label
stringclasses
6 values
text
stringlengths
1.57k
117k
is_valid
bool
1 class
fe
সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও মানবিক প্রতিরোধ সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও মানবিক প্রতিরোধফকির ইলিয়াস=======================================আমি যে দেশটিতে থাকি এখানে বহুজাতিক, বহুভাষিক মানুষের বাস। অনেক ধর্মাবলম্বী, মতাবলম্বী মানুষ। কারো সঙ্গে কারো কোনো মিল নেই। এরা চাইলে কিন্তু খুব সামান্য বিষয় নিয়েই প্রতিদিন দাঙ্গা করতে পারতো। না- তেমনটি এখানে হচ্ছে না। হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক- আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলছি।এটি এমন একটি দেশ, মানুষ মানুষের বুকের পাঁজর চিবিয়ে খেয়ে ফেলতো! যদি এ দেশে কঠোর আইন না থাকতো। না- তারা তা পারছে না। পারবে না। পারবে না এ জন্য, এমন কিছু করলে তাদের কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। তাই এ জীবনবাজি রেখে ‘রায়ট’ করবে কে?পাক-ভারত উপমহাদেশ জন্ম নিয়েছে কিংবা বিভক্ত হয়েছে ‘রায়ট’-এর মধ্য দিয়ে। কী ঘটেছিল- তা আমাদের কারোরই অজানা নয়। এ জন্মইতিহাস নিয়েই জন্মেছে পাকিস্তান-ভারত, পরবর্তীকালে বাংলাদেশ। একটি ভূখণ্ডে ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’, ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ করা হয়েছে। মানুষে মানুষে ধর্মের বিভাজন করা হয়েছে সেভাবেই খুব পরিকল্পিতভাবে।১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় অসংখ্য হিন্দু তাঁদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। কারণ জিন্নাহ’র দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একটি নতুন দেশে তাঁদের অস্তিত্ব রক্ষা করা প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। এর পরে প্রথমে ১৯৫০ এবং তার পর ১৯৬৪ সালে পূর্বতন পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে আবার বহু হিন্দুকে নিরাপত্তার জন্য ভারতে পালিয়ে যেতে হয়। ১৯৭১ সালে হিন্দুরা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে, এ বিশ্বাসে দখলদার পাক সেনা এবং তাদের সহযোগীরা প্রবল প্রতিশোধস্পৃহায় খুঁজে খুঁজে হিন্দু-নিধন চালিয়েছিল। বহু হিন্দু বুদ্ধিজীবী, সমাজসেবী, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে থাকা সহস্রাধিক হিন্দু ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছিল সে সময়ে।১৯৭১ সালের ১ নভেম্বর তারিখে ইউএস সিনেট কমিটিকে দেওয়া একটি প্রামাণ্য প্রতিবেদনে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি লিখেছিলেন, “সব থেকে বেশি আঘাত এসেছে হিন্দুদের উপর, যে সম্প্রদায়ের মানুষদের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, দোকান লুট হয়েছে, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিছু জায়গায় তাদের শরীরে হলুদ রঙ দিয়ে ‘এইচ’ লিখে দেওয়া হয়েছে... আর এ সবই হয়েছে ইসলামাবাদের সামরিক শাসকদের আদেশ এবং অনুমতিক্রমে।”এরপরের বাংলাদেশের চিত্র কী বলে? ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রের জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পরে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে আক্রমণের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। সেই সময় ধর্ষণসহ নানা পাশবিক অত্যাচার করে হিন্দু পরিবারগুলিকে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে, এ রকম অনেক উদাহরণ আছে।একইভাবে ১৯৯০ সালে এরশাদের সামরিক সরকারের পতনের পর হিন্দুদের উপর আক্রমণ চালিয়ে জামায়াত কর্মীরা তাদের দেশ ছাড়তে অথবা ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করে। সেই সঙ্গে আগুন লাগিয়ে এবং ভাঙচুর চালিয়ে ধ্বংস করা হয় তাদের বাড়িঘর, ব্যবসার জায়গা এবং উপাসনাস্থল। এ সময়ে হিন্দুদের জমি ও অন্যান্য সম্পত্তিও লুট করা হয়েছিল।এ ধারাবাহিকতা চলেছেই। একটি উদাহরণ দিতে পারি। ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর হিন্দু-বিরোধী হিংসাত্মক কাণ্ডকারখানার তদন্তে নেমে বিচারপতি এম সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিশন এ ধরনের অত্যাচার বন্ধ করার জন্য কিছু সুপারিশ করেছিল। সেই সুপারিশে যে সব দুষ্কৃতকারী ২০০১ সালের অক্টোবর এবং ২০০২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৩৫৫ জনকে হত্যা করা ছাড়াও ৩২৭০টি নির্দিষ্ট অপরাধ করেছিল, তাদের ধরার জন্য দেশের প্রতি জেলায় একটি করে তদন্ত কমিটি অথবা কমিশন গঠন করার কথা বলা হয়েছিল। জেলাগুলিতে তদন্তকারী কমিটিগুলির কাজকর্মের উপর নজরদারি করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে আলাদা সেল খোলা এবং যাঁরা হিংসার শিকার হয়েছেন, তাঁদের আইনি সহায়তা দেওয়ার কথাও এতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এ সুপারিশগুলি মানা হয়নি। এ ধরনের হিংসাত্মক ঘটনায় জড়িত ২২০০০ জনের নাম করে কমিশন প্রায় সমস্ত অপরাধীকে চিহ্নিত করলেও রহস্যজনকভাবে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে।অথচ এ দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের রক্তগঙ্গা বয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশে সেই ধারাবাহিকতায় কিছু আক্রমণ করা হয়েছে। নাসিরনগর, হবিগঞ্জ, ছাতক এমন অনেক স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।ফেসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ ওঠেছে। নাসিরনগরের ইউএনও মোয়াজ্জেম ও ওসি আবদুল কাদেরের উপস্থিতিতে একটি সমাবেশে ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যের পর ওই হামলা হয়।নাসিরনগরের দত্তবাড়ির বাসিন্দা নীলিমা দত্ত বিবিসিকে বলেছেন, ‘এক মুসলমান হামলা করেছে, আরেক মুসলমান বাঁচাইছে। ওরা যদি আমাদের রক্ষা না করতো, তাহলে এখানে লুটপাট হইতো’। তিনি বলছিলেন যে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক আক্রমণ তিনি তার জীবনে কখনো দেখেননি। হামলাকারীরা পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করলেও মুসলমান যুবকদের বাধার কারণে বাসস্থানের ঘরে ঢুকতে পারেনি। তবে বাইরে থেকে ঢিল ছুঁড়েছে। এমনকি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও দত্তবাড়িতে এ ধরনের আক্রমণ হয়নি বলে নীলিমা দত্ত উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও মুসলমানদের সহযোগিতায় হিন্দুরা দত্তবাড়িতে পূজার আয়োজন করেছিল বলে এখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন।নীলিমা দত্ত বলেছেন, যে হিন্দু যুবকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কাবাঘরকে অবমাননা করে ছবি দেওয়া হয়েছিল, তার কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার। কে এর নেপথ্যে ছিল তা দেখা দরকার। কিন্তু সে ছবির জের ধরে সব হিন্দুবাড়ি এবং মন্দিরে কেন হামলা চালানো হলো, সে প্রশ্নের উত্তরটাই খুঁজে পাচ্ছেন না নীলিমা দত্ত।বাংলাদেশে এখন যা শুরু হয়েছে- এর নেপথ্য মতলব কী তা খুঁজে বের করা দরকার। কেউ কি সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এ সব করছে? কেউ কি মুছে দিতে চাইছে সরকারের সকল ভালো কাজের তালিকা?এখন সময় এসেছে মানবিক বিবেক জাগ্রত করার। এই প্রত্যয়েই কথা বলেছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা বাংলাদেশের পবিত্র সাংবিধানিক দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন সেক্টরস কমান্ডারস ফোরামের নেতারা। ফোরাম নেতারা বলেছেন, আমরা কোনো ধর্মের জন্য যুদ্ধ করিনি। আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য যুদ্ধ করেছি। আমরা মনে করি যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চায় এ হামলায় তাদের ইন্ধন রয়েছে। এর আগে রামু এবং উখিয়াতেও একই ঘটনা ঘটেছে। এখানে যে সহিংসতা হয়েছে তা সুপরিকল্পিত। দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে একটি চক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) কেএম শফিউল্লাহ, মহাসচিব হারুন হাবীব ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ বক্তব্য রাখেন।একই কথা বলেছেন দেশের তথ্যমন্ত্রীও। তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, বাংলাদেশে শান্তি বিনষ্টের চক্রান্ত এখনো অব্যাহত আছে। ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও মন্দির ভাঙচুর বাংলাদেশের শান্তি বিনষ্টের চক্রান্তের একটি অংশ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা যেমন রেহাই পায়নি তেমনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণকারীরা রেহাই পাবে না।ইনু বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে চক্রান্ত অব্যাহত আছে সেহেতু বিএনপি ও জামায়াতের ওপর সর্তক দৃষ্টি রাখা উচিত। প্রশাসন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থা গ্রহণ করেছে। এটাই সরকারের সিদ্ধান্ত। এর বাইরে বিচ্ছিন্ন মন্তব্যকারীদের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই।আমরা একটি কথা প্রায়ই শুনি- ‘দেশ আপনাকে কী দিলো, তা বড় কথা নয়। আপনি দেশকে কী দিলেন- সেটাই বড় কথা’।কথাটি মেনে নিলাম। আচ্ছা, যারা দেশকে সামান্য কিছু না দিয়েই লুটেরা সেজেছে, যারা মুনাফাখোর, চোরাকারবারি, প্রতারক, দখলদার কিংবা রাজনীতিবিদদের পালিত দালাল- এদেরকে ক্ষমতাবানরা এ বাণী শোনাতে পারেন না?আর যারা দেশকে দিতে দিতেই না খেয়ে মরে গেলো তাদেরকে কি দেশের কিছুই দেওয়ার ছিল না? বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ঐক্যকেও মশকরা করা হয়। তারা যাবে কোথায়? যারা দখলদার ওদের সঙ্গে তারা ঐক্য করবে?মানুষ এগোচ্ছে। তাই ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা রাজনীতি করে কিংবা করছে- এদের কাছ থেকে প্রজন্মকে দূরে সরে থাকতে হবে। ভোট আর ধর্ম এক না। ধর্ম একটি পবিত্র আমানত আর রাজনীতি রাষ্ট্র পরিচালনার দালিলিক বিষয়। ধর্মের দোহাই দিয়ে কখনোই রাজনীতি চলতে পারে না। রাজনীতির মধ্যে যারা ধর্মকে টেনে আনে তারা ধর্মকে অপমান করে। ধর্ম ধর্মের জায়গায় থাকবে আর রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকা উচিত।সকল অপশক্তি রোখার প্রধান হাতিয়ার হলো মানুষের ঐক্য। এবং তা হতে হবে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে। তা ছাড়া একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। বাংলাদেশে একটি কালোশক্তি সবসময় সোচ্চার আছে- থাকবে। এদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে। এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে ন্যায্যতা-সত্যের পক্ষে।এ জন্য তরুণদের ভূমিকা হতে হবে প্রখর ও সাহসী।-----------------------------------------------------------------------দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ১১ নভেম্বর ২০১৬ শুক্রবার সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:০৬
false
ij
আজ মাও সেতুং-এর জন্মদিন। মাও সে তুং। বারবার ইতিহাসের চাকা বদলে দিয়েছেন চৈনিক এই মানুষটি। মার্কসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের বদলে কৃষককে চিহ্নিত করেছেন বিপ্লবের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে, গড়ে তুলেছেন সশস্ত্র রেড আর্মি, প্রচলন করেছেন আরণ্যক গেরিলা যুদ্ধের। সত্য এই- বিশ্বময় তরুণেরা আজও হাঁটছে তাঁর দেখানো পথে। আজও নেপাল থেকে লাতিন আমেরিকার বিপ্লবী তরুণেরা পার্বত্য আরণ্যক এলাকায় নিঘূর্ম রাত কাটাচ্ছে চেয়ারম্যান মাও-এর নির্দেশে। চিনে হুনান নামে একটি প্রদেশ রয়েছে। সেই হুনান প্রদেশেই রয়েছে শাওশান গ্রাম। ১৮৯৩। ২৬ ডিসেম্বর। মাও সে তুং-এর জন্ম সেই শাওশান গ্রামেই। পরিবারও ছিল স্বচ্ছল। ভালো স্কুলে পড়েছেন। বাবা ছিলেন কনফুসিয়াসপন্থি। মা ছিলেন একনিষ্ট বৌদ্ধ। কাজেই ছেলেবেলায় এ দুটি মতে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন। হুনান প্রদেশের রাজধানীর নাম চাঙশা। ১৯১১। মাও চাঙশা-য় চলে এলেন পড়তে। ভর্তি হলেন হুনান টির্চাস কলেজে । এখানেই প্রথম পাশ্চাত্য দর্শন সম্বন্ধে জানতে পারেন। তা হলে বুদ্ধ ও কনফুসিয়াস সব কথা বলে যাননি? যাক। সে সময়টায় চিনে চলছিল কিঙ রাজতন্ত্রের দুঃশাসন। তার বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদীদের তীব্র গনআন্দোলন হচ্ছিল। সান ইয়াত সেন ছিলেন জাতীয়তাবাদীদের নেতা। তিনি রাজতন্ত্র ভেঙ্গে গঠন করতে চান প্রজাতন্ত্র। তার ডাকে মাও উদ্ধুদ্ধ হলেন। যোগ দিলেন প্রজাতন্ত্রের সৈন্যবিভাগে । রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে সান ইয়াত সেন জয়ী হলেন। জয়ী হয়ে কউমিঙটাঙ (জাতীয়তাবাদী) দল গঠন করলেন। করে দলের প্রধান হলেন সান ইয়াত সেন। ১৯১৮। হুনান টির্চাস কলেজে থেকে পাস করে চাকরির খোঁজে বেজিং পৌঁছলেন মাও। কাজ জুটল। বেজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে। অখন্ড অবসর। পাঠ করতে লাগলেন সভ্যতার বিস্ময়কর এক তত্ত্ব: মাকর্সবাদ। বুঝলেন মায়ের বুদ্ধবাদ ও বাবার কনফুসিয়বাদ কাজের জিনিষ না। এসব ব্যাক্তিদর্শন চিনের সামাজিক সমস্যা সমাধানে অক্ষম। এবং এসব বালখিল্য দর্শন চিনকে পিছিয়ে রেখেছে। চিনের প্রয়োজন প্রবল আধুনিকায়ন, তথা পাশ্চাত্যকরণ। ১৯১৯। তখন চিনকে আধুনিকায়ন করার লক্ষে চিনের বুদ্ধিজীবিদের তরফ থেকে একটি আন্দোলন চলছিল। আন্দোলনে মাও যোগ দিলেন। তবে লিখে। সে লেখায় তীব্র সমালোচনা করলেন কনফুসিয়াসের। সেই সঙ্গে ঐতিহ্যবিরোধী আরও সব অনলবর্ষী লেখা লিখলেন মাও। ১৯২০। চাঙশায় ফিরে এলেন মাও। হুনান প্রদেশে গনতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য উদ্যোগী হলেন । ব্যর্থ হলেন। ১৯২১। সাঙহাই এলেন। সে সময় চিনের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হচ্ছিল ওখানে। সেই গোপন মিটিং-এ উপস্থিত হলেন মাও। তারপর হুনান ফিরে এসে হুনানে কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক শাখা খুললেন। কী ভাবে ধর্মঘট করতে হয়- শ্রমিকদের তাই শেখালেন। ঠিক ঐ সময়টায় যুদ্ধরত গোষ্ঠীগুলো উত্তর চিন দখলে রেখেছিল। জাতীয়তাবাদী কউমিঙটাঙ দলের প্রধান সান ইয়াত সেন তাদের দমনে সচেষ্ট হলেন। ১৯২৩ সালে কমিউনিষ্টরা জাতীয়তাবাদী কউমিঙটাঙ দলের সঙ্গে গঠন করে জোট। মাও কউমিঙটাঙএ যোগ দিলেন। হলেন সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য। ১৯২৫। জন্মগ্রাম শাওশানে কৃষক সংগঠন গড়ে তোলেন মাও। ১৯২৭। কৃষক আন্দোলন নিয়ে লিখলেন। ইতিহাসের চাকাকে ঘুরিয়ে দিলেন। কেননা মাও লিখলেন যে, বিপ্লবে কৃষকরাই মূল চালিকা শক্তি, শ্রমিকরা নয়। মার্কসবাদবিরোধী বক্তব্য। কাজেই নিজের দলে হইচই পড়ে গেল। ১৯২৭ সালে জাতীয়তাবাদী কউমিঙটাঙ দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। কউমিঙটাঙ দলের নেতা তখন চিয়াং কাই সেক। তিনি কট্টর প্রতিক্রিয়াশীল হওয়ায় প্রবল কমিউনিষ্টবিরোধী দমননীতি অনুসরন করলেন। সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নিয়ে আরেকবার ইতিহাসের চাকাকে ঘুরিয়ে দিলেন মাও। হুনান প্রদেশের কৃষকদের নিয়ে সৈন্যবাহিনী গঠন করলেন মাও। অবশ্য পরাজিত হলেন। দক্ষিণে পার্বত্য এলাকায় সরে এলেন। জায়গাটার নাম জিয়াংজি প্রদেশ। এখানে তিনি গ্রামীন ভূমি সংস্কারে উদ্যোগী হলেন। ওদিকে অসংখ্য তরুণরা দলে দলে মাও নিয়ন্ত্রিত কমিউনিষ্ট পার্টিতে যোগ দিচ্ছিল। মাও তাদের সংগঠিত করেন। ইতিহাসে এই সশস্ত্র দলটি রেড আর্মি। এদের লক্ষ একটাই-কৃষকের মুক্তি। আর সে লক্ষ অর্জনে অভিনব গেরিলা যুদ্ধের পথ অনুসরণ করে আরেকবার ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়ে দিলেন মাও। ১৯৩৪। চিয়াং কাই সেক জিয়াংজি প্রদেশ ঘিরে ফেলল। (বাংলাদেশে মাওবাদীরা "আর এ বি" দ্বারা নিহত হলেও) এক বিস্ময়কর ও অপ্রতিরোধ্য গতিবেগে সে বেড়াজাল ছিন্ন করে রেড আর্মিকে নিয়ে বেড়িয়ে এলেন মাও। অতপর? অতপর আরেকবার ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়ে দিলেন কৃষকের বন্ধু। কী করলেন তিনি। তিনি আরম্ভ করলেন এক দীর্ঘ পদযাত্রা। যা ইতিহাসে লং মার্চ হিসেবে পরিচিত। রেড আর্মির সঙ্গে ৬ হাজার মাইল দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। গন্তব্য? উত্তরের ইয়ানান প্রদেশ। হাঁটতে হাঁটতে অগনন কৃষকের সমর্থন পেলেন মাও; পেলেন অগনন কৃষানীর ভালোবাসা । হাঁটতে হাঁটতে লক্ষ্যে পৌঁছে গেলেন মাও । ক্রমশ বদলে দিলেন চিনের হাজার বছরের পুরনো রুগ্ন কৃষিকাঠামো। অপরকেও বদলে দিতে উদ্বুদ্ধ করলেন। যে কারণে আজও নেপাল থেকে লাতিন আমেরিকার বিপ্লবী তরুণেরা পার্বত্য এলাকায় কাটাচ্ছে নিঘূর্ম রাত ...এমন কী বাংলাদেশেও। মনে থাকার কথা। কউমিঙটাঙ দলের নেতা তখন চিয়াং কাই সেক। তিনি কট্টর প্রতিক্রিয়াশীল হওয়ায় প্রবল কমিউনিষ্টবিরোধী দমননীতি অনুসরন করলেন। চিয়াং কাই সেক এর ভূমিকা নিয়েছে চার দলীয় জোট সরকার (এরা জোদদার শ্রেণির হওয়ায়)। মাওবাদী দমনে তারা গঠন করেছে কালো পোষাকের "আর এ বি।" যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এখন দেখা যাক কারা জেতে! ২ বাংলাদেশেও রয়েছে দূর্বল কৃষিকাঠামো। এর দূর্বলতা কাটাতো প্রয়োজন আমূল ভূমিসংস্কারের। গ্রামীন কৃষি-অর্থনীতির আমূল পরিবর্তের সাহস কেউই করে না যেহেতু কেউই বিপ্লবী নয়। এ দেশে ভূমিসংস্কারের কথা কেউ তোলে না। আমরা কি রুঢ় বাস্তবতা এড়িয়ে চলেছি? কেন? অথচ আমরা একটি উন্নত রাষ্ট্রের অধিকারী হতে চাই। তাই যদি হয়-তা হলে আমাদের পড়ে দেখতে হবে মাও সে তুং কী লিখে গেছেন। অবশ্য সে ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা অন্তরায়। এদেশের রাজনীতি শহরভিত্তিক। তার নানা চকচকে জৌলুষ। পাকিস্থান আমল থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতি ধনী জোদদার পরিবার নিয়ন্ত্রিত। কাজেই বাংলাদেশে কৃষির মূল সমস্যা এড়িয়ে সমস্যা নিরসনে আজও দেওয়া হচ্ছে টোটকা অষুধ। ৩ একদিন হয়তো চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙ্গে দেখব কাস্তেহাতুড়ি নিয়ে শহরের উপান্তে পৌঁছে গেছে চেয়ারম্যান মাওয়ে বিশ্বাসী কৃষকেরা। হয়তো, হাসিনা সরকার ব্যর্থ হওয়ার পর। কাজেই-মানে, ঐ ভূমি সংস্কারের বিষয়টি ... তথ্যসূত্র: Rogaski, Ruth. "Mao Zedong." Microsoft® Student 2008 [DVD]. Redmond, WA: Microsoft Corporation, 2007. Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved. সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৪
false
mk
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ৬১ টি, যেকোনো ১ টি প্রমাণিত হলেই ফাঁসি !!! গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৫ ধরনের ঘটনায় ৬১টি অভিযোগ আমলে নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৫ ধরনের ঘটনায় ৬১টি অভিযোগ আমলে নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।৬১ অভিযোগ তার বিরুদ্ধে, পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা ও তাদের সঙ্গে চক্রান্তের দায়ে ৬টি, পরিকল্পনার দায়ে ৩টি, উস্কানির দায়ে ২৮টি, সম্পৃক্ততার দায়ে ২৪টি এবং ব্যক্তিগতভাবে হত্যা ও নির্যাতনের দায়ে ১টিসহ মোট ৬২টি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে একটি অভিযোগ বাদ দেন ট্রাইব্যুনাল। একাত্তরের ২১ নভেম্বর গভীর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারের ৩৮ জনকে শহরের পৈরতলা রেলব্রিজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সেনারা। এই গণহত্যা হয়েছে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের নির্দেশে। একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর বাঙালি হত্যার মূল হোতা ছিলেন তিনি।এক নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল গোলাম আযম, নুরুল আমীন, মৌলভী ফরিদ আহমেদ, খাজা খয়েরউদ্দিন, এ কে এম শফিকুল ইসলাম, মাওলানা নুরুজ্জামান, হামিদুল হক চৌধুরী, মোহসিনউদ্দিন আহমেদ, এটি সাদীসহ ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের 'খ' অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে শান্তি কমিটি গঠনের ষড়যন্ত্র করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে সব মানবতাবিরোধী অপরাধ ও নির্যাতনের যৌথ এবং একক কর্মকাণ্ডের দায়ভার গোলাম আযমের। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী বাহিনীর মাধ্যমে যা কিছু পরিচালিত হয়েছে, তার সব হয়েছে গোলাম আযমের মূল নেতৃত্বে। সব ঘটনার জন্য মূলত তিনিই দায়ী। তিনিই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী। একাত্তরের ৬ এপ্রিল গোলাম আযম আবারও টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করেন এবং বাঙালি হত্যার ষড়যন্ত্রে অংশ নেন। এ ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ১৯ জুন রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক করেন গোলাম আযম। ১ ডিসেম্বর সেখানে আবারও ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষকে দমনের জন্য রাজাকার বাহিনীর শক্তি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। দুই নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ৪ এপ্রিল টিক্কা খানের সঙ্গে বৈঠকে সারাদেশে শান্তি কমিটি গঠনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৯ এপ্রিল গোলাম আযম ও অন্যরা ঢাকায় ১৪০ সদস্যের নাগরিক শান্তি কমিটি গঠন করেন। এরপর ৪ মে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে একিউএম শফিকুল ইসলামের বাসভবনে গোলাম আযমের উপস্থিতিতে শান্তি কমিটির সভা হয়। খাজা খয়েরউদ্দিনের সভাপতিত্বে ওই সভায় ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিয়নে শান্তি কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করা হয়। তিন নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ৭ এপ্রিল গোলাম আযম এক যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষকে 'ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী' আখ্যায়িত করে তাদের ধ্বংস করার আহ্বান জানান। ২২ এপ্রিল শান্তি কমিটির সভা শেষে এক বিবৃতিতে গোলাম আযমের নিয়ন্ত্রণে থাকা সংগঠনগুলোর সদস্যদের 'দেশপ্রেমিক নাগরিক' উল্লেখ করে দেশের নাগরিকদের ধ্বংস করার আহ্বান জানানো হয়। ১৭ মে গোলাম আযম ঢাকায় এক সভায় স্বাধীনতা আন্দোলনকে 'রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ' এবং মুক্তিযোদ্ধাদের 'বিশ্বাসঘাতক' আখ্যায়িত করেন। সেই সঙ্গে ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের মানুষের স্বাধীনতার স্পৃহা স্তব্ধ করে দিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী 'অপারেশন সার্চলাইট' নামে যে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায় তারও প্রশংসা করেন জামায়াতের তখনকার আমির। এরপর ১৬ জুলাই রাজশাহী, ১৮ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৪ আগস্ট খুলনা, ৭ আগস্ট কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত সভায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ও উত্তেজনাকর বক্তব্য দেন গোলাম আযম। ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের ২৫তম আজাদি দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে, ১৭ ও ২৩ আগস্ট দলীয় সভায় এবং ২৬ আগস্ট পেশোয়ারে জামায়াতে ইসলামীর অনুষ্ঠানেও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। ১৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের শরীরচর্চা কেন্দ্রে রাজাকারদের প্রশিক্ষণ শিবির পরিদর্শন করে তাদের সশস্ত্র হওয়ার আহ্বান জানান গোলাম আযম। ৩ অক্টোবর ঢাকায় জামায়াতের মজলিসে শূরার সভায় একই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন তিনি। চতুর্থ অভিযোগে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সহযোগিতা বা সম্পৃক্ততার ২৩টি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গোলাম আযমসহ অন্যরা একাত্তরের ৪ ও ৬ এপ্রিল টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। গোলাম আযমের সহযোগিতায় ৯ এপ্রিল নাগরিক শান্তি কমিটি গঠিত হয়। এরপর ১৫ এপ্রিল এর নাম বদলে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি করা হয়। শান্তি কমিটির ২১ সদস্যের কার্যকরী কমিটিরও সদস্য ছিলেন তিনি। ১৮ জুন পাকিস্তানের লাহোর বিমানবন্দরে গোলাম আযম বলেন, জনগণ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে চায়। ১৯ জুন রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করে তিনি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মোকাবেলার জন্য রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহের আহ্বান জানান। পরদিন লাহোরে জামায়াতের পশ্চিম পাকিস্তান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গোলাম আযম বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে 'দুষ্কৃতকারী'রা সক্রিয় রয়েছে এবং তাদের প্রতিরোধে ও শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র হওয়া উচিত।
false
rn
জলের সন্তরন- (এক) অনেক গুলো সাপ মিজানের শরীরের সাথে প্যাঁচিয়ে আছে। কুচকুচে কালো বিচ্ছিরি রকমের সাপ গুলো। মিজান ছোটবেলা থেকেই সাপ খুব ভয় পায়। একবার মৌচাক মার্কেটের সামনে একদল মহিলা সাপুড়েরা মিজানের সামনে এসেছিল। মিজান রিকশা করে মগবাজার যাচ্ছিল। জ্যামের কারনে রিকশা থেমে ছিল। সাপুড়েদের দেখে মিজান লাফ দিয়ে রিকশা থেকে নেমে এক দৌড়ে মগবাজার চলে গিয়েছিল। গলার কাছে প্যাঁচিয়ে থাকা একটা সাপ মিজানকে বলল- স্যার, আপনি ভয় পাবেন না। আপনার কোনো ক্ষতি আমরা করবো না। আমাদের কে বলা হয়েছে- আপনার গায়ে প্যাঁচিয়ে বসে থাকতে। হচ্ছে কি ? সাপ কি করে কথা বলছে? এটা কি স্বপ্ন? মিজান স্বপ্ন দেখছে? মিজান চেষ্টা করছে- স্বপ্ন থেকে বের হতে। পাশ ফিরতে গিয়েই মিজানের ঘুম ভাঙ্গল। ঘুম ভাঙ্গার পর মিজান নিজের উপর নিজে খুব রাগ করলো। এইরকম ভিত্তিহীন স্বপ্ন দেখার মানে কি? অবশ্য ঘুমের মধ্যে মানুষ তো ইচ্ছা করে স্বপ্ন দেখে না, কে জেনো দেখায়। মিজান দাঁত ব্রাশ শেষ করে, অনেক সময় নিয়ে গোছল করলো। এখন তার আগুন গরম এক কাপ চা খেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু এ বাসায় চা বানানো হয় না। বছরে দুই তিন বানানো হয়। বাসার সবাই এমন ভাব করবে, তারা খুব ব্যস্ত। তবে ভাবীকে খুব করে অনুরোধ করলে চা বানিয়ে দিবেন। মাকে বললে, মা বলবেন, বাবা যা দোকান থেকে কিনে নিয়ে আয়- আমিও এক কাপ খাই। চায়ের ব্যাপার টা খুব অদ্ভুত, একবার মাথার ভেতর ঢুকে গেলে- চা না খাওয়া পর্যন্ত শান্তি নাই। বাসা থেকে বের হতেই তমা ভাবীর সাথে দেখা। ভাবী পরীকে ডিম খাওয়াচ্ছেন। এই ডিম খাওয়ার দৃশ্য খুবই বিচ্ছিরি। তমা ভাবী মাসীকে বললেন- পরীকে মাম খাইয়ে দাও। ( মাসী এই বাসায় পাঁচ বছর ধরে কাজ করছে, মাসীর নাম মরিয়ন কিন্তু সবাই তাকে মাসী বলেই ডাকে।) ভাবী কঠিন গলায় বললেন, মিজান আজ তুমি হিমির সাথে অবশ্যই দেখা করতে যাবে। মিজান বলল, আচ্ছা। হিমি আমাকে কাল সন্ধ্যায় বেশ কয়েকবার ফোন করেছে, আমি তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছি। মিজান চলে যাচ্ছিল, তমা ভাবী বললেন- আজ আমি একটা নতুন জামা পড়েছি- তুমি কিছু বললে না যে ! মিজান বলল, ভাবী আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে। মিজান হোটেলে গিয়ে আরাম করে নাস্তা খেল। নাস্তা খাওয়ার পর এক কাপ চা। এখন সে আরেক কাপ চা খাবে, সাথে সিগারেট। প্রথম চা-টার সাথে সিগারেট খায়নি। হোটেল থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফিরতে ইচ্ছা করল না মিজানের। বেকার হওয়ার এই এক সুবিধা। কোনো কিছুতেই কখনও তাড়া থাকে না। সে এখন ইচ্ছা করলেই টঙ্গী চলে যেতে পারে বাসে করে, অথবা ট্রেনে করে গাজীপুর। জানালার পাশে সিট নিয়ে, রাস্তার নানান দৃশ্য দেখতে দেখতে। অবশ্য সে ইদানিং রাস্তা-ঘাটে পরিচিত মানুষদের এড়িয়ে চলে। পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়ে গেলেই- তারা আফসোস শুরু করে দেয়। তোমার সব বন্ধুরা কত কি করে ফেলল, তুমি কিছুই করতে পারলে না। তোমার কোনো ভালো চাকরী হচ্ছে না কেন ? কেউই বুঝতে চায় না, যে মিজান চাকরীর কাঙ্গাল না। সবাইকেই চাকরী করতে হবে এমন কোনো কথা আছে? থাক না, দুই এক একজন ছন্নছাড়া। মিজান একটা খবরের কাগজ কিনল। এখন সে কোথাও বসে আরাম করে খবরের কাগজ পড়বে। একটা দৈনিক পত্রিকাতে কত রকমের যে খবর ছাপায়! মিজান সব খবর খুব মন দিয়ে পড়ে। কোনো কিছুই বাদ দেয় না। দুই ইঞ্চি একটা বিজ্ঞাপনও সে আগ্রহ নিয়ে পড়ে। পত্রিকা শেষ করে মিজান দেখলো আড়াইটা বেজে গেছে। এবং খুব ক্ষুধা পেয়েছে। পকেটে অল্প কয়েকটা টাকা আছে, এই টাকায় হোটেলে খাওয়া যাবে না। তবে রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে রুটি কলা খাওয়া যাবে। সমস্যা হলো দুপুরবেলা গরম ভাত খেতে ইচ্ছা করছে। ধোয়া উঠা গরম ভাত। সাথে ডিম সহ ইলিশ মাছ, ডাল ভর্তা আর ঝাল মুরগীর মাংস। মিজান নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে, কারন এই পৃথিবীতে একজন মেয়ে আছে, যে মিজান কে দেখা মাত্র বলবে- মুখটা শুকনা কেন ? নিশ্চয়ই দুপুরে কিছু খাওনি। চুপ করে টেবিলে বসো, আমার সামনে বসে আরাম করে খাবে। কোনো কথা না। মেয়েটির নাম হিমি। মিজান রাস্তায় হাঁটতে শুরু করলো। আকাশের অবস্থা ভালো না। আকাশ ভরা মেঘ। যেকোনো সময় ঝুম বৃষ্টি নামবে। মিজানের ইচ্ছা করছে রিকশায় করে বৃষ্টিতে ভিজতে। কিন্তু পকেটে টাকা নেই। মিজান মনে করতে চেষ্টা করছে রবীন্দ্রনাথের বৃষ্টি নিয়ে কোনো গান। মনে পড়ছে না। হিমিকে জিজ্ঞেস করলে হিমি চট করে বলে দিতে পারত। আচ্ছা, রবীন্দ্রনাথ কি কখনও খালি পকেটে একা একা রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছেন ? গত তিন ধরে আকাশ কালো হয়ে আসছে কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না। হিমির সাথে দেখা হলে স্বপ্নের কথাটা বলতে হবে। স্বপ্নে সাপ দেখলে কি হয়- হিমি বলে দিবে। এবং খুব সুন্দর একটা ব্যাখ্যাও দাঁড় করাবে। মিজান হিমির বাসায় যাওয়ার পর ঝুম বৃষ্টি নামলো। হিমি মিজানকে দেখে একটুও অবাক হলো না। যেন মিজান আজ আসবে হিমি তা জানতো। মিজান এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে হিমির দিকে তাকিয়ে আছে। হিমি আজ একটা নীল শাড়ি পড়েছে। দুই হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি, কপালে একটা নীল টিপ, চোখে মোটা করে দিয়েছে কাজল। মিজান কে দেখে হিমি অনেক খুশি হয়েছে। আনন্দে তার চোখে পানি এসে গেছে। বুকের মধ্যে যেন কেমন করছে। মিজানকে দেখলেই হিমি অস্থিরবোধ করে। মিজান বলল, দাঁড়িয়ে আছো কেন, বসো। হিমি বসে বলল- আজ তুমি আসবে এটা আমি জানতাম। মিজান বলল- কিভাবে? হিমি বলল গতকাল রাতে তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি। তুমি আসবে বলেই আজ শাড়ি পরেছি। সেজেছি। মিজান পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে হিমির হাতে দিল। হিমির সাথে দেখা হলেই- মিজান চিঠি দেয়। মিজান খেতে বসেছে। রান্না খুব ভালো হয়েছে। ডিম সহ ইলিশ মাছ, ডাল ভর্তা আর ঝাল মুরগীর মাংস। মিজান আরাম করে খেল। হিমি বলল, কতদিন আর এভাবে ঘুরে বেড়াবে? এবার চাকরী খোঁজো। মিজান হাসলো, কিছু বলল না। হিমির ইচ্ছা করছে- মিজানের গালটা একটু ছুঁয়ে দিতে। লজ্জার কারনে পারছে না। মিজান বলল আজ যাই। পরে আবার দেখা হবে, কথা হবে। হিমি বলল, আচ্ছা। কিন্তু হিমির বলতে ইচ্ছা করছে- খবরদার তুমি যাবে না, তুমি আমার সামনে চুপ করে বসে থাকো। আমি তোমার চুল আচড়ে দিবো। ঝুম বৃষ্টির মধ্যেই মিজান দরজা খুলে বের হয়ে গেল। একবারও পেছন ফিরে তাকালো না। যদি পেছন ফিরে তাকাতো, তাহলে দেখতে পেত- হিমি চোখ ভর্তি পানি নিয়ে মিজানের দিকে তাকিয়ে আছে। রাত এগারো টায় হিমি বিছায় শুয়ে মিজানের চিঠি পড়ল। বাইরে তখনও ঝুম বৃষ্টি। যতবার হিমি মিজানের চিঠি পড়ে, ততবার তার চোখ ভিজে উঠে। হিমির বড় খালা, হিমির বিয়ে ঠিক করেছে। হিমি ঠিক করে রেখেছে, মিজানকে ছাড়া সে আর কাউকে বিয়ে করবে না। মিজানের সমস্যা হচ্ছে মিজান বেকার। হিমি বিশ্বাস করে মিজানের ভালো চাকরী হবে। তারপর তারা বিয়ে করবে। ছোট দুই রুমের একটা বাসা থাকবে তাদের। বাসাটা হিমি নিজের মনের মতন করে সাজাবে। এক সময় তাদের সংসারে নতুন একটা বাবু আসবে। বাবুর নামটাও হিমি ঠিক করে রেখেছে। হিমি চিঠিটা আবার বের করলো। ঘুমাবার আগে সে আরেকবার চিঠিটা পড়বে। মিজান সুন্দর করে চিঠি লিখতে জানে না। চিঠির মধ্যে কোনো আবেগ-ভালোবাসা থাকে না। তবুও চিঠি পড়লে হিমির চোখ ভিজে উঠে। কেন এমন হয় ? হিমি, বেশ কয়েকদিন ধরে রাতে ঘুমুতে পারি না।ঘুমুলেই সাপ স্বপ্নে দেখি। তুমি তো জানো আমি সাপ খুব ভয় পাই। সাপ গুলো আমার গলা প্যাচিয়ে বসে থাকে। এর মধ্যে একটা সাপ আবার- আমাকে স্যার বলে ডাকে। টুকটাক কথা বার্তা বলে। আমাকে ভয় না পাওয়ার আশ্বাস দেয়। সাপের আশ্বাস পেয়ে আমার অস্থিরতা আরও বেড়ে যায়। কি করলে সাপ থেকে মুক্তি পাবো, আমাকে জানাও। ইতি, মিজান। ( চলবে...) সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:১৫
false
hm
খুবরগুড়ে . . . এইভাবে হতে থাকে ক্রমাগত কেউ মারে কেউ মার খায় ভিতরে সবাই খুব স্বাভাবিক কথা বলে জ্ঞানদান করে এই দিকে ওই দিকে তিন চার পাঁচ দিকে টেনে নেয় গোপন আখড়ায় কিছু বা গলির কোণে কিছু অ্যাসফল্ট রাজপথে সোনার ছেলেরা ছারখার অল্প দু চারজন বাকি থাকে যারা তেল দেয় নিজের চরকায় মাঝে মাঝে খড়খড়ি তুলে দেখে নেয় বিপ্লব এসেছে কতদূর এইভাবে, ক্রমাগত এইভাবে, এইভাবে ক্রমাগত। (ক্রমাগত, শঙ্খ ঘোষ) বিল্লালের সঙ্গে বিপ্লবের কোনোদিন দেখা হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো না। বিল্লাল নম্র স্বভাবের নিরীহ আরামপ্রিয় মানুষ। তার প্রতিবেশী আর সহপাঠীদের মধ্যে যারা বিভিন্ন সময়ে বিল্লালের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ রেখেছে, তাদের অনেকেই শহুরে জীবনের নানা মোলায়েম ঘাত প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে যাওয়ার ফলে "টাফ" হয়েছে, যেভাবে কাঁচা লোহা হাঁপরে চুল্লিতে আগুনে পানিতে গরম আর ঠাণ্ডা হয়ে পেকে ইস্পাত হয়। বিল্লাল তেমনটা পারেনি। তার রমণীকুশল বন্ধুদের সঙ্গে অনিয়মিত আড্ডায় আর মাঝে মাঝে দৈনিক কচুবনে নারীপুরুষ সিরিজে নারী ও পুরুষ সম্পর্কে নানা তাত্ত্বিক আলোচনায় নারীর কথা মাথায় রেখে পুরুষের টাফ হওয়ার প্রয়োজনের কথা ঘুরে ফিরে বার বার উঠে এলেও বিল্লাল সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত জীবনটায় অনুভব করেছে, টাফের মতো টাফ সে নয়। হয়তো জীবনে সে কখনো টাফ হতেও পারবে না। আর বিপ্লবের সঙ্গে দেখা হতে গেলে মানুষকে একটু টাফ তো হতেই হবে, এটা তো সহজেই অনুমেয়। পেলব লোকজন কি বিপ্লব করে কখনো? কিন্তু পেলব বিল্লালের সঙ্গেই বিপ্লবের দেখা হয়ে যায় প্রকৃতির খসড়াখাতার মার্জিনে লেখা অমোঘ নিয়মে। বিপ্লব অবশ্য তখন এক টং দোকানের সামনে পেতে রাখা প্লাস্টিকের টুলে বসে ঘোলা চীনামাটির কাপে চা খেতে খেতে হাপুস নয়নে কাঁদছিলো। বিল্লাল বিপ্লবের পরিচয় প্রথমে ঠাহর করতে পারেনি। তার কাছে চে গেবারা বিপ্লবের সমার্থক, তাই বিপ্লবের চেহারা অনেকটা চে গেবারার মতো হওয়া বাঞ্ছনীয়, এমনটাই সে ধরে নিয়েছিলো। বিপ্লবের গায়ে চে গেবারার চেহারাখচিত একটি টিশার্ট, তার ওপরে একটা বহুলসংখ্যক পকেটোলা হাতাছাড়া জ্যাকেট আর নিম্নাঙ্গে জিন্স বা কর্ডুরয়ের প্যান্ট থাকবে, পায়ে থাকবে একজোড়া ঈষৎ কাদামাখা বুট, এমন একটা ধারণাও উপযুক্ত কারণ ছাড়াই তার মনে জায়গা করে নিয়েছিলো। ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দুলিয়ে মুখে জন হ্যানিবল স্মিথের মতো সিগার কামড়ে ধরে বিপ্লব হোহো করে হেসে উঠে তার পাঁচশো সিসি নরটন মোটর সাইকেলে চড়ে দূরান্তের উদ্দেশে যাত্রা করবে, আকাশে তখন মেঘ গুড়গুড় করে উঠবে, দর্শক থেকে নিরাপদ দূরত্বে বাজ পড়বে কোনো অভাগার ঘাড়ে, দশ-বারো সেকেণ্ড পর বাতাসে ভেসে আসবে তার মন্দ্রধ্বনি, আর দমকা বাতাসে রাস্তায় পড়ে থাকা বিড়ির প্যাকেট, সেলোফেনের টুকরো, দিয়াশলাইয়ের কাঠি পাক খাবে, আর রাস্তা ধরে ক্রমশ দিগন্তপটে ছোটো হয়ে মিলিয়ে যাবে মোটরসাইকেলের পেছনবাতি, এমন সব নাটুকে কল্পনা তছনছ করে বিপ্লব একটা ময়লা সুতির পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি পরে ফোঁস ফোঁস করে কাঁদতে কাঁদতে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলো। দেখতে বিপ্লব মোটেও চে গেবারার মতো নয়। জুলফিতে পাক ধরেছে, মাথায় চুল পাতলা হয়ে এসেছে, আর সবচেয়ে আপত্তিকর হচ্ছে, তার বয়সটাও যুবকোচিত নয়। তাই যখন চায়ের কাপে চুমুকের ফাঁকে পাঞ্জাবির হাতায় নাক মুছে বিপ্লব বিল্লালকে জানালো, সে বিপ্লব, পরিচয়টুকু বিল্লালের বিশ্বাসের গালে যেন চড় কষিয়ে দিয়ে গেলো। বিপ্লব বুড়ো? বিপ্লব শুধু বুড়োই নয়, রোগাও। তার অভুক্ত মুখটা তাই প্রথম দেখায় মনের উপরিতলে অভক্তিই জাগিয়ে তোলে। তবে সে অভক্তিকে পরে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ভেতর থেকে উঠে আসা অনুকম্পার ঢেউ। বিল্লাল তাই টংদারকে চায়ের সঙ্গে কয়েকটা সিঙারাও দিতে বলে। প্লাস্টিকের বয়াম থেকে হতাশাজনক রকমের ছোটো আকারের সিঙারা বার করে একটা প্লাস্টিকের থালার এক কোণে কুমড়োর সস ঢেলে টংদার যখন বিল্লালের দিকে বাড়িয়ে দেয়, বিপ্লব সাগ্রহে হাত বাড়িয়ে একটা সিঙারা তুলে নিয়ে কামড়ে খায়। বিল্লাল আরেকটা টুল টেনে নিজের আর বিপ্লবের মাঝামাঝি সুবিধাজনক দূরত্বে রেখে প্লেটটাকে সমীহভরে একটু ঠেলে দেয় সে টুলের ওপর। তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে বলে, "কী হয়েছিলো বলুন তো?" বিপ্লব প্রথম সিঙারাটাকে তুমুল গতিতে শেষ করে দ্বিতীয় সিঙারা তুলে নিয়ে অন্য হাতে চায়ের কাপটাকে ঠেলে দেয় টংদারের দিকে। বলে, "আরেক কাপ চা হোক, কী বলো?" বিল্লাল মাথা ঝোঁকায়। হোক আরেক কাপ, ক্ষতি কী? তার কাছে কিছু টাকা আছে, হাতে সময়ও আছে। সবচেয়ে বড় কথা, সে বিপ্লবের দেখা পেয়েছে, প্রয়োজনমাফিক টাফ না হয়েও। তার রমণীমোহন বন্ধু শুকবর যতোই রাফ অ্যান্ড টাফ হোক না কেন, বিপ্লবকে চা-সিঙারা খাওয়ানোর সুযোগ তো সে পায়নি। দৈনিক কচুবনের নারীপুরুষ সিরিজের নারীদের ফিতায় বিল্লালের টাফনেসের আস্তিন কোনোদিনই ২৬ ইঞ্চি পর্যন্ত যাবে না, কিন্তু বিপ্লবের দেখা তো সে-ই পেলো শেষ পর্যন্ত? টংদারের হাত থেকে নিয়ে বিপ্লব আবার কাপে চুমুক দিয়ে চুক চুক করে চা খায়। সিঙারাগুলো টপাটপ ফুরিয়ে আসে ছুটির দিনের মতো। বিল্লাল নিজের চায়ের কাপে রয়েসয়ে চুমুক দেয়। "উমর আল বদরের কাছে গিয়েছিলাম," খিদেটাকে একটু বাগে এনে বলে বিপ্লব। "ভাবলাম, এসেই যখন পড়েছি, দেশের সবচেয়ে পাকনা বিপ্লবীর কাছে যাই।" বিল্লাল সন্তর্পণে টংদারের দিকে খালি প্লেটটা বাড়িয়ে ধরে ইশারা করে। প্লাস্টিকের বয়াম ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে উঠে আসে আরো কয়েকটি কৃশকায় সিঙারা। বিল্লাল একটা মুখে দেয়, বিপ্লব দেয় দুটো। "উনি ঘুমোচ্ছিলেন।" সিঙারা চিবাতে চিবাতে অভিমানভরে বলে বিপ্লব। "ভোর বেলা গিয়েছিলেন?" বিল্লাল শুধায়। "না। দিনে দুপুরে। নিজের শোবার ঘরে শুয়ে সে দিব্যি ঘুমাচ্ছিলো। আমি পানির পাইপ বেয়ে তার ঘর বরাবর উঠে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখি, ফ্যান ঘুরছে সিলিঙে, ক্যালেন্ডারের পাতা উড়ছে তার বাতাসে, আর বিছানায় শুয়ে নাক ডাকাচ্ছেন উনি। আমি তাকে ফিসফিসিয়ে ডাকলাম, ও বদর সাহেব, উঠুন, আমি এসেছি। তার আর ঘুম ভাঙে না।" বিল্লাল সিঙারা খায় আর বলে, "তারপর?" বিপ্লবের চেহারাটা অভিমানে ভরে ওঠে। "ওঠে না তো আর ওঠেই না। কয়েক বার ডাকার পর গোঁ গোঁ করে স্বপ্নের ঘোরে কী যেন বকে বকে উল্টো পাশ ফিরে শুলো সে। শেষে আমি জানালার গ্রিলের ভেতর হাত গলিয়ে পানির গ্লাসটা তুলে নিয়ে ছুঁড়ে মেরে বললাম, উমর আল বদর, আমি ডাকিতেছি তুমি ঘুমাইছো নাকি?" বিল্লাল বিপ্লবের অভিমানের বাড়ির ঠিকানা খুঁজে পেয়ে যায়। বলে, "সে কী?" বিপ্লব আরেকটা সিঙারার আলুতে গুঁজে অভিমানটুকু পিষে মারতে চায়। বলে, "লোকটা ধড়ফড়িয়ে উঠেই আমাকে গালাগালি করতে লাগলো। আমি যতোই বলি, আমি বিপ্লব, চিনতে পারো হে ... সে ততোই ক্ষেপে ওঠে। দুপুর বেলা তার ভাতঘুমটা ভাঙালাম কেন, কোন অধিকারে পানি ছুঁড়ে মারলাম, নিউমোনিয়া হলে কে বাঁচাবে আর কে পথ্যবদ্যির বিল দেবে, এইসব বুর্জোয়া কথাবার্তা শুরু করে দিলো। আমি তাকে যতোই পরিচয় দিয়ে বলি, আমি বিপ্লব, এসে পড়েছি, ওঠো তুমি, প্যান্টটা পরে নাও, এখন অনেক কাজ অনেক দৌড়ঝাঁপ, অনেক অনেক পাহাড় ঠেলা বাকি, সে ততোই বলে, আমিই সব নষ্টের গোড়া, নইলে ১৯৭৩ সালেই সে কী যেন একটা করে ফেলতো। আমার কারণেই নাকি জাবদুল হক আর মোহাব্বত তোহাকে সে বাগে আনতে পারেনি। আর আমিই নাকি ভুলিয়ে ভালিয়ে নিলাজ শিকদারকে লেলিয়ে দিয়েছিলাম তার পেছনে। নইলে সে নাকি সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া বামকে এক জায়গায় জড়ো করে এনে ...।" বিপ্লবের গলা বুঁজে আসে। "জড়ো করে এনে?" বিল্লাল জাবদুল হক আর মোহাব্বত তোহার নাম শোনেনি, নিলাজ শিকদারের নামটা মাঝে মাঝে বাতাসে ভাসতে শুনেছে সে। বিপ্লব চায়ের কাপে নীরবে চুমুক দিয়ে বলে, "জড়ো করে এনে ... বিপ্লব করতো।" বিল্লাল মাথা চুলকায়। "তাহলে কী রকম হলো ব্যাপারটা? বিপ্লবের কারণে উমর আল বদর সাহেব আর বিপ্লব করতে পারেননি?" বিপ্লবও মাথা চুলকায়। "অনেকটা সেরকমই। আমি এদিকে পানির পাইপ ধরে কোনোমতে তার জানালা বরাবর আটকে আছি, আর সে বসে বসে আমাকে গালমন্দ করছিলো। আমি যতোই তাকে বলি, কিছু দোষ তারও ছিলো, নইলে কেন সে ফণী সিংহ আর ধ্যান চক্রবর্তীকে বাগ মানাতে পারেনি ... ততোই সে আরও ক্ষেপে উঠছিলো। শেষটায় আমাকে মুখের ওপর শেখ মুজিবের চামচা ডেকে এক রকম গলাধাক্কা দিয়ে জানালা থেকে হটিয়ে, জানালা বন্ধ করে, পর্দা টেনে আবার সে ঘুমোতে চলে গেলো।" বিপ্লবের মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে ওঠে শেষে। বিল্লাল কী বলবে বুঝতে না পেরে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। বিপ্লব টংদারের প্লাস্টিকের জগ থেকে ঢেলে প্লাস্টিকের গ্লাসে করে ঢক ঢক করে পানি খায়, তার কণ্ঠার হাড় ওঠে নামে, কিছু পানি গড়িয়ে পড়ে চিবুক বেয়ে। বিল্লাল চেয়ে দেখে, সিঙারার প্লেট ফাঁকা। বিপ্লব পাঞ্জাবির হাতায় মুখ মুছে বলে, "আর কেউ আছে?" বিল্লাল বলে, "আর কেউ মানে?" বিপ্লব মিটমিট করে তাকায় তার দিকে। তার বসে যাওয়া, কালিপড়া চোখে টিমটিম করে জ্বলে আশার আলো। এদিক সেদিকে একবার চোখ বুলিয়ে গলা নামিয়ে সে বলে, "বিপ্লবী কেউ আছে আর?" বিল্লাল চায়ের কাপ আর সিঙারার প্লেট টংদারকে ফিরিয়ে দিয়ে বলে, "বিপ্লবী? মানে ... বাম?" বিপ্লব মাথা ঝাঁকায়। "আছে আর?" টংদার বিরস গলায় বলে, "বেয়াল্লিশ টেকা।" বিল্লাল মানিব্যাগ বার করে টাকা মিটিয়ে দিয়ে বিপ্লবকে বলে, "চলেন আমার সাথে।" রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা, অল্প কয়েকটা বাস চলছে, তাতে দুরুদুরু বুকে বসে অনন্যোপায় খেটে খাওয়া মানুষ। বাতাসে জমে থাকা শঙ্কা চিরে নিরাপদে জীবিত ও অদগ্ধ অবস্থায় প্রেস ক্লাবের সামনে নেমে পড়ে বিল্লাল আর বিপ্লব। বিপ্লব অবশ্য সারাটা রাস্তা আনমনে জানালার পাশে বসে ঢুলছিলো, বিম্পিজামাতের পাণ্ডারা মলোটভ ককটেল মেরে বাসে চড়ার অপরাধে তাকে পুড়িয়ে খুন করবে, এই দুর্ভাবনা তাকে খুব একটা স্পর্শ করেছে বলে বিল্লালের কাছে মনে হয়নি। বিল্লাল মনে মনে বিপ্লবের প্রশংসা করে। হাজার হোক, বিপ্লব বলে কথা। প্রেস ক্লাবের সামনে চোখ ডলতে ডলতে বিপ্লব ডানে বামে তাকিয়ে বিপ্লবী খোঁজে। মনমতো কাউকে দেখতে না পেয়ে সে বিল্লালকে বলে, "কই?" বিল্লাল বিপ্লবকে আঙুল তুলে সামনের দিকে দেখায়। বিপ্লব গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাগত মানুষের ছোটো জটলার দিকে। প্রথম জটলাটি কুড়ি-পঁচিশজনের। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবির নিচে ম্যাজেন্টা রঙের স্যাণ্ডো গেঞ্জি পরা এক বয়স্ক ভদ্রলোক এক হাত পেছনে ভাঁজ করে আরেক হাত উঁচিয়ে বলছিলেন, "এই সাম্রাজ্যবাদী সরকারের হাতে এ দেশ নিরাপদ নয়। এরা বেলা শেষে সাম্রাজ্যবাদের সহচর। কিন্তু বিরোধী দলও ভারি দুষ্টু। তারাও সাম্রাজ্যবাদেরই সহচর। সাম্রাজ্যবাদের দালালির টেণ্ডার নিয়ে দুই সহচরে লেগেছে সংঘাত, মাঝখান দিয়ে জনতার অবস্থা হালুয়া টাইট। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, সংঘাত নয়, সমঝোতা চাই।" একটা মৃদু হাততালির রোল ওঠে সমাবেশের সামনে সমাগত মানুষদের মাঝে। তাদের পরনে ধবধবে সাদা কিন্তু অস্বচ্ছ পাঞ্জাবি। তবে তাদের পাঞ্জাবির গলায় বগলে ঘামের পিঙল দাগ। বিপ্লব সেই ভিড়ের পেছন থেকে হঠাৎ হেঁকে বলে, "আনজিরুল মহসিন খান সাহেব, ফণী সিংহের শিষ্য হয়ে আজ তুমি এ কথা বলছো? হ্যাঁ? সংঘাত নয়, সমঝোতা চাই? সাম্রাজ্যবাদের দালালদের মাঝে সমঝোতা হলে প্রোলেতারিয়েতের লাভটা কী?" ভাষণরত বিপ্লবী ভদ্রলোক উসখুস করে ওঠেন। তিনি আবার ভাষণ চালু করেন, "এ দেশের মালিকানা খেটে খাওয়া সাধারণ জনগণের, সংবিধানে তেমনটিই বলা আছে। কিন্তু সেই জনগণ যখন তাদের দেখভালের জন্য সাম্রাজ্যবাদের দালালদের ক্ষমতায় পাঠায়, তখন সংবিধান হয়ে পড়ে এক টুকরো তুচ্ছ দস্তাবেজ ...।" বিপ্লব তার পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে হাত উঁচু করে গর্জে ওঠে, "আনজিরুল মহসিন খান, রাখো তোমার সংবিধান! সাম্রাজ্যবাদের দালালদের মধ্যে সমঝোতা করে কী হবে আগে বলো! লেনিন কি সমঝোতা করেছিলেন? মাও কি সমঝোতা করেছিলেন? ফিদেল কাস্ত্রো কি সমঝোতা করেছিলেন? হো চি মিন কি সমঝোতা করেছিলেন?" আনজিরুল মহসিন খান মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলেন, "ইয়ে ... কী যেন বলছিলাম, এখন দেশে যা চলছে, তা হচ্ছে চর দখলের সংস্কৃতি ...।" বিপ্লব তবুও বাঘের মতো গর্জায়, "বলো, কবে কোন বিপ্লবী সমঝোতা করেছিলেন?" আনজিরুল মহসিন খান এবার চটে গিয়ে বলেন, "আরে কী জ্বালা, শান্তিতে দুইটা বক্তব্য দিতে পারবো না নাকি? কে রে ভাই, হট্টগোল করো?" বিপ্লব তবুও বার বার নেহারির ঝোলের মতো টলটলে ভিড়ের ভেতর থেকে তড়পায়, সমঝোতা করা বিপ্লবীর নাম জানতে চায়, সাম্রাজ্যবাদের দালালদের মাঝে বিম্পি নেতা নিজামরুল ইসলাম খান কেন আনজিরুল মহসিন খানের ভায়রা, সে কথা জানতে চায়। আনজিরুল মহসিন ফুঁপিয়ে ওঠে, "আরে বাল আমি কি দুনিয়ার সব বিপ্লবীকে চিনি? এই ডালিম, তোমার হাতে পার্টি দিলাম, কী লোকজন ঢুকাইছো পার্টিতে? এইসব কী কোচ্চেন করে?" জিহাদুল আসলাম ডালিম চেয়ারে বসে বসে ঢুলছিলেন, আনজিরুল মহসিনের খোঁচা খেয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে তিনি বলেন, "সব সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত। এ সংঘাত সাম্রাজ্যবাদের খেয়ে যাওয়া রোস্টের ফেলে যাওয়া হাড্ডির টুকরার দখল-বখরা নিয়ে সংঘাত। জনগণ এ সংঘাত চায়নি, চায় না। সংঘাত নয়, সমঝোতা চাই ...।" আনজিরুল মহসিন খান আবার খোঁচান, "আরে এই লোক এগুলি কী জিগায়?" জিহাদুল আসলাম ডালিম হাত নাড়ে, "এই লোক, চলে যাও। চলে যাও এখান থেকে। সাম্রাজ্যবাদের দালালি ছেড়ে দাও। সংঘাত কোরো না। সমঝোতা চাইলে এসে বসো, বক্তৃতা শোনো। ডাস কাপিটাল পড়েছো?" বিপ্লব শূন্যে মুষ্ঠি হেনে বেরিয়ে আসে সে ভিড় থেকে, পিছু পিছু বিল্লাল। বিপ্লব বিড়বিড় করে জোর পা চালিয়ে সামনে এগোতে থাকে। "ফণী সিংহের শিষ্য এরা? এদের হাতে পার্টি? কীভাবে আসবো এ দেশে? কারা আনবে আমাকে? এরা তো আমাকে খেদিয়ে দিচ্ছে।" বিল্লাল চুপচাপ পিছু পিছু হাঁটে। সে দেখতে পায়, সেই দুবলা রোগাটে ভাবটা বিপ্লবের শরীর থেকে চলে গেছে। পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি পরা চিতাবাঘের মতো বিপ্লব গটগট করে যেন হেঁটে চলে ইতস্তত ভেড়ার পালের মাঝে। কয়েক কদম এগোতেই চোখে পড়ে আরেক জটলা। সেখানে আঙুল উঁচিয়ে এক প্রৌঢ় বিপ্লবী গর্জন করে চলছেন। "সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়াদের মোকাবেলা করার আগে নিজেদের প্রস্তুত হতে হবে। আমরা যদি খামোকা অহেতুক হুদা বিতর্কে ব্যস্ত থাকি, আমাদের সংগ্রাম ঢিলা হয়ে যাবে। এ নিয়ে আমি ভ্যানগার্ডের গত সংখ্যায় লিখেছি। কমরেড মনিবুল হালদার ও অসিতাংশু চক্রবর্তী অহেতুক দলকে কমজোর করেছেন। অহৈতুকী বিতর্কে আমাদের দুর্বল করেছেন। পিছিয়ে দিয়েছেন। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, আমরাই প্রকৃত বাঁশদ। তারা দলত্যাগী মোনাফেক মাত্র।" সমাগত কয়েক ডজন তরুণ তরুণী প্রবল হাততালি দিয়ে চেয়ারে ঢুলতে থাকা এক প্রৌঢ়ের ঘুমের চটকা ভেঙে দেয়। আলেক মওলা দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, "গণচাঁদার টাকায় সম্পত্তি কেনা নিয়ে এতো তর্কের কী আছে? পার্টির সম্পত্তি তো ভূতের নামে থাকতে পারে না। মানুষের মতো মানুষের নামেই তা থাকতে হবে। আর পার্টিতে আমার চেয়ে উপযুক্ত মানুষ কেউ আছে? থাকলে তার নাম শুনতে চাই।" বিপ্লব পেছন থেকে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে গর্জন করে ওঠে, "বিপ্লবী রাজনীতির প্রাণ, উন্নত চারিত্রিক মান!" আলেক মওলা চটে ওঠেন, "আরে রাখো তোমার উন্নত চারিত্রিক মান। একটু আধটু যৌথ জীবন যাপন করতে না দিলে বিপ্লবীরা থাকবে? সব কয়টাই তো দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ের পর পটাপট বিয়েশাদি চাকরিবাকরি বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে পগারপার হয়ে যায়। দিনকে দিন বিপ্লবী কমে যাচ্ছে। তার ওপর চরিত্র নিয়ে এতো রশি টানাটানি হলে তো দলই থাকবে না। আবার বিপ্লব!" বিপ্লব এবার লুঙ্গি মালকোঁচা দিয়ে হুঙ্কার দেয়, "কমরেড আলেক মওলা, তুমি কীভাবে বিপ্লব করবে? তোমার হাতে পড়ে বাঁশদ শুধু ভাঙছে আর ভাঙছে। ছাত্রফ্রন্টিয়ারের বিপ্লবীরা আট বছর আগে কে এক নারী কমরেডের বিয়ের আসরে তোমার মুখে চুনকালি দিয়ে বেরিয়ে গেলো, তুমি ভুলে গেছো? দুই বছর আগে জাবদুল্লাহ সরকার তোমার কান মলে দিয়ে চলে গেলেন। আবার তুমি গিয়ে ভিড়েছো ডালিম-আনজিরদের সাথে, মোর্চা থেকেও তোমার দলকে বাকি বিপ্লবীরা খেদিয়ে দিয়েছে। এরপর তুমি কাদের নিয়ে বিপ্লব করবে?" আলেক মওলা ক্ষেপে গিয়ে বলেন, "মনিবুল হালদারের হয়ে দালালি করতে এসেছো আমার মিটিঙে, তাই না? সাম্রাজ্যবাদের দালালদের চেয়ে বড় শত্রু এই মনিবুল হালদারের দালালরা। এই কে আছো কমরেড, ধরো তো এটাকে! কোনো সমঝোতা নাই, সংঘাত করতে এসেছে, দেখিয়ে দাও সংঘাত কী জিনিস!" বিপ্লব খপ করে বিল্লালের হাত চেপে ধরে ছুট লাগায়, বলে, "পালাও!" বিল্লাল হতচকিত হয়ে দৌড়ায়, পেছন পেছন তাড়া করে আসে কয়েকটি উত্তেজিত তরুণী কমরেড। বিপ্লব শ'খানেক গজ ছুটে থামে, থেমে ঘাম মোছে। পেলব বিল্লালের এতো দৌড়ঝাঁপের অভ্যাস নেই, সে ধপ করে ফুটপাথে বসে পড়ে হাঁপরের মতো হাঁপাতে থাকে। সব কিছুই তার কাছে উল্টো মনে হয়। বিপ্লব কেন পালিয়ে যাবে? বিপ্লব যেন বুঝে ফেলে তার মনের কথা। বলে, "পালানো মানেই প্রস্থান নয়। পশ্চাদপসরণ বিপ্লবীর জীবনের নিত্য কৌশল। উমর আল বদরের বাড়ি থেকে তো পশ্চাদপসরণই করলাম, তাই না? সব সময় সবকিছুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকলে বিপ্লব হবে না।" বিল্লাল হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, "সংঘাত নয়, সমঝোতা চাই?" বিপ্লব মাথা চুলকায়। "না ... তা তো বলিনি।" বিল্লাল বলে, "তাহলে?" বিপ্লব একটু ক্ষেপে ওঠে। বলে, "সমঝোতা তো পশ্চাদপসরণ নয়। সমঝোতা মানে নেকড়ের পালের সঙ্গে ভিড়ে গিয়ে পাতিনেকড়ে হওয়া। সংঘাত মানে নেকড়ের সঙ্গে লড়াই করা। আর পশ্চাদপসরণ হচ্ছে লড়াইটা আজ না করে কালপরশুর জন্যে রেখে দিয়ে প্রস্তুত হওয়া।" বিল্লাল বড় শ্বাস নিয়ে বলে, "সমঝোতা করে প্রস্তুত হওয়া যায় না?' বিপ্লব মাথা নাড়ে। "না। সমঝোতা মানে লোহা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া। আর লোহা না তাতালে আমার আর আসা হবে না।" বিল্লাল বলে, "তাহলে সামনে আগাই, কী বলেন?" বিপ্লব পা চালায়। কিছু দূরে আরেকটা জটলা শেষ বিকেলের রোদ পোহাচ্ছে। কাছে গিয়ে বিল্লাল বক্তাকে চিনে ফেলে। এনাকে সে টকশোতে নিয়মিত দেখে। সাদামাটা পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে ফেননিভ খান মেনন, যাকে সবাই একটু মশকরা করে ফেনোমেনন বলে আড়ালে বা প্রকাশ্যে ডাকে, চোখ বুঁজে বলে যাচ্ছিলেন, "স্বাধীনতার শত্রুদের সঙ্গে কোনো বোঝাপড়া আমরা হতে দেবো না। যদিও আমরা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিদের সঙ্গে জোট করেছি, কিন্তু নিজেদের পরিচয়, স্বাতন্ত্র্য, লক্ষ্যকে আমরা বিকিয়ে দিইনি। আমরা খেটে খাওয়াদের দল। আর খেটে খাওয়াদের শত্রুরাই স্বাধীনতা শত্রু। তারা এখন ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে আমাদের গায়ে আগুন দিচ্ছে, বোমা মারছে, রাতে ঘরে ঢুকে কুপিয়ে মারছে। কীভাবে তাদের এতো স্পর্ধা হলো? এই সাম্রাজ্যাবাদীদেরই প্রত্যক্ষ ও্ পরোক্ষ প্ররোচনায়। এরাই এই কালসাপকে বুকে জড়িয়ে পেলে পুষে বড় করেছে ...।" বিপ্লব অস্থির হয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা পোস্টার বার করে আনে, বিল্লাল তাতে উঁকি দিয়ে চমকে ওঠে। মইত্যা রাজাকারকে বুকে জড়িয়ে ধরে তৃপ্তির হাসি হাসছেন ফেনোমেনন। পোস্টারের নিচে লেখা, মাত্র ১৯ বছর পর। ফেনোমেনন কী যেন বকে যাচ্ছিলেন, বিপ্লব গর্জে ওঠে, "এতো খেটে খাওয়া মানুষ থাকতে তোমাকে সাম্রাজ্যবাদের দালালের সঙ্গে জোট করতে হয় কেন? কেন তুমি খেটে খাওয়া মানুষদের নিয়ে বিপ্লব করো না? আর এই পোস্টারে এটা কাকে জাবড়ে ধরে বিটকেল হাসছো তুমি, হ্যাঁ?" ফেনোমেনন চুপ করে চশমার ফাঁক দিয়ে ভাবুক চোখে বিপ্লবকে দেখেন। বিপ্লব আবারো তড়পায়, বলে, "আমি সারা দেশ ঘুরে দেখেছি। সেখানে মানুষ খাটতে খাটতে মুখে রক্ত তুলে ফেলছে। কিন্তু তুমি খেটে খাওয়ার দলের নাম ভাঙিয়ে গিয়ে জোট পাকাচ্ছো সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গেই। লেনিন কি জারের সঙ্গে জোটে ঢুকেছিলেন? মাও? কাস্ত্রো?" ফেনোমেনন অলস হাত নেড়ে বলেন, "য়্যায় কে আছো একটু দেখো তো।" কয়েকজন খেটে খাওয়া রাগী চেহারার যুবক এগিয়ে আসে ভিড় ঠেলে। বিপ্লব চিৎকার করে বলে, "পালাও পালাও!" এবার বিল্লালকে আগের চেয়ে আরো শ'খানেক গজ বেশি ছুটতে হয়, বিপ্লবও একটু হাঁপিয়ে ওঠে এবার। বিল্লাল ফুটপাথের রেলিং ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, "আরেকটু হলেই সংঘাত হয়ে যেতো, বাপ রে!" বিপ্লব বলে, "একটু পানি পাওয়া যাবে কোথাও?" বিল্লাল বলে, "নাহ, এদিকটায় তো কিছু নেই, সচিবালয়ের ওদিকে গেলে হয়তো দোকানপাট খোলা পাওয়া যেতে পারে ...।" বিপ্লব জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট চাটে, আর বলে, "আর কেউ নেই?" বিল্লাল কিছু বলতে যাবে, এমন সময় কাছেই একটা মাইক ঘড়ঘড় করে ওঠে, "হ্যালো, হ্যালো, সোনায়েদ জাকি কলিং অল ইনসাফ ড্যুডস, সোনায়েদ জাকি ডাকছে সব ইনসাফিকে, ডু ইউ কপি ড্যুডস?" একটা হুল্লোড় ওঠে কাছেই, "কপি, কপি।" বিপ্লবের চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, সে বিল্লালকে টেনে রেলিং থেকে ছাড়িয়ে সামনে এগোয়। "আছে, আরো আছে!" বিল্লাল বিপ্লবকে বুঝিয়ে বলতে চায়, কিন্তু বিপ্লব তাকে টানতে টানতে এগিয়ে যায় সামনের জটলার দিকে। এ জটলা আগের তিন জটলার চেয়ে ঘন, জটলার তরুণরাও অন্যদের চেয়ে বেশি ধোপদুরস্ত। মাইকের সামনে দাঁড়ানো বক্তা সুবেশী, তার চুলগুলো দামি সেলুনে ছাঁটা, পরনে আড়ঙের পাঞ্জাবি আর চাদর। সে বলে, "এতোক্ষণ তোমরা শুনলে আমাদের প্রিয় ইনসাফ সংগ্রামী ফারুক গুয়েবাড়ার মর্মস্পর্শী বক্তৃতা। এখন তোমাদের উদ্দেশে সুন্দরবন নিয়ে কিছু বলবে তোমাদের প্রিয় ইনসাফ সংগ্রামী কলু মুস্তফি। ভাইসব, কলু মুস্তফি।" কলু মুস্তফি নামের তরুণ গটগট করে এগিয়ে আসে মাইকের সামনে। প্রত্যয়ী কণ্ঠে সে বজ্রমুষ্ঠি উঁচিয়ে ধরে বলে, "আমাদের দেশের তেল গ্যাস কয়লার মালিক আমাদের জনসাধারণ। সাম্রাজ্যবাদী টাউট বাটপারের হাতে এসবের মালিকানা আমরা ছেড়ে দেবো না। শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমরা সুন্দরবনের হরিণশিশুকে রক্ষা করবো। সে যাতে তার মায়ের সঙ্গে ভোরবেলা নিশ্চিন্ত মনে চরে বেড়াতে পারে পশুর নদীর পারে। সে যেন বনের ঘাসপাতা চিবিয়ে আর নদীর পানি পিয়ে বড়টি হতে পারে। তারপর একদিন যেন নাদুস শরীরে ভরা যৌবনে সে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের একটি বাংলাদেশী বাঘের হাতেই ঘাড় মটকে মারা পড়ে। এটিই সুন্দরবনের হরিণের সমুচিত নিয়তি। কিন্তু কী হচ্ছে এসব ভাইসব? সাম্রাজ্যবাদের দালাল নব্য রাজাকার আম্লীগ তার শয্যাসঙ্গী ভারতকে নিয়ে সুন্দরবনের মাঝে এ কী গড়ে তুলছে? হরিণশিশুর চোখ দিয়ে দেখুন ভাইসব। দূরে ওটা কীসের ধোঁয়া? নদীতে এটা কীসের কালি? বনের সুস্বাদু টসটসে গাছের পাতায় জমা হওয়া গুঁড়াগুঁড়া ভুসিভুসি এগুলো কী রে? বনের পাশ দিয়ে নদীতে এ কী ভোঁভোঁ শব্দ আর আলো? এ কী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্বন ডায়োক্সাইড? নদীতে এটা কি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য? এ কি গাছের পাতায় জমা কয়লার কাজলরেখা? এ কী কয়লাবাহী জাহাজের ভেঁপু আর বাতি? আমি বেচারা হরিণশিশু রাতে ঘুমাবো কীভাবে? খাবো কী? শরীরে গোস্তো জমবে কী করে? আর শরীরে গোস্তো না জমলে সুন্দরবনের বাওয়ালি মৌয়ালি খাবে কী? আর বাওয়ালি মৌয়ালিরা খেতে না পেলে তাদের শরীরে গোস্তো জমবে কী করে? আর তাদের শরীরে গোস্তো না জমলে সুন্দরবনের বাঘ খাবে কী? আম্লীগ, তুই সুন্দরবনের বাঘ হরিণ সব মারলি।" কলু মুস্তফি কান্নায় ভেঙে পড়ে। বয়স্ক এক সৌম্যকান্তি ভদ্রলোক দু'পায়ে প্লাস্টার বেঁধে একটি চেয়ারে বসে ছিলেন, তিনি হাততালি দিয়ে বলেন, "কলু মুস্তফি গোটা ব্যাপারটি সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলেছে। সাবাশ ইনসাফি সংগ্রামী, সাবাশ।" কলু মুস্তফি চোখ মুছে ধরা গলায় বলে, "অধ্যাপক ঝানু মোহাব্বতকে ধন্যবাদ। ঝানু স্যার কিছুদিন আগেই সাম্রাজ্যবাদী ভারতে কীভাবে লোকে কয়লাখনির বিষে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে, তা সরজমিন পরখ করে দেখতে গিয়েছিলেন। সাম্রাজ্যবাদী ভারত স্যারকে পুলিশ দিয়ে কয়লাখনি থেকে বন্দী করে, তারপর নির্মমভাবে প্রহার করে, অত্যাচার নির্যাতন করে, তাঁকে ডিম দেয়। দেখুন স্যারের পায়ে প্লাস্টার দেখুন।" ঝানু মোহাব্বত প্লাস্টার করা পা দুটি টর্চ লাইট জ্বেলে সকলকে দেখান। ফারুক গুয়েবাড়ার পাশে ভিডিও ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক গম্ভীরবদনা মহিলা সে দৃশ্য ভিডিও করেন। বিপ্লব গর্জে ওঠে, "ডিম দিলে পায়ে কেন প্লাস্টার করতে হবে?" কলু মুস্তফি পাল্টা গর্জন করে, "আরে ডিম দিয়েছে অন্য জায়গায়। সঙ্গে পাও ভেঙে দিয়েছে। ডিমের জায়গার প্লাস্টার কি সবাইকে দেখানো যাবে?" অন্যান্য ইনসাফ সংগ্রামীরাও হুঙ্কার দেয়, "দেখানো যাবে?" ঝানু মোহাব্বত ভুরু কুঁচকে বিপ্লবকে দেখেন আপাদমস্তক। বিপ্লব পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে বলে, "ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জামাতশিবিরবিম্পির লোকজন সারা দেশে হাজার হাজার গাছ কেটেছে। সেটা নিয়ে ঝানু মোহাব্বত সরজমিন পরখ করতে যায় না কেন?" ঝানু মোহাব্বত টর্চ নিবিয়ে দিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে বসে অন্য দিকে তাকান। কলু মুস্তফি পাত্তা দেয় না বিপ্লবের কথায়, সে আবার তর্জনী উঁচিয়ে গর্জন করে, "সাম্রাজ্যবাদী ভারতের অত্যাচারের ভয়েই অধ্যাপক ঝানু মোহাব্বত দীর্ঘ তিনটি মাস ধরে সুন্দরবন নিয়ে আর কিচ্ছু বলছেন না। আমরা যারা তাঁর ভাবশিষ্য, আমরাও আপাতত চুপ আছি। কারণ যারা একজন প্রবীণ গবেষককে ডিম দেয়, তারা একজন নবীন গবেষককেও ছাড়বে না। আর দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ভুখা নাঙা আমজনতার মালিকানা বুঝে নেওয়ার জন্য, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইনসাফের জন্য কাউকে না কাউকে তো গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। তাই ভাইসব ...।" বিপ্লব আবারও গর্জায়, "ভুখানাঙা আমজনতার মালিকানাধীন সামাজিক বনায়নের কয়েকশো কোটি টাকা দামের হাজার হাজার গাছই তো জামাতশিবিরবিম্পির লোকজন কেটে নিয়ে সড়ক অবরোধ করেছে। এটা নিয়ে তোমরা কিছু বলো না কেন?" ইনসাফ ড্যুডরা চুপ করে যায়। সোনায়েদ জাকি উদাস মুখে ঘড়ি দেখে, ফারুক গুয়েবাড়া মোবাইলে কাকে যেন কল দেয়, আর ঝানু মোহাব্বত ইতস্তত কাশেন। কলু মুস্তফি কিছুক্ষণ ভাবগম্ভীর মুখে চেয়ে থেকে বলে, "হাজার হাজার গাছ?' বিপ্লব গর্জে উঠে বলে, "হ্যাঁ!" কলু মুস্তফি শরীরের ভর এক পা থেকে অন্য পায়ে নিয়ে বলে, "কয়েকশো কোটি টাকা দাম?" বিপ্লব বলে, "হ্যাঁ!" কলু মুস্তফি পকেট থেকে একটা ক্যালকুলেটর বার করে কী যেন পার্সেন্টেজ হিসাব করে আড়চোখে সোনায়েদ জাকি আর ফারুক গুয়েবাড়ার দিকে তাকায়। তারাও পাল্টা কড়া চোখে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। ঝানু মোহাব্বত হাত তুলে গৌতম বুদ্ধের বরাভয় মুদ্রা দেখান তাকে। কলু মুস্তফি ক্যালকুলেটরটিকে পকেটস্থ করে বলে, "হুমমম, আচ্ছা ... বেশ বেশ। এখানে আমাদের বুঝতে হবে, সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায় কে। গাছ যে কাটে, সেও প্রোলেতারিয়েত। এখানে জামাতশিবিরবিম্পিকেও ভুখানাঙা আমজনতা ধরতে হবে। তারা নিজেরা নিজেদের গাছ কাটছে। বরং রাষ্ট্রের গলা টিপে ধরা বুর্জোয়া আম্লীগ ঐ গাছগুলিকে যাতে সাম্রাজ্যবাদী ভারতের কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পাচার করতে না পারে, তাই তারা আগাম নিজেদের মাল নিজেরা বুঝে নিয়েছে।" বিপ্লব ঘাবড়ে গিয়ে বলে, "এ কেমন কথা?" সোনায়েদ জাকি বজ্রনির্ঘোষে হাততালি দেয়, "এনকোর, এনকোর!" কলু মুস্তফি উৎসাহ পেয়ে তর্জনী উঁচিয়ে বলে, "সুন্দরবনের হরিণশিশু যদি নিজেই সুন্দরবনের মাঝে কয়লাবিদ্যুতের কেন্দ্র খুলে বসতো, আমরা কিছু বলতে পারতাম? চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে, আমরা ভেবে করবো কী? জামাতশিবিরবিম্পির গাছকাটাকেও সুন্দরবনের হরিণশিশু কর্তৃক সুন্দরবনে কয়লাবিদ্যুৎ খুলে বসা হিসাবে দেখতে হবে। যেহেতু এই গাছগুলো কাটায় ভারতের ক্ষতি হয়েছে, তাই এখানে কোনো সমস্যা হয়নি। সর্বোপরি ...।" সে থেমে যায়। বিপ্লব চিৎকার করে বলে, "ভারতের কীভাবে ক্ষতি হলো?" কলু মুস্তফি আড়চোখে অধ্যাপক ঝানু মোহাব্বতের দিকে তাকায়, তিনি শব্দ না করে হাততালির ভঙ্গি করেন। ভরসা পেয়ে কলু বলে, "হয়েছে। এটা আপনি বুঝবেন না। অর্থনীতি বলে, ভারতেরই ক্ষতি হয়েছে। ঠিক যেভাবে সুন্দরবনের মাঝখানে সুন্দরবনেরই হরিণশিশু কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র খুললে ভারতের ক্ষতি হতো। জামাতশিবিরবিম্পি এখানে সেই হরিণশিশু।" বিপ্লব বলে, "গাছ কাটলো বাংলাদেশে, টাকা মার গেলো বাংলাদেশের গরিবের, জামাতশিবিরবিম্পির ক্যাডাররা এখানে সুন্দরবনের হরিণশিশু হয় কীভাবে?" ঝানু মোহাব্বত প্লাস্টার চুলকাতে চুলকাতে তৃপ্ত গলায় বলেন, "হয়, হয়, zানতি পারো না!" বিপ্লব তোতলাতে থাকে, "মানে কী এসবের?" কলু মুস্তফি আবার শুরু করে, "সর্বোপরি, এই গাছ কাটা হচ্ছে চাইনিজ কুড়াল ও চীন হতে আমদানি করা বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে। যেহেতু এতে করে দেশের কুড়াল ও করাতের বাজারে সংগ্রামী চীনা ইনসাফি ভাইদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, তাই এতে করে ভারতের আবারও ক্ষতি হচ্ছে। অতএব এই সামান্য গাছকাটা নিয়ে আমরা বেশি সময় নষ্ট করবো না। ফিরে যাই সুন্দরবনের হরিণশিশুর জুতো পায়ে দিতে ...।" বিপ্লব লাথি দিয়ে একটা প্লাস্টিকের চেয়ার উল্টে দিয়ে বলে, "এসব কী বাকোয়াজ? কীভাবে হয়? ব্যাখ্যা কই? প্রমাণ কই? তথ্যসূত্র কই?" কলু মুস্তফি এবার শার্টের হাতা গুটিয়ে চোখ পাকিয়ে শীতল গলায় বলে, "ব্যাখ্যা? প্রমাণ? তথ্যসূত্র? আপনি কোথাকার কোন হরিদাস পাল যে আপনাকে এসব দিতে যাবো? বাংলায় কথা বলি বোঝা যায় না?" ফারুক গুয়েবাড়া দুই পা এগিয়ে এসে ধমক দিয়ে বলে, "বাড়ি কই আপনার? গোপালি?" সোনায়েদ জাকি ধমকে বলে, "য়্যায়, কে আপনি?" অধ্যাপক ঝানু মোহাব্বত দাঁত খিঁচিয়ে বলেন, "ঐ তুই কে রে?" বিপ্লব এবার সামনে পড়ে থাকা সব প্লাস্টিকের চেয়ার লাথি মেরে ছিটকে ফেলে দিয়ে আকাশ কাঁপানো গর্জনে বলে, "আমি বিপ্লব!" এবার সবাই চমকে ওঠে। ফারুক গুয়েবাড়া কাছে এগিয়ে আসে, সোনায়েদ জাকি পকেট থেকে দূরবীণ বার করে বিপ্লবকে খুঁটিয়ে দেখে, কলু মুস্তফি দ্রুত মঞ্চ ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। অধ্যাপক ঝানু মোহাব্বত বিপ্লবের মুখে টর্চের আলো ফেলেন। বিল্লাল পেছনে অস্ফূট গুঞ্জন শুনে ঘাড় ফিরিয়ে দেখে, আনজিরুল মহসিন, জিহাদুল আসলাম ডালিম, আলেক মওলা, ফেনোমেনন, সবাই গুটি গুটি পায়ে এসে হাজির। তাদের সবার চোখে অস্বস্তি। ঝানু মোহাব্বত প্লাস্টারমোড়া পা নিয়ে থপথপিয়ে হেঁটে এসে ক্রুদ্ধ বিপ্লবের চেহারাটা টর্চের আলোয় ভালো করে দেখেন। ফারুক গুয়েবাড়া চমকে উঠে সোনায়েদ জাকি আর কলু মুস্তফির পেছনে গিয়ে লুকায়। এক এক করে প্রবীণ বামেরা বিপ্লবকে ভালো করে দেখেন। বিকেল নিংড়ে পৃথিবী শেষ রোদটুকু ঢেলে দেয় বৃদ্ধ বিপ্লবের অবয়বে। ইনসাফিরা অপরাধীর চোখে একে অন্যের দিকে আড়ে আড়ে তাকায়। বড়রা বিড়বিড় করে নিজেদের মধ্যে কথা বলেন, বিপ্লব একটা প্লাস্টিকের চেয়ার টেনে ধপ করে তার ওপর বসে পড়ে। তাকে আরো বুড়ো দেখায়। বিড়বিড় করে সে বলে, "কতো জায়গায় গিয়েছি আমি! একদিনের জন্যে হলেও গিয়েছি! শুধু ডাক পাই না তোমাদের কাছ থেকে। ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলে বসে বসে ভাবি, এই বুঝি ডাক আসে। কীসের কী! তোমরা করবে বিপ্লব? তোমাদের পাঞ্জাবির ভিতর দিয়ে রংবেরঙের নকশা করা গেঞ্জি ফুটে থাকে, এক একজনের পকেটে স্মার্টফোন, হাতে ভিডিও ক্যামেরা, বুক ভর্তি কুযুক্তি টোকা চিরকুট, মুখে হাসি আর মিথ্যা কথা। তোমরা কীভাবে আমাকে ডাকবে? আমাকে ডাকার কেউ নেই।" সবাই বিপ্লবকে ঘিরে ধরে, কিন্তু সে চেয়েও দেখে না। আনমনে বকে যায় নিকারাগুয়ার জঙ্গলে তাকে ডাকতে গিয়ে সামোজার ন্যাশনাল গার্ডের তাড়া খাওয়া কিশোরের গল্প, নেপালের সিমিকোটের পাহাড়ে গুর্খা রেজিমেন্টের মুখোমুখি হওয়া ত্রস্ত কিশোরীর হাতে ধরা স্টেনে শেষ বুলেটটির লক্ষ্য নিয়ে দ্বিধার গল্প, ঝাড়খণ্ডের গহীন অরণ্যে রাজ্য পুলিশের রেইডের মুখে আসন্নপ্রসবা গেরিলার হাত ধরে তার মুখ চেপে ধরে রাখা প্রৌঢ় পিতার শুকনো চোখের গল্প। তার এক একটা এলোমেলো গল্পের কাছে ফিকে হয়ে আসে মাইকে ভেসে আসা অদূরে অন্য কোনো বাম নেতার একঘেয়ে হুঁশিয়ারি, সাম্রাজ্যবাদের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান, সংঘাত নয় সমঝোতা চাই, দুনিয়ার মজদুর এক হও এক হও, সোনায়েদ জাকি কলিং ইনসাফি ড্যুডস অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন। অ্যাকশনের কথা শুনে বিল্লালের সম্বিত ফেরে, সে বিপ্লবের মুখ থেকে চোখ সরিয়ে আশেপাশে তাকায়। দেখে, সবাই ঘিরে ধরেছে বিপ্লবকে। তারপর অ্যাকশন শুরু হয়। আনজিরুল মহসিন খান আর জিহাদুল আসলাম ডালিম মারে ডাস কাপিটাল দিয়ে, আলেক মওলা মারে ভ্যানগার্ডের বাণ্ডিল দিয়ে, ফেনোমেনন মারে দুর্নীতি দুবৃত্তি সাম্প্রদায়িকতার হার্ড কভার দিয়ে, আর ঝানু মোহাব্বত পকেট থেকে বার করে ইস্পাতের মলাটে বাঁধাই করা ফরহাদ মগবাজারের মোকাবেলা। একটু পেছনে দাঁড়িয়ে হ্যা হ্যা করে হাসে আর উৎসাহ দেয় ফারুক গুয়েবাড়া, মার, মার শালারে, মার। বিপ্লব লুটিয়ে পড়ে পথে। বাম নেতারা তাকে জামাতশিবিরের হিংস্রতা নিয়ে মারে। বিপ্লবের গরম রক্ত ছিটকে পড়ে তাদের সফেদ পাঞ্জাবিতে। বিল্লাল শুনতে পায়, দূরে কোথায় যেন ঢাকের কাঠি বেজে উঠেছে। সূর্য অতি দ্রুত মুখ লুকিয়ে আড়াল করতে চায় এই হত্যাকাণ্ডকে, অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে কয়েকজন প্রবীণ বামপন্থীর ধবধবে সাদা পোশাকে জ্বলন্ত রক্তের ফোঁটা। বুক ভরা অব্যক্ত গল্প নিয়ে বিপ্লব খুন হয়। পেলব বিল্লাল হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। বলে, আপনারা বিপ্লবকে মেরে ফেললেন? সবাই এবার ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকায়। বিল্লাল ভয় পায় না এতটুকুও। সে আবারও বলে, আপনারা বিপ্লবকে মেরে ফেললেন? এবার বামেরা সবাই নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে আলাপ করেন। ডাস কাপিটাল, ভ্যানগার্ড, দুর্নীতি দুর্বৃত্তি সাম্প্রদায়িকতা আর মোকাবেলা থেকে টপ টপ করে রক্ত ঝরে পড়ে পথে। নিথর স্তুপ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে বিপ্লব। ঢাকের কাঠির গুড়গুড় শব্দ একটু একটু করে আরো জোরালো আর স্পষ্ট হয়। তাকে ছাপিয়ে অধ্যাপক ঝানু মোহাব্বত এবার এগিয়ে এসে মিষ্টি করে বলেন, "কই, না তো?" বিল্লাল হাহাকার করে বলে, "আপনারা বিপ্লবকে মেরে ফেললেন?" ইনসাফ সংগ্রামীরা বিপ্লবের মৃতদেহ চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে রমনা পার্কের এঁদো জলাশয়ের দিকে এগিয়ে যায়। ঢাকের শব্দ সেদিক থেকেই ভেসে আসছে। ক্রমশ সে শব্দের প্রাবল্যে বিসর্জন যাত্রা একটা ছন্দ পেয়ে যায়। অচেনা সংগ্রামীদের কাঁধে চড়ে মৃত বিপ্লব এগিয়ে যায় জলের দিকে। বামেরা সবাই সার বেঁধে দাঁড়ায় ঝানু মোহাব্বতের পেছনে। ঝানু মোহাব্বত হেসে বলেন, "এ বিপ্লব সে বিপ্লব নয়!" [মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়েকে নিয়ে কয়েকটা দিন প্রচুর কথাবার্তা হয়েছে। এই গল্পে খোবরাগাড়ে প্রাসঙ্গিক নন। তার নামটা অপ্রচলিত বলে সামান্য বদলে নিয়ে নতুন একটা শব্দ কয়েন করলাম, খুব-রগুড়ে। অর্থাৎ, অনেক রগড় ঘটায় যা, বা রগড় ঘটান যিনি। রগড়ের অর্থের মধ্যে কৌতুক, ঘর্ষণ, পেষণ, ইত্যাদি যেমন আছে, তেমনি আছে ঢাকের কাঠির আওয়াজ।]
false
hm
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও বিষ্ণুমূর্তি রহস্য গোয়েন্দা ঝাকানাকা একটি ভুরু উত্তোলন করে দারুণ এক অট্টহাসি দিলেন। দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি গম্ভীর মুখে বসে রইলেন। "কেস খুবই সরল।" ঝাকানাকা এক গাল মুড়ি চিবাতে চিবাতে বললেন। "বিষ্ণুমূর্তি আদৌ চুরি যায়নি।" কিংকু চৌধারি বললেন, "কিন্তু ...।" ঝাকানাকা চোখ পাকিয়ে তাকালেন শুধু। কিংকু চৌধারি থেমে গিয়ে মুড়ির গামলার দিকে হাত বাড়ালেন। ঝাকানাকা বললেন, "দেখুন, পুলিশে চাকরি করেন ...[justify]গোয়েন্দা ঝাকানাকা একটি ভুরু উত্তোলন করে দারুণ এক অট্টহাসি দিলেন। দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি গম্ভীর মুখে বসে রইলেন। "কেস খুবই সরল।" ঝাকানাকা এক গাল মুড়ি চিবাতে চিবাতে বললেন। "বিষ্ণুমূর্তি আদৌ চুরি যায়নি।" কিংকু চৌধারি বললেন, "কিন্তু ...।" ঝাকানাকা চোখ পাকিয়ে তাকালেন শুধু। কিংকু চৌধারি থেমে গিয়ে মুড়ির গামলার দিকে হাত বাড়ালেন। ঝাকানাকা বললেন, "দেখুন, পুলিশে চাকরি করেন বলেই যে বুদ্ধু হতে হবে এমন কোন কথা নেই। ভাবুন মন দিয়ে। গোটা ব্যাপারটাকে দেখুন চোখের সামনে। শুধু একটা বাক্সকে নিয়ে চিন্তা করলেই তো হবে না। থিঙ্ক আউট অব দ্য বক্স!" কিংকু চৌধারি মুড়ি চিবাতে চিবাতে বললেন, "কিন্তু ...।" ঝাকানাকা বললেন, "কোন কিন্তু নাই। ঘটনা সরল। মূর্তি চুরি হয় নাই।" কিংকু চৌধারি আরেক খামচা মুড়ি নিলেন। ঝাকানাকা উঠে পড়লেন সোফা ছেড়ে। বললেন, "আপনাদের হাতে আসলে আছে কী? একটি ভিজা, স্ক্রু খোলা বাক্স, যার গায়ে যাদুঘরের সীল আছে। আর আছে কী? আছে অকুস্থল, বিমানবন্দরের পাশে একটা জলা, যেখানে আপনাদের লোকেরা লোক দেখিয়ে হাঁচড়পাঁচড় করেছে। আর আছে কী? ভারত-নেপাল সীমান্ত থেকে আটক করা একটা ট্রাক, যার সীটের নিচে এক হালি বিষ্ণুমূর্তি।" কিংকু চৌধারি বললেন, "ঠিক!" ঝাকানাকা বললেন, "আর এগুলি থেকে আপনারা ভাবছেন বিষ্ণুমূর্তি চুরি হয়েছে। ভুল।" কিংকু চৌধারি বললেন, "কেন?" ঝাকানাকা বললেন চোখ পাকিয়ে, "ভাবুন! ভেবে দেখুন!" কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে আরেক খামচা মুড়ি তুলে নেন। "রাত দু'টো পর্যন্ত পুলিশ পাহারায় ছিলো এয়ারপোর্টে। তারপর তারা চলে যায়। কেন চলে যায়? কারণ তাদেরও তো ঈদ আছে। তারাও তো গরুর মাংস দিয়ে পোলাও খেতে চায়। বেশ। খাক। কিন্তু তারপর কী হলো? একটা বাক্স লোপাট হয়ে গেলো। হই হই রই রই। সেই বাক্স আবার খুব বেশি কষ্ট করতে হলো না, ধারেকাছেই একটা জলায় তাকে পাওয়া গেলো। তার মাথার স্ক্রু খুলে পড়ে গেছে, ভেতরটা ফাঁকা। ... এখানে ভাবতে হবে, কেন? কেন বাক্সটা পাওয়া গেলো? বাক্সসুদ্ধুই কেন মূর্তিগুলি সরানো হয়নি?" কিংকু চৌধারি বললেন, "বারে, বাক্সসুদ্ধু নিলে ধরা পড়ার একটা সম্ভাবনা থাকে না?" ঝাকানাকা বললেন, "তা থাকে। কিন্তু বাক্সের গা থেকে কাগজের লেবেলটা টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেললেই কিন্তু ঝামেলা চুকে যেতো। বাক্স খুলে জিনিসটা বার করতে হতো না। আর এইসব মূর্তি খুব সাবধানে প্যাক করতে হয়। বাক্সের ভেতরে থাকলেই বরং জিনিসটা নিরাপদ থাকে। চোরও তা জানে। চোর জানে এই জিনিস গদাম করে গাড়ির বুটে ফেলে নেয়ার জিনিস নয়। সামান্য দাগদুগ পড়লেই কালোবাজারে এর দাম ফস করে নেমে আসবে একশো ভাগের এক ভাগে। তারপরও সে এতো কাঁচা কাজ করলো কেন?" কিংকু চৌধারি একটা পুলিশি হাসি দ্যান। বলেন, "আপনি ভুলে যাচ্ছেন স্যার! বাক্সসহ জিনিসটা লোপাট করতে গেলে এয়ারপোর্টের দুর্ধর্ষ সিকিউরিটির হাতে বমাল ধরা পড়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়!" ঝাকানাকা হাসেন। বলেন, "মুহাহাহাহাহাহা! তাই নাকি? তো বাক্স ছাড়া লোপাট করার সময় কি এয়ারপোর্টের দুর্ধর্ষ সিকিউরিটি ঘুমাচ্ছিলো?" কিংকু চৌধারির মুখটা কালো হয়ে যায়। তিনি আমতা আমতা করে বলেন, "হয়তো কোন কাপড়টাপড় দিয়ে ঢেকেঢুকে, কিংবা ব্যাগে ভরে ...।" ঝাকানাকা বলেন, "বাক্সটা টিভিতে দেখেছি। ওটাকেও তো কাপড়টাপড় দিয়ে ঢেকে নেয়া যেতো। কিংবা ব্যাগে ভরে। নিলো না কেন?" কিংকু চৌধারি বলেন, "দেখুন, এইসব চোরছ্যাঁচড়ের কারবার বোঝা বড় দায় ...।" ঝাকানাকা বলেন, "হুমম। আপনার আমার কাজই ওটা। ঐ দায় নিয়েই চলতে হবে। এখন ভাবুন। কেন বাক্সটা পাওয়া গেলো, একেবারে নাকের ডগায়?" কিংকু চৌধারি বলেন, "কেন?" ঝাকানাকা বলেন, "কারণ বাক্সটার নিয়তিই ছিলো ধরা পড়া। আশেপাশে কোথাও খালি পেট নিয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় ধরা পড়া।" কিংকু চৌধারি বলেন, "মানে?" ঝাকানাকা বলেন, "মানে হচ্ছে, সময়মতো যদি বাক্সটা সরিয়ে ফেলা না হতো, এবং স্ক্রু খুলে তাকে কোথাও ফেলে রাখা না হতো, তাহলে ওজন করার সময় এয়ার ফ্রান্সের লোকজন বুঝে ফেলতো যে বাক্সটা আসলেই খালি, ওর ভেতরে কোন মূর্তি ছিলো না। তখন তারা হাউকাউ শুরু করতো।" কিংকু চৌধারি বলেন, "মানে কী?" ঝাকানাকা হাসেন। বলেন, "যদি ধরে নেই, রাত দু'টোর পর, পুলিশ চলে যাবার পর বাক্স থেকে মূর্তি দুটো চুরি হয়েছে, তাহলে কিভাবে ভোরবেলা ভারত-নেপাল সীমান্তে চারটা বিষ্ণু পাওয়া যায়? ভুলে যাবেন না, গতরাতে ঘন কুয়াশা ছিলো দেশে। উত্তরাঞ্চলের রাস্তা এ সময় কুয়াশায় ছেয়ে থাকে। হাজার বড় তালেবর ড্রাইভারও ঘন্টায় ষাট কিলোমিটারের বেশি গতিতে ঐ রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবে না। উত্তরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পার করতে গেলে অন্তত পক্ষে আট ঘন্টা লাগবে। সেখান থেকে ভারত নেপাল সীমান্ত আরো ঘন্টা তিনেকের রাস্তা। হিসাব তো মিলছে না।" কিংকু চৌধারি বলেন, "তাহলে?" ঝাকানাকা বলেন, "সম্ভাবনা দু'টো। এক, ঐ ট্রাকে যেসব বিষ্ণু আছে, সেগুলি আমাদের নয়। সেগুলি নকল বা অন্য বিষ্ণু। দুই, ঐ চারটার মধ্যে দু'টো আমাদের বিষ্ণুর রেপ্লিকা। তিন ...।" কিংকু চৌধারি বলেন, "আপনি না বললেন দু'টো সম্ভাবনা?" ঝাকানাকা বললেন, "চোপ! তিন, ঐ চারটার মধ্যে দু'টো আমাদের আসল বিষ্ণু।" কিংকু চৌধারি বলেন, "এখন?" ঝাকানাকা বললেন, "যদি এক বা দুই হয়, তাহলে হয়তো বিষ্ণু এয়ারপোর্ট থেকেই চুরি গেছে, এবং এই মূহুর্তে সে নিরাপদে চোরের আস্তানায় চলে গেছে। সেটা কোথায় বলতে গেলে অনেক লোককে খুব ভালোভাবে প্যাঁদাতে হবে। আর যদি তিন হয়, তাহলে এয়ারপোর্ট থেকে চুরি হয়নি, আমি যা ভাবছি তা-ই হয়েছে। যাদুঘর থেকে খালি বাক্স প্যাক করা হয়েছে। হোমবাউন্ডের গাড়ি পাহারা দিয়ে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ, কিন্তু কিছু হাতসাফাই তাদের পক্ষেও করা সম্ভব, কাজেই এমনও হতে পারে যে ভরা বাক্স মাঝপথে পাল্টে খালি বাক্স লোড করা হয়েছে এয়ারপোর্টে। ওদেরকেও প্যাঁদানোর লিস্টে রাখুন।" কিংকু চৌধারি বলেন, "খালি বাক্স?" ঝাকানাকা বললেন, "হুম। খালি বাক্স পাঠিয়ে বিষ্ণুদু'টোকে চুপিচুপি ছালার বস্তায় ভরে তুলে দেয়া হয়েছে দুপুরের দিকেই। তারা চলে গেছে সীমান্তের দিকে। সেখান থেকে রাতে তারা বাংলাদেশ ছেড়ে ঢুকে পড়েছে ভারতে।" কিংকু চৌধারি বলেন, "এখন হয়েছে কোনটা? এক, দুই না তিন?" ঝাকানাকা বলেন, "প্যাঁদাতে হবে, বুঝলেন, প্যাঁদালেই বেরিয়ে পড়বে সব গড়গড় করে। তিব্বতি উষ্টাটা কাজে লাগাতে হবে এবার ... এতো কষ্ট করে শিখলাম, কাজে লাগাতে পারিনা ...।" কিংকু চৌধারি বললেন, "দুই নাম্বার সম্ভাবনাটা বুঝি নাই। আমাদের বিষ্ণুর রেপ্লিকা কেন ধরা পড়বে নেপাল সীমান্তে?" ঝাকানাকা হাসেন। বলেন, "যে কারণে খালি বাক্স ফেরত এসেছে, সে কারণেই! রেপ্লিকা ফেরত আসবে, তারপর বিষ্ণুর জায়গা দখল করে বসে পড়বে যাদুঘরে।" কিংকু চৌধারি বলেন, "মানে? লোকজন বুঝে ফেলবে না?" ঝাকানাকা হাসেন। বলেন, "না। যারা বুঝবে তারা মুখ বুঁজে থাকবে হয়তো।" কিংকু চৌধারি বলেন, "কিন্তু ফ্রান্সের ওরা তো ঠিকই বুঝে ফেলবে!" ঝাকানাকা হাসেন। বলেন, "একবার চুরি যাবার পর কি আর ঐ জিনিস এতো সহজে আর ফ্রান্সে যাবে?" কিংকু চৌধারি বলেন, "আরেশশালা, তাই তো!" ঝাকানাকা বলেন, "মুড়ি খান।" কিংকু চৌধারি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকান ঝাকানাকার দিকে, গালি দিলো নাকি? . . . গোয়েন্দা ঝাকানাকা! | Promote Your Page Too
false
ij
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন-এর ‘অবরোধবাসিনী’ থেকে পাঠ (৪) বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন-এর (১৮৮০-১৯৩২) বিস্তারিত পরিচয় দেওয়া এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয়। তাঁর সম্বন্ধে আমরা কমবেশি জানি। তাঁর রচিত “অবরোধবাসিনী” বইটি আমাদের কারও কারও পড়া কিংবা কারও কারও এখনও পড়া হয়নি। এ কারণেই বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন-এর অবরোধবাসিনী থেকে পাঠ-এর এই পরিকল্পনা। উদ্দেশ্য, একুশ শতকে বসে বেগম রোকেয়ার চিন্তার স্বরুপ উপলব্দি করা। [ ২১ ] বঙ্গদেশের কোন জমীদারের বাড়ী পুণ্যাহের উৎসব উপলক্ষে নাচ গান হইতেছিল। নর্ত্তকীরা বাহিরে যেখানে বিরাট শামিয়ানার নীচে নাচিতেছিল, সে স্থানটা বাড়ীর দেউড়ীর কামরা হইতে দেখা যাইত। কিন্তু বাড়ীর কোনও বিবি সে দেউড়ীর ঘরে যান নাই। নৃত্য দর্শন ও সঙ্গীত শ্রবণের সৌভাগ্য লইয়া বিবিরা ধরাধামে আসেন নাই। জমীদার সাহেবের একটী তিন বৎসর বয়স্কা কন্যা ছিল। মেয়েটী দিব্যি গৌরাঙ্গী। তাহাকে আদর করিয়া কেহ বলিত, চিনির পুতুল, কেহ বলিত, ননীর পুতুল। নাম সাবেরা। ভোরের সময় রৌশন চৌকির ভৈরবী আলাপে নিদ্রিত পাখীরা জাগিয়া কলরব আরম্ভ করিয়াছে। সাবেরার ‘খেলাই’ও (আধুনিক ভাষায় “আয়া”) জাগিয়া উঠিয়াছে। তাহার সাধ হইল, একটু নাচ দেখিতে যাইবে। কিন্তু সাবেরা তখনও ঘুমাইতেছিল। সুতরাং খেলাই সে নিদ্রিতা শিশুকে কোলে লইয়া ঘরে নাচ দেখিতে গেল। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়! কর্ত্তা সেই সময় বহির্ব্বাটী হইতে অন্তঃপুরে আসিতেছিলেন। দেখিলেন, সাবেরাকে কোলে লইয়া খেলাই খড়খড়ির পাখী তুলিয়া তামাসা দেখিতেছিল। তাঁহার হাতে একটা মোটা লাঠি ছিল তিনি সেই লাঠি দিয়া খেলাইকে প্রহার আরম্ভ করিলেন। খেলাইয়ের চিৎকারে বিবিরা দৌড়িয়া দেউড়ী ঘরে আসিলেন। এক লাঠি লাগিল সাবেরার ঊরুতে। তখন কর্ত্তার ভ্রাতৃবন্ধু অগ্রসর হইয়া বলিলেন, “ছোট সাহেব, করেন কি! করেন কি! মেয়ে মেরে ফেলবেন?” প্রহারবৃষ্টি তৎক্ষণাৎ থামিয়া গেল। জমীদার সাহেব সক্রোধে কহিলেন, “হতভাগী, নিজে নাচ দেখবি, দেখ না, কিন্তু আমার মেয়েকে দেখাতে আনলি কেন?” কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিশু ত খেলাইয়ের কাঁধে মাথা রাখিয়া গভীর নিদ্রায় মগ্ন ছিল,-সে বেচারী কিছুই দেখে নাই। বাড়ীময় শোরগোল পড়িয়া গেল।-সাবেরার দুধের মত শাদা ধবধবে ঊরুতে লাঠির আঘাতে এক বিশ্রী কালো দাগ দেখিয়া কর্ত্তাও মরমে মরিয়া গেলেন। এইরূপে লাঠির গুতায় আমাদের অবরোধ-কারায় বন্দী করা হইয়াছে। [ ২২ ] শিয়ালদহ ষ্টেশনের প্লাটফরম ভরা সন্ধ্যার সময় এক ভদ্রলোকে ট্রেণের অপেক্ষায় পায়চারী করিতেছিলেন। কিছু দূরে আর একজন দাঁড়াইয়া ছিলেন; তাঁহার পার্শ্বে এক গাদা বিছানা ইত্যাদি ছিল। পূর্ব্বোক্ত ভদ্রলোক কিঞ্চিৎ কান্তি বোধ করায় উক্ত গাদার উপর বসিতে গেলেন। তিনি বসিবা মাত্র বিছানা নড়িয়া উঠিল-তিনি তৎক্ষণাৎ সভয়ে লাফাইয়া উঠিলেন। এমন সময় সেই দণ্ডায়মান ভদ্রলোক দৌড়িয়া আসিয়া সক্রোধে বলিলেন,-“মশায়, করেন কি? আপনি স্ত্রীলোকদের মাথার উপর বসিতে গেলেন কেন?” বেচারা হতভম্ব হইয়া বলিলেন, “মাফ করিবেন, মশায়! সন্ধ্যার আঁধারে ভালমতে দেখিতে পাই নাই, তাই বিছানার গাদা মনে করিয়া বসিয়াছিলাম। বিছানা নড়িয়া উঠায় আমি ভয় পাইয়াছিলাম যে, এ কি ব্যাপার!” [ ২৩ ] অপরের কথা দূরে থাকুক। এখন নিজের কথা কিছু বলি। সবে মাত্র পাঁচ বৎসর বয়স হইতে আমাকে স্ত্রীলোকদের হইতেও পর্দ্দা করিতে হইত। ছাই কিছুই বুঝিতাম না যে, কেন কাহারও সম্মুখে যাইতে নাই; অথচ পর্দ্দা করিতে হইত। পুরুষদের ত অন্তঃপুরে প্রবেশ নিষেধ, সুতরাং তাহাদের অত্যাচার আমাকে সহিতে হয় নাই। কিন্তু মেয়েমানুষের অবাধ গতি-অথচ তাহাদের দেখিতে না দেখিতে লুকাইতে হইবে। পাড়ার স্ত্রীলোকেরা হঠাৎ বেড়াইতে আসিত; অমনি বাড়ীর কোন লোক চক্ষুর ইসারা করিত, আমি যেন প্রাণ-ভয়ে যত্র-তত্র-কখনও রান্নাঘরের ঝাঁপের অন্তরালে, কখনও কোন চাকরাণীর গোল করিয়া জড়াইয়া রাখা পাটীর অভ্যন্তরে, কখনও তক্তপোষের নীচে লুকাইতাম। বাচ্চাওয়ালী মুরগী যেমন আকাশে চিল দেখিয়া ইঙ্গিত করিবা মাত্র তাহার ছানাগুলি মায়ের পাখার নীচে পলায়, আমাকেও সেইরূপ পলাইতে হইত। কিন্তু মুরগীর ছানার ত মায়ের বুক স্বরূপ একটা নির্দিষ্ট আশ্রয় থাকে, তাহারা সেইখানে পলাইয়া থাকে; আমার জন্য সেরূপ কোন নির্দিষ্ট নিরাপদ স্থান ছিল না। আর মুরগীর ছানা স্বভাবতঃই মায়ের ইঙ্গিত বুঝে-আমার ত সেরূপ কোন স্বাভাবিক ধর্ম্ম (রহংঃরহপঃ) ছিল না। তাই কোন সময় চক্ষের ইসারা বুঝিতে না পারিয়া দৈবাৎ না পলাইয়া যদি কাহারও সম্মুখীন হইতাম, তবে হিতৈষিণী মুরুব্বিগণ, “কলিকালের মেয়েরা কি বেহায়া, কেমন বেগয়রৎ” ইত্যাদি বলিয়া গঞ্জনা দিতে কম করিতেন না। আমার পঞ্চম বর্ষ বয়সে কলিকাতা থাকাকালীন দ্বিতীয়া ভ্রাতৃবধূর খালার বাড়ী-বেহার হইতে দুইজন চাকরাণী তাঁহাকে দেখিতে আসিয়াছিল। তাহাদের ‘ফ্রী পাসপোর্ট’ ছিল,-তাহারা সমস্ত বাড়ীময় ঘুরিয়া বেড়াইত, আর আমি প্রাণ-ভয়ে পলায়মান হরিণশিশুর মত প্রাণ হাতে লইয়া যত্র-তত্র-কপাটের অন্তরালে কিম্বা টেবিলের নীচে পলাইয়া বেড়াইতাম। ত্রিতলে একটা নির্জ্জন চিল-কোঠা ছিল; অতি প্রত্যুষে আমাকে খেলাই কোলে করিয়া সেইখানে রাখিয়া আসিত; প্রায় সমস্ত দিন সেইখানে অনাহারে কাটাইতাম। বেহারের চাকরাণীদ্বয় সমস্ত বাড়ী তন্নতন্ন করিয়া খুঁজিবার পর অবশেষে সেই চিল-কোঠারও বিপদের সংবাদ দিল। ভাগ্যে সেখানে একটা ছাপরখাট ছিল, আমি সেই ছাপরখাটের নীচে গিয়া নিঃশ্বাস বন্ধ করিয়া রহিলাম-ভয়, পাছে আমার নিঃশ্বাসের সাড়া পাইয়া সেই হৃদয়হীনা স্ত্রীলোকেরা খাটের নীচে উঁকি মারিয়া দেখে! সেখানে কতকগুলি বাক্স, পেটারা, মোড়া ইত্যাদি ছিল। বেচারা হালু, তাহার (৬ বৎসর বয়সের) ক্ষুদ্র শক্তি লইয়া সেইগুলি টানিয়া আনিয়া আমার চারিধারে দিয়া আমাকে ঘিরিয়া রাখিল। আমার খাওয়ার খোঁজখবরও কেহ নিয়মমত লইত না। মাঝে মাঝে হালু খেলিতে খেলিতে চিল-কোঠায় গিয়া উপস্থিত হইলে, তাহাকেই ক্ষুধা তৃষ্ণার কথা বলিতাম। সে কখনও এক গ্লাস পানি, কখনও খানিকটা “বিন্নি” (খই বিশেষ) আনিয়া দিত। কখনও বা খাবার আনিতে গিয়া আর ফিরিয়া আসিত না-ছেলে মানুষ ত, ভুলিয়া যাইত। প্রায় চারিদিন আমাকে ঐ অবস্থায় থাকিতে হইয়াছিল। [ ২৪ ] বেহার অঞ্চলে শরীফ ঘরানার মহিলাগণ সচরাচর রেলপথে ভ্রমণের পথে ট্রেণে উঠেন না। তাঁহাদিগকে বনাতের পর্দ্দা ঢাকা পাল্কীকে পুরিয়া, সেই পাল্কীতে ট্রেণের মালগাড়ীতে তুলিয়া দেওয়া হয়। ফল কথা, বিবিরা পথের দৃশ্য কিছুই দেখিতে পান না। তাঁহারা ব্রুকবণ্ড চায়ের মত ঠধপঁঁস টিনে প্যাক হইয়া দেশ ভ্রমণ করেন। কিন্তু এই কলিকাতার এক ঘর সম্ভ্রান্ত পরিবার উহার উপরও টেক্কা দিয়াছেন। তাঁহাদের বাড়ীর বিবিদের রেলপথে কোথাও যাইতে হইলে প্রথমে তাঁহাদের প্রত্যেককে, পাল্কীতে বিছানা পাতিয়া, একটা তালপাতার হাত পাখা, এক কুজা পানি এবং একটা গ্লাস সহ বন্ধ করা হয়। পরে সেই পাল্কীগুলি তাঁহাদের পিতা কিম্বা পুত্রের সম্মুখে চাকরেরা যথাক্রমে-(১) বনাতের পর্দ্দা দ্বারা প্যাক করে; (২) তাহার উপর মোম-জমা কাপড় দ্বারা সেলাই করে; (৩) তাহার উপর খারুয়ার কাপড়ে ঘিরিয়া সেলাই করে; (৪) তাহার পর বোম্বাই চাদরের দ্বারা সেলাই করে; (৫) অতঃপর সর্ব্বোপরে চট মোড়াই করিয়া সেলাই করে। এই সেলাই ব্যাপার তিন চারি ঘণ্টা ব্যাপিয়া হয়-আর সেই চারি ঘণ্টা পর্য্যন্ত বাড়ীর কর্ত্তা ঠায় উপস্থিত থাকিয়া কাড়া পাহারা দেন। পরে বেহারা ডাকিয়া পাল্কীগুলি বনাতের পর্দ্দা ঢাকা অবস্থায় রাখিয়া চাকরেরা সরিয়া যায়। পরে কর্ত্তা স্বয়ং বন্দিনীদের অজ্ঞান অবস্থায় বাহির করিয়া যথারীতি মাথায় গোলাপজল ও বরফ দিয়া, মুখে চামচ দিয়া পানি দিয়া, চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়া বাতাস করিতে থাকেন। দুই ঘণ্টা বা ততোধিক সময়ের শুশ্রূষার পর বিবিরা সুস্থ হন। [ ২৫ ] “অবরোধ-বাসিনী”র ১১নং ঘটনায় লিখিয়াছি যে, আমি গত ১৯২৪ সনে আমার দুই নাতিনের বিবাহোপলক্ষে আরায় গিয়াছিলাম। কিন্তু আমি আরা শহরটায় সেই বাড়ীখানা এবং আকাশ ছাড়া আর কিছুই দেখিতে পাই নাই। আমার “মেয়েকে” (অর্থাৎ মেয়ের মৃত্যুর পর জামাতার দ্বিতীয় পরে স্ত্রীকে) সেই কথা বলায় তিনি অতি মিনতি করিয়া আমাকে বলিলেন, “আম্মা, আপনি যদি দয়া করিয়া শহর দেখিতে চান, তবে আমরাও আপনার জুতার বরকতে শহরটা একটু দেখিয়া লইব। আমরা সাত বৎসর হইতে এখানে আছি, কিন্তুু শহরের কিছুই দেখি নাই।” সদ্যপরিণীতা মজু এবং সবুও সকাতরে বলিল, “হ্যাঁ নানি আম্মা, আপনি আব্বাকে বলিলেই হইবে।” আমি ক্রমান্বয়ে কয়েকদিন বাবাজীবনকে একখানা গাড়ী সংগ্রহ করিয়া দিতে বলায়, তিনি প্রতিদিনই অতি বিনীতভাবে জানাইতেন যে গাড়ী পাওয়া যায় না। শেষের দিন বিকালে তাঁহার ১১ বৎসর বয়স্ক পুত্র আমাদের সংবাদ দিল যে যদি বা একটা ভাড়াটে গাড়ী আসিয়াছে। কিন্তু তাঁহার জানালার একটা পাখী ভাঙ্গা। মজু অতি আগ্রহের সহিত বলিল, “সেখানটায় আমরা পর্দ্দা করিয়া লইব-আল্লার ওয়াস্তে তুমি গাড়ী ফেরত দিও না।” সবু ফিস্ফিস্ করিয়া বলিল, “ভালই হইয়াছে, ঐ ভাঙ্গা জানালা দিয়া ভালমতে দেখা যাইবে।” আমরা যতবারই গাড়ীতে উঠিতে যাইবার জন্য তাড়া দিই, ততবারই শুনিঃ সবুর করুন, বাহিরে এখনও পর্দ্দা হয় নাই। কিছুণ পরে গাড়ীতে উঠিতে দিয়া দেখি, সোবহান আল্লাহ! দুই তিন খানা বোম্বাই চাদর দিয়া গাড়ীটি সম্পূর্ণ ঢাকিয়া ফেলা হইয়াছে। জামাতা স্বয়ং গাড়ীর দরজা খুলিয়া দিলেন, আমরা গাড়ীতে উঠিবার পর তিনি স্বহস্তে কাপড় দিয়া দরজা বাঁধিয়া দিলেন। গাড়ী কিছু দূরে গেলে, মজু সবুকে বলিল, “দেখ এখন ভাঙ্গা জানালা দিয়া!” সেই পর্দ্দার এক স্থলে একটা ছিদ্র ছিল, মজু, সবু এবং তাহাদের মাতা সেই দিকে ঝুঁকিয়া পড়িয়া দেখিতে লাগিলেন, আমি আর সে ফুটা দিয়া দেখিবার জন্য তাহাদের সহিত কাড়াকাড়ি করিলাম না। [ ২৬ ] আমাদের ন্যায় আমাদের নামগুলি পর্য্যন্ত পর্দ্দানশীল। মেয়েদের নাম জানা যায়, কেবল তাহাদের বিবাহের কাবিন লিখিবার সময়। এক মস্ত জমীদারের তিন কন্যার বিবাহ একই সঙ্গে হইতেছিল। মেয়েদের ডাকনাম বড় গেন্দলা, মেজো গেন্দলা, এবং ছোট গেন্দলা-প্রকৃত নাম কেহই জানে না। তাহাদের সম্পর্কের এক চাচা হইলেন বিবাহ পড়াইবার মোল্লা। কন্যাদের বয়স অনুসারে তিন জল বরের বয়সেরও তারতম্য ছিল। তিন জন বরই বিবাহ কেন্দ্রে অনুপস্থিত। আমরা পাঠিকাদের সুবিধার নিমিত্ত বরদিগকে বয়স অনুসারে ১নং, ২নং এবং ৩নং বলিব। মোল্লা সাহেবের হাতে তিন বর এবং তিন কন্যার নামের তালিকা দেওয়া হইয়াছে। তিনি যথাসময় বিবাহের মন্ত্র পড়াইতে বসিয়া ভ্রমণবশতঃ বর ও কন্যাদের নাম গোলমাল করিয়া ১নং বরের সহিত ছোট গেন্দলার বিবাহ দিয়া দিলেন; ৩নং বরের সহিত মেজো গেন্দলার বিবাহ দিলেন। এখন ২নং বরের সহিত বড় গেন্দলার বিবাহের পালা। মেজো ও ছোট গেন্দলার বয়স খুব অল্প-১১ এবং ৭ বৎসর, তাই তাহারা কোন উচ্চ বাচ্য করে নাই। কিন্তু বড় গেন্দলার বয়স ১৯ বৎসর; সে লুকাইয়া ছাপাইয়া মুরুব্বিদের কথাবার্ত্তা শুনিয়া জানিয়াছিল, তাহার বিবাহ হইবে, ১নং বরের সহিত। আর বরের নামও তাহার জানা ছিল। সুতরাং ২নং বরের নাম লইয়া মোল্লা সাহেব যখন বড় গেন্দলার “এজেন” চাহিলেন, সে আর কিছুতেই মুখ খোলে না। মা, মাসীর উৎপীড়ন সহ্য করিয়াও সাহেবকে বলিলেন, “হাঁম গেন্দলা হুঁ বলেছে; বিয়ে হয়ে গেছে, তুমি আর কতকণ হয়রাণ হবে।” তিনি বলিলেন, “আমরা গেন্দলার মুখের “হুঁ” শুনি নাই, তবে কি আপনার “হুঁ” লইয়া আপনারই বিবাহ পড়াইব নাকি?” তদুত্তরে ক’নের মা তাঁহার পিঠে এক বিরাট কিল বসাইয়া দিলেন। অবশেষে গেন্দলা বেচারী “হুঁ” বলিল কিনা আমরা সে খবর রাখি না। এদিকে যথাসময়ে টেলিগ্রাফযোগে ৩০ বৎসর বয়স্ড়্গা ১নং বর যখন জানিলেন যে, তাঁহার বিবাহ হইয়াছে, (১৯ বৎসর বয়স্কা বড় গেন্দলার পরিবর্ত্তে) সর্ব্বকনিষ্ঠা ৭ম বর্ষীয়া ছোট গেন্দলার সহিত তখন তিনি চটিয়া লাল হইলেন-শাশুড়ীকে লিখিলেন কন্যা বদল করিয়া দিতে; নচেৎ তিনি তাঁহার বিরুদ্ধে জুয়াচুরির মোকদ্দমা আনিবেন, ইত্যাদি ইত্যাদি। [ ২৭ ] প্রায় ১০/১১ বৎসরের ঘটনা। বলিয়াছি ত বেহার অঞ্চলে বিবাহের তিন মাস পূর্ব্বে “মাইয়া-খানায়” বন্দী করিয়া মেয়েদের আধমরা করা হয়। ও তখনও ঐ বন্দিশালায় বসিবার মেয়াদ,-যদি বাড়ীতে কোন দুর্ঘটনা হইয়া বিবাহের তারিখ পিছাইয়া যায় তবে-বৎসর কালও হয়; এক বেচারী সেইরূপ ছয়মাস পর্য্যন্ত বন্দিনী ছিল। তাহার স্নান, আহার প্রভৃতির বিষয়েও যথাবিধি যতœ লওয়া হইত না। একেই ত বেহারী লোকেরা সহজে স্নান করিতে চায় না, তাহাতে আবার “মাইয়াখানা”র বন্দিনী মেয়েকে কে ঘন ঘন স্নান করাইবে? ঐ সময় মেয়ে মাটিতে পা রাখে না-প্রয়োজনমত তাহাকে কোলে করিয়া স্নানাগারে লইয়া যাওয়া হয়। তাহার নড়াচড়া সম্পূর্ণ নিষেধ। সমস্ত দিন মাথা গুঁজিয়া একটা খাটিয়ার উপর বসিয়া থাকিতে হয়; রাত্রিকালে সেইখানেই শুইতে হয়। অপরে মুখে তুলিয়া ভাতের গ্রাস খাওয়ায়, অপরে “আবখোয়া” ধরিয়া পানি খাওয়াইয়া দেয়। মাথার চুলে জটা হয়, হউক-সে নিজে মাথা আঁচড়াইতে পাইবে না-ফল কথা, প্রত্যেক বিষয়ের জন্য তাহাকে পরের মুখাপেক্ষী হইয়া থাকিতে হয়। যাহা হউক, ছয় মাস অন্তর সেই মেয়েটীর বিবাহ হইলে দেখা গেল, সর্ব্বদা চক্ষু বুজিয়া থাকার ফলে তাহার চক্ষু দুইটী চিরতরে নষ্ট হইয়া গিয়াছে। [ ২৮ ] বহুকালের ঘটনা। বহু পুণ্যফলে আরবদেশীয় কোন মহিলা কলিকাতায় তশরীফ আনিয়াছেন। তিনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা উর্দ্দু বলিতে শিখিয়াছিলেন। যখন দলে দলে বিবিরা পাল্কীযোগে তাঁহার জেয়ারত করিতে আসিতেন, তিনি পাল্কী দেখিয়া হয়রাণ হইতেন যে এ “আজাব” কেন? একদিন পূর্ব্ববঙ্গের এক বিবি আসিয়াছিলেন। আরবীয়া মহিলা কুশল প্রশ্ন প্রসঙ্গে আগন্তুক বিবির স্বামীর কুশল জিজ্ঞাসা করিলে উত্তর দান কালে বাঙ্গাল বিবি মাথার ঘোমটা টানেন আর বলেন, “তানি ত বালই আছেন, তানার আবার কি অনব? তানি ত বালই আছেন।” বেচারী আরবীয়া বিবি বুঝিতেই পারিলেন না যে, স্বামীর কুশল বলিবার সময় ঘোমটা টানার প্রয়োজন হইল কেন? আরবীয়া বিবি বাঙ্গালায় বিবিদের পাল্কীতে উঠা ব্যাপারটা কৌতুকের সহিত দাঁড়াইয়া দেখিতেন। একদিন এক বোরকা পরিহিতা বিবি পাল্কীতে উঠিলেন, তাঁহার কোলে দুই বৎসরের শিশু, সঙ্গে পানদান, একটা বড় কাঠের বা, একটা কাপড়ের গাঁটরী এবং এক কূজা পানি। পাল্কীটার বেতের ছাউনি ভাঙ্গা ছিল, তাহা পূর্ব্বে কেহ লক্ষ্য করে নাই পাল্কীর দুই পার্শ্বে তুলিল, অমনি মড়মড় করিয়া পাল্কীর বেত্রাসন ভাঙ্গিতে লাগিল। পাল্কীর দুই পার্শ্বে দুই বরকন্দাজ চলিয়াছে-তাঁহারা শিশুটিকে সম্বোধন করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “সাহেবজাদা মড়মড় শব্দ করে কি?” কিন্তু পাল্কী হইতে কোন উত্তর আসিল না;- একটু পরে গেট পার হইয়া পাল্কীটা অত্যন্ত হালকা বোধ হওয়ায় বেহারাগণ থমকিয়া দাঁড়াইল। ওদিকে ভাঙ্গা পাল্কী গলাইয়া বোরকা পরা বিবি ছেলেকে আঁকড়িয়া ধরিয়া মাটীতে বসিয়া পড়িয়াছেন; গাঁটরী, পানদান সব ইতস্ততঃ বিপ্তি। কূজা ভাঙ্গিয়া পানি পড়িয়া তিনি ভিজিয়া গিয়াছেন,-কিন্তু তবু মুখে বলেন নাই-“পাল্কী থামাও!” কলিকাতার রাস্তায় এই ব্যাপার!-বেচারী আরবের বিবি তাড়াতাড়ি চাকরাণী পাঠাইয়া বিবিটীকে আনাইয়া বলিলেন, “বিবি, পাল্কীর এমন তামাসা দেখিবার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না!” [ ২৯ ] একবার আমি কোন একটী লেডীজ কনফারেন্স উপলক্ষে আলীগড়ে গিয়াছিলাম। সেখানে অভ্যাগতা মহিলাদের নানাবিধ বোরকা দেখিলাম। একজনের বোরকা কিছু অদ্ভুত ধরণের ছিল। তাঁহার সহিত আলাপ পরিচয়ের পর তাঁহার বোরকা প্রশংসা করায় তিনি বলিলেন,-“আর বলিবেন না,-এই বোরকা লইয়া আমার যত লাঞ্ছনা হইয়াছে!” পরে তিনি সেই সব লাঞ্ছনার বিষয় যাহা বলিলেন, তাহা এইঃ তিনি কোন বাঙ্গালী ভদ্রলোকের বাড়ী শাদীর নিমন্ত্রণে গিয়াছিলেন। তাঁহাকে (বোরকা সহ) দেখিবামাত্র সেখানকার ছেলে-মেয়েরা ভয়ে চীৎকার করিয়া কে কোথায় পলাইবে, তাহার ঠিক নাই। আরও কয়েক ঘর বাঙ্গালী ভদ্রলোকের সহিত তাঁহার স্বামীর আলাপ ছিল, তাই তাঁহার সকলেল বাড়ীই যাইতে হইত। কিন্তু যতবার যে বাড়ী গিয়াছেন, ততবারই ছেলেদের সভয় চীৎকার ও কোলাহল সৃষ্টি করিয়াছেন। ছেলেরা ভয়ে থরথর কাঁপিত। তিনি একবার কলিকাতায় আসিয়াছিলেন। তাঁহারা চারি পাঁচ জনে বোরকাসহ খোলা মোটরে বাহির হইলে পথের ছেলেরা বলিত, “ওমা! ওগুলো কি গো?” একে অপরকে বলে “চুপ কর!-এই রাত্রিকালে ওগুলো ভূত না হয়ে যায় না।” বাতাসে বোরকার নেকার একটু আধটু উড়িতে দেখিলে বলিত-“দেখবে দেখ। ভূতগুলো শুঁড় নড়ে-! বাবারে! পালা রে!” তিনি এক সময় দার্জ্জীলিং গিয়াছিলেন। ঘুম ষ্টেশনে পৌঁছিলে দেখিলেন, সমবেত জনমণ্ডলী একটা বামন লোককে দেখিতেছে-বামনটা উচ্চতায় একটা ৭/৮ বৎসরের বালকের সমান, কিন্তু মুখটা বয়োপ্রাপ্ত যুবকের,-মুখভরা দাড়ী গোঁফ। হঠাৎ তিনি দেখিলেন, জনমণ্ডলীর কৌতূকপূর্ণ দৃষ্টি তাঁহার দিকে! দর্শকেরা সে বামন ছাড়িয়া এই বোরকাধারিণীকে দেখিতে লাগিল! অতঃপর দার্জ্জিলিং পৌঁছিয়া তাঁহারা আহারান্তে বেড়াইতে বাহির হইলেন; অর্থাৎ রিকশ গাড়ীতে করিয়া যাইতেছিলেন। “মেলে” গিয়া দেখিলেন, অনেক লোকের ভীড়; সেদিন তিব্বত হইতে সেনা ফিরিয়া আসিতেছিল, সেই দৃশ্য দেখিবার জন্য ভীড়। তাঁহার রিকশখানি পথের একধারে রাঁখিয়া তাঁহার কুলিরাও গেল,-তামাসা দেখিতে। কিয়ৎক্ষণ পরে তিনি দেখেন, দর্শকেরা সকলেই এক একবার রিকশর ভিতর উঁকি মারিয়া তাঁহাকে দেখিয়া যাইতেছে। তিনি পদব্রজে বেড়াইতে বাহির হইলে পথের কুকুরগুলো ঘেউঘেউ করিয়া তাঁহাকে আক্রমণ করিতে আসিত। দুই একটা পার্ব্বত্য ঘোড়া তাঁহাকে দেখিয়া ভয়ে সওয়ার শুদ্ধ লাফালাফি আরম্ভ করিত। একবার চায়ের বাগানে বেড়াইতে গিয়া দেখেন, তিনি চারি বৎসরের এক বালিকা মস্ত ঢিল তুলিয়াছে, তাঁহাকে মারিতে!* একবার তাঁহার পরিচিতা আরও চারি পাঁচজন বিবির সহিত বেড়াইবার সময় একটা ক্ষুদ্র ঝরণার ধারে কঙ্করবিশিষ্ট কাদায় সকলেই বোরকায় জড়াইয়া পড়িয়া গেলেন। নিকটবর্ত্তী চা বাগান হইতে কুলিরা দৌড়িয়া আসিয়া তাঁহাদের তুলিল; আর স্নেহপূর্ণ ভৎর্সনায় বলিল, “একে ত জুত্তা পরেছ, তার উপর আবার ঘেরাটোপ,-এ অবস্থায় তোমরা গড়াইবে না ত কি করিবে?” আহা! বিবিদের কারচুপি কাজ করা দো-পাট্রা কাদায় লতড়-পতড়, আর বোরকা ভিজিয়া তর-বতর! কেবল ইহাই নহে, পথের লোক রোরুদ্যমান শিশুকে চুপ করাইবার নিমিত্ত তাঁহাদের দিকে অঙ্গুলী নির্দ্দেশ করিয়া বলিত,-“চুপ কর, ঐ দেখ মক্কা মদিনা যায়,-ঐ!”-ঘেরাটোপ জড়ানো জুজুবুড়ী,-ওরাই মক্কা মদিনা!!” * বাঙ্গালী ও গুর্খায় প্রভেদ দেখুন; যৎকালে বাঙ্গালী ছেলেরা ভয়ে চীৎকার করিয়া দৌড়াদৌড়ি করিয়া পলাইত, সে সময় গুর্খাশিশু আত্মরক্ষার জন্য ঢিল তুলিয়াছে সে ভয়াবহ বস্তুকে মারিতে! [ ৩০ ] কোন একটী কুলে শীলে ধন্য সৎ পাত্রের সহিত এক জমীদারের বয়োপ্রাপ্তা কন্যার বিবাহ ঠিক হইয়াছিল। কি কারণে বরের পিতার সহিত কন্যাকর্ত্তার ঝগড়া হওয়ায় বিবাহের সম্বন্ধ ভাঙ্গিয়া গেল। ইহাতে পাত্রী যাহার পর নাই দুঃখিতা হইল। কন্যার পিতা তাড়াতাড়ি অন্য বর না পাইয়া নিজের এক দুরাচার ভ্রাতুস্পুত্রের সহিত কন্যার বিবাহ দিতে বসিলেন। সে বেচারী তাহার খুড়তাতো ভাইয়ের কুকীর্ত্তির বিষয় সমস্তই অবগত ছিল,-কত দিন সে নিজেই ঐ মাতালটাকে তেঁতুলের শরবত খাওয়াইয়া এবং মাথায় জল ঢালিয়া তাহার মাতলামী দূর করিতে চেষ্টা করিয়াছে। সুতরাং এ বিবাহে তাহার ঘোর আপত্তি ছিল। কিন্তু পাত্রী ত মূক,-তাহার বাকশক্তি থাকিয়াও নাই। তাহার একমাত্র সম্বল নীরব রোদন। তাই সে কেবল কাঁদিয়া চক্ষু ফুলাইয়াছে, আহার নিদ্রা ত্যাগ করিয়াছে। কিন্তু নিষ্ঠুর পিতামাতার ভ্রক্ষেপ নাই,-তাঁহারা ঐ মাতালের সহিত তাহার বিবাহ দিবেনই দিবেন। এইরূপেই আমাদের কাঠমোল্লা মুরুব্বিগণ শরিয়তের গলা টিপিয়া মারিয়া ইসলাম ও শরিয়ত রক্ষা করিতেছে। বিবাহ-সভায় বসিয়া পাত্রী কিছুতেই “হুঁ” বলিতেছিল না। মাতা, পিতামহী প্রভৃতির অনুনয়, সাধ্য-সাধনা, মিষ্ট র্ভৎসনা,-সবই সে দুই চরে জলে ভাসাইয়া দিতেছিল। অবশেষে একজনে অতর্কিতে কন্যাকে খুব জোরে চিমটি কাটিল; সেই আঘাতে সহসা “উহু-!” বলিয়া সে কাতর ধ্বনি করিয়া উঠিল। সেই “উহু” কে “হুঁ” বলিয়া ধরিয়া লইয়া তাহার বিবাহ ক্রিয়া সমাপ্ত হইল। সোবহান আল্লাহ্! জয়, অবরোধের জয়! ক্রমশ ... সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৮:১৮
false
fe
লন্ডন-নিউইয়র্কে রমরমা যাদু টোনা ব্যবসা লন্ডন-নিউইয়র্কে রমরমা যাদু-টোনা ব্যবসা ফকির ইলিয়াস ========================================= বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় বাউল শিল্পী ক্বারী আমিরুদ্দীন আহমদের লেখা একটি গান আছে-‘জানলে তোমরা বলে দাও গো করে দেখি কিয়া-কন্নি.../ যাদু-টোনা কেউ জানোনি...’। এই বাউল কবি যাদু-টোনা বা বশীকরণের মাধ্যমে তার প্রিয় বন্ধুর সান্নিধ্য পেতে চেয়েছেন। জুয়েল আইচ। বাংলাদেশের খ্যাতিমান যাদুশিল্পী। যার খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তিনি যাদুকে ম্যাজিক বলেই আখ্যায়িত করতে ভালোবাসেন। এটাকে তিনি শিল্পমাধ্যম বলেই প্রচার করেন। এর বেশি কিছু নয়। উপমহাদেশে যাদু-টোনা বা বশীকরণ একটি সম্মোহন শক্তি বলে বিশেষভাবে পরিচিত। ‘কামরূপ কামাক্ষা’র দক্ষ যাদুবিদদের কর্মশক্তির কথা বাংলার আনাচে-কানাচে শোনা যায়। এই যাদুবিদ্যার নানা ধরন আছে। মন্ত্র, পানি পড়া, তাবিজ, কবজ থেকে শুরু করে অষ্টধাতুর আংটি, ষোলরতির মালা কিংবা বিশেষ ধরনের কোন তৈল পর্যন্ত। বাংলাদেশে এ ধরনের বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন সাধক, গুরুজীদের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। সংকট মোচনের এই ব্যবসা এখন ত্বরিত গতিতে প্রসারিত হতে শুরু করেছে ইউরোপ-আমেরিকায়ও। বিশেষ করে বাঙালি অধ্যুষিত যুক্তরাজ্যের লন্ডন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এরকম বিশেষ ‘আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্নরা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার পাউন্ড-ডলার। একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই। ১৯৯৭ সালের কথা। লন্ডনে বেড়াতে গিয়েছি। আমার লন্ডন যাওয়ার সংবাদ বন্ধু সাংবাদিকদের কৃপায় স্থানীয় বাংলা পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়ে গিয়েছিল লন্ডনে আমার ফোন নম্বরসহ। এক দুপুরে হঠাৎ এক মধ্যবয়সী মহিলার ফোনে আমি চমকে উঠলাম। অপরিচিত কণ্ঠ শুধুমাত্র হ্যালো-শব্দটি বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তারপর আমি কিছু জানতে চাওয়ার আগেই বলতে শুরু করলেন তার বেদনার কাহিনী। তার কাহিনীর সারাংশটি হচ্ছে, মহিলার একমাত্র ব্রিটিশ সিটিজেন মেয়েটিকে বিয়ে করিয়ে বাংলাদেশ থেকে একজন পাত্রকে লন্ডনে এনেছিলেন। ছেলেটি এখন লন্ডনে তার স্থায়ীভাবে থাকার কাগজপত্র পেয়ে গেছে। কিন্তু মেয়েটির সঙ্গে তার চলছে চরম দাম্পত্যকলহ। মেয়েটির মা অর্থাৎ ওই মহিলা আমাকে এ কথাটিই অনুরোধ করতে চাইলেন আমি যেন তাদের দাম্পত্য কলহটি মিটিয়ে সুখী জীবনযাপনের একটি ব্যবস্থা করে দিই। বিস্তারিত ঘটনা শুনে আমি কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়লাম। পরক্ষণে বুঝতে পারলাম আমার নামের প্রথম অংশটিই, এই ঘটনার জন্য দায়ী। অর্থাৎ মহিলা আমাকে ‘বিশেষ আধ্যাত্মিকতা’সম্পন্ন একজন মানুষ হিসেবেই ধরে নিয়েছেন আমার নামটি দেখে। তাকে বিনীতভাবে বললাম এরকম কোনো সমস্যার সমাধান দিতে আমি অপারগ। কিন্তু মহিলার কাকুতিমিনতি শুনে আমি খুব বেদনাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম নিঃসন্দেহে। এটা হয়ত ছিল আমার মানবিক অনুভূতি। মানুষের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের বাইরে এই বিদেশেও গড়ে উঠেছে একটি যাদু-টোনা ব্যবসায়ীচক্র। যাদের খপ্পরে পড়ে শুধুই আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী। নিউইয়র্কের এস্টোরিয়া এলাকার আরেকজন বাঙালি মহিলার ঘটনাবলী আরো মর্মবিদারক। তিনি আমাকে বলেছেন তার প্রতারিত হওয়ার দুঃখজনক কাহিনী। তার একটি ষোড়শী মেয়ে, যে একটি হাইস্কুলে পড়ে। ওই মেয়েটির একটি কৃষ্ণাঙ্গ বয়ফ্রেন্ড আছে। গেল দু’বছর যাবৎ মেয়েটির সম্পর্ক ছেলেটির সঙ্গে। মেয়েটি যাতে ওই কৃষ্ণাঙ্গ ছেলেটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয় তার জন্যই মেয়েটির পরিবার আশ্রয় নেয় যাদু-টোনা তত্ত্বের। ‘যাদুতত্ত্ববিদ’ যিনি নিজেকে বিশেষ আধ্যাত্মিক সাধক বলে দাবি করে থাকেন- তিনি শুরু করেন তদবীর। বিভিন্ন ধরনের তাবিজ, কবজ, তৈলমর্দন প্রভৃতি ওই মেয়েটির প্রতি প্রয়োগ করেন ওই যাদুতত্ত্ববিদ। দেড় বছর যাবত চিকিৎসা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। মেয়েটির সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। বরং যাদুতত্ত্ববিদ হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার ডলার। এ তো শুধু দু’একটি ঘটনা। লন্ডন বা নিউইয়র্কের কিছু পত্র-পত্রিকায় এসব সাধক, গুরুজীদের পূর্ণ পৃষ্ঠা-অর্ধ পৃষ্ঠা বিজ্ঞাপন পড়লে রীতিমতো শঙ্কিত হতে হয়। হেন কোনো রোগ নেই, যা তারা সারাতে পারেন না। বিয়ে, প্রেম, বিচ্ছেদ, সন্তান প্রাপ্তি থেকে শুরু করে বহুমুত্র, এইডস, হাপানির মতো জটিল রোগেরও অভিজ্ঞ চিকিৎসক তারা। ‘মুখ দেখেই মনে খবর বলে দিতে পারেন’- এমন গ্যারান্টিসহ অশ্লীল কথাবার্তা ও পরিলক্ষিত হয় এদের বিজ্ঞাপনে। ভাবতে অবাক লাগে বিজ্ঞ সম্পাদকবৃন্দ ইউরোপ আমেরিকার মতো এত সুসভ্য, অগ্রণী দেশে বসবাস করেও এসব কাল্পনিক বাণী সম্বলিত বিজ্ঞাপন তাদের সাপ্তাহিকীগুলোতে ছাপতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না। লন্ডনে এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এসব যাদুতত্ত্ববিদ কারো কারো সাপ্তাহিক আয় দশ হাজার পাউন্ডেরও বেশি। আর বর্তমান প্রজত্মের তরুণ তরুণী এবং তাদের মা-বাবার পকেটের অর্থই তাদের আয়ের মূল উৎস। এদের আবার কিছু ‘রক্ষিত’ও রয়েছে। যারা ‘অমুক সাধকজীর কাছ থেকে আমি উপকার পেয়েছি বলে পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এসব ভুয়া বিজ্ঞাপন আরো অনেককেই আকৃষ্ট করে নিয়ে যাচ্ছে ওসব যাদু ব্যবসায়ীদের কাছে। মানুষ যখন জটিল সমস্যাক্রান্ত হয়, তখন তা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পথ খুঁজে। এসব দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এবং বিদেশের বাংলা পত্র-পত্রিকাগুলোতে প্রচার পাওয়ার সুযোগে ব্যাঙের ছাতার মতো এসব সাধকেরা বেড়ে উঠছে এই দূর বিদেশে। অবৈজ্ঞানিক এবং কাল্পনিক মাধ্যমে এরা স্বঘোষিত ‘সাধক সম্রাট’ সেজে প্রতারণা করছে হাজারো প্রবাসীদের সঙ্গে। এদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। বিদেশের বাঙালি প্রজন্মকে এ বিষয়টি বোঝা উচিত, যাদু-টোনা করে কারো হদয়ের প্রেম পাওয়া যায় না। আর এসব কাল্পনিক তত্ত্ব, কোনো সমস্যার সমাধানও দিতে পারে না। তা ছাড়া লন্ডন-নিউইয়র্কে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে যারা এ ধরনের ব্যবসা করছে- তাদের এমন ব্যবসার আইনগত বৈধতা আছে কি না তাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গোচরে আনা যেতে পারে। ----------------------------------------------------------------- দৈনিক ডেসটিনি।ঢাকা। ২৫ এপ্রিল ২০০৯ রোববার প্রকাশিত ছবি - স্টেলু টংকস সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫৪
false
ij
Gnostic সংঘের ইতিবৃত্ত সময়টা খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকের মাঝামাঝি। যিশু সদ্য ক্রশবিদ্ধ হয়েছেন। ফিলিস্তিনের যিশুভক্তেরা যিশুর বাণী আঁকড়ে ধরে ক্রদ্ধ রোমান শাসকদের কোপদৃষ্টি এড়িয়ে চলছে; সাধু পল (৩-৬২ খ্রিস্টাব্দ) খ্রিস্টীয় মতবাদের নতুন ব্যাখ্যা করছেন-যে ব্যাখ্যা পরবর্তী শতকে খ্রিস্টধর্ম নামে পরিচিত হয়ে উঠবে। এ রকম একটা সময়ে মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের একটি বিশেষ সাধু সম্প্রদায় এই দাবী করে বসল যে; “যিশু যা বলতে চেয়েছেন তা কেবল তারাই বুঝতে পেরেছে, অন্যরা কেউ যিশুর বাণীর মর্মার্থ উপলব্দি করতে ব্যর্থ হয়েছে।” পরবর্তীকালে খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসে এরাই নোসটিক ( Gnostic) নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। খ্রিষ্টীয় যাজকগন অবশ্য এদের বলল: উৎপথগামী বা খারেজি। তা সত্ত্বেও খ্রিস্টীয় প্রথম শতক আর ২য় শতকে Gnosticism বা জ্ঞানবাদী মরমীবাদের বিকাশ অব্যাহত থাকে। তবে পরবর্তী ১৮০০ বছর নোসটিকদের সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা যায়নি। ১৯৪৫ সালে মিশরের নাগ হামাদিতে প্রাপ্ত ‘কৌডিসীজ’ বা প্রাচীন গ্রন্থাদির পান্ডুলিপি আবিস্কারের ফলে জানা যায় যে- খ্রিষ্টীয় প্রথম ও দ্বিতীয় শতকের একটি আধ্যাত্মিক গোষ্ঠী জ্ঞানবাদী (নোসটিক) মরমী দর্শন প্রচার করেছিল যে মরমীদর্শনের বৈশিষ্ট্যে ছিল বিস্ময়করভাবে স্বতন্ত্র। মিশরের নাগ হামাদিতে প্রাপ্ত ‘কৌডিসীজ’ বা প্রাচীন গ্রন্থাদির পান্ডুলিপি; দ্য বুক অভ টমাস, দ্য গসপেল অ্যাকডিং টু ম্যারি মাগদেলেন , দ্য হাইপোসটাসিস অভ দি আরক্রোনস, থান্ডার, পারফেক্ট মাইন্ড। এসব গ্রন্থকে ডেডে সি স্ক্রোলও বলে। নোসটিক মরমী দর্শনের ভিত্তি ছিল মূলত গ্রিক ধ্যানধারণা; অবশ্য এর সঙ্গে পারস্য ও প্যাগান (পৌত্তলিক) চিন্তাচেতনার মিশ্রণ ঘটেঠে। নোসটিক মরমী দর্শনের ভারতীয় দর্শনের কিছু সিদ্ধান্ত খুঁজে পাওয়া যায়। তার কারণ আছে। নোসটিক ভাবনার সূত্রপাত হেলেনসম্ভূত (হেলেনিস্টিক এজ ) কালে। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ থেকে প্রথম অবধি সময়কাল হেলেনিস্টিক এজ নামে পরিচিত। সম্রাট আলেকজান্দারের পারস্য জয় দিয়ে যে সময়কালের শুরু এবং রোমান সভ্যতার গ্রিকরাজ্যসমূহ দখলের মাধ্যমে যে সময়কালের সমাপ্তি। এই সময়কালে প্রাচ্যসংস্কৃতির সঙ্গে পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন ঘটেছিল; এবং প্রাচ্যও পাশ্চাত্যের ধ্যানধারণা লাভ করেছিল। এশিয়া মাইনরের (বর্তমান তুরস্ক) পারগামাম, মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া প্রভৃতি হেলেনিস্টিক নগরগুলির শিক্ষিত মহলে ভারতীয় দর্শনের চর্চা হত। খ্রিস্টীয় ২য় শতকের নোসটিক মরমী দর্শনের একজন প্রবত্তা ভালেনটিনাস জন্মেছিলেন মিশরে এবং পড়ালেখা করেছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ায়। নোসটিক ধর্মতাত্ত্বিক ভালেনটিনাস (১০০-১৬০ খ্রিস্টাব্দ) বিখ্যাত হয়েছিলেন। রোমে তাঁর আখড়া গড়েছিলেন। এ লেখায় যাযা বলা হবে তার অধিকাংশই ভালেনটিনাস এর মতবাদ। যেমন, খ্রিস্টানরা যে ঈশ্বর মানে সে আসলে হীন বা Demiurge ...কারণ সে ঈশ্বরও সৃষ্ট; তাকে সৃষ্টি করেছেন পরমপুরুষ, যাকে জানা যায় না তবে তার ভিতরে লীন হওয়া যায়। বলছিলাম। নোসটিক ভাবনার সূত্রপাত হেলেনসম্ভূত (হেলেনিস্টিক এজ ) কালে। যে কালে প্রাচ্যসংস্কৃতির সঙ্গে পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন ঘটেছিল। কাজেই, বৌদ্ধধর্মের মতো নোসটিক মতবাদের মূলেও রয়েছে অভিন্ন ধারণা। জগৎ দুঃখময়। নোসটিক ধর্মতাত্ত্বিক ভালেনটিনাস মনে করতেন সর্বগ্রাসী জীবন নিজেকে পুষ্ট করতে একে অন্যকে গ্রাস করে -এভাবে একে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয় মৃত্যু ও ধ্বংসের বিভীষিকা। এমন কী তৃণভোজী পশুও উদ্ভিদের প্রাণ নাশ করে। এর ওপর রয়েছে প্রাকৃতিক ধ্বংসলীলা। ঝড়জল, ভূমিকম্প, অনাবৃষ্টি। মানুষ এসব ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্বন্ধে সচেতন। জগতে তার নিজেকে আগন্তক মনে হয়। নসটিকরা নিছক বাহ্যিক ধর্মাচরণের তুলনায় gnosis এর ওপর গুরুত্ব দেয়।বলছিলম। নোসটিক মরমী দর্শনের ভিত্তি ছিল মূলত গ্রিক ধ্যানধারণা । নোসিস অর্থ: “জ্ঞানের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা।” (দ্র. ইনস্টিটিউ ফর নোসটিক স্টাডিজ: প্রণীত দি নোসটিক হ্যান্ডবুক। পৃষ্ঠা; ৫) ঈশ্বরের নির্যাস বা ঈশ্বরের প্রকৃতসরূপের অভিজ্ঞতাই নোসটিসিজম। ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ অর্ন্তগত জ্ঞানই নোসিস। নোসটিক শব্দটি গ্রিক । এর অর্থ জানা বা ‘টু নো।’ দু’ধরনের জ্ঞানের কথা বলতেন গ্রিকরা। (১) প্রত্যক্ষ জ্ঞান। (২) পরোক্ষ জ্ঞান। পরোক্ষ জ্ঞানের উদাহরণ হল: তাজমহল ভারতের অপূর্ব কীর্তি। আর, প্রত্যক্ষ জ্ঞানের উদাহরণ হল: গত মাসে তাজমহল দেখে এলাম। এই প্রত্যক্ষ জ্ঞান হল নোসিস-এর বৈশিষ্ট্য ।সুইস মনোবিদ কার্ল গুস্তাফ ইয়ূং (১৮৭৫/১৯৬১)। ইনি নিজেকে নোসটিক ভাবতেন। তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- আপনি এখনও ঈশ্বর বিশ্বাস করেন কিনা। উত্তরে ইয়ূং বলেছিলেন,...‘আই কুড নট সে আই বিলিভ। আই নো।’ ইয়ূং এরকম বলেছিলেন। কেননা, প্রত্যক্ষ জ্ঞান হল নোসিস-এর বৈশিষ্ট্য ।এবার নোসটিক মতবাদের উদ্ভবের কারণ ব্যাখ্যা করা যাক। ১১০০ খ্রিস্টপূর্বে জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে প্রাচীন ফিলিস্তিনে হিব্রুভাষীদের রাজ্যটি গড়ে উঠেছিল। কালক্রমে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে রাজ্যটির দক্ষিণ ভাগ জুদাহ নামে পরিচিত হয়। (পারসিকরা জুদাহ রাজ্যকে ইহুদা বলত বলেই জুদাহবাসীরা পরবর্তীকালে ইহুদি বলে চিহ্নিত হয়।) খ্রিষ্টের জন্মের দুই শতাব্দী পূর্বে জুদাহ ছিল উপ্তত্ত। ইহুদিবাদ বা জুদাইজম বিবর্তিত হচ্ছিল। রাজনৈতিক অস্থিরতা। তার আগে ব্যবিলনের সম্রাট ২য় নেবুচাদনজর (খ্রিস্টপূর্ব ৬০৫ থেকে ৫৬২) জুদাহ আক্রমন করে ধ্বংস করেন ও বহু সংখ্যক জুদাহবাসীকে বন্দি করে নিয়ে যায় ব্যাবিলন। এই করুণ অধ্যায়টি ইহুদিদের ইতিহাসে ‘ব্যাবিলনিয় ক্যাপটিভিটি’ নামে পরিচিত। পারসিক সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট (৬০০-৫৩০ খ্রিস্টপূর্ব) উদারতায় খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ট শতকের শেষে ব্যাবিলন থেকে নির্বাসিত ইহুদিরা জুদায় ফিরে আসে। আগে থেকেই যারা জুদাহ প্রদেশে ছিল তাদের সঙ্গে নির্বাসিত ইহুদিদের মতপার্থক্য দেখা দেয়। নির্বাসিত ইহুদিরা দাবী করল তারা ঈশ্বরের প্রকৃত সন্তান, তারা তোরায় (ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রথম ৫ অধ্যায়) বিশ্বাস রেখে নির্বাসিত জীবনের শাস্তি ভোগ করেছে। যারা থেকে গেছে তারা কোলাবোরেটর! ওই সময়ে গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডারের সেনাপতি সেলুকাসের বংশধর সেলুসিডরা জুদাহ শাসন করত। ইহুদিরা বিদ্রোহ করে সেলুসিডদের পরাস্ত করে। এই ঘটনার পর জেরুজালেমের প্রধান উপাসনলয়ের দায়িত্ব গ্রহন করে নির্বাসিতরা।এরা ছিল কট্টরপন্থিরা। পরবর্তীকালে দেখা গেল, এদেরই বংশধরেরা ইহুদি মূলস্রোতে গা না ভাসিয়ে স্বতন্ত্র জীবনযাপন করতে লাগল। এরা অত্যন্ত সংযমী ও মহাপ্রলয়ের ভবিষ্যৎবানীতে বিশ্বাস করত। সম্প্রদায়টি ডেড সি-র কাছে কামরান গুহার কাছে ধ্যান করতে লাগল। এরাই পরবর্তীকালে এসেনেস নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। এদের নাজারেথও বলা হত। প্রাচীন ফিলিস্তিনের মানচিত্র। লোহিত সাগর। এককালে এখানেই উদ্ভব হয়েছিল ফিলিস্তিনের ক্ষুদ্র উপগোষ্ঠী এসেনেসদের যারা ঈশ্বরের সঙ্গে আধ্যাত্মিক সম্পর্কের কথা কল্পনা করেছিল। এরা বিশ্বাস করত-পুরাতন সংহিতা (কভনেন্ট) লঙ্ঘন করে ইসরাইল পাপ করেছে। প্রাচীন ফিলিস্তিনের মানচিত্র। লোহিত সাগর ও কামরান গুহা। কামরান-সম্প্রদায় দুভাগে বিভক্ত ছিল। (ক) একদল কামরানে বাস করে প্রার্থনায় মগ্ন থাকত ও কৌমার্যব্রত পালন করত (খ) অন্য দলটি শহরে বাস করত। তারা বিবাহ করত এবং ব্যবসাবানিজ্য করত। কারও কারও মতে সেন্ট জন ও যিশু ডেড সি কমিউনিটির সদস্য ছিলেন কিংবা তাদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।কামরান গুহার প্রবেশ পথ । এখানেই খ্রিস্টীয় ২য় শতকের এক নোসটিক মরমীবাদী গেয়েছিলেন; As the breath of the wind sweeps through the harp and the chords sing, / So the breath of the Lord's spirit sweeps through my members, and I sing in his love.আর, বাংলার লালন গেয়েছেন: গুরু তুমি তন্ত্রের তন্ত্রীগুরু তুমি মন্ত্রের মন্ত্রীগুরু তুমি যন্ত্রের যন্ত্রীনা বাজাও বাজবে কেনে।মানচিত্রে প্রাচীন ফিলিস্তিনআমি আগেই একবার বলেছি যে মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের একটি বিশেষ সাধু সম্প্রদায়েরএই দাবী করে বসল যে; “যিশু যা বলতে চেয়েছেন তা কেবল তারাই বুঝতে পেরেছে, অন্যরা কেউ যিশুর বাণীর মর্মার্থ উপলব্দি করতে ব্যর্থ হয়েছে।” এর কারণ? নোসটিকদের ছিল নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। সত্য এদের কাছে বুদ্ধিবৃত্তিক নয়; অধ্যাত্মবাদের নিষ্ক্রিয় উপলব্ধিও নয় বরং প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, যে প্রত্যক্ষলব্ধ জ্ঞান মানুষকে জাগতিক বন্ধন থেকে মুক্তির পথ দেখায়। নোসটিকরা মনে করত যে, আত্মার উৎস স্বর্গীয় এবং আত্মা শুভ ও মঙ্গলময়; শরীর মূলগতভাবেই জাগতিক ও অশুভ। নোসটিকরা জগৎসংসার, বস্তু ও শরীরের প্রতি বিরূপ তবে মনে করত যে মানবশরীরে আছে স্বর্গীয় বীজ; মানবদেহই অসীমের গূঢ় ইঙ্গিত। গূহ্যজ্ঞান চর্চা করে অধ্যাত্মিক নির্যাস লাভ করলে শরীরের মাঝে ঝলসে উঠতে পারে স্বর্গীয় স্ফুলিঙ্গ। তা হলেই জীবনমৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। মৃত্যুর পর আত্মা পরমপুরুষের সঙ্গে মিলিত হবে। নোসটিকরা মনে করত, মানবজাতির ৩ ভাগে বিভক্ত। ১. আধ্যাত্মিক। জগতে এরা যাই করুক না কেন - মুক্তি এরা পাবেই। ২. আত্মময়: এরা নোসটিক পথ অবলম্বন করলেই তবে মুক্তি পাবে। ৩.ভোগী। এদের মুক্তির আশা নাই! (নোসটিকরা এরকম ভাবল কেন-তা বোঝা গেল না। মানবজাতি এরকম তিন ভাগে ভাগ করাটা কেমন বিসদৃশ আর নিয়তবাদী মনে হল।)নোসটিকদের চিন্তাধারা নিয়ে বর্তমান সময়েও লেখা হচ্ছে প্রচুর গবেষনাধর্মী বই-পুস্তক।অশুভ সম্বন্ধে নোসটিকদের ধারণা চমকপ্রদ। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে আদিতে জগৎ পরিপূর্ণ ভাবে সৃষ্টি হলেও আদম-হাওয়ার জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাওয়ার পর পৃথিবী পাপে পূর্ণ হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে নোসটিকরা মনে করে জগৎ সৃষ্টি করেছে নিকৃষ্ট ঈশ্বর বা ডেমিআর্জ। এ কারণেই জগৎ অশুভ। নোসটিকদের মকে ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের ঈশ্বর ডেমিআর্জ, কারণ, সে ঈশ্বরেরও সৃষ্টিকর্তা আছে। যাকে নোসটিকরা বলে সুপ্রিম গড বা পরমপুরুষ। ঈশ্বরের নির্যাস বা প্রকৃতসরূপের অভিজ্ঞতাই নোসটিক সংঘের মূল বিবেচ্য বলেই বাধাধরা ধর্মীয় কৃত্যাদির গুরুত্ব নোসটিক সংঘে কম। আসলে এটি এক ধরনের ফর্ম অভ পারসেপশন। নোসটিক বলতে প্রজ্ঞা বোঝালেও কখনোই গ্রন্থগত জ্ঞান বোঝায় না। ঈশ্বরের নির্যাস বা প্রকৃতসরূপের অভিজ্ঞতাই নোসটিক দর্শনের মূল, এখানে বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষন অনুপস্থিত। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মানে-ঈশ্বরের মুখোমুখি হওয়া। নোসটিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দ্বৈতবাদ ছিল। জগৎ হল স্বর্গ-নরকের রণক্ষেত্র। মানুষ ঐ যুদ্ধের ক্ষুদ্ররুপ। ‘দ্য স্পিরিটস অভ ট্রুথ অ্যান্ড ফলসিহুড স্ট্রাগল উইদিন দ্য হিউম্যান হার্ট।’ They also insisted that what mattered was not one’s ethnic origin – be it Jewish or Gentile – but one’s morality: only the pure of heart would be saved. (Sean Martin ; The Gnostics : The First Christian Heretics. pp.23) নোসটিকদের অধিবিদ্যা মূলত দ্বৈতবাদী; মহাবিশ্বের সর্বত্র দুর্জ্ঞেয় ও অলীক অধ্যাত্মচেতনাবিশিষ্ট বাস্তবতা বিরজমান; নোসটিকরা একে বলে Pleroma ; বা পূর্ণতা। নোসটিকদের প্রকৃতি সংক্রান্ত ধারণাও অত্যন্ত জটিল। কেননা নোসটিক সৃষ্টিতত্ত্বে রয়েছে বিভিন্ন স্বর্গীয় সত্তার উম্মোচন ও প্রবাহ। Aeons হল শাশ্বত -যা সামগ্রিক ভাবে নির্মাণ করে অলীক প্লেরোমা কিংবা আলোকের রাজ্য (রেলম অভ লাইট)। প্লেরোমা কিন্তু ভারতীয় দর্শনের নির্গুণব্রহ্ম ও বৌদ্ধবাদী শূন্যতার মতো কিছু নয়; প্লেরোমা সৃস্ট হয়েছে স্বতন্ত্র অধ্যাত্মচেতনা হতে, যেমন: এওনস। এই এওনগুলি হচ্ছে উচ্চতর স্বগীয় চেতনার জাগতিক নিদর্শন । (আমার মনে হয় এই ধারণা সম্ভবত প্লেটোর দর্শনের প্রভাব ...) বিশ্ব, জীবন, মানুষ, গীর্জা - আরও অধিক আদি দুর্জ্ঞেয় নীতিমালা থেকে এসবের উদ্ভব হয়েছে! ভারতীয় অদ্বৈতবাদের ব্রহ্ম এবং এই আদি দুর্জ্ঞেয় নীতিমালা গবেষকদের কাছে অভিন্ন মনে হয়েছে। নোসটিক চার্চ। আমাদের মনে রাখতে হবে নোসটিক মতবাদ একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যায়নি; এই একুশ শতকেও টিকে রয়েছে; মানুষ চর্চা করছে। ১৯৪৫ সালে মিশরের নাগ হামাদিতে প্রাপ্ত ‘কৌডিসীজ’ বা প্রাচীন গ্রন্থাদির পান্ডুলিপি আবিস্কারের ফলে এর চর্চা সমন্বিত রুপ লাভ করেছে।নোসটিক মতবাদকে কেবল খ্রিষ্টীয় মরমীবাদ বলা যাবে না; কেননা, নোসটিকদের দলে যেমন খ্রিস্টানরা ছিল, তেমনি প্যাগান ও ইহুদিরাই ছিল । বৈশিষ্ট্যে নোসটিক মতবাদ আধ্যাত্মিক দর্শন হওয়ায় - যারা এ দর্শনে বিশ্বাস করত তারা নোসটিক সংঘে যোগদান করতে পারত। অনেক নোসটিক ছিল নিঃসঙ্গ উপাসক। এদের অনেকেই আবার খ্রিস্টান ধর্মের মূলস্রোতে মিশে গিয়েছিল। নোসটিক সংঘের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ নেই। এদের বিভিন্ন ধারা-উপধারা ছিল; একেক গোষ্ঠী ছিল একেক গ্রন্থ; সে গ্রন্থ মেয়েরাও লিখত। যেমন যিশুর অনুসারী ম্যারি মাগদেলেন। অনেক নোসটিক গোষ্ঠীতে ম্যারি মাগদেলেন-এর যিশুর পরে তার মর্যাদা ছিল। সবচে বিস্ময়কর এই-নোসটিকদের উপাস্য পরমপুরুষ এর প্রতিরুপ পুরুষের পাশাপাশি নারীও হত। নোসটিক সংঘে নারীর সমমর্যাদা ছিল। নোসটিকরা কি তান্ত্রিকও ছিল? এই প্রশ্নটি নিয়ে ভাবতে হবে। নোসটিকদের কাছে সাপ পবিত্র। কেননা, সাপ আদম-হাওয়াকে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাইয়ে ভালোমন্দ চিনতে শিখিয়েছে, তাদের পরিপূর্ন মানুষ করে তুলেছে। নোসটিকরা খ্রিস্টকে মনে করে বিচারক বা উদ্ধারকর্তা নন বরং স্বর্গীয় জ্ঞানের প্রকাশক, মুক্তিদাতা; খ্রিস্টের মিশন হল জ্ঞানের আলোক ছড়িয়ে মানবজাতিকে হীন ঈশ্বর বা ডেমিআর্জের হাত থেকে রক্ষা করা, যাতে করে মৃত্যুর পরে মানুষ তার আপন আধ্যাত্মিক ঘরে ফিরে গিয়ে তার পরমপুরুষের সঙ্গে মিলিত হতে পারে। নোসটিকদের কারও কারও মতে যিশু বিশুদ্ধ আত্মা; তিনি ভক্তের কাছে মানবদেহে দর্শন দিয়েছেন। এসব পড়তে পড়তে লালনের একটি গান মনে পড়ে যায় ...পাড়ে কে যাবি নবীর নৌকায়রুপকাঠের নৌকাখানি নাই ডুবার ভয় ... এ কালের শিল্পীর আঁকা যিশু খ্রিস্ট। কী এক রহস্যে আবৃত খ্রিস্টের সংক্ষিপ্ত মরমী জীবন। তাঁর জন্মের ২০০০ বছর কেটে গেছে, রহস্যের জট খোলা গেল না। কে পরিপূর্ণ ভাবে যিশুকে ব্যাখ্যা করতে পারে?
