label,text,is_valid ij,"None বছর কয়েক হল সাদিয়া আর আশরাফ সুন্দরবনের বইখালীতে জেলে শিশুদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। বইখালী জায়গাটা শিবসা নদীর তীরে; মনজুরকে ওরা অনেকবারই বইখালী যেতে বলেছে। কাজের চাপে যাওয়া হয় না। এবার এক অদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়াতে বইখালী যাওয়ার সুযোগ হল মনজুরের।আজ লাঞ্চের পর অফিসে বসে দেশিও জাহাজ নির্মান শিল্পের ওপর একটা অনুসন্ধানী রিপোর্ট লিখছিল মনজুর। একটি দেশিয় শিপইয়ার্ড দাবী করেছে সরকারি সহায়তা পেলে জাহাজ শিল্প খাতে বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। ওখানকার একজন সাবেক ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ আহমেদ। মনজুরের ছেলেবেলার বন্ধু। সে এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষন করে। সেটিই খতিয়ে দেখতে গিয়েছিল মনজুর। পরিবেশ ক্ষতি করে নদীর পাড়ে 'র'স্টিলে স্যান্ড ব্লাস্ট করেছেন কর্তৃপক্ষ - যা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ ও ভয়াবহ ক্ষতিকারক।লেখাটা প্রায় শেষ করে এনেছে। রায়হান ভাইয়ের ফোন এল। ক’দিন ধরে তাগাদা দিচ্ছেন রায়হান ভাই। এখন ইনকাম করছিস। আর কতদিন? এখন আলাদা হওয়ার কথা ভাব। তুই এক কাজ কর মনজুর। তুই বরং মেসে ওঠ। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত ঝুমুর না-হয় আমার এখানেই থাকুক। তোর ভাবীর এতে আপত্তি নেই। মনজুর আজও সময় চাইল। না! না! আর সম্ভব না! তুই কি চাস তোর জন্য আমার সংসারে আগুন ধরুক!না!তা হলে?নিজেকে সংযত করে অনেক কষ্টে মনজুর বলল, এখন রাখি। হাতে এখন কাজ আছে। রাতে তোমার সঙ্গে কথা হবে। বলে মোবাইল অফ করে দেয় মনজুর; দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বাবার কথা মনে পড়ে। বাবা আহমেদ হোসেন সৎ মানুষ ছিলেন। দীর্ঘদিন সরকারি চাকরি করেও ঢাকা শহরে জমি কি ফ্ল্যাট কিনতে পারেন নি। বাবার মৃত্যুর কয়েক মাস পর মাও চলে গেলেন। মনজুর তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ ক্লাসের ছাত্র। রায়হান ভাই ততদিনে ইস্ট-ওয়েস্ট ব্যাংকে ঢুকেছে। রায়হান ভাইই ওর পড়াশোনার খরচ যুগিয়েছে। অবশ্য মনজুরও টিউশনি করত। রায়হান ভাইয়ের প্রতি ও গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। রায়হান ভায়ের ইচ্ছে মনজুর যেন অতি সত্ত্বর মেসে ওঠে। রায়হান ভায়ের ইচ্ছে মনজুরের জন্য আদেশ। মনজুর জানে- রুমানা রায়হান ভায়ের কলাবাগানের ফ্ল্যাটে উঠবে। মেয়েটি শায়লা ভাবীর বড় বোনের মেয়ে; বগুড়ায় থাকে। ঘরটা ওর জন্যই ছাড়তে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে রুমানা ।ওর ভর্তি পরীক্ষার আগে ও পরে মনজুরকেই তো দৌড়ঝাঁপ করতে হল অফিস বাদ দিয়ে। রুমানার সঙ্গে অবশ্য মনজুরের একটা উষ্ণ সম্পর্কও গড়ে উঠেছে। মাঝেমাঝে অনেক রাতে ফোন করে । শায়লা ভাবীকে অবশ্য রায়হান ভাই বলেছিল রুমানা যেন ঝুমুরের ঘর শেয়ার করে। শায়লা ভাবী কী কারণে রাজী হয়নি। হয়তো ঘরে যোয়ান-মর্দ থাকবে তা শায়লা ভাবীর বড় বোনের পছন্দ নয়। এখন মনজুরকে ঘরটা ছাড়তেই হবে। ছোট্ট ছিমছাম ঘর, সংলগ্ন স্নানঘর; পুবমুখি জানালা, রট আয়রনের খাট, লেখার টেবিল, কম্পিউটার ও এক পাশে বইয়ের র‌্যাক মিলে আপন এক মায়াময় জগৎ গড়ে তুলেছিল । ও ঘরে এখন রুমানা থাকবে। বাড়িতে অতিথি এলে অবশ্য মনজুরকে ড্রইংরুমের মেঝেতে ফ্লোরিং করতে হয়। এতে মনজুরের কোনও অনুযোগ নেই। এর চে সংসারের মায়াগন্ডির আকর্ষন অনেক বড়।...বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত ঝুমুর না-হয় আমার এখানেই থাকুক। তোর ভাবীর এতে আপত্তি নেই। ...রায়হান ভাইয়ের এই কথাটাই এখন একমাত্র সান্ত্বনার। আজ রাতে বাসায় ফিরবে কি না ভাবছিল মনজুর। শরীর জুড়ে ঘাম ও অবসাদ ছড়াচ্ছে দ্রুত। গলার কাছে জমাট বাঁধছে তৃষ্ণা। ঘরশূন্য মানুষের ঘর ছাড়ার মুহূর্তে কেমন লাগে? যারা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়-তাদের? এই প্রশ্নটা কিছুক্ষণ ঘুরল মাথার ভিতরে...সাংবাদিকতার বেতন এত কম । বাবার ইচ্ছে ছিল বলেই সাংবাদিকতার পেশায় এসেছে। বেতন কম ঠিকই- তা সত্ত্বেও মেসের খরচ টানতে পারবে। কাজের অবসরের দু’ মুহূর্তের উষ্ণ সংসার- এর মায়া বড় গভীর। এক সঙ্গে খাওয়া কি টিভি দেখা; বা কোথাও বেড়াতে যাওয়া। নাবিল আর ফারিয়ার আদর সোহাগ। ঝুমুরের রাঁন্না করা ডিম আলুর তরকারী। এসব কারণেই মেসে ওঠা হয় না। তা ছাড়া ঝুমুর ইডেনে পড়ছে। ওর পড়ার খরচের সঙ্গে টুকটাক হাত খরচও দিতে হয়। সপ্তাহে সপ্তাহে ভাবীকে এটা-ওটা গিফট দিতে হয়-নইলে মুখ ভার করে। নাবিল আর ফারিয়ার জন্য প্রতিদিনই কিছু না কিছু নিতেই হয় ... এই জুস কি চিপস; ঝুমুরের জন্য ফোন কার্ড, রায়হান ভাইয়ের জন্য টাই। খবরের কাগজের বিল, ইলেকট্রিক বিল, বুয়ার বেতন, গ্যাসের বিল আর বিকেলের নাশতার টাকাও মনজুরই দেয়। এর পর হাতে আর কি থাকে। সিগারেট কমিয়েছে। আজকাল রিকশায় কমই চড়ে ...বেশির ভাগ সময় বাসে চাপে কি হাঁটে। এর জনও কোনও অনুযোগ নেই ওর। এত দিনে ও জেনে গেছে সাংবাদিকতার মতো মহৎ পেশাতেও মারপ্যাঁচ আছে। ও অত নীচে নামতে পারে না। বাবার কথা মনে হয়। মায়ের মৌন শান্ত মুখটি মনে পড়ে। রায়হান ভাইয়ের মানসিক গড়ন হয়তো অন্যরকম। গত মার্চে আশুলিয়ায় সাড়ে তিন কাঠা জমি কিনেছেন। এখন ইস্ট-ওয়েস্ট ছেড়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকে আছেন। ভীষণ ঘামছিল মনজুর। ঘরশূন্য মানুষের ঘর ছাড়ার মুহূর্তে কেমন লাগে? যারা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়-তাদের? এক গ্লাস পানি খেল ও। পার্টিশনের ওপার থেকে সিনিয়র রিপোর্টার ফেরদৌস আমিন বেরিয়ে এলেন। কালো মতন চশমা পরা লম্বা মাঝবয়েসী রসিক একটা মানুষ। বললেল, মনজুর, আপনি কি আজ সন্ধ্যার পর ফ্রি?হ্যাঁ। কিছু না ভেবেই বলল মনজুর। তা হলে আজ সন্ধ্যায় আপনি একটা টক শো তে যান। আমার যাওয়ার কথা। আমি গুলশান যাচ্ছি। সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী প্রেস কনফারেন্স ডেকেছেন। ’৭২ এর সংবিধান নিয়ে তাঁর কি সব বলার আছে। টক শো? মনজুর অবাক। ওর সহকর্মীরা অনেকেই বেসরকারি টিভির টক শোতে গেলেও ও কখনও যায়নি। হ্যাঁ।কোন্ চ্যানেল?ফেরদৌস আমিন বললেন।বিষয়? বিষয় আর কি। পোশাক শিল্পের বিদ্যমান অস্থিরতা। বলে কাঁধ ঝাঁকাল ফেরদৌস আমিন ।ওহ্ । মনজুরের মনে পড়ল গতকাল পোশাক শিল্পের এক নারী শ্রমিক কে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। তার আগে মেয়েটিকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছে। ও শিউরে ওঠে। ফেরদৌস আমিন হেসে বললেন, দেখবেন, আবার বেফাঁস কথা বলতে যাবেন না কিন্তু।মনজুরও মলিন হাসে।আর এটা রাখুন। বলে বুক পকেট থেকে একটা হলুদ রঙের খাম বার করে মনজুরের দিকে বাড়িয়ে দিলেন ফেরদৌস আমিন ।কি এটা! মনজুর বিস্মিত। টাকা। আরে মনে নেই - গত মাসে আপনার কাছ থেকে দু’হাজার ধার নিয়েছিলাম।ওহ্। বলে খামটা নিয়ে পকেটে রাখে মনজুর। ভুরুতে ভাঁজ আর তিরতির উদ্বেগ নিয়ে সন্ধ্যার আগেই স্টুডিওতে পৌঁছল মনজুর। আসন্ন সন্ধ্যার শহরটা থমথম করছিল। সম্ভবত সেই পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিক কে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে বলে। তার আগে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছে বলে। ঝিরঝির বৃষ্টিতে হেড লাইটের আলো। মনজুর বিষাদ বোধ করে। এ শহর কত নির্মম! এ শহরে মৃত্যু কি সহজ! উদয়-অস্ত খেটে খাওয়া নারীকে টর্চার করে। ছাদ থেকে ফেলে খুন করে। স্টুডিওতে পৌঁছে দেখল সেখানে উপস্থিত আছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ। বিশিষ্ট তৈরি পোশাক শিল্পমালিক মিজানুর রহমান চৌধুরী । একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার জসীম মল্লিক। উপস্থাপকটি ঝকঝকে তরুণ। সজল রায়হান। নতুন প্রজন্মে অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনুষ্ঠানের গোড়ায় তিনি বললেন, দর্শক, আপনারা জানে যে ন্যূনতম মজুরি তিন হাজার টাকা ধরে সাতটি গ্রেডে পোশাকশ্রমিকদের জন্য মজুরি পুননির্ধারন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ে শ্রমমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে পোশাকশ্রমিকদের জন্য নতুন এ মজুরিকাঠামো ঘোষণা করেন। এটি আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। নতুন মজুরিকাঠামো অনুযায়ী গ্রেড-১-এর শ্রমিকেরা নয় হাজার ৩০০ টাকা, গ্রেড-২-এর শ্রমিকেরা সাত হাজার ২০০ টাকা, গ্রেড-৩-এর শ্রমিকেরা চার হাজার ১২০ টাকা, গ্রেড-৪-এর শ্রমিকেরা তিন হাজার ৭৬৩ টাকা, গ্রেড-৫-এর শ্রমিকেরা তিন হাজার ৪৫৫ টাকা, গ্রেড-৬-এর শ্রমিকেরা তিন হাজার ২১০ টাকা, গ্রেড-৭-এর শ্রমিকেরা তিন হাজার টাকা এবং শিক্ষানবিশ শ্রমিকেরা আড়াই হাজার টাকা করে মজুরি পাবেন। বলে উপস্থাপক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ-এর দিকে তাকিয়ে বলল, এ ব্যাপারে আমরা অধ্যাপক আবু আহমেদের কাছ থেকে তার মতামত জানতে চাইব। অধ্যাপক আবু আহমেদ তাঁর মতামত রাখলেন। উপস্থাপক এবার তৈরি পোশাক শিল্পমালিক মিজানুর রহমান চৌধুরীকে জিগ্যেস করল, নূন্যতম মজুরি ৫০০০ টাকা করা হলে উৎপাদনশীলতা বাড়ত কি না? মিজানুর রহমান চৌধুরী বললেন, আপনার কথা তাত্ত্বিকভাবে সত্যি। তবে টাকা তো ছাপিয়ে মজুরি দেওয়া যায় না। মজুরি আয় করে দিতে হবে। মিজানুর রহমান চৌধুরী কে জসীম মল্লিক চট্টগ্রাম বন্দর সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন করলেন। এরপর উপস্থাপকসহ প্রত্যেকে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। গতকালের নারী শ্রমিকের মৃত্যুর প্রসঙ্গটি উঠে আসে। চৌধুরী সাহেব পকেট থেকে রুমাল বার করে মুখ মুছেন। মনজুর মিজানুর রহমান চৌধুরীকে জিগ্যেস করে, বিশ্বকাপের সময় তো মিলিয়ন ডলার লাভ করলেন। এখন নূন্যতম মজুরি ৫০০০ টাকা করা হচ্ছে না কেন?জসীম মল্লিক বলে, আসলে বিশ্বকাপের সময় লাভ করেছে মুষ্টিমেয় ফ্যক্টরি। এখন নূন্যতম মজুরি ৫০০০ টাকা করা হলে ছোট ফ্যক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে।অকাট্য যুক্তি। তবে মনজুর ক্রোধ টের পায়। বলে, গতকাল একজন পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিক কে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। তার আগে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছে। আপনাদের ক্যামেরা এখনও সে ঘরে ঢুকল না কেন? যে ঘরে শক দেয়, সে ঘরটি টিভিতে দেখালেন না কেন? কেন! জনগন জানতে চায়। জসীম মল্লিক কাঁধ ঝাঁকাল। এর মানে কী সের মধ্যে কি। উপস্থাপক সজল রায়হান থমকে যায়। থমকে যান অধ্যাপক আবু আহমেদও। মিজানুর রহমান চৌধুরীর থলথলে গোলাকার মুখটি খাবি খাওয়া কাৎলা মাছের মতো দেখাল। মনজুর টের পায় ওর চাকরি আর থাকল না। ওর পত্রিকার মালিক একজন বিশিষ্ট তৈরি পোশাক শিল্পমালিক। প্রবল হট্টগোল আর অস্বস্তি নিয়ে টক শো শেষ হয়। অনুষ্ঠান শেষে সজল রায়হান বলল, আপনি ওই অস্বস্তি¡কর প্রসঙ্গটি টেনে না আনলেও পারতেন মনজুর।কেন? মনজুর পালটা প্রশ্ন করে।আপনার কথায় চৌধুরী সাহেব অপমানিত বোধ করেছেন।আপনি কত পেয়েছেন?আমি কত পেয়েছি মানে! সজল রায়হানের ফরসা মুখটি লালচে হয়ে উঠতে থাকে।মনজুর পা বাড়ায়। আড় চোখে দেখল চৌধুরী সাহেব কার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছেন। লবিতে দাঁড়িয়ে ছিল জসীম মল্লিক। সে শীতল কন্ঠে বলে, মনজুর। এত মাথা গরম হলে এ লাইনে থাকা সম্ভব না।লাইন মানে! মনজুর শরীরময় প্রবল ক্রোধের উত্থান টের পায়। সে বেরিয়ে আসে। বেসরকারী টেলিভিশনের অফিসটি কাওরান বাজারে।ফুটপাতে উঠে এসে টের পেল, ঝিরঝির করে বৃষ্টি ঝরছে। জুলাই মাস শেষ হতে আর কয়েক দিন বাকি। একটা সিগারেট ধরিয়ে হাঁটতে থাকে মনজুর। বাড়ি ফিরে লাভ নেই। ঝুমুরের মুখটি ভেসে ওঠে। ও এখন কি করছে কে জানে। ভাইয়ের সংসারে খুব একটা ভালো নেই ঝুমুর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংসারের হাজারটা কাজ করতে হয়। সকালের রুটি তৈরি থেকে নাবিল আর ফারিয়ার বিছানা তৈরি । রাত দশটায় কখনও কখনও শায়লা ভাবীর বিরিয়ানি খেতে হলে ঝুমুরকেই যেতে হয় গলির মাথা পর্যন্ত। মেয়েটা লক্ষ্মী বলেই মুখ বুজে সব সহ্য করছে। রুমানার মুখটিও ভেসে ওঠে। ভারি মিষ্টি একটা মেয়ে। শ্যামলা। ডাগর আঁখি। ও মনে মনে রুমানার উদ্দেশ্যে বলে ‘তোমাকে ভালোবাসি বলেই আমি আর ফিরব না রুমানা।’ মনজুর সিদ্ধান্ত নেয়: কখনও অবসর পেলে রুমানাকে নিয়ে একটা উপন্যাস লিখবে।উলটো দিক থেকে একটা মাইক্রোবাস আসছিল। এ ধরনের বাহন সাধারনত পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত হয়। মনজুরের কেমন সন্দেহ হয়। তখন লবীতে চৌধুরী সাহের কার সঙ্গে কথা বলছিলেন। ও চট করে বাঁ পাশে সরে আসে। এ দিকে অপরিসর রাস্তা। রাস্তায় গর্ত, কাদাপানি ভরা; দু’পাশে ভাতের হোটেল। দুর্গন্ধ, আধো-অন্ধকারে থেমে থাকা ট্রাক ও সি এন জি। একটা সিন এন জি -র সামনে পৌঁছে ‘শ্যামলী’ বলে উঠে পড়ল। বুকটা কাঁপছিল। ... বাসে উঠে বসে টিপটিপ উত্তেজনা বোধ কর ছিল। মনে হল বাসে এক্ষুনি কয়েকজন র‌্যাব উঠবে। পলাতক বিডিআর বলে ফাঁসিয়ে দেবে। তৈরি পোশাক শিল্পমালিক মিজানুর রহমান চৌধুরীদের হাত অনেক দূর অবধি যায়। মাইক্রোবাসে কারা ছিল? ... বাস ছাড়ল। খিদে মরে গেছে। অন্ধকারে ডিজেলের গন্ধ। মনজুরের ঝিমুনি পায়। শরীর জুড়ে অবসাদ। মোবাইল অফ করে দেয়। রুমানা ফোন করবে। মানসপটে সাদিয়া ও আশরাফের মুখ ভেসে ওঠে। ওরা নিশ্চয়ই কাল অবাক হয়ে যাবে ওকে দেখে। সাদিয়া আর আশরাফ মনজুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী। তিনজনই টুকটাক লেখালেখি করত। ‘মউয়াল’ নামে ছোট কাগজ বার করত। উদ্বোধনী সংখ্যায় সাদিয়া লেখা একটি কবিতা আজও মনে আছে। গলুইয়ে মাছের গন্ধ; মেঘলা একটি দিন।মাছের গন্ধমাখা গলুইয়ের ওপরশহর ছাড়িয়ে গেলে যতটা জলজ আর অর্ধ-নগ্ন থাকা যায় -সেরকম উবু হয়ে ছিলাম।মেঘলা দিনের বিমর্ষ আলোয় আমারে প্রণতি জানায় শিবসার হাসিখুশি শুশুক।নদীর দু’পাড়ে- গেওয়া-গরান-ওড়া ও ধুন্দুল;তাহাদের পাতার ওপর বৃষ্টির ঝিরঝির ঝিরঝির শব্দ-শ্রাবণের শেষ জলধারা...গোলপাতার নীচে ভিজছিল নিঃস্ব মউয়াল;তাহাদের ভয়ডর নাই? চকিতে সরে যায় তুখোর বাগডাস!রায়মঙ্গল থেকে উঠে আসা মিশমিশে কালো মাঝিভাতের হাঁড়ি চাপিয়েছে নৌকায় ছৈয়ের নীচে। কাল রাতে সে বলেছিলপচাব্দী গাজীর উপাখ্যান। আমারও স্বপ্নে তারপর যথারীতি এসেছিলহলুদ একটি বাঘরাজগোখরাও মিশেছিল ডালে!পরদিন সকালে আমি উবু হয়ে ছিলাম শিবসার গূঢ়তম জলের ওপরে।কতকাল আগে যেন...গলুইয়ে মাছের গন্ধ;মেঘলা একটি দিন।ওদের ছোট্ট দলে সোসিওলজীর শারমীন বীথিও ছিল। রংপুরের মেয়ে। ভারি মিষ্টি দেখতে, চমৎকার ভাওয়াইয়া গাইত । মনজুরের সঙ্গে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হয়েছিল বীথির। সেইবীথি একবার সাদিয়াকে জিগ্যেস করেছিল, সাদিয়া, তোরা যে পরস্পরকে এত ভালোবাসিস, তোরা নিশ্চয়ই পাস করার পর পরই বিয়ে করে ফেলবি না?না।কেন?সাদিয়া তখন আল মাহমুদ থেকে আবৃত্তি করে:‘আমার তো কপিলে বিশ্বাস/ প্রেম কবে নিয়েছিল ধর্ম কিংবা সংঘের শরণ।’ বীথি হতভম্ভ। অনার্স এর পর বীথির এক কোরিয়া ফেরৎ পয়সাওয়ালা খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে ওর বিয়ে হয়ে যায়। মনজুর দুঃখ পায়নি। বীথি খুবই ঘরোয়া মেয়ে। বরং রুমানা অনেক ডিপ। রুমানাকে যা যা বলার ছিল বলা হল না ... এই দুঃখ। এই দুঃখ এখন সুন্দরবনের আলোবাতাস রোদ আর বৃষ্টিতে ভিজে ভুলে যাবে। সুন্দরবনের জীবন বিপদজনক। সাদিয়া/আশরাফরা স্বেচ্ছায় সে জীবন বেছে নিয়েছে। ওরা দরিদ্র মউয়াল ছেলে মেয়েদের পড়ায়; পড়ায় দুধর্ষ বনডাকাতের ছেলে মেয়েদেরও । উপকূলীয় অঞ্চলের জলবায়ূ পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন ওরা। ‘মউয়াল’ নামে ছোট কাগজটির সম্পাদকীয় মনে আছে মনজুরের... নানান জাতের জীবজন্তু, পাখপাখালি আর বাহারি ম্যানগ্রোভ, উদ্ভিদে ভরপুর সুষমামণ্ডিত এক বনাঞ্চলের নাম ‘সুন্দরবন’। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনের ডাঙায় বাঘ, হরিণ, বানর, শূকর, বনবিড়াল, সজারু, বক, ঈগল, মাছরাঙা, শালিক, ফিঙে, মুনিয়াসহ নানাজাতের জীবজন্তু আর পাখপাখালি; বনের ভেতর বয়ে যাওয়া ছোট-বড় নদী আর খালের পানিতে বাস করে লোনা পানির বড় বড় কুমির, অজগর, গোখরা, গুইসাপ, শুশুক থেকে শুরু করে শত প্রজাতির মাছ। এরা সুন্দরবনের স্থায়ী বাসিন্দা। সাইক্লোন আর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে এই বনভূমি। ‘হুমকিতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য’; ‘ফারাক্কার প্রভাবে মিঠা পানির প্রবাহ হ্রাস : আগামরা রোগে আক্রান্ত সুন্দরীসহ বহু গাছ’ ও ‘বনজুড়ে এখনও দেখা যায় মানবসভ্যতার ক্ষতচিহ্ন’ ...সুন্দরবনকে বাঁচাতেই হবে। কেননা, ওরা বিশ্বাস করে একুশ শতকে সিদ্ধান্ত নেবে ব্যাক্তি- রাষ্ট্র না । জলডাকাতের ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করতে হবে। ডলফিনদেরও বাঁচাতে হবে। এই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সাদিয়া/আশরাফরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়েই শিবসা নদীর পাড়ে চলে আসে। অবশ্য অনেক আগে থেকেই দক্ষিণাঞ্চলে আসা যাওয়া ছিল। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র নিয়ে ডকুমেন্টারি নির্মাণ করত। ‘বেনে বউ’ পাখির ওপর নির্মিত বারো মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্রের জন্য ওরা ফিলিপাইনভিত্তিক একটি আর্ন্তজাতিক সংগঠনের পুরস্কারও পায়। সাদিয়া তুখোর ফটোগ্রাফার। ওর সুন্দরবনের ‘সবুজ ব্যাঙ’ সিরিজ ঢাকার দৃক গ্যালারিতে প্রদর্শিত হলে দেশিবিদেশি দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে যায়। সাদিয়া বলে, ‘মনজুর, এই যে আমরা নিভৃতে একজন মউয়ালকে অরণ্যসচেতন করে তুললাম, কিংবা একটি আহত ফিঙের সেবা করলাম কি একটি বাওয়ালির দরিদ্র মেয়েকে অক্ষরজ্ঞান দিলাম ... এইই আমাদের জীবনের পরম লক্ষ । শহরের মানুষ তা নাই-বা জানল সে কথা।’ শিবসা পাড়ের সুন্দরী গেওয়া, কেওড়া, গরান গাছে ঘেরা ছিমছাম উঠানের এক কোণে সাদিয়া/আশরাফদের স্কুল। স্কুলের নাম ‘বনের পাঠশালা।’আজই মনজুর সে উঠানে প্রথম পা রাখবে।রূপসা নদী ঘাট। চারি দিকে ভোরের পবিত্র আলো ছড়িয়ে আছে। ঘাটে নৌকা ও ট্রলারের ভিড়। মনজুর এগিয়ে যায়। সাদিয়া গতমাসে একবার ঢাকায় এসেছিল। তখনই বইখালীর ঠিকানা বিস্তারিত বলে দিয়েছিল। গতকাল অনেকটা কাকতালীয় ভাবেই সিনিয়র রিপোর্টার ফেরদৌস আমিন ধার শোধ করল। নইলে পকেট প্রায় ফাঁকাই ছিল। দৈব কি চায় আমি শহর পরিত্যাগ করি। মনজুর অভিভূত হয়ে ভাবে। শহরে পোশাক শিল্পের কর্মীদের ইলেকট্রিক শক দেয়, ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করে ...শহরের বাইরে বিস্তীর্ণ বাংলাদেশ তার অনেক সবুজ জমিন রেখে দিয়েছে শান্তিবাদীদের জন্য । ... একটা ট্রলার বইখালীর দিকে যাবে। উঠে বসল ও। অন্য সহযাত্রীরাও ছিল। মাত্র ট্রলার ছেড়েছে। খিদে টের পেল। ঝুলিতে পাউরুটি/কলা আছে। ঘাট থেকে কিনেছে। ভীষণ ঘামছিল মনজুর। ঘরশূন্য মানুষের ঘরছাড়ার মুহূর্তে কেমন লাগে? যারা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়-তাদের? বোতল বার করে এক ঢোক খনিজ পানি খেল। মেঘ করেছে। করুক। বৃষ্টি আসবে। আসুক। দক্ষিণের নিবিড় অরণ্যবনের অঝোর বৃষ্টিতে ভিজে সব ভুলে যাবে মনজুর। রুমানার মুখ, এমন কী ঝুমুরের মুখ ... সব।",False fe,"আমাদের জীবনচিত্রে যুদ্ধাপরাধীদের ছায়া আমাদের জীবনচিত্রে যুদ্ধাপরাধীদের ছায়াফকির ইলিয়াস=========================================১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের সমাজে মিশে গিয়েছিল যুদ্ধাপরাধীরা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরলতার সুযোগ নিয়ে, একটি চক্র ক্রমশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। তারপরও ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এরা ছিল ঘাপটি মেরে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরেই এরা নিজ স্বরূপ নিয়ে সামনে চলে আসে। আমাদের জন্য খুব দুঃখজনক কথা হচ্ছে, এই প্রজন্মের অনেকেই প্রকৃত সত্য অনেক ঘটনাই জানে না। তারা জানে না, কিভাবে এদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, সমাজ, রাজনীতিতে এরা দুষ্টগ্রহের মতো বেড়ে উঠেছে।বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক উর্দিকে ‘হালাল’ করার একমাত্র পথ ছিল মৌলবাদকে কাছে টানা। জিয়াউর রহমান সেই কাজটি খুব দক্ষতার সঙ্গে করেছিলেন। তিনি শাহ আজিজুর রহমান, মশিউর রহমান যাদু মিয়া, খান এ সবুর, ড. আলীম আল রাজী এ রকম নেতাদের দলে টেনেছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে মোকাবেলার জন্য তিনি ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের’ নামে রাজাকারদের পুনর্বাসন করেছিলেন। সবচেয়ে বেদনার কথা হলো, জিয়া এবং এরশাদ পরবর্তী সময়ে এসব যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারচক্রের নামে বিভিন্ন স্থাপনারও নামকরণ করেছিলেন। স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে এসব স্থাপনাগুলোর মধ্যে আছে- মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক বিএনপি নেতা আব্দুল আলিমের নামে বগুড়া জেলা পরিষদ মিলনায়তন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের নামে হবিগঞ্জের মাধবপুরের নোয়াপাড়ায় বাসস্ট্যান্ড ও কায়সারনগর এলাকা। একাত্তরে পাবনার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান প্রয়াত বিএনপি নেতা সাইফুদ্দীন ইয়াহইয়াহ খান মজলিসের নামে সিরাজগঞ্জে ইয়াহইয়াহ স্কুল অ্যান্ড কলেজ। রাজাকার ও শান্তি কমিটির নেতা আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার নামে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ‘শহীদ আব্দুর রাজ্জাক রোড’। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার রাজাকার ও শান্তি কমিটির স্থানীয় চেয়ারম্যান এন এম ইউসুফের নামে ‘ইউসুফ গনি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লংলা ইউসুফ কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্য মাহতাব উল্লাহর নামে ‘মাহতাব-সায়েরা হাই স্কুল’। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে রাজাকার আব্দুল আজিজের নামে ডেলকা এমসি হাইস্কুল ও বেলকা রোডে রায়জীবন ইউনিয়ন কমপ্লেক্স। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ধর্মপুরে স্বাধীনতাবিরোধী আব্দুল জব্বারের নামে আব্দুল জব্বার ডিগ্রি কলেজ। নোয়াখালীর চৌমুহনীর রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্য তরিকুল্লার নামে হাজী তরিকুল্লাহ রোড। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় রাজাকার মিয়া মনসুর আলীর নামে মিয়া মনসুর আলী অ্যাকাডেমি। কুমিল্লার দরগাবাড়ী এলাকায় শান্তি কমিটির সদস্য রেজাউর রহমানের নামে ‘রেজাউর রহমান রোড’। নাটোরে রাজাকার আব্দুস সাত্তার খানের নামে মধু মিয়া রোড। নাটোরে রাজাকার কোসের উদ্দিনের নামে কোসের উদ্দিন রোড। পুরান ঢাকায় মুজাহিদ বাহিনীর মোহাম্মদ তামিমুল এহসানের নামে রাস্তা। পুরান ঢাকায় মুজাহিদ বাহিনীর কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ ওরফে হাফেজ্জী হুজুরের নামে রাস্তা। নেত্রকোনার ফাইলাটি ইউনিয়নে রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের নামে হাজি আব্দুর রহমান হাইস্কুল। মেহেরপুরের মুজিবনগর এলাকার রাজাকার মিয়া মনসুর আলীর নামে আনন্দবাস মিয়া মনসুর আলী অ্যাকাডেমি। মেহেরপুর পৌর এলাকার রাজাকার ও শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান সবদার আলীর নামে রাস্তা ও মার্কেট। নরসিংদীর মনোহরদীতে সরকারি শিশু পরিবারের নামফলকে যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নাম, ঝিনাইদহের শৈলকুপায় রাজাকার ও শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান শফি আহমেদের নামে শফিপুর এলাকা ও শফিপুর পোস্ট অফিস। এর আগে এক রাষ্ট্রীয় আদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ‘খান-এ-সবুর’ সড়কের নাম প্রত্যাহার করে আগের ‘যশোর রোড’ নামটি ফিরিয়ে আনতে আদালতের দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল। খুব অবাক করা কথা হচ্ছে, কোনো কোনো ছিঁচকে রাজাকারের নামেও বাংলাদেশে স্থাপনার নামকরণ করা হয়েছিল। যা জাতীয়ভাবেই অত্যন্ত লজ্জার। স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে স্থাপনা, সড়ক, অবকাঠামোর নাম বদলের আর্জি জানিয়ে ২০১২ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীর। সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে খুলনার খান-এ সবুর রোড এবং কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহ আজিজুর রহমান মিলনায়তনের কথা বলা হয়। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৪ মে রুলসহ খান-এ সবুর ও শাহ আজিজুর রহমানের নাম ব্যবহার স্থগিতের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয় হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের নামে স্থাপনা নিয়ে রুল জারি করা হয়।গত বছর নভেম্বরে হাইকোর্ট আরো একটি নির্দেশনা দেয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো পরিবর্তন করতে বলা হয়। অতি সম্প্রতি বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আদেশে দেশের বিশটি স্থাপনা থেকে এদের নাম মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।এই মামলার শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ কে রাশিদুল হক। আদেশের পর তিনি বলেছেন, ‘যারা মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দণ্ড পেয়েছেন, তাদের নামেও স্থাপনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকার সেগুলো পরিবর্তন করেনি এবং পরিবর্তনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগও নেই। বাঙালি হিসেবে আমাদের জন্য এটা লজ্জাজনক ও অগ্রহণযোগ্য।’এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, শেখ হাসিনার সরকার এই দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছে, পারছে এবং তা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, নুরেমবার্গ ও টোকিও ট্রাইব্যুনালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে কোনো ধরনের ডিফেন্স রাখার সুযোগ দেয়া হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে অভিযুক্তদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেই বিচার করা হচ্ছে, হয়েছে। ২০১৩- এর অবরোধ সহিংসতার কথা আমাদের মনে আছে। এই কাজগুলো করা হয়েছিল এই যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার জন্যই। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে বিএনপি-জামায়াত জোট হরতাল-অবরোধকেই প্রধান কর্মসূচি হিসেবে বেছে নিয়েছে বারবার। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি দুই দিন বাদ দিয়ে ১০ দিন অবরোধ পালন করে এই জোট। তারও আগে ২০১৩ সালে বিএনপি জোট ২৬ নভেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ ধাপে ২৪ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। ওই সময়ে সহিংসতায় প্রাণ যায় ১২৭ ব্যক্তির। ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ২৬ থেকে ২৮ নভেম্বর, ৩০ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর, ৭ থেকে ১৩ ডিসেম্বর, ১৭ থেকে ২০ ডিসেম্বর, ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দফা অবরোধ হয়েছিল। তার আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার পর থেকে শুরু হয়েছিল টানা সহিংসতার। ওই সময়ে ‘বাঁশের কেল্লা’ নামে ফেসবুকের একটি পেইজে প্রচারণা চালিয়ে রেলে নাশকতায় নেমেছিল জামায়াত-শিবির। ২০১৩ সাল থেকে চালানো সহিংসতায় রেলে ৪০০ হামলায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল। মহাসড়ক কেটে দেয়া, গাছ কেটে নেয়াসহ বিভিন্নভাবে সড়ক খাতে ক্ষতি করা হয়। অবরোধ ছাড়াও ওই বছর থেকে বিভিন্ন সময়ে হরতাল ডাকা হয়েছিল। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে এই যুদ্ধাপরাধীরা দাপট দেখিয়েছে। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য করে তারা তাদের শিকড় মজবুত করেছে। একটি পুরনো পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দণ্ডপ্রাপ্তরা বিভিন্ন সময়ে ছিলেন সরকারের মন্ত্রী ও এমপি। ক্ষমতার সুযোগে তারা গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসার মালিকানা নিয়ে হাজার কোটি টাকার সম্পদ আছে মাত্র আট যুদ্ধাপরাধীরই। ২০১০ সালের বিভিন্ন সময়ে কারাগারে যাওয়া যুদ্ধাপরাধীদের ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে যেসব সম্পদের কথা বলা হয়েছে সেটাই হাজার কোটি টাকার সমান। তবে এ হিসাব শুধু তাদের নিজেদের নামে ঘোষিত সম্পদের।জামায়াতের নেতা মীর কাশেম আলী ছিলেন কেয়ারী লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ইবনে সিনা ট্রাস্টের সদস্য (প্রশাসন), ইবনে সিনা হাসপাতালের পরিচালক, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের পরিচালক, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্টের সদস্য ও ফুয়াদ আল খতিব চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের সদস্য। তিনি ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন, রাবেতা আল আলম আল ইসলামী, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট, ফুয়াদ আল খতিব চ্যারিটি ফাউন্ডেশন এবং অ্যাসোসিয়েশন অব মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার এজেন্সিসের বিভিন্ন বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিতির জন্য নিয়মিত ভাতা পেতেন। এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসম্যান চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, আল্লামা ইকবাল সংসদ, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি, সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পিস, বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইসলামিক ট্রাস্ট ও ইসলামিক ইকোনমিক্স রিসার্চ সেন্টারের। যে বিষয়টি না বললেই নয় তা হলো, এই কালো ছায়া থেকে প্রজন্মকে মুক্ত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, যারা এ দেশের বিজয়কে মনে-প্রাণে মেনে নিতে পারেনি, তারা এখনো সুযোগ পেলে ইসলামী আন্দোলনের নামে জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে। যেমনটি তারা ১৯৭১ সালে করেছিল। দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বীজ বপনেও এই চক্রটি কি করেছে, তা কারো অজানা নয়। কিছু কিছু সত্য আছে যা ভুলে গেলে একটি জাতি বারবার হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।-------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:০৬",False mk,"নির্ভীক নেতৃত্বই উন্নয়নের সোপান ২৬ জুলাই (২০১৪) যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে (চলতি বছর) তিনি জাপান ও চীন সফর নিয়ে একইভাবে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এভাবে খোলামেলা কথা বলার প্রচলন করে শেখ হাসিনা জনগণের কাছে তার সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটিয়েছেন নির্ভীক চিত্তে। রাষ্ট্র পরিচালনা আর বৈদেশিক নীতির কোনো বিষয়ই গোপন করার প্রচেষ্টা নেই তার। বরং বর্তমান সরকারের অর্জনগুলো জনগণকে জানানোর আন্তরিক ইচ্ছার প্রকাশ রয়েছে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে। ঈদের পরে বিএনপির আন্দোলনের হুমকি এবং সংলাপের তাগিদ দেয়া নিয়ে তিনি স্পষ্টতই বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সাংবিধানিকভাবেই হবে। এখানে অস্পষ্টতার কিছু নেই। যারা অগণতান্ত্রিক কোনো কিছু খুঁজছে, তাদের কাছে এটা অস্পষ্ট লাগছে। বিএনপির আন্দোলন মাঠেই প্রতিরোধ করার প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেছেন, বিএনপির আন্দোলন মানে জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যা করা। নতুন করে অশান্তি সৃষ্টি করতে বিএনপি ঈদের পর আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে মাঠে দেখা হবে। মাঠে আওয়ামী লীগসহ সবাই রয়েছে, দেশের সাধারণ মানুষও আছে। তাই মাঠের দেখা মাঠেই হবে। আন্দোলনের নামে দেশের মানুষের এতটুকু ক্ষতি করার চেষ্টা হলে তা বরদাশত করা হবে না, কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনেই ৫ জানুয়ারি (২০১৪) জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনায় সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অন্যদিকে বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, আন্দোলনের নামে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে, দেশের সম্পদ ধ্বংস করেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তারা যে রাজনৈতিক ভুল করেছে, তার খেসারত তাদেরই দিতে হবে। জামায়াত নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। এটা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। উপরন্তু আওয়ামী লীগ যদি দেশ চালাতে ব্যর্থ হতো, তাহলে সংলাপ বা নির্বাচনের প্রশ্ন আসত। দেশের জনগণ এখন শান্তি ও স্বস্তিতে আছে, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। দেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বিশ্বে সুনাম অর্জন করছে। আর এসবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নির্ভীক নেতৃত্বের কারণে।গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা নিজের সুখ-শান্তি ও জীবনের মায়া ছেড়ে মানুষের মায়ায় আবদ্ধ হয়েছেন। '৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ৩ নভেম্বরে জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকা- বাংলাদেশকে অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত করেছিল। পরিবার-পরিজন হারিয়ে তার পরও শেখ হাসিনা এ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য '৮১ সালে দেশে ফিরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। শুরু হয় তার নেতৃত্বের যুগ। স্বৈরশাসক ও জল্লাদের দেশ পুনরায় সোনার বাংলা হয়ে ওঠার প্রত্যাশায় মুখরিত হয়ে ওঠে। '৯৬-এ যেমন, তেমনি ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে তিনি জনগণের কল্যাণে সমস্ত মেধা ও শ্রম নিয়োজিত করেছেন। অর্থাৎ শেখ হাসিনা তার সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ ও ভিশন-২০৪১ অর্জনের লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে একটি বৈষম্যহীন সমৃদ্ধ উন্নত ডিজিটাল দেশ গড়ে তোলা। অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও '৭৫-এর ঘাতকরা ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের উন্নয়ন প্রচেষ্টা ব্যাহত করতে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য, মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা। হরতাল ও নাশকতামূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করা, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা, বিগত জোট সরকারের পাঁচ বছরের লুটপাটের প্রক্রিয়া বজায় রাখা, হাওয়া ভবনের কর্ণধার তারেক জিয়াকে দেশে এনে রাজনীতি করতে দেয়া।২০০৯-১৩ আমলে শেখ হাসিনার সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর যুগান্তকারী কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২০০৯ সালেই ঘোষিত হয়েছে নতুন পে-স্কেল (নতুন পে কমিশনও গঠিত হয়েছে)। বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও পর্যটন নীতিমালা প্রণীত হওয়ার পাশাপাশি গঠন করা হয়েছে 'জাতীয় মানবাধিকার কমিশন'। আদালতে মানহানির মামলায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রহিত করা হয়েছে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন সংসদে অনুমোদিত হয়েছে। সরকারপ্রধান সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমনে নিয়েছেন আন্তরিক উদ্যোগ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির তালিকা ২০০ দেশের মধ্যে ১৩৬তম অবস্থান অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বসভায় ক্রমেই বাড়ছে দেশের ভাবমূর্তি। গণতন্ত্রের মানসকন্যা জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি অনুরক্ত হতে শিখেয়েছেন। ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইরান প্রভৃতি দেশ সফরের পর আঞ্চলিক ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতা পেয়ে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচারের যে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন তার রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন শেখ হাসিনা। বিডিআর কর্তৃক সেনা কর্মকর্তাদের নির্মম হত্যায় জড়িতদের বিচারকার্য শেষ হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে একাত্তরের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের, চলছে তাদের বিরুদ্ধে বিচার ও রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া। পবিত্র সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চার নীতি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়কের পরিবর্তে নির্দলীয় সরকারের রূপরেখাও প্রণীত হয়েছে। সবই শেখ হাসিনার নিরলস পরিশ্রমের ফসল। এ জন্যই বিশ্বনেতারা এ দেশ সফরে এসে প্রশংসা করে গেছেন বর্তমান সরকারের নেতৃত্বের।১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলের বিপুল খ্যাতি অর্জনের ধারাবাহিকতা বর্তমান সময়েও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে সে আমলের আগেই শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত ছিলেন। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলেও তার কৃতিত্বপূর্ণ অর্জন ব্যাপক হয়ে উঠেছিল। পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনাসহ জাপান-চীন সফর এবং যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সেমিনার ও অধিবেশনে যোগদান, বিদেশি মিডিয়ায় সরাসরি ও নির্ভীক কথা বলা নেত্রীর উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য আন্তর্জাতিক 'সাউথ-সাউথ' পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। 'গ্লোবাল উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেনস হেলথ' ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনা এ পুরস্কার পেয়েছেন। শিশুমৃত্যু হার হ্রাসের জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) পুরস্কার পায়। তাও জননেত্রীর সাফল্যের স্মারক। নেত্রীর অসামান্য নেতৃত্ব ও মহাজোট সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার আপামর জনতারও। গত আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে উন্নয়নমূলক কর্মকা- পরিচালিত হয়েছে, আন্তর্জাতিক পুরস্কারগুলো তারই স্বীকৃতি। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে নেত্রী 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এর ব্যানারে একযোগে সবাইকে নিয়ে কাজ করছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে তার মন্ত্রিপরিষদ। প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটালাইজড করার কাজ পুরোদমে চলছে। ৪ হাজার ৫০০ ইউনিয়ন পরিষদে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতকে ডিজিটালাইজড করতে ১১ হাজার কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকের প্রায় সব কটিকে ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। সেখান থেকে গ্রামীণ রোগীরা উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছে।গত বছর (২০১৩) যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান করে সারা বিশ্বের নেতাদের কাছে প্রশংসিত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের হোমল্যান্ড সিকিউরিটিবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান পিটার কিং সন্ত্রাস দমনে শেখ হাসিনার পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। আমাদের নেত্রীও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের কথা বৈঠকে পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর পরে শেখ হাসিনাই জাতিসংঘের প্রতিটি সাধারণ অধিবেশনে (৬৬তম) বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। তুলে ধরেছেন বিশ্বসভায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চিত্র। জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক বিশ্বনেতাদের সংলাপে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সরকারপ্রধান হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি। তার উপস্থাপিত শান্তির মডেল এজেন্ডা হিসেবে জাতিসংঘে বিশেষ আলোচনার জন্য গুরুত্ব দিয়ে সেকেন্ড কমিটিতে গৃহীত হয়েছে। বিশ্ববাসী আজ জানতে পেরেছে শান্তি, গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে শেখ হাসিনার অবদানের কথা। কয়েক বছর আগে নিউইয়র্কে 'কাউন্টার টেরোরিজম' শীর্ষক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে তার সরকারের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি সম্পর্কে বিশ্বকে অবহিত করেছিলেন তিনি। এ সময় তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও সাক্ষাৎকার সম্পন্ন করেন। বিভিন্ন মার্কিন মিডিয়ায় তার সাক্ষাৎকার গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়। উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে তুলে ধরা প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম কৃতিত্ব। গত বছরও তিনি অধিবেশনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। 'পিস বিল্ডিং কমিশন' (পিবিসি)-এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে এক সভায় শেখ হাসিনা দৃঢ় উচ্চারণে বলেছেন, টেকসই শান্তি ও উন্নয়নের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সব সময়ই জাতিসংঘের সব শান্তি উদ্যোগের পাশে রয়েছে এবং থাকবে। যেখানে দেশের মধ্যে খালেদা জিয়ার দল সরকারের সব শুভ উদ্যোগ বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সেখানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃঢ়চেতা শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ-প্রসারী ও প্রজ্ঞাময় বক্তব্য আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। চলতি বছর নভেম্বরে অষ্টাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিগত সার্ক সম্মেলনে শেখ হাসিনা গণতন্ত্র সনদের প্রস্তাব করেছিলেন। তাঁর প্রস্তাবগুলো ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ইতোমধ্যে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের মীমাংসা হয়েছে। বলা যায় বর্তমান সরকারের তৎপরতায় এ দেশ সমুদ্রজয়ে সক্ষম হয়েছে। এ দেশের কূটনৈতিক অর্জনগুলো অসাধারণ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে নিজ দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনায় নেত্রীর বিচক্ষণতার পরিচয় অন্যান্য দেশের কূটনীতিকরাও স্বীকার করেন।শেখ হাসিনা কেন বিশ্বসভার অনন্য নেত্রী? তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে, রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন; অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজ তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী। তিনি দেশের উন্নয়নে শিক্ষানীতি, নারীনীতি, ফতোয়া প্রদানে বিধিবিধান দিয়েছেন। সর্বোপরি '৭৫-এর পর যারা সংবিধানকে কলুষিত করেছিলেন তাদের চপেটাঘাত দিয়েছেন '৭২ সালের সংবিধানে ফিরে গিয়ে। পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর সঙ্গে তার সম্প্রীতি রক্ষার দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি নিজের দেশে প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায়কে নিজ নিজ ধর্ম পালনে উৎসাহী করেছেন। নিজের ব্যস্ততার মধ্যেও নিয়মিত নামাজ-রোজা ইবাদত-বন্দেগিতে সময় ব্যয় করেন। বাঙালির উৎসবগুলোকে তিনি সর্বজনীন সম্মিলনে পরিণত করেছেন। ঈদ, পূজা, বড়দিন, বৌদ্ধপূর্ণিমা এখন সবার উৎসব। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার জন্য তার আন্তরিক প্রচেষ্টা অভিনন্দনযোগ্য। অর্থাৎ শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে সরকার পরিচালনা করছেন। এ জন্যই নতুন প্রজন্ম তার হাতকে শক্তিশালী করতে মহাজোটকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে। অপপ্রচার ও প্ররোচনায় কেউ বিভ্রান্ত করতে পারে বলে ইতোমধ্যে তিনি সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। জেলহত্যার বিচার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ আরো অনেকের মৃত্যুর বিচার, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ সব হত্যাকা-ের বিচার প্রক্রিয়া চলছে। অর্থনৈতিক উন্নতি গতিশীল রাখার চেষ্টা অব্যাহত আছে। রিজার্ভ যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমেছে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বিশ্বসভায় আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ভিশন ২০৪১ ঘোষণা বাস্তবায়নে তরুণ সমাজকে যথার্থ শিক্ষা গ্রহণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভালো পরিবেশ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার সব কর্মকা-ই মানুষের মঙ্গলের জন্য নিবেদিত। তার নির্ভীক নেতৃত্ব ক্রম অগ্রসরমান বাংলাদেশের জন্য জরুরি। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এ দেশ বিশ্বে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য হবে।",False rg,"গ্রিসের স্ট্রবেরি খামারে বাংলাদেশিদের উপর গুলি, আহত ৩২।। রেজা ঘটক গ্রিসের রাজধানী এথেন্স থেকে ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর নিয়া মানোলাদা। এই নিয়া মানোলাদা এলাকার কৃষি খামারগুলোতে অন্তঃত পাঁচ হাজারের মত বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী কাজ করেন। এদের মধ্যে পেলপোনেসিয়ান গ্রামের 'ভাগেলা কস' নামক একটি স্ট্রবেরি খামারে কাজ করেন অন্তঃত দুইশত বাংলাদেশী শ্রমিক। বিগত ছয় মাস ধরে তারা কেউ বেতন পান না। বকেয়া বেতন আদায়ের দাবীতে গত বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে তারা কাজে যোগদান না করে ধর্মঘটের ডাক দেন। জবাবে 'ভাগেলা কস' স্ট্রবেরি খামারের মালিক নিকোলাস ভালেগা কস শ্রমিকদের কাজে যোগদানের অনুরোধ করেন এবং নইলে তিনি অন্য শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাবেন বলে হুমকি দেন। এক পর্যায়ে খামার মালিক নিকোলাস ভাগেলা কস অন্য শ্রমিকদের কাজে ডাকেন এবং বাংলাদেশী শ্রমিকদের খামার থেকে বের হয়ে যাবার নির্দেশ দেন। বকেয়া বেতন না নিয়ে বাংলাদেশী শ্রমিকরা খামার থেকে বের না হবার চেষ্টা করেন। এই পর্যায়ে স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় খামার মালিক নিকোলাস ভাগেল কসের নির্দেশে দুইজন ফোরম্যান বাংলাদেশী শ্রমিকদের উপর হঠাৎ গুলি চালান। এতে ঘটনাস্থলে অন্তঃত ৩২ জন বাংলাদেশী শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। যাদের মধ্যে ২৫ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকী ৭জনের অবস্থা আশংকাজনক। গ্রিসে বাংলাদেশিদের সংগঠন এইবিএ-এর প্রেসিডেন্ট জয়নুল আবেদীন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, 'নিয়া মানোলাদা এলাকায় স্ট্রবেরি খামারে কর্মরত দেড়শ'র মত বাংলাদেশি অভিবাসীর বেতন ছয় মাস ধরে বাকি থাকায় তারা খাওয়া থাকার খুবই সমস্যায় ছিল। বেতনের অর্থ না পাওয়ায় গত মঙ্গলবার থেকে কর্মীরা হরতালের হুমকি দেন। তারা কাজে যেতে আপত্তি জানালে তাদের বাসা থেকে বের করে মালিকের লোকজন গুলি করে।'গ্রিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলার জামাল হুসেইন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, আহত বাংলাদেশি কর্মীদের দেখতে তিনি ওই এলাকায় গেছেন। তার সঙ্গে জয়নুল আবেদীনও ঘটনাস্থলে গেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম গ্রীসে অ্যাথেন্স থেকে ২৬০ কিলোমিটার দূরে নিয়া মানোলাদা এলাকায় পেলোপন্নেসিয়ান গ্রামের এক খামারে। নিয়া মানোলাদা এলাকার কৃষি খামারে পাঁচ হাজারের মত বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী কাজ করেন। ওই খামারের কর্মীরা তাদের বকেয়া বেতনের দাবি জানাতে জড়ো হলে খামারের একজন সুপারভাইজার তাদের উপর গুলি চালায়। খামারের মালিক এবং ওই ফোরম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং খামারের আরও দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়েছে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গ্রিসে বর্ণবাদী হামলা বাড়ছে। এথেন্সের পশ্চিমের ওই এলাকায় অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা আগেও ঘটেছে। বিশেষ করে খামারে অমানবিক কাজের পরিস্থিতির প্রতিবাদে ২০০৮ সালে শ্রমিকেরা ধর্মঘট করলে তাঁদের ওপর তখন হামলা হয়েছিল। বিবিসির সংবাদদাতা মার্ক লোয়েন জানান, ওইসব খামারে অমানবিক কাজের পরিস্থিতির প্রতিবাদে ২০০৮ সালে শ্রমিকরা হরতাল করে। খামারের কর্মীদের উপর তখনও হামলার ঘটনা ঘটেছিল। নিয়া মানোলাদায় উৎপাদিত স্ট্রবেরি বর্জনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোর মাধ্যমে মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে। ওইসব খামারের স্ট্রবেরিকে 'রক্তাক্ত স্ট্রবেরি' আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠন 'কাউন্সিল অফ ইউরোপ' এ সপ্তাহেই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যাতে গ্রিসে বিশেষ করে নব্য-নাৎসী গোল্ডেন ডন পার্টির হাতে অভিবাসীদের হয়রানি ও নির্যাতনের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। ওই রিপোর্টে গ্রিসে সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সঙ্কটের পটভূমিতে বর্ণবাদী সহিংসতা বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।গ্রিসে অবস্থানরত ইউরোপে বাংলাদেশিদের সংগঠন এইবিএ-এর প্রেসিডেন্ট জয়নুল আবেদীন সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, তিনি ও দূতাবাস কর্মকর্তা জামাল হুসেইন এই বিষয়ে আইনি কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, তা নিয়ে একজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি থেকে শ্রমিকদের বাঁচাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিও তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।",False ij,"গল্প_ পাখিপুর সকালবেলায় চা শেষ করে একটা সিগারেট ধরিয়েছি। তাকিয়ে আছি জানালার বাইরে । আজ উজ্জ্বল রোদের একটা দিন। সেই সঙ্গে কনকনে হাওয়াও আছে। এ শহরের আজ একটি করুনতম ঘটনা ঘটতে চলেছে। অথচ দিনটা আজ ভয়ানক রৌদ্রকরোজ্জ্বল।দিনটা আজ কুয়াশাময় কালচে ধূসর হলেও পারত।কাল সারারাত আমার ঘুম হয়নি। আমার এখন ঘুম পাচ্ছে। বেকার বলেই কিনা কে জানে- দিনের বেলায় ঘুম পায় আমার। আপাতত আমি বেকার। মাস দুয়েক আগেও আমি একটা দেশি কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগে রাতদিন ব্যস্ত ছিলাম । আমার সেই ব্যস্ততা ছিল অর্থহীন; কেননা, জানালার ওপাশের নীলাকাশ ও সোনালি রোদগুলি আমাকে নিঃশব্দে ডাকত। এসব কারণেই চাকরি-বাকরি আমার ভালো লাগে না। দু-তিন মাস একটানা চাকরি করলে আমার হাঁপ ধরে যায়। সেসব কথা শুভ্রকে বলি । শুভ্ররও চাকরি-বাকরি ভালো লাগে না-ওর ভালো লাগে গাছপালা আর রোদ-জল-বিল-পাখি। শুভ্র আমার অনেক পুরনো বন্ধু। আমি না হয় এম এটা অন্তত পাস করেছি; এইচ এস সি পাস করে শুভ্র আর পড়ল না। তবে চমৎকার ছবি আঁকে শুভ্র। আর এরইমধ্যে একজন সম্ভাবনাময় তরুণ কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। আর খুব ঘুরে বেড়ায় শুভ্র। আমিও কখনও কখনও ওর ভ্রমনের সঙ্গী হই। আজমিরিগঞ্জ- বানিয়াচং -লাখাই -বাহুবল- চুনারুঘাট কিংবা পানছড়ি-দীঘিনালা-মাটিরাঙ্গা-মহালছড়ি -রামগড় ... কখনও ঢাকার অদূরে গাজীপুর সদরের পশ্চিমে কালেশ্বর বিল। বর্ষার সময়ে কালচে জল ও পদ্মপাতায় মোড়ানো জলজ সবুজ বিলটি শুভ্রর বড় প্রিয়। বিলটির দক্ষিণে প্রায় ২ কিলোমিটার ঘন বৃক্ষরাজীর বিস্তার । স্থানীয় অধিবাসীদের নিয়ে কালেশ্বর বিলের জলে ও দক্ষিণ পার্শ্বস্থ জঙ্গলে অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছে শুভ্র। সেই অভয়ারণ্যের আদিম অন্ধকারে শুভ্র আচমকা চিৎকার করে ওঠে- আমরা দেবতার তৃষ্ণার জলআমরা তার প্রিয়আমাদের ঘাম ও রক্তও তার প্রিয় ...শুভ্র অভয়ারণ্যের নাম দিয়েছে পাখিপুর। পাখিপুরের পুরোহিত শুভ্র । সে স্থানীয় অধিবাসীদের প্রাকৃতিক ধর্মে দীক্ষা দেয়। সমবেত লোকসকলের উদ্দেশ্যে শুভ্র বলে: বল যে আমরা দেবতার তৃষ্ণার জলসমবেত লোকসকল বলে: আমরা দেবতার তৃষ্ণার জলসমবেত লোকসকলের উদ্দেশ্যে শুভ্র বলে: বল যে: আমরা তার প্রিয়সমবেত লোকসকল বলে: আমরা তার প্রিয়সমবেত লোকসকলের উদ্দেশ্যে শুভ্র বলে: আমাদের ঘাম ও রক্তও তার প্রিয় ...সমবেত লোকসকল বলে: আমাদের ঘাম ও রক্তও তার প্রিয় ...রিজওয়ানা, শুভ্রর প্রেমিকা- আমার বড় মামার মেয়ে । রিজওয়ানার সঙ্গে শুভ্র সারাজীবন কাটিয়ে দেবে পাখিপুরে। শুভ্র- রিজওয়ানার সম্পর্ক অনেক দিনের, বস্তুত আমার সঙ্গে শুভ্রর সম্পর্ক যতদিনের পুরনো, রিজওয়ানার সঙ্গে শুভ্রর সম্পর্ক ঠিক ততদিনের । ওদের বিবাহবাসরের পর পাখিপুরে রিজওয়ানার ভূমিকা হবে মাছ, পদ্মপাতা ও পাখিদের মা। শুভ্রর কবি ও পুরোহিতের। তবে শুভ্রর শঙ্কা এই: স¤প্রতি একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানী চোখে পড়েছে পাখিপুর । প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিদের হাত করে পাখিপুরের দখল নিতে চাইছে চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা । কালেশ্বর বিলের দক্ষিণ পাড়ে কে বা কারা রাতারাতি একটি সাইনবোর্ড বসিয়েছে। তাতে লেখা: অত্র এলাকাটি ‘গ্রিন নেস্ট’ প্রপার্টিজ এর সংরক্ষিত এলাকা। অত্র এলাকায় জনসাধারনের প্রবেশ নিষেধ। ২এই রনি। ওঠ! উঁহু।তোর বড় মামা বারবার ফোন করছে। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মা যখন ঠেলে আমার ঘুম ভাঙ্গল, তখন বেলা দেড়টা। আজ রিজওয়ানার বিয়ে। বিয়েতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না আমার। দীর্ঘদিন ধরে আত্মীয়স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছি। কমিউনিটি সেন্টারে দেখাসাক্ষাৎ হলে নানান উটকো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। কি করা হয়? কি জবাব দেব? আমি আর শুভ্র যে গত অক্টবরে হাকালুকি হাওর গিয়েছিলাম ... সে কথা কি বলা যাবে? সৌম্য চৈতন্য নামে কবিতা লেখে শুভ্র। ওর প্রথম কবিতার বইয়ের নাম: “ আমরা দেবতার তৃষ্ণার জল?” সে কথা কি বলা যাবে? মায়ের পীড়াপীড়িতে কমিউনিটি সেন্টারে যেতেই হল ।সি এন জিতে মা বলল, কাল তোর বড় মামা বলল কল্যাণপুরের জমিটা আমরা রিজওয়ানার শ্বশুরকে দিতে পারি। এখন ওরা আমাদের আত্মীয় যখন- ঠকার ভয় নেই। তুই কি বলিস? আমি চুপ করে থাকি। দীর্ঘশ্বাস ফেলি। শুভ্রর মুখটি আমার মানসপটে ভেসে উঠল। আত্মীয় বলেই ভালো হয়ে গেল? ‘গ্রিন নেস্ট’ প্রপার্টিজ এর চেয়ারম্যান সাত্তার মির্জা এখন বড় মামার বেয়াই । ‘গ্রিন নেস্ট’ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মাকে এসব বুঝিয়ে লাভ নেই। গাজীপুরের কালেশ্বর বিলের একাংশ অবৈধভাবে দখলে নিয়ে ‘স্বপ্নের নীড়’ আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলতে যাচ্ছে ‘গ্রিন নেস্ট’ ।আমার বড় মামা একজন বিখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট। যথেষ্ট অর্থ ও যশ অর্জন করেছেন। এখন একমাত্র মেয়ের বিয়েতে সেসব ঢেলে দিচ্ছেন । ঘিয়ে রঙের সাফারি স্যুট পরে শশব্যস্ত হয়ে ঘুরছেন। আমাকে এক ফাঁকে দেখলেন। কথা বললেন না। আমি একটার পর একটা চাকছি নিচ্ছি আর কিছুদিন পরেই ছেড়ে দিচ্ছি। পরিবার-পরিজনের কাছে দিন দিন ‘অস্বাভাবিক’ হয়ে উঠছি। ‘অস্বাভাবিক’ লোকের সঙ্গে ‘প্রতিষ্টিত স্বাভাবিক’ লোকে কথা বলবে কেন।রিজওয়ানা এখন কোথায়?খোঁজ নিয়ে জানা গেল বিউটি পারলার থেকে এখনও আসেনি কনে। শুভ্র এখন কি করছে?আজ শুভ্রর ফ্লাইট। বিকেল ৫টায়। ওর সঙ্গে আসন্ন বিচ্ছেদের জন্য অত্যন্ত বিষন্ন বোধ করছি। শুভ্র আর কোনওদিন এ শহরে ফিরবে না বলেছে। এমন করে কি দূরে চলে যাওয়া যায়-যখন আমরা আমাদের ভবিতব্যকে জানি না? এই প্রশ্নটি কয়েকদিন আগে শুভ্রকে করেছিলাম।শুভ্র চুপ করে থাকে।আরও বললাম, যেখানে যাচ্ছিস, সেখানেও তো সম্পর্কের বেড়াজাল তৈরি হবে। কেউ সুখ দেবে, কেউ দুঃখ দেবে। তখন?শুভ্র চুপ করে থাকে। আমি ওর মনোভাব জানি। ভূমিদস্যুরা রিজওয়ানা কে লুঠ করে নেবে-শুভ্র তা সইতে পারবে না। এরচে অনেক অনেক দূরে হারিয়ে যাবে ও। পাখিপুরও তো হাতছাড়া হয়ে গেল। শুভ্র আমার প্রিয়তম মানুষের একজন। আমি ওর জীবনের সমস্ত ঘটনা জানি। কোথায় ওর সুখ, কোথায় ওর দুঃখ। ঠিক কবে রিজওয়ানার সঙ্গে ওর পরিচয়, রিজওয়ানাকে কতটুকু ভালোবাসে। তারপরও আজ আমি ওকে বিদায় জানাতে এয়ারপোর্ট যাব না। আমি পারব না। আমার সে সাহস নেই। আজ আমার দূরে কোথাও লুকিয়ে থাকার ইচ্ছে ছিল। রিজওয়ানার বিয়েতেও আসার ইচ্ছে ছিল না। মায়ের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য আসতে হল।ধীরে ধীরে অতিথিরা আসছে। মূল্যবান শীতবস্ত্রের প্রদর্শনী চলছে। শাল-ব্লেজার ও কোট। কান পেতে অতিথিদের মূল্যবান কথাবার্তা শুনছি। এবারের শীত ...উহ্ ...আর বলবেন না ... যাক, আজ রোদ উঠল ... বুঝলেন একে বলে জলবায়ূ পরিবর্তন ... জলবায়ূ পরিবর্তন ... উত্তরাঞ্চল শীতে ...আরও কম্বল লাগবে ...সরকার বুঝতে চাইছে না ... ইত্যাদি ...আমার দেখে যাওয়া ছাড়া কি আর করার আছে? আমি প্রেমহীন একটি দিনের উৎসবে ঘুরছি।ঘড়ি দেখলাম। দুটো বেজে এগারো মিনিট।উঁকি মেরে দেখলাম ভিতরের একটি ঘরের ডিভানের ওপর রিজওয়ানা ডানাকাটা শুভ্র পরীর মতো সেজে বসে আছে। ঘরটায় মেয়েদের ভিড়। ওদিকে আর গেলাম না। অথচ যাওয়ার দরকার ছিল। রিজওয়ানাকে একটা কথা বলার ছিল আমার। বিকেল ৫টায় শুভ্রর ফ্লাইট । কথাটা শুনে রিজওয়ানা কি চমকে উঠবে। ও কি কাতর হয়ে উঠবে? আমি ঠিক শিওর না। শুভ্র কবি। কবিদের একা থাকাই ভালো। না, শুভ্র ঠিক কবি না। শুভ্র পুরোহিত, পাখিপুরের পাখিদের পুরোহিত। পুরোহিতের সঙ্গে সম্পর্কটা আগুনের। নারী আগুন নয়- আগুন ও নারীর সম্পর্কটা বৈরী। বরপক্ষ এল। ভিড়ের ভিতরে রিজওয়ানার বর কামরান মীর্জাকে দেখলাম। আগেই একবার দেখেছিলাম টিভিতে। একটা শোরুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিল। লম্বা ফরসা যুবক। চোখে চশমা। অনেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ প্রভাষকের মতন দেখতে । কে বলবে এই সুদর্শন তরুণটিই ভূমিদস্যুদের একজন। বাংলাদেশের শোষক-পরিবারগুলি দিনদিন সফিসটেকেটেড হয়ে উঠছে। তিরিশ বছর আগে এরা এত মোলায়েম ছিল কি? গাজীপুরের কালেশ্বর বিলের আবাসন প্রকল্পটি নাকি কামরান মীর্জাই দেখাশোনা করছে। বিলপাড়ে কটেজ তুলেছে যুবকটি। বিয়ের পর রিজওয়ানাকে নিয়ে নিশ্চয়ই ওখানে বেড়াতে যাবে । এবং রিজওয়ানা দেখবে শীত শেষে ঝাঁক ঝাঁক পাখি ফিরে যাচ্ছে সাইবেরিয়ার উদ্দেশে। ওরা আর ফিরে আসবে না ...পাখিপুর ছারখার হয়ে যাচ্ছে রিজওয়ানা!আমার ভিতরে কে যেন নিঃশব্দে চিৎকার করে ওঠে।মা বারবার করে বলেছে, আমি যেন খাওয়ার সময় তদারকি করি- তোর বড় মামার সম্মান। সম্মান না ছাই! মার এখন বড় মামার মধ্যস্থতা প্রয়োজন। কল্যাণপুরের আড়াই কাঠা জমিসহ পুরনো দোতলা বাড়িসহ জমিটা রিজওয়ানার শ্বশুর সাত্তার মির্জার হাতে তুলে দেবে মা । দশফুটি গলির গলির ভিতরে অতটুকু জমি কোনও ডেভেলাপার নিতে চাইছে না। তার ওপর দীর্ঘদিনের ভাড়াটে উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না, ভাড়াও বাড়ানো যাচ্ছে না। মা জানে, ‘গ্রিন নেস্ট’ প্রপার্টিজ কল্যাণপুরের ভাড়াটেদের উচ্ছেদ করতে বেগ পেতে হবে না।অতিথিরা খেতে বসে গেছে। আমি এ টেবিল থেকে ও টেবিল ঘুরঘুর করছি। খানসামাদের এটা ওটা নির্দেশ দিচ্ছি। বাইরে থেকে দেখে আমাকে শান্ত ও স্বাভাবিক লাগার কথা।৩আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করল না। আধ গ্লাস বোরহানি খেয়ে কমিউনিটি সেন্টারের বাইরে চলে এলাম। বমি বমি লাগছে। কপালের বাঁ পাশের রগটা টিপ টিপ করছে। অনেকক্ষণ সিগারেট খাওয়া হয়নি। ধরালাম একটা। সিগারেটের ধোঁওয়া কাগজ পোড়া মনে হল। ফুটপাতের ওপর একটা উদ্বাস্তু পরিবার টায়ার পুড়িয়ে রান্না করছে। আমার বমির ভাবটা বেড়ে যায়। টক টক ঢেঁকুর উঠছে।শীতের দিনটা আজ কেন যেন ভয়ানক উজ্জ্বল। আর সেই সঙ্গে বইছে কনকনে বাতাস । আজ দিনটা কেন কুয়াশায় ঘোলা হয়ে রইল না? আজ যখন এ শহরের একটি করুনতম ঘটনা ঘটতে চলেছে। ভূমিদস্যুদের হাতে লুঠ হয়ে যাওয়ার আগে রিজওয়ানাকে আমি শুভ্রর সঙ্গে পাখিপুরে পালিয়ে যেতে বলেছিলাম । রিজওয়ানা চুপ করে ছিল। টিভির ঝলমলে বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়েছে কি সহজ সরল মেয়েটি? তাছাড়া পালিয়ে গেলেই-বা কি লাভ হত? কামরান মীর্জারা ঠিকই বার করে ফেলত। অন্যভাবে। এদের হাত অনেক দীর্ঘ। ওদের হাত থেকে পাখিদের মা কিংবা প্রকৃতি উপাসকদের রক্ষা নেই। কারা যেন দাবী করছে, পৃথিবীর স্থলভাগ নাকি এ শতকেই তলিয়ে যাবে সমুদ্রের গভীরে। তেমনই তো হওয়ার কথা। পৃথিবী অনেক আগেই কামরান মীর্জাদের দখলে চলে গেছে । একজন পাখির প্রেমিকের আজ আর পৃথিবীর ওপর বিন্দুমাত্র অধিকার নেই!রিজওয়ানা যখন ওর বরের গাড়িতে উঠল তখন বিকেল ৫টা।শুভ্র ঠিক এ মুহূর্তে প্লেনের সিটে বসে কি ভাবছে কে জানে। ফুলে ফুলে শোভিত সাদা রঙের বিএমডাবলিউটি বেরিয়ে গেল কমিউনিটি সেন্টারের বাইরে। রাস্তার ওপাশের একটি পাতাশূন্য গাছে হাজার হাজার কাক ডাকছে।শীতের বেলা দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। পাখিপুরে রাত নামছে।(উৎসর্গ: স্বপ্নচারী রিয়াদ )",False ij,"১৯৭১_ এই দিনে ১৯৭১ সালের প্রথম দিককার পাকিস্তান সরকারবিরোধী একটি মিছিল। মিছিলের মানুষের মুখগুলো প্রতিবাদে উত্তাল, বুকে প্রতিশোধের আগুন। এই আগুন ও প্রতিবাদই ছিল একটি স্বাধীন দেশের প্রসবযন্ত্রণা। ১৯৭১। ২৬ মার্চ। সকাল বেলা। একটা ছোট্ট উঠান; কাঁঠাল গাছ, শ্যাওলা ধরা প্রাচীর। উঠানে রোদ ছিল। রোদ ছিল কাঁঠাল গাছে আর শ্যাওলা-ধরা পাঁচিলের গায়। গতরাতে একটা যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে গেছে । পাকিস্তানি আর্মিরা ঢাকা শহরের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। অরেকট যুদ্ধ চলছিল উঠানে।যুদ্ধটা চলছিল আমার মা-বাবার মধ্যে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে! আমার মা, ঈষৎ পৃথুলা, বেঁটে;আমার বাবা- দীর্ঘ শীর্ণকায়। দুজনের হাতেই রবীন্দ্রনাথের গেরুয়া পরা মাটি-রঙা একটা বারো ইঞ্চি মূর্তি; ওটা নিয়ে উঠানের ওপর ধস্তাধস্তি চলছে। আমার তখন চার বছর বয়েস। আমি উঠানের ওপর ধস্তাধস্তির দৃশ্যটা দেখছি। যতটুকু বুঝতে পারি-আমার বাবা চাইছেন মূর্তিটা ভেঙ্গে ফেলতে, উঠানের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চাইছে। মা কিছুতেই দেবে না; মূর্তিটা না-ভেঙ্গে উঠানে পুঁতে ফেলতে চান মা। পরে বিপদ কেটে গেলে ধুয়ে মুছে ঘরে আবার সাজিয়ে রাখবেন। বললাম, আমার তখন বয়স চার বছর। ওই বয়েসের কথা কি কারও মনে থাকে? আসলে ৭১-এর পর থেকে মধ্যবিত্ত বাঙালির আলোচনার মূল বিষয়ই ছিল একাত্তর। আমিও বয়স্কদের আসরে বসে হাজারবার ঘটনাটা শুনেছি। কিংবা মায়ের মুখে অসংখ্যবার শুনে শুনে দৃশ্যটা মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছে। গতরাতেই কয়েক জন লোক পুলিশ লাইন থেকে প্রাণে বেঁচে পাঁচিল ডিঙিয়ে আমাদের উঠানে আশ্রয় নিয়েছে। ভীতসন্ত্রস্ত তাদের মুখচোখ। তাদের চোখে আমি ওই বয়েসেই মৃত্যুভয় দেখেছি। আমার মা-বাবার ধস্তাধস্তির দৃশ্যটা তারাও দেখছিল। আজ ভোরে মা-বাবা ওদের খাওয়ালেন, লুঙ্গি-গামছা দিলেন, খোঁজখবর নিলেন। এ ব্যাপারে আমার মা-বাবা একমত।কেবল ওই বরীন্দ্রনাথ নিয়েই ... অথচ ওই সময়ে আমাদের পরিবারে সুখশান্তি ছিল। সহসা কলহ হত না। কেবল ওই রবীন্দ্রনাথ নিয়েই ... আমার বাবা, পরে জেনেছি, ছিলেন moderate muslim, আওয়ামী লীগের মিটিং-এ যেতেন আবার ...আর আমার মা আগাগোরা কাব্যপ্রেমিক, romantic। সেই ১৯৬১ তেই ইডেন কলেজে নাটক করতেন ... কোথাও যেন একটা সূক্ষ্ম বিরোধ। উঠানে রোদের ভিতরে রবীন্দ্রনাথের মূর্তিটা নিয়ে ধস্তাধস্তি চলছে। রোদ পড়েছিল কাঁঠাল গাছে, প্রাচীরের ওপর। প্রাচীরের ওপাশে জমাজমি; টিনশেডের ঘর। তারপর একটা সরু গলি। যে গলি ধরে হাঁটলে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে যাওয়া যায়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন আমাদের বাড়ির খুব কাছে। গতরাতে আমাদের কারও ঘুম হয়নি। রাতভর গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। আমার moderate muslim বাবার ধারনা রবীন্দ্রনাথের মূর্তিটা এ সময় বিপদজনক। আমার কাব্যপ্রেমিক romantic মা ঝুঁকিটা নিতে চান। মূর্তি ভাঙ্গার বদলে উঠানে পুঁতে ফেলতে চান। মূর্তিটা নিয়ে শেষমেষ কী হয়েছিল আজ আর মনে নেই। কাউকে যে জিজ্ঞেস করব তেমন কেউই বেঁচে নেই। এখন লিখতে লিখতে আমার মনে হলো: রবীন্দ্রনাথের সেই মূর্তিটা গত ৩৬ বছর চোখে পড়েনি আমার! (এই লেখাটা (রবীন্দ্রনাথ) আমার একেবারে প্রথমদিককার লেখা। আজকের দিনটির কথা বিবেচনা করে লেখাটা ঈষৎ পরিবর্তন করে আবার পোষ্ট করলাম।) সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫২",False ij,"মানুষের স্থাপত্যভাবনায় যে ভাবে ছাপ ফেলে যায় অতীতের ঐতিহ্য ইরাকের সামারা নগরে অবস্থিত আল-মুতাওয়াককিল মসজিদের মিনার। মিনারটির নাম মালউইয়া। মানুষের স্থাপত্যভাবনায় যে অতীতের ঐতিহ্য ছাপ ফেলে যায় তারই এক অনন্য দৃষ্টান্ত মালউইয়া মিনার। তার কারণ, ব্যাবিলনের ‘টাওয়ার অভ বাবেল’-এর আদলে নির্মিত হয়েছিল মালউইয়া মিনার ...