washington, D.C.: National Academy of Sciences. 112: 14518–21. Bibcode:2015PNAS..11214518B. doi:10.1073/pnas.1517557112. ISSN 1091-6490. PMC 4664351Freely accessible. PMID 26483481. ৭৫ থেকে ৫৮ কোটি বছর পূর্বে নিউপ্রোটেরোজোয়িক সময়ে, পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশ বরফাচ্ছাদিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। এই ধারণাকে "স্নোবল আর্থ" বলা হয় এবং এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে কারণ এর পরে যখন জটিলভাবে বহুকোষী জীব গঠিত হওয়া শুরু হয় তখন ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ হয়েছিল।Kirschvink, J. L. (1992). Schopf, J.W.; Klein, C.; Des Maris, D., eds. Late Proterozoic low-latitude global glaciation: the Snowball Earth. The Proterozoic Biosphere: A Multidisciplinary Study. Cambridge University Press. pp. 51–52. . ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণের পরে ৫৩৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে আরও পাঁচটি বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়।Raup, D. M.; Sepkoski Jr, J. J. (1982). "Mass Extinctions in the Marine Fossil Record". Science. 215 (4539): 1501–03. Bibcode:1982Sci...215.1501R. doi:10.1126/science.215.4539.1501. PMID 17788674. সবচেয়ে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ হল ক্রেটাশাস-টার্টিয়ারি বিলুপ্তি, যা ৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে সংগঠিত হয়। এ সময়ে গ্রহাণুর প্রভাবে যেসব ডাইনোসর উড়তে পারে না এবং অন্যান্য বৃহৎ সরীসৃপসমূহ বিলুপ্ত হতে থাকে, কিন্তু ছোট প্রজাতির প্রাণীকুল, যেমন স্তন্যপায়ী প্রাণীসমূহ বেঁচে যায়। ৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত, স্তন্যপায়ীদের জীবনে ভিন্নতা দেখা দেয় এবং আরও কয়েক মিলিয়ন বছর পূর্বে আফ্রিকান বানর-সদৃশ্য প্রাণী, যেমন অরোরিন টিউজেনেন্সিস সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা লাভ করে।Gould, Stephan J. (October 1994). "The Evolution of Life on Earth". Scientific American. 271 (4): 84–91. doi:10.1038/scientificamerican1094-84. PMID 7939569. কৃষিকাজের উন্নয়ন এবং পরে সভ্যতার উন্নয়নের ফলে পরিবেশ ও প্রকৃতির উপর মানুষের প্রভাব বাড়তে থাকে এবং বর্তমান অবস্থায় আসে।Wilkinson, B. H.; McElroy, B. J. (2007). "The impact of humans on continental erosion and sedimentation". Bulletin of the Geological Society of America. 119 (1–2): 140–56. Bibcode:2007GSAB..119..140W. doi:10.1130/B25899.1. পৃথিবীর ভবিষ্যৎ পৃথিবীর প্রত্যাশিত দীর্ঘ-মেয়াদি ভবিষ্যৎ সূর্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আগামী ১.১ বিলিয়ন বছরের মধ্যে (১ বিলিয়ন বছর= ১০৯ বছর) সূর্যের আলোর উজ্জ্বলতা আরো ১০% বৃদ্ধি পেতে পারে এবং আগামী ৩.৫ বিলিয়ন বছরের তা আরও ৪০% বৃদ্ধি পেতে পারে।Sackmann, I.-J.; Boothroyd, A. I.; Kraemer, K. E. (1993). "Our Sun. III. Present and Future". Astrophysical Journal. 418: 457–68. Bibcode:1993ApJ...418..457S. doi:10.1086/173407. পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা অজৈব কার্বন চক্রকে ত্বরান্বিত করবে, যার ফলশ্রুতিতে বায়ুতে এটির ঘনত্ব উদ্ভিদের জন্য মারাত্নক ভাবে কমে আসবে (সি৪ ফটোসিন্থেসিসে মাত্র ১০পিপিএম হবে) প্রায় ৫০০ - ৯০০ মিলিয়ন বছর পরে (১ মিলিয়ন বছর= ১০৬ বছর)। Britt, Robert (25 February 2000). "Freeze, Fry or Dry: How Long Has the Earth Got?". উদ্ভিদহীনতার কারণে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন থাকবে না, এবং প্রাণী জগৎ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।Ward, Peter D.; Brownlee, Donald (2002). The Life and Death of Planet Earth: How the New Science of Astrobiology Charts the Ultimate Fate of Our World. New York: Times Books, Henry Holt and Company. . পরবর্তী বিলিয়ন বছরের মধ্যে ভূ-পৃষ্ঠের উপরের সকল পানি শুকিয়ে যাবেCarrington, Damian (21 February 2000). "Date set for desert Earth". BBC News. এবং সারা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭০°সে (১৫৮°ফা)। এই সময়ের পর থেকে, আশা করা হয় পরবর্তী ৫০০ মিলিয়ন বছর পৃথিবী বসবাসযোগ্য থাকবে, এটা ২.৩ বিলিয়ন বছর পর্যন্তও সম্ভব যদি বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন না থাকে।Li, King-Fai; Pahlevan, Kaveh; Kirschvink, Joseph L.; Yung, Yuk L. (2009). "Atmospheric pressure as a natural climate regulator for a terrestrial planet with a biosphere" (PDF). Proceedings of the National Academy of Sciences. 106 (24): 9576–79. Bibcode:2009PNAS..106.9576L. doi:10.1073/pnas.0809436106. PMC 2701016Freely accessible. PMID 19487662. এমনকি যদি সূর্য শাশ্বত ও স্থিতিশীল থাকে, আধুনিক মহাসাগরগুলোতে থাকা ২৭% পানি ভূ-অভ্যন্তরের গুরুমন্ডল স্তরে হারিয়ে যাবে, এটির কারণ সাগরের মধ্যে অবস্থিত শৈলশ্রেণী থেকে নির্গত হওয়া বাষ্পের পরিমাণ কমে যাওয়া।Bounama, Christine; Franck, S.; Von Bloh, W. (2001). "The fate of Earth's ocean" (PDF). Hydrology and Earth System Sciences. Germany: Potsdam Institute for Climate Impact Research. 5 (4): 569–75. Bibcode:2001HESS....5..569B. doi:10.5194/hess-5-569-2001. ৫ বিলিয়ন বছরের মধ্যে সূর্যের আকারের পরিবর্তন হয়ে একটি রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানবে পরিনত হবে। বিভিন্ন মডেল থেকে এটা অনুমান করা যায় সূর্যের আকৃতি বৃদ্ধি পাবে প্রায় ১ এইউ (১৫,০০,০০,০০০ কি.মি), যা এটির বর্তমান পরিধির তুলনায় ২৫০ গুন বেশি।Schröder, K.-P.; Connon Smith, Robert (2008). "Distant future of the Sun and Earth revisited". Monthly Notices of the Royal Astronomical Society. 386 (1): 155–163. arXiv:0801.4031Freely accessible. Bibcode:2008MNRAS.386..155S. doi:10.1111/j.1365-2966.2008.13022.x. পৃথিবীর ভাগ্য খুব ভালভাবে পরিষ্কার এই সময়ে। লোহিত দানব হিসাবে, সূর্য এই সময় তার ভরের প্রায় ৩০% হারাবে। তাই, জোয়ার-ভাটা বিহীন পৃথিবী, একটি কক্ষপথে সূর্যকে প্রায় ১.৭ এইউ দূরত্বে প্রদক্ষিণ করবে, এই সময় নক্ষত্রটি তার সর্বোচ্চ পরিধিতে পরিণত হবে। বেঁচে থাকা বাকি জীব বৈচিত্র্যে বেশিরভাগ গুলো, কিন্তু সব নয় সূর্যের বাড়তে থাকা উজ্জ্বলতা কারণে মারা যাবে (উজ্জ্বলতার সর্বোচ্চ সীমা বর্তমান সীমার থেকে ৫,০০০ গুণ বেশি হবে)। ২০০৮ সালে করা একটি সিমুলেশনের ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে, জোয়ার-ভাটার প্রভাব না থাকার কারণে পৃথিবীর কক্ষপথ এক সময় হ্রাস পাবে এবং সূর্য এটিকে টেনে নিবে নিজের দিকে, ফলাফলস্বরূপ পৃথিবী সূর্যের পরিমণ্ডলে প্রবেশ করবে এবং এক সময় বাষ্পে পরিণত হবে। গাঠনিক বৈশিষ্ট্য আকৃতি পৃথিবী দেখতে পুরোপুরি গোলাকার নয়, বরং কমলালেবুর মত উপর ও নিচের দিকটা কিছুটা চাপা এবং মধ্যভাগ (নিরক্ষরেখার কাছাকাছি) স্ফীত। এ'ধরনের স্ফীতি তৈরি হয়েছে নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে এটির ঘূর্ণনের কারণে। একই কারণে বিষুব অঞ্চলের ব্যাস মেরু অঞ্চলের ব্যাসের তুলনায় প্রায় ৪৩ কি.মি. বেশি।thumb|পৃথিবীর আকৃতি। ভূ-পৃষ্ঠের উপরিতল হতে ভূ-ভরকেন্দ্রের দূরত্ব দেখানো হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার আন্দাস পর্বত শৃঙ্গকে দেখানো হয়েছে উঁচু জায়গা হিসাবে। তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে পৃথিবী২০১৪ বিশ্ব ভূ-চিত্র মডেল থেকে। পৃথিবীর আকৃতি অনেকটাই কমলাকার উপগোলকের মত। ঘূর্ণনের ফলে, পৃথিবীর ভৌগোলিক অক্ষ বরাবর এটি চ্যাপ্টা এবং নিরক্ষরেখা বরাবর এটি স্ফীত। নিরক্ষরেখা বরাবর পৃথিবীর ব্যাস মেরু থেকে মেরুর ব্যাসের তুলনায় বৃহৎ। তাই, পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর পৃথিবীর ভরকেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ দূরত্বটি হল নিরক্ষরেখার উপর অবস্থিত চিম্বরাজো আগ্নেয়গিরির সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি।Sharp, David (5 March 2005). "Chimborazo and Old Kilogram". The Lancet. 365 (9462): 831-32. doi:10.1016/S0140-6736(05)71021-7. PMID 15752514 আদর্শ মাপের উপগোলকের গড় ব্যাস হল । স্থানীয় ভূসংস্থানে ব্যাসের মান আদর্শ উপগোলকের ব্যাসের মানের চেয়ে ভিন্ন হয়, যদিওবা সারা বিশ্বের কথা বিবেচনা করলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধের তুলনায় এই বিচ্যুতির মান যৎ সামান্য: সর্বোচ্চ পরিমাণ বিচ্যুতির মান হল মাত্র ০.১৭%, যা পাওয়া যায় মারিয়ানা খাতে (যা সমুদ্র পৃষ্ঠতল থেকে নিচে), আর অপরদিকে মাউন্ট এভারেস্টে ( যা সমুদ্র পৃষ্ঠতলের থেকে উঁচুতে) বিচ্যুতির মান ০.১৪%। জিওডেসি প্রকাশ করে যে, পৃথিবীতে সমুদ্র তার প্রকৃত আকার ধারণ করবে যদি ভূমি ও অন্যান্য চাঞ্চলতা যেমন ঢেউ ও বাতাস না থাকে, আর একে সংজ্ঞায়িত করা হয় জিওইড দ্বারা। আরো স্পষ্ট ভাবে, জিওইডের পরিমাণ হবে গড় সমুদ্র পৃষ্টতলের উচ্চতায় অভিকর্ষীয় মানের সমান। রাসায়নিক গঠন + ভূত্বকের রাসায়নিক গঠন Brown, Geoff C.; Mussett, Alan E. (1981). The Inaccessible Earth (2nd ed.). Taylor & Francis. p. 166. ISBN 0-04-550028-2. Note: After Ronov and Yaroshevsky (1969)যৌগ সমূহরাসায়নিক সংকেতগঠনমহাদেশীয়মহাসাগরীয়সিলিকাSiO2৬০.২%৪৮.৬%অ্যালুমিনাAl2O3১৫.২%১৬.৫%লাইমCaO৫.৫%১২.৩%ম্যাগনেসিয়াMgO৩.১%৬.৮%আয়রন (II) অক্সাইডFeO৩.৮%৬.২%সোডিয়াম অক্সাইডNa2O৩.০%২.৬%পটাশিয়াম অক্সাইডK2O২.৮%০.৪%আয়রন (III) অক্সাইডFe2O3২.৫%২.৩%পানিH2O১.৪%১.১%কার্বন ডাই অক্সাইডCO2১.২%১.৪%টাইটেনিয়াম ডাই অক্সাইডTiO2০.৭%১.৪%ফসফরাস পেন্টা অক্সাইডP2O5০.২%০.৩%মোট৯৯.৬%৯৯.৯% পৃথিবীর ভর হল প্রায় ৫.৯৭ × ১০২৪ কিলোগ্রাম (৫,৯৭০ ইয়াটোগ্রাম)। এটি গঠিত যে সকল উপাদান দিয়ে তার মধ্যে সবচাইতে বেশি হল লোহা (৩২.১%), অক্সিজেন (৩০.১%), সিলিকন (১৫.১%), ম্যাগনেসিয়াম (১৩.৯%), সালফার (২.৯%), নিকেল (১.৮%), ক্যালসিয়াম (১.৫%), এবং অ্যালুমিনিয়াম (১.৪%), এ ছাড়া বাকি ১.২% এর মধ্যে রয়েছে অন্যান্য বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতি। ভরের পৃথকীকরণ ঘটার ফলে, অনুমান করা হয় পৃথিবীর কেন্দ্র অঞ্চলটি প্রধানত গঠিত লোহা (৮৮.৮%) দ্বারা, এর সাথে অল্প পরিমাণে রয়েছে নিকেল (৫.৮%), সালফার (৪.৫%), এবং এছাড়া অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে ১% এরও কম।Morgan, J. W.; Anders, E. (1980). "Chemical composition of Earth, Venus, and Mercury". Proceedings of the National Academy of Sciences. 77 (12): 6973–77. Bibcode:1980PNAS...77.6973M. doi:10.1073/pnas.77.12.6973. PMC 350422 . PMID 16592930. সাধারণত পৃথিবীর ভূত্বকের শিলাগুলোর উপাদানসমূহের সবগুলোই হয়ে থাকে অক্সাইড ধরনের: তবে এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম হল এতে ক্লোরিন, সারফার, এবং ফ্লোরিনের উপস্থিতি এবং সাধারণত কোন শিলায় এগুলোর পরিমাণ হয়ে থাকে মোট পরিমাণের ১% এরও কম। মোট ভূত্বকের ৯৯% গঠিত হয়ে থাকে ১১ ধরনের অক্সাইড দ্বারা, যার মধ্যে প্রধান উপাদানগুলো হল সিলিকা, অ্যালুমিনা, আয়রন অক্সাইড, লাইম, ম্যাগনেসিয়া (ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড), পটাশ এবং সোডা। অভ্যন্তরীণ কাঠামো পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কাঠামো অন্যান্য বহুজাগতিক গ্রহের মত বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত, স্তরগুলোর গঠন এগুলোর রাসায়নিক ও ভৌত (রিওলজি) বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। সবচেয়ে বাইরের স্তরটি রাসায়নিকভাবে স্বতন্ত্র নিরেট সিলিকেট ভূত্বক, যার নিচে রয়েছে অধিক সান্দ্রতা সম্পন্ন নিরেট ম্যান্টেল বা গুরুমণ্ডল। ভূত্বকটি গুরুমণ্ডল থেকে পৃথক রয়েছে মোহোরোভিচিক বিচ্ছিন্নতা (Mohorovičić discontinuity) অংশ দ্বারা। ভূত্বকের পুরুত্ব মহাসাগরে নিচে প্রায় ৬ কিলোমিটার এবং মহাদেশের ক্ষেত্রে প্রায় ৩০-৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়ে থাকে। ভূত্বক এবং এর সাথে ঠান্ডা, দৃঢ় উপরের দিকের উর্দ্ধ গুরুমণ্ডলকে একসাথে বলা হয়ে থাকে লিথোস্ফিয়ার এবং লিথোস্ফিয়ার সেই অংশ যেখানে টেকটনিক প্লেটগুলো সংকুচিত অবস্থায় থাকে। লিথোস্ফিয়ারের পরের স্তরটি হল অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার, এটা এর উপরের স্তর থেকে কম সান্দ্রতা সম্পন্ন, এবং এর উপরে অবস্থান করে লিথোস্ফিয়ার নড়াচড়া করতে পারে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪১০ কি.মি. থেকে ৬৬০ কি.মি. গভীরতার মধ্যে গুরুমণ্ডলের ক্রিস্টাল কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়, এখানে রূপান্তর অঞ্চলের একটি বিস্তারে পাওয়া যায়, যা উর্দ্ধ গুরুমণ্ডল ও নিম্ন গুরুমণ্ডলকে পৃথক করে। গুরুমণ্ডলের নিচে, অত্যন্ত সান্দ্রতা পূর্ণ একটি তরল বহিঃ ভূকেন্দ্র থাকে, যা একটি নিরেট অন্তঃ ভূকেন্দ্রের উপরে অবস্থান করে। পৃথিবীর অন্তঃ ভূকেন্দ্রের ঘূর্ণনের কৌণিক বেগ বাদবাকি ভূখন্ডের তুলনায় সামান্য বেশি হতে পারে, এটি প্রতি বছর ০.১–০.৫° বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।Kerr, Richard A. (26 September 2005). "Earth's Inner Core Is Running a Tad Faster Than the Rest of the Planet". Science. 309 (5739): 1313. doi:10.1126/science.309.5739.1313a. PMID 16123276. অন্তঃ ভূকেন্দ্রের পরিধি পৃথিবীর পরিধির তুলনায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ হয়ে থাকে। + পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক স্তর সমূহJordan, T. H. (1979). "Structural geology of the Earth's interior". Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America. 76 (9): 4192–4200. Bibcode:1979PNAS...76.4192J. doi:10.1073/pnas.76.9.4192. PMC 411539. PMID 16592703.কেন্দ্র|ফ্রেমহীন|পৃথিবীর অভ্যন্তরীন বিন্যাসপৃথিবীর কাঁটা অংশ বিশেষ কেন্দ্র থেকে এক্সোস্ফিয়ার পর্যন্ত স্কেল অনুসারে আঁকা নয়।গভীরতাRobertson, Eugene C. (26 July 2001). "The Interior of the Earth". USGS. Retrieved 24 March 2007.কি.মি.স্তরগুলোর নামঘনত্বগ্রাম/সেমি৩০–৬০লিথোস্ফিয়ারLocally varies between 5 and 200 km.—০–৩৫ ভূত্বকLocally varies between 5 and 70 km.২.২–২.৯৩৫–৬০ উর্দ্ধ গুরুমণ্ডল৩.৪–৪.৪  ৩৫–২৮৯০গুরুমণ্ডল৩.৪–৫.৬১০০–৭০০ অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার—২৮৯০–৫১০০বহিঃ ভূকেন্দ্র৯.৯–১২.২৫১০০–৬৩৭৮অন্তঃ ভূকেন্দ্র১২.৮–১৩.১ বাহ্যিক গঠন পৃথিবীর উৎপত্তির সময় এটি ছিল একটি উত্তপ্ত গ্যাসের পিন্ড। উত্তপ্ত অবস্থা থেকে এটি শীতল ও ঘনীভূত হয়। এ সময় ভারী উপাদানগুলো এটির কেন্দ্রের দিকে জমা হয় আর হালকা উপাদানগুলো ভরের তারতম্য অনুসারে নিচ থেকে উপরে স্তরে স্তরে জমা হয়। পৃথিবীর এ সকল স্তর এক একটি মণ্ডল নামে পরিচিত। সবচেয়ে উপরে রয়েছে অশ্মমণ্ডল স্তর। অশ্মমণ্ডলের উপরের অংশকে ভূত্বক বলে। ভূত্বকের নিচের দিকে প্রতি কি.মি. বৃদ্ধিতে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ভূত্বকের উপরের ভাগে বাহ্যিক অবয়বগুলো যেমন -পর্বত, মালভূমি, সমভূমি ইত্যাদি থেকে থাকে। পৃথিবীর বাহ্যিক গঠন পৃথিবীর উপরিভাগের বৈচিত্রময় ভূমিরুপসমূহ নিয়ে সজ্জিত। পৃথিবীর প্রধান ভূমিরূপগুলো ভূপৃষ্ঠে সর্বত্র সমান নয়। আকৃতি, প্রকৃতি এবং গঠনগত দিক থেকে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে। ভূপৃষ্ঠে কোথাও রয়েছে উঁচু পর্বত, কোথাও পাহাড়, কোথাও মালভূমি। ভৌগোলিক দিক থেকে বিচার করলে পৃথিবীর সমগ্র ভূমিরূপকে ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলোঃ (১) পর্বত (২) মালভূমি (৩) সমভূমি। সমুদ্রতল থেকে অন্তত ১০০০ মিটারের বেশি উঁচু সুবিস্তৃত ও খাড়া ঢালবিশিষ্ট শিলাস্তূপকে পর্বত বলে। সাধারণত ৬০০ থেকে ১০০০ মি. উঁচু স্বল্প সুবিস্তৃত শিলাস্তূপ কে পাহাড় বলে। পর্বতের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হতে পারে। পর্বতের ভূপ্রকৃতি সাধারণত বন্ধুর প্রকৃতির হয়ে থাকে, এগুলোর ঢাল খুব খাড়া এবং সাধারণত চূড়াবিশিষ্ট হয়ে থাকে। পূর্ব আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারোর মত কিছু পর্বত বিছিন্নভাবে অবস্থান করে। আবার হিমালয় পর্বতমালার মত কিছু পর্বত অনেকগুলো পৃথক শৃঙ্গসহ ব্যাপক এলাকা জুড়ে অবস্থান করে। পর্বতের থেকে উঁচু কিন্তু সমভূমি থেকে উঁচু খাড়া ঢালযুক্ত ঢেউ খেলানো বিস্তীর্ণ সমতলভূমি কে মালভূমি বলে। মালভূমির উচ্চতা শত মিটার থেকে কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হতে পারে। পৃথিবীর বৃহত্তম মালভূমির উচ্চতা ৪,২৭০ থেকে ৫,১৯০ মিটার। সমুদ্রতল থেকে অল্প উঁচু মৃদু ঢালবিশিষ্ট সুবিস্তৃত ভূমিকে সমভূমি বলে। বিভিন্ন ভূপ্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেমন -নদী, হিমবাহ ও বায়ুর ক্ষয় ও সঞ্চয় ক্রিয়ার ফলে সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে। মৃদু ঢাল ও স্বল্প বন্ধুরতার জন্য সমভূমি কৃষিকাজ, বসবাস, রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য খুবই উপযোগী। তাই সমভূমিতে সবচেয়ে বেশি ঘন জনবসতি গড়ে উঠেছে। তাপ পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপের উৎপত্তি হয় গ্রহের পরিবৃদ্ধির (প্রায় ২০%) ফলে সৃষ্ট তাপের অবশিষ্ট অংশ এবং তেজস্ক্রিয়তার (৮০%) ফলে সৃষ্ট তাপের সংমিশ্রণে। পৃথিবীতে থাকা সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপাদনকারী আইসোটোপ গুলো হল পটাশিয়াম-৪০, ইউরেনিয়াম-২৩৮ এবং থোরিয়াম-২৩২ পৃথিবীর কেন্দ্রে তাপমাত্রা হতে পারে বা তারও বেশি, এবং চাপ গিয়ে পৌছাতে পারে ৩৬০ গিগা প্যাসকেল। যেহেতু অধিকাংশ তাপ সৃষ্টির মূল কারণ তেজস্ক্রিয়তা, তাই বিজ্ঞানীরা দাবি করেন যে পৃথিবীর ইতিহাসের শুরুর দিকে, তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ গুলোর অর্ধ-জীবন হ্রাসপাওয়ার পূর্বে, পৃথিবীর তাপ উৎপাদন ক্ষমতা আরও বেশি ছিল। প্রায় ৩ বিলিয়ন বছর আগে, বর্তমান সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন তাপ উৎপন্ন হত, ফলাফলস্বরূপ গুরুমণ্ডলীয় পরিচলন ও ভূত্বকীয় পাতসমূহের গঠন প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়েছিল, এবং একই সাথে কিছু বিরল আগ্নেয় শিলা যেমন কোমাটিটে তৈরি হয়েছিল, যা বর্তমানে কদাচিৎই তৈরি হয়। + বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপন্নকারী আইসোটোপ সমূহ আইসোটোপ তাপ উৎপন্ন অর্ধ-জীবনবছর গড় ম্যান্টেল কেন্দ্রীভূতকরণ তাপ উৎপন্ন ২৩৮U ২৩৫U ২৩২Th ৪০K পৃথিবীর থেকে গড় তাপ হ্রাসের পরিমাণ হল , সারা বিশ্বের তাপ হ্রাসের মান যেখানে । কেন্দ্রের তাপীয় শক্তির একটি অংশ ভূত্বকের দিকে পরিবাহিত হয় গুরুমণ্ডলীয় তাপীয় শিলা দ্বারা, এটা হল এক ধরনের পরিচলন পদ্ধতিতে উচ্চতাপমাত্রার পাথরের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের উপরের দিকে তাপের প্রবাহ। এই তাপীয় শিলাগুলো হটস্পট এবং আগ্নেয় শিলার বন্যার সৃষ্টি করতে পারে। পৃথিবীর তাপ আরও নিঃসৃত হয় টেকটনিক প্লেটগুলোর ফাটলের মধ্য দিয়ে, মধ্য-সমুদ্র রিগের যে সকল স্থানের ক্ষেত্রে গুরুমণ্ডল উপরের দিকে ওঠে গেছে। তাপ হ্রাসের সর্বশেষ মাধ্যম হল লিথোস্ফিয়ার দিয়ে পরিবহন পদ্ধতিতে, আর এটির অধিকাংশটাই হয় সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে যেহেতু মহাদেশীয় ভূত্বকের তুলনায় সমুদ্রের ভূত্বকের পুরুত্ব কম হয়ে থাকে। + পৃথিবীর প্রধান ভূত্বকীয় পাতframeless|alt=Shows the extent and boundaries of tectonic plates, with superimposed outlines of the continents they supportপাতের নামএলাকা১০৬ কি.মি.২ ১০৩.৩ ৭৮.০ ৭৫.৯ ৬৭.৮ ৬০.৯ ৪৭.২ ৪৩.৬ ভূত্বকীয় পাতসমূহ পৃথিবীর কাঠামোর বাহিরের দিকের দৃঢ় অনমনীয় স্তর, যা লিথোস্ফিয়ার নামে পরিচিত, বেশ কিছু টুকরায় বিভক্ত, এগুলো হল টেকটনিক পাত বা ভূত্বকীয় পাত। এই পাতগুলি হল সুদৃঢ় অংশবিশেষ যা নড়াচড়া করতে পারে একটির সাপেক্ষে আরেকটি, মোট তিন ধরনের যে কোন এক ধরনের পাত সীমার মধ্যে থেকে, এই পাত সীমা গুলো হল: অভিসারমুখী সীমা, এ ক্ষেত্রে দুটি পাত একটি অপরটির দিকে পরস্পরগামী ভাবে অগ্রসর হয়, বিমুখগামী সীমা এ ক্ষেত্রে দুটি পাত পরস্পরের বিপরীতমুখী ভাবে অগ্রসর হতে থাকে এবং পরিবর্তক সীমা, দুটি টেকটনিক পাত যখন সমান্তরাল ভাবে একে অন্যের বিপরীতে সরতে থাকে। ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাত, পর্বত গঠন, এবং মহাসাগরীয় খাতের গঠন প্রক্রিয়া ঘটে থাকে এই তিনটি ধরনের পাত সীমার ক্রিয়ার ফলে। ভূত্বকীয় পাতগুলো চলাচল করে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার অঞ্চলের উপরে, এটি উর্দ্ধ গুরুমণ্ডলের কঠিন কিন্তু কম সান্দ্রতাপূর্ণ অংশ, যা সঞ্চালিত হতে পারে ও নড়াচড়া করতে পারে পাতগুলোর সাথে। thumb|left|পর্বত গড়ে ওঠে যখন ভূত্বকীয় পাতসমূহ একে অন্যের দিকে এগিয়ে যায়, ফলশ্রুতিতে পাতের উপরের দিকে থাকা শীলা উপরের দিকে উঠে যায়। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত হল মাউন্ট এভারেস্ট। ভূত্বকীয় পাতগুলোর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালনের সাথে সাথে, মহাসাগরীয় ভূত্বকে সাবডাকশন ঘটে অভিসারমুখী সীমায় ক্রিয়ারত পাতগুলোর সম্মুখভাগের চাপে। ঠিক একই সময়ে, গুরুমণ্ডলের উপাদানের প্রবাহের ফলে মধ্য-সমুদ্র রিগের সৃষ্টি হয় বিমুখগামী সীমার ক্রিয়ার ফলে। এই প্রক্রিয়াগুলির সংমিশ্রণ মহাসাগরীয় ভূত্বকের রিসাইকেল করে আবার গুরুমণ্ডলে পাঠিয়ে দেয়। এই রিসাইকেলের ফলে, মহাসাগরীয় ভূত্বকের বেশিরভাগের বয়স ১০০ মিলিয়ন বছরের বেশি নয়। সবচেয়ে পুরাতন মহাসাগরীয় ভূত্বকটির অবস্থান ওয়েস্টার্ন প্যাসিফিকে যার অনুমানিক বয়স ২০০ মিলিয়ন বছর। তুলনা করা হলে যেখানে সবচেয়ে পুরাতন মহাদেশীয় ভূত্বকের বয়স প্রায় ৪০৩০ মিলিয়ন বছর। সাতটি প্রধান টেকটনিক বা ভূত্বকীয় পাত হল প্রশান্ত মহাসাগরীয়, উত্তর আমেরিকান, ইউরেশীয়, আফ্রিকান, অ্যান্টার্কটিক, ইন্দো-অস্ট্রেলীয়, এবং দক্ষিণ আমেরিকান। অন্যান্য কিছু অপ্রধান পাত হল, আরবীয় পাত, ক্যারিবীয় পাত, নাজকা পাত যা দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত এবং দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের স্কটিয়া পাত। ৫০ থেকে ৫৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে অস্ট্রেলীয়ান পাতটি ভারতীয় পাতটির সাথে সুদৃঢ় ভাবে সংযুক্ত হয়ে যায়। সবচেয়ে দ্রুত সঞ্চলনশীল পাত হল মহাসাগরীয় পাত, যেমন কোকোস পাত, এটি সঞ্চালিত হচ্ছে ৭৫ মিলি/বছর বেগে ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত, যা সঞ্চালিত হচ্ছে ৫২–৬৯ মিলি/বছর বেগে। অপর দিকে, সবচেয়ে ধীর সঞ্চালনশীল পাত হল ইউরেশীয় পাত, এটির সঞ্চালনের সাধারণ গতি বেগ হল ২১ মিলি/বছর।ড.সৈয়দ শাহজাহান আহমেদ ও জিয়াউল হক। "ভূগোল প্রথম পত্র", উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। ভূপৃষ্ঠ thumb|left|বর্তমান সময়ের পৃথিবীর উচ্চতামিতি এবং বাথীমেট্রি। তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ন্যাশনাল জিওফিজিক্যাল ডাটা সেন্টার থেকে। ডান|থাম্ব|বর্তমান পৃথিবীটি দেখতে এই রকম - যদি এতে পানি না থাকে। (ক্লিক করুন/কিংবা বড় করুন ৩ডি গ্লোব আকারে এর "ঘূর্ণন" দেখতে। পৃথিবীর মোট পৃষ্ঠতলের আকার হল প্রায় ৫১০ মিলিয়ন বর্গ কি.মি. (বা ১৯৭ মিলিয়ন বর্গ মাইল)। যার মধ্যে, ৭০.৮%, বা ৩৬১.১৩ মিলিয়ন বর্গ কি.মি. (১৩৯.৪৩ মিলিয়ন বর্গ মাইল), হল সমুদ্র পৃষ্ঠতলের নিচে ও এই অংশ সমুদ্রের পানি দ্বারা আচ্ছাদিত। সমুদ্র পৃষ্ঠতলের নিচেই রয়েছে অধিকাংশ মহীসোপান, পর্বতমালা, আগ্নেয়গিরি, সামুদ্রিক খাত, ডুবো গিরিখাত, সামুদ্রিক মালভূমি, গভীর সামুদ্রিক সমতল, এবং সারা পৃথিবী ব্যাপী বিসৃত মধ্য-সমুদ্র রিগ সিস্টেম। আর বাকি ২৯.২% অংশ বা ১৪৮.৯৪ বর্গ কি.মি. (বা ৫৭.৫১ মিলিয়ন বর্গ মাইল) যা পানি দ্বারা আচ্ছাদিত নয় ভূখণ্ডটি স্থানে স্থানে পরিবর্তিত এবং এতে রয়েছে পর্বত, মরুভূমি, সমতল, মালভূমি ও অন্যান্য ভূমিরূপ। অপসারণ ও অবক্ষেপণ, বিভিন্ন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, বন্যা, মৃত্তিকা আবহবিকার, হিমবাহ ক্ষয়ীভবন, প্রবালপ্রাচীরের বৃদ্ধি এবং উল্কা পিন্ডের আঘাত ইত্যাদি হল সেই সকল ক্রিয়াশীল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের আকার পরিবর্তন ঘটছে ভূতাত্ত্বিক সময় যাওয়ার সাথে সাথে। মহাদেশীয় ভূত্বকে কম ঘনত্বের উপাদান পাওয়া যায়, আগ্নেয় শিলা যেমন: গ্রানাইট ও অ্যান্ডেসাইট। সবচেয়ে কম পাওয়া যায় ব্যাসল্ট, যা হল অধিক ঘনত্বের আগ্নেয় শিলা, এটি হল মহাসাগরীয় ভূত্বক গঠনের মূল উপাদান। পাললিক শিলা গঠনের ক্ষেত্রে, পলি ক্রমানয়ে সঞ্চিত হয়ে এক সময় অন্য শিলার চাপে দেবে যায় এবং এরপর এক সাথে জমাট বাঁধে যায়। মহাদেশীয় ভূত্বকের প্রায় ৭৫% পাললিক শিলা দ্বারা আচ্ছাদিত, যদিও তা পৃথিবীর মোট ভূত্বকের মাত্র ৫% অংশ। আর পৃথিবীতে পাওয়া যাওয়া তৃতীয় ধরনের শিলা হল রূপান্তরিত শিলা, উচ্চ চাপে, উচ্চ তাপে কিংবা উভয়ের একসাথে ক্রিয়ার ফলে আগ্নেয় শিলা ও পাললিক শিলা রূপান্তরিত হয়ে এটি গঠিত হয়। পৃথিবীতে অজস্র পরিমাণে পাওয়া যাওয়া যে সকল সিলিকেট খনিজ সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কোয়ার্জ, ফেল্ডস্পার, অ্যাম্ফিবোল, মাইকা, পাইরক্সিন এবং অলিভিন। সাধারণত পাওয়া যাওয়া কার্বনেট খনিজ গুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যালসাইট (যা পাওয়া যায় চুনাপাথর) ও ডলোমাইট উভয়ে। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা পরিবর্তিত হতে পারে সর্বনিম্ন ৪১৮ মিটার যার অবস্থান মৃত সাগর এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা হতে পারে ৮,৮৪৮ মিটার হিমালয় পর্বতের চূড়ায়। সমুদ্র পৃষ্ঠতলের উপরে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা ৮৪০ মিটার। প্যাডোস্ফিয়ার হল পৃথিবীর মহাদেশীয় পৃষ্ঠের বাইরের সর্বোচ্চ স্তর এবং এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত মাটি ও মাটির গঠন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিষয়। মোট ভূপৃষ্ঠের ১০.৯% ভূমি হল আবাদী জায়গা, এর মধ্যে ১.৩% হল স্থায়ী শস্যভূমি। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের প্রায় ৪০% অংশ ব্যবহার করা হয় শষ্যভূমি ও চরণভূমি হিসাবে, আবার অরেকটি হিসাব থেকে জানা যায় ১.৩ × ১০৬ কি.মি.২ হল শষ্যভূমি ও ৩.৪ × ১০৬ কি.মি.২ হল চরণভূমি। জলমণ্ডল thumb|পৃথিবী পৃষ্ঠের উচ্চতার হিস্টোগ্রাম পৃথিবী পৃষ্ঠে পানির প্রাচুর্য হল সেই অনন্য বৈশিষ্ট্য যা সৌর জগতের অন্যান্য গ্রহ থেকে এই "নীল গ্রহটি"কে পৃথক করেছে। পৃথিবীর জলমণ্ডলের মধ্যে বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত মহাসাগরগুলো, কিন্তু যৌক্তিকভাবে পৃথিবী পৃষ্ঠের সকল পানি জলমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত, এটির মধ্যে রয়েছে ভূমির ভেতর দিকে থাকা সমুদ্র, লেক, নদী এবং এমনকি মাটির নিচের ২,০০০ মিটার নিচে থাকা পানিও এটার অন্তর্ভুক্ত। পৃষ্ঠতলের নিচে থাকা পানির সবচেয়ে গভীরতমটি হল প্রশান্ত মহাসাগরে থাকা মারিয়ানা খাতের চ্যালেঞ্জার ডিপ যার গভীরতা হল ১০,৯১১.৪ মিটার। মহাসাগরগুলোর অনুমানিক ভর হল প্রায় ১.৩৫ মেট্রিক টন যা মোটামুটি পৃথিবীর মোট ভরের ১/৪৪০০ অংশ। মহাসাগরগুলোর মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল হল ৩.৬১৮ কি.মি.২, আর গড় গভীরতা হল ৩৬৮২ মিটার, ফলাফল হিসাবে এটির আয়তন হল ১.৩৩২ কি.মি.৩। যদি পৃথিবীর সমুদ্র উপকূলের পৃষ্ঠের উচ্চতা সব জায়গায় সমান হত মসৃণ উপগোলকের মত, তাহলে পৃথিবীর মহাসাগরগুলোর গভীরতা হত ২.৭ থেকে ২.৮ কি.মি. পৃথিবীর মোট পানির প্রায় ৯৭.৫% হল লবণাক্ত; আর বাদবাকি ২.৫% হল মিঠা পানি। বেশিরভাগ মিঠা পানি, প্রায় ৬৮.৭%, উপস্থিত রয়েছে বরফ হিসাবে আইস ক্যাপে এবং হিমবাহ রূপে। পৃথিবীর মহাসাগরগুলোর গড় লবণাক্ততা হল প্রায় ৩৫ গ্রাম লবণ প্রতি কিলোগ্রাম লবণাক্ত পানিতে (৩.৫% লবণ)। এই লবণের বেশিরভাগ পানিতে সংযুক্ত হয়েছে অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনার ফলে বা নির্গত হয়েছে ঠান্ডা আগ্ন্যেয় শীলা থেকে। মহাসাগরগুলি দ্রবীভূত বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাসগুলোর একটি আধারও বটে, যেগুলো অত্যন্ত অত্যাবশ্যকীয় বিভিন্ন জলজ জীবন ধারণের জন্য। সাগরের পানি বিশ্বের জলবায়ুর উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে, যেখানে এটি কাজ করে একটি বৃহৎ তাপীয় আধার হিসাবে। মহাসাগরের তাপমাত্রার বণ্টনের ক্ষেত্রে যে কোন পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য ভাবে পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন করতে পারে, উদাহারণস্বরূপ এল নিনো। বায়ুমণ্ডল thumb|নাসার মোডারেট-রেজোলিউশন ইমেজিং স্পেকট্রোরেডিওমিটার ব্যবহার করে উপগ্রহ থেকে তোলা পৃথিবীর মেঘাচ্ছন্ন ছবি বায়ুমণ্ডল গ্যাসের একটি আস্তরণ যা পর্যাপ্ত ভরসম্পন্ন কোন বস্তুর চারদিকে ঘিরে জড়ো হয়ে থাকতে পারে। বস্তুটির অভিকর্ষের কারণে এই গ্যাসপুঞ্জ তার চারদিকে আবদ্ধ থাকে। বস্তুর অভিকর্ষ যদি যথেষ্ট বেশি হয় এবং বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা যদি কম হয় তাহলে এই মণ্ডল অনেকদিন টিকে থাকতে পারে। গ্রহসমূহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস জড়ো হতে দেখা যায়। এ কারণে গ্রহের বায়ুমণ্ডল সাধারণ অপেক্ষাকৃত ঘন এবং গভীর হয়। পৃথিবীর চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত স্তরকে পৃথিবী তার মধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে, একে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বা আবহমণ্ডল বলে। এই বায়ুমণ্ডল সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব রক্ষা করে। এছাড়ও তাপ ধরে রাখার মাধ্যমে (গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়ায়) ভূপৃষ্টকে উওপ্ত রাখে এবং দিনের তুলনায় রাতের তাপমাত্রা হ্রাস রোধ করে। ৮.৫ কি.মি. উচ্চতা স্কেলযুক্ত বায়ুমণ্ডল পৃথিবী পৃষ্ঠে গড় বায়ুমণ্ডলীয় চাপ প্রয়োগ করছে ১০১.৩২৫ কিলো প্যাসকেল। এটা গঠিত হয়েছে ৭৮% নাইট্রোজেন এবং ২১% অক্সিজেন দ্বারা, এর সাথে সামান্য পরিমাণে রয়েছে জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্যাসীয় উপাদান। ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতার পরিবর্তন হয় অক্ষাংশ পরিবর্তনের সাথে সাথে, যার মান হতে পারে মেরু অংশে ৮ কি.মি. ও নিরক্ষরেখার ক্ষেত্রে ১৭ কি.মি.। তবে এই মানের কিছু বিচ্যুতি হয়ে থাকে আবহাওয়া ও ঋতু পরিবর্তনের কারণে। পৃথিবীর জীবমণ্ডল উল্লেখযোগ্যভাবে এটির বায়ুমণ্ডলের পরির্তন সাধন করেছে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের উৎপাদন বিকাশ লাভ করে ২.৭ বিলিয়ন বছর আগে, গঠন করে আজকের মূল নাইট্রোজেন-অক্সিজেন বায়ুমণ্ডল। এর ফলশ্রুতিতে বায়ুজীবী জীবদের বিকাশ লাভ ত্বরান্বিত হয় এবং পরোক্ষভাবে, এটি ওজোন স্তর গঠন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে, এটির কারণ হল পরবর্তীতে ঘটা বায়ুমণ্ডলীয় O2 থেকে O3 তে পরিবর্তন। ওজন স্তর সৌর বিকিরণের অতিবেগুনী রশ্মিকে আটকিয়ে দিয়ে, ভূমিতে প্রাণের বিকাশে সহায়তা করে। অন্যান্য বায়ুমণ্ডলীয় কর্মকাণ্ড যা জীবন ধারণের জন্য জরুরি তার মধ্যে রয়েছে জলীয় বাষ্পের সঞ্চালন, অতিপ্রয়োজনীয় গ্যাসগুলির সরবরাহ, ছোট উল্কাপিন্ড পৃথিবী পৃষ্ঠে আঘাত হানার পূর্বে তা পুড়িয়ে ফেলা এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। সর্বশেষ কর্মকান্ডটি পরিচিত গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া নামে: বায়ুমণ্ডলের চিহ্নিত কিছু গ্যাসীয় অণু ভূ-পৃষ্ঠ হতে বিকীর্ণ তাপ শক্তি শোষন করে পুনরায় বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরে বিকিরিত করে, বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে। জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, এবং ওজন হল বায়ুমণ্ডলের মূল গ্রীনহাইজ গ্যাস। এই তাপ ধারণের ঘটনাটি না থাকলে, ভূ-পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা হত −১৮ °সে, বিপরীত দিকে বর্তমান তাপমাত্রা হল +১৫ °সে, এবং এটা এর বর্তমান অবস্থায় না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটত না। মে ২০১৭ সালে, কক্ষপথে থাকা একটি স্যাটেলাইট থেকে এক মিলিয়ন মাইল দূরে হঠাৎ ক্ষণিকের জন্য একটি আলোর ঝলকানি দেখা যায়, পরে জানা যায় বায়ুমণ্ডলে থাকা বরফ স্ফটিক থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে এটি ঘটেছিল। আবহাওয়া এবং জলবায়ু আবহাওয়া হলো কোনো স্থানের স্বল্প সময়ের বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা। সাধারণত এক দিনের এমন রেকর্ডকেই আবহাওয়া বলে। আবার কখনও কখনও কোনো নির্দিষ্ট এলাকার স্বল্প সময়ের বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থাকেও আবহাওয়া বলা হয়। আবার কোনো স্থানের দীর্ঘ সময়ের আবহাওয়ার উপাত্তের ভিত্তিতে তৈরি হয় সে স্থানের জলবায়ু। আবহাওয়া নিয়ত পরিবর্তনশীল একটি চলক। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কোন সুনির্দিষ্ট সীমানা নেই, ধীরে ধীরে পাতলা এবং হালকা হয়ে বহিঃমহাকাশের সাথে মিশে গেছে। বায়ুমণ্ডলের তিন চতুর্থাংশের ভর রয়েছে এটির মোট অংশের প্রথম এর মধ্যে। এর সবচেয়ে নিচের স্তরটির নাম হল ট্রপোস্ফিয়ার। সূর্য থেকে আসা তাপের প্রভাবে এই স্তরটি এবং এর নিচে থাকা ভূ-পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়, ফলশ্রুতিতে বাতাসের সম্প্রসারণ ঘটে। এই নিম্ন ঘনত্বের বাতাস উপরের দিকে উঠে যায় এবং এটির জায়গা দখল করে ঠান্ডা, উচ্চ ঘনত্বের বাতাস। ফলে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, যা তাপমাত্রার পুনঃবিন্যাস করে আবহাওয়া ও জলবায়ুকে বিভিন্ন স্থানে সঞ্চালিত করে। মূল বায়ুপ্রবাহের ধারার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত অয়ন বায়ু (Trade Wind), নিরক্ষীয় অঞ্চলের ৩০° অক্ষাংশ নিচে এবং পশ্চিমা বায়ু (westerlies) মধ্য-অক্ষাংশ বরাবর ৩০° থেকে ৬০° এর মধ্যে। মহাসাগরীয় স্রোত জলবায়ু নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, থার্মোহ্যালাইন প্রবাহ (thermohaline circulation) যা তাপ শক্তিকে বিতরণ করে নিরক্ষীয় সমুদ্র অঞ্চল থেকে ঠান্ডা মেরু অঞ্চলে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে যে জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয় তা কিছু বিন্যাস অনুসরন করে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্থানে সঞ্চালিত হয়। যখন বায়ুমণ্ডলীয় পরিবেশ গরম, আদ্রর্তাযুক্ত বাতাসকে, উপরের দিকে উঠার সুযোগ করে দেয়, তখন এই পানি ঘনীভূত হয় এবং ভূ-পৃষ্ঠের দিকে অধ:ক্ষিপ্ত ভাবে পতিত হয়। বেশির ভাগ পানি এরপর নিম্নভূমির দিকে ধাবিত হয় নদী নালার মাধ্যমে এবং সাগরে পুনরায় পৌছায় কিংবা এটি জমা হয় কোন হ্রদে। ভূমিতে জীবন ধারণের জন্য এই পানি চক্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া এবং কোন একটি ভূতত্ত্বিক সময়ের মধ্যে ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন গঠনের ভূমিক্ষয়ের জন্য এটি মূল কারণ। বৃষ্টিপাত পতনের বিন্যাস পরিবর্তিত হয় ব্যাপক ভাবে, যার মাত্রা হতে পারে প্রতি বছর কয়েক মিটার থেকে এক মিলিমিটারের থেকেও কম। বায়ুপ্রবাহ, অবস্থানগত বৈশিষ্ট্য ও তাপমাত্রার পার্থক্য - নির্ধারন করে কোন অঞ্চলে পতিত হওয়া গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। পৃথিবী পৃষ্ঠে সৌর শক্তির পরিমাণ কমতে থাকে অক্ষাংশের মান বাড়তে থাকার সাথে সাথে। উচ্চ অক্ষাংশে, সূর্যের আলো ভূ-পৃষ্ঠে পৌছায় নিম্ন কোণে, এবং এটিকে পার করতে হয় বায়ুমণ্ডলের পুরু স্তর। ফলাফলস্বরূপ, নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে প্রতি ডিগ্রী অক্ষাংশ পরিবর্তনে সমুদ্র সমতল থেকে গড় বার্ষিক বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাস পায় প্রায় । পৃথিবী পৃষ্ঠকে কিছু সুনির্দিষ্ট অক্ষ রেখায় উপবিভাজন করা যায় যেখানে মোটামুটি একই রকম জলবায়ু বিরাজ করে। নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চল পর্যন্ত বিরাজমান এই জলবায়ুগুলো হল ক্রান্তীয় জলবায়ু (বা নিরক্ষীয়),উপক্রান্তীয় জলবায়ু (subtropical), নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু এবং পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের জলবায়ু। এই অক্ষাংশ নিয়মের কিছু ব্যতয় রয়েছেঃ জলবায়ু নিয়ন্ত্রিত হয় যদি কাছাকাছি কোথায় সমুদ্র থাকে। উদাহারণস্বরূপ, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান পেনিনসুলায় (Scandinavian Peninsula) অনেক সহনীয় জলবায়ু এটির সমগোত্রীয় উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত উত্তর কানাডার তুলনায়। বায়ু সহনীয় পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করে। ভূমির বায়ুবাহিত দিক এটির বায়ুপ্রবাহ বিহীন দিকের তুলনায় অনেক সহনীয় অবস্থা অনুভব করে। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে, বাতাস প্রবাহিত হয় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে, এবং পশ্চিম তীর কোমল হয়ে থাকে পূর্ব তীরের তুলনায়। এটা দেখা যায় উত্তর আমেরিকার পূর্বাংশে এবং পশ্চিম ইউরোপে, সমুদ্রের উভয় দিকে পাশাপাশি কোমল জলবায়ু থাকলেও অন্যদিকে বন্ধুর জলবায়ু দেখা যায় এটির পূর্ব তীরের দিকে। দক্ষিণ গোলার্ধে, বাতাস প্রবাহিত হয় পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে, এবং পূর্ব তীরের জলবায়ু কোমল হয়ে থাকে। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব পরিবর্তিত হয়। পৃথিবী সূর্যের সবচাইতে কাছে থাকে (অণুসূরবিন্দুতে) জানুয়ারি মাসে, যেটা দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল। পৃথিবী সূর্য থেকে সবচাইতে দূরে থাকে (অপদূরবিন্দুতে) জুলাই মাসে, যেটা উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল, এবং অনুসূরবিন্দুর তুলনায় সূর্য থেকে আসা সৌর বিকিরণের মাত্র ৯৩.৫৫% পতিত হয় ভূমির কোন নিদির্ষ্ট বর্গ এলাকায়। এটা সত্ত্বেও, উত্তর গোলার্ধে ভূমির আকার অনেক বড়, যা সমদ্রের তুলনায় অনেক সহজে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সুতরাং, গ্রীষ্মকাল উষ্ম হয়ে থাকে উত্তর গোলার্ধে, দক্ষিণ গোলার্ধের তুলনায় অনুরূপ পরিবেশ থাকা শর্তেও। সমুদ্র সমতল থেকে অধিক উচ্চ ভূমির ক্ষেত্রে জলবায়ু অনেক ঠান্ডা থাকে কারণ সেখানে বাতাসের ঘনত্ব কম থাকে। বহুল ব্যবহৃত কোপ্পেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগ (Köppen climate classification) পাঁচটি বৃহৎ ভাগে বিভক্ত (আর্দ্র ক্রান্তীয়, শুষ্ক, আর্দ্র মধ্য অক্ষাংশ, মহাদেশীয় এবং ঠান্ডা মেরু), যা পরবর্তীতে আরও বিভাজন করা হয় বিভিন্ন উপভাগে। কোপ্পান ব্যবস্থায় বিভিন্ন ভূ-অঞ্চলের মান প্রদান করে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের উপর পর্যবেক্ষণ করে। পৃথিবীতে বায়ুর সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছিল ফুরনেসা ক্রিক, ক্যালিফর্নিয়ার, ডেথ ভ্যালিতে, ১৯১৩ সালে। পৃথিবীতে কখনো সরাসরি মাপা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ভোস্টোক স্টেশন ১৯৮৩ সালে। কিন্তু উপগ্রহে থাকা রিমোট সেন্সর ব্যবহার করে পরিমাপ করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পূর্ব অ্যান্টারর্টিকা। এই তাপমাত্রার রেকর্ড হল শুধুমাত্র কিছু পরিমাপ যা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ২০শ শতকের শুরু থেকে মান নেয়া শুরু করা হয় এবং সৌভাগ্য বশত এটা পৃথিবীর তাপমাত্রা পূর্ণ মাত্রা প্রকাশ করে না। উচ্চতর বায়ুমণ্ডল thumb|পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে দেখা যাওয়া এই পূর্ণ চাঁদটিকে আংশিকভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল। ট্রপোমণ্ডলের উপরের বায়ুমণ্ডলকে সাধারণত স্ট্রাটোমণ্ডল, মেসোমণ্ডল ও তাপমণ্ডলে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি স্তরের ভিন্ন ভিন্ন ল্যাপস রেট থাকে, যা দ্বারা উচ্চতা পরিবর্তনের সাথে তাপমাত্রার পরিবর্তন নির্দেশ করে। এরপর থেকে এক্সোমণ্ডল হালকা হতে হতে চৌম্বকমণ্ডলে মিলিয়ে যায়, যেখানে ভূ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্রসমূহ সৌরবায়ুর সাথে মিথষ্ক্রিয়া করে থাকে। স্ট্রাটোমণ্ডলের মধ্যে রয়েছে ওজন স্তর, এটা হল সেই উপাদান যা ভূ-পৃষ্ঠকে সূর্যের অতিবেগুণী রশ্মির হাত হতে প্রকৃত পক্ষে রক্ষা করে এবং তাই, পৃথিবী প্রাণী জগতের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কার্মান রেখা, টিকে সংজ্ঞায়িত করা যায় এভাবে, এটি পৃথিবী পৃষ্ঠ হতে ১০০ কি.মি. উপরে থাকে, এবং এটা হল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং মহাকাশের মধ্যে কার্যকর সীমা রেখা। তাপশক্তির কারণে বায়ুমণ্ডলের বাইরের প্রান্তে থাকা কিছু অনুর ভেতর গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং এক পর্যায়ে এগুলো পৃথিবীর অভিকর্ষ শক্তিকে ছিন্ন করে মহাকাশে বেড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়। এই ঘটনার ফলে ধীরে কিন্তু নিয়মিতভাবে বায়ুমণ্ডল মহাকাশে হারিয়ে যায়। যেহেতু মুক্ত হাইড্রোজেনের আণবিক ভর সবচাইতে কম, এটা অতি দ্রুত নির্দ্ধিধায় মুক্তিবেগ অর্জন করতে পারে, এবং এটির অন্যান্য গ্যাসের তুলনায় অধিক হারে বাইরের মহাকাশে বহির্গমন ঘটে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তনের পিছনে মহাকাশে হাইড্রোজেন গ্যাসের হারিয়ে যাওয়া একটি অন্যতম কারণ এবং এটা প্রাথমিকভাবে ঘটে একটি জারণ বিক্রিয়া থেকে এটির বর্তমান বিজারণ বিক্রিয়ায় আসায়। সালোকসংশ্লেষনের ফলে অক্সিজেনের সৃষ্টি হয়, কিন্তু ধারণা করা হয় জারণের ফলে নির্গত উপাদান যেমন হাইড্রোজেন হল বায়ুমণ্ডলে ব্যাপক হারে অক্সিজেনের সঞ্চয়নের পেছনে মূল পূর্বশর্ত। অতএব, হাইড্রোজেনের বায়ুমণ্ডল থেকে মুক্ত হওয়ার ঘটনা হয়তোবা পৃথিবীতে প্রাণের যে বিকাশ ঘটেছে তার গতি-প্রকৃতির উপর প্রভাব রেখেছে। বর্তমানে অক্সিজেন সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডলের বেশিরভাগ হাইড্রোজেন পরিণত হয় পানিতে, এটি বায়ুমণ্ডল থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবার আগেই। এটির বদলে, হারিয়ে যাওয়া বেশিরভাগ হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয় উচ্চতর বায়ুমণ্ডলে পুড়ানো মিথেনের ফলশ্রুতিতে। অভিকর্ষজ ক্ষেত্র thumb|নাসা জিআরএসিই নিরীক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীর অভিকর্ষজ বলের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, এখানে যা প্রদর্শন করছে তাত্ত্বিক মাধ্যাকর্ষণের সাথে স্থানীয় মাধ্যাকর্ষণের পার্থক্য। সুষম, স্ট্যান্ডার্ড মানের থেকে লাল অংশগুলোতে মাধ্যাকর্ষণ বলের মাত্রা অনেক শক্তিশালী এবং অপরদিকে নীল অংশগুলোতে এটি দূর্বল।পৃথিবীর অভিকর্ষজ বল হল সেই ত্বরণ যা পৃথিবীর সাথে কোন একটি বস্তুর উপর ক্রিয়া করে বস্তুটির ভরের কারণে। ভূ-পৃষ্ঠের উপর, অভিকর্ষজ ত্বরণ হল প্রায় । কোন স্থানের ভূসংস্থান, ভূতত্ত্ব এবং গভীর ভূত্বকীয় গঠনের পার্থক্যের কারণে স্থানীয় ও বৃহৎ অঞ্চলের পৃথিবীর অভিকর্ষজ বলের মানের পরিবর্তন হয়ে থাকে, যাকে বলা হয়ে থাকে মাধ্যাকর্ষীয় ব্যত্যয়। চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মূল অংশটি উৎপন্ন হয় এর ভূ-কেন্দ্রে, ডায়নামো প্রক্রিয়ার, তাপীয় ভাবে ও গাঠিনিক ভাবে উৎপন্ন গতিশক্তির পরিবর্তন ঘটে পরিচলন পদ্ধতিতে পরিবাহিত হয় তড়িৎ শক্তি ও চৌম্বক শক্তিতে। চৌম্বক ক্ষেত্রটি ভূ-কেন্দ্রে থেকে পৃথিবীর বাইরের দিকে ছড়িয়ে যায়, গুরুমণ্ডল ভেদ করে, পৃথিবীর পৃষ্ঠ পর্যন্ত, যেখানে এটা মোটামুটি একটি ডাইপোল। ডাইপোলের মেরুগুলোর অবস্থান পৃথিবীর ভৌগোলিক মেরুর কাছাকাছি। ভূ-পৃষ্ঠের উপর নিরক্ষরেখা বরাবর, চৌম্বক ক্ষেত্রটির চৌম্বক শক্তির পরিমাণ হল , একই সাথে বৈশ্বিক চৌম্বকীয় ডাইপোল মোমেন্ট হল । ভূ-কেন্দ্রে হতে পরিচলন পদ্ধতিতে প্রবাহিত চৌম্বক শক্তি সুশৃঙ্খল ভাবে চারিদিকে ছড়ায় না; চৌম্বকীয় মেরুর স্থান পরিবর্তন হয় এবং পর্যায়ক্রমে এটির অ্যালাইনমেন্টের পরিবর্তন ঘটে। এর ফলশ্রুতিতে স্যাকুলার পরিবর্তন ঘটে মূল চৌম্বক ক্ষেত্রের এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের বিপর্যয় ঘটে একটি অনিয়মিত সময়ের ভেতরে, গড়ে প্রতি মিলিয়ন বছরে একবার। সবচেয়ে কাছাকাছি সময়ে ঘটা বিপর্যয়টি হয়েছিল প্রায় ৭০০,০০০ বছর আগে। চৌম্বকমণ্ডল thumb|পৃথিবীর চৌম্বকমণ্ডলের রূপরেখা। সৌর বায়ু বাম থেকে ডানদিকে প্রবাহিত হয়।|alt=ডায়াগ্রামটি পৃথিবীর চৌম্বকমণ্ডলের চৌম্বক ক্ষেত্রের লাইনগুলো দেখায়। সৌর বায়ুর প্রভাবের ফলে লাইনগুলি সূর্যের বিপরীত দিকে পিছিয়ে যায়। মহাকাশে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের বিস্তৃতি দ্বারা চৌম্বকমণ্ডলকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সৌর বায়ুর আয়ন এবং ইলেকট্রনগুলি পৃথিবীর চৌম্বকমণ্ডল দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়; সৌর বায়ুর চাপে দিনের আলোর দিকে থাকা চৌম্বকমণ্ডলের দৈর্ঘ্য সংকুচিত হয়, প্রায় পৃথিবীর ব্যাসার্ধের ১০ গুণ পর্যন্ত এবং অন্ধকারের দিকের চৌম্বকমণ্ডলটি লম্বা করে প্রসারিত করে তোলে। এর কারণ হল তরঙ্গ যে বেগে সৌর বায়ুর দিকে অগ্রসর হয় তার থেকে সৌর বায়ুর গতিবেগ অনেক বেশি, একটি সুপারসনিক প্রচন্ড-আঘাত দিনের আলোর দিকে থাকা চৌম্বকমণ্ডলকে সৌর বায়ুর মধ্যে মিশিয়ে দেয়। চৌম্বকমণ্ডল আধানযুক্ত কণাগুলোকে ধারণ করে; প্লাসমামণ্ডলটিকে সংজ্ঞায়িত করা যায় এভাবে, এটি নিম্ন শক্তি সম্পন্ন কণা দ্বারা পূর্ণ থাকে যা পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে সাথে চৌম্বকমণ্ডলের রেখাগুলোকে অনুসরণ করে; রিং কারেন্টকে সংজ্ঞায়িত করা হয় এভাবে, এটি মধ্যম-শক্তির কণা দ্বারা পূর্ণ থাকে যা পৃথিবীর ভূচৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে তাল মিলিয়ে প্রবাহিত হয়, কিন্তু তা স্বত্তেও এটির প্রবাহ পথের উপর আধিপত্য রাখে চৌম্বক ক্ষেত্রটি, এবং ভ্যান এলেন রেডিয়েশন বেল্ট গঠিত হয় উচ্চ-শক্তি সম্পন্ন কণা দ্বারা, যার গতি প্রধানত এলোমেলো ধরনের হয়, কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে এটির অবস্থান চৌম্বকমণ্ডলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। চৌম্বকীয় ঝড় ও সাবস্ট্রোম যখন ঘটে, তখন বাইরের দিকের চৌম্বকমণ্ডল থেকে এবং বিশেষ করে ম্যাগনিটোটেইল থেকে আধানযুক্ত কণাগুলো বেরিয়ে যায়, যার দিক হতে পারে আয়নমণ্ডলের দিকে, যেখানে বায়ুমণ্ডলীয় অনুগুলো হয়ে থাকে উত্তেজিত ও আধানযুক্ত, এর ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয় আরোরা। বার্ষিক ও আহ্নিক গতি আহ্নিক গতি চিত্র:Rotating earth (Very small).gif thumb|right|পৃথিবীর আহ্নিক গতির ছবি নেয়া হয়েছে ডিএসকভার এপিক থেকে ২৯ মে, ২০১৬ সালে, অয়তান্ত-বিন্দুতে পৌছানোর কিছু সপ্তাহ আগে। পৃথিবী নিজের অক্ষের চারিদিকে ঘূর্ণনকে পৃথিবীর আহ্নিক গতি বলে। এই গতি পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত অভিমুখে হয়ে থাকে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে। সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সময়কালকে — এটির গড় সৌর দিন বলা হয়—এটা হল ৮৬,৪০০ সেকেন্ড গড় সৌর সময় (৮৬,৪০০.০০২৫ এস আই সেকেন্ড)। এর কারণ হল পৃথিবীর সৌর দিন আজ সামান্য বড় ১৯ শতকের তুলনায় যার কারণ হল টাইডাল মন্দন, প্রতিটি দিন পরিবর্তিত হয়ে বড় হয়ে থাকে ০ থেকে ২ এস আই মিলি সেকেন্ড পর্যন্ত। পৃথিবীর আহ্নিক গতির পর্যায়কাল হিসাব করা হয় স্থির নক্ষত্র সমূহের সাপেক্ষে, যেটাকে ইন্টারন্যাশনাল আর্থ রোটেশন এন্ড রেফারেন্স স্টিস্টেম সার্ভিস (আই.ই.আর.এস) কর্তৃক বলা হয় এটির নাক্ষত্রিক দিন (stellar day), যা হল ৮৬,১৬৪.০৯৮৯ সেকেন্ড গড় সৌর দিন (ইউটি১), বা ২৩ ৫৬ ৪.০৯৮৯। অয়নকাল বা ঘূর্ণনরত গড় মহাবিষুবকালের সাপেক্ষে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সময়কালকে, পূর্বে ভুলনামে প্রচলিত ছিল নাক্ষত্র দিন (sidereal day) হিসাবে, যার মান হল ৮৬,১৬৪.০৯০৫ সেকেন্ড গড় সৌর সময় (ইউটি১) (২৩ ৫৬ ৪.০৯০৫) হতে। ফলাফল স্বরূপ, নাক্ষত্র দিন নাক্ষত্রিক দিনের তুলনায় ছোট প্রায় ৮.৪ মিলিসেকেন্ড। আই.ই.আর.এস কর্তৃক গড় সৌর দিনের দৈর্ঘ্যের মানের হিসাব এস.আই এককে পাওয়া যায় ১৬২৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত—Graph at end. এবং ১৯৬২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উল্কাপিন্ড ও নিম্ন কক্ষীয় স্যাটেলাইট ছাড়া, জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুর (celestial bodies) আপাত মূল গতি লক্ষ্য করা যায় পৃথিবীর আকাশের পশ্চিম দিকে যার গতির হার হল ১৫°/ঘণ্টা = ১৫'/মিনিট। বস্তু যেগুলো খ-বিষুবের (celestial equator) কাছাকাছি থাকে, তা সূর্য বা চাঁদের আপাত পরিধির সমান হয়ে থাকে প্রতি দুই মিনিট অন্তর অন্তর; পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে, সূর্য ও চাঁদের আপাত মাপ প্রায় সমান হয়ে থাকে। বার্ষিক গতি thumb|upright| ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে ১৯৯০ সালে তোলা ছবি "ক্ষীণ নীলচে বিন্দু" যাতে পৃথিবীকে দেখা যাচ্ছে (ছবির কেন্দ্রের ডান দিকে), যা তোলা হয়েছে প্রায় দূর থেকে। যে গতির ফলে পৃথিবীতে দিনরাত ছোট বা বড় হয় এবং ঋতু পরিবর্তিত হয় তাকে পৃথিবীর বার্ষিক গতি বলে। পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে প্রায় গড় দূরত্বে প্রতি ৩৬৫.২৫৬৪ গড় সৌর দিন পরপর, বা এক সৌর বছরে। এর মাধ্যমে অন্যান্য তারার সাপেক্ষে পূর্বদিকে সূর্যের অগ্রসর হওয়ার একটি আপাত মান পাওয়া যায় যার হার হল প্রায় ১°/দিন, যা হল সূর্য বা চাঁদের আপাত পরিধি প্রতি ১২ ঘণ্টায়। এই গতির কারণে, গড়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টা লাগে—একটি সৌর দিনে—পৃথিবীকে তার অক্ষ বরাবব একটি পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে, যাতে করে সূর্য আবার মেরিডিয়ানে ফেরত যেতে পারে। পৃথিবীর গড় কক্ষীয় দ্রুতি হল , যা যথেষ্ট দ্রুত, এই গতিতে পৃথিবীর পরিধির সমান দূরত্ব, প্রায় , মাত্র সাত মিনিটে অতিক্রম করা যাবে, এবং পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব , অতিক্রম করা যাবে প্রায় ৩.৫ ঘণ্টায়। চাঁদ ও পৃথিবীর ঘূর্ণন করে একই বেরিকেন্দ্রকে অনুসর করে, প্রতি ২৭.৩২ দিনে এটির আশেপাশের তারাগুলোর সাপেক্ষে একবার চাঁদের প্রদক্ষিণ সম্পন্ন হয়। যখন সূর্যের চারিদিকে পৃথিবী ও চাঁদের যৌথ সাধারণ কক্ষপথ হিসাব করা হয়, এই সময়কালকে বলা চঁন্দ্র মাস, একটি পূর্ণিমা হতে অপর পূর্ণিমা পর্যন্ত, যা হল ২৯.৫৩ দিন। যদি খ-উত্তর মেরুর সাপেক্ষে হিসাব করা হয়, তাহলে পৃথিবীর গতি, চাঁদের গতি, এবং এদের কক্ষীয় নতি হবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে। যদি সূর্য বা পৃথিবীর উপরের কোন সুবিধাজনক অবস্থান থেকে দেখা হয়, তাহলে মনে হবে, পৃথিবী ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিক দিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। ঘূর্ণন তল এবং অক্ষীয় তল পরিপূর্ণভাবে সরলরৈখিক ভাবে সারিবদ্ধ নয়: পৃথিবীর অক্ষ বাঁকা রয়েছে প্রায় ২৩.৪৪ ডিগ্রী পৃথিবী-সূর্যের পরিক্রম পথ (ক্রান্তিবৃত্ত) থেকে উলম্ব বরাবর, এবং পৃথিবী-চাঁদের তল বাঁকা রয়েছে প্রায় ±৫.১ ডিগ্রী পর্যন্ত পৃথিবী-সূর্যের তলের তুলনায়। যদি এই বাঁকা ভাব না থাকত, তাহলে প্রতি দুই সপ্তাহে একটি করে গ্রহণ ঘটত, হয় চঁদ্রগ্রহণ হত, নয়তবা সূর্যগ্রহণ হত। হিল স্ফিয়ার, বা পৃথিবীর মহাকর্ষীয় শক্তির প্রভাবের ব্যাসার্ধ হল প্রায় । এটা হল সর্বোচ্চ দূরত্ব যেখান পর্যন্ত পৃথিবীর মহাকর্ষীয় প্রভাব আরও দূরে থাকা সূর্য ও অন্যান্য গ্রহের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এই ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা প্রতিটি বস্তু পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে বাধ্য, অথবা তারা সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে ছিটকে যেতে পারে। পৃথিবী, এবং একই সাথে সৌর জগৎ, অবস্থান করছে মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতে এবং এর কেন্দ্রে থেকে প্রদক্ষিণ করছে প্রায় ২৮,০০০ আলোক বর্ষ জুড়ে। এটার অবস্থান অরিয়ন আর্মের গ্ল্যাক্‌টিক তল হতে প্রায় ২০ আলোক বর্ষ উপরে। কক্ষের নতি এবং ঋতু পরিবর্তন thumb|left|পৃথিবীর অক্ষীয় ঢাল (বা ক্রান্তিকোণ) এবং ঘূর্ণনের অক্ষ ও কক্ষের তলের সাথে এটির সম্পর্ক। পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের পরিমাণ হল প্রায় ২৩.৪৩৯ ২৮১°, যার কক্ষতলের অক্ষটি, সর্বাদা খ-মেরুর দিকে তাক হয়ে থাকে। পৃথিবীর অক্ষীয় ঢাল বা অক্ষ রেখাটি হেলানো থাকার কারণে, কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে যে পরিমাণ সূর্যের আলো আসে, তা সারা বছর ধরে সমান থাকে না, এর মান পরিবর্তিত হয়। এর ফলশ্রুতিতে প্রকৃতি তথা জলবায়ুতে ঋতুর পরিবর্তন হয়, উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালের সূচনা হয় যখন সূর্য সরাসরি কর্কটক্রান্তি রেখার দিকে তাক হয়ে থাকে এবং একই জায়গায় শীতকালের সূচনা ঘটে সূর্য যখন দক্ষিণ গোলার্ধে থাকা মকরক্রান্তি রেখার দিকে তাক হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে, দিনগুলো অনেক লম্বা হয়, ও সূর্য আকাশের অনেক উপরের দিকে থাকে। অপরদিকে শীতকালে, জলবায়ু ঠান্ডা হয়ে যায় ও এ সময় দিনগুলো হয় ছোট। উত্তরের নাতিশীতোষ্ণ অক্ষাংশে, গ্রীষ্মকালের অয়তান্ত-বিন্দু অংশে সূর্য উদয় হয় উত্তরের সঠিক পূর্ব দিকে এবং অস্ত যায় উত্তরের সঠিক পশ্চিম দিকে, যার ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটে শীতকালে। গ্রীষ্মকালের অয়তান্ত-বিন্দু অংশে সূর্য উদয় হয় দক্ষিণের সঠিক পূর্ব দিকে, দক্ষিণের নাতিশীতোষ্ণ অক্ষাংশে এবং অস্ত যায় দক্ষিণের সঠিক পশ্চিম দিকে। আর্কটিক সার্কেলের উপরে, একটি চরম অবস্থা দাঁড়ায় যেখানে বছরের কিছু সময় দিনের আলো পৌছায় না, শুধুমাত্র উত্তর মেরুতেই প্রায় ৬ মাসের উপরে এই অবস্থা থাকে, এটি মেরু রাত্রি নামে পরিচিত। দক্ষিণ গোলার্ধে, এই সময় এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ বিপরীত থাকে, দক্ষিণ মেরুর অবস্থান ও দিওক এসময় উত্তর মেরুর অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে থাকে। ছয় মাস পরে, এই মেরুটি অনুভব করে মধ্যরাতের সূর্য (midnight sun), যেখানে এক একটি দিন হয় ২৪ ঘণ্টা লম্বা, একই সময় বিপরীত ঘটনা ঘটে দক্ষিণ মেরুতে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের রেওয়াজ থেকে, অয়তান্ত-বিন্দু অনুসারে চারটি ঋতুর হিসাব করা যায়—এটা হল সেই বিন্দু যা থেকে পৃথিবীর অক্ষ রেখার অক্ষীয় ঢাল সূর্যের কত কাছে রয়েছে বা সূর্য থেকে কত দূরে রয়েছে তার হিসাব পাওয়া যায়—এবং বিষুব অনুসারে, যখন অক্ষীয় ঢালের দিক ও সূর্যের দিক সমান্তরালে থাকে। উত্তর গোলার্ধে, শীতকালীন অয়তান্ত-বিন্দু (winter solstice) বর্তমানে হয়ে থাকে ২১ ডিসেম্বর; গ্রীষ্মকালীন অয়তান্ত-বিন্দু হয়ে থাকে ২১ জুনের কাছাকাছি সময়ে, বসন্ত বিষুব হয়ে থাকে ২০ মার্চের কাছাকাছি এবং হেমন্তকালীন বিষুব হ্যে থাকে ২২ বা ২৩ সেপ্টেম্বর। দক্ষিণ গোলার্ধে এর বিপরীত ঘটনা ঘটে থাকে, যেখানে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন অয়তান্ত-বিন্দু গুলো নিজের মধ্যে পাল্টিয়ে যায় এবং বসন্ত বিষুব ও শারদীয় বিষুবের দিনও নিজেদের মধ্যে পাল্টিয়ে যায়। পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের মান আপেক্ষিকভাবে অনেক লম্বা সময় ধরে অপরিবর্তনীয় রয়েছে। গড়ে ১৮.৬ বছরে পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের অক্ষবিচলন ঘটে, সাধারণত অতি সামান্য, অনিয়মিত গতি পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও পৃথিবীর অক্ষের অভিমুখ (এর কোণের মান নয়) সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়, এটির অয়নচলনের বৃত্তটি পরিপূর্ণভাবে শেষ হয় প্রতি ২৫,৮০০ বছরে একবার; এই অয়নচলন গতিটি নাক্ষত্র বছর থেকে ট্রপিক্যাল বছর পৃথক হবার কারণ হিসাবে কাজ করে। এই উভয় গতি সৃষ্টি হয় পৃথিবীর নিরক্ষরেখার স্ফীতি বরাবর সূর্য ও চঁন্দ্রের ভিন্ন ধর্মী আকর্ষণের কারণে। মেরু দুটিও ভূপৃষ্ঠের জুড়ে কয়েক মিটার স্থানন্তরিত হতে পারে। এই মেরু গতির বেশ কিছু, পর্যায়ক্রমিক উপাদান রয়েছে, যেগুলোকে একসাথে বর্ণনা করা যায় কোয়াসিপিরিওডিক গতি হিসাবে। এই গতির বার্ষিক উপাদান ছাড়াও, ১৪ মাস সাইকেলের আরো একটি উপাদান রয়েছে যা চ্যান্ডলার উবল নামে পরিচিত। পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে দিন-রাত্রি ছোট বড় হবার ঘটনাও ঘটে থাকে। বর্তমান সময়ে, পৃথিবী অণুসূরবিন্দুতে অবস্থান করে ৩রা জানুয়ারির কাছাকাছি সময়ে, এবং অপসূরবিন্দুতে ৪ঠা জুলাইয়ের কাছাকাছি সময়ে। অয়নচলনের কারণে ও অক্ষীয় বিভিন্ন ঘটনার কারণে সময়ের সাথে সাথে এই দিনগুলো পরিবর্তিত হয়, যা চক্রাকার একটি প্যাটার্ন অনুসরণ করে যা মিলানকোভিটচ সাইকেল নামে পরিচিত। পৃথিবী ও সূর্যের এই পরিবর্তনশীল দূরুত্বের কারণে পৃথিবী পৃষ্ঠে পৌছানো সৌর শক্তি প্রায় ৬.৯% বৃদ্ধি পায় অণুসুরের অপেক্ষা অপসূরে। এর কারণ দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুকে থাকে ঠিক যখন পৃথিবী ও সূর্যের সবচাইতে কাছাকাছি বিন্দুতে পৌছায়, সারা বছর ব্যাপী পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ এটির উত্তর গোলার্ধের থেকে কিছুটা বেশি তাপ গ্রহণ করে সূর্য থেকে। এই ঘটনাটির তাৎপর্য পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের কারণে মোট শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার তুলনায় খুবই যৎসামান্য, এবং বেশিরভাগ অতিরিক্ত শক্তি গ্রহণ করে দক্ষিণ গোলার্ধে বেশি পরিমাণে থাকা সমুদ্রের পানি। বাসযোগ্যতা thumb|কানাডার রকি পর্বতমালার সামনে মোরেইন লেকের একটি সামুগ্রিক দৃশ্য। যে গ্রহে প্রাণী-জগৎ টিকে থাকতে পারে বসবাসযোগ্য বলা হয়, যদিওবা সেই গ্রহে প্রাণের সঞ্চার না ঘটে তাহলেও। পৃথিবীতে রয়েছে পানির প্রাচুর্য্য যা জটিল জৈব যৌগের পরস্পরের সাথে সংযুক্তি ও সংমিশ্রণের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে, ও একই সাথে বিপাক প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব, একই সাথে এর অক্ষীয় উপকেন্দ্রীকতা, কক্ষীয় ঘূর্ণনের গতি, অক্ষীয় ঢাল, ভূ-প্রাকৃতিক ইতিহাস, সহনীয় বায়ুমণ্ডল, ও চৌম্বকক্ষেত্র সবগুলো একসাথে ভূ-পৃষ্ঠের সামুগ্রিক বর্তমান জলবায়ু ও পরিবেশ বজায় থাকার পিছনে কাজ করছে। জীবমণ্ডল জীবমণ্ডল হচ্ছে পৃথিবীর সমগ্র ইকোসিস্টেমগুলির যোগফল। এটিকে বলা যেতে পারে পৃথিবীর জীবনের এলাকা, একটি সংযুক্ত প্রক্রিয়া (পৃথিবীর অভ্যন্তরের সৌর এবং মহাবৈশ্বিক রেডিয়েশন এবং তাপ থেকে বিযুক্ত) এবং বৃহত্তরভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত। অন্য কথায় পৃথিবীর বাইরের স্তরে অবস্থিত বায়ু, ভূমি, পানি ও জীবিত বস্তুসমূহের সমষ্টিকে জীবমণ্ডল বোঝায়। জীবনের অস্তিত্বের সঙ্গেই জীবমণ্ডলের সম্পর্ক। জীবমণ্ডলের বিস্তৃতি ওপর-নিচে ২০ কিলোমিটারের মতো ধরা হলেও মূলত অধিকাংশ জীবনের অস্তিত্ব দেখা যায় হিমালয় শীর্ষের উচ্চতা থেকে ৫০০ মিটার নিচের সামুদ্রিক গভীরতার মধ্যেই। এখানে জীবকুল ৪.১ বিলিয়ন বছর পূর্বে বসবাস শুরু করে। গ্রহের প্রাণী জগৎ একটি বাসযোগ্য বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলে, কখন কখনও এই সবগুলোকে একসাথে বলা হয়ে থাকে "জীবমণ্ডল"। ধারণা করা হয়ে থাকে পৃথিবীর জীবমণ্ডলের গঠন শুরু হয় প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে। এই জীবমণ্ডলটি বেশ কিছু বায়োম দ্বারা বিভক্ত, প্রচুর পরিমাণে একই ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণি একই বায়োমে বসবাস করে। ভূমিতে, মূলত বায়োমকে বিভক্ত করা যায় অক্ষাংশের পার্থক্য থেকে, সমুদ্রতল থেকে উচ্চতা থেকে এবং আর্দ্রতা থেকে। সুমেরু অঞ্চলের বা অ্যান্টারর্টিক বৃত্তের স্থলজ বায়োসের ক্ষেত্রে, অধিক উঁচু অক্ষাংশে বা অত্যন্ত শুষ্ক এলাকায় প্রাণি ও উদ্ভিদ তুলনামুলকভাবে নেই বললেই চলে বা এগুলো হল বিরান অঞ্চল; প্রজাতির বৈচিত্র্য সবচাইতে বেশি পরিমাণ দেখা যায় নিরক্ষীয় অঞ্চলের আদ্রতাপূর্ণ নিম্নভূমিতে। জুলাই ২০১৬তে, বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর সকল জীবিত জীবের উপর নিরীক্ষা চালিয়ে ৩৫৫ সেট জিনকে চিহ্নিত করেছেন লাস্ট ইউনিভার্সাল কমন এনসেস্টর হিসাবে। প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূমি ব্যবহার + আনুমানিক মানুষের ভূমি ব্যবহার, ২০০০ সালে। See Table 1.ভূমি ব্যবহারমেগাহেক্টর শষ্যভূমি ১,৫১০–১,৬১১ চারণভূমি ২,৫০০–৩,৪১০ প্রাকৃতিক বনভূমি ৩,১৪৩–৩,৮৭১ রোপনকৃত বনভূমি ১২৬–২১৫ শহর এলাকা ৬৬–৩৫১ অব্যবহৃত, উৎপাদনযোগ্য ভূমি ৩৫৬–৪৪৫ মানুষ পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছে। এদের মধ্যে যেগুলিকে অনবায়নযোগ্য সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়, যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি, এগুলি কেবল মাত্র ভূতাত্ত্বিক সময়ের নিরিখে পুনর্নবায়িত হয়। ভূত্বকে জীবাশ্ম জ্বালানির বিশাল ভাণ্ডার আহরণ করা হয়। এগুলির মধ্যে কয়লা, পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস উল্লেখযোগ্য। এই মজুদগুলি মানুষ কেবল শক্তি উৎপাদন নয়, রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহার করে। এছাড়া আকরিক সৃষ্টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূত্বকে খনিজ আকরিক মজুদও গঠিত হয়েছে। লাভা, ভূমিক্ষয় এবং পাতভিত্তিক ভূত্বকীয় গঠনের ফলে এই আকরিকগুলি তৈরি হয়েছে। এই আকরিক মজুদগুলি অনেক ধাতু এবং অন্যান্য উপকারী মৌলিক পদার্থের ঘনীভূত উৎস হিসেবে গণ্য হয়। পৃথিবীর জীবমণ্ডল মানুষের জন্য প্রচুর জীবতত্ত্বিক উপাদান তৈরি করে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত খাদ্য, কাঠ, ঔষধপত্র, অক্সিজেন, এবং বিভিন্ন জৈব বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলে। ভূমি ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র নির্ভর করে মাটির উপরের দিকের উপর ও পরিষ্কার পানির উপর, এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র নির্ভর করে এতে মিশ্রিত নিউট্রিয়েন্টের উপর যা ভূমি থেকে ধুয়ে সমুদ্রের পানিতে পৌছায়। ১৯৮০ সালের হিসাব অনুসারে, ৫,০৫৩ মেগাহেক্টর (৫০.৫৩ মিলিয়ন কি.মি.২) পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের এলাকা জুড়ে ছিল বনভূমি ও বনাঞ্চল, ৬,৭৮৮ মেগাহেক্টর (৬৭.৮৮ মিলিয়ন কি.মি.২) এলাকা ছিল তৃণভুমি ও চরণভুমি, এবং ১,৫০১ মেগাহেক্টর (১৫.০১ মিলিয়ন কি.মি.২) এলাকা ছিল খাদ্যশষ্য চাষের শষ্যভূমি। আনুমানিক সেচ ভূমির পরিমাণ ১৯৯৩ সালে ছিল । মানুষ ভূমিতে বসবাস করার জন্য নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে বাড়ি ঘর তৈরি করে। প্রাকৃতিক এবং পরিবেশগত সমস্যা thumb|left|বায়ুমণ্ডলে গরম ছাই ছড়াচ্ছে অগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের সময়। পৃথিবী পৃষ্ঠের একটি বৃহত্তম এলাকায় চরম আবহাওয়া যেমন উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, হ্যারিকেন, বা টাইফুন দেখা যায়, যা ঐ সকল এলাকার জীবনযাত্রার উপর গাঢ় প্রভাব ফেলে। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত, এই ধরনের ঘটনায় প্রতি বছর গড়ে ১১,৮০০ জন মারা যায়। অসংখ্য স্থান রয়েছে যেখানে প্রায়শই ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, সুনামি, অগ্নুৎপাত, টর্নেডো, ভূমি চ্যুতি, প্রবল তুষারপাত, বন্যা, খরা, দাবানল ও অন্যান্য জলবায়ুর পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘটে। বিভিন্ন স্থানের বাতাস ও পানির দূষণ মানব সৃষ্ট দূষণ ঘটে থাকে, ফলে সৃষ্টি হয় অ্যাসিড বৃষ্টি ও বিষাক্ত উপাদান, বনভূমি ধ্বংসের কারণে (অধিক পশুচারণ ভূমি, অরণ্যবিনাশ, মরুকরণ, বণ্যপ্রাণীর বিনাশ, প্রজাতির বিলুপ্তি, মাটির অধঃপতন, ভূমির বিনাশ ও ভূমিক্ষয়। একটি বৈজ্ঞানিক ঐক্যমত্য রয়েছে মানব জাতির শিল্পায়নের ফলে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের কারণে বৈশ্বিক ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘটছে। ধারণা করা হয় যে এর ফলশ্রুতিতে জলবায়ুর পরিবর্তন যেমন হিমবাহ এবং বরফের স্তর গলে যাচ্ছে, আরও চরম তাপমাত্রার সীমা দেখা যাচ্ছে, একইসাথে আবহাওয়ারও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটছে এবং বিশ্বব্যাপী গড় সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবীয় ভূগোল মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা, মানচিত্র তৈরির অধ্যয়ন ও অনুশীলনের একটি বিদ্যা এবং ভূগোল হল ভূমি, বৈশিষ্ট্য, বাসবাসকারী এবং পৃথিবীর ঘটনাসমূহের অধ্যয়ন, একই সাথে এটি ঐতিহাসিকভাবে পৃথিবীকে চিত্রিত করার একটি নিয়মে পরিনত হয়েছে। মাপজোপ (Surveying), হল অবস্থান ও দুরত্বের পরিমাপ ব্যবস্থা, এবং ন্যাভিগেশন হল সুক্ষ পরিমাপ ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে অবস্থান ও দিক পরিমাপ করা যায়, মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা ও ভূগোলের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা এবং যথাযথভাবে নির্ণয়ের জন্য এটির উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। ৩১ অক্টোবর ২০১১ তারিখ পর্যন্ত পৃথিবীতে মানব সংখ্যার পরিমাণ আনুমানিক গিয়ে দাঁড়িয়েছে সাত বিলিয়ন। ভবিষ্যত বাণীগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যার পরিমাণ ৯.২ বিলিয়ন হবে। ধারণা করা হয় সবচাইতে বেশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। মানুষের জনসংখ্যার ঘনত্ব বিশ্বের সব জায়গায় সমান নয়, কিন্তু একটি বেশির ভাগ অংশ বাস করে এশিয়া মহাদেশে। ২০২০ সাল নাগাদ, আশা করা হয় বিশ্বের ৬০% মানুষ বাস করবে শহর এলাকায়, গ্রাম্য এলাকায় না থেকে । হিসাব করা যায় যে, পৃথিবীর পৃষ্ঠের আট ভাগের এক ভাগ জায়গা মানুষের বসবাসের জন্য উপযুক্ত – যেহেতু পৃথিবীর উপরিভাগের চার ভাগের তিন ভাগ সমুদ্র দ্বারা পরিবেষ্টিত, এর ফলে এর মাত্র এক ভাগ অংশ হল ভূমি। এই ভূমির অর্ধেক স্থান জুড়ে রয়েছে মরুভূমি (১৪%), উচ্চ পর্বতমালা (২৭%), বা অন্যান্য অনুপযুক্ত খাদ এলাকা। পৃথিবীর সর্বোচ্চ উত্তর দিকের স্থায়ী স্থাপনাটি রয়েছে এলার্টে, যা নুনাভুট, কানাডার এললেসমেয়ার আইল্যান্ডে অবস্থিত (৮২°২৮′ উত্তর), পৃথিবীর সর্বোচ্চ দক্ষিণ দিকের স্থায়ী স্থাপনাটি হল আমুন্ডসেন- স্কট সাউথ পোল স্টেশন, অ্যান্টারটিকায়, একেবারেই প্রায় দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি, (৯০°দক্ষিণ)। thumb|left|নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তর স্বাধীন সার্বভৌম দেশগুলো শুধু মাত্র কিছু অংশ বাদ দিয়ে গ্রহটির প্রায় পুরো ভূমির সবটাই নিজেদের বলে দাবী করে, বাদ দেয়া অংশ গুলোর মধ্যে হল অ্যান্টারটিকার কিছু অংশ, দানিউব নদীর পশ্চিম তীর বরাবর কয়েক খন্ড জমি, মিশর ও সুদানের সীমান্তের অদাবীকৃত এলাকা "বির টাউইল"। , ১৯৩ টি সার্বভৌম রাষ্ট্র রয়েছে পৃথিবীতে যা জাতিসংঘের সদস্য দেশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত, এছাড়াও দুটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র ও ৭২ টি নির্ভরশীল অঞ্চল এবং সীমিত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত রাষ্ট্র রয়েছে। পৃথিবীতে কখনই একটি একক সার্বভৌম সরকার তৈরি হয়নি যার পুরো বিশ্বের উপর কর্তৃত ছিল, যদিও বা কিছু জাতি-রাষ্ট্র বিশ্ব আধিপত্যের জন্য যুদ্ধ করেছে এবং ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘ বিশ্ব ব্যাপী আন্ত-রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসাবে কাজ করে, এটা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশগুলো মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার লক্ষ্যে নিয়ে, সশস্ত্র বিরোধ যাতে না ঘটে। ইউএন প্রধানত আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক আইনের ফোরাম হিসাবে কাজ করে। যদি সদস্য রাষ্ট্র সমূহ সম্মতি প্রদান করে, এটি সশস্ত্র হস্তক্ষেপের জন্যও ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা প্রথম মানুষ হলেন ইউরি গ্যাগারিন, ১২ এপ্রিল ১৯৬১ সালে। , সর্বমোট, প্রায় ৪৮৭ জন মানুষ মহাকাশে ও পৃথিবীর কক্ষপথে ভ্রমণ করেছেন, এবং, এদের মধ্যে, বার জন চাঁদের মাটিতে হেঁটেছেন। সাধারণ ভাবে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করা মানুষরাই একমাত্র মহাকাশের অবস্থান করা মানুষ। এই স্টেশনের কর্মীদলটি, গঠন করা হয় ৬ জন মানুষ নিয়ে, যাদের প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর পরিবর্তন করা হয়। পৃথিবী থেকে মানুষ সবচাইতে দূরের দূরত্ব ভ্রমণ করেছে ৪০০,১৭১ কি.মি., যা অর্জন করা হয়েছে অ্যাপোলো ১৩ অভিযানে ১৯৭০ সালে। চাঁদ + বৈশিষ্ট্য center|frameless|পৃথিবীর উত্তরায়নকালে দৃষ্ট পূর্ণ চাঁদ ব্যাস ৩,৪৭৪.৮ কিলোমিটার ভর ৬ কিলোগ্রাম অর্ধ-মুখ্য অক্ষ ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার আবর্তন কাল পৃথিবীর প্রায় এক চতুর্থাংশ ব্যাসার্ধ-বিশিষ্ট চাঁদ একটি অপেক্ষাকৃত বড় শিলাময় প্রাকৃতিক উপগ্রহ। গ্রহের আকার বিবেচনায় এটিই সৌরজগতের বৃহত্তম চাঁদ; যদিও ক্যারন তার বামন গ্রহ প্লুটো থেকে আপেক্ষিকভাবে বৃহত। পৃথিবীর ন্যায় অন্যান্য গ্রহের প্রাকৃতিক উপগ্রহগুলোকেও "চাঁদ" হিসেবেও অভিহিত করা হয়। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং সৌর জগতের পঞ্চম বৃহৎ উপগ্রহ। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব হচ্ছে ৩৮৪,৪০৩ কিলোমিটার (২৩৮,৮৫৭ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ৩০ গুণ। চাঁদের ব্যাস ৩,৪৭৪ কিলোমিটার (২,১৫৯ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের এক-চতুর্থাংশের চেয়ে সামান্য বেশি। এর অর্থ দাড়াচ্ছে, চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৫০ ভাগের ১ ভাগ। এর পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বল পৃথিবী পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বলের এক-ষষ্ঠাংশ। পৃথিবী পৃষ্ঠে কারও ওজন যদি ১২০ পাউন্ড হয় তা হলে চাঁদের পৃষ্ঠে তার ওজন হবে মাত্র ২০ পাউন্ড। এটি প্রতি ২৭.৩ দিনে পৃথিবীর চারদিকে একটি পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করে। প্রতি ২৯.৫ দিন পরপর চন্দ্রকলা ফিরে আসে অর্থাৎ একই কার্যক্রিয় আবার ঘটে। পৃথিবী-চাঁদ-সূর্য তন্ত্রের জ্যামিতিতে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের কারণেই চন্দ্রকলার এই পর্যানুক্রমিক আবর্তন ঘটে থাকে। বেরিকেন্দ্র নামে পরিচিত একটি সাধারণ অক্ষের সাপেক্ষে পৃথিবী এবং চন্দ্রের ঘূর্ণনের ফলে যে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সৃষ্টি হয় তা পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির জন্য অনেকাংশে দায়ী। জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির জন্য যে পরিমাণ শক্তি শোষিত হয় তার কারণে বেরিকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে পৃথিবী-চাঁদের যে কক্ষপথ রয়েছে তাতে বিভব শক্তি কমে যায়। এর কারণে এই দুইটি জ্যোতিষ্কের মধ্যে দূরত্ব প্রতি বছর ৩.৮ সেন্টিমিটার করে বেড়ে যায়। যতদিন না পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার উপর চাঁদের প্রভাব সম্পূর্ণ প্রশমিত হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত চাঁদ দূরে সরে যেতেই থাকবে এবং যেদিন প্রশমনটি ঘটবে সেদিনই চাঁদের কক্ষপথ স্থিরতা পাবে। পৃথিবী ও চাঁদের মহাকর্ষীয় বলের ক্রিয়ার ফলে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা তৈরি হয়। এই সমরূপ ঘটনার ফলে চাঁদের টাইডাল লকিং তৈরি হয়: চাঁদের নিজের অক্ষে ঘূর্ণনের জন্য যে সময় লাগে সেই একই পরিমাণ সময় প্রয়োজন হয় পৃথিবীর কক্ষপথে আবর্তনের জন্য। যার ফলে পৃথিবীর দিকে সব সময় এটির একই পৃষ্ঠ থাকে। চাঁদের পৃথিবীকে আবর্তনের সময়, এটির বিভিন্ন অংশ সূর্যের আলো দ্বারা আলোকিত হয়, ফলশ্রুতিতে তৈরি হয় চন্দ্রকলার; এটির অন্ধকারচ্ছন্ন অংশটি আলোকিত অংশ থেকে পৃথক হয়ে থাকে সৌর টারমিনেটর দ্বারা। thumb|left|পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে থাকা ব্যবস্থার বিস্তারিত চিত্র, যেখানে পৃথিবী ও চাঁদের বেরিকেন্দ্র ও তাদের ব্যসার্ধ্য দেখা যাচ্ছে। চাঁদের অক্ষটি নির্ধারণ করা হয়েছে ক্যাসিনির তৃতীয় সূত্র অনুসারে। পৃথিবী ও চাঁদের আকর্ষণ ক্রিয়ায় সৃষ্ট জোয়ার-ভাটার ঘটনার ফলে, চাঁদ প্রতি বছর প্রায় ৩৮ মিমি/বছর হারে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যায়। মিমিয়ন বছর ধরে, এই ক্ষুদ্র পরিবর্তনের ফলে—এবং পৃথিবীর দিন বৃদ্ধি পাওয়া ২৩ মাইক্রোসেকেন্ড/বছর—পরিশেষে বৃহত্তর পরিবর্তন করেছে। ডেভোনিয়ান সময় কালে, উদাহারণস্বরূপ (প্রায় ৪১০ মিলিয়ন বছর আগে) এক বছর পূর্ণ হতে ৪০০ দিন লাগত, যেখাবে প্রতিটি দিন ছিল ২১.৮ ঘণ্টার। পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন সাধনে সহায়তা করে, এতে প্রাণের বিকাশ ঘটাতে চাঁদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জীবাশ্ম থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও কম্পিউটার সিমুলেশন থেকে জানা যায় যে, চাঁদের সাথে জোয়ার-ভাটার ঘটনার কারণে পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালটি সুস্থির রয়েছে। কিছু ত্বাত্তিক এটি ধারণা করে যে, পৃথিবীর নিরক্ষীয় স্ফিতি বরাবর অন্যান্য গ্রহ ও সূর্য দ্বারা প্রয়োগ করা সুস্থির টর্ক না থাকলে, পৃথিবীর ঘূর্ণনের অক্ষটি এলোমেলো ও অস্থির প্রকৃতির হত, প্রতি মিলিয়ন বছরে বিশৃঙ্খল পরিবর্তন নজরে আসত, যেটা দেখা যায় মঙ্গল গ্রহের ক্ষেত্রে। পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে দেখা হলে, চাঁদ ও সূর্য প্রায় সম দূরত্বে থাকা প্রায় একই আকারের গোলাকার চাকতির মত দেখায়। এই দুটি বস্তুর কৌনিক আকার (বা ঘনকোণ) মিলে যায় কারণ, যদিও বা সূর্যের চাঁদের তুলনায় প্রায় ৪০০ গুণ বড়, একই সাথে সূর্য চাঁদের তুলনায় পৃথিবী থেকে ৪০০ গুণ দূরে অবস্থিত।—See the apparent diameters on the Sun and Moon pages. এর ফলে পৃথিবীতে পূর্ণ এবং বলয়াকার (আংটির মত) সূর্য গ্রহণ হয়ে থাকে। চাঁদের গঠন সম্পর্কে প্রচলিত সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তত্ত্বটি হলো বৃহদায়তন-প্রভাব তত্ত্ব, যেখানে বলা হয়েছে যে এটি গঠিত হয়েছে মঙ্গল গ্রহের সমান আকৃতির 'থিয়া' নামক একটি মহাজাগতিক কণার সাথে সংঘর্ষের ফলে। এই মতবাদটি ব্যাখ্যা করে (অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে) চাঁদে লৌহ এবং অস্থির উপাদানগুলির আপেক্ষিক অভাব এবং এর গঠন প্রকৃতি পৃথিবীর ভূত্বকের প্রায় অনুরূপ। গ্রহাণু এবং কৃত্রিম উপগ্রহ গ্রহাণু হল প্রধানত পাথর দ্বারা গঠিত বস্তু যা তার তারাকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে। আমাদের সৌরজগতে গ্রহাণুগুলো ক্ষুদ্র গ্রহ (Minor planet অথবা Planetoid) নামক শ্রেণীর সবচেয়ে পরিচিত বস্তু। এরা ছোট আকারের গ্রহ যেমন বুধের চেয়েও ছোট। বেশিরভাগ গ্রহাণুই মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত গ্রহাণু বেল্টে থেকে নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে আবর্তন করে। ধারণা করা হয় গ্রহাণুগুলো ভ্রূণগ্রহীয় চাকতির (Protoplanetary disc) অবশিষ্টাংশ। বলা হয় গ্রহাণু বেল্টের অঞ্চলে সৌরজগতের গঠনের প্রাথমিক সময় যেসকল ভ্রূণগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিলো তাদের অবশিষ্টাংশ বৃহস্পতির আবেশ দ্বারা সৃষ্ট মহাকর্ষীয় অক্ষ বিচলনের কারণে গ্রহের সাথ মিলিত হবার সুযোগ পায়নি। আর এই অবশিষ্টাংশই গ্রহাণু বেল্টের উৎপত্তির কারণ। কিছু গ্রহাণুর চাঁদও রয়েছে। “৩৭৫৩ ক্র্যুইথন” (3753 Cruithne) এবং “২০০২ এএ২৯” (2002 AA29) গ্রহাণুসহ পৃথিবীর রয়েছে অন্তত পাঁচটি সহ-কক্ষীয় গ্রহাণু। See table 2, p. 5. সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর কক্ষপথে স্বাধীন ক্রিকৌণিক বিন্দীয় পথে “২০১০ টিকে৭” (2010 TK7) সহযোগে একটি ট্রোজান গ্রহাণু “এল৪” (L4) পথে আবর্তন করছে। প্রতি বিশ বছর অন্তর ক্ষুদ্রতর নিকটতর-পৃথিবীর গ্রহাণু “২০০৬ আরএইচ১২০” (2006 RH120) পৃথিবী-চঁন্দ্র পদ্ধতিকে জটিল করে তোলে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন, এটি পৃথিবীকে প্রযোজ্য সময়ের চেয়েও সংক্ষিপ্তকালে আবর্তন করতে পারে। কৃত্রিম উপগ্রহ হলো মহাকাশে উৎক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত উপগ্রহ। এটা চাঁদের মতোই কিন্তু পার্থক্য কেবল এই যে চাঁদ প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত আর কৃত্রিম উপগ্রহ মানুষ তৈরি করেছে। , পৃথিবীর কক্ষপথে ১,৪১৯টি মানব কর্তৃক সৃষ্ট কার্যকরী কৃত্রিম উপগ্রহ ছিল। এছাড়াও সেখানে বর্তমানে আরো আছে সবচেয়ে প্রাচীন কৃত্রিম উপগ্রহ ভ্যানগার্ড-১ সহ ১৬,০০০ খন্ড অক্ষম উপগ্রহ এবং মহাকাশের জঞ্জাল। পৃথিবীর সর্ববৃহত কৃত্রিম উপগ্রহটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র। সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি thumb|অ্যাপোলো-৮ থেকে তোলা পৃথিবীর উদয়। frameless|upright=0.35|left|🜨 পৃথিবীর আদর্শ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক প্রতীক হল বৃত্তের অভ্যন্তরে একটি ক্রস চিহ্ন, 16px|🜨; যা পৃথিবীর চার কোণকে নির্দেশ করে। মানব সংস্কৃতিতে এই গ্রহকে নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। পৃথিবীকে কখনো কখনো শ্বর হিসেবে ব্যক্তিরূপে প্রকাশ করা হয়। অনেক সংস্কৃতিতে পৃথিবী হল দেবমাতা, যা সন্তান জন্মদানের প্রাথমিক শ্বর হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে, গাইয়া তত্ত্বে পৃথিবীর পরিবেশ ও জীবনকে একক স্ব-নিয়ন্ত্রণকারী জীবের সাথে তুলনা করা হয় যা বসবাসযোগ্যতার স্থায়িত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।Lovelock, James. The Vanishing Face of Gaia. Basic Books, 2009, p. 255. অনেক ধর্মের সৃষ্ট পুরাণে বলা হয় একজন অতিপ্রাকৃত শ্বর বা শ্বরবৃন্দ পৃথিবী সৃষ্টি করেছে। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ফলে এই গ্রহ সম্পর্কিত মানবীয় মতামতসমূহের কতক সাংস্কৃতিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। পশ্চিমে সমতল পৃথিবীর ধারণাRussell, Jeffrey B. "The Myth of the Flat Earth". American Scientific Affiliation; but see also Cosmas Indicopleustes. পরিবর্তিত হয়ে গোলাকার পৃথিবী ধারণা সৃষ্টি হয়েছে; যা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে পিথাগোরাস কর্তৃক প্রবর্তিত। এছাড়া ১৬শ শতাব্দীর পূর্বে পৃথিবীকে ভূকেন্দ্রিক মডেল-এ মহাবিশ্বের কেন্দ্র বলে বিশ্বাস করা হত; পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীরা প্রথম তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখান যে এটি একটি আবর্তনকারী বস্তু এবং সৌর জগতের অন্যান্য গ্রহের সাথে তুলনীয়। বাইবেলের বংশতালিকা বিশ্লেষণ করে পৃথিবীর বয়স নির্ণয়-কারী জেমস উশার এবং আরো কয়েকজন খ্রিস্টান পণ্ডিত ও পাদ্রীর কারণে ১৯শ শতাব্দীর পূর্ব-পর্যন্ত পশ্চিমারা ধারণা করতো যে, পৃথিবীর বয়স কয়েক হাজার বছর। ১৯শ শতাব্দীতে এসে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে পৃথিবীর বয়স কমপক্ষে কয়েক মিলিয়ন বছর। ১৮৬৪ সালে লর্ড কেলভিন তাপগতিবিজ্ঞান ব্যবহার করে হিসাব করে দেখান যে পৃথিবীর বয়স ২০ মিলিয়ন থেকে ৪০০ মিলিয়ন বছর, যা বিতর্কের জন্ম দেয়; কিন্তু পরবর্তীতে ১৯শ শতাব্দীর শেষের দিকে ও ২০শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথিবীর বয়স নির্ধারণের নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি রেডিওএক্টিভিটি ও রেডিওমেট্রিক ডেটিং আবিষ্কারের পর প্রমাণিত হয় পৃথিবীর বয়স বিলিয়ন বছরেরও বেশি। পৃথিবী সম্পর্কিত মানুষের ধারণা পুনরায় পরিবর্তন হয় যখন ২০শ শতাব্দীতে মানুষ প্রথম কক্ষপথ থেকে পৃথিবীকে দেখে এবং বিশেষত অ্যাপোলো মহাশূন্য মিশনে তোলা ছবিগুলো দেখার পর। আরও দেখুন সৌরজগৎ খ-গোলক ভূবিজ্ঞান টীকা তথ্যসূত্র আরও পড়ুন বহিঃসংযোগ উইকিম্যাপিয়ার মাধ্যমে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত পৃথিবীর চিত্র USGS -এর ভূ-চুম্বকত্ব বিষয়ক অনুষ্ঠান NASA Earth Observatory The size of Earth compared with other planets/stars Beএইউtiful Views of Planet Earth Pictures of Earth from space Flash Earth A Flash-based viewer for satellite and aerial imagery of the Earth Java ৩D Earth's Globe Projectshum.org's Earth fact file (for younger folk) Geody Earth World's search engine that supports Google Earth, NASA World Wind, Celestia, GPS, and other applications. Planet Earth From AOL Research & Learn: Photos, quizzes and info about Earth's climate, creatures and science. Earth From Space Some Photos From the Exhibit বিষয়শ্রেণী:গ্রহ বিষয়শ্রেণী:ভূগোল বিষয়শ্রেণী:ভূতত্ত্ব বিষয়শ্রেণী:আবাসযোগ্য গ্রহ বিষয়শ্রেণী:শিলাময় গ্রহ বিষয়শ্রেণী:পৃথিবী বিষয়শ্রেণী:প্রাচীনকাল থেকে জ্ঞাত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ বিষয়শ্রেণী:বৈশ্বিক প্রাকৃতিক পরিবেশ বিষয়শ্রেণী:প্রকৃতি বিষয়শ্রেণী:সৌরজগতের গ্রহ
প্রাকৃতিক পরিবেশ
https://bn.wikipedia.org/wiki/প্রাকৃতিক_পরিবেশ
thumb|right|জমি ব্যবস্থাপনা থেকে অস্ট্রেলিয়ার হেপটাউন ফলস ঝর্নার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যকে সংরক্ষণ করা হয়েছে; যার ফলে দর্শনার্থীদের প্রবেশের সুযোগ বেশি। thumb|right|সাহারা মরুভূমির উপগ্রহ চিত্র। এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় উষ্ণ মরুভূমি এবং মেরু মরুভূমির পর তৃতীয় বৃহত্তম মরুভূমি। প্রাকৃতিক পরিবেশ অথবা প্রাকৃতিক জগৎ বলতে সমগ্ৰ জীবিত এবং প্রাণহীন বস্তুর স্বাভাবিক অবস্থানকে বুঝায়, এক্ষেত্রে এটা মোটেও কৃত্রিম নয়।এই শব্দটি প্রায়শই পৃথিবীতে অথবা পৃথিবীর কিছু অংশে ব্যবহৃত হয়। সমস্ত প্রজাতি, জলবায়ু, আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক সম্পদ এই পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত যেটা মানুষের বাঁচা ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ধারণাকে নিম্নলিখিত উপাদানে ভাগ করা যায়: মানুষের বিশাল হস্তক্ষেপ ছাড়া সম্পূর্ণ পরিবেশগত এককসমূহ যেমন- গাছপালা, অণুজীবসমূহ, মাটি, শিলাসমূহ, বায়ুমণ্ডল । প্রাকৃতিক ঘটনাঃ যেগুলো তাদের সীমানা এবং তাদের প্রকৃতির মধ্যে ঘটে। বৈশ্বিক প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ এবং পদার্থবৈজ্ঞানিক ঘটনা যেগুলো পরিষ্কারভাবে পরিসীমাকে কমায়, যেমন, বায়ু, জল, এবং জলবায়ু, এছাড়া শক্তি, বিকিরণ, বৈদ্যুতিক আধান ও চৌম্বকত্ব ইত্যাদি প্রাকৃতিক পরিবেশের অংশ। প্রাকৃতিক পরিবেশের ঠিক বিপরীত হল নির্মিত পরিবেশ। কিছু এরকম অঞ্চল আছে যেখানে মানুষ শহর গঠন ও ভূমি রূপান্তরের মতো ভূদৃশ্যের মৌলিক পরিবর্তন ঘটায়; প্রাকৃতিক পরিবেশ বদল হয়ে একটা সরলীকৃত মানব পরিবেশে পরিণত হয়। এমনকি দেখা যায় যেটা চরম নয়, যেমন মাটি দিয়ে বানানো কুঁড়েঘর অথবা মরুভূমিতে ফটোভোল্টাইক পদ্ধতি, এই সংশোধিত পরিবেশ কৃত্রিম হয়ে যায়। যদিও মানুষ ছাড়া অনেক প্রাণী তাদের নিজেদের পরিবেশ ভালো করার জন্যে কিছু জিনিস তৈরি করে, সুতরাং, বীবর বাঁধ এবং উই ঢিবির কাজ, এগুলোকে প্রাকৃতিক হিসেবে ধরা হয়। পৃথিবীতে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষ কমই দেখে, এবং স্বাভাবিকতা সাধারণত একশ শতাংশ এক চরম অবস্থা থেকে শূন্য শতাংশ অন্যথায় আলাদা হয়। খুব জটিলভাবে আমরা একটা পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে অথবা উপাদান নিয়ে ভাবনা করতে পারি, এবং দেখা যায় যে, তাদের স্বাভাবিকতার মাত্রা সমান নয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটা কৃষি জমিতে খনিজ সংক্রান্ত উপাদান এবং মাটির কাঠামো নির্বিঘ্ন অরণ্যের মাটির সমান হয়, তাহলেও কাঠামো কিন্তু আলাদা হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশকে কখনো কখনো আবাসস্থলের সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা হয়, উদাহরণস্বরূপ, যখন আমরা বলি যে, জিরাফের প্রাকৃতিক পরিবেশ হল বিচরণ ভূমি। গঠন thumb|left|পৃথিবীর স্তরীয় কাঠামো: (১) ইনার কোর; (২) আউটার কোর; (৩) লোয়ার ম্যান্টল; (৪) আপার ম্যান্টল; (৫) ভূত্বক; (৬) ক্রাস্ট ভূবিজ্ঞানে সাধারণত চারটে পরিমণ্ডলের অবস্থান পাওয়া যায়, ভূত্বক, বারিমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল এবং জীবমণ্ডলEarth's Spheres . Wheeling Jesuit University/NASA Classroom of the Future. Retrieved November 11, 2007. যেগুলোর সঙ্গে যথাক্রমে (ভূবিদ্যা)শিলা, জল, বায়ু এবং জীবনের যোগসূত্র আছে। কয়েকজন বিজ্ঞানী বরফের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্রায়োস্ফিয়ার, এছাড়া মাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পেডোস্ফিয়ারকে একটা সক্রিয় এবং অন্তর্নির্মিত পরিমণ্ডল রূপে পৃথিবীর পরিমণ্ডলের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। পৃথিবী গ্রহের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সাধারণ শব্দ হল ভূবিজ্ঞান (ভূতত্ত্ব, ভৌগোলিক বিজ্ঞান অথবা ভূবিজ্ঞানসমূহও বলা হয়)। ভূবিজ্ঞানসমূহের চারটে প্রধান শাখা আছে; যথা, ভূগোল, ভূবিদ্যা, ভূপদার্থবিদ্যা এবং ভূগণিত। পৃথিবীর পরিমণ্ডলসমূহ অথবা এদের মূল ক্ষেত্রের একটা গুণগত এবং পরিমাণগত বোঝাপড়ার জন্যে এই সমস্ত প্রধান শাখায় পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, কালপঞ্জি এবং গণিত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ভূবিদ্যাগত কার্যকারিতা পৃথিবীর ক্রাস্ট অথবা ভূত্বক হল এই গ্রহের সবচেয়ে দূরের শক্ত পৃষ্ঠতল এবং এটা রাসায়নিক ও যান্ত্রিকভাবে নিচের আস্তরণ ম্যান্টল থেকে আলাদা। এটা আগ্নেয় পদ্ধতিতে ম্যাগমা ঠান্ডা ও শক্ত হয়ে বিশেষভাবে কঠিন শিলা তৈরি হয়। ভূত্বকের নিচে অবস্থানকারী ম্যান্টল তেজস্ক্রিয় উপাদানের ক্ষয় দ্বারা গরম হয়। ম্যান্টল কঠিন হলেও এটা রেইক সংশ্লেষ অবস্থানে থাকে। এই সংশ্লেষ প্রক্রিয়া খুব ধীরে হলেও ভূত্বক পাতগুলোকে সরায়। এর ফলে যা ঘটে তাকে বলে প্লেট টেকটনিক। আগ্নেয়গিরি থেকে প্রাথমিকভাবে ভূত্বক উপাদানের অবশিষ্ট গলিত অংশ অথবা মধ্য-মহাসাগর রিজ এবং ম্যান্টল প্লুমসমূহে উঠতি ম্যান্টল বেরিয়ে আসে। পৃথিবীতে জল thumb|upright=0.55|right|প্রবাল প্রাচীরসমূহের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য বর্তমান। বেশির ভাগ জল বিভিন্ন ধরনের জলাভূমিতে পাওয়া যায়। মহাসাগরসমূহ একটা মহাসাগর হল বেশির ভাগ লবণাক্ত জল এবং বারিমণ্ডলের উপাদান। পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় ৭১ শতাংশ (৩.৬২ কোটি বর্গকিলোমিটার অঞ্চল) মহাসাগর দিয়ে ঢাকা, একটা অবিচ্ছিন্ন জলভাগ যেটা প্রথাগতভাবে বিভিন্ন প্রধান মহাসাগর এবং সাগরসমূহে বিভক্ত। এই অঞ্চলের অর্ধেকের বেশি অংশ ৩,০০০ মিটারের ওপর (৯,৮০০ ফুট) গভীর। গড় মহাসাগরীয় লবণাক্ততা হল ৩৫ প্রতি-অংশ অঙ্কানুপাত (পিপিটি) (৩.৫ শতাংশ) এবং প্রায় সব সাগরজলের লবণাক্ততা হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৮ পিপিটি ধরনের। যদিও সাধারণত বিভিন্ন মহাসাগর আলাদাভাবে স্বীকৃত, এই জলভাগ পরস্পর সংযুক্ত লবণজলের আকর হিসেবে একই মহাসাগর অথবা বৈশ্বিক মহাসাগর বলা হয়ে থাকে।"". The Columbia Encyclopedia. 2002. New York: Columbia University Press"Distribution of land and water on the planet ". UN Atlas of the Oceans গভীর সাগরতলসমূহ হল পৃথিবীপৃষ্ঠের অর্ধেকের বেশি এবং সেগুলো স্বল্প-সংশোধিত প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। প্রধান মহাসাগরীয় বিভাগগুলোকে মহাদেশসমূহ, বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জ ও অন্যান্য মানদণ্ডের অংশ হিসেবে ভাগ করা হয়: এই বিভাগগুলো (আয়তনের অবতরণক্রমে) হল - প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর, ভারত মহাসাগর, দক্ষিণ মহাসাগর এবং উত্তর মহাসাগর। নদীসমূহ নদী হল প্রাকৃতিক একটা জলস্রোত;River {definition} from Merriam-Webster. Accessed February 2010. এটা সাধারণত মিঠাজলের হয়, এবং কোনো এক মহাসাগর, হ্রদ, সাগর অথবা অন্য নদীতে গিয়ে মিলিত হয়ে থাকে। কিছুসংখ্যক নদী মাটির ভিতর দিয়ে বয়ে চলে এবং অন্য কোনো জলাধারে না পৌঁছানোর ফলে পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। thumb|left|মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই রাজ্যে পাহাড়ের ভিতর প্রবাহ সাধারণত দুদিকে তীর, মাঝে প্রবাহ আধার নদীতে জল একটা খাত দিয়ে প্রবাহিত হয়। বড়ো বড়ো নদীতে প্রায়ই একটা চওড়া প্লাবনভূমি থাকে যা খাতের অতি-দোহনের দ্বারা জলের আকার নেয়। নদী-খাতের আকার অনুযায়ী প্লাবনভূমি অনেক বেশি চওড়া হতে পারে। নদীসমূহ জলবিজ্ঞান চক্রের একটা অংশ। নদীতে জলের উৎস হল পৃষ্ঠজলের মাধ্যমে বর্ষণ, ভূজল পুনর্সংযোজন, ঝরনাসমূহ এবং হিমবাহের বরফগলা জল। ছোটো ছোটো নদীগুলোর অন্য নামও দেওয়া হয়, যেমন, প্রবাহ, খাঁড়ি এবং নালা। আকর এবং প্রবাহ তীর এই দুয়ের মধ্যে তাদের স্রোত সীমাবদ্ধ। খণ্ডিত আবাস বিষয়ে সংযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ অববাহিকা ভূমিকা নিয়ে থাকে এবং এরূপেই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত হয়। প্রবাহ এবং জলপথের পরীক্ষাকে সাধারণভাবে বলা হয় পৃষ্ঠ জলবিজ্ঞান।http://ga.water.usgs.gov/edu/hydrology.html/ |date=June 20, 2019 হ্রদসমূহ thumb|right| আর্জেন্টিনার নেউকোয়েন রাজ্যে হিমবাহ থেকে উৎপন্ন ল্যাকার হ্রদ একটা হ্রদ (লাতিন লকুস শব্দ থেকে এসেছে) হল অববাহিকার নিম্নে কেন্দ্রীভূত একটা জলের আকর। একটা জলের আকরকে তখনই হ্রদ বলা যাবে যখন এটা হবে অন্তর্দেশীয়, কোনো মহাসাগরের অংশ নয় এবং একটা পুকুরের থেকে বড়ো ও গভীর হয়। thumb|left| এভারগ্ল্যাডস ন্যাশনাল পার্ক, ফ্লোরিডা, যুক্রাষ্ট্রের একটা জলাভূমি অঞ্চল পৃথিবীতে প্রাকৃতিক হদ্রসমূহ সাধারণত দেখা যায় পর্বত সন্নিহিত অঞ্চল, ফাটল অঞ্চলসমূহ এবং বর্তমান অথবা সাম্প্রতিক হিমবাহ অঞ্চলে। অন্তর্হীন অববাহিকা অথবা পরিণত নদীর গতিপথের পাশে অন্যান্য হ্রদ দেখা যায়। শেষ তুষার যুগের শেষভাগ থেকে পৃথিবীর কিছু অংশে বিশৃংখল নিকাশি ধরনের কারণে অনেক হ্রদ আছে। ভূতাত্ত্বিক কালক্রমের ওপর সকল হ্রদই অস্থায়ী যেহেতু সেগুলো ধীরভাবে পলিসহ পূর্ণ হয় অথবা তাদের মধ্যে থাকা অববাহিকায় ছড়িয়ে পড়ে। পুকুরসমূহ একটা পুকুর হল প্রাকৃতিক কিংবা মানুষে-বানানো স্থির জলের একটা আকর; পুকুর সাধারণত হ্রদ অপেক্ষা ছোটো। একটা ব্যাপক মানুষে-বানানো জলাধারসমূহকে পুকুরের নানা রূপ দেওয়া হয়; যেমন, নান্দনিক অথবা সাজানো নকশা করা জলাশয় বাগান, ব্যবসায়িক মাছ চাষের নকশা করা মাছ পুকুর এবং তাপীয় শক্তি সঞ্চয়ের নকশা করা সৌর পুকুর। ধারার গতি থেকে পুকুর এবং হ্রদের পার্থক্য নির্ধারণ করা যায়। যখন প্রবাহের ধারা সহজেই বোঝা যায়, পুকুর ও হ্রদে তাপশক্তির দ্বারা এবং পরিমিত বায়ুতাড়িত ধারা থাকে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রবাহ পুকুর এবং ঢেউ পুকুর ইত্যাদি থেকে পুকুরকে আলাদা করে। জলে মানুষের প্রভাব মানুষ নানাভাবে জলের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।যেমনঃ মানুষ নদীগুলোতে সরাসরি খাল খনন করে নিজেদের কাজে লাগানোর মাধ্যমে পরিবর্তন ঘটায়।আমরা বাঁধ ও জলাধার বানাই এবং নদীগুলোর ও জলপথের অভিমুখ নিজেদের মতো করি। বাঁধগুলো কার্যকরভাবে জলাধার এবং জলবিদ্যুৎ শক্তি তৈরি করে। যাই হোক, জলাধার এবং বাঁধ থেকে পরিবেশ ও বন্যজীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। মাছেদের স্থানান্তরণ এবং স্রোত বরাবর জীবদের গতিবিধি বাঁধে আটকা পড়ে। নগরায়ন পরিবেশের ক্ষতি করে কারণ এর ফলে অরণ্য ধ্বংস হয় এবং হ্রদের জলতল, ভূজলের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। অরণ্য ধ্বংস এবং নগরায়ন হাত ধরাধরি করে চলে। অরণ্য ধ্বংসের ফলে বন্যা হতে পারে, জলপ্রবাহ হ্রাস পেতে পারে, এবং নদীতীরের গাছপালায় পরিবর্তন আসতে পারে। গাছপালার পরিবর্তন ঘটে কেননা তারা যথেষ্ট জল না পেয়ে অবস্থার অবনতি হয়, ফলস্বরূপ আঞ্চলিক বন্যজীবনের খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি পড়ে। উপরোক্ত কারণগুলো জলতল, ভূগর্ভে জলের অবস্থা, জল দূষণ, তাপীয় দূষণ এবং সামুদ্রিক দূষণ এসবের প্রভাব পড়ে। আবহমণ্ডল, জলবায়ু ও আবহাওয়া thumb|right|মহাকাশ থেকে দেখা যাচ্ছে আবহমণ্ডলের গ্যাসগুলো (অন্যান্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে বেশি নীল আলো ছড়ায় ), নীল বর্ণবলয় তৈরি করছে thumb|right| বিমান থেকে দেখা পৃথিবীর ট্রপোমণ্ডল thumb|বজ্রপাত হল বজ্রঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক অবস্থায় আবহমণ্ডলীয় বিদ্যুৎ ঝলক যার সঙ্গে থাকে বজ্রধ্বনি পৃথিবীর আবহমণ্ডল এই গ্রহের পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করে। গ্রহের মাধ্যাকর্ষণের টানে পাতলা গ্যাসসমূহের স্তর পৃথিবীকে আবৃত করে রেখেছে। শুকনো বায়ু ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন, ২১ শতাংশ অক্সিজেন, ১ শতাংশ আর্গন এবং অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাস, এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড দিয়ে তৈরি। অন্যান্য গ্যাসগুলো প্রায়ই সামান্য হিসেবে ধরা হয়। আবহমণ্ডলে কতগুলো গ্রিনহাউস গ্যাস আছে; যেমন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড এবং ওজোন। পরিস্রুত বায়ুতে অন্যান্য রাসায়নিক যৌগ সামান্য পরিমাণে থাকে। বাতাসে আরো যেসব জিনিস থাকে সেগুলো হল: জলীয় বাষ্প এবং জলকণার প্রলম্বনসমূহ এবং মেঘ হিসেবে দেখা বরফ স্ফটিকের পরিবর্তনশীল পরিমাণ। অল্প পরিমাণ অপরিস্রুত বায়ুতে ধুলো, রেণু, জীবাণু, সাগর ফেনা, আগ্নেয় ছাই এবং উল্কাপিণ্ড থাকতে পারে। এছাড়া ক্লোরিন (প্রাথমিক বা যৌগ), ফ্লোরিন যৌগ, প্রাথমিক পারদ এবং গন্ধক যৌগ যেমন সালফার ডাইঅক্সাইড জাতীয় বিভিন্ন ধরনের শিল্প দূষকও থাকতে পারে। (SO2). পৃথিবীপৃষ্ঠে ধেয়ে আসা অতিবেগুনি রশ্মির মাত্রা কমিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ওজোন স্তর একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু ডিএনএ অতিবেগুনি রশ্মিতে সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এটা পৃষ্ঠতলের জীবনকে রক্ষার কাজ করে। এছাড়া আবহমণ্ডল রাতের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখে, যার ফলে দৈনিক চরম তাপমান হ্রাস হয়। পরিবেশের শ্রেণিবিভাগ প্রাকৃতিক পরিবেশ :প্রাকৃতিক পরিবেশ হচ্ছে সেই পরিবেশ যা প্রকৃতি নিজে নিজে তৈরি করে। এগুলো হচ্ছেঃ গাছ,পাহাড়-পর্বত,ঝর্ণা,নদী ইত্যাদি। এগুলো মানুষ সৃষ্টি করতে পারে না। এগুলো প্রাকৃতিক ভাবেই সৃষ্টি হয়। মানুষের তৈরি পরিবেশ :মানুষের তৈরি পরিবেশ হচ্ছে দালান-কোঠা,নগরায়ন,বন্দর ইত্যাদি। এগুলো মানুষ নিজের প্রয়োজনের তাগিদে তৈরি করে। পরিবেশ দূষণ ও অবক্ষয় thumb|right|325px|আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং লাভা প্রবাহের দৃশ্য। পরিবেশের প্রতিটা উপাদানের সুসমন্বিত রূপই হলো সুস্থ পরিবেশ। এই সুসমন্বিত রূপের ব্যত্যয়ই পরিবেশের দূষণ ঘটায় এবং পরিবেশের স্বাভাবিক মাত্রার অবক্ষয় দেখা দেয়। পরিবেশ বিভিন্ন কারণে দূষিত হতে পারে।যেমনঃ প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কারণও এর সাথে দায়ী। পরিবেশ দূষণের জন্য বিশেষভাবে দায়ী ১২টি মারাত্মক রাসায়নিক দ্রব্যকে একত্রে ডার্টি ডজন বা নোংরা ডজন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই ১২টি রাসায়নিক দ্রব্যের মধ্যে ৮টি কীটনাশক [অলড্রিন (aldrin), ডায়েলড্রিন (dieldrin), ক্লোরডেন (chlordane), এনড্রিন (endrin), হেপ্টাক্লোর (heptachlor), ডিডিটি (DDT), মিরেক্স (mirex), এবং টক্সাফেন (toxaphene); দুটি শিল্পজাত রাসায়নিক দ্রব্য পিসিবি (PCBs) এবং হেক্সাক্লোরোবেনজিন (hexachlorobenzene); এবং অন্য দুটো হলো কারখানায় উৎপন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত উপজাত: ডাইওক্সিন (dioxin) এবং ফিউরান (furan)]; খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে পৃথিবীব্যাপী সব পরিবেশের সব ধরনের জীবজন্তুর উপর তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটায় এই বিষাক্ত পদার্থগুলো। ত্রুটিপূর্ণ শিশুর জন্ম, ক্যান্সার উৎপাদন, ভ্রুণ বিকাশের নানাবিধ সমস্যার মূলেই দায়ী থাকে এই ডার্টি ডজন।ডার্টি ডজন, এস. এম হুমায়ূন কবির, বাংলাপিডিয়া 2.0.0, সিডি সংস্করণ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০০৯; সংগ্রহের তারিখ: ৩১ ডিসেম্বর ২০১১ খ্রিস্টাব্দ। পরিবেশ আইন বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বিপন্ন পরিবেশের বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্তির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরিবেশ আইন। মূলত পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান তত্ত্বাবধান ও সংরক্ষণের আইনই পরিবেশ আইন। এই আইন স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য বিশ্ব আন্দোলনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাগরিক ও সরকারি সংস্থাসমূহের অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে।পরিবেশ দূষণ, এস রিজওয়ানা হাসান, বাংলাপিডিয়া 2.0.0, সিডি সংস্করণ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০০৯; সংগ্রহের তারিখ: ৩১ ডিসেম্বর ২০১১ খ্রিস্টাব্দ। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:পরিবেশ বিষয়শ্রেণী:প্রকৃতি বিষয়শ্রেণী:আবাসভূমি বিষয়শ্রেণী:পৃথিবী
ভাষা
https://bn.wikipedia.org/wiki/ভাষা
ভাষা পরিবারসমূহ
https://bn.wikipedia.org/wiki/ভাষা_পরিবারসমূহ
REDIRECTভাষা পরিবার
মহাদেশ
https://bn.wikipedia.org/wiki/মহাদেশ
thumb|350px|বিশ্ব মানচিত্রে ৭ টি মহাদেশ৷ এশিয়া হলুদ ; ওশেনিয়া সবুজ ; ইউরোপ নীল ; আফরিকা কালো ; আমেরিকা লাল ; এন্টার্কটিকা ধুসর মহাদেশ বলতে পৃথিবীর বড় ভূখণ্ডসমূহকে বুঝায়। পৃথিবীতে ৭ টি মহাদেশ রয়েছে। মহাদেশসমূহ হলো এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ওশেনিয়া, ও অ্যান্টার্কটিকা।Continents দ্বীপসমূহকে পার্শ্ববর্তী মহাদেশের অন্তর্গত হিসেবে ধরা হয়। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপসমূহকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চল ওশেনিয়া সৃষ্টি করা হয়েছে। সংখ্যা মহাদেশসমূহকে পৃথক করার কয়েকটি উপায় রয়েছে: মডেলচার মহাদেশ আফ্রো-ইউরেশিয়া আমেরিকা অ্যান্টার্কটিকা অস্ট্রেলিয়া "4 Continents This would probably be the correct subdivision if we adopted a strict definition of continents, ideally defined as large landmasses separated by water. Furthermore, we should consider "separated" only what is naturally separated, excluding therefore the separations resulting from the artificially made Panama Canal (which separates North and South America) and Suez Canal (which separates Africa from Eurasia). Under this model, the four continents of the world are: Afro-Eurasia (or Eurafrasia), America, Antarctica, and Australia (not Oceania, which combines Australia with smaller countries in the Pacific Ocean which are separated by water). An alternative four-continent model, introduced at the beginning of the 20th century, included Europe, Asia, Africa, and America."পাঁচ মহাদেশ আফ্রিকা ইউরেশিয়া আমেরিকা অ্যান্টার্কটিকা অস্ট্রেলিয়া "In some textbooks, North and South America are combined into "America" and/or Europe and Asia are combined into "Eurasia", for a grant total of 6 or even 5."Martin W. Lewis and Kären E. Wigen, The Myth of Continents: A Critique of Metageography (Berkeley and Los Angeles: University of California Press, 1997) "5 Continents This model adopts the criteria of both the six-continent models, resulting in the following 5 continents: Africa, Eurasia, America, Oceania (or Australia), and Antarctica. An alternative five-continent model is the one adopted, among others, by the Olympic Charter, which excludes Antarctica as uninhabited and lists the following five: Africa, Europe, Asia, America, and Oceania (or Australia)." "There are even geographical views that prefer the presence of both a Eurasian as well as one American continent. These geographers therefore contend that there should only be 5 continents."ছয় মহাদেশ আফ্রিকা ইউরোপ এশিয়া আমেরিকা অ্যান্টার্কটিকা অস্ট্রেলিয়া"Continent". Encyclopædia Britannica. 2006. Chicago: Encyclopædia Britannica, Inc. আফ্রিকা ইউরেশিয়া উত্তর আমেরিকা দক্ষিণ আমেরিকা অ্যান্টার্কটিকা অস্ট্রেলিয়া Older/previous official Greek Paedagogical Institute 6th grade Geography textbook (at the Wayback Machine), 5+1 continents combined-America model; Pankosmios Enyklopaidikos Atlas, CIL Hellas Publications, , p. 30, 5+1 combined-America continents model; Neos Eikonographemenos Geographikos Atlas, Siola-Alexiou, 6 continents combined-America model; Lexico tes Hellenikes Glossas, Papyros Publications, , lemma continent (epeiros), 5 continents model; Lexico Triantaphyllide online dictionary, Greek Language Center (Kentro Hellenikes Glossas), lemma continent (epeiros), 6 continents combined-America model; Lexico tes Neas Hellenikes Glossas, G.Babiniotes, Kentro Lexikologias (Legicology Center) LTD Publications, , lemma continent (epeiros), 6 continents combined-America modelসাত মহাদেশ আফ্রিকা ইউরোপ এশিয়া উত্তর আমেরিকা দক্ষিণ আমেরিকা অ্যান্টার্কটিকা অস্ট্রেলিয়াWorld, National Geographic - Xpeditions Atlas. 2006. Washington, DC: National Geographic Society.The World - Continents , Atlas of CanadaThe New Oxford Dictionary of English. 2001. New York: Oxford University Press."Continent ". MSN Encarta Online Encyclopedia 2006.. 31 October 2009."Continent". McArthur, Tom, ed. 1992. The Oxford Companion to the English Language. New York: Oxford University Press; p. 260. চীন, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, পশ্চিম ইউরোপের কিছু অংশ এবং ইংরেজি ভাষাভাষী জনসংখ্যার দেশ, যেমন অস্ট্রেলিয়া, এবং যুক্তরাজ্য এ সাত মহাদেশ মডেল শিখানো হয়। যুক্ত ইউরেশিয়াসহ ছয় মহাদেশ মডেল রাশিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও জাপান এ ব্যবহৃত হয়। যুক্ত আমেরিকাসহ ছয় মহাদেশ মডেল ফ্রান্স ও ফরাসি উপনিবেশসমূহ, ইতালি, পর্তুগাল, স্পেন, রোমানিয়া, লাতিন আমেরিকা, এবং গ্রিস এ ব্যবহৃত হয়। Older/previous official Greek Paedagogical Institute 6th grade Geography textbook এই মডেল থেকে এন্টার্কটিকা মহাদেশ জনশূন্য হওয়ায় তা বাদ দিয়ে পাঁচ মহাদেশ মডেল গৃহীত হয়েছে। এই মডেল জাতিসংঘ এবং অলিম্পিক সনদ এ ব্যবহৃত হয়। উচ্চতম ও নিম্নতম স্থান মহাদেশ উচ্চতম স্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা (মিটার) সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা (ফুট) দেশ বা অঞ্চলে অবস্থান নিম্নতম স্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা (মিটার) সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা (ফুট) দেশ বা অঞ্চলে অবস্থান এশিয়া মাউন্ট এভারেস্ট ৮,৮৪৮ ২৯,০২৯ চীন ও নেপাল মৃত সাগর -৪২৭ -১,৪০১ ইসরায়েল ও জর্দান আফ্রিকা কিলিমাঞ্জারো ৫,৮৯৫ ১৯,৩৪১ তানজানিয়া আসাল হ্রদ -১৫৫ -৫০৯ জিবুতি ইউরোপ এলব্রুস পর্বত ৫,৬৪২ ১৮,৫১০ রাশিয়া কাস্পিয়ান সাগর -২৮ -৯২ রাশিয়া উত্তর আমেরিকা দেনালি ৬,১৯৮ ২০,৩৩৫ যুক্তরাষ্ট্র মৃত উপত্যকা -৮৬ -২৮২ যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ আমেরিকা অ্যাকনকাগুয়া পর্বত ৬,৯৬০ ২২,৮৩০ আর্জেন্টিনা লাগুনা দেন কার্বন -১০৫ -৩৪৪ আর্জেন্টিনা অ্যান্টার্কটিকা ভিনসন স্তূপপর্বত ৪,৮২০ ১৬,০৫০ (নেই) ভেস্টফোল্ড পর্বত -৫০ -১৬০ (নেই)অস্ট্রেলিয়া পুঞ্চাক জায়া ৪,৮৮৪ ১৬,০২৪ ইন্দোনেশিয়া (পাপুয়া) আয়ার হ্রদ -১৫ -৪৯ অস্ট্রেলিয়া তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:মহাদেশ
উত্তর আমেরিকা
https://bn.wikipedia.org/wiki/উত্তর_আমেরিকা
থাম্ব|উত্তর আমেরিকার জনবহুল অংশের মানচিত্র ২০১৮ অনুসারে Mercator প্রজেকশনে দৈহিক, রাজনৈতিক এবং জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য দেখায় (QGIS এবং CC-0 প্রাকৃতিক আর্থ জিওডাটা ব্যবহার করে সংকলিত) উত্তর আমেরিকা হল উত্তর এবং পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত একটি মহাদেশ। একে কখনো আমেরিকার উত্তর উপমহাদেশও ধরা হয়। মহাদেশটির উত্তরে উত্তর মহাসাগর, পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর এবং দক্ষিণ-পূর্বে দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় সাগর অবস্থিত। এর আয়তন ২৪,৭০৯,০০০ বর্গ কি.মি. (৯,৫৪০,০০০ বর্গ মাইল), যা পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় ৪.৮% এবং ভূ-পৃষ্ঠের ১৬.৫% জুড়ে বিস্তৃত এবং আয়তনের দিক থেকে উত্তর আমেরিকা এশিয়া ও আফ্রিকার পরে ৩য় বৃহত্তম এবং জনসংখ্যা হিসেবে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের পরে চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ। ২০০৭ সালে উত্তর আমেরিকা মহাদেশে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫২ কোটি। ২০১৩ সালের আদমশুমারি মতে নিকটবর্তী ক্যারিবীয় দ্বীপাঞ্চলসহ উত্তর আমেরিকার জনসংখ্যা ছিল ৫৬৫ মিলিয়ন, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭.৫ ভাগ। ইতিহাস মতে, সর্বশেষ বরফ যুগের সময় বেরিং ভূসেতু অতিক্রম করে উত্তর আমেরিকাতে প্রথম মানব বসতি শুরু হয় এবং তথাকথিত প্রত্ন-ভারতীয় যুগের সমাপ্তি হয় প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্বে মধ্য-ভারতীয় যুগের শুরুতে। ধ্রুপদী যুগ ৬ষ্ঠ শতাব্দী থেকে ১৩তম শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। প্রাক-কলাম্বীয় যুগের সমাপ্তি ঘটে ইউরোপীয়দের আগমনের সাথে সাথে আবিষ্কার যুগ এবং আধুনিক যুগের শুরুতে। বর্তমান অধিবাসিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও জাতিগত বিন্যাসে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক, আদিবাসী আমেরিকান, আফ্রিকীয় দাস ও তাদের বংশধরদের প্রভাব বিদ্যমান । তন্মধ্যে মহাদেশটির উত্তরাংশে ইউরোপীয় প্রভাব এবং দক্ষিণাংশে আদিবাসী আমেরিকান ও আফ্রিকীয় প্রভাব সুস্পষ্ট। মহাদেশটিতে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবে অধিকাংশ উত্তর আমেরিকীরা মূলত ইংরেজি, স্পেনীয় ও ফরাসি ভাষায় কথা বলে এবং সেখানকার চলমান সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাগুলি সাধারণত পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে। ব্যুৎপত্তি থাম্ব|১৬২১ সালের উত্তর আমেরিকার মানচিত্র। জার্মান মানচিত্রবিদ মার্টিন ওয়াল্ডসিমুলার এবং ম্যাথিয়াস রিংম্যান একত্রে ইতালীয় পরিব্রাজক আমিরিগো ভেসপুচ্চির নামানুসারে এই অঞ্চলটির নামকরণ করেন দ্যা আমেরিকাস। ভেসপুচ্চি ১৯৪৭ এবং ১৫০২ সালের কোন এক সময়ে দক্ষিণ আমেরিকা পরিভ্রমণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন প্রথম ইউরোপিয়ান পরিব্রাজক যিনি আমেরিকা এসেছিলেন। তার মতে, আমেরিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ নয়, বরং এটি একটি স্বতন্ত্র ভূমি যেটি ইউরোপিয়ানদের কাছে অজানা ছিল। ১৫০৭ সালে, ওয়াল্ডসিমুলার প্রদত্ত পৃথিবীর মানচিত্রে তিনি বর্তমান দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল অংশটিকে সর্বপ্রথম "আমেরিকা" নামকরণ করেন। তিনি তার কসমোগ্রাফি ইনট্রোডাকটো বইয়ে এই নামকরণের কারণ যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা সহ বর্ণনা করেন এভাবে: {{lang|la|... এবি আমেরিকো ইনভেন্টোরি ... কুয়েশি আমেরিকি সিভ আমেরিকাম}} (অর্থঃ পরিব্রাজক আমেরিকাস হতে বর্ণিত .. এটি ছিল আমেরিকাসের ভূমি, নাম আমেরিকা।)। ওয়াল্ডসিমুলারের নামকরণের পর এটা নিয়ে আর কেউ আপত্তি জানায়নি। যদিও তিনি ভেসপুচ্চির ল্যাটিন নামানুসারে (আমেরিকাস ভেসপুচ্চিয়াস), নামকরণ করেছিলেন তথাপি ইউরোপা, এশিয়া এবং আফ্রিকার মতো স্ত্রীবাচক নামকরণ করে আমেরিকা নামে বদলে ফেলা হয়। পরবর্তিতে অন্যান্য মানচিত্রবিদরা উত্তরের শেষ বিন্দু পর্যন্ত মহাদেশের নাম আমেরিকা প্রদান করে। ১৫৩৮ সালে, জেরার্ড মার্কেটোর তার প্রণিত মানচিত্রে পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধের পুরোটাকেই আমেরিকা নামে চিহ্নিত করেন। আমেরিকার নামকরণ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। অনেকের মতে আমেরিকার নামকরণ আমেরিগো ভেসপুচ্চির নামানুসারে হয়েছে, কিন্তু এই তত্ত্বে অনেকে বিশ্বাসী নয়। ১৯৪৯ সালে, রিকার্ডো পাল্মা একটি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন যাতে তিনি বলেন," মধ্য আমেরিকার আমেরিক পর্বতমালা এবং দক্ষিণ আমেরিকা উভয়য়েরই আবিস্কারক ভেসপু্চ্চি" যা কিনা ক্রিস্টোফার কলোম্বাস এর আবিস্কারের সাথে মিলে গেছে। আলফ্রেড ই. হুডের ১৯০৮ সালের তত্ত্ব মতে "মহাদেশগুলোর নামকরণ করা হয় রিচার্ড আমরিক নামের এক ব্রিস্টলের অধিবাসী বণিকের নামানুসারে। কেননা তিনি ১৪৯৭ সালে জন কবেট এর ইংল্যান্ড থেকে নতুন এলাকা আবিস্কারের প্রকল্পে অর্থায়ন করেন"। আরেকটি বিস্তারিত ব্যাখ্যায় বলা হয় আমেরিকার নামকরণ করা হয়েছিল একজন স্পানিশ নাবিকের নামে যিনি কিনা প্রাচীন ভিসিগোথিক গোষ্ঠীর আমেরিক। আরেকটি ব্যাখ্যায় বলা হয়, আদিবাসী আমেরিকান ভাষার শব্দ থেকেই মহাদেশটির নামকরণ করা হয়েছে। ব্যাপ্তি "উত্তর আমেরিকা" নামের অর্থ স্থানানুসারে এবং বিষয়ানুসারে আলাদা। কানাডিয়ান ইংরেজিতে, "উত্তর আমেরিকা" বলতে বুঝায় একসাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাকে See also: । অন্যদিকে, মাঝে মাঝে গ্রীনল্যান্ড এবং মেক্সিকোর (নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট অনুসারে) পাশাপাশি সমুদ্র মধ্যবর্তি দ্বীপসমূহকেও বোঝানো হয়ে থাকে। জাতিসংঘের জিও স্কিম অনুসারে "নর্থ আমেরিকা"র অঞ্চলগুলো হলো মেক্সিকো থেকে উত্তরে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা পর্যন্ত, পাশাপাশি মধ্য আমেরিকার কিছু অঞ্চল সহ ক্যারিবিয়ান দেশসমূহ। এছাড়াও কানাডিয়ান আর্কটিক অঞ্চলসমূহের মধ্যে গ্রীনল্যান্ডকেও ধরা হয়ে থাকে নর্থ আমেরিকান টেকটোনিক প্লেট অনুসারে। ইরানসহ বেশকিছু রোমান ভাষাভাষী সংস্কৃতিতে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ বলতে বোঝান হয়ে থাকে মূলত কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং মাঝে মাঝে গ্রীনল্যান্ড, সেইন্ট প্যারি এট মিক্যুইলন এবং বারমুডাকে। উত্তর আমেরিকাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে ডাকা হত। যেমন স্পেনীয় নর্থ আমেরিকা (নিউ স্পেন) ছিল উত্তরাঞ্চলীয় আমেরিকার পূর্বনাম, এবং এটি ছিল মেক্সিকোর প্রথম সাংবিধানিক নাম। অঞ্চলসমূহ ভৌগলিকভাবে উত্তর আমেরিকা মহাদেশটি বেশকিছু অঞ্চল এবং উপঅঞ্চলে বিভক্ত। এদের মধ্যে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং ভৌগোলিক অঞ্চল অবস্থিত। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ মূলত বিভিন্ন বাণিজ্য এলাকা দিয়ে গঠিত, যেমন: নর্থ আমেরিকান বাণিজ্য চুক্তি এলাকা এবং সেন্ট্রাল আমেরিকান বাণিজ্য চুক্তি এলাকা ইত্যাদি। ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিকভাবে, মহাদেশটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় অ্যাঙ্গলো-আমেরিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকা। অ্যাঙ্গলো-আমেরিকা বলতে বুঝায় উত্তরাঞ্চলীয় আমেরিকা, বেলিজ, এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ সেই সাথে ইংরেজি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী (যদিও উপআঞ্চলিক এলাকা, যেমন লুইজিয়ানা এবং কিউবিক, আর ফ্রান্সোফনিক জনগোষ্ঠী এর আওতাধীন নয়)। ল্যাটিন আমেরিকা বলতে বোঝানো হয় সাধারনত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের অঞ্চল মেক্সিকো, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানা এবং ফকল্যান্ড দ্বীপপূঞ্জ ইত্যাদিকে। উত্তর আমেরিকা মহাদেশটির দক্ষিণাংশকে দুটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চল। একইভাবে মহাদেশটির উত্তরাংশকেও কিছু অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়। যদিও উত্তর আমেরিকার সংজ্ঞানুযায়ী পুরো মহাদেশটিকেই বোঝায় হয়। আবার উত্তর আমেরিকা বলতে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং গ্রীনল্যান্ডকেও বোঝায়। উত্তর আমেরিকা পরিভাষা দ্বারা বোঝায় পুরো উত্তরাঞ্চলীয় দেশসমূহ এবং উত্তর আমেরিকার অধীনস্থ অঞ্চলসমূহসহ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রীনল্যান্ড, বারমুডা, এবং সেন্ট প্যারি ও ম্যাকুইলন (French)। যদিও খুব কম ব্যবহৃত , মিডল আমেরিকা বলতে মধ্য পশ্চিম আমেরিকা অর্থাৎ মধ্য আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান এবং মেক্সিকোকে বোঝায় না। মহাদেশটির সর্ববৃহৎ দেশ কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে সুনির্দিষ্ট অঞ্চল। যেমন কানাডার অঞ্চলগুলো হলো ব্রিটিশ কলম্বিয়া কোস্ট, কানাডিয়ান প্রেইরি, মধ্য কানাডা, আটলান্টিক কানাডা এবং উত্তর কানাডা। এই অঞ্চল গুলোর আবার কিছু উপাঞ্চল আছে। তেমনি ইউএস পরিসংখ্যান ব্যুরো মতে যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চলগুলো হলো: নিউ ইংল্যান্ড, মিড-আটলান্টিক, ইস্ট নর্থ সেন্ট্রাল স্টেস্টস্, ওয়েস্ট নর্থ সেন্ট্রাল স্টেস্টস্, সাউথ আটলান্টিক স্টেস্টস্, ই্স্ট সাউথ সেন্ট্রাল স্টেস্টস্, ওয়েস্ট সাউথ সেন্ট্রাল স্টেস্টস্, মাউন্টেইন স্টেস্টস্ এবং প্যাসিফিক স্টেস্টস্। দেশ দুটির মধ্যবর্তি অঞ্চলটি হলো গ্রেট লেক রিজিওন। প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট এবং গ্রেট লেক মেগারিজিওন এর মধ্যর্বতি মেগাপলিস গুলো মূলত কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশ নিয়েই গড়ে উঠেছে। ভূগোল ও ব্যাপ্তি দেশ, অঞ্চল, এবং অধীনস্থ অঞ্চলসমূহ দেশ অথবা অঞ্চল আয়তনবর্গকি.মি.Unless otherwise noted, land area figures are taken from জনসংখ্যা(প্রাক্কলন ২০০৮)Unless otherwise noted, population estimates are taken from জনসংখ্যার ঘনত্বপ্রতি বর্গকি.মি. রাজধানী (যুক্তরাজ্য) ১৬৪.৮ দ্যা ভ্যালি ১৯৯.১ সেন্ট জোন্স (নেদারল্যান্ডস) ৫৯৪.৪ অর্জেন্সস্ট্যাড Since the Lucayan Archipelago is located in the Atlantic Ocean rather than Caribbean Sea, the Bahamas are part of the West Indies but are not technically part of the Caribbean, although the United Nations groups them with the Caribbean. ২৪.৫ ন্যাসা ৫৯৫.৩ ব্রিজটাউন ১৩.৪ বেলমোপ্যান (যুক্তরাজ্য) ১২০৩.৭ হ্যামিল্টন (নেদারল্যান্ডস) Population estimates are taken from the ৪১.১ কারলেন্ডি (যুক্তরাজ্য) ১৫২.৩ রোড টাউন ৩.৪ অটোয়া (যুক্তরাজ্য) ২১২.১ জর্জ টাউন (ফ্রান্স) ০.০ — ৮৯.৬ স্যান জোসে ১০২.০ হাভানা (নেদারল্যান্ডস) ৩১৭.১ উইমস্ট্যাড ৮৯.২ রোজাও ২০৭.৩ সেন্টো ডোমিংগ ২৯৩.০ সান সালভাদর (ডেনমার্ক) ০.০২৬ নুক ৩০২.৩ সেন্ট জর্জস (ফ্রান্স) ২৪৬.৭ ব্যাস-টেরা ১২৮.৮ গুয়েতেমালা সিটি ৩৬১.৫ পোর্ট-অব-প্রিন্স ৬৬.৪ তেগুচিগাল্পা ২৪৭.৪ কিংসটন (ফ্রান্স) ৩৫২.৬ ফোর্ট-দ্যা-ফ্রান্স ৫৭.১ মেক্সিকো সিটি (যুক্তরাজ্য) ৫৮.৮ প্লেম্যাথ; BradesBecause of ongoing activity of the Soufriere Hills volcano beginning in July 1995, much of Plymouth was destroyed and government offices were relocated to Brades. Plymouth remains the de jure capital. (যুক্তরাষ্ট্র) Land area figures taken from These population estimates are for 2010, and are taken from ০.০ — ৪৪.১ মানাগুয়া Panama is generally considered a North American country, though some authorities divide it at the Panama Canal. Figures listed here are for the entire country. ৪৫.৮ পানামা সিটি (যুক্তরাষ্ট্র) ৪৪৮.৯ সেন জোয়ান (নেদারল্যান্ডস) ১১৮.২ দ্যা বটম (ফ্রান্স) ৩৫৪.৭ গুস্তাভিয়া ১৯৯.২ বস্টিয়ার ৩১৯.১ ক্যাস্ট্রিস (ফ্রান্স) ৫৫২.২ ম্যারিগট (ফ্রান্স) ২৪.৮ সেইন্ট-পিয়েরে ২৮০.২ কিংসটন (নেদারল্যান্ডস) ১৩০.৪ অর্জেন্সস্ট্যাড (নেদারল্যান্ডস) ১১৭৬.৭ ফিলিপসবার্গ Depending on definitions, Aruba, Bonaire, Curaçao, Panama, and Trinidad and Tobago have territory in either or both of North and South America. ২৬১.০ পোর্ট অব স্পেন Since the Lucayan Archipelago is located in the Atlantic Ocean rather than Caribbean Sea, the Turks and Caicos Islands are part of the West Indies but are not technically part of the Caribbean, although the United Nations groups them with the Caribbean. (যুক্তরাজ্য) ৩৪.৮ ককবার্ণ টাউন Includes the US state of Hawaii, which is distant from the North American landmass in the Pacific Ocean and therefore more commonly associated with the other territories of Oceania. ৩২.৭ ওয়াশিংটন, ডি.সি. (যুক্তরাষ্ট্র) ৩১৭.০ কার্লট অ্যামালাই মোট ২২.৯ জলবায়ূ যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রাকৃতিক প্রদেশ নিচের ৪৮টি মার্কিন রাজ্যকে পাঁচটি প্রাকৃতিক প্রদেশে ভাগ করা যায়: দ্য আমেরিকান কার্ডিলেরা। দ্য কানাডিয়ান শিল্ড। দ্য স্টেবল প্লাটফর্ম। দ্য কোস্টাল প্লেন। দ্য অ্যাপালাচেইন অর্গানিক বেল্ট। আলাস্কার বেশির ভাগ অঞ্চলই কর্ডিলেরা, অন্যদিকে হ্ওায়াইয়ের বেশির ভাগ দ্বীপ নিওজিন আগ্নেয়শিলার উদগিরনে তৈরী একটি উষ্ণস্থান। জনমিতি অর্থনৈতিক ভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা হলো উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে ধনী এবং উন্নত দেশ, এরপরেই আছে মেক্সিকো, যেটি নতুন শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিবেচিত। মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশ গুলোতে বৈচিত্রপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং মানব উন্নতি সূচক বিদ্যমান। উদাহরণ স্বরূপ, ছোট ছোট ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর (যেমনঃ বার্বাডোস, ট্রিনিদাদ এন্ড টোবাকো এবং অ্যান্টিগুয়া এন্ড বারমুডা) জিডিপি (পিপিপি) মেক্সিকোর চেয়েও বেশি, কারণ এসব দেশগুলোর জনসংখ্যা অনেক কম। অন্যদিকে পানামা এবং কোস্টারিকার মানব উন্নতি সূচক এবং জিডিপি অন্যান্ন ক্যারিবিয়ান দেশ গুলোর তুলনায় বেশি। উপরন্তু, গ্রীনল্যান্ডের খনিজ তেল এবং অন্যান্ন দামি খনিজদ্রব্য থাকা স্বত্ত্বেও দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে ডেনমার্কের মাছ ধরা, পর্যটন ইত্যাদির ওপর নির্ভর করতে হয়, কেননা গ্রীনল্যান্ডের খনিজদ্রব্যগুলো এখনও উত্তোলনের উদ্দোগ নেওয়া হয়নি, যদিও দ্বীপাঞ্চলটি অর্থনৈতিকভাবে উন্নত।। জনসংখ্যার ভিত্তিতে উত্তর আমেরিকায় অনেক জাতিগত বৈচিত্র পরিলক্ষিত হয়। এখানকার প্রধান তিনটি জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম হল ককেশিয়ান, মেস্টিজো এবং কৃষ্ণাঙ্গরা। অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মধ্যে ইন্ডিজিনিয়াস আমেরিকান এবং এশিয়ানরা উল্লেখযোগ্য। ভাষা উত্তর আমেরিকার প্রধান ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ইংরেজি, স্পেনীয় এবং ফরাসি। গ্রীনল্যান্ড এবং এর আশেপাশের অঞ্চল গুলোর প্রধান ভাষা ডেনিস, অন্যদিকে ডাচ ক্যারিবিয়ানরাও স্থানীয় ভাষা হিসেবে ডেনিস ভাষা ব্যবহার করে। অ্যাঙ্গলো-আমেরিকান শব্দটি ব্যবহার করা হয় সেই সব দেশ সমূহকে বোঝাত যাদের প্রধান ভাষা ইংরেজি: বিশেষত কানাডা (ইংরেজি এবং ফরাসি সেখানকার দুটি সরকারি ভাষা) এবং যুক্তরাষ্ট্র, এছাড়াও মধ্য আমেরিকা এবং ক্রান্তীয় দেশসমূহকে (যেমন কমনওয়েলথ ক্যারিবিয়ান)। ল্যাটিন আমেরিকা বলতে বোঝানো হয় সাধারনত যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঞ্চলকে (প্র্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের অঞ্চল), যেখানে ল্যাটিন, স্প্যানিস এবং পর্তূগীজ ভাষা হতে উদ্ভূত রোমান ভাষা প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত। এসব অঞ্চল গুলো হলো: মধ্য আমেরিকার কিছু দেশ (সবসময় ইংরেজি যাদের প্রধান ভাষা নয়), ক্যারিবিয়ানের কিছু দেশ (ওলন্দাজ, ইংরেজি এবং ফেঞ্চ ভাষাভাষী অঞ্চল সমূহ বাদে), মেক্সিকো, দক্ষিণ আমেরিকার বেশির ভাগ অঞ্চল গায়ানা, সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানা (ফ্রান্স) এবং ফকল্যান্ড দ্বীপপূঞ্জ(ব্রিটিশ)। ফেঞ্চ ভাষাটি উত্তর আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ একটি ঐতিহাসিক ভাষা, এমনকি কিছু কিছু ধর্মে এই ভাষাটি্কে মর্যাদার আসনে অধীন করা হয়েছে। কানাডার ২টি সরকারি ভাষা। কিউবিক প্রদেশের প্রধান ভাষা ফেঞ্চ, সেখানকার ৯৫% মানুষ হয় ফরাসি অথবা ইংরেজি ভাষায় কথা বলে। অন্যদিকে নিউ ব্রুন্সইউক প্রদেশে ইংরেজির পাশাপাশি ফেঞ্চ প্রধান ভাষা। অন্যান্য ফেঞ্চ ভাষাভাষী অঞ্চল গুলো হলোঃ অন্টারি‌ও প্রদেশ (সেখানকার সরকারি ভাষা ইংরেজি হলেও ৬০০,০০০ মানুষের ভাষা ফরাসি), ম্যানিটোবা প্রদেশ (সেখানকার ইংরেজির পাশাপাশি ফরাসি সরকারি ভাষা), ফরাসি পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং সাঁ পিয়ের এ মিক্যলোঁ, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা (এখানে ফরাসি একটি সরকারি ভাষা)। হাইতিকে ফরাসি ভাষা-ভাষী দেশ বলা যায় ঐতিহাসিক কারণে যদিও সেখানকার লোকেরা ফরাসির পাশাপাশি ক্রেওল ভাষাতেও কথা বলে। একইভাবে ইংরেজির পাশাপাশি ফরাসি এবং ফরাসি-অ্যান্টিলীয় ক্রেওল ভাষাতে কথা বলে সেন্ট লুসিয়া এবং ডমিনিকার কমনওয়েলথভূক্ত অঞ্চলসমূহ। ধর্ম থাম্ব|ডানে_উপরে|সর্বাধিক খৃষ্টান জনসংখ্যার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডি.সি.তে অবস্থিত ওয়াশিংটন ন্যাশনাল ক্যাথেড্রাল। ২০১২ সালের পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপানুযায়ী উত্তর আমেরিকার সর্ববৃহৎ ধর্ম খ্রিষ্টান। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোর প্রায় ৭৭.৪% মানুষের ধর্ম খ্রিষ্টান।The Global Religious Landscape A Report on the Size and Distribution of the World’s Major Religious Groups as of 2010 Pew Forum on Religion & Public Life, p.18 তাছাড়া এই মহাদেশের বাকি ২৩ টি দেশের বেশিরভাগ মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী।Global Christianity A Report on the Size and Distribution of the World’s Christian Population Pew Forum on Religion & Public Life, p.15 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি, প্রায় ২৪৭ মিলিয়ন (৭০%) খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মানুষের আবাসস্থল। যদিও কিছু কিছু দেশে মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি (শতকরা হারে) খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর বসবাস। ব্রাজিলের পর মেক্সিকোই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ক্যাথলিক খ্রিষ্টান জনগোষ্টির আবাসস্থল। এছাড়া কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৭.১% মানুষ ধর্মে বিশ্বাসী নয় (নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদীসহ)। যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার যথাক্রমে ২২.৮% এবং ২৩.৯% মানুষের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে উদাসিন( অর্থাৎ তারা সুনির্দিষ্ট কোন ধর্মের অণুসারী নয়)। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর প্রায় ৬ মিলিয়ন (১.৮%) মানুষ ইহুদি, প্রায় ৩.৮ মিলিয়ন (১.১%) মানুষ বৌদ্ধ এবং প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন (১%) মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ইহুদি ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস যুক্তরাষ্ট্র (৫.৪মিলিয়ন)World Jewish Population, 2012, কানাডা (৩৭৫,০০০) এবং মেক্সিকোতে (৬৭,৪৭৬)। উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস (প্রায় ২.৭ মিলিয়ন বা ০.৯%) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, অন্যদিকে কানাডায় প্রায় ১ মিলিয়ন ( মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩.২%) মুসলিম বসবাস করে এবং মেক্সিকোতে বসবাস করে ৩,৭০০জন। ২০১২ সালের ইউ-টি সান ডিয়াগোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ১.২ মিলিয়ন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রায় ৪০% এর বসবাস দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়াতে। মধ্য আমেরিকার প্রধান ধর্ম খ্রিষ্টান (প্রায় ৯৫.৬%)। বিংশ শতাব্দীর পূর্বপর্যন্ত, ১৬শ শতকে মধ্য আমেরিকায় স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের কল্যাণে রোমান ক্যাথলিক ধর্ম অন্যতম প্রধান ধর্মে পরিণত হয়। ১৯৬০ এর দশকে অন্যান্য খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বিশেষত প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদীদের ধর্মীয় সংগঠনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, পাশাপাশি ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে উদাসীন মানুষের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।তাছাড়া ক্যারিবিয়ান দেশসমূহে প্রধান ধর্ম খ্রিস্ট ধর্ম (প্রায় ৮৪.৭%) । ক্যারিবিয়াদের অন্যান্য ধর্মসমূহ হলো হিন্দুধর্ম, ইসলাম, রাস্তাফারি(জামাইকাতে )এবং অ্যাফ্রো–আমেরিকান ধর্মসমূহ যেমন সান্টারিয়া এবং ভোদোও। জনসাধারণ উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ৩১৮.৪ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে প্রধান জনবহুল দেশU.S. Census Bureau 1 July 2014. Retrieved 13 August 2014.। দ্বিতীয় জনবহুল দেশ মেক্সিকো (জনসংখ্যা প্রায় ১১২.৩২ মিলিয়ন) অন্যদিকে কানাডা তৃতীয় (জনসংখ্যা ৩২.৬২ মিলিয়ন)। কিউবা, ডোমিনিক রিপাবলিক, হাইতি, পুওটারিকো (যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ অঞ্চল), জ্যামাইকা এবং ট্রানিদাদ এন্ড টোবাকো ব্যতীত অন্যান্য ক্যারিবিয়ান দেশ গুলোর জনসংখ্যা ১ মিলিয়নের কম। Note: An exchange rate of 1 CUC to US$1.08 was used to convert GDP. যদিও গ্রীনল্যান্ডের আয়তন বিশাল (২,১৬৬,০০০ বর্গকি.মি.), তবুও সেখানকার জনসংখ্যা ঘনত্ব (০.০৩জন/বর্গকি.মি.) পৃথিবীর সবচেয়ে কম এবং গ্রীনল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৫৫,৯৮৫ জন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, এবং মেক্সিকোর জনসংখ্যা ঘনত্ব উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বেশি এবং বড় বড় শহর গুলো এই দেশগুলোতেই অবস্থিত। ক্যারিবিয়ান দেশ গুলোতেও বেশকিছু বড় শহর অবস্থিত। উত্তর আমেরিকার সর্ববৃহৎ শহর যথাসম্ভব মেক্সিকো সিটি এবং নিউ ইয়র্ক্। এই দু’টি শহরই হলো উত্তর আমেরিকার ৮ মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যা বসবাসকারী শহর, যদিও আমেরিকা অঞ্চলে এরকম আরো শহর রয়েছে। আয়তনের হিসেবে সবচেয়ে বড় শহর গুলো হলো লস অ্যাঞ্জেলস্, টরেন্টো, শিকাগো, হাভানা, সান্ট ডোমিংগ এবং মন্ট্রিল। যুক্তরাষ্ট্রের সানবেল্ট অঞ্চলসমূহের শহর গুলো (যেমন দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া, হুস্টন, ফনিক্স, মিয়ামী, আটলান্টা এবং লাস ভেগাস) দ্রুত বর্ধনশীল শহর হিসেবে পরিচিত। ফলশ্রুতিতে শহর গুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ১৯৪৫ দশকের বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তবর্তী মেক্সিকোর শহরগুলিও দ্রুত বর্ধনশীল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এসবের মধ্যে টিযুয়ানা শহর (সান ডিয়াগো সীমান্তবর্তী) এ শহরে পুরো ল্যাটিন আমেরিকার অভিবাসী পাশাপাশি ইউরোপ এবং এশিয়ার অভিবাসীরা অবস্থান গেড়েছে। ফলাফল হিসেবে এসব শহর গুলিতে পানিস্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। উত্তর আমেরিকার দশটি মেট্রোপলিটনের আটটিই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। মেট্রোপলিটন শহর গুলোর জনসংখ্যা ৫.৫ মিলিয়নের বেশি, তেমনি কিছু শহর হলো নিউ ইয়র্ক সিটি মেট্রোপলিটন এলাকা, লস অ্যাঞ্জেলস মেট্রোপলিটন এলাকা, শিকাগো মেট্রোপলিটন এলাকা এবং ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থ মেট্রোপ্লেক্স। গ্রেটার মেক্সিকো সিটি হলো যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর মধ্যবর্তি সর্বাধিক জনবহুল মেট্রোপলিটন শহর। অন্যদিকে কানাডার টরেন্টো মেট্রোপলিটন এলাকা দশটি বৃহৎ উত্তর আমেরিকান মেট্রোপলিটনের মধ্যে অন্যতম যার জনসংখ্যা ছয় মিলিয়ন। কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত এবং মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তবর্তী শহর গুলোতে আন্তর্জাতিক মেট্রোপলিটন শহর গড়ে উঠেছে। সীমান্তবর্তী শহরগুলোর মধ্যে ডেট্রয়েট-উইন্ডসোর এবং সান ডিয়াগো-টিযুয়ানা মেট্রোপলিটন গুলোর বাণিজ্যিক, অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক উন্নতি উল্লেখযোগ্য। এসব মেট্রোপলিটন গুলো মিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের জন্য বিশেষ উপযোগী। ২০০৪ সালের যোগাযোগ অংশিদারিত্ব গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, ডেট্রয়েট-উইন্ডসোর সীমান্ত দিয়ে প্রায় $১৩ বিলিয়ন বাণিজ্য এবং সানডিয়াগো-টিযুয়ানা সীমান্ত দিয়ে $২০ বিলিয়ন বাণিজ্য হয়েছে। উত্তর আমেরিকা মহাদেশ হল মেট্রোপলিটন শহর গুলোর উন্নতির প্রত্যক্ষদর্শী। যুক্তরাষ্ট্রে এগারোটি বড় অঞ্চল আছে যেগুলো কিনা মেক্সিকো এবং কানাডার সাথে সীমান্ত বিনিময় করে। এই অঞ্চল গুলো হলো অ্যারিজোনা সান করিডোর, কাসাডিয়া, ফ্লোরিডা, ফ্রন্টরেঞ্জ, গ্রেট লেক মেগারিজিয়ন, গালফ কোস্ট মেগারিজিয়ন, উত্তর-পূর্ব মেগারিজিয়ন, উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া, পিডমন্ট আটলান্টিক, সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া এবং টেক্সাস ট্রায়াঙ্গেলHagler, Yoav (2009). "Defining U.S. Megaregions." New York, NY: Regional Plan Association.। কানাডা এবং মেক্সিকোতেও মেগারিজিয়ন রয়েছে। এদের মধ্যে কিউবিক সিটি- উইন্ডসোর করিডোর, গোল্ডেন হর্সহো দুটিকে ধরা হয় গ্রেট লেক মেগারিজিওন এবং মেগাপলিস অব সেন্ট্রাল মেক্সিকো। অন্যদিকে ঐতিহ্যগতভাবে মেগারিজিওন হিসেবে ধরা হয় বোস্টন ওয়াশিংটন ডিসি করিডোরকে। ২০০০ সালের মেগারিজিয়নের বৈশিষ্ট্য অনুসারে গ্রেটলেক মেগাপলিস এর জনসংখ্যা হলো প্রায় ৫৩,৭৬৮,১২৫ জনRegional Plan Association (2008). America 2050: An Infrastructure Vision for 21st Century America. New York, NY: Regional Plan Association.। ২০১৩ সালের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোর জনমিতি অনুসারে উত্তর আমেরিকার প্রধান দশটি মেট্রেপলিটন শহর গুলো হলোঃ মেট্রোপলিটন সমূহ জনসংখ্যা আয়তন দেশ মেক্সিকো সিটি ২১,১৬৩,২২৬† নিউ ইয়র্ক সিটি ১৯,৯৪৯,৫০২ লস অ্যাঞ্জেলস ১৩,১৩১,৪৩১ শিকাগো ৯,৫৩৭,২৮৯ ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থ ৬,৮১০,৯১৩ হিউস্টন ৬,৩১৩,১৫৮ টরোন্টো ৬,০৫৪,১৯১† ফিলাডেলফিয়া ৬,০৩৪,৬৭৮ ওয়াশিংটন, ডি.সি. ৫,৯৪৯,৮৫৯ মায়ামি ৫,৮২৮,১৯১ ‌†২০১১ আদমশুমারি তথ্য থেকে অর্থনীতি ক্রমিক দেশ জিডিপি (পিপিপি, ২০১৪)মিলিয়ন মার্কিন ডলার ১ ১৭,৪১৯,০০০ ২ ২,১৪৮,৮৮৪ ৩ ১,৫৯৫,৯৭৫ ৪ ২৩৪,১৯৩ ৫ ১৩৮,৫১১ ৬ ১২৫,৬৩০ ৭ ১১৯,৮১১ ৮ ৮০,৮১১ ৯ ৭১,২৩৪ ১০ ৫১,১৯৩ ক্রমিক দেশ জিডিপি (ন্যূনতম, ২০১৪)মিলিয়ন মার্কিন ডলার ১ ১৭,৪১৯,০০০ ২ ১,৭৮৬,৬৫৫ ৩ ১,২৯১,০৬২ ৪ ১০৩,১৩৫ ৫ ৭৭,১৫০ ৬ ৬৪,০৫৮ ৭ ৫৮,৭২৮ ৮ ৪৯,৫৫৩ ৯ ৪৬,২১৩ ১০ ২৮,৮৭৪ কানাডা, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের বহুমূখী এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এই তিনটি দেশ, এমনকি সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড়। ২০১৪ সালের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু বার্ষিক আয় (জিডিপি, পিপিপি) ৫৪,৯৮০ ডলার এবং বাকি তিনদেশের তুলনায় অর্থনীতিতে প্রযুক্তিগতভাবেও উন্নত। ২০১০ সালের প্রাক্কলন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির ৭৬.৭% অবদান সেবাখাতের, ২২.২% অবদান বিভিন্ন শিল্পকারখানার এবং ১.২% অবদান কৃষিখাতের। কানাডা সেবাখাত, খনি এবং উৎপাদন খাতে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। ২০১৪ সালে ২০১৪ সালের তথ্যমতে, কানাডার মাথাপিছু আয় ছিল ৪৪,৬৫৬ ডলার এবং দেশটির ন্যুনতম জিডিপি ছিল সারা বিশ্বের মধ্যে ১১তম। ২০১০ সালের প্রাক্কলন অনুসারে, কানাডার জিডিপির শতকরা ৭৮ভাগ আসে সেবাখাত থেকে, ২০ ভাগ আসে কলকারখানার উদ্ভূত পণ্য থেকে এবং শতকরা ২ ভাগ আসে কৃষিখাত থেকে। অন্যদিকে ২০১৪ সালের তথ্যমতে, মেক্সিকোর মাথাপিছু আয় ছিল ১৬,১১১ ডলার এবং দেশটির ন্যুনতম জিডিপি ছিল সারা পৃথিবীর মধ্যে ১৫ তম। নতুন একটি শিল্পায়িত দেশ হিসেবে, মেক্সিকো তার অগ্রগতি ধরে রেখেছে আধুনিক এবং পুরাতন কারখানা, কৃষিপ্রযুক্তি এবং সেবাখাতের দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে। দেশটির আয়ের প্রধান উৎসগুলো হলো খনিজ তেল, কারখানাজাত দ্রব্যাদির রপ্তানী, মোটরগাড়ী নির্মাণ, ভারি কারখানা, খাদ্যদ্রব্য, ব্যাংকিং এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক সেবাখাত। উত্তর আমেরিকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মূলত তিনটি প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল। এই তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গুলো হলো: নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এনএএফটিএ), ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি এন্ড কমন মার্কেট(ক্যরিকম) এবং সেন্ট্রাল আমেরিকান কমন মার্কেট(সিএসিএম)। এই তিনটি অঞ্চলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র দুইটি অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এই অঞ্চলগুলো ছাড়াও আরো একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে, নাম কানাডা-কোস্টারিকা ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট। এটি বাদে বাকি অঞ্চলগুলো নিয়ে গঠিত, অবশ্য এই জোন গুলোতে ট্রেড ভূক্ত অন্যান্য দেশসমূহও রয়েছে, যেমন- মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশসমূহ। নর্থ আমেরিকান ফ্রী ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এনএএফটিএ) হলো পৃথিবীর প্রধান চারটি বাণিজ্যিক অঞ্চলের একটি। ১৯৯৪ সালে এই অঞ্চলটি গঠিত হয়, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডার মধ্যে বাণিজ্যিক সমতা এবং দেশগুলোর মাঝে আন্তঃবাণিজ্যিক সম্পর্ক সহজতর করার লক্ষে। কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইতোমধ্যে একটি দ্বিজাতী বাণিজ্যিক চুক্তি (পৃথিবীর সর্ববৃহৎ) বিদ্যমান রয়েছে, যার নাম কানাডা ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিলেশান, এই চুক্তির আওতায় দেশ দুটি নিজেদের মধ্যে বিনাশুল্কে আমদানি রপ্তানী করে থাকে, এনএফটিএ মেক্সিকোকেও বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার সুবিধা প্রদান করেছে। এই মুক্ত বাণিজ্য যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর মধ্যে বাণিজ্যকে বিনা শুল্কের পর্যায়ে উন্নিত করেছে। দেশগুলোর মধ্যে এই মুক্ত বাণিজ্যের পরিমাণ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, ২০১০ সালের তথ্য মতে, এনএফটিএ এর তিনটি দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়ে সর্বাধিক ২৪.৩% প্রবৃদ্ধি বা ৭৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌছায়। এনএফটিএ ভূক্ত অঞ্চলসমূহের জিডিপি (পিপিপি)- পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ প্রায় ১৭.৬১৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সাথে বলা যায়, ২০১০ এর তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি হলো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনীতি, পাশাপাশি দেশটির ন্যুনতম জিডিপির পরিমাণ ১৪.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এনএএফটিএ দেশ গুলো হলো নিজেদের মধ্যে সর্বাধিক বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশিদার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো মেক্সিকো এবং কানাডার সবচেয়ে বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার, যখন কিনা কানাডা এবং মেক্সিকো হলো নিজেদের তৃতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। ক্যারিবিয়ান বাণিজ্যিক অঞ্চল বা ক্যারিকম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৭৩ সালে, ১৫ টি ক্যারিবিয়ান দেশ সমূহের মধ্যে। ২০০০ সালের তথ্য মতে, ক্যারিকমের বাণিজ্যের পরিমাণ দাড়িয়েছে $৯৬ বিলিয়ন। ক্যারিকম দেশগুলো নিজেদের মধ্যে একটি সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহার করে। বিগত দশক গুলোতে এই বাণিজ্যিক এলাকাটি মূলত মুক্ত বাণিজ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং ক্যারিকম অফিস অব নেগোশিয়েশান (ওটিএন) মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দেশগুলোর জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। মধ্য আমেরিকার অর্থনীতিকে একত্রিত করার কাজ শুরু হয় মূলত, ১৯৬১ সালের সেন্ট্রাল আমেরিকান কমন মার্কেট চুক্তির আওতায়; এই চুক্তিটি ছিল প্রথম অর্থনৈতিক চুক্তি, যা কিনা দেশগুলোর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করার জন্য করা হয়। বর্তমানে এই সেন্ট্রাল আমেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (সিএএফটিএ) চুক্তির ভবিষ্যত খুব একটা পরিষ্কার নয়। সিএএফটিএ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল পাঁচটি মধ্য আমেরিকান দেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ডোমিনিকা রিপাবলিকের মধ্যে। চুক্তিটির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল এনএএফটিএ এর মতো একটি মুক্ত বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলা। যুক্তরাষ্ট্রের মতো কানাডাও এই বাণিজ্যিক অঞ্চলের অংশ। বর্তমানে প্রস্তাবিত কানাডা-সেন্ট্রাল আমেরিকা ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (সিএ৪) এর কাজ মূলত যুক্তরাষ্ট্রের মতোই হবে। এই দেশগুলো আন্ত:মহাদেশীয় বাণিজ্যিক এলাকার অংশ। মেক্সিকো যেমন কলম্বিয়া এবং ভেনিজুয়েলার সাথে জি৩ ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টে যুক্ত সাথে সাথে ইইউ এর সাথেও চুক্তিবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র কতৃর্ক প্রস্তাবিত এবং রক্ষনাবেক্ষনকৃত বাণিজ্যিক চুক্তিগুলো মূলত ট্রান্স-আটলান্টিক ফ্রি ট্রেড এরিয়া এবং ইইউ এর সাথে সম্পর্কিত, অন্যদিকে ইউএস-মধ্যপ্রাচ্য ফ্রি ট্রেড এরিয়া মূলত বিভিন্ন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে মুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা দেয়, এবং ট্রান্স-প্যাসিফিক স্ট্যাটেজিক ইকোনমিক পার্টনারশিপ মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে বিদ্যমান। পরিবহন ব্যবস্থা থাম্ব|The full Pan American Highway (including South America), from Prudhoe Bay, Alaska to Ushuaia, Argentina. পুরো আমেরিকা জুড়ে বিদ্যমান প্যান আমেরিকান হাইওয়ে ছিল প্রায় ৪৮,০০০ কি.মি. (৩০,০০০ মাইল) লম্বা। রাস্তাটিকে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকো সরকার কখনোই স্বীকৃতি প্রদান করেনি, কেননা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে সীমান্ত বরাবর একাধিক সংযোগ সড়ক রয়েছে। তথাপি রাস্তাটি মেক্সিকো থেকে উত্তর আমেরিকার উত্তরের প্রান্তবিন্দু পর্যন্ত প্রায় ২৬,০০০ কি.মি. (১৬,০০০ মাইল) লম্বা। থাম্ব|বাম|2006 map of the North American Class I railroad network ১৮৬০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম 'আন্তঃমহাদেশীয় রেললাইন' নির্মাণ করে। রেললাইনটি পূর্ব যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরের তীর পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো নির্মাণ কাজ শেষ হয়, ১৮৬৯ সালের ১০ মে। সেদিন বিখ্যাত গোল্ডেন স্পাইক অণুষ্ঠানের মাধ্যমে ইউটার প্রমেন্টরি সামিটে উদ্বোধন করা হয়। এই আন্তঃমহাদেশীয় রেললাইনটি পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের জনসাধারণ এবং অর্থনীতির জন্য বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত করে এবং পূর্ববর্তি দশকের ওয়াগণ রেলকে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নিত করে। যদিও রেললাইনটি আমেরিকা মহাদেশে দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে পৃথিবীর সর্বাধিক লম্বা রেলপথ ছিলনা। ১৮৬৭ সালে নির্মিত তৎকালীন কানাডিয়ান গ্রান্ডট্রাঙ্ক রেলওয়ে (জিটিআর) লম্বা, অন্টারিও থেকে কানাডিয়ান আটলান্টিক প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত সেই রেললাইনটি ছিল পৃথিবীর সর্বাধিক লম্বা রেল লাইন। জিটিআর রেলপথটি অবশ্য পোর্টহুরন (মিশিগান) এবং সেরিনা (অন্টারিও) দিয়েও অতিক্রম করে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তর আমেরিকার ২৪টি দেশ, অঞ্চল এবং অধীনস্থ অঞ্চল, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর অধীনস্থ অঞ্চল, কানাডা, বারমুডা এবং ১৭টি ক্যারিবিয়ান দেশসমূহের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার লক্ষে একটি সমন্বিত টেলিফোন নাম্বারিং প্লান হাতে নেওয়া হয়েছে যার নাম নর্থ আমেরিকান নাম্বারিং প্লান (এনএএনপি)। সংস্কৃতি কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্র একসময় ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলশ্রুতিতে ইংরেজি ভাষাভাষী কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতিতে পারস্পারিক সাদৃশ্য লক্ষণীয়। যদিও গ্রীনল্যান্ডের সংস্কৃতিতে কানাডার ইন্ডিজেনিয়াস জনগনের সামান্য প্রভাব রয়েছে, তবে ডেনমার্ক ঔপনিবেশিকদের শতবর্ষী শাসনের ফলে প্রবল ডেনিশ প্রভাব বিদ্যমান। স্থানীয় ভাষাভাষী উত্তর আমেরিকানদের মধ্যে স্প্যানিস ঔপনিবেশিক প্রভাব লক্ষনীয়। মধ্য আমেরিকার দেশসমূহ এবং মেক্সিকোর জনগোষ্ঠির মধ্যে মায়া সভ্যতা এবং ইন্ডিজেনিয়াস জনগনের প্রভাব বিদ্যমান। মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশ সমূহের স্প্যানিস ভাষাভাষীদের ভূতাত্ত্বিক সাদৃশ্যের কারণে বেশ মিল খুজে পাওয়া যায়। উত্তর মেক্সিকো বিশেষ করে মন্ট্রে, টিজুয়ানা, চিউড্যাড ওয়ারেজ এবং মেক্সিক্যালি শহরগুলোর সংস্কৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় জীবনধারা এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় সমাজব্যবস্থা ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। উপরিউক্ত শহরগুলোর মধ্যে মন্ট্রেকে সবচেয়ে বেশি আমেরিকান শহর বলে ধরা হয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার বেশিরভাগ অভিবাসীগণ দেশসমূহের দক্ষিণ সীমান্তবর্তী দেশ থেকে আসা। অ্যাগ্রোফোন ক্যারিবিয়ান দেশসমূহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন এবং তাদের ওপর ব্রিটিশ শাসনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রভাবের প্রত্যক্ষদর্শী। ইংরেজি ভাষাভাষী বেশিরভাগ ক্যারিবিয়ান জনগনই নিজ দেশের বাইরে (প্রবাসে) অবস্থান করে এবং বাকিরা যারা রয়েছে তারা দেশে অবস্থান বসবাস করে। খেলাধুলা নিচের টেবিলে যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর (সর্বাধিক আয়ের ভিত্তিতে) উল্লেখযোগ্য কিছু স্পোর্টস লীগের তালিকা:"The ‘Big Five’ in North American Pro Sports", FiveThrityEight, Nate Silver, 4 April 2014."MLS vs the major leagues: can soccer compete when it comes to big business?", Guardian.com, 12 March 2014. লীগ খেলা দেশের নাম স্থাপিত দল সর্বশেষ চুক্তি আয় US$(বিলিয়ন) গড় দর্শক ন্যাশনাল ফুটবল লীগ আমেরিকান ফুটবল যুক্তরাষ্ট্র ১৯২০ ৩২ ১৯৫২ $৯.০ মেজর লীগ বেসবল বেসবল যুক্তরাষ্ট্র ১৮৬৯ ৩০ ১৮৯৯ $৮.০ ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসসিয়েশান বাস্কেটবল যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৬ ৩০ ১৯৫৪ $৫.০ ন্যাশনাল হকি লীগ আইস হকি যুক্তরাষ্ট্র কানাডা ১৯১৭ ৩০ ১৯৭৮ $৩.৩ লীগা এমএক্স ফুটবল (সকার) মেক্সিকো ১৯৪৩ ১৮ —— $০.৬"Premier League wages dwarf those around Europe", Daily Mail Online, 17 November 2014. মেজর লিগ সকার ফুটবল (সকার) যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৪ ২০ ২০১৪ $০.৫ আরও দেখুন আমেরিকান(পরিভাষা) আমেরিকায় ইউরোপিয়ান ঔপনিবেশিক শাসন উত্তর আমেরিকার দুর্গসমূহ মেকিং নর্থ আমেরিকা (চলচ্চিত্র) উত্তর আমেরিকার পর্বতশৃঙ্গ নিয়ার্কটিক ইকোজোন টর্টিল দ্বীপপূঞ্জ (উত্তর আমেরিকা) ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মহাকাশ অভিযান সংগঠন এবং চুক্তিসমূহ: ক্যারিবিয়ান সম্প্রদায়সমূহ কমিশন ফর ইনভায়রনমেন্টাল কর্পোরেশান নর্থ আমেরিকান ইনভায়রনমেন্টাল কর্পোরেশান নর্থ আমেরিকান অ্যারো স্পেস ডিফেন্স কমান্ড যুক্তরাষ্ট্রের সংগঠনসমূহ নোট তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Houghton Mifflin Company, "উত্তর আমেরিকা" বিষয়শ্রেণী:মহাদেশ
দক্ষিণ আমেরিকা
https://bn.wikipedia.org/wiki/দক্ষিণ_আমেরিকা
দক্ষিণ আমেরিকা পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ। মহাদেশটির আয়তন ১,৭৮,২০,৯০০ বর্গকিলোমিটার, যা পৃথিবীর মোট স্থলভাগের ১২%। আয়তনের দিকে থেকে এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকার পরেই এর স্থান। বিষুবরেখা ও মকরক্রান্তির দুই পাশ জুড়ে এর বিস্তৃতি। মহাদেশটি উত্তরে পানামা স্থলযোটকের মাধ্যমে মধ্য ও উত্তর আমেরিকার সাথে যুক্ত। উত্তরে ক্যারিবীয় সাগর থেকে দক্ষিণে হর্ন অন্তরীপ পর্যন্ত মহাদেশটির দৈর্ঘ্য ৭,৪০০ কিলোমিটার। আর পূর্ব-পশ্চিমে এর সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য, আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত ব্রাজিলের পুন্তা দু সেইক্সাস থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত পেরুর পুন্তা পারিনিয়াস পর্যন্ত, ৫,১৬০ কিলোমিটার। ২০০৬ সালে দক্ষিণ আমেরিকার প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ছিল ৩৭ কোটি ৬০ লক্ষ, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৬%। এই মহাদেশে ১২টি রাষ্ট্র আছে। এদের মধ্যে ১০টি রাষ্ট্র লাতিন: আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, প্যারাগুয়ে, পেরু, উরুগুয়ে, এবং ভেনেজুয়েলা। দুইটি রাষ্ট্র লাতিন নয়। এই দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে গায়ানা যুক্তরাজ্যের এবং সুরিনাম নেদারল্যান্ডসের প্রাক্তন উপনিবেশ ছিল। ব্রাজিল ছিল পর্তুগালের উপনিবেশ। আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চিলি, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, প্যারাগুয়ে, পেরু, উরুগুয়ে, এবং ভেনেজুয়েলা এই ৯ টি দেশ ছিল স্পেনের উপনিবেশ। এসব দেশের ভাষাও স্পেনিস। ব্রাজিলের ভাষা পর্তুগিজ, সুরিনামের ভাষা ডাচ এবং গায়ানার ভাষা হচ্ছে ইংরেজি। এছাড়া দক্ষিণ আমেরিকাতে ফ্রেঞ্চ গায়ানা বা গুইয়ান নামে ফ্রান্সের একটি জেলা সমমর্যাদার দেপার্ত্যমঁ রয়েছে। এটি এক সময় ফ্রাঞ্চের উপনিবেশ ছিল। মহাদেশটি থেকে বিরাট দূরত্বে প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত অনেকগুলি প্রশাসনিক অঞ্চল আছে, যেগুলি দক্ষিণ আমেরিকান বিভিন্ন রাষ্ট্রের অংশ। এদের মধ্যে আছে চিলির হুয়ান ফের্নান্দেস দ্বীপপুঞ্জ ও ইস্টার দ্বীপ, এবং ইকুয়েডরের গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। উপকূলের কাছে অবস্থিত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলির মধ্যে আছে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ব্রাজিলের ফের্নান্দু দি নোরোনিয়া দ্বীপপুঞ্জ। দক্ষিণে আছে যুক্তরাজ্যের ফকল্যাণ্ড দ্বীপপুঞ্জ। এই দ্বীপপুঞ্জটিকে আর্জেন্টিনা ইসলাস মালবিনাস নামে ডাকে এবং এগুলিকে নিজেদের বলে দাবী করে। দক্ষিণ আমেরিকার তটরেখা তুলনামূলকভাবে নিয়মিত প্রকৃতির, তবে একেবারে দক্ষিণে ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অনেক ফিয়ডের্র উপস্থিতির কারণে তটরেখা অত্যন্ত ভগ্ন। বিষয়শ্রেণী:মহাদেশ বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ আমেরিকা