false
rn
পেটের চর্বি কমানোর পাঁচটি ব্যায়াম ১. চিত হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ুন, হাত দুটো শরীর বরাবর পাশে মাটিতে থাকবে, হাটু দুটো ভাজ করে পিরামিড আকৃতিতে দাড় করিয়ে রাখুন। শ্বাস নিতে নিতে আপনার থুতনি বুকের সাথে লাগান। এবার মাথা, ঘাড় ও কাধ মাটি থেকে আলগা করুন এবং শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে শরীরের দুই পাশে রাখা হাত দুটো ভাজ করে দাড় করিয়ে রাখা হাটুর দিকে আস্তে আস্তে আগাতে থাকুন। যতটুকু পাড়েন এগিয়ে এক সেকেন্ড বিরতি নিন। এবার শ্বাস নিতে নিতে আবার আগের পজিশনে শুয়ে পড়ুন। শুয়ে শ্বাস ছেড়ে দিন। এভাবে একই ব্যায়াম ৮ বার করুন। ২. চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটো সোজা কানের দুই পাশ ঘেসে মাথার উপরে মাটিতে শোয়ানো থাকবে, পা মাটিতে শোয়ানো থাকবে। শ্বাস নিতে নিতে উঠে বসুন (উঠার সময় কনুই দিয়ে মাটিতে ভর দিবেন না, হাত কানের পাশ দিয়ে মাথার উপর উঠানো থাকবে) এবং দুই হাত একসাথে মাথার উপর থেকে নামিয়ে শরীরের দুই পাশ দিয়ে সামনে হাত বাড়ানো অবস্থায় বসুন। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পায়ের আঙ্গুল ছুতে চেষ্টা করুন। যতটুকু পারুন পায়ের আঙ্গুলের দিকে আগান (প্রথম প্রথম পেটের মেদের কারণে আঙ্গুল ছুতে পারবেন না, মেদ কমে গেলে এরপর পারবেন), এরপর থেমে শ্বাস নিতে নিতে আবার শরীর ঝুকানো অবস্থা থেকে সোজা বসে থাকা অবস্থায় ফিরে যান। এরপর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আগের মত করে শুয়ে পড়ুন। এভাবে ১০ বার করুন। ৩. চিত হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ুন, হাত দুটো শরীর বরাবর পাশে মাটিতে থাকবে, পা মাটিতে শোয়ানো থাকবে। এবার দুটো পা একসঙ্গে উপরে উঠান, যাতে পায়ের তলা ছাদ বরাবর থাকে এবং পেট ভরে শ্বাস নিন। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে নিতম্ব বা পশ্চাতদেশ মাটি থেকে উপরে উঠান। আবার শ্বাস নিতে নিতে নিতম্ব বা পশ্চাতদেশ মাটিতে নামান। আবার প্রথম থেকে শুরু করুন। এভাবে ১০ বার করুন। ৪. চিত হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ুন, হাত দুটো শরীর বরাবর পাশে মাটিতে থাকবে, পা মাটিতে শোয়ানো থাকবে। এবার দুটো পা একসঙ্গে উপরে উঠান, যাতে পায়ের তলা ছাদ বরাবর থাকে। এবার ডান পা উপরে উঠানো অবস্থাতেই রেখে বাম পা টা নামাতে থাকুন। কিন্তু পুরোপুরি মাটিতে না নামিয়ে মাটি থেকে ৬ ইঞ্চি উপরে এসে পা টা শুণ্যে স্থির রাখুন। এবার মাথা এবং ঘাড় মাটি থেকে অল্প তুলে শরীরের পাশে রাখা দুই হাত দিয়ে সোজা উপরে তুলে রাখা ডান পা টাকে উরুর অংশে চেপে ধরুন, এবং নিজের দিকে অল্প টানুন। এরপর ডান পা কে নামিয়ে মাটি থেকে ৬ ইঞ্চি শুণ্যে রেখে বা পা উঠিয়ে একই কাজ করুন। কোন বিরতি না দিয়ে তারাতারি করে এভাবে ১০ বার ব্যায়াম টা করে ফেলুন। ৫. চিত হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ুন, হাত দুটো শরীর বরাবর পাশে মাটিতে থাকবে, পা মাটিতে শোয়ানো থাকবে। এবার দুটো পা একসঙ্গে উপরে উঠান, যাতে পায়ের তলা ছাদ বরাবর থাকে এবং পেট ভরে শ্বাস নিন। শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পা দুটো আবার একসঙ্গে নামাতে থাকুন। কিন্তু পুরোপুরি মাটিতে না নামিয়ে মাটি থেকে ৪ ইঞ্চি উপরে এসে পা টা শুণ্যে স্থির রাখুন। থামুন এবং শ্বাস নিন, এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আবার পা উপরে উঠান। এভাবে ১০ বার করুন।
false
rn
বাবার লেখা চিঠি প্রিয় পুত্র,আমি বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। আশা করি বয়স বেড়ে গেলেও তুমি আমাকে আগের মতই বুঝবে এবং সহ্য করবে। যদি আমি কোন সময় খাবার টেবিলের প্লেট ভেঙ্গে ফেলি অথবা সুপের বাটি ফেলে দেই। তখন আশা করি তুমি আমার সাথে চিৎকারের সাথে কথা বলবে না। আমি আমার দৃষ্টিশক্তি আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলছি। বৃদ্ধ মানুষেরা খুব কম মাত্রায় সহনশীল হয়। তাই তুমি যখন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে তখন একটু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করো। যখন আমি আমার শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলবো, তোমার কথা আমি ভালোভাবে শুনতে পারবো না। আশা করি তুমি আমাকে বধির বা অকর্ণ বলবে না। একটু কষ্ট করে তোমার কথাগুলো রিপিট করে বলো তখন অথবা কষ্ট করে লিখে দিও। এজন্য আমি দুঃখিত, কি করবো বলো আমি যে বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। যখন আমার হাটু অকেজো হয়ে যাবে, আমি দুর্বল হয়ে পড়বো। আশা করি তুমি তা সহ্য করবে এবং আমাকে দাড়িয়ে তুলতে বা বসা থেকে উঠাতে সাহয্য করবে। যেমনটি আমি তোমাকে ছোটবেলায় করেছিলাম, যখন তুমি হাটতে পারতে না। দয়া করে আমাকে সহ্য করো, যখন আমি বারবার একই কথা বলতে থাকবো তখন আশা করি তুমি আমাকে শুনতে থাকবে। প্লিজ তখন আমাকে নিয়ে হাসি তামাশা করো না অথবা আমার কথা শোনার জন্য তোমার মধ্যে বিরক্তিবোধ এনো না। তোমার কি মনে পড়ে? যখন তুমি ছোট্ট ছিলে তখন আমার কাছে অনেকগুলো বেলুন আবদার করেছিলে। কিন্তু তুমি বোঝাতে পারনি বেলুন না পাওয়া পর্যন্ত আসলে তুমি কি চেয়েছিলে। আশা করি তুমি ঠিক এভাবে আমাকে বুঝতে চেষ্টা করবে। আমি বৃদ্ধ হয়ে গেলে আমার শরীরে অনেক দুর্গন্ধ থাকবে। এটা আসলে বয়সের দুর্গন্ধ। দয়া করে তখন আমাকে জোর করে গোসল করতে বলো না। আমার শরীর খুব দুর্বল। আর তুমি তো জানোই বৃদ্ধ মানুষেরা তাড়াতাড়ি আরো দুর্বল হয়ে পড়ে যখন তারা ঠান্ডা পানিতে গোসল করে। আশা করি, তুমি আমাকে কুৎসিত বলে বাইরে ফেলে দিবে না। তোমার মনে পড়ে? যখন তুমি ছোট্ট ছিলে, আমি তোমার পিছু পিছু ছুটতাম কারণ তুমি গোসল করতে চাইতে না। আমার মেজাজ খারাপ হতো তবুও আমি সহ্য করে যেতাম। আশা করি তুমিও আমার এসব কীর্তি সহ্য করবে যখন আমি নিজের অজান্তেই খুব বদমেজাজি হয়ে যাবো। এখানে আমার কিছু করার থাকবে না। এসব কিছুই বৃদ্ধ হওয়ার অংশ। তুমিও বুঝতে পারবে যখন তুমি আমার মত বৃদ্ধ হবে। এবং যদি তুমি আমার প্রতি অনুগত থাকো তাহলে আমরা প্রতিদিন কিছু সময় কথা বলেও কাটাতে পারি। আমিতো সবসময় একাই থাকবো, আমার সাথে কথা বলার মত কেউ থাকবে না যদি না তুমি চাও। আমি জানি তোমার খুব কাজের চাপ থাকবে, তুমি ব্যস্ত থাকবে। এমনকি তুমি আমার গল্প শোনার জন্য আগ্রহীও থাকবে না। দয়া করে আমার জন্য কিছুটা সময় বরাদ্দ রেখো। তোমার কি মনে পড়ে? যখন তুমি ছোট ছিলে, আমি তোমার টেডি বিয়ারের গল্প শুনতাম। যখন সময় আসবে, আমি অসুস্থ থেকে অসুস্থতর হয়ে যাবো এমনকি বিছানায় পড়ে থাকবো। আশা করি তুমি আমার শেষ মূহূর্তের কেয়ার নিবে। আমি দুঃখিত আমি দুর্ভাগ্যবশত আমার বিছানাটা নোংরা করতে পারি। যেমনটি তুমি ছোটবেলায় নিয়মিত করতে। আমি তোমার ডায়পার, কাথা পরিস্কার করতাম। আমি আবারো আশা করি আমার জীবনের শেষ মূহুর্তগুলো তুমি আমার সবকিছু সহ্য করে আমার পাশে থাকবে। অনেক কথা লিখে ফেলেছি। যাইহোক, যখন আমার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসবে আশা করি তুমি আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখবে এবং আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার সাহস যোগাবে। চিন্তা করোনা, যখন আমি শেষমেষ সৃষ্টিকর্তার কাছে চলে যাবো আমি তখন সৃষ্টিকর্তার কানে গিয়ে বলবো সৃষ্টিকর্তা তোমার মঙ্গল করুক। কারণ তুমি তোমার বাবা এবং মা'কে পৃথিবীতে থাকতে দেখে রেখেছিলে। ইতি,তোমার বৃদ্ধ বাবা।সংগ্রহ থেকে, ব্লগার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলাম।
false
fe
জাতীয় সনদে জনগণের স্বাক্ষর জাতীয় সনদে জনগণের স্বাক্ষর ফকির ইলিয়াস====================================শেষ পর্যন্ত বহুল প্রতীক্ষিত ভাষণ দিলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। জাতির উদ্দেশে বললেন তাদের রোডম্যাপের কথা। দেশজুড়ে ঘরোয়া রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তবে তা শর্ত সাপেক্ষে। যে শর্তগুলো প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়েছে তা গণতন্ত্রের পথে অনুকূল নয় এ মুহর্তে। তারপরও সরকারের কর্তারা আশার বাণী শোনাচ্ছেন রাষ্ট্রের জনগণকে। ভাল কিছু পেতে হলে ‘স্যাক্রিফাইজ’ করতে হয়। আপাতত তাই হচ্ছে সান্তবনার বাণী।এদিকে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একই মামলায় আসামি করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। নাইকো গ্যাস উত্তোলন মামলায় আরও কিছু শীর্ষ রাজনীতিক ফেঁসে যেতে পারেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। একই মামলায় দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী আসামি হওয়ার পর বিএনপিতে বড় মেরুকরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রণেভঙ্গ দিয়েছেন সাইফুর-হাফিজপন্থি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুর রহমান। প্রবীণ এই রাজনীতিক দীর্ঘদিন থেকেই নানা অসুখে ভুগছিলেন। মনে করেছিলেন সরকারের সংস্কারপন্থি সেজে যদি কোন মতে শেষ বয়সে পার পাওয়া যায় এবং দুর্নীতিবাজ পুত্রদের রক্ষা করা যায়।কিন্তু তার সে আশায় গুড়েবালি পড়ার পরই তিনি ভোল পাল্টাতে বাধ্য হন। বলেন, তিনি আর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নন। একই মামলায় সাইফুর-নিজামী-মান্নান ভঁইয়া আসামি হওয়ার পর টনক নড়ে মান্নান ভুঁইয়ারও। বুঝতে পারেন বোধ হয় শেষ রক্ষা হবে না। অন্যদিকে হঠাৎই অসুখ বেড়ে যায় সাইফুর রহমানের। চিকিৎসার জন্য তিনি উড়াল দেন সিঙ্গাপুরে। এখন বিভিন্ন সত্রে জানা যাচ্ছে, সহসা তিনি আর সেখান থেকে দেশে ফিরছেন না।নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সংস্কারপন্থিরাও খুব একটা সুবিধায় আছেন তা বলারও কোন উপায় নেই। কারণ দেশের সার্বিক গণরোষ পর্যবেক্ষণ করে এটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিপন্থিরা এখনও শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধ। একই কথা প্রযোজ্য বিএনপির বেলায়ও। যারা বিএনপির রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন তারা এখনও বেগম জিয়াকেই তাদের কাণ্ডারি মনে করছেন। দুই নেত্রীর এই যে জনপ্রিয়তা তাতে সন্দেহ নেই বিদেশী কূটনৈতিক দাতা দেশগুলোরও। বিদেশের বিভিন্ন প্রতিনিধি ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, প্রধান দুই দল নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন অর্থবহ হবে না।নির্বাচন যে খুব একটা গ্রহণযোগ্য হবে না সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনাও। তিনি তার আইনজীবীর মাধ্যমে দেশবাসীকে যে কোন প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিহত করার ডাকও দিয়েছেন। তার এই ডাকে নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছেন তার দলের নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশে এই সত্যটি খুবই উজ্জ্বল যে, কারাবন্দি থাকার পরও শেখ হাসিনার হাইকমান্ড অমান্য করে কোন আওয়ামী লীগ নেতা যদি নির্বাচন করেন কিংবা করতে চান তবে নিজ নিজ এলাকায় জনতার তোপের মুখে তাদের পড়তে হবে। একই কথা প্রযোজ্য খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির বেলায়। তাই পোষ্য বিএনপি কিংবা পোষ্য আওয়ামী লীগের জেগে ওঠার কোন সম্ভাবনা ২০০৮ সালের বাংলাদেশে আদৌ নেই তা আমি স্পষ্ট করে বলতে পারি। জেগে উঠলেও তা জনরোষের তোড়ে ভেসে যাবে। দুই.এদিকে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে নানা ধরনের স্নায়ুচাপ এবং মেরুকরণের প্রক্রিয়া। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতারা ইতিমধ্যেই দেখা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বিভিন্ন সুপারিশনামা পেশ করেছেন। নির্বাচন কমিশন সুপারিশগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে সরকারের কাছে পাঠানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।আগামী নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে এদের বিচারের প্রশ্নে জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, নতুন প্রজন্মের মাঝে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে যে দৃঢ়তা আমরা লক্ষ্য করছি তা একটি জাতির জন্য আশার সঞ্চারক তো বটেই। কারণ সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে হলে মিথ্যাবাজ, ঘাতক, দেশদ্রোহীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটা খুবই জরুরি, একাত্তরে যারা এই জাতির সঙ্গে, এই মাটির সঙ্গে বেইমানি করেছে তারা কোন মতেই পার পেয়ে যেতে পারে না। একদিকে এ ঘটনাটি যখন ঘটেছে। অন্যদিকে ‘হিজবুত তাহরীর’ নামের একটি কট্টর জঙ্গিবাদী সংগঠনের সভায় উপস্খিত হয়েছেন বিএনপি নেতা ব্রিগেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহ। তিনি সে সভায় বলেছেন, সমমনাদের সঙ্গে তারা আগামী নির্বাচনে ঐক্য করবেন।বিএনপির সমমনা কারা তা আমরা অতীতেও দেখেছি। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য বিএনপি কিনা করেছে। কিছুই বাকি রাখেনি। জামায়াতি ঘাতকদের সঙ্গে ঐক্য করে দেশে শায়খ রহমান-বাংলাভাইয়ের জন্ম দিয়েছিল তারাই। মিডিয়া জগৎ কব্জা করতে গিয়ে অবৈধভাবে লেনদেন করেছিল হাজার কোটি টাকা। ওয়ান ইলেভেনের পর অনেক নক্ষত্রই ক্রমশ খসে পড়েছে। অতিসম্প্রতি অর্ধচন্দ্র পেয়েছেন হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ বলে কথিত সাংবাদিক, সম্পাদক শফিক রেহমান। তিনি যায়যায়দিনের সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে বাজারে গুজব রয়েছে।বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় শফিক রেহমান কি করেছেন এর যদি একটা শর্টকাট খতিয়ান তৈরি করা যায় তবে দেখা যাবে, তার সাংবাদিকতার ধারায় বিয়োগাত্মক কর্মকাণ্ডই বেশি। তিনি শুধু নিজে ওপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে সাংবাদিকতাকে ব্যবহার করেছেন। নতুন প্রজন্মকে উসকে দিতে গিয়েছেন বিভিন্ন ইস্যুতে। এমনকি সাহিত্য ক্ষেত্রেও কবিগুরুকে ‘আর এন ঠাকুর’ এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে, ‘কে এন ইসলাম’ আখ্যায়িত করে নবীন প্রজন্মকে তাদের কাছ থেকে দরে সরিয়ে রেখেছেন তার দৈনিক­সাপ্তাহিকের মাধ্যমে। তিনি যে চরম সুবিধাবাদী তা প্রমাণ করেছেন লাভ লেনে বিশাল ভবন বানানোর মাধ্যমে। ‘টাকা দেবে গৌরী সেন’-এর মতোই অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিতে বসুরার ধনকুবেররা টাকা ঢেলেছে। এটাও ছিল বিএনপির টাকার খেলা খেলে সমাজ ও রাষ্ট্র দখলের নগ্ন প্রতিযোগিতা।তিন. এবার আসি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ প্রসঙ্গে। তিনিও তার গুরুত্বপর্ণ ভাষণে কয়েক দফা সুপারিশনামা পেশ করেছেন জাতির সামনে। ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে নির্বাচন, ২২ মে থেকে জাতীয় সংলাপ এবং নির্বাচনের আগে ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন বিষয়টি খুবই গুরুত্বপর্ণ বলে আমার মনে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমার একটি কথা বারবার মনে পড়েছে। তা হচ্ছে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের লক্ষ্যে আটদল ও সাতদলের জোট দুটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় রূপরেখা প্রণয়ন করেছিল। কথা ছিল ওই রূপরেখা মেনে দেশ চলবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে দলগুলো ওই রূপরেখা মেনেছিল কি? না মানেনি। যদি মানতো তবে আজকের বাংলাদেশের এমন বেহাল অবস্খা হতো না।বাংলাদেশের রাজনীতিকদের চরিত্র হচ্ছে তারা কোন সৃজনশীল নিয়মনীতি মানেন না। মানতে চান না। না হলে এক কলমের খোঁচায় সংবিধান পরিবর্তনের এমন প্রহসন হতো না। খুনকে জায়েজ করার পাঁয়তারা হতো না। হত্যার বিচার হবে না তা সংবিধানে জুড়ে দেয়ার মতো ধৃষ্টতা বিশ্বে আর কোথাও আছে কি?বাঙালি জাতি রক্ত দিয়ে জাতীয় সার্বভৌমের খাতায় স্বাক্ষর করেছে একাত্তরে। জাতীয় সনদ তৈরি করেছেন রাজনীতিকরা। জনগণ বৃহত্তর স্বার্থে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। বারবার রক্ত দিয়েছে। আন্দোলন করেছে। কিন্তু ফসল ঘরে উঠেছে কি? যদি উঠত তবে আজ রাঘববোয়াল রাজনীতিকদের এমন বেহাল দশা হলো কেন?সবিনয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি কথা বলতে চাই। আর তা হচ্ছে, জাতীয় সনদে জনগণ বারবার স্বাক্ষর করেছে। ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন রাজনীতিকরা। আজ যারা কারাগারে, যারা কারগারের বাইরে থাকার জন্য সংস্কার লেবাস পরতে চাইছেন দুপক্ষই চরম স্বার্থপর হয়ে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। জাতীয় সনদ কার জন্য হবে? কে তা মানবে? নেতা তো তারাই যারা অতীতে বারবার কথার বরখেলাপ করেছেন।দেশের জনগণ গণতন্ত্র চান। এজন্য তারা ত্যাগ স্বীকার করতে আছেন। কিন্তু মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ যদি সমানই থেকে যায় তা হলে কি লাভ হলো? হয়তো এমনও দেখা যাবে, পটপরিবর্তনের মাধ্যমে শীর্ষ রাজনীতিকরা কারাগার থেকে রেরিয়ে আসছেন। সঙ্গে খুনি, কোটি কোটি টাকার লুটেরা, গডফাদাররাও বেরিয়ে আসছে। না এমন দৃশ্য বাঙালি জাতি দেখতে চায় না।নিউইয়র্ক১৪ মে ২০০৮--------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ১৬ মে ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত
false
ij
গল্প_ ছেলেটি রওশন মঞ্জিলের মেন গেটটা হা করে খোলা। ভিতরে একটা সাদা রঙের মাইক্রোবাস। ড্রাইভার গাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে কাচ মুছছে। বেশ স্বাস্থ ছেলেটির । সাদাকালো ডোরাকাটা গেঞ্জি পরেছে আজ । অ্যাকশান মুভির ভিলেনের মতন দেখাচ্ছে। অথচ ছেলেটি কী ভদ্র! একটু আগে নিচে নেমে এসে মেন গেটের সামনে দাঁড়িয়েছেন রেহনুমা। তখন শ্যামল (মাইক্রোবাসের ড্রাইভারের নাম) সালাম দিয়েছিল। রেহনুমা সালামের উত্তর দিয়ে মিষ্টি করে হেসেছিলেন। ছেলেটি কী ভদ্র! সবাই এখনও নেমে আসেনি। হয়তো ব্যাগট্যাগ গোছাচ্ছে। একটু আগেই সবাই খেয়ে উঠেছে। দুপুরে ইলিশ পোলাও রেঁধেছিল ময়না। ভালোই রাঁধে মেয়েটি। ও মাও ভালো রাঁধত। তখন মা-বাবা বেঁচে ছিল। রেহনুমা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর ধীরে ধীরে হেঁটে গেটের বাইরে চলে এলেন। চারিদিকে উজ্জ্বল রোদ। সময়টা শেষ আশ্বিন। বাতাসে এই সময় শীতের আগমনী-ধ্বনি টের পাওয়া যায়। কেমন একা মনে হয় নিজেকে। একা নির্জন লোকালয়। তার নির্জন পথঘাট। রেহনুমার বুকের ভিতরে হাওয়া পাক খায়। কিশোরীবেলায় এমনই মনে হত। তখন বুকের ভিতরে সারাক্ষণ কেমন যেন করত। আজও তেমনি সকাল থেকেই বুকের ভিতরটা কী রকম করছিল। একবার সেই গাছটার নিচে দাঁড়াতে ইচ্ছে হচ্ছিল। এখনও সবাই মাইক্রোবাসে ওঠেনি, কিছু সময় হাতে আছে। এখন প্রায় শেষ দুপুর। এদিকটা নির্জন হয়ে আছে। একে মফস্বর শহর- তার ওপর এদিকটা শশ্মাণ আর ইটভাঁটা রয়েছে বলে বরাবরই নির্জন। শীতলক্ষ্যা নদীর বাতাস কিছু লোনা গন্ধ নিয়ে আসে। আজ সকাল থেকেই বুকের ভিতরটা কী রকম করছিল। একবার সেই গাছটার নিচে দাঁড়াতে ইচ্ছে হচ্ছিল। আজ শাদা রঙের শাড়ি পরেছেন রেহনুমা। বিধবা হওয়ার পর সাদা রঙটাই তার জন্য নির্বাচিত। শেষ দুপুরের আলোয় হাওয়ায় তার চুল ও শাড়ি কেঁপে ওঠে। রওশন মঞ্জিলের কাছেই গাছটি। পায়ে পায়ে গাছটার নিচে এসে দাঁড়ালেন রেহনুমা। অনেক বছর পর। কামরাঙা গাছ। বেশ মোটা গুঁড়ি। বেশ বয়েসী গাছ। এখনও বাতাময়। এখনও সতেজ। এখনও আগের মতই আছে গাছটা। পাতাময়। এখন কেমন রোদ পড়ে ঝলমল করছে। গাছের ছায়ায় একটা ঠেলাগাড়ি। তার ছায়ায় ঘুমন্ত একটা মানুষ। উলটো দিকে একটা দোকান মুদি ছিল। ...কত কত বছর আগের কথা। এখন আর নেই। বরং, ওদিকটায় ইটের পাঁজা, একটা প্রাইমারি স্কুলের নোংরা পোষ্টার-সাঁটা দেওয়াল। লাইব্রেরি। “সজীব বুক কর্নার।” আজ শুক্রবার বলে বন্ধ। মুদি দোকানটা ছিল বরকত মিঞার। মোটা কালো মুখে বসন্তের দাগওলা একটা মানুষ; একমুখ ঘন কালো দাড়ি, মাথায় তালপাতার টুপি। স্কুলে যাওয়ার পথে- সেই চৌদ্দ বছর বয়েসে একবার কামরাঙা গাছের তলায় একবার থমকে দাঁড়িয়েছিল কিশোরী রেহনুমা। সময়টা যেন কবে? ১৯৬৪। ঠিক তো? এই পথে স্কুল যেতে আসতেন রেহনুমা, তখন গাছটা চোখে পড়ত। একদিন গাছের নিচে একটা ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। সাদা সার্ট, চমশা পরা, ঝাকড়া চুলের একটা ছেলে। কে ছিল ছেলেটি? কখনও জানতে পারেনি কিশোরী রেহনুম। ছেলেটা দাঁড়িয়ে থাকত ঠিক এই কামরাঙা গাছের নিচে। শ্যামলা রঙের অচেনা ছেলে। ঠিক তিন মাস। ১৯৬৪ সালের এপ্রিল-মে-জুন। তারপর আর ছেলেটিকে দেখা যায়নি। ছেলেটা কই যে গেল! কেন দাঁড়িয়ে থাকত ছেলেটা? মুদি দোকানের বরকত চাচা কি ছেলেটাকে দেখেছিল? কেন দাঁড়িয়ে থাকত ছেলেটা? অনেক অনেক বছর পর আজ আবার প্রশ্নগুলো ফিরে আসে। হর্নের শব্দে চমকে উঠলেন রেহনুমা। মাইক্রোবাসটা গেটের বাইরে চলে এসেছে। সবাই উঠে গেছে? শেষবেলার রোদে ডুবে থাকা ঝাঁকড়া কামরাঙা গাছটির দিকে শেষবারের মত তাকালেন রেহনুমা। আর কি আসা হবে। কিন্তু কে ছিল সেই ছেলেটা? কেন সে দাঁড়িয়ে থাকত? রেহনুমা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আর কিছুক্ষণ পরই ঢাকা রওনা হয়ে যাবেন। ঢাকায় দু-তিনদিন থাকার কথা। তারপর সেখান থেকে কানাডা। বড় মেয়ে কানাডা থাকে। তারই কাছে থাকেন রেহনুমা। মেজ ছেলে নিউজিল্যান্ড। ওদের বাবা চার বছর হলো মারা গেছেন। ২০০০ এপ্রিলে। লন্ডনে। তখন সেখানেই ছোট মেয়ের কাছে ছিলেন ...এই শেষ। আর আসা হবে না। কথাটা ভাবতেই হাজার হাজার অদৃশ্য টিয়া পাখির শব্দ পেলেন রেহনুমা...যেন অদৃশ্য পাখিগুলি তাকে বিদায় জানাচ্ছে। তখন এই অঞ্চলে এত টিয়া পাখির ঝাঁক ছিল। এখন পাখি কোথায়? এখন পৃথিবীজুড়েই পাখিটাখি কমে গেছে। ষাটের দশকে এ মফস্বল শহরটায় পাখিদের কলকাকলীতে ছিল মূখর। কত রকম যে পাখি। শীতলক্ষ্যার চরে পাখির বেলা বসত শীতকালে। বাবা শিকারে যেতেন। সঙ্গে বড়দা। মেজদা। বড় দুলাভাই। মেজবোনের শ্বশুড়। সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরতেন। মা আর ময়নার মা মিলে সেই শেষ রাতে উঠে পিঠে বানাত। আহ্, সেই সব দিন। সন্ধ্যার পর ম্লান কুয়াশা উঠানে। বালিকা রেহনুমা ভাসত। হারিকেনের আলো। ধুপের গন্ধ। একতলার বারান্দায় বসে আড্ডা। মেজবোনের শ্বশুড় ওকে কোলে নিয়ে বসতেন। ওর শুড়শুড়ি লাগত। সুখও লাগত। বৃদ্ধ জড়িয়ে ধরতেন। আয়ূব খানের ভীষন ভক্ত ছিলেন লোকটা। হরদম পান খেতেন। জর্দার গন্ধ ...গলায় তামার খিলাল। শুভ্র দাড়ি। বৃদ্ধ একরাম গাজি ৭১’ সালে সেপ্টেম্বরে মারা গিয়েছিলেন। বৃদ্ধের ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল মুক্তিবাহিনী। শান্তি কমিটির মেম্বার ছিলেন...। রেহনুমারা তখন শ্রীপুর। একটা পোড়ো বাড়িতে লুকিয়ে আতঙ্কের দিন কাটছিল। গুলির শব্দে স্বামীকে আঁকড়ে ধরতেন। মাইক্রোবাসটা হর্ন দিচ্ছে। রেহনুমা ঘুরে দাঁড়িয়ে ধীরেসুস্থে মাইক্রোবাসের দিকে যেতে থাকেন। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখি হয়েছিল রেহনুমা। অত সুখি সহজে কেউ হয় না। ছোট বোন কাজল। দু’দিনের জ্বরে ভুগে মরল। কলেজের বান্ধবী মমতাজ- গলায় দড়ি দিল। বিয়ের পর সুখি হয়নি। স্বামীর চরিত্র মন্দ ছিল। আরেক বান্ধবী মালা। ওর মেয়ে অ্যাবনরমাল। ছোট খালার ছেলে আযম ছিল বদমেজাজী। দীর্ঘদিন বিদেশে আছেন রেহনুমা। অনেক দেখেছেন। ওখানে অর্থবিত্ত থাকলেও সুখ কম।স্বামী সন্তান নিয়ে সুখি হয়েছিলরেহনুমা। অত সুখি সহজে কেউ হয় না। রেহনুমা সুখি হয়েছিলেন। স্বামী ইঞ্জিনিয়র মোখতার হোসেন রুপগঞ্জের। ততদিনে রেহনুমার আঠারো বছর বয়েস। ঢাকায় ইডেন কলেজের ছাত্রী। মালিবাগে ফুপুর বাড়ি থেকে পড়ছে। ’৬৮ সালে বিয়ে। ততদিনে বাবা মারা গেছেন। বাবা বেঁচে থাকলে বিয়ে হত না মনে হয়। উদার মানুষ ছিলেন বাবা। ফুপা তত উদার না ছিলেন না, বৈষয়িক ছিলেন। তিনিই বিয়েটা দিলেন। গাজীপুরের লোক ফুপা ... তো, স্বামী মোখতার হোসেন-এর স্বাস্থ ছিল ভালো। লম্বা। ফরসা। দিলীপ কুমারের মত দেখতে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে সরকারি চাকরিতে ঢুকেছেন। মোখতার হোসেন- যাকে বলে আদর্শবাদী। নিষ্ঠাবান মুসলিম। তবে রাজনীতির ব্যাপারে নীরব। মৃত্যুর আগে অবধি স্ত্রীকে মাথায় তুলে রেখেছেন। কোনওদিন অনাদর করেনি। সুখে ভরে রেখেছিল। বড়টি মেয়ে। পরেরটি ছেলে। সব শেষেরটি মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে লন্ডনে থাকে। ২০০০ সালের এপ্রিলে বিধবা হলেন রেহনুমা। তখন লন্ডনে ছোট মেয়ের কাছে ছিলেন ... রেহনুমা সুখি হয়েছিলেন। কিন্তু, কে ছিল ওই ছেলেটা? ১৯৬৪। এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখ প্রথম দেখেছিলেন রেহনুমা। সেদিনটা রেহনুমার জন্মদিন ছিল। তারপর মে। জুন। জুন মাসে বৃষ্টি এলো ঝেঁপে। স্কুলে যেতে আসতে ভিজতে হত। বৃষ্টির ভিতরে ছেলেটা দাঁড়িয়ে থাকত। আমার জন্যই কি? আমাকে ভালোবাসত? নাঃ। ছেলেটাকে আর দেখেননি রেহনুমা। স্কুল যেতে আসতে তাকাতেন। মুদি দোকানে বসে থাকত বরকত মিঞা। মাইক্রোবাসে উঠে এসে বসলেন রেহনুমা। ভিতরে হৈ চৈ। হুল্লোড়। ছোট মেয়ে লন্ডন থেকে এসেছে। সঙ্গে জামাই, নাতি-নাতনি; বড় মেয়েও জামাই নাতি-নাতনি নিয়ে কানাডা থেকে এসেছে । মেজ ছেলেও বৌবাচ্চাদের নিয়ে এসেছে নিউজিল্যান্ড থেকে । মাইক্রোবাসটা যে কারণে ভরে আছে। প্রত্যেকের মুখে আনন্দের আভা। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রেহনুমা। আমি কী সুখি! কেবল এই কামরাঙা গাছটা সুখের কাঁটা হয়ে আছে। সেই ’৬৪ সাল থেকে। কে ছিল ছেলেটা? কেন দাঁড়িয়ে থাকত সে? ’৬৪-এর এপ্রিল-মে-জুন। ঠিক তিন মাস। তারপর আর ছেলেটিকে দেখা যায়নি। কে ছিল ছেলেটা? কে? মাইক্রোবাস চলতে শুরু করেছে। শেষবারের মত রোদ ঝলমলে কামরাঙা গাছের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রেহনুমা। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৮:৫৩
false
rn
বাংলা সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (এক) অনেককেই দেখেছি ১০০টি ভাল বইয়ের তালিকা তৈরি করেছে। কিন্তু আমার ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও আমি আমার প্রিয় বইয়ের তালিকা তৈরি করতে পারিনি। কারন সেই বই গুলো আমি পরে শেষ করতে পারিনি। এখন মনে হচ্ছে, বাংলা সাহিত্যের সেরা বইয়ের তালিকা তৈরি করা যেতে পারে। এবং আমার ধারনা আপনারা সবাই আমার সাথে একমত হবেন। বই আমাদের মানুষ করেছে, আমাদের সুসভ্য করেছে৷‌ তাই আজ যারা বই-বিমুখ, যারা শুধু কম্পিউটার, পানশালা আর টিভি সিরিয়ালে আনন্দ পায়, তাদের কি সভ্য বলা যাবে? অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার। তাকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, 'ভালো বই কাকে বলে?' উত্তরে তিনি বলেছিলেন, 'যে বইটা পাঠককে ভাবায়, সেটাই ভালো বই।' বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই আমার পছন্দের বইয়ের তালিকার সাথে একমত হবেন আশা করি। পাঠকদের কাজ হল বই পড়া। বইয়ের মধ্য থেকে নিজের জন্য আনন্দ খুজে ফেরা। ''তিনটি ভাল বই একবার করে পড়ার চেয়ে একটি ভাল বই তিনবার পড়া বেশি উপকারী।”আমাদের জীবনের আয়ু তো সীমিত। বইপত্র নিয়ে এলোমেলো পড়তে গিয়ে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। বইটি পড়ার আগে ভাবতে হবে আমি এই বইটি কেন পড়ব, বইটি থেকে কী চাই। যা পড়া হয়, তা আত্মস্থ করা গুরুত্বপূর্ণ। বই পড়ার মূল উদ্দেশ্য থাকতে হবে আত্মিক উন্নয়ন। আপনার বইয়ের শেলফ যত বেশি সম্ভব ভিন্ন ধরনের বই দিয়ে ভর্তি করবেন, আপনার অ্যাডভেঞ্চারও তত বেশি হবে। ১। 'শেষের কবিতা' ও 'গোড়া' লেখক- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উপন্যাসের নায়কের নাম গোরা। মূলত গোরার পিতা ইংরেজ। সিপাহি বিদ্রোহের সময় এক ব্রাম্মন পরিবারের গোয়ালে তার জন্ম। জন্মের সময় সে মাকে হারায়। ব্রাম্মন দম্পতি তাকে মাতা-পিতার পরিচয়ে বড় করে। এই গোরা কালক্রমে বড় হিন্দু নেতা হয়ে যায় এবং ইংরেজ বিরোধী। এবং শেষের কবিতায় বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার অমিত রায় প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত এবং রোমান্টিক যুবক। তর্কে প্রতিপক্ষকে হারাতে সিদ্ধহস্ত। এই অমিত একবার শিলং পাহাড়ে গেল বেড়াতে । আর সেখানেই এক মোটর-দুর্ঘটনায় পরিচয় ঘটল লাবণ্যর সাথে। এই বইটি দুটি আমি প্রতি বছর একবার করে পড়ি। ঠিক করেছি আমৃত্যু পড়ে যাব।২। 'প্রদোষে প্রাকৃতজন' লেখক- শওকত আলী। উপমহাদেশের এক কোনায় বাংলাদেশে হঠাৎ করে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের ইসলাম গ্রহণ যে কারণেই হোক একটি সর্ব অজ্ঞাত ঘটনা। লীলাবতীর মধ্যে আবহমান বাঙালী নারীকেই পাই। বইটি লিখতে লেখকের প্রায় ১৫ বছর লেগেছে। আজীবন মনে রাখার মত অসাধারণ একটি বই। ৩। 'লৌহকপাট' লেখক, 'জরাসন্ধ' (ছদ্মনাম)। আসল নাম- চারুচন্দ্র চক্রবর্তী। বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্ব শেষ করে এক তরুণ যুবক চাকরির সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে শেষপর্যন্ত যে কাজটি পেলেন, সেটি হল কারা বিভাগে। ছোটখাটো একটি জেলের ডেপুটি জেলারের পদ। সম্পূর্ণ একটা নতুন জগতের সঙ্গে পরিচয় ঘটল সেখানে।পরিচয় হল বদর মুন্সীর মত ভয়ঙ্কর ডাকাতের সঙ্গে - খুন,জখম, নারীধর্ষণ যার কাছে ছেলেখেলা। কিন্তু সেই লোকটিই একবার ডাকাতি করার সময়ে গৃহস্বামীকে কথা দিয়েছিল, শুধু টাকা-গয়নাই নেবে - নারীর সম্মান নষ্ট করবে না। কিন্তু দলের একজন সেই হুকুম মানে নি বুঝতে পেরে, নিজেই ধরা দিল সেই অপবাদের বোঝা নিজের মাথায় নিয়ে।৪। 'অন্তর্লীনা' লেখক- নারায়ণ সান্যাল। গল্পের নায়ক কৃশানু মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। বুদ্ধিদীপ্ত, কিন্তু সাধারণের দৃষ্টিতে স্মার্ট নয়, কারণ সে লাজুক, ইন্ট্রোভার্ট, নিজের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে ভালবাসে। এছাড়া তার মধ্যে আছে এক শিল্পীমন, সে সাহিত্যের ছাত্র, ছবিও আঁকে। অথচ তার স্কেচবুকে নেই কোনও নারীর ছবি। তার বয়সী এক যুবক শিল্পীর কাছে একটু অস্বাভাবিক ঘটনা, সন্দেহ নেই। শুধু স্কেচবুক বলে তো নয়, সে ট্রামে উঠে চেষ্টা করে লেডিজ সীট থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে, তার সহপাঠী মেয়েদের মুখের দিকে সে কখনও তাকায়না পর্যন্ত। উপন্যাসটা পড়তে শুরু করলে, ভাল লাগতে শুরু করবে।৫। 'খোয়াবনামা' পূর্ববাংলার আঞ্চলিক ভাষাকে অবলম্বন করে যে কি চমৎকার উপন্যাস লেখা যায় তার সার্থক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস খোয়াবনামার মাধ্যমে। আঞ্চলিক ভাষার অধিক ব্যবহার রয়েছে বইটিতে, রয়েছে কিছু খিস্তি-খেউরও। ’৪৭ এর দেশভাগ গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে খোয়াবনামা। ৬। 'শুন বরনারী' লেখক- সুবোধ ঘোষ। জন্মেছিলেন ১৯০৯ সালে ঢাকার বিক্রমপুরে জেলায়, মৃত্যু ১৯৮০ সালে। সহজ সরল একটি উপন্যাস। এ উপন্যাসকে সম্পর্কে হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন- অতি সাধারণ উপন্যাস মুগ্ধ হয়ে বারবার পড়েছি। হিমাদ্রিশেখর দত্ত ওরফে হোমিও হিমু। পেশায় হোমিও চিকিৎসক। যদিও কেউ তাকে ডাক্তারি করতে দেখেনা। লোকের ছেলেপেলে পড়িয়ে রোজগার চলে। আর,আসল কাজ হচ্ছে পরোপকার, মানে, অমুকের সাথে অমুক জায়গায় যেতে হবে,অমুকের মেয়েকে ট্রেনে করে হোস্টেলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা, অমুক কে তীর্ত্থে নিয়ে যাওয়া, এইসব। না করতে পারেনা হিমু। এমন কাজেই ডাক পড়ে তার।৭। 'কবি' লেখক- তারাশঙ্কর। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর মধ্যে এটি একটি।কবি উপন্যাসের নায়ক একজন কবি । তবে কবি বলতে আমরা সাধারনত যা বুঝি সেই কবি তিনি নন,উপন্যাসের নায়ক নিতাইচরন একজন কবিয়াল । একবার এক মেলাতে এক বিখ্যাত কবিয়াল না থাকাতে নিতাইকে মঞ্চে তুলে দেয়া হয়,তারপরে নিতাই তার প্রতিদ্বন্দ্বী কবিয়ালকে প্রায় ঘায়েল করে ফেলে শেষে তার প্রতিপক্ষ কবিয়াল নিতাইয়ের পরিবার নিয়ে অশ্লীল আক্রমণ করে কবিয়াল লড়াইয়ে জিতে যায়,কিন্তু অই মঞ্চেই নিতাই জয় করে নেই হাজারো মানুষের মন ।৮। 'তবুও একদিন' লেখক- সুমন্ত আসলাম। বইটি একটু সময় নষ্ট করে পড়ে ফেলুন। ভালো লাগবেই।৯। ‘লালসালু’ লেখক- সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ। বেশ কয়েকটি শক্তিশালী নারী চরিত্রের প্রাধান্য পেয়েছে এই উপন্যাসে,তাদের মধ্যে জমিলা অন্যতম। জমিলা অত্যন্ত সাহসী এক নারী। মজিদ নামের প্রতিকী দ্বারা ভ্রান্ত না হয়ে, মজিদের সাথে না লেগে থেকে সে পরিবর্তন চেয়েছে। ধর্মকে পুঁজি করে যারা সমাজকে শোষন করে জমিলার মৃত্যু তাদের কপালে কলংকের চিহ্ন এঁকে দেয়। ১০। 'হাজার বছর ধরে' লেখক- জহির রায়হান। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র টুনি,অবশ্য অনেকে আম্বিয়াকেও কেন্দ্রীয় চরিত্র বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। তবে আম্বিয়ার চেয়ে টুনির জীবনের উত্থান পতনকেই লেখক বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। টুনি গ্রামের সহজ, সরল, চঞ্চল এক মেয়ে। টুনির পরিণতি হয়েছে হৃদয় চিরে যাওয়ার মতো কষ্টকর। শেষ পর্যন্ত শূন্য বুকে বাপের বাড়ি ফিরে টুনি,তবুও শৃংখল ভাঙ্গেনি। নিজের পছন্দের উপর ভিত্তি করেই বই পড়া উচিত। অন্যের পছন্দ বা ভাললাগার মূল্য না দিয়ে নিজের পছন্দ অনুসারে বই বাছাই করুন। অনেকের কাছে ভাল লেগেছে, এমন বই আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। এছাড়া কোন বই অনেকেই পড়েছে বলে আপনাকেও পড়তে হবে এমন কোন কথা নেই। অন্যের পছন্দের বই আপনাকেও পড়তে হবে, এমন মনে করাটা বোকামী। প্রত্যেকের নিজস্ব একটি ভাললাগার জগৎ থাকে। কারো ভূতের গল্প পছন্দ, কারো ফুটবল আবার কারো বা ভ্রমণকাহিনী। কারো পছন্দ বা প্ররোচনায় বই বাছাই না করে নিজের দিকে তাকান। নিজে যা চান তাই করুন, অন্যের চাপে নয়। নিজের যে বইটি পড়তে ভাল লেগেছে, অন্যকেও সেই বই পড়তে উৎসাহ দিন। পছন্দের বই নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা করুন। ভাই-বোনকে নিজের পছন্দের বই পড়তে উৎসাহ দিন। তাদেরকে তাড়াতাড়ি বইটি শেষ করতে তাগাদা দিন, যাতে আপনি তাদের সাথে কথা বলতে পারেন। বই পড়ার আনন্দ ভাগাভাগি করা বই পড়ার চেয়ে আরো বেশি আনন্দদায়ক। ( দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল পাবেন।)
false
ij
মওদুদীবাদ ও আমরা। ইনি আবুল আলা মওদুদী। বির্তকিত এক ইসলামী তাত্ত্বিক। ওয়াহাবীপন্থি বলেই বিতর্কিত। ওয়াহাবীপন্থি মওদুদীবাদ বাঙালির অপূরণীয় ক্ষতি করেছে- ১৯৭১ -এ এবং তার পরে। আজ অবধি উপমহাদেশে সব ক’টি জঙ্গিগোষ্টীর প্রেরণাদাতা মওলানা মওদুদী। জে এম বি-ও মূলত জায়ামাত ই ইসলামীর বি-টিম। এরাই রমনা বটমূলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি এদের ঘৃনা তীব্র ও অপরিমেয়। এরা বাঙালি সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চায়। কাজেই, বাঙালির শক্র মওদুদীবাদকে পরিহার করার অর্থ হল মওদুদীবাদের চিন্তাধারার কুফল সম্বন্ধে সচেতন থাকা। আমরা জানি, মওদুদীবাদীরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের দখল নিতে চায়। রাষ্ট্রের দখল নিতে চায় জেহাদীপন্থায়। কিন্তু তা কতটুকু ইসলাম সম্মত? এই প্রশ্নটি উঠতেই পারে যখন যুদ্ধাপরাধী মওদুদীপন্থিদের আমরা বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চাইছি। মওদুদীবাদীরা রাষ্ট্রের দখল নিতে চায়: অথচ রাষ্ট্রের ধারনাটি আধুনিক। জনৈক ঐতিহাসিকের মতে, State, in political science, generally a group of people inhabiting a specific territory and living according to a common legal and political authority; a body politic or nation. In this definition, the term state includes government; in another usage, the two terms are synonymous.(Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved.) এসব কারণেই মধ্যযুগে রাষ্ট্রের ধারনা ছিল না। কেননা, মধ্যযুগে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে অঞ্চলসমূহ অনেকটাই বিচ্ছিন্ন ছিল। পরবর্তীতে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে- যা জাতীয়তাবাদ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে । ইসলামের উদ্ভব মধ্যযুগে বলেই ইসলামের দিকনির্দেশনাগুলি ব্যাক্তিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চর্চার জন্য নয়। অর্থাৎ, শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দল গঠন করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল অনিবার্য নয়। মাওলানা মওদুদীর চিন্তার ভ্রান্তি এখানেই। কুড়ি শতকে বাস করে ইনি ইসলামকে কুড়ি শতকী করার চেষ্টা করেছেন। কেন? মূল কারণ-ইসলামী বিশ্বের অবক্ষয় ও পশ্চিমে অগ্রগতি। মধ্যযুগের উন্নত ইসলাম কুড়ি শতকে অচল। যে কারণে কামাল পাশা তুরস্কে পুরনো ধ্যানধারনার অনুসারী খেলাফত ধ্বংস করলেন। আমরা জানি, ১৩ শতক থেকে অটোমান তুর্কিরা প্রায় ৬০০ বছর তুরস্ক শাসন করেছে। সে যুগে এক রাজ্য অন্য রাজ্য দখল করত। অটোমান তুর্কদের লক্ষ্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা ছিল না। তারা মুসলিম বলেই তাদের রাষ্ট্রপরিচালনায় ইসলামী রীতিনীতি গ্রহন করেছিল। তা সত্ত্বেও মাওলানা মওদুদী রাষ্ট্র নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন কেন? সেই প্রেক্ষাপটটি বোঝার দরকার আছে। ইউরোপে আমরা জাতীয়তাবাদের স্ফুরণ লক্ষ্য করি অস্টাদশ উনিশ শতক থেকে। অর্থাৎ, তখন থেকেই ইউরোপে জাতীয় রাষ্ট্র গড়ে উঠতে থাকে। সে সময় খ্রিষ্টান ধর্মকেও আধুনিক ইউরোপের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এক ব্যাপক সংস্কার আন্দোলনের ফলে ধর্ম থেকে রাষ্ট্রকে পৃথক করার দাবী উঠেছিল। ষোড়শ শতক থেকেই ইউরোপের পন্ডিতরা রাষ্ট্র সংক্রান্ত নিজেদের ধারনা ব্যক্ত করে আসছেন। ফলত ক্রমশ উনিশ শতকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পাশাপাশি রাষ্ট্রবিজ্ঞানও পৃথক শাখার মর্যদা লাভ করে। যার ফলে উনিশ শতকের অন্যতম মতাদর্শ হয়ে ওঠে মার্কসবাদ। মার্কসবাদ শেখায় কী করে রাষ্ট্রযন্ত্র সর্বহারাদের কল্যাণে অধিকৃত করা যায় বিপ্লবের মাধ্যমে। মার্কবাদী চিন্তাধারা প্রসারের ফলেই কুড়ি শতকের প্রারম্ভে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা ঘটল- ১৯১৭ সালের সোভিয়েত বিপ্লব। সেই অক্টোবর বিপ্লবের দশটি দিন পৃথিবী কেঁপে উঠেছিল। যা অনিবার্যভাবে বিশ্বের ইসলামী চিন্তাবিদদেরও প্রভাবিত করেছিল। যেমন, মিশরে হাসান আল বান্না, সৈয়দ কুতুব। পাকিস্থানে আবুল আলা মওদুদী। তারা লক্ষ করলেন রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে শ্রেণিগত মতার্দশ প্রয়োগে করা যায়। তারা উদ্বুদ্ধ হলেন। এক্ষেত্রে সর্বহারার একনায়কত্ব নয়-ওয়াহাবীবাদ। তারা 'জেহাদ' শব্দটির নতুন ব্যাখ্যা দিলেন। আপনারা হয়তো শুনে থাকবেন- জায়ামাত ই ইসলামী ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি করে। ক্যাডার পদ্ধতিটির উদ্ভব করেছেন মহামতি লেনিন। কাজেই মওদুদী যে ইসলামী বিপ্লবের কথা বলেন তা আসলে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবেরই ইসলামীকরণ। তারা উপলব্দি করলেন-রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে প্রতিষ্ঠা করা যায় ইসলাম। এক্ষেত্রে সুফিবাদ নয়-ওয়াহাবী ইসলাম। ওয়াহাবীদের সম্বন্ধে নিয়াজ জামান এবং এ টি এম মুসলে উদ্দীন লিখেছেন, Wahabis a Muslim sect dominant in Saudi Arabia and Qatar, named after its founder, Muhammad ibn Abd al-Wahhab (1703-1787). Wahabis interpret Islam in the light of opinions expressed by the Prophet muhammad (Sm) and his companions. They consider the practices of later generations as be-daat or innovations, and hence unacceptable. Wahabis do not recognise esoteric approach and mysticism and do not believe that the walis have any special spiritual powers. They also do not believe in constructing tombs and mausoleums in memory of the dead. Accordingly, graveyards in Saudi Arabia are kept open and unmarked. Wahabis frown upon visits to tombs and mausoleums. The only exception they make is with regard to the tomb of the Prophet. They, however, are not inclined to honour the Prophet's grave as a holy place or one of special spiritual benefit to visitors. Wahabis are also opposed to observing milad. Wahabis are not many in number in Bangladesh. (দ্র;বাংলাপিডিয়া) ওয়াহাবীবাদ গ্রহন করে কুড়ি শতকে বাসবাস করার ফলেই ইসলামকে কুড়ি শতকী করার চেষ্টা করেছেন আবুল আলা মওদুদী। এর আরেকটি কারণ ছিল। ইসলামী বিশ্বের অবক্ষয় ও পশ্চিমের বিস্ময়কর অগ্রগতি। কুড়ি শতকের বিশ্বে মানুষের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মূলে ছিল রাষ্ট্র, জাতীয়তাবাদ। মওদুদী যে কারণে ইসলামী রাষ্ট্রের ধারনা গড়ে তুলেন। আরব জাতীয়তাবাদ আর প্রযোজ্য নয় বলেই তার বদলে ইসলামী জাতীয়তাবাদ প্রচার করেন । ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি ও তার দল ভারতীয় উপমহাদেশে নানান অঘটন ঘটান। ওয়াহাবীবাদী মওদুদীদের রাষ্ট্র দখলের অপতৎপরতার কুফল ভারতীয় উপমহাদেশে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। প্রথমত, মওদুদী পঞ্চাশের দশকে পাকিস্থানে হয়ে উঠেছিলেন প্রভাবশালী। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল না করেই তিনি পাকিস্থানী সেনাবাহিনীকে প্রভাবিত করে আহমেদীয়দের নিশ্চিহ্ন করার জন্য লেলিয়ে দিয়েছেন। এমনই অসহিষ্ণুতা তার! ধরে নিলাম আহমেদীয়রা বিপথগামী অমুসলিম। তাই বলে তাদের গ্রাম ট্যাঙ্কের নিচে গুঁড়িয়ে দিয়ে হত্যা করতে হবে! দ্বিতীয়ত, ৭১-এর মওদুদীপন্থিদের রাষ্ট্রের খেদমত করার সুযোগ এল পূর্ব পাকিস্থানে। তথাকথিত পাকিস্থানী রাষ্ট্রটির অখন্ডতা রক্ষার্থে পাকিস্থানী সৈন্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা কী জঘন্য অপকর্ম করেছে সে সম্বন্ধে নতুন করে আর কি বলব! এখন প্রশ্ন এই- মওদুদীর দাবী অনুযায়ী ইসলাম ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক কি। এই প্রশ্নটাই অযৌক্তিক। যদি প্রশ্ন করেন ঢাকার রাজধানী কি- সেরকম অযৌক্তিক। কেননা, আমি আগেই বলেছি রাষ্ট্রের ধারনাটিই আধুনিক, মধ্যযুগে রাষ্ট্রের ধারনাই ছিল না। কাজেই, ইসলামের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা হাস্যকর ও গভীর ষড়যন্ত্র মাত্র। বিগত হাজার বছর ধরে সূফীসাধকগন রাষ্ট্রের ধার না ধেরেই আল্লাহ্ র জিকির করেছেন-তারা কি মুসলিম নয়? তারা কি বে-দ্বীন? এবং, আমরা জানি বাংলাদেশ সুফীসাধকদের দেশ। অথচ, একটু আগেই পড়েছেন-Wahabis do not recognise esoteric approach and mysticism and do not believe that the walis have any special spiritual powers. অনেক মুসলিমের বিশ্বাস এই রকম যে- ইসলালী শরীয়ত চর্চার ক্ষেত্র হচ্ছে সমাজ-রাষ্ট্র নয়। ইসলামী শিক্ষার মূলে এক আল্লাহ তে বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে, আল্লাহ্র রসুলে বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে-ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়নি। অথচ, মওদুদীপন্থিরা জেহাদের নতুন ব্যাখ্যা করে রাষ্ট্র দখলের ওপরই জোর দেয় বেশি। রাস্ট্র নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকে বলেই তারা ইসলাম থেকে বিচ্যূত হতে বাধ্য। এরা গনতন্ত্রীদের সঙ্গে হাত মেলায়-যাদের লক্ষ্য কখনোই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নয়। John L. Esposito লিখেছেন-Islam has exercised considerable political and social influence throughout its history. Early rulers in the Middle East and elsewhere claimed legitimacy for their authority in the name of Islam, and Islamic teachings gave structure to almost every facet of society. But these early Muslim states and empires were not theocracies—that is, governments ruled by or subject to religious authority. There never was a theocratic or clergy-run state in the Middle East until the creation of the Islamic Republic of Iran in 1979. (Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved.) পরিশেষে বলব। ওয়াহাবীপন্থি মওদুদীবাদ বাঙালির অপূরণীয় ক্ষতি করেছে- ১৯৭১ -এ এবং তার পরে। আজ অবধি উপমহাদেশে সব ক’টি জঙ্গিগোষ্টীর প্রেরণাদাতা মওলানা মওদুদী। জে এম বি-ও মূলত জায়ামাত ই ইসলামীর বি-টিম। এরাই রমনা বটমূলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি এদের ঘৃনা তীব্র ও অপরিমেয়। এরা বাঙালি সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চায়। কাজেই, বাঙালির শক্র মওদুদীবাদকে পরিহার করার অর্থ হল মওদুদীবাদের চিন্তাধারার কুফল সম্বন্ধে সচেতন থাকা। আমি মনে করি, জায়ামাত ই ইসলামী মূলত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদেরও পরিপন্থি। কাজেই, নতুন প্রজম্মের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের তরুণ নেতাদের উচিত অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধীদের কুসঙ্গ পরিত্যাগ করার জন্য বি এন পির বর্ষিয়ান নেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। বাংলাদেশে একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ক্ষমতা বি এন পি-র আছে। তবে তার আগে দলটিতে দলীয় দুনীর্তি প্রতিরোধ ও জায়ামাত ই ইসলামীকে পরিত্যাগ করতে হবে। আমি মনে করি, ২০১৪ সালে আমরা তেমনটিই দেখতে যাচ্ছি। তথ্যসূত্র: Microsoft ® Encarta ® 2008. এবং ইন্টারনেট। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:১৯
false
hm
আঁচড় এ গল্পটা কামড় নামে একটা গল্পের সিকোয়েল (বাংলা কী হবে, অণুসরণিকা?)। কামড় গল্পটা খুব একটা জুইতের হয় নাই, আর অণুসরণিকা যে তার আগের গল্পের পোঁদাঙ্ক অনুসরণ করবে, এ আর বিচিত্র কী? টুনির মুখটা আরো ফ্যাকাসে হয়ে ওঠে আয়নায়। সে এক হাত বাড়িয়ে টোনার বাহু চেপে ধরে, তার নখের ডগা থেকে রক্ত সরে যায় মুঠির চাপে। আয়নায় দেখা যায়, শূন্য হাত রেখে দাঁড়িয়ে টুনি। টোনার শ্বাসের গতি তখনও দ্রুত, টুনি ঘুরে টোনার মুখোমুখি হয়। টোনার মুখটা সামান্য ফাঁক হয়ে আছে, ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক অনেক বড় চারটি শ্বদন্ত। যদিও টোনা বাতি আড়াল করে দাঁড়িয়ে, কিন্তু আয়নায় প্রতিফলিত আলো পড়ে ঝিকিয়ে উঠছে চারটা ভয়ঙ্কর তীক্ষ্ণ, সাদা দাঁত। টুনির মুখে অতি ধীরে একটা বিচিত্র হাসি ছড়িয়ে পড়ে। সে একটা হাত রাখে টোনার গালে। "অঅসাম!" ফিসফিস করে বলে টুনি। "সিম্পলি অঅসাম! তুমি ... তুমি সত্যি ভ্যাম্পায়ার!" টোনার চোখ সামান্য বড় হয়। "হ্যাঁ।" "এজন্যেই তুমি সকালে বের হও না?" টুনি আগ্রহ নিয়ে কাছে ঘেঁষে আসে। টোনা মাথা ঝাঁকায়। "হুঁ।" "সূর্যের আলো সহ্য করতে পারো না, তাই না?" টুনি ফিসফিস করে বলে। টোনা ম্লানমুখে সম্মতি জানায় মাথা নেড়ে। "ঔ! হাউ ডিড ইট হ্যাপেন? আমাকে সব খুলে বলো!" টুনি টোনার কাঁধে হাত রাখে। টোনা সরু চোখে টুনির দিকে তাকিয়ে বলে, "লম্বা গল্প।" টুনি চোখ নামায় টোনার চোখ থেকে। টোনার শরীর বেয়ে নিচে নামে তার দৃষ্টি। তারপর চোখ তুলে সে বলে, "লম্বা গল্প আমার ভাল্লাগে!" টোনা থতমত খেয়ে চুপ করে যায়। টুনি কাছে ঘেঁষে এসে উষ্ণ শ্বাস ফেলে টোনার গালের কাছে। "বলো না, কীভাবে এমন হলো?" টোনা মাথা নাড়ে। টুনিকে অনেক কিছু বলে ফেলেছে সে, উচিত হয়নি। টুনি দুষ্টু হাসে। "আই নেভার স্লেপ্ট উইথ আ ভ্যাম্পায়ার বিফোর ... হোয়াট অ্যাবাউট ইউ?" টোনা কথা বলে না, স্থির চোখে দেখে টুনিকে। টুনি টোনার ঠোঁটে হাত রাখে, "তোমার দাঁতগুলি দেখাও না!" টোনা টুনির হাত চেপে ধরে, "না টুনি! প্লিজ দেখতে চেয়ো না। এসব ছেলেখেলা নয় ... আমি যদি নিজেকে সামলাতে না পারি, তোমার অনেক বড় বিপদ হবে!" টুনি হাসে, বিগ ব্ল্যাক হর্স আবার ঝনঝনিয়ে বেজে ওঠে শুরু থেকে। "কী বিপদ? তুমি আমার সব রক্ত চুষে খেয়ে ফেলবা?" টোনা নিচু গলায় বলে, "হ্যাঁ। একবার শুরু করলে ... থামতে পারি না।" টুনি দুই পা পিছিয়ে যায়। "তোমার কি মনে হয় না, চুষে খাবার জন্যে রক্ত ছাড়া আরো কিছু আছে আমার শরীরে?" টোনা বড় করে শ্বাস নেয়। টুনি দুই হাতে বোলাতে থাকে নিজের শরীরে। টোনার চোখ তার হাতের গতিপথ অনুসরণ করে নিবিড়ভাবে। টুনি দুই হাতের বুড়ো আঙুল ঢুকিয়ে দেয় শর্টসের ভাঁজে, তারপর সামনে ঝুঁকে সেটাকে নামিয়ে আনে কোমর থেকে। টোনা দম বন্ধ করে নগ্ন টুনিকে দেখে। মেঝেতে গোল হয়ে পড়ে থাকা শর্টস থেকে পা গলিয়ে বার করে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে তাকে দেখে টুনি, মুখে হাসি। "আচ্ছা, তোমার কামড়ানোর দরকার নেই আমাকে।" টুনি হাত নাড়ে। "আমিই তোমাকে কামড়াবো নাহয়। ঠিকাছে?" টোনার বুকের ভেতর ড্রাম পেটায় তার সবল হৃৎপিণ্ড, ক্ষিপ্র হাতে সে টুনিকে টেনে আনে বুকের ওপর। তারপর চুমু খায় আলতো করে। টুনির গরম শরীরটা টোনার হিমশীতল শরীরের সাথে মিশে যায় যেন। টুনি দাঁতে কামড়ে ধরে টোনার ঠোঁট, প্রথমে আস্তে, তারপর ক্রমশ তীব্রতর হতে থাকে তার দংশন। জিভে নিজের রক্তের স্বাদ পেয়ে চমকে ওঠে টোনা, তারপর ঝট করে হাত বাড়িয়ে ঠেলে দেয় টুনিকে। "টুনি! কী বললাম তোমাকে?" হিসহিস করে ওঠে সে। "শুধু শুধু বিপদে পোড়ো না!" টুনি জিভ বোলায় ঠোঁটে। "উমমমম ... টেইস্টি!" টোনা দাঁতে দাঁত চাপে শুধু। টুনি মন্থর পায়ে এগিয়ে আসে আবার। "আচ্ছা বাবা, ঠিকাছে। কামড়াবো, কিন্তু রক্ত বের করবো না ... তাহলে হবে না?" টোনার বুকে হাত রাখে সে। "নাকি দাঁতই বসানো মানা?" টোনা কিছু বলে না, বড় করে শ্বাস নেয় শুধু। টুনি আলতো করে কামড় দেয় টোনার গলায়, তারপর একটু একটু করে নিচে নামে সে। টোনা একটু পিছিয়ে এসে ওয়ার্ডরোবে হেলান দেয়। "তোমার বুকে কোনো লোম নাই কেন?" টুনি নিরীহ গলায় জানতে চায়, টোনার বুকের বৃন্তে জিভ বোলাচ্ছে সে। টোনা শিউরে উঠে চোখ বোঁজে। "নাই তো আমি কী করবো?" টুনি হাসে। "ছি ছি ছি! হোক না ভ্যাম্পায়ার, তাই বলে পুরুষমানুষের বুকে লোম থাকবে না? শেইভ কোরো এখন থেকে!" টোনা চুপ করে থাকে। টুনি টোনার পেটে মুখ ঘষে। "ভ্যাম্পায়ারদের কি বাচ্চা হয়?" মিহি গলায় জানতে চায় সে। টোনা অস্বস্তিতে নড়েচড়ে দাঁড়ায়। "জানি না! কেন?" টুনি হাসে। "তাহলে তোমার উচিত প্রোটেকশন ইয়ুজ করা।" টোনা ঢোঁক গেলে। "আচ্ছা ... করবো ... তুমি থামলে কেন?" টুনি হাসে ধারালো দাঁত বের করে, তারপর ধীর গতিতে নিচে নামে আরো। টোনার চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। টুনি জিভ, দাঁত, ঠোঁট, সবই ঠিকঠাক ব্যবহার করতে জানে। টুনির হাত চেপে ধরে সে নিজের বুকের ওপর। টুনির নখগুলো সুন্দর করে শেপ করা। "আঁচড় দাও!" রুদ্ধ গলায় বলে সে। টুনি চমকে তাকায়। "কী বললে?" মুখ সরিয়ে এনে বলে সে। "আঁচড় দাও আমাকে।" টোনা আবার বলে। টুনি একটু থমকে তাকিয়ে থাকে টোনার দিকে, চোখে দ্বিধা। "কেন?" টোনা অবাক হয়ে তাকায় টুনির দিকে। "আমার ... আমার ভালো লাগে, সেজন্যে ... কেন?" বিচিত্র একটা হাসি ফুটে ওঠে টুনির মুখে। "তুমি সত্যিই চাও আমি তোমাকে আঁচড়াই?" টোনা মুচকি হাসে। "হুঁ।" টুনি তির্যক একটা হাসি ঝুলিয়ে রাখে মুখে। "ঠিকাছে! কিন্তু আরেকটু পরে আঁচড়াই?" টোনা কাঁধ ঝাঁকায়। টুনি মেয়েটা অদ্ভুত। টুনি জিভ বার করে ভেংচি কাটে টোনাকে। তারপর জিভের কাজে ফিরে যায় সে। টোনার শরীরটা টানটান হয়ে ওঠে। টুনির মাথায় হাত রেখে তার চুল মুঠো করে ধরে সে। টুনি থেমে গিয়ে বলে, "অ্যাই ... চুলে হাত দিও না!" টোনা কিছু বলতে যাবে, এমন সময় টুপ করে অন্ধকার হয়ে যায় ঘর। লোডশেডিং। উফারটা নীরব হয়ে যায় গানের মাঝখানে, ল্যাপটপের স্ক্রিন অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলো আগেই, শুধু পাওয়ারের নীল আলোটা জ্বলে থাকে শ্বাপদের চোখের মতো। টুনি নিকষ অন্ধকারেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে টোনার কোমরের নিচে। টোনা অস্ফূট একটা শব্দ করে বলে, "আলো দরকার!" টুনি হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, "একটু পরে জেনারেটর ছাড়বে। নোড়ো না এখন!" টোনা বলে, "দাঁড়াও পর্দাটা সরিয়ে দিই। বাইরে আলো আছে।" টুনি অন্ধকারে আঁতকে ওঠে, "না! না! না! পর্দা সরিয়ো না ...।" দেরি হয়ে যায়, টোনা ক্ষিপ্র হাতে টান দিয়ে সরিয়ে দেয় জানালার গাঢ় রঙের ভারি পর্দাটা। মনে অস্বস্তি নিয়ে সে ভাবে, এত ভারি পর্দা কেন জানালায়? বাইরে স্নিগ্ধ চাঁদের আলো ছড়ানো। টুনির জানালার বাইরে অনেকখানি খোলা জায়গা। টোনা মুগ্ধ হয়ে তাকায় চাঁদের দিকে। ভ্যাম্পায়ার জীবনে চাঁদই তার সূর্য। তার ওপর আজ পূর্ণিমা। পেছনে একটা কাতর জান্তব শব্দ শুনে ঘুরে দাঁড়ায় টোনা। টুনির ঘর ভেসে গেছে চাঁদের আলোয়। সেই আলোয় টোনা দেখে, টুনি মেঝের ওপর শুয়ে জন্তুর মতো ছটফট করছে আর কাতরাচ্ছে। "টুনি!" চমকে উঠে ডাকে টোনা। টুনি কোনো কথা বলতে পারে না, তার নগ্ন শরীরে খিঁচুনি ক্রমশ প্রবল হতে থাকে, গোঙানির শব্দ ক্রমাণ্বয়ে চড়া পর্দায় উঠতে থাকে। টোনা বিহ্বল হয়ে দু'পা এগিয়ে যায়। "টুনি ...!" টুনি যেন বহু কষ্টে ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়। চাঁদের আলোয় টোনা দেখে, টুনির চোখ জ্বলজ্বল করছে। একটা সবুজ আভা তাতে। "টোনা!" ঠিক যেন ডাক নয়, ঘড়ঘড়ে একটা ধাতব শব্দ বেরিয়ে আসে টুনির কণ্ঠ থেকে। "পালাও! পালাও ...!" টোনার বুকের ভেতরটা হিম হয়ে আসে। পিছিয়ে এসে দেয়ালের সাথে সেঁটে দাঁড়ায় সে। পলকে একটা সম্ভাবনার কথা উঁকি দেয় তার মাথায়। চাঁদের আলো প্লাবিত করে টুনির ঘর, আর টোনার চোখের সামনে টুনির নরম মসৃণ শরীরটা মুহূর্তে মুহূর্তে পাক খায় আর পাল্টে যেতে থাকে। তার নিটোল শরীর একটু একটু করে ছেয়ে যাচ্ছে রোমে, সুডৌল দুই ঊরু ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে পেশী, স্তন অদৃশ্য হয়েছে কর্কশ রোমের আড়ালে, কাঁধের পেশী উঁচু হয়ে অদৃশ্য করে দিচ্ছে টুনির ক্ষীণ ঘাড়, টুনির মিষ্টি গোলগাল মুখটা ক্রমশ ছুঁচালো হয়ে পড়ছে। আর টুনির হাত ... এখন আর হাত নেই। সেটাকে থাবা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। যত্ন করে ম্যানিকিওর করা নখগুলোর জায়গায় বেরিয়ে এসেছে তিন ইঞ্চি লম্বা কালচে নখর। টোনা অস্ফূটে বলে, "মায়ানেকড়ে!" টুনি শেষ একটা গড়ান দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। লম্বায় সে এখন টোনাকেও ছাড়িয়ে গেছে। মাটি থেকে ছয় ফিট ওপরে জ্বলছে এক জোড়া সবুজ চোখ। ছাদের দিকে মুখ তুলে প্রলম্বিত একটা গম্ভীর গর্জন করে রোমশ জন্তুটা, কিছুক্ষণ আগেও যাকে টুনি নামে ডাকা যেতো। "আউউউউউউউউউউ ...!" ক্রমশ উঁচুতে উঠে মিলিয়ে যায় রোমহর্ষক সেই নেকড়ের গর্জন। কর্তব্য স্থির করতে টোনার দেরি হয় না। তার শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে যায় যেন, প্রচণ্ড এক হ্যাঁচকা টানে দেয়াল থেকে গ্রিলশুদ্ধ জানালার ফ্রেমটা উপড়ে ছুঁড়ে মারে সে বদলে যাওয়া টুনির দিকে, তারপর সেই ফোকর গলে লাফিয়ে পড়ে শূন্যে। পূর্ণিমায় স্নাত শহরে কেউ চোখ তুলে তাকালে দেখতে পেতো, বহুতল ভবনের অনেক ওপরের তলায় ভাঙা জানালা দিয়ে বেরিয়ে পত পত ডানা ঝাপটে উড়ে যাচ্ছে এক প্রকাণ্ড বাদুড়। বাদুড়টা অক্ষত নয়। ভাঙা জানালা গলে বেরিয়ে যাবার সময় চকিতে থাবা চালিয়েছে শূন্যে লাফিয়ে ওঠা মায়ানেকড়েটা। বাদুড়টার পেছনের পায়ে এক গাঢ় আঁচড় পড়েছে, টপটপ করে নিচের শহরের বুকে ঝরে পড়ছে রক্ত। মায়ানেকড়ে সংক্রামক। খুব।
false
fe
ফিরে দেখা ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ _ রক্তাক্ত পিলখানা এবং আমার সেই পোষ্ট টি আজ সেই শোকাবহ ২৫ ফেব্রুয়ারি । গেল বছর আমি একটা পোস্ট দিয়েছিলাম , এই বর্বরতম ঘটনার পর। কে কী মন্তব্য করেছিলেন , পড়ুন - আর ভেবে দেখুন কার বুদ্ধির দৌড় কতদূর । Click This Link এটা প্রতিবাদের কোনো ভাষা ছিল না। এলোপতাড়ি গুলি, মানুষের মাঝে আতংক আর ভীতি ছড়িয়ে কোনো ভাবেই দাবী আদায়ের কথা বলা যায় না। শিশু , নারী , বৃদ্ধ মানুষ দৌড়ুচ্ছে । জানে না কিভাবে ফিরবে ঘরে ! কথা হচ্ছে , বিডিআর এর জোয়ানরা এই পথে গেলেন কেন ? তারা কি এর আগে তাদের দাবীর কথা জানিয়েছিলেন , সরকারকে ? জানিয়েছিলেন তাদের উর্ধ্বতন কমকর্তাদেরকে ? যদি জানিয়ে থাকেন , তবে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি ? এই যে একটা চরম নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো , সেই দানা একদিনে বাঁধেনি। এই চাপা আগুনের কথা কি গোয়েন্দারা জানতেন না ? যদি জানতেন, তবে তারা তা সরকারকে জানান নি কেন ? যারা নিহত -আহত হয়েছেন , সে ক্ষতি অপূরনীয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করে করে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। সেটাই শেষকথা নয়। বিডিআর এর অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা উচিৎ। সেনাবাহিনী বিডিআর এর প্রধান সম্পূরক শক্তি। সেই যৌথশক্তি যাতে রাষ্ট্রের কল্যাণে সার্বিকভাবে কাজ করতে পারে, সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, কারো দুর্নীতিই গ্রহণযোগ্য নয়। সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:২৮ এডিট করুন | ড্রাফট করুন | মুছে ফেলুন * ৩৮ টি মন্তব্য * ৫৮৪ বার পঠিত, Send to your friend Add to Your Showcase Print আপনি রেটিং দিতে পারবেন না পোস্টটি ৯ জনের ভাল লেগেছে, ১১ জনের ভাল লাগেনি এই লেখার লিংক টি আপনার বন্ধুকে পাঠান বন্ধ করুন এই লেখার লিংক টি আপনার বন্ধুকে পাঠান বন্ধ করুন আপনার নিজস্ব ই-মেইল ক্লায়েন্ট ব্যবহার করতে চাইলে এখানেক্লিক করুন আপনার নাম : আপনার ই-মেইল আপনার বন্ধুদের ইমেইল মেসেজ (নীচের মেসেজটি আপনার ইচ্ছেমত পরিবর্তন করুন hi, i have been reading a wonderful post in http://www.somewhereinblog.net and would like to share it with you. Here is the post link http://www.somewhereinblog.net/blog/FAQIRELIASblog/28916360 , please visit the link and rate it if you like. :-) নিজেকেও একটি কপি পাঠান ১. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৩১ comment by: শুভ৭৭ বলেছেন: এই লিঙ্কে একজন জওয়ানের সাক্ষাতকার শুনেন। http://www.dw-world.de/bengali উনি বলেছেন, উনারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন, কিন্তু উনি শুনেন নি। উনাকে কাগজ (দাবিনামা) দেয়া হয়েছে, উনি পড়েন নি। ফলে উনাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যার কারণে উনাদের এই পথ বেছে নিতে হয়েছে। Click This Link জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৩৬ লেখক বলেছেন: দাবী আগেই মানা উচিৎ ছিল মুছে ফেলুন ২. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৩২ comment by: লালপ্রভাত বলেছেন: খুবই যৌক্তিক কথা । এই সমস্যার সমাধান দরকার। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৩৬ লেখক বলেছেন: সেটাই মুছে ফেলুন ৩. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৩৩ comment by: হাসান বায়েজীদ বলেছেন: ভাই, একটা ব্যাপার খেয়াল কৈরা দেহেন, ভাষাটা কঠোর কিন্তু আবেদনটা কিন্তু মর্মান্তিক...অর্থাৎ হিংস্র সেনাকর্মকর্তাদের চিপায় পৈড়া কতোটা অসহায় হয়ে এই পথে পা বাড়াতে বাধ্য হয়েছে জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৩৮ লেখক বলেছেন: তারপরও সেটা উচিৎ হয়নি । আমার বোন , আপনার ভাই রাস্তায় গুলি খাবে সেটা মেনে নেবেন ? নিরীহ মানুষ কেন মারা হবে এভাবে ? মুছে ফেলুন ৪. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৩৩ comment by: মোহাম্মদ আরজু বলেছেন: ''এটা প্রতিবাদের কোনো ভাষা ছিল না। এলোপতাড়ি গুলি, মানুষের মাঝে আতংক আর ভীতি ছড়িয়ে কোনো ভাবেই দাবী আদায়ের কথা বলা যায় না। '' প্রতিবাদের ভাষা কি কলাম লেখা? আপনেরা আসলেই 'বুদ্ধিজীবী'। কলাম সিপাহীরাও লেইখা আসছে বহুতদিন। আপনাদের ভাষায় 'নিয়মতান্ত্রিক' উপায়ে অনেকদিন অফিসিয়ালি লেখালেখি করছে তারা। যে ছবিটা পোস্টে দিছেন সেইভাবে তো বটেই সেনাবাহীনি সাদা পোশাকেও ভেতরে ঢুকতে চাইছিলো। তাই বিদ্রোহী বিডিআর সেনারা সবাইরেই গেট থেকে দুরে থাকতে বলছে। যারা অতিউৎসাহী হইছিলো তারাই ক্ষতির স্বীকার হইছে। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৪২ লেখক বলেছেন: নাগরিক হিসেবে আমার জীবনকে কোনো বাহিনী জিম্মি করতে পারেনা । দেখুন , কিভাবে শিশু - নারীরা হন্য হয়ে কাঁদছে। বাড়ি ফিরতে পারছে না। এটা অমানবিক। গুলি চালাবার মতো কোনো পরিস্থিতিই ছিল না। দাবী আবার, বহু বার তারা জানাতে পারতেন। মনে রাখবেন , কলাম লিখে অবশ্যই প্রতিবাদ জানানো যায় সৃজনের ভাষায়। মুছে ফেলুন ৫. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৩৭ comment by: এস্কিমো বলেছেন: মুন্নি সাহার রিপোর্টে যে কয়জন বিধ্বস্থ বিডিআর দেখাগেছে - তাদের দেখলে আপনি হয়তো এই ধরনের কথা লিখতেন না। এরা যা করেছে - বাধ্য হয়েই করেছে। পুঞ্জিভুত ক্ষোভ আর অপমানের বহি:প্রকাশ এই বিদ্রোহ। সর্বগ্রাসী সেনাবাহিনী দেশের সব সংস্থার উপরে বসে মাখন খায় আর দূর্নীতির দায়ে বোকারা জেলে যায়। বিষয়গুলো ভেবে দেখবেন। স্যালুট বিডিআর জোয়ানদের প্রতি। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৪৭ লেখক বলেছেন: প্রিয় এস্কিমো, আমি সবগুলো রিপোর্ট দেখেই লিখেছি। আপনি কি দেখেছেন , শিশু নারীরা কিভাবে কাঁদছে , ঘরে ফেরার জন্য ? আপনি কি দেখেছেন , সেই নিহত ফেরিওয়ালাকে যার স্ত্রী আছড়ে পড়ছে লাশের উপর? আমরা কোন সেনাবিদ্রোহকে সমর্থন দিতে পারিনা। বরং কেন হয়েছে, তার শিকড় সন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ মনে করি। মুছে ফেলুন ৬. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৪০ comment by: শিবলী নোমান বলেছেন: ডয়েচে ভেলেতে বিডিআর জওয়ান তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেছেন, সরকার দাবি না মানলে তারা পিলখানার আশেপাশে যেসব বসতি আছে, সেগুলো ধ্বংস করে দেবে। বিডিআর সদস্যদের ওপর যে নির্যাতন চলেছে, তার বিহিত হওয়া উচিত। তবে পাশাপাশি আমি মনে করি, 'বসতি ধ্বংস করা'র এই চূড়ান্ত মানসিক প্রস্তুতি কোনো ইতিবাচক লক্ষণ নয়। কোনোভাবেই নয়। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৪৯ লেখক বলেছেন: কোন সেনা বিদ্রোহ কে আমরা মেনে নিতে পারিনা। এটা রাষ্ট্রের জন্য চরম হুমকীস্বরূপ । মুছে ফেলুন ৭. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৪৪ comment by: রন্টি চৌধুরী বলেছেন: বিডি্আর এর দু্খ বুঝতে পারলে আপনার কলম থেকে এই লেখা বেরুত না। বিডি্আর কে দেথেন, আমরা মাঝে মাঝেই তাদের পিঠ চাপরে দেই যখন সীমান্তে সাহসী কিছু করে। কটা কথা বলি, যখন বিএসএফের গুলিতে মরে। কিন্তু কথনও ভাবি না, তারা যে কাঠফাটা রোদে চৌকিতে অদন্দ্রপ্রহরী হয়ে বসে থাকে, বিপরীতে পায় কি তারা? সেনাবাহিনী কি করে? অথচ তাদের সুবিধা দেখূন...বেতন স্কেল আর সুবিধার বৈষম্য দেখূন। আবার বিডিআর এর শীর্ষ কর্মকর্তা সব সেনা থেকে নেয়া? কেন? কেন বিডিআর এ যোগ্য কর্মকর্তা গড়ে তোলা হয় না? এক্বি দেশের দুটি বাহিনীতে এত বৈষম্য কি কারনে? সবসময় বিডি্আর কে শ্রদ্ধার চোখে দেখেছি। আজকের ঘটনায় তাদের প্রতি শদ্ধা আরও বাড়ল। স্যালুট বিডিআর। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৫৬ লেখক বলেছেন: বিডিআর এর দু:খ আমার চেয়ে আপনি বেশী বুঝেন , তা মেনে নিতে পারছি না। আমি যা বলছি , তা রাষ্ট্রের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে। আজ বিডিআর এর বিদ্রোহ প্রশ্রয় পেলে , কাল র‌্যাব- পুলিশ- আনসার একই পথ ধরতে পারে। তা কোন ভাবেই কাম্য নয়। দেশের স্বার্থ , গনতন্ত্রের স্বার্থ আগে। বিডিআর দেশের রক্ষক। গুলি চালাবার এমন অধিকার তাদের নেই। বিদ্রোহ কোনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান দেয় না । মুছে ফেলুন ৮. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৪৯ comment by: হাসান বায়েজীদ বলেছেন: @লেখক............"নাগরিক হিসেবে আমার জীবনকে কোনো বাহিনী জিম্মি করতে পারেনা । দেখুন , কিভাবে শিশু - নারীরা হন্য হয়ে কাঁদছে। বাড়ি ফিরতে পারছে না। এটা অমানবিক। গুলি চালাবার মতো কোনো পরিস্থিতিই ছিল না।দাবী আবার, বহু বার তারা জানাতে পারতেন।"............... ................... " সীমান্ত পাহারা দিয়ে যারা ১৫ কোটি মানুষের ঘুমকে নিশ্চিন্ত নিরাপদ করে রাখছে...তাদের ভাষাটা আপনার মতো সুশীল লেখরা বুঝতে না পারার ব্যর্থতার জন্যেই এই ব্যবস্থা.. জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:০১ লেখক বলেছেন: বিডিআর এর দায়িত্বের অন্যতম কাজই হচ্ছে সীমান্ত রক্ষা। তারা সেই শপথ নিয়েই টুপি মাথায় নেন। আপনি কোন ''সুশীল ''এর ছায়া মাড়িয়ে বিদ্রোহ কে সমর্থন করছেন ? আপনি কি দেশের দুই বাহিনী কে মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাইছেন ? প্লিজ, আবেগ দিয়ে বিচার করবেন না। রাষ্ট্রের স্বার্থের কথা ভাবুন। গুলি দেশের অভ্যন্তরে কোনো প্রতিবাদের ভাষা নয় । মুছে ফেলুন ৯. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৫৭ comment by: দেশী পোলা বলেছেন: আপনার সাথে সহমত, যারা বিডিআর এর সাপোর্টে লাফাচ্ছে তাদের পরিবার বা ঘর-বাড়ির উপরে এলোপাতাড়ি গুলি মারলে তাদের এত সাপোর্ট দেখা যেত না। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:০৪ লেখক বলেছেন: স্যালুট আপনাকে। আপনি আমার মনের কথাটি বলেছেন । মুছে ফেলুন ১০. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:০২ comment by: এস্কিমো বলেছেন: একটা দৃশ্য দেখলাম - সেনা বাহিনী পজিশন নিয়ে আছে আর একটা ছেলে তাদের পাশে দাড়িয়ে আছে। একন যদি ছেলেটা গুলিতে মরে - দায় কার। ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই বেসামরিক লোকজনের নিরাপত্তার বিষয়টা দেখার কথা কার, কোথাও তো দেখলাম না সোবাহিণী বা পুলিশ মানুষকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। একটা এম্বুলেন্সও দেখলাম না। রেবদের দেখলাম গারবেজের পিছনে লুকিয়ে আছে আর মানুষ আশপাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। রেবের নিজের নিরাপত্তার বিষয়টা যতটা প্রকট ততটা বেসামরিক লোকজনের নিরাপত্তার বিষয়ে উদাসীন। বেসামরিক লোকজন মারা যাওয়ার দায় পুলিশ আর সরকারকে নিতে কবে। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:০৮ লেখক বলেছেন: আগে অস্ত্র জমা দিয়ে তারা ব্যারাকে যাক। আলোচনা করে সমস্যার সমাধান হোক। সরকারের দায় তো আছেই। সেটা আমি মূল লেখায় বলেছি। বাহিনী বিদ্রোহকে আমরা মেনে নিতে পারি না কোন মতেই। মুছে ফেলুন ১১. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:০২ comment by: মোহাম্মদ আরজু বলেছেন: ''মনে রাখবেন , কলাম লিখে অবশ্যই প্রতিবাদ জানানো যায় সৃজনের ভাষায়।'' 'সৃজন' এর ভাষায় প্রতিবাদ জানানো তো বুদ্ধজীবীগো কাজ। এই যে আপনে একটা কলাম সৃজন করলেন এইখানে। 'প্রতিবাদী' ব্লগার হইলেন! মনে রাইখেন, যেই সেনাবাহীনি আইন 'বহাল' রাখার জন্য গেছে তারাও কিন্তু 'স্বশস্ত্র' ছিল। সুতরাং বিডিআর সিপাহীদের ন্যায্য অবস্থা নিশ্চিত করার জন্য যদি নতুন আইন 'বহাল' করতে হয় তবেও 'স্বশস্ত্র' হওয়া লাগবো। আইজ যেইটা হইলো। এইটা না হইলে ''দাবী আবার, বহু বার'' জানানোর সুযোগ ছিল! দেখেন নাই '২৮ অক্টোবরে, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ''কিভাবে শিশু - নারীরা হন্য হয়ে কাঁদছে। বাড়ি ফিরতে পারছে না।'' ? অবশ্য আপনেরা শিল্প সাহিত্যের সংস্কৃতিবান মানুষ। নরোম মনের মানুষ। এইসব সহ্য নাও হইতে পারে। সব বদলে যা সহ্য করতে হয়। আপনেরা নন্দন সৃজন করে যান। কে বাধা দিছে? তাই বইলা এইসব বিদ্রোহের দিকে অভিযোগ আঙুল তোলার অধিকার আপনাগোরে কেউ দেয়নাই। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:২০ লেখক বলেছেন: দেখেন নাই '২৮ অক্টোবরে, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ''কিভাবে শিশু - নারীরা হন্য হয়ে কাঁদছে। বাড়ি ফিরতে পারছে না।'' ? ও আপনার মতবাদ এবার বুঝতে পারছি। আমি যা বলি, যা লিখি বুঝে শুনেই লিখি। বিদ্রোহ দমনে সেনাবাহিনী সশস্ত্র যাবে না তো , খালি হাতে যাবে নাকি ? ওরা তো প্রথমেই দুই সেনা অফিসার ( কর্নেল মুজিব ও কর্নেল এনায়েত) কে খুন করেছে। জিম্মি করে শুরু করছে গুলি । Click This Link মুছে ফেলুন ১২. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:০৮ comment by: খালেদ সময় বলেছেন: ইলিয়াস ভাই অবশ্যই আপনার বক্তব্যের যুক্তি আছে কিন্তু আজকের এই বিদ্রোহ হঠাৎ করেই শুরু হয়নি। এটা দীর্ঘদিনের বঞ্চনার প্রতিফলন। কেননা সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরী আমাদের জওয়ানরা রাতে সীমান্ত পাহারা দেয়ার পর আবার দিনে ক্যাম্পে ডিউটি করেন। কিন্তু সামরিক বাহিনীর মতো ফ্যাসিলিটিজ পাননা। এমনকি তারা মিশনেও যেতে পারেন না। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:২৪ লেখক বলেছেন: সেটা রাষ্ট্রীয় আইন। মিশনে বিডিআর কে কি নেবে জাতিসংঘ ? এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি রয়েছে। বঞ্চনার বিষয়টি সরকার সুরাহা করতেই হবে। তা আমি মূল লেখায়ই বলেছি। রাষ্ট্রীয় আইন তো সবাইকে মানা উচিৎ। না হলে - চেইন অ কমান্ড ভেঙে পড়বে। মুছে ফেলুন ১৩. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:২৯ comment by: বহ্নিশিখা বলেছেন: মীরজাফর বিডিআরের রক্ত চাই। সেনাবাহিনী কি বসে বসে আঙুল চোষে নাকি? যে দুই সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হল তার বিচার চাই। বিডিআর জাতিসংঘে যাইতে চায়!!! চোরাচালানে সহায়তা করে দেশটারে শেষ কইরা দিতাছে, আবার বড় বড় কথা। এই ব্লগে বিডিআরের দালালদেরও বিচার চাই। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:৩৪ লেখক বলেছেন: সরকার এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নেবে বলেই আশা করছি । মুছে ফেলুন ১৪. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:৩৩ comment by: আহসান হাবিব শিমুল বলেছেন: বালছাল লেখা।মাইনাস। আপনি আসলেই বুদ্ধজীবি!লিখতে থাকুন ৫ বছরে শীর্ষে যেতে পারবেন। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:৪৬ লেখক বলেছেন: বালছাল লেখা আপনার এই ভাষার জন্য শিকল পরানো হলো । মুছে ফেলুন ১৫. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:৩৬ comment by: মোহাম্মদ আরজু বলেছেন: ধুর! এইটাই খেয়াল করলেন না যে আমি কি বলছি। কইলাম যে আইন প্রয়োগ করার জন্য সেনাবাহীনি ওইখানে স্বশস্ত্র গেছে সে আইনে বিডিআর সিপাহীরা দীর্ঘদিন ধইরা বঞ্চিত।(একইভাবে বঞ্চিত আর্মির সাধারন সিপাহীরাও)। আর দীর্ঘদিন ধইরা 'সৃজন' এর ভাষায় প্রতিবাদ জানায়াও যখন লাভ হয়নাই তখন বিডিআর সিপাহীরাও 'স্বশস্ত্র' হইছে। এইটা হওয়া ছাড়াযে সম্ভব না সেইটার প্রমান হইলো এতদিন কিছু হয় নাই। এখন প্রশ্ন হইলো দুই পক্ষের কোন পক্ষে দাড়ায়া কথা কইতাছেন? (আবার নিরপেক্ষতার দাবী কইরেন না য্যান!)। আর্মি আর বিডিআরের স্বল্পসংখ্যক অভিজাতের 'রাষ্ট্র' আপনার রাষ্ট্র, নাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ আর্মি আর বিডিআর সিপাহীর রাষ্ট্র আপনের রাষ্ট্র? কোন রাষ্ট্রের স্বার্থ আপনে দেখেন সেইটা হইলো কথা। ------------------------------------------------------------------------ অফটপিক: আপনের কবিতা আমার ভালো লাগে। আপনে বরং একটা কবিতা লেখেন ইলিয়াস ভাই। মানবিক আবেদন সমৃদ্ধ কবিতা। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:৪৮ লেখক বলেছেন: আজ কবিতা হবে না। আমার বোন গুলিবিদ্ধ । তাই ডাক দিয়ে যাই মানুষের পক্ষে দাঁড়াবার। মুছে ফেলুন ১৬. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:৩৬ comment by: বহ্নিশিখা বলেছেন: শিমুল মিয়া, আমার তো আপ্নেরেই বালছাল মনে হইতাছে। চোর বিডিআরের দালালি করে কয় ট্যাকা পান? জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:৫০ লেখক বলেছেন: একুশের মাসে আমি সবাইকেই শব্দপ্রয়োগে সংযত হতে বিনীত অনুরোধ করি। মুছে ফেলুন ১৭. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:০২ comment by: মোহাম্মদ আরজু বলেছেন: ''আজ কবিতা হবে না। আমার বোন গুলিবিদ্ধ । তাই ডাক দিয়ে যাই মানুষের পক্ষে দাঁড়াবার।'' ------------------------ ওয়াও! কি কবিতা! ওহ! কি মানবিক! আপনের হাত আসলে কবিতারই হাত ইলিয়াস ভাই। বাস্তবতার চাইতে অনেক দুরের কবিতার জগতই আপনের। চালায় যান। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ১৮. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:০২ comment by: নাজিম উদদীন বলেছেন: বাংলাদেশে মনে হয় সোজা-সাফটা প্রতিবাদে কিছু হয় না, তারপরেও বিডিআরদের এভাবে এক্সট্রিম পজিশানে যাওয়া ঠিক হয়নি। এতে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমমুর্তি নষ্ট হয়েছে। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ১৯. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:০৫ comment by: গেওর্গে আব্বাস বলেছেন: দুঃখজনক। রাষ্ট্রের কাঠামো ও কঙ্কাল নিয়ে ভাবিত ... জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২০. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৩৬ comment by: আছহাবুল ইয়ামিন বলেছেন: সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। তবে আমার মনে হয় সেটি শুধুমাত্র আপাত উদ্ভুত পরিস্হিতি শান্ত করার জন্য। সামরিক বা আধা সামরিক সরকারী বাহিনীর বিদ্রোহ কোন রাষ্ট্রেই ভালো চোখে দেখা হয় না। সাধারণত কঠিন ব্যবস্হা নেয়া হয়। আমার ধারণা এখানেও নেয়া হবে। ভবিষ্যতই বলে দিবে শেষ পর্যন্ত কিভাবে বাংলাদেশ সরকার ব্যপারটিকে দেখবে। পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে আজ যা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণই অপরিকল্পিত ও আকষ্মিক; অনেকদিনের পুঞ্জিভুত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সে হিসেবে বিডিআর জওয়ানদের জন্য আমরাও সহমর্মী। কিন্তু এসকল বাহিনীতে চেইন অব কমান্ডের কোন ব্যতিক্রম সহ্য করা হয় না। এবং এখানেও যে করা হবে না - সেটিই সত্য। আজ হোক কাল হোক, আমরা চাই বা না চাই, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ব্যবস্থা করা হবে, এবং সেটি রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই। নতুবা সামরিক বাহিনীগুলোতে শৃঙ্খলা ভেঙে পরবে। আজ এখানে কাল সেখানে বিদ্রোহ দেখা দিবে। তবে আজকের ঘটনার একটি ভালো দিক হচ্ছে এখন থেকে সিপহীদের সুযোগ সুবিধার দিকেও কিছুটা নজর দেয়া হবে। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ২১. ০২ রা মার্চ, ২০০৯ রাত ৩:১৭ comment by: সোনার বাংলা বলেছেন: আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে কয়েক জন ব্লগ বুদ্ধিজীবির বুদ্ধি দেকলাম। জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন আপনার জবাবটি লিখুন ০২ রা মার্চ, ২০০৯ সকাল ৮:৫২ লেখক বলেছেন: এখন বুঝুন তাদের বুদ্ধির দৌড় ! এরা আমাদের তাত্তিক এই ব্লগ কম্যুনিটির ! মুছে ফেলুন সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৩
false
rg
এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে রাজনীতি বাংলাদেশ নতুন নয় ১৯৮৬ সাল। সে বছর মার্চ মাসের ৬ তারিখ আমাদের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। সে বছর পরীক্ষার হলে হাইস্কুলের শিক্ষকরা অনুপস্থিত ছিলেন। তখন স্বৈরাচার এরশাদ জামানা। হাইস্কুলের শিক্ষকরা তখন কি সব সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির আশায় সারাদেশে আন্দোলন করছিলেন। আমাদের পরীক্ষার হলে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, আর থানার প্রশাসন দিয়ে এরশাদ সাহেব পরীক্ষা নির্বিঘ্নে নিলেন। আমাদের পরীক্ষা যখন শেষ হল, দেখলাম মহান শিক্ষকদের সেই আন্দোলন হঠাৎ একদিন বন্ধ হয়ে গেল। সরকারের কাছে দাবি দাওয়া কতোটা আদায় হয়েছিল, কতোটা সরকার পূরণ করেছিল, তা আর আজ মনে নেই। তবে এটুকু এখন বুঝতে পারি, আমাদের এসএসসি পরীক্ষার বছর শিক্ষকদের অমন একটা অযৌক্তিক আন্দোলনের দিকে তখন ঠেলে দিয়েছিলেন আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো। তখনকার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যা নেতৃত্ব দিয়েছিল। তারা তখন শিক্ষকদের বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন, আপনারা এসএসসি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন না করলে সরকারের একটা টনক নড়বে। গত শতাব্দির ১৪ বছর আর এ শতাব্দির ১৪ বছর মোট ২৮ বছর। এই ২৮ বছর পর এখন মনে হচ্ছে, তখন যারা আমাদের শিক্ষকদের জিম্মি করে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনায় বিঘ্ন ঘটাতে চেয়েছিল, এখনো সেই রাজনৈতিক দলগুলোর আচার আচরণে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। এখনো কোমলমতি ছেলেমেয়েদের জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা, এসএসসি পরীক্ষার সময় সেই একই রাজনীতি কাজ করছে। আমাদের জীবন থেকে ২৮ টা বছর চলে গেছে। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মন-মানসিকতায়, চিন্তা-চেতনায়, হাবভাব, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে, দুরদর্শীতায় আদৌ কোনো পরিবর্তন আসেনি। আর আমাদের সেই রাজনৈতিক দলগুলোই ক্ষমতায় গিয়ে সব সময়ই দাবি করছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে।স্বৈরাচার এরশাদের সময় আমরা শিক্ষকদের ছাড়াই এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। যার পেছনে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই মূলত দায়ী ছিল। সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে নষ্ট করার সেই যে রাজনৈতিক কুমতলব, কুটকৌশল, দুষ্টুবুদ্ধি তখনো চালু ছিল, এখনো তাই আছে। এখন বাড়তি তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নিরাপত্তার ইস্যু। এখন এসএসসি পরীক্ষার সময় দেশের একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার ২০ দলীয় জোট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সরকারের বিরুদ্ধে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল দিয়েছে। ২৮ বছরে এই একটা জায়গায় কিছু পরিবর্তন শুধু দেখা গেল। ২৮ বছর আগে সরকার হাইস্কুলের শিক্ষকদের ছাড়াই পরীক্ষা নেওয়ার মত সামর্থ রেখেছিল। আর এখন সেই একই বাংলাদেশে ২৮ বছর পর ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়ে সরকার হরতালের দিন পরীক্ষা না গ্রহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মানে সরকারের সামর্থ আগের চেয়ে কমেছে। আমরা যদি খুব বধির না হই, একেবারে অন্ধ না হই, একটু অনুসন্ধান চালাই, তখন দেখব, তখন এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আন্দোলনে নামিয়েছিল এই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সবাই একাট্টা হয়ে। ২৮ বছর পর এখন ক্ষমতার পালাবদলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। কিন্তু বিএনপি তো সেই পূরণ অভিজ্ঞতা ভোলে নাই। বান্দর নাকি কখনো গাছে ওঠা ভোলে না। তো তখন আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো একসাথে যখন স্কুলের শিক্ষকদের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামিয়েছিল, তখন এই ২৮ বছর পরের কথা মাথায় ছিল না। ২৮ বছর পর যে সেই একই এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সরকার ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা দিতেও সামর্থ হারাতে পারে, এই বিষয়টা তখন আমাদের রাজনীতিবিদদের মাথায় ছিল না। নইলে তখন হয়তো ছেলেমেয়েদের জীবনের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিয়ে আমাদের রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করতেন না।স্বৈরাচার এরশাদকে হটিয়ে তথাকথিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আমাদের জীবন থেকে ছয়টি বছর সেশনজটের যে আকাল গেছে, আমাদের জীবনের সেই মহামূল্যবান ছয়টি বছর কিন্তু আওয়ামী লীগ বা বিএনপি দেশে তথাকথিত গণতন্ত্র এনেও ফিরিয়ে দিতে পারেনি। আমাদের সবার জীবনে তাই শিক্ষাজীবন শেষ করতে ছয় বছর বেশি সময় লেগেছিল। কিন্তু যখন আমরা পাস করে বের হলাম, তখন আবার গণতান্ত্রিক সরকার কিন্তু আমাদের সবার যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। এটাই আমরা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি। বাংলাদেশে রাজনীতিতে এত বেশি দুবৃত্তায়ন হয়েছে যে, রাষ্ট্রের কোথাও কোনো কিছু আর রাজনীতির বাইরে নাই। এখন বিএনপি বলছে, ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা দিয়ে কি হবে? বিএনপি যদি আওয়ামী লীগকে হটিয়ে ক্ষমতায় যেতেই না পারলো, তাহলে ছেলেমেয়েদের এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে তারা কি করবে? কিন্তু কয়েক দিন আগে মাত্র কয়েক হাজার এ লেভেল ও লেভেল পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময় কিন্তু সকল আন্দোলন কর্মসূচি পরীক্ষার আওতামুক্ত ছিল। কারণ, দেশে কাদের ছেলেমেয়েরা ও লেভেল ও লেভেল পড়ে, তা কিন্তু আমরা ভালো করেই জানি। অবৈধ টাকায় যারা বাংলাদেশে এখন দাপট দেখাচ্ছে, চুরি চামারি, ঘুষ, লুটপাট, দখল করে যারা পুঁজি বানিয়েছে, তাদের ছেলেমেয়েরাই এ লেভেল ও লেভেল পড়ছে। বাংলাদেশের গোটা রাজনীতিতে এখন ক্ষমতার প্রশ্ন। কে ক্ষমতায় থাকবে এটাই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর একমাত্র নসিয়ত। কি নিয়ে রাজনীতি করতে হবে তা কোনো বিষয় না। কিন্তু সবকিছু জনগণের নামে চালিয়ে দেবার যে প্রাচীন অভ্যাস তারা ধীরে ধীরে রপ্ত করেছে, সেখান থেকে এখনো মুক্তি ঘটেনি, অদূর ভবিষ্যতে যে মুক্তি ঘটবে, তার কোনো নিশানা এখনো দেখা যাচ্ছে না। এবার সারা দেশে অন্তত ১৫ লাখ ছেলেমেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবে। একটি পরিবারে যদি গড়ে সাত জন সদস্য হয়, তাহলে এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে গোটা দেশে অন্তত এক কোটি মানুষ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্য যদি ১৮ কোটি হয়, সেখানে এক কোটি মানুষ কেবল আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার ভবিষ্রৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এরা সবাই কিন্তু মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা নিম্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। কিন্তু এই উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কানে যায় না। যাচ্ছে না। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যে কি হারে বধির, তা তারা নিজেরাও জানে না। বিএনপি চাইছে এই উদ্বেগকে কাজে লাগিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করতে। সরকার চাইছে এই উদ্বেগকে কাজে লাগিয়ে জনপ্রিয়তা যে করেই হোক সরকারের পক্ষে রাখতে। মাগার মাঝখানে ১৫ লাখ কোমলমতি ছেলেমেয়েরা পড়েছে গ্যাড়াকলে। তারা এখনো নিশ্চিত নয় কোন দিন কোন পরীক্ষা হবে। কোন বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে তারা তৈরি হবে। ছেলেমেয়েরা তাদের মা-বাবাকে বারবার প্রশ্ন করছে, কোন বিষয় আগে পড়ব? কোন বিষয় আগে পরীক্ষা হবে, এটা তারা এখনো নিশ্চিত নয়। আমাদের মহান শিক্ষামন্ত্রীও নিশ্চিত নন কোন পরীক্ষা কখন নেবেন। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আপনার এই ষোষণাটি এতো দেরিতে আসল কোন যুক্তিতে? হরতালের দিন আপনি পরীক্ষা নিতে পারবেন না এটা দেশের ১৮ কোটি মানুষ জানে। আর আপনি জানেন না? পরীক্ষা নিয়ে রাজনীতি আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আগামীতেও হবে। এই অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আপনার আছে। তো ছেলেমেয়েদের একটা সোজা সাপটা কথা জানিয়ে দেন, যে প্রতি শুক্রবার এসএসসি পরীক্ষা হবে। অার সে অনুযায়ী পরীক্ষার বিস্তারিত সূচি আজই জানিয়ে দিন। আর সপ্তাহের ওই একটি দিন অন্তত প্রয়োজনে প্রশাসনের সকল শক্তি প্রয়োগ করে পরীক্ষা নেওয়া নিশ্চিত করুন। ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার হলে যাওয়া এবং হল থেকে বাসায় ফেরা পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। নইলে আপনি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ছেলেমেয়েদের কোমল মন নিয়ে তালবাহানা করতে পারেন না। বিএনপি না হয় ক্ষমতায় যাবার মোহে অন্ধ হয়ে গেছে। আপনারাও ক্ষমতায় থাকার মোহে অন্ধ আছেন। তারা গুহা থেকে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করছে। আর আমাদের বেনিয়া মিডিয়া তাই প্রচারে দলবেধে নামছে। শুধুমাত্র আমাদের মিডিয়া যদি রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মূসূচি প্রচার বন্ধ করে দেয়, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি অন্তত শতকরা ৯৮ ভাগ ফেল করবে। কারণ সাধারণ জনগণ এই মাতাল রাজনীতি আর বিশ্বাস করে না। মিডিয়া বরং রাজনৈতিক কর্মসূচি মধ্যরাতে হলেও তা প্রচার করে জনমনে এক ধরনের আতংক সৃস্টি করায় এখন সমান অপরাধ করে যাচ্ছে। রাজনীতির মত আমাদের মিডিয়াও এখন সমানভাবে এই দুবৃত্তায়নে অংশ নিচ্ছে। বিএনপি যদি পরীক্ষার দিন হরতাল অবরোধ ডেকে শতকরা ৮০ বা ৯০ ভাগ দায়ী হয়, সরকার কিন্তু পরীক্ষা যথাসময়ে নিতে না পারার ব্যর্থতার জন্য বাকি ২০ ভাগ বা ১০ ভাগ দায়ী। এই দায় বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউ এড়াতে পারে না। আমাদের দুষ্টু রাজনীতি এই দায় কিছু্তেই এড়াতে পারে না। যে বা যারা সাধারণ মানুষের উপর পেট্রোল বোমা ছুড়ছে, মিডিয়া তাকে দুষ্কৃতকারী বা দুবৃত্ত বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। এসব দুবৃত্তদের কেন সঙ্গে সঙ্গে ক্রোসফায়ার দেওয়া হচ্ছে না? পুলিশ প্রটেকশানে যাত্রীবাহী বাসেও হামলা হচ্ছে। সরকার জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই ব্যর্থতার দায় সরকারকেই নিতে হবে। বিএনপি ও তার জোট নিরীহ জনগণের লাশের উপর দিয়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার খেলায় নেমেছে। সরাকারও সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জনপ্রিয়তা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। মাগার সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো পক্ষই কিন্তু মোটেও উদ্বিগ্ন নয়। এই হল বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের রাজনীতি। আগেও এখানে সাধারণ মানুষের লাশের রাজনীতি হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আজ পর্যন্ত রাজণনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোনো হত্যার বিচার হয়নি। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতির নামে নিরীহ সাধারণ মানুষ হত্যা করার যেন লাইসেন্স পেয়েছে। পার্থক্য শুধু আগে দলগুলো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের আগে হোমওয়ার্ক করতো। সারা দেশে জনগণের সঙ্গে ধাপে ধাপে কর্মসূচি করে, জন যোগাযোগ বাড়িয়ে তারপর আন্দোলনে যেত। এখন মাঝরাতে মিডিয়াকে ডেকে বা গুহা থেকে প্রেসরিলিজ পাঠিয়ে সরাসরি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করছে। যে কোনো রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি মিডিয়ায় প্রচার বন্ধ করতে হবে। এটা প্রয়োজনে আইন করে বন্ধ করুন। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো মিডিয়ার কল্যানে যে রাজনীতি এখন করছে, তা আসলে রাজনীতির চরম দুবৃত্তায়ন। বিএনপিকে তাদের এই আন্দোলন থেকে সংলাপের টেবিলে ফিরিয়ে আনা ছাড়া সরকারের কাছে অন্য কোনো বিকল্প নাই। বিএনপি'র ও এই সন্ত্রাস বন্ধ করে সংলাপে বসা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। যত তাড়াতাড়ি উভয় পক্ষ সংলাপের টেবিলে বসবে, তত দ্রুত জনগণ এই উদ্বেগ উৎকণ্ঠা থেকে স্বাভাবিক হবে। সরকার যদি মনে করে কিসের সংলাপ, কাদের সাথে সংলাপ, তা শেষ পর্যন্ত কোনো যুক্তিতে পানি পাবে না। আবার বিএনপি যদি মনে করে এভাবে সাধারণ জনগণের উপর টাকার বিনিময়ে দুবৃত্ত দিয়ে হামলা চালিয়ে আন্দোলন আরো বেগবান করা যাবে, সেই যুক্তিও পানি পাবে না। উভয় পক্ষকেই নমনীয় হয়ে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের স্বার্থেই তাদের বসতে হবে। নইলে তাদের রাজনীতি মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাক্ষান করবে। অন্তত নতুন প্রজন্ম নিশ্চয়ই করবে। এখন যারা এসএসসি পরীক্ষা দেবে, এরা বড় হয়ে এই রাজনীতি ঘৃণা করবে। নিশ্চয়ই করবে। যে ১৮ কোটি মানুষের সমর্থন নিয়ে আপনারা এখন রাজনীতি করছেন বলে দাবি করছেন, আপনারা কি দয়া করে একবার একটা ওপেন গণভোট করবেন, যে আপনাদের এই রাজনীতি দেশের কয়জন মানুষ সমর্থন করছে? স্রেফ কাউকে কোনোরূপ মটিভেশান না করে, প্রভাব না খাটিয়ে, সম্পূর্ণ জনগণের উপর বিষয়টি ছেড়ে দিয়ে একটি গণভোট করবেন? আপনাদের যদি সত্যি সত্যি জনগণকে সেবা করার এতোই খায়েস, তাহলে একবার একটা গণভোট দিয়ে দেখুন। আমার ধারণা, দেশের শতকরা আশিভাগ মানুষ আপনাদের এই নষ্ট রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করবে। কারণ জনগণের নাম ভাঙিয়ে আপনারা এই ৪৫ বছরে গোটা বাংলাদেশকে এক নরক রাজ্যে পরিনত করেছেন। আপনাদের নিজেদের যার যার আখের গোছানো হয়েছে। বিদেশে আপনাদের দলীয় নেতাকর্মীদের নিরাপদ সেকেন্ড হোম রেডি আছে। সেখানে সবার ছেলেমেয়েরা আরামে নির্বিঘ্নে নিরাপদে পরীক্ষা দিচ্ছে। রাজনীতিমুক্ত পরিবেশে পড়াশুনা করছে। আর আপনারা রাজনীতির নামে দেশের শিক্ষাঙ্গন নিয়ে এক মহা দুষ্টু খেলায় মেতেছেন। এই খেলা দয়া করে বন্ধ করুন। দেশের ১৫ লাখ কোমলমতি ছেলেমেয়েদের যে প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে রেখে আপনারা যে রাজনীতি করছেন, এটা কোনো বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না। আপানাদের রাজনীতির খেলায় কে জিতবে তা নিয়ে দেশের সাধারণ জনগণের কোনো লাভ হবে না। সত্যি সত্যিই হবে না। কেবল আপনাদের লাভ হবে। যারা ক্ষমতায় থাকবেন তারা লুটপাট করবেন, চুরিচামারি করবেন, সরকারি সম্পত্তি ভোগদখল করবেন। মাগার সাধারণ নিরীহ জনগণের তাতে কিচ্ছু আসে যায় না। আমরা নিরাপদে নিজেদের কাজকর্ম করতে চাই। ছেলেমেয়েরা নির্বঘ্নে পড়াশুনা করতে চায়। নিরাপদে পরীক্ষা দিতে চায়। এই সামান্য চাওয়া নিয়েও আপনাদের নষ্ট রাজনীতির স্বীকার আর আমরা হতে চাই না। আপনারা জনগণকে নিরাপদে রেখে, জনগণকে দুর্ভোগ না দিয়ে কিভাবে রাজনীতি করবেন, কিভাবে ভাগাভাগি করবেন, কিভাবে লুটপাট করবেন, সেজন্য নতুন করে কৌশল ঠিক করেন, নতুন কোনো ফর্মুলা বের করেন। আপনাদের সেই রাজনীতি নিয়ে সাধারণ জনগণের কোনো মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু দয়া করে আপনাদের এই তামাশার রাজনীতি বন্ধ করুন। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, কোমলমতি ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার সময়সূচি দয়া করে হরতাল অবরোধ মুক্ত শুক্রবার নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন। নইলে এসব ছেলেমেয়েরা যখন আর কিছুদিন পর ভোটার হবে, সেই ভোটগুলো যখন আপনারা চাইতে যাবেন, তখন যে কোনো রাজনৈতিক দলের মুখে তারা কিন্তু থুথু ছিটিয়ে দিতে পারে। সেই থুথু থেকে বাঁচার আগে এখনই কিছু একটা করুন। নইলে নতুন প্রজন্ম কিন্তু আপনাদের সকল রাজনৈতিক দলের সকল অপকর্মকে তীলে তীলে মনে রাখছে। যার একদিন এই বাংলাদেশে ধাপে ধাপে বিচার হবার সম্ভাবনাও কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অতএব সাধু সাবধান।.....................................১ লা ফেব্রুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
mk
সন্ত্রাসীরা সবসময় আন্তর্জাতিক হয় বাংলাদেশে অর্ধশতাধিক জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্বের কথা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। দেশব্যাপী একযোগে পাঁচ শতাধিক স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০০৪ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জনসভায়ও গ্রেনেড হামলা হয়েছে। সারা দেশে এ রকম বহু ঘটনা ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। পুলিশি তত্পরতায় সব জঙ্গি নির্মূল হয়েছে কি? নাকি কৌশলগত কারণে আরো বড় ধরনের হামলা পরিচালনার জন্য তারা সংগঠিত হচ্ছে এবং সময় নিচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ শেষোক্ত দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করছে। গতকাল কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বাংলাদেশসহ চারটি দেশের ২৮টি জঙ্গি সংগঠন জোট গঠন করে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই জোটে রয়েছে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী, হুজি, জেএমবিসহ কয়েকটি সংগঠন, পাকিস্তানের জামায়াত আল-পাকিস্তান, কাশ্মীরভিত্তিক সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ, লস্কর-ই-তৈয়বা, ভারতের মুজাহিদিন, হরকাতুল জিহাদ-আই, উলফা এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সলিডারিটি ইউনিয়ন (আরএসও) ও আরাকান আর্মি। আপাতত তারা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলকে ভিত্তি করে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সংগ্রহসহ নানা ধরনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, দুই বছরের মধ্যে তারা বর্তমান সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। অবাক হওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে, সেই পরিকল্পনায় ক্ষমতাসীন দলের বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকার বেশ কিছু নেতা জড়িত রয়েছে বলেও তথ্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলে তাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ইউরোপের আরো কিছু দেশে ইতিমধ্যে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেসব দেশের অতি উন্নত পুলিশ বা গোয়েন্দা বাহিনী তাদের আটকাতে পারেনি। সেখানে আমরা যদি মনে করি, বাংলাদেশে জঙ্গিরা শক্তিহীন হয়ে পড়েছে, তারা আর বড় কোনো হামলা চালাতে পারবে না—তাহলে সেটি শুধু ভুল নয়, আত্মঘাতী ভুল হিসেবে গণ্য হবে। বিশেষ করে যেখানে আইএস, আল-কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের হামলার জন্য ঘোষিত তালিকায়ও বাংলাদেশের নাম রয়ে গেছে। বরং সবচেয়ে খারাপ আশঙ্কাগুলো মাথায় রেখেই তা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। এখনো এ ক্ষেত্রে যেসব ঘাটতি দেখা যায়, তা আমাদের শঙ্কাই কেবল বাড়ায়। তার একটি হচ্ছে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন। দুই দিন আগেই অর্থমন্ত্রী এক বক্তৃতায় স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশে যত চোরাচালান হয়, তার ৮০ শতাংশই থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর চোরাচালান থেকে আসা অর্থের বড় অংশই চলে যায় জঙ্গিদের হাতে। এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং বা এপিজিও মনে করে, বাংলাদেশে মুদ্রাপাচার ঠেকানোর ক্ষেত্রে এখনো অনেক দুর্বলতা রয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে, কিভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অহরহ অর্থ আসছে। আর তা দিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে বৃহত্তর চট্টগ্রামে একের পর এক জঙ্গি আস্তানা তৈরি করা হচ্ছে। জানা যায়, কয়েক দিন আগেই চট্টগ্রাম সফর করে গেছেন পাকিস্তান আইএসআইয়ের কর্নেল মর্যাযদার একজন কর্মকর্তা। ধারণা করা হয়, কয়েক ডজন পাকিস্তানি গুপ্তচর এখনো বাংলাদেশের নানা স্থানে লুকিয়ে ধ্বংসের আয়োজন করে চলেছে। তাই শুধু অস্বীকার নয়, জঙ্গি মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণই এখন সবচেয়ে জরুরি। সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০২
false
rg
বাংলা গানে মান্না দে এক কালজয়ী অধ্যায়!!! কলকাতার যে বাড়িতে মান্না দে জন্মগ্রহন করেন, সেই বাড়িতে সকাল থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত একটানা গান বাজত। মান্না দে'র বাবা পূর্ণচন্দ্র দে ছিলেন ব্যাংকার। মান্না দে'র মেজো কাকা হেমচন্দ্র দে ছিলেন প্রকৌশলী। আর সঙ্গীতাচার্য কৃষ্ণচন্দ্র দে হল মান্না দে'র ছোট কাকা। কলকাতার এক একান্নবর্তী পরিবার। মান্না দে'র ছোট কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে মাত্র তেরো বছর বয়সে অন্ধ হয়ে যান। উনি ব্যাচেলর ছিলেন। সারাদিন বাড়িতে বাচ্চাদের সবার দেখাশোনা করতেন। মাত্র আঠারো বছর বয়সে কৃষ্ণচন্দ্র দে একজন পূর্ণাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। কৃষ্ণচন্দ্র দে গান শুরু করার আগে মান্না দে'র পরিবারের কেউ সারেগামাও জানত না। মান্না দে'র এক আত্মীয় হরেন্দ্রনাথ শীল ছিলেন কলকাতার বিরাট জমিদার। তিনি কৃষ্ণচন্দ্রকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। অন্ধ কৃষ্ণচন্দ্র মাত্র পাঁচ বছরে ওস্তাদের কাছে সব ধরনের গানের তালিম নিলেন। নাট্যকার শিশির কুমার ভাদুরীর 'সীতা' নাটকে কৃষ্ণচন্দ্র দে বৈতালিকের গান করতেন। 'জয় সীতাপতি সুন্দর প্রজারন্ধন কারী, রাবন রামচন্দ্র সত্যব্রত ধারী...'। 'অন্ধকারের অন্তরেতে অশ্রুবদল চলে...'। কৃষ্ণচন্দ্র দে'র কণ্ঠে এই গান শুনে লোকে তখন কাঁদত। কলকাতায় নাটকে এই দুটি গান করে কৃষ্ণচন্দ্র দে রাতারাতি সবার হৃদয় জয় করেন। কলকাতায় তখন ছেলেমেয়েদের কম্বাইন্ড কলেজ ছিল মাত্র একটি। স্কটিস চার্জ কলেজ। মান্না দে সেই স্কটিস কলেজের ছাত্র ছিলেন। স্কটিস ডক্টর আকুয়াড ছিলেন স্কটিস কলেজের প্রিন্সিপাল। কলেজের ছেলেমেয়েরা একদিন প্রিন্সিপালকে গিয়ে ধরলেন, আমাদের এক বন্ধু আছে, ও খুব ভালো গান করে, ও ইন্টারকলেজে নাম দেবে না কেন? প্রিন্সিপাল মান্না দেকে ডেকে পাঠালেন। জিজ্ঞেস করলেন, তুমি গানে নাম দিচ্ছ না কেন? জবাবে মান্না দে বললেন, আমার কাকা গান করতে দেবে না। জবাবে প্রিন্সিপাল বললেন, কেন, কেন? মান্না দে জবাবে বললেন, কাকা বলেছেন, ওরা তোমাকে দু'একটা মেডেল বা কাপ দেবে, ওটা তোমার মাথা ঘুরিয়ে দেবে। তুমি গাইয়ে হয়ে যাবে। তারপর আর তোমার গান হবে না। আই হ্যাভ ডিফারেন্ট থিংস ইন মাই মাইন্ড ফর ইউ। আগে লেখাপড়া শেষ কর। তারপর দেখা যাবে। মান্না দে স্কটিস কলেজে গানের দশ বিষয়ে টানা তিন বছর ফার্স্ট হয়েছিলেন। ধ্রুপদী, খেয়াল, ঠুমরি, ভজন, গজল, টপ্পা, বাংলা মর্ডান, বাউল, ভাটিয়ালি ও কীর্তন। পরপর তিন বছর মান্না দে টানা ফার্স্ট হওয়ায় ফোর্থ ইয়ারে তাঁকে আর ছোট কাকা কৃষ্ণচন্দ্র গাইতে দেননি। কাকা বলেছিলেন, ইউ আর দ্য চ্যাম্পিয়ন। তোমার আর গান গাইতে হবে না। ইউ সুড নট গো টু পার্টিসিপেট। এই ঘটনার পর মান্না দে মনে মনে ভাবতেন, নিশ্চয়ই আমি একদিন গাইয়ে হব। কিন্তু মান্না দে'র বাবা ও মেজো কাকা চাইতেন, ও একজন ভালো উকিল হবে। মেজো কাকা হেমচন্দ্র বলতেন, আমাদের পরিবারে একজন বড় উকিল নেই। তুমি ভালো করে পড়াশুনা কর। তোমাকে লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়তে পাঠাব। তুমি ব্যারিস্টারি পাস করে বড় উকিল হবে। মান্না দেরা চার ভাই। মান্না দে সেজো। বড় প্রণব, প্রকৌশলী। মেজো প্রকাশ, ডাক্তার। মেজো কাকা প্রকাশকে বলেছিলেন, তুমি ডাক্তারি পড়বে। এবং প্রকাশ দে ডাক্তারি পড়েছিলেন। মান্না দে সেজো। মান্নাকে বললেন, আমাদের পরিবারে কোনো লয়্যার নেই। তুমি ল পড়েব। কিন্তু মান্না দে মনে মনে একজন গাইয়ে হতে চাইতেন। স্কটিশ চার্চ কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি তার সহপাঠীদের গান শুনিয়ে আসর মাতিয়ে রাখতেন। শুরুতে ছোট কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে'র কাছে এবং পরে ওস্তাদ দাবির খানের কাছ তিনি সঙ্গীতে তালিম নেন। ১৯৪৩ সালে মান্না দে স্কটিস কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশান করেন। কলকাতায় কয়েকটি স্টুডিওতে তখন সঙ্গীতে কাজ করতেন। ১৯৪৩ সালে মান্না দে ছোট কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে'র সঙ্গে বোম্বে বেড়াতে যান। সেখানে শুরুতে তিনি কৃষ্ণ চন্দ্র দে’র অধীনে সহকারী হিসেবে এবং তারপর শচীন দেব বর্মণের অধীনে কাজ করেন। পরে অন্যান্য স্বনামধন্য গীতিকারের সান্নিধ্যে আসেন। এভাবে এক সময় স্বাধীনভাবে নিজেই কাজ করতে শুরু করেন। ঐ সময় তিনি বিভিন্ন হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্য সঙ্গীত পরিচালনার পাশাপাশি ওস্তাদ আমান আলি খান ও ওস্তাদ আবদুর রহমান খানের কাছে হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নেন। ছোট কাকার সঙ্গে বোম্বে বেড়াতে গিয়েই তাঁর সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করে টানা পাঁচ বছর সেখানে কাজ করেছিলেন মান্না দে। ওস্তাদ আমান আলি খান মারা যাবার পর ওস্তাদ আবদুর রহমানের কাছে গান শিখতেন। ওস্তান আবদুর রহমান মারা গেলে তার শিষ্য তুলসী দাসের মা'র কাছে গান শিখতেন মান্না দে। তিনি মারা গেলে ওস্তাদ গোলাম মোস্তফা খানের কাছে গান শিখতেন। মান্না দে'র ইচ্ছে ছিল শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত বা নজরুল সঙ্গীতে তিনি সীমাবদ্ধ থাকবেন না। সঙ্গীতের সকল শাখায় বিচরণ করবেন। সব ধরনের গান শিখবেন। তাই তিনি ধ্রুপদী থেকে সঙ্গীতের সকল শাখায় নানাভাবে গান শিখলেন। সময় বড় পালোয়ান। সময় হচ্ছে সবচেয়ে বড় নিয়ামক। সময় বদলের সাথে সাথে গানের, মানুষের শোনার রুচি ও পছন্দে বদল আসে। একজন সফল শিল্পী সময়ের এই গতিকে যখন আত্মস্থ করতে পারেন, তখন তিনি হয়ে যান কালের, মহাকালের শিল্পী। মান্না দে এমনই একজন মহাকালের শিল্পী। যাকে কোনো একটা বিশেষণে ঠিক বিশ্লেষণ করা যাবে না। কৃষ্ণচন্দ্র দে প্রথম যেদিন মান্না দেকে নিয়ে ওস্তাদ আমান আলি খানের কাছে গেলেন, উনি কিছুতেই গান শেখাবেন না। ছোট কাকা কৃষ্ণচন্দ্র বললেন, ওস্তাদজি, ইয়ে হামারি ভাতিজি হে। ওর শিখতে যাতাহে। ইসলিয়ে ইয়ে কলকাতা ছে বোম্বে আয়া হে। বড় স্বপ্ন দেখিয়ে হে। ওস্তাদজি বললেন, ঠিক হে, ঠিক হে। তানপুরা মিলাও। মান্না দে তানপুরা নিয়ে মিলালেন। তারপর ওস্তাদকে জিজ্ঞেস করলেন, কিয়া শুনাও? কী গাইব? ওস্তাদের এটা ভালো লাগে নি। তিনি বললেন, মুলতানি শোনাও। তো মান্না দে 'আ...' বলে যখনই আওয়াজ দিলেন, ওস্তাদ বললেন, ভকবাজ বনধ কর। মান্না দে'র ওস্তাদের কথা তখন একদম ভালো লাগেনি। মান্না দে কুস্তি করতেন, বক্সিং শিখতেন। তরুণ বয়স। মাথা গরম অবস্থায় জানতে চাইলেন, খারাপ কি হইল? ওস্তাদ বললেন, ভকবাজ বনধ কর। মান্না দে রাগ করে টানপুরা রেখে দিলেন। তারপর ওস্তাদ বললেন, দেখো বেঠে, সুর লাগানা এক এইছি চিস হে, এক সুর লাগাও তো, হামকু মালুম বড়জায়ে কিসখিত কি মুলিও। ওস্তাদের এই কথায় মান্না দে'র সেই যে শিক্ষা আরম্ভ হল, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মান্না দে সেই থেকে এক নতুন গানের জগত খুঁজে পান। ওস্তাদের কাছে সুর নিয়ে বুঝতে লাগলেন, সঙ্গীতকে। সঙ্গীতের ভেতরের সুরকে। তালকে, লয়কে। গানের কথাকে। ভালো গান করার জন্য ভালো ওস্তাদের কাছে তালিম নেওয়াটা সবচেয়ে বেশি জরুরী। তিনিই রাস্তা দেখিয়ে দেন যে, এভাবে গাও, এভাবে গেও না। মান্না দে ছোট কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে'র কারণে সেই সুযোগটি পেয়েছিলেন। জীবনে ভালো ভালো ওস্তাদের কাছে গান শিখেছিলেন। গানের কথা, গানের সুর আর গান গাইয়ে এই তিন জিনিসের মিলন ঠিকঠাক না হলে সেই গান মানুষের অন্তর ছুঁয়ে যায় না। শচীন দেব বর্মণও কৃষ্ণচন্দ্র দে'র সাগরেদ ছিলেন। শচীন কর্তার গান একটু নাকে গাওয়া ঘরানার। তো, শচীন কর্তার সর্দি না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো গান রেকর্ড করতেন না। সর্দি হলেই ওঁনার পারফেক্ট নাকে গাওয়াটা নাকি বের হতো। পারফেক্ট না হওয়া পর্যন্ত উনি গান রেকর্ড করতেন না। নিশীতে যাইও ফুল বনে ও ভ্রমরা....শুনলে আমরা সে কথার প্রমাণ পাই। সাধারণত যারা গান করেন, তারা গান করার সময় গরম জল পান করেন। এমনটি দেখা যায়। গলা সতেজ রাখার জন্য নাকি এই ব্যবস্থা। কিন্তু সামসাদ ভাই নামে একজন গাইয়ে করতেন এর ঠিক উল্টো। তিনি ফ্রিজের জলের মধ্যে বরফ ভিজিয়ে রাখতেন। গানের সময় সেই বরফ জল না হলে তাঁর গলার আওয়াজ বের হতো না। মান্না দে'র ধারণা, গানের ব্যাপারে রেওয়াজ হল আসল কথা। খাবারের বিষয়ে এসব হল মনের ভ্রম। মান্না দে সবকিছু খাইতেন। লতা মুঙ্গেশকার খাবারের বিষয়ে কোনো বাছবিচার করেন না। মোহাম্মদ রফি খাবারের বিষয় কিছুই মানতেন না। মান্না দেও খাবার নিয়ে কোনো বাছবিচার করতেন না। ওঁনারা সবাই নিয়মিত রেওয়াজ করতেন। যা সঙ্গীতের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয়। আজকাল আমাদের শিল্পীদের কোনো রেওয়াজ নেই। দু'তিন লাইন গাইতে পারলেই টেলিভিশন চ্যানেলে গিয়ে হাজির হন। আহা মরি মরি!! মান্না দে আধুনিক বাংলা গানের যত গান করেছেন, তার প্রায় সবই তাঁর বন্ধু পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা। মান্না দে তখন বোম্বেতে চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক নিয়ে ভারী ব্যস্ত। একটা গানের রেকর্ড করার ঠিক আগ মুহূর্তে ডাকযোগে পুলকের পোস্ট কার্ডে পাঠানো একটি গান হাতে পেলেন। 'এতো রাগ নয় গো, এ যে অভিমান। এ শুধু তোমায় চাওয়া, আরো বেশি কাছে পাওয়া, ছল ভরা গান, এ যে অভিমান'। মান্না দে যে গানটি তখন রেকর্ড করতে যাচ্ছিলেন, সেটি বাদ দিয়ে তিনি এই গানে সুর করে এটি তখন রেকর্ড করেছিলেন। গানের কথাই মান্না দেকে এই কাজটি করতে উদ্ধুদ্ধ করেছিল। মান্না দে সবসময় সুরের মধ্যে বৈচিত্র্য খুঁজতেন। পুলকের লেখা 'কী দেখলে তুমি আমাতে...' গানটা মান্না দে একটু গজলের সুরে সুর করে গাইলেন। মান্না দে বেশি পছন্দ করতেন মাটির গান। সলিল চৌধুরীর লেখা 'আমায় ডুবাইলি রে, আমায় ভাসাইলি রে, অকুল দরিয়ার বুঝি কুল নাই রে...' গানটি রেকর্ড করার সময় মান্না দে'র টিমে অ্যাকোর্ডিয়ান যিনি বাজাতেন, বোম্বের মিস্টার মুরকি, তিনি বলেছিলেন, মান্নাদা, মাটির গান তোমার গলায় খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া গান। মুরকি যখন এসব কথা বলছিলেন, তখন মান্না দে হাতে পেলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'আমি ফুল না হয়ে কাঁটা হয়েই বেশ ছিলাম, জানিনা কোন ভুলে তোমার আঁচলে জড়ালাম, আমি সুখ না হয়ে দুঃখ হয়েই বেশ ছিলাম...' গানটি। মান্না দে তখন এই গানটি ভাটিয়ালি সুরে করলেন। এই গানের ভেতরে যে একটি না বলা অভিমান আছে, মান্না দে গানের সুরে ও গায়োকিতে সেই বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করলেন। কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় এর গল্প দিয়ে কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় অনেক ছবি বানিয়েছেন। তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় এর ডাক হরকরা গল্প দিয়ে শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের ডাক হরকরা ছবিতে 'ওগো তোমার শেষ বিচারের আশায় আমি বসে আছি, রাজ কাচারির দেউরিতে, শেষ বিচারের আশায়...' গানটি মান্না দে একতারায় করেছিলেন। শৈলজানন্দ যখন মারা যাচ্ছেন, তখন তিনি বললেন, মান্না দে'র ওই গানটি বাজাও। 'তোমার শেষ বিচারের আশায় আমি বসে আছি...'। মান্না দে'র ছোট কাকা সঙ্গীতাচার্য কৃষ্ণচন্দ্র দে যখন মারা যাচ্ছেন, তখন তিনি বললেন, মান্না'র ওই গানটা বাজাও- 'ওগো তোমার শেষ বিচারের আশায় আমি বসে আছি, রাজ কাচারির দেউরিতে, শেষ বিচারের আশায়...'। ‘তামান্না’ চলচ্চিত্রে গায়ক হিসেবে মান্না দে‘র অভিষেক ঘটে ১৯৪৩ সালে। সুরাইয়া’র সাথে দ্বৈত সঙ্গীতে গান এবং সুরকার ছিলেন ছোট কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে। ঐ সময়ে গানটি ভীষণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ১৯৫০ সালে 'মশাল' ছবিতে শচীন দেব বর্মণের গীত রচনায় ‘ওপার গগন বিশাল’ নামে একক গান গেয়েছিলেন। গানের কথা লিখেছিলেন কবি প্রদীপ। ১৯৫২ সালে মান্না দে বাংলা এবং মারাঠী ছবিতে একই নামে এবং গল্পে ‘আমার ভূপালী’ গান করেন। এই গান তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করে এবং গায়ক হিসেবে সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। মজার বিষয় হল বোম্বেতে গান করে যখন মান্না দে খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, তখনো তাঁকে কেউ বাংলা গান করতে ডাকেনি। তারপর বাংলাদেশের সুধীন দাস প্রথম মান্না দেকে দিয়ে রেকর্ড করালেন 'কে প্রথম কাছে এসেছি, কে প্রথম ভালোবেসেছি...' গানটি। তারপর আর মান্না দেকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কণ্ঠ দিয়েই তিনি বাঙালির হৃদয় জয় করেছেন। মান্না দে ভীমসেন জোসি’র সাথে একটি জনপ্রিয় দ্বৈত গান ‘কেতকী গুলাব জুহি’ গান। এছাড়াও তিনি কিশোর কুমারের সাথে আলাদা গোত্রের দ্বৈত গান হিসেবে ‘ইয়ে দোস্তী হাম নেহী তোরেঙ্গে (শোলে)’ এবং ‘এক চতুর নার (পদোসান)’ গান। এছাড়াও, তিনি শিল্পী ও গীতিকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (হেমন্ত কুমার)সহ আরো বেশকিছু গীতিকারের সাথে বাংলা ছবিতে গান গেয়েছিলেন। দ্বৈত সঙ্গীতে লতা মুঙ্গেশকরের সাথে ‘কে প্রথম কাছে এসেছি (শঙ্খবেলা)’ গান করেছেন। রবীন্দ্র সঙ্গীতসহ প্রায় ৩৫০০ গান গেয়েছেন মান্না দে। কেরালার মেয়ে সুলোচনা কুমারীনির সঙ্গে প্রেম করেছিলেন মান্না দে। বোম্বেতে একটা অনুষ্ঠানে মান্না গান করতে গিয়েই তাঁর সঙ্গে পরিচয়। খুব ভালো স্টুডেন্ট। বোম্বে ইউনিভার্সিটির ইংরেজি সাহিত্যের মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। একটা কলেজে পড়াতেন। চার বছর তাঁরা প্রেম করেন। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল। তারপর তাঁরা বিয়ে করেছিলেন ১৯৫৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর। বিয়েতে পরিবারের কেউ রাজী না। অবাঙালি মেয়েকে কেউ মেনে নিতে চাইল না। কিন্তু মান্না দে'র মা বললেন, তুই পছন্দ করে বিয়ে করেছিস, তুই ভালো থাকলেই ভগবানের কৃপা। তারপর সবাই সেই বিয়ে মেনে নিল। তাঁদের দুই কন্যা শুরোমা (জন্ম- ১৯ অক্টোবর ১৯৫৬ সালে) এবং সুমিতা (জন্ম- ২০ জুন ১৯৫৮ সালে)। মান্না দে পঞ্চাশ বছরেরও বেশী সময় বোম্বে বা এখনকার মুম্বাইয়ে কাটানোর পর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ব্যাঙ্গালোরের কালিয়ানগর শহরে বসবাস করেছেন। এছাড়াও তিনি কলকাতায়ও মাঝেমাঝে এসে বাস করতেন। প্রবোধ চন্দ্র দে যাঁর ডাকনাম মান্না দে ১৯১৯ সালের ১ মে কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা সঙ্গীত শিল্পীদের তিনি একজন। হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, গুজরাটিসহ অজস্র ভাষায় তিনি ষাট বছরেরও অধিক সময় সঙ্গীত চর্চা করেছিলেন। বৈচিত্র্যের বিচারে তাঁকেই হিন্দি গানের ভুবনে সবর্কালের সেরা গায়ক হিসেবে স্বীকার করেন অনেক বিশেষজ্ঞ সঙ্গীতবোদ্ধারা। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বেও তিনি বিভিন্ন সঙ্গীতবিষয়ক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছিলেন। মান্না দে গায়ক হিসেবে ছিলেন আধুনিক বাংলা গানের জগতে সর্বস্তরের শ্রোতাদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় একজন সফল সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব। পাশাপাশি তিনি হিন্দি এবং বাংলা সিনেমায় গায়ক হিসেবে বিশেষ সুনাম অর্জন করেছেন। মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার, মুকেশের মতো তিনিও ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। সঙ্গীত জীবনে তিনি সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করেন। সঙ্গীত ভুবনে তাঁর এ অসামান্য অবদানের কথা স্বীকার করে ভারত সরকার ১৯৭১ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী, ২০০৫ সালে পদ্মবিভূষণ এবং ২০০৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে সম্মাননায় অভিষিক্ত করে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে রাজ্যের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান 'বঙ্গবিভূষণ' প্রদান করে। মান্না দে'র গাওয়া জনপ্রিয় গান অনেক। 'কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই', 'আবার হবে তো দেখা, এ দেখা শেষ দেখা নয় তো', 'এই কূলে আমি, আর ওই কূলে তুমি', 'তীর ভাঙা ঢেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়', 'যদি কাগজে লেখো নাম', 'সে আমার ছোট বোন', 'তুমি এলে, অনেক দিন পরে যেন বৃষ্টি এলো', 'ক ফোঁটা চোখের জল ফেলেছ যে তুমি', 'দীপ ছিল শিখা ছিল', 'সবাই তো সুখী হতে চায়', 'খুব জানতে ইচ্ছে করে', 'আমি তার ঠিকানা রাখিনি', ' জানি তোমার প্রেমের যোগ্য আমি তো নই', 'তুমি অনেক যত্ন করে', ' আমি যে জলসা ঘরে', ' এরই নাম প্রেম', 'তুমি নিজের মুখে বললে যেদিন', ' পৌঁষের কাছাকাছি রোদ মাখা সেই দিন', ' স্বপন যদি মধুর এমন', ' ও চাঁদ সামলে রাখো জোছনাকে', ' ও আমার মন যমুনার', ' এই তো সেদিন তুমি আমারে বোঝালে', ' যখন কেউ আমাকে পাগল বলে', ' হাজার টাকার ঝার বাতিটা', ' গহন মেঘের ছায়া', 'দরদি গো, কি চেয়েছি আর কি যে পেলাম', 'হৃদয়ের গান শিখেতো গায় তো সবাই, ক'জনা হৃদয় দিয়ে গাইতে জানে' সহ অনেক আধুনিক বাংলা গান মান্না দে'র কণ্ঠে কালজয়ী। এসব গান কোনো দিন পুরনো হবে না বলেই আমি বিশ্বাস করি। ২০০৫ সালে বাংলাভাষায় তাঁর আত্মজীবনী ‘জীবনের জলসাঘরে’ আনন্দ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। পরে এটি ইংরেজিতে ‘মেমরীজ কাম এলাইভ’, হিন্দীতে ‘ইয়াদেন জি ওথি’ এবং মারাঠী ভাষায় ‘জীবনের জলসাঘরে’ নামে অনুদিত হয়েছে। মান্না দের জীবন নিয়ে ‘জীবনের জলসাঘরে’ নামে একটি তথ্যচিত্র ২০০৮ সালে মুক্তি পায়। বর্তমানে মান্না দে সঙ্গীত একাডেমি মান্না দে’র সম্পূর্ণ আর্কাইভ বিকশিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে। পাশাপাশি রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা সঙ্গীত ভবন মান্না দে’র সঙ্গীত সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৩ সালের ৮ই জুন ফুসফুসের জটিলতা দেখা দেওয়ায় মান্না দেকে ব্যাঙ্গালোরে একটি হাসপাতালের আইসিইউ তে ভর্তি করা হয়। ৯ই জুন, ২০১৩ সালে তাঁর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে ডাক্তাররা এই গুজবের অবসান ঘটান এবং নিশ্চিত করেন যে তিনি তখনও বেঁচে আছেন। তবে তার অবস্থার বেশ অবনতি হয়েছে এবং আরও কিছু নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। পরে ডাক্তাররা জানান তাঁর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৪শে অক্টোবর ৯৪ বছর বয়সে ব্যাঙ্গালোরে এই মহান শিল্পী পরলোকগমন করেন। যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে, যতদিন বাংলা ভাষার মানুষ গান শুনবে, ততদিন পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত মান্না দে আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। ...................................... ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৮
false
ij
