আপনাদের সবাইকে দীপাবলির অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমাদের এখানে বলা হয়েছে –শুভম্‌ করোতি কল্যাণং আরোগ্যং ধনসম্পদাম। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দীপাবলি উদযাপিত হয়। বিশেষ করে এই উৎসবে কেবল ভারতীয়রাই সামিল হন এটা নয়, অনেক দেশের সরকার, ঐ দেশের নাগরিক, সামাজিক সংগঠন দীপাবলি উৎসবকে হর্ষ উল্লাসের সঙ্গে পালন করে। একরকমের ভারত সেখানে তৈরি হয়ে যায়। বন্ধুগণ, পৃথিবীতে উতসব পর্যটনের একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। আমাদের ভারত হলো উতসবের দেশ, এখানে উতসব পর্যটনের বিশাল সুযোগ রয়েছে। আমাদের চেষ্টা করা উচিৎ যে হোলী হোক, দীপাবলি হোক, ওণম হোক, পোঙ্গল হোক, বিহু হোক, এই সমস্ত উৎসবের প্রচার করি আর এই খুশীতে অন্য রাজ্যের, অন্য দেশের লোকেদেরও সামিল করি। আমাদের এখানে প্রতি রাজ্যে, প্রতি অঞ্চলে এত রকমের বিভিন্ন উৎসব আছে – অন্য দেশের লোকেদের এই সব উৎসবের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। এই কারণে ভারতে উতসব পর্যটনের উন্নতির জন্য দেশের বাইরে বসবাসকারী ভারতীয়দের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। আমার প্রিয় দেশবাসী, গত ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি ঠিক করেছিলাম, এই দীপাবলি উপলক্ষে কিছু আলাদা করবো। আমি বলেছিলাম- আসুন, আমরা সবাই এই দীপাবলিতে ভারতীয় নারী শক্তি এবং ওঁদের সাফল্যকে উদযাপন করি, অর্থাৎ ভারতের লক্ষ্মীর সম্মান করি। দেখতে দেখতে এর ঠিক পরে স্যোসাল মিডিয়াতেঅসংখ্য অনুপ্রেরণামূলক কাহিনীর ভীড় উপচে পড়ছে। ওয়ারেংলের কোড়িপাকা রমেশ, নমো অ্যাপে লিখেছেন “আমার মা আমার শক্তি। আমার মা আমার ভগবান। আমার সব কিছু, ঠিক ভাবে দেখলে তিনি ভারতের লক্ষ্মী”। ট্যুইটারে সক্রিয়গীতিকা স্বামীর বক্তব্য হলো – তাঁর কাছে মেজর খুশবু কঁয়ার ভারতের লক্ষ্মী, যিনি বাস কন্ডাকটরের মেয়ে আর তিনি আসাম রাইফেলসের মহিলা বাহিনীর নেতৃত্ব করেছিলেন। কবিতা তিওয়ারিজীর কাছে ওঁর মেয়ে ভারতের লক্ষ্মী, যে ওঁর শক্তিও বটে। আবার মেঘা জৈন লিখেছেন- ৯২ বছর বয়স্ক এক মহিলা অনেক বছর ধরে গোয়ালিয়র রেল স্টেশনে যাত্রিদের জলদান করছেন। মেঘাজী, ভারতের এই লক্ষ্মীর বিনম্র স্বভাব আর করুণা থেকে খুব অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এরকম অনেক কাহিনী লোকেরা ভাগ করে নিয়েছেন। আমার প্রিয় দেশবাসী, সপ্তদশ শতাব্দীর বিখ্যাত মহিলা কবি সাচি হোন্নাম্মা, উনি সপ্তদশ শতকে কন্নড় ভাষায় একটি কবিতা লিখেছিলেন। সেই ভাব, সেই সবশব্দ ভারতের সেইসব লক্ষ্মী, যাঁদের কথা আমরা বলছি, মনে হয় এর ভিত সপ্তদশ শতকেরচনা করে দিয়েছিলেন। আমার প্রিয় দেশবাসী, ১২ ই নভেম্বর ২০১৯, এই দিনটিতেই সারাবিশ্বে শ্রী গুরু নানক দেবজীর ৫৫০ তম আবির্ভাব উৎসব পালন করা হবে। গুরু নানক দেবজীর প্রভাব শুধু ভারতেই নয় বরং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে। এই পৃথিবীর অনেক দেশেই আমাদের শিখ ভাইবোনেরা আছেন যারা গুরু নানক দেবজীর আদর্শে তাদের জীবনকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত করেছেন। আমি ভ্যানকুভার ও তেহরানে আমার গুরুদুয়ারা যাত্রার কথা কখনো ভুলতে পারবো না। শ্রী গুরু নানক দেবজী-র বিষয়ে এমন অনেক কথা আছে যা আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারি। কিন্তু এর জন্য মন কি বাত এর অনেক পর্ব লেগে যাবে। উনি সর্বদাই সেবামূলক কাজকে সবার উপরে স্থান দিয়েছেন। গুরু নানক দেবজী বিশ্বাস করতেন নিঃস্বার্থভাবে করা সেবামূলক কাজ অমূল্য। উনি অস্পৃশ্যতার মতো সামাজিক অভিশাপ এর বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই করেছেন। শ্রী গুরু নানক দেব-জী, তাঁর বার্তা পৃথিবীর দূর-দূরান্তে পৌঁছে দিয়েছেন। উনি তাঁর সময়ের সবচেয়ে বেশি ভ্রমণকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন । অনেক জায়গাতেই উনি গিয়েছিলেন আর যেখানেইগিয়েছেন নিজের সারল্য, নম্রতা, শুদ্ধত্মার মাধ্যমে সকলের হৃদয় জয় করেছেন। বলা হয় যে আসামের প্রখ্যাত সাধু, শংকরদেবও ওঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। উনি হরিদ্দারের পবিত্র মাটিতেও যাত্রা করেছিলেন। কর্নাটকের বিদার যাত্রার সময় গুরু নানক দেবজী, সেখানের জলের সমস্যার সমাধান করেছিলেন। বিদরে,গুরুনানকদেবজী-কেউৎসর্গিত, ‘গুরুনানক জীরা সাহেব’ নামক এক বিখ্যাত স্থান রয়েছে, যা আমাদের তাঁর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এক উদাসীর সময় গুরু নানকজী উত্তরে কাশ্মীর এবং তার আশেপাশের স্থানগুলিতেও যাত্রা করেছিলেন। এর ফলে, শিখধর্ম অনুগামীদের এবং কাশ্মীরের মধ্যে এক দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। গুরুনানক দেবজী তিব্বতেও গিয়েছিলেন এবং সেখানেও ওঁকে ‘গুরু’ রূপে স্বীকারকরা হয়। উনি উজবেকিস্তানের যাত্রাও করেছিলেন এবং সেখানেও উনি পূজনীয়। আর এক উদাসীর সময়, উনি ব্যাপকভাবে ইসলামিক দেশগুলিতে যাত্রা করেছিলেন যারমধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, ইরাক এবং আফগানিস্তান। আর এই যাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল গুরু নানক দেবজী-র, ৫৫0 তম প্রকাশ পর্বের উদযাপনের উদ্দেশ্যে। সেখানে, সেই সকল রাজদূতেরা, গোল্ডেন টেম্পল দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে, শিখ ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কেওজানার সুযোগ পান। এই ব্যাপারে আক্ষরিক অর্থেই তিনি, ‘ম্যান অফ ডিটেইল’ ছিলেন । এর পাশাপাশি তিনি সাংগঠনিক দক্ষতাতেও নিপুণ ছিলেন। পরিকল্পনা প্রণয়ন এবংরণকৌশল তৈরিতেও উনি বিশেষভাবে পারদর্শী ছিলেন। সর্দার সাহেবেরকর্মপদ্ধতির বিষয়ে যখন পড়া হয় বা শোনা হয় তখন জানতে পারা যায় যে ওঁরপ্ল্যানিং কত অসাধারণ হত। ১৯২১ সালে, কংগ্রেসের আমেদাবাদ অধিবেশনে যোগদিতে সারা দেশ থেকে হাজার হাজার প্রতিনিধি আগত হন। উনি কৃষকদেরসাথে যোগাযোগ করেন এবং খাদির ব্যাগ তৈরির আহ্বান জানান। আবার দেখুন , এরজন্যে খাদির বিক্রি ও অনেক বেড়ে গেলো। সংবিধান পরিষদে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করার জন্যে দেশ চিরকাল সর্দার প্যাটেলের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। উনি আমাদের মৌলিক অধিকারকে সুনিশ্চিত করার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেন, যাতে আর জাতি অথবা সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করার সম্ভাবনাই না থাকে | বন্ধুগণ, আমরা সকলেই জানি যে ভারতের প্রথম স্বরাস্ট্র মন্ত্রী হিসেবে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এই দেশের খন্ড খন্ড রাজ্য আর প্রান্তগুলিকে এক করার ঐতিহাসিক এবং মহৎ কাজটি করেছিলেন । প্রকৃতপক্ষে, আমরা যখন সর্দার প্যাটেলের প্রয়াসের উল্লেখ করি তখন এই দেশের শুধুমাত্র কিছু বিশেষ প্রান্তে ওঁর ভূমিকার আলোচনা করি । লাক্ষাদ্বীপের মতো একটি ছোট প্রান্তের জন্যেও কিন্তূ উনি গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করেছিলেন । এই সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই , কালবিলম্ব না করে সর্দার প্যাটেল তৎক্ষণাৎ কড়া পদক্ষেপ নিয়ে নিলেন । তাঁর নির্দেশ মতো তৎক্ষণাৎ তেরঙ্গা তোলা হয় আর লাক্ষাদ্বীপের ওপর প্রতিবেশীর কব্জা করার অভিসন্ধি পরাস্ত হয় । এই ঘটনার পর সর্দার প্যাটেল মুদালিয়ার ভ্রাতৃদ্বয় কে বলেন যে তাঁরা যেন ব্যক্তিগত ভাবে সুনিশ্চিত করেন যে লাক্ষাদ্বীপের উন্নয়নে যেন সবরকম সহায়তা পাওয়া যায় । আজ ভারতবর্ষের অগ্রগতিতে লাক্ষাদ্বীপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান করছে । এটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য ও বটে । আমি আশা করবো আপনারা এই সুন্দর দ্বীপপুঞ্জ আর তাদের সমুদ্রসৈকত এ বেড়াতে যাবেন । । আমার প্রিয় দেশবাসী, ৩১এ অক্টোবর ২০১৮ র দিনটি তে সর্দার সাহেবের স্মৃতিতে নির্মিত স্ট্যাচু অফ ইউনিটি সারা দেশ এবং বিশ্ব কে উৎসর্গ করা হয় । এইটি বিশ্বের দীর্ঘতম মানবমূর্তি । দৈর্ঘে এটি আমেরিকার স্ট্যাচু অফ লিবার্টির দ্বিগুন । বিশ্বের দীর্ঘতম মূর্তি প্রত্যেক ভারতীয়র বুক গর্বে ভরে দেয় (ভারতীয় হিসেবে বুক গর্বে ভরে ওঠে যখন ভাবি যে বিশ্বের দীর্ঘতম মূতিটি আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত ) । আত্মাভিমানে প্রত্যেক ভারতীয়র মাথা উঁচু হয়ে যায় । আপনাদের জেনে আনন্দিত হবেন যে এক বছরেই স্ট্যাচু অফ ইউনিটি মূর্তিটি দেখতে ২৬ লক্ষ পর্যটক এসেছিলেন । অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে সাড়ে আট হাজার মানুষ এই স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’র গৌরব চাক্ষুষ করেছে । হোমস্টে বা বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের সুযোগ সুবিধার পেশাদারি প্রশিক্ষণ ও দেওয়া হচ্ছে । স্থানীয় মানুষ তো এখন ড্রাগন ফ্রুটের চাষবাস ও শুরু করে দিয়েছেন আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এটি ওদের জীবিকা অর্জনের মুখ্য উপায় হয়ে উঠবে । বন্ধুগণ , দেশের জন্যে , প্রত্যেকটি রাজ্যের জন্যে, পর্যটন শিল্পের জন্যে এই স্ট্যাচু অফ ইউনিটি, একটি অধ্যয়নের বিষয় হতে পারে । আমরা তো সাক্ষী কিভাবে একটি স্থান একটি বছরের মধ্যেই একটি বিশ্ব প্রসিদ্ধ পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে , যেখানে দেশের – বিদেশের লোক আসছে । পরিবহন ব্যবস্থা, থাকবার জায়গা , গাইড-দের উপস্থিতি , পরিবেশ বান্ধব ব্যবস্থা – একের পর এক প্রত্যেকটি উন্নত হয়ে চলেছে । খুব বড় ধরণের অর্থনৈতিক উন্নতি শুরু হয়েছে এবং পর্যটকদের প্রয়োজন মতো , স্থানীয় মানুষ পরিষেবা উদ্ভাবন করছেন । সরকার ও নিজের দায়িত্ত্ব পালন করছে । বন্ধুরা, আপনারা জানেন যে, ২০১৪ থেকে প্রত্যেক বছর ৩১ শে অক্টোবর দিনটি রাষ্ট্রীয় একতা দিবস হিসাবে উদযাপিত হচ্ছে। এই দিনটি আমাদের দেশের ঐক্য, অখণ্ডতা এবং সুরক্ষা কে যেকোন মুল্যে বজায় রাখার বার্তা দেয়। এবারও এদিন ‘রান ফর ইউনিটি’- র আয়োজন করা হচ্ছে। এতে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ সামিল হবেন। দৌড়ানো, মন এবং শরীর দুয়ের পক্ষেই লাভজনক। আমি আশা রাখি যে, আপনারা সকলে 31 শে অক্টোবর দৌড়ে অংশগ্রহণ করবেন – দেশের একতা এবং নিজেদের শরীর সুস্থ রাখার উদ্দেশ্যে । আমার প্রিয় দেশবাসী, সর্দার প্যাটেল দেশকে ঐক্যের সূত্রে বেঁধেছিলেন। ঐক্যের এই মন্ত্র আমাদের জীবনের সংস্কার- স্বরূপ। ভারতবর্ষের মতো বৈচিত্রপূর্ণ দেশে প্রত্যেক স্তরে, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে, ঐক্যের মন্ত্রকে দৃঢ় করার চেষ্টা করা উচিত। আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশের ঐক্য ও সেই সংক্রান্ত চিন্তাকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের সমাজ সবসময়ই খুব সক্রিয় এবং সতর্ক থেকেছে। বন্ধুরা, আমার মনে পড়ছে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কথা, যখন এলাহাবাদ হাইকোর্ট রাম জন্মভূমি সংক্রান্ত রায় দিয়েছিল। আমি আজ ওঁকেও আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি। আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ যদি প্রত্যেক বাড়িতে, প্রত্যেক গ্রামে একটি গাথা ধ্বনিত হয়, পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ, ভারতবর্ষের প্রত্যেক প্রান্তে যদি একটি কাহিনী মুখরিত হয়, তবে তা হল স্বচ্ছতার। কিন্তু একটি আনন্দদায়ক এবং রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাও আছে। আমি শুনেছি এবং আপনাদেরও শোনাতে চাই। এত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে, এত প্রতিকূলতার মধ্যে থাকাও কম বীরত্বের ব্যাপার নয়। এরকম ভয়ানক অবস্থার মধ্যে আমাদের নির্ভীক জওয়ানরা যে কেবল বীর-বিক্রমে দেশের সীমা সুরক্ষিত রাখছেন তাই নয়, তাঁরা ওখানেস্বচ্ছ সিয়াচেন অভিযানও চালাচ্ছেন। ওখানে এত ঠাণ্ডা যে কোনও কিছুই গলতেচায় না। এরকম পরিস্থিতিতে আবর্জনা আলাদা করা, তার ব্যবস্থাপনা করাই একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমরা সবাই জানি যে সিয়াচেন এমন একটিহিমবাহ যা নদী ও শুদ্ধ জলের উৎস। এরকম একটি জায়গায় স্বচ্ছ ভারত অভিযান চালানো মানে যারা নীচু এলাকায় থাকে তাদের জন্য শুদ্ধ জলের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা। এর সঙ্গে নুব্রা ও শিওক-এর মত নদীর জল ব্যবহার করেন। আমার প্রিয় দেশবাসী, উৎসব এমন একটি পর্ব যা আমাদের সবার জীবনে একটি নতুন চেতনা জাগায়। আর দীপাবলিতে তো বিশেষ করে কিছু-না-কিছু নতুন কেনা, বাজার থেকে কিছু আনা কম-বেশি সব পরিবারেই হয়। আমি একবারবলেছিলাম যে আমরা চেষ্টা করি স্থানীয় জিনিসপত্র কিনি। যদি আমাদের প্রয়োজনের জিনিসপত্রগুলি যদি আমরা নিজেদের গ্রামেই পাই তাহলে তহসিলে যাওয়ার দরকার নেই। তহসিলে যদি পাই তাহলে জেলায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যত বেশি আমরা লোকাল জিনিস কেনার প্রচেষ্টা করি, ততই বেশি গান্ধী ১৫০ আপনা-আপনি এক মহৎ উৎসবে পরিনত হবে। আর আমি তো সবসময়ই এই অনুরোধ করি যে আমাদের তাঁতির হাতে বোনা, আমাদের খাদি কর্মীদের হাতে তৈরি কিছু-না-কিছু তো আমাদের কেনা উচিৎ। এই দীপাবলিতেও, দীপাবলির আগেই অনেকে অনেক কিছু কিনে ফেলেছেন, কিন্তু এরকমও অনেকে আছেন যারা মনে করেন যে দীপাবলির পরে গেলে হয়ত জিনিসপত্র কিছুটা সস্তায় পাওয়া যাবে। তাই এরকম অনেক মানুষ থাকবেন যাঁদের কেনাকাটা এখনো বাকি। তাই দীপাবলির শুভেচ্ছা জানানোর সঙ্গে-সঙ্গে আমি আপনাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে আসুন আমরা স্থানীয় কেনায় ইচ্ছুক হই, স্থানীয় জিনিস কিনি। দেখুন, মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্ন সফল করতে আমরাও কি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারি। আমি আরেকবার দীপাবলির এই পুণ্যতিথির অনেক শুভকামনা আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি। দীপাবলি তে সবার মত আমরা বাজীর ব্যবহার করি। কিন্তু অনেক সময় অসাবধানতাবসত আগুন লেগে যায়। কখনও আহত হয়ে যায়। আমার আপনাদের সবার কাছে এই অনুরোধ যে আপনারা সাবধানে থাকুন এবং উৎসব প্রচুর উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করুন। আমার অনেক-অনেক শুভকামনা রইল। মান কি বাট, সেপ্টেম্বর 2018 আজ সমগ্র দেশ রাখীবন্ধন উৎসব পালন করছে। এই পুণ্যলগ্নে সমস্ত দেশবাসীকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা! রাখীবন্ধনের এই উৎসব বোন ও ভাইয়ের প্রেম ও বিশ্বাসের প্রতীক। বহু শতাব্দী ধরে এই উৎসব সামাজিক সৌহার্দ্যের এক বড় উদাহরণ। দেশের ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা আছে, যখন দেখা গেছে একটি রক্ষাসূত্র কীভাবে দুটি রাজ্য, বা আলাদা আলাদা ধর্মের মানুষকে বিশ্বাসের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। আকাশে বাতাসে শোনা যাবে ‘হাথী ঘোড়া পাল-কি জয় কান্‌হাইয়া লাল-কি’ আর ‘গোবিন্দা – গোবিন্দা’ নামের জয়ধ্বনি। কৃষ্ণের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নিয়ে এই উল্লাসে মেতে ওঠার আনন্দই আলাদা। আমি সেই সমস্ত মানুষকেও অভিনন্দন জানাই, যাঁরা এই মহান ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার, এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং জনে জনে পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত আছেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজে লাগার মত জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে। তা সে বিজ্ঞান হোক বা তন্ত্রের জ্ঞান, কৃষি হোক বা স্বাস্থ্য, জ্যোতির্বিজ্ঞান হোক বা আর্কিটেকচার, অঙ্ক হোক বা ম্যানেজমেন্ট, অর্থশাস্ত্র হোক বা পরিবেশ — বলা হয়, গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর মত চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়বার মন্ত্রও আমাদের বেদে বিস্তারিত ভাবে উল্লিখিত আছে। আপনারা সবাই জেনে খুশি হবেন যে, কর্ণাটকের শিবমোগা জেলার ‘মট্টুর’ গ্রামের সমস্ত মানুষ আজ কথাবার্তার মাধ্যম হিসাবে সংস্কৃত ভাষাকে বেছে নিয়েছেন। আপনারা একটা কথা জেনে আশ্চর্য বোধ করবেন যে সংস্কৃত এমন একটি ভাষা, যার মধ্যে অনন্ত শব্দের নির্মাণ সম্ভব। তাঁর জন্মজয়ন্তীতেই পুরো দেশ জুড়ে ‘শিক্ষক দিবস’ পালিত হয়। আমি দেশের সমস্ত শিক্ষকদের আসন্ন ‘শিক্ষক দিবস’-এর শুভেচ্ছা জানাই ও সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ছাত্রদের প্রতি তাঁর সমর্পণকে, তাঁর নিষ্ঠাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। ক’দিন আগেই আমরা দেখলাম, ভীষণ বন্যা কীভাবে কেরলের জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এইরকম কঠিন পরিস্থিতিতে সারা দেশ কেরলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি প্রার্থনা করি, যাঁরা এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আহত হয়েছেন, তাঁরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করুন। আমার পুরো বিশ্বাস আছে যে অদম্য প্রাণশক্তি ও সাহসের উপর ভর করে কেরলের জনজীবন দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। কচ্ছ থেকে কামরূপ আর কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত প্রত্যেকটি মানুষ নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন, যাতে যে যে প্রান্তগুলিতে বিপর্যয় ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, তা সে কেরল হোক বা ভারতের যে কোনও জেলা বা এলাকা, সেই সমস্ত স্থানের জনজীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফেরে। সমস্ত বয়সের মানুষ এবং সমস্তরকম কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষ নিজেদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রত্যেকে ভাবছেন কেরলের মানুষের দুঃখ-কষ্ট কীভাবে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়, যাতে তা লাঘব হয়। আমরা সবাই জানি, সশস্ত্র সুরক্ষাবলের জওয়ানরা কেরলের এই বিপর্যয়ে উদ্ধারকার্যের নায়ক। তাঁরা বন্যাকবলিত মানুষদের বাঁচাবার জন্য সব রকম উপায় অবলম্বন করেছেন। আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই এন-ডি-আর-এফের জওয়ানদের কঠোর পরিশ্রমের কথা। এই বিপদের মোকাবিলায় তাঁরা যেভাবে কাজ করেছেন তা বিশেষ প্রশংসার দাবী রাখে। এন-ডি-আর-এফের ক্ষমতা, তাঁদের দায়বদ্ধতা, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিস্থিতিকে আয়ত্বে আনার ক্ষমতা সমস্ত দেশবাসীর মনে এক শ্রদ্ধার আসন তৈরি করেছে। গাজিয়াবাদ থেকে কীর্তি, সোনিপত থেকে স্বাতি বৎস, কেরলের ভাই প্রবীণ, পশ্চিমবাংলা থেকে ডক্টর স্বপন ব্যানার্জী, বিহারের কাটিহার থেকে অখিলেশ পাণ্ডে — আরও অসংখ্য মানুষ ‘নরেন্দ্র মোদী মোবাইল অ্যাপ’-এ এবং ‘মাই গভ’-এ অটলজীর জীবনের বিভিন্ন দিকগুলি নিয়ে আমাকে বলতে অনুরোধ করেছেন। ১৬-ই আগষ্ট যে মুহূর্তে দেশের ও বিশ্বের মানুষ অটলজীর প্রয়াণের খবর পেয়েছেন, প্রত্যেকে গভীর শোক ব্যক্ত করেছেন। তাঁকে খবরে বিশেষ দেখা যেত না। ভারত সব সময় ‘একানব্বইতম সংশোধন অধিনিয়ম ২০০৩’-এর জন্য অটলজীর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। প্রথমটি হল রাজ্যগুলির মন্ত্রীমণ্ডলীকে বিধানসভার মোট আসনের পনের শতাংশ পর্যন্ত সীমিত করা। একমাত্র অটলজীই এমন দূরদর্শী ছিলেন যিনি পরিস্থিতির পরিবর্তন আনেন ও রাজনীতিতে সুস্থ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। অটলজী এক সত্যিকারের দেশভক্ত ছিলেন। ২০০১-এ অটলজী বাজেট পেশ করার সময়কে বিকেল পাঁচটার বদলে বেলা এগারোটা করে দেন। এটি লাগু হয় ২০০২ থেকে, যার ফলে সার্বজনিক জায়গায় তিরঙ্গা উত্তোলন সম্ভব হয়। সাধারণ ভারতীয়রা জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সুযোগ পায়। এই ভাবে উনি আমাদের প্রাণপ্রিয় তিরঙ্গাকে জনসাধারণের কাছে নিয়ে আসেন। কিছু দিন আগেই সংসদের বাদল অধিবেশন সমাপ্ত হয়। আপনারা জেনে প্রসন্ন হবেন লোকসভার productivity ১১৮ শতাংশ ও রাজ্যসভার ৭৪ শতাংশ ছিল। দলীয় স্বার্থ ত্যাগ করে সমস্ত সাংসদ বাদলঅধিবেশনকে সবথেকে বেশি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন, তারই পরিনাম হলো, লোকসভা ২১ টি ও রাজ্যসভা ১৪ টি বিল পাস করেছে। সংসদের এই বাদল অধিবেশন সামাজিক ন্যায় এবং যুবকল্যাণের ক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই অধিবেশনে যুব এবং অনগ্রসর শ্রেণির উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বেশ কতগুলো বিল পাস করা হয়েছে। আপনারা সবাই জানেন, কয়েক দশক ধরে SC/ST কমিশনের মতো OBC কমিশন তৈরির দাবী করা হচ্ছিল। অনগ্রসর শ্রেণীর অধিকারকে সুনিশ্চিত করার জন্য, দেশ এই বার OBC কমিশন তৈরির সংকল্পকে পূর্ণকরেছেএবং এই প্রতিষ্ঠানকে একটি সাংবিধানিক অধিকার দিয়েছে। এই পদক্ষেপ সামাজিক ন্যায়ের উদ্দেশ্যকে সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। তপশিলী জাতি ও তপশিলী উপজাতিদের অধিকারকে সু্রক্ষিত করার জন্য সংশোধিত বিল পাস করার কাজও এই অধিবেশনে শুরু হয়েছে। এই আইন SC ও ST শ্রেণির মানুষদের স্বার্থকে আরও বেশি সুরক্ষিত করবে। একই সঙ্গে এটি তাদেরঅপরাধীদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করবে এবং তাদের আস্থা বাড়াবে। দেশের নারীদের প্রতি কোনও সভ্যসমাজ কোনও প্রকার অন্যায় বরদাস্ত করতে পারে না। এই অপকর্মের অপরাধীদের ন্যূনতম১০ বছরের সাজা হবে, ১২ বছরের কম মেয়েদের ধর্ষণ করলে ফাঁসির সাজা হবে। কিছু দিন আগে আপনারা হয়তো সংবাদপত্রে পড়েছেন, মধ্যপ্রদেশের মন্দসোরের একটি আদালত মাত্র দু’ মাসের শুনানির পর এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করার অপরাধে দু’জন দোষীকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছেন। এরও আগে মধ্যপ্রদেশের কাটনীর এক আদালত মাত্র পাঁচ দিন শুনানির পর অপরাধীদের ফাঁসির শাস্তি দেন। রাজস্থানের একটি আদালতও এরকম দ্রুত রায় দিয়েছেন। এই আইন মহিলা এবং বালিকাদের প্রতি অপরাধের মামলাকে নিষ্পত্তি করতে গঠনমূলক ভূমিকা নেবে। সামাজিক পরিবর্তন ছাড়া আর্থিক প্রগতি অসম্পূর্ণ। লোকসভাতে ‘তিন তালাক’ বিলটিকে পাস করা হয়েছে, যদিও রাজ্যসভাতে এই অধিবেশনে পাস করানো সম্ভব হয়নি। আমি মুসলিম মহিলাদের আশ্বাস প্রদান করতে চাই, সমগ্র দেশ ওঁদের ন্যায় প্রদান করার জন্য সমস্ত শক্তি দিয়ে সঙ্গে রয়েছে। যখন আমরা দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য এগিয়ে আসি, তখন দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া, শোষিত ও বঞ্চিতদের জীবনে পরিবর্তন আনা সম্ভব। এবারের বাদল অধিবেশনে সবাই একসঙ্গে একটি আদর্শ স্থাপন করে দেখিয়েছি। প্রতিদিন সকালে সবার আগে সংবাদপত্রে, টেলিভিশনে, খবরে, Social Media-তে নজর থাকে কোন ভারতীয় খেলোয়াড় পদক জিতেছেন। এশিয়ান গেমস এখনও চলছে। আমি দেশের জন্য যাঁরা পদক জিতেছেন, তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। যাঁদের প্রতিযোগিতা এখনও বাকি, ওঁদেরওঅনেক অনেক শুভকামনা জানাই। এটাও একটা ভালো চিহ্ন যে, যে সব খেলোয়াড়রা পদক জিতেছেন, তাঁদের অনেকেই অখ্যাত গ্রাম ও মফঃস্বল থেকে উঠে এসেছেন এবং কঠিন পরিশ্রম করে এই সাফল্যঅর্জন করেছেন। ২৯-শেআগস্ট আমরা ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’ পালন করব, এই উপলক্ষ্যে আমি সমস্ত ক্রীড়াপ্রেমীদের শুভেচ্ছা জানাই, একই সঙ্গে হকির জাদুকর মহান খেলোয়াড় শ্রীধ্যানচাঁদজী-কে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি । দেশের সমস্ত নাগরিকদের কাছে আমার আবেদন, আপনারা সবাই খেলাধূলা করুন এবং নিজের ফিটনেসের প্রতি নজর দিন, কারণ সুস্থ ভারতই সম্পন্ন ও সমৃদ্ধ ভারতের নির্মাণ করবে। আরেকবার, এশিয়ান গেমসে পদক বিজেতাদের অভিনন্দন জানাই, একইসঙ্গে বাকি খেলোয়াড়দেরও ভালো ফলাফলের শুভকামনা জানাই। কিন্তু তামিলনাড়ুর তাঞ্জাভুর-এর বৃহদেশ্বর মন্দির সেই স্থান, যেখানে স্থাপত্যকলা এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই অবিস্মরণীয় মেলবন্ধন দেখা যায়। ভারতভূমি বরাবরই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রয়োগশালা। ভারতে এমন অনেক ইঞ্জিনিয়ার জন্মেছেন যারা অকল্পনীয়কে কল্পনীয় করেছেন এবং Engineering জগতে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়ে উদাহরণ স্থাপন করেছেন। দেশের ওই অংশে তিনি তো পূজনীয় বটেই দেশের বাকি অংশের সব মানুষও তাকে অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তাঁরই স্মরণে 15–ই সেপ্টেম্বর Engineers’ Day হিসেবে পালিত হয়। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়াররা প্রাচ্য দুনিয়ায় নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করেছেন। Engineering জগতের অভাবনীয় কৃতিত্বের কথা বলতে গেলে 2001 সালে গুজরাটের কচ্ছের সেই ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের সময়কার একটা ঘটনা আমার মনে পড়ে। আমাদের ভাবতে হবে পরিবর্তিত সময়ে আমাদের কি কি নতুন বিষয় শিখতে হবে? সারা পৃথিবী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়ছে। এখানে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নতুন প্রয়োগ কি হবে? তার কোর্স কী কী আছে? ছাত্র-ছাত্রীদের কি শেখানো উচিত? এই ভাবনা নিয়ে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আবার কথা হবে। ওখানে গুহাতে যেতে এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে সাধারণভাবে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু ঐ দিন ভাগ্যদেবীর অন্যরকম ইচ্ছা ছিল। ওরা যখন গুহার ভিতরে অনেকটা ঢুকে গেছে, তখন হঠাৎ প্রচুর বৃষ্টির কারণে গুহার মুখে প্রচুর জল জমে যায়। ওখানকার সরকার, বাচ্চাদের পিতা-মাতা, পরিবারের লোকজন, গণমাধ্যম, দেশের নাগরিকবর্গ — প্রত্যেকে শান্তি ও ধৈর্যের এক অনুকরণীয় আচরণ করে দেখিয়েছে। সবাই দলবদ্ধ ভাবে এই মিশনে সামিল হয়েছে। এই অপারেশানে থাইল্যাণ্ডের নৌবাহিনীর এক সৈন্যকে প্রাণ দিতে হয়েছে। সমগ্র বিশ্ব আশ্চর্যান্বিত যে এইরকম বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতি সত্ত্বেও উদ্ধারকারীরা জলমগ্ন অন্ধকার গুহাতে সাহস ও ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করেছে, আশা ছাড়েনি। এই ঘটনা এটাই দেখায় যে যখন মানুষ জোটবদ্ধ হয়, তখন অনেক আশ্চর্য জিনিষ হয়। এটাই প্রয়োজন যে আমরা শান্ত মনে স্থির চিত্তে নিজেদের লক্ষ্যে মনোনিবেশ করি এবং তার জন্য কাজ করতে থাকি। কিছুদিন আগে আমাদের দেশের জনপ্রিয় কবি নীরজ প্রয়াত হয়েছেন। জুলাই এবং আগষ্ট মাস কৃষকদের জন্য এবং সব তরুণদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটাই হচ্ছে সেই সময় যখন কলেজগুলির জন্য ‘পিক সেশন’। সত্যমের মত লক্ষ লক্ষ যুবক স্কুল থেকে বেরিয়ে কলেজে যায়। ফেব্রুয়ারি আর মার্চ মাস যায় পরীক্ষা, প্রশ্ন-উত্তর লেখায়। এপ্রিল এবং মে মাস ছুটিতে আনন্দ করার সঙ্গে সঙ্গে রেজাল্ট, ভবিষ্যত জীবনের দিক নির্ণয় এবং ‘কেরিয়ার চয়েস’ করতে ব্যয় হয়। জুলাই হচ্ছে সেই মাস, যখন যুবকরা নিজের জীবনের নূতন পথে পদক্ষেপ করে। যখন ফোকাস ‘কোশ্চেন’ থেকে সরে ‘কাট-অফ’-এ চলে যায়। ছাত্রদের মনযোগ ‘হোম’ থেকে ‘হোস্টেল’-এ চলে যায়। ছাত্ররা ‘পেরেন্ট’দের ছত্রছায়া থেকে ‘প্রফেসর’দের ছত্রছায়াতে প্রবেশ করে। আমার বিশ্বাস, আমার যুব বন্ধুরা কলেজ জীবনের শুভারম্ভকে নিয়ে খুবই উৎসাহিত এবং খুশি। প্রথমবার বাড়ির বাইরে বেরনো, গ্রামের বাইরে যাওয়া, এক সুরক্ষিত পরিবেশ থেকে বাইরে বেরিয়ে নিজেকে নিজের পথ প্রদর্শক হতে হয়। এতসব যুবক নিজের ঘর ছেড়ে জীবনকে এক নূতন পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বেরিয়ে পরে। বই ছাড়া কোনও উপায় নেই, পড়াশোনা তো করতেই হবে। কিন্তু নূতন নূতন বিষয় খোঁজার ইচ্ছা চালিয়ে যেতে হবে। পুরনো বন্ধুরা খুবই মূল্যবান। যে সমস্ত যুবক নিজের ঘর ছেড়ে বাইরে অন্য কোথাও পড়তে গেছেন, তাঁরা ঐ জায়গাকে আবিষ্কার করুন। ওখানকার সম্পর্কে, ওখানকার লোক, ভাষা, সংস্কৃতি সম্বন্ধে জানুন। নূতন অধ্যায় শুরু করছেন —সব নব যুবকদের জন্য আমার শুভকামনা রইল। তার বাবা আজীবন আস্তাকুঁড়ের আবর্জনা কুড়িয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করে এসেছেন। সেই পরিস্থিতিতে এই সাফল্যের জন্য আমি আশারামকে অভিনন্দন জানাই। এমন কত দুঃস্থ পরিবারের ছাত্র আছে যারা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেই নিজেদের পরিশ্রম আর মনযোগকে সম্বল করে এমন কিছু করে দেখিয়েছে, যা আমাদের সকলকে প্রেরণা যোগায়। যেমন দিল্লির প্রিন্স কুমার, যার বাবা ডি-টি-সি’র বাসচালক, কিংবা কলকাতার অভয় গুপ্তা, যে ফুটপাথে রাস্তার আলোর নীচে বসে পড়াশোনা করেছে — এদের মধ্যে আছে আমেদাবাদের মেয়ে আফরীন শেখ, যার বাবা অটো চালান, আছে নাগপুরের স্কুলবাস চালকের মেয়ে খুশি, হরিয়ানার চৌকিদারের ছেলে কার্তিক কিংবা ঝাড়খণ্ডের ইঁট-ভাঁটার মজদুরের ছেলে রমেশ সাহু। গুরগাঁওয়ের প্রতিবন্ধী মেয়ে অনুষ্কা পাণ্ডে জন্ম থেকেই ‘স্পাইনাল মাসকুলার অটোপ্‌সি’ নামক বংশগত রোগের শিকার — এরা সবাই নিজেদের দৃঢ় সংকল্প আর মনের জোরে সব বাধা পার করে দুনিয়াকে দেখানোর মতো সাফল্য অর্জন করেছে। নিজেদের আশেপাশে তাকালে আমরা এমন কত উদাহরণই পেয়ে যাব। আমি ‘ব্রেন-ড্রেন’-কে ‘ব্রেন-গেইন’-এ বদলে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। নিজেদের প্রফেশনাল স্কিলকে ব্যবহার করে যোগেশজী এবং রজনীশজী মিলে একটি ‘স্মার্ট গাঁও অ্যাপ’ তৈরি করেছেন। এই অ্যাপ শুধু যে গ্রামের লোকেদের গোটা দুনিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করবে তা-ই নয়, এখন তাঁরা যে কোনও তথ্য বা সংবাদ নিজেদের মোবাইলেই পেয়ে যাবেন। সন্তোষজী, আপনার ফোনের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ! বন্ধুগণ, আষাঢ় মাসের একাদশী, যেটা এবছর ২৩-শে জুলাই তারিখে ছিল, এই দিনে পণ্ঢরপুরের পুণ্যযাত্রা জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। সন্ত জ্ঞানেশ্বর আর সন্ত তুকারামের মত সন্ন্যাসীদের পাদুকা পালকিতে রেখে বিঠ্‌ঠল ভগবানের নামে নাচগান করতে করতে পণ্ঢরপুরের দিকে রওনা দেওয়া হয়। ভগবান বিট্‌ঠল, যাঁকে বিঠোবা বা পাণ্ডুরঙ্গ-ও বলা হয়, তাঁর দর্শনের জন্য ভক্তরা ওখানে পৌঁছন। ভগবান বিট্‌ঠল দরিদ্র, অসহায়, পীড়িতদের স্বার্থরক্ষা করেন। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, গোয়া, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানার লোকেদের অপার শ্রদ্ধা এবং ভক্তি রয়েছে এই ভগবানের প্রতি। আপনারা পণ্ঢরপুরের বিঠোবা মন্দিরে যান, ওখানকার মাহাত্ম্য, সৌন্দর্য, আধ্যাত্মিক আনন্দের এক আলাদা অনুভূতি রয়েছে। ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের শ্রোতাদের আমার অনুরোধ, যদি সুযোগ আসে পণ্ঢরপুরের পুণ্যযাত্রার অভিজ্ঞতা অবশ্যই অর্জন করবেন। ‘ভারূড’ বা ‘আভংগ’-এর মতো শ্লোকে আমরা ওঁদের কাছ থেকে সদ্ভাব, প্রেম আর ভ্রাতৃত্ববোধের উপদেশ পাই। অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে শ্রদ্ধার সঙ্গে সমাজ লড়াই করতে পারে, এই মন্ত্র আমরা এঁদের কাছ থেকে পাই। এঁরাই সঠিক সময়ে সমাজকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন এবং সমাজ থেকে পুরনো কুসংস্কার দূর হোক, এটা সুনিশ্চিত করেছেন। মানুষের মধ্যে করুণা, সাম্য এবং শুচিতার ভাবনা নিয়ে এসেছেন। ঠিক এরকমই এক মহাপুরুষ ছিলেন লোকমান্য তিলক, যিনি অনেক ভারতীয়ের মনে গভীর ছাপ ফেলেছেন। আমরা ২৩-শে জুলাই তিলকজীর জন্মজয়ন্তী, আর ১-লা আগষ্ট ওঁর প্রয়াণদিবসে তাঁকে ভক্তি ভরে স্মরণ করি। লোকমান্য তিলক সাহস আর আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান ছিলেন। ব্রিটিশ শাসকদের ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে দেওয়ার মতো ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা তাঁর ছিল। লোকমান্য তিলক এবং আমেদাবাদে তাঁর যে মূর্তি রয়েছে তা নিয়ে এক বিশেষ ঘটনার কথা আপনাদের আমি বলছি। এরপর নগর কর্পোরেশনের মেয়র হয়েই বল্লভভাই প্যাটেল ব্রিটেনের মহারানীর নামাঙ্কিত ‘ভিক্টোরিয়া গার্ডেন’-এ মহামান্য তিলকের স্মারক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। আমার প্রিয় দেশবাসী, এই যে মূর্তি সর্দার প্যাটেল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তার একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে লোকমান্য তিলকজী চেয়ারে উপবিষ্ট। এই মূর্তির নীচে লেখা আছে, “স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার”। লোকমান্য তিলকের উদ্যোগেই প্রথম সার্বজনীন গণেশ উৎসব উদ্‌যাপন শুরু হয়েছিল। সার্বজনীন গণেশ উৎসব পরম্পরাগতভাবে শ্রদ্ধা ও আয়োজনে সমৃদ্ধ হয়ে উঠলেও একই সঙ্গে সমাজ জাগরণ, একতা, সমদর্শিতা এবং সাম্যের মানসিকতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটা প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছিল। এখন যে কোনও শহরের অলিতে গলিতে গণেশ মণ্ডপ দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের যুবসমাজের কাছে এ এক অতুলনীয় সুযোগ। এতে তাঁরা organisation ও leadership-এর মতো বিশেষ ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন এবং নিজেদের ভেতর সেগুলিকে বিকশিত করতে পারেন। আমি চন্দ্রশেখর আজাদের কথা বলছি। ভারতে এমন কোনও নওজোয়ান আছেন, যিনি এই পংক্তি শুনে প্রেরণা পাবেন না —সরফোরশি কি তমন্না অব হামারে দিল মে হ্যায়দেখনা হ্যায় জোর কিতনা বাজু-এ-কাতিল মে হ্যায়। এই কবিতার লাইনগুলি আশফাক উল্লাহ্‌ খান, ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদের মতো তেজীদের প্রেরণা দিয়েছিল। চন্দ্রশেখর আজাদের সাহসিকতা এবং স্বাধীনতার জন্য আকুলতা অনেক যুবককেই প্রেরণা জুগিয়েছিল। আজাদ নিজের জীবন বাজী রেখেছিলেন কিন্তু বিদেশী শাসনের সামনে কখনও মাথা নোয়াননি। এটা আমার সৌভাগ্য যে মধ্যপ্রদেশে চন্দ্রশেখর আজাদের গ্রাম অলীরাজপুর যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আরও একবার ভারতমাতার দুই মহান সন্তান লোকমান্য তিলকজী এবং চন্দ্রশেখর আজাদজীকে শ্রদ্ধাপূর্ণ নমস্কার জানাচ্ছি। কিছুদিন আগে ফিনল্যাণ্ডে অনুষ্ঠিত জুনিয়র অনূর্ধ্ব কুড়ি বিশ্ব অ্যাথলেটিক্‌স চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ মিটারের দৌড়ে ভারতের বাহাদুর কন্যা, কিষাণকন্যা হিমা দাস স্বর্ণপদক জিতে ইতিহাসসৃষ্টি করেছে। দেশের আর এক কন্যা একতা ভয়ান আমার চিঠির জবাবে ইন্দোনেশিয়া থেকেআমাকে ই-মেল করে। এখন ও ওখানে এশিয়ান গেমসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ই-মেলে একতা লিখছে — যে কোনও অ্যাথলিটের জীবনে মাহেন্দ্রক্ষণ সেটাই যখন সে তেরঙ্গা জড়িয়ে ধরে আর আমার গর্ব যে আমি তা করে দেখিয়েছি। একতা, আমাদের সবার আপনাকে নিয়ে গর্ব হয়। ওর এই সাফল্য উল্লেখযোগ্য এই কারণে, যে ও নিজের চ্যালেঞ্জকে সাফল্যের মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছে। ২০০৩-এ রোড অ্যাকসিডেণ্টে একতা ভয়ানের শরীরের নীচের অংশ অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু এই মেয়েটি সাহস হারায়নি এবং নিজেকে শক্তিশালী করে তুলে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছেছে। আমার প্রিয় দেশবাসী, আগষ্ট মাস ইতিহাসের অনেক ঘটনা, উৎসবের ঘটনাপ্রবাহে ভরা। কিন্তু আবহাওয়ার জন্য কখনও কখনও অসুখও ঘরে প্রবেশ করে। আমি আপনাদের সকলের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য, দেশভক্তির প্রেরণা জাগানো এই আগষ্ট মাসের জন্য এবং শতবর্ষ ধরে চলে আসা অনেক অনেক উৎসবের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ‘মন কি বাত’-এ আবার মিলিত হবে। আমার প্রিয়দেশবাসী, আজ আবার একবার ‘মন কি বাত’-এর এই অনুষ্ঠানে আপনাদের সবার সঙ্গেমুখোমুখি হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। কিছু দিন আগে ব্যাঙ্গালুরুতে একটি ঐতিহাসিক ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছিল। আপনারা হয়তো বুঝে ফেলেছেন যে আমি ভারত আর আফগানিস্তানের টেস্ট ম্যাচের কথা বলছি। এটা আফগানিস্তানের প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ ছিল, আর সকল ভারতীয়দের গর্বের বিষয় যে আফগানিস্তানের এই ঐতিহাসিক ম্যাচটি ভারতের সঙ্গে ছিল। আমি আমাদের ভারতীয় বন্ধুদেরও ধন্যবাদ জানাই, যাঁরা আমাদের খেলোয়াড়দের ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখানোর এক মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছেন। আফগানিস্তানের যেটা শ্রেষ্ঠ, রাশিদ তার প্রতিনিধিত্ব করেছেন”। তিনি ক্রিকেটের জগতে একজন সম্পদ,আর এর সাথে সাথে তিনি একটু মজা করেও লিখেছেন - “না, আমি এটা কাউকে দিতেও চাই না”। এই ম্যাচটি আমাদের সবার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যদিও এটা প্রথম ম্যাচ ছিল, এইজন্য মনে থাকাটা স্বাভাবিক, কিন্তু এই ম্যাচ অন্য এক বিষয়ের জন্যও আমার মনে থাকবে। ভারতীয় টিম এমন একটা কাজ করেছে যেটা গোটা বিশ্বে নজিরবিহীন। ভারতীয় টিম ট্রফি নেওয়ার সময়, এক বিজেতা টিম কি করতে পারেতাই করেদেখিয়েছে। ভারতীয় টিম ট্রফি নেওয়ার সময়, আফগানিস্তান টিম — যাঁরা প্রথমবার আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছে, তাদের আমন্ত্রণ জানায়, আর একসাথে ফোটো তোলে। Sportsman spirit ও sportsmanship কী হতে পারে — এই ঘটনা থেকে আমরা অনুভব করতে পারি। খেলা সমাজকে একজোট করার জন্য এবংআমাদের যুবদের যে কৃতিত্ব রয়েছে, তাদের মধ্যে যে প্রতিভা আছে সেটা খুঁজে বের করার উত্তম পদ্ধতি। আমার প্রিয় দেশবাসী, এই ২১শে জুন চতুর্থ যোগদিবসে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা গেছে। ব্রেসিল-এEuropean Parliament হোক, New York-এ অবস্থিত সম্মিলিত রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রধান দপ্তরহোক, জাপানী নৌসেনার লড়াকু জাহাজ হোক, সমস্ত জায়গায় লোকেরা যোগ ব্যায়াম করছেন নজরে এসেছে। সৌদি আরবে প্রথমবার যোগের ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে, আর আমাকে জানানো হয়েছে অনেকগুলো আসনেরDemonstration মহিলারাও করেছেন। লাদাখের উঁচু বরফের শিখরে ভারত আর চিনের সেনারা একসাথে মিলে যোগাভ্যাস করেছেন। যদি সমগ্র পৃথিবীর লোকেরা এত উৎসাহের সঙ্গে ‘যোগ দিবস’-এর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, তবে ভারতে এর উৎসাহ অনেক গুণ কেন হবে না। বায়ুসেনার আমাদের যোদ্ধারা আকাশের মাঝে মাটি থেকে১৫ হাজার ফুট উঁচুতে যোগাসন করে সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়েছেন। দেখার মতো দৃশ্য ছিল,এঁরা উড়োজাহাজে বসে নয়, হাওয়ায় ভেসে ভেসে যোগ করছিলেন। স্কুল হোক, কলেজ হোক, অফিস হোক, পার্ক হোক, উঁচু বাড়ি হোক বা খেলার মাঠ, সব জায়গায় যোগাভ্যাস হয়েছে। ধীরে ধীরে অনেক বেশি মানুষ যোগকে নিজেদের জীবনের অংশ হিসেবে বেছে নেবেন। ”আপনারফোনেরজন্যেধন্যবাদ। আপনারাকিজানেন,কবীরদাসজীকেনএইমগহর-এ গিয়েছিলেন? । ”অর্থাৎপ্রকৃত সাধক তিনিই, যিনি অন্যদের দুঃখ জানতে পারেন, বুঝতে পারেন। ইহ আপা তো ডাল দে, দয়া করে সব কোয়। । ”আরেক দোঁহায় কবীরদাসজী বলছেন,“যাঁহা দয়া তহঁ ধর্ম হ্যায়, যাহাঁ লোভ তহঁ পাপ। ”এটাই হচ্ছে গুরুর মহানতা এবং এরকমই একজন গুরু হচ্ছেন জগৎগুরু — গুরু নানক দেব। যিনি কোটি কোটি মানুষকে সত্যের পথ দেখিয়েছেন, যা আবহমান কাল ধরে মানুষকে প্রেরণা দিয়ে আসছে। পাঞ্জাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে আছে এমনই আর একটি ইতিহাস। ২০১৯-এ জালিয়ানওয়ালাবাগের সেই ভয়াবহ ঘটনা, যার ১০০ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। সেই ঘটনা, যা মানবতাকে লজ্জিত করেছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনার ১০০ বছর পূর্তি হতে চলেছে। কিন্তু এই ঘটনা যে শাশ্বত বার্তা দিয়েছে, তা আমরা সবসময় মনে রাখব, সেটি হল, হিংসা ও হানাহানির মধ্যে দিয়ে কখনও কোনও সমস্যার সমাধান করা যায় না। রমণজী, সবার প্রথমে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ! ভারতের ইতিহাসের প্রতি আপনার আগ্রহ দেখে খুব ভালো লাগল। সেটিই প্রথম উদাহরণ ছিল যখন ইংরেজ শাসনকালে কোনও ব্যক্তি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে বাংলা ভাষায় বক্তব্য রাখেন। মুখার্জির স্বপ্ন ছিল, শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারত আত্মনির্ভর, উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে। তিনি চাইতেন, ভারত বৃহৎ শিল্প গড়ে তুলুক এবং তার সঙ্গে MSMEs, তাঁতশিল্প, বস্ত্র ও কুটিরশিল্পের প্রতিও পুরোপুরি মনোযোগ দিক। পশ্চিমবঙ্গের উন্নতির বিষয়ে উনি খুব আবেগপ্রবণ ছিলেন। ওঁর চিন্তাভাবনা, বিবেকবোধ ও সক্রিয়তার ফলেই পশ্চিমবঙ্গের একটি অংশ রক্ষা করা গেছে এবং সেটি আজও ভারতবর্ষের অংশরূপে রয়েছে। ফাইল থেকে সরে এসে সরাসরি মানুষের মুখ থেকে শোনার সুযোগ পেয়েছিলাম তাঁদের জীবনে আসা পরিবর্তনের কথা। মানুষজন জানিয়েছেন নিজেদের সংকল্প, সুখ-দুঃখের কথা, উপলব্ধির কথা। আমি মনে করি, এটা আমার কাছে শুধু এক সরকারী অনুষ্ঠানই ছিল না, বরং এ ছিল অন্য ধরনের learning experience। আর এই সময়ে জনসাধারণের চোখেমুখে যে আনন্দ আমি প্রত্যক্ষ করেছি তার থেকে বেশি সন্তুষ্টি আর কিসে হতে পারে? যখন একজন সাধারণ মানুষের কথা শুনতাম, তাঁর সহজ সরল শব্দ, বাচনভঙ্গী, নিজস্ব অনুভবের কথা, তখন তা হৃদয়কে স্পর্শ করে যেত। জেনেছিলাম, সুদূর প্রত্যন্ত গ্রামে মেয়েরা common service centre থেকে কীভাবে গ্রামের বয়স্ক, বৃদ্ধদের পেনসন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের পাসপোর্ট তৈরিতে সাহায্য করে চলেছে। এদিকে তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, গোয়াতে স্কুলের ছাত্ররা এই অল্প বয়সেই স্কুলের ‘টিংকারিং ল্যাব’-এ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর কাজ করছে। এই রকম অসংখ্য অনুভবের গল্প ছিল সেখানে। দেশের এমন কোনও প্রান্ত ছিল না যেখান থেকে সাফল্যের বার্তা আসেনি। এই রকম বাতাবরণে সাধারণ মানুষজন যখন নতুন আশা, নতুন উৎসাহ নিয়ে নিজের জীবনের উপলব্ধির কথা বলেন, তখন তার সাফল্য সরকারের নয় তাঁদেরই প্রাপ্য। সুদূর প্রান্তের এক ক্ষুদ্র গ্রামের এক ছোট্ট মেয়ের কাহিনিও ১২৫ কোটি মানুষের জন্য প্রেরণা সঞ্চার করে। আমি দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা ৪০-৪০, ৫০-৫০ লাখ লোক এই ভিডিও ব্রিজ অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আর আমাকে নতুন শক্তি প্রদান করেছেন। আমি আরও একবার আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করছি। ভালোর এই ‘সুগন্ধ’, তা আমারও অনুভূত হয়েছে। আসলে ব্যাপারটা হল এই যে, বেঙ্গালুরুর করপোরেট প্রফেশনালরা, আই-টি ইঞ্জিনিয়াররা একসঙ্গে মিলে একটি ‘সহজ সমৃদ্ধি ট্রাস্ট’ তৈরি করেছেন আর কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে এই ট্রাস্টকে অ্যাকটিভেট করেছেন, অর্থাৎ কাজে লাগিয়েছেন। এই ট্রাস্টের মাধ্যমে এঁরা কৃষকদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, যোজনা নির্মাণ করেছেন এবং কৃষকদের আয় কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, তার সার্থক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফসল ভালো তখনই হবে যখন ভালো প্রজাতির বীজের ব্যবহার হবে। এর জন্য আলাদা করে Seed Bank বানানো হয়েছে। মহিলারা এই Seed Bank দেখাশোনার কাজ করেন। এইভাবে মহিলাদেরও এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ‘One Nation One Tax reform’ — এই ব্যবস্থার জন্য যদি আমাকে কাউকে credit দিতে হয়, তবে আমি রাজ্যগুলিকে এই credit দেবো। জি-এস-টি ‘কো-অপারেটিভ ফেডারিলিজম’-এর এক সুন্দর উদাহরণ, যেখানে সমস্ত রাজ্যগুলি একসঙ্গে দেশের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আর তারই ফলস্বরূপ দেশে এত বড় ট্যাক্স রিফর্ম ব্যবস্থা চালু করা গেছে। এখনও পর্যন্ত জি-এস-টি কাউন্সিলের ২৭-টি মিটিং হয়েছে ও আমরা গর্ব করতে পারি যে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তাধারার ব্যক্তিরা, আলাদা আলাদা রাজ্য এমনকি পৃথক পৃথক priority-যুক্ত রাজ্যের প্রতিনিধিরা সেখানে থাকা সত্ত্বেও জি-এস-টি কাউন্সিল-এ আজ পর্যন্ত যত সিদ্ধান্ত নেওয়া গেছে, তা সর্বসম্মতিতে নেওয়া হয়েছে। জি-এস-টি’র আগে দেশে ১৭ ধরনের আলাদা আলাদা ট্যাক্স ছিল। কিন্তু এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর এখন সারা দেশে একটাই কর প্রণালী। জি-এস-টি আসার পর চেক পোস্টগুলিও বন্ধ হয়েছে আর এর ফলে পণ্য ও অন্যান্য জিনিসপত্রের পরিবহনে গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শুধুমাত্র সময়ই বাঁচেনি, সঙ্গে সঙ্গে লজিস্টিক ক্ষেত্রগুলিতেও লাভ হতে দেখা যাচ্ছে। জি-এস-টি সম্ভবত বিশ্বের সর্ববৃহৎ Tax reform ব্যবস্থা। ভারতে এত বড় Tax Reform সফল হয়েছে কারণ দেশের জনসাধারণ এই ব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছেন, আর এই জনশক্তি, জনগ্রাহ্যতাই জি-এস-টি’র সাফল্য সুনিশ্চিত করেছে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, নৌসেনার ছয়জন মহিলা কম্যাণ্ডারের একটি দল গত কয়েক মাস ধরে সমুদ্রসফর করছিল। যার নাম ‘নাবিকা সাগর পরিক্রমা’। এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই। ভারতের এই ছয় কন্যার দল ২৫০ দিনেরও বেশি ‘আই-এন-এস-ভি তারিনী’র মাধ্যমে পুরো বিশ্ব ঘুরে গত ২১-শে মে ভারতে ফিরে এসেছে এবং সারা দেশ তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। বিভিন্ন মহাসাগর এবং কয়েকটি সমুদ্রযাত্রা করে প্রায় ২২,০০০ নটিক্যাল দূরত্ব অতিক্রম করেছে। এটি সারা বিশ্বেই একটি নজীর বিহীন ঘটনা। গত বুধবার, এই কন্যাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার, তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা শোনার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি আরেকবার এই কন্যাদের দুঃসাহসিক কাজের জন্য, নৌসেনার খ্যাতি বাড়ানোর জন্য, ভারতের সম্মান বৃদ্ধির জন্য এবং বিশেষ করে ভারতের কন্যারা কোনও অংশেই কম নয় — বিশ্বের দরবারে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি। ১৬-ই মে মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুরের একটি আশ্রম-বিদ্যালয়ের পাঁচজন আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রী — মনীষা ধুরবে, প্রমেশ আলে, উমাকান্ত মঢবি, কবিদাস কাতমোড়ে এবং বিকাশ সোয়াম — এরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেছে। ২০১৭ সালের অগাস্ট মাস থেকে ওয়ার্ধা, হায়দ্রাবাদ, দার্জিলিং এবং লে-লাদাখে এদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। আমি চন্দ্রপুর স্কুলের এই ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। সম্প্রতি ষোলো বছরের শিবাঙ্গী পাঠক সবচেয়ে কনিষ্ঠ ভারতীয় মহিলা হিসেবে নেপালের দিক থেকে এভারেস্ট জয় করেছে। অজিত বাজাজ এবং তাঁর কন্যা দিয়া এভারেস্ট জয়ী প্রথম পিতা-পুত্রীর জুটি। শুধু যুবপ্রজন্মই এভারেস্ট জয় করছেন তা নয়, গত ১৯-শে মে পঞ্চাশোর্ধ্ব শ্রীমতী সঙ্গীতা বেহল-ও এভারেস্ট জয় করেছেন। এভারেস্ট আরোহীদের মধ্যে কয়েকজন এমনও আছেন যাঁরা শুধু দক্ষই নন, অনুভূতিপ্রবণও। এই কাজ প্রশংসনীয় তো বটেই, পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতার প্রতি, পরিবেশের প্রতি এঁদের দায়িত্ববোধেরও পরিচায়ক। আমি সেই সমস্ত সাহসী বীরদের, বিশেষত কন্যাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে এত সংখ্যক মানুষ এই বিষয়কে সমর্থন করার জন্য এগিয়ে আসবেন। ‘Fit I ndia’-র প্রসঙ্গে আমি বলব আমার বিশ্বাস, আমরা যত খেলবো, ততই দেশ খেলবে। Social Media-তে লোকে তাঁদের Fitness Challenge–এর ভিডিও শেয়ার করছেন, সেখানে অন্যদের ট্যাগ করে তাদেরও চ্যালেঞ্জ করছেন। ”ছবি যাদবজী, আপনার ফোনের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! এই খেলাগুলি গরমের ছুটির বিশেষ অঙ্গ ছিল। পরম্পরাগত খেলাগুলির মধ্যে দুটি ধরন আছে। আউটডোরও আছে আবার ইন্ডোরও আছে। আমাদের দেশের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য কোথাও হয়ত এই খেলাগুলির মধ্যেও দেখা যায়। একই খেলা নানা জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। এটি কড়ি বা তেঁতুল বিচি অথবা গুটি দিয়ে ৮ বাই ৮-এর স্কোয়্যার বোর্ড-এ খেলা হয়। ঐটি তো গ্রাম-শহর নির্বিশেষে সব জায়গায় দেখা যায় এমন খেলা। ঐটিও কিন্তু দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন নামে পরিচিত। অন্ধ্রপ্রদেশে এটি গোটিবিল্লা অথবা কর‍্যাবিল্লা নামে পরিচিত। ওড়িশাতে একে গুলিবাড়ি বলে, মহারাষ্ট্রে একে বলে বিত্তিডালু। একই সঙ্গে আমরা আমাদের সংস্কৃতি ও পরম্পরা সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল হই। কিছু খেলা আমাদের সমাজ, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করে। ‘Crowd Sourcing’-এর দ্বারা আমরা আমাদের ঐতিহ্যশালী খেলাগুলির এক সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে পারি। এই খেলার ভিডিও বানানো যেতে পারে, যাতে খেলার নিয়ম, কীভাবে খেলবে এই বিষয়ে দেখান যেতে পারে। এবারের থিম — ‘Beat Plastic Pollution’। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, এই ভাবনার গুরুত্ব বুঝে আমরা সবাই এটা সুনিশ্চিত করি যে আমরা পলিথিন, লো গ্রেড প্লাস্টিকের ব্যবহার করব না আর ‘প্লাস্টিক পলিউশান’-এর যে ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের প্রকৃতি, বন্য জীবন ও আমাদের স্বাস্থ্যের উপর পড়ছে, তাকে কম করার চেষ্টা করব। World Environment Day-এর ওয়েবসাইট wedindia2018 থেকে সব তথ্য দেখে নিয়ে নিজের রোজকার জীবনে তার প্রয়োগের চেষ্টা করার জন্য আমি অনুরোধ করছি। ভারত আজ Climate Justice-এর কথা বলছে, COP 21 এবং Paris চুক্তিতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে, আমরাI nternational Solar Alliance–এর মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে একজোট করেছি, এই সবের পিছনে মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্ন পূর্ণ করার এক শুভ চিন্তা কাজ করছে। এই ‘পরিবেশ দিবস’-এ আমরা একটু ভাবি, এই পৃথিবীকে আরও পরিষ্কার, আরও সবুজ বানানোর জন্য আমরা কী করতে পারি। আমার প্রিয় দেশবাসী, বিশেষ করে আমার যুবা বন্ধুরা! আপনারা এখন ২১-শে জুনকে সবাই মনে রাখেন। শুধু আপনি-আমি নই, সারা পৃথিবী এখন ২১-শে জুনকে মনে রাখে। সারা বিশ্বে এখন ২১-শে জুন ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয় এবং এটা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত যে কয়েক মাস আগে থেকেই এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে যায়। খবর পাওয়া যাচ্ছে যে সারা বিশ্বে ২১-শে জুনকে ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ হিসেবে পালন করার জন্য প্রস্তুতি চলছে। যোগাভ্যাসে সাহস বাড়ে যা সবসময় পিতার মত আমাদের রক্ষা করে। ক্ষমার মানসিকতা তৈরি হয় যেমন মা তাঁর নিজের সন্তানের জন্য অনুভব করে। মানসিক শান্তি আমাদের চিরস্থায়ী বন্ধু হয়ে ওঠে। ভর্তুহরি বলেছিলেন, নিয়মিত যোগাভ্যাস করলে সত্য আমাদের সন্তান, দয়া আমাদের ভগ্নী, আত্মসংযম আমাদের ভ্রাতা, পৃথিবী আমাদের শয্যা আর জ্ঞান আমাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত করার কাজ করে। যখন এত গুণের অধিকারী কেউ হন, তখন স্বাভাবিক ভাবেই এই যোগী সব ধরনের ভয়কে জয় করে। আরও একবার আমি সব দেশবাসীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে, তাঁরা যেন ‘যোগ’-এর বিরাট ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যান এবং এক সুস্থ, সুখী এবং সদ্ভাবনাপূর্ণ রাষ্ট্র গড়ে তোলেন। আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ২৭-শে মে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর তিরোধান দিবস। আমি পণ্ডিতজীকে প্রণাম জানাচ্ছি। ১৮৫৭-র মে মাসে ভারতবাসী ইংরেজকে নিজের শক্তির পরিচয় দিয়েছিল। দেশের অনেক অংশে আমাদের জওয়ান ও কৃষকরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল। দুঃখের কথা এই যে, আমরা অনেক দিন ধরে ১৮৫৭-র ঘটনাকে কেবলমাত্র বিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহ বলে এসেছি। প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনাকে শুধু ছোট করেই দেখান হয়নি, আমাদের আত্মসম্মানকে আঘাত করার এক চেষ্টা ছিল। সাভারকর-জীর ব্যাপারে এক অদ্ভূত বর্ণনা দিয়েছেন আমাদের প্রিয়, আদরণীয় অটল বিহারী বাজপেয়ী-জী। সাভারকর কবিতা আর বিপ্লব, দুটোকেই সঙ্গে নিয়ে চলেছেন। সংবেদনশীল কবি হওয়ার পাশাপাশি উনি সাহসী বিপ্লবীও ছিলেন। আমাদের এই কন্যারা, যারা কোনো এক সময় আবর্জনার স্তূপ ঘাঁটা থেকে শুরু করে বাড়ি-বাড়ি ভিক্ষা করতে বাধ্য হত – আজ তারা সেলাইয়ের কাজ শিখে গরীবদের আচ্ছাদন সেলাই করছে। আশা আর বিশ্বাসে ভরপুর আমাদের এই কন্যাদের আমি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের শুভকামনা জানাই। এঁরা দেখিয়েছেন যে যদি কিছু করে দেখানোর জেদ থাকে আর তার জন্য আপনি কৃতসঙ্কল্প হন তো যাবতীয় মুশকিলের মধ্যেও সাফল্য লাভ করা যায় আর এটা শুধু সীকরের কথা নয়, হিন্দুস্থানের প্রতিটি কোণে আপনি এটা দেখতে পাবেন। আপনার আশেপাশে, পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে খেয়াল করলে নজরে পড়বে যে কীভাবে লোকেরানানা সমস্যাকে পরাজিত করছে। আপনি অনুভব করেছেন যে যখনই আমরা কোনও চায়ের দোকানে যাই, সেখানকার চা খেয়ে তৃপ্তি পাই তখন কিছু মানুষের সঙ্গে আলোচনা আর বিচার-বিশ্লেষণও হয়। তিনি স্কুলে আসা সব বাচ্চার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য আর ভোজনের যাবতীয় আয়োজন করেন। উনি ওদের জীবনের অন্ধকারকে মুছে দিয়েছেন। ওঁর জীবন আমাদের সবার জন্য, সমাজ আর গোটা দেশের জন্য এক অনুপ্রেরণা। আসুন আমরা সদর্থক মানসিকতাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। জুন মাসে এত গরম হয় যে লোক বর্ষার জন্য অপেক্ষা করে আর এই আশায় আকাশের মেঘের দিকে চাতকের মত চেয়ে থাকে। আজ থেকে কিছু সময় পরে লোক চাঁদেরও প্রতীক্ষা করবে। চাঁদ দেখতে পাওয়ার অর্থ হল ঈদ পালিত হওয়া। রমজানের সময় এক মাসের উপবাস শেষে ঈদের পর্ব জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব শুরুর প্রতীক। আমার বিশ্বাস সবাইখুবউৎসাহের সঙ্গে ঈদ পালন করবে। এই উপলক্ষে বিশেষ করে বাচ্চাদের ভালো ঈদি লাভ হবে। আশা করছি যে ঈদের উৎসব আমাদের সমাজে সদ্ভাবের বন্ধনকে আরও মজবুত করবে। সবাইকে অনেক-অনেক শুভকামনা। অর্থাৎ, শুধু ভারতেই নয়, পৃথিবীর এই ভূখণ্ডে ‘আসিয়ান গোষ্ঠী’ভুক্ত দেশগুলিতেও রাম ও রামায়ণের প্রেরণা ও প্রভাব আজও ততটাই। আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রতিবারের মত এবারেও আমি আপনাদের কাছ থেকে প্রচুর চিঠি, ই-মেইল, ফোন কল ও মতামত পেয়েছি। কোমল ঠাক্কর সংস্কৃতের ‘অনলাইন কোর্স’ শুরু করার বিষয়ে mygov–এ যা লিখেছেন, সেটা আমি পড়েছি। তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী হওয়ার পাশাপাশি সংস্কৃতের প্রতি আপনার এই অনুরাগ দেখে আমার খুব ভাল লাগল। আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এই বিষয়ে আপনাকে যাবতীয় তথ্য জানানোর জন্য বলেছি। ‘মন কি বাত’-এর যে সমস্ত শ্রোতা সংস্কৃত নিয়ে কাজ করছেন, আমি তাঁদেরকেও অনুরোধ করছি, কোমল ঠাক্কর-এর এই প্রস্তাবকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে। ‘নরেন্দ্রমোদী অ্যাপ’-এ বিহারের নালন্দা জেলার বরাকর গ্রামের শ্রী ঘণশ্যাম কুমার-এর মতামত পড়েছি। ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমে যাওয়া প্রসঙ্গে আপনি যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি গ্রীষ্মকালে পশু-পাখিদের জন্য জলের ব্যবস্থা রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। শকল-জী, আপনার ভাবনা আমি সব শ্রোতা বন্ধুর কাছে পৌঁছে দিয়েছি। শ্রী যোগেশ ভদ্রেশা-র বক্তব্য, আমি যেন এবার যুবাদের স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে কিছু বলি। ওঁর মতে, অন্যান্য এশিয় দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশের যুবারা শারীরিকভাবে দুর্বল। কিছুদিন আগে ফ্রান্সের মাননীয় রাষ্ট্রপতি কাশী গিয়েছিলেন। বারাণসীর শ্রী প্রশান্ত কুমার লিখেছেন, সেই যাত্রার সব দৃশ্য তাঁর মন ছুঁয়ে গেছে, তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি আগ্রহ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, সেই সব ছবি, ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা উচিৎ। প্রশান্ত-জী, ভারত সরকার ঐদিনই সব ছবি সোস্যাল মিডিয়া এবং ‘নরেন্দ্রমোদী অ্যাপ’-এ শেয়ার করেছে। অঙ্ঘা, জায়েশের মত সব শিশুকেই বলতে চাই যে, তাদের পাঠানো এই সব চিঠি পড়লে আমার সারা দিনের ধকল, পরিশ্রম একদম ছু-মন্তর হয়ে উড়ে যায়। ‘কিষাণ মেলা’ ও চাষবাস নিয়ে সারা দেশে যে কর্মকাণ্ড চলছে, সেই বিষয়েও কৃষক ভাই-বোনেরা আমায় চিঠি পাঠিয়েছেন। জলসংরক্ষণ বিষয়ে কিছু সচেতন নাগরিক আমাকে পরামর্শ পাঠিয়েছেন। উৎসবের মরশুমে আমাদের নানান উৎসব, আমাদের সংস্কৃতি ও পরম্পরা নিয়েও অনেক চিঠি আসছে। এরকমই অনেক অনেক প্রেরণা যোগানো ঘটনা আমার দেশের পরিচয় বহন করে। আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামী কয়েক মাস কৃষক ভাই-বোনেদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। মহাত্মা গান্ধীর কথাই যদি ধরি, বা শাস্ত্রীজী কি লোহিয়াজী বা চৌধুরী চরণ সিং বা চৌধুরী দেবীলাল জী — এঁরা প্রত্যেকেই কৃষি ও কৃষকভাইদের এই দেশের অর্থব্যবস্থা ও জনজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করতেন। শ্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী বৃক্ষ, উদ্ভিদ, অরণ্য ইত্যাদির সংরক্ষণ এবং উন্নততর কৃষি-প্রক্রিয়ার আবশ্যকতার উপর সর্বদা গুরুত্ব দিতেন। ডঃ রামমনোহর লোহিয়া আমাদের কৃষকদের জন্য উন্নততর উপার্জন, উন্নততর সেচ-ব্যবস্থা আর এই সব বিষয়কে সুনিশ্চিত করার জন্য এবং খাদ্য ও দুগ্ধ উৎপাদনকে বাড়ানোর জন্য সার্বিক জনজাগরণের কথা বলেছিলেন। আমাদের মেঘালয়ের কৃষকরা ২০১৫-১৬ বর্ষে বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন করেছে। ওঁরা দেখিয়েছেন, যদি লক্ষ্য স্থির থাকে, পূর্ণ আত্মবিশ্বাস থাকে, মনে প্রতিজ্ঞা থাকে তাহলে সব সম্ভব করে তোলা যায়। আমার কাছে যে চিঠি এসেছে, তাতে আমি দেখলাম, অনেক কৃষক বন্ধুরা MSP-র বিষয়ে লিখেছিলেন এবং ওঁরা চাইছেন আমি এই বিষয়ে ওঁদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করি। ভাই ও বোনেরা, এই বছরের বাজেটে কৃষকদের ফসলের উচিৎ মূল্য দেওয়ার জন্য এক বিরাট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা ঠিক করা হয়েছে যে, নির্দিষ্ট ফসলের জন্যে MSP, কম করে লগ্নির দেড় গুণ করা হবে। গ্রামের স্থানীয় বাজার, পাইকারী বাজার যাতে বিশ্ববাজারের সঙ্গে যুক্ত হয়, তার চেষ্টা চলছে। কৃষকদের নিজের উৎপাদন বিক্রি করার জন্য যাতে অনেক দূর যেতে না হয় — তার জন্য দেশের বাইশ হাজার গ্রামীণ হাটের জরুরি পরিকাঠামোর সঙ্গে upgrade করে APMC আর e-NAM Platform–এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে। তার মানে, একপ্রকার ক্ষেতের থেকে দেশের যে কোনও বাজারের সঙ্গে connect করা যায়, এমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। দেশ কীভাবে এই উৎসব উদ্‌যাপন করবে? আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা mygov-এর মাধ্যমে আপনাদের চিন্তাভাবনা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিন। Preventive Health Care খুব সস্তা এবং সহজও বটে। আমরা Preventive Health Care সম্পর্কে যতটা সচেতন হব, ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ — সবাই এতে লাভবান হবে। ‘Preventive Health Care’ হিসেবে যোগ নতুন ভাবে বিশ্বে নিজের একটা পরিচিতি তৈরি করেছে। যোগ সুস্থ ও সক্ষম দুই-ই হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এটা আমাদের সবার দায়বদ্ধতার পরিণাম যে, যোগ আজ এক গণ আন্দোলন হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। এই বছর ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ ২১-শে জুন — আর ১০০ দিনও বাকি নেই। গত তিনটি ‘আন্তর্জাতিক যোগা দিবস’-এ দেশ-বিদেশের প্রতিটি জায়গায় সমস্ত মানুষ খুব উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবারও আমাদের এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে, আমরা নিজেরা যোগ করব এবং পরিবার-বন্ধু সবাইকে যোগ করার জন্য উৎসাহ দেব। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি যোগাসনের শিক্ষক নই, কিন্তু আমি ‘যোগাভ্যাসী’। আমি আপনাদের সঙ্গে এই ভিডিও শেয়ার করতে চাই, যাতে আমরা একসঙ্গে আসন ও প্রাণায়াম অভ্যাস করতে পারি। স্বাস্থ্য পরিষেবা অবাধ হোক, সবার সাধ্যের মধ্যে হোক, জনসাধারণের জন্য সস্তা আর সুলভ হোক – এর জন্য পর্যাপ্ত চেষ্টা করা হচ্ছে। আজ সমগ্র দেশে তিন হাজারের বেশি জন-ঔষধি কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে ৮০০-রও বেশি ওষুধ কম দামে বিক্রির ব্যাবস্থা করা হয়েছে। আরও নতুন কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। হৃদরোগীদের জন্য Heart Stent-এর দাম ৮৫% পর্যন্ত কম করা হয়েছে। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ যোজনা-র অন্তর্গত প্রায় ১০ কোটি পরিবার অর্থাৎ ৫০ কোটির কাছাকাছি মানুষের চিকিৎসার জন্য এক বছরে ৫ লাখ টাকার খরচ ভারত সরকার এবং বীমা কোম্পানি মিলে বহন করবে। দেশের বর্তমান ৪৭৯-টি মেডিকেল কলেজের MBBS-এর আসন সংখ্যা বাড়িয়ে প্রায় ৬৮ হাজার করা হয়েছে। প্রতি তিনটি জেলার মধ্যে একটি করে নতুন মেডিক্যাল কলেজ খোলা হবে। প্রত্যেক মানুষের কাছে এই সচেতনতা পৌঁছানোর জন্য আপনার সাহায্য দরকার। যক্ষ্মা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে চেষ্টা করতে হবে। ওঁর ভাবনায় শিল্পএমন’ই এক শক্তিশালী মাধ্যম, যার প্রভাবে দেশের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষের আয়ের ব্যবস্থা হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান এখন এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো, আর সবচেয়ে বেশি বিদেশী বিনিয়োগ অর্থাৎ FDI ভারতবর্ষেই হচ্ছে। বিশ্ববাণিজ্য এখন ভারতের দিকেই তাকিয়ে আছে কারণ আমরাই এখন বিনিয়োগ আর নতুন প্রথা উদ্ভাবনের কেন্দ্র হয়ে উঠছি। ডক্টর আম্বেদকর স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং আত্মনির্ভরতায় গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন। দেশের একটি মানুষও যেন দারিদ্র্যের মধ্যে বেঁচে না থাকে, এইরকম চাইতেন ডক্টর আম্বেদকর। দরিদ্রদের দান দিয়ে যে দারিদ্র্য ঘোচানো সম্ভব নয়, এই কথাটিও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন। আজ ‘মুদ্রা যোজনা’, ‘স্টার্ট-up ইন্ডিয়া’, ‘স্ট্যান্ড-up ইন্ডিয়া’র মতো প্রকল্পগুলি আমাদের দেশে যুব-উদ্যোক্তা – যুব-উদ্ভাবক তৈরি করছে। আজ দেশে জলপথ আর বন্দরের সম্প্রসারণের ঐতিহাসিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন সমুদ্রতটে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বন্দর আর পুরোনো বন্দরগুলির সংস্কারের কাজও হচ্ছে একইসঙ্গে। উনি Federalism বা মৈত্রীতন্ত্রের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন আর তাই মনে করতেন যে দেশের উন্নতির জন্যে কেন্দ্র আর রাজ্যগুলিকে একসঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। ডক্টর আম্বেডকরের জন্মজয়ন্তীকে ঘিরে ১৪ই এপ্রিল থেকে ৫ই মে সারা দেশে ‘গ্রাম স্বরাজ অভিযান’-এর আয়োজন করা হচ্ছে। দেশব্যাপী এই অভিযানে থাকবে গ্রামোন্নয়ন, দরিদ্রকল্যাণ আর সামাজিক ন্যায়ের নানান কার্যক্রম। আপনাদের প্রতি আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ যে, এই জাতীয় অভিযানে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিন। আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিনের মধ্যেই পরপর অনেকগুলি উৎসব, পার্বন আসছে : মহাবীর জয়ন্তী, হনুমান জয়ন্তী, ইস্টার আর বৈশাখী। মহাবীর জয়ন্তী ভগবান মহাবীরের ত্যাগ আর তপস্যাকে স্মরণ করার দিন। অহিংসার প্রচারক ভগবান মহাবীরের জীবন আর দর্শন আমাদের কাছে প্রেরণা। সকল দেশবাসীকে আমি জানাই মহাবীর জয়ন্তীর শুভেচ্ছা। ইস্টার এলেই আমাদের মনে করি য়ে দেয় যীশু খ্রীষ্টের কথা, যিনি চেয়েছিলেন মানবতার শান্তি, শুনিয়েছিলেন সদ্ভাব, ন্যায়, দয়া আর করুণারবাণী। আবার একবার আপনাদের সবাইকে আসন্ন সকল উৎসবের অনেক শুভকামনা জানাই! আমরা দেখেছি যে সমুদ্রের রঙ নীল দেখায়, কিন্তু আমরানিজেদের রোজকার অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে জলের কোনও রঙ হয় না। আমরা কি কখনও ভেবেছি যেনদী হোক, সমুদ্র হোক, জল রঙিন হয়ে যায় কেন? এই প্রশ্নই ১৯২০-র দশকে এক যুবকের মনে এসেছিল। এই প্রশ্নই আধুনিক ভারতে এক মহান বৈজ্ঞানিকেরজন্ম দিয়েছিল। ওঁর এই আবিষ্কার ‘রমন এফেক্ট’ নামেবিখ্যাত। আমরা প্রতি বছর ২৮শে ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় বিজ্ঞান দিবস’ হিসাবে পালন করি,কারণ বলা হয়, এই দিনে উনি ‘লাইট স্ক্যাটারিং’-এর আবিষ্কার করেছিলেন। যার জন্যতাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। স্যার জগদীশ চন্দ্র বোস আর হরগোবিন্দ খুরানা থেকে শুরুকরে সত্যেন্দ্র নাথ বোসের মত বিজ্ঞানীরা ভারতের গৌরব। সত্যেন্দ্র নাথ বোসের নামেতো বিখ্যাত কণা, বোসনের নামকরণও করা হয়েছে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে অত্যাশ্চর্য কাজ হচ্ছেতা জানা বেশ আকর্ষণীয়। আজকাল সেল্‌ফলার্নিং-এর মাধ্যমে বিভিন্ন মেশিন নিজের ইন্টেলিজেন্সকে আরও স্মার্ট করে তুলছে। কিছুদিন আগে ইজরায়েলেরপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গুজরাতের আমেদাবাদে ‘আই ক্রিয়েট’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে যাওয়ারসুযোগ হয়েছিল আমার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভ্যালুনিউট্রাল। এর মধ্যে আপনা-আপনি মূল্য যুক্ত হয়ে নেই। যে কোনও মেশিন সেই কাজই করবেযা আমরা চাইব। কিন্তু এটা আমাদের উপর নির্ভর করে যে আমরা মেশিন থেকে কেমন কাজ চাই। লাইট বালবের আবিষ্কর্তা টমাসআলভা এডিসন নিজের কাজে অনেকবার অসফল হন। এক বার এ ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা হলেউত্তরে তিনি বলেন – “আমি লাইট বালব না তৈরির দশ হাজার উপায় অনুসন্ধান করেছি”,অর্থাৎ এডিসন নিজের অসফলতাকেও নিজের শক্তি বানিয়ে নেন। ঘটনাক্রমে এ এক সৌভাগ্যেরব্যাপার যে আজ আমি মহর্ষি অরবিন্দের কর্মভূমি ‘অরোভিল’-এ রয়েছি। এক বিপ্লবী হিসাবেতিনি ব্রিটিশ প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করেন, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন, তাদের শাসনকেপ্রশ্নের মুখে দাঁড় করান। সত্যকে জানতে বার বারপ্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার আগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ। ‘ন্যাশনাল সায়েন্স ডে’ উপলক্ষে আমাদের বৈজ্ঞানিকরা এবং বিজ্ঞানেরসঙ্গে জুড়ে থাকা সব মানুষকে অভিনন্দন জানাচ্ছি আমি। বন্ধুরা, সঙ্কটের সময়‘সেফটি’, ‘ Disaster ’ এই সব ব্যাপারে অনেকবারঅনেক বার্তা পাই আমি। মানুষজন আমাকে কিছু-না-কিছু লিখে পাঠান। পুনে থেকে শ্রীমানরবীন্দ্র সিংহ ‘নরেন্দ্রমোদী মোবাইল অ্যাপ’-এ অকুপেশন্যাল সেফটি নিয়ে নিজের মন্তব্য পাঠিয়েছেন। উনি লিখেছেন যে আমাদের দেশে কলকারখানা আর নির্মাণ কাজের জায়গায় সেফটিস্ট্যান্ডার্ড তেমন ভালো নয়। যদি আমরা দৈনিক জীবনে সুরক্ষা বিষয়ে সচেতন না হই , যদি সুরক্ষাকে আয়ত্ত করতে না পারি , তবে কোনও বড় বিপদ বা দুর্বিপাকের সময় সুরক্ষাব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা আরও মুশকিল। যদি আমরা সতর্ক থাকি , আবশ্যক নিয়মাবলী মেনে চলি , তাহলে আমরা নিজেদের জীবন তো বাঁচাতে পারবই , পাশাপাশি বড় কোনও দুর্ঘটনার থেকে সমাজকেও রক্ষা করতে পারব। কখনও কখনও লক্ষ্য করেছি , কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা নিয়ে নানান নির্দেশিকা দেওয়া রয়েছে , কিন্তু সেই নিয়ম একেবারেই পালন করা হয় না। সাইক্লোন কিংবা বণ্যা – প্রবণ জেলাগুলিতে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ‘ আপদা – মিত্র ’ নামক একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। দু – তিন বছর আগে পর্যন্ত লু অথবা হিট ওয়েভ – এ প্রতি বছর হাজারো মানুষ প্রাণ হারাতো। এরপর থেকে NDMA,Heat Wave মোকাবিলা সম্পর্কিত workshop – এর আয়োজন করে , জনসচেতনতা বাড়াতে অভিযান চালায়। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে ভাল পরিণাম আমরা পাই। ২০১৭ – তে তাপ প্রবাহের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা অপ্রত্যাশিত ভাবে কমে দাঁড়ায় প্রায় ২২০ – তে। এর থেকে বোঝা যায় , যদি আমরা সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিই , তবেই আমরা সুরক্ষিত থাকতে পারব । আমি তাঁদের সকলকে সম্মান জানাতে চাই , যাঁরা কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উদ্ধারকাজে হাত লাগাতে ও পীড়িতদের সাহায্য করতে। এই রকম নাম – না – জানা ‘ হিরো ’ দের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। আমার প্রিয় দেশবাসী , এই বারের বাজেটে ‘ স্বচ্ছ ভারত ’ তৈরির লক্ষ্যে গ্রামে গ্রামে বায়োগ্যাসের মাধ্যমে WasteTo Wealth এবং Wasteto Energy উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর জন্য প্রচেষ্টা শুরু হয়ে গেছে ও এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ GOBAR Dhan ’ অর্থাৎ , Galvanising OrganicBio-Agro Resources । এই GOBAR Dhan যোজনার উদ্দেশ্য হল — গ্রামগুলোকে পরিষ্কার – পরিচ্ছন্ন করে তোলা এবং পশু – প্রাণিদের গোবর এবং চাষবাসের পর ক্ষেতে পড়ে থাকা অবশিষ্ট বর্জ্যকে compost এবং Bio-gas – এ পরিবর্তিত করে তার থেকে আয় ও শক্তি উৎপাদন করা। স্বচ্ছ ভারতের ‘ মিশন গ্রামীণ ’ প্রকল্পে একে অন্তর্ভুক্ত করে আমরা এই দিকে ক্রমশঃ অগ্রসর হচ্ছি । গবাদি পশুর গোবর , কৃষিকাজের পর অবশিষ্ট বর্জ্য , রান্নাঘরের বর্জ্য — এই সমস্তগুলিকেই বায়ো – গ্যাস নির্ভর শক্তি উৎপাদনের কাজে লাগাবার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘ গোবর – ধন ’ যোজনার মাধ্যমে গ্রামীণ ভারতের কৃষকদের , গ্রামীণ ভাই – বোনদের উৎসাহ দেওয়া হবে , যাতে তারা গোবর এবং বর্জ্যপদার্থকে কেবলমাত্র waste হিসেবে না দেখে আয়ের উৎস হিসাবে দেখে। বায়োগ্যাসকে রান্নার কাজে এবং বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করলে স্বনির্ভরতাও বাড়বে। এই ব্যবস্থা কৃষকদের এবং পশুপালনকারীদের আয় বৃদ্ধির সহায়ক হবে। Wastecollection , transportation , বায়ো – গ্যাস বিক্রি ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলিতে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। ‘ গোবর ধন ’ প্রকল্পটি যথাযথ ভাবে কার্যকরী করার জন্য একটি ‘ Online trading platform ’ তৈরি করা হবে , যা কৃষকদের ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবে , যাতে কৃষকরা গোবর এবং agriculturewaste অর্থাৎ কৃষিজ বর্জ্যের সঠিক মূল্য পান। আমি এই বিষয়ে উৎসাহীদের , বিশেষ করে গ্রামে বসবাসকারী বোনেদের অনুরোধ করব , যেন তাঁরা এগিয়ে আসেন এবং SelfHelp Group তৈরি করে , সহকারী সমিতি সংগঠিত করে এই সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করেন। আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি , আসুন , আপনারাও CleanEnergy and Green Jobs – এর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হোন। নিজেদের গ্রামের waste – কে wealth – এ পরিবর্তিত করার এবং গোবর থেকে গোবর ধন তৈরির এই প্রচেষ্টায় উদ্যোগী হোন । কিন্তু , ছত্তিশগড়ের রায়পুরে এক অনুপম প্রচেষ্টার কথা জানা গেল , আর তা হল , এই রাজ্যে আয়োজিত প্রথম ‘ বর্জ্য মহোৎসব ’ । রায়পুর নগরনিগম দ্বারা আয়োজিত এই মহোৎসবের উদ্দেশ্য ছিল স্বচ্ছতা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা , শহরের বর্জ্য পদার্থের ‘ creativeuse ’ করা ও garbage – এর re-use করার বিভিন্ন পদ্ধতিগুলির সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্বচ্ছতার গুরুত্ব অভিনব পদ্ধতিতে এই মহোৎসবে প্রদর্শিত করার জন্য , রায়পুর নগরনিগম , সমগ্র ছত্তিশগড়ের জনসাধারণ এবং ওখানকার সরকার ও প্রশাসনকে আমি অনেক শুভেচ্ছা জানাই ! দেশ ও বিশ্বে নানা রকমের অনুষ্ঠান হয় । ঐ দিনে দেশে ‘ নারীশক্তি পুরষ্কার ’ প্রদানের মাধ্যমে সেই সকল মহিলাদের সম্মানিত করা হয় , যাঁরা বিগত কিছু দিনের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুকরণীয় কাজ করেছেন । আজ এই মুহূর্তে আমার স্বামী বিবেকানন্দর এক বাণী মনে আসছে । ndependence ” । একশো পঁচিশ বছর আগে স্বামীজীর এই চিন্তাধারা ভারতীয় সংস্কৃতিতে নারীশক্তির ভাবনাকেই ব্যক্ত করে । আজ সামাজিক , অর্থনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশীদারীত্ব নিশ্চিত করা আমাদের সকলের কর্তব্য , আমাদের সকলের দায়িত্ব । ওঁরা তো নিজেদের এগিয়েছেনই , সাথে দেশ ও সমাজকেও এগিয়ে নিয়ে গেছেন ও এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছেন । কিছুদিন আগে , এক ব্যক্তি আমায় দারুণ একটি পরামর্শ দিয়েছিলেন । উনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে ৮ – ই মার্চ , ‘ নারী দিবস ‘ পালনের উদ্দেশে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান হয় । কিন্তু প্রতিটি গ্রামে – শহরে যে সকল মা – বোনেরা ১০০ বছর পূর্ণ করেছেন তাঁদের সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে কি অনুষ্ঠান আয়োজন করা যেতে পারে ? ২৬শে জানুয়ারি , ২০১৮ থেকে আরম্ভ হওয়া এই অভিযানটিতে , মাত্র ২০ দিনের মধ্যে , এই মহিলারা ১ লক্ষ ৭০ হাজার শৌচালয় নির্মাণ করে একটি নতুন উদাহরণ স্থাপন করেছেন । ১৪ লক্ষ মহিলা , ২ হাজার মহিলা পঞ্চায়েত প্রতিনিধি , ২৯ হাজার জল – সহিয়া অর্থাৎ জল – মিত্র , ১০ হাজার মহিলা স্বচ্ছাগ্রহী এবং ৫০ হাজার মহিলা রাজমিস্ত্রি । আপনি কল্পনা করতে পারেন , এটি কত বড় ঘটনা ! ঝাড়খন্ডের এই মহিলারা দেখিয়েছেন যে নারীশক্তি , স্বচ্ছ ভারত অভিযানের এমন এক শক্তি , যা দৈনন্দিন জীবনে স্বচ্ছতার অভিযানকে , স্বচ্ছতার সংস্কারকে জোরের সঙ্গে জনসাধারণের স্বভাবে পরিবর্তিত করবে । ভাই ও বোনেরা , মাত্র দু দিন আগে আমি নিউজে দেখছিলাম যে এলিফ্যান্টা দ্বীপের তিনটি গ্রামে স্বাধীনতার সত্তর বছর পরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে আর এটা নিয়ে সেখানকার মানুষের মধ্যে কতটা আনন্দ আর উৎসাহ দেখা দিয়েছে। আপনারা ভালোই জানেন যে, এলিফ্যান্টা দ্বীপ মুম্বাই থেকে দশ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের মধ্যে। আমার এটা জেনে অদ্ভূত লেগেছে যে মুম্বাইয়ের কাছে অবস্থিত আর পর্যটনের এত বড় কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও স্বাধীনতা লাভের এত বছর পরেও এলিফ্যান্টায় বিদ্যুৎ পৌঁছয় নি। সত্তর বছর অবধি এলিফ্যান্টা দ্বীপের তিনটি গ্রাম — রাজবন্দর , মোরবন্দর আর সেন্তবন্দর , ওখানকার মানুষের জীবনে যে অন্ধকার ছেয়ে ছিল , এই সবে সেই অন্ধকার দূর হয়েছে আর তাদের জীবনে ঔজ্জ্বল্য এসেছে। আমি ওখানকার প্রশাসন আর জনতাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি আনন্দিত যে এখন এলিফ্যান্টার গ্রাম আর এলিফ্যান্টার গুহা বিদ্যুতের আলোয় উদ্ভাসিত হবে। এটা শুধু বিদ্যুৎ নয় বরং উন্নয়নের অভিমুখে এক নতুন শুভারম্ভ। আমারপ্রিয় ভাই-বোনেরা, কয়েকদিন আগেই আমরা ‘শিবরাত্রি’ মহোৎসব পালন করেছি। হোলিউৎসবে রঙের যতটা গুরুত্ব, ততটাই গুরুত্ব ‘হোলিকা দহন’-এর। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েথাকে, খারাপকে আগুনে জ্বালিয়ে নষ্ট করা হয় এই দিনটিতে। হোলির দিনে সব মনোমালিণ্যভুলে একসঙ্গে বসা, একে অন্যের সুখ, আনন্দ ভাগ করে নেওয়া — একটা সুন্দর মুহূর্ত এবংহোলি উৎসব — প্রেম, একতা ও সম্প্রীতির বার্তাবাহক। আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, আমাকে ‘নরেন্দ্র মোদি অ্যাপ’-এ শ্রী প্রকাশ ত্রিপাঠি আজ এক দীর্ঘ চিঠি লিখেছেন| তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, আমি যেন ওঁর লেখা চিঠির বিষয়বস্তু ছুঁয়ে যাই| তিনি লিখেছেন, পয়লা ফেব্রুয়ারি মহাকাশ অভিযাত্রী কল্পনা চাওলার মৃত্যু দিবস| কলম্বিয়া মহাকাশযান দুর্ঘটনায় তিনি আমাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন| কিন্তু বিশ্বের লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীকে অনুপ্রাণিত করে গেছেন| আমি, ভাই প্রকাশজিকে নিজের দীর্ঘ চিঠিটি কল্পনা চাওলার চির বিদায়ের ঘটনা দিয়ে শুরু করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি| ইচ্ছা ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকলে, কিছু করে দেখানোর ক্ষিধে থাকলে, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়| বেদের বিভিন্ন অংশ রচনায় এদেশের অনেক বিদূষীর কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে| এটাই আমাদের সমাজে নারীদের মাহাত্ম্য বোঝাচ্ছে| আর সেজন্যই তো, আমাদের সমাজে নারীকে শক্তির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে| এই নারীশক্তি গোটা দেশকে, সমস্ত সমাজকে, পরিবারকে একতার সুতোয় বেঁধে রাখে| শ্রী প্রকাশ ত্রিপাঠি এরপর আরও অনেক উদাহরণ তুলে ধরেছেন| তিনি লিখেছেন, আমাদের দুঃসাহসিনী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের ‘সুখোই-৩০’ যুদ্ধ বিমানে সওয়ার হওয়ার ঘটনা তাঁকে অনুপ্রেরণা যোগাবে| তিন দুঃসাহসিনী মহিলা ভাবনা কন্থ, মোহনা সিংহ ও অবনী চতুর্বেদী যুদ্ধ বিমানের চালক হয়েছেন| বর্তমানে ‘সুখোই-৩০’ যুদ্ধ বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাঁরা| এটা নরেন্দ্র মোদি ওয়েবসাইটেও ‘ই-বুক’ হিসেবে সংযোজিত হয়েছে| আজ দেশ ও সমাজের চলমান ইতিবাচক পরিবর্তনেও মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে| আজ আমরা যখন মহিলা ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা করছি, তাতে আমি এক রেলওয়ে স্টেশনের কথা উল্লেখ করতে চাইবো| একটি রেলওয়ে স্টেশন ও মহিলা ক্ষমতায়ন—আপনারা হয়তো ভাবছেন এর মধ্যে কী যোগাযোগ থাকতে পারে! মুম্বাইয়ের মাটুঙ্গা স্টেশন ভারতের প্রথম এমন রেলওয়ে স্টেশন, যেখানে সমস্ত স্তরের কর্মচারীই মহিলা| আদিবাসী মহিলাদের কথা যখন ওঠে, সবার মনেই নিশ্চিত একটা ছবি সামনে আসে| সেখানে জঙ্গল থাকবে, পাহাড়ের বুক থাকবে, সেখানে শিশুদের মাথায় করে মেয়েদের এগিয়ে চলার চেনা দৃশ্য থাকবে| কিন্তু ছত্তিসগড়ে আমাদের আদিবাসী নারী, আমাদের এই নারিশক্তি দেশের সামনে এক নতুন ছবি তৈরি করেছেন| ছত্তিসগড়ের দান্তেওয়াড়া এলাকা, যা নাকি মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার মধ্যে পড়ে| হিংসা, অত্যাচার, বোমা, বন্দুক, পিস্তল—মাওবাদীরা সেখানে এক ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে| এমন সাংঘাতিক অবস্থায় থাকা আদিবাসী মহিলারা ‘ই-রিক্সা’ চালিয়ে নিজেদের আত্মনির্ভর করে তুলছেন| খুবই কম সময়ের ব্যবধানে সেখানকার সমস্ত মহিলা এই প্রক্রিয়ার অংশীদার হয়েছেন| আমি সেখানকার জেলা প্রশাসনেরও প্রশংসা করছি| অনুদান দেওয়া থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ দেওয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসন এই মহিলাদের সাফল্যের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন| যা কিছু নেতিবাচক নির্যাস, তা বর্জন, যা কিছু প্রয়োজনীয় তার সংস্কারের বিষয় মেনে নেওয়া| যেকোনো জীবন্ত সমাজের পরিচিতি এর আত্ম-সংশোধনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই নিহিত থাকে| সামাজিক কু-প্রথা, কু-রীতিনীতি’র বিরুদ্ধে বহু শতাব্দী ব্যাপী প্রয়াস আমাদের দেশে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে ক্রমাগত চলে আসছে| এই অভিযানের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ ও পণপ্রথার মতো সামাজিক অভিশাপের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির প্রয়াস নেওয়া হয়| পণপ্রথা ও বাল্যবিবাহের মতো কু-রীতিনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার ব্যপারে সে রাজ্যে শপথ গ্রহণ করা হয়| শিশু, বৃদ্ধ, উত্সাহ ও উদ্দীপনায় ভরপুর তরুণরা, মায়েরা, বোনেরা—সবাই নিজেকে এই লড়াইয়ে শামিল করেছেন| পাটনার ঐতিহাসিক গান্ধী ময়দান থেকে শুরু হয়ে এই মানব-শৃঙ্খল রাজ্যের সীমানা পর্যন্ত অটুটভাবে জুড়ে যেতে থাকলো| সমাজের সমস্ত মানুষকে সত্যিকারের বিকাশ প্রক্রিয়ার অংশীদার করার জন্য এ ধরনের কু-রীতিনীতি-মুক্ত হওয়া জরুরি| আমি বিহারের মানুষজন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, সেখানকার প্রশাসন, মানব শৃঙ্খলে শামিল প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমাজ কল্যাণের লক্ষ্যে এমন বিশেষ এবং ব্যাপক বিষয়ের অবতারণার জন্য প্রশংসা করছি| আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, কর্ণাটকের মাইসোর থেকে শ্রী দর্শন ‘মাই গভ’-এ লিখেছেন, তাঁর বাবার চিকিত্সার জন্য প্রতিবছর ছয় হাজার টাকা খরচ হতো| তিনি প্রথমে প্রধানমন্ত্রী জন-ঔষধি যোজনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না| কিন্তু যখনই তিনি জন-ঔষধি কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে পারলেন, সেখান থেকে ঔষধ কিনতে গিয়ে পঁচাত্তর শতাংশ পর্যন্ত দাম কম পড়ল| তিনি ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন, আমি যেন ‘মন কি বাতে’ মনের কথা বলার সময় এই বিষয়ে কথা বলি| যাতে করে বেশি সংখ্যক লোকের কাছে এর বিষয়ে তথ্য পৌঁছে যায়| এক গভীর সন্তুষ্টি পেয়ে থাকি| আর আমার এটাও খুব ভালো লাগলো যে শ্রী দর্শনজি’র মনে এই ভাবনা এসেছে, যে সুবিধা তিনি পেয়েছেন, তা যেন অন্যরাও পান| এর ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষত প্রতিদিন ওষুধ নিতে বাধ্য হওয়া প্রবীণ মানুষজন আর্থিক দিক থেকে উপকার পাচ্ছেন| এখান থেকে কেনা জীবনদায়ী ওষুধ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা অনুমোদিত মান অনুযায়ী তৈরি করা হয়ে থাকে| এটাই ভালো গুণমানের ওষুধ সস্তায় পাওয়ার মূল কারণ| আজ দেশজুড়ে তিন হাজারেরও বেশি জন-ঔষধি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়ে গেছে| এগুলোতে যে শুধুমাত্র ওষুধ সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে তাই নয়, বরং ব্যক্তিগত উদ্যোগীদের জন্যও রোজগারের এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে| প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জন-ঔষধি কেন্দ্র এবং হাসপাতালের ‘অমৃত স্টোরসে’ সস্তায় ওষুধ পাওয়া যায়| এগুলোর পেছনে একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশের গরিব থেকে গরিব ব্যক্তিকে গুণমান সম্পন্ন ও সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা| যাতে এক সুস্থ ও সমৃদ্ধ ভারতের নির্মাণ করা যায়| এই ছবিটি ছিল, এক নাতি তার দাদুর সঙ্গে ‘ক্লিন মোর্না রিভার’ সাফাই অভিযানে যোগ দিয়েছে| আমি জানতে পেরেছি যে, আকোলা’র নাগরিকগণ ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর মাধ্যমে মোর্না নদীকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য স্বচ্ছতা অভিযানের আয়োজন করেছিলেন| মোর্না নদী আগে বারোমাসই প্রবাহিত হতো, কিন্তু এখন তা ঋতু নির্ভর হয়ে গেছে| দুঃখের দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, নদীটি জংলা ঘাস ও কচুরিপানায় ভরে গিয়েছিল| নদী ও এর আশেপাশে প্রচুর পরিমাণে আবর্জনা ফেলা হচ্ছিল| তাই এনিয়ে এক অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয় এবং মকর-সংক্রান্তির একদিন আগে ১৩ জানুয়ারি থেকে ‘মিশন ক্লিন মোর্না’-র প্রথম পর্যায়ে চার কিলোমিটার এলাকায় চৌদ্দটি স্থানে মোর্না নদীর তীরের দুই প্রান্তকে সাফাই করা হয়| ২০ জানুয়ারিও এই স্বচ্ছতা-অভিযান একইরকমভাবে চালিয়ে যাওয়া হয় এবং আমাকে বলা হয়েছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত মোর্না নদী সম্পূর্ণরূপে পরিচ্ছন্ন হয়ে না যায়, এই অভিযান প্রত্যেক শনিবারের সকালে চালিয়ে যাওয়া হবে| জন-আন্দোলনের মাধ্যমে অনেক বড় বড় পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব| আমি আকোলার জনগণকে, সেখানকার জেলা ও পুরনিগমের প্রশাসনকে, এই কাজকে জন-আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যুক্ত হওয়া সমস্ত নাগরিককে, আপনাদের এই প্রয়াসকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই| আমার প্রিয় দেশবাসী, ইদানীং পদ্ম-পুরস্কার নিয়ে বেশকিছু আলোচনা আপনারাও শুনেছেন| খবরের কাগজ ও টিভি-তে এই বিষয়ে আলোচনা মনোযোগ আকর্ষণ করেছে| প্রতি বছরই পদ্ম-পুরস্কার প্রদান করার পরম্পরা রয়েছে| কিন্তু গত তিন বছরে এর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এসে গেছে| এখন যেকোন নাগরিক যেকোনো ব্যক্তিকে মনোনীত করতে পারেন| সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অনলাইনে হওয়ার জন্য এতে স্বচ্ছতা এসে গেছে| বলতে গেলে এই পুরস্কারের নির্বাচন প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ রূপান্তর হয়ে গেছে| এমন সব ব্যক্তিকে পদ্ম-পুরস্কার দেওয়া হয়েছে যাদেরকে বড় বড় শহরে, খবরের কাগজে, টিভিতে, অনুষ্ঠানে দেখা যায় না| এখন পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তির পরিচয় নয়, তাঁর কাজের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে| আপনারা হয়তো শুনেছেন, শ্রী অরবিন্দ গুপ্তাজি সম্পর্কে| তিনি চার দশক ধরে ফেলে দেওয়া জিনিস থেকে খেলনা তৈরি করছেন, যাতে ছোটদের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি কৌতূহল বাড়াতে পারেন| এ ধরনেরই এক কাহিনি হচ্ছে কর্ণাটকের সিতাবা জোদাত্তি’র| তাঁকে ‘মহিলা ক্ষমতায়নের