ওশেনিয়া
https://bn.wikipedia.org/wiki/ওশেনিয়া
ওশেনিয়া ( ইংরেজি: Oceania) হল একটি ভৌগলিক অঞ্চল, যা বর্তমান বিশ্বে একটি মহাদেশ হিসাবে বর্ণনা করা হয়। মূলত প্রশান্ত মহাসাগরীয় সকল দ্বীপরাষ্ট্রকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত করে একটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চল হিসেবেই ওশেনিয়া সৃষ্টি করা হয়। এর মধ্যে আছে অস্ট্রেলিয়া, মেলানেশিয়া, পলিনেশিয়া ও মাইক্রোনেশিয়া। পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধে বিস্তৃত জল গোলার্ধের কেন্দ্রে ওশেনিয়ার ভূমির এলাকা প্রায় জুড়ে বিস্তৃত এবং ২০২২ সালের হিসাবে প্রায় ৪৪.৪ মিলিয়ন জনসংখ্যা এখানে বাস করে। ওশেনিয়াকে বেশিরভাগ ইংরেজি-ভাষী-বিশ্বের একটি ভৌগলিক অঞ্চল হিসাবে বর্ণনা করা হয়। বিশ্বের এই মডেলে, অস্ট্রেলিয়াকে হয় একটি দ্বীপ হিসাবে দেখা হয় বা ওশেনিয়া মহাদেশের অভ্যন্তরে থাকা একটি মহাদেশীয় ভূখণ্ড হিসাবে দেখা হয়। অন্যান্য মহাদেশের সাথে তুলনা করলে ওশেনিয়া স্থলভাগে সবচে' ছোট ও অ্যান্টার্কটিকার পর দ্বিতীয়-নিম্ন জনবহুল মহাদেশ। ওশেনিয়ায় অস্ট্রেলিয়া, ফরাসি পলিনেশিয়া, হাওয়াই, নিউ ক্যালেডোনিয়া ও নিউজিল্যান্ডের উচ্চ বিকশিত ও বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক আর্থিক বাজার থেকে অর্থনীতির একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ মিশ্রণ রয়েছে, যা জীবন যাত্রার মান ও মানব উন্নয়ন সূচকে উচ্চ স্থান অধিকার করে। তবে কিরিবাা, পাপুয়া নিউগিনি, টুভালু, ভানুয়াতু ও পশ্চিম নিউগিনির তুলনামূলক কম উন্নত অর্থনীতি রয়েছে, যেখানে ফিজি, পালাউ ও টোঙ্গার মত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলির মাঝারি আকারের অর্থনীতিও রয়েছে। ওশেনিয়ার বৃহত্তম এবং জনবহুল দেশ হলো অস্ট্রেলিয়া ও বৃহত্তম শহর সিডনি এবং ইন্দোনেশিয়ার পুঞ্চাক জায়া হলো ওশেনিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ । অস্ট্রেলিয়া, নিউ গিনি ও পূর্বদিকের বৃহৎ দ্বীপের প্রথম বসতি স্থাপনকারীরা ৬০,০০০ বছরেরও অধিক আগে এসেছিলেন। ১৬ শতকের পর থেকে ইউরোপীয়রা প্রথম ওশেনিয়া অন্বেষণ করে। পর্তুগিজ অভিযাত্রীরা ১৫১২ ও ১৫২৬ সালের মধ্যে তানিম্বার দ্বীপপুঞ্জ, কিছু ক্যারোলিন দ্বীপপুঞ্জ ও পশ্চিম নিউ গিনিতে পৌঁছোয়। স্পেনীয় ও ডাচ অভিযাত্রীরা তাদের অনুসরণ করেন, তারপর ব্রিটিশ ও ফরাসিরা। ১৮ শতকে নিজের প্রথম সমুদ্রযাত্রায় জেমস কুক, যিনি পরবর্তীতে হাওয়াইয়ান দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছেন, তাহিতিতে যান এবং প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল অনুসরণ করেন। পরবর্তী শতাব্দীতে ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীদের আগমনের ফলে ওশেনিয়ার সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূখণ্ডে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছিল। প্রশান্ত মহাসাগরীয় মঞ্চটি ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রধানত মিত্র শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন ( তৎকালীন একটি মার্কিন কমনওয়েলথ ) ও অস্ট্রেলিয়া এবং অক্ষ শক্তি জাপানের মধ্যে প্রধান লড়াই দেখেছিল। আদিবাসী অস্ট্রেলীয়দের পাথুরে শিল্পকর্ম হলো বিশ্বের দীর্ঘতম ক্রমাগত অনুশীলন করা শৈল্পিক ঐতিহ্য। বেশিরভাগ ওশেনীয় দেশই বহু-দলীয় প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় গণতন্ত্র। পর্যটন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলির আয়ের একটি বড় উৎস। ব্যুৎপত্তি Ocean শব্দ থেকে ওশিয়ানিয়া কথাটির উৎপত্তি। প্রাচীন জ্ঞাত মহাদেশ অর্থাৎ ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে বিস্তীর্ণ সমুদ্র দ্বারা বিচ্ছিন্ন এই মহাদেশ। ওশিয়ানিয়া মহাদেশের বৃহত্তম দেশ অস্ট্রেলিয়ার নাম অনুসারে এই মহাদেশটিকেও অনেকসময় অস্ট্রেলিয়া বলা হয়। বাস্তবে ওশিয়ানিয়া ও অস্ট্রেলিয়া এক নয়। সংজ্ঞা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের সকল দ্বীপকে একত্রে ওশেনিয়া বলে জনসংখ্যার উপাত্ত নিচের জনসংখ্যার উপাত্তের ছক ভূরাজনৈতিক ওশেনিয়ার উপ-অঞ্চল এবং দেশসমূহকে দেখায়। জাতিসংঘের ব্যবহৃত ভৌগোলিক উপঅঞ্চলের পরিকল্পনা মোতাবেক এই ছকের দেশ এবং অঞ্চলগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। দেখানো তথ্য প্রতিনির্দেশ বিধান মেনে উদ্ধৃত, আর যেখানে তথ্যসূত্র ভিন্ন, সেখানে অন্য নথিপত্র স্পষ্টভাবে দেয়া আছে। এই ভৌগোলিক এলাকা এবং অবস্থান অন্যান্য বাড়তি শ্রেণিবিভাগের আওতাধীন যা তথ্যসূত্র এবং প্রতিটি বিবরণের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে। কুলচিহ্ন পতাকা অঞ্চলের নাম, তারপর দেশের নাম আয়তন(কি.মি.2) জনসংখ্যা() জনসংখ্যার ঘনত্ব(প্রতি কি.মি.2) রাজধানী আইএসও ৩১৬৬-১অস্ট্রেলেশিয়া অ্যাশমোর এবং কার্টিয়ে দ্বীপপুঞ্জ (অস্ট্রেলিয়া) ১৯৯ অস্ট্রেলিয়া ৭,৬৮৬,৮৫০ ৩.১ ক্যানবেরা AU কোরাল সাগর দ্বীপপুঞ্জ (অস্ট্রেলিয়া) ১০ ৪ ০.৪ নিউজিল্যান্ড ২৬৮,৬৮০ ১৭.৩ ওয়েলিংটন NZ নরফোক দ্বীপ (Australia) ৩৫ ২,৩০২ ৬৫.৮ কিংস্টন NF অস্ট্রেলেশিয়া (মোট) ৭,৯৫৫,৭৭৪ ২৯,৬৪৩,৫৮৯ ৩.৬ মেলানেশিয়া ফিজি ১৮,২৭০ ৪৯.২ সুভা FJ নতুন ক্যালিডোনিয়া (ফ্রান্স) ১৯,০৬০ ১৪.৩ নুমেয়া NC পাপুয়া (ইন্দোনেশিয়া) ৩১৯,০৩৬ ৩,৪৮৬,৪৩২ ১০.৯ জায়াপুরা পশ্চিম পাপুয়া (ইন্দোনেশিয়া) ১৪০,৩৭৫ ৭৬০,৮৫৫ ৫.৪ মানকওয়ারি পাপুয়া নিউ গিনি ৪৬২,৮৪০ ১৭.৫ পোর্ট মোর্সবি PG সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ২৮,৪৫০ ২১.১ হোনিয়ারা SB ভানুয়াতু ১২,২০০ ২২.২ পোর্ট ভিলা VU মেলানেশিয়া (মোট) ১,০০০,২৩১ ১৪,৩৭৩,৫৩৬ ১৪.৪ মাইক্রোনেশিয়া মাইক্রোনেশিয়া যুক্তরাজ্য ৭০২ ১৪৯.৫ পালিকির FM গুয়াম (যুক্তরাষ্ট্র) ৫৪৯ ২৯৬.৭ হাগাতনিয়া GU কিরিবাস ৮১১ ১৪১.১ দক্ষিণ তারাওয়া KI মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ ১৮১ ২৯৩.২ মাজুরো MH নাউরু ২১ ৫৪০.৩ ইয়ারেন (দে ফ্যাক্টো) NR উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ (যুক্তরাষ্ট্র) ৪৭৭ ১১৫.৪ সাইপান MP পালাউ ৪৫৮ ৪৬.৯ এনগেরুলমুদ PW ওয়েক দ্বীপ (যুক্তরাষ্ট্র) ২ ১৫০ ৭৫ ওয়েক দ্বীপ UM মাইক্রোনেশিয়া (মোট) ৩,২০১ ৫২৩,৩১৭ ১৬৩.৫ পলিনেশিয়া মার্কিন সামোয়া (যুক্তরাষ্ট্র) ১৯৯ ২৭৯.৪ পাগো পাগো, ফাগাটোগো AS কুক দ্বীপপুঞ্জ (নিউজিল্যান্ড) ২৪০ ৭২.৪ আভারুয়া CK ইস্টার দ্বীপ (চিলি) ১৬৪ ৫,৭৬১ ৩৫.১ হাংগা রোয়া CL ফরাসি পলিনেশিয়া (ফ্রান্স) ৪,১৬৭ ৬৭.২ পাপেএতে PF হাওয়াই (যুক্তরাষ্ট্র) ১৬,৬৩৬ ১,৩৬০,৩০১ ৮১.৮ হনুলুলু US নিউয়ে (নিউজিল্যান্ড) ২৬০। ৬.২ আলোফি NU পিটকেয়ার্ন দ্বীপপুঞ্জ (যুক্তরাজ্য) ৪৭ ৪৭ ১ অ্যাডামসটাউন PN সামোয়া ২,৯৪৪ ৬৬.৩ আপিয়া WS টোকেলাউ (নিউজিল্যান্ড) ১০ ১২৮.২ আটাফু (দে ফ্যাক্টো) TK টোঙ্গা ৭৪৮ ১৪৩.২ নুকুআলোফা TO টুভালু ২৬ ৪২৬.৮ ফুনাফুতি TV ওয়ালিস এবং ফুটুনা (ফ্রান্স) ২৭৪ ৪৩.৪ মাতা-উতু WF পলিনেশিয়া (মোট) ২৫,৭১৫ ২,০৪৭,৪৪৪ ৭৯.৬ মোট ৮,৯১৯,৫৩০ ৫.১ মোট অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূ-খন্ড বাদ দিয়ে ১,২৩২,৬৮০ ১৬.৬ সকল ধর্মের লোকজন একসাথে মিলেমিশে বসবাস করেন। আরও দেখুন ওশেনিয়ার দেশসমূহ অস্ট্রেলেশিয়া ওশেনিয়ার জন্য জাতিসংঘ ভূবিন্যাস তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ "Australia and Oceania" from National Geographic বিষয়শ্রেণী:মহাদেশ বিষয়শ্রেণী:প্রশান্ত মহাসাগর
মহাসাগর
https://bn.wikipedia.org/wiki/মহাসাগর
right|thumb|240px|মহাসাগর ভাগের বিভিন্ন পদ্ধতি। মহাসাগর (বা মহাসমুদ্র, মহাসিন্ধু) অতি প্রকাণ্ড ও লবণযুক্ত বিপুল জলরাশি যা পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ওসেন শব্দটির উৎস হল প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘ওকিআনোজ’ (Ὠκεανός)। স্বীকৃত ৫ টি মহাসাগর : প্রশান্ত, আটলান্টিক, ভারতীয়, আর্টিক, এবং দক্ষিণ। মহাসাগরগুলি একত্রে পৃথিবীর মোট আয়তনের (৩.৬১×১০১৪ বর্গ মিটার) প্রায় ৭০.৯% স্থান দখল করে আছে। এ বিপুল জলরাশি আবার অনেকগুলো মহাসাগর ও ছোট ছোট সমুদ্রে বিভক্ত। মহাসাগরের অর্ধেকেরও বেশি জায়গার গড় গভীরতা ৩,০০০ মিটারেরও (৯,৮০০ বর্গফুট) বেশি। মহাসাগরের জলের গড় লবণাক্ততা ৩.৫% এবং প্রায় সকল সমুদ্রের গড় লবণাক্ততা ৩% থেকে ৩.৮%৮। বৈজ্ঞানিকেরা হিসেব করে দেখেছেন যে, মহাসাগরে প্রায় ২,৩০,০০০ সামুদ্রিক ও জলজ প্রাণী রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সামুদ্রিক ও জলজ প্রাণীর সংখ্যা নির্ণিত সংখ্যার তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি। পরিচিতি প্রচলিতভাবে আমরা বিভিন্ন ধরনের মহাসাগরের নাম দেখতে পাই। একসময় বর্তমানকালের মহাসাগরগুলোর আন্তঃসংযোগকৃত লবণাক্ত জলরাশি ‘বৈশ্বিক মহাসাগর’ হিসেবে নির্দেশ করতো। মহাসাগর মূলতঃ একটি। এ ধারণাটি অবিচ্ছেদ্য ও পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত এবং মুক্ত জলরাশির আন্তঃসংযোগে মহাসাগরীয়বিদ্যার মৌলিক গুরুত্বকেই তুলে ধরে। পাশ্চাত্ত্য ভূগোলবিদরা তাদের নিজেদের সুবিধার্থে মহাসাগরকে ৫টি অংশে বিভক্ত করেছেন। মহাসাগরীয় বিভাজনসমূহ সংজ্ঞায়িত এবং মূল্যায়িত হয়েছে - মহাদেশ, মাটির স্তর এবং অন্যান্য শর্তাবলীর আলোকে। সেগুলো হলোঃ- প্রশান্ত মহাসাগর: এটি আমেরিকাকে এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে বিভক্ত করেছে। আটলান্টিক মহাসাগর: এটি আমেরিকাকে ইউরেশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে বিভক্ত করেছে। ভারত মহাসাগর: এটি দক্ষিণ এশিয়াকে ঘিরে রেখেছে এবং আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াকে বিভক্ত করেছে। দক্ষিণ মহাসাগর বা এন্টার্কটিকা মহাসাগর: এ মহাসাগর এন্টার্কটিকা মহাদেশকে ঘিরে রেখেছে এবং প্রশান্ত, আটলান্টিক এবং ভারত মহাসাগরের বহিরাংশ হিসেবে নির্দেশিত হচ্ছে। উত্তর মহাসাগর বা আর্কটিক মহাসাগর: এ মহাসাগরটি আটলান্টিক মহাসাগরের একটি সমুদ্র হিসেবে মর্যাদা পাচ্ছে যা আর্কটিকের অধিকাংশ এলাকা এবং উত্তর আমেরিকা ও ইউরেশিয়ার একাংশকে ঘিরে রেখেছে। প্রশান্ত এবং আটলান্টিক মহাসাগর বিষুবরেখা কর্তৃক উত্তরাংশ ও দক্ষিণাংশকে আন্তঃবিভাজন করেছে। ক্ষুদ্রতম এলাকাগুলোয় মহাসাগরকে সাগর, উপসাগর, উপত্যকা, প্রণালী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণে মহাসাগর বলতে সুবিশাল মহাসাগরীয় জলাধারকে বুঝায়। মহাসাগরীয় জলাধার হচ্ছে আগ্নেয়গিরির বাসাল্টের পাতলা স্তর যা পৃথিবীর অগ্নিকুণ্ডস্বরূপ। মহাসাগরীয় প্লেটের কঠিন আবরণের তুলনায় এর আবরণ পুরু হলেও কম ঘণপূর্ণ। এ দৃষ্টিকোণে পৃথিবীতে তিনটি মহাসাগর আছে যা বিশ্ব মহাসাগর, কাস্পিয়ান সাগর এবং কৃষ্ণ সাগর বা ব্ল্যাক সি নামে পরিচিত। শেষোক্ত দু’টি লওরেসিয়াসহ কাইমেরিয়া এলাকায় একত্রিত হয়েছে। ভূ-মধ্যসাগর ঐ সময়েই মহাসাগর থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, টেকটোনিক প্লেট নড়াচড়ার ফলে জিব্রাল্টার প্রণালী থেকে বিশ্ব মহাসাগরের সাথে সম্পর্কচ্যুত হয়। কৃষ্ণ সাগর বসফরাস প্রণালীর মাধ্যমে ভূ-মধ্যসাগরের সাথে সংযুক্ত হয়। কিন্তু বসফরাস প্রণালীর প্রাকৃতিক খালটি মহাদেশীয় শিলাচ্যুতির কারণে প্রায় ৭,০০০ বছর পূর্বে বিচ্ছিন্ন হয় এবং মহাসাগরীয় সাগরতলের একটি টুকরো জিব্রাল্টার প্রণালীর উদ্ভব ঘটে। মহাসাগরীয় সীমারেখা মহাসাগর এবং জীবনধারা ভূ-মণ্ডলে মহাসাগরের বিপুল প্রভাব লক্ষ করা যায়। মহাসাগরীয় বাষ্পীভবন যা পানিচক্রের একটি ধাপ, তা অনেক বৃষ্টিপাতের উৎসস্থল হিসেবে চিহ্নিত তা মহাসাগরীয় তাপমাত্রা জলবায়ু ও বাতাসের গতিপথের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। এটি ভূ-স্থিত জীবন ও জীবনধারায় বিরাট প্রভাব বিস্তার করে। মহাসাগর গঠনের ৩ বিলিয়ন বছরের মধ্যে ভূ-স্থিত জীবন গড়ে উঠে। উপকূলের গভীরতা এবং দূরত্ব উভয়ই বিরাটভাবে প্রভাবান্বিত করেছে বলেই সাগর উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা জন্মেছে এবং সংশ্লিষ্ট প্রাণীকূল বসবাস করছে। দৃষ্টিগ্রাহ্য বিষয়সমূহ বৈশ্বিক মহাসাগরের আয়তন প্রায় ৩৬১*১০৬ বর্গকিলোমিটার (১৩৯*১০৬ বর্গমাইল)। প্রতি ঘণকিলোমিটারে পানির আয়তন হচ্ছে ১,১১১ কিলোমিটার। মহাসাগরের গড় গভীরতা ৩,৭৯০ মিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ১০,৯২৩ মিটার। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জলরাশি ৩০০০ মিটারেরও গভীরে রয়েছে। মোট বাষ্পীভবন হচ্ছে ১.৪*১০২১ কেজি যা পৃথিবীর মাত্র ০.০২৩%। ৩ শতাংশের কম স্বাদুপানি; বাকী লবণাক্ত পানির প্রায় সবই মহাসাগরের। রং সাধারণের ধারণা যে, মহাসাগরের পানির রং নীল। এছাড়াও, পানিতে খুবই কম পরিমাণে নীল রং থাকে এবং যখন বিপুল জলরাশিকে একত্রে রাখা হয় তখনই মহাসাগরের পানি নীল দেখায়। এছাড়াও, আকাশে নীল রংয়ের প্রতিফলন এর জন্য দায়ী, যদিও তা মূখ্য বিষয় নয়। মূল কারণ হচ্ছে - পানির পরমাণুগুলোতে লাল রংয়ের নিউক্লিয়ার কণা থাকে যা আলো থেকে আসে এবং প্রকৃতি প্রদত্ত রংয়ের উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে ইলেকট্রনিক, ডাইনামিক বিষয়গুলোর তুলনায় প্রাকৃতিক অণুকম্পনকে ফলাফলকে ধরা হয়। রক্তিম আভা নাবিক এবং অন্যান্য নৌ-বিদদের প্রতিবেদনে জানা জায়, মহাসাগরে প্রায়শঃই দৃশ্যমান রক্তিম আভা, আলোকছটা মাইলের পর মাইল রাত্রে দেখা যায়। ২০০৫ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেন যে, আলোকচিত্রের মাধ্যমে গ্লো’র উপস্থিতি তারা নিশ্চিত করেছেন। এটি জৈব-আলোকছটার সাহায্যে ঘটতে পারে। আবিষ্কার মহাসাগরে ভ্রমণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অতিপ্রাচীনকাল থেকেই নৌকা যোগাযোগের একটি প্রধান পরিবহন হিসেবে সু-খ্যাতি অর্জন করেছে। কিন্তু আধুনিক যুগে জলের নীচ দিয়েও ভ্রমণ করা সম্ভবপর হয়েছে। গভীরতম স্থান হিসেবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ হিসেবে নর্দার্ন মারিয়ানা দ্বীপের মারিয়ানা খাতের স্থান নির্ণিত হয়েছে। এর গভীরতা ১০,৯৭১ মিটার। ব্রিটিশ নৌযান চ্যালেঞ্জার-২ ১৮৫১ সালে স্থানটি জরিপ করে এবং সবচেয়ে গভীর স্থানকে নামকরণ করেছে ‘চ্যালেঞ্জার ডিপ’ হিসেবে। ১৯৬০ সালে ট্রিস্ট দু’জন ক্রু-সহ ‘চ্যালেঞ্জার-২’-এর কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছতে সফলকাম হন। অধিকাংশ মহাসাগরের কেন্দ্রস্থল এখনো আবিস্কৃত হয়নি এবং স্থানও নির্ণিত হয়নি। ১৯৯৫ সালে মহাকর্ষীয় সূত্র প্রয়োগ করে ১০ কিলোমিটারেরও অধিক বৃহৎ ভূ-চিত্রাবলীর দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। আঞ্চলিকতা মহাসাগরবিশারদরা ভূ-গঠন এবং জীবনধারার উপযোগী পরিবেশকে উপজীব্য করে মহাসাগরকে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করেছেন। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:ভূগোল বিষয়শ্রেণী:মহাসাগর বিষয়শ্রেণী:সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়শ্রেণী:উপকূলীয় ও মহাসামুদ্রিক ভূমিরূপ বিষয়শ্রেণী:জলরাশি
উত্তর মহাসাগর
https://bn.wikipedia.org/wiki/উত্তর_মহাসাগর
থাম্ব|300px|ডান|আন্তর্জাতিক জললেখবিজ্ঞান সংস্থা (আইএইচও) কর্তৃক বর্ণিত সীমানাসহ উত্তর মহাসাগর, যার মধ্যে হাডসন উপসাগর (যার মধ্যে কিছু মানচিত্র থেকে ৫৭°উ অক্ষাংশের দক্ষিণে) এবং অন্যান্য সমস্ত প্রান্তিক সমুদ্র রয়েছে। উত্তর মহাসাগর বা সুমেরু মহাসাগর উত্তর গোলার্ধের সুমেরু অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ও সর্বাপেক্ষা কম গভীর একটি মহাসাগর। এটি পৃথিবীর পাঁচটি প্রধান মহাসাগরের অন্যতম। আন্তর্জাতিক জললেখবিজ্ঞান সংস্থা (আইএইচও) তথা আন্তর্জাতিক জললেখচিত্রন সংস্থা এটিকে মহাসাগরের স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে কোনো কোনো সমুদ্রবিজ্ঞানী এটিকে সুমেরু ভূমধ্যসাগর (Arctic Mediterranean Sea) বা সুমেরু সাগর (Arctic Sea) বলে থাকেন। এটিকে প্রায় আটলান্টিক মহাসাগরের মোহনা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটিকে সর্বব্যাপী বিশ্ব মহাসাগরের উত্তরতম অংশ হিসাবেও দেখা হয়। উত্তর মহাসাগর উত্তর গোলার্ধের মাঝখানে উত্তর মেরু অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করে ও দক্ষিণে প্রায় ৬০°উ পর্যন্ত বিস্তৃত। উত্তর মহাসাগরের প্রায় সমগ্র অংশই ইউরেশিয়া ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশ দ্বারা বেষ্টিত এবং সীমানাগুলি স্থানবিবরণী বৈশিষ্ট্যগুলির অনুবর্তী হয়: প্রশান্ত মহাসাগরীয় দিকে বেরিং প্রণালী ও আটলান্টিকের দিকে গ্রিনল্যান্ড স্কটল্যান্ড শৈলশিরা। বছরের অধিকাংশ সময় এই মহাসাগরের অংশবিশেষ সামুদ্রিক বরফে ঢাকা থাকে।Since the beginning of the 21st century, sea ice covers only 1/3 to 1/2 the surface of the Arctic Ocean at the end of summer. শীতকালে সম্পূর্ণ মহাসাগরটিই বরফে ঢাকা পড়ে যায়। উত্তর মহাসাগরের তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা ঋতু অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। সমুদ্রের বরফের আবরণীর গলন ও জমাট বাঁধার কারণেই এমনটি হয়ে থাকে।Some Thoughts on the Freezing and Melting of Sea Ice and Their Effects on the Ocean K. Aagaard and R. A. Woodgate, Polar Science Center, Applied Physics Laboratory University of Washington, January 2001. Retrieved 7 December 2006. পাঁচটি প্রধান মহাসাগরের তুলনায় এই মহাসাগরের পানির লবণাক্ততা কম। এর কারণ, বাষ্পীভবনের নিম্ন হার, বিভিন্ন বড়ো ও ছোটো নদী থেকে এসে মেশা মিষ্টি জলের প্রবাহ এবং পার্শ্ববর্তী উচ্চ লবণাক্ততাযুক্ত মহাসাগরগুলির সঙ্গে সীমাবদ্ধ সংযোগ ও বহির্গমন স্রোত। গ্রীষ্মকালে প্রায় ৫০% বরফ গলে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশানাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার (এনএসআইডিসি) উপগ্রহ তথ্যের মাধ্যমে গড় সময়কাল ও নির্দিষ্ট পূর্ববর্ষের সঙ্গে তুলনা করার জন্য উত্তর মহাসাগরের বরফাবরণী ও বরফ গলনের দৈনিক তথ্য রাখে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে, সুমেরুর বরফের পরিমাণ একটি নতুন রেকর্ড সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। গড় পরিমাণের (১৯৭৯-২০০০) তুলনায় সমুদ্রের বরফ ৪৯% কমে গেছে। থাম্ব|প্রাচীন উত্তর সাগরের বরফের হ্রাস ১৯৮২-২০০৭ ইতিহাস উত্তর আমেরিকা উইসকনসিন হিমবাহের সময় উত্তর আমেরিকার মেরু অঞ্চলে মানুষের বসতি কমপক্ষে ১৭,০০০-৫০,০০০ বছরের পুরনো। এই সময়ে, সমুদ্র সমতলের স্তর হ্রাসের ফলে লোকেরা বেরিং ভূ-সেতু অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিল যা সাইবেরিয়ার সাথে উত্তর-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার (আলাস্কা) সাথে যুক্ত হয়ে আমেরিকায় বসতি স্থাপন দিকে নিয়ে যায়। বাম|থাম্ব|থুলে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান প্রাথমিক প্যালিও-এস্কিমো গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রাক-ডরসেট (); গ্রিনল্যান্ডের সাক্কাক সংস্কৃতি (২৫০০-৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ); উত্তর-পূর্ব কানাডা ও গ্রিনল্যান্ডের প্রথম স্বাধীনতা ও দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংস্কৃতি ( ও ); এবং ল্যাব্রাডর ও নুনাভিকের গ্রোসওয়াটার। ডরসেট সংস্কৃতি খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সুমেরু উত্তর আমেরিকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। আধুনিক ইনুইটের পূর্বপুরুষ থুলে জাতির বর্তমান আলাস্কা থেকে পূর্বে অভিবাসনের আগে ডরসেট ছিল সুমেরুর সর্বশেষ প্রধান প্যালিও-এস্কিমো সংস্কৃতি।"The Prehistory of Greenland" , Greenland Research Centre, National Museum of Denmark, accessed 14 April 2010. থুলে ঐতিহ্য প্রায় ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, যা বেরিং প্রণালীর আশেপাশে গড়ে উঠেছিল এবং পরে উত্তর আমেরিকার প্রায় পুরো সুমেরু অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। থুলে জাতি ইনুইটদের পূর্বপুরুষ ছিল, যারা এখন আলাস্কা, উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল, নুনাভুট, উত্তর কুইবেক, ল্যাব্রাডর ও গ্রিনল্যান্ডে বাস করে। ইউরোপ থাম্ব|১৮৮৬ সালে অ্যাডলফ এরিক নরডেনস্কিওল্ডের সুমেরু অভিযানের চিত্র; জর্জ ভন রোসেন অঙ্কিত ইউরোপের প্রাচীন ইতিহাসে উত্তর মেরু অভিযানের নজির বিশেষ নেই। এই অঞ্চলের ভূগোল সম্পর্কে সঠিক ধারণাও সে যুগে কারো ছিল না। মাসিলিয়ার পাইথিয়াস ৩২৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে উত্তরদিকে "এসচ্যাট থুলে" নামে একটি স্থানে যাত্রার একটি বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এই অঞ্চলে সূর্য প্রতিদিন মাত্র তিন ঘণ্টার জন্য অস্ত যেত এবং পানি এখানে এমন এক থকথকে পদার্থে পরিণত হত "যার উপর দিয়ে হাঁটাও যেত না, আবার নৌকা চালানোও যেত না।" সম্ভবত তিনি "গ্রাওলার" বা "বার্গি বিটস" নামে পরিচিত হালকা সামুদ্রিক বরফের কথা লিখেছেন। তার বিবরণীর "থাল" সম্ভবত আইসল্যান্ড। যদিও কোনো কোনো মতে তিনি নরওয়ের কথা লিখেছেন।Pytheas Andre Engels. Retrieved 16 December 2006. থাম্ব|বাম|ইমানুয়েল বোয়েনের ১৭৮০ সালের সুমেরু মানচিত্রে একটি "উত্তর মহাসাগর" রয়েছে। প্রথম যুগের মানচিত্রকারেরা সঠিকভাবে জানতেন না যে, উত্তর মেরু সংলগ্ন অঞ্চলটি জলভাগ (যেমন, মার্টিন ওয়াল্ডসিমুলারের ১৫০৭ সালের বিশ্বমানচিত্র) না স্থলভাগ (যেমন, জোহানেস রুইসের ১৫০৭ সালের মানচিত্র, গেরার্ডাস মেরক্যাটরের ১৫৯৫ সালের মানচিত্র)। "ক্যাথে" (চীন) পৌঁছানোর একটি উত্তরমুখী রাস্তা আবিষ্কারের প্রত্যাশায় অত্যুৎসাহী একদল নাবিকের আগ্রহে শেষপর্যন্ত এই অঞ্চলটিকে জলভাগ আখ্যা দেওয়া হয়। ১৭২৩ সাল নাগাদ জোহান হোম্যান প্রমুখ মানচিত্রকারেরা তার মানচিত্রের উত্তর সীমায় একটি "Oceanus Septentrionalis" আঁকতে শুরু করেন। এই যুগে সুমেরু বৃত্তের ভিতরে অল্প কয়েকটি অভিযান হলেও, তা কয়েকটি ছোটো দ্বীপেই সীমাবদ্ধ ছিল। নোভায়া জেমল্যা দ্বীপে একাদশ শতাব্দীতে ও স্পিটসবার্গেন দ্বীপে ১৫৯৬ সালে অভিযান চলে। কিন্তু এই সব দ্বীপ বরফ-পরিবৃত থাকায় এগুলির উত্তরসীমা সে সময় জানা যায়নি। সমুদ্র-মানচিত্র নির্মাতারা কোনো কোনো কল্পনাপ্রবণ মানচিত্রকারের ধারণার ধার ধরতেন না। তারা মানচিত্রে এই অঞ্চলটিকে শূন্য রেখে দিতেন। কেবল জ্ঞাত উপকূলরেখাটির চিত্র আঁকতেন। থাম্ব|বাম| জর্জ হুবার্ট উইলকিনসের ১৯২৬ সালের ডেট্রয়েট উত্তর মেরু অভিযান থাম্ব|upright=1.25| সুমেরু অঞ্চল উত্তর-পূর্ব উত্তরণ, এর মধ্যে উত্তর সাগর পথ ও উত্তর-পশ্চিম পথ দেখাচ্ছে ঊনবিংশ শতাব্দী বরফের সঞ্চরণশীল ব্যারিয়ারের ওপারে কী আছে সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকায় এই সম্পর্কে নানারকম গালগল্প ছড়িয়ে পড়ে। ইংল্যান্ড সহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে "মুক্ত মেরু সাগর" ধারণাটি জনপ্রিয়তা পায়। ব্রিটিশ অ্যাডমিরাল্টির দীর্ঘকালের সেকেন্ড সেক্রেটারি জন বারো এই সমুদ্রের সন্ধানে ১৮১৮ থেকে ১৮৪৫ সালের মধ্যে একাধিক মেরু অভিযান প্রেরণ করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৫০-এর ও ১৮৬০-এর দশকে এলিশা কেন ও আইজ্যাক ইজরায়েল হায়েস নামে দুই অভিযাত্রী এই রহস্যময় বিরাট জলভাগ দেখেছেন বলে দাবি করেন। এই শতাব্দীর শেষভাগেও ম্যাথিউ ফনটেইন মুরে তার দ্য ফিজিক্যাল জিওগ্রাফি অফ দ্য সি (১৮৮৮) গ্রন্থে মুক্ত মেরু সাগরের এক বৃত্তান্ত অন্তর্ভুক্ত করেন। তবে সকল অভিযাত্রীই, যাঁরা মেরু অঞ্চলের দিকে আরও বেশি অগ্রসর হয়েছিলেন, তারা জানান যে মেরু অঞ্চলের বরফের টুপিটি বেশ মোটা ও তা সারাবছরই বজায় থাকে। ফ্রিডজোফ নানসেন ১৮৯৬ সালে উত্তর মহাসাগরের প্রথম একটি নৌ অতিক্রমণ তৈরি করেছিলেন। বিংশ শতাব্দী ১৯৬৯ সালে ওয়ালি হার্বার্টের নেতৃত্বে আলাস্কা থেকে সভালবার্দ পর্যন্ত একটি কুকুর স্লেজ অভিযানে সমুদ্রের উপরিতল প্রথম অতিক্রম করা হয়। উত্তর মেরুর প্রথম নৌ পরিবহন ১৯৫৮ সালে সাবমেরিন ইউএসএস নটিলাস দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল ও ১৯৭৭ সালে বরফভাঙ্গা জাহাজ এনএস আর্কটিকা প্রথম সাগরের উপরিতলে নৌ পরিবহন করেছিল। ১৯৩৭ সাল নাগাদ সোভিয়েত ও রাশিয়ান মানবচালিত ভাসমান বরফ স্টেশনগুলি উত্তর মহাসাগরের উপর ব্যাপক নজরদারি শুরু করে। এই সব ভাসমান বরফের উপর বৈজ্ঞানিক বসতিও স্থাপিত হয়।North Pole drifting stations (1930s-1980s) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, উত্তর মহাসাগরের ইউরোপীয় অঞ্চলটি ব্যাপকভাবে বিবাদে জড়িয়েছিল: সোভিয়েত ইউনিয়নকে এর উত্তর বন্দর দিয়ে পুনরায় সরবরাহ করার মিত্র প্রতিশ্রুতি জার্মান নৌ ও বিমান বাহিনী বিরোধিতা করেছিল। ১৯৫৪ সাল থেকে বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলি উত্তর মহাসাগরের উপর দিয়ে তাদের বিমান উড়িয়েছে (পোলার পথ দেখুন)। ভূগোল ডান|300px|থাম্ব| উত্তর মহাসাগর ও তার পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলির বাথিমেট্রিক/টোপোগ্রাফিক মানচিত্র থাম্ব|300px|বাম|উত্তর মেরু অঞ্চল; উল্লেখ্য, এই মানচিত্রে অঞ্চলটির দক্ষিণের সীমানা একটি লাল আইসোথার্ম দ্বারা চিত্রিত হয়েছে, যেখানে উত্তরের সমস্ত অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা ছিল জুলাই মাসে এর কম। বিস্তার উত্তর মহাসাগর মোটামুটি একটি বৃত্তাকার অববাহিকা জুড়ে অবস্থিত এবং এর আয়তন প্রায় , যা অ্যান্টার্কটিকার বিস্তারের সমান। এর উপকূলরেখার আয়তন । এটি রাশিয়ার চেয়ে ছোট একমাত্র মহাসাগর, যার স্থল আয়তন । পার্শ্ববর্তী ভূমি ও একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল উত্তর মহাসাগর ইউরেশিয়া (রাশিয়া ও নরওয়ে), উত্তর আমেরিকা (কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্য), গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড দ্বারা বেষ্টিত। উত্তর মহাসাগর একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলদেশের অংশআয়তন (কিমি২) —লাপ্তেভ সাগর থেকে চুকচি সাগর ২,০৮৮,৭ ০৭৫ —কারা সাগর ১,০৫৮,১২৯ —বারেন্টস সাগর ১,১৯৯,০০৮ —মূল ভূখণ্ড ৯৩৫,৩৯৭ —স্‌ভালবার্দ দ্বীপ ৮০৪,৯০৭ —ইয়ান মায়েন দ্বীপ ২৯২,১৮৯ —মূল ভূখণ্ড ৭৫৬,১১২ —মূল ভূখণ্ড ২,২৭৮,১১৩ —পূর্ব উপকূল ২,২৭৬,৫৯৪ —সুমেরু অঞ্চল ৩,০২১,৩৫৫ —সুমেরু অঞ্চল ৫০৮,৮১৪ অন্যান্য ১,৫০০,০০০সর্বমোট উত্তর মহাসাগর ১৪,০৫৬,০০০ দ্রষ্টব্য: সারণীতে তালিকাভুক্ত এলাকার কিছু অংশ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। অন্যটি উপসাগর, প্রণালী, চ্যানেল ও নির্দিষ্ট নাম ছাড়া অন্যান্য অংশ নিয়ে গঠিত ও একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বাদ দেয়। উপ-অঞ্চল ও সংযোগ বেরিং প্রণালী দ্বারা উত্তর মহাসাগর প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত। গ্রিনল্যান্ড সাগর ও লাব্রাডর সাগর আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে উত্তর মহাসাগরের সংযোগ রক্ষা করছে। (আইসল্যান্ড সাগরকে কখনও কখনও গ্রিনল্যান্ড সাগরের অংশ ও কখনও কখনও আলাদা বলে মনে করা হয়।) উত্তর মহাসাগরের অন্তর্ভুক্ত বৃহত্তম সাগরগুলি হল: বারেন্টস সাগর—১.৪ মিলিয়ন কিমি২ হাডসন উপসাগর—১.২৩ মিলিয়ন কিমি২ (কখনও কখনও অন্তর্ভুক্ত নয়) গ্রিনল্যান্ড সাগর—১.২০৫ মিলিয়ন কিমি২ পূর্ব সাইবেরীয় সাগর—৯৮৭,০০০ কিমি২ কারা সাগর—৯২৬,০০০ কিমি২ লাপ্তেভ সাগর—৬৬২,০০০ কিমি২ চুকচি সাগর—৬২০,০০০ কিমি২ বোফর্ট সাগর—৪৭৬,০০০ কিমি২ আমুন্ডসেন উপসাগর শ্বেত সাগর—৯০,০০০ কিমি২ পেচোরা সাগর—৮১,২৬৩ কিমি২ লিংকন সাগর—৬৪,০০০ কিমি২ প্রিন্স গুস্তাফ অ্যাডলফ সাগর কুইন ভিক্টোরিয়া সাগর ওয়ান্ডেল সাগর বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ উত্তর মহাসাগর বা আটলান্টিক মহাসাগরে বিভিন্ন প্রান্তিক সমুদ্রপথ স্থাপন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে: হাডসন উপসাগর, বাফিন উপসাগর, নরওয়েজিয়ান সাগর এবং হাডসন প্রণালী। দ্বীপ উত্তর মহাসাগরের প্রধান দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ পশ্চিম মূল মধ্যরেখা থেকে এসেছে: ইয়ান মায়েন (নরওয়ে) আইসল্যান্ড গ্রিনল্যান্ড উত্তর দ্বীপপুঞ্জ (কানাডা, রানী এলিজাবেথ দ্বীপপুঞ্জ ও বাফিন দ্বীপ অন্তর্ভুক্ত) ওয়ারেঞ্জেল দ্বীপ (রাশিয়া) নতুন সাইবেরীয় দ্বীপপুঞ্জ (রাশিয়া) সেভারনায়া জেমল্যা (রাশিয়া) নোভায়া জেমল্যা (রাশিয়া, সেভারনি দ্বীপ ও ইউজনি দ্বীপ অন্তর্ভুক্ত) ফ্রাঞ্জ জোসেফ ল্যান্ড (রাশিয়া) স্‌ভালবার্দ (নরওয়ে সহ বিয়ার দ্বীপ)) বন্দর উত্তর মহাসাগরে বেশ কয়েকটি বন্দর ও পোতাশ্রয় রয়েছে।Arctic Ocean . CIA World Fact Book আলাস্কা উতকিয়াগভিক (ব্যারো) প্রুধো সাগর কানাডা ম্যানিটোবা: চার্চিল (চার্চিলের বন্দর) নুনাভুত: নানিসিভিক (নানিসিভিক নৌ সুবিধা) উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে টুকটোয়াকটুক ও ইনুভিক গ্রীনল্যান্ড: নুউক (নুউক বন্দর ও হারবার) নরওয়ে মূল ভূখণ্ড: কিরকেনেস ও ভারডো স্‌ভালবার্দ: লংইয়ারবাইন আইসল্যান্ড আকুরেরি রাশিয়া বারেন্টস সাগর: বারেন্টস সাগরে মুরমানস্ক শ্বেত সাগর: আরখানগেলস্ক কারা সাগর: ল্যাবিটনাঙ্গি, সালেখার্ড, দুদিনকা, ইগারকা ও ডিকসন লাপ্তেভ সাগর: টিকসি পূর্ব সাইবেরীয় সাগর: পূর্ব সাইবেরীয় সাগরে পেভেক সমুদ্রগর্ভ লোমোনোসোভ শৈলশিরা নামে একটি সমুদ্রগর্ভস্থ শৈলশিরা গভীর সমুদ্রের তলায় অবস্থিত উত্তর মেরু সামুদ্রিক অববাহিকাটিকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। একটি হল ইউরেশীয় সামুদ্রিক অববাহিকা; এর গভীরতা । অপরটি হল আমেরেশীয় সামুদ্রিক অববাহিকা (এটি উত্তর আমেরিকান বা হাইপারবোরিয়ান সামুদ্রিক অববাহিকা নামেও পরিচিত); এর গভীরতা । সমুদ্রের তলদেশে অনেক ফল্ট-ব্লক শৈলশিরা, নিতলীয় সমভূমি, খাত ও অববাহিকা দেখা যায়। উত্তর মহাসাগরের গড় গভীরতা । গভীরতম বিন্দুটি অবস্থিত ফ্র‍্যাম প্রণালীর মোলোয় অববাহিকায়; এর গভীরতা । দুটি প্রধান অববাহিকা একাধিক শৈলশিরা দ্বারা ক্ষুদ্রতর অংশে বিভক্ত। এগুলি হল কানাডা সামুদ্রিক অববাহিকা (কানাডা/আলাস্কা ও আলফা শৈলশিরার মধ্যে অবস্থিত), মাকারোভ সামুদ্রিক অববাহিকা (আলফা ও লোমোনোসোভ শৈলশিরার মধ্যে অবস্থিত), ফ্রাম সামুদ্রিক অববাহিকা (লোমোনোসোভ ও গেক্কেল শৈলশিরার মধ্যে অবস্থিত) ও নানসেন সামুদ্রিক অববাহিকা (অ্যামান্ডসেন সামুদ্রিক অববাহিকা) (গেক্কেল শৈলশিরা ও ফ্রাঞ্জ জোসেফ ল্যান্ডের মহীসোপানের মধ্যে অবস্থিত)। মহীসোপান উত্তর মহাসাগর একাধিক উত্তর মেরু মহীসোপান দ্বারা বেষ্টিত। যার মধ্যে রয়েছে কানাডীয় মহীসোপান, কানাডীয় সুমেরু দ্বীপপুঞ্জের নিম্নাংশ ও রুশ মহাদেশীয় মহীসোপান; যাকে কখনও কখনও "উত্তর মেরু মহীসোপান" বলা হয় কারণ এটি বড়। রুশ মহাদেশীয় মহীসোপান তিনটি পৃথক, ছোট মহীসোপান নিয়ে গঠিত: ব্যারেন্টস মহীসোপান, চুকচি সাগর মহীসোপান ও সাইবেরীয় মহীসোপান। এগুলির মধ্যে রুশ মহাদেশীয় সাইবেরীয় মহীসোপানটি বিশ্বের বৃহত্তম মহীসোপান; এটি তেল ও গ্যাসের বিশাল মজুদ রাখে। ইউএসএসআর-ইউএসএ সামুদ্রিক সীমানা চুক্তিতে বলা হয়েছে চুকচি মহীসোপানটি রুশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমানা গঠন করে। সমগ্র এলাকা আন্তর্জাতিক আঞ্চলিক দাবির অধীন। চুকচি মালভূমি চুকচি সাগর মহীসোপান থেকে বিস্তৃত। ভূতত্ত্ব উত্তর মহাসাগরের আশেপাশের পর্বতের স্ফটিক বুনিয়াদ শিলাগুলি প্যালিওজোয়িক যুগে বৃহত্তর ক্যালেডোনিয়ান অরোজেনের আঞ্চলিক পর্যায়ে এলিসমেরিয়ান অরোজেনির সময় পুনরায় স্ফটিকিত বা গঠিত হয়েছিল। জুরাসিক ও ট্রায়াসিক যুগে আঞ্চলিক অবনমনের ফলে যথেষ্ট পলি জমেছিল, যা বর্তমান দিনের তেল ও গ্যাস জমার জন্য অনেক জলাধার তৈরি করেছিল। ক্রিটেসিয়াস সময়কালে কানাডীয় অববাহিকা উন্মুক্ত হয়েছিল ও আলাস্কার সমাবেশের কারণে টেকটোনিক কার্যকলাপের ফলে হাইড্রোকার্বন এখন প্রুধো উপসাগরের দিকে স্থানান্তরিত হয়। একই সময়ে ক্রমবর্ধমান কানাডীয় রকিজ থেকে পলি পড়ে বৃহৎ ম্যাকেঞ্জি বদ্বীপ তৈরি হয়। ট্রায়াসিক সময়কাল থেকে শুরু হওয়া সুপারমহাদেশ প্যানজিয়ার বিচ্ছিন্নতা প্রাথমিক আটলান্টিক মহাসাগরকে উন্মুক্ত করে দেয়। ফাটল তখন উত্তর দিকে প্রসারিত হয়ে উত্তর মহাসাগরে যাওয়া-আসার পথ উন্মুক্ত করে দেয় কারণ মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরার একটি শাখা থেকে ম্যাফিক মহাসাগরীয় ভূত্বক উপাদান বেরিয়ে আসে। রূপান্তর চ্যুতির মাধ্যমে চুকচি বর্ডারল্যান্ড উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাওয়ার সাথে সাথে আমেরাসিয়া অববাহিকা হয়ত প্রথমে উন্মেষিত হয়েছিল। অতিরিক্ত ব্যাপ্তিশীল ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষের দিকে আলফা-মেন্ডেলিভ শৈলশিরার "ত্রি-জংশন" তৈরি করতে সহায়তা করেছিল। সিনোজোয়িক যুগব্যাপী প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটের অধীনতা, ইউরেশিয়ার সাথে ভারতের সংঘর্ষ ও উত্তর আটলান্টিকের ক্রমাগত উন্মেষের ফলে নতুন হাইড্রোকার্বন কূট তৈরি হয়েছিল। প্যালিওসিন যুগ ও ইওসিন যুগের গাক্কেল শৈলশিরা থেকে সমুদ্রতল ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, যার ফলে লোমোনোসভ শৈলশিরা ভূমি থেকে দূরে সরে যায় ও তলিয়ে যায়। সমুদ্রের বরফ ও দূরবর্তী অবস্থার কারণে উত্তর মহাসাগরের ভূতত্ত্ব এখনও দুর্বলভাবে অনুসন্ধান করা হয়। আর্কটিক কোরিং এক্সপিডিশন ড্রিলিং লোমোনোসোভ শৈলশিরার উপর কিছুটা নজরে আনে যা প্যালিওসিনের ব্যারেন্টস-মহীসোপান থেকে বিচ্ছিন্ন মহাদেশীয় ভূত্বক বলে ধারণা করা হয় এবং এরপরে পলিতে পতিত হয়। এতে ১০ বিলিয়ন ব্যারেল পর্যন্ত তেল থাকতে পারে। গাক্কেল শৈলশিরা ফাটলটিও খুব রুগ্ন বলে ধারণা করা হয় ও এটি ল্যাপ্টেভ সাগর পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। সমুদ্রবিদ্যা জলপ্রবাহ বাম|upright=2.15|থাম্ব|উত্তর মহাসাগরের প্রধান পানি ভর বণ্টন। এই অংশটি ভৌগোলিক উত্তর মেরুতে বেরিং প্রণালী থেকে ফ্র্যাম প্রণালী পর্যন্ত একটি উল্লম্ব অংশ বরাবর বিভিন্ন পানির ভরকে চিত্রিত করে। যেহেতু স্তরবিন্যাস স্থিতিশীল, উপরের স্তরগুলির চেয়ে গভীর পানির ভর ঘন। থাম্ব|upright=1.5|উত্তর মহাসাগরে উপরের গঠন। আমুন্ডসেন অববাহিকা, কানাডীয় অববাহিকা এবং গ্রিনল্যান্ড সাগরের তাপমাত্রা ও লবণাক্ততার পরিলেখ চিত্রিত করা হয়েছে। উত্তর মহাসাগরের বৃহত্তর অংশের উপরিতলে (৫০-৫০ মিটার) উষ্ণতা ও লবণাক্ততার হার অপরাপর অংশের চেয়ে কম। এটি আপেক্ষিকভাবে স্থির। কারণ গভীরতার উপর লবণাক্ততার প্রভাব উষ্ণতার প্রভাবের চেয়ে বেশি। বড়ো বড়ো সাইবেরীয় ও কানাডীয় নদীর (ওব, ইয়েনিসে, লেনা, ম্যাককেঞ্জি) স্বাদু পানি এই মহাসাগরে পতিত হয়। এই স্বাদু পানি মহাসাগরের অধিক লবণাক্ত, অধিক ঘন ও অধিক গভীর পানির উপর ভেসে থাকে। এই কম লবণাক্তযুক্ত তল ও মহাসাগরীয় লবণাক্ত পানির মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত তথাকথিত হ্যালোক্লিন। থাম্ব|একটি কোপপড থাম্ব|বাম|উত্তর মহাসাগরের ৮৫,১৮ উত্তর ও ১১৭,২৮ পূর্বের উষ্ণতা ও লবণতার প্লট, ১ জানুয়ারি, ২০১০।U.S. National Oceanographic Data Center: Global Temperature–Salinity Profile Programme. June 2006. U.S. Department of Commerce, National Oceanic and Atmospheric Administration, National Oceanographic Data Center, Silver Spring, Maryland, 20910. Date of Access, <http://www.nodc.noaa.gov/GTSPP/>. অন্যান্য মহাসাগর থেকে আপেক্ষিক বিচ্ছিন্নতার কারণে উত্তর মহাসাগরে পানি প্রবাহের একটি অনন্য জটিল ব্যবস্থা রয়েছে। এটি ভূমধ্যসাগরের কিছু হাইড্রোলজিকাল বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যা আটলান্টিক অববাহিকার সাথে ফ্র্যাম প্রণালীর মাধ্যমে কেবল মাত্র এর সীমিত যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে বলেছে "যেখানে সঞ্চালন থার্মোহ্যালাইন বল আধিপত্য বিস্তার করে"।[Regional Oceanography: An Introduction. Tomczak, Godfrey. Retrieved 18 November 2013.] উত্তর মহাসাগরের মোট আয়তন ১৮.০৭×১০২ কিমি৩, যা বিশ্ব মহাসাগরের প্রায় ১.৩% এর সমান। গড় পৃষ্ঠের সঞ্চালন মূলত ইউরেশীয় দিকে ঘূর্ণিঝড়ের মতো ও কানাডীয় অববাহিকার দিকে ঘূর্ণিঝড় মুক্ত। প্রশান্ত ও আটলান্টিক উভয় মহাসাগর থেকে পানি উত্তর মহাসাগরে প্রবেশ করে এবং তিনটি অনন্য পানির ভরে বিভক্ত করা যেতে পারে। গভীরতম পানির ভরকে উত্তর পাদ পানি বলা হয় ও এটি প্রায় গভীরতায় শুরু হয়। এটি বিশ্ব মহাসাগরের সবচেয়ে ঘন পানির সমন্বয়ে গঠিত এবং এর দুটি প্রধান উৎস রয়েছে: সুমেরু মহীসোপান পানি ও গ্রীনল্যান্ড সাগরের গভীর পানি। প্রশান্ত মহাসাগর থেকে প্রবাহ হিসাবে শুরু হওয়া মহীসোপান অঞ্চলের পানি ০.৮ সেভার্ড্রুপের গড় হারে সংকীর্ণ বেরিং প্রণালীর মধ্য দিয়ে যায় ও চুকচি সাগরে পৌঁছায়। শীতকালে আলাস্কানের ঠান্ডা বাতাস চুকচি সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ফলে সমুদ্রস্তরের পানি জমাট বাঁধে এবং এই নবগঠিত বরফকে প্রশান্ত মহাসাগরে ঠেলে দেয়। বরফ প্রবাহের গতি প্রায় ১-৪ সেমি/সেকেন্ড। এই প্রক্রিয়াটি সমুদ্রে ঘন, লবণাক্ত পানি ছেড়ে দেয় যা মহাদেশীয় মহীসোপানের উপর দিয়ে পশ্চিম উত্তর মহাসাগরে নিমজ্জিত হয় এবং একটি হ্যালোক্লিন তৈরি করে।Arctic Ocean Circulation . Polar Discovery থাম্ব|বাম|কেনেডি চ্যানেল এই পানি গ্রিনল্যান্ড সাগরের গভীর পানির নিকটে মিলিত হয় যা শীতকালীন ঝড়ের উত্তরণের সময় তৈরি হয়। শীতকালে তাপমাত্রা নাটকীয়ভাবে ঠান্ডা হওয়ার সাথে সাথে বরফের গঠন ও তীব্র উল্লম্ব সংবহন পানিকে নীচের উষ্ণ লবণাক্ত পানির নীচে নিমজ্জিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট ঘন করে তোলে। সুমেরু পাদ পানি এর বহিঃপ্রবাহের কারণে সমালোচনীয় দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ, যা আটলান্টিক গভীর পানি গঠনে অবদান রাখে। এই পানির উল্টান বৈশ্বিক সঞ্চালন এবং জলবায়ু রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৫০-৯০০ মিটার (৪৯০-২,৯৫০ ফুট) গভীরতার পরিসরে পানির ভরকে আটলান্টিক পানি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। উত্তর আটলান্টিক স্রোত থেকে অন্তঃপ্রবাহ ফ্র্যাম প্রণালীর মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে, ঠান্ডা হয় ও নিমজ্জিত হ্যালোক্লিনের গভীরতম স্তর গঠন করে, যেখানে এটি সুমেরু অববাহিকাকে ঘড়ির বিপরীত দিকে প্রদক্ষিণ করে। এটি উত্তর মহাসাগরে সর্বোচ্চ আয়তনের অন্তঃপ্রবাহ যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অন্তঃপ্রবাহের প্রায় ১০ গুণ সমান ও এটি উত্তর মহাসাগরের সীমানা স্রোত তৈরি করে। এটি প্রায় ০.০২ মিটার/সেকেন্ডে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়। আটলান্টিকের পানিতে সুমেরু পাদ পানির মতো একই লবণাক্ততা রয়েছে তবে এটি অনেক বেশি উষ্ণ (৩°সে [৩৭°ফা] পর্যন্ত)। প্রকৃতপক্ষে, এই পানির ভর প্রকৃতপক্ষে পৃষ্ঠের পানির চেয়ে উষ্ণ ও শুধুমাত্র ঘনত্বে লবণাক্ততার ভূমিকার কারণে নিমজ্জিত থাকে। যখন পানি অববাহিকায় পৌঁছায় তখন প্রবল বাতাসের মাধ্যমে এটিকে বিউফোর্ট গায়ার নামক একটি বড় বৃত্তাকার স্রোতে ঠেলে দেওয়া হয়। বড় কানাডীয় ও সাইবেরীয় নদী থেকে অন্তঃপ্রবাহের কারণে বিউফোর্ট গায়ারের পানি চুকচি সাগরের তুলনায় অনেক কম লবণাক্ত। উত্তর মহাসাগরে চূড়ান্ত সংজ্ঞায়িত পানির ভরকে বলা হয় সুমেরু পৃষ্ঠ পানি এবং এটি গভীরতার পরিসরে পাওয়া যায়। এই পানি ভরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল একটি অংশ যাকে উপ-পৃষ্ঠের স্তর হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি আটলান্টিক পানির সৃষ্ট যা গভীর খাদের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে ও সাইবেরীয় মহীসোপানে তীব্র মিশ্রণে বশীভূত হয়।Lenn, Y., Rippeth, T. P., Old, C., Bacon, S., Polyakov, I., Ivanov, V. & Holemann, J (2011). Journal of Physical Oceanography. 41(3), 531-547 যেহেতু এটি প্রবেশ করে তাই এটি স্তরগুলির মধ্যে দুর্বল মিশ্রণের কারণে পৃষ্ঠস্তরের জন্য শীতল ও উষ্ণ ঢাল হিসাবে কাজ করে।Lenn, Y. D., Wiles, P. J., Torres-Valdes, S., Abrahamsen, E. P., Rippeth, T. P., Simpson, J. H., Bacon, S., Laxon, S. W., Polyakov, I., Ivanov, V. & Kirillov, S. (2009). Vertical mixing at intermediate depths in the Arctic boundary current. Geophysical Research Letters. 36, p. L05601Fer, I. (2009). Weak vertical diffusion allows maintenance of cold halocline in the central Arctic. Atmospheric and Oceanic Science Letters 2(3):148–152. যাইহোক, গত কয়েক দশক ধরে আটলান্টিকের পানির উষ্ণতাBarton, B., Lenn, Y-D. & Lique, C. (2018). Observed atlantification of the Barents Sea causes the Polar Front to limit the expansion of winter sea ice, Journal of Physical Oceanography, 28(8), 1849-1866 ও স্রোতের সংযোগ পূর্ব সুমেরু সমুদ্রের বরফ গলে আটলান্টিকের পানির তাপের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।Igor V. Polyakov1, Andrey V. Pnyushkov, Matthew B. Alkire, Igor M. Ashik, Till M. Baumann, Eddy C. Carmack, Ilona Goszczko, John Guthrie, Vladimir V. Ivanov,Torsten Kanzow, Richard Krishfield, Ronald Kwok, Arild Sundfjord, James Morison, Robert Rember, Alexander Yulin (2017). Greater role for Atlantic inflows on sea-ice loss in the Eurasian Basin of the Arctic Ocean. Science, 356(6335), 285-291 ২০১৬-২০১৮ সালের সবচেয়ে সাম্প্রতিক অনুমানগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, পৃষ্ঠের মহাসাগরীয় তাপ প্রবাহ এখন পূর্ব ইউরেশীয় অববাহিকার বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহকে ছাড়িয়ে গেছে।Polyakov, I., Rippeth, T., Fer, I., Alkire, M., Baumann, T., Carmack, E., Ivanov, V., Janout, M. A., Padman, L., Pnyushkov, A. & Rember, R (2020). Weakening of the cold halocline layer exposes sea ice to oceanic heat in the eastern Arctic Ocean. Journal of Climate, 33(18), 8107-8123 একই সময়ের মধ্যে দুর্বল হ্যালোক্লিন স্তরবিন্যাস সামুদ্রিক বরফ হ্রাসের সাথে সম্পর্কিত বলে বিবেচিত এমন ক্রমবর্ধমান উচ্চ মহাসাগরীয় স্রোতের সাথে মিলিত হয়েছে যা এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান মিশ্রণের ইঙ্গিত করে।Polyakov, I., Rippeth, T., Fer, I., Baumann, T., Carmack, E., Ivanov, V., Janout, M. A., Padman, L., Pnyushkov, A. & Rember, R (2020). Intensification of Near-Surface Currents and Shear in the Eastern Arctic Ocean: A More Dynamic Eastern Arctic Ocean, Geophysical Research Letters, 47(16), e2020GL089469 বিপরীতে পশ্চিম সুমেরুর মিশ্রণের প্রত্যক্ষ পরিমাপ ইঙ্গিত দেয় যে, ২০১২ সালের শক্তিশালী সুমেরু ঘূর্ণিঝড় 'নিখুঁত ঝড়' পরিস্থিতিতেও আটলান্টিকের পানির তাপ মধ্যবর্তী গভীরতায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে।Lincoln, B., Rippeth, T., Lenn, Y-D., Timmermans, M-L., Williams, W. & Bacon, S (2016). Wind-driven mixing at intermediate depths in an ice-free Arctic Ocean. Geophysical Research Letters, 43(18), 9749-9756 প্রশান্ত ও আটলান্টিক উভয়ই মহাসাগর থেকে উদ্ভুত পানি গ্রিনল্যান্ড ও স্‌ভালবার্দ দ্বীপের মধ্যে ফ্র্যাম প্রণালী দিয়ে বেরিয়ে যায়, যা প্রায় গভীর ও প্রশস্ত। এই বহিঃপ্রবাহ প্রায় ৯ এসভি। ফ্র্যাম প্রণালীর প্রস্থে উত্তর মহাসাগরের আটলান্টিক অংশে অন্তঃপ্রবাহ ও বহিঃপ্রবাহ উভয়ই হয়ে থাকে। এই কারণে এটি কোরিওলিস প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়, যা পশ্চিম দিকে পূর্ব গ্রিনল্যান্ড স্রোতে বহিঃপ্রবাহকে কেন্দ্রীভূত করে এবং পূর্ব দিকে নরওয়েজিয়ান অন্তঃপ্রবাহে প্রবাহিত হয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় পানিও গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল ও হাডসন প্রণালী (১-২ এসভি) বরাবর বেরিয়ে যায়, যা কানাডীয় দ্বীপপুঞ্জে পরিপোষক পদার্থ সরবরাহ করে। উল্লিখিত হিসাবে, বরফের গঠন ও চলনের প্রক্রিয়াটি উত্তর মহাসাগরের সঞ্চালন ও পানির ভর গঠনের একটি মূল চালিকাশক্তি। এই সাপেক্ষতা সহ উত্তর মহাসাগরে সামুদ্রিক বরফ আচ্ছাদনে ঋতু পরিবর্তনের কারণে তারতম্য দেখা দেয়। সামুদ্রিক বরফের চলন বায়ুর চাপের ফলাফল, যা সুমেরুতে সারা বছর ধরে বেশ কয়েকটি আবহাওয়াগত অবস্থার সাথে সম্পর্কিত। উদাহরণস্বরূপ, বিউফোর্ট উচ্চ তল—সাইবেরীয় উচ্চ তল ব্যবস্থার একটি সম্প্রসারণ—একটি চাপ ব্যবস্থা যা বিউফোর্ট গায়ারের ঘূর্ণিঝড় মুক্ত গতিকে চালিত করে। গ্রীষ্মের সময় উচ্চ চাপের এই অঞ্চলটিকে এর সাইবেরীয় ও কানাডীয় পার্শ্ব ঘেঁষে প্রবল ধাক্কা দেওয়া হয়। উপরন্তু, গ্রিনল্যান্ডের উপর একটি সমুদ্রস্তর চাপ (এসএলপি) শৈলশিরা রয়েছে যা বরফ রফতানির সুবিধার্থে ফ্র্যাম প্রণালীর মধ্য দিয়ে শক্তিশালী উত্তর বায়ু চালিত করে। গ্রীষ্মে এসএলপি বৈপরীত্য ক্ষুদ্র হওয়ায় হালকা বায়ু উৎপাদন করে। মৌসুমী চাপ ব্যবস্থা চলনের একটি চূড়ান্ত উদাহরণ হল নিম্ন চাপ ব্যবস্থা যা নর্ডিক ও ব্যারেন্টস সাগরের উপরে বিদ্যমান। এটি আইসল্যান্ডীয় নিম্ন স্তরের একটি সম্প্রসারণ, যা এই এলাকায় মহাসাগরীয় ঘূর্ণিঝড় সঞ্চালন তৈরি করে। গ্রীষ্মে অগভীর অংশ উত্তর মেরুতে কেন্দ্রের দিকে সরে যায়। সুমেরুর এই সকল বৈচিত্র গ্রীষ্মের মাসগুলিতে বরফের প্রবাহকে এর দুর্বলতম বিন্দুতে পৌঁছাতে অবদান রাখে। এছাড়াও প্রমাণ রয়েছে যে, প্রবাহটি সুমেরু দোলন ও আটলান্টিক বহুদশকীয় দোলনের পর্যায়ের সাথে যুক্ত। উত্তর মহাসাগরের দক্ষিণ চুকচাই সাগরে একটি প্রধান রুদ্ধক বিন্দু রয়েছে। এই বিন্দুর মাধ্যমে আলাস্কা ও পূর্ব সাইবেরিয়ার মধ্যবর্তী বেরিং প্রণালী দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করা যায়। বরফের অবস্থা ভেদে, উত্তর মহাসাগর হল পূর্ব ও পশ্চিম রাশিয়ার মধ্যে নিকটতম সামুদ্রিক যোগসূত্র। উত্তর মহাসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অনেকগুলি ভাসমান গবেষণা স্টেশন রয়েছে। সারা বছরই এই মহাসাগরের উপরিতলের অধিকাংশ স্থান বরফে আবৃত থাকে। এর ফলে বায়ুর উষ্ণতাও হিমশীতল হয়। বিষুবরেখার দিকে প্রবাহিত শীতল বায়ুর একটি প্রধান উৎস হল উত্তর মহাসাগর। ৬০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে উষ্ণ বায়ুর সঙ্গে মিলিত হয়ে এই বায়ু বৃষ্টি ও তুষারপাত ঘটায়। মুক্ত অঞ্চলে, বিশেষ করে দক্ষিণ জলভাগে, প্রচুর সামুদ্রিক জীবজন্তু দেখা যায়। এই মহাসাগরের প্রধান বন্দরগুলি হল মুরমানস্ক, আরখানগেলস্ক ও প্রধো উপসাগর। বরফ টুপি থাম্ব|উত্তর মহাসাগরে সামুদ্রিক আচ্ছাদন, ২০০৫ ও ২০০৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ের পরিধি দেখাচ্ছে। থাম্ব|উত্তর মহাসাগরের সামুদ্রিক বরফে অস্থায়ী লজিস্টিক স্টেশন স্থাপন করা যেতে পারে, এখানে, একটি টুইন অটারকে ৮৬°উত্তর, ৭৬°৪৩'পশ্চিম এ আচ্ছাদিত বরফের উপর জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে। থাম্ব|ডান| উত্তর মহাসাগরীয় সামুদ্রিক বরফের প্রসারক্ষেত্রের ঋতুভিত্তিক হ্রাসবৃদ্ধি ও দীর্ঘকালীন হ্রাস।Fetterer, F., K. Knowles, W. Meier, and M. Savoie. 2002, updated 2009. Sea Ice Index. Boulder, Colorado USA: National Snow and Ice Data Center. Digital media. থাম্ব|ডান| উত্তর মহাসাগরীয় সামুদ্রিক বরফের ঘনত্বের ঋতুভিত্তিক হ্রাসবৃদ্ধি ও দীর্ঘকালীন হ্রাস।Zhang, Jinlun and D.A. Rothrock: Modeling global sea ice with a thickness and enthalpy distribution model in generalized curvilinear coordinates, Mon. Wea. Rev. 131(5), 681-697, 2003. উত্তর মহাসাগরের অধিকাংশ অঞ্চল একটি বরফের "টুপি" দ্বারা আবৃত থাকে। এটির ঋতু অনুযায়ী হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে থাকে। এই টুপির প্রসারক্ষেত্রটির (যা মূলত সামুদ্রিক বরফ দ্বারা গঠিত) আকার ১৯৮০ সালে ছিল । ২০১০ সালে তা কমে হয় । ঋতুভিত্তিক পার্থক্য প্রায় । সর্বোচ্চ প্রসার এপ্রিল মাসে এবং সর্বনিম্ন প্রসার সেপ্টেম্বরে। বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত বরফের বিরাট অঞ্চলকে স্থানান্তর বা ঘোরাতে সক্ষম হয়। চাপ অঞ্চলও সৃষ্টি হয়। সেখানে বরফের স্তুপ জমে প্যাক আইস গঠন করে।।Sea Ice Index . Nsidc.org. Retrieved on 6 March 2011.Polar Sea Ice Cap and Snow – Cryosphere Today . Arctic.atmos.uiuc.edu (23 September 2007). Retrieved on 2011-03-06. উত্তর মহাসাগরীয় সামুদ্রিক বরফের প্রসার ও গভীরতা এবং বরফের মোট ঘনত্ব বিগত দশকগুলিতে হ্রাস পেয়েছে। হিমশৈল মাঝে মাঝে উত্তর এলেসমেয়ার দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পশ্চিম গ্রিনল্যান্ড ও প্রান্তবর্তী উত্তর-পূর্ব কানাডার হিমবাহ থেকে হিমশৈল তৈরি হয়। হিমশৈল সামুদ্রিক বরফ নয় তবে আচ্ছাদন বরফের মধ্যে অনুবিদ্ধ হয়ে যেতে পারে। হিমশৈল জাহাজের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে, যার মধ্যে টাইটানিকের ঘটনা অন্যতম বিখ্যাত। অক্টোবর থেকে জুন পর্যন্ত মহাসাগর কার্যত বরফে ঢাকা থাকে ও জাহাজের উপরি কাঠামো অক্টোবর থেকে মে পর্যন্ত বরফের সাপেক্ষে থাকে। আধুনিক বরফভাঙ্গা জাহাজের আবির্ভাবের আগে উত্তর মহাসাগরে যাত্রা করা জাহাজগুলি সামুদ্রিক বরফে আটকা পড়া বা চূর্ণ হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতো (যদিও এইসব বিপদ সত্ত্বেও বাইচিমো কয়েক দশক ধরে উত্তর মহাসাগরের মধ্য দিয়ে চলাচল করেছিল)। জলবায়ু থাম্ব|১৯৯০ ও ১৯৯৯ সালের মধ্যে বরফের পরিবর্তন উত্তর মহাসাগর একটি মেরু জলবায়ুতে রয়েছে যাকে ক্রমাগত ঠান্ডা ও তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ বার্ষিক তাপমাত্রা পরিসীমা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। শীতকালকে মেরু রাত্রি, প্রচণ্ড ঠান্ডা, ঘন ঘন নিম্ন-স্তরের তাপমাত্রার পরিবর্তন ও স্থিতিশীল আবহাওয়ার অবস্থা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ঘূর্ণিঝড় শুধুমাত্র আটলান্টিকের দিকে সাধারণ ঘটনা। গ্রীষ্মকালকে ক্রমাগত দিনের আলো (মধ্যরাতের সূর্য) দ্বারা চিহ্নিত করা হয় ও বাতাসের তাপমাত্রা -এর উপরে কিছুটা বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড় গ্রীষ্মে অধিক ঘন ঘন হয়ে থাকে এবং বৃষ্টি বা তুষারও হতে পারে। এখানে সারা বছর আকাশ মেঘলা থাকে, গড় মেঘের আবরণ শীতকালে ৬০% থেকে গ্রীষ্মকালে ৮০% পর্যন্ত থাকে। উত্তর মহাসাগরের পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা সমুদ্রের পানির হিমাঙ্কের কাছাকাছি প্রায় থাকে বলে মোটামুটি স্থিতিশীল। বিশুদ্ধ পানির বিপরীতে সমুদ্রের পানির ঘনত্ব হিমাঙ্কের কাছাকাছি আসার সাথে সাথে বৃদ্ধি পায় এবং এইভাবে এটি নিচের দিকে বাড়তে থাকে। এটা সাধারণত প্রয়োজনীয় যে সমুদ্রের উপরের পানি হিমাঙ্কে ঠাণ্ডা হয় যাতে সামুদ্রিক বরফ তৈরি হয়। শীতকালে তুলনামূলকভাবে উষ্ণ সমুদ্রের পানি এমনকি বরফে ঢাকা থাকলেও একটি পরিমিত প্রভাব পড়ে। এটি একটি কারণ যে সুমেরু অ্যান্টার্কটিক মহাদেশে লক্ষিত চরম তাপমাত্রা ধারণ করে না। সুমেরুর বরফ রাশির কত রাশি বরফ উত্তর মহাসাগরকে ঢেকে রাখে তার মধ্যে যথেষ্ট ঋতুগত তারতম্য রয়েছে। সুমেরুর বরফ রাশির বেশিরভাগ অংশ বছরের প্রায় ১০ মাস তুষারে ঢাকা থাকে। সর্বাধিক তুষার আচ্ছাদন মার্চ বা এপ্রিলে - প্রায় হিমায়িত সমুদ্রের উপরে থাকে। পৃথিবীর ইতিহাসে সুমেরুর জলবায়ু উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। প্যালিওসিন-ইওসিন তাপীয় সর্বোচ্চ ৫৫ মিলিয়ন বছর আগে যখন বৈশ্বিক জলবায়ু প্রায় উষ্ণতার মধ্য দিয়ে যায় তখন এই অঞ্চলটি গড় বার্ষিক তাপমাত্রায় পৌঁছেছিল। উত্তরাঞ্চলীয়Drill cores were recovered from the Lomonosov Ridge, presently at 87°N উত্তর মহাসাগরের উপরিভাগের পানি ঋতুগতভাবে যথেষ্ট উষ্ণ হয় কারণ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জীবনরূপকে (ডাইনোফ্ল্যাজেলেটস অ্যাপেক্টোডিনিয়াম অগাস্টাম) গঠনের জন্য -এর বেশি তাপমাত্রার প্রয়োজন। বর্তমানে, সুমেরু অঞ্চল গ্রহের বাকি অংশের তুলনায় দ্বিগুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। জীবতত্ত্ব থাম্ব|তিনটি মেরু ভালুক উত্তর মেরুর কাছে ইউএসএস হনুলুলুর কাছে আসছে। উত্তর মহাসাগরে সুস্পষ্ট ঋতুর জন্য ২-৬ মাসের নিশীথ সূর্য ও মেরু রাতের কারণে বরফ শৈবাল ও ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের মতো সালোকসংশ্লেষণকারী জীবের প্রাথমিক উৎপাদন বসন্ত ও গ্রীষ্মের মাসগুলিতে (মার্চ/এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) সীমাবদ্ধ। মধ্য উত্তর মহাসাগর ও সংলগ্ন মহীসোপান প্রাথমিক উৎপাদকের গুরুত্বপূর্ণ খাদকের মধ্যে রয়েছে জুপ্ল্যাঙ্কটন, বিশেষ করে কোপেপড (ক্যালানাস ফিনমার্চিকাস, ক্যালানাস গ্লাসিয়ালিস ও ক্যালানাস হাইপারবোরিয়াস) ও ইউফৌসিডস, পাশাপাশি বরফ-সম্পর্কিত প্রাণীকুল (যেমন অ্যাম্পিফডস)। এই প্রাথমিক খাদকরা প্রাথমিক উৎপাদক ও উচ্চতর ট্রফিক স্তরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ তৈরি করে। উত্তর মহাসাগরে উচ্চতর ট্রফিক স্তরের সংমিশ্রণ অঞ্চলভেদে (আটলান্টিক পার্শ্ব বনাম প্রশান্ত মহাসাগরীয় পার্শ্ব) ও সামুদ্রিক বরফের আচ্ছাদনের সাথে পরিবর্তিত হয়। আটলান্টিক-প্রভাবিত উত্তর মহাসাগরের মহীসোপানে ব্যারেন্টস সাগরের মাধ্যমিক খাদক মূলত হেরিং, ইয়ং কড ও ক্যাপেলিন সহ উপ-উত্তর প্রজাতি। মধ্য উত্তর মহাসাগরের বরফ আচ্ছাদিত অঞ্চলে মেরু কড হল প্রাথমিক খাদকের একটি মধ্য শিকারী। উত্তর মহাসাগরের শীর্ষ শিকারী হল - সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন সীল, তিমি ও মেরু ভালুক - যারা মাছ শিকার করে। উত্তর মহাসাগরের বিপন্ন সামুদ্রিক প্রজাতির মধ্যে রয়েছে ওয়ালরাস ও তিমি। অঞ্চলটির একটি ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্র রয়েছে ও এটি বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের সংস্পর্শে আসে কারণ এটি বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দ্রুত উষ্ণ হয়। উত্তরের পানিতে লায়ন্স মানি জেলিফিশ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ও ব্যান্ডেড গানেল হল সমুদ্রে বসবাসকারী একমাত্র প্রজাতির গানেল। থাম্ব|মিনকে তিমি থাম্ব|উত্তর বরফ ভাসমান তুষারস্তরের উপর ওয়ালরাস প্রাকৃতিক সম্পদ পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র, প্লেসার মজুদ, পলিমেটালিক নোডুলস, বালি ও নুড়ি সমষ্টি, মাছ, সীল এবং তিমি এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।Arctic Ocean . CIA World Fact Book সমুদ্রের মধ্যভাগের রাজনৈতিক মৃত অঞ্চলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, নরওয়ে ও ডেনমার্কের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু।Reynolds, Paul (25 October 2005) The Arctic's New Gold Rush . BBC. এটি বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি বিশ্বের অনাবিষ্কৃত তেল ও গ্যাস সম্পদের ২৫% বা এরও বেশি ধারণ করতে পারে।Yenikeyeff, Shamil and Krysiek, Timothy Fenton (August 2007) The Battle for the Next Energy Frontier: The Russian Polar Expedition and the Future of Arctic Hydrocarbons . Oxford Institute for Energy Studies. পরিবেশগত উদ্বেগ সুমেরু বরফ গলন সুমেরু বরফ আচ্ছাদন পাতলা হচ্ছে ও ওজোন স্তরে একটি মৌসুমী ফাঁক প্রায়শই ঘটে। সুমেরু সামুদ্রিক বরফের আয়তন হ্রাস গ্রহের গড় অ্যালবেডো হ্রাস করে যা সম্ভবত একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রক্রিয়ায় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।Earth – melting in the heat? Richard Black, 7 October 2005. BBC News. Retrieved 7 December 2006. গবেষণায় দেখা গেছে যে, সুমেরু ২০৪০ সালের মধ্যে মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মে বরফমুক্ত হতে পারে।Russia the next climate recalcitrant Peter Wilson, 17 November 2008, The Australian. Retrieved 3 November 2016. শেষবার সুমেরু কখন বরফমুক্ত ছিল তার অনুমান নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে: ৬৫ মিলিয়ন বছর আগের জীবাশ্মগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, প্রায় ৫,৫০০ বছর আগেও সেখানে উদ্ভিদের অস্তিত্ব ছিল; বরফ ও সমুদ্রের অন্তঃস্থল চূড়ান্ত উষ্ণ সময়কাল থেকে ৮,০০০ বছর বা চূড়ান্ত আন্তঃগ্লাসিয়াল সময়কাল থেকে ১২৫,০০০ বছরেরও বেশি পুরনো। সুমেরুর উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ গলিত পানি উত্তর আটলান্টিকে প্রবেশ করতে পারে ফলস্বরূপ সম্ভবত বৈশ্বিক মহাসাগরের বর্তমান নিদর্শনগুলিকে ব্যাহত করতে পারে। তখন পৃথিবীর জলবায়ুতে সম্ভাব্য মারাত্মক পরিবর্তন ঘটতে পারে। সামুদ্রিক বরফের পরিমাণ হ্রাস ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উন্মুক্ত পানির উপর ২০১২ সালের শক্তিশালী সুমেরু ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঝড়ের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেমন ম্যাকেঞ্জি বদ্বীপের মতো স্থানে উপকূলে উদ্ভিদের সম্ভাব্য লবণাক্ত পানির ক্ষতি রয়ে যায় কারণ শক্তিশালী ঝড়ে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মেরু ভালুক ও মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ বাড়িয়েছে। সামুদ্রিক বরফ গলে যাওয়ার কারণে মেরু ভাল্লুকদের খাদ্যের নতুন উৎস খুঁজতে হচ্ছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এবং ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিস্থিতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যখন নোভায়া জেমলিয়ার দ্বীপপুঞ্জে মেরু ভাল্লুকের ব্যাপক আক্রমণের ফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। কয়েক ডজন মেরু ভালুককে বাড়ি, সরকারি ভবন ও বসতি এলাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ক্ল্যাথ্রেট ভাঙ্গন সামুদ্রিক বরফ ও এটি যে শীতল পরিস্থিতি বজায় রাখে তা উপকূলরেখায় ও এর কাছাকাছি মিথেন গ্যাস জমাকে স্থিতিশীল করতে কাজ করে, যা ক্ল্যাথ্রেট ভেঙ্গে যাওয়া ও বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস ছড়িয়ে পড়াকে প্রতিরোধ করে ফলে উষ্ণতা আরও বৃদ্ধি করে। এই বরফ গলে বায়ুমণ্ডলে একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউজ গ্যাস মিথেন প্রচুর পরিমাণে নির্গত হতে পারে, যার ফলে একটি শক্তিশালী ধনাত্মক প্রতিক্রিয়া চক্রে অধিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং সামুদ্রিক বংশ ও প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। অন্যান্য উদ্বেগ অন্যান্য পরিবেশগত উদ্বেগগুলি উত্তর মহাসাগরের তেজস্ক্রিয় দূষণের সাথে সম্পর্কিত উদাহরণস্বরূপ, কারা সাগরে রুশ তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ডাম্পের জায়গা,400 million cubic meters of radioactive waste threaten the Arctic area Thomas Nilsen, Bellona, 24 August 2001. Retrieved 7 December 2006. স্নায়ুযুদ্ধ পারমাণবিক পরীক্ষার জায়গা যেমন নোভায়া জেমল্যা,Plutonium in the Russian Arctic, or How We Learned to Love the Bomb Bradley Moran, John N. Smith. Retrieved 7 December 2006. গ্রিনল্যান্ডে ক্যাম্প সেঞ্চুরির দূষণকারী ও ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিপর্যয় থেকে তেজস্ক্রিয় দূষণ। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই পাঁচটি দেশ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, নরওয়ে, ডেনমার্ক/গ্রিনল্যান্ড) উত্তর মেরুর নিকটবর্তী মধ্য উত্তর মহাসাগরের ১.১ মিলিয়ন বর্গমাইল অঞ্চল থেকে তাদের মাছ ধরার জাহাজ দূরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে। চুক্তিতে সামুদ্রিক সম্পদ সম্পর্কে অধিক ভাল বৈজ্ঞানিক জ্ঞান না থাকলে ও সেই সম্পদগুলিকে রক্ষা করার জন্য একটি নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এই দেশগুলিকে সেখানে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। আরও পড়ুন Neatby, Leslie H., Discovery in Russian and Siberian Waters 1973 Ray, L., and bacon, B., eds., The Arctic Ocean 1982 Thorén, Ragnar V. A., Picture Atlas of the Arctic 1969 তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ আর্কটিক কাউন্সিল Arctic Environmental Atlas Interactive map আর্কটিক গ্রেট রিভারস অবজারভেটরি (আর্কটিকজিআরও) উত্তর মহাসাগর। দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এনআইএসডিসি-তে সোভিয়েত ভাসমান বরফ স্টেশন থেকে উত্তর মহাসাগরের দৈনিক রাউইনসন্ডে তথ্য (১৯৫৪–১৯৯০) বসন্তকালে একটি বরফের ভাসমান তুষারস্তরে স্থাপন করা ওয়েব ক্যাম থেকে NOAA নর্থ পোল ওয়েব ক্যাম NOAA Near-realtime North Pole Weather Data Data from instruments deployed on an ice floe আন্তর্জাতিক পোলার ফাউন্ডেশন বিষয়শ্রেণী:মহাসাগর বিষয়শ্রেণী:পৃথিবীর চরম বিন্দু বিষয়শ্রেণী:উত্তর মহাসাগরের ভূমিরূপ বিষয়শ্রেণী:উত্তর আমেরিকার ভূগোল
আটলান্টিক মহাসমুদ্র
https://bn.wikipedia.org/wiki/আটলান্টিক_মহাসমুদ্র
redirect আটলান্টিক মহাসাগর
ভারত মহাসাগর
https://bn.wikipedia.org/wiki/ভারত_মহাসাগর
thumb|right|300px|ভারত মহাসাগর ভারত মহাসাগর হল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। পৃথিবীর মোট জলভাগের ২০ শতাংশ এই মহাসাগর অধিকার করে আছে। এই মহাসাগরের উত্তর সীমায় রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশ; পশ্চিমে রয়েছে পূর্ব আফ্রিকা; পূর্বে রয়েছে ইন্দোচীন, সুন্দা দ্বীপপুঞ্জ ও অস্ট্রেলিয়া; এবং দক্ষিণে রয়েছে দক্ষিণ মহাসাগর সংজ্ঞান্তরে অ্যান্টার্কটিকা।Indo-American relations : foreign policy orientations and perspectives of P.V. Narasimha Rao and Bill Clinton By Anand Mathur; Page 138 "India occupies the central position in the Indian- Ocean region that is why the Ocean was named after India"Politics of the Indian Ocean region: the balances of power By Ferenc Albert Váli; Page 25Geography Of India For Civil Ser Exam By Hussain; Page 12-251; "INDIA AND THE GEO-POLITICS OF THE INDIAN OCEAN"(16-33) ভারত মহাসাগর বিশ্ব মহাসাগরগুলির সঙ্গে আন্তঃসম্পর্কযুক্ত। ২০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে এবং ১৪৬°৫৫' পূর্ব দ্রাঘিমা প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগরকে বিচ্ছিন্ন করেছে।Limits of Oceans and Seas . International Hydrographic Organization Special Publication No. 23, 1953. ভারত মহাসাগরের সর্ব-উত্তর অংশটি পারস্য উপসাগরের ৩০ ডিগ্রি অক্ষরেখায় অবস্থিত। দক্ষিণভাগে (আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত) ভারত মহাসাগরের প্রস্থ প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার (৬,২০০ মাইল)। লোহিত সাগর ও পারস্য উপসাগরসহ এই মহাসাগরের মোট আয়তন ৭৩,৫৫৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার (২৮,৩৫০,০০০ বর্গ মাইল)।http://www.enchantedlearning.com/subjects/ocean/ ভারত মহাসাগরের ঘনত্ব ২৯২,১৩১,০০০ ঘন কিলোমিটার (৭০,০৮৬,০০০ ঘন মাইল)। মহাসাগরের মহাদেশীয় প্রান্তসীমায় অনেক ছোটো ছোটো দ্বীপ অবস্থিত। ভারত মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্রগুলি হল মাদাগাস্কার (বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপ), রিইউনিয়ন দ্বীপ, কোমোরোস, সেশেল, মালদ্বীপ, মরিশাস ও শ্রীলঙ্কা। ইন্দোনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জ এই মহাদেশের পূর্ব সীমায় অবস্থিত। ব্যুৎপত্তি কমপক্ষে ১৫১৫ সাল থেকে ভারত মহাসাগরের নামকরণ করা হয়েছে ভারত নাম থেকে (ওশেনাস ওরিয়েন্টালস ইনডিকাস)। ভারত, তখন, "সিন্ধু নদীর অঞ্চল" এর গ্রীক / রোমান নাম।; প্রাচীন ভারতীয়রা একে সিন্ধু মহাসাগর বা সিন্ধুর বিশাল সমুদ্র বলে ডাকত, এই মহাসাগরকে বিভিন্ন ভাষায় হিন্দু মহাসাগর, ভারতীয় মহাসাগর ইত্যাদি বলা হত। আগে ভারত মহাসাগর 'পূর্ব মহাসাগর' নামেও পরিচিত ছিল, ১৮শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই শব্দটি ব্যবহৃত হত। বিপরীতভাবে, যখন ১৫শ শতাব্দীতে চীন ভারত মহাসাগরে অন্বেষণ করছিল, তারা এটিকে "পশ্চিম মহাসাগর" বলে অভিহিত করেছিল। প্রাচীন গ্রীক ভূগোল অনুযায়ী গ্রীকরা ভারত মহাসাগর অঞ্চলটিকে এরিথ্রিয়ান সাগর বলে জানত। "ভারত মহাসাগর বিশ্ব" এর তুলনামূলকভাবে নতুন ধারণা অনুযায়ী এবং এর ইতিহাস পুনরায় লেখার চেষ্টার ফলস্বরূপ নতুন নামের প্রস্তাব হয়েছে, যেমন 'এশিয়ান সাগর' এবং 'আফরাশিয়ান সাগর'। অবস্থান এর উত্তর দিকে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও ইরান; পশ্চিমে আরব উপদ্বীপ ও আফ্রিকা; পুর্বে রয়েছে মালয় উপদ্বীপ, অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা দ্বীপ এবং দক্ষিণ দিকে রয়েছে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ। ভারত সাগরের তিনটি প্রধান বাহু হচ্ছে: আরব সাগর, আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর। সীমান্তবর্তী দেশ এশিয়া </div> আফ্রিকা (মায়োত ও রেউনিওঁ) অস্ট্রেলিয়া আসমর ও কারটিয়ের দ্বীপপুঞ্জ এই দেশগুলির মাঝে দ্বীপ দেশ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, বাহরাইন, কমোরোস, মাদাগাস্কার, মরিশাস ও সেশেল। বাণিজ্য thumb|বিশ্বের বৃহত্তম মহাসাগর বাণিজ্য রুটে উত্তর ভারত মহাসাগর অন্তর্ভুক্ত। ভারত মহাসাগরের সমুদ্র লেনগুলি বিশ্বের সবচেয়ে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়। ভারত মহাসাগর এবং এর অত্যাবশ্যক চোকপয়েন্টগুলির মধ্য দিয়ে বিশ্বের সমুদ্রসীমায় ৮০ শতাংশেরও বেশি তেল পরিবহনের বাণিজ্য সম্পূর্ণ হয়। এই মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত হরমুজ প্রণালীর মধ্য দিয়ে ৪০ শতাংশ, মালাক্কা প্রণালীর মধ্য দিয়ে ৩৫ শতাংশ এবং বাব-মান্দাব প্রণালীর মধ্য দিয়ে ৮ শতাংশ তেল পরিবহন করা হয়। তথ্যসূত্র উৎস বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:ভারত মহাসাগর বিষয়শ্রেণী:মহাসাগর বিষয়শ্রেণী:পূর্ব আফ্রিকা বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ এশিয়া বিষয়শ্রেণী:পশ্চিম এশিয়া বিষয়শ্রেণী:ভারত মহাসাগরের ভূমিরূপ
প্রশান্ত মহাসাগর
https://bn.wikipedia.org/wiki/প্রশান্ত_মহাসাগর
right|thumb|প্রশান্ত মহাসাগরের আগ্নেয়গিরি ও গিরিখাতের ছবি প্রশান্ত মহাসাগর পৃৃথিবীর মহাসাগর সম্বন্ধীয় বিভাগগুলির মধ্যে উপরি ক্ষেত্রফল ও গভীরতার বিচারে সর্বাধিক৷ এটি উত্তরে উত্তর মহাসাগর বা সুমেরু মহাসাগর থেকে দক্ষিণ মহাসাগর বা কুমেরু মহাসাগর, পক্ষান্তরে সংজ্ঞানুযায়ী অ্যান্টার্কটিকা পর্যন্ত বিস্তৃত৷ এর পশ্চিম সীমান্তে রয়েছে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া এবং পূর্ব সীমান্তে রয়েছে উভয় আমেরিকা৷ আয়তনে অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত (আন্টার্কটিকা সংলগ্ন কুমেরু সাগরের সীমা সংজ্ঞায়িত করে) প্রশান্ত মহাসাগর বিশ্ব মহাসাগরের উপক্ষেত্রগুলির মধ্যে সর্বাধিক এবং পৃথিবীর মোট জলভাগের উপরিতলের ৪৬ শতাংশ ও পৃথিবীর পৃষ্ঠতলের ৩২ শতাংশ অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত, যা পৃথিবীর একক স্থলভাগ ও জলভাগের ক্ষেত্রফলের তুলনায় বৃৃহত্তর তথা ১৪,৮০,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার৷"Pacific Ocean". Britannica Concise. 2008: Encyclopædia Britannica, Inc. জল গোলার্ধ এবং পশ্চিম গোলার্ধ উভয়েরই কেন্দ্রবিন্দু রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরে৷ কোরিওলিস প্রভাবের ফলে উৎপন্ন মহাসাগরীয় প্রচলন প্রশান্ত মহাসাগরকে দুটি বৃহত্তর স্বতন্ত্র জলরাশিতে বিভক্ত করেছে, যা উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর নামে পরিচিত৷ ক্ষেত্রদুটি নিরক্ষরেখা অঞ্চলে মিলিত হয়৷ নিরক্ষরেখার নিকট দ্ব্যর্থকভাবে অবস্থান করা গালাপাগোস এবং গিলবার্ট দ্বীপপুঞ্জকে পুরোপুরিভাবে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের অংশ হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে৷ এটির গড় গভীরতা ৷ পশ্চিমা উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মারিয়ানা খাতেরচ্যালেঞ্জার ডিপ বিশ্বের গভীরতম বিন্দু, যার গভীরতা মোটামুটি . দক্ষিণ গোলার্ধের গভীরতম বিন্দু টোঙ্গা খাতের গভীর হরাইজন ডিপও প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত৷ পৃথিবীর তৃৃৃতীয় গভীরতম বিন্দু সিরেনা ডিপও মারিয়ানা খাতে অবস্থিত৷ পশ্চিম প্রশান্তত মহাসাগরে রয়েছে একাধিক বৃহত্তম পর্যন্তিক সাগর৷ এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সাগর হলো দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর, জাপান সাগর, ওখোৎস্ক সাগর, ফিলিপাইন সাগর, কোরাল সাগর এবং তাসমান সাগর৷ নামকরণ এশিয়া এবং ওশিয়ানিয়া তথা অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় মানুষজন প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই প্রশান্ত মহাসাগর অতিক্রম করে থাকলেও, এই মহাসাগরের পূর্ব অংশ ইউরোপীয়রাই দৃষ্টির অগোচরে আনেন। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকে ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে স্পেনীয় নাবিক তথা অনুসন্ধানকারী ভাস্কো নুয়েঁজ দে বালবোয়া পানামা যোজক অতিক্রম করেন এবং বিস্তারিত "দক্ষিণী সমুদ্র" আবিষ্কার করেন এবং স্পেনীয় ভাষায় তার নাম রাখেন মার দেল সুর। ১৫২১ খ্রিস্টাব্দে ওই মহাসাগরের বর্তমান নাম দিয়েছিলেন পর্তুগিজ নাবিক তথা অনুসন্ধানকারী ফার্ডিনান্ড ম্যাগেলান।সেই সময় নৌকাযোগে প্রদক্ষিণ করার ক্ষেত্রে স্পেনীয়দের জুড়ি মেলা ভার ছিল। সমুদ্রে বহু প্রতিকূল পরিস্থিতি অতিক্রম করে‌ ফার্ডিনান্ড ম্যাগেলান এই স্থানে এসে সামান্য প্রশস্তি পান। তিনি এই জলভাগের নাম রাখেন মার প্যাসেফিকো, পর্তুগিজ এবং স্প্যানিশ উভয় ভাষাতেই যার অর্থ প্রশান্ত মহাসাগর। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত বৃহত্তর সাগর আয়তনের বিচারে ছোট থেকে বড় আকারের সমুদ্রের তালিকা নিম্নরূপ:https://www.livescience.com/29533-the-worlds-biggest-oceans-and-seas.htmlhttps://www.worldatlas.com/http://listofseas.com/ অস্ট্রেলীয় ভূমধ্যসাগর – ৯.০৮০ মিলিয়ন বর্গকিমি ফিলিপাইন সাগর - ৫.৬৯৫ মিলিয়ন বর্গকিমি কোরাল সাগর – ৪.৭৯১ মিলিয়ন বর্গকিমি দক্ষিণ চীন সাগর – ৩.৫ মিলিয়ন বর্গকিমি তাসমান সাগর – ২.৩ মিলিয়ন বর্গকিমি বেরিং সাগর – ২ মিলিয়ন বর্গকিমি ওখোৎস্ক সাগর – ১.৫৮৩ মিলিয়ন বর্গকিমি আলাস্কা উপসাগর – ১.৫৩৩ মিলিয়ন বর্গকিমি পূর্ব চীন সাগর – ১.২৪৯ মিলিয়ন বর্গকিমি গ্রাউর সাগর – ১.১৪ মিলিয়ন বর্গকিমি জাপান সাগর – ৯৭৮,০০০ বর্গকিমি সলোমন সাগর – ৭২০,০০০ বর্গকিমি বাণ্ডা সাগর – ৬৯৫,০০০ বর্গকিমি আরাফুরা সাগর – ৬৫০,০০০ বর্গকিমি তিমুর সাগর – ৬১০,০০০ বর্গকিমি পীতসাগর – ৩৮০,০০০ বর্গকিমি জাভা সাগর – ৩২০,০০০ বর্গকিমি থাইল্যান্ড উপসাগর – ৩২০,০০০ বর্গকিমি কারপেন্টারিয়া উপসাগর – ৩০০,০০০ বর্গকিমি সুলাবেসি সাগর – ২৮০,০০০ বর্গকিমি সুলু সাগর – ২৬০,০০০ বর্গকিমি আনাদির উপসাগর – ২০০,০০০ বর্গকিমি মালুকু সাগর – ২০০,০০০ বর্গকিমি ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগর – ১৬০,০০০ বর্গকিমি টোংকিন উপসাগর – ১২৬,২৫০ বর্গকিমি হালমাহিরা সাগর – ৯৫,০০০ বর্গকিমি বোহাই উপসাগর – ৭৮,০০০ বর্গকিমি বালি সাগর – ৪৫,০০০ বর্গকিমি বিসমার্ক সাগর – ৪০,০০০ বর্গকিমি সাভু সাগর - ৩৫,০০০ বর্গকিমি সেটো অন্তর্দেশীয় সাগর – ২৩,২০৩ বর্গকিমি সেরাম সাগর – ১২,০০০ বর্গকিমি ইতিহাস প্রাথমিক অভিগমন thumb|১৫০৭ খ্রিস্টাব্দে অঙ্কিত ওয়াল্ডসীমুলার মানচিত্র ইউনিভার্সালিস কসমোগ্রাফিয়া৷ এই সময়ে আমেরিকা, বা বিশেষত উত্তর আমেরিকার প্রকৃতি ছিলো অনিশ্চিত৷ উত্তর আমেরিকাকে এশিয়ার অংশ রূপে চিহ্নিত করা হয় ও উভয় আমেরিকাকে মহাসাগর বিভাজিকা হিসাবে ফুটিয়ে তোলা হয়৷ প্রথম এই মানচিত্রেই আমেরিকাকে বিভাজিকা হিসাবে দেখানো হয়৷ দক্ষিণ আমেরিকাকে তখন পৃথক বিশ্ব হিসাবে ভাবা হতো৷ আমেরিগো ভেসপুচির পর এই মানচিত্রেই আমেরিকা নাম পাওয়া যায়৷ thumb|left|১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে অঙ্কিত ডিয়োগো রাইবেরো মানচিত্রে প্রথম প্রশান্ত মহাসাগরকে মোটামুটি সঠিক আকার দেওয়া হয় right|thumb|১৫৮৯ খ্রিস্টাব্দে আব্রাহাম অরটেলিয়াস অঙ্কিত মারিস প্যাসিফিসি প্রথম মুদ্রিত মানচিত্র যেখানে প্রশান্ত মহাসাগরকে চিহ্নিত করা হয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রগৈতিহাসিক যুগ থেকেই বহু উল্লেখ্য অভিবাসন হয়ে এসেছে৷ ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তাইওয়ান দ্বীপের অস্ট্রোনেশীয় জনজাতি ডিঙি নৌকার মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে অভিগমনে পারদর্শী হয়ে ওঠে এবং দক্ষিণের ফিলিপাইনস, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর পূর্ব তিমুর প্রভৃতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিম দিকে মাদাগাস্কার এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে নিউগিনি মেলানেশিয়া মাইক্রোনেশিয়া ওশিয়ানিয়া এবং পলিনেশিয়া অবধি ছিল এদের সর্বাধিক বিস্তার৷ দূরবর্তী পণ্য বিপণন তথা ব্যবসা-বাণিজ্য মোজাম্বিকের তটরেখা থেকে শুরু করে জাপান অবধি বিস্তৃত ছিল। এই অস্ট্রোনেশীয় জাতির ব্যবসা-বাণিজ্য ও বাস্তব জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপগুলিতে প্রভাব বিস্তার করল অস্ট্রেলিয়ায় তার বিশেষ লক্ষণ দেখা যায় না। ২১৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নাবিক জু ফু প্রশান্ত মহাসাগরে অমৃত পরশমণির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন৷ ৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে কুয়াংচৌতে আরবি মুসলমানরা এই পথে বাণিজ্যে উন্নতি করা শুরু অবধি এই আধিপত্য ছিল৷ ১৪০৪ থেকে ১৪৩৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চেং হো প্রশান্ত মহাসাগর হয়ে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুবৃত্তি শুরু করেন৷ ইউরোপীয় অন্বেষণ thumb|১৭০২-১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপীয় অন্বেষণের সময়কালীন প্রশান্ত মহাসাগরের মানচিত্র thumb|১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপীয় অন্বেষণের সময়কালীন প্রশান্ত মহাসাগরের মানচিত্র ১৫১২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ পর্তুগিজ নাবিক তথা অন্বেষক অ্যান্টোনিও দে আব্রিউ এবং ফ্রান্সিস্কো সেরাওঁ বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার ক্ষুদ্রতর সুন্দা দ্বীপপুঞ্জ এবং মালুকু দ্বীপপুঞ্জে পদার্পণ করলে ইউরোপীয় নাবিকদের সাথে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তের অঞ্চল ও দ্বীপগুলির পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। প্রায় ওই একই সময় ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে জর্জ আলভারেজ দক্ষিণ চীন সাগরে অভিযান চালান,Porter, Jonathan. (1996). Macau, the Imaginary City: Culture and Society, 1557 to the Present. Westview Press. যদিও এ দুটি অভিযানই ছিল মালাক্কার আফোনসো দে আলবুকর্কের নির্দেশ। ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে স্পেনীয় নাবিক ভাস্কো নুয়েঁজ দে বালবোয়া অভিযান চালিয়ে পানামা যোজক অতিক্রম করে একটি নতুন সমুদ্রের খোঁজ পেলে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব অংশ ইউরোপীয়দের বছরে আসে। তিনি নতুন এই সাগরের নাম রাখেন মার দেল সুর বা দক্ষিণ সাগর বা দক্ষিণের সাগর, কারণ তার আবিস্কৃত সমুদ্র ছিল পানামা যোজকের দক্ষিণ দিকে। thumb|upright=1.6|মানচিত্রে খ্রিস্টীয় ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী অবধি‌ স্পেনীয় নাবিকদের প্রশান্ত মহাসাগর অভিযানের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইতিহাসে প্রথম প্রশান্ত মহাসাগর পারাপারের আকাপুলকো ম্যানিলা অবধি পথ, যা ম্যানিলা গ্যালোন নামে পরিচিত ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে নাবিক ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান এবং তার দলবল ইতিহাসের পাতায় প্রথম প্রশান্ত মহাসাগর পার করে। এই দলটি ছিল স্পেনীয় অভিযানের অংশ যারা মসলার জন্য বিখ্যাত মালুকু দ্বীপপুঞ্জ গমনের দ্বারা বিশ্বে সম্ভাব্য প্রথম জলপথে অভিযান শুরু করে। ম্যাগেলান এই মহাসাগরকে প্যাসিফিকো বা প্রশস্তি সূচক নামাঙ্কিত করেন। তার দলবল হর্ন অন্তরীপের ঝঞ্ঝাপূর্ণ আবহাওয়া অতিক্রম করে প্রশান্ত মহাসাগরের শান্তশ্রোতে প্রশস্তি পান। নাবিক ফার্দিনান্দ ম্যাগেলানের সম্মানে খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই মহাসাগর "ম্যাগেলানের সাগর" নামে পরিচিত ছিল।Camino, Mercedes Maroto. Producing the Pacific: Maps and Narratives of Spanish Exploration (1567–1606), p. 76. 2005. ১৫২১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে গুয়াম দ্বীপে গন্তব্য নির্দিষ্ট করার পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি নির্জন দ্বীপে নোঙর করেন।Guampedia entry on Ferdinand Magellan| url = https://www.guampedia.com/ferdinand-magellan/ ১৫২১ খ্রিস্টাব্দে ম্যাগেলান ফিলিপাইনসে মারা গেলে অপর একজন স্পেনীয় নাবিক তথা তার সহচর জুয়ান সেবাস্তিয়ান ইলকানো তৎপরবর্তী গন্তব্য নির্দিষ্ট করেন। ১৫২২ খ্রিস্টানদের মধ্যে তিনি প্রশান্ত মহাসাগর হয় ভারত মহাসাগর ভ্রমণ করে উত্তমাশা অন্তরীপ অতিক্রম করে স্পেনের ফিরে আসলে বিশ্বব্যাপী জলপথে অভিযানের ইতিহাসে নতুন সময় তৈরি হয়।"Life in the sea: Pacific Ocean" , Oceanário de Lisboa. Retrieved 9 June 2013. মালাক্কা অঞ্চলের পূর্ব প্রান্তে নৌ ভ্রমণ করতে করতে ১৫২৫ থেকে ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পর্তুগিজরা আবিষ্কার করে ক্যারোলাইন দ্বীপপুঞ্জ, আরু দ্বীপপুঞ্জ, এবং পাপুয়া নিউগিনি। ১৫৪২–৪৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তারা জাপান পর্যন্ত অগ্রসর হয়।Steven Thomas, ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে ৩৭৯ জন অনুসন্ধানীসম্বলিত ও মিগুয়েল লোপেজ দে লেগাজপির নেতৃত্বাধীন পাঁচটি স্পেনীয় জাহাজ মেক্সিকো থেকে প্রশান্ত মহাসাগর অতিক্রম করে ফিলিপাইন এবং মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জে আসেন। ষোড়শ শতাব্দীর বাকি সময় ধরে এই সকল অঞ্চলে স্পেনীয়দের আধিপত্য অগ্রাধিকার পেতে থাকে, তারা মেক্সিকো এবং পেরু থেকে প্রশান্ত মহাসাগর অতিক্রম করে গুয়াম দ্বীপ হয় ফিলিপাইন্সে আসেন এবং স্পেনীয় ইস্ট ইন্ডিজ প্রতিষ্ঠা করেন। আড়াই দশক ধরে চর্চিত ম্যানিলা গ্যালিওন ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘতম বিপণন পথ তথা ম্যানিলা থেকে আকাপলকো অবধি পথ নির্দেশ করে। স্পেনীয় অভিযানের ফলে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত টুভালু, মারকেইসাস, কুক দ্বীপপুঞ্জ, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, এবং এডমিরালটি দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তীকালে টেরা অস্ট্রালিস বা বৃহত্তর দক্ষিণ ভূমি অনুসন্ধানের সময়ে তথা খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে স্পেনীয় নাবিক পেড্রো ফার্নান্দেজ দে কুয়েরস পিটকার্ন ও ভানুয়াটু দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেন এবং অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ গিনির মধ্যবর্তী দূরত্ব অতিক্রম করে অপর এক নাবিক লুইস ভাজ দে টরেস-এর নাম অনুসারে এই অংশের নাম রাখেন টরেস প্রণালী। একই সময়ে ওলন্দাজ অনুসন্ধানী ও নাবিকরাও দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলে নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্যে বৃদ্ধি ঘটাতে থাকে। উইলেম জানসোন ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রেলিয়ার ইয়র্ক অন্তরীপ উপদ্বীপে পদার্পণ করেন এবং প্রথম সম্পূর্ণ নথিভূক্ত ইউরোপীয় উপনিবেশের বর্ণনা বিস্তার করেন।J.P. Sigmond and L.H. Zuiderbaan (1979) Dutch Discoveries of Australia.Rigby Ltd, Australia. pp. 19–30 ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে আবেল তাসমান নৌপথে ভ্রমণে বেরিয়ে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সমুদ্র উপকূল বরাবর বিভিন্ন জায়গায় নোঙর করে‌ন ও তাসমানিয়া এবং নিউজিল্যান্ড দ্বীপ আবিষ্কার করেন। ষোড়শ থেকে সপ্তদশ শতাব্দীর সময়কালের মধ্যে স্পেনীয়রা প্রশান্ত মহাসাগরকে মেয়ার ক্লসাম বা অন্যান্য নৌশক্তি দ্বারা আবদ্ধ সাগর হিসেবে অভিহিত করতে থাকেন। তখনকার দিনে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর আসার জ্ঞাত পথ ছিল ম্যাজেলান প্রণালি, ফলে স্পেনীয়রা নিজেদের আধিপত্য অটুট রাখতে ও অস্পেনীয় নাবিক প্রবেশ আটকাতে এই প্রণালী নিয়ন্ত্রণে রাখত। আবার প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম দিক বরাবর এইসময় ওলন্দাজরা স্পেন অধিকৃত ফিলিপাইনের উপর ভীতিপ্রদর্শন শুরু করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরু থেকেই রাশিয়ানরা নতুন কিছু অনুসন্ধানে তৎপর হয়ে ওঠে, প্রথম কামচাটকা অভিযানে তারা আলাস্কা, অ্যালিউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেন। ডেনমার্কের রাশিয়ার নাবিক অধিকর্তা ভিটাস বেরিঙের দলপতিত্বে বৃহত্তর উত্তরা অভিযান সম্পন্ন হয়। স্পেনীয় নাবিকরা উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অভিযান সম্পাদন করেন ও ভ্যানকুভার দ্বীপসহ আলাস্কা ও দক্ষিণ কানাডা অবধি পৌঁছে যান। ফরাসিরা পলিনেশিয়া আবিষ্কার করেন এবং সেখানে থিতু হন। ব্রিটিশরা জেমস কুকের নেতৃত্বে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর এবং অস্ট্রেলিয়া, হাওয়াই ও উত্তর আমেরিকার দিকে প্রশান্ত উত্তর-পশ্চিমের দিকে তিনটি নৌযাত্রা করেন। ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে নবীন জ্যোতির্বিজ্ঞানী পিয়ার অন্তোইন ভেরন ও‌ নাবিক লুইস অন্তোইন দে বুগেনভিল নৌযাত্রা করে ইতিহাসে প্রথম প্রশান্ত মহাসাগরকে প্রস্থ বরাবর অতিক্রম করে। বিজ্ঞানভিত্তিক নৌ অভিযানের প্রথম ঐতিহাসিক নিদর্শন পাওয়া যায় ১৭৮৯-১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে স্পেনীয় মালাস্পিনা নৌ-অভিযানে। এই অভিযানের অন্তর্ভুক্ত ছিল আলাস্কা অন্তরীপ গুয়াম ফিলিপাইন নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। নব্য সাম্রাজ্যবাদ thumb|১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে জানুয়ারি মারিয়ানা খাতের গভীরতম বিন্দু স্পর্শ করার পূর্বাবস্থায় ট্রিয়েস্ট সমুদ্রতলযান খ্রিস্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রথমে ব্রিটিশরা এবং পরে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় ওশিয়ানিয়ার বৃহত্তর অংশ দখল করে। চার্লস ডারউইনের নেতৃত্বে ১৮৩০ এর দশকে এইচএমএস বিগ্‌ল দ্বারা, ১৮৭০ এর দশকে এইচএমএস চ্যালেঞ্জার দ্বারা; ১৮৭৩-৭৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে‌ ইউএসএস টুস্কারোরা দ্বারা; এবং ১৮৭৪-৭৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জার্মান গ্যাজেল দ্বারা‌সফল ও গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের ফলে সাধারণের মধ্যে ওশিয়ানিয়া সম্পর্কিত জ্ঞান বৃদ্ধি পেতে থাকে। thumb|left|১৮৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই সেপ্টেম্বর নাবিক দেয়ার্সের তাহিতি দ্বীপ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা ১৮৪২ ও ১৮৫৩ যথাক্রমে তাহিতি এবং নিউ ক্যালেডোনিয়াতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার পর ফরাসিরা ওশিয়ানিয়াতে ঔপনিবেশিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।Bernard Eccleston, Michael Dawson. 1998. The Asia-Pacific Profile. Routledge. p. 250. ১৮৭৫ ও ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে ইস্টার দ্বীপে‌ নৌ-সাক্ষাৎ সংঘটিত হওয়ার পর চিলির নৌসেনা অধ্যক্ষ পলিকার্পো টোরো ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে মধ্যস্থতা করে স্থানীয় রাপা নুই জনজাতিসহ ইস্টার দ্বীপ চিলির অন্তর্ভুক্ত করেন। এই দ্বীপভুক্তির মাধ্যমে চিলি উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রের তালিকায় নথিভূক্ত হয়।William Sater, Chile and the United States: Empires in Conflict, 1990 by the University of Georgia Press, বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জগুলি ব্রিটেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান এবং চিলির ঔপনিবেশিক শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্র গুয়াম দ্বীপে আধিপত্য বিস্তার করে এবং ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের থেকে ফিলিপাইন দখল করে। ১৯১৪ শিক্ষকদের মধ্যে জাপান প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম দিকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে এবং প্রশান্ত মহাসাগর যুদ্ধে ঐ দ্বীপগুলির ওপর আধিপত্য বিস্তার করে৷ অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জাপান যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর নিকট পরাস্ত হলে মহাসাগর ব্যপী তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়৷ জাপান শাসিত উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের শাসনাধীন হয়৷The Covenant to Establish a Commonwealth of the Northern Mariana Islands in Political Union With the United States of America, এই সময়েই বহু প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপনিবেশ দ্বীপ তথা দ্বীপপুঞ্জ স্বাধীন স্বতন্ত্রতা পায়৷ ভূগোল thumb|right|প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে দৃশ্যমান সূর্যাস্ত। পৃষ্ঠের উপর নেহাই আকৃতির মেঘপুঞ্জও দৃশ্যমান প্রশান্ত মহাসাগর ভৌগোলিকভাবে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে দুই আমেরিকাকে পৃথক করে। নিরক্ষরেখা সাপেক্ষে এটি আবার উত্তর গোলার্ধে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর ও দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে বিভক্ত। এটি দক্ষিণে কুমেরু থেকে উত্তরে সুমেরু অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবী পৃষ্ঠের এক তৃতীয়াংশের কিছু কম পৃষ্ঠতল দখল করে রয়েছে, এর উপরিতলের ক্ষেত্রফল , পৃথিবীর ভূতলের সর্বমোট ক্ষেত্রফলের থেকেও অধিক।"Area of Earth's Land Surface", The Physics Factbook. Retrieved 9 June 2013. প্রশান্ত মহাসাগর উত্তর-দক্ষিণে উত্তর দিকে সুমেরুর বেরিং সাগর থেকে দক্ষিণ দিকে কুমেরুর ষষ্টিতম দক্ষিণ অক্ষাংশে দক্ষিণ সাগর পর্যন্ত (পুরাতন সংজ্ঞা অনুসারে আন্টার্টিকার রস সাগর) প্রায় দীর্ঘ। তবে প্রশান্ত মহাসাগরের প্রসার উত্তর-দক্ষিণে তুলনায় পূর্ব-পশ্চিমে পঞ্চম উত্তর অক্ষাংশে অধিক। পূর্ব-পশ্চিমে ইন্দোনেশিয়া থেকে কলম্বিয়া পর্যন্ত দূরত্ব পৃথিবীর ওই অক্ষ সংলগ্ন পরিধির অর্ধেক ও চাঁদের ব্যাসের পাঁচগুণেরও অধিক। এখন অবধি জ্ঞাত পৃথিবীর গভীরতম বিন্দু মারিয়ানা খাত গড় সমুদ্রপৃষ্ঠের গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত। মহাসাগরের গড় গভীরতা প্রায় এবং মোট জলভাগের পরিমাণ প্রায় । ভূত্বকীয় পাত সংস্থানের ফলস্বরূপ প্রশান্ত মহাসাগর বর্তমানে তিন দিকে গড়ে প্রতিবছর প্রায় এবং সর্বমোট প্রায় আয়তন হারাচ্ছে। আবার একইভাবে এই পরিমাণ আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগরের। প্রশান্ত মহাসাগরের বিষম পশ্চিম সীমান্ত বরাবর রয়েছে একাধিক সাগর এগুলির মধ্যে বৃহত্তর সাগরগুলি হল সুলাওসি সাগর, কোরাল সাগর, পূর্ব চীন সাগর (পূর্ব সাগর), ফিলিপাইন সাগর, জাপান সাগর, দক্ষিণ চীন সাগর (দক্ষিণ সাগর), সুলু সাগর, তাসমান সাগর এবং পীত সাগর (কোরিয়ার পশ্চিম সাগর)। মালাক্কা প্রণালী ও টরেস প্রণালী সহ ইন্দোনেশীয় সমুদ্র ক্ষেত্র প্রশান্ত মহাসাগরকে পশ্চিম দিকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে এবং ড্রেক জলপথ ও ম্যাগেলান প্রণালী পূর্বদিকে আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। উত্তর দিকে বেরিং প্রণালী প্রশান্ত মহাসাগরকে উত্তর সাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। মূল মধ্যরেখা প্রশান্ত মহাসাগরকে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরকে যুক্ত করেছে, যেগুলি যথাক্রমে পূর্ব গোলার্ধ এবং পশ্চিম গোলার্ধের অংশ‌। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ দিক থেকে লঙ্ঘিত দক্ষিণ-পূর্ব ভারতীয় শৈলশিরা থেকে দক্ষিণ মেরুর উত্তরাংশ বরাবর প্রশান্ত-আটলান্টিক শৈলশিরা তথা দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণতম অংশে‌র পূর্ব প্রশান্ত চড়াই ও জুয়ান দে ফুকা শৈলশিরা ছাড়া উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ দিকের শৈলশিরা অবধি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর সীমাবদ্ধ। নাবিক ম্যাগেলানের নৌপথে ম্যাগেলান প্রণালী থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত যাত্রার অংশে তিনি দীর্ঘ মহাসাগর টিকে শান্ত অনুভব করেন। কিন্তু মূলত এই প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণাংশ একেবারে শান্ত হয় প্রতিবছর বহু ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলিতে আছড়ে পড়ে।"Pacific Ocean: The trade winds", Encyclopædia Britannica. Retrieved 9 June 2013. অগ্নেয়গিরি দ্বারা নির্মিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় চক্রবেড়-এর অন্তর্গত ভূমিভাগ ভূমিকম্প প্রবণ। সমুদ্রের অভ্যন্তরে ভূমিকম্পের ফলে তৈরি জলোচ্ছ্বাস বহু দ্বীপ ও শহর তছনছ করে দেওয়ার প্রমাণ রেখেছে। উভয় আমেরিকা মহাদেশ দুটি স্বতন্ত্র মহাসাগরকে পৃথক করছে এমন রূপ প্রথম ফুটে ওঠে ১৫০৭ খ্রিস্টাব্দে তৈরি মার্টিন ওয়াল্ডসিমুলর মানচিত্রে। পরে ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে তৈরী ডিওগো রাইবেইরো মানচিত্রের প্রথম প্রশান্ত মহাসাগরের মোটামুটি সঠিক আকার পাওয়া যায়। সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র ও এলাকা thumb|upright=1.25|প্রশান্ত মহাসাগর অববাহিকার দ্বীপ সংক্রান্ত ভূগোল thumb|upright=1.25|ওশিয়ানিয়ার অঞ্চল দ্বীপরাষ্ট্র এবং ক্ষেত্র সার্বভৌম রাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া ইকুয়েডর ইন্দোনেশিয়া উত্তর কোরিয়া এল সালভাদোর কম্বোডিয়া কলম্বিয়া কানাডা কিরিবাতি কুক দ্বীপপুঞ্জ কোস্টারিকা গণচীন গুয়াতেমালা চিলি জাপান টোঙ্গা তাইওয়ান তুভালু থাইল্যান্ড দক্ষিণ কোরিয়া নাউরু নিউজিল্যান্ড নিউয়ে নিকারাগুয়া পানামা পাপুয়া নিউগিনি পালাউ পূর্ব তিমুর পেরু ফিজি ফিলিপাইন ব্রুনেই ভানুয়াতু ভিয়েতনাম মাইক্রোনেশিয়া যুক্তরাজ্য মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ মালয়েশিয়া মেক্সিকো যুক্তরাজ্য রাশিয়া সলোমন দ্বীপপুঞ্জ সামোয়া সিঙ্গাপুর হন্ডুরাস এলাকা আমেরিকান সামোয়া (যুক্তরাজ্য) উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ (যুক্তরাজ্য) ওয়ালিস ও ফিউচুনা (ফ্রান্স) ওয়েক দ্বীপ (যুক্তরাজ্য) কিংম্যান প্রবাল প্রাচীর (যুক্তরাজ্য) ক্লিপারটন দ্বীপ (ফ্রান্স) কোরাল সাগর দ্বীপপুঞ্জ (অস্ট্রেলিয়া) গুয়াম (যুক্তরাজ্য) জনস্টোন প্রবালদ্বীপ (যুক্তরাজ্য) জারভিস দ্বীপ (যুক্তরাজ্য) টোকেলাউ (নিউজিল্যান্ড) নরফোক দ্বীপ (অস্ট্রেলিয়া) নিউ ক্যালেডোনিয়া (ফ্রান্স) পিটকের্ন দ্বীপপুঞ্জ (যুক্তরাষ্ট্র) প্যালমাইরা প্রবালদ্বীপ (যুক্তরাজ্য) ফরাসি পলিনেশিয়া (ফ্রান্স) বেকার দ্বীপ (যুক্তরাজ্য) মাকাও (গণচীন) মিডওয়ে প্রবালদ্বীপ (যুক্তরাজ্য) হংকং (গণচীন) হাউল্যান্ড দ্বীপ (যুক্তরাজ্য) ভূখণ্ড ও দ্বীপপুঞ্জ thumb|কিরিবাতি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অবস্থিত তারাওয়া প্রবাল দ্বীপ প্রশান্ত মহাসাগর রয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক দ্বীপ। সর্বমোট প্রায় ২৫,০০০ দ্বীপ রয়েছে এই মহাসাগরে। যেসকল দ্বীপ বা দ্বীপপুঞ্জ পুরোপুরিভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের অভ্যন্তরে অবস্থিত সেগুলিকে মোটামুটি তিনটি মূল ধারায় ভাগ করা যায় এগুলি হল মাইক্রোনেশিয়া, মেলানেশিয়া এবং পলিনেশিয়া। নিরক্ষরেখার উত্তর দিকে ও আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার পশ্চিম দিকে অবস্থিত দ্বীপগুলি হল মাইক্রোনেশিয়া। উত্তর-পশ্চিম দিকে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ, মধ্যভাগে ক্যারোলিন দ্বীপপুঞ্জ, পূর্বদিকে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কিরিবাতি রাষ্ট্রের একাধিক দ্বীপ নিয়ে গঠিত মাইক্রোনেশিয়া। গ্রীনল্যান্ড দ্বীপের পর আয়তনের ভিত্তিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ টি হল নিউগিনি। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত বৃহত্তম এই দ্বীপটি মেলানেশিয়ার দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত। উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত অন্যান্য মূল মেলানেশীয় দ্বীপগুলি হল বিসমার্ক দ্বীপপুঞ্জ, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, সান্তা ক্রুজ দ্বীপপুঞ্জ, ভানুয়াতু, ফিজি এবং নিউ ক্যালেডোনিয়া। সর্বাধিক প্রসারিত পলিনেশিয়ার বিস্তার উত্তরে হাওয়াই থেকে দক্ষিণে নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত। পশ্চিম প্রান্ত বরাবর রয়েছে তুভালু, টোকেলাউ, সামোয়া, টোঙ্গা এবং কেরম্যাডেক দ্বীপপুঞ্জ। কেন্দ্রীয় স্থানে রয়েছে কুক দ্বীপপুঞ্জ, সোসাইটি দ্বীপপুঞ্জ ও অস্ট্রাল দ্বীপপুঞ্জ এবং পূর্ব সীমান্ত বরাবর রয়েছে মার্কেইসাস দ্বীপপুঞ্জ, তুয়ামোটু দ্বীপপুঞ্জ, গ্যামবায়ার দ্বীপপুঞ্জ, এবং ইস্টার দ্বীপ। প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলি চার ধরনের: মহাদেশীয় দ্বীপ, উচ্চ দ্বীপ, প্রবাল প্রাচীর এবং উদ্বর্তিত প্রবাল ভূমি। মহাদেশীয় দ্বীপ অ্যান্ডিসাইট রেখার বহির্ভাগে অবস্থিত যেমন নিউগিনি, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন। এই দ্বীপগুলির বেশিরভাগই নিকটবর্তী মূল ভূভাগের মতোই ভূমিরূপ বিশিষ্ট। উচ্চ দ্বীপগুলির আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত। এরকম কিছু দ্বীপ হল বুগেনভিল, হাওয়াই এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জ। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রবাল প্রাচীরগুলি সমুদ্রতল নিমজ্জিত, আগ্নেয়গিরি ব্যাসলিসটিক লাভা সমুদ্র তলে জমে সৃষ্ট। এর মধ্যে সর্বাধিক নাটকীয় হলো অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব দিক বরাবর অবস্থিত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ পবাল প্রাচীরের সারি। উপদ্বীপীয় আকৃতির প্রবাল দ্বীপ হল উত্থিত প্রবাল ভূমি। এর কিছু প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল বানাবা এবং ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার তুয়ামোটু দ্বীপমালার অন্তর্গত মাকাটিয়া।"Coral island", Encyclopædia Britannica. Retrieved 22 June 2013."Nauru", Charting the Pacific. Retrieved 22 June 2013. প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন প্রকার স্রোত ১। কুমেরু স্রোত (শীতল): কুমেরু মহাসাগরের একটি শীতল স্রোত পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে শীতল কুমেরু স্রোত রূপে পশ্চিমদিক থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়। ২। পেরু স্রোত বা হ্যামবোল্ড স্রোত (শীতল): পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত বা নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে পৌঁছায় এবং দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ প্রান্তে বাধা পেয়ে চিলির উপকূল ধরে উত্তরদিকে পেরু উপকূলে এসে পেরু স্রোত বা শীতল হ্যামবোল্ড-স্রোত নামে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। ৩। দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ): পেরু স্রোত বা শীতল হ্যামবোল্ড স্রোত ক্রমশ উত্তরদিকে এগিয়ে নিরক্ষরেখার কাছাকাছি পৌঁছুলে দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত নামে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল থেকে পশ্চিমদিকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের দিকে প্রবাহিত হয়। ৪। নিঊ সাউথ ওয়েলস স্রোত বা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত (ঊষ্ণ): উষ্ণ দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত পশ্চিমদিকে গিয়ে ওশিয়ানিয়ার কাছে পৌঁছোলে এই স্রোত দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে এর একটি শাখা দক্ষিণদিকে ঘুরে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল ও নিঊজিল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত বা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিশে যায়। এর অপর শাখাটি উত্তর-পশ্চিমদিকে গিয়ে এশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে এবং পূর্ব-ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে বাধা পায় এবং উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। ৫। উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ): উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের উৎপত্তি হয়েছে। এই স্রোতটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল থেকে এশিয়া মহাদেশের দিকে প্রবাহিত হয়। ৬। জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো (উষ্ণ): উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ইন্দোনেশিয়ার কাছে এসে উত্তরমুখী হয়ে এশিয়া মহাদেশের জাপান ও তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল ধরে উষ্ণ জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোত নামে উত্তরে প্রবাহিত হয় । জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোতের একটি শাখা জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তর দিকে সুসিমা স্রোত নামে অগ্রসর হয়। ৭। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত (উষ্ণ): পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোতের অপর শাখাটি উষ্ণ উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত নামে জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলের দিকে প্রবাহিত হয়। ৮। ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত (শীতল): উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে পৌঁছানোর পর ক্যালিফোর্নিয়ার কাছে দক্ষিণমুখী হয়ে শীতল ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত নামে প্রবাহিত হয়। ৯। আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত (উষ্ণ): উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতের একটি শাখা আরও উত্তরে অগ্রসর হয়ে আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত নামে আলাস্কা উপকূল ও অ্যালুশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বরাবর প্রবাহিত হয়। এই স্রোত পরে শীতল বেরিং স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। ১০। বেরিং স্রোত (শীতল): অতি শীতল মেরুবায়ুর প্রভাবে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের সুমেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল বেরিং স্রোতটি বেরিং প্রণালীর মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোতের উত্তর শাখার সঙ্গে মিলিত হয়। দুটি আলাদা উষ্ণতার বাঊর মিলনে এই অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও ঝড়বৃষ্টির সৃষ্টি হয়। ১১। নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত বা প্রতিস্রোত (উষ্ণ): উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে একটি অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ও ক্ষীণ স্রোত পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় যা নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত বা প্রতি স্রোত নামে পরিচিত। ১২। প্রশান্ত মহাসাগরীয় শৈবাল সাগর: উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, জাপান স্রোত, উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত এবং ক্যালিফোর্নিয়া স্রোতের ডিম্বাকৃতি গতিপথের বিশাল অঞ্চল জুড়ে সৃষ্টি হওয়া সারকুলার কারেন্ট বা ঘূর্ণস্রোতের অভ্যন্তর ভাগের জলাবর্ত একেবারে স্রোতবিহীন সমুদ্রের সৃষ্টি হয়েছে। এই স্রোতহীন সমুদ্রের স্থির জলে নানারকম শৈবাল, আগাছা, তৃণ, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ জন্মায়। স্রোতহীন শৈবালে পরিপূর্ণ অঞ্চলকে শৈবাল সাগর বলা হয়। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:মহাসাগর বিষয়শ্রেণী:প্রশান্ত মহাসাগর
টেনিস
https://bn.wikipedia.org/wiki/টেনিস
টেনিস বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রীড়া। লন টেনিস নামেও বিশ্বের অনেক দেশে এ খেলার পরিচিতি রয়েছে। যিনি এ খেলায় অংশগ্রহণ করেন, তিনি 'টেনিস খেলোয়াড়' নামে পরিচিতি পান। টেনিস খেলার জন্য প্রয়োজন হয় তারযুক্ত একটি দণ্ড যা 'র‌্যাকেট' নামে পরিচিত, একটি বল এবং জাল। উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন এবং ইউএস ওপেন - টেনিসের চারটি বড় প্রতিযোগিতা, যা প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রত্যেক প্রতিযোগিতাই গ্র্যান্ড স্ল্যাম প্রতিযোগিতা নামে পরিচিত। রাফায়েল নাদাল, পিট সাম্প্রাস, ইভান ল্যান্ডল, বরিস বেকার, রজার ফেদেরার, নোভাক জকোভিচ, ভেনাস উইলিয়ামস, সেরেনা উইলিয়ামস, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা, স্টেফি গ্রাফ, মনিকা সেলেস, মারিয়া শারাপোভা, মার্টিনা হিঙ্গিস প্রমূখ বিশ্বের খ্যাতনামা টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত হয়ে আছেন স্ব-মহিমায়। প্রকারভেদ সাধারণত দুইভাবে টেনিস খেলা হয়:- একক (একজন বনাম একজন) দ্বৈত (দুইজন বনাম দুইজন) এছাড়াও, ডাবলসে পুরুষ ও নারী নিয়ে গঠিত দল মিক্সড ডাবলস নামে পরিচিত। কোর্ট thumb|left|ফিনল্যান্ডের পেটাজাভেসিতে অবস্থিত টেনিস কোর্ট টেনিস খেলা যেখানে অনুষ্ঠিত হয় সেই জায়গাটিকে বলা হয় টেনিস কোর্ট। টেনিস বিভিন্ন কোর্টে খেলা হয়ে থাকে:- গ্রাস কোর্ট, ঘাস আচ্ছাদিত কোর্ট। ক্লে কোর্ট, লাল মাটির ন্যাড়া কোর্ট। হার্ড কোর্ট, অন্যান্য শক্ত কোর্ট। কোর্টের মাপ thumb|250px|টেনিস কোর্টের মাপ টেনিস কোর্ট দৈর্ঘ্যে ৭৮ ফুট এবং প্রস্থে ৩৯ ফুট হয়ে থাকে। তবে সিঙ্গেল কোর্ট প্রস্থে ২৭ ফুট হয়ে থাকে। চতুর্ভূজ আকৃতির কোর্টকে দুই ভাগে ভাগ করে মাঝে জাল টাঙানো হয় মাঝ খানে যার উচ্চতা ৩ ফুট। জালের দুই পাশে দু'টি করে চারটি সার্ভিস কোর্ট থাকে জাল থেকে যাদের দৈর্ঘ্য ২১ ফুট। লম্বায় দুই পাশে দুইটি নির্দিষ্ট মাপের ট্রাম লাইন থাকে। খেলার নিয়ম টেনিস খেলায় দুই পক্ষের খেলোয়াড় জালের বিপরীত দিকে একে-অপরের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। একদিকের খেলোয়াড় বলটি প্রথমে মারে তার অপর দিকের বিপরীত পাশের খেলোয়াড়ের দিকে। একে সার্ভ করা বলে। যে বল মারে তাকে সার্ভার এবং বিপরীত প্রান্তের খেলোয়াড়কে রিসিভার বলে। 'সার্ভার'-কে তার বেস লাইনের বাইরে থেকে বল মারতে হয়। তবে রিসিভার যে কোন জায়গায় অবস্থান নিতে পারে। সার্ভিসের বল খেলোয়াড়ের অপর পাশের বিপরীত দিকের সার্ভিস কোর্টে জাল না ছুঁয়ে পাঠাতে হয়। যদি সার্ভিসে কোনো ধরনের ভুল হয়, তবে 'সার্ভার' দ্বিতীয় সুযোগ পায় সার্ভিস করার। দ্বিতীয় সার্ভিস ভুল হলে 'ডবল ফল্ট' বলে এবং রিসিভার পয়েন্ট পায়। সঠিক সার্ভিস হলে খেলার মূল অংশ (র‌্যালী) শুরু হয় যেখানে প্রতিটি খেলোয়াড় বল মেরে ফেরত পাঠায় বিপক্ষ দলের কোর্টে। এভাবে বল দেয়া-নেয়া করে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার চেষ্টা করে যাতে প্রতিপক্ষ বলটি সঠিক ভাবে তাকে ফেরত পাঠাতে না পারে। যদি প্রতিপক্ষ সঠিকভাবে বল পাঠাতে ব্যর্থ হয় তবে খেলোয়াড় পয়েন্ট পায়। সঠিকভাবে বল পাঠাতে হলে খেলোয়াড়কে একবার আঘাত করে বল প্রতিপক্ষের কোর্টে নিয়ে ফেলতে হবে এবং সেটা করতে হয় প্রতিপক্ষের পাঠনো বল দুইবার মাটিতে পড়ার আগে। টেনিস খেলার জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় সেট জয়ের সংখ্যা দ্বারা। টেনিস খেলায় পয়েন্ট প্রাপ্তির ক্রম হয় "০","১৫", "৩০", "৪০" এভাবে যেখানে খেলোয়াড় "৪০" এর পর পয়েন্ট পেলে তার গেম জেতা হয়। যদি দুই খেলোয়াড় এক সাথে "৪০" পয়েন্ট পায়। তবে গেম জেতার জন্য কোনো খেলোয়াড়কে পর পর দুই পয়েন্ট পেতে হয়। এভাবে কোনো খেলোয়াড় যদি প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের সাথে কমপক্ষে দুই গেম ব্যবধান রেখে ছয়টি গেম জয় করতে পারে তবে সে একটি সেট জিতে নিতে সক্ষম হয়। যদি তারা সমান সংখ্যক গেমে জয়ী হয় তবে টাইব্রেকারের মাধ্যমে সেটের বিজয়ী নিশ্চিত হয়। এভাবে সর্বোচ্চ সেট জয়ী খেলোয়াড় খেলায় বিজয়ী হয়। বল thumb|টেনিস র‍্যাকেট এবং বল। টেনিস বল উত্তাপের দ্বারা পশম জমা করে প্রস্তুত বস্ত্রের আবরনযুক্ত ফাঁপা রাবার দিয়ে তৈরি। টেনিস খেলার ঐতিহ্যে বলের রং ছিল সাদা, যা বিংশ শতাব্দীর শেষোক্ত সময়ে দৃষ্টি-সম্বন্ধীয় কারণের জন্য হলুদ রঙে পরিণত হয়। আরো দেখুন মনিকা সেলেস পুরুষ টেনিস র‌্যাংকিং প্রমিলা টেনিস র‌্যাংকিং আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতা টেনিস খেলোয়াড়ের তালিকা (পুরুষ) সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতা টেনিস খেলোয়াড়ের তালিকা (নারী) সবচেয়ে বেশি টুর্নামেন্ট জয়ী টেনিস খেলোয়াড়ের তালিকা (নারী) সবচেয়ে বেশি টুর্নামেন্ট জয়ী টেনিস খেলোয়াড়ের তালিকা (পুরুষ) টেনিস বিষয়শ্রেণী:ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:অলিম্পিক ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:বল খেলা বিষয়শ্রেণী:ইংল্যান্ডের ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:একক ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:ইংল্যান্ডে উদ্ভাবিত ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:র‍্যাকেট ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:অ্যাথলেটিক ক্রীড়া
রজার ফেদেরার
https://bn.wikipedia.org/wiki/রজার_ফেদেরার
রজার ফেদেরারসুইস-জার্মান উচ্চারণ অনুসারে এই ব্যক্তির নামের উচ্চারণ "রজার ফেডেরার"। বাংলা গণমাধ্যমে কখনও কখনও "ফেডেরার" বানানটিও লেখা হয়। (জন্ম ৮ই আগস্ট, ১৯৮১) একজন সুইস পেশাদারী টেনিস খেলোয়াড়। তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে সফল টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম। তিনি ২০২২ সালে অবসর ঘোষণা করেন । পিট সাম্প্রাস সহ অনেক টেনিস কিংবদন্তি, টেনিস সমালোচক, তার সমসাময়িক খেলোয়াড়সহ অনেকেই মনে করেন তিনি সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড় । তিনি ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ তারিখ ত্থেকে ২০০৮ সালের শেষভাগ পর্যন্ত টানা ২৩৭ সপ্তাহ বিশ্বের ১ নম্বর খেলোয়াড় ছিলেন, যা একটি রেকর্ড ।চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদাল এর সাথে ডাবলস ম্যাচ খেলে টেনিস থেকে বিদায় নেন। ২০০৪ সালে ফেদেরার ম্যাট্‌স উইলান্ডারের পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে একই বছরে তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখান। ২০০৬ ও ২০০৭ সালে তিনি এই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি এ পর্যন্ত ২০ টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম, ৪টি টেনিস মাস্টার্স কাপ, ও ১৫টি টেনিস মাস্টার্স সিরিজ শিরোপা জিতেছেন। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি পরপর পাঁচ বছর উইম্বলডন (২০০৩-২০০৭) ও ইউ এস ওপেন (২০০৪-২০০৮) শিরোপা জিতেছেন। ফেদেরার ষষ্ঠ পুরুষ টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামই জয়ের কৃতিত্ব দেখান । ২০০৯ সালের উইম্বলডন ছিল তার ক্যারিয়ারের ১৫তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়। এর মাধ্যমে ওপেন যুগে পুরুষ এককে সাবেক নাম্বার ওয়ান পিট সাম্প্রাসের ১৪টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ের রেকর্ড তিনি ভেঙ্গে ফেলেন। বছরের পর বছর একের পর এক অবিস্মরণীয় অর্জনের কারণে তাকে "ফেড এক্সপ্রেস" বা "সুইস জাদুকর" হিসেবেও ডাকা হয়। ব্যক্তিগত জীবন শৈশব ও প্রারম্ভিক জীবন ফেদেরার সুইজারল্যান্ডের বাজেলের বাজেল ক্যান্টনাল হাসপাতালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা রবার্ট ফেদেরার একজন সুইজারল্যান্ডীয়, বার্নেক থেকে, যা সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও জার্মানির সীমান্তের কাছে, এবং তার মা, লাইনেট ফেদেরার (জন্ম ডুরান্ড), ক্যম্পটন পার্ক, গুতেঙ থেকে, একজন সাউথ আফ্রিকান যার পূর্বপুরুষ ডাচ ও ফরাসি প্রটেস্ট্যান্ট। ফেদেরার একজন বড় বোন আছে, ডায়ানা। তিনি সুইজারল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বৈত নাগরিক।Für wen schlägt Federers Fussball-Herz? , Blick.ch, 11 September 2009 তার শৈশব কাটে বিরস্ফেলদেন, রিহেন ও পরে মুনচেস্তেন, ফরাসি ও জার্মান সীমান্তের কাছে এবং তিনি সুইস জার্মান, ফরাসি, জার্মান ও ইংরেজি ভাষায় স্বাচ্ছন্দে কথা বলতে পারেন। thumb|right|<center>ফেদেরারের স্বাক্ষর ফেদেরার রোমান ক্যাথলিক হিসেবে বড় হন এবং ২০০৬ রোম মাস্টার্সে খেলার সময় ষোড়শ পোপ বেনেডিক্টের সাথে রোমে দেখা করেন। প্রত্যেক সুইস পুরুষ নাগরিকের মত, ফেদেরারও সুইস সশস্ত্রবাহিনীতে বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা দান করেন। যদিও তিনি ২০০৩ সালে অনুপযুক্ত গণ্য হন, পিঠের সমস্যার কারণে ও পরবর্তীকালে তার সামরিক বাধ্যবাধকতা পূরণ করা আবশ্যক নয়। তিনি ছোট থেকেই এফসি বাজেল ও সুইজারল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলকে সমর্থণ করে বড় হয়েছেন। ফেদেরার শিশুকালের নানা পরিধির খেলাধুলা করতেন। তিনি তার হাতে চোখের সমন্বয়ের জন্য ব্যাডমিন্টন এবং বাস্কেটবল খেলেছেন। ফেদেরার নানা সাক্ষাৎকারে নিজেকে একজন ক্রিকেটপ্রেমী বলে উল্লেখ করেছে এবং শচীন তেন্ডুলকরের তার দুই বার দেখা হয়। তিনি বলেন "আমি সবসময় অনেক বেশি আগ্রহী যদি একটি বল জড়িত থাকে,"। অধিকাংশ টেনিস প্রতিভাবান, বিপরীতভাবে, অন্যান্য সব খেলা বর্জন করে টেনিস খেলে। পরবর্তি জীবনে, ফেদেরারের সাথে গলফ ফেলোয়াড় টাইগার উডস-এর সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে। পরিবার সাবেক ডব্লিউটিএ খেলোয়াড় মিরোস্লাভা "মিরকা" ফেদেরার (মিরোস্লাভা ভাভরিনেচ) এর সাথে প্রায় ১০ বছর প্রণয়ের পর ১১ এপ্রিল,২০০৯ তারিখে বাসেলে ঘনিষ্ঠ কিছু পরিচিতজনের সান্নিধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফেদেরার। তাদের বর্তমানে দুটি যমজ মেয়েসন্তান রয়েছে,মিলা রোজ ও শারলিন রিভা। মিরকা বর্তমানে তার স্বামীর জনসংযোগ কাজের তত্ত্বাবধান করেন। ম্যানেজমেন্ট মানবহিতকর কর্মকাণ্ড টেনিস ক্যারিয়ার ১৯৯৮-এর পূর্ব:জুনিয়র বছর ১৯৯৮-২০০২: প্রারম্ভিক কর্মজীবন ও এটিপিতে অন্তর্ভুক্তি ২০০৩-২০০৭: যুগান্তকারী ও আধিপত্য ২০০৮ থেকে ২০১৩: বড় চারের আধিপত্য ২০০৮ ২০০৯ ২০১০ ২০১১ ২০১২ ২০১৩ ২০১৪ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফেদেরার বনাম নাদাল ফেদেরার বনাম রডিক ফেদেরার বনাম জকোভিচ্ ফেদেরার বনাম রডিক ফেদেরার বনাম হিউইট ফেদেরার বনাম সাফিন ফেদেরার বনাম নালবাল্ডিয়ান উপাখ্যান খেলার ধরন সাবেক ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান টেনিস গ্রেট জিমি কনরস ফেদেরারের খেলার ধরন সম্পর্কে একবার বলেছিলেনঃ "হয় তুমি একজন হার্ডকোর্ট স্পেশালিস্ট, না হয় একজন ক্লে কোর্ট স্পেশালিস্ট, না হয় একজন গ্রাসকোর্ট স্পেশালিস্ট....... অথবা তুমি রজার ফেদেরার !" ফেদেরার একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ খেলোয়াড় যার বিশেষ খ্যাতি আছে দুর্দান্ত শট খেলার ক্ষমতা ও শৈল্পিক ছন্দের জন্যে। জন ম্যাকেনরোর মতে, ফেদেরারের ফোরহ্যান্ড "টেনিসের সেরা শট"। thumbnail|left|<center>ফেদেরার এর সার্ভ সরঞ্জাম ও পোশাক সরঞ্জাম পোশাক বিজ্ঞাপনে উপস্থাপন সম্মাননা ~চারবার "লরিয়াস বর্ষসেরা খেলোয়াড়" : ২০০৫-২০০৮ ~আটবার এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর "Fans' Favourite" : ২০০৩-২০১০ ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্স টাইমলাইন {|class=wikitable style=text-align:center; |- !টুর্নামেন্ট!!১৯৯৮!!১৯৯৯!!২০০০!!২০০১!!২০০২!!২০০৩!!২০০৪!!২০০৫!!২০০৬!!২০০৭!!২০০৮!!২০০৯!!২০১০!!২০১১!!২০১২!!২০১৩!!২০১৪!! !! !!জয় % |- |align=left|অস্ট্রেলিয়ান ওপেন |অনু |বা.হে |bgcolor=afeeee|৩রা |bgcolor=afeeee|৩রা |bgcolor=afeeee|৪রা |bgcolor=afeeee|৪রা | style="background:lime;"|[[২০০৪ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন – পুরুষ একক|'জয়ী]] | style="background:yellow;"|সেমি | style="background:lime;"|জয়ী]] | style="background:lime;"|[[২০০৭ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন – পুরুষ একক|জয়ী | style="background:yellow;"|সেমি | style="background:thistle;"|ফাই | style="background:lime;"|জয়ী]] | style="background:yellow;"|সেমি | style="background:yellow;"|সেমি | style="background:yellow;"|সেমি | style="background:yellow;"|সেমি |৪ / ১৫ |৭৩–১১ |৮৬.৯০ |- |align=left|ফ্রেঞ্চ ওপেন |অনু |bgcolor=afeeee|১রা |bgcolor=afeeee|৪রা |bgcolor=ffebcd|কো.ফা |bgcolor=afeeee|১রা |bgcolor=afeeee|১রা |bgcolor=afeeee|৩রা | style="background:yellow;"|সেমি | style="background:thistle;"|ফাই | style="background:thistle;"|ফাই | style="background:thistle;"|ফাই | style="background:lime;"|[[২০০৯ ফ্রেঞ্চ ওপেন – পুরুষ একক|জয়ী |bgcolor=ffebcd|কো.ফা | style="background:thistle;"|ফাই | style="background:yellow;"|সেমি |bgcolor=ffebcd|কো.ফা |bgcolor=afeeee|৪রা |১ / ১৬ |৬১–১৫ |৮০.২৬ |- |align=left|উইম্বলডন |অনু |bgcolor=afeeee|১রা |bgcolor=afeeee|১রা |bgcolor=ffebcd|কো.ফা |bgcolor=afeeee|১রা | style="background:lime;"|জয়ী]] | style="background:lime;"|[[২০০৪ উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ – পুরুষ একক|জয়ী | style="background:lime;"|জয়ী]] | style="background:lime;"|[[২০০৬ উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ – পুরুষ একক|জয়ী | style="background:lime;"|জয়ী]] | style="background:thistle;"|ফাই | style="background:lime;"|[[২০০৯ উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ – পুরুষ একক|জয়ী |bgcolor=ffebcd|কো.ফা |bgcolor=ffebcd|কো.ফা |bgcolor=lime|জয়ী]] | style="background:lime;"|২রা | style="background:thistle;"|ফাই |৭ / ১৬ |৭৩–৯ |৮৯.০২ |- |align=left|ইউএস ওপেন |অনু |বা.হে |bgcolor=afeeee|৩রা |bgcolor=afeeee|৪রা |bgcolor=afeeee|৪রা |bgcolor=afeeee|৪রা | style="background:lime;"|[[২০০৪ ইউএস ওপেন – পুরুষ একক|জয়ী | style="background:lime;"|জয়ী]] | style="background:lime;"|[[২০০৬ ইউএস ওপেন – পুরুষ একক|জয়ী | style="background:lime;"|জয়ী]] | style="background:lime;"|[[২০০৮ ইউএস ওপেন – পুরুষ একক|জয়ী | style="background:thistle;"|ফাই | style="background:yellow;"|সেমি | style="background:yellow;"|সেমি |bgcolor=ffebcd|কো.ফা |bgcolor=afeeee|৪রা | |৫ / ১৪ |৬৭–৯ |৮৮.১৬ |- !style=text-align:left|জয়–পরাজয় !০–০ !০–২ !৭–৪ !১৩–৪ !৬–৪ !১৩–৩ !২২–১ !২৪–২ !২৭–১ !২৬–১ !২৪–৩ !২৬–২ !২০–৩ !২০–৪ !১৯–৩ !১৩–৪ !১৪–৩ !১৭ / ৬১ !২৭৪–৪৪ !৮৬.১৯ |} ফাইনাল: ২৫ (১৭–৮) ফলাফলবছরচ্যাম্পিয়নশীপমাঠপ্রতিপক্ষস্কোরবিজয়ী২০০৩উইম্বলডনঘাস মার্ক ফিলিপুসিস৭–৬(৭–৫), ৬–২, ৭–৬(৭–৩)বিজয়ী২০০৪অস্ট্রেলিয়ান ওপেনহার্ড মারাট সাফিন৭–৬(৭–৩), ৬–৪, ৬–২বিজয়ী২০০৪উইম্বলডন (২)ঘাস অ্যান্ডি রডিক৪–৬, ৭–৫, ৭–৬(৭–৩), ৬–৪বিজয়ী২০০৪ইউএস ওপেন হার্ড লেইটন হিউইট৬–০, ৭–৬(৭–৩), ৬–০বিজয়ী২০০৫উইম্বলডন (৩)ঘাস অ্যান্ডি রডিক৬–২, ৭–৬(৭–২), ৬–৪বিজয়ী২০০৫ইউএস ওপেন (২)হার্ড আন্দ্রে আগাসি৬–৩, ২–৬, ৭–৬(৭–১), ৬–১বিজয়ী২০০৬অস্ট্রেলিয়ান ওপেন (২)হার্ড মার্কোস বাগদাতিস৫–৭, ৭–৬, ৬–০, ৬–২রানার-আপ২০০৬ফ্রেঞ্চ ওপেনলাল মাটি রাফায়েল নাদাল৬–১, ১–৬, ৪–৬, ৬–৭(৪–৭)বিজয়ী২০০৬উইম্বলডন (৪)ঘাস রাফায়েল নাদাল৬–০, ৭–৬(৭–৫), ৬–৭(২–৭), ৬–৩বিজয়ী২০০৬ইউএস ওপেন (৩)হার্ড অ্যান্ডি রডিক৬–২, ৪–৬, ৭–৫, ৬–১বিজয়ী২০০৭অস্ট্রেলিয়ান ওপেন (৩)হার্ড ফার্নান্দো গনজালেস৭–৬(৭–২), ৬–৪, ৬–৪রানার-আপ২০০৭ফ্রেঞ্চ ওপেন (২)লাল মাটি রাফায়েল নাদাল৩–৬, ৬–৪, ৩–৬, ৪–৬বিজয়ী২০০৭উইম্বলডন (৫)ঘাস রাফায়েল নাদাল৭–৬(৯–৭), ৪–৬, ৭–৬(৭–৩), ২–৬, ৬–২বিজয়ী২০০৭ইউএস ওপেন (৪)হার্ড নোভাক জকোভিচ৭–৬(৭–৪), ৭–৬(৭–২), ৬–৪রানার-আপ২০০৮ফ্রেঞ্চ ওপেন (৩)লাল মাটি রাফায়েল নাদাল১–৬, ৩–৬, ০–৬রানার-আপ২০০৮উইম্বলডনঘাস রাফায়েল নাদাল৪–৬, ৪–৬, ৭–৬(৭–৫), ৭–৬(১০–৮), ৭–৯বিজয়ী২০০৮ইউএস ওপেন (৫)হার্ড অ্যান্ডি মারি৬–২, ৭–৫, ৬–২রানার-আপ২০০৯অস্ট্রেলিয়ান ওপেনহার্ড রাফায়েল নাদাল৫–৭, ৬–৩, ৬–৭(৩–৭), ৬–৩, ২–৬বিজয়ী২০০৯ফ্রেঞ্চ ওপেনলাল মাটি রবিন সোদারলিং৬–১, ৭–৬(৭–১), ৬–৪বিজয়ী২০০৯উইম্বলডন (৬)ঘাস অ্যান্ডি রডিক৫–৭, ৭–৬(৪–৬), ৭–৬(৭–৫), ৩–৬, ১৬–১৪রানার-আপ২০০৯ইউএস ওপেনহার্ড হুয়ান মার্টিন দেল পোর্তো৬–৩, ৬–৭(৫–৭), ৬–৪, ৬–৭(৪–৭), ২–৬বিজয়ী২০১০অস্ট্রেলিয়ান ওপেন (৪)হার্ড অ্যান্ডি মারি৬–৩, ৬–৪, ৭–৬(১৩–১১)রানার-আপ২০১১ফ্রেঞ্চ ওপেন (৪)লাল মাটি রাফায়েল নাদাল৫–৭, ৬–৭(৩–৭), ৭–৫, ১–৬বিজয়ী২০১২উইম্বলডন (৭)ঘাস অ্যান্ডি মারি৪–৬, ৭–৫, ৬–৩, ৬–৪রানার-আপ২০১৪উইম্বলডন (২)Grass নোভাক জকোভিচ৭–৬(৯–৭), ৪–৬, ৬–৭(৪–৭), ৭–৫, ৪–৬ বছর অনুযায়ী পারফরম্যান্স টাইমলাইন প্রতিযোগিতা১৯৯৮১৯৯৯২০০০২০০১২০০২২০০৩২০০৪২০০৫২০০৬২০০৭২০০৮২০০৯২০১০২০১১২০১২২০১৩স্ট্রা.রেজ–পজয় %YECঅনুত্তীর্ণঅনুত্তীর্ণঅনুত্তীর্ণঅনুত্তীর্ণসেমিজয়ী]] | style="background:lime;"|[[২০০৪ টেনিস মাস্টার্স কাপ – একক|জয়ীফাইজয়ী]] | style="background:lime;"|[[২০০৭ টেনিস মাস্টার্স কাপ – একক|জয়ীরা.রসেমিজয়ী]] | style="background:lime;"|[[২০১১ এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনাল – একক|জয়ীফাইসেমি৬ / ১২৪৪–১১৮০.০০জয়–পরাজয়০–০০–০০–০০–০৩–১৫–০৫–০৪–১৫–০৪–১১–২২–২৫–০৫–০৩–২২–২ ফাইনাল: ৮ (৬–২) ফলাফলবছরচ্যাম্পিয়নশীপমাঠপ্রতিপক্ষস্কোরবিজয়ী২০০৩টেনিস মাস্টার্স কাপ, হিউস্টনহার্ড আন্দ্রে আগাসি৬–৩, ৬–০, ৬–৪বিজয়ী২০০৪টেনিস মাস্টার্স কাপ, হিউস্টনহার্ড লেইটন হিউইট৬–৩, ৬–২রানার-আপ২০০৫টেনিস মাস্টার্স কাপ, সাংহাইকার্পেট (i) দাভিদ নালবান্দিয়ান৭–৬(৭–৪), ৭–৬(১৩–১১), ২–৬, ১–৬, ৬–৭(৩–৭)বিজয়ী২০০৬টেনিস মাস্টার্স কাপ, সাংহাইহার্ড (i) জেমস ব্লেক৬–০, ৬–৩, ৬–৪বিজয়ী২০০৭টেনিস মাস্টার্স কাপ, সাংহাইহার্ড (i) দাভিদ ফেরেরার৬–২, ৬–৩, ৬–২বিজয়ী২০১০এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনাল, লন্ডনহার্ড (i) রাফায়েল নাদাল৬–৩, ৩–৬, ৬–১বিজয়ী২০১১এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনাল, লন্ডনহার্ড (i) জো উইলফ্রেড সোঙ্গা৬–৩, ৬–৭(৬–৮), ৬–৩রানার-আপ২০১২এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনাল, লন্ডনহার্ড (i) নোভাক জকোভিচ৬–৭(৬–৮), ৫–৭ অলিম্পিক গেমস ফাইনাল: ২ (১ স্বর্ণ পদক, ১ রৌপ্য পদক) একক: ১ (০–১) ফলাফলবছরচ্যাম্পিয়নশীপমাঠপ্রতিপক্ষস্কোররানার-আপ২০১২গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক, লন্ডনঘাস অ্যান্ডি মারি২–৬, ১–৬, ৪–৬ দ্বৈত: ১ (১–০) ফলাফলবছরচ্যাম্পিয়নশীপমাঠসঙ্গীপ্রতিপক্ষস্কোরবিজয়ী২০০৮গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক, বেইজিংহার্ড ওয়ারিঙ্কা এস্পেলিন ইয়োহানসন৬–৩, ৬–৪, ৬–৭(৪–৭), ৬–৩ রেকর্ডস সকল সময় টুর্নামেন্ট রেকর্ড টুর্নামেন্টথেকেঅর্জিত রেকর্ডবরাবর খেলোয়াড়গ্র্যান্ড স্ল্যাম||align=center|১৮৭৭||মোট ১৭টি পুরুষ মেজর একক||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||বছরে ৩টি পুরুষ মেজর শিরোপা ৩ বার ২০০৪, ২০০৬–০৭||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||বছরে ২টি পুরুষ মেজর শিরোপা ৫ বার ২০০৪–০৭, ২০০৯||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||মোট ২৫ বার পুরুষ মেজর ফাইনাল||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||মোট ৩৫ বার পুরুষ মেজর সেমি-ফাইনাল||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||মোট ৪২ বার পুরুষ মেজর কোয়াটার-ফাইনাল||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||টানা ১০ বার পুরুষ মেজর ফাইনাল||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||টানা ২৩ বার পুরুষ মেজর সেমি-ফাইনাল||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||টানা ৩৬ বার পুরুষ মেজর কোয়াটার-ফাইনাল||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||টানা ৫৯ বার পুরুষ মেজর টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||মোট ২৭৪টি মেজর খেলা জয়||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||মোট ১৪০টি মেজর হার্ড কোর্টে জয়||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||৬০+ জয় প্রত্যেক মেজর টুর্নামেন্টে||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||৮৭.৫০% ১৪০/২০ মেজর হার্ড কোর্টে মোট জয়ের শতাংশ||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||বছরে ৪টি মেজর ফাইনালে খেলা ৩ বার (২০০৬–০৭, ২০০৯)||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||বছরে ৪টি মেজর সেমি-ফাইনালে খেলা ৫ বার (২০০৫–০৯) ||একাগ্র্যান্ড স্ল্যাম ||align=center|১৮৭৭||বছরে ৪টি মেজর কোয়াটার-ফাইনালে খেলা ৮ বার (২০০৫–১২)||একা ওপেন যুগে রেকর্ড টীকা তথ্যসূত্র আরও পড়ুন ভিডিও Wimbledon Classic Match: Federer vs Sampras Standing Room Only, DVD Release Date: 31 October 2006, Run Time: 233 minutes, ASIN: B000ICLR98. Wimbledon 2007 Final: Federer vs. Nadal (2007) Kultur White Star, DVD Release Date: 30 October 2007, Run Time: 180 minutes, ASIN: B000V02CU0. Wimbledon — The 2008 Finals: Nadal vs. Federer'' Standing Room Only, DVD Release Date: 19 August 2008, Run Time: 300 minutes, ASIN: B001CWYUBU. বহিঃসংযোগ Official website Roger Federer Foundation প্রোফাইল বিষয়শ্রেণী:১৯৮১-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:জীবিত ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:অলিম্পিক পদক বিজয়ী ক্রীড়াবিদ বিষয়শ্রেণী:লরিয়াস বিশ্ব ক্রীড়া পুরস্কার বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:হপম্যান কাপের প্রতিযোগী বিষয়শ্রেণী:অস্ট্রেলিয়ান ওপেন বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:বিশ্বের ১নং টেনিস খেলোয়াড় বিষয়শ্রেণী:২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের টেনিস খেলোয়াড় বিষয়শ্রেণী:২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের পদক বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের টেনিস খেলোয়াড় বিষয়শ্রেণী:২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের পদক বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:সুইজারল্যান্ডীয় ক্রীড়াবিদ বিষয়শ্রেণী:সুইস পুরুষ টেনিস খেলোয়াড় বিষয়শ্রেণী:ফ্রেঞ্চ ওপেন বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:ইউএস ওপেন বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:উইম্বলডন বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:টেনিসে অলিম্পিক পদক বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত বিষয়শ্রেণী:উইম্বলডন জুনিয়র বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:সুইজারল্যান্ডের অলিম্পিক রৌপ্যপদক বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:পুরুষদের এককে গ্র্যান্ড স্ল্যাম (টেনিস) চ্যাম্পিয়ন বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকানার বংশোদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকান বিষয়শ্রেণী:ক্রীড়ায় বিশ্বরেকর্ডধারী
ফুটবল
https://bn.wikipedia.org/wiki/ফুটবল
থাম্ব|ফুটবলে ভক্তদের মৌলিক উদ্দেশ্য ম্যাচের সময় তাদের দলকে উৎসাহ দেওয়া। থাম্ব|ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সদর দপ্তর, জুরিখ, সুইজারল্যান্ড ফুটবল, যা সাধারণত ফুটবল বা সকার নামে পরিচিত,একটি দলগত খেলা যা ১১ জন খেলোয়াড়ের দুটি দলের মধ্যে খেলা হয় যারা প্রাথমিকভাবে একটি আয়তক্ষেত্রাকার মাঠের চারপাশে বল চালাতে তাদের পা ব্যবহার করে।খেলার উদ্দেশ্য হলো গোল লাইনের বাইরে বলটিকে প্রতিপক্ষের দ্বারা সুরক্ষিত আয়তক্ষেত্রাকার ফ্রেমযুক্ত গোলে সরিয়ে বিপরীত দলের চেয়ে বেশি গোল করা।ঐতিহ্যগতভাবে, খেলাটি ৪৫ মিনিট করে দুই অংশের খেলা হয়ে থাকে, মোট ম্যাচের সময় ৯০ মিনিটের জন্য।আনুমানিক ২৫০ মিলিয়ন খেলোয়াড় ২০০ টির ও বেশি দেশ এবং অঞ্চলে চলমান, এছাড়া ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হিসেবেই পরিচিত। খেলার নিয়মাবলী (সংক্ষেপে) ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, ফুটবল খেলার আইনগুলি সতেরোটি পৃথক আইন নিয়ে গঠিত, প্রতিটি আইনে বেশ কয়েকটি নিয়ম এবং নির্দেশ রয়েছে। নিচে ১৭ টি আইনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল: আইন ১: খেলার ক্ষেত্র এই আইন ফুটবল মাঠের আকার এবং চিহ্ন নির্ধারণ করে, যাকে বলা হয় একটি ফুটবল পিচ বা ফুটবল মাঠ। পিচ প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম ঘাস দ্বারা গঠিত হতে পারে। গোল লাইনের সমান্তরালে চলে এবং খেলার পৃষ্ঠকে চিহ্নিত করে এমন একটি লাইন দ্বারা পিচ দুটি সমান ভাগে বিভক্ত। এই রেখাটি কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে এবং এর চারপাশে ৯.১৫ মিটার একটি বৃত্ত আঁকা হয়।টাচলাইনগুলি অবশ্যই ৯০-১২০ মিটার দীর্ঘ এবং দৈর্ঘ্যে একই হতে হবে। গোল লাইন ৪৫-৯০ মিটার চওড়া এবং প্রস্থের সমান হতে হবে। আইন ২: বল এই আইনটি বলের আকৃতি, আকার এবং উপাদান গঠন নির্দিষ্ট করে। আইনটি বলে যে একটি আকার ৫ বলের আদর্শ ব্যাস প্রায় ২২ সেমি এবং পরিধি ৬৮-৭০ সেমি হতে হবে। ফুটবল বলটির ওজন ৪১০-৪৫০ গ্রামের মধ্যে হতে হবে। আইন ৩: খেলোয়াড় প্রতিটি দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকতে হবে। ১১ জনের মধ্যে একজনকে অবশ্যই গোলকিপার হতে হবে। একটি দলকে সম্পূর্ণরূপে বিবেচনা করার জন্য কমপক্ষে সাতজন খেলোয়াড় থাকতে হবে। খেলোয়াড়দের তাদের পা বা ধড় দিয়ে বল আঘাত করা উচিত। গোলরক্ষক ব্যতীত কোন খেলোয়াড়কে বল স্পর্শ করার জন্য তাদের হাত বা বাহু ব্যবহার করার অনুমতি নেই। আইন ৪: খেলোয়াড়দের সরঞ্জাম প্রত্যেক খেলোয়াড়কে অবশ্যই নিয়মানুযায়ী একটি শার্ট, হাফপ্যান্ট, মোজা, জুতা এবং সঠিক শিন সুরক্ষা পরতে হবে। খেলোয়াড়দের এমন কোনো সরঞ্জাম ব্যবহার বা পরিধান করার অনুমতি নেই যা তাদের বা অন্যদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, যেমন রিং। গোলরক্ষককে অবশ্যই অন্যান্য খেলোয়াড় এবং ম্যাচ কর্মকর্তাদের থেকে আলাদা রঙের পোশাক পরতে হবে যাতে সহজে তাদের বোঝা যায়। আইন ৫: রেফারি একজন রেফারি একটি ফুটবল খেলা তদারকি করেন। বিরোধসহ সব বিষয়েই তাদের শেষ কথা। তাদের কাছে একজন খেলোয়াড়কে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, ফাউলের ক্ষেত্রে একটি ম্যাচ বন্ধ করার এবং খেলাটি তদারকি করার সাধারণ দায়িত্ব রয়েছে যাতে এটি কোনও বাধা ছাড়াই চলে। আইন ৬: অন্যান্য ম্যাচ কর্মকর্তারা একজন সহকারী রেফারি খেলার সাজ-সজ্জা বজায় রাখতে রেফারিকে সাহায্য করেন। সহকারী রেফারিদের মাঠের উভয় পাশে স্থাপন করা হয় এবং অপরাধ সংঘটনে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। আইন ৭: ম্যাচের সময়কাল একটি সাধারণ ফুটবল ম্যাচে খেলার সময় ৯০ মিনিট, যা প্রতিটি ৪৫ মিনিটে দুটি অর্ধে বিভক্ত। দুই অর্ধের মধ্যে, ১৫ মিনিটের হাফটাইম বিরতি আছে। পূর্ণ-সময় খেলার সমাপ্তি চিহ্নিত করে। অর্থাৎ, ৪৫ মিনিট খেলা + ১৫ মিনিট বিরতি + ৪৫ মিনিট খেলা আইন ৮: খেলার শুরু এবং পুনঃসূচনা প্রতিটি ফুটবল খেলা শুরু হয় টস দিয়ে। দুই দলের অধিনায়ক ম্যাচ রেফারির সঙ্গে মাঠের মাঝখানে দেখা করেন। বিজয়ী দলের অধিনায়ক (টস বিজয়ী) প্রথমার্ধে কোন গোলপোস্টটি অনুসরণ করবেন তা বেছে নেন। তখন টস পরাজিত অধিনায়কে অপর অধিনায়কের বিপরীত পছন্দ বেছে নিতে হয়। দ্বিতীয়ার্ধে, বিপরীত গোলপোস্টটি নিয়ে দলদুটি আবারও খেলা শুরু করে। আইন ৯: খেলার মধ্যে এবং বাইরে বল খেলার মধ্যে বল এবং খেলার বাইরে বল একটি ফুটবল খেলার সময় খেলার দুটি প্রাথমিক স্তর। বলটিকে প্রতিটি খেলার সময়কালের শুরু থেকে খেলার সময়কাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত একটি কিক-অফ সহ খেলায় বলা হয়। শুধুমাত্র বিরল ক্ষেত্রে বল খেলার মাঠ ছেড়ে যায় বা রেফারি খেলা বন্ধ করে দেয়। আইন ১০: একটি ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করা ফুটবলের উদ্দেশ্য হল প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে বলকে লাথি মেরে বা পাস দিয়ে গোল লাইনের উপর দিয়ে গোল করা। একটি গোল বলা হয়, যদি বলটি গোলপোস্ট বা ক্রসবারের মধ্যে দিয়ে গোল লাইন অতিক্রম করে এবং স্কোরকারী দলের দ্বারা কোন অপরাধ সংঘটিত না হয়। আইন ১১: অফসাইড যদি বল ছোড়া বা কিক করার সময়, একজন খেলোয়াড় বল ব্যতীত বিপক্ষ দলের অর্ধেক মাঠে সর্বশেষ প্রতিরক্ষকের থেকে এগিয়ে অবস্থান করে তাহলে খেলোয়াড়টিকে অফসাইড অবস্থানে বলা হয়। আইন ১২: ফাউল এবং অসদাচরণ একটি ফাউল সংঘটিত হয় যখন একজন খেলোয়াড় খেলার নিয়মের বিরুদ্ধে যায় এবং পরবর্তীতে খেলাটি খেলতে বাধা দেয়। ফাউলকারী খেলোয়াড়ের প্রতিপক্ষ দলকে শাস্তি হিসেবে ফ্রি কিক দেওয়া হয়। একজন খেলোয়াড়ের যে কোনো কাজ যা রেফারি নির্ধারণ করে একটি শাস্তিমূলক পরিণতি প্রয়োজন তা একটি অসদাচরণ বলে বিবেচিত হয়। যে খেলোয়াড় এটা করবে সে হয় সতর্কবাণী পাবে অথবা মাঠ ছেড়ে চলে যাবে। বরখাস্ত হওয়া খেলোয়াড়কে প্রতিস্থাপন করা যাবে না। আইন ১৩: ফ্রি কিক এগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে: পরোক্ষ ফ্রি কিক: এগুলি "নন-পেনাল" ফাউলের পরে বিপরীত পক্ষকে দেওয়া হয়, বা যখন কোনও নির্দিষ্ট ফাউল না ঘটিয়ে প্রতিপক্ষকে সতর্ক বা বের করার জন্য খেলা থামানো হয়। এর ফলে গোল হতে পারে বা নাও হতে পারে। প্রত্যক্ষ বা সরাসরি ফ্রি কিক: একটি দল পরোক্ষ ফ্রি কিক পাওয়ার পরে আবারও ফাউল করা দলকে এগুলি দেওয়া হয়। এটি দিয়ে একটি গোল সরাসরি করা যেতে পারে। আইন ১৪: পেনাল্টি কিক ফাউলের পর ফাউল করা দলকে পেনাল্টি কিক দেওয়া হয় যা সাধারণত সরাসরি ফ্রি কিকের পরিণতি হয় কিন্তু পার্থক্য হল এটি প্রতিপক্ষের পেনাল্টি এলাকার মধ্যে ঘটে। আইন ১৫: থ্রো-ইন বল খেলার মাঠ ছেড়ে যাওয়ার পরে একটি থ্রো-ইন দেওয়া হয়। যে খেলোয়াড় শেষবার বল স্পর্শ করেছে তার প্রতিপক্ষ একটি থ্রো-ইন পায়। আইন ১৬: গোল কিক এগুলি দেওয়া হয় যখন পুরো বলটি গোল লাইন অতিক্রম করে, মাটিতে বা বাতাসে, আক্রমণকারী পক্ষের একজন সদস্যকে শেষবার স্পর্শ করে এবং গোল হয় না। বলটি গোলরক্ষক দ্বারা একটি গোল কিক দেওয়া হয়। আইন ১৭: কর্নার কিক একটি কর্নার কিক দেওয়া হয় যখন পুরো বল গোল লাইন অতিক্রম করে, মাটিতে হোক বা বাতাসে, শেষবার একজন ডিফেন্ডারকে স্পর্শ করলেও কোন গোল হয় না। শুধুমাত্র বিপরীত পক্ষ কর্নার কিক থেকে সরাসরি গোল করতে পারে; বল কিকারের গোলে প্রবেশ করলে, প্রতিপক্ষকে কর্নার কিক দেওয়া হয়। কোচ ফুটবল খেলার স্তর এবং দেশভেদে কোচের ভূমিকা ও দায়িত্ব-কর্তব্যের রূপরেখা ভিন্নতর হতে পারে। যুব ফুটবলে কোচের প্রধান ভূমিকা হচ্ছে খেলোয়াড়দেরকে উদ্বুদ্ধ করা এবং তাদের দক্ষতাকে কাগজে-কলমে দেখিয়ে উত্তরণ ঘটানো। শারীরিক অথবা কৌশলগত উত্তরণের তুলনায় প্রাণবন্ত এবং সুন্দর খেলা উপহার দেয়াকে প্রাধান্য দেয়া। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন দেশের ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো তাদের প্রশিক্ষণের ছকে এ সংক্রান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কোচদেরকেও খেলোয়াড়দের উন্নয়ন এবং বিজয়ের লক্ষ্যে আনন্দ উপভোগের জন্যে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেছে। । ঘরোয়া প্রতিযোগিতা প্রত্যেক দেশের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা প্রতি মৌসুমে ঘরোয়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সাধারণত এতে বেশ কয়েকটি বিভাগ থাকে এবং দলগুলো পুরো মৌসুম জুড়ে খেলার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পয়েন্ট অর্জন করে থাকে। দলগুলোকে একটি তালিকায় তাদের অর্জিত পয়েন্টের ক্রমানুসারে সাজানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, দলগুলো প্রতি মৌসুমে তার লীগের অন্য সকল দলের সাথে ঘরের মাঠে এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঠে ম্যাচ খেলে। এরপর মৌসুমের শেষে শীর্ষ দলটিকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। শীর্ষ কয়েকটি দল এমনকি উপরের বিভাগে খেলার সুযোগও পেতে পারে। অনুরূপভাবে, একেবারে পয়েন্ট তালিকার নিচে মৌসুম শেষ করা কয়েকটি দল নিচের বিভাগে অবনমিত হয়। শীর্ষ এক বা একাধিক দল পরবর্তী মৌসুমে আন্তর্জাতিক ক্লাব প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগও পেতে পারে। এই নিয়মের প্রধান ব্যতিক্রম দেখা যায় লাতিন আমেরিকার কয়েকটি লীগে। বেশিরভাগ দেশেই লীগ ব্যবস্থার সাথে এক বা একাধিক "কাপ" প্রতিযোগিতা যুক্ত থাকে। কিছু দেশের সর্বোচ্চ বিভাগে বিপুল পারিশ্রমিকে তারকা খেলোয়াড়েরা খেলেন। তেমনি কিছু দেশে এবং নিচু বিভাগের খেলোয়াড়েরা অ-পেশাদার এবং মৌসুমভিত্তিক হয়ে থাকতে পারেন। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচটি লীগ হল - প্রিমিয়ার লীগ (ইংল্যান্ড), লা লিগা (স্পেন), সিরি এ (ইতালি), বুন্দেসলিগা (জার্মানি) এবং লিগ ১ (ফ্রান্স)। এই লীগগুলো বিশ্বের বেশিরভাগ শীর্ষ খেলোয়াড়কে আকর্ষণ করে এবং এদের প্রত্যেকটিতে খরচ হয় ৬০০ মিলিয়ন পাউন্ড-স্টার্লিং বা ৭৬৩ মিলিয়ন ইউরো বা ১.১৮৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। রেফারী একজন রেফারীর মাধ্যমে ফুটবল খেলা পরিচালিত হয়। তিনি খেলায় মূল কর্তৃপক্ষ হিসেবে যাবতীয় আইন-কানুন প্রয়োগ করেন। দুইজন সহকারী রেফারী বা লাইন্সম্যান এবং কখনো কখনো চতুর্থ রেফারীও তাকে খেলায় সহায়তা করে থাকেন। তবে ইউইএফএ ফুটবল প্রতিযোগিতায় ৬জন রেফারী অংশগ্রহণ করেন। দুইজন গোলপোস্টের বাইরে থেকে বলের অবস্থান চিহ্নিত করেন যে তা গোললাইন অতিক্রম করেছে কি-না (এদেরকে গোললাইন রেফারীও বলা হয়)। খেলা নির্দিষ্ট সময়ে সমাপন কিংবা অতিরিক্ত সময় যুক্তকরণ তার দায়িত্ব। মাঠে অবস্থানকালে যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় পরখপূর্বক খেলোয়াড় সংখ্যার সঠিকতা, অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের সংশ্লিষ্টতা, ইত্যাদি ঘটনার বিবরণ নোটবহিতে লিপিবদ্ধসহ খেলাশেষে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পেশ করেন। এছাড়াও, খেলোয়াড় আহত ও এর গুরুত্বতা অণুধাবনপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মাঠে তিনি কোন খেলোয়াড়, এমনকি দলীয় কোচকে হলুদ কিংবা লাল কার্ডের প্রয়োগের মাধ্যমে যথাক্রমে সতর্কীকরণ, শাস্তি কিংবা বহিস্কার করতে পারেন। বিশ্বব্যাপী ফুটবল খেলার মানোন্নয়নে সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী সংস্থা ফিফা ১৭টি আইনের কথা উল্লেখ করেছে। তন্মধ্যে ৫নং ধারার মাধ্যমে খেলা পরিচালনার জন্য রেফারী এবং সহকারী রেফারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। যথাযথভাবে খেলা পরিচালনার জন্য প্রতিযোগিতা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে রেফারীদের প্যানেল সৃষ্টি করতে পারেন। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ ম্যাচ রেফারীকে সাহায্য করার জন্য ৫ম বিচারকের ব্যবস্থা রেখেছিল। আরো দেখুন সবচেয়ে বেশি গোলকারী ফুটবলারের তালিকা সবচেয়ে বেশি লীগ শিরোপাজয়ী ফুটবল ক্লাবের তালিকা বিশ্বকাপ ফুটবল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Federation Internationale de Football Association (FIFA) The Current Laws of the Game (LOTG) The Rec.Sport.Soccer Statistics Foundation (RSSSF) বিষয়শ্রেণী:ফুটবল বিষয়শ্রেণী:দলগত ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:ইংল্যান্ডে উদ্ভাবিত ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:বল খেলা বিষয়শ্রেণী:ফুটবল পরিভাষা বিষয়শ্রেণী:ফুটবল কোড বিষয়শ্রেণী:ফুটবলের আইন বিষয়শ্রেণী:শারীরিক শিক্ষা বিষয়শ্রেণী:গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:ইংরেজ উদ্ভাবন
হকি
https://bn.wikipedia.org/wiki/হকি
হকি দুই দলের মধ্যে খেলা হয় এমন খেলার গোত্রীয় একটি খেলা। উপধরন ফিল্ড হকি ফিল্ড হকি নুড়ি, প্রাকৃতিক ঘাস, বালি বা পানি আচ্ছাদিত কৃত্রিম মাটির উপর ৭৩ মিলিমিটার পরিসীমা বিশিষ্ট ছোট ও শক্ত বল দিয়ে খেলা হয়। এটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে ইউরোপ, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আর্জেন্টিনায় পুরুষ ও নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় একটি খেলা। বেশির ভাগ দেশেই যেকোন এক লিঙ্গের অর্থাৎ পুরুষ বা নারীদের মধ্যে আলাদা আলাদাভাবে খেলা হয়, যদিও খেলাটি দুই লিঙ্গের সমন্বয়েও খেলা যায়। আইস হকি আইস হকি বৃহৎ বরফাচ্ছাদিত এলাকায় তিন ইঞ্চি পরিসীমা বিশিষ্ট তাপ দিয়ে সংযুক্ত রাবার ডিস্ক দিয়ে স্কেটারদের দুই দলের মধ্যে খেলা হয়ে থাকে। এই রাবার ডিস্ককে পাক বলা হয়। এই পাকটিকে উচ্চ স্তরের খেলার পূর্বে ঠাণ্ডা করা হয় যাতে এর বাউন্সিংয়ের মাত্রা কমে ও বরফে ঘর্ষণ কম হয়। এই খেলাটি উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সর্বত্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিভিন্ন মাত্রায় খেলা হয়। এই খেলাটি কানাডা, ফিনল্যান্ড, লাটভিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয়। আইস হকি লাটভিয়ার জাতীয় খেলা এবং কানাডার শীতকালীন জাতীয় খেলা। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:ক্রীড়া
ভারত
https://bn.wikipedia.org/wiki/ভারত
পাকিস্তান
https://bn.wikipedia.org/wiki/পাকিস্তান
শ্রীলংকা
https://bn.wikipedia.org/wiki/শ্রীলংকা
REDIRECT শ্রীলঙ্কা
নেপাল
https://bn.wikipedia.org/wiki/নেপাল
মালদ্বীপ
https://bn.wikipedia.org/wiki/মালদ্বীপ
মালদ্বীপ ( ; , ), আনুষ্ঠানিকভাবে মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র (, ) দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ দেশ। এর রাজধানীর নাম মালে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক জোট সার্ক এর সদস্য। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ দেশ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ। পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এ দেশের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র দুই দশমিক তিন মিটার এবং গড় উচ্চতা মাত্র এক দশমিক পাঁচ মিটার। এক হাজার দুই শ’রও বেশি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ। মালদ্বীপ নামটি সম্ভবত "মালে দিভেহী রাজ্য" হতে উদ্ভূত যার অর্থ হল মালে অধিকৃত দ্বীপরাষ্ট্র। কারো কারো মতে সংস্কৃত 'মালা দ্বীপ' অর্থ দ্বীপ-মাল্য বা 'মহিলা দ্বীপ' অর্থ নারীদের দ্বীপ হতে মালদ্বীপ নামটি উদ্ভূত। প্রাচীন সংস্কৃতে যদিও এরকম কোনও অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে প্রাচীন সংস্কৃতে লক্ষদ্বীপ নামক এক অঞ্চলের উল্লেখ রয়েছে। লক্ষদ্বীপ বলতে মালদ্বীপ ছাড়াও লাক্কাদ্বীপ পুঞ্জ অথবা চাগোস দ্বীপপুঞ্জকেও বোঝানো হয়ে থাকতে পারে। অপর একটি মতবাদ হল তামিল ভাষায় 'মালা তিভু' অর্থ দ্বীপমাল্য হতে মালদ্বীপ নামটি উদ্ভূত । মধ্যযুগে ইবন বতুতা ও অন্যান্য আরব পর্যটকেরা এই অঞ্চলকে 'মহাল দিবিয়াত' নামে উল্লেখ করেছেন। আরবীতে মহাল অর্থ প্রাসাদ। বর্তমানে এই নামটিই মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় প্রতীকে লেখা হয়। অবস্থান শ্রীলঙ্কা হতে আনুমানিক ৪০০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে ১০১০টি প্রবাল দ্বীপ নিয়ে মালদ্বীপ দেশটি গঠিত। মালদ্বীপ নামকরণ মালদ্বীপের নামকরণ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ লক্ষ করা যায়। কেউ কেউ দাবি করেন মালদ্বীপ অর্থ হচ্ছে ‘মেল দ্বীপ রাজ’ বা পুরুষশাসিত রাজ্য। মূলত ‘দ্বীপ’ একটি সংস্কৃত শব্দ আর ‘মাল’ শব্দটি দেশটির রাজধানীর নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ঔপনিবেশিক আমলে ডাচ্রা তাদের নথিপত্রে এ দ্বীপপুঞ্জের নাম মালদ্বীপ বলে উল্লেখ করেন। পরে ব্রিটিশরাও একই নাম ব্যবহার করেন, যা দেশটির স্থানীয় নাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। শ্রীলঙ্কান প্রাচীন সাহিত্য ‘মহাবংশ’-এ মালদ্বীপকে বলা হয়েছে ‘মহিলাদ্বীপ’ বা নারীদের দ্বীপ। তবে কিছু কিছু পণ্ডিত মনে করেন, মালদ্বীপ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত মালাদ্বীপ থেকে যার অর্থ ফুলের মালার দ্বীপ। তবে প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে এ দ্বীপকে বলা হয়েছে ‘লাক্কাদ্বীপ’ বা শত হাজার দ্বীপ। তবে মালদ্বীপে এক হাজারের বেশি দ্বীপ থাকলেও এক লাখ দ্বীপ নেই। আবার আরব পর্যটক ইবনে বতুতা এ দ্বীপকে বলেছেন ‘মহল দ্বীপ’ বা রাজপ্রাসাদের দ্বীপ। আর মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় প্রতীকে ইবনে বতুতার ব্যাখ্যার নিরিখে এখনো মহল বা রাজপ্রাসাদের ছবি ব্যবহৃত হয়। ইতিহাস মালদ্বীপ বা দ্বীপের মালা; সংস্কৃত শব্দ ‘দ্বীপমালা’ শব্দ থেকেই মালদ্বীপ। আবার কেউ কেউ বলে যে- ‘মালে দিভেই রাজে’-এই কথা থেকে মালদ্বীপ শব্দটির উদ্ভব। ‘মালে দিভেই রাজে’-এই কথার অর্থ, ‘দ্বীপরাজ্য’। অনেকে মালদ্বীপকে মহলদ্বীপও বলে। মহল মানের (আরবিতে ) প্রাসাদ। দ্বাদশ শতক থেকেই মালদ্বীপের মুসলিম শাসন। ইবনে বতুতা মালদ্বীপ গিয়েছিলেন ১৩৪৩ খ্রিস্টাব্দে। কাজী ছিলেন। সংস্কৃতে মালদ্বীপকে লক্ষদ্বীপও বলা হয়েছে। এর অর্থ লক্ষ দ্বীপের সমাহার। আসলে মালদ্বীপ লক্ষ দ্বীপের সমাহার নয়; রয়েছে ২৬টি অ্যাটোল। (অ্যাটোল মানে লেগুন ঘেরা প্রবালদ্বীপ) ২৬টি অ্যাটোল আর ১১৯২টি ক্ষুদ্র দ্বীপ। যার মধ্যে কেবল ২০০টি বাসযোগ্য। প্রাচীন শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক গ্রন্থে মালদ্বীপকে বলা হয়েছে মহিলা দ্বীপ। সম্রাট অশোকের সময়েই অর্থাৎ সেই খ্রিষ্ট ৩য় শতকেই কতিপয় বৌদ্ধ ভিক্ষু নাকি গিয়েছিল লক্ষদ্বীপে । এরপর দ্রাবিড় ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী ওই দ্বীপে গিয়ে বাস করতে থাকে। দ্রাবিড় ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী সম্ভবত ওখানে গিয়েছিল দক্ষিণ ভারত থেকে। এর পর সিংহলীরা মালদ্বীপ যায়। এরা ছিল বৌদ্ধ। এরপর মুসলিমরা ঐ দ্বীপে মুসলিম সংস্কৃতি প্রোথিত করে। সময়টা দ্বাদশ শতক। ১১৫৩ থেকে ১৯৫৩ অবধি -এই ৮০০ বছর ৯২ জন সুলতান নিরবিচ্ছিন্নভাবে শাসন করে দ্বীপটি । ১৫০৭ সালে পর্তুগীজ পর্যটক দম লোরেনকো দে আলামেইদা মালদ্বীপে পৌঁছায়। সে সময় পশ্চিম ভারতের গোয়ায় ছিল পর্তুগীজদের বাণিজ্য কুঠি। পর্তুগীজরা বলপূর্বক কর আদায় করত । ১৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দ। মালদ্বীপের সুলতান হলেন সুলতান থাকুরুফানি আল-আযম। তিনি পর্তুগিজ দের মালদ্বীপ থেকে বহিস্কার করেন। সুলতান থাকুরুফানি আল-আযম মালদ্বীপের নবযুগের দ্রষ্টা। তিনিই নতুন লেখনির প্রচলন করেন। গড়ে তুলেন সামরিক বাহিনী। ব্রিটিশরা ১৮১৫ সালে শ্রীলঙ্কা পদানত করে। এরপর পদানত করে মালদ্বীপও। যা হোক। ১৯৫৩ সালে সালতানাতএর অবসান হয় ও মালদ্বীপ হয়ে ওঠে রিপাবলিক। মালদ্বীপের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন আমিন দিদি। তিনি নারীস্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। গোঁড়ারা পিছু লাগল। ফলে আমিন দিদি উৎখাত হয়ে যান। এরপর আইনসভা পুনরায় সালতানাত এর পক্ষে রায় দেয়। নতুন সুলতান হন মোহাম্মদ দিদি। ইনি ব্রিটিশদের সামরিক ঘাঁটি তৈরির অনুমতি দিলে ব্যাপক জনবিক্ষোভ সংগঠিত হয়। ১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই মালদ্বীপ ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ন স্বাধীনতা লাভ করে। রাজনীতি থাম্ব|262x262পিক্সেল|মালায় রিপাবলিক স্কয়ার দেশটিতে বর্তমানে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সরকারপ্রধান। প্রেসিডেন্টই ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের নিয়োগ দেন এবং তিনি হচ্ছেন তাদের প্রধান। প্রেসিডেন্ট পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তবে দেশটিতে অমুসলিমদের কোনো ভোটাধিকার নেই। দেশটিতে ৫০ সদস্যের একটি মজলিসে সুরা আছে। এরা পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এই ৫০ সদস্যের মধ্যে আটজন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক মনোনীত হন। এই একটি উপায়েই মহিলারা সংসদে প্রবেশের সুযোগ পান। দেশটিতে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে ২০০৫ সালে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইউম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এ দলের নাম ‘দ্য মালদ্বীপিয়ান পিপলস পার্টি’। একই বছর আরেকটি রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয় ‘মালদ্বীপিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’ হিসেবে। এভাবেই দেশটিতে বহুদলীয় রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষুদ্র হলে দেশটিতে আছে নূন্যতম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। মালদ্বীপ জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী (এমএনডিএফ) নামে যৌথ প্রতিরক্ষা বাহিনী আছে। এই বাহিনীর মূল কাজ দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা। এ বাহিনীর হাতে দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে পূর্বানুমোদন দেয়া আছে। কোস্টগার্ড, ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস, ইনফেন্ট্রি সার্ভিস, ডিফেন্স ইনস্টিটিউট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো এমএনডিএফ’র বাহিনী পরিচালনা করে থাকে। সমুদ্রবেষ্টিত হওয়া সত্ত্বেও মালদ্বীপের কোনো নৌবাহিনী নেই। মূলত পড়শি দেশ বিশেষত ভারতের ওপর এই ব্যাপারে নির্ভরশীল। ভূগোল অর্থনীতি প্রাচীনকাল থেকেই সামুদ্রিক মাছ হচ্ছে দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি। তবে বর্তমানে দেশটি পর্যটন শিল্পেও যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বলা যায়, দেশটির সবচেয়ে বড় শিল্প এখন পর্যটন। মোট আয়ের ২৮ শতাংশ এবং মোট বৈদেশিক আয়ের ৬০ শতাংশই আসে পর্যটন শিল্প থেকে। ১৯৮৯ সালে দেশটির সরকার প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ সময় বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদারনীতি গ্রহণ করা হয়। গত এক দশক যাবৎ দেশটির জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি গড়ে 7.8 শতাংশের বেশি। ”জনসংখ্যা” মালদ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় তিন লক্ষ । শতকরা ১০০ ভাগ মুসলমান। যেটা বিশ্বের মধ্যে শতকরা হিসাবে সবচেয়ে বেশি। ধিবেহী ভাষা বা মালদ্বীপীয় ভাষা মালদ্বীপের সরকারি ভাষা। এই দ্বীপগুলির প্রায় সবাই ধিবেহী ভাষার বিভিন্ন উপভাষায় কথা বলেন। এছারাও এখানে সিংহলি ভাষা, আরবি ভাষা এবং বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার প্রচলন আছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। সংস্কৃতি যেহেতু মালদ্বীপে দীর্ঘ ৮০০ বছর যাবত ইসলামি সালতানাত প্রতিষ্ঠিত ছিল তাই স্বভাবতই মালদ্বীপের বর্তমান সংস্কৃতি অনেকটাই ইসলাাম দ্বারা প্রভাবিত । পরিবহন thumb|TMA Terminal ইব্রাহিম নাসির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মালদ্বীপ প্রধান প্রবেশদ্বার । সরকারি মালিকানাধীন আইল্যান্ড এভিয়েশন সার্ভিসেস ( মালদ্বীভিয়ান ) চেন্নাই ও তিরুবনন্তপুরম , ভারত ও বাংলাদেশ এ আন্তর্জাতিক পরিবহন করে থাকে । আরও দেখুন তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:এশিয়ার রাষ্ট্র‎ বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বিষয়শ্রেণী:ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:সার্কের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:১৯৬৫-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:মালদ্বীপ বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:১৯৬৫-এ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত বিষয়শ্রেণী:ভারত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ বিষয়শ্রেণী:দ্বীপ রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ এশিয়ার ভূমিরূপ বিষয়শ্রেণী:কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:কমনওয়েলথ প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:প্রাক্তন রাজ্য বিষয়শ্রেণী:প্রাক্তন সালতানাত বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