আজ তা হলে প্রাচীন মিশরের ফারাও হাতসহেপসুত-এর জীবনের গল্পটাই বলি। hatshepsut। প্রাচীন মিশরের এক নারী। যিনি প্রাচীন মিশরের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অবৈধ প্রেমিক সেনমুতকে জীবনভর পাশে রেখেছিলেন। হাত করেছিলেন থিবস নগরের প্রধান পুরোহিত হাপুসসেনেবকে। তবে আধুনিক মিশরবিদদের মতে, নারী হয়েও সাফল্যের সঙ্গে রাজ্য পরিচালনা করেছিলেন হাতসহেপসুত-যা সম্ভবত পরবর্তী মিশরের টলেমি যুগের নারীশাসক ক্লিওপেট্রাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। হাতসহেপসুত এর পুরো নাম মাত-কা-রা হাতসহেপসুত। প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় মাত-কা-রা মানে: সত্য শৃঙ্খলা ও ভারসাম্য। মাত হচ্ছে দেবতা “রা”-এর আত্মার দ্বিগুন শক্তি। এভাবেই প্রাচীন মিশরীয় জনগন গ্রহন করেছিল তাদের নারী শাসক হাতসহেপসুতকে। হাতসহেপসুত শব্দের আরেকটি মানে:Foremost of Noble Ladies. মিশর। মিশরের বুক চিরে বইছে নীল নদ। সে নদের পূর্বতীরে কিনা প্রদেশ। কিনা প্রদেশটি মিশরের মাঝখানে। সেখানেই লুক্সর নামে একটি শহর, নীল নদের পূর্বতীরে। আপনি কখনও লুক্সর শহরে গেলে নীল নদ পেরিয়ে পশ্চিম পাড়ে যেতে ভুলবেন না। কেননা, নীল নদের পশ্চিম পাড়েই “দেইর এল বাহরি।” বাংলায় এর মানে, “উত্তরের মঠ।” ওখানেই অনেক প্রাচীন সমাধিসৌধ আজও টিকে আছে। হাতসহেপসুত-এর সমাধিসৌধটিও ওই দেইর এল বাহরিতেই। হাতসহেপসুত এর সৎ ছেলে ৩য় থুতমোসিস হাতসহেপসুত এর বিদ্বেষবশত মৃত্যুর পর সমাধিসৌধটি ধ্বংস করে দিয়েছিল। কেন? সে কথাই আজ বল। প্রাচীন মিশরই সভ্যতাকে দান করেছিল পরকাল সম্বন্ধীয় ধ্যানধারনা। তখনকার দিনের মিশরের লোকজন পরকালের ভালোমন্দ নিয়ে আচ্ছন্ন ছিল। লিখেছিল মৃতের বই বা “বুক অভ ডেড।” হাতসহেপসুতও এর ব্যাতিক্রম ছিল না। ক্ষমতা গ্রহন করে দইর এল বাহরিতে সমাধিসৗধ নির্মানের পরিকল্পনা করেছিল হাতসহেপসুত। ২ প্রাচীন মিশরের ইতিহাস আসলে প্রাচীন মিশরীয় রাজবংশের ইতিহাস। প্রাচীন মিশরের ইতিহাসকে রাজবংশের কালানুক্রম হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। যেমন পুরনো রাজবংশ, নতুন রাজবংশ। নতুন রাজবংশের একটি উপবিভাগ আবার “অষ্টাদশ রাজবংশ।” অষ্টাদশ রাজবংশের সময়কাল ছিল ১৫৫০ ১২৯২ খ্রিস্টপূর্ব। সময়কালটি প্রাচীন মিশরের ইতিহাসে নানা দিক থেকে উল্লেখযোগ্য। শক্তিশালী ক’জন ফারাও শাসন করেছেন সে সময়টায়। থুতমোসীয় গোত্রের ফারাওরা শাসন করেছেন বলে অষ্টাদশ রাজবংশটি থুতমোসিয় রাজবংশ নামেও পরিচিত। টুথানখামুন, আখেনাতেন, নেফারতিতি- এর সবাই ছিলেন অষ্টাদশ রাজবংশের । হাতসহেপসুত ছিল অষ্টাদশ রাজবংশের পঞ্চম ফারাও। ৩ হাতসহেপসুত-এর বাবা ছিলেন অষ্টাদশ রাজবংশের ফারাও ১ম থুতমোসিস । হাতসহেপসুত-এর মায়ের নাম আহমেস। যদ্দুর জানতে পেরেছি, মেয়ে ছিল মা-বাবার নয়নের মনি। ১ম থুতমোসিস ভাবছিলেন-আহ, আমার হাতসহেপসুত যদি হত মিশরের ফারাও। এত সুন্দর আর বুদ্ধিমতী। থিবস নগরের পুরোহিতদের সঙ্গে কথাবার্তা বললেন ফারাও ১ম থুতমোসিস। পুরোহিতরা আর কী বলবে-তারা একেবারে স্তম্ভিত। এমন অভিনব ধারনা। মিশরের সিংহাসনে বসবে এক নারী। বিষয়টি ছিল বিস্ময়কর। যদিও সেই সময়কার মিশরের নারীর স্থান ছিল তুলনামূলক সম্মানজনক।The Egyptian tradition of having the Pharaoh marry a royal woman led Thuthmose II to marry Hatshepsut. (The women in Egypt carried the royal blood, not the males. To become Pharaoh, the man had to marry a female of royal blood, often a sister, half sister or other near relative. Usually it was the eldest daughter of the previous Pharaoh.) Thuthmose II died soon after becoming Pharaoh, leaving the widow Hatshepsut, a daughter Neferura... and a son by another wife - Thuthmose III. Women could own land, inherit from family members, and even go to court to defend her rights. But before Hatshepsut, there were queens who had ruled Egypt... but not a female Pharaoh. কিশোরী বয়সে উপনীত হল হাতসহেপসুত। রাজবাড়ি ছিল থিবস-এ। থিবস ছিল তখন প্রাচীন মিশরের রাজধানী । ভূমধ্যসাগরের ৮০০ কিলোমিটার দক্ষিণে। নীল নদীর পূর্বপ্রান্তে। তো, রাজবাড়িতে নানা লোকজন আসত। সেনমুত তাদেরই একজন। সেনমুত ছিল অভিজাত বংশের সন্তান। ফারাও ১ম থুতমোসিস সেনমুতকে বিশেষ øেহ করতেন। হাতসহেপসুত এর ভালো লাগত সেনমুতকে। ছবি আঁকত সেনমুত। কবিতা লিখব। আর বলত সব আশ্চর্য দেশের কথা। দক্ষিণের এক দেশে নাকি রয়েছে অঢেল হাতির দাঁত, বিচিত্র সব পশু আর ঔষধি বৃক্ষ । ভারি অলীক সে দেশ। ওখানেই তো নীল নদের উৎস। সেনমুতের মুখে সে সব গল্প শুনতে শুনতে কেমন আনমনা হয়ে যেত হাতসহেপসুত। বলল, আমাকে সে দেশে নিয়ে যাবেন? হ্যাঁ। সেনমুত বলল। এই সেনমুতই পরে হাতসহেপসুত এর ঘনিষ্ট পরামর্শদাতায় পরিনত হয়েছিল । আমৃত্যু। ইচ্ছে ছিল শবাধারটি থাকবে একই সমাধিগৃহে । সেনমুত-এর সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি। হাতসহেপসুত এর সৎ ছেলে ৩য় থুতমোসিস সে রকম হতে দেয়নি। কেন? সে কথাই আজ বলব। হাতসহেপসুত-এর বাবা ১ম থুতমোসিস-এর আরেকজন স্ত্রী ছিল। মুতনোফ্রি। তার ঘরে এক ছেলে হয়েছিল। ২য় থুতমোসিস। ১৪ বছর মিশর শাসন করার পর ১ম থুতমোসিস মারা গেল। নিয়মানুয়ায়ী ২য় থুতমোসিস সিংহাসনে বসল। তবে ২য় থুতমোসিস-এর বয়স ছিল কম। কাজেই পিছন থেকে কলকাঠি নাড়তে লাগল হাতসহেপসুত। এবং সেনমুত। দুজনে ঘনিষ্ট হয়েছিল অনেক আগেই। রাতের অন্ধকারে মিলিত হত মশালজ্বলা কক্ষে। রতিক্লান্ত দেহে কাঁপা কাঁপা স্বরে হাতসহেপসুত বলত, আমি তোমাকে ভালোবাসি সেনমুত। ভালোবাসলেও তোমাকে বিয়ে করতে পারব না। আমি আমার সৎ ভাই ২য় থুতমোসিসকে বিয়ে করব। আমি মিশরের ফারাও হতে চাই। অনেক ওপরে উঠতে চাই। আমার সৎ ভাই ২য় থুতমোসিস আমার সিঁড়ি। তুমি আমার পাশে চিরকাল থেক সেনমুত। থাকব। বিয়ে হল ২য় থুতমোসিস আর হাতসহেপসুত-এর। ২য় থুতমোসিস অবশ্য আরও একটি বিয়ে করেছিল। বউয়ের নাম ছিল আইসিস । আইসিসের একটি ছেলে হল। ছেলের নামও থুতমোসিস, তবে তৃতীয়। কাজেই হাতসহেপসুত ছিল ৩য় থুতমোসিস-এর সৎ মা। ৩য় থুতমোসিসই হাতসহেপসুত ও সেনমুত-এর শেষ জীবনে চরম সর্বনাশ করেছিল! যা হোক। সিংহাসনে বসার ৪ বছর পর ২য় থুতমোসিস মারা গেল। চর্মরোগে। ২য় থুতমোসিস মমি পরীক্ষা করে সেরকমই মনে করেন মিশরবিদগন। বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল কি? যা হোক। নিয়ম অনুযায়ী ৩য় থুতমোসিস বসল মিশরের সিংহাসনে। পিছন থেকে অবশ্য রাজ্য পরিচালন করতে লাগল হাতসহেপসুত এবং সেনমুত । তখন ৩য় থুতমোসিস-এর বয়স ছিল কম। সে মেনে নিয়েছিল। পরে আর সহ্য হয়নি। পরে সে হাতসহেপসুত এবং সেনমুত এর বিরুদ্ধে ঘোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। এদিকে হাতসহেপসুত আর সেনমুত দুজনে আরও আরও ঘনিষ্ট হয়ে উঠছিল। স্বামী ২য় থুতমোসিস মৃত। হাতসহেপসুত-এর শরীরে তৃষ্ণা। সেনমুত এর সঙ্গে রাতের অন্ধকারে মিলিত হত মশালজ্বলা কক্ষে। ৪ থিবস নগরের প্রধান পুরোহিত ছিলেন হাপুসসেনেব। তামাটে বর্ণের বলিষ্ট দীর্ঘ পুরুষ। মাথা কামানো। হাপুসসেনেব ছিল সেনমুত এর ঘনিষ্ট সুহৃদ। দুজনে রাতের অন্ধকারে মিলিত হত মশালজ্বলা কক্ষে। পড়ত মৃতদের বই। যে বইয়ে রয়েছে পরকালের বর্ননা। মশালের আলোয় নগ্ন করত কিশোরী নুবিয় দাসীদের। শরীরে তেল মাখাত। তা ছাড়া একসঙ্গে ব্যবসা করত সেনমুত আর হাপুসসেনেব। রজনের। মমি তৈরি করার সময় দরকার হত রজনের। আমরা জানি, গোত্রজীবন ভেঙ্গে উদ্ভব হয় রাষ্ট্রের। আর, রাষ্ট্রের টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন ধর্মের । প্রাচীন মিশরের ক্ষেত্রে সেনমুত এবং হাতসহেপসুত ছিল রাষ্ট্র। আর হাপুসসেনেব ছিল ধর্ম। কাজেই তারা তিনজনে একত্রে মিলিত হল। সেনমুত বলল, হাপুসসেনেব, আপনি থিবস নগরে প্রধান পুরোহিত। লোকে আপনাকে শ্রদ্ধা করে, ভয়ও করে। হ্যাঁ, তা করে। হাপুসসেনেব বলল। তা হলে আপনি হাতসহেপসুত-এর জন্মের আগের এক গল্প জনগনের মধ্যে আপনি প্রচার করে দিন। কী গল্প? কৌতূহলী হয়ে ওঠে।হাপুসসেনেব এবার হাতসহেপসুত বলল, আমার জন্মের আগে দেবতা আমুন আমার বাবা ১ম থুতমোসিস-এর ছদ্মবেশে আমার মায়ে কাছে এসেছিল। তারপর তারা সঙ্গম করেছিল। কাজেই আমি দেবতা আমুন এর কন্যা। তাই বলব। বলে হাপুসসেনেব মুচকি হাসল। তারপর কুর্নিশ করল ভবিষ্যতের ফারাওকে। হাপুসসেনেব গল্পটা ছড়ালো। যে গল্পটা আমাদের কালেও পৌঁছে গেছে । দেবতাসংশ্লিষ্ট গল্পগাথা সহজেই বিশ্বাস করে মানুষ। আর, হাপুসসেনেব কেও মনে হয় খুশি করেছিল হাতসহেপসুত। হাতসহেপসুত ছিল উচ্চভিলাষী। নামধামের কাতর। তার পক্ষে সবই করা সম্ভব ছিল। ৫ হাতসহেপসুত -এর জন্মকাহিনীটি মিশরজুড়ে তুমুল আলোরণ তুলল। থিবস নগরীর প্রধান পুরোহিত বলল বলেই লোকে সহজে বিশ্বাস করল। দেবতা আমুন থিবস নগরের রক্ষাকারী দেবতা। তারই কন্য হাতসহেপসুত! হাতসহেপসুত কে এক পলক দেখার জন্য জনগন অস্থির হয়ে উঠল। তিনজনে মিলে জনগনের সামনে যাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করতে বসল। হাপুসসেনেব বলল, আপনার নারী বেশে জনগনের যাওয়া ঠিক হবে না। তা হলে? এবার সেনমুত বলল, তুমি বরং পুরুষের ছদ্মবেশ নাও। তাই করেছিল হাতসহেপসুত। তখনকার দিনে ফারাওরা নকল দাড়ি পড়তেন, মাথায় পরত খাত নামে আবরনী। কাজেই হাতসহেপসুত পুরুষের পোষাক পরে নকল দাড়ি লাগিয়ে মাথায় খাট পরে জনগনের সামনে গিয়েছিল। জনগন অভিভূত। তারা চিৎকার করে উঠল: মাত-কা-রা হাতসহেপসুত। মাত-কা-রা মানে-সত্য, শৃঙ্খলা ও ভারসাম্য। ১৪৭৯ খ্রিস্টপূর্ব। সিংহাসনে বসল হাতসহেপসুত। নিজেকে ঘোষনা করল মিশরের ফারাও। ৩য় থুতমোসিস দাঁতে দাঁত ঘঁষল। ৬ হাতসহেপসুতএর সিংহাসনে বসার কিছু সময় পরের কথা। একদিন সেনমুত বলল, জনগনের যে কোনও গল্প বেশিদিন মনে থাকে না। তারা সব সময় নতুন গল্প চায়। গল্পের অভাবে জনগন বিদ্রোহ করতে পারে। জনগনের জন্য চাই নতুন নেশা । নতুন গল্প। কী করতে হবে? হাতসহেপসুত এর মুখে উদ্বেগ। সেনমুত বলল, মনে আছে, আমি তোমাকে বলেছিলাম, দক্ষিণের এক দেশে নাকি রয়েছে অঢেল হাতির দাঁত, বিচিত্র সব পশু আর ঔষধি বৃক্ষ । ভারি অলীক সে দেশ। ওখানেই তো নীল নদের উৎস। তুমি আমাকে বলেছিলে, আমাকে সে দেশে নিয়ে যাবেন? হ্যাঁ। আমার মনে আছে। হাতসহেপসুত বলল। সেনমুত বলল, চল আমরা দক্ষিণের সেই ঈশ্বরের ভূমিতে যাই। জনগন তাহলে নতুন শিহরণ পাবে। চল। মিশরের দক্ষিণপুবের উপদ্বীপটিই বর্তমানে সোমালিয়া। মিশরের লোকেরা বলত ঐশ্বরিক ভূমি। অলীক স্বপ্নময় স্থান। নীল নদের উৎসও নাকি ওখানে। সে স্থান নাকি নানাবিধ ঔষধি বৃক্ষে পরিপূর্ন । মিশরের জনগন মাত-কা-রা হাতসহেপসুত সেই স্বপীল দেশে যাচ্ছে শুনে রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে উঠল। এক ঝলমলে দিনে নীল নদের পাড় থেকে জাহাজে উঠল হাতসহেপসুত। সঙ্গে সেনমুত। ও অসংখ্য দাসদাসী। সব মিলিয়ে পাঁচটি জাহাজ। ৭০ ফুট দীর্ঘ। বিশাল পাল। সর্বমোট ২১০ জন নাবিক, দাঁড়ি। আর দুধর্ষ মিশরী সৈন্যভরতি জাহাজ তো ছিল। নৌকা দক্ষিণে ভাসল। হাতসহেপসুত-এর কী সুখ। তার কক্ষে নীল নদের গন্ধ ভরে আছে। গবাক্ষপথে একটি মধ্যদিনের প্রাচীন আলো এসে ঢুকেছে কক্ষে। সে আলো পড়েছে কাঠের পাটাতনের ওপর। ওখানে বিবলস দেশের নীলাভ কোমল গালিচা পাতা। সেনমুত শুয়ে আছে গালিচার ওপর। নগ্ন। হাতসহেপসুত মুচকি হেসে ওদিকে গড়িয়ে যেতে থাকে। একদিন নৌকা ভিড়ল নীল নদীর পুব প্রান্তে। এবার পুবমুখো যাত্রা। হাতসহেপসুত আর সেনমুত। পালকিতে বসে আছে। সামনে পিছনে কুড়ি সহস্র সৈন্য। হাতসহেপসুত দেখে -অদ্ভূত মাটি অদ্ভূত গাছ অদ্ভূত পশু অদ্ভূত পাখি অদ্ভূত আকাশ আর অদ্ভূত অদ্ভূত সব মানুষ। কালো বেঁটে। কালো বেঁটে মানুষে অদ্ভুত সব ঘরবাড়ি। অদ্ভূত গোত্র। গোত্রটি রানীশাসিত। দুপক্ষের ভাষা নাবুঝলেও সংঘাত বাঁধেনি। বরং রানী উপহার হিসেবে দিল গাছ। যে গাছে ধূপ হয়, হয় রজন ও সুগন্ধী আতর। হাতসহেপসুতরা আরও উপহার পেল হাতীর দাঁত, নানাবিধ পশু, মসলা ও স্বর্ন। সে সব তোলা হল নৌকায়। দক্ষিণের দেশকে ইংরেজীতে বলে Land of Punt। আর, ঐতিহাসিকদের মতে প্রথম বিদেশি গাছ লাগানোর প্রথম উদ্যোগ। হাতসহেপসুত এর আমলের শিলালিপিতে দক্ষিণ দেশের অভিযানের কথা লেখা রয়েছে। থিবস ফেরার পথে নৌকায় হাতসহেপসুত সেনমুতকে বলল, আমি মা হতে যাচ্ছি সেনমুত। সেনমুত হাসল। বলল, কি নাম রাখবে সন্তানের? হাতসহেপসুত বলল, ছেলে হলে সেনমুত। আর মেয়ে হলে নেফরুরি। মেয়েই হয়েছিল হাতসহেপসুত-এর। মেয়ের নাম রাখা হয়েছিল নেফরুরি। পরবর্তীতে হাতসহেপসুত। চেয়েছিল নেফরুরি হবে মিশরের ফারাও। সে ইচ্ছে ৩য় থুতমোসিস গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। এতকাল পরে ভাবছি হাতসহেপসুত-এর সন্তানের পিতা কে? আর কে। সেনমুতই। কিংবা হাপুসসেনেব। কে বলতে পারে? যা হোক হাতসহেপসুতরা থিবস ফিরল। ঐশ্বরিক ভূমি লোকদের বর্ননা শুনে থিবসবাসী শিহরিত। অবশ্য বেঁটেকালো লোকদের কথা শুনে তারা হাসাহাসি করল। তারা বিদ্রোহ করল না। হাতসহেপসুত থিবসে প্রতিষ্টা পেয়ে গেল। ৭ মানেথো ছিলেন প্রাচীন মিশরের একজন ঐতিহাসিক। তার লেখা থেকে জানা যায় এককালে হাইকসসরা মিশর আক্রমন করে শাসন করেছিল । মিশরের লোকেরা হাইকসসদের বলত “আমমু”। মানেথো মনে করতেন হাইকসসরা ছিল এশিয় জাতি। তবে আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে, হাইকসসরা ছিল সেমেটিকভাষী; মেসোপটেমিয়। হাইকসসরা মিশরে পঞ্চদশ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। মিশর থেকে ওদের তাড়িয়ে দিয়েছিল সপ্তদশ রাজবংশের ফারাওরা। এবং “নতুন রাজ্যের” শাসকরা। একদিন থিবস নগরীর প্রধান পুরোহিত হাপুসসেনেব বলল, আমমুদের (হাইকসসদের) আমলে এ দেশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘদিন হল অন্য দেশের সঙ্গে ব্যবসাবানিজ্য বন্ধ হয়ে আছে। কী করা যায়? হাতসহেপসুতকে চিন্তাগ্রস্থ দেখাল। সেনমুত বলল, অন্য দেশের সঙ্গে বানিজ্য আবার শুরু করা উচিত। তাই করা হয়েছিল। অন্য দেশের সঙ্গে ব্যবসাবানিজ্য আরম্ভ করা হল। যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কার করা হল। পথে ব্যবসায়ীদের পাহারা দিল সৈন্যরা। এসব কারণেই, হাতসহেপসুত-এর শাসনামলের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নতির কথা মিশরবিদরা বলে থাকেন। একদিন সেনমুত বলল, জনগন মনে হয় ঝিমিয়ে পড়েছে। নতুন সামরিক অভিযান প্রেরণ না করলে জনগন আবার একঘেয়েমিতে ভুগবে। তখন তারা বিদ্রোহ করতে পারে। সামরিক অভিযান? হাতসহেপসুতকে কেমন চিন্তাগ্রস্থ দেখাল। সামরিক অভিযান হাতসহেপসুত-এর পছন্দ না। হ্যাঁ, সামরিক অভিযান। আমাদের সৈন্যরা বসে থেকে থেকে মুটিয়ে যাচ্ছে। তো, কোথায়? সেনমুত সামান্য ভেবে বলল, প্রথমে নুবিয়া। পরে সিরিয়া। তাই হয়েছিল। হাতসহেপসুতএর শাসনামলে কেবল দুটি সামরিক অভিযানের কথা জানা যায়। নুবিয়া ও সিরিয়ায়। অবশ্য আরও দুটি অভিযাত্রী দল প্রেরণ করা হয়েছিল বিচিত্র প্রাণি পশু ও স্বর্নর খোঁজে । সিনাই ও বিবলসে। সিনাই সম্ভবত সিনাই উপদ্বীপ। বিবলস কোথায়? ব্যাবিলন কি? ৮ তখন বলছিলাম। মিশরের বুক চিরে বইছে নীল নদ। সে নদের পূর্বতীরে কিনা প্রদেশ। কিনা প্রদেশটি মিশরের মাঝখানে। সেখানেই লুক্সর নামে একটি শহর, নীল নদের পূর্বতীরে। আপনি কখনও লুক্সর শহরে গেলে নীল নদ পেরিয়ে পশ্চিম পাড়ে যেতে ভুলবেন না। কেননা, নীল নদের পশ্চিমপাড়েই দেইর এল বাহরি। বাংলায় এর মানে, “উত্তরের মঠ।” ওখানেই অনেক পিরামিড প্রাচীন সমাধি সৌধ আজও টিকে আছে। প্রাচীন মিশরের ফারাও হাতসহেপসুত সমাধিসৌধটিও ওই দেইর এল বাহরিতেই। আধুনিক মিশরবিদগন বলেন, হাতসহেপসুত-এর আমলে তেমন সামরিক অভিযান হয়নি। যা হয়েছিল ধর্মীয় ভবন নির্মান। আসলে তাইই হয়েছিল। আমুন ছিলেন মিশরের প্রধানতম দেবতা। তিনি ছিলেন প্রাচীন মিশরের জীবনের নিঃশ্বাস।দেবতা আমুনের পুরোহিতরা প্রভাবশালী ছিল। ক্ষমতা থাকার জন্য ওদের তুষ্ট করার জন্য আমুন দেবতার উদ্দেশ্যে নির্মান করা হল একের পর এক ধর্মীয়কেন্দ্র। বর্তমান লুক্সর শহরের কাছে প্রাচীন মিশরের আরেকটি পবিত্র স্থান ছিল। কারনাক। সেখানেও অনেক ধর্মীয় ভবন তোলা হল। হাতসহেপসুত, সেনমুত ও হাপুসসেনেব মিলে বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছিল। সেনমুত ভালো নকশা আঁকতে পারত । ধর্মীয় ভবনাদির নকশা সেই করল। সেই সময়ে মিশরের প্রতিভাবান স্থপতি ছিল আইনিনি। সে সেনমুতের অধীনে কাজ করল। প্রজেক্ট দেখভালের দায়িত্ব পেল থিবস নগরের প্রধান পুরোহিত হাপুসসেনেব। হাইকসসরা। মিশর তছনছ করেছিল। ধ্বংস করেছিল প্রাচীন মিশরীয় দেবী মুত-এর মূর্তি। জনগনকে খুশি করতে প্রথমেই মুত-এর মূর্তিটি প্রতিস্থাপন করা হল। কত যে শিলামূর্তি নির্মান করা হল। অনেক। এত বেশি যে উন্নত বিশ্বের যেকোনও যাদুঘরে হাতসহেপসুত আমলের শিলামূর্তি নিউইয়কে হাতসহেপসুত নামে আলাদা কক্ষই রয়েছে। সেই সময় শিলালিপিও স্থাপন করা হয়েছিল। সেনমুতই লিখত সম্ভবত। Hatshepsut, with the backing of the temple of Amun, proclaimed that she was the divine Wife of the god Amun: Then his majesty said to them: "This daughter of mine, Khnumetamun Hatshepsut - may she live! - I have appointed as my successor upon my throne...she shall direct the people in every sphere of the palace; it is she indeed who shall lead you. Obey her words, unite yourselves at her command." The royal nobles, the dignitaries, and the leaders of the people heard this proclamation of the promotion of his daughter, the King of Upper and Lower Egypt, Ma'at-ka-Ra - may she live eternally! ৯ মনে থাকার কথা- ৩য় থুতমোসিস ছিল ২য় থুতমোসিস এর ছেলে। মায়ের নাম আইসিস (বা আইসেট) কাজেই হাতসহেপসুত ছিলেন ৩য় থুতমোসিস-এর সৎ মা। একসঙ্গে রাজত্ব করেছিলেন। ৩য় থুতমোসিস কিন্তু ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছিল। জনগনের আর হাতসহেপসুত দের চমক ভাল লাগছিল না। আর কত? । নারীর শাসন। গেল বার ফসল ভালো হল না। তার আগেরবার প্লাবন হল নীলে। আসলে মিশরের জনগন চাইছিল পরির্বতন। দেখি না ৩য় থুতমোসিস ক্ষমতায় বসলে আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি ঝরে কিনা। ৩য় থুতমোসিস আর ভালো লাগছিল না সৎ মায়ের শাসন। পুরুষ হয়েও নারীর অধীন। তার চারপাশে তোষামদকারীরা জুটল। তারা কানে মন্ত্র ঢালল। তারপরেও প্রায় কুড়ি বছর শাসন করল হাতসহেপসুত। ১৪৫৮ খ্রিস্টপূর্বের পর আর হাতসহেপসুত-এর কথা শোনা যায়নি। মনে থাকার কথা হাতসহেপসুত ছিল পঞ্চম ফারাও। অস্টাদশ রাজবংশের ৬ষ্ট ফারাও হল ৩য় থুতমোসিস। তারপর? তারপর সম্ভবত ৩য় থুতমোসিস এর নির্দেশে হাতসহেপসুত, সেনমুত এবং ওদের কন্যা নেফরুরিকে খুন করা হয়েছিল। সে প্রতিশোধ নিয়েছিল। সেনমুত এর ইচ্ছে ছিল তার শবাধারটি থাকবে হাতসহেপসুত-এর সমাধিমন্দিরে। হয়নি। কাছেই তার পৃথক সমাধি হয়েছিল। না। সেনমুত এর মমি পাওয়া যায়নি। শবাধারটির ১২০০ টুকরো পাওয়া গেছে। হাতসহেপসুত এর সমাধি মন্দির আজও টিকে থাকলেও, শবাধারটি ধ্বংস করা হয়েছিল। মমি চুরি হয়েছিল। সেভাবে নির্দিস্ট করে হাতসহেপসুত-এর মমি পাওয়া যায়নি। ৩য় থুতমোসিস ধ্বংস করেছিল। সে প্রতিশোধ নিয়েছিল। থিবস নগরীর পুরোহিত হাপুসসেনেব-এর কী হয়েছিল? না। তাকে কেউই মনে রাখেনি। তখন বলছিলাম। হাতসহেপসুত গর্ভবতী হয়েছিল । মেয়ে হয়েছিল। মেয়ের নাম রেখেছিল, নেফরুরি। পিতা সেনমুতই সম্ভবত। কিংবা হাপুসসেনেব। কে বলতে পারে? ১০ এই লেখাটি যদিও কাল্পনিক- তবে লেখাটির ভিতে রয়েছে হাতসহেপসুত সংক্রান্ত বেশ কটি ওয়বেসাইটের গবেষনাধর্মী তথ্যাদি। হাতসহেপসুত-এর জীবন নিয়ে কেউ চলচ্চিত্র নির্মান করতে উৎসাহী হলে [চিত্রনাট্যের জন্য] যোগাযোগ করতে পারেন! তথ্যসূত্র: Click This Link http://www.kingtutone.com/queens/hatshepsut/ Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৫১
false
rn
আমি বীরাঙ্গনা বলছি একাত্তরের ডিসেম্বরে মাদার তেরেসা খুলনা ও ঢাকার কয়েকটি ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। ওখানে তিনি দেখেন, পাকসেনারা কী পশুর তান্ডব চালিয়েছে। এসব ক্যাম্পে পাকসেনারা বাংলাদেশের নারীদের উপর দিনের পর দিন অত্যাচার চালিয়ে আসছিল। কেবল তাঁদের নগ্ন করেই রাখত না, অভাগীরা যাতে লম্বা চুল পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করতে না পারে এই ভাবনায় তাঁদের চুল কেটে দিত। এসব ক্যাম্পে তিনি কাউকে পাননি কিন্ত দেখেছেন তাদেঁর ছেঁড়া চুল, ব্যবহৃত পোশাক। বেশিরভাগ যুদ্ধ-শিশুদের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হত। তেমন কেউ এদের নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিল না, নিজেদের কাছে, এমকি দেশেও রাখতে চাইছিল না।মাদার তেরেসা পরম মমতায় ওইসব যুদ্ধ-শিশুদের কোলে তুলে নিতে থাকেন। তাদের পাঠিয়ে দেন কলকাতা, ফ্রান্স, সুইডেনে। এই কারণে তিনি বাংলাদেশে তীব্র রোষের সম্মুখীন হন, জোর বলাবলি হতে থাকে, এইসব যুদ্ধ-শিশুদের তিনি খ্রীস্টান বানিয়ে ফেলবেন। তেরেসা তখন থেমে থাকেননি। তাঁর কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন, গোপনে। বিজয়ের বেয়াল্লিশ বছর পার হলেও বীরাঙ্গনাদের অন্ধকার কাটেনি। সম্মান দিয়ে বীরের মর্যাদা দিতে পারেনি রাষ্ট্র। লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের এ তরুণীরা সবার অগোচরে এখন বৃদ্ধা।বীরাঙ্গনাদের চিহ্নিত করা রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব ছিল। কিন্তু এতো বছরেও করেনি।দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের অনেক বীরাঙ্গনা নারী।৭২ সালে গঠিত নারী পুর্নবাসন বোর্ডের সদস্য লেখিকা নীলিমা ইব্রাহিমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ বইটিতে বীরাঙ্গনা রীনার উক্তিতে বেরিয়ে আসে বিজয়ের সময় বীরাঙ্গনাদের অবস্থান।যুদ্ধ শিশুদের নিয়ে সেই সময়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলেন ড: নীলিমা ইব্রাহীম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছিলেন বীরাঙ্গনাদের মর্যাদা। ১৯৭২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছিলেন, “আজ থেকে পাকবাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত মহিলারা সাধারণ মহিলা নয়, তারা এখন থেকে বীরাঙ্গনা খেতাবে ভূষিত।কেননা দেশের জন্য তারা ইজ্জত দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে তাঁদের অবদান কম নয়, বরং কয়েক ধাপ উপরে, যা আপনারা সবাই জানেন, বুঝিয়ে বলতে হবে না। তাই তাঁদের বীরাঙ্গনার মর্যাদা দিতে হবে এবং যথারীতি সম্মান দেখাতে হবে। আর সেই স্বামী বা পিতাদের উদ্দেশে আমি বলছি যে, “আপনারাও ধন্য। কেননা এ ধরনের ত্যাগী ও মহৎ স্ত্রীর স্বামী বা মেয়ের পিতা হয়েছেন।” দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু বীরাঙ্গনাদের জন্য পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন। নীলিমা ইব্রাহীম সে-ই বোর্ডের সদস্য ছিলেন।মুক্তিযুদ্ধের পরপরই যুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় খোলা হয়েছিল নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র। সেখানে সিরাজগঞ্জের এই যুদ্ধাহত নারী মুক্তিযোদ্ধারা মাথাগোঁজার ঠাঁই পান, তিন বেলা খাবার পান। কুটিরশিল্পের কাজ শেখানো হতো তাদের আর এই জন্য তাদের দেয়া হতো কিছু বেতন। যুদ্ধকালীন সময়ে সারা দেশের ৪৮০ টি থানা থেকে গড়ে প্রতিদিন ২ জন করে নির্যাতিত মহিলার সংখ্যা অনুসারে ২৭০ দিনে ধর্ষিতার নারীদের সংখ্যা দাড়ায় ২ লক্ষ। সরকারী এক হিসাবে জন্মগ্রহণকারী শিশুর সংখ্যা বলা হয়েছে তিন লাখ।কানাডিয়ান ইউনিসেফের চেয়ারম্যান যুদ্ধ চলাকালিন এবং যুদ্ধোত্তর সময়ে দু'বার বাংলাদেশে আশার পরে তার রিপোর্টে ১০,০০০ যুদ্ধ শিশুর কথা উল্লেখ করেছেন। যে সব দেশ এগিয়ে এসেছিল যুদ্ধ শিশুদের দত্তক নিতে তার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, সুইডেন এবং অষ্ট্রেলিয়া।‘বীরাঙ্গনা’ মানে বীরের অঙ্গনা, বীরের নারী।মেয়েরা তাদের চোখের সামনে স্বজনদের খুন হতে দেখে প্রতিশোধ স্পৃহায় যুদ্ধে নেমেছিল। অথচ আজো মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিকের প্রতিচ্ছবি কেবলই পুরুষেরই দখলে। অনেকেই তাঁকে চেনেন ড. নীলিমা ইব্রাহীম নামে। তবে শোনা যায়, তিনি নাকি নিজের নামের সাথে ‘ডক্টর’ কথাটা যোগ করতে চাইতেন না। তাঁর অনেক শিক্ষার্থীর লেখায় জানা যায় বিষয়টা কথাটা। তিনি নীলিমা ইব্রাহীম নামেই পরিচিত ছিলেন সবার মাঝে- একেবারে আকাশের নীলিমার মতোই।১৯২১ সালের ১১ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর গ্রামের এক জমিদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।নীলিমা ইব্রাহিম বরাবরই একজন মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ১৯৫৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমিকায় ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটক।’ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন তিনি।নীলিমা ইব্রাহিম আমৃত্যু মানুষের শুভ ও কল্যাণী চেতনায় আস্থাশীল ছিলেন। মুক্তবুদ্ধি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও উদার মানবিকতাবোধই ছিল তার জীবনদর্শন। পুষ্প বৈরাগীর গল্প দিয়ে শেষ করছি। পুষ্প বেওয়া স্বামীর সাথে গান গাইতেন। গানের মাধ্যমেই যুদ্ধের কথা বলতেন। একদিন রাজাকার পাকিস্তানী আর্মি নিয়ে আসে পুষ্পর বাড়িতে। পুষ্পকে তার স্বামীর সামনেই নির্যাতন করে আর নিয়ে যায় তার স্বামীকে। তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরপর গত ৪০ বছর পুষ্প বৈরাগী শুধুই বঞ্চনা আর লাঞ্ছনা পেয়েছেন সমাজ থেকে। তাই আজ পুষ্প ও কমলা, রাহেলা, মাহেলা, আছিয়া, আয়শাসহ সকল যুদ্ধাহত নারী মুক্তিযোদ্ধার দাবি, রাজাকারের বিচার আর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। যাতে করে মৃত্যুর পরে তাদের কেউ ঘৃণার চোখে না দেখে। ১৯৭৩ সালে ৬৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নানা উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এর মধ্যে মাত্র দু’জন ছিলেন নারী। তাদেরই একজন কুড়িগ্রামের দরিদ্র নারী তারামন বিবি। তিনি তার ‘বীরপ্রতীক’ উপাধি পাওয়ার খবর জানতে পারেন ঘটনার ২৪ বছর পর।শেখ মুজিব কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, ‘আমি ওদের বাবা। মুক্তিযুদ্ধের প্রামান্য কিছু বইসমূহের তালিকাঃ ১। আমি বিজয় দেখেছি : এম আর আখতার মুকুল; (সাগর পাবলিশার্স) ২। একাত্তরের দিনগুলি : জাহানারা ইমাম; (সন্ধানী প্রকাশনী) ৩। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আড়ালে যুদ্ধ : অধ্যাপক আবু সায়ীদ ৪। মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখা : আবুল হাসনাত ৫। মানবতা ও গণমুক্তি : আহমদ শরীফ ৬। স্বাধীনতা '৭১ (১ম ও ২য় খণ্ড) : কাদের সিদ্দিকী ৭। একাত্তরের স্মৃতি : বাসন্তি গুহঠাকুরতা; (ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড) ৮। স্মৃতি ১৯৭১ : রশীদ হায়দা ৯। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস : লুৎফর রহমান রিটন ১০। একাত্তরের ঢাকা : সেলিনা হোসেন; (আহমদ পাবলিশিং হাউজ) ১১। একাত্তরের ডায়েরী: বেগম সুফিয়া কামাল ১২। রাজাকারের মন (১ম ও ২য় খন্ড) : মুনতাসীর মামুন ১৩। ইতিহাসের রক্ত পলাশ : আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী ১৪। আমি বীরঙ্গনা বলছি : নীলিমা ইব্রাহীম ১৫। কালরাত্রির খন্ডচিত্র : শওকত ওসমান ১৬। আত্মকথা ১৯৭১ - নির্মলেন্দু গুণ সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৩৬
false
mk
৭ নভেম্বর _ ‘মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস’ ও স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিষ্ঠার বিপ্লব যে যাই বলুক ৭ নভেম্বর দিনটি বিএনপি ও জামায়াত রাজাকারগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ উৎসবের দিন হলেও আসলে এটি ‘মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস’। ক্ষমতালিপ্সু জিয়াউর রহমান খালেদ মোশাররফসহ বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে ব্যাপক রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। অনেক মুক্তিযোদ্ধা কোরবানি হন এই দিনে আর সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ এবং তাদের গড়া কথিত রাজনৈতিক দলসহ ৭১’র যুদ্ধাপরাধী-মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো এই দিনটিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস নামে উৎসব পালন করে আসছে। প্রকৃতপক্ষে বিএনপির জন্মদিন এই ৭ নভেম্বর। না বিপ্লব, না সংহতিÑকোনোটার সাথেই এদের কোনো যোগাযোগ ছিলো না। বরং এরা এই দিনটাকে যুদ্ধাপরাধী-মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির পুনর্জন্ম দিবস বা ‘ভাগাড় থেকে প্রত্যাবর্তন’ দিবস হিসেবে পালন করলে তবুও সত্যের কাছাকাছি যাবে। আর সাধারণ মানুষ! মুক্তিযুদ্ধের সাথে বেইমানি করলো একজন মুক্তিযোদ্ধা, প্রতারিত হলো জনগণ। এই বিষয়গুলো দেখার পর দিনটি জাতীয় প্রতারণা দিবস হিসেবেও পালন করতে পারেন। মূলত ১৯৭২ সাল থেকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে প্রতিবিপ্লবীরা সংগঠিত হয়। এরা সেনাবাহিনীতেও একটা বিরাট প্রভাব ফেলে। তারপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকা-, সামরিক শাসন আর ৩ নভেম্বর জেল হত্যা সংগঠিত হয়। অবশেষে ৩ থেকে ৭ নভেম্বর দ্রুত দৃশ্যপট বদলাতে থাকে। কয়েকজন মেজর আর কর্নেলকে নিয়ে খন্দকার মোশতাক দেশে একটা অরাজকতা চালাচ্ছিলো। এই অবস্থার অবসানের লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে একটা প্রচেষ্টা নেয়। কিন্তু জেনারেল ওসমানীর মধ্যস্থতায় মোশতাক আহমদ বেঁচে যায়, কিন্তু জেলে নিহত হন চার নেতা। অন্যদিকে ওসমানীর মধ্যস্থতা মেনে নিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় মূল্যটাও পরিশোধ করেন খালেদ মোশাররফ।নেপথ্যের নায়ক৭৫’র ৭ নভেম্বরে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ভিতর থেকে যে ঘটনা ঘটেছিল তার প্রকৃত নায়ক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আবু তাহের (অব বীর উত্তম। তিনিই এ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং তিনিই বন্দিদশা থেকে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন; সেই সঙ্গে জিয়াকে ক্ষমতায়ও বসিয়েছিলেন সিপাহী-জনতার স্বার্থরক্ষা করার শর্তে।সিপাহী বিদ্রোহের শুরু এবং জিয়ার মুক্তিরাত ১২টায় সুবেদার মেজর আনিসুল হকের ইঙ্গিতে শুরু হয় সিপাহী বিদ্রোহ। ১২টা থেকেই তাহেরের বিপ্লবী গণবাহিনীর সদস্যরা এবং বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত সিপাহীরা জিয়াকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে জিয়ার বাসার চারপাশে সমবেত হতে লাগল। জিয়াকে মুক্ত করতে আসা কয়েকটি ইউনিটের মধ্যে মেজর মহিউদ্দীন (আর্টিলারি, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামী) ও সুবেদার মেজর আনিসের নেতৃত্বে টু ফিল্ডের কতিপয় সৈন্য সর্বপ্রথম জিয়ার বাসভবনে পৌঁছায়। অবস্থা বেগতিক বুঝে জিয়াকে পাহারারত ফার্স্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক প্লাটুন সৈনিক শুন্যে গুলি ছুড়তে ছুড়তে উল্টো দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। গেট খোলার মতো সেখানে উপস্থিত কেউ না থাকায় সৈন্যরা গেট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ‘জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ, সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই’ স্লোগান দিয়ে বেশ কিছু সৈনিক জিয়ার বাসায় ঢুকে পড়ে। তারা জিয়াউর রহমানকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে পীড়াপীড়ি শুরু করেন।এক পর্যায়ে মেজর মহীউদ্দীন বলেন, ‘স্যার আমরা আপনাকে নিতে এসেছি, আপনি আসুন’ প্রতিউত্তরে জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমি রিটায়ার্ড করেছি। আমি কিছুর মধ্যে নাই। আমি কোথাও যাব না। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’মেজর মহীউদ্দীন আবার বলেন, ‘আমরা আপনাকে নিয়েই যাব। আমরা আপনাকে আবার চিফ বানাতে চাই। দোহাই আল্লাহর আপনি আসুন।’ এভাবেই জেনারেল জিয়াকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করা হয়।তাহেরের জিয়া দর্শন ও আবদারএদিকে জিয়ার মুক্তির খবরে তাহের পুরো অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব দাবি করলেন এবং পুরস্কারস্বরূপ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হতে জিয়ার সাথে জিদ ধরলেন। লে. ক. আব্দুল হামিদ লিখেন, ‘জিয়াকে মুক্ত করার কিছুক্ষণ পরেই তাহের টু-ফিল্ড রেজিমন্টে ছুটে আসে। তখন রাত প্রায় ২-৩০ মিনিট। ওই সময় জিয়ার কক্ষে গুটিকয় অফিসার কর্নেল আমিনুল হক, মেজর মহীউদ্দীন, মেজর জুবায়ের সিদ্দীক, মেজর মুনীর, সুবেদার মেজর আনিস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জিয়া ও তাহের উভয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করলেন। জিয়া বললেন, তাহের তোমাকে ধন্যবাদ, আমাকে বাঁচিয়েছো। তাহের বলল, আপনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে। এদিকে আসুন প্লিজ, তাহের তাকে নিয়ে কক্ষের একটি নিভৃত কোনে গেল। বহুক্ষণ ধরে তাদের মধ্যে কথাবার্তা চলতে থাকল। একসময় তাদের মধ্যে বেশ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হল। এক ফাঁকে জিয়া বারান্দায় এসে সুবেদার মেজর আনিসকে কানে কানে বললেন, আনিস ওকে কোনোভাবে সরিয়ে দিন এখান থেকে। সাবধান বহু পলিটিক্স আছে। তাহের জিয়াকে টু-ফিল্ড থেকে বের করে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যেতে চাইছিল। জিয়া যেতে রাজি হননি সঙ্গত কারণেই।
false
ij
পার্সিপোলিস_ প্রাচীন পারস্যের বিস্ময়কর স্থাপত্য নিদর্শন পার্সিপোলিসের বিশালত্ব আসলে সম্রাট দারায়বৌষ-এর সিংহ হৃদয়ের প্রতীক। ইরানের দক্ষিণে ফারস প্রদেশ। ওই প্রদেশের একটি প্রান্তরের নাম মারভ দাস্ত। পার্সিপোলিস ওখানেই। হা হা ধ্বংসস্তুপ। আজ কেবল কয়েকটি স্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে। কেন? যিশুখ্রিস্টের জন্মের ৩৩০ বছর আগের কথা। পারস্য জয় করে পার্সিপোলিস দখল করে নিয়েছেন মেসিডোনিয়ার আলেকজান্দার। তার সৈন্যরা লুঠ করছে পার্সিপোলিস। তখনই এক রাতে মদ গিলে মাতাল হয়ে পার্সিপোলিস পুড়িয়ে দিয়েছিলেন আলেকজান্দার । সেই সঙ্গে পুড়ে গেল প্রাচীন পারস্যের বিস্ময়কর এক স্থাপত্য নিদর্শন। পার্সিপোলিস আসলে কি? পার্সিপোলিস হচ্ছে প্রাচীন পারস্যের আকামেনিদ রাজবংশের সম্রাটদের রাজপ্রাসাদ। আকামেনিদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সাইরাস দ্য গ্রেট হলেও প্রাসাদটি নির্মানের উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন সম্রাট দারায়বৌষ। এর আগে আমি এক লেখায় বলেছি যে- সম্রাট দারায়বৌষ সম্রাট সাইরাসের ছেলে গাওমাতাকে হত্যা করে পারস্যের ক্ষমতা দখল করেছিলেন; তারপর পার্সিপোলিস নির্মানের উদ্যেগ নিয়েছিলেন দারায়বৌষ। আকামেনিদ রাজবংশের পুরনো রাজধানী ছিল পাসারগাদে। সেটি ছিল পার্সিপোলিসের ২৫ মাইল উত্তরে।আকামেনিদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সাইরাস দ্য গ্রেট-এর রাজধানী ছিল পাসারগাদে। সাইরাসের সমাধিটি ওখানেই। পার্সিপোলিস নামটি দিয়েছিল গ্রিকরা। পার্সি= পারস্য বা পারশিক। পোলিস= নগররাস্ট্র। কাজেই, পার্সিপোলিস অর্থ: পারশিকদের নগররাষ্ট্র। সত্যিই পার্সিপোলিস তাই ছিল। সম্রাট দারায়বৌষ-এর আমলে পার্সিপোলিসের নাম ছিল পারসা। দেশটা পারসীয়দের বলেই। পার্সিপোলিসের মূল ভিত ছিল সমতল থেকে উচুঁ ৪৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ৩০০ মিটার প্রশস্ত চত্তর। সেই উঁচু প্রশস্ত চত্তরে ছিল রাজকীয় ভবন। যার দেওয়ালে ছিল খোদাই করা নকশা। পুবে ছিল আরও কিছু ভবন ও দূর্গের মতন পাহাড়। পার্সিপোলিসের যে কোথায় সাধারণ মানুষ বাস করত তা আজও বার করা যায়নি। পার্সিপোলিসের সাড়ে ৩ মাইল উত্তরে রয়েছে ‘নাখশ-ঈ-রুস্তাম’। সম্রাট দারায়বৌষ ও তাঁর বংশধরের সমাধিস্থল ‘নাখশ-ঈ-রুস্তাম’। সবচে বিস্ময়ের কথা এই যে-পার্সিপোলিস একেবারে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গিয়েছিল। পারস্যের লোকেরা পার্সিপোলিসকে বলতে লাগল “তখত-ঈ-জামশীদ”; জামশীদ ছিল প্রাচীন পারস্যের একজন মিথীয় পুরুষ, ঠিক আকামেনিদ রাজবংশের কেউ নন। আরও পরে পারস্যের লোকেরা পার্সিপোলিসের ধ্বংস¯তূপকে বলতে লাগল চেহেল “সোতুন” বা চল্লিশ স্তম্ভ। ১৩১৮ সালে একজন ইউরোপীয় অভিযাত্রীর লেখায় প্রথম ইউরোপ জানল পার্সিপোলিসের কথা। তারপর থেকে গবেষনা আরম্ভ হল সমতল থেকে উচুঁ ৪৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ৩০০ মিটার প্রশস্ত চত্তর। ধীরে ধীরে সব জানা গিয়েছিল। জানা গেল যে পার্সিপোলিসেই বাৎসরিক কর গ্রহন করতেন সম্রাট দারায়বৌষ, তাঁর পুত্র জেরেকসেস; ইনিই গ্রিস আক্রমন করেছিলেন, হেরেছিলেন। যা হোক। সবাইকে ১৪ মিটার উঁচু সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হত। মূল প্রবেশ পথে একটা পাথরের ষাঁড়। উলটো দিকে মানুষমুখো ডানাওলা ষাঁড়। ভীতিকর জন্তুগুলি পেরিয়ে তারপর চত্তর। বিশাল চত্তর। চারিদিকে স্তম্ভ, দরওয়াজা। এটিই আপাদানা বা সম্মেলন কক্ষ; যা ২.৬ মিটার উঁচুতে পৃথক একটি পোডিয়ামের ওপর দাঁড়িয়ে- প্রতি পাশে ১১০ মিটার দীর্ঘ। ৬টি স্তম্ভের ৬টি সারি। স্তম্ভের ভিত্তি চৌকোন। স্তম্ভের শীর্ষে ছাদের কাছে জন্তুর মুখ; বশ্যতার প্রতীক। স্তম্ভগুলোর মাঝখানে ৫ মিটার পুরু ইটের দেওয়াল। চত্তরের পশ্চিম কোণে ছিল দারায়বৌষ প্রাসাদ। প্রবেশের দওয়াজা ছিল একটিই, তার আগে প্রহরীকক্ষ। ভিতরে প্রথমে বড় একটা হল রুম। তারপরে সারিসারি কক্ষ, তার মসৃন সব দরওয়াজা। জানালা। দেওয়ালে কুরুঙ্গিতে কারুকাজ। দেওয়ালে খোদাই করা নকশা। উপকথা। পারশিক কোনও বীর হত্যা করছে কোনও ভয়ঙ্কর জন্তুকে। আসলেই পার্সিপোলিস ছিল প্রাচীন পারস্যের বিস্ময়কর স্থাপত্য নিদর্শন। ভাবলে অবাক লাগে- মদ খেয়ে মাতাল হয়ে মেসিডোনের আলেকজান্দার ওটা পুড়িয়ে দিলেন। তারপরও ঐ লোকটাকে আমরা আজও গ্রেট বলি! আশ্চর্য! সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৫৯
false
mk
স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি বাংলাদেশের দৃশ্যমান বাস্তবতা দেখে মনে হয় দেশের জনগণ আজ সম্পূর্ণভাবে দুভাবে বিভক্ত। স্বাধীনতার পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তি। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে অর্থাৎ পাকিস্তান আমলে যখন আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান ছিল তখন থেকেই এই বিভক্তির সৃষ্টি পাকিস্তান নামক ধর্মরাষ্ট্রে যারা ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতাভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা করতেন বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিরোধী ছিলেন এমনকি বাংলা ভাষায় কথা বলা যাদের অনেকের অভ্যাস ছিল না, পাকিস্তান থাকলেই ইসলাম থাকবে এই যাদের বিশ্বাস ছিল তারাই কিন্তু ১৯৭১ সালে দখলদার বাহিনীর সমর্র্থক হিসেবে সহযোগিতা করেছিলেন। অপরদিকে গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক প্রগতিপন্থীরা এমনকি পাকিস্তান সৃষ্টির আগে থেকে প্রগতির ধারায় অগ্রসরমান হচ্ছিলেন তারা কখনো পাকিস্তানি স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতার কাছে মাথানত করেননি। সুপ্ত বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় তারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। পাকিস্তানের নাগরিক হয়েও তারা একদিনের জন্য ভোলেননি যে বাংলা তাদের ভাষা, বাঙালি তাদের জাতীয়তাবাদ এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ধারণ করেই তারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারেন। তারা কখনো পাকিস্তান নাগরিক হয়েও দখলদারদের শোষণমূলক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হননি। মুষ্টিমেয় কিছু মুসলীম লীগ ও পাকিস্তানপন্থী ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। যখনই বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের সংঘাত অনিবার্য হয়েছে তখনই তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষ অবলম্বন করেছেন। উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের প্রকৃত অর্থেই সতর্ক করেছিলেন। ভাষা আন্দোলনই হচ্ছে আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রথম সোপান। ওই আন্দোলনের পথ ধরেই আমরা স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের পথে অগ্রসর হয়েছি। প্রতিক্রিয়াশীল ও মুসলীম লীগ ও অন্যান্য ডানপন্থী দল বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে পাকিস্তানি শাসক-শোষকদের তাঁবেদারি করত। পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক একচ্ছত্রভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করায় বাঙালির আন্দোলন ক্রমাগত শক্তিশালী হতে থাকে। যত দিন যায় ততই বাঙালি বুঝতে পারে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত থেকে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব নয়। সে কারণেই ৬ দফা আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন, স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপান্তর হয়। আর এই আন্দোলনের রূপকারই হচ্ছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানপন্থীরা অর্থাৎ মুসলীম লীগ, জামায়াতে ইসলাম ও অন্যান্য প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠন দখলদার বাহিনীর পক্ষাবলম্বন করে। মার্চ মাসে গণহত্যার পরও তারা তাদের মত ও পথের কোনো পরিবর্তন করেনি। ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম চলাকালে দখলদার বাহিনীর সম্পূরক শক্তি হিসেবে তারা কাজ করেছে। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ এমন কোনো অপরাধ নেই যে তারা করেনি। এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। সাধের পাকিস্তান রক্ষা করার জন্য তারা তাদের দেশের মা-বোনকে দখলদার বাহিনীর দস্যুদের হাতে তুলে দিয়েছে। প্রায় আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করা হয়েছে। ৯ মাস ধরে নিরীহ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।পাকিস্তানপন্থী দলসমূহ এবং তার নেতারা এসব শুধু পর্যবেক্ষণই করেননি সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে জামায়াতের নেতারা যারা আজকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত তারা নানা রকম উপবাহিনী সৃষ্টি করে দখলদার বাহিনীকে নিবিড় সহযোগিতা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা যে ভূমিকা পালন করেছে, মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের পর তাদের এ দেশে থাকার কোনো নৈতিক অধিকার থাকা উচিত নয়। বস্তুত গোলাম আযম তো তার লোকজন নিয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর জিয়াউর রহমান তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের যে সখ্য তার মূল উৎসই তো এখানে। স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। ১১ হাজার অপরাধী বন্দি ছিল। অনেকের বিচার হচ্ছিল বা পরে হতো। জিয়াই তো বিদ্যমান আইন বাতিল করে সব যুদ্ধাপরাধীকে মুক্ত করে দেন। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার নিষিদ্ধ করেন এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেন। জেনারেল জিয়া থেকে বেগম জিয়া প্রায় দেড় দশক বিএনপির শাসনামলে একই নীতি অবলম্বন করেছেন। বেগম জিয়া একধাপ এগিয়ে গিয়ে জামায়াতের সঙ্গে একই জোটে একীভূত হয়ে আজ পর্যন্ত আন্দোলন পরিচালনা করছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে, স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করে, আর্থসামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে যে শক্তিশালী করা হয় তারই কুফলের প্রতিফলন দেখা যায় আজকের রাজনীতিতে।১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে নিষিদ্ধ সে দলটি ধর্মকে আশ্রয় করে অতি গোপনে মসজিদ ও মাদ্রাসায় অতি গোপনে প্রচার চালাতো তারা আজ প্রকাশ্য জঙ্গিবাদী তৎপরতার মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি করছেন। যে সব যুদ্ধাপরাধীকে জিয়া মুক্ত করে দিয়েছিলেন যাদের সঙ্গে জিয়া ও বেগম জিয়ার সম্পর্ক, তারা আজ স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সত্তা ও চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ বলতে কি বুঝিয়েছেন? অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ নয়, অর্থাৎ বাংলাদেশকে তারা জামায়াতী কায়দায় গড়ে তুলতে চায়। এটাতো বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ। অথচ এটা নিয়ে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির বেশি একটা উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়নি। জামায়াতের সঙ্গে সহযোগী হয়ে, জামায়াতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে, বিএনপি তো ভিন্নতর বাংলাদেশ গঠন প্রক্রিয়া সহযোগিতা করছে। বিএনপির অভ্যন্তরে মুক্তিযোদ্ধারা কি করে এটা মেনে নিতে পারেন। আর জিয়াউর রহমান যদি সত্যিকার অর্থে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকতেন তাহলে তিনি কি করে মুক্তিযুদ্ধের শক্রদের বরণ করে নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিকে পুনর্বাসন করলেন। সব নষ্টের মূল জিয়া। একদিক থেকে বলা হচ্ছে তিনি নাকি স্বাধীনতার ঘোষক। প্রথম সারির মুক্তিযোদ্ধা। যদি তাই হয়ে থাকেন তাহলে তিনি কী করে স্বাধীনতার শত্রুদের দেশ ফিরিয়ে আনলেন এবং এ দেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করলেন।যাদের কারণে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ বিপন্ন হতে পারে। আসলে স্বাধীনতা বিরোধীরা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল তারা এখনো সেই বিরোধিতার প্রক্রিয়ায় লিপ্ত রয়েছে। ১৯৭১ সালে পরাজয় বরণ করলেও তারা সে পরাজয়কে মেনে নেয়নি। গোলাম আযমসহ জামায়াতের কোনো নেতা ভুল করেছেন বলে আজো ক্ষমা প্রার্থনা করেননি। বরং তারা তাদের দর্শন বাস্তবায়নের জন্য পাকিস্তার রক্ষার জন্য যে সংগ্রাম করেছিলেন আজো তা পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছেন।পাকিস্তান আমলে তারা যতটুকু সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে তৎপর ছিলেন তার থেকে শতগুণে জঙ্গিবাদী তৎপরতা বৃদ্ধি করেছেন। সে জন্যই তো বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা। যারা বলেন বাংদেশের গণতন্ত্র বিপন্ন। বিএনপি-জামায়াত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। তাদের কাছে প্রশ্ন এটা কি প্রমাণ করে জামায়াত ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব? বেগম জিয়া এটাই বলে আসছেন। দিনের আলোকে অন্ধকার হিসেবে পরিচিতি ঘটানোই তার লক্ষ্য। ১৯৭৫-এর প্রতিবিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লবীরা বিভিন্ন সময় কৌশল পরিবর্তন করলেও মূল লক্ষ্য থেকে কখনো সরে যায়নি। আপস করেনি। মীমাংসা করেনি। মহামান্য আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত হয়েও নিজেদের দোষ স্বীকার করেননি। তাই মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় যখন একে একে প্রকাশ পাচ্ছে তখন তারা জঙ্গিবাদী তৎপরতার মাধ্যমে তা মোকাবেলা করতে চাচ্ছে। কেননা যুক্তিতর্ক ঐতিহাসিক বাস্তবতা মেনে নিয়ে তারা কখনো তাদের অপরাধ স্বীকার করবে না। এটাই জঙ্গিবাদ তত্ত্ব।জামায়াত এই তত্ত্ব থেকে বিন্দুমাত্র সরে দাঁড়ায়নি। জেনেশুনে বিএনপির নেতারা মিথ্যাচার করছেন। যাদের মধ্যে ডজনকে ডজন ব্যারিস্টার রয়েছেন, বুদ্ধিজীবী রয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, তারা বেগম জিয়ার নির্দেশ ক্রমেই জামায়াত থেকে গাঁটছড়া হতে পারেনি, পারবেও না।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহম্মদের মতো বুদ্ধিজীবীরা জামায়াতের জঙ্গিবাদী তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত। কিন্তু বেগম জিয়ার প্রভাবমুক্ত হয়ে সত্য কথা বলার সাহস তাদের নেই। প্রতিবিপ্লবীরা প্রতিবিপ্লবের ধারায় অগ্রসর হচ্ছে এবং স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি স্বাধীনতার ধারায় অগ্রসরমান। এই বিপরীতমুখী দুই শক্তির সমন্বয় সাধন সম্পর্কে যারা কথাবার্তা বলে থাকেন বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস তাদের বিস্মৃতির অতল গহŸরে হারিয়ে গেছে।বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব একেবারেই আদর্শিক। বিশ্বের কোথাও আদর্শিক রাজনৈতিক প্রশ্নের বিরোধ সমঝোতার মাধ্যমে মীমাংসিত হয়েছে বলে কেউ বলতে পারবে না। এক সময়ের পুঁজিবাদের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত রাশার অবস্থান ছিল। কিন্তু সমঝোতা হয়নি। বাংলাদেশ বলতে যদি কোনো রাজনৈতিক দর্শন বোঝায়, বাংলা ভাষা সাহিত্য-সংস্কৃতি তথা বাঙালির মননশীলতায় যদি কোনো দর্শন থেকে থাকে তা পরিবর্জন করে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির সমঝোতা প্রতিষ্ঠা হবে এরূপ সম্ভাবনা বিরল। বরং পারস্পরিক সহাবস্থানে কতটুকু কার্যকর করা যায় সে দিকে দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে। পূর্বশর্ত হিসেবে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দর্শননির্ভর রাজনীতি অবশ্যই পরিহার করতে হবে। গণতন্ত্রের পরিভাষা শুধু ব্যবহার করলেই হবে না। গণতন্ত্রের নীতি পরিশীলিত হতে হবে।অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদ্যমান দুটি গোষ্ঠী নেহাত বিপদে জড়িয়ে পড়েছে। বাস্তবতা তা নয়। সংঘাত যদি উভয় পক্ষের বর্তমান বাস্তবতা হয়ে থাকে তা অবশ্যই রাজনৈতিক দর্শনভিত্তিক। অনেকে আছেন মুক্তিযুদ্ধের কথা বললে এমন সব বাগাড়ম্বর করেন। যার সঙ্গে প্রকৃত চেতনার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। মূল্যবোধ তো সামগ্রিকভাবে পরিবর্জিত করেছে। তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বটা কোথায়? বাংলাদেশ বলতে কি আমরা সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসী তৎপরতাকে বুঝবো? স্বাধীন বাংলাদেশ কি একটা ধর্মরাষ্ট্রে পরিণত হবে? রাষ্ট্রের ভেতর ধর্ম আছে, থাকবে। কোনো দিন তা কোনো সংকটের সৃষ্টি করেনি। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা একই রাষ্ট্রে বসবাস করে আসছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের এমন উদাহরণ আছে। একটা রাষ্ট্রে বিশেষ ধর্মকে সুযোগ দিতে হবে এটাতো আদি ইসলামকালেও ঘটেনি। এটা এখন কেন ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে? বাংলাদেশের জনগণ সম্মিলিতভাবে মুক্তির সংগ্রাম করেছেন। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই অংশ নিয়েছেন। সবাইকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। সবারই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এখানে সম্প্রদায়গত বিভেদের কোনো স্থান নেই। ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে কিন্তু ধর্মীয় কুসংস্কারকে বাদ দিয়ে বাঙালি বলতে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সবাইকে বুঝায়। রাষ্ট্র সত্তায় সবাই বিশ্বাসী। কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর অন্য গোষ্ঠীর ওপর আধিপত্য গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের ১৯৭২-এর সংবিধান তা নিশ্চিত করেছে। প্রতিবিপ্লবীরা প্রতিবিপ্লবের ধারা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যতই চেষ্টা করুন না কেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধু যে পথের দিকনির্দেশনা দিয়েছে তার থেকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি একচুলও নড়বে না। রাষ্ট্র পরিচলনার ক্ষেত্রে বিশেষ সমঝোতা হলেও হতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক দর্শনের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার পরিবর্জন-পরিবর্ধন সম্ভব নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে দর্শন ভিত্তিতে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন- যা ১৯৭২-এর সংবিধানে স্থান পেয়েছে তা পুনরুদ্ধার করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সুনিশ্চিত করা সম্ভব।
false
mk
বিশ দলের বিষ! তিন মাসের টানা আন্দোলন শেষ না হতেই কঠিন টানাপড়েনে পড়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে। বিএনপির সাম্প্রতিক আচরণে অন্য শরিকরাও কম-বেশি হতাশ। এই ক্ষোভ ও অন্তর্দ্বন্দ্ব এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে কোনো সময় জোট ছাড়তে পারে বেশ কয়েকটি শরিক দল। এ জন্য বিএনপির অবহেলা, অবমূল্যায়ন, অনিয়ম ও সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন শরিক দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে বিএনপির প্রতি জামায়াতের যেমন ক্ষোভ বেড়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক চাপসহ বিভিন্ন কারণে জামায়াতের প্রতি বিএনপিও এখন উদাসীন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য দিয়েছে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার দল। আমরা জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী। জামায়াতের আদর্শ আলাদা। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক জোটভিত্তিক আন্দোলন ও নির্বাচনকেন্দ্রিক। এর বাইরে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে আমি মনে করি, বিএনপি একটি জাতীয়তাবাদী দল। আপন শক্তিতেই বিএনপিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত।জোটের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা জানান, কয়েক মাস পরপর কোত্থেকে যে কীভাবে সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি আসে তা ঘোষণার আগ মুহূর্তে এমন সময়ে আমাদের শোনানো হয়, যখন শুধু সমর্থনজ্ঞাপন ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। অনেক সময় এতটুকুও জোটে না, অন্য কারও মুখে জানতে হয়, ‘বিএনপি এই সিদ্ধান্ত বা কর্মসূচি’ গ্রহণ করেছে। এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকেও জামায়াতে ইসলামীর ওপর তিন মাসের আন্দোলন ও সাম্প্রতিক সিটি নির্বাচনে ‘নিষ্ক্রিয়তা’সহ নেতিবাচক ভূমিকা পালনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এমনকি জামায়াত নেতাদের একটি বৃহৎ অংশের সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত রয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। এর ফলে জামায়াত সাম্প্রতিক আন্দোলনে ‘আইওয়াশ’ ছাড়া তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। আন্দোলনও কাক্সিক্ষত সাফল্য পায়নি বলে মনে করছে বিএনপি। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দলের পক্ষ থেকেও জামায়াতকে ছাড়তে বিএনপি প্রধানের ওপর চাপ রয়েছে। বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী প্রগতিশীল নেতারা মাঝে-মধ্যেই বেগম জিয়াকে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। তাদের বক্তব্য, জামায়াতের কারণেই সরকারবিরোধী প্রগতিশীল শক্তিগুলো বিএনপির সঙ্গে কোনো সম্পর্কে জড়াচ্ছে না। তাছাড়া ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। চলমান বিশ্বরাজনীতিতে জামায়াতকে বাদ না দিলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবির নিয়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই রীতিমতো বিরক্ত। এ ছাড়া জামায়াতের ব্যাপারে ইউরোপ-আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের অনেক দেশ ও সংস্থার আপত্তি থাকায় বিএনপির একটি অংশও চাচ্ছে ধর্মভিত্তিক এই রাজনৈতিক দলটিকে জোট থেকে বাদ দিতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও জামায়াত সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করা হয়েছে সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি বিবৃতিতে। এমনকি সাম্প্রতিক একটি বিবৃতিতে আফ্রিকার একটি জঙ্গি সংগঠন ‘বোকো হারামের’ সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে বাংলাদেশের এই ধর্মীয় দলটিকে। তাছাড়া বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, এমনকি অধ্যাপক ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারার মতো সমমনা দলগুলোর পক্ষ থেকে সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার পরও শুধু জামায়াতের কারণে জোটে আসতে অসম্মতি জানিয়েছে বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। ফলে সঙ্গত কারণেই ইদানীং বিএনপি-জামায়াতের দূরত্ব বেড়েছে। সূত্র জানায়, ২০ দলের শরিকদের মধ্যে বিএনপির এখন সবচেয়ে বেশি ‘টানাপড়েন’ চলছে জামায়াতের সঙ্গেই। তাদের সম্পর্ক এতটাই বিরূপ ধারণ করেছে যে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজে ফোন করে না ডাকলে জামায়াতের কোনো নেতা আর বিএনপিমুখী হবেন না। তারাও নিজ থেকে কোনো যোগাযোগও করবেন না। জামায়াতের একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পর্যায়ের নেতা এ তথ্য জানান।অপর একটি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক আন্দোলন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি নির্বাচন, জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসিসহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি কোনো যোগাযোগ না করায় জামায়াতের এই ক্ষোভ বেড়েছে। বিশেষ করে অনির্দিষ্টকালের টানা অবরোধ, অতঃপর লাগাতার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার আগে জামায়াতের সঙ্গে ন্যূনতম কোনো আলোচনার প্রয়োজনবোধ করেনি বিএনপি। এর ফলে আন্দোলনের জন্য তেমন প্রস্তুতি নেওয়ারও সুযোগ ছিল না জামায়াতের। কর্মসূচি ঘোষণার কয়েক দিন পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাছাড়া সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ সেই নির্বাচনের প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষেত্রেও তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। বিশেষ করে ২০ দলের নামে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হলেও কাউন্সিলর পদের প্রার্থী নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করেই বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’র নেতাদের নিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো কাউন্সিলর প্রার্থীদের নামের তালিকা ঘোষণা করেন। যা থেকে তাদের দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নেওয়া প্রার্থীদের নাম বাদ পড়ে। এ ছাড়াও জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হলেও বিএনপির পক্ষে কেউ ভিতরে ভিতরেও এতটুকু সহানুভূতি দেখায়নি। তাদের মতে, জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর এত বড় কঠিন সময় আর কখনো পার করেনি দলটি। অথচ দলের এই চরম দুঃসময়ে জোটের নেতৃত্বাধীন দলের কাছ থেকে ন্যূনতম কোনো সহযোগিতা তারা পায়নি। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে জামায়াত ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে অনৈতিক কাজ করেছে। কারণ সবাই যখন বর্জন করছে, তারা তাদের প্রার্থী রেখে দিয়েছে। এটা ঠিক হয়নি।’ জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতাদের মতে, বর্তমান সরকারের শাসনামলে বিএনপির ডাকে কয়েক দফা আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের শতাধিক নেতা-কর্মী খুন ও গুমের শিকার হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে কখনোই সদাচরণ কিংবা কোনোরূপ সহানুভূতিও প্রকাশ করা হয়নি। জামায়াতের মজলিশে শূরার একজন সদস্য জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের ডাকে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির দিন খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসার চারদিকে বালির ট্রাকে অবরুদ্ধ হওয়ার পর বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী রাজপথে না নামলে জামায়াত-শিবির নেতারা সেদিন ঢাকার রাজপথে নামেন এবং মালিবাগ মোড়ে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত তারা পিছু হটে। সেই থেকেই মূলত বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর থেকে তাদের বিশ্বাসে চিড় ধরে। এরপর চলতি বছর ৩ জানুয়ারি গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর বিএনপির ১০ জন নেতা-কর্মীও তাদের নেত্রীর জন্য কিংবা তার আহূত কর্মসূচিতে গুলশানে অথবা ঢাকায় একদিনও নামেননি বলে দাবি জামায়াতের। অথচ জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার কোথাও না কোথাও ঝটিকা মিছিল বের করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শুধু জামায়াতই নয়, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, এলডিপি, জাগপা, বাংলাদেশ লেবার পার্টিসহ আরও বেশ কয়েকটি শরিক দল বিএনপি নেতাদের সাম্প্রতিক আচরণে ক্ষুব্ধ। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য কয়েকটি দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেও দেখা পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির শেখ আনোয়ারুল হকসহ বেশ কয়েকটি পার্টি জোট ছেড়ে চলে যায়। পরে তাদের অধঃস্তন নেতাদের দিয়ে আবারও সেগুলো পুনর্গঠন করে জোটের অন্তর্ভুক্ত করে রাখা হয়।বাংলাদেশ লেবার পার্টি চেয়ারম্যান ড. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, এত বড় জোটে একটু-আধটু মান-অভিমান হতেই পারে। এটাকে টানাপড়েন বলাটা ঠিক হবে না। তাছাড়া বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর ক্ষমতাসীনদের যে মাত্রার দমননীতি চলছে তাতে ইচ্ছা করলেই কোনো দলের পক্ষে এখন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করা সম্ভব নয়। তবে নেতৃত্বাধীন দল হিসেবে বিএনপি নেতারা আরেকটু দায়িত্বশীল হবেন বলেও আশা করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, জামায়াতের কারণে ইন্ডিয়ার পর এখন ইউরোপ-আমেরিকার সমর্থনও তারা হারাতে বসেছেন। বিশেষ করে ২০১২ সালের অক্টোবরে ভারত সফরকালে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসার পর ২০১৩ সালের মার্চ মাসে সে দেশের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশ সফরকালে তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার দেখা না করার বিষয়টিকে অত্যন্ত নেতিবাচক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক। এ জন্য তিনি জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীকেই দায়ী করেন। - See more at: Click This Link সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:০৪
false
hm
বাঘাবাবুলের গল্প ১. বাঘাবাবুল খালি হাতে একটি বাঘ শিকার করেছিলেন। মেছোবাঘা, গেছোবাঘা, গুলবাঘা, ফুলবাঘা নয়, রীতিমতো একটি তরুণ রয়্যাল বেঙ্গলকেই ঘায়েল করেছিলেন তিনি। সেই রোমহর্ষক হত্যাকান্ডের পরই তাঁর নামের মুড়োতে একটি "বাঘা" যুক্ত হয়। নইলে এই গল্পটির শিরোনাম হতো "বাবুলের গল্প", যা কখনো লেখা হতো না। ২. বাঘাবাবুলকে সবাই খুব ভক্তিশ্রদ্ধা করতো। খালি হাতে বাঘ শিকার করা লোক সেই আমলে খুব বেশি ছিলো না, তাদের মধ্যে লোকে কেবল বাবুলকেই স্বচক্ষে দেখেছে। বাঘ শিকারের পর এলাকায় বাঘাবাবুলের প্রতিপত্তি বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়। কাজে-অকাজে লোকে তাঁকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে শুরু করে, অনেকেই তাঁর উলঙ্গশৈশবকালীন বন্ধু হিসেবে নিজেকে জাহির করতে থাকে, দুয়েকজন রীতিমতো শহর থেকে ফোটোগ্রাফার আনিয়ে বাঘাবাবুলের সাথে নিজের ছবিও তুলিয়ে বাঁধাই করে রাখে। বাঘাবাবুলের শ্বশুরবাড়ি যে গ্রামে, সেখানে আগে চোরডাকাতের মৃদু উপদ্রব ছিলো, তা বাবুলের বাঘাত্বপ্রাপ্তির পর একেবারেই লোপ পায়, বাঘাবাবুলের শ্বশুরের গ্যাঁড়া দেনাদাররা কেউ কেউ নানা উদ্যোগ করে টাকাপয়সা ফিরিয়ে দিয়ে অধমর্ণাবস্থা কাটিয়ে একটা ভদ্র আবহাওয়ায় ফিরে আসেন, বাকিরা ফেরার হন, একজন আত্মহত্যা করেন। ৩. বাঘাবাবুল কয়েকটি সন্তানাদি রেখে পরম আয়েশে ও দাপটে একটি মাঝবয়েসী জীবন কাটিয়ে হঠাৎ একদিন ধরাধাম ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর কয়েক মাস পর আবার তাঁর শ্বশুরের গ্রামে মৃদু চোরডাকাতের উপদ্রব শুরু হয়। ৪. সন্দেহের প্রথম সূত্রপাত করেন জনৈক কূটাভিলাষী সাংবাদিক মিন্টু গোলন্দাজ। তাঁরই এক সহকর্মীর বন্ধু বেশ জাঁক করে বাঘাবাবুলের সাথে নিজের পিতার তোলা ছবি দেখাচ্ছিলেন এক পার্টিতে। "ইনি আমার বাবা।" খুশি খুশি গলায় বলেন সহকর্মীর বন্ধু। "আর ইনি বাঘাবাবুল।" "বাঘাবাবুল কে?" গোলন্দাজ প্রথম গোলাটা ছোঁড়েন। সহকর্মীর বন্ধু খুব খুশি হন প্রশ্নটি পেয়ে। তিনি বাঘাবাবুল সম্পর্কে ওপরের ১ থেকে ৩ পর্যন্ত তথ্যগুলি একটু রং চড়িয়ে বলেন। গোলন্দাজ অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছেন বহু কিছুর ওপরে। বহু কেঁচোর গর্ত থেকে কেঁদো কেঁদো অজগর হিঁচড়ে বার করেছেন। তাঁর পাল্লায় পড়ে কেঁদো কেঁদো অজগর কেঁচো হয়ে প্রাণে বেঁচেছে। আর একজন বাঘাবাবুল তো নিতান্তই ইতিহাস। তিনি মনোযোগ দিয়ে ছবিটি হাতে নিয়ে বাঘাবাবুলকে পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যবেক্ষণ শেষ করে তিনি চশমাটি নাক থেকে নামান। তারপর সেটিকে ভাঁজ করেন। তারপর পকেট থেকে বার করেন চশমা রাখার খোল। তার ভেতরে তিনি চশমাটিকে রাখেন। তারপর খোলটিকে পকেটে ভরেন। তারপর একটি মৃদু কাশি দিয়ে বলতে থাকেন যা বলার। তাঁর বক্তব্য খুবই সাদামাটা। বাঘাবাবুলকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে তাঁর উচ্চতা মেরে কেটে সাড়ে পাঁচফিট হবে। তিনি যতোই ছবিতে স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে দিয়ে পালোয়ানী ভাব মারার চেষ্টা করুন না কেন, পরিষ্কার গোণা যাচ্ছে তাঁর পাঁজরের হাড্ডিগুলি। বাইসেপ ট্রাইসেপ কোয়াড্রিসেপ প্রভৃতি প্রয়োজনীয় পেশীগুলি বরং সহকর্মীর বন্ধুর বাবার গায়েই কিঞ্চিৎ বিদ্যমান, বাঘাবাবুলের তা নেই। বাঘাবাবুলকে দেখেই বোঝা যায়, তিনি পেটের অসুখে ভোগেন, হজমে সমস্যা আছে, কে জানে হয়তো ডায়াবেটিসও থাকতে পারে। সব মিলিয়ে এ সিদ্ধান্তে আসা অনুচিত হবে না যে বাঘাবাবুল নিতান্তই একজন বাবুল। বাঘ শিকার তাঁকে দিয়ে সম্ভব নয়, বন্দুক হাতেও না, আর খালি হাতে তো অসম্ভব। ৫. সহকর্মীর বন্ধুটি প্রথমে মনক্ষুণ্ণ হন, তারপর কিছুক্ষণ ভাবেন, তারপর তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। তিনি খপ করে তার বন্ধু ও গোলন্দাজের সহকর্মীর হাত থেকে ফ্রেমশুদ্ধু ছবিটা কেড়ে নিয়ে থপথপিয়ে অন্য ঘরে চলে যান, তারপর ফ্রেমখানা সেখানে কোন গোপন সুরক্ষিত অন্দরেকন্দরে ফেলে রেখে এসে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে একটি সিংহনিনাদ প্রসব করেন। তাঁর বক্তব্যও সাদামাটা। এভাবে বাঘাবাবুলের বাঘশিকারের গল্পে প্যাঁচ কষে তাঁর পিতাকে অপমানের অধিকার মিন্টু গোলন্দাজের নেই। গোলন্দাজ এবার অন্য পকেট থেকে আরেকটি খোল বার করেন। সেখান থেকে বার করেন সরু বিদেশী সিগারেট। খোল থেকেই বার করেন মোটা বিদেশী মোমমাখানো দিয়াশলাই। প্রথমে সিগারেটটি ঠোঁটে গোঁজেন, তারপরে উদাস দৃষ্টিতে সহকর্মীর বন্ধুটির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। তারপর ধীরেসুস্থে দেয়াশলাইটি ধরিয়ে সিগারেটের মাথায় ধরেন। একবার দু'বার টেনে সিগারেট ভালো করে ধরিয়ে একটা ধোঁয়াও ছাড়েন। তারপর তখনও জ্বলন্ত দেয়াশলাইয়ের কাঠিটি ফাকিউ ভঙ্গিমায় সহকর্মীর বন্ধুর মুখের সামনে তোলেন। "কী এটা?" গোলা ছোঁড়েন তিনি। সহকর্মীর বন্ধু নাক কুঁচকে বলেন, "কাঠি!" গোলন্দাজ মৃদু হাসেন। তারপর বলেন, "দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য তো এখানেই! আপনি দেখছেন কাঠি, আর আমি দেখছি আগুন!" সহকর্মীর বন্ধুটি ঘোঁৎকার করে প্রশ্ন ছোঁড়েন, "তো?" গোলন্দাজ বললেন, "সত্য হচ্ছে আগুনের মতো। যেখানেই থাকুক না কেন, গোলন্দাজ আগুন খুঁজে নেবেই, সেখানে আপনি যতোই কাঠি খুঁজে পান না কেন!" সহকর্মীটি বন্ধুটির কানে কানে কী যেন ফিসফিস করে বলেন, বন্ধুটি চোখ লাল করে গোলন্দাজকে আগাপাস্তলা এক পশ্লা খুঁটিয়ে দেখে অন্য কোথাও চলে যান। ৬. ... [চলবে, এক্টু চা খাই]
false
mk
নাশকতা ঢাকায় ঢুকেছে___ ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধের পাশাপাশি হরতাল চলাকালে গতকাল রাজধানীর হাতিরঝিলে আকস্মিকভাবে বেশ কিছু গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ছবি : কালের কণ্ঠবিএনপি জোটের লাগাতার অবরোধ ও হরতালের মাঝে গত প্রায় দুই মাস ধরে সারা দেশে যে হারে পেট্রলবোমা হামলা হয়েছে তার তুলনায় রাজধানী অনেকটাই নিরাপদ ছিল। তবে গত তিন দিনে ঢাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলা ও নাশকতার ঘটনা বেড়েছে। এতে দগ্ধ হয়েছে নিরীহ মানুষ। ঢাকায় এর আগেও পেট্রলবোমা হামলার ঘটনা ঘটলেও ইদানীং এর মাত্রা বেড়ে গেছে বলেই ঘটনাপ্রবাহ সাক্ষ্য দেয়। পেট্রলবোমার পাশাপাশি বোমা, ককটেল ও আগুন দেওয়ার ঘটনাও বেড়ে গেছে।দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ পুড়ে মারা যাওয়ার পর গত কয়েক দিন সারা দেশে এ বর্বর হামলার মাত্রা কিছুটা কমে এসেছিল। কিন্তু গত দু-চার দিনে তা হঠাৎ করে আবার বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ মন্ত্রীরাও। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে কয়েকজন মন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পেট্রলবোমা হামলা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার কী কারণে বাড়ল তা খুঁজে বের করা দরকার। একই সঙ্গে নাশকতাকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।নাশকতার বিস্তার রাজধানীতে : বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ-হরতালের মধ্যে গত তিন দিনে রাজধানীতে বেশ কিছু নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে অবরোধ সমর্থকরা। অবরোধের ৫৬তম দিনে গতকাল রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় জাতীয় পার্টির অফিসের সামনের রাস্তায় হাতবোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় অবরোধ সমর্থকরা। পরে তারা দুটি প্রাইভেট কারে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর আগে গত রবিবার ধানমণ্ডি, গুলশান ও আরামবাগসহ ছয়টি এলাকায় সাতটি গাড়িতে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। এতে এক সাংবাদিকসহ চারজন দগ্ধ হয়। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।রবিবার রাতে বনশ্রী থেকে মিরপুরগামী আলিফ পরিবহনের বাসে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ হন দুই বোন- টুম্পা ও কন্তলা। টুম্পা মহাখালীর টিঅ্যান্ডটি মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী আর কুন্তলা অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে অনার্স চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন। নাশকতার আগুনে দুই ছাত্রী দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় মুষড়ে পড়েছেন তাঁদের স্বজনরাও। রবিবার বিকেলে বনশ্রীতে কুন্তলার বড় বোন নিপার বাসা থেকে দক্ষিণ বাড্ডার বাসায় ফেরার পথে তাঁরা আক্রান্ত হন।একই ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন একাত্তর টেলিভিশনের প্রতিবেদক আরিফিন শাকিল (২৫) এবং এক রাজমিস্ত্রির সহকারী নাজিম (১৭)। শাকিলের শরীরের ৩ শতাংশ এবং নাজিমের শরীরের ৪ শতাংশ পুড়ে গেছে। তারাও বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।গতকাল বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর বিজয় নগরের একাত্তর হোটেলের কাছেই নাইটিংগেল মোড়ে পর পর কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ১০-১২ জন যুবক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তাদের চার-পাঁচজনের মুখোশ পরা ছিল। রাস্তায় একের পর এক বিস্ফোরণের ফলে আতঙ্কে দুটি প্রাইভেট কারের চালক ও যাত্রীরা ভয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। ওই সময় ওই যুবকরা গাড়ি দুটিতে পেট্রলবোমা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। গাড়িতে আগুন দেখে পথচারীরা দৌড়াতে শুরু করে। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা গিয়ে আগুন নেভান।প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবক জানান, ‘দুটি গাড়ি গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিল। ওই সময় পাশের গলি থেকে ১০-১২ জন যুবক হঠাৎ বেরিয়ে এসে প্রথমে প্রাইভেট কার দুটির সামনে হাতবোমা মারে। এই সময় ভয়ে গাড়ি দুটির চালক ও আরোহীরা নেমে গেলে গাড়িগুলো ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।’গতকাল সকালে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে হরতাল সমর্থনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরকর্মীরা মিছিল শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সেখানে শিবির-কর্মীরা পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে ও দুটি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেখানে ৮-১০টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। সূত্রাপুর থানা পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।এ ছাড়া সকাল ১০টার দিকে নিকেতনসংলগ্ন হাতিরঝিলে হরতাল সমর্থনকারীরা ছয়টি যানবাহন ভাঙচুর করে এবং চারটি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ তাণ্ডবে জড়িত কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আগুন ধরিয়ে দেওয়া প্রাইভেট কারগুলোয় কেউ হতাহত হয়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।সকাল ৯টার দিকে পুরান ঢাকার কবি নজরুল কলেজের সামনে পার্কিং করা একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেওয়া হয়। প্রায় একই সময়ে বারিধারা-নদ্দা এলাকার ট্রাফিক পুলিশ চেকপোস্টের সামনে আটটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে পুলিশ চেকপোস্ট ও একটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরই যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে একটি মিছিল থেকে ৮-১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সকাল ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ীর ডেমরা রোডে দুটি গাড়িতে আগুন ও বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় যাত্রাবাড়ী এলাকা অতিক্রমকালে জনতা ব্যাংকের একটি স্টাফ বাসে ককটেল হামলা চালালে আহত হয় ছয়জন। তাদের মধ্যে তিনজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে মৌচাক মোড়ে দেশ টিভি-ভোরের কাগজ কার্যালয়ের সামনে ককটেল হামলা ও তিনটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় একের পর এক বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং আরেকটি বাসে হামলা চালায়। ঘটনার সময় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া ফুটেজে দেখা যায়, ১৫-২০ জন দেশ টিভির সামনের রাস্তায় হামলার প্রস্তুতি নেয়। একজন টেলিফোনে নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের কাজের সমন্বয় করে। এরপর পরিকল্পিতভাবে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। আগুন লাগার সময় পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তবে কেউ হতাহত হয়নি। মোট তিনটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। মৌচাক ওভারব্রিজ পয়েন্টে যে পুলিশ দল প্রহরায় থাকে, সন্ধ্যায় তাদের ডিউটি বদলের সময়েই এই হামলা চালানো হয় বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।একই সময় যাত্রাবাড়ীতে দুটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেওয়া হয়। এই সময় সুমি আক্তার নামে এক যাত্রী বাস থেকে দ্রুত নামতে গিয়ে নিচে পড়ে যায়। এতে তার মাথা ও পায়ে আঘাত লাগে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সুমির বাবার নাম সবুজ মিয়া, বাসা সাভারে। সবুজ মিয়া জানান, সুমি নারায়ণগঞ্জে মামার বাড়ি যাচ্ছিল। দুর্বৃত্তরা বাস লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। এ ছাড়া রাত সাড়ে ৯টার দিকে বনানী এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। তবে কেউ হতাহত হয়নি।প্রসঙ্গত, রাজধানীতে সর্বশেষ বড় ধরনের হামলা হয়েছিল গত ২৩ জানুয়ারি। সেদিন রাতে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলায় একজন নিহত হয়। দগ্ধ হয়েছিল ২৯ জন। মন্ত্রিসভায় উদ্বেগ : গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, তিনি রাষ্ট্রীয় সফরে অষ্ট্রেলিয়ায় ছিলেন। এ কারণে সর্বশেষ অবস্থা তাঁর জানা নেই। তিনি পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি জানবেন বলে মন্ত্রীদের জানান।মন্ত্রিসভা বৈঠকের পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশের আইজি এ কে এম শহিদুল হককে ডেকে পাঠান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তাঁরা দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন। এ সময় দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।তবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মন্ত্রিসভা বৈঠকে নাশকতা বেড়ে যাওয়া নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরই ভিন্ন একটি ইস্যু নিয়ে কথা হয়েছে। সেটি হচ্ছে আনসারদের বিদ্রোহের শাস্তিসংক্রান্ত।’ পুলিশের আইজির সঙ্গে বৈঠক করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইজির সঙ্গে বৈঠকটি একেবারেই রুটিন কাজ।’মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে একজন মন্ত্রী কালের কণ্ঠকে জানান, নাশকতার বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে পেট্রলবোমা হামলা কমে এসেছিল। কিন্তু গত রবিবার হঠাৎ করেই তা বেড়ে গেছে। এই বেড়ে যাওয়ার কারণটাই খুঁজে বের করার কথা বলেছেন কয়েকজন মন্ত্রী। গতকালের মন্ত্রিসভা বৈঠকে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড নিয়েও কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন হুমায়ুন আজাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এর মিল রয়েছে। তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে বিপুলসংখ্যক গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়েও মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ওই এলাকায় সমন্বিত অভিযানের কথা বলেছেন। দেশব্যাপী সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে গতকালের নিয়মিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে।মন্ত্রিসভার একজন সদস্য জানান, আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি মোটরসাইকেলে দুজন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার নির্দেশ দেয়। কমিটির এ নির্দেশনাও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ফল দিয়েছে। কারণ মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে এসে পেট্রলবোমা ছুড়ে দ্রুত সরে যেত সন্ত্রাসীরা। (তথ্যসূত্র: কালেরকণ্ঠ)
false
rn
হরতাল চাই না যারা হরতাল দেন তাদের কাছে আমার হাতজোড় করে অনুরোধ- দয়া করে হরতাল দিবেন না । একটা দিন হরতাল হলে একটা দিন আমার বাসায় চুলা জ্বলে না । আমি দিন আনি দিন খাই টাইপ মানুষ । আমার মতন এমন অসংখ্য মানুষ এদেশে আছে । তাদের কথা একবার ভাবুন । যাদের বিরুদ্ধে আপনারা হরতাল দেন- তাদের বাড়ি ঘর অথবা তাদের কে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন । আমাদের তাতে কিছুই যায় আসে না । হাতে গোনা কয়েকজন মানুষের জন্য আমাদের কষ্ট দিবেন না । টনা এক মাস হরতাল হলেও তাদের কিছুই যাবে আসবে না ।আমরা কাজ করে খাই । দুর্নীতি করে ব্যাংকে কারি কারি টাকা জমিয়ে রাখিনি যে বসে বসে খাবো । তারপরও যদি আপনারা হরতাল দেন- তাহলে কিন্তু আমার মাথা গরম হয়ে যাবে- তখন অকথ্য ভাষায় গালাগালি করবো প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে । আর হাতের কাছে পেলে ঝাড়ু জুতা দিয়ে মারবো । দয়া করে নিজেরা শান্তিতে থাকুন- আমাদেরও শান্তিতে থাকতে দিন । কবি নির্মলেন্দু গুণ শেখ মুজিবের সাত মার্চের ভাষণকে বলেছেন একটি মহাকাব্য। আর সেই মহাকাব্যের মহাকবি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি স্মরণীয় অধ্যায় হচ্ছে ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ।লক্ষ মানুষ এ যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন।আজকের এ প্রজন্ম স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে অনেক বেশি আগ্রহী।দেশের বর্তমান পরিস্থিতির ডামঢোলে ভুলেই যেতে বসেছিলাম যে,আগামী বছর দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ । ১৯৯১-৯৬ আমলে আওয়ামী লীগ মোট হরতাল ডেকেছিল ১৭৩ দিন ।উল্লেখিত ৯৬ দিন ছিল তত্ত্বাবধায়কের দাবীতে আওয়ামী লীগ এবং জামাতের যুগপৎ কর্মসূচী। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন নিয়ে জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত চক্র অসভ্য প্রচারণায় নেমেছে। এ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। আমরা বীরের জাতি এই কথাটি দারুন খাটি।বঙ্গবন্ধু লাল সালাম !৭ই মার্চ লাল সালাম।৭ই মার্চ ১৯৭১। বাঙালী জাতির জীবনে এক যুগান্তরকারী দিন। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে এমন এক নুতন দিনের স্বপ্ন দেন যা জাতিগত ভাবে আমাদের অন্য ভাবে ভাবতে শুরু করায়।সেদিনই প্রথমবারের মত খোলামেলা ভাবে আমরা পকিস্তানী শাসকদের জানিয়ে দেই আমরা এখন স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত। মনে রাখবা, ''রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ''। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম''। বিরোধীদল এর এখন একটাই অস্ত্র হরতাল।কতিপয় দূর্নীতিবাজ, চোর, চরিত্রহীন এবং দেশ বিরোধী চক্রের চক্রবাকে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি এবং বাঙালী মানসিকতার অবনতি ঘটছে।কাল ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ । হরতাল দিয়ে দেশবাসীকে জিম্মি করে রাখা হচ্ছে কেন?আজকে একমাস পার হলো শাহাবাগের গনজাগরণের। একবার গ্রীষ্মকালে রবীন্দ্রনাথের কাছে গিয়েছিলাম। খুব গরম সেদিন। তিনি আমার ঘর্মাক্ত কলেবর দেখে জিজ্ঞেসা করলেন -- "খুব গরম লাগছে বুঝি? পাখার কাছে একটু সরে বস।" তারপর একটু হেসে বললেন, "এখন এখানে ইলেকট্রিসিটি হয়েছে, আগে তো কিছুই ছিল না। ঘোর গ্রীষ্মে তখন কতদিন কাটিয়েছি এখানে--" বললাম, "কষ্ট হ'ত নিশ্চয় খুব"-- হেসে উত্তর দিলেন, "না, খুব কষ্ট হ'ত না। গরম নিবারণের একটা খুব ভাল ওষুধ জানা আছে আমার।" জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম তাঁর দিকে। বললেন--"কবিতা লেখা। বেলা বারোটার সময় একটা কবিতা লেখা শুরু করলে সমস্ত দুপুরটা যে কোন দিক দিয়ে কেটে যায়--জানতেও পারি না। হঠাৎ দেখি বিকেল হয়ে গেছে।" (আপনাদের বলতে হবে গল্পটি কার লেখা। )
false
rn
সুখ ( এক ছোকরার বিয়ে করার বড়ই শখ, তার মতে এতেই তার সকল সুখ নিহিত। কিন্তু কিছুতে হয়ে ঊঠছে না। ওদের পরিবার একমাত্র শ্রীহনুমানের পূজো করে- অন্যে দেবতা সেখানে কল্কে পান না - তাই ত্রিসুন্ধ্যা তারঁই পূজো করে কাকুতি-মিনতি করে, “হে ঠাকুর, আমায় একটি বউ জুটিয়ে দেও গো”। ওদিকে নিত্য এমন ঘ্যানর ঘ্যানর শুনে হনুমানের পিত্তি চটে গিয়েছে। শেষটায় একদিন স্বপ্নে দর্শন দিয়ে হুঙ্কার দিলেন, “ওরে বুদ্ধু, বউ যদি জোটাতেই পারতুম, তবে আমি নিজে বিয়ে না করে confirmed bachelor হয়ে রইলুম কেন?!!”) আমরা প্রত্যেকেই সুখ অন্বেষণ করছি, কিন্তু প্রকৃত সুখ কি তা আমরা জানি না। সাধারণত সুখ অনুভব করা হয় আমাদের ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে। উদাহরণ-স্বরূপ, একটি পাথরের কোন ইন্দ্রিয় নেই আর পাথর সুখ-দুঃখ অনুভব করতে পারে না। উন্নত চেতনা-শক্তি অনুন্নত চেতনাশক্তির চেয়ে অনেক বেশি সুখ ও দুঃখ অনুভব করতে পারে। গাছের চেতনা-শক্তি আছে, কিন্তু সেই চেতনা উন্নতমানের নয়। গাছ হয়তো সব রকম আবহাওয়ায় দীর্ঘকাল দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, কিন্তু তাদের দুঃখ অনুভবের কোন উপায় নেই। যদি একজন মানুষকে শুধু তিন দিন বা এমনকি তার চেয়েও কম সময় গাছের মত দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়, সে এসব সহ্য করতে পারবে না। সিদ্ধান্ত হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক জীব তার চিন্তা-শক্তির উন্নতির মাত্রা অনুযায়ী সুখ বা দুঃখ অনুভব করে। একজন মেয়ে তার সমস্ত সাধ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে সংসারের জন্য সারাটা জীবন হাসি মুখে কাটিয়ে দেয়। কেউ কেউ হয়ত শাশুড়ি ননদের গঞ্জনা শুনে আবার স্বামীর গালমন্দ শুনেই পার করে সারাটা জীবন। হয়তো বা শুধুই বিছানার সঙ্গী হয়ে কাটিয়ে দেয় অধিকাংশ নারী।বাবার বাড়িতে মেয়ে হয়ে, স্বামীর সংসারে বউ হয়ে, আর সন্তানের মা হয়ে অনেকেই নিরানন্দ জীবনের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে।আমি যা খাচ্ছি তার সঠিক স্বাদ কি আমি পাচ্ছি? উত্তর যদি হয় হ্যাঁ, তবে নিজেকে সুখী ভাবতে হবে। ভেবে দেখুন তো সেই সব মানুষের কথা, যাদের মুখের স্বাদ সৃষ্টিকর্তা তুলে নিয়েছেন। তাদের থেকে আপনি কি অনেক বেশি সুখী নন?মনই যেন সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। গাড়ির গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণে যেমন স্টিয়ারিং হুইলের গুরুত্ব, মনও তেমনি মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই আমরা যদি আমাদের নিজ নিজ মনকে সঠিক পথে চালনা করতে পারি, তাহলে হয়তো বা দুঃখের বোঝাভার কমিয়ে আমরা সুখের কাছাকাছি থাকতে পারব। না পাওয়ার দুঃখ ভুলে আমরা যা পেয়েছি, যদি সেই সুখে মত্ত থাকি তাহলে সবাই আমরা বেশি বেশি সুখী হতে পারতাম।যদি কেউ ভোগ করতে চায় তবে তাকে বুদ্ধিমান হতে হবে। পশুদের প্রকৃতপক্ষে উন্নত বুদ্ধি নেই আর তাই তারা একজন মানুষের মতো জীবন উপভোগ করতে পারে না। হাত, নাক, চোখ ও অন্যান্য ইন্দ্রিয় ও দেহের অন্য সব অংশ মৃতদেহে থাকা সত্তে¡ও কিন্তু সে উপভোগ করতে পারে না। যদি একজন লোককে এক সুন্দরী স্ত্রী লোকের মৃতদেহ প্রদান করা হয়, সে কি তা গ্রহণ করবে? না, কারণ চিৎকণা দেহত্যাগ করেছে। দেহের ভেতর থেকে সে শুধু উপভোগই করছিল না, দেহের প্রতিপালনও করছিল। যখন সেই চিৎকণা দেহত্যাগ করে, তখন দেহটি সহজেই ক্ষয় প্রাপ্ত হয়।কোন বস্তুকে বিন্দুর চেয়ে বড় না দেখাতে পারে আর এর দৈর্ঘ্য বা প্রস্থ নেই মনে হতে পারে, কিন্তু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখলে, আমরা দেখি এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয়ই আছে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন- যাহারা রীতিমতো বাঁচিতে চাহে, মুমূর্ষুভাবে কালযাপন করিতে চাহে না, তাহারা দুঃখ দিয়াও সুখ কেনে। হ্যফ্‌ডিং বলেন ভালোবাসা ইহার একটি দৃষ্টান্তস্থল। ভালোবাসাকে সুখ বলিবে না দুঃখ বলিবে? গ্যেটে তাঁহার কোনো নাটকের নায়িকাকে বলাইয়াছেন যে, ভালোবাসায় "কভু স্বর্গে তোলে, কভু হানে মৃত্যুবাণ।"অতএব সহজেই মনে হইতে পারে এ ল্যাঠায় আবশ্যক কী? কিন্তু এখনও গানটা শেষ হয় নাই। সুখ দুঃখ সমস্ত হিসাব করিয়া শেষ কথাটা এইরূপ বলা হইয়াছে-- "সেই শুধু সুখী, ভালোবাসে যার প্রাণ।"ইহার মর্ম কথাটা এই যে, ভালোবাসায় হৃদয় মন যে একটা গতি প্রাপ্ত হয় তাহাতেই এমন একটা গভীর এবং উদার পরিতৃপ্তি আছে যে, প্রবল বেগে সুখ-দুঃখের মধ্যে আন্দোলিত হইয়াও মোটের উপর সুখের ভাবই থাকিয়া যায়, এমন-কি, এই আন্দোলনে সুখ বল প্রাপ্ত হয়।মন সব সময়ই চঞ্চল। এই মন এক সময় যায় এক পথে আর এক সময যায় অন্য পথে।মন সব সময় সুখের বিষয় কল্পনা করছে। আমি সব সময় ভাবছি, ‘‘এ আমাকে সুখী করবে,’’ অথবা ‘‘ও আমাকে সুখী করবে। সুখ এখানে। সুখ ওখানে।’’ এইভাবে মন আমাদের যেখানে-সেখানে ও সব জায়াগাতে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা যেন এক লাগামহীন ঘোড়ার পেছনে রথে চড়ে যাচ্ছি। আমরা কোথায় যাচ্ছি তার ওপর আমাদের কোন ক্ষমতা নেই, কিন্তু ভয়ে কেবল বসে থেকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকতে পারি।একবার এক মাইগ্রেনের রোগীকে দেখা গেলো দেয়ালে মাথা ঠুকছে, জিজ্ঞেস করতেই সহাস্য উত্তর, “অমন করলে কি আরাম যে লাগে!” কবি হাইনে নাকি বলেছিলেন, “কড়া ঠান্ডায় রাত-দুপুরে লেপের তলা থেকে পা বের করাতে দারুন শীত লাগলো, এরপরই পা টেনে ভেতরে নিয়েই আয়েস করে যে কেঊ বলে উঠবে, “আঃ কি সুখ রে!” অতীতের দুঃখকে বড় করে না দেখা, আর ভবিষ্যতের সুখের জন্য সুন্দর বর্তমানকে পুরোপুরি জলাঞ্জলি না দেয়া। সময়কে সঙ্গে নিয়ে চলুন, মনকে সঠিক নিয়ন্ত্রণ করুন, দেখবেন জীবনটা অর্থবহ মনে হবে। নিজেকে অনেক সুখী মনে হবে।
false
fe
গল্প _ পরবর্তী সংখ্যায় সমাপ্য গল্প পরবর্তী সংখ্যায় সমাপ্য ফকির ইলিয়াস ----------------------------------------------------- দু'টো ট্রেন এসে পাশাপাশি দাঁড়ায়। যাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে ট্রেন বদল করে। যে যার গন্তব্য বেছে নেয়। আমি অপলক তাকিয়ে বসে থাকি। বাইরের দৃশ্যগুলো আমাকে এখন খুব একটা টানে না। কখনো মনে হয় মুখ গুঁজে থাকি। আমার সামনের সিটে এসে যে লোকটি বসেছেন, তাকে আমি চিনি। আবার তাকিয়ে নিশ্চিত হয়ে যাই। হ্যাঁ, তিনি এই নগরে একটি টিভি চ্যানেল চালান। একটি বিশাল মুদি দোকানের মালিকও তিনি। এখানে এগুলোকে বলে ‘ক্যাশ এণ্ড ক্যারী’ কিংবা ‘সুপার মার্কেট’। এর সাথে কখনো কখনো ‘হালাল’ শব্দটিও যুক্ত হয়। সবই বিপণনের ধান্দা। মুনাফা অর্জনের নীতিমালা ! লোকটি আমাকে চিনতে পারেনি। এই ভেবে স্বস্থি লাভ করি কর্ণারের ফুড ভেন্ডরের কাছ থেকে কিনে নেয়া কফিটিতে চুমুক দিতে দিতে দৈনিক কাগজে চোখ রাখি। আমি এই লোকটি পরিচালিত টিভি চ্যানেলে একটি নাতীদীর্ঘ সাক্ষাৎকার বেশ আগেই দিয়েছি। এবং সেটি নাকি কয়েক বারই অন দ্য এয়ার-এ গেছে। তারপরও লোকটি কেনো আমাকে চিনতে পারলো না- ভেবে কিছুটা দ্বিধা বেড়ে যায় আমার। তবে কী সে তার নিজের টিভি চ্যানেলটি নিজেই দেখে না! এমনও তো হতে পারে, চ্যানেলটাকে বাণিজ্য ভেবে সবটাই লোকটি ছেড়ে দিয়েছে এর কর্মকর্তাদের উপর। লোকটি আমাকে না চিনে ভালোই করেছে। না হয় হয়তো আমার দেয়া সাক্ষাৎকারটি বিষয়েই আরো অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হতো আমাকে। আত্মগোপন করে থাকার প্রবণতা আমার মাঝে খুবই প্রবল। এই বিদ্যাটি রপ্ত করতে পেরেছিলাম বলে নিজেকে প্রায়ই ধন্য মনে করি। সে আনন্দে আমি মাঝে মাঝে হাসি, মাঝে মাঝে কাঁদিও। একবারের একটি ঘটনা আপনাদেরকে বলি। বিমানে চড়ে দীর্ঘ বারোঘণ্টার ফ্লাইট পাড়ি দিচ্ছি। একটা কোম্পানীর স্পনসরে আমিও ছিলাম সেবার প্রথম শ্রেণীর যাত্রী। বিমানে বোর্ডিং পর্ব শেষ হবার পর দেখলাম প্রথম শ্রেণীর প্রায় সবকটি আসনই জুড়ে বসেছেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের মাননীয় সাংসদরা। তারা একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দিয়ে দেশে ফিরছেন। প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদেরকে বিশেষ সম্মান দেয়া হয়- সেটা আমার জানা ছিল যদিও, এই সম্মানকে যে কেউ হীনমতলবে কাজে লাগাতে পারে, তা আমার ভাবনায় ছিল না। আমার ডানপাশের আসনগুলোতেই আয়েশ করে বসেছিলেন দু’জন সাংসদ। বিমানটি যখন মধ্যরাতের পরশ পেলো তখনই শুরু হয়ে গেল মাননীয় সাংসদদের পানপর্ব। পান আমিও করি। ‘জ্যাক ডানিয়েল’ ব্র্যান্ডের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা থাকে সব সময়ই। আমার ঠিক ডানপাশেই বসেছিলেন সাংসদ শাহ বাকীউজজামান। তিনি পীর বংশের সন্তান। এলাকায় তার পরিবারের বেশ খান্দানী নামডাক আছে। সেটা কাজে লাগিয়েই তিনি বার কয়েকের এম.পি। বিমানে বসে পান তিনি করেই চলেছেন। একসময় দেখলাম বেশ খেই হারিয়ে ফেলছেন সাংসদরা। একজন সুন্দরী বিমানবালাকে যাত্রার শুরু থেকেই আমার বেশ ভালো লাগতে শুরু করেছিল। অবশ্য ভালো লাগার একটা কারণও ছিল সংগোপনে। আমার প্রথম প্রেমিকা সুনেত্রা’র চেহারার সাথে বেশ মিল খুঁজে পেয়েছিলাম সেই তন্বী বিমানবালার। আমি স্মৃতি তপস্যায় বেশ পারদর্শী। তাই সে তপস্যা চালাতে চালাতে যখন তুরস্কের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছি তখনই দেখলাম সাংসদ শাহ বাকীউজজামান আমার সেই ‘সুনেত্রা’কে ঝাপটে ধরতে চাইছেন! মুহূর্তে আমার চেহারাও পাল্টে গিয়েছিল সে সময়। আমি যে নগরে থাকি, সে নগরেরই একজন কৃতি সাংবাদিক বন্ধু এই সাংসদ শাহ বাকীউজজামানের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তার কাগজের জন্য। সে আড্ডায় আমিও উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু এক সাথে বিমানে চড়ে দেখলাম, সাংসদদের কেউই আমাকে চিনতে পারলেন না! সে দিন ও বেশ স্বস্থি এসেছিল আামর মনে। যেচে পরিয়ে দেবার লোক কোনোকালেই আমি ছিলাম না। এখনো নই। কেউ আমাকে না জানতে, না চিনতে চাইলে আমি পরিচিত হতে যাবো কেন? সাংসদ শাহ বাকীউজ্জামান যখন অশোভন ভঙ্গিতে সেই বিমানবালার উপর চড়াও হতে চাইছেন, তখনই আমি বাঁধা দিলাম। তিনি ভারী রাগ করলেন আমার প্রতিও। - চেনেন না আমি কে? - হ্যাঁ, চিনি। আপনি আমার মতো একজন যাত্রী। আমি জবাব দিই। মদ্যপ সাংসদ আমাকে তার সর্বশক্তি দিয়ে গালিগালাজ শুরু করেন। আমি কোনো জবাব না দিয়ে বসে পড়ি। কোনো হিংস্র বন্যতাকে আমি কখনোই প্রশ্রয় দিই না। সেবারও প্রয়োজন মনে করিনি। বিমানের ক্রুদের মধ্যস্থায় সেবার রক্ষা পান বিমানবালা। তারপরও সাংসদ আমাকে গালিগালাজ থামাননি। শেষ পর্যন্ত বলেন, বিমান মাটি ছুঁলে সে মাটিতেই তিনি আমাকে পুতে ফেলবেন। মাটিতে কেউ পুঁতে ফেললে আমার জীবনটা আসলে রক্ষাই পেতো। কারণ মৃত্যু সবসময়ই আমার কাছে একটি অনাবিল অবসরের নাম। সে অবসরতো সকল জীবনই চায়। মৃত্যুর কথাই যখন এলো তখন আপনাদেরকে আরেকটি ঘটনার চিত্রপট একটু ব্যাখ্যা করি। আমি একবার বেশ কিছু দিনের জন্য বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গেলাম। সবাই খোঁজাখোঁজি শুরু করলো। পত্রপত্রিকায় কয়েকটা বিজ্ঞাপনও ছাপা হয়ে গেল ইতোমধ্যে। ‘সন্ধান চাই’। বিজ্ঞাপনটি দেখার পর ময়মনসিংহগামী এক ট্রেনের কামরায় এক ভদ্রবেশী যাত্রী আমার দিকে বেশ ক’বার তাকালেন। তখন ছিল শীতকাল। আমি সবসময়ই একটি নীল মাফলার গলায় জড়িয়ে রাখতাম। সেই মাফলার দিয়ে মুখের অর্ধেক ও ঢেকে দিলাম। যাত্রীটি কিছুটা হতাশ হয়েই আমার দিকে তাকানো ছেড়ে দিলেন। সেবার আসলেই আমার মৃত্যু হয়েছে কিনা, কিংবা আমি বেঁচে আছি কিনা- তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল আমার পরিবারের বাকী সদস্যদের মাঝে। ছোটমামা তার অকাট্য যুক্তি উপস্থাপন করে বলেছিলেন, ও আর বেঁচে নেই। কারণ সুনেত্রা’র প্রেমে ছ্যাক খাবার পর সে আর বেঁচে থাকতে পারে না। নিশ্চয়ই কোনোভাবে আত্মহত্যা করেছে। সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন বড়মামা। তিনি বলেছিলেন, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করার মতো সাহসী সে নয়। অতএব বেঁচে আছে, এবং ফিরবেই। হ্যাঁ, আমি ফিরে এসেছিলাম ঠিকই। কিন্তু অনেকটাই নিঃস্ব। সর্বহারার মতোই। কারণ শক্তি ও সাহস দিয়ে নিজেকে, নিজের প্রেমকে, নিজের সত্তাকে রক্ষা করতে না পারা মানুষটি তো সর্বহারার দলেই। এ সমাজে সব থাকার পরও সর্বহারার মানুষের সংখ্যা কম কোথায়? আমার জীবনের বিশতম বসন্তের একটি বিকেলেই প্রথম ভাব জন্মেছিল ‘সুনেত্রা’র সাথে। সুনেত্রা’র বাবা ছিলেন একজন গায়েন। লোকজ কবি আর মরমী গীতিকারদের গান খুঁজে বের করে গেয়ে বেড়াতেন তিনি। আমি নিজেও ছিলাম তার গানের একজন মুগ্ধ শ্রোতা। স্থানীয় বেতার কেন্দ্রে যে সব নতুন শিল্পীরা পল্লীগীতি গাইতেন- তাদের একটা তালিকা করে রাখতাম আমি। সে তালিকায় নাম লিখতে গিয়ে প্রথম দিন থেকেই আমি সুনেত্রা’র বাবার গানের ভক্ত শ্রোতা হয়ে যাই। পরে আবিষ্কার করি তিনি আমাদের অঞ্চলেরই এক কৃতি শিল্পী। সেই সুনেত্রা’র বাবা, অর্থাৎ আমার প্রিয় একজন গায়েন যখন গুরুতর অসুস্থ জানতে পারলাম- তখন আমি তাকে দেখতে তার বাড়িতে যাই। তিনি সেবার সেরে উঠেন ঠিকই। কিন্তু বকেয়া ধার-কর্জের হিসেব আর তার পিছু ছাড়েনি। সর্বস্বান্ত হয়ে সুনেত্রা’র বাবা একদিন আমাকে বলেন, তিনি তার প্রিয় বেহালাটা কারো কাছে বন্ধক রেখে কিছু টাকা কর্জ চান। আমি বলি, এই বাদ্যটাই তো আপনার শ্রেষ্ঠ অবলম্বন। এটা ছাড়া গান গাইবেন কি করে? - টাকাগুলান যোগাড় করতে পারলেই বেহালাটা ছাড়ায়া আনুম বাবা। তিনি উত্তর দেন। - কিন্তু গান না গাইতে পারলে আপনি আয় করবেন কিভাবে? - ‘হ, ঠিকই তো কইছেন বাবা।’ তিনি বলেন। আমার কাছে জমানো কিছু টাকা ছিল। আর আমার ‘স্টেট ব্যাংক’ বলে ভরসা ছিলেন আমার ছোট মামা। এই দুই উৎস মিলিয়ে আমি টাকাগুলো রাতারাতি যোগাড় করে ফেলি। পরদিনই তুলে দিই সুনেত্রা’র বাবার হাতে। এবং এটাও বলি এই টাকা তাকে ফেরৎ দিতে হবে না। কর্জমুক্ত হয়ে তিনি বেশ স্বচ্ছল জীবনেই ফিরে গিয়েছিলেন। সুনেত্রা’র কলেজ আর তার মা-বাবার ছোট সংসারের খরচপাতি চলে যাচ্ছিল বেশ আরামেই। কিন্তু বিধি বাম হলে সেই সুখ কী আর সয়! এলাকায় মৌলবাদী ফতোয়াবাজদের কারণে সাধারন মানুষ অতিষ্ঠ ছিলেন বেশ আগে থেকেই। কিন্তু ধর্মান্ধ এসব মৌলবাদীরা একজন নিরীহ গায়েনের উপর এমনভাবে চড়াও হতে পারে- তা কারো কল্পনায় ছিল না। সোমবারী বাজারের একটি চা দোকানে বসে স্থানীয় লোকজনদের অনুরোধে গান গাইছিলেন সুনেত্রা’র বাবা। দিন দুপুরেই মৌলবাদীরা তার উপর চড়াও হয়। তাকে বেদমভাবে প্রহার করে। তার হাতের প্রিয় বেহালাটি কেড়ে নিয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ভাসিয়ে দেয় শোকলা নদীতে। মারাত্মক আহত অবস্থায় সুনেত্রা’র বাবাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন স্থানীয় একজন চিকিৎসক। পরে এলাকার মানুষ তাকে পৌঁছে দেন তার বাড়িতে। আমি যখন মধ্যরাতে খবর পাই, তখন পাঁজর ভাঙতে শুরু করে আমার। ভোরে বের হয়ে প্রথমেই যাই আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে। সকাল তখন এগারোটা। চেয়ারম্যান তখনও ঘুমিয়ে। তাকে জাগিয়ে তোলায় তিনি কিছুটা বিরক্ত হন। আমি তাকে জানাই, সুনেত্রা’র বাবার প্রতি এই নির্মম আক্রমনের কথা। চেয়ারম্যান সহমর্মিতা জানান। কিন্তু দেখলাম তার চোখে মুখে কোনো আতংক নেই। আমি বললাম, ‘চেয়ারম্যান চাচা এর একটি বিহীত আপনি করুন।’ তিনি হেসে দিলেন। ‘আমি কী করুম বাবা’! চেয়ারম্যান বলতেই থাকলেন, 'এরা খুবই শক্তিশালী। শুনেছি ধর্মের শাসন কায়েমের নামে তারা রাষ্ট্রের আইনকে ‘তাগুদি’ আইন বলেই চিহ্নিত করে। তাদের কাছে নাকি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রও আছে! চেয়ারম্যান থামেন। আমি বলতে শুরু করি। ‘তাইলে কী এই দেশে আর কেউ বাউল গানও গাইতে পারবো না, চেয়ারম্যান চাচা?’ ‘এখনতো তাই মনে হইতেছে, বাবা।’- চেয়ারম্যান বলেন। তীব্র হতাশা নিয়ে আমি চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ফিরি। আমার কানে বার বার ভাসতে থাকে তার আওয়াজ- ‘তাদের কাছে নাকি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রও আছে।’ অস্ত্রের সাথে আমার প্রথম পরিচয় সেই একাত্তর সালে। মেঝোভাই স্বাধীন বাংলাদেশে যেদিন প্রথম ফিরে আসেন তখন ছিল খুব ভোরবেলা। ফজরের আজানে মুখরিত হয়েছে বাংলার জনপদ। আমার মা তখন শয্যাশায়ী। নামাজ পড়ে বিছানায় শুয়ে তিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন। একঝাঁক বুলেটের আওয়াজে কম্পিত হয়ে উঠে আমাদের এলাকা। দ্রুত খবর রটে যায় এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধারা ,এলাকায় ফিরে এসেছেন। অনেকটা দৌড়ে এসেই ‘মা ‘মা বলে চিৎকার করতে থাকেন মেঝো ভাই। মায়ের বেডরুমে ঢুকেই তার শিয়রে জমা রেখে দেন হাতের স্ট্যানগানটা। অস্ত্র, আমি সেই প্রথম দেখি। মায়ের শিয়রে। মেঝোভাই যখন মাকে বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদছেন, আমার চোখ তখন সেই কালো স্ট্যানগানটির দিকে। ছোট ছোট ছিদ্রের ভারি অস্ত্রটা যেন যেন চোখ উল্টে তাকাচ্ছে আমার দিকেও! মহান মুক্তিযুদ্ধে বড়ভাই শহীদ হয়েছেন। সেই শোকে দু’দিন পর হার্টফেল করে মারা গেছেন আমার বাবা। মায়ের অবস্থা সে সময় থেকেই সংকটাপন্ন। না, সেদিন সেই অস্ত্রটি আমি হাতিয়ে দেখতে পারিনি। কারণ একটা ধমক দিয়ে মেঝোভাই কয়েক মিনিট পরই তা সরিয়ে রেখেছিলেন দূরে কোথাও। কিন্তু কৈশোরে সেই প্রথম দেখা অস্ত্রের প্রতি যে দূর্বলতা আমার জন্মেছিল, তা এখনো আছে। আমি অস্ত্র নিয়ে এখনো কিছু মিথে বিশ্বাস করি। যেমন, অস্ত্র,-একটি জাতির স্বাধীনতা এনে দিতে পারে। অস্ত্র,- হানাদার বাহিনীকে হত্যা করতে পারে। অস্ত্র,- আমার বোনের সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারে। অস্ত্র,- যে কোনো জালেমের বুকে বিদ্ধ হতে পারে। ইত্যাদি, ইত্যাদি। চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ফিরে গ্রামের পাশের ছোট্ট নদীটির তীরে বসে থাকি। পাভেল এসে আমার তন্দ্রা ভাঙায়। সে আমার শিশুকালের বন্ধু। অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনার সাক্ষীও। পাভেলকে ঘটনাগুলো খুলে বলি। সে আমাকে জানায়, সুনেত্রার বাবার উপর আক্রমণের ঘটনাটি সেও শুনেছে। ইতোমধ্যে আমরা সুনেত্রার বাবাকে দেখে এসেছি। তাঁর অবস্থা মোটেও ভালো নয়। মারা যাবেন যে কোনো সময়- এটা নিশ্চিত জেনে ডাক্তার হাসপাতাল থেকে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন। এখন তিনি কোনো কথাই বলতে পারছেন না। ফ্যাল ফ্যালিয়ে শুধু তাকিয়ে থাকেন। হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। কাঁদছে সুনেত্রা। কাঁদছেন তাঁর মা। ‘বাবা, আমাদের কী হবে? এখন তো ওরা আমাদেরকেও মেরে ফেলবে।’ সুনেত্রা’র মায়ের কণ্ঠে তীব্র আতংক। আমি আর পাভেল কোনো উত্তর দিতে পারিনা। তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি। বাজারের আড্ডায় এসে দেখা পাই প্রাক্তন সতীর্থদের। হ্যাঁ এরা সবাই এখন প্রাক্তন। বলা যায় ব্যর্থ প্রাক্তন। একটি শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের প্রত্যয় নিয়ে যে ক’জন তরুণ আমরা একদিন সমবেত হতে পেরেছিলাম এই গ্রামে- এরা তাদেরই ক’জন। শাকিল, নওরোজ, রাকেশ, প্রণব, ভিক্টর সবাই আমার মুখের দিকে তাকায়। সুনেত্রার বাবার নির্মমভাবে আক্রান্ত হবার কথাটি আমি আবারো তাদেরকে বলি। পাভেল বলে, আমরা এখন কী করতে পারি, সেটা বলো। শাকিল কঠোর ভাষায় হুংকার ছাড়ে। 'তাহলে তো আমরা আবার সেই পুরনো কালো লেদার জ্যাকেটগুলো গায়ে চড়াতে হয়।' আমি তার মুখের দিকে তাকাই। রাকেশ বলে, তবে কী কোনো অনিবার্য পরাজয়ের দিকেই এগুচ্ছি আমরা? এগুচ্ছে এই দেশ? কী জবাব দেবো ভেবে পাই না। মনে পড়ে যায় আমাদের বিষন্নতার সেই দিনগুলোর কথা। ‘গণতন্ত্র’, ‘সমাজতন্ত্র’, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’, ‘জাতীয়তাবাদ’, চার মুল স্তম্ভের বাংলাদেশে গণমানুষের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের কথা। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র দিয়ে মানুষের স্বপ্ন জয়ের সংগ্রামের কথা। আজ আমি যাদেরকে ‘প্রাক্তন সতীর্থ’ বলছি- তারা সবাই ছিলাম সেই প্রতীক্ষায় বিভোর। অনেক ঝড় বয়ে গেল। সামরিক বুটের আওয়াজ খান খান করে দিলো বংলার মাটি। বত্রিশ নম্বরে নিথর পড়ে রইলো জাতির জনকের শবদেহ। তারপর........ তারপর কী হলো- সে কথা আর বলতে চাই না। বলে লাভই বা কী! ‘গ্লাসনস্তো’ আর ‘পেরেস্ত্রেইকা’ নামক শঠতার রাজনৈতিক বীজ বপনের পর ভেঙে খান খান হয়ে গেল সোভিয়েত ইউনিয়ন। পুঁজিবাদের নগ্ন বিজয়ের পর স্থবির এবং একপেশে হয়ে পড়লো বিশ্বরাজনীতি। এসব কথাগুলো আমি ভাবতে ভাবতে যখন মুহুর্তে ডুবে গিয়েছিলাম অন্য ভুবনে, তখনই ভিক্টরের কথায় সম্বিত ফিরে পেলাম। ভিক্টর গোমেজ, খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী আমার এই বিশ্বস্থ বন্ধুটির হাত তখন আমার পিঠে। ‘যার যা কিছু আছেÑ তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সেই অমর বাণীটির প্রতিধ্বনি তোলে ভিক্টর। প্রণব তাকে সমর্থন করে। বলে, আমরা আমাদের সেই পুরনো লেদার জ্যাকেটগুলো গায়ে জড়াতে চাই। কালো লেদার জ্যাকেটগুলোর ভেতরে তারা কী বহন করে তা আমি খুব ভালো করেই জানি। তারা কী করবে কিংবা করতে চাইবে তাও আমার অজানা নয়। কিন্তু আমি তাদেরকে কোনো অনুমতিই দিতে পারি না। আমার গলা আড়ষ্ঠ হয়ে উঠে। যারা সশস্ত্র কায়দায় এদেশে জঙ্গী ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাদেরকে মোকাবেলার অন্য কী কী পথ খোলা আছে,তা ভেবে দেখার জন্য বলতে সায় দেয় আমার মন। কিন্তু তাও পারিনি আমি। আমরা বাজারের উত্তরের মাঠে বসে যখন এসব দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগছি তখনই পাভেল ফিরে এসে খবর দেয় সুনেত্রা’র পিতা ক’ঘন্টা আগে প্রয়াত হয়েছেন। এবং এটাও জানায় মৃত্যুর পূর্বে সুনেত্রার মা’কে বলে গেছেন, তিনি যেন তার একমাত্র ভ্রাতুস্পুত্র সুশীলের সাথে সুনেত্রা’র বিয়ের ব্যবস্থাটি করেন। দু’টি সংবাদই আমাকে বেদনাহত করে তীব্রভাবে। সেই প্রথম বুঝি, সুনেত্রাকে আমি ভালো বেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু কেন ভালোবেসেছিলাম তাকে? প্রশ্নটি আমাকে আবারো আঁকড়ে ধরে। সতীর্থ সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি বাড়ি ফিরি। সুনেত্রা’র বাবার শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলাম আমি। তাঁর আত্মাকে আমি শুধু একথাই বলেছি, একটি স্বাধীন দেশে গান গাওয়ার স্বধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারেন নি তিনি। আর এর দায় বহন- আমি, আমরা করেই যাবো আজীবন। তরুণ অধ্যাপক সুশীলের সাথে সুনেত্রা’র বিয়ে হবে, সে কথা আগেই আমাকে জানিয়েছিলেন সুনেত্রা’র মা। আমি তাতে বাঁধা দিতে পারিনি। বাঁধা দেবার কোনো অধিকারও আমার ছিল না। আমি কে? কেন বাঁধা দিতে যাবো। বরং কায়মন বাক্যে শুভ কামনা করেছিলাম সুনেত্রা-সুশীলের জন্য। সুশীল মেলবর্ণ ইউনিভার্সিটির বৃত্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবার ছ’মাসের মধ্যেই সুনেত্রা কে সেখানে নিয়ে যায়। পাভেল, শাকিল, প্রণব, ভিক্টরসহ প্রায় সকলেই একে একে দেশ ত্যাগ করে। আমি ক্রমশ: আরো বিমূঢ় হয়ে পড়ি। যে আমি আমার প্রেমকে রক্ষা করতে পারিনি, যে আমি-আমার অগ্রজের রক্তে ভেজা মাতৃভূমিকে হায়েনাদের দখলে বাঁধা দিতে পারিনি, সেই আমার কি এদেশে থাকার অধিকার আছে? থাকার প্রয়োজন আছে? এমন একটি প্রশ্ন দিনে দিনে মারাত্মকভাবে বিদ্ধ করতে থাকে আমাকে। একসময় সিদ্ধান্ত নিই- এদেশ ছেড়ে আমি চলে যাবোই। যে সমাজ, যে সভ্যতা আমাকে এই ভূমিতে বাড়িয়ে তুলেছে তার তলানি ছুঁয়ে দেখি, রাষ্ট্ররক্ষকরা প্রতারণার জাল ফেলছে যত্রতত্র। শিকাগো থেকে শাকিল ফোন করে জানায়, যে তাত্ত্বিক আমাদেরকে সমাজতন্ত্রের অ, আ, ক, খ শিখীয়ে ছিলেন, তিনি এখন শিকাগোর ইলনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং লেকচারার হিসেবে লেকচার দিয়ে বেড়ান। সেই শুশ্রুমণ্ডিত তাত্ত্বিকের একটি বিচ্ছিন্ন প্রেতাত্মা আমাকে যেন ধাওয়া করা শুরু করে। এই দেশে ছেড়ে পালাবার জন্য আমি প্রায় মরিয়া হয়ে উঠি। নিউইয়র্কে, এখন আমি যে শহরে থাকি এর নাম হিকসভিল। ছোট্ট একটি শহর। এখানে তেমন কোনো স্বদেশী চোখে পড়ে না। না পড়াটাই আমার জন্য মঙ্গলজনক। কারণ আগেই বলেছি, আমি আত্মগোপন করে থাকতে ভালোবাসি। আমি এই সিদ্ধান্তে খুব সুদৃঢ়ভাবেই উপনীত হয়েছি যে, মানুষ মাত্রেই নিজেকে লুকিয়ে রাখে। লুকিয়ে থাকাটাই মানুষের গোপন স্বভাব। তা অন্যের কাছে হোক। কিংবা নিজের কাছেই হোক। আমার আত্মগল্পটি আমি এখানেই শেষ করবো। আমি জানি, এ গল্পটি পড়ে আপনারা ও একে একে নিজেদের গোপন না বলা গল্পটিকে সাজিয়ে নিয়েছেন নিজের বলয়ে। নিজের বৃত্তে। আমি এটাও জানি, আপনারা কেউ না কেউ লিখে যাবেন আগামীর একটি গল্প। আর তা হবে আমার এই গল্পটির প্রথমাংশ কিংবা শেষাংশ। হ্যাঁ, গল্পটা শেষ হয়েও শেষ হবে না পরবর্তী কোনো এক সংখ্যায়। # সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:২০
false
ij
মানবতাবাদী আব্রাহাম। যে পথে এককালে হেঁটে গিয়ে ছিলেন মানবতাবাদী আব্রাহাম। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া ছিল পশ্চিম এশিয়ায়। ভূমধ্যসাগরের পূর্বপাড়ে। সেখানেই এককালে গড়ে উঠেছিল সুমের ব্যাবিলন আক্কাদ আসিরিয়া কলদীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। সারা মেসোপটেমিয়জুড়েই গড়ে উঠেছিল নানা নগর। খ্রিস্টপূর্ব ১৮২৫। মেসোপটেমিয়া উত্তরে কলদীয়দের একটি নগর ছিল। নগরটির নাম ছিল উর। (বর্তমানে তুরস্কের দক্ষিণে) মানবতাবাদী আব্রাহামের জন্ম হয়েছিল সেই উর নগরে। আব্রাহামের সময়কাল নিয়ে নানা মত আছে। আমি লেখার সুবিধার্তে খ্রিস্টপূর্ব ১৮২৫ বেছে নিলাম। মানবসভ্যতায় তখন ধীরে ধীরে একেশ্বরবাদের ধারনা গড়ে উঠছিল। আব্রাহামের মনে এক সর্বশক্তিমান নিরাকার ঈশ্বরের ধারনা রুপ লাভ করছিল। কলদীয়রা ছিল বহুঈশ্বরবাদী; প্যাগান। আব্রাহামের ব্যাপারটা ভালো লাগতা না। সে মূর্তিপূজার ঘোরবিরোধী। সে সেই চিরকালীন বিরোধে জড়িয়ে পড়লেন। প্রায়ই মূর্তি ভেঙ্গে ফেলতেন। আব্রাহামের এক ভাগ্নে ছিল লুত নামে। লুতের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করতেন। যাহোক। যুবা বয়েসে সারা নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করলেন। মেয়েটি ছিল আব্রাহামের সৎ বোন। আব্রাহাম ছিলেন হিব্রুভাষী কলদীয়। হিব্রুরা ঈশ্বরকে বলত ইয়াওয়ে। তো এক দিন ইয়াওয়ে বললেন, "ওহে আব্রাহাম, তুমি উর নগর ত্যাগ কর। তুমি হারানের পথে রওনা হও। সেখানে তোমার বংশধর বর্ধিত হবে।" ঐশ্বরিক নিদের্শ পেয়ে স্ত্রী কে সঙ্গে নিয়ে হারানের পথে রওনা হল আব্রাহাম। সঙ্গে ছিল ভাগ্নে লুত ও লুতের পরিবার। কিন্তু, হারান কোন্ দিকে? আমরা জানি, ইউফ্রেতিস নদীটি ছিল মেসোপটেমিয়ায়। তারই একটি পুবমুখি শাখা ছিল বালিখ নদী। হারান ছিল ওই বালিখ নদীরই পাড়ে। (উপরের ছবি দেখুন) (আমরা আজও যে 'হারুন' নাম রাখি। তার উৎপত্তি ঐ হারান থেকেই। হারুন নামে অবশ্য একজন পয়গম্বরও ছিলেন।) হারান আসলে ছিল বাইবেলবর্ণিত প্রাচীন কেননা দেশ। আব্রাহাম ওই কেনানদেশেই পৌঁছেছিল। তারপর শুরু হল যাযাবর জীবন। তখন তো পশুপালনই ছিল সভ্যতার অন্যতম জীবিকা। একবার খুব খরা হল। বাধ্য হয়ে কেনান ছেড়ে মিশরে পৌঁছলেন আব্রাহাম। মিশর তখন ছিল নীল নদের দানে উন্নতও সমৃদ্ধ। মিশরেই থাকাকালীন পরকালের ধারনা পেলেন আব্রাহাম। ওই সময়ে মিশরে খুব চালু একটা বই ছিল;"বুক অভ দি ডেড"। সেই বইটি ছিল পরকালবিষয়ক। মানবসভ্যতায় অমন পচা বই আর লেখা হয়নি। এভাবে আব্রাহামিক ধর্মে পরকাল অর্ন্তভূক্ত হল। যা হোক। মিশরের এক বাদশার সঙ্গে সারাকে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হল। মিশর থেকে বিতাড়িত হলে আব্রাহাম। ফিরে এলেন কেনানে। মন্দ ভাগ্য। এবার ভাগিনা লুতের সঙ্গে মনোমালিন্য হল। লুতকে ছাড়াই যাযাবর জীবনে ফিরে গেলেন আব্রাহাম। ইলাম রাজ্যের রাজা চেদোরলাওমের কী কারণে ভাগিনা লুতকে আটক করেছিলেন। আব্রাহাম লুতকে ছাড়িয়ে নিলেন। সালেম রাজ্যের রাজা ছিলে পুরোহিত মেলচেইযেডেক। তিনি আব্রাহামকে আর্শীবাদ করলেন। তারপর, ইয়াওয়ে সারার গর্ভে আব্রাহামকে এক পুত্র সন্তানের প্রতিশ্রুতি দিলেন। When God informed Abraham that he intended to destroy Sodom and Gomorrah because of the wickedness of their inhabitants, Abraham pleaded with him to spare the cities. Eventually it was agreed that God would spare the cities if he could find only ten righteous men. The ten men could not be found, and God destroyed both cities. বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। আমাদের কালের বিচারে এবং যে কোনও কালের মানদন্ডে আব্রাহাম অনিবার্যভাবেই মানবতাবাদী । হিব্রু ঈশ্বর ভয়ানক নিষ্ঠুর ঈশ্বর। কথায় কথায় জনপদ ধ্বংস করত। আব্রাহাম ব্যাপারটা পছন্দ করেননি। Eventually it was agreed that God would spare the cities if he (আব্রাহাম) could find only ten righteous men. প্রমিথিউসের মতন আব্রাহামও মানুষের পক্ষে খেয়ালি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তথ্যসূত্র: Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved. http://en.wikipedia.org/wiki/Abraham সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:১১
false
ij
গল্প_ শ্রীলেখার বুনোহাঁস। (প্রথম পর্ব) একটা নারকেলের মালা, তাতে জল তোলা ফেলা- করঙ্গ সে। পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি বুঝবি শেষে। (লালন) উৎসর্গ: আবহমান বাংলায় যাঁদের আজও বিশ্বাস রয়েছে। ভূমিকা: অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম: পুন্ড্রনগর নিয়ে একটা লেখা দাঁড় করাব। যে লেখায় থাকবে পুন্ড্রনগরের ঘরদোর, পথঘাটের বর্ননা, ধর্ম-বিশেষ করে বৌদ্ধ ধর্মের সামান্য আবহ, অনিবার্যভাবে একজন দুঃখী নারী- জীবন যার কাছে অসহ্য ঠেকছে, একজন মাঝবয়েসী বৌদ্ধ ভিক্ষু-তার জীবনের গল্প ও লালনের একটি গান-লালন বাংলার শিকড়ে ও অন্তে বলেই .. তেমনই একটি লেখা দাঁড় করাতে পেরে আমার দীর্ঘ দিনের একটি ইচ্ছে পূরণ হল। এই ফাঁকে বলে রাখি: ‘পুন্ড্রনগর’ ছিল প্রাচীন বাংলার অন্যতম নগর। বগুড়া জেলার মহাস্থান গড়ের নাম আমরা তো শুনেছি- তারই আশেপাশের অঞ্চল নিয়েই ছিল খ্রিস্টপূর্ব যুগের সেই প্রাচীন পুন্ড্রনগর । যিশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৫০০ আগে থেকেই গড়ে উঠছিল নগরটি। ‘পুন্ড্র’ শব্দটির মানে, ‘আখ’। তার মানে, এখনকার মতো সেকালেও আখের চাষ হত পুন্ড্রনগরের আশেপাশে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকেই পুন্ড্রনগরটি পরিনত হয়েছিল বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের অন্যতম কেন্দ্র - যে কারণে নগরের বাইরে অনেকগুলো বৌদ্ধ বিহার (বিশ্ববিদ্যালয়) গড়ে উঠেছিল; শুধু তাই নয়- অনেকগুলি জৈন প্রার্থনাগৃহও নির্মিত হয়েছিল পুন্ড্রনগরে। বৌদ্ধ বিহারগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ভাসু বিহার। পুন্ড্রনগরে গৌতম বুদ্ধ অনেকবারই এসেছিলেন। বৌদ্ধ কখনও পুন্ড্রনগরে এলে ঐ ভাসুবিহারেরই থাকতেন। ‘ শ্রীলেখার বুনোহাঁস’ গল্পটির পটভূমি সেই রকমই একটি সময়ে। বাঁ পাশের খোলা জানালাটি দিয়ে মধ্য আষাঢ়ের শেষবেলার ম্লান রোদ ঢুকেছে ভাসু বিহারের সভাঘরটি। সে হলুদাভ ম্লান আলোয় গৌতম বুদ্ধের শরীরটি অপূর্ব মনে হয়। লাল রঙের চীবর পরে মেঝের ওপর বসেছিলেন গৌতম বুদ্ধ । পদ্মাসনে। তাঁর স্থির ধ্যানস্থ শরীরটি হলুদাভ; মাথাটি মসৃনভাবে কামানো, গোলপানা মুখটির রংটিও হলুদাভ, দু-চোখের দৃষ্টি কোন্ সুদূরে। বুদ্ধ উচ্চারণ করলেন, মনোপুব্বঙ্গমা ধম্মা মনোসেট্া মনোময়া, মনসা চে পদুটেঠন্ ভাসন্তি বা করোতি বা, ততো নং দুক্খমন্বেতি চক্কং বা বহতো পদং। কন্ঠস্বর, জলদ, মধুর ও ইষৎ গম্ভীর। আষাঢ় মাসের গোড়াতে পুন্ড্রনগর এসেছেন বুদ্ধ । বর্ষাকাল এ নগরেই কাটাবেন। তথাগত কখনও পুন্ড্রনগর এলে ভাসুবিহারেই থাকেন; যেহেতু, প্রসিদ্ধ এই বিহারটির সুনাম আর্যাবত্মের সর্বত্র। এবার কোশল রাজ্য থেকে এসেছেন তথাগত। প্রায় প্রতিদিনই দু-বেলা বিহারের শিক্ষার্থীদের সামনে ধর্ম ব্যাখ্যা করছেন। আজও। বুদ্ধের দু’পাশে বসে আছেন ভিক্ষু আনন্দ ও ভিক্ষু মৌগলায়ন । এরা দু’জনই বুদ্ধের প্রিয় শিষ্য। এদের দুজনকেও ধ্যানগম্ভীর ও স্থিরই দেখায়। ওদের পিছনে সভাগৃহটির সাদা রঙের অমসৃন দেওয়াল, দেওয়ালে লাল রঙের একটি পদ্ম ফুল আঁকা রয়েছে। হঠাৎই সেদিকে চোখ গেলে পদ্মফুলের কাল্পনিক গন্ধ পায় ভিক্ষু সুমন্ত। তখন থেকেই ভিতরে ভিতরে চাপা চঞ্চলতা টের পাচ্ছিল সে। কেমন এক অস্বস্তি বোধ করছিল। তার চারপাশে ভিক্ষুরা অভিভূত হয়ে বুদ্ধের উপদেশ শুনছে। আশ্চর্য! আজ থেকে আমি এদের কেউ না! যেহেতু-ধর্মের চেয়ে প্রেম বড়। আর, এই কথাটা বুদ্ধের কানে পৌঁছলে তথাগতর হলুদাভ সৌম মুখটির অভিব্যাক্তি কেমন বিকৃত হয়ে যেতে পারে সে দৃশ্যটি অনুমান করে উদ্বেগ বোধ করে সে। তার পরনে লাল রঙের চীবর। কাল থেকেই শরীরে খসখসে এক অনুভূতি হচ্ছিল। সে বিব্রত চোখে বুদ্ধের দিকে তাকাল। বুদ্ধ বলছেন, যাহারা, অসার বস্তুকে সার বিবেচনা করে এবং সারকে অসার বিচেনা করে, মিথ্যাদৃষ্টির প্রশ্রয়দাতা-সেই ব্যাক্তি কখনও সার প্রাপ্ত হয় না। উসখুস করে উঠল ভিক্ষু সামন্ত। তা হলে? তা হলে শ্রীলেখা কি অসার? তা হলে ওকে দেখে কাল আমি কেঁপে উঠলাম কেন? আমি কি মিথ্যাদৃষ্টির প্রশ্রয়দাতা? তা হলে? তা হলে শ্রীলেখা কি মিথ্যা? আর আমি মিথ্যাদৃষ্টির প্রশ্রয়দাতা? তাহলে? সার কি? প্রেম কি সার নয়? শ্রী লেখা?। ধর্মের চেয়ে প্রেম বড়। আর আমি শ্রীলেখাকে ভালোবাসি। মধ্যবয়েসী ভিক্ষু সুমন্ত কেঁপে উঠল। বুদ্ধ অর্ধ-মাগধী ভাষায় বলছেন, সারঞ্চ সারতো ঞত্বা অসারঞ্চ অসারতো। বুদ্ধের কথাগুলি ঠিকমতো কানে ঢুকছিল না ভিক্ষু সুমন্তর। ক্ষণে ক্ষণে শ্রীলেখার মধুর মুখোশ্রীটি মনে পড়ে যাচ্ছিল। শ্রীলেখার ঘন কালো চুল, গায়ের রংটি শ্যামলা, চোখ দুটি বড় বড়- আয়ত, মুখের ছাঁচটি ভারি মিষ্টি। আজই দুপুরে দ্বিতীয়বারের মতো শ্রীলেখাকে দেখল ভিক্ষু সুমন্ত। তবে গতকালই শ্রীলেখাকে প্রথমবার দেখার পর থেকেই শ্রীলেখার মুখটি আর ভুলতে পারছে না সে। ভিক্ষু সুমন্ত মাঝবয়েসি; শ্রীলেখা তরুণি। তাতে কি? শরীর ও শরীরের ভিতরে রয়েছে যে এক অদৃশ্য অলীক মনতন্ত্রবীণা-ভিক্ষু সুমন্ত এখন জানে- সেই বীণাটি যে কোনও বয়েসেই ঈশ্বরের কারসাজিতে বেজে উঠতে পারে। ভিক্ষের উদ্দেশে কাল দুপুরে পুন্ড্রনগরের হাঁটছিল ভিক্ষু সুমন্ত। জায়গাটি নিরিবিলি। লোকে বলে: ধান-মোহনী । একটি বৃহৎ পুস্করিণীর পাড়ে একটি জৈন মন্দির-আর একটি হরীতকী গাছ। এদিকটায় আগে তেমন আসা হয়নি। ভিক্ষু সুমন্ত পুন্ড্রনগরে এসেছে আষাঢ় মাসের গোড়ায়। এর আগে উজ্জ্বয়িনী নগরের উপান্তের একটি বৌদ্ধ সংঘে বাস করত ভিক্ষু সুমন্ত। সেই সংঘের প্রবীন অধ্যক্ষ ভিক্ষু ধর্মরক্ষিতকে গভীর শ্রদ্ধা করত সে। আটাত্তর বছর বয়েসে ভিক্ষু ধর্মরক্ষিত মৃত্যু বরণ করলে এক প্রবল শোকে আক্রান্ত হয় ভিক্ষু সুমন্ত। সে শোক প্রশমনের উদ্দেশ্যেই সে উজ্জ্বয়িনী নগর ত্যাগ করে পথে বেরিয়ে পড়েছিল। তারপর অযোধ্যা-রাজগৃহ প্রভৃতি নগর-উপনগর ঘুরে পুন্ড্রনগর এসে পৌঁছেছে সে বর্ষাকালের প্রারম্ভে। পুস্করীণির পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটি বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াল ভিক্ষু সুমন্ত। সম্পন্ন কোনও শ্রেষ্ঠীর গৃহ হবে। বাইরের দেওয়ালটি গোবর লেপা;- শুকনো গোবরের গন্ধ ভাসছিল বাতাসে। দেয়ালের মাঝখানে কাঠের দরজা- কালো রঙ করা । দেওয়ালের ওধারে একটি বর্ষজীবি বেলগাছ-বেলপাতায় রোদের ঝিলিক। স্তব্দ দুপুর। চারপাশ কী নির্জন। কেবল বেলপাতার আড়ালে কাক ডাকছিল। এই সময়ে কে যেন তার ভিতর থেকে বলল, এই জীবন। কী লক্ষ তার? আষাঢ়ের মধ্যদিনের বাতাসে ভেসে এসে কে যেন উত্তর দিল, পথে যেতে যেতে একটা আলোর মুখে দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য। আর? আর কী। সুমন্ত বিভ্রান্ত বোধ করে। একা হলেই কে যেন কথা কয়ে ওঠে তার ভিতরে। কে সে? কে? রোদ খাঁ খাঁ । ভিতরে সাড়া শব্দ নেই। লোকজন নেই নাকি বাড়িতে? ভিক্ষুদের উচ্চস্বরে ভিখ্ চাইতে নেই। ভিক্ষু সুমন্ত কাশল। তারপর কাঠের দরজায় আলতো করে ধাক্কা মারতে যাবে- তার আগেই সহসা বাতাসের ঘূর্ণিতে দরজার একটি পাল্লা গেল খুলে । দৈব কি? ভিতরে উঠান। রোদ। দু-ধাপ সিঁড়ি;- উঠে গেছে প্রশস্ত একটি দাওয়ায়। হ্যাঁ, কোনও সম্পন্ন শ্রেষ্ঠীর গৃহই মনে হচ্ছে। একটি মেয়ে দ্রুত দাওয়া থেকে উঠানে নেমে আসছে। মেয়েটির হাতে লাল রঙের মাটির বাসন। এলো চুলের শ্যামলা মতন মেয়েটি হাঁটার ধরনে কী ছিল-নিমিষে মুগ্ধ হয়ে গেল ভিক্ষু সুমন্ত। এবং তাঁর এই মুগ্ধতা বিস্ময়ের সৃষ্টি করল।তার শরীর ও মনে ভিতরে এক ধরনের ভালো লাগা চোখের নিমিষে আশ্চর্য! আমি কি ভালোবেসে ফেললাম মেয়েটিকে?। অথচ অথচ আমি যে?মোহশূন্যতার সাধক। মেয়েটির মাঝারি উচ্চতা। কতই বা বয়স-এই পচিঁশ/ছাব্বিশ। যত কাছে আসছিল, বুকের ভিতরে বেজে উঠছিল মৃদঙ্গ। ভিক্ষু সুমন্ত তার শীর্ণ বুকের ভিতরে করতোয়ার উছল জলপ্লাবন টের পায়-এই মাঝ বয়েসেও। সদর দরজার কাছে এসে মেয়েটি মুখ তুলে তাকালো। রোদ। কালো পাথরে গড়া নিখুঁত মিষ্টি একটি মুখ। আয়ত চোখ। নাকে রুপোর নথ, ঠোঁটের বাঁ পাশে তিল। জবাকুসুম তেলের গন্ধ পেল ভিক্ষু সুমন্ত। তার শরীর অবশ হয়ে যেতে থাকে। মেয়েটিও থমকে গেল যে! মুখচোখে সামান্য বিস্ময় জমেছে যেন। দ্রুত সামলে নিল। তারপর বলল, শুনেছি, নগরে তথাগত এসেছেন ভিক্ষু? কী মধুর কন্ঠস্বর। বুদ্ধ যে পুন্ড্রনগরে এসেছেন- কথাটাটি পুরনো। তবে জিজ্ঞেস করল কেন, সচেতন হয়ে উঠল ভিক্ষু সামন্ত। ভিক্ষা পাত্রে অন্ন আর সেদ্ধ ওল নিতে নিতে সুমন্ত বলল, হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। তথাগতর সঙ্গে দেখা হলে আমার প্রণাম জানাতে ভুলবেন না যেন। বেশ। তা জানিয়ে দেব। বেশ কিছু দিন থাকবেন বুঝি? হ্যাঁ। বর্ষাকালটা তথাগত পুন্ড্রনগরেই কাটাবেন। আশ্চর্য! এই কথাগুলিও তো মেয়েটির জানার কথা। তা হলে জিজ্ঞেস করছে কেন? মেয়েটি কি আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়? কিন্তু, কেন? মেয়েটির চুল এলোমেলো। বসনও ইষৎ বিস্রস্ত। আর চোখ দুটি লাল। ফোলা ফোলা। কাঁদছিল কি? কেন? মেয়েটি সুখি নয়? ভূভারতে কেউ-ইবা সুখি। কিছু আমোদপ্রিয় পুরুষ হয়তো সুখি-মেয়েরা নয়। মেয়েটিকে সম্পন্ন গৃহিনী বলেই মনে হয়। স্বামী কি বণিক? কী এর কষ্টের রহস্য? ভিক্ষু সুমন্ত বলল, অন্নের জন্য কৃতজ্ঞতা। মেয়েটি মাথা নেড়ে বলল, সে থাক। বরং, অন্য কথা বলি। কি? আপনারাই সুখি। কেন? এবার মেয়েটির চোখ স্থির হল ভিক্ষু সুমন্তর চোখের ওপর। সে চোখে রোদ। চোখের পল্লবগুলি বড় বড় -ঢেউ খেলানো। কালো রঙের মনি। কী প্রগাঢ়! মেয়েটি বলল, আপনারা কেমন মুক্ত, পাখির মতো, সংসারের দুঃখসুখ বইছেন না। জন্মের গ্লানি তো বইছি। ভিক্ষু সুমন্ত বলল। অজান্তে তার চোখ দুটি মেয়েটি স্তন দুটির দিকে চলে যায়। আচঁল ঠিক করতে করতে মেয়েটি বলল, তা হলে আমরা দ্বিগুণ দুঃখ বইছি। নারী বলে? তাই তো। দীর্ঘশ্বাস ফেলল কি? সতর্কভাবে ভিক্ষু সুমন্ত শুধালো, সন্ন্যাসীনি হওয়ার কথা ভাবছেন কি? সে রকম ভাবতেও তো পারি। কে না মুক্তি চায়। মেয়েটি বলল। চকিতে একবার ভিতরের উঠানের দিকে তাকাল। সুমন্তর বুকটা ধক করে উঠল। পুন্ড্রনগরের বামন পাড়ায় একটি ভিক্ষুণী সংঘ রয়েছে। ইচ্ছে হচ্ছে-মেয়েটার হাত ধরে যোগীর ভিটার নারী সংঘে ভিতরে লুকিয়ে রাখতে । তারপর নিরালা কক্ষে বসে ধর্মের একান্ত পাঠ। মনোপুব্বঙ্গমা ধম্মা মনোসেট্া মনোময়া, মনসা চে পদুটেঠন্ ভাসন্তি বা করোতি বা, ততো নং দুক্খমন্বেতি চক্কং বা বহতো পদং। আশ্চর্য! মধ্যবয়েসী মধুমেহগ্রস্থ ভিক্ষ সুমন্তর তো অনেক আগেই কাম মরে যাওয়ার কথা। সে কামবোধ মরে গিয়েছে সত্য-তবে ভালোবাসবার সুপ্ত আকাঙ্খা আজও মরে যায়নি। ভিতরে ভিতরে কেমন অসহায় বোধ করে সে। এ পথে লোকের চলাচল আছে। তারা দেখছে। আর দাঁড়ানো ঠিক না। ভিক্ষু সুমন্ত ঘুরে দাঁড়াল। আমি শ্রীলেখা। মেয়েটি পিছন থেকে বলল। ওহ্। আমি ভিক্ষু সুমন্ত। অবশ্য সে ঘুরে দাঁড়াল না। কথাটা শ্রীলেখা শুনল কি না কে জানে। তবে বুকে এক নতুন আবেগ টের পাচ্ছিল সে। গতকালের রাতটি নির্ঘুম কেটেছিল। আজও সকাল থেকেই শ্রীলেখার দুটি চোখ টানছিল। দুপুর নাগাদ জৈন মন্দিরের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল ভিক্ষু সুমন্ত। সেই পুস্করিণী, সেই হরীতকী গাছ। আজও শ্রীলেখা নিজেই এল অন্ন ভরা মৃৎপাত্র নিয়ে। আজও শ্রীলেখার হাঁটার ভঙ্গিটি ছিল শ্লথ। চোখ দুটিও কেমন রক্তিম আর কান্না ভেজা। ভিক্ষু সুমন্ত সে দৃশ্যে বিষাদ বোধ করে ভিক্ষু সুমন্ত। তারপর সে আবেগতাড়িত হয়ে জিজ্ঞেস করেই বলল, আপনি কাঁদছিলেন কি? শ্রীলেখা ম্লান হেসে, নাক টেনে বলল, তা মাঝে মাঝে কাঁদতে হয় বৈ কী ভিক্ষু। তা মানি। কাঁদলে কী যে ভালো লাগে। বুকের পাষানটি কেমন গলে গলে নেমে যায়। তখন বড় শান্তি পাই। শ্রীলেখা যেন আপনমনে বলল। হ্যাঁ, মায়ের কথা মনে করে আজও আমি কাঁদি। সন্ন্যাসীরা কাঁদে? শ্রীলেখার শ্যামল মুখচোখে কপট বিস্ময় ফুটে ওঠে। কেন সন্ন্যাসীরা কি øায়ূতন্ত্রের অধিকারী জীব নয়? তা মানি। শ্রীলেখা ম্লান হাসল। তারপর ভিক্ষু সুমন্তর ভিক্ষাপাত্রে অন্ন আর এক মুঠো শুষণি শাক পরম যতেœ ঢেলে দিল। এ পথে লোকের চলাচল আছে। তারা দেখছে। মিছিমিছি শ্রীলেখাকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলে কী লাভ? ভিক্ষে নেওয়া তো শেষ। তা হলে আর দাঁড়িয়ে থাকা কেন? এখন আমি যাই। ভালো থাকবেন। ভিক্ষু সুমন্ত বলল। বলে ঘুরে দাঁড়াল। প্রায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভিক্ষু সুমন্ত, ঠিক তখনই পিছন থেকে ডাকল শ্রীলেখা, একটু শুনবেন? ভিক্ষু সুমন্ত আবার ঘুরে দাঁড়াল। ইষৎ বিস্মিত। আজ্ঞে, বলেন। আপনি কি অনেক দেশ ঘুরেছেন? হ্যাঁ। ও। বলে একটু থেমে নরম সুরে শ্রীলেখা বলল, আপনি কি কখনও শ্রাবস্তী গিয়েছেন? হ্যাঁ। গত মাঘে আমি তো সে নগরেই ছিলাম। কেমন সে নগর? প্রশ্নটা শুনে ভিক্ষু সুমন্ত কী যেন ভাবল। তারপর মুচকি হেসে বলল, সে কথা জানতে হলে তো পথে নামতে হবে। তা হলে আমি পথেই নামব ভিক্ষু। শ্রীলেখা বলল। কন্ঠস্বর দৃঢ়। কথাটা শুনে অবাক হয়নি ভিক্ষু সুমন্ত। এ নগরেই প্রায় দুশোর মতন নারী ভিক্ষু রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহনের পূর্বেই এরা প্রত্যেকেই ছিল দুঃখী, নির্যাতিতা। তারা ভিক্ষু হওয়ার আগে তো পথেই নেমেছিল। শ্রীলেখাও নিশ্চয়ই সুখি নয়। নৈলে ও কাঁদছিল কেন? নৈলে ও পথে নামতে চাইছে কেন। ভিক্ষু সুমন্ত শুধালো, পথে নামবেন বললেন। কেন? ভিক্ষুণী হবেন কি? না। কেন? এমনি। ভিক্ষুণী হব কেন। কী হয় চীবর পরে? তাই তো। ভিক্ষু সুমন্ত ভাবল। আমি তো ভিক্ষু হলাম। তাতে কী লাভ হল। শ্রীলেখা আমার কুড়ি বছরের সমস্ত নিষ্কাম সাধনা চূর্ণ করে আমাকে কেমন মায়ার ঘোরে বেধে ফেলল আজ! সত্যিই তো-কী হয় চীবর পরে। শ্রীলেখা বলল, আমি সত্যিই পথে নামতে চাই ভিক্ষু। এবং আজই। আপনার স্বামী? ভিক্ষু সুমন্তকে সামান্য উৎকন্ঠিত দেখায়। স্বামী? শ্রীলেখার কন্ঠস্বরে শ্লেষ। বলল, আমার স্বামীর নাম শ্রেষ্ঠী অনন্ত-এ নগরে সবাই তাকে চেনে। বলে শ্রীলেখা চকিতে একবার উঠানের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, আমি সুখি হইনি ভিক্ষু। তিনি কি বাড়িতে নেই? ভিক্ষু সুমন্তর কন্ঠস্বর গম্ভীর। না। আমার স্বামী বৈশাখ মাসের শেষে বানিজ্যে গেছে। এখন কোথায় আছে জানি না। কোশল রাজ্যে যাওয়ার কথা, ফেরার কথা শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি। আমি ... আমি আজই আপনার সঙ্গে চলে যেতে চাই। আপনি আমায় সঙ্গে নেবেন না? নেব। ভিক্ষু সুমন্তর বুক কাঁপছে। বলল, তবে অবশ্য এখনই না। না। আমিও এখন যেতে চাইনা। শ্রীলেখা দ্রুত বলল। আগে রাত নামুক। আজ রাতে আমি ... আমি ঐ পুস্করিণীর পাশে হরীতকী গাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকব। আপনি মাঝরাতে আসবেন। আচ্ছা। তাই হবে। চাপা স্বরে বলল। বলে শ্রীলেখার আয়ত গভীর চোখের দিকে তাকালো ভিক্ষু সুমন্ত। রোদ। কালো পাথরে গড়া নিখুঁত মিষ্টি একটি মুখ। আয়ত চোখ। নাকে রুপোর নথ, ঠোঁটের বাঁ পাশে তিল। জবাকুসুম তেলের গন্ধ পেল ভিক্ষু সুমন্ত। তার শরীর অবশ হয়ে যেতে থাকে। ভিক্ষু সুমন্ত মাঝবয়েসি; শ্রীলেখা তরুণি। তাতে কি? শরীর ও শরীরের ভিতরে রয়েছে যে এক অদৃশ্য অলীক মনতন্ত্রবীণা-ভিক্ষু সুমন্ত এখন জানে- সেই বীণাটি যে কোনও বয়েসেই ঈশ্বরের কারসাজিতে বেজে উঠতে পারে। সে কথা ভেবে এখন ভিক্ষু সুমন্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আশ্চর্য! আজ থেকে তা হলে আমি ভিক্ষু সংঘের কেউ নই? তা হলে? তা হলে ধর্মের চেয়ে প্রেমই বড়? আর আমি শ্রীলেখাকে ভালোবাসি। শ্রীলেখাই সার। আর, বাকি সব অসার। এই ভাবনায়-পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই ভিক্ষু সুমন্ত সামান্য বিমূঢ় বোধ করে। জানালার বাইরে কখন যে শেষ বিকেলের রোদ মুছে গেছে। জানলায় সান্ধ্যকালীন জ্যোøার ফ্যাকাসে আলো। সভাঘরের অন্ধকার জমে উঠছিল। ভিক্ষুরা প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছে। রেড়ির তেলের গন্ধ ভাসছিল বাতাসে। বুদ্ধ তখনও উপদেশ দিয়ে চলেছেন। প্রদীপের ম্লান আলোতেও তাঁকে মহিমান্বিত বোধ হয়। সুমন্ত সহসা সচেতন হয়ে উঠল। সভা ঘরের দরজার কাছেই বসেছিল সে; সন্তপর্নে সভাঘর থেকে বেরিয়ে এল। দরজার ওপাশে দু’পাশ ঢাকা দীর্ঘ এক ইটের অলিন্দ। বাঁ পাশে ভিক্ষুদের সার সার কক্ষ । একটি কক্ষে ঢুকল সুমন্ত। ফাঁকা কক্ষ। অন্ধকার জমে ছিল। শ্রীলেখার জন্য অতিরিক্ত একটি চীবর চাই। মেঝের এককোণে কতগুলি পাট করে রাখা চীবর পড়েছিল। উবু হয়ে তারই একটি তুলে নিল সুমন্ত। চীবরটি কার কে জানে। চুরি করলাম? চুরিই তো। আর কী। গতকাল শ্রীলেখাকে দেখার পর থেকেই ভিক্ষু জীবনের পাট চুকেছে। আর, আজ পরের দ্রব্য হরণ করতে হল! দীর্ঘশ্বাস ফেলে দ্রুত পায়ে ঘরটি থেকে বেরিয়ে এল সুমন্ত। অলিন্দে অন্ধকার। প্রাঙ্গনে নেমে যাওয়ার সিঁড়ির ওপর জ্যোøা। ততক্ষণে সন্ধ্যা ঘন হয়ে উঠেছে। আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি। আকাশে পরিপূর্ন গোল একখানি পূর্ণিমার চাঁদ। প্রাঙ্গনটি জ্যোøালোকিত। জ্যোøালোকিত ও নির্জন। প্রাঙ্গনের ঠিক মাঝখানে একটি বয়স্ক অশথ গাছ। যে কারণে প্রাঙ্গনের ওপর অজস্র শুকনো পাতা ছড়িয়ে। আষাঢ়ি সন্ধ্যার বাতাসের টানে পাতাগুলি সরসর করে ওঠে। দ্রুত পা ফেলে ভাসু বিহার থেকে বেরিয়ে যায় সুমন্ত । আর আমি ভাসু বিহারে ফিরে আসব না। তার দীর্ঘশ্বাস পড়ল। ২ ভাসু বিহারটি পুন্ড্রনগরের পশ্চিমে। ও কিছু বাইরে। শ্রীলেখার মুখটি স্মরণ করে নগরমুখি হল সুমন্ত। দিন কয়েক বৃষ্টি হয়নি। নগরমুখি এ পথটায় গো শকটের চাকার গভীর দাগ। সান্ধ্য জ্যোøায় অনেকটাই স্পষ্ট। পথের দু’পাশে ঘন ঝোপজঙ্গল, কচুবন। তারই ফাঁকে ফাকে ফুটি ফুটি জ্বোনাকি। ঝিঁঝিরা তারস্বরে ডাকছিল। দূরবর্তী শেয়ালের আর্তনাদও কানে আসে। সুমন্ত দ্রুত হাঁটে। পথের দু’পাশে এখন জ্যোøার প্রান্তর, আখের ক্ষেত। আখ বর্ষজীবি উদ্ভিদ। আখ পাতার ওপর বয়ে যাওয়া আষাঢ়ি সন্ধ্যার বাতাসের ঘর্ষনে সৃষ্ট মৃদু সরসরানির শব্দ সুমন্তকে কেমন আনমনা করে দেয়। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। পথের ওপর তার ছায়াটিও চলমান। সে অভিভূত হয়ে যেতে থাকে। এই সময়ে কে যেন তার ভিতর থেকে বলল, এই জীবন। কী লক্ষ তার? পথে যেতে যেতে একটা আলোর মুখে দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য। কে যেন আজ সান্ধ্যকালীন জ্যোøার বাতাসে ভেসে এসে উত্তর দিল। আর? আর কী। সুমন্ত বিভ্রান্ত বোধ করে। একা হলেই কে যেন কথা কয়ে ওঠে তার ভিতরে। কে সে? কে? আখের খেত শেষ হলে তারপর আমবনের শুরু। আষাঢ় মাসজুড়ে আমবনে এক ধরনের কষায় গন্ধ থাকে। সুমন্ত সে কষায় গন্ধ পায়। সন্ধ্যা অতিক্রান্ত বলেই এপথটিতে এখন লোক চলাচল কম। এ পথে এখন কেবলি জ্যোøা ও গাঢ় নির্জনতা । সুমন্ত গুনগুন করে ওঠে: পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি বুঝবি শেষে। আশ্চর্য! বুদ্ধ সঙ্গীত নিষিদ্ধ করেছেন বহু আগেই। মুচকি হাসে সুমন্ত। ধর্মের চেয়ে সঙ্গীত বড়। সে দ্রুত হাঁটতে থাকে। বাতাসের গন্ধ সহসা বদলে যায়। ডান পাশে একটা বিস্তীর্ণ বিল। কালিদহ বিল। বিলের জলের রং তরল রুপার মতোই দেখায়। সামনেই একটা হাট। মেছো হাট। মাছের আঁষটে গন্ধ টের পায় বাতাসে। মানুষের কন্ঠস্বরের গুঞ্জন। পথের দুপাশে অনেকগুলি কূপি জ্বলে ছিল। ডুলো নিয়ে বসেছে মেছোরা। মাছ বিক্রি করেই তবে বাড়ি ফিরবে। আঁষটে গন্ধটা ভালো লাগে না সুমন্ত। জায়গাটি সে দ্রুত হেঁটে পেরিয়ে যেতে চায়। দীর্ঘকাল মাছ খায় না সুমন্ত। দীর্ঘকাল কেবল অন্ন আর কন্দ খেয়ে বেঁচে রয়েছে সুমন্ত। মাঝেমধ্যে অবশ্য শাকও খায়। একটা সময় ছিল-যখন সুমন্ত মাছমাংস খেত; তখনও ভিক্ষু হয়ে যায়নি সে। তা, সুমন্তর মা মহামায়া রাঁধতেন ভালো। সুমন্তর বউটিও-সেই সাবিত্রীরও রান্নার হাত ছিল চমৎকার। মাছ কাছিম ছাগ ও কবুতরের মাংস-কত কী যে রাঁধত সাবিত্রী। সুমন্তর আদিবাড়ি ছিল সমতট রাজ্যের দেবপবর্ত নগরের কাছে ক্ষিরোদা নদীর পাড়ের ময়নার টিলা গ্রামে। ক্ষিরোদা নদীটি ছিল নানাবিধ মৎসে পরিপূর্ন; বিশেষ করে, তিলাশোল। সুমন্তর বউ সাবিত্রী ছিল পাশের শ্মাশনগাছা গ্রামের মেয়ে। সুমন্তর বাবা জয়ন্ত ঘোষ যখন সাবিত্রীকে ছেলের বউ করে ঘরে আনল- সাবিত্রীর বয়স তখন সবে তেরো। বিখ্যাত ময়রা জয়ন্ত ঘোষ ছিল সমতটের প্রসিদ্ধ দই প্রস্তুতকারক। দেবপর্বত নগরের ময়নামতিতে জয়ন্ত ঘোষের দইয়ের বিপনী ছিল। তো, বউকে ভারি ভালো বাসত সুমন্ত। কত রকম পদ যে সাবিত্রী রেধে খাওয়াত; বিশেষ করে টাকি মাছের ভর্তা। হায়, তিন বছরও ঘর করা হল না- কী রোগে মরল সাবিত্রী। বউয়ের মৃত্যুর পর সুমন্তকে উদাসী রোগে ধরল। সে রাতদিন ক্ষিরোদা নদীর পড়ে বসে থাকত। সাবিত্রীর শোক দিনদিন বাড়ছিল। দিশেহারা সুমন্ত শোক প্রশমনের জন্য পথে বেরুল। সমতটের পূর্ব-দক্ষিণের ছিল ঘন অরণ্যে। সেখানে গেল। দক্ষিণের সমুদ্রের পাড়ে গেল, পশ্চিমের জমজমাট সব নগরে গেল। এভাবে শোক কিছু প্রশমিত হল বটে। বহু বছর পথে ঘুরতে ঘুরতে একদিন সে পৌঁছল আর্যাবর্ত্মের উজ্জয়িনী নগর। সে নগরের উপান্তে ভিক্ষু ধর্মরক্ষিতের সঙ্গে অনেকটা আকস্মিকভাবেই দেখা হয়ে গেল। ভিক্ষু ধর্মরক্ষিত মগধের রাজগৃহ নগরে স্বয়ং বুদ্ধদেবের কাছে ধর্মান্তিত হয়েছেন। বুদ্ধদেবই তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন নগর উজ্জ্বয়িনীতে একটি বৌদ্ধসংঘ নির্মান করতে। কুড়ি বছর উজ্জ্বয়িনীর সংঘে ছিল সুমন্ত । ভিক্ষু ধর্মরক্ষিতের সঙ্গে গড়ে উঠেছিল গভীর সখ্য । গত বছর মধ্য শ্রাবণে ভিক্ষু ধর্মরক্ষিতের মৃত্যু হল। সে সময় গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল সুমন্ত। শোক প্রশমনের উদ্দেশ্যে সে আবার পথে বেরিয়ে পড়েছিল। জীবন এমন-পুন্ড্রনগরে এসে গতকাল শ্রীলেখার মুখটি দেখে সাবিত্রী ও ধর্মরক্ষিতের মুখ সম্পূর্ন ভুলতে বসেছে সুমন্ত। আশ্চর্য! শ্রীলেখার সঙ্গে মৃতা সাবিত্রীর মুখোশ্রীর এত মিল! পুন্ড্রনগরের পশ্চিমের নগর তোড়ণটিরর প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে সমন্ত। কড়–ই গাছের সমান উচুঁ ইটের তৈরি তোরণ- অর্ধবৃত্তাকার অবয়বটা জ্যোøায় কেমন ভৌতিক দেখাচ্ছে। তোরণের ছায়ায়, ভিতরে, আশেপাশে সশস্ত্র সৈন্যরা দাঁড়িয়ে। ক’জন অশ্বারোহী সৈন্যও রয়েছে। একটি মেয়েকেও দেখল। সুমন্ত ভিক্ষ বলেই কেউই তাঁকে আটকালো না। নগর তোরণের ওপাশে একটি সোজা প্রশস্ত ইট বাঁধানো সড়ক। জ্যোøায় উজ্জ্বল। পথের দু-পাশে কিছু দ্বিতল ভবন রয়েছে। সুমন্ত জানে-ভবনগুলি অধিকাংশই প্রশাসনিক । বাঁ পাশে একটি বড় দিঘি। সুমন্ত জানে-পুন্ড্রনগরের লোকেরা দিঘিটিতে বড় দিঘিই বলে। দিঘি পেরুলে আবার সড়কের দু-পাশে কিছু দ্বিতল ভবন রয়েছে। এই ভবনগুলি প্রশাসনিক নয়-নগরের সম্পন্ন শ্রেষ্ঠীদের বাস। সড়কের পাশে প্রাচীর। প্রাচীরের ভাঙ্গা একটি রথ। রথটির তলায় একটি আশ্রয় পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। কূপী জ্বলেছিল। আর্যাবত্মজুড়েই এরকম হতশ্রী দৃশ্য বিরল নয়। কেন যে জগতে একদল মানুষ অহেতুক কষ্ট ভোগ করে। সুমন্ত হাটার গতি বাড়িয়ে দিল। সড়কটা শেষ হয়েছে বৃত্তাকার একটি ইটের প্রাঙ্গনে। জায়গাটির নাম রাজর্ষী: এটিই পুন্ড্রনগরের প্রধান নগরকেন্দ্র। রাজর্ষী চত্তরের ঠিক মাঝখানে বিশাল একটি পাখা মেলা ধবল রাজহাঁসের মূর্তি। শ্বেত পাথরের তৈরি। মধ্য আষাঢ়ের জ্যোøায় স্পস্ট ধবল দেখায়। মগধের সম্রাট বিম্বিসার একবার এসেছিলেন পুন্ড্রনগর। তখন তাঁরই সম্মানে নির্মিত করেছেন পুন্ড্রনগরের নগরপিতারা । কী মনে করে আকাশে মুখ তুলল সুমন্ত। আশ্চর্য! জ্যোøার আকাশে এক ঝাঁক বুনো হাঁস হারের মতন উড়ে যাচ্ছে দক্ষিণ দিকে। সুমন্ত তার শরীরে ক্ষীণ শিহরন টের পেল। রাজর্ষী চত্ত্বর ঘিরে চারটি পথ চারদিকে চলে গেছে। পথগুলির ফাঁকে ফাঁকে সরু সরু গলির মুখ। পূর্বদিকের একটা গলির মুখে একটি মিস্টান্নের আপণ। পুন্ড্রনগরের বিখ্যাত মধু ময়রার ‘শ্রীপর্ণা দধিভান্ডার।’ আপণে আলো জ্বলে আছে। ভিতরে বাইরে লোকজনের জটলা। এখানে এলেই মৃত বাবার কথা মনে পড়ে যায় সুমন্তর। কত শখ করে সাবিত্রীকে ছেলের বউ করে ঘরে তুলেছিল বাবা। বাবা এখন কই? দীর্ঘশ্বাস ফেলে সরু গলিতে ঢুকল সুমন্ত। এই গলির নাম নবান্নের গলি। সুমন্ত জানে । গলিটা বেশ সরু। কোনও মতে দুটি রথ যেতে পারে। দুপাশে এক মানুষ সমান উচু প্রাচীর। প্রাচীরের ওপাশে মানুষের ঘরবাড়ি। কারা যেন খড়ি পুড়িয়েছে। ধোঁওয়া দেখা না গেলেও øায়ূ উতল করা সেই গন্ধ পেল সুমন্ত। শিশুর কান্না। কুকুরের ডাক। পুরুষকন্ঠের তীক্ষ্ম চিৎকার: ‘তুই, মরতে পারিস না!’ দ্রুত পায়ে হাঁটছে সুমন্ত। গলিটা এ জায়গায় বাঁক নিয়েছে। বাঁকের মুখে একটা ছাড়া-ষাঁড়। কাদের কে জানে। অনেকদিন হল এ নগরে শৈব আর বিষ্ণপন্থি উপাসকদের প্রতাপ। বলির জন্য ষাঁড় অপরিহার্য। ষাঁড় বলি দিলে সার্থবাহের পশুর সঙ্কট। আর্যাবত্মজুড়ে ষোড়শ জনপদ গড়ে উঠেছে। পন্য নিয়ে দূরবর্তী নগরে যেতে গো-শকট অপরিহার্য। ওদিকে বুদ্ধ অসিংহধর্ম প্রচার করছেন-তিনি পশুবলির বিপক্ষে। এজন্যই কি বনিকেরা বুদ্ধের পৃষ্টপোষকতা করছেন? সুমন্ত মুচকি হাসে। বুদ্ধ যখন ব্যবহৃত হচ্ছেন-তা হলে আমি ধর্মের চেয়ে সঙ্গীত ও শ্রীলেখাকে বড় বললে আমার দোষ কোথায়? কথাটা ভাবতে ভাবতে হাড়ি পাড়ায় চলে এল সুমন্ত। হাড়ি পাড়ায় হাড়ি ছাড়াও ডোমদের বাস। এরা, শৈব আর বিষ্ণপন্থি উপাসকদের চোখে অচ্ছুত। সুমন্ত মুচকি হাসে। আরও কিছুটা হাঁটলে যৌবন বিক্রেতাদের পল্লি। সে কারণেই বাতাসের গন্ধও কেমন বদলে যায়। গলিতে নানাবয়েসী পুরুষের ভিড়। দু’পাশে আলোজ্বলা বাড়ি। বাতাসে মাংসপোড়া গন্ধ, ধেনো মদের গন্ধ। আলো। খিলখিল হাসি। গম্ভীরস্বরে ভর্ৎসনা। বিচিত্র সুরের গান। একজন নেশাসক্ত পুরুষকন্ঠের গান কানে এল সুমন্তর। তুমি আর আমি সখা, তুমি আর আমি। ভালোবাসি ভালোবাসি জানে অর্ন্তযামী। অর্ন্তযামী মানে কি ঈশ্বর? ভিক্ষুজীবনে কি ঈশ্বর মানত সুমন্ত? বুদ্ধ তো নিরেশ্বরবাদী। তা হলে? আহ্। পুন্ড্রনগর। তুমি সস্তা আর সুলভ নারীদের বুকে নিয়ে আজও সংশয়বাদী। তুমি শ্রীলেখার নগর। আমায় তুমি বদলে দিলে হে পুন্ড্রগনের মহৎ নগর। কেননা, ধর্মের চেয়ে প্রেম বড়। ঘোরের মধ্যে হাঁটে সুমন্ত। বেশিদিন হয়নি সে এ নগরে এসেছে । প্রথম থেকেই অসম্ভব ভাল লাগছিল তার নগরটি। এ নগরেই কোথাও যদি শ্রীলেখার সঙ্গে বাস করা যেত-ধরা যাক এই নবান্নের গলিতে-হাড়িপাড়ার খুব কাছে । হায়। নাঃ, তা সম্ভব নয়। শ্রীলেখার স্বামী জীবিত। শ্রীলেখাকে নিয়ে পুন্ড্রনগর ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। আজই। শ্রীলেখা শ্রাবস্তী নগরে যেতে চায়। যদিও শ্রাবস্তী যাওয়া অনুচিত হবে। শ্রাবস্তী নগরটি কোসল রাজ্যে। তখন শ্রীলেখা বলল, ওর স্বামী কোসল রাজ্যে গিয়েছে। জৈন মন্দিরের পাশে সেই হরীতকী গাছের নীচে শ্রীলেখার দাঁড়িয়ে থাকার কথা । দাঁড়িয়ে থাকবে তো? সুমন্তর বুকে ঝড়। ধর্মের চেয়ে প্রেম বড়। আর আমি শ্রীলেখাকে ভালোবাসি। আশা ও সংশয়ের দোলায় দুলতে দুলতে ধানমোহনীর জৈন মন্দিরের দিকে হাঁটতে থাকে সুমন্ত। ৩ শ্রীলেখা। অনেকক্ষণ হল জৈন মন্দিরের পাশে হরীতকী গাছটির নীচে দাঁড়িয়ে আছে । এখন রাত্রির কত প্রহর কে জানে। ভিক্ষু এখনও আসছে না । আসবে না? না আমাকে ঠকালো? সবাই আমাকে ঠকায়। আমার বাবা, জয়ন্ত, আমার স্বামী । শ্রীলেখা অসহ্য অভিমান টের পেল বুকের ভিতর। মশারা বিন বিন করছিল পায়ের কাছে। রক্ত শুষে নিচ্ছে। নিক। আমি তো মরতেই চাই। কত আর সহ্য হয়? স্বামী ঘরে না থাকলে দাসী মল্লিকা চোখে চোখে রাখে। অসহ্য। আজ রাতে দাসী মল্লিকা মাধবের ঘরে ঢুকে দোর দেওয়ার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেই তবে সন্তপর্ণে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছে শ্রীলেখা। তখন মোটেও বুক কাঁপেনি। তবে মুক্তির আনন্দও টের পাচ্ছিল না শ্রীলেখা। কেবল ক্ষীণ এক উদ্বেগ টের পাচ্ছিল- দাসী মল্লিকা যদি জেগে ওঠে। দাসী মল্লিকা সাংঘাতিক কুটনি। স্বামীর চর। মাঝেমধ্যে মধ্যরাত্তিরে মল্লিকার ঘরে যান পতিদেবতাটি। পরের দিন দাসী মল্লিকার হাসি হাসি মুখ দেখে সর্বাঙ্গ জ্বলে যায় শ্রীলেখার। তবে শ্রীলেখার স্বেচ্ছানির্বাসনের কারণ এইটুকুমাত্র নয়। ভিক্ষু এখনও আসছে না । ইস্। মশারা ছেকে ধরেছে। ধরুক। লাল রঙের চীবর পরা মধ্যবয়েসী শ্যামবর্ণের ভিক্ষুটি আমায় গতকাল দেখামাত্রই ভালোবেসে ফেলেছে। ইস্। লোকটা যদি জানত সবটা! কেন আজও মধ্যআষাঢ়ের পূর্ণিমার রাতে পুন্ড্রনগরের আকাশ দিয়ে উড়ে যায় এক ঝাঁক বুনোহাঁস! থাক। সে সব কথা এখন থাক। তবে মধ্যবয়েসী ভিক্ষুর ওপর নিশ্চয়ই বিশ্বাস রাখাই যায়। একেই কি দৈব বলে না? নইলে আমার স্বামীই-বা কেন ঠিক এই সময়ে কোশল থাকবে? নইলে আজও দুপুরে কেন বাড়ির পিছনের পুস্করিনীতে গা ধুতে যাবে দাসী মল্লিকা - যখন ভিক্ষু এল। কালও তো তাইই হল। ভাগিস্য। আজ থেকে আর আমার পাষন্ড লোকটার মুখটা দেখতে হবে না। কেন যে ঐ চন্ড লোকটা সঙ্গে বিয়ে হল। বিয়ের পরপরই এক ছেলে হয়ে মরে গিয়েছিল শ্রীলেখার-সে ও ছ’-সাত বছর আগের কথা; পুন্ডনগরের প্রবীন কবিরাজ রাজনাথ শ্রীলেখার জন্মপথে কীসব ঢুকিয়ে কী করেছিলেন-তারপর থেকে আর প্রশব বেদনা সইতে হয়নি শ্রীলেখাকে। ভাগ্যিস। সেবার ছেলে হওয়ার সময় শ্রীলেখা বাপের বাড়ি ছিল। শ্রীলেখার বাপের বাড়ি ছিল রাজর্ষী প্রাঙ্গনের পুবে, নবান্নের গলিতে- হাড়ি পাড়ার খুব কাছেই। শ্রীলেখার পিতা ছিলেন প্রসিদ্ধ বৈদিক পন্ডিত-গতবছর দেহরক্ষা করেছেন রামদেব । শ্রীলেখাদের বংশটি বড়ই সম্ভ্রান্ত। দেব পরিবারই তো বংশপরম্পরায় বৈদিক মত প্রতিষ্ঠা করেছে আর্যাবর্তের পূর্বের এই প্রান্তে। তার আগে পুন্ড্রবর্ধনের জনমানুষ পূজা করত প্রকৃতির এবং লৌকিক দেবদেবীর। বৈদিকেরা পুন্ড্রবর্ধনে আসার আগে স্থানীয় লোকজ ডোম-হাড়ি-বাগদির বৈদিক যাগজজ্ঞের ধারনাই ছিল না। নবান্নের গলির হাড়িপাড়ার ক’ঘর মানুষ আজও লৌকিক দেবদেবীর উপাসনা করে। হাড়ি পাড়ার জয়ন্তকে ভালোবাসত শ্রীলেখা। পরিবারের বৈদিক আবহ, বৈদিক শিক্ষা তুচ্ছ করেছিল শ্রীলেখা। ওর শরীরে তখন রক্তের বদলে করতোয়ার জল ঢুকে গেছে- নিত্য ঝড়জল-প্লাবন টের পায়। হাড়িপাড়ার শ্যামবর্ণের তরুণ জয়ন্ত যে দেখতে খুব একটা সুদর্শন ছিল তাও কিন্তু নয় -তবে চলনসই ছিল- শ্রীলেখা কিন্তু রুপ নিয়েও ভাবত না। চৌদ্দ বছর তিন মাস বয়েসে শ্রীলেখা প্রথম জয়ন্তকে দেখেছিল করতোয়ার পূর্ব পাড়ের রুপহাটির মেলায় বৈশাখের প্রথম দিনের রৌদ্রমূখর অপরাহ্নে । রসিক ময়রার মিস্টান্নর আপণের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল জয়ন্ত। শ্রীলেখা তো ওকে দেখামাত্র থ। শিরার রক্তে প্লাবন; বুকে ঝড়জল। সে ঝড় বাহিরের প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল কি? নইলে আচমকা ঝড়ই বা উঠবে কেন। সহসা বোশেখের ঘূর্ণি বাতাসে কে কোথায় ছিটকে গেল। মুহূর্তেই সমস্ত মেলা লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল। রুপহাটির উত্তরে যে বিস্তীর্ণ আখক্ষেত আছে-সেখানেই নিজের বুকে শক্ত করে শ্রীলেখাকে আঁকড়ে রেখেছিল জয়ন্ত। সন্ধ্যে অবধি। তারপর থেকে জয়ন্তর সঙ্গে নিত্য দেখা হতে লাগল শ্রীলেখার: লুকিয়ে অবশ্যই। শ্রীলেখার বাবা আচার্য রামদেব ছিলেন যেমন রক্ষণশীল-তেমনি চন্ড প্রকৃতির। রামদেব অবশ্য তার কন্যাটিকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। কন্যাটিও- ‘নবান্নের গলির ধোঁওয়ায় মাথা ধরে আছে। নদীর পাড়ে যাচ্ছি’ বলে রথে উঠে বসত। কন্যার কথা শুনে রামদেব মিটমিট হাসতেন। সঙ্গে নবীন তো রয়েছে-চিন্তা কী। বয়সে প্রবীন হলেও নবীন দেবপরিবারের বিশ্বাসী সারথী। তাছাড়া রামদেবের কন্যাকে উক্তত্য করে এমন স্পর্ধা কার আছে এ নগরে। তো, পুন্ড্রনগরের বাগদি পাড়ার কাছেই শালবন। শালবনের ওপাশে চন্দ্রদিঘি। সে দিঘির নিরালা পাড়ে অপেক্ষা করত জয়ন্ত। অপরাহ্নের আলো মুছে না যাওয়া অবধি দুজনের কত কথা, চুম্বন-প্রনয়। কিশোরী শ্রীলেখার শরীরে তখন রক্তের বদলে করতোয়ার জল ঢুকে যেত। যে জলে ঝড়জল-প্লাবন। জয়ন্তের গানের গলা ছিল দরদী। যখন সে এতদ্বঞ্চলের একটি লোকপ্রিয় গান ধরত- তুমি আর আমি সখা, তুমি আর আমি। ভালোবাসি ভালোবাসি জানে অর্ন্তযামী। তখন ...তখন, শ্রীলেখার মনে হত চন্দ্রদিঘির কালো জলে সন্তরণশীল বুনোহাঁসেরা গানের টানে পাড়ের দিকেই এগিয়ে আসছে। চন্দ্রদিঘির পাড় ঘিরে দীঘল দীঘল শিলকড়–ই গাছ, কচু বন, আমরাঙা গাছ। সেসব গাছের গভীর ছায়া । পাড়ে উঠে এলেও বুনোহাঁসেদের আমাদের খুঁজে পেতে সমস্যা হবে-শ্রীলেখা তেমনই ভাবত। শেষ বেলার আলোয় অজস্র চুম্বনের পর বড় রাস্তার পাড়ে অপেক্ষমান রথের কাছে ফিরত শ্রীলেখা। রথের বুড়ো সারথী নবীন খুড়ো শ্রীলেখাকে ভারি ভালোবাসত। ক্রমশ ... সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৩২