সামারা নগরটি ইরাকের উত্তরে অবস্থিত । সেখানেই রয়েছে একটি অতুলনীয় মসজিদ- মসজিদটিকে বলা হয় ‘দি গ্রেট মস্ক অভ সামারা।’ ৮৪৮ সালে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়, মসজিদ নির্মাণ শেষ হয় ৮৫১ সালে । বর্তমান ইরাক তখন পারস্যের অর্ন্তগত ছিল, পারস্য শাসন করছিল আব্বসীয় রাজবংশ। আব্বাসীয় খলিফা আল-মুতাওয়াককিল (৮৪৭-৮৬১) এর সময়ে আল-মুতাওয়াককিল মসজিদের নির্মাণ কাজশেষ হয়। ইরাকের সামারা নগরে অবস্থিত আল-মুতাওয়াককিল মসজিদের মিনার।একটা সময় ছিল। যখন ‘দি গ্রেট মস্ক অভ সামারা’ই ছিল বিশ্বের সর্বাপ্রেক্ষা বৃহত্তম মসজিদ। তবে এর মালউইয়া মিনারটি আজও অতুলনীয় বলে স্বীকৃত। মিনারটি দেখতে চোঙার মতন। শামুক আকারের মিনারটি ৫২ মিটার উঁচু ও ৩৩ মিটার চওড়া। ওপরে ওঠার জন্য রয়েছে ঢালু সর্পিল পথ। মালউইয়া মিনার।ইরাকের মানচিত্রে সামারার অবস্থান । তাইগ্রিস নদীর পাড়ে এ জায়গাটি বাগদাদের ১২৫ কিলোমিটার উত্তরে। মালউইয়া মিনারটি আমাদের পুরাকালের এক স্থাপত্যকাঠামোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এককালে, হিব্রু বাইবেলের বুক অভ জেনেসিস অনুযায়ী, ব্যাবিলন নগরের উপান্তে নির্মাণ করা হয়েছিল টাওয়ার অভ বাবেল, আরবিতে বুর্জ বাবিল। ব্যাবিলন নগরের অবস্থান ছিল বর্তমান কালের বাগদাদের ৫৫ মাইল দক্ষিণে। বাইবেলমতে মহাপ্লাবনের পরে নূহ নবীর বংশধরেরা উত্তর-পুবের আর্মেনিয়া থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের ব্যাবিলন নগরে চলে এসেছিল। তারা এক অভিন্ন ভাষায় কথা বলত। যা হোক। ব্যাবিলন তখন লোকে লোকারণ্য এক বৃহৎ নগরী হয়ে ওঠে। কখনকার কথা এটি? আধুনিক ঐতিহাসিক রীতি অনুযায়ী সন-তারিখ স্থির করা কঠিন। তবে আমরা যে নমরুদের কথা জানি, বাইবেলমতে টাওয়ার অভ বাবেল নির্মানের সময়টি নমরুদের শাসনামলের গোড়ার দিকে। ব্যাবিলনবাসী ঠিক করল তারা ব্যাবিলন নগরে একটি উঁচু স্তম্ভ নির্মান করবে, স্তম্ভটির শীর্ষ থাকবে স্বর্গে -যা ঘোষনা করবে মানুষের অহঙ্কার। টাওয়ার অভ বাবেল, আরবিতে বুর্জ বাবিল।ঈশ্বর ইয়াওয়ে কনফিউশন সৃষ্টি করছেন। ছবিটি এক বিখ্যাত ইউরোপীয় শিল্পীর আঁকামানুষের পরিকল্পনাটি ঈশ্বর ইয়াওয়ের পছন্দ হয়নি । তিনি ভাবলেন মানুষ স্তম্ভ নির্মাণ করলে সরে যাবে তার আরাধনা থেকে। কিন্তু, স্তম্ভ তৈরি বন্ধের জন্য কি করা যায় ... ঈর্ষান্বিত ইয়াওয়ে তখন ব্যাবিলনবাসীর ভাষায় বিভেদ গড়লেন তুললেন। অনতিবিলম্বে ব্যাবিলন শহরে নানা ভাষার উদ্ভব হল। (আধুনিক ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে ২২ কিলোমিটার পরপর মানুষের বাকরীতির পরিবর্তন আসে) ...তখনকারদিনের ব্যাবিলন শহরের প্যারামিটার ২২ কিলোমিটার ছিল বলে মনে হয়না। যাক, এতো বাইবেলিয় উপকথামাত্র। ইংরেজি Babel শব্দের দুটো মানে আমরা পাই। (১) বিভ্রান্তপূর্ন শব্দ। (২) শব্দপূর্ন এলাকা। যা হোক, ঈশ্বর ইয়াওয়ে ভাষার প্রভেদ গড়লেন। ব্যাবিলনবাসী একে অন্যের কথা বুঝল না। কাজেই বুর্জ বাবিল আর তৈরি হয়নি। অসমাপ্ত টাওয়ার অভ বাবেল। ছবিটি এক বিখ্যাত ইউরোপীয় শিল্পীর আঁকানবম শতকে বর্তমান ইরাকের সামারা শহরে আব্বসীয় খলিফা আল-মুতাওয়াককিল (৮৪৭-৮৬১) এর তৈরি হল দি গ্রেট মস্ক অভ সামারা।মসজিদটির মিনার তৈরির সময় তৎকালীন স্থাপত্যবিদদের ব্যাবিলনের অতীত ইতিহাস স্মরণ হয়েছিল। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, মিনার তৈরি হবে বুর্জ বাবিল এর আদলে, যে বুর্জ বাবিল ইহুদি ঈশ্বর ইয়াওয়ের হস্তক্ষেপে শেষ হয়নি, সেটিই আব্বাসীয় রাজকীয় তত্ত্বাবধানে শেষ হল। তাইই ভাবছিলাম, মানুষের স্থাপত্যভাবনায় ছাপ ফেলে যায় অতীত ঐতিহ্য। শ্রদ্ধা জানাই সেই সব স্থপতি, কারিগর ও নির্মাণ শ্রমিকদের-যারা নবম শতকের খ্রিস্টপূর্ব যুগের সদূর অতীতকে পুর্ননির্মান করেছিলেন। দি গ্রেট মস্ক অভ সামারা। আজও এক অনন্য কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছেআগ্রাসী মার্কিন সেনারা ২০০২ সালে ইরাকে অনুপ্রবেশ করে। একে একে ইরাকী নগরগুলি দখল করে নেয়। দখল করে নেয় সামারা শহরও। মার্কিন সেনারা মিনার শীর্ষে অবস্থান করে আশেপাশের অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করত। ২০০৫ সালের ১ এপ্রিল বোমার আঘাতে মালউইয়া মিনার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ইউকিপিডিয়া লিখেছে ‘বিদ্রোহীরা’ মালউইয়া মিনার আক্রমন করত। আমরা বলব মালউইয়া মিনার ক্ষতির জন্য দায়ী মার্কিন সামরিক প্রশাসন।২০০৫ সালের ১ এপ্রিল বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ মালউইয়া মিনার। ইঙ্গমার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা ঈশ্বর ইয়াওয়ের মত কি ঈর্ষিত নয়? সাম্রাজ্যবাদীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে মালউইয়া মিনার",False rn,"রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৯১ ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসের জন্য রবীন্দ্রনাথের প্রশংসা ও সমালোচনা দুই-ই প্রাপ্য। প্রশংসা একারণে যে বাঙালী বর্ণহিন্দু শ্রেণী নিয়ন্ত্রিত স্বদেশী আন্দোলনের সাথে সমাজের দরিদ্র চাষী ও বিশেষত: মুসলমান কৃষক শ্রেণীর বিচ্ছিন্নতা গভীর অন্তর্দৃষ্টির সাথে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন। সমালোচনা এ কারণে প্রাপ্য যে সন্দ্বীপের মতো ভোগী, শঠ ও নিষ্ঠুর চরিত্র দিয়ে সুভাষ চন্দ্র বসু, সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দীনেশ, প্রীতিলতা বা কল্পনা দত্তদের রক্ত ও আত্মত্যাগকে ঢাকার চেষ্টা করে রবীন্দ্রনাথ অসম্ভব অন্যায়ও করেছেন বৈকি ইতিহাসের সাথে। কাদম্বরীর মৃত্যুর কয়েকদিন আদি ব্রাহ্মসমাজের নববর্ষ উৎসব পালন করা হয়েছিল মহর্ষি ভবনে। এই উপলক্ষে চারটি গান লিখেছিলেন-রবীন্দ্রনাথ । তার মধ্যে একটি গান এই রকম- ""বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি/ শুস্ক হৃদয় লয়ে আছে দাঁড়াইয়ে/ ঊর্ধ্বে মুখে নরনারী/ না থাকে অন্ধকার, না থাকে মোহপাপ।/ না থাকে শোক-পরিতাপ/ হৃদয় বিমল হোক, প্রাণ সবল হোক/ বিঘ্ন দাও অপসারি।"" একটি গান লেখা শেষ হয়ে গেলেই- নিজেই সুর দিয়ে গুন গুন করে অনেকক্ষন গাইতেন।আদি ব্রাহ্মসমাজের নববর্ষ উৎসবের পর কাদম্বরীর আত্মহত্যা রবীন্দ্রনাথকে প্রচন্ড আঘাত দেয়। পন্ডিত হেমচন্দ্র বিদ্যারত্নের দায়িত্বে নিমতলা ঘাটের শ্মশানে কাদম্বরীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।আত্মহত্যার মৃত্যু হলে মর্যাদার সাথে দাহ করা হয়েছিল।মায়ের মৃত্যুর সময় রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল তেরো বছর।যেদিন মা মারা গেলেন, তখন তিনি গভীর ঘুমে। মৃত্যু চিনতে শিখেছিলেন- কাদম্বরী বৌঠানের মৃত্যুর পর। রবীন্দ্রনাথ পদ্মা নদীকে অনেক ভালোবাসতেন। একবার যৌবনে ছিপ নৌকা নিয়ে নদীতে নেমেছিলেন। এই পদ্মা নদী রবীন্দ্রনাথের কাছে সব সময় রহস্যময় এবং অদ্ভুত লাগত।জমিদারি দেখাশোনা করতে না এলে- এই বিশাল পদ্মা দেখা হতো না।জমিদার রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রজারা সব সময় তাদের সুখ দুঃখ, আশা স্বপ্ন এবং আবদার নিয়ে আসত। প্রজাদের কষ্টের কথা শুনে রবীন্দ্রনাথের বুক দুমড়ে মুচড়ে উঠত। বারবার চোখ ভিজে উঠত। প্রজারা জমিদার রবীন্দ্রনাথকে খুব আপন ভাবতেন। ভালোবাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন। তিনি জমিদারি দেখাশোনা করতে এসে সব সময় খেয়াল রাখতেন- প্রজাদের উপর যেন কখনও জুলুম না হয়। বাংলাদেশের শিলাইদহ, পতিসর, শাহজাদ পুরে রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। স্ত্রী ছেলে- মেয়েসহ কাটিয়েছেন দুই বছর। শেষ বারের মতন প্রজাদের আমন্ত্রণে পটিসরে আসেন ১৯৩৭ সালে। শিলাইদহ, পতিসর, শাহজাদপুরে থাকার সময় রবীন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনার পাশাপাশি অনেক লেখালেখি করেছেন।বিশেষ করে গল্প গুচ্ছ এবং ছিন্নপত্র অবিনাশী রচনা।রবীন্দ্রনাথ বলেন, প্রজাদের বড় কষ্ট ! অভাব ওদের ছাড়তেই চায় না।ওদের জন্য বড় কিছু করতে না পারা পর্যন্ত আমি শান্তি পাব না। রবীন্দ্রনাথের বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়। আমি চাই না প্রজারা জমিদারের কাছে ভিক্ষুকের মতো হাত পাতবে। তাদেরকে নিজের পায়ে দাড়ানোর মতন শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। প্রজাদের সব রকম সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।রবীন্দ্রনাথ আক্ষেপ করে বলতেন- আমি ধনীর সন্তান কিন্তু ধনী নই। রবীন্দ্রনাথ বলতেন- আমি যদি কেবল দু'তিনটি গ্রামকেও মুক্তি দিতে পারি অজ্ঞতা-অক্ষমতার বন্ধন থেকে, তবে সেখানেই সমগ্র ভারতবর্ষের একটি ছোট আদর্শ তৈরি হবে। শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, প্রতিটা গ্রামে যেন আনন্দের বাতাস বয় । প্রজারা এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে রবীন্দ্রনাথকে বলছেন- বাবুমশায়, আপনার মনটা অনেক বড়। আপনার মতো জমিদার চিরকাল থাকলে গ্রামের মানুষের দুঃখ থাকত না। প্রজারা রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসতেন। অত্যাচারী জমিদার মনে করত না।কিন্তু ঠাকুরদার সময় প্রজাদের শায়েস্তা করার জন্য টিএফ রাইস নামের সাহেবকে ম্যানেজার করা হয়েছিল। তখন শিলাইদহের মুসলমান প্রজারা খাজনা দিতে অস্বীকার করে বিদ্রোহ করেছিল। প্রজাদের শায়েস্তা করার জন্য দ্বারকানাথ এবং দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন- তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন- সাহসী সম্পাদক কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার। রবীন্দ্রনাথ তীব্র ভাবে অনুভব করেছেন- শিলাইদহ, পতিসর এবং শাহজাদপুর না এলে অনেক কিছু দেখা থেকে বঞ্চিত হতে হতো, অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হতো না। এসব এলাকার মানুষের জীবনযাপনের মধ্যে থেকে উঠে এসেছে তার গল্পগুলো। মৃণালিনী অনেককে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। সবচেয়ে মজার কথা হচ্ছে- রবীন্দ্রনাথকে বই কেনার জন্য নিয়মিত টাকা দিতেন। রবীন্দ্রনাথই শিলাইদহে লাঠিখেলা চালু করেছেন। লাঠি খেলার মাধ্যমে গ্রামবাসী শক্তি চর্চা করছে। রবীন্দ্রনাথের অতি আদরের পুত্র শমির মৃত্যুর পরদিন রাতে আকাশ ভেঙে জোছনা নেমেছিল। রবীন্দ্রনাথ একা টানাবারান্দায় বসে প্রবল জোছনার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে লিখলেন— ‘আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে বসন্তের এই মাতাল সমীরণে। যাব না গো যাব না যে রইনু পড়ে ঘরের মাঝে— এই নিরালায় রব আপন কোণে।… আমার এ ঘর বহু যতন ক’রে ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে। আমারে যে জাগতে হবে কী জানি সে আসবে কবে যদি আমায় পড়ে তাহার মনে…’ দীর্ঘদিন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গবেষনা করে আমার কেবলই মনে হয়েছে- একটা মানুষ কতকিছু যে করতে পারে, রবীন্দ্রনাথকে না পড়লে বোঝা যাবে না। ( চলবে......) সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:১৩",False rn,"অসাধারন একটা মুভি 'Life of Pi' 'Life of Pi' ছবিটা মুক্তি পায় ২০১২ সালে।লাইফ অব পাই। মাস্টারপিস এ ছবি মিস করার অর্থ জীবনটা অপূর্ণ থেকে যাওয়া। কানাডার লেখক ইয়ান মার্টেলের বুকারজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে অ্যাং লি-র ছবি। ছবির প্রযোজক ডেভিড উওমার্ক এ বার গোয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এসে বলেছিলেন, উপন্যাসটা প্রথম পড়ে তিনি কিছুতেই ছবি করতে যাননি। জল, বাঘ আর একটা বাচ্চা ছেলে। যে কোনও একটা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়। আর একসঙ্গে তিনটে? পরিচালক অবশ্য শুরু থেকে জিদ ধরে বসেছিলেন। ‘স্বপ্ন দেখতাম, ছবিটা করতেই হবে,’ বলছিলেন অ্যাং লি।ছবির কাহিনী এই রকম- চার দিকে শুধু নীল জল। ওপরে নীল আকাশ। প্রশান্ত মহাসাগরে এ ভাবেই ২২৭ দিন ধরে লাইফবোটে ভেসে চলেছে পাই আর রিচার্ড পার্কার। রিচার্ড পার্কার কোনও মানুষ নয়, ৪৫০ পাউন্ড ওজনের হিংস্র এক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।পুদুচেরি বোটানিকাল গার্ডেনে পাইয়ের বাবার একটি চিড়িয়াখানা ছিল। ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলিকে আমেরিকায় এক সার্কাস কোম্পানিকে বিক্রি করে কানাডার অভিবাসী হওয়ার কথা ভাবেন পাইয়ের মা-বাবা। জাহাজে বাঘ, ওরাংওটাং, জেব্রা সকলকে তোলা হয়। কিন্তু মাঝসমুদ্রে জাহাজডুবি। পাইয়ের মা-বাবা-দাদা সকলের সলিল সমাধি। লাইফবোটে পাইয়ের সঙ্গে একটি জেব্রা, ওরাংওটাং ও হায়না চলে আসে। কয়েক দিন পরে দেখা যায়, বোটের নীচে বসে আছে রিচার্ড পার্কার। অন্য জন্তুদের সে খেয়ে ফেলে। শুধু বেঁচে থাকে পাই। বাঘ মাঝে মাঝে আক্রমণ করতে চায়, কিন্তু কিশোর পাই বুদ্ধি করে তাকে পানীয় জল দেয়, সমুদ্রের মাছ ধরে খাওয়ায়। ছবির ৯০ শতাংশ জুড়ে ডিজিটাল বাঘ, বাকি ১০ শতাংশে আসল বাঘ। দিনের পর দিন সুরজকে বাঘেদের চলাফেরা, হাবভাব দেখতে শিখিয়েছেন অ্যাং লি। সারা ছবিতে তিনটে ঘরানা মিলেমিশে। এক দিকে জাহাজডুবির পর লাইফবোটে বেঁচে থাকার অ্যাডভেঞ্চার। সঙ্গে জীবজন্তুর স্বভাব। জাহাজডুবি, মৃত্যু সব পেরিয়েও বহু কষ্টে বেঁচে থাকে পাই। প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা তাকে বড় করে দেয়। ফলে, এটি বড় হয়ে ওঠার গল্প। এবং সব কিছুর নীচে এক আধ্যাত্মিক অভিযানের ইঙ্গিত।সিনেমাটি ২০১৩ সালের অস্কারে ‘সেরা পরিচালক’সহ সর্বাধিক চারটি পুরস্কার জিতে নেয়। ইয়ান মার্টেলের উপন্যাস অনুসারে সিনেমাটি সেরা পরিচালক, টেকনিক্যাল অ্যাওয়ার্ড ‘সেরা চিত্রগ্রহণ’, ‘বেস্ট ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট’, এবং ‘বেস্ট অরজিনাল স্কোর’-এর পুরস্কারও পায়। বিশাল সমূদ্রে একজন বালক ও একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বন্ধুত্ব নিয়ে ছবিটি সারা বিশ্বে বিপুল সাড়া জাগিয়েছে। ‘লাইফ অফ পাই’ একটি থ্রিডি (ত্রিমাত্রিক) ফ্যান্টাসি ফিল্ম। এতে অভিনয় করেছেন ইরফান খান, সুরজ শর্মা, তববু, আদিল হুসেনে।সিনেমা পর্দায় উত্তাল সমুদ্রে জীবন্ত বাঘের সাথে যে, লোমহর্ষক দৃশ্য দেখেছেন দর্শকেরা 'লাইফ অব পাই' ছবিতে। তা যে স্রেফ অ্যানিমেশন অর্থাত্ অনেকটাই এডিটিং টেবিলের কারুকাজ তা হলের দর্শকেরা কে বুঝবে। এখানেই যেন নির্মাতার মুন্সিয়ানা। দুই ঘন্টা সাত মিনিটের মুভি টা দেখে অনেক আনন্দ পাবেন।",False hm,"পিচ্চিতোষ গল্প ০২: কাঙারুর লেজে ব্যথা পাবার পর কাঙারু একদিন পথে চলতে চলতে চলতে, মানে লাফাতে লাফাতে লাফাতে হঠাৎ একটা কলার খোসার ওপর লেজ পিছলে পড়ে লেজে দারুন ব্যথা পেলো। একদম বয়ে য ফলা থয়ে আকার ব্যথা। কাঙারুর তো হাত ছোট, তাই সে ঠিকমতো লেজ মালিশও করতে পারে না। সে একটা ভালোমানুষের মতো দেখতে গেছো বাঁদরকে বললো, ""ভাই, আমার লেজটা একটু ডলে দাও না, দারুণ ব্যথা পেয়েছি।"" গেছো বাঁদর দেখতে ভালোমানুষের মতো হলেও সে আসলে দারুণ পাজি। সে কিছুক্ষণ মিটমিট করে কাঙারুর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, ""দিতে পারি, কিন্তু দশ টাকা লাগবে।"" কাঙারু শুনে খুব ক্ষেপে গেলো। বললো, ""দশ টাকা? অসুস্থ একজন কাঙারুর লেজে মালিশ করে দেয়ার জন্য দশ টাকা? তোমার মধ্যে কি মনুষ্যত্ব বলে কিছু নাই?"" গেছো বাঁদর বললো, ""উঁহু, ওসব মেছো বাঁদরদের থাকে। গেছো বাঁদরদের মনুষ্যত্ব ছেলেবেলায় কামিয়ে ফেলা হয়।"" কাঙারু খুব চটেমটে পকেট থেকে একটা ময়লা দশটাকার নোট বার করে গেছো বাঁদরকে দিলো। গেছো বাঁদর একটা আতশ কাঁচ বার করে সেটা দেখতে দেখতে বললো, ""আরে, এই দশ টাকার নোটটা কি তুমি নিজে ছেপে এনেছো, নাকি টাঁকশাল থেকে ছাপানো?"" কাঙারু আরো চটে উঠলো। বললো, ""আরে, আমার প্রিন্টারে কি এত কালি আছে নাকি? ওটা টাঁকশালের জিনিস, দেখো নম্বর দেয়া আছে।"" গেছো বাঁদর নম্বরটা মন দিয়ে পড়ে বললো, ""এখানে মনে হয় একটা অঙ্ক কম আছে!"" কাঙারু বললো, ""হতেই পারে না, সরকারী জিনিসে কোন নম্বর কম পড়তে পারে না।"" গেছো বাঁদর বললো, ""তাহলে এটা অন্য কোন প্রিন্টারে ছাপা হয়তো!"" কাঙারু বললো, ""তুমি আমার লেজে মালিশ করে দেবে নাকি দেবে না?"" গেছো বাঁদর বললো, ""উঁহুহু, আগে টাকাটা ভালোমতো পড়ে নিই! দাঁড়াও ওখানে গাছের গায়ে ঠেস দিয়ে। এটা কার ছবি টাকার গায়ে?"" কাঙারু বললো, ""ওটা মিষ্টি মেয়ে ডাগরীর ছবি, আবার কার?"" গেছো বাঁদর খুঁত ধরে শুধু, বলে, ""টাকার গায়ে মিষ্টি মেয়ে ডাগরীর ছবি কেন? ওখানে তো বেলগাছিয়া পোস্ট অফিসের ছবি থাকার কথা!"" কাঙারু রেগে আগুন, সে বলে, ""আরে বাঁদর, ওটা তো পাঁচ টাকার নোটে থাকে, আর ডালকুমড়ার ফুলের ছবি থাকে পনেরো টাকার নোটে, জানো না?"" বাঁদর বললো, ""ওহ! হুমম! ঠিকাছে। আর উল্টোপিঠে এটা কী লেখা, চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দশ টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে?"" কাঙারু বললো, ""ওসব টাকার গায়ে লেখা থাকতে হয়। নিচে সই দ্যাখো।"" বাঁদর বললো, ""সই নেই তো, টিপসই আছে শুধু!"" কাঙারু বললো, ""একটা হলেই হোলো!"" বাঁদর ধীরে সুস্থে টাকাটা নিজের মানিব্যাগে ভরে বললো, ""এসো দেখি তোমার লেজটা একটু ডলে দেই। লেজ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে এসেছো তো?"" কাঙারু খুব রেগে গেলো এ কথা শুনে। সে বলে, ""রাস্তার মধ্যে গরম পানি পাবো কিভাবে?"" বাঁদর বললো, ""সে কী! তোমার ময়লা লেজে হাত লাগাতে বলছো?"" কাঙারু তখন টের পেলো, কথা বলতে বলতে তার ব্যথাটা আর আগের মতো নেই। সে বললো, ""লাগবে না আমার ময়লা লেজে তোমার হাত দেয়া। আমার দশ টাকা আমাকে ফিরিয়ে দাও।"" বাঁদর বললো, ""টাকা তো ফিরিয়ে দেয়া যাবে না। চাইলে এক জোড়া পাখা নিতে পারো। গত হরতালে পথে কুড়িয়ে পেয়েছি। এখনও নতুন আছে।"" কাঙারু বললো, ""পাখা দিয়ে আমি কী করবো?"" বাঁদর বললো, ""পাখা লাগিয়ে উড়তে পারো। তাহলে আর লেজে ব্যথা পেতে হবে না।"" কাঙারু রাজি হয়ে গেলো, বললো, ""এক জোড়া পাখার দাম তুমি দশ টাকা রাখছো কেন? আট টাকা রাখো।"" বাঁদর বললো, ""আমার কাছে ভাংতি কেবল এক টাকা আছে।"" কাঙারু বললো, ""আচ্ছা এক টাকাই দাও ফেরত।"" বাঁদর মানিব্যাগ থেকে একটা একটাকার নোট বার করে দিলো। কাঙারু তখন আতশ কাঁচটা নিয়ে সেই একটাকার নোটটা খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। সব দেখেশুনে সে বললো, ""এই নোটটা তো তুমি নিজে প্রিন্ট করেছো! একটাকার নোটে বেলগাছিয়া পোস্টাপিসের ছবি কেন? নোটের নম্বরের জায়গায় লেখা ২+২=৪, আর উল্টোপিঠে লেখা, ""বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না""!"" বাঁদর ব্যস্ত হয়ে বললো, ""আমার একটাকার নোট আমাকে ফিরিয়ে দাও বলছি!"" কাঙারু ডানা জোড়া পরতে পরতে বললো, ""কেন?"" বাঁদর বললো, ""ওটা আমার আতশ কাঁচের ভাড়া!"" কাঙারু রেগেমেগে এক টাকার নোট বাঁদরকে ফিরিয়ে দিয়ে উড়তে উড়তে বেরিয়ে গেলো। কিন্তু কাঙারুর শান্তি নাই, কয়েকদিন পর সে দেখলো আরো অনেকে পাখা লাগিয়ে উড়তে শুরু করেছে, মাটিতে লাফানো, হাঁটা, গড়ানো কোনটাই নাকি আর নিরাপদ নয়। আকাশের গলিতে গলিতে ট্রাফিক জাম লেগে গেলো। যারা কষ্ট করে পাখা ঝাপটায়, তাদের কি আর ট্রাফিক জাম পোষায়? কয়েকদিন পর লেগে গেলো মারামারি। উল্টোদিক থেকে উড়তে উড়তে আসা গোবদা চেহারার একটা গরিলা এসে কাঙারুর লেজ মুচড়ে মারলো এক চড়। কাঙারু চড় খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো, ""তুমি আমার লেজে ব্যথা দিলে কেন? তোমার মধ্যে কি মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই?"" গরিলা বললো, ""ওসব মেছো বাঁদরদের থাকে, গরিলাদের মনুষ্যত্ব ছেলেবেলায় উপড়ে ফেলা হয়।"" কাঙারু মন খারাপ করে ডানা দু'টো খুলে আবার মাটিতে নেমে লাফাতে লাফাতে ফিরে গেলো গেছো বাঁদরের কাছে। ""তোমার পাখা তুমি ফিরিয়ে নাও, আমার দশটাকা আমাকে ফিরিয়ে দাও।"" বললো কাঙারু। বাঁদর বললো, ""উঁহু, বিক্রি করা মাল ফেরত নেই না আমি। তাছাড়া কালকে আকাশে হরতাল, একটু তক্কে তক্কে থাকলে বিনা পয়সায় অনেক পাখা পাবো আমি। পয়সা খরচ করে তোমারটা কেন নেবো?"" কাঙারু বললো, ""কে ডেকেছে হরতাল?"" বাঁদর বললো, ""পাখিরা। ডানাঅলা পশুদের জ্বালায় উড়তে পারছে না বেচারা, ভয়ানক অসুবিধা হচ্ছে ওদের।"" কাঙারু মন খারাপ করে বাড়ি চলে গেলো। তার পরদিন আকাশে হুলুস্থুলু হরতাল হলো। অনেক পাখির পালক ভাঙলো, অনেক পশুর ডানা কাটা পড়লো, বড় কয়েকটা কালো কালো মেঘে আগুন দেয়া হলো, তারা কাঁদতে কাঁদতে আসাম চলে গেলো। কাঙারু গেছো বাঁদরের বাড়ি লাফাতে লাফাতে গিয়ে দেখে, বাঁদর কতগুলি রঙিন ঘুড়ি নিয়ে বসে আছে। কাঙারুকে দেখে সে বললো, ""ঘুড়ি কিনবে ঘুড়ি? আশি টাকা এক কুড়ি!"" কাঙারু বললো, ""ঘুড়ি দিয়ে আমি কী করবো?"" বাঁদর বললো, ""ঘুড়ি দিয়ে মানুষ কী করে? ওড়াবে!"" কাঙারু বললো, ""আকাশে তো হরতাল চলছে!"" বাঁদর বললো, ""হরতালে আকাশে ঘুড়ি চলে, কোন সমস্যা নেই!""",False hm,"পিচ্চিতোষ গল্প ০১: মহারাজার বাইসাইকেল এক দেশে ছিলো এক রাজা। একদম মহারাজা। তার হাতিশালে ছিলো হাতি। মস্তবড় সে হাতি। তার কুলোর মত কান আর মূলোর মত দাঁত। আর ইয়া বড় এক শুঁড়। শুঁড় দিয়ে হাতি মাঝে মাঝে তার কান চুলকে নিতো। হাতির নাম জানতে চাও? তার শরীর যত বড়, নাম তত ছোট। হাতির নাম ফুটু। রাজার ঘোড়াশালে ছিলো ঘোড়া। সেইরকম টগবগে ঘোড়া, ঘাড়ভর্তি কেশর, মস্ত ঝুপ্পুস লেজ, লেজ দিয়ে ঘোড়া মাছি তাড়ায়। মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘোড়া সবক'টা দাঁত বার করে হাসে। রাজার ঘোড়াটার আবার একটা দাঁত ছোটকালে আইসক্রীম খেয়ে খেয়ে পড়ে গেছে, সেটা সোনা দিয়ে বাঁধানো। ঘোড়ার নাম জানতে চাও? তার শরীর যত বড়, নাম তত ছোট। ঘোড়ার নাম ছোটু। রাজার রাজাশালে, মানে রাজপ্রাসাদে রাজা নিজেই থাকেন। রাজা