ইতিহাস
https://bn.wikipedia.org/wiki/ইতিহাস
ব্রাজিলের ইতিহাস
https://bn.wikipedia.org/wiki/ব্রাজিলের_ইতিহাস
thumb|ব্রাজিল প্রশাসনিক বিভাগের বিবর্তন ১৫০০ থেকে ১৮২২ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল একটি পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল। ১৮২২ সালে এটি স্বাধীনতা অর্জন করে। দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় অনেক শান্তিপূর্ণভাবে উপনিবেশ থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ব্রাজিলের উত্তরণ ঘটে। এসময় দেশে কোন রক্তপাত বা অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেনি। স্বাধীন হবার পর একজন সম্রাট ব্রাজিল শাসন করতেন। ১৮৮৮ সালে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। ১৮৮৯ সালে সামরিক অফিসারেরা রক্তপাতহীন কু-এর মাধ্যমে সম্রাটকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করে ব্রাজিলে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র স্থাপন করেন। ১৯৩০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলির জমিদারেরা দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। সেই বছর ব্রাজিলে আরেকটি অভ্যুত্থান ঘটে যার ফলে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সামরিক স্বৈরশাসকেরা ব্রাজিল শাসন করেন। ১৯৪৫ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৪ সালে অর্থনৈতিক সমস্যা ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের রেশ ধরে আরেকটি সামরিক কু ঘটে। এই সামরিক জান্তাটি ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল শাসন করে। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এই সরকার বিরোধীদের উপর বেশ নিপীড়ন চালায়। ১৯৮০-র দশকের শুরুতে জান্তাটি কঠোরতা হ্রাস করে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে এগোতে থাকে। প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাস যখন ব্রাজিলে পর্তুগিজ অভিযাত্রী আসেন, তখন এই এলাকাটি শত বিভিন্ন ধরনের জাকুবু উপজাতিরা বসবাস করত। পর্তুগিজরা মিনাস গেরিসের উচ্চভূমিতে কমপক্ষে ১০,০০০ বছর আগের "ইন্ডিয়ানস" (یndios) নামে পরিচিত প্রথম বাসিন্দাদের বসতি খুজে পেয়েছিলেন, যা এখনও প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে বিরোধের বিষয়। পশ্চিমাঞ্চলীয় গোলার্ধে পাওয়া প্রাচীন দ্রব্যগুলি রেডিও কার্বন পরিক্ষায় প্রমাণ হয়েছে সেগুলি প্রায় ৮,০০০ বছর বয়সী । ব্রাজিলের আমাজন উপত্যকায় সান্তেরার নিকটবর্তী অঞ্চলে খনন করা হয়েছে এবং "উষ্ণ অঞ্চলটি সম্পদের সমৃদ্ধ ছিল না" এই ধারণাটি পাল্টে ফেলার প্রমাণ পাওয়া যায় সেখান।Science Magazine, 13 December 1991 http://www.sciencemag.org/content/254/5038/1621.abstract নৃতাত্ত্বিক, ভাষাবিদ ও জেনেটিক্সবাদীদের বর্তমান সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য দৃষ্টিকোণ হল যে প্রারম্ভিক গোষ্ঠী অভিবাসী শিকারীদের প্রথম অংশ ছিল যারা এশিয়া থেকে আমেরিকায় এসেছিলেন, বেরিং প্রণালি অতিক্রম করে বা প্রশান্ত মহাসাগর বরাবর উপকূলবর্তী সমুদ্র পথ দ্বারা অথবা উভয় পথ ধরে। আন্দিজ পর্বতমালা এবং দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর অঞ্চলের পর্বতশ্রেণীগুলি মহাদেশঝির পশ্চিম উপকূলে স্থায়ী কৃষি সভ্যতা এবং পূর্বের আধা-ভ্রাম্যমাণ উপজাতির মানুষের মধ্যে একটি তাতক্ষণিক ধারালো সাংস্কৃতিক সীমা তৈরি করেছিল, যারা কখনো লিখিত তথ্য বা স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভের স্থাপনা তৈরী করেনি। এই কারণে, ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের আগে ব্রাজিলের ইতিহাস সম্পর্কে খুব সামান্যই জানা যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ (প্রধানত মৃৎপাত্র), অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের একটি জটিল নমুনা আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং মাঝে মাঝে বড় রাষ্ট্রের মত ফেডারেশনগুলির নির্দেশ করে। ঔপনিবেশিক ব্রাজিল ইউরোপীয়দের দ্বারা ব্রাজিল আবিষ্কারের সময় ও তার আগে বর্তমান সময়ের ব্রাজিলে প্রায় ,০০০ টি আদিবাসী উপজাতি ছিল। আদিবাসী জনগোষ্ঠী ঐতিহ্যগতভাবে বেশিরভাগই আধা-খাদকপূর্ণ উপজাতি ছিল যারা শিকার, মাছ ধরার, সংগ্রহ ও অভিবাসী কৃষিকাজে দ্বারা জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করত। যখন ১৫০০ সালে পর্তুগিজরা এসেছিল, সেই সময় মূলত উপকূলে এবং প্রধান নদীগুলির তীরে উপজাতির মানুষেরা বাস করত। উপজাতীযগুলির মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ, নরহত্যা এবং ব্রাজিলউডের ধনতান্ত্রিক লাল রঙের পেছনে পর্তুগিজরা বিশ্বাস করেছিল যে ব্রাজিলের উপজাতী নাগরিকদেরকে খ্রিস্টধর্মে নিয়ে আসা উচিত। কিন্তু পর্তুগিজরা দক্ষিণ আমেরিকাতে স্প্যানিশদের মত অজ্ঞাতসারে তাদের সাথে রোগ নিয়ে আসে, যার ফলে চিকিৎসার অভাবের কারণে অনেক স্থানীয় মানুষ তথা আদিবাসী অসহায় ছিল। হাজার হাজার আদিবাসী মানুষের মৃত্যু হয় হাম, গুটিবসন্ত, যক্ষ্মা, গনোরিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার ফলে। আদিবাসীদের মধ্যে বাণিজ্য রুটগুলির দ্বারা দ্রুত এই সব রোগ ছড়িয়ে পড়ে এবং সমগ্র উপজাতির মানুষেরা ইউরোপীয়দের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ না করেই ধ্বংস হয়ে যায়। ব্রাজিল সাম্রাজ্য পুনঃরায়গণতন্ত্র থেকে বর্তমান সময় (১৯৮৫ থেকে বর্তমান) জাতিসংঘের দ্বারা শরণার্থীদের ফিরে আসার পর ১৯৮৫ সালে তান্দ্রো নেভস একটি পরোক্ষ নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। শপথ গ্রহণের আগেই তিনি মারা যান এবং নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জোসে সার্নি তার জায়গায় রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৮৯ সালের সামরিক শাসনের পর জনপ্রিয় ফার্নান্ডো কোলার ডি মেলো নির্বাচনের দ্বারা প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাকে দুই-দফা চূড়ান্ত রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে ৩৫ মিলিয়ন ভোটে পরাজিত করেন। কোলার সাও পাওলো রাজ্যে অনেক বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে জিতেছে। ২৯ বছর বয়সে ব্রাজিলের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি "কোলার" ও তার সরকারের প্রাথমিক যুগের বেশিরভাগ সময় উচ্চ-মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল, এই মুদ্রাস্ফীতির কখনো কখনো প্রতি মাসে ২৫% হারে পৌঁছেছিল। [45] তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:ব্রাজিলের ইতিহাস
চিলির ইতিহাস
https://bn.wikipedia.org/wiki/চিলির_ইতিহাস
thumb|মানচিত্রে চিলি চিলি ১৬শ শতক থেকে স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৯শ শতকের শুরুর দিকে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। গোটা ১৯শ শতক ধরে রপ্তানির মাধ্যমে এটি সমৃদ্ধি লাভ করে, কিন্তু এতে মূলত জমিদার উচ্চ শ্রেণীর লোকেরাই লাভবান হন। এখনও চিলিতে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত চিলিতে কোন সামরিক কু (coup) ঘটেনি, যা ছিল লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় ব্যতিক্রম। ১৯৭৩ সালে এক সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখন করে এবং ১৯৮৯ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চিলি শাসন করে। ২১শ শতকের শুরুতে এসেও চিলি সামরিক শাসনের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়শ্রেণী:চিলির ইতিহাস বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস
প্যারাগুয়ের ইতিহাস
https://bn.wikipedia.org/wiki/প্যারাগুয়ের_ইতিহাস
thumb|মানচিত্রে প্যারাগুয়ে প্যারাগুয়ের পূর্বাংশে আদিতে স্থানীয় আদিবাসী গুয়ারানি জাতির লোকেরা বাস করত। ১৬শ শতকে এখানে স্পেনীয় ঔপনিবেশিকদের আগমন ঘটে। বর্তমানে প্যারাগুয়ে স্পেনীয় ও গুয়ারানি সংস্কৃতির মিলনস্থল। প্যারাগুয়ে ১৮১১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। এর আগে এটি একটি স্পেনীয় উপনিবেশ ছিল। প্যারাগুয়ের স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাস সংঘাতময় এবং কর্তৃত্বপরায়ণ শাসন এর মূল বৈশিষ্ট্য। দেশটি দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশের ইতিহাসের তিনটি প্রধান যুদ্ধে দুইটিতে অংশ নেয়। প্রথমটি ছিল ১৮৬৫ সাথে শুরু হওয়া ত্রি-মৈত্রী যুদ্ধ। ঐ বছর প্যারাগুয়ে তার শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্র আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও উরুগুয়ের সাথে একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ১৮৭৯ সালে এই সহিংস যুদ্ধের অবসান ঘটলেও এতে প্যারাগুয়ের অর্ধেক লোকই মৃত্যবরণ করে। এছাড়াও যুদ্ধের ফলস্বরূপ প্যারাগুয়ে তার ভূ-আয়তনের এক-চতুর্থাংশ হারায়। ১৯৩২ সাল থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত প্যারাগুয়ে বলিভিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, যার নাম ছিল চাকো যুদ্ধ। ১৯৪৭ সালে দেশটিতে একটি গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ২০শ শতকের মাঝামাঝি প্যারাগুয়ে সামরিক প্রধান আলফ্রেদো স্ত্রোসনারের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের জন্য কুখ্যাত হয়ে ওঠে। স্ত্রোসনার ১৯৫৪ সালে ক্ষমতা দখল করেন এবং তার সময়ে অনেক ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক এবং জার্মানির নাৎসি রাজনৈতিক দলের প্রাক্তন সদস্যরা প্যারাগুয়েতে রাজনৈতিক আশ্রয়লাভ করে। স্ত্রোসনার ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন, যে বছর একটি সামরিক অভ্যুত্থানে তার পতন ঘটে। তখন থেকে প্যারাগুয়ে ধীরে ধীরে গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা শুরু করে। স্ত্রোসনার প্যারাগুয়ের জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ও নিজমত চেপে রাখার যে সংস্কৃতি সৃষ্টি করেন, তা থেকে তারা কেবল ২১শ শতকে এসেই উত্তরণ করতে শুরু করেছে। ১৯৯৩ সালে দেশটিতে ১৯৫৪ সালের পর প্রথমবারের মত একজন বেসামরিক রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তবে প্যারাগুয়ে এখনও রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে নিমজ্জিত। ১৯৯৯ সালে উপরাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হয়। এছাড়া দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুয়ান কার্লোস ওয়াসমোসি (১৯৯৩-১৯৯৮) এবং লুইস গোনসালেস মাকচি (১৯৯৯-২০০৩)-র বিচারে শাস্তি হয়। ২০০৮ সালে প্যারাগুয়ের কোলোরাদো পার্টি ১৯৪৭ সালের পরে প্রথমবারের মত ক্ষমতা হারায়; তার আগে এটি অবিচ্ছিন্নভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে দেশ শাসনকারী রাজনৈতিক দল ছিল। তবে ২০১৩ সালে দলটি আবার ক্ষমতায় ফেরত আসে। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:প্যারাগুয়ের ইতিহাস
পেরুর ইতিহাস
https://bn.wikipedia.org/wiki/পেরুর_ইতিহাস
পেরুর ইতিহাস ১০ সহস্রাব্দ সময়কাল পর্যন্ত বিস্তৃত। পেরুর ইতিহাস পর্বত অঞ্চল এবং হ্রদ অঞ্চল সমূহে সাংস্কৃতিক বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রসারিত হয়েছে। পেরু ছিল নর্তে চিকো সভ্যতার আবাসস্থল, যা ছিল আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতা এবং বিশ্বের ছয়টি প্রাচীনতম সভ্যতার মধ্যে একটি। ইনকা সাম্রাজ্যের সময় পেরু ছিল প্রাক-কলম্বিয়ান আমেরিকার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে উন্নত রাষ্ট্র। ১৬ শতকে পেরু স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, যার ফলে এখানে দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ অঞ্চলের এখতিয়ার সহ একটি ভাইসরয়্যালিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৮২১ সালে পেরু স্পেন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং তিন বছর ধরে চলা আয়াকুচো যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়। প্রাক কলম্বিয়ান সংস্কৃতি ১১,০০০ বছরেরও বেশি সময় আগের শিকারের সরঞ্জামগুলি পাচাকামাক, টেলারমাচে, জুনিন এবং লরিকোচা গুহাগুলির মধ্যে পাওয়া গেছে। the were, Lexus Origen de las puta Civilizaciones Andinas. p. 41. আনুমানিক ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চিলকা, প্যারাকাসের উপকূলীয় অঞ্চল এবং ক্যালেজন দে হুয়ালাস প্রদেশে প্রাচীনতম কিছু সভ্যতা আবির্ভূত হয়েছিল। পরবর্তী তিন হাজার বছরে, বাসিন্দারা যাযাবর জীবনধারা থেকে জমি চাষের দিকে চলে যায়, যেমন জিস্কাইরুমোকো, কোতোশ এবং হুয়াকা প্রিয়াতা প্রভৃতি স্থান থেকে প্রমাণিত। ভুট্টা এবং তুলা জাতীয় উদ্ভিদের চাষ (গোসিপিয়াম বারবাডেন্স) শুরু হয়েছিল। ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ক্যাল্লাল্লির মোলেপুঙ্কো গুহাগুলিতে অঙ্কিত ক্যামেলিড রিলিফ পেইন্টিংগুলি হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেইসময় হতে লামা, আলপাকা এবং গিনিপিগের বন্য পূর্বপুরুষের মতো প্রাণীদের গৃহপালিত পশু হিসেবে পালন করা শুরু হয়েছিল। বাসিন্দারা তুলা এবং উল, ঝুড়ি এবং মৃৎশিল্পের চরকা এবং বুনন অনুশীলন করত। যেহেতু এই বাসিন্দারা বসতিহীন হয়ে পড়েছিল, চাষাবাদ তাদের বসতি গড়ে তুলতে দেয়। ফলস্বরূপ, উপকূল বরাবর এবং আন্দিয়ান পর্বতমালায় নতুন সমাজের উদ্ভব হয়। আমেরিকা মহাদেশের প্রথম পরিচিত শহরটি ছিল ক্যারাল, লিমা থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তরে সুপে উপত্যকায় অবস্থিত। এটি আনুমানিক ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত হয়েছিল। এই সভ্যতার অবশিষ্টাংশ, নর্তে চিকো নামেও পরিচিত, প্রায় ৩০টি পিরামিডাল কাঠামো নিয়ে গঠিত যা একটি সমতল ছাদে শেষ হয়ে যাওয়া পিরামিড টেরেসগুলিতে নির্মিত; তাদের মধ্যে কিছু কাঠামোর উচ্চতা ২০ মিটার পর্যন্ত পরিমাপ করা হয়েছে। কারালকে সভ্যতার অন্যতম বাহক হিসেবে বিবেচনা করা হত।Charles C. Mann, "Oldest Civilization in the Americas Revealed", Science, 7 January 2005, accessed 1 Nov 2010. Quote: "Almost 5,000 years ago, ancient Peruvians built monumental temples and pyramids in dry valleys near the coast, showing that urban society in the Americas is as old as the most ancient civilizations of the Old World." ২১ শতকের গোড়ার দিকে, প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রাচীন প্রাক-সিরামিক যুগের সংস্কৃতির নতুন কিছু প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। ২০০৫ সালে, টম ডি. ডিলেহে এবং তার দল উত্তর পেরুর জানা উপত্যকায় ৫৪০০ বছর পুরানো তিনটি সেচ খাল এবং একটি সম্ভাব্য চতুর্থটি ৬৭০০ বছর পুরানো সেচের খাল আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। এটি ছিল সম্প্রদায়ের কৃষি উন্নতির প্রমাণ যা পূর্বে বিশ্বাস করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক আগের তারিখে ঘটেছে।Nicholas Bakalar, "Ancient Canals in Andes Reveal Early Agriculture", National Geographic News, 5 Dec 2005, accessed 1 Nov 2010 ২০০৬ সালে, রবার্ট বেনফার এবং একটি গবেষণা দল বুয়েনা ভিস্তাতে একটি ৪২০০ বছরের পুরানো মানমন্দির আবিষ্কার করেছিল, যা বর্তমান লিমা থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে আন্দিজের একটি স্থান। তারা বিশ্বাস করে যে মানমন্দিরটি কৃষির উপর সমাজের নির্ভরতা এবং ঋতু বোঝার সাথে সম্পর্কিত ছিল। এই নিদর্শনটিতে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া প্রাচীনতম ত্রিমাত্রিক ভাস্কর্য রয়েছে।Richard A. Lovett, "Oldest Observatory in Americas Discovered in Peru", National Geographic News, 16 May 2006, accessed 1 Nov 2010 ২০০৭ সালে, প্রত্নতাত্ত্বিক ওয়াল্টার আলভা এবং তার দল উত্তর-পশ্চিম ভেনতাররনে আঁকা ম্যুরাল সহ একটি ৪০০০ বছরের পুরনো মন্দির খুঁজে পান। একটি মন্দির হতে পেরুভিয়ান জঙ্গল সমাজের সাথে বিনিময়ের মাধ্যমে অর্জিত আনুষ্ঠানিক নৈবেদ্য পাওয়া গেছে। এই ধরনের আবিষ্কারগুলি পরিশীলিত স্মারক নির্মাণের জন্য বৃহৎ মাপের শ্রম সংগঠনের প্রয়োজন দেখায়, যা পরামর্শ দেয় যে পণ্ডিতদের ধারণার চেয়ে অনেক আগে দক্ষিণ আমেরিকায় শ্রেণিবদ্ধ জটিল সংস্কৃতির উদ্ভব হয়েছিল। সে সময়ে অন্যান্য অনেক সভ্যতা বিকশিত হয়েছিল, যেমন কোটোশ, শ্যাভিন, প্যারাকাস, লিমা, নাসকা, মোচে, টিওয়ানাকু, ওয়ারী, লাম্বায়েক, চিমু ও চিঞ্চা প্রমুখ। ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে দক্ষিণ উপকূলে প্যারাকাস সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। তারা সূক্ষ্ম বস্ত্র উৎপাদন করার জন্য শুধুমাত্র তুলার পরিবর্তে ভিকুনা ফাইবার ব্যবহারের জন্য পরিচিত— এ উদ্ভাবনটি পেরুর উত্তর উপকূলে কয়েক শতাব্দী পরে পৌছিয়েছিল। মোচে এবং নাজকার মতো উপকূলীয় সংস্কৃতিগুলি প্রায় ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে প্রায় ৭০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিকাশ লাভ করেছিল: মোচে চিত্তাকর্ষক ধাতুর কাজ তৈরি করেছিল, সেইসাথে প্রাচীন বিশ্বে দেখা সেরা কিছু মৃৎপাত্রের নির্মাতা ছিল তারা। অপরদিকে নাজকা তাদের টেক্সটাইল এবং রহস্যময় নাজকা লাইনের জন্য পরিচিত। পুনরাবৃত্তিমূলক এল নিনোর বন্যা এবং খরার ফলে এই উপকূলীয় সংস্কৃতিগুলি অবশেষে হ্রাস পেতে শুরু করে। ফলস্বরূপ, হুয়ারি এবং টিওয়ানাকু, যারা আন্দিজের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে বসবাস করত, তারা এই অঞ্চলের প্রধান সংস্কৃতি বাহক হিসেবে পরিণত হয়েছিল যেগুলি আধুনিক দিনের পেরু এবং বলিভিয়ার বেশিরভাগ অংশকে অন্তর্ভুক্ত করে। তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল শক্তিশালী শহর-রাজ্য যেমন চ্যাঙ্কে, সিপান, কাজামার্কা এবং দুটি সাম্রাজ্য : চিমোর ও চাচাপোয়াস। এই সংস্কৃতিগুলি চাষের তুলনামূলকভাবে উন্নত কৌশল , সোনা ও রূপার কারুশিল্প, ধাতুবিদ্যা , মৃৎশিল্প ও বুনন রপ্ত করেছিল ‌। ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি, তারা সামাজিক সংগঠনের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল যা ইনকা সভ্যতার পূর্বসূরি ছিল। পার্বত্য অঞ্চলে, পেরু এবং বলিভিয়া উভয়ের কাছে অবস্থিত টিটিকাকা হ্রদের কাছে টিয়াহুয়ানাকো সভ্যতা এবং বর্তমান সময়ের আয়াকুচো শহরের কাছে ওয়ারি সভ্যতা, ৫০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিশাল নগর বসতি এবং বিস্তৃত রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল।Peru Pre-Inca Cultures. Retrieved 27 July 2014. ইনকা সাম্রাজ্য প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে এটি চাচাপোয়াস সংস্কৃতির মতো অসহযোগী আন্দিয়ান সংস্কৃতিকে পরাজিত ও আত্মসাৎ করে। গ্যাব্রিয়েল প্রিয়েটোর নেতৃত্বে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ১৪০ টিরও বেশি শিশু কঙ্কাল এবং ২০০ লামার কঙ্কাল পেয়েছিলেন। তারা চিমু সংস্কৃতির দ্বারা করা বৃহত্তম গণশিশু বলির কথা প্রকাশ করেছিলেন যখন তাকে জানানো হয়েছিল যে ২০১১ সালে প্রিয়েটোর ফিল্ডওয়ার্কের কাছাকাছি একটি টিলায় কিছু শিশু হাড় খুঁজে পেয়েছে। গবেষণায় গবেষকদের নোট অনুসারে, স্টারনা বা স্তনের হাড়ে কিছু শিশু এবং লামাদের কাটা দাগ ছিল। অনুষ্ঠানের সময় বাচ্চাদের বুক কেটে ফেলার আগে মুখ লাল রঞ্জক দিয়ে মেখে দেওয়া হয়েছিল। সম্ভবত তাদের হৃৎপিন্ড কেটে ফেলার জন্য বাচ্চাদের বুক কেটে ফেলা হয়েছিল। দেহাবশেষে দেখা গেছে, এই শিশুরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছে এবং যখন শিশু ও লামাদের বলি দেওয়া হয়, তখন এলাকাটি জলে ভিজানো হয়। “আমাদের মনে রাখতে হবে যে চিমুর অধিবাসীদের আজকের পশ্চিমাদের চেয়ে খুব আলাদা বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। মৃত্যু এবং মহাবিশ্বে প্রতিটি ব্যক্তি যে ভূমিকা পালন করে সে সম্পর্কে তাদের খুব আলাদা ধারণাও ছিল, সম্ভবত ক্ষতিগ্রস্তরা স্বেচ্ছায় তাদের দেবতাদের কাছে বার্তাবাহক হিসাবে গিয়েছিল, অথবা সম্ভবত চিমু সমাজ বিশ্বাস করেছিল যে এটিই আরও বেশি মানুষকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায়” বলেছেন নৃবিজ্ঞানী রায়ান উইলিয়ামস। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, প্রত্নতাত্ত্বিকরা চিলকা শহরের কাছাকাছি ৮০০ বছর বয়সী আটটি মৃতদেহের অবশেষ প্রাপ্তির ঘোষণা করেছিলেন। মৃতদেহের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুরা অন্তর্ভুক্ত ছিল যারা কবর দেওয়ার আগে উদ্ভিদের উপাদানে আবৃত ছিল। কিছু খাবার এবং বাদ্যযন্ত্রও উন্মোচিত হয়েছে। গবেষকরা মনে করেন যে অবশিষ্টাংশগুলি চিলকা সংস্কৃতির অন্তর্গত, যা এই এলাকার অন্যান্য প্রাক-হিস্পানিক সংস্কৃতি থেকে আলাদা ছিল।==প্রাক কলম্বিয়ান সংস্কৃতি == ১১,০০০ বছরেরও বেশি সময় আগের শিকারের সরঞ্জামগুলি পাচাকামাক, টেলারমাচে, জুনিন এবং লরিকোচা গুহাগুলির মধ্যে পাওয়া গেছে। the were, Lexus Origen de las puta Civilizaciones Andinas. p. 41. আনুমানিক ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চিলকা, প্যারাকাসের উপকূলীয় অঞ্চল এবং ক্যালেজন দে হুয়ালাস প্রদেশে প্রাচীনতম কিছু সভ্যতা আবির্ভূত হয়েছিল। পরবর্তী তিন হাজার বছরে, বাসিন্দারা যাযাবর জীবনধারা থেকে জমি চাষের দিকে চলে যায়, যেমন জিস্কাইরুমোকো, কোতোশ এবং হুয়াকা প্রিয়াতা প্রভৃতি স্থান থেকে প্রমাণিত। ভুট্টা এবং তুলা জাতীয় উদ্ভিদের চাষ (গোসিপিয়াম বারবাডেন্স) শুরু হয়েছিল। ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ক্যাল্লাল্লির মোলেপুঙ্কো গুহাগুলিতে অঙ্কিত ক্যামেলিড রিলিফ পেইন্টিংগুলি হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেইসময় হতে লামা, আলপাকা এবং গিনিপিগের বন্য পূর্বপুরুষের মতো প্রাণীদের গৃহপালিত পশু হিসেবে পালন করা শুরু হয়েছিল। বাসিন্দারা তুলা এবং উল, ঝুড়ি এবং মৃৎশিল্পের চরকা এবং বুনন অনুশীলন করত। যেহেতু এই বাসিন্দারা বসতিহীন হয়ে পড়েছিল, চাষাবাদ তাদের বসতি গড়ে তুলতে দেয়। ফলস্বরূপ, উপকূল বরাবর এবং আন্দিয়ান পর্বতমালায় নতুন সমাজের উদ্ভব হয়। আমেরিকা মহাদেশের প্রথম পরিচিত শহরটি ছিল ক্যারাল, লিমা থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তরে সুপে উপত্যকায় অবস্থিত। এটি আনুমানিক ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত হয়েছিল। এই সভ্যতার অবশিষ্টাংশ, নর্তে চিকো নামেও পরিচিত, প্রায় ৩০টি পিরামিডাল কাঠামো নিয়ে গঠিত যা একটি সমতল ছাদে শেষ হয়ে যাওয়া পিরামিড টেরেসগুলিতে নির্মিত; তাদের মধ্যে কিছু কাঠামোর উচ্চতা ২০ মিটার পর্যন্ত পরিমাপ করা হয়েছে। কারালকে সভ্যতার অন্যতম বাহক হিসেবে বিবেচনা করা হত।Charles C. Mann, "Oldest Civilization in the Americas Revealed", Science, 7 January 2005, accessed 1 Nov 2010. Quote: "Almost 5,000 years ago, ancient Peruvians built monumental temples and pyramids in dry valleys near the coast, showing that urban society in the Americas is as old as the most ancient civilizations of the Old World." ২১ শতকের গোড়ার দিকে, প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রাচীন প্রাক-সিরামিক যুগের সংস্কৃতির নতুন কিছু প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। ২০০৫ সালে, টম ডি. ডিলেহে এবং তার দল উত্তর পেরুর জানা উপত্যকায় ৫৪০০ বছর পুরানো তিনটি সেচ খাল এবং একটি সম্ভাব্য চতুর্থটি ৬৭০০ বছর পুরানো সেচের খাল আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। এটি ছিল সম্প্রদায়ের কৃষি উন্নতির প্রমাণ যা পূর্বে বিশ্বাস করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক আগের তারিখে ঘটেছে।Nicholas Bakalar, "Ancient Canals in Andes Reveal Early Agriculture", National Geographic News, 5 Dec 2005, accessed 1 Nov 2010 ২০০৬ সালে, রবার্ট বেনফার এবং একটি গবেষণা দল বুয়েনা ভিস্তাতে একটি ৪২০০ বছরের পুরানো মানমন্দির আবিষ্কার করেছিল, যা বর্তমান লিমা থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে আন্দিজের একটি স্থান। তারা বিশ্বাস করে যে মানমন্দিরটি কৃষির উপর সমাজের নির্ভরতা এবং ঋতু বোঝার সাথে সম্পর্কিত ছিল। এই নিদর্শনটিতে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া প্রাচীনতম ত্রিমাত্রিক ভাস্কর্য রয়েছে।Richard A. Lovett, "Oldest Observatory in Americas Discovered in Peru", National Geographic News, 16 May 2006, accessed 1 Nov 2010 ২০০৭ সালে, প্রত্নতাত্ত্বিক ওয়াল্টার আলভা এবং তার দল উত্তর-পশ্চিম ভেনতাররনে আঁকা ম্যুরাল সহ একটি ৪০০০ বছরের পুরনো মন্দির খুঁজে পান। একটি মন্দির হতে পেরুভিয়ান জঙ্গল সমাজের সাথে বিনিময়ের মাধ্যমে অর্জিত আনুষ্ঠানিক নৈবেদ্য পাওয়া গেছে। এই ধরনের আবিষ্কারগুলি পরিশীলিত স্মারক নির্মাণের জন্য বৃহৎ মাপের শ্রম সংগঠনের প্রয়োজন দেখায়, যা পরামর্শ দেয় যে পণ্ডিতদের ধারণার চেয়ে অনেক আগে দক্ষিণ আমেরিকায় শ্রেণিবদ্ধ জটিল সংস্কৃতির উদ্ভব হয়েছিল। সে সময়ে অন্যান্য অনেক সভ্যতা বিকশিত হয়েছিল, যেমন কোটোশ, শ্যাভিন, প্যারাকাস, লিমা, নাসকা, মোচে, টিওয়ানাকু, ওয়ারী, লাম্বায়েক, চিমু ও চিঞ্চা প্রমুখ। ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে দক্ষিণ উপকূলে প্যারাকাস সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। তারা সূক্ষ্ম বস্ত্র উৎপাদন করার জন্য শুধুমাত্র তুলার পরিবর্তে ভিকুনা ফাইবার ব্যবহারের জন্য পরিচিত— এ উদ্ভাবনটি পেরুর উত্তর উপকূলে কয়েক শতাব্দী পরে পৌছিয়েছিল। মোচে এবং নাজকার মতো উপকূলীয় সংস্কৃতিগুলি প্রায় ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে প্রায় ৭০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিকাশ লাভ করেছিল: মোচে চিত্তাকর্ষক ধাতুর কাজ তৈরি করেছিল, সেইসাথে প্রাচীন বিশ্বে দেখা সেরা কিছু মৃৎপাত্রের নির্মাতা ছিল তারা। অপরদিকে নাজকা তাদের টেক্সটাইল এবং রহস্যময় নাজকা লাইনের জন্য পরিচিত। পুনরাবৃত্তিমূলক এল নিনোর বন্যা এবং খরার ফলে এই উপকূলীয় সংস্কৃতিগুলি অবশেষে হ্রাস পেতে শুরু করে। ফলস্বরূপ, হুয়ারি এবং টিওয়ানাকু, যারা আন্দিজের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে বসবাস করত, তারা এই অঞ্চলের প্রধান সংস্কৃতি বাহক হিসেবে পরিণত হয়েছিল যেগুলি আধুনিক দিনের পেরু এবং বলিভিয়ার বেশিরভাগ অংশকে অন্তর্ভুক্ত করে। তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল শক্তিশালী শহর-রাজ্য যেমন চ্যাঙ্কে, সিপান, কাজামার্কা এবং দুটি সাম্রাজ্য : চিমোর ও চাচাপোয়াস। এই সংস্কৃতিগুলি চাষের তুলনামূলকভাবে উন্নত কৌশল , সোনা ও রূপার কারুশিল্প, ধাতুবিদ্যা , মৃৎশিল্প ও বুনন রপ্ত করেছিল ‌। ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি, তারা সামাজিক সংগঠনের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল যা ইনকা সভ্যতার পূর্বসূরি ছিল। পার্বত্য অঞ্চলে, পেরু এবং বলিভিয়া উভয়ের কাছে অবস্থিত টিটিকাকা হ্রদের কাছে টিয়াহুয়ানাকো সভ্যতা এবং বর্তমান সময়ের আয়াকুচো শহরের কাছে ওয়ারি সভ্যতা, ৫০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিশাল নগর বসতি এবং বিস্তৃত রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল।Peru Pre-Inca Cultures. Retrieved 27 July 2014. ইনকা সাম্রাজ্য প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে এটি চাচাপোয়াস সংস্কৃতির মতো অসহযোগী আন্দিয়ান সংস্কৃতিকে পরাজিত ও আত্মসাৎ করে। গ্যাব্রিয়েল প্রিয়েটোর নেতৃত্বে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ১৪০ টিরও বেশি শিশু কঙ্কাল এবং ২০০ লামার কঙ্কাল পেয়েছিলেন। তারা চিমু সংস্কৃতির দ্বারা করা বৃহত্তম গণশিশু বলির কথা প্রকাশ করেছিলেন যখন তাকে জানানো হয়েছিল যে ২০১১ সালে প্রিয়েটোর ফিল্ডওয়ার্কের কাছাকাছি একটি টিলায় কিছু শিশু হাড় খুঁজে পেয়েছে। গবেষণায় গবেষকদের নোট অনুসারে, স্টারনা বা স্তনের হাড়ে কিছু শিশু এবং লামাদের কাটা দাগ ছিল। অনুষ্ঠানের সময় বাচ্চাদের বুক কেটে ফেলার আগে মুখ লাল রঞ্জক দিয়ে মেখে দেওয়া হয়েছিল। সম্ভবত তাদের হৃৎপিন্ড কেটে ফেলার জন্য বাচ্চাদের বুক কেটে ফেলা হয়েছিল। দেহাবশেষে দেখা গেছে, এই শিশুরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছে এবং যখন শিশু ও লামাদের বলি দেওয়া হয়, তখন এলাকাটি জলে ভিজানো হয়। “আমাদের মনে রাখতে হবে যে চিমুর অধিবাসীদের আজকের পশ্চিমাদের চেয়ে খুব আলাদা বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। মৃত্যু এবং মহাবিশ্বে প্রতিটি ব্যক্তি যে ভূমিকা পালন করে সে সম্পর্কে তাদের খুব আলাদা ধারণাও ছিল, সম্ভবত ক্ষতিগ্রস্তরা স্বেচ্ছায় তাদের দেবতাদের কাছে বার্তাবাহক হিসাবে গিয়েছিল, অথবা সম্ভবত চিমু সমাজ বিশ্বাস করেছিল যে এটিই আরও বেশি মানুষকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায়” বলেছেন নৃবিজ্ঞানী রায়ান উইলিয়ামস। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, প্রত্নতাত্ত্বিকরা চিলকা শহরের কাছাকাছি ৮০০ বছর বয়সী আটটি মৃতদেহের অবশেষ প্রাপ্তির ঘোষণা করেছিলেন। মৃতদেহের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুরা অন্তর্ভুক্ত ছিল যারা কবর দেওয়ার আগে উদ্ভিদের উপাদানে আবৃত ছিল। কিছু খাবার এবং বাদ্যযন্ত্রও উন্মোচিত হয়েছে। গবেষকরা মনে করেন যে অবশিষ্টাংশগুলি চিলকা সংস্কৃতির অন্তর্গত, যা এই এলাকার অন্যান্য প্রাক-হিস্পানিক সংস্কৃতি থেকে আলাদা ছিল। ইনকা সাম্রাজ্য (১৪৩৮-১৫৩২) ইনকারা প্রাক-কলম্বিয়ান আমেরিকার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে উন্নত সাম্রাজ্য এবং রাজবংশ তৈরি করেছিল। ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে এটি এর সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণে পৌঁছেছিল। এটি এমন একটি অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেছিল যেটিতে (উত্তর থেকে দক্ষিণে) ইকুয়েডরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ, কলম্বিয়ার অংশ, পেরুর প্রধান অঞ্চল, চিলির উত্তর অংশ এবং আর্জেন্টিনার উত্তর-পশ্চিম অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। পূর্ব থেকে পশ্চিমে, বলিভিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ থেকে আমাজনীয় বন পর্যন্তও ইনকা সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সাম্রাজ্যটি কুসকোতে অবস্থিত একটি উপজাতি থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, যা রাজধানী হয়ে ওঠে। পাচাকুটেক প্রথম ইনকা ছিলেন না, তবে তিনিই প্রথম শাসক যিনি কুসকো রাজ্যের সীমানা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করেছিলেন। তাকে সম্ভবত আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট (ম্যাসিডন থেকে), জুলিয়াস সিজার (রোমান সাম্রাজ্যের), আটিলা (হুন উপজাতি থেকে) এবং চেঙ্গিস খান (মঙ্গোল সাম্রাজ্য থেকে) এর সাথে তুলনা করা যেতে পারে। তার বংশধররা পরবর্তীতে সহিংস আক্রমণ এবং শান্তিপূর্ণ বিজয় উভয়ের মাধ্যমে একটি সাম্রাজ্য শাসন করে, অর্থাৎ ছোট রাজ্যের শাসক এবং বর্তমান ইনকা শাসকের মধ্যে আন্তঃবিবাহ। কুসকোতে, রাজকীয় শহরটি একটি কুগারের ন্যায় তৈরি করা হয়েছিল। প্রধান রাজকীয় কাঠামো, যা এখন সাসক্যায়হুয়েমেন নামে পরিচিত। সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক কেন্দ্র ছিল কুসকোতে। সাম্রাজ্যটি চার ভাগে বিভক্ত ছিল: চিনচায়সুয়ু , এন্টিসুয়ু , কুন্তিসুয়ু এবং কুল্লাসুয়ু। অফিসিয়াল ভাষা ছিল কেচুয়া, সাম্রাজ্যের মূল উপজাতির একটি প্রতিবেশী উপজাতির ভাষা। বিজিত জনসংখ্যা-উপজাতি, রাজ্য, রাজ্য এবং শহরগুলি-কে তাদের নিজস্ব ধর্ম এবং জীবনধারা অনুশীলন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাদের নিজেদের থেকে উচ্চতর হিসাবে ইনকা সাংস্কৃতিক অনুশীলনকে স্বীকৃতি দিতে হয়েছিল। ইন্তি, সূর্য দেবতা, সাম্রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেবতা হিসাবে উপাসনা করা হত। পৃথিবীতে তার প্রতিনিধিত্ব করতেন ইনকা সম্রাট। তাওয়ান্তিনসুয়ু একটি স্তরীভূত সমাজের সাথে আধিপত্যে সংগঠিত হয়েছিল যেখানে শাসক ছিলেন ইনকা। এটি জমির যৌথ সম্পত্তির উপর ভিত্তি করে একটি অর্থনীতি দ্বারা সমর্থিত ছিল। সাম্রাজ্য বেশ বড় হওয়ায় সাম্রাজ্যের সমস্ত পয়েন্টে ইনকা ট্রেইল এবং চাসকুইস নামে রাস্তার একটি চিত্তাকর্ষক পরিবহন ব্যবস্থা ছিল।অনেক বার্তা বাহক ছিলেন যারা সাম্রাজ্যের যে কোনও জায়গা থেকে কুসকোতে তথ্য পাঠাত। মাচু পিচু (কেচুয়া ভাষায় মাচু পিচু অর্থ পুরাতন শহর ; কখনও কখনও "ইনকাদের হারিয়ে যাওয়া শহর" বলা হয়) হল একটি সুসংরক্ষিত প্রাক-কলম্বিয়ান ইনকা ধ্বংসাবশেষ যা উরুবাম্বা উপত্যকার উপরে একটি উচ্চ পর্বত শৃঙ্গে অবস্থিত, কুসকোর প্রায় ৭০ কিমি (৪৪ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। উচ্চতা পরিমাপ পরিবর্তিত হয় কিনা তার উপর নির্ভর করে তথ্যটি পরিবর্তিত হয়। মাচু পিচু পর্যটক তথ্যে উচ্চতা ২,৩৫০ মিটার (৭,৭১১ ফুট) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে বহির্বিশ্বের দ্বারা ভুলে যাওয়া (যদিও স্থানীয়দের দ্বারা নয়) শহরটি ইয়েলের প্রত্নতাত্ত্বিক হিরাম বিংহাম তৃতীয় দ্বারা আন্তর্জাতিক মনোযোগের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। বিংহাম, প্রায়শই ইন্ডিয়ানা জোন্সের অনুপ্রেরণা হিসাবে উল্লেখ করা হয়, ১৯১১ সালে এটিকে "বৈজ্ঞানিকভাবে পুনঃআবিষ্কার" করেন এবং তার সর্বাধিক বিক্রিত বই দিয়ে সাইটটির প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পেরু হাজার হাজার নিদর্শন পুনরুদ্ধার করার জন্য আইনি প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যা বিংহাম সাইট থেকে সরিয়ে দিয়েছে এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান মালিকদের কাছে বিক্রি করেছে। যদিও মাচু পিচু এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে সুপরিচিত, পেরু আরও অনেক সাইট নিয়ে গর্ব করে যেখানে আধুনিক দর্শনার্থীরা ব্যাপক এবং সু-সংরক্ষিত ধ্বংসাবশেষ, ইনকা-যুগের অবশিষ্টাংশ এবং এমনকি পুরানো নির্মাণগুলি দেখতে পায়। এই সাইটগুলিতে পাওয়া বেশিরভাগ ইনকা স্থাপত্য এবং পাথরের কাজ প্রত্নতাত্ত্বিকদের বিভ্রান্ত করে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, সাকসেওয়ামান কুসকোতে, জিগ-জ্যাগ-আকৃতির দেয়ালগুলি একে অপরের অনিয়মিত, কৌণিক আকারে অবিকল লাগানো বিশাল বোল্ডার দ্বারা গঠিত। কোন মর্টার তাদের একত্রে ধরে রাখে না, কিন্তু তবুও তারা বহু শতাব্দী ধরে শক্ত রয়ে গেছে। ভূমিকম্প কুসকোর অনেক ঔপনিবেশিক নির্মাণকে সমতল করে দিয়েছে। বর্তমানে দৃশ্যমান দেয়ালের ক্ষতি প্রধানত স্প্যানিশ এবং ইনকাদের মধ্যে যুদ্ধের সময়, সেইসাথে পরবর্তীতে, ঔপনিবেশিক যুগে হয়েছিল। কুসকো বড় হওয়ার সাথে সাথে সাকসেওয়ামানের দেয়াল আংশিকভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছিল, সাইটটি শহরের নতুন বাসিন্দাদের জন্য নির্মাণ সামগ্রীর একটি সুবিধাজনক উৎস হয়ে উঠেছে। কীভাবে এই পাথরগুলোকে আকৃতি ও মসৃণ করা হয়েছিল, একে অপরের ওপরে তোলা হয়েছিল বা ইনকাদের দ্বারা একসাথে লাগানো হয়েছিল তা এখনও জানা যায়নি; এটাও অজানা কীভাবে তারা পাথরগুলোকে প্রথম স্থানে নিয়ে গিয়েছিল। ইউরোপীয় উপনিবেশ হিসেবে পেরু (১৫৩২-১৫৭২) পেরুর ব্যুৎপত্তি পেরু শব্দটি বিরু থেকে উদ্ভূত হতে পারে, একজন স্থানীয় শাসকের নাম যিনি ১৬ শতকের গোড়ার দিকে পানামার সান মিগুয়েল উপসাগরের কাছে বাস করতেন। Porras Barrenechea (1968) p. 83 ১৫২২ সালে যখন স্প্যানিশ অভিযাত্রীরা তার সম্পদ পরিদর্শন করেন, তখন তারা ইউরোপীয়দের কাছে নতুন বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষিণের অংশ ছিল।Porras Barrenechea (1968) p. 84 এইভাবে, ফ্রান্সিসকো পিজারো যখন দক্ষিণে অঞ্চলগুলি অন্বেষণ করেন, তখন তারা বিরু বা পেরু নামে পরিচিত হয়। Porras Barrenechea (1968) p. 86 একটি বিকল্প ইতিহাসের অবতারণা করেছেন সমসাময়িক লেখক ইনকা গার্সিলাস্কো দে লা ভেগা, একজন ইনকা রাজকুমারীর পুত্র। তিনি বলেছেন যে বিরু নামটি ছিল একজন সাধারণ ভারতীয় যা গভর্নর পেড্রো আরিয়াস দে আভিলার জন্য একটি অনুসন্ধানী মিশনে জাহাজের ক্রু দ্বারা ঘটেছিল এবং একটি সাধারণ ভাষার অভাবের কারণে ভুল বোঝাবুঝির আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে।Vega, Garcilasco, Commentarios Reales de los Incas, Editoriial Mantaro, Lima, ed. 1998. pp.14–15. First published in Lisbon in 1609. স্প্যানিশ ক্রাউন ১৫২৯ সালে ক্যাপিটুলেশিয়ন ডে টলেডো- এর সাথে নামটিকে আইনি মর্যাদা দেয়, যার দ্বারা নবগঠিত ইনকা সাম্রাজ্য পেরুকে প্রদেশ হিসাবে মনোনীত করে।Porras Barrenechea (1968) p. 87 স্প্যানিশ শাসনের অধীনে, দেশটি পেরুর ভাইসারয়্যালিটি গ্রহণ করে, যা স্বাধীনতার পর পেরু প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। ১৫৩১ সালে যখন স্প্যানিশরা অবতরণ করে, তখন পেরুর অঞ্চলটি ছিল অত্যন্ত উন্নত ইনকা সভ্যতার মধ্যমণি। কুসকোতে কেন্দ্রীভূত, ইনকা সাম্রাজ্য দক্ষিণ-পশ্চিম ইকুয়েডর থেকে উত্তর চিলি পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল। ফ্রান্সিসকো পিজারো এবং তার ভাইয়েরা একটি ধনী এবং কল্পিত রাজ্যের খবরে আকৃষ্ট হয়েছিল।Atahualpa, Pizarro and the Fall of the Inca Empire ১৫৩২ সালে, তারা পেরু নামে দেশটিতে পৌঁছায়। ( বিরু , পিরু এবং বেরু নামগুলিও প্রাথমিক রেকর্ডগুলিতে দেখা যায়।) রাউল পোরাস ব্যারেনেচিয়ার মতে , পেরু একটি কেচুয়ান বা ক্যারিবিয়ান শব্দ নয়, তবে ইন্দো-হিস্পানিক বা হাইব্রিড। ১৫২৪ থেকে ১৫২৬ সালের মধ্যে, পানামার বিজয়ীদের কাছ থেকে এবং পেরুতে স্প্যানিশ বিজয়ীদের আগে স্থানীয়দের মধ্যে সংক্রমণের মাধ্যমে গুটিবসন্তের প্রচলন, ইনকা সাম্রাজ্যের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। গুটিবসন্ত ইনকা শাসক হুয়ানা ক্যাপাকের মৃত্যু ঘটায় এবং তার উত্তরাধিকারী সহ তার পরিবারের অধিকাংশের মৃত্যু ঘটায়, ইনকা রাজনৈতিক কাঠামোর পতন ঘটায় এবং ভাই আতাহুয়ালপা এবং হুয়াস্কারের মধ্যে গৃহযুদ্ধে অবদান রাখে।Hemming, John. The Conquest of the Inca. New York: Harcourt, Inc., 1970, 28–29. এর সুযোগ নিয়ে, পিজারো একটি অভ্যুত্থান ঘটান। ১৫৩২ সালের ১৬ নভেম্বর, যখন আতাহুয়ালপার বিজয়ী সেনাবাহিনী একটি নিরস্ত্র উদযাপনে ছিল , তখন কাজামার্কা যুদ্ধের সময় স্প্যানিশরা আতাহুয়ালপাকে ফাঁদে ফেলে। সুসজ্জিত ১৬৮ স্প্যানিয়ার্ডরা হাজার হাজার সবে সশস্ত্র ইনকা সৈন্যদের হত্যা করে এবং নতুন ইনকা শাসককে বন্দী করে, যা স্থানীয়দের মধ্যে একটি বড় আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং যুদ্ধের ভবিষ্যত গতিপথকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন হুয়াস্কারকে হত্যা করা হয়, তখন স্প্যানিশরা আতাহুয়ালপাকে হত্যার বিচার করে এবং তাকে শ্বাসরোধ করে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিছু সময়ের জন্য, পিজারো আতাহুয়ালপার মৃত্যুর পর তুপাক হুয়ালপাকে সাপা ইনকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ইনকার দৃশ্যমান কর্তৃত্ব বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু বিজয়ীর গালাগালি এই সম্মুখভাগকে খুব স্পষ্ট করে তুলেছে। ক্রমাগত আদিবাসী বিদ্রোহ রক্তাক্তভাবে দমন করায় স্প্যানিশ আধিপত্য নিজেকে সুসংহত করে। ২৩ মার্চ ১৫৩৪ সালের মধ্যে, পিজারো এবং স্প্যানিশরা একটি নতুন স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক বন্দোবস্ত হিসাবে কুসকোর ইনকা শহর পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। একটি স্থিতিশীল ঔপনিবেশিক সরকার প্রতিষ্ঠা কিছু সময়ের জন্য বিলম্বিত হয়েছিল স্থানীয় বিদ্রোহ এবং কনকুইস্টাডোরস (পিজারো এবং ডিয়েগো দে আলমাগ্রোর নেতৃত্বে ) দলগুলি নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের কারণে। একটি দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ গড়ে ওঠে, যেখান থেকে পিজারো লাস স্যালিনাসের যুদ্ধে বিজয়ী হন। ১৫৪১ সালে, পিজারোকে ডিয়েগো ডি আলমাগ্রো দ্বিতীয় ( এল মোজো ) এর নেতৃত্বে একটি দল দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল এবং পরবর্তী গৃহযুদ্ধে মূল ঔপনিবেশিক শাসনের স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়েছিল। এই সত্ত্বেও, স্প্যানিশরা উপনিবেশ প্রক্রিয়াটিকে অবহেলা করেনি। এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক ছিল ১৫৩৫ সালের জানুয়ারিতে লিমার ভিত্তি, যেখান থেকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলি সংগঠিত হয়েছিল। নতুন শাসকরা এনকোমিন্ডা সিস্টেম চালু করেছিলেন, যার মাধ্যমে স্প্যানিশরা স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিল, যার একটি অংশ স্থানীয়দের খ্রিস্টান ধর্মে রূপান্তরিত করার বিনিময়ে সেভিলে পাঠানো হয়েছিল। ভূমির শিরোনাম খোদ স্পেনের রাজার কাছেই ছিল। পেরুর গভর্নর হিসাবে, পিজারো এনকোমিন্ডা ব্যবহার করেছিলেন। এটি ছিল তার সৈনিক সঙ্গীদের স্থানীয় পেরুভিয়ানদের উপর কার্যত সীমাহীন কর্তৃত্ব প্রদানের ব্যবস্থা। এইভাবে তারা ঔপনিবেশিক ভূমি-কাল কাঠামো গঠন করে। পেরুর আদিবাসীরা তাদের জমিদারদের জন্য ওল্ড ওয়ার্ল্ড গবাদি পশু, হাঁস -মুরগি এবং শস্য সংগ্রহ করবে বলে আশা করা হয়েছিল। " ব্ল্যাক লিজেন্ড " এর জন্ম দিয়ে প্রতিরোধকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। এই অঞ্চলগুলির উপর স্প্যানিশ রাজকীয় কর্তৃত্ব একত্রিত করার প্রয়োজনীয়তা একটি বাস্তব শ্রোতা (রাজকীয় শ্রোতা) তৈরির দিকে পরিচালিত করেছিল। পরের বছর, ১৫৪২ সালে, স্প্যানিশ শাসিত দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশের উপর কর্তৃত্ব সহ পেরুর ভাইসরয়্যালিটি ( ভিররেইনেটো ডেল পেরু) প্রতিষ্ঠিত হয়। কলোম্বিয়া, ইকুয়েডর, পানামা এবং ভেনিজুয়েলা ১৭১৭ সালে নিউ গ্রানাডা ( ভিরেইনাতো দে নুয়েভা গ্রানাডা ) এর ভাইসরয়্যালিটি হিসাবে বিভক্ত হয়েছিল। আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে এবং উরুগুয়ে এই চারটি অংশ নিয়ে ১৭৭৬ সালে রিও দে লা প্লাতার ভাইসরয়্যালিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পিজারোর মৃত্যুর পর, অসংখ্য অভ্যন্তরীণ সমস্যা দেখা দেয় এবং অবশেষে স্পেন ১৫৪৪ সালে পেরুর প্রথম ভাইসরয় হিসেবে ব্লাস্কো নুনেজ ভেলাকে পাঠায়। পরে পিজারোর ভাই গঞ্জালো পিজারো তাকে হত্যা করেন, কিন্তু একজন নতুন ভাইসরয় পেড্রো দে লা গাসকা শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সক্ষম হন। তিনি গঞ্জালো পিজারোকে বন্দী করেন এবং মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন। সর্বশেষ কুইপুকামায়োক দ্বারা নেওয়া একটি আদমশুমারি ইঙ্গিত দেয় যে ইনকা পেরুর ১২ মিলিয়ন বাসিন্দা ছিল। ৪৫ বছর পর, ভাইসরয় টলেডোর অধীনে, আদমশুমারির পরিসংখ্যান ছিল ১১,০০,০০০ ইনকা। ইতিহাসবিদ ডেভিড এন. কুক অনুমান করেন যে তাদের জনসংখ্যা ১৫২০-এর আনুমানিক ৯ মিলিয়ন থেকে ১৬২০-এ প্রায় ৬,০০,০০০-এ নেমে আসে মূলত সংক্রামক রোগের কারণে।Noble David Cook, Demographic collapse: Indian Peru, 1520–1620, p. 114. যদিও এটি গণহত্যার একটি সংগঠিত প্রচেষ্টা ছিল না , ফলাফল একই রকম ছিল। পণ্ডিতরা এখন বিশ্বাস করেন যে, বিভিন্ন কারণের মধ্যে মহামারী রোগ যেমন গুটিবসন্ত (স্প্যানিশদের বিপরীতে, আমেরিন্ডিয়ানদের এই রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল না) আমেরিকান নেটিভদের জনসংখ্যা হ্রাসের অপ্রতিরোধ্য কারণ ছিল। ইনকা শহরগুলিকে স্প্যানিশ খ্রিস্টান নাম দেওয়া হয়েছিল এবং স্প্যানিশ শহরগুলিকে কেন্দ্র করে একটি গির্জা বা ক্যাথেড্রাল একটি সরকারী বাসভবনের মুখের চারপাশে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। কুসকোর মতো কয়েকটি ইনকা শহর তাদের দেয়ালের ভিত্তির জন্য স্থানীয় রাজমিস্ত্রি ধরে রেখেছে। অন্যান্য ইনকা শহর যেমন হুয়ানুকো ভিজো নিম্ন উচ্চতার জন্য পরিত্যক্ত হয়েছিল। পেরুর ভাইসরয়্যালিটি (১৫৪২-১৮২৪) ১৫৪২ সালে, স্প্যানিশ ক্রাউন পেরুর ভাইসরয়্যালিটি তৈরি করে, যা ১৫৭২ সালে ভাইসরয় ফ্রান্সিসকো ডি টলেডোর আগমনের পরে পুনর্গঠিত হয়েছিল। তিনি ভিলকাবাম্বাতে আদিবাসী নিও-ইনকা রাজ্যের অবসান ঘটান এবং টুপাক আমারু প্রথমকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এছাড়াও তিনি বাণিজ্যিক একচেটিয়া এবং খনিজ উত্তোলনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন চেয়েছিলেন, প্রধানত পোটোসির রৌপ্য খনি থেকে। খনির কাজের জন্য স্থানীয় সম্প্রদায়কে একত্রিত করার জন্য তিনি ইনকা মিতা (একটি জোরপূর্বক শ্রম কর্মসূচি) পুনঃব্যবহার করেন। এই সংগঠনটি পেরুকে দক্ষিণ আমেরিকায় স্প্যানিশ সম্পদ ও ক্ষমতার প্রধান উৎসে রূপান্তরিত করেছে। লিমা শহর, ১৮ জানুয়ারী ১৫৩৫ সালে "সিউদাদ দে রেয়েস" (রাজাদের শহর) হিসাবে পিজারো দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, নতুন ভাইসরয়্যালিটির আসনে পরিণত হয়েছিল। এটি স্প্যানিশ দক্ষিণ আমেরিকার বেশির ভাগের এখতিয়ার সহ একটি শক্তিশালী শহরে পরিণত হয়েছিল। মূল্যবান ধাতুগুলি লিমার মধ্য দিয়ে পানামার ইস্তমাস এবং সেখান থেকে আটলান্টিক পথে স্পেনের সেভিলে চলে যায়, কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরের জন্য এটি মেক্সিকোতে চলে যায় এবং আকাপুল্কো বন্দর থেকে অবতরণ করে এবং অবশেষে ফিলিপাইনে পৌঁছে। ১৮ শতকের মধ্যে, লিমা একটি বিশিষ্ট এবং অভিজাত ঔপনিবেশিক রাজধানী, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন এবং আমেরিকার প্রধান স্প্যানিশ দুর্গে পরিণত হয়েছিল। পেরু ধনী এবং অত্যন্ত জনবহুল ছিল। পানামার গভর্নর সেবাস্তিয়ান হুর্তাডো ডি করকুয়েরা, ফিলিপাইনের জাম্বোয়াঙ্গা শহরে বসতি স্থাপন করেছিলেন এবং সেখানে পেরুর শহর থেকে নিয়োগকৃত সৈন্য এবং উপনিবেশবাদীদের নিয়োগ করেছিলেন। সেখানে অধিবাসীরা স্প্যানিশ ক্রেওল ভাষায় কথা বলে।"SECOND BOOK OF THE SECOND PART OF THE CONQUESTS OF THE FILIPINAS ISLANDS, AND CHRONICLE OF THE RELIGIOUS OF OUR FATHER, ST. AUGUSTINE" (Zamboanga City History) "He (Governor Don Sebastían Hurtado de Corcuera) brought a great reënforcement of soldiers, many of them from Perú, as he made his voyage to Acapulco from that kingdom." তা সত্ত্বেও, অষ্টাদশ শতাব্দী জুড়ে, লিমা থেকে আরও দূরে প্রদেশগুলিতে, স্প্যানিশদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল না। স্থানীয় অভিজাতদের সাহায্য ছাড়া স্প্যানিশরা প্রদেশগুলি পরিচালনা করতে পারত না। এই স্থানীয় অভিজাত, যারা কুরাকা শিরোনামে শাসন করেছিল, তারা ইনকা সাম্রাজ্য ইতিহাসে গর্বভরে কর্মের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। উপরন্তু, অষ্টাদশ শতাব্দী জুড়ে, আদিবাসীরা স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিদ্রোহ ছিল ১৭৪২ সালে আন্দিয়ান জঙ্গল প্রদেশের অংশ টারমা এবং জাউজাতে জুয়ান সান্তোস আতাহুয়ালপা কর্তৃক পরিচালিত বিদ্রোহ, যা স্প্যানিশদের একটি বিশাল এলাকা থেকে বিতাড়িত করেছিল এবং ১৭৮০ সালে কুজকোর কাছাকাছি উচ্চভূমির আশেপাশে তুপাক আমারু দ্বিতীয় এর বিদ্রোহ। সেই সময়ে, নিউ গ্রানাডা এবং রিও দে লা প্লাতার ভাইসরয়্যালটি তৈরির কারণে একটি অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হচ্ছিল (এটির অঞ্চলের ব্যয়ে)। শুল্ক ছাড়ের ফলে বাণিজ্যিক কেন্দ্রটি লিমা থেকে কারাকাস এবং বুয়েনস আইরেসে স্থানান্তরিত করেছিল এবং খনি বস্ত্র উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল। এই সংকট দ্বিতীয় টুপাক আমরু-এর আদিবাসী বিদ্রোহের পক্ষে অনুকূল প্রমাণিত হয়েছিল এবং পেরুর ভাইসরয়্যালিটির ক্রমাগত ক্ষয় ত্বরান্বিত করেছিল। ১৮০৮ সালে, নেপোলিয়ন আইবেরিয়ান উপদ্বীপ আক্রমণ করেন এবং রাজা ফার্দিনান্দ সপ্তমকে জিম্মি করেন। পরে ১৮১২ সালে, ক্যাডিজ কর্টেস, স্পেনের জাতীয় আইনসভা, কাডিজের একটি উদার সংবিধান জারি করে। এই ঘটনাগুলি সমগ্র স্প্যানিশ আমেরিকা জুড়ে স্প্যানিশ ক্রিওলো জনগণের মধ্যে মুক্তির ধারণাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। পেরুতে, হুয়ানুকোর ক্রেওল বিদ্রোহ ১৮১২ সালে এবং কুসকোর বিদ্রোহ ১৮১৪ থেকে ১৮১৬ সালের মধ্যে দেখা দেয়। এই বিদ্রোহ সত্ত্বেও, পেরুর ক্রিওলো অলিগার্চি বেশিরভাগই স্প্যানিশ অনুগত ছিল, যা পেরুর ভাইসরয়্যালিটির জন্য দায়ী।দক্ষিণ আমেরিকায় স্প্যানিশ আধিপত্যের শেষ সন্দেহে পরিণত হয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধ (১৮১১-১৮২৪) thumb|right|২৮ জুলাই, ১৮২১ তারিখে পেরুর লিমাতে হোসে দে সান মার্টিন দ্বারা পেরুর স্বাধীনতার ঘোষণা। জুয়ান লেপিয়ানির চিত্রকর্ম আর্জেন্টিনার হোসে দে সান মার্টিন এবং ভেনিজুয়েলার সিমন বোলিভারের নেতৃত্বে স্প্যানিশ-আমেরিকান জমির মালিক এবং তাদের বাহিনীর একটি বিদ্রোহের মাধ্যমে পেরুর স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সান মার্টিন, যিনি চাকাবুকোর যুদ্ধের পরে চিলির রাজকীয়দের বাস্তুচ্যুত করেছিলেন এবং ১৮১৯ সালে প্যারাকাসে নেমেছিলেন, তিনিই ৪,২০০ সৈন্যের সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অভিযানের মধ্যে যে যুদ্ধজাহাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল তা চিলি দ্বারা সংগঠিত এবং অর্থায়ন করা হয়েছিল এবং তা ১৮২০ সালের আগস্ট মাসে ভালপারাইসো থেকে যাত্রা করেছিল। সান মার্টিন ১৮২১ সালের ২৮ জুলাই লিমাতে পেরুর স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, ...এই মুহূর্ত থেকে, পেরু স্বাধীন এবং স্বাধীন, জনগণের সাধারণ ইচ্ছা এবং তার কারণের ন্যায়বিচার দ্বারা যা ঈশ্বর রক্ষা করেন। দীর্ঘজীবী হোক স্বদেশ! স্বাধীনতা দীর্ঘজীবী হোক! আমাদের স্বাধীনতা দীর্ঘজীবী হোক! স্প্যানিশদের কাছ থেকে পেরুকে আংশিকভাবে মুক্ত করার পর ১৮২১ সালের আগস্টে সান মার্টিন "পেরুর স্বাধীনতা রক্ষাকারী" উপাধি পেয়েছিলেন।Arana, M., 2013, Bolivar, New York: Simon & Schuster, ১৮২২ সালের ২৬ এবং ২৭ জুলাই, বোলিভার সান মার্টিনের সাথে গুয়াকিল সম্মেলন আয়োজন করে এবং পেরুর রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণের চেষ্টা করে। সান মার্টিন একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র বেছে নিয়েছিলেন, যখন বোলিভার (উত্তর অভিযানের প্রধান) একটি প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন। তবুও, তারা উভয়েই এই ধারণাটি অনুসরণ করেছিল যে এটি স্পেন থেকে স্বাধীন হতে হবে। সাক্ষাৎকারের পর, সান মার্টিন ১৮২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পেরু ত্যাগ করেন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরো কমান্ড সিমন বোলিভারের কাছে ছেড়ে দেন। thumb|250px|জুনিনের যুদ্ধ, ৬ আগস্ট ১৮২৪ পেরুর কংগ্রেস ১০ ফেব্রুয়ারী ১৮২৪ সালে পেরুর শাসক হিসেবে বোলিভারের নামকরণ করে, যা তাকে রাজনৈতিক ও সামরিক প্রশাসনকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্গঠিত করার অনুমতি দেয়। জেনারেল আন্তোনিও জোসে দে সুক্রের সহায়তায়, বলিভার স্প্যানিশ অশ্বারোহী বাহিনীকে ৬ আগস্ট ১৮২৪ সালে জুনিনের যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে। সুক্রে ৯ ডিসেম্বর ১৮২৪ সালে আয়াকুচোতে স্প্যানিশ বাহিনীর বাকি অংশ ধ্বংস করে। যুদ্ধ তখন পর্যন্ত শেষ হয়নি যতক্ষণ পর্যন্ত রাজকীয় হোল্ডআউটরা ১৮২৬ সালে রিয়েল ফেলিপ দুর্গ আত্মসমর্পণ করে। বিজয় রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে আসে, কিন্তু রাজতন্ত্রের আদিবাসী এবং মেস্টিজো সমর্থক থেকে যায় এবং হুয়ানতা প্রদেশে, তারা ১৮২৫-১৮২৮ সালে বিদ্রোহ করে, যা পুনাসের যুদ্ধ বা হুয়ান্টা বিদ্রোহ নামে পরিচিত।Ceclia Méndez, The Plebeian Republic: The Huanta Rebellion and the Making of the Peruvian State, 1820–1850. Durham: Duke University Press 2005.Patrick Husson, De la Guerra a la Rebelión (Huanta Siglo XIX). Cuzco: Centro de Estudios Regionales Andinos Bartolomé de las Casas 1992. স্পেন তার প্রাক্তন উপনিবেশগুলি পুনরুদ্ধারের জন্য নিরর্থক প্রচেষ্টা করেছিল, যেমন ক্যালাওর যুদ্ধ (১৮৬৬)। তারা ১৮৭৯ সালে পেরুর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়। পেরু প্রজাতন্ত্র আঞ্চলিক বিরোধ (১৮২৪-১৮৮৪) স্বাধীনতার পর, পেরু এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলো মাঝে মাঝে আঞ্চলিক বিরোধে লিপ্ত হয়। ১৮২৮ সালের শুরুর দিকে, পেরু বলিভারিয়ান প্রভাবের অবসান ঘটাতে বলিভিয়ার বিরুদ্ধে একটি অভিযান শুরু করে যেখানে এটি অবশেষে কলম্বিয়ানদের বলিভিয়া ছেড়ে যেতে বাধ্য করে। এটি গ্রান কলম্বিয়া-পেরু যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করে যা উভয় দেশের মধ্যে অচলাবস্থায় শেষ হয়। ১৮৩৬-১৮৩৯ সময়কালে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ডি সান্তা ক্রুজ যখন পেরু-বলিভিয়ান কনফেডারেশন অস্তিত্বে আসে তখন পেরু ও বলিভিয়াকে একত্রিত করার একটি প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। তীব্র অভ্যন্তরীণ বিরোধিতার জন্য কনফেডারেশনের যুদ্ধে এর ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে যা অগাস্টিন গামারার দ্বারা বলিভিয়াকে সংযুক্ত করার একটি পেরুভিয়ান প্রয়াসে পরিণত হয়েছিল যা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে পরিণত হয়। ১৮৫৭ এবং ১৮৬০ সালের মধ্যে আমাজনের বিতর্কিত অঞ্চলগুলির জন্য ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে পেরুর বিজয় ইকুয়েডরীয়দের এই এলাকায় বসতি স্থাপনের দাবিতে বাধা দেয়। thumb|left|১৮৮২-১৮৮৩ সিয়েরা ক্যাম্পেইন ১৮৮২-১৮৮৩ সিয়েরা ক্যাম্পেইন উপলক্ষে পেরু একটি রেলপথ নির্মাণ কর্মসূচি শুরু করেছে। আমেরিকান উদ্যোক্তা হেনরি মেইগস আন্দিজ জুড়ে ক্যালাও থেকে অভ্যন্তরীণ, হুয়ানকায়ো পর্যন্ত একটি স্ট্যান্ডার্ড গেজ লাইন তৈরি করেছিলেন ; তিনি লাইন তৈরি করেছিলেন এবং কিছু সময়ের জন্য এর রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন; শেষ পর্যন্ত, তিনি নিজেকে এবং দেশকে দেউলিয়া করেছেন। রাষ্ট্রপতি টমাস গার্দিয়া ১৮৭১ সালে আটলান্টিক পর্যন্ত একটি রেলপথ নির্মাণের জন্য মেইগসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। আর্থিক সমস্যা ১৮৭৪ সালে সরকারকে দায়িত্ব নিতে বাধ্য করে। শ্রম পরিস্থিতি জটিল ছিল, উত্তর আমেরিকান, ইউরোপীয়, কৃষ্ণাঙ্গ এবং চীনাদের মধ্যে বিভিন্ন স্তরের দক্ষতা এবং সংগঠনের দ্বন্দ্বের কারণে। পরিস্থিতিগুলি চীনাদের জন্য অত্যন্ত নৃশংস ছিল এবং ধর্মঘট এবং সহিংস দমনের দিকে পরিচালিত করেছিল।Watt Stewart, Henry Meiggs: Yankee Pizarro (1946) thumb|left|যুদ্ধের পরে আঞ্চলিক পরিবর্তন ১৮৭৯ সালে, পেরু প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধে প্রবেশ করে যা ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত চলে। বলিভিয়া চিলির বিরুদ্ধে পেরুর সাথে তার মৈত্রী আহ্বান করে। পেরুর সরকার চিলি সরকারের সাথে আলোচনার জন্য একটি কূটনৈতিক দল পাঠিয়ে বিরোধের মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কমিটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল যে যুদ্ধ অনিবার্য। ১৪ মার্চ ১৮৭৯-এ, বলিভিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং চিলি, প্রতিক্রিয়া হিসাবে, ৫ এপ্রিল ১৮৭৯-এ বলিভিয়া এবং পেরুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং পরের দিন পেরু যুদ্ধ ঘোষণা করে। প্রায় পাঁচ বছরের যুদ্ধ শেষ হয় আতাকামা অঞ্চলের টারাপাকা বিভাগ এবং টাকনা এবং আরিকা প্রদেশ হারানোর মাধ্যমে। মূলত, চিলি তাদের জাতীয় অধিভুক্তি নির্ধারণের জন্য আরিকা এবং টাকনা শহরগুলির জন্য একটি গণভোটের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল যা বছর পরে অনুষ্ঠিত হবে। যাইহোক, চিলি চুক্তিটি প্রয়োগ করতে অস্বীকার করে এবং উভয় দেশ বিধিবদ্ধ কাঠামো নির্ধারণ করতে পারেনি। সালিশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে গণভোট গ্রহণ করা অসম্ভব ছিল, তাই পক্ষগুলির মধ্যে সরাসরি আলোচনার ফলে একটি চুক্তির ( লিমা চুক্তি, ১৯২৯) হয়েছিল, যেখানে আরিকাকে চিলির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল এবং তাকনা রয়ে গিয়েছিল। ২৯ আগস্ট ১৯২৯ তারিখে তাকনা পেরুতে ফিরে আসে। চিলির সৈন্যদের দ্বারা আঞ্চলিক ক্ষতি এবং পেরুর শহরগুলির ব্যাপক লুটপাট চিলির সাথে দেশের সম্পর্কের উপর দাগ ফেলে যা এখনও পুরোপুরি নিরাময় হয়নি। ১৯৪১ সালের ইকুয়েডর-পেরুভিয়ান যুদ্ধের পর, রিও প্রোটোকল ঐ দুটি দেশের মধ্যে সীমানাকে আনুষ্ঠানিক করার চেষ্টা করেছিল। চলমান সীমানা মতবিরোধের কারণে ১৯৮১ সালের প্রথম দিকে একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধ এবং ১৯৯৫ সালের শুরুর দিকে চেনেপা যুদ্ধ হয়, কিন্তু ১৯৯৮ সালে উভয় দেশের সরকার একটি ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা তাদের মধ্যে স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক সীমানা চিহ্নিত করে। ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে, পেরু এবং চিলির সরকারগুলি তাদের ১৯২৯ সালের সীমান্ত চুক্তির শেষ অসামান্য নিবন্ধটি বাস্তবায়ন করে। ১৯৮০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পেরু এবং চিলি উভয়ই একটি সামুদ্রিক বিরোধে জড়িত ছিল যা ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে উত্থাপন না হওয়া পর্যন্ত কয়েক দশক ধরে অমীমাংসিত ছিল, যা ২০১৪ সালে পেরুর পক্ষে বিরোধের সমাধান করে এবং এটিকে তার দাবিকৃত অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ প্রদান করে। পুনর্গঠন, অভিজাত প্রজাতন্ত্র, এবং লেগুয়ের ১১ বছরের শাসন (১৮৮৪-১৯৩০) প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধের পরে, পুনর্নির্মাণের একটি অসাধারণ প্রচেষ্টা শুরু হয়। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার বেশ কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু করে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা শুধুমাত্র ১৯০০ এর দশকের গোড়ার দিকে অর্জিত হয়েছিল। ১৮৯৪ সালে, নিকোলাস দে পিয়েরোলা লিমা দখল করার জন্য গেরিলা যোদ্ধাদের সংগঠিত করার জন্য পেরুর সিভিল পার্টির সাথে তার দলের মিত্রতা গঠনের পর, আন্দ্রেস অ্যাভেলিনো ক্যাসেরেসকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং ১৮৯৫ সালে আবার পেরুর রাষ্ট্রপতি হন। একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের পরে যেখানে সামরিক বাহিনী আবার নিয়ন্ত্রণ করে। ১৮৯৫ সালে পিয়েরলার নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটিতে স্থায়ীভাবে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯৯ সালে তার দ্বিতীয় মেয়াদ সফলভাবে সম্পন্ন হয় এবং আর্থিক, সামরিক, ধর্মীয় এবং বেসামরিক সংস্কার শুরু করার মাধ্যমে একটি বিধ্বস্ত পেরুর পুনর্গঠনের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ১৯২০ এর দশক পর্যন্ত, এই সময়টিকে "অভিজাত প্রজাতন্ত্র" বলা হত, কারণ দেশটি শাসনকারী বেশিরভাগ রাষ্ট্রপতিই সামাজিক অভিজাত শ্রেণীর ছিলেন। এই সময়ে, কর্নেল এবং লোরেটো এমিলিও ভিজকারার প্রিফেক্ট পেরু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জঙ্গল রিপাবলিক নামের একটি রাষ্ট্র ঘোষণা করেন, একটি অস্বীকৃত বিচ্ছিন্নতাবাদী রাষ্ট্র যার ঘোষিত সীমানা লরেটো বিভাগের (আজ লোরেটো, সান মার্টিন এবং উকায়ালি বিভাগ ) এর সাথে মিলে যায়। রাষ্ট্রপতি এডুয়ার্ডো লোপেজ দে রোমানা অবিলম্বে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সৈন্য প্রেরণ করেন এবং ১৯০০ সালে এই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বন্ধ হয়ে যায়। এই বিদ্রোহের আগে ১৮৯৬ সালে অনুরূপ একটি বিদ্রোহ হয়েছিল, যেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পেরু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং স্বল্পস্থায়ী ফেডারেল স্টেট প্রতিষ্ঠা করে। লরেটো যার বিদ্রোহ একইভাবে শেষ হয়েছিল; এবং ১৯২১ সালে আরেকটি বিদ্রোহও একই রকম ভাগ্য দেখেছিল। অগাস্টো বি. লেগুয়ার সরকারের সময়কালে (১৯০৮-১৯১২ এবং ১৯১৯-১৯৩০), পরবর্তীটি "Oncenio" ("একাদশ") নামে পরিচিত, আমেরিকান পুঁজির প্রবেশদ্বার হয়ে ওঠে এবং বুর্জোয়াদের পক্ষপাতী হয়। এই নীতি বিদেশী বিনিয়োগের উপর বর্ধিত নির্ভরতা সহ পেরুর সমাজের সবচেয়ে প্রগতিশীল ক্ষেত্রগুলি থেকে জমির মালিক অলিগার্কির বিরুদ্ধে বিরোধিতাকে কেন্দ্রীভূত করেছিল। ১৯২৯ সালে একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি হয়েছিল, যা পেরু এবং চিলির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং এই লিমা চুক্তি বলে অভিহিত করা হয় যার মাধ্যমে টাকনা পেরুতে ফিরে আসে এবং পেরু স্থায়ীভাবে আরিকা এবং তারাপাকা প্রদেশের পূর্বে সমৃদ্ধ প্রদেশগুলি লাভ করে, কিন্তু আরিকাতে বন্দর কার্যক্রমের কিছু অধিকার রাখে এবং চিলি এই অঞ্চলগুলিতে কি করতে পারে তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ১৯২২ সালে সালোমন-লোজানো চুক্তি পেরু এবং কলম্বিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ‌, যেখানে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে একটি বিশাল পরিমাণ ভূখণ্ড কলম্বিয়াকে অর্পণ করা হয়েছিল যাতে তারা আমাজন নদীতে প্রবেশ করতে পারে এবং পেরুর অঞ্চলকে আরও হ্রাস করে। thumb|left|200px|ট্যাকনা-আরিকা বিরোধ এবং এর সমাধান দেখানো মানচিত্র ১৯২৪ সালে মেক্সিকো থেকে পেরুর বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার নেতারা যারা সরকার কর্তৃক নির্বাসনে বাধ্য হয়েছিল তারা আমেরিকান পিপলস রেভোলিউশনারি অ্যালায়েন্স (আপরা) প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা দেশের রাজনৈতিক জীবনে একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল। আপরা মূলত ১৯১৮-১৯২০ সালের বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার এবং শ্রমিকদের সংগ্রামের একটি রাজনৈতিক অভিব্যক্তি। এই আন্দোলনটি মেক্সিকান বিপ্লব এবং এর ১৯১৭ সালের সংবিধান থেকে বিশেষ করে কৃষিবাদ এবং আদিবাসীদের ইস্যুতে এবং রাশিয়ান বিপ্লব থেকে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। মার্কসবাদের কাছাকাছি (এর নেতা, হায়া দে লা টোরে, ঘোষণা করে যে "আরপা হল আমেরিকান বাস্তবতার মার্কসবাদী ব্যাখ্যা"), তবুও এটি শ্রেণী সংগ্রামের প্রশ্নে এবং লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক ঐক্যের সংগ্রামকে দেওয়া গুরুত্বের ভিত্তিতে এটি থেকে সরে যায়।Latin America in the 20th century: 1889–1929, 1991, p. 314-319 ১৯২৮ সালে, পেরুভিয়ান সোশ্যালিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, বিশেষত হোসে কার্লোস মারিয়াতেগুই -এর নেতৃত্বে, যিনি নিজে আরপা-এর একজন প্রাক্তন সদস্য ছিলেন। এর কিছুদিন পরে, ১৯২৯ সালে, পার্টি জেনারেল কনফেডারেশন অফ ওয়ার্কার্স তৈরি করে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুইস মিগুয়েল সানচেজ সেরো এবং তার সহানুভূতিশীলদের দ্বারা পরিচালিত একটি অভ্যুত্থানের পরে এই সময়কাল শেষ হয়, জেনারেল ম্যানুয়েল মারিয়া পন্স ব্রুসেট সানচেজ সেরোর আরেকুইপা থেকে লিমায় ফিরে না আসা পর্যন্ত দুই দিনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। দেশটির সরকার তখন একটি একক রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র থেকে সামরিক সরকারে পরিণত হয়। মাত্র দুই বছর পর সানচেজ সেরোকে হত্যার সাথে সাথে কলম্বিয়ার সাথে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। গণতন্ত্র এবং সামরিকবাদের মধ্যে বিকল্প (১৯৩০-১৯৭০) ১৯২৯ সালের বিশ্বব্যাপী সংকটের পর, অসংখ্য সংক্ষিপ্ত সরকার একে অপরকে অনুসরণ করেছিল। আরপা পার্টির রাজনৈতিক কর্মের মাধ্যমে সিস্টেম সংস্কার করার সুযোগ ছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি। ১৯২৪ সালে ভিক্টর রাউল হায়া দে লা টোরের নেতৃত্বে এটি একটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, জনতাবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী দল হয়ে উঠে। পেরুর সোশ্যালিস্ট পার্টি (পরে পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি) চার বছর পরে তৈরি হয়েছিল এবং এটির নেতৃত্বে ছিলেন হোসে সি. মারিয়াতেগুই। ১৯৩০-এর দশকের গোড়ার দিকে দমন-পীড়ন ছিল নৃশংস এবং কয়েক হাজার আপরা অনুসারী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বা কারারুদ্ধ হয়েছিল। এই সময়কালটি আকস্মিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নগরায়ন বৃদ্ধির দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল। আলবার্তো ফ্লোরেস গ্যালিন্ডোর মতে, "১৯৪০ সালের আদমশুমারি দ্বারা, সর্বশেষ যেটি জাতিগত বিভাগগুলি ব্যবহার করেছিল, মেস্টিজোসকে শ্বেতাঙ্গদের সাথে গোষ্ঠীভুক্ত করা হয়েছিল, এবং দুটি জনসংখ্যা ৫৩ শতাংশেরও বেশি গঠন করেছিল৷ মেস্টিজোস সম্ভবত আদিবাসীদের চেয়ে বেশি এবং জনসংখ্যার বৃহত্তম গোষ্ঠী ছিল৷" ব্রাজিল ২২ আগস্ট ১৯৪২, বলিভিয়া ৭ এপ্রিল ১৯৪৩ এবং কলম্বিয়া ১৯৪৩ সালের ২৬ নভেম্বর এবং ১৯৪৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে পেরু অক্ষবাহিনীর বিরুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সাথে যুদ্ধে যোগদান করে। ২রা সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর বিজয়ের পর, ভিক্টর রাউল হায়া দে লা টোরে (আপরা-এর প্রতিষ্ঠাতা), হোসে কার্লোস মারিয়াতেগুই ( পেরুভিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ) পেরুর রাজনীতিতে দুটি প্রধান শক্তি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। আদর্শগতভাবে বিরোধিতা করে, তারা উভয়েই প্রথম রাজনৈতিক দল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল যা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি মোকাবেলা করেছিল। যদিও মারিয়াতেগুই অল্প বয়সে মারা যান, হায়া দে লা টোরে দুবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন, কিন্তু সামরিক বাহিনী তাকে যোগদান করতে বাধা দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, দেশটি তার জাপানি অভিবাসী জনসংখ্যার প্রায় ২০০০ জনকে রাউন্ড আপ করেছিল এবং জাপানি-আমেরিকান ইন্টার্নমেন্ট প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরণ করেছিল।Agence France-Presse/Jiji Press, "Peru sorry for World War II internments", Japan Times, 16 June 2011, p. 2. প্রেসিডেন্ট বুস্তামান্তে ওয়াই রিভেরো আশা করেছিলেন যে সামরিক এবং অলিগার্কির ক্ষমতা সীমিত করে আরও গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করবেন। আপরা এর সহযোগিতায় নির্বাচিত শীঘ্রই রাষ্ট্রপতি এবং হায়া দে লা টোরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। আপরা পার্টির সমর্থন ছাড়া বুস্তামান্তে ওয়াই রিভেরো তার রাষ্ট্রপতির পদ গুরুতরভাবে সীমিত হিসেবে খুঁজে পান। রাষ্ট্রপতি তার এপ্রিস্টা মন্ত্রিসভা ভেঙে দেন এবং বেশিরভাগ সামরিক মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভায় প্রতিস্থাপন করেন। ১৯৪৮ সালে, মন্ত্রী ম্যানুয়েল এ. ওড্রিয়া এবং মন্ত্রিসভার অন্যান্য ডানপন্থী মন্ত্রী আরপাকে নিষিদ্ধ করার জন্য বুস্তামান্তে ওয়াই রিভেরোকে অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু রাষ্ট্রপতি প্রত্যাখ্যান করলে ওড্রিয়া তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২৯ অক্টোবর একটি সামরিক অভ্যুত্থানে, জেনারেল ম্যানুয়েল এ. ওড্রিয়া নতুন রাষ্ট্রপতি হন। ওড্রিয়ার প্রেসিডেন্সি ওচেনিও নামে পরিচিত ছিল। তিনি আপরাকে কঠোরভাবে দমন করেছিলেন, মুহূর্তের জন্য অলিগার্কি এবং ডানদিকের অন্য সকলকে খুশি করেছিলেন, কিন্তু একটি পপুলিস্ট পথ অনুসরণ করেছিলেন যা তাকে দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের কাছে দারুণ অনুগ্রহ লাভ করতে সহায়তা করেছিল। একটি উন্নতিশীল অর্থনীতি তাকে ব্যয়বহুল কিন্তু সামাজিক নীতিতে লিপ্ত হতে দেয়। তবে নাগরিক অধিকার কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ ছিল এবং তার শাসনামলে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। এটা আশঙ্কা করা হয়েছিল যে তার একনায়কত্ব অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে, তাই ওড্রিয়া নতুন নির্বাচনের অনুমতি দিলে এটি আশ্চর্যজনক ছিল। এই সময়ে ফার্নান্দো বেলাউন্ডে টেরি তার রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু করেন এবং ন্যাশনাল ফ্রন্ট অফ ডেমোক্রেটিক ইয়ুথের নেতৃত্ব দেন। জাতীয় নির্বাচন বোর্ড তার প্রার্থীতা গ্রহণ করতে অস্বীকার করার পরে, তিনি একটি ব্যাপক প্রতিবাদের নেতৃত্ব দেন এবং পতাকা নিয়ে বেলাউন্দের হাঁটার আকর্ষণীয় চিত্রটি পরের দিন "Así Nacen Los Lideres" শিরোনামের একটি নিবন্ধে নিউজ ম্যাগাজিন দ্বারা প্রদর্শিত হয় ("এভাবে নেতারা কি জন্মগ্রহণ করেন")। বেলাউন্দের ১৯৫৬ সালের প্রার্থীতা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছিল, কারণ ম্যানুয়েল প্রাডো উগারতেচে স্বৈরাচার-অনুগ্রহপ্রদত্ত ডানপন্থী প্রার্থীতা প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। ১৯৬২ সালের জাতীয় নির্বাচনে বেলাউন্ডে আবারও রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন; এবার তার নিজের দল, Acción Popular (পপুলার অ্যাকশন) নিয়ে। ফলাফল খুব টাইট ছিল; তিনি ভিক্টর রাউল হায়া দে লা টোরকে অনুসরণ করে ১৪,০০০ ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেছেন। যেহেতু প্রার্থীদের মধ্যে কেউই সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ন্যূনতম এক তৃতীয়াংশ ভোট সরাসরি জয়লাভ করতে সক্ষম হয়নি, তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কংগ্রেসের কাছে হওয়া উচিত ছিল; সামরিক বাহিনী এবং আরপা-এর মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে চলা বৈরী সম্পর্ক হায়া দে লা টোরেকে প্রাক্তন স্বৈরশাসক ওড্রিয়ার সাথে একটি চুক্তি করতে প্ররোচিত করেছিল, যিনি তৃতীয় স্থানে ছিলেন, যার ফলে ওড্রিয়া একটি জোট সরকারে প্রেসিডেন্সি গ্রহণ করত। যাইহোক, প্রতারণার ব্যাপক অভিযোগ পেরুর সামরিক বাহিনীকে প্রাডোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং রিকার্ডো পেরেজ গোডয়ের নেতৃত্বে একটি সামরিক জান্তা স্থাপন করতে প্ররোচিত করে। গডয় একটি সংক্ষিপ্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনা করেছিলেন এবং ১৯৬৩ সালে নতুন নির্বাচন করেছিলেন, যেগুলি বেলাউন্ডে আরও আরামদায়ক কিন্তু এখনও পাঁচ শতাংশের ব্যবধানে জিতেছিল। ১৯৬০-এর দশকে ল্যাটিন আমেরিকা জুড়ে, কিউবার বিপ্লব দ্বারা অনুপ্রাণিত কমিউনিস্ট আন্দোলন গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা জয় করতে চেয়েছিল। বিপ্লবী বাম আন্দোলন (পেরু) বা এমআইআর একটি বিদ্রোহ শুরু করেছিল যা ১৯৬৫ সালের মধ্যে চূর্ণ হয়েছিল, কিন্তু পেরুর অভ্যন্তরীণ বিবাদ কেবল ১৯৯০-এর দশকে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত ত্বরান্বিত হবে। পেরুর ইতিহাসে সামরিক বাহিনী বিশিষ্ট অভ্যুত্থান বারবার বেসামরিক সাংবিধানিক সরকারকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সামরিক শাসনের সাম্প্রতিকতম সময়কাল (১৯৬৮-১৯৮০) শুরু হয়েছিল যখন জেনারেল জুয়ান ভেলাস্কো আলভারাডো পপুলার অ্যাকশন পার্টি (এপি) এর নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ফার্নান্দো বেলাউন্ডে টেরিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। সামরিক সরকারের জাতীয়তাবাদী কর্মসূচীর "প্রথম পর্যায়" বলা হয় তার অংশ হিসেবে, ভেলাসকো একটি ব্যাপক কৃষি সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং মাছের খাবার শিল্প, কিছু পেট্রোলিয়াম কোম্পানি এবং বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও খনির সংস্থাকে জাতীয়করণ করে। জেনারেল ফ্রান্সিসকো মোরালেস বারমুডেজ ১৯৭৫ সালে ভেলাস্কোর স্থলাভিষিক্ত হন, ভেলাস্কোর অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যের অবনতির কথা উল্লেখ করে। মোরালেস বারমুডেজ বিপ্লবকে আরও রক্ষণশীল "দ্বিতীয় পর্বে" নিয়ে যান, প্রথম পর্যায়ের র‍্যাডিক্যাল পদক্ষেপগুলিকে টেম্পারিং করেন এবং দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে একটি সাংবিধানিক সমাবেশ তৈরি করা হয়েছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন ভিক্টর রাউল হায়া দে লা টোরে। মোরালেস বারমুডেজ ১৯৭৯ সালে প্রণীত একটি নতুন সংবিধান অনুসারে বেসামরিক সরকারে প্রত্যাবর্তনের সভাপতিত্ব করেন। বেসামরিক শাসন পুনরুদ্ধার এবং নির্বাচন (১৯৭৯-বর্তমান) ১৯৮০ এর দশক ১৯৮০-এর দশকে, পূর্ব অ্যান্ডিয়ান ঢালের বিশাল এলাকায় অবৈধ কোকা চাষ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গ্রামীণ বিদ্রোহী আন্দোলন, যেমন শাইনিং পাথ ( সেন্ডারো লুমিনোসো বা এসএল) এবং টুপাক আমারো রেভ্যুলেশনারি মুভমেন্ট (এমারটিএ) মাদক পাচারকারীদের সাথে জোট থেকে উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পেরুতে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের দিকে নিয়ে গেছে। মে ১৯৮০ সালের নির্বাচনে, প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দো বেলাউন্ডে টেরি বহুল জনসমর্থন লাভ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার প্রথম পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি ছিল বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র তাদের নিজ নিজ মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। এভাবে বাক স্বাধীনতা আবারও পেরুর রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধীরে ধীরে, তিনি ভেলাস্কো কর্তৃক সূচিত কৃষি সংস্কারের কিছু সবচেয়ে আমূল প্রভাবকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা করেন এবং ভেলাস্কোর সামরিক সরকারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যে স্বাধীন অবস্থান ছিল তা উল্টে দেন। বেলাউন্দের দ্বিতীয় মেয়াদটি ১৯৮২ সালে চালু হয়। যুক্তরাজ্যের সাথে ফকল্যান্ড যুদ্ধের সময় আর্জেন্টিনা বাহিনীর জন্য পেরু নিঃশর্ত সমর্থন দেয়। বেলাউন্ডে ঘোষণা করেছিলেন যে "পেরু আর্জেন্টিনাকে প্রয়োজনীয় সমস্ত সংস্থান দিয়ে সমর্থন করতে প্রস্তুত"। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ফাইটার প্লেন এবং সম্ভবত পেরুভিয়ান এয়ার ফোর্সের কর্মী, সেইসাথে জাহাজ এবং মেডিকেল টিম অন্তর্ভুক্ত ছিল। বেলাউন্ডের সরকার দুই দেশের মধ্যে একটি শান্তি বন্দোবস্তের প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু উভয় পক্ষের দ্বারা তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, কারণ উভয়ই এই অঞ্চলের অবিকৃত সার্বভৌমত্ব দাবি করেছিল। যুক্তরাজ্যের প্রতি চিলির সমর্থনের প্রতিক্রিয়ায়, বেলাউন্ডে লাতিন আমেরিকান ঐক্যের আহ্বান জানান। পূর্ববর্তী সামরিক সরকারের থেকে রয়ে যাওয়া অস্বস্তিকর অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি টিকে ছিল, ১৯৮২-১৯৮৩ সালে " এল নিনো " আবহাওয়ার ঘটনার দ্বারা আরও খারাপ হয়, যা দেশের কিছু অংশে ব্যাপক বন্যা, অন্যগুলিতে মারাত্মক খরা এবঃ সমুদ্রের মাছসমূহের আবাসস্থল ধ্বংস করে, যা দেশের অন্যতম প্রধান সম্পদ। একটি প্রতিশ্রুতিশীল শুরুর পরে, মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক কষ্ট এবং সন্ত্রাসবাদের চাপে বেলাউন্দের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। ১৯৮৫ সালে, আমেরিকান পপুলার রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স (আপরা) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভ করে, অ্যালান গার্সিয়াকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে। ২৮ জুলাই ১৯৮৫ তারিখে বেলাউন্ডে কর্তৃক গার্সিয়ার নিকট রাষ্ট্রপতির পদ হস্তান্তর ছিল পেরুর ৪০ বছরের মধ্যে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন নেতা থেকে অন্য নেতার কাছে ক্ষমতার প্রথম বিনিময়। আপরা এর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে, অ্যালান গার্সিয়া একটি উন্নত ভবিষ্যতের আশা নিয়ে তার প্রশাসন শুরু করেছিলেন। যাইহোক, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত হাইপারইনফ্লেশনের দিকে পরিচালিত করে। গার্সিয়ার কার্যকাল হাইপারইনফ্লেশনের দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল, যা ১৯৯০ সালে ৭,৬৪৯% এ পৌঁছেছিল এবং জুলাই ১৯৮৫ এবং জুলাই ১৯৯০ এর মধ্যে ক্রমবর্ধমান হারটি মোট ২২,০০,০০০% পর্যন্ত পৌছে যায়, যা ১৯৯০ সালের জুলাই মাসে অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে। এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী মুদ্রাস্ফীতির কারণে, পেরুর মুদ্রা সল, ১৯৮৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইন্টি নামক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল, যেটি নিজেই ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে নুয়েভো সল ("নতুন সূর্য") দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল, সেই সময়ে নতুন সল একটি ক্রমবর্ধমান মুদ্রা ছিল। এক নতুন সোলের মূল্যমান এক বিলিয়ন পুরানো সোলের মূল্যমানের সমান ছিল। তার প্রশাসনের সময়, পেরুভিয়ানদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় $৭২০ (১৯৬০ এর স্তরের নিচে) এবং পেরুর মোট দেশজ উৎপাদন ২০% কমে যায়। তার মেয়াদ শেষে, জাতীয় রিজার্ভ ছিল ঋণাত্মক $৯০০ মিলিয়ন। সেই সময়ের অর্থনৈতিক অস্থিরতা পেরুর সামাজিক উত্তেজনাকে বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং আংশিকভাবে সহিংস বিদ্রোহী আন্দোলন শাইনিং পাথের উত্থানে অবদান রেখেছিল। গার্সিয়া প্রশাসন অসফলভাবে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদের একটি সামরিক সমাধান চেয়েছিল এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে যা এখনও তদন্তাধীন। জুন ১৯৭৯ সালে, বিনামূল্যে শিক্ষার জন্য বিক্ষোভগুলিকে সেনাবাহিনী দ্বারা কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল: সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে ১৮ জন নিহত হয়েছিল, কিন্তু বেসরকারী অনুমান অনুযায়ী কয়েক ডজন মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনাটি গ্রামাঞ্চলে রাজনৈতিক প্রতিবাদের একটি ধারার দিকে পরিচালিত করে এবং শেষ পর্যন্ত শাইনিং পাথের সশস্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রাদুর্ভাবের দিকে পরিচালিত করে।Luis Rossell, Rupay: historias gráficas de la violencia en el Perú, 1980–1984, 2008Julia Lovell, Maoism: A Global History (2019) pp 306–346. ফুজিমোরির প্রেসিডেন্সি এবং ফুজিশক (১৯৯০-২০০০) অর্থনীতি, সেন্ডেরো লুমিনোসো এবং এমআরটিএ থেকে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী হুমকি এবং অফিসিয়াল দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন ভোটাররা ১৯৯০ সালে একজন তুলনামূলকভাবে অজানা গণিতবিদ-রাজনীতিবিদ আলবার্তো ফুজিমোরিকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। নির্বাচনের প্রথম রাউন্ড ভালভাবে জিতেছিলেন একজন সুপরিচিত লেখক মারিও ভার্গাস লোসা, একজন রক্ষণশীল প্রার্থী যিনি পরবর্তীতে ২০১০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, কিন্তু ফুজিমোরি তাকে দ্বিতীয় রাউন্ডে পরাজিত করেছিলেন। ফুজিমোরি সরকার কঠোর পদক্ষেপগুলি বাস্তবায়ন করেছে যার ফলে মুদ্রাস্ফীতি ১৯৯০ সালে ৭,৬৫০% থেকে ১৯৯১ সালে ১৩৯% এ নেমে এসেছে। মুদ্রার ২০০% অবমূল্যায়ন‌ করা হয়েছে, দাম দ্রুত বাড়ছে (বিশেষত পেট্রল, যার মূল্য ৩০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে), শত শত পাবলিক কোম্পানিগুলি বেসরকারীকরণ করা হয়েছে। এবং তিন লক্ষ চাকরি হারিয়ে যাচ্ছে।জনসংখ্যার অধিকাংশই শক্তিশালী বৃদ্ধির বছরগুলি থেকে উপকৃত হয়নি, যা শেষ পর্যন্ত ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধানকে প্রসারিত করেছে। দারিদ্র্যের হার প্রায় ৫০% এ রয়ে গেছে।  অন্যান্য স্বৈরশাসকদের মতো, ফুজিমোরি পেরুর সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫ এপ্রিল ১৯৯২ -এর অটো-গোল্পে কংগ্রেস ভেঙে দেন। এরপর তিনি সংবিধান বাতিল করেন; নতুন কংগ্রেস নির্বাচন বলা হয়; এবং অনেক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির বেসরকারীকরণ, বিনিয়োগ-বান্ধব জলবায়ু সৃষ্টি এবং অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সহ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন করেছে। ফুজিমোরির প্রশাসনকে বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী দল, বিশেষ করে সেন্ডেরো লুমিনোসো (শাইনিং পাথ) দ্বারা প্ররোচিত করা হয়েছিল, যারা ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশক জুড়ে গ্রামাঞ্চলে সন্ত্রাসী অভিযান চালিয়েছিল। তিনি বিদ্রোহীদের উপর দমন করেন এবং ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে তাদের দমন করতে সফল হন, কিন্তু লড়াইটি পেরুর নিরাপত্তা বাহিনী এবং বিদ্রোহী উভয়ের দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ব্যারিওস আলতোস গণহত্যা এবং লা ক্যান্টুটা গণহত্যা সরকারী আধাসামরিক গোষ্ঠী দ্বারা সংঘটিত হয়। শাইনিং পাথ দ্বারা তারাতা এবং ফ্রিকুয়েনসিয়া ল্যাটিনার বোমা হামলা সংঘটিত হয়। এই উদাহরণগুলি পরবর্তীকালে সহিংসতার শেষ বছরগুলিতে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতীক হিসাবে দেখা যায়। ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে আবিমায়েল গুজমান (শাইনিং পাথের প্রেসিডেন্ট গনজালো নামে পরিচিত ) গ্রেপ্তার হওয়ার পর শাইনিং পাথ একটি গুরুতর আঘাত পেয়েছিল যা কার্যত সংগঠনটিকে ধ্বংস করে দেয়। ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে, এমআরটিএ -এর অন্তর্গত বিদ্রোহীদের একটি দল লিমাতে জাপানি দূতাবাস দখল করে  এবং বাহাত্তর জনকে জিম্মি করে। সামরিক কমান্ডোরা ১৯৯৭ সালের মে মাসে দূতাবাসের কম্পাউন্ডে হামলা চালায়, যার ফলে ১৫ জন জিম্মিকারী, একজন জিম্মি এবং দুজন কমান্ডো নিহত হয়। পরে এটা উঠে আসে যে, ফুজিমোরির নিরাপত্তা প্রধান ভ্লাদিমিরো মন্টেসিনোস আত্মসমর্পণ করার পর অন্তত আটজন বিদ্রোহীকে হত্যার নির্দেশ দিয়ে থাকতে পারেন। ২০০০ সালের জুনে তৃতীয় মেয়াদে এবং পরবর্তীকালে কলঙ্কিত বিজয়ের জন্য ফুজিমোরির সাংবিধানিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে আসে। একটি ঘুষ কেলেঙ্কারি, যা জুলাইয়ে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে ফাঁস হয়ে যায়, তা ফুজিমোরিকে নতুন নির্বাচন করতে বাধ্য করে যেখানে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এই কেলেঙ্কারিতে ভ্লাদিমিরো মন্টেসিনোস জড়িত ছিল, যাকে টিভিতে সম্প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখানো হয়েছিল যে একজন রাজনীতিবিদকে পক্ষ পরিবর্তন করতে ঘুষ দিচ্ছেন। মন্টেসিনোস পরবর্তীকালে সেন্ডেরো লুমিনোসোর বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় আত্মসাৎ, দুর্নীতি, মাদক পাচার, সেইসাথে মানবাধিকার লঙ্ঘন সহ অবৈধ কার্যকলাপের একটি বিশাল অংশের কেন্দ্র হিসাবে আবির্ভূত হয়। টলেডো, গার্সিয়া, হুমালা, কুকজিনস্কি, ভিজকারা এবং কাস্টিলো প্রেসিডেন্সি (২০০১-বর্তমান) ২০০০ সালের নভেম্বরে, ফুজিমোরি অফিস থেকে পদত্যাগ করেন এবং পেরুর নতুন কর্তৃপক্ষের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগের জন্য বিচার এড়িয়ে স্ব-আরোপিত নির্বাসনে জাপানে যান। তার প্রধান গোয়েন্দা প্রধান, ভ্লাদিমিরো মন্টেসিনোস , কিছুক্ষণ পরেই পেরু থেকে পালিয়ে যান। ২০০১ সালের জুন মাসে ভেনেজুয়েলার কর্তৃপক্ষ তাকে কারাকাসে গ্রেপ্তার করে এবং তাকে পেরুভিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। তিনি এখন কারারুদ্ধ এবং ফুজিমোরির প্রশাসনের সময় দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত। ভ্যালেন্টিন প্যানিয়াগুয়ার সভাপতিত্বে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুন রাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেসের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এপ্রিল ২০০১ সালে; পর্যবেক্ষকরা তাদের অবাধ ও ন্যায্য বলে মনে করেন। আলেজান্দ্রো টলেডো (যিনি ফুজিমোরির বিরুদ্ধে বিরোধী দলের নেতৃত্ব দেন) প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অ্যালান গার্সিয়াকে পরাজিত করেন। নবনির্বাচিত সরকার ২৮ জুলাই ২০০১ তারিখে কার্যভার গ্রহণ করে। ফুজিমোরি এবং গার্সিয়া উভয় সরকারকে জর্জরিত করা কর্তৃত্ববাদ এবং দুর্নীতি নির্মূল করে টলেডো প্রশাসন পেরুতে কিছু পরিমাণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় (১৯৮০-২০০০) সামরিক আদালতে ভুলভাবে বিচার করা নির্দোষদের বেসামরিক আদালতে নতুন বিচার পাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ২৮ আগস্ট ২০০৩-এ, ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন (সিভিআর), যাকে ১৯৮০-২০০০ সময়ের সহিংসতার শিকড় সম্বন্ধে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, রাষ্ট্রপতির কাছে তার আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন পেশ করে। রাষ্ট্রপতি টলেডোকে মন্ত্রিসভায় বেশ কয়েকটি পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয়েছিল, বেশিরভাগ ব্যক্তিগত কেলেঙ্কারির প্রতিক্রিয়া হিসাবে। টলেডোর শাসক জোটের কংগ্রেসে সংখ্যালঘু আসন ছিল এবং একটি অ্যাডহক নিয়ে আলোচনা করতে হয়েছিল আইন প্রণয়নের প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা গঠনের জন্য অন্যান্য দলের সাথে ভিত্তি করে। ভোটে টলেডোর জনপ্রিয়তা তার শাসনামলের শেষ বছরগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আংশিকভাবে পারিবারিক কেলেঙ্কারির কারণে এবং পেরুর সামষ্টিক অর্থনৈতিক সাফল্যের সুবিধার অংশ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষের কারণে। ২০০৩ সালের মে মাসে শিক্ষক ও কৃষি উৎপাদনকারীদের ধর্মঘট দেশব্যাপী রাস্তা অবরোধের দিকে পরিচালিত করার পর, টলেডো জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে যা কিছু নাগরিক স্বাধীনতা স্থগিত করে এবং ১২টি অঞ্চলে আদেশ কার্যকর করার জন্য সামরিক ক্ষমতা দেয়। জরুরী অবস্থা পরে শুধুমাত্র কয়েকটি এলাকায় হ্রাস করা হয়েছিল যেখানে শাইনিং পাথ কাজ করছিল। ২৮ জুলাই ২০০৬-এ, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অ্যালান গার্সিয়া আবারও পেরুর রাষ্ট্রপতি হন। ২০০৬ সালের নির্বাচনে তিনি ওলান্টা হুমালার বিরুদ্ধে রানঅফে জয়লাভ করেন। মে ২০০৮ সালে, রাষ্ট্রপতি গার্সিয়া দক্ষিণ আমেরিকান নেশনস ইউনিয়নের ইউএনএএসইউআর সাংবিধানিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ছিলেন। পেরু চুক্তিটি অনুমোদন করেছে। ৫ জুন ২০১১-এ, ওলান্টা হুমালা ২০১১ সালের নির্বাচনে আলবার্তো ফুজিমোরির কন্যা কেইকো ফুজিমোরির বিরুদ্ধে রান-অফে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন, যা তাকে জুয়ান ভেলাস্কো আলভারাডোর পর পেরুর প্রথম বামপন্থী রাষ্ট্রপতি করে তোলে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে, কিছু বড় খনির প্রকল্পের জনপ্রিয় বিরোধিতা এবং পরিবেশগত উদ্বেগের কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। পেদ্রো পাবলো কুজিনস্কি জুলাই ২০১৬-এর সাধারণ নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তার বাবা-মা ছিলেন নাৎসিবাদ থেকে পালিয়ে আসা ইউরোপীয় উদ্বাস্তু। কুজিনস্কি পেরুর আদিবাসী জনসংখ্যাকে একীভূত করতে এবং স্বীকার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলেন, এবং রাষ্ট্র-চালিত টিভি কেচুয়া এবং আয়মারায় দৈনিক সংবাদ সম্প্রচার শুরু করেছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেইকো ফুজিমোরির বিপরীতে দেয়া প্রচারাভিযানের প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে গিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফুজিমোরিকে ক্ষমা করার জন্য কুজিনস্কি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে, রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করতে ব্যর্থ হওয়ার পরে, কুজিনস্কি আবারও ওডেব্রেখট কর্পোরেশনের সাথে ভোট কেনার দুর্নীতি এবং ঘুষের ভিত্তিতে অভিশংসনের হুমকির সম্মুখীন হন। ২৩ মার্চ ২০১৮-এ, কুজিনস্কিকে প্রেসিডেন্সি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল, এবং তারপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। তার উত্তরসূরি ছিলেন তার প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন ভিজকাররা। ভিজকাররা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে রাজনৈতিক সঙ্কট এবং অস্থিতিশীলতার মধ্যে পুনরায় নির্বাচন করার জন্য তার কোন পরিকল্পনা নেই। যাইহোক, কংগ্রেস ২০২০ সালের নভেম্বরে রাষ্ট্রপতি মার্টিন ভিজকারার অভিশংসন করেছিল। তার উত্তরসূরি, অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতি ম্যানুয়েল মেরিনো, মাত্র পাঁচ দিন অফিসে থাকার পর পদত্যাগ করেন। মেরিনোর স্থলাভিষিক্ত হন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিসকো সাগাস্টি, এক সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয় রাষ্ট্রপ্রধান। ২৮ জুলাই ২০২১-এ একটি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রান-অফ নির্বাচনে সংকীর্ণ ব্যবধানে জয়ের পর বামপন্থী পেদ্রো কাস্তিলো পেরুর নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। আরও পড়ুন Dobyns, Henry F. and Paul L. Doughty, Peru: A cultural history. New York : Oxford University Press, 1976. Higgins, James. A history of Peruvian literature (Francis Cairns, 1987) Werlich, David P. Peru: a short history (Southern Illinois Univ Pr, 1978) বিজয় Cieza de León, Pedro de. The Discovery and Conquest of Peru: Chronicles of the New World Encounter. Ed. and trans., Alexandra Parma Cook and David Noble Cook. Durham: Duke University Press 1998. Hemming, John. The Conquest of the Incas. New York: Harcourt Brace Janovich, 1970. Lockhart, James. The Men of Cajamarca; a social and biographical study of the first conquerors of Peru, Austin, Published for the Institute of Latin American Studies by the University of Texas Press [1972] Yupanqui, Titu Cusi. An Inca Account of the Conquest of Peru. Trans. Ralph Bauer. Boulder: University Press of Colorado 2005. ঔপনিবেশিক আমল Andrien, Kenneth J. Crisis and Decline: The Viceroyalty of Peru in the Seventeenth Century. Albuquerque: University of New Mexico Press 1985. Andrien, Kenneth J. Andean Worlds: Indigenous History, Culture, and Consciousness under Spanish Rule, 1532–1825. Albuquerque: University of New Mexico Press 2001. Bakewell, Peter J. Silver and Entrepreneurship in Seventeenth-Century Potosí: The Life and times of Antonio López de Quiroga. Albuquerque: University of New Mexico Press 1988. Baker, Geoffrey. Imposing Harmony: Music and Society in Colonial Cuzco. Durham: Duke University Press 2008. Bowser, Frederick P. The African Slave in Colonial Peru, 1524–1650. Stanford: Stanford University Press 1973. Bradley, Peter T. Society, Economy, and Defence in Seventeenth-Century Peru: The Administration of the Count of Alba de Liste (1655–61). Liverpool: Institute of Latin American Studies, University of Liverpool 1992. Bradley, Peter T. The Lure of Peru: Maritime Intrusion into the South Sea, 1598–1701. New York: St Martin's Press 1989. Burns, Kathryn. Colonial Habits: Convents and the Spiritual Economy of Cuzco, Peru (1999), on the crucial role that convents played in the Andean economy as lenders and landlords; nuns exercised economic & spiritual power. Cahill, David. From Rebellion to Independence in the Andes: Soundings from Southern Peru, 1750–1830. Amsterdam: Aksant 2002. Chambers, Sarah C. From Subjects to Citizens: Honor, Gender, and Politics in Arequipa, Peru, 1780–1854. University Park: Penn State Press 1999. Charnay, Paul. Indian Society in the Valley of Lima, Peru, 1532–1824. Blue Ridge Summit: University Press of America 2001. Dean, Carolyn. Inka Bodies and the Body of Christ: Corpus Christi in Colonial Cuzco, Peru. Durham: Duke University Press 1999. Fisher, John. Bourbon Peru, 1750–1824. Liverpool: Liverpool University Press 2003. Fisher, John R., Allan J. Kuethe, and Anthony McFarlane, eds. Reform and Insurrection in Bourbon New Granada and Peru. Baton Rouge: Louisiana State University Press 2003. Garrett, David T. Shadows of Empire: The Indian Nobility of Cusco, 1750–1825. New York: Cambridge University Press 2005. Griffiths, Nicholas. The Cross and the Serpent: Religious Repression and Resurgence in Colonial Peru. Norman: University of Oklahoma Press 1996. Hyland, Sabine. The Jesuit and the Incas: The Extraordinary Life of Padre Blas Valera, S.J. Ann Arbor: University of Michigan Press 2003. Jacobsen, Nils. Mirages of Transition: The Peruvian Altiplano, 1780–1930 (1996) Lamana, Gonzalo. Domination Without Dominance: Inca-Spanish Relations in Early Colonial Peru. Durham: Duke University Press 2008. Lockhart, James. Spanish Peru, 1532–1560: A Social History (1968), a detailed portrait of the social and economic lives of the first generation of Spanish settlers in Peru & the development of Spanish colonial society in the generation after conquest MacCormack, Sabine. Religion in the Andes: Vision and Imagination in Colonial Peru. Princeton: Princeton University Press 1991. Mangan, Jane E. Trading Roles: Gender, Ethnicity, and the Urban Economy in Colonial Potosí. Durham: Duke University Press 2005. Marks, Patricia. Deconstructing Legitimacy: Viceroys, Merchants, and the Military in Late Colonial Peru. University Park: Penn State Press 2007. Means, Philip Ainsworth. Fall of the Inca Empire and the Spanish Rule in Peru: 1530–1780 (1933) Miller, Robert Ryal, ed. Chronicle of Colonial Lima: The Diary of Joseph and Francisco Mugaburu, 1640–1697. Norman: University of Oklahoma Press 1975. Mills, Kenneth. Idolatry and Its Enemies: Colonial Andean Religion and Extirpation, 1640–1750. Princeton: Princeton University Press 1997. Osorio, Alejandra B. Inventing Lima: Baroque Modernity in Peru's South Sea Metropolis. New York: Palgrave 2008. Poma de Ayala, Felipe Guaman, The First New Chronicle and Good Government: On the History of the World and the Incas up to 1615. Ed. and trans. Roland Hamilton. Austin: University of Texas Press 2009. Premo, Bianca. Children of the Father King: Youth, Authority, and Legal Minority in Colonial Lima. Chapel Hill: University of North Carolina Press 2005. Ramírez, Susan Elizabeth. The World Turned Upside Down: Cross-Cultural Contact and Conflict in Sixteenth-Century Peru. Stanford: Stanford University Press 1996. Serulnikov, Sergio. Subverting Colonial Authority: Challenges to Spanish Rule in Eighteenth-Century Southern Andes. Durham: Duke University Press 2003. Spalding, Karen. Huarochirí: An Andean Society Under Inca and Spanish Rule. Stanford: Stanford University Press 1984. Stavig, Ward. The World of Tupac Amaru: Conflict, Community, and Identity in Colonial Peru (1999), an ethnohistory that examines the lives of Andean Indians, including diet, marriage customs, labor classifications, taxation, and the administration of justice, in the eighteenth century. Tandeter, Enrique. Coercion and Market: Silver Mining in Colonial Potosí, 1692–1826. Albuquerque: University of New Mexico Press 1993. TePaske, John J., ed. and trans. Discourse and Political Reflections on the Kingdom of Peru by Jorge Juan and Antonio Ulloa. Norman: University of Oklahoma Press 1978. Thomson, Sinclair. We Alone Will Rule: Native Andean Politics in the Age of Insurgency. Madison: University of Wisconsin Press 2003. Van Deusen, Nancy E. Between the Sacred and the Worldly: the Institutional and Cultural Practice of Recogimiento in Colonial Lima. Stanford: Stanford University Press 2001. Varón Gabai, Rafael. Francisco Pizarro and His Brothers: The Illusion of Power in Sixteenth-Century Peru. Trans. by Javier Flores Espinosa. Norman: University of Oklahoma Press 1997. Walker, Charles F. Shaky Colonialism: The 1746 Earthquake-Tsunami in Lima, Peru, and Its Long AftermathStay (2008) Wightman, Ann M. Indigenous Migration and Social Change: The Forasteros of Cuzco, 1570–1720. Durham: Duke University Press 1990. স্বাধীনতা পরবর্তী যুগ Blanchard, Peter. Slavery and Abolition in Early Republican Peru. Wilmington: Scholarly Resources 1992. Bonilla, Heraclio. "The War of the Pacific and the national and colonial problem in Peru". Past & Present 81#.1 (1978): 92–118. Cueto, Marcos. The return of epidemics: health and society in Peru during the twentieth century (Ashgate, 2001) Hünefeldt, Christine. Paying the Price of Freedom: Family and Labor Among Lima's Slaves, 1800–1854. trans. by Alexandra Minna Stern. Berkeley and Los Angeles: University of California Press 1994. Kenney, Charles Dennison. Fujimori's coup and the breakdown of democracy in Latin America (Univ of Notre Dame Press, 2004) Larson, Brooke. Trials of Nation Making: Liberalism, Race, and Ethnicity in the Andes, 1810–1910. New York: Cambridge University Press 2004. Méndez G., Cecilia. The plebeian republic : the Huanta rebellion and the making of the Peruvian state, 1820–1850. Durham: Duke University Press, 2005. Miller, Rory. Region and Class in Modern Peruvian History (1987) Pike, Frederick B. The Modern History of Peru (1967) Starn, Orin. "Maoism in the Andes: The Communist Party of Peru-Shining Path and the refusal of history". Journal of Latin American Studies 27#2 (1995): 399–421. Walker, Charles F. Smoldering Ashes: Cuzco and the Creation of Republican Peru, 1780–1840. Durham: Duke University Press 1999. অর্থনৈতিক ও শ্রম ইতিহাস De Secada, C. Alexander G. "Arms, guano, and shipping: the WR Grace interests in Peru, 1865–1885". Business History Review 59#4 (1985): 597–621. Drake, Paul. "International Crises and Popular Movements in Latin America: Chile and Peru from the Great Depression to the Cold War", in Latin America in the 1940s, David Rock, ed. Berkeley and Los Angeles: University of California Press 1994, 109–140. Gootenberg, Paul, Between silver and guano: commercial policy and the state in postindependence Peru. Princeton, N.J.: Princeton University Press, 1989. Gootenberg, Paul, Andean cocaine: the making of a global drug. Chapel Hill: University of North Carolina Press, 2008. Greenhill, Robert G., and Rory M. Miller. "The Peruvian Government and the nitrate trade, 1873–1879". Journal of Latin American Studies 5#1 (1973): 107–131. Keith, Robert G. Conquest and Agrarian Change: The Emergence of the Hacienda System on the Peruvian Coast (1979) Peloso, Vincent C. Peasants on Plantations: Subaltern Strategies of Labor and Resistance in the Pisco Valley, Peru (Duke University Press, 1999) Purser, Michael, and W. F. C. Purser. Metal-mining in Peru, past and present (1971) Quiroz, Alfonso W. Domestic and foreign finance in modern Peru, 1850–1950: financing visions of development (University of Pittsburgh Press, 1993) Stewart, Watt. Henry Meiggs: Yankee Pizarro (Duke University Press, 1946), on 1870s প্রাথমিক উৎস Higgins, James (editor). The Emancipation of Peru: British Eyewitness Accounts (2014). ইতিহাস Bonilla, Heraclio. "The New Profile of Peruvian History", Latin American Research Review Vol. 16, No. 3 (1981), pp. 210–224 in JSTOR Fryer, Darcy R. "A Taste of Spanish America: Reading Suggestions for Teachers of Colonial North America", Common-Place 15#2 (2015) * Heilman, Jaymie Patricia. "From the Inca to the Bourbons: New writings on pre-colonial and colonial Peru", Journal of Colonialism and Colonial History Volume 12, Number 3, Winter 2011 Restall, Matthew. Seven Myths of the Spanish Conquest (Oxford University Press, 2003) Thurner, Mark. History's Peru: The Poetics of Colonial and Postcolonial Historiography (University Press of Florida; 2010) 302 pages; a study of Peruvian historiography from Inca Garcilaso de la Vega (1539–1616) to Jorge Basadre (1903–80). full text online তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Machu Picchu information, photos, maps and more U.S. State Department Background Note: Peru WorldStatesmen State of Fear is a documentary that tells the story of Peru's war on terror based on the findings of the Peruvian Truth and Reconciliation Commission. "An Account of a Voyage up the River de la Plata, and Thence over Land to Peru: With Observations on the Inhabitants, as Well as Indians and Spaniards, the Cities, Commerce, Fertility, and Riches of That Part of America" from 1698 বিষয়শ্রেণী:পেরুর ইতিহাস
সুরিনামের ইতিহাস
https://bn.wikipedia.org/wiki/সুরিনামের_ইতিহাস
thumb|মানচিত্রে সুরিনাম ইউরোপীয়দের আগমনের আগে বর্তমান সুরিনাম এলাকাটিতে আরাওয়াক, কারিব ও ওয়ার্‌রাউ নামের আদিবাসী আমেরিকান গোত্রগুলি বাস করত। বেশির ভাগ আদিবাসী আমেরিকান ছোট ছোট স্বাধীন গ্রামে বাস করত, যেখানে আত্মীয়তার বন্ধনে গঠিত হত সম্প্রদায়। এরা শিকার করে ও ক্ষেতখামার করে জীবন চালাত। মূলত কন্দ জাতীয় ফসলের আবাদ হত, যেমন কাসাভা। উপকূলের লোকেরা আরাওয়াক ভাষায় এবং অভ্যন্তরভাগের লোকেরা কারিবীয় ভাষায় কথা বলত। ইউরোপীয়দের বসতি স্থাপন ১৬শ শতকের শেষভাগে এসে ওলন্দাজ, ফরাসি ও ইংরেজ বণিকেরা সুরিনামের উপকূলে বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করে। ১৭শ শতকের প্রথমার্ধে ইংরেজ বণিকেরা দেশটিতে বসতি স্থাপন শুরু করে। ১৬৫০ সালে সুরিনাম নদীর তীরে একটি ব্রিটিশ দল প্রথম স্থায়ী ইউরোপীয় বসতি স্থাপন করে। পরবর্তীতে ওলন্দাজ পশ্চিম ভারতীয় কোম্পানির একটি নৌবহর এই বসতিটি দখল করে। ১৬৬৭ সালে ব্রেডার চুক্তির মাধ্যমে ইংরেজরা উত্তর আমেরিকায় নিউ অ্যামস্টার্ডাম (বর্তমান নিউ ইয়র্ক শহর)-এর বিনিময়ে এই উপনিবেশটির একাংশ ওলন্দাজদের দিয়ে দেয়। ফলে সুরিনাম সরকারীভাবে ওলন্দাজ নিয়ন্ত্রণে আসে। তখন থেকে ওলন্দাজরা সুরিনামকে একটি উপনিবেশ হিসেবে শাসন করতে থাকে। তবে ১৭৯৫-১৮০২ এবং ১৮০৪-১৮১৬ যুদ্ধচলাকালে ব্রিটিশরা সাময়িকভাবে সুরিনামের দখল নিয়েছিল। ঔপনিবেশিক প্ল্যান্টেশন ব্যবস্থা সুরিনামে ওলন্দাজ উপনিবেশের অর্থনীতির প্রাথমিক ভিত্তি ছিল প্ল্যান্টেশন কৃষি। ওলন্দাজেরা সুরিনামে অনেক প্ল্যান্টেশন স্থাপন করে এবং আফ্রিকা থেকে বিরাট সংখ্যক ক্রীতদাসকে এগুলিতে কাজ করাতে নিয়ে আসে। প্ল্যান্টেশনে চাষ করা শস্যের মধ্যে প্রধান ছিল আখ। তবে কিছু কিছু প্ল্যান্টেশনে কফি, কাকাও, নীল, তুলা, খাদ্যশস্য ও কাঠ উৎপাদনী বৃক্ষও উৎপাদন করা হত। ১৭৮৫ সাল পর্যন্ত প্ল্যান্টেশন অর্থনীতি প্রসার লাভ করে। সেসময় এখানে ৫৯১টি প্ল্যান্টেশন ছিল, যাদের মধ্যে ৪৫২টি চিনি ও অন্যান্য বাণিজ্যিক শস্য উৎপাদন করত এবং এবং ১৩৯টি খাদ্যশস্য ও কাঠ উৎপাদন করত। ১৭৮৫ সালের পর কৃষি উৎপাদন হ্রাস পেতে থাকে। প্ল্যান্টেশনের মালিকেরা অন্যত্র আরও বেশি আয় করা শুরু করে, এবং দাসদের মুক্তিলাভের ফলে প্ল্যান্টেশনের খরচ বেড়ে যায়। ১৮৬০ সাল নাগাদ মাত্র ৮৭টি চিনির খামার অবশিষ্ট ছিল এবং ১৯৪০ সালে এসে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪। চিনি উৎপাদনকারী অন্যান্য দাসভিত্তিক উপনিবেশগুলির মত সুরিনামেও সমাজব্যবস্থা তিনটি স্তরে বিভক্ত ছিল। সবচেয়ে উপরের স্তরে ছিল একটি ক্ষুদ্র অভিজাত ইউরোপীয় শ্রেণী। এরা ছিল মূলত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, প্ল্যান্টেশনের মালিকেরা, যারা তাদের প্ল্যান্টেশনে বসবাস করত এবং প্ল্যান্টেশনের প্রশাসকেরা, যারা মালিকের অনুপস্থিতিতে সেগুলির দেখাশোনা করত। ইউরোপীয়দের সিংহভাগই ছিল ওলন্দাজ, তবে কেউ কেউ জার্মান, ফরাসি, বা ইংরেজও ছিলেন। অভিজাত শ্রেণীর ঠিক নিচের স্তরটিতে ছিল মুক্ত নাগরিকদের নিয়ে গঠিত মধ্যস্তর। জাতিগতভাবে বিচিত্র এই দলটির সদস্য ছিল সুরিনামে জন্ম নেওয়া ইউরোপীয় বংশদ্ভূত লোক, দাসী মহিলদের গর্ভে ইউরোপীয়দের ঔরসজাত সন্তানাদি, এবং যেসমস্ত দাসকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল বা যারা মুক্তি কিনে নিয়েছিল। সমাজের একেবারে নিম্নস্তরে ছিল দাসেরা, এবং এরাই ছিল সমাজের বৃহদংশ। সুরিনামের দাসপ্রথা ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির। দাসদেরকে সম্পত্তির মত ব্যবহার করা হত, এবং তাদের কোন আইনি অধিকার ছিল না। ঔপনিবেশিক আইন অনুসারে দাসদের মালিকদের ছিল সর্বময় একচ্ছত্র ক্ষমতা। কোন কোন দাস নদীপথে পালিয়ে দেশের অভ্যন্তরভাগের অতিবৃষ্টি অরণ্যে স্বাধীন গ্রাম স্থাপন করে বিছিন্নভাবে বসবাস করত। উপনিবেশের সেনাদল দিয়ে এদের ধরে আনার অনেক চেষ্টা করা হলেও তারা তাদের স্বাধীনতা বজায় রাখে। এদের বংশধরেরা আজও সেসব এলাকায় বসবাস করে। ১৯শ শতকের শুরুর দিকে ইউরোপীয় মনোভাব দাসপ্রথা অবসানের প্রতি অনুকূল হয়। ১৯শ শতকের মধ্যভাগে ইংরেজ ও ফরাসিরা আইন করে তাদের দাসদের মুক্তির ব্যবস্থা করে। তখন ওলন্দাজেরাও তাদের উপনিবেশগুলিতে দাসদের মুক্তির ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে থাকে। সুরিনামের প্ল্যান্টেশন মালিকেরা ভয় করছিল যে মুক্তিপ্রাপ্ত দাসেরা আর প্ল্যান্টেশনে কাজ করতে চাইবে না। তাই আইন করে মুক্তির পরেও ১০ বছর ন্যূনতম ভাড়ায় সরকারী নির্দেশনায় দাসদের প্ল্যান্টেশনে কাজ করা বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৮৬৩ সালে পূর্ণ মুক্তির পর প্রাক্তন দাসেরা ভাল বেতনের চাকরি ও উন্নত শিক্ষার আশায় পারামারিবো শহরে ভিড় জমাতে থাকে। এই স্থানান্তরের ফলে সুরিনামের প্ল্যান্টেশনগুলিতে কর্মীর যে অভাব দেখা দেয়, তা পূরণ করতে এশিয়া থেকে শ্রমিক আমদানি করে নিয়ে আসা হয়। ১৮৫৩ ও ১৮৭৩ সালের মধ্যে ২৫০২ জন চীনা শ্রমিক এবং ১৮৭৩ থেকে ১৯২২ সালের ভেতর ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আরও প্রায় ৩৪ হাজার, এবং ১৮৯১ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩২,৯৬৫ জন শ্রমিক নিয়ে আসা হয়। এই শ্রমিকেরা নির্দিষ্ট সংখ্যক বছরের জন্য প্ল্যান্টেশনে কাজ করার প্রতিশ্রুতি সংবলিত চুক্তি স্বাক্ষর করে এখানে কাজ করতে আসে। এদের অধিকাংশই কৃষিকাজে নিয়োজিত ছিল। বর্তমানে এই এশীয় শ্রমিকদের বংশোদ্ভূতরা সুরিনামের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি অংশ গঠন করেছে। ঔপনিবেশিক সরকার thumb|left|400px|সুরিনাম নদীর তীরে মেরুন গ্রাম, ১৯৫৫ ঔপনিবেশিক পর্বের অধিকাংশ সময় জুড়ে একজন ওলন্দাজ-নিযুক্ত গভর্নর সুরিনাম শাসন করতেন এবং তাকে এই কাজে দুইটি কোর্ট সাহায্য করত। এই কোর্টগুলির উপনিবেশের ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে থেকে ওলন্দাজরা কর্মচারী বেছে নিত। ১৮৬৬ সালে কোর্টগুলি বিলুপ্ত করে একটি আইনসভা গঠন করা হয়, যদিও গভর্নরের আইনসভার নির্দেশের বিরুদ্ধে ভেটো প্রদানের ক্ষমতা ছিল। সম্পত্তি ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে কঠোর নিয়মের কারণে প্ল্যান্টেশনের মালিকেরাই সুরিনামের আইনসভায় প্রথমদিকে আধিপত্য বিস্তার করতেন। ওলন্দাজ সরকার যোগ্যতার নিয়ম শিথিল করার সাথে সাথে উচ্চ- ও নিম্ন-শ্রেণীর ক্রেওলেরা ১৯০০ সালের পর থেকে আইনসভায় আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। তবে ১৯৪৯ সাল পর্যন্তও যোগ্য ভোটারের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২%-এর বেশি ছিল না। ১৯৪৯ সালে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ককে ভোটপ্রদানের ক্ষমতা দেয়া হয়। ১৯২২ সালে সুরিনাম নেদারল্যান্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। ১৯৫৪ সালে একটি নতুন সংবিধান করে এটিকে ওলন্দাজ রাজ্যের অন্যান্য সদস্যদের সমমানের একটি সদস্যের মর্যাদা দেয়া হয়। অন্য সদস্যগুলি ছিল নেদারল্যান্ড্‌স নিজে এবং ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থিত নেদারল্যান্ড্‌স অ্যান্টিল দ্বীপপুঞ্জ। এই নতুন সংবিধান মোতাবেক ওলন্দাজ সরকার সুরিনামের প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্কের দেখাশোনা করত এবং সুরিনামের গভর্নর নিয়োগ করত, আর সুরিনামবাসীরা একটি আইনসভা নির্বাচন করত, যা সুরিনামের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারগুলি দেখাশোনা করত। স্বাধীনতা ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে নেদারল্যান্ড্‌স থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা সমর্থনকারী একটি কোয়ালিশন জয়লাভ করে এবং প্রধানমন্ত্রী হেন্‌ক আরনের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। এই সরকার ওলন্দাজ সরকারের সাথে স্বাধীনতার বিষয়ে কথাবার্তা বলা শুরু করে। ১৯৭৫ সালের ২৫শে নভেম্বর ওলন্দাজ সরকার সুরিনামকে স্বাধীনতা প্রদান করে। তবে প্রায় ৪০,০০০ লোক ওলন্দাজ নাগরিকত্বেই থেকে যান এবং সুরিনাম থেকে নেদারল্যান্ড্‌সে ফেরত চলে যান। ১৯৭৭ সালে নতুন স্বাধীন সুরিনাম প্রজাতন্ত্রের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে হেন্‌ক আরন তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখেন। সামরিক শাসন ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে আরন ক্ষমতাচ্যুত হন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেজিরে বুতের্সে-র নেতৃত্বে একদল সেনা অফিসার জাতীয় সেনা কাউন্সিল গঠন করেন। ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই কাউন্সিল আইনসভা বিলোপ করে এবং সংবিধান স্থগিত করে। কাউন্সিল রাষ্ট্রপতি হেঙ্ক চিন সেনকেও ক্ষমতাচ্যুত করে। সেন ও আরও হাজার হাজার লোক নেদারল্যান্ড্‌সে পালিয়ে যান। বুতের্সে সুরিনামের জাতীয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন এবং সেনাপ্রধান হিসেবে দেশ চালাতে থাকেন। ১৯৮০ ও ১৯৮১ সালে পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা এবং ১৯৮২ সালে একটি গণতান্ত্রিক বিরোধী জোট গঠনের প্রচেষ্টাকে নিষ্ঠুর হাতে দমন করা হয়। ১৯৮৫ সালে সেনাবাহিনী ১৫ জন নাগরিকের উপর অত্যাচার চালায় ও তাদের হত্যা করে। এ ঘটনার পর নেদারল্যান্ড্‌স সুরিনামকে সাহায্য দেয়া বন্ধ করে দেয়। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সেনাবাহিনী একটি নতুন আইনসভা গঠনে সায় দেয়। রাজনৈতিক দলগুলির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেয়া হয় এবং আরন আবার জাতীয় কাউন্সিলে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে দেশটিতে গেরিলা যুদ্ধ আরম্ভ হয় এবং অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। সুরিনামীয় মুক্তিবাহিনী নামের এই বিদ্রোহীরা সাংবিধানিক অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালায়। কয়েক মাসের মধ্যে তারা প্রধান প্রধান বক্সাইট খনি ও শোধনকারী শিল্পগুলি বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়। এই সময় একটি নতুন সংবিধান রচনা করা হয় এবং ১৯৮৭ সালের গণভোটে ৯৩% ভোট পেয়ে এটি পাশ হয়। বেসামরিক সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ১৯৮৭ সালের সংবিধান নাগরিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে। নভেম্বরের নির্বাচনে বুতের্সের দল ৫১টি আসনের মধ্যে মাত্র ২টিতে জয়লাভ করে, অন্যদিকে ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামের বহুজাতিক দল ৪০টি আসন জেতে। ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় আইনসভা প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী রামসেওয়াক শংকরকে রাষ্ট্রপতি এবং আরনকে উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে। ১৯৮৮ সালে ওলন্দাজেরা আবার সুরিনামকে সাহায্য পাঠাতে শুরু করে এবং পরবর্তী সাত থেকে আট বছর ধরে ৭২১ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। বক্সাইট খনিগুলিতে আবার কাজ শুরু হয়। সাংবিধানিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও বুতের্সে সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখেন। তিনি ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে শংকরের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ১৯৯১ সালে নতুন করে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং নিউ ফ্রন্ট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামের একটি কোয়ালিশন সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও নিউ ফ্রন্ট কোয়ালিশনের নেতা রোনাল্ড ভেনেতিয়ান রাষ্ট্রপতি পদ লাভ করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচিনে ভেনেতিয়ানের কোয়ালিশন স্বল্প ব্যবধানে পরাজিত হয়। ন্যাশনাল ডেমোক্র‌্যাটিক পার্টির জুল উইডেনবশ নতুন রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, সরকারী চাকুরেদের বেতন প্রদানে ব্যর্থতা, এবং ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক ঋণের মত অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং দলে উইডেনবশের সরকারের উপর অনাস্থার সৃষ্টি হয়। ১৯৯৯ সালের মে মাসে দেশব্যাপী এক ধর্মঘট হয় ও মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। উইডেনবশ এক বছর আগেই ২০০০ সালের মে-তে নির্বাচন দেন। এই নির্বাচনে ভেনেতিয়ানের নিউ ফ্রন্ট কোয়ালিশন বিজয়ী হয় এবং ২০০০ সালের আগস্টে ভেনেতিয়ান আবার রাষ্ট্রপতি পদলাভ করেন। জাতীয় সংসদে ভেনেতিয়ানের মূল বিরোধী দল ছিল মিলেনিয়াম কম্বিনেশন, যার নেতৃত্বে ছিলেন বুতের্সে। ১৯৯৭ সালে ওলন্দাজ সরকার বুতের্সের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক গ্রেফতার ওয়ারেন্ট জারি করে। তার বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসে বিপুল পরিমাণে কোকেন পাচারের অভিযোগ আনা হয়। সুরিনাম বুতের্সেকে নেদারল্যান্ডসের হাতে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে। ২০০০ সালের জুনে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের এক আদালতে বুতের্সেকে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার ও শাস্তি প্রদান করা হয়। ২০০৪ সালে ওলন্দাজ ও সুরিনাম সরকার মাদক চোরাচালানি বন্ধের ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতার ব্যাপারে একমত হয়। ২০০৫ সালে সুরিনামের সর্বশেষ আইনসভা নির্বাচনে ভেনেতিয়ানের নিউ ফ্রন্ট কোয়ালিশন দশটি আসন হারায় এবং এর ফলে সংসদে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ক্ষুণ্ণ হয়। জুলাই মাসে ৫১-সদস্যবিশিষ্ট আইনসভা দুই দফা ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্ণয়ের চেষ্টা করে, কিন্তু ভেনেতিয়ান কিংবা বিরোধী প্রার্থী রাবিন পারমেসার কেউই দরকারি দুই-তৃতীয়াংশ ভোট অর্জনে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে ৮৯১ সদস্যবিশিষ্ট প্রাদেশিক কাউন্সিলের সভায় এক বিশেষ ভোটে ভেনেতিয়ান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:সুরিনামের ইতিহাস বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস
দেশ (দ্ব্যর্থতা নিরসন)
https://bn.wikipedia.org/wiki/দেশ_(দ্ব্যর্থতা_নিরসন)
থাম্ব|বিশ্বের মানচিত্র দেশ দ্বারা বোঝাতে যেতে পারে: দেশ হল একটি ভৌগোলিক অঞ্চল। রাষ্ট্র, এক রাজনৈতিক সংগঠনকে বোঝায় যা কোন একটি ভৌগোলিক এলাকা ও তৎসংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার সার্বভৌম ক্ষমতা রাখে। দেশ (পত্রিকা) - ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকার, সাময়িকী।
সার্বভৌম রাষ্ট্রের তালিকা
https://bn.wikipedia.org/wiki/সার্বভৌম_রাষ্ট্রের_তালিকা
alt=A long row of flags|thumb|upright=1.3| জাতিসংঘ এর সদস্য রাষ্ট্র এটি একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের তালিকা যা সারাবিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের রাজনৈতিক অবস্থান ও সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতির ওপর তথ্যসহ তাদের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরে| তালিকাটিতে ২০৬টি দেশ লিপিভুক্ত আছে| দেশগুলো বিভক্ত করা হয়েছে দুটি পদ্ধতির ব্যবহার করে: জাতিসংঘ ব্যবস্থায় সদস্যপদ কলামটি দেশগুলোকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করে: জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশ ও ২টি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র, এবং ১১টি অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহ| সার্বভৌমত্বে দ্বন্দ্ব কলামটি দেশগুলোকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করে: ১৬টি রাষ্ট্রসমূহ যাদের সার্বভৌমত্ব বিষয়ে দ্বন্দ্ব আছে এবং ১৯০টি অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহ| এমন একটি তালিকা তৈরি করা একটি দুরূহ ও বিতর্কিত প্রক্রিয়া যেহেতু এমন কোনো সংজ্ঞা নেই যা জাতিগোষ্ঠীর ওপর রাষ্ট্রত্বের মানদণ্ড বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করে| এই তালিকাটির বিষয়বস্তু নির্ধারণে ব্যবহৃত মানদণ্ড সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্যের জন্যে অনুগ্রহ করে নিচের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মানদণ্ড অনুচ্ছেদটি দেখুন| সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের তালিকা পতাকা দেশ আইএসও কোড 22x20px| অস্ট্রিয়া AT 22x20px| অস্ট্রেলিয়া AU 22x20px| আইসল্যান্ড IS 22x20px| আজারবাইজান AZ 22x20px| আফগানিস্তান AF 22x20px| আয়ারল্যান্ড IE 22x20px| আর্জেন্টিনা AR 22x20px| আর্মেনিয়া AM 22x20px| আলজেরিয়া DZ 22x20px| আলবেনিয়া AL 22x20px| ইউক্রেন UA 22x20px| ইতালি IT 22x20px| ইথিওপিয়া ET 22x20px| ইন্দোনেশিয়া ID 22x20px| ইয়েমেন YE 22x20px| ইরাক IQ 22x20px| ইরান IR 22x20px| ইরিত্রিয়া ER 22x20px| ইসরায়েল IL 22x20px| উগান্ডা UG 22x20px| উজবেকিস্তান UZ 22x20px| উত্তর কোরিয়া KP 22x20px| উরুগুয়ে UY 22x20px| এঙ্গোলা AO 22x20px| এন্টিগুয়া এবং বার্বুডা AG22x20px| এন্ডোরা AD22x20px| এল সালভাদর SV22x20px|এস্তোনিয়া EE 22x20px| ওমান OM 22x20px| কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র CD 22x20px| কঙ্গো প্রজাতন্ত্র CG 22x20px| কম্বোডিয়া KH 22x20px| ক্যামেরুন CM 22x20px| কুয়েত KW 22x20px| ক্রোয়েশিয়া HR 22x20px| কলম্বিয়া CO 22x20px| কাজাখস্তান KZ 22x20px| কাতার QA 22x20px| কানাডা CA22x20px| কিউবা CU 22x20px| কিরগিজস্তান KG 22x20px| কিরিবাস KI 22x20px| কেনিয়া KE 22x20px| কেপ ভের্দ CV 22x20px| কোত দিভোয়ার CI 22x20px| কোমোরোস KM 22x20px| কোস্টা রিকা CR 22x20px| গ্যাবন GA 22x20px| গুয়াতেমালা GT 22x20px| গ্রীস GR 22x20px| গ্রেনাডা GD 22x20px| গাম্বিয়া GM 22x20px| গায়ানা GY 22x20px|| গিনি GN 22x20px| গিনি-বিসাউ GW 22x20px| ঘানা GH 22x20px| চাদ TD 22x20px| চিলি CL 22x20px| চীন CH 22x20px| চেক প্রজাতন্ত্র CZ 22x20px| জামাইকা JM 22x20px| জর্জিয়া GE 22x20px| জর্দান JO 22x20px| জাপান JP 22x20px| জাম্বিয়া ZM 22x20px| জার্মানি DE 22x20px| জিবুতি DJ 22x20px|জিম্বাবুয়ে ZW22x20px|টোঙ্গা TO 22x20px| টুভালু TV 22x20px| টোগো RG 22x20px| ডেনমার্ক DK 22x20px| ডোমিনিকা DM 22x20px| ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র DO 22x20px| তুর্কমেনিস্তান TM 22x20px| তুরস্ক TR 22x20px| ত্রিনিদাদ ও টোবাগো TT 22x20px| তাইওয়ান CN 22x20px| তাজিকিস্তান TJ 22x20px| তানজানিয়া TZ 22x20px| তিউনিসিয়া TN 22x20px| থাইল্যান্ড TH 22x20px| দক্ষিণ আফ্রিকা ZA 22x20px| দক্ষিণ কোরিয়া KR 22x20px| দক্ষিণ সুদান SS 22x20px| নরওয়ে NO 22x20px| নাইজার NE 22x20px| নাইজেরিয়া NG 22x20px| নাউরু NR 22x20px| নামিবিয়া NA 22x20px|নিউজিল্যান্ড NZ 22x20px|নিকারাগুয়া NI 22x20px|নেদারল্যান্ড NL 22x20px|নেপাল NP 22x20px|প্যারাগুয়ে PY 22x20px|পর্তুগাল PT 22x20px|পূর্ব তিমুর TL 22x20px|পাকিস্তান PK22x20px|পানামা PA22x20px|পাপুয়া নিউগিনি PG 22x20px|পালাউ PW 22x20px|পেরু PE 22x20px|পোল্যান্ড PL 22x20px|ফ্রান্স FR 22x20px|ফিজি FJ 22x20px|ফিনল্যান্ড FI 22x20px|ফিলিপাইন PH 22x20px|বুর্কিনা ফাসো BF 22x20px|বুরুন্ডি BI 22x20px|ব্রুনাই BN 22x20px|ব্রাজিল BR 22x20px|বুলগেরিয়া BG 22x20px|বলিভিয়া BO 22x20px|বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা BA 22x20px|বাংলাদেশ BD 22x20px|বার্বাডোস BB 22x20px|বাহরাইন BH 22x20px|বাহামা BS 22x20px|বিষুবীয় গিনি GQ 22x20px|বেনিন BJ 22x20px|বেলজিয়াম BE 22x20px|বেলারুস BY 22x20px|বেলিজ BZ 22x20px||বতসোয়ানা BW 22x20px|ভুটান BT 22x20pxভ্যাটিকান সিটি VA22x20px|ভানুয়াতু VU 22x20px|ভারত IN 22x20px|ভিয়েতনাম VN 22x20px|ভেনেজুয়েলা VE 22x20px|মঙ্গোলিয়া MN 22x20px|মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র CF 22x20px|মন্টিনিগ্রো ME 22x20px|মরক্কো MA 22x20px|মরিশাস MU 22x20px|মাইক্রোনেশিয়া যুক্তরাজ্য FM 22x20px|মাদাগাস্কার MG 22x20px|মায়ানমার MM 22x20px|মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ MH 22x20px|মাল্টা MT 22x20px|মালদ্বীপ MV 22x20px|মলদোভা MD 22x20px|মালয়শিয়া MY 22x20px|মালাউই MW 22x20px|মালি ML 22x20px|মিশর EG 22x20px|মেক্সিকো MX 22x20px|মেসিডোনিয়া MK 22x20px|মোজাম্বিক MZ 22x20px|মোনাকো MC 22x20px|মৌরিতানিয়া MR 22x20px|যুক্তরাজ্য GB 22x20pxযুক্তরাষ্ট্র US 22x20px|রাশিয়া RU 22x20px|রোমানিয়া RO 22x20px|রুয়ান্ডা RW 22x20px|লুক্সেমবুর্গ LU 22x20px|লাইবেরিয়া LR 22x20px|লাওস LA 22x20px|লাতভিয়া LV22x20px| লিশ্‌টেনশ্‌টাইন LI 22x20px|লিথুয়ানিয়া LT 22x20px|লিবিয়া LY22x20px|লেবানন LB 22x20px|লেসাথো LS 22x20px|শ্রীলংকা SL 22x20px| সংযুক্ত আরব আমিরাত AE 22x20px| সুইজারল্যান্ড CH 22x20px|সুইডেন SE 22x20px|সুদান SD 22x20px|স্পেন ES 22x20px|সুরিনাম SR 22x20px|স্লোভাকিয়া SK 22x20px|স্লোভেনিয়া SI 22x20px|সলোমন দ্বীপপুঞ্জ SB 22x20px|সাইপ্রাস CY 22x20px|সাঁউ তুমি ও প্রিন্সিপি ST 22x20px|সান মারিনো SM 22x20px|সামোয়া WS 22x20px|সার্বিয়া RS 22x20px|সিঙ্গাপুর SG 22x20px| সিয়েরা লিওন SL 22x20px|সিরিয়া SY 22x20px|সেশেলস SC 22x20px|সেন্ট কিট্‌স ও নেভিস KN 22x20px| সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন দ্বীপপুঞ্জ VC 22x20px|সেন্ট লুসিয়া LC 22x20px|সেনেগাল SN 22x20px|সোমালিয়া SO 22x20px|সোয়াজিল্যান্ড SZ22x20px|সৌদি আরব SA 22x20px|হন্ডুরাস HN 22x20px|হাইতি HT 22x20px|হাঙ্গেরী HU দেশের তালিকা বাংলা, ইংরেজি, সরকারী, জাতীয় ও রাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপূ্র্ণ ভাষায় দেশের নাম The names of the items in the list are given in Bengali English, as well as in the official, national, major minority, and historically important languages of the state. Where applicable, names in other languages are included in their original script, along with a transliteration in Roman characters. Except where mentioned, the source for the names in their official languages is the জাতিসংঘ Group of Experts on Geographical Names(UNGEGN, retrieved 24 February 2011), which uses romanisation systems approved by the জাতিসংঘ. The sources for flags are the main articles on these states. When other sources are used, these sources are mentioned. For a gallery of flags, see Gallery of sovereign-state flags.জাতিসংঘ ব্যবস্থায় সদস্যপদ সার্বভৌমত্বে দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক অবস্থান ও সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য A AAAA AAAA AAAZZZ↓ জাতিসংঘের সদস্য দেশ বা পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রসমূহ ↓A AAAZZZZZZআবখাজিয়া - Abkhazia → আবখাজিয়াজাতিসংঘের সদস্য দেশনেই – Afghanistan ইসলামী প্রজাতন্ত্রী আফগানিস্তান (Islamic Republic of Afghanistan) ফার্সি ভাষা:  – → পশতু ভাষা:  – → A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Albania আলবেনিয়া প্রজাতন্ত্র (Republic of Albania) আলবেনীয় ভাষা:  – A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Algeria গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী আলজেরিয়া (People's Democratic Republic of Algeria) আরবি ভাষা:  – → A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Andorra অ্যান্ডোরা রাজ্য (Principality of Andorra) কাতালান ভাষা:  – A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই অ্যান্ডোরা একটি দ্বৈরাজ্য যেখানে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ পদাধিকারবলে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ও উর্গেলের রোমান ক্যাথলিক বিশপ, যিনি নিজেই ভ্যাটিকান কর্তৃক নিযুক্ত, যৌথভাবে ধরে রাখে| – Angola অ্যাঙ্গোলা প্রজাতন্ত্র (Republic of Angola) পর্তুগিজ ভাষা:  – কঙ্গো, কিম্বুন্দু ও উম্বুন্দু ভাষা:  – A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই - Antigua and BarbudaA জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা একটি কমনওয়েলথ রাজ্য|Commonwealth realms are members of the কমনওয়েলথ অফ নেশনস in which the head of state is Queen দ্বিতীয় এলিজাবেথ. The realms are sovereign states; see Relationship of the realms. এর রয়েছে ১টি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, বার্বুডা|For more information on divisions with a high degree of autonomy, see the List of autonomous areas by country. – Argentina আর্জেন্টাইন প্রজাতন্ত্র (Argentine Republic) The Argentine Constitution (Art. 35) recognises the following denominations for আর্জেন্টিনা: "United Provinces of the Río de la Plata", "Argentine Republic" and "Argentine Confederation"; furthermore, it establishes the usage of "Argentine Nation" for purposes of legislation. স্পেনীয় ভাষা:  – A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই আর্জেন্টিনা ২৩টি প্রদেশ ও ১টি স্বায়ত্বশাসিত শহরের একটি সংঘ| আর্জেন্টিনা ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ ও দক্ষিণ জর্জিয়া ও দক্ষিণ স্যন্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে যদিও তা যুক্তরাজ্য তদারকি করে| আর্জেন্টিনা আর্জেন্টাইন অ্যান্টার্কটিকাকে নিজেদের জাতীয় সীমানার অংশ দাবি করে, তা সরকারিভাবে তিয়েররা দেল ফুয়েগো প্রদেশ, অ্যান্টার্কটিকা ও দক্ষিণ আটলান্টিক দীপপুঞ্জের একটি বিভাগ, যা যুক্তরাজ্য ও চিলির দাবির সঙ্গে সমাপতিত|The continent of Antarctica, including its outlying islands south of 60°S, are held in abeyance under the terms of the Antarctic Treaty System. Under this treaty, territorial claims in this region are neither recognised nor disputed. Claimant countries are Argentina, Australia, Chile, France, New Zealand, Norway, and the United Kingdom, with all those save Argentina and Chile mutually recognising each others claims. "Mutual recognition of claims has been limited to Australia, France, New Zealand, Norway, and the United Kingdom ... Chile and Argentina do not recognize each other's claims ..." – Armenia আর্মেনিয়া প্রজাতন্ত্র (Republic of Armenia) আর্মেনীয় ভাষা:  – → A জাতিসংঘের সদস্য দেশপাকিস্তান দ্বারা স্বীকৃত নয়Pakistan Worldview – Report 21 – Visit to Azerbaijan Senate of Pakistan — Senate foreign relations committee, 2008Nilufer Bakhtiyar: "For Azerbaijan Pakistan does not recognise Armenia as a country" 13 September 2006 [14:03] – Today.Az</span> – Australia কমনওয়েলথ অব অস্ট্রেলিয়া (Commonwealth of Australia)A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই অস্ট্রেলিয়া একটি কমনওয়েলথ রাজ্য এবং ৬টি অঙ্গরাজ্য ও ১০টি অঞ্চলের একটি সংঘ| অস্ট্রেলিয়ার বাহ্যিক শাসিত অঞ্চলগুলো হচ্ছে: অ্যাশমোর ও কার্টিয়ার দ্বীপপুঞ্জ () অস্ট্রেলীয় অ্যান্টার্কটিকা () ক্রিসমাস দ্বীপ () কোকোস/কীলিং দ্বীপপুঞ্জ () কোরাল সাগর দ্বীপপুঞ্জ () হার্ড দ্বীপ ও ম্যাকডনাল্ড দ্বীপপুঞ্জ () নরফোক দ্বীপ () – Austria অস্ট্রিয়া প্রজাতন্ত্র (Republic of Austria) জার্মান ভাষা:  – সার্বীয় ভাষা:  – ক্রোয়েশীয় ভাষা:  – A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য| অস্ট্রিয়া ৯টি অঙ্গরাজ্যের একটি সংঘ (Bundesländer)| – Azerbaijan আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র (Republic of Azerbaijan) আজারবাইজানি ভাষা:  – A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই আজারবাইজানের রয়েছে ২টি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, নাখচিভান ও নাগোর্নো-কারাবাখ (Dağlıq Qarabağ)| নাগোর্নো-কারাবাখে একটি দে ফ্যাক্টো বা কার্যত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে| – The Bahamas কমনওয়েলথ অব দ্য বাহামাস্ (Commonwealth of The Bahamas)A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই বাহামা দ্বীপপুঞ্জ একটি কমনওয়েলথ রাজ্য| – Bahrain বাহরাইন রাজ্য (Kingdom of Bahrain) আরবি ভাষা:  – → A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Bangladesh গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ (People's Republic of Bangladesh)A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই - BarbadosA জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই বার্বাডোস একটি কমনওয়েলথ রাজ্য| - Belarus বেলারুশ প্রজাতন্ত্র (Republic of Belarus) বেলারুশীয় ভাষা:  – → রুশ ভাষা:  – → A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই - Belgium বেলজিয়াম রাজ্য (Kingdom of Belgium) ওলন্দাজ ভাষা:  – ফরাসি ভাষা:  – জার্মান ভাষা:  – A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য| বেলজিয়াম একটি সংঘ যা ভাষাগত সম্প্রদায় ও অঞ্চলে বিভক্ত| - BelizeA জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই বেলিজ একটি কমনওয়েলথ রাজ্য| - Benin বেনিন প্রজাতন্ত্র (Republic of Benin) ফরাসি ভাষা:  – A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই - Bhutan ভুটান সাম্রাজ্য (Kingdom of Bhutan) জংখা ভাষা:  – → ওয়াইলী: "ʼbrug-yul" ("ব্রুগ্যুল")"Druk Yul" ("ড্রুক্যুল") – "ʼBrug Rgyal-khab" ("ব্রুগ-র-গ্যাল-খাব")"Dru Gäkhap" ("ড্রু-গ্যাখাপ")A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই - Bolivia বলিভিয়া বহুজাতিক রাষ্ট্র (Plurinational State of Bolivia) স্পেনীয় ভাষা:  – কেচুয়া ভাষা:  – আইমারা ভাষা:  – A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই - Bosnia and Herzegovina বসনীয় ও ক্রোয়েশীয় ভাষা: সার্বীয় ভাষা: → A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা দুটি সংঘটক ইউনিটের একটি সংঘ: ফেডারেশন অব বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা () রেপাবলিকা সর্পসকা () এবং ব্রচকো জেলা (Brčko District) যা একটি স্বশাসিত প্রশাসনিক ইউনিট|For more information about the division of Bosnia and Herzegovina, see Dayton Agreement and the text of The General Framework Agreement for Peace in Bosnia and Herzegovina (14 December 1995). Office of the High Representative. Retrieved 28 February 2011. – Botswana বতসোয়ানা প্রজাতন্ত্র (Republic of Botswana) সুয়ানা ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Brazil সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী ব্রাজিল (Federative Republic of Brazil) পর্তুগিজ ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই ব্রাজিল ২৬টি অঙ্গরাজ্য এবং ১টি যুক্তরাষ্ট্রীয় জেলার একটি সংঘ| – Brunei ব্রুনাই দারুসসালাম রাজ্য (State of Brunei, Abode of Peace) মালয় ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই ব্রুনাই স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের কিছু অংশের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে|The sovereignty over the Spratly Islands is disputed by China, Taiwan, Vietnam, and in part by Brunei, Malaysia, and the Philippines. Except for Brunei, each of these countries occupies part of the islands (see List of territorial disputes). – Bulgaria বুলগেরিয়া প্রজাতন্ত্র (Republic of Bulgaria) বুলগেরীয় ভাষা:  - → A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য|Also known as Burkina; formerly referred to as Upper Volta, its official name until 1984. – Burkina Faso ফরাসি ও মোরে ভাষা: A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Burma রিপাবলিক অব দ্য ইউনিয়ন অব মায়ানমার (Republic of the Union of Myanmar) Burma's official short form name as used by the United Nations is "Myanmar". The government changed the state's official name in English from "Union of Myanmar" to "Republic of the Union of Myanmar" in October 2010. বর্মী ভাষা:  - → আ-ধ্ব-ব: Myamà (ম্যামা) - Pyìdàùngzu' Thàmmada' Myamà Nàyngngàɴdɔ̀ (প্যীদাঊংযু' থাম্মদা' ম্যামা নায়েঙ্ঙাংদ)A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Burundi বুরুন্ডি প্রজাতন্ত্র (Republic of Burundi) রুন্ডি ভাষা:  - ফরাসি ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Cambodia কম্বোডিয়া রাজ্য (Kingdom of Cambodia) খমের ভাষা:  - → ফরাসি ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Cameroon ক্যামেরুন প্রজাতন্ত্র (Republic of Cameroon) ফরাসি ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই The legal name for Canada is the sole word; an officially sanctioned, though disused, name is Dominion of Canada (which includes its legal title); see: Name of Canada, Dominion. - Canada ফরাসি ভাষা: A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই কানাডা একটি কমনওয়েলথ রাজ্য এবং ১০টি প্রদেশ ও ৩টি অঞ্চলের একটি সংঘ| – Cape Verde কেপ ভার্দ প্রজাতন্ত্র (Republic of Cape Verde) পর্তুগিজ ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই - Central African Republic সাংগো ভাষা: ফরাসি ভাষা: A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Chad চাদ প্রজাতন্ত্র (Republic of Chad) আরবি ভাষা:  - → ফরাসি ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Chile চিলি প্রজাতন্ত্র (Republic of Chile) স্পেনীয় ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই ইস্টার দ্বীপ ও হুয়ান ফার্নান্দেজ দ্বীপপুঞ্জ বালপারাইসো অঞ্চলে চিলির "বিশেষ অঞ্চলসমূহ" ("special territories")| চিলি অ্যান্টার্কটিকার কিছু অংশকে তার ম্যাজেলানস্ ই লা আন্টার্কটিকা চিলেনা অঞ্চলে একটি পরিকল্পিত সম্প্রদায় (commune) হিসেবে দাবি করে| এর দাবি যুক্তরাজ্য ও আর্জেন্টিনার সঙ্গে সমাপতিত| – China গণচীন/গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (People's Republic of China)The People's Republic of China (PRC) is commonly referred to as "China", while the Republic of China (ROC) is commonly referred to as "Taiwan". The ROC is also occasionally known diplomatically as Chinese Taipei, along with other names.</ref> চৈনিক ভাষা:  - → মান্দারিন: "Zhōngguó" – Zhōnghuá Rénmín Gònghéguó তিব্বতী ভাষা: ཀྲུང་ཧྭ་ - ཀྲུང་ཧྭ་མི་དམངས་སྤྱི མཐུན་རྒྱལ་ཁབ → ওয়ালী: "Krung Hwa" – "Krung Hwa Mi Dmangs Spyi Mthun Rgyal Khab" উইগুর ভাষা:  - → চুয়াং ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশচীন প্রজাতন্ত্র দ্বারা নিজস্ব বলে দাবিকৃত গণচীনের আছে পাচটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, গুয়াংজি, অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়া, নিংজিয়া, জিনজিয়াং ও তিব্বত| এছাড়াও এর কিছু বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের ওপর সার্বভৌমত্ব রয়েছে, যেমন: এদেশ আরও যেসব স্থান নিজেস্ব বলে দাবি করে: তাইওয়ান ও সংশ্লিষ্ট দ্বীপপুঞ্জ, কোয়েময়, মাৎসু, প্রাটাস ও তাইপিং আবা, যেগুলো শাসন করে চীন প্রজাতন্ত্র (যা সমস্ত চীনের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে); প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ (বিতর্কিত);The Chinese sovereignty over the Paracel Islands is disputed by Vietnam and the Republic of China (see List of territorial disputes); স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ (বিতর্কিত); দক্ষিণ তিব্বত (অরুণাচল প্রদেশের অংশ হিসেবে ভারত দ্বারা শাসিত)| ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের অংশ হিসেবে আকসাই চীন, যা গণচীন শাসিত, নিজস্ব বলে দাবি করে| গণচীন ২২টি জাতিসংঘের সদস্য দেশ ও ভ্যাটিকান, যা এর পরিবর্তে চীন প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয়, দ্বারা স্বীকৃত নয়|See also Dates of establishment of diplomatic relations with the People's Republic of China and Foreign relations of the People's Republic of China.চীন প্রজাতন্ত্র - Republic of China → তাইওয়ানA জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Colombia কলম্বিয়া প্রজাতন্ত্র (Republic of Colombia) স্পেনীয় ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Comoros কোমোরোস দ্বীপপুঞ্জ (Union of the Comoros) কমোরীয় ভাষা:  - আরবি ভাষা:  - → ফরাসি ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই কমোরোস ৩টি দ্বীপের একটি সংঘ যা ফ্রান্সের অংশ মায়োতকে এর চতুর্থ দ্বীপ হিসেবে নিজস্ব বলে দাবি করে|More information on more or less federal structures can be found at a List of federations.Constitution of Comoros, Art. 1. বাংক দ্যু গেইসেরের ওপর ফরাসি সার্বভৌমত্বের সঙ্গে কমোরোসের দ্বন্দ্ব আছে| Also known as Congo-Kinshasa. Formerly referred to as Zaire, its official name from 1971 to 1997. - Democratic Republic of the Congo ফরাসি ভাষা: কিতুবা ভাষা: লিঙ্গালা ভাষা: সোয়াহিলি ভাষা: A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই Also known as Congo-Brazzaville. - Republic of the Congo ফরাসি ভাষা: কঙ্গো ভাষা: লিঙ্গালা ভাষা: A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেইZZZকুক দ্বীপপুঞ্জ - Cook Islands → কুক দ্বীপপুঞ্জA জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Costa Rica কোস্টা রিকা প্রজাতন্ত্র (Republic of Costa Rica) স্পেনীয় ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Côte d'Ivoire (আইভোরি কোস্ট - Ivory Coast) কোত দিভোয়ার প্রজাতন্ত্র (Republic of Côte d'Ivoire) ফরাসি ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Croatia ক্রোয়েশিয়া প্রজাতন্ত্র (Republic of Croatia) ক্রোয়েশীয় ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Cuba কিউবা প্রজাতন্ত্র (Republic of Cuba) স্পেনীয় ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই – Cyprus সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র (Republic of Cyprus) গ্রিক ভাষা:  - → তুর্কি ভাষা:  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশতুরস্ক এবং উত্তর সাইপ্রাস দ্বারা স্বীকৃত নয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য| দ্বীপটির উত্তরপূর্বাংশ উত্তর সাইপ্রাসের কার্যত রাষ্ট্র | সাইপ্রাসের বৈদেশিক সম্পর্ক এবং সাইপ্রাস বিতর্ক দেখুন| তুরস্ক সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্রকে "দক্ষিণ সাইপ্রাসের গ্রিক সাইপ্রিয়ট প্রশাসন" ("Greek Cypriot Administration of South Cyprus") বলে উল্লেখ করে|<ref>See Republic of Turkey Ministry for European Union Affairs Retrieved June 12, 2012.</ref> |- |valign=top| A simpler official short-form name has been encouraged by the Czech government: the English variant Czechia remains uncommon, but variants in Czech (Česko) and some other languages are more popular. See Name of the Czech Republic - Czech Republic চেক ভাষা'':  - A জাতিসংঘের সদস্য দেশA নেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য|ZZZ↑ জাতিসংঘের সদস্য দেশ বা পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রসমূহ ↑D ZZZZZZZZZZZZZZZZZZZZZ↓ অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহ ↓A AAAZZZ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মানদণ্ড রাষ্ট্রীয়তার আধিপত্যবাদী আন্তর্জাতিক আইন মানা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়তার ঘোষণামূলক তত্ত্ব, যা রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইনের একজন ব্যক্তি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে। যদি নিম্নলিখিত যোগ্যতার অধিকারী হয়: (ক) স্থায়ী জনসংখ্যা; (খ) একটি নির্ধারিত অঞ্চল; ( গ) সরকার এবং (ঘ) অন্যান্য রাজ্যের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা। " রাষ্ট্রীয়তার মানদণ্ড হিসাবে স্বীকৃতিটি যে ডিগ্রিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত সে বিষয়ে বিতর্ক বিদ্যমান। রাজ্যত্বের ঘোষণামূলক তত্ত্ব, যার একটি উদাহরণ মন্টেভিডিও কনভেনশনে পাওয়া যায়, যুক্তি দেখায় যে রাষ্ট্রীয়তা নিখুঁতভাবে উদ্দেশ্য এবং অন্য রাজ্যগুলির দ্বারা রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অপ্রাসঙ্গিক। বর্ণালীটির অপর প্রান্তে, রাষ্ট্রক্ষেত্রের গঠনমূলক তত্ত্বটি কেবলমাত্র রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ব্যক্তিরূপে সংজ্ঞায়িত করে কেবল যদি তা অন্য রাজ্যগুলির দ্বারা সার্বভৌম হিসাবে স্বীকৃত হয়। এই তালিকার উদ্দেশ্যে, অন্তর্ভুক্ত সমস্ত রাজ্য যে হয়: (ক) স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে এবং প্রায়শই স্থায়ী জনবহুল অঞ্চলগুলির নিয়ন্ত্রণ হিসাবে বিবেচিত হয় বা (খ) কমপক্ষে অন্য একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের দ্বারা সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃত মনে রাখবেন যে কিছু ক্ষেত্রে প্রথম দফার ব্যাখ্যার উপর মতামতের একটি বিভ্রান্তি রয়েছে, এবং কোনও সত্তা এটি বিতর্কিত কিনা তা সন্তুষ্ট কিনা। উপরের মানদণ্ডের ভিত্তিতে, এই তালিকায় নিম্নলিখিত 206 সত্তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: কমপক্ষে একটি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র দ্বারা স্বীকৃত ২০৩ টি রাষ্ট্র দুটি রাজ্য যা স্থায়ীভাবে জনবহুল অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে এবং কেবল জাতিসংঘের অ-সদস্য সদস্যদের দ্বারা স্বীকৃত: নাগর্নো-কারাবাখ প্রজাতন্ত্র, ট্রান্সনিস্ট্রিয়া এমন একটি রাষ্ট্র যা স্থায়ীভাবে জনবহুল অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে এবং অন্য কোনও রাষ্ট্রের দ্বারা স্বীকৃত নয়: সোমালিল্যান্ড আরও দেখুন সার্বভৌম রাষ্ট্র ক্লিকযোগ্য বিশ্বের মানচিত্র টীকা তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি বিষয়শ্রেণী:দেশের তালিকা বিষয়শ্রেণী:রাষ্ট্র + বিষয়শ্রেণী:ইউরেশিয়া বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকা বিষয়শ্রেণী:আমেরিকা বিষয়শ্রেণী:ওশেনিয়া বিষয়শ্রেণী:দেশ
আবখাজিয়া
https://bn.wikipedia.org/wiki/আবখাজিয়া
থাম্ব|ডান|250px থাম্ব|বাম|200px|Abkhazia|আবখাজিয়া আবখাজিয়া (আবখাজ ভাষায়: Аҧсны; জর্জীয় ভাষায়: აფხაზეთი; রুশ ভাষায়: Абха́зия) ককেসাস পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত আইনত একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রশাসনিক অঞ্চল এবং কার্যত একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্রOlga Oliker, Thomas S. Szayna. Faultlines of Conflict in Central Asia and the South Caucasus: Implications for the U.S. Army. Rand Corporation, 2003, Abkhazia: ten years on. By Rachel Clogg, Conciliation Resources, 2001Medianews.ge. Training of military operations underway in Abkhazia , August 21,2007Emmanuel Karagiannis. Energy and Security in the Caucasus. Routledge, 2002. । তবে এটি এখনও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। অঞ্চলটি কৃষ্ণ সাগরের পূর্ব উপকূলে জর্জিয়ার সীমান্তের অভ্যন্তরে অবস্থিত; উত্তরে এটি রাশিয়ার সাথে সীমান্ত গঠন করেছে। এর রাজধানী সুখুমি। আবখাজিয়া জর্জিয়ার অভ্যন্তরে একটি স্বায়ত্বশাসিত সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। ১৯৯১ সালের আগস্টে এটি জর্জিয়ার অংশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু আবখাজিয়ার মুসলিম (মোট জনসংখ্যার ১৭.৮% ) এবং রুশ (১৪.৩%) সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দুইটি এই বন্দোবস্তের পক্ষে ছিল না। প্রতিবেশী স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রজাতন্ত্র চেচনিয়ার মুসলিম স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় আবখাজিয়ার জর্জিয়া-বিরোধীরা জর্জিয়ার সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। তারা আবখাজিয়ার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আবখাজিয়ায় বসবাসরত সংখ্যাগুরু জর্জীয় জনগোষ্ঠীকে (৪৫%) সেখান থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়। ১৯৯৪ সাল নাগাদ আবখাজিয়াতে জর্জীয় লোক তেমন অবশিষ্ট ছিল না। জর্জিয়া পরাজয় স্বীকার করে এবং আবখাজিয়াকে সম্পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়। বর্তমানে আবখাজিয়া একটি দ্বৈত শাসন চলছে। এখানকার ৮৩% এলাকা রুশ মদদ নিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী আবখাজ সরকার শাসন করছে; এদের সদর দফতর সুখুমিতে অবস্থিত। উত্তর আবখাজিয়াতে প্রায় ১৭% এলাকায় জর্জীয় সরকারকে প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রাদেশিক সরকার শাসন করছে; এদের সদর দফতর কোদোরি উপত্যকায় অবস্থিত। বর্তমানে অঞ্চলটির ভবিষ্যত নিয়ে জর্জিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব্ব্ব চলছে। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Photos from Abchazia রাষ্ট্রপতির সরকারি ওয়েবসাইট বিষয়শ্রেণী:জর্জিয়া (রাষ্ট্র) বিষয়শ্রেণী:রুশ ভাষী দেশ ও অঞ্চল
আফগানিস্তান
https://bn.wikipedia.org/wiki/আফগানিস্তান