false
mk
ভাঙচুরের সংস্কৃতি___কবে হবে শেষ_ সরকারের শেষ সময়ে এসে দেশে জ্বালাও-পোড়াও-ভাঙচুরের রাজনীতি শুরু হয়েছে। নির্বিচারে ভাঙচুর করা হচ্ছে দেশের সম্পদ। রক্ষা পাচ্ছে না বেসরকারি সম্পদও। রাজনৈতিক সমাবেশে ককটেল বিষ্ফোরনের মতো ঠুনকো কারণে ডাকা হচ্ছে দিনের পর দিন হরতাল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে বিরোধীদলের কোনো নেতার বাড়ির পোষা প্রাণী মারা গেলেও বুঝি হরতাল আহ্বান করা হবে। যে রাজনীতিবিদদের দেশ ও জাতি নিয়ে ভাবার কথা সেই রাজনীতিবিদরা এখন ক্ষমতা নিয়ে ভাবছে। হরতাল আর আগের দিনের হরতালে নেই। ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ বেড়েছে। আগের হরতালের তুলনায় সম্প্রতি হওয়া হরতালে ক্ষতির পরিমাণ চারগুণ বেড়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা বলছেন। দু’এক বছর আগেও হরতালে প্রাণহানির কথা চিন্তা করা যেতো না। কিন্তু সময় বদলেছে, পাল্টেছে হরতালের পিকেটিংয়ের ধরন। সম্প্রতি কয়েকদিনের হরতালে ঝরে গেছে পুলিশসহ কয়েক ডজন মানুষের প্রাণ। মানুষের জীবনের পাশাপাশি মালের ক্ষতিও বেড়েছে বহুগুণে। অজানা আতঙ্কে জনমন বিপর্যস্ত। আতঙ্কে বসবাস করছে দেশবাসী। হরতালে পথচারীদের মনে থাকে অজানা ভয়, না জানি কখন কোন দিক থেকে মাথার উপর বোমা বা ককটেলের বিষ্ফোরন ঘটে। হরতালের পুড়ছে হাজার কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি সম্পদ। এর প্রভাবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিদেশী বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে অন্য রাষ্ট্রের কাছে। দেশের এমন ক্রান্তিকালে হরতালের নেতিবাচক দিক তুলে ধরতে হবে দেশের গণমাধ্যমকে। দেশবাসী ও সাধারণ মানুষকে করতে হবে সচেতন। হরতালের অপকারিতা বোঝাতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের। তৈরি করতে হবে হরতাল বিরোধী জনমত ও গনসচেতনতা। দেশ ও জাতিকে রক্ষায় দল, মত নির্বিশেষে এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। সবাইকে বোঝাতে হবে বাংলাদেশটা আমার ও আপনার। এ দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করতে হবে। হায়েনাদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে। দেশ ও জাতির কথা চিন্তা করে হরতালকে না বলতে হবে সবাইকে। এমতাবস্থায় দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে সবার আগে প্রয়োজন জাতীয় ঐকমত্যের। হরতাল বন্ধে সকল পেশার ও মতের মানুষদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন দেশের বিশিষ্টজনরা।জ্বালাও-পোড়াও-ভাঙচুরেরধ্বংসাত্মক হরতালের রাজনীতিহরতালে গাড়িতে আগুন দেওয়ার রেওয়াজ আগেও ছিল এখনও আছে। তবে এর প্রবণতা বেড়েছে বহুগুণে। ছোট ছোট বাস-ট্রাকে আগুন দিলেও এখন রেলগাড়ি ও পণ্যবাহী ট্রাকও হরতালের আগুন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। আজ থেকে ৫ বছর আগেও গাড়িতে আগুন দিলে গাড়ি চালক, হেলপার ও যাত্রীদের নামার সুযোগ দিতো পিকেটাররা। এখন দিন বদলেছে। এখন আর সে সুযোগও দেয় না পিকেটাররা। আগুনে কে মারা গেল এটা দেখার সময়ও নেই তাদের। বিএনপি-জামায়াতের হরতালে গত আড়াই মাসে সারাদেশের পরিবহন খাতে ২০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ক্ষতির শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক কে এনায়েত উল্লাহ বলেন, হরতালের কারণে সারাদেশে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় প্রায় ১৭ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পরিবহন খাত। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় হরতালের আগেরদিন রাতে। তিনি আরও বলেন, আমরা বারবার হরতালের বিকল্পের কথা বলি কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনে না। আর এভাবে প্রতিনিয়ত পরিবহনের ক্ষতি হলে অচিরেই এই সেক্টর ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। গত কয়েকদিনে জামায়াত-বিএনপির হরতালে আক্রমণের একটি প্রধান লক্ষ্য ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। দেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইন উপড়ে ফেলে স্টেশন ভাঙচুর ও ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক ও বাস। এমনকি রাজধানীর সুরক্ষিত কমলাপুর রেলস্টেশনেও রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন দেয় হরতাল আহ্বানকারীরা। কিছুদিন আগেও হরতালে প্রকাশ্যে মিছিল ও পিকেটিং করতো হরতাল আহ্বানকারীরা। এখন সে সময় বদলে গেছে। হরতালে পিকেটিং ছিল হরতাল আহ্বানকারী রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার হরতালে বিরোধীদলকে দমাতে কঠোর অবস্থান নেয়। তারা হরতালে পিকেটিংকারীদের মোবাইল কোর্ট আইনে গ্রেফতার ও সাজা দেওয়ার কাজ পাকাপোক্ত করে। এর ফলে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা হরতাল আহ্বান করলেও হরতালের সমর্থনে প্রকাশ্যে মিছিল-মিটিং করতে খুব একটা আগ্রহী নয়। চোরাগোপ্তা হামলা ও গেরিলা কায়দায় হরতালে পিকেটিং করে তারা। এর ফলে দেশে হরতালের রাজনীতিতে শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি। জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির জন্য সরকার পক্ষ দায়ী করছে বিরোধীদলকে। অন্যদিকে বিরোধীদল দায়ী করছে সরকারি দলকে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের রায়কে কেন্দ্র করে গত দেড় মাসে দেশের প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে; যার মধ্যে প্রায় এক ডজন পুলিশও রয়েছে। আহতের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারে ছাড়িয়ে গেছে।হরতালে ৪ গুণ বেশি ক্ষতিএবারের হরতালের চরিত্র ছিল আগেরগুলোর চেয়ে ভিন্ন, যার প্রভাব পড়েছে গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র। বেড়েছে হরতালে জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা। ফলে আগেরগুলোর তুলনায় এবারের হরতালে চার গুণ বেশি ক্ষতি হয়েছে- এ মূল্যায়ন ডিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সবুর খানের। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, আগের হরতালগুলোতে প্রভাব পড়ত বিভাগীয় শহরগুলোতে। তা ছাড়া রপ্তানিতেও তেমন সমস্যা হতো না। সাম্প্রতিক হরতালে সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ছে। রপ্তানিতে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে এর আগে টানা হরতালেও রাতের বেলা ট্রাক চলত। গান পাউডার দিয়ে ট্রাকসহ পণ্য পুড়িয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি আগে কখনো দেখা যায়নি। এ জন্য সারাদেশেই ট্রাক চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায় হরতালে। ফলে রপ্তানিপণ্য পরিবহন ছাড়াও সারাদেশে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে। এতে একদিকে যেমন কৃষকসহ শিল্প উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তেমনই ক্ষতির শিকার হয়েছেন পণ্যের গ্রাহক ও ক্রেতারা। অর্থাৎ এবার ক্ষতির শিকার সবাই। আগামী দিনগুলোয় এমন অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনীতির বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা। রপ্তানিকারকদের দাবি, গত কয়েকদিনের হরতালে বহু প্রতিষ্ঠান সময়মতো পণ্য পাঠাতে পারেনি। ফলে তাদের আগামী কয়েক দিনে অর্ডার বাতিল, পণ্যমূল্য থেকে ক্ষতিপূরণ কেটে রাখা, বিমানে পাঠানোর মতো সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে সুনামের। এ গেল রপ্তানিখাতের কথা। দেশের জন্য পণ্য উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের অবস্থাও করুণ। কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়েছে, তবে বিক্রি সেভাবে হয়নি। স্থানীয় বাজারে দাম পড়ে গেছে, ঢাকাসহ অন্য শহরে বেড়ে গেছে। আমদানি পণ্যের জাহাজ বা ট্রাক বন্দরে এসেছে। কিন্তু পণ্য বন্দর ছাড়তে পারেনি। শিল্পপণ্যের চাহিদা না থাকায় উৎপাদন কম হয়েছে। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতির প্রতিটি কর্মকা- পরস্পর সংযুক্ত। এর প্রভাবও একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। একটি দোকানে কেনাবেচা কমে গেলে উৎপাদন কমে যায়। বিক্রেতা ও উৎপাদনকারী যে ব্যাংকে লেনদেন করেন, ওই ব্যাংকের আমানত ও ঋণ কমে যায়। সার্বিকভাবে বছর শেষে এর প্রভাব পড়ে ব্যাংকের মুনাফায়। দেশজুড়ে বছরব্যাপী এ ধরনের সহিংসতা চললে শেষে ব্যাংকের মুনাফা কমে যেতে পারে। আর তার অনিবার্য ফল শেয়ারবাজারে ওই ব্যাংকটির শেয়ারের দরপতন ও বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি। সব মিলিয়ে বছর শেষে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া।হরতালে প্রতিদিন ক্ষতিএক দিনের হরতালে কতো ক্ষতি হয়, এর কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই বাংলাদেশে। বেসরকারি পরিসংখ্যানও গবেষণা নির্ভর হয়। বাংলাদেশ দোকানমালিক সমিতির মতে, এক দিনের হরতালে খুচরা কেনাবেচায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। বাংলাদেশ পরিবহন সমিতিগুলোর মতে, হরতালে দৈনিক ক্ষতি আড়াই’শ কোটি টাকার মতো। ২০০৫ সালে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউএনডিপি হিসাব করে বলেছিল, এক দিনের হরতালে সরাসরি ৫০০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। তারপর গত আট বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ব্যাপ্তি অনেক বেড়েছে। জিডিপির আকার ৯ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ফলে ক্ষতিও বেড়েছে। ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) মতে, এক দিনের হরতালে ক্ষতি প্রায় ২০ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা।জামায়াতি সন্ত্রাসে রাষ্ট্রের ক্ষতি২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন থেকে জামায়াত-শিবির দেশজুড়ে যে নৈরাজ্য ও নাশকতা চালিয়ে আসছে তাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ বিপুল। এখন পর্যন্ত প্রায় ২২৫ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে। তবে এটাই সব নয়, কিছু ক্ষতির হিসাব এখনো মেলেনি। হরতালের সময় ও এর আগে-পরের সহিংসতা ও অচলাবস্থা মিলিয়ে বেসরকারি খাত ও ব্যক্তিগত সম্পদের পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে ক্ষতির মোট পরিমাণ ঠিক কতো এর কোনো হিসাব কেউ করেনি। ব্যবসায়ীরা অবশ্য এরই মধ্যে বলেছেন, অন্য সময়ের তুলনায় এবারের হরতালে চার গুণ বেশি ক্ষতি হয়েছে। ব্যক্তিজীবন ও স্বাস্থ্যের ক্ষতির আর্থিক মূল্য নিরুপণ করা সম্ভব নয়। জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় গত কয়েক দিনে আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র, উপড়ে ফেলা হয়েছে রেললাইন, আগুন দেওয়া হয় সরকারি কার্যালয় ও রেলের বগিতে। নির্বিচারে ভাঙচুর ও পোড়ানো হয় সরকারি যানবাহন। রক্ষা পায়নি আগুন নেভানোর গাড়িও। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায়। সেদিনের আগুন ও লুটপাটের ঘটনায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। গত ৫ মার্চ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন এসব তথ্য জানান। তবে এই আর্থিক ক্ষতির চেয়েও বড় যে ক্ষতি হয়েছে তা সুদূরপ্রসারী। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পুড়ে যাওয়ায় সেখানকার আট হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক জনজীবনে সৃষ্টি হবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাঘাত। রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি ও ব্যক্তির জান-মালের ক্ষতিপূরণ আদায়ের আইনী কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকারি সংস্থা ও কর্মকর্তাদের হিসাব অনুযায়ী, চলমান সহিংসতায় কেবল বগুড়ায় ১১ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। রেলওয়ের ক্ষতি হয়েছে সাড়ে আট কোটি টাকা। বিআরটিসির ক্ষতি প্রায় দুই কোটি টাকা। চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি সম্পদের ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এর মধ্যে প্রায় তিন কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ। দেশজুড়ে ফায়ার সার্ভিসের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। তবে পুলিশের গাড়ি পোড়ানো, সেতুর ক্ষতি করাসহ বেশ কিছু ক্ষতির আর্থিক মূল্য বের করা যায়নি। বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকলেও অন্যসব হরতালের মতো জামায়াতের ডাকা হরতালেও কিছু জেলার সঙ্গে রেল যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। জামায়াত রেলকেই বেছে নেয় সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে। সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর ছয় দিনে রেলওয়েকে কেন্দ্র করে ৫৯টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে গঠিত পশ্চিম রেলের দুটি স্টেশন ও তিনটি কোচ পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক শাহ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করেছি।’ জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবনির্মিত সরকারি পর্যটন মোটেলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করছে পর্যটন করপোরেশন। তবে মোটেলটির ঠিকাদার খায়রুল ইসলাম জানিয়েছেন, মোটেলটির ক্ষতি মেরামত করতে এক কোটি টাকারও বেশি খরচ হবে। বগুড়া থানায় হামলা, ফাঁড়ি ও উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে আগুনের ঘটনায় ১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ প্রধান ও নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। বগুড়ার পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক বলেছেন, সহিংসতায় পাঁচটি থানা ও ছয়টি পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সব মিলিয়ে সেখানে ক্ষতি হয়েছে এক কোটি টাকার মতো। উপজেলা পরিষদে আগুন ও দুটি গাড়ি পোড়ানোয় প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। শিবগঞ্জে পল্লীবিদ্যুতের সাবস্টেশন ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় আট হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে ওই এলাকার কৃষকরা সরাসরি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। দেশের গড়পড়তা উৎপাদন হিসাব অনুযায়ী ওই পরিমাণ জমিতে প্রায় ৩২ হাজার টন চাল উৎপাদন হওয়ার কথা, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৯৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীদের হামলায় ব্যক্তিগতভাবে অনেকের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিকা-ের শিকার হয়েছে। এসবের আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণগত চার বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে; চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। সম্প্রতি হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভসহ নানা সহিংসতায় রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। শুল্ক আদায়ে স্থবিরতা বিরাজ করছে, মূসক আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ শতাংশ কম। তবে আয়কর আদায় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। সামগ্রিকভাবে নেতিবাচক এ ধারার জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতাকেই দায়ী করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা। এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় কম। এনবিআর রাজস্ব আদায়ের যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেসবের পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এর জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতাই দায়ী। গোলাম হোসেন বলেন, প্রায় ছয় মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতায় শিল্প ও বিনিয়োগে নেতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে। গত দুই মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছে। সহিংসতা চলছে দেশের কিছু জায়গায়। এতে বিনিয়োগ ও শিল্প খাত স্থবির হয়ে পড়েছে। রাজস্ব আদায়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভসহ নানামুখী রাজনৈতিক সহিংসতায় চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনের স্বাভাবিক কাজ বন্ধ রয়েছে। গত সাত দিনের হরতালে শুধু চট্টগ্রাম বন্দরেই রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকা। আবারও হরতাল বা রাজনৈতিক সহিংসতায় শুল্কসংক্রান্ত ঘাটতি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। গোলাম হোসেন বলেন, আয়কর ও মূসক আদায়ের জন্য কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে ঠিকমতো যেতে পারছেন না। যাঁরা যাচ্ছেন তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্যের অচলাবস্থার কথা বলে সময় চাচ্ছেন করদাতারা। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি ঘাটতি থেকে গেছে। আলোচ্য সময়ে ২১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকার ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৯ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। একই সময়ে আমদানি শুল্ক বাবদ ১৯ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৮ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। কর-বহির্ভূত অন্যান্য খাতে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি প্রায় ২২৪ কোটি টাকা। তবে একই সময়ে আয়কর আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছে এনবিআর। গত জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫৩১ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয়কর আদায় হয়েছে ১৫ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, চলতি বছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আরো আট হাজার কোটি টাকা আদায়ের নির্দেশ ছিল। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অতিরিক্ত এ রাজস্ব আদায়ের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।গতি কমেছে ব্যবসা-বাণিজ্যেসার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও রপ্তানিখাতে বছরখানেক ধরেই গতি কম। বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহারের সীমা তুলে নিয়ে বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়ার গতি শ্লথ। ফলে উৎপাদনেও টান পড়েছে। তাজরীন, স্মার্ট ফ্যাশনে আগুন, শ্রমিকের মৃত্যু, ডলারের দাম পড়ে যাওয়া এবং ইউরোপ ও আমেরিকায় তিন বছর ধরে মন্দাভাব, সব মিলিয়ে নানা শঙ্কায় ১৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের পোশাক খাত। অন্য ছোট খাতগুলোর প্রধান বাজার ইউরোপ। পোশাক ছাড়া অন্য পণ্য সেখানে রপ্তানি করে তেমন সুবিধা করা যাচ্ছে না। দেশীয় প্রধান প্রধান খাতে মন্দা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আবাসন খাতের ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বড়গুলো কোনো রকমে টিকে আছে। কাগজ, সিমেন্ট, স্টিল ইত্যাদি বড় বড় খাতে উৎপাদনক্ষমতার বড় অংশ অব্যবহƒত থেকে যাচ্ছে। ফলে কোম্পানিগুলোর পণ্যের একক প্রতি উৎপাদন খরচ বেশি লাগছে। কিন্তু বাজারে চাহিদা কম থাকায় দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। কাঁচামাল, যন্ত্রপাতিসহ পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় চলতি ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশের লেনদেন ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। এই সময়ে পণ্য-বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে। তবে আমদানি কমে যাওয়ার মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসাকে মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। আলোচ্য সময়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তিভিত্তিক মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। শিল্প কাঁচামাল আমদানি কমেছে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। গুরুত্বপূর্ণ এই উপাদান দুটির আমদানি কমে যাওয়ায় শিল্পের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান, সর্বোপরি প্রবৃদ্ধি কমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। জ্বালানির অভাব, অবকাঠামোর দুর্বলতা ও উচ্চ সুদহারে দেশের অর্থনীতি সমস্যায় আছে। এর মধ্যে সহিংসতা ও হরতাল আরো সংকট তৈরি করবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ আর অবকাঠামো সংকটে বাংলাদেশে তেমন বিনিয়োগ হচ্ছে না। দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করতে পারছেন না। কিন্তু এ দেশের অনেক সম্ভাবনা আছে। সেগুলো কাজে লাগাতে বাধাগুলো দূর করতে হবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এক দিন হরতাল হলে যে ক্ষতি হয়, তা পরের দিন কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ ধরনের হরতাল ও সহিংসতা অব্যাহত থাকলে পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে না। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সম্ভাবনার কথা বলেছে বেশ কয়েকটি বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান। মার্কিন প্রতিষ্ঠান জেপি মরগান ২০০৭ সালে বলেছিল, বাংলাদেশ হবে আগামী দিনের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাঁচটি দেশের একটি, যাদের তারা বলেছে ‘ফ্রন্টিয়ার ফাইভ’। কিন্তু আদতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ তেমনভাবে হচ্ছে না বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে। এর ওপর এক বছর ধরে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে দেশজুড়ে। দিন যতো যাচ্ছে তা আরো বাড়ছে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করার আগে বিভিন্ন দেশের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। সহিংসতা অবশ্যই এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক হিসেবে কাজ করে। নতুন বিনিয়োগ হয় না, পুরনো বিনিয়োগকারীরা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকেন। অনিশ্চয়তা দেশ থেকে টাকা অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার হার বাড়িয়ে দেয় বলেও মনে করেন ওই অর্থনীতিবিদ। গ্লোবাল ইনটিগ্রিটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে চলে গেছে। প্রতিবছর বিদেশে চলে যাওয়া অর্থের পরিমাণ দেড় বিলিয়ন ডলার। তবে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে বাঁচাতে হবেসম্প্রতি বিরোধীদলের রাজনৈতিক তা-ব ও অগ্নিসংযোগের কবল থেকে দেশের বিকাশমান অর্থনীতিকে বাঁচাতে হবে। বিএনপি’র পৃষ্ঠপোষকতা ও নৈতিক সমর্থনে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও তা-বের কারণে দেশের অর্থনীতি আজ বিপর্যস্ত। এতে অসুবিধায় পড়ছে সাধারণ জনগণ। তাদের অনেকেরই জীবন ও জীবিকা প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অথচ গত ৪ বছর ধরে বাংলাদেশে যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ছিল, তাতে অনেকেই নিশ্চিত ছিলেন, বাংলাদেশ অচিরেই মাঝারি আয়ের দেশে পরিণত হবে। বিশ্বে অনেক দেশে যখন অর্থনৈতিক মন্দা, তখন আমাদের দেশে বার্ষিক উন্নয়নের ধারা সাড়ে ৬ শতাংশ। কিন্তু জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের হামলার প্রধান লক্ষ্য দেশের অর্থনীতি। তারা দেশের শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, ব্যবসা প্রভৃতি প্রতিটি খাতকেই ধ্বংস করতে চায়। তারা নির্বিচারে কলকারখানা, বিদ্যুতেকেন্দ্র ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাচ্ছে। অর্থনীতি ধ্বংসের মাধ্যমে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। কৃষি এদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির মূল ভিত্তি। জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই তা-ব ও অগ্নিসংযোগের কবল থেকে দেশের বিকাশমান অর্থনীতিকে বাঁচাতে হবে। এ জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। নাশকতার সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততার খবর প্রমাণিত হয়েছে বহু আগেই। কারণ এরা আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমর্থন করে না। জামায়াত দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। শাহবাগের নতুন প্রজšে§র পক্ষ থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। সরকারের ভেতর-বাইরের বিভিন্ন মহল থেকেও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধের জোর দাবি উঠেছে। এমতাবস্থায় সরকারকে ভেবে-চিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।বিকল্প বিবেচনার সময় এসেছেহরতাল নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য শুরু হতে না হতেই সমাবেশস্থলে মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। প- হয়ে যায় সমাবেশ। কালবিলম্ব না করে ঘোষণা আসে হরতালের। ‘হরতাল, হরতাল’ ধ্বনি উঠল বিক্ষিপ্ত মানুষের মধ্যে। এরপর ঘটল আড়াই ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস একটি পুলিশি অভিযান। অনেকের বিশ্বাস ছিল, রাজনৈতিক দলের প্রধান কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান পরিচালিত হয় না। বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী আহমেদ দীর্ঘদিন প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করেছেন এই ভরসায়। কিন্তু এ ধরনের বিশ্বাস আর টেকেনি। পরবর্তীতে এর প্রতিবাদে দীর্ঘ হরতালের কর্মসূচি পালন করে বিরোধী দল। হরতাল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি। এক সময়, পাকিস্তান আমলে বা বাংলাদেশ আমলেও রাজনীতির চরম কর্মসূচি হিসেবে হরতাল ব্যবহৃত হতো। গত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ অনেক হরতাল করেছে। হরতালের চাপে জোট সরকার পদত্যাগ করেনি, মেয়াদ শেষ করেই ক্ষমতা ছেড়েছে। এখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট হরতাল করছে। এরা নিশ্চয় জানে, হরতাল দিয়ে সরকারকে নরম করা যাবে না। তাহলে দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর এই হরতাল ডেকে কী লাভ এমন প্রশ্ন নানা মহল থেকেই উঠছে। আজকাল ‘হরতাল’-এর পুরনো চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। আগে হরতাল মানেই গাড়ির চাকা ঘুরছে না, অফিস-আদালত চলছে না, বন্ধ থাকছে সব শিল্প-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। এখন কী হয়? হরতালের দিন কম হলেও গাড়ি চলছে, অফিস-আদালত চলছে, স্বাভাবিকতা না থাকলেও জনজীবন থেমে থাকে না। মাঝ থেকে মানুষের জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায়, গাড়ি ভাঙচুর, আগুন লাগানোর নানা হাঙ্গামা চলতে থাকে। ঘটে মৃত্যুর ঘটনাও। হরতাল ডেকে কী ফল ঘরে তোলা যায়, তা হরতাল আহ্বানকারীরা নিশ্চয় বুঝতে পারেন। আন্তঃজেলা বাস না চললেও ছোট-বড় শহরে গণপরিবহন চলেছে। হরতাল আহ্বানকারীরা গাড়ি ভেঙেছে, পুড়িয়েছে। মালবাহী ট্রাক পুড়েছে। যাত্রীবাহী ট্রেন পুড়িয়েছে, রেললাইন উপড়ে ফেলেছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে হরতালের কার্যকারিতা অনেকটাই কমে গেছে, এমনটি মনে করছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। গণতন্ত্র থাকলে ভিন্নমত থাকবে, দাবি-দাওয়া থাকবে। দাবি-দাওয়া আদায়ে আন্দোলনও করতে হবে। তবে হরতালের বিকল্প জরুরি হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে হরতাল পরিহারের পথে খুঁজতে হবে। হরতাল নৈরাজ্যের জš§ দেওয়া এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়া কোনো সমস্যা সমাধানে অবদান রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ কথা উপলব্ধির সময় এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলোসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষদের ভাবতে হবে হরতালের বিকল্প খুঁজে বের করতে। হরতালের বিকল্প ভাবার সময় এখনই।রাজনীতিবিদসহ সবাইকে ভাবতে হবেগণতান্ত্রিক রাজনীতি একটি দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশকে স্থিতিশীল ও গতিশীল করে তোলে। সরকার অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে সচেষ্ট থাকে। কোনো ব্যত্যয় ঘটলে বা অসংগতি দেখা দিলে বিরোধীদলগুলো সরকারের সেই দুর্বলতা ধরিয়ে দেয়, যাতে দেশের জনগণ, রাষ্ট্রের ও জনগণের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সেই সঙ্গে অনুল্লিখিত একটি বার্তাও জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় যে পরবর্তী নির্বাচনে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিলে এ ধরনের দুর্বলতা থাকবে না। এটাই এক কথায় গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধীদলের পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয়। একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক দেশে সরকার ও বিরোধীদল বিভিন্ন বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ, রাষ্ট্র পরিচালনায় স্থিতিশীলতা প্রদর্শন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখা নিয়ে বিতর্ক করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বেলায় যেনো বিধি বাম। দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কর্মকা-ের নামে যে হরতাল ও সহিংসতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে স্থবির হয়ে পড়ছে জনজীবন; ধীরে ধীরে এগোনো অর্থনীতির পা অচল হয়ে পড়ছে। দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে শুধু যে বাজার সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে তা-ই নয়, উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত এবং ব্যক্তির নিরাপত্তা ও সচ্ছলতার সঙ্গে জড়িত সব খাত অস্বাভাবিক রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। একদিকে শিল্প খাতে যেমন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, সঙ্গে শিল্প বিনিয়োগ-সম্ভাবনাও মারাত্মকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে, যা একটি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে। বীমা কোম্পানিগুলো আর্থিক চাপে পড়লে জনগণের নিরাপত্তা শঙ্কার মুখে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে হরতালকেন্দ্রিক সহিংসতায় যে গাড়ি, সম্পদ ভাঙচুর ও অগ্নিদগ্ধ করা হয়েছে, তাতে স্বাভাবিকের তুলনায় বীমা কোম্পানিগুলোতে অনেক বেশি বীমার টাকার দাবি (ক্লেম) উঠেছে। কৃষি উৎপাদন ও সরবরাহ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ, মুদ্রাবাজার-এর কোনো খাতই সরাসরি লোকসানের আওতার বাইরে নয়। অতএব বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের এখন ভাবতে হবে হরতালের মতো কর্মসূচি কী করে এড়িয়ে যাওয়া যায়। দেশ পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদদেরও বিরোধীপক্ষকে এমন এক সন্তোষজনক অবস্থানে টেনে আনতে হবে, যাতে হরতালের মতো কর্মসূচি তারা পরিহার করে। দেশের উৎপাদন ব্যাহত হলে, শিল্প উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হলে সার্বিক অর্থনীতিতে যে চাপ পড়বে, তার দায়ভার ও পরিণতি দেশবাসীর সঙ্গে রাজনীতিবিদদেরও ভোগ করতে হবে। বাংলাদেশে এক সময় জাতির অস্তিত্বের প্রশ্নে ও জাতির আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে হরতাল ডাকতে হতো। তখন অর্থনৈতিক কর্মকা- এতোটা বিস্তৃত ছিল না। শত শত কোটি টাকার লোকসান গুণতে হতো না। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। সুতরাং একটি দিন হরতাল ঘোষণার আগে যেকোনো একটি রাজনৈতিক দলের শতবার ভেবে দেখা প্রয়োজন।
false
rn
বৃষ্টির জল হয়ে ছুঁয়ে দিয়েছে হায়,সে আমায় মথুরা মোহন চক্রবর্তী উপমহাদেশের সর্বপ্রথম আয়ুবের্দ প্রতিষ্ঠান 'শক্তি ঔষধালয় স্থাপন করেন ঢাকার পাটুয়াটুলিতে। ঢাকায় সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক বাতি প্রচলন শুরু হয়। নোবেল পুরস্কার প্রদান শুরু হয়। রানী ভিক্টোরিয়ার মৃ্ত্যু হয়। ১০,ই এপ্রিল কবি অমিয় চক্রবর্তী'র জন্ম হয়। বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডষ্টাইনার রক্তের 'এ' 'বি' এবং এবি শ্রেনী চিহ্নিত করেন। আনন্দ মোহন কলেজ প্রতষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহে। 'হিমি' অবাক হলো না একটুও।আরেক টা প্রশ্ন করলো-শেষের কবিতা থেকে যে কোনো অংশ আমাকে শোনাও। এইটা আমার জন্য কোনো ব্যাপার'ই না।আমি 'হিমি' দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম- "যে পক্ষের দখলে শিখল আছে সে শিকল দিয়েই পাখিকে বাঁধে,অর্থ্যাৎ জোর দিয়ে।শিকল নেই যার সে বাঁধে আফিম খাইয়ে,অর্থ্যাৎ মায়া দিয়ে।শিকলওয়ালা বাঁধে বটে,কিন্তু ভোলায় না,আফিমওয়ালী বাঁধেও বটে,ভোলায়ও।মেয়েদের কোটা আফিমে ভরা,প্রকৃ্তি- শয়তানী তার জোগান দেয়। আমার হৃদয়ের ভারী কথা গুলি মুখে হালকা হয়ে ভেসে উঠে,তাই বলে তার ওজন কমে না।আমার মনের গড়নটা অনেকটা সাহিত্যিক,প্রত্যেক অভিজ্ঞতায় আমার মুখে কথার উচ্ছাস ফুটে।এটাই আমার জীবনের ফসল,তাতেই আমি আনন্দ পাই।তোমাকে আমার প্রয়োজন এই জন্যই।যে সব কথা আমার মনে বরফ হয়ে জমে আছে,আমি নিজে যার ভার বোধ করি কিন্তু আওয়াজ পাওয়া যায় না,তোমার উওাপ লাগিয়ে আমাকে গলিয়ে ঝরিয়ে দিতে হবে। তুমি আমার কথা কে অবিশ্বাস করছ!তুমি জানো না তোমার কথা আমাকে কেমন করে জাগিয়ে দেয়।তুমি কি করে জানবে তুমি কী বলো,আর সে বলার অর্থ কী।আবার দেখছি রবীন্দ্রনাথকে ডাকতে হবে,ওর নাম এবং কবিতা শুনে শুনে তুমি কি বিরক্ত হয়ে গেছো?কিন্তু কি করব বলো,ঐ লোকটা আমার প্রানের কথার ভান্ডারী।রবীন্দ্রনাথ নিজের কাছে নিজে এখনো পুরনো হয়ে যায়নি।আমি ও। তোমার মনের মধ্যে এমন একটি স্বচ্ছতা আছে যে আকাশের সমস্ত আলো সহজেই প্রতিবিম্বিত হয়।তোমার সব কিছুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সেই আলো আমি দেখতে পাই- তোমার মুখে,তোমার হাসিতে,তোমার কথায়,তোমাত স্থির হয়ে বসে থাকায়,তোমার রাস্তা দিয়ে চলায়......" হঠাৎ 'হিমি'র দিকে তাকিয়ে দেখি আমার 'হিমি'র চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে।'হিমি' কাঁদলে তো অনেক সুন্দর দেখায়!আমি কাছে গিয়ে 'হিমি'র চোখ মুছে দেই না।আমি জানি খুব সুন্দরের কাছে যেতে হয় না। তিন মাস পরে এক গভীর রাতে 'হিমি' আমাকে ফোন করে বলে-তার মন ভালো নেই।তার খুব একা লাগছে।খুব কষ্ট হচ্ছে।ভয় পাচ্ছে।তার জন্য আমি কিছু করতে পারি কিনা।আমার মনে আছে সেই গভীর রাতে অনেকক্ষন ধরে ঝুম বৃষ্টি পড়ছিল।'হিমি' একটা বাড়িতে একা থাকে।তার ঘরের খাটটা অনেক বড়।ঘরে সিলিং ফ্যান নেই।সিলিং ফ্যান 'হিমি'র ভালো লাগে না।মাথার কাছে খুব সুন্দর একটা টেবিল ফ্যান। 'হিমি'র সাথে কথা বলতে বলতে ভোর হয়ে যায়।এক সময় আমার কি একটা কথায় যেন 'হিমি'র চোখে জল এসে যায়।'হিমি' বাচ্চা মেয়ের মতো কাঁদতে থাকে।মেয়েরা যার সামনে একবার বুক ভাসিয়ে কাঁদে,তাকে আর সহযে ছাড়তে চায় না।কান্নায় সব দূরত্ব মুছে যায়। গতকাল রাতে স্বপ্নে দেখি- বিশাল এক সবুজ মাঠে সবুজ শাড়ি পড়ে 'হিমি' শুয়ে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে নক্ষএ দেখছে।'হিমি'র মাথার পিছনে বটগাছ।বট গাছের মাথার অনেক উপরে একটি তারা জ্বল জ্বল করছে।জ্বল জ্বল করা তারাটির নাম 'হিমি'। আমি ঠিক করেছি,'হিমি'কে নিয়ে নীলগিরি পাহাড়ে বৃষ্টিতে ভিজব।কোনো এক বিশেষ দিনে।বৃষ্টির দিনে।'হিমি' নীল শাড়ি পড়ে থাকবে।দুই হাত ভরতি থাকবে কাঁচের নীল চুড়ি।মাথার চুল থাকবে খোলা।'হিমি' আমার কাছে এসে বলবে- 'এই চলো না বৃষ্টিতে ভিজি,চলো না যাই পাহাড়ে,আজ আমরা বৃষ্টিবন্দি,ভালোবাসা'র অপরাধে।' সেই বিকেলে অনেকক্ষন বৃষ্টি হবে।'হিমি'র হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজব। আনন্দের কথা ভাবতেও যে কেন এত কষ্ট হয় কে জানে! বৃষ্টির জল হয়ে ছুঁয়ে দিয়েছে হায়,সে আমায়। হলাম আমি কত যে খুশি দেখে মুখ আকাশের আয়নায়। বৃষ্টির জল যেন মুক্ত হয়ে ঝরে ঝরে পড়ে বাতাসে যেন দুলে দুলে ভিজে শরমের আঁচল ভিজে যাবে চোখের কাজল, ভাসি আমি এ যেন কোন অজানায় সে আমায়। সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১৬
false
rn
আমার একটি পাপের কাহিনী- ৩ আমি যখন পাপ করি, তখন আমার খুব অপরাধবোধ হয় । রাতে ঘুমাতে পারি না । তবুও পাপ করি, হা হা হা । সবচেয়ে মজার ম্যাপার হলো- একটা পাপ করার পর- সেটা যখন লিখে ফেলি দারুন একটা আত্মতৃপ্তি হয় । আজ একটা অন্যরকম পাপের কথা বলব। যদিও প্রতিদিন এই রকম অসংখ্য পাপের ঘটনা ঘটছে- গোপনে গোপনে । গোপন পাপটা আমিও করে ফেললাম- হায় আল্লাহ ! আজ সকালে ঘুম থেকে উঠার পরই একটা পুরোনো দিনের গান খুব মনে পড়ছে- "পথ ছাড়ো ওগো শ্যাম, কথা রাখো মোর/ এমন করে তুমি আঁচল ধোরো না/এখনি যে শেষ রাত হয়ে যাবে ভোর!" নেটে সার্চ দিয়ে গানটা কোথাও খুঁজে পেলাম না । তবে অন্য একটা গান খুঁজে পেলাম- "অভিমানী ভালবাসা চায় যে হারাতে ঐ দূর অজানাতে/ তুমি আমি ভেসে যাব মেঘলা বাতাসে এই হাত রেখে হাতে"। মেয়েটার নাম লাবনী ( অবশ্যই সদ্যনাম ) । আসল নাম দিয়ে কি ঝামেলায় পড়বো নাকি? আমার বন্ধুর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে তার সাথে প্রথম দেখা এবং পরিচয় । পরের দিন বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা এবং তার দুইদিন পর বউ-ভাত অনুষ্ঠানে আবার দেখা । মজার ব্যাপার হলো পর-পর সাত দিন মেয়েটার সাথে আমার দেখা হয় । একদিন সন্ধ্যায় দেখা হয় কেএফসি'তে । পরের দিন তখন বইমে্লা চলছিল- বই মেলাতেও দেখা হয়। শ্রাবনী প্রকাশনীতে ।তার হাতে হুমায়ূন আহমেদের "তিথির নীল তোয়ালে বইটা ছিল।একটা কথা বলে রাখি- আমার সৃত্মি শক্তি অনেক ভালো । অনেক তুচ্ছ ঘটনাও আমি ভুলি না । সব মনে থাকে আমার । সপ্তম বার তার সাথে আমার দেখা হয় নিউ মার্কেটে ।সেদিন রাত ৮ পর্যন্ত লাবনী আমার সাথে ছিল । ইচ্ছা করলে চুমু দিতে পারতাম কিন্তু দেইনি । শুধু হাতে হাত রেখেছিলাম । এরপর লাবনী'র সাথে আমার নিয়মিত দেখা হয় । মেয়েটা আমার সাথে দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে থাকত । দেখা হলে সারাক্ষণ আমার হাত ধরে থাকত । আর রিকশায় বসলে কঠিন ভাবে হাত ধরে থাকত । যেন কেউ আমাকে কেড়ে নিয়ে যেতে না পারে । মেয়েটা আমার জন্য নানান খাবার রান্না করে নিয়ে আসত । খাইয়ে দিত । মিথ্যা বলব না- হাতের রান্না দারুন । মেয়েটা ইডেন কলেজ থেকে রাষ্টবিজ্ঞানে অনার্স শেষ করেছে ।চাকরী করতে চেয়েছিল- আমি কঠিন গলায় মানা করে দিয়েছি । আমার নিষেধ সে অগ্রাহ্য করতে পারেনি। দেখতে দেখতে দুই বছর পার হয়ে গেল । এই দুই বছরে আমরা সারা ঢাকা শহর চষে বেড়ালাম । বেশ কয়েকবার ঢাকার বাইরেও বেড়াতে গেলাম । হাত ধরাধরা ছাড়া মাদের মধ্যে আর কিছুই হয়নি । তা-ও হাত ধরেছি বাধ্য হয়ে, লাবনী রাস্তা পার হতে পারে না । তখন আমি হাত ধরে পার করে দিলাম, নিশ্চয়ই এটা কোনো দোষের মধ্যে পরে না । তাছাড়া নোংরামী ব্যাপার টা আমার কখনই ভালো লাগে না । ইচ্ছা করলে, লাবনী'র সাথে আমি যা খুশি তাই-ই করতে পারতাম । এইবার আমি আমার পাপের কাহিনীটা বলব- হটাৎ একদিন আমি লাবনী'র খুব কাছাকাছি চলে আসি । সেদিন সারা বাড়িতে আমি আর লাবনী ছাড়া অন্য কেউ নেই । লাবনী আমাকে অনেক কিছু রান্না করে খাওয়ালো । আমিও খেলুম খুব মজা করে । বেশ কয়েকবার চা করে খাওয়ালো । তখন বিকেল আমার একট ঘুম ঘুম পেয়েছিল, আমি বিছানায় বসলাম । আমার পাশে লাবনী । লাবনী বলল- তুমি আরাম করে একটু ঘুমাও, আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই । আমি বললাম আচ্ছা । হঠাৎ লাবনী আমার ঠোঁটে একটা চুমু দিল । কি অদ্ভুত লাগল আমার ! জীবনে প্রথম কোনো নারী আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখল ! আমি গভীর এক আকাশ আনন্দে অভিভুত হলাম । তারপর আমি পাগলের মতন লাবনী কে অনেক আদর করলাম, অনেকক্ষন আদর করলাম । এক আকাশ ভালো লাগায় মন এবং শরীর ভরে রইলো। লাবনী'র চোখে মুখে দেখতে পেলাম এক আকাশ আনন্দ । সেদিন আদরের পর আমরা অনেকক্ষন রিকশায় করে ঘুরে বেড়ালাম ।রাতে দুইজন বাইরে খেলাম। তারপর আমি বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসি । আমি জানতাম না এটাই আমাদের শেষ দেখা।লাবনীর সাথে আমার বিয়ে হয়নি । আজ লাবনী কোথায় আছে আমি জানি না । মেয়েটাকে আমার অনেক মনে পড়ে । অফিসের কাজে পনের দিনের জন্য আমি ঢাকার বাইরে যাই, কিন্তু কাজ শেষ করতে সময় লাগল এক মাস। লাবনী আমাকে ফোন করে জানায়- তার পেটে বাচ্চা । তখন আমার আর্থিক অবস্থা খুব ভালো ছিল না । বাবা- মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে লাবনীকে বিয়ে করাও সম্ভব ছিল না । আমি পড়ে গেলাম মহা সমুদ্রে । একদিকে বাবা মা অন্য দিকে লাবনী । আমি একটুও বুঝতে পারিনি- যে একদিন আদর করলেই বাচ্চা হতে পারে । এসব ব্যাপারে আমার একেবারেই ধারনা কম । লাবনীকে আমি কোনো পজেটিভ উত্তর দিতে পারিনি । বলেছিলাম- ডাক্তার দেখাও, ঝামেলা মিটিয়ে ফেলো। সে অনেক কষ্ট পেয়েছে । আমি আছি অস্থিরতার মধ্যে । ঢাকা ফেরার পর দেখি মা আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখে রেখেছে । এরপর আমি আর লাবনী'র কোনো খোজ পাইনি । তন্ন তন্ন করে সারা ঢাকা শহর খুঁজে বেড়িয়েছি। সম্ভবত লাবনী অস্টেলিয়া চলে যায় । অনেক চেষ্টা করেও কোনো যোগাযো করতে পারিনি । আমার বাচ্চাটিকে সে পৃথিবীতে এনেছিল কিনা তা-ও জানি না । লাবনী বিয়ে করেছে কিনা তা ও জানি না । আমারা বাচ্চাটিকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে । এতদিনে বাচ্চাটির তিন বছর হওয়ার কথা । এই জন্য রাস্তায় ছোট ছোট বাচ্চা দেখলে বুকের মধ্যে যেন কেমন করে উঠে । বোকা মেয়েটা ভেবেছে- আমি মা'র পছন্দের মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেলেছি । না, আমি বিয়ে করিনি । আজও আমি লাবনী'র অপেক্ষায় আছি । আসলে ইচ্ছা করেই লাবনী আমার কাছ থেকে হারিয়ে যায় ।লাবনী'র ধারনা ছিল, যদি আমি মাকে কষ্ট দিয়ে লাবনীকে বিয়ে করতাম তাহলে সংসার জীবনে কখনও সুখী হতাম না । লাবনী আমাকে সব সময় হাসি খুশি দেখতে চাইতো । মধ্যরাত্রে আমি আকাশের দিকে তাকাই- আর আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ে । তখন নিজেকে বলি- না, না তোমার কোনো কষ্ট নেই । চোখে সমস্যা তাই পানিপড়ছে । ভালো ডাক্তার দেখাও ।একদিন হঠাৎ হাওয়া, থামিয়ে আসা-যাওয়া, প্রশ্নের জাল বোনে, শুরু হয় চাওয়া-পাওয়া। আজ শুধু পথ চাওয়া, বিরহের গান গাওয়া, ভাবনার নদী বুকে, উজানেতে তরী বাওয়া। শুধু সেই গান ভোলে অভিমান চোখে অকারণ ঘোর বর্ষা নামে। এমন বিরহ জ্বালায় স্মৃতির মেলায় কাটে না আর দিন।
false
fe
প্রজন্ম যখন শান্তির স্বপক্ষে দাঁড়ায় প্রজন্ম যখন শান্তির স্বপক্ষে দাঁড়ায় ফকির ইলিয়াস =======================================গোটা বিশ্বকে চমক লাগিয়ে দিয়ে ২০০৯ এর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়ে গেলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। নোবেল কমিটি তাদের ঘোষণায় বলেছে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যে উদার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, এটা তারই স্বীকৃতি। বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। মার্টিন লুথার কিং- ‘আই হ্যাভ এ্যা ড্রীম’ বলে বিশ্বের গণমানুষের জন্য যে বার্তা বইয়ে দিতে চেয়েছিলেন, বারাক ওবামা তারই উত্তরসূরী।২০০৮ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার বক্তব্য ছিল ‘ইয়েস উই কেন্‌’। হ্যাঁ পারবো আমরা। প্রজন্ম জেগে উঠেছিল তার ভাষণে। দাঁড়িয়েছিল তার পাশে। দু’হাত তোলে। বলেছিলে পরিবর্তন চাই। বলার অপেক্ষা রাখে না, গোটা বিশ্বই এখন পরিবর্তনমুখী। সবাই একটা পরিবর্তন প্রত্যাশা করছে। সবাই চাইছে সূচি হোক ধরা। এই যে পরিবর্তনের শ্লোগান- তারও একটা প্রক্রিয়া আছে। আছে সৃজনশীল মননের বহিঃপ্রকাশ। মানুষ তো বদলাচ্ছে, আদিলগ্ন থেকেই। বদলায়ে বদলায়ে। এ পর্যন্ত এসেছে। আরো বদলাবে, আরো অগ্রসর হবে।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একটা প্রত্যয় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। তার সে প্রত্যয়টি হচ্ছে- আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করতে চাই। সমাধান করবো। আমরা জানি, ওবামার প্রশাসনে পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী যিনি আছেন, হিলারি ক্লিনটন, তিনি বারাক ওবামার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রাইমারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। প্রাইমারীতে বারাক ওবামা জয়ী হবার পর, হিলারী ওবামাকেই পূর্ণ সমর্থন করেন। এবং তার পাশে দাঁড়ান। গণতন্ত্রে এই যে পারস্পরিক সম্মানবোধ, সেটাই প্রজন্মকে আলোকিত করে। খুলে দেয় নতুন দরোজা।ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর, হিলারী ক্লিনটনকেই ‘সেক্রেটারী অব স্টেটস’ অর্থাৎ পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিয়োগ দেন। হিলারী তার গুর" দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করে যাচ্ছেন।বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যপ্রাচ্য একটা প্রধান বিষয় তা বিশ্বের সকল রাজনীতিকই জানেন এবং বুঝেন। ইহুদীদের রাষ্ট্র ইসরাইল এবং মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের মধ্যে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে, তা শান্তির প্রশ্নে একটি মুখ্য বিষয় সে কথাও স্বীকার করবেন এক বাক্যে সকল রাজনীতিবিদগণ। এর পরও এই সমস্যাটির সমাধানে আন্তরিকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না শুরু থেকেই। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বিল ক্লিনটন একটি উদ্যোগ নিলেও তা খুব একটি ফলপ্রসূ হয়নি।এর মধ্যে বিশ্বে ঘটে গেছে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা। নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। এর জের ধরে আফগানিস্তান আক্রমণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্র দেশসমূহ। এরপর অভিযান চালানো হয়েছে ইরাকে। একটি চরম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ধাওয়া করেছে বিশ্বের শান্তিগ্রহকে।যে যুদ্ধ এবং রক্তপাত এ পর্যন্ত সাধিত হয়েছে, তা বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠার কতোটা ভূমিকা রাখতে পেরেছে, সে প্রশ্নটি থেকেই যাচ্ছে। কারণ মৌলবাদী সন্ত্রাসী হঠাবার নামে, জঙ্গি দমনের নামে যুক্তরাষ্ট্র যে অভিযান চালাচ্ছে তা সঠিক কিনা সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ থাকছে।এটা অস্বীকার করার উপায় নেই বিশ্ব এখন দুটি প্রতাপে বিভক্ত। একটি অস্ত্রের দাপট আর অন্যটি বাণিজ্যের দাপট। যারা শুধুমাত্র বাণিজ্য দিয়ে বিশ্বে আধিপত্য গড়ে তুলতে চাইছে তাদের চক্ষু যুদ্ধের দিকে ধাবমান নয়। কিন্তু যারা অস্ত্র বিক্রি করে মুনাফার নামে কিংবা পেট্রোলিয়াম সাম্রাজ্যের নেপথ্য দখলের নামে বিশ্বে মহড়া দেখাচ্ছে, তাদের কর্মযজ্ঞ বেশী অমানবিক।সেই অমানবিকতাকে বন্ধ করতে, সেই দূরাচারী মানসিকতা বদলাতেই বারাক ওবামাকে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। ওবামা প্রশাসনের বয়স মাত্র দশ মাস। এই দশ মাসে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বারাক ওবামা কি যথেষ্ট করতে পেরেছেন ? তার সেই ‘যথেষ্ট করা’ কি নোবেল বিজয়ের মতো ঘটনার সহায়ক ?এ বিষয়ে আমার কথা হচ্ছিল নিউইয়র্ক সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সমাজ বিশ্লেষণ বিভাগের অধ্যাপক নরেল লীন্ডার্স এর সাথে। নরেল বলেন, নোবেলের জন্য ওবামা কোন মতেই উপযুক্ত ছিলেন না। তিনি বিশ্বে এমন কিছুই এ পর্যন্ত করতে পারেননি, যা তাকে নোবেল পাবার যোগ্যতা দিয়েছে। প্রায় একই মত জানালেন, ইলনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর লুসিয়ানা জোহান্স। লুসিয়ানা বলেন, ‘ইট ওয়াজ টু আর্লি ফর হিম’।তবুও বারাক ওবামা নোবেল কিভাবে পেলেন ? তাহলে কি নোবেল কমিটির উপরও আছর করেছে মার্কিনী ভূত ? এমন অনেক প্রশ্ন জনমনে আসতেই পারে। মার্কিনী দাপটের প্রশ্ন যখন আসে, তখনই আসে সুপার পাওয়ারের কথা। জাতিসংঘে সুপার পাওয়ারের ‘ভেটো প্রথা’ বাতিল করা হোক এমন দাবী অনেক রাষ্ট্রই জাতিপুঞ্জের কাছে করে আসছে। কিন্তু তাতে কি কোন কাজ হয়েছে ? নাকি হবে ? না- হবার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ বিশ্বের শ্রেণী বৈষম্য বিলুপ্ত হলে অনেক সংঘাতই কমে যাবে। কে চায়- শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে ?আজ বিশ্বে দুটি দেশ নিয়ে পশ্চিমা পরাশক্তির মাতামাতির সুর বেশি। একটি উত্তর আমেরিকা অন্যটি ইরান। এই দুই দেশ আনবিক শক্তি সম্পন্ন হোক তা কোন মতেই মেনে নিতে পারছে না সেই সুপার পাওয়ারগুলো। অথচ পরমাণু অস্ত্র এখন পাকিস্তান, ভারত, ইসরাইলের হাতে আছে। কারণ হলো দেশ তিনটি সুপার পাওয়াদের বৈশ্য। এই বৈশ্যতার পোষ মানিয়ে রাখার মানসিকতাই বিশ্ব শান্তির অন্তরায় হচ্ছে বার বার, নানাভাবে।বারাক ওবামা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। এর ক’দিন আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন আফগানিস্তানে আরো সৈন্য পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। সুতরাং এই যুদ্ধ যে আরো দীর্ঘায়িত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ওবামা বলেছেন, আল কায়েদা শক্তি নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত আফগানিস্তানে অপারেশন চালাবে মার্কিন বাহিনী। আফগানিস্তানে যুদ্ধ বাহিনীর মার্কিনী কমান্ডার জেনারেল স্টেনলি ম্যাকশিষ্টালকে ওবামা সে কথা জানিয়েছেন ইতোমধ্যে। এসোসিয়েটেড প্রেসকে দেয়া সাক্ষাতকারেও তা স্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা।না, ইরাক থেকেও সৈন্য সরিয়ে আনার সুস্পষ্ট বাস্তবায়ন এখনও দেখা যাচ্ছে না। এদিকে তালেবান, আল কায়েদারা নানা ধরণের হুমকি দিয়েই যাচ্ছে। যা গোটা বিশ্বের শান্তির বিপক্ষেই দাঁড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। লন্ডন, প্যারিস, নিউইয়র্ক, শিকাগোর মতো জনবহুল শহরে হলুদ এলার্ট, রেড এলার্ট আজকাল নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার।এই যে চর্তুমুখী সংকট তা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে। এই প্রজন্ম বার বার সেই শান্তির স্বপক্ষেই দাঁড়াচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিশোর কিশোরীদের সিংহ ভাগই সমস্বরে বলছে, যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই। শান্তি চাইছে বাংলাদেশের প্রজন্মও। এই যে, যোগসূত্র আজকের বিশ্বে সেটাই প্রধান শক্তি। সেই শক্তিকে এগিয়ে নিতে আজ প্রয়োজন নিঃস্বার্থ ঐক্য। আর তা হলেই সকল শান্তি পুরস্কারের মর্ম সার্থক হবে গণমানুষের কল্যাণে।নিউইয়র্ক, ১০অক্টোবর ২০০৯---------------------------------------------------------------------দৈনিক উত্তরপূর্ব । সিলেট। ১৩ অক্টোবর ২০০৯ মংগলবার প্রকাশিত ছবি- জো রশেল
false
hm
শব্দগল্পদ্রুম ০১ উপনিবেশের মানুষ হিসেবে আমরা জগদ্দর্শনের জন্যে প্রকাণ্ড কিছু চশমা না চাইতেই পেয়েছি, স্বশাসনের ঝাপটা চশমাগুলো আমাদের চোখ থেকে সরাতে পারে নি। সব ক্ষেত্রে সে চশমা খোলার প্রয়োজনও হয়তো পড়ে নি। মোগলাই-বৃটিশ-পাকি চশমার ভেতর দিয়ে পৃথিবীটা দেখতে গিয়ে আমাদের দেখার চোখও এখন এমন যে খালি চোখে দেখতে গেলে হোঁচট খেতে হয়। ভাষাও এমনই একটা চশমা। বাংলা ভাষার যে রূপটাকে আমরা প্রমিত মেনে নিয়ে ব্যবহার করছি, তা যাঁদের হাতে গড়ে উঠেছে, তাঁরা ইংরেজদের ভিক্টোরিয়ান আমলের চশমা অনেকদিন চোখে রেখেছিলেন। প্রমিত বাংলা ভাষায় সে সময় রক্তমাংস যোগ করেছেন সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিকেরা, আদালত ও দাপ্তরিক কাজ তখন ইংরেজিতে চলতো (যেমন এখনও অনেকাংশে চলে) বলে এখনও আইন-প্রশাসনের ক্ষেত্রে পরিভাষা খুঁজতে গিয়ে আমাদের হাতড়াতে হয়। আমরা ২০১৬ সালে এসেও বহুলাংশে সে আমলের গোলা ভেঙেই ফসল খাচ্ছি। যাঁদের হাতে আমাদের প্রমিত বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হলো, তাঁরা ইংরেজি চশমার বাইরে হাতড়ে হাতড়ে যে যাঁর শাস্ত্রে খানিকটা আশ্রয় খুঁজেছেন, কিন্তু তাঁদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ আর উপলব্ধিগুলো ইংরেজের উপনিবেশকাণ্ডের প্রত্যক্ষ ফল। আমরা সুযোগ পাওয়ার পরও তাঁদের চেয়ে বেশি কিছু করতে পারি নি, এমনকি সমকক্ষও হতে পারি নি, ইংরেজের ধরিয়ে দেওয়া টিনের চশমা চোখে দিয়ে প্রথমে আমরা নিজেকে দেখেছি, তারপর দেখেছি ভারতবর্ষকে, তারপর দেখেছি বিশ্ব। তাই আমাদের দেখা পৃথিবীর আলো মূলত কয়েক দফা ইংরেজের পরিত্যক্ত নানা চশমা পেরিয়ে চোখে ঢোকে। হয়তো এ কারণেই হীনমন্যতা আমাদের শিক্ষিত সমাজের মাঝে প্রবল। উদয়াস্ত খেটে ইংরেজি শেখার পর আমরা টের পাই, আমরা বাংলায় নিজেকে ভালোমতো প্রকাশ করতে পারি না। পৃথিবীর খাড়া পাহাড়ে চড়তে গেলে ইংরেজি একাধারে আমাদের লাঠি, মশাল, গাঁইতি, তাঁবু আর মশক। বিদ্যাশিক্ষার মাঝারি স্তর এই ভাষাটি ছাড়া আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এখনও দুর্লঙ্ঘ্য। পৃথিবীকে নিজের মতো করে জানতে গেলে আমাদের ভরসা আগে ছিলো বই, এখন গুগল, সেখানেও ইংরেজি ছাড়া গণ্ডি ছেড়ে খুব বেশিদূর এগোনো যায় না। প্রতিদিন নতুন সব প্রপঞ্চ এসে গ্রাস করে নিচ্ছে আমাদের জীবনকে, সেগুলোও ইংরেজিবাহিত (যেমন সেলফি)। জীবিত কবিনামযশোপ্রার্থী যুবক মৃত কবির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিশেষণ খুঁজে না পেয়ে বলেন, "তাঁর ভাষা ছিলো টোটালিটিময়"। পাঁজরে প্রথমে ইংরেজ, পরে জাটকা-ইংরেজ পাকিস্তানীদের হাঁটুর চাপ সহ্য করে মাতৃভাষা নিয়ে কাজ করে গেছেন কীর্তিমান কবি-সাহিত্যিকেরা, পরিভাষা নির্মাণের মূল ঝাপটাটা তাঁদের ওপর দিয়েই গেছে। তাঁদের তুলনায় আমরা অনেক, অনেক ফুরফুরে। আমাদের চাপ যেমন নেই, তেমনই দায়টুকুও আমরা কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলেছি (কারণ আমরা টোটালিটিময়)। কিন্তু আমার ভাষায় রক্তমাংস যোগ করে চলার কাজটা তো মঙ্গলগ্রহ থেকে কেউ এসে করে দেবেন না। আমাদের প্রতি জনের নিষ্ক্রিয়তার ফল বা কুফল, সেটা কি কোনো একসময় সবাইকে বহন করতে হবে না? উদাহরণে আসি। ধরা যাক, আপনি গল্প লিখতে বসেছেন। যাপিত জীবনের গল্প নয়, কোনো জমজমাট রূপকথা। সেখানে সমুদ্রযাত্রার প্রসঙ্গ আছে। জাহাজের বর্ণনা শুরু করতে গেলেই আপনাকে থমকে যেতে হবে। কারণ বাঙালির সমুদ্রযাত্রার সাথে তার ভাষায় সাহিত্য-কাব্য-সাংবাদিকতার যোগসূত্র ক্ষীণ। জাহাজের মাস্তুল পর্যন্ত আপনি লিখতে পারবেন, কিন্তু মাস্তুলের সাথে বাঁধা যে কাঠ থেকে পাল ঝুলে থাকে, তার বাংলা প্রতিশব্দ আপনি জানেন না। ইংরেজিতে একে বলে Yard, কিন্তু বাংলায়? ‌ইংরেজের জীবনে জাহাজের গুরুত্ব এতো প্রবল-প্রকাণ্ড-প্রচণ্ড, যে জাহাজের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্রতিটি অংশ, প্রতিটি কর্মী, প্রতিটি কাজের বর্ণনা তার দলিল, সংবাদ ও সাহিত্যে সুলভ। বাংলায় তেমনটা ঘটে নি। বাঙালি নাবিকের জীবন ও কাজ বাংলা ভাষার নির্মাণকর্তাদের বৈঠকখানা পর্যন্ত পৌঁছায় নি, তাই আঞ্চলিক শব্দগুলোও প্রমিত হয়ে ওঠার সুযোগ পায় নি। ইয়ার্ডকে বরিশালের জাহাজি যা বলে (যদি আদৌ কিছু বলে থাকে), চট্টগ্রামের জাহাজি হয়তো তা বলে না (যদি আদৌ কিছু বলে থাকে)। তাহলে আমাদের রূপকথার চাঁদ সওদাগর পাল ঝোলাবে কী থেকে? ইয়ার্ডের বাংলা প্রতিশব্দের অভাবে কি আমরা সমুদ্রযাত্রা নিয়ে বাংলায় একটা রূপকথা লিখতে পারবো না? জাহাজের অঙ্গে অঙ্গে, প্রত্যঙ্গে প্রত্যঙ্গে আমাকে ইংরেজের ফেলে যাওয়া টিনের চশমা পরে হাতড়ে বেড়াতে হবে? ইংরেজি ভাষার প্রতি আমার কোনো বিরাগ নেই। আমি এর রূপে ও গুণে মুগ্ধ। যাঁরা ল্যাটিন আর গ্রিক থেকে মূল ধার করে এ ভাষায় নতুন সব শব্দ যোগ করে গেছেন শত শত বছর ধরে, তাঁদের প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। কিন্তু আমি আগাগোড়া মসৃণ বাংলায় সমুদ্রযাত্রা নিয়ে রূপকথা লিখতে চাই, একটিবারও ইংরেজির কাছে আত্মসমর্পণ না করে। প্রয়োজনে আমি ইংরেজিসহ আরো অনেক ভাষার আঁটি ভেঙে শাঁস খাবো, কিন্তু আস্ত ছেড়ে দেবো না। পথ না থাকলে আমি একটি একটি করে ইঁট ফেলে পথ গড়ে তারপর চলবো। কারণ আমি বাংলায় সমুদ্রযাত্রা নিয়ে একটি রূপকথা লিখেই থামতে চাই না। আমি দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ লেখাটি যেমন লিখতে চাই, তেমনি দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ লেখকের কলমে ঝরঝরে বাংলায় সমুদ্রযাত্রা নিয়ে আরো রূপকথা পড়তে চাই, যেখানে পূর্বসূরীর অবহেলার হাওয়ার তোড়ে ইংরেজি ডুবোশব্দে গুঁতো খেয়ে গল্পডুবি হয় না। সৈনিকের প্রশিক্ষণের সময় বলা হয়, "ঘাম রক্ত বাঁচায়"। লেখকের প্রশিক্ষণের সময় কি আমরা বলতে পারি না, "লেখকের ঘাম ভাষার রক্তশূন্যতা দূর করে"? গল্প লিখতে বসে মাতৃভাষায় শব্দের অভাবে থেমে যাকে অন্যের ভাষা হাতড়াতে হয়, পৃথিবীতে সে-ই সবচেয়ে বড় অভাগা। শব্দগল্পদ্রুমের পরবর্তী পর্বগুলো পদে পদে এমন অভাগা হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখবো।
false
rg
নেপালে ভুমিকম্পে নিহতের সংখ্যা সহস্রাধিক! অসংখ্য মানুষ এখন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা !!! আজ ২৫ এপ্রিল ২০১৫, নেপালে এক শক্তিশালী ভুমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়েছে। সবশেষ বিবিসি'র খবরে বলা হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা ৮৭০ ছাড়িয়ে গেছে, আহত এবং নিখোঁজ হয়েছেন বহু লোক। আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ১১ মিনিট ২৭ সেকেন্ডে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দূরে, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু ও পোখারার মাঝখানে লামজুং এলাকায় ছিল ভুমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল, এবং রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৯। নেপাল ছাড়াও সমগ্র উত্তর ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ জুড়ে এই ভূকম্পন অনুভুত হয়। রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৫। প্রথম কম্পনটির পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আরেকটি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, রিখটার স্কেল অনুযায়ী ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলে এর তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৯। তীব্রতা অনুযায়ী এটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। এটির গভীরতা ছিল ১৫ কিলোমিটার। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ৮১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। ভেঙে পড়া অসংখ্য ভবনের নিচে এখনো অনেকে চাপা পড়ে আছেন। নেপালের পুলিশ বলছে, নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। নেপালের তথ্যমন্ত্রী মীনেন্দ্র রিজ্জাল বলেছেন, এই বিপর্যয়ের মোকাবিলায় তার দেশের আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন। রাজধানী কাঠমান্ডুর বিখ্যাত ধারাহারা টাওয়ার সহ বহু ভবন ধ্বংস হয়েছে। রাজধানীর ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গে অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। হিমালয় অভিযানে যাওয়া পর্বতারোহীদের একটি 'বেস ক্যাম্পের একাংশ বরফের ধসে চাপা পড়েছে। ভূমিকম্পের কারণেই জমাট বাঁধা এই বরফে ধস শুরু হয়। নেপালের একজন পর্যটন কর্মকর্তা বলেন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ এই পর্বতটিতে তুষার ধসে অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। “নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে। নিহতদের মধ্যে বিদেশি নাগরিক এবং শেরপারা রয়েছে।” ভূমিকম্পে কাঠমান্ডুর অনেক ভবন ধসে পড়েছে, এর মধ্যে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্য ধারারা টাওয়ারও রয়েছে। ১৮৩২ সালে নির্মিত এই স্থাপনাটি কাঠমান্ডুর অন্যতম প্রধান পর্যটন স্থান। কাঠমান্ডুর একটি পার্কে ভাস্কর্য ভেঙে পড়লে তার নিচে চাপা পড়ে এক নারী শিশু নিহত হয়। বিধ্বস্ত ভবন থেকে উদ্ধার করে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে, এদের মধ্যে অনেকেই হাত-পাসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গ হারিয়েছেন। কাঠমান্ডুতে অনেকেই ধসে পড়া ঘর-বাড়ির ছবি ইন্টারনেটে তুলেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিধ্বস্ত ভবনগুলোর আশেপাশে পাথরকুচি ছড়িয়ে আছে। রাস্তায় বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে এবং আতঙ্কিত মানুষজন বাচ্চাদের নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করছে। রয়টার্সের এক সাংবাদিক বলেছেন, অনেক ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সবাই নেমে এসেছে রাস্তায়। অনেকে ছুটছে হাসপাতালের দিকে। নেপালের তথ্যমন্ত্রী মিনেন্দ্র রিজাল উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন। “আমাদের এখন আন্তর্জাতিক সব সম্প্রদায় থেকে সাহায্য প্রয়োজন। আমরা এখন যে দুর্যোগের মুখে পড়েছি, তা মোকাবেলায় যাদের বেশি জ্ঞান ও সরঞ্জাম রয়েছে, তাদের সাহায্য এখন আমাদের জন্য জরুরি।” এ ভুমিকম্পে ভারতের নানা স্থানে অন্তত ৩০ জন এবং বাংলাদেশে অন্তত ২ জন নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকায় প্রথম দফায় ভূমিকম্পটি প্রায় দুই মিনিট স্থায়ী ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছে। শহরের বহুতল ভবনগুলো কয়েক মিনিট ধরে দুলতে থাকায় আতংক তৈরি হয়। এসময় ভবনগুলো থেকে মানুষজন ছুটোছুটি করে নেমে রাস্তায় এসে অবস্থান নেয়। এর চল্লিশ মিনিট পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা ভূমিকম্প আঘাত হানে। বাংলাদেশে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিলো ৫ বা তার কিছু বেশী', বলছিলেন মি. আলম। মিরপুর এলাকার কয়েকজন গার্মেন্টস উদ্যোক্তা জানাচ্ছেন, ভূমিকম্প আঘাত হানার সাথে সাথে ওই এলাকার সব গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা বাগেরহাট থেকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তিনি পুকুরের পানিতে ঢেউ সৃষ্টি হতে দেখেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ায় যে ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন পুকুরে এমন ঢেউ উঠতে দেখেছিলেন। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ৮১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এর গভীরতা ছিল ১৫ কিলোমিটার। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৯। ভারতে নিহত ২০: টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতে ভূমিকম্পে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন নিহত হয়েছে বিহারে। নয়াদিল্লিসহ ভারতের পুরো সীমান্ত এলাকাজুড়ে ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও সিকিমেও এ কম্পন অনুভূত হয়। দেশটির বিভিন্ন স্থান থেকে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি জানান, ভারতের দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড, হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, আসাম ও রাজস্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। পশ্চিমবঙ্গেও তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কারণে কলকাতার পাতাল রেল চলাচল ১৫ মিনিট বন্ধ ছিল। ভারতে ভবন ধসে অন্তত ১২জন এবং বাংলাদেশে আতঙ্কের হুড়োহুড়িতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। নেপালে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ১৯৩৪ সালের ভূমিকম্পে, ওই দুর্যোগে সাড়ে ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ভূমিকম্পে কাঠমান্ডুতে ত্রিভূবন বিমানবন্দরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন। এনডিটিভি বলছে, রাজধানী দিল্লিতে ভূমিকম্পের কারণে আতঙ্কিত মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল। ভূমিকম্পটি প্রায় মিনিটখানেক সময় অনুভূত হয়। এছাড়াও ভারতের পাটনা, লক্ষ্ণৌ, কলকাতা, জয়পুর, চন্ডিগড় এবং অন্যান্য বেশকিছু শহরে কম্পন অনুভূত হয়। [সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা, রয়টার্স, এপি, এনডিটিভি, প্রথম আলো, বিডিনিউজ২৪, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এএফপি ও কিছু অনলাইন নিউজপেপার] সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৩৫
false
hm
পিএসসি আর জেএসসি পরীক্ষার কি আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে? বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রের সাম্প্রতিক সংযোজন পিএসসি আর জেএসসি পরীক্ষা শিক্ষার মানোন্নয়নে কী ভূমিকা রাখছে, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত ছাত্র-অভিভাবকদের সামনে হাজির করেছেন কি না, আমার জানা নেই। কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে একটু চিন্তা করলে মনে হয়, গুটিকয় বাটপার ছাড়া এই দুই পাবলিক পরীক্ষা বৃহত্তর জনসমাজের আর কোনো কাজে আসবে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিকের জন্যে ৫ বছর, মাধ্যমিকের জন্যে ৫ বছর আর উচ্চ মাধ্যমিকের জন্যে ২ বছর সময় বরাদ্দ করা আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও কম বেশি একই স্তরে বিভক্ত। প্রাথমিক স্তরের একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্তরের আরেকটি স্কুলে যাওয়ার জন্যে ভর্তি পরীক্ষায় বসতেই হয়, প্রাথমিক স্তরের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার ফল তাতে খুব একটা কাজে আসে না। একইভাবে মাধ্যমিক স্তরের স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কলেজে ভর্তি হতে গেলেও ভর্তি পরীক্ষায় বসতে হয়, উচ্চ মাধ্যমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে গেলেও ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে এসএসসির ফল একটি মোটাদাগের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে এসএসসি আর এইচএসসি পরীক্ষার ফল সম্মিলিতভাবে মোটাদাগের নিয়ামকের কাজ করে। এই নিয়ামক দিয়ে কারা ভর্তি পরীক্ষায় বসার যোগ্য হবে, সেটি ঠিক করা হয় কেবল। বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে ভর্তি পরীক্ষার ফলের। যদি নামী স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য পিএসসির ফলকে নিয়ামক হিসেবে গ্রহণ করার রেওয়াজ শুরু হয়, সেক্ষেত্রে এই পরীক্ষাকে যৌক্তিক বলে মনে করা যেতে পারে। কিন্তু জেএসসি পরীক্ষার যৌক্তিকতা কোথায়? মাধ্যমিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণীর পর একই স্কুলের নবম শ্রেণীতে শিক্ষালাভের সুযোগ থাকে, আরেকটি ভিন্ন শিক্ষায়তনে ভর্তির জন্যে নিয়ামক হিসেবে এই পরীক্ষার ফল ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। এই পরীক্ষাটি তাহলে কেন নেওয়া হচ্ছে? আরেকটু তলিয়ে দেখলে আমরা দেখবো, এক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণী থেকে আরেকটি স্কুলের (অপেক্ষাকৃত "ভালো") ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির জন্যে অভিভাবকদের প্রত্যাশাজতিন যে চাপ থাকে, তার সঙ্গে কোচিং ব্যবসার সরাসরি যোগ আছে। অভিভাবকদের এই আকুতিকে কাজে লাগিয়ে কোচিং সেন্টারগুলো ব্যবসা করে, এবং পঞ্চম শ্রেণী থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তরণের জন্যে ভর্তি প্রক্রিয়াটিকেও বাণিজ্যিকীকরণের সুযোগ এই পিএসসির মাধ্যমে প্রশস্ত হচ্ছে। এখানেই প্রশ্নফাঁসের অর্থনীতি একটু খতিয়ে দেখতে হবে। এককালে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন বিক্রি হতো, সে বাণিজ্যের অর্থনীতি নিষিদ্ধ মাদক বাণিজ্যের অর্থনীতির মতো। কিন্তু এখন প্রশ্ন চলে আসছে ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজে, এবং সরাসরি শিক্ষামন্ত্রক থেকে এই ফাঁসের ব্যাপারটিকে হয় অস্বীকার করা হচ্ছে, নয়তো তাচ্ছিল্যের সাথে দেখা হচ্ছে। মোবাইল-ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়ার মতো নির্বোধ আহাম্মকি কথাবার্তা বলে কর্তাব্যক্তিরা মানুষের মনোযোগকে অন্যদিকেও নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ফেসবুকে ফাঁস করা প্রশ্নের অর্থনীতিটা ভিন্ন, এখানে প্রশ্নটি আর টাকার বিনিময়ে ক্রয়যোগ্য পণ্য নেই, বরং আরেকটি ভিন্ন ও বৃহত্তর বাণিজ্যের দিকে এই ফাঁস-হওয়া-প্রশ্নের-ভোক্তাকে (অর্থাৎ অভিভাবক) ঠেলে দেওয়ার একটি মাধ্যমমাত্র। সে আলোচনার আগে একটু চিন্তা করে দেখি, প্রশ্ন ফাঁস হলে কী হয়? একবার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেলে এবং নাগালের ভেতরে থাকা উন্মুক্ত মাধ্যমে (যেমন ফেসবুকে) চলে এলে পরীক্ষার্থীর সামনে দুটি পথ থাকে, হয় প্রশ্নটি যোগাড় করে কাজে লাগানো (অসৎ পদ্ধতি), নয়তো প্রশ্নটি উপেক্ষা করে নিজের প্রস্তুতির ওপর ভরসা রাখা (সৎ পদ্ধতি)। এখন যদি দবীর আর কবীর নামের দু'জন "লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো" পরীক্ষার্থীর মধ্যে যদি তুলনা করে দেখি, তাদের গেম মেইট্রিক্স হবে এমন: এখানে মনে রাখা ভালো, দবীর বা কবীর কেউ উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করিয়ে আনছে না, তারা নিরীহ পরীক্ষার্থী, এবং প্রশ্ন ফাঁস তাদের উদ্যোগ ছাড়াই ঘটে যাচ্ছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কাজে না লাগালে দবীর বা কবীর বড়জোর এ মাইনাস পাবে, কিন্তু কাজে লাগালে তারা এ প্লাস পাবে। এরকম পরিস্থিতিতে দবীর আর কবীর, দু'জনের জন্যেই ডমিন্যান্ট স্ট্র্যাটেজি বা লাভজনক কৌশল হচ্ছে অসৎ হওয়া। এবং শেষ পর্যন্ত তারা দু'জনই অসৎ হবে, এটাই এই গেমের ন্যাশ ভারসাম্য। প্রশ্ন ফাঁসের গেমে যেসব "লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো"রা সৎ থাকবে, তারা পরীক্ষার ফলের বিচারে অন্যদের তুলনায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা পিএসসি পরীক্ষার্থীরা ঠিকমতো না বুঝলেও তাদের অভিভাবকরা বোঝেন, এবং সোৎসাহে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন যোগাড় করে সন্তানকে দেন। কাজেই প্রশ্ন ফাঁস করে উন্মুক্ত ডোমেইনে তুলে দিলে একটা জনগোষ্ঠীর বড় অংশ তাৎক্ষণিক লাভের আশায় অসৎ হয়ে পড়ে। শিক্ষামন্ত্রক এই পরিস্থিতির জন্যে এককভাবে দায়ী। পরীক্ষার্থী বা অভিভাবকদের ঘাড়ে দোষ দেওয়া নিরর্থক, কারণ তারা প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার প্রক্রিয়াটি উদ্যোগ নিয়ে ঘটাচ্ছে না। উন্মুক্ত ডোমেইনে প্রশ্ন ফাঁস করে দিলে প্রশ্নটির আর পণ্যমূল্য থাকে না, কিন্তু সেটি বাজারে ভালো ফলের একটি বাড়তি সরবরাহ তৈরি করে। যেসব পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে, সেসব পরীক্ষায় যারা এ প্লাস পাচ্ছে, তাদের মধ্যে কারা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কাজে লাগিয়েছে, আর কারা লাগায়নি, তা বোঝার উপায় কারোই থাকে না। পরীক্ষা নেওয়ার অনেক উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি হচ্ছে পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার গুরুত্ব অনুধাবনে সমর্থ করে তুলে অনাগত জীবনের নানা পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুত করা, আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি জনগোষ্ঠী থেকে যোগ্যতর একটি অংশকে সে জনগোষ্ঠীর জন্যে বিভিন্ন ভূমিকায় কাজে লাগানোর জন্য কম যোগ্যতরদের থেকে পৃথক করা। প্রশ্ন ফাঁস করলে এ দুটি উদ্দেশ্যই মার খায়। তাহলে কোন উদ্দেশ্য সাধিত হয়? পিএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকে যদি আমরা নমুনা আলোচ্য হিসেবে ধরি, তাহলে আমরা দেখবো, বাংলাদেশে যতো সংখ্যক ভালো মাধ্যমিক স্কুল আছে, ততো সংখ্যক ভালো প্রাথমিক স্কুল নেই। কাজেই প্রাথমিক স্কুলের ভালো ছাত্ররা যদি পিএসসি পরীক্ষায় ভালো করে, এবং প্রাথমিক স্কুলের মাঝারি ও খারাপ ছাত্ররা যদি পিএসসি পরীক্ষায় খারাপ করে, তাহলে মাধ্যমিক স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে কেবল পিএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতেই তাদের ভর্তি করা সম্ভব হতো, কিংবা অন্তত পিএসসি পরীক্ষার ফলকে ষষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষায় একটি জোরালো নিয়ামক হিসেবে ব্যবহার করা যেতো। এটিই স্বাভাবিক এবং আদর্শ পরিস্থিতি। কিন্তু এই পরিস্থিতি ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোচিং বাণিজ্যবান্ধব নয়। কোচিং ব্যবসা তখনই জমবে, যখন ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জোরালো নিয়ামকের ভিত্তিতে আর ফিল্টার করা যাবে না। উন্মুক্ত ডোমেইনে প্রশ্ন ফাঁস করে দিলে এই ব্যাপারটিই ঘটে, মুড়ি-মুড়কি সব সমান দর হয়ে পড়ে। মাঝারি মাপের কবীর ও দবীর তখন ভালো মাপের সগীরের সঙ্গে এ প্লাস পেয়ে এক কাতারে চলে আসে। এবং যেহেতু নিজেদের মধ্যে আর পৃথক করার মাপকাঠি অবশিষ্ট থাকে না, কবীর-দবীর-সগীর তিনজনই তখন কোচিং বাণিজ্যের ভোক্তায় পরিণত হয়। একই প্রক্রিয়া এসএসসি ও এইচএসসির ক্ষেত্রেও খাটে। আমার বিবেচনায় জেএসসি সম্পূর্ণ নিরর্থক একটি পরীক্ষা, যেটি কোনো বাছাইয়ের কাজে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে না। যেহেতু এক ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আরেক ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উত্তরণের প্রশ্নও এক্ষেত্রে নেই (যে স্কুলে অষ্টম শ্রেণী আছে, সেখানে নবম ও দশম শ্রেণীও থাকে), এই পরীক্ষাটি কেন নেওয়া হচ্ছে, সে উদ্দেশ্যও স্পষ্ট নয়। কিন্তু পাবলিক পরীক্ষা মানেই প্রতিযোগিতা, এবং অভিভাবকদের পক্ষ থেকে সে পরীক্ষায় ভালো করার জন্য পরীক্ষার্থীর ওপর চাপ, কাজেই এ পরীক্ষাটিও কোচিং বাণিজ্যের উদরপূর্তির কাজে লাগছে কেবল। পাবলিক পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেবল কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। এই সহযোগিতার পেছনে আর্থিক লেনদেন আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাই। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য আপাতত প্রাথমিক করণীয় একটাই, শিক্ষকের মানোন্নয়ন। শিক্ষায়তনে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা-সুবিধা বাড়ানো হোক, শিক্ষকের পেশায় মেধাবীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হোক। সবার আগে পিএসসি ও জেএসসি নামের এই নিরর্থক কোচিংতোষী দুটি পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করা হোক।
false
rg
রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষ্যে 'মন ভেসে যায় গানে গানে' অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের মুগ্ধ করলেন কলকাতার শিল্পী সুস্মিতা পাত্র!! বৈশাখের প্রখর তাপদাহের ভেতর আজ সন্ধ্যায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বয়ে গেল সুরের ঝর্নাধারা। চলতি সপ্তাহের চলমান প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে হল ভর্তি দর্শক শ্রোতারা মুগ্ধ হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে। ভারতের বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শ্রীমতী সুস্মিতা পাত্র এক এক করে গাইলেন রবী ঠাকুরের বহুমাত্রিক গান। রবীন্দ্রনাথের পূজা, প্রেম, প্রার্থণা, প্রকৃতি ও স্বদেশ পর্বের গানে সাজানো টানা দেড় ঘণ্টা দর্শক শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধের মত এক জাদুকরী কণ্ঠের গানে আবিষ্ট থাকলেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একশত পঞ্চান্নতম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও রবীন্দ্র একাডেমি'র যৌথ আয়োজনে একক সংগীত পরিবেশন করলেন ভারতের বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শ্রীমতী সুস্মিতা পাত্র। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি এম আজিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন রবীন্দ্র একাডেমি'র সাধারণ সম্পাদক বুলবুল মহলানবীশ ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও কয়েক মিনিট দেরিতে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ায় বক্তরা দর্শক শ্রোতাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে খুব সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা প্রদান করেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তমনা লেখক, প্রকাশক, শিক্ষক ও মুক্তবুদ্ধি চর্চারত মানুষের উপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। দুই পর্বে সাজানো অনুষ্ঠানের বক্তৃতাপর্ব শেষ হলেই দ্বিতীয় পর্বে মঞ্চে ওঠেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরের মেয়ে বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শ্রীমতী সুস্মিতা পাত্র। এটা ছিল শিল্পী সুস্মিতা পাত্রের প্রথম বাংলাদেশ সফর। আর প্রথম সফরেই রবী ঠাকুরের ভিন্নধারার অল্প শোনা, বহুল শ্রুত বা একেবারে অফট্রাকের কিছু গান গেয়ে দর্শক শ্রোতাদের হৃদয় জয় করলেন। রবীন্দ্রনাথের পূজা পর্বের ''প্রভু প্রভু, তোমা লাগি আঁখি জাগে/দেখা নাই পাই/পথ চাই/সেও মনে ভালো লাগে॥ ধূলাতে বসিয়া দ্বারে ভিখারি হৃদয় হা রে/ তোমারি করুণা মাগে; কৃপা নাই পাই/শুধু চাই,/সেও মনে ভালো লাগে॥'' গানটি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন শিল্পী সুস্মিতা পাত্র। তারপর একে একে গাইলেন রবীন্দ্রনাথের পূজা, প্রেম, প্রার্থণা, প্রকৃতি ও স্বদেশ পর্বের খুব অপ্রচল, অল্পশ্রুত গান 'কোথায় আলো, কোথায় ওরে আলো/বিরহানলে জ্বালো রে তারে জ্বালো', ‘তোমার আমার এই বিরহের অন্তরালে’, ‘আমারে করো তোমার বীণা’, ‘লুকিয়ে আসো আঁধার রাতে’, ‘সুখের মাঝে তোমায় দেখেছি’,’বঁধু তোমার’, 'আমি তোমারি মাটির কন্যা', 'মধুর তোমার শেষ যে না পাই', 'চিরসখা হে ছেড়ো না', 'তোমার অসীমে প্রাণময় লয়ে'সহ একটানা প‌্রায় বিশ বাইশটি গান করেন শিল্পী সুস্মিতা পাত্র। রাত নয়টার দিকে রবীন্দ্রনাথের স্বদেশ পর্বের ''বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল/পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান/বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ/পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক হে ভগবান'' গানটি দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন শিল্পী সুস্মিতা পাত্র। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিষয়ে মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়ার কৃতিত্ত্ব অর্জনকারী শ্রীমতী সুস্মিতা পাত্রের ভরাট ও দরদী কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের অপ্রচলিত গানগুলোও যেন দর্শক শ্রোতাদের কাছে বৈশাখের তাপদাহ ভোলার একটি মোক্ষম উপলক্ষ্য হয়ে দেখা দিয়েছিল আজ কয়েক মুহূর্তের জন্য। ''আকাশ আমায় ভরল আলোয়, আকাশ আমি ভরব গানে। সুরের আবীর হানব হাওয়ায়, নাচের আবীর হাওয়ায় হানে॥ ওরে পলাশ, ওরে পলাশ, রাঙা রঙের শিখায় শিখায় দিকে দিকে আগুন জ্বলাস– আমার মনের রাগ রাগিণী রাঙা হল রঙিন তানে॥'' এই গানটি যেন সদ্য বিদায় নেওয়া বসন্তের পর গ্রীষ্মের প্রখর সূর্যের প্রচণ্ড তাপদাহের আগুন জ্বালানোর কথাকেই দর্শক শ্রোতাদের স্মরণ করিয়ে দিল। শিল্পী'র নিজের বাছাই করা গানের ফাঁকে ফাঁকে দর্শক শ্রোতাদের পছন্দের গানও শোনালেন প্রথম বারের মত বাংলাদেশ সফরে আসা শিল্পী সুস্মিতা পাত্র। আজকের অনুষ্ঠানে শিল্পী মূলত রবীন্দ্রনাথের টপ্পা ঘরানা ও কীর্তন ঘরানার গান দিয়ে সাজিয়েছিলেন। কিন্তু শ্রোতাদের অনুরোধের কাছে হার মেনে তিনি শ্রোতাদের পছন্দের গান গেয়েও সবাইকে মুগ্ধ করেন। শিল্পী শ্রীমতী সুস্মিতা পাত্র'র এখন পর্যন্ত তিনটি একক অ্যালবাম বাজারে এসেছে। ২০১০ সালে অনন্যা থেকে প্রথম প্রকাশ পায় তাঁর একক অ্যালবাম 'অরুণালোকে'। ২০১৪ সালে পিকাশো থেকে প্রকাশ পায় শিল্পী'র দ্বিতীয় একক অ্যালবাম 'অবেলায়'। আর ২০১৫ সালে কসমিক হারমোনি থেকে প্রকাশ পায় তাঁর তৃতীয় একক অ্যালবাম 'নয়নে সাজায়ে'। ২০১৪ সালে শোভিক মিত্রের নির্মিত 'পুনশ্চ' চলচ্চিত্রে তিনি রবীন্দ্রনাথের গান ''গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ'' গেয়েছেন। এছাড়া একটি সিডি কোম্পানি' প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের গীতিনৃত্য 'চিত্রাঙ্গদা'য় তিনি কণ্ঠ দেন। আকাশ বাণী ও দূর দর্শনেও তিনি গান করেন। এছাড়া ভারতের বাংলা চ্যানেলগুলোতে তিনি নিয়মিত গান করেন। প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে এসেও তিনি তিনটি বাংলাদেশি চ্যানেলে গান করার অফার পেলেন। অর্থ্যাৎ এখন থেকে বাংলাদেশের দর্শক শ্রোতারা নিয়মিত শিল্পী সুস্মিতা পাত্রের গান শুনতে পারবেন। রবীতীর্থের বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শ্রীমতী সুচিত্রা মিত্র ছিলেন সুস্মিতা পাত্রের রবীন্দ্রসংগীত বিষয়ের প্রথম গুরু। পরবর্তী সময়ে তিনি শ্রীমতী শ্রাবণী সেনের কাছে রবীন্দ্রসংগীতে উচ্চতর তালিম নেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করা শিল্পী সুস্মিতা পাত্র আবারও বাংলাদেশে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী সুস্মিতা পাত্রের সঙ্গে বাংলাদেশে বেড়াতে আসা তাঁর দিদি সংহিতা পাত্র ও দাদা সৌমেন পাত্র। ..................................৩০ এপ্রিল ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৪:২১
false
ij
গল্প_ ইমতিহান শাবান মাসের মাঝামাঝি এক উজ্জ্বল সকাল। একটি ধূসর বর্ণের গাধার পিঠে একলপ্ত জিনিসপত্র চাপিয়ে পারস্যের কেরমান নগরের নগর তোরণ পেরিয়ে নগরের বাইরে চলে এল বাইশ বছর বয়েসী একজন পারসিক তরুণ। ১১৪০ সাল; বাগদাদে আব্বাসীয় খলিফা আল মুকতাফির-এর আমল। ছিপছিপে সুদর্শন ফরসা ও শ্মশ্রুমন্ডিত তরুণটির নাম মুনতাসির । নগরের বাইরে এসে সে সমুখের অইরান মরুভূমির দিকে তাকাল। কমলা রঙের উচুঁ নীচু বালির দরিয়া; মরুভূমির নাম লুত, মাঝেমাঝে সবুজ মরুদ্যানও চোখে পড়ে। মরুদ্যানে খুবানি, আখরোট আর নাশপাতির গাছের মনোহর শোভা; দূরে একটি দূর্গম পাহাড় দেখা যায়। পাহাড়ের নাম কোহে নেদা, তার বোরজ-এ সফেদ রঙের বরফের আচ্ছাদন। তবে এখন চলার পথে মাথার ওপরে গনগনে আফতাব । গরমি আর আতশ এর স্পর্শ পায় গাধা ও গাধাটির মালিক মুনতাসির । ওই কোহে নেদা পাহাড়ই তরুণ মুনতাসিরের আশু গন্তব্য। সে এলমে-দীন অর্জন করবে বলে এরাদা করেছে। পাহাড়ের অটুট নির্জনতাই এখন তার ইন্তেজারি। কেরমান নগরের এলজামে তার মন-মগজ বিপর্যস্ত। মুনতাসির-এর আব্বা মরহুম কেরমান নগরের দায়রা আদালতের কাজী উল-কুজাত। জবরদস্ত দানেশমন্দ ব্যক্তি ছিলেন রিয়াদ সাবরি । কাজেই পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে বিস্তর বহি ও কিতাব পেয়েছে মুনতাসির; আর পেয়েছে এক নির্দেশ। কিতাব পাঠ করতে হবে, তাহলেই আল্লাহ্র দর্শন মিলবে: মৃত্যুর পূর্বে পুত্রের প্রতি রিয়াদ সাবরির এই নিদের্শ ছিল। মুনতাসিরের মনের আরজুও অনুরূপ; সে মহান আল্লাহতালার নৈকট্য লাভ করতে ইচ্ছুক। এই উদ্দেশ্যে সে হররোজ কিতাব পাঠ করে, পাঠ করতে করতে গভীর এলহামও বোধ করে। তবে কেরমান নগরে বাস করে প্রবল অস্বস্তি বোধ করে মুনতাসির; নগরে খালি আখছা-আখছি আর গস্তানি-গস্তিদারের হল্লা। এই নগরে বাস করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব কি ? নগরে বড়ো বেশি আঞ্জুমান, বড়ো বেশি আড়ং। সে এখন জানে ওলি-আউলিয়াগন কেন নগরে এবাদত-বন্দেগী করেন না। তরুণ মুনতাসির সিদ্ধান্ত নিল যে সেও কেরমান নগর ছেড়ে চলে যাবে। তা ছাড়া আজ অবধি তরুণটির আকদও হয়নি; সে এক আজাদ তরুন; সে নগর ত্যাগ করতেই পারে। গরমি আর আতশ সহ্য করে তপ্ত বালির ওপর দিয়ে মুনতাসির চলেছে কোহে নেদা পাহাড়ের উদ্দেশে। শেষ বিকেলের আগেই মরুভূমি পাড় হয়ে একটি বিস্তীর্ণ ভুট্টা ক্ষেতের কাছে চলে এল সে। ভুট্টা ক্ষেতের পরই পাহাড়ের ঢালের শুরু। এখানে একটি ঘন জয়তুন বনের বিস্তার; তার ভিতরে একটি পরিত্যক্ত মকবরা চোখে পড়ল। জয়তুন গাছের সবুজ বনের গাছে গাছে আকসার আবাবিল পাখির চেঁচামেচি; যেন ওদের ওয়ালিমা চলেছে । মুনতাসির আপন মনে হাসে। ফিরোজা বর্ণের আসমানের নীচে নির্জন পাহাড় বেলাশেষের আলোয় নিথর হয়ে রয়েছে। এখানে-ওখানে বেশুমার রুক্ষ পাথর ছড়ানো । মুনতাসির পাথরে ফাঁক গলে ঢাল বেয়ে উঠতে থাকে উপরে। তার গাধাটির নাম: ‘কাওস’; সেও মুনিবের পিছন পিছন উঠতে থাকে । কিছুদূর ওঠার পর একটি একটি গুহামুখ দেখতে পেল মুনতাসির । গুহামুখে একটি ডালিমের গাছ। গুহার ভিতরে প্রবেশ করে আধো-অন্ধকারের মুখোমুখি হল। গুহাটি পরিচ্ছন্ন। দেওয়ালে যেন হলুদ রঙের আস্তরের মিহিন প্রলেপ। মেঝেটিও তদ্রুপ ;মসৃণ। দূরন্ত বাতাস উড়িয়ে আনল কিছু ডালিমের ফুল গুলেনার। কাওস-এর পিঠ থেকে একে একে গালিচা-ফরাস, তাকিয়া, গাঁটরি, চিলিমচি, ও বহি-কিতাবগুলি নামিয়ে রাখল। গুহার বাইরে স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা। মশক নিয়ে সে দিকে যায় মুনতাসির । তার আগে কাওস কে ছেড়ে দেয়। আল্লা তারও খাদ্য দূন্ঈয়ায় মজুদ রেখেছেন। ফোয়ারার শীতল পানিতে গোছল সেরে পাক -পবিত্র বোধ করে মুনতাসির। তারপর গুহায় ফিরে এসে গাঁটরি থেকে শুকনো রুটি, মধু ও শুকনো ভেড়ার গোশত বের করে খেল। মশক এ ফোয়ারার পানি ভরে এনেছে। খেল। সন্ধ্যায় চেরাগ জ্বালালো । তারপর গালিচার ওপর বসে কিতাব টেনে নিল । কিতাবের নাম: ‘কিতাব ফুতু আর বুলদান’ (ইসলামী রাষ্ট্রের উদ্ভব)। রচয়িতা: আহমাদ ইবনে ইয়াহিয়া আল-বালাধুরি। বিষয়: মহানবী ও খলিফাদের প্রাথমিক বিজয়। কিতাবটি রচনা করার জন্য আল্লামা বালাধুরি আরব দেশগুলিতে অনেক ঘুরে লিখেছেন। ফারসি ভাষায় লেখা বহিটি আরবিতেও অনুবাদ করেছেন বালাধুরি । পড়তে পড়তে মুনতাসিরের মস্তিস্কের করোটির গভীরে গভীর সুখানুভূতির স্রোত বইতে থাকে। অনেক রাতে মুনতাসির গুহার বাইরে আসে। বাইরে আসতেই এলোমেলো বাতাস ওকে জড়িয়ে ধরল। কাওস দাঁড়িয়ে ছিল গুহামুখে। ওর দীর্ঘ ছায়া পড়েছে। মুখ তুলে দেখল জয়তুন বনের উপরে একটি আলহেলাল। তবে এখনও চাঁদনির রুপালি আলো ঘন হয়ে ওঠেনি। তথাপি জয়তুন বনের দিক থেকে আতরের গন্ধ ভেসে এল যেন । নাকি আমার মনের আজগুবি খেয়াল? নির্জনে তরুণের মন আনচান করে। বড়ো একটি পাথরের ওপর বসে সে। রাত বাড়ে। নির্জন রাত্রিতে রব এর কথা ভাবে সে । রবকে দেখার জন্যই তো এখানে আসা। রাত্রির আকাশে অজস্র আখতার ও আদমসুরাত। রব ওই আসমানের কোথাও আরশে বসে আছেন। কতকাল আগে আজল আফলাক সৃষ্টি করেছেন। খুদাতালার কী শান! আদল ও আদব এর কথাও ভাবে মুনতাসির । ভাবতে ভাবতে তার জববা লাগে তার। তখন বাতাসেরা এসে পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খায়। নিঃসঙ্গতা কাটাতেই যেন কাওস-এর সঙ্গে কথা বলে। এক সময় ঘুম এসে যায় চোখে। দিন যায়। একদিন। সুবে সাদিকের পর ম্লান আলোয় গুহার ভিতরে ফরাসের ওপর শুয়ে ছিল মুনতাসির। আচানক ইয়াসমিন ফুলের তীব্র সুবাস পেল । কৌতূহলী হয়ে গুহার বাইরে বেরিয়ে এল সে। কম্বল-আবৃত দীর্ঘদেহী একজন আজনবী বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন। বৃদ্ধের গায়ের রং টকটকে ফরসা, মাথায় সবুজ দস্তার, পরনে কাল আলখাল্লা- তার ওপরই কম্বল জড়ানো এবং কম্বলের রংটি ধূসর। বৃদ্ধের হাতে একটি আসা। দীর্ঘ পুরুষ্ট ফরসা আঙুলে লাল রঙের ইয়াকুত মনি বসানো আংগস্তরি । ইনি কি কোনও আউল দরবীশ? কমলিওয়ালা? আরেফিন? মুনতাসির বিস্মিত হয়ে যায়। Sufism, Islamic mysticism that began to develop in the 7th century, the first century of Islam. The term sufi (Arabic, “man of wool”) was coined in the early 9th century as a name for mystics whose ascetic practices included wearing coarse woolen garments, or sufu; soon the term referred to all mystics, whether or not they followed ascetic practices ... (মাইক্রোসফট এনকার্টা) এ দেশে বৃদ্ধকে দেখে সালাম দেওয়াই দস্তুর। মুনতাসির সালাম দিল। আলায়কাসসালাম। জলদ গম্ভীর কন্ঠে বৃদ্ধ বললেন। বলে মাথা নাড়লেন। বললেন, আমার নাম মাজিন মিনহাজ। লোকে অবশ্য আমাকে বাবা আল মাজিন বলেই ডাকে। মুনতাসির-এর দিল ধক করে উঠল। আপনি খোরাসানের দানেশমন্দ ওলি বাবা আল মাজিন ? হ্যাঁ। বৃদ্ধ মাজিন মিনহাজ হাসলেন। বড়ো মধুর সে হাসি। হ্যাঁ। মুনতাসির বাবা আল মাজিন এর নাম শুনেছে বৈ কী। অতি তালেবর ওলি। পারস্যবাসী এঁকে গভীর শ্রদ্ধা করে। কখনও গায়েব থাকেন, কখনও অবরে সবরে নগরে যান। সবচে বড়ো কথা- বাবা আল মাজিন একজন ‘গায়ের মোকাল্লেদ’- অর্থাৎ চার ইমামের কারও গোঁড়া অনুসারী নন। সে বলল, আমার নাম সাফি, মুনতাসির সাফি। আমার বাড়ি কেরমান নগর। মাজিন মিনহাজ মাথা নাড়লেন। মুনতাসির বলল, আমার পিতা রিয়াদ সাবরি ছিলেন ....মুনতাসিরের কথা শেষ হল না, মাজিন মিনহাজ বললেন, কেরমান নগরের দায়রা আদালতের কাজী উল-কুজাত রিয়াদ সাবরি ? হ্যাঁ। আপনি আব্বাকে চেনেন! চিনতাম। আমার ইয়ারবকশি ছিল সাবরি। আমরা একসঙ্গে বাগদাদের নিজামিয়ায় পড়াশোনা করেছি। অনেক তর্ক করেছি এক সময়। মুনতাসির অবাক হল। কই, বাবা কখনও বলেনি আপনার কথা! সে প্রশ্ন এড়িয়ে মাজিন মিনহাজ জিগ্যেস করলেন, তা তুমি এখানে কি করছ বাবা? আমি এখানে কিতাব হেফজ করছি। নগরের ইল্লত ছেড়ে এখানে এসেছি। ওহ্ । আসুন না দেখবেন। বলে মুনতাসির হাত তুলে পীরকে গুহামুখ দেখিয়ে দিল। ভোরের আলো ফুটে উঠছে। জয়তুন বনের দিক থেকে আবাবিল পাখিদের কিচিরমিচির কানে এল। মুনতাসিরের পাশে পাশে হাঁটছেন মাজিন মিনহাজ । অম্বরের কড়া গন্ধ পায় মুনতাসির । রুহানি পীরের শরীর নির্গত সুবাসে মুনতাসির শুনেছে ইবলিস পালায়। খান্নাসের অসওয়াসা দূর করে। মাজিন মিনহাজ গুহার অন্দরে গেলেন। চারিদিকে তাকালেন। মেঝেতে ফরাস পাতা। ছোট্ট তাকিয়াও আছে। চতুর্দিকে বেশুমার কিতাব ছড়ানো। হুমম। এখানেই তা হলে তুমি কিতাব হেফজ করছ? মাজিন মিনহাজ জিগ্যেস করলেন। হ্যাঁ। মাথা নাড়ল মুনতাসির। কেন? নরম স্বরে জানতে চাইলেন মাজিন মিনহাজ। তারপর ফরাসের ওপর বসলেন। ইঙ্গিতে মুনতাসিরকেও বসতে বললেন। আমি আল্লাহর দিদার লাভ করতে চাই ওলি। ফরাসের ওপর বসে মুনতাসির কাতর কন্ঠে বলল । আল্লাহর দর্শন চাও তুমি? হ্যাঁ, আল্লামা। তুমি কি মনে কর কিতাব হেফজ করলেই আল্লাহর দিদার লাভ করা সম্ভব? হ্যাঁ। কথাটা কে বলেছে তোমার শরীয়তপন্থী আব্বা হুজুর? কন্ঠস্বরে ব্যঙ্গ স্পষ্ট। হ্যাঁ। মাথা নাড়ল মুনতাসির। ভিতরে ভিতরে বিস্ময় পুলক অনুভব করছে। আব্বা এত বড় ওলিকে চিনতেন, দু’জনে ইয়ারবকশিও ছিলেন বাগদাদে অথচ কখনও বলেননি। আজীব! মাজিন মিনহাজ হাসলেন। বললেন, আরে ব্যাটা, আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর আগে তো আহলিয়াত অর্জন করতে হবে। তার কী হবে? কিতাবী এলেম অর্জন করে কি তা করা যায়? তাহলে? আল্লাহর দিদার লাভ করতে হলে আগে গরীব দুঃখীদের সেবা করতে হবে। কিতাব হেফজ করে কি লাভ রে ব্যাটা? আচানক মাজিন মিনহাজ হুঙ্কার ছাড়লেন। মুনতাসির থ। এমন কথা সে আগে কখনও শোনে নি। তার আব্বা জবরদস্ত দানেশমন্দ ব্যক্তি ছিলেন। তিনিও কখনও বলেন নি। তিনি জীবনভর কেবল দিনার আর দিরহাম আয় করেছেন আর কিতাব হেফজ করেছেন। মাজিন মিনহাজ বলে চলেছেন, বাগদাদের নিজামিয়ায় পাঠ শেষে তোমার আব্বা কেরমান নগরে ফিরে দায়রা আদালতের কাজী হল; আর আমি? বলে তীক্ষ্ম চোখে মুনতাসিরের চোখের দিকে তাকালেন। মুনতাসির রুহানি পীরের শরীর নির্গত অম্বরের কড়া গন্ধ পায়। আমি এই কোহে নেদা পাহাড়ের উত্তর দিকে এক নগরে চলে গেলাম। মাজিন মিনহাজ বললেন। সে নগরের নাম আশরত। আশরত নগরে জন্মান্ধ, পঙ্গু ও কুষ্ঠদের বাস। পারস্যবাসী আশরত নগর এড়িয়ে চলে; আমি বারো সাল আশরত নগরে জন্মান্ধ, পঙ্গু ও কুষ্ঠদের খিদমত করলাম। তারপর ... তারপর আমি আমার রব এর দর্শন পেলাম। মুনতাসির টের পেল তার শরীর ঘেমে উঠছে। দূনঈয়ায় এখন আমার আর কোনও কাজ নেই। মাজিন মিনহাজ বললেন। আমি এখন মৃত্যুর অপেক্ষায় আছি। যখন প্রিয়তমের ডাক আসবে, চলে যাব। মুনতাসির অবশ বোধ করে। আসলে মূল কথা হল এস্ক। মাজিন মিনহাজ বললেন। তোমাকে আল্লাসৃষ্ট জীবের আশিক হতেই হবে বাবা। এতে কোনও বাহানা চলে না। এইই তোমার এলমে আকসির, এইই তোমার ইমতিহান (পরীক্ষা) এই তোমার আদল ও আদব। এই ইমতিহানে উত্তীর্ণ হলে ইলাহির দিদার মিলবে। নইলে না। এইই হল এলমে তাসাউফ-এর মূল। এইই হল তাকওয়া। মুনতাসির চুপ করে থাকে। গুহার মেঝেয় মধুবর্ণের রোদ গড়িয়ে আসছে। আজই তুমি আশরত নগরে রওনা হয়ে যাও বাবা। আর আমি এই অদরকারি কিতাবগুলি দজলা নদীতে ফেলে দেব। আশরত নগরে তুমি কম করে বারো সাল জন্মান্ধ, পঙ্গু ও কুষ্ঠদের খিদমত করবে। তা হলেই তোমার মনোবাসনা পূর্ণ হবে। কিতাবী এলেম অর্জন করে কোনও লাভ নেই বাবা। অনেক ক্ষণ চুপ করে রইল মুনতাসির । কী যেন ভাবছে। গভীর ভাবে ভাবছে। আব্বা কখনও বলেননি জন্মান্ধ, পঙ্গু ও কুষ্ঠদের খিদমত করতে, বলেছেন কিতাব পাঠ করতে আর আপৎকালের জন্য দিনার-দিরহাম সঞ্চয় করতে । এক লহমায় মুনতাসিরের কাছে যেন সবই পরিস্কার হয়ে গেল। উঠে দাঁড়াল সে। তারপর তহরিমা বেঁধে সামান্য ঝুঁকে মাজিন মিনহাজ এর দিকে অপলক চেয়ে বলল, আমি আপনার আহকাম মেনে নিলাম আল্লামা। আমি আপনার কাছে আহদ করলাম আমি আল্লাসৃষ্ট দুঃখী জীবের আশিক হব। আর এক্ষুণি আমি আশরত নগরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাচ্ছি। সে নগরে বারো সাল জন্মান্ধ, পঙ্গু ও কুষ্ঠ দের খিদমত করব। আলহামদুলিল্লাহ্ । গুহার ভিতরে অম্বরের গন্ধ ঘন হয়ে ওঠে। ভোরের দামাল বাতাস উড়িয়ে আনল কিছু ডালিমের ফুল গুলেনার। সে গুলফাম তরুণের চোখে মুখে লাগে আল্লাহর রহমতের মতন। যেন আজ নওরোজ, যেন এখন নওবাহার; আর বেহেস্তি তাম্বুরার তারানা শুনতে পেল যেন। সালাম এবং আলবেদা। বলে মুনতাসির গুহার বাইরে চলে এল। পরম করুনাময় আল্লাহতালা তোমার যাত্রা মঙ্গলময় করুন। পিছন থেকে ধ্বনিত হল। তারপর বারো সাল ইমতিহান দেবে বলে নির্ভীক নওজোয়ান ছুটে চলল আশরত নগরের উদ্দেশে ... সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:১৩
false
rn
আমার অনেক রাগ ১। রোদ আর ধুলো-বালি উপেক্ষা করে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকি। দশ মিনিট- বিশ মিনিট। বাস আর আসে না। যখন রাগ করে হাঁটা শুরু করি- তখন একের পর এক বাস আসা শুরু করে। চলন্ত বাসে তো আর লাফ দিয়ে ওঠা যায় না। প্রতিদিন একই ঘটনা। কিন্তু আজ রাগ করেই সিনেমার নায়কদের মতো চলন্ত বাসেই লাফ দিয়ে উঠে পড়েছি। অনেক দূর যাওয়ার পর আবিস্কার করলাম ভুল বাসে উঠেছি। খুব রাগ লাগল। এই রাগ যে কার উপর জানি না। যাত্রাবাড়ি থেকে অনেক রাগ নিয়ে বাসের ভাড়ার চেয়ে দশ গুন বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশায় করে বাসায় ফিরলাম। ২। বুদ্ধদেব বসু আমার প্রিয় সাহিত্যিক। রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর মতো সব্যসাচী প্রতিভা আর কেউ আসেনি। তার 'আমার যৌবন' বই আমার খুব ভালো লেগেছে। তিনিই প্রথম শার্ল বোদলেয়রের কবিতা অনুবাদ করেন। জীবনানন্দ দাশের প্রকৃত মূল্যায়ন বুদ্ধদেব ছাড়া তৎকালীন কেউই করেনি। প্রতিভা বসু ছিলেন তার স্ত্রী। প্রতিভা বসুর লেখা আত্নজীবনী "জীবনের জলছবি"র মাধ্যমে বুদ্ধদেবকে ভালোভাবে চেনা যায়। শৈশবে মানুষ হয়েছেন মাতামহের কাছে বিক্রমপুরে। মালখানগর হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। নোয়াখালির রামগন্জে এবং ঢাকার পুরানা পল্টনে দীর্ঘদিন থেকেছেন। জন্মের পর থেকেই মাতৃহীন অসাধারন প্রতিভাধর এই মানুষটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের কৃতি ছাত্র ছিলেন। তাঁর কবিতা ও গদ্য উভয়ই তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ৩। আসমা বিনতে ওমাইর রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দেব না যা তুমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানির মধ্যে পড়বে। সাহাবী বললেন, অবশ্যই শেখাবেন। নবীজি বললেন, দোয়াটি হচ্ছে : ‘আল্লাহু আল্লাহ রব্বী লা উশরিকু বিহি শাইয়ান। অর্থ : আল্লাহই আল্লাহ আমার প্রতিপালক। আমি তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করি না। (আবু দাউদ : ১৫২৫) ৪। বিবাহিত পুরুষরা কখনও নরকে যাবেন না, কারণ পৃথিবীতেই তাঁরা নরক ভোগ করে ফেলেছেন। অবিবাহিত কোন পুরুষই কথাটা বিশ্বাস করেন না। এবং যথারীতি নরকবাসে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ৫। রবীন্দ্রনাথ কোনো রাজনীতিবিদ ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সচেতন এবং সমাজ বৈষম্য নিধনকারী, পবিরর্বতনকামী নাগরিক। তিনি চেয়েছেন মানুষের মধ্যে ঐক্য ও উদার মানবিকতার প্রতিফলন ঘটুক। তিনি সমাজ বদলের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। সমাজের ভেতরে মানুষের কর্মোদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। সমাজবিরোধীশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সমবেত আত্মশক্তির প্রয়োজন উপলব্ধি করেছেন সেই সময়েই। ব্যক্তি সমাজ সৃষ্টি করে, আর সমাজ সৃষ্টি করে রাষ্ট্রের। সমাজে সৎ অংশগ্রহণ সৎ রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্ম দেয়। এটা ছিল তাঁর কর্মের মূল প্রত্যয়। ৬। বর্তমানে অকবিরা কবিতার সর্বনাশ করছে। ফেসবুকের ভোট যদি আপনি আপনার লেখার মানদণ্ড বলে মানেন তাহলে কোনোদিনই আপনি লেখক বা কবি নন।ফেসবুক মূলত বাজারের চায়ের দোকানেরই প্রতিচ্ছবি, এখানে কোনো গাম্ভীর্য বা সিদ্ধান্ত আশা করা বোকামী। ৭। বাপ-দাদার কাছ থেকে সবাই জমি-জমা, টাকা পয়সা পায়। আমি পেয়েছি রাগ। এক আকাশ রাগ। রাগে জিদ্দে ফেটে পড়ি। গরীবের রাগের ধার কেউ ধারে না। গরীবের রাগের মুল্য দুই পয়সা। সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩২
false
rn
মাই নেম ইজ রেড 'মাই নেম ইজ রেড' ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত অরহান পামুকের লেখা তুর্কি উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৫৯১ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের অনুচিত্রশিল্পীদের নিয়ে লেখা। ভাষায় ও গল্প বলায় পামুক সতর্ক, তুখোড় ও বিশদ। মনে হবে পড়ছেন তুর্কি-পারস্য প্রেমলীলার মহাকাব্যগুলো, জানছেন প্রাচ্যের লুপ্ত চিত্রকলার দর্শন ও তার কিংবদন্তীর শিল্পগুরুদের কথা। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এই উপন্যাসের জন্য পামুক সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন। ওরহান পামুকের এই মহাকাব্যিক উপন্যাস একজন পাঠক খুনের রহস্য জানার জন্য পড়বে না, বরং পড়বে লেখকের সাহায্যে দার্শনিক ধাঁধা সমাধানের জন্য। উত্তম পুরুষে লেখা বইটিতে সে সময়কালের বিখ্যাত শিল্পী ও অন্যান্য চরিত্রের জবানের সাথে সাথে কথা বলেছে মুদ্রা, চিত্রে আঁকা কুকুর বা লাল রঙের মতো বিভিন্ন বস্তু। কাহিনীর সময়কালটি রাজনৈতিক দিক থেকে অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টাতে খেলাফতের একটি ক্রান্তিকালও বলা যায়। এই সাম্রাজ্য ইউরোপের অংশ হওয়ায় ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগ অনেকদিনের। তাদের কুটনৈতিক বোঝাপড়ার সাথে আছে শিল্প-সংস্কৃতির দ্বন্ধ, আছে সভ্যতার গরিমা। ফলে রাজনৈতিক দ্বন্ধের সাথে যুক্ত পারষ্পরিক শিল্পকলার দ্বন্ধ। যেখানে প্রতিদ্বন্ধী গোষ্ঠীগুলো একে অপরকে প্রভাবিত করতে চায়। এটা ইসলামী বয়ান আশ্রিত শিল্পরীতির ক্ষয়ের কালও বটে।পামুকের জন্ম ইস্তাম্বুলে ১৯৫২ সালের ৭ জুন। ১৯৯৭৪ থেকে পামুক নিয়মিত লেখা শুরু করেন। তার প্রথম উপন্যাস আলো ও আঁধার। ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাশ করেন ১৯৭৬ সালে। তাঁর সম্বন্ধে বলা হয়েছে-He is a Muslim, but he describes himself as a cultural one who associates the historical and cultural identification with the religion. ছেলেবেলা থেকেই ইতিহাস পড়তে বড় ভালোবাসতেন পামুক ।ইতিহাস পড়তে পড়তে চিনেছিলেন ইতিহাসের অন্ধকার দিক। জেনেছিলেন কী ভাবে হত্যা করা হয়েছিল নিরীহ আর্মেনিয়দের। অরহান পামুক বলেনঃ 'মাই নেম ইজ রেড' উপন্যাসটি আমার মা’কে হতবুদ্ধি করে দিয়েছিল : তিনি আমায় এখনও বলেন যে তিনি এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি আমি উপন্যাসটি কীভাবে লিখেছি...আমার অন্য কোন উপন্যাস পড়ে তাঁর এমন অবাক লাগেনি; তিনি জানতেন আমি সেগুলো আমার জীবন থেকেই টেনে নিয়েছি। কিন্তু মাই নেম ইজ রেড পড়ে তাঁর মনে হয়েছিলো এটার কোন এক অংশে তিনি আমার সাথে আর কানেক্টেড নন, তিনি যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন, সেই আমি, তাঁর সন্তান, যাকে তিনি চেনেন, তাঁর সেই সন্তান যার সম্পর্কে মা’র ধারনা, তিনি সব জানেন। সর্বোচ্চ প্রশংসাসূচক একটা ব্যাপার এটা, আমার মতে, যদি কেউ তার মা’র কাছ থেকে শুনতে পায় যে তার লেখা বইটি আসলে তার চেয়ে জ্ঞানী। অন্য এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেনঃ আমার জীবনের কিছুই পালটে যায়নি,কারন আমি সব সময় কাজে ব্যস্ত থাকি। আমি আমার জীবনের ৩০ বছর সাহিত্য সাধনায় ব্যয় করেছি। এর প্রথম ১০ বছরে আমি টাকা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম এবং কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করতো না আমি কত উপার্যন করি। দ্বিতীয় দশকে আমি টাকা ব্যয় করেছি এবং কেউ এ সম্পর্কে জানতে চায়নি। শেষ দশকটাতে সকলে জানতে চাইছে আমি কীভাবে টাকা খরচ করি যা আমি কখনই বলব না।আশা করি বইটি পাঠকদের কাছে ভালো লাগবে।নামঃ মাই নেম ইস রেড (টার্কিশঃ Benim Adım Kırmızı)লেখকঃ ওরহান পামুকপ্রকাশকালঃ ১৯৯৮ইংরেজি অনুবাদঃ ২০০১মুল্যঃ টাকা ১৩০-১৫০ (লোকাল প্রিন্ট)টাকা ৭৯০/৮৯০ (ইন্ডিয়ান প্রিন্ট- প্রথমা/ পাঠক সমাবেশ)বাংলা অনুবাদঃ আমার নাম লাল (অমর মুদি, সন্দেশ প্রকাশনী)
false
rn
মৃত্যুর আগে যে ১০০ টি মুভি আপনাকে দেখতে হবে (নয়) ৮১। রকি (Rocky) সিলভেস্টার স্ট্যালনের লেখা এবং অভিনীত Rocky মুভিটি মুক্তি পায় ১৯৭৬ সালে। মুভিটি একজন বক্সার যিনি দেনার দায়ে প্রায় ডুবে আছেন। কিভাবে হাল না ছেড়ে শুধু মাত্র প্রচন্ড ইচ্চাশক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যেমে পরিণত হন একজন সফল বক্সারে। মুভিটি আপনাকে এই মেসেজটি দিবে, যদিও সারা দুনিয়া আপনাকে বুঝায়, যে আপনি সফল হতে পারবেন না, আপনার কোন আশাই নেই, তবু হাল ছাড়বেন না। আপনাকে লড়াই করতে হবে একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত । ৮২। আরগো (Argo) এই চলচিত্র মুক্তি পাবার পরে সি,এন,এন জিমি কার্টারের সাক্ষাতকার নিয়েছিল। এই মুভির বেস্ট পার্ট হলো ডিরেকশন আর সিনেমাটোগ্রাফি। প্রত্যেকটা দৃশ্যই অত্যন্ত যত্ন নিয়ে বানানো। কাহিনী সেই আশির দশকের জিম্মি সংকট কে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খায়। শাহ পাহলাভি ক্ষমতাচুত্য হওয়ার পর তাকে যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয় দেয়। সেটা নিয়ে ইরানে বিশাল বিক্ষোভ চলতে থাকে। একদল বিক্ষোভকারী ইরানের মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করে এবং ভিতরে আক্রমন চালায়। তারা ৫০ জনকে জিম্মি করে। কিন্তু ঘটনা চক্রে ৬ জন দূতাবাস কর্মী সেখান থেকে পালিয়ে কানাডিয়ান এক কুটনৈতিক কমকর্তার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তাকে উদ্ধারের লক্ষ্যে সিআইএ এর গোপন মিশন ই এই মুভির মূল উপজীব্য বিষয়। ৮৩। দি আর্টিস্ট (The Artist) পুরোদস্তুর নির্বাক মুভি এবং প্লটেও সেই নির্বাক চলচ্চিত্রের সময়কালকেই দেখানো হয়েছে। কোনো নির্বাক মুভিকে ব্রিলিয়ান্ট করতে দুইটা জিনিস লাগে আর তাহলো স্টোরিটেলিং আর অভিনেতাদের পারফরম্যান্স। আর এই দুই দিয়ে শতভাগ সফল The Artist মুভিটি। এক নির্বাক মুভি তারকার সাথে দেখা হয় এক উঠতি নর্তকীর। সবাক সিনেমার আবির্ভাব তাদের দুজনের ক্যারিয়ারকে দুদিকে ঠেলে দেয়। মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৮.৫ এবং আমার পার্সোনাল রেটিং ৯/১০। ৮৪। ডক্টর জিভাগো (Doctor Zhivago) একজন রুশ ডাক্তার ও কবির কাহিনী। বিবাহিত লোকটি এক রাজনৈতিক কর্মীর স্ত্রীর প্রেমে পড়ে যায়। শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং তারপরে অক্টোবর বিপ্লব। এটি একটি রাশিয়ান মুভি।৮৫। রিয়েল স্টীল (Real Steel) রোবট লড়াই এর নিখুঁত মিশ্রন, আবেগ, কিছু কমিক দৃশ্য, পিতা পুত্রের ভালোবাসা, সুন্দর স্টোরিলাইন আর কি চাই বলুন! মুভির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ রবোফাইট সেটাও যথেষ্ট উপভোগ্য। ৮৬। ডগ ডে আফটারনুন (Dog day afternoon) এই মুভিতে দেখা যায় দুই জন লোক একটা ব্যাংক ডাকাতি করতে যায়। কিন্তু পুলিশ খবর পায় এবং ব্যাংক ঘিরে ফেলে। তারপর ব্যাংকের ভেতরের লোকদের জিম্মি করে দুই ব্যাং ডাকাতের চলে পুলিশের সাথে দর কষাকষি। অনেকে বলেছেন- এই মুভির গল্প দূর্বল। শুধুমাত্র অভিনয়ের জন্য ভালো লাগে দেখতে। ৮৭। দি টার্মিনাল (The Terminal) ভিক্তর নভরস্কি পূর্ব ইউরোপ থেকে নিউ ইয়র্ক শহরে এসেছে একজন জ্যাজ মিউজিশিয়ানের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করতে। ভিক্তরের প্রয়াত পিতা ছিলেন জ্যাজ মিউজিকের ভক্ত। তিনি হাঙ্গেরিয়ান একটি পত্রিকায় এক দল জ্যাজ মিউজিশিয়ানের একটি ফটোগ্রাফ পেয়েছিলেন। সেই ছবির সব তারকার অটোগ্রাফ জোগাড় করতে চেয়েছিলেন ভিক্তরের পিতা। একজন ছড়া বাকি সবার অটোগ্রাফ তিনি জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই বাকি একজন হলেন টেনর সেক্সোফোনিস্ট বেনি গোলসন যিনি এখন নিউ ইয়র্ক শহরে বসবাস করছেন। তাঁরই অটোগ্রাফের জন্য এতদূর ছুটে এসেছেন ভিক্তর। কিন্তু বিমান বন্দরে এক অদ্ভুত সমস্যায় পড়েন ভিক্তর। সে তার দেশ ত্যাগ করার পর পরই সেখানে শুরু হয়েছে এক রাজনৈতিক গোলযোগ। সেই গোলযোগের কারণে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ভিক্তরের দেশের সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক রাখছে না। ফলে ভিক্তর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অধিকার পায় না। আবার তাকে দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতিও দেওয়া হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ৯ মাস তাকে বিমান বন্দরে কাটিয়ে দিতে হয়। সেখানেই গড়ে ওঠে তার এক নিজস্ব জগৎ, পরিচিত পরিমন্ডল। বিমান বন্দর টার্মিনালে ভিক্তরের অভিজ্ঞতা নিয়েই নির্মিত হয়েছে সিনেমা ‘দি টার্মিনাল’।৮৮। দ্য রিং (The Ring) সাইকোলজিক্যাল হরর। এটি মূলত ১৯৯৮ সালে নির্মিত জাপানী হরর সিনেমা ‘রিং’-এর পূনঃনির্মাণ। সিনেমায় দেখা যায় র‌্যাচেল কেলার নামের এক নারী-সাংবাদিক একটি রহস্যময় ভিডিও টেপ সম্পর্কে অনুসন্ধান করছে। ভিডিওটেপটি সম্পর্কে স্থানীয়দের মধ্যে একটি গুজব প্রচলিত আছে। গুজবটি হল—যে এই ভিডিওটেপটি দেখে কিছুদিনের মধ্যে তার মৃত্যু হয়। র‌্যাচেলের ভাগ্নীসহ চার জন কিশোর বয়সী বালক-বালিকার এটার প্রভাবে মৃত্যু হয়েছে বলে অনেকের ধারনা।৮৯। হোম এলোন (Home Alone) হাস্যরসের সিনেমা ‘হোম এলোন’ ১৯৯০ সালে নির্মিত হয়। আট বছর বয়সী ক্যাভিন এক বিশাল পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। ক্যাভিনের পরিবার ক্রিসমাসের ছুটিতে প্যারিসে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। যাওয়ার দিন ক্যাভিনের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায়। অনেক ছেলে-মেয়ের মধ্যে ক্যাভিনের মা খেয়াল করতে পারে না যে ক্যাভিন তাদের সাথে নেই। পরিবারের সবাই ক্যাভিনকে একা রেখেই বেড়াতে চলে যায়।সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্যাভিন আবিষ্কার করে যে সে বাসায় একা। এতে প্রথমে সে খুশি হয়ে উঠে। সে স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতে থাকে। এদিকে পথে ক্যাভিনের পরিবার আবিষ্কার করে যে ক্যাভিন তাদের সাথে নেই। কিন্তু তখন আর তাদের পক্ষে ফিরে যাওয়া সম্ভব হয় না। ক্যাভিন তার একাকী জীবন উপভোগ করছিল। কিন্তু তার আনন্দের দিন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এক দল চোর তাদের বাড়িতে চুরি করতে আসলে ক্যাভিনকে নিজ বাড়ি রক্ষা করতে স্বচেষ্ট হতে হয়।৯০। এমিলি (Amélie) এমিলি প্যারিসের এক ইন্ট্রোভার্ট ওয়েট্রেস।একদিন নিজের ফ্লাটে লুকিয়ে রাখা ছোট্ট এক খেলনার বাক্স খুঁজে পায় সে।আর তারপরই পাল্টে যায় এমিলির জীবন।নিজের আর চারপাশের মাণুষগুলোর জীবনে পরিবর্তন আনতে শুরু করে সে।আর এভাবেই এক দিন প্রেমে পড়ে গেলো এমিলি। এই মুভিগুলো দেখতে বলার পেছনে আরেকটা কারণ আছে, সেটা হল জীবনে চলার পথে কোন না কোন সময় এগুলো আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে। তবে, এমন কোন কথা নেই যে, আমার যে মুভিটি ভাল লাগবে- তা আপনাকেও মুগ্ধ করবে । আর আমি আমার পছন্দের মুভিগুলাকে রেটিং করতে কার্পণ্য করি না।
false
fe
মোহাম্মদ আব্দুল বাসিত _ প্রখর মেধাবী এক সাংবাদিক না , সিলেটে তাঁর সাথে কখনো আমার দেখা হয় নাই। দেখা হয়েছিল এই নিউইয়র্কে । আমি তখন ( ১৯৮৮ - ১৯৯০ ) একটা ধারাবাহিক লিখতাম দৈনিক সিলেটের ডাক এ যুক্তরাষ্ট্রের রোজনামচা শিরোনামে। এই ধারাবাহিকটি তখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আমার সে লেখাটিই আমাকে তাঁর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। নিউইয়র্কে এসেই তিনি আমার সন্ধান করেন। বন্ধুবর আব্দুর রউফ খান মিষ্টুর মাধ্যমে দেখা হয়ে যায়। তারপর তুমুল আড্ডা। আমরা ক'জন মিলে তাঁকে নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক ঠিকানা য় একটা চাকুরী যোগাড় করে দেই। তিনি সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কৃতিত্বের সাথে। তিনি আমার কাছে ছিলেন অগ্রজসম। গুরুতুল্য মানুষ। তাঁর কাছে শুনেছি, তাঁর অনেক চড়াই উৎরাই পেরোনো সাংবাদিক জীবনের কথা। একজন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হিসেবে তিনি সুনীতির প্রতি ছিলেন সব সময় অবিচল। পরবাসে মন টিকে নি তাঁর। মাত্র দেড় বছর পরই দেশে চলে যান।এরপর অবসর জীবনেই ছিলেন।২০০৬ সালে বের হয় তাঁর লেখা স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ - সহস্র বিস্মৃতিরাশি । ১৮ জানুয়ারি ২০০৯ চিরবিদায় নিয়ে চলে গেছেন আমাদের প্রিয় বাসিত ভাই। তাঁর মৃত্যসংবাদ শুনে আঁতকে উঠেছি। বেদনাহত হয়েছি ,প্রিয় স্বজনের মহাপ্রয়াণে। তাঁর কর্মপ্রেরণা ,তাঁর আদর্শ পাথেয় হয়ে থাকবে যেকোন সৃজনশীল লেখক, সাংবাদিকের - চিরকাল। তাঁর আত্মা চিরশান্তি লাভ করুক। --------------------------------------------------------------------------- তাঁকে নিয়ে এই লেখাটি লিখেছেন অগ্রজপ্রতিম সাংবাদিক , দৈনিক ইত্তেফাক এর সিনিয়র রিপোর্টার এডভোকেট তবারক হোসেইন। লেখাটি দৈনিক সমকাল- এ ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ ছাপা হয়েছে। এখানে যুক্ত করে রাখলাম। --------------------------------------------------------------------------- মোহাম্মদ আবদুল বাসিত শ্রবণ ও বাকশক্তিহীন হয়েও ছিলেন অদম্য তবারক হোসেইন ====================================== মোহাম্মদ আবদুল বাসিত সিলেটের বিয়ানীবাজারের ছোটদেশ নামে একটি গ্রামে জন্ম নিয়েছিলেন। তিনি শৈশব থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। নবম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে তার টাইফয়েড হয়েছিল। টাইফয়েড সেরেছিল; কিন্তু তিনি হারিয়েছিলেন শ্রবণশক্তি আর বাকযন্ত্রটিও হয়েছিল ক্ষতিগ্রস্থ। তিনি কানে মোটেও শুনতে পেতেন না আর কথাও ছিল অস্পষ্ট। অনেক চিকিৎসা করেও তার শ্রবণেন্দ্রিয়কে সচল করা যায়নি। তার সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করতে হতো কাগজে লিখে। ছোটবেলা থেকেই তার লেখার প্রতি ঝোঁক ছিল। বিয়ানীবাজার থেকে তিনি গল্প লিখে সিলেটের সাপ্তাহিক যুগভেরী পত্রিকায় পাঠাতেন, মাঝে মধ্যে সেখানকার খবরও। এভাবেই তিনি হয়ে উঠলেন সাংবাদিক। সম্ভবত ১৯৬৬ সালে সিলেটের সাপ্তাহিক যুগভেরী পত্রিকায় চাকরি নিয়ে সিলেট শহরে চলে আসেন। আমি তখন তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকার সিলেটের প্রতিনিধি। সেই সুবাদে আমরা দু’জন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠি। ফলে তাকে ভালোভাবে জানার সুযোগ হয়েছিল। প্রতিদিন আমাদের মধ্যে দেখা হতো। কোনো সময় দু’তিনদিনের মধ্যে দেখা না হলে তিনি আমার বাসায় চলে আসতেন আবার আমিও সেভাবে তাকে খুঁজে নিতাম। তিনি যুগভেরী পত্রিকায় যখন যোগদান করেন তখন হিমাংশু শেখর ধর (ঝর্ণা বাবু), সুধীন্দ্র বিজয় দাস প্রমুখ প্রবীণ সাংবাদিকও যুগভেরীতে কাজ করতেন। তাদের সান্নিধ্যে এসে তিনি সংবাদপত্রের প্রুফ দেখা থেকে শুরু করে সম্পাদনা পর্যন্ত সব শাখায় সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠেন। এক সময় যুগভেরী পত্রিকাটি পরিচালনার একক দায়িত্ব তার ওপর বর্তায় এবং তিনি তা সুচারুরূপে পালন করেন। ষাটের দশকে যুগভেরী পত্রিকা ছিল সিলেটের একমাত্র সংবাদপত্র। তিনি একজন কলমযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধেও বিপুল অবদান রেখেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমি এপ্রিল মাসে ভারতের করিমগঞ্জে যাই এবং সেখানকার যুব ক্যাম্পে কাজ করি। তখন করিমগঞ্জের একটি প্রেস থেকে ‘জয় বাংলা’ নামে মুক্তিযুদ্ধের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হতো। আমি সেখানে যাওয়ার পর ওই পত্রিকাটি সম্পাদনার দায়িত্ব আমার ওপর পড়ে। সম্ভবত সে মাসে বাসিতও করিমগঞ্জ শহরে গিয়ে উপস্থিত হন। আওয়ামী লীগ নেতারা ‘জয় বাংলা’ পত্রিকাটির দায়িত্ব নিলে বাসিত এটি সম্পাদনা করতেন। তবে এ পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেলে ‘সোনার বাংলা’ নামে আরো একটি কাগজ বের হয় এবং তিনি ওই পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা জোগানোর জন্য তাদের সাফল্যের খবরগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয় শিরোনামে প্রকাশ করতেন। তার সম্পাদকীয় লেখাগুলোও ছিল ভাষা নৈপুণ্যে চমৎকার অনুপ্রেরণাদায়ক। স্বাধীনতার পর দেশে এসে বাসিত যুগভেরী পত্রিকাটি পুনঃপ্রকাশের দায়িত্ব নেন এবং ১৯৭৫ সালে মাত্র চারটি দৈনিক পত্রিকা ছাড়া আর সব কাগজের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত এ সাপ্তাহিক পত্রিকাটি তিনি চালিয়েছেন খুবই দক্ষতার সঙ্গে। তিনি একজন নিষ্ঠাবান সাংবাদিক ছিলেন। সংবাদ সম্পাদনায় তার হাত ছিল খুবই ভালো। নিউজ সেন্সও ছিল তীক্ষ্ণ। আর সাংবাদিকতার দায়িত্ববোধও ছিল গভীর। পত্রিকাটির সম্পাদক ও মালিক মরহুম আমীনুর রশীদ চৌধুরী বাসিতকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং তার প্রতিভার প্রতি তার ব্যাপক শ্রদ্ধাবোধ ছিল। তিনি তার এই শ্রদ্ধা-মর্যাদা রেখেছেন যতদিন কর্মরত ছিলেন। ’৭৫-এর পর যুগভেরী পত্রিকাটি আবার প্রকাশিত হলে বাসিতের আর ওই পত্রিকায় ফিরে যাওয়া হয়নি। কারণ তিনি তখন জীবিকার জন্য অন্য পথ খুঁজছিলেন। আমেরিকায় চলে গিয়ে ওখানে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাতে সফল হননি। যদিও যুগভেরী ছেড়ে দেওয়ার পর সংবাদপত্র জগতের স্থায়ী কর্মী হননি, কিন্তু সংবাদপত্র জগতের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল অবিচ্ছিন্ন। সিলেটের প্রায় প্রতিটি কাগজে তিনি নিয়মিত কলাম লিখতেন। মাঝে মধ্যে গল্পও লিখতেন। তার কলামগুলো ছিল প্রধানত রস রচনামূলক। সমাজের যত অনিয়ম-বিশৃংখলা আর অসততার বিরুদ্ধে ব্যঙ্গাত্মকভাবে আক্রমণ করতেন তিনি। তিনি সমাজে ন্যায়বিচার, দেশে গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষে তার কলমযুদ্ধ চালিয়ে গেছেন কর্মক্ষম থাকা পর্যন্ত। মোহাম্মদ আবদুল বাসিত ছিলেন একজন মনেপ্রাণে বাঙালি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তো বটেই, তারও আগে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ১১ দফা আন্দোলনে যুগভেরী যে সাহসী ভূমিকা রাখে তাতে তার অবদানও ছিল। পূর্ববাংলার স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে তিনি ছিলেন একজন আপসহীন যোদ্ধা। তিনি সর্বতোভাবেই ছিলেন বাঙালির জাতীয় ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে একজন সচেতন ব্যক্তি। শ্রবণ ও বাকশক্তিবিহীন, মফস্বল শহরে কাজ করতেন বলে জাতীয় পর্যায়ে তার পরিচিতি ছিল কম, তাই তিনি দেশের বৃহত্তর মানুষের কাছে অচেনাই রয়ে গেলেন। তিনি ছিলেন সত্যিকারের একজন জনদরদি, সমাজের কল্যাণকামী, সৎ, দেশপ্রেমিক ব্যক্তি, একজন অত্যন্ত দক্ষ সাংবাদিক ও চমৎকার মানুষ। মৃত্যুকে সবাই আলিঙ্গন করতে হবে । বাসিতকেও করতে হয়েছে। তার বিদেহী আত্মাকে বলি, ‘তুমি চলে গেছো বন্ধু, তবে শান্তিতে থেকো।’ ## ## ########### ## সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:১৬