কিন্তু ছোট্টখাট্টো লোক, তেমন পালোয়ান নন। তাঁর ভাড়া করা পালোয়ান আছে। রাজার মস্ত গোঁফও নেই, তাঁর ভাড়া করা গোঁফোয়ান আছে। রাজা শুকনোপটকা লোক, তিনি মুড়ি দিয়ে চানাচুর সরষের তেল মেখে খেতে ভালোবাসেন। রাজার নাম জানতে চাও? তার শরীর যত ছোট, নাম তত বড়। রাজার নাম আসমুদ্রহিমাচলজিৎ জয়জয়ধ্বনিহুহুঙ্কারমন্ডিৎ ভ্যূলোকদ্যূলোকগোলকরাজহাঁসেরপালকভেদী সেইরকমধমাধমবীরবিক্রমাদিত্য। রাজা নিজেই নিজের নাম মাঝে মাঝে ভুলে যান, তাঁর নিজের নাম মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে ভাড়া করা নামোয়ান আছে। রাজা কোন অংশ ভুল করলে সে ফিসফিসফিস করে আবার মনে করিয়ে দেয়। তবে রাজাকে রাজার নাম জিজ্ঞেস করবে এমন আস্পদ্ধা সেই দেশে কারো নেই। রাজা নিজেই মাঝে মাঝে ""আমার নামটা যেন কী"" বলে খেই হারিয়ে ফেলেন। রাজা কিন্তু হাতিশালার হাতি ফুটুর পিঠে চড়েন না সহজে। তাঁর ভয় লাগে। হাতিটা বেজায় বড়ো! রাজা ঘোড়াশালার ঘোড়া ছোটুর পিঠেও সহজে চড়েন না। ছোটুকেও তিনি ভয় পান। ছোটু বেজায় ফোঁস ফোঁস করে আর ঘাড় নাড়ে। রাজা কোথাও যেতে হলে পালকি চড়ে যান। তাঁর পালকিটা বিশ বেহারার পালকি। দশজন ডানে আর দশজন বামে সেই পালকি নিয়ে হুমহুমহুম গান গাইতে গাইতে চলে। সাথে পাইকলস্কর সব ঘোড়ায় চড়ে রাজাকে পাহারা দেয়। লস্করের ভয়ে তস্করেরা রাজার পথ থেকে নেমে লুকিয়ে পড়ে। একদিন রাজা দেখলেন, রাজবাড়ির গোয়ালা সাইকেলে চড়ে দুধ দিতে আসছে। কী চমৎকার তার সাইকেলটা! বড় বড় গোলগাল দুইটা চাকা। লাল টকটকে তার শরীর। স্পোকগুলি সব রোদে ঝকমক করছে। গোয়ালার সাইকেলের পেছনে দুধের বড় পাত্র। সেখান থেকে সে রাজবাড়ির রাঁধুনিকে দুধ ঢেলে দেয় বড় হাতাওয়ালা মগ দিয়ে। তারপর চটপট আবার সাইকেল ঘুরিয়ে সাঁই সাঁই করে চলে যায় নিজের বাড়ির দিকে। রাজার খুব শখ হলো তিনি সাইকেল চেপে এখন থেকে বেড়াতে বের হবেন। তিনি তখনই মন্ত্রীকে ফোন করলেন। বললেন, ""মন্ত্রী! সাইকেল আনো। সাইকেল চালাবো।"" মন্ত্রী বললেন, ""তথাস্তু!"" তখনই সাইকেলের দোকান থেকে সাইকেল কেনা হলো। লাল সাইকেল গোয়ালা চালায় বলে একটা নীল সাইকেল কিনে দেয়া হলো রাজাকে। দাম নিলো দশ স্বর্ণমুদ্রা। রাজা বললেন, ""দাম বেশি নিয়েছে।"" মন্ত্রী বললেন, ""সস্তা সাইকেল কি আর রাজন চড়তে পারেন? সবচে দামীটা কেনা হয়েছে।"" রাজা বললেন, ""তাই তো!"" তার পরদিন ভোরবেলা রাজা সাইকেল নিয়ে বের হলেন। সাথে পাইকলস্কর সব ঘোড়ায় চড়ে। কিন্তু রাজা তো সাইকেল চালাতে পারেন না। দুই গজ যেতে না যেতেই ধড়াম করে বামে পড়ে যান। তখনই দু'জন পাইক এসে তাঁকে তুলে ধরে, গা থেকে ধূলো ঝেড়ে দেয় সোনার ঝাড়ু দিয়ে। তারপর রাজা আরো দুই গজ যেতে না যেতেই ধড়াম করে ডানে পড়ে যান। আরো দু'জন পাইক এসে তাঁকে তুলে ধরে, গা থেকে ধূলো ঝেড়ে দেয় রূপার ঝাড়ু দিয়ে। এভাবে এক ঘন্টা ঝাড়ুর বাড়ি খেয়ে খেয়ে শেষে রাজা খুব ক্ষেপে গেলেন। বললেন, ""গোয়ালাটাকে নিয়ে এসো! ও চালায় কিভাবে?"" গোয়ালার বাড়ি থেকে তাকে সাইকেলসুদ্ধু গ্রেফতার করা হলো। সেনাপতি বললো, ""জাঁহাপনা! হুকুম করুন ব্যাটাকে রিমান্ডে নিয়ে যাই। দুদিনে সাইকেল চালানো ভুলিয়ে দেয়া হবে।"" রাজা বললেন, ""আরে বেয়াকুব, ওকে ভুলিয়ে দিলে তো শেষে আর আমারই শেখা হবে না।"" গোয়ালা বললো, ""হুজুর সাইকেল চালাতে গেলে কয়েকবার আছাড় খেতেই হবে। এটিই নিয়ম। আমিও শুরুতে খেয়েছি।"" রাজা বললেন, ""তুমি খেয়েছ বলেই সেটা নিয়ম? আমাকেও আছাড় খেতে হবে? ওসব চলবে না। আমাকে আছাড় না খাইয়ে সাইকেল চালানো শেখাও।"" গোয়ালা বললো, ""হুজুর! এক কাজ করুন। আপনার সাইকেলটা আমাকে দিন। আমি একটু মেরামত করে দেই। তাহলেই আপনি আর আছাড় খাবেন না।"" রাজা রাজি হয়ে গেলেন। গোয়ালা রাজার সাইকেল নিয়ে গেলো কামারের কাছে। বললো, ""দোস্ত, এটাকে বাইসাইকেল থেকে ট্রাইসাইকেল বানিয়ে দাও তো!"" কামার রাজার বাইসাইকেলে আরেকটা চাকা ফিট করে দিলো। গোয়ালার রাজার কাছে সেটা ফিরিয়ে নিয়ে বললো, ""হুজুর, আপনার সাইকেলে কি দুটো চাকা মানায়? দু'চাকার সাইকেল চালাবো আমরা, যারা গরীব মানুষ, খেটে খাই। আপনি রাজা আসমুদ্রহিমাচলজিৎ জয়জয়ধ্বনিহুহুঙ্কারমন্ডিৎ ভ্যূলোকদ্যূলোকগোলকরাজহাঁসেরপালকভেদী সেইরকমধমাধমবীরবিক্রমাদিত্য, কমসে কম তিনটা চাকা তো আপনার সাইকেলে থাকতেই হবে।"" নিজের নাম শুনে রাজা খুব ঘাবড়ে গেলেন, নামোয়ান ফিসফিসফিস করে বললো, ""ঠিকাছে।"" ঠিকাছে শুনে রাজাও বললেন, ""ঠিকাছে।"" গোয়ালা হাঁপ ছেড়ে তার সাইকেল আর দুধের ক্যান নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলো। রাজা তাকে একটা সোনার অঙ্কুশ উপহার দিলেন, বললেন, ""কখনো যদি হাতি কেনো তো এটা কাজে লাগবে।"" পরদিন থেকে রাজা তাঁর তিনচাকাঅলা বাইসাইকেলে চড়ে বেড়াতে গেলেন। সাথে পাইকলস্কর ঘোড়ায় চড়ে। সেদিন আর তস্করেরা পালিয়ে গেলো না, তারা হাঁ করে রাজার সাইকেল চালানো দেখতে লাগলো পথের পাশে দাঁড়িয়ে।",False rg,"সত্যের মত বদমাস এক শিরোনাম!!! কর্মানুভূতিকে হাজার বার আঘাত করলেও সেই ব্যক্তির খাসিলত বদলায় না। কারণ, খাসিলত তার ব্যক্তি চরিত্রের অলংকার। এই অলংকার ফুরায় না বরং ঘুরে ফিরে কুতুকুতু দেয়। আমরা বাঙালি জাতি এই কুতুকুতু না পাওয়া পর্যন্ত ঘুমাই অথবা অন্য সুড়সুড়িতে মহাব্যস্ত থাকি। হালের কুতুকুতু এখন চিঠিমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী'র মন্তব্যকে ঘিরে। লতিফ সিদ্দিকীর জন্য মানসিকভাবে সবচেয়ে স্বস্তিকর হল, সামান্য কয়েকটি কথা বলেই তিনি সালমান রুশদী অথবা তসলিমা নাসরীনদের দলভুক্ত হলেন। আর সবচেয়ে অস্বস্তিকর হল, ভোটের লড়াইয়ে আগামীতে প্রচণ্ডভাবে ধর্মানুভূতি সম্পন্ন ভোটারদের মন জয় করার চ্যালেঞ্জ। একথা লতিফ সিদ্দিকীও জানতেন, ভিন্ন মতকে গ্রহন করার মত অতোটা সভ্য আমরা এখনো হইনি। সভ্যতা শুধু শরীরের লজ্বা নিবারনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অনেক শিক্ষিত লোকের ভেতরেও সভ্যতা জীবনে নাও প্রবেশ করতে পারে। সভ্যতার সঙ্গে শিক্ষার এই যে ঘাটতি, সেখানে ধর্ম সেই ঘাটতিকে আরো যোজন যোজন দূরত্ব তৈরি করতে উৎসাহ যোগায়। ভাইরাসের চেয়েও ধর্মের সেই নিজস্ব শক্তিগুন থাকায় পরিবেশ, প্রতিবেশ, সমাজ ও দেশে দেশে সভ্যতার বিপরীতে ধর্মের বাহাদুরী এখনো তেজস্বতায় সক্রিয়ভাবে বহাল। সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ সাহেব লাল সালুতে গত শতাব্দিতে খুব মূল্যবান কথাটি বলেছিলেন বেশ মুন্সিয়ানা দিয়েই। শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি। এমনিতে শস্যের ভেতরে আগাছার অবস্থান। আর রূপক অর্থে ধর্মের ভেতরে তিনি যে টুপির অস্তিত্ব দেখেছেন, তাকে একটু মুন্সিয়ানার সঙ্গে পাল্টে দিয়ে, শস্যের সঙ্গে টুপি আর ধর্মের সঙ্গে আগাছাকে জুড়ে দিয়ে সৈয়দ সাহেব এক বিশাল জজ্ঞ করেছেন বটে। কিন্তু পরিস্থিতির কেমন উন্নতি হল, তা এবার বুঝি সিদ্দিকী সাহেব হাড়ে হাড়ে টের পেলেন। সিদ্দিকী সাহেব মনে করেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে আটলান্টিকের ওপারে যারা গেছেন, তারা হয়তো উন্নত সমাজে বসবাসের কারণে মানসিকভাবে পেছনের অশিক্ষা বা কুশিক্ষাকে কাটিয়ে নিজেদের অনেক উন্নতি ঘটিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবের ফলাফল পাওয়া গেল উল্টো। হাইস্কুলে আমাদের ধর্ম ক্লাস নিতেন সাহাদাৎ স্যার। স্যার খুব মূল্যবান একটি কথা প্রায়ই ক্লাসে বলতেন। জীবনে তিনটি জিনিস খেয়াল রাখবা। এক. সঙ্গী নিয়ে চলবা। দুই. যাচাই করে খাবার খাবা। তিন. সভা বুঝে কথা কবা। মাননীয় মন্ত্রী সাহেবের ওই অনুষ্ঠানে অনেক সঙ্গী ছিল বটে। খাবার দাবারও হয়তো যাচাই বাছাই করে খেয়েছিলেন। কিন্তু কথা বলার সময় তিনি সভা ঠিক বুঝতে পারেননি। ফলে সভায় আগত যাদের অন্তরেই সেই কথা দগ্ধতা ছড়িয়েছে, তারাই এই ধর্ম গেল ধর্ম গেল রব তুলেছেন। সর্বশেষ সেই গেল গেল রবে খোদ রাষ্ট্রও জড়িয়ে গেল। বাংলাদেশে মুক্ত চিন্তার একটি সংজ্ঞা হল, আপনি মুক্ত চিন্তা করতে পারবেন, কিন্তু ধর্ম নিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। ধর্ম এখানে মুক্তচিন্তার উর্ধ্বের বিষয়। আরো উর্ধ্বের বিষয় হল শাসকদের সম্পর্কে কটুক্তি করা। মিস্টার সিদ্দিকী, ওই সভায় কি কারণে সবকিছু অমন গুবলেট পাকালেন, তা গবেষণার বিষয়। কিন্তু যে মুহূর্তে ইনু সাহেব ও মেনন সাহেবরা পবিত্র হজ্ব পালনে গেছেন, সেই একই সময়ে সিদ্দিকী সাহেব হজ্ব নিয়ে রিডাকশানের কথা বলে যে দুঃসাহস দেখিয়েছেন, একই মন্ত্রীসভায় তিনি ফের কোন স্পর্ধায় পাশাপাশি বসবেন!!! বাংলাদেশের নব্বইভাগ লোক মুসলমান এটা লতিফ সাহেব জানতেন। বাংলাদেশের মানুষ হজ্বে যায়, এটাও তিনি জানতেন। এমনকি নির্বাচনের আগে অনেকে ওমরা হজ্ব পালন করেন, সেটাও ওনার জানা। আবার হজ্ব ইসলামের একটি অন্যতম স্তম্ভ, এটাও উনি জানেন। খামাখা উনি কেন এমন একটা মন্তব্য ওই সভায় করলেন? তাহলে কি ওনাকে এই বিষয়ে উসকে দেওয়ার জন্য সেখানে কেউ ছিলেন? নইলে হঠাৎ ওনার আরজ আলী মাতুব্বর হবার ইচ্ছে হল কেন? আসল ঘটনা আমরা কিছুই জানি না। জাতিসংঘের এবারের পিকনিকে নুরু-পুষি-আয়েসা-সফি সবাই গেছিলেন। সবাই ভালোমন্দ খেয়েছেন, ঘুরেছেন, দেখেছেন, বাজার সদাই করেছেন, বক্তৃতা করেছেন। লতিফ সাহেবও একটা সুযোগ পেয়েছিলেন বক্তৃতা করার। সেটা প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে। ইতোমধ্যে ইনু সাহেব ও মেনন সাহেবরা যখন আমেরিকায় না গিয়ে ঢাকা থেকে হজ্ব করতে সৌদি রওনা হয়েই আলোচনার শিরোনাম হয়ে গেলেন, তখন লতিফ সাহেবের হয়তো সেইরাম শিরোনাম হবার খায়েস হয়েছিল। বিশাল পিকনিক বহরের একজনও শিরোনাম হবেন না, এটা কেমন কথা!!! সেই শিরোনামের পেছনে ছুটতে গিয়ে মিস্টার সিদ্দিকী সাহেব এখন ভাবছেন, আমি অবুঝের মতো একি বলেছি....!!! তিনি শিরোনাম ঠিকই হয়েছিলেন, কৌশলটি অল্পের জন্য ফসকে গেল। কিন্তু সেই শিরোনাম ওনার পায়ের তলার মাটি এখন ক্রমান্বয়ে সরিয়ে ফেলছে। এখন মন্ত্রীসভা থেকে ওনার অপসারণের যে খবর শোনা যাচ্ছে, তাতে ওনার ঢাকায় বিমানবন্দরে নামাটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেল। এই যে পিকনিক করতে গিয়ে উনি যে নিজেকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিলেন, এখানে সবচেয়ে মজার ব্যাপারটা হল, সেই ঝুঁকি তৈরি করতে সবচেয়ে মোক্ষম ভূমিকা রেখেছে ওনার মন্ত্রণালয়ের সার্ভিসগুলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ওনার দপ্তর। মোবাইল ফোন, ফ্যাক্স ওনার দপ্তর। চিঠপত্র-ইমেইল ওনার দপ্তর। সেই সার্ভিসগুলোর সুযোগ নিয়ে সবাই কেমন আপনার পেছনে লেগে গেল, আর আপনি লটকে গেলেন!!! ছোটবেলায় আমাদের বইতে একটা ছবি ছিল, এক বোকারাম গাছের উপরের ডালে বসে গোড়া কাটছিল। সেই ছবি দেখার পর তখনই আমরা পড়া শেখার আগেই টের পেয়েছিলাম, লোকটা হাবা না হলে গাছের আগায় বসে গোড়া কাটে কেমনে? আর লতিফ সাহেব খোদ আমেরিকায় বসে এমন দুঃসাহসী উক্তি করলেন যে, যে কথা শুনে মস্তবড় পণ্ডিৎগণ পর্যন্ত নড়েচড়ে বসলেন। ক্ষমতাবানরা এ-ওর দিকে চাইলেন। জাতিসংঘ পিকনিকের খরচ-বরজ এমনিতেই যায়েজ। আমরা সাধারণ জনগণ সরকারকে ট্যাক্স দেব। সরকার তা উন্নয়ন-অনুন্নয়ন কাজে ব্যয় করবেন। রাষ্ট্র কাঠামোতে এমনই বলা আছে। এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিল প্রায় দুইশো'র কাছাকাছি। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রয়োজনীয় মানুষগুলোর বাইরে এই সংখ্যাটি নিয়ে নানান মহল মিডিয়ায় কিছুদিন সচল ছিলেন। বাঙালি সামনে কিছু একটা পেলেই আগের ঘটনা ভুলে যায়। এই যে সংস্কৃতি, এই সংস্কৃতির এবার আরো উন্নতি ঘটল। পুরো জাতিসংঘ পিকনিকের ব্যাপারটাকে এক লতিফ সাহেব ভিন্নখাতে ঘুরিয়ে দিয়ে বরং সরকারকে অনেক ন্যায্য সমালোচনার হাত থেকেই রক্ষা করলেন। সেজন্য সরকার দলের অনেকের উচিত মিস্টার সিদ্দিকী সাহেবকে অন্তত একটা ধন্যবাদ দেওয়া। মিডিয়ার খবর যদি সত্য হয়, সেখানে বরং তিনি ধন্যবাদের বদলে একটা রামধরা খেলেন। বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র এই কথা আর প্রমাণ করার সুযোগ নাই। এবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙার খবর পাওয়া গেছে। তখন তো ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগল না সরকার বাহাদুরের?? প্রতিমা ভাঙার পর প্রতিমা গড়ার অর্থ দান করলেই দায় এড়ানো যায় না। রামুতে বৌদ্ধমন্দির পোড়ানো হল। সরকারি অর্থে আবারো সেখানে বৌদ্ধমন্দির গড়ে উঠেছে। কিন্তু তাদের অন্তরে যে ধর্মানুভূতি, সেখানে যে আঘাত লেগেছে, সেই ঘা কি কোনোকালে শুকাবে? প্রতিমা ভাঙায় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের অন্তরে যে আঘাত লাগে, সেই ঘা কি কখনো শুকায়? আর সেখানে লতিফ সাহেব সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন!! তার ঠেলাতো একটু ভারীই হবে!!! আমার তো মনে হয়, খোদ অনুভূতি শব্দের চেয়েও ধর্মানুভূতি বাংলাদেশে বেশি শক্তিশালী। লতিফ সাহেব মন্ত্রী হবার সময়ে শপথ নিয়েছিলেন। সেখানে ধর্মানুভূতিতে আঘাত না করার ব্যাপার জড়িত ছিল। সেই হিসেবে অনেকে দাবি তুলেছেন, উনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। কথায় যুক্তি আছে বটে। অনেকে ওনাকে বিচারের আওতায় এনে কঠোর বিচার দাবি করেছেন। মন্ত্রী থাকা কালে ওনার সরকারি সম্পদের ব্যাপারে ওলাট-পালটের কোনো ব্যাপার থাকলে সেগুলো এখন মিডিয়ার কল্যানে সামনে আসবে। সুতরাং, মিস্টার লতিফ সাহেব আরো কিছুদিন শিরোনাম থাকবেন যতক্ষণ না বাঙালি আলোচনা করার মত আরেকটি টোপিক হাতে না পান। তারপর লতিফ সাহেবের দুঃসাহসের কথা সবাই ভুলে গিয়ে নতুন বিষয়ে আবার গলাবাজি করবেন। ততক্ষণ ধৈর্য ধরেন মিস্টার সিদ্দিকী সাহেব। সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:১৭",False ij,"None মাহমুদ যখন রায়ের বাজারের একটা সরু গলির ভিতর পুরনো একটি চারতলা দালানের সামনে রিকশা থেকে নামল তখনও দিনের আলো আছে। কাছেই একটা কনফেকশনারী। কনফেকশনারীতে ঢুকে সিঙারা কিনল মাহমুদ। দাম মিটিয়ে বেরুনোর সময় হঠাৎই অধ্যাপক আলী ইব্রাহীম এর কথা মনে হল ওর। ক’দিন আগে একটি পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকারে পড়েছিল অধ্যাপক আলী ইব্রাহীম এই দালানেই থাকেন। বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলী ইব্রাহীম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন । এখন অবশ্য রিটায়ার করেছেন। অধ্যাপক আলী ইব্রাহীম অত্যন্ত উদার, অসা¤প্রদায়িক ও মানবতাবাদী। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে নাকি অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন। দৈনিক পত্রিকায় এখনও রাষ্ট্রযন্ত্রের ভিত টলিয়ে দেওয়ার মতো বিস্ফোরক সব প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখেন। বাজারে অধ্যাপক ইব্রাহীমের বইয়ের সংখ্যাও শতাধিক। গত বই মেলায় ‘ডারউইনের শক্রমিত্র’ নামে অধ্যাপক আলী ইব্রাহীম এর একটি বই বেরিয়েছে। মাহমুদ ঠিক করল ফেরার সময় অধ্যাপক আলী ইব্রাহীম এর সঙ্গে একবার দেখা করে যাবে। দালানে ঢুকতে ঢুকতে মেঘের ছায়ার দিনের আলো নিভে গেল। অথচ আজ দুপুরেও ঝলমলে রোদ ছিল। আজ দুপুরে খেয়ে উঠে একটা বই পড়ছিল মাহমুদ। অধ্যাপক আলী ইব্রাহীম এর লেখা: ‘দার্শনিক স্পিনোজার জীবন ও কর্ম।’ মাহমুদ-এর কাছে স্পিনোজার দর্শন কিছুটা জটিল মনে হয়, তবে সে বিশ্বাস করে স্পিনোজার জীবন থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। অধ্যাপক আলী ইব্রাহীম এর বইটা যতই পড়ছে ততই বইটা ওর প্রিয় হয়ে উঠছে। বইটা ইংল্যান্ড নিয়ে যাবে ঠিক করল। একটু পর মা এসে বলল, যা না, তোর জোছনা খালার সঙ্গে একবার দেখা করে আয় । দু’দিন পর বিদেশ চলে যাচ্ছিস, আবার কখন না কখন দেখা হয়। জোছনার আবার বাতের ব্যথা। নইলে ওই তোর সঙ্গে দেখা করতে আসত ওর বরকে নিয়ে। তুমি যাবে? বই গুটিয়ে জানতে চাইল মাহমুদ। আমি যাই কি করে বল। বিকেলে মহম্মদপুর থেকে ঝুমা-রিয়ারা আসছে। ওরা রাতে থাকবে । তুই বেশি দেরি করিস না আবার। মিসেস হাসান ছেলের মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বললেন। অগত্যা বেরুতে হল। জোছনা খালা মায়ের ঘনিষ্ট বান্ধবীদের একজন, থাকেন রায়ের বাজার, একসঙ্গে ইডেনে পড়েছেন । আগে জোছনা খালা ঘন ঘন আসতেন, মাও যেতেন। এখন যাতায়াত কমে গেছে। ফোনে অবশ্য মায়ের সঙ্গে কথা হয়। জোছনা খালারা তিন তলায় থাকেন। মায়ের সঙ্গে বছর খানেক আগে একবার এসেছিল ও। কলিং বেল বাজানোর কিছু পর দরজা খুলল কালো মতন দেখতে অল্পবয়েসি একটি মেয়ে। সম্ভবত গার্হস্থ্যকর্মী । কেমন মায়া মায়া চেহারা। ভারি মিষ্টি দেখতে। জোছনা খালা কি আছেন? আছে। আপনে কে? গিয়ে বল যে সেগুনবাগিচা থেকে শুভ্র এসেছে। বলে মেয়েটিকে সিঙারার প্যাকেট দিল মাহমুদ। আপনে বসেন। আমি মামীরে ডাক দিয়া দিতাছি। ভিতর থেকে চিৎকার ভেসে এল- ঝর্না! ঝর্না! কে আসছে রে। উত্তর না দিয়ে দ্রুত ভিতরে চলে যেতে থাকে ঝর্না । একটা সোফায় বসল মাহমুদ। একটু পর জোছনা খালা ঘরে এসে ঢুকলেন। মাঝবয়েসী শরীরটি ফরসা আর থলথলে । চোখে চশমা। সবুজ পাড়ের সাদা শাড়ি পরে আছেন। মাহমুদকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে বললেন, ওমাঃ, তুমি । বস, বাবা. বস। তোমার আম্মা ভালো। জ্বী। জোছনা খালা বললেন, কাল অবশ্য একবার রওশনের সঙ্গে মোবাইলে কথা হইছে। তোমাদের ওখানে আমারই যাওয়ার কথা। যাব কি করে, হাঁটুর ব্যথায় অস্থির হয়ে আছি। তোমার খালু আবার বাসায় নাই। পপুলারে গেছে এক্স রে-র রিপোর্ট আনতে। যাক। শুনলাম তুমি নাকি লন্ডনে যাইবা পড়তে? জ্বী। এ মাসের ২৭ তারিখে আমার ফ্লাইট। আজ হইল ২৪ তারিখ। যাক। লন্ডনে যা অবস্থা শুনি। চাকরি নাই বাকরি নাই। এই অবস্থায় গিয়া আবার বিপদে পড়বা না তো? মাহমুদ চুপ করে থাকে। ওর হাসি পাচ্ছে। বলতে পারে না যে, আমি তো চাকরি করতে যাচ্ছি না খালা, যাচ্ছি পড়তে। তা লন্ডনে উঠবা কোথায়? মঞ্জু ফুপুর বাসায়। ইস্ট লন্ডনে থাকে। আশরাফ ফুপার বাংলাদেশি কারির রেস্টুরেন্ট আছে । ওহ্, তোমরা তো আবার সিলেটি। তোমাদের তো অনেক আত্মীয়স্বজনই লন্ডনে থাকে। মাহমুদ মাথা নাড়ে। যদিও ‘সিলেটি’ শব্দটি কেমন উৎকট ঠেকল কানে। কথা গড়িয়ে চলে। ঝর্না ট্রে নিয়ে এল। ট্রের ওপর একটা প্লেটে কাটা আম আর এক গ্লাস পানি। ঝর্না ট্রে-টা টেবিলের ওপর রেখেছে, জোছনা খালা চিৎকার করে ওঠেন। খবিস মাইয়া ! চামুচ আবার ট্রেতে রাখছোস! ঠিক মতো কাম না করলে লাত্থি দিয়া তোরে ভূয়াপুর পাঠায় দিমু হারামজাদী । মাহমুদ থ। মুহূর্তেই জোছনা খালার মুখোশ খুলে গেল। ঝর্নার শ্যামল মুখটি বিবর্ণ হয়ে উঠল। ‘ঠিক আছে’, ‘ঠিক আছে’ বলে ট্রে থেকে কাঁটাচামচ আর আমের প্লেটটি তুলে নিল মাহমুদ। ঝর্না ট্রে রেখে দ্রুত ঘর ছেড়ে চলে যায়। বোঝাই যায়, অপমানিত বোধ করছে। যদিও বাংলাদেশে গার্হস্থ্যকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন প্রতিদিনের স্বাভাবিক ঘটনা। জোসনা খালার ওপর বিরক্ত হল মাহমুদ। এই মহিলার কাছে সময় নষ্ট করার চেয়ে অধ্যাপক ইব্রাহীমের সঙ্গে দেখা করা ভালো। প্লেটটা টেবিলের ওপর রেখে মাহমুদ বলল, খালা, আমি এখন উঠি । বলে উঠে দাঁড়াল। আরে যাবে কেন? চা খাও। বলে, ‘ঝর্না’, ‘ঝর্না’ বলে আবার চিৎকার করে উঠলেন মহিলা। বান্ধবীর ছেলের প্রতি আবেগ কেমন ঝরে ঝরে পড়ে ... অথচ ... প্রতিমুহূর্তে সেবা করে যাওয়া ঝর্না নামের ছোট্ট মেয়েটির কপালে জোটে কেবল অপমান আর কথার শরাঘাত। মাহমুদ বিষাদ টের পায়। বলে, না, খালা থাক। তোমার খালু গতকাল দিনাজপুর থেকে ফিরল । দিনাজপুরে লিচু নাকি ভীষণ সস্তা। তোমার আম্মার জন্য কিছু দিয়া দেই কেমন? এই মহিলার কোনও কিছু বাসায় নেবে না মাহমুদ। বলল, খালা আমার একবার নিউমার্কেট যাওয়ার কথা। আকাশের অবস্থা ভালো না। কিছু কেনাকাটা আছে। কথাটা মিথ্যে । অবশ্য মিথ্যে বলতে খারাপ লাগল না মাহমুদের । আচ্ছা থাক তাইলে। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় হাতের বাঁ পাশের দরজার ওপর চোখ আটকে গেল। নেমপ্লেটে লেখা: ‘অধ্যাপক আলী ইব্রাহীম’ । দরজা ভেজানোই ছিল। ভিতরের বইয়ের আলমারী চোখে পড়ে। সোফায় একজন বৃদ্ধ বসে আছেন, পত্রিকা পড়ছেন । পিছনে একটি জানালা। শেষবেলার আলো ঢুকেছে। বৃদ্ধর গায়ের রং কালো, মাথায় টাক, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, পরনে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি । অধ্যাপক আলী ইব্রাহীম? বয়স সত্তরের কাছাকাছি বলেই মনে হল। ভিতরে ঢুকল মাহমুদ। শব্দ হতেই পত্রিকা সরিয়ে বৃদ্ধ তাকালেন। মাহমুদ সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছেন স্যার? আছি ভালো। আরে, এসো, এসো, বস। এমনভাবে বললেন যেন মাহমুদ অনেক দিনের চেনা। অসময়ের এসে আপনাকে বিরক্ত করলাম না তো স্যার। অধ্যাপক ইব্রাহীম মাথা নেড়ে বললেন, না, না বিরক্তি কীসের। জীবনে আমি কখনও দিনেদুপুরে ঘুমাইনি। আর দিনের বেলায় আমার ঘরের দরজা খোলাই থাকে। কখনও মানুষ ঢোকে, কখনও অ-মানুষ ঢোকে। তা কি নাম তোমার? মাহমুদ হাসান শুভ্র। বস। উল্টোদিকের সোফায় বসল মাহমুদ। ড্রইংরুমে বাতাসে ভারি মিষ্টি সুগন্ধ ভাসছে- কিংবা বইয়ের গন্ধ। আসলে এক জায়গায় অনেক বই থাকলে সে স্থানটি পবিত্র বলেই গন্য হয়। অধ্যাপক ইব্রাহীমও স্বভাবচরিত্রে ঋষিদের মতো। মাহমুদ শুনেছে অধ্যাপক ইব্রাহীম এর আত্মীয়-স্বজন নাকি পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে মামলা করেছিল। অধ্যাপক ইব্রাহীম-এর পৈত্রিক সম্পত্তির অংশটুকু আত্মীয়-স্বজন বিলিয়ে দিয়েছেন । দার্শনিক স্পিনোজার জীবনেও এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। পৈত্রিক সম্পদ নিয়ে স্পিনোজার বোন মামলা করেছিল। স্পিনোজা সম্পত্তি বোনকে দিয়ে দিয়েছে। তা পড়ছ কোথায় তুমি? এবার এইচ.এস.