আফগানিস্তান (পশতু ভাষা/দারি: , ), সরকারি নাম আফগানিস্তান ইসলামি আমিরাত, হলো পাহাড়ি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এটি ইরান, পাকিস্তান, চীন, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যস্থলে একটি ভূ-বেষ্টিত মালভূমির উপর অবস্থিত। আফগানিস্তানকে অনেক সময় দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের Afghanistan , Middle East Institute (accessed 20 January 2006) অংশ হিসেবেও গণ্য করা হয়। আফগানিস্তানের পূর্বে ও দক্ষিণে পাকিস্তান , পশ্চিমে ইরান, উত্তরে তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান এবং উত্তর-পূর্বে চীন। আফগানিস্তান শব্দটির অর্থ "আফগান (তথা পশতুন) জাতির দেশ"। আফগানিস্তান একটি রুক্ষ এলাকা যার অধিকাংশ এলাকা পর্বত ও মরুভূমি আবৃত।শুধু পার্বত্য উপত্যকা এবং উত্তরের সমভূমিতে গাছপালা দেখা যায়। এখানকার গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া গরম ও শুষ্ক এবং শীতকালে প্রচণ্ড শীত পড়ে। কাবুল দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। আফগানিস্তান প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বহু প্রাচীন বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণ এই দেশের মধ্য দিয়েই সংঘটিত হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু লোক আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে চলাচল করেছেন এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসতি স্থাপন করেছেন। দেশটির বর্তমান জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্য এই ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়। আফগানিস্তানে বসবাসরত সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হল পশতুন জাতি। এরা আগে আফগান নামেও পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে আফগান বলতে কেবল পশতু নয়, বরং জাতি নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিককেই বোঝায়। ইতিহাস থাম্ব|275x275পিক্সেল|সিন্ধু সভ্যতার মানচিত্র (2600-1900 BCE) প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান খনন করে দেখা গেছে উত্তর আফগানিস্তানে প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে মনুষ্যবসতি ছিল। ধারণা করা হয় আফগানিস্তানের কৃষি খামার সম্প্রদায় বিশ্বের প্রাচীনতম খামারগুলোর একটি। আফগানিস্তানে অনেক সাম্রাজ্য ও রাজ্য ক্ষমতায় এসেছিল, যেমন গ্রেকো-বারট্রিয়ান, কুশান, হেফথালিটিস, কাবুল শাহী, সাফারি, সামানি, গজনবী, ঘুরি, খিলজি, কারতি, মুঘল, ও সবশেষে হুতাক ও দুররানি সাম্রাজ্য। "স্ট্যান" অর্থ জমি। আফগানিস্তান মানে আফগানদের দেশ। "স্টান" শব্দটি কুর্দিস্তান এবং উজবেকিস্তানের নামেও ব্যবহৃত হয়। প্রাক-ইসলামি পর্ব ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পর মধ্য এশিয়া থেকে এই এলাকায় লোক আসতে শুরু করে। এদের অধিকাংশই ছিল আর্য, যারা ইরান ও ভারতেও বসতি স্থাপন করেছিল। তখন এই এলাকার নাম ছিল আরিয়ানা। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে হাখমানেশি সাম্রাজ্য আরিয়ানা দখল করে। ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহান আলেকজান্ডার পারস্যের সম্রাটকে পরাজিত করে আরিয়ানার পূর্ব সীমান্ত ও তারও পূর্বে চলে যেতে সক্ষম হন। ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর অনেকগুলি রাজ্য তার এশীয় সাম্রাজ্যের দখল নেয়ার চেষ্টা করে। এদের মধ্যে সেলুসিদ সাম্রাজ্য, বাকত্রিয়া সাম্রাজ্য ও ভারতীয় মৌর্য সাম্রাজ্য উল্লেখযোগ্য। খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দীতে মধ্য এশীয় কুশান জাতি আরিয়ানা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। ৩য় থেকে ৮ম শতাব্দী পর্যন্ত বৌদ্ধধর্ম ছিল এখানকার প্রধান ধর্ম। এই পর্বের অনেক বৌদ্ধমন্দিরের ধ্বংসস্তুপ আজও আফগানিস্তানে দেখতে পাওয়া যায়। হুন নামের মধ্য এশীয় এক তুর্কীয় জাতি ৪র্থ শতাব্দীতে এসে কুশানদের পতন ঘটায়। ইসলামি পর্ব খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে আরব সৈন্যরা আফগানিস্তানে ইসলাম ধর্ম নিয়ে আসে। পশ্চিমের হেরাত ও সিস্তান প্রদেশ আরবদের নিয়ন্ত্রণে আসে, কিন্তু আরব সৈন্য চলে যাওয়া মাত্রই সেখানকার জনগণ তাদের পুরনো ধর্মে ফেরত যায়। ১০ম শতকে বর্তমান উজবেকিস্তানের বোখারা থেকে সামানিদ নামের মুসলিম শাসকবংশ আফগান এলাকায় প্রভাব বিস্তার করা শুরু করেন। ১০ম শতাব্দীতে গজনীতে গজনবী রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে এর পূর্ব পর্যন্ত মুসলমান ও অ-মুসলমানরা তখনও কাবুলে পাশাপাশি অবস্থান করত। গজনীর সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা মাহমুদ গজনভি ৯৯৮ থেকে ১০৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ এলাকা শাসন করেন এবং তার সময়েই তিনি কাফিরিস্তান ব্যতীত বাকি হিন্দু রাজাদের পরাজিত করে সমগ্র আফগানিস্তানে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। গজনী সাহিত্য ও শিল্পের কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং মাহমুদ বুদ্ধিজীবীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন, তন্মধ্যে রয়েছে ইতিহাসবিদ আল-বিরুনি ও কবি ফেরদৌসী। মাহমুদের মৃত্যুর পর গজনীর প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে এবং ১২শ শতাব্দীতে পশ্চিম-মধ্য আফগানিস্তানের ঘোর প্রদেশ শহরে ঘুরি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ঘুরিরা আবার ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে মধ্য এশিয়ার খোয়ারিজমি শাহদের কাছে পরাজিত হন। ১২১৯ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গোল সেনাপতি চেঙ্গিজ খান তার সৈন্যদল নিয়ে খোয়ারিজমি শহর হেতাত ও বালখ এবং বামিয়ানে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেন। মোঙ্গলদের এই ক্ষতিসাধনের ফলে অনেক স্থানীয় লোকজন কৃষিজমি পরিপূর্ণ গ্রামীণ এলাকায় চলে যেতে বাধ্য হয়। ১৪শ শতাব্দীর শেষে মধ্য এশীয় সেনাপতি তৈমুর লং আফগানিস্তান জয় করেন ও ভারতে অগ্রসর হন। তার সন্তান ও পৌত্রেরা তার সাম্রাজ্যের পুরোটা ধরে রাখতে পারেনি, তবে তারা বর্তমান আফগানিস্তানের অধিকাংশ হেরাত থেকে শাসন করতে সক্ষম হয়। ঘুরি থেকে তিমুরীয় সাম্রাজ্যের শাসনামলে এখানে ইসলামী স্থাপত্যের বিকাশ ঘটে। এসময় তৈরি বহু মসজিদ ও মিনার আজও হেরাত, গজনি ও মাজার-ই-শরিফে দাঁড়িয়ে আছে। হেরাতে ১৫শ শতাব্দীতে ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারার বিকাশ ঘটে। মায়ের দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর আর বাবার দিক থেকে তৈমুর লঙের বংশধর জহিরুদ্দীন মুহম্মদ বাবর ১৬শ শতাব্দীর প্রারম্ভে ১৫০৪ সালে আরঘুন রাজবংশের নিকট থেকে কাবুল দখল করেন। তারপর ১৫২৬ সালে তিনি ভারতে গিয়ে দিল্লি সালতানাতে আক্রমণ চালিয়ে লোদি রাজবংশকে পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। বাবর। ১৬শ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর পুরোটা জুড়ে ভারতে অবস্থিত মুঘল সাম্রাজ্য, উজবেক বুখারা খানাত এবং পারস্যের সাফাভি রাজবংশের রাজারা আফগানিস্তানের দখল নিয়ে যুদ্ধ করেন। সাধারণত মুঘলেরা কাবুলের দখল রাখতো এবং পারসিকেরা হেরাত দখলে রাখতো আর কান্দাহারের শাসনভার প্রায়ই হাতবদল হত। এসময় পশতুন জাতি তাদের শক্তিবৃদ্ধি করে, তবে স্বাধীনতা লাভে ব্যর্থ হয়। হুতাক রাজবংশ ও দুররানি সাম্রাজ্য থাম্ব|বাম|আহমেদ শাহ দুররানি, ১৭৪৭ সালে আধুনিক আফগানিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ১৭০৯ সালে স্থানীয় ঝিলজাই গোত্রের নেতা মিরওয়াইস হুতাক সাফাভিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং গুরগিন খানকে পরাজিত করে স্বাধীন আফগানিস্তান স্থাপন করেন। মিরওয়াইস ১৭১৫ সালে মারা যান এবং তার স্থলে তার ভাই আবদুল আজিজ সিংহাসনে আরোহণ করেন। মিরওয়াইসের পুত্র মাহমুদ হুতাক তাকে রাষ্ট্রদোহিতার জন্য হত্যা করে। মাহমুদ ১৭২২ সালে পারস্যের রাজধানী ইস্পাহানে আক্রমণ চালান এবং গুলনাবাদের যুদ্ধের পর নগরীটি দখল করে নিজেকে পারস্যের রাজা হিসেবে ঘোষণা দেন। ১৭৪৭ সালে আহমদ শাহ দুররানি কান্দাহার শহরকে রাজধানী করে এখানে দুররানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৭২ সালের অক্টোবরে দুররানির মৃত্যু হয় এবং তাকে কান্দাহারে সমাহিত করা হয়। তার পুত্র তৈমুর শাহ দুররানি তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং তিনি আফগানিস্তানের রাজধানী কান্দাহার থেকে কাবুলে স্থানান্তরিত করেন। এই সময় থেকে দেশটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির কাছে অনেক অঞ্চল হারাতে শুরু করে। ১৭৯৩ সালে তৈমুরের মৃত্যুর পর তার পুত্র জামান শাহ দুররানি ক্ষমতায় আসেন, এবং ধারাবাহিকভাবে মাহমুদ শাহ দুররানি, সুজা শাহ ও অন্যান্যরা সিংহাসনে আরোহণ করেন।এস্পোসিতো, জন এল. "The Oxford Dictionary of Islam"। পৃ. ৭১। বারাকজাই রাজবংশ 19 শতকের প্রথম দিকে, আফগান সাম্রাজ্য পশ্চিমে পারস্য এবং পূর্বে শিখ সাম্রাজ্য থেকে হুমকির মুখে ছিল। বারাকজাই উপজাতির নেতা ফতেহ খান তার অনেক ভাইকে নিয়ে সাম্রাজ্য জুড়ে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। ১৮১৮ সালে দুরানি সাম্রাজ্যের মাহমুদ শাহ ফতেহ খানকে নির্মমভাবে হত্যা করেন । ফলস্বরূপ, ফতেহ খান এবং বারাকজাই উপজাতির ভাইরা বিদ্রোহ করে এবং একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই উত্তাল সময়কালে, আফগানিস্তান কান্দাহারের প্রিন্সিপ্যালিটি , হেরাতের এমিরেট , কুন্দুজের খানাতে, মাইমানা খানাতে এবং অন্যান্য অনেক যুদ্ধরত রাজনীতি সহ অনেক রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বিশিষ্ট রাষ্ট্র ছিল দোস্ত মোহাম্মদ খান শাসিত কাবুলের আমিরাত । দুররানি সাম্রাজ্যের পতনের সাথে এবং সদোজাই রাজবংশের নির্বাসনে হেরাত শাসন করতে , পাঞ্জাব এবং কাশ্মীরকে শিখ সাম্রাজ্যের শাসক রঞ্জিত সিংয়ের কাছে শাসন করার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল , যিনি ১৮২৩ সালের মার্চ মাসে খাইবার পাখতুনখোয়া আক্রমণ করেছিলেন এবং নওশেরার যুদ্ধের পর পেশোয়ার শহরটি দখল করেছিলেন। 1834 সালে, দোস্ত মোহাম্মদ খান অসংখ্য অভিযানের নেতৃত্ব দেন, প্রথমে জালালাবাদে প্রচারণা চালান এবং তারপরে সুজা উল-মুলকের অভিযানে শাহ সুজা দুররানি এবং ব্রিটিশদের পরাজিত করার জন্য কান্দাহারে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইদের সাথে মিত্রতা করেন । 1837 সালে, দোস্ত মোহাম্মদ খান পেশোয়ার জয় করার চেষ্টা করেন এবং তার পুত্র ওয়াজির আকবর খানের অধীনে একটি বড় বাহিনী প্রেরণ করেন, যা জামরুদের যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয় । আকবর খান এবং আফগান সেনাবাহিনী শিখ খালসা আর্মির কাছ থেকে জামরুদ দুর্গ দখল করতে ব্যর্থ হয় , কিন্তু শিখ কমান্ডার হরি সিং নালওয়াকে হত্যা করে , এইভাবে আফগান-শিখ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে । এই সময়ের মধ্যে ব্রিটিশরা পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর হচ্ছিল, শিখ সাম্রাজ্যের পতনকে পুঁজি করে রঞ্জিত সিং- এর মৃত্যুর পর তাদের নিজস্ব অশান্তির সময় ছিল , যা " দ্য গ্রেট গেম"-এর সময় প্রথম বড় সংঘর্ষে কাবুলের আমিরাতকে জড়িত করেছিল। 1839 সালে, একটি ব্রিটিশ অভিযাত্রী বাহিনী আফগানিস্তানে অগ্রসর হয়, কান্দাহারের প্রিন্সিপ্যালিটি আক্রমণ করে এবং 1839 সালের আগস্টে কাবুল দখল করে । দোস্ত মোহাম্মদ খান পারওয়ান অভিযানে ব্রিটিশদের পরাজিত করেন , কিন্তু তার বিজয়ের পর আত্মসমর্পণ করেন। তিনি প্রাক্তন দুররানি শাসক শাহ সুজা দুররানির সাথে কাবুলের নতুন শাসক হিসাবে প্রতিস্থাপিত হন , যা ব্রিটিশদের একটি বাস্তবিক পুতুল । একটি বিদ্রোহের পরে যা শাহ সুজার হত্যাকাণ্ড দেখেছিল , 1842 সালে ব্রিটিশ-ভারতীয় বাহিনীর কাবুল থেকে পশ্চাদপসরণ এবং এলফিনস্টোনের সেনাবাহিনীর বিনাশ , এবং কাবুলের যুদ্ধের শাস্তিমূলক অভিযান যা এর বরখাস্তের নেতৃত্ব দেয়। , ব্রিটিশরা তাদের আফগানিস্তানকে পরাধীন করার প্রচেষ্টা ছেড়ে দেয়, যা দোস্ত মোহাম্মদ খানকে শাসক হিসাবে ফিরে আসতে দেয়। দোস্ত মোহাম্মদ তার শাসনামলে আফগানিস্তানের বেশিরভাগ রাজ্যকে একত্রিত করেন, আফগানিস্তানে আশেপাশের রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে অসংখ্য প্রচারাভিযান শুরু করেন যেমন হাজারাজাত অভিযান , বলখ বিজয় , কুন্দুজ বিজয় , কান্দাহার বিজয় এবং অবশেষে শেষ প্রধান রাজ্যটি সুরক্ষিত করা। , হেরাত , তার চূড়ান্ত প্রচারণায় । পুনঃ একীকরণের প্রচারাভিযানের সময়, তিনি ব্রিটিশদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেছিলেন এবং 1857 সালের দ্বিতীয় অ্যাংলো-আফগান চুক্তিতে তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করেছিলেন , যখন বুখারা এবং অভ্যন্তরীণ নেতারা আফগানদের ভারত আক্রমণ করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা লাভ ১৯শ শতাব্দীতে দেশটি ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ও রুশ সাম্রাজ্যের মধ্যকার দ্বন্দ্বে মধ্যবর্তী ক্রীড়ানক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ১৯৭৩ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে সামরিক কর্মকর্তাগণ রাজার পতন ঘটান এবং প্রজাতন্ত্র গঠন করেন। ১৯১৯ সালে তৃতীয় ব্রিটিশ-আফগান যুদ্ধশেষে আফগানিস্তান যুক্তরাজ্য থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে।১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে আফগানিস্তানে এক দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিপ্রায়ে ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং সোভিয়েত–আফগান যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েতরা আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং এর সাথে সাথে দেশটিতে আবার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে তালেবান নামের একটি ইসলামিক গোষ্ঠী কাবুলের দখল নেয়। তালেবান ইসলামিক আরেকটি দল আল-কায়েদাকে আফগানিস্তানে আশ্রয় দেয়। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর কথিত সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং ২০০১-এর শেষে তালেবানদের উৎখাত করে। ২০০৪ সালে আফগানিস্তানের সংবিধান নতুন করে লেখা হয় এবং একটি রাষ্ট্রপতি-ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত আফগানিস্তানের রাজা ও তার আত্মীয়েরা কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে রক্ষণশীল গোষ্ঠীগত ও ধর্মীয় নেতারাও শাসনব্যবস্থায় প্রভাব বিস্তার করতেন। ১৯৬৩ সালে প্রথমবারের মত রাজপরিবারের বাইরের একজনকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেয়া হয় যাতে রাজপরিবার আইন প্রণয়নের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পায়। ১৯৬৪ সালের নতুন সংবিধানে দেশটিতে আরও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে রাজা কেবল নির্বাচিত আইনসভার সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে এসময় যাতে জাতিগত ও বামপন্থী দল যাতে গঠিত হতে না পারে সেজন্য রাজা রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা করেন। পিডিপিএ সামরিক অভ্যুত্থান ও সোভিয়েত যুদ্ধ ১৯৭৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং প্রজাতন্ত্র হিসেবে আফগানিস্তানের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৭৮ সালে আরেকটি অভ্যুত্থানে নিষিদ্ধ বামপন্থী দল পিপল্‌স ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ আফগানিস্তান (পিডিপিএ) ক্ষমতায় আসে। এই দলের সাম্যবাদী শাসন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আফগানিস্তানের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে। তবে মুসলিম মুজাহিদগণ এই শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে। পিডিপিএ-কে সমর্থন করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে একটি পূর্ণমাপের আক্রমণ (দখলদারী আগ্রাসন) পরিচালনা করে। এই আক্রমণের পরে একজন মধ্যপন্থী পিডিপিএ নেতাকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়, যাতে মুজাহিদিনেরা শান্ত হয়। কিন্তু মুজাহিদিনেরা সোভিয়ত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গেরিলা হামলা অব্যাহত রাখে। পিডিপিএ সরকার সোভিয়েত সরকারের কাছ থেকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা পেত, অন্যদিকে মুজাহেদিনেরা মুসলিম জনগোষ্ঠি থেকে পূর্ণমাত্রায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, সৌদি আরব ও অন্যান্য দেশ থেকে অল্প সাহায্য পেত। আফগানিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্র (২০০২-২০২১) থাম্ব|ডান|250px|আফগান মহিলারা ২০০৪ সালের নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। মুজাহেদিনরা পিডিপিএ সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করে। অবশেষে ১৯৯২ সালে সরকারের পতন ঘটে, কিন্তু মুজাহেদিনদের একাধিক দলের মাঝে কোন্দলের কারণে গৃহযুদ্ধ শেষ হয়নি। একদল মুজাহেদিন তালেবান নামের একটি ইসলামী দল গঠন করে এবং ১৯৯৬ সালে কাবুল দখল করে। পরবর্তীতে ২০০১-এর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হস্তক্ষেপে উত্তরাঞ্চলীয় জোট তালেবানদের ইসলামী সরকারের পতন ঘটায়। তালেবানদের ইসলামী সরকারের পতনের পর জাতিসংঘ দেশটিতে বহুজাতিগোষ্ঠীয় সরকার স্থাপনে উৎসাহ দেয়। জার্মানির বন শহরে এ নিয়ে সম্মেলনের পর ২০০১-এর ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। তার ৬ মাস পরে একটি মধ্যবর্তী সরকার গঠিত হয় যা ২০০৪ সালে একটি নতুন সংবিধান পাশ করে। নতুন সংবিধান অনুযায়ী আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট-শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৪ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আফগানিস্তানের প্রথম সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণ করেন। বর্তমান ইতিহাস (২০২১-বর্তমান) ভূগোল থাম্ব|ডান|200px|আফগানিস্তানের ভূ-সংস্থান ভূমিবেষ্টিত সুউচ্চ পর্বতময় এবং উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্তে সমভূমিবেষ্টিত আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়া* ও মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত। আয়তন-বিশিষ্ট দেশটি পৃথিবীর ৪১তম বৃহত্তম দেশ। এর পূর্ব-পশ্চিমে এর সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১,২৪০ কিমি (৭৭০ মাইল); উত্তর-দক্ষিণে সর্বোচ্চ ১,০১৫ কিমি (৬৩০ মাইল)। উত্তর-পশ্চিম, পশ্চিম ও দক্ষিণের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি মূলত মরুভূমি ও পর্বতশ্রেণী। উত্তর-পূর্বে দেশটি ধীরে ধীরে উঁচু হয়ে হিমবাহ-আবৃত পশ্চিম হিমালয়ের হিন্দুকুশ পর্বতের সাথে মিশে গেছে। আমু দরিয়া নদী ও এর উপনদী পাঞ্জ দেশটির উত্তর সীমান্ত নির্ধারণ করেছে। আফগানিস্তানের উত্তর সীমানায় তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান; পূর্বে চীন এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীর; দক্ষিণে পাকিস্তান এবং পশ্চিমে ইরান। আফগানিস্তানের প্রায় অর্ধেক এলাকার উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে ২,০০০ মিটার বা তার চেয়ে উঁচুতে অবস্থিত। ছোট ছোট হিমবাহ ও বছরব্যাপী তুষারক্ষেত্র প্রায়ই পরিলক্ষিত হয়। উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত উচ্চতা বিশিষ্ট নওশাক আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ও সর্বোচ্চ বিন্দু। এটি পাকিস্তানের তিরিচ মির পর্বতশৃঙ্গের একটি নিচু পার্শ্বশাখা। পর্বতটি আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বে হিন্দুকুশ পর্বতমালার অংশ, যেটি আবার পামির মালভূমির দক্ষিণে অবস্থিত। হিন্দুকুশ থেকে অন্যান্য নিচু পর্বতসারি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে প্রধান শাখাটি দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রসারিত হয়ে পশ্চিমের ইরান সীমান্ত অবধি চলে গেছে। এই নিচু পর্বতমালাগুলির মধ্যে রয়েছে পারোপামিসুস পর্বতমালা, যা উত্তর আফগানিস্তান অতিক্রম করেছে, এবং সফেদ কোহ পর্বতমালা, যা পাকিস্তানের সাথে পূর্ব সীমান্ত তৈরি করেছে। সফেকদ কোহ-তেই রয়েছে বিখ্যাত খাইবার গিরিপথ, যা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে সংযুক্তকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ। অপেক্ষাকৃত নিম্নভূমিগুলি দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমে অবস্থিত। এদের মধ্যে রয়েছে উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের হেরাত-ফেরা নিম্নভূমি, দক্ষিণ-পশ্চিমের সিস্তান ও হেলমন্দ নদী অববাহিকা এবং দক্ষিণের রিগেস্তান মরুভূমি। সিস্তান অববাহিকাটি বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক এলাকার একটি। আফগানিস্তানের সর্বনিম্ন বিন্দু জওজান প্রদেশের আমু নদীর তীরে অবস্থিত, যা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে উচ্চতা বিশিষ্ট। নদী উপত্যকা ও কিছু ভূগর্ভস্থ পানিবিশিষ্ট নিম্নভূমি ছাড়া অন্য কোথাও কৃষিকাজ হয় না বললেই চলে। মাত্র ১২ শতাংশ এলাকা পশু চারণযোগ্য। দেশটির মাত্র ১ শতাংশ এলাকা বনাঞ্চল, এবং এগুলি মূলত পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তানে অবস্থিত। যুদ্ধ ও জ্বালানি সংকটের কারণে বনভূমি দ্রুত বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ডান|থাম্ব|250px|সালাং গিরিপথ আফগানিস্তান এত পর্বতময় যে এগুলির মধ্যকার রাস্তাগুলি দেশটির বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহামতি আলেকজান্ডার কুশান পাসের ভেতর দিয়ে এসে দেশটি আক্রমণ করেন এবং খাইবার পাস দিয়ে বের হয়ে গিয়ে ভারত আক্রমণ করেন। এই একই পথ ধরে মোঘল সম্রাট বাবর ১৫শ শতকে এসে আফগানিস্তান ও ভারত দুই-ই করায়ত্ত করেন। অন্যদিকে সোভিয়েতরা সালাং পাস ও কেন্দ্রীয় হিন্দুকুশে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান দখল করে। নদী ও জলাশয় আফগানিস্তানের বেশির ভাগ প্রধান নদীর উৎপত্তি পার্বত্য জলধারা থেকে। দীর্ঘস্থায়ী শুষ্ক মৌসুমে বেশির ভাগ নদী শীর্ণ ধারায় প্রবাহিত হয়। বসন্তে পর্বতের বরফ গলা শুরু হলে এগুলিতে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। বেশির ভাগ নদীই হ্রদ, জলাভূমি কিংবা নোনাভূমিতে পতিত হয়। এদের মধ্যে কাবুল নদী ব্যতিক্রম; এটি পূর্বে প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানের সিন্ধু নদের সাথে মেশে, যা পরে ভারত মহাসাগরে গিয়ে পতিত হয়। দেশটির একমাত্র নৌ-পরিবহনযোগ্য নদীটি হল উত্তর সীমান্তের আমু দরিয়া। তবে ফেরি নৌকার সাহায্যে অন্যান্য নদীর গভীর এলাকায় যাওয়া যায়। পামির মালভূমি থেকে উৎপন্ন পাঞ্জ ও বখ্‌শ্‌ উপনদী থেকে পানি আমু দরিয়ায় গিয়ে মেশে। হারিরুদ নদী মধ্য আফগানিস্তানে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে ইরানের সাথে সীমান্ত সৃষ্টি করেছে। হারিরুদের পানি হেরাত অঞ্চলে সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়। হেলমান্দ নদী কেন্দ্রীয় হিন্দুকুশ পর্বতমালায় উৎপন্ন হয়ে দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত ইরানে প্রবেশ করেছে। এই নদীটি ব্যাপকভাবে সেচকাজে ব্যবহৃত হয়, তবে ইদানীং এর পানিতে খনিজ লবণের আধিক্য দেখা যাওয়ায় শস্যে পানি দেয়ার কাজে এর উপযোগিতা কমে এসেছে। আফগানিস্তানের হ্রদগুলি সংখ্যায় ও আকারে ছোট। এদের মধ্যে আছে তাজিকিস্তান সীমান্তে ওয়াখান করিডোরে অবস্থিত জার্কোল হ্রদ, বাদাখশানে অবস্থিত শিভেহ হ্রদ এবং গজনীর দক্ষিণে অবস্থিত লবণাক্ত হ্রদ ইস্তাদেহ-ইয়ে মোকোর। সিস্তান হ্রদ বা হামুন-ই-হেলমান্দ হেলমান্দ নদীর শেষসীমায় লবণাক্ত জলা এলাকায় ইরানের সীমান্তে অবস্থিত। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কিছু কিছু নদীতে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিম জলাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। এদের মধ্যে আছে কাবুল শহরের পূর্বে কাবুল নদীর উপরে নির্মিত সারোবি ও নাগলু বাঁধ, হেলমান্দ নদীর উপর নির্মিত কাজাকি জলাধার, এবং কান্দাহার শহরের কাছে হেলমান্দ নদীর একটি উপনদীর উপর নির্মিত আর্গান্দাব বাঁধ। প্রাণী ও জীবজন্তু আফগানিস্তানের উদ্ভিদরাজি সংখ্যায় অল্প কিন্তু বিচিত্র। পর্বতে চিরসবুজ বন, ওক, পপলার, হেজেলনাট ঝাড়, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি দেখা যায়। উত্তরের সমতলভূমি মূলত শুষ্ক, বৃক্ষহীন ঘাসভূমি, আর দক্ষিণ-পশ্চিমের সমভূমি বসবাসের অযোগ্য মরুভূমি। শুষ্ক অঞ্চলের গাছের মধ্যে আছে ক্যামেল থর্ন, লোকোউইড, মিমোসা, ওয়ার্মউড, সেজব্রাশ ইত্যাদি। আফগানিস্তানের বন্য এলাকায় দেখতে পাওয়া প্রাণীর মধ্যে আছে আর্গালি (মার্কো পোলো ভেড়া নামেও পরিচিত), উরিয়াল (মাঝারি আকারের বন্য ভেড়া), আইবেক্স বা বুনো ছাগল, ভালুক, নেকড়ে, শেয়াল, হায়েনা ও বেঁজি। এছাড়াও বন্য শূকর, শজারু, ছুঁচা, বন্য খরগোশ, বাদুড় এবং অনেক তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কিছু কিছু স্তন্যপায়ী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মুখীন গ্যাজেল হরিণ, চিতা, বরফ চিতা, মার্কর ছাগল, এবং বাকত্রীয় হরিণ। আফগানিস্তানে প্রায় ২০০ জাতের পাখিরও দেখা মেলে। ফ্লেমিংগো ও অন্যান্য জলচর পাখি গজনীর উত্তরে ও দক্ষিণে হ্রদ এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়। হাঁস ও তিতিরজাতীয় পাখিও চোখে পড়ে। তবে পাখি অনেক শিকার করা হয় এবং ফলে কিছু কিছু পাখির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন, যেমন - সাইবেরীয় বক। জলবায়ু আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকাতেই অধঃ-সুমেরুদেশীয় পার্বত্য জলবায়ু বিদ্যমান। এখানে শীতকাল শুষ্ক। নিম্নভূমিতে জলবায়ু ঊষর ও অর্ধ-ঊষর। পর্বতগুলিতে ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী কিছু উপত্যকায় মৌসুমী বায়ু নিরক্ষদেশীয় সামুদ্রিক ভেজা বাতাস বহন করে নিয়ে আসে। আফগানিস্তানে মূলত দুইটি ঋতু। গরম গ্রীষ্মকাল এবং অত্যন্ত শীতল শীতকাল। উত্তরের উপত্যকায় গ্রীষ্মে ৪৯° সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শীতকালের মাঝামাঝি সময়ে হিন্দুকুশ ও আশেপাশের ২০০০ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট অঞ্চলে তাপমাত্রা -৯° সেলসিয়াসে নেমে পড়ে। অন্যান্য উঁচু এলাকায় উচ্চতাভেদে তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে। এমনকি একই দিনে তাপমাত্রার ব্যাপক তারতম্য ঘটতে পারে। বরফজমা ভোর থেকে দুপুরে ৩৫° তাপমাত্রা ওঠা বিচিত্র নয়। অক্টোবর ও এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টিপাত হয়। মরুভূমি এলাকায় বছরে ৪ ইঞ্চিরও কম বৃষ্টি পড়ে। অন্যদিকে পর্বত এলাকায় বছরে জলপাতের পরিমাণ ৪০ ইঞ্চিরও বেশি, তবে এর বেশির ভাগই তুষারপাত। পশ্চিমের হাওয়া মাঝে মাঝে বিরাট ধূলিঝড়ের সৃষ্টি করে, আর সূর্যের উত্তাপে স্থানীয় ঘূর্ণিবায়ু ওঠাও সাধারণ ঘটনা। প্রাকৃতিক সম্পদ আফগানিস্তানে ছোট আকারে মণি, সোনা, তামা ও কয়লা উত্তোলনের ইতিহাস থাকলেও প্রণালীবদ্ধভাবে খনিজ আহরণ ১৯৬০-এর দশকের আগে শুরু হয়নি। ১৯৭০-এর দশকে দেশটির উত্তরাঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাসের উল্লেখযোগ্য মজুদ আবিষ্কৃত হয়। এছাড়া পেট্রোলিয়াম ও কয়লাও এখানে পাওয়া যায়। দেশটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তামা, লোহা, বেরাইট, ক্রোমাইট, সীসা, দস্তা, গণ্ধক, লবণ, ইউরেনিয়াম ও অভ্রের মজুদ আছে।Afghanistan , CIA World Factbook. তবে সোভিয়েত আক্রমণ এবং তৎপরবর্তী গৃহযুদ্ধের কারণে আফগানিস্তান এই খনিজ ও জ্বালানি সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি। অদূর ভবিষ্যতে এগুলি নিষ্কাশনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। Afghanistan’s Energy Future and its Potential Implications , Eurasianet.org.Govt plans to lease out Ainak copper mine , Pajhwok Afghan News. বহু শতাব্দী ধরে আফগানিস্তান দুষ্প্রাপ্য ও অর্ধ-দুষ্প্রাপ্য পাথরেরও একটি উৎসস্থল, যাদের মধ্যে আছে নীলকান্তমণি, চুনি, নীলা ও পান্না। পাঞ্জশির প্রদেশ দুষ্প্রাপ্য পান্না পাথরের বিশাল খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। জনপরিসংখ্যান ডান|থাম্ব|300px|একটি পশতু আফগান পরিবার আফগানিস্তানে বহু বিচিত্র জাতির বসবাস। এদের প্রায় সবাই মুসলিম। মধ্য এশিয়া, চীন, ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইরান - এই চার সাংস্কৃতিক অঞ্চলের মিলন ঘটেছে এখানে। ফলে দেশটিতে সৃষ্টি হয়েছে বিপুল ভাষাগত ও জাতিগত বৈচিত্র্য। আফগানিস্তানের মানুষ ইরান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, মঙ্গোলিয়া, চীন, আরব উপদ্বীপ ও আরও বহু জায়গা থেকে এসেছেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের চলাচল, রাজনৈতিক বিপ্লব, আক্রমণ, রাজ্যবিজয় ও যুদ্ধ বহু মানুষকে এই অঞ্চলে নিয়ে আসে। এদেরই কেউ কেউ আফগানিস্তানকে নিজের মাতৃভূমি বানিয়ে নেয়। রাজনৈতিক দল ও জাতিসত্তার ধারণা বহু পরে এই বিচিত্র জাতি-সমাহারের ওপর অনেকটা চাপিয়ে দেয়া হয়। আফগানিস্তানের বর্তমান সীমারেখা ১৮শ শতকের শেষ দিকে দেশটিকে রুশ ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যবর্তী "বাফার" অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয়। এই কৃত্রিম সীমান্ত বহু জাতির ঐতিহ্যবাহী বাসস্থলকে ভাগ করে ফেলে, যাদের মধ্যে আছে পশতু, তাজিক ও উজবেক। বহু যুদ্ধ আফগানিস্তানে জাতিগত বিদ্বেষ জিইয়ে রাখে। এমনকি এখনও আফগানিস্তানে অনেকে জাতি ও আত্মীয়তার বন্ধন রাষ্ট্রীয় বন্ধনের চেয়ে বড় হিসেবে গণ্য করেন। আফগানিস্তানে এ পর্যন্ত একটিমাত্র সরকারি আদমশুমারি সম্পন্ন হয়েছে, ১৯৭৯ সালে। সেটি অনুযায়ী আফগানিস্তানের জনসংখ্যা ছিল প্রায় দেড় কোটি। ২০০৬ সালে এই জনসংখ্যা ৩ কোটি ১০ লক্ষে গিয়ে পৌঁছেছে বলে ধারণা করে হয়। ১৯৭৯ সালের সোভিয়েত আক্রমণের ফলে অনেক আফগান দেশের বাইরে উদ্বাস্তু হিসেবে পাড়ি জমান। এদের মধ্যে ৩০ লক্ষ যান পাকিস্তানে, এবং প্রায় ১৫ লক্ষ চলে যান ইরানে। এছাড়া প্রায় দেড় লাখ আফগান স্থায়ীভাবে বিদেশে পাড়ি জমান এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে বসতি স্থাপন করেন। ২০০১ সালে তালেবান সরকারের পতনের পর অনেক উদ্বাস্তু দেশে ফেরত আসতে থাকেন। ২০০২ সাল নাগাদ প্রায় ১৫ লক্ষ উদ্বাস্তু পাকিস্তান থেকে এবং প্রায় ৪ লক্ষ উদ্বাস্তু ইরান থেকে ফেরত আসেন। তবে এদের সঠিক পুনর্বাসন আফগান সরকারের জন্য সংকটের সৃষ্টি করেছে। বহু উদ্বাস্তু স্থলমাইন-সঙ্কুল, বিমান-আক্রমণে বিধ্বস্ত ও পানির অভাবগ্রস্ত খরা এলাকায় বাস করছেন। ২০০৬ সালে আফগানিস্তানের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধরা হয় ২.৬৭%। আফগানিস্তানের শিশু মৃত্যুর হার বিশ্বে সর্বোচ্চ - ১০০০-এ ১৬০ টি শিশু জন্মেই মারা যায়। এখানে গড় আয়ুষ্কাল ৪৩ বছর। আফগানিস্তানের প্রায় ৭৭ শতাংশ লোক গ্রামে বসবাস করেন। শহরবাসীর অর্ধেক থাকেন রাজধানী কাবুলে। সরকার ব্যবস্থা প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ থাম্ব|ডান|339px|মানচিত্রে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশ আফগানিস্তান প্রশাসনিকভাবে ৩৪টি প্রদেশ বা ওয়েলায়েত-এ বিভক্ত। প্রতি প্রদেশের নিজস্ব রাজধানী আছে। প্রদেশগুলি আবার জেলায় বিভক্ত। একেকটি জেলা সাধারণত একটি করে শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল নিয়ে গঠিত। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী প্রতিটি প্রদেশে একজন করে গভর্নর নিয়োগ করেন। গভর্নর কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রদেশের পুলিশ প্রধানকেও অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী নিয়োগ দেন। শুধুমাত্র কাবুল শহরে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। সেখানে শহরের মেয়রকে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন এবং শহরটির প্রশাসন কাবুল প্রদেশ থেকে স্বাধীন। নিচে আফগানিস্তানের সবগুলি প্রদেশের নাম দেয়া হল (প্রদেশগুলির ক্রমিক সংখ্যা পাশের মানচিত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ)। ১. বাদাখশান, ২. বাদগিস, ৩. বাগলান, ৪. বাল্‌খ, ৫. বামিয়ান, ৬. দাইকুন্ডি, ৭. ফারাহ, ৮. ফারিয়াব, ৯. গজনি, ১০. ঘাওর, ১১. হেলমান্দ, ১২. হেরাত, ১৩. জোওয্‌জান, ১৪. কাবুল, ১৫. কান্দাহার, ১৬. কাপিসা, ১৭. খোস্ত, ১৮. কুনার, ১৯. কুন্দুজ, ২০. লাগমান, ২১. লোওগার, ২২. নানকারহার, ২৩. নিমরুজ, ২৪. নুরেস্তান, ২৫. ওরুজ্‌গান, ২৬. পাক্‌তিয়া, ২৭. পাক্তিকা, ২৮. পাঞ্জশির, ২৯. পারভান, ৩০. সামাংগান, ৩১. সারে বোল, ৩২. তাখার, ৩৩. ওয়ার্দাক, ৩৪. জাবুল শহর থাম্ব|ডান|200px|কাবুল শহর ও তার পেছনের তুষারাবৃত পর্বতসারি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দেশটির পূর্ব-কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত। অন্যান্য প্রধান শহরের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণের কান্দাহার, পশ্চিমের হেরত এবং উত্তরের মাজরে শরীফ। ছোট শহরগুলির মধ্যে আছে পূর্বের জালালাবাদ, কাবুলের উত্তরে অবস্থিত চারিকার, এবং উত্তরের কন্দোজ ও ফয়েজাবাদ। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময়ে ও ১৯৮৯ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার ঠিক পরে গ্রামাঞ্চল থেকে বহু মানুষ জনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে এসে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেয়। ১৯৮০-এর শেষের দিকে কাবুলের জনসংখ্যা বেড়ে প্রায় ২০ লক্ষ হয়ে যায়। তবে ১৯৯০-এর শুরুর দিকের গৃহযুদ্ধের সময় অনেক লোক বিধ্বস্ত কাবুল ছেড়ে পালিয়ে যায়; ফলে ১৯৯৩ সালে এর জনসংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ৭ লক্ষ। তবে ২০০১ সালের পর এর জনসংখ্যা আবার বেড়ে ২০ লক্ষে গিয়ে পৌঁছেছে। বেশির ভাগ শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, পানি শোধন ব্যবস্থা ও জনপরিবহন ব্যবস্থা নেই। অর্থনীতি সোভিয়েত অধিকৃতির আগেই আফগানিস্তানে জীবনযাত্রার মান ছিল বিশ্বের সর্বনিম্ন। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ ও তার পরে গৃহযুদ্ধ দেশটির অর্থনীতির চূড়ান্ত বিপর্যয় ঘটায়। সোভিয়েত আমলে শহরকেন্দ্রিক বাণিজ্য ও শিল্প সুযোগ সুবিধা গ্রামীণ অর্থনীতিকে শুরু থেকে আলাদা করে ফেলে। মাদকদ্রব্য ও অস্ত্রের চোরাচালান চরমে পৌঁছে। আফগানরা মূলত কৃষক ও পশুপালক। ২০শ শতকে খনি ও ভারী শিল্পের উন্নতি ঘটে, তবে স্থানীয় হস্তশিল্প গুরুত্ব হারায়নি। ১৯৫৬ সালে সরকার অনেকগুলি পাঁচসালা পরিকল্পনার প্রথমটি শুরু করে। ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপানের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্যোগে নেয়া প্রকল্পগুলি সাফল্যের মুখ দেখে। অন্যান্য বড় দেশের সহায়তায় আফগানিস্তান রাস্তা, বাঁধ, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, বিমানবন্দর, কারখানা ও সেচ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েতরা আসার পর পশ্চিমী সাহায্য বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯৯১ সালে সোভিয়েত শাসনের মুক্তির পর আবার সাহায্য আসা শুরু হয়। ২০০১ সালে তালেবানদের পতনের পর আফগানিস্তানে নতুন করে আন্তর্জাতিক সাহায্য নিয়ে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। শ্রমশক্তি ২০০৩ সালে আফগানিস্তানের মোট শ্রমিক সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ। এদের প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষিকাজ বা পশুপালনের সাথে জড়িত। যুদ্ধের কারণে আরও অনেক ধরনের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বেকারত্ব এবং দক্ষ শ্রমিক ও প্রশাসকের অভাব সবচেয়ে বড় সমস্যা। কৃষি আফগানিস্তানের খুবই সামান্য এলাকায়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উপত্যকায় কৃষিকাজ সম্ভব এবং এই কৃষিভূমির সবগুলোতেই ব্যাপক সেচের প্রয়োজন হয়। ঝর্ণা ও নদী থেকে খাল (কারেজ বা গানাত) খুঁড়ে পানি আনা হয়। গম আফগানিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শস্য। এরপর রয়েছে যব, ভুট্টা, ও ধান। তুলাও ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। আফগানিস্তান থেকে রপ্তানিকৃত দ্রব্যের মধ্যে ফল ও বাদাম গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের আঙ্গুর ও তরমুজ খুব মিষ্টি হয়; এগুলি দক্ষিণ-পশ্চিমে, হিন্দুকুশের উত্তরে ও হেরাতের আশেপাশের অঞ্চলে জন্মে। আফগানিস্তান কিশমিশও রপ্তানি করে। অন্যান্য ফলের মধ্যে রয়েছে এপ্রিকট, চেরি, ডুমুর, তুঁত, ও বেদানা। উত্তর আফগানিস্তানে বিপুল পরিমাণে কারাকুল ভেড়া পালন করা হয়। এই ভেড়ার শক্ত, কোঁকড়া লোম দিয়ে পারসিক ভেড়ার কোট তৈরি করা হয়। অন্যান্য জাতের ভেড়া ও ছাগলও পালন করা হয়। আফগানিস্তানের আরেকটি পরিচয় অবৈধ আফিম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে এটি মায়ানমারকে হটিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিমাণ আফিম উৎপাদক দেশে পরিণত হয়। এছাড়াও হাশিশও তৈরি হতো। ২০০০ সালের জুলাই মাসে তালেবান সরকার ইসলামে আফিমের ব্যবহার নিষিদ্ধ বলে পপি গাছের চাষ বন্ধ করে দেয়। ২০০১ সালে তালেবানের পতনের গ্রামাঞ্চলের অনেক স্থানীয় দরিদ্র কৃষক আবার আফিম চাষ করা শুরু করে, যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আফিম পপি চাষ নিষিদ্ধ করেছিল। হস্তশিল্প থাম্ব|ডান|300px|ঐতিহ্যবাহী অষ্টভুজাকৃতি "বুখারা" ধাঁচের আফগান কার্পেট তুর্কমেন ও উজবেকরা কার্পেট বানিয়ে থাকে। বালুচীরা জায়নামাজ, পশমের কার্পেট ইত্যাদি বানায়। উটের লোম ও তুলাও মাঝে মাঝে ব্যবহৃত হয়। বিয়ের কনের সাজপোষাকের সুন্দর সূচির কাজ দেখতে পাওয়া যায়। খননশিল্প ১৯৬৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় উত্তর আফগানিস্তানে বড় আকারের প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস আহরণ শুরু হয়। ১৯৮০-র দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে বিপুল পরিমাণে গ্যাস রপ্তানি করা হত, তবে ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের পর তা থেমে যায়। একবিংশ শতকের প্রথম দশকে শেবেরগান শহরের কাছে অবস্থিত মূল গ্যাসক্ষেত্রগুলিতে আবার গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। আফগানিস্তান বিশ্বের উচ্চমানের নীলকান্তমণির অন্যতম সরবরাহকারী। এছাড়াও দেশটিতে অন্যান্য দামী পাথর যেমন পান্না, চুনি ইত্যাদি এবং খনিজ তামা ও লোহা পাওয়া যায়। একাধিক দশকব্যাপী যুদ্ধের কারণে আফগানিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদের আহরণ ও ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত ছিল। বর্তমানে এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ২০০৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপসংস্থা (United States Geological Survey বা USGS) প্রাক্কলন করে যে উত্তর আফগানিস্তানে গড়ে ২৯০ শত কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত খনিজ তেল, ১৫.৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস এবং ৫৬ কোটি ব্যারেল প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে প্রাপ্ত তরল আছে। ২০১১ সালে আফগানিস্তান সরকার গণচীনের জাতীয় পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের সাথে একটি খনিজ তেল অনুসন্ধান সংক্রান্ত ৭ শত কোটি ডলারের একটি চুক্তি সম্পাদন করে, যেখানে দেশটির উত্তরাংশে আমু দরিয়া নদীর পাড় ধরে তিনটি তেলক্ষেত্র স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। আফগানিস্তানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লিথিয়াম রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সংস্থা পেন্টাগনের একটি অভ্যন্তরীণ পত্রে বলা হয় যে আফগানিস্তান "লিথিয়ামের সৌদি আরবে" পরিণত হতে পারে। এছাড়াও দেশটিতে তামা, সোনা, কয়লা, লোহার আকরিক এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ আছে। হেলমান্দ প্রদেশের খানাশিন এলাকার কার্বোনাটাইট শিলাতে ১ কোটি মেট্রিক টনের মত দুর্লভ ধাতু রয়েছে। ২০০৭ সালে চীনের ধাতুগলন গোষ্ঠী নামক সংস্থাকে ৩ শত কোটি টাকার বিনিময়ে ৩০ বছরের জন্য আইনাক তামার খনিটি ভাড়া দেওয়া হয়।"China, Not U.S., Likely to Benefit from Afghanistan's Mineral Riches". এটি আফগানিস্তানের ইতিহাসে বৃহত্তম বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগ ও বেসরকারী ব্যবসা প্রকল্প। ভারতের রাষ্ট্র-পরিচালিত ইস্পাত প্রশাসন কেন্দ্রীয় আফগানিস্তানের হাজিগাক গিরিপথে অবস্থিত বিশাল লৌহ আকরিকের খনিটি খননকাজের অধিকার অর্জন করে।"Indian Group Wins Rights to Mine in Afghanistan's Hajigak ". Businessweek. 6 December 2011 আফগানিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা অনুমান করেন যে দেশটির ৩০% অব্যবহৃত খনিজ সম্পদের মূল্য কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। একজন কর্মকর্তার মতে খনিজ সম্পদ আফগান অর্থনীতির মেরুদণ্ডে পরিণত হবে। উৎপাদন শিল্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী বছরগুলিতে আফগানিস্তানে ভারি শিল্পের বিকাশ ঘটে। ১৯৬৫ সালে পশ্চিম জার্মানি একটি পশম কারখানা স্থাপনের পর পশমের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের আগে আফগানিস্তানে প্রায় ২০০টি সরকারি কারখানা ছিল। এদের মধ্যে ছিল টেক্সটাইল, খাবার (বিশেষত শুকনা খাবার ও ফল), রাসায়নিক সার, সিমেন্ট, চামড়ার দ্রব্য, এবং কয়লার ইট বা চাপড়া বানানোর কারখানা। যুদ্ধের কারণে এগুলির সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শক্তিসম্পদ ডান|থাম্ব|200px|হেলমান্দ নদীর উপর কাজাকাই বাঁধ পেট্রোলিয়াম, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস ও জলবিদ্যুৎ আফগানিস্তানের প্রধান শক্তি-উৎস। পেট্রোলিয়াম মূলত ইরান ও তুর্কমেনিস্তান থেকে আমদানি করা হয়। আফগানিস্তানের নিজস্ব সামান্য তেল সম্পদ উত্তরে আমুদরিয়ার কাছে অবস্থিত। দেশটি কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর বেশি নির্ভরশীল। কাঠের লাকড়িও অনেক ঘরে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তবে বন উচ্ছেদের ফলে এগুলি পাওয়া এখন দোষ্কর হয়ে পড়েছে। কন্দুজ, কাবুল, আর্গান্দবাদ ও হেলমান্দ নদীর উপরের বাঁধগুলি মূলত শহরগুলিতে জলবিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এগুলি সেচের জন্য পানিও ধরে রাখে। গৃহযুদ্ধের আগে দেশটির জলবিদ্যুৎ-ক্ষমতার মাত্র ১০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছিল। যুদ্ধের সময় টারবাইন, ফ্লাডগেট, ট্রান্সমিশন লাইন ইত্যাদি ধ্বংস করে ফেলা হয়। ব্যক্তিগত ডিজেল-চালিত জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হত। ২০০২ সালে তালেবান পতনের পর দেশের পাওয়ার নেটওয়ার্ক আবার নতুন করে তৈরি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। বৈদেশিক বাণিজ্য আফগানিস্তানের রপ্তানিকৃত দ্রব্যের মধ্যে শুকনা ফল ও বাদাম, হস্তনির্মিত কার্পেট, পশম, তুলা, চামড়া, ও নানা ধরনের মণিপাথর প্রধান। আফগানিস্তান বিদেশ থেকে খাদ্য, মোটর যান, পেট্রোলিয়াম, ও কাপড় আমদানি করে। সোভিয়েত রাশিয়া ১৯৭৯-এর সোভিয়েত আগ্রাসনের অনেক আগে থেকেই আফগানিস্তানের প্রধান বাণিজ্যবন্ধু ছিল। ১৯৮০-এর দশকে এই বন্ধুত্ব তীব্রতা পায়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলি, পাকিস্তান, ভারত, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি আফগান পণ্যের প্রধান ক্রেতায় পরিণত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৬ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের সাথে বাণিজ্য স্থগিত রেখেছিল। ২০০০ সালে আফগানিস্তানের মোট রপ্তানি ছিল ১২৫ মিলিয়ন ডলার এবং আমদানির মোট পরিমাণ ছিল ৫২৪ মিলিয়ন ডলার। মুদ্রা ও ব্যাংকিং আফগানিস্তানের মুদ্রার নাম আফগানি। ১০০ পুলে ১ আফগানি। আফগানির বিনিময় হার বহুবার ওঠা নামা করেছে। ১৯৮১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত মূদ্রাস্ফীতি আফগানির ক্রয়ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত করে দেয় এবং তালেবান শাসনামলেও এই ধারা বজায় ছিল। যুদ্ধজনিত মুদ্রাস্ফীতির কারণে আফগানির মূল্য এত কমে যায় যে সরকার নতুন অধিক মূল্যের আফগানি আবার ইস্যু করেন। ২০০২ সালের শেষে এসে আফগানির মূল্য স্থিতিশীল হয় এবং ২০০৭ সালে ১ মার্কিন ডলারে প্রায় ৫০ নতুন আফগানি পাওয়া যেত। আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৯৩৮ সালে স্থাপিত হয়। এটি দেশটির বৃহত্তম ব্যাংক। ১৯৭৫ সালে আফগানিস্তানের সমস্ত বেসরকারী ব্যাংকের জাতীয়করণ করা হয়। আফগানিস্তানে কোন স্টক মার্কেট বা অন্যান্য আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নেই। সাধারণত টাকার "বাজারে" টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন হয়। অনেকেই টাকা ধার নিয়ে থাকেন, যেগুলোর কোন হিসাব রাখা হয় না। যোগাযোগ ব্যবস্থা সড়ক পরিবহন থাম্ব|200px|হেরাতের কাছের মহাসড়কে গাড়ি রুক্ষ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং যথাযথ পরিবহন কাঠামোর অভাবে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে ভ্রমণ অত্যন্ত দুরূহ। দেশের প্রায় ২৪ শতাংশ রাস্তা কাঁচা। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি বৃত্তাকারে প্রধান প্রধান শহরগুলিকে সংযুক্ত করেছে। কাবুল থেকে শুরু হয়ে এই মহাসড়কটি উত্তরে সালাং সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে গিয়ে তাশকুরঘান যায়, তারপর পশ্চিমে মাজরে শরীফ হয়ে মেইমানেহ ও হেরাতে পৌঁছে; এরপর এটি দক্ষিণ-পূর্বে মোড় নিয়ে কান্দাহার যায় ও তারপর আবার উত্তর-পূর্বে গিয়ে কাবুলে ফেরত আসে। আফগানিস্তানের সড়ক ব্যবস্থা দেশটিকে পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত করেছে। উত্তরে জালালাবাদ ও পাকিস্তানের পেশাওয়ার শহর সংযুক্ত, অন্যদিকে দক্ষিণে কান্দাহার ও চামান শহর সংযুক্ত। আরেকটি বড় রাস্তা হেরাত থেকে ইরানে প্রবেশ করেছে। যুদ্ধের কারণে অনেক রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাবুল ও দেশের উত্তরের সাথে যোগসূত্র স্থাপনকারী সালাং সুড়ঙ্গ ১০ বছর বন্ধ থাকার পর ২০০২-এর শুরুতে আবার খুলে দেয়া হয়। কিছু কিছু রাস্তা শীতকালে ও বসন্তকালে বরফ পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। শহরগুলিতে তিন চাকার অটোরিক্সা সাধারণ যানবাহন। অনেক জায়গায় ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়। গ্রামাঞ্চলে আফগানিরা পায়ে হেঁটে, গাধা বা ঘোড়ার কিংবা মাঝে মাঝে উটের পিঠে চড়ে ভ্রমণ করে। আফগানিস্তানের কোন সমুদ্র বন্দর নেই, তাই স্থলপথেই অন্যান্য দেশের সাথে আমদানি-রপ্তানি সম্পন্ন হয়। রেল পরিবহন নগণ্য, তাই দেশের ভেতরে মাল পরিবহন মূলত সড়কপথেই সম্পন্ন হয়। আফগানিস্তানে বাসে ভ্রমণ করা জঙ্গি কার্যকলাপের কারণে বিপজ্জনক। বাসগুলি সাধারণত পুরনো আদলের মার্সেডিজ-বেঞ্জ জাতীয় এবং এগুলি বেসরকারি কোম্পানির মালিকানাধীন। কাবুল-কান্দাহার এবং কাবুল-জালালাবাদ মহাসড়ক গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক দুর্ঘটনা আফগান সড়ক ও মহাসড়কগুলিতে সাধারণ ঘটনা। সড়ক ও মহাসড়কগুলির পুনর্নির্মাণের পরে সম্প্রতি নতুন অটোমোবাইলগুলি আরও ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। তারা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্য দিয়ে আমদানি করা হয়। ২০১২ সালে ১০ বছরের বেশি পুরনো যানবাহন দেশে আমদানি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যের কারণে অর্থনীতির জন্য দেশের রাস্তাঘাটের উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য হল। আফগানিস্তানে ডাক পরিষেবাগুলি জনসাধারণের মালিকানাধীন আফগান পোস্ট এবং ফেডএক্স, ডিএইচএল এবং অন্যান্যদের মতো ব্যক্তিগত কোম্পানি দ্বারা সরবরাহ করা হয়। নৌপরিবহন নৌপরিবহন মূলত আমু দরিয়া নদীতেই সীমাবদ্ধ। আমু দরিয়ার ওপর কেলেফ্‌ত, খয়রাবাদ ও শির খান নদীবন্দরগুলি অবস্থিত। বিমান পরিবহন কাবুল ও কান্দাহারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে। ২০০১ সালে মার্কিনী বোমা হামলায় কাবুল বিমানবন্দর ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু পুনরায় বিমান পরিবহন ব্যবস্থা নির্মাণ প্রকল্পে এটিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। বর্তমানে এই বিমানবন্দরটিই বহির্বিশ্বের সাথে আফগানিস্তানের যোগসূত্র। দেশের ভেতরে আরও কিছু ছোট ছোট বিমানবন্দর আছে। আরিয়ানা আফগান এয়ারলাইন্স জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা। প্রথম বেসরকারী বিমান সংস্থা কাম এয়ার ২০০৩ সালে অভ্যন্তরীণ উড্ডয়ন বা ফ্লাইট চলাচল শুরু করে। আফগানিস্তানে বিমান পরিবহন এয়ারিয়া আফগান এয়ারলাইন্স (এএএ) জাতীয় ক্যারিয়ার, এবং আফগান জেট ইন্টারন্যাশনাল, ইস্ট হরিজন এয়ারলাইন্স, কাম এয়ার, পানির এয়ারওয়েজ এবং সাফী এয়ারওয়েজের মতো বেসরকারি কোম্পানিগুলির দ্বারা সরবরাহ করা হয়। বহির্বিশ্বের কয়েকটি দেশের বিমান পরিবহন সংস্থাও দেশটিতে সেবা প্রদান করে। এর মধ্যে রয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া, এমিরেটস, গালফ এয়ার, ইরান আসেমান এয়ারলাইন্স, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স এবং তুর্কি এয়ারলাইন্স দেশের চারটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (পূর্বে কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর), কান্দাহার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, হেরাত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং মাযার-ই-শরীফ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কাবুল এবং অন্যান্য বড় বড় শহরগুলির সাথে উড়ানের সাথে প্রায় এক ডজন গার্হস্থ্য বিমানবন্দর রয়েছে। রেল পরিবহন ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী আফগানিস্তানে শুধু দুইটি রেলপথ আছে। একটি বালখ প্রদেশের খেইরাবাদ থেকে আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান সীমান্ত পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেলপথ। অন্যটি তোরাগুন্দি থেকে তুর্কমেনিস্তান সীমান্ত পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেলপথ। দুইটি রেলপথই শুধুমাত্র মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং এখন পর্যন্ত যাত্রীবাহী কোন রেলগাড়ি চলাচল করে না। দেশটিতে আরও রেলপথ নির্মাণের বিভিন্ন প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৩ সালে আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতিরা একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে তুর্কমেনিস্তান-আন্দখভোই-মাজার-ই-শরিফ-খেইরাবাদ-এর মধ্যে একটি ২২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক রেলপথ নির্মাণের গোড়াপত্তন করা হয়। এই রেলপথটি উজবেকিস্তান সীমান্তের কাছে খেইরাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত ইতোমধ্যে বিদ্যমান রেলপথের সাথে সংযুক্ত হবে। অন্য আরেকটি পরিকল্পনা অনুসারে আরেকটি রেলপথ রাজধানী কাবুল থেকে পূর্ব দিকে সীমান্ত শহর তোরখাম পর্যন্ত চলে যাবে,যেখানে গিয়ে পথটি পাকিস্তানি রেলব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত হবে। এছাড়াও ইরানের খাফ শহরে থেকে আফগানিস্তানের হেরাত শহর পর্যন্ত একটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষা থাম্ব|225px|কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী আফগানিস্তানে দুই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা বিদ্যমান। একটি হল প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত মাদ্রাসা ব্যবস্থা, যেখানে উলামাগণ কুরআন পড়া ও লেখা এবং প্রাথমিক গণিত শিক্ষা দেন। অন্য শিক্ষাব্যবস্থাটি ১৯৬৪ সালে আফগান সংবিধান অনুসারে পশ্চিমা শিক্ষাব্যবস্থার অনুসরণে প্রবর্তন করা হয়, যেখানে সমস্ত বয়স স্তরে শিক্ষাগ্রহণ বিনামূল্য ও বাধ্যতামূলক ছিল। তবে এই ব্যবস্থার লক্ষ্য পূর্ণ হয়নি। পাঁচ বছরের প্রাথমিক শিক্ষার উপর জোর দেয়া হয়। কাবুল ও অন্যান্য বড় শহরগুলিতে মাধ্যমিক স্কুলের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বেশির ভাগ আফগানই এমন এলাকায় বসবাস করতেন যেখানে কোন স্কুল ছিল না। একাধিক দশকব্যাপী যুদ্ধ দেশটির শিক্ষাব্যবস্থায় ধ্স নামায় এবং একটি প্রজন্ম কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই বড় হয়ে উঠে। গৃহযুদ্ধের কারণে দেশের প্রায় সমস্ত বিদ্যালয় ও উচ্চতর বিদ্যাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বেশির ভাগ শিক্ষক চাকরি ছেড়ে আফগানিস্তান থেকে চলে যান। এর পরে তালেবানেরা এসে মাদ্রাসা ব্যতীত সকল ধরনের স্কুল বন্ধ ঘোষণা করে এবং মহিলাদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করে। কেবল কুরআন শরীফ মুখস্থ করা অণুমোদিত ছিল। ২০০১ সালে তালিবানের পতনের পর দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা আবার নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় নতুন করে শুরু হয়। ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৪০ লাখ ছেলেমেয়ে দেশটির প্রায় ৯,৫০০ স্কুলে শিক্ষাগ্রহণ করে। প্রাথমিক শিক্ষা বিনামূল্য ঘোষণা করা হয়েছে। ১৫ বছরের বেশি বয়সের আফগানদের মধ্যে সাক্ষরতার হার প্রায় ৩৬ শতাংশ হিসাব করা হয়েছে। তবে পুরুষদের সাক্ষরতার হার (৫১%) নারীদের (২১%) চেয়ে অনেক বেশি। আফগান স্কুলগুলিতে দারি, পশতু ও অন্যান্য ভাষা, যেমন- উজবেক ভাষায় পড়ানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সগুলি মূলত দারি ভাষায় পড়ানো হয়। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় দেশটির বৃহত্তম ও সবচেয়ে সম্মানিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯৩৮ থেকে ১৯৬৭ সালের মধ্যে আরও নয়টি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। জালালাবাদে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত ননগরহার বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা ও অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয়। এছাড়া কান্দাহার, হেরাত, বাল্‌খ ও বামিয়ানে ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। ১৯৬১ সালের আগে কেবল পুরুষেরাই স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা লাভ করতে পারতেন। এরপর থেকে সমস্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মহিলাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ২০০৬ সালে সহশিক্ষামূলক আফগানিস্তান মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়; এখানে শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি ভাষা। মাজার-ই-শরীফ শহরে ৬০০ একর এলাকা জুড়ে বাল্‌খ বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। Pakistan grants $10m for Balkh University , Pajhwok Afghan News. সমাজ ও সংস্কৃতি আফগানিস্তানের জনগণ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত। এই জাতিগুলির কতগুলি আবার আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলিতে বসবাস করে। পশতুন জাতি আফগানিস্তানের বৃহত্তম জাতি। তারা বহুদিন ধরে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় ছিল। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের পর তাজিক, উজবেক, হাজারা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগুলির একটি কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় আসে। তবে ১৯৯৬ সালে তালেবানেরা ক্ষমতা দখল করে পশতুন আধিপত্য পুনরায় প্রতিষ্ঠা করে। ২০০১ সালের শেষে তালেবানদের পতনের পর দেশটির প্রধান প্রধান জাতিগত সম্প্রদায়গুলি সরকারি ক্ষমতা অংশীদারী করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৪ সালের আফগান সংবিধানে আফগানিস্তানের বৈচিত্র্যময় জাতিগুলির অধিকার সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ এতে সংখ্যালঘুদের যথেষ্ট ভাষাগত স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ভাষা যেমন উজবেক ও তুর্কমেনীয় ভাষাকে তাদের ভাষাভাষী স্থানীয় এলাকায় সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। দেশটির সবচেয়ে বেশি কথিত ভাষা পশতু ভাষা ও দারি ভাষাকে রাষ্ট্রীয় সরকারি ভাষার মর্যদা দেয়া হয়েছে। আফগানিস্তানের প্রায় দুই-পঞ্চমাংশ জনগণ পশতুন জাতির লোক। হিন্দুকুশ পর্বতের দক্ষিণে এদের ঐতিহ্যবাহী আবাসস্থল। যদিও পশতুনরা আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে বাস করে, তাদের মূল শক্তিকেন্দ্র দেশের দক্ষিণে কান্দাহার প্রদেশে। এছাড়া অনেক পশতুন উত্তর-পশ্চিমে পাকিস্তান সীমান্তে বাস করেন। পুরুষ পশতুনরা প্রাচীন জাতিগত আচার মেনে চলেন, যে আচারে সাহস, ব্যক্তিগত সম্মান, প্রতিজ্ঞা, স্বনির্ভরতা ও আতিথেয়তাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। পশতুনদের মাতৃভাষা পশতু, একটি ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর ভাষা। ধর্ম ধর্মই আফগানিস্তানের বিভক্ত জাতিসত্তার দৃঢ়তম বন্ধন। আফগানদের প্রায় ৯৯ শতাংশই মুসলিম। এদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ সুন্নি এবং প্রায় ১৫ শতাংশ শিয়া মুসলিম। শহরগুলিতে অল্পসংখ্যক হিন্দু, শিখ, পারসিক ও ইহুদী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। ১৯৬০-এর দশক থেকে অনেক আফগান ইহুদী ইসরায়েলে পাড়ি দিয়েছেন। হযরত আলির কবর মাজার-এ-শরিফ অনেক মুসলিমের তীর্থস্থল। আফগান জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হলেন মোল্লা। যেকোন পুরুষ যিনি কুরআন শরীফ মুখস্থ বলতে পারেন, তিনি মোল্লা হওয়ার যোগ্য । মোল্লারা শুক্রবারের প্রার্থনা, বিয়ে ও দাফনকাজ পরিচালনা করেন। মোল্লারা মানুষদের ইসলামের বিধিবিধান শিক্ষা দেন। তারা ইসলামী আইননুসারে সংঘাত নিরসন করেন এবং শারীরিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান দেন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় মোল্লা ও স্থানীয় জমিদার (খান) মিলে নির্ধারণ করেন তাদের অনুসারীরা কী করতে পারবে বা পারবে না। সাহিত্য আফগানিস্তানে গল্প-গাঁথা বলার শিল্প এখনও সগৌরবে বিরাজমান, সম্ভবত ব্যাপক নিরক্ষরতার কারণেই এই শিল্পটি হারিয়ে যায়নি। সঙ্গীতের সাথে লোকগাঁথা বর্ণনা করার ঐতিহ্য আজও আদৃত। এই লোকগাথাগুলি বর্তমানের আফগানদেরকে অতীতের কথা মনে করিয়ে দেয়। আফগান জীবনের সমস্ত দিক নিয়েই এই গাথাগুলি রচিত এবং এগুলির মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও আচরণ শিক্ষা দেয়া হয়। ইসলামী পর্বে দারি ও পশতু উভয় ভাষার সাহিত্যের বিকাশ ঘটে এবং আরবি লিপির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। ১০১০ সালে ফেরদৌসী তার মহাকাব্য শাহনামা রচনা শেষ করেন। এতে দারি ভাষায় লেখা প্রায় ৬০,০০০ দুই-পঙক্তির ছড়া আছে। দারি ও তুর্কি-জাতীয় ভাষায় আরও অনেক কাব্য ও গাথা রচিত হয়। ১৩শ শতকে সুফীসাধক ও কবি জালাল আল-দীন রুমি মহাকাব্য মসনবী-ইয়ে মানাবী রচনা করেন, যা ইসলামী সাহিত্য ও চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব ফেলে। ১৭শ শতকের বিখ্যাত যোদ্ধা ও কবি খুশহাল কাট্টাক কবিতার মাধ্যমে উপজাতীয় আচার-আচরণের নিয়ম প্রদান করতেন। আধুনিক আফগান সাহিত্যে আধুনিক বিশ্বের নানা ধারণা স্থান পেয়েছে। ১৯৭২ সালে সৈয়দ বোরহানউদ্দীন মাজরুহ বহুখণ্ডবিশিষ্ট ধ্রুপদী, ছন্দময় দারি গদ্য রচনা করেন, যাতে কারণ, যুক্তি, বিজ্ঞান ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ আলোচিত হয়। সোভিয়েতদের সাথে যুদ্ধের সময় ইসলাম ও মুক্তি বিষয় হিসেবে প্রাধান্য পায়। ১৯৮৩-তে গুলজারাক জাদরান পশতু ভাষায় জিহাদের ওপর বই লেখেন। আফগানিস্তান ইতিহাস সোসাইটি ও পশতু অ্যাকাডেমি নতুন লেখকদের উৎসাহিত করার জন্য সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করতেন, তবে গৃহযুদ্ধের কারণে তাদের প্রচেষ্টা অনেকাংশেই ব্যাহত হয়। শিল্পকলা ও স্থাপত্য ডান|থাম্ব|150px|জাম শহরের মিনার থাম্ব|250px|ডান|নীল আকাশের নিচে বিখ্যাত নীলরঙা মাজার-ই-শরিফ ও তার সামনে দুই নীল বোরখা পরিহিতা মহিলা আফগানিস্তানে সব যুগের স্থাপত্যকলার নিদর্শন পাওয়া যায়, যাদের মধ্যে আছে গ্রিক ও বৌদ্ধ স্থাপত্যের ধ্বংসস্তুপ, মন্দির, খিলান, স্তম্ভ, সূক্ষ্ম কারুকাজময় ইসলামী মিনার ও দুর্গ। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হেরাত ও মাজার-ই-শরিফের মসজিদদ্বয়, পশ্চিম-মধ্য উঁচু এলাকার জাম শহরের একটি মসজিদের মিনার, ১০০০ বছরের পুরনো কালে-ইয়ে বোস্তের মহান খিলান, চেল জিনা (চল্লিশ ধাপ), কান্দাহারের সম্রাট বাবরের রেখে যাওয়া পাথরের খোদাইকর্ম, বামিয়ানের বুদ্ধ (যা ২০০১ সালের মার্চে তালেবানরা ধ্বংস করে ফেলে), গজনীর বিজয় চূড়া, বাবরের সমাধি ও কাবুলের বালা হিস্‌সার। ক্ষুদ্র আকারের শিল্পকলার মধ্যে হেরাতের হালকা নীল-সবুজ টাইলের কাজ, রঙিন ক্যালিগ্রাফি বা হস্তলেখাশিল্প উল্লেখ্য। সোনা ও রূপার গয়না, সূচিশিল্প, ও চামড়ার বিভিন্ন দ্রব্য আজও ঘরে ঘরে বানানো হয়। তবে আফগানিস্তানের সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্পকর্ম হল পারসিক-ধাঁচে বানানো কার্পেট। সঙ্গীত আফগানিস্তানের সঙ্গীত মূলত ঐতিহ্যবাহী লোক সঙ্গীত, গাথা ও নৃত্য। তার দিয়ে তৈরি বাদ্যযন্ত্র রোহাবকে পশ্চিমের ভায়োলিন বা চেল্লোর পুরানো রূপ হিসেবে মনে করা হয়। অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে আছে সন্তুর, হারমোনিয়াম, চং, এবং তবলা ও ঢোল। পশতুন অঞ্চলের আত্তান নৃত্য জাতীয় নৃত্য। এতে নর্তকেরা একটি বড় বৃত্তে দাঁড়িয়ে হাততালি দেন এবং দ্রুত লয়ে সঙ্গীতের ছন্দের সাথে পা নাড়ান। ছুটির দিনে বা সপ্তাহের শেষে আফগানেরা নদীর তীরে বা বনে পিকনিকে গিয়ে গান গাইতে ও শুনতে পছন্দ করেন। গ্রন্থাগার ও জাদুঘর স্বল্পসংখ্যক প্রধান গ্রন্থাগারগুলি কাবুলে অবস্থিত। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ১৯৩১ সালে স্থাপিত হয় এবং সোভিয়েতদের সাথে যুদ্ধে ও পরবর্তীকালে গৃহযুদ্ধের সময় এর বহু বই চুরি হয়ে যায়। জাতীয় আর্কাইভও লুট হয়। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত কাবুল জাতীয় জাদুঘর দেশটির সর্ববৃহৎ জাদুঘর এবং এটি প্রাচীন বৌদ্ধ নিদর্শনের সংগ্রহের জন্য এককালে পরিচিত ছিল। এই সংগ্রহ থেকে কিছু উচ্চমূল্যের বৌদ্ধ নিদর্শন সোভিয়েত ইউনিয়নে পাচার হয়ে যায়। ১৯৯৩ সালে রকেট হামলা করে যাদুঘরটি খুলে লুট করা হয়। বেশির ভাগ দোষ্প্রাপ্য দ্রব্য পাকিস্তান হয়ে চলে যায় এবং অন্য দেশের ধনী সংগ্রাহকদের কাছে বেচা হয়। আফগান প্রাচীন নিদর্শনের অবৈধ ব্যবসা এ সময় অবৈধ ড্রাগসের ব্যবসার পরেই সবচেয়ে বেশি অর্থের ব্যবসা ছিল। ২০০০ সালে তালেবান পুলিশ জাদুঘরের অবশিষ্ট ২৭০০ শিল্পকর্ম, যাদের মধ্যে অনেক প্রাচীন সাংস্কৃতিক সম্পদ ছিল, মূর্তিপূজা আখ্যা দিয়ে ইসলামের নামে ধ্বংস করে ফেলে। তালেবানের পতনের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলিতে আরেক দফা লুটতরাজ ঘটে। গণমাধ্যম ১৯৭৮ সালে জাপানি অর্থানুকূল্যে কাবুলে আফগানিস্তানের প্রথম টেলিভিশন স্টেশন আফগানিস্তান জাতীয় টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু করে। তবে তালিবানেরা ক্ষমতায় আসার পর টেলিভিশন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০০১ সালে তালিবানদের পতনের পর আবার কাবুলে টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু হয়। ১৮৭৫ সালে আফগানিস্তানে প্রথম সংবাদপত্র ছাপা হয়, এবং ১৯০০ সালের ঠিক পরে আরও দুইটি ছোট ছোট সংবাদপত্র প্রকাশিত হত। ১৯১৯ সালে রাজা আমানুল্লাহ শাসনভার হাতে নেওয়ার পর প্রায় ১৫টি সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন বিকাশ লাভ করে। ১৯৫০-এর দিকে আফগানিস্তানের ৯৫% ছাপা বই ও সংবাদ সরকারিভাবে প্রকাশিত হত। ১৯৬২ সালে প্রথম ইংরেজি দৈনিক হিসেবে কাবুল টাইম্‌স আত্মপ্রকাশ করে। এছাড়া বাখতার সংবাদ সংস্থাও অনেক বিদেশী খবর পরিবেশন করত। ১৯৭৮ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর কাবুল টাইম্‌সের নাম বদলে কাবুল নিউ টাইম্‌স রাখা হয় এবং এতে সাম্যবাদী ধারার খবরাখবর প্রকাশিত হত। এই পত্রিকাটি ছিল ঘোর-পাশ্চাত্যবিরোধী। এর প্রতিবাদে গোপনে শবনম নামে একটি সরকারবিরোধী পত্রিকা কাবুলে প্রকাশিত হত। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে ১২টি দৈনিক পত্রিকা ছিল, কিন্তু তালিবানেরা ক্ষমতায় আসার পর এগুলির সবই বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৮ সালে তালিবানেরা এদের মধ্য থেকে দুইটিকে নিজস্ব প্রচারমাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার জন্য আবার চালু করে। ২০০২ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রদানকারী আইন পাশ করে। এর পর প্রায় ১০০টি সংবাদপত্র আফগানিস্তানে প্রকাশিত হতে শুরু করে। বর্তমানে সাপ্তাহিক কাবুল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সংবাদপত্র। টীকা ২। আফগানিস্তান সার্কভুক্ত একটি দেশ। তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি বহিঃসংযোগ General information BBC News Country Profile - Afghanistan Afghanistan's Paper Money সরকার ও প্রতিষ্ঠানসমূহ Offical Website of Afghanistan Official Website of the President of Afghanistan Laws of Afghanistan Afghanistan Customs Da Afghanistan Bank (Central Bank) Afghanistan National Development Strategy (ANDS) Afghanistan Investment Support Agency (AISA) Royal House of Afghanistan সংস্কৃতি Afghanistan Cultural Profile - Afghanistan national cultural portal News from Afghanistan Afghanistan Online News, Information, Pictures from Afghanistan Local Afghan News Bakhtar News Agency (Official Afghan Agency) General Afghan Information and Entertainment Portal অন্যান্য Picture galleries from Kabul and Afghanistan Old photos of Afghanistan Return to Afghanistan - Short films by the Washington Post on the New Afghanistan British Royal College for Defense Studies analyses and proposes a war in August 2001 বিষয়শ্রেণী:এশিয়ার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বিষয়শ্রেণী:ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:সার্কের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:স্বল্পোন্নত দেশ বিষয়শ্রেণী:ইসলামি রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:মধ্য এশীয় রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আমিরাত বিষয়শ্রেণী:ইরানীয় মালভূমি বিষয়শ্রেণী:স্থলবেষ্টিত দেশ বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ধর্মশাসক বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
আলবেনিয়া
https://bn.wikipedia.org/wiki/আলবেনিয়া
আলবেনিয়া (আলবেনীয় ভাষায়: Shqipëri শ্চিপ্যরি) দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বলকান উপদ্বীপের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। দেশটি পশ্চিম দিক থেকে আদ্রিয়াতিক সাগর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে আইওনীয় সাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত; উপকূলীয় তটরেখার দৈর্ঘ্য ৩৬২ কিলোমিটার। দেশটির পূর্ণ সরকারি নাম আলবেনিয়া প্রজাতন্ত্র। আলেবেনীয় ভাষার দেশটির নাম "শ্চিপ্যরি", যার অর্থ "ঈগলদের দেশ"। এর রাজধানী ও বৃহত্তম নগরীর নাম তিরানা। এখানে প্রায় ২৯ লক্ষ লোক বাস করে। দেশটির আয়তন ২৮৭৪৮ বর্গকিলোমিটার । জনঘনত্ব প্রতি বর্গমাইলে ২৭৪ জন। দুই সাগরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এই দেশটির ৭০ শতাংশ ভূমিই খুব বন্ধুর। দেশটির সর্বোচ্চ স্থান দিবারের কোরাব সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৭৫৩ মিটার ওপরে অবস্থিত। আলবেনিয়াতে আদ্রিয়াতিক সাগরের তীরে একটি সরু উপকূলীয় সমভূমি অবস্থিত। দেশের অভ্যন্তরভাগ মূলত পাহাড়-পর্বতে পূর্ণ। দেশের প্রায় ৪০% অংশ অরণ্য ও স্ক্রাবে আবৃত। দেশটির জলবায়ু ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় প্রকৃতির। গ্রীষ্মকালগুলি উষ্ণ এবং শীতকালগুলি শীতল। পার্বত্য অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টি বা তুষারপাত হয়। আলবেনিয়া ইতিহাসে বহুবার পূর্বের ইতালীয় শক্তি ও পশ্চিমের বলকান শক্তির কাছে নত হয়েছে। ১৫শ শতকে আলবেনিয়া উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে আসে এবং শেষ পর্যন্ত ১৯১২ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। ইস্কান্দর বে আলবেনীয় জাতির পিতা হিসেবে পরিচিত। ১৯৪৪ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এটি একটি সাম্যবাদী রাষ্ট্র ছিল। ১৯৯১ সালে দেশটি গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতি ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে রূপান্তর শুরু করে এবং পূর্ব ইউরোপের সর্বশেষ দেশ হিসেবে অর্থনীতির উদারীকরণ সম্পন্ন করে। ১৯৯০-এর দশকে দেশটিতে আঞ্চলিক সংঘাতের কারণে দেশটির জীবনযাত্রায় সমস্যার সৃষ্টি করেছে। দেশটির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও বিচারবিভাগীয় সংস্কারের গতি অত্যন্ত মন্থর। দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে ২০১৪ সালে প্রার্থী হয়। একসময় আলবেনিয়া বিশ্বের একমাত্র সরকারীভাবে নাস্তিক রাষ্ট্র ছিল। বর্তমানে এখানে আবার মসজিদ ও গির্জা খুলেছে। দেশের দক্ষিণভাগে অবস্থিত সংখ্যালঘু গ্রিক সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রচুর বৈষম্যের শিকার। আলবেনিয়ার জনগণ আলবেনীয় ভাষাতে কথা বলে, যা দেশটির সরকারি ভাষা। এছাড়া গ্রিক ভাষার প্রচলন আছে। দেশের ৬৮% জনগণ সুন্নি মতাদর্শের ইসলাম ধর্মাবলম্বী। ১২% লোক ক্যাথলিক মণ্ডলীর খ্রিষ্টান, ৮% আলবেনীয় প্রথানুবর্তী খ্রিষ্টান এবং ৬% অধার্মিক। জাতিগতভাবে ৯৮% আলবেনীয় জাতির লোক এবং ১% গ্রিক। এখানে একটি সংসদীয় শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান। আলবেনিয়ার অবকাঠামো খুবই প্রাথমিক পর্যায়ের। বিদেশি বিনিয়োগও কম। সংগঠিত অপরাধীরা দেশের একটি বড় সমস্যা। তবে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। দেশটির মুদ্রার নাম লেক; ১ লেক ১০০ কিনদার্কার সমান। ইতিহাস আলবেনিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে বলকান উপদ্বীপে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। প্রাচীন ইতিহাস বর্তমান আলবেনীয়রা সম্ভবত ইলিরীয় জাতির লোকদের বংশধর। দক্ষিণ বলকান অঞ্চলে গ্রিক, রোমান ও স্লাভ জাতির লোকেরা অভিবাসন করার অনেক আগে থেকেই ইলিরীয় জাতির লোকেরা বাস করত। খ্রিস্টপূর্ব ৭ম ও ৬ষ্ঠ শতকে গ্রিকেরা আলবেনিয়ার উপকূলে অনেকগুলি বসতি স্থাপন করে; এগুলির মধ্যে ছিল এপিদামনুস (বর্তমান দুররেস) এবং আপোল্লোনিয়া (বর্তমান ভ্‌লোরে)। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতক নাগাদ এই বসতিগুলির পতন হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত এগুলি বিলীন হয়ে যায়। গ্রিকেরা চলে যাবার পর এই এলাকায় আদিকাল থেকে বসবাসকারী ইলিরীয় সমাজের বিবর্তন ঘটে এবং এতে জটিলতর রাজনৈতিক সংগঠন যেমন ফেডারেশন, রাজ্য, ইত্যাদির আবির্ভাব ঘটে। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইলিরীয় রাজ্যটি খ্রিস্টপূর্ব ৫ম ও ২য় শতকের মধ্যবর্তী সময়ে টিকে ছিল। একই সময়ে আড্রিয়াটিক সাগরের অপর তীরে ইতালীয় উপদ্বীপে রোমের বিস্তার ঘটছিল। রোমানরা ইলিরিয়াকে পূর্ব দিকের দেশগুলি বিজয়ের একটি আরম্ভকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করত। ২২৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দেই রোমানরা আড্রিয়াটিক সাগর পাড়ি দিয়ে ইলিরিয়া আক্রমণ করে। ১৬৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ ইলিরিয়াতে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। তারা এটিকে রোম সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত করে এবং নাম দেয় ইলিরিকুম। রোমানরা এর পর প্রায় ৬ শতাব্দী ধরে এলাকাটি শাসন করে। কিন্তু ইলিরীয়রা রোমান সংস্কৃতির সাথে মিশে না গিয়ে নিজেদের স্বকীয় সংস্কৃতি ও ভাষা ধরে রাখে। তা সত্ত্বেও অনেক ইলিরীয় রোমান সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জনে সক্ষম হন। অনেক ইলিরীয় বংশোদ্ভূত পরবর্তীকালে রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাটও হন। এদের মধ্যে আছেন আউরেলিয়ান (২৭০-২৭৫ খ্রিষ্টাব্দ), দিওক্লেতিয়ান (২৮৪-৩০৫ খ্রিষ্টাব্দ), এবং মহান কন্সতান্তিন (৩০৬-৩৩৭ খ্রিষ্টাব্দ)। ১ম শতকের মাঝামাঝি নাগাদ ইলিরিকুমে খ্রিস্টধর্ম প্রভাব ফেলতে থাকে এবং ৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সাধু পল এপিদামনুস নগরের জন্য একজন যাজক নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে আপোল্লোনিয়া এবং স্কোদ্রা (বর্তমান শ্‌কোদার) শহরে বিশপদের কর্মস্থল নির্মাণ করা হয়। বাইজেন্টীয় শাসন ৩৯৫ সালে রোমান সাম্রাজ্য পূর্ব ও পশ্চিমে দুইটি সাম্রাজ্যে ভাগ হয়ে যায়। আধুনিক আলবেনিয়া এলাকাটি পূর্ব অংশে তথা বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্যে পড়ে। অনেক ইলিরীয় পরবর্তীতে বাইজেন্টীয় সম্রাট হন। এদের মধ্যে ১ম জুস্তিনিয়ান (৫২৭-৫৬৫) অন্যতম। ৫ম শতক নাগাদ এখানে খ্রিস্টধর্ম একটি প্রতিষ্ঠিত ধর্মে পরিণত হয়। আলেবেনিয়ার খ্রিস্টানেরা বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্যের প্রজা হয়েও রোমান পোপের অধীনে ছিলেন। ৫ম শতকে ভিজিগথ, হুন এবং অস্ট্রোগথেরা অঞ্চলটি আক্রমণ করে এর অশেষ ক্ষতিসাধন করে। ৬ষ্ঠ ও ৮ম শতকের মধ্যবর্তী সময়ে ইলিরিয়া অঞ্চলটিতে স্লাভ জাতির লোকেরা বসতি স্থাপন করে। বহু ইলিরীয় স্লাভদের সাথে মিশে যায় এবং বর্তমান স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, সার্বিয়া এলাকাগুলির মানুষদের পূর্বপুরুষ গঠন করে। কিন্তু দক্ষিণ ইলিরীয় অঞ্চলের লোকেরা, যার মধ্যে আধুনিক আলবেনিয়াও পড়েছে, স্লাভদের সাথে মিশ্রণ রোধ করে। ৭৩২ খ্রিষ্টাব্দে বাইজেন্টীয় সম্রাট ৩য় লিও আলবেনীয় গির্জার সাথে রোমের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং একে কন্সতান্তিনোপলের (বর্তমান ইস্তানবুল) ধর্মগুরুর অধীনে আনেন। ৮ম থেকে ১১শ শতকের মধ্যে ইলিরিয়া ধীরে ধীরে আলবেনিয়া নামে পরিচিত হতে শুরু করে। নামটি এসেছে মধ্য আলবেনিয়াতে বসবাসকারী আলবানোস জাতির লোকদের নাম থেকে। বর্তমান আলবেনীয়রা নিজেদের দেশকে শকিপারিয়া (ঈগলের দেশ) নামে ডাকে, কিন্তু এই নামটির উৎস নির্ধারণ করা যায়নি। তবে পণ্ডিতেরা একমত যে শকিপারিয়া নামটি ১৬শ শতকে আলবেনিয়া নামটিকে প্রতিস্থাপন করে। ৯ম শতকে বাইজেন্টীয় সম্রাটের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হতে শুরু করে। ফলে প্রথমে বুলগেরীয় স্লাভ, নর্মান ক্রুসেডার, ইতালীয় আঙ্গেভিন, সার্ব এবং ভেনিসীয় জাতির লোকেরা পর্যায়ক্রমে অঞ্চলটি আক্রমণ করে। ১০ম শতকের পরে এখানে একটি জমিদারী প্রথা গড়ে ওঠে। কৃষক সৈন্যরা যারা আগে সামরিক নেতাদের অধীনে যুদ্ধ করেছিল, তারা জমিদারদের খামারে কাজ করা শুরু করে। এসময় অঞ্চলটির কিছু প্রদেশ কন্সতানিনোপল থেকে প্রায় সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে চলতে থাকে। ১০৫৪ সালে যখন খ্রিস্টান গির্জা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পূর্ব ও পশ্চিম গির্জায় ভাগ হয়ে যায়, তখন দক্ষিণ আলবেনিয়া পূর্ব বা অর্থডক্স গির্জার সাথে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখে। অন্যদিকে উত্তর আলবেনিয়া রোমের রোমান ক্যাথলিক গির্জার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে। মধ্যযুগে (৫ম থেকে ১৫শ শতক) আলবেনিয়ার শহরগুলির প্রসার ঘটে এবং বাণিজ্যেরও উন্নতি হয়, বিশেষ করে আড্রিয়াটিক অঞ্চলে। শহরের উন্নতির সাথে সাথে শিল্পকলা, সংস্কৃতি, এবং শিক্ষারও উন্নতি ঘটে। আলবেনীয় ভাষা বেঁচে থাকলেও গির্জা, সরকার ও শিক্ষাব্যবস্থায় এটির ব্যবহার ছিল না। বরং গ্রিক ও লাতিন ভাষাই সাহিত্য ও সংস্কৃতির সরকারি ভাষা হিসেবে থেকে যায়। উসমানীয়দের বিজয় ১৩৪৭ সালে স্তেফান দুসানের অধীনে সার্বীয়রা আলবেনিয়া দখল করলে আলবেনীয়রা গণহারে গ্রিসে পালিয়ে যায়। ১৪শ শতকের মাঝামাঝি সময়েই বাইজেন্টীয় শাসনের পতন ঘটে এবং বর্তমান তুরস্ক-অঞ্চলভিত্তিক উসমানীয়রা ১৩৮৮ সালে আলবেনিয়া আক্রমণ করে। ১৪৩০ সালের মধ্যেই উসমানীয়রা আলবেনিয়া বিজয়ে সক্ষম হয়। কিন্তু ১৪৪০-এর দশকে গিয়ের্গি কাস্ত্রিওতি দেশটির জমিদারদের একত্রিত ও সংগঠিত করে উসমানীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। রোম, নাপোলি, এবং ভেনিসের সামরিক সাহায্য নিয়ে কাস্ত্রিওতি প্রায় ২৫ বছর সফলভাবে উসমানীয়দের ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর আলেবেনিয়ার প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে এবং ১৫০৬ সালে উসমানীয়রা পুনরায় আলবেনিয়া দখলে সক্ষম হয়। দেশটির জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ লোক ইতালি, সিসিলি, এবং আড্রিয়াটিক সাগরের ডালমেশীয় উপকূলে পালিয়ে যায়। কাস্ত্রিওতি তথা স্কেন্দারবেগকে আজও আলবেনীয়রা তাদের জাতীয় ঐক্য ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে পরম শ্রদ্ধা করে। উসমানীয়রা চার শতাব্দী ধরে শাসন করলেও সম্পূর্ণ আলবেনিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে কখনোই সক্ষম হয়নি। উচ্চভূমি অঞ্চলে উসমানীয়দের নিয়ন্ত্রণ ছিল দুর্বল; সেখানকার আলবেনীয়রা কর প্রদানে এবং সামরিক সেবায় অংশ নিতে অসম্মতি প্রকাশ করত। আলবেনীয়রা অনেকগুলি বিদ্রোহে অংশ নেয়; খ্রিস্টধর্মের উপর বিশ্বাস রক্ষা করা এগুলির পেছনে আংশিক কারণ হিসেবে কাজ করেছিল। ১৬শ শতকের শেষে উসমানীয়রা ভবিষ্যৎ বিদ্রোহ প্রতিরোধের লক্ষ্যে আলবেনীয়দের ইসলামীকরণের নীতি গ্রহণ করে। ১৭শ শতকের মাঝামাঝি আলবেনীয় জনগণের দুই-তৃতীয়াংশ ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে যায়। অনেকেই খ্রিস্টানদের উপর ধার্য অতিরিক্ত করের বোঝা এড়াতেই এমনটি করে। উসমানীয়রা একটি সামন্ত-সামরিক মিশ্র ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারিত করে; এই ব্যবস্থায় যেসব সামরিক নেতারা সাম্রাজ্যের অণুগত ছিলেন, তারা জমিদারি লাভ করতেন। ১৮শ শতকে উসমানীয় ক্ষমতার ক্ষয় ঘটতে শুরু করে এবং ফলে আলবেনিয়ার কিছু সামরিক নেতার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৭৫০ থেকে ১৮৩১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে উত্তর আলবেনিয়ার অধিকাংশ এলাকা ছিল বুশাতি পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে আলি পাশা তেপেলিন ১৭৮৮ থেকে ১৮২২ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আলবেনিয়া ও উত্তর গ্রিস নিয়ন্ত্রণ করেন। এই স্থানীয় শাসকেরা নিজেদের আলাদা রাজ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু উসমানীয় সুলতান ২য় মাহমুদ তাদেরকে পরাজিত করেন। ১৮শ ও ১৯শ শতকে অনেক আলবেনীয় উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রশাসনে উচ্চপর্যায়ে অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়। দুই ডজনেরও বেশি আলবেনীয় বংশোদ্ভূত লোক উসমানীয় সুলতানের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। আলবেনিয়ার স্বাধীনতা ১৯শ শতকে বলকান অঞ্চলের অনেক পরাধীন মানুষ নিজেদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ১৮৭৮ সালে আলবেনীয় নেতারা কসভোর প্রিজরেন শহরে মিলিত হন এবং প্রিজরেনের লিগ তথা আলবেনীয় লিগ গঠন করেন। লিগের উদ্দেশ্য ছিল সমস্ত আলবেনীয় অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে একটি একত্রিত আলবেনিয়া গঠন। লিগ আলবেনীয় ভাষা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নেরও লক্ষ্য হাতে নেয়। ১৯০৮ সালে আলবেনীয় নেতারা লাতিন লিপির উপর ভিত্তি করে একটি জাতীয় বর্ণমালা প্রবর্তন করেন। ১৯১০ থেকে ১৯১২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আলবেনীয় জাতীয়তাবাদীরা উসমানীয়দের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়। প্রথম বলকান যুদ্ধ নামে পরিচিত এই যুদ্ধে সার্ব, গ্রিক ও বুলগেরীয় সেনারাও যোগ দেয় এবং উসমানীয়রা এতে পরাজয় বরণ করে। যুদ্ধ শেষ হবার পর পরই আলবেনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে। যুদ্ধের পর যুক্তরাজ্য, জার্মানি, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স ও ইতালি (মহাশক্তিসমূহ) একটি সম্মেলনে আলবেনিয়ার স্বাধীনতা মেনে নেয়, কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলির প্রবল চাপের মুখে তারা আলবেনীয় অধ্যুষিত কসোভো অঞ্চলটি সার্বিয়াকে এবং কামেরিয়া অঞ্চলটির অধিকাংশ গ্রিসকে দিয়ে দেয়। এর ফলে আলবেনীয় জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই সদ্যপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের সীমানার বাইরে পড়ে যায়। মহাশক্তি রাষ্ট্রগুলি একজন জার্মান রাজপুত্র ভিলহেল্ম ৎসু ভিডকে আলবেনিয়ার শাসক নিয়োগ করে, কিন্তু তিনি মাত্র ছয় মাস ক্ষমতায় ছিলেন। এর পরই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এসময় অস্ট্রীয়, ফরাসি, ইতালীয়, গ্রিক, মন্টেনেগ্রীয় এবং সার্বীয় সেনারা আলবেনিয়া দখল করে। দেশটিতে রাজনৈতিক নেতৃত্বহীনতা দেখা দেয়। বিশ্বযুদ্ধের পরে প্যারিস শান্তি সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন আলবেনিয়াকে ভাগ করে তার প্রতিবেশিদের দিয়ে দিয়ে দেবার ব্রিটিশ-ফরাসি-ইতালীয় পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ভেটো দেন। ১৯২০ সালে আলবেনিয়াকে সদ্য সংগঠিত লিগ অফ নেশন্‌স-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়, ফলে দেশটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯২০-এর দশকে আলবেনিয়ার জনগণ দুইটি বিরুদ্ধ রাজনৈতিক শক্তির অধীনে গভীরভাবে দ্বিধাভক্ত ছিল। আহমেদ বেই জোগুর নেতৃত্বে জমিদার ও গোত্রপ্রধানদের একটি রক্ষণশীল শ্রেণী অতীতের সমাজকাঠামো ধরে রাখতে চাচ্ছিল। অন্যদিকে উদারপন্থী বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, ও ব্যবসায়ীরা আলবেনিয়ার আধুনিকীকরণ চেয়েছিলেন। উদারপন্থীদের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাপ্রাপ্ত অর্থডক্স গির্জার বিশপ ফান নোলি। ১৯২৪ সালে রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে এক গণবিপ্লবের ফলে জোগু ইউগোস্লাভিয়াতে পালিয়ে যান। নোলি নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন এবং পশ্চিমা ধাঁচের একটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মন দেন। কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মাথায়, আন্তর্জাতিক সমর্থনের অভাবে ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার হয়ে নোলি ক্ষমতাচ্যুত হন ও জোগু ইউগোস্লাভিয়ার সহায়তায় আবার ক্ষমতায় আসেন। জোগু এরপর ১৪ বছর শাসন করেন। প্রথমে রাষ্ট্রপতি হিসেবে (১৯২৫-১৯২৮) এবং তারপর রাজা প্রথম জোগ হিসেবে (১৯২৮-১৯৩৯)। জোগের স্বৈরশাসনে আলবেনিয়ার অর্থনীতি ছিল স্থবির, তবে তিনি আলবেনিয়াতে একটি আধুনিক স্কুল ব্যবস্থা দিয়ে যান এবং দেশটিতে স্থিতিশীলতা আনেন। কিন্তু ভূমি সংস্কারের সমস্যা সমাধানে তিনি ব্যর্থ হন এবং কৃষকেরা দরিদ্র থেকে যায়। জোগের শাসনের সময় আলবেনিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ইতালির এতটাই প্রভাব ছিল যে এ সময় আলবেনিয়া দৃশ্যত ইতালির একটি প্রদেশে পরিণত হয়। ১৯৩৯ সালের এপ্রিলে ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার সামান্য আগে ইতালি আলবেনিয়া আক্রমণ ও দখল করে। জোগ পালিয়ে গ্রিসে চলে যান। ১৯৪১ সালে নাৎসি জার্মানি ইউগোস্লাভিয়া ও গ্রিসকে পরাজিত করলে কসোভো ও কামেরিয়াকে ঐ দেশগুলি থেকে নিয়ে আলবেনিয়ার সাথে যুক্ত করা হয়। এই যুদ্ধকালীন আলবেনিয়া ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত ইতালির অধীনে ছিল। এরপর জার্মান সেনারা এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। ১৯৪৪ সালের নভেম্বরে জার্মানরা পিছু হটে গেলে এই যুদ্ধকালীন রাষ্ট্রের পতন ঘটে। কসোভোকে সার্বিয়ার কাছে এবং কামেরিয়াকে গ্রিসের কাছে ফেরত দিয়ে দেয়া হয়। সাম্যবাদী শাসন যুদ্ধের সময় জাতীয়তাবাদী, রাজতন্ত্রী ও সাম্যবাদীরা আলবেনিয়াতে সক্রিয়ভাবে ইতালীয়, জার্মান, ও আলেবেনীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছিল। সাম্যবাদীরা শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়, এবং ১৯৪৪ সালের নভেম্বর মাসে তারা আলবেনিয়ার ক্ষমতা দখল করে। এ ব্যাপারে তারা ইউগোস্লাভিয়ার সাম্যবাদীদের সাহায্য নেয়। সাম্যবাদী দলের মহাসচিব এনভার হোক্সহা দেশের নতুন নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। দরিদ্র কৃষক এবং কিছু বুদ্ধিজীবীর সাহায্য নিয়ে সাম্যবাদী দল একটি আমূল সংস্কার প্রকল্প হাতে নেয় যা জমিদারদের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয় এবং শিল্প, ব্যাংক, এবং বাণিজ্যিক সম্পত্তি জাতীয়তাকরণ করা হয়। এভাবে সাম্যবাদীরা তাদের শাসন শক্ত করে এবং রাষ্ট্রশাসিত একটি সমাজতন্ত্রবাদী সমাজ গঠন করে। সোভিয়েত রাশিয়াতে স্তালিনের শুরু করা মডেল অণুসরণে কৃষির সমবায়ীকরণ করা হয়, এবং ১৯৬৭ সাল নাগাদ প্রায় সব কৃষক এই প্রকল্পের আওতায় আসে। হোক্সহার সরকার উত্তরের উচ্চভূমিতে শক্ত নিয়ন্ত্রণ স্থাপনে সক্ষম হয় এবং ঐতিহ্যবাহী পিতৃতান্ত্রিক বংশ ও গোত্রের প্রধানদের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। নতুন শাসনব্যবস্থায় আইনের চোখে নারীরা পুরুষদের সমমর্যাদা লাভ করে। শুরুর দিকে আলবেনিয়া আর্থিক ও সামরিক সাহায্যের জন্য ইউগোস্লাভিয়ার উপর নির্ভর করত। কিন্তু দেশটি ইউগোস্লাভিয়ার রাজনৈতিক আগ্রাসনের ব্যাপারে ভীত ছিল। ১৯৪৮ সালে যখন স্তালিন ইউগোস্লাভিয়াকে সাম্যবাদী ব্লক থেকে আদর্শগত কারণে বহিস্কার করেন, আলবেনিয়া স্তালিনকে সমর্থন দেয়। হোক্সহা আলবেনিয়ার ইউগোস্লাভ-সমর্থক দলগুলিকে নিষিদ্ধ করেন। এই দলগুলির নেতৃত্বে ছিল কোসি খোখে, হোক্সহার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্ব্বী। তবে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন ১৯৬০-এর দশকের শুরুর দিকে বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্ব্বী ভূমিকায় লিপ্ত হয়, আলবেনিয়া চীনকে সমর্থন দেয়, কেননা হোহক্সা চীনের আদর্শকে বেশি খাঁটি বলে মনে করতেন। হোহক্সা অন্যান্য সাম্যবাদী বন্ধু দেশের প্রতিও আস্থা হারিয়ে ফেলেন। তিনি তাদেরকে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ত্যাগ করার পুঁজিবাদী পশ্চিমের সাথে হাত মেলানোর অভিযোগ করেন। ১৯৬১ সালে আলবেনিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। যে সোভিয়েত সাহায্য ও কারগরি সহায়তা নিয়ে আলবেনিয়াতে আধুনিক শিল্প ও কৃষির ভিত্তি গড়ে উঠেছিল এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান বেড়ে গিয়েছিল, সেগুলি বন্ধ হয়ে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের জায়গায় চীন আলবেনিয়ার প্রধান বাণিজ্য অংশীদার ও অর্থনৈতিক সাহায্যদাতায় পরিণত হয়। ১৯৬০-এর দশকের শেষ পর্যন্ত আলবেনিয়া বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৯৬৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন চেকোস্লোভাকিয়া দখল করলে আলবেনিয়া নিজেকে রক্ষার জন্য পার্শ্ববর্তী ইউরোপীয় দেশগুলির সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং সোভিয়েত-নেতৃত্বাধীন ওয়ারশ চুক্তি থেকে সরে আসে। ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের আঁতাতের প্রেক্ষিতে চীনের সাথে আলবেনিয়ার সম্পর্ক খারাপের দিকে মোড় নেয়। ১৯৭৮ সালে চীন আলবেনিয়ার সাথে বাণিজ্য চুক্তি ও সাহায্য রদ করে দেয়। আলবেনিয়া এরপর ইউরোপের সাথে ঘনিষ্ঠতর অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে ১৯৯০-এর দশকের শুরু পর্যন্তও আলবেনিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন একটি রাষ্ট্র ছিল। হোক্সহার অধীনে রাজনৈতিক নিপীড়নের পরিমাণ ছিল ভয়াবহ। বিরুদ্ধ মত দূর করার জন্য সাম্যবাদী দল বাদে বাকী সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সাম্যবাদী দলের অভ্যন্তরীণ বিরুদ্ধবাদীদেরও পর্যায়ক্রমিকভাবে নিষ্ক্রিয় করা হয়। হাজার হাজার লোককে চাকুরিচ্যুত করা হয়, শ্রম ক্যাম্পে অন্তরীণ করা হয়, কিংবা মেরে ফেলা হয়। সমস্ত সরকারি সংস্থার উপর সেন্সরশিপ জারি করা হয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক সিগুরিমি সব লোকের উপর নজরদারি করত এবং যেকোন ধরনের বিদ্রোহ দেখলেই তা দমন করত। ১৯৬৭ সালে সমস্ত ধর্মীয় সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়, খ্রিস্টান ও মুসলিম ধর্মালয়গুলির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং দেশটিকে বিশ্বের প্রথম নাস্তিক রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। শাসক দলের মধ্যেই বিরোধিতার আভাস দেখা দেয়। ১৯৮১ সালে প্রধানমন্ত্রী মেহমেট শেহু অজানা রহস্যময় কারণে মারা যান। ধারণা করা হয় তিনি হোক্সহাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পাঁয়তারা করছিলেন। ১৯৮৩ সালে সিগুরিমি বেশ কয়েকজন দলীয় কর্মকর্তাকে ফাঁসি দেন। ১৯৮৫ সালের এপ্রিলে হোক্সহা মারা গেলে দলের প্রথম সচিব রামিজ আলিয়া তার পদে আসেন। আলিয়া সাম্যবাদী ব্যবস্থা বজায় রেখে অবনতিশীল অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সংস্কারকাজ উপস্থাপন করেন। গণতন্ত্রের শুরু ১৯৮৯ সালে পূর্ব ইউরোপে যখন সাম্যবাদী শাসনের অবসান ঘটে, তখন কিছু কিছু আলবেনীয় আরও সুদূরপ্রসারী সংস্কারের দাবী তোলেন। এদের মধ্যে ছিলেন বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক শ্রেণির সদস্য, এবং অসন্তুষ্ট তরুণেরা। বর্ধমান অশান্তি ও গণবিক্ষোভের মুখে আলিয়া ধর্মীয় স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনেন, সিগুরিমির ক্ষমতা খর্ব করেন এবং কিছু বাজার সংস্কার ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ হাতে নেন। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে সরকার স্বাধীন রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি বৈধ ঘোষণা করে, ফলে রাজনীতিতে সাম্যবাদী দলের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ শেষ হয়। বিচার ব্যবস্থা সংস্কার করে আইন মন্ত্রণালয় তৈরি করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ডের পরিমাণ হ্রাস করা হয়। আলবেনীয়দের বিদেশ গমনের অনুমতি দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে হাজার হাজার আলবেনীয় পশ্চিমা দেশগুলির দূতাবাসের মাধ্যমে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ৫০০০ আলবেনীয়কে নিরাপদে সরিয়ে নিতে বহুদেশীয় ত্রাণ অপারেশন হাতে নেওয়া হয়। আরও ২০ হাজার আলবেনীয় নৌকায় করে অবৈধভাবে ইতালিতে পাড়ি জমায়। একই সময়ে আলবেনিয়াতে গণপ্রতিবাদ চলতে থাকে। ফলে সরকার ও সাম্যবাদী দল থেকে অনেক চরম সাম্যবাদী নেতাকে বহিস্কার করা হয়। ১৯৯১ সালের এক মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে অনেকে নিহত হয়। মার্চে সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। একই মাসে আইনসভার জন্য বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সাম্যবাদী দল ও তাদের মিত্ররা ২৫০টি আসনের মধ্যে ১৬৯টি আসন জেতে। অন্যদিকে নবগঠিত ডেমোক্র্যাট দল ৭৫টি আসন জেতে। সাম্যবাদীদের বিজয়ের পর আরেক দফা বিক্ষোভ শুরু হয়। এবার শকোডার শহরে পুলিশের গুলিতে চার জন মারা যায়। ১৯৯১ সালের এপ্রিলে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান পাস করা হয় এবং দেশের নাম গণপ্রজাতন্ত্রী আলবেনিয়ার পরিবর্তে আলবেনিয়া প্রজাতন্ত্র রাখা হয়। আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সাম্যবাদীরা আলিয়াকে নব্যসৃষ্ট রাষ্ট্রপতি পদে বসায় এবং অর্থনীতিবিদ ফাতোস নানো প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু হাজার হাজার শ্রমিকের সাধারণ ধর্মঘটের মুখে এই সরকার পদত্যাগ করেন এবং জুনে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করা হয়। এতে সাম্যবাদী, গণতন্ত্রী, প্রজাতন্ত্রী এবং সামাজিক গণতন্ত্রীরা অন্তর্ভুক্ত হন। কিন্তু রাস্তায় মিছিল চলতে থাকে এবং প্রতিবাদকারীরা প্রাক্তন সাম্যবাদী নেতাদের গ্রেপ্তার ও গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবী করতে থাকে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে কোয়ালিশন সরকারের পতন ঘটে এবং একটী অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালের মার্চে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে গণতন্ত্রীরা আইনসভার ১৪০টি আসনের মধ্যে ৯২টিতে বিজয়ী হয়। সমাজতন্ত্রবাদীরা ৩৮টি, সমাজতন্ত্রবাদী গণতন্ত্রীরা ৭টি এবং গ্রিক সংখ্যালঘু একতা দল ২টি আসন জেতে। আইনসভা গণতন্ত্রী দলের নেতা সালি বেরিশাকে রাষ্ট্রপতি বানায় এবং বেরিশা আলেক্সান্দর মেক্‌সিকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন। বেরিশার অধীনে বেশ কিছু প্রাক্তন সাম্যবাদী কর্মকর্তাকে, যাদের মধ্যে আলিয়া ও নানো-ও ছিলেন, গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির দায়ে বিচার করা হয় এবং দীর্ঘমেয়াদের শাস্তি দেয়া হয়। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন এই বিচারগুলি ন্যায়বিচার ছিল না, বরং বেরিশা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্ব্বীদের সরিয়ে ফেলতে এগুলি ব্যবহার করেন। আলিয়া ও নানো উভয়েই কয়েক বছরের মধ্যেই ছাড়া পান। ১৯৯৪ সালের নভেম্বরে গণতন্ত্রীরা একটি নতুন সংবিধান প্রস্তাব করে কিন্তু জনগণ একটি গণভোটে তা প্রত্যাখ্যান করেন। বিরোধীরা বলে যে এই প্রস্তাবটিতে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতির হাতে আরও ক্ষমতা কুক্ষিগত করত। রাষ্ট্রপতিকে স্বৈরাচারী আখ্যা দেয়া হয় এই বলে যে তিনি প্রেসের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, প্রাক্তন সাম্যবাদী নেতাদের জুলুম এবং আদালতসমূহ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সরকারের সমর্থকেরা পাল্টা দাবি করে যে সমাজতন্ত্রবাদীরা দেশের নতুন গণতন্ত্র বানচাল করে দিতে চাচ্ছে। প্রাক্তন ইউগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রগুলির সাথে সম্পর্কও খারাপের দিকে মোড় নেয়, বিশেষ করে সার্বীয় প্রদেশ কসোভোর সংখাগরিষ্ঠ আলবেনীয় জনগণের উপর নিপীড়ন প্রসঙ্গে। ১৯৮৯ সালে সার্বিয়া কসভোর স্বায়ত্বশাসন রদ করে এবং ১৯৯১ সালে কসভোর আলবেনীয় নেতারা প্রদেশটির স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে কসোভো স্বীকৃতি পায়নি, আলবেনিয়া কসোভোকে সমর্থন দেয় এবং জাতিসংঘকে প্রদেশটিতে পর্যবেক্ষক পাঠাতে অণুরোধ জানায়। কিন্তু জাতিসংঘ এই অনুরোধে সাড়া দেয়নি। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি আলবেনিয়া ভয় করতে শুরু করে যে অশান্ত কসোভোতে সামরিক ধরপাকড় শুরু হবে এবং বহু লোক উদ্বাস্তু হয়ে গোটা বলকান অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। এছাড়া ম্যাসিডোনিয়াতে আলবেনীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারেও আলবেনিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি আলবেনিয়াতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু রাষ্ট্রপতি সালি বেরিশার গণতন্ত্রী দল বিজয় লাভ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়। বিরোধী দলগুলি সংসদ বর্জন করে। ১৯৯৭ সালে এই সংসদ বেরিশাকে আরও ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত করে। ১৯৯৭ সালের শুরুতে অনেকগুলি জাল বিনিয়োগ স্কিম ধরা পড়ে, যাতে হাজার হাজার আলবেনীয় তাদের সঞ্চয় হারান। সরকার বহু বিনিয়গকারীকে আংশিক ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও অর্থনীতিতে বিপর্যয় ও রাজনৈতিক স্ক্যান্ডালের প্রেক্ষিতে আলবেনীয়রা প্রথমে বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ শুরু করে ও পরে সেগুলি রায়টে রূপ নেয়। ১৯৯৭ সালের মার্চের মধ্যে দেহসব্যাপী বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশের অনেক অংশে প্রশাসন বিকল হয়ে যায়। দেশের দক্ষিণাংশ, বিশেষ করে ভলোরে এবং সারান্দে শহর, স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনী ও সশস্ত্র নাগরিকেরা লুটেরাদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা নিজেদের হাতে তুলে নেন। দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয় এবং রাষ্ট্রপতি বেরিশা একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করেন, যার প্রধান ছিলেন সমাজতন্ত্রবাদী বাশকিম ফানো। বেরিশা জুনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন এবং তার দল হেরে গেলে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগের প্রতিশ্রুতি দেন। নতুন সরকার দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য কামনা করে। তবে ইতালীয় কমান্ডারের অধীনে আগত বহুজাতিক বাহিনীটিকে কেবল আলবেনিয়ার দুর্গম এলাকাগুলিতে ত্রাণ সরবরাহেই কাজে লাগানো হয়। ১৯৯৭ সালের জুনের নির্বাচনে সমাজতন্ত্রবাদীরা ৬৫% ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসে। বেরিশা জুলাইয়ে পদত্যাগ করেন। কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত নেতা ফাতোস নানো প্রধানমন্ত্রী হন। রেক্সহেপ মেজদানী নামের আরেকজন সমাজতন্ত্রবাদী নেতাকে রাষ্ট্রপতি পদ দেওয়া হয়। গণতন্ত্রীরা ১৯৯৮ সালের মার্চ পর্যন্ত সংসদ বয়কট করেন। ১৯৯৭ সালের আগস্টে সরকার ঘোষণা দেন যে ভলোরে শহরে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সেই মাসেই বহুজাতিক বাহিনী আলবেনিয়া ত্যাগ করে। ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নানো কোয়ালিশন সরকারের সাথে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের ব্যাপারে মতভেদের কারণে পদত্যাগ করেন। পান্ডেলি মাজকো নামের একজন সমাজতন্ত্রবাদী নেতাকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হয়। কসোভোতে জাতিগত আলবেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বহু সার্বীয় পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করলে এর জের ধরে ১৯৯৮ সালের শুরুতে তৎকালীন ইউগোস্লাভিয়ার (বর্তমান সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রো) সাথে আলবেনিয়ার সম্পর্ক খারাপের দিকে মোড় নেয়। সার্বীয় পুলিশ ও ইউগোস্লাভ সেনাবাহিনীর দল কসোভোর সাধারণ জনগণের উপর হামলা করে এবং ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালের শুরুর অধিকাংশ সময় জুড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী কসভো মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে। ইউগোস্লাভিয়া কসোভোর ব্যাপারে শান্তিচুক্তিতে আসতে অসম্মতি জানালে ১৯৯৯ সালের মার্চে ন্যাটো ইউগোস্লাভ সামরিক স্থাপনাগুলিতে বিমান হামলা চালানো শুরু করে। এর জবাবে সার্বীয় সেনারা কসোভোর গ্রামগুলিতে আরও বেশি আক্রমণ শুরু করে, ফলে লাখ লাখ লোক নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে চলে যায়। ১৯৯৮ সাল থেকেই আলবেনিয়া কসোভো-আগত উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিয়ে আসছিল, কিন্তু ১৯৯৯- এর বিমান হামলার ফলে উদ্বাস্তুর ঢেউ সামলাতে আলবেনিয়া হিমশিম খেয়ে যায়। দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতিতে চাপের সৃষ্টি হয়। জুন মাসের মধ্যেই প্রায় সাড়ে চার লাখ কসোভোবাসী আলবেনিয়াতে আশ্রয় নেয়। ঐ মাসেই ইউগোস্লাভ সরকার একটি আন্তর্জাতিক শান্তি চুক্তিতে সম্মত হয়। চুক্তির শর্ত অনুসারে কসোভোতে একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনী স্থাপন করা হয় যাতে উদ্বাস্তুরা নিরাপদে দেশে ফিরে আসতে পারে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে মাজকো সাম্যবাদী দলের অভ্যন্তরীণ আস্থা হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অবসর নেন। তার স্থানে আসেন ইলির মেতা, একজন তরুণ ও সংস্কারপন্থী নেতা। মেতা মাজকো সরকারের নীতি ধরে রাখার ব্যাপারে শপথ করেন; এই নীতিগুলির মধ্যে ছিল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নেটোতে আলবেনিয়ার সদস্যপদ প্রাপ্তির ব্যাপারে কাজ করা। ২০০১ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে সমাজতান্ত্রিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখে। কিন্তু ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে ফাতোস নানোর সাথে তিক্ত বিবাদের জের ধরে মেতা হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অবসর নেন। সমাজতান্ত্রিক দলও এতে দুই ভাগ হয়ে যায়। নানো মেতার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন এবং মন্ত্রিসভাতে আমূল পরিবর্তন আনতে বলেন। মেতার পদত্যাগের পর পরই গণতন্ত্রী দলের সদস্যরা সাত মাসের বয়কট শেষ করে সংসদে ফেরত আসেন। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সমাজতান্ত্রিক দলের নেতারা মাজকোকে মেতার উত্তরসূরী হিসেবে নির্বাচিত করেন এবং জুন মাসে সংসদ বিদায়ী রেক্সহেপ মেজদানির স্থলে আলফ্রেড মোইসিউ-কে রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ দেয়। মোইসিউ একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তিনি জুলাই মাসে পদ গ্রহণ করেন। একই মাসে মাজকোকে সরিয়ে নানো প্রধানমন্ত্রী হন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয় এবং আশা করা হয় সেটি সমাজতান্ত্রিক দলের অন্তর্কোন্দল বন্ধ করবে। রাজনীতি আলবেনিয়ার রাজনীতি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের কাঠামোয় পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী সরকার ও একটি বহু-দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতা সরকার ও আইনসভা উভয়ের হাতে ন্যস্ত। আলবেনিয়ার আইনসভার নাম Kuvendi i Republikës së Shqipërisë। ১৯৯১ সাল থেকে দেশটিতে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রচলিত। তবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ আলবেনিয়া এবং সোশালিস্ট পার্টি অফ আলবেনিয়া নামের দুইটি দল আলবেনিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে। প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশটি ১৯৮৮ সালের ৬৫ হাজার সেনাসদস্য থেকে ২০০৯ সালে এ সংখ্যা নামিয়ে নিয়ে আসে ১৪ হাজার ৫০০-তে। ১৯৯০ সালে পুরনো বেশ কিছু অস্ত্র তারা ধ্বংস করে। ২০০৮ সালে দেশটি তার জিডিপি’র ২.৭ শতাংশ এ খাতে খরচ করেছিল। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটি ন্যাটোর সাথে কাজ করতে শুরু করে। ভূগোল থাম্ব|259x259পিক্সেল|উত্তরে আলবেনীয় আল্পস একটি উপ-আর্কটিক জলবায়ু উপভোগ করে আলবেনিয়ার এক-তৃতীয়াংশের বেশি অংশজুড়ে আছে বনাঞ্চল। আর এর আয়তন হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এই পুরো অংশটিই বেশ ঘন বনে আচ্ছাদিত। আলবেনিয়ায় তিন হাজারের অধিক প্রজাতির গাছ পাওয়া গেছে। এগুলোর অনেকগুলোই ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মধ্যসাগরীয় শান্ত জলবায়ুই এখানে বিরাজ করে থাকে। আলবেনিয়ার শীতকালটি তুলনামূলক উষ্ণ এবং রৌদ্রময়। আর গ্রীষ্মকাল সাধারণত অধিকতর শুষ্ক থাকে। যদিও অন্যান্য অংশের আবহাওয়া ঋতুর ওপর নির্ভর করে কিন্তু দেশটির এক হাজার ৫০০ মিটার ওপরের এলাকাগুলোতে শীতকালসহ বেশির ভাগ সময়েই তীব্র শীত অণুভূত হয়, অবিরাম তুষারপাতও দেখা যায় সেখানে। দেশের নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্র্তী এলাকাগুলোতে দুপুরে তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেলেও রাতে সবসময়ই শীতল থাকে। অর্থনীতি আলবেনিয়া একটি দরিদ্র দেশ। বর্তমানে মুক্তবাজার অর্থনীতির সুবাদে দেশটি নতুন নতুন ব্যবসা খুলে নিজের অর্থনীতি চাঙ্গা করার দিকে এগোচ্ছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের হিসাব অনুযায়ী ২০১০ সালে এর প্রবৃদ্ধি হবে ২.৬ শতাংশ, যা ২০১১ সালে গিয়ে দাঁড়াবে ৩.২ শতাংশে। আলবেনিয়াতে এখন বিনিয়োগ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আলবেনিয়া ও ক্রোশিয়া মিলিতভাবে মন্টেনেগ্রোর সীমান্তে একটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৯ সালের ফেব্র“য়ারিতে একটি ইতালীয় কোম্পানি আলবেনিয়াতে ৮০০ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দেয়। আর এগুলোর সাহায্যে আলবেনিয়া তার রফতানি খাতে বিদ্যুৎকে যুক্ত করতে চাইছে। দেশটিতে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি রয়েছে। তবে এখানে দৈনিক তেল উৎপাদনের হারটি বেশ কম। মাত্র ছয় হাজার ৪২৫ ব্যারেল। তবে প্রাকৃতিক গ্যাসের যে মজুদের খবর পাওয়া গেছে তাতে দেশের জনগণের চাহিদা আপাতত মিটে যাওয়ার কথা। এর বাইরে দেশটিতে কয়লা, বক্সাইট, কপার এবং লোহার খনি রয়েছে। আলবেনিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে কৃষিরও। এ খাতে দেশটির ৫৮ শতাংশ লোক নিয়োজিত আর তা জিডিপিতে অবদান রাখছে ২১ শতাংশ । আলবেনিয়ার গম, ভুট্টা, তামাক, ডুমুর এবং জলপাইয়ের উৎপাদন মোটামুটি আলোচনায় আসার মতো। যোগাযোগব্যবস্থা দেশটির সার্বিক যোগাযোগব্যবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সড়ক, রেল ও বিমান সব দিক দিয়েই যোগাযোগব্যবস্থায় ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে তারা। তবে সম্প্রতি দেশটির সরকার কসভো, মেসিডোনিয়া, বুলগেরিয়া, ক্রোশিয়া ও গ্রিসের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে মনোযোগ দিয়েছে। এ প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আলবেনিয়ার ৭৫৯ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক তৈরি হবে। এরই পাশাপাশি দেশটির অভ্যন্তরীণ সড়ক উন্নয়নেরও ব্যবস্থা নিচ্ছে। জনসংখ্যা জানুয়ারী ২০১০-এর উপাত্ত অনুযায়ী আলবেনিয়ার জনসংখ্যা ৩১,৯৫,০০০। বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৫৪৬%। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনবসতির ঘনত্ব ১১১ জন।মাত্র ৩৫ লক্ষ লোকের দেশ আলবেনিয়ায় শতকরা ৯৫% শতাংশ লোক আলবেনীয় ভাষার কোন উপভাষায় (তোস্ক বা ঘেগ) কথা বলে থাকে। আলবেনীয়ার বাকী জনগণ সবচেয়ে বেশি যে ভাষায় কথা বলে, তা হল গ্রিক। এছাড়া ম্যাসিডোনীয় ভাষা ও সার্বো-ক্রোটীয় ভাষাতেও স্বল্পসংখ্যক লোক কথা বলেন। যাদের মাতৃভাষা আলবেনীয়, তারা মূলত দুইটি উপভাষার একটিতে কথা বলেন। এগুলি হল উত্তরের ঘেগ আলবেনীয় এবং দক্ষিণের তোস্ক আলবেনীয়। তোস্ক আলবেনীয় উপভাষা উপর ভিত্তি করে আদর্শ আলবেনীয় ভাষা গঠিত হয়েছে। আলবেনিয়ার বাইরে ম্যাসিডোনিয়া ও কসোভোতেও আলবেনীয় ভাষার প্রচলন আছে। ১৯৯০-এর দশকে যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধের সময় প্রায় ৫ লক্ষ আলবেনীয়ভাষী কসোভোবাসী আলবেনিয়াতে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নেন। আলবেনিয়ার গণমাধ্যমের ভাষা আলবেনীয়। তবে রেডিও তিরানা আটটি ভাষায় প্রোগ্রাম সম্প্রচার করে। এছাড়া অনেক আলবেনীয় স্যাটেলাইটের সাহায্যে ইতালীয় ও গ্রিক টিভির অণুষ্ঠান দেখে থাকেন। ভাষা আলবেনিয়ার সরকারি ভাষা আলবেনীয় ভাষা। গেগ ও তোস্কের মিলিত রূপই হচ্ছে আলবেনীয় ভাষা। এখানে সংখ্যালঘু গ্রিকদের ভাষাও বেশ প্রচলিত। এর পাশাপাশি সার্বিয়ান, মেসিডোনিয়ান, রোমানি এবং অ্যারোমেনিয়ান ভাষা দেশটিতে চালু আছে। ধর্ম সরকারিভাবে আলবেনিয়ার জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের দেয়া তথ্য মতে, দেশটিতে ৭০ শতাংশ জনগণ মুসলমান, ২০ শতাংশ আলবেনীয় সনাতনপন্থী খ্রিস্টান এবং ১০ শতাংশ রোমান ক্যাথলিক মন্ডলীর খ্রিস্টান। ১১ শতকের সময়ের প্রথম যে ইতিহাস পাওয়া যায় তখন এ আলবেনিয়া পুরোটাই খ্রিস্টান অধ্যুষিত ছিল। কিন্তু পরে তুর্কি সাম্রাজ্যের অধীনে আসার পর দেশটিতে ধীরে ধীরে মুসলমানদের সংখ্যা খ্রিস্টানদের ছাড়িয়ে যায়। ১৯১২ সালে তুর্কি সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দেশটিতে বিভিন্ন মতাদর্শের শাসন বিশেষ করে কমিউনিস্ট শাসন চলায় দেশটিতে সেকুলার আদর্শ অনেকর মধ্যে প্রভাব ফেলে। ফলে মুসলমান বা খ্রিস্টান থাকার পরও অনেকে সাম্যবাদী আদর্শ লালন করেন। দেশটিতে সব ধর্ম পালনেরই সমান স্বাধীনতা রয়েছে। দেশটির পুরো অংশতেই মুসলমানদের ব্যাপক বিচরণ থাকলেও রোমান ক্যাথলিকরা তাদের জন্য দেশটির উত্তরাঞ্চল এবং সনাতনপন্থী খ্রিস্টানরা নিজেদের জন্য দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে বেছে নিয়েছে। শিক্ষা আলবেনিয়া তুর্কি সাম্রাজ্যের অধীনে থাকার সময় দেশটিতে শিক্ষার হার ছিল ৮৫ শতাংশ। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়টুকুতে দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এ দেশের শাসকরা আবার দেশটির শিক্ষার হার বাড়াতে ব্যাপকাকারে উদ্যোগ নেন। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১২ থেকে ৪০ বয়সসীমার মধ্যে থাকা সবাইকেই শিক্ষিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর ফলাফল হিসেবে দেশটিতে বর্তমান শিক্ষার হার ৯৮.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষদের শিক্ষার হার ৯৯.২ শতাংশ এবং নারীদের শিক্ষার হার ৯৮.৩ শতাংশ। দেশটির প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে তিরানার ইউনিভার্সিটি অব আলবেনিয়া। ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে এটি যাত্রা শুরু করে। সংস্কৃতি আলবেনিয়ার স্বকীয় সংস্কৃতি কালান্তরে গ্রিক, রোমান, বাইজেন্টীয়, তুর্কি, স্লাভীয় ও ইতালীয় সংস্কৃতি থেকে বহু উপাদান ধার করেছে। ঐসব দেশ ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বলকান অঞ্চল শাসন করত। এসব ভিন্ন ভিন্ন বৈদেশিক প্রভাব সত্ত্বেও আলবেনীয় সংস্কৃতি বেশ সমসত্ত্ব। ঐতিহ্যবাহী পোশাকের মধ্যে আছে রঙিন, সূচির কারুকাজময় শার্ট ও মহিলাদের পোশাক। কোন কোন অঞ্চলে মহিলারা ঢিলেঢালা প্যান্ট পরেন। সাম্যবাদী শাসনের সময় এইসব ঐতিহ্যবাহী পোশাকের পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় কারখানায় নির্মিত কমদামী, আধুনিক পোশাক পরাকে উৎসাহিত করা হয়। গণতন্ত্রের আগমনের পর থেকে লোকজন এসব ব্যাপারে আরও বেশি পছন্দ করার সুযোগ পেয়েছে। এখনও গ্রামাঞ্চলে ও উচ্চভূমি অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী পোশাকের চল দেখা যায়, বিশেষত মহিলাদের মধ্যে। খেলাধুলা সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের জন্য দেশটি ১৯৩০ সালে গঠন করেছে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অব আলবেনিয়া। দেশটি ফিফার সদস্য এবং উয়েফার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম। দেশটিতে অন্যান্য খেলাধুলার মধ্যে বাস্কেটবল, ভলিবল, রাগবি এবং জিমন্যাস্টিক উল্লেখযোগ্য। আরও দেখুন আলবেনীয় জাতীয় পর্যটন সংস্থা - আলবেনিয়ার সরকারি ভ্রমণ ও পর্যটন তথ্যের ওয়েবসাইট। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সরকার আলবেনিয়ার সরকার (মন্ত্রীর পরিষদ) আলবেনিয়ার পার্লামেন্ট আলবেনিয়ার সাংবিধানিক কোর্ট আলবেনিয়ার পরিসংখ্যানের সংস্থা Chief of State and Cabinet Members সাধারণ তথ্য আলবেনিয়া আমেরিকার রাষ্ট্র বিভাগ। আলবেনিয়া from UCB Libraries GovPubs আলবেনিয়া থেকে জাতীয় বৃত্তান্ত ধর্ম ডেটা আর্কাইভের সমিতি। পর্যটন জাতীয় পর্যটন সংস্থা ভ্রমণ এবং পর্যটন তথ্যের জন্য সরকারি ওয়েবসাইট। পর্যটন, ইতিহাস ভ্রমণ ফটোগ্রাফ ফটো এবং মানচিত্রের সঙ্গে। আলবেনিয়ার বিবিধ তোপোগ্রাফিক মানচিত্র সংগ্রহ (১৮ জানুয়ারি ২০০৯ হালনাগাদ করা হয়েছে।) GPS Basemap for Albania VIVAlbania, hospitality and ecotourism in Albania সহায়িকা থেকে আলবেনিয়া (ছবির সঙ্গে) আলবেনিয়ার জাতীয় পর্যটক সংস্থার ওয়েবসাইট অন্যান্য আলবেনিয়ার জাতীয় পাঠাগারের ধনদৌলত আলবেনিয়া তথ্য The Royal House of Zogu Books about Albania and the Albanian people (scribd.com) Reference of books (and some journal articles) about Albania and the Albanian people; their history, language, origin, culture, literature, etc. Public domain books, fully accessible online. বিষয়শ্রেণী:ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইউরোপের রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইউরোপ কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ভূমধ্যসাগরীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:বলকান রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
আলজেরিয়া
https://bn.wikipedia.org/wiki/আলজেরিয়া
আলজেরিয়া উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। এর পূর্ণ সরকারি নাম আলজেরিয়া গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্র। দেশটির আয়তন প্রায় ২৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৭৪১ বর্গকিলোমিটার । আয়তনের বিচারে আলজেরিয়া আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম ও বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। আলজেরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৩৬ লক্ষ; জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৬ জন। আলজেরিয়ার আরবি নাম আলজাজাইর (অর্থাৎ দ্বীপসমূহ); নামটি রাজধানীর তীর সংলগ্ন দ্বীপগুলিকে নির্দেশ করছে। ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত আলজিয়ার্স দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী; এছাড়া ওরান, কন্সটান্টিন ও আন্নাবা কিছু গুরুত্বপূর্ণ নগরী। ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা ও ধর্মের কারণে আলজেরিয়াকে আরব বিশ্বের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। আলজেরিয়ার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে তিউনিসিয়া, পূর্বে লিবিয়া। পশ্চিমে মরক্কো ও পশ্চিম সাহারা প্রজাতন্ত্র, এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে মালি ও মোরিতানিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্বে নাইজার অবস্থিত। আলজেরিয়ার নাগরিকদেরকে আলজেরীয় বলা হয়। উত্তর আলজেরিয়ার ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলটির নাম তেল। এখানেই দেশের সিংহভাগ লোক বাস করে। আলজেরিয়ার তটরেখায় অনেক খাঁড়ি ও উপসাগর আছে। এখানে উর্বর সমভূমি ও অনুচ্চ পাহাড় আছে। নদীগুলি ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ধরনের। উত্তর আলজেরিয়াতে গ্রীষ্মকালীন জলবায়ু উষ্ণ ও শুষ্ক এবং শীতকালগুলি মৃদু ও বৃষ্টিবহুল। উত্তরের তেল অঞ্চলটির ঠিক দক্ষিণে অ্যাটলাস পর্বতমালা উত্তর আলজেরিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রসারিত হয়েছে; এর সর্বোচ্চ বিন্দু চেলিয়া পর্বত (২৩২৮ মিটার)। অ্যাটলাস পর্বতমালা দুইটি সমান্তরাল পর্বতমালা নিয়ে গঠিত, উত্তরের তেলীয় অ্যাটলাস এবং দক্ষিণের সাহারা অ্যাটলাস। অ্যাটলাস পর্বতমালার দক্ষিণে অবস্থিত মধ্য ও দক্ষিণ আলজেরিয়া মূলত সাহারা মরুভূমির উত্তরাংশ নিয়ে গঠিত। সাহারা মরুভূমি আলজেরিয়ার প্রায় নয়-দশমাংশ এলাকা গঠন করেছে। সাহারাতে কিছু মালভূমি এবং মধ্য আলজেরিয়াতে আর্গ নামের বিশাল সুউচ্চ অনেক বালিয়াড়ি (বালির পাহাড়) আছে। আলজেরিয়ার সর্বোচ্চ বিন্দু তাহাত পর্বত (২৯১৮ মিটার) এখানেই অবস্থিত। সাহারা মরুভূমির জলবায়ু ঋতু বা দিবসের অহ্ন অনুযায়ী অত্যন্ত শীতল বা অত্যন্ত উত্তপ্ত হতে পারে; এখানে বৃষ্টিপাত অত্যন্ত বিরল। আলজেরিয়ার উদ্ভিদগুলি পানি ছাড়াই বহুদিন বেঁচে থাকতে পারে। উত্তরের তেল অঞ্চলে চিরসবুজ গুল্ম ও অনুচ্চ বিভিন্ন বৃক্ষের দেখা মেলে। মরুভূমি অঞ্চলে গুচ্ছ গুচ্ছ ঘাস, গুল্ম, আকাসিয়া বৃক্ষ ও জুজুবে বৃক্ষের আবাস। আলজেরিয়ার স্থানীয় হায়েনা, খ্যাঁকশিয়াল, বানর, বাজপাখি ও সাপ আছে। আরও আছে অ্যান্টিলোপ হরিণ, বুনো খরগোশ, তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণী ও বন্য শূকর। সাহারা কাঁকড়াবিছার উপস্থিতি খুবই সাধারণ। আলজেরিয়ার সিংহভাগ (৭৫%) জনগণ নৃতাত্ত্বিকভাবে ও ভাষাগতভাবে আরব জাতির লোক; এছাড়া এখানে বার্বার (আমাজিগ) জাতির একটি বৃহৎ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বাস করে, যারা জনসংখ্যার প্রায় ২৪%। এখানে আরবদের আগমনের পূর্বে বার্বার জাতির লোকেরাই বাস করত। বর্তমানে বার্বার জাতির লোকেরা দেশের উত্তর-পূর্বভাগের কাবিলিয়া অঞ্চলে ঘনীভূত। সংখ্যালঘু বার্বারেরা ইসলাম গ্রহণ করলেও নিজ ভাষা ও রীতিনীতি বিসর্জন দেয় নি। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বার্বারদেরকে অধিকতর জাতিগত অধিকার প্রদান করা হয়েছে। সাহারা অঞ্চলে মাত্র ৫ লক্ষ লোক বাস করে। এরা হয় খনিজ তেলখনির শ্রমিক, অথবা মেষপালক বা ছাগলপালক যাযাবর তুয়ারেগ জাতির লোক। আরবি ও বার্বার (তামাজিগত) দুইটি সরকারি ভাষা। তবে ঔপনিবেশিক কারণে প্রশাসন, ব্যবসা ও উচ্চশিক্ষার ভাষা হিসেবে ফরাসি ভাষা এখনও বহুল প্রচলিত। সরকারি ধর্ম ইসলাম, প্রায় সবাই (৯৯%) মুসলমান এবং সিংহভাগ মুসলমান সুন্নি মতাদর্শী। কুসকুস (গমের সুজিভিত্তিক পদ) ও ত্বজিন (মাটির পাত্রে অল্প পানিতে সিদ্ধ মসলা, বাদাম ও শুকনো ফল দেয়া মাছ, মাংস ও সবজির মিশ্রণ) দুইটি প্রধান স্থানীয় পদ। খেজুরের বীজ ভেজে গুঁড়ো করে কফি বানিয়ে খাওয়া হয়। আলজেরিয়া একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র যার একটি দ্বিকাক্ষিক আইনসভা আছে। রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থাতে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান। আলজেরিয়া একটি উন্নয়নশীল দেশ, যার অর্থনীতি মূলত সাহারা মরুভূমি থেকে উত্তোলিত খনিজ তেল (পেট্রোলিয়াম) ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ও রপ্তানির উপরে নির্ভরশীল, এই দুইটি দ্রব্য দেশটির রপ্তানিকৃত পণ্যের ৯৭% গঠন করেছে। আলজেরিয়া মূলত ফ্রান্স ও ইতালিতে গ্যাস রপ্তানি করে। দেশটির মুদ্রার নাম আলজেরীয় দিনার, যা আবার ১০০ সঁতিমে বিভক্ত। স্বাধীনতা লাভের পর দেশটি অর্থনীতির সিংহভাগ রাষ্ট্রায়ত্তধীন করলেও ১৯৮০-র দশক থেকে কিছু কিছু খাতের আংশিক বেসরকারিকরণ ঘটেছে। বেশিরভাগ আলজেরীয় সরকারি চাকুরি, সামরিক বাহিনী বা কৃষিখাতে (শ্রমশক্তির এক-চতুর্থাংশ) নিয়োজিত। এখানে গম, আলু, টমেটো, যব, খেজুর, ডুমুর, পেঁয়াজ, কমলা, জলপাই ও আঙুরের চাষ হয়। আলজেরিয়া খেজুর ও কর্ক (কর্ক ওক বৃক্ষের ছাল) উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলির একটি। গবাদি পশু হিসেবে মূলত ভেড়া ও ছাগল পালন করা হয়। তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে আলজেরিয়াকে তিন-চতুর্থাংশ খাদ্য আমদানি করতে হয়। শিল্পখাতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, তামাকজাত দ্রব্য, সিমেন্ট, ইট, টালি, লোহা ও ইস্পাতের দ্রব্য উৎপাদন করা হয়।.২০১৯ সালে মাথাপিছু স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) ছিল ৪২২৯ মার্কিন ডলার, যা বিশ্বে ১০৯তম। দেশটির মানব উন্নয়ন সূচক ০.৭৫৯ (অর্থাৎ উচ্চ), যা বিশ্বে ৮২তম। প্রাচীন যুগ থেকেই এখানে বার্বার জাতির লোকেরা বাস করত; বার্বারেরাই সম্ভবত প্রথম উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় বসতি স্থাপন করেছিল। এরপর এখানে পালাক্রমে বিভিন্ন আক্রমণকারী জাতিদের আগমন ঘটে। খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দে আলজেরিয়া অঞ্চলে ফিনিসীয় বণিকেরা বসতি স্থাপন করেছিল। এরপর কার্থেজীয় জাতিরাও এখানে আক্রমণ করে। এর কয়েক শতাব্দী পরে রোমানরা অঞ্চলটি আক্রমণ করে এবং খ্রিস্টপূর্ব ৪০ অব্দ নাগাদ সমগ্র ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় অঞ্চলটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। খ্রিস্টীয় ৫ম শতকে রোমের পতন ঘটলে ভ্যান্ডাল জাতির লোকেরা অঞ্চলটি আক্রমণ করে। পরে বাইজেন্টীয় (পূর্ব রোমান) সাম্রাজ্য অঞ্চলটি পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। খ্রিস্টীয় ৭ম শতকে এখানে মুসলমানদের আক্রমণ শুরু হয় এবং ৭১১ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সমগ্র দক্ষিণ আফ্রিকা উমাইদ রাজবংশীয় খলিফাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আরব মুসলমানেরা এখানে ইসলাম ধর্ম ও আরবি ভাষার প্রচলন করে। এরপর বেশ কয়েকটি বার্বার মুসলমান রাজবংশ অঞ্চলটি শাসন করে; এদের মধ্যে আলমোরাভিদ রাজবংশটি সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। আলমোরাভিদরা ১০৫৪ থেকে ১১৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন এবং তাদের সাম্রাজ্য ইউরোপের স্পেন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এরপরে আলমোহাদ রাজবংশটিও ১১৩০-১২৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন। ১৫১৮ সালে তুর্কি উসমানীয় সাম্রাজ্য উত্তর আলজেরিয়া দখলে নেয়। বার্বার উপকূলের জলদস্যুরা বহু শতাব্দী ধরে ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যের জন্য হুমকি ছিল। জলদস্যুদের আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে তাদেরকে দমনের মিথ্যা কারণ দেখিয়ে ফরাসিরা ১৮৩০ সালে আলজেরিয়া আক্রমণ করে। ১৮৪৭ সালের মধ্যে ফ্রান্স অঞ্চলটির সিংহভাগ এলাকায় সামরিক শাসন জারি করে; আলজেরিয়া একটি ফরাসি উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৯শ শতকের শেষে এসে ফরাসিরা আলজেরিয়াতে বেসামরিক শাসন চালু করে। এসময় প্রায় ১০ লক্ষ শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় (মূলত ফরাসি, স্পেনীয় ও ইতালীয়) আলজেরিয়াতে অভিবাসন করে। কিন্তু বিংশ শতাব্দীত ১৯২০-এর দশক থেকে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আলজেরীয়দের বিদ্রোহ দানা বেঁধে ওঠে, তারা আরও বেশি অধিকার দাবী করতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৪ সালে "ফ্রোঁ দ্য লিবেরাসিওঁ নাসিওনাল" (এফএলএন, "জাতীয় স্বাধীনতা ফ্রন্ট") নামের একটি দলের নেতৃত্বে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর যুদ্ধ চলে। শেষ পর্যন্ত ১৯৬২ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। আট বছর ধরে সংঘটিত স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশটির অশেষ ক্ষতিসাধন হয়, প্রায় ১০ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয় এবং যুদ্ধশেষে কয়েক হাজার বাদে প্রায় সব ইউরোপীয় আলজেরিয়া ছেড়ে চলে যায়। ফ্রোঁ দ্য লিবেরাসিওঁ নাসিওনাল নতুন সরকার গঠন করে। স্বাধীনতার সময়ে আলজেরিয়ার অর্থনীতি ছিল অনুন্নত ও কৃষিনির্ভর, তবে সরকার শীঘ্রই এটি আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেন। বর্তমানে আলজেরিয়া আফ্রিকার ধনী দেশগুলির একটি, এবং এর অন্যতম কারণ পেট্রোলিয়ামের রপ্তানি। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো আলজেরিয়াতে গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এদের মধ্যে ইসলামপন্থী দল 'ফ্রোঁ ইসলামিক দে সালভাসিওঁ' (এফইএস); তারা আলজেরিয়াতে একটি একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। যখন প্রতিভাত হয় যে এফইএস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করবে, তখন তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার সামরিক বাহিনীর সাহায্য নিয়ে নির্বাচন বাতিল করে দেয় এবং দেশের শাসন করায়ত্ত করে। এর ফলে অবশম্ভাবী ভাবে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। দেশটিতে সামরিক বাহিনী ও ইসলামী দলের মধ্যে এক বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। বহু হাজার আলজেরীয় নাগরিক গৃহযুদ্হাধে ও সামরিক বাহিনীর হামলায় মারা যায়। আলজেরীয় ঐ সরকার ইসলামী দল ফ্রোঁ ইসলামিক দে সালভাসিওঁ' (এফইএস); কে রাষ্ট্র পরিচালনা ও ইসলামী রাষ্ট্র গঠনে বাধা প্রদান করে। ও এই নিমিত্তেই নির্বাচন বাতিল করে। সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে তৎকালীন সরকার নির্বাচন বাতিল করে দেয়া আলজেরিয়ার ইতিহাসের ও রাজনীতির কালো অধ‍্যায় এবং ইসলামী দলসমূহের উপর ঐ সরকারের নির্যাতন অব‍্যাহত থাকে এবং এই অবস্থা এখনো বিদ‍্যমান। ১৯৯৯ সালে আরেকটি নির্বাচনে আলজেরীয়রা আবদেলাজিজ বুতেফিকাকে ১৯৬৫ সালের পরে প্রথমবারের মতো একজন বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত করে এবং বিভিন্ন ইসলামী দলসমূহের সাথে সরকার সংঘাত অব্যাহত রাখে। সরকার আলজেরিয়ায় ইসলামী বিধানানুযায়ী শাসন প্রতিষ্ঠায় ও পূর্ণ ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্থ করে। রাজনৈতিক গণ্ডগোলের কারণে বহুসংখ্যক দক্ষ বিদেশী শ্রমিক আলজেরিয়া ত্যাগ করেছে। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো আলজেরিয়াতে যে গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিলো তা তৎকালীন সরকার অবৈধ ভাবে ও সামরিক বাহিনীর সহায়তায় বাতিল না করলে ইসলামপন্থী দল 'ফ্রোঁ ইসলামিক দে সালভাসিওঁ' (এফইএস) সরকার গঠন করতো এবং আলজেরিয়া একটি ইসলামী বিধান সম্পন্ন দেশ তথা ইসলামী দলের শাসনাধীন দেশ হিসেবে গর্বিত হওয়ার সুযোগ পেতো। ত‍ৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের অবৈধ কাজের ফলশ্রূতিতে বহু হাজার আলজেরীয় নাগরিক মৃত‍্যু বরণ করে। আলজেরিয়ার প্রায় সকল ব্যক্তি ইসলাম ধর্মাবলম্বী এবং প্রায় সকলেই সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী । সামরিক বাহিনী আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি আলজেরিয়ার সামরিক বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক। ২০০৪ সালে আলজেরিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল ১,৩৭,৫০০। এদের মধ্যে স্থল সামরিক বাহিনীতে আছেন প্রায় ১,২০,০০০ জন সেনা। আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়েই সামরিক বাহিনী গঠন করা হয়। এই সামরিক বাহিনী উত্তর আফ্রিকার ২য় বৃহত্তম,যার আগে রয়ছে মিশর। আলজেরিয়ার বিমানবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১০ হাজার। এরা সোভিয়েত, চেক, মার্কিন ও ফরাসি-নির্মিত জেট বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। নৌবাহিনীতে প্রায় ৭,৫০০ জন কর্মরত আছেন। ভূগোল থাম্ব|333x333পিক্সেল|দক্ষিণ আলজেরিয়ার আহাগারের সাংস্কৃতিক পার্কে বালির টিলা আলজেরিয়ার উত্তরে ভূমধ্যসাগর, পূর্বে তিউনিসিয়া ও লিবিয়া, দক্ষিণে নাইজার, মালি এবং মোরিতানিয়া, পশ্চিমে মরক্কো ও পশ্চিম সাহারা। এটি একটি বিশাল দেশ। এটি আফ্রিকার বৃহত্তম এবং বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। দেশটিকে দুইটি সুস্পষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়। উত্তরপ্রান্তে অবস্থিত অঞ্চলটি তেল নামে পরিচিত। এটি মূলত তেল অ্যাটলাস পর্বতমালাটি নিয়ে গঠিত, যা উপকূলীয় সমভূমিগুলিকে দক্ষিণের দ্বিতীয় অঞ্চলটি থেকে আলাদা করেছে। এখানকার জলবায়ু ভূমধ্যসাগর দ্বারা প্রভাবিত। দক্ষিণের দ্বিতীয় অঞ্চলটি প্রায় সম্পূর্ণই মরুভূমি আবৃত। এই অঞ্চলটি আলজেরিয়ার আয়তনের সিংহভাগ গঠন করেছে। এটি মূলত গোটা উত্তর আফ্রিকা জুড়ে বিস্তৃত সাহারা মরুভূমির পশ্চিম অংশ। ভূমিরূপ আলজেরিয়ার ভূমিরূপের মূল গাঠনিক বৈশিষ্ট্যগুলি আফ্রিকান ও ইউরেশীয় ভূত্বকীয় পাতগুলির মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ভূমধ্যসাগরীয় সীমারেখা বরাবর সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেশটি দুইটি ভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত। উত্তরের তেল নামক অঞ্চলটিতে দেশের বেশির ভাগ নাগরিক বাস করেন। এখানে দুইটি ভৌগোলিকভাবে নবীন স্তুপপর্বতমালা রয়েছে: তেল অ্যাটলাস পর্বতমালা এবং সাহারান অ্যাটলাস পর্বতমালা। এগুলি সমান্তরালভাবে পূর্ব-পশ্চিমে চলে গেছে এবং উচ্চ মালভূমি দ্বারা এরা নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন। দক্ষিণের সাহারা মরুভূমি অঞ্চলটি একটি কঠিন, প্রাচীন, আনুভূমিক ও সুষম শিলাস্তরের উপর অবস্থিত। বেশ কিছু মরূদ্যান ছাড়া এখানে তেমন কোন জনবসতি নেই। তবে এখানে প্রচুর লুক্কায়িত খনিজ সম্পদ আছে, যার মধ্যে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস অন্যতম। মৃত্তিকা ক্রমাগত বৃক্ষ ও উদ্ভিদ নিধন এবং ভূমিক্ষয়ের কারণে উর্বর বাদামী মাটিযুক্ত এলাকার আয়তন কমে গেছে। কেবল কিছু উচ্চভূমিতেই এরকম উর্বর মাটি দেখতে পাওয়া যায়; সেখানে এখনও চিরহরিৎ ওকে অরণ্যের দেখা মেলে। উত্তর তেল পর্বতমালার অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চলগুলিতে মূলত ভূমধ্যসাগরীয় লাল মাটি পাওয়া যায়। দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হবার সাথে সাথে আর্দ্রতা ও মাটির পরিপক্কতা ক্রমাগত কমতে থাকে। এই অঞ্চলে আবহাওয়ার কারণে রাসায়নিক উপায়ে শিলাভাঙ্গন ও জৈবিক বস্তুর সঞ্চয় খুবই কম। মরু অঞ্চলগুলিতে প্রায় সার্বক্ষণিক শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহজনিত ভূমিক্ষয়ের কারণে মাটি সৃষ্টির প্রক্রিয়া আরও ব্যহত হয়। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সাহারা মরুভূমির উত্তরমুখী দখল ঠেকানোর জন্য একটি সবুজ প্রতিবন্ধক বলয় তৈরির একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প শুরু হয়েছিল। প্রকল্পটিতে প্রায় ২০ কিমি প্রশস্ত এবং প্রায় ১৬০০ কিমি দীর্ঘ একটি ফিতাসদৃশ ভূমিকে বনে রূপান্তরিত করার কথা ছিল। প্রকল্পটি আংশিকভাবে সফল হয়। ১৯৮০-র দশকের মধ্যভাগে আরও প্রায় ৩৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বনায়ন করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। জনসংখ্যা ভাষা ১৯৯০ সালে আরবি ভাষাকে সরকারিভাবে আলজেরিয়ার জাতীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সিংহভাগ আলজেরীয় মানুষ প্রচলিত কথ্য আরবি ভাষার একাধিক উপভাষাগুলির কোনও একটিতে কথা বলেন। মরক্কো ও তিউনিসিয়ার যে অঞ্চলগুলি আলজেরিয়ার সীমানার কাছে অবস্থিত সেখানকার উপভাষাগুলির সাথে এই উপভাষাগুলির মোটামুটি মিল আছে। বিদ্যালয়গুলিতে আধুনিক আদর্শ বা প্রমিত আরবি ভাষা শেখানো হয়। আলজেরিয়ার ইমাজিগেন নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা আমাজিগ ভাষার বিভিন্ন ভৌগোলিক উপভাষাতে কথা বলে, তবে এদের বেশিরভাগই আরবি ভাষাতেও সমানভাবে কথা বলতে পারে। স্বাধীনতার পর থেকেই আলজেরিয়ার সরকারের নীতি ছিল "আরবিকরণ", অর্থাৎ স্থানীয় আরবি ভাষাকে উৎসাহিত করা এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলি সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া। এর ফলশ্রুতিতে জাতীয় ভাষামাধ্যম হিসেবে আরবি ভাষা ফরাসি ভাষাকে প্রতিস্থাপিত করেছে। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষাদানের মূল ভাষা হিসেবে এখন আরবি ব্যবহার করা হয়। কিছু আমাজিক জাতিদল এই নীতির জোর বিরোধিতা করেছে, কেননা তাদের আশঙ্কা হল এর ফলে দেশে সংখ্যাগুরু আরবিভাষী জনগণ তাদেরকে দমন করবে। ২০০২ সালে আমিজাগ ভাষাকে জাতীয় ভাষা এবং ২০১৬ সালে এটিকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। ধর্ম আলজেরিয়ার সকল ব্যক্তি ইসলাম ধর্মাবলম্বী । সকলেই প্রায় সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী । শিয়া অনুসারী সংখ্যালঘু । সংস্কৃতি আলজেরিয়ার সংস্কৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূ্র্ণ। এখানের মানুষ আরবি,ফরাসি,বার্বার ভাষাসহ চতুর্থ ও পঞ্চম ভাষাতেও পারদর্শী হয়। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সরকার El Mouradia সরকারি ওয়েবসাইট (ফরাসি এবং আরবিতে) জাতীয় জনগণর বিধানসভা সংসদীয় ওয়েবসাইট। রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ সাধারণ তথ্য আলজেরিয়া from UCB Libraries GovPubs Ministère de l'Aménagement du Territoire, de l'Environnement et du Tourisme আলজেরিয়ার মানচিত্র বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:১৯৬২-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:আরব লিগের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ওপেকের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ভূমধ্যসাগরীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:আরবিভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:জি১৫ রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
অ্যান্ডোরা
https://bn.wikipedia.org/wiki/অ্যান্ডোরা
আন্দোর্‌রা দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ মহাদেশের একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। দেশটি পূর্ব পিরিনীয় পর্বতমালায় ফ্রান্স ও স্পেনের মাঝে অবস্থিত। আন্দোর্‌রা বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্রগুলির একটি। এর আয়তন ৪৬৮ বর্গকিমি ও জনসংখ্যা প্রায় ৮৪ হাজার। আন্দোর্‌রা লা ভেল্যা রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। আন্দোর্‌রা একটি রুক্ষ এলাকা; গভীর গিরিখাত, সরু উপত্যকা ও সুউচ্চ পর্বত এর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য। এর সর্বনিম্ন এলাকা সমুদ্র সমতল থেকে ৯১৪ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। শীতকালে প্রচুর বরফ পড়ে এর পাহাড়ি রাস্তাগুলি প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়, বিশেষত ফ্রান্সের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী রাস্তাটি। গ্রীষ্মে এর আবহাওয়া শীতল, শুষ্ক ও রোদেলা। আন্দোর্‌রা বহু বছর ধরে অবহেলিত ছিল। ১৯৫০-এর দশকে এসে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়। ক্ষুদ্র হলেও আন্দোর্‌রাতে পিরিনীয় পর্বতমালার সেরা স্কি ও স্নোবোর্ডিঙের ব্যবস্থা আছে। হাইকিং, বাইকিং ও আল্প্‌স পর্বতমালার অসাধারণ দৃশ্যাবলী গরমকালে পর্যটকদের ডেকে আনে। তবে আন্দোর্‌রার বেশির ভাগ অতিথিই দৈনিক ভিত্তিতে স্পেন বা ফ্রান্স থেকে প্রবেশ করেন, বিশেষত দেশটির করমুক্ত কেনাকাটার সুবিধা গ্রহণের জন্য। ব্যবসায়ীরা আন্দোর্‌রা লা ভেল্যা ও অন্যান্য শহরের রাস্তায় রাস্তায় ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, মদ, তামাক ও অন্যান্য বিলাসদ্রব্য বিক্রি করেন। পর্যটন আন্দোর্‌রার আয়ের মূল উৎস, তবে কিছু কিছু অ্যান্ডোরান আদিকালের মত এখনও ভেড়া ও গবাদি পশু পালন করেন। গ্রীষ্মে গ্রামের লোকেরা গবাদিপশুদের পর্বতের উঁচুতে আল্পীয় চারণভূমিতে নিয়ে যায়। আবাদযোগ্য জমিগুলোতে মূলত তামাকের চাষ হয়। প্রায় ৭০০ বছর ধরে আন্দোর্‌রা ফ্রান্সের নেতা ও উত্তর-পশ্চিম স্পেনের উর্গেল অঞ্চলের বিশপ একত্রে শাসন করতেন। তাদেরকে একত্রে "আন্দোর্‌রার যুবরাজগণ" উল্লেখ করা হত। ১৯৩৩ সালে আন্দোর্‌রাবাসী স্বাধীন গণতান্ত্রিক এলাকা তাদের প্রথম সংবিধান পাশ করে। বর্তমানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও উর্গেলের বিশপ দেশটির কেবল নামেই শাসক। রাজনীতি আন্দোর্‌রার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের কাঠামোয় পরিচালিত। সরকার প্রধান দেশটির প্রধান নির্বাহী এবং বহুদলীয় ব্যবস্থার নেতা। সরকার ও আইনসভা উভয়ের হাতে আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ন্যস্ত। নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা থেকে বিচার বিভাগ স্বাধীন। ১৯৯৩ সালে রচিত আন্দোর্‌রার নতুন সংবিধান অনুযায়ী আন্দোর্‌রা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র, যার রাষ্ট্রপ্রধান ফ্রান্স ও স্পেনের দুই "রাজপুত্র", কিন্তু প্রকৃত নির্বাহী ক্ষমতা সরকারপ্রধানের হাতে ন্যস্ত। ভূগোল থাম্ব|আন্দোর্‌রার টপোগ্রাফিক মানচিত্র আন্দোর্‌রা স্পেন ও ফ্রান্সের সীমান্তে পিরিনীয় পর্বতমালার পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি ভূমিবেষ্টিত রাষ্ট্র। দেশটির অধিকাংশই পর্বতময়। সমুদ্রসমতল থেকে দেশটির গড় উচ্চতা ১৯৯৬ মিটার। এর সর্বোচ্চ বিন্দু কোমা পেদ্রোসার উচ্চতা ২৯৪৬ মিটার। আন্দোর্‌রার পাহাড়ী এলাকা ইংরেজি ওয়াই-আকৃতির তিনটি নদী উপত্যকা দ্বারা বিভক্ত, এবং এই নদীগুলি একত্রিত হয়ে ভালিরা নদী নামে স্পেনে প্রবেশ করেছে। অর্থনীতি অ্যান্ডোরার জিডিপি ১৯৯৮ সালে $১, ২ বিলিয়ন, যার প্রধান বাণিজ্য খাত হচ্ছে পর্যটন শিল্প। ফ্রান্স ও স্পেনের দোকানীদের কাছে আকর্ষণীয় এবং একটি উন্মুক্ত বন্দর হিসেবে গণ্য। দেশটি গ্রীষ্মকাল এবং শীতকালের জন্য সক্রিয় পর্যটক রিসোর্ট ও হোটেল বিকশিত করেছে। কিছু ২৭০ হোটেল সহ ৪০০ রেস্টুরেন্টে, অনেক দোকান নিয়ে এই পর্যটক বাণিজ্য চাকরিতে ঘরোয়া শ্রম হিসেবে একটি বাড়ন্ত অংশ। এতে আনুমানিক ১১ ৬০০ হাজার পর্যটক বার্ষিক পরিদর্শন করে। জনসংখ্যা অ্যান্ডোরার সরকারি নথিপত্র ও অণুষ্ঠানের একমাত্র ভাষা কাতালান ভাষা। তবে সাধারণ জনগণ স্পেনীয় ভাষায় প্রচুর কথা বলে। এছাড়া পর্তুগিজ ও ফরাসি ভাষাতেও লোকেরা কথা বলে। অ্যান্ডোরাতে মূলত অ্যান্ডোরার নিজস্ব কাতালানভাষী অধিবাসী, এবং স্পেনীয়, পর্তুগিজ ও ফরাসি অভিবাসীরা বসবাস করেন। এই চার সম্প্রদায়ের ভাষার ব্যবহারও ভিন্ন। কাতালান অ্যান্ডোরার সরকারি ভাষা হলেও ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদানে স্পেনীয় ভাষাই বহুল প্রচলিত। তাই কাতালান না জেনেও অ্যান্ডোরাতে বসবাস করা সম্ভব। তবে শুমারিতে দেখা গেছে অ্যান্ডোরার ৯৭% জনগণই কাতালান বুঝতে পারেন। অ্যান্ডোরার নিজস্ব কাতালান-ভাষী, স্পেনীয়, পর্তুগিজ -- সবাই ঘরের বাইরে হাটে-বাজারে স্পেনীয় ভাষাতেই কথাবার্তা বলেন। তবে অ্যান্ডোরার শিক্ষাব্যবস্থা ফরাসি শিক্ষা ব্যবস্থার মডেল অনুকরণ করে বলে এখানে ফরাসি ভাষারও যথেষ্ট সাংস্কৃতিক প্রভাব রয়েছে। বিশেষত ফ্রান্স ও অ্যান্ডোরার সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্যে ফরাসির প্রভাব বেশি। অ্যান্ডোরার স্কুল-কলেজে বিদেশী ভাষা হিসেবে ফরাসি, স্পেনীয় ও ইংরেজি ভাষার শিক্ষা দেয়া হয়। অ্যান্ডোরার বেশির ভাগ লোক সাতটি শহরে বাস করেন। এদের মধ্যে আন্দোররা লা বেল্লা রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এর জনসংখ্যা ২২ হাজার। শহরটি পশ্চিম কেন্দ্রীয় অ্যান্ডোরায় ভালিরা নদীর তীরে অবস্থিত। অন্যান্য শহরগুলির মধ্যে আছে এস্কালদেস-এনগোর্দানি, এনকাম্প, সাঁ জুলিয়া দ্য লোরিয়া, এবং লা মাস্‌সানা। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Govern d'Andorra - সরকারি সাইট (কাতালান ভাষায়) রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ পৃথিবীতে ফাটলগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে Library of Congress অ্যান্ডোরা from UCB Libraries GovPubs অ্যান্ডোরার ইতিহাস: প্রাথমিক ডকুমেন্ট from EuroDocs বিষয়শ্রেণী:ইউরোপের রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:খ্রিস্টান রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইউরোপ কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:স্পেনীয় ভাষী রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:স্থলবেষ্টিত দেশ বিষয়শ্রেণী:ইউরোপের রাজতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
অ্যাঙ্গোলা
https://bn.wikipedia.org/wiki/অ্যাঙ্গোলা
অ্যাঙ্গোলা (, ) সরকারি হিসেব মতে অ্যাঙ্গোলা প্রজাতন্ত্র (, ) আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের পশ্চিম তীরে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। মোট আয়তন এবং জনসংখ্যার বিচারে (দুক্ষেত্রেই ব্রাজিলের ঠিক পরেই) এটি দ্বিতীয় সর্বোবৃহত্তম লিউসোফোন (পর্তুগীজ ভাষাভাষী) দেশ এবং আফ্রিকার সপ্তম সর্ববৃহৎ দেশ। এর দক্ষিণ সীমান্তে নামিবিয়া, উত্তরে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, পূর্বে জাম্বিয়া এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর। অ্যাঙ্গোলার একটি ছিটমহল প্রদেশ রয়েছে, ক্যাবিন্ডা প্রদেশ, যা প্রজাতন্ত্রী কঙ্গো ও গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোকে ঘিরে রেখেছে। লুয়ান্ডা হচ্ছে অ্যাঙ্গোলার রাজধানী এবং সবচেয়ে জনবহুল শহর। প্যালিওলিথিক যুগ থেকেই অ্যাঙ্গোলায় বসবাস করছে মানুষ। পর্তুগীজ উপনিবেশন থেকেই জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে এর উদ্ভব যা ষোড়শ শতকে প্রাথমিকভাবে উপকূলীয় বসতি ও স্থান বাণিজ্যের মাধ্যমে শুরু হয়েছিলো। উনিশ শতকে ইউরোপীয়ান দখলদাররা অন্তর্ভাগে নিজেদের অধিষ্ঠিত করতে থাকে। বিংশ শতকের আগ পর্যন্ত পর্তুগীজ উপনিবেশের, যা পরবর্তীতে অ্যাঙ্গোলায় রুপ নেয়, কোনো সীমানা ছিলো না। মূলত কুয়েমাটো, কোয়ানয়ামা ও বুন্দার মতো স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর বিরোধীতাই এর প্রধান কারণ। দীর্ঘস্থায়ী উপনিবেশ-বিরোধী সংগ্রামের পর ১৯৭৫ সালে অ্যাঙ্গোলা মার্কসবাদী-লেনিনবাদী একদলীয় প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা অর্জন করে। সেই একই বছর ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধের শুরু হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও কিউবা সমর্থিত অ্যাঙ্গোলা স্বাধীনতাবাদী গন-আন্দোলন এবং জায়ার সমর্থিত অ্যাঙ্গোলার ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের মধ্যে। ১৯৭৫ সাল থেকেই অ্যাঙ্গোলা স্বাধীনতাবাদী গণ-আন্দোলন দল দ্বারা শাসনক্ষমতায় রয়েছে। ২০০২ সালে যুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকেই অ্যাঙ্গোলা তুলনামূলক স্থিতিশীল একক, রাষ্ট্রপতিশাসিত, সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রাকাশ করেছে। অ্যাঙ্গোলার বিশাল খনিজ ও পেট্রোলিয়াম মজুদ রয়েছে এবং এর অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল, বিশেষ করে গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে। তবে এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত অসম ও দেশের অধিকাংশ সম্পদ জনসংখ্যার একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ক্ষুদ্র অংশে কেন্দ্রীভূত। এর বৃহত্তম বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য অংশীদার হচ্ছে চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বেশিরভাগ অ্যাঙ্গোলানদের জীবনযাত্রার মান এখনো নিম্ন পর্যায়ের; আয়ু পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম, যেখানে শিশুমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। ২০১৭ সাল থেকে, জোয়াও লরেঙ্কো -এর সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে তার মূল লক্ষ্য বানিয়েছে, এতটাই যে আগের সরকারের অনেক ব্যক্তিকেই হয় জেলে পাঠানো হয়েছে নয়তো তাঁরা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও বিদেশী কূটনীতিকরা এই প্রচেষ্টাকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন, কিছু সংশয়বাদীরা এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন। অ্যাঙ্গোলা জাতিসংঘ, ওপেক, আফ্রিকান ইউনিয়ন, পর্তুগিজ ভাষার দেশগুলির সম্প্রদায় এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উন্নয়ন সম্প্রদায়ের সদস্য। ২০২১ সালের হিসাবে, অ্যাঙ্গোলার আনুমানিক জনসংখ্যা ধরা হয় ৩২.৮৭ মিলিয়ন। অ্যাঙ্গোলা বহুসাংস্কৃতিক এবং বহুজাতিক। অ্যাঙ্গোলান সংস্কৃতি বহু শতাব্দীর পর্তুগিজ শাসনকে প্রতিফলিত করে, যাতে পর্তুগিজ ভাষা এবং ক্যাথলিক চার্চের প্রাধান্যই বেশি এবং বিভিন্ন দেশীয় রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের সাথে সম্মিলিত। ব্যুৎপত্তি অ্যাঙ্গোলা নামটি পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক নাম রেইনো ডি অ্যাঙ্গোলা ('কিংডম অফ অ্যাঙ্গোলা') থেকে এসেছে, যা পাওলো ডায়াস ডি নোভাইসের ১৫৭১ সালের সনদের মতই বেশ পুরনো। এনডোঙ্গো এবং মাতাম্বার রাজাদের এনগোলা উপাধি থেকে পর্তুগীজরা এই নামটি নিয়েছেন। এনডোঙ্গো কঙ্গো রাজ্যের অধীনে কোয়াঞ্জা এবং লুকালা নদীর মধ্যবর্তী উচ্চভূমিতে ছিল। কিন্তু ষোড়শ শতকে বৃহত্তর স্বাধীনতার দাবী শুরু করে। ইতিহাস অ্যাঙ্গোলা দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ। কিমবুন্ডু, যার মানে হচ্ছে রাজা, শব্দটি থেকে দেশটির নাম এসেছে। অ্যাঙ্গোলায় প্রথমে সান শিকারী-সংগ্রাহক সমাজ দ্বারা বসতি স্থাপিত হয়েছিল উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চল কঙ্গো এবং এনডোঙ্গোর মতো বান্টু রাজ্যের শাসনের অধীনে আসার আগে।থাম্ব|রাজা জোয়ো প্রথম, কঙ্গো রাজ্যের মানিকঙ্গো রাজনীতি অ্যাঙ্গোলান সরকার মূলত তিনটি শাখা নিয়ে গঠিত। এগুলো হল- নির্বাহী, আইনসভা এবং বিচার বিভাগ।  সরকারের নির্বাহী শাখা রাষ্ট্রপতি, ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রী পরিষদের সমন্বয়ে গঠিত। আইনসভা শাখায় রয়েছে ২২০ সিটের এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা- অ্যাঙ্গোলার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি, যা প্রাদেশিক এবং দেশব্যাপী উভয় নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়।  দশকের পর দশক ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে প্রেসিডেন্সিতে। ৩৮ বছরের শাসনের পর, ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি ডস সান্তোস MPLA নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।  ২০১৭ সালের আগস্টে সংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ী দলের নেতা অ্যাঙ্গোলার পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হন।  এমপিএলএ প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জোয়াও লরেঙ্কোকে সান্তোসের নির্বাচিত উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচিত করেছে। যাকে রাজনৈতিক শুদ্ধি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে তার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে এবং ডস সান্তোস পরিবারের প্রভাব কমানোর জন্য লরেনকো পরবর্তীতে জাতীয় পুলিশের প্রধান, অ্যামব্রোসিও দে লেমোস এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান অ্যাপোলিনারিও জোসেকে বরখাস্ত করেন।  উভয়ই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডস সান্তোসের সহযোগী হিসাবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতির কন্যা ইসাবেল ডস সান্তোসকে দেশটির রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সোনাঙ্গোলের প্রধান পদ থেকে সরিয়ে দেন। সামরিক বাহিনী অ্যাঙ্গোলার সামরিক বাহিনী একজন সেনাপ্রধান দ্বারা পরিচালিত, যিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করেন। অ্যাঙ্গলার প্রতিরক্ষা বাহিনী তিনটি বিভাগ নিয়ে গঠিত - স্থলসেনাবাহিনী, নৌবাহিনী (মারিনিয়া দি গেররা) এবং বিমান বাহিনী। মোট সেনাসংখ্যা প্রায় ১,১০,০০০। এদের মধ্যে স্থলসেনাবাহিনীতেই ১ লক্ষ নারী-পুরুষ কর্মরত। নৌবাহিনীতে ৩ হাজার এবং বিমানবাহিনীতে ৭ হাজার সেনা কর্মরত আছেন। বিমানবাহিনীতে রুশ-নির্মিত ফাইটার ও পরিবহন বিমান ব্যবহার করা হয়। অ্যাঙ্গোলার স্থলসেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশ কঙ্গো ও গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে নিয়োজিত আছে। জনসংখ্যা সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:Angola_Ethnic_map_1970.svg|ডান|থাম্ব|অ্যাঙ্গোলার ঐতিহাসিক জাতিগত বিভাগ ভাষা ধর্ম আরও দেখুন অ্যাঙ্গোলাতে পরিবহন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সরকার অ্যাঙ্গোলার প্রজাতন্ত্র সরকারী ওয়েবসাইট (পর্তুগিজ ভাষায়) অ্যাঙ্গোলার জাতীয় বিধানসভা (পর্তুগিজ ভাষায়) রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ সাধারণ তথ্য Angola from UCB Libraries GovPubs পর্যটন বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:মধ্য আফ্রিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:১৯৭৫-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:পর্তুগিজ ভাষী দেশগুলির সম্প্রদায়ের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ওপেকের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:সাবেক পর্তুগিজ উপনিবেশ বিষয়শ্রেণী:স্বল্পোন্নত দেশ বিষয়শ্রেণী:পর্তুগিজভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
এন্টিগুয়া এবং বার্বুডা
https://bn.wikipedia.org/wiki/এন্টিগুয়া_এবং_বার্বুডা
redirectঅ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা
আর্জেন্টিনা
https://bn.wikipedia.org/wiki/আর্জেন্টিনা