দেবী’ এমনি-এমনি বলা হয়না| গত তিন দশক থেকে বেলাগাভি-তে তিনি অগণিত মহিলার জীবন পরিবর্তনের জন্য মহান কাজ করেছেন| তিনি সাত বছর বয়সেই নিজেকে দেবদাসী হিসেবে সমর্পিত করে দিয়েছিলেন| কিন্তু তারপর দেবদাসীদের কল্যাণের জন্যই নিজের গোটা জীবন যুক্ত করে দেন| শুধু এটুকুই নয়, তিনি দলিত মহিলাদের কল্যাণের জন্যও অভূতপূর্ব কাজ করেছেন| আপনারা মধ্যপ্রদেশের ভজ্জু শ্যামের নাম শুনে থাকতে পারেন| শ্রীমান ভজ্জু শ্যাম-এর জন্ম সম্পূর্ণ এক গরিব পরিবারে, আদিবাসী পরিবারে হয়েছিল| তিনি জীবন যাপনের জন্য সামান্য চাকরি করতেন| কিন্তু তাঁর পরম্পরাগত আদিবাসী পেন্টিং তৈরির শখ ছিল| আজ এই শখের জন্যই শুধুমাত্র ভারতেই নয়, গোটা প্রথিবী জুড়েই তিনি সম্মানিত| বিদেশে ভারতের নাম উজ্জ্বল করা ভজ্জু শ্যামজি’র প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করা হয়েছে| লক্ষ্মীকুট্টি কোল্লার এলাকায় শিক্ষকতা করেন এবং এখনও ঘন জঙ্গলের মধ্যে আদিবাসী এলাকায় তালপাতায় ছাওয়া ঝুপড়ির মধ্যে থাকেন| তিনি নিজের স্মৃতির ওপর নির্ভর করেই পাঁচশো ভেষজ ওষুধ তৈরি করেছেন| সাপের কামড়ের ওষুধ তৈরিতে তাঁর দক্ষতা রয়েছে| লক্ষ্মীজি এই হারবাল ওষুধ সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান থেকে প্রতিনিয়ত মানুষের সেবা করে চলেছেন| এই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিত্বকে চিহ্নিত করে সমাজে তাঁর অংশগ্রহণের জন্য তাঁকে পদ্মশ্রী প্রদান করে সম্মানিত করা হয়েছে| আজ আরও একটি নামের উল্লেখ করার ইচ্ছে করছে| পশ্চিমবঙ্গের পঁচাত্তর বছরের সুভাষিণী মিস্ত্রিকেও পুরস্কারের জন্য বাছাই করা হয়েছে| সুভাষিণী মিস্ত্রি এমন এক মহিলা যিনি হাসপাতাল তৈরির জন্য অন্য লোকের বাড়িতে বাসন মেজেছেন, সবজি বিক্রি করেছেন| তাঁর যখন তেইশ বছর বয়স ছিল, তখন চিকিত্সার অভাবে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়| আর এই ঘটনাটি তাঁকে গরিব মানুষদের জন্য হাসপাতাল তৈরির ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করেছে| আজ তাঁর কঠোর পরিশ্রমের ফলে তৈরি করা হাসপাতালে হাজার হাজার গরিব মানুষের বিনামূল্যে চিকিত্সা হচ্ছে| আমার স্থির বিশ্বাস যে, আমাদের বহুরত্না-বসুন্ধরায় এ ধরনের অনেক নর-রত্ন রয়েছেন, নারী-রত্ন রয়েছেন, যাঁদের কেউ জানেননা, চেনেননা| কখনও স্কুলে, কলেজে এ ধরনের মানুষদের নিয়ে এসে তাঁদের অভিজ্ঞতাকে জানা উচিত| পুরস্কারের বাইরে সমাজেও কিছু প্রয়াস হওয়া উচিত| আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রতি বছর নয় জানুয়ারি আমরা প্রবাসী ভারতীয় দিবস পালন করি| এটা হচ্ছে সেই দিন, যেদিন পূজনীয় মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে এসেছিলেন| এদিন আমরা ভারতীয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে অটুট বন্ধনের উত্সব পালন করি| এই বছর প্রবাসী ভারতীয় দিবসে আমরা এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা ভারতীয় বংশোদ্ভুত সমস্ত সাংসদ ও মেয়রদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল| আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, এই অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল, মরিশাস, ফিজি, তানজানিয়া, কেনিয়া, কানাডা, ব্রিটেন, সুরিনাম, দক্ষিণ আফ্রিকা, আমেরিকা এবং আরও নানা দেশ থেকে ভারতীয় বংশোদ্ভুত সাংসদ ও মেয়র যোগ দিয়েছেন| আমাদের ভারতীয় বংশোদ্ভুত মানুষ যারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন—কেউ সাইবার সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছেন, তো কেউ আয়ুর্বেদে যুক্ত রয়েছেন, কেউ সঙ্গীতের মাধ্যমে বা কবিতার মাধ্যমে সমাজের মনকে আনন্দিত করছেন| আমি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে চাই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এই উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য, ভারতীয় বংশোদ্ভুত মানুষদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এবং তাঁদের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষদের তা জানানোর জন্যও| ত্রিশ জানুয়ারি পূজনীয় বাপুর পুণ্য-তিথি, যিনি আমাদের সবাইকে এক নতুন পথ দেখিয়েছিলেন| এগুলো শুধুমাত্র মূল তত্ত্বই ছিলনা| বর্তমান সময়েও আমরা প্রতিটি পদক্ষেপেই দেখতে পাই যে, বাপু’র বার্তা কতটুকু সঠিক ছিল| যদি আমরা সংকল্প গ্রহণ করি যে, বাপু’র দেখানো পথে চলবো—যতটুকু চলতে পারি চলবো—তাহলে তার চেয়ে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি আর কী হতে পারে? আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে দু’হাজার আঠারো সালের শুভকামনা জানিয়ে আমার কথা বলা শেষ করছি| ভাববে, কি করে আমরা ২০২২-এর আগেই আমাদের পরিকল্পনারূপায়ন করবো? তিনি আমাদের সবার বয়োজ্যেষ্ঠা এবং দেশের বিভিন্ন ঘটনাবলীর সাক্ষী। এই ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি নব্বই বছর পূর্ণ করলেন। বিদেশ যাত্রার প্রাক্কালে দিদির সঙ্গে আমার ফোনে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছিল। এই কথোপকথন ঠিক তেমনই ছিল যেমনভাবে একজন ছোট ভাই অত্যন্ত আদরের সঙ্গে নিজের বড় বোনের সঙ্গে কথা বলেন। আমি নরেন্দ্র মোদী কথা বলছি। লতাজী : বয়সে তো অনেকেই বড় হন, কিন্তু নিজের কাজ দিয়ে যিনি বড় হন তাঁর আশীর্বাদ পাওয়াটাই খুব বড় পাওয়া। লতাজী : হ্যাঁ, কিন্তু আমি মনে করি, এসবই আমার মা-বাবার আশীর্বাদ এবং সকল শ্রোতাবন্ধুদের আশীর্বাদ। না, আমি আপনাকে আর বেশি কষ্ট দিতে চাই না। কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি এবং জানিও আপনি কতটা কর্মব্যস্ত এবং আপনার কী পরিমাণ কাজ থাকে। কত কী চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। যখন আপনি আপনার মায়ের পদধূলি নিয়ে এসেছিলেন, তা দেখে আমিও একজনকে পাঠিয়েছিলাম ওঁর কাছে, তাঁর আশীর্বাদ নিতে। আরও একবার আপনার জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আগামী বেশ কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত দেশ জুড়ে এই উৎসব উদ্‌যাপনের খুশি ও ঔজ্জ্বল্য বজায় থাকবে। হয়ত এই প্রবাদ শুধু কথার কথা নয়, এটি আমাদের জন্য একটি নির্দেশ, একটি দর্শন, একটি প্রেরণা। কিছু ঘরে মিষ্টি নষ্ট হয়ে যায়, আবার কিছু ঘরে বাচ্চারা মিষ্টির জন্য আকুল হয়ে থাকে। অন্ততপক্ষে বাড়ির অতিরিক্ত বা অব্যবহৃত জিনিসকে ‘ডেলিভারি-আউট’ করা যেতেই পারে। অনেক শহরে বেশ কিছু এনজিও–র তরুণ বন্ধুদের স্টার্টআপগুলি এই কাজ করছে। তারা লোকেদের ঘর থেকে পোশাক, মিষ্টি, খাবার সবকিছু একত্রিত করেন, তারপর দুঃস্থ-অভাবীদের খুঁজে বার করে জিনিসগুলি নীরবে তাদের কাছে পৌঁছে দেন। এবার উৎসবের এই মরসুমে সম্পূর্ণ সচেতনতা এবং সংকল্পের সঙ্গে প্রদীপের তলার সেই অন্ধকার আমরা কি ঘুচাতে পারি? আমাদের সংস্কৃতিতে মেয়েদের লক্ষ্মী বলে গণ্য করা হয়, কারণ মেয়েরা সৌভাগ্য আর সমৃদ্ধি নিয়ে আসে। এই দীপাবলীতে ভারতের এইসব লক্ষ্মীদের সম্মান জানানোর কর্মসূচি কিআমরা রাখতে পারি? আমাদের চারপাশে অনেক কন্যা, অনেক বধূ এমন আছেন, যাঁরা অসাধারণ কাজ করছেন। কেউ গরীব বাচ্চাদের পড়ানোর কাজ করছেন, কেউ স্বচ্ছতা ও স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সচেতনতা তৈরি করছেন, কেউ ডাক্তার–ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সমাজের সেবা করছেন, আবারকেউ উকিল হয়ে কাউকে ন্যায়বিচারপাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। আমাদের সমাজ এই মেয়েদের স্বীকৃতি ও সম্মান দিকএবং তাদের নিয়ে গর্ব করুক। যেমন আমরা সবাই মিলে ‘সেলফি উইথ ডটার’ নামে এক বিরাট অভিযান চালিয়েছিলাম, যা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি আগেও বলেছি, এর একটা মস্ত লাভ হল যে পরিচিত-অপরিচিত বহু মানুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কথা বলার সৌভাগ্য আমার হয়। কয়েকদিন আগে সুদূর অরুণাচল প্রদেশ থেকে এক বিদ্যার্থী অলীনা তায়ং আমাকে খুব আকর্ষণীয় একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। আমি রোইং, অরুণাচল প্রদেশেথাকি। পড়ে আমার খুবই ভালো লাগে, আমার মনে হল বইটি পরীক্ষার আগে পড়লে আমার অনেক উপকার হত। এই বইটির অনেক বিষয় আমার খুব ভালো লেগেছে, তবে আমি এটাও লক্ষ্য করলাম যে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তো এই বইটিতে অনেক পরামর্শ আছে, কিন্তু অভিভাবক আর শিক্ষকদের জন্য এই বইটিতে তেমন কিছু নেই। আমার ছোট্ট বিদ্যার্থী বন্ধু, প্রথমেই চিঠি লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। ‘একজাম ওয়ারিয়রস’ দু–তিনবার পড়ার জন্য ধন্যবাদ। যদি আমি নতুন সংস্করণের জন্য সময় বার করতে পারি, তাহলে আপনার কথা মত অবশ্যই তাতে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের জন্য কিছু কথা লেখার চেষ্টা করব। আমি অবশ্যই সেগুলি বিবেচনা করে দেখব। তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করব এবং সেগুলির মধ্যে যে কটি আমার উপযুক্ত মনে হবে তা আমি নিজের ভাষায়, নিজের পদ্ধতিতে অবশ্যই লেখার চেষ্টা করব। তাই আমি অপেক্ষা করব আপনাদের মতামতের জন্য। আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা খবরের কাগজের মাধ্যমে, টিভির মাধ্যমে দেশের প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ত কর্মসূচির বিষয়ে জানেন, ব্যস্ততা নিয়ে চর্চাও করেন। কিন্তু আপনারা তো জানেন যে আমিও আপনাদের মতই একজন সাধারণ মানুষ। কড়া মোকাবিলার পর ফাইনালে হেরে গিয়েও নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রশংসা করে তিনি স্পোর্টসম্যান স্পিরিট–এর এক জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ান নাদালও দানিল-এর খেলার প্রশংসা করেন। একই ম্যাচে পরাজিত খেলোয়াড়ের মনোবল ও জয়ী খেলোয়াড়ের বিনম্র ব্যবহার দুটোই শিক্ষণীয়। আমার প্রিয় দেশবাসী, বিশেষত আমার যুববন্ধুরা, এখন আমি যা বলতে চলেছি তা শুধুমাত্র আপনাদের ভালোর জন্য। নাহলে সমস্যা এক বৃহদাকার নিয়ে নেয় এবং তার সমাধান করা এক বিষম কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। গোড়াতেই যদি আমরা সচেতন হই, তবে অনেক কিছু বাঁচানো যেতে পারে। এই ভাবনা থেকেই আমার মনে হয়, আমার যুব বন্ধুদের একটি জরুরী বিষয়ে কিছু কথা অবশ্যই বলা উচিত। আমরা সবাই জানি, তামাকের নেশা স্বাস্থ্যের পক্ষে কতখানি ক্ষতিকর এবং একবার এই বদভ্যাস হয়ে গেলে তা ছাড়ানো কঠিন কাজ। তামাকেরনিকোটিন নেশা করায়। কৈশোর অবস্থায় এই তামাক সেবন শুরু করলে মস্তিস্কের বিকাশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বিষয়গুলো আমরা সকলে মোটামুটি জানি, কিন্তু আজ আমি আপনাদের এক নতুন বিষয় সম্পর্কে অবগত করতে চাই। আপনারা জানেন, সম্প্রতি ভারতেe-cigarette-এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে। সাধারন cigarette থেকে আলাদা এইe-cigaretteএকটি ইলেকট্রনিক উপকরণ। সাধারণcigarette–এর বিপদ সম্পর্কে আমরা জানি, কিন্তু e-cigarette সম্পর্কে এক ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে যে এটি ক্ষতিকর নয়। কিন্তু e-cigaretteর বিষয়টি একদম আলাদা। এই সম্পর্কে খুব কম সচেতনতা আছে মানুষের মধ্যে। সাধারণ মানুষ e-cigarette-এর ক্ষতিকারক দিকটি সম্পর্কে অবগত নন এবং এই কারণেসন্তর্পণেe-cigarette ঢুকে পড়েছে ঘরেঘরে। আপনারা জানেন, যখন আমাদের আশেপাশে কেউ cigarette খেয়েছে কিনা সেটা আমরা গন্ধ দিয়ে বুঝতে পারি। কিন্তু e-cigarette-এর ক্ষেত্রে এমনটা হয়না। যুবকরা জেনে হোক, অজান্তে হোক, কিংবা fashion statementহিসেবে হোক, নিজেদের ব্যাগে, বইয়ের মাঝখানে বা হাতে সগর্বে এটি নিয়ে ঘোরে। তারা এইভাবেই এই নেশার কবলে পড়ে যায়। যুবশক্তি আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। কোন ভাবেই যাতে এই নেশার অসুখ সমাজে শিকড় না গাড়তে পারে। আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ জানাই, তামাকের বদভ্যাস ত্যাগ করুন এবংe-cigarette সম্পর্কে কোন ভ্রান্ত ধারনা পোষণ করা বন্ধ করুন। ‘ফিট ইন্ডিয়া’ মানে কিন্তু শুধুমাত্র রোজ সকাল-বিকাল দুঘণ্টা জিমে যাওয়া নয়। অনেক মানবরত্ন এই দেশ উপহার দিয়েছে। এমনই একজন মানবাত্মাকে ভ্যাটিকান সিটিতে ১৩ অক্টোবর সম্মানিত করা হতে চলেছে যা আমাদের সারা দেশের কাছে গর্বের বিষয়। ওইদিন পোপ ফ্রান্সিস, মরিয়াম থ্রেসিয়াকে সেন্ট ঘোষণা করতে চলেছেন। সিস্টার মরিয়াম থ্রেসিয়া পঞ্চাশ বছরের স্বল্প আয়ুষ্কালেই মানবকল্যাণে যে অপরিসীম অবদান রেখেছেন,সারা বিশ্বে তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। আমি আরও একবার সিস্টার মারিয়াম থ্রেসিয়া–কে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই, এবং ভারতবাসীদের বিশেষত আমার খ্রিস্টান ভাই–বোনেদের এই সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানাই। আমার প্রিয় দেশবাসী, শুধু ভারত নয়, সমগ্র বিশ্বের কাছে এটা গর্বের বিষয় যে আজ যখন আমরা ‘গান্ধী ১৫০’ পালন করতে চলেছি, এবং সেই একই সময়ে দাঁড়িয়ে ১৩০ কোটি দেশবাসী Single Use Plastic-এর ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার সঙ্কল্প নিয়েছেন। পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে যেভাবে বিশ্বের মধ্যে ভারত অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে তাতে সমগ্র বিশ্বের নজর এখন ভারতের ওপর। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আগামী ২ অক্টোবর Single Use Plastic–বিরোধী যে অভিযান তাতে আপনারা সবাই সামিল হবেন। বিভিন্ন জায়গায় মানুষ নিজের মতো করে এই অভিযানে তাদের অবদান রাখছেন। তবে আমাদের দেশেরই এক যুবক এক অনন্য অভিযান শুরু করেছেন। ওঁর এই কাজ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং আমি ওঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাঁর এই নতুন পরিকল্পনা সম্বন্ধে জানার এবং বোঝার চেষ্টা করি। হয়তো তার এই কথাগুলো দেশের অন্যান্য লোকেদেরও কাজে আসবে। আমি যখন প্রথমবার plogging শব্দটি শুনেছিলাম তখন তা আমার কাছেও নতুন ছিল। বিদেশে সম্ভবত এই শব্দটি অল্পবিস্তর ব্যবহৃত হয়। আমি বিশ্বাস করি, ১৩০কোটি দেশবাসী এই লক্ষ্যে একধাপ এগোলে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকমুক্ত ভারত গঠনের উদ্দেশ্যে আমাদের দেশ ১৩০কোটি পদক্ষেপ এগিয়ে যাবে। রিপু দমনজী, আপনাকে আরও একবার অনেক ধন্যবাদ! নিজের জীবনকে দেশের কল্যাণে নিয়োজিত করতে চাই। আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের হয়তো মনে থাকবে ১৫ আগস্ট আমি লালকেল্লা থেকে বলেছিলাম যে, ২০২২-এর মধ্যে আপনারা ভারতের পনেরোটি জায়গায় যান। কমপক্ষে ১৫-টি জায়গায় যান এবং ওখানে গিয়ে একরাত বাদুরাত থাকার চেষ্টা করুন। আপনারা ভারতকে দেখুন, বুঝুন, অনুভব করুন। আমাদের কতবিবিধতা আছে। দীপাবলী উপলক্ষে তো ছুটি থাকেই, তখন তো সকলেই বেড়াতে যায়। তাই আমি অনুরোধ করছি আপনারা ভারতেরই পনেরোটি জায়গায় বেড়াতে যান। অর্থাৎ, আমরা এই সময়েই অনেকটা এগিয়ে গেছি। আমরা যদি আরও চেষ্টা করি তাহলে স্বাধীনতার ৭৫বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই পর্যটনক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বে অন্যতম স্থান অর্জন করতে পারব। এটাও অবশ্যই দেখবেন দীপাবলীর দিনগুলোতেআতসবাজীর জন্য যেন কোথাও আগুন লাগার ঘটনা না ঘটে বা কোন মানুষের ক্ষতি না হয়। মন কি বাত, নভেম্বর ২০১৭ উত্তর ভারতের মানুষ জানবেন না দক্ষিণ ভারতে কী আছে? পশ্চিম ভারতের মানুষটি জানবেন না যে পূর্বভারতে কী আছে? আমাদের দেশ বুদ্ধ এবং গান্ধীর দেশ। দেশের ঐক্যের জন্য মন-প্রাণ সমর্পণকারী সর্দার প্যাটেলজীর দেশ। প্রাচীনকাল থেকে আমাদের পূর্বসূরীরা যে সর্বজনীন মূল্যবোধকে, অহিংসাকে, সম্প্রীতিকে লালন করে এসেছে, তা আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। ‘অহিংসা পরম ধর্ম’ – এটা আমরা শৈশব থেকে শুনে আসছি, বলে আসছি। আমি দেশবাসীকে আশ্বাস দিতে চাইছি, আইন হাতে তুলে নেওয়া লোকেদের বিরুদ্ধে, হিংসার পথে যাওয়া যে কাউকেই – ব্যক্তি বা সম্প্রদায় যেই হোক – কাউকেই সরকার বা দেশ বরদাস্ত করবে না। আমাদের অনেক উৎসব সরাসরি কৃষক ও মৎস্যচাষী ভাই-বোনদের সঙ্গে যুক্ত। আজ আমি উৎসবের কথা বলছি, তাই প্রথমেই আমি আপনাদের ‘মিচ্ছামি দুক্কড়ম’ বলতে চাই। গতকাল জৈন সমাজের ‘সম্বৎসরি’ উৎসব পালিত হয়েছে। জৈন সমাজে ভাদ্র মাসে ‘পর্যুষণ পরব’ পালন করা হয়। আর একে ‘ক্ষমা-বাণী’ উৎসবও বলা হয় এবং এই দিনে একে অপরকে ‘মিচ্ছামি দুক্কড়ম’ বলে শুভেচ্ছা জানানোর ঐতিহ্য আছে। তাছাড়া আমাদের শাস্ত্রে আছে ‘ক্ষমা বীরস্য ভূষণম’ অর্থাৎ ক্ষমা বীরের ভূষণ। আর এই মহোৎসবকে ঐক্য, সাম্য আর পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে আমরা জানি। এই উপলক্ষে প্রত্যেক দেশবাসীকে জানাই গণেশোৎসবের অনেক অনেক শুভকামনা। এখন কেরালায় ‘ওনাম’ উৎসব পালিত হচ্ছে। ভারতের বহুবর্ণের উৎসবের মধ্যে ‘ওনাম’ কেরালার এক প্রধান উৎসব। এই উৎসব নিজের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক মহত্বের জন্য বিশিষ্ট। আর এখন তো এই উৎসবও পর্যটনের আকর্ষণের এক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া আমি তো দেশবাসীকে বলবই যে, গুজরাটের যেমন নবরাত্রি উৎসব বা পশ্চিমবাংলার দুর্গোৎসব – সেভাবেই আজ পর্যটনের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে – এই ওনাম। আমাদের দেশের অন্যান্য উৎসবগুলিতেও বিদেশিদের আকর্ষণ করার প্রচুর সুযোগ রয়ে গেছে। এই ভাবনায় – আমরা আগামী দিনে কি কি পদক্ষেপ নিতে পারি – আমাদের ভাবতে হবে বৈকি! উৎসবের এই আনন্দমেলায় ক’দিন পরেই ‘ঈদ-উল-জুহা’ পালিত হবে। সমস্ত দেশবাসীকে জানাই ‘ঈদ-উল-জুহা’র অনেক অনেক অভিনন্দন আর শুভকামনা! আমাদের পারিবারিক জীবনে তো উৎসব আর স্বচ্ছতা অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। উৎসবের প্রস্তুতিই শুরু হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্য দিয়ে। একথা নতুন নয়, কিন্তু স্বচ্ছতাকে সামাজিক স্বভাবে পরিণত করা খুব জরুরী। সর্বজনীনরূপে স্বচ্ছতা শুধুমাত্র আমাদের ঘরেই নয়, প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি শহরে, আমাদের রাজ্যে, আমাদের দেশে – এই স্বচ্ছতা ও উৎসবকে এক সুতোয় বাঁধতে হবে – যে বন্ধন হবে অটুট। আমার প্রিয় দেশবাসী, আধুনিক হয়ে ওঠার পরিভাষা ক্রমশ বদলাচ্ছে। YouTube-এ আপনারা দেখতে পাবেন, আজকাল বাচ্চারা বাড়িতে মাটি দিয়ে গণেশের মূর্তি তৈরি করছে। তিনবছর আগে আমরা যে স্বচ্ছতা অভিযান শুরু করেছিলাম, আগামী দোসরা অক্টোবর তার তৃতীয় বর্ষপূর্তি। এই রকম একটা সময়ে গুজরাতের বনাসকাঁঠা জেলার ধানেরায় ‘জমীয়ত-উলেমা-এ-হিন্দ’-এর কর্মকর্তারা বন্যা প্রভাবিত ২২টি মন্দির ও ৩টি মসজিদের সাফ-সাফাই ও পরিচ্ছন্নতার সম্পূর্ণ কাজ নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানাচ্ছি যে, আসুন, আবার একবার, দোসরা অক্টোবর ‘গান্ধী জয়ন্তী’র ১৫-২০ দিন আগে থাকতে ‘স্বচ্ছতাই সেবা’-র প্রচার শুরু করি। যেরকম আগে বলা হত, ‘জল সেবাই প্রভু সেবা’ এবং ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ – ঠিক সেইরকম। আমার সোস্যাল মিডিয়ার বন্ধুরা ভার্চুয়্যাল দুনিয়ায় এমন কিছু সৃজনশীল প্রচার চালাতে পারেন যা বাস্তবে প্রেরণাদায়ক হতে পারে। পানীয় জল ও স্বচ্ছতা মন্ত্রক দ্বারা ‘স্বচ্ছ সংকল্প থেকে স্বচ্ছ সিদ্ধি’ অভিযানের অন্তর্গত প্রবন্ধ, স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র এবং ছবি আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। আপনারা বিভিন্ন ভাষায় প্রবন্ধ লিখতে পারেন এবং এই প্রতিযোগিতার কোনও নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই। শ্রোতার সংখ্যা কয়েক কোটি এবং লক্ষাধিক মানুষ কখনও চিঠি মাধ্যমে, কখনও message পাঠিয়ে বা ফোনে যোগাযোগ করেন, বার্তা পাঠান যা আমার কাছে এক পরম প্রাপ্তি ও দুর্লভ সম্পদ। দেশের জনগণের ভাবনা ও মনের কথা জানার এটা আমার কাছে একটা বড় সুযোগ। আপনারা যতটা ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের অপেক্ষা করেন, তার চেয়ে বেশি অপেক্ষায় আমি থাকি আপনাদের খবরাখবরের। আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি কারণ, আপনাদের থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পারি। আমি আমার এক বান্ধবীর কথা আপনাকে জানাতে চাই। সে সবসময় লোকেদের সাহায্য করার চেষ্টা করে কিন্তু ওর একটা বদভ্যাস আছে যা দেখে আমি খুব আশ্চর্য হই। আমি একবার কেনাকাটা করতে ওর সঙ্গে মলে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে সবজি কেনার সময়ও ও একই কাজ করল ও দরদাম করে চার-পাঁচটাকা বাঁচাল। ”আমার বিশ্বাস, এই ফোনের বিষয়বস্তু শোনার পর আপনারা কেবল সজাগই হননি, এমন ভুল না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। আপনার কি মনে হয় না কি আমাদের ঘরের আশেপাশে যখন কেউ জিনিস বিক্রি করতে আসে, ফেরি করতে আসে, কোনো ছোট দোকানদার, সব্জী বিক্রেতার সঙ্গে আমাদের কাজ পড়ে, কখনও অটো-রিকশার সঙ্গে দরকার পড়ে – যখনই কোনো মেহনতী মানুষের সঙ্গে কাজ পড়ে আমাদের, তখনই আমরা দরাদরি করি, দর কষতে লেগে যাই তার সঙ্গে – না এত নয়, দু’ টাকা কম করো, পাঁচ টাকা কম করো। আর আমাদের মত লোকই যখন কোনো বড় রেস্টুরেণ্টে খাবার খেতে যাই তখন বিলে কী লেখা আছে তা দেখিও না, সঙ্গে সঙ্গে টাকা বের করে দিয়ে দিই। শুধু তাই নয়, শোরুমে শাড়ি কিনতে গেলে কোনো দরাদরি করি না, কিন্তু কোনো গরীবের সঙ্গে কাজ পড়লে দরাদরি না করে ছাড়ি না। দু’ টাকা, পাঁচ টাকায় আপনার জীবনে কোনো ফারাক পড়বে না কিন্তু আপনার এই সামান্য আচরণ তার মনে কতটা গভীর আঘাত দেয় তা কখনও ভেবে দেখেছেন? ম্যাডাম, আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ, আপনি এমন হৃদয়স্পর্শী ফোন করে এক বার্তা দিলেন আমাকে। আমার বিশ্বাস যে আমার দেশবাসীর মধ্যে গরীবের সঙ্গে এই আচরণের অভ্যাস থাকলে নিশ্চিতভাবে তাঁরা তা ত্যাগ করবেন। আমার প্রিয় তরুণ বন্ধুরা, ২৯শে অগাস্ট তারিখটা পুরো দেশ ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’ হিসাবে উদযাপন করে। এই দিনটি মহান হকি খেলোয়াড় এবং হকির জাদুকর মেজর ধ্যানচাঁদজীর জন্মদিন। হকিতে ওঁর অবদান অতুলনীয়। আমি এই ব্যাপারটাকে এই কারণে স্মরণ করছি কারণ আমি চাই যে আমাদের দেশের নতুন প্রজন্ম খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত হোক। খেলাধুলো আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠুক। যদি আমরা বিশ্বের ‘তরুণ রাষ্ট্র’ হই তবে খেলার মাঠেও এই তারুণ্য নজরে পড়া উচিত। একদিক থেকে খেলাধুলো হৃদয়ের মেলবন্ধন ঘটানোর এক দারুণ দাওয়াই। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম খেলার জগতে এগিয়ে আসুক আর আজ কম্প্যুটারের যুগে আমি এ ব্যাপারেও সচেতন করতে চাইব যে প্লেয়িং ফিল্ড, প্লে-স্টেশনের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কম্প্যুটারে ফিফা খেলুন কিন্তু বাইরে ময়দানেও তো কখনও ফুটবলের সঙ্গে কসরৎ করে দেখান। কম্প্যুটারে হয়ত ক্রিকেট খেলেন, কিন্তু খোলা ময়দানে আকাশের নীচে ক্রিকেট খেলার আনন্দই আলাদা। আমাদের তরুণদের জন্য খুশির খবর যে ৬ থেকে ২৮শে অক্টোবর ভারতে ফিফা আণ্ডার সেভেনটিন ওয়ার্ল্ড কাপ আয়োজিত হতে চলেছে। দুনিয়ার চব্বিশটি টিম ভারতকে নিজেদের ঘর বানাতে চলেছে। আসুন, বিশ্ব থেকে আসা আমাদের তরুণ অতিথিদের খেলার উৎসবের সঙ্গেই স্বাগত জানাই, খেলা এনজয় করি, দেশে এক উপযুক্ত পরিবেশ বানাই। যখন আজ আমি খেলার কথা বলছি তখন মনে পড়ে যাচ্ছে গত সপ্তাহের এক মর্মস্পর্শী ঘটনা। দেশবাসীদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই সেটা। খুব কম বয়সের কিছু মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয় আমার আর তাদের মধ্যে কয়েকজনের তো হিমালয়ের কোলে জন্ম হয়েছে। সমুদ্রের সঙ্গে যাঁদের কোনোদিনই সংযোগ ছিল না। কখনও একটানা চল্লিশ দিন জলেই থাকবে। কখনও একসঙ্গে তিরিশ দিন জলে কাটাবে। সমুদ্রের ঢেউয়ের মাঝে আমাদের এই সাহসী ছয় কন্যা, আর এটা বিশ্বের এমন প্রথম ঘটনা। কোন্‌ ভারতবাসী আছেন যিনি গর্বিত হবেন না আমাদের এই কন্যাদের নিয়ে! আমি এই মেয়েদের অনুভবকে সেলাম জানাই, আর আমি ওঁদের বলেছি যে গোটা দেশের সঙ্গে নিজেদের ভাবনা ভাগ করে নিতে। এই কন্যাদের প্রতি আমার অনেক-অনেক শুভেচ্ছা, ঢের-ঢের আশীর্বাদ। আমার প্রিয় দেশবাসী, ৫ই সেপ্টেম্বর আমরা সবাই ‘শিক্ষক দিবস’ পালন করি। উনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন কিন্তু গোটা জীবন ধরে নিজেকে একজন শিক্ষক হিসাবেই তৈরি করেছিলেন। উনি সবসময় শিক্ষক হিসাবে বাঁচতেই পছন্দ করতেন। একজন শিক্ষকের মহত্ত্বম গুণ তাঁর ছাত্রদের মধ্যে সৃজনের মানসিকতা জাগানো এবং জ্ঞানার্জনের আনন্দ দান। এক mission mode–এ একটা অভিযান শুরু করতে পারি? দেশের Transformation–এ তা অনেক বড় ভূমিকা নেবে। আসুন, ‘Teach to Transform’-এই মন্ত্র নিয়ে আমরা এগিয়ে চলি। আমার নাম ডাক্তার অনন্যা অবস্থি। আমি মুম্বইয়ের বাসিন্দা এবং হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির I ndia Research Centre-এর সঙ্গে যুক্ত। ২০১৪ সালের ২৮শে আগষ্ট একটা স্বপ্ন নিয়ে এই যোজনা শুরু হয়েছিল। কাল, ২৮শে আগষ্ট ‘প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা’র তিন বছর পূর্ণ হবে। ৩০ কোটি ভারতবাসী এই যোজনায় অংশগ্রহণ করে তাঁদের প্রথম ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্ট খুলেছেন। বিশ্বের বহু দেশের জনসংখ্যার থেকেও বেশি এই নতুন অ্যাকাউণ্টধারী নাগরিকের সংখ্যা। ঘরে বা পকেটে টাকা থাকলে বাজে খরচের দিকে মন যায়। ‘প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা’য় আমাদের দেশের গরীব মানুষেরা প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা জমা করেছেন। আবার ‘প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা’য় যাঁরা অ্যাকাউণ্ট খুলেছেন, ইন্সিওরেন্সের সুবিধাও পেয়েছেন। ‘প্রধানমন্ত্রী জীবনজ্যোতি বীমা যোজনা’, ‘প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা’ যথাক্রমে মাত্র একটাকা ও তিন টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে আজ ঐ গরীব মানুষের জীবনে নতুন আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। বহু পরিবারে এই গরীব মানুষ যখন সংকটে পড়েছে – পরিবারের প্রধানের মৃত্যু হয়েছে, ঐ একটা প্রিমিয়ামের সুফল দু’লাখ টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। মানুষের মন এমনই যে বর্ষাকাল মানুষের কাছে খুব আনন্দদায়ক হয়। পশু-পাখী,গাছপালা, প্রকৃতি – প্রত্যেকেই বর্ষার আগমনে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। কিন্তু মাঝে মাঝেবর্ষা যখন ভয়ঙ্কর রূপ নেয় তখন বোঝা যায় জলের বিধ্বংসী ক্ষমতা কতটা। প্রকৃতি আমাদেরজীবনদাত্রী, আমাদের পালনকর্ত্রী, কিন্তু কখনও কখনও বন্যা, ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিকদুর্যোগ, তার ভয়াল রূপ প্রচণ্ড বিধ্বংসী হয়ে ওঠে। ঋতুচক্রের এই পরিবর্তন এবংপরিবেশে যে পরিবর্তন আসছে, তার একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গত কিছু দিনে ভারতেরকিছু জায়গায় বিশেষ করে অসম, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, গুজরাট, রাজস্থান, বাংলা-র কিছুঅংশে অতি বৃষ্টির কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ্য করতে হচ্ছে। ব্যাপক ভাবে উদ্ধারকার্য চালানো হচ্ছে। যেখানে সম্ভবহচ্ছে, সেখানেই মন্ত্রীপরিষদে আমার যে সহকর্মীরা আছেন, তাঁরা পৌঁছে যাচ্ছেন। রাজ্যসরকারও নিজের নিজের মত করে বন্যাকবলিত মানুষদের সাহায্য করার জন্য সবরকম প্রয়াসচালাচ্ছে। সামাজিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সেবামূলক কাজ করতে ইচ্ছুক নাগরিকরা এইপরিস্থিতিতে মানুষজনের কাছে সাহায্য পৌঁছনোর জন্য সবরকম প্রয়াস চালাচ্ছে। লোকজন নিজেদের দুরাবস্থার কথা জানাচ্ছেন। বর্ষাকালের আগেই বেশিরভাগ জায়গায় Mock Drill করে পুরো সরকারি কর্মসূচি তৈরি করে রাখা হয়েছিল। NDRF -এর Team নিয়োগ করা হয়েছিল। ধীরে ধীরে আমরাও আমাদের এভাবেই তৈরি করেছি যেবর্ষার পূর্বাভাস অনুযায়ী আমরা এমনভাবেই আমাদের কাজ করব, যাতে আমরা লোকসানের হাতথেকে পরিত্রাণ পেতে পারি। যখনই আমি ‘মন কি বাত’-এর জন্য তৈরি হই, আমি দেখি আমারথেকেও বেশি তৈরি আমার দেশের নাগরিক। এবার তো GST নিয়ে এত চিঠি এসেছে, এত ফোন এসেছে, আর এখনও মানুষজন GST নিয়ে খুশি ব্যক্ত করছেন,প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছেন। একটি ফোন আমি আপনাদের শোনাতে চাই – “নমস্কার প্রধানমন্ত্রীজী,আমি গুরগাঁও থেকে নীতু গর্গ বলছি। আমি ‘চার্টার্ড অ্যাকাউণ্ট্যাণ্ট ডে’-তে আপনারবক্তৃতা শুনে অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছি। আমাদের দেশে এজন্যই গতমাসে আজকের দিনেই Goods and Service Tax – GST শুরু হয়েছে। ” GST চালু হওয়ার পর প্রায় একমাস হয়ে গেছে আর তারলাভজনক ফল দেখা যাচ্ছে। আর আমার খুব ভাল লাগছে, খুশি হচ্ছি যে যখনই কোনও দরিদ্রমানুষ চিঠি লিখে বলছেন GST -র জন্য দরিদ্রদেরপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কীভাবে কমে গেছে, জিনিসপত্র কীভাবে সস্তা হয়ে গেছে। আরউত্তর-পূর্বাঞ্চল, দূর-সুদূর পার্বত্য অঞ্চল, জঙ্গলে বসবাসকারী কোনও ব্যক্তি চিঠিলিখে জানাচ্ছেন যে প্রথমে ভয় হয়েছিল যে না জানি কি হবে, কিন্তু এখন যখন আমি এটাশিখে এবং বুঝে গেছি তো আমার মনে হচ্ছে আগের থেকে কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক সরল হয়ে গেছে। আর সবথেকে বড় কথা এই যে, গ্রাহকদের ব্যবসায়ীদেরওপর ভরসা বাড়ছে। এখন আমি দেখছি যে Transportand Logistic Sector –এর ওপর GST –র কীরকম প্রভাব পড়েছে। কীভাবে ট্রাকের আসা-যাওয়া বেড়ে গেছে। যারফলে জোরদার smooth transition হচ্ছে, যাতে জোরদার ভাবে migration হচ্ছে, নতুন registration হচ্ছে, আর এর ফলে সারা দেশে এক নতুন বিশ্বাস তৈরি হচ্ছে। আর কখনও না কখনও,অর্থনীতিবিদ, ম্যানেজমেন্টের বিদগ্ধ ব্যক্তি, Technology -র পণ্ডিত মানুষ, তাঁদের গবেষণার মাধ্যমে ভারতে GST –র প্রয়োগকে বিশ্বের দরবারে এক মডেল হিসেবে অবশ্যই তুলেধরবেন। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এ এক Case Study হয়ে উঠবে। কারণ, এত বড় মাপে এত বড় পরিবর্তন, এত কোটিমানুষের তাতে যোগদান, এত বিশাল এক দেশে তার প্রয়োগ এবং সাফল্যের সঙ্গে তাকে এগিয়েনিয়ে যাওয়া, এটা নিজেই এক সাফল্যের শীর্ষবিন্দু। বিশ্ব অবশ্যই এই নিয়ে গবেষণাকরবে। GST প্রয়োগ করা হয়েছে, প্রতিটিরাজ্য তাতে অংশ নিয়েছে, প্রতিটা রাজ্যের তাতে দায়িত্বও আছে। সমস্ত সিদ্ধান্ত সবকটিরাজ্য ও কেন্দ্র মিলিতভাবে সর্বসম্মতিক্রমে নিয়েছে। আর এরই ফল, প্রতিটি সরকারেরএটিই প্রাথমিক লক্ষ্য যে GST –র জন্য যেন দরিদ্রদের ওপরকোনও চাপ না পড়ে। আমি এই কাজেরসঙ্গে যুক্ত সমস্ত মন্ত্রক , সমস্ত দপ্তর, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের সবকর্মচারীদের অন্তর থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। GST ভারতের সামগ্রিক শক্তির সাফল্যের এক উত্তম উদাহরণ। এ একঐতিহাসিক উপলব্ধি। এ এক রকম সামাজিক সংস্কারেরও অভিযান। আমি আবারএকবার অত্যন্ত আন্তরিকভাবে এত বড় প্রয়াসকে সফল করার জন্য কোটি কোটি দেশবাসীকে কোটিকোটি নমস্কার করছি। আমারপ্রিয় দেশবাসী, আগস্ট মাস আন্দোলনের মাস। আমাদের নতুন প্রজন্মের জানাদরকার ১৯৪২-এর ৯-ই আগস্ট কী হয়েছিল। ১৮৫৭ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত ভারতবাসীস্বাধীনতার প্রত্যাশার সঙ্গে কীভাবে নিজেদের একাত্ম করেছিল, তার জন্য তাদের কতখানিযুঝতে হয়েছে, কত কিছু সহ্য করতে হয়েছে – ইতিহাসের পাতায় পাতায় তার বর্ণনা উন্নতভারত গঠনে আমাদের প্রেরণা স্বরূপ। মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ মন্ত্রে নিজেদের জীবনকে সংগ্রামে সমর্পণ করেছিল। ১৯২০-র‘অসহযোগ আন্দোলন’ আর ১৯৪২-এর ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধীর দুটি আলাদা রূপদেখা যায়। অসহযোগ আন্দোলনের চেহারা একরকম ছিল, এরপর ’৪২-এ অবস্থা এমন দাঁড়ালো,আন্দোলনের তীব্রতা এতটাই বেড়ে গেল যে মহাত্মা গান্ধীর মতো মহাপুরুষও ‘করেঙ্গে ইয়ামরেঙ্গে’ মন্ত্র দিয়ে দিলেন। এইসব সাফল্যের পিছনে ছিল জনসমর্থন, জনসামর্থ্য,জনসঙ্কল্প এবং জনসংঘর্ষ। গোটা দেশ সেদিন একজোট হয়ে লড়েছিল। আমি কখনও কখনও ভাবি,ইতিহাসের পাতাগুলিকে একত্র করে নিয়ে দেখলে বোঝা যায় ভারতের প্রথম স্বাধীনতাসংগ্রাম হয়েছিল ১৮৫৭-য়। প্রজন্ম বদলে গেছে, কিন্তু তাদের সংকল্পের তীব্রতা কিছুমাত্রকমেনি। একদল মানুষ এসেছে, সংগ্রামে যুক্ত হয়েছে, চলেও গেছে – আবার নতুন দল এসেছে,তারাও একইভাবে সংগ্রামে যোগ দিয়েছে – আর ইংরেজ সাম্রাজ্যকে সমূলে উৎপাটনের জন্যদেশ প্রতি মুহূর্তে চেষ্টা করে গেছে। ১৮৫৭ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত এই প্রচেষ্টাআন্দোলনকে এমন এক পর্যায়ে এনে ফেলে যে ১৯৪২-এ তা চরম সীমায় পৌঁছায় এবং ‘ভারতছাড়ো’-র বিষাণ এমনভাবে বাজে, যার ফলে পাঁচ বছরের মধ্যে ১৯৪৭-এ ইংরেজ চলে যেতেবাধ্য হয়। এখনআমি আপনাদের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে চাই। প্রায় ৭০ বছর হয়ে গেছে। সরকার এসেছে, গেছে। নীতি-নিয়ম তৈরি হয়েছে, পরিবর্তিতহয়েছে, পরিবর্ধিত হয়েছে। দেশের সমস্যামুক্তির জন্য সকলেই নিজের নিজের মতো করেচেষ্টা করে গেছে। প্রত্যাশাও বেড়েছে। এই ২০১৭-র ১৫-ই আগস্ট আমরা সঙ্কল্পপর্বের সূচনা হিসেবে পালন করব এবং ২০২২-এ স্বাধীনতার যখন ৭৫ বছর হবে, ততদিনেঅবশ্যই আমরা সেই সঙ্কল্পেরও সিদ্ধি সাধন করে ফেলব। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৭ পাঁচটি বছর যেমন দেশের স্বাধীনতার নির্ণায়ক হয়ে উঠেছিল, তেমনই ২০১৭থেকে ২০২২ – এই পাঁচ বছরও ভারতের ভবিষ্যৎ গঠনের নির্ণায়ক বর্ষ হয়ে উঠতে পারে – এবংতাকে তা করে তুলতেই হবে। পাঁচ বছর পর আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালন করব। এমন একটি সঙ্কল্প যা আমরা আগামী পাঁচ বছরে সিদ্ধ করে দেখাবো। আসুন, প্রযুক্তিব্যবহার করে ভিডিও পোস্ট, ব্লগ, নিবন্ধ, নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে আসুন। এইআন্দোলনকে এক জন-আন্দোলনের রূপ দিতে হবে। এই Quiz প্রতিযোগিতা দেশের যুবসম্প্রদায়কে দেশের গৌরবশালী ইতিহাস এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়কদের সঞগে পরিচিতকরানোর এক প্রচেষ্টা। আমি আনন্দিত যে গত তিন বছর যাবৎ ১৫-ই আগস্ট কি বলা উচিত কোন বিষয় আলোচনা করাউচিত এই নিয়ে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে আমার কাছে অনেক প্রস্তাব এসেছে। এইপ্রস্তাবগুলির মুখ্য উদ্দেশ্য তাঁদের স্বপ্নগুলি যেন শব্দের রূপ পায়। ১৫-ইআগস্ট আমি যতটুকু সময় পাবো তার মধ্যে এই প্রস্তাবগুলি আলোচনা করার চেষ্টা করবো। খুব বেশি হলে৪০-৪৫ বা ৫০ মিনিটের মধ্যে শেষ করবো। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি আজকে অন্য একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতেচাই। ভারতবর্ষের অর্থব্যবস্থার সঙ্গে সামাজিক-অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এরগুরুত্বকে কখনোই খাটো করা উচিত নয়। আমাদের বিভিন্ন পরব, উৎসব কেবল মাত্রআনন্দ-উল্লাসের জন্য এমনটি নয়। এই সবউৎসবের সঙ্গে এক সহজ স্বাভাবিক আনন্দও মিশে থাকে। অর্থব্যবস্থার কথা বলতে গেলে রাখীবন্ধনউৎসবের কয়েক মাস আগে থেকেই শত শত পরিবারে ছোটো ছোটো পারিবারিক ব্যবসায় রাখী তৈরিশুরু হয়ে যায়। সুতী, সিল্ক প্রভৃতি নানারকম সুতো দিয়ে নানা ভাবে নানা রকম রাখীতৈরি হয়, আর আজকাল তো লোকজন Homemade রাখিই বেশি পছন্দ করেন। রাখি তৈরির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, বিক্রির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, মিষ্টি ব্যবসায়ী –এই ভাবে শত শত – হাজার হাজার ব্যবসায়ী একটি উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ছোটো ছোটো মাটির প্রদীপযাঁরা বানান, সেই সব গরীব পরিবারের সঙ্গে কিন্তু দীপাবলী সরাসরি সম্পর্কিত। আজকেআমি যখন পরব, উৎসব এবং এর সঙ্গে যুক্ত গরীব ব্যক্তিদের অর্থব্যবস্থার কথা বলছি,তখন একই সঙ্গে আমি পরিবেশের কথাও বলতে চাই। কখনও কখনও আমি ভাবি যে আমার থেকেওদেশবাসী অনেক বেশি সজাগ এবং সক্রিয় এবং সেটা আমি উপলব্ধিও করেছি। গত একমাস যাবৎপরিবেশের বিষয়ে সজাগ নাগরিকরা আমাকে চিঠি লিখেছেন। তাঁরা আমাকে আবেদন জানিয়েছেন যেসময় থাকতে আমি যেন গণেশ চতুর্থীতে eco-friendly গণেশের কথা বলি যাতেলোকেরা মাটির তৈরি গণেশ পছন্দ করেন, পরিকল্পনা বানান। আসুন, আমরাও তাঁর কথা স্মরণ করে এই বছর গণেশ উৎসবের সময় রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনাসভা ইত্যাদি আয়োজন করি। আমি সমস্ত দেশবাসীকে আগামী অনেকউৎসবের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা নিরন্তর দেখছি যে শিক্ষা ক্ষেত্রে হোক, আর্থিক ক্ষেত্রহোক, সামাজিক ক্ষেত্র হোক বা ক্রীড়াক্ষেত্র হোক – আমাদের কন্যারা দেশের নামউজ্জ্বল করছে, নতুন নতুন সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যাচ্ছে। আমাদের দেশবাসীদের আমাদেরকন্যাদের নিয়ে গর্ব হয়, আমরা সম্মানিত হই তাঁদের জন্য। এই কিছুদিন আগেই আমাদেরমেয়েরা মহিলা ক্রিকেটের বিশ্বকাপে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। এই সপ্তাহে আমার এইসব খেলোয়াড় মেয়েদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়েছিল। ওইসব মেয়েদের আমি আমার এক আলাদা মূল্যায়নের কথা বলেছি। আমি এমনখেলা দেখেছি যে ভারতের খেলোয়াড়রা যদি বিফল মনোরথ হয় তো দেশবাসীর রাগ খেলোয়াড়দেরওপর পড়ে। কিছু মানুষ তো মানমর্যাদা ভেঙে এমন কিছু কথা বলে দেন, এমন কিছু জিনিসলিখে দেন যে খুবই কষ্টদায়ক হয়। এই-ই সব নয়, মেয়েরাযা করেছে তার গুণগান করল, তাঁদের সম্মান দিল। আমি এর মধ্যে এক সুন্দর পরিবর্তনদেখছি, আর আমি এই মেয়েদের বলেছি যে আপনারা দেখুন, এই সৌভাগ্য কেবল আপনাদেরই হয়েছে। আপনারা যে সফল হননি এটা মন থেকে দূর করে দিন। আসুন, আমরা একসঙ্গে চলি, কিছু না কিছু করে চলি। দেশের ভাগ্য, দেশের ভবিষ্যৎ আরওভাল হতে থাকবে এই বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাই। আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তুসৌভাগ্যের বিষয় যে বর্ষা ঋতু সময় মত নিজের পদচিহ্ন অনুসরণ করে এগিয়ে আসছে। দেশেরবেশ কিছু অংশে বর্ষা শুরু হয়ে গেছে। বর্ষার পর ঠাণ্ডা হাওয়ায় বিগত দিনের গরম থেকেকিছুটা আরাম অনুভূত হচ্ছে। আমরা সবাই দেখেছি যে ব্যক্তিগত জীবনে বা সার্বজনিকজীবনে যতই উত্তেজনা বা উদ্বেগ থাকুক, বর্ষার আগমন কিন্তু আমাদের মানসিক স্থিতিবদলে দেয়। আজ দেশেরবিভিন্ন অংশে ভগবান জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা খুব উৎসাহ ও আনন্দের সঙ্গে পালিতহচ্ছে। আজকাল তো পৃথিবীর অন্যান্য কিছু জায়গাতেও ভগবান জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসবপালিত হয়। ভগবান জগন্নাথদেবের সঙ্গে দেশের গরীব মানুষরা বিশেষভাবে জড়িয়ে আছেন। ভগবান জগন্নাথ গরীব মানুষের দেবতা। খুব কম মানুষই জানেন যে ইংরেজি ভাষাতে একটি শব্দ আছে ‘ Juggernaut ’ যার মানে এমনএকটি সুন্দর রথ যার গতি থামানো যায় না। আভিধানিক অর্থে পাওয়া যায় যে জগন্নাথদেবেররথ থেকেই এই শব্দ এসেছে। এর থেকেই বোঝা যায় যে বিশ্বের মানুষ নিজের নিজের মতেকীভাবে জগন্নাথদেবের এই যাত্রার গুরুত্বকে স্বীকার করেছেন। ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে আমার পক্ষথেকে সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আসুন, আমরা সবাই মিলে এইপবিত্র উৎসব থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে খুশির ভাণ্ডারকে বিলিয়ে দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়েযাই। রমজানের এইপবিত্র মাসে উত্তরপ্রদেশের বিজনৌর-এর মুবারকপুর গ্রামের একটি খুব অনুপ্রেরণামূলকঘটনার কথা জানতে পারলাম। এই ছোট গ্রামে প্রায় সাড়ে তিনি হাজার মুসলমান ভাই-বোন বাসকরেন। বলতে গেলে এখানকার বেশির ভাগ অধিবাসী মুসলিম পরিবারভুক্ত। এই রমজান মাসেগ্রামের সবাই মিলে শৌচালয় বানানোর সিদ্ধান্ত করেন। ব্যক্তিগত শৌচালয় বানানোর জন্যসরকার থেকে যে সহায়তা দেওয়া হয় সেই সহায়তাস্বরূপ ১৭ লক্ষ টাকা তাঁদের দেওয়া হয়েছে। এই ১৭ লক্ষ টাকাগ্রামের অন্যান্য পরিষেবার জন্য খরচ করা হোক। সামাজিক উন্নয়নের সুযোগে এই পরিবর্তনআনার জন্য আমি রমজান মাসের এই পবিত্র সময়ে মুবারকপুরের সব গ্রামবাসীকে ধন্যবাদজানাচ্ছি। আমরা জানি যেআমাদের দেশের তিনটি রাজ্য – সিকিম, হিমাচল প্রদেশ এবং কেরল ইতিমধ্যে ‘উন্মুক্তস্থানে শৌচকার্য’-মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য এই পাঁচরাজ্যের প্রশাসন এবং জনতাকে বিশেষভাবে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা খুব ভালোভাবেই জানি যে ব্যক্তিগত জীবনে বা সামাজিক জীবনে কোনও ভালো কাজ করার জন্য অনেকপরিশ্রম করতে হয়। আমার হাতের লেখা যদি খারাপ হয় তাহলে সেটাকে ঠিক করার জন্য অনেকদিন যাবৎ সচেতন ভাবে প্রয়াস করতে হয়। এই ভাবে শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার পরিবর্তনআসে। কিছু খারাপ অভ্যাস আমাদের স্বভাবজাত হয়ে গেছে। প্রত্যেকের মনযোগ আকর্ষণ করতে হবে। প্রেরণাদায়ক ঘটনাগুলিকেও বার বার স্মরণ করতেহবে। আমি খুশি যে পরিচ্ছন্নতা এখন আর কেবলমাত্র সরকারী কার্যক্রম নয়। এটি সমাজে সাধারণজনগণের আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা যখন জনসাধারণের অংশগ্রহণের সঙ্গে এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যান তখন স্বাভাবিক ভাবেই শক্তি অনেক বেড়ে যায়। বিগত দিনেরএকটি ভালো ঘটনা আমার মনে পড়ছে যেটা আমি আপনাদের বলতে চাই। এই ঘটনাটিঅন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়নগরম জেলার। তাঁদের লক্ষ্য ছিল ১০০ ঘণ্টায় ৭১ টি গ্রাম পঞ্চায়েতেদশ হাজার পারিবারিক শৌচালয় বানানো। আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা শুনে খুশি হবেন যেজনতা এবং স্থানীয় প্রশাসন একত্রে ১০০ ঘণ্টায় দশ হাজার শৌচালয় বানানোর কাজ সাফল্যেরসঙ্গে সম্পন্ন করেছে। ১৯৭৫ সালের ২৫-শে জুন এমনই একটা কালো দিন যেটাগণতন্ত্রপ্রেমী কোনও ভারতবাসী ভুলতে পারেন না। সমগ্র দেশকেই একপ্রকার জেলখানাতেপরিণত করা হয়েছিল। জয়প্রকাশ নারায়ণ-সহ দেশের গণ্যমান্য নেতাদের কয়েদ করা হয়েছিল। সংবাদপত্রকে পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় করে দেওয়াহয়েছিল। এই ঐতিহ্যকে আরওশক্তিশালী করতে হবে আমাদের। আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, প্রত্যেকভারতবাসী আজ বিশ্বে মাথা উঁচু করে নিজেকে গর্বিত অনুভব করছে। সমুদ্র থেকে পর্বত পর্যন্ত মানুষজন সকাল-সকাল যোগের মাধ্যমেসূর্যের কিরণকে স্বাগত জানাল। কোনও ভারতবাসী আছেন যার গর্ব হবে না এতে? এমন নয় যেযোগাভ্যাস হত না আগে, কিন্তু আজ যখন যোগের সূত্রে বাঁধা পড়েছে, তখন যোগই বিশ্বকেজোড়ার কারণ হয়ে উঠেছে। দুনিয়ার প্রায় সব দেশ এই যোগাভ্যাসের উপলক্ষকে নিজেদেরউপলক্ষ করে নিয়েছে। একদিকে যেখানে চীনে ‘দ্য গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’র উপরে মানুষযোগাভ্যাস করেছে সেখানে অন্যদিকে সমুদ্রতল থেকে দু হাজার চারশো মিটার উপরে পেরুর ‘ওয়ার্ল্ডহেরিটেজ সাইট’ মাচ্চুপিছুতে যোগাভ্যাস করেছে মানুষ। ফ্রান্সে আইফেল টাওয়ারের ছায়ায়যোগ করেছে মানুষ। সিঙ্গাপুরের মত ছোটদেশে সত্তরটা জায়গায় অনুষ্ঠান হয়েছে আর গোটা সপ্তাহ জুড়ে ওঁরা এক অভিযানচালিয়েছেন। রাষ্ট্রসঙ্ঘ আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে দশটা ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের কর্মচারীরা, সারা দুনিয়ারডিপ্লোম্যাটরা – প্রত্যেকে এতে অংশ নেয়। এবার ফের একবার, যোগ বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টিরকাজও করেছে। গুজরাতের আমেদাবাদে প্রায় পঞ্চান্ন হাজার মানুষ একসঙ্গে যোগ করে একনতুন বিশ্বরেকর্ড তৈরি করেছেন। আমারও লক্ষ্ণৌয়ে যোগের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগহল। কিন্তু প্রথমবার বৃষ্টিতে যোগ করার সৌভাগ্য হল আমার। আমাদের সৈনিকরা যেখানেমাইনাস কুড়ি, পঁচিশ, চল্লিশ ডিগ্রী তাপমাত্রায় থাকে সেই সিয়াচিনেও যোগাভ্যাস করাহয়েছে। এইযোগ দিবসে আমি বলেছিলাম যে তিন প্রজন্ম, যেহেতু এটা তৃতীয় ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ছিল, তাই আমি বলেছিলাম যে পরিবারের তিন প্রজন্ম এক সঙ্গে যোগ করে তার ফোটো শেয়ারকরুন। কিছু টিভি চ্যানেল এই ব্যাপারটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। কারণ যখন আমি গুজরাতে ছিলাম, আমি সরকারে এক রীতি বানিয়েছিলাম যে আমরা তোড়া দেব না,বই দেব আর নয়ত রুমাল দিয়ে স্বাগত জানাব। সে রুমাল হবে খাদির যাতে খাদির শ্রীবৃদ্ধিঘটে। যতদিন পর্যন্ত আমি গুজরাতে ছিলাম তখন এটাই সবার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল, কিন্তুএখানে আসার পর আমার সেই অভ্যাস চলে যায়। আর আমি তো আবার এখন সরকারে নোটিশ দেওয়া শুরু করেছি এ ব্যাপারে। আমরাও ধীরেধীরে এক স্বভাব তৈরি করতে পারি। ফুলের তোড়ার আয়ু খুব কম হয়। এক বার হাত থেকে নিয়েইফেলে দিতে হয়। কিন্তু যদি বই দিই তবে সেটা বাড়ির অংশ হয়ে ওঠে, পরিবারের সদস্য হয়েওঠে। গিয়েছিলাম তখন লণ্ডনে, ব্রিটেনের রানি, ক্যুইন এলিজাবেথ আমাকে আহারেআমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কত বছর হয়ে গিয়েছে অথচ ক্যুইন এলিজাবেথ মহাত্মা গান্ধীর দেওয়া রুমাল যত্ন করেরেখেছেন। মহাত্মা গান্ধীর একটাছোট্ট উপহার ওঁর জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছে, ওঁর ইতিহাসের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। আমারবিশ্বাস যে এইসব অভ্যাস রাতারাতি বদলে যায় না আর কখনও কখনও এমন কথা বললে সমালোচনারশিকারও হতে হয়। কিন্তু এ সত্ত্বেও এমন কথা উচ্চারিত হওয়া উচিত, প্রয়াস চালিয়েযাওয়া উচিত। এখন আমি তো এটা বলতে পারি না যে আমি কোথাও গেলাম আর কেউ ফুলের তোড়ানিয়ে চলে এলেন, তখন আমি তাকে না বলে দেব, এটা আমি করতে পারব না। কিন্তু যাই হোক,সমালোচনাও হবে, কিন্তু কথা চালিয়ে যাওয়া উচিত, তাতে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসবে। আমার প্রিয় দেশবাসীগণ,প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সূত্রে অনেক রকমের কাজ থেকে যায়। ফাইলের মধ্যে ডুবে থাকতে হয়,কিন্তু আমি নিজের এক অভ্যাস গড়ে তুলেছি। যে সব চিঠি পাই আমি তার মধ্যে কিছু চিঠিরোজ পড়ি আর এইভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার এক সুযোগ পাই। বিভিন্ন রকমের মানুষ চিঠি লেখেন। এরমধ্যে এমন একটা চিঠি পড়ে মনে হল আপনাদের জানাই। ঐ চিঠিতে কী লিখছেন – বলছেন, আমিআমার সংসার সামলানো, বাচ্চাদের পড়াশোনা সামলাতে সামলাতে কিছু করার কথা ভাবলাম যাতেসংসারে আর্থিক কিছু সুরাহা হয়। সেই মত আমি ‘মুদ্রা যোজনা’য় ব্যাঙ্ক থেকে কিছু ঋণনিয়ে বাজার থেকে কিছু মালপত্র কিনে যোগান দেওয়ার কাজ শুরু করলাম। এরমাঝে আমিশুনলাম সরকার ‘ Government E-Marketplace ’ নামে কিছু একটা ব্যবস্থা চালু করেছে। হ্যাঁ এটাই হল Empowerment । এতে transparency আছে, empowerment হচ্ছে ,একই সঙ্গে Entrepreneurship -ও বাড়ছে। আমি চাইবো, যাঁরাই সরকারকেকিছু বিক্রি করতে চাইবেন তাঁদের সংখ্যা এভাবে যেন বাড়তেই থাকে। আমি বুঝতে পারছি Minimum Government and Maximum Governance -এর অতুলনীয় এক উদাহরণ এটা এবং এর লক্ষ্য MinimumPrice এবং Maximumease, efficiency and transparency । আমার প্রিয়দেশবাসী, একদিকে আমরা যেমন যোগ নিয়ে গর্ব করতে পারি, আবার Space Science -এও যে সাফল্য আসছেতা নিয়েও গর্ব করতে পারি। এটাই ভারতের বিশেষত্ব। যোগ আমাদের দেশের মাটিতে জুড়েরয়েছে আবার দূর দূর মহাকাশ অভিযানেও আমাদের দেশ রয়েছে। এর আগে খেলাধুলায়, বিজ্ঞানে ভারত বহু সাফল্য দেখিয়েছে। আজ ভারত শুধু ধরিত্রীতে নয়, অন্তরীক্ষেও নিজেদের সাফল্যের জোয়ার আনছে। এই তোদু’দিন আগেই ইসরো কার্টোস্যাট-২ সিরিজ স্যাটেলাইটের সঙ্গে ৩০-টি ন্যানোস্যাটেলাইট-ও উৎক্ষেপণ করেছে। এইসব স্যাটেলাইটের মধ্যে ভারত ছাড়াও ফ্রান্স,জার্মানি, ইটালি, জাপান, ব্রিটেন, আমেরিকা এমন প্রায় ১৪-টা দেশ সামিল হয়েছে। আরভারতের এই ন্যানো স্যাটেলাইটগুলো থেকে কৃষিক্ষেত্রে, কৃষকদের উপকারে প্রাকৃতিকদুর্যোগের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রেও প্রচুর উপকারী তথ্য পাওয়া যাবে। ১৯-শে জুন Mars Mission -এর এক হাজার দিনপূর্ণ হল। আপনাদের সবার মনে আছে, এই মার্স মিশনের জন্য আমরা সাফল্যের সঙ্গে orbit -এ স্থাপন করতেপেরেছিলাম এবং তার মেয়াদ ছয় মাসের জন্য ধার্য করা হয়েছিল। এই এক হাজার দিনপূর্ণ করা আমাদের বৈজ্ঞানিক যাত্রা আমাদের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে মহত্তম সাফল্যনির্দেশ করছে। এই তো সেদিন ইন্দোনেশিয়া ও স্পেনে ভারতেরব্যাডমিণ্টন খেলোয়াড় কিদাম্বী চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের সম্মান বাড়িয়েছে। আমি এই অবসরেকিদাম্বী শ্রীকান্ত ও তাঁর কোচকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। খেলাধুলা ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালনকরে। দেশেপ্রতিভার কোনও অভাব নেই। যদি পরিবারের ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলার দিকে ঝোঁক থাকে তাকেউৎসাহ দেওয়া উচিৎ। আবার একবার বলি,দেশবাসী, বর্ষাকাল, উৎসব পালনের আনন্দোৎসব একরকমভাবে এই সময়কে বিশিষ্টতা দেয়। আজ আমি যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি , তখন পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়ে গেছে। পবিত্র রমজান মাসে আমি বিশ্বের সমস্ত মানুষদের , বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের এই পবিত্র মাসে আন্তরিক শুভকামনা জানাচ্ছি। এ এক এমন দেশ যে ঈশ্বরবিশ্বাসী বা নাস্তিক – যাঁরা মূর্তিপূজা করেন অথবা যাঁরা মূর্তিপূজার বিরোধী , সব রকমের চিন্তাধারা , সব রকমের পূজা পদ্ধতির , সব রকমের পরম্পরার মানুষ এক সঙ্গে জীবনধারণ করার কৌশল আয়ত্ত করেছেন। আর ধর্মই হোক , সম্প্রদায় , চিন্তাধারা বা পরম্পরা – যাই হোক না কেন , আমাদের একটিই বার্তা দেয় – শান্তি , একতা আর সদ্ ‌ ভাবনা। এই পবিত্র রমজান মাস শান্তি , একতা আর সদ্ ‌ ভাবনার এই ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে। আমি আবার একবার শুভকামনা জানাচ্ছি। আমার আনন্দ হচ্ছে যে বহু মানুষ আমাকে feedback দিয়েছেন। এত বার্তা আসে যে আমি সবগুলিই তো পড়ে উঠতে পারি না , সবার পাঠানো বার্তা শুনতেও পারি না। যখন আমি স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে পড়তে শুরু করলাম , তখন বুঝতে পারলাম যে ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য কত সংগ্রাম করতে হয়েছে , কত জীবনদান করতে হয়েছে , কত স্বাধীনতা সংগ্রামীরা জেলে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর। আমার ভালো লাগছে যে আজকের যুবক - যুবতীরা আমাদের ইতিহাস , আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামী – যাঁরা আমাদের দেশের জন্য জীবন বলিদান দিয়েছেন , তাঁদের বিষয়ে জানার ইচ্ছে প্রকাশ করছে। বহু বছর আগে আমি আন্দামান - নিকোবর গিয়েছিলাম। সেলুলার জেল দেখতে গিয়েছিলাম। বীর সাভারকর জেলে বসে ‘ মাঁজী জন্মঠে ’ বইটি লিখেছিলেন। জেলের দেওয়ালে কবিতা লিখতেন। একটা ছোট ঘরে তাঁকে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। স্বাধীনতার জন্য কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল। যখন আমি সাভারকরজীর ‘ মাঁজী জন্মঠে ’ বইটি পড়ি তা থেকেই আমি সেলুলার জেল দেখার প্রেরণা পাই। সেখানে এক Light and Sound Show চলে যা খুবই প্রেরণাদায়ক। হিন্দুস্থানের এমন কোনো রাজ্য নেই , এমন কোনো ভাষাভাষী মানুষ নেই যাঁরা স্বাধীনতার জন্য কালাপানির সাজা ভোগ করেননি , আন্দামানের জেলে – এই সেলুলার জেলে নিজের জীবন খোয়াননি। আমার প্রিয় দেশবাসী , ৫ - ই জুন মাসের প্রথম সোমবার। আর একথা মহাত্মা গান্ধীর থেকে ভালভাবে আর কেই বা বলেছেন। মহাত্মা গান্ধী বহুবার বলেছেন – “ One must care about aWorld one will not see ”, অর্থাৎ আমরা যে জগৎ দেখিনি , আমাদের কর্তব্য হল সে সম্পর্কে ভাবনা - চিন্তা করা , তার প্রতি যত্নবান হওয়া। খুব ক্লান্ত হয়ে আসার পর ঘরের জানলা - দরজা খুলে দিয়ে তাজা বাতাসে শ্বাস নিলে নতুন প্রাণ আসে। যে পঞ্চভূতে আমাদের শরীর তৈরি , সেই পঞ্চভূতের সঙ্গে যখন যোগাযোগ ঘটে , তখন আপনা থেকেই আমাদের শরীরে এক নতুন প্রাণ , নতুন উদ্যমের সঞ্চার হয়। এটা আমরা সবাই দেখেছি , কিন্তু এটা নিয়ে সেভাবে ভাবিনি। আমরা এটাকে এক সূত্রে এক রশিতে বাঁধতে পারিনি। আমাদের পূর্বপুরুষরা পরিবেশ রক্ষার জন্য যে কাজ করেছেন তার কিছু ফল আমরা পাচ্ছি। আমরা যদি পরিবেশ রক্ষা করি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তার ফল পাবে। বেদ - এ পৃথিবী আর পরিবেশকে শক্তির মূল বলে মান্য করা হয়। বেদ - এ বলা হয়েছে আমাদের মধ্যে যে পবিত্রতা আছে তা আমাদের পৃথিবীর জন্য। ধরিত্রী আমাদের মা আর আমরা তাঁর সন্তান। যদি আমরা ভগবান বুদ্ধের কথা মনে করি তো একটা কথা অবশ্যই বেরিয়ে আসে যে মহাত্মা বুদ্ধের জন্ম , তাঁর জ্ঞান প্রাপ্তি এবং তাঁর মহাপরিনির্বাণ – তিনটিই হয়েছিল বৃক্ষতলে। এ সময়ে বিভিন্ন রাজ্য থেকে খবর আসে আমার কাছে। বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সমস্ত রাজ্যে গাছ লাগানোর বড় অভিযান শুরু হয়ে যায়। কোটি কোটি গাছ লাগানো হয়। ‘ বিশ্ব যোগ দিবস ’ হিসেবে সমগ্র বিশ্ব এই দিনটি পালন করে । খুব অল্প সময়ের মধ্যে ২১ জুনের এই ‘ বিশ্ব যোগ দিবস ’ সমস্ত জায়গায় বিস্তার লাভ করেছে , লোকদের সামিল করছে। একদিকে পৃথিবীতে বিভেদ সৃষ্টিকারী অনেক শক্তি তার বিকৃত রূপ দেখাচ্ছে , এই সময়ে ‘ বিশ্ব যোগ দিবস ’ ভারতের এক বড় অবদান। যোগের মাধ্যমে আমরা সমগ্র বিশ্বকে এক সূত্রে বেঁধে ফেলেছি। যোগ যেভাবে শরীর , মন , বুদ্ধি এবং আত্মাকে এক সঙ্গে বাঁধে ঠিক সেইভাবে আজ যোগ বিশ্বকেও একসঙ্গে বাঁধছে। উল্টোপাল্টা ওষুধ খাওয়া এবং দিন কাটিয়ে দেওয়া – এই পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন পাওয়ার জন্য যোগব্যায়ামের বড় ভূমিকা রয়েছে। যোগ কেবলমাত্র এক ব্যায়াম নয় , সুস্থতা পরিস্ফুট হয় শরীর , মন , বিচারের মেলবন্ধনে আর এই মেলবন্ধন অনুভব করা সম্ভব একমাত্র যোগব্যায়ামের দ্বারা। দু ’ দিন আগে আমি যোগ দিবস নিয়ে বিশ্বের সমস্ত দেশের সরকারকে , সব নেতাদের চিঠি লিখেছি। গত বছর আমি যোগ সম্পর্কিত কিছু প্রতিযোগিতার ঘোষণা করেছিলাম। কিছু পুরস্কারের ঘোষণা করেছিলাম। তিনি বলেছেন – এটি তৃতীয় আন্তর্জাতিক যোগ দিবস , আমাকে বলছেন , আমি যেন অনুরোধ করি যে এই তৃতীয় আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে একই পরিবারের তিন প্রজন্ম এক সঙ্গে যেন যোগ ব্যায়াম করে। দাদু - ঠাকুমা হোক বা দাদু - দিদিমা , মা - বাবা , ছেলে - মেয়ে তিন প্রজন্ম এক সঙ্গে যোগ ব্যায়াম করুক , আর এর ছবি আপলোড করুন। গতকাল , আজ আর আগামী কাল - এর এক সৌভাগ্যমূলক মেলবন্ধন যোগকে এক নতুন দিশা দেখাবে । আপনি নিশ্চয়ই ‘ নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ ’ - এর মাধ্যমে ‘ মাই গভ ’ - এ যেখানে যেখানে তিন প্রজন্মের লোকেরা একসঙ্গে যোগব্যায়াম করছে , এই তিন প্রজন্মের লোক এক সঙ্গে আমাকে ছবি পাঠাবেন । এটা কাল , আজ আর আগামীকালের ছবি হবে। যেটা এক সুন্দর কালের গ্যারাণ্টি হবে। আমি আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এখনও আন্তর্জাতিক যোগদিবসের প্রায় তিন সপ্তাহ বাকী। আপনিও তিন সপ্তাহ অবিরাম যোগ বিষয়ে প্রচার করুন , প্রসার করুন , লোকেদের সামিল করুন। এটা একরকমের Preventive Health Care – এর আন্দোলন। আমি আপনাদের সবাইকে এতে অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। মোদিজী , টিভিতে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে আমি আজকাল প্রায় দেখছি আপনি যেখানেই যাচ্ছেন , সেখানকার লোকেরা সবাই পরিস্কার - পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ নজর দিচ্ছে। মুম্বই হোক বা সুরাত , আপনার আহ্বানে লোকেরা সামগ্রিকভাবে স্বচ্ছতাকে মিশন হিসাবে মেনে নিয়েছেন। বড়দের সঙ্গে ছোটরাও স্বচ্ছতাকে নিয়ে সচেতন হয়েছে। অনেকবার ছোটোরা বড়দের জঞ্জাল ফেলতে দেখে তাদের বারণ করেছে । আপনি ঠিক বলেছেন , আমি যেখানে যেখানে যাচ্ছি , সেখানে সরকারীভাবে সাফাইয়ের কাজ তো হয় , কিন্তু আজকাল সমাজেও পরিচ্ছন্নতার এক উৎসব শুরু হয়ে যায়। কিন্তু যখন এই ফোন কলটা এল , আমিও চিন্তা করলাম এবং দেখলাম যে হ্যাঁ , একথাটা ঠিক। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্য বাকি প্রস্তুতি তো থাকবেই কিন্তু সবথেকে আগে থাকবে স্বচ্ছতা। এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বচ্ছতাপ্রেমী যেকোন লোককে আনন্দ দেবে। আমি এই স্বচ্ছতার প্রতি জোর দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই। কেউ একজন আমাকে একটা প্রস্তাব দিয়েছেন। এমনিতে এটা এক মজাদার প্রস্তাব। আমি জানি না , এটা করতে পারব কি না। dea তো খুব ভাল , কিন্তু আমাকে ভাবতে হবে । কত বড় মানবতার কাজ হবে। একবার এটাকে যদি ‘ wealth ’ হিসেবে মানতে পারি , তাহলে Waste Management – এর নতুন নতুন উপায় আমাদের সামনে আসবে। রান্নাঘরের আবর্জনা , যেমন শাক - সব্জির খোসা , উচ্ছিষ্ট , ডিমের খোলা , গাছপালার পাতা – এসবই ভেজা আবর্জনা – সবুজ Dustbin– এ ফেলুন। এই সমস্ত জিনিসগুলি এমনই যা কৃষিকাজে লাগে , যদি খেতের রঙ সবুজ – এই বিষয়টি মনে রাখেন , তাহলে সবুজ Dustbin– এ কী কী ফেলতে হবে , তা মনে থাকবে। আজ আমি গর্বের সঙ্গে একটা কথা উল্লেখ করতে চাই যে একজন ব্যক্তিও যদি মনস্থির করে নেয় , তাহলে কত বড় একটা জন আন্দোলন সৃষ্টি করতে পারে। পরিচ্ছন্নতার কাজ এই রকমই একটি বিষয়। আমি জানতে পারলাম যে এই কাজে সব থেকে বেশি নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় মহিলারা। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য তাঁরা মশাল নিয়ে মিছিল করেছেন। প্রতি গলিতে , প্রতি ঘরে ঘরে গিয়ে তাঁরা প্রত্যেককে এই কাজে প্রেরণা জুগিয়েছেন। আমার প্রিয় দেশবাসী , বর্তমান সরকারের গত তিন বছরের কাজ - কর্ম নিয়ে গত ১৫ দিন যাবৎ পত্র পত্রিকায় , বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে , সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্রমাগত আলোচনা হচ্ছে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সেটিকে বিশ্লেষণ করেছেন। গণতন্ত্রের জন্য এটি একটি ভালো পরম্পরা। এক সজাগ রাষ্ট্রের জন্য , এক সচেতন রাষ্ট্রের জন্য এই সমালোচনা খুব জরুরী। আমার প্রিয় দেশবাসী , আমি ও আপনাদের মত একজন সামান্য নাগরিক সেই কারণে একজন সামান্য নাগরিকের মনে ভালো - মন্দ বিষয়ে যেরকম প্রভাব পড়ে , আমার মনেও সেই রকমই প্রভাব পড়ে । শত শত পরিবার আছে যারা এই বিষয়টি আমাকে লিখে জানিয়েছেন। আমি আকবর সাহেবের কাছে কৃতজ্ঞ। আসুন , আমরা সবাই এই পরিবেশে প্রকৃতিকে ভালোবেসে এগিয়ে যাই। আপনাদের সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি। মন কি বাত, এপ্রিল 2017 এস. দক্ষতার উন্নতির দিকে একটু জোর দেওয়া যেতে পারে। দেশের প্রতিটি কোণে অধিকাংশ পরিবার নিজেদের সন্তানদের পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। যাদের পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে সেখানে কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ রয়েছে আর যেখানে পরীক্ষা চলছে , সেই সব পরিবার এখনও কিছুটা চাপে আছেন। কিন্তু এমন একটা সময় আমি এটাই বলব যে গত বার আমি ‘ মন কী বাত ’ এ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে যে কথাগুলো বলেছিলাম , ওগুলো আবার শুনে নিন। আজ ২৬শে মার্চ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক লড়াই , বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনতার অভূতপূর্ব বিজয়। আমরা সবাই এ ব্যাপারে গর্বিত যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , তাঁর স্মৃতি , আমাদের দু ’ দেশেরই ঐতিহ্য। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্কে একটা খুব আকর্ষণীয় তথ্য এই যে , ১৯১৩ সালে উনি শুধু নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত এশিয়ার প্রথম ব্যক্তিই ছিলেন না , ইংরেজরা ওঁকে নাইটহুড উপাধিও দিয়েছিল। আর যখন ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালা বাগে ইংরেজরা গণহত্যা চালাল , তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সেই সব মহাপুরুষদের মধ্যে যাঁরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন আর এই সেই সময় যখন বারো বছরের এক শিশুর মনে এই ঘটনার গভীর প্রভাব পড়েছিল। মাঠে – ময়দানে হেসেখেলে বেড়ানো ওই বালকের জীবনে এক নতুন অভিমুখ এনে দিল জালিয়ান ওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকান্ড। আর ১৯১৯ সালে ১২ বছরের ওই বালক ভগৎ আমাদের সবার প্রিয় , আমাদের সবার প্রেরণা – শহীদ ভগৎ সিং। আজ থেকে তিন দিন আগে , ২৩শে মার্চ ভগৎ সিংকে আর ওনার সঙ্গী – সুখদেব আর রাজগুরুকে ইংরেজরা ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল আর আমরা সবাই জানি ২৩শে মার্চের সেই ঘটনা – ভগৎ সিং , সুখদেব , রাজগুরুর মুখে ভারত মায়ের সেবায় লাগার তৃপ্তি – কোনো মৃত্যুভয় ছিল না। জীবনের সব স্বপ্ন ভারত মায়ের মুক্তির জন্য বলি দিয়েছিলেন তাঁরা। আর ওই তিন বীর আজও আমাদের প্রেরণা। ভগৎ সিং , সুখদেব আর রাজগুরুর বলিদানের কাহিনি আমরা শব্দে বর্ণনা করতে পারব না। গোটা ব্রিটিশ প্রশাসন এই তিন যুবককে ভয় পেত। জেলে তাঁরা বন্দী , ঠিক হয়ে গিয়েছে ফাঁসির দিন , কিন্তু তাও তাঁদের নিয়ে কী করা যায় এই চিন্তা উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল ব্রিটিশদের। আর তাই তো ২৪শে মার্চ যেখানে ফাঁসী দেওয়ার কথা সেখানে ফাঁসি হয়ে গেল ২৩ তারিখ। লুকিয়েচুরিয়ে করা হল এটা যা সাধারণভাবে দেখা যায় না। আর এর পরে ওঁদের মৃতদেহ আজকের পাঞ্জাবে এনে ইংরেজরা চুপচাপ পুড়িয়ে দিয়েছিল। অনেক বছর আগে যখন প্রথমবার আমি সেখানে যাওয়ার সুযোগ পেলাম তখন ওই ভূমির কম্পন যেন অনুভব করতে পেরেছিলাম। আর আমি দেশের তরুণদের অবশ্যই বলব , যখনই পাঞ্জাবে যাওয়ার সুযোগ পাবে , ভগৎ সিং , সুখদেব , রাজগুরু , ভগৎ সিংয়ের জননী এবং বটুকেশ্বর দত্তের সমাধিতে অবশ্যই যেও। এই সময়েই স্বাধীনতার হাতছানি , তার তীব্রতা , তার উন্মাদনা বেড়ে চলল। এক দিকে ভগৎ সিং , সুখদেব , রাজগুরুর মত বীরেরা সশস্ত্র বিপ্লবের প্রেরণা দিয়েছিলেন যুবকদের। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধী ভাবধারা আর গান্ধী শৈলী , এর প্রকট রূপ প্রথমবার দেখা গেল চম্পারণে। স্বাধীনতার গোটা আন্দোলনে এ ছিল এক পট পরিবর্তন , বিশেষ করে সঙ্ঘর্ষের রীতি – পদ্ধতির দৃষ্টিকোণ থেকে। এই সেই পর্ব , চম্পারণের সত্যাগ্রহ , খেড়া সত্যাগ্রহ , আহমেদাবাদে কারখানার শ্রমিকদের হরতাল – আর এই সব কিছুর মধ্যে মহাত্মা গান্ধীর ভাবধারা আর কাজের শৈলীর গভীর প্রভাব দেখা যাচ্ছিল। ১৯১৫ সালে গান্ধীজী বিদেশ থেকে ফিরে এলেন আর ১৯১৭ সালে বিহারের এক ছোটো গ্রামে গিয়ে উনি দেশকে নতুন প্রেরণা দিলেন। আজ আমাদের মনে মহাত্মা গান্ধীর যে ছবি রয়েছে , সেই ছবির ভিত্তিতে আমরা চম্পারণ সত্যাগ্রহের মূল্যায়ন করতে পারব না। কল্পনা করুন এক জন মানুষের কথা , যিনি ১৯১৫ সালে হিন্দুস্থানে ফিরে এলেন , কাজ করলেন মাত্র দুটো বছর। আর চম্পারণ সত্যাগ্রহ এমনই ছিল যেখানে মহাত্মা গান্ধীর সাংগঠনিক কৌশল , মহাত্মা গান্ধীর ভারতীয় সমাজের নাড়ি – নক্ষত্র জানার শক্তি , মহাত্মা গান্ধীর নিজের আচরণের মাধ্যমে ইংরেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে হতদরিদ্র , একান্তই অক্ষরজ্ঞানশূন্য ব্যক্তিকে লড়াইয়ের জন্য তৈরি করা , অনুপ্রাণিত করা , লড়াইয়ের ময়দানে নিয়ে আসা – এক অদ্ভূত শক্তির প্রদর্শন ঘটেছিল। তাই আমরা মহাত্মা গান্ধীর বিশালত্বকে অনুভব করতে পারি। কিন্তু যদি একশো বছর আগের গান্ধীর কথা ভাবেন , ওই চম্পারণ সত্যাগ্রহের গান্ধীর কথা , তাহলে জনজীবনের অঙ্গণে সদ্য প্রবেশ করা যে কোনো ব্যক্তির জন্য চম্পারণ সত্যাগ্রহ এক গভীর অধ্যয়নের বিষয়। জনজীবনে অংশগ্রহণের কাজটা শুরু করা যায় কীভাবে , নিজেকে কতটা পরিশ্রম করতে হয় আর গান্ধী কীভাবে সেটা করেছিলেন , এটা আমরা ওঁর থেকে শিখতে পারি। আর সে ছিল একটা সময় , যখন তাবড় তাবড় নেতারা , যাঁদের নাম শুনি আমরা , সে রাজেন্দ্রবাবু হোন , আচার্য কৃপালনী হোন – সবাইকে গ্রামে পাঠিয়েছিলেন গান্ধী। এক দিকে জেল ভরে দেওয়া তো অন্যদিকে গঠনমূলক কাজে নিজেকে সঁপে দেওয়া । এক বড় অদ্ভূত ভারসাম্য ছিল গান্ধীর কার্যশৈলীর মধ্যে। সত্যাগ্রহের অর্থ কী হতে পারে , অসহমত কী হতে পারে , এত বড় একটা সাম্রাজ্যের সামনে অসহযোগের অর্থ কী হতে পারে – শুধু শব্দ দিয়েই নয় , সফল উপস্থাপনের মাধ্যমে এক সম্পূর্ণ নতুন বিচারধারা উপস্থাপন করেছিলেন গান্ধী। আর এই একবিংশ শতাব্দীতে এমন কোন ভারতীয় আছেন – যিনি পরিবর্তন চান না , যিনি দেশের প্রগতিতে অংশীদার হতে চান না। এমন অনেক মানুষ আছেন , যাঁরা নিয়মিত হাসপাতালে যান রুগীদের সেবা করতে। যদি আমরা এই চিন্তাভাবনাকে একসঙ্গে সংগঠিতরূপে দেখি , তাহলে বোঝা যাবে , এটা কত বড় শক্তি। ndia – র প্রসঙ্গে আলোচনা হলে , ভিন্ন মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গিও যে উঠে আসবে তা খুবই স্বাভাবিক ও অনিবার্য। কিন্তু এটাও সত্যি যে সমগ্র দেশবাসী যদি সংকল্প করে এবং তাকে বাস্তবায়িত করার পথে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে থাকে , তাহলে নতুন ভারতের স্বপ্ন সফল হতে পারে। জরুরি নয় যে এসমস্ত কাজ বাজেট বা সরকারী খরচায় হতে হবে। যদি প্রত্যেক নাগরিক সংকল্প করেন তাঁরা ট্র্যাফিক নিয়ম মেনে চলবেন , নিজকর্তব্য নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন , সপ্তাহে অন্তত একদিন পেট্রোল – ডিজেল – এর ব্যবহার বন্ধ রাখবেন , তাহলে আমরা এই ছোটো ছোটো পদক্ষেপের মাধ্যমে New I ndia – র স্বপ্নকে সাকার হতে দেখবো। এটুকুই বলব যে , প্রত্যেকে নিজেদের নাগরিকধর্ম পালন করুন , কর্তব্য পালন করুন। এইভাবেই ‘ নতুন ভারত ’ গঠনের সূচনা হতে পারে। আমার প্রিয় দেশবাসী , কালো টাকা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না , এইভাবে আপনি দেশসেবার এক বড় অংশীদার হতে পারেন। কালো টাকা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজেকে এক বীর সৈনিক প্রতিপন্ন করতে পারেন। কিছুদিন আগে লোকশিক্ষা ও সচেতনতার জন্য ‘ ডিজিধন মেলা ’ র আয়োজন করা হয়েছিল। নগদ লেনদেন এবং নোটের ব্যবহার কমানোর এই প্রচেষ্টায় আসুন আমরা যোগদান করি। আমার প্রিয় দেশবাসী , আমি খুশি যে যখনই ‘ মন কি বাত ’ – এর জন্য আপনাদের পরামর্শ চাই , তখন অনেক মতামত আসে। কিন্তু আমি লক্ষ করেছি যে , স্বচ্ছতা বিষয়ে আগ্রহের অভাব নেই। আমার মনে হয় স্বচ্ছতা কতটা জরুরি সেটা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। আমি প্রতিদিন একটি নদীর পাশ দিয়ে যাই , যেখানে লোকজন অনেক আবর্জনা ফেলে নদীটিকে দূষিত করে। এই নদীটি রিস্পনা পুল দিয়ে আসছে এবং আমাদের বাড়ি পাশ দিয়ে বয়ে গেছে । এই নদীকে স্বচ্ছ রাখার জন্য আমি পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি , মিছিল করেছি , কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি। ভাই – বোনেরা , আপনারা দেখুন – একাদশ শ্রেণির একটি মেয়ে কতটা কষ্ট পাচ্ছে। নদীতে ফেলা ময়লা আবর্জনা দেখে সে কতটা ক্রুদ্ধ ! এটাকে আমি একটা ভালো সংকেত মনে করি। আমি তো এটাই চাই যে ১২৫ কোটি দেশবাসীর মনে আবর্জনার প্রতি ক্রোধ সৃষ্টি হোক। একবার ক্রোধ সৃষ্টি হলে , অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হলে , ক্ষোভ তৈরি হলে আমরা আবর্জনার বিরুদ্ধে অভিযানে কিছু নিশ্চয় করতে পারবো। এটা ভালো ব্যাপার যে গায়ত্রী নিজে ক্রোধ প্রকাশ করেছে , আমাকে পরামর্শ দিয়েছে এবং একই সঙ্গে একথাও বলেছে যে সে অনেক চেষ্টা করেছে , কিন্তু বিফল হয়েছে। এটা একটা আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। আবর্জনার প্রতি ঘৃণা ধীরে ধীরে বাড়ছে। মানুষ সচেতন হোক , সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করুক , আন্দোলন হোক – এর তো একটা নিজস্ব গুরুত্ব আছেই। কাজ কঠিন , কিন্তু এটা আমাদের করতেই হবে। আমার বিশ্বাস যে দেশের নবীনদের মধ্যে , ছেলেদের মধ্যে , শিক্ষার্থীদের মধ্যে , যুবকদের মধ্যে যে সচেতনতা এসেছে , সেটা সামগ্রিকভাবে একটা ভালো পরিনামের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আজকে আমার ‘ মন কি বাত ’ – এ যাঁরা গায়ত্রীর কথা শুনছেন , আমি সেই সব দেশবাসীকে বলতে চাইবো যে গায়ত্রীর বক্তব্য যেন আমাদের সকলের বক্তব্য হয়। যতটা থালায় নিই অর্ধেকও পেটে যায় না , আর সেটা সেখানে ফেলে দিয়েই বেরিয়ে পড়ি। কখনও ভেবে দেখেছেন আমরা যে অভুক্ত খাবার ফেলে দিই , তাতে আমরা কতটা অপচয় করি। এটা কী কখনও ভেবে দেখেছেন যদি অপচয় না করেন , তাহলে এই খাবার কত গরীব মানুষের পেট ভরাতে পারে। এই বিষয়ে আলাদা করে বোঝানোর কিছু নেই। সাধারণত আমাদের বাড়িতে মা যখন ছোটো বাচ্চাদের খাবার পরিবেশন করেন , তখন বলেন যতটা খেতে পারবে , ততটাই নাও। গরীবদের প্রতি এটা অন্যায়। সমাজের জন্য ভাবনা ভালো , কিন্তু এই বিষয়টি এমন যে এতে পরিবারও সুফল পাবে । আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না কিন্তু আমি চাই যে সচেতনতা বাড়ুক। দেশের সব রাজ্যেই কোথাও না কোথাও এই ধরনের মানুষ পাওয়া যাবে। ওঁদের কাজ আমাদের প্রেরণা জোগাতে পারে , যাতে আমরা খাবার অপচয় না করি। আমরা ততটাই নেব , যতটা খাব। পরিবর্তনের জন্য এটাই তো পথ। এবং যাঁরা স্বাস্থ্যসচেতন , তাঁরা তো সবসময়েই বলে থাকেন – প্লেটও একটু খালি রাখুন , পেটও একটু খালি রাখুন । স্বাস্থ্যর কথাই যখন এল , তখন বলি , ৭ এপ্রিল ‘ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ’ । রাষ্ট্র সঙ্ঘ ২০৩০ পর্যন্ত ‘ Universal HealthCoverage ’ অর্থাৎ ‘ সকলের জন্য স্বাস্থ্য ’ লক্ষ্য স্থির করেছেন। একটি হিসেব অনুসারে বিশ্বে প্রায় পঁয়ত্রিশ কোটির বেশি মানুষ মানসিক অবসাদের শিকার। সমস্যা হল আমাদের আশেপাশের অনেকেই এই রোগের শিকার , কিন্তু আমরা সেটা বুঝতে পারি না। আর হয়ত মন খুলে এবিষয়ে কথা বলতেও সংকোচ বোধ করি। আমার দেশবাসীকে বলতে চাই , depression এমন নয় যে তার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। প্রথম কথা depression – কে suppress না করে তাকে express করা দরকার। নিজের বন্ধুদের সঙ্গে বাবা – মা ’ র সঙ্গে , ভাই – বোনদের সঙ্গে , শিক্ষকের কাছে মন খুলে বলুন – আপনার ভেতরে কী হচ্ছে। আপনি কি কখনো ভেবেছেন ঐ মানুষটি কেন এমন করছে ? আপনি নিশ্চিত থাকুন , এগুলিই depression – এর প্রথম লক্ষণ। কেউ সবার মাঝখান থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে একা থাকতে চাইলে খেয়াল রাখুন – তাকে একা হতে দেবেন না। যার বা যাদের সঙ্গে সে থাকতে পছন্দ করে তাদের সঙ্গে থাকতে দিন। হই – হুল্লোড় মজার কথার মধ্যে তাকে মন খুলে কথা বলায় উৎসাহিত করুন। মনের গভীরে তার কিসের কুণ্ঠা লুকিয়ে রয়েছে , খুঁজে বার করুন। ডায়াবেটিসের মতো অসুখে মানুষ যেমন শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে , depression মানুষের বিবেচনা শক্তি কমিয়ে দেয় , সাহস কেড়ে নেয় , জীবনযুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি কমিয়ে দেয়। আমাদের সব জীবনীশক্তি ধ্বংস করে দেয়। সেবার মন নিয়ে অন্যের সমস্যার সমাধান করতে শুরু করলে আপনার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। অন্যের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারলে , সেবা করতে পারলে এবং তা যদি নিঃস্বার্থভাবে করতে পারেন , দেখবেন কি অনায়াসে মন হালকা হয়ে যায়। যোগ অভ্যাস কিন্তু মনের স্বাস্থ্য সুন্দর রাখার উপকারী পথ। ‘ আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ’ উদ্ ‌ যাপনে আপনাদের যদি কিছু পরামর্শ দেওয়ার থাকে , আমার মোবাইল অ্যাপ – এর মাধ্যমে আমায় সে সব ভাবনা পাঠিয়ে দিন ‌ , পথ দেখান । যোগ নিয়ে যত কবিতা , গান লিখতে পারেন , লিখতে থাকুন , যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক উদ্দীপনা আসতে পারে। এবার আমি মা – বোনেদের কিছু বলবো। স্বাস্থ্যচর্চা নিয়ে অনেক কথাই বলা হল। কিছুদিন আগে ভারত সরকার এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য ভারত সরকার একটা অত্যন্ত জরুরি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কর্মরতা মহিলাদের গর্ভাবস্থার সময় , প্রসবকালীন ও প্রসব – পরবর্তী সন্তান প্রতিপালনের সময় যে মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হত , আগে তা ছিল ১২ সপ্তাহের। এক্ষেত্রে বিশ্বের মাত্র দু – তিনটি দেশই আমাদের থেকে এগিয়ে আছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নববর্ষ উৎসব নানান ভাবে পালিত হয়। মহারাষ্ট্রে ‘ গুড়ি পড়োয়া ’, অন্ধ্র – কর্ণাটকে নববর্ষে পালিত হয় ‘ উগাড়ি ’ , সিন্ধি ‘ চেটি চাঁদ ’, কাশ্মিরী ‘ নবরেহ ’, আওয়োধ – এ ‘ সংবৎসর পূজা ’, বিহারের মিথিলায় ‘ জুড় শীতল ’ আবার মগধে ‘ সতুওয়ানি ’ পালনে নববর্ষের উৎসব পালন করা হয়। বিপুল দেশ ভারতে বৈচিত্র্যে ভরা রয়েছে। পাখির কলকাকলি মনেখুশির জোয়ার আনে। শুধু ফুলই নয়, গাছের শাখায় ফলও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে রৌদ্রকিরণে। গ্রীষ্মঋতুর ফল আমের মুকুলও দেখা যায় এই বসন্তে। একইভাবে চাষের ক্ষেতে সর্ষের হলুদ ফুলদেখে আশায় বুক বাঁধে চাষি। পলাশের লাল ফুল হোলির আগমনের সঙ্কেত দেয়। আমীর খসরু ঋতুপরিবর্তনের এই সময়টার বড় সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। বসন্ত-পঞ্চমী,মহাশিবরাত্রি এবং হোলি উৎসব মানুষের জীবনকে রঙিন করে তোলে। আর তাই তিনি বলেছেন যে আমি যেন ১০৪টি উপগ্রহেরউৎক্ষেপণ এবং ইন্টারসেপ্টর মিসাইল নিয়ে কিছু বলি। শোভাজী আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদযে আপনি ভারতের গর্বের নিদর্শনকে স্মরণ করেছেন। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই হোক,অসুখবিসুখের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা হোক, দুনিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হোক,জ্ঞান বা তথ্যের প্রেরণ হোক – প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান নিজের ভূমিকা প্রমাণ করেছে। ২০১৭ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারিভারতের জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় দিন। বিশ্বের সমক্ষে আমাদের মাথা উঁচু করে দিয়েছেনআমাদের বিজ্ঞানীরা। ১০৪টি স্যাটেলাইট একসঙ্গে মাহাকাশে পাঠিয়ে ইতিহাস রচনা করাবিশ্বের প্রথম দেশ ভারতবর্ষ। আর এটাও খুশির কথা যে এটা পি-এস-এল-ভির ৩৮তম ধারাবাহিকসফল উৎক্ষেপণ। এটা শুধু ইসরো নয়, গোটা ভারতবর্ষের পক্ষে এক ঐতিহাসিক সাফল্য। বিশেষ করে আমার কৃষক ভাই বোনেরা জানতে পারবেন যে আমাদের দেশে কোথায় কতটা জলসম্পদআছে, এর ব্যবহার কেমনভাবে করা উচিত, কোন কোন ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত – এই সব বিষয়ে আমাদের নতুনস্যাটেলাইট Cartosat 2D খুব সাহায্য করবে। আমাদের স্যাটেলাইট কক্ষে পৌঁছেই কিছু ছবি পাঠিয়েছে। নিজের কাজ শুরু করে দিয়েছে সেটি। আমাদের কাছে এটাও খুব আনন্দের যে এই সব অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন আমাদের যুবাবৈজ্ঞানিকরা, আমাদের মহিলা বৈজ্ঞানিকরা, তাঁরাই এসব করেছেন। যুবকদের এবং মহিলাদেরএই দুর্দান্ত সহযোগিতা ইসরোর সাফল্যের এক বড় গৌরবজনক দিক। আমি দেশবাসীদের পক্ষথেকে ইসরোর বৈজ্ঞানিকদের ভূয়সী প্রশংসা করছি। সাধারণ মানুষের জন্য, রাষ্ট্রেরসেবার জন্য মাহাকাশ বিজ্ঞানকে প্রয়োগ করার উদ্দেশ্যকে তাঁরা সবসময় অটুট রেখেছেন আরনিত্যদিন নতুন নতুন কৃতিত্বের রচনা করে চলেছেন। আমাদের এই বৈজ্ঞানিকদের, তাঁদেরপুরো টীমকে আমরা যতই প্রশংসা করি না কেন ততই তা কম হবে। শোভাজী আর একটি প্রশ্ন রেখেছেন এবং তা ভারতের সুরক্ষা সম্পর্কিত। ইন্টারসেপশন প্রযুক্তিতে বলীয়ানএই ক্ষেপণাস্ত্র নিজের পরীক্ষামূলক উড়ানের সময় মাটি থেকে প্রায় একশ কিলোমিটার উপরেশত্রুর ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকে দিয়ে সাফল্য সূচিত করেছে। যখন নতুন প্রযুক্তি দেখি, কোনো নতুন বৈজ্ঞানিক সাফল্য দেখি, তখন আনন্দ হয়আমাদের। আর মানব জীবনের বিকাশের ধারায় জিজ্ঞাসা এক বড় ভূমিকা পালন করেছে। আরসেই জিজ্ঞাসাই নতুন আবিষ্কারের কারণ হয়ে ওঠে। এঁরা ততক্ষণ শান্ত হন না যতক্ষণ সেইপ্রশ্নের উত্তর না পাওয়া যায়। আর হাজার হাজার বছরের মানব জীবনের বিকাশের ধারাকেযদি আমরা দেখি, তাহলে আমরা বলতে পারি যে মানব জীবনের এই বিকাশের ধারায় কোথাওপূর্ণচ্ছেদ নেই। পূর্ণচ্ছেদ অসম্ভব। ব্রহ্মাণ্ডকে, সৃষ্টির নিয়মসমূহকে, মানুষেরমনকে জানার প্রয়াস নিরন্তর চলতে থাকে। নতুন বিজ্ঞান, নতুন প্রযুক্তি তার মধ্যেথেকেই জন্ম নেয়। আর প্রতিটি প্রযুক্তি, বিজ্ঞানের প্রতিটি নতুন রূপ, এক নতুন যুগেরজন্ম দেয়। আমার প্রিয় তরুণেরা, যখন আমরা বিজ্ঞানের কথা বলি,বৈজ্ঞানিকদের কঠোর শ্রমের কথা বলি, আমার মনে পড়ে আমার এই ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানেকয়েকবার বলেছি যে তরুণ প্রজন্মের বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ থাকা উচিত। দেশে অনেক –অনেক বৈজ্ঞানিকের প্রয়োজন। আজকের বৈজ্ঞানিক আগামী প্রজন্মের জীবনে স্থায়ীপরিবর্তনের সূচনা করবেন। বিভিন্ন পরিষেবাও প্রযুক্তি তাড়িত হতে চলেছে। বলতে গেলেপ্রযুক্তি জীবনের অভিন্ন অঙ্গ হয়ে উঠেছে। ভারতেরডিজিট্যাল ট্র্যানজেকশনের হার বাড়ছে। ‘লাকিগ্রাহক যোজনা’, ‘ডিজি ধন ব্যাপার যোজনা’য় বিপুল সাড়া মিলছে। প্রায় দু’মাস হয়ে গেল,এই দুই যোজনা থেকে প্রতিদিন ১৫ হাজার মানুষ ১ হাজার টাকা করে পুরস্কার পাচ্ছেন। এই যোজনায় অংশ নিয়ে অনেকেই ১ লক্ষ টাকাপুরস্কার পেয়েছেন। পঞ্চাশ হাজার টাকা করে পেয়েছেন চার হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী। মহীশূরের শ্রীমান সন্তোষ ‘নরেন্দ্রমোদী-অ্যাপ’-এ খুশির খবরজানিয়েছেন যে ‘লাকি গ্রাহক যোজনা’তে তিনি ১ হাজার টাকা পুরস্কার পেয়েছেন। একদিকে তিনি যেমন গাড়ি চালাচ্ছেন, অন্যদিকে ‘লাকি গ্রাহকযোজনা’র অ্যাম্বাসেডর হয়ে উঠেছেন। এই কাজ এক প্রকারে দুর্নীতিএবং কালো টাকার বিরুদ্ধে যে লড়াই, তাতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্মরণীয়একটি দিন। কিছুদিন আগেই বাবাসাহেব আম্বেদকরের ১২৫-তমজন্ম-জয়ন্তী পেরিয়ে গেল। তাই আমি বলতে চাই, ড. বাবাসাহেবআম্বেদকর যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন, আমাদের সেটাকে মজবুত করতে হবে। ঘরেঘরে গিয়ে সবাইকে নিয়ে ১২৫ কোটি লোকের হাতে ‘ভীম’ অ্যাপ পৌঁছে দিতে হবে। বিগতদু-তিন মাস ধরে এই যে আন্দোলন চলছে, তার সাফল্য অনেক গ্রাম ও শহরে পাওয়া যাচ্ছে। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশের অর্থব্যবস্থারমূলে কৃষির অনেক অবদান রয়েছে। গ্রামের আর্থিক শক্তি, দেশের আর্থিক গতিকে শক্তিপ্রদান করে। আজ আমি এক আনন্দের কথা আপনাদের বলতে চাই। আমাদের কৃষক ভাই-বোনেরা অনেকপরিশ্রম করে অন্নের ভাণ্ডার ভরে দিয়েছেন। আমাদের দেশের কৃষকদের পরিশ্রমের ফলে এইবছর সর্বাধিক ধানের উৎপাদন হয়েছে। সবরকমের তথ্য এটা জানিয়ে দিচ্ছে যে, আমাদেরকৃষকরা পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। এবছর ক্ষেতের মধ্যে ফসল যেভাবে ঢেউ তুলেছে,প্রত্যেক দিনই মনে হচ্ছে পোঙ্গল বা বৈশাখী উৎসব পালন করি। এই বছর দেশে প্রায়দু’হাজার সাত কোটি টনেরও বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছে। আমাদের কৃষকদের সর্বশেষ যেরেকর্ড লেখা ছিল, তার থেকেও আট শতাংশ বেশি। আমিবিশেষভাবে দেশের কৃষকদের ধন্যবাদ দিতে চাই। আমি আনন্দিত যেদেশের কৃষকরা দরিদ্রদের কথা শুনেছেন। প্রায় দু’শ নব্বই লাখ হেক্টর জমিতেবিভিন্নরকমের ডালের চাষ হয়েছে। এটা কেবল ডালের উৎপাদন নয়, এটা হল কৃষকদের দ্বারাদেশের দরিদ্রদের সবথেকে বড় সেবা। আমার একটা প্রার্থনাকে, একটা অনুরোধকে শিরোধার্য করেআমার দেশের কৃষক ভাই-বোনেরা যে পরিশ্রম করেছেন, রেকর্ড পরিমাণ ডালের উৎপাদনকরেছেন, সেজন্য তাঁরা আমার বিশেষ ধন্যবাদের অধিকারী। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদেরদেশে সরকারের দ্বারা, সমাজের দ্বারা, বিভিন্ন সংস্থার দ্বারা, সংগঠনের দ্বারা –সবার মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতার জন্য কিছু না কিছু কার্যক্রম চলছেই। কিছু না কিছু ভাবেসবারই এক প্রকারে পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতনতা চোখে পড়ছে। তেলেঙ্গানা রাজ্যের ওয়ারাঙ্গালে শুধু বন্ধ ঘরে সেমিনারনয়, সরাসরি পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। ১৭ এবং ১৮-ই ফেব্রুয়ারিহায়দ্রাবাদে ‘ Toilet Pit Emptying Exercise ’-এর আয়োজন করা হয়েছিল। ছ’টি ঘরের টয়লেট পিট পরিস্কার করাহয়েছে এবং আধিকারিকরা নিজেরাই দেখালেন ‘ TwinPit Toilet ’ বানানো গর্তকে খালি করে কীভাবেআবার ব্যবহারযোগ্য করা যায়। তাঁরা এটাও দেখালেন যে এই নতুন পদ্ধতির শৌচালয় কতটাসুবিধাজনক, আর একে খালি করা থেকে পরিস্কার করা পর্যন্ত অন্য কোনও অসুবিধা বা সংকোচবা মানসিক দ্বিধা থাকে না। আমরাও ছোট-খাট সাফাইয়ের কাজ করি, যেমন শৌচালয়ের গর্তআমরাই পরিস্কার করতে পারি। ছয় সদস্যেরপরিবারের জন্য একটি ‘ Standard Twin PitToilet ’ প্রায় পাঁচ-ছ’বছরে ভরে যায়। আমাদের কৃষকরা NPK -র সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই পরিচিত। বিভিন্ন সরকারি বিভাগ ও আলাদা আলাদা ভাবে পরিচ্ছন্নতা পক্ষ পালন করে। মার্চমাসের প্রথম পক্ষে মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক এবং একই সঙ্গে জনজাতি উন্নয়নমন্ত্রক পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সামিল হবে। মার্চ মাসের দ্বিতীয় পক্ষে আরও দুটিমন্ত্রক ‘নৌপরিবহন’ মন্ত্রক এবং ‘জলসম্পদ, নদী উন্নয়ন এবং গঙ্গা পুনরুজ্জীবন’মন্ত্রক স্বচ্ছতা অভিযান চালাবে। আমরা জানি যে আমাদের দেশের যেকোনো নাগরিক যখন কোনও উল্লেখযোগ্য কাজ করে তখন সমগ্র দেশ এক নতুন শক্তি লাভ করে,আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। রিও প্যারালিম্পিক্স-এ আমাদের দিব্যাঙ্গ খেলোয়াড়রা যে ধরনেরফল করেছে তাকে আমরা সকলে স্বাগত জানিয়েছি। এই মাসে আয়োজিত ‘ব্লাইণ্ড টি-২০ ওয়ার্ল্ডকাপ ফাইনাল’-এ ভারত পাকিস্তানকে হারিয়ে ক্রমাণ্বয়ে দ্বিতীয় বার ওয়ার্ল্ডচ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের গৌরব বৃদ্ধি করেছে। আমি পুনরায় এই দলের সব খেলোয়াড়কে অভিনন্দনজানাচ্ছি। আমাদের এই দিব্যাঙ্গ বন্ধুদের সাফল্যে দেশ গৌরবান্বিত। আমি সব সময় এটামানি যে দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনেরা সমর্থ, দৃঢ় চিত্ত, সাহসী এবং সংকল্পে অটুট। সব সময়আমরা তাঁদের কাছ থেকে নতুন কিছু শিখতে পারি। খেলাধুলার ক্ষেত্রেই হোক বা মহাকাশবিজ্ঞান – আমাদের দেশের মেয়েরা কোনও ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। পায়ে পায়ে তারা এগিয়েচলেছে এবং নিজেদের সাফল্যে দেশকে গৌরবাণ্বিত করছে। কিছু দিন আগে ‘এশিয়ান রাগবিসেভেন’স ট্রফি’-তে আমাদের মহিলা খেলোয়াড়েরা রৌপ্য পদক জিতেছে। এই সব খেলোয়াড়দেরআমি অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি। ‘বেটি বাঁচাও –বেটি পড়াও’ আন্দোলন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। যখন এই ধরনের খবরপাওয়া যায় যে কন্যাসন্তানের জন্ম উপলক্ষে উৎসব পালিত হয়েছে, তখন সত্যিই খুব আনন্দহয়। কন্যাসন্তানের প্রতি এই ধরনের ইতিবাচক চিন্তাধারা সামাজিক স্বীকৃতির পথকেপ্রশস্ত করে। আমি জানতে পারলাম যে, তামিলনাড়ু রাজ্যের ‘ Cuddalore ’ জেলা এক বিশেষঅভিযান চালিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সমর্থ হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৭৫-টিরও বেশি বাল্যবিবাহঅনুষ্ঠান বন্ধ করা গেছে। ‘সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা’-তে প্রায় ৫৫-৬০ হাজারেরও বেশিব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশে ‘হর ঘর দস্তক’ যোজনায় প্রতিটি গ্রামেপ্রতিটি ঘরে কন্যাসন্তানদের শিক্ষিত করার অভিযান চালানো হচ্ছে। ‘আপনা বাচ্চা আপনাবিদ্যালয়’ অভিযানের মাধ্যমে রাজস্থান, শিক্ষা শেষ না করে বিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়ামেয়েদের পুনরায় বিদ্যালয়ে ভর্তি করে তাদের লেখাপড়ায় উৎসাহিত করার অভিযান চালাচ্ছে। নতুন নতুন কল্পনাও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। স্থানীয় আবশ্যকতা অনুযায়ী এতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আপনারা সক্রিয়ভাবে এর সঙ্গে যুক্ত থাকেন। আপনাদের কাছ থেকে আমিঅনেক কিছু জানতে পারি। পৃথিবীতে কোথায় কী হচ্ছে, গ্রামের দরিদ্র মানুষদের চিন্তা-ভাবনাআমার কাছে পৌঁছচ্ছে। আপনাদের সহযোগিতার জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। সুদর্শনচক্রধারী মোহন যমুনা নদীর তীর ছেড়ে গুজরাটের সমুদ্রতীরে দ্বারকা শহরে গিয়ে অবস্থান করেন আর সমুদ্রতীরে জন্মানো মোহন যমুনার তীরে দিল্লিতে জীবনের অন্তিম দিন অতিবাহিত করেন। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি মহাত্মা গান্ধীর ১৫০-তম জন্মজয়ন্তীর কথা বলছি। যে কোনও ব্যক্তি যেখানেই হোক, যখনই হোক বিপদে পড়লে তাঁকে সাহায্য করার জন্য মহাত্মা গান্ধী ছুটে যেতেন। তিনি শুধু সেবার কথায় জোর দিতেন না, সেবায় যে আত্মতৃপ্তি তার গুরুত্বও জানতেন। ‘সেবা’ শব্দটার সার্থকতা তখনই ঘটে যদি তা আনন্দের সঙ্গে করা হয়। তবেই ‘সেবা পরম ধর্ম’ হয়ে ওঠে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত আনন্দ ‘স্বান্ত সুখায়’ — এই ভাবনাও সেবা কথাটির মধ্যে অন্তর্নিহিত। এটা আমরা গান্ধীজীর জীবন পর্যবেক্ষণ করলে সহজেই বুঝতে পারি। মহাত্মা গান্ধীর জীবনে ব্যক্তি ও সমাজ, মানব এবং মানবতাই একমাত্র চিন্তা ছিল। আফ্রিকার Phoenix Farm–এই হোক কি Tolstoy Farm, সবরমতী আশ্রম বা ওয়ার্ধা — সব জায়গাতেই এক মৌলিক ভাবনায় সমাজ বিকাশে community mobilisation-এ তিনি গুরুত্ব দিতেন। আমার জীবনের পরম সৌভাগ্য পূজনীয় মহাত্মা গান্ধীজীর বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ হয়েছে। গান্ধীজী সেবা ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক শক্তির প্রতিও গুরুত্ব দিতেন। সমাজসেবা এবং সামাজিক সংহতি, community service এবং community mobilisation — এই দুই ভাবনা আমরা ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে চাইছি। আমার প্রিয় দেশবাসী, কয়েক মাস আগে আমি গুজরাটের ডান্ডি গিয়েছিলাম। আগামী দিনে অনেক কার্যক্রম, প্রতিযোগিতা, প্রদর্শনী ইত্যাদির আয়োজন করা হচ্ছে। এই অবকাশে আপনাদের একটি চমৎকার খবর দিই। এতে হরিপুরা প্যানেলগুলি বিশেষ ভাবে মনোগ্রাহী ছিল। আপনাদের মনে আছে গুজরাতের হরিপুরাতে কংগ্রেসের অধিবেশন হয়েছিল, যেখানে সুভাষ চন্দ্র বোসকে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘটনা ইতিহাসে নথিবদ্ধ আছে। এইসব Art Panel-গুলোর এক খুব সুন্দর অতীত রয়েছে। কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনের আগে ১৯৩৭-৩৮ সালে মহাত্মা গান্ধী শান্তিনিকেতনের কলাভবনের তখনকার অধ্যক্ষ নন্দলাল বোসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গান্ধীজী চেয়েছিলেন ভারতে বাস করা লোকেদের জীবনশৈলীকে শিল্পকলার মাধ্যমে দেখানো হোক, আর এই Art Work অধিবেশন চলাকালীন প্রদর্শিত হোক। ইনি সেই নন্দলাল বোস যাঁর শিল্পকলা আমাদের সংবিধানের শোভাবর্ধন করে। সংবিধানকে এক নতুন পরিচয় দেয়। তাঁর শিল্পকলার এই চর্চা সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গে নন্দলাল বোসকেও অমরত্ব প্রদান করেছে। নন্দলাল বোস হরিপুরার আশেপাশের গ্রামগুলি পর্যবেক্ষণ করেন এবং তারপর গ্রামীণ ভারতকে নিয়ে কিছুart canvas তৈরিকরেছিলেন। এই অমূল্য শিল্পকলার খুব আলোচনা হয়েছিল ভেনিসে। আর-একবার গান্ধীজীর সার্ধশতবর্ষের অভিনন্দনের সঙ্গে প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে কিছু না কিছু সংকল্প করার আবেদন জানাচ্ছি। দেশের জন্য, সমাজের জন্য, অপরের জন্য কিছু না কিছু করা দরকার। এটাই বাপুর প্রতি আমাদের সুন্দর, সত্য ও প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে। ভারত মায়ের সুসন্তানেরা, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে বিগত কিছু বছর ধরে আমরা ২রা অক্টোবরের আগে দু-সপ্তাহ ধরে সারা দেশে ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ অভিযান চালাই। এবছর এটা ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। এতে পয়সাও বাঁচে আর পরিবেশকে রক্ষা করার নিজের অংশীদারিত্বও দেখাতে পারেন। এবার ২রা অক্টোবরে যখন বাপুর সার্ধশতবর্ষ পালিত হবে, তখন তাঁকে কেবল খোলা জায়গায় শৌচকর্ম মুক্ত ভারত সমর্পণ করবো না, ঐ দিন প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে এক নতুন জন আন্দোলনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হবে। ২রা অক্টোবর বিশেষ দিন হিসেবে পালিত হোক। একে recycle-ওকরা যেতে পারে। একে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সংস্কৃত সুভাষিত, এক রকম জ্ঞানের রত্ন। আমাদের সংস্কৃতিতে অন্নের অনেক বেশি মহিমা রয়েছে। এমনকি আমরা খাদ্যশস্য সংক্রান্ত জ্ঞানকে বিজ্ঞানে পরিবর্তন করেছি। সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার আমাদের সকলের প্রয়োজন। বিশেষ করে, মহিলা এবং নবজাতক শিশুদের জন্য। মানুষ নতুন এবং মনোরঞ্জক পদ্ধতিতে অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এখানে ফসল কাটার দিনে অঙ্গণবাড়ির সেবিকারা সবার থেকে এক এক মুঠো শস্য একত্র করতো। এই খাদ্যশস্য শিশু ও মহিলাদের জন্য গরম খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হত। এর ফলে যিনি দান করছেন তিনি এক সচেতন নাগরিক ও সমাজসেবক হয়ে যান। এর পর, ঐ ব্যক্তি এই লক্ষ্যে নিজেকে সমর্পণ করেন এবং এই আন্দোলনে তিনিও একজন সৈনিক হয়ে যান। Liquid food নয় Solid food। গুজরাতে ২০১০ সালে ভাবা হয়েছিল অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানে বাচ্চাকে complementary food দেওয়া হোক, যাতে মানুষের মনে এ বিষয়ে সচেতনতা আসে। এটা এক খুবই মহৎ উদ্যোগ যা কিনা সর্বত্রই গ্রহণ করা যায়। অনেক রাজ্যে মানুষেরা ‘তিথি ভোজন’ অভিযান পালন করেন। যদি কোনো পরিবারে জন্মদিন, কোনো শুভদিন, কোনো স্মৃতিদিবস থাকে, তবে পরিবারের সদস্যরা সুস্বাদু, পুষ্টিকর খাবার তৈরি করে অঙ্গণবাড়ি, বিদ্যালয়ে যান এবং পরিবারের সদস্যরা নিজেরাই বাচ্চাদের পরিবেশন করে খাবার খাওয়ান, নিজের আনন্দ সবার মধ্যে ভাগ করেন, যা আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এইভাবে সেবাভাব ও আনন্দভাবের এক অদ্ভুত মিলন লক্ষ করা যায়। বন্ধুরা, এইরকম অনেক ছোটো ছোটো বিষয় আছে যেগুলির দ্বারা আমাদের দেশ অপুষ্টির বিরুদ্ধে এক ফলপ্রসূ লড়াই লড়তে পারে। আজ সচেতনতার অভাবে ‘অপুষ্টি’ গরীব এবং ধনী উভয় ব্যক্তিদের পরিবারেই প্রভাব বিস্তার করেছে। সারা দেশে সেপ্টেম্বর মাসে ‘পোষণ অভিযান’ পালন করা হবে। আপনি অবশ্যই এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হবেন, তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং নতুন কোনও ভাবনা যুক্ত করবেন। যদি আপনি দু-একজন ব্যক্তিকেও অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন, তার অর্থ আমাদের দেশও অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাবে। এই একটা episode-এর মাধ্যমে আমি শুধুমাত্র ভারতবর্ষই নয়, বিশ্বের সব জায়গার যুবসম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছি। আমি কখনই ভাবতে পারিনি যে যুবপ্রজন্মের মনে আমার এমন একটা জায়গা তৈরি হবে। আমি কখনও এটা চিন্তা করিনি যে আমাদের দেশের এবং বিশ্বের যুবসমাজ কত বিচিত্র বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখেন। গত সপ্তাহে আমি ভুটান গিয়েছিলাম। এটাই আমি অনুভব করেছি। Tiger, Lion, জীব-সৃষ্টি—আমি অবাক হয়ে যাই যে লোকেদের কত রকম বিষয়ে উৎসাহথাকতে পারে। এটা কি পরে এডিট হয়েছে? দেখুন, এতে কোনো রহস্য নেই। আমি বলতাম হিন্দি কিন্তু উনি শুনতেন ইংরেজিতে। এই কারণেই কথাবার্তা খুব সহজ হয়ে যেত আর technology-র এটাই কামাল। এই শো-এর পরে আমি লক্ষ করেছি যে, অনেক লোক জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কের বিষয়ে আলোচনা করছেন। আপনারাও nature আরwildlife— প্রকৃতি আর বন্যপ্রাণীঅধ্যুষিত জায়গায়অবশ্যই যান। আমি আগেও বলেছি,আমি আবার বলছি। আপনারা নর্থ ইস্ট অবশ্যই যান। গতমাসে দেশেtiger census জারী করার সৌভাগ্য হয়েছিল। আপনারা কি জানেন ভারতে বাঘের সংখ্যা কত? ভারতে ২৯৬৭-টি বাঘ আছে। কয়েক বছর আগে এর অর্ধেকও খুব কষ্টে পাওয়া যেত। বাঘেদের নিয়ে ২০১০সালে রাশিয়ার সেন্টপিটার্সবার্গে ‘টাইগার সামিট’ হয়েছিল। এখানে পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যার হ্রাসপ্রাপ্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটা সংকল্প নেওয়া হয়েছিল। এই সংকল্প ছিল ২০২২সালের মধ্যে গোটা পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে। আমরা ২০১৯-এর মধ্যেই আমাদের এখানে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছি। ভারতে শুধু বাঘের সংখ্যাই নয়,‘প্রটেক্টেড এরিয়া’ আর কমিউনিটি রিজার্ভ-এর সংখ্যাও বেড়েছে। যখন আমি বাঘসুমারীরতথ্য প্রকাশ করছিলাম তখন আমার গুজরাটে গির অরণ্যের সিংহের কথাও মনে এসেছে। যখন আমিগুজরাটে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলাম তখন গির-এর জঙ্গলে সিংহের বাসস্থান সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছিল। ওদের সংখ্যা কমে যাচ্ছিল। আমরা গির-এ এক-এক করে বেশ কিছুউদ্যোগনিয়েছি। ২০০৭-এ ওখানে মহিলা গার্ড নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিই। পরিকাঠামোর সুবন্দোবস্তের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পে উন্নতি সম্ভব। প্রকৃতি এবং বন্য জীবন প্রসঙ্গে আমরা শুধু সংরক্ষণ বা কনজারভেশন এর ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এবার আমাদের সংরক্ষণের গণ্ডি পেরিয়ে কম্প্যাশন বা সমবেদনার পরিপ্রেক্ষিতে ভাবনা-চিন্তা করতেই হবে। আমার প্রিয় দেশবাসী, ১১সেপ্টেম্বর ১৮৯৩সালে স্বামী বিবেকানন্দের ঐতিহাসিক ভাষণ আমরা কি কেউ ভুলতে পারি? এই তরুণ ভারতীয় সন্ন্যাসীর তেজস্বী ভাষণ সাড়া জাগিয়েছিল সমগ্র বিশ্বের মানবজাতির মধ্যে। যেখানে পরাধীন ভারত বিশ্বের দরবারে ছিল করুণার পাত্র, সেই বিশ্ব১১সেপ্টেম্বর ১৮৯৩সালে মহাপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দের তেজোদ্দীপ্ত শব্দে আবিষ্কার করতে বাধ্য হলএক নতুন ভারতকে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের জন্য এ এক দারুণ আকর্ষণীয় অভিযান হবে। তবে আজ আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানাচ্ছি না। আসুন এক নতুন উৎসাহ, নতুন সংকল্প, নতুন শক্তি নিয়ে আমরা এই অভিযান শুরু করি। আমি আপনাদের বার্তা ও পরামর্শের অপেক্ষায় রইলাম। অন্তরের আনন্দ ও সেবার মন্ত্রে আলোকিত হোক আমাদের চলার পথ। ভারতের সংবিধান, নাগরিকদের কর্তব্য,নাগরিকদের অধিকার, লোকতন্ত্রের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা – এ যেন এক অর্থে সংস্কারউৎসব যা আগামী প্রজন্মকে গণতন্ত্রের বিষয়ে, গণতন্ত্রের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনকরে, সংস্কারে আবদ্ধ করে। কিন্তু এখনও আমাদের দেশে নাগরিকদের কর্তব্য আর নাগরিকদেরঅধিকার – এর উপর যতটা বিতর্ক হওয়া উচিত, যতটা গভীরেগিয়ে বাদানুবাদ হওয়া উচিত, যতটা ব্যাপকভাবে চর্চা হওয়া উচিত, তা হচ্ছে না। আমি আশাকরি প্রত্যেক স্তরে, প্রতি মুহূর্তে, যতটা জোর অধিকারের উপর দেওয়া হয়, ততটাই জোরকর্তব্যের উপর দেওয়া হোক। অধিকার আর কর্তব্যের দুই পথের উপরই ভারতের লোকতন্ত্রেরগাড়ি অগ্রসর হতে পারে। কাল ৩০-শে জানুয়ারি, আমাদের পূজনীয়বাপুর পুণ্য তিথি। ৩০-শে জানুয়ারি আমরা সকাল ১১-টায়, ২ মিনিটের মৌনতা পালন করে,দেশের জন্য প্রাণদানকারী শহীদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করি। ঐক্যবদ্ধ সমাজহিসেবে, একটা দেশ হিসেবে, ৩০-শে জানুয়ারি, ১১-টায় দুই মিনিটের শ্রদ্ধাঞ্জলি পালন – এ আমাদের সাধারণ অভ্যাস হয়ে ওঠা উচিত। এবারের গণতন্ত্র দিবসের প্রাক্‌-সন্ধ্যায়,বিভিন্ন বীরত্বসূচক পুরস্কারে যেসব বীর জওয়ান সম্মানিত হয়েছেন, তাঁদের এবং তাঁদেরপরিবারের সদস্যদের আমি অভিনন্দন জানাই। এই সব পুরস্কারের মধ্যে ‘কীর্তি চক্র ’, ‘শৌর্যচক্র ’ , ‘পরম বিশিষ্ট সেবা পদক ’, ‘বিশিষ্ট সেবা পদক ’ – অনেক বিভাগ আছে। যখন তাঁদের সাহস,বীরত্ব ও পরাক্রমের কথা বিস্তারিত ভাবে আমরা জানতে পারি, তখন যেমন আশ্চর্য হয়েযাই, তেমনি গর্বও হয় এবং প্রেরণাও পাই। এক দিকে আমরা সবাই ২৬-শে জানুয়ারিরউৎসাহ আর উদ্দীপনার খবরে যখন আনন্দে ছিলাম, ঠিক সেই সময় কাশ্মীরে আমাদের সেনাজওয়ানরা, যাঁরা দেশের সুরক্ষায় স্থিরপ্রতিজ্ঞ, তুষার ধ্বসের ফলে তাঁদের বীর-প্রয়াণঘটে। আমি এই সব বীর জওয়ানদের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করি, প্রণাম জানাই। আমার যুবা বন্ধুরা, আপনারা তো ভালোকরেই জানেন যে, আমি ধারাবাহিকভাবে ‘মনকী বাত ’ শোনাচ্ছি। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল – এই সব মাস প্রত্যেক পরিবারে পরীক্ষার মাস। সংসারের এক-আধ জন বা দু ’জন বাচ্চার পরীক্ষা থাকে – কিন্তু গোটা পরিবারই পরীক্ষার চাপে নুয়ে থাকে। পরিবার দুশ্চিন্তায়, বিদ্যার্থী দুশ্চিন্তায়, শিক্ষক দুশ্চিন্তায়– একটা বেশ বিচিত্র মনোবৈজ্ঞানিক বাতাবরণ প্রত্যেক সংসারে দেখা যায়। আর আমার সবসময়মনে হয়েছে যে এর থেকে বেরিয়ে আসা উচিত আর এই জন্যই আজ আমি তরুণ বন্ধুদের সঙ্গে এসম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে কথা বলতে চাই। টেলিফোনে আমি এক বার্তাপেয়েছি সৃষ্টির কাছ থেকে। ’ যাই হোক, প্রশ্ন তো সৃষ্টি করেছে,কিন্তু এই একই প্রশ্ন আপনাদের সবার মনেও নিশ্চয়ই আছে। পরীক্ষা এমনিতেই এক আনন্দেরঅবকাশ হওয়া উচিত। সারা বছর পরিশ্রম করা হয়েছে, এবার জানানোর সুযোগ এসেছে, এটা আশাএবং উৎসাহের পর্ব হওয়া উচিত। সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে যে এটাকে আপনি pressure ভাববেন,না pleasure. আর যখন উৎসবহয় তখন আমাদের ভেতর সেরা যেটা সেটাই বেরিয়ে আসে। উৎসবের সময়ই সমাজ নিজের শক্তিরআন্দাজ পায়। পরীক্ষার সময়ও পরিবারে, বন্ধুদের মধ্যে, পাড়া-প্রতিবেশে এক উৎসবেরবাতাবরণ তৈরি হওয়া উচিত। সত্যি তো এটাই যে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা, কচ্ছ থেকেকামরূপ, অম্রেলী থেকে অরুণাচল এই তিন-চার মাস কেবল পরীক্ষা আর পরীক্ষা। আমাদেরপ্রত্যেকের দায়িত্ব যে প্রত্যেক বছর এই তিন-চার মাস, নিজের-নিজের পদ্ধতিতে,নিজের-নিজের পরম্পরা মেনে, নিজের-নিজের পরিবারের বাতাবরণ বুঝে, একে এক উৎসবে পরিণতকরা। আর তোমরা দেখেছ যেযখন তুমি আনন্দে থাকো, হাসিখুশি থাকো তখন নিজেকে relaxed মনেহয় তোমার। খুব সহজভাবে relax হয়ে যাও তুমি আর যখন এমন relaxথাক তখন এক বছরের পুরনো কথাও সহজে মনে এসে যায় তোমার। এক বছর আগেক্লাসরুমে টিচার কী বলেছিলেন তার গোটা দৃশ্যটা মনে পড়ে যায় তোমার। তখন মনে হয়,পরীক্ষা যেন জীবন-মরণের প্রশ্ন। পরীক্ষার অর্থ হল তুমি সারা বছর ধরে যে পড়াশোনাকরেছ তার মূল্যায়ন। তিনি বায়ুসেনাতে যোগদান করতে চেয়েছিলেনকিন্তু অকৃতকার্য হন। মনে কর এই ব্যর্থতার পর তিনি যদি হতাশ হয়ে যেতেন, হতোদ্যমহয়ে যেতেন, তাহলে কি ভারত এত বড় একজন বৈজ্ঞানিককে পেত – এমন একজন রাষ্ট্রপতিকেপেত! যার ফলেছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতাই বাড়েনি, দুশ্চিন্তাও বেড়েছে। শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান স্থিতি ও ভবিষ্যত সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই। জীবনে যা আপনার সত্যিকারের পাথেয় হবে তা হল – আপনার অর্জিত জ্ঞান, আপনার দক্ষতা, আপনারআত্মবিশ্বাস ও সংকল্পশক্তি। বড় বড় মামলা মোকদ্দমার সময় আপনারা যখন কোনও নামীউকিলের কাছে যান, তখন কি তাঁর মার্কশিট-এর খোঁজ করেন? আপনি তাঁর অভিজ্ঞতা, তাঁরজ্ঞান এবং সাফল্যকেই দেখেন। এই জন্যই কখনও কখনও এই নম্বরের বোঝা আমাদের সঠিক পথেযাওয়ার অন্তরায় হয়ে ওঠে। আর এই জন্যই কখনও কখনও এরকমও হয় পরীক্ষায় অত্যন্তসাফল্যের সঙ্গে কৃতকার্য হয়েও আমরা জীবনে ব্যর্থতার মুখোমুখি হই। রিচা আরও একটি বিষয় উত্থাপন করেছেন,তা হল প্রতিযোগিতা। এটা একটা খুব বড় মানসিক দ্বন্দ্বের ক্ষেত্র। এক্ষেত্রে আমরা শচীন তেণ্ডুলকরের উদাহরণ দিতে পারি। বন্ধুরা, জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেএবং বিশেষ করে যখন আপনারা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন, তখন খেয়াল করে দেখুন, আগে যদিপড়াশোনার জন্য দুই ঘণ্টা সময় দিতেন, এখন কি সেটা তিন ঘণ্টা করতে পেরেছেন? আপনি যদি একবার স্বীকার করতে শিখে যান,তাহলে অনেক সমস্যার সেখানেই সমাধান হয়ে যাবে। এটা স্বীকার করেনিলে এই সমস্যার থেকে সমাধানের পথ খুলে যায়। আশা রাস্তাকে কঠিনতর করে তোলে। বর্তমান অবস্থাকে স্বীকার করে নিলে সমাধানের নূতন রাস্তা খোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়। দেখবেন, আপনিও ভারমুক্ত হয়ে যাবেন। আসলে আমরা অসুস্থ ব্যক্তির কাছে গিয়ে অসুখ সম্পর্কে তাঁর মনে এক ভয় সৃষ্টিকরি। অভিভাবকদের আমি এই কথাই বলতে চাই যে, কখনো কখনো ছোটদের সঙ্গেও আমরা এইরকমইকরে থাকি। আপনি কি কখনও ভেবেছেন যে পরীক্ষার দিনগুলিতে বাচ্চাদের হাসি-খুশির একটাপরিবেশ দিই। আপনি দেখবেন পরিস্থিতিটাই বদলে যাবে। আমার কাছে বেশ মজার একটা ফোন এসেছে। ভদ্রলোক নিজের নাম বলতে চাননি। ফোনটার বিবরণ শুনলে আপনারা বুঝতে পারবেন, ওইব্যক্তি কেন নিজের নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না। “নমস্কার,প্রধানমন্ত্রীজী, আমি আমার শৈশবে এমন কিছু কাজ করেছিলাম যে আমি আমার নাম বলতেপারছি না। ওইসময়টা আমি পড়াশোনার জন্য ব্যয় করলে একই নম্বর পেতে পারতাম। আমি যখন নকল করে পাশকরার চেষ্টা করেছিলাম, তখন ধরা পড়ে যাই আর আমার জন্য আমার আশেপাশের অনেক বন্ধুদেরওবেশ অসুবিধা হয়েছিল। আমি আপনাদের সেইকথাটাই আবার বলছি। সব্বার এই মত পছন্দ হবে কিনা জানি না, কিন্তু আমি আমারবিশ্বাসের কথা জানালাম। একবার একজন লোকসংগীত গায়ক আমারসঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন কতক্ষণ ঘুমোন আপনি? আমিজানতে চাইলাম, ভাই আপনি কি ডাক্তার? তিনি বললেন, আরে না-না, আপনি বলুনই না, এই যেবক্তৃতা দিতে দিতে আপনার গলা বসে যায় তার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। আপনি ঠিকঠাকঘুমোলে আপনার ভোকাল কর্ডও বিশ্রাম পাবে। এর আগে আমি আমার ঘুম ও গলার স্বর নিয়েকক্ষনো ভাবিনি। ভুলেও এমনটা করবেন না। তাতে আপনারঅভিভাবকেরা আমার ওপর অসন্তুষ্ট হবেন। তা নাহলে যেদিন মার্কশিট আসবে তাতে অভিভাবকরাআপনাদের বদলে আমার প্রতিচ্ছবিই দেখতে পাবেন। এই মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলুন। এই উপলক্ষে কোস্ট গার্ড বাহিনীর প্রত্যেক কর্মী ও সেনাদের তাঁদের দেশেরপ্রতি কর্তব্য পালনের জন্য অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের কোস্ট গার্ডবাহিনী আমাদের স্বদেশে নির্মিত ১২৬টি যুদ্ধজাহাজ ও ৬২ টি বিমান সহযোগে বিশ্বেরপ্রথম চার শ্রেষ্ঠ কোস্ট গার্ড বাহিনীর মধ্যে নিজেদের গর্বিত স্থান অর্জন করেছে। কোস্ট গার্ডবাহিনীর মন্ত্র ‘অয়ম্‌ রক্‌শাম্‌’ – এই অঙ্গীকারকে মনে রেখে দেশের সমুদ্র সীমা ওসামুদ্রিক অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখতে আমাদের কোস্ট গার্ড বাহিনী সবরকম প্রতিকূলতারমধ্যেই সারাক্ষণ তৎপর রয়েছে। কোস্ট গার্ড-এ আমাদের মহিলা পাইলট অফিসার রয়েছেন,এমনকি হোভারক্র্যাফ্‌ট-এর কামান সামলাতেও তাঁরা পারদর্শী। শুধুই বিদ্যার্চনা নয়, বীরত্বের অনুপ্রেরণার উৎসবও বটে। ‘মেরে রঙ দেবাসন্তী চোলা’ – এটাই তো সেই অনুপ্রেরণা। এই বসন্ত-পঞ্চমী উদ্‌যাপনের পরিসরেদেশবাসীকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আমার প্রিয়দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ কার্যক্রমকে আকাশবাণী আরও অনেক বর্ণময় ভাবনাচিন্তায় ভরিয়ে তুলেছে। গত মাসে আমার ‘মন কি বাত’ ভাষণের অব্যবহিত পরে আঞ্চলিক ভাষায় ‘মন কি বাত’ শোনানোশুরু করেছে। এই প্রচেষ্টায় বৃহৎ সাফল্য এসেছে। এই নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে দেশবাসীরাচিঠি লিখেছেন। গত মাসে আমরা সবাই দীপাবলির উৎসবপালন করেছি। প্রত্যেক বছরের মতো এবারও দীপাবলির সময়, সেনাবাহিনীর সঙ্গে দীপাবলিপালন করতে আমি চীন সীমান্তে গিয়েছিলাম। প্রতি বছরই আমি সীমান্তে যাই, কিন্তু এবারেরদীপাবলির অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা। সেই আবেগে ওঁরা ভরপুর ছিলেন এবং শুধুতাই নয়, দেশবাসী যে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন, নিজেদের খুশির সঙ্গে সেনানীদেরসামিল করেছেন তার এক অদ্ভূত প্রতিক্রিয়া দেখছিলাম। কিন্তু, সত্যি বলতে কি এবারেদীপাবলি উৎসবের সময় আমাদের তেমনটা মনে হয় নি। উল্টে এবারে মনে হচ্ছিল, ১২৫ কোটিভারতবাসীর সঙ্গেই যেন দীপাবলির উৎসবে সামিল হয়েছি। প্রিয়দেশবাসী, যে আন্তরিকতা, খুশী, ভালোবাসা ও আনন্দ আমাদের সেনাবাহিনীর জওয়ানদের মধ্যেসঞ্চারিত হয়েছে, একি শুধু হোলি-দীপাবলিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে, না থাকা উচিৎ? আপনাদেরকাছে আমার আবেদন, আসুন, সমাজ হিসেবে, রাষ্ট্র হিসেবে একে স্বভাব ও প্রকৃতির অংশকরে তুলি। যে কোনও পার্বণ বা উৎসবই হোক, যে কোনও আনন্দের সময় আমরা আমাদেরসেনাবাহিনীর জওয়ানদের কোনও না কোনও ভাবে মনে রাখবো। যখন রাষ্ট্র সেনাবাহিনীর সঙ্গেএকাত্ম হয়ে উঠবে, সেনাবাহিনীর শক্তিও ১২৫ কোটি গুণ বেড়ে যাবে। কিছুদিন আগে,জম্মু ও কাশ্মীরের সব গ্রামের প্রধানরা আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ওঁরা গ্রামের বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য কিছু দাবিদাওয়া জানাতে এলেও স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় কাশ্মীর উপত্যকার সাম্প্রতিক অবস্থা, আইন-কানুন, বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ- এই সব প্রসঙ্গও উঠে এলো। কিছুদিন আগে কাশ্মীরে বোর্ড এক্‌জাম হয়ে গেল এবংসেখানকার প্রায় ৯৫% ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষায় বসেছেন। বোর্ডের পরীক্ষায় এই বিপুলসংখ্যায় ছাত্র-ছাত্রীর অংশগ্রহণে আমি স্পষ্ট আভাস পাচ্ছি যে জম্মু-কাশ্মীরউপত্যকায় আমাদের বাচ্চারা শিক্ষার মাধ্যমে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বিকাশের জন্যদৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ছাত্র-ছাত্রীদের এই অঙ্গীকারের জন্য শুধু ওদের নয়, ওদের অভিভাবক,বাবা-মা, শিক্ষক এবং সর্বোপরি গ্রামপ্রধানদের অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার প্রিয়ভাই-বোনেরা, যখন আমি এবারের ‘মন কি বাত’ নিয়ে জনসাধারণের আলোচনা প্রস্তাব চেয়েছি,আমি স্বীকার করছি, প্রত্যেকে একটাই প্রস্তাব করেছেন। প্রত্যেকেই চেয়েছেন পাঁচশো ওহাজার টাকার নোট নিয়ে আমি বিস্তারিত ভাবে কিছু বলি। ৮-ই নভেম্বর রাত ৮-টায় আমিদেশের সঠিক উন্নয়নের জন্য, রাষ্ট্রের পক্ষে এক মহা অভিযানের কথা জানিয়েছিলাম। যেসময় আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং আপনাদের সেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলাম, স্পষ্টবলেছিলাম, এটা একটা সাধারণ সিদ্ধান্ত নয়, এটা একটা কঠিন পদক্ষেপ। সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময়ই আমি সতর্ক করেছিলাম এই প্রস্তাব কার্যকরী করার প্রভাব এতটাইব্যাপক যে তার থেকে বেরোতে অন্ততঃ ৫০ দিন তো লাগবেই। তারপরই আমরা স্বাভাবিকঅবস্থার দিকে এগোতে পারবো। সত্তরটা বছর ধরে যে অসুখ ছড়িয়েছে, তার থেকে সুস্থ হয়েওঠা খুব সহজ ঘটনা নয়। ১২৫ কোটি ভারতবাসীর নিজের দেশের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও পূর্ণ বিশ্বাসআছে যে তাঁরা দেশের উন্নতির জন্য সর্বান্তঃকরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই জন্যই আমরা সাফল্যপাবোই। ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের কর্মীরা কি প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করে চলেছেন। আর যখনমানবিকতার কথা আসছে ওঁরা যেন আরও সক্রিয় হয়ে উঠছেন। সেই কথা যখনস্থানীয় ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের কানে গেছে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণ ভদ্রলোকের বাড়িতেটাকা পৌঁছে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর চিকিৎসার সুব্যবস্থা করেছেন। আমি এই ঘটনাটিজেনে অভিভূত হয়েছি। ওঁরা নিজেদের কালো টাকা বাঁচাতে বিভিন্নবে-আইনী উপায় নিচ্ছেন। একটাই অনুরোধ, নিজেদের অন্যায্য স্বার্থ পূরণের জন্য গরীবমানুষগুলিকে নিয়ে খেলবেন না। আপনাদের অন্যায় উপার্জন গরীব মানুষের রেকর্ডে জুড়েদিচ্ছেন, তদন্তের পর আপনি নয়, এই গরীব মানুষগুলো ফেঁসে যাবে, ওরা কষ্ট ভোগ করবে। বেনামীসম্পত্তিকে আওতায় আনার জন্য অত্যন্ত কঠোর নিয়মকানুন বানানো হয়েছে, যেগুলি সবক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। আমি মধ্যপ্রদেশের জেলাহরদা, তহশীল ও গ্রাম তিরালির এক সাধারণ নাগরিক। আপনার এই পাঁচশো-হাজারের নোট বন্ধকরার পদক্ষেপ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি বলেছিলেন যে সুদিন আসছে,কিন্তু কেউ ভাবতে পারেনি যে আপনি এত বড় একটি পদক্ষেপ নিতে পারবেন। পাঁচশো ও হাজারটাকার নোট বন্ধ করে আপনি দুর্নীতিগ্রস্ত কালোবাজারিদের উচিত শিক্ষা দিয়েছেন। ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের কাছে এর চেয়ে বড় সুদিন আর হয় না। এই জন্য আমি আপনাকে আরওএকবার ধন্যবাদ জানাই। ”মিডিয়া,সাধারণ মানুষ ও সরকারী সূত্রের মাধ্যমে যখন এই ধরনের খবর শুনতে পাই, তখন কাজ করারউৎসাহ অনেক বেড়ে যায়। লোকেরা সেখানে গিয়ে খেয়েছেন, আর দুই-চার-ছয়দিন বাদে আবার যখন সেইরাস্তা দিয়ে ফিরেছেন তখন বিল মিটিয়ে দিয়েছেন। এই হচ্ছে আমার দেশের শক্তি, যেখানেসেবা পরায়ণতা ও ত্যাগ ধর্মই প্রধান। কিন্তু আমার এটা জানা ছিল না যেবিয়েতেও ‘চা-বৈঠক’ হতে পারে! আমি খবর পাই সতেরোই নভেম্বর সুরাতে এমনই এক বিয়ে হয়। এই বিয়েতে পাত্রীপক্ষ আমন্ত্রিতদের জন্য শুধুমাত্র চা পানের আয়োজন করেছিলেন, অন্যকোনও খাওয়াদাওয়া ও ভুরিভোজের অনুষ্ঠান ছিল না – কারণ, নোট বন্ধ হওয়ার দরুণ তাঁদেরহাতে নগদ টাকার অভাব ছিল। বরযাত্রীরাও এই ব্যাপারটিকে সমর্থন করেন। এই ধরনের বিয়েরমাধ্যমে সুরাতের ভরত মারু ও দক্ষা পরমার দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়েঅংশগ্রহণ করে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। গ্রামটি চা-শ্রমিকদেরএবং এই চা-শ্রমিকরা সাপ্তাহিক মজুরি পেয়ে থাকে। প্রত্যেক মিউনিসিপ্যালিটির ট্যাক্সের কেবল মাত্র পঞ্চাশ শতাংশইজমা পড়ে। কিন্তু আট তারিখের এই ঘোষণার পরে মানুষজনের মধ্যে পুরনো নোটে বকেয়া জমাদেওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। এরকম বহুউদাহরণ আমরা পাচ্ছি, যার প্রত্যক্ষ সুফল আমাদের নজরে আসছে। ভাই-বোনেরা,গ্রাম ও চাষিভাইরা আমাদের দেশের অর্থব্যবস্থার মেরুদণ্ড স্বরূপ। আমি এই বছরেরফসলের বীজ বপনের হিসাব নিচ্ছিলাম। আমি দেখে খুব খুশি হলাম যে গম, ডাল বা তিল সবক্ষেত্রেই গতবছরের তুলনায় এবছরেরবীজ বপণের অঙ্কটা বেড়েছে। সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও চাষিভাইরা নতুন নতুন পথ বেরকরে নিয়েছেন। সরকারী তরফ থেকেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেখানেচাষিভাইদের এবং গ্রামগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশেরছোটো ব্যবসায়ীরা রোজগারের সুযোগও তৈরি করেন এবং আর্থিক উন্নয়নেও যোগদান করেন। লক্ষ-কোটি টাকা ‘মুদ্রা’ যোজনার মাধ্যমে এই সমস্ত ছোটো ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়েছে। কারণ অসংখ্য মানুষ যাঁরা এই ছোটো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তাঁরাই কোটি কোটি টাকারবাণিজ্যিক লেনদেনকে চালু রাখেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ফলে এই সমস্ত ছোটোব্যবসায়ীদেরও অসুবিধা হওয়া স্বাভাবিক। আপনারাও নিজেদের মোবাইল ফোনে ব্যাঙ্ক-এর অ্যাপ ডাউনলোড করুন। এগুলি প্রযুক্তিগত উপায়, যা নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং দ্রুত। আমি চাই আপনারা এই অভিযানকে সফল করতে শুধুমাত্র সাহায্য করুন তাই নয়, আপনারানেতৃত্বও দিন। আমার বিশ্বাস আপনারাই পারেন এই পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিতে। আমি শ্রমিক ভাই-বোনদেরও বলতে চাই যে, আপনাদের উপর অনেক শোষণ চালানোহয়েছে। কাগজে লেখা হচ্ছে এক বেতন আর হাতে যা দেওয়া হচ্ছে তা আরেক রকম। কখনও পুরোপারিশ্রমিক পাওয়া গেল তো দেখা গেল বাইরে একজন দাঁড়িয়ে আছে, তাকে ভাগ দিতে হবে আরশ্রমিক বাধ্য হয়ে এই শোষণকে জীবনের অঙ্গ বলে মেনে নেয়। এখনকার নতুন ব্যবস্থায় আমরাচাই যে ব্যাঙ্কে আপনার অ্যাকাউন্ট থাকুক, আপনার পারিশ্রমিকের অর্থ ব্যাঙ্কে জমাহোক্‌ যাতে ন্যূণতম মজুরির শর্ত পালিত হয়। আজ আমি বিশেষভাবে যুবক বন্ধুদেরসঙ্গে কথা বলতে চাই। আমরা গোটা দুনিয়ায়ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বলি যে – ভারত এমন দেশ যেখানে জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ পঁয়ত্রিশ বছরেরকম বয়সী। আপনারা, আমার দেশের যুবক ও যুবতীরা, আমি জানি আমার সিদ্ধান্ত আপনাদেরপছন্দ হয়েছে। আমি এটাও জানি যে আপনারা এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। আমি এও জানি যেএই ব্যাপারটাকে সদর্থকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে আপনারা অনেক অবদানও রাখবেন। কিন্তুবন্ধুরা, আপনারা আমার সত্যিকারের সৈন্য, সত্যিকারের বন্ধু। আমার বাহাদুর তরুণরা, আপনারা কি আমাকে সাহায্য করতে পারেন? শুধু আমারসঙ্গে থাকবেন, এইটুকুতে কাজ হবে না। আজকের দুনিয়া সম্পর্কে যে ধারণা আছে আপনাদের,তা পুরনো প্রজন্মের নেই। এমন হতে পারে যে আপনাদের পরিবারে বড় ভাইও এতটা জানে না আরমা-বাবা, কাকা-কাকিমা, মামা-মামীও সম্ভবতঃ এতটা জানেন না। আপনারা জানেন ‘অ্যাপ’ কীজিনিস, ‘অনলাইন ব্যাঙ্কিং’ কী, ‘অনলাইন টিকিট’ বুকিং কীভাবে হয়। আপনাদের জন্য এসবখুব সাধারণ ব্যাপার এবং আপনারা এর ব্যবহারও করেন। কিন্তু আজ দেশ যে মহান কাজটাকরতে চায়, আমাদের সেই স্বপ্ন হল ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’। এটা ঠিক যে একশো শতাংশক্যাশলেস সোসাইটি সম্ভব নয়। আর এই ব্যাপারেআপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা, সময় ও সংকল্প চাই। আর আপনারা আমাকে কখনও নিরাশ করবেন নাতা আমি জানি, কারণ আমরা সবাই হিন্দুস্থানের গরীব মানুষদের জীবন পরিবর্তনের ইচ্ছাপোষণ করা নাগরিক। আপনারা জানেন, ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’র জন্য, ডিজিট্যাল ব্যাঙ্কিং-এরজন্য বা মোবাইল ব্যাঙ্কিং-এর জন্য আজ কত সুযোগ রয়েছে। প্রত্যেকটা ব্যাঙ্ক অনলাইনসুবিধা দেয়। ওয়ালেটের সাদামাটা অর্থ হল – ‘ই’-মানিব্যাগ। বেশ কয়েকরকম কার্ডপাওয়া যায়। সাধারণ বৈশিষ্ট্য-সহ যে ফোন পাওয়া যায়, তাতেও ক্যাশট্রান্সফার হতে পারে। ধোপা হোক বা শাকসব্জী, দুধ, খবরের কাগজ, চা, ছোলা বিক্রেতা হোক– সবাই অনায়াসে এটা ব্যবহার করতে পারে। আর আমিও এই ব্যবস্থাকে আরও সরল করার উপরজোর দিয়েছি। সব ব্যাঙ্ক এতে সামিল হয়ে কাজটা করছে। আমার তরুণ বন্ধুরা, এতসব হওয়ারপরেও একটা গোটা প্রজন্ম এমন রয়েছে, যাঁরা এইসব ব্যাপারের সঙ্গে অপরিচিত। আর আপনারাসবাই, আমি ভালো ভাবেই জানি, এই মহান কাজে সক্রিয় রয়েছেন। হোয়াটস অ্যাপে যে ধরনেরক্রিয়েটিভ ম্যাসেজ দেন আপনারা – স্লোগান, কবিতা, গল্প, কার্টুন, নতুন নতুন কল্পনা,হাসি-ঠাট্টা – সব কিছুই দেখছি, আর চ্যালেঞ্জের মুখে তরুণ প্রজন্মের এই যে সৃজন শক্তি,এ দেখে মনে হচ্ছে, যেন এই ভারতবর্ষের বিশেষত্বই হলো যে কোনও এক যুগে যুদ্ধেরময়দানে ‘গীতা’র জন্ম হয়েছিল। কিন্তু আমার প্রিয় তরুণবন্ধুরা, আমি আবার একবার বলছি, এই কাজে আপনাদের সাহায্য প্রয়োজন আমার এবং আমারবিশ্বাস, আপনারা, দেশের কোটি কোটি তরুণ এই কাজ করবেন। দোকানদারকেও শেখান কীভাবে ব্যবসা করা যায়। আপনিস্বেচ্ছায় এই ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’-তে প্রবেশের, এই নোটের চক্কর থেকে সমাজকে বের করেআনার যে মহা-অভিযান, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার যে অভিযান, কালো টাকা থেকে মুক্তিপাওয়ানোর যে অভিযান, মানুষকে দুর্দশা আর সমস্যা থেকে মুক্ত করার যে অভিযান – তারনেতৃত্ব দিতে হবে আপনাকে। এক বড় বিপ্লব ঘটিয়েছে এই দেশ। আমার তরুণরা, আমি ফের একবার,আবারও একবার প্রবল আগ্রহ নিয়ে আপনাদের বলছি যে আপনারা এই অভিযানকে এগিয়ে নিয়েচলুন। আপনারা দেখেছেন যে এই সময়ের সবথেকে জনপ্রিয়শিল্পী অমিতাভ-জী স্বচ্ছতা অভিযানকে খুব পরিশ্রম করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন তো ‘মনকী বাত’-এর মাধ্যমে আপনাদের চিন্তা, আপনাদের ভাবনা পত্রের মাধ্যমে, ‘মাই গভ’-এ,‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ পৌঁছচ্ছে আর আপনাদের সঙ্গে জুড়ে রাখছে আমাকে। এখন তো বেলাএগারোটার সময় ‘মন কি বাত’ প্রচারিত হয় কিন্তু এই সম্প্রচার শেষ হওয়ার পর পরইপ্রাদেশিক ভাষায় এটা শোনানোর ব্যবস্থা শুরু হতে চলেছে। ভারতের প্রতিটি কোণে কোণে উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে দীপাবলীর উৎসব পালনকরা হয়। ভারত এমনই এক দেশ, যেখানে ৩৬৫ দিন ধরে দেশের কোনও না কোনও অংশে কোনও নাকোনও উৎসব চোখে পড়ে। কিন্তু এই সবকিছুমধ্যে আমরা একটা বিষয় ভালোভাবে দেখতে সক্ষম যে ভারতে এই যে সারাবছর ধরে উৎসবেরপুরো যাত্রাপথ, তার ব্যপ্তি, তার গভীরতা, প্রতিটি ব্যক্তির ওপর তার প্রভাব – এইসবকিছু একটিই মূল মন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত – ব্যক্তিকে সমষ্টির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বের প্রসার ঘটিয়ে, নিজেদের সীমিত চিন্তা-ভাবনার গণ্ডি পেরিয়েসমাজ থেকে মহাবিশ্ব পর্যন্ত বিস্তৃত করার এক প্রয়াস চলতেই থাকে। প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যাওয়া এক চিন্তার বিষয় হয়েউঠেছে। সেখানে ভারতবর্ষে উৎসবের এই পরম্পরা প্রকৃতি-প্রেমকে আরও শক্তিশালী করেতোলে। বালক থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষকে আরও শুভচিন্তাসম্পন্ন করে তোলে। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে ছুটিও মহাবিশ্বের সঙ্গে বিজ্ঞানকে যুক্ত করে পালনকরার এক পরম্পরা রয়ে গেছে। আজ যখন আমরা দীপাবলী উৎসব পালন করছি, যেমন আমি বললাম,আমাদের প্রতিটি উৎসব শিক্ষামূলক হয়, শিক্ষার বোধ নিয়ে আসে। সামাজিক দোষত্রুটির – ব্যক্তিগত দোষত্রুটির ছায়াথেকে প্রদীপ জ্বালিয়ে মুক্তির, অন্ধকার থেকে আলোয় পৌঁছনোর উৎসব দীপাবলী। একটা কথাআমরা সবাই ভালো করেই জানি, ভারতবর্ষের যে কোনও প্রান্তে চলে যান, ধনীর থেকে ধনীরঘর কিংবা গরীবস্য গরীবের ঝুপড়ি দীপাবলীর সময় প্রতি পরিবারে স্বচ্ছতা অভিযান চলছেদেখা যায়। ঘরের প্রতিটি কোণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। পৃথিবীর যে কোন জায়গার সরকার, সেখানকার সংসদ, শাসক – সবাইদীপাবলী উৎসবের অংশ হয়ে ওঠেন। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে দীপাবলী উৎসব পালনের ছবি অত্যন্তগর্বের সঙ্গে সারা বিশ্বের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। সিঙ্গাপুর সংসদের১৬ জন মহিলা সদস্য ভারতীয় শাড়ি পরে সংসদের বাইরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন আর সেই ছবিসোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই সব করা হয়েছে দীপাবলীর জন্য। দীপাবলীর সময় দুর্ঘটনার খবর, আগুন লেগেযাওয়ার খবর, অপমৃত্যুর খবর খুব দুশ্চিন্তা জাগায়। আর এক অসুবিধা হয় দীপাবলীর সময় –ডাক্তারবাবুরা অনেকেই দীপাবলীতে পরিবারের সকলের সঙ্গে দীপাবলী উৎসব পালন করার জন্যবাড়ি চলে যান। তা খালিএকদিনের নয়, গোবর্ধন পূজা, ভাইফোঁটা, লাভ-পঞ্চমী থেকে কার্তিক-পূর্ণিমা পর্যন্তদীর্ঘদিন ধরে তা চলে। প্রবাদ আছে যে বিশ্বের সমস্ত মানুষউদিত সূর্যের পূজা করেন। ছট পূজা এক এমন উৎসব যেখানে অস্তগামী সূর্যেরও পূজা হয়। এর মধ্যে একটি খুব বড় সামাজিক বার্তা আছে। আমি দীপাবলী উৎসবের কথা বলি, ছট পুজোর কথা বলি, এই উপলক্ষ্যেআপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানানোর, বিশেষ করে দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানানোর,কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করার সময় এটাই। গত কয়েক মাসে, যে সব ঘটনা ঘটেছে, আমাদেরসুখনিদ্রার জন্য আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতিটি জওয়ান নিজেদের সব কিছু ত্যাগ করেছেন। আমারমনোজগতে সেনা জওয়ান – সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানদের ত্যাগ, সাধনা, পরিশ্রম এক বিশেষপ্রভাব ফেলেছে। আর এজন্যই আমার মনে হয়েছে যে এই দীপাবলী সুরক্ষা বাহিনীর নামেঅর্পণ করার কথা। আমি দেশবাসীকে আহ্বান করেছি ‘সন্দেশ টু সোলজারস্‌’ নামে একঅভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য। কিন্তু আজ আমি মাথা নত করে বলতে চাই যে ভারতবর্ষে এমনকোনো মানুষ নেই, যাঁর মনে দেশের সৈন্যবাহিনীর জন্য অপরিসীম ভালোবাসা নেই,সেনাবাহিনী নিয়ে গর্ব, প্রতিরক্ষা বাহিনী নিয়ে গর্ব নেই। যেভাবে মানুষ তা প্রকাশকরেছেন তা দেশবাসীকে আরও শক্তি দেবে। সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানদের ক্ষেত্রে তো আমরাকল্পনাই করতে পারি না, আপনাদের একটি বার্তা তাঁদের কতটা শক্তি দেয়। হোক, ইন্দো-টিবেটান পুলিশ হোক, আসাম রাইফেল্‌স হোক, নৌবাহিনী, পদাতিকবাহিনী বা বায়ুসেনা হোক, বা কোস্ট গার্ড, আমি সবার নাম বলতে পারছি না, অগুনতি –আমাদের জওয়ানরা কী কী ধরনের কষ্ট সহ্য করেন তা ধারণার বাইরে। আমি সত্যি সত্যি দেশবাসীরপ্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। ‘সন্দেশ টু সোলজারস্‌’ –এই হ্যাশট্যাগে কতরকম বার্তা, কতরকম ভাবে যে এসেছে। শ্রীমান অশ্বিনী কুমার চৌহান একটি কবিতাপাঠিয়েছেন, আমি সেটি পড়ে শোনাতে চাই। ” আমার প্রিয় দেশবাসী,যাঁর বাপের বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ি – দুটি পরিবারের অনেকেই সেনাবাহিনীতে কর্মরত, এমনইএক বোন, শিবানী আমাকে একটি টেলিফোন মেসেজ পাঠিয়েছেন। আসুন এই সৈনিক পরিবারটি কীবলছে শুনি – “নমস্কারপ্রধানমন্ত্রীজী, আমি শিবানী মোহন বলছি। এই দীপাবলীতে যে ‘সন্দেশ টু সোলজার্‌স’অভিযান শুরু হয়েছে, তাতে আমাদের ফৌজি ভাইয়েরা বিশেষ উৎসাহ পেয়েছেন। আমার পরিবারএকটি সৈনিক পরিবার। আমার স্বামী একজন আর্মি অফিসার। আমার বাবা এবং শ্বশুরমশাইদু’জনেই আর্মি অফিসার ছিলেন। আমি বলতে চাই যে,আর্মি অফিসার এবং সৈনিকদের সঙ্গে তাঁদের পত্নী এবং গোটা পরিবারকেই যথেষ্ট ত্যাগস্বীকার করতে হয়। ” আমার প্রিয় দেশবাসীরা,একথা ঠিক যে, সেনা জওয়ানরা শুধু যে সীমান্তে প্রহরায় থাকেন তা-ই নয়, জীবনের নানাক্ষেত্রে তাঁদের সজাগ উপস্থিতি নজরে আসে। এইভাবেই হিমাচল প্রদেশ উন্মুক্ত শৌচালয় বিহীন রাজ্য হতেপেরেছে। সহজে সেখানে কেউযায় না। এই যুবকরা নিজেদের কাঁধেকরে ইঁট, সিমেন্ট এবং শৌচালয় বানানোর অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে সারাদিন পায়ে হেঁটে এইজঙ্গলে পৌঁছান। যেভাবে তাঁরা এইকাজটি হাতে নিয়েছেন, তাতে আমার মনে হয়, পুরো রাজ্যই খুব শিগগিরি কেরোসিন-মুক্ত হয়েযাবে। আমার প্রিয় দেশবাসী,মহাত্মা গান্ধী সবসময়েই আমাদের সকলের পথপ্রদর্শক। দেশ কী করবে, কীভাবে করবে,সেবিষয়ে তাঁর যাবতীয় মতাদর্শকে এখনও দৃষ্টান্ত হিসেবে মানা হয়। সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের একটার পর একটা পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের পুরনোধ্যানধারণা যেমনই হোক না কেন, সমাজে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বিভেদ দূর করতেই হবে। এই সুযোগআমাদের কন্যাদের কাছে ভারতীয় সমাজে বিভেদমুক্তির নিদর্শনস্বরূপ। সরকারের পক্ষ থেকেটীকাকরণ তো হয়, কিন্তু তবুও লক্ষ লক্ষ শিশু টীকাকরণ কর্মসূচি থেকে বাদ পড়ে যায়। রোগের শিকার হয়। ‘মিশন ইন্দ্রধনুষ’ টীকাকরণ এরকমই একটি অভিযান, যার মধ্যে বাদযাওয়া শিশুদেরও সামিল করা হচ্ছে। এই কর্মসূচিটি শিশুদের ভয়ানক রোগগুলি থেকে মুক্তিদেওয়ার জন্য শক্তি যোগায়। চেষ্টা চলছে ৫ কোটি পরিবারকে ধোঁয়া থেকেমুক্তি দেওয়ার। এই অভিযানও সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলছে। মুদ্রাযোজনা, স্ট্যাণ্ড-আপ যোজনা, জন ধন অ্যাকাউণ্ট – এই সবই সুদখোরদের হাত থেকে মুক্তিপাওয়ার এক সফল অভিযান। আধার কার্ডের মাধ্যমে অর্থ সরাসরি ব্যাঙ্কে পৌঁছে যাচ্ছে। প্রকৃত প্রাপকদের সরাসরি আর্থিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনে দালালদেরহাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সময় এসেছে। আমারপ্রিয় দেশবাসী, আগামী কাল ৩১শে অক্টোবর, এই দেশের মহাপুরুষ ভারতের একতাকে যিনিজীবনের মূলমন্ত্র করেছিলেন এবং করেও দেখিয়েছিলেন – সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলেরজন্মজয়ন্তী। মহাশয়, আপনি জানেন যে ৩১শে অক্টোবরসর্দার প্যাটেলের জন্মদিন। এবং যেটা আমরা সবাই জানি, যে ওঁর হত্যার পর দেশেরমধ্যে কীরকম ঘটনা ঘটেছিল। মহাশয়, আমি এটা বলতে চাই যে এরকম দুর্ভাগ্যপূর্ণ যেসবঘটনা ঘটে, তা কীভাবে আমরা বন্ধ করতে পারি। ” প্রিয়দেশবাসী, এই দুঃখ একজনের নয়। এক সর্দার – সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, ইতিহাস এইঘটনার সাক্ষী রয়েছে, চাণক্যের পর দেশকে একত্রিত করার মহান কাজ সর্দার বল্লভভাইপ্যাটেল করেছেন। কিন্তু এটাও তোএক দুঃখ, যে সর্দার সাহেব একতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, লড়াই করেছেন, দেশের একতাওঁর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, তার জন্য কতজনের অসন্তোষের শিকারও হয়েছেন, কিন্তু একতাররাস্তাকে কখনও ছাড়েন নি। একতার জন্য সারা জীবন যে মহাপুরুষ ব্যয় করে গেছেন, তাঁরই জন্মদিনে – সর্দারেরজন্মদিনে সর্দারদের উপর অত্যাচার, ইতিহাসের এই পৃষ্ঠা, আমাদের সবাইকে কষ্ট দেয়। কিন্তুএই সংকটের মধ্যেও, একতার মন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিবিধের মধ্যে একতাই দেশেরশক্তি। বিভেদের চিন্তাধারা, ভেদাভেদের প্রবৃত্তিথেকে আমরা যেন নিজেদের এবং দেশকে রক্ষা করি। সর্দার সাহেব আমাদের ‘এক ভারত’দিয়েছেন, আমাদের সবার দায়িত্ব হল ‘শ্রেষ্ঠ ভারত’ তৈরি করার। বর্তমানে কখনও কখনও আমরা‘আমূল’-এর নাম শুনি। ‘আমূল’-এর প্রত্যেক পণ্যর সঙ্গে আজ সমগ্র ভারত এবং ভারতবর্ষেরবাইরের মানুষও পরিচিত। কিন্তু কম লোকই জানেন যে দূরদর্শী সরদার সাহেব কো-অপারেটিভমিল্ক প্রোডিউসার’স-এর ইউনিয়ন তৈরির কল্পনা করেছিলেন। গুরু নানক তাঁর শিক্ষা-দীক্ষা সমগ্র মানবজাতির জন্য, শুধুমাত্র ভারতবর্ষের জন্যনয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য আজও সঠিক দিশা দর্শন করায়। সেবা, সত্য এবং প্রত্যেকেরভালো হোক, এটাই গুরু নানকের বার্তা। শান্তি, একতা এবং সদ্‌ভাবনা-ই তাঁর মূল মন্ত্রছিল। ভেদাভেদ, অন্ধ বিশ্বাস, কু-রীতি থেকে সমাজকে মুক্তি দেওয়ার অভিযান ছিল গুরুনানকের প্রত্যেক কথায়। আমি গুরু নানককেওআসন্ন প্রকাশ উৎসবে হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে প্রণাম জানাই। আমারপ্রিয় দেশবাসী, আরও একবার, দেশের সৈনিকদের নামে উৎসর্গীকৃত এই দীপাবলী, এই দীপাবলীউপলক্ষে আপনাদের অনেক অনেক শুভকামনা। আপনার স্বপ্ন, আপনার সংকল্প সবরকম ভাবে সফলহোক। আপনার জীবন সুখ-শান্তিতে ভরে থাকুক, এই শুভকামনা সকলকে জানাচ্ছি। কিছু দিন আগে জম্মু-কাশ্মীরের উরি সেক্টরে উগ্রপন্থী হামলায় আমরা দেশের আঠেরো জন বীর সন্তানকে হারিয়েছি। আমি এই সব বাহাদুর সৈনিককে প্রণাম জানাই এবং আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি। আর তাই আমি আমার দেশবাসীদের এটাই বলব, যা বলেছিলাম সেই দিনে,সেটারই পুনরাবৃত্তি করব যে, দোষীরা সাজা পাবেই। আমার প্রিয় দেশবাসী,আমাদের সেনাবাহিনীর উপর ভরসা আছে। আমাদের সেনাবাহিনী নিয়ে গর্বিত আমরা। আমি আজ কাশ্মীরেরনাগরিকদের সঙ্গেও বিশেষ ভাবে কথা বলতে চাই। কাশ্মীরের নাগরিকরা দেশবিরোধীশক্তিসমূহকে ভালোই চিনতে পারছে। আর যেই সত্যকে বুঝতে পারছে, তারা অমনি সেই সবশক্তি থেকে নিজেদের পৃথক করে নিয়ে শান্তির পথে চলা শুরু করেছে। কৃষকরাও চাইছেন যে তাদেরফলানো ফল, ফসল দেশের সব বাজারে পৌঁছে যাক। আর গত কয়েক দিনে ব্যবসা-বাণিজ্যসুচারুভাবে চলতেও শুরু করেছে। আমরা সব জানি – শান্তি, একতা আর সদ্ভাবনা আমাদের সবসমস্যা সমাধানের রাস্তাও বটে, আমাদের প্রগতির রাস্তাও বটে এবং আমদের উন্নয়নেররাস্তাও। আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য আমাদের উন্নয়নের নব-নব শিখর পার করতে হবে। আমারবিশ্বাস যে আমরা একসঙ্গে বসে সব সমস্যার সমাধান খুঁজব, সমাধানের পথ বের করব এবংসঙ্গে-সঙ্গে কাশ্মীরের ভাবী প্রজন্মের জন্য উন্নত পথও তৈরি করব। কাশ্মীরেরনাগরিকদের সুরক্ষা এই প্রশাসনের দায়িত্ব। আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনকে কিছুব্যবস্থা নিতে হয়। কখনও কখনওআমরা যা ভাবি তার থেকে ভিন্ন চিন্তার মানুষজন অন্য ভাবনা পোষণ করেন। সোশ্যালমিডিয়ায় আজকাল অনেক কিছু জানার সুযোগ হয় আমার। হিন্দুস্থানের প্রতিটি কোণ থেকে, সবধরণের মানুষের ভাবনাচিন্তা জানার সুযোগ পাওয়া যায় আর এতে গণতন্ত্রের শক্তি বৃদ্ধিপায়। কিছু দিন আগে একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্র হর্ষবর্ধন আমার কাছে একদম অন্য ধরনের একভাবনা পাঠিয়েছে। সে লিখেছে – ‘উরিতে উগ্রপন্থী হামলার পর আমি খুব বিচলিত হয়েপড়েছি। আমার মনেরমধ্যে এই প্রশ্ন উঠছিল যে দেশহিতের জন্য আমি কী কাজ করতে পারি। আমি সঙ্কল্প নিলামযে রোজ আমি বাড়তি তিন ঘন্টা পড়াশুনো করব। দেশের কাজে আসতে পারি এমন যোগ্য নাগরিকহয়ে উঠব। ’ভাই হর্ষবর্ধন, আক্রোশেরএই বাতাবরণে এবং এত কম বয়সে তুমি যে সুস্থভাবে ভাবতে পারছ, এটাই আমার কাছেআনন্দের। তখন লাল বাহাদুর শাস্ত্রীজি গোটাবিশ্বের কাছে দেশের এই মনোভাব পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আর উনি ‘জয় জওয়ান, জয়কিষাণ’ মন্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রেরণা দিয়েছিলেন, দেখিয়েছিলেন দেশের জন্যকীভাবে কাজ করতে হয়। বোমা আর বন্দুকের আওয়াজের মধ্যে দেশভক্তি প্রদর্শনের আরও একটারাস্তা যে আছে তা দেখিয়েছিলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রীজি। মহাত্মা গান্ধীও যখন আন্দোলনপরিচালনা করতেন, যখন আন্দোলন পৌঁছত তীব্রতায়, একটা অভিমুখ গঠনের প্রয়োজন হত, তখনউনি আন্দোলনের এই তীব্রতাকে সমাজের ভেতরে গঠনমূলক কাজকে আরও সংগঠিত করতে ব্যবহার করতেনঅত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে। আমরা সবাই – সেনাবাহিনী নিজেদের দায়িত্ব পালন করুক,প্রশাসনে থাকা মানুষজন নিজেদের কর্তব্য পালন করুক আর আমরা দেশবাসীরা এই দেশভক্তিরআবেগকে সঙ্গে নিয়ে কিছু-না-কিছু গঠনমূলক কাজে অবদান রাখি। তাহলেই দেশ পৌঁছবে নতুনউচ্চতায়। আপনারা দু’জনই শুধু নন, দেশের প্রতিটি ব্যক্তির একটা ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট গড়েউঠেছে প্যারা-অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণকারী অ্যাথলিটদের প্রতি। সম্ভবত খেলাধুলোর ঊর্ধেউঠে প্যারা-অলিম্পিক্স আর আমাদের খেলোয়াড়দের প্রদর্শন, মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে,দিব্যাঙ্গদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। আর আমি আমাদের বিজয়ীবোন দীপা মালিকের এই কথাটা কখনও ভুলতে পারব না। যখন সে পদক পেল তখন সে বলল, ‘এইপদকের মাধ্যমে আমি বিকলাঙ্গতাকেই হারিয়ে দিয়েছি। ’ এই কথাটায় প্রচুর শক্তি আছে। এবার প্যারা-অলিম্পিক্সে আমাদের দেশ থেকে তিন জন মহিলা সহ উনিশ জন অ্যাথলিট অংশনিয়েছিলেন। অন্যান্য খেলার সঙ্গে দিব্যাঙ্গদের খেলার তুলনা যদি করি তবে শারীরিকক্ষমতা, খেলার কৌশল এই সব ছাপিয়ে বড় কথা হয়ে ওঠে – ইচ্ছা শক্তি, সঙ্কল্পের শক্তি। আপনারা জেনে সুখী হবেনএবং আশ্চর্য হবেন যে আমাদের খেলোয়াড়রা এ যাবৎ সর্বশ্রেষ্ঠ প্রদর্শন করে চারটি পদকজিতেছেন – এর মধ্যে দুটি স্বর্ণপদক, একটি রৌপ্য পদক এবং একটি ব্রোঞ্জ পদক রয়েছে। স্বর্ণপদকজয়ী দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়া বর্শা ছোড়ায় দ্বিতীয় বার স্বর্ণপদক আনলেন বারোবছর পরে। উনি জন্ম থেকে দিব্যাঙ্গ ছিলেন না। বৈদ্যুতিক শকের কারণে ওনার একটা হাত বাদ যায়। আপনারা ভাবুন, যে ব্যক্তি তেইশ বছর বয়সে প্রথম স্বর্ণপদক আর পঁয়ত্রিশ বছর বয়সেদ্বিতীয় স্বর্ণপদক পান তিনি জীবনে কত বড় সাধনা করেছেন। মরিয়প্পন থঙ্গাভেলু হাইজাম্পে স্বর্ণ পদক জিতেছেন। থঙ্গাভেলু মাত্র পাঁচ বছর বয়সে নিজের ডান পা হারান। দারিদ্র্য ওনার সঙ্কল্পের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি। উনি বড় শহর থেকে আসেন নি,মধ্যবিত্ত স্বচ্ছ্বল পরিবার থেকেও আসেন নি। একুশ বছরের জীবনে যাবতীয় কাঠিণ্যেরসঙ্গে লড়াই করে, শারীরিক সমস্যা সত্বেও সঙ্কল্পের শক্তিতে দেশকে পদক এনে দিয়েছেন। অ্যাথলিটদীপা মালিকের নামের সঙ্গে তো জুড়ে গিয়েছে অনেক বিজয়চিহ্ন। প্যারা-অলিম্পিক্সের পদকের গুরুত্ব তো রয়েইছে আমাদেরদেশে, আমাদের সমাজে, আমাদের চারপাশে। আমাদের দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনেদের প্রতি আমাদেরদৃষ্টিভঙ্গী বদলের ক্ষেত্রে এই সব পদক অনেক বড় কাজ করে দিয়েছে। খুব কম মানুষইজানেন যে এবারের প্যারা-অলিম্পিক্সে দিব্যাঙ্গজনেরা কেমন পরাক্রম দেখিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আমি হতচকিত হয়ে গেলাম যখন জানলাম যেদিব্যাঙ্গদের মধ্যে চতুর্থ হয়েছেন যিনি, যিনি কোনও মেডেল পান নি, তিনি সাধারণদৌড়বীরদের মধ্যে যিনি স্বর্ণপদক পেয়েছেন তার থেকে কম সময়ে দৌড়েছেন। আমি আরও একবার,আমাদের সব খেলোয়াড়দের অনেক-অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আগামী দিনে ভারত প্যারা-অলিম্পিক্সেরজন্য এবং তার বিকাশের জন্য এক সুচারু যোজনা বানানোর পথে এগোচ্ছে। আমার প্রিয় দেশবাসী, গত সপ্তাহেগুজরাতের নবসারী-তে আমার কতগুলো আশ্চর্য অভিজ্ঞতা হয়েছে। আটঘণ্টার মধ্যে ছ’শো দিব্যাঙ্গ, যাঁরা শুনতে পান না, ওঁদের শোনার জন্য মেশিন যোগানোরসফল ব্যবস্থা হয়েছিল। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ এই ঘটনাটি স্থান পেয়েছে। একদিনে দিব্যাঙ্গদের দ্বারা তিন-তিনটি বিশ্বরেকর্ড স্থাপন আমাদের দেশবাসীর কাছেগৌরবের কথা। প্রিয়দেশবাসী, দু’বছর আগে, ২-রা অক্টোবর পূজণীয় বাপুর জন্মজয়ন্তীতে আমরা ‘স্বচ্ছ ভারতমিশন’ শুরু করেছিলাম। ওই দিনও আমি বলেছিলাম, স্বচ্ছতা, পরিচ্ছন্নতা আমাদের স্বভাবহওয়া দরকার। প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হওয়া উচিত, অপরিচ্ছন্নতার প্রতি ঘৃণার একপরিবেশ সৃষ্টি করা। আগামী ২-রা অক্টোবর যখন দু’বছর পূর্ণ হচ্ছে, আমি বিশ্বাসেরসঙ্গে বলতে পারি, ১২৫ কোটি দেশবাসীর হৃদয়ে স্বচ্ছতার প্রতি সচেতনতার বৃদ্ধি ঘটেছে। আমি বলেছিলাম, স্বচ্ছতার দিকে এক কদম এগিয়ে চলুন। আজ আমরা সবাই বলতে পারি, প্রত্যেকেইএক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস নিশ্চয়ই করেছেন। অর্থাৎ দেশ ১২৫ কোটি কদম স্বচ্ছতারদিকে এগিয়েছে। গণমাধ্যমের বন্ধুরাও এক্ষেত্রে সদর্থকভূমিকা পালন করেছেন। আমি সম্প্রতি গুজরাত গিয়েছিলাম,সেখানে আমাকে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মহাত্মা গান্ধীর জন্মস্থান পোরবন্দর এই বছর২-রা অক্টোবর ODF -এর লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। আমি যুবক বন্ধুদের – যাঁরা আজকালপ্রযুক্তির ব্যবহারে অভ্যস্ত, বিশেষ করে তাঁদের জন্য একটি নতুন প্রকল্প শুরু করতেচাই। আপনাদের শহরে স্বচ্ছতা মিশন কি অবস্থায় রয়েছে তা জানার অধিকার সবার রয়েছে। সেইজন্য ভারত সরকার একটি টেলিফোন নাম্বার দিয়েছে – 1969 । আমরা জানি যে,১৮৬৯ সালে মহাত্মা গান্ধীর জন্ম হয়েছিল। আর ২০১৯ সালে আমরা মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশতবার্ষিকী অর্থাৎ ১৫০-তমজন্মজয়ন্তী পালন করতে চলেছি। এই 1969 নম্বরে আপনি ফোন করে শুধু মাত্র নিজের শহরের শৌচালয়নির্মাণের পরিসংখ্যান জানতে পারবেন তা নয়, নতুন শৌচালয় বানানোর আবেদনও জানাতেপারবেন। জেলাগুলোতে ‘স্বচ্ছভারত কর্মী’-রূপে তাঁদের পাঠানো যেতে পারে। রাসায়নিক সারকোম্পানিগুলিকে বলা হয়েছে যে Waste থেকে যে Compost তৈরি হয়েছে, সেগুলো তারা কিনুক। যে কৃষক Organic Farming -এ যেতেইচ্ছুক, তাঁদের প্রয়োজনীয় রসদ যোগান দিক। যাঁরা নিজেদের জমির স্বাস্থ্য শোধরাতেচান, মাটির স্বাস্থ্যের চিন্তা যাঁরা করেন, যাঁদের রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলেযথেষ্ট লোকসান হয়ে গেছে, তাঁদেরও যদি কিছু মাত্রায় এই রকম সারের দরকার হয়, তাহলেতা তাদের সরবরাহ করুক। শ্রীমান অমিতাভ বচ্চন এই কাজের জন্য ব্র্যাণ্ড অ্যামবাসেডররূপে যোগদান করেছেন। আমি তোদেখছি যে স্বচ্ছতা নিয়ে নিরন্তর নতুন নতুন সংবাদ আসছে। একদিন আমি খবরের কাগজেপড়লাম – গুজরাট টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা ১০৭-টি গ্রামে গিয়ে শৌচালয়নির্মাণে সচেতনতার অভিযান চালিয়েছেন। ভারত সরকারও নিজেদের বিভিন্ন বিভাগে এক বছরের ক্যালেণ্ডার তৈরি করেছে। সাধারণ নাগরিকদের কাছে আমার অনুরোধ, এইসব সরকারী বিভাগগুলি যে কাজকর্ম করে, আপনারা যদি কোনও ভাবে তার সঙ্গে সম্পর্কিতহন, তাহলে আপনারাও এই অভিযানে যুক্ত হন। আমি আশা করি এই অভিযানে সমস্ত নাগরিকসাধ্যমত যোগদান করবেন। আগামী ২-রা অক্টোবর মহাত্মা গান্ধী এবং লাল বাহাদুরশাস্ত্রীর জন্ম-জয়ন্তী। আমি গান্ধী জয়ন্তীথেকে দীপাবলী পর্যন্ত খাদি থেকে প্রস্তুত কিছু না কিছু সামগ্রী কেনার জন্য অনুরোধকরি। এবারও আমি অনুরোধ করবো যে প্রত্যেক পরিবার যেন খাদির কোনো সামগ্রী কেনেন,যাতে গরীবের ঘরেও দীপাবলীর প্রদীপ জ্বলে। আগামী ২-রা অক্টোবর যদিও রবিবার, কিন্তুএকজন নাগরিক হিসেবে আমরা কী কোথাও না কোথাও স্বচ্ছতা অভিযানে অংশ নিতে পারি? স্বচ্ছতার কাজে আপনারা অন্তত দু’চার ঘণ্টার জন্য কায়িক পরিশ্রম করুন এবং তার একটিফোটো ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ শেয়ার করুন। ভিডিও হলে তাও শেয়ার করতে পারেন। আমাদেরএই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে এই অভিযান শক্তি পাবে, নতুন গতি পাবে। আসুন, আমরামহাত্মা গান্ধী এবং লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে স্মরণ করে দেশের জন্য ভালো কিছু করারসঙ্কল্প করি। প্রিয় দেশবাসী, কেউ স্বীকৃতি দিক বানা দিক জীবনে দান করার মধ্যে এক আলাদা আনন্দ আছে, এক অদ্ভুত খুশি আছে। বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী, জামা-কাপড়ইত্যাদি জোগাড় করে অভাবগ্রস্ত লোকেদের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হবে তাঁদের অভিযানেরউদ্দেশ্য। আমি যখন গুজরাটে ছিলাম, তখন দেখেছি যে, আমাদের কর্মকর্তারা বিভিন্নপরিবারের কাছে গিয়ে তাঁদের বাড়িতে যে পুরনো খেলনা আছে তা সংগ্রহ করে গরীব বস্তিতেযে সব অঙ্গণওয়ারি আছে, সেখানকার বাচ্চাদের দিত। এই উৎসব দানের উৎসব। যে সকল যুবকবৃন্দ এইকাজ করছেন, তাঁদের আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। প্রিয়দেশবাসী, আজ ২৫-শে সেপ্টেম্বর পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্ম-জয়ন্তী আর আজ থেকেইতাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালন শুরু হচ্ছে। উন্নয়নের লাভ গরীব থেকেগরীবতম ব্যক্তি কী ভাবে পেতে পারে? সব হাতে কাজ এবং সব জমিতে জল – এই দুই শব্দেতিনি তাঁর অর্থনৈতিক ভাবনাকে ব্যক্ত করেছিলেন। তাঁর জন্মশতবর্ষকে দেশ ‘গরীব কল্যাণবর্ষ’ রূপে পালন করবে। উন্নয়নের ফলগরীবরা কীভাবে লাভ করবে সেই বিষয়ে সমাজ, সরকার এবং অন্যান্য সকলকে মনোযোগী হতে হবে– তাহলেই আমরা দেশকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে পারব। ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানেরদু’বছর পূর্তিতে এই অনুষ্ঠানকে আপনারা যেভাবে উৎসাহ দিয়েছেন, শক্তি জুগিয়েছেন,আশীর্বাদ করেছেন, তার জন্য সমস্ত শ্রোতাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমিআকাশবাণীকেও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে তারা শুধু অনুষ্ঠানটি প্রচারই করেননি, সব ভাষাতেএই অনুষ্ঠান শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ারও সব রকম প্রচেষ্টা করেছেন। আমি সেই সবদেশবাসীকেও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যাঁরা ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে চিঠি লিখে, পরামর্শদিয়ে, সরকারী ব্যবস্থার দোষ-ত্রুটিগুলি প্রকাশ করেছেন। আকাশবাণী এই সমস্তচিঠিপত্রগুলি নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান তৈরি করেছে, সরকারী কর্মচারীদের অনুষ্ঠানে সামিলকরে সমস্যাগুলি সমাধানের একটা মঞ্চ তৈরি করেছে। এই কারণে ‘মন কি বাত’ কেবলমাত্রপনেরো-কুড়ি মিনিটের একটি ভাষণমাত্র নয়, সমাজ পরিবর্তনের এক নতুন মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আমার প্রিয়দেশবাসী, আগামী সপ্তাহে নবরাত্রি এবং দুর্গাপূজা, বিজয়াদশমীর উৎসব, দীপাবলীরপ্রস্তুতি শুরু হচ্ছে। নবরাত্রি বা দুর্গাপূজা – শক্তিরএই আরাধনা সমাজের ঐক্যের আরাধনা হতে হবে। একের সঙ্গে এক-কে যুক্ত করার উৎসব হতেহবে। তবেই সেটা হবে আসল শক্তির সাধনা আর তখনই আমরা মিলিতভাবে বিজয় উৎসব পালন করতেপারব। আসুন, শক্তির আরাধনা করি। একতার মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলি। কাল, ২৯-শেঅগাস্ট হকির জাদুকর ধ্যানচাঁদের জন্মদিন। এই দিনটি সারা দেশে ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’হিসেবে পালিত হয়। আমি ধ্যানচাঁদজীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আর একই সঙ্গে আপনাদেরসবাইকে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছি। তিনি ১৯২৮, ১৯৩২ এবং ১৯৩৬ সালে ভারতেরহয়ে অলিম্পিক হকিতে স্বর্ণপদক জয়ের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আমরা সবাই ক্রিকেট-প্রেমী। ব্র্যাডম্যানের নাম জানি। এক বার কলকাতায় এক ম্যাচের সময়, বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ধ্যানচাঁদজীর মাথায় হকি স্টিক দিয়ে আঘাত করে। সেসময় ম্যাচ শেষ হতে আর মাত্র ১০মিনিট সময় বাকি। ধ্যানচাঁদজী ওই ১০ মিনিটে তিনটি গোল করেন আর বলেন, আমি আঘাতেরবদলা নিলাম – গোল করে। আমার প্রিয়দেশবাসী, যখনই ‘মন কি বাত’-এর সময় আসে, তখনই মাই-গভ পোর্টালে বা নরেন্দ্র মোদীঅ্যাপে অনেক অনেক পরামর্শ আসে। শ্রীমান অজিত সিং ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ লিখেছেন, দয়া করে এবার ‘মন কি বাত’-এমেয়েদের শিক্ষা এবং খেলাধূলায় তাঁদের অংশগ্রহণের বিষয়ে অবশ্যই বলবেন। কারণ রিওঅলিম্পিক্‌সে পদক জয় করে তাঁরা দেশকে গৌরবান্বিত করেছেন। শ্রীমান শচীন লিখেছেনআপনাকে অনুরোধ, এবার ‘মন কি বাত’-এ সিন্ধু, সাক্ষী আর দীপা কর্মকারের কথা অবশ্যইউল্লেখ করবেন। মনে হচ্ছে যেন ভারতবর্ষের নাম উজ্জ্বল করার ভার সারা দেশের মেয়েরাই তাঁদেরকাঁধে তুলে নিয়েছেন। ‘মাই-গভ’পোর্টালে শিখা ঠাকুর লিখেছেন, আমরা অলিম্পিক্‌সে আরও ভাল ফল করতে পারতাম। তিনিলিখেছেন, শ্রদ্ধেয় মোদী স্যার, সব থেকে আগে রিওতে দুটি পদক জয়ের জন্য আপনাকেধন্যবাদ জানাই। কিন্তু এইসঙ্গে আমি এবিষয়েও আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই – আমাদেরঅন্যান্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মান কি ভাল ছিল? এর উত্তর হল – ‘না’। আর এইকাজ আপনি ছাড়া আর কেউ ভাল ভাবে করতে পারবে না। এরকমই শ্রীমানসত্যপ্রকাশ মেহরা ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ লিখেছেন, ‘মন কি বাত’-এ আমাদের অতিরিক্তশিক্ষাগত কার্যক্রমের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশু ও যুবক-যুবতীদেরখেলাধূলার বিষয়ে। এই একই রকম ভাব প্রকাশ করেছেন হাজারও মানুষ। এটা তো অস্বীকারকরার কোনও উপায় নেই যে আমরা আশানুরূপ ফল প্রদর্শন করতে পারিনি। কিন্তু এটাও সত্যি যেপদক না পেলেও যদি আমরা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করি, তো দেখব, বেশ কিছু বিষয়ে ভারতেরখেলোয়াড়রা প্রথমবার অত্যন্ত পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। দেখুন, শ্যুটিং-এ আমাদের অভিনববিন্দ্রা চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন এবং খুব অল্প ব্যবধানের জন্য পদক তাঁরহাতছাড়া হয়ে গেছে। জিমন্যাস্টিক্‌সে দীপা কর্মকারও অত্যন্ত ভালো ক্রীড়া প্রদর্শনকরেছেন এবং চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন। খুব কম ব্যবধানে পদক তাঁর হাতছাড়া হয়। কিন্তু একথা আমরা কীভাবে ভুলব যে তিনি জিমন্যাস্টিক্‌সে প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনিঅলিম্পিকসের জন্য এবং অলিম্পিক্সের ফাইনাল পর্বের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন। মোটামুটি এরকমই ঘটনা ঘটেছে সানিয়া মির্জা এবং রোহন বোপান্না জুটির ক্ষেত্রেও। অ্যাথলেটিক্‌সে এবার আমরা ভাল ফল প্রদর্শন করেছি। বেশ কিছু খেলোয়াড়, যেমন বলা যায় অদিতি অশোক, দত্তু ভোকনল, অতনু দাস এমনআরও অনেকে আছেন, যাঁরা বেশ ভাল ক্রীড়া প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু আমার প্রিয়দেশবাসী, আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে। যা আমরা এবার করে এসেছি তাই যদি করতেথাকি, তাহলে হয়ত আমরা আবার নিরাশ হব। আমি একটি কমিটি তৈরির কথা ঘোষণা করেছি। বিশ্বের কোথায় কীভাবে খেলাধূলার অনুশীলন হচ্ছে তা নিয়ে ঘরোয়া ভাবে আমরা গভীরে গিয়েপর্যালোচনা করব। আমরা কীভাবে আরও ভাল করতে পারি, তার এক রোডম্যাপ তৈরি করব। ২০২০,২০২৪, ২০২৮ সাল পর্যন্ত ফলাফলের ভাবনা নিয়ে আমরা পরিকল্পনা তৈরি করেছি। রাজ্যসরকারগুলি নিজেরা পর্যালোচনা করে তাদের পরামর্শ পাঠাক। আমার প্রিয়দেশবাসী, ৫-ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস। এই সব ছোট ছোট ছেলেদেরকাছ থেকে অনেক কিছু শিখি। আমার কাছে ৫-ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস যেমন, তেমনইশিক্ষাদিবসও বটে। কিন্তু এবার আমাকে G-20summit –এ যেতে হচ্ছে। তাই আমার ইচ্ছে হচ্ছে আজ ‘মন কিবাত’-এ আমি আমার মনের এই অনুভূতিটুকু প্রকাশ করি। জীবনে মা-রস্থান যতটা, ততটাই শিক্ষকের স্থান। এই কদিন রিও অলিম্পিক্‌সের পর, পুল্লেলা গোপীচাঁদেরকথা বার বার আলোচনা হচ্ছে। উনি একজন খেলোয়াড় ঠিকই, কিন্তু উনি কত ভাল প্রশিক্ষকতার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। আমি আজ গোপীচাঁদকে এক খেলোয়াড়-এর থেকেও বেশি এক উত্তমপ্রশিক্ষক হিসাবে দেখছি। আর শিক্ষক দিবসে পুল্লেলা গোপীচাঁদকে, তাঁর সাধনা, খেলারপ্রতি তাঁর আত্মদান আর তাঁর শিষ্যের সফলতায় তাঁর নিজস্ব পদ্ধতিতে আনন্দ পাওয়াকেসম্মান জানাই। আমাদের সবার জীবনে শিক্ষকের ভূমিকা সবসময়ই আমরা অনুভব করি। তিনি জীবনে যেখানেই পৌঁছন নাকেন, নিজে সবসময় শিক্ষক হিসাবে দিন কাটানোর চেষ্টা করতেন। আমি কখনও কখনওভাবি যে আমার তো আমার শিক্ষকের অনেক কথা মনে আছে। কারণ আমাদের ছোট্ট গ্রামে উনিইছিলেন আমাদের আদর্শ। আমি আজ আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি যে আমার এক শিক্ষক, যাঁর এখনপ্রায় নব্বই বছর বয়স হয়ে গেছে, আজও প্রতি মাসে তাঁর নিজের হাতে লেখা চিঠি আসে আমারকাছে। আপনাদের শিক্ষকদের সঙ্গে ফটো থাকলে, আপনাদের শিক্ষকদের সঙ্গেকোনও ভাল ঘটনা ঘটে থাকলে, আপনাদের শিক্ষকদের পাঠানো কোনও বার্তা থাকলে অবশ্যইআপনারা ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ তা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিন। দেখুন, দেশে শিক্ষকদেরঅবদান শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখা অত্যন্ত মূল্যবান। আমার প্রিয়দেশবাসী, কিছুদিন পরেই গণেশ উৎসব পালিত হবে। ভগবান গণেশ সকল বিঘ্ন দূর করেন আরআমরা সকলেই চাই আমাদের দেশ, সমাজ, পরিবার, সকল ব্যক্তি এবং তাঁদের জীবন নির্বিঘ্নথাকুক। আমরা যখনই গণেশ উৎসবের কথা বলি, তখন লোকমান্য তিলকের নাম স্মরণে আসা খুবইস্বাভাবিক। লোকমান্য তিলক-ই গণেশ উৎসবকে সর্বজনীন রূপ প্রদান করেছিলেন। সর্বজনীন গণেশ উৎসবের মাধ্যমে সমাজজীবনকে প্রভাবিত করে এমন সকল বিষয়ের আলোচনা হওয়া উচিত যাতে এই সময়ে আয়োজিতঅনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সমাজ নতুন শক্তিতে, নতুন বলে বলীয়ান হয়ে ওঠে। আজকাল তো কেবলমাত্র মহারাষ্ট্রই নয়, দেশের সর্বত্র গণেশ উৎসব পালিত হয়। বিশেষ করেযুবকরা এই উৎসব পালনের জন্য উৎসাহের সঙ্গে প্রস্তুতি শুরু করেন। কিছু মানুষতো এখনওপর্যন্ত লোকমান্য তিলক যে ভাবনা নিয়ে এই উৎসব শুরু করেছিলেন তা অনুসরণ করতে সচেষ্টথাকেন। বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা সভা, রচনা প্রতিযোগিতা, আল্পনা প্রতিযোগিতারআয়োজন করা হয়। প্রতিমার শোভাযাত্রায় আমাদের সমাজকে প্রভাবিত করে এমন সব বিষয়গুলিকেসুন্দর ভাবে উপস্থাপিত করা হয়। এই সর্বজনীন গণেশ উৎসবে একপ্রকার লোকশিক্ষার প্রচারঅভিযান চালানো হয়। লোকমান্য তিলক ‘স্বরাজ আমাদের জন্মসিদ্ধ অধিকার’ আমাদের এইপ্রেরণাদায়ক মন্ত্রটি দিয়েছিলেন। এই মন্ত্র-কে সঙ্গে নিয়ে আমরা কি এগিয়ে যেতেপারি না? আসুন, আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি। উৎসব বিনা আমাদের জীবন অসম্ভব। কিন্তুসময়ের দাবী অনুযায়ী তার মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। এবার আমাকে অনেকেই বিশেষ করেগণেশ উৎসব এবং দুর্গাপুজা নিয়ে অনেক কিছু লিখেছেন। তাঁরা বিশেষ করে পরিবেশ বিষয়েখুব চিন্তিত। পরিবেশের সুরক্ষা, নদী এবং পুষ্করিণীসুরক্ষা এবং এর ফলে দূষণ থেকে জলে থাকা ছোট ছোট জীবের সুরক্ষা তো ঈশ্বরের সেবারইনামান্তর। ভগবান গণেশ – বিঘ্নহারী। তাই আমরা এমন ধরণের মূর্তি তৈরি করব না যাবিঘ্ন সৃষ্টি করে। আমি জানি না আপনারা আমার এই কথাগুলি কীভাবে নেবেন। কিন্তুকেবলমাত্র আমি একাই একথা বলছি না, আরও অনেকেই বলছেন। পরিবেশ-বান্ধব গণেশ উৎসব – এটাও তো একটি সমাজ সেবা। দুর্গাপূজার এখনও কিছু সময় বাকি আছে। আমি আপনাদের সবাইকে গণেশ চতুর্থীর অনেক অনেকশুভেচ্ছা জানাছি। আমার প্রিয়দেশবাসী। ভারতরত্ন মাদার টেরেসা-কে আগামী ৪ঠা সেপ্টেম্বর ‘সন্ত’ উপাধিতে ভূষিত করাহবে। মাদার টেরেসা তাঁর পুরো জীবনকাল ভারতের গরীব মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছিলেন। নিজেকে গরীবের সেবায় উপযুক্ত করে তোলার জন্য অনেক প্রয়াস করেছেন। এই মাদার টেরেসার ‘সন্ত’ উপাধি পাওয়ায় সকল ভারতবাসীর গর্বিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। ৪-ঠা সেপ্টেম্বর যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে, তাতে অংশগ্রহণের জন্য একশো পঁচিশকোটি ভারতবাসী এবং ভারত সরকারের তরফে আমাদের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের নেতৃত্বেআধিকারিকদের এক প্রতিনিধি দল সেখানে উপস্থিত থাকবেন। সন্ত, ঋষি, মুনি এবংমহাপুরুষদের কাছ থেকে আমরা সব সময় কিছু শিখতে পারি। আমি আশা করি আমরা নতুন কিছুপাবো, শিখতে থাকবো এবং ভালো কিছু করব। জনশক্তিকে ঈশ্বরের এক রূপ হিসেবে মানা হয়। বিগত দিনেভারত সরকার পাঁচটি রাজ্যসরকারের সঙ্গে সংযুক্ত ভাবে স্বচ্ছ গঙ্গার জন্য গঙ্গাসাফাই অভিযানে সাধারণ লোককে যুক্ত করার এক সফল প্রচেষ্টা করেছে। এলাহাবাদে উপস্থিত গ্রামপ্রধানরা মা-গঙ্গাকে সাক্ষী রেখে শপথ নিয়েছেন তাঁরা নিজনিজ গ্রামে উন্মুক্ত স্থানে শৌচকার্য করার প্রচলিত অভ্যাস এখনই বন্ধ করাবেন,শৌচালয় বানানোর অভিযান চালাবেন, গঙ্গাকেনোংরা হতে দেবেন না, গঙ্গা সাফাই অভিযানে সম্পূর্ণরূপে যোগদান করবেন। আমি ভারত সরকারের ওই সকলমন্ত্রক এবং মন্ত্রীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি যাঁরা এই অনুষ্ঠানকে সম্ভব করেছেন। আমিপাঁচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, যাঁরা গঙ্গা সাফাই অভিযানে সাধারণজনতাকে সংযুক্ত করে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। সাত থেকে সতেরো বছর বয়সী বালক-বালিকারা এই কাজকরেছে। এই চিঠির এমন আবেগপ্রবণ প্রভাব পড়েছে যে সেই চিঠি পাওয়ার পরের দিনই যখনছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে এসেছে, তাদের হাতে কিছু পিতা-মাতা স্কুলের শিক্ষকেরউদ্দেশে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা একটা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে বাড়িতে শৌচাগারবানিয়ে দেবেন। কর্ণাটকের কোপ্পাল জেলার ষোল বছর বয়সী একটি মেয়েমল্লম্মা নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহে বসেছে। মল্লম্মার মতো মেয়ের জেদের শক্তিআর মহম্মদ শাফির মতো গ্রামপ্রধান সত্যিই উল্লেখযোগ্য। সমস্যার সমাধানের জন্যকীভাবে রাস্তা তৈরি করা যায় – এটাই তো জনশক্তি। আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘স্বচ্ছ ভারত’ এখন সমস্ত ভারতবাসীরস্বপ্ন হয়ে গেছে। কারও কারও কাছে এটা একটা সংকল্প। আর কিছু ভারতবাসী এটাকেই তাঁদেরউদ্দেশ্য হিসাবে বেছে নিয়েছেন। এর একটি প্রতিযোগিতা হবে এবং ২-রা অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তী-র দিনে যিনি বিজয়ীহবেন, তাঁকে পুরষ্কৃত করা হবে। আমার প্রিয় দেশবাসী,ভারত সব সময় চেষ্টা করে আসছে যে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীরহোক, সহজ হোক, প্রাণবন্ত হোক। কিছুদিন আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটলো, আমাদেররাষ্ট্রপতি মাননীয় প্রণব মুখার্জী কলকাতাতে ‘আকাশবাণী মৈত্রী’ চ্যানেলের শুভউদ্বোধন করেছেন। এখন অনেকেই হয়ত ভাববেন রাষ্ট্রপতি কি একটা রেডিও চ্যানেলেরউদ্বোধন করবেন? কিন্তু এটা একটা সাধারণ রেডিও চ্যানেল নয়, এটা একটা অনেক বড়গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমাদের পড়শি বাংলাদেশ রয়েছে। আমরা জানি, বাংলাদেশ ওপশ্চিমবঙ্গ একই সাংস্কৃতিক পরম্পরাকে আজও এগিয়ে নিয়ে চলছে। তাই একদিকে ‘আকাশবাণীমৈত্রী’ আর অন্যদিকে ‘বাংলাদেশ বেতার’ – এরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আদানপ্রদানকরবে, আর দুই দিকের বাংলাভাষী মানুষ আকাশবাণীর অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। মানুষেরসঙ্গে মানুষের যোগাযোগে আকাশবাণী-র এক বড় অবদানরয়েছে। মাননীয় রাষ্ট্রপতি এর উদ্বোধন করেছেন। আমি বাংলাদেশকেও ধন্যবাদ দিতে চাই যেতারাও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আমি আকাশবাণীর বন্ধুদেরও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, তাঁরাওবিদেশ নীতিতে নিজেদের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। এই রকম ঘটনা নতুন শক্তিরজোগান দেয়, নতুন অনুপ্রেরণা দেয়, আর এটাই দেশবাসীর জন্য কিছু না কিছু করারপ্রেরণার উৎস। কিছুদিন আগে আমি একটা চিঠি পেয়েছিলাম, যেটা আমার মনকে নাড়া দিয়েছিল। প্রায় চুরাশি বছরের এক মা, যিনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা, উনি এই চিঠি লিখেছেন। ”দেশবাসী, আপনারাহয়ত জানেন, আমি চেষ্টা করেছিলাম, যাঁরা যাঁরা গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছেন,তাঁদের একটি চিঠি পাঠাই, আর আমার কোনও প্রতিনিধি স্বয়ং উপস্থিত হয়ে সেই চিঠিপৌঁছাক। এক কোটিরও বেশি চিঠি লেখার জন্য আমি চেষ্টা করছি। এখানেপঞ্চাশ হাজার টাকাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, জরুরি হল এই মায়ের আবেগ। উনি আর ওঁর মতোকোটি কোটি মা-বোনেদের আশীর্বাদই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎকে গড়তে সাহায্য করে, শক্তিদেয়, ভরসা দেয়। আমার প্রিয়দেশবাসী, গত বছর আমরা খরার জন্য খুব চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম। কিন্তু এই অগাস্ট মাসটায়আমরা ক্রমাগত বন্যার সমস্যায় জেরবার। দেশের কিছু জায়গায় একাধিকবার বন্যা হয়েছে। রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সরকার, স্থানীয় প্রশাসনিক সংস্থা, সামাজিক সংস্থা ও নাগরিকরাযতটা করা সম্ভব, করেছেন। কিন্তু এই বন্যারখবরের মধ্যেও এমন কিছু খবর আছে, যা আমাদের মনে রাখা বেশি প্রয়োজন। যারা এইছোটো ছোটো ছেলেদের এগিয়ে দিয়ে কাশ্মীরে অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন, তাদেরকখনও না কখনও অবশ্যই এই নির্দোষ বালকদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আমার প্রিয়দেশবাসী, আমাদের এই দেশ সুবৃহৎ, নানা বিবিধতায় সমৃদ্ধ। আমরা সবাইজানি কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্ব-খেলাধুলোর ক্ষেত্রে সবথেকে বড় ক্রীড়ার মহাকুম্ভ আয়োজিতহতে চলেছে। বারবার আমাদের কানে প্রতিধ্বনিত হবে ‘রিও’। আজ দিল্লিতে ভারত সরকার ‘ Run for Rio ’,‘খেলো আর বাঁচো, খেলো আর প্রস্ফুটিত হও’ শীর্ষক এক বিশাল এবং সুন্দর দৌড়ের আয়োজনকরেছে। আমিও আগামী দিনে যেখানেই থাকি না কেন, আমাদের খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করারজন্য কিছু না কিছু করব। আর যখন আমি ‘ Let us aim to innovate ’ বলি, তখন AI M –এর মানে হল Atal I আমাদেরকাছে যদি শক্তিশালী এবং উন্নতমানের গবেষণাগার থাকে, তাহলে আবিষ্কারের জন্য, নতুনউদ্যোগের জন্য, তাকে কাজ লাগানোর জন্য, তাকে এক নিশ্চিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্যএক পরিকাঠামো তৈরি হয়। প্রতিদিনেরজীবনে এইসব সমস্যার প্রযুক্তিগত সমাধান খুঁজতে হবে। আমরা আজকের যুবপ্রজন্মকে ‘অটলগ্র্যাণ্ড চ্যালেঞ্জেস’-এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। যদি আপনাদের নজরে কোনো সমস্যাআসে, তার সমাধানের জন্য প্রযুক্তি খুঁজে বার করুন, গবেষণা করুন, আবিষ্কার করুন,আমাদের জানান। ভারত সরকার আমাদের সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য এই ধরনের নতুনপ্রযুক্তির সন্ধান দিতে পারলে উদ্ভাবনকারীকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করে উৎসাহ দিতেচায়। রাজ্যসরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বন্যাকবলিত মানুষদের সাহায্যকরার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্ষার জন্য কিছু সমস্যা তৈরি হলেও, বর্ষায়প্রতিটি মানুষের মন পুলকিত হয়ে ওঠে। কারণ আমাদের গোটা আর্থিক চিত্রেরকেন্দ্রবিন্দুতে আছে বর্ষা আর চাষাবাদ। কখনও কখনও এমন রোগ আসে যে আমাদের জীবনভোর আফশোষকরতে হয়। সুখী, সমৃদ্ধএলাকাতেই সবচেয়ে আগে ডেঙ্গু ছড়ায়। আপনারা দূরদর্শনে নিশ্চয়ইবিজ্ঞাপন দেখেন, তবুও কখনও কখনও আমরা তা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে উদাসীন হয়ে পড়ি। আরেকসমস্যার প্রতি প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। জীবন এখন এতপ্রাণচঞ্চল, এত এর মধ্যে দৌড়-ঝাঁপ রয়েছে, তাই কখনো কখনো নিজের জন্য চিন্তা করার অবকাশহয় না। অসুস্থ হলাম তো মনে হয় তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাই, সেই জন্য যে কোন অ্যান্টিবায়োটিকখেয়ে ফেলি। সঙ্গে সঙ্গে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, কিন্তু আমার প্রিয় দেশবাসী,এরকম কথায় কথায় অ্যাণ্টি-বায়োটিক খাওয়ার অভ্যেস গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। হতে পারে আপনি কিছু সময়ের জন্য আরাম পেলেন, কিন্তু আমাদের উচিত ডাক্তারদের পরামর্শছাড়া অ্যাণ্টি-বায়োটিক খাওয়া বন্ধ করা। যেসব জীবানু যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়াছড়ায় সেগুলি দ্রুত গতিতে নিজেদের মধ্যে এতটাই পরিবর্তন আনছে যাতে ঔষধের কর্মক্ষমতানষ্ট হয়ে যায়। যখনস্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় কথা হচ্ছে, আমি আরেকটি কথা এর সঙ্গে যোগ করতে চাই। আমাদেরদেশে যেসব গর্ভবতী মায়েরা আছেন, তাঁদের জীবনহানির চিন্তা কখনো কখনো খুব ভাবায়। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় তিনকোটি মহিলা গর্ভবতী হন, কিন্তু কিছু মা সন্তানপ্রসবের সময় মারা যান, কখনো মা মারা যান, কখনো বা সন্তান, আবার কখনো মা ও সন্তানদুজনেই মারা যায়। এটা ঠিক যে গত এক দশকে মায়েদের প্রসবকালীন মৃত্যুর হার কমেছেকিন্তু তবুও আজও অনেক গর্ভবতী মায়েদের জীবন বাঁচানো সম্ভবপর হয় না। গর্ভাবস্থায় বাপরে রক্তাল্পতা, প্রসবের সময় সংক্রমণ, উচ্চ রক্তচাপ – কতরকমের অজানা সংকট কখন তাঁরজীবনকে নষ্ট করে দেবে কেউ জানে না। এই সব কথা মনে রেখে ভারত সরকার গত কিছু মাসথেকে এক নতুন অভিযান শুরু করেছে – ‘প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযান’। এইঅভিযান অনুসারে প্রত্যেক মাসের নয় তারিখে সকল গর্ভবতী মহিলাদের সরকারীস্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনা খরচে পরীক্ষা করা যাবে। মা ও সন্তান – দুজনেরই প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে, আর আমি স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ–দেরবিশেষ ভাবে বলতে চাই, আপনারা কি মাসের একদিন, নয় তারিখ দরিদ্র মায়েদের বিনা পয়সায়চিকিৎসা করতে পারেন না! আমার ডাক্তার ভাই-বোনেরা কি বছরে বারো দিন দরিদ্রদের এইকাজের জন্য নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন না? আমারপ্রিয় দেশবাসী, আজ সমগ্র পৃথিবী ঋতু পরিবর্তন, বিশ্ব উষ্ণায়ণ, পরিবেশ নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তাগ্রস্ত। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্রেও ভগবানশ্রীকৃষ্ণ গাছেদের কথা বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রেও গাছেদের কথা চিন্তা করার মাহাত্ম্যযে কতখানি, আমরা সেটা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারি। গীতাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন –‘অশ্বত্থ: সর্ববৃক্ষানাং’ অর্থাৎ সকল বৃক্ষের মধ্যে আমি অশ্বত্থ। শুক্রাচার্যনীতিতে বলা হয়েছে, ‘নাস্তি মূলং অনৌষধং’ – এরকম কোনও গাছ নেই যার ঔষধি গুণ নেই। যে গাছ দান করে, তাঁকে ওই গাছসন্তানের মতো পরলোকেও পার করে দেয়। সেই জন্য যেসব মাতা-পিতা নিজেদের কল্যাণের কথাভাবেন, ভালো ভালো গাছ লাগিয়ে সন্তানের মতো লালন-পালন করুন। আমাদের শাস্ত্র – গীতাহোক, শুক্রাচার্য নীতি হোক বা মহাভারতের অনুশাসন পর্ব – বর্তমান প্রজন্মের কিছুমানুষ রয়েছেন, যাঁরা শাস্ত্রের এই দর্শনকে নিজেদের কর্মে করে দেখিয়েছেন। কিছুদিনআগে পুনের এক মেয়ে সোনাল-এর উদাহরণ আমার মনে আসছে – ও আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। মহাভারতের অনুশাসন পর্বে বলা হয়েছে – গাছ পরলোকেও সন্তানের কর্তব্য পালন করে। সোনাল কেবলমাত্র নিজেদের মাতা-পিতার দায়িত্ব ছাড়াও সমাজের চাহিদা পূর্ণ করতে এরকমকঠিন কাজ করেছেন। মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনের জুন্নর তালুকের নারায়ণপুর গ্রামের কৃষকখণ্ডু মারুতি মহাত্রে নিজের নাতনি সোনালের বিয়ে এক দৃষ্টান্তমূলক পদ্ধতিতেকরিয়েছেন। বর্তমানে ভারতবর্ষে ঘর বানানোর জন্য, আসবাবপত্রবানানোর জন্য কোটি কোটি টাকার কাঠের গুঁড়ি বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়। বিগত দিনে অনেক রাজ্য এই বর্ষা ঋতুর সুবিধা নিয়ে অনেক অভিযান চালিয়েছে,ভারত সরকারও এক CAMPA আইন সম্প্রতি পাশ করেছে, এইআইনের মাধ্যমে প্রায় চল্লিশ হাজার কোটিরও বেশি টাকা রাজ্যগুলিকে বৃক্ষরোপণের জন্যবিলি করা হচ্ছে। রাজস্থানএক মরুভূমি-র রাজ্য – এতবড় বন-মহোৎসব পালন করেছে এবং পঁচিশ লক্ষ চারা লাগানোরসংকল্প নিয়েছে। রাজস্থানে পঁচিশ লাখ চারাগাছ লাগানো ছোটোখাটো ব্যাপার নয়। যাঁরারাজস্থানের মাটির সঙ্গে পরিচিত তাঁরাই বুঝতে পারবেন কত কঠিন কাজ। অন্ধ্রপ্রদেশও২০২৯ সালের মধ্যে রাজ্যের সবুজায়ন ৫০ শতাংশে বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। গুজরাতেও বন-মহোৎসবের এক উজ্জ্বল ধারাবাহিকতা আছে। এবছর গুজরাত ‘আমবন’, ‘একতাবন’, ‘শহীদ বন’ নামক অনেক প্রকল্পকে বন-মহোৎসব হিসাবে পালন করেছে এবং কোটি কোটিগাছ লাগানোর অভিযান চালিয়েছে। আমি সমস্ত রাজ্যের কথা উল্লেখ করতে পারছি না কিন্তুসবাই প্রশংসার যোগ্য। আমারপ্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগে আমার দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। এটা আমারপ্রথম যাত্রা, এবং যখনই বিদেশ যাত্রা হয়, তখনই কূটনীতির কথা হয়, শিল্প-বাণিজ্যনিয়ে কথা হয়, সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা হয়, কখনো ‘মউ’ সাক্ষরিত হয় – এই সবকিছুই তো হওয়াচাই। যখনই দক্ষিণআফ্রিকার কথা মনে করা হয়, মহাত্মা গান্ধী এবং নেলসন ম্যাণ্ডেলার কথা মনে আসা খুবইস্বাভাবিক। যখনই এই পৃথিবীতে অহিংসা, প্রেম, ক্ষমা ইত্যাদি শব্দগুলি কানে আসে,তখনই তাঁদের চেহারা আমাদের চোখের সামনে ফুটে ওঠে। আমি আমার দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণেরসময় Phoenix Settlement -এ গিয়েছিলাম, যা মহাত্মাগান্ধীর বাসস্থান ‘সর্বোদয়’ নামে পরিচিত। এতবড় তপস্যা করার পরও তাঁদের চেহারায় কিছু নেবার, কিছু পাওয়ার বাকিছু হওয়ার কোন চাহিদার প্রকাশ চোখে পড়েনি। সেই সাক্ষাৎকারটি আমারচিরদিন মনে থাকবে। কোনও সমাজের বা কোনও সরকারের জন্যই সাম্য এবং সমান সুযোগের এরচেয়ে বড় কোনও মন্ত্র হতে পারে না। সকলকে সমান ভাবা এবং সকলকে আপন ভাবার এটাই তো পথযা আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যায়। আমরা সুন্দর জীবন চাই, বাচ্চাদের ভালোভবিষ্যৎ চাই – প্রত্যেকের প্রয়োজন আলাদা আলাদা। ‘ Priority ’ আলাদা আলাদা হতে পারে, কিন্তু পথ একটাই, আর সেই পথ হলউন্নয়ন, সাম্য, সমান সুযোগ, সকলকে সমান ভাবা এবং সকলকে নিজের ভাবা। আসুন, আমরা সেইভারতীয়দের জন্য গর্ব অনুভব করি, যাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকাতেও আমাদের জীবনের মূলমন্ত্রকে সম্বল করে জীবনযাপন করে দেখিয়েছেন। একজন মহিলা হিসেবেতাঁর পরিবারের জন্য আমার যথেষ্ট সমবেদনা আছে। প্রযুক্তি একদিকে যেমন আর্থিক উন্নয়নে এক বড় ভূমিকানিয়েছে, তেমনি অন্যদিকে তার অপব্যবহার করার লোকও মাঠে নেমে পড়েছে। কোনও একটা নকল লেটার প্যাড বানিয়ে পাঠিয়েদিয়ে আপনার ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডের নম্বর জেনে নেয় এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনারব্যাঙ্কের খাতা খালি হয়ে যায়। এ হল নতুন রকমের ধোঁকাবাজি, ডিজিটাল-ধোঁকাবাজি। এধরনের মোহ থেকে দূরে থাকতে হবে, সজাগ থাকতে হবে, আর এরকম কোনও মিথ্যে মেসেজ এলেনিজেদের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে তা শেয়ার করে তাঁদেরও সতর্ক করে দিতে হবে। কিন্তু সম্প্রতি আমার এক ভালো অভিজ্ঞতা হল। আলিগড়ের কিছু ছাত্র আমার কাছেএসেছিলেন। স্টেশনে চমৎকার ছবি এঁকেছেন। শুধু এ-ই নয়,গ্রামে যত প্লাস্টিকের বোতল কিংবা তেলের ক্যানের মতো আবর্জনা পড়ে ছিল, তা খুঁজেখুঁজে জড়ো করে মাটি ভরে গাছ লাগিয়ে ‘ভার্টিক্যাল গার্ডেন’ বানিয়েছেন। এইভাবে তাঁরারেলস্টেশনটিকে সম্পূর্ণ নতুন এক রূপ দিয়েছেন। আপনারা কখনও আলিগড় গেলে স্টেশনটিনিশ্চয়ই দেখবেন। একটি নতুনত্বের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণেকীরকম পরিবর্তন আনা যায়, এটা তারই উদাহরণ। দেশে এরকম কাজ যাঁরা করছেন, তাঁদেরধন্যবাদ, বিশেষ করে ধন্যবাদ আমার আলিগড়ের সাথীদের। আমারপ্রিয় দেশবাসী, বর্ষা এলেই আমাদের দেশে উৎসবের মরশুম শুরু হয়ে যায়। আগামীদিনগুলিতে বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন হবে। গতবছরের মত এবছরেও কি আপনারা রাখীবন্ধন উপলক্ষে দেশের মা-বোনেদের ‘প্রধানমন্ত্রীসুরক্ষা বীমা যোজনা’ বা ‘জীবন-জ্যোতি বীমা যোজনা’ উপহার দিতে পারেন না? আমি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যে স্বাধীন ভারতবর্ষে জন্মেছে। ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ৭৫ বছর এবং স্বাধীনতার ৭০ বছর আমাদের নতুন প্রেরণাদিতে পারে, নতুন উৎসাহ যোগাতে পারে, এবং দেশের জন্য ভালো কিছু করার সংকল্প নেওয়ারউপযুক্ত সময় হয়ে উঠতে পারে। আমার আশা, আপনারাও স্বদেশপ্রেমের প্রেরণায় কিছু না কিছুভালো কাজ করবেন। জে. আপনাদের নিশ্চই স্মরণে আছে যে গতবার আমি প্রেমচাঁদজির গল্পের একটি বইয়ের কথা আলোচনা করেছিলাম এবং আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, কেউ যদি কোনো বই পড়েন তাহলে সেই বই সম্পর্কে কিছু কথা NarendraModiApp-এর মাধ্যমে সবার সঙ্গে ভাগ করে নেবেন। আমি দেখেছি যে প্রচুর সংখ্যক লোক, বিবিধ প্রকারের বই সম্পর্কে তথ্য সেখানে ভাগ করেছেন। আমার ভালো লাগলো দেখে যে লোকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, নতুন উদ্ভাবন, ইতিহাস, সংস্কৃতি, বাণিজ্য, আত্মজীবনীর মতো বেশ কিছু বিষয়েলেখা বই নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিছু লোক তো আমাকে এই পরামর্শও দিয়েছেন যে আমি আরও কিছু বই নিয়ে কথা বলি। কিন্তু একটি কথা আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে এখন আমি খুব বেশি বই পড়ার সময় পাইনা। কিন্তু আমার মনে হয় যে বিগত এক মাসের এই অভিজ্ঞতাকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। বন্ধুগণ, আমার মনে হচ্ছে যে ‘মন কি বাত’-এ, ‘জল সংরক্ষণ’ — এই বিষয়টিকে আগে আমি ছুঁয়ে গেছিলাম, কিন্তু আজ হয়তো অনুভব করছি যে আমার বলার আগেই এই জল সংরক্ষণ বিষয়টি আপনাদের হৃদয়কে ছুঁয়ে যাওয়ার মতোই বিষয় ছিল, সাধারণ মানুষের পছন্দেরবিষয় ছিল। আমি অনুভব করছি যে সম্প্রতি এই জলের বিষয়টি আপামর দেশবাসীর মনকে নাড়া দিয়েছে। জল সংরক্ষণ নিয়ে দেশব্যাপী অনেক কার্যকর প্রচেষ্টা চলছে। মানুষ নানারকম প্রথাগতপদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য ভাগ করে নিচ্ছেন। Mediaজল সংরক্ষণের উপর বেশ কিছু উদ্ভাবনী প্রচার শুরু করেছে। এর ফলে কেবল ভূমি ক্ষয় এবং ফসল নষ্ট হওয়াকে আটকানো যাচ্ছে তাই নয়, ক্ষেতগুলিও জল পাচ্ছে। আপনারা সবাই জেনে খুশি হবেন যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুন্দরী রাজ্য মেঘালয়, দেশের প্রথম রাজ্য যেটি নিজস্ব একটি জলনীতি বা ‘ওয়াটার পলিসি’তৈরিকরেছে। আমি সেখানকার সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এসব সময়ে অনেক মেলাও বসে। জল সংরক্ষণের জন্য আমরা এই মেলাগুলিকে কাজে লাগাতে পারি। সমাজের সব শ্রেণীর লোকজন এই মেলায় আসেন। জল বাঁচানোর খবর আমরা এখানেই প্রদর্শনীর আয়োজন করে, নাটক করে খুব চমৎকার ভাবে পৌঁছে দিতে পারি। উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে জল সংরক্ষণের ব্যবস্থাও হয়ে যাবে। এদের সম্বন্ধে আমি যা বলবো, তাতে আপনাদেরও গর্ব হবে, আপনাদের মধ্যেও এক তেজ সঞ্চারিত হবে। আমরা সবাই জানি, ‘ক্যান্সার’ এমন একটি শব্দ যাকে পুরো দুনিয়া ভয় পায়। খেলাধূলার ক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই দেখি যে একজন খেলোয়াড় টুর্নামেন্ট জেতার পর বা পদক পাওয়ার পরই চ্যাম্পিয়ন হন, কিন্তু এ এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা, যেখানে এরা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে — এবং তাও আবার জীবন যুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন। এই মাসেই মস্কোয় World Children’s Winners Games–এর আয়োজন হয়েছিল। এতে শ্যুটিং, দাবা, সাঁতার, দৌড়, ফুটবল, টেবিল টেনিসের মত খেলার আয়োজন করা হয়। আমাদের দেশের এই দশ কৃতী চ্যাম্পিয়ন এই টুর্নামেন্টে পদক জিতেছে। এদের মধ্যে কয়েকজন তো আবার একাধিক খেলায় পদক জিতেছে। আসলে মহাকাশ গবেষণার দৃষ্টিকোণ থেকে ২০১৯ সালটি ভারতের জন্য খুব ভালো একটি বছর। মাত্র ৩ মিনিটের মধ্যে ‘A-Sat’ মিসাইল ৩০০ কিলোমিটার দূরের স্যাটেলাইটকে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিল। ‘চন্দ্রযান-২’-এর সফল উৎক্ষেপনের সেই সব ছবি দেশবাসীকে গৌরবে, শক্তিতে ও প্রসন্নতায় ভরিয়ে দিয়েছে। ‘চন্দ্রযান-২’অনেক অর্থে একটি বিশেষ ধরনের মিশন। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে ‘চন্দ্রযান-২’সম্পূর্ণ ভারতীয় একটি উদ্যোগ। এটি মনে প্রাণে ভারতীয়। এটি সম্পূর্ণ রূপে একটি স্বদেশী মিশন। যেভাবে আমাদের বৈজ্ঞানিকেরা রেকর্ড সময়ে, দিন রাতকে এক করে সব প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলিকে ঠিক করে চন্দ্রযান-২ কে লঞ্চ করলেনতা অভূতপর্ব। আমি আমার যুব বন্ধুদের অনুরোধ করবো যে তারা যেন এই কুইজ কম্পেটিশনে অংশ নেন আর এটিকে আরওমনোগ্রাহী আর স্মরণীয় করে তোলেন। সেই বিজয়ী, সেই কৃতীছাত্রদের জীবনে এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হবে – কিন্তু তার জন্যে আপনাদের এই Quiz Competition এ অংশ নিতে হবে, সবচেয়ে বেশি নম্বর পেতে হবে। ৫ বছর আগে যে সফর শুরু হয়েছিল তা আজ সবার সহযোগিতায় স্বচ্ছতার নতুন নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে। এই আন্দোলন এখন ‘স্বচ্ছতা’ থেকে ‘সৌন্দর্য’-এর দিকে পা বাড়িয়েছে। কিছুদিন আগে আমি মিডিয়াতে শ্রী যোগেশ সাইনি আর ওঁর টিমের একটি খবর দেখছিলাম। যোগেশ সাইনি একজন ইঞ্জিনিয়র যিনি ভারত মাতাকে সেবা করার উদ্দেশ্যে তিনি আমেরিকার চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে এসেছেন। তিনি কিছুদিন আগে দিল্লিকে শুধু ‘স্বচ্ছ’ই নয়, ‘সুন্দর’ করে তোলারও দায়িত্ব নেন। উনি নিজের টিমের সঙ্গে লোদী গার্ডেনের আস্তাকুঁড় থেকে সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু করেন। ‘স্ট্রিট আর্ট’-এর মাধ্যমে দিল্লির বহু এলাকাকে খুব সুন্দর চিত্র দিয়ে সাজিয়ে তুলতে থাকেন। ওভারব্রিজ আর স্কুলের দেওয়াল থেকে শুরু করে ঝুপড়ি-বস্তিগুলোকে যখন উনি সুন্দর করে তুললেন, তখন আরও অনেকেই এগিয়ে আসতে লাগলেন এবং এই ভাবে কাজটি এগোতে লাগল। আপনাদের মনে থাকবে, কুম্ভ মেলার সময়ে ‘স্ট্রিট পেইন্টিং’ দিয়ে কীভাবে প্রয়াগরাজকে সাজানো হয়েছিল। আমাদের জীবনে ‘Waste to Wealth’ — আবর্জনা থেকে সম্পদ বানানোর প্রচেষ্টা তৈরি হোক, এটা খুব জরুরি। অর্থাৎ, আমাদের আবর্জনা থেকে সোনা বানানোর লক্ষ্যে এগোতে হবে। আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগে ‘মাই গভ’ পোর্টালে আমি একটি চিত্তাকর্ষক মন্তব্য পড়ি। মন্তব্যটি জম্মু-কাশ্মীরের সোপিয়ান জেলা নিবাসী ভাই মহম্মদ আসলাম-এর ছিল। আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমি নিজের রাজ্য জম্মু-কাশ্মীরে Community Mobilisation Programme ‘Back to Village’–এর আয়োজনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করি। এই অনুষ্ঠানটি জুন মাসে আয়োজন করা হয়েছিল। আমার মনে হয় এই অনুষ্ঠানটি প্রত্যেক তিন মাস অন্তর আয়োজন করা উচিত। এর সঙ্গে, অনুষ্ঠানটির online monitoring-এর আয়োজন করা উচিত। আমার মনে হয়, এটা প্রথম এমন একটি অনুষ্ঠান যেখানে, জনগণ সরকারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পেরেছিল। ভাই মুহাম্মদ আসলামজি আমাকে যে বার্তা পাঠিয়েছেন, সেটি পড়ার পরে, “Back to Village” প্রকল্প সম্বন্ধে আমার জানার আগ্রহ বেড়ে যায়। তাই আমি এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে পড়লাম, এবং তখন আমার মনে হলো যে এটি সারা দেশকে জানানো দরকার। কাশ্মীরের মানুষ দেশের উন্নতির মূলধারার সঙ্গে যুক্ত হতে কতখানি আগ্রহী তা এই প্রকল্পের কথা থেকে বোঝা যায়। তাঁরাও জেনে নিলেন যে, গ্রামবাসীরা আদৌ সরকারি পরিষেবা পাচ্ছেন কিনা। তাদের আয় কীভাবে বাড়ানো যেতে পারে? কার্যক্রমটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার উদ্দেশ্যে আরও কিছু কিছু জিনিস এতে যোগ করা হয়েছিল। “খেলো ইন্ডিয়া”যোজনার অন্তর্গত বাচ্চাদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে বিতরণ করা হয়েছিল খেলাধুলোর সরঞ্জাম,‘মনরেগা’প্রকল্পের কাজ পাওয়ার কার্ড এবং তপশিলিজাতি ও উপজাতিদের শংসাপত্র। কোনো কোনো অফিসার গ্রামবাসীদের তরফে দেওয়া উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়ে এতটাই অভিভূত হয়েছিলেন যে তাঁরা দুদিনেরওবেশি সময় সেই গ্রামে রয়ে যান। এইসব এলাকায় গ্রামসভারউদ্যোগে প্রচুর মানুষের অংশগ্রহণ এবং নিজেদের উন্নতির জন্য যোজনা তৈরিতে অংশীদারিত্ব সত্যিই খুব আনন্দের বিষয়। নব উদ্যমে এবং নতুন সংকল্পের এ এক চমকপ্রদ ফলাফল। যে সমস্ত ব্যক্তি উন্নয়নের রাস্তায় ঘৃণার কাঁটা ছড়াতে চান এবং প্রগতিকে আটকাতে চান, তারা যে কখনোই নিজেদের ঘৃণ্য অভিসন্ধিতে সফল হবে না একথা আজ দিনের আলোর মত স্পষ্ট। এই ঋতুতে যখনই আমাদের আশেপাশে নজর যায়, মনে হয় যেন বসুন্ধরা সবুজ চাদর গায়ে দিয়েছে। এই সময়েই ভাই-বোনের ভালোবাসার উৎসব রাখীবন্ধনও পালন করা হয়। শ্রাবণ মাসের কথা যখন হচ্ছে, আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন এবারের অমরনাথ যাত্রায় গত চার বছরের মধ্যে সবথেকে বেশি তীর্থযাত্রী অংশগ্রহণ করেছেন। ১লা জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত তিন লাখেরও বেশি তীর্থযাত্রী পবিত্র অমরনাথ গুহার দর্শন করেছেন। ২০১৫ তে ৬০ দিন ধরে চলা এই যাত্রায় যত তীর্থযাত্রী অংশগ্রহণ করেছিলেন তার থেকেও বেশি তীর্থযাত্রী মাত্র ২৮ দিনে এবার সামিল হয়েছেন। অমরনাথ যাত্রার সফলতার জন্য, আমি বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীরের লোকেদের ও তাঁদের অতিথিপরায়ণতারও প্রশংসা করতে চাই। যাঁরা যাত্রা সেরে ফিরে এসেছেন, তাঁরা ওই রাজ্যের লোকেদের আদর যত্ন ও আতিথেয়তার উষ্ণ স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। এই সমস্ত বিষয় ভবিষ্যতে পর্যটনের উন্নতিতে সাহায্য করবে। আমাকে বলা হয়েছে উত্তরাখণ্ডেও এ বছর যেদিন থেকে চার ধাম যাত্রা শুরু হয়েছে, সেদিন থেকে দেড় মাসের মধ্যে ৮ লাখেরও বেশি তীর্থযাত্রী কেদারনাথ ধাম দর্শন করেছেন। ২০১৩-তে বিশাল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর, প্রথম বার এত রেকর্ড সংখ্যায় তীর্থযাত্রী ওখানে পৌঁছেছেন। আমার আপনাদের সবার প্রতি অনুরোধ, দেশের ওই সব অঞ্চলে আপনি অবশ্যই যান, যেখানকার সৌন্দর্য্য, বর্ষার সময় দেখতে চমৎকার লাগে। নিজের দেশের এই সৌন্দর্য্যকে দেখতে আর নিজের দেশের মানুষের আবেগকে বুঝতে, পর্যটন এবংতীর্থযাত্রা, মনে হয় এর থেকে বড় কোনো শিক্ষক হতে পারে না। আমার আপনাদের সবার প্রতি শুভকামনা রইল যে, শ্রাবণের এই সুন্দর আর সজীব মাস আপনাদের সবার মধ্যে নতুন শক্তি, নতুন আশা এবং নতুন উদ্যমের সঞ্চার করুক। অন্য দিকে এটা সেই সময়, যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা যখন টিভি দেখি, একদিকে বর্ষাতে চার দিকে বন্যা, জল থই থই, ট্রাফিক জ্যাম। বর্ষার অন্য এক ছবি— যেখানে আনন্দ করছে আমাদের কৃষক, পাখির কলতান, ঝরনা বয়ে যাচ্ছে, সবুজের চাদর গায়ে বসুন্ধরা— এসব দেখতে আপনাকে পরিবারের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে পড়তে হবে। বৃষ্টি, সতেজতা আর খুশি অর্থাৎ Freshnessআর happiness দুটোকে এক সঙ্গেনিয়ে আসে। আমার কামনা – এই বর্ষা আপনাদের সবাইকে নিরন্তর খুশিতে ভরে দিক। আমি সবাইকে ইস্টারের অনেক শুভকামনা জানাই। আজ ভারত অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলবে। আমি দু’দলের খেলোয়াড়দেরই আমার শুভকামনা জানাচ্ছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য – গত কয়েক দশকে আমরা ক্রমাগত নিম্নস্থান পেয়ে আসছি – হেরে যাচ্ছি – পিছু হটছি – পিছিয়ে যাচ্ছি – পিছিয়েই যাচ্ছি। কিছু মানুষ রাজ্যের বাইরেও যান। আগের বারেও আমি আপনাদের বলেছিলাম, আপনারা যেখানেই যান না কেন, সেখান থেকে ফোটো আপলোড করুন। আর আমি তো ভাগ্যবান, আমি ভ্রমণ করার অনেক সুযোগ পেয়েছি। যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম না, প্রধানমন্ত্রী ছিলাম না, আর আপনাদের মত অল্প বয়সের ছিলাম, আমি অনেক ঘুরেছি। এই জায়গা নিজেই নতুন জিনিস দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। আমি আশা করব, ছুটিতে যদি আপনারা বাইরে বেড়াতে যান, তাহলে পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও কিছু কাজ আপনারা করতে পারবেন। হয়ত খুব বেশি বৈজ্ঞানিকভাবে কাজ হচ্ছে না, কিন্তু হচ্ছে। আপনিও কি একজন পর্যটক হিসেবে পর্যটন কেন্দ্রের স্বচ্ছতায় গুরুত্ব দিতে পারেন না? আমার স্থির বিশ্বাস, আমাদের যুব বন্ধুরা এই বিষয়ে অবশ্যই সহায়তা করবেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত এখনও পর্যটনে অনেক পিছিয়ে আছে। কিন্তু আমরা একশো পঁচিশ কোটি দেশবাসী যদি মনে করি যে আমাদের পর্যটনকে শক্তিশালী করতে হবে, তাহলে আমরা অবশ্যই সারা বিশ্বকে আকর্ষণ করতে পারি। সরকার হোক, সংস্থা হোক, সমাজ হোক বা নাগরিক – এই কাজ সবাই মিলে করতে হবে। আসুন, আমরা সেই উদ্দেশ্যে কিছু কাজ করি। আমার যুবা বন্ধুরা, ছুটিগুলো এমনি এমনি আসে আর চলে যায় – এটা আমার ভাল লাগে না। আপনারাও এই বিষয়টি ভাবুন। আপনারাও কি আপনাদের ছুটি, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বছরগুলো, মহত্বপূর্ণ এই সময়গুলো এইভাবেই চলে যেতে দেবেন? আমি কতকগুলো বিষয় বলছি – আপনারা ভেবে দেখতে পারেন। আপনারা কি এই ছুটিতে নিজেদের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আরও কোনও বাড়তি গুণ যোগ করার সঙ্কল্প নিতে পারেন না? আমি এই কাজটি করে আনন্দ পেয়েছি। এই সুযোগে অনেক পাখির সঙ্গে আমার বন্ধুত্বও হয়ে গেছে। আমার অনুরোধ, আপনি ‘মন কি বাত’-এ এই বিষয়টা আবার বলুন। সে আমাকে একটা ভালো কাজের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। অভি আমাকে জানিয়েছে, সে সারা বছর এই কাজ করে চলেছে এবং অনেক পাখি তার বন্ধু হয়ে গেছে। হিন্দির মহান কবি মহাদেবী বর্মা পাখিদের খুব ভালবাসতেন। নিজের কবিতায় তিনি লিখেছিলেন – “তোকে দূরে যেতে দেবো না, উঠোন ভরে দেবো দানায়, পাত্রে ভরে দেবো মিষ্টি ঠাণ্ডা জল। ” আসুন মহাদেবীজী-র এই কথাকে আমরা কাজে পরিণত করি। আমি অভিকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, সেইসঙ্গে কৃতজ্ঞতাও জানাচ্ছি – তুমি আমাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে করিয়ে দিয়েছো। মহীশূর থেকে শিল্পা কুকে আমাদের সকলের জন্য একটা খুব সংবেদনশীল বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের বাড়ির পাশে দুধওয়ালা, খবরের কাগজওয়ালা, পোস্টম্যান আসেন। কখনও কখনও বাসনওয়ালা, কাপড় বিক্রিওয়ালাও ওই পথ দিয়ে যান। বাজারের অবস্থা কেমন, পাইকারি বাজারের পরিস্থিতি কি, এই সময়ে ভাল ফসলের যোগান কেমন, উপযুক্ত ওষুধ কোনটি, ইত্যাদি অনেক বিষয়ই এই অ্যাপে আছে। আর যদি আপনি কোনও প্রশ্ন তাঁদের সামনে রাখেন, তাঁরা তার জবাব দেবেন এবং আপনাকে বুঝিয়েও দেবেন। আমি আশা করি, আমার কৃষক ভাই-বোনেরা এই ‘কিসান সুবিধা অ্যাপ’ নিজেদের মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করবেন। আমরা কি ওইসব পুরনো জায়গাগুলো আবার একবার খুঁড়ে, পরিষ্কার করে রাখতে পারিনা, যাতে বেশি জল সঞ্চয় করা যায়? এবার আপনারা হয়তো দেখেছেন, ৫ লাখ পুকুর এবং চাষ জমির পুকুর বানানোর প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। ‘মনরেগা’ প্রকল্পের আওতায় জল সংরক্ষণের মাধ্যমে সম্পদ সৃষ্টিতে জোর দেওয়া হয়েছে। দেশের মধ্যে এমন অনেক গ্রাম আছে, অনেক প্রগতিশীল কৃষক রয়েছেন, অনেক সচেতন নাগরিক রয়েছেন, যাঁরা এই কাজ করছেন। কিন্তু আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। আমি এই মতকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। যত জল বাঁচবে, কৃষকদের ততটাই লাভ হবে আর জীবনও ঠিক ততটাই বাঁচবে। ডায়াবেটিস এমন একটা রোগ, যেটা অন্যান্য সব রোগকেও ডেকে নিয়ে আসে। একবার যদি কারও ডায়াবেটিস হয়, তারপর অনেক রোগরূপী অতিথি নিজের ঘরে, শরীরে প্রবেশ করে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে আমাদের দেশে সাড়ে ৬ কোটি ডায়াবেটিসের রোগী ছিলেন। তিন শতাংশ মৃত্যুর কারণ হল ডায়াবেটিস। আর টাইপ-2-র কারণ হল বদভ্যাস, বয়সজনিত এবং অতিরিক্ত ওজন। সমগ্র পৃথিবী ডায়াবেটিস নিয়ে চিন্তিত। এই জন্য ৭ তারিখ, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের থিম হল ডায়াবেটিস। আমরা সবাই জানি, ডায়াবেটিস-এর সবথেকে বড় কারণ হল আমাদেরলাইফ-স্টাইল। কায়িক পরিশ্রম কম হচ্ছে। যখন আমি ছোটো ছিলাম, তখন যক্ষ্মার নাম শুনলেই ভয় পেতাম। সমগ্র পৃথিবীর তুলনায় আমাদের দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এর মানে হল, এটি এমন একটা রোগ যার তাড়াতাড়ি পরীক্ষা দরকার। আমার প্রিয় দেশবাসী, এই বিষয়ে অনেক কাজ চলছে। সঠিক চিকিৎসা করুন এবং রোগ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যান। আমি আপনাদের অনুরোধ করব, যক্ষ্মা হোক বা ডায়াবেটিস – এদের আমাদের পরাস্ত করতে হবে। ভারতকে এই রোগগুলি থেকে মুক্ত করতে হবে। কিন্তু এটা কেবল সরকার, ডাক্তার, ওষুধ দিয়ে হবে না – যতক্ষণ না আপনারা এগিয়ে আসেন। আর এই জন্য আমি আজ দেশবাসীদের অনুরোধ করছি, আসুন, ডায়াবেটিস-কে পরাস্ত করুন এবং যক্ষ্মা থেকে মুক্তি পান। আমার প্রিয় দেশবাসী, এপ্রিল মাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিন আসছে। বিশেষ করে ১৪-ই এপ্রিল বাবাসাহেব ভীমরাও অম্বেদকর-এর জন্মদিন। ওঁর ১২৫-তম জন্ম-জয়ন্তী ধুমধামের সঙ্গে সারা দেশে পালিত হল। আমার সৌভাগ্য যে, এই বছর ১৪-ই এপ্রিল পূজনীয় বাবাসাহেব আম্বেদকর-এর জন্মস্থান মহু যাওয়ার সৌভাগ্য হবে। দেশের দায়িত্ববান নাগরিক হওয়ার জন্য বাবাসাহেব আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন। সেই পথ অনুসরণ করে দেশের দায়িত্ববান নাগরিক হয়ে ওঁকে আমরা সবথেকে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে পারি। বিভিন্ন রাজ্যে, বিভিন্ন নামে এই উৎসব পালিত হয়। বোধহয় ভারতবর্ষের এমন কোনও জেলা নেই, যেখানে আমার যাওয়ার সুযোগ হয় নি। অতএব পর্যটন থেকে প্রচুর রোজগারের সম্ভাবনা আছে। এর ফলে আপনার ব্যক্তিত্ব, আপনার আত্মবিশ্বাস যে কতখানি বেড়ে যাবে – দেখে নেবেন। বন্ধুদের মধ্যে এটা নিয়ে কথা হবে। আপনারা যদি এই অ্যাপটি আপনাদের মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করে নেন, তাহলে কৃষি এবং আবহাওয়া সম্পর্কিত বহু তথ্য আপনার হাতে চলে আসবে। কৃষকদের জন্য চাষ শুরুর আগের এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে ভাববেন। আমিও এই ব্যাপারে আপনাদের শরিক হতে চাই। নিজেদের সন্তানদের পরীক্ষা নিয়ে আপনাদের যতটা চিন্তা আছে, আমারও ততটাই চিন্তা রয়েছে। তবে আমরা যদি পরীক্ষা সম্পর্কে আমাদের ভাবনা-চিন্তার প্রক্রিয়ার বদল ঘটাই, তবে হয়ত আমরা চিন্তামুক্ত থাকতে পারব। আমি আমার আগের ‘মন কি বাত’-এ বলেছি যে, আপনারা আপনাদের অনুভূতি, আপনাদের পরামর্শ ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এর মাধ্যমে আমাকে অবশ্যই পাঠান। আমার এই ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি মা-বাবা, পরীক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সঙ্গে বিশেষ ভাবে কথা বলতে চাই। যা আমি শুনেছি, যা আমি পড়েছি, আমাকে যা বলা হয়েছে, তার থেকেই কিছু কথা আমি বলতে চাই। আমি জানি, কিছুদিনের মধ্যেই পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে। আপনি অবশ্যই পরিশ্রম করবেন, কিন্তু এক বাস্তবসম্মত এবং পারা সম্ভব এমন (যেটা পারবেন সেরকম) লক্ষ্য নিজের জন্য ঠিক করুন এবং এই লক্ষ্য ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। এর এক সমাধান বার করা আমার জন্য অত্যন্ত জরুরী ছিল। আর এই লক্ষ্য পূরণ করার জন্য আমি সবসময়ই চেষ্টা করেছি। আমার সব সময় লক্ষ্য ছিল বলের ওপর এবং তার ফলে সেই লক্ষ্য নিজে নিজেই ধীরে ধীরে পূরণ হয়ে গেছে। প্রত্যাশার চাপে কখনও পড়বেন না। আপনার ভবিষ্যত আপনাকেই তৈরি করতে হবে। অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে কেন নিজের সময় নষ্ট করব? আমি নিজের তৈরি করা সব রেকর্ড কেন নিজেই ভাঙ্গার চেষ্টা করব না? বন্ধুরা, পরীক্ষাকে নম্বরের খেলা ভাববেন না। আমরা সঠিক পথে চালিত হচ্ছি কিনা, বা ঠিকঠাকভাবে এগোচ্ছি কিনা, এই পরীক্ষা তারই হিসেব-নিকেশ করে। তাতে যদি কোথাও প্রত্যাশা পূরণে কিছু খামতি থেকে যায়, তো নিরাশ হবেন না। আরও-আরও-আরও পরিশ্রম ও চেষ্টা করার মানসিকতা তৈরি করুন। হাজার হাজার মানুষ আমার অ্যাপ-এ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নানান ছোটো ছোটো কথা লিখেছেন। শ্রেয় গুপ্তা বলেছেন সুস্থ শরীরেই থাকে সুস্থ মন। ছাত্র-ছাত্রীরা, তোমরা তোমাদের পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যের প্রতিও মনোযোগ দাও, যাতে তোমরা পরীক্ষা ঠিক ভাবে দিতে পারো। এমনিতেও ৩৬৫ দিন আমাদের রোজনামচা আমাদের স্বপ্ন আর সংকল্পের অনুকূল হওয়া উচিত। শ্রী প্রভাকর রেড্ডির কথার সঙ্গে আমি একমত। উনি বিশেষ করে ঠিক সময়ে শুতে বলেছেন এবং ভোর-ভোর উঠে রিভিশন করতে বলেছেন। অ্যাডমিট কার্ড ও অন্যান্য কাগজপত্রসহ পরীক্ষাকেন্দ্রে আগে পৌঁছনো উচিত – এই কথা বলেছেন প্রভাকর রেড্ডিজী। আর আমি যখন ঘুমের কথা বলেছি, তখন ভেবো না যে, পরীক্ষার জন্য আমি ঘুমের কথা বলছি। ভুল বুঝো না, আমি পরীক্ষার সময় ভালো পরীক্ষা দেওয়ার জন্য টেনশনমুক্ত থাকার জন্য ঘুমের কথা বলছি। এরকম নিশ্চয়ই করবে না। আমার বিশ্বাস তোমরা এরকম করবে না। এজন্য কোনও কিছুকেই ছোট বলে ভাবতে নেই। ঠিকভাবে করুন, করে তো দেখুন। প্রশ্নপত্র কঠিন হবে না সহজ হবে ইত্যাদি ভাবে – এই দু’রকমের পরীক্ষার্থী আমি দেখেছি। তাঁর চোখ এদিক-ওদিক ঘোরে না। আমরা তো শুনেছি অর্জুনের জীবনের সেই ঘটনা – পাখির চোখের দিকেই শুধু তার নজর ছিল। সেইভাবেই দেখেছি বিশ্বনাথন আনন্দ-কে। খেলার সময় তাঁর সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকে লক্ষ্যের প্রতি – আর সেটা তাঁর অন্তরজগতের শান্তিরই প্রকাশ। আপনি বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলবেন না – একলা থাকবেন, মনমরা হয়ে থাকবেন, প্রচুর বইপত্রের পাতা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উল্টাবেন – তো কখনই মনকে শান্ত করতে পারবেন না। কিন্তু যদি জল শান্ত না থাকে, তো কিছুই দেখা যায় না। Deep breathing – গভীর শ্বাস নিতে থাকি। কখনও ৩০, ৪০ কিংবা ৫০ সেকেণ্ড পার হয়ে যায়। কিন্তু আমার মন একদম শান্ত হয়ে যায় যে, কোনও জিনিস বোঝার উপযুক্ত হয়ে যায়। হতে পারে এটা আমার অভিজ্ঞতা, কিন্তু এটা আপনাদেরও কাজে আসতে পারে। বাড়িতে যদি মা-বাবা শিক্ষিত হন, তার ওপর মা-বাবা শিক্ষক হন তো আবার পুরো খাতায় কী লিখেছি তা লিখতে বলেন। আমরা এর মধ্যেই আটকা পড়ি। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অন্য বিষয়ে কথাবার্তা বলুন। ফেলে আসা দিনের কোন হাসির কথা মনে করুন। মা-বাবার সঙ্গে যদি কোথাও বেড়াতে গিয়ে থাকেন, সেই দৃশ্য মনে করুন। পরীক্ষার চিন্তা ছেড়ে অন্তত আধঘণ্টা সময় কাটান। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ‘রামচরিত মানস’-এর গুরুত্ব বিষয়ে তাঁর মতামত সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পূজনীয় মুরারীবাপু আমাদের সবার জন্য যে উপদেশ দিয়েছেন, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। বন্ধুরা, আজকে আমি আর একটা কথা বলতে চাই। কিন্তু বন্ধুরা, আমি যদি বলি – কাল সকাল থেকেই যোগব্যায়াম শুরু করুন, তাহলে সেটা আপনাদের প্রতি অন্যায় করা হবে। কিন্তু, যাঁরা যোগব্যায়াম করেন, তাঁরা পরীক্ষা আছে বলে আজকে করব না – এরকম করবেন না। যদি যোগব্যায়াম করতে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই করুন। পরীক্ষার আগে আপনি যোগব্যায়াম না করে থাকলে, আপনার কাছাকাছি যোগব্যায়াম জানেন এমন কোনও ব্যক্তি থাকলে যোগাযোগ করুন। যিনি আপনাকে, দুই-চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে করতে পারেন এমন কিছু যোগ ব্যায়াম বলে দেবেন। এর জন্য তাড়াহুড়ো কেন করবেন! নিজেদের পুরো দিনের সময়সূচি এমনভাবে তৈরি করুন, যাতে ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে পড়লেও সময়মত পরীক্ষা হলে পৌঁছতে পারেন। তা না হলে, এরকম অবস্থা মনের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। আর একটা বিষয়, প্রশ্নপত্রে যেরকম নির্দেশিকা থাকে, মনে হয় সেগুলি পড়তে গেলে সময় নষ্ট হবে। প্রশ্নগুলিকে বোঝা খুবই জরুরী। এটাই তো বিজ্ঞানের শক্তি এবং বৈজ্ঞানিক মনের শক্তি। ভালো করার জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমার অ্যাপে রুচিকা ডাবস নিজের পরীক্ষার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। আমরা সবাই বৈদ্যুতিক বাল্বের আবিষ্কারক থমাস আলভা এডিসন সম্পর্কে জানি, আমাদের সিলেবাসেও ওঁর বিষয়ে পড়েছি। হ্যারি পটার সিরিজ আজ সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। কিন্তু শুরুতে এমনটা ছিল না। ওঁকে কত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে – কত ব্যর্থতা এসেছে। পরীক্ষা আজকাল কেবলমাত্র বিদ্যার্থীদের নয়, পুরো পরিবার, বিদ্যালয়, শিক্ষক এতে যুক্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু পিতা-মাতা এবং শিক্ষকের মিলিত সহযোগিতা ছাড়া বিদ্যার্থীদের পরিস্থিতি অনুকূল হয় না। শিক্ষক, পিতা-মাতা, এমনকি সিনিয়র ছাত্রদের সবাইকে নিয়ে একটি দল তৈরি করে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমচিন্তাধারার সঙ্গে এগিয়ে গেলে পরীক্ষা সহজ হয়ে যায়। শ্রী কেশব বৈষ্ণব, আমার অ্যাপে লিখেছেন, উনি অভিযোগ করেছেন, বেশি নম্বর পাওয়ার জন্য ছাত্রদের উপর পিতা-মাতার বেশি চাপ দেওয়া উচিত নয়। প্রস্তুত হওয়ার জন্য শুধু উৎসাহিত করতে হবে। বিজয় জিন্দল লিখেছেন, বাচ্চাদের উপর নিজেদের আশার বোঝা চাপিয়ে দেবেন না। যদি ও ওর বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছে, তো ওকে আটকাবেন না। আমরা বিজ্ঞানের সঙ্গে একই গতিতে এগিয়ে যেতে চাই। জিজ্ঞাসাই বিজ্ঞানের জননী। বন্ধুগণ, কখনও কখনও সাফল্য পেতে অনেক দেরী হয়। আর যখন সাফল্য পাওয়া যায়, তখন বিশ্বকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গির বদল হয়ে যায়। আমাদের বৈজ্ঞানিকরা নিজেদের ক্ষমতায় গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ বা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ চিহ্নিত করতে পেরেছেন। আমি ঐ সকল বৈজ্ঞানিকদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। ভবিষ্যতেও এই গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের বৈজ্ঞানিকরা প্রচেষ্টা চালাবেন। আমি আবার সব বৈজ্ঞানিকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি – শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমাকেও কাল পরীক্ষা দিতে হবে। ১২৫ কোটি দেশবাসী আমার পরীক্ষা নেবেন। কিন্তু হ্যাঁ, আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন আমার কথা শুনেই বুঝতে পারছেন – আমি কতটা স্বাস্থ্যবান, কতটা আত্মবিশ্বাসী। ব্যস্‌ কাল আমার পরীক্ষা হয়ে যাবে – পরশু আপনাদের শুরু হয়ে যাবে। আমরা সবাই সফল হলে পুরো দেশ সফল হবে। নতুন উৎসাহের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও রোজগারপাতিও শুরু হয়ে যাবে। অন্যদিকে ক্রিসমাসের জন্য প্রস্তুতিও নিশ্চয়ই শুরু হয়ে গেছে। সমাজ-জীবনে উৎসবের এক আলাদা মহত্ব আছে। কখনও উৎসব শোক দূর করতে কাজ করে, কখনও বা তা নতুনভাবে উৎসাহ সৃষ্টি করে। কিন্তু কখনও কখনও উৎসবের সময় যখন কোনও সংকট এসে উপস্থিত হয়, তখন তা খুব বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে। বিশ্বের প্রতিটি জায়গা থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর এসেই চলেছে। এমন সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা আগে কখনও শুনি নি বা ভাবি নি। এই বিপদের সময়ে আমি এই সমস্ত পরিবারের প্রতি আমার শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। রাজ্য সরকার উদ্ধার ও ত্রাণকাজে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। কেন্দ্রিয় সরকারও সব সময়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে। আপাতত ভারত সরকারের উদ্ধারকারী একটি দল তামিলনাড়ু গেছে। আমার বিশ্বাস, এই বিপদ সত্ত্বেও তামিলনাড়ু আবার নতুন উদ্যমে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার যে ভূমিকা তা সে পালন করবে। যখন চারদিকে এই বিপদের ঘটনা ঘটছে, তখন তা প্রতিরোধ করার প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে যাচ্ছে। এখন তার রূপ বদলে গেছে। নিজে খালি যে জৈব প্রযুক্তিতে চাষ করছেন তাই নয়, কৃষকদের সমস্যাও আপনি খুব ভালো বুঝতে পারেন। এটা আমাদের স্বভাব এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম এভাবেই ফসলের গোড়া জ্বালিয়ে দেওয়ার কাজ করে আসছে। দ্বিতীয়ত, এছাড়া অন্য কী পদ্ধতি হতে পারে, তার কোনও প্রশিক্ষণও ছিল না। যখন এই বিপদের প্রভাব শহরের ওপরের পড়তে শুরু করল, তখন এর বিরুদ্ধে মানুষ সরব হতে থাকল। আপনি যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, তা যথার্থ। ফসলের গোড়া যথেষ্ট মূল্যবান। এটা নিজেই এক জৈব সার। এই গোড়া জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য কৃষিজমির উপরের স্তর পুড়ে যাচ্ছে। আমাদের জমির একদম ওপরের স্তর পুড়ে যায়, যা আমাদের উর্বরা ভূমিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। আর এজন্যই আমাদের উপযোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। এই ফসলের গোড়াকে জমিতে মিশিয়ে দিয়ে দেখুন, তা সার হয়ে যাবে। আমার একবার কলাচাষীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। তাঁরা খুব ভাল এক অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন। যদি তা পরিষ্কার করার জন্য ট্র্যাক্‌টর না পাওয়া যেত, তো গোড়াগুলি সেভাবেই পড়ে থাকত। কিছু কৃষক তখন এই গোড়াগুলিকে ছয় বা আট ইঞ্চি মাপের টুকরো করে জমিতে পুঁতে দিয়েছিলেন। কারণ ওই কলাগাছের গোড়াতে এত জল থাকে, যে যেখানে সেগুলি পোঁতা হয়, সেখানে যদি কোনও বৃক্ষ, গাছ বা শস্য থাকে, তাতে তিন মাস পর্যন্ত আলাদা করে জল দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। যে গোড়া পরিষ্কারের জন্য আগে তাঁদের পয়সা খরচ করতে হত, এখন তার থেকেই আয় হচ্ছে। আমাদের কৃষক ভাইয়েরাও কোনও বৈজ্ঞানিকের থেকে কম নয়। গত ‘মন কি বাত’-এ অঙ্গ দানের কথা আলোচনা করেছিলাম। চিত্রাভিনেত্রী রবিনা ট্যাণ্ডন সহ সমাজের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এতে সামিল হয়েছেন। অঙ্গ দান অনেক মূল্যবান প্রাণ বাঁচাতে পারে। তা একরকম ভাবে অমরত্ব এনে দিতে পারে। এক শরীর থেকে অন্য শরীরে যখন দেহের কোনও অংশ প্রতিস্থাপিত হয়, তখন তা নতুন জীবন লাভ করে। সেই মানুষটাও নতুন জীবন লাভ করে। এর থেকে মহৎ দান আর কী হতে পারে? শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষদের অসীম সাহস ও ক্ষমতা থাকে। কিন্তু আমরা যদি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করি, তাঁদের প্রতি আমাদের মনোভাব পরিবর্তন করি, তাহলে এঁরাই আমাদের জীবনের ও কাজের প্রেরণাস্থল হয়ে উঠতে পারেন। ছোটো ছোটো সমস্যায় পড়লেও আমরা কাঁদতে বসি। এই জন্যই তাঁরা আমাদের প্রেরণার উৎস। তাঁদের জীবনের সংকল্প, শক্তি, জীবনের সঙ্গে তাঁদের লড়াই করার পন্থা আর সমস্যাকে শক্তিতে পরিবর্তিত করার অদম্য প্রচেষ্টাকে আমি সাধুবাদ জানাই। আমি আজ জাভেদ আহ্‌মদের কথা বলতে চাই। সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে কিডনি, ক্ষুদ্রান্ত্র ও পাকস্থলির কিছু অংশ তাঁকে খোয়াতে হয়েছিল। মেরুদণ্ডেও গুরুতর চোট লেগেছিল। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মত ক্ষমতা তাঁর বরাবরের মত শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জাভেদ আহ্‌মেদ হার মানেন নি। বিনা কারণে এক নির্দোষ মানুষ এইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন, জীবন-যৌবন সংকটের সম্মুখীন হল, তবু কোনও রকম রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশ না করে জাভেদ আহ্‌মেদ এই বিপদের মোকাবিলা করলেন সংবেদনশীলতার সঙ্গে। এটাই তাঁর সব থেকে বড় মানসিক দৃঢ়তা। তিনি তাঁর জীবন সমাজের সেবায় নিয়োগ করেছেন। সব সময় ক্ষমতায় কুলোয় না, কিন্তু বিগত কুড়ি বছর ধরে তিনি শিশুদের শিক্ষাদানের কাজে নিযুক্ত আছেন। ভারতবর্ষের প্রতিটি প্রান্তের মানুষ কি জাভেদের জীবন কাহিনি থেকে প্রেরণা পেতে পারেন না? আমি ৩-রা ডিসেম্বর জাভেদ আহ্‌মদ-এর জীবন, তপস্যা ও মানবসেবায় তাঁর আত্মনিয়োগ বিশেষভাবে স্মরণ করব। ৩-রা ডিসেম্বর এমনই সব প্রেরণাদায়ক মানুষদের স্মরণ করার দিন। আমাদের দেশ এক বিশাল বড় দেশ। এমন অনেক বিষয় আছে, যাতে মানুষ সরকারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত, দরিদ্র, দলিত, পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষদের সঙ্গে সরকার ও সরকারি ব্যবস্থার প্রতিনিয়ত সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের সমগ্র দেশে আশা কর্মীদের একটা নেটওয়ার্ক আছে। এঁরা ভারতে অনেক সামাজিক কাজকর্ম করেন। ওখানে ম্যালেরিয়া রোগের খুব প্রকোপ আছে। এই গ্রামের এক আশা কর্মী যমুনা মনিসিং স্থির করেছেন যে তাঁর নিজের গ্রামের কাউকে ম্যালেরিয়া রোগে মরতে দেবেন না। গ্রামের কারও ছোটো-খাটো জ্বর হলেও তৎক্ষণাৎ সেই বাড়িতে পৌঁছে যান। ওঁকে যে প্রাথমিক চিকিৎসা শেখানো হয়েছে, তার ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু করে দেন। প্রত্যেক বাড়িতে কীটনাশক দেওয়া মশারির ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছেন। এরকম কত যমুনা মনিসিং রয়েছেন– । আমাদের আশেপাশে এরকম লক্ষ লক্ষ মানুষ রয়েছেন। আমরা তাঁদের সম্মানের চোখে দেখার চেষ্টা করব। এঁরাই দেশের অনেক বড় শক্তি হয়ে উঠতে পারেন। আমাদের সব সময়ের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে থাকেন। আমি সমস্ত আশা-কর্মীদের যমুনা মনিসিং-এর মাধ্যমে সম্মান জানাচ্ছি। আমি অনুরোধ করছি, আপনারা এই ই-বুক-গুলি দেখুন। সঠিক দৃষ্টান্তমূলক ঘটনাই আমাদের সব থেকে বড় শক্তি। আমি আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন, রাষ্ট্র-নির্মাণের কাজে আপনিও যোগদান করুন। আমার প্রিয় দেশবাসী, সমগ্র বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত। বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন সবচেয়ে আলোচ্য এবং চিন্তারও বিষয়। প্রত্যেক কাজ করার আগে এটা একটা সূচক হিসাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। আমি একবার বলেছিলাম যে, পূর্ণিমার রাতে রাস্তার আলো বন্ধ করে বিদ্যুৎ বাঁচিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পূর্ণ চাঁদের আলোয় জ্যোৎস্নাস্নাত হওয়া উচিত। তিনি সূর্যের আলো থেকে সৌরশক্তি ব্যবহার করে গরীবদের বিদ্যুৎ দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি অন্ধকারের সঙ্গে লড়াই করছেন এবং নিজের নাম উজ্জ্বল করছেন। দেখুন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য পৃথিবীর বড় বড় লোকেরা অনেক কিছু করছেন, কিন্তু এক নূরজাহান মনে হয় এঁদের সকলকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন, এমনই কাজ করছেন। এমনিতেই নূরজাহান নামের মানেই হল বিশ্বকে আলোকিত করা। এইভাবে তিনিও আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা’ হল ‘Fund the Unfunded’। এমনিতে যে গতিতে এগোতে চাই, সেই গতি আসা এখনও বাকি। এই সাহায্য প্রাপকদের মধ্যে বেশিরভাগই তপশীলি জাতি, তপশীলি উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত মানুষরা যাঁরা নিজেরাই পরিশ্রম করে নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে সম্মানের সঙ্গে পরিবার চালানোর চেষ্টা করছেন। অভিষেক নিজেই নিজের উৎসাহের কথা বলেছেন। আমার কাছেও অনেক এইরকম খবর আসতে থাকে। আমাকে এখনই একজন বললেন, মুম্বইতে শৈলেশ ভোঁসলে নামে কেউ আছেন। উনি মুদ্রা প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে সাড়ে আট লক্ষ টাকার ঋণ পেয়েছেন। আর উনি পয়ঃপ্রণালী সাফাইয়ের কারবার শুরু করেছেন। আমি আমার স্বচ্ছতা অভিযানের সময় বলেছিলাম এই অভিযান নতুন উদ্যোগপতি তৈরি করবে। আর শৈলেশ ভোঁসলে মহাশয় এটা করে দেখিয়েছেন। আর ওঁর পরিবারের জন্য একটি ভালো ব্যবসা গড়ে উঠল। কিন্তু আমি চাই এই যোজনার আরও প্রচার হোক। আমাদের সব ব্যাঙ্কগুলি আরও সংবেদনশীল হোক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাহায্য করুক। বাস্তবে দেশের অর্থনীতি এঁদের দ্বারাই পরিচালিত। ছোটোখাটো কাজে নিযুক্ত লোকেরা দেশের অর্থ-ব্যবস্থার আসল শক্তি হয়। আমরা এটার উপরেই গুরুত্ব দিতে চাই। ভালো হয়েছে, কিন্তু আমাদের আরও ভালো করতে হবে। আমার প্রিয় দেশবাসী, ৩১-শে অক্টোবর, সর্দার প্যাটেলের জন্মজয়ন্তীতে আমি ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর কথা বলেছিলাম। এমন বহু বিষয় আছে, যা আমাদের সমাজ জীবনে সর্বদা সচেতনতার বোধ তৈরি করে। ‘এক ভারত – শ্রেষ্ঠ ভারত’ – এটিকে আমি একটি পরিকল্পনার রূপ দিতে চাই। পোর্টালে আমি এই নিয়ে মতামতও চেয়েছিলাম। আমাকে বলা হয়েছে যে বেশ কিছু পরামর্শ এসেছে। বড়ো বড়ো পুরষ্কারের ঘোষণাও করা হয়েছে। এই সময়টা খাওয়া-দাওয়া এবং নানান পোষাক-পরিচ্ছদ পরার খুব ভালো সময়। ভাল মরশুমে ভালো অভ্যাস তৈরি হোক। আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, আপনাদের সবাইকে নমস্কার! আবার একবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আপনাদের মধ্যে আমার আসার সুযোগ হল। সুদূর দক্ষিণ ভারতের মানুষেরা এখন ওনাম উৎসবে মেতে রয়েছেন আর গতকালই পুরো দেশ পবিত্র রাখীবন্ধন উৎসব পালন করল। ভারত সরকার সাধারণ মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা-সহ আরও কয়েকটি নতুন নতুন যোজনা শুরু করেছে। খুব অল্প সময়েই অনেক মানুষ যে এইসব যোজনার আওতায় এসেছেন, এতেই আমি আনন্দিত। আমি ছোট্ট একটি অনুরোধ করেছিলাম, রাখীবন্ধন উৎসবে আমাদের বোনেদের যেন এমনই একটি সুরক্ষা যোজনা দেওয়া হয়। আমার কাছে প্রচুর তথ্য এসেছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে পরিকল্পনা শুরু হওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত এগারো কোটি পরিবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আমাকে এটাও জানানো হয়েছে যে, এর প্রায় অর্ধেক সুবিধা মা-বোনেরা পেয়েছেন। আজ যখন আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, তার একবছর আগে ‘জনধন যোজনা’ হাতে নেওয়া হয়েছিল। এর ফলে দেশের তরুণরাও কাজ পেয়েছেন। দরিদ্র মানুষও যে ব্যাঙ্ক থেকে পয়সা পেতে পারেন এই বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। আমি আবার একবার এর সঙ্গে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং যে সব দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর ভাই ও বোনেরা ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, তাঁদের অনুরোধ করছি, আপনারা ব্যাঙ্কের সঙ্গে এই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হতে দেবেন না। এই ব্যাঙ্ক আপনাদেরই, আপনারা আর একে ছাড়বেন না। আমি একে আপনাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি, এবার একে ধরে রাখার দায়িত্ব আপনাদের। ব্যাঙ্কে আমাদের সকলের খাতা চালু রাখতে হবে। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই গুজরাতের বিচক্ষণ নাগরিক – আমার ভাই-বোনেরা পরিস্থিতিকে সামলে নিয়েছেন। পরিস্থিতির বেসামাল হওয়া আটকাতে তাঁরা সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন এবং গুজরাত আবার শান্তির পথ নিয়েছে। শান্তি, একতা ও ভ্রাতৃত্বের এই রাস্তাই ঠিক রাস্তা এবং উন্নতির জন্য আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। সমৃদ্ধিতেই আমাদের সব সমস্যার সমাধান। সম্প্রতি আমার সুফি ধারার বিদ্বজ্জনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার এবং তাঁদের কথা শোনার সুযোগ হয়েছিল। আমি সত্যি বলছি, তাঁদের সেই মহৎ কথা শোনার এই অভিজ্ঞতা আমার শ্রবণে যেন এক সঙ্গীতের অনুভব নিয়ে এসেছে। সেই পণ্ডিতদের শব্দচয়ন, তাঁদের কথা বলার ধরন, অর্থাৎ সুফি ধারায় যে শান্ত উদারতার ঐতিহ্য রয়েছে – তা যেন এক সঙ্গীতের লয়ের মতো আমার উপলব্ধিতে পৌঁছেছে। সম্ভবত ইসলামের এই সত্য স্বরূপটিকে তামাম দুনিয়ার কাছে ঠিকমতো পৌঁছে দেওয়াই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আমার বিশ্বাস, সুফি পরম্পরার এই প্রেম এবং উদারতার বাণী দূর-দূরান্তে পৌঁছে যাবে, যাতে সমগ্র মানবজাতি তথা ইসলামের উপকার হবে। আমি অন্যদেরও বলি, আমরা ভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত হলেও সুফি ভাবধারাটি আমাদের বোঝা দরকার। আগামী দিনে আমার আর একটি সুযোগ আসতে চলেছে এবং এই নিমন্ত্রণ পাওয়ার জন্য আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরু বুদ্ধগয়ায় গিয়েছিলেন। বিশ্বের এইসব বিদ্বজ্জনের সঙ্গে দেখা হওয়ার এই ক্ষণটি আমার কাছে এক আনন্দের মুহূর্ত হতে চলেছে। আমার প্রিয় কৃষক ভাই-বোনেরা, আমি আরও একবার আপনাদের বিশেষ করে মনের কথা বলতে চাই। আমি এর আগেও এই বিষয় নিয়ে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে কথা বলেছি। আপনারা সংসদে, সার্বজনীন সভায় বা ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে সে কথা শুনেছেন। আমি প্রত্যেকবার একটা কথাই বলে আসছি, জমি অধিগ্রহণ আইন নিয়ে যে বিবাদ চলছে, সেই বিষয়ে সরকারের মন খোলাই আছে। কৃষকদের মঙ্গলের জন্য যে কোন পরামর্শ গ্রহণ করতে আমি রাজি আছি – একথা আমি বহুবার বলে আসছি। অর্থাৎ, আমার সরকার তৈরি হওয়ার আগে যে অবস্থান ছিল, সেটাই আবার ফিরে এলো। ‘জয় জওয়ান জয় কিষাণ’ মন্ত্রটি স্মরণে আসাও খুব স্বাভাবিক। ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকার গৌরব ও সম্মান বজায় রাখার জন্য যেসমস্ত মানুষ শহীদ হয়েছেন, তাঁদের আত্মবলিদানের কথা স্মরণে আসাও খুব স্বাভাবিক। এরকম ঐতিহাসিক ঘটনা আমাদের প্রতিনিয়ত প্রেরণা যোগায়। আমার খুব ভাল লেগেছে যে বিজ্ঞানের নানান ক্ষেত্রে ভারত খুব ভাল কাজ করছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা সত্যিই খুব ভাল কাজ করছেন। আমি দেখেছি তরুণ বৈজ্ঞানিকেরা কি উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁদের চোখে নতুন স্বপ্ন আমি দেখেছি। গতবারের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম যে, আমাদের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের দিকে আরও অগ্রসর হওয়া উচিত। বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে এই আলোচনার পর আমার মনে হয়েছে যে এই ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ, অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমার ভাল লাগছে মাত্র পনের দিনের মধ্যে, সরকার খুব দ্রুত এগিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে এই ব্যাপারে কাজ করা শুরু করেছে। নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, আর খুব তাড়াতাড়ি আশা করা যায় ছোটো ছোটো চাকরির ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ ব্যবস্থা তুলে দেওয়া সম্ভব হবে। ইদানিং ভারতে বিশ্বের অনেক দেশ থেকে অতিথিরা এসেছেন। স্বাস্থ্য, বিশেষ করে মা ও শিশুর মৃত্যুহার কমানোর জন্য বিশ্বের ২৪টি দেশ একজোট হয়ে ভারতের Call to Action পরিকল্পনায় মতামত দিয়েছেন। আমেরিকার বাইরে অন্য কোনও দেশে এই পরিকল্পনা এই প্রথমবার হ’ল। এটা ঠিক যে আজও আমাদের প্রত্যেক বছর প্রায় পঞ্চাশ হাজার মা আর প্রায় তের লক্ষ শিশু প্রসবকালে কিংবা তার পরবর্তী সময়ে মারা যায়। এটা অত্যন্ত চিন্তাজনক এবং ভয়েরও। যেমন আমরা পোলিও থেকে মুক্তি পেয়েছি, তেমনই মা ও শিশুর টিটেনাসের কারণে মৃত্যু থেকেও মুক্তি পেয়েছি। গোটা বিশ্ব একে স্বীকৃতি জানিয়েছে। কিন্তু এখনও আমাদের মা ও সদ্যোজাত শিশুদের সকলকে বাঁচাতে হবে। ভাই ও বোনেরা, আজকাল ডেঙ্গুর খবর খুব পাওয়া যাচ্ছে। এটা ঠিক যে ডেঙ্গু অত্যন্ত বিপজ্জনক। কিন্তু ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব সহজ। আমি যে স্বচ্ছ ভারতের কথা বলি, তার সঙ্গে এর সরাসরি যোগ আছে। ঘরের ছোট ছোট জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখা, জল বিশুদ্ধ রাখার নিয়মকানুন আছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব যে মৃত্যুকে এত সহজে আসতে দেবেন না। জীবন অনেক মূল্যবান। চারপাশের নোংরা জমা জলের প্রতি উদাসীন ভাব মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে, এটা ঠিক নয়। সারা দেশে প্রায় ৫১৪টি কেন্দ্রে বিনা পয়সায় ডেঙ্গুর পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রয়েছে। এখন রাখীবন্ধন থেকে দীপাবলী পর্যন্ত দেশজুড়ে নানান উৎসব চলবে। আপনারা দেখবেন, পরিচ্ছন্নতার এই বিধি পালন আপনার স্বভাব হয়ে যাবে। এই দুই ভাই ভারতের গৌরব বাড়িয়েছেন। আমেরিকায় একটি সাইকেল রেস হয়, ‘রেস অ্যাক্রস আমেরিকা’, যা খুব কঠিন। দেখুন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত স্তরে কীভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যখন এইসব ঘটনা শুনি তখন গর্বে বুক ফুলে ওঠে। কখনও কখনও পুরনো ধ্যান-ধারণার বশবর্তী হয়ে আমরা নতুন প্রজন্মের প্রতি অন্যায় করে ফেলি। পুরনো প্রজন্মের মানুষের ধারণা আছে যে নতুন প্রজন্ম কিছু জানে না। এই ধ্যান-ধারণা বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। আমি এমন অনেক যুবকের সঙ্গে মিলিত হয়েছি, যাঁরা Sunday on Cycle–কে তাঁদের জীবনের ব্রত করেছেন। কিছু মানুষ বলেন, আমি তো সপ্তাহে একদিন ‘সাইকেল ডে’ পালন করি। আমার শরীর-স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের সুরক্ষার জন্যও এটি অত্যন্ত উপযোগী। আর আমি যে যুবক, সেটা ভাবতেও ভাল লাগে। এখন তো আমাদের দেশের অনেক শহরে সাইকেল চালানো হচ্ছে এবং সাইকেল চালাতে উৎসাহ দেওয়ার লোকও অনেক আছেন। এটি পরিবেশ সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এক ভাল প্রচেষ্টা। আজ যখন আমার দেশের দুই তরুণ আমেরিকায় দেশের জাতীয় পতাকা তুলে ধরেছেন, তখন ভারতের যুবকদের ভাবনা-চিন্তা যে পথে চলেছে তা উল্লেখ করতে আমার ভাল লাগছে। আমি আজ মহারাষ্ট্র সরকারকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাতে চাই। মুম্বই-এ ইন্দু মিল-এর জমিতে বাবাসাহেব আম্বেদকরের স্মারক তৈরির কাজ বহুদিন ধরে আটকে ছিল। এই সঙ্গে লণ্ডনের 10, King Henry Road–এর যে বাড়িতে ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর থাকতেন, সেটি আমরা কিনে নিয়েছি। বাবাসাহেব আম্বেদকরের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য মহারাষ্ট্র সরকারের এই দুটি প্রচেষ্টাকেই আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি, আমি গর্ব বোধ করছি, আমি তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমাদের কৃষক ভাই-বোনেদের খারিফ শস্যরোপণে সাহায্য হবে। আর একটি খুশির খবর আমার মনে আসাতে খুব আনন্দ হয়েছে। আমাদের দেশে ডালশস্য এবং তৈলবীজের খুব ঘাটতি আছে। গরীব মানুষদের ডাল চাই, খাবার জন্য তরি-তরকারি তৈরিতে অল্প তেলও চাই। আমার প্রিয় দেশবাসী, ২৬শে জুলাই দিনটি আমাদের দেশের ইতিহাসে ‘কারগিল বিজয় দিবস’ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। কৃষকদের দেশের জমির সঙ্গে যতটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, আমাদের দেশের জওয়ানদেরও তাই। কারগিলের যুদ্ধ কেবল দেশের সীমারেখাতেই হয়নি, ভারতের প্রতিটি শহর, প্রতিটি গ্রামের যোগ ছিল এই যুদ্ধের সঙ্গে। এই যুদ্ধ সেই সব মা ও বোনেরাও লড়েছেন, যাঁদের জওয়ান ছেলে বা ভাই কারগিলে শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। গণতন্ত্রে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো, প্রতিটি মানুষকে দেশের উন্নতির কাজে লাগানোর সংকল্প আমার, আর আজ এক বছর বাদে এই কাজ করতে গিয়ে এটাই আমার আনন্দ যে প্রায় দু’কোটি মানুষ ‘mygov’ পোর্টালটি দেখেছেন। এখন এই কথাটা খুব ছোট, কিন্তু কখনও সরকারী তরফে এটা নিয়ে ভাবা হয়নি বা কোনো বিচার-বিবেচনা করা হয়নি। কিন্তু ভাই অখিলেশ বাজপেয়ী-র এই মতামত সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে এবং আজ আমাদের প্রতিবন্ধী ভাই-বোনদের জন্য এই ব্যবস্থা চালু করা হয়ে গেছে। আজ যে লোগো তৈরি হচ্ছে, ট্যাগ লাইন তৈরি হচ্ছে, পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে, নীতি তৈরি করা হচ্ছে – ‘mygov’ পোর্টালে এই সবকিছু ব্যাপারে সদর্থক মতামত আসছে। শাসন ব্যবস্থায় এক নতুন স্বচ্ছ বাতাস বয়ে যাওয়ার অনুভূতি হচ্ছে। এক নতুন চেতনা অনুভব হচ্ছে। ১৫ই অগাস্টে আমার কি বলা উচিত তা নিয়েও ইদানিং ‘mygov’ পোর্টালে নানান পরামর্শ আসছে। চেন্নাই থেকে সুচিত্রা রাঘবচারী অনেক মতামত পাঠিয়েছেন। ‘mygov’ পোর্টালে পাঠাতে পারেন, আকাশবাণীতে চিঠি লিখতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী-র কার্যালয়েও চিঠি লিখতে পারেন। দেখুন, আমি এটা মানি এ এক ভাল জিনিস যে ১৫ই অগাস্ট আমার ভাষণের জন্য জনতা-জনার্দনের কাছ থেকে পরামর্শ সংগ্রহ। আমার বিশ্বাস আপনারা অবশ্যই ভাল পরামর্শ পাঠাবেন। মাত্র দু’দিন আগে দিল্লিতে এক দুর্ঘটনার দৃশ্য আমার চোখে পড়ে। দুর্ঘটনার পরে এক স্কুটার চালক ১০ মিনিট ধরে পড়ে ছটফট করছেন। তিনি কোনও সাহায্য পাননি! আর যখন পরিসংখ্যানের দিকে চোখ যায়, তখন মন ব্যথিত হয়ে ওঠে। আমাদের দেশে প্রতি মিনিটে একটি করে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার জন্য, পথ-দুর্ঘটনার জন্য প্রতি ৪ মিনিটে একটি করে মৃত্যু হয়। আর সবথেকে বড় চিন্তার কথা এই যে, এই সমস্ত মৃত মানুষদের এক-তৃতীয়াংশই ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী নওজওয়ান। একটি মৃত্যু পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারে। প্রশাসনের যে কাজ করা উচিত, তা তো তাঁরা করবেনই, কিন্তু আমি মা-বাবাদের অনুরোধ জানাব, আপনার সন্তান টু-হুইলার চালাক বা ফোর-হুইলার, সাবধানতার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা পরিবারের তরফেই হওয়া উচিত। সারা দেশ জুড়ে আমি দুর্ঘটনার খবর দেওয়ার জন্য একটি টোল-ফ্রি নম্বর 1033-এর ব্যবস্থা করেছি, অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছি – কিন্তু এই সব কিছুই দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ। কখনও কখনও আমি বলি যে, কর্মচারীরা কর্মযোগী হন। নিজস্ব রুচি, নিজস্ব শিল্প, নিজস্ব ক্ষমতাকে নিজের কাজের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত করা যায়, তা বিজয় বিশওয়াল দেখিয়ে দিয়েছেন। আগামীদিনে বিজয় বিশওয়ালের ছবি নিয়ে নানান আলোচনা, মত বিনিময় অবশ্যই হতে পারে। আমার আর একটি কথাও মনে পড়ছে – মধ্যপ্রদেশের হরদা জেলার সরকারী আধিকারিকদের পুরো দল, পুরো জেলাতে এক এমন কাজ শুরু করেছেন যা আমার মনকে ছুঁয়ে গেছে এবং তাঁদের কাজ আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এইরকম একটি খবর আমি জানতে পারলাম। যেটা আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। ছত্রিশগড়ের রাজনন্দ গাঁও-তে কেশলা নামে একটি ছোটো গ্রাম আছে। এই গ্রামের লোকেরা গত কয়েক মাস যাবৎ শৌচালয় তৈরির অভিযান চালিয়েছেন। এখন এই গ্রামের কোনও ব্যক্তিকে উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম করতে হয় না। শৌচালয় তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর পুরো গ্রামের লোক এই উপলক্ষ্যে একটি বড় উৎসব পালন করেছেন। সমাজ জীবনে মূল্যবোধ কীভাবে বদলে যাচ্ছে, জনসাধারণের মানসিক চাহিদা কীভাবে বদলে যাচ্ছে, দেশের নাগরিকবৃন্দ দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এটি যা আমার সামনে এসেছে। তাঁরা অনেক কিছু লিখতে থাকেন – এটা খুব ভাল কথা। আমি আজ আনন্দের সঙ্গে তাঁদের বলতে চাই যে, উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রক রয়েছে। দিল্লি থেকে দূরে পূর্ব পর্যন্ত যাওয়ার প্রচেষ্টা যাকে আমি ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ বলছি, এটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মার্স মিশন’-এর সফলতায় আমরা আনন্দিত। আমরা গর্বিতও। কিন্তু কখনও কখনও ভাবি, আজ আমরা যখন যুব প্রজন্মের সঙ্গে কথা বলি এবং জানতে চাই, তাঁরা ভবিষ্যতে কি হতে চান, সেক্ষেত্রে একশো জনের মধ্যে এক-আধজন বিদ্যার্থী পাওয়া যায়, যাঁরা বলেন, ‘আমি বৈজ্ঞানিক হতে চাই’। এখন তো মোবাইল চার্জ করতে হলেও অন্য গ্রামে যেতে হয়। শহরে লভ্য সমস্ত সুবিধা গ্রামেও পাওয়া উচিত। সেইজন্যই আমরা শুরু করেছি ‘দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি কার্যক্রম’। কিন্তু গরীবদের জন্য আমাদের আরও কাজ করতে হবে। এটা শুরু করে দিয়েছি, শেষও করব। আজ এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার ইচ্ছা হল। একদিক দিয়ে আমাদের দেশে অগাস্ট-সেপ্টেম্বর উৎসবের মাস বলে পালিত হয়। অনেক উৎসবও পালিত হয়। আপনাদের সবাইকে আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ১৫-ই অগাস্টের জন্য আপনাদের পরামর্শ অবশ্যই পাঠান। আপনাদের মতামত আমার অনেক কাজে আসবে। যখন বলেছিলাম, আমি ভাবিনি, এরকম উল্লেখযোগ্য সাড়া পাব। লাখ লাখ লোক ট্যুইটার, ফেসবুক, ইন্‌স্টাগ্রাম-এ ফটো পোস্ট করেছেন। একটার পর একটা ফোটো দেখলাম, ভারতে কত বৈচিত্র্য রয়েছে – স্থাপত্য, কলা, প্রকৃতি, ঝরনা, পাহাড়, নদী, সমুদ্র – কত কী? আমার মনে হয় ভারত সরকার পর্যটনের জন্য যে কথাটা ভাবতেও পারে নি, সেই বড় কাজটাই আপনারা করে দিয়েছেন। আর কিছু কিছু ছবি আমার এতই ভালো লেগেছে যে আমি নিজেই পুনরায় ট্যুইট করেছি। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, যোগাভ্যাসের বিশ্বে সূর্য অস্ত যায় না। যোগকে যেভাবে বিশ্বের লোকেরা সম্মানিত করেছেন এবং আত্মস্থ করেছেন তা প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছেই গর্বের বিষয়। মন খুশিতে ভরে গেছে। ফ্রান্সের লোকের কাছে সিন্‌ নদী আর আইফেল টাওয়ার গৌরবের প্রতীক। তাঁরা যোগের জন্য ঐ স্থান পছন্দ করে যোগকেও সমান সম্মান দেখিয়েছেন। নিউ ইয়র্কের টাইম্‌স স্কোয়ারে লোকেরা যোগাভ্যাস করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরা অপেরা হাউসে যোগাভ্যাস করেছেন, যোগকে অপেরা হাউসের সমান সম্মান দেখিয়েছেন। উত্তর আমেরিকা হোক বা সিলিকন ভ্যালি বা মিলানের ডুয়োমো ক্যাথিড্রাল – সব জায়গাতেই যোগাভ্যাস আমাদের গর্বান্বিত করেছে। ভারতের সিয়াচেনে সাদা বরফের চাদরের উপর আমাদের সেনা যোগা করেছেন, সমুদ্রে নৌসেনারা যেখানেই আমাদের নৌবহর ছিল সেখানেই যোগাভ্যাসের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। দিল্লীতে যোগাভ্যাস তো গিনেসবুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান করে নিয়েছে। মনে হচ্ছিল, বিশ্বের প্রতিটি স্থান থেকে এক নতুন প্রশ্ন – এক নতুন আনন্দ – এক নতুন উৎসাহ – এক নতুন একাত্মবোধ উঠে আসছে। কিছুদিন আগে যখন আমি ট্যুইটারে ভিয়েতনামের এক পরিবারের ছোট্ট বাচ্চার যোগাভ্যাস করার ফোটো ট্যুইট করেছিলাম, ঐ ফোটোটা এত সুন্দর ছিল যে বিশ্বজুড়ে তার প্রশংসা হয়েছে। স্ত্রী-পুরুষ, বাচ্চা-বুড়ো, গ্রাম-শহর, উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ সকলেই যোগের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেছেন। যোগ সত্যিই গোটা পৃথিবীকে এক সূত্রে বেঁধেছে। ভারতকে জানার জন্য প্রত্যেকের আগ্রহ বেড়েছে। ভারতের মূল্যবোধ, পরম্পরা, ঐতিহ্য – বিশ্ব জানতে চায়। আমাদের সকলের দায়িত্ব এই ঐতিহ্যকে আগলে না রেখে সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়া। আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি গর্ব থাকলে আমরা এই কাজ করতে পারব। কখনো কখনো কোনো কোনো বিষয় আমাদের কাছে এতই পরিচিত যে তার মধ্যে আমরা কোন নূতনত্ব দেখতে পাইনা – যেমন আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ। আমরা জানিই না আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ বিশ্বের লোকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’-এর সাফল্য, আনন্দ ও সন্তুষ্টির সঙ্গে এক নতুন দায়িত্ববোধ নিয়ে এসেছে। বিশ্বকে ভালো যোগ-শিক্ষক দেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই। কোথায় যোগ শিখবেন, কোথায় যোগ-শিক্ষক পাওয়া যাবে – এই সম্বন্ধে একটি ডেটাবেস আপনারা তৈরি করতে পারেন বলে আমার বিশ্বাস। বিগত দিনের ঘটনাগুলিকে আমি এক অন্য দৃষ্টিতেও দেখছি। সরকার কাজ করছে, সরকার ভীষণ সক্রিয়, লক্ষ্য স্থির থাকলে তার কি ফল হয় সেটা আমরা দেখেছি। আমাদের চারিদিকে যখন নিরাশা ছেয়ে ছিল, যেমন এক বছর আগেই আমরা শুনতাম, কিচ্ছু হবে না - কিচ্ছু হবে না – কিচ্ছু হবে না। কিন্তু ‘যোগা দিবস’-এর দিনে এক কোণে পড়ে থাকা এই ছোট বিভাগই নেতৃত্ব দিয়েছে এবং গোটা বিশ্বজুড়ে এত বড় একটা অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করে দেখিয়েছে। যদি লক্ষ্য স্থির থাকে, তবে ছোটো ছোটো বিভাগও ভাল কাজ করতে পারে – এটা তারই নমুনা। কিছুদিন আগেই বিশ্ব দেখেছে আমাদের লোক ইয়েমেন থেকে বিপদগ্রস্থ লোকেদের কীভাবে রক্ষা করেছে। গত ১৫ই আগস্ট আমি লালকেল্লায় সমস্ত বিদ্যালয়ে শৌচালয় বানানোর জন্য অনুরোধ করেছিলাম, আর বলেছিলাম সামনের ১৫ই আগস্টের মধ্যে এই কাজ আমাদের সম্পূর্ণ করতে হবে। অর্থাৎ সরকার, সাধারণ মানুষ, সরকারী কর্মচারী – সবাই দেশের জন্য কাজ করতে চায়। গত মাসে আমি কলকাতা থেকে তিনটি জন-সুরক্ষা প্রকল্প শুরু করেছিলাম। এত কম সময়ের মধ্যে জন সুরক্ষা প্রকল্পে প্রায় ১০ কোটির বেশি মানুষ কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত হয়েছেন, যদিও এই প্রকল্প আমাদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আগষ্ট মাসে আসছে রাখীবন্ধনের উৎসব। আমি যখন ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আসি, তখন অনেকে আমাকে পরামর্শ পাঠান। বহু মানুষ আমাকে পরামর্শ পাঠিয়েছেন যে বর্ষা নিয়ে কিছু কথা আমার বলা উচিত। নাগপুর থেকে যোগেশ দাণ্ডেকর, মাইসোর থেকে হর্ষবর্ধন মহাশয়, প্রবীণ নাদকর্ণী মহাশয়, দিব্যাংশু গুপ্তা মহাশয় – প্রত্যেকে আমাকে বলেছেন ‘মন কি বাত’-এ বর্ষা নিয়ে কিছু কথা বলতে। আপনারাও নিশ্চয়ই এই বর্ষায় গরম পকোড়া, ভাজাভুজি ও ভুট্টা-র সঙ্গে গরম চা-এর আমেজ উপভোগ করছেন। যেমন সূর্যের কিরণ আমাদের প্রাণশক্তি দেয় তেমনি বর্ষা আমাদের শক্তি যোগায়। গ্রামের জল গ্রামে থাকবে, শহরের জল শহরে – এই আমাদের সংকল্প হওয়া উচিত। আমরাও তো এরকম করতে পারি। আর আমি একটি পরামর্শ দিচ্ছি যা আমার প্রত্যক্ষ এবং সফল অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া। আপনারা যখন গাছ লাগাবেন তখন গাছের পাশে একটি পুরনো মাটির কলসী বসিয়ে তাতে জল ভরে দিন। মাসে এক-দু বার জল ভরলেই চলবে। আমি তো কৃষকদেরও বলব, আপনারা আপনাদের ক্ষেতের পাশে বেড়া না লাগিয়ে গাছ লাগান। আর আমরা এ-ও জানি যে বর্ষাকালে জলের মাধ্যমে রোগ বেশি ছড়ায়। এটা তো ঠিক যে, আমরা যত সাবধান হব, রোগও তত দূরে থাকবে। আমার দেশবাসী, আমরা সদ্য সদ্য তিনটি নতুন প্রকল্প শুরু করেছি, বিশেষ করে শহরবাসীর জন্য। আমাদের দেশে কম করে হলেও পাঁচশো ছোটোখাটো শহর আছে। ২০২২ সালে যখন ভারতবর্ষ তার স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ করবে, তখন আমরা প্রত্যেক দেশবাসীকে নিজের ঘর দিতে চাই। কিন্তু যখন এই সরকারী প্রকল্প কোন ব্যক্তি, সমাজ বা গ্রামের নিজেদের প্রকল্প হয়ে ওঠে, তখন তার শক্তি কতটা বেড়ে যায়। বিগত দিনে হরিয়ানার বিবিপুর গ্রামের এক পঞ্চায়েত প্রধান শ্রীমান সুনীল জগলান মহাশয় এক খুব মজার প্রচেষ্টা শুরু করেছেন। হরিয়ানাতে বালকদের তুলনায় বালিকার সংখ্যা খুব কম। দেশের মধ্যে প্রায় ১০০টি জেলা এরকম আছে যেখানে এইরকম অবস্থা রয়েছে, যা খুবই চিন্তাজনক। হরিয়ানার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। আর তাই আমি আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারাও আপনাদের কন্যাদের সঙ্গে ‘সেল্‌ফি উইদ ডটার’-এ অংশ নিন। এর সঙ্গে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ট্যাগলাইন লিখে দিন, সুন্দর ট্যাগলাইন লিখুন, তা যে কোনো ভাষাতেই হতে পারে। ইংরেজি, হিন্দি, আপনার মাতৃভাষা বা অন্য যে কোনো ভাষাতেই হোক না কেন। এর মধ্যে যে ট্যাগ লাইনটা প্রেরণাদায়ক হবে, আমি সেটা আপনাদের কন্যার সঙ্গে তোলা আপনাদের সেল্‌ফি পুনরায় ট্যুইট করব। আমরা সবাই একরকম ভাবে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ এই প্রকল্পটিকে জন আন্দোলনের রূপ দিতে পারি। আমাদের দেশকে শস্যশ্যামলা করে তুলুন। একে আপনাদের জীবনের অংশ করে তুলুন। আর একটি কথা – ‘ইনক্রেডিবল্‌ ইণ্ডিয়া’ – আপনারা যেখানেই যান না কেন, সেখানকার ছবি অবশ্যই পাঠাবেন। আমাদের দেশ – এমন কি সমস্ত বিশ্ব জানতে পারবে আমাদের দেশে কত বৈচিত্র্য আছে। আমার মনে হয়েছে, যে ছবি আপনারা পাঠাচ্ছেন, তার মধ্যে হস্তশিল্প সংক্রান্ত ছবি খুব কম এসেছে। আর আমাদের এক সহজ মাধ্যম আছে যার সাহায্যে আমরা অবশ্যই পৌঁছতে পারি। আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ এইটুকুই। আপনারা কল্পনা করে নিন এই মাঝখানের সময়টুকু কীরকম গেছে। যখন আমি ‘মন কী বাত’-এ মনের কথা বলি, তখন যদিও বলতাম আমিই, শব্দগুলিও আমার, গলার আওয়াজও আমার, কিন্তু বক্তব্য ছিল আপনাদের, পুরুষার্থ ছিল আপনাদের, পরাক্রমও ছিল আপনাদেরই। কিন্তু এই রবিবার আমায় অনেক অপেক্ষা করিয়েছে। যাক, শেষ পর্যন্ত সুযোগও এসে গেছে। আপনাদের সঙ্গে আমার এই মৌণ আদানপ্রদান, আমার কাছে এ এক প্রকার আধ্যাত্মিক যাত্রার অনুভূত অংশ ছিল। অনেকে আমাকে এ-ও জিজ্ঞাসা করেছেন ভোটের ঐ ব্যস্ততার মধ্যে আমি কেদারনাথ কেন গিয়েছিলাম। বেশির ভাগ মানুষই এর মধ্যে রাজনৈতিক মানে খুঁজে নিয়েছিলেন। কিন্তু আমার জন্য এ ছিল নিজের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ। বলতে পারেন আমি আমার সঙ্গে মিলিত হতে গিয়েছিলাম। যেরকম কেদারের বিষয়ে লোকেরা জানার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন, সেইরকম একটি ইতিবাচক শক্তি আপনাদের চেষ্টায়, আপনাদের কথায় আমি সর্বক্ষণ অনুভব করি। কখনও কখনও তো আপনাদের কিছু কিছু শব্দ আমার চিন্তাভাবনাকে পর্যন্ত ধারালো করে তোলে। মানুষজন যেমন দেশ ও সমাজের সামনে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জের কথা বলেন, আবার সঙ্গে সঙ্গে তার সমাধানের কথাও বলেন। যদি কেউ স্বচ্ছতা নিয়ে লেখেন তিনি নোংরা আবর্জনা নিয়ে তাঁর বিরক্তির কথা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্বচ্ছতার প্রতি এই প্রচেষ্টাকে স্বাগতও জানান। এ আমাদের বলে দেয় দেশবাসীর মধ্যে আন্তরিক শক্তি, সামর্থ্য ও প্রতিভার কোনো অভাব নেই। শুধু দরকার ঐ শক্তি ও প্রতিভাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার, সুযোগ দেওয়ার, তাকে কাজে লাগানোর। এই ভাবনাকে পাথেয় করে চলুন ‘মন কি বাত’-এর ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। সম্প্রতি গণতন্ত্রের মহাপর্ব, সর্ববৃহৎ নির্বাচন প্রক্রিয়া আমাদের দেশে সম্পন্ন হল, যেখানে ধনী থেকে দরিদ্র, সবাই সানন্দে এই অভিযানে সামিল হয়ে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ণয় করতে তৎপর হয়েছিল। ভারতে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ৬১ কোটিরও বেশি মানুষ ভোটদান করেন, Sixty One Crore! সংখ্যাটা সামান্য মনে হতে পারে, কিন্তু গোটা দুনিয়ার নিরিখে দেখতে গেলে আমি বলব, এক চিন ছাড়া পৃথিবীর যে কোনো দেশের জনসংখ্যার থেকে বেশি মানুষ ভারতে ভোট দিয়েছেন। যতজন ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, সেই সংখ্যা আমেরিকার মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি, প্রায় দ্বিগুণ। ভারতের মোট ভোটদাতার সংখ্যা গোটা ইউরোপের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। এগুলি আমাদের গণতন্ত্রের বিশালতা ও ব্যাপকতার পরিচায়ক। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন এখনও পর্যন্ত ইতিহাসে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক নির্বাচন। আপনি কল্পনা করতে পারেন — এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কী বিপুল আয়োজন ও মানব সম্পদের প্রয়োজন হয়। লক্ষাধিক শিক্ষক, আধিকারিক ও কর্মচারিদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য এই নির্বাচন সম্ভব হয়েছে। গণতন্ত্রের এই মহাযজ্ঞকে সাফল্যপূর্বক সম্পন্ন করতে একদিকে যেমন আধা-সামরিক বাহিনীর প্রায় তিন লক্ষ সুরক্ষাকর্মীরা নিজেদের দায়িত্ব নিষ্পন্ন করেছেন, অন্যদিকে বিভিন্ন রাজ্যের কুড়ি লক্ষ পুলিশকর্মী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এঁদের কঠিন পরিশ্রমের ফলস্বরূপ এইবার, গত নির্বাচনের থেকে বেশি ভোটদান হয়। এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রায় দশ লক্ষ Polling Station, প্রায় চল্লিশ লক্ষের বেশি EVMমেশিন, ১৭ লক্ষের বেশি VVPAT মেশিনের ব্যবস্থা করা হয় — কল্পনা করতে পারছেন, কী বিশাল মাপের কর্মকাণ্ড! এইসব সুনিশ্চিত করার জন্য যে, কেউ যেন তার ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত না থাকেন। অরুণাচল প্রদেশের এক প্রত্যন্ত জায়গায় কেবল একজন মাত্র মহিলা ভোটদাতার জন্য Polling Station বানানো হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু জায়গায় অবস্থিত ভোটদান কেন্দ্রও এই ভারতেই। হিমাচল প্রদেশের লাহুল-স্পিতি অঞ্চলে ১৫০০০ ফিট উচ্চতায় রয়েছে এই ভোটদান কেন্দ্র। এছাড়া আরও এক তথ্য আছে, যে বিষয়ে আমরা গর্ববোধ করতে পারি। সম্ভবত ইতিহাসে প্রথমবার মহিলারাও পুরুষদের মত উৎসাহের সঙ্গে ভোটদান করেছেন। এই নির্বাচনে পুরুষ ও মহিলা ভোটদাতার সংখ্যা প্রায় সমতুল্য। আরও এক অনুপ্রাণিত করার মত তথ্য হল এখন সংসদে ৭৮ জন মহিলা সাংসদ আছেন, যা এক রেকর্ড। আমি নির্বাচন কমিশনকে এবং ভোটদান প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং ভারতের সচেতন ভোটদাতাদের প্রণাম জানাচ্ছি। চার-পাঁচ বছরের হামিদ যখন মেলা থেকে তার দিদিমার জন্য একটি চিমটে নিয়ে যায়, তখন সত্যিই মনে হয় মানব মনের ভালোবাসা, সহমর্মিতা কী অপূর্ব, কী অভাবনীয় হতে পারে। এই গল্পের শেষ লাইনটি আমাদের ভাবায়, শেখায় জীবনের এক অমোঘ সত্য। “শিশু হামিদ, বৃদ্ধ হামিদের ভূমিকা পালন করেছিল — বৃদ্ধা আমিনা, বালিকা আমিনায় পরিবর্তিত হয়েছিল। ”এরকমই এক খুবই হৃদয়স্পর্শী গল্প হল ‘পুস কি রাত’। এই গল্পে এক গরীব কৃষকের জীবনের বিড়ম্বনারপ্রকৃত ছবি দেখতে পাওয়া যায়। নিজের ফসল নষ্ট হওয়ার পরেও কৃষক হলদু আনন্দিত হয়, কারণ তাকে আর শীতকালের ঠাণ্ডায় ক্ষেতের মধ্যে ঘুমোতে হবে না। যদিও এইসব গল্প প্রায় শতাব্দী প্রাচীন, তবুও এর প্রাসঙ্গিকতা আজও ততটাই অনুভূত হয়। গল্পটা পড়ার পর, আমার এক অন্য ধরনের অনুভুতি হয়। যখন বই পড়ার কথা হচ্ছে, তখন কোন এক সংবাদমাধ্যমে, আমি কেরলের অক্ষরা লাইব্রেরি সম্বন্ধে পড়েছিলাম। আপনি এটা জেনে আশ্চর্য হবেন যে ওই লাইব্রেরি ইডুক্কির গভীর অরণ্যের এক গ্রামের মধ্যে অবস্থিত। একটা সময় এমনও ছিল, যখন বস্তায় ভরে পিঠের ওপর চাপিয়ে, এখানে বই আনা হত। আজ এই লাইব্রেরি আদিবাসী শিশুদের পাশাপাশি, সকলকেই এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে। গুজরাটের, ‘ওয়াংচে গুজরাট’ অভিযান, এক সফল উদ্যোগ। সব বয়সের, লক্ষ লক্ষ মানুষ, বই পড়ার এই অভিযানে অংশ নিয়েছিল। আজকের ডিজিটাল জগতে, গুগল গুরুর কালে, আমি আপনাদেরও অনুরোধ করব যে, একটু সময় বের করে, নিজের ডেইলি রুটিনে বইকেও যেন একটু স্থান দেওয়া হয়। আপনি সত্যিই খুব এনজয় করবেন আর যেই বই পড়ুন না কেন, সেই ব্যাপারে NarendraModiApp-এ অবশ্যই লিখবেন যাতে কিনা ‘মন কি বাত’-এর সকল শ্রোতারাও, সেই বিষয়ে অবগত হন। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি খুব খুশি যে আমার দেশের জনগণ সেই সকল বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছে, যা কিনা কেবল বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের জন্য এক বড় Challenge। আমি NarendraModiApp আর MyGov-এ আপনাদের কমেন্ট পড়ছিলাম। আমি লক্ষ্য করলাম যে জলের সমস্যা নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু লিখেছেন। Belgavir পওয়ান গৌড়াই, ভুবনেশ্বরের সিতাংশু মোহন পারিদা, এছাড়াও ইয়াশ শর্মা, শাহাব আলতাফ এবং আরও অনেকেই জল সম্পর্কিত সমস্যার সম্বন্ধে লিখেছেন। আমাদের সংস্কৃতিতে জলের খুব বড় প্রভাব রয়েছে। জলের অভাবে দেশের বহু অংশ প্রতিবছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আপনি আশ্চর্য হবেন জেনে যে এক বছরে, বর্ষাথেকে প্রাপ্ত জলের কেবল মাত্র ৮ শতাংশ আমাদের দেশে সংরক্ষণ করা হয়। আমি বিশ্বাস করি যে, আমরা অন্যান্য সমস্যার মতোই, গণ অংশগ্রহণের মাধ্যমে, জনগণের শক্তি দিয়ে, 130 কোটি দেশবাসীর সামর্থ্য, সহযোগিতা ও সংকল্পের সাহায্যে এই সংকটেরও সমাধান খুঁজে নেব। জলের গুরুত্বকে সর্বাগ্রে রেখে দেশে নতুন জলশক্তি মন্ত্রক তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে জল সম্বন্ধিত সমস্ত বিষয়ে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে। আমি দেশের সমস্ত গ্রামপ্রধানকে চিঠি লিখেছিলাম। আমি গ্রামপ্রধানদের লিখেছিলাম জল বাচাঁতে, জল সঞ্চয় করতে, বর্ষার প্রতিটি ফোঁটাকে বাঁচাতে। তাঁরা গ্রামসভার বৈঠক ডেকে, গ্রামবাসীদের সঙ্গে বসে যেন শলা-পরামর্শকরেন। আমার ভালো লাগছে যে তাঁরা এ-বিষয়ে সম্পূর্ণ উৎসাহ দেখিয়েছেন এবং এ-মাসে ২২ তারিখে হাজার হাজার পঞ্চায়েতে কোটি কোটি লোক শ্রমদান করেছেন। গ্রামে গ্রামে লোকেরা জলের এক-এক ফোঁটা সঞ্চয় করতে সঙ্কল্প করেছেন। আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি একজন গ্রামপঞ্চায়েতের কথা শোনাতে চাই। ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ জেলার কাটকামশাণ্ডী ব্লকের লুপুং গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান আমাদের সবাইকে কী বার্তা দিয়েছেন শুনুন —আমার নাম দিলীপ কুমার রবিদাস। জল বাঁচাতে যখন প্রধানমন্ত্রী মহোদয় আমাদের চিঠি লিখেছেন, তো আমাদের বিশ্বাস হচ্ছিল না যে প্রধানমন্ত্রী আমাদের চিঠি লিখেছেন। ওখানের লোকেরা আবার একবার জল সংরক্ষণের জন্য নিজেদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত হয়েছেন। আমার পক্ষ থেকে সকল গ্রামপ্রধানকে, সকল পঞ্চায়েতপ্রধানকে, তাদের সক্রিয়তার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। সারা দেশে এমন অনেক পঞ্চায়েতপ্রধান আছেন, যাঁরা জল সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছেন। আমি যেটা বলেছিলাম, সকলের চেষ্টায় বড়ো ইতিবাচক পরিণাম লাভ করা সম্ভব। কিন্তু সবার লক্ষ্য একটাই, সেটা হল জল বাঁচানো, জল সংরক্ষণ। পাঞ্জাবে জলের নিকাশী নালা সংস্কারের কাজ চলছে। এর ফলে জল জমে যাওয়ার সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে। তেলেঙ্গানার থিমাঈপল্লীতে একটি জলাধার নির্মাণের ফলে গ্রামের লোকেদের জীবন বদলে যাচ্ছে। রাজস্থানের কবিরধামে ক্ষেতের মধ্যে তৈরি ছোটো ছোটো পুকুর নির্মাণের ফলে এক বড় পরিবর্তন এসেছে। আমি তামিলনাড়ুর ভেল্লোরে একটি সার্বজনিক প্রচেষ্টার কথা পড়ছিলাম, সেখানে নাগনদীকে আবার বাঁচিয়ে তুলতে ২০ হাজার মহিলা এক জায়গায় হয়েছেন। আমি গাঢ়ওয়ালের সেইসব মহিলাদের সম্বন্ধেও পড়ছিলাম, যাঁরা একসঙ্গে মিলে বৃষ্টির জলকে ধরে রাখার জন্য খুব সুন্দর কাজ করে যাচ্ছেন। আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশবাসীকে তিনটি অনুরোধ করছি। আমার প্রথম অনুরোধ — যেভাবে দেশবাসী স্বচ্ছতাকে একটি গণ আন্দোলনের রূপ দিয়েছিলেন, আসুন সেইভাবে জল সংরক্ষণের জন্য একটি গণ আন্দোলনের শুভারম্ভ করি। আমরা সবাই মিলে জলের প্রতিটি ফোঁটা বাঁচানোর সংকল্প করি, আমার বিশ্বাস জল হল পরমেশ্বরের থেকে পাওয়া প্রসাদ, জল পরশপাথরের রূপ। জলের এক-এক ফোঁটাকে বাঁচাতে একটি সচেতনতার অভিযানের শুভারম্ভ করি। সিনেমা জগত হোক, খেলাধূলার জগত হোক, মিডিয়ার বন্ধুরা হোক, সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত লোকেরা হোক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত লোকেরা হোক, কথা-কীর্তনের শিল্পীরা হোক, প্রত্যেকে নিজ নিজ পদ্ধতির মাধ্যমে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিন। সমাজকে জাগিয়ে তুলুন, প্রত্যেককে যুক্ত করুন ও জোট বাঁধুন। আপনারা দেখুন, নিজের চোখের সামনে আমরা পরিবর্তন দেখতে পাব। আসুন, আমরা জল সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত পদ্ধতিগুলির একটি তালিকা তৈরি করে মানুষকে জল সংরক্ষণে অনুপ্রাণিত করি। আপনারা সকলে ‘হ্যাশট্যাগ janshakti4jalshakti’-এর ব্যবহার করে আপনার content shareকরতে পারেন। আমার প্রিয় দেশবাসী, আরও একটি বিষয়ের জন্য আপনাদের এবং বিশ্বের সকল মানুষকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। যেভাবে ২১ জুন, আবার একবার ‘যোগ দিবস’-এ যেরকম সক্রিয়তার সঙ্গে, উৎসাহে ভরপুর এক-একটি পরিবারের তিন-তিন বা চার-চার প্রজন্ম একসঙ্গে বসে ‘যোগ দিবস’ পালন করেছেন, তার জন্য। Holistic Health Care-এর জন্য যে সচেতনতা এসেছে এর মধ্যে, ‘যোগ দিবস’-এর মাহাত্ম্য বেড়েই চলেছে। পৃথিবীর প্রতিটি কোণে সূর্যোদয়ের সঙ্গে যদি কোনও যোগাপ্রেমী সূর্যকে স্বাগত জানায়, তবে তার পুরো যাত্রা শেষ হয় সূর্যাস্তের সঙ্গে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সুপরিচিত গণ্য-মান্য ব্যক্তিত্ব, সাধারণ মানুষ — এঁরা আমাকে ট্যুইটারে দেখিয়েছেন কীভাবে তাঁদের নিজের নিজের দেশে ‘যোগ দিবস’ পালন করেছেন। ওই দিন, বিশ্বকে খুশিতে ভরপুর এক বিশাল পরিবারের মতো লাগছিল। আমরা সবাই জানি, একটা সুস্থ সমাজ গড়তে, সুস্থ ও সংবেদনশীল মানুষের প্রয়োজন। যোগা সেটাই সুনিশ্চিত করে। ২০১৯-এ যোগের প্রসার ও উন্নতিকল্পে অনন্য অবদানের জন্য Prime Minister’s Awards-এর ঘোষণা করাহয়েছিল, যেটা অবশ্যই আমার কাছে সুসংবাদ. এই পুরস্কার পৃথিবীর সেই সংগঠনগুলিকে দেওয়া হয়েছে যারা যোগেরপ্রচার ও প্রসারে গুরুপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যেমন, ‘জাপান যোগা নিকেতন’-এর কথাই বলা যেতে পারে, যারাসমগ্র জাপানে যোগাকে ভীষণ জনপ্রিয় করে তুলেছেন। আর যেখানে বিষয়টা যোগের সঙ্গেযুক্ত সেখানে কি ভারতীয়রা পিছিয়ে থাকতে পারেন? বিহারের মুঙ্গেরের যোগা বিদ্যালয়, যারা গত কয়েক দশক ধরেযোগের প্রতি নিবেদিত, তাদের সম্মানিত করা হয়েছে। আপনাদের ভাবনারসঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারা, আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ‘মন কি বাত’ তো নিমিত্তমাত্র। আপনারাই আমার প্রেরণা, আমার শক্তি। আসুন আমরা সবাইএকসঙ্গে বসে ‘মন কি বাত অনুষ্ঠান’ শুনতে শুনতে জীবনের সমস্ত দায়িত্ব সম্পন্ন করি। আগামী মাসে ‘মন কি বাত’অনুষ্ঠানে আবার আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। ‘মন কি বাত’ শুরু করতে গিয়ে আজ আমার মন ভারাক্রান্ত। দশ দিন আগে, ভারতমাতা তাঁর বীর সুসন্তানদের হারিয়েছেন। দেশের সামনে উপস্থিত এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সবাইকে জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতাবাদ এবং বাকি সব মতানৈক্য ভুলে যেতে হবে, যাতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা আগের চাইতে আরও দৃঢ়, শক্তিশালী এবং ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিতে পারি। আমাদের সশস্ত্র সেনা অদম্য সাহসের পরিচয় দিয়ে থাকে। আপনারা দেখেছেন যে সন্ত্রাসের ১০০ ঘণ্টার ভিতরেই কীরকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেনারা সন্ত্রাসবাদীদের এবং তাদের মদতকারীদের কীভাবে সমূলে ধ্বংস করা যায় তার সঙ্কল্প নিয়েছে। বীর সৈনিকদের শহিদ হয়ে যাওয়ার পর, মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁদের পরিজনদের প্রেরণাদায়ক বার্তা সামনে এসেছিল, যা কিনা সমগ্র দেশের মানুষের মধ্যে অতীব সাহস, উৎসাহ এবং শক্তির প্রেরণা জাগিয়ে থাকে। বিহারের ভাগলপুরে শহিদ রতন ঠাকুরের পিতা রামনিরঞ্জনজী এই দুঃখের সময়েও উদ্দীপনার সঙ্গে দৃঢ় সঙ্কল্পের যে পরিচয় দিয়েছেন তা আমাদের সকলকে প্রেরণা জোগায়। তিনি বললেন যে ওঁর অন্য পুত্রকেও দেশের শত্রুদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য পাঠাবেন এবং প্রয়োজন হলে নিজেও লড়াইয়ের ময়দানে উপস্থিত হবেন। ওড়িশার জগৎসিংহপুরের শহিদ প্রসন্না সাহুর পত্নী মীনাজীর অদম্য সাহসকে সমগ্র দেশ কুর্ণিশ জানাচ্ছে। তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে CRPF-এ যোগদান করানোর সংকল্প নিয়েছেন। যখন জাতীয় পতাকায় ঢাকা শহিদ বিজয় সোরেনের মৃতদেহ ঝাড়খণ্ডের গুমলায় পৌঁছায়, সেই সময় তাঁর ছোট ছেলে বলে ওঠে যে সেও সেনাবাহিনিতে যোগ দেবে। এই নিষ্পাপ শিশুর উৎসাহের সঙ্গে এই দৃঢ় সঙ্কল্প, ভাবনা আজ ভারতবর্ষের ছোট ছোট সন্তানদের ভাবনাকে প্রকাশ করে। আমার প্রিয় দেশবাসী, স্বাধীনতার এত দীর্ঘসময়ে আমাদের সকলের যে ‘War Memorial’-এর অপেক্ষা ছিল, তা এখন সমাপ্ত হতে চলেছে। এই বিষয়ে দেশবাসীর অনেক প্রশ্ন, অনুসন্ধিৎসা থাকা খুবই স্বাভাবিক। আমি অবাক হয়ে যেতাম এবং ব্যথিতও হয়েছি যে ভারতে কোনো ন্যাশনাল ওয়্যার মেমোরিয়াল ছিল না। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশের পূর্ব প্রধানমন্ত্রী মোরারজীভাই দেশাইয়ের জন্ম হয়েছিল২৯-শে ফেব্রুয়ারি। আপনারা সকলে এও জানেন যে ঐ বিশেষ দিনটি ৪ বছরে একবারই আসে। সহজ, শান্তিপূর্ণ ব্যক্তিত্বে বলীয়ান, মোরারজীভাই এই দেশের সবচেয়ে নিষ্ঠাবান নেতাদের অন্যতম ছিলেন। আমাদের এই স্বতন্ত্র ভারতে, সংসদে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট পেশ করার রেকর্ড মোরারজী ভাই দেশাইয়ের নামেইরয়েছে। সেদিনের ঐ কঠিন সময়ে মোরারজী দেশাই ভারতকে সঠিক নেতৃত্ব দান করেন, যখন কিনা দেশের গণতন্ত্র এক সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ছিল। মোরারজীভাই দেশাই এই গণতন্ত্রকে রক্ষা করতেই, ‘জরুরী অবস্থা’র বিরুদ্ধে আন্দোলনে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। আর এর জন্য বার্ধক্যে এসেও তাঁকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছিল। সেদিনের সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। কিন্তু, ১৯৭৭-এ যখন জনতা পার্টি ভোটে জেতে, তখন তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী হন। ঘটনাটা এই কারণেই খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ‘জরুরী অবস্থা’র জন্য ৪২-তম সংশোধনের প্রস্তাব করা হয় — যেখানে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতাকে খর্ব করার এবং আরও কিছু প্রস্তাবও সেখানে ছিল যাতে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধও খর্ব হত — সেগুলি কার্যকরী না করে ফেরৎ পাঠানো হয়। যেমন ৪৪-তম সংশোধনী প্রস্তাবের কারণে সংসদ ও বিধানসভার যাবতীয় কাজকর্মের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি, সুপ্রিমকোর্টের কিছু কিছু ক্ষমতা বহাল রাখা হয়। এই সংশোধনী প্রস্তাবে রাখা হয় যে, সংবিধানের ২০ এবং ২১ নং অনুচ্ছেদ মিলে নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলিও যেন ‘জরুরী অবস্থা’র কারণে কোনোভাবেই কেড়ে নেওয়া না হয়। আজ আর একবার এই মহান নেতাকে আমি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করছি। আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রত্যেক বছরের মতই এবারও ‘পদ্ম’ পুরস্কার নিয়ে মানুষের মনে খুব কৌতুহল ছিল। আমি আজ এরকম কিছু মানুষের কথা আপনাদের বলতে চাই। গুজরাটের আব্দুল গফুর খাতড়িজীর কথাই ধরন, তিনি কচ্ছের ঐতিহ্যবাহী রোগন শিল্পকলাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আশ্চর্যজনক কাজ করেছেন। তিনি এই দুর্লভ শিল্পকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে এক অসাধারণ কাজ করেছেন। আব্দুল গফুরের বানানো ‘Tree of Life’ আমি আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামাকে উপহার দিয়েছিলাম। ‘পদ্ম’ পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে মারাঠওয়াড়ার সাব্বির সঈদকে ‘গোমাতার সেবক’ হিসেবে সবাই জানে। তিনি যেভাবে নিজের সমস্ত জীবন গোমাতার সেবায় সঁপে দিয়েছেন — তাতে তিনি অনন্য। মাদুরাই চিন্না পিল্লাই, সেই বিশিষ্ট মানুষ, যিনি তামিলনাড়ুতে ‘কলঞ্জিয়ম আন্দোলন’-এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত এবং শোষিতদের শক্তিশালী ও স্বনির্ভর করার চেষ্টা করেছেন। তিনি একশ বছর বয়সেও বিশ্বজুড়ে সব মানুষকে যোগ ব্যায়ামের প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছেন এবং এখন পর্যন্ত ১৫০০ জন যোগা শিক্ষক তৈরি করেছেন। ঝাড়খণ্ডের বিখ্যাত ‘Lady Tarzan’ হিসেবে খ্যাত যমুনা টুডু, গাছপাচারকারী মাফিয়া ও নকশালদের মোকাবিলা করার মত সাহসী কাজ করে তিনি শুধু ৫০ হেক্টর জঙ্গল উজাড় হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাননি, উপরন্তু দশ হাজার মহিলাকে একজোট করে গাছ ও বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন। যমুনাজীর এই পরিশ্রমের সুফল হিসেবে আজ গ্রামের মানুষ প্রতিটি শিশুর জন্মের সময় ১৮টি করে এবং প্রতিটি মেয়ের বিয়ের সময় ১০টি করে গাছ লাগান। নিজে দিব্যাঙ্গ হয়েও দিব্যাঙ্গ মহিলাদের উন্নয়নের জন্য তিনি যেভাবে কাজ করেছেন — তেমন উদাহরণ বিরল। ‘চক্ষু মহিলা সেবাকুঞ্জ’ নামক সংস্থা তৈরি করে দৃষ্টিহীন শিশুদের স্বনির্ভর করে তোলার পুণ্যকাজে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। আসল কথা এই যে, তিনি চাষবাসের সঙ্গে কারিগরি বিদ্যা প্রয়োগের কাজটিও করেছেন। আমার প্রিয় দেশবাসী, এই বোধহয় প্রথমবার এমন হল যে এই বছর যাঁদের ‘পদ্ম’ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১২ জন কৃষক রয়েছেন। সাধারণত কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত খুব কম মানুষ এবং সরাসরি যাঁরা কৃষক তাঁদের মধ্যে খুব স্বল্পজনই ‘পদ্মশ্রী’ প্রাপকদের তালিকায় আসেন। আর এটাই হল বদলে যাওয়া ভারতের জীবন্ত ছবি। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি আজ আপনাদের সকলের সঙ্গে এক হৃদয়স্পর্শী অনুভবের কথা জানাব, কথাটা গত কয়েকদিন ধরে আমি নিজে উপলব্ধি করেছি। আজকাল আমি দেশের যে অঞ্চলেই যাই, ‘আয়ুষ্মান ভারত’ যোজনা — ‘PM-JYA’ তথা ‘PM জন আরোগ্য যোজনা’য় উপকৃত মানুষের সঙ্গে দেখা করতে চাই। ভাই ও বোনেরা, গত পাঁচ মাসে প্রায় বারো লক্ষ দরিদ্র পরিবার এই যোজনার সুযোগ নিয়েছেন। আমি বুঝতে পারছি, দরিদ্র মানুষের জীবনে এর ফলে কত বড় পরিবর্তন এসেছে। আপনারা যদি কোনো দরিদ্র মানুষকে জানেন, যিনি অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, তাঁদের এই যোজনা সম্পর্কে জানান। সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা সংসদদশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করবে। পরীক্ষার্থীদের, তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। কিছুদিন আগে দিল্লিতে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ এই কার্যক্রমে টাউন হল ফরম্যাটে এক বিপুল আয়োজন হয়েছিল। সমস্ত বিদ্যার্থী, তাদের শিক্ষক, পিতা-মাতা ইউটিউবে এই কার্যক্রমের রেকর্ডিং দেখতে পারেন, আসন্ন পরীক্ষা-যোদ্ধাদের ওসংশ্লিষ্ট সকলকে আমার আগাম শুভকামনা জানালাম। আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতের কথা হবে আর তার পুজোপার্বণের কথা হবে না তা তো হয় না। আর কয়েকদিনের মধ্যে মহাশিবরাত্রি আসছে এবং এবার শিবরাত্রি সোমবার পড়েছে। সোমবার এবং শিবরাত্রি একসঙ্গে পড়ে গেলে আমাদের মন বিশেষ পবিত্র ভাবনায় ও ভক্তিতে ভরে ওঠে। এ কথা মেনে নিতেই হবে এই দিব্যাঙ্গতরুণের ক্ষমতায়আমি অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছি। আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ কার্যক্রমের মাধ্যমে আপনাদের সকলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন আমার কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। রেডিওর মাধ্যমে প্রত্যেক মাসে কোটি কোটি পরিবারের সঙ্গে আমি মুখোমুখি হই। অনেক সময় আপনাদের চিঠি পড়তে পড়তে, আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে, বা ফোনে পাঠানো আপনাদের নানান কথা, পরামর্শ শুনতে শুনতে মনে হয়েছে আমাকে আপনারা আপনাদের পরিবারেরই একজন করে নিয়েছেন। এ আমার এক অত্যন্ত খুশির অনুভব। বন্ধুগণ নির্বাচন গণতন্ত্রের সব থেকে বড় উৎসব। আগামী দু’মাস আমরা নির্বাচন নিয়ে বিভিন্নভাবে ব্যস্ত থাকব। সিদ্ধগঙ্গামঠনিয়মিতপশুএবংকৃষিমেলারআয়োজনকরে। এমনএকমহাপুরুষকেআমিআরওএকবারআন্তরিকশ্রদ্ধাজানাই। যদিকোনওকারণবশতঃভোটদানেঅসমর্থহন, তাহলেখুবইমানসিককষ্টপাওয়াউচিত। আমিদেশেরগণ্যমান্যব্যক্তিদেরঅনুরোধকরবযেআসুন,আমরাসবাইমিলেঅভিযানচালিয়েভোটারতালিকায়নামনথিভুক্তকরণএবংনির্বাচনেরদিনভোটদানেরবিষয়েজনসাধারণকেসজাগকরি। আমারবিশ্বাস, অধিকসংখ্যকযুবক–যুবতীভোটারতালিকায়তাঁদেরনামনথিভুক্তকরাবেনএবংনিজেদেরঅংশীদারিত্বেআমাদেরগণতন্ত্রকেসুদৃঢ়করবেন। এইখানেইংরেজশাসকরাভারতমায়েরবীরসন্তানকর্ণেলপ্রেমসেহগল, কর্ণেলগুরুবক্সসিংহধীলঁএবংমেজরজেনারেলশাহনওয়াজখানেরবিচারকরেছিল। আমিযখনলালকেল্লারক্রান্তিমন্দিরেনেতাজীরসঙ্গেসম্পর্কিতজিনিষগুলিদেখছিলাম, তখননেতাজীরপরিবারেরসদস্যরাআমাকেএকটিবিশেষধরনেরটুপিউপহারদেন। একসময়নেতাজীএইটুপিব্যবহারকরতেন। এইটুপিটিআমিসংগ্রহশালায়রাখারব্যবস্থাকরেছি, যাতেসংগ্রহশালাদেখতেআসামানুষএইটুপিটিদেখেনএবংদেশভক্তিরঅনুপ্রেরণাপান। আমাদেরদেশনায়কদেরশৌর্য, দেশভক্তিরকথাআমাদেরনবীনপ্রজন্মেরকাছেবিভিন্নমাধ্যমেনিরবচ্ছিন্নভাবেপৌঁছেদেওয়াপ্রয়োজন। এইমাসখানেকআগে — গত৩০শেডিসেম্বরআমিআন্দামান–নিকোবরদ্বীপপুঞ্জেগিয়েছিলাম। কিন্তুসেটাছিলআজাদহিন্দসরকারগঠনের৭৫বছরপূর্ণহওয়ারঘটনা। “দিল্লিচলো”, “তোমরাআমাকেরক্তদাও, আমিতোমাদেরস্বাধীনতাদেব” —এইধরনেরতেজস্বীস্লোগানদিয়েনেতাজীসমস্তভারতবাসীরঅন্তরেস্থানকরেনিয়েছেন। সেইদিনটিআমারমনেআছে, যেদিননেতাজীরপরিবারেরসকলেপ্রধানমন্ত্রীরবাসস্থানেএসেছিলেন। আমাকেজানানোহয়েছেযে, রেডিওস্টেশনসাপ্তাহিকখবরওপ্রচারকরতইংরেজী, হিন্দী, তামিল, বাংলা, মারাঠী, পাঞ্জাবী, পুস্তু, ঊর্দুইত্যাদিভাষাতে। মিউজিয়ামেচারটিঐতিহাসিকexhibitionআছেআরসেখানেতিনপ্রজন্মেরপুরানো৪৫০এরওবেশিpainting আরart workসংরক্ষিতআছে। এখানেআমৃতাশেরগিল, রাজারবিবর্মা, অবনিন্দ্রনাথঠাকুর,গগনেন্দ্রনাথঠাকুর, নন্দলালবোস, যামিনীরায়, শৈলজমুখার্জীদেরমতোমহানশিল্পীদেরশ্রেষ্ঠশিল্পকলাসুন্দরভাবেপ্রদর্শিতহয়েছে। আরআশ্চর্যেরকথাহলোগুরুদেবরবীন্দ্রনাথঠাকুরএইশিল্পকলারবেশিরভাগেরইকোনওনামরাখেননি। উনিমানতেনযেওঁরpainting–কেদর্শকরানিজেরাইনিজেদেরমতকরেবুঝুন,তাঁরাইতাঁদেরদৃষ্টিদিয়েশিল্পীরসৃষ্টিকেজানুন। ওঁরpainting–গুলিইউরোপেরবিভিন্নদেশে, রাশিয়াএবংআমেরিকাতেওপ্রদর্শিতহয়েছে। আমিআশাকরিআপনারাক্রান্তিমন্দিরেতাঁরpaintingঅবশ্যইদেখতেযাবেন। আমারপ্রিয়দেশবাসী, ভারতসাধুসন্তদেরভূমি। আমাদেরসন্ত’রানিজেদেরমতামতএবংকাজেরমাধ্যমেসদ্ভাব, সাম্যএবংসামাজিকক্ষমতায়নেরবাণীদিয়েছেন। এরকমইএকসন্তছিলেন – সন্তরবিদাস। ১৯শেফেব্রুয়ারীরবিদাসেরজন্মজয়ন্তী। গত২৪–শেজানুয়ারিআমাদেরছাত্রদেরতৈরি ‘কলাম–স্যাট’উৎক্ষেপণকরাহয়েছে। ওড়িশারবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরতৈরি ‘সাউণ্ডিংরকেট’-ওদৃষ্টান্তস্থাপনকরেছে। দেশস্বাধীনহওয়ারপরথেকে২০১৪পর্যন্তযতগুলিমহাকাশঅভিযানহয়েছে, প্রায়সমসংখ্যকঅভিযানগতচারবছরেহয়েছে। আমরাএকটিমহাকাশযানথেকেএকসঙ্গে১০৪–টিস্যাটেলাইটউৎক্ষেপণকরেবিশ্বরেকর্ডস্থাপনকরেছি। আমরাশীঘ্রইচন্দ্রায়ণ–২অভিযানেরমাধ্যমেচাঁদেভারতেরপারাখারব্যবস্থাকরছি। ‘হাউসিংফরঅল’ অর্থাৎসবারজন্যবাসস্থান— এইপরিকল্পনায়তেইশটিরাজ্যেপ্রায়চল্লিশলক্ষগৃহকেGeo Tagকরাহয়েছে। এরইসঙ্গে‘মনরেগা’-রঅধীনেপ্রায়সাড়েতিনকোটিসম্পত্তিকেওGeo Tagকরাহয়েগেছে। আমাদেরএইসবস্যাটেলাইট, দেশেরক্রমবর্ধমানশক্তিরপ্রতীক। বিশ্বেরঅনেকদেশেরসঙ্গেভালোসম্পর্কেরগড়েওঠারক্ষেত্রেআমাদেরএইএরঅবদানআছে। সাউথএশিয়াsatellitesএকটাঅনন্যউদ্যোগযেটারমাধ্যমেআমাদেরপ্রতিবেশীদেশগুলিরউন্নতিসাধনহয়েছে। তাঁরাসপরিবারেগাড়িরাখারশেডেরমধ্যেথাকেন। সাধারণতকবাডিরমতোখেলায়মেয়েদেরউৎসাহিতকরাহয়না। তত্সত্বেওসোনালীহেলভীকবাডিকেবেছেছেনএবংতাতেদক্ষতাদেখিয়েছেন। আসানসোলনিবাসী১০বছরেরঅভিনবশাkhelo india youthগেমস–এরসর্বকনিষ্ঠস্বর্ণপদকবিজেতা। কর্ণাটকেরএকটিকৃষকপরিবারেরমেয়েAkshata Baswani Kamtiভারোত্তলনেস্বর্ণপদকজিতেছে। যখন‘নবভারত’-এরনির্মাণেরকথাবলছি, তখনএইযুবশক্তিরযেসংকল্প —এটাইতোসেইনতুনভারত। খেলোইন্ডিয়ারএইকাহিনিগুলোপ্রমাণকরেযেনবভারতেরনির্মাণশুধুমাত্রবড়শহরবামহানগরেরমানুষেরদ্বারাহবেনা, বরঞ্চতাতে ছোটশহর, মফস্বল, গ্রামথেকেআসাশিশু, যুবকএবংতরুণখেলোয়াড়দেরবড়অবদানরয়েছে। আমারছোট্টবন্ধুরা, পরীক্ষারদিনএগিয়েআসছে। হিমাচলপ্রদেশথকেঅংশুলশর্মাmygov–এলিখেছেযে, এইসবপরীক্ষাএবংতারপরীক্ষার্থী–যোদ্ধাদেরনিয়েআমায়কিছুবলতেহবে। অংশুলজী,এইপ্রসঙ্গতোলারজন্যআপনাকেঅনেকধন্যবাদ। হ্যাঁ, কিছুপরিবারেরকাছেএইপরীক্ষারমরশুমটাইঅগ্রাধিকারপায়। শিক্ষার্থী,তাদেরবাবা–মাএবংশিক্ষক–শিক্ষিকা —পরীক্ষারসঙ্গেযুক্তপ্রত্যেকেইভীষণব্যস্তথাকে। আমিপ্রত্যেকশিক্ষার্থী, তাদেরমা–বাবাআরশিক্ষকদেরশুভকামনাজানাই। আজকেরএই ‘মনকিবাত’ অনুষ্ঠানেআমারএইবিষয়েকথাবলতেভালোলাগতো, কিন্তুআপনারাএকথাজেনেখুশিহবেনযে —আগামী২৯–শেজানুয়ারিসকাল১১–টায় ‘পরীক্ষাপেচর্চা’ এইঅনুষ্ঠানেআমিসারাদেশেরপরীক্ষার্থীদেরসঙ্গেকথাবলব। পরীক্ষারসঙ্গেযুক্তসমস্তবিষয়, বিশেষকরে ‘Stress Free Exam’অর্থাৎউৎকণ্ঠাহীনপরীক্ষানিয়েআমারতেজোদীপ্তবন্ধুদেরসঙ্গেঅনেককথাবলব। আমরাযেখানেইথাকি,শহীদদেরপ্রতি২মিনিটযেনঅবশ্যইশ্রদ্ধাঞ্জলীঅর্পণকরি। পূজনীয়বাপুজীরপুণ্যস্মরণেতাঁরস্বপ্নকেবাস্তবায়িতকরা, ‘নতুনভারত’-এরনির্মাণ,সুনাগরিকহিসাবেনিজেরকর্তব্যপালনকরারপ্রতিজ্ঞানিয়েইআমরাএগিয়েযাব।