সি পাস করলাম স্যার। বেশ । দরজার কাছে শব্দ হল। ঝর্নাকে লিচু নিয়ে ঢুকতে দেখে অবাক হল মাহমুদ । এক পলক মাহমুদের দিকে তাকিয়ে ঝর্না বলল, নানা, নানা, মামী আপনার জন্য লেচু পাঠাইল। আয় মা, আয়। র্ঝনাকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে হাসিমুখে অধ্যাপক ইব্রাহীম বললেন। তারপর মাহমুদের দিকে চেয়ে বললেন, শুভ্র, এ হল ঝর্না সাহা। আমার পড়শী। ‘সাহা’ শব্দটা মাহমুদের কানে বাজল। ঝর্না কি তবে ... ঝর্না কলকল করে বলল, নানা, আমি উনারে চিনি। তাই নাকি ? অধ্যাপক ইব্রাহীম এমন ভাবে বললেন, যেন অসম্ভব অবাক হয়েছেন। আসলে পন্ডিতেরা এমনই হয়-শিশুর মতন। মাহমুদ বলল, তিনতলার মিসেস বিলকিস আমার মায়ের বান্ধবী। ওনার কাছেই এসেছিলাম। ওহ্, তাই নাকি ? ঝর্না লিচু রেখে চলে যায়। অধ্যাপক ইব্রাহীম বললেন, ঝর্নার বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর । আমিও ওখানকারই ছেলে, আসলে আমি যমুনা পাড়ের ছেলে। কাজেই, আমি আর ঝর্না এক রকম বন্ধুর মতন হয়ে উঠেছি বলতে পার। আমি আর ঝর্না কখনও কখনও একসঙ্গে বসে ফেলে আসা গ্রামীণজীবনের স্মৃতিচারণ করি।আমি পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় এসেছি। সে সব নিয়ে ‘স্মৃতিকথা’ লিখতে শুরু করেছি। গত চল্লিশ বছর ধরে একখানা উপন্যাস লিখতে চাইছি। নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। ভাবছি ঝর্নার কথাগুলোও লিখব। বেশ একটা উপন্যাস হবে কি বল। মাহমুদ অবাক হল না। অধ্যাপক ইব্রাহীম একজন অত্যন্ত উদার অসা¤প্রদায়িক ও মানবতাবাদী। তিনি উর্ধ্বে উঠতে পেরেছেন। জোছনা খালা পারেননি। এই আক্ষেপ, তবে জোছনা খালা শ্রেণি সচেতন, অবসরপ্রাপ্ত বিখ্যাত অধ্যাপককে ঠিকই ফল পাঠান ...অথচ অথচ প্রতিমুহূর্তে সেবা করে যাওয়া ঝর্না নামের মেয়েটির কপালে জোটে কেবল অপমান আর কথার শরাঘাত। অধ্যাপক ইব্রাহীম বললেন, শুভ্র। জ্বী বলুন। ঝর্না যে মুসলিম নয়, হিন্দু-এ তথ্যটি তোমার বিলকিস খালা জানলে ভদ্রমহিলার মুখের অবস্থা কেমন হতে পারে কল্পনা করতে পার কি? বলেন কি স্যার! হ্যাঁ, তাইই। অভাবের তাড়নায় ঝর্নারা শহরমূখী হতে বাধ্য হয়। অভাবগ্রস্থ মানুষ হিন্দু হলেই-বা কি আর মুসলমান হলেই-বা কি । মাহমুদ মাথা নাড়ল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল। গত বছর বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে দুঃস্থ আদিবাসী ম্রো পরিবার দেখে ভীষণই কষ্ট লেগেছিল। ওদের সমাজেও শ্রেণিবিভাজন আছে। ম্রো গ্রামপ্রধান অনেকই স্বচ্ছল। একবার কি হয়েছে শোন। অধ্যাপক ইব্রাহীম বললেন। আমারই এক ছাত্রের জীবনের ঘটনা। ছেলেটি বড় ভাল ছিল, পাড়া-প্রতিবেশীর উপকার করে বেড়ায়। তো একবার পাড়ারই সেলিনা নামে একটি কিশোরী গার্হস্থ্যকর্মী জ্বরে ভুগে মারা গেল। সমস্ত রকম ফর্মালিটিস সেরে মেয়েটির গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য ট্রাকে লাশ তুলল আমার ছাত্রটি। গ্রামে পৌঁছে তো সে রীতিমতো অবাক। মেয়েটি নাকি হিন্দু। নাম বিন্দু ...কী ট্র্যাজিক ভেবে দেখ, জীবিকার তাগিদে ধর্মীয় পরিচয় বদলে ফেলা ... মাহমুদ এর করোটির ভিতরে একটি গল্পের ভ্র“ন যেন দানা বেঁধে উঠতে থাকে। অধ্যাপক ইব্রাহীম বললেন, এ পাড়ায় যে মধ্যবয়েসী মহিলাটি গার্হস্থ্যকর্মী সাপ্লাই করে তার নাম জোহরা। জোহরার সঙ্গে আমার ভালো জানাশোনা আছে, নিয়মিত আমরা বৈঠক করি- আসলে জোহরার দেওয়া তথ্য আমার রিসার্চে কাজে লাগে। আমি স্মৃতিকথা লেখার পাশাপাশি দাসযুগ নিয়ে রিসার্চ করছি। দাসযুগ! হাঃ হাঃ হাঃ করে হাসলেন অধ্যাপক ইব্রাহীম। বললেন, দাসযুগই তো। বাংলাদেশে তো দাসযুগই চলেছে। গার্হস্থ্যকর্মীরা সব দাস নয় তো কি? এরা মাসিক ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়। এদের কারও কারও মজুরি হয়তো সামান্য বেশি। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে আমাকে প্রায়শ জিগ্যেস করত আমরা যে এত প্লেটো অ্যারিস্টটলের লেখনীর প্রশংসা করি আসলে তারা তো ছিল দাসযুগের সৃষ্টি। এই কথা শুনে আমি ভাবি, ভবিষ্যতের মানুষ আমাদের কি বলবে। বলবে যে একুশ শতকেও বাঙালিরা একসঙ্গে তিনজন রিকশায় উঠত। মাহমুদ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। গতবছর ডেনমার্ক থেকে মাহমুদের বাবার এক ব্যবসায়িক পার্টনার এসেছিলেন। সপ্তাহ দুয়েক ঢাকায় ছিলেন মিস্টার ইয়োসেন। যাবার আগে বললেন, তোমাদের সবই ভালো, উৎসব, ফলমূল- খাওয়াদাওয়া- পোশাক-আচরণ গানবাজনা সবই ভালো, তবে এদেশে মেইড সারভেন্টের জীবন ও কাজের পরিবেশ অমানবিক এবং এই নিদারুন অবস্থা তোমাদের সাংস্কৃতির গৌরবময় দিকগুলিকে ম্লান করে দেয়। সেলফোনটা বাজল। মাহমুদ চমকে ওঠে। নায়লা। লন্ডন যাবার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, নায়লা ততই অস্থির হয়ে উঠেছে। খালি বলে, ‘তুমি চলে গেলে আমি একা একা কী করে থাকব’ ...‘তুমি চলে গেলে আমি একা একা কী করে থাকব’ ... নায়লা এত অবুঝ। পরিস্থিতি বুঝতে চায় না। মাকে ছেড়ে যেতে মাহমুদেরই কি ভালো লাগছে। মাহমুদ ফোন অফ করে দেয়। বাংলাদেশের কনফুসিয়াসের সঙ্গে দেখা হয়েছে। এখন নায়লার ছেঁদো কথাবার্তা ভালো লাগবে না। অধ্যাপক ইব্রাহীম বললেন, শুভ্র। জ্বী, বলেন স্যার। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করলে, এখন কোথায় ভর্তি হবে বলে ভাবছ? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্যার। বেশ বেশ। তো কোন সাবজেক্ট পড়বে বলে ঠিক করেছ? সমাজবিজ্ঞানে পড়ার ইচ্ছে আছে। তাই নাকি! আরে আমি তো ওই বিষয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছি। বলতে বলতে অধ্যাপক ইব্রাহীম শিশুদের মতন উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। মাহমুদ বলল, জানি স্যার। মনে মনে বলল, জানি গুরু। জিজ্ঞেস করল, আপনার শরীর কেমন স্যার? পত্রিকায় পড়লাম বছর দুয়েক আগে মাইল্ড ষ্ট্রোক ... দু-হাত নেড়ে অধ্যাপক ইব্রাহীম বললেন, ধুরও, আমি ওসব নিয়ে আমি মোটেও মাথা ঘামাই না। আমার ছেলেমেয়েরা সব বেটার লিভিং -এর লোভে পড়ে দেশবিদেশে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের জীবন কাটাচ্ছে। আমি ওসব নিয়ে আমি মোটেও মাথা ঘামাই না। কেবল যখন আমার চল্লিশ বছরের জীবনসঙ্গী সৈয়দা মারূফা খাতুন ওরফে শিলু আমাকে ফেলে চলে গেল ...তখন...তখন আমি ভীষণ কষ্ট অনুভব করেছিলাম। বলে অধ্যাপক ইব্রাহীম সেই বিখ্যাত গানটি গাইতে লাগলেন। পথহারা পাখি কেঁদে ফিরে একা। চমৎকার কন্ঠস্বর । ভরাট। অনেকটা পাকিস্তানি গজল গায়ক গুলাম আলীর ভরাট কন্ঠস্বরের মতো। মাহমুদের ঘোর লাগে। একটু পর মাহমুদ প্রশ্ন করে, আপনার রান্নাবান্না কে করে দেয় স্যার? ধুৎ, ওসব নিয়ে আমি মাথা ঘামালে তো। অধ্যাপক ইব্রাহীম বললেন । আসলে পন্ডিতদের জন্য ওই খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারটিই বিশাল এক হ্যাপা। তুমি হ্যাপা বোঝ তো শুভ্র? শেষ বাক্যটি টাঙ্গাইলের ভাষায় বললেন। মাহমুদ মাথা নাড়ল। হাসল। অধ্যাপক ইব্রাহীম বললেন, পাড়ার একটা ভাতের হোটেলের সঙ্গে মাসিক চুক্তিতে বন্দোবস্ত আছে। রোজ দু বেলা খাবার ওরাই দিয়ে যায়। আমি মান্থলি পে করি। তা ছাড়া ঘরে মুড়ি রাখি গুর রাখি। গুরমুড়ি আমার প্রিয়। আর ‘র’ চা। চা আমিই বানাই। তুমি গুরমুড়ি খাবে শুভ্র ? কিংবা ‘র’ চা? না, স্যার । আচ্ছা। ঠিক আছে। স্যার? বল। আপনার স্টুডেন্টরা সব আপনার মতো মানুষ হয়েছে, না কি জানোয়ারই রয়ে গেছে? হাঃ হাঃ হাঃ করে হাসলেন অধ্যাপক ইব্রাহীম । তারপর বললেন, মানবসমাজে মিসেস বিলকিসের মতন দিবাঅন্ধ কূপমুন্ডুক মানুষই বেশি। ঝর্না বলে নাকি কিছু? মাহমুদ কৌতূহলী হয়ে ওঠে। অধ্যাপক ইব্রাহীম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, বলতে হবে কেন? আমি যমুনা পাড়ের ছেলে। আমি তো জানি ওর মুখেই তো সমস্ত বিষন্নতা জমা হয়ে আছে। খুন্তি গরম করে আবার ছ্যাঁকা-ট্যাঁকা দেয় না তো? আরে না। মিসেস বিলকিস অতটা নিচে নামেননি । জানালার বাইরে সন্ধ্যা নামছে। বাড়ি ফিরতে হবে। ঝুমা-রিয়ারা মনে হয় এতক্ষণে এসে গেছে। না, এখুনি বাড়ি ফিরবে না মাহমুদ। আজ অনেক্ষণ রাস্তায় রাস্তায় হাঁটবে। আজ জীবন বদলে গেল। আজ রাত্তিরে ঝুম বৃষ্টি হবে। দোয়েল চত্তরের সামনে শীতল জলবৃষ্টিধারায় দীর্ঘক্ষণ ভিজবে মাহমুদ। একা একা সেলিব্রেট করবে ওর শিহরণময় নতুন জীবন। আজ থেকে মাহমুদের নাম আর মাহমুদ না, আজ থেকে কেউ নাম জিগ্যেস করলে বলব, আমার নাম শুভ্র। ব-দ্বীপের শুভ্র। হঠাৎ মনে পড়ল তখন নায়লা কে এড়াতে ফোন অফ করে দিয়েছিল। দ্রুত অন করল। মা ফোন করতে পারে। আমি এখন যাই স্যার। উঠে দাঁড়িয়ে শুভ্র বলল। যাবে? আচ্ছা। মাঝে-মাঝে এসো তাহলে। এলে বড় খুশি হব। এখন আর কেউই আসে না তেমন। নিশ্চয় আসব। শুভ্র বলল। অধ্যাপক ইব্রাহীমও উঠে দাঁড়িয়েছেন। সামান্য ইতস্তত করে বললেন, কাল সকালে একবার আসতে পারবে? শুভ্র কিছু না ভেবেই বলল, পারব স্যার। একবার বারডেমে যেতে হবে। অনেকদিন ব্লাড টেস্ট করা হয় না। শুভ্র বলল, আমি কাল সকাল সকাল চলে আসব স্যার। অধ্যাপক ইব্রাহীম দরজা পর্যন্ত এগিয়ে এলেন। বললেন, বারডেম থেকে ফেরার সময় সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড়ের মিউজিক শপ থেকে দোতরা কিনব। আমার অনেক দিনের শখ দোতরা বাজানো শিখব। তুমি দোতরা বাজাতে পার শুভ্র? না, স্যার। তবে টুকটাক গিটার বাজাতে পারি। আচ্ছা, ওতেই হবে। শুভ্র গিটার বাজাতে পারে শুনে যমুনা পাড়ের ছেলে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। একটু পর। সিঁড়ি দিয়ে নামছে শুভ্র। ভাগ্যের জোরে যমুনা পাড়ের ছেলের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তারই কল্যাণে মানবিক স্বভূমিতে ফিরে আসতে পেরেছে। হালকা লাগছে। নইলে ইংল্যান্ডের শীত আর বরফ-পাথরের বুকে গেঁথে যেত চিরদিনের মতো, অর্থহীন একটা ঝিমুনো-জীবন কেটে যেত। গলিতে নেমে এসেছে। ঠিক তখনই মায়ের ফোন এল। কি রে এত দেরি হচ্ছে কেন তো ? ঝুমা-রিয়ারা কখন এসে তোর অপেক্ষায় বসে আছে। তোর জন্য কত কি রান্না করে এনেছে। লন্ডনে নাকি এবার বেশ শীত পড়েছে । তোর নাজিয়া ভাবী সোয়োটার এনেছে । আমি লন্ডন যাচ্ছি না মা। কি! মা আর কিছু বলার আগে ফোন অফ করে দিল শুভ্র। সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১০ বিকাল ৪:৩০",False rn,"ভালো বই কাকে বলে_ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার। তাকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, 'ভালো বই কাকে বলে?' উত্তরে তিনি বলেছিলেন, 'যে বইটা পাঠককে ভাবায়, সেটাই ভালো বই।' আমরা জানি আমাদের মস্তিষ্কে দুটো বলয় রয়েছে। ডান বলয় আর বাম বলয়। ডান বলয় নিয়ন্ত্রণ করে কল্পনা, আবেগ, বিশ্বাস, সৃজনশীলতা, অতিচেতনা, আত্মিক এবং আধ্যাত্মিক ভাবনা ইত্যাদি। আর বাম বলয় নিয়্ন্ত্রণ করে কথা, শ্রুতি, অঙ্ক, যুক্তি, ভাষা-র মতো জিনিসগুলো। আমরা যখন কোন কিছু লিখতে শুরু করি, নতুন নতুন ভাবনা, নতুন নতুন চিন্তাধারা, দৃষ্টিভঙ্গি, যুগান্তাকারী আইডিয়া আমাদের মাথায় আসে। মুক্তবুদ্ধির চর্চার কারণে দৃষ্টির সীমাটা আমাদের দিন দিন প্রসারিত হতে থাকে। চারপাশের পুরো জগতের যেন একটা নতুন মানে আমরা খুঁজে পাই। এবং এই উপকারটা যে শুধুমাত্র যিনি লিখছেন শুধু তিনিই পাচ্ছেন না। যিনি লিখছেন আর যিনি লেখা পড়ছেন, দুজনেই আলোকিত হচ্ছেন।আপনি গাড়িতে করে যাচ্ছেন। গাড়িটা চলতে চলতে একসময় সিগন্যালে থেমে গেল। গাড়ির জানালা দিয়ে ছোট্ট একটা হাত ঢুকে গেল ভেতরে। হাতে ধরা টকটকে লাল, তাজা চমৎকার ক'টা গোলাপ ফুল। পাঁপড়ির ওপর দুয়েকটা পানির ফোঁটায় রোদের সোনালি ঝিলিক। অদ্ভুত সুন্দর একটা দৃশ্য। হঠাৎ ফুলগুলো ধরে রাখা মেয়েটার দিকে আপনার নজর যেতে আপনি একটা ধাক্কামতো খেলেন। মলিন চেহারার একটা মেয়ে। তারচেয়ে মলিন তার পোশাক। খড়ের মতো চুলগুলোয় শেষ কবে তেলপানি পড়েছিল তা কে জানে! আসামান্য সৌন্দর্যের সওদাগর হচ্ছে অতিসামান্য, অতিমলিন একটি শিশু। মেয়েটাকে দেখে আপনার খুব মায়া লাগছে। আপনি ব্যাগ হাতড়ে মোটামুটি বড় একটা নোট মেয়েটাকে দিয়ে বললেন, পুরোটাই রাখ, ফেরত দিতে হবে না। আনন্দে মেয়েটি ফিক করে হেসে ফেলো। সাদা দাঁতের ঝলকানিতে আপনি আবারও বিস্মিত হয়ে পড়লেন। অতি অদ্ভুত সুন্দর সেই হাসি। মুহূর্তে জন্য আপনি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন, কোনটা বেশি সুন্দর? আপনার হাতের গোলাপগুলো, নাকি বাইরের মলিন আবরণের পেছনের ওই নির্মল হাসিটুকু?! সিগন্যাল বাতি বদলে সবুজ হয়ে গেছে। গাড়ি চলতে শুরু করেছে। আর আপনি তাতে বিহ্বল হয়ে বসে আছেন। পূর্ববাংলার আঞ্চলিক ভাষাকে অবলম্বন করে যে কি চমৎকার উপন্যাস লেখা যায় তার সার্থক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস খোয়াবনামার মাধ্যমে। আঞ্চলিক ভাষার অধিক ব্যবহার রয়েছে বইটিতে, রয়েছে কিছু খিস্তি-খেউরও। কাহিনীর ভেতর একবার ঢুকে যাওয়ার পর আর কোন সমস্যা হয়নি, একটানে সমাপ্ত করেছি খোয়াবনামার দীর্ঘ যাত্রা। গ্রামীণ মানুষের সংস্কৃতিচর্চা, কুসংস্কারচর্চা, এমনকি মানুষের অযাচারচর্চাও বাদ পড়েনি এই উপন্যাস থেকে। ’৪৭ এর দেশভাগ গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে খোয়াবনামার। বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই বইটি উপভোগ করবেন বলে আমার বিশ্বাস; আর বইটির সাহিত্যমানই আমাকে এই বিশ্বাস দান করেছে।",False rn,"বাঁচতে হলে জানতে হবে-২ খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫-খ্রিষ্টপূর্ব জুলিয়াস সিজার বৃটেন আক্রমন করেন। ৫৯-খ্রিষ্টপূর্ব জুলিয়াস সিজারের রোমে প্রথম সংবাদ পত্র প্রকাশিত হয়। (তা ছিল হাতে লেখা সংবাদ পত্র) ৬৪-খ্রিষ্টপূর্ব রোম নগরী আগুণে পুড়ে ভষ্মীভূত হয়ে যায়। ১৫০-খ্রিষ্টপূর্ব ভারত বর্ষে কাল গণণা শুরু হয়। ১৮৭-খ্রিষ্টপূর্ব মৌর্য বংশের পতন হয়। ২০০-খ্রিষ্টপূর্ব গৌতম বুদ্ধের অনুসারীরা ত্রিশটির মতো গুহা, নরম আগ্নেয়শিখা খনন করে বানিয়েছিলেন। ২১৪-খ্রিষ্টপূর্ব চীনে গ্রেটওয়াল বা চীনের প্রাচীর নির্মান করা হয়। ২৩২খ্রিষ্টপূর্ব সম্রাট অশোকের মৃত্যু হয়। ২৮৭-খ্রিষ্টপূর্ব আর্কিমিডিস এর জন্ম। ৩০০-খ্রিষ্টপূর্ব ইউক্লিড জ্যামিতি আবিষ্কার করেন। (গ্রীস) মিশর থেকে কুস্তি খেলা এসেছে। ৩২৩খ্রিষ্টপূর্ব ব্যাবিলনে আলেকজেন্ডার এর জন্ম হয়। ৩২৫-খ্রিষ্টপূর্ব ঢাকার 'মসলিন' বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করে। ৩২৭-খ্রিষ্টপূর্ব আলেকজেন্ডার ভারতবর্ষে আগমন করেন। ৩২৮-খ্রিষ্টপূর্ব অ্যারিষ্টটলের ছাত্র আলেকজেন্ডার শিক্ষকের কাছে জীবিত টিয়া পাখি এনেছিলেন। ৩৪১-খ্রিষ্টপূর্ব প্রচীন গ্রীক বস্তুবাদী দার্শনিক ও নীতিশান্তিবিদ এপিকিউয়াস জন্মগ্রহণ করেন। ৩৫০-খ্রিষ্টপূর্ব চীনা পন্ডিত শি শেন ৮০০টি নক্ষত্রের বর্ণনা সম্বলিত একটি নক্ষত্র পঞ্জিকা তৈরী করেছিলেন। ৩৮৪-খ্রিষ্টপূর্ব অ্যারিস্টটল এর জন্ম। ৩৯৯-খ্রিষ্টপূর্ব সক্রেটিসকে মৃম্ত্যুদন্ড দেয়া হয়। ৪২৫-খ্রিষ্টপূর্ব গ্রীক ঐতিহাসিক হেরোডোটাইসের লেখায় ভারতীয় মিহি বস্ত্রের কথা লেখা ছিল। ৪২৭-খ্রিষ্টপূর্ব প্লেটোর জন্ম। ভাববাদী দার্শনিক গ্রীস দেশের এথেন্স নগরীতে জন্ম। ৪৫০-খ্রিষ্টপূর্ব হেরোদোতাস বলেছেন ইরানে মূর্তি পজা নেই। ৪৭০-খ্রিষ্টপূর্ব সক্রেটিস গ্রীসে জন্মগ্রহন করেন। ৪৮৮-খ্রিষ্টপূর্ব গৌতম বুদ্ধ দেহত্যাগ করেন। ৫৩০-খ্রিষ্টপূর্ব গ্রীক দার্শনিক ও গাণিতিকবিদ দক্ষিন ইতালির গ্রীক নগর রাজ্যে ক্রোটন এ- একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ৫৪০-খ্রিষ্টপূর্ব মিশর অথবা পারস্যে টেনিস খেলার জন্ম হয়। ৫৫১-খ্রিষ্টপূর্ব কনফুসিয়াস এর জন্ম। ৫৮৮-খ্রিষ্টপূর্ব গৌতম বুদ্ধ বোধিবা মহাজ্ঞান লাভ করে, যার ফলে গৌতম জগতে বুদ্ধ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ৬০০-খ্রিষ্টপূর্ব আয়ুর্বেদীয় যুগের প্যারম্ব। ৬২৩-খ্রিষ্টপূর্ব সিদ্ধ্যার্থ গৌতম বুদ্ধ নেপালে জন্মগ্রহন করেন। ৬৩৯-খ্রিষ্টপূর্ব প্রাচীন গ্রীসের শাসনকর্তা, কবি সোলোন জন্মগ্রহন করেন। ১১৯৪-খ্রিষ্টপূর্ব ট্রয় নগরীতে যুদ্ধ শুরু হয়। ১২০০-খ্রিষ্টপূর্ব মিশরীয় সভ্যতার পতন ঘটে। কাশী হিন্দুদের একটি প্রাচীন তীর্থ স্থান। এর অপর নাম বারানসী। বাল্মিকী, সংস্কৃত ভাষায় রামায়ন রচনা করেন। ১২২৫-খ্রিষ্টপূর্ব হেলেন এর জন্ম। ১৮০০-খ্রিষ্টপূর্ব প্রাচীন জেরুজালেমের ইতিহাস শুরু হয়। ২০০০-খ্রিষ্টপূর্ব মানুষ কয়লার ব্যবহার জানত। ব্যাবিলনের জ্যোতিবিদ্যান মহাকাশে গ্রহ নক্ষত্রের চাট তৈরী করে তা ব্যবহার করেছেন। মোষের দুধ থেকে মাখন তৈরির কৌশল জানা ছিল। ২০৫০-খ্রিষ্টপূর্ব পারস্যে হকি খেলার শুরু হয়। ২৫০০-খ্রিষ্টপূর্ব হিন্দুদের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ 'বেদ' রচনা শুরু হয়েছিল। ২৭৫০-খ্রিষ্টপূর্ব সিন্ধু সভ্যতার পতন ঘটৈ। ৩০০০-খ্রিষ্টপূর্ব মিশরের কাঠের তক্তা মুড়ে জাহাজ তৈরীর উপায় উদ্ভাবন করে। সুমেবিয়ান সভ্যতা গড়ে ওঠে। মহাভারত রচিত হয়। (প্রাচীন পন্থী পন্ডিতদের মতে) ৩২০০-খ্রিষ্টপূর্ব মিশরীয় নাবিকের দ্বারপাল আবিষ্কার করে। ৩৩১৫-খ্রিষ্টপূর্ব রাখাইন জাতির উদ্ভব বলে মনে করা হয়। ৩৫০০-সক্রেটিস সবচেয়ে প্রাচীন পান্ডুলিপি প্যাপিরাসে লেখা হত। ৪০০০-খ্রিষ্টপূর্ব মিশরীয় সভ্যতার অগ্রযাত্রা শুরু হয়। ৫০০০-খ্রিষ্টপূর্ব কোনো এক সময়ে প্রাচীন সুমেরীয়রা ব্যাবিলনে তাদের বসতি স্থাপন করে। ৮০০০-খ্রিষ্টপূর্ব জাপানে মাটির পাত্র তৈরী হয়। সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:০০",False ij,"গল্প_ পরির দেশের উদ্বেগ প্রথম পর্ব রাতটা ফুরিয়ে যাচ্ছিল। তাইই ঝিলিমিলি নদীর ধারে গাইতে-থাকা, নাচতে-থাকা পরিদের দলটারও কিন্তু পরির দেশে ফিরে যাবার সময় হয়ে এল। কিন্তু এ কী! রাকা কোথায়? রাকাকে তো কোথাও দেখা যাচ্ছে না। রাকা কোথাও নেই যে! ও কোথায় গেল? সবাই মিলে রাকাকে খুঁজতে শুরু করল। বালুচরের সর্বত্র, ঘাসের বনের ফাঁকেফোকরে, অশথ গাছের তলার ঝুপসি অন্ধকারে, অশথ গাছের পিছনের খালপাড়ের ভেজা মাটিতে। না নেই। কোথাও রাকাকে পাওয়া গেল না। শেষমেশ। কী আর করা। পরির দল মন খারাপ করে আকাশে উড়ল। তারপর চাঁদের গা ঘেঁষে আকাশপথে ভেসে ভেসে চলে যেতে লাগল পরির দেশে। রাকাকে খুঁজে না পেয়ে সেই দুঃখেই কার যেন রুপালি মুক্তোদানার মতন একফোঁটা অশ্র“ দুধসাদা জোছনার সঙ্গেই ঝরে পড়ল ঝিলিমিলি নদীচরের বালির ওপর! পরির দেশের রানবাড়িতে পৌঁছে সবই খুলে বলল পরিরা। রাকা হারিয়ে গেছে শুনে রানবাড়ির সবাই কান্না জুরে দিল। পরিরাজ্যে রাকাকে সবাই গভীর ভাবে ভালোবাসত। ওরা সবাই ফিরল। রাকাই কেবল ফিরল না। এখন কী হবে। যদি রাকা আর কোনওদিনই ফিরে না আসে। পরিরানি শয্যা নিলেন। পরিরানিই তো হল রাকার মা। পরিরানি এমননিতে ভীষন বুদ্ধিমতী আর সাহসী। পরির দেশটা তো তিনিই শাসন করেন। সবাই তাঁকে পরিমা বলে ডাকে। কিন্তু এখন রাকাকে না দেখে ভেঙ্গে পড়লেন পরিরানি। রাকাকে তিনি ভীষনই আদর করেন কিনা তাই। পরিরানি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আর কোনও দিন রাকাকে বকব ন। ওরে, তোরা আমার রাখাকে আমার বুকে ফিরিয়ে আন। আমি আর কোনও দিন রাকাকে বকব ন। পরিরানির শয্যার কাছে সবাই দাঁড়িয়েছিল। পরিরা ছাড়াও ছিল রাজাবাড়ির দারোয়ান পবনবাবু, হেড বাবুর্চি ভোলামিঞা, রথের সারথী বুড়োদাদা। এ ছাড়া ছিল পরির দেশের মন্ত্রীবুড়ো আর রাকার বাবা। রাকার বাবা গম্ভীর হয়ে বললেন, সে তো বুঝলাম, কিন্তু রাকা গেল কোথায় সেই তো বোঝা যাচ্ছে না। তোমরা রাকাকে ভালো করে খুঁজেছিলে তো? সবুজ পরি কান্নাভেজা কন্ঠে বলল, হ্যাঁ, জ্যাঠামশাই, রাকাকে আমরা তন্ন তন্ন করেই খুঁজেছি। পরিরানি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমি বকলাম বলেই তো ও রাগ করে আর ফিরে এল না। রাকার বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, যা হওয়ার হয়ে গেছে। সেসব আর বলে কী লাভ। বলে গম্ভীর মুখে পায়চারি করতে লাগলেন। রাকার বাবার পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। তার গলায় একটা দূরবীন। মুখচোখে মন্ত্রীবুড়ো উদ্বেগের ছাপ পড়েছে। পরিরানি বললেন, কাউকে এখন পৃথিবীতে পাঠানোই বিপদ। সূর্য উঠছে। একটু পরই আকাশপথটা আগুনে ঝলসে যাবে। মন্ত্রীবুড়ো বললেন, হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন পরিমা। সূর্য না-উঠলে কাউকে না কাউকে পাঠানো যেত। দেখি এখন কী হয়। রাকার বোন আঁকা। ও ও নীল পরি। এখন চোখ মুছতে মুছতে বলল, আপুর জন্য আমার কেমন যে করছে। হলুদ পরিটা মন্ত্রিবুড়োর মেয়ে। ও খানিকটা হিংসুক ধরনের হলেও রাকার জন্য ... হলুদ পরি আঁকাকে জড়িয়ে ধরে শান্ত্বনা দিল। পরিরানি আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, তোমরা আমার রাকাকে ভালো করে খুঁজেছিলে তো? হ্যাঁ, জেঠিমা, আমরা তন্ন তন্ন করেই খুঁজেছিলাম। এমন কী অশথগাছের পিছনে খালপাড়েও খুঁজেছি, পাই নি। সবুজ পরি বলল। গ্রামে খোঁজনি? রাকার জন্য সবুজ পরির ভারি কষ্ট হচ্ছে। বেচারির মুখচোখ শুকিয়ে গেছে। ওই বলল, না। পরিরানি কঠিন স্বরে বললেন, কেন? পরিরা চুপ করে রইল। পরিরানি আর কী বলবেন। তিনি চুপ করে থাকলেন। মন্ত্রিবুড়ো একটু পর বললেন, যাই, ছাদে যাই। দেখি যদি রাকাকে দেখা যায়। বলেই মন্ত্রিবুড়ো ধীরে ধীরে ঘর ছেলে চলে গেলেন। রানবাড়ির দারোয়ান পবনবাবু, হেড বাবুর্চি ভোলামিঞা, রথের সারথী বুড়োদাদা মন্ত্রিবুড়োকে অনুসরণ করে চাদে উঠে এল। মন্ত্রিবুড়ো ঘর ছেলে চলে যাওয়ার পর পরিরানি ক্লান্ত গলায় বললেন, যাও। তোমরা এখন যার যার ঘরে চলে যাও। ভোর হয়ে যাচ্ছে। ঘুমিয়ে পড়। রাকা যদি ফেরে তো পরে দেখা হবে। পরিরা সবাই ঘর ছেড়ে চলে গেল। ততক্ষনে মন্ত্রীবুড়ো রানবাড়ির ছাদে উঠে এসেছেন। চোখে দূরবীন লাগিয়ে রাকাকে আকাশপথে খুঁজতে লাগলেন তিনি। মন্ত্রিবুড়ো রাকাকে ভীষন আদর করেন বলে তাঁর মুখে গভীর উদ্বেগ ফুটে উঠেছে। রাত প্রায় শেষ হয়ে এল। না রাকাকে কোথাও দেখতে পাওয়া গেল না। ওদিকে প্রায় শেষ রাতের দিকে ঘুম ভাঙল রাকার। চোখ ডলে চারপাশে তাকাল। উঠে বসল। দেখল গাছের পাতা আর ডাল। আর কে যেন শুয়ে পাশে। এ কী! আমি এখানে কেন? আম্মু কই? রাকা ওর পাশে ওর আম্মুকে না দেখে কেঁদেই ফেলল। একটু পর কান্না থামিয়ে ও ভাবতে বসল। ধীরে ধীরে ওর সব মনে পড়ল। কালরাতে ওর সঙ্গে পিদিম নামের সাদা ভূতটার পরিচয় হয়েছিল। এই তো পিদিম এখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আম্মুর জন্য এখন খারাপ লাগছে রাকার। ও ঠিক করেছিল পরির দেশে আর ফিরবেই না। দুধ না-খাওয়ার জন্য বকার জন্য ওর আম্মুর ওপর ভীষণ অভিমান হয়েছিল। ভাবতেই রাকার ছোট্ট বুকটা হিম হয়ে এল। আর বুক ভেঙ্গে কান্না পাচ্ছিল। আম্মুটা যে কী। এমন করে বকল। কেউ বকলে রাগ করে না বুঝি। এতসব ভেবে ও ঠিক করে ছিল এই পৃথিবীতে থাকবে পরিদের দেশে আর ফিরে যাবে না। অথচ এখন ওর আম্মুর মুখটা মনে পড়তেই ও পরির দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠল। ঝিলিমিলি নদীর ধারে ঘাসের বনের দিকে উড়ে গেল রাকা। এই দৃশ্যটাও দেখে গম্ভীর ভাবে মাথা নাড়ল গড়ান। বালুচরটা ফাঁকা পড়ে আছে দেখে রাকার বুকটা ছ্যাত করে উঠল। এ কী ! গেল কই সব? ওরা কি আমাকে ফেলেই চলে গেল নাকি? ভাবতে-ভাবতে বালুচরে, ঘাসের বনের গভীরে তন্নতন্ন করে খুঁজল। খুঁজল বটে , কিন্তু কাউকে না পেয়ে ভীষন কান্না পেল রাকার। ওরা সবাই মনে হয় আমাকে ফেলেই চলে গেছে। কী আর করা। আমি তা হলে একাই পরির দেশে ফিরে যাই। এই ভেবে একাই আকাশে উড়ল রাকা । একটু জোরেই উড়তে থাকল ও। দেরি হলেই যে সর্বনাশ! চাঁদটা ডুবে গেলে যে আর পরির দেশে ফেরাই হবে না। আর পুবদিকে সূর্যটা উঠলে যে সর্বনাশের চূড়ান্ত হবে। সূর্যের আগুনে পাখা খসে পড়বে যে। তখন ধপাস করে নীচের মাটিতে পড়ে যেতে হবে। রাকা এই ভয়টাই পাচ্ছিল। চাঁদটা পশ্চিমে ডুবে যাচ্ছিল ধীরে ধীরে। আর আকাশের পূর্বকোণে ফুটে উঠল রঙের আভাস । সর্বনাশ! সূর্য উঠছে। রাকা প্রাণপন ডানা ঝাপ্টাচ্ছিল। যে করেই হোক সূর্য ওঠার আগে রানবাড়ি পৌঁছতেই হবে। ইস, তখন কেন যে ঘুমিয়ে পড়লাম। এখন? পুড়ে মরতে হবে। ভাবতেই রাকার চোখে জল ভরে এল। ও চোখের কোণ দিয়ে পুবে দেখছিল আর প্রাণপ্রন ডানা ঝাপ্টাচ্ছিল। যদি সূর্যের তাপে ডানার মোম গলে যায় আর আমি পড়ে যাই নীচে... ঠিক এমন একটা সময়ে চোখে দূরবীন লাগিয়ে রানবাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে মন্ত্রিবুড়ো রাকাকে খুঁজছিলেন। না, রাকাকে তো কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ঠিক এমন সময় কার যেন পায়ের শব্দ শোনা গেল। চোখ থেকে দূরবীন সরিয়ে মন্ত্রীবুড়ো দেখলেন রাকার বাবা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দেখা যাচ্ছে কিছু? মন্ত্রীবুড়ো আবার চোখে দূরবীন ঠেকিয়ে বললেন, না। হ্যাঁ। আরে ওটা কী। রাকা না তো। কী যেন দেখা যাচ্ছে নীল রঙের আকাশপথে। রাকা কি? হ্যাঁ তাই তো মনে হচ্ছে। মন্ত্রিবুড়োর বুকটা আনন্দে দুলে উঠল। হ্যাঁ, রাকাই তো, প্রাণপনে ডানা ঝাপটে এদিকেই আসছে। জোরে জোরে পাখা ...