false
rn
শুধু কি মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্যই পিরামিড এর সৃষ্টি _ পিরামিড পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি। প্রাচীন মিশর শাসন করতেন ফারাও রাজারা। তাদের কবরের উপর নির্মিত সমাধি মন্দিরগুলোই পিরামিড হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মিসরে ছোটবড় ৭৫টি পিরামিড আছে। পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল বিশাল বিশাল পাথর খন্ড দিয়ে। পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে এমনভাবে পিরামিড তৈরি করা হত যে, একটি পাথর থেকে আরেকটি পাথরের মাঝের অংশে একচুলও ফাঁক থাকত না।মিশরীয় পিরামিডগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত পিরামিডগুলি দেখা যায় কায়রো শহরের উপকণ্ঠে গিজায়।গিজায় অবস্থিত খুফুর পিরামিড মিশরীয় পিরামিডগুলির মধ্যে বৃহত্তম।মিশরীয়রা মনে করত যতদিন রাজাদের দেহ রক্ষা করা যাবে ততদিন তারা স্বর্গে বাস করবে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী এখনো তাদের অনেক রাজা স্বর্গে আছেন। খ্রীস্টের জন্মের প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মিশরের নীল নদের তীরে গড়ে উঠেছিল এই সমৃদ্ধ সভ্যতাটি। বিশাল সব পাথর কেমন করে শত শত ফুট ওপরে তোলা হয়েছিল জানে না কেউ। জানে জানে কেমন করে কাঁটা হয়েছিল পাথরগুলো। কারণ পাথরগুলোর ধার এতই মসৃণ যে অতি উন্নত যন্ত্র ছাড়া যেটা সম্ভব নয়। পিরামিড তৈরির সব থিওরীই এখন পর্যন্ত অনুমান ও যুক্তি নির্ভর। ঠিক কোন পদ্ধতিতে কিভাবে আসলেই এগুলো তৈরী করা হয়েছিলো তা নিশ্চিতভাবে কেউই এখন পর্যন্ত প্রমান করতে পারেনি। জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতির চরম শিখরে আরোহনের পর গত কয়েক শতাব্দীতে মানুষ পিরামিডের উচ্চতার এই রেকর্ডকে ভাঙ্গতে সক্ষম হয়।পিরামিডটির অবস্থান ৩১.১৩১০১৩ দ্রাঘিমাংশ এবং ২৯.৯৭৬৯৭৭ অক্ষাংশে। পিরামিড মজার ব্যাপার হচ্ছে যে,চার হাজার চারশত বছর ধরে এটিই ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্য কর্ম, ১৮৮৯ এ আইফেল টাওয়ার নির্মাণের পর এটি তার গৌরব হারায়।ইতিহাসের জনক হেরোডেটাসের মতে, এই পিরামিড তৈরিতে ১ লাখ লোকের ২০ বছর লেগেছিলো।তবে হেরোডেটাস যে মতবাদ দিয়ে গেছেন তা পরবর্তীকালে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, প্রতিটি পিরামিড ই নির্মিত হয়েছে কোন না কোন তারার অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। বৈদিক যুগে সমগ্র পৃথিবী বৈদিক শাস্ত্র মতে পরিচালিত হত । তৎকালীন সময়ে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ ভারতবর্ষে এসে তপস্যা, সংযম এবং শাস্ত্রগ্রন্থাদি অধ্যয়ন করতেন । গত ৩০০০ হাজার বছরে অন্তত ১৬ টি মারাত্মক ভূমিকম্প কে হেলায় অবজ্ঞা করে টিকে আছে পিরামিড।সকালে যখন সূর্যের আলো ফোটে তখন প্রথম আলো পড়ে পিরামিডের চূরায়। এরপর ধিরে ধিরে তা আলো বাড়ার সাথে সাথে পিরামিডে ছরিয়ে পরে। কড়া রোদের মাঝে দূর থেকে দেখলে মনে হয় পিরামিড পানির মাঝখানে দাড়িঁয়ে রয়েছে । দিনের শেষ আলোটুকুও শেষ হয় পিরামিডের চূরা থেকে । এই আলোর খেলা আজও রহস্যময় হয়ে আছে । বিস্ময়কর পিরামিডের জন্য সারাবিশ্বেই মিসরের সুখ্যাতি আছে, যা দেখার জন্য প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক আসে। মিসরের আরও বিখ্যাত যে ক’টি জিনিস আছে তা হলো—বিশ্বে সবচেয়ে বড় নদী ‘নীল নদ’ ।মিশরের ফারাও রাজবংশই হচ্ছে পিরামিডের মূল নির্মাতা। ধারণা করা হয়, পিরামিডের প্রথম নির্মাণ কাজ শুরু হয় জোসার শাসনামলে। পিরামিড নির্মাণের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল বিপুল সংখ্যক দাস।
false
ij
মানুষ যে কারণে দরিদ্র_ লাওৎ-সের ব্যাখ্যা। এমন করুন অমানবিক দৃশ্য এশিয়ার সর্বত্রই চোখে পড়ে। আড়াই হাজার বছর আগেও এশিও সমাজে দারিদ্র ছিল; এখনও রয়ে গেছে। কেন এই ছেলেটি হাত পেতে আছে। লাওৎ-সে বলছেন-Because the rulers demand too much of life. প্রাচীন চিনের দার্শনিক লাওৎ-সেকে প্রায়শ আধ্যাত্মিক ব্যাক্তি হিসেবে উপস্থাপনার প্রবনতা রয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে, কনফুসিয়াস যতখানি বাস্তববাদী ছিলেন, তিনি ততটুকু ছিলেন না। অথচ, লাওৎ-সে ‘তাও তে চিং’ বা ‘পুণ্য পথের নিয়ম’ বইটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লে প্রাচীন চিনের এই মহৎ চিন্তাবিদের সমাজবাস্তবতার বোধ সহজেই চোখে পড়ে। ‘তাও তে চিং’ বইটির ৭৫ সংখ্যক অধ্যায়টি এই রকম: Why are the people starving? Because the rulers eat up the money in taxes. Therefore the people are starving. Why are the people rebellious? Because the rulers interfere too much. Therefore they are rebellious. Why do the people think so little of death? Because the rulers demand too much of life. Therefore the people take death lightly. Having little to live on, one knows better than to value life too much. মানুষ যে না খেয়ে রয়েছে-তার একটি কারণ সম্রাটের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত করারোপ।লাওৎ-সে তাই মনে করতেন। এর পরও কি লাওৎ-সে কে সমাজবিচ্ছিন্ন বলা যাবে? না। আর, সবচে ভয়াবহ এই যে-people think so little of death. এই বোধ থেকেই মানুষ খুন করে, রাহাজানি করে এবং ডাকাতিসহ নানান গর্হিত অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তাকে যে বাঁচতেই হবে, পরিবারটিকে বাঁচাতে হবে। এক অসহায় বোধ থেকেই মৃত্যুকে তুচ্ছ করে মানুষ পথে নামে, অন্যের কাছে হাত পাতে কিংবা গভীর রাতে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়। কারণ,the rulers eat up the money in taxes.Therefore the people are starving. মানুষ সম্মিলিত হয়ে রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করে।Because the rulers interfere too much. মানুষ মৃত্যুকে তুচ্ছ করে। কেন? Because the rulers demand too much of life.Therefore the people take death lightly. সবচে ভয়ানক কথা এটাই। the people take death lightly. কেননা, the rulers demand too much of life. এই রকম নির্মম উপলব্দির পরও লাওৎ-সে কে কেবল অধ্যাত্মবাদী বলা যায়? তবে বর্তমানে কর আদায়ের প্রক্রিয়া প্রাচীনকালের মতন অমন অমানবিক না-হলেও, আধুনিক কালে নানা সরকারের ব্যয় বেড়েছে; দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচী তার মধ্যে একটি। তবুও আজও মানুষ দরিদ্রই রয়ে গেছে। কেননা, দারিদ্র বিমোচনের নামে কী হয়- তা আমরা ভালো করেই জানি! মূল চৈনিক থেকে অনুবাদ করেছেন: Gia Fu Feng সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৪১
false
fe
দৈনিক সিলেটের ডাকের তিন দশক দৈনিক সিলেটের ডাকের তিন দশক ফকির ইলিয়াস ______________________________________ দৈনিক সিলেটের ডাক তিন দশক পূর্ণ করেছে। তিরিশ বছর দীর্ঘ সময়। এই সময়ে একজন মানুষ পূর্ণ বয়স্ক হয়ে ওঠে। সিলেটের ডাকও আজ পূর্ণ যৌবনা। বলে রাখি, আমি এক সময় সিলেটের ডাকের নিয়মিত লেখক ছিলাম। ১৯৮৯-১৯৯৬ সময়ে আমি এই বহুল প্রচারিত দৈনিকে নিয়মিত একটি কলাম লিখতাম। এর শিরোনাম ছিল-‘যুক্তরাষ্ট্রের রোজনামচা’। লেখাটি শতপর্বেরও বেশি প্রকাশিত হয়েছিল। পাঠক নন্দিত এই কলামটি আমাকে ব্যাপক পরিচিতি দিয়েছে দেশে-বিদেশে। ডাকের সাথে আমার স্মৃতি অনেক। ঐ সময়ের অন্যতম নির্বাহী মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার এখন ইংল্যাণ্ড প্রবাসী। তাঁর অনুপ্রেরণার কথা ভুলা যাবে না কোনোদিন। কিংবা তৎকালীন সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত জেলা জাজ, জনাব আব্দুল হান্নান সাহেবের স্নেহঋণ শোধ করা যাবে না। সিলেটের ডাক এই সময়ে অনেক এগিয়েছে। বাংলাদেশের মূলধারার দৈনিক কাগজের মতোই শক্তি নিয়ে সিলেটের ডাক এই প্রজন্মকে উৎকর্ষতার রসদ দিয়ে যাচ্ছে। জানাচ্ছে, এই প্রজন্মকে অগ্রসর হতে হবে মূল শিকড় ঠিক রেখে। ২০১২ সালে দেশে গিয়েছিলাম। বর্তমানে সিলেটের ডাকের নির্বাহী সম্পাদক আবদুল হামিদ মানিক। একজন তুখোড় সাংবাদিকই শুধু নন, একজন বাগ্মী চিন্তাশীল মহান মানুষও তিনি। তাঁর হাত ধরেই একঝাঁক তরুণ সাংবাদিক এখন ডাকের কাণ্ডারী। যা ভাবতেই ভালো লেগেছে আমার। আমি জানি ডাকের সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি, আমার খুব শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব জনাব ডঃ রাগীব আলী খুব সাহস করেই একদিন এই দৈনিকটির হাল ধরেছিলেন। সিলেট বিভাগবাসী তাঁর এই ঋণ শোধ করতে পারবে না এজন্য,- তিনি কাগজটিকে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিদ্ধন্ধী করে তুলতে পেরেছেন। একজন মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী এই দৈনিকটির যে আলোকবর্তিকা জ্বেলে গিয়েছিলেন, সেই রশ্মিই উড্ডীন রেখেছেন বর্তমান সম্পাদক আব্দুল হাই। বর্তমান ব্যবস্থাপনা সম্পাদক তৌফিক মজিদ লায়েক এর ব্যবস্থাপনার কাজটি করছেন দক্ষতার সাথে। একজন লেখক হিসেবে তাঁদের কাছে আমি এজন্য ঋণী, আমাদের লেখালেখির একটি মুক্ত প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন তাঁরা। লেখালেখি যাদের মননে গেঁথে যায়, তাদের পরবর্তী জীবন কেমন কাটে- তা নিয়ে আমি যে ভাবি নি, তা নয়। ভেবেছি। আর চাঁদা তোলে যেন চিকৎসা না হয়- সেই সামর্থ গড়ার জন্যই দেশ ছেড়েছি।পেয়েছি অনেক কিছু। আবার পাই নি অনেক কিছুই। পারিও নি। তারপরও ‘যে জীবন আমার ছিল না- আমি ছিলাম তার দোসর / এ কোন তন্ত্রমন্ত্র আমায় ব্যস্ত রাখে নিরন্তর’ --- এমন গান লিখে উত্তর খুঁজেছি নিজেই। আমরা জানি,মিডিয়া আজ সমাজে একটি বড় হাতিয়ার। সিলেটের ডাক সেই শক্তি ও সাহসকে কাজে লাগাতে চাইছে প্রজন্মের কল্যাণে। সিলেটের ডাক মত প্রকাশে বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সভ্যতাকেই প্রাধান্য দিয়েছে। এটাই ডাকের অন্যতম প্রাণশক্তি। আমরা দেখছি, মিডিয়ার সামনে আজ নতুন বাতায়ন উন্মুক্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে সংবাদপত্রের অনলাইন জার্নালিজমের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। বাংলাদেশেও এখন অনলাইন সংবাদপত্র চালু হওয়ার প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সংবাদপত্রগুলোর প্রায় সবারই ওয়েবসাইট রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার আগামীতে বাংলা ভাষায় অনলাইন জার্নালিজমের আধিপত্য বাড়বে। আমেরিকার প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া এসবকে ছাপিয়ে এখন অনলাইন মিডিয়া অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে। এখানে প্রায় প্রতিটি দৈনিক পত্রিকারই মূদ্রণের পাশাপাশি ইন্টারনেট সংস্করণ রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসসহ আরও বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র এখন তাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। আশঙ্কা করা হচ্ছে, অনলাইন জার্নালিজম বা ইন্টারনেটে সংবাদ পড়ার সুবিধার ফলে এক সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে সংবাদপত্রের মুদ্রণকার্য। স¤প্রতি বাংলাদেশেও বেশ ভালভাবে কয়েকটি অনলাইন নিউজ সার্ভিস চালু হয়েছে। এতে অনলাইন জার্নালিজমের পথও খুলে যাচ্ছে বাংলাদেশে। বিদেশ থেকেও প্রকাশিত বেশ কটি অনলাইন দৈনিক জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। যে কথাটি না বললেই নয়, দৈনিক সিলেটের ডাক তার অনলাইন ভার্সনটি আরও আধুনিক, আপডেটেড করবে এই প্রত্যাশা সময়ের। ইন্টারনেটে ধীরে ধীরে পাঠকও বেড়ে চলেছে পাল­া দিয়ে। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের উপর জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, যারা নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করেন- তাদের মধ্যে পত্রিকা কেনার চেয়ে ইন্টারনেটে অনেকগুলো সংবাদপত্র পড়ে নেয়। তাছাড়া এখন ওয়ান টাইম সংবাদপত্রের (৪/৫টাকা দামের ছোট পত্রিকা যা গাড়িতে বসে সময় পার করার জন্য পাঠকরা কিনে) কদর বাড়ছে। এ ধারা চলতে থাকলে আগামীতে আমাদের পাঠকও যে অনলাইনে সংবাদপত্র পড়ায় আসক্ত হবে পড়বে তা কিন্তু নিশ্চিত করেই বলা যায়। তাহলে আমাদের সংবাদপত্র শিল্পের কি হবে? এ প্রশ্নের উত্তর নিজেদেরই খুঁজে বের করতে হবে। এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বিশ্ববিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ রচনার বিষয়বস্তু ছিল কিভাবে আপনার সংবাদপত্র রক্ষা করবেন। ম্যাগাজিনের উক্ত সংখ্যায় টাইমের সাবেক সম্পাদক ওয়ালটার নতুন এক পরিকল্পনার কথা উলে­খ করেছেন যার মাধ্যমে ইন্টারনেটে সংবাদ পাঠকদের অনলাইনে সংবাদ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হবে। তিনি মাইক্রো-পেমেন্ট এর মাধ্যমে অর্থ প্রদানের কথা বলেন। একইভাবে স্বনামধন্য দৈনিক পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস-ও সংবাদপত্রের জন্য যুদ্ধপরিকল্পনা শীর্ষক শিরোনামে একটি বিশেষ রচনা প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে যে, বেশকিছু বিখ্যাত ব্লগারদের অনলাইনে বিনামূল্যে বিজ্ঞাপনের সুবিধা দেয়ার কারণে সংবাদপত্রের অন্যতম লাভজনক ব্যবসা ও শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপন আজ প্রায় ধ্বংসের পথে। এমতাবস্থায় আমেরিকায় সংবাদপত্রের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা। সংবাদপত্রের মুদ্রিত প্রকাশনায় বিজ্ঞাপন হচ্ছে অন্যতম লাভজনক একটি ব্যবসা। কিন্তু সংবাদপত্রের বিক্রি কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞাপনদাতাও বিজ্ঞাপন দেয়া কমিয়ে দেন। ঠিক এমনটাই ঘটছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্ট মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিজে। প্রায় সব পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ মানুষই বিনামূল্যে সংবাদ পড়ার জন্য পত্রিকা না কিনে ওয়েবসাইটে চলে যায়। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে পত্রিকার ওপর। পত্রিকাগুলো তাদের অনলাইন সংস্করণের জন্য বিজ্ঞাপন পাচ্ছে তবে তা মূদ্রিত বিজ্ঞাপনের কমার হারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অর্থাৎ সবমিলিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ প্রকাশের পুরনোতম মাধ্যম, সংবাদপত্র। কাগজের সংবাদপত্রের পর ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় যে টিকে থাকবে সে কথা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ মানুষের স্বভাবই হচ্ছে- ইজি, সহজলভ্য, ঝামেলাবিহীন পদ্ধতির দিকে অগ্রসর হওয়া। তাই অনলাইন মিডিয়া এসবের নিশ্চয়তা যদি দেয় তাহলে আগামীতে কাগজের সংবাদপত্র, টিভি, রেডিও এসবের দিন ফুরিয়ে না গেলেও কার্যত অর্থে হারিয়ে যাবে ধীরে ধীরে। এই যে বিবর্তনের প্রক্রিয়া, সিলেটের ডাক তা কিভাবে মোকাবেলা করবে তা ভাবতে হবে। পৃথিবীর পঠিত বিষয় হচ্ছে মানুষ। মানুষের জীবন। যাপিত জীবনের স্বাধীনতা, সমমর্যাদা ও সম-অধিকার। বহু বিচিত্র জীবনে জীবন যোগ করে সম্মিলিত জনজীবন, সেই জনজীবনের কল্যাণ। আমাদের , বাঙালী সমাজের ,স্বপ্নের সংবাদপত্রের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে এই প্রত্যয়। স্বাধীনভাবে গভীর সততার সাহসে সুস্থ সম্মিলিত জীবনের স্বার্থে সত্য অন্বেষণ ও প্রকাশ করা এবং সেটা করতে গিয়ে কারও অযাচিত অন্যায্য ক্ষতি না করা স্বপ্নের সারকথা এই। দৈনিক সিলেটের ডাক সত্যের পক্ষে সব সময় দাঁড়িয়েছে। এই পথচলা অব্যাহত রাখতে হবে। সেই সাথে বর্ষপূর্তিতে আমি কিছু প্রস্তাবনা রাখতে চাই। সে গুলো হলো- ১। 'দৈনিক সিলেটের ডাক সম্মাননা' নামে একটি পুরস্কার প্রবর্তন করা যেতে পারে। যা বাংলাদেশের গুণী লেখক,কবি,শিল্পী,সুকার, গীতিকার, সমাজসেবক,ছাত্র, চিকিৎসক, শিক্ষক এমন ব্যক্তিদেরকে দেয়া হবে। ২। বছরে অন্তত দুটি বড় ওয়ার্কশপ করতে পারে, যা থেকে নতুন সাংবাদিকরা শিকড় সন্ধানী, সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার দিক নির্দেশনা পাবেন। ৩। সমাজ সচেতনতায় সেমিনার, অপরাধ দমনে গণসংহতি ও ঐক্য নির্মানে ভূমিকা রাখা যেতে পারে। ৪। বৃহত্তর সিলেটের উন্নয়নে প্রাজ্ঞদের পরামর্শ শীর্ষক একটা ধারাবাহিক চালু করে এর স্বপক্ষে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে লিয়াজো রেখে কাজ করা যেতে পারে। এটা খুবই বেদনার কথা- দৈনিক সিলেটের ডাকের ইন্টারনেট যোগাযোগ বিভাগ খুবই দুর্বল। আমরা যারা প্রবাসী লেখক, তারা ইমেল করে জবাব পাই না। ইমেলে লেখা পাঠালে তা ডাকে গেল কী না, তা জানতে পারি না। এই অচলাবস্থার উত্তরণ দরকার। কারণ চলমান সময় ইন্টারনেট নির্ভর- তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ফেসবুকে একটা গ্রুপ থাকতে পারে দৈনিক সিলেটের ডাকের। আগেই বলেছি, জনাব ড. রাগীব আলী একজন আলোকিত মানুষ। তিনি বাংলা ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতি,মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে তাঁর কাগজ চালাবেন- এ বিশ্বাস আমার আছে। একটি মিডিয়া মানেই গণমানুষের মুখছবি। সেই মুখছবি ধারণ করেই এগিয়ে যাক দৈনিক সিলেটের ডাক। হোক আপামর মানুষের, সমাজের কন্ঠস্বর। -------------------------------------------------- দৈনিক সিলেটের ডাক ॥ বর্ষপূর্তি সংখ্যা ॥ ১৮ জুলাই ২০১৪ শুক্রবা এখানে পড়ুন দৈনিক সিলেটের ডাক http://www.sylheterdakbd.com সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:০৬
false
fe
ডিসেম্বর _ ১৯৭১ থেকে ২০১৬ ডিসেম্বর : ১৯৭১ থেকে ২০১৬ফকির ইলিয়াস=======================================সময় খুব দ্রুতই যাচ্ছে। অনেক হিসাব-নিকাশ আমাদের সামনে। ডিসেম্বর বাঙালির বিজয়ের মাস। গৌরবের মাস এই ডিসেম্বর। বাংলাদেশ ৪৫ বছর পার করে দিল। অর্জন নেই তা বলা যাবে না। কিন্তু আরো অনেক কিছুই হতে পারত। হয়নি। একটি কালো শক্তি গলা চাপা দিতে চেয়েছে এই জাতিকে বারবার। বহুবার। একটি জাতির জীবনে এমন উল্লেখযোগ্য সময় কয়েকটি মহাকাল পরই আসে। বাঙালির জন্য একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশমাতৃকার জন্ম তেমনি অবিস্মরণীয় ঘটনা। ১৯৭১ থেকে ২০১৬ সময়ে তাই এর মূল্যায়ন দরকার। এই বয়সে একটি রাষ্ট্র, একটি জাতি কতটা পূর্ণতা পেতে পারে তা নিয়ে কথা চলতে পারে পক্ষে-বিপক্ষে। কিন্তু পাওয়ার ঝুড়ি যদি তুলনামলক শূন্যের কোটায় থাকে, তবে সে দুঃখবোধ হয়ে পড়ে হৃদয়বিদারক। বাংলাদেশের বেশ কিছু ক্ষেত্রে তেমনটি হয়েছে।সাড়ে চার দশক সময়ে বাংলাদেশে প্রধান দুঃখবোধটি হচ্ছে মানুষের ন্যায্যতা ও সুশাসন। যার ফলে যে চেতনা নিয়ে রাষ্ট্রটি বিজয়মাল্য পেয়েছিল তা রোদনে পরিণত হয়েছে অনেকভাবে। একটি রাষ্ট্র কাঠামো উঠে দাঁড়ানোর আগেই তার মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে অত্যন্ত জঘন্যভাবে। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহানুভবতার সুযোগ নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল সেই পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মারা।১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গ যারা তোলেন এটাও তারা খুব ভালো করে জানেন পাকপন্থী একটি সনাতনী ব্যুরোক্রেসি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সরকার চালানো ছিল দুরূহ কাজ। সমন্বয়ের অভাব, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নিষ্পেষণ, দেশি বেনিয়া গোষ্ঠীর তীব্র অসহযোগিতা চুয়াত্তরের মন্বন্তরকে কাগুজে বাঘে রূপান্তরিত করে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাসন্তীকে ‘জাল’ পরিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনাম করা হয়, যা পরে প্রমাণিত হয়েছে। বাহাত্তর-পরবর্তী সময়ে ঘনীভূত রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার বিরোধিতার নামে হঠকারী সিদ্ধান্ত পরাজিত রাজাকারদের ভাগ্য ক্রমেই খুলে দিতে থাকে। পাকপন্থী সেনা সদস্যদের সংগঠিত করে ঘটানো হয় পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সপরিবারে নিহত হন জাতির জনক। এরপর কারা কীভাবে ক্ষমতায় এসেছে এবং কী করেছে, এদিকে নজর দিলেই বোঝা সহজ হবে পরাজিত রাজাকারদের প্রধান লক্ষ্য কী ছিল। পটপরিবর্তনের মাধ্যমে নানা ভেকভণিতা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রয়োজনে বহুদলীয় গণতন্ত্রের লেবাসে তিনি আলবদর-রাজাকারদের রাজনৈতিক পুনর্বাসন নিশ্চিত করেন। এমন হীন অপকর্ম তিনি কিছুই বাদ রাখেননি, যা তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য দরকারি ছিল। সেনা অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হলেও তার জারি করা ফরমানের ফলে রাজাকাররা স্থায়ী আসন গেড়ে নিতে সমর্থ হয়। এরপর সামরিক জান্তাতন্ত্র চলতে থাকে ওই একই ধারাবাহিকতায়। জাতীয়তাবাদের ‘বাংলাদেশী’ সংস্করণ যা শুধু ক্ষমতা দখলের মুখ্যমন্ত্র হিসেবেই কাজে লেগেছিল, তারই দ্বিতীয় সংস্করণ প্রণয়ন করেন স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ। এর পরের দশকটি বাঙালি জাতিকে কাটাতে হয়েছে স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলনে। নূর হোসেনকে শহীদ হতে হয়েছে রাজপথে, স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক এ ¯েøাগান বুকে-পিঠে লিখে। নানাভাবে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে জনগণকে। ডা. মিলনের খুনিরা মিশে গেছে, রাজনীতির কাফেলায়। সুদীর্ঘ আন্দোলন, ব্যাপক রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে নিপাত যায় স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার। যৌথ গণতান্ত্রিক উদ্যোগে প্রণীত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা। ১৯৯১-এর নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। জনগণকে বলা হয়, আমরা গণতন্ত্রের পথেই এগিয়ে যাচ্ছি। ১৯৯১-৯৬ সময়কালীন সরকার বাংলাদেশে দুর্নীতি এবং মৌলবাদের গোড়াপত্তন শুরু করে। জে. জিয়ার রাজাকার পুনর্বাসন প্রকল্পের এক্সটেনশন হিসেবে জঙ্গিতন্ত্রের বীজ রোপিত হতে থাকে বাংলার নরম মাটিতে। গ্রামাঞ্চলে এরা গড়তে থাকে দুর্গ। দুর্নীতিবাজদের চরম দাপটের গালে চড় বসিয়ে জনগণ রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন আনে ১৯৯৬-এর নির্বাচনে। ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে ক্ষমতা শেয়ার করার মানসে জাসদ একাংশের আ স ম আবদুর রব এবং জাতীয় পার্টির একাংশের আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে মন্ত্রিত্ব দেন। কিন্তু থেমে থাকেনি রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি। আওয়ামী লীগের ক্ষমতাবানরা দু-দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নিজেদের দখলে রেখে চালাতে থাকেন ক্ষমতার ত্রাসতন্ত্র। দেশটি শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের তালিকায় স্থান পেতে থাকে। অন্যদিকে মৌলবাদী জঙ্গিরাও সংগঠিত হতে থাকে তলে তলে। আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা ঘাতক-রাজাকারদের বিচারের ব্যাপারে আগে সোচ্চার থাকলেও ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তারা তা বেমালুম ভুলে যান বরং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জামায়াতিদের সঙ্গে আওয়ামীপন্থিরা অনেক জয়েন্টভেঞ্চার ব্যবসা-বাণিজ্যও গড়ে তোলেন। এসব ফিরিস্তি দেশবাসীর অজানা নয়।ফলে আবারো পতন ঘটে আওয়ামী লীগের। দেশের জনগণ ২০০১-এর নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের জোটকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে সংসদে নিয়ে আসে। তারা ক্ষমতায় বসে। ২০০১ থেকে ২০০৬ এ সময়টি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম কালো অধ্যায়। পুরো দেশটিকেই ক্রিকেট খেলার মাঠে পরিণত করে জোটের নেতা-মন্ত্রীরা। প্রধানমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় তার পুত্রদ্বয় তারেক-কোকো হয়ে ওঠে দেশের সর্বোচ্চ নেপথ্য নীতিনির্ধারক। সবকিছুকে ‘ডেম কেয়ার’ করে গণভবনের আদলে গড়ে ওঠে প্যারালাল হাওয়া ভবন। দেশ পরিণত হয় জঙ্গিদের লীলাক্ষেত্রে। যত্রতত্র বোমা ফুটতে থাকে। আক্রান্ত হতে থাকেন দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা। আদালত প্রাঙ্গণ ভেসে যায় রক্তে।এই নির্মমতম ঘটনাগুলোর নেপথ্য কাণ্ডারি ছিল সেই পরাজিত রাজাকার শক্তি। যারা ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ পরিকল্পিতভাবে বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। এই ঘাতকদের উত্তরসূরিরাই কবি শামসুর রাহমান, ড. হুমায়ুন আজাদকে আক্রমণ করেছিল, তা পরে তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে। শুধু ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে তাদের গডফাদার রাজাকার পাষণ্ডরা। এভাবেই বাংলাদেশের একটি ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট অনিবার্য হয়ে ওঠে। দেশে ঘটে যায় একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের অবকাঠামো। এই সময়ে বিচারের মাধ্যমে দুই প্রধান জঙ্গিনেতা শায়খ আবদুর রহমান এবং বাংলাভাইকে ফাঁসি দেয়া হয়। প্রশ্নটি হচ্ছে এই দুই জঙ্গিকে ফাঁসি দেয়ার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদকে কি বাংলার মাটি থেকে সমূলে বিনাশ করা গিয়েছিল? না- যায়নি, বলেই হলি আর্টিজানে আমরা দেখেছি রক্তবন্যা।৪৫ বছরের বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে মৌলবাদের প্রসার। মৌলবাদ দমনে বিশ্বের নীতিনির্ধারকরা প্রকৃতপক্ষে আন্তরিক কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, মৌলবাদ সব সময়ই সামন্তবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে ভেঙে খান খান করে দিতে পুঁজিবাদীরা এটাকে ব্যবহার করেছে। এমন কি গোত্রগত সংঘাত চাঙ্গা করে রাখতেও ব্যবহৃত হয়েছে মৌলবাদী দানতন্ত্র। তবে কি পরোক্ষভাবে গণতন্ত্রই মৌলবাদের সহচর? আসতে পারে সে প্রশ্নটিও। দেখা গেছে, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার নামে কোনো কোনো দেশে মৌলবাদকে উসকে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- এটাও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। পুঁজিবাদীরা একে ব্যবহার করেছে তাদের প্রয়োজনে। পরে দেখা গেছে, এভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে বিষবাষ্প। দূষিত হয়ে গিয়েছে ক্রমশ! গোটা বিশ্বের মুক্তিকামী গণতান্ত্রিক মানুষের নিঃশ্বাসের আবাসস্থল। বাংলাদেশে যে সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে তা করতে হচ্ছে এই কালোশক্তিকে মোকাবেলা করে। এর সঙ্গে যুক্ত থাকছে ক্ষমতাসীনদের কারো কারো দখলদার মনোবৃত্তি। এদের কি সরকারপ্রধান দেখছেন না? এরা যে সরকার ও দলের জন্য খুব ভয়ঙ্কর- তা কি সরকারপ্রধানের অজানা?ডিসেম্বর এলেই আমার যে কথাটি খুব মনে পড়ে তা হলো আমরা একটি শান্তির দেশ চেয়েছিলাম। কেমন আছেন এই দেশের সাধারণ মানুষ? খবর বেরিয়েছে- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হককে মন্ত্রিসভা থেকে সরানো ও গ্রেপ্তারের দাবিসহ সারা দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন শেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান আদিবাসী পার্টির নেতা-কর্মীরা। সেখানে তারা বলেছেন- ‘স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও সরকার দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা হয়েছে, নির্দোষ রসরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন বলছে রসরাজ নির্দোষ। তারপরও তার জামিন হচ্ছে না। গাইবান্ধায় সাঁওতালদের বাড়িঘর ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সরকার ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেখানে জনপ্রতি ছয় হাজার টাকা করে অর্থ সাহায্য করলেও তাদের ৩০০ পরিবারের বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়নি। তারা অসহায় জীবনযাপন করছে।’ এর মাঝেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- দেশের আর্থ-সামাজিক ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দরকার। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। সেই বাংলাদেশ আজও চায় প্রজন্ম। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এর বিকল্প নেই। কারণ একটি রাষ্ট্রের মৌলিক শক্তি হলো সেই জাতির বিশ্বাস ও প্রত্যয়। এই ডিসেম্বরে সে কথাটি আমি আবার সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই।-------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৪
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৪১ ১. প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর চুল বড় করার একটা খায়েশ হয়েছিলো আমার। অনেকে বাগান করেন, কেউ কেউ পাখি পালেন, অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছ পালেন আমাদের মাছপাগল হের রেহমান, কুকুরবিড়ালখরগোশও পালেন অনেকে, আমি চুল (মাথার) পোষার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আমার সহপাঠী বা বন্ধুরা সবাই একে স্বাগতম জানাননি। প্রাথমিক পর্যায়ে একজন এসে জানালেন, মাইক্রোস্কোপের নিচে মশাকে যেমন দেখায়, আমাকেও নাকি সেরকম দেখাচ্ছে। আরেক বন্ধুর সাথে একই রিকশায় চড়ে বাড়ি ফিরি, তিনি একদিন অভিযোগ করলেন, তার এক বন্ধু নাকি ফোন করে ঝাড়ি দিয়েছে, "তুই এত লম্বা কাউলা একটা মাইয়ার লগে প্রেম করস, আমাগো লগে আলাপ করায়া দ্যাস নাই ক্যা?" সেই বন্ধুর বন্ধুর বোধহয় গ্লুকোমা ছিলো, তা না হলে আমার হাফকাস্ত্রো দাড়ি কিভাবে তার নজর এড়িয়ে গেলো, সেটাও প্রশ্ন। তবে মাস দশেকের চেষ্টায় আমি চুলকে পোষ মানিয়ে ফেললাম। দুর্জনেরা আমাকে "কেশবৎ" বলে ব্যঙ্গ করার চেষ্টা করলেও গর্বের সাথে বলতে পারি, তাদের অনেকেরই মাথায় টাকের আভাস দেখা যাচ্ছিলো সেই সময়েই। সেইসব হিংসুকদের মুখে ছাই দিয়ে আমার চুল দিনকে দিন শনৈঃ শনৈঃ বৃদ্ধি পাচ্ছিলো পূর্বপুরুষের পূণ্যগুণে। তবে চুলকে পোষ মানাতে গিয়ে টের পাই, এরচেয়ে মাছ কিংবা খরগোশই ভালো ছিলো। শহরের ধূলিবহুল এলাকায় বাস করি বলে প্রায় রোজই শ্যাম্পু দিয়ে মাথা পরিষ্কার করতে হতো। এছাড়া আমার মা এবং বোন মাঝে মাঝেই নানারকম ভেষজ গবেষণার জন্যে আমাকে গিনিপিগ হিসেবে বেছে নিতেন। শুক্রবার সকালে তাঁদের আবিষ্কৃত কোন একটি বিকটগন্ধী আরক আমাকে মাথায় মেখে বসে থাকতে হতো ঘন্টাখানেক। এতে আমার চুলের গুণবৃদ্ধি হলেও সংখ্যা হ্রাস পেতো, সেটা টের পেতাম হাড়ে হাড়ে। তৎকালীন বান্ধবী চুল নিয়ে তেমন আপত্তি করেননি, তবে মাঝে মাঝে টান দেয়ার চেষ্টা করতেন। চুল এবং দাড়ির সাথে রাত্রি জাগরণের রক্তচক্ষু যোগ হওয়ায় বিভিন্ন বিল দিতে গিয়ে ব্যাঙ্কে আমি অন্যায় সুবিধা নিতাম। একেবারে শেষ বর্ষে এসে জনৈক সদ্যযোগদানকারী প্রভাষক ছাড়া প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোন শিক্ষক আমার মতো একজন নগণ্য ছাত্রের চুলের দৈর্ঘ্য নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করেননি। আমার দীর্ঘ ছয় বছরের সাধনা ধূলিস্যাৎ হয় শেষ টার্মের পরীক্ষা দেয়ার পর পর বান্দরবান-লোয়ার রাঙামাটিতে এক রোমহর্ষক ট্রেকযাত্রার বোনাস হিসেবে পাওয়া তীব্র ম্যালেরিয়ার সময়। এভাবে মানুষের মাথার চুল গোছা গোছা উঠে আসতে পারে, তা-ও আবার নিজের মাথা, না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। একেবারেই ব্যাঙ্করাপ্ট হবার আগেই আমার চুল বাটিছাঁট দিয়ে ফেলা হয়। একশো তিন থেকে একশো সাত ডিগ্রী জ্বরের মধ্যে থাকতাম বলে এ ব্যাপারে অসম্মতির সুযোগও তেমন একটা ছিলো না। ষোল কেজি হারানো ওজনের মধ্যে অন্তত এক কেজি চুলে ছিলো বলে আমার ধারণা। চুল হারানোর পর নিজেকে ওল্ড টেস্টামেন্টের শিমশোনের মতো মনে হতে লাগলো, তবে হাতের কাছে কোন দেলাইলা ছিলো না বলে আয়নায় অচেনা আমিকে দেখে বিরক্ত হওয়া ছাড়া গতি ছিলো না। এ ছাড়া পরিচিত লোকজন দেখেও চেনে না, ভাইয়ের বিয়েতে গিয়ে তার তুতো-শালিদের প্রশ্নের মুখে পড়লাম, হিমু ভাই আসে নাই কেন? ইচ্ছা করছিলো ধরে ... যাই হোক। যাই হোক, চাকরিবাকরি করি বাটিছাঁটা চুল নিয়ে, একদিন বিকেলে এক মার্কেটে দেখা হলো আমার সেই পুরনো কেশবিদ্বেষী প্রভাষকের সাথে। আমার মাথা দেখে তিনি রীতিমতো উলু দিয়ে উঠলেন। জানতে চাইলেন বস ধরে কেটে দিয়েছে কি না চুল। বিনয়ের সাথে বললাম, আমার চুল নিয়ে সময় নষ্ট করার মতো নির্বোধ বসের অধীনে চাকরি করি না। তিনি অগ্নিদৃষ্টি হেনে চলে গেলেন গটগটিয়ে। আমি চুল কেটে ফেলার পর লম্বাচুলো ছেলেপিলেদের দেখলে অসহ্য লাগতো। মনে হতো, বাটিছাঁট রুলজ। আমার ধারণা সত্যি প্রমাণ করে বছর কয়েকের মাথায় দেশ বাটিছাঁটদের দখলে চলে যায়। এই প্রবাসে এসে চুল ছাঁটার কাজে ইস্তফা দিয়েছি আবার। আজ থেকে দশ বছর আগে আমার মাথার চুলের ডেনসিটি দুইতিনগুণ ছিলো বলেই আমার ধারণা, অন্তত পুরনো ছবি দেখলে সেরকমই মনে হয়। তবে আয়নায় নিজের লম্বা চুল দেখে কিছুটা নস্টালজিক হয়ে পড়লাম সেদিন। আমার কাছের এক বন্ধু চুল ছাঁটার পর একদিন পথে আমাকে দেখে চমকে গিয়ে এ কথাটাই বলেছিলো, আমার ছোট চুল দেখে নাকি তার ছয় বছর আগের কথা মনে পড়ে গিয়ে নস্টালজিক লাগছিলো। হেসেছিলাম সেদিন, চুলও স্মৃতির মাইলস্টোন হয়ে থাকে জেনে। অনুভব করছি আবারও, কথাটা সত্যি। কেশবৎ হয়ে যেটা লস, তা হচ্ছে নাপিতের অভিজ্ঞতা না হওয়া। আবারও পড়ালেখা ফুরোলে হয়তো চুল ছাঁটাবো, তার আগে জার্মানির নরসুন্দরীদের ওপর কিছু লিখতে পারছি না। ২. সবজান্তাকে ধন্যবাদ। রাত জেগে বসে এতক্ষণ দেখলাম "লিটল ম্যানহাটান"। অপূর্ব লেগেছে। বহু বছর আগে একই রকম আপ্লুত হয়েছিলাম "দন হুয়ান দি মার্কো" আর "অ্যাডিক্টেড টু লাভ" দেখে। অনুচ্চকিত, ছিমছাম, কিন্তু খুব ছাপ ফেলা সিনেমা। যাঁদের দেখার সুযোগ আছে, দেখে নিতে পারেন।
false
hm
ঘর হতে নাহি দুই পা ফেলিয়া ঢাকা ক্রমশ নানারকম সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেশে ফোন করলে সবার সাথে কথোপকথনের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে ঢাকায় বসবাসের তিক্ত অভিজ্ঞতা বিনিময়। এই শহরে আমি জন্মালেও বড় হইনি, শহরটাও বড় হয়েছে আমাকে ছাড়াই। এই দূরত্ব শুধু বেড়েছে বিগত বছরগুলোয়। ঢাকা আক্রান্ত হয়েছে প্রথমত ডিজাইন প্রবলেমে। নগরবিদেরা আমার চেয়ে ভালো বলতে পারবেন, কিন্তু এই শহরটি উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত হলেও উত্তর-দক্ষিণ বরাবর রাস্তা কম। ঢাকায় স্থায়ী আর অস্থায়ীদের যাতায়াতে প্রতিটি রাস্তা দিনের প্রতিটি মুহূর্তে জ্যামকণ্টকিত, দিনে গড়ে চার ঘন্টা করে সময় ব্যয় হয় ঘর থেকে বেরোতে আর ঘরে ফিরতে। ঢাকায় জনসংখ্যার তুলনায় পাবলিক ট্র্যান্সপোর্ট অপ্রতুল, আর রাস্তার একটি বড় অংশ দখল করে থাকে প্রাইভেট কার। সরকার এই সমস্যা নিয়ে নির্বিকার। আমি ভাবছিলাম, কেন আমরা ঘর ছেড়ে বেরোই? সম্ভাব্য উত্তরগুলি দেখলাম, ঘর ছেড়ে হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাই, কিংবা যাই অফিসে। এর বাইরে যাওয়া যায় কেনাকাটায়। নিশ্চয়ই আরো হাজারটা উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়ে বেরোই আমরা, কিন্তু প্রধান খাত তো এই তিনটিই। প্রতিদিন সকালে লক্ষ লক্ষ লোক সরু কয়েকটি রাস্তা ধরে হয় উত্তর থেকে দক্ষিণে, নয়তো দক্ষিণ থেকে উত্তরে ছুটছে। ভাবছিলাম, চট করে শহরে বড় মাপের কোন পরিবহন সমাধান চালু করা সম্ভব নয়। পাতাল রেল বা দোতলা রেল, দু'টিই অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ, আর যতদিন কাজ চলবে ততদিন নরকযন্ত্রণা পোহাতে হবে সবাইকে। বিকল্প থাকে, এই কমিউটিংকে মিনিমাইজ করা। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে কি ডিস্ট্রিবিউটেড অফিস সিস্টেমস চালু করা সম্ভব না? ঘর ছেড়েই বের হবার প্রয়োজন কমিয়ে আনা যাবে তাতে। ঘুম থেকে উঠবো আটটার সময়, দাঁত মেজে গোসল করে নাস্তা সেরে কাঁটায় কাঁটায় ন'টায় লগ-ইন করবো অফিসের পোর্টালে। যা কিছু কাজ আছে, অনলাইনে পেয়ে যাবো, সেগুলো করা শুরু করবো। লাগবে শুধু নির্ভরযোগ্য কমিউনিকেশন আর এনার্জি ব্যাকবোন। হাতের কাছে তো অফিসের মোবাইল আছেই, যে কোন প্রয়োজনে হাজির আছি সকাল ন'টা থেকে। শোবার ঘরটাকেই কাজের ঘর বানিয়ে ফেলবো, কম্পিউটার/ল্যাপটপ তো অফিস দিচ্ছেই। এর ইমপ্যাক্টটা চিন্তা করে দেখুন একবার। ছোট্ট একটা কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা থাকবে অফিসে, ম্যানেজারসহ দু'তিনজন থাকলেই যথেষ্ঠ। অনেক ছোট জায়গা নিয়ে অফিস চলতে পারে, বিদ্যুৎ তাতে খরচ হবে কম, ফলে দিনের বেলায় লোডশেডিংও তুলনামূলকভাবে কম হবে। এমপ্লয়ির বেহুদা যাতায়াত খরচটা বাঁচে, বাঁচে বাস-সিএনজি তাড়া করার হ্যাপাটা, আর এমপ্লয়ারের বাঁচে ফালতু অফিস স্পেস ভাড়া আর ইউটিলিটি খরচা। ঘরের খেয়ে অফিসের মোষ তাড়ানোতে একটা আলাদা জোশ কাজ করবে। ফাঁকিবাজির সম্ভাবনা বাড়তে দেখতে পারেন অনেকে, তাহলে বলি, ফাঁকিবাজি কি অফিসে বসে হয় না? যে ম্যানেজ করতে জানে, সে দূর থেকেও ম্যানেজ করতে জানে। ওসব ছেঁদো যুক্তি। হপ্তায় একটা দিন বড়জোর জেনারেল উইকলি মিটিঙের জন্য বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। আসুন, অফিস যাওয়ার হাঙ্গামা থেকে ঢাকা শহরকে বাঁচাই, নিজেরা বাঁচি। রাস্তাটুকু ছেড়ে দিই ছাত্রছাত্রী আর বাজারুদের জন্যে।
false
fe
রক্তপাতের বিপক্ষে মানুষের অবস্থান রক্তপাতের বিপক্ষে মানুষের অবস্থান ফকির ইলিয়াস ===================================== বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার সহসা উন্নতি হবে, এমন কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। একটা প্রত্যাশার বাণী শুনিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার ঘোষণা ছিল, তিনি বদলে দেবার সূচনা করবেন গোটা বিশ্ব। কিন্তু দশ মাসে এর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বরং যুদ্ধ চলছে। মৃত্যুর লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। বোমা হামলা কিংবা আত্মঘাতি বোমার আওয়াজ ভীত সন্ত্রস্থ করে তোলছে মানুষের মন। সম্প্রতি পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেটস হিলারী কিন্টন। এই সফলকালে তিনি বলেছেন, পাকিস্তানে ইসলামিক মিলিট্যান্ট শক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান অব্যাহত থাকবে। পাকিস্তানে আসলে কি হচ্ছে ? আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে জঙ্গিরা এতো শক্তি সাহস কোথা থেকে পাচ্ছে ? এসব প্রশ্ন উঠছে খুব সঙ্গত কারণে। পেশওয়ারের একটি আত্মঘাতি বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা একশত। আহত হয়েছে দুই শতাধিক। এই বোমা হামলাকারীরা মসজিদ পর্যন্ত উড়িয়ে দিয়েছে। এর কারণ কি ? ধর্মই যদি তাদের আরাধ্য বিষয় হয়, তবে মসজিদ তাদের হাতে আক্রান্ত হবে কেন ? এটা সবার জন্য পাক-আফগান সীমান্তে আল কায়েদা, তালেবান শক্তিরা একটি শত্রু ঘাঁটি গড়ে তোলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড' ওসামা বিন লাদেনও রয়েছেন এই মরু প্রদেশে। এমন আশংকা যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন থেকেই করে আসছে। এরপরও মার্কিন গোয়েন্দাদের সকল কারিগরি শক্তির চোখে ধুলো দিয়ে লাদেন এই অঞ্চলে তার জঙ্গিবাদ চালিয়েই যাচ্ছেন। বর্তমান সময়ে জঙ্গিবাদের অন্যতম চারণ ভূমি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া। এর প্রধান কারণটি হচ্ছে, এই অঞ্চলের মানুষ ধর্মের বিষয়ে অত্যন্ত সরলপ্রাণ এবং সুদৃঢ় বিশ্বাসী। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ধর্মীয় সমাজ কল্যাণের নামে ‘হিজবুত তাহরীর’ কিংবা দাওয়াতুল ইসলামের মতো কোন সংগঠন রাজতন্ত্র শাসিত সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, দুবাই,ওমান প্রভৃতি দেশে গড়ে উঠতে পারেনি কিংবা পারবেও না। অথচ সকল নবী, রাসুলদের আবির্ভাব সেই আরব মল্লুকেই হয়েছিল। এর কারণ কি ? কারণটি হচ্ছে কট্টরপন্থিদেরকে প্রধান মুসলিম দেশগুলো, নিজ দেশে পৃষ্ঠপোষকতা করে না। অথচ আমরা পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই সংবাদ দেখি উপমহাদেশের অনেকগুলো ধর্মীয় সংগঠন মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফান্ড পায়। কেন এই ফান্ড দেয়া হয় ? এর নেপথ্য উদ্দেশ্য কি ? যারা, যে সব রাষ্ট্র প্রধানরা - নিজ দেশে ‘এক্সট্রিম পলিটিক্যাল মোটিভেশন’ লালন করে না, তারা অন্য দেশে এর পৃষ্ঠপোষকতা কেন করে ? এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মি· স্টিফেন চাকলার বলেন, রাজতন্ত্রী দেশগুলো হচ্ছে ধর্মীয় সুবিধাবাদে বেশি লাভবান। কারণ তারা বংশ পরম্পরায় একটি দেশ শাসন করে। আর নিজের রাষ্ট্রে গণতন্ত্রকে হত্যা করে অন্য দেশে ধর্মীয় কট্টরবাদ জিইয়ে রাখার জন্য সেই সব তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর একটি চক্র দায়ী। এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। তা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের গণমানুষের মুক্তি সংগ্রাম কিন্তু ধনী আরব মুল্লুকের জোরালো সমর্থন কোনদিনই পায়নি। না পাবার কারণ কি ? কারণটি হচ্ছে, তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার সাহস তৈল সমৃদ্ধ আরব দেশগুলো কখনোই করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না, তেলের বদলে যুক্তরাষ্ট্র আরব বিশ্বের রাজা, বাদশাহ, খলিফা, সুলতানদের বংশ পরম্পরায় শাসনের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করে যাচ্ছে। দুই· একটি রাষ্ট্র কাঠামোতে ধ্বংস নামে, যখন রাষ্ট্র পরিচালকরা‌ কোন অশুভ শক্তি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত কিংবা প্ররোচিত হন। যে পাকিস্তানে আজ সরকার বনাম জঙ্গিদের গৃহযুদ্ধ চলছে, সেই পাকিস্তানে জঙ্গিরা মদদ পেয়েছে সামরিক স্বৈরাশাসকের। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য হাত মিলিয়েছিলেন জঙ্গিবাদী অপশক্তির সাথে। ফলে তারা তাদের বিষদাঁত শক্ত করতে পেয়েছে পাকিস্তানের মরুভূমিতে। প্রায় একই অবস্থা ঘটেছিল বাংলাদেশেও চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে। এখানে একটি সঙ্গত প্রশ্ন উত্থাপন করা খুব জরুরি মনে করি। তা হচ্ছে ২০০১-২০০৬ সালে বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়টির দায়িত্ব কার হাতে ছিল ? আমরা জানি এ সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ কোন মন্ত্রী ছিলেন না। এর নেপথ্য কারণ কি ? পনেরো কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। এই দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়টি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। কেন একজন প্রতিমন্ত্রীর হাতে ছিল সর্বময় ক্ষমতা ? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এ সময়ে এই মন্ত্রণালয়টি চালাতো বিশেষ একটি মহলের সিন্ডিকেট। একটি ভবন নিয়ন্ত্রণ করতো সবকিছু। ফলে, শিক্ষা, অর্থ সহ আরো বেশ কিছু মন্ত্রণালয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী থাকার পরও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ কোন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়নি চারদলীয় জোট সরকার। যা সে সময়ে ছিল অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কারণ দেশের শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতোই নাজুক থাকার পরও এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেন নি খালেদা-নিজামীর জোট সরকার। বাংলাদেশ এখনও সেই জঙ্গিবাদের দহন বয়ে বেড়াচ্ছে। যত্রতত্র গড়ে উঠা এসব জঙ্গিবাদী সংগঠন বিভিন্নভাবে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বে সকল নাশকতা মূলক কাজের হোতাদের মাঝে একটা যোগসূত্র আছে। আর তা হচ্ছে এরা গোটা বিশ্বকে অশান্ত করতে চায়। মানুষকে ভীত করে তোলতে চায়। সহিংসতার বিষবাষ্প ছড়াতে চায়। মানুষের অর্থনৈতিক মন্দার চরম ক্রান্তিকালে সামাজিক অশান্তিটি হচ্ছে বাড়তি দুঃখ। যারা একটি গোষ্ঠী ভিত্তিক মতবাদ কায়েম করে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেবার কথা বলে এরা মূলতঃ সমাজে কলহই ছড়াচ্ছে বেশি। প্রকারান্তরে বিশেষ মহলের স্বার্থ হাসিল করছে। এই সব হানাহানি, এই সব রক্তপাতের বিরুদ্ধে মানুষের অবস্থান শক্ত করতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সম্মিলিত ভাবে সবাইকে। আর যারা সরকার চালান, যারা রাষ্ট্রপরে নিয়ন্ত্রক তাদের কে একটি কথা মনে রাখতে হবে গভীরভাবে। তা হচ্ছে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সুবিচার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি। আমরা দেখেছি জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে একুশে আগষ্টের বোমা হামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হয়েছে। তা সফল হয়নি। যেমনটি হয়নি সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসি দেবার পরও ইরাকে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। বিশ্বে আজ ন্যায়ের ধারা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। তা হলে সকল শুভ কর্মের উদ্যোগই ব্যাহত হবে বার বার। নিউইয়র্ক, ৩১ অক্টোবর ২০০৯ -------------------------------------------------------------------- দৈনিক উত্তরপূর্ব । সিলেট । ৩ নভেম্বর ২০০৯ মংগলবার প্রকাশিত ছবি- হোসে ডিয়াজ সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০০৯ রাত ৯:৩৯
false
rn
চলো আজ কিছু বেলুন আকাশে উড়াই বেলুনের ছবিটা আমার'ই তোলা।সকালে ঘুম থেকে উঠে, তাড়াহুড়া করে গোসল করে অফিসের উদ্দশ্যে বের হয়ে যাই। কোনোদিন নাস্তা খাই, কোনোদিন খাই না। আজ নাস্তা খাওয়া হয়নি, ঘরে আটা ছিল না। কোনোদিন আটা থাকে তো ডিম বা আলু থাকে না। রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকি- কখন বাস আসবে। এদিকে অফিসের সময় চলে যাচ্ছে। হঠাৎ দুই একটা বাস আসলেও যাত্রী বোঝাই থাকে। দুই একজন নামলে উঠে দশ জন। অনেকেই ধাক্কা-ধাক্কি এবং লাফা-লাফি করে উঠে যায়। কিন্তু আমি পারি না, অসহায় এর মত দাঁড়িয়ে থাকি। রাগে-দুঃখে চোখ ভিজে আসে। এদিকে সময় চলে যাচ্ছে। রিকশায় যাবো সে উপায় নেই, অনেক টাকা ভাড়া। আমার জন্য রিকশায় চড়া মানে বিলাসিতা করা।কখনো-সখনো বাসে উঠে সিট পাওয়া ঈদের আনন্দের চেয়ে কম নয়, যেখানে বাসে পা রাখার মত জায়গা পাওয়াই বিশাল ভাগ্যের ব্যাপার। বাসের যাত্রীদের ধাক্কা-ধাক্কিতে আমার আয়রন করা জামা নষ্ট হয়ে যায়, জুতো মানুষের পায়ের পাড়ায়-পাড়ায় নোংরা হয়ে যায়। প্রতিদিন বিধ্বস্ত এবং ঘামে ভিজে আমাকে অফিসে যেতে হয় এবং বাসায় ফিরতে হয়। অফিস শুরু হওয়ার দেড় ঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হই। তারপরও প্রতিদিন অফিসে সঠিক সময়ে পৌছাতে পারি না। কোনোদিন যদি বাসে উঠার সুযোগ পাই-ও, কিন্তু বেশি দূর যেতে পারি না, রাস্তায় লম্বা জ্যাম। নেমে দ্রুত হাঁটা দেই। নোংরা ফুটপাত, ভাঙ্গা রাস্তা আর সামান্য বৃষ্টি হলে প্যাক কাদা তো আছেই। অফিসে গিয়েও শান্তি নেই। সারা দিনের জন্য অনেক গুলো কাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয়। আবার সেই বাসে-বাসে এক অফিস থেকে অন্য অফিস। সেই জ্যাম, গরম। ঘামে ভেজা শার্ট নিয়ে সারাটা দিন ঘুরে বেড়াই। দুপুরে ক্ষুধা পেলে কোনো হোটেলে ঢুকে ভাত মাছ খেতে পারি না। অনেক খরচের ব্যাপার। পকেটে থাকে অল্প কিছু টাকা। রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে- চা বিস্কুট অথবা রুটি কলা খেয়ে নিই হাসি মুখে। ক্ষুধার জ্বালায় মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে বড় কোনো হোটেলে ঢুকে প্রিয় সব খাবার গুলো অর্ডার করে আরাম করে বসে চিবিয়ে চিবিয়ে খাই। একদিন তো ক্ষুধায় পাগল হয়ে এক হোটেলে বসে পড়লাম কিন্তু খাবারের দাম শুনে মাথা নিচু করে বের হয়ে যাই। সন্ধ্যায়, কখনও কখনও বা রাতে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরি। ঘামে শার্ট গায়ের সাথে লেপ্টে থাকে। কপাল বেয়ে টপ টপ করে ঘাম ঝড়তে থাকে। আমার স্ত্রী ঘামের বাজে গন্ধের তোয়াক্কা না করে আমাকে জড়িয়ে ধরে, কপালে চুমু খায়। তাড়াতাড়ি লেবুর সরবত বানিয়ে দেয়। আমি সরবত খেয়ে বিশ্রাম নিই। তখন আমার স্ত্রী সারা দিনের জমিয়ে রাখা কথা গুলো এক আকাশ আগ্রহ নিয়ে বলে যায়। সারাদিন এত পরিশ্রম করেও আমি বেচারিকে আর্থিক স্বাছন্দ দিতে পারি না। অল্প কিছু টাকা বেতন পাই। মাসের বাজার করার পর হাতে আর তেমন কিছু অবশিষ্ট থাকে না। বউ ভাবে একদিন আমার অনেক-অনেক টাকা হবে, আর সেদিন সে সারা ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে শপিং করবে। নিজের মনের মতোন করে ঘর সাজাবে। অফিস থেকে ফেরার সময়- রাস্তার পাশে মাছের বাজারে একবার ডু মারি। ইচ্ছে করে সব গুলো বড়-বড় মাছ গুলো কিনে নিই। পকেট ফাঁকা থাকায় আর মাছ কেনা হয় না আমার। মনে মনে ভেবে রাখি- সামনের মাসে বেতন পেয়ে সবার আগে পাঁচ রকমের পাঁচ কেজি মাছ কিনব। মাসের পর মাস চলে যায়, সেই মাছ গুলো আর কেনা হয় না। মাছ কেনার টাকা গুলো দিতে হয়- ডাক্তার আর ঔষধের পেছনে। অফিসের কাজে সারাদিন এত পরিশ্রম করি- তারপরও অফিস আমার কাজ দেখে না। বেতন বাড়ায় না, সুযোগ সুবিধা বাড়ায় না। বরং সারাক্ষন ভয়ে ভয়ে থাকি- কখন চাকরি চলে যায়। তখন তো না খেয়ে মরতে হবে। আমার তো ধনী কোনো আত্মীয় স্বজন নেই- যে, বিপদে পড়লেই ছুটে যাবো তার কাছে। দিনের বেলা আমি যখন কোনো বাসে হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে থাকি, তখন আমার বউ ফোন দিয়ে বলে- রাতে কি রান্না করবো? ঘরে তো কিছু নেই। আসার সময় ডিম আর আলু নিয়ে এসো। তখন আমি একটি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলি- আচ্ছা। কখনও কখনও মাসের বিশ তারিখে ঘরের বাজার শেষ হয়ে যায়। বেতন পাওয়ার আগের ক'টা দিন কিভাবে চলবো- রাতে ভাবতে ভাবতে আমি এপাশ-ওপাশ করি। আমার ঘুম আসে না। এক আকাশ চিন্তা আর অস্থিরতা নিয়ে আমি ছট-ফট করি। পাশে আমার স্ত্রী তখন গভীর ঘুমে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব মায়া হয় আমার। তখন ভাবি যত কষ্ট'ই হোক এই বৈশাখে অবশ্যই তাকে খুব সুন্দর একটা শাড়ি কিনে দেব। ছোট ছোট সব স্বপ্ন আমার- তাও সত্যি হয় না। বিশেষ-বিশেষ দিন গুলো আমি বউ নিয়ে বেড়াতে যেতে পারি না। পকেট ফাঁকা। ছুটির দিনে বউ বলে, অনেকদিন আমরা রিকশায় করে কোথাও যাই না, চলো, আজ অনেকক্ষন আমরা রিকশায় করে ঘুরে বেড়াবো। আমার স্ত্রীর বাচ্চার খুব শখ। আমি নিজেও বাচ্চা খুব ভালোবাসি। কিন্তু খরচের ভয়ে বাচ্চা নিতে পারছি না। এদিকে হু হু করে সময় চলে যাচ্ছে। বুকের মধ্যে হাহাকার করে উঠে। আমি চুপ করে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াই। আকাশের দিকে তাকিয়ে ইশ্বরকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করি। সারা জীবন সৎ থেকেছি, সজ্ঞানে কারো কোনো ক্ষতি করিনি। কোনো দিনও কারি-কারি টাকা পয়সা, বাড়ি-গাড়ির ইচ্ছা হয়নি। কিন্তু নূন্যতম চাহিদা গুলোও কি মিটবে না এই জীবনে? এক আধদিন ইচ্ছা হয়- চলন্ত ট্রেন অথবা ব্রিজের উপর থেকে নদীতে লাফ দেই। এই যন্তনা আর সহ্য হয় না। তিলে তিলে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি।আমার তো হতে পারতো, একটা আনন্দময় জীবন! সকালে নিজের গাড়িতে করে অফিস যাবো। অফিসে গিয়েই এসি ছেড়ে দেব, গা এলিয়ে নরম চেয়ারে বসব। বেল টিপে কফি দিতে বলব। কফি খাবো আর আরাম করে পত্রিকা পড়ব। ফাঁকে ফাঁকে কর্মকর্তা আর কর্মচারীদের ডেকে ধমক-ধামক দেব। না, না রফিক সাহেব এভাবে কাজ করলে হবে না। আরও বেশি মন দিতে হবে। সোলায়মান সাহেব এক পাতা টাইপ করতে নব্বই ঘন্টা লাগে? তাও বিশ টা বানান ভুল!! না, না এভাবে করলে হবে না। কাজে মন দিন। এক ফাঁকে বউকে ফোন দিয়ে বলব- হুম, ড্রয়ারে টাকা আছে যা যা কিনতে চাও কিনে ফেল। ইত্যাদি ইত্যাদি। অফিস ছুটি হওয়ার কিছুক্ষন আগে মিটিং ডাকবো, চা খাবো আর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য কিভাবে বাড়বে তা নিয়ে আলোচনা করবো। সেই মিটিং শেষ করবো রাত ৯ টায়। আমার স্ত্রী খাঁচায় বন্দী পাখি দেখলেই আমাকে বলে, তোমার যখন অনেক টাকা হবে, তখন আমরা সারা বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে সব খাঁচার বন্দী পাখি কিনে ফেলব তারপর আকাশে উড়িয়ে দেব। পকেটে অল্প টাকা থাকলেই আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে কফি শপে। দুইজন কোল্ড কফি খেতে খেতে আমাদের সংসার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করি। সেই সব আলোচনা কখন বাস্তব রুপ নেয় না। তবে আমি ঠিক করেছি সামনের মাসে বেতন পেয়েই আমি একশোটি গ্যাস বেলুন কিনব সাহস করে। যত দামই হোক। আমি বলব- চলো আজ কিছু বেলুন আকাশে উড়াই। আমার স্ত্রী ছোট বাচ্চাদের মতোন সব গুলো বেলুন আকাশে উড়িয়ে দেবে। তার দীর্ঘদিনের একটা ইচ্ছা পূরন হবে। সে অনেক আনন্দ পাবে। তার আনন্দময় মুখ আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার।মাসের শেষে যখন মার কাছে হাত পাতি- মা আমাকে বলেন, তুমি সারাদিন কাজ করো- তারপরও তোমার এত অভাব কেন? তার উপর সংসারে নাই বাচ্চা-কাচ্চা। আসলেই, অভাব কেন পিছু ছাড়ছে না, আমি বুঝি না। শুধু মনে হয়- আর কিছু দিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলে যায়, কিন্তু কিছুই ঠিক হয় না। আমি অপেক্ষায় থাকি, আমি অপেক্ষা করি, অপেক্ষা করতে আমার ভালোই লাগে। সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:২৬
false
hm
বহুজগত ১. প্রফেসর দরবেশ মন দিয়ে বিস্কুট খাচ্ছিলেন, চায়ে চুবিয়ে। সব কনফারেন্স শেষেই তিনি সংলগ্ন ক্যাফেতে ঢুকে তাদের চা আর বিস্কুটের মান পরখ করেন, তারপর মনে মনে একটা রেটিং দেন। যেসব ক্যাফের চা ভালো, যাদের বিস্কুট চায়ে চুবানোর পর ঠুস করে গলে ভেঙে চায়ে ডুবে আত্মহত্যা করে না, সেসব ক্যাফের সাথে সংশ্লিষ্ট কনফারেন্স এবং আয়োজকদের প্রতি তিনি প্রসন্ন থাকেন। যেসব কনফারেন্সে গিয়ে সাথের ক্যাফেতে, বলাই বাহুল্য, সুবাসিত চা এবং বলিষ্ঠ বিস্কুট মেলে না, সেসব কনফারেন্সকে তিনি তুচ্ছজ্ঞান করেন। বিজ্ঞান কোনো না কোনোভাবে এগিয়ে চলবেই, কিন্তু দুবলা বিস্কুট সরবরাহকারী ক্যাফে মানবজাতিকে সবসময় পেছনদিকে টেনে নিয়ে যায়। চায়ে চুবিয়ে বিস্কুট খাওয়ার কাজটাকে কিছুটা ঐকান্তিক মনে করেন প্রফেসর দরবেশ, অনেকটা প্রেমিকার সাথে ফিসফিস আলাপের মতোই। এ সময়ে কেউ কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকলে দুটো কাজেই ব্যাঘাত ঘটে। "ডক্টর দরবেশ?" একটা পিলে কাঁপানো ভারি কণ্ঠস্বর মেঝের ছয়ফুট ওপর থেকে হেঁকে ওঠে। প্রফেসর দরবেশ প্রচণ্ড বিরক্ত হন, কারণ সিক্ত বিস্কুটের একটা টুকরো তার হাত থেকে ফসকে পড়ে গেছে চায়ের কাপে। তিনি মাথা উঁচিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিশালদেহী কৃষ্ণাঙ্গ লোকটির দিকে তাকালেন। একেবারে কুচকুচে কালো একটা মুখ থেকে হীরার মতো ঝকঝকে দুই সারি দাঁত বেরিয়ে আছে হারমোনিয়ামের চাবির মতো। লোকটার পরনে ধবধবে সাদা শার্ট, একটা চলনসই টাই, কোটটা হাতে ভাঁজ করে রাখা। "হ্যাঁ।" খ্যাঁক করে উঠলেন প্রফেসর দরবেশ। "আপনার সাক্ষাত পেয়ে প্রীত বোধ করছি প্রফেসর দরবেশ!" জাঁক করে বললো ব্যাটা। "আমার নাম ম্বাবাটু, ম্যাক্স ম্বাবাটু।" "উম্বাবাটু? আচ্ছা ... তা কী করতে পারি আপনার জন্যে, জনাব উম্বাবাটু?" প্রফেসর দরবেশ টুসকি মেরে সুশ্রী ছিপছিপে ওয়েট্রেস মেয়েটিকে ডাকলেন। আরেক কাপ চা দরকার। বিস্কুটগলা চায়ের চেয়ে বদখদ আর কিছুই হতে পারে না। ম্বাবাটু একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো, তবে খুবই সন্তর্পণে, যেন একটা বেড়াল এসে বসলো মখমলের গদিতে। "মৃতবিন্দু নিয়ে একটা ভাবনা আপনার সাথে শেয়ার করতে চাই স্যার।" প্রফেসর দরবেশের মুখে একটা বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠে ঝুলে রইলো। মৃতবিন্দু নিয়ে তাঁর সাথে ভাবনা ভাগ করার মতো সাহস এখনও খুব বেশি পদার্থবিদের হয়নি। কিন্তু যেখানে ফেরেস্তা ঘেঁষে না, সেখানে বোকচন্দররা তেড়ে যায়। "বেশ ... আমি এক কাপ চা দিতে বলেছি। সেটা শেষ করা পর্যন্ত সময় পাচ্ছেন আপনি।" খনখনে গলায় বললেন প্রফেসর দরবেশ। "মানে পাঁচ মিনিট ছত্রিশ সেকেণ্ড, আঠারো সেকেণ্ড স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন ধরে?" ম্বাবাটু সহজ গলায় বললো। প্রফেসর দরবেশ এবার একটু মনোযোগ দিলেন ম্বাবাটুর দিকে। লোকটা সম্ভবত নিরক্ষীয় আফ্রিকার কোনো দেশ থেকে এসেছে, চেহারায় বুদ্ধির ছাপ আছে, এবং সে যে বাহরাম দরবেশের মতো একজন প্রথম সারির জ্যোতির্পদার্থবিদের ওপর লম্বা সময় ধরে নজর রাখছে, সে কথা জানাতে ম্বাবাটু পিছপা নয়। কী চায় ব্যাটা? "কতদিন ধরে?" ওয়েট্রেস মেয়েটাকে ট্রে নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে নতুন করে চায়ের তৃষ্ণা অনুভব করলেন প্রফেসর দরবেশ। "প্রায় বছর ঘুরতে চললো স্যার।" ম্বাবাটু আবার হারমোনিয়ামের চাবি মেলে ধরলো। "বেশ ... কিন্তু এক কাপ চা পর্যন্তই সময় পাবেন। এরপর আমি হোটেলে ফিরে যাবো।" প্রফেসর দরবেশ মনে মনে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ম্বাবাটু হাত বাড়িয়ে দিলো, "আপনার আজকের প্রেজেন্টেশনটা দারুণ হয়েছে স্যার।" প্রফেসর দরবেশ বেজার মুখে করমর্দন করলেন ম্বাবাটুর সাথে। "সময়টা কাজে লাগান জনাব ম্বাবাটু। মিষ্টি মিষ্টি কথা বাদ দিন। আমার সব প্রেজেন্টেশনই দারুণ হয়।" ম্বাবাটু ওয়েট্রেস মেয়েটাকে নিচু গলায় এক কাপ কালো কফির অর্ডার দিয়ে ঝুঁকে বসলো। "মৃতবিন্দু নিয়ে ভাবনার কথা বলার আগে আমার পরিচয়টা দিচ্ছি স্যার। আমি একজন বিজ্ঞান লেখক।" প্রফেসর দরবেশের মনটা এবার বিতৃষ্ণায় ছেয়ে গেলো। "কল্পকাহিনী লেখেন?" ম্বাবাটুর মুখটা আরো এক পরত কালো হয়ে গেলো। "না স্যার, ভুল বুঝলেন। কল্পবিজ্ঞান লেখক নই আমি। বিজ্ঞান লেখকরা বিজ্ঞান আর গবেষণা নিয়ে লেখালেখি করে। আমার আগ্রহের বিষয় জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা ... বুঝতেই পারছেন ... আমি সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো নিয়ে একটা বই লিখছি।" প্রফেসর দরবেশ বললেন, "আমার সাক্ষাতকার নিতে চান?" ম্বাবাটু বললো, "না স্যার। আপনি ব্যস্ত মানুষ, সাক্ষাতকার নিতে গিয়ে আপনাকে জ্বালানোর স্পর্ধা করি না। শুধু একটা আইডিয়ার কথা আপনাকে জানাতে এসেছি স্যার। শুধু যদি আপনি আমার পুরোটা ভাবনা মন দিয়ে শোনেন, তবেই আমি কৃতার্থ হবো।" প্রফেসর দরবেশ চায়ের কাপে এক মারাত্মক চুমুক দিলেন। ম্বাবাটুর জন্যে এই ইশারাই কাফি হওয়ার কথা, এমন মর্মান্তিক চুমুকের পর চায়ের কাপ অর্ধেক খালি না অর্ধেক ভরা, তা নিয়ে আশাবাদী আর নৈরাশ্যবাদীর মধ্যে তুমুল তর্কের জায়গা প্রশস্ত হয়। ম্বাবাটুর কফি চলে আসে, সে কফির কাপ হাতের মুঠোয় ধরে বলে, "মৃতবিন্দু থেকে এই যে মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন হচ্ছে, এমন কি হতে পারে না স্যার, এটা একটা সিগন্যাল?" প্রফেসর দরবেশ চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে চোখ বুঁজলেন। তার মনটা ক্যাফে থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে গেলো পনেরো বছর আগে, যেদিন ডেড স্পট নিয়ে তাঁর প্রথম পেপারটা সায়েন্স-এ ছাপা হয়েছিলো। একটা বাজে সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি, ক্যারিয়ারটা কাদায় আটকা পড়েছিলো, ডেড স্পট তাঁকে এক হ্যাঁচকা টানে ফিরিয়ে নিয়ে আসে আলোচনায়। অথচ কী নিতান্ত ফালতু এক প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। চিলির আতাকামা মরুভূমির এক চিপায় এক অতিকায় দূরবীণ প্রকল্পে যোগ দিয়ে চাঁদের একটা অবজারভেটরির সাথে যোগাযোগের জন্যে স্থাপিত মাইক্রোওয়েভ সংযোগের কোয়ালিটি পরীক্ষার মতো বিরক্তিকর কাজে দিন কাটছিলো তাঁর। সতেরো বছর আগে এক দিন রাতে হঠাৎ লুনার স্টেশন থেকে বার্তা আসে, স্টেশনের টেলিস্কোপে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। একটা কালো বিন্দু দেখা যাচ্ছে পৃথিবী বরাবর। এবং কিমাশ্চর্যম, আতাকামার সেই স্টেশনের প্রকাণ্ড ভিএলটি-তেও চাঁদের বরাবর একটা কালো বিন্দু দেখা গেলো। প্রফেসর দরবেশের চোখে প্রথম ছবিটা এখনও ভেসে ওঠে মাঝে মাঝে, লুনার স্টেশন বরাবর একটা আশ্চর্য অন্ধকার বিন্দু। হিসেব কষে দেখা গেলো, বিন্দুটার ব্যাসার্ধ ৫০ মিটারের মতো, এবং সেটি নিখুঁত বৃত্তাকার। অনেক পুরনো একটা কথা সেদিন নতুন করে মনে পড়েছিলো প্রফেসর দরবেশের, ত্রুটিহীনতা একটা বার্তা। জরুরি, বড় বার্তা। প্রকৃতিতে ত্রুটিহীন বৃত্ত খুব বেশি নেই। মহাকাশে একটা গোল কালো বিন্দুর তাৎপর্য অন্যরকম। লুনার স্টেশন থেকে আরো বার্তা এলো, গত ছয় মাস ধরে যে মৃদু নয়েজ পাওয়া যাচ্ছিলো মাইক্রোওয়েভ রিসিভারে, সেটা সম্ভবত এই কালো ছোপের কারণেই। কেন কেউ আরো আগে এই কালো ছোপটাকে শনাক্ত করেনি, সেই প্রশ্নটা তৎক্ষণাৎ কারো মাথায় আসেনি। মহাকাশে মাত্র পঞ্চাশ মিটার ব্যাসার্ধের একটা কালো বিন্দু শনাক্ত যে হয়েছে, এটাই ভাগ্যের ব্যাপার। সেই থেকে শুরু। এরপর প্রফেসর দরবেশ দুই বছরের নির্ঘুম অক্লান্ত গবেষণার পর প্রমাণ করলেন, ঐ কালো বিন্দুটি মহাজগতবিদ্যার গবেষণায় এক মারাত্মক সংযোজন। ডেড স্পট বা মৃতবিন্দুর ধারণাটিও তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন তার গবেষণাপত্রে। এ এমন এক ইয়ে, যা আলোকে বিকর্ষণ করে। কৃষ্ণবিবরের মহাকর্ষ থেকে যেমন আলো মুক্তি পায় না বলে তাকে কালো দেখায়, ডেড স্পট বা মৃতবিন্দু আলোকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না বলে তা কালো দেখায়। পশ্চাদপটে উজ্জ্বল কোনো কিছু থাকলে ব্যাপারটা স্পষ্ট বোঝা যায়, একটা ছোটো কালো বিন্দু ফুটে ওঠে তখন। সময়ের সাথে প্রফেসর দরবেশ আরো প্রমাণ করেন, এই ডেড স্পট চাঁদকে প্রদক্ষিণ করছে, খুব মন্থর গতিতে। এবং শুধু আলো নয়, কোনো কিছুই এর কাছে ঘেঁষতে পারে না। এই ডেড স্পটকে লক্ষ্য করে পাঠানো প্রজেক্টাইলগুলো একে একে বেঁকে ছুটে গেছে দিগ্বিদিক, দৃশ্যমান আলোর মতো এক্স রে, মাইক্রোওয়েভ আর বেতার তরঙ্গও বেঁকে গেছে। এক আশ্চর্য অস্পৃশ্য প্রপঞ্চ হয়ে মন্থর গতিতে চাঁদকে ঘিরে পাক খাচ্ছে ঐ বিন্দুটি। একে বোঝার উপায় আপাতত একটিই, এর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা অতি মৃদু মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ। এবং এই গবেষণায় প্রফেসর দরবেশ আপাতত গোটা পৃথিবীতে অগ্রণী। "কী বলতে চাইছেন?" মনের কলার ধরে আবার ক্যাফেতে ফিরিয়ে আনলেন প্রফেসর দরবেশ। ম্বাবাটু কফিতে পরিমিত চুমুক দিয়ে বললো, "আমি বলতে চাইছি স্যার, এমন কি হতে পারে না, যে এই বিকিরণের মধ্যে আসলে প্রচুর তথ্য আছে?" প্রফেসর দরবেশ আনমনে ছোটো একটা চুমুক দিলেন চায়ের কাপে। "কী ধরনের তথ্য?" ম্বাবাটু হাসিমুখে বললো, "তার আগে বলুন স্যার, বহুজগত নিয়ে কিছু বললে আপনি চটবেন কি না?" প্রফেসর দরবেশ ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন, "দেখুন ম্বাবাটু, আপনি বোধহয় জানেন, আমি এই বহুজগত তত্ত্বটাকে কল্পগল্পের চেয়ে বেশি কিছু মনে করি না। ছোটো বাচ্চাদের কমিকের জিনিসপত্রে আমার আগ্রহ এককালে ছিলো, যখন আমি নিজে ছোটো ছিলাম। এখন আর নাই।" বহুজগত তত্ত্ব নিয়ে কসমোলজিস্টদের হাউকাউ শুনলে প্রফেসর দরবেশ বিরক্ত হন। অতি অতি অতি ক্ষীণ সম্ভাবনার ওপর ভরসা করে যারা বিজ্ঞানের গরু গাছে ওঠাতে চান, তাদের প্রতিও তিনি চরম বিরক্ত। বহুজগত তাত্ত্বিকদের এক দল বলছেন, মহাজগতের কোথাও না কোথাও আমাদের পৃথিবী বা সৌরজগত বা ছায়াপথের হুবহু কপি রয়েছে, এবং সেই কপির সংখ্যাও অনির্দিষ্ট রকমের বড় হতে পারে। সেই কপি-পৃথিবীগুলো মূল পৃথিবীর সমসাময়িক না-ও হতে পারে, হয়তো সেখানে মোটে এককোষী প্রাণের উদ্ভব হয়েছে, কিংবা হয়তো সেখানে প্রাণের বিবর্তনের চরমতম অধ্যায় চলমান, নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু কোনো এক কপি-পৃথিবী আমাদের সমসাময়িকও হতে পারে। প্রফেসর দরবেশ বাঁকা হেসে বললেন, "আপনি কি জানেন, কীরকম দূরত্ব পার হলে আপনি ঐ ছেঁদো বহুজগত তত্ত্বের প্রমাণ পাবেন?" ম্বাবাটু মৃদু হেসে বললো, "জানি স্যার। গত মাসেই এ নিয়ে লেখা আমার একটা নিবন্ধ ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। সংখ্যাটা বেশ ... বড়, আমি জানি।" প্রফেসর দরবেশ বললেন, "আমাদের দৃশ্যমান জগতে উপপারমাণবিক কণাগুলোকে কতভাবে সাজানো সম্ভব, জানেন?" পকেট থেকে একটা কলম বার করে টিস্যু পেপারে বড় করে একটা ২ লিখলেন তিনি, তারপর তার ঘাতের জায়গায় লিখলেন ১০১১৮ । "দেখুন।" ম্বাবাটু হাসিমুখেই বললো, "এর সাথে গুণ করতে হবে আমাদের দৃশ্যমান জগতের ব্যাস। ১০২৬ মিটার স্যার, জানি আমি।" প্রফেসর দরবেশ বললেন, "ঐ গুণফলের সমান দূরত্ব পার হলে হুবহু আরেকটা পৃথিবী পাওয়া যেতে পারে, যেখানে আমি আর আপনি ক্যাফেতে বসে চা আর কফি খাচ্ছি, তাই তো?" ম্বাবাটু মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখেই বললো, "মমমম না স্যার। ঐ পৃথিবীতে হয়তো আমি এখনও ক্যামেরুনের কোনো জঙ্গলে বাঁদর শিকারে ব্যস্ত, আর আপনি হয়তো কোনো ট্রেন স্টেশনে পান-বিড়ি বিক্রি করছেন।" প্রফেসর দরবেশ ঠাণ্ডা চোখে ম্বাবাটুর দিকে তাকিয়ে বললেন, "পান-বিড়ি?" ম্বাবাটু হাসিমুখে মাথা দুলিয়ে বললো, "কিংবা কলা।" প্রফেসর দরবেশ বললেন, "আমার একটা কপিকে অন্য দুনিয়ায় পান-বিড়ি বেচাতে হলে যে বিরাট দূরত্ব পার হতে হবে, সেই দূরত্ব পার হবার সময় আপনার বা আমার কারোই নেই। এ কারণেই, এই তত্ত্বে আমার কোনো আগ্রহ নেই। এসব জিনিস বিজ্ঞান লেখকদের বিজ্ঞান বিজ্ঞান খেলার জন্যে, আমার অন্য কাজ আছে।" ম্বাবাটু আহত হলো না একটুও, অন্তত আহত হলেও তার চেহারায় সেই ছাপ পড়লো না। "কিন্তু স্যার, চিন্তা করে দেখুন, হয়তো স্থানকালের চাদরটা আমরা যেমন ভাবছি, সেরকম চাদর নয়। হয়তো দলা পাকানো, মোচড়ানো, হয়তো আমাদের চেনা তিন মাত্রায় অতিক্রম করতে গেলে একটা বিন্দু থেকে আরেকটা বিন্দুর দূরত্ব ওরকমই বড় হবে। কিন্তু যদি অন্য কোনো মাত্রায় এরা খুব কাছাকাছি চলে আসে ...।" প্রফেসর দরবেশ আবার চায়ের কাপে বজ্রকঠোর চুমুক দিলেন। "ওয়ার্মহোল? আমি দুঃখিত, ওটাও কল্পবিজ্ঞান। কমিকের খোরাক। আর কিছু বলবেন?" ম্বাবাটু হাসিমুখেই বললো, "আপনি যে মৃতবিন্দু নিয়ে কাজ করছেন স্যার, ওটা কি একটা একমুখী ওয়ার্মহোলের এক প্রান্ত হতে পারে না?" প্রফেসর দরবেশ চায়ের কাপটা ধীর হাতে নামিয়ে রাখলেন। "তাই? পারে?" ম্বাবাটু ঝুঁকে পড়ে বললো, "কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউণ্ড তো কোনো কমিকের খোরাক নয় স্যার। আমরা সেই বিগ ব্যাঙের আমলের বিকিরণ শনাক্ত করতে পেরেছি। এমনকি হতে পারে না স্যার, যে এই ডেড স্পট আসলে একটা একমুখী সুড়ঙ্গের মাথা? এর অন্য প্রান্ত হয়তো খোলা, যেদিক দিয়ে আলো ঢুকতে পারে। যদি সুড়ঙ্গটার দৈর্ঘ্য আমাদের পরিচিত তিন মাত্রার হিসেবে অনেক, অনেক বেশি হয়, তাহলে সেই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে সেই আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বাড়তে বাড়তে সেটা এক সময় মাইক্রোওয়েভে পরিণত হতে পারে, যে মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ নিয়ে আপনি আজকে পেপার পড়লেন স্যার। আপনারই নকশা করা মাইক্রোওয়েভ টেলিস্কোপ চাঁদকে ঘিরে চক্কর কাটতে যাচ্ছে বছর খানেকের মধ্যে, তাই না?" প্রফেসর দরবেশ চায়ের কাপে ছোটো চুমুক দিয়ে বললেন, "ম্বাবাটু, আপনার উৎসাহ আছে, আমি টের পাচ্ছি। কিন্তু বিজ্ঞান একেবারেই ছেলেখেলা নয়। হুট করে একটা ফিকশনের ওপর ভর করে আমরা, বিজ্ঞানীরা, এগোতে পারি না।" ম্বাবাটু কফিতে চুমুক দিলো হাসিমুখে। "আমার আইডিয়াটা এমনই স্যার। আপনি তো জানেন, মহাজগতে একটা তথ্য প্রাচীর আছে। পাশের গ্যালাক্সিতে যদি আজ আমরা একটা বার্তা পাঠাতে যাই, সেটা ওখানে পৌঁছুতে পৌঁছুতে পঁচিশ লক্ষ বছর পেরিয়ে যাবে। সেই বার্তার কোনো উত্তর যদি পাঠানো হয়, সেটা পৌঁছবে আজ থেকে পঞ্চাশ লক্ষ বছর পরের কোনো প্রজন্মের হাতে। কিন্তু স্যার, কোনো না কোনো চোরাগলি কি এই মহাজগতে থাকতে পারে না, যেখানে অন্তত আরো অনেক অল্প সময়ের মধ্যে তথ্য বিনিময় হতে পারে? আপনার এই মৃতবিন্দু হয়তো সেরকমই যোগাযোগের একটা মাধ্যম?" প্রফেসর দরবেশ বললেন, "তা ঐ সুড়ঙ্গের খোলা মাথাটা কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন?" ম্বাবাটু বললো, "তা ঠিক জানি না স্যার। হয়তো খুব স্বাভাবিক এক টুকরো জায়গা। হয়তো আমাদের এই ক্যাফেটাই ওরকম কোনো সুড়ঙ্গের খোলা মাথা। আমাদের এখান থেকে আলো সেই সুড়ঙ্গ বেয়ে অন্য কোনো পৃথিবীর মৃতবিন্দু দিয়ে মাইক্রোওয়েভ হয়ে বেরোচ্ছে। হয়তো সেই মাইক্রোওয়েভ সিগন্যালকে দৃশ্যমান আলোতে রূপান্তরের কোনো ফিল্টার কাজে লাগিয়ে আমরা কী করছি, সেটা দেখছে কেউ।" প্রফেসর দরবেশ বললেন, "তার মানে, পৃথিবীতে প্রাইভেসি বলে কিছু নেই?" ম্বাবাটু হাসিমুখে বললো, "কারো কারো জন্যে হয়তো নেই স্যার। আসি, আমার কফি খাওয়া শেষ। আপনার চা-ও মনে হয় শেষের দিকে। শুভেচ্ছা জানাই স্যার, আমার আইডিয়াটা একেবারে যদি ডাস্টবিনে না ফেলেন, সেটাই হবে আমার বড় পাওয়া। বিদায়।" প্রফেসর দরবেশ শুষ্ক কণ্ঠে বললেন, "বিদায়।" ২. চার বছর আগে চা খেতে গিয়ে ম্বাবাটুর সাথে সাক্ষাতের কথা আবার মনে পড়ে গেলো প্রফেসর দরবেশের। সত্যি বলতে কী, লোকটার আইডিয়া তিনি ঝেড়ে ফেলেছিলেন, কিন্তু মাইক্রোওয়েভ টেলিস্কোপের প্রথম দফার সিগন্যাল হাতে পেয়ে ম্বামাটুর কথাই তার প্রথমে মনে পড়েছিলো। মৃতবিন্দু থেকে বেরিয়ে আসা মাইক্রোওয়েভ বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বৈচিত্র্যই এর কারণ। এর পর দুই বছর প্রায় ষাটজন বিজ্ঞানীর এক দল নিয়ে পশুর মতো পরিশ্রম করে গেছেন প্রফেসর দরবেশ। সম্ভাব্য সব রকম বিশ্লেষণ প্রয়োগ করে শেষ পর্যন্ত একটি ফিল্টার অ্যালগরিদম ফল দিয়েছে, মাইক্রোওয়েভ টেলিস্কোপের আউটপুটে দেখা গেছে একটি ছবি। তাতে কালো মহাকাশে একটি নীল গ্রহের একাংশ দেখা গেছে। ম্বাবাটুর সাথে যোগাযোগ করা উচিত হবে কি না, তা নিয়ে সামান্য ভাবনা উদয় হয়েছিলো প্রফেসর দরবেশের মনে, কিন্তু সে ভাবনা ঝেড়ে ফেলেছেন তিনি। বিজ্ঞান লেখকদের সাথে পরে কথা বললেও চলবে। এর পর প্রচুর নষ্ট আউটপুটের পাশাপাশি একে একে আরো বেশ ক'টি অর্থবহ ছবি পাওয়া গেছে। নীল গ্রহটি যে পৃথিবীর ছবি, তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ ছিলো না, তাই সেটি বাস্তব পৃথিবীরই প্রতিবিম্ব কি না, তা স্থির করতে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়েছে। বাস্তব পৃথিবীর ছবি সেটি নয়, কারণ সেই পৃথিবীতে উত্তর আর দক্ষিণ মেরুর বরফ আচ্ছাদন আরো বিস্তৃত, এবং সেই পৃথিবীর চাঁদটিতে উল্কাপাতের গহ্বরের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। ম্বাবাটুর অনুমান ভুল নয়, এটি অন্য কোনো কপি-পৃথিবীর ছবি, যে পৃথিবী বহু দূরে, যে পৃথিবীর বার্তা ভেসে আসছে মহাজগতের এক চোরাগলি বেয়ে। প্রফেসর দরবেশ সেই বার্তার উদ্ধারকর্তা। চায়ের কাপ হাতে সামনে বিশাল মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছেন প্রফেসর দরবেশ। নতুন শক্তিশালী মাইক্রোওয়েভ টেলিস্কোপ পাঠানো হয়েছে মৃতবিন্দু থেকে বেরিয়ে আসা বিকিরণ বিশ্লেষণের জন্যে, আজ তার প্রথম দফা ছবি আসবে, আগের চেয়ে অনেক বেশি রেজোলিউশনে। "ডক্টর দরবেশ, ফাইল প্রসেসিং শেষ। স্ক্রিনে পাঠাবো?" হেডফোনে ভেসে এলো এক সহকর্মীর গলা। "হ্যাঁ, প্লিজ।" বুক ঢিপঢিপ অনুভূতিটা চায়ের কাপে চুবিয়ে মারার সিদ্ধান্ত নিলেন প্রফেসর দরবেশ। স্ক্রিনে ভেসে উঠলো একটা ছবি। কপি-পৃথিবীর একাংশ দেখা যাচ্ছে স্ক্রিনে, কপি-চাঁদ দৃশ্যমান নয়, আর একটা ছোটো আলোর বিন্দু গোল লাল মার্কার দিয়ে দাগানো। "জুম করো।" মাইকে বললেন প্রফেসর দরবেশ। তিন দফা জুম করার পর ছোটো আলোর বিন্দুটি একটি আলোর গোলকে পরিণত হলো। "করতে থাকো।" নতুন টেলিস্কোপটি মারাত্মক শক্তিশালী, দফায় দফায় জুম করার পরও ছবির কোয়ালিটির তেমন কোনো হেরফের হয়নি দেখে টের পেলেন প্রফেসর দরবেশ। আলোর গোলকটি এক সময় গোটা স্ক্রিন দখল করে ফেললো। নিশ্চিতভাবেই সেটি একটি মহাকাশ স্টেশন গোছের কিছু। গোলকটির একটি অংশ স্বচ্ছ কোনো বস্তুর আবরণে তৈরি, তার ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে, গোলকটির ভেতরে আলো জ্বলছে। সেই আলোয় চোখে পড়ছে প্ল্যাটফর্মের মতো একটি কাঠামো, কিছু গোল দরজা, একটি প্রশস্ত কাউন্টার। নিঃসন্দেহে একটা মহাকাশ স্টেশনের ছবি। হলঘরের ভেতর উত্তেজিত ফিসফাস শুরু হলো। কে একজন হাততালি দিয়ে উঠলো। প্রফেসর দরবেশ চোখ বুঁজলেন। নোবেল নিশ্চিত, কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু কয়বার দেয়া হবে সেটাই এখন প্রশ্ন। অন্তত দুইবার দেয়া উচিত, তিনবার দিলে বুঝতে হবে নোবেল কমিটির লোকজনের ভদ্রতাজ্ঞান আছে। আর ম্বাবাটুর সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারটা নিয়ে পরে চিন্তা করা যাবে। লোকটা কোনো মিডিয়াভিত্তিক নিম্নবর্গীয়পনা শুরু না করলেই হয়। হেডফোনে হড়বড় করে কে যেন বললো, "ডক্টর দরবেশ, একটা মানুষ দেখা যাচ্ছে!" "জুম করো!" হুঙ্কার দিলেন প্রফেসর দরবেশ। আলোকিত গোলকটির জানালা গোছের প্রান্তে একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে, এবার বোঝা যাচ্ছে পরিস্কার। উজ্জ্বল আলো এসে পড়েছে তার মুখে। আরো কয়েকবার জুম করার পর লোকটার অবয়ব আরো স্পষ্ট হয়ে উঠলো। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে, হাতে একটা পাত্রের মতো কিছু ধরা। "জুম, জুম, জুম!" গর্জে উঠলেন প্রফেসর দরবেশ। আরো কয়েকবার জুম করার পর গোটা হলঘরের ফিসফাস থেমে গেলো। এবার স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মানুষটাকে, হাঁটু পর্যন্ত। লোকটা বয়স্ক, মুখে পুরু গোঁফ, মাথায় টাক, চোখে চশমা। তার হাতে ধরা একটা টুকরিজাতীয় পাত্র। প্রফেসর দরবেশ বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইলেন সেই চেহারার দিকে। চেহারাটা তাঁর পরিচিত, তিনি প্রায়ই এই চেহারাটা কোথাও দেখেন, কিন্তু কোথায় দেখেন, তা কিছুতেই তাঁর মনে পড়ছে না। আরেক দফা জুম করার পর প্রফেসর দরবেশ চিনতে পারলেন চেহারাটাকে। রোজ সকালে আয়নায় চেহারাটা দেখেন তিনি। পর্দার ঐ লোকটা কপি-পৃথিবীর কপি-দরবেশ। কিন্তু ওর হাতে কী? প্রফেসর দরবেশ অস্ফূট গলায় বললেন, "হাতে কী?" আরো এক দফা জুম করার পর কানের কাছে হেডফোনে কটকট করে উঠলো একটা গলা। "কলা, স্যার। পাকা কলা।"
false
fe
প্রয়োজনের জন্য ভাষা, ভাষার প্রতি প্রজন্মের আগ্রহ প্রয়োজনের জন্য ভাষা, ভাষার প্রতি প্রজন্মের আগ্রহফকির ইলিয়াস::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::বাংলাদেশই বাংলা ভাষার চারণভূমি হিসেবে টিকে থাকবে। কথাগুলো বলছেন বাংলা ভাষাভাষি অনেক প্রাজ্ঞজন। অথচ এ বাংলাদেশেই এখন অনেকগুলো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। অভিভাবকরা জানেন ও বোঝেন— তাদের সন্তানদের বিশ্বমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে।ভাষাবিদ্যায় পারদর্শী হওয়ার কথা ভাবলে আমরা যে চিত্রটি প্রথমেই দেখি, তা হচ্ছে একটি অগ্রসরমান প্রজন্মের ভবিষ্যত্। তা নির্মাণে প্রয়োজন নিরলস অধ্যবসায়। একটি প্রজন্ম শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে দুটি বিষয়ের প্রয়োজন পড়ে খুব বেশি। প্রথমটি হচ্ছে সত্ভাবে সমাজের অবকাঠামো নির্মাণ। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে সমকালের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কর্মপরিধির ব্যাপ্তি ঘটানো। কাজ করতে হলে একটি যোগ্য কর্মীবাহিনীর প্রয়োজন পড়ে, যারা তাদের মেধা ও মনন দিয়ে কাজ করবে নিরন্তর।জ্ঞানার্জনে ভাষা একটি ফ্যাক্টর তো বটেই। কারণ মানুষ না জানলে, সেই তথ্য-তত্ত্ব এবং সূত্রগুলোকে নিজের জীবনে, সমাজজীবনে প্রয়োগ করতে পারে না। সে জন্য প্রয়োজন পড়াশোনা। পড়াশোনা করতে হলে শিক্ষার প্রয়োজন। প্রয়োজন সেই ভাষাটিও রপ্ত করা। বাংলাদেশের নিরক্ষর মানুষ প্রয়োজনীয় অক্ষরজ্ঞান পেলে নিজেদের জীবনমান যেমন বদলাতে পারবেন, তেমনি পারবেন সমাজের চিত্রও বদলে দিতে। একজন শিক্ষিত মা-ই পারেন একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে। আমরা সে কথাটি সবাই জানি এবং মানি।ভাষার যত রকম প্রয়োজনীয়তার সংজ্ঞা আমরা তুলি না কেন, প্রধান কথাটি হচ্ছে একটি জাতিকে শিক্ষিত করে তোলার গুরুত্ব। মানুষ সুশিক্ষিত হলেই তার জ্ঞান খুলবে— সে উদার হবে, সত্ কাজগুলো করবে। এটাই নিয়ম। পাশ্চাত্যে আমরা উচ্চশিক্ষিতের যে হার দেখি, ওই জনশক্তিই রাষ্ট্র গঠন, পরিচালনায় একটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে— তা অস্বীকার করার উপায় নেই।আমার এক বন্ধু নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পোলিশ এ বন্ধুটির সঙ্গে আমার নানা বিষয়ে কথা হয়। সমাজবিদ্যার এ শিক্ষক আমাকে বারবার বলেন, শক্তিশালী ভাষাই বিশ্বে পুঁজির আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ করছে। তার কথাটি মোটেই মিথ্যা নয়। নিউইয়র্ক তথা গোটা উত্তর আমেরিকার একটি বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা নরটন অ্যান্ড কোম্পানির বেশ কয়েকজন কর্ণধারের সঙ্গে ‘ভাষা ও সাহিত্য’ বিষয়ে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছে। তারা একবাক্যে বলতে চান, মুনাফার লোভেই তারা মহাকবি ওমর খৈয়াম, জালালুদ্দিন রুমী থেকে নাজিম হিকমত, রবীন্দ্রনাথ কিংবা মাহমুদ দারবিশের রচনাবলিকে ইংরেজিতে অনুবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, নিজস্ব আঙ্গিকে। তারা তা ইংরেজিতে ছাপিয়েছেন। বাজারজাত করেছেন। এতে বিশ্বসাহিত্যে ওসব মহত্ লেখক যেমন আদৃত হচ্ছেন কিংবা হয়েছেন, তেমনি তাদের বই বিক্রি করে আয় হয়েছে লাখ লাখ ডলারও।বাংলা ভাষার সন্তান বাঙালি জাতি। জাতিসত্তা থেকে এ চেতনা আমরা কোনও মতেই সরাতে পারব না। পারার কথাও নয়। কিন্তু এই বলে আমরা অন্যভাষা রপ্ত করব না বা করার আগ্রহ দেখাব না; তা তো হতে পারে না।এখানেও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তির বিষয়টি আগে আসে খুব সঙ্গত কারণে। ভারতের কেরালা ও তামিলনাড়ু নামে দুটি অঙ্গরাজ্যের কথা আমরা জানি। কেরালা অঙ্গরাজ্যের মানুষ দুটি ভাষা জানেন বিশেষভাবে। একটি কেরালাদের নিজস্ব ভাষা মালেআলাম আর অন্যটি ইংরেজি। সেখানে হিন্দির তেমন দাপট নেই। একই অবস্থা তামিলনাড়ুতেও। তারা তামিল এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষ। বিদেশে চাকরি নিয়ে কেরালা-তামিল থেকে যারা আসেন, তাদের দেখলে মনে হয় ইংরেজি যেন তাদের মাতৃভাষাই। তাদের লক্ষ্যটি হচ্ছে, ভাষার আলো গ্রহণ করে একজন দক্ষ আইন প্রফেশনাল কিংবা টেকনোলজিস্ট হওয়া। আর সে জন্য তারা ইংরেজিকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন স্কুলজীবন থেকেই।স্যাটেলাইট টিভির বিভিন্ন চ্যানেলে বাংলাদেশের বইমেলার ওপর অনুষ্ঠানগুলো প্রতিদিনই দেখি। মনে পড়ছে একবার একটি অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম, একজন লেখক তার বইয়ের প্রচার করছেন একটি লাইভ অনুষ্ঠানে। তার গ্রন্থের বিষয়— কীভাবে আলুর অধিক ফলন করা যায়। বিষয়টি চমকপ্রদ। বর্তমান বিশ্বে আলু চাষের প্রতিযোগিতা চলছে। খাদ্য হিসেবে পাশ্চাত্যে বিভিন্ন আইটেমের আলুখাদ্য জনপ্রিয় হলেও প্রাচ্যে তা জনপ্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি মনে করি একজন শিক্ষিত কৃষক ক্ষুদ্র আকারে তার নিজের অধিক ফলন অভিজ্ঞতা বিষয়টি হাতে লিখে, কম্পোজ করিয়ে অন্যদের মাঝে বিতরণ করতে পারেন। বিষয়টি ক্ষুদ্র হলেও প্রধান দিকটি হচ্ছে একজন শিক্ষিত কৃষকই তা পারবেন। আর সে জন্যই শিক্ষার বিষয়টি আগে আসছে। শিক্ষিত হলেই মনের প্রখরতা বাড়ে। আর শিক্ষাগ্রহণ করা যায় জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত।কয়েক বছর আগে আমরা ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কয়েকটি কৃষিফার্ম সফর করতে গিয়েছিলাম। ফ্লোরিডায় বেশকিছু ফার্ম আছে, যেগুলোর সব কর্মীই স্প্যানিশ ভাষাভাষী। এরা ইংরেজি একটি অক্ষরও জানেন না। সেখানে কৃষিবিষয়ক সরকারি পুস্তিকাগুলো স্প্যানিশ ভাষায়ই বিতরণ করা হয় সরকারি উদ্যোগে।হ্যাঁ, ভাষার আলো ছড়িয়ে দিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা উদ্যোগের প্রয়োজন খুবই জরুরি। বাংলাদেশের ভেতরে আদিবাসী ভাষার অনেক কবি, সাহিত্যিক, মনীষী, চিন্তাবিদ, দীক্ষক আছেন যাদের নামটি পর্যন্তও হয়তো আমরা জানি না। তাদের চিন্তা-চেতনা যদি বাংলায় রূপান্তরিত হত তবে বাংলা ভাষাভাষীরা হয়তো তা জেনে উপকৃত হতে পারতেন। একই দেশের ভেতরেই আছে অনেক ভাষা। আর এক বিশ্বে কত ভাষা আছে তা জানার সুযোগ হয়তো সব মানুষের পুরো জীবনেও আসবে না।আমি সবসময়ই রূপান্তরে বিশ্বাস করি। রূপান্তরই হচ্ছে ফিরে আসা, অনূদিত হওয়া কিংবা বিবর্তিত হওয়া। বিবর্তন না হলে নতুনের উন্মেষ ঘটে না। তুলনামূলক আলোচনা ছাড়া জানা যায় না বিশ্বের ভাষার নান্দনিক বিবর্তন কীভাবে ঘটছে। লক্ষ করেছি, চলতি সময়ে বইমেলায় বেশকিছু দুর্লভ প্রাচীন ভাষা ও সাহিত্য যেমন চর্যাপদ, সিলেটি নগরী, আদিবাসী শ্লোক নিয়ে বেশ কাজ হয়েছে। আজকের লেখকরা বাংলা ভাষায়ই লিখছেন ক্যারিয়ার গড়াবিষয়ক বই। ওপরে কীভাবে উঠবেন। চাকরির সিঁড়ি কীভাবে নির্মাণ করবেন। ভাষা প্রয়োজনেই শেখে মানুষ।নিউইয়র্কের একজন নতুন প্রজন্মের বাঙালি-মার্কিন আইনজীবীকে জানি— যিনি তার পেশাগত কারণেই শিখে নিয়েছেন বাংলা ভাষা, বাংলা অভিধান তালাশ করে।এগুলো আশার বিষয়। আমি মনে করি এসব উত্স সন্ধানই প্রজন্মকে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি সাধনের পাশাপাশি ভাষা ও সাহিত্য অঙ্গনেও এগিয়ে যাবে স্বপ্নের বাংলাদেশ।বাংলাদেশে এখন বইমেলা চলছে। বই প্রকাশিত হতে শুরু করেছে লন্ডন, নিউইয়র্ক থেকেও স্থানীয় বাংলা প্রকাশনীর মাধ্যমে। কারণ বাংলা কম্পোজ এখন খুবই সহজ।বিভিন্ন ভাষার বেশ কিছু অনুবাদগ্রন্থ ইতোমধ্যে বেরিয়েছে। বাংলাদেশের প্রকাশকরা অনুবাদ গ্রন্থের প্রতি যত মনোযোগী হবেন, ততই লাভ বাংলা ভাষার। বাংলা সাহিত্যের। মূল কথা হল, সাহিত্যের রস আস্বাদন করা। তা যদি ইংরেজিতেও হয় ক্ষতি কী?ভাষার আলো গ্রহণের একটা প্রতিযোগিতা চলছে আজকের বিশ্বে, নিজেকে টিকিয়ে রাখার কারণেই। বাঙালি প্রজন্ম তা থেকে পিছিয়ে থাকবে কেন?________________________________________________দৈনিক আমাদের সময় ॥ ঢাকা ॥ বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪॥
false
hm
উটপশু আর উটপাখি পোস্টটা শুরু করি প্রথম আলোর একটি আর্টিকেল উদ্ধৃত করে। ভারতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত রাহীদ এজাজ | তারিখ: ১০-১২-২০১০ রাষ্ট্রীয় ঋণের আওতায় ভারতের এক্সিম ব্যাংক থেকে পাওয়া ১০০ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা ভারতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিনতে হবে। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ পণ্য সরাসরি ভারতের কাছ থেকে কিনতে হবে, আর অবশিষ্ট ১৫ শতাংশ কিনতে হবে ভারতীয় ঠিকাদারের পরামর্শে। এ ছাড়া ঋণ চুক্তির আওতায় যেসব প্রকল্পে অর্থায়ন হবে, তাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। ... জানা গেছে, গত ৮ নভেম্বর নাদিম পাঞ্জেতানের নেতৃত্বে আসা এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ইআরডিতে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বৈঠক হয়। বৈঠকে ৮৫ শতাংশ পণ্য ভারত থেকে কেনার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ব্যাখ্যা চাইলে এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের কাছে ৮৫ শতাংশ পণ্য বিক্রি করা হবে, তা হবে ভারতে উৎপাদিত। দরপত্রে যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে, সেগুলো ভারতে নিবন্ধিত, প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বত্বাধিকারীরাও হবেন ভারতীয় নাগরিক এবং ৫১ শতাংশ মালিকানা হবে ভারতীয়। অন্যদিকে, ভারতের বাইরে থেকে যে ১৫ শতাংশ পণ্য বাংলাদেশ কিনবে, সেটি ঠিক করে দেবে ভারতীয় ঠিকাদারেরাই। সে ক্ষেত্রে তৃতীয় দেশ থেকে কেনা হতে পারে, আবার ভারত আমদানি করেও তা বাংলাদেশে সরবরাহ করতে পারে। ঋণ চুক্তি অনুযায়ী ১০০ কোটি ডলারের জন্য বছরে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিবছর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে ‘কমিটমেন্ট ফি’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, বগি ও ইঞ্জিন কিনতে ১৮ থেকে ২৪ মাস লেগে যায়। সে ক্ষেত্রে, পণ্য কেনার আগেই ওই ফি গুনতে হবে বাংলাদেশকে। এ ব্যাপারে এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তা পরামর্শ দেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প নির্বাচিত করে তা যেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর তা যেন এক বছরের মধ্যেই পাওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশকে ওই কমিটমেন্ট ফি গুনতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ সময় বলা হয়, ১৮ থেকে ২৪ মাস সময় লাগা ছাড়াও ভারতীয় ঠিকাদারেরা যদি কালক্ষেপণ করেন, বাংলাদেশের কী করার আছে। এমন প্রশ্নের উত্তরে নাদিম বলেন, ঠিকাদারদের বুঝিয়ে এক বছরের মধ্যে তা পাওয়ার চেষ্টাটা বাংলাদেশকেই করতে হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানতে চাওয়া হয়, আখাউড়ায় সেতু নির্মাণে যে সেবা দেওয়া হবে, তার মধ্যে নির্মাণসামগ্রী অন্তর্ভুক্ত কি না। এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, ‘প্রজেক্ট এক্সপোর্ট’ নামের ওই সেবা প্রকল্পের মধ্যে রড, বালু, সিমেন্টসহ সব ধরনের নির্মাণসামগ্রী অন্তর্ভুক্ত। ভারতীয় নির্মাণসামগ্রীর নিম্নমান এবং এসব পণ্য দিয়ে নির্মিত হলে সেতু মানসম্পন্ন হবে না—বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হলে ভারতীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে ভারতীয় নির্মাণসামগ্রীই কিনতে হবে। কারণ, এক্সিম ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী কোনো প্রকল্পের পরামর্শসেবার আওতায় সবকিছু ভারতীয় উৎসের হতে হবে। মান নিয়ন্ত্রণ নিয়েও নানা প্রশ্ন: বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) সামর্থ্য বাড়াতে ঋণ চুক্তির আওতায় বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কেনার কথা রয়েছে। ভারত যেখানে জার্মানি, সুইজারল্যান্ডসহ পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ওই সব যন্ত্র্রপাতি সংগ্রহ করে, সেখানে বাংলাদেশ কেন ভারত থেকে তা সংগ্রহ করবে—বৈঠকে জানতে চান বিএসটিআইয়ের প্রধান। এক্সিম ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক চুক্তির কথা উল্লেখ করলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক বলেন, ভারতীয় যন্ত্র্রপাতি দিয়ে কখনো বিএসটিআই আধুনিকায়ন সম্ভব নয়। কাজেই এসব যন্ত্রপাতি নেওয়ার দরকার নেই। নিয়মিত জানাতে হবে: ভারতের দেওয়া ঋণে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিবর্তন কতটা হলো, তা নিয়মিতভাবে জানাতে হবে এক্সিম ব্যাংককে। এ নিয়ে ইআরডির সচিব প্রশ্ন তুলে বলেন, এ বিষয়টির উল্লেখ ছিল না চুক্তিতে। কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন নাদিম। ... [সূত্র] পরবর্তী সংবাদটিও একই ধাঁচের, কালের কণ্ঠে প্রকাশিত, ১১ ডিসেম্বর তারিখে। ভারতের সঙ্গে যৌথ বিদ্যুৎকেন্দ্র খুলনায়: ক্ষমতা ২৬৪০ মেগাওয়াট, খসড়া চুক্তিপত্রে পিডিবির স্বার্থ উপেক্ষিত ফারুক মেহেদী বিদ্যুৎ সংকট কাটাতে খুলনায় বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বিনিয়োগে প্রতিটি ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, (পিডিবি) এবং ভারতের পক্ষে ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কম্পানি (এনটিপিসি) এ বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। মোট ২৬৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে বাংলাদেশ ও ভারতের সমান অংশীদারিত্ব থাকবে। এরই মধ্যে প্রকল্পের যৌথ বিনিয়োগ চুক্তিপত্রের (জেভিএ) খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়া চুক্তিপত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয় সংস্থা এনটিপিসির একচ্ছত্র কর্তৃত্ব থাকবে। ওই সংস্থা অনুমোদন না দিলে প্রস্তাবিত প্রকল্পের কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। খসড়াটি গত ২ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো হয়েছে মতামতের জন্য। ... পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক ও বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ বি ডি রহমতুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রকল্পটি ভারতীয় স্বার্থ বিবেচনায় রেখেই করা হচ্ছে। ভারতের বাজে কয়লা, তাদের বেকার লোকজনের কর্মসংস্থান, অদক্ষ জনবলকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে এখানে কাজে লাগানো হবে। আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করলেও এখানে আসছেন ভারতীয়রা।’ তিনি বলেন, ‘পিডিবিতে অন্তত ৬০ জন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। এখানে খসড়া যা করা হয়েছে, তার খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।’ ... খসড়ায় আরো বলা হয়, বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর পরবর্তী ৩০ বছরে কোনো করপোরেট কর দেবে না এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র। এমনকি প্লান্ট, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, অবকাঠামো নির্মাণসামগ্রী, জ্বালানি আমদানিতেও কোনো রকমের শুল্ক, ভ্যাট, সারচার্জ, আমদানি পারমিট ফিসহ কোনো ধরনের মাসুলও দেওয়া হবে না ওই সময় পর্যন্ত। স্থানীয় বাজার থেকেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনে কোনো কেনাকাটা করলে তাও শুল্ক-কর-ভ্যাটমুক্ত থাকবে। এমনকি বিদেশি উৎস থেকে এ প্রকল্পের জন্য ঋণ নেওয়া হলে ঋণদাতা আয়কর ও ঋণের সুদের ওপর আয়কর থেকে মুক্ত থাকবে। প্রকল্পে নিয়োজিত বিদেশি সংস্থা তার শেয়ারের পুঁজির মুনাফা স্থানান্তর করলেও তা করমুক্ত থাকবে। প্রকল্পের প্রয়োজনে স্থানীয় বা বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়া অথবা অর্থ সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার, বিনিয়োগ বোর্ড কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা জারি করতে পারবে না। খসড়া চুক্তিপত্র অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার প্রকল্পটিকে সাধারণ বীমা করপোরেশনে ইনস্যুরেন্স বা পুনঃইনস্যুরেন্স করাতে বাধ্য করতে পারবে না এবং প্রকল্প কর্তৃপক্ষ চাইলে আন্তর্জাতিক কোনো বীমা কম্পানিতে ইনস্যুরেন্স করাতে পারবে। এমনকি প্রকল্পটি যখন বাংলাদেশের স্থানীয় আইনে চুক্তিবদ্ধ হবে তখন প্রযোজ্য স্ট্যাম্প শুল্কও আদায় করা যাবে না। এ প্রকল্পে যেসব বিদেশি বিশেষজ্ঞ চাকরি করবেন, তাঁদের আয় প্রথম তিন বছর করমুক্ত রাখতে হবে এবং তাঁদের আয়ের ৫০ শতাংশ নিজ দেশে পাঠানোর সুযোগ থাকতে হবে। প্রকল্পে নিয়োজিত বিদেশিদের ওয়ার্ক পারমিটে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারবে না। খসড়া চুক্তিপত্রের ‘সংরক্ষিত ইস্যু’ অংশে বলা হয়েছে, চুক্তিপত্রে যা-ই থাকুক না কেন, এনটিপিসির অনুমোদন ছাড়া প্রকল্পের উন্নয়ন, বিনিয়োগ বা এর শেয়ার, ব্যবসা স্থানান্তর, সম্পদ বিক্রি, অন্য কোনো যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি বা নতুন সংস্থায় বিনিয়োগ ইত্যাদি কিছুই করা যাবে না। বোর্ড সভায় ব্যবসায়িক পরিকল্পনা অনুমোদন করা হলেও নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন, ব্যবসা সম্প্রসারণ, অবকাঠামো নির্মাণ, এর ব্যয়, নকশা, বাণিজ্যিক পরিকল্পনা, বার্ষিক বাজেট ইত্যাদি ক্ষেত্রে এনটিপিসির অনুমোদন লাগবে। এ ছাড়া বিল পরিশোধ জিম্মা নির্দেশনার (গ্যারান্টি গাইডলাইন) কোনো পরিবর্তন, প্রশাসনিক, বাণিজ্যিক, পরিচালন ও বার্ষিক বাজেট অনুমোদন, মুনাফার বিপরীতে ডিভিডেন্ড ঘোষণা দেওয়া, বিগত সময়ের খরচের ২০ শতাংশের বেশি খরচ প্রাক্কলন করা, জমি অধিগ্রহণ, ভবন পণ্য বা সেবাসংক্রান্ত কাজে দালালকে কোনো বিল পরিশোধ করা যাবে না এনটিপিসির অনুমোদন ছাড়া। খসড়ায় আরো বলা হয়, প্রকল্পের মার্জার বা আত্তীকরণ, পুনর্নির্মাণ, সম্পদ স্থানান্তর, প্রকল্পের জন্য অনাবশ্যক কোনো বোঝা তৈরি, প্রকল্প পরিকল্পনায় নেই এমন পরিকল্পনা করা, কোনো পার্টিকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া, জিম্মা থাকা, পেইড-আপ ক্যাপিটালের কোনো রকম পরিবর্তন, বার্ষিক পরিকল্পনার বাইরে নতুন ঋণ নেওয়া, শেয়ার বিভক্তিকরণ, বাড়ানো, কেনা বা বাতিল করা, রাইট ও বোনাস শেয়ার ইস্যু করা, সংস্থার সমঝোতা স্মারক পরিবর্তন, প্রকল্পের জন্য অডিটর নিয়োগ বা বাতিল করা, নতুন কোনো হিসাব নীতিমালা চালু করা, ব্যাংকিং দেউলিয়াত্ব বা অক্ষমতাসহ অন্য কোনো আর্থিক কারণে মামলা করা, প্রকল্পের পরিচালক বা প্রিন্সিপাল অফিসার নিয়োগ, বাতিল বা তাঁদের সম্মানী নির্ধারণ, প্রকল্পের কোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠান তৈরি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া, আইপিও ছাড়া যাবে না এনটিপিসির অনুমোদন ছাড়া। এ ছাড়া পাঁচ মিলিয়ন (৫০ লাখ) ডলার মূল্যের বেশি কার্যাদেশ দেওয়া, পাঁচ লাখ ডলারের বেশি ব্যয়ে পরামর্শক সংস্থার কার্যাদেশ, ২০ হাজার ডলারের বেশি নয় এমন স্টোরের সামগ্রী, যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ইত্যাদির অবলোপন বা রাইট অফ, এক হাজার ডলারের বেশি নয় এমন নগদ অর্থের অবলোপন, প্রকল্পের কোনো স্টাফের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ১০ হাজার ডলারের বেশি দেওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ভারতীয় কম্পানি এনটিপিসির অনুমোদন নিতে হবে। ভারতীয় পক্ষে প্রকল্পের স্বার্থে এনটিপিসির অনুমোদন নেওয়ার যেসব শর্ত প্রস্তাব করা হয়েছে, সে রকম শর্ত পিডিবির পক্ষে প্রযোজ্য হলেও তা করা হয়নি খসড়ায়। অর্থাৎ যৌথ ব্যবস্থাপনার এ প্রকল্পে পিডিবির কোনো বিষয়ে আপত্তি করার কোনো বিধান রাখা হয়নি খসড়ায়। [সূত্র] কয়েকদিন আগে শাহরুখ খান বাংলাদেশে এসে মঞ্চে নৃত্য ও রঙ্গ পরিবেশন করে গেছেন, এ নিয়ে সচলায়তনে দু'টি প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়েছে [প্রতিক্রিয়া ১, প্রতিক্রিয়া ২] কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কিংবা মান নির্ধারক যন্ত্রপাতির সাথে হিন্দি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান বা হিন্দি সিনেমার কী সম্পর্ক, এটা পাঠক আমাকে করতেই পারেন। সম্পর্ক আছে। আমি ভারতের এক্সিম ব্যাঙ্ক, এনটিপিসি কিংবা শাহরুখ খানকেও কোনো দোষারোপ করতে চাই না। আমি শুধু কৌশলী ভারতের বাণিজ্যফ্রন্টের তিনটি শাখা পাঠকের সামনে তুলে ধরলাম। আজ থেকে ঠিক তিন বছর আগে সচলায়তনে একটি পোস্ট প্রকাশ করেছিলেন সচল বিপ্রতীপ। "বাঙ্গালী কি হুজুগে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলো?" শিরোনামের ঐ পোস্টে তিনি গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে জনৈক বি. আর. মোল্লার লেখা একটি পোস্টকার্ডের স্ক্যান্ড কপি প্রকাশ করেছিলেন। আজ থেকে সত্তর বছরেরও বেশি সময় আগে মোল্লা সাহেব তাঁর এক আত্মীয়কে লিখেছিলেন, ‘কিন্তু যা করি তাহা কিছুই ভালো লাগে না, কারন আমরা বাঙ্গালী খোদা তাল্লার কাছ হইতে যে কি আনিয়াছি তাহা বলতে পারি না, কারন মুসলমানের হাত হইতে গেল ইংরেজদের হাতে রাজত্ব শিখিতে হইলো ইংরেজি, আবার জোরে যে বাহু বলে আনিয়া স্বদেশ পাকিস্তান তাও আবার রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে। এখন দেখা যায় আমরা বাঙ্গালী চীর কাল শুধু রাষ্ট্রভাষাই শিখিয়া যাইতে হবে। কিসের সংসার উন্নতি কিসের চাকরি, শুধু আনিয়াছি আমার খোদা তাল্লার নিকট হইতে রাষ্ট্রভাষার কপাল। এই আমাদের কাজ কিন্তু খোদা তাল্লাই বিচার করিবে। তবে আমরা বীরের মতো পাঞ্জাবীর উপর আক্রমন করিতে প্রস্তুত হইতেছি। আপনারাও তৈয়ার হন, একবার তাহাদের সাথে লড়িব, জয় নাহয় পরাজয়।’ আমরা যারা বাংলা ভাষাকে দৈনন্দিন জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে ব্যবহারের অধিকারকে প্রাপ্য ধরে নিয়েছি, তাদের পক্ষে আরেকটি ভাষার আগ্রাসনের ব্যাপারটা অনুভব করা সম্ভবত একটু মুশকিলই। গতবছর প্রাগে বেড়াতে গিয়ে অনুভব করেছি, একটা ভাষা না জানার কী সমস্যা। প্রাগ ইয়োরোপের ট্যুরিস্ট অধ্যূষিত শহরগুলোর অন্যতম, সারা দুনিয়া থেকে লোকজন গিয়ে গিজগিজ করে, সেখানে দোকানপাট যারা চালায়, তারা কিছু ইংরেজি জানবে, এটা আশা করা হয়তো ভুল ছিলো না। কিন্তু ইংরেজি, জার্মান, ভাঙাভাঙা ফরাসী বা স্প্যানিশ, চারটা ভাষার একটার জবাবেও প্রাগের দোকানদার খালাম্মারা চেক ভাষা ছাড়া অন্য কিছুতে জবাব দেননি। তাদের দেহভাষা পরিষ্কার ছিলো, কেনার ঠ্যাকা তোমার, কাজেই আমার কথা বোঝার ঠ্যাকাও তোমার। আমি আর আমার বন্ধুরা বোকা বনে গিয়েছিলাম, কিছুটা ক্রুদ্ধও। এটাকে ভাষার আগ্রাসন বলা যাবে না, বড়জোর ভাষাপ্রাচীর বলা যেতে পারে। এবার উল্টো অভিজ্ঞতার কথা বলি। জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রর পক্ষ থেকে একবার শেরাটনে এক শিক্ষামেলায় জার্মান শিক্ষা বিনিময় পরিষেবার [ডয়েচার আকাডেমিশার আউসটাউশডিন্সট] স্টলে কামলা খাটতে গিয়েছিলাম। সেখানে দিল্লি থেকে আগত জনৈকা জার্মান যুবতী এবং ভারতীয় যুবককে সাহায্য করতে হবে। এ দু'জনের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে জার্মানই ব্যবহার করছিলাম। শিক্ষামেলা কর্তৃপক্ষ [এরা হোলসেল ধান্দাবাজ] আমাদের সাথে সাদা চামড়ার লোক দেখে গলে গিয়ে এক তরুণ এবং এক তরুণীকে পাঠালেন সাহায্য করার জন্যে। আমার খাটনি তাতে একটু লাঘব হওয়ায় ভালোই লাগছিলো। একটু পর সেই ভারতীয় যুবক আমাকে এসে হাসিমুখে হিন্দিতে বললেন, বাহ, তোমাদের এখানে তো সবাই চমৎকার হিন্দি বলে! আমি তার হাসির আড়ালে দাঁত বার করা তাচ্ছিল্যটুকু দেখে অপমানিত হয়েছিলাম। এবং সত্যিই তাই, সেই তরুণ আর তরুণী ইংরেজিতে কাঁচা হলেও গড়গড়িয়ে হিন্দি বলে যাচ্ছিল সেই ভারতীয় ভদ্রলোকের সাথে। আমি দু'জনকে একটু তফাতে ডেকে নিয়ে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করলাম, আপনারা একটু কষ্ট করে হলেও ইংরেজিতে কথা বলুন। তারা আমার অনুরোধ রাখলেন তো না-ই, ঝাঁঝিয়ে উঠলেন। আমি মানুষের সাথে সহজে দুর্ব্যবহার না করলেও প্রয়োজনের সময় পিছপা হই না, আমি তাদের প্রায় ঘাড়ধাক্কা দিয়ে স্টল থেকে বার করে দিয়েছিলাম। কাজটার জন্যে আমি গর্বিত নই, কিছুটা লজ্জিতই। তবে সেই ভারতীয় ভদ্রলোক পরবর্তী আটচল্লিশ ঘন্টায় আমার বা আমার সহপাঠীদের সাথে একটিও হিন্দি শব্দ ব্যবহারের আগ্রহ পাননি। প্রাগের চেক দোকানদার খালাম্মার সাথে ঢাকা শেরাটনের সেই তরুণতরুণীর মানসপটের পার্থক্য থাকবেই। আমরা বিদেশীবৎসল জাতি, ভিনজাতির কাউকে হাতের কাছে পেলে তাকে নারায়ণজ্ঞানে আপন করে নিতে ক্ষেপে উঠি, চেকরা কমবেশি বিদেশীবিদ্বেষী। ভাষার আগ্রাসনের দিকটা যদি আমরা এবার এভাবে কল্পনা করি, খোদ বাংলাদেশে বসেই একটা ভাষা না জানার কারণে আমাদের কোনো একটা সেবা বা পরিষেবা বা সুবিধা পেতে প্রবল সমস্যা হচ্ছে, তাহলে পরিস্থিতি কেমন দাঁড়ায়? ইতিমধ্যে এমন একটি ভাষা আগ্রাসী রূপে বাংলাদেশে বিরাজ করছে, ইংরেজি। কিন্তু ইংরেজি সারা পৃথিবীতেই লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কাগুলোর একটি বলে আমরা হয়তো গা করি না। ইংরেজি না জানলে আমরা বাংলাদেশে পড়ালেখা করতে পারবো না বেশিদূর, চাকরিবাকরি পেতে আর করতে অনেক সমস্যা হবে, সামাজিক পরিমণ্ডলে অচ্ছ্যুৎ হিসেবে বিবেচিত হবো, এমনকি হাইকোর্টের রায়ও পড়তে পারবো না, এরকম আরো নানা ভ্যাজাল আছে। সমস্যা হচ্ছে, ইংরেজির পাশাপাশি প্রবাদের উটের মতো আমাদের তাঁবুতে মাথা গলিয়েছে হিন্দি উট। আটচল্লিশ সালে জিন্নাহ টপ-ডাউন প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের সব প্রদেশের ওপর রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। বাঙালি বটম-আপ প্রক্রিয়ায় উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ছেড়েছিলো। উর্দুর আগ্রাসন আমাদের কাছে পরিষ্কার, কারণ উর্দুর স্বার্থে এদেশে রক্তপাত হয়েছে, রাষ্ট্র মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে। হিন্দির আগ্রাসন নীরব ও কোমল। ঘরে ঘরে কামানের বদলে টেলিভিশনগুলো গুলি ছুঁড়ছে, আমরা সোৎসাহে সেই গুলি সেবন করে যাচ্ছি আফিমের গুলির মতো। কার্টুন নেটওয়ার্ক নামের শিশুপ্রিয় চ্যানেলটির সম্পূর্ণ হিন্দি-ডাবড সংস্করণ এখন বাংলাদেশের শিশুরা বসে বসে দেখছে। তাদের বিনোদনের সুস্থ উপায়গুলো আমরা নষ্ট করছি এক এক করে, তাদের খেলার মাঠ নেই, বন্ধুদের সাথে মিলে হইচই আড্ডা এক্সকারশন নেই, তাদের আছে শুধু স্যারের বাসা, কোচিং সেন্টার আর লোডশেডিঙের ভিড়ে বিনোদনের একমাত্র জানালা, হিন্দিভাষী কার্টুন আর নাচগান। আমাদের অভিভাবকরাও কমবেশি গর্বিত, বাচ্চা গড়গড় করে হিন্দি বলা শিখে গেছে, শিলা কি জাওয়ানি নাচতে পারে এই বাচ্চা বয়সেই! বিয়ের অনুষ্ঠানে হিন্দি গানের সাথে নাচ এখন একটা অবশ্যপরিবেশনীয় আইটেম, দুইদিন পর এটা না করলে ইজ্জত থাকবে না। হিন্দি সিরিয়ালে দেখানো জামা বানানোর জন্যে গাউসিয়াতে লাইন দিচ্ছি আমরা, মোবাইল টেলিফোনে প্রেমাস্পদাকে গদগদ হিন্দিতে আমরাই ভালোবাসা জানাচ্ছি। এই সমালোচনার জবাবে যারা হিন্দি রসে মজে আছেন, তারা বলছেন, ভালো বাংলা কনটেন্ট তো নেই, হিন্দি দেখবেন না তো কী দেখবেন? এবং তারা রীতিমতো অপমানিত বোধ করেন এই প্রসঙ্গ তুললে। অনুমান করা কঠিন নয়, হিন্দি তাদের কাছে এখন একটি টোটেমে পরিণত হয়েছে। আমরা ইংরেজি পারি না বলে বিদেশী ভাষা হিসেবে হিন্দিকে গ্রহণ করছি উদার হাতে, এবং এ নিয়ে কথা উঠলে তেড়ে আসছি। সমস্যাটা প্রকট হবে তখন, যখন বটম-আপ পদ্ধতিতে আমরা হিন্দিকে দেশের দ্বিতীয় ভাষার কাছাকাছি তুলে আনবো। এখন যেভাবে চলছে, সেভাবে চলতে থাকলে এটা ঘটতে আর বছর আষ্টেক সময় লাগতে পারে। তখন হিন্দি না জানার পরিণতি হবে ইংরেজি না জানার পরিণতির মতোই। আমরা কাজ পাবো না, সমাজে মিশতে পারবো না। দেশ দখল নিয়ে বিম্পি খুব বড় বড় কথা বলে, ট্র্যানজিট করিডর ইত্যাদি বলে চিৎকার করতে থাকে, কখনও শুনিনি, ভারতের এই সংস্কৃতি-কামানের বিরুদ্ধে কোনো কথাবার্তা বলতে। রাজনীতিকদের নাতিপুতিরাও যে হিন্দিরসে হেজেমজে আছে, সেটার উদাহরণ শেখ হাসিনার নাতনি আলিফ লায়লা নানা ছাগলামিতে আমাদের সামনে স্পষ্ট করেছে। দেশ শুধু ভৌগোলিক সীমার ব্যাপার নয়, মানুষ নিয়েই দেশ। সেই মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে ভূগোল কে চোদে? আমাদের সচেতনতার অভাবে এই দেশে বটম-আপ প্রক্রিয়াতেই হিন্দির গোড়া শক্ত হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে এখন টপ-ডাউন প্রক্রিয়াতে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি চাই, সরকার এই দেশে হিন্দি চ্যানেলের সংখ্যা এবং এয়ার টাইম নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। শাশুড়ি তার পুত্রবধুর পোঁদে কী কী প্রক্রিয়ায় আঙুল দিচ্ছে, তা হিন্দি ভাষায় না দেখলে আমাদের বিনোদনজগতে কোনো ক্ষতি হবে বলে আমার মনে হয় না। সংবাদপত্রগুলো যে অশ্লীল মাত্রায় কাভারেজ দেয় হিন্দি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনকে, সেটা বন্ধ করতে হবে। আমাদের দেশীয় চ্যানেলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে, দেশী প্রোগ্রাম নির্মাতাদের আরো আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে ভালো অনুষ্ঠান নির্মাণে উৎসাহিত করতে হবে। আমরা যারা ভোক্তা, তাদের আনুগত্য স্থাপন করতে হবে দেশী অনুষ্ঠান ও কনটেন্টের ওপর। যদি না করি? নাদিম পাঞ্জেতান এসে ঠিক করে দেবেন, আমরা কার কাছ থেকে কী কিনবো। এনটিপিসি এসে ঠিক করে দেবে, আমাদের দেশে বিদ্যুৎ খাতে কে কীভাবে বিনিয়োগ করবে। আর শাহরুখ খান এসে হাসিমুখে রঙ্গ করে বলবেন, কোলকাতা নাইট রাইডার্সের জন্য বাচ্চা পয়দা করতে। আমরা সবই চুপ করে মেনে নেবো। কয়েকজন হয়তো বি. আর. মোল্লার মতো ইমেইল বা ব্লগ লিখবেন ইউনিকোড বাংলায়। উটের পিঠ ভাঙে শেষ পর্যন্ত একটা খড়। আর উটপাখি বালুতে মুখ গুঁজে রাখতে পারে, তাতে ঝড় থামে না।
false
rn
ইংরেজি সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (তিন) ২১। 'এম্পায়ার অভ দা মোগল দি টেনটেড থ্রোন' লেখক- এলেক্স রাদারফোর্ড। বইটিতে মোঘর বাদশাহদের শাসনকালের কিছু চিত্র ফুটে উঠেছে। সম্রাট আকবারের মৃত্যুর পাঁচ মাস পরে তার পুত্র শাহজাহান সিংহাসনে আরোহন করেন। কিন্তু তার ক্ষমতা গ্রহন সুখকর ছিলো না। তার ভাইয়েরা বিরোধিতা করে। শাহজাহান কঠিন হস্তে তাদের দমন করেন। ২২। 'ইসলাম সংক্ষিপ্ত ইতিহাস'- কারেন আর্মস্টং। পশ্চিমা দেশগুলোতে ইসলাম ধর্মকে ভাবা হয় নারীদের মৃত্যুকূপ হিসাবে। এধর্মে নারীদের কোন স্বাধীনতা নেই, নারীদের কোন অধিকার নেই, সম্মান নেই ইত্যাদি এবং ইসলামই সবচেয়ে পুরুষতান্ত্রিক ও নারী-বিদ্বেষী ধর্ম। ইসলাম ধর্ম মানেই জঙ্গিগোষ্ঠি আল-কায়দা, তালেবান। আমার মনে হয় ক্যারেন আর্মস্ট্রং এর লেখা এই বইটি পড়লে পশ্চিমা দেশগুলোর মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হতে বাধ্য। ইসলাম ধর্ম কতটা সুন্দর, কতটা উদার, কতটা মহান ক্যারেন আর্মস্ট্রং কিছুটা হলেও বলতে পেরেছেন। অনুবাদক শওকত হোসেনকে অনেক অনেক ধন্যবাদ বইটি বাংলায় অনুবাদ করার জন্য। ২৩। 'নো লংগার অ্যাট ইজ' লেখক- চিনুয়া আচিবে। যুগান্তকারী উপন্যাস “থিংগস ফল এপার্ট” এর জন্য কৃষ্ণ আফ্রিকার অন্যতম উপন্যাসিক চিনুয়া নামটি বিশ্বব্যাপী আলোচিত। নো লংগার অ্যাট ইজ উপন্যাসের কাহিনী শুরু ওবি ওকোনকো নামের এক নাইজেরিয়ান সিভিল সার্ভেন্টের ঘুষ গ্রহণের পর বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এরপর কাহিনীর পুরোটায়ই বর্ণনা করা হয় ফ্লাসব্যাকে। প্রধান চরিত্র ওবি ছোটবেলায় স্কুলে অসাধারণ ছাত্র ছিলেন। তার জন্ম ইউমোফিয়াতে। এটি পূর্ব নাইজেরিয়ার শহর লাগোসের একটি ইগবো পল্লী। ইগবো নাজেরিয়ার অন্যতম বৃহ্ৎ এথনিক সম্প্রদায়ের একটি। নাইজেরিয়ার শহর লাগোসের ইউমোফিয়া উন্নয়ন সমিতি চাঁদা তুলে আটশো পাউন্ড ধার দেয় ওবিকে। উদ্দেশ্যে যে ওবি ইংল্যান্ডে গিয়ে আইন শাস্ত্রে পড়াশোনা শেষ করে নাইজেরিয়াতে ফিরে ইগবো সম্প্রদায়ের সুখ-দুঃখ দেখবে। কিন্তু ওবি ইংল্যান্ডে গিয়ে আইনে পড়াশোনা না করে ইংরেজি সাহিত্যে লেখাপড়া শেষ করে চার বছর পর আবার নাইজেরিয়াতে ফেরত আসেন। বাস করতে থাকেন লাগোস শহরে। যোগদান করেন সিভিল সাভির্সের স্কলারশিপ বোর্ডের চাকুরিতে, একজন শ্বেতাঙ্গ আফিসারের অধীনে। ওবি ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনার সুবিধা পায় সরকারের কাছ থেকে। তার এই পার্থিব সাফল্য প্রাপ্তিতে মা-বাবা, গ্রামবাসী ও ইউমোফিয়ার সভাপতি ও সদস্যসহ সকলেই খুব খুশি হয়। ২৪। 'ওয়াদারিং হাইটস' লেখক- এমিলি ব্রোন্ট। কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে হীথক্লিফ নিজের ছেলের চেয়েও বেশি প্রিয় হয়ে উঠলো মিস্টার আর্নশর কাছে। কৈশোরেই হীথক্লিফের প্রেমে পড়ল ক্যাথরিন আর্নশ। পিতার মৃত্যুর পর হিন্ডলে আর্নশ কর্তা হলো বাড়ির। হীথক্লিফকে ভাইয়ের আসন থেকে নামিয়ে দিল সে চাকরের পর্যায়ে। একই সময় এডগার লিনটনের সাথে ঘনিষ্টতা হতে শুরু করল ক্যাথরিন আর্নশর। প্রতিশোধের নেশায় পাগল হয়ে উঠল হীথক্লিফ। হিন্ডলে আর্নশ ও এডগার লিনটনের সম্পত্তি করায়ত্ত করল সে ছলে বলে কৌশলে। কিন্তু শান্তি কি পেল তার অতৃপ্ত আত্মা? জানতে হলে পড়ুন ওয়াদারিং হাইটস। ২৫। 'ম্যারিজ এন্ড মরালস' লেখক- বার্ট্রান্ড রাসেল। বইটিতে রাসেল বলেছেন, একালের নৈতিকতার উৎস দুটি; পিতৃত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হবার আকাঙ্ক্ষা এবং যৌনতা সম্পর্কে খারাপ ধারনা। রাসেল অবাধ যৌনতাকে খারাপ বলে চিহ্নিত করেন নি। কিন্তু একইসাথে তিনি আত্মসংযমের কথাও বলেছেন। এক্ষেত্রে আবার সংযমের সঙ্গে যেন ব্যক্তি স্বাধীনতার বিরোধ না ঘটে সেটাও তিনি নিশ্চিত হতে বলেছেন। বিবাহের মূল লক্ষ্য সন্তান পালন- এটা রাসেলের মতামত। সন্তান পালনের ব্যাপারটা না থাকলে তিনি বিবাহের পুরোই বিরোধী হতেন বলে জানিয়েছেন। ২৬। 'মিথ এন্ড মিনিং' লেখক- ক্লদ লেভি স্ত্রস। সারাজীবন কাজ করেছেন বিভিন্ন জনগোষ্ঠীতে প্রচলিত পৌরাণিক মিথ, লোকজ গল্পগাথা, যুগের পর যুগ চলে আসা নির্দিষ্ট অভ্যাস অথবা ভঙ্গী নিয়ে। প্রায় তিন দশক ধরে আমাজনের ইন্ডিয়ানদের জীবনাচরন ব্যাখা বিশ্লেষন করে দুনিয়ার যাবতীয় পৌরানিক কাহিনীগুলোর মধ্যে একটা সার্বজনীন বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেয়েছেন। পৌরানিক মিথ ও প্রথার মৌলিক ধারনাকে তিনি বিশ্লেষন করে আবিস্কার করেছেন তার অন্তর্নিহিত বিন্যাস, তার অভ্যন্তরীন প্যাটার্ণ। লোকজ স্থানীয় মিথ নিয়ে কাজ করার সময় ক্লদ লেভি স্ট্রসের মিথলজি হয়ে যায় মিথলজিক। যুক্তি দিয়ে বোঝা লোককল্প। ফলে নির্দ্বিধায় তিনি দাবী করেন আদিম সমাজ নিয়ে তার তাত্ত্বিক অবস্থান- আদিবাসী মানুষের মানস বৈশিষ্ট্য নিশ্চিত ভাবেই পশ্চিমা সভ্যতার মানসের সমকক্ষ। যে কোন জাতিসত্ত্বার নিজস্ব চিন্তা সংস্কৃতি ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে যে ভাবনা প্রকাশ করে, পশ্চিমা যে কোন ভাবনার চেয়ে তা কোন অংশে কম নয়। ২৭। 'ইলিয়াড' ও 'ওডেসি' লেখক- হোমার। বিশ্বের সর্বকালের সেরা দুটি গ্রিক মহাকাব্য ইলিয়াড এবং অডিসি।সেই আদিকাল থেকে অদ্যাবদি যেগুলোর জনপ্রিয়তা এতটুকু ম্লান হয় নি।এ রকম দুট কালজয়ী সাহিত্যকর্মের রচয়িতা মহাকবি হোমার। একজন জার্মান সমালোচক ও দার্শনিকের অভিমত, ইলিয়াড কাব্যটি এককভাবে হয়ত হোমারের রচিত নয়।এটি আসলে জাত মহাকাব্য। এই সুবৃহত মহাকাব্যটি হয়তো প্রাচীন গ্রীসের বেশ ক জন গ্রাম্য স্বভাবকবি কর্তৃক রচিত।বিভিন্ন কবির রচিত খন্ড খন্ড অংশ একত্রিত করেই সৃষ্টি হয়েছে ইলিয়াড। ২৮। 'এন্ডলেস ওয়েট' লেখক- আগাথা ক্রিস্টি। আগাথা ক্রিস্টি (১৫ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯০ – ১২ই জানুয়ারি, ১৯৭৬) একজন ইংরেজ অপরাধ কল্পকাহিনী লেখক। তিনি ৮০টি রহস্য উপন্যাস লেখেন, যাদের মধ্যে গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারো (Hercule Poirot) ও মিস মার্পল'র কাহিনীগুলো অন্যতম। তাঁকে রহস্য উপন্যাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্ভাবনী লেখকদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। ২৯। 'দ্য গুড আর্থ' লেখক- পার্ল এস. বাক। বইটি ১৯৩১ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৩১ থেকে ১৯৩২ – এই পুরো দুই বছর ‘দ্য গুড আর্থ’ বইটি আমেরিকার ন্যাশনাল বেস্টসেলার হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলো। এই বইটির জন্য বাক ১৯৩২ সালে পুলিৎজার পুরষ্কার পান। অসামান্য মর্মস্পর্শী এই সাহিত্যকর্মই পরবর্তীতে তাঁকে নোবেল পুরষ্কারের মঞ্চের দিকে আরো কয়েকধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। পার্ল এস. বাক’র ‘দ্য গুড আর্থ’ নিয়ে বেশ কয়েকটি শর্ট ফিল্ম ও পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন বিশ্বের বেশ কয়েকজন নামীদামী পরিচালক। ‘দ্য গুড আর্থ’ এর কাহিনি চীনের এক গরীব কৃষক ওয়াং লুংকে নিয়ে। ওয়াং লুং হোয়াঙের জমিদারের কৃতদাসী ও-লানকে বিয়ে করে। নিজের কঠোর কর্মঠ জীবনের সূত্র ধরে একসময় সে প্রভূত উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়। জমানো অর্থ খরচ করে কিনে ফেলে পড়তি জমিদারের জমি। সেই জমিতে চাষবাস শুরু করে ওয়াং লুং। তার গরীবী অবস্থা ফিরতে থাকে। তাকে একাজে সবসময় সাহায্য করে তার বোকাসোকা স্ত্রী ও-লান। প্রতি বছর সে একটু একটু করে নিজের জমির পরিধি বাড়াতে থাকে। ৩০। 'মাদার তেরেসা' লেখক- এমিল জোলা। বিশ্বের 'ঔপন্যাসিকদের ঔপন্যাসিক' হিসেবে খ্যাত ছিলেন এমিল জোলা। সাহিত্যে প্রকৃতিবাদী চিন্তাধারার অত্যন্ত জোরালো প্রবক্তা ছিলেন তিনি।জীবনের শুরুতে তিনি ফরাসি শুল্ক বিভাগের একজন করণিক ছিলেন। ফ্রান্সের রাজনৈতিক উদারনৈতিকতার জন্য সবসময় কাজ করেছেন এমিল জোলা।দ্য আর্থ (বাংলায় অনূদিত গ্রন্থ মাটি) বা দ্য জার্মিনাল (বাংলায় অনূদিত গ্রন্থ অংকুর) এর মতো উপন্যাসসহ আরও অনেক কালজয়ী উপন্যাসের রচয়িতা ছিলেন এমিল জোলা। ১৯৩৭ সালে জোলার জীবনী নিয়ে তৈরি করা হয় চলচ্চিত্র 'দ্য লাইফ অব এমিলি জোলা'। মুভিটি একাডেমি অ্যাওয়ার্ড পায়। সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:০৮
false
rn
এই বৈশাখে (আমার দুঃখ জোয়ারের জলস্রোতে/নিয়ে যাবে মোরে সব লাঞ্ছনা হতে।)মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে,বুকের ভেতর প্রচন্ড কষ্ট হয়।চারপাশ নিঃশব্দ।পৃথিবীটা বড় মায়াময় লাগে।চাঁদের কি আলো।আহা।ইশ্বরের উচিত মানুষের মরার সময়টা এমন চাঁদের আলো'র রাতে নিদিষ্ট করা।জীবনানন্দের কবিতার শব্দ গুলো একটার পর একটা ছবি তৈরি করে ধর ছিল আমার চোখের পাতায়।''চোখের পাতার মতো নেমে-চুপি কোথায় চিলের ডানা থামেসোনালি সোনালি দল শিশিরশিকার করে নিয়ে গেছে তারে।কুঁড়ি বছরের পরে সেই কুয়াশায়পাই যদি হঠাৎ তোমারে।হয়তো এসেছে চাঁদ মাঝ রাতেএকরাশ পাতার পেছনে।সরু-সরু কালো কালো ডালপালা মুখে নিয়ে তার,শিরীষের অথবা জামের,ঝাউয়ের-আমেরকুঁড়ি বছরের পরে তখন তোমারে নাই মনে!জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুঁড়ি-কুঁড়ি বছরের পার।(খুব কষ্ট হয়।চোখ ভিজে যায় বার বার।)আমি বোকা মানুষ।আমার ফট ফট করে কথা বলা উচিত না।আমি বলিও না।মুখ বুজে থাকি।মাঝে মাঝে মেজাজ খুব খারাপ হয় তখন বলি।সমস্যা হলো আমার সারাক্ষন'ই মেজাজ খারাপ থাকে।তখন ইচ্ছা করে আসে-পাশে যারা থাকে তাদের সবার মেজাজ খারাপ করে দেই।আমার মেজাজে কারো কিছু যায় আসে না।এখন দুপুর দু'টা।বৈশাখ মাস।দারুন গরম।আজ রবি বার।গতকাল রাতে কি হয়েছে তাই বলি,নীলা আপা'র বন্টি দারুন বুদ্ধিমতি মেয়ে কিন্তু বোকা।ভালো মেয়ে গুলো একটু বোকা বোকা হয়'ই।যাই'ই হোক এখন বন্টি'র কথা বলি।রাতে বাসায় ফিরতে দেরী হয়ে গেল,নীলা আপা'র বন্টি আমাকে বললো-খেয়ে নাও,বন্টি আমাকে তার মায়াময় হাতে অনেক ভালোবাসা নিয়ে ভাত বেড়ে দিচ্ছে।বন্টি'র দুই হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি।টুন টুন করে বাজছে।কি ভালো লাগে!ভাত খাওয়ার পর মনে পড়লো আজ সিগারেট আনতে ভুলে গেছি।বাইরে ঘুঁড়ি ঘুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে।বৈশাখ মাসের বৃষ্টি।আমি সিগারেট আনতে বাইরে যাই।কোনো কোনো রাতে ঘরে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে না।ইচ্ছা করে শুধু হাঁটতেই থাকি।হাঁটতেই থাকি।তখন হঠাৎ করে মনে পড়ে নীলা আপা'র বন্টি দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আমার জন্য অপেক্ষা করছে।তখন বাসার দিকে হাঁটা শুরু করি।দরজার কাছে এসে দেখি বন্টি দাঁড়িয়ে আছে।চোখে মুখে এক আকাশ ভয়।আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে ভিজে যাওনি তো?আমি বলি,আমি ভিজেছি,সিগারেট ভিজেনি।বন্টি হাসে।বড় ভালো লাগে এই বোকা মেয়েটির হাসি।Among the windingsof the ViolinsAnd the ariettesof cracked cornetsInside my brain adull tom-tom beginsAbsurdly hammeringa prelude of it's ownCapricious monotoneThat is at least onedefinite false note.একটি অন্তত প্রেমিকা না থাকলে নিজের জীবনটাকে ভীষন অপমানিতের জীবন মনে হয়।আমার ধারনা,ইদানিং যা ভাবি,মানুষের ভিড়ের মধ্যে কেউ কেউ তা বুঝতে পারে।কিছু মানুষ এই ক্ষমতা অর্জন করেছে।যারা এই ক্ষমতা অর্জন করেছে তাদের নিশ্চয়'ই আন্তজার্তিক নেটওয়ার্ক আছে।রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় রাস্তার দুই পাশের সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি।বাটা'র দোকানের ঐ পাড়ে চৌরঙ্গী'র সামনে এক রিকশাওলা তার নতুন রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।লম্বা মাথার চুল।রিকশাওলা ইশারায় আমাকে জিজ্ঞেস করলো,আমি ওর রিকশায় যাব কিনা?নতুন রিকশা দেখলেই আমার ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছা করে।হঠাৎ মনে হলো রিকশাটা যেন একটা আধুনিক লিমুজিন গাড়ি।রিকশা চালকটা আমার ড্রাইবার।আমি হাতের ইশারায় রিকশা দাঁড়াতে বললাম।তারপর দোকানে সিগারেট কিনতে গেলাম।রিকশাওলা আমার পেছনে এসে হর্ন বাজাচ্ছে।আমি রিকশায় উঠে বসলাম।আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই রিকশাওলা'র পূর্ব পুরুষ জমিদার ছিল।সেদিন প্রথম মিতু কে কি রঙ্গের শাড়ি পরা দেখে ছিলাম,মনে মনে তাই কল্পনা করছি।মিতু'র হাতে কি কাঁচের চুড়ি ছিল?এই ভাবেই কল্পনা শক্তি'র ব্যায়াম করা যায়।কোনো কোনো দিন বেশ মিলে ও যায়।তখন কি আনন্দ হয়।সেদিন আমার আত্নবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়।গভীর রাত পর্যন্ত খুশিতে জেগে থাকি।যখনই আমার হিমি'র কথা খুব মনে পড়ে,হাঁটতে হাঁটতে একা একা দূরে কোথাও চলে যাই।যেন বাতাসের সাথে অদৃশ্য ভাবে মিশে আছে আমার হিমি।আমার কিছুই ভালো লাগে না।আমার কিছুই হতে ইচ্ছা করে না।এমন কি মানুষ ও না।ক্লান্ত মনে একটা সিগারেট ধরাই।হিমি'র প্রসঙ্গটা কি আরো টেনে নিয়ে যাবো?হিমি'র প্রতি একটা আর্কষন বোধ করি ঠিকই।কিন্তু ব্যাপার টা যেহেতু....এর পরই আসবে চাকরি বা ব্যাবসা,বিয়ে,টাকা,হাসপাতাল,শাড়ি গহনা,প্রভিডেন্ট ফান্ড,বেড়াতে যাওয়া,অনুষ্ঠান....একের পর এক।কোনো বৈচিএ নেই।আপষ আর আপষ।এত আপষ করে একটা মানুষ জীবনে কি পায়?দুর্লভ কয়েকটা মুহুর্ত।কয়েকটি মুর্হুতের জন্য নিজের পুরো জীবনটাকে উৎসর্গ করার কোনো মানে হয় না।ফোনটা বাজছে।আমি জানি কে ফোন করেছে।ফোনের আওয়াজের মধ্যে কি যেন একটা আছে।আমার বুকের মধ্যে শির শির করছে।প্রিয় মানুষরা ফোন করলে সব সময় ফোন ধরতে হয় না।একশো বার ফোন করলে একবার ধরতে হয়।আর ফোনটা ধরেও খুব বিরক্ত ভাব দেখাতে হয়।এটাই নিয়ম।ফোনটা বেজেই যাচ্ছে।যে ফোন করেছে এখন আমি তাকে একটা এসএমএস করবো।এসএমএস টা হবে এই রকম- "আমি বিলাসিতার শিকল ভেঙ্গে আবার আসব-/তোমার অহনে,অপেক্ষায় থেকো দিনের শেষে।"
false
fe