থাম্ব|261x261পিক্সেল|আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস প্রদেশের মার দেল প্লাটা সমুদ্র সৈকত এবং শহর আর্জেন্টিনা () দক্ষিণ আমেরিকার একটি রাষ্ট্র। বুয়েনোস আইরেস দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। দেশটি দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশের প্রায় পুরোটা জুড়ে অবস্থিত। আয়তনের দিক থেকে এটি দক্ষিণ আমেরিকার ২য় বৃহত্তম এবং বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। আর্জেন্টিনায় ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ু বিচিত্র। উত্তরের নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে দক্ষিণের মেরু-উপদেশীয় অঞ্চল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার বিস্তার। এর মধ্যেই আছে রুক্ষ আন্দেস পর্বতমালা ও তার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আকোনকাগুয়া। তবে বেশির ভাগ লোক দেশটির মধ্যভাগে অবস্থিত বিশাল উর্বর প্রেইরি সমভূমির (যার নাম পাম্পাস) শহরগুলিতে বাস করেন। পাম্পাসেই দেশটির অধিকাংশ কৃষিসম্পদ উৎপন্ন হয় এবং এখানেই দক্ষিণ আমেরিকার বিখ্যাত কাউবয় "গাউচো"-দের আবাসস্থল। আর্জেন্টিনায় আরও আছে অরণ্যভূমি, মরুভূমি, তুন্দ্রাভূমি, সুউচ্চ সব পর্বতশৃঙ্গ, নদনদী এবং হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ আটলান্টিক মহাসাগরীয় উপকূলভূমি। এছাড়া দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের অনেকগুলি দ্বীপ আর্জেন্টিনা নিজেদের বলে দাবী করে, যার মধ্যে ব্রিটিশ-শাসিত ফকল্যাণ্ড দ্বীপপুঞ্জ অন্যতম (আর্জেন্টিনীয়রা এগুলিকে মালবিনাস দ্বীপপুঞ্জ নামে ডাকে)। এর বাইরে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের একটি অংশও আর্জেন্টিনা নিজের বলে দাবী করে। আর্জেন্টিনাতে আদি প্রস্তর যুগে মানব বসতির নিদর্শন পাওয়া গেছে। আধুনিক আর্জেন্টিনার ইতিহাস ১৬শ শতকে স্পেনীয় উপনিবেশীকরণের মাধ্যমে সূচিত হয়। ১৭৭৬ সালে এখানে স্পেনীয় সাম্রাজ্যের অধীনে রিও দে লা প্লাতা উপরাজ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে এই উপরাজ্যের উত্তরসূরী রাষ্ট্র হিসেবে আর্জেন্টিনার উত্থান ঘটে। প্রায় তিন শতাব্দী ধরে ঔপনিবেশিক শাসনের পর ১৮১০ সালে আর্জেন্টিনা স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ১৮১৮ সালে স্পেনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধবিজয় শেষ হয়। আর্জেন্টিনার জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীরা দক্ষিণ আমেরিকার অন্যত্রও বিপ্লবে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এরপরে দেশটিতে অনেকগুলি গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়। শেষ পর্যন্ত ১৮৬১ সালে অনেকগুলি অঙ্গরাজ্যের একটি ফেডারেশন হিসেবে দেশটি পুনর্গঠিত হয়, যার রাজধানী নির্ধারিত হয় বুয়েনোস আইরেস। এর পরে দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরত আসে এবং ইউরোপ থেকে বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর আগমন ঘটে, যার ফলে সাংস্কৃতিক ও জনসংখ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে দেশটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ১৯শ শতকের শেষ ভাগ থেকে আর্জেন্টিনা প্রচুর পরিমাণে কৃষিদ্রব্য যেমন মাংস, পশম, গম, ইত্যাদি রপ্তানি করা শুরু করে। দক্ষিণ আমেরিকায় আর্জেন্টিনাতেই প্রথম শিল্পায়ন শুরু হয় এবং এটি বহুদিন ধরে এই মহাদেশের সবচেয়ে ধনী দেশ ছিল। সে সময় এখানকার অধিবাসীরা ইউরোপীয় দেশগুলির সমমানের জীবনযাত্রা নির্বাহ করত। ব্যাপক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করে দেশটি বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বের ৭ম ধনী দেশে পরিণত হয়। তবে ১৯৪০-এর দশকের পর থেকে আর্জেন্টিনা ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি, উচ্চ বেকারত্ব ও বড় আকারের জাতীয় ঋণের সমস্যায় জর্জরিত। আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক ইতিহাস সংঘাতময়। দেশটির সবচেয়ে বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট হুয়ান পেরন শ্রমিক শ্রেণী ও দরিদ্রদের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু তিনি ছিলেন একজন একনায়ক এবং সমস্ত বিরোধিতা কঠোর হাতে দমন করতেন। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ১৯৫৫ সালে পেরনের পতন ঘটে। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত কুখ্যাত সামরিক শাসনের সময় বহু আর্জেন্টিনীয়কে বিচার ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ১৯৮৩ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছেড়ে দেবার পর আর্জেন্টিনায় আবার গণতন্ত্র স্থাপিত হয় কিন্তু দেশটি অর্থনৈতিক সমস্যায় তখনও হাবুডুবু খেতে থাকে। ২১শ শতকের প্রথম দশকেও আর্জেন্টিনা তার অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাম্পাস এবং বিস্তীর্ণ ঊষর পাতাগোনীয় ভূপ্রকৃতির রোমান্টিক হাতছানি সত্ত্বেও আর্জেন্টিনা মূলত একটি নগরকেন্দ্রিক রাষ্ট্র। দেশটির রাজধানী বুয়েনোস আইরেসকে ঘিরে থাকা আধুনিক ও ব্যস্ত শহরতলীগুলি পাম্পাসের পূর্ব অংশে ছড়িয়ে পড়েছে। বুয়েনোস আইরেস দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ ও আন্তর্জাতিক শহরগুলির একটি। উচ্ছল রাত্রিজীবন এবং স্থাপত্যশৈলীর কারণে এটিকে প্রায়ই প্যারিস ও রোমের সাথে তুলনা করা হয়। ১৯শ শতকের শেষভাগে ও ২০শ শতকের শুরুর দিকে ইতালি, স্পেন ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ অভিবাসী এখানকার শিল্পকারখানাগুলিতে জীবিকা নির্বাহ করার লক্ষ্যে দেশান্তরী হন। বৃহত্তর বুয়েনোস আইরেস এলাকাতে আর্জেন্টিনার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনগণ বাস করে। দেশটির অন্যান্য প্রধান শহরগুলির মধ্যে আছে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলস্থিত মার দেল প্লাতা, লা প্লাতা ও বাইয়া ব্লাঙ্কা এবং দেশের অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত রোসারিও, সান মিগেল দে তুকুমান, কর্দোবা ও নেউকেন। ভূগোল থাম্ব|261x261px|alt=Mountain tops, with clouds shown.|আকোনকাগুয়া এশিয়ার বাইরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত, যা , এবং দক্ষিণ গোলার্ধের সর্বোচ্চ আর্জেন্টিনার আয়তন দেশটি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণাংশের প্রায় পুরোটা জুড়ে অবস্থিত। আন্দেস পর্বতমালা দেশটির পশ্চিম সীমানা নির্ধারণ করেছে, যার অপর পার্শ্বে চিলি অবস্থিত।: "The Andes Mountains form the "backbone" of Argentina along the western border with Chile." দেশটি উত্তরে বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ে, উত্তর-পূর্বে ব্রাজিল, পূর্বে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর। এবং দক্ষিণে ড্রেক প্রণালী। সব মিলিয়ে দেশটির স্থলসীমান্তের দৈর্ঘ্য । রিও দে লা প্লাতা ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে দেশটির তটরেখার দৈর্ঘ্য মেন্দোসা প্রদেশে অবস্থিত আকোনকাগুয়া আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ পর্বত। এটি সমুদ্রতল থেকে ( উচ্চতায় অবস্থিত। এছাড়াও আকোনকাগুয়া দক্ষিণ গোলার্ধ ও পশ্চিম গোলার্ধের সর্বোচ্চ পর্বত। আর্জেন্টিনার সর্বনিম্ন বিন্দু হচ্ছে সান্তা ক্রুস প্রদেশে অবস্থিত লাগুনা দেল কার্বন, যা সান হুলিয়ান বৃহত্‌ অবনমনের একটি অংশ। এটি সমুদ্র সমতল থেকে ( নিচে অবস্থিত। এছাড়াও এটি দক্ষিণ গোলার্ধ ও পশ্চিম গোলার্ধের সর্বনিম্ন বিন্দু, এবং পৃথিবীর ৭ম সর্বনিম্ন বিন্দু। আর্জেন্টিনার উত্তরতম বিন্দুটি রিও গ্রান্দে দে সান হুয়ান ও রিও মোহিনেতে নদী দুটির সঙ্গমস্থলে, হুহুই প্রদেশে অবস্থিত। দেশটির দক্ষিণতম বিন্দু হল তিয়ের্‌রা দেল ফুয়েগো প্রদেশের সান পিও অন্তরীপ। সর্বপূর্ব বিন্দুটি মিসিওনেস প্রদেশের বেরনার্দো দে ইরিগোইয়েন শহরের উত্তর-পূর্বে এবং সর্বপশ্চিম বিন্দুটি সান্তা ক্রুস প্রদেশের লোস গ্লাসিয়ারেস জাতীয় উদ্যানের মধ্যে পড়েছে। উত্তর থেকে দক্ষিণে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য প্রায় ; এর বিপরীতে পূর্ব থেকে পশ্চিমে দেশটির সর্বোচ্চ প্রশস্ততা প্রায় . আর্জেন্টিনার প্রধান প্রধান নদীর মধ্যে রয়েছে পারানা নদী ও উরুগুয়াই নদী (নদী দুটি একত্র হয়ে রিও দে লা প্লাতা নদী গঠন করেছে), সালাদো নদী, রিও নেগ্রো নদী, সান্তা ক্রুস নদী, পিকোমাইয়ো নদী, বের্মেহো নদী ও কোলোরাদো নদী। এই সব নদীর পানি আর্জেন্টিনীয় সাগরে গিয়ে পড়েছে। আটলান্টিক সাগরের যে অগভীর অংশটি আর্জেন্টিনীয় শেলফ বা সমুদ্র-তাকের উপরে অবস্থিত, তাকেই আর্জেন্টিনীয় সাগর নামে ডাকা হয়। এটি একটি অস্বাভাবিকভাবে প্রশস্ত মহাদেশীয় মঞ্চ। এই সাগরের পানি দুইটি প্রধান মহাসাগরীয় স্রোতের প্রভাবাধীন: উষ্ণ ব্রাজিল স্রোত এবং শীতল ফকল্যান্ডস স্রোত। দক্ষিণে অবস্থিত ইসলা গ্রান্দে দে তিয়েররা দেল ফুয়েগো নামক দ্বীপের পূর্ব অর্ধাংশ আর্জেন্টিনার অন্তর্গত। এছাড়াও পূর্বের বেশ কিছু সামুদ্রিক দ্বীপ যেমন ইসলা দে লোস এস্তাদোস আর্জেন্টিনার অধীন। আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। জনসংখ্যা ২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ীে মোট জনসংখ্যা ৪০,১১৭,০৯৬ জন, যা ২০০১ সাল থেকে ৩৬,২৬০,১৩০ জন বেশি। মোট জনসংখ্যায় আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকায় তৃতীয়, ল্যাটিন আমেরিকায় চতুর্থ এবং বিশ্বব্যাপী ৩৩তম। এর জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটার ভূমি এলাকায় ১৫ জন, যা বিশ্বের গড় ৫০ জনের চেয়ে অনেক কম। ২০১০ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল আনুমানিক ১.০৩%, প্রতি ১,০০০ জন বাসিন্দার মধ্যে জীবিত জন্মের হার ১৭.৭ এবং প্রতি ১,০০০ জন বাসিন্দার মধ্যে মৃত্যুর হার ৭.৪। ধর্ম আর্জেন্টিনা মূলত খ্রিস্টধর্ম প্রধান দেশ। আর্জেন্টিনার ৭৮ শতাংশ খ্রিস্টান,২০ শতাংশ নাগরিক কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নন এবং বাকি ২ শতাংশ অন্যান্য ধর্মালম্বী। ইতিহাস সাম্প্রতিক যুগ আলফোনসিন সরকার রাউল আলফোনসিন (Raúl Alfonsín) ১৯৮৩ সালের আর্জেন্টিনার সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তিনি একনায়কতান্ত্রিক প্রোসেসো (Proceso) পর্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের পক্ষে প্রচারণা চালান। এর ফলশ্রুতিতে আলফোনসিনের শাসনামলে সামরিক জান্তা এবং অন্যান্য সামরিক আদালতের বিচার হয়, যাতে সামরিক ক্যু-এর সমস্ত নেতাদের শাস্তি হয়। তবে সামরিক চাপের মুখে আলফোনসিন ১৯৮৬ সালে শেষ বিন্দু বা “পুন্তো ফিনাল” ও ১৯৮৭ সালে প্রাপ্য আনুগত্য বা “ওবেদিয়েন্সিয়া দেবিদা” নামের আইন দুটি প্রবর্তন করেন যার ফলে নিম্নস্তরের কর্মচারীদের বিচার রহিত হয়। অর্থনৈতিক সংকট খারাপ হতে শুরু করলে ও অতিমুদ্রাস্ফীতি ঘটলে আলফোনসিনের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে পেরনবাদী রাজনীতিবিদ কার্লোস মেনেম জয়লাভ করেন। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে বিক্ষুব্ধ জনগণ দাঙ্গা শুরু করলে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই আলফোনসিন পদত্যাগ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। মেনেম সরকার নির্বাচিত হয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি মেনেম নব্য-উদারবাদী অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রয়োগ করেন: সুনির্দিষ্ট মুদ্রা বিনিময় হার, ব্যবসাসমূহের উপর নিয়ন্ত্রণ হ্রাস (deregulation), ব্যক্তিমালিকানাধীনকরণ (privatization) এবং সংরক্ষণবাদী বাধাগুলি দূরীকরণের মাধ্যমে অর্থনীতি কিছুদিনের জন্য স্বাভাবিক হয়ে আসে। আলফোনসিন সরকারের যেসব সামরিক অফিসারদের শাস্তি হয়েছিল, তাদের তিনি ক্ষমা করে দেন। ১৯৯৪ সালে আর্জেন্টিনার সংবিধানের সংশোধনী আনা হয়, যার বদৌলতে ১৯৯৫ সালে মেনেম দ্বিতীয়বারের মত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৯৫ সাল থেকে আর্জেন্টিনার অর্থনীতি আবার খারাপের দিকে যেতে শুরু করে, বেকারত্বের হার বাড়তে থাকে এবং দেশটি অর্থনৈতিক মন্দার নিমজ্জিত হয়। ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে ফের্নান্দো দে লা রুয়ার নেতৃত্বে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আলফোনসিনের রাজনৈতিক দল উনিওন সিবিকা রাদিকাল আবার ক্ষমতায় ফেরত আসে। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ আর্জেন্টিনার সরকারি ওয়েবসাইট আর্জেন্টিনা at UCB Libraries GovPubs LANIC আর্জেন্টিনা ওয়েবসাইট বিষয়শ্রেণী:খ্রিস্টান রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:জি২০ সদস্য বিষয়শ্রেণী:মার্কোসুরের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:স্পেনীয় ভাষী রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:প্রাক্তন স্পেনীয় উপনিবেশ বিষয়শ্রেণী:জি১৫ রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
আর্মেনিয়া
https://bn.wikipedia.org/wiki/আর্মেনিয়া
আর্মেনিয়া ( হায়াস্তান্‌) পূর্ব ইউরোপেরThe UN classification of world regions places Armenia in Western Asia; the CIA World Factbook , , and Oxford Reference Online also place Armenia in Asia. একটি রাষ্ট্র। জর্জিয়া ও আজারবাইজানের সাথে এটি দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের স্থলযোজকের উপর অবস্থিত। ইয়েরেভান দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। আর্মেনীয় জাতি। জাতিগত আর্মেনীয়রা নিজেদের "হায়" (Հայ) বলে ডাকে এবং আর্মেনিয়ার ৯০% লোক হায় জাতির লোক। ১৯২২ সালে এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৯১ সালে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৯৫ সালে দেশটির প্রথম সোভিয়েত-পরবর্তী সংবিধান পাশ হয়। ইতিহাস থাম্ব|260x260পিক্সেল|ঐতিহাসিক আর্মেনিয়া, ১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ আর্মেনিয়ার প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ অব্দে, উরার্তু বা ভান রাজ্যের অংশ হিসেবে। রাজ্যটি ককেসাস অঞ্চল ও পূর্ব এশিয়া মাইনর এলাকাতে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। সেলেউসিদ সাম্রাজ্যের ধ্বংসের পর ১৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম আর্মেনীয় রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৯৫ থেকে ৬৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এই নবগঠিত রাষ্ট্রের চরম উৎকর্ষের সময়। এসময় আর্মেনিয়া সমগ্র ককেসাস অঞ্চল তো বটেই, এরও বাইরে বর্তমান পূর্ব তুরস্ক, সিরিয়া এবং লেবানন পর্যন্ত সীমানা বিস্তার করে। কিছু সময়ের জন্য আর্মেনিয়া ছিল রোমান পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্য। ৬৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এটি রোমান সাম্রাজ্যের অংশে পরিণত হয় এবং রাজনৈতিক, দার্শনিক ও ধর্মীয়ভাবে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি অণুসরণ করা শুরু করে। ৩০১ খ্রিষ্টাব্দে আর্মেনিয়া ইতিহাসের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে এবং আর্মেনীয় গির্জাব্যবস্থার পত্তন করে। আজও আর্মেনীয় গির্জা রোমান ক্যাথলিক গির্জাব্যবস্থা এবং পূর্ব অর্থডক্স গির্জাব্যবস্থা অপেক্ষা স্বাধীন একটি গির্জাব্যবস্থা হিসেবে বিদ্যমান। পরবর্তীতে আর্মেনিয়ার রাজনৈতিক সংকটের সময় এই গির্জা আর্মেনিয়ার অদ্বিতীয় জাতীয় সত্তা সংরক্ষণে সাহায্য করে। আনুমানিক ১১০০ থেকে ১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আর্মেনীয় জাতীয়তাবাদের কেন্দ্র দেশের দক্ষিণদিকে সরে যায়। এসময় আর্মেনীয় সিলিসিয়া রাজ্য ইউরোপীয় ক্রুসেডার রাজ্যগুলির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মাইনর এলাকাতে সমৃদ্ধি অর্জন করে, যদিও রাজ্যটি শেষ পর্যন্ত মুসলমানদের করায়ত্ত হয়। ৪র্থ থেকে ১৯শ শতক পর্যন্ত আর্মেনিয়া বিভিন্ন বড় শক্তির শাসনাধীনে আসে। এদের মধ্যে পারসিক, বাইজেন্টীয়, আরব, মোঙ্গল এবং তুর্কি জাতি উল্লেখযোগ্য। ১৯১৫ সালে সংঘটিত আর্মেনিয় গণহত্যা দেশটির এক উল্লেখযোগ্য কালো অধ্যায়। ১৯১৮ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত ক্ষুদ্র সময়ের জন্য এটি একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র ছিল। ১৯২০ সালে স্থানীয় সাম্যবাদীরা ক্ষমতায় আসে এবং সোভিয়েত সেনাবাহিনী দেশটি দখল করে। ১৯২২ সালে আর্মেনিয়া আন্তঃককেশীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের অংশে পরিণত হয়। ১৯৩৬ সালে এটি আর্মেনীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। ১৯৯১ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর আর্মেনিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। রাজনীতি আর্মেনিয়ায় ২০১৭ সালে একটি সাংবিধানিক গণভোট আয়োজিত হয়। সেখানে আর্মেনীয়রা সংসদীয় শাসনব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। অতঃপর রাষ্ট্রপতি সার্জ সার্জিসান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে তীব্র সরকারবিরোধী আন্দোলন হয়, যা আর্মেনীয় ভেলভেট বিপ্লব নামে পরিচিতি লাভ করেছে। সার্জিসান পদত্যাগ করলে বিরোধী নেতা নিকোল পাশিনিয়ান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তঁার দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ভূগোল আর্মেনিয়া রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের অন্তর্বর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। উত্তর আর্মেনিয়া জুড়ে রয়েছে ক্ষুদ্রতর ককেশাস পর্বতমালা, যেটি সেভান হ্রদ ও আজারবাইজানের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত হয়েছে এবং আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সীমান্ত হয়ে ইরানে চলে গেছে। এই পর্বতগুলির কারণে আর্মেনিয়ার দক্ষিণ থেকে উত্তরে ভ্রমণ করা কষ্টকর। আর্মেনিয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্প হয় এবং এর ফলে অনেক প্রাণহানি ঘটে। আর্মেনিয়ার প্রায় অর্ধেক এলাকা সমুদ্র সমতল থেকে ২০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় অবস্থিত। দেশটির মাত্র ৩% ৬৫০ মিটারের নিম্ন উচ্চতায় অবস্থিত। আরাস নদী ও দেবেত নদীর উপত্যকাগুলি দেশের নিম্নতম এলাকা, এবং এগুলিও যথাক্রমে ৩৮০ মিটার ও ৪৩০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। ককেশাস পর্বতমালার দক্ষিণে আছে আর্মেনীয় মালভূমি, যা দক্ষিণ-পশ্চিমে আরাস নদীর দিকে ঢালু হয়ে গেছে। মালভূমিটিতে পাহাড় পর্বত ও মৃত আগ্নেয়গিরি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এদের মধ্যে ৪৪৩০ মিটার উঁচু আরাগাৎস পর্বত আর্মেনিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। ৩৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও সর্বোচ্চ ৭২.৫ কিলোমিটার প্রস্থবিশিষ্ট সেভান হ্রদ আর্মেনিয়ার ভূগোলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হ্রদটি সমুদ্রতল থেকে ২০৭০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। আরাস নদী প্রধানতম নদী। সেভান হ্রদ থেকে উপনদী রাজদান প্রবাহিত হয়ে আরাসে পড়েছে। উল্লেখ্য বিতর্কিত নাগার্নো-কারাবাগ অঞ্চল নিয়ে আজারবাইজানের সাথে আর্মেনিয়ার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে সামরিক সংঘাত চলে আসছে।এতে এ পর্যন্ত দু দেশের প্রায় ৩০০ এর বেশি বেসামরিক লোকজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে।https://m.dailyinqilab.com/article/327050/%E0%A6%86%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A7%A9%E0%A7%A6%E0%A7%A6-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A3%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF সামরিক শক্তি চারদিকে স্থলবেষ্টিত হওয়ায় দেশটিতে মূলত স্থল বাহিনী ও বিমানবাহিনী রয়েছে। ভারতীয় সুখই-৩০ এর উন্নত ধরন সুখই-৩০এসএম এর ৪টি বিমান রয়েছে বাহিনীর কাছে। ৫০০ কিমি পরিসীমার 9K720 ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্রো ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থনীতি ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর আর্মেনিয়াতে অর্থনৈতক মন্দা দেখা দিলেও দেশটি ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে উঠছে। তবে ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং ১৯৯০-এর দশকে আজারবাইজানের সাথে নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে যুদ্ধ আর্মেনিয়ার অর্থনীতিতে আজও প্রভাব রেখে চলেছে। ২৭-০৯-২০ যুদ্ধে কারাবাখ আজারভাইজানের হাতে চলে যাবে.. আর্মেনিয়াতে নগরায়নের হার উচ্চ। এখানে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লোক শহরে বাস করে। নদী উপত্যকায়, বিশেষত হ্রাজদান নদীর তীরে বসতির ঘনত্ব বেশি। হ্রাজদান নদীর তীরেই আর্মেনিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী ইয়েরেভান অবস্থিত। আর্মেনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হল গিয়ুম্‌রি। ১৯৮৮ সালে গিয়ুম্‌রি শহর এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের শিকার হয়। ভাষা আর্মেনিয়ার ৯৮% অধিবাসী আর্মেনীয় ভাষায় কথা বলে থাকেন। আর্মেনীয় ভাষা দেশটির রাষ্ট্রভাষা। আর্মেনীয় ভাষাকে পূর্ব ও পশ্চিম এই দুইটি সাহিত্যিক আদর্শ ভাষায় ভাগ করা যায়। এদের মধ্যে পূর্ব আর্মেনীয়কেই বর্তমানে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ১৯১৫ সালে আর্মেনিয়ার গণহত্যার সময় অনেক আর্মেনীয় পশ্চিম আর্মেনিয়াতে (বর্তমান তুরস্ক) পালিয়ে যান এবং বর্তমান আর্মেনিয়ার বাইরে বসতি স্থাপন করেন। তাদের ব্যবহৃত ভাষাই পশ্চিম আর্মেনীয় ভাষা। এছাড়াও আর্মেনীয় গির্জাগুলিতে গ্রাবার নামের একটি প্রাচীন লিখিত আর্মেনীয় ভাষা ব্যবহৃত হয়। সংখ্যালঘুদের মধ্যে প্রচলিত ভাষাগুলির মধ্যে আছে রুশ ভাষা, কুর্মান্‌জি (ইয়েজিদীয়) নামের একটি কুর্দি উপভাষা, নব্য-আসিরীয়, গ্রিক ও ইউক্রেনীয় ভাষা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেদের ভাষা ছাড়াও রুশ কিংবা আর্মেনীয়তে কথা বলতে পারে। আর্মেনিয়ায় দ্বিবিধ ভাষারীতি (diglossia) বিদ্যমান। লিখিত মাধ্যমে, নথিপত্রে ও শিক্ষাক্ষেত্রে আর্মেনীয়রা আদর্শ পূর্ব আর্মেনীয় ভাষা ব্যবহার করে। কিন্তু প্রাত্যহিক কাজেকর্মে ও কথাবার্তায় স্থানীয় উপভাষাই বেশি চলে। আর্মেনীয়দের ভাষার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল প্রায় ৯০% আর্মেনীয় আর্মেনীয় ও রুশ উভয় ভাষাতেই স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারেন। আর্মেনিয়া যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল তখন রুশ ভাষার এখানে একটি বিশেষ অবস্থান ছিল। রুশ ভাষার সাথে তুলনায় আর্মেনীয় ভাষার মর্যাদা ছিল কম। তবে আর্মেনিয়ার স্বাধীনতার পর দৃশ্যপট বদলেছে। বর্তমানে আর্মেনীয় ভাষাই দেশের মূল ভাষা। আর্মেনীয়রা স্কুলে রুশ ও ইংরেজি এই দুই বিদেশী ভাষা সম্পর্কেই ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে। তবে ইদানীং ইংরেজির আধিপত্য বেড়েছে। জনসংখ্যা ২০১১ এর আদমশুমারি অনুযায়ী আর্মেনিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ ১৮ হাজার। ধর্ম খ্রিস্টানধর্ম, আরো বিশেষ করে বলতে গেলে, আর্মেনিয় অ্যাপসল গির্জার ধর্ম, আর্মেনিয়ার প্রায় ৯৫% অধিবাসীর ধর্ম। যিশুর দুই শিষ্য বার্থেলেমিউ ও থাদেউস প্রথম শতকেই এখানে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করেন। ৩য় শতকে আর্মেনিয়ার রাজা খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং একে দেশটির রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রচলিত করেন। এছাড়া দেশটিতে স্বল্পসংখ্যক ইহুদি, ইয়াজিদি ও মুসলমান অধিবাসী বসবাস করেন। সংস্কৃতি আর্মেনীয়রা সাধারণত পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখে এবং তাদের বিশেষ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখে। আর্মেনীয় সঙ্গীত ও রান্না অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যীয় দেশগুলির মত। খাবারের মধ্যে দোলমা বা শর্মা এবং পানীয়ের মধ্যে ওয়াইন ও ব্র‌্যান্ডি গুরুত্বপূর্ণ। উৎসবের সময় আর্মেনীয়রা ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীত গাইতে এবং বৃত্তাকারে গাইতে পছন্দ করে। বাস্কেটবল, ফুটবল ও টেনিস জনপ্রিয় খেলা। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে আর্মেনীয়রা কুস্তি, মুষ্টিযুদ্ধ, ভারোত্তোলন এবং জিমন্যাস্টিক্‌সে সাফল্য লাভ করেছে। আর্মেনীয়রা অবসর সময়ে দাবা ও অন্যান্য বোর্ড খেলা খেলতেও পছন্দ করে। শহরের বেশির ভাগ অধিবাসী সোভিয়েত আমলে নির্মিত অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বাস করে; যেগুলির বর্তমান অবস্থা তেমন ভাল নয়। গ্রামের লোকেরা সাধারণত এক পরিবারের জন্য নির্মিত বাড়িতে বাস করে। অনেক সময় যৌথ পরিবারের অনেক সদস্য একই ছাদের নিচে বাস করে। পরিবার ও বন্ধুবান্ধব সামাজিক জীবনের কেন্দ্র। আর বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রজন্মে প্রজন্মে সংযোগ স্থাপিত হয়। বিখ্যাত ভারতীয় শাস্রীয় সঙ্গীত গায়িকা গওহর জান ছিলেন আর্মেনিয়ান বংশোদ্ভূত। থাম্ব|ডান|alt=Yerevan .|ইয়েরেভান আরও দেখুন •ককেশাসের ইতিহাস •জর্জিয়া •আজারবাইজান তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সরকারী আর্মেনিয়ার সরকার সরকারী ওয়েবসাইট আর্মেনিয়ার জাতীয় বিধানসভা আর্মেনিয়ার রাষ্ট্রপতি আর্মেনিয়ার বিচারবিভাগ মন্ত্রণালয় এবং সংস্থা আর্মেনীয় পরমাণবিক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আর্মেনিয়ার জাতীয় পরিসংখ্যান সংক্রান্ত পরিসেবা আর্মেনীয় রীতিনীতি পরিসেবা অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয় রাজস্ব মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কমিশন রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ সাধারণ তথ্য Armenia at UCB Libraries GovPubs পর্যটন Armeniainfo.am official government Tourist Board Electronic Visa (eVisa) for tourists অন্যান্য Armeniapedia.org - আর্মেনীয়ন উইকি (ইংরেজি) পৃথিবী বুদ্ধিজীবী বৈশিষ্ট্য গাইডবই: আর্মেনিয়া বিষয়শ্রেণী:এশিয়ার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইউরোপের রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:১৯১৮-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:১৯৯১-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:খ্রিস্টান রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:স্বাধীন রাষ্ট্রের কমনওয়েলথের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইউরোপ কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:রুশ ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:আন্তঃমহাদেশীয় রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:১৯১৮-এ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত বিষয়শ্রেণী:১৯৯১-এ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত বিষয়শ্রেণী:১৯৯১-এ ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত বিষয়শ্রেণী:ককেশাস বিষয়শ্রেণী:স্থলবেষ্টিত দেশ বিষয়শ্রেণী:পশ্চিম এশিয়ার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:সীমিত স্বীকৃতির রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
অস্ট্রেলিয়া
https://bn.wikipedia.org/wiki/অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রিয়া
https://bn.wikipedia.org/wiki/অস্ট্রিয়া
থাম্ব|275x275পিক্সেল|ভিয়েনায় জাতিসংঘের কার্যালয় বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের চারটি প্রধান অফিসের একটি অস্ট্রিয়া ( ও্যস্টারাইশ্‌, ক্রোয়েশীয় ভাষায়: Austrija আউস্ত্রিয়া, হাঙ্গেরীয় ভাষায়: Ausztria অউস্ত্রিয়, স্লোভেনীয় ভাষায: Avstrija আভ্‌স্ত্রিয়া) পশ্চিম ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। স্থলবেষ্টিত এই দেশের উত্তরে জার্মানি ও চেক প্রজাতন্ত্র, পূর্বে স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি, দক্ষিণে স্লোভেনিয়া ও ইতালি, এবং পশ্চিমে সুইজারল্যান্ড ও লিশ্‌টেন্‌ষ্টাইন। অস্ট্রিয়া মূলত আল্পস পর্বতমালার উপরে অবস্থিত। দেশটির তিন-চতুর্থাংশ এলাকাই পর্বতময়। অস্ট্রিয়া একটি সংসদীয় গণতন্ত্র। এখানে ৯টি ফেডারেল রাজ্য রয়েছে। এটি ইউরোপের ৬টি রাষ্ট্রের অন্যতম যারা স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষতা ঘোষণা করেছে। অস্ট্রিয়া ১৯৫৫ থেকে জাতিসংঘের এবং ১৯৯৫ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। অস্ট্রিয়া অতীতে হাবসবুর্গ রাজাদের অধীনস্থ একটি বিস্তৃত শক্তিশালী সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র ছিল। ভিয়েনা ছিল সেই সাম্রাজ্যের রাজকীয় রাজধানী। ভিয়েনা এখনও বিশ্বের অন্যতম প্রধান শহর হিসেবে আদৃত। এর রাজকীয় রূপ, অসাধারণ বারোক স্থাপত্য, সঙ্গীত ও নাট্যকলা জগদ্বিখ্যাত। ভিয়েনা বর্তমানে অস্ট্রিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) শেষে অস্ট্রিয়ার অধীনস্থ বহুজাতিক সাম্রাজ্যটি ভেঙে যায় এবং তার স্থানে একাধিক জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। অস্ট্রিয়া নিজে একটি ক্ষুদ্র স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। নতুন রাষ্ট্রগুলি বাণিজ্য বাধার সৃষ্টি করলে অস্ট্রিয়া তার প্রাক্তন বৈদেশিক বাজার এবং জ্বালানির উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দেশটির অর্থনীতি বৈদেশিক সাহায্যের পর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অস্ট্রিয়াতে রক্ষণশীল শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৩০-এর দশকের অর্থনৈতিক মন্দা দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়। যে সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি ভিয়েনাকে সামাজিক গণতন্ত্রের মডেল হিসেবে গড়ে তুলেছিল, ১৯৩৪ সালে তাদের পতন ঘটে এবং ডানপন্থী স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৯ সালে নাৎসি জার্মানি অস্ট্রিয়াকে নিজেদের সাথে সংযুক্ত করে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) জার্মানির পরাজয়ের পর মিত্রশক্তি অস্ট্রিয়া দখল করে। এসময় মার্কিন ও সোভিয়েত সেনারা এখানে অবস্থান করছিল। ১৯৫৫ সালে অস্ট্রিয়া আবার স্বাধীন হয় এবং তারপর থেকে দেশটির অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে। বর্তমানে দেশটি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। রপ্তানি ও পর্যটন শিল্প দেশটির আয়ের বড় উৎস। ভিয়েনার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং অস্ট্রিয়ার অসাধারণ সৌন্দর্যময় পার্বত্য ভূদৃশ্যাবলীর টানে এখানে বহু পর্যটক বেড়াতে আসেন। ইতিহাস অস্ট্রিয়ার ইতিহাস ৯৭৬ সালে শুরু হয়। ঐ বছর লেওপোল্ড ফন বাবেনবের্গ বর্তমান অস্ট্রীয় এলাকার বেশির ভাগ অংশের শাসকে পরিণত হন। ১২৭৬ সালে রাজা প্রথম রুডলফ হাব্‌স্‌বুর্গ বংশের প্রথম রাজা হিসেবে অস্ট্রিয়ার শাসক হন। হাব্‌স্‌বুর্গ রাজবংশের রাজারা প্রায় ৭৫০ বছর অস্ট্রিয়া শাসন করেন। রাজনৈতিক বিবাহ সম্পাদনের মাধ্যমে হাব্‌স্‌বুর্গেরা মধ্য ইউরোপের এক বিরাট এলাকা দখলে সক্ষম হন। তাদের ভূসম্পত্তি এমনকি আইবেরীয় উপদ্বীপ (বর্তমান স্পেন) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ১৬শ ও ১৭শ শতকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের আক্রমণের ফলে অস্ট্রীয় এলাকাটি ধীরে ধীরে দানিউব নদীর অববাহিকার কেন্দ্রীয় ইউরোপীয় অংশটিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ১৮৪৮ সালে প্রথম ফ্রান্‌ৎস ইয়োজেফ সিংহাসনে আরোহণ করেনে এবং ১৯১৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তার আমলে অস্ট্রীয় ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। ১৮৬৭ সালে অস্ট্রীয় সাম্রাজ্যের ভেতরে হাঙ্গেরি আগের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক স্বাধীনতা পায়, ফলে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় দ্বৈত রাজ্যব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটে। ২০শ শতকে এসে রাজনৈতিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি পায় এবং ১ম বিশযুদ্ধ শেষে সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে। ঐ সময় অস্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র স্বাধীনতা ঘোষণা করে, যার সীমানা ও বর্তমান অস্ট্রিয়ার সীমানা মোটামুটি একই রকম। ১৯১৯ সালে সাঁ জেরমাঁ-র চুক্তির ফলে হাব্‌স্‌বুর্গ রাজবংশ সরকারিভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং অস্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৮ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত অস্ট্রিয়াতে রাজনৈতিক সংঘাত বৃদ্ধি পায়। ১৯২০-এর দশকের শেষে এবং ১৯৩০-এর দশকের শুরুতে আধা-সামরিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলি হরতাল ও সহিংস সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। বেকারত্বের হার বেড়ে ২৫% হয়ে যায়। ১৯৩৪ সালে একটি কর্পোরেশনবাদী স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় আসে। ১৯৩৪ সালের জুলাই মাসে অস্ট্রীয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক (নাৎসি) দল কু-এর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ১৯৩৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মানির সামরিক আগ্রাসনের হুমকির মুখে অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কুর্ট শুশনিগ অস্ট্রীয় নাৎসিদের সরকারে নিতে বাধ্য হন। ১৯৩৮ সালের ১২ই মার্চ জার্মানি অস্ট্রিয়াতে সৈন্য পাঠায় এবং দেশটিকে জার্মানির অংশভুক্ত করে নেয়। এই ঘটনাটির ঐতিহাসিক নাম দেয়া হয়েছে আন্‌শ্লুস (জার্মান ভাষায় Anschluss)। সেসময় বেশির ভাগ অস্ট্রীয় এই আনশ্লুস সমর্থন করেছিল। ১৯৩৮ সালের মার্চ থেকে ১৯৪৫ সালের এপ্রিলের মধ্যে অস্ট্রিয়ার অধিকাংশ ইহুদীকে হয় হত্যা করা হয় অথবা নির্বাসনে যেতে বাধ্য করা হয়। সিন্তি, জিপসি, সমকামী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্ব্বীদেরও একই পরিণাম ঘটে। ১৯৩৮ সালের আগে অস্ট্রিয়াতে ২ লক্ষ ইহুদী বাস করত। ১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে এদের অর্ধেকের বেশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। জার্মানরা ইহুদীদের ব্যবসা ও দোকানপাটে লুটতরাজ চালায়। প্রায় ৩৫ হাজার ইহুদীকে পূর্ব ইউরোপে গেটো বা বস্তিতে পাঠানো হয়। প্রায় ৬৭ হাজার ইহুদীকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়; যুদ্ধশেষে এদের মাত্র ২ হাজার বেঁচে ছিল। ১৯৪৫ সালে জার্মানির পরাজয়ের পর মিত্রশক্তিরা অস্ট্রিয়াকে চারভাগে ভাগ করে। ১৯৫৫ সালের ২৫শে অক্টোবর নাগাদ এরা সবাই অস্ট্রিয়া ত্যাগ করে এবং অস্ট্রিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা পায়। রাজনীতি অস্ট্রিয়ার রাজনীতি-র ভিত্তি একটি কেন্দ্রীয় সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রী প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থা, যেখানে চ্যান্সেলর হলেন সরকারপ্রধান। এটি একটি বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা। সরকার নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী। আইন প্রণয়ন ক্ষমতা দ্বি-কাক্ষিক সংসদ (জাতীয় কাউন্সিল ও কেন্দ্রীয় কাউন্সিল) ও সরকার, উভয়ের হাতে ন্যস্ত। ১৯৪৯ সাল থেকে রক্ষণশীল দল Austrian People's party ও সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল Social Democratic Party of Austria দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রাধান্য বিস্তার করে আসছে। ভূগোল ডান|350px|থাম্ব|অস্ট্রিয়ার ভৌগোলিক মানচিত্রঅস্ট্রিয়াকে তিনটি অসম ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়। এদের মধ্যে বৃহত্তম অংশটি (৬২%) হল আল্পস পর্বতমালার অপেক্ষাকৃত নবীন পাহাড়গুলি। এদের পূর্বে আছে পানোনীয় সমভূমি, এবং দানিউব নদীর উত্তরে আছে বোহেমীয় অরণ্য নামের একটি পুরানো কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিচু গ্রানাইট পাথরে নির্মিত পার্বত্য অঞ্চল। দানিউব নদী দানিউব নদী দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির ডোনাএশিঙেনের কাছ থেকে উৎপত্তি লাভ করে অস্ট্রিয়ার ভেতর দিয়ে পূর্বমুখে প্রবাহিত হয়ে কৃষ্ণসাগরে পতিত হয়েছে। আল্পসের উত্তরের ইন নদী, ৎসালজাখ নদী ও এন্স নদী দানিউবের উপনদী। অন্যদিকে আল্পসের দক্ষিণের অর্থাৎ মধ্য ও পূর্ব অস্ট্রিয়ার গাইল নদী, ড্রাভা নদী, ম্যুর্ৎস নদী ও মুরা নদী সার্বিয়াতে গিয়ে দানিউবে পতিত হয়েছে। আল্পস পর্বতমালা ডান|200px|থাম্ব|গ্রোসগ্লকনার পর্বতশৃঙ্গ আল্পসের তিনটি প্রধান শাখা, উত্তর চুনাপাথরীয় আল্পস, কেন্দ্রীয় আল্পস, ও দক্ষিণ চুনাপাথরীয় আল্পস অস্ট্রিয়ার পশ্চিম থেকে পূর্ব জুড়ে বিস্তৃত। ৩৭৯৭ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট গ্রোস্‌গ্লকনার অস্ট্রিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। অস্ট্রিয়ার মাত্র ২৮% অঞ্চল সমতল বা অপেক্ষাকৃত কম পাহাড়ি। বোহেমীয় অরণ্য দানিউব উপত্যকার উত্তরে অস্ট্রিয়ার প্রায় ১০% এলাকা জুড়ে অবস্থিত একটি গ্রানাইট মালভূমি এলাকা। অর্থনীতি অস্ট্রিয়ার অর্থনীতি ব্যবস্থাকে একটি সামাজিক বাজার অর্থনীতি হিসেবে গণ্য করা হয়। এর গঠন প্রতিবেশী জার্মানির অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মতন। ২০০৪ সালের তথ্য অনুযায়ী অস্ট্রিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪র্থ ধনী দেশ। এখানকার মাথাপিছু স্থুল জাতীয় উৎপাদন প্রায় ২৭,৬৬৬ ইউরো। কেবন লুক্সেমবুর্গ, আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ড্‌স এই দিক থেকে অস্ট্রিয়ার চেয়ে এগিয়ে। Regional GDP per inhabitant in the EU27 , provided by Eurostat সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ২০০২-২০০৬ সময়সীমাতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ১ থেকে ৩.৩%-এর মধ্যে স্থিতিশীল ছিল। Real GDP Growth – Expenditure Side, provided by the Austrian National Bank মধ্য ইউরোপে অবস্থিত বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন সদস্যরাষ্ট্রগুলির (যেগুলি বেশির ভাগই পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত) প্রবেশদ্বার হিসেবে অস্ট্রিয়া গুরুত্ব লাভ করেছে। জনসংখ্যা অস্ট্রিয়ার জনসংখ্যা বর্তমানে ৮,৭২৫,৯৩১ জন। ধর্মবিশ্বাস অস্ট্রিয়াতে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্ম প্রধান। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৭৩.৬% লোক এই ধর্মে বিশ্বাসী। প্রায় ১১.৫% লোক প্রতি রোববারে গির্জায় যান। তবে গির্জায় যাওয়ার পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। লুথেরান খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা ২০০৬ সালে জনসংখ্যার ৪.৭% গঠন করেছে; এরা বেশির ভাগই দক্ষিণ অস্ট্রিয়ার কের্নটেন অঙ্গরাজ্যে বাস করে। অস্ট্রিয়াতে মুসলিম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বর্তমানে এরা জনসংখ্যার ৪.২%। এছাড়াও অস্ট্রিয়াতে স্বল্পসংখ্যক হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ ও ইহুদীবাস করেন। ভাষা অস্ট্রিয়াতে মূলত জার্মান ভাষার একটি পরিবর্তিত রূপ ব্যবহৃত হয়। এর নাম অস্ট্রীয় জার্মান। জার্মান ভাষায় এর নাম Schönbrunner Deutsch (শ্যোনব্রুনার ডয়চ অর্থাৎ রাজকীয় প্রাসাদের জার্মান)। অস্ট্রীয় জার্মান বর্তমান আদর্শ জার্মান ভাষা থেকে বেশ কিছু দিকে থেকে আলাদা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে সমস্ত স্বরধ্বনি আদর্শ জার্মান ভাষায় উচ্চারিত হয়, অস্ট্রীয় জার্মান ভাষায় সেগুলি উচ্চারিত হয় না; কিংবা সামান্য ভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়। অস্ট্রীয় জার্মান ভাষায় নিজস্ব প্রত্যয়েরও (suffix) ব্যবহার আছে। এছাড়া বলা হয়ে থাকে যে অস্ট্রীয় জার্মান খানিকটা নাসিক্য স্বরে (nasalized) বলা হয়ে থাকে। অস্ট্রীয় জার্মান ভাষার উপভাষাগুলিকে আলেমানীয় উপভাষা ও দক্ষিণ বাভারীয় উপভাষা - এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। আলেমানীয় উপভাষা দেশটির পূর্ব এক-তৃতীয়াংশে প্রচলিত (ফোরার্লবের্গ প্রদেশে)। আর দক্ষিণ বাভারীয় উপভাষাগুলি দেশের বাকি অংশে ব্যবহৃত। আলেমানীয় উপভাষাগুলি সুইজারল্যান্ডের জার্মান ও দক্ষিণ-পূর্ব জার্মানির ভাষাগুলির সাথে তুলনীয়। আর দক্ষিণ বাভারীয় উপভাষাগুলি জার্মানির বাভারিয়ার বা বায়ার্নের ভাষাগুলির সাথে তুলনীয়। এছাড়াও অস্ট্রিয়ায় অনেকগুলি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজস্ব ভাষায় কথা বলে থাকে। এগুলির মধ্যে অন্যতম হল ক্রোয়েশীয়, স্লোভেনীয়, হাঙ্গেরীয়, চেক, স্লোভাক এবং জিপসি ভাষাসমূহ। শহর অস্ট্রিয়ার পাঁচটি প্রধান শহর হল ভিয়েনা, গ্রাৎস, লিন্‌ৎস, জাল্‌ৎসবুর্গ এবং ইন্স‌ব্রুক। ভিয়েনা অস্ট্রিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এটি অস্ট্রিয়ার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র। শহরটি দানিউব নদীর দুই তীরে অবস্থিত। এর শহরতলীগুলি পশ্চিমে বিখ্যাত ভিয়েনা অরণ্য পর্যন্ত চলে গেছে। ভিয়েনা ইউরোপের সবচেয়ে রাজকীয় শহরগুলির একটি। এখানে অনেক জমকালো বাসভবন, রাজপ্রাসাদ, পার্ক ও গির্জা আছে। শহরের জনসংখ্যা ১৬ লক্ষের বেশি। গ্রাৎস অস্ট্রিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এটি ষ্টাইয়ারমার্ক প্রদেশের রাজধানী। শহরটি একটি উর্বত উপত্যকায় মুর নদীর তীরে অবস্থিত। গ্রাৎস একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, বাণিজ্য ও শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে প্রায় আড়াই লক্ষ লোকের বাস। লিন্‌ৎস ওবারঅস্টাররাইখ প্রদেশের রাজধানী। এটি দানিউব নদীর তীরে অবস্থিত বন্দর শহর ও শিল্পকেন্দ্র। জাল্‌ৎসবুর্গ অস্ট্রিয়ার সবচেয়ে নয়নাভিরাম শহরগুলির একটি। এটি জাল্‌ৎসাখ নদীর তীরে আল্পস পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত। শহরটি বিখ্যাত সুরকার ভোলফগাং আমাদেউস মোৎসার্টের জন্মস্থান। এখানকার বাৎসরিক সঙ্গীত উৎসবগুলি সারা বিশ্বে পরিচিত। এখানে অনেক পর্যটক বেড়াতে আসেন। ইন্সব্রুক টিরোলিয়ান আল্পস পর্বতমালায় সমুদ্র সমতল থেকে বহু উঁচুতে অবস্থিত একটি শীতকালীন অবকাশ যাপন কেন্দ্র। এটি টিরোল প্রদেশের রাজধানী ও ইন নদীর তীরে অবস্থিত। ইন্সব্রুকের অবস্থান ও সৌন্দর্যের কারণে এখানেও অনেক পর্যটক বেড়াতে আসেন। তথ্যসূত্র আরও দেখুন বিষয়শ্রেণী:ইউরোপের রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:১৯৫৫-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ওইসিডি সদস্য অর্থনীতি বিষয়শ্রেণী:থ্রি সিস ইনিশিয়েটিভের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ভূমধ্যসাগরীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ওইসিডি সদস্য বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:স্থলবেষ্টিত দেশ
আজারবাইজান
https://bn.wikipedia.org/wiki/আজারবাইজান
থাম্ব|262x262পিক্সেল|১৯১৯ প্যারিস শান্তি সম্মেলনে আজারবাইজানের প্রতিনিধি দল দ্বারা উপস্থাপিত মানচিত্র আজারবাইজান (আজারবাইজানি ভাষায়: Azərbaycan আজ়্যার্বায়জান্‌), সরকারী নাম আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র (আজারবাইজানি ভাষায়: Azərbaycan Respublikası) পূর্ব ইউরোপের একটি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র। এটি কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের মধ্যবর্তী স্থলযোটক দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত রাষ্ট্র। আয়তন ও জনসংখ্যার দিকে থেকে এটি ককেশীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বৃহত্তম। দেশটির উত্তরে রাশিয়া, পূর্বে কাস্পিয়ান সাগর, দক্ষিণে ইরান, পশ্চিমে আর্মেনিয়া, উত্তর-পশ্চিমে জর্জিয়া। এছাড়াও ছিটমহল নাখশিভানের মাধ্যমে তুরস্কের সাথে আজারবাইজানের একচিলতে সীমান্ত আছে। আর্মেনিয়ার পর্বতের একটি সরু সারি নাখশিভান ও আজারবাইজানকে পৃথক করেছে। আজারবাইজানের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের একটি এলাকা নাগোর্নো-কারাবাখের আনুগত্য বিতর্কিত। কাস্পিয়ান সাগরে অবস্থিত অনেকগুলি দ্বীপও আজারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত। আজারবাইজানের রাষ্ট্রভাষা আজারবাইজানি। কাস্পিয়ান সাগরতীরে অবস্থিত বন্দর শহর বাকু আজারবাইজানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। ১৮শ ও ১৯শ শতকে ককেশীয় এই দেশটি পর্যায়ক্রমে রুশ ও পারস্যদেশের শাসনাধীন ছিল। রুশ গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে ১৯১৮ সালের ২৮শে মে তৎকালীন আজারবাইজানের উত্তর অংশটি একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কিন্তু মাত্র ২ বছরের মাথায় ১৯২০ সালে বলশেভিক লাল সেনারা এটি আক্রমণ করে আবার রুশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে এবং ১৯২২ সালে দেশটি আন্তঃককেশীয় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৩৬ সালে আন্তঃককেশীয় সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রটি ভেঙে তিনটি আলাদা প্রজাতন্ত্র আজারবাইজান, জর্জিয়া ও আর্মেনিয়াতে ভেঙে দেওয়া হয়। তখন থেকেই আজারবাইজানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং নাগোর্নো-কারাবাখ এলাকার খ্রিস্টান আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব্বের সূত্রপাত। নাগোর্নো-কারাবাখের জনগণ আর্মেনিয়ার সাথে একত্রিত হতে চায়। ১৯৯১ সালের ২০শে অক্টোবর আজারবাইজান স্বাধীনতা লাভ করলে এই দ্বন্দ্ব্ব সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নেয়। ফলে নতুনভাবে স্বাধীন দেশটির প্রথম বছরগুলি রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক অবনতি, এবং নাগোর্নো-কারাবাখের যুদ্ধে অতীবাহিত হয়। ১৯৯৪ সালের মে মাসে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর দীর্ঘ ২৮ বৎসর নগোর্নো কারাবাখ এবং সংলগ্ন ৭টি আজারবাইজানি জেলা বিচ্ছিন্নতাবাদী আর্মেনীয়দের নিয়ন্ত্রনাধীন ছিল,কিন্তু ২০২০ সালের ২৮শে অক্টোবর থেকে আজারবাইজান তাঁদের দখল হয়ে যাওয়া এলাকা উদ্ধারে সামরিক অভিযান শুরু করলে ৪৮ দিন পর এলাকাটি তাঁদের নিয়ন্ত্রনে আসে ।বর্তমানে নাগোর্নো-কারাবাখের কিছু অংশ এবং ১৯৯৪ সালে আর্মেনিয়া কর্তৃক দখল হয়ে যাওয়া ৭টি আজারবাইজানি জেলা আজারবাইজানের সামরিক নিয়ন্ত্রণে আছে। ১৯৯৫ সালে আজারবাইজানে প্রথম আইনসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ঐ বছরই সোভিয়েত-উত্তর নতুন সংবিধান পাস করা হয়। আজারবাইজানের বাকু তেলক্ষেত্রগুলি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেলক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। কিন্তু দুর্নীতি, সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ এবং দুর্বল সরকারের কারণে দেশটি খনিজ সম্পদ থেকে সম্ভাব্য মুনাফা অর্জনে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। রাজনীতি আজারবাইজানে রাজনীতি-র ভিত্তি একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতন্ত্র, যেখানে আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রপ্রধান, এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারপ্রধান। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে, আইন প্রণয়ন ক্ষমতা সরকার ও সংসদ উভয়ের হাতে ন্যস্ত। বিচার বিভাগ স্বাধীন। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ আজারবাইজান ১০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল;৬৬ টি রেয়ন এবং ৭৭ টি শহরে বিভক্ত। সামরিক শক্তি বিমান বাহিনী : ১৩টি মিগ্-২৯ বিমান রয়েছে বাহিনীর কাছে। স্থল বাহিনী : ৪০০ কিমি পরিসীমার LORA ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা রয়েছে। ভূগোল আজারবাইজান ইউরেশিয়ার ককেশাস অঞ্চলে অবস্থিত। এই দেশটির ভূগোলে তিনটি মূল বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়: কাস্পিয়ান সাগর, যার তটরেখা দেশটির পূর্বে একটি প্রাকৃতিক সীমানা সৃষ্টি করেছে। উত্তরের বৃহত্তর ককেশাস পর্বতমালা। দেশটির কেন্দ্রভাগের বিস্তীর্ণ সমতলভূমি। আজারবাইজান মোটামুটি পর্তুগাল বা মার্কিন অঙ্গরাজ্য মেইন-এর সম-আয়তনবিশিষ্ট। দেশটির আয়তন প্রায় ৮৬,৬০০ বর্গকিলোমিটার। রাজদান প্রবাহিত হয়ে আরাসে পড়েছে। উল্লেখ্য বিতর্কিত নাগার্নো- কারাবাগ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়ার সাথে আজারবাইজানের ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে সামরিক সংঘাত চলে আসছে।এতে এ পর্যন্ত দু দেশের প্রায় ৩০০ এর বেশি বেসামরিক লোকজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে অর্থনীতি আজারবাইজানের অর্থনীতি বর্তমানে একটি সন্ধি পর্যায়ে বিদ্যমান, যেখানে সরকার এখনও একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে চলেছে। আজারবাইজানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ তেলের ভাণ্ডার। বৈচিত্র‌্যময় জলবায়ু অঞ্চলের উপস্থিতির কারণে দেশটির কৃষি খাতের উন্নতির সম্ভাবনাও প্রচুর। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের সহযোগিতায় আজারবাইজান একটি সফল অর্থনৈতিক সুস্থিতিকরণ প্রকল্প হাতে নেয়, যার ফলশ্রুতিতে ২০০০ সাল থেকে দেশটির অর্থনীতি ১০% হারে প্রবৃদ্ধি লাভ করে চলেছে। ২০০৭ সালে আজারবাইজানের স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন প্রায় ২৫% বৃদ্ধি পায়। মূলত তেল খাতই এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। ২০০৭ সালের স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (GDP) ৫২.৮% খনিজ তেল খাত থেকে আসে। আজারবাইজানের মুদ্রার নাম মানাত। পরিবহন গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরগুলো + বিমানবন্দরগুলো নাম শহর অঞ্চল রানওয়ে হায়দার আলিয়েভ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাকু অ্যাশেরন অর্থনৈতিক অঞ্চল ৩,৯০০ কাবালা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাবালা শাকি-জাগাতলা অর্থনৈতিক অঞ্চল৩,৬০০ নাখচিভান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নাখচিভান নাখচিভান স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র৩,৩.০০গঞ্জা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগঞ্জাগঞ্জা-কাজাখ অর্থনৈতিক অঞ্চল৩,৩.০০লঙ্কারান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরলঙ্কারান লঙ্কারান অর্থনৈতিক অঞ্চল৩,৩.০০ জনমিতি জাতিগোষ্ঠী আজারবাইজানে প্রায় ৯৮ লক্ষ ২৪ হাজার ৯০০ লোকের বাস। এদের মধ্যে ৯৫% লোক জাতিগতভাবে আজারবাইজানি। অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির লোকের মধ্যে লেজগীয়, রুশ, আর্মেনীয় ও তালিশ জাতির লোক প্রধান। ধর্ম আজারবাইজানের ৯৭ ভাগ মানুষ মুসলমান। এর মধ্যে ৮৫% শিয়া এবং ১৫% সুন্নি।Administrative Department of the President of the Republic of Azerbaijan – Presidential Library – Religion . (PDF). Retrieved 1 July 2017. আজারবাইজান বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক শিয়াবহুল দেশ।Mapping the Global Muslim Population | Pew Research Center . Pewforum.org (7 October 2009). Retrieved 1 July 2017. থাম্ব|বাম|বাকুতে বিবি-হয়বত মসজিদ। মহানবীর এক বংশধরের সমাধির উপর এই মসজিদ নির্মিত হয়। দেশটির বৈচিত্র্যময় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষও রয়েছে। সংবিধানের ৪৮ তম ধারা অনুযায়ী আজারবাইজান একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র যা সকল মতাবলম্বীদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করে থাকে। ২০০৬–২০০৮ সালের একটি গ্যালআপ ভোটগ্রহণ অনুসারে, অংশগ্রহণকারীদের মাত্র ২১% মনে করেন যে ধর্ম তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।GALLUP – What Alabamians and Iranians Have in Common – data accessed on 19 August 2014 দেশটির সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা প্রায় ২৮০,০০০ (৩.১%) যাদের বেশিরভাগ রুশ ও জর্জীয় অর্থডক্স এবং আর্মেনীয় প্রেরিতীয়। ২০০৩ সালে রোমান ক্যাথলিকদের সংখ্যা ছিল ২৫০। ২০০২ সালের জরিপমতে অন্যান্য খ্রিষ্টান মণ্ডলীগুলোর মধ্যে রয়েছে লুথারবাদী, বাপ্তিস্মবাদী ও মলোকান। এছাড়া দেশটিতে ছোট একটি প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ও রয়েছে। আজারবাইজানে একটি প্রাচীন ইহুদি সম্প্রদায়েরও বসবাস রয়েছে যাদের ইতিহাস অন্ততপক্ষে ২০০০ বছর পুরনো। ইহুদি সংগঠনসমূহের অনুমানমতে আজারবাইজানে মোট ইহুদিসংখ্যা ১২,০০০। এছাড়াও আজারবাইজানে বাহাই ধর্ম, ইস্কন ও জেহোভার সাক্ষীর পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। কিছু ধর্মীয় সম্প্রদায় ধর্মীয় স্বাধীনতার উপভোগের ক্ষেত্রে অদাপ্তরিক বাধার সম্মুখীন হয়। ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি রিপোর্ট মতে নির্দিষ্ট কিছু মুসলমান ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজারবাইজানে ধরপাকড়ের শিকার হন এবং অনেক ধর্মীয় গোষ্ঠী আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের ধর্মীয় সংগঠন বিষয়ক জাতীয় পরিষদে (এসসিডাব্লিউআরএ) নিবন্ধিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হয়।Azerbaijan . state.gov সংস্কৃতি তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সরকার Global Integrity Report: Azerbaijan has information on anti-corruption efforts State Statistical Committee of Azerbaijan রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ United Nations Office in Azerbaijan সংস্কৃতি এবং পর্যটন মন্ত্রণালয় সংবাদ মিডিয়া আজকের আজারবাইজান Trend News আজারবাইজান প্রেস সংস্থা AzerNEWS পর্যটন আজারবাইজান পর্যটন ওয়েবসাইট সাধারণ তথ্য আজারবাইজান কোম্পানি আজারবাইজান হোটেল আজারবাইজানের সম্বন্ধে দেশ বৃত্তান্ত বিবিসি সংবাদ থেকে। আজারবাইজান at UCB Libraries GovPubs অন্যান্য আন্তর্জাতিক আজারবাইজান ম্যাগাজিন। বিষয়শ্রেণী:এশিয়ার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:১৯৯১-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:স্বাধীন রাষ্ট্রের কমনওয়েলথের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইউরোপ কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:তুর্কি সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য বিষয়শ্রেণী:রুশ ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:তুর্কি রাষ্ট্র সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আন্তঃমহাদেশীয় রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ককেশাস বিষয়শ্রেণী:ইউরোপের রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:পশ্চিম এশিয়ার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:স্থলবেষ্টিত দেশ বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:১৯৯১-এ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত বিষয়শ্রেণী:১৯৯১-এ ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
বাহামা দ্বীপপুঞ্জ
https://bn.wikipedia.org/wiki/বাহামা_দ্বীপপুঞ্জ
থাম্ব|বাহামার কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগের মানচিত্র বাহামা দ্বীপপুঞ্জ( ), অফিসিয়ালি কমনওয়েলথ অফ দ্য বাহামাস নামে পরিচিত, আটলান্টিক মহাসাগরের ওয়েস্ট ইন্ডিজের লুকায়ান দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত একটি দেশ। Official government website. "The Constitution". Retrieved 29 May 2017 এটি লুকায়ান দ্বীপপুঞ্জের ভূমির ৯৭% জুড়ে অবস্থিত এবং দ্বীপপুঞ্জের ৮৮% জনসংখ্যার বাসস্থান । সমগ্র দ্বীপপুঞ্জ ৭০০এর বেশি দ্বীপ, অণুদ্বীপ, প্রবালদ্বীপ নিয়ে গঠিত। দ্বীপটি আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে, কিউবার উত্তরে অবস্থিত, হিস্পানিওলা (হাইতি এবং ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র )এবং তুর্কস ও কাইকোস দ্বীপপুঞ্জের উত্তর-পশ্চিমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্ ফ্লোরিডার দক্ষিণ-পূর্বে এবং ফ্লোরিডা র পূর্বে অবস্থিত। এর রাজধানী নাসাউ নিউ প্রভিডেন্স দ্বীপে অবস্থিত। দ্য রয়েল বাহামাস ডিফেন্স ফোর্সের তথ্য অনুযায়ী বাহামা ৪,৭০,০০০ কিমি২ (১,৮০,০০০ মা২) সমুদ্রপৃষ্ঠ জুড়ে রয়েছে । "CIA World Factbook – The Bahamas". Retrieved 21 July 2019. বাহামা দ্বীপপুঞ্জের আদি বাসিন্দাদের বলা হয় লুকায়ান যারা ছিল আরকান ভাষী তাইনোদের একটি শাখাCountry Comparison :: GDP – per capita (PPP). CIA World Factbook। লুকায়ানরা ছিল নিরীহ শান্তিপ্রিয় জাতি। কলম্বাসই প্রথম ইউরোপীয় যিনি ১৪৯২ সালে "নতুন পৃথিবী " হিসেবে এ দ্বীপ আবিষ্কার করেন। কলম্বাসকে অনুসরণ করে পরবর্তীকালে যে সব স্প্যানিশরা বাহামায় আসে তারা স্থানীয় লুকায়ানদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাদের দূরের দ্বীপে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রী করে দেয়। যার ফলে বাহামা দ্বীপপুঞ্জ ১৫১৩ থেকে ১৬৪৮ সাল পর্যন্ত প্রায় জনমানবহীন ছিল যতদিন না ইংরেজ ঔপনিবেশিকরা এখানে বসতি স্থাপন শুরু করে। ইংরেজরা বাহামা সংলগ্ন সমুদ্রপথে জলদস্যুদের উপদ্রব বন্ধ করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়। ১৭১৮ সালে বাহামা দ্বীপপুঞ্জ ব্রিটিশ রয়েল কলোনী হিসেবে স্বীকৃতি পায়। মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধে ইংরাজদের পরাজয়ের পর হাজার হাজার ইংরাজ অনুগামী তাদের ক্রীতদাসদের নিয়ে আমেরিকা থেকে বাহামায় চলে আসে ও বৃটিশ সরকারের অনুদান পাওয়া জমিতে আবাদের, প্রধানত তুলাচাষের, কাজ শুরু করে। সেই আফ্রিকান ক্রীতদাস ও তাদের বংশধররাই বর্তমান বাহামার সিংহভাগ জনসংখ্যা গঠন করে । ১৮০৭ সালে বৃটিশ সরকার আন্তর্দেশীয় দাসব্যবসায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এসময় অবৈধভাবে দাসব্যবসায়ে লিপ্ত এরকম বহু জাহাজ থেকে ইংরাজ রয়েল নেভি ক্রীতদাসদের মুক্ত করে ও তাদের বাহামায় পুনর্বাসিত করা হয়। ১৮২০ সালে সেমিনোল যুদ্ধের সময় কিছু উত্তর আমেরিকান ক্রীতদাস ও সেমিনোল ফ্লোরিডা থেকে পালিয়ে বাহামায় চলে আসে। তবে বাহামার অভ্যন্তরে, প্রধানত আবাদগুলিতে, ক্রীতদাসপ্রথা চালু ছিল ১৮৩৪ সাল পর্যন্ত। ১৮৩৪ সালে বৃটিশ সরকার আইন করে দাসপ্রথার সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটালে বাহামাতেও এর অবসান ঘটে। বর্তমানে আফ্রো-বাহামিয়ানদের সংখ্যা ৩৩২,৬৩৪ জন যা মোট জনসংখ্যার ৯০%। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বাহামা ইংরাজ শাসনের অধীনে ছিল যদিও স্বায়ত্তশাসনের দাবি প্রধানত কৃষ্ণাঙ্গদের তরফ থেকে ক্রমশই বাড়ছিল। ১৯৭৩ সালের ১০ জুলাই বাহামা স্বাধীনতা অর্জন করে ও স্যার লিনডেন পিন্ডলিং এর নেতৃত্বে মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। বাহামা কমনওয়েল্থ রিয়াল্মসের সদস্য় যাদের শীর্ষপদে রয়েছেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথCountry Comparison :: GDP – per capita (PPP). CIA World Factbook। বাহামা আমেরিকার অন্যতম ধনী রাষ্ট্র(মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পরই এর স্থান)। এর অর্থনৈতিক উন্নতির মূল কারণ হচ্ছে পর্যটন শিল্প ও আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা। Ahrens, Wolfgang P. (2016). "Naming the Bahamas Islands: History and Folk Etymology". In Hough, Carole; Izdebska, Daria (eds.). 'Names and Their Environment': Proceedings of the 25th International Congress of Onomastic Sciences: Glasgow, 25-29 August 2014, Volume 1: Keynote Lectures: Toponomastics I (PDF). University of Glasgow. p. 47. ISBN 978-0-85261-947-6. বাহামা নামের উৎস দক্ষিণ আমেরিকার ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের আদিবাসী লুকায়ানরা হল বাহামা দ্বীপের মূল অধিবাসী। লুকায়ান ভাষায় বাহামা শব্দের অর্থ হল “বিরাট দ্বীপ” (লার্জ আপার মিডল আইল্যাণ্ড)। সম্ভবতঃ তা থেকেই দ্বীপের এই নাম।ইংরেজরা পরে এর নামকরণ করে গ্র্যাণ্ড বাহামা Granberry, Julian; Vescelius, Gary (2004). Languages of the Pre-Columbian Antilles. University of Alabama Press. p. 85. ISBN 0-8173-1416-4.। বাহামার ট্যুরিস্ট গাই়ড বইগুলিতে হামেশাই বলা হয়ে থাকে বাহামা নামটি এসেছে স্প্যানিশ শব্দ “বাজা-মার” থেকে যার অর্থ কিনা “অগভীর সমুদ্র”। অধ্যাপক উল্ফগ্যাং অবশ্যই একথা মানতে রাজী নন। তিনি বলেন, সমুদ্রের থেকে দ্বীপ শব্দটির সংগেই বাহামার সাদৃশ্য বেশি Granberry, Julian; Vescelius, Gary (2004). Languages of the Pre-Columbian Antilles. University of Alabama Press. p. 85. ISBN 0-8173-1416-4.। পুরাতত্ত্ববিদ আইজ্যাক টেলর মনে করেন বাহামা নামটি এসেছে “বিমানি” বা “বিমিনি” থেকে। বিমিনি হল বাহামার পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত যমজ দ্বীপ। হাইতির স্প্যানিয়ার্ডদের ধারণা জন ম্যান্ডেভিলের ভ্রমণকাহিনীতে উল্লিখিত “ফাউন্টেন অফ ইউথ” (যে ঝর্ণার জলে স্নান করলে যৌবন পুনরুদ্ধার হয়)এই দ্বীপেই রয়েছে। Encyclopedia Britannica – The Bahamas". Retrieved ইতিহাস প্রাক-ঔপনিবেশিক যুগ আনুমানিক ৮০০ খৃষ্টাব্দে আরাওয়াক জাতির একটি শাখা ক্য়ারিবিয়ান সমুদ্র পেরিয়ে বাহামা দ্বীপে এসে উপস্থিত হয় ও বসতি স্থাপন করে। এখানে তাদের পরিচয় হয় লুকায়ান নামেKeegan, William F. (1992). The people who discovered Columbus: the prehistory of the Bahamas. Jay I. Kislak Reference Collection (Library of Congress). Gainesville: University Press of Florida. pp. 25, 54–8, 86, 170–3. ISBN 0-8130-1137-X. OCLC 25317702.। লুকায়ানরাই বাহামার আদিমতম অধিবাসী। আরাওয়াক জাতির অন্য়ান্য় শাখা ক্য়ারিবিয়ান সাগরের কিউবা, জামাইকা, হিসপানিওলা প্রভৃতি দ্বীপে ছড়িয়ে পড়ে। তারা তাইনো নামে পরিচিত। লুকায়ানরা ছিল শান্তিপ্রিয়, সুসংগঠিত সমাজবদ্ধ মানুষ। ১৪৯২ খৃষ্টাব্দে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আগমনের সময় বাহামায় আনুমানিক লুকায়ান জনসংখ্য়া ছিল ৪০,০০০https://www.refworld.org/cgi-bin/texis/vtx/rwmain। স্পেনীয়দের আগমন আমেরিকার যে দ্বীপে কলম্বাস প্রথম পা রাখেন, তিনি তার নাম রেখেছিলেন স্যান স্যালভাডর। যদিও দ্বীপটির সঠিক অবস্থান জানা যায় না, তবে এটি যে বাহামা দ্বীপপুন্জের অন্তর্গত তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।, অনেক গবেষক মনে করেন এটি দক্ষিণ-পূর্ব বাহামার সান সালভেদর দ্বীপ (পূর্ব নাম ওয়েটিং আইল্যাণ্ড)। আবার ১৯৮৬তে কলম্বাসের লগবুকের ভিত্তিতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকার লেখক-সম্পাদক জোসেফ জাজ গণনা করে দেখান যে দ্বীপে কলম্বাস পদার্পণ করেছিলেন সেটি হল দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের সামানা ক্য দ্বীপে পদার্পণ করে কলম্বাস প্রথমে লুকায়ানদের রাজার সংগে যোগাযোগ করেন, উপহার বিনিময় করেন ও নিকটবর্তী গ্রেটার অ্যান্টিলেসের অন্যান্য দ্বীপে অভিযানের পূর্বে এই দ্বীপে স্প্যানিশ রাজার “ক্রাউন অফ ক্যাস্টিল”-এর অধিকার ঘোষণা করে যান Keegan, William F. (1992). The people who discovered Columbus: the prehistory of the Bahamas. Jay I. Kislak Reference Collection (Library of Congress). Gainesville: University Press of Florida. pp. 25, 54–8, 86, 170–3. ISBN 0-8130-1137-X. OCLC 25317702.। ১৪৯৪ খৃষ্টাব্দে স্পেন এবং পর্তুগাল, তৎকালীন ইউরোপের দুই বৃহত্তম শক্তি-র মধ্য়ে ইতিহাস প্রখ্য়াত চুক্তি ট্রিটি অফ টরডেসিলা স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী নবাবিষ্কৃত আমেরিকার ভূমি সম্পদ, সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের অধিকার সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য় করে, স্পেন এবং পর্তুগাল নিজেদের মধ্য়ে ভাগ করে নেয়। স্পেনের ভাগে আসে বাহামা দ্বীপপুন্জ। স্প্য়ানিশরা এসেই লুকায়ানদের সংগে নানা অসদাচারণ করতে শুরু করে, তাদের সম্পত্তি কেড়ে নেয় এবং অনেককে ক্রীতদাসে পরিণত করে হিস্পানিওলা, কিউবা প্রভৃতি দ্বীপে রুপার খনিতে মজদুরের কাজে বা সমুদ্রে মুক্তা-ডুবুরীর কাজে যেতে বাধ্য করেNaming the Bahamas Islands: History and Folk Etymology Wolfgang P. Ahrens। সেখানকার কঠিন পরিশ্রমে,অস্বাস্থ্য়কর পরিবেশে, নানারকম ব্য়াধিতে বহু শ্রমিকের মৃত্য়ু হয়। অচিরে বাহামা একটি প্রায় জনমানবহীন স্থানে পর্যবসিত হয়। "Diocesan History". Anglican Communications Department. 2009. Archived from the original on 5 May 2009. Retrieved 7 May 2009. ইংরেজদের আগমন লুকায়ানদের বিলুপ্তির পর প্রায় ১৫০ বছর বাহামা পরিত্য়ক্ত অবস্থায় ছিল। সেসময় বাহামা সংলগ্ন সমুদ্রপথ জলদস্য়ুদের স্বর্গভূমি হয়ে ওঠে। ইউরোপ থেকে আমেরিকাগামী মালবাহী জাহাজগুলি এদের লক্ষ্য ছিল। ১৬২৯ খৃষ্টাব্দে ইংল্যাণ্ডের সম্রাট প্রথম চার্লস্ অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট হীথকে বাহামার উপস্বত্ব দান করেন যার অন্য়তম প্রধান উদ্দেশ্য় ছিল জলদস্যুদের উপদ্রব বন্ধ করা। কিন্তু রবার্ট হীথ বাহামায় বসতি স্থাপনের কোনো উৎসাহ দেখাননি https://www.britannica.com/place/The-Bahamas/Government-and-society। ১৬৪০ খৃষ্টাব্দে ইংল্য়াণ্ডে রাজশক্তির সংগে ধর্মীয় সংঘাতের ফলে পিউরিটান গোষ্ঠীর একটি শাখা বৃটিশ অধিকৃত বারমুডা ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য় হয় এবং উইলিয়াম সেইলের নেতৃত্বে তারা বাহামায় এসে পৌঁছায়। যে দ্বীপে তারা প্রথম আসে তার নাম রাখে এলিউথেরা, গ্রিক ভাষায় যার অর্থ হল স্বাধীনতা। গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দের কারণে সেইল পরে অনুগামীদের নিয়ে অন্য একটি দ্বীপে চলে আসেন, দ্বীপটি বর্তমানে নিউ প্রভিডেন্স নামে পরিচিত। এটি বাহামার সবচেয়ে জনবহুল দ্বীপ, বাহামার রাজধানী নাসাউ এই দ্বীপে অবস্থিত। বাহামার অভিজ্ঞতা সেইলস বা তার সংগীদের পক্ষে সুখকর হয়নি। সেখানকার কঠোর প্রাকৃতিক পরিবেশের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সেইলস সহ অনেকেই অবশেষে বারমুডা ফিরে যান Keegan, William F. (1992). The people who discovered Columbus: the prehistory of the Bahamas. Jay I. Kislak Reference Collection (Library of Congress). Gainesville: University Press of Florida. pp. 25, 54–8, 86, 170–3. ISBN 0-8130-1137-X. OCLC 25317702 ১৬৭০ খৃষ্টাব্দে রাজা দ্বিতীয় চার্লস উত্তর আমেরিকায় বৃটিশ উপনিবেশের ক্য়ারোলিনা প্রভিন্সের শাসককে (লর্ড প্রোপাইটর)- বাণিজ্য় রাজস্ব এবং প্রশাসনের অধিকার সহ বাহামা দ্বীপপুন্জের ইজারা দেনMancke/Shammas p. 255। কিন্তু প্রোপাইটর জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণ বা দেশের প্রতিরক্ষা কার্যে ব্যর্থ হন।Woodard, Colin (2010). The Republic of Pirates. Harcourt, Inc. pp. 166–168, 262–314. ISBN 978-0-15-603462-3. রাজধানী নাসাউ উপর্যুপরি বিদেশী, প্রধানত স্প্যানিশ, আক্রমণের শিকার হয়। ১৬৮৪ সালের স্প্যানিশ হামলা ও ১৭০৩ সালের স্পেন ও ফ্রান্সের যৌথ হামলা এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য Marley (1998), p. 226.Headlam, Cecil (1930). America and West Indies: July 1716 | British History Online (Vol 29 ed.). London: His Majesty's Stationery Office. pp. 139–159. Retrieved 15 October 2017.। অষ্টাদশ শতাব্দী ১৭১৮ সালে প্রধানত জলদস্য়ুদের উৎপাত বন্ধ করবার তাগিদে বাহামাকে সরাসরি বৃটিশ রাজশাসনের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং উড্স রজার্সকে বাহামার শাসক নিযুক্ত করা হয়। রজার্স ব্য়ক্তিগত জীবনে একজন দুর্ধর্ষ ও অভিজ্ঞ নাবিক ছিলেন। তিনি কঠোর হস্তে শাসনভার গ্রহণ করেন এবং দক্ষতার সঙ্গে বিদেশি ও জলদস্য়ুদের আক্রমণ প্রতিহত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হন Dwight C. Hart (2004) The Bahamian parliament, 1729–2004: Commemorating the 275th anniversary Jones Publications, p4। ১৭১৮ সালে স্পেনের সঙ্গে বৃটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া এবং হল্য়ান্ড- ইউরোপের এই চার সম্মিলিত শক্তির যে যুদ্ধ বাধে (ওয়ার অব্ কোয়াড্রপল অ্যালিয়ান্স) তার জের হিসাবে ১৭২০ সালে স্প্য়ানিশ শক্তি পুনরায় নিউ প্রভিডেন্স দখলের উদ্দেশ্য়ে নাসাউ আক্রমণ করে। কিন্তু তাদের সে অভিযান ব্য়র্থ হয়। ১৭২৮ সালে গভর্নর জর্জ ফেনি বাহামার বৃটিশ অধিবাসিদের জন্য় স্বায়ত্ত্বশাসনের উদ্য়োগ নেনCazorla, Frank, Baena, Rose, Polo, David, Reder Gadow, Marion (2019) The Governor Louis de Unzaga (1717–1793) Pioneer in the birth of the United States and liberalism, Foundation Malaga, pages 21, 154–155, 163–165, 172, 188–191 যার ফলে ১৭২৯ সালে বাহামায়একটি স্থানীয় সংসদ গঠিত হয়।Keegan, William F. (1992). The people who discovered Columbus: the prehistory of the Bahamas. Jay I. Kislak Reference Collection (Library of Congress). Gainesville: University Press of Florida. pp. 25, 54–8, 86, 170–3. ISBN 0-8130-1137-X. OCLC 25317702 Hart, p8 ১৭৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমেরিকার নৌবাহিনী বাহামায় হামলা চালায় ও সাময়িকভাবে নাসাউ আমেরিকার অধীনে চলে আসে। আবার ১৭৮২ সালে স্প্য়ানিশরা যখন মেক্সিকো থেকে বৃটিশদের উৎখাত করতে যুদ্ধ চালাচ্ছে সেসময় স্প্য়ানিশ নৌবাহিনী নাসাউর উপকুলে হাজির হয় এবং বাহামা বিনাযুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে। পরে ১৭৮৩ সালের প্য়ারিস চুক্তির ভিত্তিতে ফ্লোরিডার বিনিময়ে বাহামা বৃটিশ অধিকারে আসে। ১৭৮৪ সালে বাহামাকে বৃটিশ উপনিবেশ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। Wertenbaker, Thomas Jefferson (1948). Father Knickerbocker Rebels: New York City during the Revolution. New York: Charles Scribner's Sons. p. 260. আমেরিকার স্বাধীনতালাভের পর নবনির্মিত যুক্তরাষ্ট্র থেকে দক্ষিণের ধনশালী জোতদারসহ বহু বৃটিশ অনুগামী তাদের নিগ্রো ক্রীতদাসদের নিয়ে বাহামায় চলে আসেPeters, Thelma (October 1961). "The Loyalist Migration from East Florida to the Bahama Islands". The Florida Historical Quarterly. 40 (2): 123–141. JSTOR 30145777. p. 132, 136, 137। এদের মধ্য়ে স্কটল্য়ান্ডের অভিজাতবংশীয় লর্ড ডানমোর বা ডেভেনক্সের মতন সম্ভ্রান্ত ব্য়ক্তিরাও ছিলেন। এদের আসার ফলে বাহামা জনবহুল হয়ে ওঠে। বৃটিশ সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ তাদের বাহামার বিভিন্ন দ্বীপে জমির মালিকানা দেওয়া হয় যেখানে তারা প্রথমে তুলা চাষ ও পরে কৃষিনির্ভর অন্য়ান্য় কাজ শুরু করে। শীঘ্রই এরা একটি উল্লেখযোগ্য় রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়।Taylor, Isaac (1898). Names and Their Histories; a Handbook of Historical Geography and Topographical Nomenclature. London: Rivingtons. p. 58. কিন্তু তাদের সঙ্গে যে আফ্রিকান-আমেরিকান ক্রীতদাসেরা এসেছিল তাদের উত্তরসূরীরাই ক্রমে সংখ্য়াগরিষ্ঠতা লাভ করে। ঊনবিংশ শতাব্দী অষ্টাদশ- ঊনবিংশ শতাব্দীতে উত্তর আমেরিকা ও সংলগ্ন ক্য়ারিবিয়ান অঞ্চলে ব্য়াপক ক্রীতদাসপ্রথা প্রচলিত ছিল, বাহামাও তার ব্য়তিক্রম ছিল না। দাসেদের মধ্য়ে একাধিক বিদ্রোহের ঘটনা ইংল্য়ান্ড পার্লামেন্টের সদস্য়দের দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলে।১৮৩০ সালে এক্জুমা দ্বীপের পম্পেই আবাদের দাসবিদ্রোহ ও ১৮৩১ সালে ক্য়াট আইল্য়ান্ডের গোল্ডেন গ্রোভ আবাদের দাসবিদ্রোহ এর মধ্য়ে উল্লেখযোগ্য়October 2015 International Journal of Bahamian Studies 21(1):74-90, Allan D. Meyers Eckerd College We shall not be moved: Pompey's slave revolt in Exuma Island, Bahamas, 1830 Michael Craton • । ১৮০৭ সালে ইংল্য়ান্ড আংশিকভাবে, প্রধানত আন্তর্জাতিক স্তরে, দাসব্য়বসায় বন্ধ করে দেয়। বৃটিশ যুক্তরাষ্ট্র এই প্রথার বিলুপ্তির জন্য় ক্রীতদাস ব্য়বসায়ে নিযুক্ত অন্য়ান্য় দেশগুলির ওপরেও চাপ সৃষ্টি করতে থাকে এবং তাদের নৌবাহিনী রয়াল নেভিকে সমুদ্রপথে বিভিন্ন ক্রীতদাসবাহী জাহাজগুলি থেকে ক্রীতদাসদের উদ্ধার করার পরওয়ানা দেয়।Peters, Thelma (October 1961). "The Loyalist Migration from East Florida to the Bahama Islands". The Florida Historical Quarterly. 40 (2): 123–141. JSTOR 30145777. p. 132, 136, 137Falola, Toyin; Warnock, Amanda (2007). Encyclopedia of the Middle Passage. Greenwood Press. pp. xxi, xxxiii–xxxiv. ISBN 9780313334801 এইভাবে বহু আফ্রিকান ক্রীতদাসকে উদ্ধার করে তাদের বাহামায় পুনর্বাসিত করা হয়। ১৮২০ সালে ফ্লোরিডায় আমেরিকানদের সঙ্গে আদিবাসী সেমিনোলদের সংঘর্ষের সময়, যা সেমিনোল বা ফ্লোরিডা ওয়ার নামে পরিচিত. বহু ক্রীতদাস ও আফ্রিকান-সেমিনোল বাহামায় পালিয়ে আসে। এদের অধিকাংশ উত্তরপশ্চিমে বাহামার বৃহত্তম দ্বীপ অ্যান্ড্রস দ্বীপে আশ্রয় নেয় এবং পরবর্তীকালে সেখানে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি সমৃদ্ধ রেড-বে গ্রাম গড়ে তোলে। প্রত্য়ক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী ১৮২৩ সালে ৩০০ জনের এরকম একটি দল বাহামিয়ান ডিঙি বা ভেলায় চড়ে এখানে এসে পৌঁছেছিল। এদের অনেকে এখনো তাদের সনাতন ঝুড়ি বানানো বা সমাধি নির্মাণের কাজে নিযুক্তAppendix: "Brigs Encomium and Enterprise", Register of Debates in Congress, Gales & Seaton, 1837, pp. 251–253. Note: In trying to retrieve North American slaves off the Encomium from colonial officials (who freed them), the US consul in February 1834 was told by the Lieutenant Governor that "he was acting in regard to the slaves under an opinion of 1818 by Sir Christopher Robinson and Lord Gifford to the British Secretary of State".। ১৮১৮ সালে ইংল্য়ান্ড ঘোষণা করে বৃটিশ অধিকৃত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বহির্ভূত যেসব ক্রীতদাস বাহামায় আসবে তাদের দাসত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। ১৮৩০ থেকে ১৮৩৫ সালের মধ্য়ে বিভিন্ন ঘটনায় প্রায় ৩০০ জন আমেরিকান ক্রীতদাস এবং ১৮৩০ থেকে ১৮৪২ সালের মধ্য়ে ৪৪৭ জন ক্রীতদাস মুক্তি পায়। কমেট এবং এনকোমিয়াম নামে আমেরিকার দুটি ক্রীতদাসপণ্য়বাহী জাহাজ- যথাক্রমে ডিসেম্বর ১৮৩০ ও ফেব্রুয়ারি ১৮৩৪ সালে বাহামার আবাকো দ্বীপের কাছে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়। যাত্রীদের মধ্য়ে কমেটে ১৬৫ ও এনকোমিয়ামে ৪৮ জন ক্রীতদাস ছিল। উদ্ধারকার্যের শেষে মালিকদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও জাহাজের দাসেদের মুক্তি দেওয়া হয়। যদিও পরে ১৮৫৫ সালে ইংল্য়ান্ড- আমেরিকার এক চুক্তির ভিত্তিতে এ বাবদ তাদের কিছু ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়।https://www.britannica.com/place/The-Bahamas/Government-and-society ১৮৩৪ সালে ইংল্য়ান্ড সরকার দাসব্য়বসায়কে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৮৩৫ সালে আমেরিকার আর একটি ক্রীতদাসপণ্য়বাহী জাহাজ “এন্টারপ্রাইজ” যখন বাহামায় আসে জাহাজের ৭৮জন দাসকে মুক্ত করা হয়। অনুরূপে হারমোজা জাহাজ যখন ১৮৪০ সালে আবাকো দ্বীপের কাছে ভেঙে পড়ে তখন জাহাজের ৩৮জন ক্রীতদাসযাত্রীকে মুক্ত করা হয়Williams, Michael Paul (11 February 2002). "Brig Creole slaves". Richmond Times-Dispatch. Richmond, Virginia. Retrieved 25 O। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য় ঘটনাটি ঘটে ১৮৪১ সালের নভেম্বর মাসে ক্রিওল জাহাজে। ১৩৫ জন ক্রীতদাস নিয়ে জাহাজটি ভার্জিনিয়া থেকে নিউ অর্লিন্সের উদ্দেশ্য়ে পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু পথে দাসেরা বিদ্রোহ করে ও জাহাজটিকে নাসাউ যেতে বাধ্য় করে। পরিশেষে বাহামিয়ান কর্তৃপক্ষ ১২৮ জন দাসকে মুক্ত করে যারা দ্বীপেই থেকে যায়। ক্রিওলের ঘটনা আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দাসবিদ্রোহের ঘটনা বলে মনে করা হয়Grand Bahama Island – American Civil War Archived 25 October 2007 at the Wayback Machine The Islands of The Bahamas Official Tourism Site। ১৮৬০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় যখন রাষ্ট্রযন্ত্র দক্ষিণের রাজ্য়গুলির জন্য় সমুদ্রপথ বন্ধ করে দেয় তখন তারা বাহামা করিডরকে জাহাজ চলাচলের জন্য় ব্য়বহার করত, এর ফলে বাহামার অর্থনীতির প্রসার ঘটে।Stark, James. Stark's History and Guide to the Bahama Islands (James H. Stark, 1891). pg.93 Higham, pp. 300–302 বিংশ শতাব্দী- প্রথম ভাগ বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকগুলি ছিল বাহামার পক্ষে এক কঠিন পরীক্ষার সময়। ১৯৩৯ সালে বাহামার অন্য়তম প্রধান শিল্প স্পন্জ শিল্প ধরাশায়ী হয় এবং বহু মানুষ প্রধানত কৃষ্ণাঙ্গ মানুষেরা তাদের কর্মসংস্থান হারায়। বিদেশি ব্য়াংকগুলির বাণিজ্য় বিস্তার লাভ করে কিন্তু সেখানে প্রধানত সংখ্য়ালঘিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গরাই চাকরি পেত। মন্দা অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য়ের মাঝে অধিবাসিরা কোনোমতে কৃষি অথবা মৎস্য়শিকারের মাধ্য়মে দিন গুজরান করত।( World War II and the 1942 Nassau RiotGail Saunders DOI:10.5744/florida/9780813062549.003.0007) ১৯৪০ সালে ইংল্য়ান্ডের (প্রাক্তন) রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড বা ডিউক অব্ উইন্ডসর বাহামার গভর্নর নিযুক্ত হন ও এই পদে ১৯৪৫ অবধি আসীন থাকেন। শাসনভার নিয়ে ডিউক বাহামার দারিদ্র্য় দূরীকরণের জন্য় নানা প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নেন। ১৯৪০ সালের ২৯শে অক্টোবর বাহামার প্রশাসন পরিচালনার জন্য় স্থানীয় সংসদ গঠিত হয়। ১৯৪২ সালের নাসাউ রায়ট-বর্ধিত বেতনের দাবিতে কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গদের যে সংঘর্ষ বাধে- তার সমাধানেও তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দেন।Bloch, Michael (1982). The Duke of Windsor's War. London: Weidenfeld and Nicolson. ISBN 0-297-77947-8, pp. 154–159, 230–233 53. ^ Higham, pp. 331–332 ১৯৪৫ সালে ডিউক পদত্য়াগ করেন56. ^ Higham, p. 359 places the date of his resignation as 15 March, and that he left on 5 April। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়(১৯৪৫-১৯৭৩) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নূতন রাজনৈতিক যুগের সূচনা হয়। ১৯৫০ সালে বাহামায় দুটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। এদের মধ্য়ে "ইউনাইটেড বাহামিয়ান পার্টি" বা "ইউবিপি" ছিল ইংরেজ-বাহামিয়ানদের মুখপাত্র। অপরপক্ষে প্রগ্রেসিভ লিবারাল পার্টি বা পিএলপি ছিল সংখ্য়াগরিষ্ঠ অ্যাফ্রো-বাহামিয়ানদের মুখপাত্র।Nohlen, D. (2005), Elections in the Americas: A data handbook, Volume I ISBN 978-0-19-928357-6 বাহামাকে আভ্য়ন্তরীণ স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার দিয়ে নতুন সংবিধান গঠিত হয় ৭ জানুয়ারী, ১৯৬৪ সালে। ইউবিপি দলের সার রোলান্ড সিমোনেট হলেন প্রথম মুখ্য়মন্ত্রীTime Magazine. 20 January 1967. Archived from the original on 4 February 2013.Nohlen, D. (2005), Elections in the Americas: A data handbook, Volume I ISBN 978-0-19-928357-6। ১৯৬৭ সালে পিএলপি দলের লিন্ডেন পিন্ডলিং বাহামার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মুখ্য়মন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে রাষ্ট্রপ্রধান পদের নাম মুখ্য়মন্ত্রীর পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ঐবছরই পিন্ডলিং বাহামার জন্য় পূর্ণ স্বাধীনতা দাবী করেন।"Bahamian Proposes Independence Move". The Washington Post. United Press International. 19 August 1966. p. A20. আভ্য়ন্তরীণ বিষয়ে বাহামাকে অধিকতর প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে নতুন সংবিধান রচিত হয়Armstrong, Stephen V. (28 September 1968). "Britain and Bahamas Agree on Constitution". The Washington Post. p. A13.। ১৯৭১ সালে পিএলপি দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী ফ্রী ন্য়াশনাল মুভমেন্ট বা এফএনএম নামে মধ্য়পন্থী নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে, ইউবিপি দল তার সাথে যুক্ত হয়। এফএনএম হয়ে দাঁড়ায় পিএলপি-র প্রধান প্রতিপক্ষ।Hughes, C (1981) Race and Politics in the Bahamas ISBN 978-0-312-66136-6 বৃটিশ হাউস অফ লর্ডস ২২ জুন ১৯৭৩ তারিখে বাহামার স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়।"British grant independence to Bahamas". The Baltimore Afro-American. 23 June 1973. p. 22. ১০ জুলাই ১৯৭৩ প্রিন্স চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে বাহামাকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র ঘোষণা করেন ও প্রধানমন্ত্রী লিন্ডেন পিন্ডলিংএর হাতে সরকারী নথি তুলে দেন।"Bahamas gets deed". Chicago Defender. United Press International. 11 July 1973. p. 3. এই তারিখটি বাহামার স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়। একই দিনে বাহামা কমনওয়েলথ অফ নেশনস-এ যোগদান করে।বর্তমানে বাহামা কমনওয়েলথ রিয়ালমের সদস্য় (কমনওয়েলথ অন্তর্ভুক্ত এমন ১৫টি রাষ্ট্র যাদের শীর্ষপ্রধান ইংল্য়ান্ডের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ)। স্যার মিলো বাটলার রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সরকারী প্রতিনিধি স্বরূপ বাহামার প্রথম গভর্নর-জেনারেল নিযুক্ত হন"Bahama Independence". Tri-State Defender. Memphis, Tennessee. 14 July 1973. p. 16.। স্বাধীনতা-উত্তর কাল ১৯৭৩ সালের ২২ আগস্ট বাহামা ইন্টারনেশনাল মনিটরি ফান্ড, বিশ্বব্যাংক এবং ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে যোগদান করে।Ciferri, Alberto (2019). An Overview of Historical and Socio-Economic Evolution in the Americas. Newcastle-upon-Tyne: Cambridge Scholars Publisher. p. 313. ISBN 978-1-5275-3821-4. OCLC 1113890667"Bahamas Joins IMF, World Bank". The Washington Post. 23 August 1973. p. C2. পরবর্তী দুই দশক একাধিক নির্বাচনে জয়লাভের ফলে বাহামার রাজনৈতিক পটভূমিতে পিএলপি-র প্রাধান্য় অক্ষুণ্ণ থাকে। নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ পিন্ডলিংএর জনপ্রিয়তায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। এই সময় পর্যটন ও বৈদেশিক ব্য়াংকিং- প্রধানত এই দুই শিল্পের উপর নির্ভর করে বাহামার অর্থনীতির প্রভূত প্রসার ঘটে ও জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। বাহামার সমৃদ্ধিতে আকৃষ্ট হয়ে প্রতিবেশি দেশগুলি, প্রধানত হাইতি থেকে, বহু লোক এখানে বসবাস করতে চলে আসে।Taylor, Isaac (1898). Names and Their Histories; a Handbook of Historical Geography and Topographical Nomenclature. London: Rivingtons. p. 58. ১৯৯২ সালে পিন্ডলিং এফএনএম-এর হাবার্ট ইনগ্রাহামের কাছে পরাজিত হন। ইনগ্রাহাম পরবর্তী ১৯৯৭-র নির্বাচনেও জয়লাভ করেন কিন্তু ২০০২-র নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন এবং পিএলপি পেরি ক্রিস্টির নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফিরে আসে। এরপর থেকে বাহামার রাজনৈতিক ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে পিএলপি এবং এফএনএম-এর মধ্য়ে হস্তান্তরিত হতে থাকে। ২০০৭ থেকে ২০১২ পুনরায় হাবার্ট ইনগ্রাহামের নেতৃত্বে এফএনএম-, ২০১২ থেকে ২০১৭ পেরি ক্রিস্টির নেতৃত্বে পিএলপি এবং ২০১৭ থেকে ২০২১ অবধি হাবার্ট মিনিসের নেতৃত্বে এফএনএম ক্ষমতাসীন থাকে। সেপ্টেম্বর ২০২১ এ বিধ্বস্ত অর্থনীতির ধাক্বা সামলাতে এক অন্তর্বর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এফএনএম বিরোধী পিএলপির কাছে পরাজিত হয়"Bloomberg". www.bloomberg.com. 17 September 2021.। ফিলিপ ডেভিস ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।"Bahamas Election 2021: PLP election victory confirmed | Loop Caribbean News". Loop News. 20 September 2021. ভূগোল অসংখ্য় ছোট বড় দ্বীপের সমষ্টি বাহামা দ্বীপমালা। অতলান্তিক মহাসাগরের ৮০০কিলোমিটার (৫০০মাইল) ধরে এই দ্বীপগুলি ছড়িয়ে রয়েছে। পশ্চিমে রয়েছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, দক্ষিণে কিউবা ও হিস্পানিওয়ালা, পূবে বৃটিশ অধিকৃত টার্ক এবং কাইকো দ্বীপ। ২০ ডিগ্রী থেকে ২৮ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭২ ডিগ্রী থেকে ৮০ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ এর সীমানা নির্দেশ করছে। সর্বসমেত ৭০০টি গ্বীপ ও ২৪০০টি প্রবালদ্বীপ বাহামা দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্ভুক্ত, এদের মধ্য়ে মাত্র ত্রিশটিতে জনবসতি রয়েছে।মোট আয়তন ১০০১০ বর্গ কিলোমিটার।Official government website. "The Constitution". Retrieved 29 May 2017. বাহামার সবচেয়ে ঘনবসতি পূর্ণ দ্বীপ হল নিউ প্রভিডেন্স। এই দ্বীপেই বাহামার রাজধানী নাসাউ অবস্থিত। অন্য় জনঅধ্য়ুষিত দ্বীপগুলির মধ্য়ে গ্র্য়ান্ড বাহামা, ইলিউথেরা, ক্য়াট আইল্য়ান্ড, রাম ক্য়ে, লং আইল্য়ান্ড, স্য়ান স্য়ালভাডর, রাগেড আইল্য়ান্ড, অ্যাকলিন্স, ক্রুকেড আইল্য়ান্ড, এক্জিউমা, বেরি আইল্য়ান্ড, মায়াগুয়ানা, বিমিনি, গ্রেট অ্যাবাকো, গ্রেট ইনাগুয়া উল্লেখযোগ্য়। বৃহত্তম দ্বীপ হল অ্যান্ড্রোস। সবকটি দ্বীপই অনুচ্চ সমতলভূমির উপর অবস্থিত। পাড়ের খাড়াই কোনোখানেই ১৫ থেকে ২০মিটার (৪৯ থেকে৬৬ ফুট) –এর বেশি নয়। ক্য়াট আইল্য়ান্ডের মাউন্ট অ্যালভার্নিয়া (পূর্বের নাম কোমো পাহাড় বা কোমো হিল) হল দ্বীপপুন্জের সর্বোচ্চ স্থান যা কিনা ৬৪মি বা ২১০ ফুট।"Encyclopedia Britannica – The Bahamas". Retrieved 22 July 2019. প্রাকৃতিক পরিবেশের ভিত্তিতে সমগ্র দ্বীপপুন্জকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, শুষ্ক বনাঞ্চল, পাইন মোজাইক অঞ্চল ও উপকূলবর্তী লোনা মাটির ম্য়ানগ্রোভ বনাঞ্চল।Dinerstein, Eric; Olson, David; Joshi, Anup; Vynne, Carly; Burgess, Neil D.; Wikramanayake, Eric; Hahn, Nathan; Palminteri, Suzanne; Hedao, Prashant; Noss, Reed; Hansen, Matt; Locke, Harvey; Ellis, Erle C; Jones, Benjamin; Barber, Charles Victor; Hayes, Randy; Kormos, Cyril; Martin, Vance; Crist, Eileen; Sechrest, Wes; Price, Lori; Baillie, Jonathan E. M.; Weeden, Don; Suckling, Kierán; Davis, Crystal; Sizer, Nigel; Moore, Rebecca; Thau, David; Birch, Tanya; Potapov, Peter; Turubanova, Svetlana; Tyukavina, Alexandra; de Souza, Nadia; Pintea, Lilian; Brito, José C.; Llewellyn, Othman A.; Miller, Anthony G.; Patzelt, Annette; Ghazanfar, Shahina A.; Timberlake, Jonathan; Klöser, Heinz; Shennan-Farpón, Yara; Kindt, Roeland; Lillesø, Jens-Peter Barnekow; van Breugel, Paulo; Graudal, Lars; Voge, Maianna; Al-Shammari, Khalaf F.; Saleem, Muhammad (2017). "An Ecoregion-Based Approach to Protecting Half the Terrestrial Realm". BioScience. 67 (6): 534–545. doi:10.1093/biosci/bix014. ISSN 0006-3568. PMC 5451287. PMID 28608869 ২০১৯ এর তথ্য় অনুযায়ী বাহামার ফরেস্ট ল্যান্ডস্কেপ ইন্টিগ্রিটি ইনডেক্স ৭.৩৫/১০, অর্থাৎ বাহামার বনভূমির উপর মনুষ্য়কৃত পরিবর্তনের প্রভাব কম।Grantham, H. S.; Duncan, A.; Evans, T. D.; Jones, K. R.; Beyer, H. L.; Schuster, R.; Walston, J.; Ray, J. C.; Robinson, J. G.; Callow, M.; Clements, T.; Costa, H. M.; DeGemmis, A.; Elsen, P. R.; Ervin, J.; Franco, P.; Goldman, E.; Goetz, S.; Hansen, A.; Hofsvang, E.; Jantz, P.; Jupiter, S.; Kang, A.; Langhammer, P.; Laurance, W. F.; Lieberman, S.; Linkie, M.; Malhi, Y.; Maxwell, S.; Mendez, M.; Mittermeier, R.; Murray, N. J.; Possingham, H.; Radachowsky, J.; Saatchi, S.; Samper, C.; Silverman, J.; Shapiro, A.; Strassburg, B.; Stevens, T.; Stokes, E.; Taylor, R.; Tear, T.; Tizard, R.; Venter, O.; Visconti, P.; Wang, S.; Watson, J. E. M. (2020). "Anthropogenic modification of forests means only 40% of remaining forests have high ecosystem integrity – Supplementary Material". Nature Communications. 11 (1): 5978. doi:10.1038/s41467-020-19493-3. ISSN 2041-1723. PMC 7723057. PMID 33293507 জলবায়ু কোপেনের জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী বাহামার জলবায়ু মুখ্য়তঃ ক্রান্তীয় অঞ্চলের সাভানা তৃণভূমির জলবায়ু সদৃশ। উষ্ণ এবং আর্দ্র অথবা শীতল এবং শুষ্ক- এই দুই ধরনের আবহাওয়া বাহামার ঋতুচক্রের বৈশিষ্ট্য়। বিষুবরেখার নিকটবর্তীতা, ক্রান্তীয় উষ্ণ প্রস্রবণ এবং নিম্ন উচ্চতার দরুণ বাহামার আবহাওয়া সর্বদাই উষ্ণ থাকে, শীতের উপস্থিতি বিশেষ টের পাওয়া যায় না।Rabb, George B.; Hayden, Ellis B.; Van Voast; American Museum of Natural History Bahama Islands (1957). "The Van Voast-American Museum of Natural History Bahama Islands Expedition (1952–1953): record of the expedition and general features of the islands". American Museum Novitates (1836). hdl:2246/4700 ক্রান্তীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য় অনুযায়ী এখানে বর্ষা নামে গ্রীষ্মকালে এবং গ্রীষ্মই এখানে আর্দ্রতম ঋতু। বাহামার দ্বীপগুলিতে উষ্ণতম ও শীতলতম মাসগুলির মধ্য়ে তাপমাত্রার পার্থক্য় বড়জোর ৭ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। উত্তর আমেরিকা থেকে আগত শৈত্য়প্রবাহ মাঝে মাঝে বাহামার তাপমাত্রাকে ১০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের নীচে নামিয়ে নিয়ে যায়, তবে তুষারপাতের কথা কখনো শোনা যায় না, কেবল ১৯৭৭ সালের ১৯শে জানুয়ারি তারিখে একবারই বাহামার বাতাসে বর্ষার জলকণার সঙ্গে তুষারকণাও ভাসতে দেখা গিয়েছিল"40th Anniversary of Snow in South Florida" (PDF). www.weather.gov. Retrieved 13 December 2018.। বছরের অধিকাংশ সময়ে বাহামার প্রকৃতি থাকে শুষ্ক এবং রৌদ্রোজ্জ্বল।"40th Anniversary of Snow in South Florida" (PDF). www.weather.gov. Retrieved 13 December 2018. ক্রান্তীয় ঝঞ্ঝা-ঘূর্ণিবাত্য়া কখনো কখনো বাহামার উপর আছড়ে পড়ে। ১৯৯২ সালে হারিকেন অ্যান্ড্রিয়ু বাহামার উত্তর ভূখন্ডের উপর আর ১৯৯৯ সালে হারিকেন ফ্লয়েড পূর্ব ভূখন্ডের উপর দিয়ে বয়ে যায়। ২০১৯এর সেপ্টেম্বর মাসে কুখ্য়াত হারিকেন ডোরিয়ান তীব্র গতিতে আবাকো ও গ্রান্ড বাহামা দ্বীপকে আঘাত করে, বাহামার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল কার্যতঃ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ধ্বংসের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার, নিহতের সংখ্য়া অন্তত ৫০ বা তারও বেশি। ১৩০০ জনের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।Stelloh, Tim (9 September 2019). "Hurricane Dorian grows deadlier as more fatalities confirmed in Bahamas". NBC News. Retrieved 10 September 2019"Bahamas". Caribbean Islands. 4 December 2015. Retrieved 4 December 2015Hurricane Dorian Advisory Number 33 (Report). NHC. ভূতত্ত্ব বাহামার নির্মাণকার্য শুরু হয়েছিল প্রত্নতাত্তিক যুগে, আনুমানিক ২০ কোটি বছর আগে, যখন ভূপৃষ্ঠতলে সবেমাত্র ফাটল ধরতে শুরু করেছে। বর্তমানে এটি ৭০০ দ্বীপ, প্রবালদ্বীপ ও বালিয়াড়ির সমষ্টি এক দ্বীপপুন্জ। এর পাড়ের কাছের যে চুনাপাথরের স্তর, তা জমতে শুরু করেছিল অন্ততঃ ক্রিটেশাস যুগ থেকে (মেসোজোইক যুগের শেষভাগ অর্থাৎ ১৪৪ মিলিয়ন বছর আগে) এবং সম্ভবতঃ জুরাসিক যুগ থেকে (ট্রায়াসিক যুগের শেষভাগ অর্থাৎ ২০০ মিলিয়ন বছর আগে)। বর্তমানে এই স্তরের ঘনত্ব ৪.৫ কিলেমিটারেরও বেশি (২.৮মাইল)"Geomorphology from Space, Chapter 6: Coastal Landforms. Plate C-16, 'Great Bahama Bank'". geoinfo.amu.edu.pl. Retrieved 9 March 2006. । সমগ্র স্তরটি নিজের ভরে প্রতি হাজার বছরে ৩.৬সেমি গতিতে সমুগ্রগর্ভে নেমে যাচ্ছে।"Geomorphology from Space, Chapter 6: Coastal Landforms. Plate C-16, 'Great Bahama Bank'". geoinfo.amu.edu.pl. Retrieved 9 March 2006. বাহামা দ্বীপপুন্জ বৃহত্তর লুকায়ান দ্বীপপুন্জের অংশবিশেষ। বৃটিশ অধিকৃত টার্ক এবং কাইকো দ্বীপ, সমুদ্র-নিমজ্জিত মৌচির, সিলভার ও নাভিদাদ ব্যাংকও লুকায়ান দ্বীপপুন্জের অন্তর্ভুক্ত।। অতীতে ১৫ কোটি বছর আগে, উত্তর অতলান্তিক মহাসাগর সৃষ্টির গোড়ার দিকে, যখন বাহামা প্ল্য়াটফর্ম প্রথম গঠিত হয় তখন মূল বাহামা ছাড়াও দক্ষিণ ফ্লোরিডা, উত্তর কিউবা, টার্ক, কাইকো এবং বর্তমানে সমুদ্রমগ্ন ব্লেক উপত্য়কাও এর সংগে যুক্ত ছিল।Carew, James; Mylroie, John (1997). Vacher, H.L.; Quinn, T. (eds.). Geology of Bahamas, in Geology and Hydrology of Carbonate Islands, Developments in Sedimentology 54. Amsterdam: Elsevier Science B.V. pp. 91–139. ISBN 9780444516442. যে ৬.৪ কিলোমিটার গভীর চুনাপাথরের স্তর বাহামার বৈশিষ্ট্য় তা অতীতে ক্রিটেশাস যুগে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মূল ভূখন্ডের থেকে প্রসারিত একটি অগভীর অংশের উপর জমা হতে শুরু করে। যেমন যেমন চুনাপাথর মিশ্রিত পলি জমতে থাকে তেমন তেমন অংশটি নিজের ভারেই নীচে নেমে যেতে থাকে। এইভাবে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সমুদ্রতল ও কিছু বিচ্ছিন্ন দ্বীপ গড়ে ওঠে। এরপরে প্রায় ৮কোটি বছর আগে উপসাগরীয় প্রবাহ অঞ্চলটিকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এর ফলে ব্লেক উপত্য়কা সাগরে ডুবে যায় আর বাহামা কিউবা, ফ্লোরিডা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসে। , দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে একাধিক বেলাভূমির সৃষ্টি হয়। এদের মধ্য়ে কে সাল, লিটল ও গ্রেট বাহামা উল্লেখযোগ্য়।চুনামিশ্রিত পলি অথবা প্রবালকীট এখনো বাহামার সমুদ্রতট ধরে হাজার বছরে ২০ মিমি হারে জমা হয়ে চলেছে। প্রবালপ্রাচীর এদের ধরে রাখে।Hydrant (http://www.hydrant.co.uk), Site designed and built by (15 August 2013). "Bahamas, The". The Commonwealth. Retrieved 25 January 2021 এই প্রবাল সঞ্চয় প্রক্রিয়ার বেশিটাই সম্পন্ন হয়েছিল টার্সিয়ারি যুগ অর্থাৎ ছয় থেকে আড়াই কোটি বছর আগে।এরপরে হিমযুগ শুরু হলে প্রক্রিয়াটি ব্য়াহত হয়। এই কারণে সমুদ্রতল থেকে নীচে অন্ততঃ ৩৬ মিটার গভীরে গেলে প্রবালস্তরের প্রাচুর্য দেখতে পাওয়া যায়। সাগরের লোনা জল বালির মধ্য়ে ঢুকে পড়ে তার তাপমাত্রা এবং লবনাক্ততা বাড়িয়ে দেয় যার ফলে উলাইট, সিমেন্টেড উইডস বা গ্রেপস্টোন, দানব স্ট্রোমাটোলাইট প্রভৃতি পাললিক শিলার সৃষ্টি হয়। তীরের উলাইট কণাগুলি বায়ুবাহিত হয়ে দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে স্তূপাকারে জমা হয় ও পরস্পর সংলগ্ন একাধিক বালিয়াড়ির সৃষ্টি করে। তীরের কাছে এগুলি প্রধানত বালিয়াড়ি হিসাবে থাকলেও দ্বীপের অভ্য়ন্তরে কণাগুলি বৃষ্টির জলের প্রভাবে দ্রুত প্রস্তরীভূত হয়ে যায় ও অনুচ্চ শৈলশ্রেণী বা টিলা গঠন করে যাকে ইওলিয়ানাইট বলা হয়https://www.britannica.com/ বেশিরভাগ দ্বীপে এগুলির উচ্চতা 30 থেকে 45 মিটার (98 থেকে 148 ফুট) যদিও ক্যাট আইল্যান্ডের টিলার উচ্চতা 60 মিটার (200 ফুট)। টিলাগুলির মধ্যবর্তী জমি হ্রদ এবং জলাভূমি গঠনের জন্য উপযোগী। বাহামায় কোনো নদী নেই কিন্তু বেশ কয়েকটি বড়বড় হ্রদ রয়েছে। নিউ প্রভিডেন্স, সান সালভাডর, গ্রেট ইনাগুয়া দ্বীপের হ্রদ উল্লেখযোগ্য়।বাহামার মাটি চুনাপাথর সমৃদ্ধ।আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শে চুনাপাথরের দ্রুত ক্ষয় হওয়ার প্রবণতা বাহামার ভূপৃষ্ঠকে একটি বৈশিষ্ট্য় প্রদান করেছে যা "বাহামিয়ান কার্স্ট" নামে পরিচিত। এদের মধ্যে রয়েছে ভূগর্ভস্থিত কন্দর বা পটহোল, সামুদ্রিক গহ্বর বা ব্লু হোল, সিংকহোল, তটভূমির ভঙ্গুর নুড়িপথ বা বীচরক প্রভৃতি। দক্ষিণ অ্যান্ড্রস দ্বীপে কয়েকটি ব্লু হোল দেখতে পাওয়া যায়। লং আইল্য়ান্ড দ্বীপে ডিনের ব্লু হোল গভীরতায় বিশ্বের দ্বিতীয়। বীচরকের মধ্য়ে রয়েছে বিমিনি দ্বীপের ০.৮কিমি দৈর্ঘের সুদীর্ঘ বিমিনি রোড ("পেভমেন্ট অব আটলান্টিস")।টাইডাল ফ্ল্য়াট বা টাইডাল ক্রীকই সচরাচর দেখা যায় যাদের মধ্য় দিয়ে জোয়ার ভাঁটার জল বয়ে যায় তবে জল নিষ্কাশনের জন্য় ক্য়ানিয়নগুলি যথা গ্রেট বাহামা ক্য়ানিয়ন নিঃসন্দেহে অনেক বেশি চিত্তাকর্ষক।Sealey, Neil (2006). Bahamian Landscapes; An Introduction to the Geology and Physical Geography of The Bahamas. Oxford: Macmillan Education. pp. 1–24. ISBN 9781405064064 বাহামা দ্বীপগুলির স্তরবিন্যাস তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম স্তরে প্লেইস্টোসিন বা হিমযুগের মধ্যভাগে গঠিত ঘুলঘুলি সদৃশ আউলস হোল দেখা যায়। দ্বিতীয় স্তরে আছে হিমযুগের শেষভাগে গঠিত গ্রোটো বিচ যা প্রথম স্তরকে আচ্ছাদিত ও সুরক্ষিত করেছে।শেষ স্তরে রয়েছে হলোসিন যুগের রাইস বে ফর্মেশন যখন কৃষিকার্যের উন্মেষ ঘটেছিল। তবে এমন নয় যে স্তরগুলি নিয়ম মেনে সময়ানুযায়ী পরপর সাজানো।বরং পাশাপাশিও অবস্থিত হতে পারে। গ্রোটো বিচের উপস্থিতি সর্বাধিক দেখা যায়।টেরা রোসা প্যালিওসয়েলকেও গ্রোটো বিচের মতন প্রথম স্তরের আউলস হোলকে ঢেকে থাকতে দেখা গিয়েছে।Carew, James; Mylroie, John (1997). Vacher, H.L.; Quinn, T. (eds.). Geology of Bahamas, in Geology and Hydrology of Carbonate Islands, Developments in Sedimentology 54. Amsterdam: Elsevier Science B.V. pp. 91–139. ISBN 9780444516442 সরকার এবং রাজনীতি বাহামা একটি সংসদীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, যেখানে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে রয়েছেন। স্থানীয়ভাবে একজন গভর্নর-জেনারেল তাঁর প্রতিনিধিত্ব করেন। রাজনৈতিক এবং আইনগত নিয়মগুলি ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্টমিনস্টার প্রথাকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করে। বাহামা কমনওয়েলথ রিয়ালমসের সদস্য।Hydrant (http://www.hydrant.co.uk), Site designed and built by (15 August 2013). "Bahamas, The". The Commonwealth. Retrieved 25 January 2021.Hunter, Josh (27 September 2012). "A more modern crown: changing the rules of succession in the Commonwealth Realms". Commonwealth Law Bulletin. 38 (3): 423–466. doi:10.1080/03050718.2012.694997. S2CID 144518578 – via Taylor & Francis Online প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারের প্রধান এবং সংসদে সংখ্য়াগরিষ্ঠ দলের নেতা।প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের সদস্য়দের মধ্য় থেকে মন্ত্রি নির্বাচন করে মন্ত্রিসভা গঠন করেন। দেশের পরিচালন ব্য়বস্থার দায়িত্ব ও ক্ষমতা মন্ত্রিসভার উপর ন্য়স্ত থাকে। বর্তমান গভর্নর-জেনারেল হলেন মাননীয় কর্নেলিয়াস এ. স্মিথ, এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হলেন মাননীয় ফিলিপ ডেভিস এমপি।"CIA World Factbook – The Bahamas". Retrieved 21 July 2019"Encyclopedia Britannica – The Bahamas". Retrieved 22 July 2019. আইন প্রণয়নের জন্য় দেশে বাইকামেরাল বা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় শাসনব্য়বস্থা চালু।এর ৩৮-সদস্যের নিম্নকক্ষ বা হাউস অফ অ্যাসেম্বলি প্রতি জেলা থেকে একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত, এবং ১৬-সদস্যের উচ্চকক্ষ বা সেনেট, গভর্নর-জেনারেল মনোনীত ১৬জন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত। ১৬জন প্রতিনিধিদের মধ্য়ে গভর্নর-জেনারেল, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে নয়জন, বিরোধী দলের নেতার পরামর্শে চারজন এবং বিরোধী নেতার সাথে পরামর্শের পর প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে তিনজনকে মনোনয়ন করেন। ওয়েস্টমিনস্টার সিস্টেমের মতন এখানেও প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভেঙে দিতে পারেন এবং পাঁচ বছরের মেয়াদের মধ্যে যেকোনো সময় একটি সাধারণ নির্বাচন আহ্বান করতে পারেন।"Bahamas 1973 (rev. 2002)". Constitute. Archived from the original on 17 March 2015. Retrieved 17 March 2015. বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মাচরণ, আন্দোলন এবং সম্মেলনের স্বাধীনতা বাহামার নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার।সংবিধান অনুযায়ী বাহামার বিচার বিভাগ সংসদ ও প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত সম্পূর্ণ পৃথক ব্য়বস্থা। রাজনৈতিক পরিবেশ বাহামাতে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল- বামপন্থী প্রগ্রেসিভ লিবারেল পার্টি (পিএলপি) এবং মধ্য়পন্থী ফ্রী ন্য়াশনাল মুভমেন্ট(এফ এনএম)। অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলও রয়েছে যারা সংসদ নির্বাচনে জিততে পারেনি; এর মধ্যে রয়েছে বাহামাস ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, কোয়ালিশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্ম, বাহামিয়ান ন্যাশনালিস্ট পার্টি এবং ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স।"Member States and Associate Members". CARICOM. Retrieved 4 February 2021 বৈদেশিক সম্পর্ক বাহামার সঙ্গে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট বৃটেনের ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে।ওয়াশিংটনে একজন রাষ্ট্রদূত এবং লন্ডনে হাইকমিশনার বাহামার প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। 'হারিকেন ডোরিয়ান'-এর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস দুর্যোগ প্রস্তুতি, ব্যবস্থাপনা, পুনর্গঠন, মডুলার আশ্রয়কেন্দ্র, মেডিকেল ইভাকুয়েশন বোট প্রভৃতির জন্য় বাহামাকে $৩.৬ মিলিয়ন অর্থসাহা্য্য় দেয়।Central Intelligence Agency (2009). The CIA World Factbook 2010 (Report). Skyhorse Publishing. p. 53। বাহামা প্রতিবেশি ক্যারিবিয়ান রাষ্ট্রগুলির সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে। "United States Donates $3.6M in Modular Shelters, Rescue Boats, and Construction Materials for Hurricane Response in The Bahamas". U.S. Embassy in The Bahamas. 18 September 2020. Retrieved 18 September 2020.Central Intelligence Agency (2009). The CIA World Factbook 2010 (Report). Skyhorse Publishing. p. 53. সেনা বাহিনী বাহামিয়ান সেনাবাহিনীকে বলা হয় রয়্যাল বাহামা ডিফেন্স ফোর্স (RBDF)। ১৯৮০ সালে এটি গঠিত হয়।দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করা ও সীমান্তের অধিকার সুনিশ্চিত করা, জলসীমায় টহল দেওয়া, দুর্যোগের সময়ে সহায়তা এবং ত্রাণ সরবরাহ করা, মাদক চোরাচালান বন্ধ করা, সমুদ্রপথের নাবিকদের সাহায্য় করা প্রভৃতি সেনাবাহিনীর দায়িত্ব "Our Mandat". rbdf.gov.bs. Retrieved 4 February 2021।এটি ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি (CARICOM) এর আঞ্চলিক নিরাপত্তা টাস্ক ফোর্সের সদস্য।[92] বাহামার নৌবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত একটি স্থল ইউনিট যার নাম কমান্ডো স্কোয়াড্রন (রেজিমেন্ট) এবং একটি এয়ার উইং (এয়ার ফোর্স)।Defence Act". Act of 1980. p. 211-14. প্রশাসনিক বিভাগ বাহামার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জেলা হল নিউ প্রভিডেন্স- জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ এখানে বাস করে এবং এখানেই রাজধানী নাসাউ অবস্থিত। এর প্রশাসন সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়।বাকী জেলাগুলি স্থানীয় সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ১৯৯৬ সালে, বাহামিয়ান সংসদ বিভিন্ন দ্বীপের জন্য "স্থানীয় সরকার আইন" প্রণয়ন করে।এই আইনের বলে ফ্য়ামিলি আইল্য়ান্ড বা প্রান্তিক দ্বীপগুলির জন্য় পৃথক প্রশাসক পদের, বিভিন্ন জেলার জন্য় স্থানীয় জেলা কাউন্সিলর পদের সৃষ্টি হয় এবং স্থানীয় শহর কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই আইনের সামগ্রিক লক্ষ্য হল কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই বিভিন্ন নির্বাচিত নেতাদের তাদের নিজ নিজ জেলার বিষয়গুলি পরিচালনা ও তদারকি করবার ক্ষমতা দেওয়া। মোট ৩২টি জেলা রয়েছে, যেখানে প্রতি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হয়। বর্তমানে ১১০ জন কাউন্সিলর এবং ২৮১ জন টাউন কমিটির সদস্য বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলর এবং টাউন কমিটির সদস্যদের অন্য়তম দায়িত্ব হল প্রত্য়েকের নিজ নিজ নির্বাচন কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য় বরাদ্দ অর্থের সঠিক ব্য়বহার সুনিশ্চিত করা।"Bahama Island Information". www.bahamaislands.com. Retrieved 4 February 2021 নিউ প্রভিডেন্স ভিন্ন বাহামার অন্য় জেলাগুলি হল- ১. অ্যাকলিনস . ২.বেরি আইল্য়ান্ড, ৩. বিমিনি ৪. ব্ল্য়াক পয়েন্ট একজুমা ৫. ক্য়াট আইল্য়ান্ড ৬. সেন্ট্রাল আবাকো ৭. সেন্ট্রাল অ্যান্ড্রস ৮.সেন্ট্রাল এলিউথেরা ৯. গ্র্য়ান্ড বাহামা(সিটি অব ফ্রী পোর্ট)১০. ক্রুকেড আইল্য়ান্ড ১১. ইস্ট গ্র্য়ান্ড বাহামা ১২. একজুমা ১৩. গ্র্য়ান্ড কে আবাকো১৪ . হার্বার আইল্য়ান্ড এলিউথেরা ১৫. হোপ টাউন আবাকো ১৬. ইনাগুয়া ১৭. লং আইল্য়ান্ড ১৮. ম্য়ানগ্রোভ সিটি অ্যান্ড্রস ১৯. মায়াগুনা ২০. মুর আইল্য়ান্ড, আবাকো ২১. নর্থ আবাকো ২২. নর্থ অ্যান্ড্রস ২৩.নর্থ এলিউথেরা ২৪.রাগড আইল্য়ান্ড ২৫.রাম কে ২৬. সান সালভাডর ২৭. সাউথ আবাকো ২৮. সাউথ অ্যান্ড্রস ২৯. সাউথ এলিউথেরা ৩০. স্প্য়ানিশ ওয়েলস এলিউথেরা ৩১. ওয়েস্ট গ্র্য়ান্ড বাহামা GDP (current US$) | Data | Table. World Bank, Retrieved on 20 April 2014 GDP (current US$) | Data | Table. World Bank, Retrieved on 20 April 2014 অর্থনীতি জনপ্রতি জিডিপির ভিত্তিতে বাহামা আমেরিকার অন্যতম ধনী দেশ। বাহামার অর্থনীতি পর্যটনের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল । বাহামিয়ান জিডিপির প্রায় ৫0% পর্যটন শিল্পের অবদান। দেশের প্রায় অর্ধেক জনসাধারণের কর্মসংস্থানের উৎসও পর্যটন শিল্পAhrens, Wolfgang P. (2016). "Naming the Bahamas Islands: History and Folk Etymology". In Hough, Carole; Izdebska, Daria (eds.). 'Names and Their Environment': Proceedings of the 25th International Congress of Onomastic Sciences: Glasgow, 25-29 August 2014, Volume 1: Keynote Lectures: Toponomastics I (PDF). University of Glasgow. p. 47. ISBN 978-0-85261-947-6.Spencer, Andrew (14 July 2018). Travel and Tourism in the Caribbean: Challenges and Opportunities for Small Island Developing States. Springer. ISBN 978-3-319-6958। নিউ প্রভিডেন্স এবং গ্র্য়ান্ড বাহামা দ্বীপ দুটি পর্যটনের মূল কেন্দ্র। পর্যটকরা অধিকাংশই আসেন আমেরিকা থেকে। বিভিন্ন প্রমোদ ভ্রমণের মধ্য়ে বাহামার নৌকাবিহার পর্যটকদের অন্য়তম আকর্ষণ। ২০১২সালে বাহামা ৫.৮ মিলিয়ন দর্শক আকর্ষণ করেছিল, যাদের মধ্যে ৭০% এরও বেশি ছিল জলবিহারের দর্শক।"Panama Papers". The International Consortium of Investigative Journalists. পর্যটনের পরে, দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হল আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা বা অফশোর ফিনান্স। জিডিপির প্রায় ১৫% এখান থেকে আসে। বাহামায় কোনো আয়কর বা কর্পোরেট ট্যাক্স নেই এবং এখানে আর্থিক লেনদেনের গোপনীয়তাও বজায় রাখা হয়।এই কারণে শতাধিক বিদেশি ব্য়াংক এবং ট্রাস্ট কোম্পানি বাহামায় তাদের শাখা খুলেছে‍। জাতীয় ব্যাঙ্ক হল সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ দ্য বাহামাস, ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। জাতীয় মুদ্রা হল বাহামিয়ান ডলার; দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে মার্কিন মুদ্রাও গৃহীত হয়। "Contributions Table". The National Insurance Board of The Commonwealth of The Bahamas. 11 May 2010. Retrieved 22 December 2011 বাহামায় কম্পিটিটিভ ট্য়াক্স রেজিম চালু রয়েছে যে ব্য়বস্থায় বিভিন্ন ব্য়ক্তিগত করে হ্রাস ঘটিয়ে উপভোক্তা করের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। বাহামায় কোনো ব্য়ক্তিগত কর যথা আয়কর, কর্পোরেট কর, মূলধন লাভ কর, বা সম্পদ কর নেই। সরকারী ব্যয়গুলি পরোক্ষ করের উপর নির্ভরশীল যা প্রাথমিকভাবে পর্যটন এবং বহির্বাণিজ্যের উপর আরোপ করা হয়। সরকার আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, লাইসেন্স ফি, এবং স্ট্যাম্প ট্যাক্স থেকে তার রাজস্ব সংগ্রহ করে। সামাজিক সুরক্ষার ভার বহন করে বেতনকর যার ৩.৯% দেয় কর্মচারীরা ও ৫.৯% দেয় নিয়োগকর্তা। হয়।২০১০ সালে, জিডিপির শতাংশ হিসাবে সামগ্রিক করের পরিমাণ ছিল ১৭.২%।"Contributions Table". The National Insurance Board of The Commonwealth of The Bahamas. 11 May 2010. Retrieved 22 December 2011. কৃষি বাহামাবাসিদের সনাতন জীবিকা হলেও বর্তমান অর্থনীতিতে এর অবদান সামান্য়, জিডিপির মাত্র ৫-৭% এবং কর্মসংস্থানেও ক্ষেত্রটির ভূমিকা সীমিত। বাহামার জমি সাধারণত অনুর্বর এবং মাটি অগভীর। দেশের প্রায় সব খাদ্যসামগ্রী আমদানি করা হয় বিদেশ থেকে, মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তবে রৌদ্রোজ্জ্বল জলবায়ু নানারকম ফলের চাষের পক্ষে সহায়ক। প্রধান ফলের মধ্যে রয়েছে টমেটো, আনারস, কলা, আম, পেয়ারা, স্যাপোডিলা (একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় চিরহরিৎ গাছের ফল), সোরসপ, জাম্বুরা এবং সামুদ্রিক আঙ্গুর Group, Taylor & Francis (2004). Europa World Year. Taylor & Francis. ISBN 978-1-85743-254-1। গলদা চিংড়ি প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছকে কেন্দ্র করে সংক্ষিপ্তাকারে মৎস্য়শিল্প গড়ে উঠেছে। কিছু শূকর, ভেড়া এবং গবাদি পশু পালন করা হয়। শিল্প ও বাণিজ্য়ের মধ্য়ে রয়েছে রম এবং অন্যান্য মদের উৎপাদন কেন্দ্র সহ সিমেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যালস,টিনজাত ফল এবং প্রসেস্ড স্পাইনি লবস্টার প্রভৃতির উৎপাদন শিল্প। বাহামার বহির্বাণিজ্য়ের সিংহভাগ অধিকার করে আছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। অন্যান্য ব্যবসায়িক অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে চীন, পানামা, আয়ারল্যান্ড, ইউএস ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, তুর্কস এবং কাইকোস, যুক্তরাজ্য এবং জাপান। প্রধান আমদানির মধ্যে রয়েছে যন্ত্রপাতি ও পরিবহন সরঞ্জাম, খাদ্য পণ্য এবং খনিজ জ্বালানি। প্রধান রপ্তানি হল পেট্রোলিয়াম এবং রক লবস্টার।https://www.britannica.com/place/The-Bahamas পরিবহন নাসাউ, ফ্রিপোর্ট এবং অধিকাংশ জনবসতিপূর্ণ দ্বীপে পাকা রাস্তা ব্যবস্থা রয়েছে। বাহামাতে প্রায় ১৬২০ কিমি (১০১০ মাইল) পাকা রাস্তা রয়েছে। আন্তঃদ্বীপ পরিবহন প্রধানত জাহাজ ও আকাশপথে পরিচালিত হয়। মেইল বোট নামে পরিচিত ছোট মোটর জাহাজের একটি বহর নাসাউ এবং আউট দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে যাত্রী, মালবাহী এবং ডাক পরিবহন করে। নাসাউ এবং ফ্রিপোর্ট দেশের প্রধান দুটি বন্দর। ফ্রিপোর্টে একটি বড় কন্টেইনার ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টও রয়েছে। প্রতি বছর অসংখ্য বিদেশী যাত্রী ও মালবাহী জাহাজ বাহামিয়ান বন্দর পরিদর্শন করে। দেশের 61টি বিমানবন্দর রয়েছে,যেখানে বিভিন্ন থাকার ব্যবস্থা এবং সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই কেবল অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবা দেয়, তবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলি নাসাউ, ফ্রিপোর্ট এবং এক্সুমাতে অবস্থিত এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলি অন্যান্য বাহামিয়ান দ্বীপগুলির সাথেও সংযোগ করে।প্রধান বিমানবন্দর হল নিউ প্রভিডেন্সের লিন্ডেন পিন্ডলিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গ্র্যান্ড বাহামা দ্বীপের গ্র্যান্ড বাহামা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং অ্যাবাকো দ্বীপে লিওনার্ড এম. থম্পসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (পূর্বে মার্শ হারবার বিমানবন্দর)।<ref>https://www.britannica.com/place/The-Bahamas</</ref> জনতত্ত্ব বাহামার আনুমানিক জনসংখ্যা ৩,৮৫,৬৩৭ যার মধ্যে ১৪ বছর বা অনূর্ধ ১৪~ ২৫.৯% ১৫ বছর থেকে ৬৪ বছর~ ৬৭.২% ৬৫ বছর বা তার বেশি~ ৬.৯% ২০১০সালের পরিসংখ্য়ান অনুযায়ী- জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৯২৫% জন্মহার ১৭.৮১/১,000 মৃত্যুহার ৯.৩৫/১,000, শিশুমৃত্যুর হার ২৩.২১/১,000 এবং অভিবাসন হার −২.১৩ /১,000। জীবিত জন্ম। Country Comparison "Total fertility rate", CIA World Factbook. গড় আয়ু ৬৯.৮৭ বছর: মহিলাদের জন্য ৭৩.৪৯ বছর, পুরুষদের জন্য ৬৬.৩২ বছর।NEW PROVIDENCE". Government of the Bahamas. Retrieved 15 May 2015 জাতিগত এবং বর্ণগত গোষ্ঠী ২০১০ সালে জনগণনায় জনসংখ্যার ৯০.৬% নিজেদেরকে কালো, ৪.৭% সাদা এবং ২.১% মিশ্র (আফ্রিকান এবং ইউরোপীয়) হিসাবে চিহ্নিত করে। প্রসংগত,বাহামায় বর্ণনির্নয়ের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিধি নেই, নাগরিকের অভিমতই চূড়ান্ত। == শ্বেতাঙ্গরা যথাক্রমে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে আগত ইংরেজ ঔপনিবেশিক ও আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের বৃটিশভক্তদের বংশধর। কিছু গ্রীক রয়েছেন যারা ১৯০০ সালে স্পন্জ শিল্পে সাহায্য করতে এসেছিল। কৃষ্ণাঙ্গদের পূর্বসূরীরা ছিলেন দাস,শ্রমিক অথবা অভিবাসী। "Caribbean Countries Resource Guide" (PDF). www.aiafla.orgThe Commonwealth of the Bahamas (August 2012). "2010 Census of Population and Housing" (PDF). pp. 10 and 82. In 1722 when the first official census of the Bahamas was taken, 74% of the population was European or native British and 26% was African or mixed. Three centuries later, and according to the 99% response rate obtained from the race question on the 2010 Census questionnaire, 90.6% of the population identified themselves as being Afro-Bahamian, about five percent (4.7%) Euro-Bahamian and two percent (2%) of a mixed race (African and European) and (1%) other races and (1%) not stated ধর্ম বাহামার অধিবাসীরা প্রধানত খ্রিস্টান, যার মধ্যে প্রোটেস্ট্যান্ট ৭০% ও রোমান ক্যাথলিক ১৪%। প্রোটেস্ট্যান্টদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপ্টিস্টরা ৩৫%, অ্যাংলিকান ১৫%, পেন্টেকোস্টাল ৮%, চার্চ অফ গড ৫ %, সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট ৫% এবং মেথডিস্ট ৪%। United States Bureau of Democracy, Human Rights and Labor. Bahamas: International Religious Freedom Report 2008. This article incorporates text from this source, which is in the public domain ইহুদিদের একটি ছোট সম্প্রদায় রয়েছে। কলম্বাস অভিযানের দোভাষী একজন ইহুদি ছিলেন বলে মনে করা হয়।"Bahamas Virtual Jewish History Tour". Jewish Vitual Library. Retrieved 2 December 2021. আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, দ্বীপে ইহুদি সংখ্যা ২০০,মতভেদে ৩০০ "Bahamas' Jewish community has a small but steady presence". Sun Sentinel. 9 September 2019. Retrieved 2 December 2021.| মুসলমানদেরও স্বল্প উপস্থিতি রয়েছে।"Jamaa' Ahlus Sunnah Bahamas (Jamaat-ul-Islaam Bahamas)". Jamaa' Ahlus Sunnah Bahamas. Retrieved 2 December 2021 ঔপনিবেশিক যুগে কিছু ক্রীতদাস এবং মুক্ত আফ্রিকানরা মুসলিম ছিল, বর্তমানে দ্বীপের প্রায় ৩০০ অধিবাসী মুসলিম। এছাড়াও বাহাই, হিন্দু, রাস্তাফেরিয়ান এবং পুরাতন আফ্রিকান ধর্ম ওবেহের অনুসরণকারীদের ছোট ছোট সম্প্রদায় রয়েছে। "Population & Census". bahamas.gov. 2011. Retrieved 2 December 2021. ভাষা বাহামার সরকারী ভাষা ইংরেজি। অনেক মানুষ একটি ইংরেজি ভিত্তিক ক্রিওল ভাষায় কথা বলে যাকে বলা হয় বাহামিয়ান ইংরেজি বা শুধুই "বাহামিয়ানিজ"Staff, ed. (27 February 2013). "SWAA students have accomplished Bahamian playwright, actor and poet Laurente Gibbs as Guest Speaker". Eleuthera News. Retrieved 1 February 2017.।"বাহামিয়ানিজ" নামটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন লরেন্টে গিবস নামে একজন বাহামিয়ান লেখক এবং অভিনেতা, তাঁর একটি কবিতায়। তারপর থেকে নামটির ব্যবহার প্রচলিত হয়েছে Collie, Linda (2003). Preserving Our Heritage: Language Arts, an Integrated Approach, Part 1. Heinemann. pp. 26–29. ISBN 9780435984809. Retrieved 1 February 2017. Michaelis, Susanne Maria; Maurer, Philippe; Haspelmath, Martin; Huber, Magnus, eds. (2013). The Survey of Pidgin and Creole Languages, Volume 1. OUP Oxford. pp. 127–129. ISBN 9780199691401. Retrieved 1 February 2017। হাইতিয়ান ক্রিওল, একটি ফরাসি-ভিত্তিক ক্রিওল ভাষা যা বাহামার হাইতিয়ানরা ব্যবহার করে থাকে। হাইতিয়ানরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫%। এটিকে বাহামিয়ান ইংরেজি থেকে আলাদা করার জন্য সহজভাবে ক্রিওল বলা হয় "About Us". University of the Bahamas. 2017. Retrieved 26 April 2021। শিক্ষা ২০১১ সালের তথ্যানুসারে, বাহামায় প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৯৫% সাক্ষর। জাতীয় উচ্চশিক্ষা বা বিদ্যালয় পরবর্তী শিক্ষার জন্য রয়েছে বাহামা বিশ্ববিদ্যায় বা ইউনিভার্সিটি অফ দ্য বাহামাস (ইউবি)।ইউবি স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং তুলনীয় ডিগ্রী প্রদান করে । ইউবি-র তিনটি ক্যাম্পাস এবং দেশ জুড়ে অনেক শিক্ষাদান ও গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি বাহামা কলেজ নামে কাজ শুরু করে কিন্তু ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর বাহামা বিশ্ববিদ্যালয় পদে উন্নীত হয় "International Religious Freedom Report 2005 – Bahamas". United States Department of State. Retrieved 22 July 2012.। সংস্কৃতি বাহামার সংস্কৃতি হল আফ্রিকান, ব্রিটিশ এবং আমেরিকান- এই তিন দেশের সংস্কৃতির মিশ্রণ।Keegan, William F. (1992). The people who discovered Columbus: the prehistory of the Bahamas. Jay I. Kislak Reference Collection (Library of Congress). Gainesville: University Press of Florida. pp. 25, 54–8, 86, 170–3. ISBN 0-8130-1137-X. OCLC 25317702.> বাহামিয়ান খাদ্য়তালিকায় ক্যারিবিয়ান, আফ্রিকান এবং ইউরোপীয় প্রভাব লক্ষ্য়করা যায়। কিছু অঞ্চলের উৎসব সেই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ফসল, ফল বা খাবারের সাথে যুক্ত থাকে, যেমন গ্রেগরি টাউন, এলিউথেরাতে "আনারস ফেস্ট" বা অ্যান্ড্রোসে "ক্র্যাব ফেস্ট"। বাহামিয়ান সাহিত্য কবিতা, ছোটগল্প, নাটক এবং কল্প-কাহিনী সমৃদ্ধ।পারিপার্শ্বিক জগৎ ও সাধারণ মানুষের মনোজগতের বিবিধ প্রতিক্রিয়া রচনাগুলির উপাদান। সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব, পরিশীলনের অদম্য প্রচেষ্টা, আত্ম অনুসন্ধান, অতীতেরস্মৃতিচারণ এবং সর্বোপরি সৌন্দর্যের উপলব্ধি রচনাগুলিরমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সাহিত্যিকদের মধ্যে সুসান ওয়ালেস, পার্সিভাল মিলার, রবার্ট জনসন, রেমন্ড ব্রাউন, ও.এম. স্মিথ, উইলিয়াম জনসন, এডি মিনিস এবং উইনস্টন সন্ডার্সের নাম উল্লেখযোগ্য।Collinwood, Dean; Phillips, Rick (1990). "The National Literature of the New Bahamas". Weber Studies. 7 (1): 43–62. ASJ-Bahamas National Coat of Arms.বাহামার বিভিন্ন দ্বীপের জনপ্রিয় লোককাহিনী এবং কিংবদন্তির মধ্যে রয়েছে অ্যান্ড্রোস দ্বীপের “লুসকা” এবং “চিকচার্নি” প্রাণী, এক্সুমা দ্বীপের “প্রিটি মলি” এবং বিমিনি দ্বীপের হারিয়ে যাওয়া শহর “আটলান্টিস”।গল্প কথন বাহামার আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহ্য। জুনকানু হল সঙ্গীত, নৃত্য সমৃদ্ধ একটি ঐতিহ্যবাহী আফ্রো-বাহামিয়ান কুচকাওয়াজ যা প্রতি বক্সিংডে, নববর্ষের দিনে এবং অন্যান্য ছুটির দিন যেমন মুক্তি দিবস উদযাপন করতে নাসাউ প্রভৃতি কয়েকটি স্থানে অনুষ্ঠিতKeegan, William F. (1992). The people who discovered Columbus: the prehistory of the Bahamas. Jay I. Kislak Reference Collection (Library of Congress). Gainesville: University Press of Florida. pp. 25, 54–8, 86, 170–3। বাহামার প্রান্তিক দ্বীপগুলিতে, যা ফ্য়ামিলি আইল্য়ান্ড নামে পরিচিত, রেগাটাস বা নৌ প্রতিযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান। এই দ্বীপগুলি প্রধানত কৃষ্ণাঙ্গদের বাসভূমি। পুরানো দিনের নৌকায় চড়ে জলবিহার ও তৎসঙ্গে নানা আমোদ-প্রমোদের আয়োজন এই উৎসবের অঙ্গCollinwood, Dean W. and Dodge, Steve (1989) Modern Bahamian Society, Caribbean Books, ISBN 0931209013। কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত প্রান্তিক দ্বীপগুলিতে নানা হস্তশিল্পের প্রচলন রয়েছে যা এখানকার লোকসংস্কৃতির অঙ্গ।খড় বা গাছের পাতা থেকে তৈরি ঝুড়ি, টুপি, ব্যাগ, "ভুডু পুতুল" প্রভৃতি পণ্যদ্রব্য পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় "Native Boat Regattas in The Bahamas". World Nomads. Retrieved 4 February 2021। ওবেহ একধরনের আফ্রিকান-বাহামিয়ান জাদুবিদ্যা, পরের অশুভকামনায় ব্যবহৃত হয়, যার অনুশীলন বর্তমানে বাহামায় আইনত নিষিদ্ধ "Practising Obeah, etc.", Ch. 84 Penal Code. laws.bahamas.gov.bs Hurbon, Laennec (1995). "American Fantasy and Haitian Vodou". Sacred Arts of Haitian Vodou. Ed. Donald J. Cosentino. Los Angeles: UCLA Fowler Museum of Cultural History,। প্রতীক বাহামিয়ান পতাকা ১৯৭৩ সালে গৃহীত হয়েছিল। এর রং বাহামিয়ান জনগণের শক্তির প্রতীক; এর নকশা প্রাকৃতিক পরিবেশ (সূর্য এবং সমুদ্র) এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের দিকগুলিকে প্রতিফলিত করে। পতাকাটি তিনটি আনুভূমিক সমান্তরাল ভাগে বিভক্ত। উপর ও নীচের নীলরং সমুদ্রের প্রতীক ও মধ্যের হলুদ রং সূর্যের। একটি কালো সমবাহু ত্রিভুজ মাস্তুলের সূচক। Country Comparison :: GDP – per capita (PPP). CIA World Factbook. বাহামার সম্মানসূচক পদক বা কোট অফ আর্মস এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি ঢাল এবং তার দুইপাশে রয়েছে একটি মার্লিন এবং একটি ফ্ল্যামিঙ্গো, যথাক্রমে বাহামার জাতীয় পশু এবং পাখি।। ফ্ল্যামিঙ্গো ভূমিতে এবং মার্লিন সমুদ্রে অবস্থিত ।ঢালের উপরিভাগে সূর্য, নিম্নে সমুদ্র, মধ্যে জাহাজ এবং সবার উপরে একটি শঙ্খের খোল, যা দ্বীপের বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে। ঢালের নীচে উদ্ধৃত রয়েছে জাতীয় নীতিবাক্য:"ফরওয়ার্ড, আপওয়ার্ড, অনওয়ার্ড টুগেদার।"ASJ-Bahamas Symbol – Flower. Bahamasschools.com. Retrieved on 20 April 2014 বাহামার জাতীয় ফুল ইয়েলো এল্ডার।বাহামার সর্বত্র এবং সম্বৎসর এই ফুল ফুটতে দেখা যায়।১৯৭০-এ নিউ প্রভিডেন্সের চারটি গার্ডেন ক্লাবের সদস্যদের সম্মিলিত জনপ্রিয় ভোটের মাধ্যমে এটিকে নির্বাচন করা হয়েছিল ‍The Yellow Elder – National Flower of The Bahamas – Government – Details". www.bahamas.gov.bs. Retrieved 30 October 2020. খেলাধুলা খেলাধুলা বাহামিয়ান সংস্কৃতির অন্য়তম প্রধান অঙ্গ। জাতীয় ক্রীড়া ক্রিকেট। এটিই দেশের প্রাচীনতম ক্রীড়াওৢ বটে। ১৮৪৬ সাল থেকে বাহামায় এই খেলা শুরু হয়।১৯৩৬ সালে বাহামা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের পত্তনি হয়। বাহামা ওয়েস্ট ইণ্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের সদস্য় না হওয়ায় বাহামার খেলোয়াড়রা ওয়েস্ট ইণ্ডিজ ক্রিকেট টীমে খেলবার সুযোগ পায় না। তবু ১৯৪০ থেকে ১৯৭০ সাল অবধি দেশে ক্রিকেটের যথেষ্ট প্রাধান্য় ছিল। ১৯৭০ সাল থেকে খেলাটির জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে শুরু করে কারণ তখন থেকে ক্রীড়া শিক্ষকদের পদে পূর্বের ইংল্যান্ডের ক্রিকেট অনুরাগী শিক্ষকদের পরিবর্তে নিযুক্ত করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের তেমন জনপ্রিয়তা না থাকায় বাহামার খেলায় ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড, বাস্কেটবল, বেসবল, সফটবল,ভলিবল, অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল প্রভৃতির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। এই খেলাগুলি বর্তমানে অধিক জনপ্রিয় এবং এদের দর্শকের সংখ্যাও বেশি। অ্যাথলেটিক্স, সাধারণত দেশে 'ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড' নামে পরিচিত, বাহামিয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে সফল খেলা। এতে বাহামিয়ানদের বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে সাফল্যের কারণে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড সম্ভবত বাস্কেটবলের পাশে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা।Bahamas – Football Association. Bahamasfa.com. Retrieved on 20 April 2014. নাসাউ এবং প্রান্তিক দ্বীপপুঞ্জে ট্রায়াথলনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফুটবল লিগগুলি বাহামা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা পরিচালিত হয়। ক্রিকেট এখনও কিছু স্থানীয় স্তরে খেলা হয়। উইন্ডসর পার্ক এবং হেইন্স ওভালে শনিবার ও রবিবার ক্রিকেট খেলা হয়। আরেকটি খেলা হল ঘোড়দৌড়, যা ক্রিকেটের আগে ১৭৯৬ সালে শুরু হয়েছিল। অন্যান্য জনপ্রিয় খেলা হল সাঁতার, টেনিস এবং বক্সিং, যেখানে বাহামিয়ানরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু সাফল্য উপভোগ করেছে। অন্যান্য খেলা যেমন গল্ফ, রাগবি লীগ, রাগবি ইউনিয়ন, সকার, এবং নেটবলেরও আকর্ষণ ক্রমশ বাড়ছে। বাহামা ১৯৫২ সালে অলিম্পিক গেমসে প্রথম অংশগ্রহণ করে এবং তারপর থেকে প্রতিটি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। ১৯৮০ সালে আমেরিকার নেতৃত্বে বাহামা অলিম্পিক বয়কট করেছিল। এপর্যন্ত বাহামিয়ান খেলোয়াড়রা মোট ষোলটি পদক জিতেছে, সবগুলোই অ্যাথলেটিক্স এবং সেলিংয়ে। বাহামা দশ লাখের নিচে জনসংখ্যা সহ অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি অলিম্পিক পদক জিতেছে"Celebrate the Olympic Games - The World's Biggest Sports Event". International Olympic Committee. 29 January 2022.। ২০১৭ সালে ক্যারিবিয়ানে অনুষ্ঠিত প্রথম পুরুষদের সিনিয়র ফিফা টুর্নামেন্ট “ফিফা বিচ সকার বিশ্বকাপ”-এর, আয়োজক ছিল বাহামা। এছাড়া বাহামা তিনবার আন্তর্জাতিক রিলেরেসের আয়োজন করেছে "IAAF/BTC World Relays Bahamas 2017". World Athletics. Retrieved 4 February 2021 "Celebrate the Olympic Games - The World's Biggest Sports Event". International Olympic Committee. 29 January 2022.। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:উত্তর আমেরিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য বিষয়শ্রেণী:ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:আটলান্টিক মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ বিষয়শ্রেণী:ক্যারিবীয় রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:এইচঅডিওর মাইক্রোবিন্যাসের সাথে নিবন্ধসমূহ বিষয়শ্রেণী:ক্যারিবীয় সম্প্রদায়ের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:বাহামা বিষয়শ্রেণী:দ্বীপ রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:১৯৭৩-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:১৯৭৩-এ উত্তর আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত বিষয়শ্রেণী:ইংল্যান্ডের প্রাক্তন উপনিবেশ
বাহরাইন
https://bn.wikipedia.org/wiki/বাহরাইন
বাহরাইন মধ্যপ্রাচ্যের একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বীপ রাষ্ট্র। বাহরাইন পারস্য উপসাগরের পশ্চিম অংশের ৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এর পূর্বে কাতার ও পশ্চিমে সৌদী আরব। সবচেয়ে বড় দ্বীপটিও বাহরাইন নামে পরিচিত এবং এতে দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী মানামা অবস্থিত। প্রায় ৫,০০০ বছর আগেও বাহরাইন একটি বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। সবসময়ই এটি শক্তিশালী প্রতিবেশীদের অধীনস্থ ছিল। ১৭শ শতকে এটি ইরানের দখলে আসে। ১৭৮৩ সালে মধ্য সৌদী আরবের আল-খলিফা পরিবার নিজেদেরকে বাহরাইনের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে এবং তখন থেকে তারাই দেশটিকে শাসন করে আসছে। ১৯শ শতকের কিছু সন্ধিচুক্তির ফলে যুক্তরাজ্য দেশটির প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব পায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত বাহরাইন ব্রিটিশ প্রভাবাধীন ছিল। বাহরাইনের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি সেখানেই জন্ম-নেওয়া। এছাড়া বাহরাইনে শিয়া মুসলিমদের সংখ্যা সুন্নী মুসলিমদের প্রায় দ্বিগুণ। তবে সুন্নীরা বাহরাইনের সরকার নিয়ন্ত্রণ করেন। ১৯৩০-এর দশকে বাহরাইন পারস্য উপসাগরের প্রথম দেশ হিসেবে তেল-ভিত্তিক অর্থনীতি গঠন করে, কিন্তু ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকেই এর সমস্ত তেল ফুরিয়ে যায়। তবে দেশটি এই পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগ করে রেখেছিল এবং দেশটির অর্থনীতি এখনও উন্নতি করে যাচ্ছে।বাহারাইনি দিনার বিশ্বের দ্বিতীয় সব থেকে দামি মুদ্রা। ইতিহাস থাম্ব|আড়াদে আরাদ দুর্গ; পর্তুগিজদের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পূর্বে নির্মিত হয়েছিল। বর্তমান বাহরাইন অঞ্চলে ব্রোঞ্জ যুগে দিলমুন নামক সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল। ৫ হাজার বছর আগেও বাহরাইন সিন্ধু অববাহিকা ও মেসোপটেমিয়ার সভ্যতাগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২০০০ অব্দের দিকে ভারত থেকে বাণিজ্য আসা বন্ধ হয়ে গেলে দিলমুন সভ্যতার পতন ঘটা শুরু করে। ৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে আসিরীয় রাজার বাহরাইনকে ক্রমাগত নিজেদের বলে দাবী করতে শুরু করে। ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কিছু পরে দিলমুন আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। এরপর অনেক দিন যাবৎ বাহরাইনের কোন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতকে পারস্য উপসাগরে মহাবীর আলেকজান্ডারের পদার্পণ ঘটলে আবার এর হদিস পাওয়া যায়। যদিও আরব গোত্র বনি ওয়াএল এবং পারসিক গভর্নরেরা অঞ্চলটি শাসন করতেন, খ্রিস্টীয় ৭ম শতক পর্যন্তও এটি গ্রিক নাম তিলোস (Tylos) নামে পরিচিত ছিল। ঐ শতকে এখানকার অধিবাসীরা ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। বাহরাইন ছিল আঞ্চলিক বাণিজ্য ও মুক্তা আহরণ কেন্দ্র। ৭ম শতক থেকে বিভিন্ন পর্বে এলাকাটি সিরিয়ার উমাইয়া বংশীয় খলিফাগণ, বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফাগণ, পারসিক, ওমানি এবং পর্তুগিজদের দ্বারা শাসিত হয়। শেষ পর্যন্ত বনি উতবাহ গোত্রের আল খালিফা পরিবার ১৭৮৩ সালে ইরানীদের কাছ থেকে অঞ্চলটি দখল করে এবং তখন থেকে আজ পর্যন্ত তারা বাহরাইনের শাসক। ১৮৩০-এর দশকে আল খালিফা পরিবার একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাহরাইনকে একটি ব্রিটিশ প্রটেক্টোরেটে পরিণত করে, অর্থাৎ যুক্তরাজ্য বহিরাক্রমণ থেকে দেশটির সুরক্ষার দায়িত্ব নেয় এবং এর বিনিময়ে বাহরাইন যুক্তরাজ্যের অনুমতি ছাড়া অন্য কোন বিদেশী শক্তির সাথে সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ হারায়। বাহরাইনে বড় আকারে খনিজ তেলের উৎপাদন শুরু হবার কিছু পরেই ১৯৩৫ সালে পারস্য উপসাগর অঞ্চলে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর প্রধান ঘাঁটিটি বাহরাইনে নিয়ে আসা হয়। ১৯৬৮ সালে যুক্তরাজ্য সরকার পারস্য উপসাগরের শেখশাসিত রাজ্যগুলির সাথে ইতোমধ্যে করা চুক্তিগুলি রদ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় বাহরাইন কাতার এবং বর্তমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৭টি শেখরাজ্যের সাথে মিলে একটি বৃহৎ সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ১৯৭১ সাল নাগাদ এই নয় রাজ্য সংযুক্তিকরণের বিভিন্ন ব্যাপারে একমত হতে পারেনি। ফলে ১৯৭১ সালের ১৫ই আগস্ট বাহরাইন একক রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। নতুন রাষ্ট্র বাহরাইনের জন্য একটি সংবিধান রচনা করা হয় এবং ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচিত হয়, কিন্তু মাত্র দুই বছর পরে ১৯৭৫ সালে বাহরাইনের আমির সংসদ ভেঙে দেন, কেননা নির্বাচিত সংসদ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আল-খলিফা শাসনের অবসান এবং মার্কিন নৌবাহিনীকে সেখান থেকে বিতাড়নের প্রচেষ্টা করছিল। ১৯৯০-এর দশকে বাহরাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া সম্প্রদায়ের অসন্তুষ্টি বিভিন্ন রাজনৈতিক সংঘাতের আকারে প্রকাশ পায়। এর প্রেক্ষিতে বাহরাইনের আমির প্রায় ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত, ১৯৯৫ সালে, বাহরাইনের মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনেন, এবং আইন পর্যালোচনাকারী কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা ৩০ থেকে ৪০-এ বৃদ্ধি করেন। এর ফলে সংঘাতের পরিমাণ প্রথমে কিছু কমলেও ১৯৯৬ সালের শুরুর দিকে বেশ কিছু হোটেল ও রেস্তোরাঁ-তে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে এবং এতে অনেকে নিহত হয়। পুলিশ প্রায় ১ হাজার লোককে এর জের ধরে গ্রেফতার করে এবং কোন বিচার ছাড়াই এদের শাস্তি দেয়া হয়। সম্প্রতি বাহরাইন সরকার এদের অনেককে ছেড়ে দিয়েছে। বাহরাইন ১৯৭১ সালে স্বধীনতা লাভ করে। বাহার শব্দের অর্থ সাগর আর বাহরাইন হচ্ছে দু'টি সাগর। এটি একটি দ্বীপ রাষ্ট্র এর চারদিকে সাগর I রাজনীতি বাহরাইনের রাজনীতি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র কাঠামোতে সংঘটিত হয়। রাজা শাইখ হামাদ বিন ইসা আল খালিফা সরকার চালানোর জন্য একজন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। বাহরাইনের আইনসভা দুই-কক্ষবিশিষ্ট। নিম্ন কক্ষের সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেন। ঊর্ধ্বকক্ষ তথা শুরা কাউন্সিলের সদস্যদের রাজা নিয়োগ দেন। বর্তমানে খালিফা ইবন সুলমান আল-খালিফা দেশের প্রধানমন্ত্রী। রাজপুত্র শাইখ সালমান বাহরাইনের সেনাবাহিনীর কমান্ডার। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ: ভূগোল বাহরাইন রাষ্ট্রটি আরব উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল থেকে ২৪ কিমি দূরে পারস্য উপসাগরে অবস্থিত ৩২টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাষ্ট্র। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বীপটির নাম বাহরাইন দ্বীপ। দ্বীপটির বেশির ভাগ অংশ মরুময় ঊষর নিম্নভূমি। কেবল উত্তরের উপকূলে এক চিলতে সমভূমি আছে যেখানে রাজধানী মানামা অবস্থিত। অর্থনীতি বাহরাইনের অর্থনীতি প্রধানত পেট্টোলিয়াম উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও রিফাইনিং এর উপর নির্ভরশীল। এই খাত ৬০% রপ্তানিতে ও ৩০% জিডিপিতে অবদান রাখে। এদেশের শ্রমবাজারের ৫ ভাগের ৩ ভাগ দখল করে আছে বিদেশি শ্রমিকেরা। যোগাযোগব্যবস্থা ভাল হওয়ায় পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এখানে সদরদপ্তর স্থাপন করেছে। পর্যটন খাত অনেক উন্নতি সাধন করেছে। এই খাত জিডিপিতে ৯% অবদান রাখছে। শুধুমাত্র ১% ভূমি চাষযোগ্য হওয়ায় তারা প্রয়োজনীয় খাদ্য নিজেরা উৎপাদনে অক্ষম। তারা এক্ষেত্রে আমদানির উপর নির্ভর করে। তাদের মাথাপিছু আয়ও অনেক বেশি। প্রায় ৫১,৯৫৬ মা.ডলার(২০১৭ অনুযায়ী) জনমিতি thumb|মানামায় নামাজরত বাহরাইনি শিয়া মুসলমানেরা ২০১০ সালে বাহরাইনের জনসংখ্যা ১.২ মিলিয়ন হয়ে দাঁড়ায় যার মধ্যে ৫৬৮,৩৯৯ জন বাহরাইনি নাগরিক এবং ৬৬৬,১৭২ জন অনাগরিক। ২০০৭ সালে তা ১.০৫ মিলিয়ন (৫১৭,৩৬৮ অনাগরিক) অতিক্রম করে। ২০২০ সালের জানুয়ারি নাগাদ বাহরাইনের জনসংখ্যা ১.৬৯ মিলিয়নেরও উপরে গিয়ে দাঁড়ায়। যদিও জনসংখ্যার অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের লোক, তথাপি বাহরাইনিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দক্ষিণ এশীয়। ২০০৮ সালে প্রায় ২৯০,০০০ ভারতীয় নাগরিক বাহরাইনে বসবাস করেন, যা তাদের দেশটির একক বৃহত্তম প্রবাসী জনগোষ্ঠীতে পরিণত করে। এদের বেশিরভাগই ভারতের কেরল রাজ্য থেকে আগত। বাহরাইন বিশ্বের চতুর্থ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ যার জনসংখ্যার ঘনত্ব ২০১০ সালে ছিল প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,৬৪৬ জন। জনসংখ্যার একটি বড় অংশই দেশটির উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে, দক্ষিণাঞ্চল তুলনামূলক কম জনবহুল। দেশটির উত্তরাঞ্চল এতটাই নগরায়িত যে অনেকে একে একটি বৃহৎ মেট্রোপলিটন এলাকা বলে বিবেচনা করে। জাতিগোষ্ঠী বাহরাইনিরা জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময়। শিয়া বাহরাইনিরা দুটি প্রধান জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত: বাহরানা এবং আজম। বাহরানারা হল আরব শিয়া, অন্যদিকে আজমরা হল পারসিক শিয়া। মানামা ও মুহররকের জনসাধারণের বড় অংশই পারসিক শিয়া। শিয়া বাহরাইনিদের একটি ক্ষুদ্র অংশ হল আল-হাসা অঞ্চলের হাওয়াসি জনগোষ্ঠী। সুন্নি বাহরাইনিরাও মূলত দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত: আরব ও হুওয়ালা। আরব সুন্নিরা বাহরাইনের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠী, তারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত এবং বাহরাইনি রাজতন্ত্রও আরব সুন্নিদের নিয়ন্ত্রণাধীন। সুন্নি আরবেরা ঐতিহ্যগতভাবে জাল্লাক, মুহররক, রিফা ও হাওয়ার দ্বীপসমূহে বসবাস করে আসছে। হুওয়ালারা হল ইরানি সুন্নিদের বংশধর; তাদের কেউ কেউ পারসিক সুন্নি,Dialect, Culture, and Society in Eastern Arabia: Glossary. Clive Holes. 2001. Page 135. আর বাকিরা আরব সুন্নি।Rentz, "al- Baḥrayn.":Rentz, G. "al- Kawāsim." Encyclopaedia of Islam. Edited by: P. Bearman, Th. Bianquis, C.E. Bosworth, E. van Donzel and W.P. Heinrichs. Brill, 2008. Brill Online. 15 March 2008 সুন্নিদের মধ্যে বেলুচি জাতিগোষ্ঠীর লোকেরাও রয়েছে। আফ্রিকান বাহরাইনিদের অধিকাংশই পূর্ব আফ্রিকা থেকে আগত এবং ঐতিহ্যগতভাবে মুহররক দ্বীপ ও রিফাতে বসবাস করে। ধর্ম বাহরাইনের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং অধিকাংশ বাহরাইনি মুসলমান। বাহরাইনি মুসলমানদের বেশিরভাগই শিয়া। এটি মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি শিয়াপ্রধান দেশের অন্যতম, অন্য দুটি দেশ হল ইরাক ও ইরান। ২০১৭ সালের একটি আদমশুমারি অনুযায়ী বাহরাইনি জনগণের ৬২% শিয়া এবং ৩৮% সুন্নি। শিয়ারা বাহরাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হলেও রাজপরিবার এবং অভিজাতদের বেশিরভাগই সুন্নি মতাবলম্বী। দেশটির এই প্রধান দুই মুসলিম সম্প্রদায় কিছু ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তীব্র মতবিরোধ ধারণ করে। শিয়ারা প্রায়শই রাজনৈতিক নিপীড়ন ও অর্থনৈতিক প্রান্তীকরণের অভিযোগ তুলেছে; ফলে ২০১১ সালের বাহরাইনি অভ্যুত্থানের অধিকাংশ বিক্ষোভকারীই ছিল শিয়া। ২০১০ সালের আদমশুমারি মতে, বাহরাইনের মুসলিম জনসংখ্যা ৮৬৬,৮৮৮। বাহরাইনে স্থানীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। ২০১০ সালের শুমারি অনুযায়ী অমুসলিম বাহরাইনিদের সংখ্যা ৩৬৭,৬৮৩, যাদের বেশিরভাগই খ্রিস্টধর্মাবলম্বী। বাহরাইনের খ্রিস্টানদের বড় অংশই প্রবাসী, স্থানীয় খ্রিস্টান বাহরাইনিরা সে তুলনায় সংখ্যালঘু। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সাবেক বাহরাইনি রাষ্ট্রদূত আলীদ সামান একজন স্থানীয় খ্রিস্টান। বাহরাইনে একটি ক্ষুদ্র স্থানীয় ইহুদি সম্প্রদায়ও রয়েছে যাদের সংখ্যা ৩৭। বিভিন্ন সূত্রমতে বাহরাইনি ইহুদিদের সংখ্যা ৩৬ থেকে ৫০। বাহরাইনি লেখিকা ন্যান্সি খেদুরির মতে, বাহরাইনের ইহুদি সম্প্রদায় পৃথিবীর অন্যতম নবীন জনগোষ্ঠী। ১৮৮০-র দশকে তৎকালীন ইরাক ও ইরান থেকে বাহরাইন দ্বীপে অভিবাসন করা কয়েকটি ইহুদি পরিবার থেকে এই জনগোষ্ঠীর উৎপত্তিলাভ করে। thumb|মানামার গুদাইবিয়া মসজিদ সাএশীয় দেশসমূহ থেকে, বিশেষত ভারত, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা থেকে, আগত অভিবাসী কর্মীদের ক্রমাগত আগমনের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাহরাইনের সামগ্রিক মুসলিম সংখ্যার হার হ্রাস পেয়েছে। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, বাহরাইনের জনসংখ্যার ৮১.২% মুসলমান, ১০% খ্রিস্টান এবং ৯.৮% হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। বাহরাইনের জনসংখ্যার ১% বাহাই ধর্মাবলম্বী। ভাষা শিক্ষা স্বাস্থ্য সংস্কৃতি ইসলাম মূল ধর্ম এবং বাহরাইনীরা অন্যান্য ধর্মের অনুশীলনের প্রতি সহনশীলতার জন্য পরিচিত।বাহরাইনি এবং প্রবাসীদের মধ্যে বিবাহ অস্বাভাবিক নয়। ফিলিপিনো শিশু অভিনেত্রী মোনা মারবেলা আল-আলাওয়ের মতো অনেক ফিলিপিনো-বাহরাইনি রয়েছে। মহিলাদের পোশাক সম্পর্কে বিধিগুলি সাধারণত আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের তুলনায় শিথিল করা হয়; মহিলাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক সাধারণত হিজাব বা আবায়ায় অন্তর্ভুক্ত থাকে। যদিও ঐতিহ্যবাহী পুরুষদের পোশাকটি থোবে যাতে কেফিয়েহ, ঘুতরা, তবে পশ্চিমা পোশাকগুলিও এ দেশে প্রচলিত। যদিও বাহরাইন সমকামিতাকে বৈধতা দিয়েছে। সঙ্গীত বাহরাইনের সঙ্গীত অনেকটা এর প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের মতই। খালিজি (Khaliji) , এক প্রকার লোক সঙ্গীত সমগ্র বাহরাইন জুড়ে জনপ্রিয়। এছাড়া শহুরে ঘরানার সাওত (sawt) সঙ্গীতও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আলি বাহার বাহরাইনের বিখ্যাত গায়কদের মধ্যে একজন। Al Ekhwa (আরবি অনুবাদ- দ্যা ব্রাদার্স) তার সঙ্গীত দলের নাম। অ্যারাবস গট ট্যালেন্ট কর্তৃক ২০১১ সালে নির্বাচিত ক্ষুদে সংগীত শিল্পী হালা আল তুরক বাহরাইনে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাহরাইন ছাড়াও সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। এছাড়াও তার ইউটিউব মিউজিক ভিডিও সমূহ খুবই জনপ্রিয়। উল্লেখ্য, পারসিয়ান গালফ স্টেটস সমূহের মধ্যে বাহরাইনেই সর্বপ্রথম recording studio স্থাপন করা হয়। পরিবহন বাহরাইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শহরের তথা দেশের প্রধান ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর। এটি অন্যতম হাব বিমানবন্দর। তথ্যসূত্র 4. http://www.everyculture.com/A-Bo/Bahrain.html বহিঃসংযোগ বাহরাইন তথ্য ওয়েবসাইট বাহরাইনের রাজ্য সরকারি ওয়েবসাইট। রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ দেশ বৃত্তান্ত বিবিসি সংবাদ থেকে Bahrain at UCB Libraries GovPubs ChooseBahrain.com বাহরাইনের মানচিত্র বাহরাইন উইকি বিষয়শ্রেণী:এশিয়ার রাষ্ট্র‎ বিষয়শ্রেণী:মধ্যপ্রাচ্য বিষয়শ্রেণী:ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইসলামি রাজতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:বাহরাইন বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আরব লিগের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আরব উপদ্বীপ বিষয়শ্রেণী:আরবিভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:দ্বীপ রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:রাজ্য বিষয়শ্রেণী:মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:নিকট প্রাচ্যের রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:পশ্চিম এশিয়ার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
বার্বাডোস
https://bn.wikipedia.org/wiki/বার্বাডোস
থাম্ব|261x261পিক্সেল|ব্রিজটাউনে বার্বাডোজ পার্লামেন্ট ভবন বার্বাডোস () ক্যারিবীয় সাগরে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। ক্যারিবীয় সাগরের দ্বীপগুলির মধ্যে এটি সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত। বার্বাডোস প্রায় তিন শতাব্দী ধরে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। ১৯৬৬ সালে এটি যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। অ্যাংলিকান গির্জা থেকে শুরু করে জাতীয় খেলা ক্রিকেট পর্যন্ত দেশটির সর্বত্র ব্রিটিশ ঐতিহ্যের ছাপ সুস্পষ্ট। বার্বাডোসের বর্তমান অধিবাসীদের বেশির ভাগই চিনির প্ল্যান্টেশনে কাজ করানোর জন্য নিয়ে আসা আফ্রিকান দাসদের বংশধর। দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত ব্রিজটাউন দেশটির বৃহত্তম শহর, প্রধান বন্দর ও রাজধানী। বার্বাডোসের শুভ্র বালুর সৈকত ও দ্বীপের চারদিক ঘিরে থাকা প্রবাল প্রাচীর বিখ্যাত। বহু বছর ধরে আখ ছিল অর্থনীতির প্রধান পণ্য। ১৯৭০-এর দশকে পর্যটন শিল্প প্রধান শিল্পে পরিণত হয়। দ্বীপটি এই অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটক গন্তব্যস্থলের একটি। দ্বীপের সরকার বার্বাডোসলে অফশোর ব্যাংকিং এবং তথ্যপ্রযুক্তির একটি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। ইতিহাস প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে মানুষ সম্ভবত 1600 খ্রিস্টপূর্বাব্দে দ্বীপটিতে প্রথম বসতি বা পরিদর্শন করেছিল। কোন ইউরোপীয় জাতি বার্বাডোসে প্রথম এসেছিল তা অনিশ্চিত, যা সম্ভবত ১৫ শতক বা ১৬ শতকের কোন এক সময়ে হয়েছিল। রাজনীতি রাষ্ট্রের প্রধান হলেন বার্বাডোসের রাষ্ট্রপতি - বর্তমানে সান্দ্রা ম্যাসন - বার্বাডোসের সংসদ দ্বারা চার বছরের মেয়াদের জন্য নির্বাচিত, এবং বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী , যিনি সরকার প্রধান , দ্বারা বার্বাডিয়ান রাজ্যের বিষয়ে পরামর্শ দেন । সংসদের নিম্নকক্ষ, হাউস অফ অ্যাসেম্বলির মধ্যে 30 জন প্রতিনিধি রয়েছেন। সিনেটে , পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে 21 জন সিনেটর রয়েছে। বার্বাডোস একটি দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা হিসাবে কাজ করে । প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলি হল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টি এবং বর্তমান বার্বাডোস লেবার পার্টি । প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ বার্বাডোস 11টি প্যারিশে বিভক্ত ভূগোল অর্থনীতি মাথাপিছু জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) এর পরিপ্রেক্ষিতে বার্বাডোস হল বিশ্বের 52 তম ধনী দেশ। জনসংখ্যা বার্বাডোসের বর্তমান জনসংখ্যা ২৮৭,৪৩২(২৭/০৭/২০২০-সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী)।প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বাস করেন ৬৬৮ জন। (উৎসঃ https://www.worldometers.info/world-population/barbados-population/) সংস্কৃতি খেলাধুলা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের অন্যান্য ক্যারিবীয় দেশগুলির মতো, দ্বীপে ক্রিকেট খুবই জনপ্রিয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলে সাধারণত অনেক বার্বাডিয়ান খেলোয়াড় থাকে। বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ এবং ছয়টি "সুপার এইট" ম্যাচ ছাড়াও, দেশটি 2007 সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল আয়োজন করেছিল কেনসিংটন ওভাল-এ । বার্বাডোস স্যার গারফিল্ড সোবার্স , স্যার ফ্রাঙ্ক ওয়ারেল , স্যার ক্লাইড ওয়ালকট , স্যার এভারটন উইকস , গর্ডন গ্রিনিজ , ওয়েস হল , চার্লি গ্রিফিথ , জোয়েল গার্নার , ডেসমন্ড হেইনস সহ অনেক মহান ক্রিকেটার তৈরি করেছে ।ম্যালকম মার্শাল । আরও দেখুন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বার্বাডোস সরকারি ওয়েবসাইট বার্বাডোস সরকারি তথ্য পরিসেবা বার্বাডোস সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ বার্বাডোস বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন কর্পোরেশন বার্বাডোস জাদুঘর এবং ঐতিহাসিক সমাজ বার্বাডোস পরিসংখ্যান পরিসেবা বার্বাডোস পর্যটন কর্তৃপক্ষ- পর্যটন মন্ত্রণালয়। ২০০৮ এবং ২০০৯ এর জন্য ভ্রমণ করা ওয়েবসাইট- সম্পূর্ণভাবে বার্বাডোস বার্বাডোসের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইট বার্বাডোসের পার্লামেন্টের ওয়েবসাইট বার্বাডোসের হলুদ পাতা এবং সাদা পাতার টেলিফোন ডাইরেকটরি বিষয়শ্রেণী:উত্তর আমেরিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:দ্বীপ রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ক্যারিবীয় দ্বীপ বিষয়শ্রেণী:বার্বাডোস বিষয়শ্রেণী:প্রাক্তন কমনওয়েলথ রাজ্য বিষয়শ্রেণী:১৯৬৬-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ক্যারিবীয় সম্প্রদায়ের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:ক্যারিবীয় রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:লিওয়ার্ড দ্বীপ (ক্যারিবীয়) বিষয়শ্রেণী:সাবেক পর্তুগিজ উপনিবেশ বিষয়শ্রেণী:কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য বিষয়শ্রেণী:ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:কমনওয়েলথ প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:১৬২৭-এ উত্তর আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত বিষয়শ্রেণী:১৯৬৬-এ উত্তর আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত বিষয়শ্রেণী:ইংল্যান্ডের প্রাক্তন উপনিবেশ