ওর ডান দিকে আলোর রেখা সর্বনাশ সূর্য উঠছে। মন্ত্রীবুড়োর বুকটা কেঁপে উঠল। কই দেখি। দাও, আমাকে দূরবীনটা দাও। মন্ত্রীবুড়ো রাকার বাবাকে দূরবীনটা দিলেন। রাকার বাবা চোখে দূরবীন ঠেকিয়ে দেখলেন, রাকা এগিয়ে আসছে। ওদিকে ধীরে ধীরে সূর্যটাও উঠছে। রাকার বাবা বললেন, হ্যাঁ, ওই তো। কিন্তু, সর্বনাশ! সূর্য উঠছে। রাকা তো তা হলে পুড়ে যাবে। মন্ত্রীবুড়ো বললেন, আমিও সেটাই ভাবছি। আকাশপথটা একটু পরেই আগুনে ঝলসে উঠবে। রাকার বাবা প্রায় আর্তনাদ করে উঠলেন। এখন কী হবে। রাকার ডানা দুটো যদি পুড়ে যায়! রানবাড়ির দারোয়ান পবনবাবু, হেড বাবুর্চি ভোলামিঞা, রথের সারথী বুড়োদাদা -সবাই ছাদে উঠে এল। সেই সঙ্গে হলুদপরি আর আঁকা। হলুদ পরির মুখ শুকিয়ে গেছে। ও আঁকার দিকে তাকিয়ে বলল, এখন কী হবে ভাই? আঁকা বলল, আমি ওই দৃশ্য দেখে সইতে পারব না। বলে ও চোখ বুঝল। আঁকার কথা শেষ হল ঝুপ করে একটা শব্দ হল ছাদের ওপর। কী হলো কী। আঁকা চোখ খুলে দেখল ছাদের ওপর দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে রাকা। রানবাড়ির দারোয়ান পবনবাবু, হেড বাবুর্চি ভোলামিঞা, রথের সারথী বুড়োদাদা, হলুদ পরি, রাকার বাবা, মন্ত্রিবুড়ো -সবাই হইহই করে উঠল। রাকার বাবা আর মন্ত্রীবুড়ো ছুটে গেলেন রাকার কাছে। আঁকাও। ওর পাশে হলুদ পরি। দেখল রাকার ছোট্ট নীল রঙের মুখটি ঘেমে গেছে। আরও নীল হয়ে গেছে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ছোট্ট বুকটা ওঠা নামা করছে। ব্যাথা পেয়েছিস মা ? রাকাকে জড়িয়ে ধরে রাকার বাবা জিগ্যেস করলেন। ইস, আরেকটু হলেই পুড়ে মরছিল। ভাবতেই বুকটা শুকিয়ে আসছিল। না তো। রাকা বলল। মন্ত্রিবুড়ো রাকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নরম সুরে জিগ্যেস করলেন, মার কাছে যাবে রাকা? হ্যাঁ, কাকা, আমি মার কাছে যাব। বলে কেঁদে ফেলল রাকা। রাকার বাবা রাকাকে কোলে তুলে নিলেন। তারপর সিঁড়ি ভেঙ্গে দোতলায় নেমে এসে পরিরানির ঘরে নিয়ে এলেন। পরিরানি তখনও কাঁদছিলেন। রাকাকে ওর বাবার কোলে দেখেই তবে পরিরানি কান্না থামল। শুধু তাই না, পরিরানির মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ধড়ফর করে উঠে বসে রাকাকে কোলে নিলেন পরিরানি, হাসলেন, রাকার গালে ও কপালে চুমু খেলেন। আর কোনও দিন রাকাকে বকবেন না বলে কথা দিলেন। রাজবাড়ির হেড বাবুর্চি ভোলা মিঞা আজ বাদাম দিয়ে তালমিছরির পায়েস রেঁধেছিলেন। রাকাকে কোলে বসিয়ে পরিরানি রুপোর চামচ দিয়ে তাই খাওয়ালেন । রাকা ফিরে এসেছে বলে রানবাড়িতে বইল খুশির বন্যা । মন্ত্রীবুড়োর সুপরামর্শে পরিরানি পরির দেশে সাত দিনের বিরতিহীন আনন্দ-উৎসবের ঘোষনা দিলেন মার কোলে বসে পায়েস খাওয়া শেষ। রাকার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। ওর মা ওর ডানা দুটো খুলে রেখে নরম পালকের বিছানায় শুইয়ে দিলেন রাকাকে। শুয়ে পড়তেই রাকার নেমে এল রাজ্যে ঘুম। পরিরানি ওর মাথার কাছে বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আঁকাও রাকার খুব কাছে বসে থাকল । জানালার বাইরে তখন চাঁদ উঠেছে। পৃথিবীতে যখন দিনের শুরু তখনই পরির দেশে নেমে আসে রাত। আর পরির দেশে যখন দিনের শুরু হয় তখন পৃথিবীর লোকেরা দেখে যে সন্ধ্যা নামছে। হ্যাঁ। এটাই নিয়ম। চলবে ... সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১০ সকাল ১১:৩৫",False fe,"প্রজম্মের বাতিঘর প্রজম্মের বাতিঘরফকির ইলিয়াস=========================না, গণজাগরণ থেমে যাবে না। দেশজুড়ে যে আলোর জ্যোতি আমরা দেখছি, তা বিকিরণ ছড়াচ্ছে বিদেশেও। হাজার হাজার অভিবাসী প্রজন্ম গুগল সার্চ দিয়ে দেখে নিচ্ছে বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস। জানতে চাইছে রাজাকার কী? ওরা একাত্তরে কী করেছিল? শাহবাগ থেকে যে ছয় দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে, তা খুবই যৌক্তিক। কারণ এভাবে দায় নিয়ে কোন প্রজন্ম চলতে পারে না।প্রজন্মের এই জাগরণ আমাকে অনেক কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। ১৯৯২ সাল। আমার জীবনের একটি স্মরণীয় বছর। সাপ্তাহিক বিচিত্রা নিয়মিত নিউইয়র্কে আসে। আমি এর একনিষ্ঠ পাঠক। হঠাৎ চোখে পড়ে একটি আহ্বান। ডাক দিয়েছেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। সরদার ফজলুল করিমের ‘রুমীর আম্মা ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ বইটি আমার পড়া ছিল। তার ডাকে সাড়া দিতে মন চায়। সঙ্গে সঙ্গে বিচিত্রায় প্রকাশিত ফোন নম্বর দেখে ঢাকায় ফোন করি। কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) কাজী নুরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি জানান, জাতীয়ভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সম্বয় কমিটি’ গঠিত হচ্ছে। আমরা যেন বিদেশেও সেই আন্দোলন ছড়িয়ে দিই। এরপরে কয়েক দফা শহীদ জননীর সঙ্গে আমার কথা হয়। তিনি আমাকে যুক্তরাষ্ট্রে কমিটির শাখা করার অনুমতি দেন। কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আমরা কমিটি গঠন করি। বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী ও কাজী জাকারিয়াকে যৌথ আহ্বায়ক, ফরাসত আলীকে (বর্তমানে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান) সদস্য সচিব এবং আমাকে সহকারী সদস্য সচিবের দায়িত্ব দিয়ে জাতীয় সমন্বয় কমিটি যুক্তরাষ্ট্র শাখা গঠন করা হয়।আমরা কাজ করতে থাকি পুরোদমে। এ সময়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিতে নিউইয়র্কে আসেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার গাড়ির বহর প্লাজা হোটেলের সামনে আটকে দেয় অভিবাসী বাঙালি সমাজ। দাবি একটাইÑ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে। জাতীয় সমন্বয় কমিটি ২৬ মার্চ ঢাকার গণআদালতে একজন মার্কিন আইনজীবী পাঠায়। বিশিষ্ট আইনজীবী টমাস কিটিং ঢাকার গণআদালতে উপস্থিত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে বিভিন্ন মহলে তার বক্তব্য তুলে ধরেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। শহীদ জননী তার শেষ বক্তব্যে বলেছিলেন, এ প্রজন্ম একদিন এ দাবি আদায় করবেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই ইনশাআল্লাহ।২০১৩ সালে সেই গণজাগরণ আমরা দেখছি। আজ গোটা বাংলাদেশই যেন শাহবাগ। আন্দোলন চলছে লন্ডন, নিউইয়র্ক, টরেন্টো, টোকিও, প্যারিস, জেদ্দা, দুবাই, কুয়েত, কাতারÑ সবখানেই। এ আন্দোলনের ভিত্তি যিনি রচনা করেছিলেন, তার নাম জাহানারা ইমাম। প্রজš§ চত্বরে তার প্রতিকৃতি স্থাপন আমাদের আবারও শাণিত করেছে।প্রজন্ম রাজপথে এই যে সংগ্রাম করছে, তা মূলধারায় যুক্ত হওয়ার সংগ্রাম। এ সংগ্রাম ‘জয় বাংলা’কে ধারণ করার সংগ্রাম। যা শুনলে এখনও আলবদর-রাজাকারদের গায়ে জ্বালা ধরে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বর্তমান প্রজন্ম এ সংগ্রামে জয়ী হবেই।শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে কথা হচ্ছিল কবি শহীদ কাদরীর সঙ্গে। তিনি বললেন, শাহবাগ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা আমাকে আবারও চমকে দিয়েছে। যেমনটি আমি একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালির মাঝে দেখেছিলাম। আমি ভেবে পাই না একাত্তর-পরবর্তী সময়েই কেন এসব ঘাতক-দালালকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়নি। আমরা জানি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল হয়। সেখানে নাৎসিদের কীভাবে বিচার করা হয়, তা আমরা জানি। বাঙালিরা একাত্তরের খুনি-ধর্ষকদের শাস্তি দিতে পারেনি বলেই আজ আমাদের এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।কবি বলেন, আমি আজকের এ প্রজন্মের কাছে ঋণ স্বীকার করে বলতে চাই, আমি খুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে, বাঙালি কি আর ঘুরে দাঁড়াবে না? আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকার মানুষ এককাতারে দাঁড়িয়েছে। আমি খুবই আশান্বিত। আমি সমাবেশে যেতে পারব না ঠিকই, কিন্তু আমার আত্মিক সমর্থন থাকছে এ আন্দোলনের সঙ্গে। আমি জানি, বাঙালির জয় সুনিশ্চিত।হ্যাঁ, আলোর বাতি এখন প্রজন্মের হাতে। ফেসবুক-ব্লগ থেকে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এই আলো পৌঁছে যাবেই। কারণ সত্য ইতিহাসকে কবর দেয়া যায় না। যেমনটি ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করেও তার নাম, তার আদর্শ মুছে দেয়া যায়নি।আমরা দেখছি, ধর্মের দোহাই দিয়েই একটি মহল দেশে-বিদেশে বিষবাষ্প ছড়াতে চাইছে, যা কোন সভ্য সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে যারা আলবদর-রাজাকারদের বাঁচাতে চাইছে, সময় এসেছে তাদের চিহ্নিত করার।-------------------------------------------------------------দৈনিক যুগান্তর // ঢাকা // ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ প্রকাশিত",False ij,"মাদার অ্যান মাদার অ্যান লি। নারীরুপী খ্রিস্ট বলে যিনি নিজেকে দাবী করেছিলেন। শেকারদের ধর্মসাধনায় সংগীত অপরিহার্য। এজন্য অসংখ্য গান কম্পোজ করে তারা। গানের সঙ্গে নাচ; উপাসনায় প্রয়োজন হয় গান। শেকার সম্প্রদায়ে গানের প্রতিভা কে মনে করা হয় ঐশ্বরিক। তাদের গানের রয়েছে নিজস্ব স্বরলিপি -যা অনেকটা গ্রিক স্বরলিপির মতন দেখতে। Many of the lyrics to Shaker tunes consist of syllables and words from unknown tongues, the musical equivalent of glossolalia. It has been surmised that many of them were imitated from the sounds of Native American languages, as well as from the songs of African slaves, especially in the southernmost of the Shaker communities, but in fact the melodic material is derived from European scales and modes. তো কারা Shaker? শেকারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশিস্ট ধর্মসম্প্রদায়। এদের পুরো নাম: the United Society of Believers in Christ's Second Appearing, যদিও ১৭৫০ সালের দিকে ইংল্যাল্ডের ম্যানচেস্টারে শেকারদের সূত্রপাত জেন এবং জেমস ওয়ার্ডলির বাড়িতে । তবে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে শেকারস-দের পথিকৃৎ হলেন মাদার অ্যান লি।এক দুঃসময়ে জেন এবং জেমস ওয়ার্ডলির সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল মাদার অ্যান লি-র। মাদার অ্যান লি-র জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৭৩৬ খ্রিস্টাব্দে। ম্যানচেস্টারে। আট ভাইবোনের মধ্যে অ্যান লি ছিল ২য়। কেমন দেখতে ছিল অ্যান লি? গড়ন ছোটখাটো, তার মানে বেঁটে, তবে ফরসা, নীলাভ চোখ, বাদামী চুল। তৎকালীন ম্যানচেস্টারে এতই হতদরিদ্র ছিল যে ম্যানচেস্টারেকে বলা হত ব্যাঙের গলি । আসলেই তাই। নোংরা। ঘিঞ্জি। করকারখানা থেকে ভুরভুর করে সালফারের দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। এমনই এক অসহনীয় পরিবেশে বেড়ে উঠছিল। বালিকা অ্যান লি। অ্যান লির বাবার নাম জন লি; পেশায় কামার। সামান্য আয়। টেনেটুনে সংসার চলছে। অ্যান লি লেখাপড়া শিখবে কি? কিশোরী বয়েসে ম্যানচেস্টারে একটা টেক্সটাইল মিলে কাজ নিল-কী খাটুনি! কটা বছর কাটল মিলে। বছর কুড়ি বয়স হলে ওখানকার কাজে ইস্তফা দিয়ে প্রথমে হাসপাতালে তারপর পাগলাগারদে রাঁধুনির চাকরি নিল। ম্যানচেস্টার শহরে ভালো লাগত না অ্যান লি-র। ভিড়। রাস্তাগুলি ছিল নোংরা। যত্রতত্র বর্জ্য। আর মদের ছড়াছড়ি। ম্যানচেস্টারে বেশ কটা জিন মিলের ছিল। দরিদ্র শ্রেণিতে বেশুমার মদ গেলার চল ছিল। কিন্তু, অ্যান লি-র হৃদয় ছিল অন্যরকম। মদ্যপ মানুষ দেখে ওর ভালো লাগত না। অ্যানের কেমন দিশেহারা দিশেহারা লাগত। ম্যানচেস্টার শহরটার চারিদিকে পাপ, ব্যাভিচার, অনাচার আর দারিদ্র। কোথায় যিশুর শিক্ষা? মানুষের নৈতিক অবক্ষয় দেখে দেখে অ্যান লি প্রায় পাগলপ্রায় হয়ে উঠেছিল । যৌনতার প্রতি কেন যেন বিতৃষ্ণা জন্মেছিল। তাঁর জীবনীকার লিখেছেন- So great was her sense of its impurity, that she often admonished her mother against it, which, coming to her father's ears, he threatened and actually attempted to whip her; upon which she threw herself into her mother's arms and clung around her neck to escape his strokes. মানুষের সমস্ত দুভোর্গের জন্য কামকেই দায়ী করল অ্যান লি। পন করল বিয়ে করবে না। আগের একটা লেখায় আমি জর্জ ফক্স-এর কোয়েকার আন্দোলন নিয়ে লিখেছিলাম । সেই আন্দোলনে, যা হয়, ভাঙ্গন ধরেছিল। ছোট একটা দল বেরিয়ে গিয়েছিল জর্জ ফক্স-এর কোয়েকার আন্দোলন থেকে। যারা বেরিয়ে গিয়েছিল-তাদের বলা হত শেকিং কোয়েকারস। শেকিং কোয়েকারস সঙ্গে কোয়েকারদের মিল ছিল: উভয় দলই ব্যাক্তিগত আলোকপ্রাপ্তির কথা বলত। মূলত তারা দুদলই ছিল প্রেটেস্টান্ট। ক্যাথলিক পোপ কিংবা গির্জা মানত না। শেকিং কোয়েকারসরা আবার ফরাসী আধ্যাত্মিক দলের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। সেই ফরাসী রহস্যবাদীদের বলা হত কামিসার। কামিসারা বিশ্বাস করত- যিশূর ২য় আগমন নাকি দূরে নয় আসন্ন। এবং, যিশু পুরুষ বলে তাঁর ২য় আবির্ভাব হবে নারীরুপে! শেকিং কোয়েকারসরা এই দুটি বিশ্বাসই গ্রহন করে জর্জ ফক্স-এর কোয়েকার আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। জেন এবং জেমস ওয়ার্ডলি ছিলেন ইংল্যান্ডে শেকিং কোয়েকারস প্রবক্তা। তাদের বাড়িতেই নিয়মিত শেকিং কোয়েকারসরা সমবেত হত। প্রার্থনার সময় তারা ভীষন কাঁপত; গান গাইত; কর্কস গলায় চিৎকার করত আর নাচত। এসব কারণেই তাদের নাম হয়েছিল শেকিং কোয়েকারস! অ্যান লি জেন এবং জেমস ওয়ার্ডলির সংস্পর্শে এল। অ্যান লি নিজের জগৎ খুঁজে পেল। জেন এবং জেমস ওয়ার্ডলিও বুকে টেনে নিল অ্যান লিকে। অ্যানের লি-র মুখটি ছিল নমনীয় এবং অভিব্যাক্তিপূর্ন। গম্ভীর প্রশান্ত। দৃষ্টি ছিল তীব্র, তীব্র ও প্রবেষক। জেন এবং জেমস ওয়ার্ডলির মনে হল-এই সেই নারীরুপী যিশু নয় তো-যার অপেক্ষায় রয়েছে জগৎ। ওদিকে অ্যান লির বাবা অ্যান লিকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। মানুষের সমস্ত দুভোর্গের জন্য কামই দায়ী বলে মনে করত অ্যান লি। পন করেছিল বিয়ে করবে না। বাবা গায়ে হাত তুলল। এ আর নতুন কি। মেয়েবেলা থেকেই মার খেয়ে আসছে। মি: ষ্টানডেরিন ছিল বাবার বন্ধু। সেই অ্যান লিকে বিয়ে করতে চায়। যা হোক বিয়ে হল। দেখা গেল ষ্টানডেরিন লোক হিসেবে খারাপ না। অ্যান লিকে বোঝার চেস্টা করে। শেকিং কোয়েকারসদের সঙ্গে অ্যান লি-র ঘনিষ্টতা সহজ ভাবে নিয়েছে। বিয়ের পর পরপর ৪ সন্তান জন্মাল অ্যান লি-র। সবাই অল্প বয়েসেই মরে গেল। প্রবল অনুতাপে ভুগতে শুরু করল অ্যান লি।মানুষের সমস্ত দুভোর্গের জন্য কামই যে দায়ী-এই ধারনা তীব্র হচ্ছিল। তাঁর জীবনীকার লিখেছেন-The tragic experiences of these years not only undermined Ann's health, both physical and mental, but strongly conditioned her views toward sex and the institution of marriage. She saw the deaths of her children as a series of judgments on her ""concupiscence."" Fearing to stir up the affections of her husband ""she began to avoid her bed, as if it had been made of embers."" She was afraid to sleep lest she ""awake in hell,"" and night after night she walked the floor, ""laboring for a sense of the word of God."" স্বামীর সঙ্গে আর শোয় না অ্যান। বরং ধর্মকম্মে মন দিল অ্যান লি। অ্যান লি ততদিনে শেকারদের প্রভাবিত করতে শুরু করেছে। শেকাররা বিয়ের বিরুদ্ধে বলত। নারীরুপে বিশ্বাস করত। ম্যানচেস্টারের লোকজন শেকারদের উপরে ক্ষেপে উঠল। কর্তৃপক্ষ ভুরু কোঁচকাল। অ্যান লিই এসব আকথা-কুকথার হোতা। অ্যান লিকে গেরেপতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হল। কারাগারে দৈবীবানী এল। হ্যাঁ। ঈশ্বর সকন্টে বললেন- ""আমার কাছে সবাই সমান। একজন নারীও হতে পারে জগতের পতিত মানুষ সকলের উদ্ধারকর্ত্রী। তুমি তোমার আদিস্ট পথে নির্ভয়ে এগিয়ে যাও। মৃত্যুভয়ে ভীত হলো না।"" যথাসময়ে জেল থেকে বেরিয়ে এলেন অ্যান লি। বললেন, আমিই নারীরুপী যিশু। আমি কী বলি শোন। শোন, প্রথমে তোমরা শান্তিকামী হও। তারপর জাতিগত ও লৈঙ্গিক বৈষম্যবিরোধী হও। দাসতন্ত্রের বিরোধী। ধনের সমবন্টনও দাবী কর। কী ভয়ঙ্কর কথা! সম্পদের সমবন্টনের কথা বলে এই নারী! কাজেই অ্যান লিসমতে শেকারবিরোধীতা তুঙ্গে উঠল ম্যানচেস্টারসহ খোদ ইংল্যান্ডে। তখনই মার্কিন দেশে আসার কথা ভাবলেন অ্যান লি। ২ ১৭৭৪। মাত্র আটজন সঙ্গী নিয়ে আমেরিকার মাটিতে পা রাখলেন অ্যান লি। স্বামীও এসেছিলেন। স্বামীর সঙ্গে শুতে চান না। ফলে স্বামীর সঙ্গে তিক্ততা বাড়ছিল। Standerin had made one final attempt to coerce Lee into cohabitation by bringing a prostitute into their bedroom and threatening to marry her if Lee did not consent. When Lee refused to renounce her vows of celibacy, Standerin departed from her company. She never heard from him again. সঙ্গীদের নিয়ে ২ বছর নিউইয়কে থাকলেন অ্যান লি। ভয়ানক কষ্ট করলেন। নিউইয়র্কের লোকজন ক্ষেপে উঠল শেকারদের ওপর। বিয়েকে অস্বীকার করছে।