None মুখ ঢেকে যায় বইয়ে প্রতীক ইজাজ ----------------------------- তখনো সূর্য ডোবেনি। উত্তরের প্রবেশ দ্বার দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই কানে এলো বাঁশি বিক্রেতা রোকনের বাঁশিতে শিবরঞ্জন রাগ। দুই প্রান্তের প্রবেশদ্বার দিয়ে তখন কেবলই বইপ্রিয় মানুষের আসা-যাওয়া। হাতের ওপর স্তূপাকার বইয়ে ঢেকে গেছে মুখ। রাস্তার দুই পাশের সোডিয়াম বাতির আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে মুখগুলো। আর বাইরের প্রাঙ্গণ ছাপিয়ে আবৃত্তি মেলার স্টল থেকে ভেসে আসছে মাহিদুল ইসলামের কণ্ঠে হেলাল হাফিজের 'প্রস্থান' কবিতার পঙ্ক্তি_'এখন তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো, পত্র দিয়ো; এক বিকেলে মেলায় কেনা, খামখেয়ালির তালপাখাটা...।' ভেতরে তখন বইয়ের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া উৎফুল্ল মানুষ। বাংলা একাডেমীর অমর একুশের বইমেলার ভেতর ও বাহির প্রাঙ্গণে গতকাল মঙ্গলবারের চিত্রটা ছিল অনেক বেশি প্রাণবন্ত। অনেক বেশি উচ্ছ্বাসের। যত না আড্ডা, তার চেয়ে বিক্রিবাট্টা অনেক বেশি। মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়িয়েছেন মন্ত্রী, আইনজ্ঞ, নানা পেশার সৃজনশীল মানুষ। আর স্টলগুলোয় বইয়ের স্তূপের ফাঁক গলে দেখা গেছে জনপ্রিয় সব লেখকের মুখ। ক্লান্তি ছিল না ব্যস্ত দোকানিদের। অটোগ্রাফের শিকার লেখকরাও হাসিমুখে আশীর্বাণী দিয়েছেন ভক্তকে, প্রিয় পাঠককে। রূপা মেলায়, সঙ্গে মাইকেল জ্যাকসনও জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের আরেকটি নতুন উপন্যাস 'রূপা' এসেছে মেলায়। প্রকাশ করেছে অন্বেষা। হিমুর মতোই রূপা আরেকটি নতুন চরিত্র। দুর্বোধ্য রূপাও ব্যস্ত থাকে নানা কাণ্ডকীর্তি নিয়ে। মঙ্গলবার 'রূপা' কিনতে স্টলে দুপুরের পর থেকেই ভিড় জমে পাঠকদের। একই সঙ্গে মেলায় এসেছে সদ্যপ্রয়াত পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের ব্যক্তিজীবন ও বর্ণাঢ্য সঙ্গীতজীবনের বিচিত্র ঘটনাবলি নিয়ে বই 'এ ট্রিবিউট টু দ্য গ্রেটেস্ট এন্টারটেইনার দ্যাট এভার লিভড : মাইকেল জ্যাকসন'। জনান্তিক প্রকাশিত বইটি লিখেছেন সারাহ্ উইসা। বইয়ের ফাঁকে হাস্যোজ্জ্বল লেখক কথাশিল্পী রশীদ হায়দার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাসিমুখ নিয়ে বসেছিলেন অনুপম প্রকাশনীর স্টলে। গতকাল এখান থেকেই বেরিয়েছে তাঁর লেখা রাজনৈতিক কলামের বই 'চিম্বুকের নিচে আলোর আভা'। কেমন লাগছে মেলা_জানতে চাইলে উল্টো প্রশ্ন : 'মায়ের কাছে মাসীর গল্প?' তারপর বললেন, 'বইয়ের দোকানের সামনে কত মানুষ, মানষের হাতে বই_এটি ভাবতে ও দেখতে ভালো লাগছে। আমাদের হাত দিয়ে শুরু মেলা আজ কত বড়_ অবাক লাগে।' মেলায় তাঁর আরো তিনটি বই এসেছে। শিশু একাডেমী প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস 'শোভনের স্বাধীনতা', অয়ন প্রকাশনী থেকে কিশোর উপন্যাস 'যদি দেখা পাও' ও বৃক্ষ প্রকাশন থেকে 'জসীমের নক্সিকাঁথা'। অনন্যার স্টলে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন জনপ্রিয় কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলন। অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন ভক্তকুলকে। এই প্রকাশনা থেকে এবার সাতটি বই বেরিয়েছে 'বন্ধুবান্ধব', 'চাই', 'লিলিয়ান উপাখ্যান', 'ক্লাসের সবচাইতে দুষ্ট ছেলেটি' ও 'নায়ক আসেনি' এবং 'সমগ্র কিশোর উপন্যাস' ও 'সমগ্র কিশোর গল্প'। অটোগ্রাফ দিতে দিতেই বললেন, 'এবার মেলা শুরু থেকেই জমজমাট। কিশোর তরুণরা আসছে, বই কিনছে, বাড়ছে গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার সংখ্যাও_এটা সুখের কথা, আনন্দের কথা।' একই স্টলে ছিলেন কথাশিল্পী মোস্তফা কামাল। এখান থেকে বেরিয়েছে তাঁর দুটি বই_ কিশোর উপন্যাস 'ফার্স্ট বয়' ও সায়েন্স ফিকশনের পাঁচটি উপন্যাস নিয়ে 'সায়েন্স ফিকশন সমগ্র'। মেলা প্রসঙ্গে বললেন, 'সেই '৮৭ থেকেই নিয়মিত মেলায় আসছি। না এলে স্বস্তি পাই না। প্রতি বছর বই বের হয়। মেলায় আসার তাগিদও থাকে। তবে বই বিক্রি বেড়েছে, বইয়ের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে_এটা ভালো লাগছে।' মন্ত্রী ও আগুনের গল্প তখন বিকেল সাড়ে ৪টা। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান নজরুল মঞ্চে উঠেছেন মিলন সব্যসাচী সম্পাদিত 'বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত পদাবলী' বইটির মোড়ক উন্মোচন করতে। বইটি প্রকাশ করেছে সিদ্দিকীয়া পাবলিশার্স। বক্তৃতা শুরু করলেন। হঠাৎ মাথার ওপর সামিয়ানার নিচে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তাকর্মীরা মন্ত্রীকে নিচে নিয়ে যান। পরে অবশ্য একাডেমীর দমকল বাহিনীর গাড়ি এসেছিল। কিন্তু তার আগেই চেয়ার দিয়ে আগুন নেভান একজন। পরে অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে বইটির মোড়ক আর উন্মোচন করা হয়নি। নিচে নেমে মন্ত্রী বলেন, 'আমাদের সময়ের বইমেলার চেয়ে এখনকার বইমেলা অনেক বেশি দর্শনীয়। এখন প্রচুর বই আসছে। মানুষও আসছে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের বইয়ের প্রতি উচ্ছ্বাস দেখে ভালো লাগছে।' তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ উন্মোচন করেন আবিদুর রহমানের 'নীলকমল' বইটি। এটি প্রকাশ করেছে স্কাইওয়ে পাবলিশার্স। তাঁর প্রিয় হাসান আজিজুল হক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে মেলায় এসেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। নজরুল মঞ্চে উন্মোচন করলেন শামীমা জাফরিনের লেখা তিনটি বই। এর মধ্যে উৎস প্রকাশ করেছে 'অর্থির যতকথা', অঙ্কুর 'পিউলির খালার বাড়ি চাঁদে চাচ্চুর বাড়ি মঙ্গলগ্রহে' ও টইটমু্বর প্রকাশ করেছে গল্পের বই 'পাখিদেরও ফ্ল্যাট চাই'। মেলা প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, 'হাসান আজিজুল হক আমার প্রিয় লেখক। তাঁর বই কিনব। তবে আমি চাই আদালতেও বাংলার প্রচলন হোক।' নতুন বই মঙ্গলবার মেলায় এসেছে ৯২টি বই। সুবর্ণ এনেছে ড. মুনতাসীর মামুনের 'মুক্তিযুদ্ধ সমগ্র-এক' ও বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের উপন্যাস 'ফেরারী জীবনের উপাখ্যান' বই দুটি। পাঠক সমাবেশ এনেছে আবদুল মান্নান সৈয়দের গল্পগ্রন্থ 'সত্যের মতো বদমাশ' ও আবদুর রশীদ সম্পাদিত স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ 'শহীদুল জহির স্মারকগ্রন্থ', শ্রাবণ এনেছে কবি নির্মলেন্দু গুণের ভ্রমণ কাহিনী 'গীন্সবার্গের সঙ্গে', বিজয় প্রকাশ এনেছে কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনের শিশু উপন্যাস 'নীল টুনির গল্প' ও বিভাস এনেছে কবি নির্মলেন্দু গুণের 'নির্বাচিত ১০০ কবিতা'। মঙ্গলসন্ধ্যা এনেছে কাব্যগ্রন্থ 'মুজিব ইরম বিরচিত আদিপুস্তক' ও ভাষাচিত্র প্রকাশ করেছে প্রবাসী লেখক ফকির ইলিয়াসের গল্পগ্রন্থ 'চৈতন্যের চাষকথা'। আলতাফ শেহাবের কাব্যগ্রন্থ 'নুন আগুনের সংসার' প্রকাশ করেছে অগ্রদূত। পাওয়া যাচ্ছে লিটল ম্যাগাজিন চত্বরের ২৬ নম্বর স্টলে। --------------দৈনিক কালের কন্ঠ / ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ ভোর ৬:৪৫
false
hm
পল্টিবাজের জায়গা শাহবাগে নাই দৈনিক প্রথম আলোর পোষা বাম ফারুক গুয়েবাড়াসহ আরো দুয়েকটি পল্টিবাজ গত কয়েক বছর ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাষায় ছাগুদের ধামা ধরে পেট ভরে দই খেয়ে এখন মুখে চুনের দাগ লাগিয়ে শাহবাগে হাজির হয়ে বিপ্লবী সাজার চেষ্টা করছেন। দৃশ্যগুলো কৌতুককর, কিন্তু সে কৌতুক হিমশৈলের চূড়া কেবল, সে কৌতুকের ভিত নেমে গেছে আশঙ্কাজনক কুমতলবের সাগরের গভীরে। ১. ফারুক গুয়েবাড়ার এই পল্টির প্রচেষ্টা চোখে বেশি লাগে, কারণ মাত্র দুই বছর আগেই এই বুদ্ধিবেশ্যাটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অশ্লীলতম চলচ্চিত্র "মেহেরজান"-এর জন্য দৈনিক প্রথম আলো ও ব্লগ-ফেসবুকে জান লড়িয়ে দিচ্ছিলো। মিসেস ফারুক এই চলচ্চিত্রে একজন কামলি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন বলেই হয়তো গুয়েবাড়াদাকে গুয়েবলস হিসেবে দুই হাজার এগারোর প্রথম কয়েক মাস "মেহেরজান" নিয়ে প্রচুর তত্ত্বকথা ফাঁদতে হয়েছিলো। একটি তত্ত্ব ছিলো, অতীত ভুলে গিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে রিকনসিলিয়েশন। এই নোংরামির প্রতিবাদে ব্লগে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এসেছিলো। গুয়েবাড়াদার গুয়েবলসপনা থামেনি। দাম্পত্য সুখের মূল্য আর মেহেরজানের খ্যাপ খাটার দায় মেটাতে তিনি এখানে ওখানে অনবরত ফরহাদ মজহার ও এবাদুর রহমান প্রণীত "গুলমোহর রিপাবলিক" নামের একটি বটতলার বিষ্ঠাতুল্য উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত "মেহেরজান" চলচ্চিত্রটির হয়ে একের পর এক লেখা নামিয়ে গেছেন। দুই বছর আগে ফারুক গুয়েবাড়ার বুদ্ধিবেশ্যামোর কথা মানুষ বিস্মৃত হতেই পারেন। কিন্তু গত বছরের আঠারোই ডিসেম্বর, মাত্র মাস দুয়েক আগেও কিন্তু গুয়েবাড়াদা ডুকরে ম্যাৎকার করে উঠেছেন ফেসবুক ও প্রিয় ব্লগে। চুম্বক কিছু অংশ তুলে ধরি, জামাত নিষিদ্ধ করা নির্বুদ্ধিতা হবে, বুমেরাং হবে। কিন্তু বাংলাদেশ বিরোধী রাজনীতির কারণে নীতিগতভাবে তাকে নিষিদ্ধের দাবি করা যেতেই পারে। যেমন নাতসিদের নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। প্রশ্নটা অন্যখানে। এরকম উগ্র সেক্যুলারিজমের প্রতিক্রিয়াতেই তুরস্ক, মিসর, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়ার মতো দেশে ইসলামপন্থীরা ক্ষমতাসীন হয়েছে। [সূত্র] গুয়েবাড়াদার কাছে জামাত নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়াটা উগ্র সেক্যুলারিজমের মধ্যে পড়ে। গতকাল শাহবাগে তিন লক্ষ মানুষের সমবেত কণ্ঠ কোন শপথ নিয়েছে? তারা কি "উগ্র সেক্যুলার"? মোটেও না। দুই বছরের শিশুকে যে আছড়ে মারে, এগারো বছরের বালিকাকে যে গণধর্ষণ করে খুন করে, তরুণী কবির মাথা দায়ের কোপে কেটে যে তারই চুল দিয়ে সে মাথা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে, সাড়ে তিনশো নিরীহ গ্রামবাসীকে যে এক বিকেলে অবলীলায় খুন করে, তার ফাঁসি চাওয়া আর তার রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি উগ্র সেক্যুলারিজম?? একই কথা কিন্তু জামাতশিবিরের লোকও বলে বেড়াচ্ছে। বলছে শাহবাগে নাকি উগ্র গাঞ্জাখোর নাস্তিকেরা জমা হয়েছে। তাদের সাথে মিলে যাচ্ছে ফারুক গুয়েবাড়ার সুর। ফারুক গুয়েবাড়া আরো লিখেছেন, বামজাতীয়তাবাদী অসাম্প্রদায়িক ঐক্য ছাড়া গতি নাই। সেই আন্দোলনকে খামোখা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধবাদী বা ভারতমুখী জাতীয়তাবাদী সেক্যুলার না হলেও চলবে। [সূত্র] লক্ষ্য করুন পাঠক, "খামোখা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধবাদী" কথাটা ওজন করে দেখুন মনের মাঝে। যে রাজনীতির বিষে বাংলাদেশ গত চার দশকে বার বার পাকিস্তানের অভিমুখে যাত্রা করেছে, সে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথাটা গুয়েবাড়াদার কাছে খামোখা। অথচ গতকাল শাহবাগে সমবেত তিন লক্ষ মানুষ হাত উঁচিয়ে কোন দৃপ্ত শপথ নিলেন? এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার শপথই কি নয়? ফারুক গুয়েবাড়া এদের শপথকেই বলছেন খামোখা? এই লোক রোজ যাচ্ছে শাহবাগে। মিডিয়ার ক্যামেরা দেখলেই লোমপড়া কুত্তার মতো ছুটে গিয়ে ভুক ভুক করছে মাইকের সামনে। আর বলছে এমন সব কথা, যার সাথে এ আন্দোলনের কোনো সাযুজ্য নেই। শাহবাগে আন্দোলনরত ভাই ও বোনেরা, আপনারা নিজেদের মাঝে সিংহের চামড়া পড়া এই ফারুক গুয়েবাড়াকে চিনতে ভুল করবেন না। যার যা প্রাপ্য, তাকে তা বুঝিয়ে দিন। ২. দ্বিতীয় যে পল্টিবাজদের শাহবাগে উপস্থিত হয়ে রং পাল্টানোর চেষ্টা চোখে পড়ে, সেটি হচ্ছে "শিরোনামহীন" ব্যান্ড। সুবিধাবাদী "শিরোনামহীন" গত কয়েক বছর ধরেই একাত্তরের শীর্ষ ঘাতকদের একজন মীর কাসেম আলীর মালিকানাধীন জামাতশিবিরের টেলিভিশন দিগন্ত টিভিতে নিয়মিত পারফর্ম করে আসছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ভক্তরা একাধিকবার তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, মেইল-মেসেজ-এসএমএস পাঠিয়ে অনুরোধ করেছে দিগন্ত টিভিতে পারফর্ম না করতে, তাদের অনুরোধকে কাঁচকলা দেখিয়ে শিরোনামহীন নিষ্ঠাবান পোঁদবালকের মতো দিগন্ত টিভিতে উপস্থিত থেকে জামাতশিবিরের প্রোপাগাণ্ডা চ্যানেলটিকে বছরের পর বছর সহযোগিতা করে গেছে। ভক্ত-শ্রোতাদের অনুরোধের স্রোত উপেক্ষা করে শিরোনামহীনের জিয়া উত্তর দিয়েছিলেন, শিল্পীর শিল্পীসত্ত্বা নাকি যে কোনো রাজনীতির ঊর্ধ্বে ধরে রাখতে হয়। যে রাজনীতি দুই বছরের শিশুকে আছড়ে মারে, যে রাজনীতি এগারো বছরের বালিকাকে ধর্ষণ করে, যে রাজনীতি তরুণী কবির কর্তিত মস্তক ঝুলিয়ে রাখে কাপড় শুকানোর তারে, যে রাজনীতি শত শত মানুষকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে মারে একটি অপরাহ্নে, সে রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে "শিরোনামহীন" দিগন্ত টিভিকে ব্লোজব দিয়েই শুধু বেড়ায় না, তার সাফাইও গায়। আজ শিরোনামহীন তাদের ব্যান্ডের ফেসবুক পেইজে ঘোষণা দিয়ে বলছে, আগামীকাল সন্ধ্যা ছয়টায় শাহবাগ যাচ্ছে তারা। সাবস্ক্রাইবারদের যাবতীয় খেদোক্তি মুছে দিয়ে তাদের ব্লকও করে দিতে ভোলেনি তারা। কিন্তু কুকর্মের ইতিহাস কি তাতে মোছা যায়? শাহবাগের যোদ্ধারা, দিগন্ত টিভিতে বছরের পর বছর সব কিছু জেনে, সব কিছু বুঝে পারফর্ম করা এই বুদ্ধিবেশ্যার দলের সদস্যদের আপনারা বলুন, ক্ষমা নাই। মাইক হাতে নিয়ে দিগন্ত টিভিতে পারফর্ম করার জন্য মাফ চেয়ে ক্যামেরার সামনে গত ৪২ বছরের জন্য ৪২ বার কানে ধরে ওঠবোস করার আগে কোনো ক্ষমা নাই। ১৯৮০ সালে গোলাম আজম ফিলিস্তিনে যুদ্ধ করতে যাওয়া দুই বাংলাদেশীর জানাজা পড়তে বায়তুল মোকাররমে যাওয়ার পর মুসল্লিরা তাকে জুতোপেটা করেছিলো। পল্টিবাজদের কী করতে হয়, আমরা জানি। নোট টু গুয়েবাড়াদা: লেখার স্ক্রিনশট এখানে আছে হে বুদ্ধিবেশ্যা। মুছে লাভ নাই।
false
rn
সাহিত্য ও সংস্কৃতি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- "জীবনের আশি বছর অবধি চাষ করেছি।সব ফসল'ই যে মারাইতে জমা হবে তা বলতে পারি না।কিছু ইঁদুর খাবে,তবু বাকি থাকবে কিছু।জোর করে বলা যায় না,যুগ বদলায়,তার সাথে তো সবকিছু বদলায়।তবে সবচেয়ে স্থায়ী আমার গান,এটা জোর করে বলতে পারি।বিশেষ করে বাঙালীরা,শোকে দুঃখে সুখে আনন্দে আমার গান না গেয়ে তাদের উপায় নেই।যুগে যুগে এ গান তাদের গাইতে হবে।"বাংলায় আধুনিক গীতি কবিতার আমেজ প্রথম যিনি সৃষ্টি করলেন,তিনি বিহারীলাল চক্রবর্তী-জন্ম ১৮৩৪ সনে আর মৃত্যু ১৮৯৪ সনে।বিহারীলাল ছিলেন জীবনবাদী কবি।তার জীবনের অবলম্বন ছিল প্রেম ও সৌন্দর্য।মানুষকে ভালোবেসে,নারীকে প্রেম করেই বিহারীলাল বিশ্ব প্রকৃ্তির এবং ব্রহ্মান্ডের ধারনা বোধগত করেন।সহজ করে বলতে গেলে,বিহারীলালের কাব্যে তত্ব বা তথ্য যা আছে,তা এই- রুপসীরে করে পূজা,প্রেয়সীরে ভালোবাসে কবি।'তুমি লক্ষী সরস্বতী/আমি ব্রহ্মান্ডের পতি/হোক গে বসুমতি যার খুশী তার।'বাঙালীরা ভাবপ্রবন ও কল্পনাপ্রিয়।উছ্বাস ও উওেজনাতেই এর প্রকাশ।তাই বাঙালী যখন কাঁদে,তখন কেঁদে ভাসায়।আর যখন হাসে তখন সে দাঁত বের করেই হাসে।যখন উওেজিত হয়,তখন আগুন জ্বালায়।তার সব কিছুই মাএাতিরিক্ত।আবার কালো পিপড়ের মতো বাঙালী অতিচালাক।বাঙালীর যা গৌরব-গর্বের অবদান,রা সব সময়েই ছিল ব্যক্তিক অবদান।এই বাংলাদেশেই চিরটাকাল নতুন চিন্তা নিয়েছে।কিন্তু লালন পেয়েছে সামান্য।কিন্তু তবু আমরা তাদের স্মরন করি-রামমোহন,ঈশ্বরচন্দ্র,তীতুমীর,দুদু মিয়া,রবীন্দ্রনাথ,নজরুল,রামনাথ,এদেশের'ই সন্তান,তখন নতুন করে আত্নবিশ্বাস ফিরে পাই।কোরানে আল্লাহ বলেনঃ 'আমি যাকে দেই,তাকে বেহিসাব(অপরিমেয়)দেই।আধুনিক জীবনবোধ বিকাশের জন্য সমকালীন সাহিত্য,বিজ্ঞান ও দর্শন পাঠ আবশ্যক ছিল।কিন্তু কবি নজরুল সে শিক্ষা গ্রহন করেননি।নজরুলের জন্মের আগেই ডারুইন,মার্কস ও ফ্রয়েড মানুষের জীবনে ও জগতে (এই তিন জনকে)অবহেলা করে আধুনিক মানুষ হওয়া চলে না।নজরুলের কাছে ডারুইন ও ফ্রয়েড অজ্ঞাত আর মার্কস অবহেলিত।গল্প উপন্যাস নাটক লেখার প্রতিভা নজরুলের সামান্য'ই ছিল।এতে মস্তিস্কের প্রয়োজন বেশী,হৃদয়বৃওির স্থান সামান্য।সত্য বটে নজরুল অজস্র গান রচনা করেছেন।তার গানের সংখ্যা কেউ বলেন দু'হাজার,কেউ বলেন তিন হাজার।মজার ব্যাপার হলো-সুরস্রষ্টা হিসেবেও নজরুল প্রখ্যাত।'গাহী সাম্যের গান/মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই/নাহি কিছু মহীয়ান।(এখানে রবীন্দ্রনাথের একটি গানের কলি মনে পড়ছেঃ 'চোখের আলোয় দেখেছিলেম চীখের বাহিরে/'১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকাল থেকে বাঙালীরা মাছ-মোরগের মতোই নরহত্যা করতেও শিখেছে।এখন নরহত্যা আমাদের দেশেও সার্বক্ষণিক ও সার্বএিক ঘটনা।প্রথমে সুপরিকল্পিতভাবে রাজনীতিক গুন্ডা তৈরি করেন ছাএ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোনেম খান,পরে নতুন করে ভালো ছাএদের গুন্ডা বানান জিয়াউর রহমান।ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ-ওয়াজ করেছেন,পীরালি করেছেন,কোরান অনুবাদ করেছেন।১৯৪৯ সালে সাহিত্য সম্মেলনে সভাপতির ভাষনে উচ্চারন করেছিলেন "আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য,তার চেয়ে বেশী সত্য আমরা বাঙালী।"সাত পুএ ও দুই কন্যার পিতা মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পদশালী ছিলেন।জসীম উদ্দীন বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য কবি।জসীম উদ্দীন অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন।"লাল মোরগের পাখার মতো উড়ে তাহার শাড়ি/জালি লাউয়ের ডগায় মত,গা খানি তার শাওন মাসের যেমন তমাল তরু/কাঁচাধানের পাতার মত কচিমুখের মায়া"। আমাদের ব্যাথা কেতাবেতে লেখা,পড়িলেই বোঝা যায়অনন্তকাল যাদের বেদনা রহিয়াছে শুধু বুকেএদেশের কবি রাখে নাই যাহা মুখর ভাষায় টুকেসে ব্যাথরে আমি কি করে জানাব?(নকশী কাঁথার মাঠ)সহায়ক গ্রন্থঃজানা দেশ অজানা কথা -শংকরসূর্যবাদ -আতোয়ার রহমানরঙ বেরঙ -কিউ ইয়াহিয়ানির্বাচিত প্রবন্ধদেশ দেশান্তর - ফারুখ চৌধুরী (লেখাটা অসমাপ্ত।)
false
ij
গল্প_ অন্তরালের সাধক ভোগল দিঘীর হাটে প্রচুর শালের জঙ্গল। জায়গাটা দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলায়। শালবন মাইলের পর মাইল ছড়িয়ে আছে; সে শাল অরণ্যে হারিয়ে যাওয়া যায়। এর আগে বন্ধুদের সঙ্গে বহুবার আমি ভোগল দিঘীর হাটে এসেছি। একটা সময় ছিল যখন বন্ধুদের সঙ্গে বাংলাদেশ চষে বেড়াতাম। এখন কে কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে। সে সব কথা ভাবলে মন বিষন্ন হয়ে ওঠে। সময়টা চৈত্রের মাঝামাঝি। শালবন দুপুরবেলার উজ্জ্বল রোদে ডুবে আছে । একা একা শালবনে হাঁটছি। সকাল থেকে নানা কারণে মনটা অস্থির ছিল। শালবনে হেঁটে হেঁটে মনটা শান্ত হল। দুপুর থেকে শালবনে ঘুরে বেড়াচ্ছি। খুব ভোরে ভোগল দিঘীর হাটের বাস স্টেশনে নেমেছি। একাই। তারপর একটি স্থানীয় সস্তা হোটেলে উঠে খেয়ে দেয়ে ঘুম। দুপুরের আগেই আবার বেরিয়ে পড়েছি। ভোগল দিঘির হাটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আদিবাসীর বাস । আদিবাসী বলতে সাঁওতালই বেশি। তবে কোচরাও আছে। আমি তাদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। তারাও আমাকে দেখে। এরাই বাঙালির নৃগোষ্ঠীর মূল ভিত,- অথচ হাজার বছর ধরে বাঙালিসমাজে কোনঠাসা। চৈত্রের দুপুরটি উদাস। শালবনময় ঝকমক অমলিন রোদ । কী রকম এক কড়া গন্ধ বাতাসে। সম্ভবত সাঁওতালরা পাতা পুড়িয়েছে । শালবনের ভিতর দিয়ে কালচে সরু পিচরাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে। গন্তব্যহীন হাঁটতে হাঁটতে আমার ঘোর লাগে। বুক ভরে পোড়া শালপাতার গন্ধ নিই। চকিতে শুকনো পাতার ওপর দিয়ে দৌড়ে একটা খরগোশ চলে যায়। একটা মাঝারি কালচে রঙের সাইজের শূকর দৌড়াচ্ছে। বর্শা হাতে ছুটন্ত জন্তুটার পিছন পিছন দৌড়ে যাচ্ছে কয়েকজন কোল- ভীল-কোচ-সাঁওতাল ...এ রকম অনেক প্রাচীন দৃশ্য উঠে আসে ভোগল দিঘীর হাটের নির্জন দুপুরের শালবনে। স্বল্প দৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্র নির্মান আমার দীর্ঘদিনের সাধ । বৃষ্টির শব্দ, ঘোড়ার ডাক, এনিগমার মিউজিক ... শালগাছে ঠেস দিয়ে বিপদজনক ভঙ্গিতে কামার্ত সাঁওতাল তরুণী, মুখোমুখি চাবুক হাতে স্যাডিস্ট বাঙালি যুবক। তবে আদিবাসীদের ওপর মূলধারার শোষনের বিষয়টি অন্যভাবেও আনা যেতে পারে। আদিবাসী গ্রামের উঠানে কালচে রঙের মাঝারি সাইজের একটা শূকরের পায়ূপথে রড ঢুকিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পোড়ানো হচ্ছে - এখানে নিরীহ আদিবাসীদের ভূমিকা অনেকটা ধর্ষকের ... প্রাণীহত্যার বিষয়টা এভাবেও দেখানো যেতে পারে।এরকম ভাবনায় আচ্ছন্ন ছিলাম-হঠাৎই লোকটাকে দেখলাম। বয়স্ক থলথলে শরীর। ছাপা লুঙ্গি আর সাদা রঙের ময়লা ফতুয়া পরে একটা শালগাছের নীচে কাটা-গুঁড়ির ওপর বসে আছে। গায়ের রং ফরসা। চুল পেকে গেছে, মাথার সামনে দিকে অনেকটা টাক। পাকা দাড়ি। চোখে কালো ফ্রেমের কালো রঙের চশমা, দৃষ্টিহীনদের চশমা যেমন হয়। বৃদ্ধর বসার ভঙ্গিটা কেমন অদ্ভূত। সহসা গভীর টান বোধ করলাম। আমি এগিয়ে যাই।বৃদ্ধ আমায় দেখে স্মিত হাসলেন। বললেন, আজ ভোরে কিন্তু আপনাকে আমি বাস স্টেশনে দেখেছি। কন্ঠস্বর জলদ গম্ভীর। ওহ্, তাই নাকি।হ্যাঁ। আপনি খুব সম্ভব নাশতা সেরে ধনঞ্জয় মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে বেরুচ্ছিলেন। আমি মাথা নাড়লাম। বসুন না, আলাপ করি।আমি কাটা-গুঁড়ির এক প্রান্তে বসলাম। চতুর্দিকে শুকনো শালপাতার স্তুপ। সামনে সরু পিচ রাস্তা। টুংটাং ঘন্টি বাজিয়ে সাইকেল চালিয়ে দেহাতি যুবক যাচ্ছে। সাইকেলের হ্যান্ডেলে ক্যান ঝুলে আছে, সম্ভবত দুধের । পিচ রাস্তার দু’পাশে শালগাছের সারি। ওপাশে কাকেদের চিৎকার। একটা সিগারেট ধরাবো কিনা ভাবছি। বৃদ্ধের সামনে সঙ্কোচ হল।বৃদ্ধ বললেন, সিগারেট খেলে খান। সমস্যা কি? আমিও তো মাঝেসাজে চুরুট খাই। বৃদ্ধ আমার মনের কথা জানলেন কি করে। আমি অবাক হলাম। বৃদ্ধর কথার বলার ভঙ্গিটি মুগ্ধ হওয়ার মতো। একে কি বলে? ব্যক্তিমায়া? বৃদ্ধের অবয়বে কী আছে, ভারি øিগ্ধ। শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে করে। মনে হয় মনের সব কথা বৃদ্ধকে খুলে বলি। ... শুনুন, আমি এক সময় কবিতা লিখতাম। ব্যাঙ্কের চাকরির পর ফুরিয়ে গেছি। দৈববাণী আর আসে না। বিয়ের পর নতুন বৌয়ের ইচ্ছেয় বইয়ের আলমারী শোওয়ার ঘর থেকে সরাতে হল। তারপর থেকে সারাক্ষণ নিজেকে নিঃস্ব মনে হয়, অফিসে আর বাসায় দম বন্ধ হয়ে আসে। সন্ধ্যার পর দুঃখী বালকের মতো শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই, একটার পর একটা সিগারেট টানি। স্বল্পদৈর্ঘ্যরে ছবি নির্মাণের কথা ভাবি। ছুটিছাঁটা পেলে শহরের বাইরে এক দিনের জন্য হলেও চলে যাই ... আমি সিগারেট ধরালাম। বৃদ্ধ বললেন, আমার নাম আহমেদ রশীদ। আপনার?আমি আমার নাম বললাম, কোন ব্যঙ্কে চাকরি করি, কবে বিয়ে করেছি- সেসবও বললাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এখানেই থাকেন? নাকি আমার মতো বেড়াতে এসেছেন? শালপাতার ফাঁক গলে বৃদ্ধের চোখেমুখে শেষ দুপুরের রোদ এসে পড়েছে। আহমেদ রশীদ হেসে বললেন, না, না। আমি বেড়াতে আসিনি। আমি প্রায় তিরিশ বছর হল এখানেই লুকিয়ে আছি। লুকিয়ে আছেন মানে? আমি অবাক হলাম। কিছু বলতে যাব- এমন সময় দেহাতি একটি মেয়ে কে আসতে দেখলাম। মেয়েটিকে সাঁওতাল বলেই মনে হল; তবে আমি ঠিক সিওর না । মেয়েটির গায়ের রং মিসমিসে কালো, কিন্তু অসম্ভব সুশ্রী। বড় বড় চোখ, নাকে পিতলের নথ। হাতে কলাপাতায় ঢাকা লাল রঙের একটি মাটির বাসন। মেয়েটির বয়স বছর তিরিশ বয়স বলে মনে হল আমার। মেয়েটি উবু হয়ে কলাপাতা ঢাকা বাসনটি আহমেদ রশীদের পায়ের কাছে রাখল। তারপর সিধে হয়ে দাঁড়াল। আহমেদ রশীদ বললেন, আচ্ছা, তুই এখন যা রে শিপ্রা। সন্ধ্যার পর হামি তুর বাড়িত একবার যাইমো।মেয়েটি উবু হয়ে আহমেদ রশীদকে প্রণাম করে চলে গেল।দৃশ্যটায় কী ছিল। আমার কল্পনার চলচ্চিত্রে দৃশ্যটা সংযোজন করে নিলাম। খুঁটিনাটি পরে লিখে রাখব। সে যাই হোক। শালবনের এই বৃদ্ধকে আমার বুদ্ধের মতো মনে হল। শিপ্রাকে সুজাতা। কলাপাতা ঢাকা বাসনে কি রয়েছে দেখার কৌতূহল হল। আমি বললাম, আপনি তখন বললেন ... আপনি এখানে লুকিয়ে আছেন?হ্যাঁ। মাথা নেড়ে আহমেদ রশীদ বললেন।তার কারণ?সে অনেক কথা। শুনবেন? আহমেদ রশীদ কন্ঠস্বরে সামান্য আবেগ ফুটে উঠল মনে হল। বলুন। বলে সিগারেটে টান দিলাম। শুকনো শালপাতার টকটক গন্ধ পাচ্ছি। সিগারেট খাওয়া ঠিক হচ্ছে না মনে হয়। অবশিষ্টাংশ ছুঁড়ে ফেলে দিলাম দূরে। আহমেদ রশীদ বললেন, আমি আসলে মানুষের কাছ থেকে পালিয়ে আছি, আর সে কারণেই বনেজঙ্গলে লুকিয়ে থাকি। তিরিশ বছর ধরে এখানকার আদিবাসী এক গাঁয়ে গা ঢাকা দিয়ে আছি।কেন?আহমেদ রশীদ বললেন, শৈশব থেকেই দেখেছি- লোকে আমার প্রতি অদ্ভূত এক আকর্ষন বোধ করে। আমাকে খুশি করতে নানাভাবে চেষ্টা করে। আমি যা বলি তাই তারা বিশ্বাস করে। একটু আগে যে সাঁওতাল মেয়েটিকে দেখলেন-হ্যাঁ।মেয়েটির নাম শিপ্রা, সাঁওতাল, বন্ধ্যা। ওর ধারণা- সে নিয়মিত আমার সেবাযতœ করলে একদিন না একদিন সন্তানসম্ভাবা হয়ে উঠবে। প্রায়ই আমাকে এটা-ওটা রান্না করে খাওয়ায়। দেখি আজকে কি দিয়েছে- বলে ঝুঁকে মাটির বাসন তুলে কলাপাতা সরালেন। আমি উঁিক দিয়ে দেখলাম। ভিতরে ভাত আর খানিকটা দই। আহমেদ রশীদ হেসে বললেন, খাবেন নাকি? কন্ঠস্বরে গভীর আন্তরিকতা। থাক। বৃদ্ধ আমাকে ভীষন টানছে। কিন্তু তিনি তিরিশ বছর ধরে আদিবাসী গাঁয়ে গা ঢাকা দিয়ে আছেন কেন?আহমেদ রশীদ বললেন, লোকে আমার প্রতি কেন যেন ভীষন টান বোধ করে। আমি যা বলি তাই বিশ্বাস করি। লন্ডনে যখন ছিলাম - তখনও এমনও দেখেছি। আপনি ইংল্যান্ড ছিলেন নাকি?হ্যাঁ। আহমেদ রশীদ মাথা নেড়ে বললেন। ওখানেই তো ডাক্তারি কমপ্লিট পড়লাম। আমরা রংপুরের বনেদি পরিবার, যদিও পাকিস্তান আমল থেকে ঢাকায় সেটল। আমাদের পরিবারে নামকরা ডাক্তার আর ব্যারিষ্টারের অভাব নেই। আমার বাবাও সিক্সটি ফোরে চিফ জাষ্টিস ছিলেন। আমি সেভেনটি ফোর এ বিলেত চলে যাই। ওখানেই ডাক্তারি পাস করে দেশে ফিরে আসি। তারপর থেকে এখানেই আছি। বিয়েটিয়ে করিনি। এখানকার স্থানীয় লোকদের যতটা পারি চিকিৎসা সেবা দিই। আমি বললাম, সে তো বুঝলাম। কিন্তু আপনি লোকজন এড়িয়ে চলছেন কেন?ঐ যে বললাম- আমার প্রতি লোকজন গভীর টান বোধ করে। এই কারণে আমি যা বলি সে সব লোকে বিশ্বাস করে।তাতে ক্ষতি কি?ক্ষতি?হ্যাঁ।ক্ষতি আছে।কী রকম?ধরুন। আহমেদ রশীদ বললেন। আমি জীবন ও জগতের সরূপ ব্যাখ্যা করতে শুরু করলাম। ধরুন সেসব নিয়ে বইও লিখলাম।হুঁ।লোকে মন দিয়ে আমার কথা শুনবে, মানে যারা আমার ভক্ত-হ্যাঁ।তারা আমার বই পড়বে। তারপর তারা বলতে শুরু করবে জীবন ও জগতের সরূপ সম্পর্কে আমার ব্যাখ্যাই সত্য ও চূড়ান্ত। তারপর তারা স¤প্রদায় গড়ে তুলবে। স¤প্রদায়ের নাম দেবে-এই ধরুন ‘রশীদি।’ দিক। তাতে ক্ষতি কি। আমি বললাম। শালবনে বাতাস বয়ে যায়। আমার ঘোর লাগে। ক্ষতি আছে। আহমেদ রশীদ বললেন। রশিদী স¤প্রদায় তাদের মতাদর্শ সত্য প্রতিপন্ন করার জন্য অন্যদের নানা যুক্তি দেখিয়ে হেয় করবে, বিরোধী পক্ষকে ঘৃনা করবে। তারপর অপর পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে। বিশ্বের ইতিহাসে এই তো হয়ে আসছে-তাই না? তাই তো।আহমেদ রশীদ গম্ভীর কন্ঠে বললেন, আসলে জীবন ও জগতের প্রকৃত সত্য কেউই জানে না। সবাই বিশ্বজগতের মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়।আহমেদ রশীদের এই কথাটা শালবনের এই শেষবেলার আলোয় কেমন যেন শোনাল। বেলা পড়ে আসছে। শুকনো শালপাতার গন্ধ ঘন হয়ে উঠছে। আকাশের রং কেমন বদলে যাচ্ছে- অনেকটা ফিকে ফিরোজা রং ধারন করেছে। পিচরাস্তার মাঝখানে একটি শুভ্র খরগোশ। পর্যটন কর্পোরেশনের একটি সাদা মাইক্রোবাস ধূলো উড়িয়ে চলে যায়। সাদা খরগোশটি কোথায় পালালো কে জানে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, একটা মতবাদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কেন? কেবলমাত্র সেই মতবাদের প্রবক্তার ব্যক্তিমায়ার জন্যই?হুঁ। তাই তো।কেবলই কি ব্যক্তিমায়া? তাহলে সত্য বলে কি কিছু নেই?আহমেদ রশীদ স্বীকার করলেন, হ্যাঁ। প্রত্যেক মতবাদে সত্যও কিছু আছে বৈ কী, অন্তত মরাল, মানে, নৈতিক দিক থেকে, প্রাচীন ভারতের জৈনরা ছিল প্রাণীহত্যার বিরোধী। তবে ঐ ব্যক্তিমায়াই হল আসল। মহাবীরের, জৈনধর্মের প্রবক্তা-তাঁর গভীর ব্যক্তিমায়া ছিল।আমার কাছে এখন আহমেদ রশীদের জীবনদর্শন অনেকটাই স্পষ্ট। বৃদ্ধ স¤প্রদায় তৈরি করবেন না, অনিবার্য সংঘাত এড়াতে অরণ্যে নিভৃত জীবনযাপন করছেন। আশ্চর্য! বললাম, আপনি তাহলে সংঘাত এড়াতেই অন্তরালে আছেন?হ্যাঁ।আশ্চর্য! সবাই তো গডফাদার হতে চায়। ক্ষমতার সুখ উপভোগ করতে চায়। আহমেদ রশীদ ম্লান হেসে বললেন, এসব করে কী লাভ? এসব তো অনিবার্য সংঘর্ষ সৃষ্টি করে। শিখদের গুরু নানকের মতবাদ যতই নিরীহ হোক-তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিখ ধর্মটির অগ্রযাত্রার ইতিহাসে আমরা রক্তপাত দেখেছি। গুরু নানকের ভারতবর্ষের কোথাও নিভৃত জীবন কাটিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। বললাম, বুঝেছি। আপনি আমার শ্রদ্ধা গ্রহন করুন। আহমেদ রশীদ ম্লান হাসলেন।আমি আরও কী বলতে যাব-সম্ভবত আহমেদ রশীদের জীবনদর্শন সম্বন্ধে কোনও প্রশ্ন করব- হঠাৎ একটি দেহাতি যুবককে দৌড়ে আসতে দেখলাম। কালো হাড্ডিসার। খালি গা ধূতি পরা। আহমেদ রশীদ বললেন, কী রে সরেন, কী হয়েছে, তুই দৌড়াচ্চু ক্যা?লোকটা স্থানীয় ভাষায় গরগর করে কি সব বলল ।আহমেদ রশীদ বললেন, আই হ্যাভ টু গো, ইয়াংম্যান। আমার এক পেশেন্টের ক্রিটিক্যাল অবস্থা-এই মধু সরেনের ওয়াইফ। আমাকে এক্ষুনি যেতে হচ্ছে। বলে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর আমার বিস্ময়ভরা চোখের সামনে অন্তরালের সাধক শালবনের ঋষি শেষ বেলার ম্লান আলোর বনপথে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।আমিও উঠে দাঁড়াই। গাছগুলির ওপাশে একটি শূকরের মৃত্যুযন্ত্রণা শুনতে পেলাম যেন। তার বিকট আর্তনাদ। কারা যেন গাছপালার আড়ালে শূকর বধ করছে। শুকনো পাতার ওপর দিয়ে দৌড়ে একটা খরগোশ চলে যায়। পিচ রাস্তায় একটি সাপের খোলশ কাগজের ঠোঙার মতো গড়িয়ে যাচ্ছে। চর্তুদিকের গাছপালায়, পিচরাস্তায় কনে দেখা রোদ ছড়িয়ে আছে। একটা মাঝারি কালচে রঙের সাইজের শূকর দৌড়াচ্ছে। জন্তুটা পিছন পিছন দৌড়ে যাচ্ছে কয়েকজন কোল ভীল সাঁওতাল ...এরকম অনেক প্রাচীন দৃশ্য ভোগল দিঘীর হাটের নির্জন দুপুরের শালবনে উঠে আসতে পারে । একটু আগে আহমেদ রশীদ বলছিলেন: আসলে জীবন ও জগতের প্রকৃত সত্য কেউই জানে না। সবাই মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়।আমার শরীর ছমছম করে ওঠে। আমি পায়ে পায়ে শালবন থেকে বেরিয়ে যেতে থাকি। আজ রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হব। শালবনজুড়ে বেলা শেষে হাজার হাজার কাক ডেকে উঠল। কি তাদের চিৎকারের কারণ? ভাবলাম আমার যদি আহমেদ রশীদ এর মতো ব্যক্তিমায়া থাকত। তাহলে? আমি আমার অগনিত ভক্তদের বলতাম-এই জীবন ও জগৎ আসলে সত্য নয়, কাকেদের স্বপ্ন মাত্র। তারপর মজা দেখতাম ...
false
fe
ভাষার শক্তি, প্রাত্যহিক জীবনের জোর ভাষার শক্তি, প্রাত্যহিক জীবনের জোরফকির ইলিয়াস--------------------------------------------------একটি আনন্দ সংবাদ দিয়ে লেখাটি শুরু করি। জাতিসংঘ ও ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভের পর বাঙালির অমর একুশে, এবার আমেরিকার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন করেছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কের স্টেট গভর্নর এন্ড্রু এম কুমো আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন।উল্লেখ্য, ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে মুক্তধারা নিউইয়র্ক এবং বাঙালির চেতনা মঞ্চ যৌথ উদ্যোগে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারির সূচনালগ্নে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করে চলেছে। ১৯৯২ সালে অমর একুশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘ ও ইউনেস্কোর স্বীকৃতি অর্জনেও এ উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ২০১৪ সালে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিশ্বজিত সাহা আমেরিকার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি লাভের জন্য নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর হোজে পেরাল্টার কাছে প্রস্তাবনাটি পেশ করেন। নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট আলবেনিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ প্রস্তাবটি পাস করা হয় (রেজ্যুলেশন নং ৪৬৯)। এরপর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পাসকৃত প্রস্তাবনাটি গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুষ্ঠানে স্বীকৃতি সনদটি হস্তান্তর করা হয়। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য প্রবাসে অবস্থানরত সব বাঙালিকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ উপলক্ষে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে দুই সপ্তাহব্যাপী একুশের গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে। অমর একুশের গ্রন্থমেলায় বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত নতুন বইগুলো প্রদর্শিত হবে। এই যে অর্জন, তা গোটা বাঙালি জাতির। গোটা ভাষাপ্রেমী মানুষের। একটি ভাষা যে কোনো জাতির কাছেই সমাদৃত। সে ভাষার জনগোষ্ঠী যত বড় কিংবা যত ছোটই হোক। যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী ড. জেভিন বেকন বলেন, একটি ভাষা হচ্ছে একটি জাতির মুখ্যশক্তি। ভাষা মানুষের প্রথম এবং শেষ আশ্রয়। কারণ জন্ম নিয়েই সে নিজ মায়ের ভাষায়, মায়ের আদর স্নেহ পায়। আবার মৃত্যুর সময় নিজ মাতৃভাষায়ই শেষ আরাধনাটুকু করে যায়।আমরা অতীতের দিকে তাকালে দেখব, রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৫২ সালে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আন্দোলন আরো তীব্র হয়। ১৯৫৪ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু যাদের প্রাণের বিনিময়ে এ ভাষা পেয়েছিল বাঙালি জাতি তাদের বিশ্ব দরবারে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ ছিল না। এই দায়িত্ববোধ থেকে কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাংলাদেশি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের কাছে একটি আবেদন করেন। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সাল থেকে দিনটি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে প্রতি বছর দিনটিকে আন্তর্জাতিক মার্তভাষা দিবস হিসেবে নিজেরা পালনের ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশ প্রস্তাবটি উত্থাপন করলে সর্বসম্মতিক্রমে সাধারণ পরিষদে পাস হয়।আজকের বিশ্বে সে ভাষাই তত বেশি শক্তিশালী, যে ভাষার যে রাষ্ট্রের অর্থনীতি যত বেশি চাঙ্গা- তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তার কারণ কি? কারণ হচ্ছে শক্তিশালী ভাষাভাষী মানুষরাই বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে। অগ্রসরমান প্রজন্মের শক্তি সঞ্চিত হলেই স্বীকৃতি মিলছে নিজ ভাষার। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের প্রধান প্রধান হাসপাতালে সাইনবোর্ড ঝুলছে, ‘আমরা বাংলায় কথা বলি’। নিউইয়র্কের বোর্ড অফ এডুকেশন তাদের প্রতিটি নোটিশে এখন সংযোজন করে নিয়েছে বাংলাভাষা। নির্দেশিকায় স্থান পাচ্ছে বাংলায় নিয়মাবলি। তার কারণ প্রায় পঁচিশ হাজারেরও বেশি বাংলা ভাষাভাষী ছাত্রছাত্রী এখন লেখাপড়া করছে নিউইয়র্কের মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে। এখন এখানে ‘বাংলা কারিকুলাম’ চালু করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষার প্রচেষ্টা চলছে।নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশন অবশেষে তাদের নির্বাচনী নথিপত্রে ভোটারদের জন্য বাংলা ভাষা সংযুক্ত করেছে। বোর্ড অব ইলেকশন তাদের নির্বাচনী নির্দেশিকায় ইতোমধ্যে বাংলা ভাষায় নির্বাচনী তথ্যাদি প্রকাশ করেছে।বোর্ড অব ইলেকশনের ছাপা ৫টি ভাষায় লেখা মোট ২৪ পৃষ্ঠার নির্দেশিকায় প্রচ্ছদ ও পেছনের পাতায় বাংলা উপস্থাপন ছাড়াও ভেতরে পুরো ৪ পাতাজুড়ে বাংলায় নির্বাচনী তথ্যাদি সংযুক্ত করা হয়েছে। বিশ্বে একই রাষ্ট্রে বিভিন্ন ভাষা চালু থাকার উদাহরণও দেখি আমরা। ভারতের কথাই ধরা যাক। কেরালা কিংবা তামিলনাড়ু অঙ্গরাজ্যের মাতৃভাষা আর কলকাতার মাতৃভাষা এক নয়। দুটি রাজ্যের দুজন নাগরিকের রাষ্ট্রভাষা যদিও ‘হিন্দি’ কিন্তু এই দুই অঙ্গরাজ্যে তা কি মানতে দেখা যায়? না, যায় না। বরং এই দুই অঙ্গরাজ্যের নাগরিকরা মিলিত হয়ে যান এক ভাষায়। আর তা হচ্ছে ইংরেজি। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন মাল্টিকালচারাল কোম্পানি তাদের শোরুম খুলেছে মুম্বাই, দিল্লি, পুনা কিংবা কেরালার ট্রিচুর ডিস্ট্রিক্টে। সেখানে ভারতীয় রিপ্রেজেনটেটিভদের বলা হয়েছে, ফোনের জবাব দিতে হবে ইংরেজিতে। কারণ ক্লায়েন্ট সবাই ইউরোপ-আমেরিকার। ভাষার প্রতিপত্তি এভাবেই দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন উপনিবেশ। অর্থনীতিই হয়ে উঠেছে মুখ্যশক্তি। এমনকি বদলে দেয়া হয়েছে সেখানকার প্রতিনিধিদের নামও। ‘রাজেশ’ হয়ে গিয়েছে ‘রেন্ডি’, ‘মনিষা’ হয়ে গিয়েছে ‘মনিকা’। এ বদল শুধু প্রতীকী কারণের। এই সঙ্গে জড়িত ‘মাল্টিকমপ্লেক্স বিজনেস এন্ডি মার্কেটিং।’বিভিন্ন দেশেই আজ একটি বিষয় লক্ষ করা যায়, তা হচ্ছে শুদ্ধ এবং কথ্যভাষার দ্ব›দ্ব। যুক্তরাষ্ট্রে আঞ্চলিক কিংবা কথ্যভাষায় বিভিন্ন র‌্যাপ সঙ্গীতে এমনভাবে বাণীবদ্ধ করা হয়, যার মাঝেমধ্যে অশ্লীল, অশোভন কিছু শব্দও ঢুকিয়ে দেয়া হয় খুব কৌশলে। এসব গান পারিবারিক আবহে, মাতা-পিতা-স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে বসে শোনার মতোই নয় বলা যায়। তারপরও এসব র‌্যাপ সঙ্গীতের সিডি বাজারে আসছে মিলিয়ন মিলিয়ন। এরও কারণ একটাই, বাণিজ্যিক মুনাফা অর্জন এবং তা সম্ভবও হচ্ছে। কবি অক্টাভিওপাজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি লিখি আমার মাতৃভাষায়। বাজারজাতকারীরা তা ইংরেজিতে তর্জমা করে মুনাফা লুটে। নোবেল কমিটির কাছেও ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব বেশি। তা না হলে তারা ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় প্রতিষ্ঠিত কবি-লেখকদের ব্যাপারে অন্তিমে এসে আগ্রহী হবে কেন?’ পাজের ক্ষোভ বাজারি মুনাফাখোরদের প্রতি। কিন্তু সে ক্ষোভ যতই তীব্র হোক না কেন, ভাষা বাণিজ্যকারীরাই পৃষ্ঠপোষকতা পায় বিভিন্ন সরকারের, রাষ্ট্র শাসকদের। এই মুনাফালাভের লোভ তো লেখকরাও সংবরণ করতে পারেন না!বাংলাদেশে একুশের বইমেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি বড় বই বাণিজ্য। লেখকদের টাকায়ই বই বের করেন প্রকাশকরা। আবার তারা ওই বই বিক্রি করেও টাকা কামান। বাংলাদেশ আজ দখল করে নিয়েছে, ভারতীয় টিভি চ্যানেল। আমার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে ভারতীয় প্রকাশকদের আসতে দেয়া হচ্ছে না কেন? ভারতীয় প্রকাশকরা এলে তো বাংলাদেশের লেখকরা তুলনামূলক ভালো রয়ালিটি নিয়ে বচসা করতে পারতেন। এটা কে না জানে- বাংলাদেশের অনেক খ্যাতিমান লেখকও তাদের প্রকাশকদের কাছ থেকে সম্মানী যথাসময়ে, নীতিমাফিক পান না। আমার মতে, রাষ্ট্রীয় আলোচনার মাধ্যমে কলকাতা-ঢাকা যৌথ বইমেলা, সাহিত্য অনুষ্ঠান, ভাষা সংস্কৃতির আদান পর্ব হতে দোষ কোথায়? নাকি সেখানেও কারো কারো স্বার্থের বিষয় জড়িয়ে আছে? সাহিত্য এবং ভাষার বিশ্বায়নের সমকালে তা কি আটকে রাখা যাবে? দোষ যে কলকাতা রাজ্য সরকারের নেই, তা আমি বলছি না। তারাও ঢাকার বাংলা টিভি চ্যানেলগুলোকে কলকাতায় ঢুকতে না দিয়ে একক রামরাজত্ব বহাল রাখতে চাইছেন। কিন্তু হালে তা কি সম্ভব হবে? বিবিসি, সিএনএনের ওয়ার্ল্ড সার্ভিস দখল করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে স্যাটেলাইট আকাশ। তাহলে বাংলা ভাষাভাষী দুই দেশবাসীর এত দ্বিধা কেন? গেল এক দশক ধরে বাংলাদেশে একটি সাহিত্যকর্ম আমাকে বেশ আপ্লুত করছে। আর তা হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে সংস্কৃতি সাহিত্য নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন রাষ্ট্রের আপামর মানুষ। মণিপুরী, গারো, হাজং, মারমাসহ বিভিন্ন ভাষাভাষী তরুণ সাহিত্যিকরা এগিয়ে এসেছেন। তারা সেসব ভাষার কবিতা, কথাসাহিত্য বাংলায় অনুবাদ করে বাংলা সাহিত্যের মূলধারায় প্রতিষ্ঠিত করছেন। তা অনুমান হচ্ছে এভাবে ইংরেজিতেও। কোনো উপজাতির সাহিত্য, একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ভাষার বাহু বলা যায়। কারণ সেসব ভাষাভাষী মানুষও একই রাষ্ট্রের প্রাণশক্তি।বলছিলাম, একই রাষ্ট্রে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার কথা। কোনো অঞ্চলের কথ্য ভাষায় সাহিত্য রচিত হবে কিনা; কিংবা হওয়া উচিত কিনা তা নিয়েও চলছে নানা বিতর্ক। একটি কথা মনে রাখতে হবে, একই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরেই একটি অঞ্চলের কথ্যভাষা অন্য অঞ্চলে সম্পূর্ণ অচল। এমন কিছু শব্দাবলি আছে যা অঞ্চলের ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন অর্থও প্রকাশ করে। তাহলে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন আসছে যিনি কোনো আঞ্চলিক কথ্যভাষায় গদ্য পদ্য লিখছেন, তিনি কি এ অঞ্চলের পাঠক-পাঠিকাকে সামনে রেখেই তা লিখছেন। নাকি তার জাতীয় ভাষার পাঠক তার লক্ষ্যবিন্দু। আগেই বলেছি, ইংরেজিতে কথ্য অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে গান রচিত, গীত হচ্ছে পাশ্চাত্য। এর শ্রোতাও একটি গোষ্ঠী। বাজারি চাহিদাও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যেও ইংরেজি ভাষার বাচনভঙ্গি, উচ্চারণের ভিন্নতা প্রায়ই লক্ষ করা যায়। যেমন- নর্থ ক্যারোলিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, টেক্সাস কিংবা নিউইয়র্কের মানুষ একই বাচনভঙ্গিতে কথা বলেন না। সমকালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হতে যত বেশি সম্ভব ভাষার দখল শিখতে পারাটাই কৃতিত্ব বলে আমি মনে করি। যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা কোনো বাঙালি প্রজন্ম যদি বাংলা ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতির ওপর গবেষণা করে বাঙালি জাতিসত্তাকে বিশ্বে আরো উজ্জ্বল করতে পারে তা তো সবার জন্যই শুভ বার্তাবাহী।কেউ যদি জাপান কিংবা চীনের কোনো বাণিজ্যিক, বৃত্তিমূলক কাজে আমেরিকা থেকে যান তাকে আগেই ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাকে জানিয়ে দেয়া হয় তিনি সেখানে গিয়ে যোগদানের আগে যদি জাপানি কিংবা চীনা ভাষা কিছুটা রপ্ত করে যান তবে তাকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে তার থাকাকালীনই তাকে ভাষা শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করবে জাপানি কিংবা চীনা ওই প্রতিষ্ঠান। বিশ্ব মানবের কাছে নিজেদের ভাষা ছড়িয়ে দেয়ার এই যে চেষ্টা এবং চেতনা তা অনুসরণযোগ্য। আর এর সঙ্গে অর্থ রোজগারের বিষয় তো রয়েছেই।অনেক উদাহরণ আমরা প্রায়ই দেখি। কয়েক বছর আগে, একটি সংবাদ দেশে-বিদেশে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, একজন অভিবাসী বাঙালি মহান একুশে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ডাক বিভাগের (ইউএসপিএস) অধীনে একটি ডাকটিকেট প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এর প্রকৃত ঘটনাটি অন্যরকম। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু লাইসেন্সধারী এজেন্ট রয়েছে যারা ডাকটিকেট প্রিন্ট করতে পারে। ডাক বিভাগের নিয়োগকৃত এসব এজেন্টের কাছে যে কেউ উপযুক্ত কারণ, শর্ত এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি মেনে ডাকটিকেট প্রকাশের আবেদন করতে পারেন। তা তারা মেনে নিলে সাময়িকভাবে কম্পিউটার প্রিন্ট ডাকটিকেট প্রকাশের ব্যবস্থা করে। প্রধান শর্ত হচ্ছে লক্ষাধিক ডাকটিকেট এভাবে অনলাইনে বিক্রি করতে হবে। তা করতে পারলেই তারা ডাকঘরে ওই ডাকটিকেট বিক্রির উদ্যোগ নেবে। আসল কথা হচ্ছে অর্থ উপার্জন।অর্থ উপার্জনের উৎস করে দিতে পারলেই ভাষা সংস্কৃতি এখন আদৃত হচ্ছে বিশ্ববাজারে। তাই ভাষাকে টিকে থাকতে হচ্ছে এই অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই। একটি ভাষার শক্তি, মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের জোর বাড়িয়ে দেয়। কারণ সে যখন তার নিত্যপ্রয়োজনে ওই ভাষায় কথা বলে জীবন চালাতে পারে, আয়-রোজগার করতে পারে, তখনই ওই ভাষার প্রতি তার মমত্ব বাড়ে। যে বুঝতে পারে তার কথার মূল্য আছে। তার অক্ষরের মূল্য আছে। লেখার শেষ প্রান্তে এসে আরেকটি অর্জনের খবর পাঠকদের জানাতে চাই। গেল ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ মার্কিন সরকারের অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের অনানুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। নিউজার্সির প্যাটারসন শহরে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় প্যাটারসনের ডেপুটি মেয়র পেড্রো রড্রিগেজ, কাউন্সিল ভাইস প্রেসিডেন্ট রুবি কটন, স্থানীয় কাউন্সিল সদস্যরা, প্যাসিক কাউন্টি অফিসের কর্মকর্তারা, নির্বাচিত স্থানীয় প্রতিনিধিরা এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির বহুসংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, টেক্সাসের হিউস্টনে বাংলাদেশ কমিউনিটির নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে একটি শহীদ মিনার ইতোপূর্বে নির্মিত হয়েছে। নিউজার্সির শহীদ মিনারটি মার্কিন সরকারের অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম শহীদ মিনার, যার জন্য জমির বরাদ্দ ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে পূর্ণ অর্থায়ন করেছে। ২০১২ সালে বিভিন্ন ভাষাভাষীর সমন্বয়ে গঠিত প্রবাসী কমিউনিটির মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং প্যাটারসনের বাংলাদেশ কমিউনিটির সম্মানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্যাটারসন সিটি কাউন্সিল ওয়েস্টসাইড পার্কে জমি বরাদ্দ এবং ২০১৩ সালে এই প্রজেক্টের জন্য প্যাসিক কাউন্টি আর্থিক অনুদান দেয়। এই যে স্বীকৃতি, তা লাখ লাখ মার্কিনি অভিবাসী বাঙালিকেই সম্মান। বাংলা ভাষাকে সম্মান।আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলা ভাষার জাগরণ মানে ইংরেজি, ফ্রান্স, স্প্যানিশ, জার্মান ইত্যাদি ভাষার প্রতি অনীহা নয়। বিশ্বে আজকাল চলতে হলে ‘মালটিপল ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিল’ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, প্রজন্ম ও প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।-----------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ প্রকাশিত
false
ij
কারা ছিল ঠগী_ ঠগীরা ছিল ভারতীয় খুনি কাল্ট (Cult); ঠগীরা যত মানুষ হত্যা করেছিল পৃথিবীর কোনও সংগঠিত খুনি কাল্ট এত নিরীহ মানুষ হত্যা করেনি। কেবল ১৮৩০ সালেই ঠগীরা প্রায় ৩০,০০০ মানুষ শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে; মৃতদেহ উৎসর্গ করত দেবী কালীকে। হয়তো কোনওপ্রকারে হত্যাপ্রবন ঐ আদিম রীতিটি ভারতীয় সমাজে তখনও টিকে গিয়েছিল। আদিম সমাজে মানুষ তো মানুষের মাংসও খেত ...মায়া-অ্যাজটেকরা উপড়ে নিত জীবন্ত মানুষের হৃৎপিন্ড ... অস্টাদশ শতকের ভারতবর্ষ ঠগীদের নৃশংস ইতিহাস ভারতীয় ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। আজও গ্রামবাংলার মানুষের মুখে ফেরে ঠগীদের রোমহর্ষক কাহিনী । ঠগীদের নির্মম কাহিনী অবহিত হওয়ার পর ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ইম এম ফস্টার ১৯২৪ সালে অত্যন্ত খেদের সঙ্গে বলেছেন: ‘গড ইজ লাভ। ইজ দিস দ্য ফাইনাল মেসেজ অভ ইন্ডিয়া?’ ঈশ্বর প্রেমই কি ভারতের চূড়ান্ত বক্তব্য? ফস্টার ভুল করেছিলেন। কেননা, এমনটি মনে করার কোনও কারণ নেই যে কালীসাধক মাত্রেই খুনি, ভারতবর্ষের কালীসাধকদের একটি ক্ষুদ্র অংশই কেবল কালীসাধনার অপব্যাখ্যা করে খুনি হয়ে উঠছিল। ঠগীর দল তো, কারা ঠগী? । বাংলা অভিধানে ঠগী বলতে বোঝায়, বিশেষ শ্রেনির দস্যুদল যারা পথিকের গলায় রুমাল বা কাপড় জড়িয়ে হত্যা করত। ঠগী বলতে আরও বোঝায় বোঝায়- ঠগীর কার্য, দস্যুবৃত্তি। ঠগী শব্দটি সংস্কৃত ঠগ শব্দ থেকে এসেছে। ঠগ অর্থ, ঠক বা প্রতারক বা ধূর্ত বা প্রবঞ্চক। ভারত শাসনের সূত্রে যে সকল শব্দ ইংরেজি ভাষায় যুক্ত হয়েছে Thud (থাড) তাদের একটি। শব্দটির মানে, ধপ করে পড়া বা আঘাত করা। শব্দটি নিয়ে আমরা কৌতূহলী হতে পারি যেহেতু শব্দটি সংস্কৃত ঠগী শব্দ থেকে এসেছে। ঠগীরা তেরো শতক থেকে উনিশ শতক বাংলাসহ উত্তর ভারতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। ঠগীদের সম্বন্ধে ব্রিটিশ সরকার প্রথম জানতে পারে ১৮১২ সালে । রাজ্যের নানা স্থানে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার করার সংবাদ ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায় । কর্তৃপক্ষ প্রথম প্রথম বিষয়টি আমলে নেয়নি, ভেবেছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ১৮১২ সালের দিকে গঙ্গার ধারে একটি গণকবরে একত্রে ৫০ টি মৃতদেহ পাওয়া যায় । গনকবরটি পরীক্ষা করে দেখা গেল যে মৃতদেহগুলি যাতে ভালো করে মাটির সঙ্গে মিশে যায় সে জন্য অত্যন্ত সচেতনভাবে কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, হাড়ের সন্ধিস্থলগুলি ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে, যাতে করে ডিকম্পোজিশন প্রক্রিয়াটি তরান্বিত হয় এবং যাতে কবর ফুলে না ওঠে এবং মৃতদেহগুলি শেয়ালে না খায়। এসব বিচারবিশ্লেষন করে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ অনুমান করে গনহত্যার পিছনে রয়েছে খুনে কালট। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ঠগী নামে খুনে এক উন্মাদ গুপ্ত ধর্মীয় গোষ্ঠীর কথা। এরা ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ায়, যাত্রীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। তারপর সময় সুযোগমতো পথিকের গলায় রুমাল বা কাপড় পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে তারপর গোপনে মৃতদেহ সমাহিত করে। যে কারণে কেউ ঠগীদের আক্রমনে মারা গেলে বিষয়টি অজানা থেকে যেত। লোকে ভাবত পথিমধ্যে জন্তুজানোয়ারের আক্রমনের শিকার হয়েছে। কিন্তু যখন বৃটিশ পর্যটক নিখোঁজ হতে শুরু করে তখন তদন্ত শুরু হয়। যানা যায় হত্যাকারীরা আদিম কালীউপাসক গোষ্ঠী। বাংলার ঠগীরা কালীকে ভবানী বলে। ঠগীরা কেবল সনাতন ধর্মেরই অনুসারী নয়, এদের মধ্যে মুসলিম ও শিখও রয়েছে! ঠগীরা বংশপরম্পরায় খুন ও দস্যুবৃত্তি করত। ছোটবেলা থেকেই ঠগী পিতা ছেলেকে শেখাত কীভাবে শ্বাসরোধ করে ফাঁস দিয়ে হত্যা করতে হয়। ঠগী বালকের শিক্ষা শুরু হত দশ বছর বয়েসে । তখন সে লুকিয়ে হত্যাকান্ড দেখত । বয়স ১৮ হলে হত্যার অনুমতি পেত। সাধারণত শক্ত কাপড়ের তৈরি হলুদ রঙের রুমাল ফাঁস গলায় পেঁচিয়ে হত্যা করা হত। হলদে রুমাল থাকত ঠগীদের কোমড়ে । কেন ফাঁস দিয়ে হত্যা? কেননা, কালীর আদেশে রক্তপাত নিষিদ্ধ। ঠগীদের আদিপিতাই নাকি কালীর কাছে শিখেছিল ফাঁস দিয়ে হত্যার রক্তপাতহীন পদ্ধতি। ডাহা মিথ্যে কথা। যিনি মানুষ হত্যায় প্ররোচিত করেন তিনি অন্তত দেবী নন। আগেই বলেছি, ভারতবর্ষের কালীসাধকদের একটি ক্ষুদ্র অংশই কেবল কালীসাধনার ভ্রান্ত্র ব্যাখ্যায় বশেই খুনি হয়ে উঠছিল। মৃতদেহ উৎসর্গ করা হত কালীকে, কেবল লুঠের মাল ভাগ করে নিত না। এজন্যই তারা ছিল বিশেষ একটি কাল্ট বা উপাসক সম্প্রদায়। ঠগীরা ব্যবসায়ী তীর্থযাত্রীর কিংবা সৈন্যের ছদ্মবেশে ভ্রমন করত। এদেরই লোকজন গোপনে বাজার কিংবা সরাইখানা থেকে পথযাত্রীদের সম্বন্ধে খুঁটিনাটি তথ্য যোগার করত। তারপরে যাত্রীদের সঙ্গে মিশে যেত। যাত্রাবিরতিতে হত্যাকান্ড ঘটাত। একজন যাত্রীকে খুন করত তিনজনের একটি দল। একজন মাথা ঠেলে দিত, অন্যজন ফাঁস পরাত, অন্যজন পা চেপে ফেলে দিত। কেউ পালিয়ে গেলেও রক্ষা নেই, ঠগীদের অন্যদলটি কাছেপিঠেই ওত পেতে থাকত। তবে ঠগীরা যে কাউকে হত্যা করত না। যেমন, ফকির সংগীতজ্ঞ নৃত্যশিল্পী ঝারুদার তেল বিক্রেতা কাঠমিস্ত্রী কামার বিকলাঙ্গ কুষ্ঠরোগী গঙ্গজলবাহক ও নারী। তবে ব্যবসায়ীদের স্ত্রীদের হত্যা করতে হত। ঠগীরা প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত । অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকে ঠগীদের হত্যাকান্ড তুঙ্গে উঠলেও ১৩ শতক থেকেই উত্তর ভারতে ঠগীদের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। আর বাংলায়? অনুমান করা যায় ঠগীরা পূর্বে দিল্লির আশেপাশে ছিল এবং ১২৯০ সালের পর বাংলায় আসে। ১৩৫৬ সালে ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দীন বারানি “ফিরোজ শাহর ইতিহাস” গ্রন্থে লিখেছেন: ‘...উক্ত সুলতানের শাসনামলে (১২৯০) কয়েকজন ঠগীকে দিল্লিতে আনীত হইয়াছিল এবং উক্ত ভ্রাতৃসংঘের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া আরও সহস্র ঠগীকে আটক করা হয়। সুলতান তাহাদের হত্যার নির্দেশ দেন নাই। সুলতান উহাদিগকে নৌকায় করিয়া লক্ষণাবতীতে পাঠাইয়া দিতে নির্দেশ দেন যেন তাহারা আর দিল্লিতে গোলযোগ না করে।’ এখন প্রশ্ন হল লক্ষণাবতী কোথায়? লক্ষণাবতী বা লখনৌতি হল গৌড় বাংলা। যা অবস্থিত ছিল বর্তমান পশ্চিম বাংলার মালদা জেলায়। বাংলায় ঠগীদের ইতিহাসের সূত্রপাত তা হলে ১২৯০ সাল থেকেই? ১২৯০ সালে বাংলায় মুসলিম শাসনের ৮৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। যা হোক। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতবর্ষে রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল। যাত্রীরা পায়ে হাঁটার বদলে রেলে ভ্রমন করতে শুরু করে। ঠগীদের দৌরাত্ব কমে আসছিল। এরপরও বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যাচ্ছিল গনকবর। ব্রিটিশ সরকার ঠগীদের নিমূর্ল করার উদ্যোগ গ্রহন করে উইলিয়াম শ্লিমান কে দায়িত্ব দেওয়া কথা ভাবে। ১৮২২ সালে উইলিয়াম শ্লিমান বেঙ্গল আর্মির অফিসার ছিলেন। পরে তিনি সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন; তাকেই গর্ভনর জেনারেল লর্ড বেনঙ্কিট শ্বাসরুদ্ধকারী ঠগীদের নির্মূল করার নির্দেশ। উইলিয়াম শ্লিমান। অত্যন্ত বিচক্ষণ ব্যাক্তি। চারটি ভারতীয় ভাষা জানতেন। উইলিয়াম শ্লিমানই সর্বপ্রথম ঠগীদের কার্যপ্রনালী সম্বন্ধে আঁচ করতে পারেন। তিনি জানতেন ঠগীদের দমন করা সহজ না। কেননা, অন্যান্য দুস্কৃতিকারীদের থেকে ঠগীদের আলাদা করা যাচ্ছিল না। তাছাড়া সুকৌশলে অপরাধ ঢেকে রাখছিল। ঠগী মানেই তো ঠগ; তারা নিপুন ছলনাকারী। উইলিয়াম শ্লিমান গুপ্ত চর নিয়োগ করেন, গঠন করেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ পুলিশ ফোর্স (সম্ভবত র‌্যাব এর মত), বিশেষ ট্রাইবুনাল ও দ্রুত বিচার আদালত গঠন করেন। এরই পাশাপাশি উইলিয়াম শ্লিমান ঠগীদের অপরাধস্থল সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষন করে মানচিত্র তৈরি করেন এবং অপরাধের দিনক্ষণের একটি তালিকা তৈরি করেন; যার ফলে তিনি পরবর্তী গনহত্যার সময়কাল আঁচ করতে সক্ষম হন। নিজের লোকদের ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে অস্ত্রসহ পাঠান। এভাবে ১৮৩০ থেকে ১৮৪১ সালের মধ্যে ৩, ৭০০ ঠগী ধরা পড়ে। জিজ্ঞাসাবাদের ফলে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। যেমন মাত্র ২০ জনের দল ৫,২০০ পথযাত্রীকে হত্যা করেছে । ঠগী সর্দার বেহরাম ছিল ক্রমিক খুনি (সিরিয়াল কিলার); সে ১৭৯০ থেকে ১৮৩০ সাল এর মধ্যে ৯৩১ টি খুন করে! তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল সে জন্য তার অনুশোচনা হয় কি না। উত্তরে বেহরাম নির্বিকার কন্ঠে বলেছিল, ব্যবসার জন্য কারা আক্ষেপ করে! যাহোক। ৫০ জন ঠগীকে গোপন তথ্যাদি দেওয়ায় ক্ষমা করা হয়। বাদবাকিদের হয় যাবৎজ্জীবন কারাদন্ড। ৫০০ ঠগীকে ঝোলানো হয় ফাঁসীতে। ফাঁসীকাষ্ঠে ঠগীরা ছিল অভিব্যাক্তিশূন্য । বরং তারা কর্তৃপক্ষের কাছে ফাঁস দিয়ে মৃত্যুর আবেদন করে, যে ভাবে তারা নিরীহ যাত্রীদের হত্যা করত! যাই হোক। ঠগীদের যে নির্মম চিত্র তুলে ধরা হয়েছে- বর্তমানে ভারতীয় লেখকগন তার বিরোধীতা করছেন। তারা বলছেন যে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই ঠগীদের অমন হিংস্র করে দেখানো হয়েছে যা মূলত ভারতকে না বোঝার জন্যই হয়েছে। ভারতীয় সমাজে গুপ্ত সংগঠনের অস্তিত্ব যেমন হাস্যকর তেমনি ধর্মীয় কারণে ধারাবাহিক লুন্ঠনও অস্বাভাবিক। ঠগীরা আসলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং অন্যদের মতোই কালী উপাসক। বাধ্য হয়ে তারা হত্যা ও লুন্ঠনের আশ্রয় নিত বটে তবে মৃতদেহ কালীকে উৎসর্গ করার বিষয়টি অবাস্তব। হলিউডি মুভি ‘ইন্ডিয়ানা জোনস অ্যান্ড দি টেমপল অভ ডুমস’ এ কুড়ি শতকের কালীউপাসক ঠগীদের দেখানো হয়েছে। ছবিটি যে কারণে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ঠগীদের নিয়ে লেখা গত বছরের একটি অসাধারন পোস্টের লিঙ্ক ঠগীদের নিয়ে লেখা একটি উপন্যাস http://www.mediafire.com/?mmlyzmmwalj সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০০৯ ভোর ৬:৫৯
false
rn
সম্রাট অশোক সম্রাট অশোক তার সমস্ত জীবন প্রজাদের সুখ কল্যাণে তাদের আত্মিক উন্নতির জন্য ব্যয় করেছিলেন। তবুও তার অন্তরে দ্বিধা ছিল। একজন সম্রাট হিসেবে তিনি কি তার যথার্থ কর্তব্য পালন করছেন? একদিন গুরুকে প্রশ্ন করলেন, গুরুদেব, সর্বশ্রেষ্ঠ দান কী?বৌদ্ধ সন্ন্যাসী উত্তর দিলেন, সর্বশ্রেষ্ঠ দান ধর্মদান। একমাত্র ধর্মের পবিত্র আলোতেই মানুষের অন্তর আলোকিত হয়ে উঠতে পারে। তুমি সেই ধর্মদান কর।ভারতের ইতিহাসে দুজন রাজাকে গ্রেট উপাধি দেয়া হয়েছে তাদের একজন হলেন অশোক দ্যা গ্রেট আরেকজন আকবর দ্যা গ্রেট।রাজা অশোকের সময়টা ছিল খৃষ্টপূর্ব ২৭৩ অব্দে। রাজা অশোক কে নিয়ে কিন্তু বলিউঠে একটা সিনেমাও হয়েছিল। শাহরুখ খান তাতে অভিনয় করেছিল। সম্রাট অশোক ছিলেন মৌর্য্য সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ সম্রাট। সম্রাট অশোকের জন্ম ৩০৪ খ্রীষ্টপূর্ব, শাসনকাল ২৭২ -২৯৮ খ্রীষ্টপূর্ব।রাজা হওয়ার পরই অশোক সাম্রাজ্য বিস্তারে মনযোগী হন। তিনি পূর্বে বর্তমান আসাম ও বাংলাদেশ, পশ্চিমে ইরান ও আফগানিস্হান, উত্তরে পামীর গ্রন্থি থেকে প্রায় সমগ্র দক্ষিণভারত নিজের সাম্রাজ্যভূক্ত করেন। এরপর অশোক কলিঙ্গ প্রজাতন্ত্র দখলে উদ্যোগী হন ।মৌর্য সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট মহামতি অশোকের (৩০৪-২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) রাজত্বকালকেই (২৭৩-২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) বৌদ্ধধর্মের সুবর্ণযুগ বলা হয়ে থাকে।সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর আবারো ব্রাহ্মণ্যবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এবং বৌদ্ধধর্ম ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের উপর নেমে আসে দলন-পীড়ন।অশোক সম্বন্ধে ইংরেজ লেখক H.G. Wells- এর একটি মন্তব্য এরকম- Amidst the tens of thousands of names of monarchs that crowd the columns of history ...the name of Asoka shines, and shines almost alone, a star.প্রতিবেশী দুটি সাম্রাজ্য মগধ এবং কলিঙ্গ। মগধ অপেক্ষাকৃত বড়, তার শক্তিও তুলনায় বেশি। তবুও মগধ সম্রাটের মনে শান্তি নেই। প্রতিবেশী এক শত্রুকে রেখে কি নিশ্চিন্ত হওয়া যায়!দুই পক্ষের সৈন্যবাহিনীই শক্তিশালী। কিন্তু মগধের সৈন্যরা অনেক বেশি যুদ্ধপটু আর কৌশলী। কলিঙ্গের সৈন্যরা বীর বীক্রমে লড়াই করেও পরাজিত হলো। আহত আর নিহত সৈন্যে ভরে উঠল যুদ্ধক্ষেত্র। রক্তাক্ত হলো সমস্ত প্রান্তর। কলিঙ্গরাজ নিহত হলেন।বিজয়ী মগধ সম্রাট হাতির পিঠে চেপে যেতে যেতে দেখলেন তার দুপাশে ছড়িয়ে রয়েছে কত অসংখ্য মৃতদেহ। কত আহত সৈনিক। কেউ আর্তনাদ করছে, কেউ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে চিৎকার করছে। কেউ সামান্য একটু পানির জন্য ছটফট করছে। আকাশে মাংসের লোভে শকুনের দল ভিড় করছে।যুদ্ধক্ষেত্রের এই বিভীষিকাময় দৃশ্য দেখে সম্রাট বিষণ্ন হয়ে গেলেন। অনুভব করলেন তার সমস্ত অন্তর ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছে। ধীরে ধীরে নিজের তাঁবুতে ফিরে দেখলেন শিবিরের সামনে দিয়ে চলেছে এক তরুণ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। সন্ন্যাসী বললেন, আমি যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিকদের সেবা করতে চলেছি।মুহূর্তে অনুতাপের আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল সম্রাটের হৃদয়। সম্রাটের অন্তরে জ্বলে উঠল নতুন এক প্রজ্ঞার আলোক। তিনি শপথ করলেন আর যুদ্ধ নয়, আর হিংসা নয়, ভগবান বুদ্ধের করুণায় আলোয় অহিংসা মন্ত্রে ভরিয়ে দিতে হবে সমগ্র পৃথিবী।একদিন যিনি ছিলেন উন্মত্ত দানব-এবার হলেন শান্তি আর অহিংসার পূজারি প্রিয়দর্শী অশোক। অশোক সম্বন্ধে জানার উৎস প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য এবং পুরাতত্ত্ব। সাহিত্য বলতে ‘দিব্যবদান’ এবং সিংহলী ইতিবৃত্ত বোঝায়। ‘দিব্যবদান’ সংস্কৃত ভাষায় লেখা এবং এর অন্তর্ভুক্ত ‘অশোকাবদান’ (অশোকের জীবনী) । সিংহলী ইতিবৃত্ত দুটি: দীপবংশ এবং মহাবংশ। এই দুটি গ্রন্থই পালি ভাষায় লেখা। বিন্দুসারের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম সুধীন, দ্বিতীয় পুত্র অশোক। সুধীন ছিলেন উদ্ধত বিলাসী। অশোক ছিলেন হৃদয়হীন নিষ্ঠুর প্রকৃতির। ভাইকে হত্যা করে সিংহাসন অধিকার করলেন। অশোকের পরের ভাইয়ের নাম ছিল তিষ্য।অশোক সিংহাসনে আরোহণ করে প্রথম কয়েক বছর নিজের অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন। যারা তার আনুগত্য স্বীকার করতে অস্বীকার করল, তিনি তাদের নির্মমভাবে হত্যা করলেন। তার এই নৃশংসতার জন্য লোক তাকে চণ্ডাশোক বলত।অশোক বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। প্রধানত তারই প্রচেষ্টায় পূর্ব ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রসার লাভ করে।অশোকের নির্দেশে বহু পথ নির্মাণ করা হলো। এই সমস্ত পথের দুপাশে প্রধানত বট এবং আম গাছ পোঁতা হতো। যাতে মানুষ ছায়ায় পথ চলতে পারে। ক্ষুধার সময় গাছের ফল খেতে পারে। প্রতি আট ক্রোশ অন্তর পথের ধারে কূপ খনন করা হয়েছিল।শুধু মানুষ নয়, পশুদের প্রতিও ছিল তার গভীর মমতা। তিনি সমস্ত রাজ্যে পশুহত্যা শিকার নিষিদ্ধ করেছিলেন। মানব সভ্যতার ইতিহাসে তিনিই প্রথম পশুদের জন্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেছিলেন। সর্বজীবের প্রতি করুণায় এমন দৃষ্টান্ত জগতে বিরল।অশোক বৌদ্ধ হলেও অন্য কোনো ধর্মের প্রতি তার কোনো বিদ্বেষ ছিল না। সকলেই যে যার ধর্ম পালন করত। একটি শিলালিপিতে তিনি লিখেছেন, নিজের ধর্মের প্রতি প্রশংসা অন্যের ধর্মের নিন্দা করা উচিত নয়। পরস্পরের ধর্মমত শুনে তার সারবস্তু, মূল সত্যকে গ্রহণ করা উচিত।
false
hm
ফরাসি বিস্ময় সুনীল গাঙ্গুলির কল্যাণে ফ্রান্স আমাদের কাছে ছবির দেশ। কবিতার দেশ। সেইদেশে সঙ্গমবান্ধব লোকজন বাস করে, তারা পান করে সুস্বাদু ওয়াইন, লেখে কবিতা, আঁকে ছবি। যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে ... । ফ্রান্সের আছে আইফেল টাওয়ার, আছে র-কে হ্র বলা লোকজনে গিজগিজ প্যারিস, লুভ জাদুঘর, সেখানে মোনালিসা। সভ্যতা ভব্যতায় ফ্রান্স আমাদের চেয়ে অনেক ওপরে। সেই ফরাসিদের বিস্মিত করে দিতে পেরেছি আমরা। এ আমাদের কপালে আরেকটি রাজতিলক। খামারের ইংরেজিতে যদিও বিস্মিত করে দেয়া কথাটার একটা দুষ্টু অর্থ আছে, তবে অত কাবিলি আমরা এখনও হতে পারিনি। ফরাসী রাষ্ট্রপতির বিশেষ দূত মাহতাঁ ইর্শ আমাদের কায়কারবার দেখে গোটা ফরাসি জাতির হয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে গেছেন। আলেকজান্ডারের পর আর কেউ এইভাবে বিস্মিত হতে পারেনি। ইর্শের সেলুকাস নেই বলে তিনি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেই যা বলার বলে গেছেন [১]। ইর্শ বলেছেন, ১৮ মাস আগে আমি এখানে এসেছিলাম। তখন সরকার দারিদ্র্র্য দূরীকরণে কর্মরত গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক ও এ ধরনের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে প্রশংসাসূচক কথা বলেছিলো। তবে বিস্ময়কর বিষয় হলো ১৮ মাস পরে তারাই নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে গেছে। বিস্ময় প্রকাশ সেরে ইর্শ আসল বার্তাটি দিয়েছেন। বলেছেন, ফ্রান্সের কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে 'সামাজিক ব্যবসায়' বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে তা ঝুঁকিতে পড়ুক - এমনটি ফ্রান্স সরকার চায় না বলে মন্তব্য করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত। ফ্রান্সের একটি বড় প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসায় আগ্রহের রকমসকম দেখে ফরাসি না হয়েও আমি বিস্মিত হয়েছি। আমার এই পোস্টের বাকি অংশ সেই বিস্ময়েরই প্রতিধ্বনি। প্রতিষ্ঠানটি ভিওলিয়া ওয়াটার। ফ্রান্সের অন্যতম শক্তিশালী এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। গ্রামীণ গোষ্ঠীর একটি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস এর সঙ্গে যোগ দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছে গ্রামীণ ভিওলিয়া লিমিটেড। দৈনিক প্রথম আলো প্রচণ্ড আহ্লাদের সঙ্গে এর ওপর খবর করেছে ২৭ নভেম্বর, ২০১০ সালে [২]। তারা শিরোনাম লিখেছে, "গরীব মানুষের বিশুদ্ধ পানি গ্রামীণ ভিওলিয়া"। খবর পড়ে জানতে পাই, ২০১২ সালের মধ্যে এক লাখ মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। দাউদকান্দির গোয়ালমারি ও পদুয়া ইউনিয়নের সাত হাজার পরিবারের মধ্যে দুই হাজার পরিবার রিপোর্টকালীন সময়ে গ্রামীণ ভিওলিয়ার গ্রাহক ছিলো। ডিলারের কাছ থেকে দৈনিক ১০ লিটার পানি নেয় বেশির ভাগ অধিবাসী। সামর্থ্যবান দু-তিনটি পরিবারও ঘরে পানির সংযোগ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রাথমিকভাবে ছয় থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। ১০ লিটার পানি গ্রামবাসীর কাছে আড়াই টাকায় বিক্রি করে ডিলার ৫০ পয়সা কমিশন পান। বেশ কয়েকজন ডিলারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা পানির কমিশন বাবদ মাসে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা উপার্জন করেন। ১৯টি কলের প্রতিটির জন্যে একজন ডিলার রয়েছেন। এবং, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: গ্রামের গরিব মানুষকে কম দামে পানি দিতে আপাতত গ্রামীণ ভিওলিয়াকে প্রতি লিটার পানির জন্য বড় রকমের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তাই মূল প্রকল্পের পাশে আরেকটি প্রকল্প স্থাপন করা হচ্ছে, যেখান থেকে বড় পাত্র ভরে পানি শহরাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হবে। ওই মুনাফা থেকে গ্রামের মানুষের পানি বিক্রিতে ভর্তুকি দেওয়া হবে। গ্রামীণ ভিওলিয়ার লক্ষ্য ছিল গোয়ালমারী ও পদুয়ার সাত হাজার পরিবারের প্রত্যেকে দৈনিক খাওয়া ও রান্নার জন্য ৩০ লিটার পানি কিনবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অধিবাসী দৈনিক ১০ লিটার করে পানি নিচ্ছে। উদ্যোক্তারা জানান, পানি সরবরাহের জন্য ব্যবহূত উন্নতমানের পাইপ আনা হয়েছে ভারত থেকে। পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র আনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ফ্রান্স থেকে। এই তথ্যগুলো আমাদের অনেকের মনেই প্রবল গর্ব ও আনন্দ সৃষ্টি করতে বাধ্য। ঐ খবরটিতে একমাত্র কমেন্টটিতে এক পাঠক লিখেছেন, "GOOD----VERY GOOD--WE WILL GO FORWARD--" । বিশ্বে পানি বিরাষ্ট্রীকরণের লাইনে সবচেয়ে বড় কাণ্ডারি ভিওলিয়া এসে আমাদের গরীব গুর্বোদের সস্তায় পানি পিলাচ্ছে, এতে অনেকের বিবেচনায় আমাদের সম্মান হয়তো বেড়েছে। ইউনূস যেমন নোবেল জিতে বলেছিলেন, জাতির উচ্চতা আজ দশফুট হয়ে গেছে। ভিওলিয়া গ্রামীণের সাথে হাত মেলানোয় জাতির উচ্চতা আরো ইঞ্চি দেড়েক বাড়ার দাবি কেউ করলে অবশ্য আমার এই পোস্টের পেছনে যে বিস্ময় কাজ করছে, তা বাড়বে না। প্রথম আলোর লেখকপরিচয়হীন এই আর্টিকেলটিতে যে উল্লাস ব্যক্ত হয়েছে ভিওলিয়ার আগমনে, সেটা কেন যেন খুব একটা সংক্রামক নয়। যেমন দেখতে পাই, এই পানির মূল্যের একটা বড় অংশই চলে যাচ্ছে পাইপের কল্যাণে ভারতে (বাংলাদেশের ফুড-গ্রেড পাইপের ওপর ইউনূস বা ভিওলিয়া, কারোই ভরসা নেইকো) আর বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রের সুবাদে যুক্তরাজ্য-জার্মানি-ফ্রান্সে। আমাদের দেশে আমাদের প্রধান উৎপাদন যন্ত্র হচ্ছে আমাদের শিশ্ন ও যোনি, আমরা বাকি দুনিয়ার জন্য ভোক্তা আর কামলা উৎপাদন করতে জানি শুধু, পাইপও বানাতে পারি না, বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রও না। ভাগ্যিস ভিওলিয়া এসে আড়াই টাকা দিয়ে ১০ লিটার পানি খাওয়াচ্ছিলো গ্রামের ঐ গরীবগুলোকে, নইলে কী যে হতো! তারপরও আমার খটকা দূর হয় না। কারণ এই গরীবগুর্বোদের পানি কেন কিনে খেতে হবে, কেন রাষ্ট্র তাদের জন্য আর্সেনিকমুক্ত পানির সস্তা কোনো সরবরাহ নিশ্চিত করবে না, এ প্রশ্নের উত্তর পাই না। ঢাকা শহরে বিত্তবানেরা ঘরে বসে ১০০০ লিটার পানি পায় ৬ টাকা ৩৪ পয়সায়[৩], আর দাউদকান্দির গোয়ালমারি আর পদুয়া ইউনিয়নের গাঁইয়ারা কেন ১০০০ লিটার পানি ২৫০ টাকা দিয়ে কেনে গ্রামীণ ভিওলিয়ার কাছে, এ এক রহস্যই মনে হয়। আমার পাপী মন আমাকে বলে, রাষ্ট্রের ব্যর্থতাই বাংলাদেশে গ্রামীণ ও ভিওলিয়ার ব্যবসার প্রথম স্তম্ভ। রাষ্ট্র নিজে গোয়ালমারি আর পদুয়ার সাত হাজার পরিবারের ব্যাপারে উদাসীন। আর ভিওলিয়া যদি এই গরীবগুর্বোদের পানি পিলিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে চায়, ভর্তুকির টাকা তাকে উসুল করতে হবে নগরাঞ্চলের সুপেয় বোতলজাত পানির মার্কেটে দখল নিয়ে। যেহেতু নামের গোড়ায় গ্রামীণ আছে, আর গ্রামীণ মানেই গরীবের মাইবাপ, কাজেই গরীবের নাম বেচে কিছু কর-সুবিধা বা শুল্ক-সুবিধা হয়তো পেতে পারে প্রতিষ্ঠানটি [নিশ্চিত নই]। অর্থাৎ, শহরে আমাদের অন্যান্য বোতলজাত পানির দেশীয় উদ্যোক্তাদের তুলনায় এই সামাজিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানটি এসব সুবিধার কারণে এগিয়ে থাকবে। তার ওপর তারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পানি ব্যবসায়ী, ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা তো তাদের থাকবেই। গোয়ালমারি আর পদুয়ার আর্সেনিক-কবলিত মানুষদের দেখিয়ে দেশের নগরাঞ্চলের সুপেয় পানির মার্কেটে নিজের সত্যিকার রূপ নিয়েই আবির্ভূত হতে পারে এই পানিবণিক প্রতিষ্ঠানটি। আমার পাপী মনে আরেকটা উদাহরণ কেন যেন বেয়াদবের মতো উঁকি দিলো। গরীব পল্লী নারীর ভাগ্যোন্নয়নের জন্যে টেলিনরও তো গ্রামীণফোন হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলো। গরীব পল্লী নারীর ভাগ্যের আরেকবার উন্নয়ন ঘটাতে ভিওলিয়া ওয়াটারের বাংলাদেশের পানির বাজার দখল করতে সমস্যা কী? ইউনূস অবশ্য বলেছেন, সামাজিক ব্যবসাকে কর-সুবিধা নিতে হবে না। তিনি ভারতের মুম্বাইতে গিয়ে ভারতীয়দের বুঝিয়েছেন, তাদের দেশে সামাজিক ব্যবসার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। খাতগুলো চিহ্নিত করতে গিয়ে তিনি পানির কথা বলতে ভোলেননি [৪]। আমার পাপী মন আবারও দুয়ে দুয়ে চার মেলায়। নোবেলজয়ী ইউনূস দেশে দেশে পানি নিয়ে সামাজিক ব্যবসার কথা বলছেন, আবার হাত মিলিয়েছেন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পানিবণিক ভিওলিয়ার সাথে। পানি নিয়ে বিশ্বের প্রথম সামাজিক ব্যবসা শুরুও করেছে ভিওলিয়া। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের বিস্ময়ের কারণটা আস্তে আস্তে স্পষ্ট হয়। ইউনূসকে নিয়ে ফরাসি উদ্বেগের মর্মমূলে যে পানি আর ভিওলিয়ার কিছু শিকড় আছে, এমন একটা অসংস্কৃত সন্দেহ জাগে। কিন্তু আমার বিস্ময় কাটে না। কারণ খোদ ফরাসি মুল্লুকের রাজধানী প্যারিসেই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পানি বাণিজ্য ঘুচিয়ে দিয়েছেন প্যারিসের মেয়র। প্যারিসের আদ্ধেকটায় পানি সরবরাহ করতো ভিওলিয়া, আর গোটা ফ্রান্সের বেসরকারি পানির ব্যবসার ৫৬%-ই তারা নিয়ন্ত্রণ করে [৫]। ফ্রান্স কয়েক শতক ধরেই পানি সরবরাহের ব্যবসাকে বিরাষ্ট্রীকরণ করেছে, ফলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুটি পানিবণিক প্রতিষ্ঠান, ভিওলিয়া আর সুয়েজ যে ফরাসি, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। খোদ প্যারিসীয়রাই যেখানে খরচ বাচাতে ভিওলিয়ার হাত থেকে নিষ্কৃতি নিয়েছে, আর প্যারিসখেদানো ভিওলিয়া আমাদের গোয়ালমারি আর পদুয়া ইউনিয়নে এসে ঠাঁই নিলে বুকটা গর্বে একটু ফুলে ওঠে না, বলেন? বিশ্বের সাড়ে নয় কোটি মানুষের সাথে পানির ব্যবসা করা ভিওলিয়া কিন্তু ক্রমশ লাভ হারাচ্ছে, তাই তারা ক্রমশ ঝুঁকে পড়ছে এশিয়ার দিকে [৬]। বাংলাদেশে গরীবকে পানি পিলাতে তারা এর মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এশিয়া তাদের বাণিজ্য-প্রসারণে আমাদের নোবেলজয়ী ড. ইউনূস যে একজন সহায়ক শক্তি, তা নিয়ে সন্দেহ থাকে না। তিনি টেলিনরেরও বন্ধু ছিলেন। ফ্রান্স যে দূতাবাসের বাইরেও দূত পাঠিয়ে খবরাখবর নেবে, এ আর বিচিত্র কী? ছবির দেশ, কবিতার দেশ ফ্রান্সের বিশেষ দূত বাংলাদেশে এসে বিস্মিত হয়ে পড়েছেন বলে অনেকেই উদ্বিগ্ন। ফ্রান্সের অপমান সইতে পারেন না, এমন দুয়েকজন বন্ধু আমার আছেন। তাঁদের একজন গিমে জাদুঘরের প্রত্ন নিদর্শনের গাজোয়ারির সময়ও বাংলাদেশের মানুষের মুণ্ডপাত করেছিলেন। প্যারিসে প্রদর্শিত হতে না পেরে আমরা কত হাজার বছর পিছিয়ে ঐ প্রত্ন নিদর্শনের যুগেই ফিরে গিয়েছি, এমন ভর্ৎসনা তিনি আকচার করতেন। এবার তাঁর জন্যে একটি ছবি, ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া। সঙ্গে একটি গল্প ফ্রি। সম্রাট আকবর তার কৃপাপ্রার্থীদের অনেকের স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করতেন। সুন্দরী নারীর প্রতি তাঁর একটা স্নেহ কাজ করতো আর কি। এ নিয়ে সম্রাটের নেকনজরবন্দি অনেক পুরুষই ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাঁদের প্রতি আকবরের বার্তা ছিলো, হাতির মাহুতের সাথে বন্ধুত্ব করতে গেলে বাড়ির দরজা উঁচু করতে হয় [বানিয়ে বলছি না, Abraham Eraly-র The Last Spring এ পাবেন]। ছবিতে এরকম একজন হাতির মাহুতকে দেখতে পাচ্ছি। বন্ধুত্ব থাকলেও যে গোয়া মেরে দেয়া যাবে না, এমনটা ফরাসি শাস্ত্রে নেই। তাই ফরাসি বিস্ময় নিয়ে হৃদরোগে ভোগা বন্ধু আমার, সেরে উঠুন। পুনশ্চ: ১৮ মাসের মধ্যেই সরকারের সাথে ইউনূসের লাঠালাঠি দেখে ইর্শের বিস্মিত হওয়া স্বাভাবিক। সারকোজি আর গাদ্দাফি ২০০৭ এর জুলাইতে পরস্পরের সাথে ঊষ্ণ বন্ধুত্ব স্থাপন করেছিলেন [৭], আর এই ২০১১তে এসে গাদ্দাফির পাছায় মিসাইল দাগছেন সারকোজি। বিবাদে জড়িয়ে পড়তে সারকোজিরই যেখানে ৪৫ মাস সময় লাগে, সেখানে গরীবগুর্বোর দেশ বাংলাদেশের সরকার ১৮ মাসের মধ্যে চুলোচুলি শুরু করে দিলে বিস্মিত না হয়ে উপায় আছে? [১] ইউনূস বিষয়ে হুমকি নয়, সহযোগিতা: ফ্রান্স [২] গরিব মানুষের বিশুদ্ধ পানি গ্রামীণ ভিওলিয়া [৩] ওয়াসার পানির মূল্যহার [৪] India Has Huge Potential in Social Business, Muhammad Yunus [৫] Paris takes back public control of their water services from Veolia and Suez-Lyonnaise des Eaux! [৬] Veolia Environnement’s Profits Shrink as Communities Across the Globe Remunicipalize Water Contracts and Company Fails to Secure Long-Term Leases [৭] WikiCables: Sarkozy peddles a reactor to Gaddafi
false
hm
অভিনব রাজনৈতিক প্রচারণা গত বারোই নভেম্বর, বুধবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছয়টি শহরে প্রায় ১.২ মিলিয়ন কপি নকল ১৪ পাতার "নিউ ইয়র্ক টাইমস" বিতরণ করা হয়েছে। জুলাই ৪, ২০০৯ (জুলাই ৪ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস) তারিখ ছাপা এই পত্রিকা জুড়ে রয়েছে লিবারেল রাজনীতির অনুসারীদের কাম্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের নকল খবর। প্রথম পাতায় বিশাল ছবি আর ক্যাপশনসহ রয়েছে ইরাক যুদ্ধ অবসানের খবর। আরো রয়েছে ব্যাপক ধ্বংসী যুদ্ধাস্ত্রের জুজু প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা, সেনাদের ইরাক থেকে ঘরে ফেরার কয়েক রকমের খবর, স্বাস্থ্য বীমা সংক্রান্ত আইন পাস, বুশের বিচার প্রক্রিয়া শুরু, অন্তর্দহন যান নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ নানা খবর। মনসান্তোর ব্যানারে সেখানে রয়েছে কীটনাশকের বদলে গুবরেপোকা দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে ফসলের কীট ধ্বংসের বিজ্ঞাপন, এক্সন-মোবিল সেখানে ইরাক যুদ্ধের পেছনে নোংরা কৌশলকে বিশদ ব্যাখ্যা করে নতুন শক্তি সরবরাহ নীতি অনুসরণের প্রতিজ্ঞা করছে। এমনই আরো মজার সব "সংবাদ" রয়েছে চৌদ্দ পাতা জুড়ে। যে ওয়েবসাইটটির রেফারেন্সসহ এই নকল সংবাদপত্র মানুষের হাতে হাতে বিলানো হয়েছে, সেটি দেখতেও নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতোই। নিউ ইয়র্ক, লস এঞ্জেলস, সান ফ্রান্সিসকো, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া আর ওয়াশিংটন জুড়ে অনেক স্বেচ্ছাসেবী এই "সংবাদ"পত্র বিতরণের কাজে যোগ দিয়েছেন। এর রূপকাররা হচ্ছেন জনৈক চলচ্চিত্র উদ্যোক্তা, টাইমসের তিনজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মী, এবং স্টিভেন ল্যাম্বার্ট, জনৈক চারুকলা অধ্যাপক। বারাক ওবামাকে এই পেপার ছাপিয়ে একটা মেসেজ দিতে চেয়েছেন তারা, জো ওয়াদা কিয়া ও নিভানা পাড়েগা। সফটওয়্যার আর ইন্টারনেটে সহায়তা জুগিয়েছে "ইয়েস মেন" নামে একটি গোষ্ঠী। তারা জানিয়েছে, প্রায় ছয় মাস প্রস্তুতির পর ছয়টি প্রেসে এই কাগজটি ছাপা হয়েছে। "দ্য ইয়েস মেন" নামে একটি ননফিকশন চলচ্চিত্রও মুক্তি পেয়েছিলো ২০০৪, যেখানে এই ইয়েস মেন এর রাজনৈতিক প্র্যাঙ্কগুলো স্থান পেয়েছে। একটি উদাহরণ ছিলো এমন, অস্ট্রিয়ার জালৎসবুর্গে ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে নাম ভাঁড়িয়ে একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছিলো ইয়েস মেন এর একজন, অ্যান্ডি বিশলবাউম, এবং তার বক্তব্যের মোদ্দা কথা ছিলো, মার্কিনীদের উচিত তাদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোট নিলামে তুলে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে বিক্রি করা, আর ডাব্লিউ.টি.ও.র আসল কাজ হচ্ছে "এক দুনিয়া এক সংস্কৃতি" চালু করা। তারা একই কাজ ফিনল্যান্ডেও একটি ট্রেড কনফারেন্সে নাম ভাঁড়িয়ে অংশগ্রহণ করেছিলো, যেখানে তাদের ওয়েবসাইটটি হুবহু ডব্লিউ.টি,ও.-র ওয়েবসাইটটির মতো সাজিয়ে ফিনিশ কর্তাদের ধোঁকা দেয়া হয়েছিলো। এবারে তাদের বক্তব্য ছিলো, ডব্লিউ.টি.ও, অচিরেই ভেঙে দিয়ে গরীববান্ধব বাণিজ্যের পথ উদারীকরণ হবে শিগগীরই। তবে এমন ধোঁকা এ-ই প্রথম নয়। ১৯৯৯ এর এপ্রিল ফুল'স ডে-তে রিচার্ড ব্র্যানসন এক লক্ষ কপি নকল নিউ ইয়র্ক টাইমস ছাপিয়েছিলেন। সূত্রঃ সংসারে এক সন্ন্যাসী।
false
mk
নানা নামে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে জঙ্গিরা বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার শুরু নব্বই দশক থেকে। বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাপড়–য়া ছাত্র-শিক্ষকদের একটি অংশ আশির দশকের শেষ দিকে আফগানিস্তানে যায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মুজাহিদীনদের পক্ষে লড়াই করতে। দেশে ফিরে তারাই গঠন করে হরকাতুল জিহাদ। পরে নানা নামে হয় আরো বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠন। গোপন তৎপরতার পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দলের হয়েও কাজ করতে থাকেন এসব জঙ্গি সংগঠনের নেতারা।১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরে উদীচীর সম্মেলনে, ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টনে সিপিবির সমাবেশ, একই বছরের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূল এবং ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোমা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটায় জঙ্গিরা। হরকাতুল জিহাদের জঙ্গিরা এসব ঘটিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় তদন্তে। জঙ্গিদের হামলার মধ্যে সবচেয়ে বীভৎস ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে দলের অন্য শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে হত্যার জন্য চালানো এই হামলায় বিপুল প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় একটি বড় রাজনৈতিক শক্তির সহযোগিতা পেয়েছে জঙ্গিরা। এর পাশাপাশি ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলায় একই সময়ে সাড়ে পাঁচশরও বেশি বোমা হামলা চালিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয় জেএমবি। সে সময় চারদলীয় জোট সরকারের একটি অংশ এই জঙ্গিদের সহযোগিতা করে বলে অভিযোগ ওঠে।জেএমবি নেতা বাংলাভাইয়ের অস্তিত্ব নেই বলেও দাবি করে সে সময়ের সরকার। পরে অবশ্য এই আমলেই গ্রেফতার হয় জেএমবির শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিরা আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ফাঁসি হয় এদের ছয়জনের। তবে দেশে জঙ্গিগোষ্ঠী কেবল এই দুটি নয় বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা বাহিনীর হিসাব মতে, দেশে ধর্মীয় ও উগ্রপন্থি সংগঠনের সংখ্যা শতাধিক। একটি সংগঠন নিষিদ্ধ হলে কিছু লোক এর নামেই গোপন তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি তৈরি করে নতুন নামে সংগঠন। এভাবে বেড়েছে সংগঠনের সংখ্যা।এখনো বাংলাদেশে হরকাতুল জিহাদ, জেএমবির পাশাপাশি আনসার উল্লাহ বাংলা টিম, শাহাদত-ই আল হিকমা-বাংলাদেশ, হিজবুত তাওহিদ, তৌহিদী ট্রাস্ট, আল্লাহর দল, জামাত-আস-সাদাত, শাহাদত-ই-নবুয়ত, খতমে নবুয়ত আন্দোলন, জামিউতুল ফালাহ, ইসলামিক সলিডারিটি ফ্রন্ট, আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, আরাকান পিপলস আর্মি, আরাকান মুজাহিদ পার্টি, মিয়ানমার লিবারেশন ফোর্স, রোহিঙ্গা লিবারেশন ফোর্স, রোহিঙ্গা ইনডিপেন্ডেন্ট পার্টি, রোহিঙ্গা প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট, আল হারাত-আল-ইসলামিয়া, ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ফ্রন্ট, তৌহিদী জনতা, জুমাআতুল আল সাদাত, তামির উদ-দ্বীন বাংলাদেশ, আল খিদমত, হিজবুল মাহদি, হিজবুল্লাহ ইসলামী সমাজ, দাওয়াতি কাফেলা, বাংলাদেশ এন্টি টেররিস্ট পার্টি, আল মারকাজুল আল ইসলামী, আল ইসলাম মার্টেনস ব্রিগেড, সত্যবাদ, মুসলিম মিল্লাত, শরিয়া কাউন্সিল, জমিয়ত আহলে হাদিস আন্দোলন, আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশ, কলেমার জামাত, তাজির বাংলাদেশ, সাহাবা পরিষদ, কাতেল বাহিনী, তাজির বাংলাদেশ, হায়াতুর ইলাহা, ফোরকান মুভমেন্ট, জামিউতুল এহজিয়া এরতাজ, আনজুমানে তালামিজ ইসলামিয়া নামে জঙ্গি সংগঠন কাজ করছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।গোয়েন্দারা বলছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মদতে এখনো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। এদের মধ্যে কেউ পাকিস্তান, কেউ আফগানিস্তান কেউবা ইয়েমেনের জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। কওমি মাদরাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধেও আছে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ। হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি ইহাজারুল ইসলামের চট্টগ্রামের লালখানবাজার মাদরাসায় গ্রেনেড তৈরির সময় বিস্ফোরণে তিন ছাত্র নিহত হয় ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর। ঘটনাটিতে প্রথমে আইপিএস বিস্ফোরণ দাবি করলেও পরে বিস্ফোরণের ব্যাপকতার পর হেফাজতের এই দাবি আর গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু অবিস্ফোরিত গ্রেনেড, গ্রেনেড তৈরির মালামালও উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনার পর থেকে পালিয়ে আছেন মুফতি ইজাহারুল। তিনি ও তার আটক ছেলে হারুন ইজহারসহ নয়জনের বিরুদ্ধে গত ১০ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।মুফতি ইজাহারের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ পুরনো। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আশির দশকে আফগানিস্তান যান তিনি। ফিরে এসে ১৯৯৮-৯৯ সালে দাওয়াত নামের একটি পত্রিকায় এ নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন তিনি। যার শিরোনাম ছিলÑ ‘তালেবানের আফগানে জান্নাত দেখে এলাম।’জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ : বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিকাশে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বেশ কিছু সংগঠন আর্থিক ও অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। আল কায়েদা, লস্কর-ই-তৈয়্যেবা, হিযবুত তাহরীর, জয়শ-ই-মুহাম্মদসহ আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন সংগঠনের বাংলাদেশে শাখাও পাওয়া গেছে। নিরাপত্তাবাহিনীর তদন্তে দেখা যায় বাংলাদেশে উগ্র ধর্মীয় রাষ্ট্র গঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে জঙ্গি তৎপরতা চালাতে প্রশিক্ষণও দেয়া হতো বাংলাদেশে।২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ভারতে যেসব জঙ্গি হামলা চালান হয়েছে তাতে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিরা অংশ নেয় বলেও অভিযোগ আছে। ২০০৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতে বিস্ফোরকসহ আটক হন ফরিদপুর থেকে যাওয়া দুই ভাই মুরসালিন ও মুত্তাকিন। তারা এখনো ভারতের তিহার কারাগারে বন্দি আছেন। তাদের বিরুদ্ধে দেশটিতে একাধিক হামলায় অংশ নেয়ার অভিযোগ আছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আল কায়েদা প্রধান জাওয়াহিরির অডিওবার্তা প্রকাশের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগাযোগের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে।২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের রাজধানীর শাপলা চত্বর থেকে উচ্ছেদ অভিযানে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে সরকারের বিরুদ্ধে ইন্তিফাদা বা সশস্ত্র সংগ্রাম শুরুর আহ্বান জানান জাওয়াহিরি। সরাসরি না বললেও জামায়াতের পক্ষেও কথা বলেন জাওয়াহিরি। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উল্লেখ করে জাওয়াহিরি দাবি করেন, ইসলামের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বাংলাদেশে মুসলিম নেতাদের সাজা দেয়া হচ্ছে, কারো কারো ফাঁসিও দেয়া হচ্ছে।জঙ্গিদের জামায়াতের আঁতাত : মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা জামায়াত জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ কখনো স্বীকার করতে চায়নি। তবে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়াদের একটি বড় অংশের সঙ্গে এবং তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে।জেএমবি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই ছিলেন শিবিরের সক্রিয় সদস্য। শায়খ রহমানও জামায়াত নেতাদের সুপারিশে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ আলী সিকদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জামায়াত ও জঙ্গি সংগঠনগুলো প্রায় একই। জঙ্গিরা আসলে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে আলাদা সংগঠন করেছে এবং জামায়াত তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী বলেছিলেন, বাংলাভাই বলতে কিছু নেই। এমনকি সরকারেরও এ ব্যাপারে কিছুর করার নেই। এর মাধ্যমে তখন তারা জেএমবিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছিল। এসব কিছু প্রমাণ করে যে, সব কিছুর মূলেই রয়েছে জামায়াত এবং তাদের রাজনৈতিক আদর্শ।’ত্রিশালে ছিনিয়ে নেয়া এক জঙ্গি রাকিব হাসান রাসেল ওরফে হাফেজ মাহমুদও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন। ২০০৩ সালে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি জামায়াতের প্রার্থীর হয়ে খেটেছিলেন।যেভাবে ছিনিয়ে নেয়া হলো জঙ্গিদের : রোববার সকাল ৮টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাসেল, সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তৌহিদ ও মিজান ওরফে বোমা মিজান ওরফে জাহিদুল হাসান সুমনকে ডা-াবেড়ি পরিয়ে প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। তাদের মধ্যে সালাউদ্দিন ও রাকিব মৃত্যুদ- ও মিজান যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত আসামি। ভ্যানটি ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় পৌঁছলে আধুনিক অস্ত্র এবং শক্তিশালী বোমা ব্যবহার করে হামলা চালায় জঙ্গিরা।প্রিজনভ্যানের চালক সবুজ মিয়া জানান, বেলা ১১টার দিকে প্রথমে বিপরীত দিক থেকে একটি ট্রাক প্রিজনভ্যানকে আটকে দেয়। একই সময় একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন সামনে এসে গুলি শুরু করে।একপর্যায়ে প্রিজনভ্যানের ভেতরের দরজা খুলে কাঠের একটি বাক্স (টাকশালে টাকা নেওয়ার বাক্স) নামায়। এরপর ডা-াবেড়ি পরা তিন ব্যক্তি নিচে নামে। হামলাকারীরা ডা-াবেড়ি পরা ব্যক্তিদের মধ্যে দু’জনকে কালো মাইক্রোবাসে এবং বাকি একজনকে নিয়ে সাদা মাইক্রোবাসে ওঠে। এ সময় পেছনে ঢাকামুখী আরেকটি বাস আসছিল। হামলাকারীরা সেই বাসের সামনে ককটেল ফাটায়। তারা বাসের চালককে কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকার জন্য বলে মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যায়। পুরো কাজে সময় লাগে কেবল পাঁচ মিনিট।এ সময় এসআই হাবিব, কনস্টেবল আতিক ও সোহেল এবং প্রিজনভ্যানের চালক সবুজ গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে পুলিশ কনস্টেবল আতিক মারা যান। নিহত আতিক (৩৫) গাজীপুর পুলিশ লাইনের কনস্টেবল ছিলেন।তিন জঙ্গিই ভয়ঙ্কর : ছিনিয়ে নেয়া তিন জঙ্গিকেই বিপজ্জনক বলেছে পুলিশ। এদের মধ্যে সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীনকে ২০০৬ সালের ২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মোট ৩৩টি মামলা আছে। ২০০৩ সালে এক খ্রিষ্টান যুবককে হত্যার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। নয়টি মামলায় তাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদের ওপর হামলায়ও তিনি অংশ নেন বলে পুলিশ তদন্তে উঠে এসেছে।রাকিব হাসান রাসেল ওরফে হাফেজ মাহমুদ আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধ করতে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন। তিনি জেএমবির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম মজলিসে শুরার সদস্য এবং খুলনা বিভাগের কমান্ডার। সালাউদ্দিনের সঙ্গে তিনিও মৃত্যুদ- পেয়েছেন একই মামলা। এ ছাড়া আরো তিনটি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পেয়েছেন তিনি। ২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমানের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ীই ২০০৬ সালে সিলেট থেকে আটক করা হয় শায়খ আবদুর রহমানকে।এই তিনজনের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বলছে পুলিশ। ২০০১ সাল থেকে জেএমবির এহসার সদস্য তিনি। আফগান যুদ্ধে অংশ নেয়া মিজান বোমা ও গ্রেনেড তৈরিতে বিশেষভাবে পারদর্শী। দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৯টি মামলা রয়েছে। ২০০৯ সালের ১৪ মে রাজধানীর মিরপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। একটি অস্ত্র মামলায় তাকে যাবজ্জীবন দ- দেয়া হয়। অন্য চার মামলায় তাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। ২০০৫ সালে এক বিচারকের ওপর বোমা হামলার জন্য তাকে ২০ বছর সাজা দেয়া হয়। - See more at: Click This Link
false
mk
অস্বস্তি জামাতকে নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালে কোনো প্রভাব পড়েনি সাতক্ষীরা জেলায়। জীবনযাত্রা ছিল স্বাভাবিক। গতকাল শুক্রবার ছিল অবরোধের ৭৪তম দিন। এই ৭৪ দিনে জেলায় কোনো পেট্রলবোমা বা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। হরতাল-অবরোধের সমর্থনে বিএনপি-জামায়াতের কোনো তৎপরতাও নেই। তার পরও জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিয়ে একধরনের অস্বস্তি রয়েছে সাধারণ মানুষ ও রাজনীতিবিদদের।পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, সাতক্ষীরায় অবস্থান করে জামায়াত-শিবিরের নেতারা কোনো পরিকল্পনা করছেন না। জেলায় তাঁদের পক্ষে সংঘবদ্ধ হয়ে কোনো নাশকতা বা সহিংসতা করা সম্ভব হবে না। পুলিশ ও প্রশাসন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দিকে কড়া নজর রাখছে।২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর প্রায় ১১ মাস সাতক্ষীরায় তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির। এ সময় আওয়ামী লীগের ১৬ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। অনেক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত জামায়াত-শিবির কার্যত সাতক্ষীরাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। কিন্তু এবার জোটের অবরোধ-হরতালে তারা একেবারে নিশ্চুপ। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা এমনিতেই খারাপ। এলাকায় পুলিশি টহলের কারণে জামায়াত নেতাদের মতো বিএনপির নেতারাও আত্মগোপনে আছেন।জেলার কলারোয়া উপজেলা সদরে কথা হয় সেখানকার ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসলেমউদ্দিনের সঙ্গে। তাঁরা বললেন, ২০১৩ সালে এ উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় জামায়াত-শিবির ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। কিন্তু এবার ওরা ঘাপটি মেরে আছে। অবশ্য পুলিশ এবার খুবই তৎপর। তার পরও ভয়-অস্বস্তি কাটছে না।জেলা সদরের নিউমার্কেটের সামনে কথা হয় স্থানীয় এনজিওর কর্মী শারমিন আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে সাতক্ষীরায় কিছু হচ্ছে না। বিএনপি-জামায়াতের তৎপরতা নেই। তবে মানুষের ধারণা, জামায়াত সুযোগ পেলে আবারও তাণ্ডব চালাবে। শহর বাসস্ট্যান্ডের কাছে চায়ের দোকানি অশোক কুমার বলেন, ‘কখন কী হয়, বোঝা যায় না। মানুষের মনে যে ভয় ডুকে গেছে, তা বের হওয়া কঠিন।’জোটের চলমান কর্মসূচিতে জামায়াতের নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, এটা তাঁদের কৌশল। কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা এখন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। জেলার নেতা-কর্মীরা পালিয়ে বা আত্মগোপনে আছেন। ওই অবস্থায় রাজনীতিতে যুক্ত থাকছেন।জামায়াত-শিবির নিয়ে অস্বস্তি-ভয় থাকলেও বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে তা নেই সাধারণ মানুষের। কারণ, জেলায় বিএনপির তেমন তৎপরতা নেই। জেলা বিএনপির কমিটিতে আছেন কেবল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি রহমতউল্লাহ পলাশ ঢাকায় থাকেন। সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীমের তেমন কার্যক্রম চোখে পড়ে না। দলের বাজে অবস্থার কথা স্বীকার করে সাধারণ সম্পাদক প্রথম আলোকে বলেন, এখানে বিএনপির কার্যক্রম সেভাবে নেই। দলের মূল ভরসা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নিষ্ক্রিয়। তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে সাতক্ষীরায় তাঁরা আরাফাত রহমান কোকোর গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি বড় আকারে পালন করেছেন। নিজেদের মধ্যে বৈঠক বন্ধ আছে।সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও জামায়াত-শিবিরের এই ‘নীরবতা’ অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনসুর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াত-শিবির হয়তো আরও বড় পরিসরে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগও সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর কাজ করছে। প্রতিটি ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে জামায়াতের কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। এ আশঙ্কার কথা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়, যৌথ বাহিনীর অভিযানে নেতা-কর্মীদের মৃত্যু, আহত হওয়াকে বিরোধী দলের তৎপরতা না থাকার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা। তাঁরা জানান, জেলায় নতুন করে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মাত্র ১৫-২০টি মামলা হয়েছে। তবে পুরোনো মামলা আছে ৩০০ শতাধিক। মামলার ভয়ে কেউ ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামছেন না।পরিস্থিতি সম্পর্কে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেন, প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন গ্রেপ্তার হচ্ছে। রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সব সন্ত্রাসীর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা কেউ বাড়িতে থাকতে পারছে না বা বৈঠক করতে পারছে না। সাতক্ষীরায় বিএনপি-জামায়াত আর সংঘবদ্ধ নাশকতা চালাতে পারবে না।অবরোধ-হরতালেও জেলার শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। কয়েকটি বিদ্যালয় ও কলেজে গিয়ে স্বাভাবিক অবস্থা দেখা গেছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলার সব স্কুল-কলেজ খোলা। নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা ও অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।জেলার অভ্যন্তরীণ ও আন্তজেলা বাস চলাচলও স্বাভাবিক আছে। রাতেও বাস চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। দোকানপাটও খোলা থাকছে। লিঙ্ক: দৈনিক প্রথম আলো
false
rg
জামায়াতে ইসলামী'র ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাস ও বিস্তার বাংলাদেশের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার পথে সবচেয়ে বড় হুমকি!!! ১৯৮৬ সালের ৭ মে বাংলাদেশের তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ১৫ বছরের মধ্যে সেবার-ই প্রথম জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহন করে। সেই নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। ফলে জাতীয় পার্টি ২৫৩ টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। ৭৭ টি আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আর ১০ টি আসন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী হয় তৃতীয়। জামায়াত তখন মোট ভোট পেয়েছিল ১৩ লাখ ১৪ হাজার ৫৭টি। যা মোট কাস্টিং ভোটের শতকরা ৪.৬০ ভাগ। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের পঞ্চম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইসলামী দ্বিতীয় বারের মত সেই নির্বাচনে অংশগ্রহন করে। ১৪০ টি আসনে জয়লাভ করে বিএনপি সরকার গঠন করে। ৮৮টি আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ হয় দ্বিতীয়। ৩৫ টি আসন পেয়ে জাতীয় পার্টি হয় তৃতীয়। আর ১৮ টি আসন পেয়ে জামায়াতে ইসলামী হয় চতুর্থ। জামায়াত তখন মোট ভোট পেয়েছিল ৪১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৬১টি। যা মোট কাস্টিং ভোটের শতকরা ১২.১০ ভাগ। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন বাংলাদেশের সপ্তম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইসলামী তৃতীয় বারের মত সেই নির্বাচনে অংশগ্রহন করে। ১৪৬ টি আসন নিয়ে আওয়ামী লীগ আসনে নিয়ে সরকার গঠন করে। ১১৬ টি আসন পেয়ে বিএনপি হয় দ্বিতীয়। ৩২ টি আসন পেয়ে জাতীয় পার্টি হয় তৃতীয়। ৩টি আসন পেয়ে জামায়তে ইসলামী হয় চতুর্থ। জামায়াত তখন মোট ভোট পেয়েছিল ৩৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৩টি। যা মোট কাস্টিং ভোটের শতকরা ৮.৬ ভাগ। ২০০১ সালের ১ লা অক্টোবর বাংলাদেশের অষ্টম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইসলামী চতুর্থ বারের মত সেই নির্বাচনে অংশগ্রহন করে। ১৯৫ টি আসনে জয়লাভ করে বিএনপি সরকার গঠন করে। ৫৮টি আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ হয় দ্বিতীয়। ১৭ টি আসন পেয়ে জামায়াতে ইসলামী হয় তৃতীয়। আর ১৪ টি আসন পেয়ে জাতীয় পার্টি হয় চতুর্ত। আর জামায়াত তখন মোট ভোট পেয়েছিল ২৩ লাখ ৮৫ হাজার ৩৬১টি। যা মোট কাস্টিং ভোটের শতকরা ৪.২৮ ভাগ। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের নবম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইসলামী পঞ্চম বারের মত সেই নির্বাচনে অংশগ্রহন করে। ২৩০ টি টি আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ৩০টি আসন পেয়ে বিএনপি হয় দ্বিতীয়। ২৭ টি আসন পেয়ে জাতীয় পার্টি হয় তৃতীয়। ৩টি আসন পেয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ হয় চতুর্থ। আর ২টি করে আসন পেয়ে যৌথভাবে পঞ্চম স্থান লাভ করে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত তখন মোট ভোট পেয়েছিল ৩১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৮৪টি। যা মোট কাস্টিং ভোটের শতকরা ৪.৬০ ভাগ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ১৫ বছরের মাথায় স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামী দলটি মোট নয়টি সাধারণ নির্বাচনের মধ্যে পাঁচটিতে অংশগ্রহন করার সুযোগ পায়। প্রথম, দ্বিতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ সাধারণ নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহন করেনি। দেখা যাচ্ছে যে, পাঁচটি নির্বাচনের মধ্যে পঞ্চম সাধারণ নির্বাচনে জামায়ত সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে। শুরুতে জামায়াতের ভোট যেখানে ছিল ১৩ লাখ ১৪ হাজার। সেখানে পাঁচ বছরের মাথায় সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ লাখ ৩৬ হাজারে। অর্থ্যাৎ প্রায় ৫ বছরে জামায়াতের প্রায় চারগুন ভোট বেড়েছে। আবার পরবর্তী ৫ বছর পর জামায়াতে ভোট ৫ লাখ কমে ৩৬ লাখে নামলেও পরবর্তী ৫ বছরে সেই ভোটের সংখ্যা আরো কমেছিল। ২০০১ সালে সেটি প্রায় ২৫ লাখে গিয়ে পৌঁছায়। কিন্তু পরবর্তী ৭ বছরে জামায়াতের আবার ভোট লাফিয়ে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩২ লাখে। অর্থ্যাৎ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জামায়াতের ভোট সংখ্যা কমার একটি প্রবনতা ছিল। ২০০৮ সাল থেকে সেটি আবার বাড়ার প্রবনতায় রূপ নিয়েছে। ভোট বাড়ুক আর কমুক, মোট কথা জামায়াতের প্রায় ৫০ লাখ ভোটার যে আছে, একথা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। বাংলাদেশের বিভাগ অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, জামায়াতে ইসলামী'র সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। আর স্বল্প পরিসরে বরিশাল ও সিলেট বিভাগে কিছু ঘাঁটি গাড়লেও ঢাকা বিভাগে জামায়াত তেমন শক্ত কোনো অবস্থান গড়ে তুলতে পারেনি। জেলা অনুয়ায়ী দেখলে দেখা যায়, সাতক্ষীরা, পাবনা, নওগাঁ, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কক্সবাজার, লক্ষীপুর ও বরগুনায় জামায়াত শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। এছাড়া নড়াইল, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুস্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, ব্রাহ্মণবড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, ভোলা, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে কিছু কিছু বিক্ষিপ্ত জামায়াতের ঘাঁটি গড়ে উঠেছে। গাণিতিক পরিসংখ্যানের বাইরে জামায়াতের বিস্তার ঘটেছে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, ক্লিনিক, হাউজিংসহ নানান ক্ষেত্রে। ২০০৪ সালে ১৭ আগস্ট সারা দেশের ৬৪ জেলায় একসঙ্গে বোমা ফাটিয়ে জামায়াত তাদের শক্ত অবস্থানের কথা প্রথম প্রকাশ্যে ঘোষণা করে। দেশের অনেক বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এখন জামায়াত নেতারা। চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের একচ্ছত্র আধিপত্য। ঢাকায় বুয়েটেও তাদের অবস্থান দিন দিন শক্ত হচ্ছে। কুস্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের শক্ত ঘাঁটি গড়ে উঠেছে। এছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন যেমন ডাক্তার, প্রকৌশলী, উকিল, ব্যাংকার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ নানান ক্ষেত্রে জামায়াতের শক্ত অবস্থান দিন দিন আরো প্রসার লাভ করছে। ইসলামী ব্যাংক বিগত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বড় অফিসিয়াল স্পন্সর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। জামায়াতের স্বাস্থ্য সেবায় ইবনে সিনা ক্লিনিক সারা দেশে শাখা খুলেছে। ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স সারা দেশে বিস্তার লাভ করেছে। এছাড়া মাল্টি কর্পোরেট বিজিনেসের আওতায় নানান নামে জামায়াত এমএলএম ব্যবসা প্রসার করেছে সারা দেশে। পাশাপাশি সৌদি আরব সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশের মসজিদ ও মাদ্রাসা ভিত্তিক নানান কর্মসূচিতে নানাভাবে শিকড় গেড়েছে জামায়াত। জামায়াতের রয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, লিবিয়া, ইরাক থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি মুজাহিদ। এদের নের্তৃত্বে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে এবং পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে জামায়াতের রয়েছে গোপন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখানে তারা সামরিক ও অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ গ্রহন করে। জামায়াতের পরিবহণ ব্যবসা আছে, মেডিসিন ব্যবসা আছে, ব্যাংক ব্যবসা আছে, এছাড়া আছে দেশের নানান ক্ষেত্রে শক্ত অর্থনৈতিক অবস্থান। পাশাপাশি রাজনীতিতে তারা কেবল ভোটের হিসেবে দেশের চতুর্থ বৃহত্তম শক্তি। জামায়াতের এই বেপড়োয়াভাবে বিস্তার লাভের পেছনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সবচেয়ে বেশি দায়ী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জেনারেল জিয়া জামায়াতকে রাজনীতি করার অধিকার ফিরিয়ে দেন। জেনারেল এরশাদ জামায়াতকে সমর্থণ করে সংবিধান সংশোধন করে বাংলাদেশকে একটি ইসলামী রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। বেগম জিয়া জামায়াতকে মন্ত্রীসভায় স্থান দিয়ে জাতীয় পতাকার সঙ্গে বেঈমানী করেন। আর শেখ হাসিনা জামায়াতের ভোটের সুবিধা পাওয়ার জন্য জামায়াতের সঙ্গে এরশাদ পরবর্তী রাজনৈতিক মেরুকরণে ছায়া জোট গঠন করেন। বাংলাদেশের সকল বৃহত্তম রাজনৈতিক দলগুলোই জামায়াতকে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দান করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার যে কৌশল গ্রহন করেছিল, সেই সুযোগের শতভাগ সুবিধা আদায় করে আজ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে চিন্থিত হয়েছে। আজ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন কাউন্সিল পর্যন্ত সব জায়গায় জামায়াতের পদচারণা। আদালত থেকে হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাংক বীমা, জনপ্রশাসন থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বত্র জামায়াতের সরাসরি অনুপ্রবেশ রয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী'র শুধু এককভাবে সরকার গঠনের ইতিহাস সৃষ্টি করাটি বাকি আছে। বাকী সকল ক্ষেত্রে জামায়াত ধীরে ধীরে বেশ শক্তভাবেই শিকড় গেড়েছে। তাই জামায়াতের মত একটি জঙ্গি সংগঠনকে রাতারাতি বন্ধ করা যথেষ্ঠ ঝুঁকিবহুল। যদি দেশের বাকী সকল রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনগুলো একত্রে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করে, তাহলে জামায়াতে ইসলামীকে প্রতিরোধ করা ভবিষ্যতে আরো কঠিন হয়ে যাবে। দেশের সকল পক্ষকে একত্রে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে জামায়াতের ব্যাপারে। নইলে এই দানব রুখে দেওয়া সত্যি সত্যিই কষ্টকর। কারণ, বিশ্ব রাজনীতি'র টানাপোড়নে জামায়াত সুবিধাবাদী গোষ্ঠীগুলোর একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। সেই হাতিয়ারের বিরুদ্ধে একটা সমাবেশ করে, বা একটা নামমাত্র নিষিদ্ধ ঘোষণা দিয়ে, বা টেলিভিশনের টকশোতে গলাবাজী করে জামায়াতের মত একটি প্রশিক্ষিত রাজনৈতিক শক্তিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। আর রাষ্ট্রীয়ভাবে জামায়াতকে ঠিক কি হিসেবে দেখা হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা এবং সেই ঘোষণার যথাযথ বাস্তবায়ন সমন্বিতভাবে জাতীয় ঐক্য নিয়ে করতে না পারলে, জামায়াত দানব বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আর এই হুমকি আজ তৈরি হয়েছে আমাদের জাতীয় ঐক্যের অভাব, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি, জামায়াত প্রীতি, আর তলে তলে জামায়তের সকল সুবিধা বাস্তবায়নের পথ সুগম করার জন্যে। যা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় কলংকের চিন্থ। আফগানিস্তানে যেমন তালেবানরা মার্কিন প্রশাসনের সক্রিয় সহায়তায় ক্ষমতায় এসেছিল, মিশরে যেমন মার্কিন প্রশাসনের মদদে ও সহযোগিতায় ব্রাদারহুড ক্ষমতায় এসেছিল, তেমনি আগামীতে আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদের সরাসরি সহযোগিতায় যেমন- মার্কিন স্বার্থ, ভারতীয় স্বার্থ, চীনের স্বার্থ, পাকিস্তানের স্বার্থ, সৌদি আরবের স্বার্থ ইত্যাদি আন্তর্জাতিক স্বার্থের কুটকৌশলে জামায়াত যে বাংলাদেশে একদিন ক্ষমতায় আসবে না, সেই গ্যারান্টি তো নেই!!! আমাদের ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও স্বার্থের সুযোগ নিয়ে জামায়াতের মত একটি অপশক্তির দানবকে আমরাই ধীরে ধীরে এতো বড় করেছি। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে, বাংলাদেশের বাঙালি জাতিসত্ত্বা বাঁচাতে হলে, বাঙালি সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে, জামায়াতে বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই। যতোদিন আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিতে সময় ক্ষেপন করব ততোদিনে জামায়াত বাংলাদেশের অবশিষ্ট অঞ্চলগুলোতে আরো শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে সমর্থ হবে। গণতন্ত্র রক্ষার চেয়ে জামায়াতের হাত থেকে দেশ রক্ষার বিষয়টি এখন সবচেয়ে প্রধান ইস্যু হওয়া উচিত। সেখানে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হলে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না। ভোটের রাজনীতিতে কে ক্ষমতায় যাবে আর কে যাবে না, সেই দুষ্টু কুতর্ক করার সময় ভবিষ্যতে আরো পাওয়া যাবে। কিন্তু জামায়াতের বিরুদ্ধে দেশের সর্বস্তরের সকল মানুষ যতোক্ষণ না ঐক্যবদ্ধ না হচ্ছে, ততোক্ষণ সেই আশংকা থেকেই যাচ্ছে। মুরব্বী মীর মশাররফ হোসেন যথার্থই বলেছিলেন, স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা সবচেয়ে কঠিন কাজ। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হলেও সেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করার জন্য কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এখন। বিগত ৪২ বছরে কে কি ভুল করলো, কে ইতিহাস বিকৃত করলো, কে ইতিহাস নিজের মত লিখলো, কে কাকে সুবিধা দিল, কে কত অর্থ বিদেশে পাচার করলো, কে কত বড় দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, কে কত বড় লুটকারী-লুণ্ঠনকারী, কে কত বড় সম্পদের মালিক, কার ব্যাংক ব্যালেন্স কত এসব বিষয় পেছনে ফেলে এখনই আমাদের রাজনৈতিকভাবে জামায়াতের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যমতে পৌঁছানোর সময়। যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তোলার সত্যিই সদিচ্ছা আমাদের রাজনৈতিক নেতারা পোষণ করেন, তাহলে এখনই জাতীয় স্বার্থে এক কাতারে নাম লেখান। নইলে বাংলাদেশ যেভাবে স্বাধীনতা বিরোধীদের কাছে বিপন্ন হচ্ছে, সেখান থেকে আপনারা কেউ পালানোর সুযোগ পাবেন না। দেশের ১৬ কোটি মানুষ আপনাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আপনারা এখনই কিছু একটা করুন। নইলে মহাকালের ইতিহাসের কাঠগড়ায় একদিন আপনাদেরও দাঁড়াতে হবে।। সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪২
false
rg
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও রাজনীতি।। রেজা ঘটক চেতনা একটি আপেক্ষিক বিষয়। চেতনা থাকলে বা না থাকলে কারো কিচ্ছু যায় আসে না। সেই অর্থে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের চেতনা অনেক ভালো এবং শক্তিশালী। দেশের মানুষের চেতনা সক্রিয় না থাকলে তারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তো না। চেতনা না থাকলে তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াতো না। চেতনা না থাকলে তারা স্বৈরাচার এরশাদকে রুখে দিতো না। চেতনা না থাকলে তারা ১৫ ফেব্রুয়ারি' ৯৬-এ খালেদা জিয়ার নির্বাচনকে অবলিলায় মেনে নিতো। চেতনা না থাকলে ছাত্রলীগের কুকর্মের বিরুদ্ধে মানুষ কথা বলতো না। চেতনা না থাকলে ২০০১-এর নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় সংখ্যালঘু মানুষ এভাবে মার খেতো না। চেতনা না থাকলে মঈন-ফকরুদ্দিন ক্ষমতায় আসতো না। চেতনা না থাকলে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেতো না। চেতনা না থাকলে শাহবাগের গণ-জাগরণ মঞ্চের সৃস্টি হতো না। এমনি কি চেতনা না থাকলে হেফাজতে ইসলামের আমদানি হতো না। চেতনারা দুই ভাই। হাবলু আর কাবলু। হাবলু শুধু ভালো কাজের প্রেরণা জোগায়। আর কাবলু শুধু খারাপ কাজের ইন্ধন জোগায়। দুই ভাইয়ের সেই কর্মপদ্ধতি'র দুটোই চেতনার অংশ। মানুষের কাজ দুটোকেই গ্রহন করা। কেউ বুঝে গ্রহন করে। কেউ না বুঝে গ্রহন করে। গোলাম আজমও মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি চেতনায় বিশ্বাস করতেন। সেটি হল পাকিস্তান রক্ষার চেতনা। চেতনারা মরে না। চেতনা সদা জাগ্রত। চেতনা'র শক্তি বাতাসের মতো। কেউ না বললেও, কেউ প্রচার না করলেও, কেউ চেতনারে না খাওয়ালে চেতনারা বেঁচে থাকে মানুষের রক্তের শিরায় শিরায় ধমনিতে ধমনিতে। আইন ভাই, আপনি এখন বলতে পারেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানুষ কিভাবে মনে রেখেছে? মানুষের মনে রাখার দরকার হয় তখনই যখন এর প্রয়োজন হয়। আওয়ামী লীগের একমাত্র ভোটের সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দরকার হয়। চুরি চামারি লুটপাট দখল খুন গুম টেন্ডারবাজির সময় তাদের চেতনার ঘুমিয়ে থাকার নিয়ম। ঠিক বিএনপি'র বেলায় ভোটের সময় জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটা আংশিক ক্রেডিট প্রয়োজন হয়। বাকি সব দুর্নীতি, লুটপাট, ছিনতাই, দখল, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, ধর্মের দোহাই, সহ অন্যসব আকাম কুকাম করার সময় চেতনা তাদের ঘরে ঘুমিয়ে থাকে। একমাত্র সাধারণ মানুষের চেতনা ঘুমায় না। হরতালে তার রিক্সাটা ভেঙে দিয়ে আপনি কিসের চেতনা ফুটাবেন? গাড়িতে আগুন দিয়ে আপনি কোন চেতনা জাগাবেন? আপনার দরকার ভোট। সেটা গুজব রটিয়ে এই অশিক্ষিত জনতার মাঝখান থেকে অনায়াসে ভাগাতে পারবেন। আমজনতা শিক্ষিত হলে তো আপনার রাষ্ট্রের পয়সার বিদেশ সফরের হিসাব চাইবে। আমজনতা চেতনার প্রমাণ দিতে চাইলে তো আপনার মাসিক আয়ের হিসেব চাইবে। আমজনতা চেতনায় আবেগ আপ্লুত হলে তো আপনার বাথরুমের এসির খবর বেড়িয়ে আসবে। আমজনতা চেতনায় জাগ্রত হলে তো আপনার কুইক রেন্টালের পার্সেন্টেসের হিসাব ধরা পরবে। আমজনতা চেতনায় নিবিষ্ট হলে তো আপনাদের রাতের ডিনারে একই টেবিলে বিদেশী মদ খাওয়ার খবর বেড়িয়ে আসবে। আমজনতা চেতনায় শিক্ষিত হলে তো আপনার ছেলেমেয়েরা কোথায় পড়াশুনা করছে আর আমরা নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কি করছি, সেই গোপন রহস্য ফাঁস হয়ে যাবে। সো, চেতনাকে বুক পকেটে আটকে রাখার নিয়ম বাংলাদেশে। আওয়ামী লীগ আর বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সুযোগে ব্যবহার করে। সুযোগ না পড়লে বুক পকেটে বন্দি করে রাখে। চেতনা এদেশে বুক পকেটে নিয়ে ফেরি করার জিনিস। যখন দরকার হবে তখন বিক্রি হবে। চেতনা এখানে বিক্রি হয়। আমাদের রাজনীতি ব্যবসায় চেতনা ভারী মূল্যবান। খবরদার আইন ভাই, চেতনা নিয়ে কথা বললে, আপনাকে কিন্তু চেতনার কাঠগড়ায় দাঁড় হওয়া লাগতে পারে। সো, সাধু সাবধান।
false
rn
সুকন্যা এবং সুপারম্যান সুকন্যা এবং সুপারম্যান একটা ইংলীশ মিডিয়াম স্কুলে নার্সারী ভর্তি হয়েছে। স্কুলটি ছোট। ক্লাশ রুমের সংখ্যা সাতটা। তবে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মন্দ নয়। ক্লাশ শুরু হয় সকাল আট টায়। স্কুলের ড্রেস হচ্ছে- ছেলেদের খাকী হাফ প্যান্ট আর সাদা শার্ট সাথে টাই। মেয়েদের খাকী স্কার্ট আর সাদা শার্ট সাথে টাই। প্রথম দিন সুপারম্যান স্কুলে গিয়ে সুকন্যার পাশে গিয়ে বসে। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে ছেলেরা ডান পাশে আর মেয়েরা বসবে বাম পাশে। কিন্তু সুপারম্যান কোনো নিয়মের ধারধারে না। ক্লাশে প্রবেশ করেই সুপারম্যানের সুকন্যাকে ভালো লেগে যায়। সুকন্যা দেখতে অনেক সুন্দর। সুপারম্যানও কম না। সুপারম্যানের ভালো নাম- গুল্লু। গুল্লুর প্রিয় কার্টুন সুপারম্যান। তার স্কুল ব্যাগে সুপারম্যান আঁকা। গুল্লু নিজেকে সুপারম্যান মনে করে। কেউ তার নাম জিজ্ঞেস করলে- সে খুব ভাব নিয়ে বলে আমার নাম, সুপারম্যান। সে স্কুলের ভর্তি হবার এক বছর পর একটা কবিতা লিখেছে- কবিতা টা এই রকমঃ আমি সুপারম্যান হবো, আকাশে উড়বো সু্কন্যার ছাদে যাবো-সু্কন্যার সাথে খেলবো সুকন্যার বাবা-মা এলে আমি লাফিয়ে পালিয়ে যাবো, আমি সুপারম্যান হবো- রোজি মিসের মাথায় উপর থেকে পানি ঢেলে দিবো- আমি সুপারম্যান হবো আকাশের সব ঘুড়ি দাঁত দিয়ে কেটে দিবো- আমি সুপারম্যান হবো রফিক চাচার বাড়িতে উপর থেকে মুতে দিবো আমি সুপারম্যান হবো সন্ধ্যায় মিলি ম্যাডামের কাছে পড়তে যাবো না- সুপারম্যান হয়ে আকাশে ভেসে থাকব আমি সুপারম্যান হবো রাতে ঘুম না পেলে তারাদের সাথে মি্শব আমার ডায়েরীতে আমার কবিতা আমি আমার ইচ্ছা মতো লিখব- আমি সুপারম্যান হবো । প্রথম ক্লাশ শুরু হলো। টিচার সুপারম্যানের দিকে তাকিয়ে বললেন- তুমি এই মেয়ের পাশে বসেছো কেন? ছেলেরা এবং মেয়েরা আলাদা বসবে- এটাই এই স্কুলের নিয়ম। সুপারম্যান বলল, টিচার আমি কোনো নিয়মের ধারধারি না, আমার নাম সুপারম্যান। টিচার প্রচন্ড অবাক হয়ে সুপারম্যানের দিকে তাকিয়ে রইলেন। অংক ক্লাশে রোজী মিস সুপারম্যানকে বলল, বল তো পৃথিবীর আকার কী রকম? সুপারম্যান বলল, গোলাকার । রোজী মিস আবার প্রশ্ন করলেন, বেশ বেশ। এবার প্রমাণ দাও কী করে বুঝলে যে পৃথিবী গোল। সুপারম্যান এবার উত্তর দিতে পারল না। উত্তর দিয়ে দিল পাশে বসা সুকন্যা। সুপারম্যান খুবই লজ্জা পেল। ছুটির ঘন্টা বাজল। সুকন্যা চলে যাওয়ার সময়, সুপারম্যান ছোট্র একটা চিরকুট তার হাতে দিয়ে দেয়। সুকন্যা চিরকুটটি নিতে খুব লজ্জাবোধ করেছিল। সুপারম্যান বলল- বাসায় গিয়ে পড়বে। সেই চিরকুটে কি লেখা ছিল- আমি এখনও জানতে পারিনি। জানতে পারলে আপনাদের জানাব। স্কুল ছুটির পর সুকন্যা এবং সুপারম্যান যে যার বাসায় চলে গেল। সুপারম্যানের মন টা খারাপ হয়ে গেল। এতক্ষন সুকন্যার পাশে বসে থেকে নিজেকে নায়ক নায়ক মনে হচ্ছিল। নায়িকা সুকন্যা। সুপারম্যান অস্থিরবোধ করলো- সুকন্যার জন্য। পরের দিন সুপারম্যান সকাল সাত টায় স্কুলে এসে হাজির। সকালে নাস্তাও করে আসেনি। টিফিন নিয়ে আসতেও ভুলে গেছে। টাই পরেতেও ভুলে গেছে। ক্লাশ শুরু হলো। আজ প্রথম ক্লাশ হচ্ছে রিফাত ম্যাডামের। রিফাত ম্যাডাম ইংরেজী ক্লাশ নেন। ম্যাডাম সুপারম্যানকে বলল- একটা ছড়া শোনাও। সুপারম্যান বলল- আমার নিজের লেখাটা একটা ছড়া বলি। ম্যাডাম অবাক হয়ে বললেন, তুমি নিজে ছাড়া লিখেছো !! বাহ ! আচ্ছা, বলো। ছড়া শুনে রিফাত ম্যাডাম 'হা' করে তাকিয়ে থাকলেন। সুপারম্যানের লেখা ছড়াটা এই রকমঃ I am only Superman As you can see, I can laugh ha! ha! ha! I know so did you. Life is but a dream. How I wonder what you are! Come again another day. Never show your face again? Are you Sleepin? Morning bells are ringing, Can you tell? টিফিন টাইমে কেউ কেউ ক্লাশে বসে টিফিন খায় আবার কেউ কেউ দোতলার ছাদে চলে যায়। সুকন্যা টিফিন হাতে নিয়ে ছাদে যাওয়ার সময় দেখল সুপারম্যান মন খারাপ করে বসে আছে। সুকন্যা এগিয়ে গিয়ে বলল- টিফিন আনোনি ? আচ্ছা, এসো আজ আমার টিফিন দু'জন মিলে খেয়ে ফেলি। চলো, ছাদে যাই। সুকন্যা দাঁড়িয়ে টপ টপ করে সিড়ি দিয়ে ছাদে উঠে গেল। কিন্তু সুপারম্যান পারল না। সে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারে না। এই কাজটা করতে সে অনেক ভয় পায়, তাই বসে বসে পা লেছড়ে লেছড়ে ছাদে গেল। সুকন্যা উঠে গেল, সুপারম্যান অনেক সময় নিল। দুইজন মিলে মজা করে টিফিন খেল। আবার নামার সময় সুপারম্যান বসে বসে পা লেছড়ে নামল। সুকন্যা সুন্দরভাবে নামল। টিফিনের পরে দু'টা ক্লাস হয়, তারপর ছুটি। ছুটির সময় সুকন্যা সুপারম্যানকে বলল- তুমি যখন ছাদে যাওয়ার জন্য পা লেছড়ে লেছড়ে উঠছিল- তখন আমি তোমার নুনু দেখে ফেলেছি। এই কথা শুনে সুপারম্যানের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সে লজ্জায় লাল হয়ে গেল। বিকেল চারটায় খুব মন দিয়ে গুল্লু টিভিতে সুপারম্যান কার্টুন দেখছে। আজকের পর্ব টা খুব বেশী দারুন। আজকের পর্বের কাহিনীটা এই রকমঃ সুপারম্যান ক্রিপটন গ্রহে জন্মগ্রহন করে। সে সময় তার নাম ছিল কাল এল। ক্রিপটন ধ্বংস হবার আগ মুহুর্তে তার বাবা তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়। আমেরিকার ক্যানসাস শহরের এক কৃষক ও তা স্ত্রী তাকে খুঁজে পায়। সেখানে সে ক্লার্ক কেন্ট নামে শৃংখলার সাথে বড় হতে থাকে। ছোটবেল থেকেই তার নানা অতিমানবীয় ক্ষমতা দেখা যায় এবং বড় হবার সাথে সাথে সে এ ক্ষমতা দিয়ে মানুষের উপকার করতে থাকে। সুপারম্যান তার ব্যাপক সাফল্যের মাধ্যমে সুপারহিরো সিরিজের এক নতুন ধারা চালু করে। চরিত্রের পোশাকটি বিশেষভাবে স্বতন্ত্র্য: লাল, নীল ও হলুদের মিশ্রণে তৈরি পোশাকটি বুকে ‘S’ ফলকটি ধারণ করে আছে। শুক্র এবং শনিবার স্কুল বন্ধ থাকে। দু'টা দিন সুকন্যা কে না দেখে থাকতে হয়। যা সুপারম্যানের জন্য অনেক কষ্টকর। তার ইচ্ছা করে সারাক্ষন সুকন্যার সাথে থাকতে। প্রথম দিন দেখেই সে সুকন্যাকে ভালোবেসে ফেলেছে। অনেক স্বপ্ন দেখেছে সুকন্যাকে নিয়ে। সুপারম্যান বুঝতে পারে সুকন্যাও তাকে অনেক ভালোবাসে। সেদিন মিলি ম্যাডামের ক্লাশে সুপারম্যান হোমওয়াক করেনি। মিলি মিস অনেক রাগী। মিস সুপারম্যানকে বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। সুপারম্যানের কষ্ট দেখে সুকন্যা প্রায় কেঁদেই ফেলেছিল তারপর থেকে সুপারম্যান হোমওয়াক করতে আর ভুলেনি। সে কিছুতেই সুকন্যার চোখের পানি সহ্য করতে পারবে না। এই সুকন্যা পনের বছর পর সুপারম্যানের হাতে একটি চিঠি দেয়। চিঠিটা এই রকমঃ তোমাকে আমার মন্দ লাগে না একদম। বরং প্রতিদিন খুব খুব করে তোমার নেশায় মত্ত হই! শিক্ষকের চোখ রাঙানি তুচ্ছ করে আর বন্ধুদের ফিসফাস ভুলে খুউব যত্ন করে তোমার নীল শার্টের বোতাম লাগিয়ে দেই। তোমার চোখে চোখ রাখি হাত বুলিয়ে তোমাকে ছুঁয়ে দেই কতশতবার। আর । তোমাকে নিয়ে আমার এ যেন এক নতুন সংসার, খুনসুটিময় দিন ভাইবোন বন্ধু আরো কত জন! বিষন্নতার আঁধার কেটে এক একটি জোছনামাখা রাত। কখনোবা ছুটে যাওয়া আপনজনের অসুস্থতার খবর শুনে আর কখনোবা নতুন চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে ওঠা। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৪৫
false
ij