বেলারুশ
https://bn.wikipedia.org/wiki/বেলারুশ
{{Infobox country | latd = 53 | latm = 55 | latNS = N | longd = 27 | longm = 33 | longEW = E | conventional_long_name = বেলারুশ প্রজাতন্ত্র | native_name = | image_flag = Flag of Belarus.svg | image_coat = Coat of arms of Belarus (official).svg | common_name = বেলারুশ | symbol_type = জাতীয় প্রতীক | national_anthem = File:My Belarusy vocal.ogg | image_map = Europe-Belarus.svg | map_caption = | capital = মিন্‌স্ক | largest_city = রাজধানী | official_languages = | ethnic_groups = {{unbulleted list | ৭৬.৭% বেলারুশীয় | ১০.০৬℅ বৌদ্ধ' | ৫.৩% রুশী | ৩.১% পোল | ১.৭% ইউক্রেনীয় | ০.১% তাতার | ০.১% ইহুদী | ৩.০% অন্যান্য }} | demonym = বেলারুশীয় | government_type = Unitary presidential republic | leader_title1 = রাষ্ট্রপতি | leader_name1 = আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো | leader_title2 = প্রধানমন্ত্রী | leader_name2 = আন্দ্রেই কোবিকোভ | legislature = জাতীয় অধিবেশন | upper_house = প্রজাতন্ত্র পরিষদ | lower_house = | sovereignty_type = গঠন | sovereignty_note = | established_event1 = Principality of Polotsk | established_date1 = ৯৮৭ | established_event2 = লিথুয়ানিয়ার গ্র্যান্ড ডিউক | established_date2 = প্রায় ১২৩৬ | established_event3 = পোলিশ-লিথুয়েনীয় কমনওয়েলথ | established_date3 = ১লা জুলাই ১৫৬৯ | established_event4 = রুশ সাম্রাজ্যের মধ্যে রাজ্যভুক্ত | established_date4 = ১৭৯৫ | established_event5 = রুশ সাম্রাজ্যের থেকে স্বাধীন; বেলারুশিয়ান গণপ্রজাতন্ত্রী | established_date5 = ২৫শে মার্চ ১৯১৮ | established_event6 = লিথুয়েনীয়-বেলোরুশিয়ান এসএসআর | established_date6 = ১৭ই ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ | established_event7 = বেলোরুশিয়ান এসএসআর | established_date7 = ৩১শে জুলাই ১৯২০ | established_event8 = পশ্চিমা বেলারুশের সোভিয়েত আত্মসাৎ | established_date8 = ১৫ই নভেম্বর ১৯৩৯ | established_event9 = রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ঘোষণা | established_date9 = ২৭শে জুলাই ১৯৯০ | established_event10 = | established_date10 = ২৫শে আগস্ট ১৯৯১ | established_event11 = স্বাধীনতা স্বীকৃত | established_date11 = ২৬শে ডিসেম্বর ১৯৯১ | established_event12 = বর্তমান সংবিধান | established_date12 = ১৫ই মার্চ ১৯৯৪ | area_km2 = 207595 | area_rank = ৮৫তম | area_sq_mi = 80155 | percent_water = 1.4% () | population_estimate = 9,498,700 | population_estimate_year = ২০১৬ | population_census_rank = ৮৭তম | population_density_km2 = 45.8 | population_density_rank = ১৪২তম | population_density_sq_mi = 120.8 | GDP_PPP = $১৬৪.৮৩৭ বিলিয়ন | GDP_PPP_year = ২০১৬ | GDP_PPP_rank = | GDP_PPP_per_capita = $১৭,৪৪০ | GDP_PPP_per_capita_rank = | GDP_nominal = $৪৫.৮৮৭ বিলিয়ন | GDP_nominal_year = ২০১৬ | GDP_nominal_rank = | GDP_nominal_per_capita = $৪,৮৫৫ | GDP_nominal_per_capita_rank = | Gini = 26.5 | Gini_year = ২০১১ | Gini_change = decrease | Gini_ref = | Gini_rank = ১১তম | HDI = 0.798 | HDI_year = ২০১৪ | HDI_change = increase | HDI_ref = | HDI_rank = ৫০তম | currency = New Belarusian rubled | currency_code = BYN | time_zone = FET | utc_offset = +৩ | date_format = dd.mm.yyyy | drives_on = ডান | calling_code = +৩৭৫ | cctld = | footnote_a = | footnote_b = | footnote_c = | footnote_d = Replaced the Belarusian ruble (BYR) on 1 July 2016. | continent = ইউরোপ | Dependency Ratio_year = ২০১৪ | Dependency Ratio = ২০ | Dependency Ratio_ref = }} থাম্ব|308x308পিক্সেল|মিয়েন্স্ক, বেলারুশবেলারুশ (, বিয়েলারুস্য্‌;), সরকারী নাম বেলারুশ প্রজাতন্ত্র (Рэспубліка Беларусь রেস্‌পুব্‌লিকা বিয়েলারুস্য্‌‌), মধ্য পূর্ব ইউরোপের একটি স্থলবেষ্টিত প্রজাতন্ত্র। এর উত্তরে ও পূর্বে রাশিয়া, দক্ষিণে ইউক্রেন, পশ্চিমে পোল্যান্ড, এবং উত্তর-পশ্চিমে বাল্টিক প্রজাতন্ত্র লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়া। বেলারুশ মূলত অরণ্য (দেশের এক-তৃতীয়াংশ), হ্রদ ও জলাভূমিতে পূর্ণ একটি সমতল ভূমি। বেলারুশের প্রায় ৯৯ লক্ষ লোকের ৮০%-ই জাতিগতভাবে বেলারুশীয়; অন্যান্য জাতির মধ্যে পোলীয়, রুশ ও ইউক্রেনীয় উল্লেখযোগ্য। তিন-চতুর্থাংশ জনগণ নগর অঞ্চলে বাস করেন। দেশের মধ্যভাগে অবস্থিত মিন্‌স্ক রাজধানী ও বৃহত্তম নগর। অন্যান্য বড় শহরগুলির মধ্যে আছে ব্রেস্ত, হ্রোদনা, হোমিয়েল, মোগিলেফ, ভিতেভ্‌স্ক এবং বাব্‌রুইস্ক। ১৯৯৫ সালের একটি গণভোটের মাধ্যমে রুশ ও বেলারুশ ভাষা দেশের সরকারি ভাষা। রুশ অর্থডক্স খ্রিস্টধর্ম দেশের মানুষের প্রধান ধর্ম। বেলারুশে একটি কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত অর্থনীতি বিদ্যমান; সরকার নিয়ন্ত্রিত ভারী শিল্পকারখানাগুলি এই অর্থনীতির চালিকাশক্তি, তবে কৃষিও একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। মধ্যযুগ থেকে বেলারুশ অঞ্চলটি বিভিন্ন বিদেশী শাসনের অধীনে ছিল। এদের মধ্যে আছে পোল্যান্ডের ডিউক রাজত্ব, লিথুয়ানিয়ার ডিউক রাজত্ব, এবং পোলীয়-লিথুয়ানীয় কমনওয়েলথ। ১৮শ শতকে এটিকে রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কেবল মধ্য-১৯শ শতকে এসে বেলারুশে জাতীয়তাবাদী ও সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটে। ১৯১৯ সালে বেলোরুশীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে বেলারুশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২২ সালে এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের চারটি প্রতিষ্ঠাকারী রাষ্ট্রের একটি ছিল। ১৯৩০ সালে ২য় পোলীয় প্রজাতন্ত্রের বেলারুশ জাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলি আধুনিক সীমান্তের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বেলারুশীয় ভূমিগুলির সম্পূর্ণ একত্রীকরণ সংঘটিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দেশটির প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হয়; এ সময় বেলারুশের এক-চতুর্থাংশ জনসংখ্যার মৃত্যু ঘটে এবং দেশটি অর্ধেকেরও বেশি অর্থনৈতিক সম্পদ হারায়। যুদ্ধপরবর্তী বছরগুলিতে বেলারুশ ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠে। এটি জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরাষ্ট্রগুলির একটি ছিল। ১৯৯১ সালের ২৭শে জুলাই বেলারুশের আইনসভা দেশটির সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেন। আগস্ট মাসে দেশটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং এর মাধ্যমে ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে ভূমিকা রাখে। বর্তমান বেলারুশ সরকার একটি রাষ্ট্রপতিভিত্তিক প্রজাতন্ত্র। ১৯৯৪ সাল থেকে আলেক্সান্দর লুকাশেঙ্কো দেশটির রাষ্ট্রপতি। বেলারুশ ও রাশিয়াকে একত্রিত করে একটি মাত্র রাষ্ট্র রুশ ও বেলারুশ ইউনিয়ন করার ব্যাপারে ১৯৯৬ সাল থেকে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা চলছে। ইতিহাস রাজনীতি বেলারুশের রাজনীতি''' একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারপ্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দ্বিকাক্ষিক আইনসভার উপর ন্যস্ত। তবে রাষ্ট্রপতি আইনের মতই অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্যকর অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতা রাখেন। বেলারুশের দুটি বড় দলের নাম হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক দল ও গণ ফ্রন্ট। এছাড়াও সেখানে আরও কিছু ছোট দলও রয়েছে। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ ভূগোল পূর্ব ইউরোপের স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র বেলারুশ মূলত একটি সমতল ভূমি যার কোন প্রাকৃতিক সীমানা নেই। দেশের মধ্যভাগে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বে চলে গেছে বেলারুশ পর্বতশ্রেণী। দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা জনবিরল অরণ্যে আবৃত। প্রায় ৩ হাজার নদী ও প্রায় ৪ হাজার হ্রদ দেশটির ভূগোলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অর্থনীতি জনসংখ্যা বেলারুশ এবং রুশ ভাষা বেলারুশ প্রজাতন্ত্রের সরকারি ভাষা। এর মধ্যে বেলারুশীয় ভাষাতে প্রায় ৯৮% জনগণ কথা বলে। ১০% লোক রুশ ভাষাতে কথা বলতে পারে। পশ্চিম সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পোলীয় এবং জার্মান ভাষার প্রচলন আছে। সংস্কৃতি তথ্যসূত্র আরও দেখুন বহিঃসংযোগ সরকারী বেলারুশের ই-সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেলারুশের দূতাবাস Global Integrity Report: Belarus has information on Belarus anti-corruption efforts. বেলারুশের সরকার বৈদেশিক মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপতির সরকারি ওয়েবসাইট সংবাদ এবং গণমাধ্যম বেলারুশীয় টেলিগ্রাফ সংস্থা- খবর, ঘটনা, ঘটনা Minsk Post | Daily diary of Belarus বেলারুশ সংবাদ বেলারুশের মিডিয়া বেলারুশের সংবাদ বেলারুশ থেকে রাজনীতি এবং সংবাদ সাধারণ তথ্য বেলারুশের প্রজাতন্ত্রের আধিকারিক ওয়েবসাইট Belarus at UCB Libraries GovPubs'' Belarus Miscellany প্রথম বেলারুশীয় শিল্প গ্যালারি বেলারুশের ভার্চুয়াল সহায়িকা The World Bank in Belarus FAO Country Profiles: Belarus মানচিত্র বেলারুশ, topographic map সাধারণ পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা, বেলারুশের পিডিএফ মানচিত্র ডাউনলোডযোগ্য বিষয়শ্রেণী:ইউরোপের রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:১৯৯১-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:স্বাধীন রাষ্ট্রের কমনওয়েলথের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:রুশ ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:একাধিক দাপ্তরিক ভাষা সহ ইউরোপের দেশ বিষয়শ্রেণী:স্থলবেষ্টিত দেশ বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
বেলজিয়াম
https://bn.wikipedia.org/wiki/বেলজিয়াম
বেলজিয়াম ( বেল্‌য়া, ব্যল্‌ঝ়িক্‌, বেল্‌গিয়েন্‌) উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশ। এটি ইউরোপের ক্ষুদ্রতম ও সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলির একটি। এটি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। বেলজিয়াম ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ব্রুসেল শহরটি বেলজিয়ামের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। ইউরোপীয় কমিশন, ন্যাটো এবং বিশ্ব শুল্ক সংস্থার সদর দপ্তর ব্রাসেল্‌স-এ অবস্থিত। এছাড়া ইউরোপীয় পার্লমেন্টের নতুন ভবন এখানে অবস্থিত। ইউরোপীয় পার্লমেন্টের আদি ভবন ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে অবস্থিত। বেলজিয়াম ইউরো জোন-এ অবস্থিত এবং এর মুদ্রা ইউরো। ইউরো প্রবর্তনের পূর্বে বেলজিয়ামের মূদ্রার নাম ছিল বেলজিয়াম ফ্রাঁ । এটি ইউরোপের সর্বাধিক নগরায়িত দেশ; এখানকার ৯৭% লোক শহরে বাস করে। নেদারল্যান্ডস ও লুক্সেমবুর্গের সাথে মিলে বেলজিয়াম নিচু দেশগুলি গঠন করেছে। ফ্রান্স এবং উত্তর ইউরোপের সমভূমির মধ্যস্থলে অবস্থিত। এর উত্তরে উত্তর সাগর। ইউরোপের একটি ভৌগোলিক সঙ্গমস্থলে অবস্থিত হওয়ায় দেশটি মধ্যযুগ থেকেই একটি প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। উত্তর সাগরের মাধ্যমে দেশটি বাকী বিশ্বের সাথে বাণিজ্য চালায়। বেলজিয়ামের অবস্থান সামরিক কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বহু যুদ্ধ হয়েছে। ১৮৩০ সালে বেলজিয়াম স্বাধীনতা লাভ করে। ইতিহাস দেশটির নাম বেল্গায়ে নামের এক কেল্টীয় জাতির নাম থেকে এসেছে। এই জাতিটি এখানকার আদি অধিবাসী ছিল; খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দে জুলিয়াস সিজার এলাকাটি দখল করে নেন। ভাষা ভাষার জন্য বেলজিয়ানরা যুদ্ধ-বিগ্রহে পর্যন্ত লিপ্ত হয়েছে। প্রধান ভাষা দুটি যথাঃ ফ্লেমিশ এবং ফরাসী। তৃতীয় প্রচলিত ভাষা জার্মান। কেবল ব্রুসেল শহরে ফ্লেমিশ এবং ফরাসি উভয় ভাষাই সরকারীভাবে ব্যবহৃত হয়। ফ্ল্যান্ডার্স এলাকায় অবিমিশ্রভাবে ফ্লেমিশ ভাষা প্রচলিত ; ওয়ালোনিয়া এলাকায় প্রচলিত ফরাসি ভাষা। তবে দূতাবাসের শহর ব্রুসেলে ইংরেজি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। বেলজিয়ামে দুইটি সরকারি ভাষা প্রচলিত: ওলন্দাজ এবং ফরাসি। বেলজিয়ামের প্রায় ৫৭% লোক ওলন্দাজ ভাষার একটি উপভাষা ফ্লেমিশে কথা বলে। ফরাসি ভাষা প্রায় ৩৩% লোকের মাতৃভাষা এবং ফরাসিভাষীরা মূলত দেশের দক্ষিণাংশে ওয়ালুন অঞ্চলের বাস করে। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেল্‌স একটি দ্বিভাষিক এলাকা। এছাড়া পূর্বের অয়পেন-মালমেডি-সাংক্ত ভিট প্রদেশগুলিতে প্রায় দেড় লক্ষ জার্মান ভাষাভাষী বাস করে। বেলজিয়ামের সংখ্যালঘু ভাষাগুলির মধ্যে আরবী, তুর্কি, কাবিলে, স্পেনীয়, পর্তুগিজ এবং লেৎসেবুর্গেশ ভাষা অন্যতম। রাজনীতি বেলজিয়ামের রাজনীতি একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাজা বা রাণী হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারপ্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং দ্বিকাক্ষিক আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত। থাম্ব|263x263পিক্সেল|ব্রাসেলস, বেলজিয়ামের রাজধানী এবং বৃহত্তম মেট্রোপলিটন এলাকা প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ বেলজিয়াম প্রশাসনিক ভাবে তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত যথা ফ্ল্যান্ডার্স, ওয়ালোনিয়া এবং ব্রাসেলস ক্যাপিটাল সিটি। ফ্ল্যান্ডার্স অঞ্চলটি ব্রাসেলসের উত্তর ও পশ্চিমে অবস্থিত; এখানে বেশির ভাগ লোক ওলন্দাজ (ফ্লেমিশ) ভাষায় কথা বলে এবং এরা ফ্লেমিং নামে পরিচিত। ওয়ালোনিয়া ব্রাসেলসের পূর্বে ও দক্ষিণে অবস্থিত এবং এখানকার বেশির ভাগ লোক ফরাসি ভাষায় কথা বলে। এরা ওয়ালোন নামে পরিচিত। ব্রাসেলস ক্যাপিটাল সিটি অঞ্চলে উভয় জাতের লোকের বাস। প্রতিটি অঞ্চলই প্রায় স্বায়ত্তশাসিত; কিন্তু ফ্লেমিং ও ওয়ালোনদের মধ্যে এখনও তীব্র দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। ফ্ল্যান্ডার্স এলাকা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে আগ্রহী। ভূগোল বেলজিয়ামকে তিনটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়: উত্তর-পশ্চিমের উপকূলীয় সমভূমি, মধ্যভাগের মালভূমি এবং দক্ষিণ-পূর্বের আর্দেন পর্বতমালা। অর্থনীতি জনসংখ্যা সংস্কৃতি তথ্যসূত্র আরও দেখুন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বেলজিয়াম বহিঃসংযোগ সরকারী বেলজিয়াম রাজতন্ত্রের সরকারি ওয়েবসাইট বেলজিয়ামের কেন্দ্রীয় সরকারি ওয়েবসাইট রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ সাধারণ তথ্য Belgium entry at Encyclopædia Britannica Belgium at UCB Libraries GovPubs বেলজিয়াম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দপ্তরের তথ্য। Portals to the World from the United States Library of Congress FAO Country Profiles: Belgium পর্যটন Official Site of the Belgian Tourist Office in the Americas and GlobeScope,– its links to sites of Belgian Tourist Offices in Belgium– its links to sites of Belgian Tourist Offices worldwide Other বেলজিয়াম, entry on the Catholic Encyclopedia 1913, republished on Wikisource বেলজিয়াম , entry on the Public Diplomacy wiki monitored by the USC Center on Public Diplomacy বেলজিয়ামের ইতিহাস: প্রাথমিক ডকুমেন্ট EuroDocs: Online Sources for European History বিষয়শ্রেণী:ইউরোপের রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:বেলজিয়াম বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইউরোপ কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ওলন্দাজ ভাষার ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ভূমধ্যসাগরীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ওইসিডি সদস্য বিষয়শ্রেণী:ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:একাধিক দাপ্তরিক ভাষা সহ ইউরোপের দেশ বিষয়শ্রেণী:রাজ্য বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
বেলিজ
https://bn.wikipedia.org/wiki/বেলিজ
থাম্ব|262x262পিক্সেল|জাতীয় পরিষদ, ভবেলমোপান, বেলিজ বেলিজ মধ্য আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অংশে, ক্যারিবীয় সাগরের উপকূলে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। বেলিজ মধ্য আমেরিকার সবচেয়ে ক্ষুদ্র ও স্বল্পবসতিপূর্ণ দেশগুলির একটি। এর উত্তরে মেক্সিকো, পশ্চিমে ও দক্ষিণে গুয়াতেমালা এবং পূর্বে ক্যারিবীয় সাগর। দেশটির তটরেখার দৈর্ঘ্য ২৮০ কিলোমিটার। উপকূল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে সমুদ্রের মধ্যে একটি প্রবাল বাধ আছে, যার নাম বেলিজ প্রবাল বাধ। ভৌগোলিকভাবে বেলিজ ইউকাতান উপদ্বীপের দক্ষিণে অবস্থিত। বেলিজের উত্তর অর্ধাংশ নিম্ন জলাভূমি প্রকৃতির; এখানে কৃষিকাজ দুরূহ। বেলিজের দক্ষিণ অংশটিতে একটি সরু উপকূলীয় সমভূমি আছে, যার পাশে হঠাৎ অনেক উঁচু পাহাড় ও পর্বত উঠে গেছে; পার্বত্য অঞ্চলটির নাম মায়া পর্বতমালা। দেশের তিন-চতুর্থাংশ এলাকা অরণ্যে আবৃত। উপকূলীয় শহর বেলিজ সিটি দেশের বৃহত্তম শহর ও দেশের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এটি দেশটির রাজধানী ছিল। ১৯৬১ সালে একটি হারিকেন ঘূর্ণিঝড়ে শহরটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করলে দেশের অভ্যন্তরে বেলিজ সিটি থেকে ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে বেলমোপান শহরে নতুন রাজধানী নির্মাণ করা হয়। বেলিজ জাতিগত ও সাংস্কৃতিকভাবে বিচিত্র দেশ। এখানকার অনেক লোক কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা মিশ্র আফ্রিকান-ইউরোপীয় রক্তের লোক, যাদেরকে ক্রেওল ডাকা হয়। এছাড়াও এখানে বহু মায়া আদিবাসী ও মেস্তিসো (আদিবাসী আমেরিকান ও ইউরোপীয়দের মিশ্র জাতি) লোকের বাস। এছাড়াও এখানে ইউরোপীয় ও এশীয়রা স্বল্প সংখ্যায় বাস করেন। ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে কৃষাঙ্গ ও অর্ধ-কৃষ্ণাঙ্গ ক্রেওলদের তুলনায় মেস্তিসোদের অনুপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেস্তিসোরা বর্তমানে বেলিজের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি প্রতিনিধিত্ব করছে। বর্তমান বেলিজ এলাকাটি অতীতে মায়া সভ্যতার অংশ ছিল। মায়া সভ্যতা ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিকাশ লাভ করে এবং ১৫৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। মায়ারা ছিল দক্ষ কৃষক; তারা তখনকার যুগের সবচেয়ে অগ্রসর একটি সভ্যতা নির্মাণ করেছিল। তারা অনেক কারুকার্যময় মন্দির নির্মাণ করে। মায়া সভ্যতার প্রাচীন নগরগুলির ধ্বংসাবশেষ দেখতে অনেক পর্যটক এখন বেলিজে বেড়তে আসে। দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্য ও মনোরম সৈকতগুলিও পর্যটকদেরকে আকৃষ্ট করে। বেলিজ প্রায় দুই শতক ধরে ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল। এটি আমেরিকা মহাদেশের মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত সর্বশেষ ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। ১৯৭৩ পর্যন্ত এর নাম ছিল ব্রিটিশ হন্ডুরাস। প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুয়াতেমালা ঐতিহাসিক কারণে বেলিজকে নিজের অংশ বলে দাবী করে আসলেও বেলিজ নিজের স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রচারণা চালায়। ১৯৮১ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর এটি স্বাধীনতা অর্জন করে। বর্তমানে এটি কমনওয়েলথ অফ নেশনসের একটি সদস্য হিসেবে যুক্তরাজ্যের সাথে সম্পর্ক জিইয়ে রেখেছে। বেলিজের প্রধান ভাষা ইংরেজি। বেলিজের সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি ভাষা তাই ইংরেজি ভাষাভাষী ব্রিটিশ ক্যারিবীয় দ্বীপগুলির মত। কিন্তু এর সংস্কৃতি আবার মধ্য আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলির মত। বেলিজের রাজনৈতিক ব্যবস্থাটি মধ্য আমেরিকার দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক। ১৬৩৮ সালে পিটার ওয়ালেস নামের একজন স্কটল্যান্ডীয় জলদস্যু বেলিজ নদীর মোহনাতে একটি লোকালয় স্থাপন করেন বলে ধারণা করা হয়। ওয়ালেসের নামের স্পেনীয় উচ্চারণ থেকেই "বেলিজ" নামটি এসেছে বলে অনুমান করা হয়। আরেকটি তত্ত্ব অনুযায়ী মায়া ভাষার শব্দ বেলিক্স থেকে এসেছে যার অর্থ "কাদাপানি" অথবা অন্য আরেকটি মায়া শব্দ বেলিকিন থেকে এসেছে যার অর্থ "সমুদ্রমুখী দেশ"। বেলিজের অর্থনীতি মুক্তবাজার প্রকৃতির। ২০শ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত কাঠ রপ্তানি ছিল এর অর্থনীতির মেরুদণ্ড। বর্তমানে চিনি ও লেবু জাতীয় ফল রপ্তানি দেশটির আয়ের প্রধান উৎস। বর্তমানে সেবাখাত দেশটির বৃহত্তম অর্থনৈতিক খাত। এছাড়া পর্যটন বিদেশী আয়ের অন্যতম একটি উৎস। বেলিজের মুদ্রার নাম বেলিজ ডলার। ইতিহাস thumb|left|Caana, a Mayan pyramid at Caracol, Cayo District. রাজনীতি প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ ভূগোল অর্থনীতি জনসংখ্যা সংস্কৃতি আরও দেখুন কমনওয়েলথ অব নেশন্স তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বেলিজের সরকার - সরকারি ওয়েবসাইট। রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ বেলিজ জাতীয় জরুরী অবস্থা ব্যবস্থাপনা সংস্থা - সরকারি ওয়েবসাইট। বেলিজ পর্যটন বোর্ড- সরকারি পর্যটন ওয়েবসাইট। Belize Wildlife Conservation Network - Belize Wildlife Conservation Network Belize information on globalEDGE Country Page from Encyclopaedia Britannica LANIC Belize page Belize at UCB Libraries GovPubs বিষয়শ্রেণী:বেলিজ বিষয়শ্রেণী:ক্যারিবীয় দ্বীপ বিষয়শ্রেণী:মধ্য আমেরিকা বিষয়শ্রেণী:১৯৮১-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ক্যারিবীয় সম্প্রদায়ের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:স্পেনীয় ভাষী রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:উত্তর আমেরিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:ক্যারিবীয় রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:মধ্য আমেরিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:প্রাক্তন স্পেনীয় উপনিবেশ বিষয়শ্রেণী:কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য বিষয়শ্রেণী:ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
বেনিন
https://bn.wikipedia.org/wiki/বেনিন
{{Infobox Country |native_name = République du Béninরেপ্যুব্লিক্‌ দ্যু বেনিন্‌|conventional_long_name = বেনিন প্রজাতন্ত্র |common_name = বেনিন |image_flag = Flag of Benin.svg |image_coat = Coat of arms of Benin.svg |image_map = Benin in its region.svg |national_motto = ফরাসি: Fraternité, Justice, Travail(অনুবাদ: বন্ধুভাব, ন্যায়পরায়ণতা, শ্রম) |national_anthem = L'Aube Nouvelle (ফরাসি)(অনুবাদ: একটি নতুন দিনের ভোর)L'Aube Nouvelle |official_languages = ফরাসি |demonym = বেনিনীয় |capital = পর্তো নোভো |latd= 6|latm=28 |latNS=N |longd=2 |longm=36 |longEW=E |largest_city = কোতোনু |government_type = বহুদল বিশিষ্ট গণতন্ত্র |leader_title1 = রাষ্ট্রপতি |leader_name1 = প্যাট্রিশ টেলনhttps://www.aboutenergy.com/en_IT/briefs/patrice-talon.shtml |sovereignty_type = স্বাধীনতা |sovereignty_note = ফ্রান্স হতে |established_event1 = তারিখ |established_date1 = ১লা আগস্ট ১৯৬০ |area_rank = ১০১তম |area_magnitude = |area = ১১২,৬২২ |areami² = ৪৩,৪৮৪ |percent_water = ১.৮ |population_estimate = ৮,৯৩৫,০০০ |population_estimate_rank = ৯০তম |population_estimate_year = ২০০৯ |population_census = 10,008,749 |population_census_year = 2013 |population_density_km2 = 94.8 |population_density_sq_mi= |population_density_rank = 120th |GDP_PPP = $26.177 billion |GDP_PPP_rank = |GDP_PPP_year = 2017 |GDP_PPP_per_capita = $2,297 |GDP_PPP_per_capita_rank = |GDP_nominal = $9.605 billion |GDP_nominal_year = 2017 |GDP_nominal_per_capita = $842 |Gini_year = 2003 |Gini_change = |Gini = 36.5 |Gini_ref = |Gini_rank = |HDI_year = 2015 |HDI_change = increase |HDI = 0.485 |HDI_ref = |HDI_rank = 167th | currency = পশ্চিম আফ্রিকান সিএফএ ফ্রাঙ্ক | currency_code = XOF |country_code = |time_zone = WAT |utc_offset = +১ |time_zone_DST = not observed|utc_offset_DST = +১ |cctld = .বিজে |calling_code = ২২৯ |footnote1 = কোটনিউ সরকারের আসন। |footnote2 = Estimates for this country explicitly take into account the effects of excess mortality due to AIDS; this can result in lower life expectancy, higher infant mortality and death rates, lower population and growth rates, and changes in the distribution of population by age and sex than would otherwise be expected. |footnote3 = Rank based on 2005 estimate. }} থাম্ব|প্যাট্রিস ট্যালন, বেনিনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বেনিন (ফরাসি: Bénin বেনিন্‌) পশ্চিম আফ্রিকার একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এর পূর্ব নাম ছিল দাহোমি। গিনি উপসাগরে দেশটির প্রায় ১২১ কিমি দীর্ঘ তটরেখা বিদ্যমান। কীলক আকারের দেশটি উত্তর দিকে আফ্রিকার অভ্যন্তরে প্রায় ৬৭০ কিলোমিটার প্রবেশ করেছে। এটি আফ্রিকার ক্ষুদ্রতর দেশগুলির একটি। বেনিনের জলবায়ু ক্রান্তীয়। এর অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক।"Food and Agriculture Organization of the United Nations" . United Nations, 29 June 2010 দেশের বেশির ভাগ কৃষক দিনমজুরি করেন। ১৯৯০-এর দশকে বেনিনের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটলেও এটি আফ্রিকার দরিদ্রতম দেশগুলির একটি। বেনিনে বিভিন্ন জাতের লোকের বাস। এদের ফন, ইয়োরুবা, ও আজা জাতির লোক সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফরাসি ভাষা দেশটির সরকারি ভাষা। তবে ফন এবং অন্যান্য আফ্রিকান ভাষা বহুল প্রচলিত। ১৮৯৯ সাল থেকে বেনিন ফরাসি পশ্চিম আফ্রিকার অংশ হিসেবে একটি ফরাসি উপনিবেশ ছিল। ১৯৬০ সালে দাহোমি নামে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। দাহোমি ১৮শ ও ১৯শ শতকে আফ্রিকার একটি বড় রাজ্য ছিল, যার কেন্দ্র ছিল বেনিন। স্বাধীনতা লাভের পর অনেকগুলি সামরিক শাসক দেশটি শাসন করেন। ১৯৭২ সালে একটি মার্ক্সবাদী সরকার ক্ষমতায় আসে। ১৯৭৫ সালে দেশটির নাম বদলে গণপ্রজাতন্ত্রী বেনিন করা হয়। ১৯৮০র দশকে অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত বেনিন পশ্চিমের দেশগুলির কাছে সাহায্য চায়। ১৯৮৯ সালে সরকার মার্কসবাদ পরিত্যাগ করে। ১৯৯০ সালে নতুন সংবিধান পাস করা হয় ও গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধন করা হয়। বর্তমানে বেনিন একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা; রাষ্ট্রপতি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। নামকরণ ঔপনিবেশিক সময়ে এবং স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে এই দেশটির নাম ছিলো দাহোমি। ১৯৭৫ সালের ৩০শে নভেম্বর তারিখে দেশটির নাম পালটে বেনিন রাখা হয়। এই নামটি এসেছে এই দেশের তীরের কাছের বেনিন উপসাগর থেকে, যার নাম আবার এসেছিলো বেনিন রাজ্য হতে। নতুন নাম বেনিন বেছে নেয়া হয় নিরপেক্ষতার খাতিরে। দাহোমি নামটি এসেছিলো দাহোমি রাজ্য হতে, যা দেশটির দক্ষিণের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা জুড়ে ছিলো। কাজেই উত্তর-পশ্চিমের রাজ্য আতাকোরা কিংবা উত্তর পূর্বের রাজ্য বোর্গুর কোনো নিদর্শন দেশের নামে ছিলো না। সেজন্য দেশটির নাম রাখা হয় বেনিন। ইতিহাস রাজনীতি প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ ভূগোল অর্থনীতি জনসংখ্যা বেনিনে জনসংখ্যা ১১,৩৯৬,৩৮০ (২০১৭) সংস্কৃতি আরও দেখুন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সরকার বেনিনের সরকার (ফরাসীতে সরকারী ওয়েবসাইট) রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ সার্বিক শুদ্ধতা প্রতিবেদন: বেনিন সাধারণ তথ্য দেশ বৃত্তান্ত বিবিসি সংবাদ থেকে Benin from UCB Libraries GovPubs'' বেনিন রাজনীতি সংবাদ মিডিয়া বেনিন খবর উৎসের ডাইরেকটরি স্টানফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিহ্মার উদ্যোগগুলো Benin Education Fund (BEF) Provides educational support and scholarships. ভ্রমণ Benin Travel Guide from Word Travels বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:১৯৬০-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:বেনিন বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:সাবেক পর্তুগিজ উপনিবেশ বিষয়শ্রেণী:স্বল্পোন্নত দেশ বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:পশ্চিম আফ্রিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
ভুটান
https://bn.wikipedia.org/wiki/ভুটান
ভুটান (; ), আনুষ্ঠানিকভাবে ভুটান রাজ্য (), দক্ষিণ এশিয়ার স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। ভুটানের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে মাতৃভাষা জংখা ভাষায় 'দ্রুক ইয়ুল' বা 'বজ্র ড্রাগনের দেশ' নামে ডাকে। দেশটি ভারতীয় উপমহাদেশে হিমালয় পর্বতমালার পূর্বাংশে অবস্থিত। ভুটান উত্তরে চীনের তিব্বত অঞ্চল, পশ্চিমে ভারতের সিকিম ও তিব্বতের চুম্বি উপত্যকা, পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ এবং দক্ষিণে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ দ্বারা পরিবেষ্টিত। ভুটান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ "ভূ-উত্থান" থেকে যার অর্থ "উঁচু ভূমি"।সংস্কৃত ভাষায় ভোট বা ভোটান্ত বলতেও ভুুুটান দেশটিকে বোঝানো হয়। ভুটান সার্কের একটি সদস্য রাষ্ট্র এবং মালদ্বীপের পর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ। ভুটানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর থিম্ফু। ফুন্টসলিং ভুটানের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র। অতীতে ভুটান পাহাড়ের উপত্যকায় অবস্থিত অনেকগুলি আলাদা আলাদা রাজ্য ছিল। ১৬শ শতকে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসেবে এর আবির্ভাব ঘটে। ১৯০৭ সাল থেকে ওয়াংচুক বংশ দেশটি শাসন করে আসছেন। ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত ভুটান একটি বিচ্ছিন্ন দেশ ছিল। ১৯৬০-এর দশকে ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য নিয়ে দেশটি একটি আধুনিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। তবে এখনও এটি বিশ্বের সবচেয়ে অনুন্নত দেশগুলির একটি। নামকরণ ভুটানের নাম এসেছে সংস্কৃত শব্দ "ভূ-উত্থান" (উচ্চভূমি) হতে। অন্য মতে, ভুটান এসেছে ভোটস-আন্ত, অর্থাৎ "তিব্বতের শেষ সীমানা" হতে, যেহেতু ভুটান তিব্বতের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত। ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন সময়ে ভুটান বিভিন্ন নামে খ্যাত ছিলো। যেমন, লো মন (দক্ষিণের অন্ধকারাচ্ছন্ন রাজ্য), লো সেন্দেঞ্জং (সেন্দেন সাইপ্রেস বৃক্ষমন্ডিত দক্ষিণের রাজ্য), লোমেন খাঝি (দক্ষিণের রাজ্য যাতে চারটি প্রবেশ পথ রয়েছে), ও লো মেন জং (দক্ষিণের রাজ্য যেখানে ওষধি বৃক্ষ পাওয়া যায়। ইতিহাস ভুটানের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে সেখানে প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনীর চেয়ে বেশি সুস্পষ্ট কিছু জানা যায় না। এখানে হয়ত খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দেও বসতি ছিল, তবে ৯ম শতকে এখানে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের প্রচলনের পরেই এলাকাটির সম্পর্কে আরও জানা যায়। সেসময় বহু তিব্বতি বৌদ্ধ ভিক্ষু পালিয়ে ভুটানে চলে আসেন। ১২শ শতকে এখানে দ্রুকপা কাগিউপা নামের বৌদ্ধধর্মের একটি ধারা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটিই বর্তমানে ভুটানের বৌদ্ধধর্মের প্রধান রূপ। ভুটানের বৌদ্ধ মন্দির ও ধর্মশিক্ষালয় দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসের উপর সবসময় প্রভাব ফেলেছে। ১৬১৬ সালে নগাওয়ানা নামগিয়াল নামের এক তিব্বতি লামা তিনবার ভুটানের উপর তিব্বতের আক্রমণ প্রতিহত করলে ভুটান এলাকাটি একটি সংঘবদ্ধ দেশে পরিণত হতে শুরু করে। নামগিয়াল বিরোধী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলিকে পদানত করেন, একটি ব্যাপক ও সূক্ষ্ম বিবরণসমৃদ্ধ আইন ব্যবস্থা প্রচলন করেন এবং একটি ধর্মীয় ও সিভিল প্রশাসনের উপর নিজেকে একনায়ক বা শাবদ্রুং হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর অন্তর্কোন্দল ও গৃহযুদ্ধের কারণে পরবর্তী ২০০ বছর শাবদ্রুঙের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে। ১৮৮৫ সালে উগিয়েন ওয়াংচুক শক্ত হাতে ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম হন এবং ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসনের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। ১৯০৭ সালে উগিয়েন ওয়াংচুক ভুটানের রাজা নির্বাচিত হন এবং ঐ বছর ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার উপাধি ছিল দ্রুক গিয়ালপো বা ড্রাগন রাজা। ১৯১০ সালে রাজা উগিয়েন ও ব্রিটিশ শক্তি পুনাখার চুক্তি স্বাক্ষর করে যেখানে ব্রিটিশ ভারত ভুটানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক না গলানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। উগিয়েন ওয়াংচুক ১৯২৬ সালে মারা গেলে তার পুত্র জিগমে ওয়াংচুক পরবর্তী শাসক হন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর ভুটানকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে গণ্য করে। ১৯৪৯ সালে ভুটান ও ভারত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যেখানে ভুটান ভারতের কাছ থেকে বৈদেশিক সম্পর্কের ব্যাপারে পথনির্দেশনা নেবার ব্যাপারে সম্মত হয় এবং পরিবর্তে ভারত ভুটানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ১৯৫২ সালে জিগমে ওয়াংচুকের ছেলে জিগমে দর্জি ওয়াংচুক ক্ষমতায় আসেন। তার আমলে ভুটান পরিকল্পিত উন্নয়নের পথে এগোতে থাকে এবং ১৯৭১ সালে জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তার সময়েই ভুটানে একটি জাতীয় সংসদ, নতুন আইন ব্যবস্থা, রাজকীয় ভুটানি সেনাবাহিনী এবং একটি উচ্চ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭২ সালে ১৬ বছর বয়সে জিগমে সিঙিয়ে ওয়াংচুক ক্ষমতায় আসেন। তিনি আধুনিক শিক্ষা, সরকারের বিকেন্দ্রীকরণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, পর্যটন এবং পল্লী উন্নয়নের মত ব্যাপারগুলির উপর জোর দেন। তিনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি জনগণের সামগ্রিক সুখের একজন প্রবক্তা; উন্নয়ন সম্পর্কে তার দর্শন কিছুটা ভিন্ন এবং এই ভিন্নতার কারণে তিনি আন্তর্জাতিক পরিচিত পেয়েছেন। তার আমলে ধীরে ধীরে ভুটান গণতন্ত্রায়নের পথে এগোতে থাকে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি রাজার পদ ছেড়ে দেন এবং তার ছেলে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ভুটানের রাজা হন। ২০০৮ সালের ১৮ই জুলাই ভুটানের সংসদ একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। এই ঐতিহাসিক দিন থেকে ভুটানে পরম রাজতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটে এবং ভুটান একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্রে পরিণত হয়। রাজনীতি ভুটান হল একটি রাজতন্ত্র বিশিষ্ট দেশ। এখানে বর্তমানে রাজতন্ত্র বিদ্যমান। ভুটানে অতীতে একটি পরম রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। বর্তমানে এটি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। ভুটানের রাজা, যার উপাধি ড্রাগন রাজা, হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। মন্ত্রীদের একটি কাউন্সিল রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনা করে। সরকার ও জাতীয় সংসদ উভয়ের হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ন্যস্ত। এছাড়াও যে খেনপো উপাধিবিশিষ্ট দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা রাজার সবচেয়ে কাছের পরামর্শদাতার একজন। ২০০৭ সালে একটি রাজকীয় আদেশবলে রাজনৈতিক দল নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়। বর্তমান সংবিধানে দেশটিতে একটি দুই-দলবিশিষ্ট গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। জিগমে খেসার নামগিয়াল ওয়াংচুক বর্তমানে ভুটানের রাজা। ভূগোল thumb|300px|ভুটানের মানচিত্র (২০১০ সাল অনুযায়ী) ভুটানের আয়তন ৪৬,৫০০ বর্গকিলোমিটার। থিম্পু এর রাজধানী শহর এবং এটি দেশের মধ্য-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। অন্যান্য শহরের মধ্যে পারো, ফুন্টসলিং, পুনাখা ও বুমথং উল্লেখযোগ্য। ভুটানের ভূপ্রকৃতি পর্বতময়। উত্তরে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালা, মধ্য ও দক্ষিণভাগে নিচু পাহাড় ও মালভূমি এবং দক্ষিণ প্রান্তসীমায় সামান্য কিছু সাভানা তৃণভূমি ও সমভূমি আছে। মধ্যভাগের মালভূমির মধ্যকার উপত্যকাগুলিতেই বেশির ভাগ লোকের বাস। ভুটানের জলবায়ু উত্তরে আল্পীয়, মধ্যে নাতিশীতোষ্ণ এবং দক্ষিণে উপক্রান্তীয়; জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। স্থলবেষ্টিত দেশ ভুটানের আকার, আকৃতি ও পার্বত্য ভূ-প্রকৃতি সুইজারল্যান্ডের সদৃশ বলে দেশটিকে অনেক সময় এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ডাকা হয়। বহির্বিশ্ব থেকে বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ভুটান প্রাণী ও উদ্ভিদের এক অভয়ারণ্য। এখানে বহু হাজার দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। ভুটানের প্রায় ৭০% এলাকা অরণ্যাবৃত। এই অরণ্যই ভুটানের জীব বৈচিত্র‍্য সংরক্ষণ করে চলেছে যুগ যুগ ধরে। 300px|thumb|ভুটানের ভৌগোলিক মানচিত্র অর্থনীতি ভুটানের রাষ্ট্রীয় মুদ্রা গুলট্রাম এবং এর বিনিময় হার ভারতীয় টাকার সাথে সম্পর্কিত। ভুটানে ভারতীয় টাকারও প্রচলন রয়েছে। ভুটানের অর্থনীতি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র অর্থনীতিগুলির একটি। ২০১২ পর্যন্ত ভুটানের মাথাপিছু আয় ছিল ২,৪২০ মার্কিন ডলার। ভুটানের অর্থনীতি কৃষি, বনজ, পর্যটন এবং ভারতে জলবিদ্যুৎ বিক্রির উপর নির্ভরশীল। জনসংখ্যার ৫৫.৪ শতাংশের জন্য কৃষিকাজ মূল জীবিকা সরবরাহ করে। কৃষিকাজ মূলত খামার এবং পশুপালন নিয়ে গঠিত। হস্তশিল্পগুলি, বিশেষত তাঁত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পার্বত্য ও পাহাড়ী অঞ্চল হবার ফলে রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কঠিন এবং ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। সমুদ্রবন্দর না থাকায় ভুটান ব্যবসা বাণিজ্যতে ভালো করতে পারেনি। ভুটানের কোনও রেলপথ নেই, যদিও ভারতীয় রেলপথ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির আওতায় দক্ষিণ ভুটানকে তার বিশাল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে। ২০০৮ সালে ভুটান এবং ভারত একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে,যা বিশ্বের যেকোনো বাজার থেকে ভুটানে আমদানি ও রফতানি শুল্ক ছাড়াই অনুমতি দেয় ট্রানজিট এর মাধ্যমে । ১৯৬০ সাল নাগাদ ভুটানের সাথে চীনের স্বায়ত্তশাসিত তিব্বত অঞ্চলের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল। শরণার্থীদের আগমনের পরে চীনের সাথে তার সীমানা বন্ধ করে দেয়। শিল্প খাতটি একটি নবজাতক পর্যায়ে রয়েছে, যদিও বেশিরভাগ উৎপাদন কুটির শিল্প থেকে আসে, বৃহত্তর শিল্পগুলিকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে এবং সিমেন্ট, ইস্পাত এবং ফেরো এলয় এর মতো কয়েকটি শিল্প স্থাপন করা হয়েছে। বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্প, যেমন রাস্তা নির্মাণ, ভারতীয় চুক্তি শ্রমের উপর নির্ভর করে। কৃষি উৎপাদনের মধ্যে চাল, মরিচ, দুগ্ধ (কিছু ইয়াক, বেশিরভাগ গাভী) পণ্য, বেকওয়েট, বার্লি, সাইট্রাস এবং ভুট্টা পাহাড়ি নিম্ন ভূমিতে হয় । শিল্পের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, কাঠের পণ্য, প্রক্রিয়াজাত ফল, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড। জনসংখ্যা thumb|300px|ওয়াংদি ফোদ্রাং উৎসবে জাতীয় পোষাকে ভুটানিরা ভুটানের অধিবাসীরা ভুটানি নামে পরিচিত। ২০০৫ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভুটানে ৬,৭২,৪২৫ জনের বাস। প্রতি বছর জনসংখ্যা ২% হারে বাড়ছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৫ জন। ভুটানে দ্রুপকা জাতির লোক প্রায় ৫০%। এর পরেই আছে নেপালি (৩৫%) এবং অন্যান্য আদিবাসী বা অভিবাসী জাতি। দেশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ লোক লামাবাদী বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী। বাকীরা ভারত ও নেপালি ধারার হিন্দু ধর্ম পালন করে। জংখা  ভুটানের সরকারি ভাষা। এছাড়া বুমথাং-খা, শারচোপ-খা ও নেপালি ভাষা প্রচলিত। ইংরেজি ভাষাতে শিক্ষা দেওয়া হয়। ভুটানের সাক্ষরতার হার প্রায় ৬০%। জনগণের প্রায় ৯৪% শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত। বেকারত্বের হার ৩.১% (২০০৫ সালের প্রাক্কলন)।জংখা ভাষা বা ভুটানি ভাষা ভুটানের সরকারি ভাষা। এছাড়াও এখানে আরও প্রায় ১০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে বহু লক্ষাধিক বক্তাবিশিষ্ট নেপালি ভাষা অন্যতম। আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। সংস্কৃতি ভুটানের বাসিন্দারা মূলত বৌদ্ধ ধর্ম পালন করে। ভুটানের একটি সমৃদ্ধ এবং অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে যা বিশ শতকের মধ্যভাগ অবধি বিশ্বব্যাপী বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে মূলত অক্ষত রয়েছে। পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল দেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। ভুটানদের ঐতিহ্য তার বৌদ্ধ ঐতিহ্যে গভীরভাবে বিস্তৃত। দক্ষিণ অঞ্চলে সর্বাধিক প্রচলিত হিন্দু ধর্ম ভুটানের দ্বিতীয় সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্ম। সরকার দেশের বর্তমান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বজায় রাখার জন্য ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এর জন্য ভুটান কে সর্বশেষ শ্যাংগ্রি-লা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ভুটানের নাগরিকরা বিদেশ ভ্রমণে ক্ষেত্রে স্বাধীন, অনেক বিদেশী ভুটানকে ভ্রমণযোগ্য হিসেবে দেখে। এটি অজনপ্রিয় গন্তব্য হওয়ার অন্য কারণ হল ব্যয়, যা কঠোর বাজেটের পর্যটকদের জন্য বেশি। প্রবেশাধিকার ভারত, বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপের নাগরিকদের জন্য নিখরচায়, তবে অন্য সমস্ত বিদেশিদের একটি ভুটান ট্যুর অপারেটরের সাথে সাইন আপ করতে হবে এবং তারা দেশে থাকতে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ ডলার দিতে হবে, যদিও এই ফি বেশিরভাগ ভ্রমণ, থাকার ব্যবস্থা এবং খাবারের ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করে। ভুটান ধূমপান নিষিদ্ধ করার জন্য বিশ্বের প্রথম দেশ। ভুটানের ২০১০ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে প্রকাশ্যে ধূমপান করা বা তামাক বিক্রি করা আইনত অবৈধ হয়েছে। গণমাধ্যম ১৯৬০ এর দশকের প্রথম দিকে জিগমে দর্জি ওয়াংচুক মধ্যযুগীয় রাজতন্ত্রে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে প্রথম ত্রিশ মিনিটের জন্য বেতার সম্প্রচার হয়। টেলিভিশন সম্প্রচার আরম্ভ হয় ১৯৯০-এর দশকে, যদিও মাত্র কয়েকটি ধনী পরিবার তখন স্যাটেলাইট ডিশ এন্টেনা কিনতে সক্ষম ছিল। ২০০০ সালে ইন্টারনেট সেবা চালু হয়। খাদ্য ভুটানের প্রধান খাবার হলো লাল চাল (বাদামী চালের মতো, কিন্তু এতে বাদামী স্বাদ থাকে, ধানের একমাত্র প্রকার যেটি উঁচু এলাকায় জন্মায়।), বাজরা, ভুট্টা ইত্যাদি। পাহাড়াঞ্চলের খাবারের তালিকায় আছে মোরগ, চমরী গাইয়ের মাংস, শুকনো গরুর মাংস, শূকরের মাংস এবং চর্বি এবং মেষশাবক ইত্যাদি। স্যুপ এবং সিদ্ধ মাংস, চাল, ফার্ন, মসুর ডাল, এবং শুকনো সবজি, লাল মরিচ এবং পনিরের সাথে মশলা ইত্যাদি ভুটানে শীতকালের প্রিয় খাবার। দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে গরু এবং চমরী গাইয়ের দুধের তৈরি মাখন এবং পনির অত্যন্ত জনপ্রিয়, প্রকৃতপক্ষে বেশির ভাগ দুধ দিয়েই মাখন এবং পনির বানানো হয়। জনপ্রিয় পানীয়র মধ্যে আছে: মাখন চা, কালো চা, স্থানীয় ভাবে প্রস্তুতকৃত আরা (ভাতের মদ) এবং বিয়ার। জনপ্রিয় মশলার মধ্যে আছে: এলাচ, আদা, থিংগে (সিচুয়ান মরিচ), রসুন, হলুদ, এবং কেওড়া। যখন কেউ খাবারের জন্য অনুরোধ করে, তখন বলে মেশু মেশু, এবং ভুটানের ভদ্রতা অনুযায়ী অপরজন বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করে, তখন দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার অনুরোধ করা হয়। ভ্রমণ ভুটান ভ্রমণ করার জন্য একটি সুন্দর জায়গা ৷ ভুটানের ভূ-প্রকতি প্রাকৃতিক ভাবেই খুব সুন্দর । আরও দেখুন বজ্র ড্রাগনের দেশ নামে পরিচিত ভুটান এশিয়ার সবচেয়ে সুখী দেশ। ভুটানের রাজার উপাধি ‘ড্রাগন রাজা’। স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র ভুটানের আকার, আকৃতি ও পার্বত্য ভূ-প্রকৃতি সুইজারল্যান্ডের সদৃশ বলে দেশটিকে এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ডাকা হয়। ভুটানের প্রায় ৭০% এলাকা অরণ্যাবৃত। বহির্বিশ্ব থেকে বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ভুটান প্রাণী ও উদ্ভিদের এক অভয়ারণ্য। এখানে বহু হাজার দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। ভুটানের রাষ্ট্রীয় মুদ্রা গুলট্রাম এবং এর বিনিময় হার ভারতীয় টাকার সাথে সম্পর্কিত। ভুটানের সাক্ষরতার হার প্রায় ৬০%। জনগণের প্রায় ৯৪% শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত। জংখা ভাষা ভুটানের সরকারি ভাষা। নেপালি ভাষাতেও তাদের দক্ষতা রয়েছে। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ভুটান সরকারের ওয়েবসাইট রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ ভুটানিকা দেশ বৃত্তান্ত এবং টাইমলাইন বিবিসি সংবাদ থেকে। ভুটান লিঙ্ক ভুটানের জাতীয় লাইব্রেরী Bhutan from UCB Libraries GovPubs ভুটানের পর্যটন পরিষদ সরকারী ওয়েবসাইট। 'Datsi in the Druk Highlands,' An introduction to Bhutanese cuisine in Sunday Mid-Day,01-02-2009, by Arjun Razdan বিষয়শ্রেণী:এশিয়ার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ভুটান বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বিষয়শ্রেণী:সার্কের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:স্বল্পোন্নত দেশ বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:স্থলবেষ্টিত দেশ বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
বলিভিয়া
https://bn.wikipedia.org/wiki/বলিভিয়া
{{Infobox Country |native_name = |conventional_long_name = বলিভিয়ার বহুজাতিক রাজ্য |common_name = বলিভিয়া |image_flag = Flag of Bolivia (state).svg |image_coat = Coat of arms of Bolivia.svg |image_map = Bolivia in its region.svg |national_motto = "¡La unión es la fuerza!""Unity is strength!"</small> |national_anthem = বলিভিয়ানোস, এল হাদো প্রোপিচিওFile:Himno Nacional de Bolivia instrumental.ogg |capital = বলিভিয়া (স্পেনীয়: Bolivia বোলিব‌্‌য়া, কেচুয়া: Bulibya বুলিব্‌য়্যা, আইমারা: Wuliwya উলিউয়া) দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যভাগের একটি দেশ। আন্দেস পর্বতমালায় অনেক উঁচুতে অবস্থিত বলে দেশটিকে পৃথিবীর ছাদ নামেও অনেক সময় ডাকা হয়। বলিভিয়াতে আছে বরফাবৃত বহু পর্বতশৃঙ্গ, আর দেশটির উন্মুক্ত মালভূমির উপর দিয়ে বয়ে যায় দুরন্ত হাওয়া। পর্বতমালার পূর্বে রয়েছে সবুজ তৃণভূমি এবং তারও নিম্নে আছে ক্রান্তীয় বনাঞ্চল। সরকারীভাবে বলিভিয়ার রাজধানীর নাম সুক্রে। তবে লা পাজ দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী ও সরকারের প্রধান কর্মস্থল। ৩,৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত লা পাজ বিশ্বের উচ্চতম রাজধানী। বলিভিয়া দক্ষিণ আমেরিকার দরিদ্রতম দেশগুলির একটি। দেশের অধিকাংশ লোক আদিবাসী আমেরিকান। কিন্তু একটি ক্ষুদ্র স্পেনীয়ভাষী অভিজাত শ্রেণী ঐতিহ্যগতভাবে দেশটির রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে এবং দেশের বেশির ভাগ সম্পদ এদের হাতে কুক্ষিগত। প্রথমে আন্দেস পর্বতমালায় প্রাপ্ত খনিজ ছিল এই সম্পদের উৎস। ১৯৯০-এর দশকে শেষের দিকে এসে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস বলিভিয়ার প্রধান খনিজ সম্পদ। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে দেশটি কোকেনের উপকরণ কোকা পাতাও রপ্তানি শুরু করে। বলিভিয়ার বেশির ভাগ লোক আন্দেস পর্বতমালার দুইটি পর্বতশ্রেণীর মাঝখানে অবস্থিত একটি মালভূমিতে বাস করেন। দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা জুড়ে আন্দেস পর্বতমালা অবস্থিত। তবে ১৯৫০-এর দশক থেকে পূর্বের নিচু সমভূমিগুলিতে ধীরে ধীরে ঘনবসতিপূর্ণ জনপদ গড়ে উঠেছে। বিশেষত ঐ এলাকায় খনিজ তেল ও গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হবার পর এটি ঘটেছে। এছাড়াও দেশটির উর্বর খামারভূমিগুলি বসতির জন্য খুলে দেওয়া হয়। ২০০০-এর দশকের শুরুতে এই অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা লা পাজকে ছাড়িয়ে বলিভিয়ার বৃহত্তম শহরে পরিণত হয়। ১৬শ শতক থেকে ১৯শ শতকের শুরু পর্যন্ত বলিভিয়া স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৮২৫ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৫২ সালে এখানে একটি রাজনৈতিক বিপ্লব ঘটে যার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। বিপ্লবী নেতারা আদিবাসী আমেরিকানদের অধিকতর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের প্রকল্প গ্রহণ করেন। সরকার তাদের ভোট দেবার সুযোগ দেন, এবং পল্লী এলাকাগুলিতে শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। বড় বড় জমিদারীগুলি ভেঙে দেয়া হয় এবং আদিবাসী আমেরিকান চাষীদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমি দেওয়া হয়। তবে এই সংস্কারগুলি বলিভিয়ার অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। পরবর্তী সরকারগুলি অর্থনীতির বড় অংশ বেসরকারীকরণের চেষ্টা করলেও এখনও বলিভিয়া সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্র। ইতিহাস রাজনীতি ডিপার্টমেন্ট ও প্রদেশসমূহ right|thumb|বলিভিয়ার ডিপার্টমেন্টসমূহের মানচিত্র বলিভিয়া মোট ৯টি ডিপার্মেন্টে (departamentos) বিভক্ত। এর রাজধানীগুলোকে বন্ধনীর মধ্যে দেখানো হয়েছে: Beni (ত্রিনিদাদ) Chuquisaca (সুক্রে) Cochabamba (Cochabamba) La Paz (লা পাজ) Oruro (Oruro) Pando (Cobija) Potosí (Potosí) Santa Cruz (সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা) Tarija (Tarija) ভূগোল right|thumb|Map of Bolivia from the CIA World Factbook. thumb|left|Uyuni thumb|left|Colours of Altiplano Boliviano বলিভিয়ার এলাকার ক্ষেত্রফল ১,০৯৮,৫৮০ বর্গকিলোমিটার। এলাকার দিক থেকে এটি পৃথিবীতে ২৮তম। CIA World Factbook. Retrieved from https://www.cia.gov/library/publications/the-world-factbook/rankorder/2147rank.html . ১৮৭৯ হতে বলিভিয়া একটি ভূবেষ্টিত (land-locked) দেশ। ঐ বছর চিলির সাথে প্রশান্ত মহাসাগরের যুদ্ধে বলিভিয়া উপকূলবর্তী আন্তোফাগাস্তা এলাকাটির দখল হারায়। তবে প্যারাগুয়ে নদীর মাধ্যমে বলিভিয়া অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত। বলিভিয়ার পরিবেশে ব্যাপক বৈচিত্র রয়েছে। পশ্চিমের পাহাড়ী এলাকা আন্দেজ পর্বতমালায় অবস্থিত। এখানে বলিভীয় আলতিপ্লানো এলাকা রয়েছে। পূর্বের সমতলভূমিতে আমাজন বনাঞ্চল এর চিরহরিৎ (??) বৃক্ষরাজি রয়েছে। বলিভিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশিখর হলো নেভাদো সাজামা যার উচ্চতা ৬৫৪২ মিটার। টিটিকাকা হ্রদ বলিভিয়া ও পেরুর সীমান্তে অবস্থিত। পৃথিবীর বৃহত্তম লবনাক্ত ভূমি সালার দি উইয়ুনি বলিভ্যার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ অবস্থিত। বলিভিয়ার বৃহৎ শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে লা পাজ, এল্‌ অল্টো, সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা, এবং কোচাবাম্বা। অর্থনীতি মাথাপিছু আয় ৪,৪৪৪ মা,ডলার জনসংখ্যা বলিভিয়ার মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লক্ষ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৬% সংস্কৃতি আরও দেখুন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:বলিভিয়া বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:স্পেনীয় ভাষী রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ আমেরিকান নেশনস ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:প্রাক্তন স্পেনীয় উপনিবেশ বিষয়শ্রেণী:স্থলবেষ্টিত দেশ বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
https://bn.wikipedia.org/wiki/বসনিয়া_ও_হার্জেগোভিনা
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা (বসনীয় ও ক্রোয়েশীয় ভাষায়: Bosna i Hercegovina, সার্বীয় ভাষায়: Босна и Херцеговина বস্‌না ই খ়ের্ত্‌সেগভ়িনা) ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে বলকান উপদ্বীপে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। অতীতে এটি যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্রের একটি অংশ ছিল। ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। এর পরপরই বসনীয় মুসলমান, ক্রোয়েশীয় ও সার্বীয় জাতির লোকদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৫ সালে যুদ্ধ শেষে সার্বীয়রা দেশের ৪৯% এলাকা দখলে সক্ষম হয় এবং এর নাম দেয় সার্ব প্রজাতন্ত্র। বসনীয় ও ক্রোয়েশীয়রা দেশের বাকী অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয় যার নাম বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ফেডারেশন। এই ফেডারেশন ও সার্ব প্রজাতন্ত্র একত্রে বর্তমানে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা রাষ্ট্র নামে পরিচিত। তবে বাস্তবে দেশটির বসনীয়, ক্রোয়েশীয় ও সার্বীয় জাতির লোকদের মধ্যে প্রবল বিভাজন ও বিদ্বেষ বর্তমান, যদিও এটি নিরসনের জন্য বহুবার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। যে এলাকাটি এখন বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, সেখানে অন্তত উচ্চ প্যালিওলিথিক যুগ থেকে মানুষ বসবাস করছে। কিন্তু প্রমাণ থেকে জানা যায় যে নিওলিথিক যুগে, বুটমির, কাকাঞ্জ এবং ভুচেডোল সংস্কৃতির সময়কালে এখানে স্থায়ী মানব বসতি স্থাপন করা হয়েছিল। প্রথম ইন্দো-ইউরোপীয়দের আগমনের পর, এলাকাটি বেশ কয়েকটি ইলিরিয়ান ও কেল্টিক সভ্যতার দ্বারা জনবহুল ছিল। সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে দেশটির একটি সমৃদ্ধ ও জটিল ইতিহাস রয়েছে। দক্ষিণ স্লাভিক মানুষের পূর্বপুরুষরা যারা আজ এই এলাকায় জনবসতি করেছে তারা ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শতকের মধ্যে এসেছিলেন। ১২ শতকে বসনিয়ার ব্যানেট অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৪ শতকের মধ্যে এটি বসনিয়া রাজ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ১৫ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, এটি অটোমান সাম্রাজ্যের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছিল, যার শাসনের অধীনে এটি ১৯ শতকের শেষ পর্যন্ত ছিল। অটোমানরা এই অঞ্চলে ইসলাম নিয়ে আসে এবং দেশের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির অনেকটাই পরিবর্তন করে। ১৯ শতকের শেষ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত, দেশটি অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান রাজতন্ত্রের সাথে যুক্ত ছিল। আন্তঃযুদ্ধের সময়, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ছিল যুগোস্লাভিয়া রাজ্যের অংশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, নবগঠিত সমাজতান্ত্রিক ফেডারেল রিপাবলিক অফ যুগোস্লাভিয়াতে এটিকে পূর্ণ প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯২ সালে, যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ার পর, প্রজাতন্ত্র স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এর পরে বসনিয়ান যুদ্ধ শুরু হয়, যেটি ১৯৯৫ সালের শেষ পর্যন্ত চলে এবং ডেটন চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে। আজ, দেশটি তিনটি প্রধান জাতি গোষ্ঠীর আবাসস্থল, দেশেে "সংবিধান জনগণ" মনোনিত সংবিধান। বসনিয়াকরা তিনটির মধ্যে সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী, সার্বরা দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং ক্রোয়াটরা তৃতীয় বৃহত্তম৷  ইংরেজিতে, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সকলকে আদিবাসী, জাতি নির্বিশেষে বসনিয়ান বলা হয়। সংখ্যালঘু শ্রেণির যারা সংবিধানের অধীনে "অন্যান্য" হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ইহুদি, রোমানিয়ান, আলবেনিয়ান, মন্টেনিগ্রিন, ইউক্রেনীয় এবং তুর্কি। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা রয়েছে এবং তিনটি প্রধান জাতিগোষ্ঠীর প্রত্যেকের একজন সদস্য নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের রাষ্ট্রপতি পদ রয়েছে। যাইহোক, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত, কারণ দেশটি মূলত বিকেন্দ্রীকৃত। এটি দুটি স্বায়ত্তশাসিত সত্ত্বা নিয়ে গঠিত—ফেডারেশন অফ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং রিপাবলিকা শ্রপস্কা —এবং একটি তৃতীয় ইউনিট, ব্র্যাকো জেলা, যেটি নিজস্ব স্থানীয় সরকার দ্বারা শাসিত। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার ফেডারেশন আরও ১০টি ক্যান্টন নিয়ে গঠিত। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং মানব উন্নয়নে ৭৩তম স্থানে রয়েছে। এর অর্থনীতি শিল্প এবং কৃষি দ্বারা প্রভাবিত, পর্যটন এবং পরিষেবা খাত দ্বারা অনুসরণ করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পর্যটন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে একটি সামাজিক-নিরাপত্তা এবং সর্বজনীন-স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা রয়েছে এবং প্রাথমিক- এবং মাধ্যমিক-স্তরের শিক্ষা টিউশন-মুক্ত।  ব্যুৎপত্তি "বসনিয়া" নামের একটি ফর্মের প্রথম সংরক্ষিত ব্যাপকভাবে স্বীকৃত উল্লেখ রয়েছে De Administrando Imperio, একটি রাজনৈতিক-ভৌগলিক হ্যান্ডবুক যা বাইজান্টাইন সম্রাট আইসিইন্স আইসিড  ১০ শতকের মাঝামাঝি (৯৪৮ এবং ৯৫২ এর মধ্যে) "বোসোনা" (Βοσώνα) এর "ছোট ভূমি" (χωρίον গ্রীক) বর্ণনা করে, যেখানে সার্বরা বাস করে।  বসনিয়াকে DAI (χωριον βοσονα, বসনিয়ার ছোট ভূমি) বাপ্তিকৃত সার্বিয়ার একটি অঞ্চল হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।. এই নামটি বসনিয়ান হার্টল্যান্ডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বসনা নদীর হাইড্রোনিম থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়। ফিলোলজিস্ট এন্টন মায়ারের মতে, বোসনা নামটি ইলিরিয়ান *"বাস-আন-আস" থেকে এসেছে, যা পরবর্তীতে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় মূল bʰegʷ- থেকে উদ্ভূত হতে পারে।  অর্থ "বহমান জল". ইংরেজ মধ্যযুগীয় উইলিয়াম মিলার এর মতে, বসনিয়ায় স্লাভিক বসতি স্থাপনকারীরা "ল্যাটিন উপাধিকে অভিযোজিত করেছিল ... বসন্তে, স্রোতকে বোসনা এবং নিজেদেরকে বসনিয়াক বলে অভিহিত করে তাদের নিজস্ব বাগধারায়". হার্জেগোভিনা নামের অর্থ "হারজোগের [ভূমি]", এবং "হার্জোগ" জার্মান শব্দ "ডিউক" থেকে এসেছে". এটি ১৫ শতকের বসনিয়ান ম্যাগনেট, স্টেপান ভিউসিস কোসাকা-এর উপাধি থেকে উদ্ভূত, যিনি ছিলেন "হাম অ্যান্ড দ্য কোস্টের হেরসেগ [হেরজোগ]" (১৪৪৮)। হাম (পূর্বে বলা হত জাক্লুমিয়া) একটি প্রাথমিক মধ্যযুগীয় রাজত্ব যা ১৪ শতকের প্রথমার্ধে বসনিয়ান বানাতে দ্বারা জয় করা হয়েছিল।  অটোমানরা যখন এই অঞ্চলের শাসনভার গ্রহণ করে, তখন তারা একে হার্জেগোভিনার সানজাক (হার্সেক) বলে।  এটি বসনিয়া আইলেট পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯২-এ স্বাধীনতার প্রাথমিক ঘোষণার সময়, দেশটির সরকারী নাম ছিল বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা প্রজাতন্ত্র, কিন্তু ১৯৯৫ ডেটন চুক্তির অনুসরণে, এটি চুক্তি এবং নতুন চুক্তি  অফিসিয়াল নাম পরিবর্তন করে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা করা হয়।The World Factbook (Washington DC: National Foreign Assessment Center, Central Intelligence Agency, 2013), 90-93. ইতিহাস গ্রন্থপঞ্জি তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ স্রেব্রেনিচা গণহত্যা বার্ষিকীতে সার্ব প্রধানমন্ত্রীকে ধাওয়া বিষয়শ্রেণী:ইউরোপের রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:১৯৯২-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:ইউরোপ কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ভূমধ্যসাগরীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
বোত্সওয়ানা
https://bn.wikipedia.org/wiki/বোত্সওয়ানা
REDIRECTবতসোয়ানা
ব্রাজিল
https://bn.wikipedia.org/wiki/ব্রাজিল
{{Infobox country | conventional_long_name = সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী ব্রাজিল | native_name = | common_name = ব্রাজিল | image_flag = Flag of Brazil.svg | alt_flag = | image_coat = Coat of arms of Brazil.svg | alt_coat = | symbol_type = সীলমোহর | national_motto = | national_anthem = {{vunblist |ইনো নাসিওনাউ ব্রাজিলিয়েরু"| |noicon|center}} | other_symbol_type = জাতীয় সীল | other_symbol = | image_map = BRA orthographic.svg | alt_map = | map_caption = | image_map2 = | capital = 20px ব্রাসিলিয়া | latd = 15 | latm = 47 | latNS = S | longd = 47 | longm = 52 | longEW = W | largest_city = 15px সাও পাওলো | official_languages = পর্তুগিজ | ethnic_groups = | ethnic_groups_year = ২০১০ | demonym = ব্রাজিলীয় | government_type = ফেডারেল রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র | leader_title1 = রাষ্ট্রপতি | leader_name1 = লুইজ ইনাসিউ লুলা দা সিলভা | leader_title2 = উপ-রাষ্ট্রপতি | leader_name2 = হ্যামিল্টন মুরাও | leader_title3 = | leader_name3 = (পিএমডিবি) | leader_title4 = সেনেটের সভাপতি | leader_name4 = (পিএমডিবি) | leader_title5 = সুপ্রিম ফেডারেল কোর্টের সভাপতি | leader_name5 = Ricardo Lewandowski | legislature = জাতীয় কংগ্রেস | upper_house = ফেডারেল সেনেট | lower_house = ডেপুটি চেম্বার | sovereignty_type = স্বাধীনতা | sovereignty_note = কিংডম অফ পর্তুগালের কাছ থেকে (বর্তমানে পর্তুগাল) | established_event1 = ঘোষণা | established_date1 = ৭ সেপ্টেম্বর ১৮২২ | established_event2 = স্বীকৃতি লাভ | established_date2 = ২৯ আগস্ট ১৮২৫ | established_event3 = প্রজাতন্ত্র | established_date3 = ১৫ নভেম্বর ১৮৮৯ | established_event4 = বর্তমান সংবিধান | established_date4 = ৫ অক্টোবর ১৯৮৮ | area_rank = ৫ম | area_magnitude = 1 E12 | area_km2 = 8515767 | area_sq_mi = 3287597 | percent_water = 0.65 | area_label = মোট | population_estimate = 212,688,125 | population_estimate_year = 2022 | population_estimate_rank = 6th | population_density_km2 = 25 | population_density_sq_mi = 63 | population_density_rank = 199th | GDP_PPP = $3.389 trillion | GDP_PPP_year = 2018 | GDP_PPP_rank = 8th | GDP_PPP_per_capita = $16,199 | GDP_PPP_per_capita_rank = 81th | GDP_nominal = $2.139 trillion | GDP_nominal_year = 2018 | GDP_nominal_rank = 9th | GDP_nominal_per_capita = $10,224 | GDP_nominal_per_capita_rank = 65th | Gini = 51.3 | Gini_year = 2015 | Gini_change = decrease | Gini_ref = | Gini_rank = | HDI = 0.754 | HDI_year = 2015 | HDI_change = steady | HDI_ref = | HDI_rank = 79th | currency = রিয়েল (R$) | currency_code = BRL | time_zone = BRT | utc_offset = −২ থেকে −৫ | time_zone_DST = BRST | utc_offset_DST = −২ থেকে −৫ | DST_note = | antipodes = | date_format = dd/mm/yyyy (CE) | drives_on = right | calling_code = +৫৫ | iso3166code = | cctld = .br | footnote_a = Multiracial. | languages_type = | languages2_type = | leader_name6 = | leader_name7 = | leader_name8 = | leader_name9 = | FR_total_population_estimate_year = | FR_foot = | FR_total_population_estimate = | FR_total_population_estimate_rank = | FR_metropole_population_estimate_rank = }} সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী ব্রাজিলAs on for example the national website. (, বা হেপুব্লিকা ফ়েদেরাচিভ়া দু ব্রাজ়িউ ), যা প্রচলিতভাবে ব্রাজিল (, বা ব্রাজিউ) নামে পরিচিত, হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র। এছাড়াও জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। ৮,৫১৪,৮৭৭ বর্গকিলোমিটার (৫,২৯০,৮৯৯ বর্গমাইল) আয়তনের এই দেশটিতে বসবাসকৃত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি। এটি আমেরিকার একমাত্র পর্তুগিজভাষী দেশ, এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ পর্তুগিজভাষী রাষ্ট্র। ব্রাজিলে পূর্বভাগ আটলান্টিক মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। যার উপকূলীয়ভাগের দৈর্ঘ্য প্রায় । ব্রাজিলের উত্তরে রয়েছে ভেনেজুয়েলা, গায়ানা, সুরিনাম, ও ফ্রান্সের সামুদ্রিক দেপার্ত্যমঁ ফরাসি গায়ানা। এছাড়াও এর উত্তর-পশ্চিমভাগে কলম্বিয়া; পশ্চিমে বলিভিয়া ও পেরু; দক্ষিণ-পশ্চিমে আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে, এবং সর্ব-দক্ষিণে দক্ষিণে উরুগুয়ে অবস্থিত। ব্রাজিলীয় সীমানায় আটলান্টিক মহাসাগরের বেশকিছু দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে ফের্নান্দু জি নরোনিঁয়া, রোকাস অ্যাটল, সেন্ট পিটার ও সেন্ট পল রকস, এবং ত্রিনিদাজি এ মার্চিঁ ভাজ। ব্রাজিলের সাথে চিলি ও ইকুয়েডর ব্যতীত দক্ষিণ আমেরিকার সকল দেশেরই সীমান্ত-সংযোগ রয়েছে। ১৫০০ সালে পর্তুগিজ অভিযাত্রী পেদ্রু আলভারেজ কাবরাউয়ের ব্রাজিলে এসে পৌঁছানোর পর থেকে ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্রাজিল ছিলো একটি পর্তুগিজ উপনিবেশ। ১৮১৫ সালে এটি যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, ও আলগ্রেভিজের সাথে একত্রিত হয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা গঠন করে। মূলত ১৮০৮ সালেই ব্রাজিলের ‘পর্তুগিজ উপনিবেশ’ পরিচয়ে ফাটল ধরে, কারণ নেপোলিয়নের পর্তুগাল আক্রমণের রেশ ধরে পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের কেন্দ্র লিসবন থেকে ব্রাজিলের রিও দি জানেইরুতে সরিয়ে নওয়া হয়। ১৮২২ সালে ব্রাজিল, পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। প্রাথমিক ভাগে এটি ব্রাজিলীয় সাম্রাজ্য হিসেবে সার্বভৌমত্ব অর্জন করলেও ১৮৮৯ সাল থেকে এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে শাসিত হয়ে আসছে। ১৮২৪ সালে ব্রাজিলের প্রথম সংবিধান পাশ হওয়ার পর থেকে দেশটিতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সরকার ব্যবস্থা চলে আসছে, যা বর্তমানে কংগ্রেস নামে পরিচিত। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ব্রাজিল একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র। একটি ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট, ২৬টি প্রদেশ, ও ৫,৫৬৪টি মিউনিসিপ্যালিটি নিয়ে এর যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়েছে। ক্রয়ক্ষমতা সমতা ও মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের"World Development Indicators database" (PDF file), World Bank, 7 October 2009. ভিত্তিতে ব্রাজিলের অর্থনীতি বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতি। ব্রাজিলের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। এর অর্থনৈতিক সংস্কার আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশটিকে একটি নতুন পরিচিতি দিয়েছে। ব্রাজিল জাতিসংঘ, জি-২০, সিপিএলপি, লাতিন ইউনিয়ন, অর্গানাইজেশন অফ ইবেরো-আমেরিকান স্টেটস, মার্কুসাউ ও ইউনিয়ন অফ সাউথ আমেরিকান নেশন্স, এবং ব্রিক দেশগুলোর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ব্রাজিল জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশের দিকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান একটি দেশ হিসেবে বিবেচিত। ব্রাজিলে বিভিন্ন প্রকারের প্রকৃতি সংরক্ষণকেন্দ্র ও অভয়ারণ্য বিদ্যমান। এছাড়াও দেশটি সমৃদ্ধ খনিজসম্পদের অধিকারী, যা বিভিন্ন সময়ে এর অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। ব্রাজিলে বিভিন্ন জাতের লোকের বাস। আদিবাসী আমেরিকান, পর্তুগিজ বসতিস্থাপক এবং আফ্রিকান দাসদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ব্রাজিলের জাতিসত্তাকে দিয়েছে বহুমুখী রূপ। ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র পর্তুগিজ উপনিবেশ। ১৬শ শতকে পর্তুগিজদের আগমনের আগে বহু আদিবাসী আমেরিকান দেশটির সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ১৬শ শতকের মধ্যভাগে পর্তুগিজেরা কৃষিকাজের জন্য আফ্রিকা থেকে দাস নিয়ে আসা শুরু করে।Boxer, p. 110Skidmore, p. 34. এই তিন জাতির লোকেদের মিশ্রণ ব্রাজিলের সংস্কৃতি, বিশেষ করে এর স্থাপত্য ও সঙ্গীতে এমন এক ধরনের স্বাতন্ত্র্য এনেছে কেবল ব্রাজিলেই যার দেখা মেলে। ১৯শ শতকের শেষ দিকে ও ২০শ শতকের গোড়ার দিকে ব্রাজিলে আগমনকারী অন্যান্য ইতালীয়, জার্মান, স্পেনীয়, আরব, ও জাপানি অভিবাসীরাও ব্রাজিলের সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছে। মিশ্র সংস্কৃতির দেশ হলেও কিছু কিছু আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ব্রাজিলীয়, ইউরোপ ও এশিয়া থেকে আগত অ-পর্তুগিজ অভিবাসী, এবং আদিবাসী আমেরিকানদের অংশবিশেষ এখনও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও রীতিনীতি ধরে রেখেছে। তবে পর্তুগিজ সংস্কৃতির প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। পর্তুগিজ এখানকার প্রধান ভাষা এবং রোমান ক্যাথলিক প্রধান ধর্ম। ব্যুৎপত্তি ব্রাজিল নামটির ব্যুৎপত্তি পরিষ্কার নয়। ঐতিহ্যগতভাবে ধারণা করা হয় ‘ব্রাজিল’ নামটি এসেছে ব্রাজিলউড থেকে, যা এক প্রকার কাঠ উৎপাদনকারী গাছ। ১৬ শতকের দিকে ব্রাজিল থেকে নাবিকরা ইউরোপে এই কাঠ রপ্তানি করতো। Eduardo Bueno, Brasil: uma História (São Paulo: Ática, 2003; ), p.36. পর্তুগিজ ভাষায় ব্রাজিলউডকে ‘পাউ-ব্রাজিউ’ (pau-brasil) নামে ডাকা হয়, আর ‘ব্রাজিউ’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি হয়েছে ‘জলন্ত কয়লার মতো লাল’ শব্দগুচ্ছ থাকে। লাতিন ভাষায় ‘ব্রাজা’ (brasa) শব্দের অর্থ কয়লা এবং শেষের ‘-il’ উপসর্গটি লাতিন ‘-iculum’ বা ‘-ilium’ থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।CNRTL – Centre National de Ressources Textuelles et Lexicales Michaelis – Moderno Dicionário da Língua Portuguesa iDicionário Aulete পরবর্তীতে পর্তুগিজ ‘ব্রাজিউ’ শব্দটি থেকে ইংরেজিতে ব্রাজিল নামটি এসেছে। ব্যুৎপত্তির এই তত্ত্বটি ব্রাজিল ও পর্তুগালের স্কুলগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে পড়ানো হয়। ব্রাজিলীয় পণ্ডিত জুসে আদেলিনু দা সিলভা আজেভেদুর স্বীকার্য অনুসারে ‘ব্রাজিল’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিস্থল আরও অনেক পুরোনো এবং এর উৎপত্তি হয়েছে মূলত কেল্টিক বা ফিনিসিয়ীয় থেকে। ফিনিসিয়ীরা কেল্টিক দ্বীপগুলোর খনি থেক প্রাপ্ত এক প্রকার খনিজ দ্রব্য থেকে উৎপন্ন লাল রঞ্জন ইবেরিয়া থেকে আয়ারল্যান্ডে রপ্তানি করতো। "República Federativa do Brasil." Consulted on October 9, 2010. আয়ারল্যান্ডীয় পুরাণে হাই-ব্রাজিল নামে পশ্চিমে অবস্থিত একটি দ্বীপের কথা উল্লেখ করা রয়েছে। টলকিনসহ কারও কারও মতে এই দ্বীপটির নাম থেকেই ‘ব্রাজিল’ শব্দটির উৎপত্তি।[Tolkien, J. R. R., On Fairy Stories, (London: George Allen & Unwin, 1964) p. 13. ],- Tolkien refers to the theory as well established in his 1947 essay. ষোড়শ শতকে বিভিন্ন পণ্ডিতগণও এই তত্ত্বটিকে সমর্থন করেছেন। দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসী ভাষা গুয়ারানিতে ব্রাজিলকে ‘পিন্দুরামা’ নামে ডাকা হয়। অতীতে ব্রাজিল অঞ্চলটি আদিবাসীদের কাছে এই নামেই পরিচিত হতো। পিন্দুরামা শব্দের অর্থ ‘তাল গাছের ভূমি’। ইতিহাস পর্তুগিজ উপনিবেশ থাম্ব|পেড্রো দ্বিতীয়, ১৮৩১ থেকে ১৮৮৯ সালের মধ্যে ব্রাজিলের সম্রাট। ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে পর্তুগিজ অভিযাত্রী পেদ্রু আলভারেজ কাবরাউ পরিচালিত একটি পর্তুগিজ নৌবহর বর্তমানের ব্রাজিলে এসে পৌঁছায় এবং পর্তুগালের রাজা প্রথম মানুয়েলের নামে ভূখণ্ডটিতে পর্তুগালের অধিকার দাবি করে।Boxer, p. 98. সে সময় পর্তুগিজরা ব্রাজিলে বসবাসরত প্রস্তর যুগের আদিবাসীদের সাথে পরিচিত হয়। এসকল আদিবাসীদের বেশিরভাগ-ই কথা বলতো তুপি-গুয়ারানি পরিবারের বিভিন্ন ভাষায়, এবং আদিবাসী গোত্রগুলো পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত ছিল।Boxer, p. 100. ১৫৩২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাজিলে প্রথম পর্তুগিজ উপনিবেশটি গোড়াপত্তন হয়। তবে ১৫৩৪ সালে ডম তৃতীয় জোয়াউঁ কর্তৃক সমগ্র অঞ্চলটি ১২টি পৃথক বংশানুক্রমিক নেতৃত্বে ভাগ করে দেওয়ার মাধ্যমে কার্যকরভাবে ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।Boxer, pp. 100–101.Skidmore, p. 27. কিন্তু পরবর্তীতে এই প্রথাটি সমস্যাপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়, এবং ১৫৪৯ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগালের রাজা পুরো উপনিবেশ প্রশাসনের জন্য একজন গভর্নর-জেনারেল নিয়োগ দেন।Boxer, p. 101. পর্তুগিজরা কিছু আদিবাসী গোত্রকে নিজেদের দলে নেয়।Boxer, p. 108 অপরদিকে বাকিদেরকে তঁরা দাস হিসেবে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করে। এছাড়াও কিছু কিছু গোত্রকে দীর্ঘ যুদ্ধে হারিয়ে ও রোগ বিস্তারের মাধ্যমে নিঃশেষ করে দেয়। ইউরোপীয় রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় সেসকল আদিবাসীদের জানা ছিল না, তাই খুব সহজেই তারা রোগাক্রান্ত হয়।Boxer, p. 102.Skidmore, pp. 30, 32. ১৬শ শতকের মধ্যভাগে ঔপনিবেশিকেরা উত্তর-পূর্ব উপকূলের ভালো মাটি ও ক্রান্তীয় জলবায়ুর সুযোগ নিয়ে সেখানে চিনির প্ল্যান্টেশন স্থাপন করে। সে সময় চিনি ছিল ব্রাজিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য।Skidmore, p. 36. আন্তজার্তিক বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদারSkidmore, pp. 32–33. সাথে তাল মিলিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পর্তুগিজরা আফ্রিকান দাসদেরও ব্রাজিলে নিয়ে আসা শুরু করে। thumb|left|260px|ব্রাজিলীয় চিত্রশিল্পী ভিক্তর মিরিইলেসের অঙ্কিত ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ব্রাজিলের প্রথম খ্রিষ্ঠীয় গণ-নৈশভোজের চিত্র ফরাসিদের সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে পর্তুগিজরা তাদের দখলকৃত ভূখণ্ড ধীরে ধীরে আরও বিস্তৃত করতে থাকে। ১৯৫৭ সালে তারা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত রিউ দি জানেইরু ও ১৬১৫ সালে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাউঁ লুইসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।Bueno, pp. 80–81. ১৬৬৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তারা আমাজন অরণ্য অভিমূখে অভিযান শুরু করে ও ঐ অঞ্চলে অবস্থিত ব্রিটিশ ও ওলন্দাজ উপনিবেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।Facsimiles of multiple original documents relating about the events in Brazil in the 17th century that led to a Dutch influence and their final defeat নিয়ন্ত্রণ লাভের পর পর্তুগিজরা অঞ্চলগুলোতে নিজেদের গ্রাম ও দুর্গ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণকে আরও সুসংহত করে।Calmon, p. 294. ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে তাদের এ অভিযান সর্ব দক্ষিণে বিস্তৃত হয়। সেখানে রিও দে লা প্লাতা নদীর তীরে তারা সাক্রামেন্তো শহরের গোড়াপত্তন করে, বর্তমানে যা উরুগুয়ের অংশ।Bueno, p. 86. ১৭ শতকের শেষভাগে ব্রাজিলের চিনি রপ্তানির পরিমাণ কমতে থাকে,Boxer, p. 164. তবে ১৬৯০-এর দশকে ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্ব ভাগে বেশ কিছু স্বর্ণখনি আবিষ্কৃত হয়। পর্তুগিজ ভাষায় বান্দিরাঞ্চিস (Bandeirantes) নামে পরিচিত এই পর্তুগিজ স্কাউটরা বর্তমান ব্রাজিলের মাতু গ্রসো ও গোইয়াস অঞ্চলে স্বর্ণখনির সন্ধান পান। তৎকালীন সময়ে জায়গাটির নামকরণ করা হয় মিনাজ জেরাইস (বাংলা অর্থ ‘সাধারণ খনি’), যা বর্তমানে ব্রাজিলের একটি প্রদেশ। স্বর্ণখনি আবিস্কারের ফলে চিনি রপ্তানি কমে যাওয়া থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে পর্তুগিজ উপনিবেশ রক্ষা পায়।Boxer, pp. 168, 170. এছাড়াও স্বর্ণখনিতে কাজের উদ্দেশ্যে সমগ্র ব্রাজিলসহ পর্তুগাল থেকে হাজার হাজার অভিবাসী এ অঞ্চলে পাড়ি জমায়।Boxer, p. 169. এই সময় দেশের অভ্যন্তরভাগে বসতি স্থাপিত হয় এবং অর্থনীতি ও জনসংখ্যার প্রধান কেন্দ্র দেশের উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পূর্ব অংশে স্থানান্তরিত হয়। স্পেনীয় ঔপনিবেশিক শাসকগণ এ অঞ্চলে পর্তুগিজ উপনিবেশের সম্প্রসারণে বাঁধা প্রদান করে আসছিল। ১৪৯৪ সালে স্পেন অধিকৃত ভূখণ্ডে পর্তুগিজদের উপনিবেশ সম্প্রসারণ রোধে উভয়পক্ষের মধ্যে তোর্দিজিলাস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭৭ সালে স্পেনীয়রা পর্তুগিজ অধিকৃত বান্দা ওরিয়েন্টাল নিজেদের দখলে আনতে সমর্থ হয়। যদিও পরবর্তীকালে এ বিজয় নিষ্ফল বলে প্রতীয়মান হয়, কারণ ঐ বছরেই পর্তুগিজ ও স্পেনীয় সাম্রাজ্যের ভেতর প্রথম সান লিদিফোনসো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি অনুসারে এ অঞ্চলের পর্তুগিজদের সম্প্রসারিত সকল অঞ্চলে পর্তুগালের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হয়। বর্তমান ব্রাজিলের সীমানাও মূলত এই সম্প্রসারিত ভূখণ্ডের সীমানার প্রতি লক্ষ্য রেখেই নির্ধারিত হয়েছে।Boxer, p. 207. ১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজ রাজ পরিবার, পর্তুগালে অনুপ্রবেশকৃত নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীকে তাড়ানোর চেষ্টা করছিল। সে সময় নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী পর্তুগালসহ মধ্য ইউরোপের বেশিরভাগ স্থানেই নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছিল। প্রতিকুল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে রাজ পরিবার নিজেদেরকে ব্রাজিলের রিউ দি জানেইরুতে সরিয়ে নেয়। ফলশ্রুতিতে এটি সম্পূর্ণ পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।Boxer, p. 213. ১৮১৫ সালে ডম ষষ্ঠ জোয়াউঁ, তার অকর্মক্ষম মায়ের পক্ষে রিজেন্ট হিসেবে ব্রাজিলকে পর্তুগিজ উপনিবেশ থেকে উন্নীত করে পর্তুগালের সাথে একত্রিত একটি সার্বভৌম যুক্তরাজ্যীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম হয় ইউনাইটেড কিংডম অফ পর্তুগাল, ব্রাজিল, অ্যান্ড দি আলগ্রাভিস। ১৮০৯ সালে পর্তুগিজরা ফরাসি গায়ানা দখল করে (যদিও পরবর্তীকালে ১৮১৭ সালে তা ফ্রান্সের কাছে ফিরিয়ে দেয়)।Bueno, p. 145. এছাড়ারও ১৮১৬ সালে ইস্টার্ন স্ট্রিপও তারা নিজেদের দখলে নেয়, ও কিসপ্লাতিনা নামে নামকরণ করে।Calmon (2002), p. 191. কিন্তু ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাজিল এ অঞ্চলটির ওপর তার নিয়ন্ত্রণ হারায়, এবং অঞ্চলটিতে উরুগুয়ে নামের একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়।Barman (1999), pp.18, 27 স্বাধীনতা ও সাম্র্যাজ্য thumb|260px|১৮২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রথম পেদ্রু কর্তৃক ব্রাজিলের স্বাধীনতার ঘোষণা থাম্ব|341x341পিক্সেল|1888 সালে ব্রাজিলে দাসত্ব বিলুপ্ত করার আইন। ১৮২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজা ষষ্ঠ জোয়াউঁ ইউরোপে ফিরে যান, ও যাবার পূর্বে তার বড় ছেলে পেদ্রু জি কান্তারাকে ব্রাজিলের রিজেন্ট হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করেন।Lustosa, pp. 109–110 পরবর্তীতে পর্তুগিজ সরকার ব্রাজিলকে পুনরায় পর্তুগিজ উপনিবেশে পরিণত করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ১৮০৮ সাল থেকে চলে আসা অঞ্চলটির নিজেদের অর্জন থেকে বঞ্চিতLustosa, pp. 117–119 ব্রাজিলীয়রা পুরনায় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা করে। রিজেন্ট পেদ্রু পর্তুগালে ফিরতে অস্বীকৃত জানান ও ব্রাজিলীয়দের দাবির পক্ষে অবস্থান নেন। ১৮২২ সালের ৭ নভেম্বর পেদ্রু আনুষ্ঠানিকভাবে পর্তুগালের কাছে থেকে ব্রাজিলের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।Lustosa, pp. 150–153 একই বছরের ১২ অক্টোবর ডম পেদ্রু ব্রাজিলের প্রথম সম্রাট হিসাবে স্থলাভিষিক্ত হন, এবং ১৮২২ সালের ১ ডিসেম্বর সিংহাসনে আরোহণ করেন।Vianna, p. 418 এর মাধ্যমেই ব্রাজিলে ৩২২ বছর ধরে চলে আসা পর্তুগিজ শাসনের অবসান ঘটে। তৎকালীন সময়ে ব্রাজিলীয়রা রাজতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন, এবং গণতন্ত্র ততোটা জনপ্রিয় ছিল না।Hendrik Kraay apud Lorenzo Aldé, Revista de História da Biblioteca Nacional, issue 50, year 5 (Rio de Janeiro: SABIN, 2009), p. 20Sérgio Buarque de Holanda, O Brasil Monárquico: o processo de emancipação, 4th ed. (São Paulo: Difusão Européia do Livro, 1976), p. 403 স্বাধীনতার ঘোষণার ফলস্বরূপ ব্রাজিলের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়, যা ব্রাজিলের উত্তর, উত্তর-পূর্ব, ও দক্ষিণাঞ্চলসহ পর্তুগিজ অধিকৃত প্রায় সম্পূর্ণ অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়েছিল।Diégues 2004, pp. 168, 164, 178 অবেশেষে ১৮২৪ সালের ৮ মার্চ পর্তুগিজ সৈন্যরা ব্রাজিলীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করে,Diégues 2004, pp. 179–180 এবং ১৮২৫ সালের ২৯ আগস্ট পর্তুগাল ব্রাজিলের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়।Lustosa, p. 208 ১৮২৪ সালের ১৫ মার্চ ব্রাজিলের প্রথম সংবিধানটি জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করার পূর্বে এটি মিউনিসিপ্যালিটি কাউন্সিলগুলোর অনুমোদন লাভ করে।Vianna, p. 140José Murilo de Carvalho, A Monarquia brasileira (Rio de Janeiro: Ao Livro Técnico, 1993), p. 23Calmon (2002), p. 189Vainfas, p. 170 ১৮৩১ সালের ১ এপ্রিল প্রথম পেদ্রু সিংহাসন ছেড়ে দেন ও তার কন্যার রাজত্ব পুনরায় দাবি করার উদ্দেশ্যে পর্তুগালে পাড়ি জমান। যাবার পূর্বে তিনি তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে নির্বাচিত করে যান, যিনি পরবর্তীতে ডম দ্বিতীয় পেদ্রু নামে সিংহাসনে আরোহণ করেন।Lyra (v.1), p. 17 যেহেতু নতুন সম্রাটের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত সাবালকত্ব অর্জনের জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল, তাই এ সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার উদ্দেশ্যে রিজেন্সি পদ্ধতি চালু করা হয় ও সম্রাটের পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রিজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়।Carvalho 2007, p. 21 রিজেন্সি চালুর পর ব্রাজিলের বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্রোহে রূপ নেয়। এটি রিজেন্সি ব্যবস্থাটিকে বেশ অস্থিতিশীল করে তোলে ও রিজেন্টদের শাসনে ব্রাজিল প্রায় অরাজক একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়।Miriam Dohlnikoff, Pacto imperial: origens do federalismo no Brasil do século XIX (São Paulo: Globo, 2005), p. 206 বিদ্রোহের ফলস্বরূপ কিছু কিছু প্রদেশ ব্রাজিল থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের স্বাধীন প্রজাতন্ত্র গঠন করে, যদিও এসকল গোষ্ঠীর বিদ্রোহটি সত্যিকার অর্থে রাজতন্ত্রের বিপক্ষে ছিল না।Carvalho (2007), p. 43Souza, p. 326 তবে এসব কিছুই বলবৎ ছিল যতোদিন দ্বিতীয় পেদ্রু নিজে রাষ্ট্রভার গ্রহণে অসমর্থ ছিলেন।Janotti, pp. 171–172 এমতাবস্থায় রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় পেদ্রুর আইনগত সাবালকত্ব অর্জনের বয়স কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়, এবং তিনি শাসনভার গ্রহণ করেন। ১৪ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণের পর তিনি এক টানা ৫৮ বছর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার রাজত্বকালে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকার পাশাপাশি ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নও সাধিত হয়।Munro, p. 273 thumb|right|260px|ওয়ার অফ দ্য ট্রিপল অ্যালায়েন্সের যুদ্ধে ব্রাজিলীয় বাহিনীর (নীল পোশাক পরিহিত) সাথে প্যারাগুয়েইয়ান সেনাবাহিনীর (কিছু লাল শার্ট পরিহিত ও বাকীরা খালি গায়ে) যুদ্ধ দ্বিতীয় পেদ্রুর ৫৮ বছরের শাসনামলে ব্রাজিল তিনটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধে জয়লাভ করে। যুদ্ধগুলো ছিল প্লেটাইন যুদ্ধ, উরুগুয়েইয়ান যুদ্ধ, এবং ওয়ার অফ ট্রিপল অ্যালায়েন্স।Lyra (v.1), pp. 164, 225, 272 এছাড়াও পেদ্রুর শাসনামলেই ব্রাজিল রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হয়। মূলত সফল নির্বাচন ও স্বাধীন গণমাধ্যমের ফলেই এ অর্জন সম্ভব হয়।Carvalho (2007), pp. 9, 222 এই ৫৮ বছরের শাসনামলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনটি ছিল দাস প্রথার বিলোপ সাধন। ১৮৫০ সালে আন্তর্জাতিকভাবে দাস পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। এর পরেই ব্রাজিল ধীরে ধীরে দাস প্রথা বিলোপের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে,Lyra (v.1), p. 166 ও শেষ পর্যন্ত ১৮৮৮ সালে সম্পূর্ণরূপে দাস প্রথার বিলোপ সাধিত হয়।Lyra (v.3), p. 62 অবশ্য স্বাধীনতার পর থেকেই ব্রাজিলে দাসদের সংখ্যা ধীরে কমতে শুরু করেছিল। ১৮২৩ সালে মোট জনগণের ২৩% ছিল দাস, আর ১৮৮৭ সালে এই হার নেমে আসে মাত্র ৫%-এ।Vainfas, p. 18 ১৮৮৯ সালে রাজতন্ত্রের অবলোপনের পরMunro, p. 280 সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে কেউ ততোটা আগ্রহী ছিল না।George Ermakoff, Rio de Janeiro – 1840–1900 – Uma crônica fotográfica (Rio de Janeiro: G. Ermakoff Casa Editorial, 2006), p. 189 দ্বিতীয় পেদ্রু তখনও জনসাধারণের মাঝে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন,Schwarcz, p. 444Vainfas, p. 201 কিন্তু তার নিজের ইচ্ছাতেই রাজতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটে।Barman (1999), p. 399 তার দুই ছেলের মৃত্যুর পর পেদ্রুর মনে হয়েছিল এই রাজত্ব তার মৃত্যুর সাথেই শেষ হয়ে যাবে।Barman (1999), p. 130 রাজত্ব রক্ষার ব্যাপারে তিনি খুব আগ্রহী ছিলেন না।Lyra (v.3), p. 126Barman (1999), p. 361 তাই তিনি নিজে এটি রক্ষার ব্যাপারে কিছু করেন নি ও কাউকে কিছু করতেও দেন নি। দাস প্রথা বিলোপের সময় এর বিরোধীতাকারীরা সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করে যাতে কোনো প্রকার সামরিক ক্যু ঘটাতে না পার তা ঠেকাতেই মূলত তিনি গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হন।Ricardo Salles, Nostalgia Imperial (Rio de Janeiro: Topbooks, 1996), p. 194 – However, the monarchist reaction after the fall of the empire and the subsequent exile of the Imperial Family "was not small and even less was its repression".Lyra (v.3), p. 99Schwarcz, pp. 450, 457 thumb| ইগ্রেজা ডি সান্তা রিতা দে ক্যাসিয়া প্রজাতন্ত্রের প্রাথমিক সময় সমসাময়িক যুগ ভূ-তত্ত্ব thumb|260px|ব্রাজিলের টপোগ্রাফিক চিত্র ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলভাগের সবচেয়ে বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে, সেই সাথে মহাদেশটির সবচেয়ে বেশি অংশটিও এই দেশটির আওতাধীন। ব্রাজিলের দক্ষিণে উরুগুয়ে; দক্ষিণ-পশ্চিমে আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে; পশ্চিমে বলিভিয়া ও পেরু; উত্তর-পশ্চিমে কলম্বিয়া; এবং উত্তরে ভেনেজুয়েলা, সুরিনাম, গায়ানা, এবং ফরাসি দেপার্ত্যমঁ ফরাসি গায়ানা অবস্থিত। ব্রাজিলের সাথে ইকুয়েডর ও চিলি ব্যতীত দক্ষিণ আমেরিকার সকল দেশের সাথেই সীমান্ত সংযোগ রয়েছে। ব্রাজিলীয় সীমানায় বেশকিছু দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে ফের্নান্দু জি নরোনিঁয়া, রোকাস অ্যাটল, সেন্ট পিটার ও সেন্ট পল রকস, এবং ত্রিনিদাজি এ মার্চিঁ ভাজ। এর সুবিশাল আকৃতি, জলবায়ু, এবং খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য ব্রাজিলকে ভূ-তাত্ত্বিকভাবে একটি বৈচিত্রময় দেশে পরিণত করেছে। দেশটির আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জগুলো ধরলে ব্রাজিলের সীমানা ২৮° পশ্চিম থেকে ৭৪° পশ্চিম অক্ষরেখা থেকে, ৬° উত্তর থেকে ৩৪° দক্ষিণ দ্রাঘিমা রেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ হিসেবে রাশিয়া, কানাডা, চীন, ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ব্রাজিলের অবস্থান। কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর এটি আমেরিকা মহাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। এর সর্বমোট আয়তন ,Official Area (In Portuguese) IBGE: Instituto Brasileiro de Geografia e Estatística. Retrieved 2010-01-08. যার ভেতর জলভাগের আয়তন প্রায় । দেশটিতে মোট তিনটি সময় অঞ্চল অবস্থিত। পশ্চিমের প্রদেশগুলো ইউটিসি-৪, পূর্বের প্রদেশগুলো ইউটিসি-৩ (এটি একই সাথে ব্রাজিলের সরকারি সময়), এবং আটলান্টিক দ্বীপপুঞ্জগুলো ইউটিসি-২ সময় অঞ্চলের অন্তর্গত। ব্রাজিলে টপোগ্রাফি যথেষ্ট বৈচিত্রময়। দেশটিতে পাহাড়, পর্বত, সমভূমি, উচ্চভূমি, চরণভূমি প্রভৃতি বৈচিত্রের ভূভাগ বিদ্যমান। এর ভূখণ্ডের বেশিরভাগের উচ্চতা থেকে -এর মধ্যে। দেশটির দক্ষিণ অর্ধাংশেই বেশিরভাগে উচ্চভূমি অবস্থিত। উত্তর-পশ্চিম অংশের সমভূমিগুলো ঢালু ও ভাঙা ভাঙা পাহাড় দিয়ে ঘেরা। দেশটির দক্ষিণাঞ্চল বেশ অমসৃণ, এবং বেশিরভাগ অঞ্চলই রিজ ও পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত। এ অঞ্চলের গড় উচ্চতা পর্যন্ত। এসকল পর্বতমালার মধ্যে রয়েছে মান্তিকিরা, এসপিনাসো পর্বতT এবং সেরা দু মার। উত্তরে গুয়াইয়ানা উচ্চভূমি একটি বড় নিষ্কাশন বিভক্তির মাধ্যমে আমাজন বেসিনের দিকে প্রবাহিত নদীগুলো থেকে ভেনেজুয়েলা থেকে উত্তর দিকের ওরিনোকো নদী ব্যবস্থায় এসে সমাপ্ত হওয়া নদীগুলোকে পৃথক করেছে। ব্রাজিলের সর্বোচ্চ পর্বত হচ্ছে পিকু দা নেবলিনা যার উচ্চতা প্রায় , এবং সর্বনিম্ন অঞ্চল হচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগর। ব্রাজিলে ঘন ও বেশ জটিল নদী ব্যবস্থা বিদ্যমান, যা বিশ্বের অন্যতম জটিল নদী ব্যবস্থা। ব্রাজিলে মোট আটটি নদী নিষ্কাশন ব্যবস্থা অবস্থিত, যার সবকটি-ই আটলান্টিক মহাসাগরে এসে শেষ হয়েছে। ব্রাজিলের উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে আমাজন, যা বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী ও নিষ্কাশিত জলের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী। এছাড়াও আছে পারান ও এর গুরুত্বপূর্ণ শাখানদী ইগুয়াসু (ইগুয়াসু জলপ্রপাত সহ), নিগ্রো, সাউঁ ফ্রান্সিসকু, শিজু, মেদেইরা, ও টাপাজুস নদী। জলবায়ু জীববৈচিত্র পরিবেশ রাজনীতি আইন বৈদেশিক সম্পর্ক দেশটির সঙ্গে অন্যান্য দেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই দেশের পাসপোর্টে ১১০টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করা যায়, যা পাসপোর্ট শক্তি সূচকে ১২তম স্থানে রয়েছে। সামরিক বাহিনী প্রশাসনিক বিভাগ অর্থনীতি thumb|right|260px|ব্রাজিলীয় এমব্রেয়ার কোম্পানির ইআরজে-১৩৫ মডেলের বাণিজ্যিক জেট বিমান। ব্রাজিল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিমান উৎপাদনকারী দেশ আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল ও বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ব্রাজিলের অর্থনীতি দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ, বাজার বিনিময়ের ভিত্তিতে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম, ও ক্রয়ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ব্রাজিলের অর্থনীতি একটি মিশ্র অর্থনীতি। দেশটির যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, যা এর অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ভিত্তিতে ধারণা করা হয়, সামনের কয়েক দশকে ব্রাজিলের অর্থনীতি বিশ্বের পাঁচটি বৃহত্তম অর্থনীতির একটি হিসেবে পরিণত হবে। এর বর্তমান গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হচ্ছে ১০,২০০ মার্কিন ডলার, যা বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে ৬৪তম। ব্রাজিলের বৃহৎ ও উন্নত কৃষি, খনিশিল্প, উৎপাদন ব্যবস্থা, এবং সেবাখাত রয়েছে। সেই সাথে দেশটিতে শ্রমিকের প্রাচুর্যও বিদ্যমান। ব্রাজিলের রপ্তানিখাত অত্যন্তু দ্রুত বিস্তৃত ও বিকশিত হচ্ছে, এবং টাইকুনের একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করছে। ব্রাজিলের মূল রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে উড়োজাহাজ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, গাড়ি, ইথানল, টেক্সটাইল, পাদুকা, লৌহ আকরিক, ইস্পাত, কফি, কমলার রস, সয়াবিন, এবং কর্নড বিফ। দেশটি ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক অর্থ ও পণ্যবাজারে নিজের উপস্থিতি আরও বিস্তৃত করে চলেছে। এছাড়াও ব্রাজিল উত্থানশীল অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোর সংগঠন ব্রিকের সদস্য। ১৯৯৪ সাল থেকে মুদ্রা হিসেবে ব্রাজিলীয় রিয়াল ব্যবহার করে আসছে। ১৯৯৭ সালে পূর্ব এশিয়া, ১৯৯৮ সালে রাশিয়া, এবং এর রেশ ধরে বহুস্থানে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর মুদ্রা নীতি সাময়িকভাবে পরিবর্তন করে। বিনিময়ের হারের অব্যাহত দরপতনের ফলে সৃষ্ট মুদ্রা সংকট মোকাবেলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাময়িকভাবে মুদ্রা বিনিময় হার নির্দিষ্ট করে দেয়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে ব্রাজিল পুনরায় মুক্তবাজার বিনিয়ময় হারে ফিরে যায়। অর্থনৈতিক জটিলতা কাটিয়ের ওঠার জন্য ব্রাজিল ২০০২-এর মধ্যভাগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ৩০.৪ বিলিয়ন ডলারের একটি রেকর্ড পরিমাণ ঋণ সহায়তা লাভ করে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই ঋণ পরিশোধের সুযোগ থাকলেও ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যংক ২০০৫ সালেই আইএমএফ-এই ঋণ পরিশোধ করে। সাম্প্রতিককালে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশটির যেসকল বিষয় মোকাবেলা করেছে তার মধ্যে রয়েছে স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের পুজির পরিমাণ আনুমানের চেয়ে বেশি হারে বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট জটিলতা। এর ফলেই ঐ সময়কালে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রাজিলীয় রিয়ালের দরপতন ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকৃত অর্থ অনুমানের চেয়ে কম হারে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলেছিল। ২০০৭ সালে এর আনুমানিক পরিমাণ ছিল ১৯৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে স্বল্পমেয়াদী ঋণে সুদের পরিমাণ মুদ্রানীতির আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে দেশটির মুদ্রস্ফীতির হার পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ। বিষয়বস্তু ও শক্তিখাত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরিবহন thumb|260px|ফর্তালিজা শহরের বাইরে বিআর-১১৬ মহাসড়ক ব্রাজিলে বিস্তুত ও বৈচিত্রময় পরিবহন ব্যবস্থা বিদ্যমান। জনপরিহন ও পণ্যপরিবহনে মূলত সড়ক পথই ব্যবহৃত হয়। ২০০২ সালের হিসাব অনুযায়ী ব্রাজিলের বিদ্যমান সড়ক পথের মোট দৈর্ঘ্য্য ১৯ লক্ষ ৯০ হাজার কিলোমিটার (১২ লক্ষ ৩০ হাজার মাইল)। ১৯৬৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছরে দেশটিতে পাকাকৃত সড়কের দৈর্ঘ্য্য ৩৫,৪৯৬ কিলোমিটার (২২,০৫৬ মাইল) থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৮৪,১৪০ কিলোমিটার (১,১৪,৪২৫ মাইল)। সড়ক পথের সম্প্রসারণের দিকে বেশি নজর দেওয়ায় ১৯৪৫ সাল থেকে ধীরে ধীরে ব্রাজিলের রেলপরিবহন ব্যবস্থার পরিধি সংকুচিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে দেশটির রেললাইনের সর্বমোট দৈর্ঘ্য্য ছিলো ৩১,৮৪৮ কিলোমিটার (১৯,৭৮৯ কিলোমিটার), এবং ২০০২ সালে এসে এই দৈর্ঘ্য্য হয় ৩০,৮৭৫ কিলোমিটার (১৯,১৮৬)। রেলওয়ে ব্যবস্থার বেশিরভাগ অংশ সরকারি মালিকানাধীন ফেডারেল রেইলরোড কর্পোরেশনের আয়ত্তাধীন। কিন্তু ১৯৯৭ সালে সরকার ৭টি লাইন বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেয়।"Brazil – Transportation," Encyclopedia of the Nations (nationsencyclopedia.com). সাঁউ পাইলু মেট্রা ব্রাজিলের প্রথম পাতাল রেল পরিবহন ব্যবস্থা। অন্যান্য পাতাল রেল পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে আছে রিউ দি জানেইরু, পর্তু আলেগ্রে, হেসিফি, বেলু হরাইজন্তে, ব্রাসিলিয়া, তেরেসিনা, ফর্তালিজা, এবং সালভাদোর। ব্রাজিলে প্রায় ২,৫০০ বিমানবন্দর ও বিমান অবতরণের স্থান রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।"Ociosidade atinge 70% dos principais aeroportos." globo.com, 12 August 2007. সাঁউ পাউলু শহরে কাছে অবস্থিত সাঁউ পাউলু-গুয়ারুলহোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্রাজিলের সর্ববৃহৎ ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর। দেশটির অভ্যন্তরীন জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিক পরিবহনের একটি বড় ও বৈচিত্রময় অংশ এই বিমানবন্দরে সম্পন্ন হয়। এছাড়াও আন্তজার্তিকভাবে এই বিমান বন্দরটি ব্রাজিলকে বিশ্বের সকল বড় শহরগুলোর সাথে যুক্ত করেছে।"Aeroporto Internacional de São Paulo/Guarulhos-Governador André Franco Montoro ," infraaero.gov.br. উপকূলের পরিবহন সংযোগগুলো দেশটির স্বত্বন্ত্র অংশ। বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ের সান্তোশের বন্দরগুলো মুক্তভাবে ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। ব্রাজিলের ৩৬টি গভীর-জল বন্দর রয়েছে যার মধ্যে সান্তোশ, ইতাজাই, রিউ গ্রাঁদ, পারানাগুয়া, রিউ দি জানেইরু, সেপেতিবা, ভিতোরিয়া, সাউপে, মানাউশ, এবং সাঁউ ফ্রান্সিসকো দু সুই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।"Mercado Brasileiro Terminais de Contêineres," Santos Brasil. জনপরিসংখ্যান বর্ণ/জাতি (২০০৮) শেতাঙ্গ ৪৮.৪৩% বাদামী (মিশ্র) ৪৩.৮০% কৃষ্ণাঙ্গ ৬.৪৮% এশীয় ০.৫৮%(হিন্দু ধর্ম ০.৪০% এবং ইসলাম ধর্ম ০.১৮% আমেরিন্ডিয়ান ০.২৮% ২০০৮ সালের গণনা অনুযায়ী ব্রাজিলের জনসংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি।2008 PNAD, IBGE. "População residente por situação, sexo e grupos de idade" জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি কিলোমিটারে ২২.৩১ জন, এবং পুরুষ ও নারীর অনুপাত ০.৯৫:১।2008 PNAD, IBGE. "População residente por situação, sexo e grupos de idade" মোট জনসংখ্যার ৮৩.৭৫% ভাগ শহরাঞ্চলে বসবাস করে।2008 PNAD, IBGE. "População residente por situação, sexo e grupos de idade." ব্রাজিলের বেশিরভাগ মানুষ বাস দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব (৭ কোটি ৯৮ লক্ষ) ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (৫ কোটি ৩৫ লক্ষ)। যদিও ভৌগোলিকভাবে দেশটির সবচেয়ে বড় অংশ হচ্ছে এর মধ্য-পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চল, যা ব্রাজিলের মোট ভূখণ্ডের ৬৪.১২% ভাগ দখল করে আছে, কিন্তু সে অঞ্চলগুলোতে বসবাসকৃত মানুষের সংখ্যা মাত্র ২ কোটি ৯১ লক্ষ। মৃত্যুহার কমে যাওয়ায় ১৯৪০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে ব্রাজিলের জনসংখ্যা বেশ বেড়ে যায়। যদিও এ সময় জন্মহারও সামান্য পরিমাণে হ্রাস পায়। ১৯৪০-এর দশকে দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ২.৪%। ১৯৫০-এর দশকে এসে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩.০%; ও ১৯৬০-এর দশকে এই হার ছিল ২.৯%। এ বছরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৪৪ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪ বছরে উন্নীত হয়।José Alberto Magno de Carvalho, "Crescimento populacional e estrutura demográfica no Brasil" Belo Horizonte: UFMG/Cedeplar, 2004 (PDF file), p.  5. ২০০৭ সালে এসে ব্রাজিলের মানুষের গড় আয়ু হয় ৭২.৬ বছর। ১৯৬০-এর দশকের পর থেকে ব্রাজিলের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৫০-৫০-এর মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ৩.০৪%। ২০০৮ সালে এসে এ হার দাঁড়ায় মাত্র ১.০৫%-এ। ধারণা করা হয়, এমনভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ ব্রাজিলের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক অঙ্কে পৌঁছাবে, এবং হার হবে -০.২৯%।Magno de Carvalho, "Crescimento populacional e estrutura demográfica no Brasil," pp. 7–8. ব্রাজিলের ইন্সটিটিউট অফ জিওগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্সের ২০০৮ সালের গণনা অনুসারে মোট জনসংখ্যার ৪৮.৪৩% ভাগ (প্রায় ৯ কোটি ২০ লক্ষ) নিজেদেরকে শেতাঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করেছে; এবং ৪৩.৮০% ভাগ বাদামী (মিশ্র) (প্রায় ৮ কোটি ৩০ লক্ষ), ৬.৮৪% কৃষ্ণাঙ্গ (১ কোটি ৩০ লক্ষ), ০.৫৮% এশীয় (১১ লক্ষ), এবং ০.২৮% নিজেদের আমেরিন্ডিয়ান (৫ লক্ষ ৩৬ হাজার) হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। অপরদিকে ০.০৭% (প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার) মানুষ নিজেদের বর্ণ পরিচয় দেয়নি।2008 PNAD, IBGE. "População residente por cor ou raça, situação e sexo." ২০০৭ সালে জাতীয় ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে ব্রাজিলে ৬৭টি ভিন্ন উপজাতীয় গোত্রের অবস্থান উল্লেখ করা হয়, যাঁদের সাথে কোনো রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ নেই। ২০০৪ সালে যোগাযোগহীন এসকল গোত্রের সংখ্যা ছিল ৪০। ব্রাজিলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অযোগাযোগকৃত মানুষের বাস করে বলে ধারণা করা হয়।"In Amazonia, Defending the Hidden Tribes," The Washington Post, 8 July 2007. ব্রাজিলের বেশিরভাগ মানুষ দেশটির আদিবাসী জনগণ, পর্তুগিজ উপনিবেশক, এবং আফ্রিকান দাসদের বংশদ্ভূত।Enciclopédia Barsa vol. 4, p. 230. ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজদের আগমনের পর থেকে এই তিন জাতির মাঝে বৈবাহিক সম্পর্কের সৃষ্টি হতে থাকে, যা ব্রাজিলকে একটি বৈচিত্রময় জাতিসত্ত্বা উপহার দিয়েছে। ব্রাজিলের বাদামী বর্ণের জনগোষ্ঠীর (পর্তুগিজ ভাষায় এদেরকে ‘প্রাদু’ (prado) নামে সম্বোধন করা হয়Coelho (1996), p. 268.Vesentini (1988), p. 117.) বিভিন্ন ভাগের সৃষ্টি হয়েছে। এই ভাগ গুলোর মধ্যে আছে শেতাঙ্গ ও ইন্ডিয়ান বংশদ্ভূত ‘কাবোক্লু’ (Caboclo), শেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ বংশদ্ভূত ‘মুলাতু’ (Mulatto), এবং কৃষ্ণাঙ্গ ও ইন্ডিয়ান বংশদ্ভূত ‘কাফুজু’ (Cafuzo)।Adas, Melhem. Panorama geográfico do Brasil, 4th ed (São Paulo: Moderna, 2004), p. 268Azevedo (1971), pp. 2–3.Moreira (1981), p. 108. বেশিরভাগ কাবোক্লু জনগণ দেশটির উত্তর, উত্তর-পূর্ব, এবং মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে।Enciclopédia Barsa, vol. 4, pp. 254–55, 258, 265. গরিষ্ঠ সংখ্যাক মুলাতু জনগণ বাস করে বায়া ও থেকে পারাইবা পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঘেঁষে চলে আসা পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল,Azevedo (1971), pp. 74–75. উত্তর মারানাউঁ,Enciclopédia Barsa, vol. 10 (Rio de Janeiro: Encyclopaedia Britannica do Brasil, 1987), p. 355.Azevedo (1971), p. 74. দক্ষিণ মিনাস জেরাইসAzevedo (1971), p. 161. এবং পূর্ব রিউ দি জানেইরু অঞ্চলে। ১৯শ শতক থেকে অভিবাসীদের জন্য ব্রাজিলের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে ১৮০৮ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ব্রাজিলে বিশ্বের ৬০টি দেশ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের আগমন ঘটে। এসকল অভিবাসীর বেশিরভাগই এসেছিল পর্তুগাল, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, জাপান, এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে।Maria Stella Ferreira-Levy, "O papel da migração internacional na evolução da população brasileira (1872 a 1972), Revista de Saúde Pública Volume 8, suplemento. June 1974. ) (1974). Table 2, p.  74. Available here at scielo.br as a PDF file. ২০০৮ সালে ব্রাজিলে সার্বিক নিরক্ষরতার হার ছিল ১১.৪৮%,PNAD 2008, IBGE. "Pessoas de 5 anos ou mais de idade por situação, sexo, alfabetização e grupos de idade e grupos de idade." এবং তরুণদের ভেতর (বয়স ১৫–১৯) এই হার ছিল ১.৭৪%। এই হার সবচেয়ে বেশি ছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (২০.৩০%), যেখানে বেশ বড় সংখ্যক গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাস।PNAD 2008, IBGE. "Pessoas de 5 anos ou mais de idade por situação, sexo, alfabetização e grupos de idade" গড় হিসাবে নিরক্ষতার হার গ্রামীণ জনগণের মাছে বেশি (২৪.১৮%) ও শহুরে জনগোষ্ঠীর মাঝে কম (৯.০৫%)।PNAD 2008, IBGE. "Pessoas de 5 anos ou mais de idade por situação, sexo e alfabetização." নগরায়ণ ভাষা সংস্কৃতি thumb|260px|কার্নিভালে সাম্বা স্কুল প্যারেডের সাম্বা নৃত্য উপস্থাপন। কার্নিভাল ও সাম্বা নৃত্য বহিঃবিশ্বের কাছে ব্রাজিলের সংস্কৃতির সবচেয়ে পরিচিত অংশগুলোর একটি। তিনশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পতুগিজ ঔপনিবেশকদের শাসনের ফলে, ব্রাজিলের সংস্কৃতির মূল অংশটি এসেছে পর্তুগালের সংস্কৃতি থেকে। পর্তুগিজরা ব্রাজিলের সংস্কৃতির যেসকল স্থানে প্রভাব ফেলেছে তার মধ্যে আছে পর্তুগিজ ভাষা, ক্যাথলিক ধর্ম, এবং ঔপনিবেশিক স্থাপত্যশিল্প। এছাড়াও ব্রাজিলের সংস্কৃতি আফ্রিকান, ও আদিবাসী ইন্ডিয়ানের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য দ্বারাও বেশ প্রভাবান্বিত হয়েছে। এছাড়া ব্রাজিলে অভিবাসী হিসেবে আসা ইতালীয়, জার্মান, ও অন্যান্য ইউরোপীয় অভিবাসীদের সংস্কৃতিও ব্রাজিলীয় সংস্কৃতিতে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করেছে। ১৮-১৯শত শতকের দিকে দলে দলে আসা এ সকল অভিবাসীরা ব্রাজিলের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বসবাস করা শুরু করেছিল, এবং বর্তমানেও ঐ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাদের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তবে সামগ্রিকভাবে আদিবাসী আমেরিন্ডিয়ানরা ব্রাজিলের ভাষা ও রন্ধনশিল্পে প্রভাব ফেলেছে; অপরদিকে আফ্রিকানরা প্রভাব ফেলেছে ব্রাজিলের রন্ধনশৈলী, সঙ্গীত, নৃত্যকলা, ও ধর্মে। ১৬শ শতকের পর থেকে ব্রাজিলীয় চিত্রকলা বিভিন্ন ধারায় বিস্তৃত হতে থাকে। পূর্বে ব্রাজিলের চিত্রকলায় বারুকি ধারার প্রভাব ছিল খুব বেশি,Leandro Karnal, Teatro da fé: Formas de representação religiosa no Brasil e no México do século XVI (São Paulo, Editora Hucitec, 1998; available here ."The Brazilian Baroque ," Encyclopaedia Itaú Cultural কিন্তু ১৬শ শতকের পর বারুকি থেকে তা রোমান্টিকতা, আধুনিকতা, অভিব্যক্তিবাদ, কিউবিজম, পরাবাস্তবাদ, বিমূর্তবাদ প্রভৃতি দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ব্রাজিলীয় চলচ্চিত্রের গোড়াপত্তন হয় ১৯শ শতকের শেষ দিকে। অনেক অভ্যন্তরীণ চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রাজিলের চলচ্চিত্র দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেছে। সঙ্গীত সাহিত্য ব্রাজিলীয় সাহিত্য বিশ্বে অন্যতম আলোড়ন তোলা সাহিত্য।ব্রাজিলের লেখক পাওলো কোয়েলহো বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত লেখক।এছাড়া মাচাদো দ্যে অ্যাসিস ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা লেখক হিসেবে সুপরিচিত। রন্ধনশিল্প খেলাধুলা ফুটবল খেলাই ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া হিসেবে পরিচিত। ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দল ফিফা বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানীয় দল হিসেবে চিহ্নিত। দলটি এ পর্যন্ত পাঁচবার বিশ্বকাপ জয়লাভ করেছে যা একটি রেকর্ড। ভলিবল, বাস্কেটবল, অটো রেসিং এবং মার্শাল আর্ট ক্রীড়াও ব্যাপকভাবে দর্শকপ্রিয়। ব্রাজিলের পুরুষ জাতীয় ভলিবল দলটি ওয়ার্ল্ড লীগ, বিশ্ব ভলিবল গ্রাঁ চ্যাম্পিয়ন্স কাপ, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ এবং বিশ্বকাপের বর্তমানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। ব্রাজিলের অন্যান্য খেলার মধ্যে রয়েছে - টেনিস, হ্যান্ডবল, সুইমিং এবং জিমন্যাসটিক্‌স যা গত কয়েক দশক ধরে চর্চা হচ্ছে। ব্রাজিলে বেশকিছু ক্রীড়ার উদ্ভব ঘটেছে। তন্মধ্যে - বীচ ভলিবল, ফুটসাল এবং ফুটভলি অন্যতম। মার্শাল আর্টে ক্যাপোইরা, ভ্যালে টুডো এবং ব্রাজিলিয়ান জি-জিতসু ক্রীড়ার প্রচলন ঘটিয়েছে। অটো রেসিংয়ে এ পর্যন্ত তিনজন ব্রাজিলীয় ড্রাইভার ফর্মুলা ওয়ানে আটবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করেছে। শহর আরও দেখুন ব্রাজিলের সূচি - সম্পর্কিত নিবন্ধসমূহ তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি Azevedo, Aroldo. O Brasil e suas regiões. São Paulo: Companhia Editora Nacional, 1971. Barman, Roderick J. Citizen Emperor: Pedro II and the Making of Brazil, 1825–1891. Stanford: Stanford University Press, 1999. Boxer, Charles R.. O império marítimo português 1415–1825. São Paulo: Companhia das Letras, 2002. Bueno, Eduardo. Brasil: uma História. São Paulo: Ática, 2003. Calmon, Pedro. História da Civilização Brasileira. Brasília: Senado Federal, 2002. Carvalho, José Murilo de. D. Pedro II. São Paulo: Companhia das Letras, 2007. Coelho, Marcos Amorim. Geografia do Brasil. 4th ed. São Paulo: Moderna, 1996. Diégues, Fernando. A revolução brasílica. Rio de Janeiro: Objetiva, 2004. Enciclopédia Barsa. Volume 4: Batráquio – Camarão, Filipe. Rio de Janeiro: Encyclopædia Britannica do Brasil, 1987. Fausto, Boris and Devoto, Fernando J. Brasil e Argentina: Um ensaio de história comparada (1850–2002), 2nd ed. São Paulo: Editoria 34, 2005. Gaspari, Elio. A ditadura envergonhada. São Paulo: Companhia das Letras, 2002. Janotti, Aldo. O Marquês de Paraná: inícios de uma carreira política num momento crítico da história da nacionalidade. Belo Horizonte: Itatiaia, 1990. Lyra, Heitor. História de Dom Pedro II (1825–1891): Ascenção (1825–1870). v.1. Belo Horizonte: Itatiaia, 1977. Lyra, Heitor. História de Dom Pedro II (1825–1891): Declínio (1880–1891). v.3. Belo Horizonte: Itatiaia, 1977. Lustosa, Isabel. D. Pedro I: um herói sem nenhum caráter. São Paulo: Companhia das letras, 2006. Moreira, Igor A. G. O Espaço Geográfico, geografia geral e do Brasil. 18. Ed. São Paulo: Ática, 1981. Munro, Dana Gardner. The Latin American Republics; A History. New York: D. Appleton, 1942. Schwarcz, Lilia Moritz. As barbas do Imperador: D. Pedro II, um monarca nos trópicos. 2nd ed. São Paulo: Companhia das Letras, 1998. Skidmore, Thomas E. Uma História do Brasil. 4th ed. São Paulo: Paz e Terra, 2003. Souza, Adriana Barreto de. Duque de Caxias: o homem por trás do monumento. Rio de Janeiro: Civilização Brasileira, 2008. Vainfas, Ronaldo. Dicionário do Brasil Imperial. Rio de Janeiro: Objetiva, 2002. Vesentini, José William. Brasil, sociedade e espaço – Geografia do Brasil. 7th Ed. São Paulo: Ática, 1988. Vianna, Hélio. História do Brasil: período colonial, monarquia e república, 15th ed. São Paulo: Melhoramentos, 1994. আরও পড়ুন Alves, Maria Helena Moreira (1985). State and Opposition in Military Brazil. Austin, TX: University of Texas Press. Amann, Edmund (1990). The Illusion of Stability: The Brazilian Economy under Cardoso. World Development (pp. 1805–1819). ‘Background Note: Brazil’. US Department of State. Retrieved 2011-06-16. Bellos, Alex (2003). Futebol: The Brazilian Way of Life. London: Bloomsbury Publishing plc. Bethell, Leslie (1991). Colonial Brazil. Cambridge: CUP. Costa, João Cruz (1964). A History of Ideas in Brazil. Los Angeles, CA: University of California Press. Fausto, Boris (1999). A Concise History of Brazil. Cambridge: CUP. Furtado, Celso. The Economic Growth of Brazil: A Survey from Colonial to Modern Times. Berkeley, CA: University of California Press. Leal, Victor Nunes (1977). Coronelismo: The Municipality and Representative Government in Brazil. Cambridge: CUP. Malathronas, John (2003). Brazil: Life, Blood, Soul. Chichester: Summersdale. Martinez-Lara, Javier (1995). Building Democracy in Brazil: The Politics of Constitutional Change. Macmillan. Prado Júnior, Caio (1967). The Colonial Background of Modern Brazil. Los Angeles, CA: University of California Press. Schneider, Ronald (1995). Brazil: Culture and Politics in a New Economic Powerhouse. Boulder Westview. Skidmore, Thomas E. (1974). Black Into White: Race and Nationality in Brazilian Thought. Oxford: Oxford University Press. Wagley, Charles (1963). An Introduction to Brazil. New York, New York: Columbia University Press. The World Almanac and Book of Facts: Brazil. New York, NY: World Almanac Books. 2006. বহিঃসংযোগ পর্যটকদের জন্য ব্রাজিলের গাইড ব্রাজিলের ব্যবসায়িক গাইড ব্রাজিলীয় সংযুক্ত প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রাদেশিক প্রধান ও কেবিনেট সদস্যবৃন্দ ব্রাজিলীয় ভূ-তত্ত্ব ও পরিসংখ্যান ইন্সটিটিউট ব্রাজিলের তথ্য ও ছবিভিত্তিক পর্যটন ইউসিবি লাইব্রেরিজ গভপাবস''-এ ব্রাজিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস থেকে প্রাপ্ত ব্রাজিলের বৃত্তান্ত (১৯৯৭) ১৯৬১ সালে ব্রাজিলের ওপর প্রণীত একটি ভিডিও রিপোর্ট ব্রাজিল বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:পর্তুগিজভাষী রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:সাবেক পর্তুগিজ উপনিবেশ বিষয়শ্রেণী:জি১৫ রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:জি২০ সদস্য বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ব্রিক্‌স রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:পর্তুগিজ ভাষী দেশগুলির সম্প্রদায়ের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ই৭ রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:মার্কোসুরের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:পর্তুগিজভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
ব্রুনাই
https://bn.wikipedia.org/wiki/ব্রুনাই
ব্রুনাই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। বন্দর সেরি বেগাওয়ান ব্রুনাই এর রাজধানী। এটি একটি রাজতান্ত্রিক ইসলামী দেশ। দেশটি বোর্নিও দ্বীপের উত্তর উপকূলে অবস্থিত। এর উত্তরে দক্ষিণে চীন সাগর, এবং বাকী সব দিকে মালয়শিয়া। লিমবাং এর সারাওয়াক জেলা দ্বারা এটি দুটি ভাগে বিভক্ত। এদের মধ্যে পশ্চিমেরটি বৃহত্তর। দুই এলাকাতেই সমুদ্র বন্দর আছে। তবে দুইটিকেই মালয়শিয়ার সারাওয়াক প্রদেশ ঘিরে রেখেছে। ব্রুনাই আয়তন মাত্র ৫,৭৬৫ বর্গকিলোমিটার। ব্রুনাই হল একমাত্র সার্বভৌম রাষ্ট্র যা সম্পূর্ণভাবে বোর্নিওতে অবস্থিত; দ্বীপের অবশিষ্টাংশ মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে বিভক্ত। সরকার একটি নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র যা এর সুলতান বা ইয়াং ডি-পার্টুয়ান দ্বারা শাসিত, এবং ইংরেজি সাধারণ আইন এবং শরিয়া আইন, সেইসাথে সাধারণ ইসলামিক অনুশীলনের সমন্বয় বাস্তবায়ন করে। ২০২০ সালে ব্রুনাইয়ের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪,৩৭,০০০ থেকে কিছুটা বেশি, যাদের মধ্যে প্রায় ১০০,০০০ রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর বন্দর সেরি বেগাওয়ানে বাস করে। দাবি করা হয় যে ব্রুনিয়ান সাম্রাজ্যের শীর্ষে, সুলতান বলকিয়াহ (শাসনকাল ১৪৮৫-১৫২৮) বোর্নিওর বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ছিল, যার মধ্যে আধুনিক দিনের সারাওয়াক এবং সাবাহ, পাশাপাশি বোর্নিওর উত্তর-পূর্ব প্রান্তের সুলু দ্বীপপুঞ্জ এবং বোর্নিওর উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত দ্বীপগুলি। দাবিগুলি আরও বলে যে সেলুডং (বা মেনিলার রাজ্য, যেখানে আধুনিক ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা এখন দাঁড়িয়ে আছে) তাদের নিয়ন্ত্রণ ছিল কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় পণ্ডিতরা বিশ্বাস করেন যে এটি ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট সেলুরং একটি বসতিকে নির্দেশ করে। ১৫২১ সালে স্পেনের ম্যাগেলান অভিযানে ব্রুনাইয়ের সামুদ্রিক রাজ্য পরিদর্শন করা হয়েছিল এবং ১৫৭৮ সালের ক্যাস্টিলিয়ান যুদ্ধে স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। ১৯ শতকের সময় ব্রুনিয়ান সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়। সালতানাত সারাওয়াক (কুচিং) কে জেমস ব্রুকের কাছে হস্তান্তর করে এবং তাকে শ্বেতাঙ্গ রাজা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং এটি সাবাহকে ব্রিটিশ নর্থ বোর্নিও চার্টার্ড কোম্পানির হাতে তুলে দেয়। ১৮৮৮ সালে, ব্রুনাই একটি ব্রিটিশ প্রটেক্টরেট হয়ে ওঠে এবং ১৯০৬ সালে একজন ব্রিটিশ বাসিন্দাকে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি দখলের পর, ১৯৫৯ সালে একটি নতুন সংবিধান লেখা হয়। ১৯৬২ সালে, ব্রিটিশদের সহায়তায় রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি ছোট সশস্ত্র বিদ্রোহ শেষ হয়েছিল। ব্রুনাই ১৯৬৭ সাল থেকে ব্রুনাই হাসানাল বলকিয়াহের সালতানাতের নেতৃত্বে রয়েছে এবং ১ জানুয়ারী ১৯৮৪-এ একটি ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্য হিসাবে এর স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। দেশটি একটি স্বৈরাচারী নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র। ১৯৯০ এবং ২০০০ এর দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত জিডিপি ৫৬% বৃদ্ধির সাথে, ব্রুনাইকে একটি শিল্পোন্নত দেশে রূপান্তরিত করেছে। এটি ব্যাপক পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র থেকে সম্পদ তৈরি করেছে। সিঙ্গাপুরের পরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ব্রুনাইয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মানব উন্নয়ন সূচক রয়েছে এবং এটি একটি উন্নত দেশ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) অনুসারে, ক্রয় ক্ষমতার সমতা অনুযায়ী মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের দিক থেকে ব্রুনাই বিশ্বের পঞ্চম স্থানে রয়েছে। আইএমএফ ২০১১ সালে অনুমান করেছিল যে ব্রুনাই দুটি দেশের মধ্যে একটি ছিল (অন্যটি হল লিবিয়া) যার পাবলিক ঋণ জাতীয় জিডিপির ০%। বুৎপত্তি স্থানীয় ইতিহাসগ্রন্থ অনুসারে, ব্রুনাই আওয়াং অলক বেতাতার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, পরবর্তীকালে সুলতান মুহাম্মদ শাহ, ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে রাজত্ব করেছিলেন। তিনি টেম্বুরং জেলার গারাং থেকে ব্রুনাই নদীর মোহনায় আসেন এবং ব্রুনাই আবিষ্কার করেন। কিংবদন্তি অনুসারে, অবতরণ করার সময় তিনি চিৎকার করে বলেছিলেন, বারু না (আসলভাবে অনুবাদ করা হয়েছে "এটাই!" বা "সেখানে"), যেখান থেকে "ব্রুনাই " নামটি এসেছে। তিনি ছিলেন ব্রুনাইয়ের প্রথম মুসলিম শাসক।মুসলিম বলকিয়া রাজবংশের অধীনে ব্রূনিয়ান সাম্রাজ্যের উত্থানের আগে, ব্রুনাই বৌদ্ধ শাসকদের অধীনে ছিল বলে মনে করা হয়। সম্ভবত সংস্কৃত শব্দ " " ( ) দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ১৪ শতকে এর নামকরণ করা হয়েছিল "বরুণই" ), যার অর্থ "নাবিক"। " বোর্নিও " শব্দটি একই উৎসের। দেশটির পুরো নাম, । ( ) মানে "শান্তির আবাস", আর নেগরা মানে "দেশ" মালয় ভাষায়। মালয় সরকারি নাম, "ব্রুনাই দারুসসালাম" এর একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণও সাধারণ ব্যবহারে প্রবেশ করেছে, বিশেষ করে সরকারি প্রসঙ্গে, এবং এটি জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের ভৌগোলিক নামের ভৌগোলিক ডাটাবেসে উপস্থিত রয়েছে, পাশাপাশি সরকারি ভাবে আসিয়ানে এর তালিকায়। এবং কমনওয়েলথ ব্রুনাই সম্পর্কে পশ্চিমের প্রথম নথিভুক্ত নথিটি লুডোভিকো ডি ভার্থেমা নামে একজন ইতালীয় দ্বারা, যিনি আরও বলেছিলেন যে "মলুকু দ্বীপপুঞ্জে যে লোকেদের সাথে তার দেখা হয়েছিল তার চেয়ে ব্রুনিয়ার লোকদের ত্বকের রঙ ফর্সা"। ১৫৫০ সালে তার লিখিত নথি থেকে : আমরা বোর্নেই (ব্রুনেই বা বোর্নিও) দ্বীপে পৌঁছেছি, যেটি মালুচ থেকে প্রায় , এবং আমরা দেখতে পেলাম যে এটি পূর্বোক্তের চেয়ে কিছুটা বড় এবং অনেক কম। লোকেরা পৌত্তলিক এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। তাদের রঙ অন্য ধরনের রঙের চেয়ে সাদা... এই দ্বীপে ন্যায়বিচার ভালভাবে পরিচালিত হয়... ইতিহাস প্রাথমিক ইতিহাস বিজয়পুরা নামে পরিচিত বসতিটি বৌদ্ধ শ্রীবিজয়া সাম্রাজ্যের একটি ভাসাল-রাজ্য ছিল এবং এটি বোর্নিওর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বলে মনে করা হয়েছিল যা ৭ম শতাব্দীতে বিকাশ লাভ করেছিল। এই বিকল্প শ্রীবিজয়া ব্রুনাইকে উল্লেখ করে, আরবি উৎসের কাছে "শ্রীবুজা" নামে পরিচিত ছিল। আরবি লেখক আল ইয়াকুবি ৮০০ সালে লিখেছিলেন যে মুসার রাজ্য (মুজা, যা পুরানো ব্রুনাই) চীনা সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে মেদ রাজ্যের (হয় মা-ই বা মাদজা-যেমন ফিলিপাইনের সাথে) জোটবদ্ধ ছিল। যার বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধ করেছে। শ্রীবিজয়ায় ভারতীয় চোল আক্রমণের পর, দাতু পুতি সুমাত্রা এবং বোর্নিও থেকে কিছু ভিন্নমতের দাতুকে রাজা মাকাতুনাওয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন, যিনি ছিলেন চোল নিযুক্ত স্থানীয় রাজা বা সেরি মহারাজের বংশধর (চীনা রেকর্ড অনুযায়ী)। ভিন্নমতাবলম্বী এবং তাদের দল ফিলিপাইনের ভিসায়াস দ্বীপপুঞ্জের (শ্রীবিজয়ের নামে একটি দ্বীপপুঞ্জ) মাদজা নামে একটি নতুন দেশে শ্রীবিজয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিল। অগাস্টিনিয়ান ফ্রিয়ার রেভের মতে, ১০ ডাটাস পানায়ে এবং দক্ষিণ লুজনে অনেকগুলি শহর প্রতিষ্ঠা করে। বোর্নিওতে একটি স্বাধীন রাজ্যের প্রথমদিকের চীনা থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডগুলির মধ্যে একটি বনির শাসকের কাছ থেকে চীনা সম্রাটের কাছে ৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের চিঠি যা কিছু পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে বোর্নিওকে উল্লেখ করা হয়েছে বলে। জাভানিজ-সুমাত্রান যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে ব্রুনিয়ানরা শ্রীবিজয়া থেকে তাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে।Coedes, Indianized States, Page 128, 132. ১২২৫ সালে, চীনা কর্মকর্তা ঝাও রুকুও জানান যে বনির বাণিজ্য রক্ষার জন্য ১০০টি যুদ্ধজাহাজ এবং রাজ্যে প্রচুর সম্পদ ছিল। মার্কো পোলো তার স্মৃতিকথায় বলেছেন যে গ্রেট খান বা মঙ্গোল সাম্রাজ্যের শাসক, "গ্রেট জাভা" আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিলেন এবং ব্যর্থ হন যা ব্রুনিয়ান নিয়ন্ত্রিত বোর্নিওর ইউরোপীয় নাম ছিল।Journal of Southeast Asian Studies Vol. 14, No. 1 (Mar., 1983) Page 40. ১৩০০-এর দশকে চীনা ইতিহাস, নানহাই ঝি, রিপোর্ট করেছে যে ব্রুনাই সারাওয়াক এবং সাবাহ এবং সেইসাথে বুটুয়ান, সুলু, মা-ই (মিন্দোরো), মালিলু 麻裏蘆 (এর ফিলিপাইন রাজ্যগুলি আক্রমণ করেছে বা পরিচালনা করেছে) বর্তমান ম্যানিলা ), শাহুচং 沙胡重 (বর্তমান সিওকন), ইয়াচেন 啞陳 ( ওটন ), এবং 文杜陵 ওয়েন্ডুলিং (বর্তমান মিন্দানাও ),Reading Song-Ming Records on the Pre-colonial History of the Philippines By Wang Zhenping Page 256. যা পরবর্তী সময়ে তাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে।Quanzhou to the Sulu Zone and beyond: Questions Related to the Early Fourteenth Century By: Roderich Ptak. সেরা ভিসায়ান গায়করা প্রায়শই তাদের যোদ্ধা জাতির সদস্যও হন। যাইহোক, ইসলামিক ব্রুনাইয়ের শক্তি বোর্নিওতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না কারণ দক্ষিণে কুটাই নামক ভারতীয়দের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি রাজ্যে এটির একটি হিন্দু প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল যাকে তারা পরাজিত করেছিল কিন্তু ধ্বংস করেনি। ফিলিপাইনে ব্রুনাইয়ের আধিপত্যকে দুটি ভারতীয় রাজ্য, সেবু এবং বুটুয়ানের রাজাহানেটস চ্যালেঞ্জ করেছিল যেগুলি কাকতালীয়ভাবে কুতাইয়ের সাথে মিত্র ছিল এবং ব্রুনাইয়ের নির্ভরতার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল; সুলু এবং ম্যানিলা পাশাপাশি তাদের পারস্পরিক মিত্র, মাগুইন্দানাওয়ের সালতানাত। মাদজা-আস এবং দাপিতানের কেদাতুয়ানরাও ব্রুনাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিল কারণ তারা মাগুইন্দানাও এবং টারনেট থেকে সংগঠিত ক্রমাগত মুসলিম আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল, ওশেনিয়ার আশেপাশে অবস্থিত একটি পাপুয়া ভাষী রাজ্য যা মশলা উৎপাদনে একচেটিয়াভাবে সম্পদশালী হয়ে উঠেছিল। তবুও, ১৬ শতকের মধ্যে, ব্রুনাইয়ে ইসলাম দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়েছিল এবং দেশটি তার বৃহত্তম মসজিদগুলির মধ্যে একটি তৈরি করেছিল। ১৫৭৮ সালে, একজন স্প্যানিশ ভ্রমণকারী অ্যালোনসো বেল্টরান এটিকে পাঁচ তলা লম্বা এবং জলের উপর নির্মিত বলে বর্ণনা করেছিলেন। এই প্রাক-স্প্যানিশ কিংবদন্তি ইতিহাসের স্প্যানিশ যুগে সান্তারেন রেকর্ড করে যে, দাতু ম্যাকাতুনাও বা রাজা মাকাতুনাও যিনি ছিলেন "মরোসের সুলতান" এবং দাতু পুতির একজন আত্মীয় যিনি দশটি দাতুর সম্পত্তি এবং সম্পদ দখল করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করা হয়েছিল। লাবাওডুঙ্গন এবং পায়বার নামের যোদ্ধারা, তাদের শ্বশুর পাইবুরং থেকে এই অবিচারের কথা জানতে পেরে, বোর্নিওতে ওডটোজানে রওনা হন যেখানে মাকাতুনাউ শাসন করতেন। যোদ্ধারা শহরটি বরখাস্ত করে, মাকাতুনাউ এবং তার পরিবারকে হত্যা করে, ১০টি ডাটাসের চুরি হওয়া সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করে, ওডটোজানের অবশিষ্ট জনসংখ্যাকে ক্রীতদাস করে এবং পানায়ে ফিরে যায়। দাঁড়াও দঙ্গন এবং তার স্ত্রী, ওজায়তানায়ন, পরে মোরোবোরো নামক একটি জায়গায় বসতি স্থাপন করেন।Mga Maragtas ng Panay: Comparative Analysis of Documents about the Bornean Settlement Tradition By Talaguit Christian Jeo N. ১৪ শতকে, জাভানিজ পাণ্ডুলিপি নগরক্রেতাগামা, ১৩৬৫ সালে প্রপাঞ্চ দ্বারা লিখিত, বরুণকে হিন্দু মাজাপাহিতের উপাদান রাষ্ট্র হিসাবে উল্লেখ করেছে, যাকে বার্ষিক ৪০টি কর্পূরের শ্রদ্ধা জানাতে হয়েছিল। ১৩৬৯ সালে, সুলু যেটি পূর্বে মাজাপাহিতের অংশ ছিল, সফলভাবে বিদ্রোহ করেছিল এবং তারপরে বনি আক্রমণ করেছিল এবং বোর্নিওর উত্তর-পূর্ব উপকূলে আক্রমণ করেছিলMing shi, 325, p. 8411, p. 8422. এবং তারপরে দুটি পবিত্র মুক্তা বস্তাসহ এর ধন ও সোনার রাজধানী লুট করেছিল। মাজাপাহিতের একটি নৌবহর সুলুসকে তাড়িয়ে দিতে সফল হয়, কিন্তু আক্রমণের পর বনি দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৩৭১ সালের একটি চীনা প্রতিবেদনে বণিকে দরিদ্র এবং সম্পূর্ণরূপে মাজাপাহিত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ১৫ শতকের সময়, বনি মাজাপাহিত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন এবং তারপরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।এভাবে ব্রুনাইয়ের স্বাধীন সালতানাতে রূপান্তরিত হয়।ব্রুনাই একটি হাশেমি রাষ্ট্রে পরিণত হয় যখন তিনি মক্কার আরব আমির শরীফ আলীকে তার তৃতীয় সুলতান হওয়ার অনুমতি দেন। পণ্ডিতরা দাবি করেন যে ব্রুনাই সালতানাতের ক্ষমতা ১৫ এবং ১৭ শতকের মধ্যে শীর্ষে ছিল, এর ক্ষমতা উত্তর বোর্নিও থেকে দক্ষিণ ফিলিপাইন (সুলু) পর্যন্ত এবং এমনকি উত্তর ফিলিপাইন (ম্যানিলা) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল যা ব্রুনাই আঞ্চলিক অধিকারের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করেছিল যা রাজকীয় বিয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন। রাজনৈতিক কারণে, মায়নিলার ঐতিহাসিক শাসকরা ব্রুনাইয়ের সালতানাতের শাসক গোষ্ঠীগুলির সাথে আন্তঃবিবাহের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ জ্ঞানগত সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, কিন্তু ময়নিলার উপর ব্রুনাইয়ের রাজনৈতিক প্রভাব সামরিক বা রাজনৈতিক শাসনে প্রসারিত বলে মনে করা হয় না। ব্রুনাইয়ের মতো বৃহৎ থ্যালাসোক্র্যাটিক রাজ্যের (সামুদ্রিক রাজ্য) তাদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য এবং মায়নিলার মতো স্থানীয় শাসকদের জন্য আভিজাত্যের প্রতি তাদের পারিবারিক দাবিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করার জন্য আন্তঃবিবাহ ছিল একটি সাধারণ কৌশল। সুলতান বলকিয়াহ ম্যানিলা এবং সুলুকে জয় করার সময় ব্রুনাইয়ের ক্ষমতাকে সর্বাধিক পরিমাণে প্রসারিত করেছিলেন যদিও তিনি চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ভিসায়াস দ্বীপপুঞ্জ জয় করতে ব্যর্থ হন যদিও সুলতান বলকিয়াহ নিজে একজন ভিসায়ান মায়ের বংশধর ছিলেন এবং তিনি সুলতান রাগাম নামে পরিচিত ছিলেন। " দ্য সিংগিং ক্যাপ্টেন", তার শক্তিশালী বাদ্যযন্ত্রের কণ্ঠস্বর ছিল একটি বৈশিষ্ট্য যা তিনি তার ভিসায়ান বংশ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন যেহেতু ভিসায়ানরা সাংস্কৃতিকভাবে গান গাওয়ার প্রতি আচ্ছন্ন ছিল, সেরা ভিসায়ান গায়করা প্রায়শই তাদের যোদ্ধা জাতির সদস্যও হন।Cf. William Henry Scott (1903). যাইহোক, ইসলামিক ব্রুনাইয়ের শক্তি বোর্নিওতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না কারণ দক্ষিণে কুটাই নামক ভারতীয়দের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি রাজ্যে এটির একটি হিন্দু প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল যাকে তারা পরাজিত করেছিল কিন্তু ধ্বংস করেনি।ফিলিপাইনে ব্রুনাইয়ের আধিপত্যকে দুটি ভারতীয় রাজ্য, সেবু এবং বুটুয়ানের রাজাহানেটস দ্বারাও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল যেগুলি কাকতালীয়ভাবে কুতাইয়ের সাথে মিত্র ছিল এবং ব্রুনাইয়ের নির্ভরতার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল; সুলু এবং ম্যানিলা পাশাপাশি তাদের পারস্পরিক মিত্র, মাগুইন্দানাওয়ের সালতানাত। মাদজা-আস এবং দাপিতানের কেদাতুয়ানরাও ব্রুনাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিল কারণ তারা মাগুইন্দানাও এবং টারনেট থেকে সংগঠিত ক্রমাগত মুসলিম আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল, ওশেনিয়ার আশেপাশে অবস্থিত একটি পাপুয়া ভাষী রাজ্য যা মশলা উৎপাদনে একচেটিয়াভাবে সম্পদশালী হয়ে উঠেছিল।তবুও, ১৬ শতকের মধ্যে, ব্রুনাইয়ে ইসলাম দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়েছিল এবং দেশটি তার বৃহত্তম মসজিদগুলির মধ্যে একটি তৈরি করেছিল। ১৫৭৮ সালে, একজন স্প্যানিশ ভ্রমণকারী অ্যালোনসো বেল্টরান এটিকে পাঁচ তলা লম্বা এবং জলের উপর নির্মিত বলে বর্ণনা করেছিলেন। স্পেনের সাথে যুদ্ধ এবং পতন বাম|থাম্ব|১৪০০ থেকে ১৮৯০ পর্যন্ত ব্রুনাইয়ের আঞ্চলিক ক্ষতি পর্তুগিজরা মালাক্কা দখল করলে ব্রুনাই সংক্ষিপ্তভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রাধান্য বেড়ে যায় হয়ে এবং এর ফলে সেখানকার ধনী এবং শক্তিশালী কিন্তু বাস্তুচ্যুত মুসলিম উদ্বাস্তুদের আচেহ এবং ব্রুনাইয়ের মতো নিকটবর্তী সালতানাতে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করে। ব্রুনেয়ির সুলতান তখন ফিলিপাইনের হিন্দু টোন্ডো এবং মুসলিম ম্যানিলার মধ্যে একটি আঞ্চলিক দ্বন্দ্বে হস্তক্ষেপ করেন ম্যানিলার ব্রুনিয়ান বংশোদ্ভূত রাজা আচেকে টোন্ডোর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্রুনিয়ান নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল হিসাবে এবং ফিলিপাইনে ব্রুনিয়ান স্বার্থের প্রয়োগকারী হিসাবে নিযুক্ত করে। পরবর্তীকালে তিনি ম্যাগেলান অভিযানের সম্মুখীন হনde Aganduru Moriz, Rodrigo (1882). যেখানে আন্তোনিও পিগাফেট্টা উল্লেখ করেন যে তার পিতামহ ব্রুনাইয়ের সুলতানের নির্দেশে আচে পূর্বে পুরাতন ধর্মের প্রতি বিশ্বস্ত এবং সালতানাতের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম বোর্নিওর বৌদ্ধ শহর লুকে বরখাস্ত করেছিলেন।Tom Harrisson, Brunei's Two (or More) Capitals, Brunei Museum Journal, Vol. 3, No. 4 (1976), p. 77 sq.যাইহোক, ইউরোপীয় প্রভাব ধীরে ধীরে ব্রুনাইয়ের আঞ্চলিক ক্ষমতার অবসান ঘটায়, কারণ একটি সময়ে ব্রুনাই রাজকীয় উত্তরাধিকার নিয়ে অভ্যন্তরীণ কলহের কারণে পতনের শুরু হয়। ইউরোপীয় খ্রিস্টান শক্তির এই আক্রমণের মুখে, অটোমান খিলাফত আচেহকে একটি সংরক্ষিত রাজ্য বানিয়ে এবং স্থানীয় মুজাহিদিনদের শক্তিশালীকরণ, প্রশিক্ষণ ও সজ্জিত করার জন্য অভিযান প্রেরণ করে বিপর্যস্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সালতানাতদের সাহায্য করেছিল।Kayadibi, Saim ম্যানিলা ওইডোর মেলচোর দাভালোসের অভিযোগের প্রমাণ হিসাবে তুর্কিরা নিয়মিতভাবে ব্রুনাইতে চলে যাচ্ছিল, যারা তার ১৫৮৫ সালের প্রতিবেদনে বলেছে যে তুর্কিরা প্রতি বছর সুমাত্রা, বোর্নিও এবং টেরনেটে আসছিল, লেপান্তোর যুদ্ধের পরাজিত প্রবীণরা সহ।Melchor Davalos to the King, Manila 20 June 1585, in Lewis Hanke, Cuerpo de Documentos del Siglo XVI sobre los derechos de España en las Indias y las Filipinas (Mexico 1977), pp 72, 75। হ্যাবসবার্গ স্পেনের বিরুদ্ধে ব্রুনাইকে সাহায্যকারী তুর্কিদের উপস্থিতি পরবর্তী ক্যাস্টিল যুদ্ধকে অটোমান-হ্যাবসবার্গ যুদ্ধের একটি অংশ করে তোলে। স্পেন ১৫৭৮ সালে যুদ্ধ ঘোষণা করে, সেই সময়ে ব্রুনাইয়ের রাজধানী কোটা বাতু আক্রমণ ও দখল করার পরিকল্পনা করে। এটি দুটি ব্রুনিয়ান সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি, পেঙ্গিরান সেরি লেলা এবং পেঙ্গিরান সেরি রত্ন-এর সহায়তার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। প্রাক্তন ম্যানিলায় ভ্রমণ করেছিলেন, তখন স্প্যানিশ উপনিবেশের কেন্দ্রস্থল। ম্যানিলা নিজেই ব্রুনাই থেকে বন্দী হয়েছিল, খ্রিস্টান ধর্ম‌ নিয়েছিল এবং মেক্সিকো সিটিতে কেন্দ্রীভূত নিউ স্পেনের ভাইসারয়্যালিটির একটি অঞ্চল তৈরি করেছিল। পেঙ্গিরান সেরি লেলা তার ভাই সাইফুল রিজাল কর্তৃক দখল করা সিংহাসন পুনরুদ্ধার করতে সাহায্যের জন্য ব্রুনাইকে স্পেনের উপনদী হিসেবে প্রস্তাব করতে এসেছিলেন। স্প্যানিশরা সম্মত হয়েছিল ব্রুনাই জয় সফল হলে, পেঙ্গিরান সেরি লেলাকে সুলতান হিসেবে নিযুক্ত করা হবে, আর পেঙ্গিরান সেরি রত্ন হবেন নতুন বেন্দাহারা। ডান|থাম্ব|১৮৯০ সাল থেকে ব্রুনাই (সবুজ) এর সীমানা ১৫৭৮ সালের মার্চ মাসে, একটি নতুন স্প্যানিশ নৌবহর মেক্সিকো থেকে এসে ফিলিপাইনে বসতি স্থাপন করেছিল, ডি স্যান্ডে, ক্যাপিটান-জেনারেল নেতৃত্বে, তিনি ম্যানিলা থেকে ব্রুনাইয়ের উদ্দেশ্যে একটি অভিযানের আয়োজন করেছিলেন। এই অভিযানে ৪০০ জন স্প্যানিয়ার্ড এবং মেক্সিকান, ১,৫০০ ফিলিপিনো নেটিভ এবং ৩০০ জন বোর্নিয়ান ছিল। প্রচারণাটি ছিল অনেকের মধ্যে একটি, যার মধ্যে মিন্দানাও এবং সুলুতেও অ্যাকশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। খ্রিস্টান পক্ষের জাতিগত গঠন বৈচিত্র্যময় ছিল কারণ এটি সাধারণত মেস্টিজোস, মুলাটোস এবং আমেরিন্ডিয়ান ( আজটেক, মায়ান এবং ইনকান ) দ্বারা গঠিত যারা মেক্সিকো থেকে একত্রিত এবং পাঠানো হয়েছিল এবং তাদের নেতৃত্বে ছিল স্প্যানিশ অফিসাররা যারা স্থানীয় ফিলিপিনোদের সাথে একসাথে কাজ করেছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে সামরিক অভিযানে। যদিও মুসলিম দিকটিও সমানভাবে বর্ণগতভাবে বৈচিত্র্যময় ছিল।স্থানীয় মালয় যোদ্ধাদের পাশাপাশি, অটোমানরা বারবার নিকটবর্তী আচেহতে সামরিক অভিযান পাঠিয়েছিল।অভিযানগুলো মূলত তুর্কি, মিশরীয়, সোয়াহিলি, সোমালি, সিন্ধি, গুজরাটি এবং মালাবারদের নিয়ে গঠিত। এই অভিযাত্রী বাহিনী ব্রুনাইয়ের মতো কাছাকাছি অন্যান্য সুলতানিতেও ছড়িয়ে পড়েছিল এবং কামান তৈরির সম্পর্কে নতুন যুদ্ধের কৌশল ও শিখিয়েছিল।Cambridge illustrated atlas, warfare: Renaissance to revolution, 1492–1792 by Jeremy Black p. 16 অবশেষে, স্প্যানিশরা ১৫৭৮ সালের ১৬ এপ্রিল পেঙ্গিরান সেরি লেলা এবং পেঙ্গিরান সেরি রত্ন-এর সহায়তায় রাজধানী আক্রমণ করে, শহরগুলি পুড়িয়ে দেয় এবং জনসংখ্যাকে ধর্ষণ করে।সুলতান সাইফুল রিজাল এবং পাদুকা সেরি বেগাওয়ান সুলতান আব্দুল কাহার মেরাগাং তারপর জেরুডং -এ পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।জেরুডং-এ, তারা ব্রুনাই থেকে দূরে বিজয়ী সেনাবাহিনীকে তাড়া করার পরিকল্পনা করেছিল। কলেরা বা আমাশয় প্রাদুর্ভাবের কারণে উচ্চ প্রাণহানির শিকার, স্প্যানিশরা ব্রুনাই ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ৭২ দিন পর ২৬ জুন ১৫৭৮ সালে ম্যানিলায় ফিরে আসে। তারা মসজিদটির পাঁচ স্তরের ছাদ সহ একটি উঁচু কাঠামো পুড়িয়ে দেয়। পেঙ্গিরান সেরি লেলা আগস্ট বা সেপ্টেম্বর ১৫৭৮ সালে মারা যান, সম্ভবত তার স্প্যানিশ মিত্রদের দ্বারা ভোগা একই অসুস্থতা থেকে। সন্দেহ ছিল যে তিনি বৈধ সুলতানকে ক্ষমতাসীন সুলতান দ্বারা বিষ প্রয়োগ করা হতে পারে। সেরি লেলার কন্যা, একজন ব্রুনিয়ান রাজকুমারী, "পুত্রি", স্প্যানিশদের সাথে চলে গিয়েছিলেন, তিনি মুকুটের প্রতি তার দাবি পরিত্যাগ করেছিলেন এবং তারপর তিনি অগাস্টিন দে লেগাজপি দে টোন্ডো নামে একজন খ্রিস্টান তাগালগকে বিয়ে করেছিলেন। অগাস্টিন ডি লেগাস্পি তার পরিবার এবং সহযোগীদের সাথে শীঘ্রই মহারলিকাদের ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েন, ফিলিপিনোরা ফিলিপাইন থেকে স্পেনীয়দের বিতাড়িত করার জন্য ব্রুনাই সালতানাত এবং জাপানি শোগুনেটের সাথে সংযোগ স্থাপনের একটি প্রচেষ্টা।Martinez, Manuel F. Assassinations & conspiracies : from Rajah Humabon to Imelda Marcos. যাইহোক, ষড়যন্ত্রের স্প্যানিশ দমনের উপর, প্রাক-ঔপনিবেশিক ম্যানিলার ব্রুনিয়ান বংশোদ্ভূত অভিজাতদেরকে গুয়েরেরো, মেক্সিকোতে নির্বাসিত করা হয়েছিল যা পরবর্তীকালে স্পেনের বিরুদ্ধে মেক্সিকান স্বাধীনতা যুদ্ধের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। কাস্টিলিয়ান যুদ্ধের স্থানীয় ব্রুনাই অ্যাকাউন্ট ঘটনাগুলির সাধারণভাবে গৃহীত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনেকটাই আলাদা।কাস্টিলিয়ান যুদ্ধকে বীরত্বপূর্ণ পর্ব হিসেবে দেখা হয়েছিল, যেখানে স্প্যানিয়ার্ডদের বিতাড়িত করা হয়েছিল বেন্দাহারা সাকাম, কথিতভাবে ক্ষমতাসীন সুলতানের ভাই এবং এক হাজার স্থানীয় যোদ্ধা।বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ এটিকে একটি লোক-নায়কের বিবরণ বলে মনে করেন, যা সম্ভবত কয়েক দশক বা শতাব্দী পরে বিকাশ লাভ করেছে। ব্রুনাই শেষ পর্যন্ত নৈরাজ্যের মধ্যে পড়ে। দেশটি ১৬৬০ থেকে ১৬৭৩ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধের শিকার হয়েছিল। ব্রিটিশ হস্তক্ষেপ থাম্ব|ব্রিটিশ অভিযাত্রী জেমস ব্রুক ব্রুনাইয়ের সুলতানের সাথে আলোচনা করছেন, যার ফলে লাবুয়ান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, ১৮৪৬ ব্রিটিশরা বেশ কয়েকবার ব্রুনাইয়ের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে।১৮৪৬ সালের জুলাইয়ে ব্রিটেন ব্রুনাই আক্রমণ করে কারণ সঠিক সুলতান কে ছিল তা নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে। ১৮৮০ এর দশকে, ব্রুনিয়ান সাম্রাজ্যের পতন অব্যাহত ছিল। সুলতান জেমস ব্রুককে জমি (বর্তমানে সারাওয়াক) দিয়েছিলেন, যিনি তাকে একটি বিদ্রোহ দমন করতে সাহায্য করেছিলেন এবং তাকে সারাওয়াকের রাজ প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছিলেন। সময়ের সাথে সাথে, ব্রুক এবং তার ভাগ্নেরা (যারা তার উত্তরসূরি হয়েছিলেন) আরও জমি লিজ বা সংযুক্ত করে। ব্রুনাই তার এবং তার রাজবংশের কাছে তার অনেক অঞ্চল হারিয়েছিল, যা সাদা রাজা নামে পরিচিত। সুলতান হাশিম জলিলুল আলম আকামাদ্দিন ব্রিটিশদের কাছে ব্রুকসের আরও দখল বন্ধ করার আবেদন জানান। "সুরক্ষার চুক্তি" স্যার হিউ লো দ্বারা আলোচনা করা হয় এবং ১৭ সেপ্টেম্বর ১৮৮৮ সালে কার্যকর হয়। চুক্তিতে বলা হয়েছিল যে সুলতান "ব্রিটিশ সম্মতি ব্যতীত বিদেশী শক্তির কাছে কোন অঞ্চল হস্তান্তর বা ইজারা দিতে পারবেন না"; এটি ব্রুনাইয়ের বাহ্যিক বিষয়ে ব্রিটেনকে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে, এটিকে একটি ব্রিটিশ সুরক্ষিত রাষ্ট্রে পরিণত করে (যা ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল)। কিন্তু, ১৮৯০ সালে যখন সারাওয়াকের রাজ ব্রুনাইয়ের পান্ডারুয়ান জেলাকে সংযুক্ত করে, তখন ব্রিটিশরা এটি বন্ধ করার জন্য ব্রুনাই বা সারাওয়াকের রাজকে 'বিদেশি' (সুরক্ষা চুক্তি অনুসারে) বলে গণ্য করেনি। সারওয়াকের এই চূড়ান্ত সংযোজন ব্রুনাইকে তার বর্তমান ক্ষুদ্র ভূমির ভর এবং দুটি ভাগে বিভক্ত করে ছেড়ে যায়। ব্রিটিশ বাসিন্দাদের ১৯০৬ সালে সম্পূরক সুরক্ষা চুক্তির অধীনে ব্রুনাইতে প্রবর্তন করা হয়েছিল। বাসিন্দাদের প্রশাসনের সমস্ত বিষয়ে সুলতানকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।সময়ের সাথে সাথে, বাসিন্দা সুলতানের চেয়ে বেশি নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।আবাসিক ব্যবস্থা ১৯৫৯ সালে শেষ হয়। তেল আবিষ্কার বহু ব্যর্থ প্রচেষ্টার পরে ১৯২৯ সালে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কৃত হয়েছিল। দুই ব্যক্তি, এফএফ ম্যারিয়ট এবং টিজি কোচরান, ১৯২৬ সালের শেষের দিকে সেরিয়া নদীর কাছে তেলের গন্ধ পেয়েছিলেন। তারা একজন ভূ-পদার্থবিদকে অবহিত করেছিলেন, যিনি সেখানে একটি জরিপ পরিচালনা করেছিলেন। ১৯২৭ সালে, এলাকায় গ্যাসের ক্ষরণের খবর পাওয়া গেছে। সেরিয়া ওয়েল নাম্বার ওয়ান (S-1) ১২ জুলাই ১৯২৮ সালে ড্রিল করা হয়েছিল। ৫ এপ্রিল, ১৯২৯ এ তেল পাওয়া যায়। সেরিয়া ওয়েল নম্বর ২টি ১৯ আগস্ট ১৯২৯ সালে ড্রিল করা হয়েছিল এবং , তেল উৎপাদন অব্যাহত। ১৯৩০-এর দশকে আরও তেলক্ষেত্রের বিকাশের সাথে সাথে তেল উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ১৯৪০ সালে, তেল উৎপাদন ছিল ছয় মিলিয়ন ব্যারেলেরও বেশি। ব্রিটিশ মালয়ান পেট্রোলিয়াম কোম্পানি (বর্তমানে ব্রুনাই শেল পেট্রোলিয়াম কোম্পানি) ২২ জুলাই ১৯২২ সালে গঠিত হয়েছিল। প্রথম অফশোর কূপ ১৯৫৭ সালে খনন করা হয়েছিল। ২০ শতকের শেষের দিক থেকে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ব্রুনাইয়ের উন্নয়ন এবং সম্পদের ভিত্তি। জাপানিদের দখলে থাম্ব|ব্রুনাইয়ের ২৭তম সুলতান আহমদ তাজউদ্দীন, জাপানিদের ব্রুনাই আক্রমণের আট মাস আগে, ১৯৪১ সালের এপ্রিলে তার দরবারের সদস্যদের সাথে পার্ল হারবার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে তাদের আক্রমণের আট দিন পর ১৯৪১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাপানিরা ব্রুনাই আক্রমণ করে।তারা কাওয়াগুচি ডিট্যাচমেন্টের ১০,০০০ সৈন্যকে কুয়ালা বেলাইতে ক্যাম রণ বে থেকে অবতরণ করে।ছয় দিনের যুদ্ধের পর তারা সমগ্র দেশ দখল করে নেয়।এই অঞ্চলে একমাত্র মিত্রবাহিনী ছিল সারওয়াকের কুচিং-এ অবস্থিত ১৫তম পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ২য় ব্যাটালিয়ন।"Brunei under the Japanese occupation", Rozan Yunos, Brunei Times, Bandar Seri Begawan, 29 June 2008 জাপানিরা ব্রুনাই দখল করার পর তারা সুলতান আহমদ তাজউদ্দীনের সাথে দেশ পরিচালনার চুক্তি করে।ইঞ্চে ইব্রাহীম (পরে পেহিন দাতু পের্দানা মেন্টেরি দাতো লায়লা উতামা আওয়াং হাজি ইব্রাহিম নামে পরিচিত), ব্রিটিশ বাসিন্দার প্রাক্তন সেক্রেটারি, আর্নেস্ট এডগার পেঙ্গিলি, জাপানি গভর্নরের অধীনে প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিযুক্ত হন।জাপানিরা প্রস্তাব করেছিল যে পেঙ্গিলি তাদের প্রশাসনের অধীনে তার অবস্থান ধরে রাখবে, কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।তিনি এবং ব্রুনাইয়ে থাকা অন্যান্য ব্রিটিশ নাগরিকদেরকে জাপানিরা সারাওয়াকের বাতু লিন্টাং ক্যাম্পে বন্দী করে রেখেছিল। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা যখন জাপানি পাহারায় ছিলেন, তখন ইব্রাহিম ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেককে হাত নেড়ে তার মঙ্গল কামনা করেন।"The Japanese Interregnum. সুলতান তার সিংহাসন ধরে রাখেন এবং জাপানিরা তাকে পেনশন এবং সম্মান প্রদান করেন।দখলের পরবর্তী সময়ে, তিনি লিমবাংয়ের তানতুয়ায় বসবাস করতেন এবং জাপানিদের সাথে তার তেমন কোনো সম্পর্ক ছিল না।বেশিরভাগ মালয় সরকারি কর্মকর্তাকে জাপানিরা ধরে রেখেছিল।ব্রুনাইয়ের প্রশাসনকে পাঁচটি প্রিফেকচারে পুনর্গঠিত করা হয়েছিল, যার মধ্যে ব্রিটিশ উত্তর বোর্নিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।প্রিফেকচারের মধ্যে বারাম, লাবুয়ান, লাওয়াস এবং লিমবাং অন্তর্ভুক্ত ছিল।ইব্রাহিম দখলের সময় জাপানিদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি লুকিয়ে রেখেছিলেন। পেঙ্গিরান ইউসুফ (পরে ইয়াএম পেঙ্গিরান সেটিয়া নেগারা পেঙ্গিরান হাজি মোহম্মদ ইউসুফ ) অন্যান্য ব্রুনিয়ানদের সাথে প্রশিক্ষণের জন্য জাপানে পাঠানো হয়েছিল।যদিও হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলার দিন ওই এলাকায়, ইউসুফ বেঁচে যান। ব্রিটিশরা একটি জাপানি আক্রমণের পূর্বাভাস করেছিল, কিন্তু ইউরোপে যুদ্ধে জড়িত থাকার কারণে এলাকাটি রক্ষা করার জন্য তাদের সম্পদের অভাব ছিল।পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সৈন্যরা ১৯৪১ সালের সেপ্টেম্বরে সেরিয়া তেলক্ষেত্র তেলওয়েলগুলিকে কংক্রিট দিয়ে ভরাট করে জাপানিদের ব্যবহার অস্বীকার করার জন্য।জাপানিরা মালায়া আক্রমণ করলে অবশিষ্ট যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়।