ডিরোজিও_ প্রথাবিরোধী এক অনন্য দ্রোহী। ডিরোজিও। পুরো নাম হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। ডিরোজিওর জন্ম কোলকাতার এক মিশ্র পর্তুগিজ পরিবারে হলেও নিজেকে আপাদমস্তক খাঁটি বাঙালিই ভাবতেন। সে কথা তাঁর লেখা একটি ইংরেজী কবিতায় ফুটে উঠেছে। My Country! In the days of Glory Past A beauteous halo circled round thy brow And worshipped as deity thou wast, Where is that Glory, where is that reverence now? আপনাদের মধ্যে যারা কোলকাতায় গিয়েছেন, তারা জানেন যে কোলকাতায় এনটালি নামে একটা জায়গা আছে। ডিরোজিওর জন্ম সেখানেই হয়েছিল ১০ এপ্রিল ১৮০৯ সালে। বাবার নাম ফ্রান্সিস ডিরোজিও। সে সময়টায় কোলকাতায় বাস করত ড্রুমন্ড নামে একজন স্কটিশ। তিনি ছিলেন দারুন প্রগতিশীল এক মানুষ। তাঁর সম্বন্ধে লোকে বলত, "a dour Scotsman, an exile and a 'notrious free thinker'" তিনি কোলকাতার ধর্মতলায় একটি স্কুল দিয়েছিলেন। স্কুলের নাম ছিল ধর্মতলা আকাদেমি স্কুল। সেখানেই ভর্তি হয়েছিল বালক ডিরোজিও। ড্রুমন্ড মুক্তচিন্তা ডিরোজিওর ভিতর ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। যাতে করে বালকের মন কুসংস্কারমুক্ত হয়ে ওঠে। ড্রুমন্ড বালককে পাঠ দিতেন ইতিহাস দর্শন ও ইংরেজী সাহিত্যে। ড্রুমন্ড-এর উৎসাহে বালক ডিরোজিও পড়ত ফরাসী বিপ্লব নিয়ে: The causes of the French Revolution are a subject of significant historical debate. France in 1789, although facing some economic ( especially taxation) difficulties and simplicities, was one of the richest and most powerful nations in Europe; further, the masses of most other European powers had less freedom and a higher chance of arbitrary punishment. পড়ত কবি রবার্ট বার্নসের কবিতা। I see amid the fields of Ayr A ploughman, who, in foul and fair, Sings at his task So clear, we know not if it is The laverock's song we hear, or his, Nor care to ask. ডিরোজিওর তখন চৌদ্দ বছর বয়েস। বাবার ব্যবসায় সাহায্য করার জন্য স্কুলের পড়া ছাড়তে হল। ডিরোজিও ভাগলপুর চলে যান। জায়গাটি বিহারে। সেখানে গঙ্গার রুপ দেখে বিস্মিত। কবিতা লিখতে শুরু করলেন। পরে সেসব কবিতা কিছু প্রকাশিত হয়েছিল। নানা বিষয়ে পড়াশোনা চলছিল। ইম্মানুয়েল কান্ট ছিলেন জার্মান দার্শনিক। তাঁর কড়া সমালোচনা করে নিবন্ধ লিখলেন। তখন ডিরোজিওর বয়স মাত্র ১৭। বছরের তরুণের লেখায় কোলকাতায় বুদ্ধিজীবি মহলে আলোরন উঠল। ১৮২৮। কবিতা ছাপতে কোলকাতায় এলেন ডিরোজিও। সেই সময় কোলকাতায় বাস করতেন ডেভিড হেয়ার নামে এক ঘড়ি ব্যবসায়ী। (বিস্তারিত দেখুন Click This Link) ঘড়ির ব্যবসা করে প্রভূত ধন অর্জন করেছিলেন হেয়ার। হেয়ারের বাড়ি ছিল স্কটল্যান্ডে। সেখানেই ফিরে যাওয়ার কথা। গেলেন না। কেননা, ততদিনে কোলকাতার মানুষের দুঃখদুর্দশা (যার অন্যতম কারণ ঔপনিবেশিক শাসন) দেখে মর্মাহত হয়েছিলেন হেয়ার। ঔপনিবেশিক শাসনে নিষ্পেষিত মানুষের জন্য কী করা যায় ভাবছিলেন। হেয়ার সম্ভবত ভেবেছিলেন, কোলকাতার মানুষ শিক্ষিত হলে কর্ম সংস্থান হবে। কাজেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা ভাবলেন হেয়ার। তখন ১৮১৭ সাল। হেয়ারের বয়স ৪২ বছর। তখন কোলকাতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাইড ইষ্ট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থাপনের কথাটা হেয়ার তাঁকে বোঝালেন। ফল হল। অতপর হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা। যার পিছনে হেয়ারের অবদান অসামান্য। ডিরোজিও শুনলেন-হিন্দু কলেজে পদ খালি আছে-আবেদন করলেন। তাঁকে নেওয়া হল। ঔপনিবেশিক বাংলার বাতাসে তখন পরিবর্তনের সুর। ডিরোজিও সে বাতাসের বিদ্রোহ আরও উশকে দিলেন। ১৮২৬। মে মাস। ১৭ বছর বয়েসে ডিরোজিও ইতিহাস ও ইংরেজী সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে হিন্দু কলেজে যোগ দিলেন। ব্যতিক্রমধর্মী পাঠদানের কারণে ছাত্ররা তাঁর প্রতি আকর্ষন বোধ করল। ছাত্রদের সঙ্গে খোলাখুলি মিশতেন ডিরোজিও। শ্রেণি কক্ষের বাইরেও যোগাযোগ রাখতেন। অনেকে ছাত্রই তাঁর বাড়ি যেতেন। সেখানে আড্ডা চলত। তখন বলছিলাম ডিরোজিও নিজেকে বাঙালি ভাবতেন। বাঙালিমাত্রেই আড্ড ভালোবাসে। আড্ডায় ডিরোজিও উদাত্ত কন্ঠে আবৃত্তি করতেন- Expanding like the petals of young flowers I watch the gentle opening of your minds… এভাবে জীবদ্দশাতেই কিংবদন্তীতে পরিনত হলেন ডিরোজিও। বিস্তর পড়াশোনা ছিল ডিরোজিওর। ছিলেন আপাদমস্তক যুক্তিবাদী। ছাত্রদের টমান পেইন পড়তে বলতেন; বিশেষ করে, “রাইটস অভ ম্যান।” ডিরোজিও নিজে নিরীশ্বরবাদী ছিলেন, খ্রিস্টানসুলভ আচরণ পরিত্যাগ করেছিলেন। ধর্মবিশ্বাসীদের প্রশ্ন করে করে বিব্রত করতেন। ছাত্রদেরও হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে তাই করতে বলতেন। চিন্তার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী অযৌক্তিক ধর্মীয় আচরণকে অবজ্ঞা করতেন। সেই সঙ্গে জ্ঞানতৃষ্ণা ছিল প্রবল। জ্ঞানের আলোয় যেন সমস্ত অন্ধকার কুসংস্কার ছাড়খার করে ফেলবেন! হিন্দু কলেজ ঘিরে ডিরোজিওর জ্ঞানচর্র্চা আলোরণ তুলেছিল তৎকালীন কোলকাতাকেন্দ্রীক বঙ্গীয় সমাজে। তাঁর ছাত্রদের বলা হত “ডিরোজিয়ানস”। নানা বিষয়ে ছাত্রদের নিয়ে বির্তক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন ডিরোজিও। ১৮২৮ সালে ডিরোজিও তাঁর ছাত্রদের নিয়ে “অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েসন” গড়ে তোলেন। লক্ষ্য-সাহিত্যচক্র ও বির্তক অনুষ্ঠান আয়োজন। “অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েসন”-এর তরফ থেকে “পার্থেনন” নামে একটি পত্রিকাও বের করে। সে পত্রিকায় কয়েকটি বিষয় নিয়ে লেখা হয়: ১) নারী স্বাধীনতা। (লক্ষ করুন) ২) ধর্মের অযৌক্তিকতা। ৩)ব্রিটিশ শাসনের কুফল। ডিরোজিওর ছাত্রদের মধ্যে কৃষ্ণমোহন ব্যানার্জী, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রামতনু লাহিড়ী, এবং রসিক কৃষ্ণ মল্লিক ছিলেন অন্যতম। এঁদের মধ্যে ডিরোজিওর উদারনৈতিক প্রভাব ছিল গভীর। রামতনু লাহিড়ী পৈতা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। তাঁর অনেক ছাত্রই যোগ দিয়েছিলেন ব্রাহ্মসমাজে। কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায় খ্রিস্টান হয়ে যান। প্যারি চাঁদ মিত্র নামে তাঁর এক ছাত্র ছিল । বাংলায় প্রথম উপন্যাস লেখার কৃতিত্ব এঁরই। ছাত্রদের সাংবাদিকতায় উৎসাহ দিতেন ডিরোজিও। কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায় ‘দি ইনকোয়ারার’ নামে ইংরেজী সাপ্তাহিক বার করলেন। দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় ও রসিক কৃষ্ণ মল্লিক বার করলেন বাংলা পত্রিকা ‘জ্ঞানান্বেষন।’ ২ ডিরোজিওর হিন্দু ধর্মাচারে কঠোর সমালোচনার ফলাফল তৎকালীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন বঙ্গীয় সমাজে হয়েছিল দুঃখজনক। ডিরোজিওকে হিন্দু কলেজ থেকে বহিস্কার করা হয়। তারপরও ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর। যা হোক। কলেরা রোগটি সে সময়টায় ছিল প্রায় অনিরাময়যোগ্য ও প্রাণঘাতি। কলেরায় আক্রান্ত হলেন ডিরোজিও। ২৬ ডিসেম্বর ১৮৩১। মাত্র ২২ বছর বয়েস মারা যান ডিরোজিও। তখন একবার বলেছি ডিরোজিও নিজে নিরীশ্বরবাদী ছিলেন, খ্রিস্টানসুলভ আচরণ পরিত্যাগ করেছিলেন। কোলকাতায় তখন খ্রিস্টানদের কবরখানা ছিল পার্কস্ট্রিটে। খ্রিস্টান পুরুতরা তাঁকে পার্কস্ট্রিটের কবরখানার ভিতরে সমাহিত করতে অস্বীকার করল। পরে তাঁরে গোর দেওয়া হলো পার্কস্ট্রিটের সিমেট্রির বাইরে রাস্তার ওপর। ৩ আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডিরোজিও নামটি আজও তাৎপর্যময়। যেহেতু উনিশ শতকের বাংলার রেঁনেসায় ডিরোজিওর অবদান ছিল গভীর। এবং যেহেতু আমরা একটি রেঁনেসার অপেক্ষায় রয়েছি। আমার সব সময়ই মনে হয়েছে, বাংলায় রেঁনেসা হলেও বাংলাদেশে আজও রেনেঁসা হয়নি। এবং সেই মানসিক বিপ্লবটি বাদ দিয়েই আমরা ব্যাপক পরিবর্তনের কথা ভাবছি। যা হোক। বাংলাদেশে রেঁনেসা হয়নি বলেই যে কারণে আজও স্বাধীন চিন্তার অধিকারী মানুষদের জন্য বাংলাদেশে এক বিপদজনক ও কঠিন স্থান। এখানকার ডিরোজিওদের (হুমায়ূন আজাদ) হত্যা করা হয় কিংবা এখানকার ডিরোজিওদের (আহমেদ ছফা) অবজ্ঞা করা হয়। বাংলাদেশে রেঁনেসা হয়নি বলেই আজও ধর্মীয় কুসংস্কারগ্রস্থ ইসলামিক টিভি এদেশে এত জনপ্রিয়, বাংলাদেশে আজও রেঁনেসা হয়নি বলেই হাজার হাজার তরুন সহজেই মওদুদীপন্থি হয়ে ওঠে; এবং বাংলাদেশে আজও রেঁনেসা হয়নি বলেই ছাত্রদলের লক্ষ লক্ষ কর্মীদের চিন্তাচেতনা আদিম ও অপরিচ্ছন্ন এবং বাংলাদেশে আজও রেঁনেসা হয়নি বলেই তসলিমা নাসরিনরা এদেশে জন্মেও নির্বাসনের দুঃখ ভোগ করেন। অপরদিকে উনিশ শতকে ডিরোজিওদের মুক্তিবুদ্ধির আন্দোলনের ফলে কোলকাতা আজও স্বাধীন চিন্তার পীঠস্থান বলে বিশ্বময় খ্যাত। এবং আমাদের মনে রাখতে হবে কোলকাতা সত্যজিৎ রায়ের শহর। ভালো হোক মন্দ হোক আজও কোলকাতাকেন্দ্রীক পশ্চিমবঙ্গে মার্কবাদীরা অধিষ্ঠিত- যেটি অনিবার্যভাবেই প্রগতিশীলতার চিহ্ণ। দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চার আন্দোলন শক্তিশালী ভিতের ওপর কখনোই দাঁড়াতে পারেনি। যে কারণে এদেশে ভাস্কর্য শিল্পের ওপর আজও সহজে আঘাত আসে, যে কারণে আজও এদেশে উগ্র ডানপন্থি দলের এত হা হা বিস্তার, তারা ক্ষমতা আসামাত্রই আরম্ভ হয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম পীড়ন, এরাই অবলীলঅয় উচ্চারণ করে 'উপজাতী'-র মতো ঘৃন্য শব্দ। উগ্র ডানপন্থি দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল। এদের সদস্যদের চিন্তাচেতনায় এত ব্যাপক অন্ধকার মধ্যযুগ; এরা জানে না যে উগ্র মুসলিম জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মেলাতে নেই, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত করতে নেই-এই সামান্য শিক্ষাটুকুও তাদের নেই। একুশ শতকে বেঁচে থেকেও এরা কেউই ভাবে না যে উনিশ শতকে যে সব প্রশ্ন হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছিল সেই একই প্রশ্ন ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধেও তোলা যায়! ৪ আজকাল আমরা যে বাংলাদেশের সমাজজীবনে ব্যাপক এক পরিবর্তনের কথা বলছি, সেটি প্রবল এক মানসিক বিপ্লব (রেঁনেসা) ব্যতীত সম্ভবপর নয়। কাজেই-হে ডিরোজিও ... তথ্যসূত্র: Click This Link http://banglapedia.search.com.bd/HT/D_0121.htm সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:২৩
false
fe
শান্তির প্রতিপক্ষ সামন্তবাদ শান্তির প্রতিপক্ষ সামন্তবাদ ফকির ইলিয়াস=========================================পুলিশের নির্মম অত্যাচারের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নয়। ‘পুলিশ ব্রুটালিটি’র বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে অনেকগুলো মানবাধিকার সংস্থা এখানে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি একজন কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান শন বেল হত্যাকা-কে ঘিরে আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। শন বেলকে তার বিয়ে অনুষ্ঠানের পূর্ব রাতে পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হতে হয়। নিউইয়র্কের জ্যামাইকার একটি নাইটক্লাবে বিবাহপূর্ব সর্বশেষ ব্যাচেলর পার্টির আয়োজন করেছিল শন বেল। গোয়েন্দা পুলিশ সেই ক্লাবে অবৈধ ড্রাগ বিক্রেতাদের খুঁজতে হানা দেয়।শন বেল এবং তার সহযোগীরা পুলিশের সঙ্গে অসহযোগিতা করে। এক পর্যায়ে তারা পুলিশের আদেশ অমান্য করে গাড়ির চাকা তুলে দিতে চায় পুলিশের ওপর দিয়ে। পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলি করে। তিনজন কর্তব্যরত গোয়েন্দা পুলিশ মোট পঞ্চাশ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। শন বেল ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। আহত হয় তার দুজন সঙ্গী।এই ঘটনার পর পুলিশের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গুলি করে হত্যার মামলা হয়। এক বছর মামলা চলার পর চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মাননীয় আদালত অভিযুক্ত তিনজন পুলিশকে বেকসুর খালাশ দেন। উল্লেখ্য, তিনজন পুলিশের দুজন কৃষ্ণাঙ্গ এবং একজন শ্বেতাঙ্গ।নিহত শন বেলের পরিবারের পক্ষ থেকে এই রায় না মেনে আপিলসহ আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেয়া হয়। এর নেতৃত্বে চলে আসেন কৃষ্ণাঙ্গ মানবাধিকার নেতা আল সাম্পর্টন। তারা নিউইয়র্ক নগরী অচল করে দেয়ার হুমকি দেয়। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিতে চাইলে পুলিশ, আল সাম্পর্টনসহ বেশ কজন গ্রেফতার করে। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।এই মামলাটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখছে। এটাকে ঘিরে যাতে কোনো সহিংস ঘটনা ঘটতে না পারে সে জন্য সতর্ক সরকারের প্রতিটি বিভাগ। নিউইয়র্কের প্রভাবশালী সিনেটর চার্লস শুমার এবং হিলারি ক্লিনটন দুজনেই বলেছেন যাতে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়Ñ সেদিকে লক্ষ্য রেখে কেন্দ্রীয় সরকারকে কাজ করতে হবে। আমরা জানি, সুবিচার প্রাপ্তি একজন নাগরিকের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রত্যাশা। কারণ আইনের শাসনই পারে একটি সমাজে প্রকৃত শান্তি দিতে।এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রখর মানবতাবাদী কবি মি. নর্মান রস্টানের একটি উদ্ধৃতি আমার সব সময় মনে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশ্বনন্দিত অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোকে নিয়ে একটি স্মৃতিগ্রন্থ সম্পাদনা করেছিলেন কবি নর্মান রস্টান। ‘মেরিলিন এমং ফ্রেন্ডস’ নামের বইটিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কবি-লেখকদের লেখা স্থান পেয়েছিল। একজন শিল্পীকে ভালোবেসে বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের লেখকরা যে শব্দাবলী রচনা করেছিলেন তা তিনি গ্রন্থিত করেছিলেন। কবি নর্মান রস্টানকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, মানবপ্রেম কি সীমান্ত মানে? তিনি সহাস্যে জবাব দিয়েছিলেন, ‘বিশ্বের শাসকশ্রেণী যদি রাষ্ট্রের সীমান্ত ঠিক রেখে হলেও প্রকৃত শান্তিকামী হতেন, তবে এ বিশ্বে হিংসা-বিদ্বেষ নব্বই শতাংশই নিঃশেষ হয়ে যেতো। আইন প্রণেতারা আইন প্রণয়ন করেন নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধাবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য।অবশ্য বিশ্বে আমরা এর বিপরীত চিত্রও দেখি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী নির্মমভাবে বোমা হামলার শিকার হয়ে নিহত হয়েছিলেন। তাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে নলিনী নামের একজন। এই নলিনীর সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে গিয়েছিলেন রাজীব কন্যা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। প্রিয়াঙ্কার মনে প্রশ্ন জেগেছে কেন এই নলিনী চক্র তার পিতাকে হত্যা করতে চেয়েছিল? না প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে নয়, নলিনীর মানসিক অবস্থা স্টাডি করার জন্য প্রিয়াঙ্কা দেখা করতে গিয়েছিলেন। এই বিশ্বে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণতাই এখনো প্রধান অশান্তির কারণ। সামন্তবাদীরা চাইছেন, ‘বিশ্ব’ তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে এক চুলও নড়বে না। আর সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষরা সংগ্রাম করছে নিরন্তর বেঁচে থাকার জন্য। তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোকে নিজের বাগে রাখার ইচ্ছা কিংবা চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে মজুদ শক্ত হাতে ধরে রাখা, দুটোই সামন্তবাদের দুই প্রকার। কোনো রাষ্ট্রে পুলিশ ব্রুটালিটির শিকার হলে অন্তত মামলা করা যায়; কিন্তু রাষ্ট্রীয় ব্রুটালিটির শিকার হলে তো দাঁড়াবার পথ থাকে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে আমরা এই ভাসমান সন্ত্রাস প্রতিদিন দেখছি। একজন কৃষ্ণাঙ্গ বংশোদ্ভূত বারাক ওবামা কোন দেশে গিয়ে কি কাপড় পরেছিলেন, পাসপোর্টে তার নাম কি, তিনি কোন চার্চে গিয়ে কিভাবে প্রার্থনা করেছিলেন, এসব নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়ানো হচ্ছে। আর এই হীন সামন্তবাদী মানসিকতাই শান্তির প্রতিপক্ষ হচ্ছে বার বার। --------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক ডেসটিনি । ২২ জুন ২০০৮ রোববার প্রকাশিত
false
fe
রাজনীতির ভারসাম্য ও রাষ্ট্রীয় নীতির প্রতি মানুষের ভরসা রাজনীতির ভারসাম্য ও রাষ্ট্রীয় নীতির প্রতি মানুষের ভরসা ফকির ইলিয়াস ======================================== প্রকারান্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যটি ক্রসফায়ারের পক্ষেই গেল। জাতিসংঘ অধিবেশনে এসে নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন তিনি। ক্রসফায়ার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, 'সন্ত্রাসী ধরতে গেলে যদি সন্ত্রাসীরা একশনে যায় তবে সরকারি বাহিনী কি বসে থাকবে? ওরা মারবে, আর সরকারি শান্তি রক্ষাকারী বাহিনী তো মার খেতে পারে না। মরতে পারে না। আমরা কি লিল্লাহতে ছেড়ে দেবো?' প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যটি টিভিতে প্রচারিত হয়েছে। দেশবাসী শুনেছে। দেখেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর ক্রসফায়ারের পালে বেশ হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশে। এ পর্যন্ত, নবম জাতীয় সংসদের সরকারের সময়ে কতজন ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছে তার সুষ্ঠু কোন পরিসংখ্যান নেই। 'ক্রসফায়ার' নিয়ে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে কম বিতর্ক হয়নি। এর প্রকৃত শানে নজুল এবং রহস্য কি, তা কারোরই অজানা নয়। যে ক'টি ক্রসফায়ার হয়েছে এবং হচ্ছে তার সবক'টির ধরন একই। শান্তি রক্ষাকারী বাহিনী শীর্ষ সন্ত্রাসীটিকে নিয়ে অস্ত্র খুঁজতে অথবা আরও সন্ত্রাসী ধরতে কোন স্থানে যায়। সেই স্থানে ওঁৎ পেতে থাকেন ওই শীর্ষ সন্ত্রাসীর দোসররা। ওরা গুলি করে। পাল্টা গুলি চালিয়ে শান্তি রক্ষাকারী বাহিনী। এই ক্রসফায়ারের বলি হয় সেই চিহ্নিত সন্ত্রাসীটি। মোটামুটি এটাই হচ্ছে ঘটনার ছক। 'ক্রসফায়ার' সম্পর্কে রাষ্ট্রের তৃণমূল পর্যায়ে একটি বদ্ধমূল ধারণা আছে। ধারণাটি হচ্ছে এই, রাষ্ট্রপক্ষ আইনি প্রক্রিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিচারের মুখোমুখি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর সেই ব্যর্থতা পুষিয়ে নিতেই এক ধরনের নীরব, বিচার-বর্জিত হত্যাকান্ডের প্রশ্রয় দিচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ। আগেই বলেছি, কেন ক্রসফায়ার নামক ব্যবস্থাটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতিতে নতুনভাবে আলোচিত হচ্ছে তা কারোরই অজানা নয়। চারদলীয় জোট সরকারই ক্রসফায়ারের করেছিল। আর বর্তমান সরকার এর পক্ষে কথা বলছে সরাসরি। একটি রাষ্ট্রে অপরাধী যত ক্ষমতাবানই হোক না কেন, রাষ্ট্রীয় আইনে তার বিচার হবে-সেটাই প্রত্যাশিত বিষয়। কিন্তু আমরা দেখছি, খুন, ধর্ষণ, বোমাবাজি প্রভৃতির মতো জঘন্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসীরা পার পেয়ে যাচ্ছে, জামিনে বেরিয়ে আসছে, মদদ পাচ্ছে দেশের কিছু রাজনীতিকেরও। বাংলাদেশে প্রচলিত আইন এবং বিচার বিভাগীয় দীর্ঘসূত্রতার কারণে এ রকম অনেক মারাত্মক অপরাধী বেরিয়ে যায় আইনের ফাঁকফোকরের মধ্যদিয়ে। তাদের আটকানো যায় না। কেন যায় না? এই ব্যর্থতাটি কাদের এবং কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা দরকার। দুই. বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা ভারসাম্য রক্ষার মহড়া আমরা সবসময়ই লক্ষ্য করা যায়। বড় বড় দলে, সরকারেও নেপথ্যে সবসময় এ রকম একটি প্রচেষ্টা থাকে। এর একটি অতি-সম্প্রতি উদাহরণ দেয়া যাক। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আবদুল জলিল, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে নানা ধরনের আপত্তিকর কথা বলেছেন সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে গিয়ে। তা ফলাও করে দেশে-বিদেশে প্রচারিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দলে তীব্র প্রতিক্রিয়াও হয়েছে। চাপের মুখে জলিল 'দুঃখিত' বলে একটি বিবৃতিও দিয়েছেন। ৩ অক্টোবর ২০০৯ শনিবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নতুন কার্যকরী কমিটির প্রথম যৌথসভা হলো। দেখা গেল, সে সভা আবদুল জলিলের বিরুদ্ধে কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আবদুল জলিলকে একজন 'মানসিক ভারসাম্যহীন' ব্যক্তি বলেই চালাতে চেয়েছেন। প্রশ্নটি হচ্ছে_ জলিল কি আসলে মানসিক ভারসাম্যহীন? যিনি শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে এমন নগ্ন আপত্তিকর কথা বললেন, তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলা হবে? না কি ষড়যন্ত্রকারী খোন্দকার মোশ্তাকের প্রেতাত্মা বলা হবে? দলে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মোহম্মদ মনসুর- এমন অনেক সিনিয়র নেতা আছেন যারা এমপিও হতে পারেননি। তারা তো দলের চেইন অফ কমান্ডকে এমন চ্যালেঞ্জ করছেন না। কিংবা করেননি। আবদুল জলিল এমন ধৃষ্টতা দেখাবার সাহস পেলেন কোথা থেকে? এ নিয়ে বিতর্ক যে শেষ হয়ে গিয়েছে তা কিন্তু নয়। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তাকে 'মানসিক ভারসাম্যহীন' বলার যুক্তি থেকে সরে গিয়ে এখন বলছেন, আবদুল জলিল নিজেই নিজেকে 'ভারসাম্যহীন' বলেছেন। একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি একটি রাষ্ট্রের সাংসদ হতে পারেন কি না, তাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে নানা মহলে। সব মিলিয়ে সরকার বেশ বিতর্কের মুখেই পড়েছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, তিনি ভারসাম্যহীন কি না তা আদালতই বলতে পারবে। কথা আসতে পারে তার ডাক্তারি পরীক্ষা বিষয়েও। কারণ মানসিকভাবে কেউ আক্রান্ত হয়ে কথা বললে, তার পক্ষে-বিপক্ষে ডাক্তারি তর্ক-বিতর্ক চলার রেওয়াজও রাজনৈতিকভাবে রয়েছে। এসব বিতর্ক যতই বাড়ছে, রাষ্ট্রনীতির প্রতি মানুষের ভরসা কমছে ততটাই। কারণ একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের ভেতরের দলীয় কোন্দলের কাহিনী শুনতে এই প্রজন্ম প্রস্তুত নয় মোটেও। সরকার রাষ্ট্রের মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারবে না, আর নিজেদের মাঝে কলহ করে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করবে তা কখনই প্রত্যাশিত নয়। রাষ্ট্রের মানুষ স্বপ্নের আলো চোখে নিয়ে একটি পরিবর্তন আশা করছে। প্রত্যাশা করছে, একটি নতুন অধ্যায়ের। যে অধ্যায়ের জমিনে শক্তিশালী হয়ে দাঁড়ানোর সাহস পাবে এই প্রজন্ম। আওয়ামী লীগের ক্ষমতাবঞ্চিত আর ক্ষমতাভোগীদের নিত্য কলহ দেখার জন্য তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাউকে দেয়নি। আজ আবদুল জলিল বলছেন। এই প্রথা বন্ধ না হলে কাল অন্যরাও নানা বিভ্রান্তি ছড়াতে সচেষ্ট হবে। অনেক দরকারি কাজ বাকি রেখে ক্ষমতাসীনদের এই কলহ মানুষকে ধৈর্যহারা করে তুলতে পারে। আর সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে সরকারের প্রতিপক্ষ। লেখাটি যখন শেষ করব ভাবছিলাম তখনই টিভি'র পর্দায় সংবাদ এলো সংসদীয় বাণিজ্যবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে আবদুল জলিলকে। নতুন সভাপতি হয়েছেন সাংসদ লুৎফুল হাই। এই ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত ছিল না। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের খুঁজে বের করা হবে। কারা এই ষড়যন্ত্রকারী? কেন ষড়যন্ত্র করছে? তা জানার অধিকার জনগণেরও রয়েছে। সরকারের ভেতরে এবং সরকারের বাইরে যারা রাষ্ট্র, মানুষ এবং সব মননশীলতায় বিরোধিতা করছে তাদের চিহ্নিত করা দরকার গণতন্ত্রের স্বার্থেই। আগেই বলেছি, একজন আবদুল জলিল কখনই একটি বৃহৎ দলের জন্য চ্যালেঞ্জের কারণ নয়- হতে পারেন না। এর নেপথ্যে যারা কলকাঠি নাড়েছে তাদের শিকড় খুঁজে না দেখলে সরকার আরও বিপন্ন হতে পারে। নিউইয়র্ক , ৭ অক্টোবর ২০০৯ ------------------------------------------------------------------ দৈনিক সংবাদ। ঢাকা। ৯ অক্টোবর ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- কাঝ ওয়াট সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:০৬
false
hm
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও বইমেলা রহস্য ঝাকানাকা বাদামের খোসা ভাঙতে ভাঙতে বললেন, "আপনি ঠিক জানেন তো? নাকি শুধুমুধু সাত টাকা খরচ করালেন আমাকে দিয়ে?" দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি বুক ঠুকে বললেন, "একেবারে ঘোড়ার মুখ থেকে খবর এনেছি স্যার! বদরু খাঁ এ মেলাতেই আছে।" ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে বললেন, "এই মেলায় কমসে কম হাজার পাঁচেক লোক আছে এখন। সন্দেহের তালিকাটা একটু বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে না?" এই বলে কচমচিয়ে বাদাম খান তিনি। কিংকু চৌ...[justify] ঝাকানাকা বাদামের খোসা ভাঙতে ভাঙতে বললেন, "আপনি ঠিক জানেন তো? নাকি শুধুমুধু সাত টাকা খরচ করালেন আমাকে দিয়ে?" দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি বুক ঠুকে বললেন, "একেবারে ঘোড়ার মুখ থেকে খবর এনেছি স্যার! বদরু খাঁ এ মেলাতেই আছে।" ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে বললেন, "এই মেলায় কমসে কম হাজার পাঁচেক লোক আছে এখন। সন্দেহের তালিকাটা একটু বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে না?" এই বলে কচমচিয়ে বাদাম খান তিনি। কিংকু চৌধারি সলজ্জ কণ্ঠে বলেন, "সেজন্যেই তো আপনাকে নিয়ে এলাম স্যার। জনা পাঁচেক হলে তো আমিই পারতাম। পঞ্চাশ জন হলেও সমস্যা হতো না। কিন্তু পাঁচ হাজারের ভেতর থেকে একজনকে বার করা আমার পক্ষে একটু মুশকিল।" ঝাকানাকা বলেন, "বটে? তা, পাঁচজন থাকলে আপনি কিভাবে কাজ করতেন? আপনার মোডুস অপেরান্ডি একটু শুনে দেখি?" কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার, আমার কর্মপদ্ধতি তো আপনার কাছ থেকেই শেখা! কষে প্যাঁদাতাম পাঁচটাকেই!" ঝাকানাকা বলেন, "তারপর?" কিংকু চৌধারি বলেন, "চারজন স্বীকার করে ফেলতো যে তারাই বদরু খাঁ, ছদ্মবেশে মেলায় এসেছে গা ঢাকা দেবার জন্যে। একজন স্বীকার করতো না। ওটাই হচ্ছে আমাদের আসল পাজি বদরু খাঁ!" ঝাকানাকা উদ্ভাসিত মুখে বলেন, "আপনার উন্নতি হচ্ছে আমার সাথে মিশে মিশে। ব্রাভো!" কিংকু চৌধারি লাজুক মুখে বাদাম ভাঙেন। ঝাকানাকা বলেন, "এই সাত টাকা কিন্তু আমি বিল করবো। টিকিটের দু'টাকা আর বাদামের পাঁচ টাকা।" কিংকু চৌধারি বললেন, "নিশ্চয়ই স্যার, নিশ্চয়ই! ... কিন্তু আমার খুব কৌতূহল হচ্ছে, এতো লোকের ভেতর থেকে বদমাশ বদরুকে কিভাবে ছেঁকে বার করবেন তা জানার জন্যে!" ঝাকানাকা বললেন, "আজ আপনিই কিছু গোয়েন্দাগিরি করুন না। আমি বরং আপনাকে সহযোগিতা করি।" কিংকু চৌধারি খুশি হয়ে বললেন, "ঠিকাছে স্যার! ... যতটা কঠিন ভাবছিলাম, ততটা কঠিন বোধহয় নয়! যেমন ধরুন, বদরু খাঁ ছয় ফুটের ওপরে লম্বা!" ঝাকানাকা বিরসমুখে বাদাম খেতে খেতে বললেন, "অ্যাতো অ্যাতোদিন ধরে বদরুর পেছনে ছুটে ছুটে এ-ই শিখলেন? জানেন না সে ছদ্মবেশে কত পাকা একটা বদমাশ? পাঁচফুট বা সাতফুট লম্বা কোন লোক বা মেয়েলোক সেজে থাকা তার জন্যে কোন ব্যাপারই না। চাইলে সে ল্যাম্পপোস্টের ছদ্মবেশও ধরে থাকতে পারে!" কিংকু চৌধারি একটু মিইয়ে যান। বলেন, "স্যার লবণ খাবেন?" ঝাকানাকা তপ্ত কণ্ঠে বলেন, "আপনার নুন খেলেও গুণ গাইতে পারবো না ...।" কিংকু চৌধারি বলেন, "না স্যার, বলছিলাম বাদামের সাথে লবণ খাবেন কি না।" ঝাকানাকা বলেন, "ওহ, আচ্ছা ... হুমম! আসুন তার আগে কিছু বই দেখা যাক। বইমেলায় এসে বই না দেখে বাদাম খাওয়া ঠিক না।" কিংকু চৌধারি প্রথম স্টল গুলবুলিস্তান প্রকাশনীতে হানা দ্যান, "আপনারাই তো বকর বিন আবু কাশেমের "বিকিনি নয়, বোরখা" উপন্যাসটি প্রকাশ করেছেন এবার?" স্টলদার ভদ্রলোক পান চিবাতে চিবাতে বলেন, "জ্বে। তবে এখন তো পাবেন না। অষ্টম মুদ্রণের কাম চলতে আছে, কাইলকে বিকালে একবার আইসেন।" ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে বললেন, "আপনি অ্যাতো কিছু জানেন কিভাবে?" কিংকু চৌধারি উদ্ভাসিত মুখে বলেন, "কী যে বলেন স্যার, সেই ছোটবেলা থেকে বকর বিন আবু কাশেমের পাৎলা পাৎলা বই পড়ে আসছি ...।" ঝাকানাকা সন্দিগ্ধ চোখে একবার দ্যাখেন শুধু কিংকু চৌধারিকে, কিছু বলেন না। কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার, যদি গোলাগুলি করতে হয়, তাহলে তো বিপদ। অ্যাতো অ্যাতো মানুষ মেলায় ...।" ঝাকানাকা ক্রুর হাসেন। বলেন, "তাকে একবার শনাক্ত করতে পারলে গোলাগুলি নিয়ে আর চিন্তা নেই। পিটিয়ে তক্তা করবো ব্যাটাকে, বন্দুক পিস্তল উঁচিয়ে ধরার আগেই!" কিংকু চৌধারি বলেন, "প্রত্যেকটা লোকের সাথে কথা বলে বাজিয়ে দেখা তো মুশকিল স্যার। বদরু খাঁকে আমরা ধরবো কিভাবে?" ঝাকানাকা মৃদু হাসেন, নিমীলিত নয়নে বাদাম চিবান কিছুক্ষণ। তারপর বলেন, "বদরু খাঁ বেশ ভালোমতোই জানে যে তাকে এখানে খোঁজ করা হবে। কাজেই হেঁজিপেঁজি কোন বইয়ের ক্রেতা সেজে বেরোতে গেলে তার ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। আমার ধারণা, সে এখানে লেখক বা লেখিকা সেজে কোথাও ঘাপটি মেরে আছে।" কিংকু চৌধারি একটু গুম মেরে গেলেন। বললেন, "স্যার, সন্দেহজনক লোকের লিস্ট তো খুব একটা ছোট হলো না। মেলায় কমসে কম শ'পাঁচেক লেখকলেখিকা আছেন এখন।" ঝাকানাকা হাসেন। বলেন, "নয়গুণ কাজ কমিয়ে দিলাম আপনার, তারপরও ঘ্যান ঘ্যান করছেন আমার সুন্দরী সেক্রেটারি মিস মিলির মতো। ওর সঙ্গে মিশে মিশে আপনার দারোগাপনা ক্রমশ কমে যাচ্ছে, খিটখিটে মহিলাদের মতো হয়ে উঠছেন আপনি।" কিংকু চৌধারির মুখটা একটু বিষন্ন হয়ে পড়ে। ঝাকানাকা বলেন, "আপনি কি লেখক আর ক্রেতার মধ্যে তফাৎ করতে পারেন?" কিংকু চৌধারি এবার একটু খুশি হন। খুশি খুশি মুখে বলেন, "তা পারি স্যার। লেখক থাকেন স্টলের ভেতরে, নিজের বইয়ে অটোগ্রাফ দিতে থাকেন। আর ক্রেতা স্টলের বাইরে দাঁড়িয়ে সেই বইয়ে অটোগ্রাফ নিতে থাকেন।" ঝাকানাকা মৃদু হাসেন। "হুমম! কিন্তু কিছু লেখক আছেন যারা সবসময় অটোগ্রাফ দেন না। তারা বাইরে কোথাও জটলা পাকিয়ে ভাব ধরেন আর বিড়ি পান করেন।" কিংকু চৌধারি বললেন, "আমরা দুই পদের লেখককেই বাজিয়ে দেখতে পারি স্যার। সন্দেহজনক মনে হলে তাদের গালে লাল কালি দিয়ে একটা ঢ্যাঁড়া কেটে চালান করে দিতে পারি। পরে থানায় নিয়ে গিয়ে আচ্ছা করে পেঁদিয়ে ...।" ঝাকানাকা হাসেন মুহাহাহাহা করে। বলেন, "আপনার এই আচরণ দেখলে বাকি লেখকরাই পেঁদিয়ে আপনার খাল তুলে দেবে। হুঁশিয়ার! বদরু খাঁকে চিহ্নিত করতে হবে একবারে, অনেকের থেকে তাকে পেঁদিয়ে বাছাই করার সুযোগ আপনি পাবেন না। আপনার আচরণে সন্দেহজনক কিছু থাকলে সে আবারও ঘাপটি মারবে, হয়তো মিশে যাবে বাকি সাড়ে চার হাজার ক্রেতার ভিড়ে। তখন অনুসন্ধানের কাজটা মাটি হবে। কাজেই হুঁশিয়ার!" কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে বললেন, "কিন্তু স্যার, আমাদের ছদ্মবেশও তো বেশ পাকা!" ঝাকানাকা বললেন, "হ্যাঁ! ভুলে যাবেন না, আপনি ফকিরুন্নেসা নুন কলেজের ছাত্রীর ইউনিফর্ম গায়ে দিয়ে ছুকরি সেজে হাঁটছেন। দারোগার আচরণ আপনাকে মানায় না। আপনাকে হতে হবে চপলা তন্বী, চকিতহরিণপ্রেক্ষণা, লীলালাস্যে এদিক ওদিক বই দেখে বেড়ান।" কিংকু চৌধারি বেজার হয়ে বললেন, "কিন্তু স্যার, আমার মতো ছয়ফুট লম্বা পালোয়ান লোকের গায়ে এই ইউনিফর্ম ঠিক মানাচ্ছে না। তন্বী সেজে থাকতে বেজায় কষ্ট হচ্ছে আমার। তাছাড়া আমার শরীর হচ্ছে স্যার যাকে বলে রোমশ। চপলা তন্বীদের কি স্যার আমার মতো গা ভর্তি লোম থাকে?" ঝাকানাকা গম্ভীর হয়ে বললেন, "তা তো জানি না। থাকতেও পারে। আপনি আপনার কার্ডিগানের হাতা না গোটালেই হবে।" কিংকু চৌধারি ঝাকানাকাকে আড়চোখে দেখে বললেন, "স্যার, আপনার ছদ্মবেশটাও কিন্তু ঐ যাকে বলে সন্দেহজনকই হয়েছে। আজকাল মহিলারা ঠিক এভাবে শাড়ি পরেন না।" ঝাকানাকা বাদাম চিবাতে চিবাতে বললেন, "আপনি জানলেন কিভাবে এতকিছু?" কিংকু চৌধারি লজ্জানম্র হাসি দেন একটা। বলেন, "মিস মিলির কাছ থেকে মাঝে মাঝে টুকটাক শিখেছি স্যার ... উনি এ ব্যাপারে বেশ নলেজ রাখেন দেখলাম ...!" ঝাকানাকা বললেন, "রাখাই উচিত, তিনি যেহেতু শাড়িটাড়ি পরেন। ইন ফ্যাক্ট, আমার শাড়িটার কুচি ঠিক করতে পারছিলাম না, সেটা মিস মিলিই কুচিয়ে দিয়েছে।" কিংকু চৌধারি বললেন, "কিন্তু ফুলহাতা ব্লাউজ তো আজকাল প্রায় কেউই পরেন না স্যার!" ঝাকানাকা বিরক্ত হয়ে বললেন, "আহ, শীতের দিনে একজন ভদ্রমহিলা ফুলহাতা ব্লাউজ পরতেই পারেন! অত ত্যানা প্যাঁচান ক্যানো!" কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে বলেন, "না মানে, বলছিলাম যে, আমরা কি জিন্স আর টি-শার্ট পরে আসতে পারতাম না?" ঝাকানাকা কটমটিয়ে তাকিয়ে থেকে বললেন, "মেয়েদের জিন্সের প্যান্ট আপনাকে ফিট করবে না, আমাকেও না। আর টি শার্ট পরলে আপনার লোমগুলির কী ব্যাখ্যা দেয়া যেতো?" কিংকু চৌধারি বলেন, "ওহহো, তাই তো! কিন্তু স্যার, আমরা কেন মেয়ে সাজলাম?" ঝাকানাকা বললেন, "লেখকদের একটু ইয়ে থাকে মেয়েদের ব্যাপারে। ওখানেই আসল লেখক আর নকল লেখকের ব্যাপারটা আলাদা করা যায়। খাঁটি লেখক আমাদের দেখলে একটু নখড়ামো করতে বাধ্য। কিন্তু বদরু খাঁ তা করবে না। ওখানেই ফস্কা গেরো, আর তার পরপরই বজ্রআঁটুনি!" কিংকু চৌধারি সন্দিগ্ধ কণ্ঠে বললেন, "কিন্তু স্যার, ছয়ফুট লম্বা ঘাড়ে-গর্দানে দুইজন মহিলাকে দেখেও কি লেখকরা অমন করবেন?" ঝাকানাকা মুচকি হেসে বললেন, "লেখকদের ব্যাপারে আপনার ধারণা দেখছি নিতান্তই নাবালকোচিত! আমার গোঁফটা না কামিয়ে আসলেও চলতো, বুঝলেন?" কিংকু চৌধারি বিড়বিড় করে বললেন, "কী ঘেন্না, কী ঘেন্না ...!" চলতে চলতে একটা স্টলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন ঝাকানাকা। স্টলের ভেতর এক সুদর্শন তরুণ লেখক ঘ্যাঁচঘ্যাঁচ করে বইয়ে সই করছেন। ঝাকানাকা বললেন, "এ ছোকরাকে তো লেখক পাড়ায় আগে দেখিনি কখনো! দেখুন তো ভালো করে, বদরুর মতো মনে হয় কি না?" কিংকু চৌধারি বললেন, "না স্যার, ইনি নবীন ঔপন্যাসিক অমিত আহমেদ, এবারই প্রথম উপন্যাস বেরিয়েছে, গন্দম!" ঝাকানাকা বললেন, "অ্যাক্ট ন্যাচারালি। যান, ওর একটা বই কিনে সই নিয়ে আসুন।" কিংকু চৌধারি যথাসম্ভব লীলালাস্যে এগিয়ে গিয়ে একটা বই কিনে বাড়িয়ে ধরলেন অমিত আহমেদের দিকে। "অটোগ্রাফ প্লিজ!" ছয়ফুট লম্বা "ফকিরুন্নেসা নুনের ছাত্রী"র বাজখাঁই এই অনুরোধ শুনে অমিত আহমেদ ঘাবড়ে গেলেন, কাঁপা কাঁপা হাতে বইটা নিয়ে বললেন, "কী নাম লিখবো?" কিংকু চৌধারি বললেন, "ইয়ে, লিখুন, মিলির জন্যে!" অমিত আহমেদ সই করে দিলেন। কিংকু চৌধারি বই নিয়ে ফিরে আসার পর ঝাকানাকা বললেন, "বটে? গন্দম নিয়ে যাচ্ছেন মিস মিলির জন্যে?" কিংকু চৌধারি বলেন, "কী করবো স্যার, মেয়ের নাম আর মাথায় আসছিলো না!" ঝাকানাকা গম্ভীর গলায় শুধু বললেন, "হুমম!" কিছুদূর এগোতেই একটা ফাঁকা জায়গা, সেখানে অনেকগুলি টিভি ক্যামেরা জটলা করছে, মাঝে ছোটখাটো মোটাসোটা এক গুঁফো ভদ্রলোক, মাইক হাতে অমায়িকমুখে বলছেন, "এখন যাঁর সাথে কথা বলবো, তিনি লেখেন সচলায়তন নামের এক অলীক স্থানে, যেখানে অনেক প্রতিশ্রুতিশীল লেখকদের সমাগম ঘটে প্রতিনিয়ত ... কথা বলছি আরিফ জেবতিকের সাথে।" স্বাস্থ্যবান ভুঁড়িওয়ালা এক যুবক সহাস্যে কথা বলতে থাকেন গুঁফো ভদ্রলোকের সাথে। কিংকু চৌধারি ফিসফিস করে বলেন, "ব্যাটার গোঁফটা দেখেছেন? উচ্চতা কমিয়ে এনেছে ফুটখানেক, কিন্তু গোঁফটা ছাঁটতে ভুলে গেছে তাড়াহুড়োয়!" ঝাকানাকা গম্ভীর হয়ে বললেন, "উনি লুৎফর রহমান রিটন! আপনি দেখছি লেখকপাড়ায় খুব একটা যাতায়াত করেন না! আমার তো বরং সাথের ঐ বিটকেলটাকে সন্দেহ হচ্ছে!" কিংকু চৌধারি বললেন, "কে, আরিফ জেবতিক? না স্যার, উনিও নামকরা ঔপন্যাসিক! এ বছর বেরিয়েছে "তাকে ডেকেছিলো ধূলিমাখা চাঁদ!" সচলায়তনে নিয়মিত লেখেন।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! ঐ বিটকেল ওয়েবসাইটটায়? শালারা কতদিন ধরে আমাকে লটকে রেখেছে, অ্যাক্টিভেট করার নামগন্ধ নেই! সেদিন একটা ছড়া লিখলাম, সেটা প্রথম পাতায় প্রকাশ করলোই না!" কিংকর্তব্যবিমূঢ় বললেন, "স্যার, চলেন আমরা মেয়ে সেজে সচলায়তনে ঢুকি! মেয়ে দেখলে ব্যাটাদের চিত্ত চুলবুল করতে পারে, তখন আমাদের অ্যাকাউন্ট সচল হয়ে যাবে!" ঝাকানাকা বিমর্ষ গলায় বললেন, "আরে মেয়ে সেজেই তো চেষ্টা করেছিলাম, লাভ হয়নি!" কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে চুপ করে গেলেন। আমলকি প্রকাশনীতে ঢুকে কিছুক্ষণ ছড়ার বই আর হরতুকি প্রকাশনালয়ে ঢুকে কিছুক্ষণ ছবির বই ঘেঁটেঘুঁটে আবার মেলার পথে নামলেন দু'জন। ঝাকানাকা বললেন, "কবিদের আড্ডায় একটু যেতে হবে। ওখানে ঘাপটি মেরে থাকা সহজ। একটু টালটক্কর কথাবার্তা বলে কবি সেজে বসে পড়া যায়।" কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, শুনেছি কবিদের গায়ে বোঁটকা গন্ধ হয়। বদরু খাঁ কি ছদ্মবেশের সাথে ছদ্মগন্ধও ধারণ করতে পারে?" ঝাকানাকা বললেন, "গন্ধ কোন ব্যাপার নয়। সুগন্ধী স্প্রে যখন পাওয়া যায়, দুর্গন্ধী স্প্রেও পাওয়া যাবে। নাক নয়, চোখ আর কানকে কাজে লাগান।" কবিদের জটলার কাছে যেতেই তাদের মধ্যে একটা চিত্তচাঞ্চল্য ঘটে। জনৈক ফ্রেঞ্চকাট আর লুঙ্গির ওপর টিশার্ট পরা কবি অস্ফূটে বলে ওঠেন, "নারী!" একটা কলরব ওঠে, "নারী, নারী!" ঝাকানাকা থমকে দাঁড়ান। "বেশি কাছে যাওয়া যাবে না, এগুলো মনে হচ্ছে সত্যিকারের কবি। দেখুন তো ঠাহর করে, চেনা যায় কি না?" কিংকু চৌধারি বললেন, "তা যায় স্যার। এরা সব বৃদ্ধ শাইসু আর তার চ্যালাচামুন্ডা!" ঝাকানাকা বলেন, "হুমম! অন্য কবিদের জটলা চেক করে দেখতে হবে।" কিংকু চৌধারি বললেন, "চলুন স্যার ওখানটায় যাই।" এরপর ঘন্টাখানেক ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন কবিদের আড্ডা পর্যবেক্ষণ করতে করতে দুই গোয়েন্দা ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। এক জটলায় মাহমুদ খাদি সবাইকে চা-ডালপুরি খাইয়ে উদাত্ত কণ্ঠে আবৃত্তি করছেন শৈশবের স্বরচিত কবিতা, অন্য কোণায় কবি রাসেল ডটডটডট মৃদু কণ্ঠে কবি বৃদ্ধ শাইসুর কবিতার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছেন, আরেক জটলায় মহিলা কবি ধনুপমা ভৈরবী ফিতা কেটে উদ্বোধন করছেন কবিতার বই "পিয়াল তরুর কোলে", আরেক কোণায় কবি হলুদ ঘোগ হাসিমুখে সবুজ ঘুড়া আর নীল ডাগদারের গল্প শোনাচ্ছেন এক ছিপছিপে বিশালবক্ষা তরুণীকে, তো আরেক প্রান্তে পুরনো দিনের বাঘা বাঘা কবিরা স্মৃতিচারণ করছেন পুরনো বইমেলার কথা। আর চতুর্দিকে বনবন পনপন করে ঘুরছে টেলিভিশন ক্যামেরা আর রেডিওর মাইক্রোফোন। হঠাৎ এক বিদঘুটে চেহারারা লোক এসে ঝাকানাকার পথরোধ করে দাঁড়ালো। "চ্যানেল হাটিকুমরুল থেকে আমি শাহনেওয়াজ মন্টু, বইমেলা থেকে সরাসরি রিপোর্ট করছি। এক্সকিউজ মি আপা, আপনি কী কিনলেন?" ঝাকানাকা গম্ভীর হয়ে বললেন, "আমি আমার বাচ্চার জন্য একটা ছড়ার বই খুঁজছি, কিন্তু পাচ্ছি না। এই বইমেলায় শুধু দুষ্টু দুষ্টু বড়দের কবিতার বই বেরিয়েছে, ছোট্টমণিদের জন্যে কিছু বেরোয়নি, জানেন?" শাহনেওয়াজ মন্টু বললেন, "একজন দর্শক আমাদের জানিয়েছেন এই বইমেলায় ছোট্টমণিদের জন্য কিচ্ছু বেরোয়নি! ... এবার কথা বলছি আপনার সাথে ... আপনার হাতে ওটি কার বই?" কিংকু চৌধারি মিহি গলায় বলেন, "অমিত আহমেদের গন্দম!" শাহনেওয়াজ মন্টু বললেন, "আমরা দেখতে পাচ্ছি তরুণীদের মধ্যে গন্দম ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশ বেড়েই চলছে, নিশ্চয়ই ডাল মে কুছ কালা হায়! চ্যানেল হাটিকুমরুল থেকে শাহনেওয়াজ মন্টু, বইমেলা, ঢাকা!" এই বলে সে মাইক বন্ধ করে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় আরেকদিকে, পেছনে ক্যামেরা হাতে তাড়া করে একজন। ঝাকানাকা বললেন, "খুব সাবধান! আরো এক চক্কর মারতে হবে।" কিংকু চৌধারি বললেন, "চলুন স্যার!" কিছুদূর এগিয়ে যেতেই ঝাকানাকা থমকে গেলেন। "দেখুন!" কিংকু চৌধারি বললেন, "কে স্যার? ... ওহ, উনি? লেখক মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী।" ঝাকানাকা বললেন, "সাপ্তাহিক কচুবনের সাহিত্য পাতার মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী?" কিংকু চৌধারি স্মিত মুখে বললেন, "স্যার, কচুবন বহুদিন হলো দৈনিক হয়ে গেছে। আগে সাপ্তাহিক ছিলো স্যার। ঐ যে, ঠ্যালার পর ঠ্যালা বের হতো আগে ... মজার মজার চুটকি থাকতো, হেঁ হেঁ হেঁ ...।" ঝাকানাকা গম্ভীর গলায় বললেন, "কিন্তু মেঘদুধের সাথে ওটা কে?" মেঘদুধ মুর্শিদাবাদীর পাশে এক মাঝারি উচ্চতার কুর্তাপরা ভদ্রলোককে দেখা যায়, তাঁর হাতে আবার একটি কলম। কিংকু চৌধারি বললেন, "হবে স্যার, কোন হোমড়াচোমড়া কবিসাহিত্যিক!" ঝাকানাকা বললেন, "খেয়াল করে দেখুন, মেঘদুধ ওনার জুতোর ফিতা বেঁধে দিচ্ছে।" কিংকু চৌধারি বললেন, "তা দিতে পারে স্যার। বড় কবিসাহিত্যিকদের ফাইফরমাশ খাটা মেঘদুধ সাহেবের একটা হবি বলতে পারেন। লেখক হতে গেলে এগুলো একটু আধটু নাকি করতে হয়, উনি বলেন।" ঝাকানাকা বললেন, "করুক গিয়ে। কিন্তু অত হোমড়াচোমড়াই যদি হবে, তাহলে সঙ্গের লোকটাকে আমরা চিনি না কেন? অচেনা লোকের ফরমায়েশ কি মেঘদুধ খাটে?" কিংকু চৌধারি চমকে উঠে বললেন, "তাই তো!" ঝাকানাকা এক মূহুর্ত দেরি করেন না। চোখের পলকে শাড়ি হাঁটুর ওপর তুলে তীব্রবেগে ঝাঁপিয়ে পড়েন সেই কুর্তাপরা ভদ্রলোকের ওপর। আর শুরু হয় এক অশৈলী কান্ড! মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী এক পাশে সরে গিয়ে বক্তৃতা দেয়া শুরু করে, "দেখুন গুন্ডাদের কান্ড! তারা আক্রমণ করেছে বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় লেখক মুখতারুজ্জামান জুলিয়াসের ওপর! এরা সন্ত্রাসী, জাতির শত্রু। এদের চিনে রাখুন।" ওদিকে মুখতারুজ্জামান জুলিয়াসের ছদ্মবেশ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে ঝাড়া সাড়ে ছয়ফুট লম্বা এক মুশকো দৈত্য, যার শরীরে টগবগ করছে পেশী। এক হুঙ্কার ছেড়ে সে বলে, "তবে রে!" ঝাকানাকাও শাড়িপেটিকোটব্লাউজ ছুঁড়ে ফেলে হুঙ্কার দিয়ে বলেন, "তবে রে!" শুরু হয় এক ভীষণ হুটোপুটি। বইমেলার মাটি কেঁপে কেঁপে ওঠে তার তান্ডবে। মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলে। কিন্তু বেশিক্ষণ লড়াই চলে না। ঝাকানাকা বদরু খাঁ-র পেটে এক ভীষণ কনুইয়ের গুঁতো বসিয়ে দ্যান কর্সিকার মাফিয়াদের কাছে শেখা কায়দায়, আর বদরু খাঁ ঝাকানাকার ঘাড়ে কষায় এক ভীষণ কায়দার রদ্দা, যা কি না একমাত্র হনলুলুর এক গোপন মারকুটে সম্প্রদায়ই শুধু মারতে জানে। আর তার পরপরই সে উল্কার মতো ছুটে হারিয়ে যায় বইমেলার বাইরের আঁধারে। ঝাকানাকা টলতে টলতে উঠে দাঁড়ান। "শালা, ফস্কে গেলো ...!" মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী চেঁচাতে থাকে, "দেখুন, গুন্ডাদের কান্ড দেখুন। এরা হামলা করে মুখতারুজ্জামান জুলিয়াসের ওপর, দেখুন!" কিংকু চৌধারি গিয়ে কড়া গলায় ধমক দ্যান, "ইস্টুপিট, মুখতারুজ্জামান জুলিয়াস এগারো বছর আগে মারা গেছেন!" মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী চমকে ওঠে। "কিন্তু উনি যে বললেন ঐটা সাংবাদিকদের ষড়যন্ত্র ছিলো, উনি মরেন নাই!" ঝাকানাকা দাঁত কিড়মিড় করে বলেন, "মূর্খ!" কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার, ব্যথা পেয়েছেন?" ঝাকানাকা বলেন, "আহ্লাদ পরে হবে, চলুন সরে পড়ি, ঐ দেখুন ক্যামেরা হাতে দৌড়ে আসছে সব! আন্ডারওয়্যার পরে সাক্ষাৎকার দেয়ার বড়ো হ্যাপা!" (সমাপ্ত) . . . গোয়েন্দা ঝাকানাকা! | Promote Your Page Too
false
rn
রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই-৯৮ রবীন্দ্রনাথের পরে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তারপরে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়–এদের কথা চলে আসে।রবীন্দ্র পরবর্তীকালে বাংলা ছোটগল্পের বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। প্রথমত পরিবর্তন এসেছে কাহিনী বা পটভূমির দিক দিয়ে। অধিকাংশ রবীন্দ্র ছোটগল্পের পটভূমি ছিল গ্রাম। গ্রামই ছিল তাঁর গল্পের প্রাণ। গ্রামের সৌন্দর্য ও গ্রামীণ জীবন তাঁর মত করে আর কেউ বর্ণনা করতে পারেনি। পরবর্তী কালের গল্পকারদের ক্ষেত্রে শহরকে পটভূমি করেই গল্প লেখার প্রবণতাটা বেশি দেখা গেছে। আরেকটা পরিবর্তন এসেছে গল্প বলার ধরনে।তিনি কিন্তু খুব বড় পরিসরে গল্প লেখেননি। তাঁর গল্পের পাত্র-পাত্রীরা সবাই খুব সাধারণ। রবীন্দ্রনাথ নিজেই তাঁর ছোটগল্পের একটা সংজ্ঞা দিয়েছিলেন যে, ছোট ছোট দুঃখকথা থাকবে, নিতান্তই সহজ-সরল হবে অর্থাৎ খুব বেশি বাগাড়ম্বর থাকবে না, আর শৈলীর নামে শৈলী নির্ভরতাটা থাকবে না। ছোটগল্পের ভুবনটা হবে এরকম যে একটা আখ্যান থাকবে এবং যে ভাষাটি ব্যবহৃত হবে সেটি হবে জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটা ভাষা, যেটি পণ্ডিতি বা পোশাকি ভাষা নয়, যে ভাষাটি মানুষ দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে আর সবচেয়ে বড় জিনিস–যেটা তিনি বলেছিলেন—যে, ছোটগল্পের অভিঘাতটা হবে যে, শেষ হইয়াও হইল না শেষ। এটা রবীন্দ্রনাথের চমৎকার একটা অভিঘাত যে, তিনি বলে যাচ্ছেন আর আমরা গল্পটা পড়ছি এবং একবার পড়ার পর মনে হয় যেন আবার পড়ি! রবীন্দ্রনাথ যখন গল্প লিখতে শুরু করেন তখন বিশ্বসাহিত্যের ছোটগল্পের দিকপাল লেখকরা হচ্ছেন সমরসেট মম, অ্যাডগার অ্যালান পো, মোঁপাশা, ও হেনরি প্রমুখ। লক্ষ করি এইসব বিশ্বখ্যাত লেখকদের ছোটগল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ‘সারপ্রাইজ’। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ গল্প লিখতে গিয়ে সে পথে হাঁটেননি। যদিও তাঁর গল্পে সারপ্রাইজ আছে তবে ‘সারপ্রাইজ ইলিমেন্ট’ তার গল্পের প্রধান শক্তি নয়। অপ্রত্যাশিত চমক দিয়ে সাধারণত তাঁর গল্প শেষ হয় না বরং গল্প শেষে পাঠকের জন্য একটা বিশেষ থিমের উসকানি থাকে। রবীন্দ্রনাথ এর জমিদারি ছিল কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। এক প্রজা ৮ বছর খাজনা দিতে না পারায় খুবই চিন্তিত ছিল। অবশেষে সে একটি “চিতল মাছ” রবীন্দ্রনাথ কে উপহার দেয় এবং এই চিতল মাছে পেয়ে রবীন্দ্রনাথ এত খুশী হন যে তার ৮ বছরের খাজনা মাপ করে দেন। ঘর ছেড়ে কতটা বাহির দেখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর? গানে তো বলেছেন, ‘আমি চঞ্চল হে, আমি সুদূরের পিয়াসী। জীবন মিলিয়ে দেখলে ভেবে অবাক হতে হয় তার পরিভ্রমণের দীর্ঘ তালিকা দেখে। কতটা ভ্রমণপিপাসু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ? জীবনরেখা যখন সত্তর পেরিয়ে গেছে তখনও রবীন্দ্রনাথ পৌঁছে গেছেন পারস্যে। মৃণালিনী দেবীর কাছে এক পত্রে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘মানুষের আত্মার চেয়ে সুন্দর আর কিছুই নেই,যখনই তাকে খুব কাছে নিয়ে এসে দেখা যায়, যখনই তার সাথে প্রত্যক্ষ মুখোমুখি পরিচয় হয় তখনই যথার্থ ভালোবাসার প্রথম সূত্রপাত হয়। তখন কোন মোহ থাকে না। কেউ কাউকে দেবতা বলে মনে করবার দরকার হয় না। মিলনে ও বিরহে মত্ততার ঝড় বয়ে যায় না কিন্তু দূরে নিকটে সম্পদে বিপদে অভাবে এবং ঐশ্বর্যে একটি নিঃসংশয় নির্ভরের সহজ আনন্দের নির্মল আলোক পরিব্যপ্ত হয়ে থাকে।’ রবীন্দ্রনাথ সর্বাধিক চিঠি লিখেছেন নির্মলকুমারী মহলানবিশকে। ১৯২৫ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত চিঠি লিখেছিলেন প্রায় ৫শ’। এই চিঠিগুলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য সৃষ্টির এক অসামান্য নিদর্শন। ব্যক্তি এখানে তুচ্ছ বা গৌণ – সৃষ্টিকর্মই উজ্জ্বল এখানে। নির্মলকুমারীকে লেখা চিঠি থেকে ৬৪ টি চিঠি নিয়ে সংকলিত হয়েছে। ‘পথে ও পথের প্রান্তে’ বই। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৩৮ সালে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “তাঁর চিঠি হল ভিড়ের আড়ালে অন্তরঙ্গ মানুষের সঙ্গে আলাপ প্রতিলাপ তা সর্বসাধারণের সাহিত্য দরবারে উপস্থাপিত করবার নয়”। রবীন্দ্রনাথের চিঠিতে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ ও পারিবারিক প্রসঙ্গ, দেশ-বিদেশের ভ্রমণ প্রসঙ্গ ছাড়াও পাওয়া যায় ঈশ্বর প্রসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক ভাবনা। আছে তাঁর কাব্য, কবিতা, গল্প, উপন্যাস রচনার কথা। আছে নিজের আঁকা ছবির কথা, নববর্ষের কথা, ধর্মচিন্তার বিষয়, জমিদারীর কথা, জন্মদিনের কথা, নারী প্রসঙ্গ ও স্ত্রী স্বাধীনতার কথা, পল্লী উন্নয়ন প্রসঙ্গ, পল্লী বাংলার কথা, সাময়িক পত্র-পত্রিকা ও তিনি যে সব বই পড়েছেন তার কথা, সমকালীন কবি-সাহিত্যিকদের কথা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য সমালোচনার কথা, বিশ্বভারতীর কথা, শান্তিনিকেতনের উৎসব অনুষ্ঠানের কথা, মানবধর্মের কথা, কবি কালিদাসের কথা, রাজনীতির-সমাজনীতির কথা, শিক্ষা ও পঠন পাঠনের কথা, ইংরেজ কবিদের কথা, সংগীত প্রসঙ্গ, শিলাইদহের প্রসঙ্গ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা কথা, ৭ই পৌষের কথা ও রামায়ন মাহাভারতের কথা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিঠি পেতেও ভালবাসতেন লিখেতে ভালবাসতেন। এখানে উল্লেখ করতে হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম বই একগুচ্ছ পত্র সমষ্টি। বইটির নাম ‘য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র’। অপর দু’টি ‘জাভা যাত্রীর পত্র’ ও ‘রাশিয়ার চিঠি’। এছাড়া তার বিখ্যাত বই ‘ছিন্নপত্র’। অন্য বইটির নাম ‘চিঠিপত্র’। এই শেষের ‘চিঠিপত্র’ বইটি ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ‘বালক’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকশিত হয়েছিল। ১৮৮১ খৃষ্টাব্দে (১২৮৮ বঙ্গাব্দ) প্রকাশিত ‘য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র’ বইখানি বাংলাসাহিত্যে চলিত ভাষায় লেখা প্রথম বই। রবীন্দ্রনাথ কখনই ভাবেননি তার চিঠিগুলো পত্রিকার পাতায় ছাপা হবে অথবা বই আকারে প্রকাশ পাবে। কবি কাহিনী, বাল্মিকী প্রতিভা ও বনফুল রবীন্দ্রনাথ লেখেন ১৮-১৯ বছর বয়সেই। তখনই চিঠির প্রাপকরা বুঝে ফেলেছিলেন বাংলা সহিত্যের উজ্জ্বল রবি’র আলোর ঝলকানি। তাই তারা চিঠিগুলো যত্ন সহকারে রেখেছিলেন। এই চিঠি সমূহ পরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়-সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। চিঠিতেই প্রকৃত আত্মপ্রকাশের পথ খুঁজে পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ যাদের কাছে চিঠি লিখেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেনঃ নির্মলকুমারী মহলানবিশ, আন্নদাশঙ্কর রায়, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রভাতকুমার মুখোপধ্যায় (কথাসাহিত্যিক), প্রমথ চৌধূরী, অজিতকুমার চক্রবর্তী, অবলা বসূ, অমল হোম, অসিতকুমার হালদার, কাদম্বিনী দেবী, অমিয় চক্রবর্তী, জগদানন্দ রায়, কালিদাস নাগ, চারু চন্দ্র বন্দোপাধ্যায়, দিলীপ কুমার রায়, দীনেশচন্দ্র সেন, ধুর্জটিপ্র্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ দেববর্ম, নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, নন্দগোপাল সেনগুপ্ত, নন্দিতা দেবী, নন্দলাল বসু, নেপালচন্দ্র রায়, নির্ঝরিনী দেবী, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় (রবীন্দ্রজীবনীকার), প্রতিমা দেবী, প্রিয়নাথ সেন, বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাসন্তী দেবী, বিজনবিহারী ভট্টাচার্য, বিধুশেখর শাস্ত্রী, বুদ্ধদেব বসু, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, ভূপেন্দ্রনাথ সান্যাল, মনিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, ব্রজেন্দ্রকিশোর দেববর্মা, মনোরঞ্জন বন্দোপাধ্যায়, মীরা দেবী, মৃনালিনী দেবী, মৈত্রেয়ী দেবী, মোহিতচন্দ্র সেন, যদুনাথ সরকার, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজশেখর বসু, রাধারানী দেবী, রানু অধিকারী, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, শান্তা দেবী, শীশচন্দ্র মজুমদার, শান্তিদেব ঘোষ, সজনী কান্ত দাস, সঞ্জয় ভট্টাচার্য, সাহানী দেবী, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, সীতা দেবী, সুধাকান্ত রায় চৌধূরী, সুধিন্দ্রনাথ দত্ত, হৈমন্তী দেবী, স্বর্ণ কুমারী দেবী, হেমলতা দেবী, হেমন্তবালা দেবী, লতা সেন, সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, সুভাষচন্দ্র বসু, সুবোধচন্দ্র মুজুমদার। চিঠির জন্য কবির ব্যাকুলতার তীব্রতা প্রকাশ পেয়েছে মানসীর’ ‘পত্রের প্রত্যাশা’ কবিতায়। এই কবিতায় রবীন্দ্রনাথ বারবার বলছেন, চিঠি কই,চিঠি কই, কই চিঠি। একই ভাবে চিঠির জন্য ব্যাকুলতা লক্ষ্যকরা যায় শিশু কাব্যগ্রন্থের ‘ব্যাকুল’ কবিতায়। চিঠি নামে কবিতাটি আছে পূরবীতে। পত্র শিরোনামে তাঁর কয়েকটি কবিতা আছে। ‘কড়ি ও কোমল’, মানসী, পুনশ্চ, বীথিকা ও প্রহসিনীতে। স্বামীর দুর্লভ কয়েকটি চিঠি স্ত্রী অমূল্য সম্পদের মত সযতনে সংগোপনে রেখেছিলেন। কবির স্মরণ কাব্যের একটি কবিতায় তা ফুটে উঠেছে। চার বছর বয়স থেকে আশি বছর পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ চিঠি লিখেছেন। প্রথম চিঠি তিনি লিখেছিলেন বাবাকে। জমিদারী সেরেস্তার কর্মচারী মহানন্দ বাবু’র কাছ থেকে একটুকরো কাগজ চেয়ে নিয়ে ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথকে চিঠি লিখতেন। প্রথম দু’একটি চিঠি বাবার হস্তগত হলেও পরের বহু চিঠি পৌছেনি। কারণ জমিদারী সেরেস্তার কর্মচারীরা শিশু রবীন্দ্রনাথের এই লেখা পত্রের প্রতি শেষ পর্যন্ত তেমন আগ্রহ দেখাননি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনস্মৃতিতে বাবাকে প্রথম চিঠি লেখার অভিজ্ঞতার কথা এভাবে বর্ণনা করেছেন, “বেশ মনে আছে, আমাদের ছেলেবেলায় কোনো এক সময় গবরমেন্টের চিরন্তন জুজু রাসিয়ান কর্তৃক ভারত আক্রমনের আশঙ্কা লোকের মুখে আলোচিত হইতেছিল। ….. এইজন্য মার মনে অত্যন্ত উদ্বেগ উপস্থিত হইয়াছিল। বাড়ির লোকেরা নিশ্চয়ই কেহ তাঁহার এই উৎকন্ঠার সমর্থন করেন নাই। মা সেই কারণে পরিণত বয়স্ক দলের সহায়তা লাভের চেষ্টায় হতাশ হইয়া শেষকালে এই বালকের আশ্রয় করিলেন। আমাকে বলিলেন, ‘রাসিয়ানদের খবর দিয়া কর্তাকে একখানা চিঠি লেখো তো’। মাতার উদ্বেগ বহণ করিয়া পিতার কাছে সেই আমার প্রথম চিঠি। কেমন করিয়া পাঠ লিখিতে হয়, কী করিতে হয় কিছুই জানি না। দফতর খানায় মহানন্দ মুনশির শরনাপন্ন হইলাম। ………. এই চিঠির উত্তর পাইয়াছিলাম। তাহাতে পিতা লিখিয়াছেন, ভয় করিবার কোন কারণ নাই, রাশিয়ানকে তিনি স্বয়ং তাড়াইয়া দিবেন। রবীন্দ্রনাথ শেষ চিঠি লিখেছিলেন পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীকে। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে ১৯৪১ সালের ৩০ জুলাই ৭টি বাক্যের ওই চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘তোমাকে নিজের হাতে কিছু লিখতে পারিনে বলে কিছুতে লিখতে রুচি হয় না।’ রবী ঠাকুর তখন ছোট বালক, জমিদার বাড়িতে তথা রবী ঠাকুরের বাড়িতে প্রতি বছেরর ন্যায় এবারো যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়েছে। বালক রবীন্দনাথের ছিল যাত্রা দেখার অদম্য ইচ্ছা। কিন্তু যাত্রা দেখার জন্য ছোটদের অনুমতি ছিল না। জমিদার বাড়ীর ছোট ছেলেরা রাত আটটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ত। এরপর শুরু হত যাত্রাপালা। রবীন্দনাথ যাত্রা দেখার শখের কথা কোনভাবেই তার বাবা বা দাদাদের কাছে তুলতে সাহস পাইল না, কেননা তারা জানলে তার শখের মুখে ছাই চাপা দিবেন তিনি জানতেন। তাই মায়ের কাছে গিয়ে আবদারের সুরে বলল তোমাদের সাথে আমি যাত্রা দেখতে যাব।অনেক সময় অনুনয় বিনুনয় শেষে যাত্রা দেখার অনুমতি মিলল। যাত্রাপালা শুরু হল অনেক রাতে, রবিন্দ্রনাথ অনেক কষ্ট নিয়ে বসেছিলেন। কারন তার চোখে ঘুমের রাজ্য ভর করতেছিল। পাত্র-পাত্রী যখন মঞ্চে উঠল তিনি তখন কাজের লোকের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছেন। এভাবেই তিনি জীবনের প্রথম যাত্রাপালা দেখেছিলেন। সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:০২
false
rg
প্রিয় আদুরী ও তনয়ের নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা!!! আজ ছিল আমার কাজিন (চাচাতো বোন) আদুরী'র বিয়ে। মুন্সীগঞ্জের ছেলে তনয়ের সাথে আদুরী'র বিয়ে হলো। আজ থেকে ওরা একটি নতুন জার্নি শুরু করলো। দু'জনের জীবনেই এই জার্নিটা নতুন। দু'জনকেই এই নতুন জার্নিতে পরস্পরকে চেনার মাধ্যমে, জানার মাধ্যমে, সমঝোতার মাধ্যমে, ভালোবাসার মাধ্যমে, পরস্পরের প্রতি সম্মান রেখে ধৈর্যের সঙ্গে একটা যৌথ জীবন এগিয়ে নেবার কমিটমেন্ট থাকার জন্য আমার পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকলো। আশির্বাদ করি, তোমারা জীবনে সুখি হও। তোমাদের যৌথ জীবন আনন্দময় হোক। তোমাদের মঙ্গল হোক। আমার দাদু'র ছিলো দুই বউ। দাদু'র সংসারে ছিলো চার ছেলে ও আট মেয়ে। আমার বাবা সবার বড়। দাদু'র বড় সংসারে বাবাসহ তারা তিন ভাই ও পাঁচ বোন। আর দাদু'র ছোট সংসারে আমার এক কাকা ও তিন ফুফু। আদুরী'র বাবা হলো আমার মেজে কাকা। আমার বাবা, বড় ফুফু, মেজে ফুফু, সেজে ফুফু, সেজে কাকা ও নোয়া ফুফু না ফেরার দেশে চলে গেছেন। মেজে কাকা ও ছোট কাকাসহ এখনো আমার চার ফুফু জীবিত আছেন। মেজে কাকা'র দুই ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে সবার ছোট হলো আফসানা শামীম আদুরী। আমাদের জেনারেশানে কাজিনদের মধ্যে আদুরী সবার ছোট। তাই ওর অফিশিয়াল নাম আফসানা শামীম হলেও ফ্যামিলি নেইম আদুরী। পরিবারে সবার ছোট বলে ও আদরও একটু বেশি পেয়েছে। যে কারণে ওর নামও আদুরী। আদুরী একজন আর্কিটেক্ট। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থ্যাপত্য বিদ্যায় পড়াশুনে শেষে আদুরী এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে। আমি মূলত পরিবার থেকে বাইরে এক ধরনের চৈতন্য জীবনযাপন করি। লেখালেখি করি। চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে জড়িত। বলতে গেলে নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে পরিবার থেকে অটোমেটিক একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে আমার। যার প্রধান কারণ, আমার চিন্তা-চেতনার সঙ্গে পরিবারের অন্য কারোর প্রচলিত চিন্তা-মানসিকতার মধ্যে রাতদিনের পার্থক্য। পরিবারের ভাইবোনদের বিয়েও আমাকে ছাড়া হয়েছে। আমাকে না জানিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে পর্যন্ত হয়েছে, হচ্ছে। তাদের ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে, হচ্ছে। আমি তাদের অনেককে এখন আর চিনি না। নেক্সট জেনারেশানের সঙ্গে আমার দূরত্ব যে কারণে আরো বেশি। সেই অর্থে আমি মোটেও পারিবারিক-সামাজিক প্রাণী নই। পরিবারের বাইরে আমার সম-মানসিকতার বন্ধুদের নিয়েই আমার জগত ও পরিবার! আদুরী'র বিয়ে উপলক্ষ্যে মেজে কাকা ঢাকায় এসেই আমাকে ফোন করেছিলেন। কাকাকে কথা দিয়েছিলাম সময়সুযোগ করতে পারলে আদুরী'র বিয়েতে আমি যাবো। দুই বছর আগে কাকীমা (আদুরী'র মা) মারা গেছেন। কাকীমা'র সাথে আমার শৈশবের অনেক স্মৃতি। কাকীমা সবসময় গর্ব করে বলতেন, আমি তার সবচেয়ে আদরের ছেলে। কাকীমা বেঁচে থাকলে আজ আদুরী'র বিয়ের সময় খুব ভালো লাগতো তার। আজকে পরিবারের অনেকের সাথে দেখা হয়েছে। অনেক আত্মীয় স্বজনের সঙ্গেই দীর্ঘদিন পরে দেখা হয়েছে। আদুরী'র বিয়ে উপলক্ষ্যে দীর্ঘদিন পরে এটা পরিবারের সঙ্গে আমার এক ধরনের গেটটুগেদার। এই ফেমিলি গেটটুগেদারে আমি সবচেয়ে বেশি মিস করেছি কাকীমাকে। কাকীমা সত্যি সত্যিই আমাকে খুব স্নেহ করতেন। দীর্ঘদিন পরে বলাই মামা, মামী, তাদের মেয়ে ঐশী (ঐশী খুলনায় একটি কলেজে বিবিএ পড়ছে এখন), হিমু মামা, বাসু খালা, মিনু খালার মেয়ে ডলি'র সঙ্গে দেখা। আমার সবচেয়ে বেশি খাতির ছিলো নীলু মামার সঙ্গে। নীলু মামা আসেনি। ঐশীকে আজ প্রথম দেখলাম। ১৯৮৮ সালে এইচএসসি পাস করার পর খুলনায় আর্মি কমিশনে পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে বাগেরহাট বলাই মামার বিয়েতে অ্যাটেন্ট করেছিলাম। সেটা ২৮ বছর আগের ঘটনা। তারপর বলাই মামা-মামী'র সাথে আজকে আবার দেখা হলো। আদুরী'র বড় হচ্ছে পপি। রোকসানা শামীম পপি। ১৯৯৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার পরীবাগের হোয়াং হো হোটেলে পপি'র বিয়ে হয়েছিল। পপি'র বিয়েতেও আমি উপস্থিত ছিলাম। ২১ বছর পরে আজ পপি আর পপি'র বর সিমুর সঙ্গে দেখা হলো। ওদের তিন ছেলে। পপি'র বড় ছেলে তো লম্বায় আমাকে ছাড়িয়ে গেছে! মেজে কাকার পরিবারে চাচতো ভাইবোনদের মধ্যে মামুন সবার বড়। মামুনের ঢাকা চিটাগাং যাতায়াত থাকায় আর মামুন ও আমি একই ক্লাশে পড়তাম বলেই, মামুনের সাথেই আমার যোগাযোগটা সবার চেয়ে বেশি। আজ মামুনের বউ আর দুই ছেলের সাথেও দেখা হলো। মামুনের পরে হলো রোজী, তারপর পপি, তারপর বাপ্পী, তারপর টপি আর সবার ছোট আদুরী। রোজী আর টপি আসতে পারেনি। বাপ্পী'র সাথেও অনেক দিন পরে দেখা হলো। বাপ্পী'র বউ সুমি'র সাথেও দীর্ঘদিন পরে দেখা। চট্টগ্রামে সুমি'র বাবার বাড়িতে কোনো এক ঈদের সময় বেড়াতে যাবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো। বাপ্পী আর সুমি'র তিন ছেলেমেয়ে। বড় মেয়ে অহোনা তো অনেক লম্বা হয়ে গেছে। ছোট দুইটার নাম বলতে পারবো না। আদুরী ওর নতুন বর তনয়ের সাথে পরিচয় করানোর সময়ে বলেছে, ভাইয়া তুমি আশায় আমি খুব খুশি হয়েছি। আমিও তোমার জীবনের এই বিশেষ দিনে উপস্থিত থাকতে পরে খুব খুশি হয়েছি। তোমাদের নতুন জীবন আনন্দময় হোক, তোমাদের চলার পথ আরো উপভোগ্য হোক। জগতে তোমাদের কীর্তি সবার নজর কারুক। এই আশির্বাদ করি। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি পারিবারিক ঘটনা মনে পড়ে গেল। শান্তিনিকেতনে তখন প্রতিদিন সন্ধ্যায় গুরুজির পায়ে তেল মালিশ করা হতো। তো একদিন কবি'র দুই নাতনি গীতা ও দীপ্তি গুরুজির পায়ে তেল মালিশের দাবি নিয়ে কবি'র কাছে হাজির হলেন। কিন্তু কবি'র এতে বেজায় আপত্তি। গুরুজি রসিকতা করে বললেন, তোরা সব আধুনিকার দল, আধুনিকরা যে কারুর পা টিপতে চায়, তা তো জানতুম না। তাছাড়া তোদের সব শৌখিন পোশাক, যদি ওতে তেল লেগে যায়? তখন হয়তো এদেশে কাপড় কাচাতেই পারবি না, কাপড় কাচাতে হয়তো প্যারিস পাঠাতে হবে। কিন্তু গুরুজির নিষেধ সত্ত্বেও হুট করে দীপ্তি কবি'র হাত ধরতেই কবি বললেন, পাণি-পীড়ন তাহলে করবেই? তা করো। ততক্ষণে গীতা যখন পা টিপতে শুরু করলো, তখন কবি বললেন, ও, এইবার পা নিপীড়নও করবে বুঝি? তা করো। কিন্তু খেয়াল রেখো, তোমাদের শৌখিন পোষাকে যেন তেল না লাগে! (রবীন্দ্রনাথের ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় মেয়ে সরোজাসুন্দরী দেবী'র দুই মেয়ে হলো গীতা ও দীপ্তি)। .................................২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৮
false
rg
বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় কার নির্দেশ পালন করছে___ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবে বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশান মিলে ঢাকার বিভিন্ন দেয়ালে আরবিতে 'যেখানে সেখানে প্রস্রাব না করার' যে বার্তা লিখে দিচ্ছে, তা কি আদৌ ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশান করছে? নাকি কোনো ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর এটি একটি অভিনব কৌশল? এই কাজটি সত্যি সত্যিই বা কারা করছে? বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও দেয়ালে লেখা এসব আরবি কয়জনে পড়তে পারে? যেখানে সেখানে প্রস্রাব বন্ধ করার জন্য আরবিতে দেয়াল লিখন করলেই সমস্যার সমাধান হয় কিনা সেটি কি আমাদের ধর্ম মন্ত্রণালয় বা সিটি করপোরেশানের আক্কেলে আছে?পাবলিক টয়লেট না বানিয়ে আরবিতে দেয়াল লিখন কোনো সমাধান নয়, হে মুর্খ ধর্মমন্ত্রণালয় বা অকর্মন্য সিটি করপোরেশান। জনসংখ্যার সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে পাবলিক টয়লেট বানাতে হবে। আরবিতে দেয়াল লিখন কোনো সমাধান নয়। বাংলাদেশে আরবিতে দেয়াল লিখন কেন বন্ধ করা হবে না, সে বিষয়ে আমি মহামান্য আদালতের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। আইন করে এটা এখনই বন্ধ করা হোক। বিবিসি বলছে, বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রী মতিউর রহমানের এক বার্তা সম্বলিত একটি ভিডিও এটা প্রচার করছে। আর পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন দেয়ালে এই আরবি লেখার সংখ্যা বাড়ছে। মাননীয় সরকার বাহাদুর, ধর্মমন্ত্রণালয়ের এ ধরনের মুর্খামি কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. চৌধুরী মোহাম্মদ বাবুল হাসান বিবিসিকে বলেন, আরবি ভাষা পবিত্র কোরানের ভাষা, তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনে আরবি ভাষার ব্যাপারে একটা ভীতি কাজ করে, তাই দেয়ালে আরবি লেখা দেখলে সেখানে লোকেরা প্রস্রাব করবে না। কত বড় মুর্খামি রে বাবা। এখনই এই বিষয়ে সতর্ক না হলে বাংলাদেশকে এই বিষয়ে চরম মূল্য দিতে হবে। এমনিতে বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানকে আড়াল করার সরকারি প্রচেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিজ্ঞানলেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকে আল কায়েদা নিজেদের বলে দাবি করছে। এফবিআই এটাকে চালাতে চাচ্ছে বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উত্থান হিসেবে। এসবের মধ্যে ঢাকায় এভাবে আরবিতে দেয়াল লিখন করে যেখানে সেখানে প্রস্রাব করা বন্ধ করার কৌশল মোটেও কোনো সুস্থ মস্তিস্কের কাজ নয়। বিষয়টি নিয়ে সরকার নিরব থাকলে তা বাংলাদেশের জন্যই ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়ে আসবে। অতএব সাধু সময় থাকতে এসব মুর্খামি বন্ধ করুন।................................৬ মে ২০১৫ঢাকা
false
ij
গল্প_ কৃষ্ণরাতের রাই দিন কয়েক আগে; তখন অনেক রাত, ঘুমিয়ে ছিল রাধা; হঠাৎ ই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তার; এবং তারপরে বাঁশী র সুর শুনতে পায়; কে বাঁশী বাজায়? কৌতূহলী হয়ে উঠে দ্রুতপদে আলুথালু হয়ে ই ঘর থেকে বেরিয়ে ম্লান জোছনা র ভিতর হাসনুহানা র গন্ধ-ভাসা উঠা নে এসে দাঁড়ায়। বাঁশী র সুর নদী র দিক থেকে ভেসে আসছিল। দ্রুত পায় নদী পাড়ে যেতে থাকে রাধা । নদী পাড়ের বটের তলায় আলোছায়ায় মিশে অপূর্ব ভঙ্গিমায় বসে এক শ্যামল স্বাস্থ্যবান পুরুষ নিমগ্ন হয়ে বাঁশী বাজাচ্ছিল। দৃশ্যটায় কী ছিল। থমকে গিয়েছিল রাধা। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বাঁশীর সুরে ডুবে গেল। রাগ বসন্ত। সা গা, ক্ষ্মা দা, র্ঋা, র্সা/ র্ঋা না, দা, পা ক্ষ্মগক্ষ্মদা, ক্ষ্মগঋসা। রাত্রির শেষ প্রহরের রাগ। রাধা জানে। তারপর এক সময় বসন্ত-র সুর থেমে গেলে রাধা অনেচনা বাঁশরিয়া পুরুষটিকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কে গো? এত সুন্দর করে বাঁশী বাজাও। পুরুষটি বলল, আমার নাম কৃষ্ণ। রাধা। (উচ্ছসিত হয়ে) কৃষ্ণ? কৃষ্ণ। (মাথা নেড়ে) হ্যাঁ। কৃষ্ণ। রাধা। (কৃষ্ণের মুখোমুখি বটের গুঁড়িতে বসে শুধাল) কী তোমার পরিচয়? কৃষ্ণ। (মৃদু হেসে।) আমি পথিক। রাধা। বুঝলাম, পথিক। তা পথিকের বুঝি ঘর থাকে না? কৃষ্ণ। থাকে বুঝি? রাধা । (হেসে) থাকে না আবার। তা তোমার কোথায় ঘর শুনি ? কৃষ্ণ। আমার ঘর মথুরায়। বৃন্দাবনের কাছে। রাধা। মথুরা-বৃন্দাবন? সে কোন্ দিকে? কৃষ্ণ। তা ধরো এখান থেকে পশ্চিমে। রাধা। বেশ। তা বাংলা দেশে কি বেড়াতে এসেছ? কৃষ্ণ। হ্যাঁ। পথিক তো ঘুরে বেড়ায়। রাধা। মথুরা কোথায় গো? কৃষ্ণ। যমুনা নদীর পাড়ে। রাধা। ধ্যাত। যমুনার পাড়ে তো তোমার রাধার বাড়ি। কৃষ্ণ। তোমার নাম বুঝি রাধা? রাধা। হ্যাঁ। বললে না মথুরা কোথায়। কৃষ্ণ। যমুনা নদীর পাড়ে। রাধা। (আপন মনে) তা কি করে হয়, যমুনা নামে কি দুটি নদী হয়? কৃষ্ণ। জগতে কত নদী রাধা। দুটো নদীর নাম মিলে গেলে কি এমন ক্ষতি শুনি? রাধা। (অভিমানী সুরে) ক্ষতির কথা আমি বললাম বুঝি। কৃষ্ণ। বলনি? রাধা। না। বলিনি। আচ্ছা তুমি এত সুন্দর করে বাঁশী বাজাও কি করে? কৃষ্ণ। আমার ভিতর থেকে কে যেন বাজায়। রাধা। কে সে? কৃষ্ণ। জানি না। তাকে খুঁজতেই তো পথে নামলাম। রাধা। পেলে? কৃষ্ণ। পেলাম মনে হয়। রাধা। (অবাক হয়ে) কে সে? কৃষ্ণ। আজও চিনতে পারিনি তবে নারীরুপী কেউ। রাধা। নারী! কৃষ্ণ। হ্যাঁ। তাই তো মনে হচ্ছে। সেই শুরু। তারপর থেকে প্রতিরাতে নদীপাড়ের বটের তলায় কৃষ্ণর সঙ্গে দেখা হচ্ছে রাধার। দিনমানে কৃষ্ণর কথা ভেবে বড় উত্তেজনা বোধ করে রাধা। তার কারণ আছে। কৃষ্ণ পুরুষ; রাধা নারী। কৃষ্ণ সবল তনুর অধিকারী। সংসারের কাজের অবসরে কৃষ্ণের নিটোল দেহটি ভেবে ভেবে রাধার পক্ষে কামবোধে জর্জরিত হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু বাঁশী সুরে কি যাদু আছে। রাত্রে বাঁশীর সুর ভেসে এলে রাধার দেহমন কেমন শীতল হয়ে ওঠে। তারপর কৃষ্ণের মুখোমুখি হলে সর্বাঙ্গে অবশ বোধ করে রাধা। কামের কথা মনেও পড়ে না। এ কী যাদু! নিষ্কাম না হলে বুঝি ঈশ্বরদর্শন হয় না? সে কারণেই দেবতা জগতে বাঁশীর সুর দিয়েছেন। রাধা এমনই ভাবে। এক পলক কৃষ্ণকে দেখার তৃষ্ণায় বিকেল থেকেই রাধা ভারি উতলা বোধ করতে থাকে। রাধার স্বামী অয়ন ঘোষ। স্বামী কখন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বে, রাধা অভিসারে বেরুবে-বিকেল থেকে এই আশায় থাকে। যমুনার পাড়ে কৃষ্ণ অপেক্ষা করছে। অয়ন ঘোষ আজ হাট থেকে দেরি করে ফিরেছে। ভোরবেলা দুধ নিয়ে হাটে গেছে । তারপর হাট থেকেই সোনাতলার গন্ধবণিক ননীগোপালের ভাইপো মাধব তাকে সোনাতলায় ধরে নিয়ে গেল। আজ সোনাতলার গন্ধবণিক ননীগোপালের দৌহিত্রের অন্নপ্রাসন্ন ছিল। মিষ্টান্ন দেখভাল করে ঘোষপাড়ায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়াল। যমুনায় নাইতে গেল সে। নদীটি বাড়ির খুব কাছেই। নদীর পাড়ে সুবিস্তীর্ণ তেপান্তরের মাঠ, সে মাঠের পূব-উত্তর কোণেই ঘোষপাড়া। ঘোষপাড়ার দক্ষিণ পার্শ্বে উঠান ঘিরে চারখানি মাটির ঘর অয়ন ঘোষের । একপাশে ভাঁড়ার ঘর, লাউয়ের মাচা; অন্যপাশে গোয়াল ঘর। সব মিলিয়ে আহিরের সম্পন্ন সংসার। আজ আষাঢ়ী পূর্ণিমা। আজ যে আকাশে একখানি পরিপূর্ণ নিটোল ধবধবে চাঁদ উঠবে তার ইঙ্গিত এখনই স্পষ্ট। মৃদমন্দ বাতাস বইছিল। খালি গায়ে ধূতি পরে কাঁধে গামছা ফেলে অয়ন ঘোষ পা চালিয়ে নদীপাড়ের দিকে যেতে থাকে। তেপান্তরের মাঠে তালতমালের বন, পদ্মদিঘী। পদ্মদিঘীর জল ছুঁয়ে আষাঢ়ী সন্ধ্যার বাতাস আরও মধুর হয়ে ওঠে। অয়ন ঘোষের দেহমন স্পর্শ করে সে মধুর বাতাস। নদীপাড়ে এসে সে থমকে যায়। যমুনায় পূর্ণ রুপা গলা জল । সে মুগ্ধ হয়ে দেখে। নদীর বাতাস যেন তাকে উড়িয়ে নেবে। কোজাগরী পূর্ণিমায় যমুনার রুপা গলা জলে অবগাহন করে পরম শান্তি পেল অয়ন ঘোষ। ফেরার পথে বয়েসি বটের তলায় কাকে যেন দেখে থমকে দাঁড়াল সে। ঝুপসি অন্ধকারে ঠিক বোঝা যায় না। পুরুষালি ছায়ামূর্তি। ঘোষপাড়ার লোকে বলাবলি করে: আজকাল মধ্যরাতে কে যেন নদীপাড়ের তেপান্তরের মাঠে বাঁশী বাজায়। সে নয়তো ...অচেনা আগন্তুকের বাঁশীর সুর সেও শুনেছে । বাঁশী শুনতে ভালোবাসে অয়ন ঘোষ। অনেক অনেক কাল আগে ... অয়ন ঘোষ তখন যুবক ... মধ্যরাতে নদীপাড়ে বসে তন্ময় হয়ে বাঁশী বাজাত। তখনও বউ হয়ে রাধা এ গাঁয়ে আসেনি। কুমোর পাড়ার মেয়ে বৈশাখী। বাঁশির সুরের টানে নদীপাড়ে চলে আসত। তখন রাত ভোর না হওয়া অবধি দু’জনের কত কথা হত। সেই বৈশাখী মরল ওলাউঠায়। ওলাই-চন্ডীকে ডেকে ডেকেও কোনও লাভ হয়নি। অয়ন ঘোষের বাবা সামন্ত ঘোষও ওই ভেদ বমন রোগেই মারা গিয়েছিলেন ... বৈশাখীর মৃত্যুর পর অয়ন ঘোষ আর বাঁশী বাজায়নি। মধ্যরাতের অচেনা আগন্তকের বাজানো বাঁশীর সুর ভেসে এলে রাধা যে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় - অয়ন ঘোষ তা জানে। বৈশাখীর কথা ভেবেই বাধা দেয়নি। রাধার ভিতরে বৈশাখীর পুর্নজন্ম হয়েছে। তারপর রাধার ভিতরে বৈশাখী লীন হয়ে গেছে। অয়ন ঘোষ এমনই ভাবে। উঠান জোছনার আলো থই থই করছিল। আলোর প্রয়োজন ছিল না। রাধা তবু দাওয়ায় মাটির প্রদীপ জ্বেলেছে। অয়ন ঘোষ খেতে বসেছে। কলা পাতায় আতপ চালের সাদা ধবধবে ধোঁওয়া ওঠা ভাত, এক পাশে বেগুন ভাজা, তেঁতুলের চাটনি; মাটির বাটিতে মৌরালা মাছের ঝোল; রাধা নিজেই রেঁধেছে। খেতে খেতে মাথা নাড়ে অয়ন ঘোষ। রাধা রাঁধে ভালো। বউটি তার সত্যি ভালো। তবে মাঝে-মাঝে রাধা বড্ড উদাসী হয়ে ওঠে। কী যেন ভাবে। দূর থেকে রাধার সে অপূর্ব বিষন্ন মূর্তি মুগ্ধ হয়ে দেখে অয়ন ঘোষ। শ্যামলা ছিপছিপে গড়ন রাধার; মাথায় মেঘবরন চুল, টলটলে কাজলকালো দুটি চোখ, ছোট্ট শ্যামল নাকে রুপার নথ। করতোয়া পাড়ের নন্দীগ্রামের মেয়ে রাধা। দেখেশুনে সম্বন্ধ করেই তবে বিয়ে করেছে অয়ন ঘোষ। ঠকেনি মোটেও । বউকে আদর করে ডাকে রাই। খেতে খেতে খুশি খুশি গলায় আয়ান ঘোষ বলে, বুঝলি রাই। আজ সোনাতলার গন্ধবণিক ননীগোপালের দৌহিত্রের অন্নপ্রাসন্ন ছিল। সে কথা আমি সাবিত্রী বুড়ির মুখে শুনেনি। হ্যাঁ। ননীগোপালের ভাইপো মাধব আমায় হাট থেকে সোনাতলায় ধরে নিয়ে গেল। মধু ময়রার আসার কথা ছিল, সে আসেনি। আমাকেই দইমিষ্টির ভার নিতে হল। তো সে অনুষ্ঠানে এক কবির সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হল। কবি! রাধার মুখটি ঝলমল করে ওঠে। জগতে কী এক গূঢ় রহস্যে নারী ও কবি পরস্পর পরস্পরের প্রতি গভীর টান অনুভব করে। একমাত্র কবিই যে বোঝে নারীর সুপ্ত অনুভূতি। একারণেই? হ্যাঁ। কবি। অয়ন ঘোষ বলে। কী নাম গো কবির? জয়দেব। জয়দেব। বাহ্, ভারি সুন্দর নাম তো। তা কোন্ গাঁয়ে বাস গো তোমার কবির? অজয় নদীর পাড়ে কেঁদুলি গাঁয়ে। কেঁদুলি গাঁয়ে? সে আবার কোথায় গো? করতোয়ার পাড়ে আমাদের নন্দীগ্রামের দিকে? না। অজয় নদীর পাড়ে কেঁদুলি গাঁ বাংলার পশ্চিমে। ও। তা কবির বয়স কেমন? তরুণ। ঘুরতে বেড়িয়েছেন। ভারি দিব্যকান্তি দেখতে। আমার তৈরি মিষ্টি খেয়ে ভারি প্রশংসা করল। গৌড়াধিপতি রাজা লক্ষণসেন নাকি তাঁর কাব্য শুনে মুগ্ধ। এখান থেকে নাকি উড়িষ্যা যাবেন কবি। কবিকে কাল্ নেমতন্ন করব ভাবছি। এতবড় কবি যখন। আচ্ছা, করো। কাল হাট থেকে বোয়াল মাছ এনে দিও। মাছ ভেজে দেব। এত বড় কবি যখন- ছোট মাছ খাওয়াই কি করে বল! তারপর অনেক রাতে অয়ন ঘোষ ঘুমিয়ে পড়লে রাধা যমুনামুখি হয়। আজও নদীপাড়ের বটমূলে বসেছিল কৃষ্ণ। আপনমনে ললিত রাগে ধূন বাজাচ্ছিল। ন্ঋগমা ক্ষ্মমগা ক্ষ্মধর্সা।/ র্ঋা নধা ক্ষ্মধা ক্ষ্মমগা ঋাসা। রাধা চুপচাপ কৃষ্ণর মুখোমুখি বসে। মুগ্ধ হয়ে শোনে ললিতের সুর যতক্ষন না শেষ হয়। অনেক ক্ষণ পর। বাঁশী থেমে গেছে। চরাচর জুড়ে স্তব্ধতা নেমেছে। কৃষ্ণ তন্ময় হয়ে বসে আছে। তারপর এক সময় তার ঘোর কাটলে রাধার দিকে তাকালো কৃষ্ণ। রাধা নরম স্বরে শুধোল, আমায় তুমি ভালোবাস কৃষ্ণ? কৃষ্ণ। বাসী রাধা। রাধা। তুমি বাঁশী বললে? কৃষ্ণ। তুমিই তো আমার বাঁশী যে। বলে ঝুঁকে রাধার কপাল স্পর্শ করে কৃষ্ণ। রাধা কেঁপে ওঠে। এই প্রথম পূজারীর স্পর্শ পেল রাধা। মথুরায় যা হয় হোক; বাংলায় নারীই উপাস্য। উপাসকের স্পর্সের পর রাধা শরীরময় অদ্ভূত অনুভূতি নিয়ে চুপ করে বসে থাকে। কৃষ্ণ ঝুঁকে রাধার কপাল স্পর্শ করছে ... এই দৃশ্যটি দেখে থমকে যান কবি জয়দেব। তিনি সোনাতলার গন্ধবণিক ননীগোপালের আতিথ্য বরণ করেছেন। রাতের আহার সেরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎই তাঁর ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। আষাঢ়ী পূর্ণিমার কথা স্মরণ হতেই তৎক্ষণাৎ ঘর থেকে বেরিয়ে দক্ষিণমুখি পথ ধরে যমুনার পাড়ে ছুটে এসেছেন। চলতে চলতে ললিত রাগে ধূন শুন থমকে দাঁড়িয়েছেন। তারপর অপূর্ব সুন্দরী এক শ্যামল তন্বী নারীকে দেখলেন। কবি জয়দেব অবাক হয়ে ভাবছেন: কে ওই নারী? আর তখন অসংলগ্ন তুমুল হাওয়ারা নদীর দিক থেকে ছুটে আসে । সে বাতাসে রাধার চুল ছড়িয়ে যায়। তারপর চোখেমুখে লাগে। বাতাসের ঘর্ষনে বটপাতায় সরসর শব্দ ওঠে। সমুখের তেপান্তরের মাঠটি এই মুহূর্তে কোজাগরী জোছনায় উজ্জ্বল । একপাল গরু চড়ছে। কাদের গরু ওগুলো? রাধা অবাক হয়ে ভাবল। টি টি শব্দে একঝাঁক রাতচরা পাখি উড়ে গেল যমুনার দিকে। রাধা অবাক হয়ে ভাবল: কৃষ্ণ কেন বলল- তুমি আমার বাঁশী যে। কৃষ্ণ খানিকটা গম্ভীর স্বরে বলে, কাল ভোরে আমি চলে যাচ্ছি রাধা। এই কথার পর যেন অনন্তকাল কেটে গেল। রাধা অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে বলল, কাল চলে যাচ্ছ। কোথায়? কৃষ্ণ বলল, যেখান থেকে আমি এসেছি। সেই মথুরায়। রাধা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর জিজ্ঞেস করে, যেতেই হবে? হ্যাঁ। কেন? আমার সব তো ওখানে ... মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন। তাহলে পথে নামলে যে- পথে নেমেছি একটা প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে । কি সে প্রশ্ন? একটু চুপ করে থেকে কৃষ্ণ বলল, আমার ভিতরে বাঁশী কে বাজায়। পেলে উত্তর? হ্যাঁ। উত্তর পেলাম। বাংলা দেশে এসে পেলাম। রাধা চুপ করে থাকে। কৃষ্ণের সঙ্গে একবার তার মিলনের সাধ জাগল। তবে আকাশে বাতাসে বাঁশীর রেষ ফুরোয়নি তখনও। নাঃ, শরীর জাগবে না। কে সে? রাধা শুধালো। কার কথা বলছ তুমি? কৃষ্ণ অবাক হয়ে শুধায়। যে তোমার ভিতরে বাঁশী বাজায়। তুমি জান না কে সে? রাধা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। একজন যখন আমাকে জানল তখন সংসারে ফেরাই যায়। কেউ না জানলে সংসারের দিনগুলি দমবন্ধ হয়ে ওঠে। এখন অনেক নির্ভার লাগছে। রাধা এখন জানে কৃষ্ণের ভিতরে বাস করে কে বাঁশী বাজায়। রাধা উঠে দাঁড়ায়। কৃষ্ণ চেয়ে চেয়ে দেখে একটি নারী কোজাগরী জোছনায় মিলিয়ে যাচ্ছে। সে ম্লান হাসে। কবি জয়দেবও কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়ে নারীটিকে চলে যেতে দেখলেন। আয়ান ঘোষ-এর ঘুম আসছিল না। ঘরের জানালা দিয়ে হু হু করে সাদা পালের মতন জোছনাময়ী বাতাস ঢুকছিল ঘরে। বাতাসের ধাক্কায় তার ঘুম ভেঙে যায়। কিংবা অনেক অনেক দিন আগে বেঁচে থাকা বৈশাখীকে স্বপ্ন দেখছিল সে। আয়ান ঘোষ উঠে বসে। রাধা পাশে নেই-কোথায় গেল রাধা। দরজা ভেজানো দেখে মুচকি হাসল। দাওয়ায় এসে দাঁড়াল সে। উঠানে টইটুম্বুর কোজাগরী পূর্ণিমা , উথালপাথাল হাওয়া। রাধা সারা বাড়িতে কোথাও নেই। রাধা কই গেছে তা অয়ন ঘোষ জানে। সে তারপরও ক্রোধে উন্মক্ত হয়ে উঠতে পারে না ... উতল শীতল বাতাস এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কিংবা তার বৈশাখীর কথা মনে পড়ে । কে যেন তার কানে ফিসফিস করে বলে: নারীপ্রকৃতি হল ধরনীর মতো; একে একা একা ভোগ করলে স্বার্থপরের মতো দেখায় না? সবই যখন অনিত্য, ক্ষণস্থায়ী -তখন প্রাচীন চার্বাক ঋষির কথা ভাবো না কেন। আকাশপাতাল ভাবতে ভাবতে উঠানের জোছনায় ভূতের মতন দাঁড়িয়ে ছিল আয়ান ঘোষ। রাধা স্বামীকে দেখে থমকে দাঁড়ায়। রাধা। (সামান্য রেগে গিয়ে) কি বলবে বল। অয়ন ঘোষ। এ কী রাই! কাঁদছিস যে তুই? রাধা। ( ফুঁপিয়ে উঠে ) কাঁদছি মনের সুখে। অয়ন ঘোষ। হঠাৎ এত সুখ উথলে উঠল যে তোর? রাধা। আজ আমাকে একজন চিনে ফেলল যে। অয়ন ঘোষ। হুম। যে তোকে চিনতে পেরেছ তাকে আমার ভীষণ ইর্ষে হচ্ছে রে রাই। রাধা। কেন? তাকে আপনার ইর্ষা হচ্ছে কেন? অয়ন ঘোষ। (দীর্ঘশ্বাস চেপে) আমি যে তোকে ঠিক চিনতে পারলাম না রাধা। রাধা। একেবারেই কি চেনেননি? অয়ন ঘোষ। তা ক্ষানিক চিনেছি বটে। যতটুকু চিনেছি তাতেই আমি সন্তুষ্ট রে রাধা। রাধা। (নরম স্বরে) সে আমার বড় সৌভাগ্য স্বামী। অয়ন ঘোষ। তাছাড়া তুই ঘরদোরের যতœ নিস। আর রাঁধিসও ভালো। রাধা। (হেসে) আমি ভালো রাঁধি? না, আপনি ভোজনরসিক? অয়ন ঘোষ। (হেসে) সে একই হল। যা । এখন ঘরে গিয়ে শুয়ে পড় গে যা। কাল আবার ভোরে উঠে দুধ দুইতে হবে। রাধা ঘরের দিকে পা বাড়ায়। কী কথা মনে পড়তে অয়ন ঘোষ বলে, ওহ্ হো। এই রাই শোন। আবার কী হল? কাল খানিকটা দুধ সরিয়ে রাখিস । কেন? তোর মনে নেই? কাল কবি জয়দেব আসবেন। পায়েস রাঁধিস। হাট থেকে পাটালি গুড় এনে দেব। রাধার মনে পড়ল কবি জয়দেবের কথা। রাধা ঠিক করল কবিকে সে সব বলবে। কে আমি কে কৃষ্ণ ...ললিতের বসন্তের সুরের কী মানে ...সব ...সব কবিকে রাধা বলে দেবে। ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢেকে রাধা। একা হতেই রাধার মনে হল- কৃষ্ণ কাল ভোরে মথুরায় ফিরে যাবে। রাধার অভ্যন্তরে দুঃখেরা তরল দুধের মতন ফেনিয়ে ওঠে। কান্নাভেজা চোখে রাধা জানালা দিয়ে চেয়ে দেখল ধবল পূর্ণিমার রাতটি নিমিষে কালো মেঘে ঢেকে গেছে। । কৃষ্ণরাত যেন! নাঃ, কবিকে কিছুই বলবে না রাধা। যদি সে প্রকৃতই কবি হয় তো সে কবি ভেবে নিক ঠিক কী ঘটেছিল যমুনা তীরে ... উৎসর্গ: ডা. শাহাদাত সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:২০
false
ij
None রেজিনা স্পেকটর। রুশ বংশোদ্ভূত মার্কিন কন্ঠশিল্পী গীতিকার ও পিয়ানো বাদক। রুশ বংশোদ্ভূত বলেই রেজিনার পুরো নাম রেজিনা ইলিনিচনা স্পেকটর। জন্ম মস্কোয়, ১৯৮০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। মা বেলা স্পেকটর মস্কোর এক সংগীত বিদ্যালয়ের সংগীতের অধ্যাপক ছিলেন, বর্তমানে নিউ ইর্য়কের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। রেজিনার বাবা ফটো সাংবাদিক ও বেহালাবাদক। রেজিনা স্পেকটর অত্যন্ত প্রতিভাবান একজন সংগীতশিল্পী । ওর ‘দ্য কল’ গানটি শুনে অসম্ভব ভালো লাগল। কথা সুর ও কন্ঠ -সবমিলিয়ে এককথায় অনবদ্য। একটি টিভি সিরিয়ালে ও একটি চলচ্চিত্রে ‘দ্য কল’ গানটি বেজেছে ... The Call lyrics It started out as a feeling which then grew into a hope which then turned into a quite thought which then turned into a quite word And then the word grew louder and louder Till there was a battle cry I'll come back when you call me no need to say good bye Just because everythings chnging doesn't mean that its never been this way before all u can do is try to know who your friends are as you head off to the war Pick a star on the dark horizon And follow the light You'll come back when it's over No need to say goodbye You'll come back when it's over No need to say goodbye Now we're back to the beginning It's just a feeling and no one knows yet But just because they can't feel it too Doesn't mean that you have to forget Let your memories grow stronger and stronger 'Til they're before your eyes You'll cone back When they call you No need to say goodbye You'll come back When they call you No need to say goodbye ডাক শুরুতে ছিল অনুভূতি তারপর বেড়ে উঠল আশায়; তারপর পরিনত হল শান্ত ভাবনায় তারপর শান্ত শব্দে গেল বদলে ... আর তারপর জোরে জোরে শব্দটি বেড়ে উঠল যুদ্ধের কান্না অবধি আমি ফিরে আসব যখন তুমি ডাকবে বিদায় বলার নেই প্রয়োজন সবই বদলে যায় বলে পুরনো সময় তো আর মিথ্যে নয় যা তুমি করতে পার জানার চেস্টা করো কে তোমার বন্ধু যুদ্ধের অভিমূখে যেতে যেতে অন্ধকার দিগন্তে দ্যাখো নক্ষত্র তার আলো অনুসরণ করো যখন শেষ হবে ফিরে আসবে তুমি বিদায় বলার নেই প্রয়োজন যখন শেষ হবে ফিরে আসবে তুমি বিদায় বলার নেই প্রয়োজন এখন আমরা ফিরে যাচ্ছি শুরুতে এটা শুধু অনুভূতি, এখনও জানেনা কেউ ওরা এটা বোঝে না বলেই ভুলে যাওয়ার কোনও মানে হয় না। তীব্র করে তোলো তোমার স্মৃতিকে যতক্ষণ না ওরা তোমার চোখের সামনে তুমি ফিরে আসবে যখন তারা তোমায় ডাকবে বিদায় বলার নেই প্রয়োজন তুমি ফিরে আসবে যখন তারা তোমায় ডাকবে বিদায় বলার নেই প্রয়োজন তুমি ফিরে আসবে এই চমৎকার গানটি অনেকেই গেয়েছে। অন্য আরেকজনের গাওয়া 'দ্য কল' সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২০
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৪৪ ১. পরীক্ষা ছিলো গতকাল। বায়ুটারবাইনের নিয়ন্ত্রণ ও নেটসংযোগের ওপর। পরীক্ষার পরপরই কলোকুইয়ুম, সাথে সাথেই গ্রেড পেয়ে যায় পোলাপান। প্রফেসর হায়ার এর এই ব্যবস্থাটা খুবই ভালো লেগেছে আমার কাছে। ৪৫ মিনিট বা ১ ঘন্টার পরীক্ষা, তার পরপরই খাতা দেখতে দেখতে আলোচনা, ভুলভাল কিছু থাকলে তৎক্ষণাৎ শুধরে দেয়া, যাতে ছেলেপিলে কোন সংশয় নিয়ে পরীক্ষার হল ছেড়ে না বেরোয়। হায়ার সুযোগ পেলেই এই সুব্যবস্থার কথা লোকজনকে জানিয়ে দেন, "ভিয়ার হান্ডেল্ন ডি নোটে ৎসুজামেন মিট ডেন ষ্টুডেন্টেন আউস, হে হে হে!" আজ পরীক্ষা দিয়েছি সবশুদ্ধু আটজন। ক্লাসের অর্ধেকেরও বেশি ছেলেপিলে শেষ পর্যন্ত আর পরীক্ষা দেয়নি। এক্সট্রা ক্রেডিটের এটাই মজা, ক্লাস করতে চাইলে করো, পরীক্ষা দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। তবে পরীক্ষার জন্যে একবার নিবন্ধন করে পরীক্ষা দিতে বসলে তা পাশ করতেই হবে, নইলে ভ্যাজাল। ২.০ পেয়ে মনটা একটু খারাপই ছিলো। ওপেন-বুক পরীক্ষা, প্রায় চারশো পৃষ্ঠার মতো ব্লক ডায়াগ্রাম আর গ্রাফ, তারপরও মনে একটা দুরাশা ছিলো এবার পরীক্ষা ভালো হবে। অদৃষ্টের মন্দপ্রেম ভেবে হেলেদুলে বার হলাম। পরে অবশ্য বাসায় ফিরে আবার নানা ভ্যাজালে পড়ে মন কিছুটা ভালো হলো। ২. সেদিন এক্সকারশন ছিলো মেয়ারহোফ বলে এক জায়গায়, ১০০ মেগাওয়াটের একটা উইন্ড টারবাইন প্ল্যান্ট সেখানে। ভোরবেলা উঠে সময়মতো হাল্টেষ্টেলে (বাসস্ট্যান্ড) গিয়ে দেখি খাপ্পা চেহারার এক বুড়ি সেখানে বসে গজগজ করছে, সকালে যেমন ভিড় থাকার কথা, তেমনটা নেই। সন্দেহ হচ্ছিলো বলে বুড়িকে জিজ্ঞেস করতেই বুড়ি মহা ক্ষেপে গেলো। "দেখুন এদের কান্ডটা একবার! সময়ের আগেই এসে চলে গেছে! গত বিশ বছর ধরে গরম পড়লেই ব্যাটারা এমনটা করে, সময়ের আগে এসে চলে যায়! বলুন দেখি কেমনটা লাগে! আমি তো বলি এটা কাসেলারফেরকেয়ার্সগেজেলশাফট (KVG, কাসেলের পরিবহন সংস্থার নাম) নয়, কাসেলারফেরষ্পেটুংসগেজেলশাফট (কাসেলের দেরি করিয়ে দেয়া সংস্থা)!" বুড়ির কথায় সায় দিলাম বিমর্ষ মুখে। "আমার আজকে একটা এক্সকারশন আছে, এখন তো মনে হচ্ছে সময়মতো আর যাওয়া হবে না।" বুড়ি ঢোলের বাড়ি পেয়ে আরো নাচতে লাগলো। গত বিশ বছরে KVG আরো কী কী কুকর্ম করেছে, তার একটা ফিরিস্তি শুরু হলো। জার্মান বুড়োবুড়িরা মদ না খেলে সাধারণত খুব স্পষ্ট জার্মান বলে, বুঝতে তেমন একটা সমস্যা হয় না, নওজোয়ানরা এক নিঃশ্বাসে অনেক কিছু বলে, তখন প্রায়ই আরেকবার দম নিয়ে বলার অনুরোধ জানাতে হয়। ফোন করলাম ওলাফ আর ক্রিস্তফকে, দু'জনের কেউই যাচ্ছে না এক্সকারশনে। এদিকে কাউকে না জানালে ঘড়ির কাঁটা ধরে চলে যাবে সবাই। মুসিবত। ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল ক্যাম্পাসের সামনে পরে ট্রাম থেকে নামতেই উলরিখের ফোন পেলাম, ঊর্ধ্বশ্বাসে বাকিটা পথ ছুটে গিয়ে দেখি বাকিরা তিব্বতী লামাদের মতো গম্ভীর মুখে করে সার বেঁধে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে, লেট লতিফের অপেক্ষায়। লজ্জায় মাথা কাটা পড়লো আমার। বাকিটা সময় অবশ্য ভালোই কাটলো এক্সকারশনে। বিএমডব্লিউতে আগে চড়িনি কখনো, প্রফেসর হায়ার খুব উৎসাহ নিয়ে আমাদের তাঁর গাড়ির নানা কীর্তি শোনাতে লাগলেন। হায়ারের বয়স ষাটের ওপর, কিন্তু দারুণ ড্রাইভ করেন। হাইওয়েতে উঠেই সাঁ করে একশো আশিতে তুলে ফেললেন গাড়ি। উলরিখ আর কায়েস গুজগুজ করে গল্প জুড়ে দিলো। ভিজবাডেন আর কোয়ল্নের বাসাভাড়া নিয়েই আধ ঘন্টা আলাপ শুনতে শুনতে ঘুম দিলাম। মেয়ারহোফ জায়গাটা পাহাড়ি মালভূমির মতো, যেদিকে চোখ যায় শুধু সরষে ক্ষেত। ফাঁকে ফাঁকে দৈত্যাকৃতি সব টারবাইন, গুণে শেষ করা যায় না। উইন্ড টারবাইনের জন্যে আশেপাশের সব জমি কিনে ফেলার কোন দরকার হয় না, অল্প একটু জায়গা লিজ নেয়া হয় চুক্তির মাধ্যমে, টারবাইন আর কেবল ট্রেঞ্চের জন্যে যতটুকু জায়গা লাগে ততটুকু হলেই বেশ চলে যায়। গ্যালোবার নয়ডর্ফে গিয়ে দেখেছি, মোট ১১ মেগাওয়াটের ৫টা মাত্র টারবাইনের জন্য ২৬টা চুক্তি করতে হয়েছে, মেয়ারহোফে পঞ্চাশটারও বেশি টারবাইন, কয়টা ফেরপেখটুং করতে হয়েছে কে জানে। এবার আর ওপরে চড়িনি, বাম হাত জখম, নিচে বসে গল্পগুজব করে সময় কাটালাম। কিছু ছবি তুলেছি, সেগুলোও ওয়াশ করা হয়নি। ডিজিটাল ক্যামেরার জন্যে হাহুতাশ করেই দিন কেটে যাবে মনে হচ্ছে। দেখি, ওয়াশ করলে স্ক্যান করে তুলে দেবো। উলরিখ নিচে নেমে এসে পাকড়াও করলো আমাকে, "ব্যাপার কী? খেলা দেখো নাই ফাইন্যাল? কা নয়েনৎসেন এ তোমাকে দেখলাম না তো।" ইউনিভার্সিটির পার্টি বিল্ডিং হচ্ছে কা নয়েনৎসেন, সেখানে কোন টুর্নামেন্ট হলে সবাই বোতলের কেস নিয়ে জড়ো হয়। আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, "আমি স্পেনের সাপোর্টার ছিলাম। ধোলাই খেয়ে মরি আর কি।" উলরিখ হেসে ফেললো, "আরে ধুর, ভয়ের কী আছে? স্পেনের পোলাপানও তো সেদিন খেলা দেখতে গেছে।" আমি মনে মনে বললাম, স্পেনের পোলাপানের কিছু হবে না রে, কপালে মাইর থাকলে আমারেই খাইতে হবে। সারাটা জীবনই ফাও গোয়ামারা খেয়ে যাচ্ছি, মাতাল জার্মান সাপোর্টারের হাতে মাইর নাহয় আপাতত না-ই খাইলাম। মুখে বললাম, "জার্মানি খুব বাজে খেলসে। খেলোয়াড়দের ধরে স্পেনে পাঠায় দেয়া দরকার।" উলরিখ আর সহ্য করতে পারলো না, খেলার আলাপ পাল্টে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলো। ৩. গতকাল পরীক্ষা দিয়ে এসে প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছিলো, কিন্তু ঘুমানোর উপায় নাই, আজও পরীক্ষা ছিলো, তার ৯০%ও পড়া বাকি। ঢুলতে ঢুলতে কিছুক্ষণ পড়ে ঘুমিয়ে গেলাম। ভোরবেলা ঘুম ভাঙার পর পড়তে বসে দেখি, বহুত জিনিস বাকি, কিছুতেই পুরোটা শেষ করা যাবে না। জোলারটেখনিক, মানে সৌরকৌশল, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সৌরতাপ, সৌরবিদ্যুৎ মিলিয়ে একটা খিচুড়ি জিনিস, পড়তে পড়তে সূর্য জিনিসটার উপর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এর মধ্যে আমার ফ্ল্যাটমেট উগো ফেরনান্দেজ আবার রান্নাঘরে গিয়ে শুরু করেছে বিদঘুটে পর্তুগীজ গান। উগো বেশ ভালো হারমোনাইজ করতে পারে, কিন্তু যখন আমি অঙ্ক করছি তখন এই আপদ আর কতক্ষণ ভালো লাগে? একবার ভাবলাম বের হয়ে একটা কড়া ঝাড়ি মারি, পরে ভাবলাম, মানুষ নীরবে সহো। ভাবছি ওকে জরিমানা করবো, রান্নাঘর সামনের শনিবারে ওকে দিয়ে সাফ করাতে হবে। চুদির ভাই এখানে আসার পর থেকে একবারও রান্নাঘরের মেঝে ঝাঁট দেয়নি। তারপরও মন্দের ভালো হয়েছে পরীক্ষা। পোলাপাইন কেউই পরীক্ষা দিয়ে খুশি না, কিন্তু সবারই এক বক্তব্য, আরো খারাপ হতে পারতো। এতো অসংখ্য তথ্য আছে চিপাচাপায়, যে চাইলেই কঠিন প্রশ্ন করে সবাইকে ফেল করিয়ে দেয়া যায়। সেই তুলনায় বেশ ফেয়ার পরীক্ষা হয়েছে। মোটে দেড় ঘন্টার পরীক্ষা, কিন্তু ক্লান্তিতে নুয়ে পড়েছে সবাই, প্রশ্নগুলি ছোট ছোট হলেও অনেক চিন্তা করতে হয়। আজকে আবার ডিপার্টমেন্টে খাটুনি আছে। বসে বসে পোস্টাচ্ছি, ফোনের অপেক্ষায়। আজকে ঠিক করেছি সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরে পূর্ণমাত্রায় টাল হবো। কী আছে দুনিয়ায়?
false
hm
মাটির ময়না মাটির ময়না দেখিনি আগে। এতক্ষণ ধরে দেখে মুগ্ধ হয়ে লিখতে বসলাম। আমি ধরে নিই, যে সিনেমা সম্পর্কে কিছু বলতে চাইছি, সেটি পাঠক আগে দেখেননি। ফলে, তাঁর সিনেমা দেখার আনন্দ মাটি করে কোনো কিছু লিখতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু সিনেমারিভিউ লিখতে গেলে কাজটা যথেষ্ঠ কঠিন হয়। ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মাটির ময়না নিয়ে কথা বলতে গেলে আগাম কিছু আনন্দ মাটি হবার সম্ভাবনা এই পোস্টে দেখতে পাচ্ছি। সিনেমা নিয়ে আমার জ্ঞান তলানি স্পর্শ করে। তারপরও এ নিয়ে কথা বলার সাহস পেয়েছি জোকার নায়েককে দেখে, হাঁটুতে জ্ঞান নিয়েও যে মহাকাশ সম্পর্কে কথা বলে। মাটির ময়না স্তিমিত, মৃদু সুরের সিনেমা। উচ্চকিত কোনো "বক্তব্য" ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয়নি, একটা মিহি, শান্ত টোনে বলে যাওয়ার ভঙ্গি আছে সিনেমার আদ্যোপান্ত। সিনেমায় এই সুর ধরে রাখা খুব কঠিন বলে মনে হয়েছে আমার কাছে, সেই কঠিন কাজটি নির্মাতারা মসৃণভাবে করতে পেরেছেন। লোকেশন বাছাই দুর্দান্ত হয়েছে, গোটা কাহিনী তার পটভূমিতে কোনো দৃষ্টিকটু চড়াই-উৎরাই ছাড়াই মিশে গেছে। ক্যামেরা সম্পর্কে আমি ততটুকুই জানি, যতটুকু জোকার নায়েক জানে মহাকাশ নিয়ে, কিন্তু প্রেরণা পাই তার কাছ থেকেই, তাই বকে যাই। ক্যামেরার লোকাস বা "গতিপথ" আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। সামান্য একটু সরে বিভিন্ন বাঁক ধরে বয়ে চলা ঘটনা ধারণ করার কৌশলটা দারুণ মুনশিয়ানায় করা হয়েছে। বেশ কিছু শটে পরিস্থিতির নাটকীয়তাকে আরো তীক্ষ্ণ করার জন্যে ক্যামেরা যেভাবে বসিয়ে শটগুলি নেয়া হয়েছে, তা মনের ওপর ছাপ ফেলার মতো। মাদ্রাসা থেকে আনু ফিরছে কাকার সাথে, কাজী সাহেব একটু এগিয়ে এসে দেখছেন, ঘাটে এসে ভিড়লো নৌকা, প্রথমে পাড়ের উঁচু ঢালের ওপাশে দেখা গেলো করিম মাঝির রোদে পোড়া রুষ্ট মুখ, এরপর ঢাল বেয়ে উঠে আসছে মিলন আর আনু, এ অংশটি দারুণ লেগেছে আমার কাছে। বন্যায় পানি বাড়ছে, সেই অপূর্ব মেঘলা দিনে করিম মাঝির নৌকা আনুকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে, ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল আনুর কাছে সবকিছু ঝাপসা, তার কানে শুধু ভেসে আসছে দূরাগত শব্দ আর সংলাপগুলো, এ অংশটিও অপূর্ব। সিনেমায় রঙের ব্যবহারও আমাকে মুগ্ধ করেছে। কাজী সাহেবের সর্বদাপরিধেয় সাদা রঙের পাশে উজ্জ্বল রংগুলি দর্শককে একটি বক্তব্যই পৌঁছে দেয়, কাজীর পরিবারে ভিন্ন কোনো ধারণা, বিশ্বাস বহমান, গাঢ় কনট্রাস্ট বারেবারেই স্মরণ করিয়ে দেয় সে কথা। মাদ্রাসার ভেতরের পরিবেশটুকুই যেন কাজী সাহেব বহন করে বেড়ান তাঁর সফেদ জামাকাপড়ে, একটি ছোটখাটো চলমান মাদ্রাসা হয়ে তিনি সতত সঞ্চরণশীল, তাঁরই উঠানে একটি লাল শাড়ি মেলে দেন আনুর মা, যখন আনু বাড়ি ফিরে আসে মাদ্রাসা থেকে। আবার কাজী সাহেবের বামপন্থী ছোট ভাই মিলনেরও পরনে সাদা কাপড়, যদিও সে কাজীর বিপরীত মেরুর লোক, কিন্তু সিনেমায় তাকেও দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে কাজীর সারিতেই, দু'জনেই নিজের বিশ্বাসের ছায়ায় দাঁড়িয়ে অপরকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। দু'জনের চোখেই গাঢ় কালো ফ্রেমের চশমা, এঁচড়ে-পাকা দর্শক হিসেবে সন্দেহ জাগে, এই চশমা কেবল জৈব প্রেসবায়োপিয়া বা মায়োপিয়ার কারণে নয়, এই চশমা যেন দু'জনের বিশ্বাসেরও প্রতীক। মাদ্রাসা সম্পর্কে আমার ধারণা কম, তাই মাদ্রাসার ভেতরের দৃশ্যগুলি কতটুকু বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে কিছুই বলা সাজে না আমার। পরিচালক ও কাহিনীকার তারেক মাসুদ যেহেতু নিজে মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন এক সময়ে, সম্ভবত উপস্থাপিত দৃশ্যাবলি যথেষ্ঠ বাস্তব, অন্তত কাহিনীর সময় '৬৯-'৭১ এ। মাদ্রাসার দৃশ্যগুলির একটা বড় অংশ রাতে, দিনের শটগুলির একটা বড় অংশ মেঘলা, ভোরের ঘাটে আছে তিনটি বড় দৃশ্য, সেগুলি হয় কুয়াশাচ্ছন্ন, নয়তো মেঘলা। এমনকি আনু যখন মাদ্রাসা ছেড়ে বেরিয়ে আসে, আমরা দেখি এক বিশাল উঁচু দেয়াল আর তার ফাটলে গজানো বনস্পতির চারাকে। রোকন চরিত্রে রাসেল ফারাজির অভিনয় অনবদ্য মনে হয়েছে, তার সংলাপ উপস্থাপনের দক্ষতা মনে রাখার মতো। স্কিটজোফ্রেনিক রোকনের উপস্থিতি সিনেমায় হয়তো প্রয়োজন ছিলো মাদ্রাসার "জলবায়ু"কে আরো পরিস্ফূট করার জন্যেই, সেখানে রোকন বড়জোর লিটমাস পেপার। ইব্রাহিম হুজুর চরিত্রটিতে যিনি অভিনয় করেছেন, তিনি অভিব্যক্তিতে সফল হলেও সংলাপ পরিবেশনে ততটা দক্ষ নন বলে মনে হয়েছে, এবং তাঁর কারণে নিবেশিত মনোযোগে আঁচড় পড়েছে একাধিকবার । সিনেমায় করিম মাঝি, যে মাঝে মাঝে সংলাপের মাধ্যমে কাহিনীতে অবয়ব যোগ করে, তার চরিত্রে শাহ আলম দেওয়ানকে মানিয়েছে চমৎকার। পুঁথিপাঠ আর নৌকোয় বসে বৈঠা চালাতে চালাতে গল্প বলা, এই দুই জায়গায় তিনি করতালি পাবার যোগ্য। মাদ্রাসার সিড়িঙ্গে হুজুর, যাকে ছেলেরা শিঙ্গি মাছ বলে ডাকে আড়ালে, তিনি এক কথায় মাস্টারপিস। আমার চোখে আর কানে ছোটখাটো কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে, জোকার নায়েকদত্ত স্পর্ধা নিয়েই বলি, যেমন আনু মাদ্রাসা থেকে ছুটি পেয়ে বাড়ি ফিরছে, যেখানে স্পষ্টতই তার ভালো লাগছে না, কিন্তু আমরা দেখি বাড়ির কাছে এসে তার কোনো তাড়া নেই, বেশ কিছুদিন ধরে বাড়িছাড়া একটি মাদ্রাসাবন্দী বালক যে আকুতি নিয়ে বাড়িতে ছুটে ঢুকবে, তার চিহ্ন নেই তার আচরণে। কাহিনীর পটভূমি বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের, কিন্তু আনুর বাবা, কাকা কিংবা মায়ের সংলাপ অঞ্চলানুগ নয়। কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের সংলাপ পরিবেশনে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চরিত্রগুলিকে সচেষ্ট দেখা যায়নি। মাটির ময়নার গানগুলো ভালো লেগেছে, সিনেমার গতি রুদ্ধ করেনি সেগুলি। ছবির শেষাংশে এসে "যদি ভেস্তে যাইতে চাও গো" গানটি অবশ্য কিছুটা অপ্রত্যাশিত ছিলো, তবে মানুষের গোছানো জীবনযাত্রায় যে বড় একটি পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে, তারই আভাস মেলে এতে। নৌকায় ইব্রাহিম বয়াতির পরিবেশনায় "শের এ খোদা আলি সায়েব" গানটি দারুণ লাগসই, চিত্রায়নও ভালো। সারা সিনেমাতেই ছোটো ছোটো রূপক দৃশ্য রয়েছে, যেমন কাজী সাহেব কেবল খোলা জানালা বন্ধ করে দেন, পিচ গলানো চুলার পাশ দিয়ে চলে যায় দশ বারোজনের একটি ছোট মিছিল, এমন আরো। শিল্প নির্দেশনা বুঝি কম, কিন্তু ভালো লেগেছে শিল্প নির্দেশকদের কাজ, যখন দেখি রাস্তার দেয়ালে কাজী সাহেবের পেছনে সিনেমার পোস্টারগুলিতে সেই আমলের সিনেমার নাম আর চরিত্র, কিন্তু এ-ও মনে হয়েছে, যেন এই পোস্টার জোর করেই দেখানো হচ্ছে দর্শককে। গ্রামের গানের আসরের দু'টির চিত্রায়নই চমৎকার, শিল্পীদের তন্ময় ভাবটা খুব ফুটেছে। আমি এমন পরিবেশন বাস্তবে খুব বেশি দেখিনি, কিন্তু ঐ ঘোরাবিষ্ট অভিব্যক্তি মনে ছাপ ফেলে, ফলে গানের আসরে সঙ্গীত ও যন্ত্রীদের চেনা মনে হয়েছে। মাটির ময়না চুরানব্বই মিনিটের সিনেমা, কিন্তু দর্শককে ধরে রাখতে পারে। সিনেমা দেখে শেষ করে মনে হয়, আনুর মা শেষ পর্যন্ত যেন ভূখন্ডটিরই প্রতিনিধিত্ব করেন, সিনেমা যত গড়ায়, তিনিও যেন পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে বাংলাদেশ হয়ে ওঠেন। তাঁর ভেতরে কোনো দ্রোহ নেই, আছে কষ্ট, শোক আছে, বিহ্বলতা আছে, স্মৃতি আছে, সব মিলিয়ে আনুর মা নিরাপদ উঠোন থেকে আক্রান্ত দেশ হয়ে ওঠেন ক্রমে। হঠাৎ মনে হয়, সিনেমাটি হয়তো তাঁকে ঘিরেই "বলা হয়েছে" খুব মৃদু স্বরে। আসমার ভূমিকায় রিমঝিমের অভিনয় খুব ভালো লেগেছে। তাকে দেখে মনে পড়ে গেলো আমার বোনের মেয়ের কথা, যাকে বেবিসিট করেছি দীর্ঘদিন। পোস্টটি তাই হিমু মামার পক্ষ থেকে রিমঝিমকেই উৎসর্গ করলাম।
false
fe
একটি তুলনামূলক আলোচনা _ খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার ভারত সফর শেখ হাসিনা সম্প্রতি ভারত সফর করে এলেন। খালেদা জিয়া গিয়েছিলেন ২০০৬ সালে। বেগম খালেদা জিয়া কী এনেছিলেন সে সময়ে ? এর একটা ক্ষুদ্র তুলনামূলক আলোচনা এখানে তুলে ধরা হলো । এবার শেখ হাসিনার সফরে সন্ত্রাস দমনে তিন চুক্তি এবং বিদ্যুৎ আমদানি ও সাংস্কৃতিক বিনিময় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যু। ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বাস মিলেছে অর্থনৈতিক ও সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে স্বাক্ষরিত চুক্তি তিনটি হচ্ছে ১. অপরাধ দমনে পারস্পরিক আইনগত সহযোগিতা চুক্তি ২. সাজাপ্রাপ্ত আসামি হস্তান্তর চুক্তি এবং ৩. আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমন ও মাদক পাচার প্রতিরোধ চুক্তি। এছাড়া বিদ্যুৎ আমদানি ও সাংস্কৃতিক বিনিময় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ভবিষ্যতে ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। এছাড়াও ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে নদী খনন, রেল ও সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়। কোনো একক দেশকে ভারতের এই বিপুল আর্থিক সাহায্য দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। ভারতের বাজারে বাংলাদেশের আরো ৪৭টি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার করার অনুমতি দিয়েছে এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে ট্রানজিট দেবে ভারত। এ সফরে টিপাইমুখ প্রকল্প ও তিস্তা নদীসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যু সমাধানে ফলপ্রসূ আলোচনা ও আশ্বাসও মিলেছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টনে চুক্তি করার ব্যাপারে বাংলাদেশের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও এবারের সফরে তিস্তার পানি বণ্টনে কোনো চুক্তি সই হয়নি। তবে খুব শিগগিরই ‘যৌথ নদী কমিশন’ (জেআরসি) ও মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ড কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়াকে সন্ত্রাস ও দারিদ্র্যমুক্ত শান্তির আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকারও করেন তিনি। বৈঠকে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং আবারো আশ্বস্ত করেন, বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু করবে না ভারত। ড. মনমোহন সিং আরো আশ্বাস দেন, বাংলাদেশ থেকে অধিক সংখ্যক পণ্য ভারতে প্রবেশাধিকার দেয়া হবে। সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ইস্যু জাতিসংঘে নিয়ে যাওয়ায় বৈঠকে অস্বস্তি প্রকাশ করে ইস্যুটি সালিস আদালত থেকে প্রত্যাহার করে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির প্রস্তাব করে ভারতীয় পক্ষ। বাংলাদেশ এ বিষয়ে কিছুই বলেনি। শীর্ষ বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে, সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপকে সক্রিয় করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর শেষে গত ১২ জানুয়ারি প্রদত্ত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘোষণায় উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে সহযোগিতার অঙ্গীকার করা হয়। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ ও ভারত তাদের একে অন্যের সমুদ্র, রেল ও সড়কপথ ব্যবহার করতে দিতে রাজি হয়েছে। নেপাল ও ভুটানে ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশকে তার ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। অন্যদিকে বাংলাদেশ চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতকে ব্যবহার করতে দেবে। যদিও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও মংলা বন্দর বাংলাদেশ শুধু ভারতকে নয়, নেপাল ও ভুটানকেও দেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে ভারত রাজি আছে কিনা সে সম্পর্কে যৌথ ঘোষণায় কিছুই বলা হয়নি। ৫০ দফার যৌথ ঘোষণায় সন্ত্রাসবাদ দমন, ট্রানজিট, সীমান্ত বিরোধ ও ব্যবস্থাপনা, তিস্তা নদীসহ অভিন্ন ৫৪ নদীর পানিবণ্টন, বাণিজ্য বৈষম্য বিলোপ ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা হয়। এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের আশুগঞ্জ ও ভারতের শীলঘাট বন্দরকে পরস্পর ব্যবহার করতে ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণা করা হয়েছে। আশুগঞ্জ থেকে ‘ওভার ডাইমেনশনাল কার্গো’ (ওডিসি) ওয়ান টাইম কিংবা দীর্ঘ মেয়াদে পরিবহনে ব্যবহারের অবকাঠামো উন্নয়নে একটি যৌথ প্রতিনিধিদল সফর করে পর্যালোচনা করবে। এই উন্নয়নের জন্য ভারত প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করবে। অন্যদিকে ২০০৬ সালের ২০-২২ মার্চ বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শেষ সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, বর্তমান বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া ভারত সফর করেন। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত সে সফরকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল দুদেশেই। তখন দুদেশের মধ্যে দুটি গতানুগতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এগুলো হচ্ছে মাদক পাচার বা চোরাচালান রোধে সহযোগিতা চুক্তি এবং বাণিজ্য উন্নয়ন চুক্তি। বাংলাদেশের জনগণ আশা করেছিল, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা চুক্তিসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, বাণিজ্য ঘাটতি ও তিনবিঘা করিডোরসহ অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সুরাহা না হলেও আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। অথচ সে সময় এ ইস্যুগুলো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উত্থাপনই করা হয়নি। খোদ সরকারের কাছে বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকায় ওই সফরের যৌথ বিবৃতিতেও দুদেশের মধ্যকার এক নম্বর সমস্যা অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন নিয়ে একটি শব্দও স্থান পায়নি। এমনকি ওই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী পানিমন্ত্রী বা কোনো পানি বিশেষজ্ঞও ছিলেন না। আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, খালেদা জিয়ার ভারত সফরের সময় সীমান্ত সমস্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছিল কিনা যৌথ বিবৃতিতে তারও উল্লেখ ছিল না। অথচ প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সীমান্ত সমস্যা। ওই সফরের আগে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব হেমায়েত উদ্দিন কিন্তু বেশ ঘটা করেই সংবাদ সম্মেলনে এসব ব্যাপারে আলোচনা হবে বলেই জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতেও হেমায়েত উদ্দিন ওই সফরকে ফলপ্রসূ বা সম্পর্কের টার্নিং পয়েন্ট বলে গেছেন। তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে ওই সফর একধাপ এগিয়ে গিয়েছে একথা বলতে পারেননি। উপরন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কোনো সংবাদ সম্মেলনে সফরের প্রাপ্তির কথা জানাননি। স্বভাবতই ওই সফরের সময় শীর্ষ বৈঠকের পরদিন সংবাদপত্রগুলোর শিরোনাম ছিল ‘নিরাপত্তা বাণিজ্যসহ সব বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার’, ‘শুভেচ্ছাতেই সীমাবদ্ধ সফর’, ‘বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি সই: খালেদা-মনমোহন বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে মতৈক্য’, ‘বাংলাদেশের প্রাপ্তি শূন্য’ ইত্যাদি। আজ যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে টানাপড়েনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্কে রূপান্তরিত করে দেশ ফিরেছেন, সে সময়ে বিরোধী দলসহ বিভিন্ন মহল এ সফরকে ব্যর্থ দেখাতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে নস্যাৎ করার কুৎসিত ষড়যন্ত্রের চর্চা এদেশে অব্যাহত রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। এ ষড়যন্ত্র কখনো কখনো হয়ে ওঠে রাজনীতির হাতিয়ার। আজকের বিশ্বায়নের যুগে যখন সারা দুনিয়া অর্থনৈতিক কূটনীতিকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিচ্ছে, সে সময়ে এ ভারত বিদ্বেষী মনোভাবের নামে সরকারকে সহযোগিতার বদলে অসহযোগিতা করার মানসিকতা জনগণের কাছে কতোটা গ্রহণযোগ্য হবে সে প্রশ্নই সকলের। সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:২৯
false
rg
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৪ ও কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয়!! গতকাল বুধবার ১১ মে ২০১৬ শেরে বাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৪ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের নির্মাতা, প্রযোজক, শিল্পী, কলাকুশলী, পরিবেশক ও সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের এক মিলনমেলায় পরিনত হয় জমকালো অনুষ্ঠান। এই প্রথম কোনো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম। যে কারণে অনুষ্ঠানের সকল অভিজ্ঞতাও আমার কাছে প্রথম।কিন্তু অনুষ্ঠানের কিছু সুস্পষ্ট বিষয়ের প্রতি আমি তথ্য মন্ত্রণালয়ের সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করছি। ২০১৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হিসাবে বছরের শুরুতে প্রথমে মুরাদ পারভেজ পরিচালিত ’বৃহন্নলা’ ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ ছবি’র পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের গল্প চুরির অভিযোগে মুরাদ পারভেজের ছবি ‘বৃহন্নলা’ কে পুরস্কারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। পরে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মাসুদ পথিক পরিচালিত ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ ছবি হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এটা নিয়ে আগেও আমরা অনেক লেখালিখি করেছি। কিন্তু আজকের অনুষ্ঠানেও মুরাদ পারভেজ ভূত ভর করেছিল।অনুষ্ঠানে ২০১৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হিসাবে ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ছবিটির নাম ঘোষণার সময় প্রযোজক হিসাবে মাসুদ পথিকের নামের সঙ্গে ঘোষিকা মুরাদ পারভেজ জুড়ে দেন! ঘোষিকা ঘোষণা করেন ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ শ্রেষ্ঠ ছবির প্রযোজক মাসুদ পথিক মুরাদ পারভেজ! মাসুদ পথিক যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার গ্রহণ করছেন, তখন ঘোষিকা দ্বিতীয়বার উচ্চারণে শুধু মাসুদ পথিক বলেছেন।আমার প্রশ্ন হলো, যে অনুষ্ঠানে স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে, যেখানে স্বয়ং তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব এবং জাতীয় সংসদের তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপস্থিত, সেই অনুষ্ঠানে একজন ঘোষিকার পক্ষে লিখিত স্ক্রিপ্টের বাইরে একটি শব্দও কী উচ্চারণ করা সম্ভব? জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ ছবির প্রযোজকের নাম কীভাবে ঘোষিকা ভুল করেন? নাকি এই ভুল ইচ্ছাকৃত? কারণ মাসুদ পথিকের নামের সঙ্গে এই ‘মুরাদ পারভেজ’ যোগ করার মধ্যে একটি ছোট্ট ইনটেনশন বা রাজনীতি ছিল। যা উপস্থিত দর্শকদের কাছে দৃষ্টিকটু ঠেকেছে।একজন ঘোষিকা যিনি শ্রেষ্ঠ ছবির প্রযোজকের নাম ভুল পড়েন, তিনি কোন যোগ্যতায় এমন একটি জাতীয় অনুষ্ঠানে ঘোষিকা হবার সুযোগ পান? কাদের ইসারায় এমন ঘোষিকারা জাতীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন? এটা কী আমাদের জাতীয় লজ্বা নাকি এর ভেতরে আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গনের নোংরা রাজনীতির কোনো অশুভ ইঙ্গিত দৃশ্যমান? একজন ঘোষিকা তো ঠিকমত ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’-ই উচ্চারণ করতে পারলেন না, নাকি এটাও ইচ্ছাকৃত ভুল? তথ্য মন্ত্রণালয় এসব ভুল নিয়ে জাতিকে আসলে কী উপহার দিচ্ছে!জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৪ উপলক্ষ্যে তথ্য মন্ত্রণালয় একটি ৪৬ পৃষ্ঠার স্মরণিকা বের করেছে। সেখানেও ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ছবিটি যে কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ কবিতা অবলম্বনে নির্মিত সেই কথাটি কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। নাকি এটাও ইচ্ছাকৃত ভুল। যেখানে প্রযোজকের পক্ষ থেকে ছবির বর্ণনায় শুরুতেই এই কথাটির উল্লেখ ছিল, সেটি কী কারণে বাদ যায়? তাছাড়া বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো কবিতা অবলম্বনে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সেই কথাটি স্মরণিকায় উল্লেখ না থাকাটা কী কেবল তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভুল নাকি এখানেও সেই নোংরা রাজনীতির কোনো কারসাজি আছে? ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ছবিটি শ্রেষ্ঠ ছবির পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক, শ্রেষ্ঠ গীতিকার, শ্রেষ্ঠ সুরকার, শ্রেষ্ঠ গায়িকা ও শ্রেষ্ঠ মেকাপ আর্টিস্ট পুরস্কার বিজয়ী। অথচ স্মরণিকায় ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ছবির গানের যে লিরিক ব্যবহার করা হয়েছে সেখানেও গানের কলিতে ভুল! এটাও কী ইচ্ছাকৃত নাকি তথ্য মন্ত্রণালয় এরকম ভুল সবসময়ই করে থাকে?অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৪ তুলে দেন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ এমপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। স্বাগত বক্তব্য দেন তথ্য সচিব মরতুজা আহমদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন বিমানে চড়েন তখন সিনেমা দেখেন। বিষয়টি জানতে পেরে ভালো লাগলো। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরো উন্নয়ন করার যে আশাবাদ তিনি ব্যক্ত করলেন, সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু চমৎকার বক্তৃতা করলেন। এমন চৌকশ একজন মন্ত্রী’র নেতৃত্বে প্রকাশিত এমন একটি স্মরণিকায় এত ভুল স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমার আশংকা এর ভেতরে অন্য কোনো নোংরা রাজনীতি জড়িত।২০১৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হিসাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন সৈয়দ হাসান ইমাম ও রাণী সরকার। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’, প্রযোজক মাসুদ পথিক। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক পুরস্কার পেয়েছেন জাহিদুর রহিম অঞ্জন (চলচ্চিত্র: মেঘমাল্লার)। শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে ‘গাড়িওয়ালা’, প্রযোজক মো. আশরাফুল আলম (আশরাফ শিশির)।শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার পেয়েছেন ফেরদৌস আহমেদ (চলচ্চিত্র: এক কাপ চা)। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভাবে মৌসুমী (চলচ্চিত্র: তাঁরকাটা) ও বিদ্যা সিনহা মিম (চলচ্চিত্র: জোনাকির আলো)। শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা পুরস্কার পেয়েছেন শাহ মো. এজাজুল ইসলাম (চলচ্চিত্র: তাঁরকাটা) ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন চিত্রলেখা গুহ (চলচ্চিত্র: ৭১ এর মা জননী)। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খল চরিত্রে পুরস্কার পান তারিক আনাম খান (চলচ্চিত্র: দেশা দ্যা লিডার) ও শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্রে পুরস্কার পান মিশা সওদাগর (চলচ্চিত্র: অল্প অল্প প্রেমের গল্প)। শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী পুরস্কার পান আবির হোসেন অংকন (চলচ্চিত্র: বৈষম্য) ও শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার পান মারজান হোসাইন জারা (চলচ্চিত্র: মেঘমাল্লার)।শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক পুরস্কার পান ড. সাইম রানা (চলচ্চিত্র: নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ), শ্রেষ্ঠ গায়ক পুরস্কার পান মাহফুজ আনাম জেমস (চলচ্চিত্র: দেশা দ্যা লিডার), শ্রেষ্ঠ গায়িকা পুরস্কার পান যৌথভাবে রুনা লায়লা (চলচ্চিত্র: প্রিয়া তুমি সুখী হও) ও মমতাজ (চলচ্চিত্র: নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ)। শ্রেষ্ঠ গীতিকার পুরস্কার পান মাসুদ পথিক (চলচ্চিত্র: নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ), শ্রেষ্ঠ সুরকার পুরস্কার পান বেলাল খান (চলচ্চিত্র: নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ)।শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার পুরস্কার পান আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (চলচ্চিত্র: মেঘমাল্লার)। শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার পুরস্কার পান সৈকত নাসির (চলচ্চিত্র: দেশা দ্যা লিডার)। শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা পুরস্কার পান জাহিদুর রহিম অঞ্জন (চলচ্চিত্র: মেঘমাল্লার)। শ্রেষ্ঠ সম্পাদকের পুরস্কার পান তৌহিদ হোসেন চৌধুরী (চলচ্চিত্র: দেশা দ্যা লিডার)। শ্রেষ্ঠ শিল্পনির্দেশকের পুরস্কার পান মারুফ সামুরাই (চলচ্চিত্র: তাঁরকাটা)। শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক পুরস্কার পান মোহাম্মদ হোসেন জেমী (চলচ্চিত্র: বৈষম্য)। শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক পুরস্কার পান রতন পাল (চলচ্চিত্র: মেঘমাল্লার)। শ্রেষ্ঠ পোষাক ও সাজসজ্জা পুরস্কার পান কনক চাঁপা চাকমা (চলচ্চিত্র: জোনাকির আলো)। শ্রেষ্ঠ মেকাপম্যান পুরস্কার পান আবদুর রহমান (চলচ্চিত্র: নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ)।২৬টি ক্যাটাগরিতে মোট ২৯ জন শিল্পী ও কলাকুশলী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৪ বিজয়ী হন। আজীবন সন্মাননা পাওয়া দুই অভিনয় শিল্পীকে দেড় লাখ টাকা, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালককে এক লাখ টাকা করে এবং অন্যদের ৫০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। এছাড়া প্রত্যেককে ১৮ ক্যারেট ১৫ গ্রাম ওজনের স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। তবে অনুষ্ঠানে পদকের রেপ্লিকা দেওয়া হয়, যা ছিল ছয় গ্রাম স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া ব্রোঞ্জের।পুরস্কার বিতরণের পর শুরু হয় জমজমাট আলো ঝলমলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নাচ-গান আর হৈ চৈ এর এই পর্বে উপস্থাপনায় ছিলেন অভিনেতা রিয়াজ এবং অভিনেত্রী নওশীন। নৃত্যশিল্পী মৌ তাঁর দলসহ মঞ্চে কিছু নান্দনিক নৃত্য পরিবেশনা করেন। শিল্পিী ফাহমিদা নবী গেয়ে শোনান 'লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’ গানটি আর সঙ্গীতশিল্পী মমতাজ শোনান 'নিশি পঙ্খী' ও 'আগে যদি জানতামরে বন্ধু’ গান দুটি। এছাড়াও অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেন অমিত হাসান, ওমর সানী, নিরব, ইমন, তমা মির্জা, পরীমনি, আইরিন এবং ভাবনা।..........................১১ মে ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৩:২৭
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৪০ ১. অসহ্য লাগে এক একটা আয়ুষ্মান দিন, ভোরে জন্মে প্রায় মাঝরাতে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে রোদের, রাত ন'টাতেও জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে কৌতূহলী রোদের বৃদ্ধ আস্তিন হেলান দিচ্ছে ঘরের দেয়ালে। এতোখানি উত্তর অক্ষাংশে আগে কখনো গ্রীষ্ম কাটাইনি, আমার শরীরের ঘড়ি তাই বিকেলের রোদেই সন্ধ্যার ইঙ্গিত দিতে থাকে। ভোরে ঘুম থেকে ওঠাও একটা কিচ্ছা। ভোরে বেশ ভালোই ঠান্ডা থাকে, লেপের আরামটুকু ছেড়ে বেরোতে ভাল্লাগেনা। ওদিকে রাতেও ঘুমাতে দেরি হয়ে যায়। রীতিমতো আপদ। গতকাল এক্সকারশন ছিলো নয়ডর্ফ বলে এক জায়গায়, একটা ভিন্ডপার্কে। কাসেল থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে সে জায়গাটা, অপূর্ব সর্ষে ক্ষেতের মাঝখানে দানবের বউয়ের মতো এক একটা ফুটফুটে উইন্ড টারবাইন আনমনে ঘুরে চলছে হু হু বাতাসের স্রোতে ডানা ভাসিয়ে। ক্যামেরা সাথে নিয়েছিলাম, কিছু ছবিও তুলেছি, তবে আমার ক্যামেরা ম্যানুয়াল বলে ফিল্ম ডেভেলপ করার আগে তেমন কিছু দিতে পারছি না। আর সবচেয়ে শ্বাসরুদ্ধকর জায়গায় ক্যামেরা নিয়ে আর ওঠা যায়নি বলে টারবাইনের চূড়া থেকে আশপাশটা চর্মচোখে দেখেই কর্ম সেরে আসতে হয়েছে। দুঃখিত। আমাদের এক্সকুরজিওনের আয়োজিকা ছিপছিপে কাথরিন, ওর গাড়িতে চড়েই গিয়েছি নয়ডর্ফে। নয়ডর্ফ যাওয়ার পথও অপূর্ব সুন্দর, ঘন বিশাল উঁচু সব গাছ রাস্তার দুই পাশে, একটু পর পর হরিণ পারাপারের চিহ্ন। নয়ডর্ফ একেবারেই গ্রাম, খেতে চড়ে বেড়াচ্ছে ঘোড়া আর ভেড়া, বাড়ির পাশে পাকা আস্তাবলে গোমড়ামুখো জার্মান গরু কী যেন চিবাচ্ছে, তার পাশেই ওয়ার্কশপে পড়ে আছে চাষের নানা যন্ত্রপাতি, সরু রাস্তার পাশে অলস হেঁটে বেড়াচ্ছেন গ্রামের বুড়িদাদীরা। আমরা মোট এগারোজন, ওদিকে পার্কের মালিকপক্ষের তিনজন অপেক্ষা করছিলেন আমাদের জন্যে। তাঁরা জার্মানির একদম শুরুর দিকের টারবাইনগুলির সাথে জড়িত ছিলেন, এখন ঈশ্বরের রহমতে নিজেরাই ব্যবসা করছেন। পাঁচটা টারবাইন নিয়ে তাঁদের দশ মেগাওয়াটের পার্ক, মোটামুটি এগারো মিলিয়ন ইউরো (একশো দশ কোটি টাকার মতো) খরচা পড়েছে মোটমাট। আমাদের দেশে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির ইরেকশন কস্ট মোটামুটি প্রতি মেগাওয়াট তিন কোটি, আর এর পর বাকিটা খাবার খরচ, স্থলভাগে বায়ুবিদ্যুতের ইরেকশন কস্ট মোটামুটি তিনগুণ হলেও অপারেশনাল কস্ট প্রায় নেই বললেই চলে। ভেস্তাস ডেনমার্কের নামকরা উইন্ড টারবাইন নির্মাতা, এক সময় ইন্ডাস্ট্রির মাথা ছিলো তারাই (এখন এনারকন ভেস্তাসকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে গেছে), জার্মানিতেও তাদের মার্কেট খারাপ ছিলো না বছর ছয়েক আগে। এক একটা টারবাইনের হাব হাইট নব্বই মিটার, রোটর ব্যাস আশি মিটার। টিলার চূড়ায় একেকটা টারবাইনের টাওয়ার, রোটরের ঘূর্ণনের ফলে সাগরের স্রোতের মতো শব্দ ভেসে আসছে ওপর থেকে। একটা টারবাইনের নিচে গিয়ে না দাঁড়ালে ঠিক বোঝা যায় না জিনিসটা কী বিশাল। আমাদের জন্যে কয়েক পদের পানীয় মজুদ ছিলো টাওয়ারের গোড়ায়, তাতে চুমুক দিতে দিতে জনাব ব্রুনোর বক্তৃতা শুনলাম সবাই। ষাটের কাছাকাছি বয়স হবে, রীতিমতো জোয়ানের মতোই চলাফেরার ভঙ্গি, বরং তাঁর ছেলেকে দেখে অনেক বেশি ল্যাবা মনে হলো। বক্তৃতা শেষ করে টাওয়ারে চড়া শুরু হলো। মই বেয়ে টাওয়ারে চড়ার অভিজ্ঞতা আমার খুব কম নয়, কিন্তু নব্বই মিটার আগে কখনো চড়িনি। তাছাড়া দেশে টাওয়ারে চড়ার সময় কোন ধরনের নিরাপত্তা-বেল্ট ব্যবহার করিনি, কারণ দেশে কোন টাওয়ারেই ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সেফটি লাইন বাঁধা নেই, বেল্টের হুক বাঁধবো কীসের সাথে? নয়ডর্ফের টাওয়ারগুলিতে তা-ও মই মাটির সাথে নব্বই ডিগ্রী কোণ করে আছে, অন্যান্য টারবাইনের টাওয়ারে মই থাকে দেয়ালের সাথে গাঁথা, আর টাওয়ারও ক্রমশ সরু হতে থাকে বলে একটা পর্যায়ে গিয়ে রীতিমতো ঝুলে ঝুলে উঠতে হয়। প্রফেসর হায়ার একদিন পরম তৃপ্তির সাথে কিছু ছবি দেখাচ্ছিলেন, পোলাপাইন অনেকেরই দেখেছিলাম মুখ শুকিয়ে গেছে। টাওয়ারের গন্ডেল, অর্থাৎ চোঙার ভেতরে খুব সামান্যই ফাঁকা জায়গা, সেখানেই পালা করে দাঁড়িয়ে যা দেখার দেখলাম সবাই। গন্ডেলের ঘুলঘুলি খুলে মাথা বার করে যা দেখলাম তা খুবই দারুণ ব্যাপার। নিচে অপূর্ব টুকরো টুকরো হলুদ সর্ষে ক্ষেত আর সবুজ বন, যতদূর পর্যন্ত দেখা যায়, একই রকম। খুবই আফসোস হচ্ছিলো ক্যামেরার জন্য, কিন্তু ক্যামেরা নিয়ে ওপরে ওঠা সম্ভব ছিলো না। আমরা যতক্ষণ ছিলাম ওপরে, টারবাইন লক করা ছিলো বলে ব্লেডগুলো ঘোরার দৃশ্য আর কাছ থেকে দেখা হয়নি, চল্লিশ মিটার দীর্ঘ বিশাল তিনটা ব্লেড নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো শূন্যে, শুধু পুঁচকে অ্যানেমোমিটার ঘুরে চলছিলো বনবন করে। বাতাসের বেগ ওরকম উচ্চতায় ভয়ানক, সাতআট মিটার প্রতি সেকেন্ডে। বাংলাদেশের দক্ষিণে কিছু স্পটে একশো মিটার উচ্চতায় ছয় থেকে সাত মিটার প্রতি সেকেন্ডে পাওয়া সম্ভব, হিসেব করে দেখেছিলাম। যতক্ষণ নিচে ছিলাম, আরেক ভদ্রলোকের সাথে আলাপ হচ্ছিলো। আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে তিনি খুব উৎসাহ নিয়ে গেস্টবুক বার করে দেখালেন, বাংলাদেশ থেকে আগেও আরো চারজন অতিথি এসেছিলেন এই পার্ক দেখতে। জার্মানির অজ পাড়াগাঁয়ের ভিন্ডপার্কের অতিথির খাতায় সুন্দর হস্তাক্ষরে বাংলায় লেখা মন্তব্য দেখে খুব ভালো লাগলো, মনে মনে বললাম, হুঁ হুঁ বাবা, দুনিয়াতে প্রতি চল্লিশ জনে একজন বাংলাদেশী, প্রতি তিরিশজনে একজন বাঙালি, যাবা কই? এক্সকারশন শেষে একটা প্লাস্টিকের গ্লাসে করে বিয়ারের খরচ চাঁদা করে ওঠানো হলো। তারপর কয়েকটা গ্রুপ ছবি তুলে আবার কাসেলের দিকে যাত্রা শুরু হলো। ২. এই ক'দিনে কাজের ফাঁকে আরো কিছু সিনেমা দেখলাম। খেকশিয়ালকে ধন্যবাদ, চমৎকার লেগেছে "দ্য প্রেস্টিজ" দেখে। জাড আপাতো-র "নকড আপ" দেখেছিলাম দুর্দান্তের সুপারিশে, সেটাও দারুণ লেগেছে। মোটামুটি লাগলো "হাউ টু রব আ ব্যাঙ্ক" আর "আই অ্যাম লিজেন্ড" দেখে, যদিও শেষেরটাকে পিচ ব্ল্যাক আর আই রোবোট এর একটা ককটেল বলে মনে হচ্ছিলো কেন যেন। আরও একটা ছবি ভালো লেগেছে, "কিস কিস ব্যাং ব্যাং।" এ সপ্তাহে লালনীল সুতার বাম্পার ফলন হবে মনে হচ্ছে, অন্তত নোটবুক দেখে তা-ই মনে হচ্ছে।
false
rn
রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে লেখা তসলিমা নাসরিনের চিঠি প্রিয় রুদ্র,প্রযত্নে, আকাশতুমি আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে বলেছিলে। তুমি কি এখন আকাশ জুরে থাকো? তুমি আকাশে উড়ে বেড়াও? তুলোর মতো, পাখির মতো? তুমি এই জগত্সংসার ছেড়ে আকাশে চলে গেছো। তুমি আসলে বেঁচেই গেছো রুদ্র। আচ্ছা, তোমার কি পাখি হয়ে উড়ে ফিরে আসতে ইচ্ছে করে না? তোমার সেই ইন্দিরা রোডের বাড়িতে, আবার সেই নীলক্ষেত, শাহবাগ, পরীবাগ, লালবাগ চষে বেড়াতে? ইচ্ছে তোমার হয় না এ আমি বিশ্বাস করি না, ইচ্ছে ঠিকই হয়, পারো না। অথচ এক সময় যা ইচ্ছে হতো তোমার তাই করতে। ইচ্ছে যদি হতো সারারাত না ঘুমিয়ে গল্প করতে – করতে। ইচ্ছে যদি হতো সারাদিন পথে পথে হাটতে – হাটতে। কে তোমাকে বাধা দিতো? জীবন তোমার হাতের মুঠোয় ছিলো। এই জীবন নিয়ে যেমন ইচ্ছে খেলেছো। আমার ভেবে অবাক লাগে, জীবন এখন তোমার হাতের মুঠোয় নেই। ওরা তোমাকে ট্রাকে উঠিয়ে মিঠেখালি রেখে এলো, তুমি প্রতিবাদ করতে পারোনি।আচ্ছা, তোমার লালবাগের সেই প্রেমিকাটির খবর কি, দীর্ঘ বছর প্রেম করেছিলে তোমার যে নেলী খালার সাথে? তার উদ্দেশ্যে তোমার দিস্তা দিস্তা প্রেমের কবিতা দেখে আমি কি ভীষণ কেঁদেছিলাম একদিন ! তুমি আর কারো সঙ্গে প্রেম করছো, এ আমার সইতো না। কি অবুঝ বালিকা ছিলাম ! তাই কি? যেন আমাকেই তোমার ভালোবাসতে হবে। যেন আমরা দু’জন জন্মেছি দু’জনের জন্য। যেদিন ট্রাকে করে তোমাকে নিয়ে গেলো বাড়ি থেকে, আমার খুব দম বন্ধ লাগছিলো। ঢাকা শহরটিকে এতো ফাঁকা আর কখনো লাগেনি। বুকের মধ্যে আমার এতো হাহাকারও আর কখনো জমেনি। আমি ঢাকা ছেড়ে সেদিন চলে গিয়েছিলাম ময়মনসিংহে। আমার ঘরে তোমার বাক্সভর্তি চিঠিগুলো হাতে নিয়ে জন্মের কান্না কেঁদেছিলাম। আমাদের বিচ্ছেদ ছিলো চার বছরের। এতো বছর পরও তুমি কী গভীর করে বুকের মধ্যে রয়ে গিয়েছিলে ! সেদিন আমি টের পেয়েছি।আমার বড়ো হাসি পায় দেখে, এখন তোমার শ’য়ে শ’য়ে বন্ধু বেরোচ্ছে। তারা তখন কোথায় ছিলো? যখন পয়সার অভাবে তুমি একটি সিঙ্গারা খেয়ে দুপুর কাটিয়েছো। আমি না হয় তোমার বন্ধু নই, তোমাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম বলে। এই যে এখন তোমার নামে মেলা হয়, তোমার চেনা এক আমিই বোধ হয় অনুপস্থিত থাকি মেলায়। যারা এখন রুদ্র রুদ্র বলে মাতম করে বুঝিনা তারা তখন কোথায় ছিলো?শেষদিকে তুমি শিমুল নামের এক মেয়েকে ভালোবাসতে। বিয়ের কথাও হচ্ছিলো। আমাকে শিমুলের সব গল্প একদিন করলে। শুনে … তুমি বোঝোনি আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। এই ভেবে যে, তুমি কি অনায়াসে প্রেম করছো ! তার গল্প শোনাচ্ছো ! ঠিক এইরকম অনুভব একসময় আমার জন্য ছিলো তোমার ! আজ আরেকজনের জন্য তোমার অস্থিরতা। নির্ঘুম রাত কাটাবার গল্প শুনে আমার কান্না পায় না বলো? তুমি শিমুলকে নিয়ে কি কি কবিতা লিখলে তা দিব্যি বলে গেলে ! আমাকে আবার জিজ্ঞেসও করলে, কেমন হয়েছে। আমি বললাম, খুব ভালো। শিমুল মেয়েটিকে আমি কোনোদিন দেখিনি, তুমি তাকে ভালোবাসো, যখন নিজেই বললে, তখন আমার কষ্টটাকে বুঝতে দেইনি। তোমাকে ছেড়ে চলে গেছি ঠিকই কিন্তু আর কাউকে ভালোবাসতে পারিনি। ভালোবাসা যে যাকে তাকে বিলোবার জিনিস নয়।আকাশের সঙ্গে কতো কথা হয় রোজ ! কষ্টের কথা, সুখের কথা। একদিন আকাশভরা জোত্স্নায় গা ভেসে যাচ্ছিলো আমাদের। তুমি দু চারটি কষ্টের কথা বলে নিজের লেখা একটি গান শুনিয়েছিলে। “ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি দিও”। মংলায় বসে গানটি লিখেছিলে। মনে মনে তুমি কার চিঠি চেয়েছিলে? আমার? নেলী খালার? শিমুলের? অনেক দিন ইচ্ছে তোমাকে একটা চিঠি লিখি। একটা সময় ছিলো তোমাকে প্রতিদিন চিঠি লিখতাম। তুমিও লিখতে প্রতিদিন। সেবার আরমানিটোলার বাড়িতে বসে দিলে আকাশের ঠিকানা। তুমি পাবে তো এই চিঠি? জীবন এবং জগতের তৃষ্ণা তো মানুষের কখনো মেটে না, তবু মানুষ আর বাঁচে ক’দিন বলো? দিন তো ফুরোয়। আমার কি দিন ফুরোচ্ছে না? তুমি ভালো থেকো। আমি ভালো নেই।ইতি,সকালপুনশ্চঃ আমাকে সকাল বলে ডাকতে তুমি। কতোকাল ঐ ডাক শুনি না। তুমি কি আকাশ থেকে সকাল, আমার সকাল বলে মাঝে মধ্যে ডাকো? নাকি আমি ভুল শুনি?
false
hm
হিউস্টন, উই হ্যাভ আ প্রবলেম ১. নাচ শেষ করে মঞ্চের আড়ালে ফিরবার পথে নাদিয়ার বুক দুরুদুরু করে ওঠে। বন্ধু শিবানীর হাত খামচে ধরে সে। "শিবা, দেখরে নি!" কাঁপা গলায় বলে নাদিয়া। শিবানী বেশ লম্বাচওড়া, নাদিয়ার মতো ছিপছিপে পল্লবিনীলতা নয়, তাছাড়া নাচ শেখার পাশাপাশি সে স্পোর্টসেও দক্ষ, শটপুটে প্রাইজ পেয়েছে কলেজ জীবনে, নাদিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে লোকটাকে দেখে সে আপাদমস্তক। "খেগু বে ইগু?" নিচু গলায় প্রশ্ন করে শিবানী, তার হাতের মুঠি পাকানো। ছোটখাটো লোকটার মাথায় চুল কম, কিন্তু বড় জুলফি। চোখে চশমা। টিশার্টের আড়ালে ভুঁড়ির আভাস। হাতে একটা ডিজিটাল ক্যামেরা, মীর জুমলার কামানের মতো বিশাল তার লেন্স। "ইগুর কতা কইসি নানি বে? খিতা জিগাইরে! লাগের ই বেটায় আমারে ফলো খরের!" নাদিয়ার গলা কেঁপে ওঠে অস্বস্তি আর আশঙ্কায়। লোকটা নির্ণিমেষ নয়নে তাকিয়ে আছে নাদিয়ার দিকে। শিবানী নাদিয়ার হাত ধরে টান দেয়। "আয় বে, জাইগি! ইস্টেজর মাজে উবাইয়া খিতা খরতে?" নাদিয়া একটু লজ্জিত হয়ে দ্রুত পায়ে চলে আসে স্টেজের পেছনে। প্রোগ্রাম শেষ তার। বন্ধুদের সাথে একটু আড্ডার ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না তার। তাড়াহুড়ো করে নূপুর খুলে ব্যাগে ভরে পার্কিঙের দিকে পা চালায় নাদিয়া, পাশে শিবানী, ইতিউতি চাইছে আশেপাশে। নাহ, সেই লোকটাকে আর দেখা যাচ্ছে না। ২. লোকটাকে নাদিয়া প্রথম খেয়াল করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে। বন্ধুদের সাথে জোর আড্ডা হচ্ছিলো, হা হা হি হির ফাঁকে সে লক্ষ্য করে, একটা টেবিলে এক কাপ চা নিয়ে বসে আছে লোকটা, চেয়ারে হেলান দিয়ে, হাত দু'টো মাথার পেছনে। স্থির চোখে তাকিয়ে ছিলো নাদিয়ার দিকে। কেমন অশুভ একটা ভাব তার মুখে, যেন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে নাদিয়াকে! অসভ্য ছেলে সে কম দেখেনি ছেলেবেলা থেকে, কিন্তু এই লোকটা তো ছেলে নয়, দস্তুরমতো লোক! দেখলে তো মনে হয় বিয়েশাদিও করেছে, ছেলেপুলেও আছে! তারপরও কেন এইভাবে ইউনিভার্সিটিতে এসে জুলজুলিয়ে তাকিয়ে থাকবে সুন্দরী মেয়েদের দিকে? নাদিয়ার দিকে চেয়ে থেকেই ধীরে ধীরে পকেট থেকে মোবাইল বার করে কী যেন বলছিলো লোকটা। নাদিয়া ত্রস্তপায়ে বেরিয়ে এসেছিলো ক্যান্টিন ছেড়ে। পহেলা বৈশাখে কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাইতে উঠেছিলো নাদিয়া, গানের গলা খারাপ নয় তার, বৃন্দসঙ্গীতে কাজ চালানোর মতো গাইতে সে জানে। সেই অনুষ্ঠানে গানের ফাঁকে নাদিয়া দেখতে পায়, সেই লোকটা! ক্যামেরা বাগিয়ে ছবি তুলে যাচ্ছে! অমঙ্গল আশঙ্কায় নাদিয়ার আত্মা কেঁপে উঠেছিলো। কী চায় লোকটা? বাবাকে বলেনি সে কিছুই। কিন্তু আজ নাচ সেরে বাড়িতে ফিরতে ফিরতে তার মনে হয়, বাবাকে সব খুলে বলা উচিত। ৩. কয়েক দিন কাটে, লেখাপড়ার ব্যস্ততায় নাদিয়া আস্তে আস্তে ভুলে যায় লোকটার কথা। কিন্তু একদিন "বইপত্র" থেকে আনোয়ার সাদাত শিমুলের "অথবা গল্পহীন সময়" কিনে বের হবার পথে নাদিয়া চমকে ওঠে ভীষণ। তার শ্যামলা মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে ওঠে পলকে। সেই লোকটা! আজ তার পরনে ফতুয়া, গলায় মোটা রূপালি চেইন ... আর হাতে সেই ক্যামেরা। নাদিয়া প্রায় ছুটতে থাকে ডানদিকে, মহিলা কলেজের দিকে। একবার পেছন ফিরে তাকায় সে, লোকটা পিছু নিচ্ছে কি না দেখতে। না, একই জায়গায় দাঁড়িয়ে তার দিকে চেয়ে আছে লোকটা। ঐ তো! মোবাইল বার করলো! কাকে ফোন করে সে? কী চায় সে? নাদিয়া ভীষণ ভয় পায়। ৪. নিশুতি রাত। দোতলায় নিজের ঘরে ঘুমাচ্ছে নাদিয়া। পানির পাইপ বেয়ে নিঃশব্দে ঘরে ঢোকে এক ছায়ামূর্তি। ছোটোখাটো, লম্বা জুলফি, ভুঁড়ি আছে। ঘরে ঢুকে প্রথমে নিঃসাড়ে কান পাতে সে, কোথাও কোনো শব্দ নেই। পা টিপে টিপে নাদিয়ার খাটের দিকে এগোয় লোকটা। নাদিয়া কুঁকড়েমুকড়ে শুয়ে আছে এক পাশ ফিরে, গভীর ঘুমে অচেতন, কাঁথা সরে গেছে তার গা থেকে। খুব সাবধানে নাদিয়ার গায়ে কাঁথা তুলে দেয় লোকটা। কাঁথার ওম পেয়ে নাদিয়া এবার চিৎপাত হয়ে টানটান শোয়। কোমরের পাউচ থেকে এবার লোকটা বার করে একটা ফিতা! ফিতা দিয়ে নাদিয়ার মাথা থেকে পা পর্যন্ত মাপে সে। তারপর মোবাইল তুলে আলগোছে ডায়াল করে একটা নাম্বারে। ফিসফিস করে বলে, "তেষট্টি ইঞ্চি, ওভার!" ওপাশ থেকে জবাব আসে, "চেকিং! ওভার!" লোকটা অপেক্ষা করে। ওপাশ থেকে আবার কথা ভেসে আসে। "ঠিকাছে। গ্রেটার দ্যান পাঁচ ফুট, লেস দ্যান পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। কম্পিউটার বলছে সব ওকে! ওভার!" লোকটা ফিসফিস করে বলে, "অখন খিতা খরতাম তে?" ওপাশ থেকে কণ্ঠস্বর বলে, "রিট্রিট! ওভার!" লোকটা বলে, "রজার দ্যাট! উইলকো! ওভার অ্যান্ড আউট!" লোকটা ঘুরে দাঁড়ায় জানালার দিকে, এমন সময় নাদিয়ার ঘুম ভেঙে যায়! সে দেখতে পায়, ঘরের মাঝে দাঁড়িয়ে সেই লোকটা! এক দারুণ ত্রাস গ্রাস করে তাকে, সে প্রবল আর্তনাদ করে ওঠে, "ঈঈঈঈঈঈঈঈঈ! আব্বা গোওওওওও! মারি লাইলো!" নিচে একটা হুটোপুটির শব্দ শোনা যায়, তারপর এক জোড়া পা ধুপধাপ করে উঠে আসতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে। লোকটা বুঝতে পারে, এই পায়ের মালিক অবব্রিগেডিয়ার সফদার জং বাহাদুর না হয়েই যায় না! কাঁপা হাতে মোবাইল তুলে সে ডায়াল করে, তারপর বলে, "হিউস্টন, আলবাব খইরাম! উই হ্যাভ আ প্রবলেম!" আজ নজমুল আলবাবের জন্মদিন। জন্মদিনে তাকে শুক্না কাঁথার শুভেচ্ছা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেবো না। আমার ঘটকালির কাজে সে এক শতাংশও অগ্রসর হয় নাই। সুন্দরী সিলটি পাত্রীদের নিয়ে সে মাস্তি করে বেড়ায় এদিক সেদিক, কিন্তু আমি বিয়েশাদির প্রসঙ্গ তুললেই সে অসুস্থ থাকে, সুন্দরবন যায়, ব্যস্ত থাকে, ছেলের স্কুল থাকে, বৌয়ের অফিস থাকে, আর এইসব কিছু তামাদি হয়ে গেলে তার বাপজান তাকে জরুরি কাজে বাইরে পাঠান। এহেন একজন পাপাত্মাকে আর যাই হোক, শুক্না কাঁথার শুভেচ্ছা জানানো যায় না! আপনারা কেউ জানাতে চাইলে জানাতে পারেন, হিউস্টনের তাতে কোনো সমস্যা নাই!
false
rn
বিষাদ সিন্ধু যখন মীর মশাররফ হোসেনের চার বছর চার মাস বয়স তখন তার নিজ বাড়িতে পড়ালেখার হাতেখড়ি দেন মুন্সি জমীর উদ্দিন। মজার ব্যাপার হলো মশাররফের পিতাও পড়ালেখঅর হাতেখড়ি নেন মুন্সি জমির উদ্দিনের কাছ থেকে। ১৪ বছর বয়সে মশাররফ তার মাকে হারান। মায়ের মৃত্যুরপর কিছুদিন তাঁর পড়ালেখা বন্ধ থাকে। তিনি এ সময় তার বাবার সাথে ফরদপুরের পদমদী বরিশালের বামনা, ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। তার বাবার ঢাকা থেকে ফিরে কুষ্টিয়ার ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করে দেন। এছাড়াও তিনি পদমদী ও কৃষ্ণনগরে লেখাপড়া করেছেন। সে সময় ভারত জুড়ে বাল্যবিবাহের ছড়াছড়ি। আর এর স্বীকারও হোন মীর মশাররফ হোসেন। কলকাতা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই পড়াশোনার সুবিধার্থে তার বাবার বন্ধু নাজির আহমদের বাড়িতেই থাকেন। নাজির আহমদের ছিল দু’কন্যা। বড় মেয়ে লতিফন ছিলেন সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী। মশাররফ হোসেন তাকে পছন্দ করেন। ১৮৬৫ সালের ১৯ মে মীর মশাররফ হোসেন বিয়ে করেন। বিন্তু পছন্দের মেয়েকে তিনি বিয়ে করতে পারেননি।ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘মীর মশাররফ' সম্পর্কে বলেছিলেন : ‘‘বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যে হিন্দু ও মুসলমানের দান সম্পর্কে যদি স্বতন্ত্রভাবে বিচার করা চলে, তাহা হইলে বলিতে হইবে, একদিকে-ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের যে স্থান, অন্যদিকে ‘বিষাদ সিন্ধু' প্রণেতা মীর মশাররফ হোসেনের স্থান ঠিক অনুরূপ।’’এ সাহিত্যিক ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পদমদী গ্রামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাকে তার প্রিয়তমা স্ত্রী বিবি কুলসুমের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।মীর মশাররফ হোসেন জন্ম গ্রহণ করেন ১৮৪৭ সালের ১৩ই নবেম্বর, কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে। হিসাব অনুযায়ী ‘বিষাদ সিন্ধু' রচনার [রচনা কাল ১৮৯১] একশত বছর পূর্ণ হয়ে গেছে বেশ আগেই। তাঁর হাতেই আধুনিক গদ্যের যাত্রা শুরু। সৃজনশীলতার মধ্যদিয়ে তিনি সফলতার চূড়াকে স্পর্শ করেছেন।মীর মশাররফ হোসেন মূলত তার লেখনীর মাঝে ইসলাম ও মুসলমানদের কথাই বেশী তুলে ধরেছেন। এ জন্য তার লেখা মুসলিম জাতির কাছে সমাধৃত হয়ে আছে। এছাড়া ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা (১৮৯০), গাজী মিয়ার বস্তানী ‘এসলামের জয়’ (১৯০৮) উল্লেখযোগ্য।মীর মশাররফ হোসেন লিখেছেন কবিতা, গদ্য, কাহিনী এবং নাটক। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রত্মাবতী'। এটা প্রকাশিত হয় ১৮৬৯ সালে।মীর মশাররফের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তেইশ।১৮৯১ সালে তিন পর্ব একত্রিত করে গ্রন্থাকারে ‘বিষাদ সিন্ধু' প্রকাশিত হয়। কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস "বিষাদসিন্ধু" তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা। তাঁর সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করে।সেই ১৮৯১ সালে ‘বিষাদ সিন্ধু' প্রকাশের সাথে সাথে চারদিকে তুমুল আলোড়ন শুরু হয়েছিল।আজো ‘বিষাদ সিন্ধুর' পাঠক-চাহিদা, এর আবেদন এবং সমাদর গগনস্পর্শী। মুসলিম বিদ্বেষ, ঘৃণা এবং আক্রমণেই বঙ্কিমের লেখার মূল চারিত্র্য। অপরদিকে মীর মশাররফ হোসেন-তাঁর সাহিত্যের বিষয়বস্তু মুসলিম ঐতিহ্য থেকে গ্রহণ করলেও তাঁর ভাষা এবং তাঁর প্রকাশে অন্য ধর্ম কিংবা অন্য জাতির প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের চিহ্নমাত্র নেই।তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। তিনি কিছুকাল কলকাতায় বসবাস করেন। ‘বিষাদ সিন্ধুর' একটি বিরল বৈশিষ্ট্য-এর রচনাশৈলী এবং যাদুকরী ভাষার কৌশল। এ ক্ষেত্রেও তিনি বাংলা সাহিত্যের অগ্রপথিক।বিষাদসিন্ধুর কাহিনীর মধ্যে সবটুকুই যে সত্য ইতিহাস এমন নয়, অনেক অবিশ্বাস্য কাহিনীও আছে।সে আমলে মুসলিম সমাজে সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা দেখা যায়নি। এ পরিবেশ থেকে মশাররফ বেরিয়ে এসেছিলেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যচর্চায় উৎসাহী ছিলেন। গান-বাজনায়ও আগ্রহী ছিলেন। সে সময় কুষ্টিয়া থেকে একটি নামকরা পত্রিকা বের হতো ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ নামে। এ পত্রিকার সম্পাদক কাঙ্গাল হরিণাথ মজুমদার মশাররফকে খুব স্নেহ করতেন। তার প্রেরণায় মশাররফ ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’য় লিখতেন। আরো পরে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রতিষ্ঠিত কলকাতার ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের মধ্যে মীর মশাররফ হোসেন হলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি বিশুদ্ধ বাংলা চর্চা করেছেন।‘বিষাদ সিন্ধু' বাংলা ভাষার সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ। এ পর্যন্ত এর শতাধিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। মোট মিলে ছাপা হয়েছে প্রায় পঞ্চাশ লাখ কপি।
false
ij
কোথায় ছিল শ্রাবস্তী নগর_ রুপসী বাংলার কবি লিখেছেন: চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; ইংরেজিতে এ দুটি লাইনের সার্থক অনুবাদ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের বিদগ্ধ অধ্যাপক ফকরুল আলম - Her hair was full of the darkness of a distant Vidisha night, Her face was filigreed with Sravasti’s artwork. আমরা প্রায় প্রত্যেকেই জানি যে ওই লাইন দুটি বনলতা সেন সম্বন্ধে বলা হয়েছে। জীবনানন্দের মনে হয়েছে বনলতা সেন এর মুখোশ্রীতে প্রতিভাত হত শ্রাবস্তীর কারুকার্য; কিন্তু শ্রাবস্তীর কারুকার্য বলতে কবি ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন? প্রাচীন ভারতে শ্রাবস্তী নামে এক নগর ছিল বলে আমরা জানতে পারি। কিন্তু শ্রাবস্তীর কারুকার্য বলতে ঠিক কি বোঝায়? মনে হয় শ্রাবস্তীর কারুকার্য বলতে কবি বুঝিয়েছেন এক ধরনের তাম্রবর্ণের প্রাচীনতা যা নাটরের বনলতা সেন এর মুখে ভেসে উঠত, যা ইতিহাস-সচেতন কবির আবেগের উদ্রেক ঘটিয়েছিল; কিংবা বনলতা সেন এর মুখটি সেই তাম্রবর্ণের প্রাচীন সময়ের প্রতীক, যে প্রতীকের সঙ্কেত উদঘাটনে কবি মগ্ন । প্রাচীন ভারত, তার নগর-জনপদ, তার বিচিত্র জনমানুষ, তাদের আশ্চর্য উত্থানপতনের ক্রমিক ইতিহাস -এসবই বনলতা সেন এর মুখে যেন শিলালিপির মতন খোদিত ছিল এবং সেই সাদাকালো এবং ধূসর জগৎই ছিল শতাব্দীর পরিব্রাজক যুগবিহারী বাংলার শুদ্ধতম কবিটির অন্যতম মোক্ষ। এ কালের শিল্পীর আঁকা বনলতা সেন। বনলতা সেন এর এই মুখটি যেন এক তাম্রবর্ণের প্রাচীন সময়ের প্রতীক, যে প্রতীকের সঙ্কেত উদঘাটনে কবি জীবনভর মগ্ন ছিলেন। যে প্রতীকের সঙ্কেত উদঘাটনে আমাদেরও প্ররোচিত করেছেন। কিন্তু কোথায় ছিল শ্রাবস্তী নগর? প্রাচীন ভারতের মানচিত্র। খিষ্টপূর্ব ৬ষ্ট শতকের দিকে এখানেই গড়ে উঠেছিল ষোলটি স্থানীয় রাজ্য। গঙ্গার উত্তরে কোশল রাজ্যটি দেখা যাচ্ছে। এই রাজ্যেরই এক সমৃদ্ধশালী নগর ছিল শ্রাবস্তী। প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের শুরু খিষ্টপূর্ব ৬ষ্ট শতকে। এর আগেও যে প্রাচীন ভারতে রাজনৈতিক ইতিহাস ছিল না,তা নয়, তবে সেই ইতিবৃত্তটি আজও তেমন স্পস্ট নয়। রাম শরণ শর্মা, দামোদর ধর্মানন্দ কোসাম্বী প্রমূখ ঐতিহাসিক খিষ্টপূর্ব ৬ষ্ট শতক থেকেই রাজনৈতিক ইতিহাস আলোচনা করেছেন। খিষ্টপূর্ব ৬ষ্ট শতকের দিকে প্রাচীন ভারতে ষোলটি স্থানীয় রাজ্য গড়ে উঠেছিল। বৌদ্ধগ্রন্থ অঙ্গুত্তর নিকয় তে এই রাজ্যগুলির নাম পাওয়া যায়। বৌদ্ধসাহিত্যে এই রাজ্যগুলির ষোড়শ মহাজনপদ বলে অবহিত করা হয়েছে। মজুমদার, রায়চৌধুরী ও দত্ত ‘অ্যাডভান্স হিষ্ট্রি অভ ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে লিখেছেন,"In an early Buddhist text we have a list of sixteen great nations that occupied the territory from the Kabul valley to the banks of the Godavari shortly before the rise of Buddhism.” (page, 54) এই ষোড়শ মহাজনপদগুলি হল: কাশী কোসল অঙ্গ মগধ বজ্জি মল্ল চেদি বৎস কুরু পাঞ্চাল মৎস সুরসেনা অস্মক অবন্তী গান্ধার এবং কম্বোজ। আমাদের আলোচ্য কোশল। অধ্যাপক সুনীল চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন। “কোশল একটি বৃহৎ রাজ্য ছিল। এতে অযোধ্যা সাকেত ও শ্রাবস্তী এই তিনটি প্রধান নগর ছিল। অযোধ্যা ছিল সরযূ নদীর তীরবর্তী একটি নগর। অযোধ্যা এবং সাকেত -কে অনেক সময় অভিন্ন মনে করা হয়। কিন্তু রিস ডেভিস উল্লেখ করেছেন যে গৌতম বুদ্ধের সময়ে দুইটি শহরের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের কথা জানা যায়। শ্রাবস্তীর বর্তমান নাম সাহেত-মাহেত। এর অবস্থান ছিল রাপ্তী নদীর দক্ষিণ তীরে। (প্রাচীন ভারতের ইতিহাস। প্রথম খন্ড। পৃষ্ঠা,১১২) রাপ্তী নদীর প্রাচীন নাম অচিরাবতী। প্রাচীন অযোধ্যা নগরীর একটি প্রাসাদ। ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ-এর সূত্রপাত কোশল রাজ্যের অযোধ্যা নগরীটি থেকেই। বাল্মীকি একবার প্রশ্ন করেছিলেন: স¤প্রতি পৃথিবীতে যথার্থ গুণবান কে আছেন বলুন তো? প্রত্যুত্তরে দেবর্ষি নারদ বললেন, মর্ত্যে সর্বগুণের আধার একজনকেই আমি জানি। তিনি ইক্ষাকুবংশজাত রাম নামে এক রাজা। ...স্রোতস্বতী সরযূ নদীর তীরে ধনধান্যসমৃদ্ধ, আনন্দকলরোলমুখরিত কোশল নামে এক জনপদ আছে। ত্রিভুবনখ্যাত অযোধ্যা তার নগরী। রাম এর জন্ম সেই অযোধ্যা নগরীতে হয়েছিল। (দ্র.জ্যোতিভূষণ চাকী সম্পাদিত গদ্যে বাল্মীকি রামায়ণ। পৃষ্ঠা, ৩-৭) রাম এর দুই পুত্রের একজনের নাম লভ। তার জন্যই একটি নতুন নগর নির্মাণ করা হয়েছিল; সে নগরের নাম ছিল শ্রাবস্তী। রাম কোশল রাজ্যটি দু-ভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন। লভ পেয়েছিলেন শ্রাবস্তী নগর এবং কুশ কুশবতী নগর। কুশবতী কোশল রাজ্যের অন্য একটি নগর। মহাভারতের তথ্য অনুযায়ী: শ্রাবস্তী নগরের গোড়াপত্তন করেছিলেন কিংবদন্তীতূল্য সম্রাট শ্রাবস্ত । পালি ভাষায় শ্রাবস্তী হল সাবত্থি। বৌদ্ধ ঐতিহ্য বলে সাবত্থি নগরে সাধু সাবত্থা বাস করতেন বলেই ঐ নাম। শ্রাবস্তী নগরের নামসংক্রান্ত আরও এক মজার কাহিনী আছে। যেখানে শ্রাবস্তী নগর গড়ে উঠেছিল সেখানেই এককালে একটি অতিথিশালা ছিল। অতিথিশালায় নানা রাজ্যের বণিকেরা সমবেত হত। বণিকেরা একে অন্যকে জিজ্ঞেস করত কী আছে সঙ্গে? (কিম বানডাম আত্থি?) উত্তরে বলা হত: আমাদের সব আছে। (সাবাম আত্তি) ...এই সাবাম আত্তি শব্দ দুটো থেকেই নাকি নগরের নাম সাবত্থি বা শ্রাবস্তী হয়েছে। চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; বনলতা সেন। মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; ...বনলতা সেন-এর এই মুখে রামায়ন-মহাভারত, সম্রাট শ্রাবস্ত, সাধু সাবত্থা থেকে শুরু করে কোশল রাজ্যের এক অতিথিশালার কিঞ্চিৎ বিস্ময়কর ইতিবৃত্ত মিশে রয়েছে। যে ইতিহাসের একনিষ্ট আবিস্কারক-পাঠক জীবনানন্দ দাশ ... জীবনানন্দ দাশ ... আগেও একবার উল্লেখ করেছিলাম। প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের শুরুটা হয়েছিল খিষ্টপূর্ব ৬ষ্ট শতকের দিকে। শুধু রামায়ন-মহাভারতের যুগেই নয়- ঐতিহাসিক যুগেও কোশল তার প্রভাব প্রতিপত্তি অক্ষুন্ন রেখেছিল। Buddhist India গ্রন্থে T .W.Rhys Davids কোশল রাজ্যের পরিচয় জানাতে গিয়ে লিখেছেন, “To the north-west there was the kingdom of Kosala-the northern Kosala-with its capital at Savatthi, ruled over at first by King Pasenadi and afterwards by his son Vidudabha. “(page 3) ভারতবর্ষের মানচিত্রে কোশল রাজ্যের অবস্থান তার আগে কাশীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিল কোশল। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ট শতকের সময় কোশলরাজ মহাকোশলের সময় কাশী কোশলরাজ্যের অর্ন্তভূক্ত হয়। মহাকোশলের এক মেয়েকে বিবাহ করেছিলেন মগধের রাজা বিম্বিসার। আবারও জীবনানন্দ: হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল সমুদ্র থেকে আরো দূর অন্ধকারে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে সেখানে ছিলাম আমি; কেবল বিম্বিসার নয়- গৌতম বুদ্ধের সঙ্গে শ্রাবস্তী নগরীর সম্পর্ক ছিল নিবিড়। সেও এক আশ্চর্য ইতিহাস। সুদত্ত ছিলেন শ্রাবস্তী নগরের একজন ধনী শ্রেষ্ঠী। সে কালের শ্রেষ্ঠীকে এ কালের ব্যাংকার বলা যায়। সুদত্ত ব্যবসায়ের কাজে মগধের রাজধানী রাজগৃহ নগরে গিয়েছিলেন। ওই রাজগৃহে নগরেই সুদত্ত প্রথম বুদ্ধকে দেখেছিলেন । বুদ্ধের সঙ্গে কথা বলে সুদত্ত বুদ্ধের এক পরম ভক্তে পরিনত হয়। বুদ্ধকে একবার শ্রাবস্তী যাওয়ার অনুরোধ করেন সুদত্ত। বুদ্ধ রাজী হন। কিছুকাল পরের কথা। বুদ্ধ শ্রাবস্তী আসছেন; সঙ্গে কয়েক হাজার শিষ্য। এত লোককে কোথায় থাকবার আয়োজন করা যায়। সুদত্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। শ্রাবস্তী নগরের বাইরে যুবরাজ জেত-এর বিশাল একটি বাগান ছিল। সুদত্ত বাগানটি কিনতে চাইলে জেত প্রথমে রাজী হননি। পরে অবশ্য শর্তসাপেক্ষে রাজী হলেন। কি সেই শর্ত? স্বর্ণমুদ্রায় বাগান ঢেকে দিতে হবে। তাই হবে। সদুত্ত সম্মত হলেন। সুদত্ত গো-শকট করে স্বর্ণমুদ্রা এনে বাগান ঢেকে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন । সুদত্তর পরম বুদ্ধভক্তি দেখে জেত অভিভূত হয়ে পড়েন। তিনি সুদত্তকে বাগানখানি দান করলেন। কৃতজ্ঞতাসরূপ সুদত্ত জেত এর নামে বাগানে নাম রাখেন জেতবন। আজ সারা পৃথিবী থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ শ্রাবস্তীর জেতবন দেখতে যায়। রাজকুমার জেত অসম্ভব ধনাঢ্য ছিলেন; তিনি বুদ্ধকে ১৮ কোটি স্বর্ণ মুদ্রা দান করেন। শ্রাবস্তী নগরেরর বাইরে জেতবন। বুদ্ধ তাঁর জীবনের ৪৫টি বর্ষাকালের মধ্যে ১৯টিই এখানে অতিবাহিত করেছেন। বুদ্ধের মানবিক শিক্ষায় ধন্য জেতবন। জেতবন। সুদত্ত বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবেন। পন্ডিত ধর্মানন্দ কোসম্বী লিখেছেন, ‘ ইহার প্রকৃত নাম ছিল সুদত্ত। অনাথদিগকে তিনি অন্ন (পিন্ডক) দিতেন বলিয়া তাঁহাকে অনাথপিন্ডিক বলা হইত।’ (ভগবান বুদ্ধ। পৃষ্ঠা, ১৪।) অনাথপিন্ডিক নামটি বুদ্ধই দিয়েছিলেন। যা হোক। বুদ্ধ শ্রাবস্তী এলেন। ধ্যান করলেন। দান করলেন। শ্রাবস্তী নগরকে অমর করে রাখলেন। শ্রাবস্তী নগরকে অমর করে রাখলেন বাংলার এক কবি ... গন্ধকুটির। ‘বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্ম এবং প্রাচীন বৌদ্ধ সমাজ’ গ্রন্থে শান্তিকুসুম দাশগুপ্ত লিখেছেন,‘বুদ্ধের ব্যবহারের জন্য সুদত্ত (অনাথ ) গন্ধবাহী কাষ্ঠ দিয়ে একটি কুটির নির্মাণ করলেন, যা বৌদ্ধ সাহিত্যে গন্ধকুটির নামে সুবিখ্যাত’। পৃষ্ঠা ৩৬)। এ কালের এক মেয়ের ছবি। যাকে বিশাখা বলে ভ্রম হয়। পন্ডিত ধর্মানন্দ কোসম্বী লিখেছেন, ‘বিশাখা নামে শ্রাবস্তী নগরের এক উপাসিকাও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য পূর্বারাম নামক একটি প্রকান্ড প্রাসাদ নির্মাণ করিয়া দিয়াছিলেন।’ শ্রাবস্তী নগরকে কেন্দ্র করে বিশাখা-র সময়কাল নিয়ে বাণী বসু লিখেছেন ৪৪১ পৃষ্ঠার উপন্যাস, ‘মৈত্রেয় জাতক।’ এমন একটা সময়-যে সময়ের প্রতিচ্ছবি পড়েছিল কুড়ি শতকের বনলতা সেন এর মুখোশ্রীতে। অনাথপিন্ডিক-এর স্তুপ প্রাচীন শ্রাবস্তীর নগরীর দেওয়াল এখনও দাঁড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে তিনটি প্রাচীন স্থাপাত্য-কাঠামো দেখার জন্য আজও দেশবিদেশের পর্যটকেরা ভিড় করে। আঙ্গুলিমালা স্তুপ, অনাথপিন্ডিক স্তুপ আর একজন জৈন তীর্থঙ্করের উদ্দেশ্যে নিবেদিত প্রাচীন জৈন চৈত্যগৃহ। আর জেতবন তো আছেই। বুদ্ধের নিবাস গন্ধকুঠি। সেটিও দেখতে যায় লোকে। জেতবনে আনন্দবোধি বৃক্ষ রয়েছে। লোকে তাও দেখে। আমরা অবশ্য এসবের বাইরেও আরও অন্য কিছু খুঁজতে নিতে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারি। শ্রাবস্তী নগরের বিশাখা কিংবা নাটোরের বনলতা সেন এর মুখে যেন এক ধূসর তাম্রবর্ণের প্রাচীন সময়ের প্রতীক অঙ্কিত হয়ে গেছে, যে প্রতীকের সঙ্কেত উদঘাটনে জীবনানন্দ জীবনভর মগ্ন ছিলেন। যে প্রতীকের সঙ্কেত উদঘাটনে আমাদেরও প্ররোচিত করেছেন কবি! তথ্য নির্দেশ: আবদুল মান্নান সৈয়দ সংকলিত ও সম্পাদিত প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কবিতাসমগ্র জীবনানন্দ দাশ অধ্যাপক সুনীল চট্টোপাধ্যায়; প্রাচীন ভারতের ইতিহাস। (প্রথম খন্ড) জ্যোতিভূষণ চাকী সম্পাদিত গদ্যে বাল্মীকি রামায়ণ। শান্তিকুসুম দাশগুপ্ত; ‘বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্ম এবং প্রাচীন বৌদ্ধ সমাজ’। ধর্মানন্দ কোসম্বী; ভগবান বুদ্ধ। Fakrul Alam; Jibanananda Das Selected Poems with an Introduction, Chronology, and Glossary R.C.Majumdar, H.C. Raychaudhuri, Kalikinkar Datta ; An Advanced History of India. T .W.Rhys Davids; Buddhist India. সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:০৫
false
fe
মানবতার কল্যাণে ভাষাময় জীবন মানবতার কল্যাণে ভাষাময় জীবনফকির ইলিয়াস=====================================ভাষাশহীদ আব্দুস সালামের সমাধি শেষ পর্যন্ত চিহ্নিত হয়েছে। ওয়েব পোর্টাল পরিবর্তন ডট কমের প্রতিবেদক ফারজানা টুসির পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। তার গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে আজিমপুর গোরস্তানে সালামের কবরের চিহ্নায়ন। আজিমপুর পুরোনো কবরস্থানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল তিন-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম আনসারুজ্জামান, অঞ্চল তিন-এর সহকারী সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান, কবরস্থানের সিনিয়র মহরার মিজানুর রহমান ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান এবং সাংবাদিক ফারজানা টুসির উপস্থিতিতে শনাক্ত হয় ভাষাশহীদ সালামের কবর। সংবাদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর আগে এই জাতি, এই দেশ জানতো না কোথায় মিশে আছেন এই বীর শহীদ। জানতো না তার পরিবার।বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বায়ান্নের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙে বিক্ষোভে অংশ নেন বাংলার দামাল ছেলেরা। পরে ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালালে আবদুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯৫২ সালের ৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আবদুস সালাম ১৯২৫ সালে ফেনীর দাগনভূঁইয়ায় লক্ষণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে গ্রামটি তার নামানুসারে সালামনগর করা হয়। আবদুস সালাম কর্মজীবনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগের ‘পিয়ন’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঢাকার নীলক্ষেত ব্যারাকের ৩৬/বি নম্বরের কোয়ার্টারে থাকতেন। এরই মধ্যে তার নামে সালামনগরে ভাষাশহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে।আমরা অতীতের দিকে তাকালে দেখব, রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৫২ সালে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আন্দোলন আরো তীব্র হয়। ১৯৫৪ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু যাদের প্রাণের বিনিময়ে এ ভাষা পেয়েছিল বাঙালি জাতি তাদের বিশ্ব দরবারে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ ছিল না। এই দায়িত্ববোধ থেকে কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাংলাদেশি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের কাছে একটি আবেদন করেন। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সাল থেকে দিনটি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে প্রতি বছর দিনটিকে আন্তর্জাতিক মার্তভাষা দিবস হিসেবে নিজেরা পালনের ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশ প্রস্তাবটি উত্থাপন করলে সর্বসম্মতিক্রমে সাধারণ পরিষদে পাস হয়।আজকের বিশ্বে সে ভাষাই তত বেশি শক্তিশালী, যে ভাষার যে রাষ্ট্রের অর্থনীতি যত বেশি চাঙ্গা- অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তার কারণ কী? কারণ হচ্ছে শক্তিশালী ভাষাভাষী মানুষরাই বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে। অগ্রসরমান প্রজন্মের শক্তি সঞ্চিত হলেই স্বীকৃতি মিলছে নিজ ভাষার। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের প্রধান প্রধান হাসপাতালে সাইনবোর্ড ঝুলছে, ‘আমরা বাংলায় কথা বলি’। নিউ ইয়র্কের বোর্ড অফ এডুকেশন তাদের প্রতিটি নোটিশে এখন সংযোজন করে নিয়েছে বাংলা ভাষা। নির্দেশিকায় স্থান পাচ্ছে বাংলায় নিয়মাবলি। তার কারণ প্রায় পঁচিশ হাজারেরও বেশি বাংলা ভাষাভাষী ছাত্রছাত্রী এখন লেখাপড়া করছে নিউ ইয়র্কের মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে। এখন এখানে ‘বাংলা কারিকুলাম’ চালু করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষার প্রচেষ্টা চলছে।নিউ ইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশন অবশেষে তাদের নির্বাচনী নথিপত্রে ভোটারদের জন্য বাংলা ভাষা সংযুক্ত করেছে। বোর্ড অব ইলেকশন তাদের নির্বাচনী নির্দেশিকায় ইতোমধ্যে বাংলা ভাষায় নির্বাচনী তথ্যাদি প্রকাশ করেছে। বোর্ড অব ইলেকশনের ছাপা ৫টি ভাষায় লেখা মোট ২৪ পৃষ্ঠার নির্দেশিকায় প্রচ্ছদ ও পেছনের পাতায় বাংলা উপস্থাপন ছাড়াও ভেতরে পুরো ৪ পাতাজুড়ে বাংলায় নির্বাচনী তথ্যাদি সংযুক্ত করা হয়েছে। বিশ্বে একই রাষ্ট্রে বিভিন্ন ভাষা চালু থাকার উদাহরণও দেখি আমরা। ভারতের কথাই ধরা যাক। কেরালা কিংবা তামিলনাড়ু অঙ্গরাজ্যের মাতৃভাষা আর কলকাতার মাতৃভাষা এক নয়। দুটি রাজ্যের দুজন নাগরিকের রাষ্ট্রভাষা যদিও ‘হিন্দি’ কিন্তু এই দুই অঙ্গরাজ্যে তা কি মানতে দেখা যায়? না, যায় না। বরং এই দুই অঙ্গরাজ্যের নাগরিকরা মিলিত হয়ে যান এক ভাষায়। আর তা হচ্ছে ইংরেজি। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন মাল্টিকালচারাল কোম্পানি তাদের শোরুম খুলেছে মুম্বাই, দিল্লি, পুনা কিংবা কেরালার ট্রিচুর ডিস্ট্রিক্টে। সেখানে ভারতীয় রিপ্রেজেনটেটিভদের বলা হয়েছে, ফোনের জবাব দিতে হবে ইংরেজিতে। কারণ ক্লায়েন্ট সবাই ইউরোপ-আমেরিকার। ভাষার প্রতিপত্তি এভাবেই দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন উপনিবেশ। অর্থনীতিই হয়ে উঠেছে মুখ্যশক্তি। এমনকি বদলে দেওয়া হয়েছে সেখানকার প্রতিনিধিদের নামও। ‘রাজেশ’ হয়ে গিয়েছে ‘রেন্ডি’, ‘মনীষা’ হয়ে গিয়েছে ‘মনিকা’। এ বদল শুধু প্রতীকী কারণের। এই সঙ্গে জড়িত ‘মাল্টিকমপ্লেক্স বিজনেস এন্ডি মার্কেটিং’।বিভিন্ন দেশেই আজ একটি বিষয় লক্ষ করা যায়, তা হচ্ছে শুদ্ধ এবং কথ্যভাষার দ্বন্দ্ব। যুক্তরাষ্ট্রে আঞ্চলিক কিংবা কথ্যভাষায় বিভিন্ন র‌্যাপ সঙ্গীতে এমনভাবে বাণীবদ্ধ করা হয়, যার মাঝেমধ্যে অশ্লীল, অশোভন কিছু শব্দও ঢুকিয়ে দেওয়া হয় খুব কৌশলে। এসব গান পারিবারিক আবহে, মাতা-পিতা-স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে বসে শোনার মতোই নয় বলা যায়। তারপরও এসব র‌্যাপ সঙ্গীতের সিডি বাজারে আসছে মিলিয়ন মিলিয়ন। এরও কারণ একটাই, বাণিজ্যিক মুনাফা অর্জন এবং তা সম্ভবও হচ্ছে। কবি অক্টাভিও পাজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি লিখি আমার মাতৃভাষায়। বাজারজাতকারীরা তা ইংরেজিতে তর্জমা করে মুনাফা লোটে। নোবেল কমিটির কাছেও ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব বেশি। তা না হলে তারা ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় প্রতিষ্ঠিত কবি-লেখকদের ব্যাপারে অন্তিমে এসে আগ্রহী হবে কেন?’ পাজের ক্ষোভ বাজারি মুনাফাখোরদের প্রতি। কিন্তু সে ক্ষোভ যতই তীব্র হোক না কেন, ভাষা বাণিজ্যকারীরাই পৃষ্ঠপোষকতা পায় বিভিন্ন সরকারের, রাষ্ট্র শাসকদের। এই মুনাফালাভের লোভ তো লেখকরাও সংবরণ করতে পারেন না!বলছিলাম, একই রাষ্ট্রে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার কথা। কোনো অঞ্চলের কথ্য ভাষায় সাহিত্য রচিত হবে কিনা; কিংবা হওয়া উচিত কিনা তা নিয়েও চলছে নানা বিতর্ক। একটি কথা মনে রাখতে হবে, একই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরেই একটি অঞ্চলের কথ্যভাষা অন্য অঞ্চলে সম্পূর্ণ অচল। এমন কিছু শব্দ আছে যা অঞ্চলের ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন অর্থও প্রকাশ করে। তাহলে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন আসছে যিনি কোনো আঞ্চলিক কথ্যভাষায় গদ্য পদ্য লিখছেন, তিনি কি এ অঞ্চলের পাঠককে সামনে রেখেই তা লিখছেন। নাকি তার জাতীয় ভাষার পাঠক তার লক্ষ্যবিন্দু। আগেই বলেছি, ইংরেজিতে কথ্য অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে গান রচিত, গীত হচ্ছে পাশ্চাত্য। এর শ্রোতাও একটি গোষ্ঠী। বাজারি চাহিদাও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যেও ইংরেজি ভাষার বাচনভঙ্গি, উচ্চারণের ভিন্নতা প্রায়ই লক্ষ করা যায়। যেমন- নর্থ ক্যারোলিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, টেক্সাস কিংবা নিউ ইয়র্কের মানুষ একই বাচনভঙ্গিতে কথা বলেন না। সমকালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হতে যত বেশি সম্ভব ভাষার দখল শিখতে পারাটাই কৃতিত্ব বলে আমি মনে করি। যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা কোনো বাঙালি প্রজন্ম যদি বাংলা ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতির ওপর গবেষণা করে বাঙালি জাতিসত্তাকে বিশ্বে আরো উজ্জ্বল করতে পারে তা তো সবার জন্যই শুভ বার্তাবাহী। কেউ যদি জাপান কিংবা চীনের কোনো বাণিজ্যিক, বৃত্তিমূলক কাজে আমেরিকা থেকে যান তাকে আগেই ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয় তিনি সেখানে গিয়ে যোগদানের আগে যদি জাপানি কিংবা চীনা ভাষা কিছুটা রপ্ত করে যান তবে তাকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে তার থাকাকালীনই তাকে ভাষা শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করবে জাপানি কিংবা চীনা ওই প্রতিষ্ঠান। বিশ্ব মানবের কাছে নিজেদের ভাষা ছড়িয়ে দেওয়ার এই যে চেষ্টা এবং চেতনা তা অনুসরণযোগ্য। আর এর সঙ্গে অর্থ রোজগারের বিষয় তো রয়েছেই।এটা গর্বের কথা, বিদেশে বাংলাভাষার দাপট এগিয়ে যাচ্ছে জোরেশোরেই। অর্থ উপার্জনের উৎস করে দিতে পারলেই ভাষা সংস্কৃতি এখন আদৃত হচ্ছে বিশ্ববাজারে। তাই ভাষাকে টিকে থাকতে হচ্ছে এই অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই। একটি ভাষার শক্তি, মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের জোর বাড়িয়ে দেয়। কারণ সে যখন তার নিত্যপ্রয়োজনে ওই ভাষায় কথা বলে জীবন চালাতে পারে, আয়-রোজগার করতে পারে, তখনই ওই ভাষার প্রতি তার মমত্ব বাড়ে। যে বুঝতে পারে তার কথার মূল্য আছে। তার অক্ষরের মূল্য আছে। লেখার শেষ প্রান্তে এসে আরেকটি অর্জনের খবর পাঠকদের জানাতে চাই। গেলো ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ মার্কিন সরকারের অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের অনানুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। নিউ জার্সির প্যাটারসন শহরে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় প্যাটারসনের ডেপুটি মেয়র পেড্রো রড্রিগেজ, কাউন্সিল ভাইস প্রেসিডেন্ট রুবি কটন, স্থানীয় কাউন্সিল সদস্যরা, প্যাসিক কাউন্টি অফিসের কর্মকর্তারা, নির্বাচিত স্থানীয় প্রতিনিধিরা এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির বহু সংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, টেক্সাসের হিউস্টনে বাংলাদেশ কমিউনিটির নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে একটি শহীদ মিনার ইতিপূর্বে নির্মিত হয়েছে। নিউজার্সির শহীদ মিনারটি মার্কিন সরকারের অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম শহীদ মিনার, যার জন্য জমির বরাদ্দ ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে পূর্ণ অর্থায়ন করেছে। ২০১২ সালে বিভিন্ন ভাষাভাষীর সমন্বয়ে গঠিত প্রবাসী কমিউনিটির মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং প্যাটারসনের বাংলাদেশ কমিউনিটির সম্মানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্যাটারসন সিটি কাউন্সিল ওয়েস্টসাইড পার্কে জমি বরাদ্দ এবং ২০১৩ সালে এই প্রজেক্টের জন্য প্যাসিক কাউন্টি আর্থিক অনুদান দেয়। এই যে স্বীকৃতি, তা লাখ লাখ মার্কিনি অভিবাসী বাঙালিকেই সম্মান। বাংলা ভাষাকে সম্মান।আমি যে কথাটি বারবার বলি, বাংলার পাশাপাশি এই প্রজন্মকে অন্যান্য ভাষাও রপ্ত করতে হবে। জানতে হবে অন্যান্য ভাষার সাহিত্য-সংস্কৃতি। মানুষের জ্ঞানার্জনের পরিসীমা নেই। ইন্টারনেট এখন হাতের মুঠোয়। এই সুযোগ কাজে লাগাতেহবে। অধ্যবসায় ছাড়া কোনো জেনারেশনই এগোতে পারে না।-------------------------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ শুক্রবার সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:০৩
false
mk
বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীন বাংলাদেশের নিরাপত্তা ভাবনা বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস পাকিস্তানের নির্জন কারা প্রকোষ্ঠে বন্দি ছিলেন। যুদ্ধ কিভাবে চলছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বের কোন ক্ষমতাবান দেশের অবস্থান কী ছিল, তার কোনো কিছু তখন বঙ্গবন্ধুর জানার সুযোগ ছিল না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য দেশদ্রোহিতার অভিযোগে জেলের অভ্যন্তরে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুর বিচার শুরু করেছিল। ওই আজ্ঞাবাহী ট্রাইব্যুনাল ইচ্ছা করলে এক মাসের মধ্যে বিচার শেষ করে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দিতে পারতেন। কিন্তু প্রাপ্ত দলিলে দেখা যায়, ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণা করা হয় ১২ ডিসেম্বর ১৯৭১, যখন পাকিস্তান বুঝতে পারে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ক্ষমতার পালাবদলে ইয়াহিয়ার পরিবর্তে জুলফিকার আলী ভুট্টো ক্ষমতায় আসাতে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির দণ্ডাদেশ আর কার্যকর হয় না। বিলম্বে ফাঁসির আদেশ ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটা বিষয় বোঝা যায়, যুদ্ধের ৯ মাস পাকিস্তানি শাসকরা সব রকম চেষ্টা করেছে বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে একটা আপসরফা করানোর জন্য, যাতে কোনোমতে এ যাত্রায় পাকিস্তান রক্ষা পায়। কিন্তু তাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে শেষ সময়ে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর দিগন্তের মতো সীমাহীন ও সাগরের মতো গভীর অন্তর্দৃষ্টির দ্বারা বুঝতে পেরেছিলেন, নিজের ফাঁসি বা মৃত্যু হলেও বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাবে, কেউ তা ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এ জন্য অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বসে, বিশ্বের সব যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানিদের আপসের সব প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবন চরিতকাল স্বল্প, মাত্র ৫৫ বছর। কিন্তু দুনিয়ার সব ব্যক্তিগত লোভ ও প্রাপ্তির উর্ধ্বে উঠে দেশের মাটি ও মানুষকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসার কারণে রাজনীতির মধ্য বয়সেই তিনি গভীর অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী হন।বঙ্গবন্ধুর এই অন্তর্দৃষ্টির শক্তির বলেই স্বাধীনতার পর অল্প সময়ের মধ্যে ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশ আবার উঠে দাঁড়িয়েছে এবং পাহাড় সমান প্রতিকূলতা ও হুমকির মুখে শূন্য হাতে নবজাত রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লন্ডন ও দিল্লি হয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসেন। লন্ডনে পৌঁছানোর পর থেকে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের সব কিছু জানতে শুরু করেন। লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য কখন ফেরত যাবে। এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। তখন পর্যন্ত ভারত ও ভুটান ব্যতীত আর কোনো রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। হিথের প্রশ্নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হয়তো বুঝে নিলেন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে হলে ও প্রভাবশালী দেশের স্বীকৃতি পেতে হলে ভারতীয় সৈন্য দ্রুত ফেরত যাওয়া প্রয়োজন। সংগত কারণেই এই প্রশ্ন ঘিরে তখন বহুমুখী পারস্পরিক দ্বন্দ্বমূলক সংকট উদয় হওয়ার কথা। ভারতীয় সৈন্য চলে গেলে বহির্দেশীয় আক্রমণ থেকে দেশের নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত হবে, যার হুমকি তখনো প্রবলভাবে উপস্থিত। দ্বিতীয়ত্ব, ভারতের প্রতিক্রিয়া কী হবে। এই রকম জটিল পরিস্থিতি বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব্ব নেওয়ার পর কিভাবে সব কূল রক্ষা করে নবজাত রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন, সেটিই আজকের প্রবন্ধের মূল বিষয়। সংকটের সমাধান কিভাবে হয়েছিল তা বোঝার জন্য ওই সময় বাংলাদেশের নিরাপত্তার ওপর যেসব হুমকি ছিল, তার স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্রথমে আলোচনা প্রয়োজন। সদ্য স্বাধীন দেশে অর্থাৎ বাহাত্তরের প্রারম্ভে বাংলাদেশের নিরাপত্তার প্রতি হুমকির মাত্রা বোঝার জন্য মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষপ্রান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরকেন্দ্রিক ঘটনার সামান্য বর্ণনাও দরকার। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার পাকিস্তান রক্ষার সম্ভাব্য দুটি পথ বের করেন। এক. বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের আগেই যুদ্ধ বিরতি ও ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের পক্ষে জাতিসংঘকে ব্যবহার করা। দুই. পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির অজুহাতে সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য বাংলাদেশের উপকূলে সপ্তম নৌবহর মোতায়েন করা। তবে সপ্তম নৌবহরের ব্যবহার নির্ভরশীল ছিল দুটি শর্তের ওপর। প্রথমত, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অন্তত তিন সপ্তাহ নিজ শক্তিতে বাংলাদেশের রণক্ষেত্রে পাকিস্তানকে টিকে থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভারতের উত্তর সীমান্তে চীনের যুগপৎ তৎপরতা আবশ্যক। যুদ্ধ বিরতির দুটি প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোর কারণে ভণ্ডুল হওয়ার পর ৯ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সন ফিলিপাইনের উপকূলে অবস্থিত সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন। বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর সর্বাত্মক পতন রোধের জন্য নৌ, বিমান ও স্থল তৎপরতার সম্ভাব্য মিশন দেওয়া হয় সপ্তম নৌবহরকে। ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নকে জানিয়ে দেয়, ভারত যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত না হলে সপ্তম নৌবহর নিয়োগসহ শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ১২ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চরম হুমকি ভারত উপেক্ষা করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে পাকিস্তানকে উদ্ধারের জন্য সামরিক হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকে আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু শেষ মুহূর্তে চীন সরাসরি সামরিক পদক্ষেপে অংশ নেওয়া থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কারণে এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনড় অবস্থানের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ওই সময় আপাতত সপ্তম নৌবহরকে চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকে।১৯৭২ সালে দেশে ফিরে সরকার গঠনের পর ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশকে গড়ে তোলার মহা কর্মযজ্ঞ কাঁধে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবজাত একটি শিশু রাষ্ট্র, যাকে গলাটিপে হত্যা করার জন্য বিশ্বের পরাশক্তিসহ দেশের অভ্যন্তরীণ পরাজিত গোষ্ঠী ও পাকিস্তান তখনো উদ্যত, সে অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর আত্মবিশ্বাস ও দূরদৃষ্টিই সেদিন বাংলাদেশকে রক্ষা করেছিল। সপ্তম নৌবহর তো বঙ্গোপসাগরে আছেই। উপরন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনকে সঙ্গে নিয়ে মহা কূটনৈতিক ষড়যন্ত্রও শুরু করেছে। পাকিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় জামায়াতের তৎকালীন আমির (এখন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ৯০ বছর সাজাপ্রাপ্ত) গোলাম আযম বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে পাকিস্তান হয়ে লন্ডনে অবস্থান নেন এবং পূর্ব-পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল স্বল্প সময়ের মধ্যে আন্দোলনটি যদি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জনসমর্থন পায় তাহলে ওই আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সপ্তম নৌবহরকে পুনরায় সক্রিয় করে তোলা হবে। এই ভরসায় চীন, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো তখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকে। বাংলাদেশ তখনো জাতিসংঘের সদস্য হতে পারেনি চীনের অসহনীয় বিরোধিতার কারণে। তিন-তিনবার চীন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিয়েছিল, যাতে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য হতে না পারে। আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থা ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের সব সন্দেহ দূর করার জন্য বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি লন্ডন থেকে ফেরার পথেই সিদ্ধান্ত নেন অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী ফেরত পাঠানো হবে। ফেরার পথে দিল্লিতে বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকেও বিষয়টি অবহিত করেন। এখানে প্রসঙ্গক্রমে ইতিহাস থেকে দু-একটি উদাহরণ দিতে চাই। পঞ্চাশের দশকে কোরিয়া যুদ্ধের জের ধরে কোরিয়া দুই ভাগ হয়ে গেল। যুদ্ধের সময় দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে প্রায় এক লাখ আমেরিকান সেনাবাহিনী যুদ্ধ করে। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয় কমিউনিস্ট চীন। আর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নও ছিল পরোক্ষভাবে উত্তর কোরিয়ার পক্ষে। ১৯৫৩ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সেনাবাহিনী ও উত্তর কোরিয়ায় চীনের সেনাবাহিনী রয়ে গেল দুই কোরিয়ার নিরাপত্তা স্বার্থের বিবেচনায়। আজ কোরিয়া যুদ্ধের ৬০ বছর পেরিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছানুসারে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের সম্মতিতে ১৯৭২ সালের মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ভারতের সব সৈন্য বাংলাদেশ থেকে চলে যায়। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী তখনো পুনর্গঠিত হতে পারেনি। ফলে সংগত কারণেই একটি কনভেনশনাল সেনাবাহিনীর যে শক্তি-সামর্থ্য থাকে তার কোনো কিছুই তখনো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছিল না। সুতরাং ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের পর বাংলাদেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা একেবারে নাজুক অবস্থায় পড়ে যায়। এ অবস্থায় পাকিস্তানের মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর, চীন বা উভয়ের পক্ষ থেকে যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো রকম অ্যাডভেনচারিজম শুরু করা হতো, তাহলে সদ্য স্বাধীন দেশের অবস্থা কী হতে পারত, তার উদাহরণ ইতিহাসেই আছে।১৯৬৪ সালের ৪ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে প্রচার করে উত্তর ভিয়েতনামের রকেট মার্কিন রণতরীর ওপর আঘাত করেছে। এই অজুহাতে আমেরিকা দক্ষিণ ভিয়েতনামের পক্ষে যুদ্ধে নেমে পড়ে। পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, মার্কিনিদের ওই রকেট আক্রমণের কাহিনী ছিল সম্পূর্ণ নিজেদের তৈরি প্রোপাগান্ডা। ইতিহাসের এ রকম শিক্ষা ও তখনকার বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২৫ বছরমেয়াদি একটি মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেন ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে। ওই চুক্তিতে মোট ১২টি ধারা ছিল। চুক্তির ৯ নম্বর ধারাটি ছিল নিম্নরূপ, 'কোনো এক পক্ষের বিরুদ্ধে তৃতীয় পক্ষ সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হলে চুক্তিকারী প্রত্যেকে এতদুল্লিখিত তৃতীয় পক্ষকে সব প্রকার সাহায্যদানে বিরত থাকবে। তা ছাড়া যেকোনো পক্ষ আক্রান্ত হলে অথবা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে সেই আশঙ্কা নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে যথাযথ সক্রিয় ব্যবস্থা নিতে উভয় পক্ষ সঙ্গে সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হয়ে নিজেদের দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে।' ১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে একই আদলে একই ধারা বিশিষ্ট একটি মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তিটির উল্লিখিত ৯ নম্বর ধারাটি মনোযোগ সহকারে পড়লে সবাই বুঝতে পারবেন ওই সময়ে বাংলাদেশের ওপর তৃতীয় কোনো দেশ যদি আক্রমণ চালাত তাহলে ভারত যেমন সশস্ত্র সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে বাধ্য হতো, ঠিক তেমনি ভারত-সোভিয়েতের চুক্তির ওই একই রকম ধারা বলে সোভিয়েত ইউনিয়নও বাংলাদেশ ও ভারতের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে চুক্তি মোতাবেক বাধ্য ছিল। সেই ধারাগুলোর আন্তসম্পর্কের কারণে সেদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো রকম দুঃসাহস দেখায়নি এবং পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনও কোনো রকম নড়াচড়া করার সাহস পায়নি। এভাবে সেদিন নবজাত রাষ্ট্রের নাজুক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মবিশ্বাস ও বিচক্ষণতার দ্বারা নিশ্চিত করেছিলেন। মূললেখক: মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)
false
fe
নতুন সূর্যের প্রজ্বলনে প্রতিষ্ঠিত হোক জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ নতুন সূর্যের প্রজ্বলনে প্রতিষ্ঠিত হোক জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ ফকির ইলিয়াস-------------------------------------------------------------উৎসবমুখর এখন বাংলাদেশ। এ উৎসব নির্বাচনের। এ উৎসব পরিবর্তনের। চারদিকে চলছে প্রতিশ্রুতির পালা। প্রার্থীরা ছুটছেন আনাচে-কানাচে। যারা কখনই এসব নেতাকে দেখেনি, তারা দেখছে­ এই তাদের সম্ভাব্য প্রতিনিধি। নির্বাচন নিয়ে নানা মেরুকরণ সবসময়ই হয়। এবারও হচ্ছে? একটি মহল মধ্যস্বত্বভোগে ব্যস্ত। তারা ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে চাইছে। এই মহলটির নতুন পরিচয় এবার দেখছে দেশবাসী। খুনের হুমকি হলে সেটাকেও তারা বলছে­ এটা জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা!ভারতীয় কিছু মিডিয়ায় খবর এসেছে­ আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার প্রাণনাশের জন্য জঙ্গিবাদীরা তৎপর। এটা একটি মারাত্মক দু:সংবাদ। অথচ এই খবর বের হওয়ার পর চারদলীয় জোটের নেত্রী, রাজাকারদের মূল আশ্রয়দাতা খালেদা জিয়া কি প্রতিক্রিয়া দেখালেন? তিনি বললেন, পরিকল্পিতভাবে নাকি দেশকে জঙ্গিবাদী বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তার বক্তব্যের সারাংশ হচ্ছে­ শেখ হাসিনা সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য এমন অপপ্রচার চালানোর প্রত্যয়ী হচ্ছেন। খালেদা জিয়া আরও বললেন, একটি উদার মুসলিম দেশ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণí করার চেষ্টা করছে একটি জোট।কি জঘন্য মানসিকতা! হুমকি কে দিচ্ছে- কোথা থেকে আসছে তা তদন্তের দাবি না করে বরং তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেই কথা বলা শুরু করলেন! এটা কি সহনশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিদর্শন? একজন দলপ্রধান কোন দায় নিয়ে এমন অসংলগ্ন কথা বলতে পারেন?এর দু’দিন পরই কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার জনসভার দেড় মাইল দূরে থেকে চারটি গ্রেনেডসহ তিনজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এর পরই খালেদা জিয়া জনসভায় দাঁড়িয়ে বললেন, তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রশ্ন জাগে­ কারা করছে এসব? এদের প্রকৃত উদ্দেশ্য কি? যখন শেখ হাসিনা হুমকির সম্মুখীন হন­ তখন নীরব থাকেন খালেদা জিয়া, সস্তা জনপ্রিয়তার কথা বলেন। এখন তার জনসভার কাছাকাছি গ্রেনেড পাওয়ার পরই তিনি বুলি পাল্টিয়ে দিলেন। খালেদার ভাষায় দেশে ‘জঙ্গিবাদী নেই’। যদি তাই হয় তবে তার জনসভার কাছে কারা বোমা নিয়ে বসেছিল? গ্রেফতারকৃতদের প্রকৃত পরিচয় কি? খালেদা কি আড়ালে কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন?ভাবতে অবাক লাগে­ খালেদা জিয়া সেসব জঙ্গি গডফাদারের পক্ষে ভোট চাইছেন। ২০০১-এর নির্বাচনে জিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের প্রতি কি আচরণ করেছিল জামায়াত-বিএনপির ক্যাডাররা তা জাতি এখনও ভুলে যায়নি। ভুলে যায়নি পূর্ণিমা রানীর প্রতি নারকীয় আচরণের কথা। চারদলীয় জোট এভাবেই তাদের জয়োল্লাস করে ২০০১ সালে। এর পরই ঘটতে থাকে মর্মান্তিক ঘটনাবলি একের পর এক। গণভবনের পাশাপাশি গড়ে ওঠে ‘হাওয়া ভবন’। এই ভবন থেকে পরিচালিত হতে থাকে প্যারালাল সরকার। বিএনপি মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের প্রত্যক্ষ সমর্থনে মাঠে নামে দানব বাংলাভাই। সে গাছে লটকিয়ে মানুষ হত্যার ভয়াবহ চিত্র দেখায় বিশ্ববাসীকে। সেই লোমহর্ষক ঘটনার পরও সংসদে দাঁড়িয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেন দেশে কোন জঙ্গি নেই।এর পরের ঘটনাগুলো এখনও দেশবাসীর চোখের সামনে ভাসছে। ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর আক্রমণ, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, শাহ কিবরিয়ার হত্যাকাণ্ড, আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ড, দেশজুড়ে একসঙ্গে বোমা হামলা, এজলাসের বাইরে জোড়া বিচারক হত্যাকাণ্ড­ এভাবে একের পর এক ঘটতে থাকে রক্তের হোলিখেলা। না, এত কিছুর পরও পদত্যাগ করেননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। পদত্যাগ করেননি তার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বরং সেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে খুনের মদদ ও খুনিদের বাঁচানোর জন্য ২২ কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পরবর্তী সময়ে। দেশে তারেক-কোকো-বাবর-মামুনরা কেমন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল­ তা ভুলে যায়নি দেশবাসী। দৌড় সালাউদ্দিন, সন্ত্রাসী পিন্টু, লালু, বুলু, দুলুরা দেশবাসীকে মনে করেছিল তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। দেশের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান লালন করেছিলেন গৃহপালিত ভূমিখেকো দস্যুচক্র। নিজে বানিয়েছিলেন প্রাসাদ। হারিছ চৌধুরীরা নিয়ন্ত্রণ করছিল আন্ডারওয়ার্ল্ড।দুইবাংলাদেশের মানুষ সেসব দুর্বিষহ চিত্র ভুলে যায়নি। যাওয়ার নয়। এখন সেসব সন্ত্রাসী গডফাদারই হয়তো দলীয় না হয় স্বতন্ত্র মনোনয়ন নিয়ে ভোটে প্রার্থী হয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আওয়ামী লীগের ফন্সাঙ্কেনস্টাইন বলে যে জয়নাল হাজারী-হাজী সেলিম-শামীম ওসমান-ডা. ইকবালদের প্রচার করা হয়েছিল এরা কেউই এবার মনোনয়ন পায়নি। ভোটেও দাঁড়ায়নি। অথচ বিএনপির ক্যাডার এবং সন্ত্রাসী গডফাদার ভিপি জয়নাল, পিন্টু, বাবর, সা. কা, মওদুদ, ‘দৌড় সালাহউদ্দিন’, এহছানুল মিলনরা এবারও নির্বাচন করছেন। কারা দেশে সন্ত্রাস চায়­ আর কারা চায় না, তা অত্যন্তই পরিষ্কার এখন জাতির সামনে।নির্বাচনের ঠিক পূর্বক্ষণে দাঁড়িয়ে তিনি প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়তে নাকি মাত্র দু’বছর লাগবে। ২০১১ সালের মধ্যে তিনি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে দেবেন।এই সেই খালেদা জিয়া যিনি বলেছিলেন, ‘বোবা, শিশু আর পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়’। অতএব নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা তিনি মানেন না। কমনওয়েলথের কর্মকর্তা স্যার নিনিয়ান গিয়েও বুঝাতে পারেননি খালেদা জিয়াকে। তার আপসহীনতার রোষানলে পড়ে একের পর এক প্রাণ ঝরছিল বাংলাদেশে ’৯৪-৯৫ সালে।এই সেই খালেদা জিয়া যিনি নিউইয়র্কে বলেছিলেন, ‘সিলেট বিভাগ গঠনের আদৌ কোন প্রয়োজন নেই’। পরে তীব্র আন্দোলন করে সিলেটবাসী বিভাগ বাস্তবায়ন করেছিল। এই সেই খালেদা জিয়া যিনি এখন বলছেন, এই দেশ তার শিকড়ভূমি। তিনি দেশ ছেড়ে কোথাও যাননি। তাকে কেউ দেশ ছেড়ে যেতে আদৌ বলেছিল কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কেউ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া তো আর পালিয়ে যাওয়া নয়। আর খালেদার দুই পুত্র দেশে যে পুকুরচুরির সম্ভার গড়ে তুলেছে­ সেগুলো পাহারা দেয়ার জন্যই তো তার দেশে থাকা জরুরি। তিনি না থাকলে সিঙ্গাপুরে পাচারকৃত কোটি টাকা উদ্ধারের জন্য দেন-দরবার করবে কে? মামুন-বাবর-লালু চক্রকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে কে?২০০৬ পর্যন্ত যে অসমাপ্ত জঙ্গিতত্ত্বটি গড়তে পারেননি, খালেদা জিয়া এবার জিতে সেই অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে চান। শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন যারা ‘দেশ বেঁচো, মানুষ মারো’ নীতি চালু করেছিল­ তারা এখন দেশ বাঁচানোর শ্লোগান দিচ্ছে।২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনটি জাতির জীবনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জাতি নির্ধারণ করবে তারা কোন পথ বেছে নেবে। জঙ্গিবাদী অপশাসন নাকি আধুনিক মননের বাংলাদেশ। প্রজন্মকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এদেশে লালন-হাসান-কামরুল-জয়নুলের স্মৃতি থাকবে কি থাকবে না। জরুরি অবস্খার মধ্যে যারা লালন ভাস্কর্য, বলাকা ভাস্কর্য ভাঙার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে এরা রাষ্ট্রক্ষমতার ভাগ পেলে কি করতে পারে­ তা ভাবতে হবে। সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, জঙ্গি হায়েনাদের ভোটে পরাজিত করে বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে­ এদেশে বাগান সাজাতে হলে আগে খালেদা জিয়ার তৈরি জঙ্গিবাদী জঙ্গল পরিষ্কার করতে হবে। আর এজন্য অসাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শক্তিকে বিজয়ী করার কোন বিকল্প নেই।আধুনিক বিশ্বের মিডিয়াগুলো নির্বাচনের সময়, তাদের দেশের বিভিন্ন প্রার্থী, দলকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে এনডোর্সমেন্ট করে। বাংলাদেশে সে প্রথা এখনও গড়ে ওঠেনি। এটি গড়ে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রার্থী বাছাই কাজটি বেশ সহজতর হতো।যারা এই লালসবুজের পতাকাখচিত বদ্বীপটিকে মনেপ্রাণে ভালবাসেন, তাদের বিনীত অনুরোধ করি­ বুকে হাত দিয়ে শপথ নিন মৌলবাদমুক্ত, জঙ্গিবাদমুক্ত, রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। সংগঠিত করুণ প্রতিটি প্রতিবেশীকে। যার যা কিছু আছে, তা দিয়ে প্রতিহত করুন এই দাবনশক্তিকে।নিউইয়র্ক­ ২৪ ডিসেম্বর ২০০৮=========================================দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত
false
hm
"তুমি কোন কাননের ফুল?" ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের দুই দাবিদারের একজন, কৃতী ব্যবসায়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের একটি বিবৃতি দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত [১] হয়েছে। ইউনূস এই বিবৃতিতে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁর সন্দেহ, সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক তার কর্মসংস্কৃতি হারিয়ে ফেলতে পারে। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নিয়ে ইউনূসের উদ্বেগ প্রকাশের পূর্ণ অধিকার রয়েছে, যেহেতু এটি বহুলাংশে তার মস্তিষ্কপ্রসূত, এবং তার সরাসরি তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় প্রায় পুরোটা সময় পরিচালিত হয়েছে। বয়সের কারণে কর্তৃপক্ষীয় হস্তক্ষেপে এবং পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের রায়ে ইউনূস গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন, নইলে হয়তো এখনও তিনিই ব্যবস্থাপনা পরিচালক রয়ে যেতেন। এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। কয়েকদিন আগেই "বিজনেস ফর পিস" পুরস্কার পেয়েছেন ট্রান্সকম গ্রুপের মালিক লতিফুর রহমান। তিনি দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারেরও মালিক। দৈনিক প্রথম আলো এই পুরস্কারটিকে ব্যবসায় নোবেলের সমকক্ষ বানানোর জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে। বিজনেস ফর পিস ফাউন্ডেশন গঠিত হয়েছে ২০০৭ সালে [৩], এটি পরিচালিত হয় নরওয়ে থেকে। নরওয়ে থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কারও ঘোষিত হয়। উকিলের বাড়ির বিড়ালও যেহেতু উকিল হয়, তাই "নরওয়ে" ও "পুরস্কার" শব্দ দুইটি এক বাক্যের মধ্যে থাকায় প্রথম আলো একে "ব্যবসায় নোবেল" হিসেবে চালিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসা বা অর্থনীতিতে লতিফুর রহমানের নোবেলপ্রাপ্তির সম্ভাবনা নেই, কামনা করি তিনি যেন শান্তি বা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মানসপটে গুমরে মরা নোবেলক্ষুধার নিবৃত্তি ঘটান এবং নরওয়ে থেকে পাওয়া যে কোনো টুকিটাকি পুরস্কারকে "অমুক ক্ষেত্রে নোবেল" হিসেবে চালিয়ে দেয়ার বদলেযাউবদলেদাউপনা থেকে মতিউর রহমান ভাইয়াকে উদ্ধার করেন। নরওয়ের জনগণের প্রতিও আহ্বান জানাই, আপনারা বেশি বেশি করে ফাউন্ডেশন স্থাপন করুন, এবং আরো বৈচিত্র্যপূর্ণ ক্ষেত্রে পুরস্কার দিয়ে তৃতীয় বিশ্বের বাহ্বাক্ষুধিত অশিক্ষিত মানুষগুলোকে নাকের পরিবর্তে নরুণ দিয়ে তুষ্ট করুন। "সম্পাদনায় নোবেল", "উপসম্পাদকীয় লেখায় নোবেল", "কলাম লেখায় নোবেল" এবং "কলামের ভেতরে বইয়ের বিজ্ঞাপন লেখায় নোবেল" দেয়ার জন্যে অন্তত পক্ষে আরো চারটি নরওয়েজিয় ফাউন্ডেশন গঠন এখন সময়ের দাবি। বিজনেস ফর পিস ফাউন্ডেশনের পুরস্কার পর্ষদ আলোকিত করে আছেন আমাদের ঘরের নোবেলপতি ড. ইউনূস স্বয়ং, এবং অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ড. মাইকেল স্পেন্স। এই ফাউন্ডেশনের পুরস্কার পর্ষদের সদস্য হওয়ার মানদণ্ডই এটি, শান্তি বা অর্থনীতিতে নোবেল জয় করতে হবে। দুই দুইজন নোবেল জয়ী যখন "সততা"র জন্য লতিফুর রহমানকে এই পুরস্কার গছিয়ে দেন, তখন লতিফুর রহমানের সততাকে চ্যালেঞ্জ করার আর কোনো জো থাকে? লতিফুর রহমান সৎ, নাকি অসৎ, সেটা নিয়ে আমার আপাতত মাথাব্যথা নেই। তবে প্রথম আলোর ঐ খবরে [২] দু'টি আগ্রহোদ্দীপক ব্যাপার চোখে পড়েছে। এক, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এ উপলক্ষ্যে গান পরিবেশন করেছেন, তুমি কোন কাননের ফুল। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি প্রশ্ন, বিশদ আলোচনার দাবি রাখে বলেই মনে হয়েছে আমার কাছে। আর দুই, ড. ইউনূসের একটি বক্তব্য সে খবরে প্রকাশিত হয়েছে। খবরটিকে সত্য বলে মেনে নিলে, ইউনূস বলেছেন, "বিজনেস ফর পিস পুরস্কারপ্রাপ্তিতে লতিফুর রহমানকে অশেষ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এমনিতেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তির কথা বললে প্রথমেই চলে আসে দুর্নীতির প্রসঙ্গটি। তার মধ্যে ব্যবসার কথা এলে লোকজন সন্দেহ করে যে, এ থেকে দুর্নীতির সূত্রপাত। সেখানে একজন ব্যবসায়ী সফল হবেন, সততা ও শান্তির জন্য পুরস্কার পাবেন, সেটা জাতির জন্য গৌরবের ও খুশির খবর। জাতিকে এ গৌরবের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য লতিফুর রহমানকে অভিনন্দন।" বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে, তা জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীও বলেছেন বলে জানিয়েছে প্রথম আলো। বহির্বিশ্বের কাছে আমরা মুখ দেখাতে পারতাম না, যদি আমাদের একজন ইউনূস আর একজন লতিফুর না থাকতো। তারা কোন কাননের ফুল? কীভাবে তারা বাংলার এই দুর্নীতিসিঞ্চিত মাটিতে গজালেন? সততার সনদপত্র দিয়ে বেড়ানো ইউনূসকে নিয়ে বিডিনিউজে দেড় বছর আগে একটি খবর [৪] প্রকাশিত হয়েছিলো, যেটি পরবর্তী হট্টগোলের কারণে মানুষের মন থেকে মুছে গেছে প্রায়। এর কৃতিত্বও মিডিয়াকেই দেয়া চলে। সেই খবর অনুযায়ী, দারিদ্র্য দূর করার জন্য ভর্তুকি হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংককে ১৯৯৬ সালে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেয় ইউরোপের কয়েকটি দেশ। নরওয়ে, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানির দেওয়া অর্থ থেকে ১০ কোটি ডলারেরও বেশি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণ নামে নিজের অন্য এক প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেন ইউনূস। ঢাকার নরওয়ের দূতাবাস, নরওয়ের দাতাসংস্থা নোরাড এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এ অর্থ গ্রামীণ ব্যাংকে ফেরত নিতে চেয়েও পারেনি। ১০ কোটি ডলারের মধ্যে সাত কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ ইউনূসের গ্রামীণ কল্যাণ নামের প্রতিষ্ঠানেই থেকে যায়। এরপর গ্রামীণ কল্যাণের কাছে ওই অর্থ ঋণ হিসেবে নেয় গ্রামীণ ব্যাংক। আমরা যদি ফিরে যাই গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউনূসের বিবৃতির কাছে, সেখানে দেখি তিনি লিখেছেন, আমি নিজের উদ্যোগে বহু প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছি। আমার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলির নামের সঙ্গে আমি ‘গ্রামীণ’ নাম ব্যবহার করে এসেছি। এই প্রতিষ্ঠানগুলির বেশির ভাগই হলো ‘মুনাফার জন্য নয়’, এমন প্রতিষ্ঠান। আইন অনুসারে এদের কোনো ‘মালিক’ নেই। কোম্পানি আইনের সেকশন ২৮ দিয়ে বেশির ভাগ কোম্পানিগুলি সৃষ্ট। এগুলিতে শেয়ার বিক্রি করার ব্যবস্থা থাকে না (নন স্টক), এগুলি থেকে কেউ মুনাফা পায় না, যেহেতু কারও এতে মালিকানা নেই, এবং এগুলি স্পনসরদের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দ্বারা সীমিত, অর্থাৎ কোম্পানি দায়দেনা শোধ করতে না পারলে স্পনসররা ব্যক্তিগতভাবে তাদের দেয়া গ্যারান্টি পর্যন্ত অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবেন। কাজেই এমন প্রতিষ্ঠানে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা থাকারও প্রশ্ন আসে না। আর কিছু আছে মুনাফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান। মুনাফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানগুলির মালিক হচ্ছে এক বা একাধিক ‘মুনাফার জন্য নয়’, এমন প্রতিষ্ঠান। এখানেও গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা থাকার কোনো অবকাশ নেই। দু'টি খবর যদি আমরা মিলিয়ে পড়ি, তাহলে বুঝতে পারি, গ্রামীণ কল্যাণের মালিকানা কোনোভাবেই গ্রামীণ ব্যাঙ্কের হতে পারে না। আর গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মালিকানা তো আমাদের দেশের দরিদ্র নারীদের। তার অর্থ হচ্ছে, ইউনূস সেই দরিদ্র নারীদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সরিয়ে নিয়েছেন মালিকানাহীন একটি প্রতিষ্ঠানে, তারপর সেই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে সেই দরিদ্র নারীদের ঘাড়ে ঋণের দায়ও চাপিয়েছেন। অর্থাৎ, দরিদ্র নারীর প্রাপ্য সম্পদকে ইউনূস দরিদ্র নারীর দেনা ও দায়ে পরিণত করেছেন। এটা কি সততা? এটা কি এথিক্যাল প্র্যাকটিস? ইউনূস যখন দরিদ্র নারীদের মালিকানাধীন গ্রামীণ ব্যাঙ্ক সম্পর্কে বিভিন্ন জায়গায়, দেশে ও বিদেশে, বিবৃতি দেন, তিনি দুর্নীতি শব্দটি উচ্চারণ করেন বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বাইরে যে বাংলাদেশ রয়েছে, তার কোলে তিনি অবলীলায় দুর্নীতির ভাবমূর্তি তুলে দেন। ইউনূসের কথা শুনলে মনে হতে পারে, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক আর ট্রান্সকম বাদে গোটা বাংলাদেশ দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন। ইউনূস নিজে কি দুর্নীতিমুক্ত? গরিব মহিলাদের সম্পদকে তিনি গরিব মহিলাদের দেনা বানিয়েই ক্ষান্ত হননি, এ প্রসঙ্গ ধামাচাপা দিতে নোরাডের কর্তাদের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন। সে চিঠিতে [৪] লিখেছিলেন, ১৯৯৮ সালের ১ এপ্রিল লেখা ওই চিঠিতে ইউনূস বলেন, "আপনার সাহায্য দরকার আমার। ... সরকার এবং সরকারের বাইরের মানুষ বিষয়টি জানতে পারলে আমাদের সত্যিই সমস্যা হবে।" নোরাড, ঢাকার নরওয়ে দূতাবাস এবং বাংলাদেশ সরকারের সংশ্ল্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে। সেই ইউনূস আবার বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে বড়বড় কথা বলেন, সেইসাথে সততার সনদপত্রও দেন একে ওকে। নিজের বিবৃতিতে ড. ইউনূস অভিমানভরে বলেছেন, এই তদন্ত কমিশন গঠন করে আমরা একটা রেকর্ড স্থাপন করলাম। নোবেল পুরস্কারের ১১০ বছরের ইতিহাসে মোট ২০টি নোবেলজয়ী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এশিয়ার একমাত্র নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর তদন্ত কমিশন বসিয়ে। আমাদের ইতিহাসে এটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইউনূস হয়তো বিস্মৃত হয়েছেন, ২০১০ সালে খোদ নরওয়ে সরকারই নোরাডকে দিয়ে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে তহবিল স্থানান্তর বিষয়ে তদন্ত করিয়েছিলো। তখন কি ইউনূস নরওয়ে সরকারের কাছে এই নোবেলজয়ী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তদন্ত করা নিয়ে কোনো অভিমানজরজর অভিযোগ ঠুকেছিলেন? কোনো পত্রিকায় বিবৃতি পাঠিয়ে নোবেলজয়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতি নরওয়ে সরকারের এই নজিরবিহীন তদন্তের মাধ্যমে স্থাপিত রেকর্ড নিয়ে কিছু বলেছিলেন? বলেননি সম্ভবত। বাংলাদেশ তদন্ত করলে মানসম্মান নষ্ট হয়ে যায়, আর নরওয়ে তদন্ত করলে কিছু হয় না? পৃথিবীতে আর কোনো শান্তিতে নোবেলজয়ী কি গরিব মহিলাদের চেহারা দেখিয়ে চেয়ে আনা টাকা অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করে সেই টাকাকে গরিব মহিলাদের দেনাদায়ে পরিণত করেছেন? যদি না করে থাকেন, জনাব ইউনূস নিজেই একটি রেকর্ড স্থাপন করে বসে আছেন কিন্তু। এই রেকর্ডের জন্যে তাকে সাধুবাদ দিতে পারছি না। লতিফুর রহমান যে মিডিয়াগোষ্ঠীর মালিক, সে মিডিয়াগোষ্টী ইউনূসের পয়গম্বরীকরণ সম্পন্ন করতে গিয়ে উঠতে বসতে একই কথা পুনরাবৃত্ত করছে, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খারাপ। আর মুহম্মদ জাফর ইকবাল আর হুমায়ূন আহমেদ সেই মিডিয়াগোষ্ঠীর কাগজে কলম ধরে লিখছেন, ইউনূস একাই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন। যদি ইউনূস দরিদ্র নারীদের সম্পদকে তাদের দেনায় পরিণত করেন এবং সেই কুকীর্তি ধামাচাপা দেয়ার জন্যে দাতাদের কাছে চিঠিও লিখে থাকেন, আর তার পরও যদি বহির্বিশ্বে তিনি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে চলেন, তাহলে বহির্বিশ্বের বিবেচনাবোধ সম্পর্কে খুব একটা ভরসা পাই না। মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখেছেন, প্রফেসর ইউনূস সারা পৃথিবীর মাঝে একজন অত্যন্ত সম্মানী মানুষ। তিনি শুধু যে ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তা নয়, কিছুদিন আগে তাকে স্টিভ জবস, বিল গেটস কিংবা গুগল বা ফেসবুকের প্রবর্তকদের মতো সমান কাতারের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আমি তাকে অসম্ভব পছন্দ করি (আশির দশকেই আমি একটা লেখায় তাঁর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছিলাম) কাজেই তাঁর সম্পর্কে আমার লেখায় যুক্তিতর্ক খুঁজে লাভ নেই! কিন্তু প্রফেসর রেহমান সোবহান তাঁর লেখায় লিখেছিলেন এই মানুষটি সারা পৃথিবীর অল্প কয়েকজন মানুষের ভেতর একজন, যিনি যেকোনো সময় পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে টেলিফোন তুলে কথা বলার অধিকার রাখেন, কাজেই বাংলাদেশের উচিত হবে এই অসাধারণ সুযোগটি দেশের মঙ্গলের জন্য গ্রহণ করা। মুহম্মদ জাফর ইকবালের কথা শুনলে মনে হয়, ইউনূস বাংলাদেশের বাইরের একজন মানুষ, যাকে নিরন্তর স্তব করে বাংলাদেশের মানুষ বিদেশী রাষ্ট্রনায়কদের কাছে টেলিফোন করিয়ে কৃপা প্রার্থনা করবে। বাংলাদেশের মানুষ কি পৃথিবীর যে কোনো রাষ্ট্রনায়কের কাছে আবদারের জন্য লালায়িত? আর ইউনূস নিজের গ্রামীণ ব্যাঙ্কের গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে কবে কোন রাষ্ট্রনায়কের কাছে টেলিফোন করে কী সুবিধা আদায় করেছেন বাংলাদেশের জন্য? আমরা তো দেখি তিনি নিজের তহবিল স্থানান্তরের কথা ধামাচাপা দেয়ার অনুরোধ করে চিঠি লিখতেই ব্যস্ত। আর জাফর ইকবালের লেখায় আমরা যুক্তিতর্ক খুঁজবো না তো কি আমিনীর লেখায় খুঁজবো? রাজনীতি নিয়ে ভাবতে বসে সে লেখায় যুক্তিতর্ক না থাকলে সেই লেখার আদর্শ ব্যবহার হতে পারে মুড়ির ঠোঙ্গা বানানোতে। ইউনূসের পয়গম্বরীকরণে যারা ব্যস্ত, তারা একটু যেন ব্যাখ্যা করেন, ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, যার মালিকানা লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মহিলাদের হাতে, সেই গ্রামীণ ব্যাঙ্কে দরিদ্র মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব কেমন করে নিশ্চিত করা হয়। নামকাওয়াস্তে কয়েকজন পরিচালক তাদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হয় বলে শুনেছি, কিন্তু সেই পরিচালকেরা ব্যাঙ্কিং সম্পর্কে কতটুকু বোঝেন, বা পরিচালনা পর্ষদে বসে এই ধরনের তহবিল স্থানান্তর গোছের সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণের জন্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা তাদের রয়েছে কি না, সেটা আমরা জানি না। এ ব্যাপারে তাদের শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় কি না, তা-ও জানি না। এ ব্যাপারে কি কেউ আমাকে আলোকিত করতে পারেন? মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছে অনুরোধ, যে ব্যক্তিটি যে কোনো সময় পৃথিবীর রাষ্ট্রনায়কদের ফোন মেরে বসতে পারেন, তাঁর সাথে দেখা হলে তিনি যেন এই গরিব, দুর্নীতিগ্রস্ত, বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি সঙ্কটে ভোগা দেশকে কর দেয়ার অনুরোধ করেন। একজন নোবেলজয়ী মানুষ নিজের দেশকে নানা অজুহাতে কর দেয়া থেকে বিরত থাকলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে না, আমি নিশ্চিত। কালের কণ্ঠের এক খবরে [৬] বলছে, ইউনূসের ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে করমুক্ত আয় হিসেবে প্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ ৫৪ কোটি ৫৩ লাখ ২৩ হাজার ৫৩৫ টাকা। ইউনূস বিদেশ থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ অর্থ আয় করার দাবি করেছেন এবং বিভিন্ন ব্যাংকে মেয়াদি জমা (এফডিআর) হিসেবে তা রেখেছেন। কিন্তু এনবিআর 'বিদেশে উদ্ভূত আয় কর অব্যাহতি যোগ্য নয়' যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবেদনে বলছে, 'ড. ইউনূস যে এসআরওর উল্লেখ করে বিদেশে উদ্ভূত আয়ের ওপর কর অব্যাহতি নিয়েছেন তা আইনানুগ হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না। মূলত বাংলাদেশি ওয়েজ আর্নারদের আয়কে করমুক্ত করার জন্যই ওই এসআরও জারি করা হয়। তিনি কোনোক্রমেই একজন ওয়েজ আর্নার নন। তাঁর বিদেশে উদ্ভূত আয় বাংলাদেশে উদ্ভূত আয় হিসেবেই গণ্য হবে। যদি তা না হয়, তবে সব রপ্তানিকারকের আয় কর অব্যাহতিযোগ্য হতো। কারণ রপ্তানিকারকের আয়ও বিদেশে উদ্ভূত হয় এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে আসে।' ইউনূস প্রকৃতপক্ষে কোন কাননের ফুল, আর কোন কেতাবি নন্দন কাননের ফুল হিসেবে তাকে চিত্রিত করলে বাংলাদেশে বিরাজনৈতিকীকৃত সুশীল সমাজের গায়ে চুলকে করা ঘায়ে মলম লাগাতে সুবিধা হয়, সেটা আমরা জানি। ইউনূসকে সামনে রেখে এর আগেও একবার আখের গোছাতে মাঠে নেমেছিলেন যারা, তারা আবার এই লোকটাকে সামনে ঠেলতে চাইছেন। ওনাকে লতিফুর রহমানের মতো শান্তিতে ব্যবসা করতে দিন, সেই ব্যবসা সামাজিক হোক বা না হোক। সংযোজন: যারা ইউনূসের তহবিল স্থানান্তর অধ্যায়টি ইতিমধ্যে বিস্মৃত হয়েছেন বা ভুলে থেকে স্বস্তি পেতে চান, তাদের বোঝার সুবিধার্থে শুভাশীষ দাশের "প্রফেসর ইউনূস, গ্রামীণ ও সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র" পোস্টটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সেখানে পরিস্থিতির সসূত্র বর্ণনা রয়েছে। তথ্যসূত্র: [১] ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিবৃতি - গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ: আমার শঙ্কা, প্রথম আলো, ৩১.০৫.২০১২ [২] সততা ও মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখবে এই পুরস্কার, প্রথম আলো, ৩১.০৫.২০১২ [৩] বিজনেস ফর পিস ফাউন্ডেশন [৪] দরিদ্রদের 'ইউনূসফাঁদ', বিডিনিউজ২৪, ০১.১২.২০১০ [৫] সাদাসিধে কথা: রাজনীতি নিয়ে আমার ভাবনা, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রথম আলো, ২৬.০৫.২০১২ [৬] এনবিআরের প্রতিবেদন - ব্যাংকে জমা ইউনূসের নিজস্ব ৫৪ কোটি টাকাও করমুক্ত!, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১২.০৪.২০১১
false
rg
শুভ জন্মদিন কাজী আনোয়ার হোসেন আজ কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্মদিন। ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় কাজী আনোয়ার হোসেন জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাক নাম 'নবাব'। তাঁর পিতা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন। আর মাতা সাজেদা খাতুন। তাঁরা ছিলেন ৪ ভাই, ৭ বোন । ঢাকা মেডিকেল কলেজের পূর্ব সীমানায় উত্তর ও দক্ষিণ কোণে যে দুটি দোতালা গেষ্ট হাউজ এখনো দেখা যায়, সেখানেই উত্তরের দালানটিতে আনোয়ার হোসেনের ছেলেবেলা কেটেছে। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় বাড়ি বদল করে তাঁরা দক্ষিণ দিকের গেষ্ট হাউসে চলে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের কিছু অংশ ছিল দক্ষিণ দিকে। ড. কাজী মোতাহার হোসেন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। পরে অবশ্য তাঁরা বাসা বদল করে সেগুনবাগিচায় নিজেদের বাসায় (২৪/৪, কাজী মোতাহার হোসেন সড়ক) চলে আসেন।১৯৫২ সালে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে কাজী আনোয়ার হোসেন ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাস করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। পড়াশুনা শেষ হওয়ার পর তিনি রেডিওতে নিয়মিত গান গাইতে শুরু করেন। নিয়মমাফিক কোনো প্রশিক্ষণ না নিলেও তাঁদের বাড়িতে গানের চর্চা সবসময় ছিলো। তাঁর তিন বোন সানজীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন ও মাহমুদা খাতুন এখনও রবীন্দ্র সঙ্গীতের সাথে ওতপ্রতোভাবে জড়িত। তিনি ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বেতারের সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন। কিন্তু ১৯৬৭ সালে তিনি রেডিও কিংবা টিভিতে গান গাওয়া এবং সিনেমার প্লে-ব্যাক ছেড়ে দেন। ১৯৬৩ সালে মে মাসে বাবার দেয়া দশ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা। আট হাজার টাকা দিয়ে কেনেন একটি ট্রেডল মেশিন আর বাকিটাকা দিয়ে টাইপপত্র। দু'জন কর্মচারী নিয়ে সেগুনবাগান প্রেসের সেই শুরু। যা পরবর্তীকালে নাম পাল্টে হয় সেবা প্রকাশনী। পরবর্তীতে তাঁর প্রকাশনা সংস্থা বাংলাদেশে পেপারব্যাক গ্রন্থ প্রকাশ শুরু হয়। বিশ্ব সাহিত্যের প্রখ্যাত উপন্যাসের অনুবাদ এবং কিশোর সাহিত্যের ধারাকে অগ্রসর করার কাজে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৪ সালের জুন মাসে প্রকাশিত হল কুয়াশা-১, যার মাধ্যমে সেগুনবাগান প্রকাশনীর আত্মপ্রকাশ ঘটে। কাজী আনোয়ার হোসেনের এক মেয়ে ও দুই ছেলে। তাঁর মেয়ে শাহরীন সোনিয়া একজন কন্ঠশিল্পী। বড় ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন এবং ছোট ছেলে মায়মুর হোসেন লেখালেখির এবং সেবা প্রকাশনীর সাথে জড়িত।তাঁর অধিকাংশ উপন্যাস ও গল্প বিদেশী কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে রচিত। তাঁর ভাষাশৈলী অসাধারণ রকমে স্বাদু। মৌলিক রচনাগুলোও চমকপ্রদ। বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন তিনি প্রধানত সম্পাদকের কাজ করেন। যদিও প্রকাশের ক্ষেত্রে বইগুলো তাঁর নামেই প্রকাশিত হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, যাঁরা তাঁর হয়ে লিখেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। 'মাসুদ রানা' তাঁর সৃষ্টি করা একটি কাল্পনিক চরিত্র। ১৯৬৬ সালে 'ধ্বংস পাহাড়' প্রচ্ছদ নামের প্রথম গ্রন্থটি থেকে শুরু করে সেবা প্রকাশনী থেকে 'মাসুদ রানা' সিরিজে এই চরিত্রকে নিয়ে প্রায় চার শতাধিক গুপ্তচর কাহিনীর বই প্রকাশিত হয়েছে। সিরিজের প্রথম দুইটি বই বাদে বাকিগুলো ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষার বইয়ের ভাবানুবাদ বা ছায়া অবলম্বনে রচিত। 'মাসুদ রানা'র চরিত্রটিকে মূলত ইয়ান ফ্লেমিংয়ের (Ian Fleming) সৃষ্ট জেমস বন্ড (James Bond) চরিত্রটির বাঙালি সংস্করণ হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৬৯-৭০ সালের দিকে তিনি বন্ধু সাংবাদিক রাহাত খানের অনুপ্রেরণায় রহস্যপত্রিকা প্রকাশের পরিকল্পনা নেন। রহস্য পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৭০ সালের নভেম্বরে। চারটি সংখ্যা বের হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের সময় পত্রিকাটির প্রকাশনা স্থগিত রাখা হয়েছিলো। স্বাধীনতার পর সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে পত্রিকাটি প্রকাশ সম্ভব হচ্ছিলো না। এরপর ১৯৮৪ সালে 'রহস্যপত্রিকা' আবার প্রকাশিত হয়। আজ পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে।১৯৭৪ সালে 'মাসুদ রানা'র কাহিনী নিয়ে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয় (মূল ভুমিকায় ছিলেন সোহেল রানা (মাসুদ পারভেজ)। বাংলাদেশের টিভি নাটকের ইতিহাসে প্রথম প্যাকেজ নাটক 'প্রাচীর পেরিয়ে'র কাহিনী রচনা করা হয় কাজী আনোয়ার হোসেন রচিত 'মাসুদ রানা' সিরিজের 'পিশাচ দ্বীপ' নামক বই থেকে। ১৯৯৪ সালে প্রচারিত নাটক 'প্রাচীর পেরিয়ে'র নির্দেশক আতিকুল হক চৌধুরী। ঐ নাটকের প্রধান দুটি চরিত্রে ছিলেন বিপাশা হায়াত ও নোবেল।কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে প্রথম সমালোচনা ছিলো তিনি 'মাসুদ রানা' সিরিজে যৌনতার বেসাতি পেতেছেন। এই হাওয়ায় পাল এতোটাই উঠেছিলো যে, 'প্রজাপতি' মার্কাওয়ালা বই পড়াই এক সময় নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো বাঙালি ঘরে। যারা এসব বই পড়তো তাদেরকে দেখা হতো অন্য নজরে। এছাড়া তিনি সমালোচিত হয়েছেন, প্রায় ঢালাওভাবে বিদেশী কাহিনী ধার করে 'মাসুদ রানা'কে সচল রাখার জন্য। ১৯৭৪ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা হিসেবে 'বাচসাস' পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন 'সিনেমা পত্রিকা' ও 'জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার'।কাজী আনোয়ার হোসেন প্রতিদিন সকাল ৮ টায় ঘুম থেকে ওঠেন। আর সকাল ১০ টায় লিখতে বসেন। বর্তমানে লেখার চেয়ে সম্পাদনার কাজই বেশি করছেন। এছাড়া রয়েছে তাঁর পড়ার নেশা। আর দিনে অন্তঃত ২ ঘণ্টা তিনি গান শোনেন। যন্ত্র সঙ্গীত তাঁর খুব প্রিয়। ছুরি আর বন্দুক সংগ্রহে তাঁর ভারী সখ। ছুরি সংগ্রহ করতে পারলেও বন্দুক সংগ্রহ করা হয়নি। স্কুলে পড়ার সময় কাজীদা শিকাড় করতেন। বুনোহাঁস ও অন্যান্য পাখি শিকাড়ে তিনি ছিলেন খুব দক্ষ। এছাড়া কাজীদা পছন্দ করতেন কিউবার হাভানা চুরুট। মাসুদ রানা'র যমেন পছন্দ ছিল হাভানা সিগার। কাজী দা সাক্ষাৎকার দেওয়া পছন্দ করেন না। তাঁর বাড়িতে টেলিভিশনের ক্যামেরা নিষিদ্ধ। তবে কেউ ই-মেইল করে কোনো প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে তিনি দেরিতে হলেও সাড়া দেন। কাজীদা ব্যক্তি জীবনে ভারী নিভৃতচারী। আর তাঁর বাবা কাজী মোতাহের হোসেন ছিলেন ঠিক এর উল্টো, আড্ডাবাজ। কাজীদা'র প্রিয় বই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পদ্মা নদীর মাঝি' ও 'পুতুল নাচের ইতিকথা' এবং হুমায়ূন আহমেদের 'নন্দিত নরকে'। কাজীদা তাঁর স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে পরামর্শ করে বন্ধু মাসুদ করিমের নামের 'মাসুদ' আর তাঁর শৈশবের নায়ক মেবারের রাজপুত রানা প্রতাপ সিংহের নাম থেকে 'রানা' বাছাই করে তাঁর কাল্পনিক চরিত্র 'মাসুদ রানা'র নাম ঠিক করেন। আর মাসুদ রানার জন্ম দিন ঠিক করেন ৯ এপ্রিল। এই বিশেষ দিনে জন্ম নেওয়া মানুষেরা নাকি অন্যায় মেনে নেয় না, প্রতিবাদী ও বিপ্লবী হয়। হাজারো প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে তারা টিকে থাকতে পারে। আর কাজীদা নিজের মায়ের কাছে শোনা হুগলী'র কথ্য ভাষাকে বেছে নিয়েছেন লেখনি'র ভাষা হিসেবে। কাজীদা আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ। আমি মোট তিনবার কাজীদা'র সেগুনবাগিচার বাড়িতে গিয়েছি। একবার কাজীদা'র সঙ্গে নিচতলা থেকে ইন্টারকমে কুশল বিনিময় করতে পেরেছিলাম। আমি রহস্যপত্রিকা বা বই কিনতে গিয়েছিলাম। আজ কাজীদা'র ৭৭ তম জন্মদিনে কাজীদাকে একজন অনুরাগী পাঠক হিসেবে লাখো ছালাম। আমাদের প্রজন্মের অনেকের মধ্যে বই পড়ায় আগ্রহ সৃষ্টি করাতে কাজীদা চিরদিন হৃদয়ে থাকবেন।
false
fe
সিলেট বিভাগের উন্নয়ন_ যে মাটির ঋণ শোধে চাই ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস সিলেট বিভাগের উন্নয়ন: যে মাটির ঋণ শোধে চাই ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ফকির ইলিয়াস ======================================= তিনশত ষাট আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত সিলেট বিভাগ অঞ্চলে সার্বিক উন্নয়ন কি সাধিত হচ্ছে ? এমন একটি প্রশ্ন প্রায়ই উঠে এই অঞ্চলের অধিবাসীদের মনে। গোটা বাংলাদেশের উন্নয়নের সিলেট বিভাগের একটি উজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছিলেন প্রবাসী সিলেটবাসীরা। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জে এম এ জি ওসমানী এবং উপ সেনাপতি এম এ রব দুজনেই ছিলেন এই অঞ্চলের মানুষ।সেই সিলেট বিভাগ স্বাধীনতার আটত্রিশ বছরে কি পেয়েছে, এই প্রশ্নটি বারবার আসছে। দেশের জাতীয় রাজনীতিতে এই অঞ্চলের অনেক কৃতি ব্যক্তিত্ব স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ধ্রুব হিসেবে কাজ করে গেছেন। এর মধ্যে সাবেক স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী , সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান প্রমুখের নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হয়। একটা বিষয় খুব স্পষ্ট আমার কাছে, বৃহত্তর সিলেটের উন্নয়নের এসব জাতীয় নেতারা অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন। তারা কাজ করে গেছেন সেই আলোকেই। এটা স্বীকার করার কোনো উপায় নেই, সময় বদলেছে। বদলেছে মানুষের চাহিদা। আর সমকালের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে মানুষের ইচ্ছে পূরণের নামই গণমানুষের রাজনীতি। খুবই দুঃখের সাথে যে কথাটি না বললেই নয়, তা হচ্ছে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের এই অঞ্চলের নীতি নির্ধারকদের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকারও হয়েছেন এই এলাকার মানুষ। আমি নাম উল্লেখ করে, সেই বেদনার স্মৃতি রোমান্থন করতে চাই না। এই যে দলের অভ্যন্তরে স্নায়ুযুদ্ধ, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই, তা কি সিলেট বিভাগবাসীকে লাভবান করেছে। না, লাভবান তো করেইনি, বরং ক্ষতিই করেছে বেশি। শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কর্তৃত্বের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে বিএনপি কিংবা আওয়ামীলীগ দুই সরকারের সময়েই সিলেটবাসী উপকৃত হতেন এ বিষয়ে দ্বিমত থাকার কথা নয়। এ বিষয়টি সকলেরই মনে রাখা উচিৎ, সিলেট বিভাগের মানুষ অত্যন্ত শান্তি প্রিয় এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই অঞ্চলে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করার প্রচেষ্টা অতীতেও হয়েছে, বর্তমানেও হচ্ছে। কিন্তু অশুভ শক্তি কখনও জয়ী হতে পারেনি। জয়ী হয়েছে সুরমা কুশিয়ারা খোয়াই মনু নদীর পাড়ের মানুষ। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের উন্নয়নে বিভিন্ন দাবী দীর্ঘদিন থেকেই উত্থাপিত হচ্ছে। কিন্তু তারপরও এই বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চলের চেহারা, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং শিক্ষা-চিকিৎসা চিত্র দেখলে রীতিমতো শিউরে উঠতে হয়। এখনও সিংহভাগ গ্রামে বিদ্যুতের আলো পৌঁছেনি। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর দৈন্যদশা মনকে দুঃখ ভারাক্রান্ত করে। দুই. বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করেছেন, তা নিয়ে একটি কথা আমি বারবারই ভাবি। আর তা হচ্ছে বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ কি ‘ডিজিটাল’ শব্দটির অর্থ বোঝেন ? না, বোঝেন না। এটা পীড়াদায়ক যে, রাজনীতির মারপ্যাঁচে এক ধরণের রাজনীতিক আছেন, যারা মনে করেন বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃত শিক্ষিত হলে তাদের অশুভ রাজনীতির দিন শেষ হয়ে যাবে। এরা মনে করেন, মানুষ জেগে উঠলে তাদের হীন স্বার্থ হাসিলের সকল প্রচেষ্টা তলিয়ে যাবে। দীন মানসিকতা সম্পন্ন রাজনীতিকরা এমনটিই চায়। তারপরও মানুষ দাঁড়ায়। দাঁড়াতেই হয়। বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের এই আটত্রিশ বছরে যদি সকল রাজনীতিকের প্রত্যয় হতো, ‘একটি শিক্ষিত প্রজন্ম’ তবে আজ বাংলাদেশের চিত্র অন্য রকম হতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি। একই কথা প্রযোজ্য সিলেটের বেলায়ও। যৌথ কর্মের অভাব, সমন্বয়ে দুর্বলতা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বৃহত্তর সিলেটবাসীকে। অথচ স্বর্ণগর্ভা এই মাটিতে কোন সুশক্তিরই কোন অভাব ছিল না। বর্তমান সরকারের সময়ে এই বিভাগ অঞ্চলে বেশ ক’জন ক্ষমতাবান রাজনীতিক রয়েছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, আইন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন রয়েছেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে সমুজ্জ্বল। এরা সকলেই সরকারের অন্যতম নীতি নির্ধারক বলে বিবেচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে বিদেশে বিভিন্ন সমাবেশে সিলেট বিভাগের উন্নয়নে সবকিছু করার কথা বলছেন। এই প্রত্যাশার পথ ধরে, আমি মনে করি সিলেট বিভাগের উন্নয়নের এই অঞ্চলের জাতীয় নেতৃবৃন্দের মাঝে একটি সমন্বয় সাধিত হওয়া প্রয়োজন। দল মত নির্বিশেষে সকলের উচিৎ, এই মাটির ঋণ শোধ করতে এগিয়ে আসা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই অঞ্চলের মানুষ মহাজোটকে সব ক’টি আসনেই জয়ী করেছেন। রয়েছেন মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী, শফিকুর রহমান চৌধুরীর মতো ব্যক্তিত্ব যারা দীর্ঘদিনের প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতায় লব্ধ করেছেন নিজেদেরকে। এসব সঞ্চয়কে কাজে লাগিয়ে সিলেট বিভাগের উন্নয়নে সকল প্রচেষ্টা আরো জোরদার করা প্রয়োজন। এর আলোকে আমি কিছু প্রস্তাবনা আমার এই নিবন্ধে তুলে ধরতে চাই। (১) সিলেট বিভাগের চারটি জেলায় চারটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কারিগরি শিক্ষা ইনষ্টিটিউট গড়ে তোলা হোক। যেখানে স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীরা বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র ফি-তে এসব শিক্ষা নিতে পারবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষিত জনশক্তির চাহিদা প্রচুর। ইলেকট্রিশিয়ান, ওয়েল্ডার, প্লাম্বার, অটো মেকানিক, সেলাই কারিগর, দক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিকসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলা সম্ভব এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর দ্বারা। শিখানো যেতে পারে বেসিক ইংরেজী ভাষাজ্ঞানও। (২) সিলেট বিভাগ অঞ্চরের ভাটি অঞ্চল রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হোক। সুনামগঞ্জ-হবিগঞ্জের জলমহালগুলো রক্ষা করে উৎপাদনশীল খাতে কাজে লাগাবার সরকারী পরিকল্পনা নেয়া হোক। (৩) সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, শাল্লা, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলায় মাধবপুর, বাহুবল, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই, সিলেট সদর জেলার গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর প্রভৃতি উপজেলা এখনও শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ব্যবস্থায় পিছিয়ে রয়েছে। এসব উপজেলাগুলোর মানব সম্পদ উন্নয়নে বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হোক। ঐসব এলাকাগুলোকে ভাগ করে মন্ত্রীদেরকে তদারকির দায়িত্ব দেয়া হোক এবং অগ্রগতি মনিটরিং এর জন্য একটি ওভারসিইং কমিটি গঠন করা হোক। (৪) শমসেরনগর বিমানবন্দরটি যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হোক। ওসমানী বিমান বন্দরের সকল উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করে আরো আধুনিক বিমান বন্দরে রূপান্তরিত করা হোক। (৫) সিলেট সিটি কর্পোরেশন, সুনামগঞ্জ পৌরসভা, মৌলভীবাজার পৌরসভা, হবিগঞ্জ পৌরসভাগুলোর নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির প্রয়োজনে পয়ঃনিষ্কাশন, আবর্জনা দূরীকরণ এবং ড্রেজিং কাজগুলো দ্রুত সম্পাদন প্রয়োজন। গণস্বাস্থ্য রক্ষার সার্বিক উদ্যোগ নেয়া হোক। (৬) সিলেট বিভাগ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ চুনাপাথর, মৎস্য সম্পদ, ফলমূল রপ্তানী প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রয়োজনে আধুনিক ইন্ডাষ্ট্রিজ, ফ্যাক্টরী গড়ে তোলা হোক। যা শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগই নয়, প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দরোজাও খুলে দেবে। আগেই বলেছি, সিলেট বিভাগের অনেক প্রত্যন্ত উপজেলায় এখনও উন্নয়নের ছোঁয়াও লাগেনি। সে সব পশ্চাদপদ এলাকাগুলোর দিকে বিশেষ নজর দেয়া হোক। সময় এসেছে এই একুশ শতকের প্রজন্মকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার। প্রবাসে অনেক বিত্তশালী ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যারা সুযোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সিলেটে ভারতের বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যানিকেতনের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলতে পারেন। অনেক অভিবাসী ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যারা শিক্ষা, চিকিৎসা, সমাজ উন্নয়ন ক্ষেত্রে নিজ মাটিতে গিয়ে আত্মনিয়োগে আগ্রহী। সেই সুযোগ অবারিত করতে হবে সরকারকেই। তুলে নিতে হবে সকল আমলাতান্ত্রিক বাধা। শিক্ষাক্ষেত্রে সিলেট বিভাগ অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এই দুর্নাম ঘুচাতে এই প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর তা করতে সবাইকে হতে হবে ঐক্যবদ্ধ। সিলেট ভূমির মাটির প্রতি ঋণ অনেক ,এই অঞ্চলের সন্তানদের। তাই ভেদাভেদ ভুলে কর্মের কোন বিকল্প নাই। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, এই বিভাগের প্রবাসীরা নিয়ত প্রহরীর মতোই রয়েছেন নিজ মাতৃভূমির সাথে। উন্নয়ন কর্মে দেশ ও প্রবাসের সেতু বন্ধন সমৃদ্ধ করবে দেশ ও প্রবাসের প্রজন্মকে। নিউইয়র্ক । ২৪ অক্টোবর ২০০৯ -------------------------------------------------------------------- দৈনিক উত্তরপূর্ব । সিলেট। ২৬ অক্টোবর ২০০৯ সোমবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৭:১৯
false
fe
নতুন ধারার রাজনীতিতে জাতীয় ঐকমত্যের ভাবনাবিলাস নতুন ধারার রাজনীতিতে জাতীয় ঐকমত্যের ভাবনাবিলাসফকির ইলিয়াস============================================বাংলাদেশের রাজনীতিতে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তারেক রহমান এখন মুখ্য নাম। তারেক রহমান এখন থাকেন বিলাতে। আর জয় থাকেন মার্কিন মুল্লুকে। জয় মার্কিন নাগরিক কিনা- তা আমি জানি না। তবে তিনি মার্কিন দেশেই লেখাপড়া করেছেন। তার পত্নীও একজন আমেরিকান। অন্যদিকে তারেক রহমান, জীবনে যা মিস করেছিলেন তা পুষিয়ে নিচ্ছেন বিলাতে থেকে। তার সন্তান লন্ডনে লেখাপড়া করছেন। তার পত্নীও সেখানে ডাক্তারি পড়ছেন। তারেক নিজেও আইন বিষয়ে লেখাপড়া করছেন- সে খবর আমরা মিডিয়ায় জানছি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন ইংল্যান্ড-আমেরিকা নির্ভর, তা বেশ স্পষ্ট করেই বলা যাচ্ছে। তারেকের ‘লন্ডন ঘোষনা’য় তিনি নতুন ধারার রাজনীতির কথা বলেছেন অতিসম্প্রতি একটি ইফতার মাহফিলে। বিএনপির বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে মিডিয়াগুলো জানাচ্ছে- আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের এমনই দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে। সে আলোকে ইতোমধ্যেই ইশতেহার প্রণয়নের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন তারা। আগামী ঈদের পর ইশতেহারের খসড়া রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। ইতোমধ্যে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান পরিবর্তনকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি সময়োপযোগী নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বিএনপির এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে থাকছে, যুবসমাজের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থান আর যে কোনো মূল্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার। সেই সঙ্গে আগামী সরকারের উন্নয়ন ও নতুন ধারার শাসন ব্যবস্থার রূপরেখা। এরই অংশ হিসেবে পরিবর্তনের সেøাগানে তরুণ ও নারীদের এক প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করা হবে। ক্ষমতায় গেলে বিরোধী দলের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি বন্ধের সুস্পষ্ট ঘোষণাও থাকবে এতে। এ ছাড়া সরকারের মেয়াদ শেষে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যবস্থার অঙ্গীকারও থাকবে ইশতেহারে। আমরা পত্র-পত্রিকায় পড়েছি, তারেক রহমান অতি সম্প্রতি সেখানে এক কর্মী সমাবেশে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য একটি উন্নয়ন রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন। এতে বাংলাদেশের কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, প্রযুক্তি, পরিবেশ ও পর্যটন, রাজধানীর যানজট, পানি, বিদ্যুৎসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে করণীয় স্পষ্ট করে তিনি বলেন, অতীতমুখিতা নয়, দৃষ্টি দিতে হবে ভবিষ্যতের দিকে। তারেক রহমান তার লন্ডন ভাষণে বলেছেন- ‘আমাদের গড়ে তুলতে হবে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে বহুদূর। এই অগ্রযাত্রার গতি হতে হবে দ্রুত। লক্ষ্য হতে হবে সুনির্দিষ্ট।’ তিনি বলেন, ‘অতীতমুখী নয়, আমাদের চেতনা ও দায়বদ্ধতা হতে হবে ভবিষ্যতে। গতানুগতিক ধারার রাষ্ট্র পরিচালনায় আবদ্ধ থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ কিন্তু খুব উজ্জ্বল নয়।’ এখানে একটি বিষয় বলে নিতে চাই। বিলাতে সম্প্রতি বিএনপির একটি নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। সেই কমিটিতে সভাপতি হয়েছেনÑ শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেনÑ কয়সর আহমদ। এই দুজনসহ কমিটির সকলেই নতুন মুখ। পুরোনো যারা বিএনপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা কেউই স্থান পাননি। বিষয়টি হচ্ছে এই, তারেক রহমান সম্পূর্ণ নতুন মুখ এনেছেন বিলাত বিএনপির রাজনীতিতে। যারা তার অনুগত হবে। এখানে অভিজ্ঞতা মোটেই প্রাধান্য পায়নি। না পাবারই কথা। কারণ প্রবীণদের অনেক স্বৈর মানসিকতায়ই অনুগত করা যায় না। বলা দরকার, ঠিক একই কায়দায় তারেক রহমান অনুগতদের দিয়ে ‘হাওয়া ভবন’ গড়ে তুলেছিলেন। প্যারালাল সরকার দাঁড় করিয়েছিলেন বাংলাদেশে। এর ফলাফল কী হয়েছিল, তা দেশের মানুষ খুব ভালোই দেখেছেন। অন্যদিকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। জয় বলেছেন, আমার কাছে তথ্য আছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। সুতরাং আগামী ছয় মাস মানুষের কাছে গিয়ে বিএনপির অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরতে হবে। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘বিএনপির অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদেরও প্রচারণায় নামতে হবে। এখন থেকে আগামী ছয় মাস বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরতে হবে। মানুষ যদি আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কথা বলে, তাহলে তখন বলবেন, আসুন আমরা বিএনপির আমলের দুর্নীতির সঙ্গে এ আমলের তুলনা করি। তাহলেই মানুষ সহজে বুঝবে। কারণ তাদের কোনো সফলতা নেই। তাদের সময় বাংলাদেশ পাঁচ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দুর্নীতি নিয়ে গবেষণা করে। তাদের গবেষণায় আমরা এখন দুর্নীতিতে ৪০তম কোঠায় আছি। আর বিএনপি পাঁচ বছরে এক নম্বরে ছিল। আজ আমরা সেখান থেকে কোথায় এসেছি? আমরা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছি। তাদের সময় দুর্নীতির কথা বলাই যেতো না। চার বছর আমরা কিভাবে দেশ চালিয়েছি তা দেশবাসী দেখেছে। বিএনপি আমলের মতো এমন কোনো ভবন হয়নি যেখানে ব্যবসায়ীদের চাঁদা দিতে হয়। বিএনপি আমলে এমন কোনো ছোটখাটো ব্যবসা ছিল না যেখান থেকে হাওয়া ভবনকে চাঁদা দিতে হয়নি। তারা শুধু খাম্বা দিয়েছে। বিদ্যুৎ দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকায় কতোগুলো ফ্লাইওভার তৈরি করেছে। একটা ফ্লাইওভারের জন্য কাউকে কোনো চাঁদা দিতে হয়নি। হাতিরঝিল তৈরি করে ঢাকা শহরের চেহারা পাল্টে দেয়া হয়েছে। সেখানে গেলে মনে হয় দেশের বাইরে কোথাও এসেছি। ঢাকাকে আন্তর্জাতিক শহরের মতো মনে হয়। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে জোর দিয়েছি। এভাবে অর্থনীতি এগোলে ২০২১ ভিশন-২১ বাস্তবায়ন হবে।’ তিনি বলেন, ‘রমজানে কোনো খাদ্যের দাম বাড়তে দেয়নি সরকার। হয়তো অনেকে ভুলে গেছে বিএনপি সরকারের আমলে রমজানে কিভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তো। এটা ভুলে গেলে চলবে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ যে পরিমাণ এগিয়েছে বিএনপির দুই আমলেও সে পরিমাণ দেশ এগোয়নি। এই দেশে যতো উন্নয়ন হয়েছে সব আওয়ামী লীগের সময় হয়েছে। বিএনপির সময় হাওয়া ভবনের মাধ্যমে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি হয়েছে। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন হয়েছে। ১০ মাসের শিশুকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তখন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিএনপি আমলে যেভাবে নির্যাতন হয়েছে তা কোনোভাবেই মানুষকে ভুলতে দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, আমরা ২১ আগস্টের কথা ভুলিনি। আমার মায়ের ওপর বোমা হামলা করা হয়েছিল। আমাদের দলের ২৩ নেতাকর্মীকে হত্যা এবং ৪০০ জনকে আহত করা হয়েছিল। আমি ছোটবেলায় যাদের সঙ্গে খেলতাম তাদের মা আইভী রহমানকে মেরে ফেলা হয়েছিল। হাওয়া ভবন থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে নিজে পরিকল্পনা করে এ হামলা করে। এর বিচার হবেই।’ জয়ের এই ‘তথ্য’ নিয়ে অনেক কথা বলছে বিরোধী দল। পাঁচটি সিটি নির্বাচনে তারা জেতার পর এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে এই ভেবে যে তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েই ক্ষমতায় যাচ্ছে। এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে বলতে পারি, আগামী দিনে নির্বাচন হবেই। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে গন্ধ পাচ্ছি, আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জনগণের রায় নিয়ে আবারো ক্ষমতায় আসবে।’ আওয়ামী লীগ যখন এই ‘তথ্য’ ও ‘গন্ধ’-এর রাজনীতি নিয়ে মাঠ গরম করছে, তখন খবর বেরিয়েছে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠন করবে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, ক্ষমতায় গেলে বিএনপির দলীয় কাঠামোর মধ্যে নেই এমন নেতৃস্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে রাষ্ট্র পরিচালনায় কাজে লাগাতে চায়। এজন্য শাসনতান্ত্রিক কাঠামো পরিবর্তন করে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের পক্ষে তারা। পাশাপাশি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদের মতো ব্যক্তিকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। অনুরোধে রাজি হলে এ দুজনকে উপ-প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ বা বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। এছাড়া স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি প্রশাসনকে প্রকৃত অর্থে বিকেন্দ্রীকরণের ইচ্ছা রয়েছে দলটির। পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে ন্যায়পাল নিয়োগ, সরকারি কর্মকর্তাদের ওএসডির বিধান বাতিলসহ ইতিবাচক নানা উদ্যোগ রয়েছে দলটির বিবেচনায়। বিএনপি বিদেশী দাতা ও সরকারদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ড. ইউনূস, ফজলে হাসান আবেদ ও গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব দিয়ে কাজে লাগাবার কথা ভাবছে বলেও শোনা যাচ্ছে। কথা হচ্ছে এই, ক্ষমতায় যাবার জন্য এমন কৌশল বিএনপি আগেও নিয়েছে। ২০০১ এর নির্বাচনে জিতে কী তা-ব তারা চালিয়েছিলÑ তা মানুষের ভুলে যাবার কথা নয়। আজ যে উপজেলাকে শক্তিশালী করার কথা বিএনপি বলছে, সেই উপজেলা পদ্ধতিকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল এই বিএনপি-ই। রাজধানী ঢাকার যে করুণ পরিণতি, তাতে এই চাপ কমাবার জন্য বাংলাদেশে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা চালু এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করে রাষ্ট্রক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের যে প্রস্তাবনা জাতীয় পার্টি প্রধান এইচ এম এরশাদ এতোদিন থেকে বলে আসছেন তা অনেকের কাছে অপ্রিয় হলেও তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আমার কাছে খুব স্পষ্টই মনে হয়, বিএনপি জাতীয় সরকার গঠন করবে না। কারণ অনির্বাচিত কোনো উপদেষ্টামণ্ডলী দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা শাসিত হবার মানসিকতা এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে গড়ে ওঠেনি। ফলে দুকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট যদি করতেই হয় তা হতে হবে আমেরিকার সিনেট ও কংগ্রেসের আদলে। উভয় পক্ষের প্রতিনিধিকেই ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে তা সম্ভব না হলে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার ভাবনাবিলাস হয়েই থেকে যাবে। তাছাড়া বিএনপি যেভাবে বিভিন্ন দুষ্টগ্রহ দ্বারা আচ্ছাদিত, তাতে তারা মুখে বললেও কাজে অনেক কিছুই করতে পারবে না। বর্তমান সরকার আগামী কয়েক মাসে আরো অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে নিজেদের আরো সর্বনাশ ডেকে আনবে কিনা তাও ভাবনার বিষয়। কারণ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুবলীগ নেতা রিয়াজউদ্দিন খান ওরফে মিল্কিকে যেভাবে নারকীয় কায়দায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তা জনবিবেককে হার মানিয়েছে। ঘাতকের নাম জাহিদ সিদ্দিকী তারেক বলে জানিয়েছে র‌্যাব। তিনিও যুবলীগ নেতা। গোটা দেশজুড়েই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে হত্যার রাজনীতি। যা আগামী কয়েক মাসে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।--------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : শনিবার, ৩ আগস্ট ২০১৩
false
ij
আমরা কি অভ্যন্তরীন পর্যটনের কথা ভাবতে পারি_ (৫) নিরাপত্তা দেবে গ্রামবাসী থানা থেকে বেরিয়ে ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুরে চোখ ধাঁধিয়ে গেল রহমান সাহেবের। বেলা বারোটার মতন বাজে। সূর্য মধ্যগগনে। সময়টা বৈশাখের শেষ। এখনই জ্যৈষ্ঠের তীব্র আভাস দিচ্ছে। বাতাসে অল্প লু। রহমান সাহেব আজ সাদা পাঞ্জাবি পরেছেন। ঘামে ভিজে গেছে। হোসেনপুর থানায় আজ ওসি সাহেব ছিলেন না। রাউন্ডে বেরিয়েছেন। পলাশপুরে নাকি পরশু রাতে ভয়ঙ্কর ডাকাতি হয়ে গেছে। তারই তদন্তে বেরিয়েছেন মাসুম আলী। এস. আই মোহাম্মদ মমতাজ আলীর সঙ্গে কথা হল। চল্লিশের মতন বয়েস। বাড়ি ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলায়। মেঘনা সেতুর কথা বলতেই উত্তেজিত হয়ে উঠলেন মোহাম্মদ মমতাজ আলী । বলেন কি মেঘনা নদীর উপর ব্রিজ! কেন? জাপানে তারা সমুদ্রের উপর ব্রিজ করে নাই? রহমান সাহেবের উলটো প্রশ্ন। করছে। তয়? মোহাম্মদ মমতাজ আলী চুপ করে থাকে। রহমান সাহেব তখন দক্ষিণাঞ্চলের ইকোনকিম বেল্টের কথা খুলে বললেন। লক্ষ্মীপুর থেকে ভোলা-পিরোজপুর-ঝালকাঠি-পটুয়াখালি-বাগেরহাট-খুলনা-সাতক্ষীরা পর্যন্ত গড়ে উঠবে সাউদার্ণ বেঙ্গল ইকোনকি জোন। শুনতে শুনতে মোহাম্মদ মমতাজ আলী রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে উঠেন। তিনি দক্ষিণ বাংলার মানুষ। দেশের কথা উঠলে শরীরের রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। বাঙালির দেশচিন্তা নেশাদ্রব্যের মতন। রহমান সাহেবের ওপর শ্রদ্ধা বেড়ে যায় মোহাম্মদ মমতাজ আলীর। এমনিতেই ওই দীর্ঘদেহি মানুষটা দেখতে পির-ফকিরদের মত। মাথায় জটাচুল, তাল পাতার টুপি। গায়ের রং ফরসা। দাড়িতে মেন্দি।সব সময় লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরেন। রহমান সাহেব সময় নস্ট না করে আসল কথায় এলেন। বললেন, শোনেন মমতাজ সাহেব। আপনি জানেন আমি গ্রামের মধ্যে হোটেল খুলছি। সেই খবর জানাইয়া পেপারে বিজ্ঞাপন দিসি। সবাই এখন ফোন কইরা নিরাপত্তার কথা জিগায়। আমি কর দেই, মানে ট্যাক্স দেই। আমি সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাই। শহর থেকে আমার কাচারিবাড়িতে অতিথিরা আসে। গ্রামে ঘুইরা বেড়ায়। তাদের নিরাপত্তা লাগব। নিরাপত্তা না পাইলে কেউ গ্রামে আসবে না। আমার ব্যবসার লালবাতি জ্বলব। মোহাম্মদ মমতাজ আলী আন্তরিক কন্ঠে বললেন, আপনি চিন্তা কইরেন না রহমান সাহেব। আমরা সব সময় আপনার পাশে আছি। আপনি মহৎ উদ্যেগ নিয়েছেন। তবে জানেনই তো বাংলাদেশের প্রতিটি থানায় পুলিশের সংখ্যা সীমিত। পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব না। জানেন তো সরকারের আয় সীমিত। জানি। সরকারের আয় বাড়াবে অভ্যন্তরীণ পর্যটন। সরকার নতুন ট্যাক্স ধার্য করলে হৈচৈ পইড়া যায়। যায় না? যায়।মোহাম্মদ মমতাজ আলী মাথা নেড়ে বললেন। ট্যাক্স নিতে হবে অন্য ভাবে। কী ভাবে? মোহাম্মদ মমতাজ আলী ঝুঁকে পড়েন। রহমান সাবেহ বললেন, শহর থেকে লোকে গ্রামে এসে টাকা খরচ করবে। সেই টাকার একাংশ অভ্যন্তরীণ পর্যটনের উদ্যেক্তারা সরকারকে ট্যাক্স হিসেবে দেবে। তার মানে কি দাঁড়াইল? আপনি তো দেখি দারুন লোক। মোহাম্মদ মমতাজ হেসে বললেন। তবে আমার মনে হয় পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রামবাসী নিলে ভালো হয়। আসলে গ্রামবাসীর মধ্যে সচেতনা বাড়ানো দরকার। আপনার লাভ মানে তাদের লাভ। হ। আগামী শুক্রবার গ্রামের লোকদের নিয়া জরুরি মিটিং ডাকি? ডাকেন। এরপর আরও কিছুক্ষণ আগামী শুক্রবারের মিটিং প্রসঙ্গে কথা বলে থানা থেকে বেড়িয়ে এলেন রহমান সাহেব। কাচারিবাড়ি ফেরার পথে পাল পাড়া পড়ে। বিপিনের বাড়ির সামনে একটা টিনের ঘর। সামনে বড় একটা সাইনবোর্ডে লেখা। প্রদর্শনী কেন্দ্র। সেদিন হোসেন পুর হাটে বিপিনের সঙ্গে দেখা। বলল, বিক্রিবাটা বেড়ে গেছে। শুনে এত ভালো লাগল রহমান সাহেবের। দুপুরে খেয়ে নতুন বিজ্ঞাপন লিখতে বসলেন রহমান সাহেব। হোসেনপুর গ্রামে এসে কয়েক দিন বেড়িয়ে যান। সন্ধ্যার পর বাউল গানের কনসার্ট। তার আগে তালতলার মাঠে শ্রীলেখা সাহার নকশী কাথা প্রদর্শনী। তেরোই জ্যৈষ্ঠ পুব পাড়ার নিহার বানুর নকশী কাথা প্রদর্শনী । অপরাহ্নে চিত্রা নদীতে নৌকা বাইচ। (অনিময়মিত) নিরাপত্তার চিন্তা নাই। পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তা দেবে গ্রামবাসী। কী ভাবে হোসেনপুর আসবেন। মোবাইল নম্বর। বিজ্ঞাপনটি বার কয়েক দেখে ভারি সন্তুষ্ট হলেন এই পাগলাটে মানুষটি। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:১৩
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৩৯ ১. কেমন একটা থমথমে ভাব চারদিকে। মনে হচ্ছে দাঁতের ফাঁকে পিন কামড়ে ধরে আছি, গ্রেনেডটা বুকের সাথে চেপে ধরা, একটু পরেই দারুণ বিস্ফোরণে সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাবে। সকালে ঘুম ভাঙার পর অনেকক্ষণ ধরে ধুকধুক করতে থাকে বুক। হৃৎপিন্ডটাও হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটছে আমার সাথে, হাঁসফাঁস করে একটা কিছু বলার চেষ্টা করছে, বুঝে উঠতে পারছি না। আগামী সেমেস্টারে থিসিস, যাকে এখানে বলা হয় ডিপ্লোমআরবাইট, লিখতে হবে। আমার ব্যাচেলর ডিপ্লোম-আইন্স (আইন্স = ১) এর সমকক্ষ, মাস্টার্স করার পর সেটা ডিপ্লোম-ৎস্বাই (ৎস্বাই = ২) হবে। জার্মানীতে প্রকৌশল নিয়ে পড়ালেখা করলে ডিগ্রীটাকে লেখা হয় Dipl.-Ing., অর্থাৎ প্রকৌশলে ডিপ্লোমপ্রাপ্ত। ডক্টরেট করলে কপালে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার দুই খেতাবই জোটে, অর্থাৎ লেখা হয় Dr.-Ing.। এ নিয়েও কিছু কালা কানুন আছে, যেমন হিটলুর আমলের একটা আইন ছিলো, জার্মানির বাইরে কেউ যদি ডক্টরেট করেন, তাহলে জার্মানির ভেতরে সে পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করতে পারবেন না, করলে সেটা অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত হবে, এবং জরিমানা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাভোগ জাতীয় ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে। কয়েক বছর আগে এই হুজ্জতের সীমা একটু কমানো হয়েছে, এখন ইয়োরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে কেউ যদি ডক্টরেট করেন, তাহলে জার্মানিতে সে পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করতে পারবেন, অন্যথায় নয়। কিছুদিন আগে এক মার্কিন বিজ্ঞানীকে এ নিয়ে পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের একটা লিঙ্ক ছিলো, সংরক্ষণ করতে ভুলে গেছি, নইলে শেয়ার করা যেতো। আরো হ্যাপা নাকি আছে। প্রকৌশলে পোস্ট ডক্টরেট, এখানে যাকে বলে হাবিলিটাৎসিওন, করলে কেবল পুরনো পূর্ব জার্মানীর লোকজনই তা ব্যবহার করেন, পশ্চিম জার্মানীতে প্রকৌশলশাস্ত্রের লোকেরা নামের গোড়ায় Dr.-Ing. Habil. লিখতে পারবেন না। তবে নাটুওরভিসেনশাফট, অর্থাৎ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের লোক হলে ভিন্ন কথা। আগামী সেমেস্টারে ডিপ্লোমআরবাইট নিয়ে প্রফেসরদের কাছে ঘোরাফেরা করছি। আমার আগ্রহ সৌর আর বায়ুশক্তিক্ষেত্রে, যদিও বাংলাদেশে এই দুয়ের প্রয়োগই কিছুটা সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি। বাংলাদেশে এই দুই নবায়নযোগ্য শক্তির প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে একটা ছোট সিরিজ লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছি আপাতত। প্রফেসর আর তাঁদের ডক্টোরান্ডদের কাছে আনাগোনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কী নিয়ে কাজ করবো। এ নিয়ে একটা চাপা টেনশন কাজ করছে কেন যেন। প্রফেসররা দেখলাম এই আগেভাগে খোঁজ নেয়ার ব্যাপারটাকে বেশ ভালো চোখেই দেখেন। আমার পরামর্শক প্রফেসর কাজ করেন উচ্চবিভব নিয়ে, আমার আগ্রহের কথা শুনে তিনি সরাসরি জানালেন, ওরকম কোন কাজ তিনি আপাতত করছেন না, তবে ইনসুলেশন নিয়ে টাটকা কিছু কাজ হচ্ছে, আমার আগ্রহ থাকলে করতে পারি। কাজের কিছু নমুনা দেখালেন তিনি, বেশ ইন্টারেস্টিং, কিন্তু ঐ পথে হাঁটবো না হয়তো। সৌর আর বায়ুশক্তি নিয়েও প্রচুর কাজ হচ্ছে, এই দুই ক্ষেত্রের তিন প্রফেসরকে জ্বালিয়ে মারবো আপাতত কয়েক সপ্তাহ। যে প্রফেসরের অধীনে কাজ করার খুব ইচ্ছা ছিলো, তিনি আপাতত দূরদূরান্তের সব কাজ গছিয়ে দিচ্ছেন ছাত্রদের, আর কাজ করছেন জৈববস্তু নিয়ে, যে ব্যাপারে আমার আগ্রহ থাকলেও রসায়নে আক্কেলগত শৈথিল্যের কারণে ঐ পথে যাওয়া হবে না। গত সেমেস্টারের একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো লিখতে লিখতে। কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাপগতিবিদ্যার দুঁদে প্রফেসর হচ্ছেন ক্লোজে। বেশ বদমেজাজি লোক, কিন্তু খুব খেটে পড়ান। বয়স হয়ে গেছে, অঙ্ক করাতে গিয়ে মাঝে মাঝেই ভুলভাল হয়ে যায়, পিএইচডির ছাত্ররা তড়িঘড়ি করে আবার ঠিক করে দেয় বোর্ডে গিয়ে। এক রাতে আড্ডা সেরে আমি আর হের রেহমান যাচ্ছি যে যার বাড়ি, এক বিপন্নমুখো ছোকরা কোত্থেকে এসে হাল্টেষ্টেলেতে পথ আগলে দাঁড়ালো। "ক্ষমা কোরো ... কিন্তু তুমি কি জানো, কিভাবে কোন সংখ্যার ঘাত বার করতে হয়?" ছোকরার উচ্চারণ আর চেহারা দেখে মনে হলো সে জাতিতে আরব, বললাম, "হুমম, জানি! ক্যালকুলেটর দিয়ে!" ছোকরা হেসে ফেলে বললো, "ক্যালকুলেটর ছাড়া কিভাবে করতে হয় তা-ই বলো!" থতমত খেয়ে বললাম, "টেইলর সিরিজে ভেঙে করা যায়। কিন্তু ক্যালকুলেটর ব্যবহার করছো না কেন?" ছোকরা এবার জানালো তার দুঃখের কাহিনী। ক্লোজের পরীক্ষা সামনে, যন্ত্রকৌশলের ছাত্রদের জন্যে তাপগতিবিদ্যার প্রথম পাঠ, সে পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ। ঐ যন্ত্রটি ছাড়াই এক দশমিক ছয় তিন দুই ঘাত শূন্য দশমিক পাঁচ তিন দুই আট এর মান বার করতে হবে। হের রেহমান চুপচাপ শুনছিলেন, এবার তিনি ধীরে ধীরে কিভাবে টেইলর ধারা দিয়ে এইসব হাবিজাবি বার করতে হয়, কিভাবে তৃতীয় ও পরবর্তী ঘাত অগ্রাহ্য করে সংক্ষেপে কাছাকাছি মান বার করা যায়, তা বিশদ বুঝিয়ে বললেন। ছোকরা সব নোট করে নিলো। মনে মনে ভাবলাম, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্র্যামেবল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা নিষিদ্ধ ছিলো, কিন্তু কোন ক্যালকুলেটর ছাড়া তাপগতিবিদ্যার পরীক্ষা নেয়াকে ভোগলামি ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। জৈববস্তু নিয়ে কাজ করতে গেলে ক্লোজের মুখোমুখি হতে হবে অনেকবার। দূর থেকেই নমস্কার জানিয়ে তাই কেটে পড়ি। ২. এই রেনেট ছোকরাটাকে ধরে প্যাঁদানো উচিত। কী একটা মুভি স্ট্রীমিং সাইটের ঠিকানা দিলো, এখন শুধু প্রাণ ভরে মুভি দেখি। খুব খুব খুব ভালো লাগলো রাতাতুয়ি (Ratatouille) দেখে। ভোজনরসিক এক ইঁদুর রেমি, যে কি না বাড়ির রান্নাঘরে লুকিয়ে চুরিয়ে টেলিভিশনে দেখে দুঁদে শেফ গুস্তো-র রান্নাবান্নার কলাকৌশল। গুস্তো-র মোটো হচ্ছে, যে কেউই রান্না করতে পারে। রেমির বাপ রেমির ওপর একটু চটা, কারণ রেমির চালচলন অন্য ইঁদুরদের মতো নয়। যেমন, রেমির নাক অন্যদের চেয়ে একটু বেশি স্পর্শকাতর, তাই সব ইঁদুরদের যোগাড় করে আনা খাবার শুঁকে দেখে রেমি রায় দেয়, কোনটা বিষ মাখানো আর কোনটা নিরাপদ। কিন্তু রেমি আবার সব খাবার মুখে দেয় না, বেছে বেছে সবচেয়ে ভালো এক চিমটি খায়। রেমি কুড়িয়ে খেতে ভালোবাসে না, খাবার চুরি করে খাওয়া তার পছন্দ নয়, সে চায় রান্না করে খেতে। ছবির শুরুতেই দেখা যায় রেমি এক টুকরো ফরাসী পনির পেয়ে খুঁজে বার করেছে মাশরুম, তারপর বাড়ির ছাদে চড়ে সেই চীজ আর মাশরুম সেঁকে নিচ্ছে চিমনির ধোঁয়ায়। এই দৃশ্যটিই রাতাতুয়িকে অনেক ওপরে ঠেলে নিয়ে গেছে বলে মনে হয়েছে। ছোট্ট রেমি, ছোট্ট তার ইচ্ছা, কিন্তু কী অসামান্য তার চেষ্টা! এরপরে ঘটনা আরো অনেক গড়ায়, সম্ভাব্য দর্শকের মজা মাটি করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। সিনেমা রিভিউ করতে গিয়ে অনেকেই গোটা সিনেমার গল্প বলে দ্যান, যা অতিশয় বিরক্তিকর ব্যাপার, তাই ও পথে পা বাড়াচ্ছি না। গুস্তো, তার রান্নার সমালোচক আন্তন ইগো, কিংবা ঝাড়ুদার থেকে শেফ বনে যাওয়া লিঙ্গুয়িনি, এদের সবার কাহিনী সুযোগ পেলে দয়া করে দেখে নেবেন রাতাতুয়িতে। শুধু বলি, রাতাতুয়ির সুরের কাজ অসাধারণ হয়েছে। আমি সারা জীবনে কখনো রেঁধে খাইনি, এমনকি চা বানিয়েও খাইনি খুব বেশি, এখন বাটে পড়ে রান্না করে খাই। যা নিজে রান্নার সাহস করি না, তা খাবার ইচ্ছে হল চৌধুরীর ঘাড়ে হামলা করি। চৌধুরীও আমার পথেরই পথিক, কিন্তু তাঁর তেহারি খাওয়ার বাসনা অনেক বেশি সলিড, তাই তিনি নিজেই রান্না করে ফ্যালেন, আমি খানিকটা জবরদস্তি করেই হামখোরাক হই। রাতাতুয়ির মূলমন্ত্র, এনিওয়ন ক্যান কুক দেখে তাই আমি খুবই স্পৃষ্ট। ঠিক করেছি, নতুন কিছু রান্না করে সবাইকে চমকে দেবো। এমন কিছু, যা খেয়ে লোকজন হয় মরে যাবে, নয়তো আর জবান নড়াতে পারবে না। কিন্তু ছবিটা দেখতে দেখতেই গভীর একটা বিষাদ আমাকে গ্রস্ত করে। শেষ পর্যন্ত, একটা ইঁদুরই তো আমি, রেমির চেয়ে একটু বড়, রেমির চেয়ে আরো অলস। রেমির মতো আমিও তো স্বজনদের ছেড়ে পড়ে আছি দূর প্রবাসে, নিজের ধান্ধায়। নিজেকে ডুবন্ত জাহাজ থেকে লাফিয়ে পড়া ইঁদুরের মতো মনে হয়, যে ঢেউয়ের মাথায় চড়ে জাহাজের দিকে তাকিয়ে চোখ মোছে। খুব শব্দ করে কাঁদতে ইচ্ছা হয়, অন্য অনেক ইচ্ছার মতোই অপূর্ণ থেকে যায় এটাও।
false