যুদ্ধের শেষের দিকে, মিরি এবং সেরিয়াতে ১৬টি কূপ পুনরায় চালু করা হয়েছিল, যার উৎপাদন যুদ্ধ-পূর্ব স্তরের প্রায় অর্ধেক পৌঁছেছিল। মুয়ারায় কয়লা উৎপাদনও পুনরায় শুরু করা হয়েছিল, কিন্তু সামান্য সাফল্যের সাথে। alt=|বাম|থাম্ব|১৯৪৪ সালের অক্টোবরে ব্রুনাই উপসাগরে নাগাতো, টোন, ইয়ামাতো এবং মুসাশি দখলের সময়, জাপানিদের তাদের ভাষা স্কুলে শেখানো হতো এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জাপানি ভাষা শেখার প্রয়োজন ছিল। স্থানীয় মুদ্রা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল যা ডুইট পিসাং (কলার টাকা) নামে পরিচিত হয়েছিল। ১৯৪৩ সাল থেকে অতি-মুদ্রাস্ফীতি মুদ্রার মান ধ্বংস করে এবং যুদ্ধের শেষে এই মুদ্রাটি মূল্যহীন হয়ে পড়ে।শিপিংয়ের উপর মিত্রবাহিনীর আক্রমণের ফলে শেষ পর্যন্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।খাদ্য ও ওষুধের সরবরাহ কমে যায় এবং জনগণ দুর্ভিক্ষ ও রোগের শিকার হয়। বিমানবন্দরের রানওয়েটি জাপানিরা দখলের সময় তৈরি করেছিল এবং ১৯৪৩ সালে জাপানি নৌ ইউনিটগুলি ব্রুনাই বে এবং লাবুয়ানে অবস্থিত ছিল।মিত্রবাহিনীর বোমা হামলায় নৌঘাঁটি ধ্বংস হয়ে গেলেও বিমানবন্দরের রানওয়ে বেঁচে যায়।সুবিধাটি একটি পাবলিক বিমানবন্দর হিসাবে উন্নত করা হয়েছিল। ১৯৪৪ সালে মিত্ররা দখলদার জাপানিদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা শুরু করে, যার ফলে শহর এবং কুয়ালা বেলাইত অনেকাংশ ধ্বংস হয়ে যায়, কিন্তু কাম্পং আয়ার মিস হয়।"Japanese occupation", Historical Dictionary of Brunei Darussalam, Jatswan S. Sidhu, Edition 2, illustrated, Scarecrow Press, 2009, p. 115, ডান|থাম্ব|১০ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ তারিখে লাবুয়ানে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে জাপানি ৩৭ তম ডিভিশনের লেফটেন্যান্ট-জেনারেল মাসাও বাবার (স্বাক্ষরকারী) সাথে অস্ট্রেলিয়ান ৯ম ডিভিশনের মেজর-জেনারেল উটেন ১৯৪৫ সালের ১০ জুন, অস্ট্রেলিয়ান ৯ম ডিভিশন জাপানিদের কাছ থেকে বোর্নিও পুনরুদ্ধার করতে অপারেশন ওবো সিক্সের অধীনে মুয়ারায় অবতরণ করে। তাদের আমেরিকান বিমান এবং নৌ ইউনিট সমর্থন করেছিল। ব্রুনাই শহরে ব্যাপকভাবে বোমাবর্ষণ করা হয় এবং তিন দিনের প্রবল যুদ্ধের পর পুনরায় দখল করা হয়। ব্রিটিশ সামরিক প্রশাসন জাপানিদের কাছ থেকে শাসনভার গ্রহণ করে এবং ১৯৪৬ সালের জুলাই পর্যন্ত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ব্রিটিশ সামরিক প্রশাসনের (বিএমএ) অধীনে ব্রুনাইতে একটি নতুন সরকার গঠিত হয়।এটি প্রধানত অস্ট্রেলিয়ান অফিসার এবং সার্ভিসম্যানদের নিয়ে গঠিত। ১৯৪৫ সালের ৬ জুলাই ব্রুনাইয়ের প্রশাসন সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ব্রুনাই স্টেট কাউন্সিলও সেই বছর পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল। BMA-কে ব্রুনিয়ার অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, যা তাদের দখলের সময় জাপানিদের দ্বারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।তাদের সেরিয়ার কূপের আগুনও নিভিয়ে দিতে হয়েছিল, যা তাদের পরাজয়ের আগে জাপানিদের দ্বারা লাগানো হয়েছিল। ১৯৪১ সালের আগে, সিঙ্গাপুরে অবস্থিত স্ট্রেইট সেটেলমেন্টের গভর্নর ব্রুনাই, সারাওয়াক এবং উত্তর বোর্নিও (বর্তমানে সাবাহ ) এর জন্য ব্রিটিশ হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করতেন। ব্রুনাইয়ের প্রথম ব্রিটিশ হাইকমিশনার ছিলেন সারাওয়াকের গভর্নর স্যার চার্লস আরডন ক্লার্ক। বারিসান পেমুদা ("ইয়ুথ মুভমেন্ট"; সংক্ষেপে BARIP) হল প্রথম রাজনৈতিক দল যেটি ব্রুনাইতে ১২ এপ্রিল ১৯৪৬ সালে গঠিত হয়েছিল। দলটির উদ্দেশ্য ছিল "সুলতান ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং মালয়দের অধিকার রক্ষা করা"। BARIP দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচনায়ও অবদান রেখেছে। ১৯৪৮ সালে নিষ্ক্রিয়তার কারণে দলটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯৫৯ সালে, ব্রুনাইকে একটি স্ব-শাসিত রাষ্ট্র ঘোষণা করে একটি নতুন সংবিধান লেখা হয়েছিল, যখন এর পররাষ্ট্র বিষয়ক, নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা যুক্তরাজ্যের দায়িত্ব ছিল।১৯৬২ সালে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি ছোট বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল, যা যুক্তরাজ্যের সহায়তায় দমন করা হয়েছিল।ব্রুনাই বিদ্রোহ নামে পরিচিত, এটি উত্তর বোর্নিও ফেডারেশন গঠনে ব্যর্থতায় অবদান রাখে।বিদ্রোহ আংশিকভাবে মালয়েশিয়ান ফেডারেশন থেকে বেরিয়ে আসার ব্রুনাইয়ের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছিল। ব্রুনাই ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।সরকারি জাতীয় দিবস, যা দেশের স্বাধীনতা উদযাপন করে, ঐতিহ্য অনুসারে ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধান রচনা থাম্ব|সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন তৃতীয় ১৯৫৩ সালের জুলাই মাসে, সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন তৃতীয় ব্রুনাইয়ের লিখিত সংবিধান সম্পর্কে নাগরিকদের মতামত জানতে তুজুহ সেরাংকাই নামে একটি সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেন। ১৯৫৪ সালের মে মাসে, সুলতান, আবাসিক এবং হাই কমিশনার কমিটির ফলাফল নিয়ে আলোচনা করার জন্য মিলিত হন।তারা সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের অনুমোদন দিতে সম্মত হয়েছে। ১৯৫৯ সালের মার্চ মাসে, সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন তৃতীয় প্রস্তাবিত সংবিধান নিয়ে আলোচনার জন্য লন্ডনে একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ব্রিটিশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন উপনিবেশের সেক্রেটারি অফ স্টেট স্যার অ্যালান লেনক্স-বয়েড।ব্রিটিশ সরকার পরবর্তীকালে খসড়া সংবিধান গ্রহণ করে। ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫৯ তারিখে, ব্রুনাই শহরে সংবিধান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন তৃতীয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কমিশনার-জেনারেল স্যার রবার্ট স্কট।এটি নিম্নলিখিত বিধান অন্তর্ভুক্ত: সুলতানকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রধান করা হয়। ব্রুনাই এর অভ্যন্তরীণ প্রশাসনের জন্য দায়ী ছিল। ব্রিটিশ সরকার শুধুমাত্র পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক দায়বদ্ধ ছিল। রেসিডেন্টের পদটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল এবং একজন ব্রিটিশ হাইকমিশনার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। পাঁচটি কাউন্সিল স্থাপন করা হয়: কার্যনির্বাহী পরিষদ ব্রুনাইয়ের আইন পরিষদ প্রিভি কাউন্সিল উত্তরাধিকার পরিষদ রাজ্য ধর্মীয় পরিষদ জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্রুনাইয়ের ২৮তম সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন তৃতীয় জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি সিরিজ শুরু করেছিলেন। প্রথমটি ১৯৫৩ সালে চালু হয়েছিল। মোট B$১০০ মিলিয়ন ব্রুনাই স্টেট কাউন্সিল এই পরিকল্পনার জন্য অনুমোদিত হয়েছিল। ফিজির ঔপনিবেশিক অফিস থেকে ইআর বেভিংটনকে এটি বাস্তবায়নের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। পরিকল্পনার অধীনে একটি মার্কিন ডলার ১৪ মিলিয়ন গ্যাস প্ল্যান্ট নির্মিত হয়েছিল। ১৯৫৪ সালে, ব্রুনাই শেল পেট্রোলিয়াম অফশোর এবং অনশোর উভয় ক্ষেত্রেই জরিপ ও অনুসন্ধানের কাজ হাতে নেয়। ১৯৫৬ সাল নাগাদ, উৎপাদন ১১৪,৭০০ bpd এ পৌঁছেছিল। থাম্ব|১৯৬৩ সালের জানুয়ারি সেরিয়া তেলক্ষেত্রে পাহারায় ব্রিটিশ সৈন্যরা ব্রুনাইয়ের ব্রিটিশ সংরক্ষিত অঞ্চলে পরিকল্পনাটি জনশিক্ষার উন্নয়নেও সহায়তা করেছে। ১৯৫৮ সাল নাগাদ, শিক্ষার ব্যয় ছিল $৪ মিলিয়ন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছিল, কারণ নতুন রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল এবং ১৯৫৪ সালে বেরাকাস বিমানবন্দরের পুনর্গঠন সম্পন্ন হয়েছিল। দ্বিতীয় জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ১৯৬২ সালে চালু করা হয়েছিল। ১৯৬৩ সালে একটি প্রধান তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল।তেল ও গ্যাস সেক্টরে উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে এবং তারপর থেকে তেল উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিকল্পনাটি নাগরিকদের খাওয়ার জন্য মাংস ও ডিমের উৎপাদনকেও প্রচার করে। মাছ ধরার শিল্প পরিকল্পনার পুরো সময় জুড়ে তার উৎপাদন ২৫% বৃদ্ধি করেছে। মুয়ারার গভীর পানির বন্দরও এই সময়ে নির্মিত হয়েছিল।বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা হয়েছিল, এবং গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য গবেষণা করা হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় এই অঞ্চলের একটি স্থানীয় রোগ ম্যালেরিয়া নির্মূল করার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। স্বাধীনতা ১৪ নভেম্বর ১৯৭১ সালে, সুলতান হাসানাল বলকিয়া ১৯৫৯ সালের সংবিধানের সংশোধনী সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করার জন্য লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১৯৭১ সালের ২৩ নভেম্বর ব্রিটিশ প্রতিনিধি অ্যান্থনি রয়েলের সাথে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির অধীনে, নিম্নলিখিত শর্তাবলীতে সম্মত হয়েছিল: ব্রুনাইকে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ স্ব-শাসন দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাজ্য এখনও বহিরাগত বিষয় এবং প্রতিরক্ষার জন্য দায়ী থাকবে। ব্রুনাই এবং যুক্তরাজ্য নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ভাগাভাগি করতে সম্মত হয়েছে। এই চুক্তির কারণে গুর্খা ইউনিটগুলি ব্রুনাইতে মোতায়েন করা হয়েছিল, যেখানে তারা আজ অবধি রয়ে গেছে। থাম্ব| ২০০৪ সালে সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ (ডানে) ৭ জানুয়ারি ১৯৭৯-এ, ব্রুনাই এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি লর্ড গরনউই-রবার্টস যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি হিসাবে স্বাক্ষরিত করেছিল। এই চুক্তি ব্রুনাইকে একটি স্বাধীন জাতি হিসাবে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব গ্রহণের অনুমতি দেয়। ব্রিটেন ব্রুনাইকে কূটনৈতিক বিষয়ে সহায়তা করতে রাজি হয়েছে। মে ১৯৮৩ সালে, যুক্তরাজ্য ঘোষণা করেছিল যে ব্রুনাইয়ের স্বাধীনতার তারিখ হবে ১ জানুয়ারি ১৯৮৪। ১৯৮৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর, দেশের চারটি জেলার প্রধান মসজিদে একটি গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি মধ্যরাতে সুলতান হাসানাল বলকিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। সুলতান পরবর্তীকালে পূর্ববর্তী " হিজ রয়্যাল হাইনেস " এর পরিবর্তে " হিজ ম্যাজেস্টি " উপাধি গ্রহণ করেন। ব্রুনাই ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৮৪ তারিখে জাতিসংঘে ভর্তি হয়, সংস্থার ১৫৯তম সদস্য হয়।Brunei is Greeted as the 159th U.N. Member, The New York Times ভূগোল থাম্ব|ব্রুনাইয়ের একটি টপোগ্রাফিক এবং ভৌগোলিক সীমা মানচিত্র ব্রুনাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ যা দুটি সংযোগহীন অংশ নিয়ে গঠিত এবং বোর্নিও দ্বীপএ অবস্থিত। মোট এলাকা । এটির উপকূলরেখা দক্ষিণ চীন সাগরের পাশে, এবং মালয়েশিয়ার সাথে সীমান্ত ভাগ করে। এটির আঞ্চলিক জলের, এবং একটি একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল। জনসংখ্যার প্রায় ৯৭% বৃহত্তর পশ্চিম অংশে ( বেলাইত, টুটং এবং ব্রুনাই-মুয়ারা )-তে বাস করে, যেখানে কেবলমাত্র ১০,০০০ মানুষ পাহাড়ী পূর্ব অংশে ( টেম্বুরং জেলা ) বাস করে। ব্রুনাইয়ের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪০৮,০০০ যার মধ্যে প্রায় ১৫০,০০০ বাস করে রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানে।2001 Summary Tables of the Population Census. অন্যান্য প্রধান শহরগুলি হল বন্দর শহর মুয়ারা, তেল উৎপাদনকারী শহর সেরিয়া এবং এর পার্শ্ববর্তী শহর কুয়ালা বেলাইত, বেলাইত জেলায়। পানাগা এলাকায় প্রচুর পরিমাণে ইউরোপীয় প্রবাসীদের বাসস্থান, রয়্যাল ডাচ শেল এবং ব্রিটিশ আর্মি আবাসনের কারণে, সেখানে বেশ কিছু বিনোদনমূলক সুবিধা রয়েছে। ব্রুনাইয়ের বেশির ভাগই বোর্নিও নিম্নভূমি রেইন ফরেস্ট ইকোরিজিয়নের মধ্যে, যা দ্বীপের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে। পর্বত রেইন ফরেস্টের এলাকা অভ্যন্তরীণভাবে অবস্থিত। ব্রুনাইয়ের জলবায়ু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় নিরক্ষীয় যেটি একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইনফরেস্ট জলবায়ু বাণিজ্য বায়ুর তুলনায় আন্তঃক্রান্তীয় অভিসারী অঞ্চলের অধীন এবং কোন বা বিরল ঘূর্ণিঝড় নেই। ব্রুনাই অন্যান্য আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলির সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত ঝুঁকির মুখোমুখি। জনসংখ্যার উপাত্ত থাম্ব|রাতে সুলতান ওমর আলি সাইফুদ্দিন মসজিদ ব্রুনাইয়ের আদিবাসীদের মধ্যে রয়েছে বেলাইত, ব্রুনাই বিসায়া (আশেপাশের ফিলিপাইনের বিসায়া/ভিসায়ার সাথে বিভ্রান্ত হবেন না), আদিবাসী ব্রুনিয়ান মালয়, দুসুন, কেদায়ান, লুন বাওয়াং, মুরুত এবং টুটং। ব্রুনাইয়ের জনসংখ্যা সালে ছিল,যার মধ্যে ৭৬% শহরাঞ্চলে বাস করে। ২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত প্রতি বছর নগরায়নের হার ২.১৩% অনুমান করা হয়েছে। গড় আয়ু ৭৭.৭ বছর। ২০২০ সালে, জনসংখ্যার ৬৫.৭% মালয়, ১০.৩% চীনা, ৩.৪% আদিবাসী, বাকি ২০.৬% ছোট ছোট গোষ্ঠী ছিল। এখানে অপেক্ষাকৃত বড় প্রবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। বেশিরভাগ প্রবাসী অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং ভারতের মতো অ- মুসলিম দেশ থেকে আসে। ধর্ম ইসলাম হল ব্রুনাইয়ের সরকারী ধর্ম, বিশেষ করে সুন্নি সম্প্রদায়ের এবং শাফি'র ইসলামিক আইনশাস্ত্রের ধর্ম। জনসংখ্যার ৮০% এর বেশি, যার মধ্যে বেশিরভাগ ব্রুনিয়ান মালয় এবং কেদায়ানরা মুসলিম হিসাবে চিহ্নিত। চর্চা করা অন্যান্য ধর্ম হল বৌদ্ধধর্ম (৭%, প্রধানত চীনাদের দ্বারা) এবং খ্রিস্টধর্ম (৭.১%)। ফ্রিথিঙ্কাররা, বেশিরভাগই চীনা, জনসংখ্যার প্রায় ৭%। যদিও তাদের বেশিরভাগই বৌদ্ধধর্ম, কনফুসিয়ানিজম এবং তাওবাদের উপাদানগুলির সাথে কিছু ধরনের ধর্ম পালন করে, তারা নিজেদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন ধর্ম পালন করেনি বলে উপস্থাপন করতে পছন্দ করে, তাই সরকারী আদমশুমারিতে নাস্তিক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। আদিবাসী ধর্মের অনুসারী জনসংখ্যার প্রায় ২%। ভাষা ব্রুনাইয়ের সরকারী ভাষা হল স্ট্যান্ডার্ড মালয়, যার জন্য ল্যাটিন বর্ণমালা ( রুমি ) এবং আরবি বর্ণমালা ( জাউই ) উভয়ই ব্যবহৃত হয়। ১৯৪১ সালের দিকে লাতিন বর্ণমালায় পরিবর্তনের আগে মালয় ভাষা জাভি লিপিতে লেখা হত। প্রধান কথ্য ভাষা হল মেলায়ু ব্রুনাই ( ব্রুনাই মালয় )। ব্রুনাই মালয় প্রমিত মালয় এবং বাকি মালয় উপভাষাগুলি থেকে বরং ভিন্ন, প্রায় ৮৪% প্রমিত মালয়ের সাথে পরিচিত, এবং এটির সাথে বেশিরভাগই পারস্পরিকভাবে বোধগম্য। ইংরেজি একটি ব্যবসায়িক এবং অফিসিয়াল ভাষা হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এটি ব্রুনাইয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা এতে কথা বলে। ইংরেজি একটি কাজের ভাষা এবং প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার ভাষা হিসাবে ব্যবসায় ব্যবহৃত হয়। চীনা ভাষাগুলিও ব্যাপকভাবে বলা হয় এবং ব্রুনাইয়ের চীনা সংখ্যালঘুরা বিভিন্ন ধরনের চীনা ভাষায় কথা বলে। আরবি মুসলমানদের ধর্মীয় ভাষা। তাই, স্কুলে, বিশেষ করে ধর্মীয় স্কুলে এবং উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানেও আরবি পড়ানো হয়। ২০০৪ সালের হিসাবে, ব্রুনাইতে ছয়টি আরবি স্কুল এবং একটি ধর্মীয় শিক্ষকের কলেজ রয়েছে। ব্রুনাইয়ের মুসলিম জনসংখ্যার একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ তাদের ধর্মীয় শিক্ষার অংশ হিসেবে আরবি ভাষার পঠন, লেখা এবং উচ্চারণে কিছু আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেছে। অন্যান্য ভাষা ও উপভাষার মধ্যে রয়েছে কেদায়ন মালয় উপভাষা, টুটং মালয় উপভাষা, মুরুত এবং দুসুন । সংস্কৃতি ডান|থাম্ব|রয়্যাল রেগালিয়া যাদুঘর ব্রুনাইয়ের সংস্কৃতি প্রধানত মালয় (এটির জাতিসত্তাকে প্রতিফলিত করে), ইসলামের ব্যাপক প্রভাব সহ, কিন্তু ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার তুলনায় এটিকে অনেক বেশি রক্ষণশীল হিসাবে দেখা হয়। ব্রুনিয়ান সংস্কৃতির প্রভাব মালয় দ্বীপপুঞ্জের মালয় সংস্কৃতি থেকে আসে। সাংস্কৃতিক প্রভাবের চারটি সময়কাল ঘটেছে: অ্যানিমিস্ট, হিন্দু, ইসলামিক এবং পাশ্চাত্য। ইসলামের খুব শক্তিশালী প্রভাব ছিল, এবং ব্রুনাইয়ের মতাদর্শ ও দর্শন হিসাবে গৃহীত হয়েছিল। একটি শরিয়া দেশ হিসাবে, অ্যালকোহল বিক্রি এবং প্রকাশ্যে সেবন নিষিদ্ধ। অমুসলিমদের তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে তাদের যাত্রার স্থান থেকে সীমিত পরিমাণে অ্যালকোহল আনার অনুমতি দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্রুনাইয়ের মিডিয়াকে সরকারপন্থী বলা হয়; সরকার ও রাজতন্ত্রের প্রেস সমালোচনা বিরল। ফ্রিডম হাউস কর্তৃক গণমাধ্যমে দেশটিকে "মুক্ত নয়" হিসাবে স্থান দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও, প্রেসগুলি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি স্পষ্টতই বিদ্বেষী নয় এবং শুধুমাত্র সরকার সম্পর্কিত নিবন্ধ প্রকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সরকার ১৯৫৩ সালে ব্রুনাই প্রেস পিএলসি নামে একটি মুদ্রণ ও প্রকাশনা সংস্থা গঠনের অনুমতি দেয়। সংস্থাটি ইংরেজি দৈনিক বোর্নিও বুলেটিন মুদ্রণ অব্যাহত রেখেছে। এই কাগজটি একটি সাপ্তাহিক সম্প্রদায়ের কাগজ হিসাবে শুরু হয়েছিল এবং 1990 সালে একটি দৈনিকে পরিণত হয়েছিল দ্য বোর্নিও বুলেটিন ছাড়াও, মিডিয়া পারমাটা এবং পেলিটা ব্রুনেই রয়েছে, স্থানীয় মালয় সংবাদপত্র যা প্রতিদিন প্রচারিত হয়। ব্রুনাই টাইমস ২০০৬ সাল থেকে ব্রুনাই থেকে প্রকাশিত আরেকটি ইংরেজি স্বাধীন সংবাদপত্র। ব্রুনাই সরকার DVB-T (RTB Perdana, RTB Aneka এবং RTB Sukmaindera) এবং পাঁচটি রেডিও স্টেশন (ন্যাশনাল এফএম, পিলিহান এফএম, নুর ইসলাম এফএম, হারমনি এফএম এবং পেলাঙ্গি এফএম) ব্যবহার করে ডিজিটাল টিভি চালু করার সাথে তিনটি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক ও পরিচালনা করে। . একটি প্রাইভেট কোম্পানি কেবল টেলিভিশন উপলব্ধ করেছে (অ্যাস্ট্রো-ক্রিস্টাল) পাশাপাশি একটি বেসরকারী রেডিও স্টেশন, ক্রিস্টাল এফএম। এটির একটি অনলাইন ক্যাম্পাস রেডিও স্টেশনও রয়েছে, UBD FM, যেটি তার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, Universiti Brunei Darussalam থেকে প্রবাহিত হয়। খেলা ব্রুনাইয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হল অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল । ব্রুনাই জাতীয় ফুটবল দল 1969 সালে ফিফায় যোগ দেয়, কিন্তু খুব বেশি সাফল্য পায়নি। শীর্ষ দুই ফুটবল লিগ হল ব্রুনাই সুপার লিগ এবং ব্রুনাই প্রিমিয়ার লিগ । ব্রুনাই ১৯৯৬ সালে অলিম্পিকে আত্মপ্রকাশ করেছিল; এটি ২০০৮ ব্যতীত পরবর্তী সমস্ত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। দেশটি ব্যাডমিন্টন, শুটিং, সাঁতার এবং ট্র্যাক-এন্ড-ফিল্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, কিন্তু এখনও কোনো পদক জিততে পারেনি। ব্রুনাই এশিয়ান গেমসে সামান্য বেশি সাফল্য পেয়েছে, চারটি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে। প্রথম বড় আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্ট যেটি ব্রুনাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা ছিল 1999 সালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান গেমস । সর্বকালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান গেমসের পদক টেবিল অনুসারে, ব্রুনিয়ার ক্রীড়াবিদরা গেমসে মোট ১৪টি স্বর্ণ, ৫৫টি রৌপ্য এবং ১৬৩টি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে। অর্থনীতি ডান|থাম্ব|ব্রুনাই রপ্তানির আনুপাতিক উপস্থাপনা, ২০১৯ ডান|থাম্ব|২৫ এপ্রিল ২০১৩-এ ব্রুনাইয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে BIMP-EAGA বৈঠক।বাম থেকে: ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়া, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুসিলো বামবাং ইউধোইয়োনো, মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি এবং ফিলিপিনো প্রেসিডেন্ট তৃতীয় বেনিগনো অ্যাকুইনো। ব্রুনাই BIMP-EAGA-এর অংশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা উদ্যোগ। সিঙ্গাপুরের পরে দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ব্রুনাইয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মানব উন্নয়ন সূচক রয়েছে এবং এটি একটি উন্নত দেশ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ। অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন এর জিডিপির প্রায় ৯০%। প্রতিদিন প্রায় তেল উৎপাদিত হয়, যার ফলে ব্রুনাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। এটি প্রায় উৎপাদন করে প্রতিদিন তরল প্রাকৃতিক গ্যাস, ব্রুনাই বিশ্বের নবম বৃহত্তম গ্যাস রপ্তানিকারক। ফোর্বস পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রের ভিত্তিতে ব্রুনাইকে ১৮২ টির মধ্যে পঞ্চম ধনী দেশ হিসাবে স্থান দিয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগ থেকে আয় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন আয়ের পরিপূরক। এই বিনিয়োগের বেশিরভাগই ব্রুনাই ইনভেস্টমেন্ট এজেন্সি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি শাখা দ্বারা করা হয়। সরকার সকল চিকিৎসা সেবা প্রদান করে, এবং চাল এবং বাসস্থানে ভর্তুকি দেয়। জাতীয় বিমান বাহক, রয়্যাল ব্রুনাই এয়ারলাইন্স, ব্রুনাইকে ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়া/নিউজিল্যান্ডের মধ্যে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এই কৌশলটির কেন্দ্রবিন্দু হল লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে এয়ারলাইনটি তার অবস্থান বজায় রাখে। এটি উচ্চ ক্ষমতা-নিয়ন্ত্রিত বিমানবন্দরে একটি দৈনিক স্লট ধারণ করে, যা এটি বন্দর সেরি বেগাওয়ান থেকে দুবাই হয়ে পরিবেশন করে। এয়ারলাইনটির সাংহাই, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর এবং ম্যানিলা সহ প্রধান এশিয়ান গন্তব্যে পরিষেবা রয়েছে। ব্রুনাই অন্যান্য দেশ থেকে কৃষি পণ্য (যেমন চাল, খাদ্য পণ্য, পশুসম্পদ ইত্যাদি), যানবাহন এবং বৈদ্যুতিক পণ্যের মতো আমদানির উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। ব্রুনাই তার খাদ্যের ৬০% আমদানি করে; এই পরিমাণের, প্রায় ৭৫% অন্যান্য আসিয়ান দেশ থেকে আসে। ব্রুনাইয়ের নেতারা উদ্বিগ্ন যে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান একীকরণ অভ্যন্তরীণ সামাজিক সংহতিকে দুর্বল করবে এবং তাই তারা একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতি অনুসরণ করেছে।যাইহোক, এটি 2000 এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (APEC) ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আরও বিশিষ্ট খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে।ব্রুনাইয়ের নেতারা শ্রমশক্তিকে আপগ্রেড করার, বেকারত্ব কমানোর পরিকল্পনা করেছেন, যা 2014 সালে 6.9% ছিল; ব্যাংকিং এবং পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করা এবং সাধারণভাবে, অর্থনৈতিক ভিত্তি প্রসারিত করা। একটি দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার লক্ষ্য বৃদ্ধির বৈচিত্র্য আনা। ব্রুনাই সরকারও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বৃদ্ধি করেছে, বিশেষ করে চালে। এপ্রিল ২০০৯ সালে ওয়াসান পাড়ি মাঠে "ব্রুনাই দারুসসালামে ধান উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দিকে পাড়ি রোপণ" অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের সময় ব্রুনাই তার ব্রুনাই দারুসসালাম রাইস ১ এর নাম পরিবর্তন করে লায়লা রাইস রাখে।Ubaidillah Masli, Goh De No and Faez Hani Brunei-Muapa (28 April 2009). ২০০৯ সালের আগস্টে, রাজপরিবার স্থানীয় ধানের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বছরের পর বছর প্রচেষ্টার পর প্রথম কয়েকটি লায়লা পাড়ির ডালপালা কাটে, একটি লক্ষ্য প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে প্রথম প্রকাশ করা হয়েছিল। জুলাই ২০০৯ সালে বিদেশী বাজারে রপ্তানি করার লক্ষ্যে ব্রুনাই তার জাতীয় হালাল ব্র্যান্ডিং স্কিম, ব্রুনাই হালাল চালু করে। ২০২০ সালে, ব্রুনাইয়ের বিদ্যুৎ উৎপাদন মূলত জীবাশ্ম জ্বালানির উপর ভিত্তি করে ছিল; দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ১% এরও কম জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য দায়ী।Vakulchuk, R., Chan, H.Y., Kresnawan, M.R., Merdekawati, M., Overland, I., Sagbakken, H.F., Suryadi, B., Utama, N.A. and Yurnaidi, Z. 2020. রাজনীতি ও সরকার থাম্ব|হাসানাল বলকিয়াহ, ব্রুনাইয়ের সুলতান প্রশাসনিক বিভাগ ব্রুনাই চারটি জেলায় ( ) বিভক্ত, যথা ব্রুনাই-মুয়ারা, বেলাইত, টুটং এবং টেম্বুরং। ব্রুনাই-মুয়ারা জেলাটি সবচেয়ে ছোট অথচ সবচেয়ে জনবহুল এবং দেশটির রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানের অবস্থান। বেলাইত দেশের তেল ও গ্যাস শিল্পের জন্মস্থান এবং কেন্দ্র। তেম্বুরং একটি এক্সক্লেভ এবং ব্রুনাই উপসাগর এবং মালয়েশিয়ান রাজ্য সারাওয়াক দ্বারা দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন। টুটং দেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক হ্রদ তাসেক মেরিম্বুনের অবস্থান। প্রতিটি জেলাকে কয়েকটি মুকিমে ভাগ করা হয়েছে। ব্রুনাইতে মোট ৩৯ টি মুকিম রয়েছে। প্রতিটি মুকিম বেশ কয়েকটি গ্রাম ( বা ) নিয়ে গঠিত। বন্দর সেরি বেগাওয়ান এবং দেশের শহরগুলি ( মুয়ারা এবং বাঙ্গার ব্যতীত) মিউনিসিপ্যাল বোর্ড এলাকা হিসাবে শাসিত হয় ( )।প্রতিটি পৌর এলাকা আংশিক বা সামগ্রিকভাবে গ্রাম বা মুকিম গঠন করতে পারে।বন্দর সেরি বেগাওয়ান এবং কয়েকটি শহর যেখানে তারা অবস্থিত সেই জেলাগুলির রাজধানী হিসাবে কাজ করে। একটি জেলা এবং এর উপাদান মুকিম এবং গ্রামগুলি একটি জেলা কার্যালয় দ্বারা পরিচালিত হয় ( ) ইতোমধ্যে, পৌর এলাকাগুলি পৌর বিভাগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ( ) জেলা অফিস এবং পৌর বিভাগ উভয়ই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি বিভাগ। ব্রুনাইয়ের রাজনীতি একটি পরম রাজতন্ত্র কাঠামোতে সংঘটিত হয়। ব্রুনাইয়ের সুলতান হলেন একাধারে রাষ্ট্র ও সরকারের প্রধান। সরকারের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত। ব্রুনাইয়ে ২০ সদস্যবিশিষ্ট একটি আইন প্রণয়ন কাউন্সিল আছে, তবে এর সদস্যেরা আইন প্রণয়নে কেবল পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৯ সালের সংবিধান অনুযায়ী পাদুকা সেরি বাগিন্দা সুলতান হাজি হাসানাল বোলকিয়াহ মুইযাদ্দিন ওয়াদ্দাউল্লাহ হলেন দেশের প্রধান। ১৯৬০-এর বিপ্লবের পর থেকে ব্রুনাইয়ে মার্শাল ল' জারি হয়ে আছে। ব্রুনাইয়ের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সংবিধান এবং মালয় ইসলামী রাজতন্ত্রের জাতীয় ঐতিহ্য ( মেলায়ু ইসলাম বেরাজা; এমআইবি) দ্বারা পরিচালিত হয়। MIB এর তিনটি উপাদান মালয় সংস্কৃতি, ইসলাম ধর্ম এবং রাজতন্ত্রের অধীনে রাজনৈতিক কাঠামোকে কভার করে। ইংরেজি সাধারণ আইনের উপর ভিত্তি করে এটির একটি আইনি ব্যবস্থা রয়েছে, যদিও কিছু ক্ষেত্রে ইসলামী আইন ( শরিয়াহ ) এটিকে অগ্রাহ্য করে। ব্রুনাইয়ের সংসদ আছে কিন্তু নির্বাচন নেই; সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬২ সালে। ব্রুনাইয়ের ১৯৫৯ সালের সংবিধানের অধীনে, মহামান্য পাদুকা সেরি বাগিন্দা সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ সম্পূর্ণ নির্বাহী কর্তৃত্ব সহ রাষ্ট্রের প্রধান। ১৯৬২ সাল থেকে, এই কর্তৃপক্ষ জরুরি ক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা প্রতি দুই বছর পর পর নবায়ন করা হয়। ১৯৬২ সালের ব্রুনাই বিদ্রোহের পর থেকে ব্রুনাই প্রযুক্তিগতভাবে সামরিক আইনের অধীনে রয়েছে।হাসানাল বলকিয়া রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেন। বিদেশী সম্পর্ক থাম্ব|ব্রুনাইয়ের সুলতান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসানাল বলকিয়াহ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে দেখা করেছেন, 18 নভেম্বর 2015 থাম্ব|ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডোর সাথে সুলতান হাসানাল বলকিয়া, 6 অক্টোবর 2017 ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত, ব্রুনাইয়ের বৈদেশিক সম্পর্ক যুক্তরাজ্য সরকার পরিচালিত করতো। এর পরে, তারা ব্রুনাই কূটনৈতিক পরিষেবা দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতার পর, এই পরিষেবাটি মন্ত্রী পর্যায়ে উন্নীত হয় এবং এখন এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিসাবে পরিচিত। আনুষ্ঠানিকভাবে, ব্রুনাইয়ের পররাষ্ট্র নীতি নিম্নরূপ: অন্যের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্মান; জাতির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা; অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা; এবং এই অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং প্রচার করা। যুক্তরাজ্যের সাথে তার ঐতিহ্যগত সম্পর্কের সাথে, ব্রুনাই ১ জানুয়ারি ১৯৮৪-এ স্বাধীনতার দিনে অবিলম্বে কমনওয়েলথের ৪৯তম সদস্য হয়ে ওঠে। আঞ্চলিক সম্পর্কের উন্নতির দিকে তার প্রথম উদ্যোগগুলির মধ্যে একটি, ব্রুনাই ৭ জানুয়ারি ১৯৮৪-এ আসিয়ানে যোগদান করে, ষষ্ঠ সদস্য হয়ে। তার সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার স্বীকৃতি অর্জনের জন্য, এটি একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হিসাবে যোগদান করে। একটি ইসলামী দেশ হিসাবে, ব্রুনাই ১৯৮৪ সালের জানুয়ারিতে মরক্কোতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কনফারেন্সের (বর্তমানে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা ) পূর্ণ সদস্য হয়। ১৯৮৯ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন ফোরামে (APEC) যোগদানের পর, ব্রুনাই নভেম্বর ২০০০ সালে APEC ইকোনমিক লিডারস মিটিং এবং জুলাই ২০০২ সালে ASEAN রিজিওনাল ফোরাম (ARF) আয়োজন করে। ব্রুনাই ১ জানুয়ারি ১৯৯৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয় এবং ২৪ মার্চ ১৯৯৪-এ ফিলিপাইনের দাভাওতে মন্ত্রীদের উদ্বোধনী বৈঠকের সময় গঠিত BIMP-EAGA- এর একজন প্রধান খেলোয়াড়। থাম্ব|APEC 2000 এর সময় সুলতান হাসানাল বলকিয়া এবং ভ্লাদিমির পুতিন সিঙ্গাপুর এবং ফিলিপাইনের সাথে ব্রুনাইয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এপ্রিল ২০০৯-এ, ব্রুনাই এবং ফিলিপাইন একটি সমঝোতা স্মারক (MOU) স্বাক্ষর করেছে যা কৃষি এবং খামার-সম্পর্কিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করতে চায়।Marvyn N. Benaning (29 April 2009) RP, "Brunei seal agri cooperation deal", Manila Bulletin বিরোধপূর্ণ স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের কিছু দাবি করার জন্য ব্রুনাই অনেক দেশগুলির মধ্যে একটি। সারওয়াকের অংশ হিসেবে লিমবাং -এর মর্যাদা নিয়ে ব্রুনাই বিতর্কিত হয়েছে যেহেতু এলাকাটি ১৮৯০ সালে প্রথম সংযুক্ত করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে ইস্যুটি নিষ্পত্তি হয়েছিল বলে জানা গেছে, মালয়েশিয়া ব্রুনিয়ার জলসীমায় তেলক্ষেত্রগুলির দাবি ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে ব্রুনাই সীমান্ত মেনে নিতে সম্মত হয়েছিল। ব্রুনাই সরকার এটি অস্বীকার করে এবং বলে যে লিমবাংয়ের উপর তাদের দাবি কখনও বাদ দেওয়া হয়নি। ২০১৩ সালে ব্রুনাই আসিয়ানের চেয়ার ছিল।একই বছর এটি আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনেরও আয়োজন করেছিল। প্রতিরক্ষা ব্রুনাই সারা দেশে অবস্থানরত তিনটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন রক্ষণাবেক্ষণ করে। ব্রুনাই নৌবাহিনীর বেশ কয়েকটি "ইজতিহাদ"-শ্রেণীর টহল নৌকা রয়েছে যা একটি জার্মান নির্মাতার কাছ থেকে কেনা হয়েছে। যুক্তরাজ্য সেরিয়াতেও একটি ঘাঁটি বজায় রাখে, ব্রুনাইয়ের তেল শিল্পের কেন্দ্র। ১,৫০০ জন কর্মী নিয়ে গঠিত একটি গুর্খা ব্যাটালিয়ন সেখানে অবস্থান করছে।দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির অধীনে যুক্তরাজ্যের সামরিক কর্মীরা সেখানে অবস্থান করছে। বিমান বাহিনী দ্বারা পরিচালিত একটি বেল ২১২ ২০ জুলাই ২০১২ তারিখে কুয়ালা বেলাইতে বিধ্স্ত হয় এবং ১৪ জন ক্রূর মধ্যে ১২ জন নিহত হয়। দুর্ঘটনার কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দুর্ঘটনাটি ব্রুনাইয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ বিমান চলাচলের ঘটনা। সেনাবাহিনী বর্তমানে ইউএভি এবং S-৭০ ব্ল্যাক হকস সহ নতুন সরঞ্জামগুলি অর্জন করছে। ব্রুনাইয়ের আইন পরিষদ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে ৫৬৪ মিলিয়ন ব্রুনাই ডলার ($৪০৮ মিলিয়ন) করার প্রস্তাব করেছে।এটি রাজ্যের মোট জাতীয় বার্ষিক ব্যয়ের প্রায় দশ শতাংশ এবং জিডিপির প্রায় ২.৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। আইনি ব্যবস্থা ব্রুনাই এর বিচার বিভাগীয় শাখায় অসংখ্য আদালত রয়েছে।সর্বোচ্চ আদালত হল সুপ্রিম কোর্ট, যা আপিল আদালত এবং হাইকোর্ট নিয়ে গঠিত।এই দুটিতে একজন প্রধান বিচারপতি এবং দুজন বিচারপতি রয়েছেন। নারী ও শিশু থাম্ব|ব্রুনাইয়ের মুসলিম স্কুলছাত্রীদের জন্য টুডং নামক হেডস্কার্ফ বাধ্যতামূলক মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বলেছে যে ব্রুনাইয়ে নারীদের প্রতি বৈষম্য একটি সমস্যা।2010 Human Rights Report: Brunei Darussalam. আইন যৌন হয়রানি নিষিদ্ধ করে এবং শর্ত দেয় যে যে কেউ আক্রমণ করে বা অপরাধমূলক শক্তি ব্যবহার করে, এর মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশের উদ্দেশ্যে বা এটি কোনও ব্যক্তির শালীনতাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে তা জেনে, তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং বেত্রাঘাতের শাস্তি দেওয়া হবে।আইনে ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ধর্ষণের জন্য ১২টির কম স্ট্রোক সহ বেত্রাঘাতের বিধান রয়েছে।আইন স্বামী-স্ত্রী ধর্ষণকে অপরাধী করে না; এটি স্পষ্টভাবে বলে যে একজন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে যৌন মিলন, যদি না তার বয়স ১৩ বছরের কম না হয়, তা ধর্ষণ নয়।সংশোধিত ইসলামিক পারিবারিক আইন আদেশ ২০১০ এবং বিবাহিত নারী আইন আদেশ ২০১০ এর অধীনে স্বামী/স্ত্রীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে।একটি সুরক্ষা আদেশ লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা হল জরিমানা BN$2,000 এর বেশি নয় বা ছয় মাসের বেশি নয়।আইন অনুসারে, ১৪ বছরের কম বয়সী কোনও মহিলার সাথে যৌন মিলন ধর্ষণ বলে গণ্য হয় এবং এর জন্য কমপক্ষে আট বছরের কারাদণ্ড এবং ৩০ বছরের বেশি নয় এবং বেতের ১২টি আঘাতের কম নয়।আইনের উদ্দেশ্য হল মেয়েদের পতিতাবৃত্তি এবং পর্নোগ্রাফি সহ "অন্যান্য অনৈতিক উদ্দেশ্য" এর মাধ্যমে শোষণ থেকে রক্ষা করা। ব্রুনিয়ার নাগরিকত্ব জুস সোলির পরিবর্তে পিতামাতার জাতীয়তার মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়।রাষ্ট্রহীন অবস্থার অভিভাবকদের দেশে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের জন্য একটি বিশেষ পাসের জন্য আবেদন করতে হবে। একটি শিশু নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে শিশুটিকে স্কুলে ভর্তি করা কঠিন হতে পারে। এলজিবিটি অধিকার ব্রুনাইয়ে নারী-পুরুষ সমকামিতা অবৈধ।পুরুষদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক মৃত্যু বা বেত্রাঘাত দ্বারা শাস্তিযোগ্য; নারীদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক বেত বা কারাদণ্ডের দ্বারা দণ্ডনীয়। ২০১৯ সালের মে মাসে, ব্রুনাই সরকার শরিয়া ফৌজদারি কোডে মৃত্যুদণ্ডের উপর বিদ্যমান স্থগিতাদেশ প্রসারিত করেছিল এবং সেইসাথে সমকামী কাজগুলিকে পাথর ছুঁড়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল। ধর্মীয় অধিকার থাম্ব|ব্রুনাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মসজিদ ব্রুনাইয়ের আইনে, অমুসলিমদের তাদের বিশ্বাস অনুশীলন করার অধিকার 1959 সালের সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে।যাইহোক, উদযাপন এবং প্রার্থনা অবশ্যই উপাসনালয় এবং ব্যক্তিগত বাসস্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।শরিয়া দণ্ডবিধি গৃহীত হওয়ার পর, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পাবলিক প্লেসে ক্রিসমাস সাজসজ্জা নিষিদ্ধ করেছিল, কিন্তু উপাসনালয় এবং ব্যক্তিগত প্রাঙ্গনে ক্রিসমাস উদযাপন নিষিদ্ধ করেনি।২৫ ডিসেম্বর ২০১৫-এ, ১৮,০০০ আনুমানিক স্থানীয় ক্যাথলিকদের মধ্যে ৪,০০০ জন ক্রিসমাস ডে এবং ক্রিসমাস ইভের গণসংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।২০১৫ সালে, ব্রুনাইয়ের ক্যাথলিক চার্চের তৎকালীন প্রধান ব্রুনাই টাইমসকে বলেছিলেন, "সত্যি বলতে এই বছর আমাদের জন্য কোন পরিবর্তন হয়নি; কোন নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি, যদিও আমরা বিদ্যমানকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করি এবং মেনে চলি। প্রবিধান যে আমাদের উদযাপন এবং উপাসনা গির্জার যৌগ এবং ব্যক্তিগত বাসস্থানের মধ্যে [সীমাবদ্ধ] থাকবে"। ব্রুনাইয়ের সংশোধিত দণ্ডবিধি পর্যায়ক্রমে কার্যকর হয়েছে, ২২ এপ্রিল ২০১৪ থেকে শুরু হয়েছে জরিমানা বা কারাদণ্ডের শাস্তিযোগ্য অপরাধ।সম্পূর্ণ কোড, পরে চূড়ান্ত বাস্তবায়নের জন্য, অসংখ্য অপরাধের (হিংসাত্মক এবং অহিংস উভয়ই) জন্য মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করে, যেমন মুহাম্মদের অবমাননা বা মানহানি, কোরআন ও হাদিসের কোনো আয়াতকে অবমাননা করা, ব্লাসফেমি করা, নিজেকে একজন নবী ঘোষণা করা বা অমুসলিম, ডাকাতি, ধর্ষণ, ব্যভিচার, ব্যভিচার, মুসলমানদের জন্য বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক এবং হত্যা।পাথর ছুড়ে হত্যা ছিল নির্দিষ্ট "যৌন প্রকৃতির অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পদ্ধতি"।জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের (ওএইচসিএইচআর) অফিসের মুখপাত্র রুপার্ট কলভিল ঘোষণা করেছেন যে, "এ ধরনের বিস্তৃত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।" পশু অধিকার ব্রুনাই হল এশিয়ার প্রথম দেশ যে দেশব্যাপী হাঙ্গর পাখনা নিষিদ্ধ করেছে। বোর্নিও দ্বীপের প্রতিবেশীদের তুলনায় ব্রুনাই তার বেশিরভাগ বন ধরে রেখেছে।প্যাঙ্গোলিনকে রক্ষা করার জন্য একটি জনসাধারণের প্রচারণা চালানো হচ্ছে যা ব্রুনেইতে হুমকিস্বরূপ ধন হিসেবে বিবেচিত। অবকাঠামো থাম্ব|লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে রয়্যাল ব্রুনাই বোয়িং 787 ড্রিমলাইনার। ২০১৯ সালের হিসাবে, দেশের সড়ক নেটওয়ার্কের মোট দৈর্ঘ্য , যার মধ্যে পাকা ছিল। মুয়ারা টাউন থেকে কুয়ালা বেলাইত পর্যন্ত হাইওয়ে একটি ডুয়েল ক্যারেজওয়ে। ব্রুনাই বিমান, সমুদ্র এবং স্থল পরিবহন দ্বারা অ্যাক্সেসযোগ্য।ব্রুনাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশটির প্রধান প্রবেশপথ।রয়্যাল ব্রুনাই এয়ারলাইন্স জাতীয় বাহক।আরেকটি এয়ারফিল্ড আছে, আন্দুকি এয়ারফিল্ড, সেরিয়াতে অবস্থিত।মুয়ারার ফেরি টার্মিনাল লাবুয়ান (মালয়েশিয়া) এর সাথে নিয়মিত সংযোগ প্রদান করে।স্পিডবোট টেম্বুরং জেলায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করে।ব্রুনাই জুড়ে চলমান প্রধান হাইওয়ে হল টুটং-মুয়ারা হাইওয়ে।দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। ব্রুনাইয়ের একটি প্রধান সমুদ্র বন্দর মুয়ারাতে অবস্থিত। ব্রুনাইয়ের বিমানবন্দরটি বর্তমানে ব্যাপকভাবে আপগ্রেড করা হচ্ছে।চাঙ্গি এয়ারপোর্ট ইন্টারন্যাশনাল এই আধুনিকীকরণে কাজ করছে পরামর্শক, যার পরিকল্পিত ব্যয় বর্তমানে $১৫০ মিলিয়ন।এই প্রকল্পে যোগ করার কথা রয়েছে নতুন ফ্লোরস্পেস এবং একটি নতুন টার্মিনাল এবং আগমন হল সহ। এই প্রকল্পের সমাপ্তির সাথে, বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী ধারণক্ষমতা ১.৫ থেকে ৩ মিলিয়ন দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতি ২.০৯ জন ব্যক্তির জন্য একটি ব্যক্তিগত গাড়ি সহ, ব্রুনাই বিশ্বের সর্বোচ্চ গাড়ি মালিকানার হারগুলির মধ্যে একটি।এটি বিস্তৃত পরিবহন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, কম আমদানি কর এবং লিটার প্রতি B$০.৫৩ আনলেড পেট্রোলের মূল্যকে দায়ী করা হয়েছে। নতুন ব্রুনাইয়ের মুয়ারা এবং টেম্বুরং জেলার সাথে সংযোগকারী সড়কপথটি ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই সড়কপথটির চৌদ্দ কিলোমিটার (৯ মা) ব্রুনাই উপসাগর অতিক্রম করবে। সেতুটির ব্যয় $১.৬ বিলিয়ন। ব্যাংকিং ব্যাংক অফ চায়না এপ্রিল ২০১৬ সালে ব্রুনাইতে একটি শাখা খোলার অনুমতি পেয়েছিল। সিটি ব্যাংক, যা ১৯৭২ সালে প্রবেশ করেছিল, ২০১৪ সালে ব্রুনাইয়ে তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এইচএসবিসি, যেটি ১৯৪৭ সালে প্রবেশ করেছিল, ২০১৭ সালের নভেম্বরে ব্রুনাইতে তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। মে ব্যাঙ্ক অফ মালয়েশিয়া, আরএইচবি ব্যাঙ্ক অফ মালয়েশিয়া, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্ক অফ ইউনাইটেড কিংডম, ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাঙ্ক অফ সিঙ্গাপুর এবং ব্যাঙ্ক অফ চায়না বর্তমানে ব্রুনেইতে কাজ করছে। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:ব্রুনাই বিষয়শ্রেণী:এশিয়ার দেশসমুহ ও আঞ্চলিক বিষয় বিষয়শ্রেণী:কমনওয়েলথ রাজতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:১৯৮৪-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:এশিয়ার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইসলামি রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:এশিয়ায় প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ ও আশ্রিত রাজ্য বিষয়শ্রেণী:দ্বীপ রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:সালতানাত বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
বুলগেরিয়া
https://bn.wikipedia.org/wiki/বুলগেরিয়া
থাম্ব|262x262পিক্সেল|বুলগেরিয়ার টপোগ্রাফিক মানচিত্র বুলগেরিয়া (বুলগেরীয় ভাষায়: България ব্যেল্‌গারিয়া আ-ধ্ব-ব: [bɤlˈgarijə]), সরকারী নাম বুলগেরিয়া প্রজাতন্ত্র (বুলগেরীয় ভাষায়: Република България রেপুব্লিকা ব্যেল্‌গারিয়া আ-ধ্ব-ব: [rɛˈpubliˌkə bɤlˈgarijə]), দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ মহাদেশের একটি রাষ্ট্র। দেশটি বলকান উপদ্বীপের পূর্ব পার্শ্বে ইউরোপ ও এশিয়ার ঐতিহাসিক সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। এর পূর্বে কৃষ্ণ সাগর, দক্ষিণে গ্রিস ও তুরস্ক, পশ্চিমে সার্বিয়া ও মন্টিনেগ্রো এবং ম্যাসিডোনিয়া, এবং রোমানিয়া অবস্থিত। এখানে প্রায় ৭৭ লক্ষ লোকের বাস। সোফিয়া বুলগেরিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। বুলগেরিয়া পর্বত, নদনদী ও সমভূমির দেশ। উত্তর বুলগেরিয়ার পূর্ব-পশ্চিম বরাবর বলকান পর্বতমালা প্রসারিত। বলকান পর্বতমালার নামেই অঞ্চলটির নাম হয়েছে বলকান। তবে বুলগেরীয়রা এগুলিকে Stara Planina বা প্রাচীন পর্বতমালা নামে ডাকে। ইউরোপের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী দানিউব বুলগেরিয়ার উত্তর সীমান্ত গঠন করেছে। পশ্চিমে সোফিয়া এবং পূর্বে কৃষ্ণ সাগর পর্যন্ত নিম্নভূমিটি গোলাপের উপত্যকা নামে পরিচিত। তিন শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এখানকার কৃষকেরা কাজালনুক গোলাপের চাষ করে আসছেন। এই গোলাপের তৈল নির্যাস অত্যন্ত দুর্লভ এবং বুলগেরিয়ার অন্যতম রপ্তানি পণ্য। বুলগেরিয়ার পূর্বে কৃষ্ণ সাগরের উপকূল উত্তরে খাড়া পার্বত্য ঢাল থেকে দক্ষিণে বালুকাময় সৈকতে নেমে এসেছে। এখানকার পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে সারা বিশ্ব থেকে লোক বেড়াতে আসে। উত্তরের পর্বতমালাতে শীতকালে ভারী বরফ পড়ে; ফলে শীতকালীন ক্রীড়ার জমজমাট আসর বসে এখানে। ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যস্থলে অবস্থিত হওয়ায় বুলগেরিয়াকে নিয়ে বহু শক্তির প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা হয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে এটি একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। মধ্যযুগে এসে দীর্ঘ সময় ধরে একটি প্রধান শক্তি ছিল। প্রথম বুলগেরীয় সাম্রাজ্যের সময় (৬৩২/৬৮১—১০১৮) এখানকার শাসকেরা বলকান উপদ্বীপের অধিকাংশ এলাকা শাসন করেছেন। এখানকার খ্রিস্টান অর্থডক্স ধর্ম, সংস্কৃতি দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপীয় বহু স্লাভীয় জাতিকে প্রভাবিত করেছে। পূর্ব ইউরোপের ভাষাগুলির লিখন পদ্ধতিতে প্রচলিত সিরিলীয় লিপি বুলগেরিয়াতেই উদ্ভাবিত হয়। দ্বিতীয় বুলগেরীয় সাম্রাজ্যের অবক্ষয়ের শেষে ১৩৯৩ সালে দেশটি উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। প্রায় ৫০০ বছর উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে শাসিত হবার পর ১৮৭৮ সালে সান স্তেফানোর চুক্তির মাধ্যমে বুলগেরিয়া একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯১২-১৯১৩ সালের প্রথম বলকান যুদ্ধে জয়ী হলেও ২য় বলকান যুদ্ধে দেশটি হেরে যায় এবং গ্রিস, সার্বিয়া ও রোমানিয়ার কাছে অনেক এলাকা হারায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনারা দেশটির দখলে ছিল। এসময় সোভিয়েত সরকারের সমর্থনে একটি সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সাম্যবাদী শাসনের সময় বুলগেরীয় নেতারা প্রধানত কৃষিভিত্তিক দেশটির অর্থনীতির আধুনিকায়নের লক্ষ্যে একটি শিল্পায়ন প্রকল্প শুরু করেন। ১৯৮৯ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কারের আগ পর্যন্ত বুলগেরিয়া একটি সাম্যবাদী রাষ্ট্র ছিল। ১৯৯০ সালে বুলগেরিয়াতে যুদ্ধের পর প্রথমবারের মত বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এর নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বুলগেরিয়া থেকে বদলে বুলগেরিয়া প্রজাতন্ত্র রাখা হয়। গণতন্ত্র ও মুক্ত বাণিজ্যের পথে রূপান্তর বুলগেরিয়ার জন্য সুখপ্রদ হয়নি। সাম্যবাদের পতন এবং বুলগেরীয় পণ্যের সোভিয়েত বাজারের বিলোপ ঘটায় দেশটির অর্থনীতির প্রবল সংকোচন ঘটে। মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের ঊর্ধগতি, অবারিত দুর্নীতি, এবং সমাজকল্যাণ ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটায় জীবনযাত্রার মানের চরম পতন ঘটে। অনেক বুলগেরীয় দেশ ছেড়ে চলে যান। বুলগেরীয় সরকার ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে গৃহীত সংস্কারগুলির ব্যাপারে অটল থাকলে ধীরে ধীরে বৃহত্তর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়। দেশটি ২০০৪ সালের মার্চে নেটোর এবং ২০০৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়। thumb| আলেকজান্ডার নেভস্কি ক্যাথেড্রাল, সোফিয়া রাজনীতি প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ ভূগোল অর্থনীতি জনসংখ্যা বুলগেরিয়ার ৮০%-এর বেশি লোক বুলগেরীয় অর্থোডক্স গির্জার খ্রিস্টধর্মের অনুসারী বা এর সাথে সম্পর্কিত। প্রায় ১২% লোক ইসলাম ধর্মের অনুসারী। মূলত উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসনামলে আগত তুর্কি বসতিস্থাপকদের মধ্যে ইসলাম প্রচলিত। বুলগেরীয় ভাষা বুলগেরিয়ার সরকারি ভাষা এবং এই ভাষাতে দেশটির প্রায় ৮৫% লোক কথা বলে। সংখ্যালঘু ভাষাগুলির মধ্যে তুর্কি, আলবেনীয়, আর্মেনীয়, গাগাউজ, গ্রিক, ম্যাসেডোনীয় এবং রোমানীয় ভাষা উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বুলগেরিয়াতে জিপসি বা রোমানি ভাষা ব্যবহারকারী একটি উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী বাস করে। আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে রুশ, জার্মান এবং ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। সংস্কৃতি আরও দেখুন ইক্সাইন-কোলকিক পলিটিক্স বন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:ইউরোপের রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:থ্রি সিস ইনিশিয়েটিভের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ভূমধ্যসাগরীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:বুলগেরিয়া বিষয়শ্রেণী:বলকান রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:১৯৯০-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
বুর্কিনা ফাসো
https://bn.wikipedia.org/wiki/বুর্কিনা_ফাসো
বুর্কিনা ফাসো (; ) আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমভাগে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। এটি পূর্বে আপার ভোল্টা (ইংরেজি: Upper Volta) নামে পরিচিত ছিল। ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা অর্জনের আগ পর্যন্ত এটি একটি ফরাসি উপনিবেশ ছিল। ১৯৮৫ সালে দেশটির নাম বদলে রাখা হয় বুর্কিনা ফাসো, যার অর্থ "নৈতিক জাতির দেশ"। এর উত্তরে ও পশ্চিমে মালি, পূর্বে নাইজার, এবং দক্ষিণে বেনিন, টোগো, ঘানা ও কোত দিভোয়ার। ওয়াগাদুগু (ফরাসি Ouagadougou উয়াগাদুগু, মোরে ভাষায় উয়াগ্যড্যগ্য) দেশের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। বুর্কিনা ফাসো আফ্রিকার সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির একটি। প্রতি বছর এই দেশের হাজার হাজার লোক পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে, যেমন ঘানা বা আইভরি কোস্টে কাজ খুঁজতে বিশেষ করে মৌসুমী কৃষিকাজের জন্য পাড়ি জমায়। বুর্কিনা ফাসো পশ্চিম আফ্রিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত খরাপ্রবণ তৃণভূমি নিয়ে গঠিত। এই স্থলবেষ্টিত দেশটির উত্তরাংশে সাহারা মরুভূমি এবং দক্ষিণে ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য। বুর্কিনাবে জাতির লোকেরা দেশের প্রধান জনগোষ্ঠী এবং এরা মূলত দেশের ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ ভাগে বাস করে। মাটির মান খারাপ এবং প্রচুর খরা হলেও এরা মূলত কৃষিকাজেই নিজেদের নিয়োজিত রাখে। বুরকিনা ফাসোর মোসসি জাতির লোকেরা বহু শতাব্দী আগে এখানে যে রাজ্য স্থাপন করেছিল, তা ছিল আফ্রিকার সবচেয়ে প্রাচীন রাজ্যগুলির একটি। ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটিতে বারংবার সামরিক অভ্যুথান বা কু (coup) ঘটে এবং সামরিক শাসন চলে। ১৯৯১ সালে নতুন সংবিধান পাস হবার পর দেশটিতে বর্তমানে গণতন্ত্র বিদ্যমান। ইতিহাস প্রাচীন ইতিহাস ইউরোপীয়দের অভিযান ও ঔপনিবেশীকরণ স্বাধীনতা ও তার পরবর্তী যুগ রাজনীতি প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ বুর্কিনা ফাসো প্রশাসনিকভাবে বেশ কিছু রেজিওঁ (ফরাসি Région) বা অঞ্চলে বিভক্ত। প্রতিটি রেজিওঁ আবার কিছু প্রোভঁস (Provence) বা প্রদেশে বিভক্ত। প্রদেশগুলি একইভাবে কিছু দেপার্তমঁ (Département) বা জেলায় বিভক্ত। প্রতিটি রেজিওঁ একজন গভর্নর এবং প্রতিটি প্রোভঁস একজন উচ্চ-কমিশনার দ্বারা শাসিত হয়। ভূগোল থাম্ব|ডান|বুর্কিনা ফাসোর ভূসংস্থান থাম্ব|ডান|কৃষ্ণ, শ্বেত ও লোহিত ভোল্টা নদীর গতিপথ সীমানা বুর্কিনা ফাসো উত্তরে ও পশ্চিমে মালি, উত্তর-পূর্বে নাইজার, দক্ষিণ-পূর্বে বেনিন এবং দক্ষিণে কোত দিভোয়ার, ঘানা এবং টোগো দ্বারা সীমাবদ্ধ। এটি একটি ভূমিবেষ্টিত রাষ্ট্র। ভূমিরূপ ও মৃত্তিকা দেশটি একটি বিস্তৃত মালভূমির উপর অবস্থিত, যা দক্ষিণ দিকে হালকা ঢালু হয়ে গিয়েছে। মালভূমিটির গভীরে রয়েছে কেলাসিত শিলার স্তর, যাকে উপরে আবৃত করে রেখেছে লাল ও লৌহসমৃদ্ধ ল্যাটেরাইটিক (lateritic) শিলাস্তর। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে কিছু বেলেপাথরের শিলা দিয়ে গঠিত মালভূমি রয়েছে। বানফোরা প্রবণভূমি (Banfora Escarpment) যাদের সীমানা নির্ধারণ করেছে। এটি দক্ষিণমুখী এবং প্রায় ৫০০ ফুট বা ১৫০ মিটার উঁচু। বুর্কিনা ফাসোর বেশির ভাগ মাটি অনুর্বর। নদনদী ও জলাশয় মালভূমিটিকে গভীরে চিরে দেশটির তিনটি প্রধান নদী প্রবাহিত হচ্ছে - মুওঁ বা কালো ভল্টা, নাজিনোঁ বা লাল ভোল্টা এবং নাকাম্বে বা শ্বেত ভোল্টা। এই তিনটি নদীই দক্ষিণে ঘানাতে গিয়ে মিলিত হয়ে ভোল্টা নদী গঠন করেছে। ভোল্টা নদীর আরেকটি উপনদী ওতি নদী বুর্কিনা ফাসোর দক্ষিণ-পূর্বে উৎপত্তি লাভ করেছে। ঋতুভেদে নদীগুলির জলপ্রবাহে ব্যাপক তারতম্য ঘটে। শুস্ক মৌসুমে অনেক নদীই পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। জলবায়ু বুর্কিনা ফাসোর জলবায়ু মূলত রৌদ্রোজ্জ্বল, উষ্ণ এবং শুষ্ক। দেশটিকে দুইটি প্রধান জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করা যায়। উত্তরের সহিলীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণের সুদানীয় অঞ্চল। সহিলীয় অঞ্চলটি মূলত একটি অর্ধ-অনুর্বর স্টেপ জাতীয় তৃণভূমি। এখানে তিন থেকে পাঁচ মাস অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হয়। সুদানীয় অঞ্চলের জলবায়ু দক্ষিণের দিকে ক্রমান্বয়ে ক্রান্তীয় আর্দ্র-শুষ্ক জাতীয় হয়ে থাকে। এখানে তাপমাত্রার বৈচিত্র্য এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণের তারতম্য বেশি। উত্তরের চেয়ে এখানে সব মিলিয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। বুর্কিনা ফাসোতে চারটি ঋতু দেখা যায়। মধ্য-নভেম্বর থেকে মধ্য-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুষ্ক শীতকাল, যখন রাত্রীকালীন তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে। মধ্য-ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল, যখন ছায়াতেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি চলে যায়। এসময় সাহারা মরুভূমি থেকে হারমাতান নামের উত্তপ্ত, শুষ্ক, ধূলিময় বায়ুপ্রবাহ ধেয়ে আসে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস হচ্ছে বর্ষাকাল। এর পরে আসে একটি অন্তর্বর্তীকালীন ঋতু, যা সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর পর্যন্ত বিরাজ করে। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দক্ষিণে ১০০০ মিমি বা ৪০ ইঞ্চি থেকে উত্তরে ২৫০ মিমি বা ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। উদ্ভিদ ও প্রাণী বুর্কিনা ফাসোর উত্তর অংশে সাভানা তৃণভূমি অবস্থিত, যেখানে কাঁটাময় ঝোপঝাড় এবং বামনবৃক্ষ দেখতে পাওয়া যায়; এগুলি মূলত বর্ষা মৌসুমে জন্মায় ও বৃদ্ধি পায়। দক্ষিণের দিকে এগোলে ঝোপঝাড়ের বদলে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন বনভূমির আবির্ভাব ঘটে এবং এই বনভূমিগুলি চিরপ্রবহমান নদীগুলির তীরে আরও ঘন আকার ধারণ করে। ক্যারাইট বা শেয়া বৃক্ষ এবং বাওবাব বা হিবিস্কাস বৃক্ষ এই অঞ্চলের স্বজাত উদ্ভিদ। প্রাণীর মধ্যে মহিষ, কৃষ্ণশার হরিণ, সিংহ, জলহস্তী, হাতি, কুমির ও বানরের দেখা মেলে। পাখী ও কীটপতঙ্গগুলি সমৃদ্ধ ও বিচিত্র। নদীগুলিতে বহু প্রজাতির মাছ রয়েছে। দেশেটিতে অনেক জাতীয় উদ্যান আছে যার মধ্যে দক্ষিণ-মধ্য অংশে অবস্থিত "পো", দক্ষিণ-পূর্বে "আর্লি" এবং পূর্বে বেনিন-নাইজার সীমান্তে অবস্থিত "উয়" উদ্যান উল্লেখযোগ্য। অর্থনীতি বুর্কিনা ফাসোর নয়-দশমাংশ মানুষ খাদ্যসংস্থানমূলক কৃষিকাজ এবং গবাদিপশুপালনের কাজে জড়িত। অর্থনৈতিক মন্দা, কিছুদিন পর পর অতিখরা, ইত্যাদি কারণে এখানকার বহু মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে কিংবা অন্যান্য দেশে, বিশেষত কোত দিভোয়ার ও ঘানাতে পাড়ি জমিয়েছে। দেশের কর্মশক্তি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা প্রায় ১৫ লক্ষ লোক কোনও না কোন সময় বিদেশে গিয়ে কাজ করেছে। ২১শ শতকের শুরুর দিকে পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে, বিশেষ করে কোত দিভোয়ারে গণ্ডগোল শুরু হলে, বুর্কিনাবেদের চাকরি পেতে সমস্যা হয়। বাজার অর্থনীতির আকার ছোট বলে এবং সমুদ্রের সাথে সরাসরি সংযুক্ত পথ না থাকায় এখানকার শিল্পক্ষেত্রের উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে সরকার কিছু সরকার-নিয়ন্ত্রিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ করেন যার লক্ষ্য ছিল বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। কৃষি কৃষিকাজ মূলত খাদ্যশস্য উৎপাদনে নিয়োজিত। উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য অর্থকরী শস্য হিসেবে বিক্রি করা হয়। উওৃত্ত তুলা, শেয়া বাদাম, তিসি এবং আখ রপ্তানি করা হয়। অন্যদিকে সোরগোম, জোয়ার, ভুট্টা, চিনাবাদাম এবং ধান স্থানীয় ভোগের জন্য উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও ফোনিও নামের এক ধরনের ঘাস, যার বিজদানাগুলি খাদ্যশস্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কাসাভা, মিষ্টি আলু এবং শীম জাতীয় বীচিও চাষ করা হয়। পশুপালন জীবিকার অন্যতম উৎস। গবাদি পশু, ভেড়া, শূকর, গাধা, ঘোড়া, উট, মুরগী, হাঁস ও গিনি মুরগী পালন করা হয়। প্রাকৃতিক সম্পদ বুর্কিনা ফাসোতে বেশ কিছু খনিজের সন্ধান মেলে, যাদের মধ্যে ম্যাঙ্গানিজ এবং স্বর্ণ অন্যতম। এগুলি দেশটির সম্পদের অন্যতম সম্ভাব্য উৎস। কুদুগু শহরের দক্ষিণ-পুর্বে পুরা শহরে স্বর্ণখনি আছে। এছাড়া দেশের উত্তরে সেব্বা এবং দোরি-ইয়লোগোতে তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র আয়তনের স্বর্ণমজুদ আছে। এছাড়াও দেশটিতে নিকেল, বক্সাইট, দস্তা, সীসা এবং রূপার মজুদের সন্ধান পাওয়া গেছে। উত্তর-পূর্বে তামবাও শহরের কাছে অবস্থিত ম্যাঙ্গানিজের যে বিশাল মজুদ আছে, সেটি সম্ভবত দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এটি সারা বিশ্বেই ম্যাঙ্গানিজের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাণ্ডারগুলির একটি। তবে বিদ্যমান পরিবহন ব্যবস্থার অকার্যকারিতার কারণে এটি উত্তোলন-নিষ্কাশন এখনও সীমিত। উৎপাদন শিল্পখাত উৎপাদন শিল্পকারখানাগুলি সংখ্যায় সীমিত। এগুলি মূলত নগরী ও অপেক্ষাকৃত বড় শহরগুলিতে অবস্থিত। প্রধানত খাদ্যদ্রব্য, পানীয়, বস্ত্র, জুতা এবং বাইসাইকেলের যন্ত্রাংশ নির্মাণের কারখানা আছে। অর্থসংস্থান থাম্ব|বুর্কিনা ফাসোর মানচিত্র বুর্কিনা ফাসোর মুদ্রার নাম সিএফএ ফ্রঁ (Communauté Financière Africaine franc) অর্থাৎ আফ্রিকান আর্থিক সম্প্রদায়ের ফ্রঁ। মুদ্রাটি সরকারীভাবে ইউরোর সাথে সংযুক্ত (peg) করা হয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকান রাষ্ট্রসমূহের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই মুদ্রাটি ছাপায়। ব্যাংকটি পশ্চিম আফ্রিকান অর্থনৈতিক ও মুদ্রা ইউনিয়নের একটি সংস্থা। এই ইউনিয়নে বুর্কিনা ফাসোসহ মোট আটটি দেশ আছে, যারা হল বেনিন, কোত দিভোয়ার, গিনি-বিসাউ, মালি, নাইজার, সেনেগাল এবং টোগো। এই সবগুলি দেশই অতীতে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। এই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখাগুলি বুর্কিনা ফাসোর উয়াগাদুগু এবং বোবো দিউলাসো শহর দুইটিতে অবস্থিত। এছাড়াও আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে সরকার-নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক আছে, যাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বুর্কিনা আন্তর্জাতিক ব্যাংক (Banque Internationale du Burkina); এটি উয়াগাদুগুতে অবস্থিত। এছাড়া বুর্কিনা ফাসো পশ্চিম আফ্রিকান রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের একটি সদস্যরাষ্ট্র। পশ্চিম আফ্রিকার অধিকাংশ রাষ্ট্র এই সম্প্রদায়ের সদস্য; অঞ্চলটির অর্থনৈতিক ব্যাপারগুলির সমন্বয় সাধন এবং সুষমীকরণ এই সম্প্রদায়ের লক্ষ্য। বুর্কিনা ফাসো বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলির একটি। তাই এটি ব্যাপকভাবে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া বিদেশে অবস্থিত অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থও দেশটির হিসাবের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। বাণিজ্য ২১শ শতকে এসে বুর্কিনা ফাসো মূলত তুলা, স্বর্ণ, গবাদি পশু, চিনি এবং ফল রপ্তানি করছে। বেশিরভাগ দ্রব্যই পার্শ্ববর্তী আফ্রিকান দেশগুলিতে রপ্তানি করা হয়। তবে কিছু কিছু পণ্য, যেমন তুলা এবং খনিজ পদার্থসমূহ চীন, সিংগাপুর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে রপ্তানি হয়। আমদানিকৃত প্রধান পণ্যগুলি হল পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি এবং খাদ্যদ্রব্য। এগুলি মূলত পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ এবং ফ্রান্স থেকে আমদানি করা হয়। আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম বলে দেশটির পরিশোধন-বিবরণীতে (balance of payments) ঘাটতি আছে। রপ্তানিকৃত দ্রব্যের অর্থমূল্য ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় আমদানি করা দ্রব্যের অর্থমূল্যের জন্য যথেষ্ট নয় বলে এমনটি ঘটেছে। পরিবহন উয়াগাদুগু শহর রেলপথের মাধ্যমে কোত দিভোয়ারের আবিজান বন্দরের সাথে যুক্ত। রেলপথটি প্রায় ১১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ, যার প্রায় ৫-- কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বুর্কিনা ফাসোর ভেতর দিয়ে চলে গেছে। ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে কোত দিভোয়ারের গৃহযুদ্ধের কারণে রেলপথটি একাধিক বছর বন্ধ ছিল। রেলপথটি বুর্কিনা ফাসোর ভেতরে দিয়ে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর প্রসারিত এবং কুদুগু, বোবো দিউলাসো এবং বানফোরা শহরগুলির সাথে এটি সংযুক্ত। এছাড়াও রাজধানী শহর উয়াগাদুগু সড়কপথের মাধ্যমে দেশের প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলির সাথে এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলির রাজধানীগুলির সাথে সংযুক্ত। বুর্কিনা ফাসোর সড়ক ব্যবস্থাটি অনুন্নত; এর খুব ছোট একটি অংশ সারা বছর ধরে ব্যবহারোপযোগী থাকে। অবশিষ্টাংশ মূলত কাঁচা গ্রামীণ রাস্তা। উয়াগাদুগু ও বোবো দিউলাসো শহরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে। এছাড়ে দেশের বিভিন্ন অংশে বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নক্ষেত্র আছে। জনসংখ্যা জাতি ও ভাষা থাম্ব|বুর্কিনা ফাসোর ভাষাসমূহের ভৌগোলিক বিস্তার (গোলাপি অঞ্চলটি মোসি ভাষা অঞ্চল) বুর্কিনা ফাসোতে দশটিরও বেশি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী আছে। দেশটির প্রধান ভাষাভিত্তিক গোষ্ঠীটি হল মোসি, যারা জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। তারা মোরে নামের একটি ভাষাতে কথা বলে। মোসি জাতির লোকেরা বহু শতাব্দী ধরে এই অঞ্চলে বাস করে। গুর্মা ও ইয়ার্সে নামের দুইটি জাতির মোসি জাতির সাথে মিলিত হয়ে গিয়েছে। ইয়ার্সে জাতির লোকেরা মূল মান্দে জাতি থেকে আসলেও এখন মোসি ভাষাতে কথা বলে। মোসি বা মোরে ভাষাটি নাইজার-কঙ্গো ভাষা পরিবারের গুর শাখার একটি ভাষা। এছাড়াও গুরুনসি, সেনুফো, বোয়া এবং লোবি নামের জাতিগুলি বিভিন্ন গুর ভাষাতে কথা বলে। নাইজার-কঙ্গো ভাষাপরিবারের আরেকটি শাখা মান্দে ভাষাগুলিতে একাধিক জাতিগোষ্ঠী কথা বলে; এরা হল সামো, মারকা, বুসানসি এবং দিউলা। এছাড়াও দেশটিকে আফ্রো-এশীয় ভাষা হাউসা ও তুয়ারেগভাষী জাতি, এবং ফুলা ভাষাতে (নাইজার-কঙ্গো পরিবারের আটলান্টিক শাখার ভাষা) কথা বলা ফুলানি জাতির লোকেরা বাস করে। বুর্কিনা ফাসোর নাগরিকেরা জাতি নির্বিশেষে "বুর্কিনাবে" নামে পরিচিত। ফরাসি ভাষা সরকারি ভাষা হলেও মুখের ভাষা হিসেবে ব্যাপক প্রচলিত নয়। বেশির ভাগ লোক মোরে ভাষাতে কথা বলেন। ব্যবসা বাণিজ্যে দিউলা ভাষাটি অনেক ব্যবহৃত হয়। ধর্ম থাম্ব|ডান|বুর্কিনা ফাসোর জনগণের ধর্মসমূহ (নীল মুসলমান, সবুজ ক্যাথলিক খ্রিস্টান, হলুদ প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টান এবং হালকা নীল জড়োপাসক) দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মুসলমান। প্রায় এক-পঞ্চমাংশ রোমান ক্যাথলিক খিস্টান এবং প্রায় এক-ষষ্ঠাংশ প্রথাগত ধর্মগুলি পালন করে। বাকীরা মূলত প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টান বা অধার্মিক। উয়াগাদুগু শহরে রোমান ক্যাথলিক আর্চবিশপের গির্জা অবস্থিত। এছাড়া সারা দেশজুড়ে অনেক বিশপশাসিত ধর্মীয় অঞ্চল রয়েছে। জনবসতির বিন্যাস থাম্ব|রাজধানী শহর উয়াগাদুগুর কেন্দ্রস্থল বুর্কিনা ফাসোর জনসংখ্যা দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে অসমভাবে বণ্টিত। পূর্বের ও কেন্দ্রের অঞ্চলগুলি ঘনবসতিপূর্ণ এবং এখানে দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বাস। দেশের বাকী অঞ্চলগুলিতে জনসংখ্যা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে। জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ গ্রামে বাস করে। গ্রামগুলি ভোল্টা নদীগুলির উপত্যকা থেকে দূরে উঁচু ভূমিতে অবস্থিত। ভোল্টা নদীগুলির দুই তীরের প্রায় বেশ কিছু মাইল ভেতর পর্যন্ত এলাকাতে কোন জনবসতি নেই, কেননা এই এলাকাতে ঘুমন্ত রোগের জীবাণু বহনকারী ৎসেৎসে মাছি এবং নদী অন্ধত্ব রোগের জীবাণু বহনকারী সিমুলিয়াম মাছির ব্যাপক প্রাদুর্ভাব রয়েছে। উয়াগাদুগু দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী এবং সরকারের মূল কার্যালয় এখানেই অবস্থিত। এটি একটি আধুনিক শহর। এখানে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর অবস্থিত। এখানেই মোসি জাতির লোকদের মহান গুরু "মোরহো নাবা" বাস করেন। আফ্রিকাতে আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রকল্পগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবেও শহরটি পরিচিত। উয়াগাদুগু শহর ছাড়া অন্যান্য প্রধান শহরগুলি হল বোবো দিউলাসো, কুদুগু, বানফোরা, উয়াইগুইয়া, পুইতেংগা এবং কায়া। বোবো দিউলাসো শহরটি দেশের পশ্চিমে অবস্থিত। এটি অতীতে দেশের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক কেন্দ্র ছিল; কোত দিভোয়ারের আবিজান শহর থেকে আসা রেলপথ এই শহরেই শেষ হয়েছিল। তবে ১৯৫৫ সালের পরে রেলপথটি সম্প্রসারিত করে উয়াগাদুগু পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। তখন থেকে বোবো দিউলাসোর গুরুত্ব কিছু গুরুত্ব কমে গেলেও এখনও এটি দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র। জনসাঙ্খ্যিক ভাবধারা ২১শ শতকের শুরুর দিকে বাৎসরিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার গড়ে প্রায় ৩ শতাংশ ছিল। দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স ১৫ বছরের নিচে। গড় প্রত্যাশিত আয়ু ৫০ বছরের সামান্য বেশি, যা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে কম হলেও পার্শ্ববর্তী দেশগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সংস্কৃতি আরও দেখুন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Premier Ministère সরকারি ওয়েবসাইট। রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ Burkina Faso from UCB Libraries GovPubs News headline links from AllAfrica.com বুর্কিনা ফাসোর ছবি বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:প্রাক্তন ফরাসি উপনিবেশ বিষয়শ্রেণী:স্থলবেষ্টিত দেশ বিষয়শ্রেণী:স্বল্পোন্নত দেশ বিষয়শ্রেণী:১৯৬০-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:পশ্চিম আফ্রিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
বুরুন্ডি
https://bn.wikipedia.org/wiki/বুরুন্ডি
থাম্ব|261x261পিক্সেল|২০০৬ সালে রাজধানী বুজুম্বুরার দৃশ্য বুরুন্ডি ( or ), আনুষ্ঠানিকভাবে বুরুন্ডি প্রজাতন্ত্র ( ; ; ) হচ্ছে পূর্ব আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এর উত্তরে রুয়ান্ডা, পূর্বে ও দক্ষিণে তানজানিয়া, পশ্চিমে তাংগানিকা হ্রদ ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (প্রাক্তন জায়ার)। এলাকাটি অতীতে গোত্র রাজারা শাসন করত। ১৯শ শতকের শেষে এসে জার্মানি অঞ্চলটি দখল করে উপনিবেশ স্থাপন করে। ১৯৬২ সালে স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত এটি প্রথমে জার্মান ও পরবর্তীতে বেলজীয় উপনিবেশ ছিল। দেশটির মধ্যভাগে অবস্থিত গিতেগা (Gitega) এর রাজনৈতিক রাজধানী এবং বুজুম্বুরা অর্থনৈতিক রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। বুরুন্ডি বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র একটি দেশ। নামকরণ আধুনিক বুরুন্ডির নামকরণ করা হয়েছে বুরুন্ডির রাজার নামে, যিনি ষোড়শ শতকে এই অঞ্চল শাসন শুরু করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলের হা জনগোষ্ঠী থেকে এর নামটি প্রাপ্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যাদের উৎপত্তিস্থল বুহা নামে পরিচিত ছিল। ইতিহাস বুরুন্ডি ১৬ শতকে আফ্রিকান গ্রেট লেক অঞ্চলে একটি ছোট রাজ্য হিসাবে উদ্ভূত হয়েছিল। ইউরোপীয় যোগাযোগের পরে এটি রুয়ান্ডা রাজ্যের সাথে একত্রিত ছিল এবং রুয়ান্ডা-উরুন্ডির উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল। এরপর প্রথমে জার্মানি এবং পরে বেলজিয়াম দ্বারা উপনিবেশ করা হয়েছিল। উপনিবেশটি ১৯৬২ সালে স্বাধীনতা লাভ করে এবং আবার রুয়ান্ডা এবং বুরুন্ডিতে বিভক্ত হয়। এটি আফ্রিকার কয়েকটি দেশের মধ্যে (যেমন রুয়ান্ডা, বতসোয়ানা, লেসোথো এবং এসওয়াতিনি) একটি প্রাক-ঔপনিবেশিক যুগের আফ্রিকান রাষ্ট্রের সরাসরি আঞ্চলিক ধারাবাহিকতা। বুরুন্ডিয়ান রাজ্যের প্রথম প্রমাণ মেলে ষোড়শ শতকের শেষের দিকে যেখানে এটি পূর্ব পাদদেশে আবির্ভূত হয়েছিল। পরবর্তী শতাব্দীতে এটি ছোট প্রতিবেশীকে সংযুক্ত করে আরও বিস্তৃত হয়। গ্রেট লেক অঞ্চলের বুরুন্ডি কিংডম বা উরুন্ডি একটি প্রথাগত রাজা কর্তৃক শাসিত একটি রাষ্ট্র ছিল এবং তার অধীনে বেশ কয়েকজন রাজকুমার ছিল; এবং উত্তরাধিকার সংগ্রাম ছিল সাধারণ। মওয়ামি (শাসক) নামে পরিচিত এই রাজা একটি রাজকীয় অভিজাততন্ত্রের (গানওয়া) নেতৃত্ব দিতেন যারা বেশিরভাগ জমির মালিক ছিল। মওয়ামি রাজা তৎকালীন স্থানীয় কৃষক (প্রধানত হুতু) এবং পশুপালকদের (প্রধানত তুতসি) কাছ থেকে চাঁদা বা ট্যাক্স আদায় করত। বুরুন্ডি কিংডম ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তুতসি রাজপরিবার উবুগাবাইরের বিকাশের সাথে ভূমি, উৎপাদন এবং বন্টনের উপর কর্তৃত্ব একীভূত করে—এটি একটি পৃষ্ঠপোষক-ক্লায়েন্ট সম্পর্ক, যেখানে জনগণ শ্রদ্ধাভক্তি এবং জমির মেয়াদের বিনিময়ে রাজকীয় সুরক্ষা পায়। এই সময়ের মধ্যে রাজদরবার তুতসি-বান্যারুগুরুর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। তুতসি-হিমারদের মতো অন্যান্য যাজকদের তুলনায় তাদের সামাজিক মর্যাদা বেশি ছিল। এই সমাজের নিম্ন স্তরে সাধারণত হুতু জাতিরা ছিল এবং স্তরের একেবারে নীচে ছিল ত্বোয়া (Twa) জনগোষ্ঠী। কিছু হুতু জনগণ আভিজাত্যের অন্তর্গত ছিল এবং এইভাবে রাষ্ট্রের কাজকর্মেও তাঁদের গুরুত্ব বাড়তেছিল।VANDEGINSTE, S., Stones left unturned: law and transitional justice in Burundi, Antwerp-Oxford-Portland, Intersentia, 2010, p 17. হুতু বা তুতসির শ্রেণিবিভাগ শুধুমাত্র জাতিগত মানদণ্ডের ভিত্তিতে ছিল না। হুতু চাষীরা মূলত সম্পদ এবং গবাদি পশু পালন করত তাই তাদেরকে তুতসির উচ্চ সামাজিক মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে, তুতসিদের এমনও খবর রয়েছে যারা তাদের সমস্ত গবাদি পশু হারিয়েছে এবং পরবর্তীকালে তাদের উচ্চ মর্যাদাও হারিয়েছে, তাই তাদেরকে হুতু বলা হত। এইভাবে হুতু এবং তুতসির মধ্যে পার্থক্যটিও একটি বিশুদ্ধ জাতিগত ধারণার পরিবর্তে একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ধারণায় রূপ নেয়। হুতু এবং তুতসি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহের প্রচলনটি অনেক পুরনো। ইউরোপীয় শাসন ১৮৮৪ সাল থেকে জার্মান ইস্ট আফ্রিকা কোম্পানি আফ্রিকান গ্রেট লেক অঞ্চলে সক্রিয় ছিল। জার্মান ইস্ট আফ্রিকা কোম্পানি, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং জাঞ্জিবার সালতানাতের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা এবং সীমান্ত বিরোধের ফলে জার্মান সাম্রাজ্যকে আবুশিরি বিদ্রোহ দমন এবং এই অঞ্চলে সাম্রাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। জার্মান ইস্ট আফ্রিকা কোম্পানি ১৮৯১ সালে জার্মান সাম্রাজ্যের কাছে তাদের অধিকার হস্তান্তর করে, এইভাবে জার্মানরা পূর্ব আফ্রিকায় জার্মান উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে, যার মধ্যে বুরুন্ডি (উরুন্ডি), রুয়ান্ডা (রুয়ান্ডা) এবং তানজানিয়ার মূল ভূখণ্ডের অংশ (পূর্বে টাঙ্গানিকা নামে পরিচিত ছিল)। জার্মান সাম্রাজ্য ১৮৮০ -এর শেষের দিকে রুয়ান্ডা এবং বুরুন্ডিতে সশস্ত্র বাহিনী স্থাপন করেছিল। বর্তমান সময়ের গিতেগা শহরের অবস্থান রুয়ান্ডা-উরুন্ডি অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পূর্ব আফ্রিকা অভিযানকালে আফ্রিকান গ্রেট লেক অঞ্চলকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। মিত্রশক্তির বেলজিয়াম ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বাহিনী জার্মান উপনিবেশের উপর সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। বুরুন্ডিতে অবস্থানরত জার্মান সেনাবাহিনী বেলজিয়ান সেনাবাহিনীর সংখ্যাগত শ্রেষ্ঠত্বের কারণে পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং ১৭ জুন ১৯১৬ সাল নাগাদ বুরুন্ডি ও রুয়ান্ডা দখল করে নেয়। যুদ্ধের পর, ভার্সাই চুক্তির রূপরেখা অনুসারে জার্মানি পূর্ব আফ্রিকার পশ্চিম অংশের নিয়ন্ত্রণ বেলজিয়ামের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়।Strachan, H. (2001). The First World War: To Arms. I. New York: Oxford University Press. . ২০ অক্টোবর, ১৯২৪ সালে রুয়ান্ডা-উরুন্ডি একটি বেলজিয়ান লীগ অফ নেশনস ম্যান্ডেট টেরিটরিতে পরিণত হয়, যার রাজধানী ছিল উসুম্বুরা। ব্যবহারিক দিক থেকে এটি বেলজিয়ান ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত হত। বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা-উরুন্ডির অংশ হিসেবে ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের উপস্থিতি সত্ত্বেও তারা রাজবংশ অব্যাহত রাখে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, রুয়ান্ডা-উরুন্ডি অঞ্চল বেলজিয়ামের প্রশাসনিক কর্তৃত্বের অধীনে জাতিসংঘের ট্রাস্ট টেরিটরি হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ হয়। ১৯৪০-এর দশকে একাধিক নীতির কারণে সারা দেশে বিভাজন ঘটে। ১৯৪৩ সালের ৪ অক্টোবর বুরুন্ডি সরকারের আইনী বিভাগে প্রধান এবং নিম্ন প্রধানদের মধ্যে ক্ষমতা বিভক্ত হয়। ১৯৪৮ সালে বেলজিয়াম অঞ্চলটিকে রাজনৈতিক দল গঠনের অনুমতি দেয়। এই দলগুলোই পরবর্তীতে (১ জুলাই ১৯৬২ সালে) বেলজিয়াম থেকে বুরুন্ডির স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রাখে। স্বাধীনতা থাম্ব|বুজুম্বুরার স্বাধীনতা স্কোয়ার এবং স্মৃতিস্তম্ভ। ২০ জানুয়ারী, ১৯৫৯ সালে বুরুন্ডির শাসক মোয়ামি মোয়াবুস্তা ৪ (Mwami Mwambutsa IV) বেলজিয়াম থেকে বুরুন্ডির স্বাধীনতা এবং রুয়ান্ডা-উরুন্ডি ইউনিয়ন বিলুপ্ত করার অনুরোধ জানান। পরের কয়েকমাসে বুরুন্ডির রাজনৈতিক দলগুলো বেলজিয়ামের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান এবং রুয়ান্ডা ও বুরুন্ডিকে আলাদা করার পক্ষে সমর্থন দিতে শুরু করে। এই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রথম এবং বৃহত্তম দল ছিল ইউনিয়ন ফর ন্যাশনাল প্রোগ্রেস বা (UPRONA)। বুরুন্ডির স্বাধীনতায় প্রথম ধাক্কা লাগে রুয়ান্ডার বিপ্লব এবং এর সাথে সংঘটিত অস্থিতিশীলতা ও জাতিগত সংঘাত। রুয়ান্ডার এ বিপ্লবের ফলে ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সময়কালে অনেক রুয়ান্ডার তুতসি শরণার্থী বুরুন্ডিতে এসেছিলেন। বুরুন্ডির প্রথম নির্বাচন ১৯৬১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুবরাজ লুই রোগাসোরের নেতৃত্বে ইউনিয়ন ফর ন্যাশনাল প্রোগ্রেস দলটি ৮০% এর বেশি ভোটে জয়লাভ করে। নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ অক্টোবর, ২৯ বছর বয়সী যুবরাজ লুই রোগাসোরকে হত্যা করা হয়। দেশটি ১ জুলাই, ১৯৬২ সালে স্বাধীনতা দাবি করে এবং আইনত তার নাম রুয়ান্ডা-উরুন্ডি থেকে বুরুন্ডিতে পরিবর্তন করে। এরপর বুরুন্ডি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত হলে যুবরাজ রোগাসোরের পিতা মোয়ামি মোয়াবুস্তা -৪ দেশের রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৬২ সালে বুরুন্ডি জাতিসংঘে যোগদান করে।United Nations Member States . 3 July 2006. Retrieved 22 June 2008. থাম্ব|পিয়েরে নকুরুনজিজা, ২০০৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বুরুন্ডির রাষ্ট্রপতি ছিলেন। সরকার ও রাজনীতি বুরুন্ডির রাজনৈতিক ব্যবস্থা হলো একটি বহুদলীয় রাষ্ট্রের উপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্রপতি প্রতিনিধি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। বুরুন্ডির রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান এবং সরকার প্রধান। বুরুন্ডিতে বর্তমানে ২১টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। ১৩ মার্চ ১৯৯২, তুতসি অভ্যুত্থান নেতা পিয়েরে বুয়োয়া একটি সংবিধান প্রতিষ্ঠা করেন, যা একটি বহু-দলীয় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া প্রদান এবং বহু-দলীয় প্রতিযোগিতা প্রতিফলিত করে। ছয় বছর পর, ৬ জুন ১৯৯৮-এ সংবিধান পরিবর্তন করা হয়, জাতীয় পরিষদের আসন প্রসারিত করা হয় এবং দুই ভাইস-প্রেসিডেন্টের জন্য বিধান করা হয়। আরুশা অ্যাকর্ডের কারণে, বুরুন্ডি ২০০০ সালে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রণয়ন করে। বুরুন্ডির আইনসভা শাখা হলো একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট, যা ট্রানজিশনাল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি এবং ট্রানজিশনাল সেনেট নিয়ে গঠিত। ২০০৪ সালের হিসাবে ট্রানজিশনাল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ১৭০ সদস্য নিয়ে গঠিত। বুরুন্ডিতে ফ্রন্ট ফর ডেমোক্রেসির ৩৮ শতাংশ আসন রয়েছে এবং ইউপিআরওএনএ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সমাবেশের ১০ শতাংশ রয়েছে। বাকি ৫২টি আসন অন্য দলগুলোর দখলে। বুরুন্ডির সংবিধান ৬০% হুতু, ৪০% তুতসি, এবং ৩০ শতাংশ মহিলা সদস্য, পাশাপাশি তিনজন বাটোয়া সদস্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে ট্রানজিশনাল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে প্রতিনিধিত্বকে বাধ্যতামূলক করে। জাতীয় পরিষদের সদস্যরা জনপ্রিয়তার ভোটে নির্বাচিত হন এবং পাঁচ বছরের মেয়াদে থাকেন। ট্রানজিশনাল সেনেটে ৫১জন সদস্য রয়েছে এবং তিনটি আসন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিদের জন্য সংরক্ষিত। বুরুন্ডির সংবিধানের শর্তাবলীর কারণে সিনেট সদস্যদের ৩০% মহিলা হতে হবে। সিনেটের সদস্যরা ইলেক্টোরাল কলেজ দ্বারা নির্বাচিত হয়, যা বুরুন্ডির প্রতিটি প্রদেশ এবং কমিউনের সদস্যদের নিয়ে গঠিত।Background Note: Burundi. United States Department of State. February 2008. Retrieved on 28 June 2008. বুরুন্ডির ১৮টি প্রদেশের প্রতিটির জন্য একজন হুতু এবং একজন তুতসি সিনেটর বেছে নেওয়া হয়ে থাকে। ট্রানজিশনাল সেনেটের মেয়াদ পাঁচ বছর। একত্রে, বুরুন্ডির আইনসভা শাখা পাঁচ বছরের মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। বুরুন্ডির রাষ্ট্রপতি তার মন্ত্রী পরিষদে কর্মকর্তাদের নিয়োগ করেন, যা নির্বাহী শাখারও অংশ। রাষ্ট্রপতি মন্ত্রী পরিষদে পরিবেশন করার জন্য ট্রানজিশনাল সেনেটের চৌদ্দ (১৪) সদস্যকেও বেছে নিতে পারেন। মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের অবশ্যই বুরুন্ডির আইনসভার দুই-তৃতীয়াংশ দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। রাষ্ট্রপতি দুই ভাইস-প্রেসিডেন্টও বেছে নেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনের পর, বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট ছিলেন পিয়েরে নকুরুনজিজা। প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন থেরেন্স সিনুনগুরুজা, এবং দ্বিতীয় ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন গেরভাইস রুফিকিরি।Burundi – World Leaders . CIA. Retrieved on 28 June 2008. কোর সুপ্রেম (সুপ্রিম কোর্ট) হলো বুরুন্ডির সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের সরাসরি নীচে তিনটি আপিল আদালত রয়েছে। প্রথম দৃষ্টান্তের ট্রাইব্যুনালগুলো বুরুন্ডির প্রতিটি প্রদেশে বিচার বিভাগীয় আদালতের পাশাপাশি ১২৩টি স্থানীয় ট্রাইব্যুনাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মানবাধিকার সাংবাদিক জিন-ক্লদ কাভুমবাগুকে একাধিকবার গ্রেফতার ও বিচারের জন্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো দ্বারা বুরুন্ডির সরকার বারবার সমালোচিত হয়েছে। সেজন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (এআই) তাকে 'বিবেকের বন্দী' হিসেবে নাম দিয়েছে। এপ্রিল, ২০০৯ সালে, বুরুন্ডি সরকার সমকামিতাকে অপরাধী করার আইন পরিবর্তন করে। সম্মতিমূলক সমকামী সম্পর্কের জন্য দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিরা দুই থেকে তিন বছরের জেল এবং ৫০,০০০ থেকে ১০০,০০০ বুরুন্ডিয়ান ফ্রাঙ্কের জরিমানা গুনতে হবে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই কর্মের নিন্দা করেছে, এটিকে তারা আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক মানবাধিকার আইনের অধীনে বুরুন্ডির বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।Burundi abolishes the death penalty but bans homosexuality ". Amnesty International. 27 April 2009. এটি সংবিধানের বিরুদ্ধে, যা গোপনীয়তা অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। বুরুন্ডি আনুষ্ঠানিকভাবে ২৭ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) ত্যাগ করে। জাতিসংঘ কর্তৃক সেপ্টেম্বর, ২০১৭ -এর রিপোর্টে বিভিন্ন অপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন, যেমন বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং যৌন সহিংসতার জন্য দেশটিকে অভিযুক্ত করার পরে এই পদক্ষেপ গৃহীত হয়। আইসিসি ৯ নভেম্বর, ২০১৭-এ ঘোষণা করেছিল যে বুরুন্ডি সদস্য হওয়ার সময় থেকে এখনও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে এবং এখন পর্যন্ত তারা বিচারের আওতায় রয়েছে। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ থাম্ব|বুরুন্ডির রাজ্য সমূহের মানচিত্র বুরুন্ডি ১৮টি প্রদেশে বিভক্ত, এরমধ্যে ১১৯টি কমিউন এবং ২,৬৩৮টি কোলাইন (পাহাড়)।Kavamahanga, D. International Conference on AIDS 2004. 15 July 2004. NLM Gateway. Retrieved on 22 June 2008. প্রতিটি প্রাদেশিক সরকার এই সীমানাগুলোর উপর গঠিত। বুরুন্ডির প্রদেশ এবং কমিউনগুলো ১৯৫৯ সালে ক্রিসমাসের দিনে একটি বেলজিয়ান ঔপনিবেশিক ডিক্রি দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। তারা সর্দারদের পূর্ব-বিদ্যমান ব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করেছে। ২০০০ সালে বুজুম্বুরাকে ঘিরে প্রদেশ ব্যবস্থা বুজুম্বুরা গ্রামীণ এবং বুজুম্বুরা মাইরি নামে দুটি প্রদেশে বিভক্ত হয়। ২০২২ সালের জুলাই মাসে বুরুন্ডি সরকার দেশের আঞ্চলিক মহকুমাগুলোর একটি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ঘোষণা করেছে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনটি প্রদেশের পরিমাণ ১৮ থেকে কমিয়ে ৫-এ নামিয়ে আনবে এবং কমিউনের পরিমাণ ১১৯ থেকে কমিয়ে ৪২-এ নামিয়ে আনবে বলে জানা যায়। পরিবর্তনটি কার্যকর করার জন্য এখন শুধু বুরুন্ডির সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন। ভূগোল থাম্ব|284x284পিক্সেল|মানচিত্রে বুরুন্ডির ভৌগোলিক অবস্থান আফ্রিকার ক্ষুদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি বুরুন্ডি। দেশটি স্থলবেষ্টিত এবং একটি নিরক্ষীয় জলবায়ু রয়েছে। বুরুন্ডি আলবার্টিন রিফটের একটি অংশ, পূর্ব আফ্রিকান রিফটের পশ্চিম সম্প্রসারণ। এটি আফ্রিকার কেন্দ্রে একটি ঘূর্ণায়মান মালভূমিতে অবস্থিত। বুরুন্ডির উত্তরে রুয়ান্ডা, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে তানজানিয়া এবং পশ্চিমে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো। এটি আলবার্টিন রিফ্ট মন্টেন বন, সেন্ট্রাল জাম্বেজিয়ান মিওম্বো বনভূমি এবং ভিক্টোরিয়া বেসিন বন-সাভানা মোজাইক ইকোরিজিয়নের মধ্যে অবস্থিত। কেন্দ্রীয় মালভূমির গড় উচ্চতা হলো ১,৭০৭ মিটার (৫,৬০০ ফুট), সীমানায় নিম্ন উচ্চতা রয়েছে। সর্বোচ্চ শিখর মাউন্ট হেহা ২,৬৮৫ মিটার (৮,৮১০ ফুট),O'Mara, Michael (1999). Facts about the World's Nations. Bronx, New York: H.W. Wilson, p. 150, যেটির বৃহত্তম শহর এবং অর্থনৈতিক রাজধানী বুজুম্বুরার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। নীল নদের উৎস বুরুরি প্রদেশে, এবং ভিক্টোরিয়া হ্রদ থেকে রুভিরোঞ্জা নদীর মাধ্যমে এর প্রধান জলের সাথে যুক্ত।Ash, Russell (2006). The Top 10 of Everything. New York City: Sterling Publishing Company. আরেকটি প্রধান হ্রদ হলো লেক টাঙ্গানিকা, বুরুন্ডির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অনেকাংশে এটির অবস্থান। বুরুন্ডিতে দুটি জাতীয় উদ্যান রয়েছে: উত্তর-পশ্চিমে কিবিরা ন্যাশনাল পার্ক (রুয়ান্ডার নিয়ংওয়ে ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্কের সংলগ্ন রেইনফরেস্টের একটি ছোট অঞ্চল), এবং উত্তর-পূর্বে রুবুবু ন্যাশনাল পার্ক (রুরুবু নদীর ধারে, রুভুবু বা রুভুউ নামেও পরিচিত)। উভয়ই ১৯৮২ সালে বন্যপ্রাণী সংখ্যা সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।East, Rob (1999). African Antelope Database 1998. Gland, Switzerland: International Union for Conservation of Nature, p. 74. . শারীরিক ভূতত্ত্ব থাম্ব|স্যাটেলাইট থেকে বুরুন্ডির ভূমি বুরুন্ডি ২৭,৮৩০ বর্গ কিলোমিটার (১০,৭৫০ বর্গ মাইল) আয়তনের সমান একটি এলাকা জুড়ে আছে, যার মধ্যে ২৫,৬৮০ বর্গ কিলোমিটার (৯,৯২০ বর্গ মাইল) ভূমি। দেশটির ১,১৪০ কিলোমিটার (৭১০ মাইল) স্থল সীমান্ত রয়েছে: এরমধ্যে ২৩৬ কিলোমিটার (১৪৭ মাইল) কঙ্গোর সাথে, ৩১৫ কিলোমিটার (১৯৬ মাইল) রুয়ান্ডার সাথে এবং ৫৮৯ কিলোমিটার (৩৬৬ মাইল) তানজানিয়ার সাথে সীমানা ভাগ করা হয়েছে। একটি স্থলবেষ্টিত দেশ হিসাবে বুরুন্ডির কোন উপকূলরেখা নেই। এটি কঙ্গো-নীল ডিভাইডের চূড়ায় বিস্তৃত, যা কঙ্গো এবং নীল নদের অববাহিকাকে পৃথক করেছে। নীল নদের সবচেয়ে দূরবর্তী হেডওয়াটার রুভিরোঞ্জা নদীর উৎস বুরুন্ডিতে। ভূখণ্ড: থাম্ব|বুরুন্ডির ভূসংস্থান বুরুন্ডির ভূখণ্ডটি পাহাড়ি এবং পূর্বে একটি মালভূমিতে নেমে গেছে। সেন্ট্রাল জাম্বেজিয়ান মিওম্বো বনভূমি ইকোরিজিয়নের অংশ হিসেবে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার দ্বারা দক্ষিণ ও পূর্ব সমভূমিকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। দেশের সর্বনিম্ন বিন্দু টাঙ্গানিকা হ্রদে অবস্থিত, যেটির উচ্চতা ৭৭২ মিটার (২,৫৩৩ ফুট)। দেশটির সর্বোচ্চ বিন্দুটি হেহা পর্বতে, এর উচ্চতা ২,৬৮৪ মিটার (৮,৮০৬ ফুট)। বুরুন্ডিতে বন্যা ও ভূমিধসের কারণে প্রায়ই প্রাকৃতিক বিপত্তি দেখা দেয়। প্রাকৃতিক সম্পদ: বুরুন্ডির মজুদ রয়েছে: নিকেল, ইউরেনিয়াম, বিরল আর্থ অক্সাইড, পিট, কোবাল্ট, তামা, প্ল্যাটিনাম (এখনও শোষিত হয়নি), ভ্যানাডিয়াম, নাইওবিয়াম, ট্যানটালাম, সোনা, টিন, টংস্টেন, কাওলিন এবং চুনাপাথর। দেশটিতে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি এবং জলবিদ্যুতের সম্ভাবনাও রয়েছে। বুরুন্ডিতে ২১৪.৩ বর্গ কিলোমিটার (৮২.৭ বর্গ মাইল) সেচযোগ্য জমি রয়েছে। পরিবেশ থাম্ব|246x246পিক্সেল|বুরুন্ডির মালভূমিমাটির ক্ষয় বুরুন্ডির জন্য একটি সমস্যা। অতিমাত্রায় চারণ এবং প্রান্তিক জমিতে কৃষি সম্প্রসারণের ফলে মাটির ক্ষয় হয়ে থাকে। অন্যান্য সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে: জ্বালানীর জন্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাছ কাটার কারণে বন উজাড়; এবং অতিমাত্রায় আবাসস্থল তৈরির কারণে বন্যপ্রাণী হুমকির মুখে। বন্যপ্রাণী বুরুন্ডির বন্যপ্রাণী তার উদ্ভিদ ও প্রাণীর সমন্বয়ে গঠিত। ছোট, স্থলবেষ্টিত দেশটিতে ২,৯৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৫৯৬টি প্রজাতির পাখি, ১৬৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫২ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৬ প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং ২১৫টি মাছের প্রজাতি রয়েছে। বন্যপ্রাণী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। প্রধানত তীব্র জনসংখ্যার চাপ, বনের বৃহৎ এলাকাকে কৃষি জমিতে রূপান্তর এবং ব্যাপকভাবে পশুপালনের কারণে বন্যপ্রাণী হ্রাস পাচ্ছে। দেশটির বন্যপ্রাণী সংরক্ষিত এলাকা দেশের মোট আয়তনের ৫% এর কিছু বেশি জুড়ে বিস্তৃত। থাম্ব|উত্তর-পশ্চিম বুরুন্ডির কিবিরা ন্যাশনাল পার্কে হিপ্পোস আইনি অবস্থা: বেলজিয়ামের ঔপনিবেশিক শাসনের সময় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য কোনো জাতীয় আইন ছিল না বা কোনো জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শুধু ব্যতিক্রম ছিল একটি বন সংরক্ষিত, যা ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৮০ সালের আগে বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য সামান্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। জারি করা প্রথম আইনটি ছিল ডিক্রি নং ১/৬, তারিখ ৩ মার্চ ১৯৮০, যার অধীনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও সংরক্ষণের জন্য জাতীয় উদ্যান (Parc Nationalaux) সংরক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই ডিক্রির অধীনে বনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। ২৫ মার্চ ১৯৮৫ এর ফরেস্ট কোড ছিল একটি কার্যকরী আইন যার অধীনে সংরক্ষিত বনাঞ্চল নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং সংরক্ষিত এলাকাগুলো নির্দিষ্ট করা হয়। সংরক্ষণের জন্য একটি জাতীয় ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ১৯৮০ সালের মার্চের ডিক্রির অধীনে প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য জাতীয় ইনস্টিটিউট; যা এখন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড কনজারভেশন অফ নেচার নামে নামকরণ করা হয়েছে। এটি জাতীয় উদ্যান এবং সংরক্ষণাগার স্থাপনের দায়িত্ব রয়েছে। এটি উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি ইকোট্যুরিজম প্রচার করে থাকে। বাসস্থান, তাপমাত্রা ও অন্যান্য: বুরুন্ডির বন্যপ্রাণী আবাসস্থল, তার ১৫টি প্রদেশ জুড়ে বিস্তৃত। যা মধ্যম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত এবং উচ্চতাগত পার্থক্য দ্বারা প্রভাবিত হয়। মালভূমি অঞ্চলে গড় বার্ষিক তাপমাত্রা 20 °C (68 °F) রেকর্ড করা হয় যখন রিফট ভ্যালিতে 23 °C (73 °F) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।Kanyamibwa & Weghe, p. 128. এই তাপমাত্রা শুষ্ক মৌসুম জুন থেকে আগস্ট এবং আবার ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী হয়। বর্ষাকাল অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, যার বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৫০০-২,০০০ মিলিমিটার (২০-৭৯ ইঞ্চি)। পশ্চিম পর্বত অঞ্চলে গড় বৃষ্টিপাত হয় ১,৩৭৫ মিলিমিটার (৫৪.১ ইঞ্চি); যদিও পূর্ব মালভূমিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাত হয় ১,১০০-১,২৫০ মিলিমিটার (৪৩-৪৯ ইঞ্চি)। দেশটি পাহাড়ি মালভূমি দ্বারা অধ্যুষিত। মালভূমিতে উচ্চতা ১,৪০০-১,৮০০ মিটার (৪,৬০০-৫,৯০০ ফুট) থেকে পরিবর্তিত হয় এবং দেশের পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে হ্রাসের প্রবণতা রেকর্ড করা হয়। এর জীববৈচিত্র্য বিস্তৃতভাবে স্থলজ বাস্তুতন্ত্র এবং জলজ ও আধা-জলজ বাস্তুতন্ত্রের অধীনে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।দেশের পশ্চিম অঞ্চলটি সংকীর্ণ এবং তাঙ্গানিকা হ্রদের সীমানা, রিফ্ট উপত্যকা এবং রুসিজি নদী (কঙ্গোর সীমান্ত) দ্বারা গঠিত। দেশের পশ্চিমাঞ্চল কঙ্গো-নীল ডিভাইডের পাহাড়ি ভূখণ্ড দ্বারা গঠিত, যেখানে অনেক পাহাড় ২,৫০০ মিটার (৮,২০০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত; এখানকার সর্বোচ্চ পর্বতমালা হলো মাউন্ট তেজা ২,৬৬৫ মিটার (৮,৭৪৩ ফুট) এবং হেহা পর্বত ২,৬৭০ মিটার (৮,৭৬০ ফুট)। বুরুন্ডিতে অবস্থিত টাঙ্গানিকা হ্রদ, বিশ্বের দ্বিতীয় গভীরতম হ্রদ। দেশটিতে মাত্র 8% জলের বিস্তার রয়েছে। নীল নদ এখানকার প্রধান নদ এবং অন্যান্য নদীগুলো হলো মালাগারিসি এবং রুভুউ। নীল নদের প্রধান প্রবাহ হলো রুভিয়ারোঞ্জা, যা কাগেরা নদীর একটি উপরের শাখা। দেশের নদী ব্যবস্থা নীল নদ এবং কঙ্গো অববাহিকার দুটি প্রধান হাইড্রোগ্রাফিক্যাল অববাহিকার অধীনে পড়ে। থাম্ব|রুসিজি নদী সুরক্ষিত এলাকাসমূহ: বুরুন্ডিতে তিনটি জাতীয় উদ্যান রয়েছে: কিবিরা জাতীয় উদ্যানের আয়তন ৪০,০০০ হেক্টর (৯৯,০০০ একর) এবং এটি দেশের বৃহত্তম রেইনফরেস্ট। রুভুবু ন্যাশনাল পার্ক (৫০,৮০০ হেক্টর (১২৬,০০ একর), এটি দেশের বৃহত্তম পার্ক এবং হাইকিং ট্রেইলের জন্য এটি বেশ পরিচিত। রুসিজি ন্যাশনাল পার্ক (৯,০০০ হেক্টর (২২,০০০ একর), বুজুম্বুরা থেকে ১৫ কিলোমিটার (৯.৩ মাইল) দূরের জলাভূমি, যেখানে জলহস্তী, সিতাতুঙ্গা (জলজল হরিণ) এবং অনেক প্রজাতির পাখি রয়েছে। ১৯৯০ সালে এটিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়, এটি বুজুম্বুরার বাইরের সীমানায় রুসিজি নদীর বন্যার সমভূমিতে অবস্থিত। জাতীয় উদ্যান ছাড়াও চারটি রিজার্ভ এলাকা রয়েছে: লাখ রুহিন্দা প্রকৃতি সংরক্ষণ (৮,০০০ হেক্টর), বুরুরি ফরেস্ট নেচার রিজার্ভ (৩,৩০০ হেক্টর), রুমঙ্গে নেচার রিজার্ভ (৫,০০০ হেক্টর), কিগওয়েনা ফরেস্ট নেচার রিজার্ভ (৮০০ হেক্টর)। এছাড়াও, এখানে দুটি প্রাকৃতিক স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে: চুটস দে লা কাগেরা এবং নায়াকাজু গর্জ। থাম্ব|2007 সালে রুসিজি জাতীয় উদ্যানের দৃশ্য উদ্ভিদ জগত থাম্ব|প্রজাপতি গুল্ম বুরুন্ডির উদ্ভিদজগতকে পূর্ব আফ্রিকার চিরহরিৎ গুল্মভূমি এবং গৌণ তৃণভূমি, সেইসাথে পশ্চিম পর্বত অঞ্চলের অন্তর্বর্তীকালীন রেইনফরেস্ট সহ আফ্রোমন্টেন গাছপালা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। হাইফেন-বাবলা এবং ব্র্যাকিস্টেজিয়া গাছ হ্রদের তীরে উল্লেখ করা হয়েছে। Brachystegia-Julbernardia (miombo) গাছ দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত এলাকায় দেখা যায়।Kanyamibwa & Weghe, pp. 127-128. উত্তরে বুগেসেরা অঞ্চল এবং পূর্ব দিকে কুমোসো নিম্নচাপে বাবলা-কমব্রেটাম গাছ এবং ব্র্যাকিস্টেজিয়া গাছ প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এখানকার বন্য উদ্ভিদের অনেক প্রজাতি স্থানীয় বলে জানা যায়; এই শ্রেণীতে ৭০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। থাম্ব|বুজুম্বুর ফুল পাখি বুরুন্ডিতে রিপোর্ট করা পাখির (avifauna) মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ৫৯৬ প্রজাতি (৪৩৯ আবাসিক এবং ১০৯ মৌসুমী অভিবাসী)। কোন স্থানীয় পাখির প্রজাতি নেই। দেশে বার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক ঘোষিত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পাখি সংরক্ষণ এলাকা রয়েছে, যা ১,০১৮ বর্গ কিলোমিটার (৩৯৩ বর্গ মাইল) এলাকা জুড়ে এবং এটি আয়তনে দেশের মোট ৩.৭%। বার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনালের মতে, বিশ্বব্যাপী সংরক্ষণ উদ্বেগের ১৩টি প্রজাতি রয়েছে (ছয়টি অ-প্রজননকারী অভিবাসী, অ্যালবার্টিন রিফ্ট এবং প্যাপিরাস জলাভূমি থেকে প্রজননের ভারসাম্য)। এর মধ্যে রয়েছে ফিনিকপ্টেরাস মাইনর (এনটি), সার্কাস ম্যাক্রোরাস (এনটি), ফ্যালকো নাউমান্নি (ভিইউ), গ্যালিনাগো মিডিয়া (এনটি), গ্ল্যারিওলা নর্ডমানি (এনটি), আরদেওলা আইডিয়া (এনটি), লিবিয়াস রুব্রিফেসিস (এনটি), কুপিওর্নিস রুফোসিনকটাস (এনটি), ল্যানিয়ারিয়াস মুফুম্বিরি (এনটি), বালেনিসেপস রেক্স (এনটি), অ্যাপালিস আর্জেনটিয়া (ভিইউ), ব্র্যাডিপ্টেরাস গ্রাউরি (ভিইউ), ক্রিপ্টোস্পিজা শেলেই (ভিইউ), ক্যালামোনাস্টাইডস গ্র্যাসিলিরোস্ট্রিস (ভিইউ), এবং বুগেরানাস কারুনকুলাটাস (ভিইউ)। অর্থনীতি থাম্ব|250x250পিক্সেল|বুরুন্ডির মাথাপিছু জিডিপির ঐতিহাসিক উন্নয়ন বুরুন্ডি একটি স্থলবেষ্টিত দরিদ্র রাষ্ট্র দেশ এবং এর উৎপাদন খাত অনুন্নত। দেশটির অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর। ২০১৭ সালে জিডিপির ৫০% কৃষিনির্ভর এবং জনসংখ্যার ৯০% এরও বেশি কৃষি কাজ করে জীবিকানির্বাহ করে থাকে। এর মধ্যে প্রাথমিক রপ্তানি হলো কফি এবং চা, যা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মোট ৯০ শতাংশ, যদিও এটি রপ্তানি জিডিপির অংশে তুলনামূলকভাবে কম।Eggers, p. xlvii. অন্যান্য কৃষি পণ্যের মধ্যে রয়েছে তুলা, চা, ভুট্টা, ঝাল, মিষ্টি আলু, কলা, ম্যানিওক (টেপিওকা); গরুর মাংস, দুধ এবং চামড়া। থাম্ব|251x251পিক্সেল|টাঙ্গানিকা হ্রদে জেলেরা বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রতম দেশটির ভৌগোলিক অবস্থা প্রায় পুরোটাই স্থলবেষ্টিত। শিক্ষার সুযোগের অভাব এবং এইচআইভি/এইডসের বিস্তারের কারণে দেশে দরিদ্রতা বিস্তার করে আছে। বুরুন্ডি এর জনসংখ্যার প্রায় ৮০% দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে।Burundi Population . Institute for Security Studies. Retrieved on 30 June 2008. বিংশ শতাব্দিতে দেশজুড়ে বিরাট দুর্ভিক্ষ এবং খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি অনুসারে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৫৬.৮% দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টিতে ভোগে। World Food Programme. Retrieved on 30 June 2008. মজুরি বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির সাথে তাল মিলিয়ে না থাকায় বেশিরভাগ বুরুন্ডিয়ানদের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। দারিদ্র্যের গভীরতার ফলে তারা দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক দাতাদের কাছ থেকে সাহায্যের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। বিদেশী সাহায্য বুরুন্ডি জাতীয় আয়ের ৪২% প্রতিনিধিত্ব করে, সাব-সাহারান আফ্রিকায় যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হার। বুরুন্ডি ২০০৯ সালে পূর্ব আফ্রিকান সম্প্রদায়ে যোগদান করে, যার ফলে তার আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি $৭০০ মিলিয়ন ঋণ ত্রাণ লাভ করে।২০১৮ সালে ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী বুরুন্ডিয়রা বিশ্বের সবচেয়ে কম সুখী জনগণ হিসেবে চিহ্নিত। বুরুন্ডির কিছু প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে ইউরেনিয়াম, নিকেল, কোবাল্ট, তামা এবং প্ল্যাটিনাম। কৃষি ছাড়াও অন্যান্য শিল্পের মধ্যে রয়েছে: আমদানিকৃত উপাদানের সমাবেশ; গণপূর্ত নির্মাণ; খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং হালকা ভোগ্যপণ্য যেমন কম্বল, জুতা এবং সাবান। আর্থিক পরিষেবাগুলোতে অ্যাক্সেসের অভাব সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার জন্য একটি গুরুতর সমস্যা, বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামীণ এলাকায়। দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ২% মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে এবং ০.৫% এরও কম ব্যাংক ঋণ পরিষেবা ব্যবহার করে। তবে, সেখানে ক্ষুদ্রঋণ একটি বৃহত্তর ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে বুরুন্ডিয়ীদের ৪ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার সদস্য। ২৬টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান (MFIs) ঋণ গ্রহণে ইচ্ছুক জনগণের মধ্যে সঞ্চয়, আমানত এবং স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী ঋণ প্রদান করে থাকে। বুরুন্ডি পূর্ব আফ্রিকান সম্প্রদায়ের অংশ এবং পরিকল্পিত পূর্ব আফ্রিকান ফেডারেশনের সম্ভাব্য সদস্য। দেশটিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্থির, ফলে তারা এখনও প্রতিবেশী দেশগুলোর পিছনে রয়েছে।Burundi . Worlddiplomacy.org. Retrieved on 29 June 2015. মুদ্রা বুরুন্ডির মুদ্রা হলো বুরুন্ডিয়ান ফ্রাঙ্ক (ISO 4217 কোড BIF)। এটি নামমাত্র ১০০ সেন্টিমে বিভক্ত, যদিও স্বাধীন বুরুন্ডিতে কয়েন কখনও সেন্টিমে জারি করা হয়নি; যখন বুরুন্ডি বেলজিয়ান কঙ্গো ফ্রাঙ্ক ব্যবহার করতো তখন থেকে সেন্টিটাইম মুদ্রা প্রচলন করা হয়। বুরুন্ডির মুদ্রানীতি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক অফ দ্য রিপাবলিক অফ বুরুন্ডি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পরিবহন থাম্ব|274x274px|বাইসাইকেল বুরুন্ডিতে পরিবহনের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম থাম্ব|273x273px|বুজুম্বুরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল, বুজুম্বুরা বুরুন্ডির পরিবহন নেটওয়ার্ক সীমিত এবং অনুন্নত। একটি ২০১২ সালের DHL গ্লোবাল কানেক্টেডনেস ইনডেক্স অনুযায়ী, বুরুন্ডি ১৪০টি জরিপকৃত দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। বুজুম্বুরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলো একমাত্র বিমানবন্দর যেখানে একটি পাকা রানওয়ে রয়েছে এবং মে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এটি চারটি এয়ারলাইন্স (ব্রাসেলস এয়ারলাইনস, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস, কেনিয়া এয়ারওয়েজ এবং রুয়ান্ডএয়ার) দ্বারা পরিসেবা করা হয়েছে। কিগালি হলো বুজুম্বুরার সাথে সবচেয়ে দৈনিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সংযোগের শহর। দেশে একটি সড়ক নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশের রাস্তার মাত্র ১০ শতাংশের কম পাকা ছিল।Globalisation: Going backwards , The Economist (22 December 2012). Retrieved on 4 April 2014. ২০১২ সাল পর্যন্ত বেসরকারী বাস কোম্পানিগুলো রুয়ান্ডার কিগালি যাওয়ার আন্তর্জাতিক রুটে বাসের প্রধান অপারেটর ছিল; তবে অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে কোন বাস সংযোগ ছিল না (তানজানিয়া এবং কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র)। বুজুম্বুরা তানজানিয়ার কিগোমার সাথে একটি যাত্রী ও পণ্যবাহী ফেরি (এমভি এমওয়ানগোজো) দ্বারা সংযুক্ত। ভবিষ্যতে কিগালি ও উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা এবং কেনিয়ার সাথে রেলের মাধ্যমে দেশটিকে সংযুক্ত করার একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে। জনপরিসংখ্যান থাম্ব|270x270পিক্সেল|বুজুম্বুরার শিশুরা, বুরুন্ডি ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বুরুন্ডির জনসংখ্যা ১২,৩৪৬,৮৯৩ জন, যা ১৯৫০ সালে মাত্র ২,৪৫৬,০০০ জন ছিল।"Table 2. Total population by country, 1950, 2000, 2015, 2025 and 2050 (medium-variant) ". (PDF). United Nations Department of Economic and Social Affairs/Population Division. p. 27. জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রতি বছর ২.৫ শতাংশ, এটি গড় বৈশ্বিক গতির দ্বিগুণেরও বেশি। একজন বুরুন্ডিয়ান মহিলার গড়ে ৫.১০ সন্তান রয়েছে, যেটি আন্তর্জাতিক প্রজনন হারের দ্বিগুণেরও বেশি। ২০২১ সালে বুরুন্ডি বিশ্বের দশম সর্বোচ্চ মোট উর্বরতার হার ছিল, এর অবস্থান সোমালিয়ার ঠিক পরে। গৃহযুদ্ধের ফলে অনেক বুরুন্ডিয়ান অন্য দেশে চলে গেছে। ২০০৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুমানিক ১০,০০০ বুরুন্ডিয়ান শরণার্থীকে গ্রহণ করেছিল।Kaufman, Stephen. U.S. Accepting Approximately 10,000 Refugees from Burundi . 17 October 2006. U.S. Department of State. Retrieved on 30 June 2008. বুরুন্ডিতে একটি অপ্রতিরোধ্য গ্রামীণ সমাজ রয়ে গেছে, যেখানে ২০১৩ সালে জনসংখ্যার মাত্র ১৩% শহরাঞ্চলে বসবাস করে। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৩১৫ জন (প্রতি বর্গ মাইল ৭৫৩), সাব-সাহারান আফ্রিকায় এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জনসংখ্যার প্রায় ৮৫% হুতু জাতিগত, ১৫% তুতসি এবং ১% এরও কম আদিবাসী ত্বোয়া। ভাষা বুরুন্ডিতে ঐতিহ্যগতভাবে দুটি সরকারী ভাষা ছিল: কিরুন্ডি এবং ফরাসি। ২০১৪ সালে ইংরেজি দেশটির তৃতীয় সরকারী ভাষা হয়ে ওঠে। এর মধ্যে শুধুমাত্র কিরুন্ডি ভাষাই অধিকাংশ জনসংখ্যা ব্যবহার করে থাকে। এটি ২০০৫ সালের বুরুন্ডিয়ান সংবিধান দ্বারা জাতীয় ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পায়। বুরুন্ডি আফ্রিকান রাজ্যগুলোর মধ্যে অস্বাভাবিক একটি একক আদিবাসী ভাষা যার সমগ্র জনসংখ্যা ভাগ করে নিয়েছে। ধারণানুযায়ী, বুরুন্ডিয়ানদের ৯৮ শতাংশ কিরুন্ডি ভাষায় কথা বলে এবং মাত্র ১০% এর কম ফরাসি ভাষায় কথা বলে। অতীতে বেলজিয়ান ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে (১৯১৯-৬২) কিরুন্ডি শেখানো হয়েছিল, যেখানে আবার জার্মান শাসনের অধীনে (১৮৯৪-১৯১৬) সোয়াহিলিকে উৎসাহিত করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বুরুন্ডিয়ান সরকার দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে একত্রিত করার উপায় হিসাবে কিরুন্ডি ভাষার ব্যবহারকে উন্নীত করেছে। দেশটিকে ফ্রাঙ্কোফোনির অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বেলজিয়ামের ঔপনিবেশিক শাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে সরকার, ব্যবসায় এবং শিক্ষিত শ্রেণিতে ফরাসিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে কিন্তু জনসংখ্যার মাত্র ৩ থেকে ১০ শতাংশই সাবলীল ভাষায় কথা বলে। বুরুন্ডিয়ান আঞ্চলিক ফরাসিও প্রায়শই কিরুন্ডি, লিঙ্গালা এবং অন্যান্য ভাষার শব্দগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফরাসি একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু দ্বারা কথ্য এবং প্রধানত একটি দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে দেশের অভিবাসী বাসিন্দারা কথা বলে থাকে। ২০০৭ সালের পরে পূর্ব আফ্রিকান সম্প্রদায়ের সাথে আঞ্চলিক একীকরণের দিকে পদক্ষেপের অংশ হিসাবে ইংরেজি গৃহীত হয়েছিল কিন্তু দেশে এর কার্যকর উপস্থিতি এখন খুবই কম। বুরুন্ডিতে কথ্য ভাষার মধ্যে সোয়াহিলি যা গ্রেট লেক অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি বিশেষ করে বাণিজ্যে এবং দেশের মুসলিম সংখ্যালঘুদের সাথে বা পূর্ব আফ্রিকার অন্য কোথাও থেকে অভিবাসন করা জনগনের ক্ষেত্রে অধিক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ধর্ম বুরুন্ডিতে ধর্ম বৈচিত্র্যময়। খ্রিস্টান ধর্ম তাদের প্রধান বিশ্বাস। সিআইএ ফ্যাক্টবুকের ২০০৮ সালের হিসাব অনুসারে, বুরুন্ডির জনসংখ্যার প্রায় ৮৬ শতাংশ খ্রিস্টান (৬২.১% রোমান ক্যাথলিক, ২৩.৯% প্রোটেস্ট্যান্ট), ৭.৯% ঐতিহ্যগত ধর্ম অনুসরণ করে এবং ২.৫ শতাংশ মুসলিম (প্রধানত সুন্নি)। বিপরীতে, ২০১০ সালে এনসাইক্লোপিডিয়া অফ আফ্রিকার আরেকটি অনুমান বলে যে, বুরুন্ডির ৬৭ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান, ২৩% সনাতন ধর্ম অনুসরণ করে এবং ১০% ইসলাম বা অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। এরমধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ২-৫%, যাদের অধিকাংশই সুন্নি এবং শহরাঞ্চলে বসবাস করে।Pew Research Center's Religion & Public Life Project: Burundi . Pew Research Center. 2010.Burundi . U.S. Department of State. State.gov (17 November 2010). Retrieved on 24 November 2012. স্বাস্থ্য় থাম্ব|236x236পিক্সেল|বুরুন্ডিতে স্বাস্থ্যের উন্নতি। বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা সূচকে র‍্যাঙ্ক করা ১২০টি দেশের মধ্যে বুরুন্ডির অবস্থান সবচেয়ে ক্ষুধা ও অপুষ্টির তালিকায় রয়েছে।Jillian Keenan, The Blood Cries Out . "In one of Africa's most densely populated countries, brothers are killing brothers over the right to farm mere acres of earth. There's just not enough land to go around in Burundi — and it could push the country into civil war." Foreign Policy (FP) ১৯৬২ সালে গৃহযুদ্ধের ফলে দেশে চিকিৎসার অগ্রগতি বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোর মতো বুরুন্ডিরা বায়োমেডিসিন ছাড়াও কিছু দেশীয় ওষুধ ব্যবহার করে থাকে। ১৯৮০-এর দশকে বুরুন্ডির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মান নিয়ন্ত্রণের বিকাশ এবং ঔষধি গাছ থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস নিয়ে নতুন গবেষণা শুরু করতে সহায়তার জন্য জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির কাছে অনুরোধ করেছিল। একই সময়ে বুরুন্ডিতে অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্র্যাডিশনাল প্র্যাকটিশনারস (ATRADIBU) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা বুরুন্ডিতে ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের গবেষণা ও প্রচার কেন্দ্র (CRPMT) স্থাপনের জন্য সরকারী সংস্থার সাথে যুক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সাহায্যের সাম্প্রতিক প্রবাহ বুরুন্ডিতে বায়োমেডিকেল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাজকে সমর্থন করেছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য কর্মীরা বুরুন্ডিতে ঐতিহ্যগত দেশীয় ওষুধ ব্যবহার পরিহারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ২০১৫ সালের হিসাবে, বুরুন্ডিতে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন শিশু ৫ বছর বয়সের আগেই নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া এবং ম্যালেরিয়া প্রতিরোধযোগ্য এবং চিকিৎসাযোগ্য অসুস্থতা থেকে মারা যায়। ২০১৫ সালের হিসাবে বুরুন্ডির গড় আয়ু ৬০.১ বছর। ২০১৩ সালে বুরুন্ডি স্বাস্থ্যসেবাতে তাদের জিডিপির ৮% ব্যয় করেছে। দেশটিতে মৃত্যুর হার প্রতি ১,০০০ জীবিত জন্মের জন্য ৬১.৯ মৃত্যু এবং জন্মহার প্রতি মহিলার ৬.১ জন শিশু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুযায়ী, দেশে গড় আয়ু ৫৮/৬২ বছর। বুরুন্ডির সাধারণ রোগের মধ্যে রয়েছে ম্যালেরিয়া এবং টাইফয়েড জ্বর। সংস্কৃতি থাম্ব|272x272পিক্সেল|ফুটবলে বুরুন্ডি বুরুন্ডির সংস্কৃতি স্থানীয় ঐতিহ্য এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রভাবের উপর ভিত্তি করে, যদিও নাগরিক অস্থিরতার কারণে সাংস্কৃতিক প্রাধান্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির প্রধান শিল্প কৃষি এবং সাধারণ বুরুন্ডিয়ান খাবারের মধ্যে রয়েছে মিষ্টি আলু, ভুট্টা, চাল এবং মটর। অতিরিক্ত খরচের কারণে মাসে মাত্র কয়েকবার মাংস খাওয়া হয়। কারুশিল্প বুরুন্ডিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ফর্ম এবং অনেক পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় উপহার। ঝুড়ি বয়ন বা বাস্কেট ওয়েভিং স্থানীয় কারিগরদের জন্য একটি জনপ্রিয় নৈপুণ্য।Levin, Adam (2005). The Art of African Shopping. Cape Town, South Africa: Struik, p. 36. অন্যান্য কারুশিল্প যেমন মুখোশ, ঢাল, মূর্তি এবং মৃৎপাত্র বুরুন্ডিতে তৈরি হয়। Cultural Profiles Project. Citizenship and Immigration Canada. Retrieved 30 June 2008. ঢোল বাজানো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বুরুন্ডির বিশ্ব-বিখ্যাত রয়্যাল ড্রামার্স, যারা ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পারফর্ম করেছে।Center for the Arts Presents the Royal Drummers of Burundi . The Mason Gazette. 14 September 2006. George Mason University. Retrieved on 20 July 2008. তারা কারিন্ডা, আমাশাকো, ইবিশিকিসো এবং ইকিরন্য ড্রাম ব্যবহার করে ঐতিহ্যবাহী ড্রামিং এর জন্য বিখ্যাত। নাচ প্রায়ই ড্রামিং পারফরম্যান্সের সাথে থাকে, যা প্রায়শই উদযাপন এবং পারিবারিক সমাবেশে দেখা যায়। দেশের মৌখিক ঐতিহ্য গুলোর মধ্যে গল্প, কবিতা ও গানের মাধ্যমে ইতিহাস ও জীবনের শিক্ষা তুলে ধরে। ইমিগানি, ইন্দিরিম্বো, আমাজিনা এবং আইভিভুগো হলো বুরুন্ডির সাহিত্যের প্রধান ধারা। বাস্কেটবল, ট্র্যাক এবং ফিল্ড উল্লেখযোগ্য খেলা। মার্শাল আর্টও বুরুন্ডিতে বেশ জনপ্রিয়। অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল সারা দেশে একটি জনপ্রিয় বিনোদন, যেমন মানকাল গেম। অধিকাংশ খ্রিস্টান ধর্মীয় ছুটির দিন পালিত হয় বড়দিনের সাথে। Cultural Profiles Project. Citizenship and Immigration Canada. Retrieved 30 June 2008. বুরুন্ডিয়ান স্বাধীনতা দিবস প্রতি বছর ১ জুলাই পালিত হয়। ২০০৫ সালে, বুরুন্ডিয়ান সরকার ঈদ-উল-ফিতরকে মুসলমানদের জন্য সরকারী ছুটি ঘোষণা করেছে।Burundi celebrates Muslim holiday . BBC. 3 November 2005. Retrieved on 30 June 2008. মিডিয়া বুরুন্ডির বেশিরভাগ গণমাধ্যম সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। দেশটিতে রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সক্রিয় রয়েছে। রেডিও: বুরুন্ডির জাতীয় মালিকানাধীন রেডিও স্টেশনগুলো হলঃ রেডিও বুন্টু ইজউই রি'ইম্পফুভি নাবাপফাকাজি, রেডিও বেনা এফএম, রেডিও সিসিআইবি এফএম+, রেডিও আগাকিজা, রেডিও কলম্ব এফএম, রেডিও সংস্কৃতি, রেডিও ডেসটিনি এফএম, রেডিও ঈগল স্পোর্ট এফএম, রেডিও ফ্রিকোয়েন্স মেনিয়া, রেডিও ইজউই রাই’ উমুকেনয়েজি, রেডিও মারিয়া বিডিআই, রেডিও রেমা এফএম, রেডিও স্টার এফএম ইত্যাদি। এবং আন্তর্জাতিক মালিকানাধীন রেডিও স্টেশনের মধ্যে রয়েছে- আরএফআই, রেডিও হিট আফ্রিকা, রেডিও রয়্যাল মিডিয়া। টেলিভিশন: বুরুন্ডিতে টেলিভিশন ১৯৮৪ সালে প্রথম চালু হয়েছিল, যার কভারেজ ১৯৯২ সালে জাতীয় নাগালের মধ্যে ছিল। ২০০৪ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র একটি টেলিভিশন পরিষেবা ছিল, সরকারি মালিকানাধীন টেলিভিশন ন্যাশানাল ডু বুরুন্ডি। ২০২১ সালে নিবন্ধিত টেলিভিশন স্টেশনগুলো হলো (টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ): টেলিভিশন ন্যাশনাল ডু বুরুন্ডি, হেরিটেজ টিভি, রেমা টিভি, টেলিভিশন সালামা, সিটিজেন টিভি (স্যাটেলাইট) প্রভৃতি। ইন্টারনেট: বুরুন্ডি একটি ফাইবার-অপটিক তারের নেটওয়ার্কে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস প্রশস্ত করতে $২৫ মিলিয়ন বিনিয়োগ প্রকল্প চালু করেছে। সংবাদপত্র: বুরুন্ডিতে জনপ্রিয় সংবাদপত্রের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত: আর্ক-এন-সিয়েল, বুরুন্ডি ক্রেটিয়ান, বুরুন্ডি ট্রিবিউন প্রভৃতি। ইওয়াকু, ১৯৯৩ সালে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত এবং তারা ২০০৮ সালে বুরুন্ডিতে একটি সাপ্তাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করে। এটি দ্রুত বুরুন্ডিতে সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্র হয়ে ওঠে এবং ২০১৬ সাল পর্যন্ত এটিই একমাত্র ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। শিক্ষা থাম্ব|258x258পিক্সেল|বুরুন্ডির ক্যারোলাস ম্যাগনাস স্কুল ২০০৯ সালে, বুরুন্ডিতে প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতার হার অনুমান করা হয়েছিল ৬৭% (৭৩% পুরুষ এবং ৬১% মহিলা), যার সাক্ষরতার হার যথাক্রমে ৭৭% এবং ৭৬%, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য।Table 4a. Literacy . un.org ২০১৫ সাল নাগাদ, এটি ৮৫.৬% (৮৮.২% পুরুষ এবং ৮৩.১% মহিলা) বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০২ সাল থেকে প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের মধ্যে সাক্ষরতা ১৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। বুরুন্ডির অতিমাত্রায় দারিদ্র্যতার ফলে স্কুলে অনুপস্থিতির কারণে তুলনামূলকভাবে স্বাক্ষরতার হার কিছুটা কম। Cultural Profiles Project. Citizenship and Immigration Canada. cp-pc.ca বুরুন্ডিতে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, বুরুন্ডি বিশ্ববিদ্যালয়। শহরগুলোতে জাদুঘর রয়েছে, যেমন বুজুম্বুরার বুরুন্ডি ভূতাত্ত্বিক যাদুঘর এবং বুরুন্ডি জাতীয় যাদুঘর এবং গিতেগায় বুরুন্ডি মিউজিয়াম অফ লাইফ অবস্থিত। ২০১০ সালে ওয়েস্টউড হাই স্কুল, যা কানাডার ছাত্রদের দ্বারা অর্থায়ন করা ছোট গ্রামে একটি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হয়েছিল।Bridge To Burundi . Retrieved on 4 April 2014. ২০১৮ সালের হিসাবে, বুরুন্ডি শিক্ষায় তাদের মোট জিডিপির ৫.১% এর সমতুল্য বিনিয়োগ করেছে। আরও দেখুন গিতেগা বুজুম্বুরা আফ্রিকান দেশগুলোর তালিকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বুরুন্ডির সরকারি ওয়েবসাইট Books4burundi (is korean) রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ Burundi from UCB Libraries GovPubs Burundi National Consultations website বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:মধ্য আফ্রিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:১৯৬২-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:পূর্ব আফ্রিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:স্থলবেষ্টিত দেশ বিষয়শ্রেণী:স্বল্পোন্নত দেশ বিষয়শ্রেণী:প্রাক্তন রাজতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
মানচিত্র
https://bn.wikipedia.org/wiki/মানচিত্র
thumb|মানচিত্র,২০১৬ মানচিত্র ভূমির সাংকেতিক প্রতিচ্ছবি। দেশের সার্ভে বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত নির্ধারিত রং এর ব্যবহারে কোন এলাকার ভূমির উল্লেখ যোগ্য প্রাকৃতিক ও কৃত্তিম বস্তু সমূহকে নির্দিষ্ট সাংকেতিক চিহ্নের মাধ্যমে কাগজ বা কাপড়ের উপর ক্ষুদ্রাকারে মাপনী অনুযায়ী অঙ্কন করাকে ম্যাপ বা মানচিত্র বলে। কোন স্থানে অবস্থিত বস্তু সমূহের অবস্থান এবং সম্পর্কের দৃষ্টিগ্রাহ্য সাধারণ প্রকাশ হচ্ছে মানচিত্র। অনেক মানচিত্র স্থির, ত্রি-মাত্রিক স্থানের দ্বি-মাত্রিক প্রতিরূপ; আবার কিছু মানচিত্র পরিবর্তনশীল, এমনকি ত্রিমাত্রিকও হতে পারে। মানচিত্র বলতে সাধারণত ভৌগোলিক মানচিত্রকেই বোঝানো হয়, তবে মানচিত্র হতে পারে কোন স্থানের - বাস্তব বা কাল্পনিক, এতে স্কেল বা অন্যান্য অনুষঙ্গের প্রয়োজনীয়তা নাও থাকতে পারে; যেমন, ব্রেন মানচিত্রকরণ, ডিএনএ মানচিত্রকরণ এবং মহাকাশের মানচিত্রকরণ। ইতিহাস thumb|500px|মুহাম্মাদ আল-ইদ্রিসি এর টাবুলা রগেরিয়ানা ( ১৫৫৪ খ্রিষ্টাব্দ), আগের দিনের একটি অত্যাধুনিক ম্যাপ। ভৌগোলিক মানচিত্র thumb|100 px|১৭'শ শতাব্দীর একটি মহাকাশের মানচিত্র, ডাচ মানচিত্রকারক ফ্রেডেরিক দ্য ভিটের তৈরি। বিষয়শ্রেণী:মানচিত্র বিষয়শ্রেণী:মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা বিষয়শ্রেণী:ভূগোল
চলচ্চিত্র
https://bn.wikipedia.org/wiki/চলচ্চিত্র
right|thumb|একটি ১৬ মিমি স্প্রিং-অউন্ড বোলেক্স এইচ১৬ রিফ্লেক্স ক্যামেরা। চলচ্চিত্রের স্কুলগুলোতে প্রথমে এই ক্যামেরা দিয়ে পরিচয় করানো হয়। চলচ্চিত্র এক প্রকারের দৃশ্যমান বিনোদন মাধ্যম। চলমান চিত্র তথা "মোশন পিকচার" থেকে চলচ্চিত্র শব্দটি এসেছে। এটি একটি বিশেষ শিল্প মাধ্যম। বাস্তব জগতের চলমান ছবি ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণ করে বা এনিমেশনের মাধ্যমে কাল্পনিক জগৎ তৈরি করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। চলচ্চিত্রের ধারণা অনেক পরে এসেছে, ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে। আর এনিমেশন চিত্রের ধারণা এসেছে আরও পরে। বাংলায় চলচ্চিত্রের প্রতিশব্দ হিসেবে ছায়াছবি, সিনেমা, মুভি বা ফিল্ম শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়। চলচ্চিত্রের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ। যে সংস্কৃতিতে তা নির্মিত হয় তাকেই প্রতিনিধিত্ব করে চলচ্চিত্রটি। শিল্পকলার প্রভাবশালী মাধ্যম, শক্তিশালী বিনোদন মাধ্যম এবং শিক্ষার অন্যতম সেরা উপকরণ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে চলচ্চিত্রের। ছায়াছবির সাথে ভিজ্যুয়াল বিশ্বের সমন্বয় থাকায় সাধারণ মানুষের সাথে সবচেয়ে ভালো যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। অন্য কোন শিল্পমাধ্যম সাধারণের সাথে এতোটা যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম নয়। অন্য ভাষার চলচ্চিত্রের ডাবিং বা সাবটাইটেল করার মাধ্যমে নিজ ভাষায় নিয়ে আসার প্রচলনও রয়েছে। প্রথাগতভাবে চলচ্চিত্র নির্মিত হয় অনেকগুলো একক ছবি তথা ফ্রেমের ধারাবাহিক সমন্বয়ের মাধ্যমে। এই স্থিরচিত্রগুলি যখন খুব দ্রুত দেখানো হয় তখন দর্শক মনে করেন তিনি চলমান কিছু দেখছেন। প্রতিটি ছবির মাঝে যে বিরতি তা একটি বিশেষ কারণে দর্শকের চোখে ধরা পড়ে না। ধরা না পড়ার এই বিষয়টাকে দৃষ্টির স্থায়িত্ব বলে। সহজ কথা বলা যায়, ছবির উৎস সরিয়ে ফেলার পরও এক সেকেন্ডের ১০ ভাগের ১ ভাগ সময় ধরে দর্শকের মনে তার রেশ থেকে যায়। এভাবে চলমান ছবির ধারণা লাভের বিষয়টাকে মনোবিজ্ঞানে বিটা চলন নামে আখ্যায়িত করা হয়। ইতিহাস thumb|200px|left|রাউন্ডহে গার্ডন সিন ছবির একটি দৃশ্য। পৃথিবীর প্রাচীনতম এ চলচ্চিত্রটি ১৮৮৮ সালে নির্মিত হয়। নির্মাণ করেন Louis Le Prince। কৃত্রিমভাবে দ্বিমাত্রিক চলমান ছবি তৈরির কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৮৬০-এর দশকে। তখন জোট্রোপ এবং প্র্যাক্সিনোস্কোপ নামক যন্ত্র দিয়ে এ ধরনের ছবি তৈরি করা যেতো। একেবারে সাধারণ আলোক যন্ত্রের (ম্যাজিক লণ্ঠন) উন্নতি সাধন করে এগুলো তৈরি করা হয়েছিল। এগুলোর মাধ্যমে ধারাবাহিক কতগুলো স্থিরচিত্র একটার পর একটা এতো দ্রুত পরিবর্তন করা যেতো যে দর্শকের চোখে পরিবর্তন খুব একটা ধরা পড়তো না। ছবিগুলোকে খুব যত্ন সহকারে ডিজাইন করতে হতো যাতে কোন খুঁত না থাকে। এই ধারণাটিই পরবর্তীতে এনিমেশন চিত্র নির্মাণের মূলনীতি হয়ে দেখা দিয়েছিলো। স্থির চিত্রগ্রহণে সেলুলয়েড ফিল্ম আসার পর চলমান বস্তুর সরাসরি ছবি তোলা সম্ভব হলো। প্রাথমিক যুগে একটি ড্রামের মধ্যে বেশ কিছু ছবি লাগিয়ে ড্রামটিকে জোড়ে ঘুরানো হতো। একটা বিশেষ দিক থেকে দর্শক ড্রামের দিকে তাকালে চলমান চিত্র দেখতে পেতো। ড্রামের গতি ছিল সাধারণত সেকেন্ডে ৫ বা ১০ বার এবং ড্রামগুলো কয়েনের মাধ্যমে অর্থ আদায় করতো। ১৮৮০'র দশকে চলচ্চিত্র ক্যামেরা উদ্ভাবিত হয়। এর মাধ্যমে অনেকগুলো স্থিরচিত্রকে একটি মাত্র রিলে সংরক্ষণ করা যেতো। এই রিলগুলোকে পরবর্তীতে চলচ্চিত্র রূপে দেখানো হতো প্রজেক্টরের মাধ্যমে। প্রজেক্টরের আলো রিলের উপর ফেলা হতো এবং রিলের ছবিগুলোকে বিবর্ধিত করে একটি বড় পর্দার উপর ফেলা হতো যা দর্শকরা দেখতে পেতো। প্রথম দিককার চলচ্চিত্রগুলো সবই ছিল বাস্তব ঘটনার সরাসরি দৃশ্যায়ন এবং প্রদর্শন। সেখানে কোন সম্পাদনা বা চলচ্চিত্ররূপী উপস্থাপনার সুযোগ ছিল না। ১৮৯৪ সালের দিকেই ডিকসন শব্দ এবং ছবি একসাথে ধারণের পরীক্ষা শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার সে প্রচেষ্টাকে এড়িয়ে গিয়ে নির্বাক চলচ্চিত্র প্রাধান্য বিস্তার করে এবং জনমনে বিশেষ ছাপ ফেলতে সক্ষম হয়। ঊনবিংশ শতকের শেষ পর্যন্ত নির্বাক চলচ্চিত্রই ছিল একমাত্র চলমান শিল্প মাধ্যম। বিংশ শতকের শুরুতে চলচ্চিত্র বর্ণনামূলক ধারায় রূপ নিতে শুরু করে। অনেকগুলো দৃশ্যকে একসাথে জোড়া লাগিয়ে এবং প্রত্যেকটির জন্য বর্ণনাভঙ্গি নির্দিষ্ট করে, প্রচার করা হতে থাকে। ধীরে ধীরে দৃশ্যগুলোকে বিভিন্ন আক্র এবং কোণ থেকে নেয়া অনেকগুলো শটে ভাগ করা হয়। এছাড়া চলমান ক্যামেরার মাধ্যমে চলচ্চিত্র গল্প ফুটিয়ে তোলার কৌশল আবিষ্কৃত হয়। তখনও ছবি নির্বাক ছিল। কিন্তু, প্রতিটি শটের সাথে মিল রেখে সঙ্গীত এবং বাজনা বাজানোর জন্য সিনেমা হলে বা মঞ্চে অর্কেস্ট্রা দল থাকতো। বড় বড় প্রযোজনা কোম্পানিগুলো এসবের ব্যবস্থা করতো। thumb|200px|Georges Méliès পরিচালিত Le Voyage dans la Lune (চন্দ্রাভিযান) (১৯০২) চলচ্চিত্রের একটি শট। প্রাচূন বর্ণনামূলক চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম হলিউডের উত্থানের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলচ্চিত্র বিকশিত হয়ে উঠলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ইউরোপে এই শিল্পটি ততোটা বিকশিত হয়ে উঠতে পারেনি। অবশ্য ১৯২০-এর দশক থেকে সের্গে আইজেনস্টাইন, এফ ডব্লিউ মার্নো এবং ফ্রিৎস ল্যাং এর মতো ইউরোপীয় পরিচালকরা ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ, চার্লি চ্যাপলিন, বুস্টার কিটন প্রমুখ মার্কিন পরিচালক ও অভিনেতাদের সাথে মিলে ইউরোপে চলচ্চিত্র বিস্তারের কাজ শুরু করেন। এই দশকেই প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে চলচ্চিত্রের শটগুলোর সাথে ঐকতান বজায় রেখে শব্দ, সঙ্গীত এবং কথোপকথন যুক্ত করা সম্ভব হয়। উদ্ভব হয় সবাক চলচ্চিত্রের। ইংরেজতে এগুলোকে "টকিং পিকচার" বা সংক্ষেপে "টকি" (talky) বলা হতো। এর পরে চলচ্চিত্র শিল্পে সবচেয়ে বড় সংযোজন ছিল "প্রাকৃতিক রঙ" যুক্ত করা। শব্দ যুক্ত করার পর খুব দ্রুত নির্বাক চলচ্চিত্র এবং মঞ্চের বাদ্য-বাজনা বিলীন হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু সাদাকালোর বদলে চলচ্চিত্র রঙের ব্যবহার করার প্রচলন অনেক ধীরে ধীরে হয়েছে। এর মূল কারণ ছিল রঙিন চলচ্চিত্রের খরচ এবং সামঞ্জস্য। প্রথমদিকে সাদা-কালো এবং রঙিন চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকদের দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম ছিল। কিন্তু ক্রমাগত বেশি বেশি রঙিন চলচ্চিত্র নির্মিত হতে থাকে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় রঙিন চলচ্চিত্রই প্রাধান্য বিস্তার করে। কারণ প্রযোজকরা বুঝতে পারছিলেন, রঙিনের দিকে দর্শকদের ঝোঁক বেশি। আরও একটি কারণ ছিল, টেলিভিশন ১৯৬০-এর দশকের আগে রঙিন হয়নি। তাই টিভির সাদাকালোকে হারানোর জন্য চলচ্চিত্র রঙের সংযোজন আবশ্যক ছিল। ১৯৬০-এর দশকের পরে রঙিন চলচ্চিত্রই নির্মাতাদের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠে। ১৯৬০ এর দশকে স্টুডিও পদ্ধতির পতনের পর কয়েক দশক জুড়ে চলচ্চিত্র জগতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে চলচ্চিত্র শিক্ষা গুরুত্ব অর্জন করে। নব হলিউড, ফরাসি নবকল্লোল এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র স্কুলের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এটি ত্বরান্বিত হয়। আর ১৯৯০-এর দশকের পর ডিজিটাল প্রযুক্তি চলচ্চিত্র নির্মাণের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠে। চলচ্চিত্র তত্ত্ব এই চলচ্চিত্রের সুসংক্ষিপ্ত, সুষ্ঠু এবং পদ্ধতিগত ধারণা তৈরি করার নামই চলচ্চিত্র তত্ত্ব। এসব তত্ত্বের মূল উদ্দেশ্য চলচ্চিত্রকে একটি শিল্প হিসেবে অধ্যয়নের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা। Ricciotto Canudo ১৯১১ সালে প্রকাশিত তার "The Birth of the Sixth Art" নামক মেনিফেস্টোতে প্রথম চলচ্চিত্র তত্ত্বের উল্লেখ করেন। এরপরে ফর্মালিস্ট তত্ত্ব দিয়ে এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন Rudolf Arnheim, Béla Balázs এবং Siegfried Kracauer। এই তাত্ত্বিকেরা চলচ্চিত্রকে দেখেছেন বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন একটি প্রকৃত শিল্প মাধ্যম হিসেবে। André Bazin এই তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, চলচ্চিত্রের সার্থকতা যান্ত্রিক উপায়ে বাস্তবতাকে পুনঃনির্মাণ করার মধ্যে নিহিত। বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা কখনও চলচ্চিত্রের লক্ষ্য হতে পারে না। এই চিন্তাধারার ফলে চলচ্চিত্র রিয়েলিস্ট তথা বাস্তবিকতা তত্ত্বের জন্ম হয়। বর্তমানে Lacan এর মনোবিশ্লেষণ এবং Ferdinand de Saussure এর সেমিওটিক্স এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র নতুন কিছু তত্ত্বের জন্ম হয়েছে। এগুলো হল মনোবিশ্লেষণমূলক চলচ্চিত্র তত্ত্ব, স্ট্রাকচারালিস্ট চলচ্চিত্র তত্ত্ব, নারীবাদী চলচ্চিত্র তত্ত্ব ইত্যাদি। সমালোচনা ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে চলচ্চিত্রের আবির্ভাব হয়। ১৯০০ এর দশকের প্রথম দিকে চলচ্চিত্রের প্রথমদিকের শৈল্পিক সমালোচনার আবির্ভাব হয়। চলচ্চিত্র সমালোচনার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় দ্য অপটিক্যাল ল্যান্টার্ন এণ্ড সিনেমাটোগ্রাফ নামক সাময়িকীতে, পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে বায়োস্কোপ পত্রিকা চলচ্চিত্র সমালোচনা প্রকাশ করে। প্রাচীনকাল থেকে শিল্প হিসেবে সংগীত, সাহিত্য, চিত্রকর্মের অস্তিত্ব থাকলেও চলচ্চিত্র তুলনামূলকভাবে নতুন ধরনের শিল্প। এজন্য চলচ্চিত্র নিয়ে প্রথমদিককার রচনাগুলোতে এটা নিয়েই যুক্তি দেখানো হত যে চলচ্চিত্রকেও শিল্প হিসেবে সম্মান করা যেতে পারে। ১৯১১ সালে রিকশিওত্তো ক্যানুডো একটি ইসতেহার লেখেন যেখানে চলচ্চিত্রকে ষষ্ঠ শিল্প (পরবর্তীতে "সপ্তম শিল্প") হিসেবে দাবি করা হয়।Giovanni Dotoli, Ricciotto Canudo ou le cinéma comme art, Preface by Jean-Louis Leutrat, Fasano-Paris, Schena-Didier Érudition, 1999 এরপরও কয়েক দশক ধরে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত শিল্পের চেয়ে চলচ্চিত্রকে কম সম্মানের শিল্প হিসেবে মূল্যায়ন করা হত। চলচ্চিত্রের ধরন বিষয়বস্তু, পরিপ্রেক্ষিত, পটভূমি আর অবস্থানের উপর ভিত্তি করে যেকোন সাহিত্য মাধ্যমেরই ধরন নির্দিষ্ট করা যায়। চলচ্চিত্রেরও এরকম কিছু ধরন রয়েছে যাদেরকে ইংরেজিতে জনরা (genre) বলে। এই ধরনগুলো মূলত সারণীকরণের মাধ্যমে করা হয়। ধরন দিয়ে একটি চলচ্চিত্রকে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। একটি চলচ্চিত্র আবার একাধিক ধরনের মধ্যে পড়তে পারে। জনপ্রিয় কিছু ধরনের মধ্যে রয়েছে হরর, রোমাঞ্চ, অ্যাকশন, থ্রিলার, ঐতিহাসিক, মহাকাব্যিক, রূপকথা, অপরাধ, কমেডি ইত্যাদি। আরও দেখুন চলচ্চিত্র উৎসবের তালিকা চলচ্চিত্রের তালিকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Allmovie – Information on films: actors, directors, biographies, reviews, cast and production credits, box office sales, and other movie data. Film Site – Reviews of classic films Rottentomatoes.com – Movie reviews, previews, forums, photos, cast info, and more. The Internet Movie Database (IMDb) – Information on current and historical films and cast listings. বিষয়শ্রেণী:দৃশ্যকলা মাধ্যম বিষয়শ্রেণী:মাধ্যম বিন্যাস বিষয়শ্রেণী:ফরাসি উদ্ভাবন বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ বিষয়শ্রেণী:১৯শ শতাব্দীর উদ্ভাবন
আইন
https://bn.wikipedia.org/wiki/আইন
থাম্ব|"লেডি জাস্টিস"(লাতিন: Iustitia; জাস্টিশিয়া) ট্রাইব্যুনালের জবরদস্তিমূলক ক্ষমতার একটি প্রতীকী মূর্তি: তলোয়ারটি রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করে, ওজনমাপনীটি বস্তুনিষ্ঠ মানের প্রতিনিধিত্ব করে এবং বাঁধা চোখ নির্দেশ করে যে ন্যায়বিচার নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। মানুষকে সুষ্ঠু, স্বাধীন এবং সুশৃংখলভাবে জীবন পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন তৈরি এবং প্রয়োগ করা হয় তাকে আইন বলে। আইনের ইংরেজি প্রতিশব্দ Law (ল) যা Lag (ল্যাগ) নামক শব্দ থেকে উদ্ভূত। Lag এর আভিধানিক অর্থ স্থির, অপরিবর্তনীয় এবং যা সর্বত্র সমানভাবে প্রযোজ্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইন হলো সার্বভৌম শক্তি কর্তৃক বলবৎযোগ্য বিধান, যা সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়। আইন হলো সামাজিক রীতিনীতি সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত বিশেষ জ্ঞান বা দক্ষতা। আইন হলো নিয়মের এক পদ্ধতি যাকে নাগরিক বাধ্যতা, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজের ভিত্তি নির্মাণ করতে ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যকরী করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া আইন বলতে সামাজিকভাবে স্বীকৃত লিখিত ও অলিখিত বিধিবিধান ও রীতিনীতিকে বোঝায়।হুগো গ্রোশিয়াস (১০ এপ্রিল ১৫৮৩ - ২৮ আগস্ট ১৬৪৫) ছিলেন ওলন্দাজ প্রজাতন্ত্রের একজন আইনজ্ঞ। তিনি ফ্রান্সিসকো দে ভিতোরিয়া আর আলবার্তো জেন্তিলির সাথে মিলে প্রাকৃতিক আইনের উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।Robertson, Crimes against humanity, 90; see jurisprudence for extensive debate on what law is; in The Concept of Law Hart argued law is a "system of rules" (Campbell, The Contribution of Legal Studies, 184); Austin said law was "the command of a sovereign, backed by the threat of a sanction" (Bix, John Austin); Dworkin describes law as an "interpretive concept" to achieve justice (Dworkin, Law's Empire, 410); and Raz argues law is an "authority" to mediate people's interests (Raz, The Authority of Law, 3–36). ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিষ্টটল লিখেছিলেন, "আইনের শাসন যেকোন ব্যক্তি শাসনের চেয়ে ভাল।"n.b. this translation reads, "it is more proper that law should govern than any one of the citizens" (Aristotle, Politics 3.16). সামাজিক জীবনে যে রীতিনীতি বা বিধিবিধান মানুষ মেনে চলে তা হলো সামাজিক আইন। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় আইন হলো রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বিভিন্ন জাতীয় নীতিমালার প্রেক্ষিতে সমাজে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে সার্বজনীনভাবে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন নির্দেশ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা সংজ্ঞা মূলধারার সংজ্ঞা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আইনের অসংখ্য সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মেরিয়াম-ওয়েস্টার হতে তৃতীয় নতুন আন্তর্জাতিক অভিধান আইনটিকে এইভাবে সংজ্ঞায়িত করেন: আইন একটি সম্প্রদায়ের বাধ্যতামূলক রীতি; একটি নিয়ম বা আচরণের পদ্ধতি বা পদক্ষেপ যা একটি সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ দ্বারা বাধ্যতামূলক হিসাবে নির্ধারিত বা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত ; নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত, স্বীকৃত বা প্রয়োগের দ্বারা অনুমোদনের (বাধ্যতামূলক, ডিক্রি, রিসক্রিপ্ট, আদেশ, অধ্যাদেশ, আইন, সমাধান, বিধি, বিচারিক সিদ্ধান্ত বা ব্যবহার হিসাবে) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। Third New International Dictionary, Merriam-Webster, Inc., Springfield, Massachusetts. ১৯৭৩ সালে স্ক্রিবনার দ্বারা প্রকাশিত আইডিয়াস অফ হিস্ট্রি অফ আইডিয়াস আইন অনুসারে সংজ্ঞাটিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিল: "একটি আইনি ব্যবস্থা হলো মানব আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে সুস্পষ্ট, প্রাতিষ্ঠানিক এবং জটিল পদ্ধতি, একই সাথে এটি কেবল একটি অংশে ভূমিকা পালন করে, কম প্রাতিষ্ঠানিক ধরনের সামাজিক ও নৈতিক বিধিগুলির জন্য আচরণকে প্রভাবিত করে৷ আইনের দর্শন আইনের দর্শন সাধারণত আইনশাস্ত্র নামে পরিচিত। আদর্শিক আইনশাস্ত্র প্রশ্ন করে "আইন কী হওয়া উচিত?"। অপরদিকে বিশ্লেষণমূলক আইনশাস্ত্র প্রশ্ন করে "আইন কী?" বিশ্লেষণাত্মক আইনশাস্ত্র "আইনের সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা" তৈরি করার জন্য বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। ১৯৭১ সালে, ব্যারন হ্যাম্পস্টেড পরামর্শ দেন যে এই ধরনের কোনো সংজ্ঞা তৈরি করা যাবে না। Dennis Lloyd, Baron Lloyd of Hampstead. Introduction to Jurisprudence. Third Edition. Stevens & Sons. London. 1972. Second Impression. 1975. p. 39. ম্যাককুব্রে এবং হোয়াইট বলেন যে "আইন কি?" এই প্রশ্নের কোনো সহজ উত্তর নেই। গ্লানভিল উইলিয়ামস বলেছিলেন, "আইন" শব্দের অর্থ সেই শব্দটি কোন প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেছিলেন, " প্রাথমিক প্রথাগত আইন " ও " পৌর আইনের " মধ্যে "আইন" শব্দের দুটি ভিন্ন এবং অপরিবর্তনীয় অর্থ বিদ্যমান। Williams, Glanville. International Law and the Controversy Concerning the Meaning of the Word "Law". Revised version published in Laslett (Editor), Philosophy, Politics and Society (1956) p. 134 et seq. The original was published in (1945) 22 BYBIL 146. থারম্যান আর্নল্ড বলেছিলেন ,"এটি স্পষ্ট যে "আইন" শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করা অসম্ভব এবং এটিও সমানভাবে স্পষ্ট যে এই শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করার সংগ্রাম কখনই পরিত্যাগ করা উচিত নয়।" Arnold, Thurman. The Symbols of Government. 1935. p. 36. "আইন" শব্দটি সংজ্ঞায়িত করার প্রয়োজন নেই এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা সম্ভব। (যেমন "আসুন সাধারণ বিষয়গুলো ভুলে যাই এবং মামলায় নেমে যাই")। Baron Lloyd of Hampstead. Introduction to Jurisprudence. Third Edition. Stevens & Sons. London. 1972. Second Impression. 1975. একটি সংজ্ঞায় বলা হয় "আইন হলো নিয়ম ও নির্দেশিকার একটি ব্যবস্থা যা আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়"। Robertson, Crimes against humanity, 90. দ্য কনসেপ্ট অফ ল- এ, এইচএলএ হার্ট যুক্তি দিয়েছিলেন যে আইন হলো একটি "নিয়মের ব্যবস্থা"; Campbell, The Contribution of Legal Studies, 184 জন অস্টিন বলেন, আইন হলো "একটি সার্বভৌম ক্ষমতার আদেশ, যা অনুমোদনের হুমকির মাধ্যমে সমর্থিত"; Bix, John Austin রোনাল্ড ডোয়ার্কিন আইনের সাম্রাজ্য শিরোনামে তার পাঠ্যে আইনকে ন্যায়বিচার অর্জনের জন্য একটি "ব্যাখ্যামূলক ধারণা" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। Dworkin, Law's Empire, 410 জোসেফ রাজ যুক্তি দেন যে আইন মানুষের স্বার্থের মধ্যস্থতা করার জন্য একটি "কর্তৃপক্ষ"। Raz, The Authority of Law, 3–36 অলিভার ওয়েন্ডেল হোমস আইনকে "আদালত বাস্তবে কী করবে তার ভবিষ্যদ্বাণী, এবং এর চেয়ে বেশি ছলনাময় কিছু নয়।" বলে সম্বোধন করেছেন।Holmes, Oliver Wendell. "The Path of Law" (1897) 10 Harvard Law Review 457 at 461. টমাস অ্যাকুইনাস তার আইন সম্পর্কিত গ্রন্থে যুক্তি দেন যে আইন হলো জিনিসগুলোর একটি যুক্তিসঙ্গত ক্রম, যা সাধারণ ভালোর সাথে সম্পর্কিত, যেটি সম্প্রদায়ের যত্ন নেওয়ার জন্য দায়ী এমন কারো মাধ্যমে তা প্রবর্তিত হয়। Aquinas, St Thomas. Summa Theologica. 1a2ae, 90.4. Translated by J G Dawson. Ed d'Entreves. (Basil Blackwell). Latin: "nihil est aliud qau edam rationis ordinatio ad bonum commune, ab eo qi curam communitatis habet, promulgata". এই সংজ্ঞায় ইতিবাচক এবং প্রকৃতিবাদী উভয় প্রকার উপাদানই রয়েছে। McCoubrey, Hilaire and White, Nigel D. Textbook on Jurisprudence. Second Edition. Blackstone Press Limited. 1996. . p. 73. আরও দেখুন আইন প্রণয়ন রাষ্ট্রবিজ্ঞান আইনের শ্রেণিবিভাজন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Company Registration Law বিষয়শ্রেণী:কর্তৃপক্ষ বিষয়শ্রেণী:মানববিদ্যা বিষয়শ্রেণী:সামাজিক ধারণা বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ বিষয়শ্রেণী:বিচার
গণিত
https://bn.wikipedia.org/wiki/গণিত
thumb |রাফায়েলের কল্পনায় ৩য় শতাব্দীর বিখ্যাত গণিতবিদ ইউক্লিড, দ্য স্কুল অফ এথেন্স ছবির অংশবিশেষ।No likeness or description of Euclid's physical appearance made during his lifetime survived antiquity. Therefore, Euclid's depiction in works of art depends on the artist's imagination (see Euclid). গণিত হল জ্ঞানের একটি ক্ষেত্র যাতে সংখ্যা, সূত্র এবং সম্পর্কিত কাঠামো, আকার এবং সেগুলির মধ্যে থাকা স্থানগুলি এবং পরিমাণ এবং তাদের পরিবর্তনগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই বিষয়গুলি যথাক্রমে সংখ্যা তত্ত্বের প্রধান উপশাখা, বীজগণিত,  জ্যামিতি, এবং বিশ্লেষণ। তবে একাডেমিক শৃঙ্খলার জন্য একটি সাধারণ সংজ্ঞা সম্পর্কে গণিতবিদদের মধ্যে কোন সাধারণ ঐকমত্য নেই। গণিতে সংখ্যা ও অন্যান্য পরিমাপযোগ্য রাশিসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়। গণিতবিদগন বিশৃঙ্খল ও অসমাধানযুক্ত সমস্যাকে শৃঙ্খলভাবে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া খুঁজে বেড়ান ও তা সমাধানে নতুন ধারণা প্রদান করে থাকেন। গাণিতিক প্রমাণের মাধ্যমে এই ধারণাগুলির সত্যতা যাচাই করা হয়। গাণিতিক সমস্যা সমাধান সম্পর্কিত গবেষণায় বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ বা শত শত বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। গণিতের সার্বজনীন ভাষা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা একে অপরের সাথে ধারণার আদান-প্রদান করেন। গণিত তাই বিজ্ঞানের ভাষা। ১৭শ শতক পর্যন্ত কেবল পাটীগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতিকে গাণিতিক শাস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হত। সেসময় গণিত দর্শন ও বিজ্ঞানের চেয়ে কোন পৃথক শাস্ত্র ছিল না। আধুনিক যুগে এসে গণিত বলতে যা বোঝায়, তার গোড়াপত্তন করেন প্রাচীন গ্রিকেরা, পরে মুসলমান পণ্ডিতেরা এগুলি সংরক্ষণ করেন, অনেক গবেষণা করেন এবং খ্রিস্টান পুরোহিতেরা মধ্যযুগে এগুলি ধরে রাখেন। তবে এর সমান্তরালে ভারতে এবং চীন-জাপানেও প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগে স্বতন্ত্রভাবে উচ্চমানের গণিতচর্চা করা হত। ভারতীয় গণিত প্রাথমিক ইসলামী গণিতের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ১৭শ শতকে এসে আইজাক নিউটন ও গটফ্রিড লাইবনিৎসের ক্যালকুলাস উদ্ভাবন এবং ১৮শ শতকে অগুস্তঁ লুই কোশি ও তার সমসাময়িক গণিতবিদদের উদ্ভাবিত কঠোর গাণিতিক বিশ্লেষণ পদ্ধতিগুলির উদ্ভাবন গণিতকে একটি একক, স্বকীয় শাস্ত্রে পরিণত করে। তবে ১৯শ শতক পর্যন্ত কেবল পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিদ ও প্রকৌশলীরাই গণিত ব্যবহার করতেন। thumbnail|right|আইজ্যাক নিউটন (১৬৪৩-১৭২৭), ক্যালকুলাসের জনক ১৯শ শতকের শুরুতে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের যে আধুনিক ধারা সূচিত হয়, সে-সংক্রান্ত গবেষণাগুলির ফলাফল প্রকাশের জন্য জটিল গাণিতিক মডেল উদ্ভাবন করা হয়। বিশুদ্ধ গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণায় জোয়ার আসে। অন্যদিকে ২০শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কম্পিউটারের আবিষ্কার এ-সংক্রান্ত সাংখ্যিক পদ্ধতিগুলির গবেষণা বৃদ্ধি করে। গণিতের ইতিহাস ইতিহাস ও গণিতবিশ্ব thumbnail|left|বিখ্যাত গ্রিক গণিতবিদ পীথাগোরাস (৫৭০-৪৯৫ খ্রিষ্টপূর্ব) গণনা করা ছিল আদিমতম গাণিতিক কর্মকাণ্ড। আদিম মানুষেরা পশু ও বাণিজ্যের হিসাব রাখতে গণনা করত। আদিম সংখ্যা ব্যবস্থাগুলি প্রায় নিশ্চিতভাবেই ছিল এক বা দুই হাতের আঙুল ব্যবহার করে সৃষ্ট। বর্তমানের ৫ ও ১০-ভিত্তিক সংখ্যা ব্যবস্থার বিস্তার এরই সাক্ষ্য দেয়। মানুষ যখন সংখ্যাগুলিকে বাস্তব বস্তু থেকে পৃথক ধারণা হিসেবে গণ্য করা শিখল এবং যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ --- এই চারটি মৌলিক অপারেশন বা প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করল, তখনই পাটীগণিতের যাত্রা শুরু হল। আর জ্যামিতির শুরু হয়েছিল রেখা ও বৃত্তের মত সরল ধারণাগুলি দিয়ে। গণিতের পরবর্তী উন্নতির জন্য চলে যেতে হবে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে, যখন ব্যাবিলনীয় ও মিশরীয় সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলনীয়রা এবং নীল নদের অববাহিকায় প্রাচীন মিশরীয়রা সুশৃঙ্খল গণিতের প্রাচীনতম নিদর্শন রেখে গেছে। তাদের গণিতে পাটীগণিতের প্রাধান্য ছিল। জ্যামিতিতে পরিমাপ ও গণনাকে প্রাধান্য দেয়া হয়, স্বতঃসিদ্ধ বা প্রমাণের কোন নিদর্শন এগুলিতে পাওয়া যায় না। প্রাচীন ব্যাবিলনীয়দের গণিত ব্যাবিলনিয়ার গণিত সম্পর্কে আমরা জানতে পারি এই সভ্যতার নিদর্শনবাহী কাদামাটির চাঙড় থেকে, যেগুলির উপর ব্যাবিলনীয়রা কীলক আকৃতির খোদাই করে করে লিখত। এই লেখাগুলিকে কিউনিফর্ম বলা হয়। সবচেয়ে প্রাচীন চাঙড়গুলি খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ সালের বলে ধারণা করা হয়। খোদাইগুলির বেশির ভাগ গণিতই ছিল বাণিজ্য বিষয়ক। ব্যাবিলনীয়রা অর্থ ও পণ্যদ্রব্য আদানপ্রদানের জন্য পাটীগণিত ও সরল বীজগণিত ব্যবহার করত। তারা সরল ও যৌগিক সুদ গণনা করতে পারত, কর গণনা করতে পারত, এবং রাষ্ট্র, ধর্মালয় ও জনগণের মধ্যে সম্পদ কীভাবে বন্টিত হবে তা হিসাব করতে পারত। খাল কাটা, শস্যাগার নির্মাণ ও অন্যান্য সরকারি কাজকর্মের জন্য পাটীগণিত ও জ্যামিতির ব্যবহার হত। শস্য বপন ও ধর্মীয় ঘটনাবলির জন্য পঞ্জিকা নির্ধারণেও গণিতের ব্যবহার ছিল। right|thumb|300px|ব্যাবিলনীয় সংখ্যা বৃত্তকে ৩৬০টি ভাগে বা ডিগ্রীতে বিভক্ত করা এবং প্রতি ডিগ্রী ও মিনিটকে আরও ৬০টি ভাগে বিভক্ত করার রীতি ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকে এসেছে। ব্যাবিলনীয়রাই একেক দিনকে ২৪ ঘণ্টায়, প্রতি ঘণ্টাকে ৬০ মিনিট ও প্রতি মিনিটকে ৬০ সেকেন্ডে ভাগ করে। তাদের সংখ্যা ব্যবস্থা ছিল ৬০-ভিত্তিক। ১-কে একটি কীলকাকৃতি খাঁজ দিয়ে নির্দেশ করা হত এবং এটি বারবার লিখে ৯ পর্যন্ত নির্দেশ করা হত। ১১ থেকে ৫৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলি ১ এবং ১০-এর জন্য ব্যবহৃত চিহ্ন ব্যবহার করে নির্দেশ করা হত। ৬০-এর চেয়ে বড় সংখ্যার জন্য ব্যাবিলনীয়রা একটি স্থাননির্দেশক চিহ্ন ব্যবহার করত। স্থানিক মানের এই ধারণার উদ্ভাবন গণনাকে অনেক এগিয়ে দেয়। এর ফলে একই প্রতীক বিভিন্ন স্থানে বসিয়ে একাধিক মান নির্দেশ করা সম্ভব হয়। ব্যাবলিনীয়দের সংখ্যা ব্যবস্থায় ভগ্নাংশও নির্দেশ করা যেত। তবে তাদের ব্যবস্থায় শূন্য ছিল না, এবং এর ফলে দ্ব্যর্থতার সৃষ্টি হয়। ব্যাবিলনীয়রা বিপরীত সংখ্যা, বর্গ সংখ্যা, বর্গমূল, ঘন সংখ্যা ও ঘনমূল, এবং যৌগিক সুদের সারণী প্রস্তুত করেছিল। তারা ২-এর বর্গমূলের একটি ভাল আসন্ন মান নির্ধারণ করতে পেরেছিল। কিউনিফর্ম চাঙড়গুলি থেকে আরও প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ব্যাবিলনীয়রা দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানের সূত্র আবিষ্কার করেছিল এবং তারা দশটি অজানা রাশি বিশিষ্ট দশটি সমীকরণের ব্যবস্থা সমাধান করতে পারত। খিস্টপূর্ব ৭০০ অব্দে এসে ব্যাবিলনীয়রা গণিত ব্যবহার করে চাঁদ ও গ্রহসমূহের গতি নিয়ে গবেষণা আরম্ভ করে। এর ফলে তারা গ্রহগুলির দৈনিক অবস্থান পূর্বাভাসে সক্ষম হয়, যা জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্র --- দুই ক্ষেত্রেই তাদের কাজে আসে। thumbnail|right|গণিতবিদ লিওনার্দ অয়লার (১৭০৭-১৭৮৩), গণিত জনপ্রিয়করনে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরনীয় জ্যামিতিতে ব্যাবিলনীয়রা সদৃশ ত্রিভুজের একই বাহুগুলির মধ্যে সমানুপাতিকতার সম্পর্কের ব্যাপারে অবহিত ছিল। তারা পীথাগোরাসের উপপাদ্য ব্যবহার করে সমস্যা সমাধান করতে পারত এবং অর্ধবৃত্তের উপর অঙ্কিত কোণ যে সমকোণ হয়, তা জানত। তারা সরল সমঢতলীয় বিভিন্ন চিত্র যেমন সুষম বহুভুজ, ইত্যাদির ক্ষেত্রফলের সূত্র এবং সরল ঘনবস্তুগুলির আয়তনের সূত্র বের করেছিল। তারা পাই-এর জন্য ৩-কে আসন্ন মান হিসেবে ব্যবহার করত। প্রাচীন মিশরীয়দের গণিত মিশরীয়রা তাদের স্তম্ভগুলিতে হায়ারোগ্লিফের মাধ্যমে সংখ্যা অঙ্কিত করেছিল, কিন্তু মিশরীয় গণিতের আসল নিদর্শন হল আনুমানিক ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দুইটি প্যাপিরাস। এগুলিতে পাটীগণিত ও জ্যামিতির নানা সমস্যা আছে, যার মধ্যে বাস্তব সমস্যা যেমন নির্দিষ্ট পরিমাণ মদ তৈরির জন্য কতটুকু শস্য লাগবে, এক জাতের শস্য ব্যবহার করে মদের যে মান পাওয়া যায়, অন্য জাতের শস্য কতটুকু কাজে লাগিয়ে সেই একই মান পাওয়া যায়, তার সমস্যা। মিশরীয় বেতন নির্ণয়ে, শস্যক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ও শস্যাগারের আয়তন নির্ণয়ে, কর নির্ণয়ে ও নির্দিষ্ট কাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় ইটের সংখ্যা বের করতে গণিতকে কাজে লাগাত। এছাড়াও পঞ্জিকা গণনাতেও তারা গণিতভিত্তিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ব্যবহার করত। পঞ্জিকার সাহায্যে তারা ধর্মীয় ছুটির তারিখ ও নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের সময় নির্দেশ করতে পারত। মিশরীয়দের সংখ্যা ব্যবস্থা ছিল ১০-ভিত্তিক। তারা ১০-এর বিভিন্ন ঘাতের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হায়ারোগ্লিফ প্রতীক ব্যবহার করত। তারা ১-এর প্রতীক পাঁচবার লিখে ৫, ১০-এর প্রতীক ৬ বার লিখে ৬০, আর ১০০-র প্রতীক ৩ বার লিখে ৩০০ নির্দেশ করত। একসাথে এই প্রতীকগুলি ৩৬৫ নির্দেশ করত। সমসাময়িক যুগে গণিত ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গণিত সম্মেলনে জার্মান গণিতবিদ ডাভিড হিলবের্ট একটি বক্তৃতায় তার তত্ত্বগুলি ব্যাখ্যা করেন। হিলবের্ট গোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক আসনপ্রাপ্ত গণিতবিদ ছিলেন, যে আসনে এর আগে গাউস ও রিমান অধিষ্ঠিত ছিলেন। হিলবের্ট গণিতের প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। জ্যামিতির ভিত্তি (১৮৯৯) নিয়ে তার ধ্রুপদী গবেষণা যেমন ছিল, তেমনি অন্যান্য গণিতবিদদের সাথে গণিতের ভিত্তি নিয়ে গবেষণাতেও তিনি অবদান রাখেন। প্যারিসের বক্তৃতায় হিলবের্ট ২৩টি গাণিতিক সমস্যা উপস্থাপন করেন এবং তার বিশ্বাস ছিল ২০শ শতকের গাণিতিক গবেষণার উদ্দেশ্য হবে এই সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজে বের করা। বাস্তবিকপক্ষেই এই সমস্যাগুলি ২০শ শতকের সিংহভাগ গাণিতিক গবেষণাকর্মের জন্য উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছিল। যখনই কোনও গণিতবিদ একটি করে হিলবের্টের সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়ার ঘোষণা দিতেন, আন্তর্জাতিক গণিতবিদ সম্প্রদায় অধৈর্যের সাথে সেই সমাধানের বিশদ বিবরণের অপেক্ষায় থাকত। যদিও উপরের সমস্যাগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা সত্ত্বেও হিলবের্ট একটি ব্যাপার কল্পনায় আনতে পারেন নি, আর তা হল ডিজিটাল প্রোগ্রামযোগ্য গণকযন্ত্র তথা কম্পিউটারের উদ্ভাবন। কম্পিউটার গণিত নিয়ে গবেষণার প্রকৃতি পালটে দেয়। কম্পিউটারের উৎস হিসেবে পাস্কাল ও লাইবনিৎসের গণনাযন্ত্রিকা বা ক্যালকুলেটরকে গণ্য করা হলেও কেবল ১৯শ শতকে এসে ইংরেজ বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজ এমন একটি যন্ত্র নকশা করতে সক্ষম হন যা কাগজের টুকরা বা ফিতাতে লেখা নির্দেশমালা অনুসরণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাণিতিক ক্রিয়া সম্পাদন করতে সক্ষম ছিল। ব্যাবেজের কল্পনাপ্রসূত যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সঠিক প্রযুক্তি তার আমলে লভ্য ছিল না। রিলে, বায়ুশূন্য নল ও ট্রানজিস্টরের উদ্ভাবনের পরে বড় মাপের প্রোগ্রামযোগ্য গণনা সম্পাদন করা সম্ভবপর হয়। এই প্রযুক্তিগত উন্নতি গণিতের বেশ কিছু শাখায় বড় ধরনের সাহায্য করে, যেমন সাংখ্যিক বিশ্লেষণ ও সসীম গণিতের মতো ক্ষেত্রগুলিতে। এছাড়া এর ফলে গণিতের নতুন নতুন শাখারও উদ্ভব হয়, যেমন অ্যালগোরিদমসমূহের গবেষণা। সংখ্যাতত্ত্ব, ব্যবকলনীয় সমীকরণ ও বিমূর্ত বীজগণিতের মত বিচিত্র সব ক্ষেত্রে কম্পিউটার প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। এছাড়া কম্পিউটারের সুবাদে এমন সব গাণিতিক সমস্যা সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়, যেগুলি অতীতে করা সম্ভব ছিল না। যেমন ১৯শ শতকের মধ্যভাগে প্রস্তাবিত চার বর্ণ টপোগাণিতিক সমস্যাটি সমাধান করা সম্ভব হয়। চার বর্ণ উপপাদ্যটিতে বলা হয় যে যেকোনও মানচিত্র অঙ্কনের জন্য চারটি বর্ণ বা রঙই যথেষ্ট, সাথে শর্ত হল দুইটি পাশাপাশি দেশের বর্ণ ভিন্ন হতে হবে। ১৯৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উচ্চ গণনক্ষমতাবিশিষ্ট কম্পিউটার ব্যবহার করে উপপাদ্যটি প্রমাণ করে দেখানো হয়। আধুনিক বিশ্বে গণিতের ক্ষেত্রে জ্ঞান যে গতিতে অগ্রসর হয়েছে, তা অতীতে কখনও ঘটেনি। যেসমস্ত তত্ত্ব অতীতে একে অপর থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র হিসেবে গণ্য করা হত, সেগুলিকে একীভূত করে সম্পূর্ণতর ও আরও বিমূর্ত তত্ত্ব গঠন করা হয়েছে। যদিও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির সিংহভাগই সমাধান করা হয়েছে, বেশ কিছু সমস্যা যেমন রিমানের অনুমিতিটি এখনও মীমাংসিত হয়নি। একই সময়ে নতুন নতুন উদ্দীপনামূলক সমস্যা আবির্ভূত হয়ে চলেছে। আপাতদৃষ্টিতে গণিতের সবচেয়ে বিমূর্ত তত্ত্বগুলিও বাস্তবে প্রয়োগ খুঁজে পাচ্ছে। গণিতের মৌলিক ধারণাসমূহ অঙ্ক thumb|400px| বাংলাদেশী ও ভারতীয় সংখ্যার দশটি অঙ্ক, মানের উর্ধ্বক্রমে। গণিতে অঙ্ক হলো সংখ্যা প্রকাশক চিহ্ন। কোনো সংখ্যায় একটি অঙ্কের দুধরনের মান থাকে, নিজস্ব মান ও স্থানীয় মান। দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে ০ থেকে শুরু করে ৯ পর্যন্ত দশটি অঙ্ক আছে। এছাড়াও রয়েছে আরও নানা ধরনের সংখ্যা পদ্ধতি যেমনঃ বাইনারি( দুই ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি), অক্টাল ( আট ভিত্তিক), হেক্সাডেসিমাল ( ষোলো ভিত্তিক)। তবে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিই বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংখ্যা পদ্ধতি । গণিতের প্রধান ক্ষেত্রসমূহ পরিমাণ পরিমাণ বিষয়ক গবেষণার ভিত্তি হচ্ছে সংখ্যা। শুরুতেই আলোচিত হয় স্বাভাবিক সংখ্যা ও পূর্ণ সংখ্যা এবং এদের উপর সম্পন্ন বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়া বা অপারেশন আলোচিত হয় পাটীগণিতে। পূর্নসংখ্যাগুলির গভীরতর ধর্মগুলি আলোচিত হয় সংখ্যাতত্ত্ব শাখায়। ফার্মার শেষ উপপাদ্য এই শাখার একটি বিখ্যাত ফলাফল। এখনও সমাধান হয়নি এরকম দুইটি সমস্যা হচ্ছে দ্বৈত মৌলিক সংখ্যা অনুমান এবং গোল্ডবাখের অনুমান। আরও উন্নত সংখ্যাব্যবস্থায় পূর্ণসংখ্যাগুলি মূলদ সংখ্যার উপসেট হিসেবে পরিগণিত হয়। মূলদ সংখ্যাগুলি আবার বাস্তব সংখ্যার অন্তর্গত। বাস্তব সংখ্যাগুলি অবিচ্ছিন্ন রাশি বর্ণনা করতে ব্যবহার করা হয়। বাস্তব সংখ্যাগুলিকে আবার জটিল সংখ্যাতে সাধারণীকৃত করা হয়। জটিল সংখ্যাগুলিকে কোয়ার্টানায়ন ও অক্টোনায়োন-বিশিষ্ট সংখ্যাব্যবস্থায় সম্প্রসারিত করা যায়। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="20" ||||||||| |- | স্বাভাবিক সংখ্যা|| পূর্ণ সংখ্যা || ভগ্নাংশ || বাস্তব সংখ্যা || জটিল সংখ্যা |} সংখ্যা • হাইপারকমপ্লেক্স সংখ্যা • কোয়ার্টারনিয়ন • অক্টোনিয়ন • সেডেনিয়ন • হাইপাররিয়াল সংখ্যা • পরাবাস্তব সংখ্যা • পূরণবাচক সংখ্যা • অঙ্কবাচক সংখ্যা • পি-এডিক সংখ্যা • পূর্ণসাংখ্যিক অনুক্রম • গাণিতিক ধ্রুবক • সংখ্যার নাম • অসীম • ভিত্তি গঠন আকার, প্রতিসাম্য এবং গাণিতিক গঠন সংক্রান্ত আলোচনা। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="15" ||| 96px || 96px|সংযোগ=Special:FilePath/Rubik_float.png||96px || 96px |-| পাটিগণিত || সংখ্যা তত্ত্ব || Abstract algebra || দল তত্ত্ব || ক্রম তত্ত্ব |} Monoids • Rings • ফীল্ড • রৈখিক বীজগণিত • বীজগাণিতিক জ্যামিতি • সার্বজনীন জ্যামিতি স্থান স্থান নিয়ে গবেষণা মানব মনে গণিতের বীজ বপন করেছিল। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="15" | 96px || 96px || 96px || 96px || |- |জ্যামিতি || ত্রিকোণমিতি || সমাকলন জ্যামিতি || টপোগণিত || ফ্র্যাক্টাল জ্যামিতি |} বীজগাণিতিক জ্যামিতি • স্থানাংক পদ্ধতি • অন্তরক টপোগণিত • বীজগাণীতিক টপোগণিত • রৈখিক বীজগণিত • গুচ্ছবিন্যাসতাত্ত্বিক জ্যামিতি • বহুধা পরিবর্তন গাণিতিক ফাংশন এবং সংখ্যার মানসমূহের পরিবর্তনের প্রকাশ। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="20" | 96px || 96px |||| 96px || 96px || 96px |- | ক্যালকুলাস || ভেক্টর ক্যালকুলাস|| ব্যবকলনীয় সমীকরণ || গতিশীল সিস্টেম || বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব || জটিল-সাংখ্যিক বিশ্লেষণ |} গাণিতিক বিশ্লেষণ • বাস্তব বিশ্লেষণ • জটিল বিশ্লেষণ • ফাংশনাল এনালিসিস • বিশেষ ফাংশন • পরিমাপন তত্ত্ব • ফুরিয়ার বিশ্লেষণ • পরিবর্তনশীল ক্যালকুলাস ভিত্তি এবং পদ্ধতি গণিতের স্বভাব ও ধর্ম বুঝার জন্য সহায়ক। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="15" ||| 128px || 96px |- | গাণিতিক যুক্তি || সেট তত্ত্ব || ক্যাটাগরি তত্ত্ব || |} গণিতের ভিত্তি • গণিতের দর্শন • প্রাতিষ্ঠানিকতা • কনস্টাক্টিভিজম • প্রমাণ তত্ত্ব • মডেল তত্ত্ব • রিভার্স গণিত বিচ্ছিন্ন গণিত বিচ্ছিন্ন গণিত {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="15" ||| || 96px || 96px |- | কম্বিনেটরিক্স ||গণনার তত্ত্ব || ক্রিপ্টোগ্রাফি || লেখ তত্ত্ব |} কম্পিউটিবিলিটি তত্ত্ব • কম্পিটেশনাল কমপ্লেক্স থিওরি • উপাত্ত তত্ত্ব ফলিত গণিত ফলিত গণিত গণিতের সাহায্যে বাস্তব-বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান নির্দেশ করে। • বলবিদ্যা • গাণিতিক অর্থনীতি • গাণিতিক জীববিজ্ঞান • ক্রিপটোগ্রাফি • অপারেশনস রিসার্চ পেশা হিসাবে গণিত ফিল্ডস পদক হচ্ছে গণিতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার যেটি ১৯৩৬ সালে যাত্রা শুরু করে, বর্তমানে প্রতি চার বছর পরপর এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এই পুরষ্কারটিকে গণিতে নোবেল পুরষ্কারের সমতুল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তেইশটি উন্মুক্ত সমস্যার একটি বিখ্যাত তালিকা ১৯০০ সালে জার্মান গণিতবিদ ডাভিড হিলবের্ট তৈরি করেন যেটাকে বলা হয় "Hilbert's problems". এই তালিকাটি গণিতবিদদের মধ্যে অনেক বড় আলোড়ন তৈরি করে। এই সমস্যা গুলোর মধ্যে নয়টি সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। সাতটি গুরুত্বর্পূণ সমস্যার একটি নতুন তালিকা "Millennium Prize Problems" নামে ২০০০ সালে প্রকাশিত হয়। এর প্রত্যেকটি সমস্যার সমাধানের জন্য এক মিলিয়ন ইউএস ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্য দেখুন উপপাদ্যের তালিকা পিথাগোরাসের উপপাদ্য • ফার্মির ভাগশেষ উপপাদ্য • গোডেলের অসম্পূর্ণতার তত্ত্ব • পাটীগণিতের মৌলিক উপপাদ্য • বীজণিতের মৌলিক উপপাদ্য • ক্যালকুলাসের মৌলিক উপপাদ্য • ক্যান্টরের কর্ণ-বৃদ্ধি • চার রঙ উপপাদ্য • যোরনের লেমা • অয়লারের অভেদ • গাউস-বনেট তত্ত্ব • কোয়াড্রাটিক রিসিপ্রোসিটি • রিম্যান-রখ তত্ত্ব। গুরুত্বপূর্ণ অনুমান বেশ কিছু গাণিতিক সমস্যা আছে, যা আজও সমাধান হয়নি। গোল্ডবাখ অনুমান • দ্বৈত মৌলিক অনুমান • রিম্যান প্রকল্প • কোলাজ অনুমান • P=NP? • open হিলবার্টের সমস্যাগুচ্ছ। আরও দেখুন গণিতের ইতিহাস •গণিতের দর্শন• গণিতবিদ তালিকা • ফিল্ডস্ মেডাল • অ্যাবেল পুরস্কার •গণিতের ইতিহাসের তারিখ • Millennium Prize Problems (Clay Math Prize) • ইন্টারনেশনাল ম্যাথেম্যাটিক্যাল ইউনিয়ন • গণিতের প্রতিযোগিতাসমূহ • Lateral thinking • গাণিতিক শিক্ষা • গাণিতিক যোগ্যতা এবং লৈঙ্গিক ইস্যুসমূহ তথ্যসূত্র গ্রন্থসূত্র Benson, Donald C., The Moment of Proof: Mathematical Epiphanies, Oxford University Press, USA; New Ed edition (December 14, 2000). . Boyer, Carl B., A History of Mathematics, Wiley; 2 edition (March 6, 1991). . — A concise history of mathematics from the Concept of Number to contemporary Mathematics. Courant, R. and H. Robbins, What Is Mathematics? : An Elementary Approach to Ideas and Methods, Oxford University Press, USA; 2 edition (July 18, 1996). . Davis, Philip J. and Hersh, Reuben, The Mathematical Experience. Mariner Books; Reprint edition (January 14, 1999). . — A gentle introduction to the world of mathematics. Eves, Howard, An Introduction to the History of Mathematics, Sixth Edition, Saunders, 1990, . Gullberg, Jan, Mathematics — From the Birth of Numbers. W. W. Norton & Company; 1st edition (October 1997). . — An encyclopedic overview of mathematics presented in clear, simple language. Hazewinkel, Michiel (ed.), Encyclopaedia of Mathematics. Kluwer Academic Publishers 2000. — A translated and expanded version of a Soviet mathematics encyclopedia, in ten (expensive) volumes, the most complete and authoritative work available. Also in paperback and on CD-ROM, and online. Jourdain, Philip E. B., The Nature of Mathematics, in The World of Mathematics, James R. Newman, editor, Dover Publications, 2003, . Kline, Morris, Mathematical Thought from Ancient to Modern Times, Oxford University Press, USA; Paperback edition (March 1, 1990). . Oxford English Dictionary, second edition, ed. John Simpson and Edmund Weiner, Clarendon Press, 1989, . The Oxford Dictionary of English Etymology, 1983 reprint. . Pappas, Theoni, The Joy Of Mathematics, Wide World Publishing; Revised edition (June 1989). . JSTOR. Peterson, Ivars, Mathematical Tourist, New and Updated Snapshots of Modern Mathematics, Owl Books, 2001, . বহিঃসংযোগ Nrich, a prize-winning site for students from age five from Cambridge University Weisstein, Eric et al.: MathWorld: World of Mathematics. An online encyclopedia of mathematics. বিষয়শ্রেণী:রৌপ বিজ্ঞান বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
গণিতবিদদের তালিকা
https://bn.wikipedia.org/wiki/গণিতবিদদের_তালিকা
গণিতবিদদের তালিকা উল্লেখযোগ্য গণিতবিদ জাতীয়তা, জাতিগত, ধর্ম, পেশা এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দ্বারা তৈরি বর্ণানুক্রমিক তালিকা। জাতীয়তা, জাতিগততা বা ধর্ম অনুসারে তালিকা   পেশা দ্বারা তালিকা অক্টোরিয়াসদের তালিকা গেম তাত্ত্বিকদের তালিকা জ্যামিতিক তালিকা যুক্তিবাদীদের তালিকা গাণিতিক সম্ভাবনার তালিকা পরিসংখ্যানবিদদের তালিকা পরিমাণগত বিশ্লেষকদের তালিকা গণিতবিদদের অন্যান্য তালিকা অপেশাদার গণিতবিদদের তালিকা 19 শতকে জন্মগ্রহণকারী গণিতবিদদের তালিকা শতবর্ষীদের তালিকা (বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ) গণিতবিদ সম্পর্কে চলচ্চিত্রের তালিকা গণিতে মহিলাদের তালিকা দ্য গণিত বংশবৃদ্ধি প্রকল্প;- গণিতবিদদের একাডেমিক বংশতালিকা জন্য ডাটাবেস গাণিতিক শিল্পীদের তালিকা বহিঃসংযোগ গণিত সংরক্ষণাগারের ম্যাকটিউটার ইতিহাস - বিস্তারিত জীবনী ব্যাপক তালিকা দ্য ওবারওয়লফাচ ফটো সংগ্রহ - সারা বিশ্ব থেকে গণিতবিদদের ফটোগ্রাফ গণিতবিদদের ছবি - আন্দ্রে বাউয়ার দ্বারা তৈরি গণিতবিদ (এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী)এর ফটো সংগ্রহ৷ বিখ্যাত গণিতবিদ গণিতবিদদের জন্মদিন এবং মৃত্যু বার্ষিকীর ক্যালেন্ডার বিষয়শ্রেণী:গণিতবিদদের তালিকা
কার্ল ফ্রিডরিক গাউস
https://bn.wikipedia.org/wiki/কার্ল_ফ্রিডরিক_গাউস
REDIRECT কার্ল ফ্রিড‌রিশ গাউস
লিওনার্ড অয়লার
https://bn.wikipedia.org/wiki/লিওনার্ড_অয়লার
পুনর্নির্দেশ লেওনার্ড অয়লার
শ্রীনিবাস রামানুজন
https://bn.wikipedia.org/wiki/শ্রীনিবাস_রামানুজন
শ্রীনিবাস রামানুজন (২২ ডিসেম্বর ১৮৮৭ – ২৬ এপ্রিল ১৯২০) অসামান্য প্রতিভাবান একজন ভারতীয় গণিতবিদ। খুব অল্প সময় বাঁচলেও তিনি গণিতে সুদূরপ্রসারী অবদান রেখে গেছেন। প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় তিনি গণিতের বিভিন্ন শাখায়, বিশেষ করে গাণিতিক বিশ্লেষণ, সংখ্যাতত্ত্ব, অসীম ধারা ও আবৃত্ত ভগ্নাংশ শাখায়, গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁর রেখে যাওয়া নোটবুক বা ডায়েরি হতে পরবর্তীতে আরও অনেক নতুন সমাধান পাওয়া গেছে। ইংরেজ গণিতবিদ জি এইচ হার্ডি রামানুজনকে অয়েলার ও গাউসের সমপর্যায়ের গণিতবিদ মনে করেন। C.P. Snow Foreword to "A Mathematician's Apology" by G.H. Hardy অবিভক্ত ভারতের মাদ্রাজের এক গরিব ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান রামানুজন ১০ বছর বয়সে গণিতের সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁকে এস এল লোনি লিখিত ‘’’ত্রিকোণমিতি’’’ পুস্তকটি দেওয়া হয় এবং তখন থেকে তিনি গণিতে সহজাত প্রতিভা প্রদর্শন করেন। ১২ বছরের মধ্যে তিনি ওই পুস্তকের বিষয়গুলোতে দক্ষতা অর্জন করেন। এমন কি তিনি নিজে কিছু উপপাদ্য আবিষ্কার করেন এবং স্বতন্ত্রভাবে অয়েলারের এককত্ব পুনরাবিষ্কার করেন। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি গণিতে বিশেষ দক্ষতা দেখিয়ে পুরস্কার ও প্রশংসা লাভ করেন। ১৭ বছর বয়সে রামানুজন বার্নোলির সংখ্যা ও অয়েলার-মাসেরনি ধ্রুবকের ওপর নিজের গবেষণা সম্পন্ন করেন। কুম্বাকোটম সরকারি কলেজে পড়ার জন্য বৃত্তি পেলেও অ-গাণিতিক বিষয়ে ফেল করার কারণে তাঁর বৃত্তি বাতিল হয়ে যায়। এরপর তিনি অন্য একটি কলেজে নিজের গাণিতিক গবেষণা শুরু করেন। এই সময় জীবন ধারণের জন্য তিনি মাদ্রাজ বন্দর ট্রাস্টের মহা হিসাবরক্ষকের কার্যালয়ে কেরানি পদে যোগ দেন। জীবনী জন্ম ও বংশপরিচয় রামানুজন ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রদেশের তাঞ্জোর জেলার ইরেভদ শহরের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কে শ্রীনিবাস ইয়েঙ্গার ছিলেন শহরের একটি কাপড়ের দোকানের হিসাবরক্ষক। তার মা কোমালাটাম্মাল একজন গৃহিণী ছিলেন এবং একটি স্থানীয় মন্দিরে গান গাইতেন। তিনি ছিলেন তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন মহিলা। প্রচলিত আছে যে, রামানুজনের মায়ের বিয়ের পর বেশ কয়েকবছর কোন সন্তান না হওয়ায়, রামানুজনের মাতামহ নামাক্কল শহরের বিখ্যাত নামগিরি দেবীর নিকট নিজ কন্যা সন্তানের জন্য প্রার্থনা করেন। এরপরই জ্যেষ্ঠ সন্তান রামানুজন জন্মগ্রহণ করেন। সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:Erode,_18_Alahiri_Str_-_Ramanujan_birth_place.jpg|থাম্ব|রামানুজনের জন্মস্থান যা ১৮ আলাহিরি রোড, ইরোড, বর্তমানে তামিলনাড়ু সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:Ramanujanhome.jpg|থাম্ব|সারাঙাপানি সান্নিধি রোড, কুম্বাকনামায় রামানুজনের বাসা বাল্যকাল পাঁচ বছর বয়সে রামানুজনকে পাড়ার পাঠশালায় ভর্তি করা হয়। সাত বছর বয়সে তাকে কুম্ভকোনাম শহরের টাউন হাই স্কুলে ভর্তি করানো হয়। রামানুজন সাধারণত কম কথা বলতেন এবং মনে হতো তিনি কিছুটা ধ্যানমগ্ন থাকতেন। তার অসাধারণ প্রতিভা স্কুল কর্তৃপক্ষের গোচরে আসে এবং তার প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে বৃত্তি দেওয়া হয়। তিনি বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে বিভিন্ন গাণিতিক উপপাদ্য, গণিতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। তিনি ও এর মান যে কোন সংখ্যক দশমিক স্থান পর্যন্ত বলতে পারতেন। প্রথমে নিজের এই অদ্ভুত প্রতিভার বিচার তিনি নিজেই করতে পারেননি। তার এক বন্ধু তাকে জি. এস. কার (G S Carr)-এর লেখা সিনপসিস অফ এলিম্যনটারি রেজাল্ট ইন পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড ম্যাথেম্যাটিক্‌স (Synopsis of elementary results in Pure and Applied Mathematics) বইটি পড়তে দেন। মূলত এই বইটি পড়েই তার গাণিতিক প্রতিভার বিকাশ ঘটতে শুরু করে। রামানুজন এই বইয়ে প্রদত্ত বিভিন্ন গাণিতিক সূত্রগুলির সত্যতা পরীক্ষা শুরু করেন। তার কাছে এগুলো ছিল মৌলিক গবেষণার মত, কারণ তার কাছে অন্য কোন সহায়ক গ্রন্থ ছিল না। গবেষণা কর্মের সূচনা তিনি ম্যাজিক স্কোয়ার গঠনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এরপর তিনি জ্যামিতিক বিভিন্ন বিষয়ের উপর কাজ শুরু করেন। বৃত্তের বর্গসম্পর্কীয় তাঁর গবেষণা পৃথিবীর বিষুবরৈখিক পরিধির দৈর্ঘ্য নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পদ্ধতিতে নির্ণীত বিষুবরৈখিক পরিধির দৈর্ঘ্য এবং প্রকৃত মানের পার্থক্য মাত্র কয়েক ফুট ছিল। জ্যামিতির সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে তিনি বীজগণিতের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। শোনা যায়, রামানুজন সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাঁর নোট বুকে কিছু লিখতেন। কী লিখছেন জিজ্ঞাসা করলে বলতেন যে, নামাক্কলের দেবী স্বপ্নে তাঁকে এই সব সূত্র দিয়ে প্রেরণা দিচ্ছেন। স্বপ্নের মাধ্যমে প্রাপ্ত এ সকল সূত্র তিনি পরীক্ষণ করতেন, যদিও তাঁর পরীক্ষা পদ্ধতি খুব আনুষ্ঠানিক ছিলনা। যৌবনকাল ১৬ বছর বয়সে রামানুজন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ও জুনিয়র শুভ্রামানায়াম বৃত্তি লাভ করে কুম্ভকোনাম সরকারি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু গণিতের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়ার ফলে পরের পরীক্ষায় ইংরেজিতে অকৃতকার্য হন এবং তাঁর বৃত্তি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি কুম্ভকোনাম ত্যাগ করে প্রথমে বিশাখাপত্তনম এবং পরে মাদ্রাজ যান। ১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি ফার্স্ট এক্সামিনেশন ইন আর্টস (F.A. বা I.A.) পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন এবং অকৃতকার্য হন। তিনি আর এই পরীক্ষা দেননি। এরপর কয়েক বছর তিনি নিজের মত গণিত বিষয়ক গবেষণা চালিয়ে যান। বিবাহ ও কর্মজীবন ১৯০৯ সালে রামানুজন বিবাহ করেন। কিন্তু তাঁর কোন স্থায়ী কর্মসংস্থান ছিলনা। প্রয়োজনের তাগিদেই তিনি স্বভাবের বিপরীতে জীবিকা অন্বেষণের চেষ্টা চালাতে থাকেন। এ সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ একজন একটি পরিচয়পত্র দিয়ে চাকুরির সুপারিশ করে তাঁকে মাদ্রাজ শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে নেলোর শহরের কালেক্টর দেওয়ান বাহাদুর রামচন্দ্র রাও-এর কাছে প্রেরণ করেন। রামচন্দ্র রাও গণিতের ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। রামানুজনের দুটি নোটবুক তার সকল গাণিতিক সূত্রের প্রতিপাদ্য ও এ-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় লিপিবদ্ধ ছিল। রামানুজন সম্পর্কে রামচন্দ্র রাও নিজের ভাষায় বর্ণনা করেছেন। নিচে কিছুটা তুলে ধরা হলো, রামচন্দ্র রাও কিছুদিনের জন্য রামানুজনের সকল ব্যয়ভার বহন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু তার জন্য কোন বৃত্তির ব্যবস্থা না হওয়ায় এবং রামানুজন দীর্ঘকাল অপরের গলগ্রহ হয়ে থাকতে সম্মত না হওয়ায় তিনি মাদ্রাজ পোর্ট ট্রাস্টের অধীনে একটি সামান্য পদের চাকুরিতে যোগদান করেন। কিন্তু তার গবেষণা কর্ম এসবের জন্য কখনো ব্যহত হয়নি। পোর্ট ট্রাস্টে কাজ করার সময় কিছু লোকের সাথে তার পরিচয় হয় যারা তার নোটবুক নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেন। এর সূত্র ধরে গণিত বিষয়ে কিছু বিশেষজ্ঞের সাথে তার যোগাযোগ হয়। ১৯১১ সালে তার প্রথম গবেষণা প্রবন্ধ Journal of the Mathematical Society পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সংখ্যাতত্ত্বের উপর তার গবেষণালব্ধ Some Properties of Bernoulli's Numbers নামে তার প্রথম দীর্ঘ প্রবন্ধ একই বছর প্রকাশিত হয়। ১৯১২ সালে একই পত্রিকায় তার আরো দুটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় এবং সমাধানের জন্য কিছু প্রশ্নও প্রকাশিত হয়। প্রতিভার স্বীকৃতি রামচন্দ্র রাও মাদ্রাজ প্রকৌশল মহাবিদ্যালয়ের মি. গ্রিফিথ-কে রামানুজনের ব্যাপারে বলেন। মাদ্রাজ পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান স্যার ফ্রান্সিস স্প্রিং-এর সঙ্গে মি. গ্রিফিথ এর আলাপ হওয়ার পর থেকেই রামানুজনের প্রতিভার স্বীকৃতি শুরু হয়। মাদ্রাজ শহরের বিশিষ্ট পণ্ডিত শেশা আইয়ার এবং অন্যান্যদের পরামর্শে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের ফেলো জি.এইচ. হার্ডির সঙ্গে রামানুজন যোগাযোগ শুরু করেন এবং তার বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে ইংরেজি ভাষায় একটি পত্র লেখেন। এই পত্রের সঙ্গে ১২০ টি উপপাদ্য সংযোজিত ছিল, তার ভিতর থেকে নমুনাস্বরূপ হার্ডি ১৫টি নির্বাচন করেন। হার্ডি মন্তব্য করেন এরপর হার্ডি ওই ১২০ টির মধ্যে কয়েকটি ইতিপূর্বে অন্য কোন গণিত বিশারদ প্রমাণ করেছেন বলে উল্লেখ করেন। একটি গাণিতিক পদের জন্য ব্যবহৃত প্রতীক (notation) ১৯০৮ সালে এডমুন্ড ল্যান্ডাউ প্রথম উদ্ভাবন করেন। ল্যান্ডাউয়ের মত এত কিছু রামানুজনের ছিলনা। তিনি ফরাসী বা জার্মান ভাষায় কোন পুস্তক কখনো দেখেন নি, এমন কি ইংরেজি ভাষায় তাঁর জ্ঞান এত দুর্বল ছিল যে কোন ডিগ্রির জন্য কোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াও তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিলনা। তিনি এমন কিছু বিষয় ও সমস্যার উপস্থাপনা করেছেন যা ইউরোপের অসামান্য প্রতিভাধর বিজ্ঞানীরা ১০০ বছর ধরে সমাধান করেছেন- এমন কি কিছু এখনো সমাধান হয়নি। ইংল্যান্ড যাত্রা সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:RamanujanCambridge.jpg|থাম্ব|রামানুজন (কেন্দ্র) ও তার সহকর্মী জি এইচ হার্ডি (একদ্ম ডান) অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে, সেনেট হাউস কেমব্রিজের বাইরে, c.1914-19 সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:Whewell's_Court,_Trinity_College,_Cambridge.jpg|থাম্ব|হুইলস কোর্ট, ট্রিনিটি কলেজ, কেমব্রিজ অনেকদিন ধরে হার্ডি রামানুজনকে ইংল্যান্ড নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন । রামানুজনের অনেক বন্ধু ও হিতৈষীর প্রচেষ্টায় ১৯১৩ সালের মে মাসে মাদ্রাজ পোর্ট ট্রাস্টের কেরানির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং একটি বৃত্তি মঞ্জুর করা হয়। ঠিক এমনি সময়ে তিনি কেমব্রিজ থেকে একটি আমন্ত্রণ পান। চাকুরিগত সমস্যার সমাধান হলেও জাতিপ্রথা ও মায়ের অনুমতির অভাবে প্রথমে রামানুজন দেশের বাইরে যেতে অসম্মতি জানান। হার্ডি লিখেছেন, কেমব্রিজ এর আমন্ত্রণে বিদেশে আসার অল্পদিন পরই রামানুজন ট্রিনিটি কলেজের ফেলোশিপ পেয়ে যান। এই সময় মাদ্রাজ থেকে প্রাপ্ত বৃত্তির পরিমাণ ছিল বার্ষিক ২৫০ পাউন্ড; তার ৫০ পাউন্ড দেশে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহের জন্য দিতে হত। এছাড়া ট্রিনিটি কলেজ থেকে ভাতা বাবদ ৫০ পাউন্ড পেতেন। রামানুজন সম্পর্কে হার্ডি লিখেছেন, গণিতবহির্ভূত বিষয়ে রামানুজনের আগ্রহে অদ্ভুত বৈপরীত্য ছিল। শিল্প ও সাহিত্যে তার প্রায় কোনরূপ উৎসাহ ছিলনা। ধর্মীয় জীবন তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু। ধর্মীয় অনুশাসন পালনে তিনি যথেষ্ট কঠোরতা অবলম্বন করতেন। তার মতে, পৃথিবীর সব ধর্মই কমবেশি সত্য। তিনি নিরামিষভোজী ছিলেন। তিনি যতদিন কেমব্রিজ ছিলেন, সবসময় স্বপাক আহার করতেন এবং বাইরের পোশাক পরিধান করতেন। শেষ জীবন ১৯১৭ সালের বসন্তকালের প্রথমে রামানুজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে কেমব্রিজের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। এরপর তিনি আর কখনো সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেন নি। তাকে ওয়েলস, ম্যালটক এবং লন্ডন শহরের স্বাস্থ্যনিবাসে ভর্তি করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ এক বছর তার শারীরিক কোন উন্নতি দেখা যায়নি। এই সময় রামানুজন রয়েল সোসাইটি-র সদস্য নির্বাচিত হন। গবেষণা কাজে অধিক মনোযোগ দেওয়ার ফলে তার সবচেয়ে মূল্যবান উপপাদ্যগুলো এই সময় আবিষ্কৃত হয়। তিনি নির্বাচিত ট্রিনিটি ফেলো ছিলেন। ১৯১৯ সালে রামানুজন ভারতবর্ষে ফিরে আসেন। কিছুকাল যক্ষ্মারোগে ভোগার পর ১৯২০ সালের ২৬ই এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। রামানুজনের প্রসঙ্গে হার্ডির আলোচনা রামানুজনের কিছু গোপন রহস্য ছিল ধারণা করা হলেও হার্ডি তার মন্তব্যে এ কথা ভিত্তিহীন বলেছেন। তবে একথা হার্ডি অস্বীকার করেন নি যে রামানুজনের স্মৃতিশক্তি ছিল অসাধারণ। রামানুজন অদ্ভুত উপায়ে বিভিন্ন ধরনের সংখ্যার প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য মনে রাখতে পারতেন। মি. লিট্‌লউড মন্তব্য করেছেন যে, প্রত্যেক ধনাত্নক সংখ্যা রামানুজনের বন্ধু ছিল। হার্ডি লিখেছেন গণিতে অবদান গণিতের ক্ষেত্রে, পর্যবেক্ষণ ও প্রমাণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। রামানুজন এমন অনেক গাণিতিক সূত্রের উদ্ভাবন করেন যেগুলো বহুকাল পরে প্রমাণ হয়। প্রমাণ করতে গিয়ে গবেষণার অনেক নতুন দিকের সূচনা হয়। রামানুজন এর অনন্ত ধারা উদ্ভাবন করেন। রামানুজনের এর ধারা সম্পর্কীয় সকল ধারাকে এত দ্রুত একত্রিত করেছে যে, আধুনিক অ্যালগরিদমের সকল ক্ষেত্রে তার ধারা-ই ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, তার সংজ্ঞা তাকে কিছু ইতঃপূর্বে অজানা অভেদ প্রতিপাদন করতে সাহায্য করেছে। উদাহরণস্বরূপ, সকল -র মানের জন্য, যেখানে (z) হলো গামা ফাংশন। , এবং এর সহগ সমীকৃত করার মাধ্যমে অধিবৃত্তীয় ছেদকের কিছু তাৎপর্যপূর্ণ সূচক পাওয়া যায়। তত্ত্ব এবং উদ্ভাবন রামানুজনের উদ্ভাবনসমূহ ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। রামানুজনের নিজের মৌলিক উদ্ভাবনসমূহ এবং হার্ডির সাথে তার গবেষণার ফসলসমূহ নিম্নরূপঃ খ্যাসমূহের বৈশিষ্ট্য। বিভাজন ফাংশন এবং এর অসীমতট সম্পর্কীয় তত্ত্বসমূহ।নিম্নোক্ত ক্ষেত্রেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে: গামা ফাংশন মডুলার রূপ (Modular forms) রামানুজনের অবিচ্ছিন্ন ভগ্নাংশসমূহ (Ramanujan's continued frations) অপসারী ধারা (Divergent series) অধিজ্যামিতীয় ধারা (Hypergeometric series) মৌলিক সংখ্যা তত্ত্ব। রামানুজনের মৌলিক সংখ্যা সমূহ ১৯১৯ সালে রামানুজন কর্তৃক প্রকাশিত হয়। মক থেটা ফাংশন (Mock theta functions) রামানুজনের অনুমিতি এবং এদের অবদান রামানুজনের বিপুল সংখ্যক তত্ত্ব তার অনুমান হিসেবে পরিচিত হলেও পরবর্তীকালে এগুলো গবেষণা ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রেখেছে। রামানুজনের অনুমিতি ছিল (Ramanujan conjecture) টাউ ফাংশনের (tau function) আকার নিয়ে একটা পূর্বানুমান, যেটা (q) এর মডুলার রূপের পার্থক্য নিরূপণ করে। পিয়ের ডেলিগনি কর্তৃক ওয়েলের অনুমিতি (Weil conjectures) প্রমাণের ফলাফল স্বরূপ এটি প্রমাণিত হয়। রামানুজনের নোটখাতা প্রথম থেকেই রামানুজন তার সকল গবেষণালব্ধ ফলাফল তার নোটখাতায় লিখে রাখতেন। কিন্তু তিনি কোন প্রতিপাদন লিখতেন না। ফলে এমন একটি ধারণার জন্ম হলো যে, রামানুজন তার তত্ত্বসমূহ প্রমাণ করতে সমর্থ ছিলেন না। গণিতবিদ ব্রুস বেন্ডিট রামানুজন এবং তার নোটখাতা সম্পর্কিত আলোচনায় একথা বলেছেন যে, রামানুজন তার তত্ত্বসমূহ প্রমাণ করতে পারতেন কিন্তু কোন কারণে তিনি সেটা আনুষ্ঠানিকতায় রূপ দিতেন না। এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। রামানুজন আর্থিক ভাবে সচ্ছল ছিলেন না, আর তখন কাগজের মূল্য ছিল চড়া। তাই রামানুজন শ্লেটে লিখে কোন তত্ত্ব প্রমাণ করতেন এবং নোটখাতায় শুধুমাত্র ফলাফল লিখে রাখতেন। রামানুজনের প্রথম নোটখাতার পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৩৫১। এটি ১৬ টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত ছিল এবং কিছু অগোছালো পৃষ্ঠাও পাওয়া যায়। তার দ্বিতীয় নোটখাতার পৃষ্ঠাসংখ্যা ছিল ২৫৬। অধ্যায় ছিল ২১ টি এবং এতে ১০০ টি অগোছালো পৃষ্ঠা ছিল। তৃতীয় নোটখাতাতেও এরকম ৩৩ টি অবিন্যস্ত পৃষ্ঠা ছিল। তার এসব নোটখাতা পরবর্তীতে গণিতবিদদের গবেষণায় বিরাট অবদান রাখে। হার্ডি নিজেও এসব নোটখাতা থেকে অনেক তত্ত্ব উদ্ধার করেছিলেন। পরবর্তীতে বি এম উইলসন, জি এন ওয়াটসন এবং ব্রুস বেন্ডিট রামানুজনের এসব নোটখাতার উপরে কাজ করেন। রামানুজনের অন্য একটি নোটখাতা, যেটি 'হারানো নোটখাতা' নামে পরিচিত, ১৯৭৬ সালে আবিষ্কৃত হয়। স্বীকৃতি রামানুজন এবং তার অবদানের কথা স্মরণ করে তামিলনাড়ু প্রদেশে রামানুজনের জন্মদিন ২২শে ডিসেম্বর 'প্রাদেশীয় আই.টি.দিবস' হিসেবে পালিত হয়। ১৯৬২ সালে রামানুজনের ৭৫তম জন্মদিনে ভারত সরকার একটি স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করে। International Centre for Theoritical Physics (ICTP) এবং IMU যৌথভাবে, উন্নয়নশীল দেশসমূহের তরুণ গণিতবিদের জন্য একটি বার্ষিক পুরস্কারের ব্যবস্থা নিয়েছে যেটি রামানুজনের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৮৭ সালে স্প্রিঙ্গার-নারোসা কর্তৃক সম্পাদিত ' রামানুজনের হারানো নোটখাতা' প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী কর্তৃক প্রকাশিত হয়। তিনি এর প্রথম কপি রামানুজনের বিধবা স্ত্রী এস জানাকী আম্মাল রামানুজন এবং দ্বিতীয় কপি জর্জ অ্যান্ড্রুজকে সংখ্যাতত্ত্বে তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রদান করেন। সংস্কৃতিতে রামানুজন Good Will Hunting চলচ্চিত্রে রামানুজনকে গণিতের একজন অসাধারণ প্রতিভা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভের্নার ভিঞ্জ রচিত 'দ্য পিস ওয়ার' এবং ডগলাস হফষ্টেডারের গ্যোডেল, এশ্যর, বাখ গ্রন্থসমূহে রামানুজনের জীবনী আলোচনা করা হয়েছে। CBS টিভি ধারাবাহিক Numb3rs এর 'আমিতা রামানুজন' চরিত্রটি রামানুজনের নামানুসারে নামাকৃত হয়েছে।(সূত্র: IMDB's trivia for 'Numb3rs') সাইরিল কর্ণব্লুথ রচিত ছোটগল্প গোমেজ" এ রামানুজনকে স্বশিক্ষিত একজন গণিত প্রতিভা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। আইজাক আসিমভের 'Prelude to Foundation' গ্রন্থের ' ইয়োগো আমাইরাল' চরিত্রটি রামানুজনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। 'কম্পলিকেট' নাট্যশালা রামানুজনের জীবনের উপর ভিত্তি করে ' A Disappearing Number' নামে একটি প্রকাশনা করে। এটির পরিচালক ছিলেন 'সিমন ম্যাকবার্ণী'। চলচ্চিত্র তামিল নাডু প্রদেশ এবং কেমব্রীজে রামানুজনের জীবন নিয়ে একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ধারণ করা হবে। এটি একটি ভারত-ব্রিটিশ শিল্পকেন্দ্র কর্তৃক প্রযোজিত হবে। পরিচালনা করবেন স্টিফেন ফ্রাই এবং ডেভ বিনিগাল। রবার্ট কানিগেল কর্তৃক রচিত গ্রন্থ 'The Man Who Knew Infinity: A Life of the Genius Ramanujan'-এর উপর ভিত্তি করে এডওয়ার্ড প্রেসমেন এবং ম্যাথিউ ব্রাউন ২০১৫ সালে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দ্য ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি নির্মাণ করেন। এতে রামানুজনের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন ব্রিটিশ অভিনেতা দেব পাটেল। রামানুজনের প্রকাশিত রচনাবলি 'কালেক্টেড পেপারস অফ শ্রীনিবাস রামানুজন'- শ্রীনিবাস রামানুজন, জি.এইচ.হার্ডি, পি.ভি.সেশু আইয়ার, বি.এম.উইলসন, ব্রুস বার্নডিট। এই বইটি রামানুজনের মৃত্যুর পর ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয়। এটি বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত রামানুজনের ৩৭ টি প্রবন্ধের একটি সংকলন। এর তৃতীয় মুদ্রণে ব্রুস বার্নডিটের কিছু মন্তব্য সংযোজিত ছিল। 'নোটবুকস্‌'(২ খন্ড), শ্রীনিবাস রামানুজন, টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ, বোম্বাই, ১৯৫৭। এই বইটিতে রামানুজনের নোটখাতা গুলোর ফটোকপি সম্পাদিত হয়েছে। 'দি লস্ট নোটবুক এন্ড আদার আনপাবলিশ্‌ড পেপারস্‌- এস. রামানুজন, নারোসা, নিউ দিল্লী, ১৯৮৮। এই বইটিতে রামানুজনের 'লস্ট নোটবুক' এর ফটোকপি সংকলিত হয়েছে। রামানুজনের কর্মের উপর প্রকাশনা সমূহ রামানুজন: টুয়েল্‌ভ লেকচারস্‌ অন সাবজেক্টস সাজেসটেড বাই হিস লাইফ এবং ওয়ার্ক বাই জি.এইচ. হার্ডি। রামানুজন: লেটারস এন্ড কামেন্টারি ( হিস্টরি অফ ম্যাথ্‌মেটিক্‌স )- ব্রুস সি. বার্নডিট এবং রবার্ট এ. রান্‌কিন। রামানুজন'স নোটবুকস, প্রথম খন্ড - ব্রুস সি. বার্নডিট। রামানুজন'স নোটবুকস, দ্বিতীয় খন্ড - ব্রুস সি. বার্নডিট। রামানুজন'স নোটবুকস, তৃতীয় খন্ড - ব্রুস সি. বার্নডিট। রামানুজন'স নোটবুকস, চতুর্থ খন্ড - ব্রুস সি. বার্নডিট। রামানুজন'স নোটবুকস, পঞ্চম খন্ড - ব্রুস সি. বার্নডিট। রামানুজন'স লস্ট নোটবুকস, প্রথম খন্ড - জর্জ এন্ড্রুস এবং ব্রুস সি. বার্নডিট। নাম্বার থিউরি ইন দ্য স্পিরিট অফ রামানুজন- ব্রুস সি. বার্নডিট। এন ওভারভিউ অফ রামানুজন'স নোটবুকস- ব্রুস সি. বার্নডিট। মডার্ন ম্যাথ্‌মেটিকস - হ্যারি হ্যান্ডারসন। দি ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি: এ লাইফ অফ দি জিনিয়াস রামানুজন - রবার্ট কেনিজেল। আরও দেখুন ভারতীয় গণিতবিদদের তালিকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Biographical essay on Ramanujan Biography of this mathematical genius at World of Biography A Study Group For Mathematics: Srinivasa Ramanujan Iyengar Srinivasan Ramanujan in One Hundred Tamils of 20th Century The Ramanujan Journal - An international journal devoted to Ramanujan Jai Maharaj, Computing the Mathematical Face of God: S. Ramanujan Srinivasa Aiyangar Ramanujan A short biography of Ramanujan International Math Union Prizes, including a Ramanujan Prize. A biographical song about Ramanujan's life Feature Film on Math Genius Ramanujan by Dev Benegal and Stephen Fry A magical genius Norwegian and Indian mathematical geniuses RAMANUJAN — Essays and Surveys Ramanujan's growing influence Ramanujan's mentor A biography of Ramanujan set to music "A passion for numbers" BBC radio programme about Ramanujan - episode 5 Bruce C. Berndt, Robert A. Rankin. The Books Studied by Ramanujan in India American Mathematical Monthly, Vol. 107, No. 7 (Aug. - Sep., 2000), pp. 595–601 doi:10.2307/2589114 "Ramanujan's mock theta function puzzle solved" বিষয়শ্রেণী:১৮৮৭-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৯২০-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:তামিলনাড়ুর বিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:সংখ্যা তাত্ত্বিক বিষয়শ্রেণী:মানসিক গণনাকারী বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় সমন্বয়বাদী বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় সংখ্যা তাত্ত্বিক বিষয়শ্রেণী:পাই-সম্পর্কিত ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:রয়েল সোসাইটির সভ্য বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় হিন্দু বিষয়শ্রেণী:ভারতে সংক্রামক রোগে মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:তাঞ্জাবুর জেলার ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:১৯শ শতাব্দীর হিন্দু বিষয়শ্রেণী:১৯শ শতাব্দীর ভারতীয় গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর ভারতীয় গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
আর্কিমিডিস
https://bn.wikipedia.org/wiki/আর্কিমিডিস
আর্কিমিডিস (প্রাচীন গ্রিক ভাষায়: Ἀρχιμήδης আর্খিম্যাদ্যাস্‌, বর্তমান গ্রিক ভাষায় Αρχιμήδης আর্খ়িমিদ়িস্‌) বা সিরাকাসের আর্কিমিডিস (খ্রি.পূ. ২৮৭-২১২) একজন গ্রিক গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক। প্রাচীন গ্রিক সভ‍্যতা তার উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে পৌছেছিলো প্রাচীন কালের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ আর্কিমিডিস এর সময়ে। যদিও তার জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে, তবুও তাকে ক্ল্যাসিক্যাল যুগের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পদার্থবিদ্যায় তার উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে স্থিতিবিদ্যা আর প্রবাহী স্থিতিবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন এবং লিভারের কার্যনীতির বিস্তারিত ব্যাখ্যাপ্রদান। পানি তোলার জন্য আর্কিমিডিসের স্ক্রু পাম্প, যুদ্ধকালীন আক্রমণের জন্য সীজ (ইংরেজি: siege সীঝ়্‌) ইঞ্জিন ইত্যাদি মৌলিক যন্ত্রপাতির ডিজাইনের জন্যও তিনি বিখ্যাত। আধুনিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় তার নকশাকৃত আক্রমণকারী জাহাজকে পানি থেকে তুলে ফেলার যন্ত্র বা পাশাপাশি রাখা একগুচ্ছ আয়নার সাহায্যে জাহাজে অগ্নিসংযোগের পদ্ধতি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। আর্কিমিডিসকে সাধারণত প্রাচীন যুগের সেরা এবং সর্বাকালের অন্যতম সেরা গণিতজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি মেথড অফ এক্সহশন ব্যবহার করে অসীম ধারার সমষ্টিরূপে প্যারাবোলার বক্ররেখার অন্তগর্ত ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করেন এবং পাই -এর প্রায় নিখুঁত একটি মান নির্ণয় করেন। এছাড়াও তিনি আর্কিমিডিসের স্পাইরালের সংজ্ঞা দেন, বক্রতলের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র প্রদান করেন এবং অনেক বড় সংখ্যাকে সহজে প্রকাশ করার একটি চমৎকার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। যদিও রোমানরা আর্কিমিডিসের কোন ক্ষতি করার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, কিন্তু রোমানদের সিরাকিউজ অবরোধের সময় এক রোমান সৈন্যের হাতেই আর্কিমিডিস নিহত হন। রোমান দার্শনিক সিসেরো আর্কিমিডিসের সমাধীর উপরে একটি সিলিন্ডারের ভেতরে আবদ্ধ একটি গোলকের উল্লেখ করেছেন। আর্কিমিডিস প্রমাণ করেছিলেন যে সিলিন্ডারের ভেতর আবদ্ধ গোলকটির আয়তন এবং ভূমির ক্ষেত্রফল উভয়ই সিলিন্ডারের দুই তৃতীয়াংশ, যা আর্কিমিডিসের সেরা গাণিতিক অর্জনগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত। প্রাচীনকালে আর্কিমিডিসের গাণিতিক রচনাগুলি তার উদ্ভাবনগুলোর মত পরিচিত ছিল না। আলেকজান্দ্রিয়ার গণিতবিদরা তার লেখা পড়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখও করেছেন, কিন্তু আনুমানিক ৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে গ্রিক স্থপতি ইসেডোর অফ মিলেতাস সর্বপ্রথম তার সকল রচনা একত্রে লিপিবদ্ধ করেন। পরবর্তীতে ষষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রিক গণিতবিদ ইউতোশিয়াস আর্কিমিডিসের কাজের উপর একটি বিবরণ প্রকাশ করেন, যা তাকে প্রথমবারের মত বৃহত্তর পাঠকসমাজের কাছে পরিচিত করে তোলে। আর্কিমিডিসের কাজের খুব কম লিখিত দলিল মধ্যযুগের পর অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু সেই অল্পকিছু দলিলই পরবর্তীকালে রেনেসাঁ যুগের বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই উপকারী বলে বিবেচিত হয়। ১৯০৬ সালে আর্কিমিডিসের একটি নতুন পাণ্ডুুুলিপি আবিষ্কৃত হয় যা তার গাণিতিক সমস্যা সমাধানের পদ্ধতির উপর নতুনভাবে আলোকপাত করে। জীবনী থাম্ব|ডান|ব্রোঞ্জনির্মিত আর্কিমিডিসের এই মূর্তিটি বার্লিনের আর্কেনহোল্ড অবজারভেটরিতে অবস্থিত। এর ভাস্কর গেরহার্ড থীয়েম এবং এটি ১৯৭২ সালে উন্মোচন করা হয়। আর্কিমিডিস আনুমানিক ২৮৭ খৃস্টপূর্বাব্দে তৎকালীন বৃহত্তর গ্রিসের উপনিবেশ সিসিলি দ্বীপের সিরাকিউজ নামের বন্দর নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। বাইজান্টাইন গ্রিক ঐতিহাসিক জন যেতজেসের বিবরণ অনুযায়ী আর্কিমিডিস পঁচাত্তর বছর বয়সে মারা যান, সেখান থেকে তার জন্মসাল সম্পর্কে ধারণা করা হয়।T. L. Heath, Works of Archimedes, 1897 দ্য স্যান্ড রেকোনার নামক দলিলে আর্কিমিডিস তার বাবার নাম ফিডিয়াস বলে উল্লেখ করেন। ফিডিয়াস একজন জ্যোতির্বিদ ছিলেন, যাঁর সম্পর্কে আর কিছু জানা সম্ভব হয়নি। ঐতিহাসিক প্লুটার্খ তার দ্য প্যারালাল লাইভস নামক জীবনী গ্রন্থে আর্কিমিডিসকে সিরাকিউজের রাজা দ্বিতীয় হিয়েরোর আত্মীয় বলে উল্লেখ করেন। আর্কিমিডিসের বন্ধু হেরাক্লিডিস তার একটি জীবনী লিখেছিলেন, কিন্তু সেটি পরবর্তীতে হারিয়ে যায়। আর্কিমিডিসের জীবনের অনেক খুঁটিনাটি তথ্য তাই আর জানা যায়নি। যেমন তিনি বিয়ে করেছিলেন কিনা, তার কোন সন্তান ছিল কিনা এগুলো এখনো অজানা। যৌবনে আর্কিমিডিস সম্ভবত মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় পড়াশুনা করেছিলেন, যেখানে কোনোন অভ সামোস এবং এরাতোস্থেনেস অফ সিরেন তার সহপাঠী ছিলেন। তিনি কোনোন অভ সামোসকে তার বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন; অপরদিকে তার দুটি কাজের ( দ্য মেথোড অভ মেকানিক্যাল থিওরেমস এবং দ্য ক্যাটল প্রবলেম) শুরুতে এরাতোস্থেনেসের উদ্দেশ্যে কিছু নির্দেশনা ছিল। ২১২ খৃস্টপূর্বাব্দে দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধের সময় আর্কিমিডিস নিহত হন, যখন রোমান সেনাপতি জেনারেল মার্কাস ক্লডিয়াস মার্সেলাস দুই বছর ধরে অবরোধের পর সিরাকিউজ শহর দখল করেন। প্লুটার্খের বিবরণ অনুযায়ী, সিরাকিউজের পতনের সময় আর্কিমিডিস একটি গাণিতিক চিত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এক রোমান সৈন্য তাকে কাজ বন্ধ করে জেনারেল মার্সেলাসের সাথে দেখা করতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। আর্কিমিডিস তার কাজ শেষ না করে যেতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত সৈনিক তার তলোয়ার দিয়ে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করে। অন্য একটি স্বল্প প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, আর্কিমিডিস এক রোমান সৈন্যের কাছে আত্মসমর্পণের সময় নিহত হন। এই মতবাদ অনুসারে, তিনি কিছু গাণিতিক সরঞ্জাম বহন করছিলেন যেগুলোকে সৈন্যটি মূল্যবান সম্পদ ভেবে বিভ্রান্ত হয় এবং লোভে পড়ে তাকে হত্যা করে। বলা হয়ে থাকে যে, জেনারেল মার্সেলাস আর্কিমিডিসের বৈজ্ঞানিক প্রতিভা সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং তিনি তার কোন ক্ষতি না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর্কিমিডিসের মৃত্যুসংবাদ তাই তাকে ক্ষুব্ধ করে। থাম্ব|ডান|কোন গোলকের আয়তন এবং পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল তার অন্তঃস্থ সিলিন্ডারের আয়তন ও পৃষ্ঠতলের ২/৩ অংশের সমান। আর্কিমিডিসের সমাধিতে তাঁর নিজের অণুরোধে একটি গোলক ও একটি সিলিন্ডার বসানো হয়। আর্কিমিডিসের সমাধিফলকে একটি ভাস্কর্য রয়েছে যা সমান উচ্চতা ও ব্যাসের একটি গোলক ও একটি সিলিন্ডার নিয়ে গঠিত, যা তার সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কারগুলোর একটিকে নির্দেশ করে। তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে সমান উচ্চতা ও ব্যাসবিশিষ্ট একটি গোলক ও একটি সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে গোলকটির আয়তন ও পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল সিলিন্ডারের আয়তন ও পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলের দুই তৃতীয়াংশ। আর্কিমিডিসের মৃত্যুর ১৩৭ বছর পর ৭৫ খ্রিষ্টাব্দে রোমান বক্তা সিসেরো সিরাকিউজের এগ্রিজেনটিন গেইটের কাছে ঝোপঝাড় পরিবেষ্টিত অবস্থায় আর্কিমিডিসের কবর আবিষ্কার করেন। আবিষ্কার ও উদ্ভাবনসমূহ সোনার মুকুট থাম্ব|ডান|130px|আর্কিমিডিস তার অনিয়মিত আকারের বস্তুর আয়তন পরিমাপের পদ্ধতির মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে মুকুটের সোনার ঘনত্ব খাটি সোনার ঘনত্বের চেয়ে কম। আর্কিমিডিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটি ছিল অনিয়মিত আকারের বস্তুর আয়তন পরিমাপের পদ্ধতি। ভিট্রুভিয়াসের বিবরণ অনুযায়ী, রাজা দ্বিতীয় হিয়েরোর জন্য লরেল পাতার মুকুটের মত দেখতে একটি সোনার মুকুট প্রস্তুত করা হয়েছিল। আর্কিমিডিসকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মুকুটটি খাঁটি সোনার কিনা সেটা নিশ্চিত করার। সহজ পদ্ধতি ছিল মুকুটটি গলিয়ে তার ঘনত্ব নির্ণয় করা, কিন্তু রাজা মুকুটটি নষ্ট করতে রাজি ছিলেন না। আর্কিমিডিস যখন এ সমস্যা নিয়ে ভাবছিলেন, তখন হঠাৎ গোসল করতে গিয়ে তিনি লক্ষ করেন যে তিনি পানিতে নামা মাত্র বাথটাবের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বুঝতে পারেন যে পানির এই ধর্মকে ঘনত্ব পরিমাপে ব্যবহার করা সম্ভব। যেহেতু ব্যবহারিক কাজের জন্য পানি অসংকোচনশীল, তাই পানিতে নিমজ্জিত মুকুট তার আয়তনের সমান পরিমাণ পানি স্থানচ্যুত করবে। এই অপসারিত পানির আয়তন দ্বারা মুকুটের ভরকে ভাগ করে মুকুটের ঘনত্ব পরিমাপ করা সম্ভব। যদি মুকুটের উপাদানে সোনার সাথে অন্য কোন কম ঘনত্বের সস্তা ধাতু যোগ করা হয় তাহলে তার ঘনত্ব খাঁটি সোনার ঘনত্বের চেয়ে কম হবে। বলা হয়ে থাকে যে এই আবিষ্কার আর্কিমিডিসকে এতই উত্তেজিত করেছিল যে তিনি নগ্ন অবস্থায় শহরের রাস্তায় "ইউরেকা" (গ্রিক: "εὕρηκα!" ; অর্থ "আমি পেয়েছি!") বলে চিৎকার করতে করতে দৌড়াতে শুরু করেছিলেন। বাস্তবে আর্কিমিডিসের আবিষ্কৃত এই পদ্ধতিটি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিল, ঘনত্বের পার্থক্যের কারণে যে পরিমাণ পানি অপসারিত হবে সেটি সঠিকভাবে নির্নয় করা একটি কষ্টসাধ্য কাজ। এই সমস্যার সমাধান করা হয় fluid statics এর মাধ্যমে যেটি আর্কিমিডিস তত্ত্ব নামে পরিচিত। তত্ত্বটি তার On Floating Bodies প্রবন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে। তত্ত্বে বলা হয়েছে যে , কোন বস্তুর ওজন এটি দ্বারা অপসারিত পানির ওজনের সমান। আর্কিমিডিসের স্ক্রু থাম্ব|বাম|আর্কিমিডিসের স্ক্রু পানি উত্তোলনের কাজ ব্যবহৃত একট কার্যকর যন্ত্র। আর্কিমিডিসের প্রকৌশল কাজের অধিকাংশই ছিল তার নিজ শহর সিরাকিউজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য। গ্রিক লেখক অথেনিয়াস অভ নক্রেটিসের বর্ণনা অনুযায়ী, রাজা দ্বিতীয় হিয়েরো আর্কিমিডিসকে একটি বিশাল জাহাজ তৈরি করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সিরাকিউসা নামের এই জাহাজটিকে প্রয়োজনানুযায়ী প্রমোদতরী, রসদ-সরবরাহকারী এবং রণতরী হিসেবে ব্যবহার করে যেত। বলা হয়ে থাকে যে ক্লাসিকাল যুগে নির্মাণ করা সকল জাহাজের মধ্যে সিরাকিউসা ই ছিল সর্ববৃহৎ। অথেনিয়াসের ধারণামতে, এই জাহাজে একসাথে ছয়শো যাত্রী বহন করা যেত এবং জাহাজটিতে সাজানো বাগান, একটি ব্যায়ামাগার এবং দেবী আফ্রোদিতির মন্দির ছিল। স্বাভাবিকভাবেই এত বৃহদাকৃতির একটি জাহাজে প্রচুর পানি চুঁইয়ে ঢুকতো। সেই পানি নির্গমণের জন্য আর্কিমিডিস তার বিখ্যাত আর্কিমিডিসের স্ক্রু তৈরি করেন। এটি ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি সিলিন্ডারের ভেতরে আবদ্ধ একটি স্ক্রু আকৃতির ঘূর্ণায়মান ধাতব ব্লেড যাকে হাত দিয়ে ঘুরানো হত। এই যন্ত্রটি খাল থেকে উঁচু জমিতে সেচের জন্যও ব্যবহার করা হত। বর্তমানকালেও পানি এবং কয়লা, শস্যদানা জাতীয় ক্ষুদ্রাকৃতির পদার্থ উত্তোলনের জন্য আর্কিমিডিসের স্ক্রু ব্যবহার করা হয়। ভিট্রুভিয়াসের বিবরণ অনুযায়ী, আর্কিমিডিসের স্ক্রু সম্ভবত প্রাচীন ব্যবিলনের শুন্যোদ্যানে জলসেচনের জন্য ব্যবহৃত স্ক্রু পাম্পের একটি উন্নততর রূপ ছিল। আর্কিমিডিসের থাবা "দ্য ক্ল অভ আর্কিমিডিস" বা "আর্কিমিডিসের থাবা" একটি অস্ত্র যা আর্কিমিডিস তার শহর সিরাকিউজকে বহিঃস্থ আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য উদ্ভাবন করেছিলেন বলে বলা হয়ে থাকে। এ যন্ত্রটিতে একটি ক্রেনের ন্যায় বাহু এবং তাতে ঝুলানো একটি বিশাল ধাতব আংটা ছিল। এই আংটার সাহায্যে আক্রমণকারী জাহাজকে উল্টে ফেলা হত। আধুনিককালে এই যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে। ২০০৫ সালে "সুপারউইপনস অভ দ্য এনসিয়েন্ট ওয়ার্ল্ড" নামের একটি টেলিভিশন ডকুমেণ্টারীতে এমন একটি যন্ত্র প্রস্তুত করা হয় এবং সিদ্ধান্ত দেয়া হয় যে এটি প্রস্তুত এবং সার্থকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। আর্কিমিডিসের উত্তপ্ত রশ্মিঃ সত্য নাকি জনশ্রুতি? থাম্ব|ডান|200px|আর্কিমিডিস হয়তো অনেকগুলো আয়না একত্র করে আবতল প্রতিফলক হিসেবে কাজ করিয়ে সিরাকিউজ আক্রমণকারী জাহাজ ভস্মীভূত করেছিলেন। দ্বিতীয় শতকের লেখক লুসিয়ানের বর্ণনা অনুযায়ী, সিরাকিউজ যখন আক্রান্ত হয়, আর্কিমিডিস শত্রুপক্ষের জাহাজ আগুনে ভস্মীভূত করেন। ট্রেলসের এনথেমিয়াসের বিবরণ অনুযায়ী, আর্কিমিডিস অনেকগুলি আয়নার সাহায্যে আক্রমণকারী জাহাজের উপর সূর্যরশ্মি কেন্দ্রীভূত করে সেগুলোতে অগ্নিসংযোগ করেন।Hippias, 2 (cf. Galen, On temperaments 3.2, who mentions pyreia, "torches"); Anthemius of Tralles, On miraculous engines 153 [Westerman]. রেনেসাঁ যুগ থেকেই অবশ্য এই জনশ্রুতির সত্যতা নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে। রেনে দেকার্ত একে অসত্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন, যদিও বর্তমানকালের বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র আর্কিমিডিসের যুগে সহজলভ্য যন্ত্রপাতির সাহায্যে এই প্রক্রিয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অনেকের ধারণা, সারিবদ্ধভাবে সাজানো অনেকগুলো চকচকে পলিশ করা ব্রোঞ্জ বা তামার পাতের সাহায্যে জাহাজের উপর সূর্যরশ্মি কেন্দ্রীভূত করা সম্ভব। এতে প্রকৃতপক্ষে সৌরচুল্লীতে ব্যবহৃত পরাবৃত্তিক প্রতিফলনের নীতি ব্যবহার করা হবে। ১৯৭৩ সালে গ্রিক বিজ্ঞানী ইওয়ান্নিস সাক্কাস আর্কিমিডিসের সূর্যরশ্মি নিয়ে একটি পরীক্ষা চালান। এ পরীক্ষায় তিনি সত্তুরটি আয়না ব্যবহার করেন। প্রতিটি আয়নার আকার ছিল পাঁচ ফুট বনাম তিন ফুট এবং এগুলো তামা দ্বারা পালিশ করা ছিল। আয়নাগুলো একশো ষাট ফুট দূরবর্তী একটি প্লাইউড নির্মিত জাহাজের দিকে তাক করা ছিল। আয়নাগুলো ঠিকমত ফোকাস করার মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। অবশ্য জাহাজটিতে আলকাতরার প্রলেপ ছিল, যা সম্ভবত অগ্নিসংযোগের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। ২০০৫ এর অক্টোবরে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অভ টেকনোলজির একদল ছাত্র ১২৭টি এক ফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বিশিষ্ট আয়না প্রায় ১০০ ফুট দূরবর্তী একটি কাঠের ডামি জাহাজের উপর ফোকাস করে একটি পরীক্ষা চালায়। প্রায় দশ মিনিট উজ্জ্বল সূর্যালোকে এক জায়গায় থাকার পর জাহাজটিতে আগুন জ্বলে ওঠে। এ পরীক্ষা থেকে সিদ্ধান্তে আসা হয় যে এ প্রক্রিয়ায় অগ্নিসংযোগ সম্ভব তবে তা শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে। মিথবাস্টার্স টেলিভিশন শোতে এমআইটির এই শিক্ষার্থীরা পুনরায় একই পরীক্ষা চালায়, এবার সানফ্রান্সিসকো ঊপকূলে একটি কাঠের মাছধরা নৌকার উপর। এবারও বেশ কিছু সময় পর ছোট আকারে নৌকাটিতে আগুন জ্বলে ওঠে। প্রকৃতপক্ষে আগুন জ্বলে ওঠার জন্য কাঠকে তার দহন তাপমাত্রায় পৌছতে হয় যা প্রায় তিনশো ডিগ্রি সেলসিয়াসের সমান। ২০০৬ এর জানুয়ারিতে অণুষ্ঠানটি সম্প্রচারের সময় মীথবাস্টার্স সিদ্ধান্ত দেয় যে এটি প্রকৃতপক্ষে জনশ্রুতি, সত্য নয়। এর স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে অগ্নিসংযোগের জন্য দীর্ঘ সময় এবং ঊজ্জ্বল সূর্যালোকের প্রয়োজনীয়তার দিকে নির্দেশ করা হয়। এছাড়াও বলা হয় যে সিরাকিউজ পূর্বদিক থেকে আক্রান্ত হয়েছিল, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র সকাল বেলার আক্রমণই এ পদ্ধতিতে মোকাবেলা করা সম্ভব। মীথবাস্টার্সে এ কথাও মনে করিয়ে দেয়া হয় যে সেসময় প্রচলিত অন্যান্য অস্ত্র, যেমন অগ্নিসংযোগ করা তীর অথবা ক্যাটাপোল্টের বোল্ট ব্যবহার করে আরো সহজে কোন জাহাজে দূর থেকে অগ্নিসংযোগ করা সম্ভব ছিল। অন্যান্য আবিষ্কার ও উদ্ভাবন যদিও আর্কিমিডিস নিজে লিভার উদ্ভাবন করেননি, তিনিই প্রথম লিভারের কার্যনীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। পাপ্পাস অভ আলেকজান্দ্রিয়ার কথা অনুযায়ী, লিভারের মূলনীতি বোঝাতে গিয়ে আর্কিমিডিস বলেছিলেন, "আমাকে একটা দাঁড়ানোর জায়গা দাও, আমি পৃথিবীকে তুলে সরিয়ে দেব"।Quoted by Pappus of Alexandria in Synagoge, Book VIII প্লুটার্খ ব্যাখ্যা করেছেন আর্কিমিডিস কীভাবে ব্লক-এন্ড-ট্যাকল পুলি ডিজাইন করেন, যা নাবিকদের লিভারের মুলনীতি ব্যবহার করে অনেক ভারী বস্তু সরাতে সাহায্য করে। এছাড়াও আর্কিমিডিস ক্যাটাপোল্টের ক্ষমতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করেন এবং প্রথম পিউনিক যুদ্ধের সময় ওডোমিটার আবিষ্কার করেন। প্রচলিত বিবরণ অনুযায়ী, ওডোমিটার ছিল একটি গীয়ারযুক্ত ঠেলাগাড়ি যা প্রতি মাইল চলার পর একটি পাত্রে ছোট একটি গোলক ফেলে দিত। সিসেরো (খৃষ্টপূর্ব ১০৬ - ৪৩) তার De re publica নামক কাল্পনিক কথোপকথনে আর্কিমিডিসের উল্লেখ করেন। সিরাকিউজ দখলের পর রোমান সেনাপতি মার্কাস ক্লদিয়াস মার্সেলাস রোমে দুটি যন্ত্র নিয়ে যান। এই যন্ত্রগুলির সাহায্যে সূর্য, চাঁদ এবং পাঁচটি গ্রহের স্থান পরিবর্তন দেখানো যেত, যা জ্যোতির্বিদ্যায় ব্যবহৃত হত। একসময় ধারণা করা হত যে এমন যন্ত্র তৈরি করার জন্য যে পরিমাণ যন্ত্রকৌশলগত জ্ঞান থাকা লাগে তা এত প্রাচীনকালে ছিল না, কিন্তু ১৯০২ সালে এন্টিকাইথেরা মেকানিজমের খোঁজ পাওয়ার পর বোঝা যায় যে প্রাচীন গ্রিকদের এসব বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। গণিত যদিও আর্কিমিডিসকে বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কারের জন্য সবচেয়ে বেশি মনে রাখা হয়, কিন্তু তিনি গণিতেও অনেক অবদান রাখেন। প্লুটার্খ লিখেছেন, "তাঁর সমুদয় ভালোবাসা এবং উচ্চাকাঙ্খা ছিল সেসব তাত্ত্বিক বিষয়ের প্রতি যেখানে তাঁকে বাস্তব জীবনের প্রয়োজন নিয়ে মাথা ঘামাতে হতো না।" থাম্ব|ডান|200px|আর্কিমিডিস মেথড অভ এক্সহশন ব্যবহার করে পাইয়ের আসন্ন মান নির্ণয় করেন আর্কিমিডিস বর্তমানে ইন্টিগ্র্যাল ক্যালকুলাসে ব্যবহৃত অতিক্ষুদ্র সংখ্যার ধারণা ব্যবহার করতে সক্ষম ছিলেন। প্রুফ অভ কন্ট্রাডিকশন ব্যবহার করে তিনি নিখুঁতভাবে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারতেন, সেই সাথে সেসব সমাধানের লিমিটও উল্লেখ করতেন। এই পদ্ধতিকে বলা হয় মেথড অভ এক্সহশন, যার সাহায্যে তিনি পাইয়ের মান যথেষ্ট নিখুঁতভাবে নির্ণয় করেন। তিনি এই কাজের জন্য বৃত্তের বাইরে একটি বড় বহুভুজ এবং ভেতরে একটি ছোট বহুভুজ আঁকেন। বহভুজের বাহুর সংখ্যা যত বৃদ্ধি পায়, তা আকৃতিতে বৃত্তের তত কাছাঁকাছি আসতে থাকে। যখন প্রতিটি বহুভুজের ৯৬টি করে বাহু, তিনি বহুগুলির দৈর্ঘ্য নির্ণয় করেন এবং দেখান যে পাইয়ের মান ২২/৭ (প্রায় ৩.১৪২৯) এবং ২২৩/৭১ (প্রায় ৩.১৪০৮) এর মাঝে, যা প্রকৃত মান ৩.১৪১৬ এর খুবই কাছাঁকাছি। তিনি আরও প্রমাণ করেন যে বৃত্তের ক্ষেত্রফল তার ব্যাসার্ধের বর্গের পাই গুণিতকের সমান। অন দ্য স্ফীয়ার এন্ড সিলিন্ডার বইতে তিনি মতবাদ প্রদান করেন যে, যে কোন মানকে তার নিজের সাথে যথেষ্ট সংখ্যক বার যোগ করলে তা যে কোন নির্দিষ্ট মানকে অতিক্রম করবে। এই মতবাদ বাস্তব সংখ্যার আর্কিমিডিয়ান বৈশিষ্ট্য নামে পরিচিত। মেজারমেন্ট অভ সার্কেল বইতে আর্কিমিডিস ৩ এর বর্গমূল ২৬৫/১৫৩ (প্রায় ১.৭৩২০২৬১) এবং ১৩৫১/৭৮০ (প্রায় ১.৭৩২০৫১২) এর মাঝে বলে উল্লেখ করেন, যা প্রকৃত মান ১.৭৩২০৫৮ এর খুবই কাছাঁকাছি। তিনি অবশ্য কোন পদ্ধতিতে এই মান নির্ণয় করেছিলেন সে প্রসঙ্গে কোন কিছুই উল্লেখ করেননি।Quoted in T. L. Heath, Works of Archimedes, Dover Publications, . থাম্ব|ডান|200px|আর্কিমিডিস প্রমাণ করেছেন যে উপরের চিত্রের পরাবৃত্তিক ক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল নিচের চিত্রের অন্তঃস্থ ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফলের ৪/৩ গুণিতকের সমান। কোয়াড্রেচার অভ প্যারাবোলা বইতে আর্কিমিডিস প্রমাণ করেন যে একটি পরাবৃত্ত এবং একটি সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রে ক্ষেত্রফল একই ক্ষেত্রের অন্তঃস্থ ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের ৪/৩ গুণিতকের সমান, যা পাশের চিত্রে দেখানো হয়েছে। তিনি এ সমস্যার সমাধানটিকে একটি অসীম ধারা হিসেবে প্রকাশ করেন যার সাধারণ অণুপাত ১/৪। দ্য স্যান্ড রেকোনার বইতে আর্কিমিডিস এই মহাবিশ্ব মোটা কতগুলো ধূলিকণা ধারণ করতে সক্ষম তা গণনা করার চেষ্টা করেন। এর মাধ্যমে তিনি ধূলিকণার সংখ্যা গণনা করার জন্য অনেক বেশি বড় এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেন। এ সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে তিনি মিরিয়াডের ভিত্তিতে গণনা করার একটি পদ্ধতি বের করেন। মিরিয়াড শব্দটি গ্রিক μυριάς murias থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ১০,০০০। তিনি ১০০ মিলিয়নকে (মিরিয়াডের মিরিয়াড) ভিত্তি করে একটি নাম্বার সিস্টেম প্রস্তাব করেন এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে মহাবিশ্বকে সম্পূর্ণভাবে পূর্ণ করতে ৮ ভিজিনটিলিয়ন ( ৮ x ১০৬৩) ধূলিকণা প্রয়োজন। লেখালেখি আর্কিমিডিস তার কাজের লিখিত রূপের জন্য ডরিক গ্রিক ভাষা ব্যবহার করতেন, যা প্রাচীন সিরাকিউজের আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে প্রচলিত ছিল। .Encyclopedia of ancient Greece By Nigel Guy Wilson Page 77 (2006) আর্কিমিডিসের অধিকাংশ কাজ ইউক্লিডের কাজের মত সংরক্ষিত হয়নি; তার সাতটি থীসিসের কথা জানা যায় কেবলমাত্র অন্যদের কাজের রেফারেন্স থেকে। পাপ্পাস অভ আলেকজান্দ্রিয়া আর্কিমিডিসের "অন স্ফীয়ার মেকিং" এবং বহুতল বিশিষ্ট বস্তুর উপর আরএকটি কাজের কথা উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে থেরন অভ আলেকজান্দ্রিয়া প্রতিসরণ সম্পর্কে আর্কিমিডিসের হারিয়ে যাওয়া একটি লেখনী "Catoptrica" এর উল্লেখ করেন। জীবদ্দশায় আর্কিমিডিস তার কাজের প্রচারের জন্য আলেকজান্দ্রিয়ার গণিতবিদদের উপর নির্ভর করতেন। বাইজান্টাইন স্থপতি ইসিডোর অভ মিলেতাস আর্কিমিডিসের লেখনীগুলোকে একত্রিত করেন; পরবর্তীতে ষষ্ঠ শতকে ইউতোশিয়াস অভ আসকালোন তার কাজের উপর লিখিত বিবরণ প্রকাশ করার পর আর্কিমিডিসের কাজ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। আর্কিমিডিসের কাজ থাবিত ইবনে কুররা (৮৩৬-৯০১ খ্রিষ্টাব্দ) আরবিতে এবং জেরার্ড অভ ক্রেমোনা (১১৪৭-১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দ) ল্যাটিনে অনুবাদ করেন। রেনেসাঁর সময় ১৫৪৪ সালে জোহান হেরওয়াগেন সুইজারল্যান্ডের বাজল শহর থেকে গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষায় আর্কিমিডিসের কাজ সহ এডিটিও প্রিন্সেপস (Editio Princeps) বইয়ের প্রথম সংস্করণ প্রকাশ করেন। ১৫৮৬ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি বাতাস ও পানিতে ধাতব বস্তুর ওজন নির্ণয়ের জন্য একটি হাইড্রোস্ট্যাটিক নিক্তি উদ্ভাবন করেন, যা আর্কিমিডিসের কাজ দ্বারা অণুপ্রাণিত বলে বলা হয়ে থাকে। অক্ষত কাজসমূহ থাম্ব|Archimēdous Panta sōzomena, 1615 থাম্ব|ডান|লিভার সম্পর্কে আর্কিমিডিসের কথিত উক্তি, "আমাকে একটা দাঁড়ানোর জায়গা দাও, আমি পৃথিবীকে তুলে সরিয়ে দেব" অন দ্য ইকুইলিব্রিয়াম অভ প্লেইনস (On the Equilibrium of Planes) (দুই খন্ড) প্রথম খণ্ডে পনেরটি উপপাদ্য আর সাতটি অণুসিদ্ধান্ত রয়েছে, অপরদিকে দ্বিতীয় খণ্ডে দশটি উপপাদ্য পাওয়া যায়। এই বইতে আর্কিমিডিস লিভারের মূলনীতি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, "লিভারের দুই বাহুতে প্রযুক্ত ওজন বাহু দুইটির দৈর্ঘ্যের ব্যস্তানুপাতিক।" এই বইয়ে উল্লিখিত মূলনীতির সাহায্যে আর্কিমিডিস বিভিন্ন জ্যামিতিক আকারের বস্তু, যেমন ত্রিভুজ, সামান্তরিক, পরাবৃত্তের ক্ষেত্রফল এবং ভরকেন্দ্র নির্ণয় করেন। অন দ্য মেজারমেন্ট অভ আ সার্কেল (On the Measurement of a Circle) কোনন অভ সামোস (Conon of Samos) এর ছাত্র ডোসিথিস অভ পেলুসিয়ামের (Dositheus of Pelusium) সাথে যৌথভাবে লিখিত এই নিবন্ধে তিনটি উপপাদ্য রয়েছে। দ্বিতীয় উপপাদ্যে আর্কিমিডিস দেখান যে পাইয়ের মান ২২৩/৭১ এর চেয়ে বড় এবং ২২/৭ এর চেয়ে ছোট। ২২/৭ কে পাইয়ের আসন্ন মান হিসেবে মধ্যযুগে গ্রহণ করা হয় এবং বর্তমানেও অত্যন্ত নিখুঁত হিসাবের প্রয়োজন না থাকলে ২২/৭ কেই পাইয়ের মান হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। "অন স্পাইরালস (On Spirals)" আঠাশটি উপপাদ্য নিয়ে গঠিত এই কাজটিও ডোসিথিসকে উদ্দেশ্য করে লেখা। এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে আর্কিমিডিয়ান স্পাইরালকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, পোলার স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় ("r",θ) স্পাইরালকে নিচের সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়ঃ যেখানে "a" এবং "b" দুটি বাস্তব সংখ্যা। "অন দ্য স্ফীয়ার এ্যাণ্ড দ্য সিলিন্ডার (On the Sphere and the Cylinder)" (দুই খন্ড) ডোসিথিসকে উদ্দেশ্য করে লেখা এই উপপাদ্যে আর্কিমিডিস সমান উচ্চতা এবং ব্যাস বিসিষ্ট গোলক এবং সিলিন্ডারের মধ্যবর্তী সম্পর্ক প্রকাশ করেন। এই উপপাদ্য অনুযায়ী, "r" ব্যাসার্ধবিশিষ্ট গোলক এবং সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে, গোলকের আয়তন πr3 এবং সিলিন্ডারের আয়তন 2πr3। অপরদিকে, গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল 4πr2 এবং সিলিন্ডারের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল 6πr2। গোলকটির আয়তন এবং পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল যথাক্রমে সিলিন্ডারের আয়তন এবং পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলের অংশ। উল্লেখ্য, আর্কিমিডিস নিজের এই কাজটি নিয়ে সর্বাপেক্ষা বেশি গর্ববোধ করতেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অণুরোধে তাঁর সমাধিফলকের উপর একটি গোলক এবং একটি সিলিন্ডার স্থাপন করা হয়। "অন কোনয়েডস এ্যাণ্ড স্পেরোয়েডস (On Conoids and Spheroids)" বত্রিশটি উপপাদ্য সংবলিত এই কাজটিও ডোসিথিয়াসকে উদ্দ্যেশ্য করে লেখা। এতে আর্কিমিডিস কোণক, গোলক এবং পরাবৃত্তিক গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল এবং আয়তন পরিমাপ করেন। "অন ফ্লোটিং বডিজ (On Floating Bodies)" (দুই খন্ড) প্রথম খণ্ডে আর্কিমিডিস প্রবাহী পদার্থের সাম্যাবস্থার সূত্র বিবৃত করেন এবং প্রমাণ করেন যে পানি একটি ভারকেন্দ্রের চারপাশে গোলকীয় আকার ধারণ করবে। তাঁর এই কাজটি সমসাময়িক গ্রিক জ্যোতির্বিদদের (যেমন এরাতোস্থেনিস) "পৃথিবী গোল" মতবাদের ব্যাখ্যা করার চেষ্টা থেকে হয়ে থাকতে পারে। তিনি এমন একটি বিন্দু কল্পনা করেছিলেন যার দিকে সকল পদার্থ পতিত হয় এবং গোলকীয় আকার লাভের চেষ্টা করে। দ্বিতীয় খণ্ডে তিনি পরাবৃত্তিক গোলকের বিভিন্ন অংশের সাম্যাবস্থামূলক অবস্থান পরিমাপ করেন। সম্ভবত তাঁর চেষ্টা ছিল জাহাজের হালের একটি আদর্শ আকৃতি নির্ণয় করা। তাঁর কাজ করা পরাবৃত্তিক গোলকগুলির মধ্যে কিছু তাদের ভূমি পানির নিচে এখন শীর্ষ পানির উপরে রেখে ভাসতে পারতো, যেভাবে হিমশৈল সাগরে ভেসে বেড়ায়। আর্কিমিডিস এই বইয়ে তাঁর প্লবতার নীতি বিবৃত করেন এভাবেঃ "দ্য কোয়াড্রেচার অভ প্যারাবোলা(The Quadrature of the Parabola)" ডোসিথিয়াসকে উদ্দেশ্য করে লেখা চব্বিশটি উপপাদ্য সংবলিত এই রচনায় আর্কিমিডিস দুইটি ভিন্ন পদ্ধতিতে প্রমাণ করেন যে একটি পরাবৃত্ত এবং একটি সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল সমান ভূমি ও উচ্চতাবিশিষ্ট ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের ৪/৩ গুণ। এই প্রমাণের জন্য তিনি একটি জ্যামিতিক ধারার অসীম পর্যন্ত যোগফল নির্ণয় করেন। তথ্যসূত্র আর্কিমিডিসের কাজগুলি অনলাইনে দেখুন প্রাচীন গ্রিকভাষায় লেখা: PDF scans of Heiberg's edition of the Works of Archimedes, now in the public domain ইংরেজি অনুবাদ : The Works of Archimedes, trans. T.L. Heath; supplemented by The Method of Mechanical Theorems, trans. L.G. Robinson আরও জানুন Republished translation of the 1938 study of Archimedes and his works by an historian of science. Complete works of Archimedes in English. বহিঃসংযোগ Archimedes—The Greek mathematician and his Eureka moments—In Our Time, broadcast in 2007 (requires RealPlayer) The Archimedes Palimpsest project at The Walters Art Museum in Baltimore, Maryland The Mathematical Achievements and Methodologies of Archimedes Article examining how Archimedes may have calculated the square root of 3 at MathPages Archimedes On Spheres and Cylinders at MathPages Photograph of the Sakkas experiment in 1973 Testing the Archimedes steam cannon Stamps of Archimedes বিষয়শ্রেণী:খ্রিষ্টপূর্ব ২৮৭-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:খ্রিষ্টপূর্ব ২১২-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:গ্রিক প্রকৌশলী বিষয়শ্রেণী:গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:গ্রিক দার্শনিক বিষয়শ্রেণী:গ্রিক গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:গ্রিক পদার্থবিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:প্রবাহী গতিবিজ্ঞানী
এডওয়ার্ড উইটেন
https://bn.wikipedia.org/wiki/এডওয়ার্ড_উইটেন
এডওয়ার্ড উইটেন () (জন্ম ২৬শে আগস্ট, ১৯৫১) গণিতে ফিল্ড্‌স পদক বিজয়ী একজন মার্কিন গণিতবিদ ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন শহরের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিদ্যালয়ের একজন অবসরোত্তর সাম্মানিক (ইমেরিটাস) অধ্যাপক। উইটেন স্ট্রিং তত্ত্ব, কোয়ান্টাম অভিকর্ষ, অতিপ্রতিসম কোয়ান্টাম ক্ষেত্রে তত্ত্বসমূহে ও গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রের একজন গবেষক। উইটেনের গবেষণাকর্ম বিশুদ্ধ গণিতশাস্ত্রের উপরে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক গণিত সংঘ তাঁকে প্রথম পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে গণিতে ফিল্ডস পদক প্রদান করে। পদার্থবিজ্ঞানে অন্তর্দৃষ্টির জন্য (যেমন সাধারণ আপেক্ষিকতা ক্ষেত্রে ১৯৮১ সালে ধনাত্মক শক্তি উপপাদ্যটির প্রমাণ) এবং জোনসের অপরিবর্তনীয়গুলিকে ফাইনম্যান সমগ্রক হিসেবে ব্যাখ্যা করার জন্য তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তাঁকে কার্যত এম-তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়।Duff 1998, p. 65 জীবনী উইটেন ম্যারিল্যান্ডের বাল্টিমোরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ব্যাচেলর্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ১৯৭৪ সালে এমএ এবং ১৯৭৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার পিএইচডি উপদেষ্টা ছিলেন নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড জোনাথন গ্রস। তিনি ১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত প্রিন্সটনে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিতে উইটেনের মুখ্যপাতা ArXiv-এ সংরক্ষিত উইটেনের প্রকাশনাসমূহ arxiv.org এ উইটেন থিম ট্রি ফিউচারামা পর্বের তথ্য পোপ বেনেডিক্ট XVI কর্তৃক পনটিফিসিয়াল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ উইটেন'কে নিয়োগদান বিষয়শ্রেণী:গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:মার্কিন গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:১৯৫১-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:ফিল্ডস পদক বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:ন্যাশনাল মেডেল অফ সাইন্স বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:আলবার্ট আইনস্টাইন পদক বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:লরেন্টজ মেডেল বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:হার্ভি পুরস্কার বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের বিশিষ্ট সভ্য বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর মার্কিন পদার্থবিদ বিষয়শ্রেণী:ব্র্যান্ডেস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:আমেরিকান ম্যাথমেটিকাল সোসাইটির সভ্য বিষয়শ্রেণী:আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির বিশিষ্ট সভ্য বিষয়শ্রেণী:রয়েল সোসাইটি অব এডিনবার্গের সভ্য বিষয়শ্রেণী:রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য বিষয়শ্রেণী:হার্ভার্ড সভ্য বিষয়শ্রেণী:ইহুদি মার্কিন বিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:জীবিত ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:মার্কিন ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্য বিষয়শ্রেণী:ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য বিষয়শ্রেণী:মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য বিষয়শ্রেণী:প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
জন ভন নিউম্যান
https://bn.wikipedia.org/wiki/জন_ভন_নিউম্যান
জন ভন নিউমান ( ; , [; ২৮শে ডিসেম্বর, ১৯০৩  - ৮ ফেব্রুয়ারি , ১৯৫৭ ) একজন হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান গণিতবিদ, পদার্থবিদ, কম্পিউটার বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং পলিম্যাথ ছিলেন। ভন নিউমানকে সাধারণত তাঁর সময়ের শীর্ষস্থানীয় গণিতবিদ হিসাবে গণ্য করা হত এবং তাকে বলা হত "মহান গণিতবিদদের সর্বশেষ প্রতিনিধি"। তিনি খাঁটি এবং প্রায়োগিক বিজ্ঞানকে সংহত করেছিলেন। ভন নিউমান গণিত ( গণিতের ভিত্তি, কার্যকরী বিশ্লেষণ, এরগোডিক তত্ত্ব, উপস্থাপনা তত্ত্ব, অপারেটর বীজগণিত, জ্যামিতি, টপোলজি এবং সংখ্যাসূচক বিশ্লেষণ ), পদার্থবিজ্ঞান ( কোয়ান্টাম মেকানিক্স, হাইড্রোডাইনামিক্স এবং কোয়ান্টাম স্ট্যাটিস্টিকাল মেকানিক্স ) অর্থনীতি ( গেম তত্ত্ব ), কম্পিউটিং ( ভন নিউম্যান আর্কিটেকচার, লিনিয়ার প্রোগ্রামিং, স্ব-প্রতিলিপি মেশিন, স্টোকাস্টিক কম্পিউটিং ) এবং পরিসংখ্যান সহ অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তিনি কার্যকরী বিশ্লেষণের বিকাশে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জন্য অপারেটর তত্ত্বের প্রয়োগের পথিকৃৎ এবং গেম তত্ত্বের বিকাশ এবং সেলুলার অটোমাতা, সার্বজনীন নির্মাতা এবং ডিজিটাল কম্পিউটারের ধারণাগুলির একজন মূল ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ভন নিউমান তার জীবনের প্রায় দেড় শতাধিক নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন: গণিতে প্রায় ৬০, প্রয়োগিত গণিতে ৬০, পদার্থবিদ্যায় ২০ টি এবং বাকীগলো বিশেষ গাণিতিক বিষয় বা অ-গাণিতিক বিষয়ে। তাঁর শেষ রচনা, তিনি হাসপাতালে থাকাকালীন লিখিত একটি অসম্পূর্ণ পান্ডুলিপি, পরবর্তীকালে দ্য কম্পিউটার এবং ব্রেন নামে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। স্ব-প্রতিরূপের কাঠামো সম্পর্কে তাঁর বিশ্লেষণ ডিএনএর কাঠামো আবিষ্কারের পূর্ববর্তী। তিনি ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ জমা দেয়া তার জীবন সম্পর্কে তথ্যের সংক্ষিপ্ত তালিকায় তিনি লিখেছেন, "আমার যে কাজটি আমি সবচেয়ে জরুরি বলে বিবেচনা করি তা হ'ল কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর, যা ১৯২৬ সালে গ্যাটিনজেন এবং পরে বার্লিনে ১৯২৭–১৯২৯ সালে বিকশিত হয়েছিল। এছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের অপারেটর তত্ত্ব, বার্লিন ১৯৩০ এবং প্রিন্সটন ১৯৩৫-১৯৩৯; অরগোডিক উপপাদ্যে, প্রিন্সটন, ১৯৩১-১৯৩২ সম্পর্কে আমার কাজ।" দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভন নিউমান ম্যানহাটন প্রকল্পে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড টেলার, গণিতবিদ স্ট্যানিসলাউ উলাম এবং অন্যদের সাথে, থার্মোনিউক্লিয়াল বিক্রিয়ায় জড়িত পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের সমস্যা সমাধানের মূল পদক্ষেপ এবং হাইড্রোজেন বোমা নিয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি প্রসারণ-ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহৃত বিস্ফোরক লেন্সগুলির পিছনে গাণিতিক মডেলগুলি তৈরি করেছিলেন এবং উৎপন্ন বিস্ফোরক শক্তির পরিমাপ হিসাবে "কিলোটন" ( টিএনটি-এর) শব্দটি তৈরি করেছিলেন। যুদ্ধের পরে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সাধারণ উপদেষ্টা কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনীর ব্যালিস্টিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি, সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ অস্ত্র প্রকল্প এবং লরেন্স লিভারমোর জাতীয় পরীক্ষাগার সহ সংস্থাগুলির জন্য পরামর্শ দেন। হাঙ্গেরীয় আমেরিকান হিসাবে যে সোভিয়েতরা পারমাণবিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি অস্ত্রের সীমাবদ্ধ করার জন্য পারস্পরিক আশ্বাসপ্রাপ্ত ধ্বংসের নীতিটি তৈরি ও প্রচার করেছিলেন। প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা পারিবারিক ইতিহাস থাম্ব|ভন নিউমানের জন্মস্থান, বুদাপেস্টের ১৬ বেথরি স্ট্রিটে। ১৯৬৮ সাল থেকে, এটি জন ফন নিউম্যান কম্পিউটার সোসাইটি স্থাপন করেছে। এক ধনী, সমৃদ্ধ এবং অ-পর্যবেক্ষক ইহুদি পরিবারে নিউম্যান জ্যানোস লাজোসের জন্ম হয়েছিল। হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় পরিবারের নামটি প্রথমে আসে এবং তাঁর প্রদত্ত নামগুলি ইংরেজিতে জন লুইসের সমতুল্য। ভন নিউমানের জন্ম হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে, যা তখন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। তিনি তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন; তাঁর দুই ছোট ভাইবোন হলেন মিহলি (ইংরেজি: মাইকেল ভন নিউমানান; ১৯০৭-১৯৮৯) এবং মিক্লাস (নিকোলাস ভন নিউমান, ১৯১১-২০১১)। তাঁর পিতা, নিউমান মিক্সা (ম্যাক্স ভন নিউমান, ১৮৭৩–১৯২৮) একজন ব্যাংকার ছিলেন, যিনি আইন বিষয়ে ডক্টরেট করেছিলেন। তিনি ১৮৮০ এর দশকের শেষে প্যাকস থেকে বুদাপেস্টে চলে এসেছিলেন। মিক্সার বাবা এবং দাদা দু'জনেরই উত্তর হাঙ্গেরির জেম্প্লেন কাউন্টি ওন্ডে (বর্তমানে সেজেরেন্স শহরের অংশ) জন্ম হয়েছিল। জন এর মা ছিলেন কান মার্গিট (ইংরেজি: মার্গারেট কান); তার বাবা-মা ছিলেন জাকব কান এবং মাইসেলস পরিবারের কাতালিন মিজেলস। কান পরিবারের তিন প্রজন্ম বুদাপেস্টে কান-হেলারের অফিসের উপরে প্রশস্ত অ্যাপার্টমেন্টে বাস করত; ভন নিউমানের পরিবার উপরের তলায় একটি ১৮ কক্ষের অ্যাপার্টমেন্টে থাকত। ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৩ এ সম্রাট ফ্রানজ জোসেফ জন পিতাকে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যে তাঁর কাজের জন্য হাঙ্গেরিয়ান আভিজাত্যের দিকে উন্নীত করেছিলেন। নিউমান পরিবার এভাবে বংশানুক্রমিকমার্গিটটাই অর্জন করেছিল, যার অর্থ "মার্গিট্টা" (আজকের মারঘিটা, রোমানিয়া )। শহরের সাথে পরিবারের কোনও যোগাযোগ ছিল না; মার্গারেটের প্রসঙ্গে এই আবেদনটি বেছে নেওয়া হয়েছিল, যেমনটি তাদের বেছে নেওয়া তিনটি মার্গুইরাইট চিত্রযুক্ত কোট। নিউমান জানোস মার্গিটটাই নিউউম্যান জানোস (জন নিউম্যান ডি মারজিটা) হয়েছিলেন, যা থেকে পরে তিনি জার্মান জোহান ফন নিউমানের হয়ে ওঠেন। শিশু বয়সেই পরম বিস্ময়কর ব্যক্তি ভন নিউমান একটি শিশু বয়স থেকেই পরম বিস্ময়কর ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যখন ছয় বছর বয়সী ছিলেন, তখন তিনি মাথার মধ্যেই দুটি আট-অঙ্কের সংখ্যা ভাগ করতে পারতেন এবং প্রাচীন গ্রিক ভাষায় কথা বলতে পারেন। ছয় বছর বয়সী ভন নিউমান যখন তার মাকে লক্ষ্যহীনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "আপনি কী হিসাব করছেন?"। তারা যখন ছোট ছিল, পরিচারিকারা ভন নিউমন, তার ভাই এবং তার চাচাত ভাইদের শিক্ষা দিত। ম্যাক্স বিশ্বাস করতেন যে হাঙ্গেরিয়ান ছাড়াও অন্য ভাষার জ্ঞানও অপরিহার্য, তাই বাচ্চাদের ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান এবং ইতালীয় ভাষাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। আট বছর বয়সের মধ্যে ভন নিউউমন ডিফারেনশিয়াল এবং অবিচ্ছেদ্য ক্যালকুলাসের সাথে পরিচিত ছিলেন, তবে তিনি ইতিহাসে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। তিনি মাধ্যমে তার উপায় পড়া উইলহেম ওঙ্কেন এর আইনজেল্ডারস্টেলুঞ্জেনে এলজেমাইন গেসিচিট এর ৪৬টি ভলিয়ম পড়েছিলেন। ম্যাক্সের ক্রয় করা একটি অনুলিপি একটি ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে ছিল। অ্যাপার্টমেন্টের একটি কক্ষ একটি লাইব্রেরি এবং পাঠকক্ষে রূপান্তরিত হয়েছিল, যেখানে সিলিং থেকে মেঝে পর্যন্ত বইয়ের তাক ছিল। ভন নিউমানান ১৯১৪ সালে লুথেরান ফ্যাসরি এভাঙ্গালিকাস জিমনজিয়ামে প্রবেশ করেছিলেন।Aspray, William (1990). John von Neumann and the Origins of Modern Computing. Cambridge, Massachusetts: MIT Press. . ইউজিন উইগনার লুথেরান স্কুলে ভন নিউমানের এক বছর আগে ছিলেন এবং শীঘ্রই তাঁর বন্ধু হন। এটি বুদাপেস্টের অন্যতম সেরা স্কুল এবং এটি অভিজাতদের জন্য নকশাকৃত একটি উজ্জ্বল শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ ছিল। হাঙ্গেরীয় সিস্টেমের অধীনে, শিশুরা তাদের সমস্ত শিক্ষা একটি জিমনেসিয়ামে পেয়েছিল। হাঙ্গেরিয়ান স্কুল ব্যবস্থা বৌদ্ধিক কৃতিত্বের জন্য খ্যাতিযুক্ত একটি প্রজন্ম তৈরি করেছিল, যার মধ্যে থিওডোর ভন কার্মেন (জন্ম ১৮৮১), জর্জ ডি হেভেসি (জন্ম ১৮৮৫), মাইকেল পোলানাই (জন্ম ১৮৯১), লে লে সিজিলার্ড (জন্ম ১৮৯৮), ডেনিস গ্যাবার (জন্ম ১৯০০), ইউজিন উইগনার (জন্ম ১৯০২), এডওয়ার্ড টেলার (জন্ম ১৯০৮), এবং পল এরদেস (জন্ম ১৯১৩)। সম্মিলিতভাবে, তারা কখনও কখনও " দ্যা মার্শিয়ান " নামে পরিচিত ছিল। যদিও ম্যাক্স তার বয়সের উপযুক্ত গ্রেড স্তরে ভন নিউমানকে স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য জোর দিয়েছিল, তবে তিনি যে অঞ্চলে ছিলেন সেখানে তাকে প্রাইভেট টিউটর নিয়োগের বিষয়ে সম্মত হন। ১৫ বছর বয়সে, তিনি বিশিষ্ট বিশ্লেষক গ্যাবার সেজিগের অধীনে উন্নত ক্যালকুলাস অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন। প্রথম সাক্ষাতে, ছেলের গাণিতিক প্রতিভার সাথে সেজিগ এতটাই অবাক হয়েছিলেন যে তিনি অশ্রুসিক্ত হয়েছিলেন। ভন নিউমানের ক্যালকুলাসে যে সমস্যাগুলির উদ্ভব হয়েছিল তার কয়েকটির তাৎক্ষ্ণিক সমাধান তার বাবার স্টেশনারিতে আঁকা এবং এখনও বুদাপেস্টের ভন নিউমান আর্কাইভে প্রদর্শিত হচ্ছে। ১৯ বছর বয়সে ভন নিউমান দু'টি বড় অঙ্কের গাণিতিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন, এর মধ্যে দ্বিতীয়টি অর্ডিনাল সংখ্যার আধুনিক সংজ্ঞা দেয় যা গেয়র্গ ক্যান্টরের সংজ্ঞাটিকে বহিষ্কার করে। জিমনেসিয়ামে তাঁর পড়াশোনা শেষে ভন নিউউমন গণিতের জন্য জাতীয় পুরস্কার এটভিস পুরস্কার জিতেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা তাঁর বন্ধু থিওডোর ভন কার্মানের মতে, ভন নিউমানের বাবা চেয়েছিলেন যে জন তাকে শিল্পে অনুসরণ করে এবং এর মাধ্যমে তার সময় গণিতের চেয়ে আরও আর্থিকভাবে কার্যকর প্রচেষ্টাতে ব্যয় করতে পারে। আসলে, তার বাবা ভন কার্মন তার ছেলেকে গণিতকে তার প্রধান হিসাবে গ্রহণ না করার জন্য রাজি হবার জন্য বলেছিলেন।von Kármán, T., & Edson, L. (1967). The wind and beyond. Little, Brown & Company. ভন নিউমান এবং তাঁর বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে সেরা ক্যারিয়ারের পথটি একজন রাসায়নিক প্রকৌশলী হওয়া। ভন নিউমানের এ বিষয়ে তেমন জ্ঞান ছিল না, তাই তাকে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নে দুই বছর, নন-ডিগ্রি কোর্স করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, এরপরে তিনি সম্মানজনক ইটিএইচ জুরিখের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন, যা তিনি ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বরে পাস করেছিলেন। একই সময়ে ভন নিউমানও বুদাপেস্টের পজমেনি পেটার বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে পিএইচডি করতে যান। তাঁর থিসিসের জন্য, তিনি ক্যান্টরের সেট তত্ত্বটির একটি অডিওম্যাটাইজেশন তৈরি করতে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি ১৯২৬ সালে ইটিএইচ জুরিখ থেকে রাসায়নিক প্রকৌশলী হিসাবে স্নাতক হন (যদিও উইগনার বলেছেন যে ভন নিউম্যান কখনও রসায়ন বিষয়ের সাথে খুব বেশি সংযুক্ত ছিলেন না),The Collected Works of Eugene Paul Wigner: Historical, Philosophical, and Socio-Political Papers. Historical and Biographical Reflections and Syntheses, By Eugene Paul Wigner, (Springer 2013), page 128 এবং পিএইচডি করার জন্য তাঁর শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। গণিতে একই সাথে তার রাসায়নিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির সাথে, যার মধ্যে উইগনার লিখেছিলেন, "সম্ভবত পিএইচডি থিসিস এবং পরীক্ষা একটি প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা গঠন করেনি।" এরপরে তিনি রকিফেলার ফাউন্ডেশনের ডেভিড হিলবার্টের অধীনে গণিত অধ্যয়নের জন্য অনুদানে গুটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। গ‍্যালারি থাম্ব| ফ্রেডরিচ-উইলহেমস-ইউনিভার্সিটি বার্লিনের ১৯২৮ এবং ১৯২৮ / ২৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যালেন্ডার থেকে উদ্ধৃত অংশটি নিউমেনের বক্তৃতাগুলিকে অ্যাক্টিওমেটিক সেট তত্ত্ব এবং গাণিতিক যুক্তি, কোয়ান্টাম মেকানিক্সে নতুন কাজ এবং গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানের বিশেষ কার্যাদি ঘোষণা করে। সম্মাননা ডান|থাম্ব|240x240পিক্সেল| ভন নিউমন খন্দক, চাঁদের খুব দূরের অংশে। অপারেশনস রিসার্চ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের জন ভন নিউমন থিয়োরি পুরস্কার (আইএনএফওএমএস, পূর্বে টিআইএমএস-ওআরএসএ) অপারেশন গবেষণা এবং পরিচালন বিজ্ঞানের তত্ত্বের ক্ষেত্রে মৌলিক এবং টেকসই অবদান রেখেছেন এমন একজন ব্যক্তিকে (বা গোষ্ঠী) বার্ষিক পুরস্কার দেওয়া হয়। কম্পিউটার সম্পর্কিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অসামান্য সাফল্যের জন্য আইইইই জন ভন নিউমন মেডেল প্রতি বছর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইইই) ইনস্টিটিউট কর্তৃক ভূষিত করা হয়।" জন ভন নিউমান লেকচারটি প্রতি বছর সোসাইটি ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিক্সে (এসআইএএম) দেওয়া হয় এমন একজন গবেষক যিনি প্রায়োগিক গণিতে অবদান রেখেছিলেন এবং নির্বাচিত প্রভাষককে একটি আর্থিক পুরস্কারও দেওয়া হয়। চাঁদের ক্রেটার ভন নিউমন তার নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে। গ্রহাণু ২২৮২৪ ভন নিউমান তার সম্মানে নামকরণ করা হয়েছিল। নিউ জার্সির প্লিনসবোরো টাউনশিপের জন ভন নিউমন সেন্টারকে তার সম্মানে নামকরণ করা হয়েছিল। হাঙ্গেরীয় কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের পেশাদার সমাজ, জন ভন নিউম্যান কম্পিউটার সোসাইটির নাম ভন নিউমানের নামে রাখা হয়েছিল। এটি ১৯৮৯ সালের এপ্রিলে বন্ধ ছিল। ৪ মে, ২০০৫ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাক পরিষেবা আমেরিকান বিজ্ঞানীদের স্মারক ডাকটিকিট সিরিজ জারি করে, শিল্পী ভিক্টর স্টাবিনের নকশাকৃত বেশ কয়েকটি কনফিগারেশনে চারটি ৩৭-স্ব স্ব আঠালো স্ট্যাম্পের সেট। চিত্রিত বিজ্ঞানীরা হলেন ভন নিউম্যান, বারবারা ম্যাকক্লিনটক, জোসিহিয়া উইলার্ড গিবস এবং রিচার্ড ফেনম্যান। রাজক লসল্লি কলেজ ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের জন ভন নিউমান অ্যাওয়ার্ডটি তাঁর সম্মানে নামকরণ করা হয়েছিল এবং ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর এমন প্রফেসরদের দেওয়া হয় যারা সঠিক সামাজিক বিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রেখেছিল এবং তাদের কাজের মধ্য দিয়ে পেশাদার বিকাশের উপর দৃঢ়ভাবে প্রভাব ফেলেছে এবং কলেজ সদস্যদের চিন্তা। কেকস্কেমেট কলেজের একটি উত্তরাধিকারী হিসাবে হাঙ্গেরিতে ২০১৬ সালে জন ভন নিউম্যান বিশ্ববিদ্যালয় ( হু: নিউম্যান জেনোস এগিইয়েটেম ) স্থাপিত হয়।John von Neumann University নির্বাচিত কাজ ১৯২৩। স্থানান্তরিত নম্বরগুলির প্রবর্তনের সময়, ৩৪৬-৫৪। ১৯২৫। সেট তত্ত্বের একটি অডিওম্যাটাইজেশন, ৩৯৩-৪১৩। ১৯৩২। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের গাণিতিক ভিত্তি, বায়ার, আরটি, ট্রান্স।, প্রিন্সটন ইউনিভ। টিপুন। ১৯৯৬ সংস্করণ:। ১৯৩৭। ১৯৪৪। থিওরি অফ গেমস এবং ইকোনমিক আচরণ, মরগেনস্টার্ন, ও।, প্রিন্সটন ইউনিভ সহ। সংরক্ষণাগার ..org এ অনলাইনে চাপুন। ২০০৭ সংস্করণ:। ১৯৪৫। ইডিভিএসি-তে একটি প্রতিবেদনের প্রথম খসড়া ১৯৪৮। "আচরণের সেরিব্রাল মেকানিজমে: " অটোমেটার সাধারণ এবং যৌক্তিক তত্ত্ব : হিকসন সিম্পোজিয়াম, জেফ্রেস, এলএ এড।, জন উইলে অ্যান্ড সন্স, নিউ ইয়র্ক, এন। ওয়াই, ১৯৫১, পিপি। ১-৩১, এমআর ০০৪৫৪৪৬। ১৯৯৬০। ১৯৬৩। জন ভন নিউমান, সংগৃহীত রচনাগুলি, তাউব, এএইচ, এডি।, পেরগ্যামন প্রেস।আইএসবিএন 0-08-009566-6 ১৯৬৬। ইলিনয় প্রেস ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় প্রেসের আত্ম-প্রজনন অটোমাতা, বার্কস, এডাব্লু, এডি।আইএসবিএন 0-598-37798-0 আরও দেখুন মন্তব্য তথ্যসূত্র আরও পড়ুন বই জনপ্রিয় সাময়িকী Good Housekeeping Magazine, September 1956, "Married to a Man Who Believes the Mind Can Move the World" ভিডিও John von Neumann, A Documentary (60 min.), Mathematical Association of America বহিঃসংযোগ গুগল স্কলারে ভন নিউমানের প্রোফাইল অ্যালিস আর বার্কস এবং আর্থার ডব্লু বার্কস, চার্লস ব্যাবেজ ইনস্টিটিউট, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিনিয়াপলিসের সাথে মৌখিক ইতিহাসের সাক্ষাৎকার। এলিস বার্কস এবং আর্থার বার্কস এনিয়াক, এডভ্যাক, এবং আইএএস কম্পিউটারগুলি এবং কম্পিউটার উন্নয়নে জন ভন নিউমানের অবদানের বর্ণনা দিয়েছেন। মিজিনিপিসের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্লস ব্যাবেজ ইনস্টিটিউট ইউজিন পি। উইগনারের সাথে মৌখিক ইতিহাস সাক্ষাৎকার। মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্লস ব্যাবেজ ইনস্টিটিউট নিকোলাস সি মেট্রোপলিসের সাথে মৌখিক ইতিহাসের সাক্ষাৎকার। ভন নিউমান বনাম ডাইরাক - দর্শনশাস্ত্রের স্ট্যানফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে বিষয়শ্রেণী:গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিষয়শ্রেণী:মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য বিষয়শ্রেণী:রয়্যাল নেদারল্যান্ডস কলা ও বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য বিষয়শ্রেণী:ইহুদি উদ্ভাবক বিষয়শ্রেণী:ইহুদি মার্কিন বিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:হাঙ্গেরীয় গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:হাঙ্গেরীয় ইহুদি বিষয়শ্রেণী:হাঙ্গেরীয় উদ্ভাবক বিষয়শ্রেণী:আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির বিশিষ্ট সভ্য বিষয়শ্রেণী:এনরিকো ফের্মি পুরস্কার প্রাপক বিষয়শ্রেণী:মার্কিন রোমান ক্যাথলিক বিষয়শ্রেণী:মার্কিন নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:১৯৫৭-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:১৯০৩-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:অপর্যালোচিত অনুবাদসহ পাতা বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর মার্কিন গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর মার্কিন পদার্থবিদ বিষয়শ্রেণী:কম্পিউটার বিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:প্রবাহী গতিবিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:ইহুদি সমাজতান্ত্রিক বিরোধী বিষয়শ্রেণী:গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:মার্কিন ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্য বিষয়শ্রেণী:কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:মানসিক গণনাকারী
এভারিস্ত গালোয়া
https://bn.wikipedia.org/wiki/এভারিস্ত_গালোয়া
এভারিস্ত গালোয়াএই ফরাসি ব্যক্তিনামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপেডিয়া:বাংলা ভাষায় ফরাসি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ-এ ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। (ফরাসি ভাষায়: Évariste Galois) (অক্টোবর ২৫, ১৮১১ - মে ৩১, ১৮৩২) একজন ফরাসি গণিতবিদ। তিনি গ্রুপ থিওরীর প্রবর্তন করেন। তিনি একটি মাত্র চিঠিতে (কোশির কাছে লেখা) প্রমাণ করেন যে, পঞ্চম বা তার বেশি মাত্রার বহুপদীর সাধারণ সমাধান মূলকের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আবিষ্কারটি যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তিনি যে উপায়ে প্রমাণ করেন সেই উপায়টি। গ্যালোয়ার জন্ম ২৫ অক্টোবর, ১৮১১। তাঁর বয়স যখন ১৪ তখন প্রথমবারের মত পরিচয় ঘটে গণিতের সাথে। যেদিন প্রথম ক্লাসে গণিত পড়ানো হয়, তাঁর মধ্যে যেন একটা বিপর্যয় ঘটে যায়। তিনি গণিতে এতই মজে ছিলেন যে, অন্য সব কিছু পড়া একেবারে ছেড়ে দিলেন। সব কিছুতে খুব খারাপ করতে লাগলেন। আগে তেমন খারাপ ছাত্র ছিলেন না, ল্যাটিন ভাষায় দক্ষতার জন্য পুরস্কারও পেয়েছিলেন, কিন্তু এখন অন্য বিষয়গুলোতে তাঁর পাশ করা বেশ কঠিন হয়ে গেল। গণিত চর্চায় এতই এগিয়েছিলেন যে তাঁর হঠাৎ মনে হওয়া শুরু হলো, গণিতে তাকে শেখানোর মতো স্কুলের শিক্ষকদের কাছে আর অবশিষ্ট কিছুই নেই। ফলে নিজেই নিজের মত বই কিনে গণিত চর্চা শুরু করলেন। কিন্তু এইবার ভিন্ন সমস্যা শুরু হল। গ্যালোয়া যেই পরিমাণে গণিত বুঝেন, সেই পরিমাণ গণিত আসলে তাঁর শিক্ষকরাও বুঝতেন না। ফলে পরীক্ষার খাতায় গ্যালোয়া যা উত্তর করেন তাঁর কিছুই তাঁদের বোধগম্য হয় না। এবার গ্যালোয়া গণিতেও খারাপ করা শুরু করলেন। ১৮২৮ সালে তিনি École Polytechnique নামক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেন। এটা ছিলো গণিতের জন্য তৎকালীন ফ্রান্সের সবচেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে তিনি পড়ে ফেলেছেন Adrien Marie Legendre' এর Éléments de Géométrie, Joseph Louis Lagrange এর Réflexions sur la résolution algébrique des équations (এটি পরবর্তিতে তাঁকে ইকুয়েশন থিওরীতে কাজ করতে আগ্রহী করে তোলে), Leçons sur le calcul des fonctions ইত্যাদি। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় গিয়ে তিনি পরীক্ষকদের কোনো প্রশ্নের উত্তরেই সন্তুষ্ট করতে পারলেন না। আসলে তিনি তাঁদেরকে উত্তর এমন অল্প কথায় ব্যাখ্যা ছাড়া দিয়েছিলেন যে কেউ তা বুঝতে পারেনি। ফলে তিনি École Polytechnique তে ভর্তি হতে ব্যর্থ হন। পরে সেই বছর তিনি অপেক্ষাকৃত নিম্ন র‍্যাংকিং এর বিশ্ববিদ্যালয় École préparatoire তে ভর্তি হন। স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ব্যর্থ গ্যালোয়া তাঁর সমস্ত জিদ যেন ঢেলে দেন গণিতের উপরে। তুমুল উৎসাহে মেতে ওঠেন ত্রিঘাত, চতুর্ঘাত আর পঞ্চঘাত সমীকরনে। ১৮২৯ সালে তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশ হয় Annales de mathematiques এ continuous fraction এর উপরে। অনেক পরিশ্রম করে ২টি রিসার্চ পেপার তৈরি করে জমা দেন Academy of Sciences এ। তখন Academy of Sciences এর প্রধান ছিলেন বিখ্যাত গণিতবিদ Augustin Louis Cauchy। তিনি পেপার দুটির নিজেই সুপারিশ করেছিলেন, একই সাথে তিনি গ্যালোয়ার কাছে পেপার দুটি ফেরত পাঠান পুনর্বিন্যাস ও ব্যাখ্যা করে লেখার জন্য। বছর ঘুরতেই (১৮২৯) রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গ্যালোয়ার বাবা আত্মহত্যা করেন। পিতার মৃতদেহ সৎকার করে গ্যালোয়া প্যারিস ফিরলেন, অসমাপ্ত কাজ শেষ করে তার পেপার দুটি জমা দিলেন একাডেমির সেক্রেটারি স্যার জসেফ ফুরিয়ারে কাছে। কিন্তু সেবার গ্যালোয়া পুরস্কার পান নি। পুরস্কার ঘোষণার কিছু দিন আগে ফুরিয়ার মারা যান এবং তার পেপার যে জমা হয়েছে এমন কোন ডকুমেন্টের অস্তিত্বই ছিল না। ফলে রাজনৈতিক কারণে গ্যালোয়ার পেপার গায়েব হয়েছে বলে তাঁর সন্দেহ হয়। এই সন্দেহ পুরোপুরি বাস্তবে প্রমাণিত হলো যখন অযৌক্তিক ও অবোধ্য এর খোড়া যুক্তি দেখিয়ে একাডেমি অফ সায়েন্স তার একাধিক গবেষণাপত্র ফেরত পাঠায় (১৮৩০)। সে বছর গ্যালোয়া মোট ৩টি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন, যার মধ্যে একটি বিখ্যাত Galois theory এর ভিত্তি গড়ে দেয়, অন্য দুইটি ছিল আধুনিক উপায়ে সমীকরনের মুল নির্ণয় সম্পর্কিত এবং নাম্বার থিওরি নিয়ে। শেষোক্তটি বেশ গুরুত্ববাহি, কারণ finite field এর ধারণা প্রথম এখানেই পাওয়া যায়। সে বছর গ্যালোয়া তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টরকে গালিগালাজ করে একটি প্রতিবেদন লেখেন। ডিরেক্টর ছিলেন প্রজাতন্ত্রের সমর্থক। সুতরাং তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয় । এরপর তিনি যেন পুরোই উচ্ছনে গেলেন। বছর ঘুরতেই (১৮৩১) মদ আর সন্ত্রাস তার নিত্যসঙ্গী হয়ে যায়। কখনও চাকু হাতে সম্রাটকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন খোলা রাস্তায়, তো পরক্ষনে গ্রেফতার। ছাড়া পেয়ে আবার নিষিদ্ধ ন্যাশনাল গার্ডের পোশাক পরে রাস্তায় বের হলে তাঁর জেল হয়ে যায়। এক মাস পর গ্যালোয়া জেল থেকে ছাড়া পান। কিছুদিন পর তাঁর প্রনয়ের খবর চাঊর হয়ে যায়, প্রেয়সী স্টাফানি ফেলিসি। স্টাফানি এক বিখ্যাত ডাক্তারের মেয়ে, প্যারিসের এক সম্ভ্রান্ত বংশের ছেলে পেশ্চু ডি’হেরবিনভিল এর বাগদত্তা। পেশ্চু এই ঘটনায় খুব রেগে গেলেন। অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে শুটিং ডুয়েলের চ্যালেঞ্জ দেন গ্যালোয়াকে। ডুয়েলের আগের রাতে (১৮৩২) নিজের মৃত্যু সম্পর্কে গ্যালোয়া এতই নিশ্চিত ছিলেন যে সারারাত জেগে তার থিওরেমগুলো লিখে ফেলেন। তাঁর সে রাতের কাজের মধ্যে দিয়ে আলোর মুখ দেখে গ্রুপ থিওরি। সাথে একটি চিঠি লিখেন যে তাঁর যদি পরদিন ডুয়েলে মৃত্যু হয়, তাহলে যেন তাঁর কাজগুলোকে ইউরোপের বড় বড় গণিতবিদদের কাছে পৌছে দেওয়া হয়। পরদিন, ৩০ মে ১৮৩২ সাল, ডুয়েলে গ্যালোয়াকে নিখুঁত নিশানায় ভুলুন্ঠিত করে পেশ্চু। ৩১ মে মৃত্যু হয় গ্যালোয়ার। কিন্তু মাত্র একরাতে গ্যালোয়া যা লিখছিলেন তার মর্ম উদ্ধার করতে গাউস, জ্যাকোবিদের অনেক গলদঘর্ম হতে হয়েছে। গ্যালোয়ার মৃত্যুর ১৪ বছর পর, ১৮৪৬ সালে লিউভিল সেই কাগজগুলো থেকে যে থিওরি উদ্ধার করেন তা তিনি গ্যালোয়ার থিওরি নামে প্রকাশ করেন। তাঁর কাজের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে গ্যালোয়া থিওরি এবং গ্রুপ থিওরি, যা কিনা বিমূর্ত বীজগণিত এর দুটি প্রধান শাখাঁ। তথ্যসূত্র পাদটীকা বিষয়শ্রেণী:গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:ফরাসি গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:১৮১১-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৮৩২-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:১৯শ শতাব্দীর ফরাসি গণিতবিদ
রিচার্ড হ্যামিং
https://bn.wikipedia.org/wiki/রিচার্ড_হ্যামিং
রিচার্ড হ্যামিং (ফেব্রুয়ারি ১১, ১৯১৫ – জানুয়ারি ৭, ১৯৯৮) একজন মার্কিন গণিতবিদ ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী। শিক্ষাজীবন তিনি ১৯৩৭ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর্স ডিগ্রি, ১৯৩৯ সালে নেব্রেস্কা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ১৯৪২ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। টুরিং পুরস্কার, অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং মেশিনারি, ১৯৬৮. ফেলো অব দ্য ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স, 1968. IEEE Emanuel R. Piore Award, 1979. মেম্বার অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমী অব ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৯৮০. Harold Pender Award, University of Pennsylvania, 1981. IEEE Richard W. Hamming Medal, 1988. ফেলো অব দ্য অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং মেশিনারি, ১৯৯৪. Basic Research Award, Eduard Rhein Foundation, 1996. Certificate of Merit, Franklin Institute, 1996 তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:১৯১৫-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৯৯৮-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্সের সভ্য বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর মার্কিন গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:নিউ ইয়র্কের সিটি কলেজের অনুষদ বিষয়শ্রেণী:অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং মেশিনারির সভ্য বিষয়শ্রেণী:টুরিং পুরস্কার বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
জাক আদামার
https://bn.wikipedia.org/wiki/জাক_আদামার
thumb|জাক আদামার জাক আদামারএই ফরাসি ব্যক্তিনামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় ফরাসি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ-এ ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। () (ডিসেম্বর ৮, ১৮৬৫ – অক্টোবর ১৭, ১৯৬৩) একজন ফরাসি গণিতবিদ। তিনি ১৮৯৬ সালে করা তার মৌলিক সংখ্যা উপপাদ্যের প্রমাণের জন্য বিখ্যাত। পাদটীকা বিষয়শ্রেণী:গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:১৮৬৫-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৯৬৩-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:ফরাসি গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:১৯শ শতাব্দীর ফরাসি গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিষয়শ্রেণী:ফরাসি নাস্তিক বিষয়শ্রেণী:ইহুদি নাস্তিক বিষয়শ্রেণী:ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য বিষয়শ্রেণী:রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য বিষয়শ্রেণী:রয়্যাল নেদারল্যান্ডস কলা ও বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য বিষয়শ্রেণী:পাঠ্যপুস্তক লেখক
ডাভিড হিলবের্ট
https://bn.wikipedia.org/wiki/ডাভিড_হিলবের্ট
ডাভিড হিলবের্টএই জার্মান ব্যক্তি বা স্থাননামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় জার্মান শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ শীর্ষক রচনাশৈলী নিদের্শিকাতে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। ( ডাভ়িট্‌ হিল্‌বেয়াট্‌, জানুয়ারি ২৩, ১৮৬২ - ফেব্রুয়ারি ১৪, ১৯৪৩) একজন জার্মান গণিতবিদ, যাঁকে ঊনবিংশ শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগের সবচেয়ে প্রভাবশালী গণিতবিদদের অন্যতম হিসাবে গণ্য করা হয়। ফরাসি গণিতবিদ অঁরি পোয়াঁকারের সাথে হিলবের্টকে গাণিতিক বিশ্বজনীনবাদীদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। হিলবের্ট গণিতের বিভিন্ন শাখায় অবদান রেখেছেন, যেমন অব্যয় তত্ত্ব (Invariant theory), হিলবের্টের প্রস্তাবনা, এবং হিলবার্ট জগতের ধারণা। তিনি বিশুদ্ধ গণিতের বিভিন্ন শাখা যেমন বীজগণিত, সংখ্যাতত্ত্ব, জ্যামিতি, ব্যবকলন সমীকরণসমূহ ও ব্যবকলনীয় বিশ্লেষণ, যুক্তিবিজ্ঞান ও গণিতের ভিত্তি, ইত্যাদিতে অবদান রাখেন। তিনি প্রমাণ তত্ত্ব ও গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞানের অন্যতম স্রষ্টা এবং গেয়র্গ কান্টরের সেট তত্ত্বের সমর্থক। ১৮৯৯ সালে তিনি গ্রুন্ডলাগেন ডের গেওমেট্রিক ("জ্যামিতির মৌলিক ধারণাসমূহ") নামের একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যাতে ১৯শ শতকের শেষে জ্যামিতি অধ্যয়নে যে পরিবর্তনগুলি এসেছিল, তা লিপিবদ্ধ আছে। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ২৩টি অমীমাংসিত গাণিতিক সমস্যার একটি তালিকা প্রদান করেন, যার নাম হিলবের্টের সমস্যাতালিকা। তালিকাটি বিংশ শতকের গাণিতিক গবেষণার দিক নির্দেশনা করেছে। এগুলির অনেকগুলির জন্য আজও সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়নি। হিলবের্ট তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ব্যাপারেও আগ্রহী ছিলেন। হিলবের্ট ও তার ছাত্ররা কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান ও সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্যবহৃত গণিত উদ্ভাবন করে গেছেন। হিলবের্ট পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্বগুলির স্বতঃসিদ্ধ নির্মাণের যে প্রকল্পটি পরিচালনা করেন, তার ফলে গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের মধ্যে যোগসূত্র রচিত হয়। হিলবের্ট ও আইনস্টাইনের মধ্যে আলোচনার সূত্র ধরেই ১৯১৫ সালে মহাকর্ষের ক্ষেত্র সমীকরণগুলির সূত্রায়ন সম্ভব হয়। হিলবের্ট ১৮৬২ সালে ভেলাউ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্যোনিগসবের্গ ও হাইডেলবের্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৮৮৫ সালে তিনি ডক্টরেট সনদ লাভ করেন। ১৮৯৫ সালে তিনি গোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৩০ সালে অবসরগ্রহণের আগ পর্যন্ত সেখানেই কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। জীবন প্রথম জীবন এবং শিক্ষা অটো ও মারিয়া টেরেজা (এর্টমান) হিলবের্টের দুই সন্তানের প্রথম এবং একমাত্র পুত্র সন্তান হিসেবে হিলবের্ট জন্মগ্রহণ করেন; তার জন্মস্থান প্রুশিয়া সাম্রাজ্যের প্রুশিয়া প্রদেশের ক্যোনিগসবের্গ শহরে হতে পারে (হিলবের্টের নিজের বক্তব্য অনুসারে) অথবা ক্যোনিগসবের্গের কাছে ভেলাউতেও (১৯৪৬ সাল থেকে যা নামেনস্ক হিসেবে পরিচিত) হতে পারে যেখানে তার বাবা তার জন্মের সময়ে কাজ করতেন।Reid 1996, pp. 1–2; also on p. 8, Reid notes that there is some ambiguity as to exactly where Hilbert was born. Hilbert himself stated that he was born in Königsberg. ১৮৭২ সালের শেষের দিকে, হিলবের্ট ফ্রিডরিখ কোলেগে গ্যুমনাজিউম (কলেজিয়াম ফ্রিডেরিসিয়ানাম, ১৪০ বছর আগে ইমানুয়েল কান্ট একই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন) নামক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন; কিন্তু একটা খারাপ অবস্থার পর, তিনি ঐ স্কুল ছেড়ে অধিকতর বিজ্ঞানমুখী ভিলহেল্ম গ্যুমনাজিউমে ভর্তি হন (১৮৭৯র শেষে) এবং সেখান থেকেই উত্তীর্ণ হন (১৮৮০র শুরুতে)।Reid 1996, pp. 4–7. স্নাতকপাঠ শেষ করে ১৮৮০ সালের শরৎ মাসে তিনি ক্যোনিগসবের্গ, “আলবার্টিনা”য় ভর্তি হন। ১৮৮২ সালের শুরুতে হেরমান মিংকফ্‌স্কি (হিলবের্টের থেকে দুবছরের ছোট এবং ক্যোনিগসবের্গের বাসিন্দা, কিন্তু দেড় বছরের জন্য বার্লিনে গেছিলেন)Reid 1996, p. 11. ক্যোনিগসবের্গে ফিরে আসেন এবং উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। হিলবের্ট লাজুক, প্রতিভাধর মিংকভস্কির সাথে আজীবন বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন।Reid 1996, p. 12. কর্মজীবন ১৮৮৪ সালে,আডলফ হুরভিৎস গ্যোটিঙেন থেকে একজন এক্সট্রাঅর্ডিনারিয়াস (অর্থাৎ একজন সহ-অধ্যাপক) হিসেবে আসেন। এই তিন ব্যক্তিত্বের মধ্যে একটি নিবিড় এবং ফলদায়ী বৈজ্ঞানিক ধারণার বিনিময় শুরু হয় এবং মিংকফ্‌স্কি ও হিলবের্ট তাঁদের বৈজ্ঞানিক কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় পরস্পরের ওপর বিপরীত প্রভাব ফেলার চেষ্টা করতেন। হিলবের্ট ১৮৮৫ সালে ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন; তিনি ফার্দিনান্দ ভন লিন্ডেম্যানের অধীনে গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছিলেন যার নাম ছিল উবের ইনভারিয়ান্তে আইজেন্সচ্যাফেন স্পেজিলার বাইনারার ফরমেন, ইন্সবেসোন্ডেরে ডার কুগেলফাঙ্কশনেন (“অন দি ইনভ্যারিয়ান্ট প্রপার্টিস অফ স্পেশাল বাইনারি ফর্মস, ইন পার্টিকুলার দি স্ফেরিকাল হার্মোনিক ফাংশানস্”)। হিলবের্ট ক্যোনিগসবের্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৮৬ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত প্রিভাট-ডোৎসেন্ট (বরিষ্ঠ প্রভাষক) হিসেবে ছিলেন। ১৮৯৫ সালে ফেলিক্স ক্লাইন তার জায়গায় আসার ফলে, তিনি গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপকের পদ লাভ করেন। ক্লাইন এবং হিলবের্টের সময়ে গ্যোটিঙেন গণিতের দুনিয়ায় একটি প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তিনি সেখানে আজীবন কাজ করে যান। সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:Mathematik_G%C3%B6ttingen.jpg|থাম্ব|গ্যোটিঙেনের ম্যাথমেটিকাল ইনস্টিটিউট। এর নতুন ভবন, রকফেলার ফাউন্ডেশন কর্তৃক আর্থিক অনুদানে নির্মিত; হিলবের্ট এবং কোরান্ট ১৯৩০ সালে এটির উদ্বোধন করেন। গ্যোটিঙেন ঘরানা হিলবের্টের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছিলেন হেরমান ভাইল, দাবাড়ু ইমানুয়েল লাস্কার, এর্ন্সট জারমেলো, এবং কার্ল গুস্টাভ হেম্পেল, জন ভন নিউম্যান ছিলেন তার সহকারী। গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, হিলবের্ট এমি নোয়েদার এবং আলোঞ্জো চার্চের মতো বিংশ শতকের সবচেয়ে বিখ্যাত গণিতবিদদের সাথে একটি সামাজিক বৃত্তে বেষ্টিত ছিলেন। তার ৬৯ জন পিএইচডি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন যাঁরা পরবর্তীকালে বিখ্যাত গণিতবিদ হয়েছিলেন; যেমন (গবেষণাপত্রের সালের উল্লেখ রয়েছে) : অটো ব্লুমেন্থাল (১৮৯৮), ফেলিক্স বার্নস্টিন (১৯০১), হেরমান ভাইল (১৯০৮), রিচার্ড কোর‍্যান্ট (১৯১০), এরিক হেকে (১৯১০), হুগো ষ্টাইনহাউস (১৯১১) এবং ভিলহেল্ম আকারমান (১৯২৫)। ১৯০২ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত হিলবের্ট মাটেমাটিশে আনালেন নামক তৎকালীন মুখ্য গণিত গবেষণা সাময়িকীর সম্পাদক ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবন সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:ConstantinCaratheodory_KatheHilbert_MFO633.jpg|থাম্ব|১৯৩২ সালের আগে কনস্টান্টিন কারাথিওডরির সাথে ক্যাথি হিলবার্ট ১৮৯২ সালে, হিলবের্ট ক্যাথি জেরস্ককে (১৮৬৪ – ১৯৪৫) বিয়ে করেন যিনি ক্যোনিগসবের্গের একজন ব্যবসায়ীর মেয়ে ছিলেন। স্বাধীনচেতা স্পষ্টবাদী এই মহিলার সাথে হিলবের্টের মিল ছিল।Reid 1996, p. 36. ক্যোনিগসবের্গে থাকাকালীন তাঁদের এক সন্তান হয়, ফ্রান্স হিলবের্ট (১৮৯৩ – ১৯৬৯)। ফ্রান্স সারাজীবন ধরে এক অনির্ণীত মানসিক রোগে ভুগতো। তার এই হীনবুদ্ধিতা তার বাবার কাছে একটা ভয়াবহ হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং এই দুর্ভাগ্য গ্যোটিঙেনের গণিতবিদ এবং ছাত্রছাত্রীদের এক প্রধান সমস্যা ছিল।Reid 1996, p. 139. হিলবের্ট গণিতবিদ হেরমান মিংকফ্‌স্কিকে তার “সবচেয়ে ভালো এবং সত্যিকারের বন্ধু” বলে গণ্য করতেন।Reid 1996, p. 121. হিলবের্ট খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন এবং প্রুশীয় ইভাঞ্জেলিকাল মণ্ডলীতে কালভাঁপন্থী হয়ে পড়েন।হিলবের্ট পরিবার এই সময়ে, রিফর্মড প্রোটেস্টান্ট মণ্ডলী ছেড়ে দেন যেখানে তারা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন এবং বিবাহ করেছিলেন। - রিড ১৯৯৬, পৃ. ৯১ পরে তিনি চার্চ পরিত্যাগ করেন এবং একজন অজ্ঞেয়বাদী হয়ে যান।ডাভিড হিলবের্ট সম্ভবত অজ্ঞেয়বাদী ছিলেন এবং মূল ধর্মতত্ত্ব, এমনকি ধর্মের সাথেও তার কোন সম্পর্ক ছিল না। কনস্ট্যান্স রিড এই বিষয়ে একটি গল্প বলেছিলেন:হিলবের্ট পরিবার এই সময়ে (১৯০২ সাল নাগাদ), রিফর্মড প্রোটেস্টান্ট চার্চ ছেড়ে দেন যেখানে তারা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন এবং বিবাহ করেছিলেন। শোনা যেত, যখন (ডাভিড হিলবের্টের ছেলে) ফ্রান্স স্কুলে যেতে শুরু করে, তাঁকে তখন জিজ্ঞাসা করা হয়, “আপনি কোন ধর্মের?” এবং তিনি এর কোন উত্তর দিতে পারেননি। (১৯৭০, পৃঃ ৯১)১৯২৭ সালে হিলবের্ট হামবুর্গের ভাষণে বলেছিলেন, “গণিত পূর্বানুমানভিত্তিক বিজ্ঞান নয় (ডাই ম্যাথমেটিক ইস্ট এইন ভোরাউসেটজুঙ্গস্লোস উইসেনন্সচ্যাফট)” এবং “একে পাওয়ার জন্যে আমার কোন শুভ ঈশ্বরের প্রয়োজন নেই" (ৎসু ইরের বেগ্রুন্ডুং ব্রাউখে ইখ ভিডার ডেন লাইবেন গট)” (১৯২৮, এস. ৮৫; ভ্যান হেইজেনুর্ট, ১৯৬৭, পৃঃ ৪৭৯)। যদিও ম্যাথমেটিশ্চে প্রবলেমে (১৯০০) থেকে শুরু করে নাটুরেরকেন্নেন উন্ড লোগিশে (১৯৩০) লিখিত গ্রন্থে তিনি তার প্রিয় সন্তান-গণিত সম্বন্ধে মানবাত্মায় এবং শুদ্ধ চিন্তার ক্ষমতায় অর্ধ-ধর্মীয় বিশ্বাস রেখেছিলেন। তিনি গভীরভাবে এটা বিশ্বাস করতেন যে প্রতিটি গাণিতিক সমস্যাই শুদ্ধ যুক্তি দ্বারা সমাধান করা যায়ঃ গণিত এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের যেকোন অংশের (গণিতের সাহায্যে) ক্ষেত্রেই কোন “ইগনোরাবিমাস নেই” (হিলবের্ট, ১৯০০, এস. ২৬২; ১৯৩০, এস ৯৬৩; ইওয়াল্ড, ১৯৯৬, পিপি. ১১০২, ১১৬৫)। এই কারণেই গণিতের একটি অন্তর্নিহিত বিশুদ্ধ ভিত্তি খুঁজে চলাটাই হিলবের্টের সারাজীবনের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি কখনো তার এই অবস্থান ত্যাগ করেননি, এবং তার ১৯৩০ সালে ক্যোনিগসবের্গে দেওয়া ভাষণ “উইর মুসেন উইসেন, উইর ওয়ার্ডেন উইসেন” (“আমরা নিশ্চয়ই জানি, আমরা জানব”) অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে তার সমাধিস্তম্ভে গ্রথিত হয়ে আছে। এখানে, আমরা বিগত ধর্মতত্ত্বের ভূত দেখতে পেয়েছি (জর্জ বার্কলের কথাগুলোকে সংশোধিত করে বললে), কারণ মানুষের স্বজ্ঞাকে বিশুদ্ধ বলার অর্থই হল ঘুরিয়ে একে ঐশ্বরিক শক্তির সাথে তুলনা করা। - তিনি বলেন গণিতের সত্য ঈশ্বরের অস্তিত্ব অথবা অন্য কোন পূর্বকৃত ধারণার দ্বারা প্রভাবিত হয় না।“গণিত পূর্বানুমানভিত্তিক বিজ্ঞান নয়। একে পাওয়ার জন্য আমার ঈশ্বরের প্রয়োজন নেই, যেমন ক্রোনেকারের আছে, অথবা গণিতের সাধারণ নীতি ও নিয়মাবলীর সাথে আমাদের বোধের বিশেষ ক্ষমতার মানিয়ে নেওয়ার অনুমানও জরুরী নয়, যেমন পয়েনকেয়ার বলেছিলেন, অথবা ব্রোয়ারের তাৎক্ষণিক উপলব্ধিরও প্রয়োজন নেই, অথবা সবশেষে রাসেল এবং হোয়াইটহেড যেমন বলেছিলেন, অসীমের স্বতঃসিদ্ধতা, রিডিউসিবিলিটি, অথবা কমপ্লিটনেস যেগুলো প্রকৃতপক্ষে আসল এবং সন্তুষ্টিদায়ক ধারণা সেগুলোকে ধারাবাহিক প্রমাণ দ্বারা মিটিয়ে দেওয়া যায় না।” ডাভিড হিলবের্ট, ডাই গ্রুন্ডলাগেন ডার ম্যাথমেটিক, হিলবের্টস প্রোগ্রাম, ২২সি:০৯৬, আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়। যখন সৌরকেন্দ্রিক মতবাদের ওপর তার প্রতিষ্ঠিত সত্যের হয়ে দাঁড়াতে পারেননি বলে গ্যালিলিও গ্যালিলেইকে সমালোচনা করা হয়, হিলবের্ট তার প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, “কিন্তু [গ্যালিলিও] বোকা ছিলেন না। বোকারাই মনে করে বৈজ্ঞানিক সত্যের জন্য শহীদ হতে হয়; এটা ধর্মে প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক ফলাফল নিজেই একসময় প্রমাণিত হয়।” পরবর্তী জীবন ১৯২৫ সাল নাগাদ, হিলবের্টের পার্নিসিয়াস অ্যানিমিয়া হয়, তৎকালীন সময়ে এটি ছিল একটি দুরারোগ্য ব্যাধি; ভিটামিনের অভাবে এই রোগ হয় যার প্রাথমিক লক্ষণ হল ক্লান্তি; তার সহকারী ইউজিন উইগনার তাঁকে “প্রচণ্ড ক্লান্ত” এক ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং যেভাবে তাঁকে “বৃদ্ধ মনে হয়” এবং তার রোগের নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরেও, তিনি “১৯২৫ সালের পর থেকে একজন নামমাত্র বিজ্ঞানী ছিলেন এবং অবশ্যই একজন হিলবের্ট নন।”1992 (as told to Andrew Szanton). The Recollections of Eugene P. Wigner. Plenum. ১৯৩৩ সালে হিলবের্ট দেখেছিলেন গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত সকল শিক্ষকদের নাৎসীরা বিতাড়িত করে দিচ্ছে। (Hilbert's colleagues exiled) যাদের চলে যেতে বাধ্য হতে হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলেন হেরম্যান ওয়েইল (যিনি ১৯৩০ সালে যখন হিলবের্ট অবসর নেন তখন তার পদ পান), এমি নোয়েদার এবং এডমন্ড ল্যান্ডো। পল বার্নেস নামে এক ব্যক্তি যিনি হিলবের্টের সাথে গাণিতিক যুক্তি নিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন এবং গ্রান্ডল্যাগেন ডার ম্যাথেমেটিক নামে বিখ্যাত বইটি (যেটি ১৯৩৪ এবং ১৯৩৯ সালে দুটি খণ্ডে বের হয়েছিল) দুজনে একসাথে লিখেছিলেন, তাঁকেও জার্মানি ছাড়তে হয়। উক্ত বইটি হিলবের্ট-আকারম্যানের লেখা বই প্রিন্সিপলস অফ ম্যাথেমেটিকাল লজিকের (১৯২৮) একটি সিক্যুয়েল। হেরম্যান ওয়েইলের পরে আসেন হেলমাট হেসে। প্রায় একবছর পরে, হিলবের্ট একটি ভোজসভায় আমন্ত্রিত হয়ে আসেন এবং নতুন শিক্ষামন্ত্রী বার্নহার্ড রাস্টের পাশেই বসেন। রাস্ট জিগ্যেস করেছিলেন “ইহুদীদের চলে যাওয়ার ফলে কি গণিত প্রতিষ্ঠান কি সত্যিই খুব দুরবস্থার মুখে পড়েছে?” উত্তরে হিলবার্ট বলেছিলেন, “দুরবস্থা? এর তো আর কোন অস্তিত্বই নেই, আছে কি?”Eckart Menzler-Trott: Gentzens Problem. Mathematische Logik im nationalsozialistischen Deutschland., Birkhäuser, 2001, , Birkhäuser; Auflage: 2001 p. 142.Hajo G. Meyer: Tragisches Schicksal. Das deutsche Judentum und die Wirkung historischer Kräfte: Eine Übung in angewandter Geschichtsphilosophie, Frank & Timme, 2008, , p. 202. মৃত্যু সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:G%C3%B6ttingen_Stadtfriedhof_Grab_David_Hilbert.jpg|থাম্ব|হিলবের্টের স্মৃতিসৌধ:ভির মুসেন ভিসেন''''ভির ভের্ডেন ভিসেন ১৯৪৩ সালে যখন হিলবের্ট মারা যান, নাৎসিরা সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদেরই বদলি করে দিয়েছিল কারণ আগেকার প্রায় সমস্ত শিক্ষরাই হয় ছিলেন ইহুদি অথবা ইহুদিকে বিয়ে করেছিলেন। হিলবের্টের শেষযাত্রায় ডজনখানেকেরও কম লোক ছিল, তার মধ্যে কেবলমাত্র দুজন ছিল তার বন্ধু সহকারী, তাঁদের একজন আর্নল্ড সমারফেল্ড, এক তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এবং ক্যোনিগসবের্গের বাসিন্দা।Reid 1996, p. 213. তার মৃত্যুর ছ’মাস পরে সেই খবর বাইরের বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। গ্যোটিঙেনে তার সমাধিলিপিতে ১৯৩০ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর সোসাইটি অফ জার্মান সায়েন্টিস্টস অ্যান্ড ফিজিশিয়ান্সে তার প্রদত্ত অবসরকালীন বক্তৃতার শেষ বিখ্যাত লাইনটি উদ্ধৃত করা হয়। ল্যাটিন প্রবাদ “ইগনোরামাস এট ইগনোরাবিমাস” অথবা “আমরা জানি না, আমরা জানব না”-এর উত্তরে বলেছিলেনঃReid 1996, p. 192 ভির মুসেন ভিসেন ভির ভের্ডেন ভিসেন। বাংলায়                     আমদেরকে জানতে হবে আমরা জানব। ১৯৩০ সালে সোসাইটি অফ জার্মান সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড ফিজিশিয়ান্সে বার্ষিক অধিবেশনে তার উপরিউক্ত কথা বলার আগের দিন, কুর্ট গোডেল – জ্ঞানতত্ত্বের ওপরে সভা চলাকালীন গোলটেবিল বৈঠকে সোসাইটির সভার সাথে – পরীক্ষামূলকভাবে তার অসম্পূর্ণ উপপাদ্যের প্রথম অভিব্যক্তি ঘোষণা করেছিলেন।“প্রকৃত বিজ্ঞানের জ্ঞানতত্ত্বের সম্মেলন তিনদিন ধরে চলেছিল ৫ই থেকে ৭ই সেপ্টেম্বর” (ড’সন ১৯৯৭:৬৮)। “সোসাইটি অফ জার্মান সায়েন্টিস্টস অ্যান্ড ফিজিশিয়ান্সের ৯১তম বার্ষিক সভা……. এবং জার্মান ফিজিসিস্টস অ্যান্ড ম্যাথমেটিসিয়ান্সের ষষ্ঠ সমাবেশের……. পূর্বেই এটা বোঝা ধরে নেওয়া গেছিল…..গোডেল তার অবদানমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন শনিবার, ৬ই সেপ্টেম্বর [১৯৩০], বিকেল ৩টা থেকে ৩:২০ পর্যন্ত, এবং রবিবার এই সভা শেষ হয় প্রথম দিনের বক্তব্যের গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে। পরের অনুষ্ঠানটি চলাকালীন, কোনরকম সতর্কতা ছাড়াই হঠাৎ, গোডেল শান্তভাবে ঘোষণা করে যে “এক ব্যক্তি এমনকি এমন প্রস্তাবনার উদাহরণ দিতে পারেন (এবং প্রকৃতপক্ষে গোল্ডবাক ও ফার্মাটের টাইপের ক্ষেত্রেও) যে, বিষয়বস্তু যদি সত্যি হয়, তবে ধ্রুপদী গণিতের নিয়মানুগ ব্যবস্থায় অপ্রমাণযোগ্য হয়ে যায় [১৫৩]” (ড’সন:৬৯)”…এটা যখন ঘটে, হিলবের্ট তখন ক্যোনিগসবের্গে উপস্থিত ছিলেন, যদিও আপাতভাবে জ্ঞানতত্ত্বের সম্মেলনে ছিলেন না। গোলটেবিল বৈঠকের পরের দিন, তিনি সোসাইটি অফ জার্মান সায়েন্টিস্টস অ্যান্ড ফিজিশিয়ান্সের সামনে তার বক্তব্য শুরু করেন – তার বিখ্যাত বক্তব্য যা নাটুরেরকেন্নেন উন্ড লজিক (যুক্তি এবং প্রাকৃতিক জ্ঞান), যার শেষে তিনি ঘোষণা করেন: গণিতজ্ঞদের কাছে কোন ইগনোরাবিমাস নেই, এবং, আমার মতে, প্রকৃতি বিজ্ঞানেও তা নেই…(কোন ব্যক্তি) কেন কোন অসমাধানযোগ্য সমস্যা খুঁজে পাচ্ছেন না, তার প্রকৃত কারণ, আমার মতে, অসমাধানযোগ্য সমস্যার আদৌ অস্তিত্ব নেই। বোকা ইগনোরাবিমাসের বিপক্ষে, আমাদের বিশ্বাস এটাই বলে: আমরা নিশ্চয়ই জানি, আমরা জানবো [১৫৯]”(ড’সন:৭১)। গোডেলের গবেষণাপত্র ১৯৩০ সালের ১৭ই নভেম্বর গৃহীত হয় (সিএফ রিড পৃঃ ১৯৭, ভ্যান হেইজেনুর্ট ১৯৭৬:৫৯২) এবং প্রকাশিত হয় ১৯৩১ সালের ২৫শে মার্চ (ড’সন ১৯৯৭:৭৪)। কিন্তু গোডেল এই বিষয়ে আগেই একটি বক্তব্য রেখেছিলেন… “১৯৩০ সালের অক্টোবরে হান্স হান ভিয়েনা অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসে একটি অ্যাবস্ট্র্যাক্ট জমা দেন” (ভ্যান হেইজেনুর্ট:৫৯২); এই অ্যাবস্ট্র্যাক্টটি এবং সম্পূর্ণ গবেষণাপত্রটি ভ্যান হেইজেনুর্ট:৫৮৩এফএফে প্রকাশিত হয়। গোডেলের অসম্পূর্ণ উপপাদ্য দেখায় যে মৌলিক স্বতঃসিদ্ধমূলক ব্যবস্থাগুলোও (যেমন পিয়ানো অ্যারিথমেটিক) হয় স্বতঃবিরোধী অথবা এমন যৌক্তিক পক্ষ মেনে চলে যা প্রমাণ অথবা অপ্রমাণ করা অসম্ভব। গণিত এবং পদার্থবিদ্যায় অবদান হিলবের্টের গর্ডানের সমস্যার সমাধান ইনভ্যারিয়ান্ট অপেক্ষকের ওপরে হিলবের্টের প্রথম কাজের ফলে ১৮৮৮ সালে তার বিখ্যাত ফাইনাইটনেস থিওরেম প্রদর্শন করা সম্ভব হয়েছিল। কুড়ি বছর আগে, পল গর্ডান একটি জটিল গাণিতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে দ্বিমিক রূপের উৎপাদকের ফাইনাইটনেসের এই থিওরেমটি প্রদর্শন করেছিলেন। তার পদ্ধতির সাধারণীকরণ করার সময় দুটি চলরাশির অধিক অপেক্ষক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হন, কারণ গণনাটিতে একটি প্রকাণ্ড জটিল গণনাপদ্ধতির অবতারণা করা হয়েছিল। গর্ডান সমস্যা নামে পরিচিত এই বিষয়টির সমাধান করতে গিয়ে হিলবের্ট বুঝেছিলেন এর সমাধান করতে গেলে সম্পূর্ণ অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এর ফলে তিনি হিলবার্টের বেসিস থিওরেম প্রকাশ করলেন, যেখানে দেখালেন যেকোন সংখ্যক চলরাশিতে কোয়ান্টিক্সের ইনভ্যারিয়ান্টের জন্য জেনারেটরের নির্দিষ্ট সেটের অস্তিত্ব থাকে, কেবলমাত্র বিমূর্ত (অ্যাবস্ট্র্যাক্ট) রূপে। অর্থাৎ, এইধরনের সেটের অস্তিত্ব প্রদর্শনের ক্ষেত্রে, একটা গঠনমূলক প্রমাণ থাকতেই হবে এমন মানে নেই – এটি “একটা বস্তু” হিসেবে প্রদর্শিত হয় না – কিন্তু এর অস্তিত্বের প্রমাণ আছেConstance Reid 1996, pp. 36–37. এবং এক্ষত্রে হিলবের্ট একটি অসমাপ্ত এক্সটেনশনের ক্ষেত্রে ল অফ এক্সক্ল্যুডেড মিডল পদ্ধতির ওপর নির্ভর করেছিলেন। হিলবের্ট তার প্রাপ্ত ফল ম্যাথমেটিসচে আন্নালেনে পাঠিয়েছিলেন। গর্ডান ম্যাথমেটিসচে আন্নালেনের ইনভ্যারিয়ান্ট তত্ত্বের বিশেষজ্ঞ হিসেবে হিলবের্টের উপপাদ্যের বৈপ্লবিক বিষয়টির প্রশংসা করতে পারেননি এবং নিবন্ধটিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন এই তত্ত্বটি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিস্তৃত নয়। তার মন্তব্যটি ছিলঃ ডাস ইস্ট নিচ্‌ট মাথেমেটিক। ডাস ইস্ট থিওলজি। (এটা গণিত নয়। এটা ধর্মতত্ত্ব।)Reid 1996, p. 34. অন্যদিকে ক্লিন এই কাজটির গুরুত্ব সম্বন্ধে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এবং এই ব্যাপারে নিশ্চিত করেছিলেন যে এটি কোনরকম পরিবর্তন ছাড়াই প্রকাশিত হবে। ক্লিনের বক্তব্যে উৎসাহিত হয়ে, হিলবের্ট তার পদ্ধতিটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় একটি নিবন্ধ বের করেন যেখানে তিনি জেনারেটরের ন্যুনতম সেটের সর্বোচ্চ ঘাতের ধারণা দিয়েছিলেন এবং তিনি সেটিকে আরও একবার আন্নালেনে পাঠান। পাণ্ডুলিপিটি পড়ে, ক্লিন তাঁকে লিখেছিলেন, নিঃসন্দেহে এটি সাধারণ বীজগণিতের ওপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ যা আন্নালেনে প্রথমবার প্রকাশিত হল।Rowe, p. 195 পরে, হিলবের্টের পদ্ধতির উপযোগিতা বিশ্বের সর্বত্র স্বীকৃতি পেলে, গর্ডান নিজেই বলতেনঃ                আমি নিজেকে এটা বিশ্বাস করিয়েছি যে ধর্মতত্ত্বের মধ্যেও প্রতিভা থাকে।Reid 1996, p. 37. তার সমস্ত সাফল্যের পেছনে তার প্রমাণের প্রকৃতি প্রভূত সমস্যা সৃষ্টি করেছিল যা হিলবের্টও কল্পনা করতে পারেননি। যদিও ক্রোনেকার প্রাথমিকভাবে হিলবের্টের তত্ত্ব মেনে নিয়েছিলেন, কিন্তু হিলবের্টকে পরবর্তীকালে অন্যান্যদের একই সমালোচনার প্রত্যুত্তর দিতে হয়েছিল এই বলে যে “ভিন্ন ভিন্ন অনেক গঠনগুলো (কনস্ট্রাকশন্স) একই মৌলিক ধারণার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে” – অন্য কথায় (রিডের কথা উদ্ধৃত করলে): “অস্তিত্বের প্রমাণের মধ্যে দিয়ে, হিলবের্ট একটা গঠনকে (কনস্ট্রাকশন্) পেয়েছেন”; “প্রমাণ” (অর্থাৎ পাতায় ব্যবহৃত চিহ্ন) হল “বস্তু (অবজেক্ট)”। এতে সকলের বিশ্বাস উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। এর কয়েকদিন পরেই ক্রোনেকার মারা যান, কিন্তু তার গঠনমূলক (কনস্ট্রাকটিভিস্ট) দর্শন যুবক ব্রোয়ার এবং তার উন্নয়নশীল স্বজ্ঞা (ইন্ট্যুইশনিস্ট) ধারার ব্যক্তিবর্গ বহন করে যেতে লাগলেন যার ফলে হিলবের্টের পরবর্তী জীবনে প্রভূত পীড়নের শিকারে হতে হয়।cf. Reid 1996, pp. 148–149. প্রকৃতপক্ষে, হিলবের্ট তার “প্রতিভাধর ছাত্র” ওয়েইলকে হারান যে স্বজ্ঞার (ইন্ট্যুইশনিজম) দিকে ঝুঁকে পড়ে – “প্রাক্তন ছাত্র ব্রোয়ারের ধারণার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ায় হিলবের্ট বিরক্ত হন, এর ফলে ক্রোনেকারের স্মৃতিও তার ফিরে আসে।”Reid 1996, p. 148. স্বজ্ঞা ধারার ব্রোয়ার বিশেষ করে অসীম সেটের (ইনফাইনাইট সেট) ক্ষেত্রে ল্য অফ এক্সক্লুডেড মিডলের বিরোধীতা করেন (যা হিলবের্ট ব্যবহার করেছিলেন)। হিলবের্ট প্রত্যুত্তর দেনঃ          গণিতবিদের থেকে প্রিন্সিপল অফ এক্সক্লুডেড মিডল কেড়ে নেওয়া….তার সাথে তুলনীয়….একজন বক্সারকে তার মুঠো ব্যবহার করতে নিষেধ করার মতো।Reid 1996, p. 150. জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধতা গ্রুন্ডলাগেন ডার জিওমেট্রি (অনু. জ্যামিতির ভিত্তি) নামে বইটি হিলবের্ট ১৮৯৯ সালে হিলবের্ট প্রকাশ করেন যেখানে তিনি চিরাচরিত ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধতাকে পরিত্যাগ করে একটি ফর্ম্যাল সেটের অবতারণা করেন যাকে হিলবের্ট স্বতঃসিদ্ধতা (অ্যাক্সিওমস্‌) বলা হয়। এটি ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধতার দুর্বলতাগুলোর থেকে মুক্তি দিয়েছিল; যদিও ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধতা সেসময়কার পাঠ্যক্রমে তখনও পড়ানো হত। হিলবের্ট তার স্বতঃসিদ্ধতাকে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন এবং সংশোধন করেছিলেন এবং সেই কারণে গ্রুন্ডলাগেনের ইতিহাসের পাঠ না করে হিলবের্টের স্বতঃসিদ্ধতা বোঝা খুবই দুরূহ। আসল মনোগ্রাফটির পরেই এর ফরাসী অনুবাদ বেরিয়ে যায় যেখানে হিলবের্ট ভি.২, দি কমপ্লিটনেস্‌ অ্যাক্সিওমস্‌ কথাটি যোগ করেন। হিলবের্টের অনুমোদনে ই.জে. টাউনসেন্ড এর একটি ইংরেজি অনুবাদ বের করেন যার স্বত্তাধিকার করা হয়েছিল ১৯০২ সালে।G. B. Mathews(1909) The Foundations of Geometry from Nature 80:394,5 (#2066) ফরাসী অনুবাদের পরিবর্তনগুলোকে এই অনুবাদে ঢোকানো হয় এবং তাই একে দ্বিতীয় সংস্করণ বলে গণ্য করা হয়। হিলবের্ট এর পরেও বইটির অদলবদল করেন এবং জার্মান ভাষায় এর আরও কয়েকটি সংস্করণ বেরিয়েছিল। হিলবের্টের জীবদ্দশায় এর ৭ম সংস্করণই শেষবারের মত বেরোয়। ৭ম সংস্করণের পরেও নতুন সংস্করণ বেরিয়েছিল, কিন্তু তার মূলপাঠের বিশেষ পরিবর্তন করা হয়নি। হিলবের্টের অবলম্বিত পন্থা আধুনিক স্বতঃসিদ্ধমূলক পদ্ধতি (অ্যাক্সিওমেটিক মেথড) দিকে যেতে আমাদের সাহায্য করে। ১৮৮২ সালে মরিট্‌জ পাস্কের কাজ থেকে হিলবের্টের মধ্যে ধারণাটি আসে। স্বতঃসিদ্ধতাকে কখনোই স্ব-প্রমাণ সত্য বলে ধরা যায় না। জ্যামিতি এমন সকল বস্তুকে নিয়ে কাজ করতে পারে, যা সম্বন্ধে আমাদের শক্তিশালী স্বজ্ঞা রয়েছে, কিন্তু অসংজ্ঞায়িত ধারণার ওপর সুস্পষ্ট অর্থ চাপিয়ে দেওয়া যায় না। শোয়েনফ্লাইস এবং কোটারকে হিলবের্ট এইভাবে বলেছিলেন যে বিন্দু, রেখা, তল এবং অন্যান্য উপাদানগুলোকে টেবিল, চেয়ার, মদের গ্লাস এবং এইধরনের অন্যান্য বস্তু দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা যায়। Here: p.402-403 কেবলমাত্র সংজ্ঞায়িত সম্পর্ক নিয়েই আমরা আলোচনা করতে পারি। হিলবের্ট প্রথমে অসংজ্ঞায়িত ধারণার গণনা শুরু করেনঃ বিন্দু, রেখা, তল, উপরিপাতন (বিন্দু এবং রেখা, বিন্দু ও তল, রেখা ও তলের মধ্যেকার সম্পর্ক), মধ্যবর্তীতা, বিন্দুর (রেখাংশ) জোড়ার সঙ্গতি (কংগ্রুয়েন্স), এবং কোণের সঙ্গতি। স্বতঃসিদ্ধগুলো প্লেন জিওমেট্রি এবং ইউক্লিডের সলিড জিওমেট্রিকে একটি একক ব্যবস্থার মধ্যে একত্রিত করেছিল। ২৩টি সমস্যা ১৯০০ সালে প্যারিস শহরে ইন্টারন্যাশানাল কংগ্রেস অফ ম্যাথমেটিসিয়ান্সে হিলবের্ট সবচেয়ে প্রভাবশালী ২৩টি অমীমাংসিত প্রশ্নের অবতারণা করেন। এটিকে একজন একক গণিতবিদ কর্তৃক উপস্থাপিত সবথেকে সফল এবং গভীরভাবে বিবেচিত মুক্ত সমস্যার সংকলন বলা হয়। চিরাচরিত জ্যামিতির ভিত্তির ওপরে পুনরায় কাজ করে, হিলবের্ট গণিতের অন্যান্য দিক সম্বন্ধেও অবহিত হতে পেরেছিলেন। তার অবলম্বিত পন্থাটি যদিও পরবর্তীকালে ‘ভিত্তিবাদী’ রাসেল হোয়াইটহেড অথবা ‘বিশ্বকোষবিদ্‌’ নিকোলাস বোরবাকি এবং তার সমসাময়িক জিওসেপ্পি পিয়ানোর থেকে আলাদা ছিল। গোটা গণিতের দুনিয়াকেই এইসকল সমস্যার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারত, যে সমস্যাগুলোকে তিনি গণিতের বিভিন্ন শাখার গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন এবং যার চাবিকাঠিটি ছিলেন তিনি নিজেই। প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক গণিতবিদের সম্মেলন চলাকালীন “গণিতের সমস্যা” শীর্ষক বক্তৃতায় এই সমস্যা রাশিটির অবতারণা করা হয়। হিলবের্ট এর ভূমিকাতে যা বলেছিলেন তা হলঃযে পর্দার পেছনে ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে, তাকে উন্মোচিত করলে কে না খুশী হয়; কে না খুশী হয় আমাদের বিজ্ঞানের আসন্ন উন্নতির দিকে এবং আগামী শতাব্দীর উন্নতির গোপন রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতে? গণিতজ্ঞদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে দিকে এগিয়ে চলতে চায় তার শেষ কোথায়? গাণিতিক চিন্তার বিস্তীর্ণ ও সমৃদ্ধ ভূমিতে কোন পদ্ধতি, নতুন কোন ঘটনা নতুন শতাব্দী এনে দেবে?, archived from [www.seas.harvard.edu/courses/cs121/handouts/Hilbert.pdf]সম্মেলনে তিনি অর্ধেকেরও কম সমস্যা উত্থাপন করেছিলেন, এবং সেগুলি সম্মেলনের কাজের তালিকায় পরে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী প্রকাশনে, তিনি ক্ষেত্রটিকে আরও বিস্তৃত করেন এবং বিখ্যাত সূত্র তৈরি করেন যা বর্তমানে হিলবের্টের ২৩টি সমস্যা নামে পরিচিত। আরও দেখুন হিলবের্টের চব্বিশতম সমস্যা। এর সম্পূর্ণ বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যখনই প্রশ্ন করা হয় কতগুলো প্রশ্নের সমাধান করা গেছে, তখনই প্রশ্নের ব্যাখ্যা করতে গেলে এটি অনিবার্য বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এগুলোর কোন কোনটি স্বল্প সময়ে সমাধান করা হয়েছে। অন্যান্যগুলো ২০শ শতক জুড়ে বহু আলোচিত হয়েছে, যার মধ্যে কিছু এতোটাই উন্মুক্ত যে এখন সেগুলোকে নিয়ে আর চর্চা হয় না। কিছু প্রশ্ন আজও গণিতবিদদের কাছে রীতিমত চ্যালেঞ্জ। ফর্ম্যালিজম মধ্য-শতাব্দীতে এসে হিলবের্টের সমস্যার সেটটি একটি মানদণ্ডে পরিণত হয়েছিল এবং এটি একধরনের ঘোষণাপত্র হয়ে উঠেছিল যা গণিতে ফর্ম্যালিস্ট ধারার উন্নতির রাস্তা খুলে দেয় যে ধারা ছিল বিংশ শতকের অন্যতম সেরা তিনটির মধ্যে একটি। ফর্ম্যালিস্টদের মতে, গণিত হল নির্দিষ্ট করে দেওয়া নিয়মানুযায়ী কিছু চিহ্নের খেলা। এটি তাই একটি স্বয়ংশাসিত চিন্তাভাবনার কার্যকলাপ। যদিও এই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে যে হিলবের্টের নিজের ধারণাও কি এমনই সহজ ফর্ম্যালিস্টদের মত ছিল। হিলবের্টের কর্মসূচী ১৯২০ সালে হিলবের্ট স্পষ্টভাবে একটি গবেষণামূলক প্রকল্পের (গণিতে, এটিকে এই নামেই তখন বলা হত) কথা বলেন যা হিলবের্টের কর্মসূচী নামে পরিচিত হয়। তিনি চাইতেন গণিত একটি শক্ত এবং সম্পূর্ণ যৌক্তিক ভিত্তির ওপর তৈরি হোক। তিনি বিশ্বাস করতেন যে নিয়মানুযায়ী এটা করা যেতে পারে; তিনি দেখালেনঃ ১. সঠিকভাবে নির্বাচিত সীমিত স্বতঃসিদ্ধতার ব্যবস্থা থেকেই সমস্ত গণিত অনুসৃত হয়; এবং ২. কিছু এইধরনের স্বতঃসিদ্ধ ব্যবস্থা কিছু অর্থে তুলনীয় বলে প্রমাণ করা যায়, যেমন এপসিলন কলনবিদ্যা। মনে হয়, তার এই প্রস্তাবনাটিকে সূত্রায়িত করার পিছনে প্রায়োগিক এবং দার্শনিক কারণ ছিল। ইগনোরাবিমাস হিসেবে যা পরিচিত ছিল তা হিলবের্ট অপছন্দ করতেন যদিও এটি তার সময়কালে জার্মানদের চিন্তাভাবনায় একটি সক্রিয় সমস্যা ছিল, এবং এই সূত্রটি এমিল ডু বোয়ে-রেমন্ডের সময় থেকে প্রচলিত ছিল। এই প্রোগ্রামটি গণিতের দর্শনে সবথেকে জনপ্রিয় ফর্ম্যালিজম হিসেবে। উদাহরণস্বরূপ, বোরবাকি গোষ্ঠী তাদের প্রকল্পদ্বয়ের প্রয়োজনে এর একটি জলীয় ও নির্বাচিত সংস্করণ গ্রহণ করেছিলেন; তাদের প্রকল্পগুলো ছিল (অ) বিশ্বকোষীয় ভিত্তিমূলক কাজের লিখন, এবং (আ) গবেষণার বিষয় হিসেবে স্বতঃসিদ্ধ পদ্ধতিকে সহায়তা করা। এই পদ্ধতিটি সফল হয়েছিল এবং বীজগণিতে এবং অপেক্ষকের বিশ্লেষণে হিলবের্টের কাজকে আরও প্রভাবশালী করেছিল, কিন্তু পদার্থবিদ্যা এবং যুক্তিবিজ্ঞানের দুনিয়ায় একই পদ্ধতিতে তার প্রভাব বৃদ্ধি করতে অসমর্থ হয়। হিলবের্ট ১৯১৯ সালে লিখেছিলেনঃআমরা কোন অর্থেই এখানে স্বেচ্ছাচারিতার কথা বলছি না। গণিত এমন কোন খেলা নয় যার কাজ কিছু নির্বিচারে নির্ধারিত নিয়ম দ্বারা স্থিরীকৃত হবে। বরং, এটি এমন একটি ধারণাগত ব্যবস্থা যার অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং যেটি কেবলমাত্র এমনই হতে পারে এবং কোন অর্থেই এর অন্যথা হয় না।Hilbert, D. (1919–20), Natur und Mathematisches Erkennen: Vorlesungen, gehalten 1919–1920 in G\"ottingen. Nach der Ausarbeitung von Paul Bernays (Edited and with an English introduction by David E. Rowe), Basel, Birkh\"auser (1992).গণিতের ভিত্তির ওপরে লেখা গ্রুন্ডলাগেন ডার ম্যাথমেটিক নামে দুই খণ্ডের বইয়ে হিলবের্ট তার বক্তব্য প্রকাশ করেন। গোডেলের কাজ হিলবের্ট এবং অন্যান্য গণিতবিদরা যাঁরা তার সাথে তার এই উদ্যোগে কাজ করেছেন তারা প্রত্যেকেই এই প্রকল্পটিতে নিজেদের নিয়োজিত করে দিয়েছেন। তিনি স্বতঃসিদ্ধ গণিতকে নির্দিষ্ট নীতির সাহায্যে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, যা যাবতীয় তাত্ত্বিক অনিশ্চয়তাকে নস্যাৎ করে দিতে পারতো, সেটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। গোডেল দেখিয়েছিলেন যে পরস্পরবিরোধী নয় এমন যেকোন ফর্ম্যাল ব্যবস্থা, যা অন্তত পাটিগণিতকে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে যথেষ্ট বিস্তৃত, তা কিন্তু তার নিজের স্বতঃসিদ্ধতার দ্বারাই নিজের সম্পূর্ণতাকে প্রদর্শন করতে পারে না। ১৯৩১ সালে তিনি তার অসম্পূর্ণতার উপপাদ্যে দেখিয়েছিলেন যে যে হিলবের্টের মহান পরিকল্পনা যেমনভাবে বলা হয়েছে সেভাবে হওয়া অসম্ভব। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বতঃসিদ্ধ ব্যবস্থাটি সত্যসত্যই নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়, ততক্ষণ হিলবের্টের এই কাজটির প্রথম ক্ষেত্রটির সঙ্গে দ্বিতীয়টিকে কোনভাবেই যুক্তিযুক্তভাবে মেলানো যায় না। তৎসত্ত্বেও, প্রমাণ তত্ত্ব পরবর্তীতে খুব সামান্য সঙ্গতি ব্যাখ্যা করতে পেরেছিল যা গণিতজ্ঞদের মুখ্য ভাবনাযুক্ত তত্ত্বের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। এই ব্যাখ্যাকালীন সময়ে হিলবের্টের কাজ যুক্তিপ্রয়োগ শুরু করে; গোডের কাজ বোঝার প্রয়োজনীয়তা এরপর থেকে পুনরাবৃত্তি তত্ত্বের বিকাশ ঘটাতে শুরু করে এবং ১৯৩০এর দশক থেকে গাণিতিক যুক্তি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শাখা হিসেবে গড়ে ওঠে। তাত্ত্বিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভিত্তিও এই ‘বিতর্ক’ থেকেই সরাসরি জন্ম নিয়েছিল যে কম্পিউটার বিজ্ঞান আলোঞ্জো চার্চ এবং অ্যালান ট্যুরিং শুরু করেন। অপেক্ষকের বিশ্লেষণ ১৯০৯ সাল নাগাদ, হিলবের্ট ডিফারেনশিয়াল এবং ইন্টিগ্রাল সমীকরণের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন; তার কাজ আধুনিক অপেক্ষকের বিশ্লেষণের গুরুত্বপূর্ণ অংশে সরাসরি প্রভাব ফেলেছিল। এইসকল কাজ করার সময়ে, হিলবের্ট অসীম মাত্রাযুক্ত ইউক্লিডিয় স্থানের ধারণার অবতারণা করেন যা পরে হিলবের্ট স্থান নামে পরিচিত হয়। বিশ্লেষণের এই অংশটিতে তার কাজ পরবর্তী দুই দশক ধরে পদার্থবিদ্যার গণিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের ভিত্তিভূমি প্রস্তুত করেছিল, যদিও সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত দিক থেকে এমনটা সম্ভব হয়েছিল। পরবর্তীকালে, স্টিফান বানাচ ধারণাটিকে আরও প্রসারিত করেন যার নাম দেন বানাচ স্থান। হিলবের্ট স্থান অপেক্ষকের বিশ্লেষণের কাজের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণীর বিষয় বলে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে ২০শ শতকে গড়ে ওঠা সেলফ-অ্যাডজয়েন্ট লিনিয়ার অপারেটরের স্পেক্ট্রাল তত্ত্বের ক্ষেত্রে। পদার্থবিদ্যা ১৯১২ সাল পর্যন্ত হিলবের্ট প্রায় একান্তভাবে একজন “বিশুদ্ধ” গণিতজ্ঞ ছিলেন। বন শহরে হিলবের্টের সহকারী গণিতজ্ঞ ও বন্ধু হেরমান মিংকফ্‌স্কি পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনায় মগ্ন ছিলেন; সেখান থেকে ফিরে আসবার পরিকল্পনা করার সময় তিনি মজা করে বলেছিলেন যে হিলবের্টের সঙ্গে দেখা করার আগে তাঁকে দশদিনের জন্য সঙ্গনিরোধ হয়ে থাকতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, ১৯১২ সালের আগে হিলবের্টের পদার্থবিদ্যা গবেষণার বেশিরভাগ অংশের জন্যই মিংকফ্‌স্কিকে দায়ী করা হয়; ১৯০৫ সালে তারা দুজন এই বিষয়ের ওপর যৌথ সেমিনারেও অংশগ্রহণ করেন। হিলবের্ট তার বন্ধুর মৃত্যুর তিন বছর পরে ১৯১২ সালে পদার্থবিদ্যার প্রতি সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করেন। তিনি তার জন্য “পদার্থবিদ্যার শিক্ষক” নিযুক্ত করেছিলেন।Reid 1996, p. 129. তিনি গ্যাসের গতিতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন এবং সেখান থেকে প্রাথমিক বিকিরণ তত্ত্ব এবং পদার্থের আণবিক তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করে যান। এমনকি ১৯১৪ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে, তিনি তার সেমিনার এবং ক্লাস চালিয়ে যান যেখানে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এবং অন্যান্যদের গবেষণামূলক কাজ খুব কাছ থেকে অনুসরণ করা হত। ১৯০৭ সালের মধ্যে আইনস্টাইন মৌলিক মহাকর্ষ তত্ত্বের অবতারণা করেন, কিন্তু একটি বিভ্রান্তিকর সমস্যার কারণে এরপর প্রায় ৮ বছর ধরে তাঁকে তত্ত্বটির সর্বশেষ রূপ প্রদান করার জন্য চেষ্টা করে যেতে হয়।Isaacson 2007:218 ১৯১৫ সালের গ্রীষ্মের শুরুতে হিলবের্টের পদার্থবিদ্যার প্রতি আগ্রহ সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের প্রতি নিবিষ্ট হয়, এবং তিনি আইনস্টাইনকে গ্যোটিঙেনে এই বিষয়ের ওপর এক সপ্তাহের ভাষণ দেবার জন্য আমন্ত্রণ জানান।Sauer 1999, Folsing 1998, Isaacson 2007:212 আইনস্টাইন এই আমন্ত্রণ খুবই উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন।Isaacson 2007:213 গ্রীষ্মের সময়, আইনস্টাইন জানতে পারেন যে হিলবের্টও ক্ষেত্র সমীকরণের ওপরে কাজ করছেন যার ফলে তিনি নিজের কাজে দ্বিগুণ শ্রম বাড়িয়ে দেন। ১৯১৫ সালের নভেম্বর মাসে, আইনস্টাইন মহাকর্ষের ক্ষেত্র সমীকরণের সর্বশেষ রূপদান করে কিছু গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন (আইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণ দেখুন)।সময়ের সাথে সাথে মহাকর্ষজ ক্ষেত্র সমীকরণগুলোর সাথে হিলবের্টের নাম জড়িয়ে থাকার ব্যাপারটি খুবই কমে যায়। তবে এর মধ্যে একজন ব্যতিক্রম ছিলেন পি. জর্ডন (শ্চয়েরক্রাফট উন্ড ওয়েল্টঅল, ব্রাউনশ্চোয়েগ, ভিওয়েগ, ১৯৫২), যিনি বায়ুশূন্য অবস্থায় মহাকর্ষ সমীকরণকে বলতেন আইনস্টাইন-হিলবের্ট সমীকরণ। (লিও কোরি, ডাভিড হিলবের্ট অ্যান্ড দি অ্যাক্সিমাটাইজেশন অফ ফিজিক্স, পৃঃ ৪৩৭) প্রায় একইসাথে, ডাভিড হিলবের্টও প্রকাশ করলেন “পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি”, যা ছিল ক্ষেত্র সমীকরণের একটি স্বতঃসিদ্ধ উদ্ভাবনা (দেখুন, আইনস্টাইন-হিলবের্ট কাজ)। হিলবের্ট তত্ত্বটির প্রবর্তক হিসেবে আইনস্টাইনকেই সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের জীবদ্দশায় ক্ষেত্র সমীকরণ নিয়ে এই দুটি মানুষের মধ্যে কখনোও কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি।১৯৭১ সাল থেকে কিছু সোৎসাহী এবং পণ্ডিতদের মধ্যে আলোচনা চলছে এই নিয়ে যে দুজন মানুষের মধ্যে কে প্রথম ক্ষেত্র সমীকরণগুলোর বর্তমান রূপটি আবিষ্কার করেছিলেন। “হিলবের্ট মুক্তভাবে স্বীকার করেছিলেন, এবং বার বার তার ঘোষণায় বলেছিলেন যে এই মহান ধারণাটি আইনস্টাইনের: “গ্যোটিঙেনের রাস্তায় প্রতিটা ছেলেই চতুর্মাত্রিকতার জ্যামিতিকে আইনস্টাইনের চেয়েও বেশি চেনে।” তিনি একদা মন্তব্য করেছিলেন। “তবুও, তা সত্ত্বেও, আইনস্টাইনই এই কাজটা করেছেন এবং গণিতবিদরা নন।” (রিড ১৯৯৬, পিপি ১৪১-১৪২, আইজ্যাকসন ২০০৭:২২২ থর্নের কথা উদ্ধৃতি তুলে পৃঃ ১১৯)। আরও দেখুন অগ্রাধিকার। এছাড়াও, হিলবের্টের কাজ কোয়ান্টাম বলবিদ্যার গাণিতিক সূত্রায়নের ক্ষেত্রে কিছু পূর্বানুমান করেছিল এবং এর অগ্রগতিতে সহায়তা করেছিল। ওয়ার্নার হাইজেনবার্গের ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যা এবং আরউইন শ্রয়েডিংগারের তরঙ্গ সমীকরণের গাণিতিক তুলনীয়তার ওপরে হেরমান ওয়েইল এবং জন ভন নিউম্যানের কাজের প্রধান একটি দিক ছিল হিলবের্টের কাজ; এছাড়াও তার নামে নামাঙ্কিত হিলবের্ট স্থান কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করে। ১৯২৬ সালে, ভন নিউম্যান দেখিয়েছিলেন যে যদি কোয়ান্টাম অবস্থাকে হিলবের্ট স্থানের ভেক্টরের সঙ্গে একইসাথে অনুধাবন করা হয়, তবে তারা শ্রয়েডিংগারের তরঙ্গ ফাংশান তত্ত্ব এবং হাইজেনবার্গের ম্যাট্রিক্সের সাথে সঙ্গতি রেখে চলে।১৯২৬ সালে, মাক্স বর্ন এবং ভের্নার কার্ল হাইজেনবের্ কোয়ান্টাম তত্ত্বের ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যা সূত্রায়ন করে দেওয়ার পর, গণিতবিদ জন ভন নিউম্যান গ্যোটিঙেনে হিলবের্টের সহকারী হন। ১৯৩২ সালে নিউম্যান যখন বেরিয়ে গেলেন, সেসময়ে ভন নিউম্যানের কোয়ান্টাম বলবিদ্যার গাণিতিক ভিত্তির ওপর লেখা বই ম্যাথমেটিশ্চে গ্রুন্ডলাগেন ডার কোয়ান্টেনমেচানিক নামে প্রকাশিত হয় যা হিলবের্টের গণিতের ওপর ভিত্তি করেই লেখা হয়েছিল। দেখুন: নরম্যান ম্যাক্রে (১৯৯৯) জন ভন নিউম্যান: দি সায়েন্টিফিক জিনিয়াস হু পায়োনিয়ার্ড দি মডার্ন কম্পিউটার, গেম থিওরি, নিউক্লিয়ার ডিটারেন্স, অ্যান্ড মাচ মোর (আমেরিকান ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটি কর্তৃক পুনর্মুদ্রিত) এবং রিড (১৯৯৬)। পদার্থবিদ্যার চর্চায় এইভাবে ডুব দিয়ে, হিলবের্ট পদার্থবিদ্যার গণিতে কঠোরতা অবলম্বন করার ওপরে কাজ করেছিলেন। উচ্চতর গণিতের ওপরে নির্ভরশীল হওয়ার কারণে, পদার্থবিদরা এটির সম্বন্ধে “অযত্নশীল” ছিলেন। হিলবের্টের মত একজন “বিশুদ্ধ” গণিতবিদের কাছে এটি যেমন জঘন্য ছিল তেমনই এটি বোঝাও ছিল কঠিন। পদার্থবিদ্যা এবং কীভাবে পদার্থবিদরা গণিতকে ব্যবহার করে, তা তিনি একদিকে যেমন বুঝতে শুরু করেছিলেন, তেমনিভাবে অন্যদিকে তিনি একটি সুসঙ্গত গাণিতিক তত্ত্ব গড়ে তোলেন যার কারণে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে ইন্টিগ্রাল সমীকরণের ক্ষেত্রে উন্নতি করেন। যখন তার সহকর্মী রিচার্ড কোরান্ট মেথোডেন ডার ম্যাথমেটিশ্চেন ফিজিক [গাণিতিক পদার্থবিদ্যার পদ্ধতি] নামক অধুনা ক্লাসিক বইটি লেখেন এবং হিলবের্টের ধারণাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেন, উক্ত বইটিতে তিনি লেখকের নাম হিসেবে হিলবের্টের নাম লেখেন যদিও বইটির রচনায় হিলবের্টের কোন প্রত্যক্ষ অবদান ছিল না। হিলবের্ট বলেছিলেন “পদার্থবিদ্যা পদার্থবিদদের কাছে অত্যন্ত কঠিন”, অর্থাৎ তিনি এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে প্রয়োজনীয় গণিতকে তারা এখনও দূরে সরিয়ে রেখেছে; কোরান্ট-হিলবের্টের বই এই বিষয়টিকে তাঁদের কাছে সহজ করে দিয়েছে। সংখ্যাতত্ত্ব হিলবের্ট তার ১৮৯৭ সালে লেখা জালবেরিখট্‌ (আক্ষরিক অর্থে “সংখ্যার ওপরে প্রতিবেদন”) নামক বইয়ে বীজগাণিতিক সংখ্যা তত্ত্বের ক্ষেত্রটিকে একত্রিত করেছিলেন। ১৭৭০ সালে ওয়েরিং দ্বারা কৃত গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যাতত্ত্বের সমস্যার তিনি সমাধান করেছিলেন। ফাইনাইটনেস থিওরেম দ্বারা, তিনি অস্তিত্বের প্রমাণ ব্যবহার করেছিলেন যা দেখায় সমস্যার উত্তর পাওয়ার একটি পদ্ধতি না থাকলেও নির্দিষ্ট সমাধান থাকবেই।Reid 1996, p. 114 এই বিষয়ের ওপরে তার সামান্যই বিষয় প্রকাশ করার ছিল; কিন্তু তার একজন ছাত্র কর্তৃক প্রস্তুত গবেষণাপত্রে হিলবের্ট মডিউলার ফর্মের দাবী আসার সঙ্গে সঙ্গে হিলবের্টের নাম আরও বড়ো ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল। ক্লাস ফিল্ড তত্ত্বের ওপর তিনি বেশ কিছু অনুমান প্রস্তুত করেন। ধারণাগুলো অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং তার এই অবদান হিলবের্ট ক্লাস ফিল্ড এবং হিলবের্ট সিম্বল অফ লোকাল ক্লাস ফিল্ড থিওরি নামে পরিচিত হয়ে রয়েছে। এর ফলাফলগুলোর বেশিরভাগই তেইজি তাকাগির কাজের পরে ১৯৩০ সালের মধ্যে প্রমাণিত হয়ে যায়।এই কাজটিই তাকাগিকে জাপানের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের গণিতজ্ঞের মর্যাদা এনে দেয়। হিলবের্ট বিশ্লেষণী সংখ্যাতত্ত্বের কেন্দ্রীয় ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করেননি, কিন্তু তার নাম হিলবের্ট-পোলভা কনজেকচারের কারণে পরিচিত হয়ে আছে, যার কারণ অজানা। কাজ তার সম্মিলিত কাজ (গেসাম্মেল্টে আভান্দলুনজেন) কয়েকবার প্রকাশিত হয়। তার গবেষণাপত্রের প্রকৃত সংস্করণটায় “বিভিন্ন মাত্রার অনেক প্রায়োগিক ত্রুটি ছিল”;Reid, chap.13 যখন এই সংকলনটি প্রথম প্রকাশিত হয়, এর ত্রুটিগুলো দূর করা হয় তখন এটা বোঝা যায় যে এর উপপাদ্যগুলোর বর্ণনায় কোন গুরুতর পরিবর্তন না এনেই তা করা যাবে; এর মধ্যে শুধু একটি ব্যতিক্রম ছিল – কন্টিন্যুয়াম হাইপোথিসিসের একটি প্রমাণের দাবী।Page 284f in: Rota G.-C. (1997), "Ten lessons I wish I had been taught", Notices of the AMS, 44: 22-25. তৎসত্ত্বেও, এর ত্রুটিগুলো সংখ্যায় এতোই বেশি ছিল এবং এতোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে সেগুলোকে সংশোধন করতে ওলগা তৌস্কি-টডের তিন বছর সময় লেগেছিল। আরও দেখুন ধারণা ডাভিড হিলবের্ট নামাঙ্কিত বস্তুর তালিকা জ্যামিতির ভিত্তি হিলবের্ট C*-মডিউল হিলবের্ট ঘনক হিলবের্ট বক্র হিলবের্ট ম্যাট্রিক্স হিলবের্ট মেট্রিক হিলবের্ট-মামফোর্ড ক্রাইটেরিয়ন হিলবের্ট সংখ্যা হিলবের্ট বলয় হিলবের্ট-পয়েনকেয়ার শ্রেণী হিলবের্ট শ্রেণী ও হিলবের্ট পলিনোমিয়াল হিলবের্ট স্পেক্ট্রাম হিলবের্ট সিস্টেম হিলবের্ট ট্রান্সফর্ম হিলবের্টস অ্যারিথমেটিক অফ এন্ডস গ্র্যান্ড হোটেল সংক্রান্ত হিলবের্টের প্যারাডক্স হিলবের্ট-স্কিম্‌ডট অপারেটর হিলবের্ট-স্মিথ কনজেকচার উপপাদ্য হিলবের্ট-বার্চ উপপাদ্য হিলবের্টস ইরিড্যুসিবিলিটি থিয়োরেম হিলবের্ট নালস্টেলেনসাট্‌জ হিলবের্টের উপপাদ্য (ডিফারেনশিয়াল জ্যামিতি) হিলবের্টের উপপাদ্য ৯০ হিলবের্টের সিজিগি উপপাদ্য হিলবের্ট-স্পিজার উপপাদ্য অন্যান্য ব্রোয়ার-হিলবের্ট বিতর্ক জ্যামিতি এবং কল্পনা আপেক্ষিকতাবাদের অগ্রাধিকার বিতর্ক পাদটীকা তথ্যসূত্র উৎস ইংরেজি অনুবাদে মুখ্য গ্রন্থ ১৯১৮। "অ্যাক্সিওমেটিক থট," ১১১৪-১১১৫। ১৯২২। "দি নিউ গ্রাউন্ডিং অফ ম্যাথমেটিক্সঃ ফার্স্ট রিপোর্ট," ১১১৫-১১৩৩। ১৯২৩। "দি লজিক্যাল ফাউন্ডেশন্স অফ ম্যাথমেটিক্স," ১১৩৪-১১৪৭। ১৯৩০। "লজিক অ্যান্ড নলেজ অফ নেচার," ১১৫৭-১১৬৫। ১৯৩১। "দি গ্রাউন্ডিং অফ এলিমেন্টারি নাম্বার থিওরি," ১১৪৮-১১৫৬। ১৯০৪। "অন দি ফাউন্ডেশন্স অফ লজিক অ্যান্ড অ্যারিথমেটিক," ১২৯-১৩৮। ১৯২৫। "অন দি ইনফাইনাইট," ৩৬৭-৩৯২। ১৯২৭। "দি ফাউন্ডেশন্স অফ ম্যাথমেটিক্স," ওয়েইলের টীকা এবং বার্নেসের পরিশিষ্টসহ, ৪৬৪-৪৮৯। পরবর্তী গ্রন্থ , গালিকায় উপলব্ধ। ফ্রেঞ্চ অ্যাকাডেমিতে ১৯৪৩ সালের ২০ ডিসেম্বরে গ্যাব্রিয়েল বার্ট্রান্ডের "অ্যাড্রেস": সম্প্রতি মৃত সদস্যদের একটি জীবনী নকশা তিনি প্রস্তুত করেন যার মধ্যে ছিলেন পিটার জেমান, ডাভিড হিলবের্ট এবং জর্জেস গিরড। বোট্টাজানি উমবের্তো, ২০০৩। Il ফ্লটো ডি হিলবের্ট। স্টোরিয়া ডেলা মাটেমেটিকা। UTET, কোরি, এল., রেন, জে., এবং স্টাচেল, জে., ১৯৯৭, "হিলবের্ট-আইনস্টাইনের অগ্রাধিকার বিতর্কের বিলম্বিত সিদ্ধান্ত," সায়েন্স ১৭৮: এনএন-এনএন। ডসন, জন ডব্লিউ. জুনিয়র ১৯৯৭। লজিকাল ডিলেমাস: দি লাইফ অ্যান্ড ওয়ার্ক অফ কুর্ট গোডেল। ওয়েলেসলি এমএ: এ. কে. পিটার্স। . ফলসিং, আলব্রেখট, ১৯৯৮। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। পেঙ্গুইন। গ্রত্তন-গ্রিনিচ, আইভর, ২০০০। দি সার্চ ফর ম্যাথমেটিকাল রুটস ১৮৭০-১৯৪০। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস। গ্রে, জেরেমি, ২০০০। দি হিলবের্ট চ্যালেঞ্জ। মেহরা, জগদীশ, ১৯৭৪। আইনস্টাইন, হিলবের্ট, অ্যান্ড দি থিওরি অফ গ্র্যাভিটেশন। রিডেল। পিয়ারজিওর্জিও ওডিফ্রেডি, ২০০৩। ডাইভারটিমেন্টো জিওমেট্রিকো - ডা ইউক্লিড অ্যাড হিলবের্ট। বোল্লাটি বোরিংঘেরি, . ইউক্লিডের "ত্রুটির" একটি স্বচ্ছ ব্যাখ্যা এবং তার সমাধান গ্রুন্ডলাগেন ডার জিওমেট্রি বইটিতে অ-ইউক্লিডিয় জ্যামিতির প্রসঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে। রিড, কনস্টান্স, ১৯৯৬। হিলবের্ট, স্পিঙ্গার, . ইংরেজি ভাষায় হিলবের্টের একটি চূড়ান্ত জীবনী বিষয়ক গ্রন্থ। সিগ, উইলফ্রিড, অ্যান্ড রাভাগলিয়া, মার্ক, ২০০৫ "গ্রুন্ডলাগেন ডার ম্যাথমেটিক" ইন গ্রাট্টান-গিনেস, I., স. ল্যান্ডমার্ক রাইটিংস ইন ওয়েস্টার্ন ম্যাথমেটিক্স। এলসেভিয়ার: ৯৮১-৯৯। (ইংরেজিতে) থর্ন, কিপ, ১৯৯৫। ব্ল্যাক হোলস অ্যান্ড টাইম ওয়ার্পস্‌: আইনস্টাইনস্‌ আউটরেজিয়াস লেগেসি, ডব্লিউ. ডব্লিউ. নর্টন অ্যান্ড কোম্পানি; পুনর্মুদিত সংস্করণ। . বহিঃসংযোগ হিলবের্ট-বার্নিস প্রজেক্ট হিলবের্টস ২৩ প্রবলেমস্‌ অ্যাড্রেস আইসিএমএম ২০১৪ ডেডিকেটেড টু দি মেমোরি অফ ডি. হিলবের্ট ১৯৩০ সালে ক্যোনিগসবের্গে হিলবের্টের রেডিও বার্তার রেকর্ড (জার্মান ভাষায়) ইংরেজি অনুবাদসহ উলফ্রাম ম্যাথওয়ার্ল্ড - হিলবের্ট'কনস্ট্যান্ট ফ্রম হিলবের্টস প্রবলেমস টু দি ফিউচার' অধ্যাপক রবিন উইলসন কর্তৃক প্রদত্ত ভাষণ, গ্রেশাম কলেজ, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ (টেক্সট, অডিও, ভিডিও ফর্ম্যাটে উপলব্ধ) বিষয়শ্রেণী:১৮৬২-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৯৪৩-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:জার্মান গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:জ্যামিতিবিদ বিষয়শ্রেণী:রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য বিষয়শ্রেণী:রৌপবাদ (অবরোহী) বিষয়শ্রেণী:গাণিতিক বিশ্লেষক বিষয়শ্রেণী:মার্কিন ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্য
খ্রিস্টিয়ান হাওখেন্স
https://bn.wikipedia.org/wiki/খ্রিস্টিয়ান_হাওখেন্স
REDIRECTক্রিস্টিয়ান হাইগেনস