একজন নারী হয়ে নিজেকে প্রফেট দাবি করছে। লোকজন তো ক্ষেপে উঠবেই। নিউ ইয়র্কে আর টেকা যাচ্ছিল না। ওদিকে ব্রিটিশদের সঙ্গে মার্কিনীদের যুদ্ধও আসন্ন। লোকেরা শেকারদের মনে করলটোরি । টোরি মানে ব্রিটিশদের প্রতি সহানুভূতিশীল। শেকারা আসলে কোনও দলেই ছিল না। এক শুভাকাঙ্খীর মারফত অ্যালবানিতে জায়গা কেনা হল । অ্যালবানি জায়গাটা নিউইয়র্কের কাছেই। অতি নিভৃত স্থান। ১৭৭৬ থেকে অ্যালবানির নিসকিয়ূনাতে বসবাস আরম্ভ করলেন মাদার অ্যান। ওখানেই শেকারদের প্রথম কমিউনিটি। যপরবর্তীকালে যার নাম হয়েছিল-the United Society of Believers in Christ's Second Appearing, নিউইয়র্ক থেকে সরে এসেও বিপদ কিন্তু ঘুচল না। শেকারদের বলা হল ব্রিটিশ চর। কয়েকজন শেকারকে আটক করে নিয়ে গেল কর্তৃপক্ষভ। যা হোক। শেকাররা নিরীহ বলে স্থানীয় জনগনের হস্তক্ষেপে ঘটনা বেশিদূর গড়ালো না। অ্যালবানিতে থিতু হওয়ার পর প্রাচারে নামলেন মাদার অ্যান। কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে ঘোড়ার পিঠে চেপে আশেপাশের অঞ্চলে ধর্মমত প্রচার করতে লাগলেন। অনেকেই গ্রহন করল। অনেকই গালিগালাজ করল। মারধোর পর্যন্ত করল। তবুও ম্যাসাচুসেটসসহ অন্যান্য অঞ্চলের লোকে তাদের কথা শুনল। মত গ্রহন করল। অবশ্য অত সহজে নয়। কয়েকজন শেকারকে চাবুক মারা হল। মাদার অ্যান কেও একদল উন্মুক্ত জনতা ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বার করে শারীরিকভাবে হেনস্তা করল। প্রচার কার্য শেষে অ্যালবানিতে ফিরে এলেন মাদার অ্যান। শরীর ভেঙ্গে আসছিল। সেপ্টেম্বর ৮; ১৭৮৪। জীবনে নানান কষ্টকর ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। এবার মুখোমুখি হলেন মৃত্যুর। Her final days had been spent sitting in her rocking chair ""singing in unknown tongues … and holy divested of any attention to material things."" Her disciples buried her in a simple wooden coffin, after a rousing Shaker celebration of her life and her passing into the realm of spirit. তাঁর দাবী যাই হোক- শান্তিকামী ছিলেন মাদার অ্যান লি। ছিলেন জাতিগত ও লৈঙ্গিক বৈষম্যবিরোধী; ছিলেন দাসতন্ত্রের বিরোধী। ধনের সমবন্টনও দাবী করেছিলেন মাদার অ্যান। ৩ শেকাররা আজও সাদামাটা জীবন যাপন করে অ্যালবানিতে; ওদের কেউই তেমন ব্যাক্তিগত সম্পদের অধিকারী নয়। ওদের কমিউনিটিতে ইলেকট্রিসিটি নাই, নিজেরাই পরিশ্রম করে। লাঙল দিয়ে জমি চাষ করে। শেকারদের ঘরদোর-সবই ছিমছাম। সাদামাটা। শেকারদের হাতের কাজ অসাধারণ। বিশেষ করে কাঠের চেয়ার। আগেই বলেছি। শেকারদের ধর্মসাধনায় সংগীত অপরিহার্য। এজন্য অসংখ্য গান কম্পোজ করে তারা। সেই সঙ্গে নাচ; উপাসনায় প্রয়োজন হয় গান। কখনও জোছনা রাতে শেকাররা আজও জড়ো হয় অরণ্যের কাছাকাছি কোনও মাঠে। আগুন জ্বালায়। গান গায়। হাত ধরাধরি করে নাচে। অনেক অনেক দূরের নক্ষত্রলোক থেকে সে অপার্থিব দৃশ্য দেখেন মাদার অ্যান। আরও জানার জন্য দেখুন- http://www.answers.com/topic/ann-lee সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৩৮",False ij,"বেদ প্রাচীন ভারত ভারতবর্ষের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো অতুলনীয়। আজ থেকে দু কি তিন হাজার বছর আগেও তো ভারতবর্ষের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিন্দুমাত্র অমলিন ছিল না। বরং আরও সমুজ্জ্বল থাকারই সম্ভাবনা। তখন তো কলকারখানা ছিল না। আকাশ ছিল নীলাভ ও নির্মল। মেঘেরাও। সে সময়ে শীতকালেও খুব বৃষ্টি হত নাকি। মনে হয়, ভারতবর্ষের প্রাচীন মানুষেরা প্রাকৃতিক শক্তি বা সৌন্দর্য দেখে নিশ্চয়ই অভিভূত হয়েছিল । আর ঋষিরা? ঋষিরা যেহেতু ব্যাতিক্রমী হৃদয়ের অধিকারী, কাজেই তারা সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ বা ভীত হয়ে গিয়ে রচনা করলেন মন্ত্র: যাকে সংস্কৃত ভাষায় বলা হয়, স্তোত্র বা সূক্ত। কাজেই প্রাচীন ভারতের ঋষিরা, সর্বমোট যে ২০,৩৭৯ টি সূক্ত রচনা করেছিলেন তারই সংকলনকে বলা হয় বেদ। কেননা বেদ-এ রয়েছে সর্বমোট ২০,৩৭৯টি মন্ত্র বা ঋক। প্রাচীন ভারতকে বলা হয় বৈদিক ভারত। ওই বৈদিক কথাটা এসেছে বেদ থেকেই। বৈদিক সমাজে দারুণ প্রভাব ছিল গ্রন্থটির। সহস্র মন্ত্রের সমষ্টি বলেই বেদ অনির্বায ভাবেই ধর্মীয় গ্রন্থ । প্রাচীন ভারতেই গ্রন্থটি রচিত ও সঙ্কলিত হয়েছিল আজ থেকে ৩ বা সাড়ে ৩ হাজার বছর আগে; গবেষকরা এমনই মনে করেন। দীর্ঘকাল বেদ বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। পরে বেদ সঙ্কলন করলেন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস। ইঁনিই রচেছিলেন মহাভারত। বেদ-এর ভাষা আদি সংস্কৃত। সাধারন মানুষ তো দূরের কথা; অতি শিক্ষিত পন্ডিতেও টীকাভাষ্য বাদে বেদ বোঝে না। সবচে ভালো টীকা নাকি লিখেছেন সায়নাচার্য। জানি না। আমি বেদজ্ঞ নই। তবে বেদ বোঝার জন্য টীকাভাষ্যের দরকার হয়। কেননা, বৈদিক যুগে একই শব্দের বিভিন্ন অর্থ হত। যেমন: “গো” শব্দের অর্থ হতে পারত জল রশ্মি বাক্য পৃথিবী গরু। মনে করা হয় যে যিশুখ্রিস্টের জন্মের ১৫০০ বছর আগে আর্যরা পারস্য হয়ে প্রাচীন ভারতে এসেছিল প্রাচীন । তার আগেই প্রাচীন ভারতে হরপ্পা ও মহেনজোদারো সভ্যতা প্রায় ধ্বংসের মুখে এসে পৌঁছেছিল। তো, আর্যরা প্রথমে ভারতবর্ষের পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে; আরও পরে তারা পূবের গাঙ্গেয় অববাহিকা অবধি পৌঁছেছিল। এভাবেই সূচিত হয়েছিল বৈদিক যুগের। বৈদিক ঋষিরা বেদ লিখেছিল ভোজ নামে এক ধরনের গাছের পাতার ওপর। এই ভূর্জপত্র বা ভোজ পাতাই হল প্রাচীন ভারতের প্যাপিরাস। সেই বৈদিক যুগেই গড়ে উঠেছিল বেদ-এর কনসেপ্ট। তো বেদের কনসেপ্ট বা বিষয় কি? বেদের কনসেপ্ট বা বিষয় হল দেবতা ও যজ্ঞ। দেবতা কি তা জানি। কিন্তু, যজ্ঞ কি? দেবতার উদ্দেশ্যে দ্রব্য ত্যাগই যজ্ঞ। বৈদিক যজ্ঞে নাকি রাশি রাশি কাঠ, মন মন ঘি পুড়ত। শত শত ছাগ, শত শত ষাঁর রীতিমতো বলি হয়ে যেত। বেদে নানা দেবতার কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন, অগ্নি ছিলেন বেদ-এর একজন প্রধান দেবতা।অন্য দেবতারা হলেন: বায়ূ জল সূর্য উষা পৃথিবী আকাশ। আগেই বলেছি, বৈদিক ঋষিরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গিয়ে রচনা করেছিলে স্তোত্র বা সূক্ত বা মন্ত্র। তো, তখনকার সমাজে লোকে বিশ্বাস ছিল যে বিশেষ উপায়ে এসব দেবদের ভজনা করলে সুখশান্তি মেলে; বিপদ ধারেকাছেও ঘেঁষে না, উপরোন্ত ধনবৃদ্ধি হয়। কী করে দেবদের ভজনা করা যায় সে পথ দেখাত বেদ। কাজেই বেদ ছিল বেস্ট সেলার। তবে গ্রন্থটি সবাই পাঠ করতে পারত না। কেবল ব্রাহ্মণরাই এটি পড়তে পারত ব্যাখ্যা করতে পারত; অন্যরা নয়। বৈদিক সমাজে তখন বর্ণপ্রথা ছিল। বৈদিক সমাজে সবচে নিচে ছিল শূদ্ররা। এরা আসলে ছিল আর্য-পূর্ব ভারতের অধিবাসী। আর্যরা এদের পরাজিত করে দাসে রুপান্তরিত করেছিল। শূদ্ররা বেদ শ্রবণ করলে বা শুনলে নাকি ওদের কানে গরম সিসা ঢেলে দেওয়া হত! তো বেদ কিন্তু একটি গ্রন্থ নয়। বেদ চারটি। যথা:ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ। বেদের মধ্যে ঋগ্বেদই প্রচীনতম। এর অধিকাংশ সূক্তেই বিভিন্ন দেবতার বর্ণনা ও প্রশস্তি লিপিবদ্ধ আছে। যজুর্বেদ গদ্যে লেখা এবং এটি দুভাগে বিভক্ত। শুল্ক ও কৃষ্ণ যজুর্বেদ; এতে নানা কাহিনী রয়েছে। যেমন গুরু বৈশম্পায়ণ ও শিষ্য যাজ্ঞবল্ক্যের কাহিনী আমরা যজুর্বেদ-এই পাই। শুল্ক যজুর্বেদ মন্ত্রের সঙ্কলন। আর কৃষ্ণ যজুর্বেদ এ মন্ত্র থাকলেও গল্প রয়েছে। এটিকে ভারতীয় পুরাণের উৎস বলা যেতে পারে। সামবেদ বিভিন্ন ঋষিরচিত সূক্তের সংকলন। এ জন্য এটিকে সামবেদ-সংহিতাও বলা হয়। এটি একটি সঙ্গীত গ্রন্থ। বৈদিক যজ্ঞে যে সঙ্গীতের প্রচলন ছিল তা সামবেদ থেকেই নেওয়া। সামবেদের ৭৫টি মন্ত্র বাদ দিলে বাকি সব সূক্ত ঋগ্বেদ থেকে নেওয়া। অথর্ববেদ: আগের বেদগুলার বিষয় ছিল কেবল মোক্ষ। অথর্ববেদ-এ মোক্ষ ছাড়াও ধর্ম অর্থ ও কাম বিষয় হিসেবে প্রযুক্ত হয়েছে। তা ছাড়া এটি ভারতীয় আয়ুবের্দ শাস্ত্রেরও উৎস। পাপক্ষয়, শক্রজয় বিষয়ক নানা বশীকরণ মন্ত্র রয়েছে এটিতে । সবচে বিস্ময় যে - অথর্ববেদ-এ রয়েছে আর্য ঐক্যের আহবান। অনার্যদের নিশ্চিহ্ন করার ইঙ্গিত! প্রতিটি বেদ কয়েকটি মন্ডল বা অধ্যায়ে বিভক্ত। মন্ডলে রয়েছে সূক্ত। প্রতিটি সূক্তে রয়েছে বেশ কটি ঋক বা মন্ত্র। আগেই একবার উল্লেখ করেছি, বেদে সর্বমোট মন্ত্রের বা ঋকের সংখ্যা ২০,৩৭৯। যা হোক। প্রাচীন বৈদিক সমাজেই বেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠেছিল। যিশুর জন্মের ৬০০/৭০০ বছর আগে বৈদিক সমাচে বেদবিরোধী প্রতিবাদী চিন্তাবিদের জন্ম হল। যেমন: চার্বাক মহাবীর বুদ্ধ। বৈদিকরা এদের বলল নাস্তিক। পরবর্তীকালে বেদবিরোধীরা ভারতবর্ষে টিকে থাকতে পারেনি। ওদের যথা সময়ে হটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভারতবর্ষ থেকে অন্যত্র পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছিল বৌদ্ধধর্ম। জৈনধর্ম কেবল ভারতবর্ষে আজও টিকে আছে; কারণ, ধর্মটি নানা বৈদিক আচারপ্রথা গ্রহন করেছিল বহুকাল আগেই। চার্বাক ঋষি কি বলেছেন না বলেছেন সে সব এখন পন্ডিতদের গবেষনার বিষয়। ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষ ওসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। কাজেই সংশয়ীদের হটিয়ে বেদ আবার ফিরে আসে। তাছাড়া বেদভিত্তিক ধর্মের উত্থান হয়েছিল খ্রিস্টীয় ষষ্টসপ্তম শতকে। ব্রাহ্মণ্যবাদী পৌরানিক ধর্মের উত্থান ঘটে তখনই। পৌরানিক ধর্মের ভিত্তি ছিল ভারতবর্ষের সমাজে প্রচলিত পুরাণ। আগেই বলেছিকৃষ্ণ যজুর্বেদ কে ভারতীয় পুরাণের উৎস বলা যেতে পারে। ভারতীয় সমাজে আজও বেদ-এর প্রাধান্য। তার কারণ বিশেষ উপায়ে দেবতার ভজনা করলে সুখশান্তি মেলে, বিপদ আসে না, ধনবৃদ্ধি হয়-ভারতের সাধারণ মানুষের এরকম বিশ্বাস। বেদের দেবতারা অপসৃত হয়ে গেছে কবে। তবে মূল কনসেপ্টটি আজও অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে- পূজো-অর্চনা করে দেবতাকে সন্তুষ্ট করা। বেদের প্রধানতম দেবতা ছিল অগ্নি; অগ্নির অর্চনা আজ ভারতবর্ষে কেউই করে না। নিজেদের জন্য অনিল আম্বানিরা ৬০ তলা ভবন নির্মান করলেও ভারতীয় সমাজে আজও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হয়নি। ভারত আজ চাঁদে রকেট পাঠালেও ভারতীয় সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে বিজ্ঞানের বিকাশ তেমন হয়নি। কাজেই বহুলপঠিত না হলে বেদ এখনও ভারতীয় সমাজে অপ্রতিরোধ্য গ্রন্থ হিসেবেই টিকে রয়েছে। এমন কী- পাকিস্থানি ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে জয়লাভের আশাতেও বেদপাঠ হয়! উৎস: ড. আর এম দেবনাথ রচিত সিন্ধু থেকে হিন্দু। নিচের লিঙ্কে বেদ-এর পুরোটাই পাবেন। অবশ্য ইংরেজিতে। http://www.sacred-texts.com/hin/ সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:২৯",False hm,"ভূতেন হাজারিকা অপ্রকাশিত লেখা। অপ্রকাশিত রাখলেই বোধহয় ভালো হতো, খুব একটা জুইতের হয় নাই। যাই হোক, মে ২৪, ২০০৪ লেখা গল্পের নিচে। ১. ‘বেশিদিন আগের কথা নয়, বুঝলি তো ---।’ আমরা ভালোভাবে কিছু বোঝার আগেই মামা একেবারে ক্ষেপে ওঠেন, লালনভক্ত সাধুর মতো বিড়ির গোড়ায় কষে দম দ্যান, আট কুঠুরি নয় দরজার প্রতিটি বর্গবিঘতে ধোঁয়া ছড়িয়ে দেবার লালসায়। তারপর তেমনি বাউলোচিত, রক্তিম ঢুলুঢুলু চোখে তাকান আমাদের দিকে। ‘বুঝলি কি না বল?’ আমাদের সন্দেহ হতে থাকে, নিশ্চয়ই সুরেশ কারিগরের সাথে মামার বিড়িবিনিময় ঘটেছে। সুরেশ ভর সন্ধ্যায় আর সিঙারা আলুপুরি ভাজে না, বরং উদ্ভট সব হিন্দুস্থানী সুর ভাঁজে, আর বড় তামাকের কল্কেতে প্রগাঢ় সব চুম্বন দেয়। তবে মামার গাঁজা খাওয়া-তে আমাদের আপত্তি নেই, গাঁজা ছাড়া গাঁজাগুরিগপ্পো না জমে ওঠে, না গেঁজে ওঠে। গাঁজার গুণে যদি গল্পে কিছু যোগ হয়, তাতে আমাদের কী ক্ষতি? কিন্তু আমাদের বোধনের সম্মতি বা অসম্মতির পরোয়া না করে চারপাশ ঘোলা করে দিয়ে ধোঁয়া ছাড়েন মামা, তারপর দরদভরা গলায় ডাকেন, ‘জুম্মন রে, পুরি লাগা বাপ!’ এমন কাতর স্নেহভরা স্বরে জুম্মনের মতো ঘাঘু বেলেহাজ পিচ্চি পর্যন্ত কাবু হয়ে যায়, বিদঘুটে হিন্দি সিনেমার গানে খ্যামা দিয়ে সে পুরি আনতে ছুটে যায়। কিন্তু পুরির আগমনের অপেক্ষা করেন না মামা, বিড়িতে আরেকটি টান দিয়ে শুরু করে দেন, তাঁর গুলন্দাজি। ‘ধর, তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। পড়ি মানে কি, মাত্র ক্লাস এইট টপকে নাইনের ঘরে পা দিয়েছি।’ মামা নস্টালজিয়া-জরজর এক দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, তার সাথে অনেক নষ্ট ধোঁয়া বেরিয়ে আসে। ‘ঈশশ, কিভাবে দিন কেটে যায় ---।’ আমি তাড়াতাড়ি বাগড়া দিই, নইলে গল্পটা কল্পলোকের চৌকাঠ পেরোতে পারবে না, সেই অখাদ্য নাইনের ঘরের চৌকাঠের ওপরই গোঁৎ খেয়ে পড়বে। ‘কী করলেন ক্লাস নাইনে উঠে?’ মামা আরো কাতর হয়ে পড়েন। ‘কত্তো কিছু ---।’ কিন্তু এবার শিবলি তেড়েফুঁড়ে ওঠে, ‘মামা, আমার টিউশানি ---।’ মামা শক্ত বেঞ্চে নেমে আসেন, অতীতচর্চায় ক্ষান্ত হয়ে। ‘তোরা বড় নিষ্ঠুর, বুঝলি? বুঝবি বুঝবি, আগে বড় হ, সুন্দর শৈশব পার হয়ে যাক?’ জুম্মন ঠকাস করে পুরির পেয়ালা টেবিলের ওপর রাখে, তারই একটা মুখে ঠুসে দিয়ে রেজা ফুঁসে ওঠে, ‘ক্লাস নাইনে ওঠার পরও আপনার শৈশব শেষ হয় নাই? আর কতো?’ মামা চটে ওঠেন, ‘চোপরাও! শিশুর জন্ম দেয়ার আগ পর্যন্ত সবাই শিশু, বুঝলি?  আর শৈশবের তোরা বুঝবি কী, জন্মেই তো বুড়ো হয়ে গিয়েছিস, এঁচড়ে পেকে গেছিস যতো সব গজা কাঁঠালের দল ---!’ কিন্তু শিবলি আবারো ডুকরে ওঠে শিশুর মতো, ‘আমার টিউশানি ...।’ অতএব, গল্পটাকে শুরু করতেই হয়। অবশিষ্টাংশ মামার নিজস্ব বচনামৃত। ২. বেশিদিন আগের কথা নয়, আমি তখন মাত্র ক্লাস নাইনে উঠেছি। উঠেই আমি হতবাক। এ যেন যাদু সীমের গাছ বেয়ে মেঘের রাজ্যে দৈত্যের বাগানে গিয়ে উঠেছি। ক্লাস নাইন তো নয়, যেন ওয়ান্ডারল্যান্ড, ঘরভর্তি উটকো উটকো সব গোবদা সব ছেলে, সব আমার সিনিয়র ভাই। কেউ এক বছরের, কেউ দুবছরের, কয়েকজনের চেহারা ছবি গার্জিয়ানদের মতো ভারিক্কি ... কি গোঁপ কি দাড়ি, কোনটারই কমতি নেই তাদের। আমার ক্লাসএইট-পর্যন্ত মেরেকেটে উঠে আসা ক্লাসমেটগুলো অনেকেই ফাইন্যালে ফান্টুশ হয়ে গেছে, আমি অল্প কয়েকজন সৌভাগ্যবানের মধ্যে একজন। একদিন পরই টের পেলাম, বরে শাপ হয়েছে, সৌভাগ্য নয়, দুর্ভাগ্যের দোলনায় চড়েই এই ক্লাসে এসে পড়েছি আমি। সিনিয়র ভাইগুলো সব বদ আর বখা, সবার পকেটে বিড়িসিগারেটের বিপুল মজুদ, দুবছুরে এক ফেলবিশারদ তো চুরূট খেতো --- তার চুরূট নাকি সব বার্মা থেকে সাম্পানে করে চট্টগ্রামে চোরাচালান হয়ে আসে, বলতো সে, সেই বর্মী মার্কার চুরূট ছাড়া অন্য কিছু রুচতো না তার। তবে বখা হলেও বেশির ভাগের সাথেই আমার খাতির ছিলো, তারা আমাকে মোটেও ঘাঁটাতো না। কিন্তু ক্লাস নাইনে যারা অভিজ্ঞ, অর্থাৎ কমপক্ষে দুবছর ধরে আছে, তারা ছিলো ভীষণ। একেবারে টাইরান্ট। সবচেয়ে সিনিয়ার ছিলেন মজনু ভাই, তাঁকে ডাকতে হতো মজনু ওস্তাদ বলে, কারণ তিনি বাজারের পাশে পোড়ো জমিটায় ভোরবেলা কুংফু শেখাতেন। বিভিন্ন ক্লাসেই একাধিকবছর কাটিয়ে এখন তিনি দুটি বছর জিরোচ্ছেন। ভয়ানক ঘাড়েগর্দানে চেহারা, একদিন শেভ না করলেই চম্বলদস্যু বীরাপ্পনের মতো লাগতো দেখতে, রদ্দা মেরে চেয়ারটেবিল ভেঙে ফেলা ছিলো তাঁর কাছে নস্যি, আমাদের পলকা ঘাড় দেখে তিনি তো হেসে লুটোপুটি, বলতেন টোকা মারলেই চুরমার হয়ে যাবে। আমরাও তা-ই ভাবতাম। যাকগে, ঠিক হলো, তার বিভিন্ন ফরমাশ আমাদের খেটে দিতে হবে। কাজেই দেখা গেলো, শফি তার চুল টেনে দিচ্ছে আর ঘাড় ম্যাসাজ করে দিচ্ছে  মজনু ওস্তাদ তাকে ডাকতেন ডলামাস্টার, খোরশেদ তার জন্যে বিরাট একটা ফ্লাস্কে পানি বয়ে বেড়াতো --- খোরশেদের নাম হয়ে গেলো পানিবর্দার, ভালো ছাত্র বিকাশ তার হোমওয়ার্ক করে দিতো ... সেজন্যে বিকাশ হলো কামেল-বান্দে, বড়লোকের বাছা ইসমাইল তার বিড়ি আর চায়ের পয়সা দিতো, দিতে হতো, কারণ মজনু ওস্তাদ, যে কি না বিড়ির চেয়ে হুঁকা টানতেই বেশি পছন্দ করতেন, প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিলেন, পয়সা না দিলে তিনি ঘর থেকে তাঁর পেতলের হুঁকামোবারকটিকে স্কুলে এনে দারোয়ানের ঘরে রেখে দেবেন, আর ইসমাইলকে ঐ জগদ্দল হুঁকায় রোজ পানি পাল্টাতে হবে, টিকে সাজাতে হবে, প্রয়োজনে কল্কে আর ডাব্বা দুটিকেই ছাই দিয়ে মেজেঘষে আয়নার মতো পরিষ্কার করতে হবে, সর্বোপরি হুঁকাখানা সেই সুদূর দারোয়ানের ঘর থেকে এই পালোয়ানের হাতে বয়ে এনে দিতে হবে, এবং এই কর্তব্যে অস্বীকৃতি তো দূরে থাক, তিলেকমাত্র অবহেলা প্রদর্শনের শাস্তি হবে কবরের আযাবের চেয়ে বীভৎস, বিশ্বাস না হলে বিগত পাঁচ বছরে মজনু ওস্তাদের হাতে প্রহৃত, কাম্পুচিয়ান মার্শাল আর্টের নৃশংস শিকার ব্যক্তিবর্গের নামধামের হৃষ্টপুষ্ট তালিকা অনুসরণ করে সরজমিন দেখে আসুক ইসমাইল, তারা কিভাবে বেঁচে আছে, তাদের বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে ---। কাজেই ইসমাইল বিনা বাক্যব্যয়ে, কেবল একটি ঢোঁককে সাফল্যের সাথে গিলে ফেলার মাধ্যমে আলাপগত সৌজন্য রক্ষা করে তৎক্ষণাৎ তার জন্যে প্রকৃষ্ট বিকল্প, অর্থাৎ তামাক ও চায়ের ব্যয়বহনে রাজি হয়ে গেলো, কারণ কবরের আযাব সম্পাদনের দায়িত্বও যে মজনু ওস্তাদ ভালোভাবেই পালন করতে পারবেন সে ব্যাপারে তার দ্বিমত ছিলো না। ইসমাইলের জন্যে একটা চলনসই ভালো নাম আমাকেই মজনু ওস্তাদ বেছে দিতে বলেছিলেন। অনেক নামই আমি দিয়েছিলাম, যেমন গৌরীসেন, চায়তৈয়ারি, টামুকখামু --- কিন্তু ওস্তাদ নিজেই আলগোছে স্নেহবশে ইসমাইলের নাম রাখলেন হুক্কু। হুঁকাবর্দারের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ আর কি। তোরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস, আমি মজনু ওস্তাদের বিশেষ স্নেহের পাত্র ছিলাম। আমার নাম তিনি দিয়েছিলেন, গবুচন্দ্র, অনেক সুমন্ত্রণা আমি তাঁকে যুগিয়েছি। এই স্নেহের কারণ আর কিছুই না, আমার এক মামা ছিলেন তৎকালীন থানাদার, দোর্দন্ডপ্রতাপ দারোগা, এবং এই তথ্যটিকে আমি সুকৌশলে যথাক্রমে বাতেনী ও জাহেরী পন্থায় ব্যবহার করতাম। বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে কতকিছু করতে হয়! ... দীর্ঘশ্বাস ... যা বলছিলাম, পড়াশোনায় মজনু ওস্তাদ অত্যন্ত পশ্চাদপদ ছিলেন, ক্লাসে তার পদটিও ছিলো একেবারে পশ্চাতে, খেলাধূলাতেও তিনি খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি, কারণ খেলাধূলায় মারামারি অনিবার্য, এবং তাঁর সেই অজেয় কাম্পুচিয়ান কুংফুর ধার বা ভার সহ্য করার মতো লোকজন আদপেই স্কুলে ছিলো না, আর তিনিও নিজেকে অ্যাটেম্পট-টু-মার্ডারের মামলায় ফেঁসে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্যে এসব এড়িয়ে চলতেন। কিন্তু মজনু ওস্তাদ ছিলেন একজন সুদক্ষ স্কাউট। তিনিই ছিলেন আমাদের সিনিয়ার প্যাট্রল লিডার। আর, আমাদেরকেও বাধ্য হয়েই বুড়ো বয়সে স্কাউটিং শুরু করতে হয়েছিলো, কারণ স্কুলে যতক্ষণ মজনু ওস্তাদ থাকবেন, ততক্ষণ আমাদেরও তাঁর ডিউটি দিতে হবে। তাই আমরাও খাকি হাফপ্যান্ট পড়ে কুচকাওয়াজ করতাম। আর শিগগীরই আমাদের বিপদ ঘনিয়ে এলো। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ স্কাউট ক্যাম্প পড়লো করিমগঞ্জে। করিমগঞ্জ কোথায় জানিস? আসামে! হুমম! ... এতে বিপদের কী আছে বুঝিসনি? বুঝবি। স্কুল থেকে আমাদের পাঁচজনের একটা টীমকে সেই ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করতে হবে। বাঘা বাঘা দু’জন স্কাউটের সাথে আমাকে আর শফিকেও টীমে ঢুকিয়ে দিলেন মজনু ওস্তাদ। কারণ আমার মন্ত্রণা তাঁর দরকার ছিলো, আর শফি তাঁর ডলামাস্টার ...। এখন সমস্যা হচ্ছে, শফিও পালোয়ান টাইপ ছেলে, আমাদের ফুটবল টীমের ব্যাকে খেলে। আর আমি নিতান্ত প্যাকাটি। নানা মন্ত্রণাদানে আমি যত সিদ্ধ, স্কাউটিঙের শ্রমবহুল কীর্তিকলাপে আমি ততটাই কাঁচা। কিন্তু মজনু ওস্তাদ পরিষ্কার হুমকি দিলেন, ক্যাম্পে না গেলে ফিরে এসে আমার কপালে পূর্বোক্ত আযাব প্রয়োগ করা হবে। কাজেই বাড়ি থেকে অনুমতি নিয়ে কম্পিতচিত্তে একদিন আমি দলের সাথে সিলেট সীমান্ত পার হয়ে করিমগঞ্জ পৌঁছলাম। স্কাউট ক্যাম্পের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আমি আর অযথা গল্পের পিঠে বোঝা চাপাতে চাই না, কিন্তু নানা রকম অমানুষিক খাটনি --- অন্তত আমার মতো মানুষের জন্যে --- করতে হলো। আমার টীম, এবং অন্যান্য টীমের ছেলেপেলে, তাদের মধ্যে ক্ষুদে কিছু বিচ্ছুও আছে, একেবারেই নির্বিকার। আর ওদিকে সন্ধ্যাবেলা আমার গায়ে তীব্র টনটনানি। শুতে হতো একটা শক্ত কম্বলগোছের জিনিসের ওপর, সেটাও আবার উঁচুনিচু বন্ধুর, কাজেই আরাম করে ঘুমানোও যেতো না। অন্ধকারের মধ্যে বিউগল বাজিয়ে জাগানো হতো আমাদের, বিচ্ছিরি সব অহমিয়া নাস্তা --- যেগুলো কেবল আসামীরাই হজম করতে পারে --- খেতে হতো, আর সেই খাটনি তো আছেই। তাঁবুতে ফিরে একেবারেই বেতাব হয়ে পড়তাম ঘুমানোর জন্য। আর তখন হেমন্তকাল, কিন্তু করিমগঞ্জের সেই মাঠে পড়তো হাড় কাঁপানো শীত, মাথাটাই জমে যেতো একেবারে! আমাদের ড্রিল টীচার জিল্লুর স্যার এসেছিলেন আমাদের সাথে, তিনি শুধু বসে বসে ঝিমুতেন, ফুড়–ৎ ফুড়–ৎ চা খেতেন আর আরাম করতেন। তারপর একদিন শুনলাম, জঙ্গলের মধ্যে আমাদের একশো মাইল দৌড়াতে হবে। যে টীম সবার আগে পৌঁছুতে পারবে, তাদের জন্যে থাকবে বিশাল পুরস্কার! এই ক্যাম্পে কেবল কয়েকটা বাছা বাছা টীমই অংশগ্রহণ করেছিলো, বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিলো মাত্র চার পাঁচটা দল, যার জন্যে খুব একটা ভিড় হয়নি। কম দৌড়ে কর্তৃপক্ষকে দুগগি দেয়ারও উপায় ছিলো না, কারণ স্টার্টিং পয়েন্ট থেকে শুরু করে পঞ্চাশ মাইল দূরে দূরে একেকটা পোস্টে গিয়ে রিপোর্ট করে ফিরে আসতে হবে। আসার সময় নমুনা হিসেবে টোকেন নিয়ে আসতে হবে সাথে করে। বড় হ্যাপা। মজনু ওস্তাদ এসে হৃষ্ট গলায় বললেন, ‘ট্রফিটা অত্যন্ত জোশ। ওটা আমাদেরই জিততে হবে। আপসোস, অন্য দলের ছেলেপিলেগুলোকে রদ্দা মারা নিষেধ, মারলে ডিসকোয়ালিফায়েড হয়ে যাবো। কাজেই সৎ পথে দৌড়েই আমাদের এই ট্রফি হাসিল করতে হবে। বুঝলি তো সবাই?’ শফি খুব গম্ভীর হয়ে আমাকে দেখিয়ে বললো, ‘এই ছাগলটা হাঁপিয়ে পড়বে। পদে পদে ওর জন্য থামতে হবে। ওর জন্যেই হারবো আমরা।’ আমি প্রতিবাদ করলাম না। কথা সত্য। কিন্তু একটি ভীষণ ভ্র“কুটি দিতে কার্পণ্য করলাম না, ভুরু জোড়া নইলে আছে কী করতে? মজনু ওস্তাদ দাঁত বের করে বললেন, ‘আমাদের ট্র্যাক পড়েছে নর্থ কাছাড়ের পাহাড় আর ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। পিছিয়ে পড়লে ওকে সাপে কাটবে, নয়তো বাঘে খাবে। আর তাঁবু থাকবে আমার কাছে। কাজেই আমাদের কোন চিন্তা নেই, ও নিজের তাগিদেই আমাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে।’ আমার সাথে মিশে মিশে মজনু ওস্তাদের বুদ্ধি কত ধারালো হয়েছে দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। আর নিজের তীক্ষ্ণ আক্ল এর ওপর আমার রাগ হতে থাকে। যা বলছিলাম, আমাদেরকে বিশাল পথ বাসে চাপিয়ে উত্তর কাছাড়ের সেই বিদঘুটে ট্র্যাকের কাছে নিয়ে আসা হলো। মোট আটাশটা দল এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, প্রতিটি দলের রুট আলাদা, প্রত্যেকের পোস্ট ও টোকেন নম্বর আলাদা, যাতে কোন ঝামেলা না হয। আর প্রতিটা রুটই রেললাইনের কাছে, যাতে কোন সমস্যা হলে রেল লাইন বরাবর গিয়ে নিকটস্থ স্টেশনে রিপোর্ট করা যায়। কিন্তু বিদঘুটে চেহারার পাহাড় আর ঘন জঙ্গল আছে এখানে, এবং জঙ্গলের মধ্যে যেসব জীবজন্তু থাকে তারা খুব একটা বন্ধুবৎসল নয়। একশো মাইল টানা দৌড়ানো সম্ভব নয়। আমাদের কাঁধে আবার যৎকিঞ্চিৎ বোঝাও চাপানো আছে। কাজেই জোরে হাঁটাই আমাদের টার্গেট। কাজেই পরদিন ভোরে সেই কাছাড়ি ক্যাম্প থেকে দরূদ পড়তে পড়তে বের হলাম আমরা। সবার কাঁধে বোঝা, হাতে খাটো লাঠি। সেই বিচ্ছিরি ট্র্যাকে চলার অভিজ্ঞতা নিয়েও বেশি কিছু বলবো না, শুধু বলবো যে এমন বিশ্রী ঘন জঙ্গল, আর এমন বিদঘুটে চেহারার পাহাড় আমি আগে কখনো দেখিনি। পিছিয়ে পড়া তো দূরের কথা, হাঁপাতে হাঁপাতে নিজের ফুসফুসটা জিভ দিয়ে ভেতরে ঠেলে রেখে আমি দলের বাকি চারজনের সাথে পা মিলিয়ে পঞ্চাশ মাইল পাড়ি দিলাম। আমাদের সময় লেগেছিলো দেড়দিন, এক রাত আমরা একটা গ্রামে থেকেছি, আগে থেকেই আমাদের ভালো করে ম্যাপ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিলো। ঐ গ্রামের লোকজনও খুবই ভালো, তাদের কল্যাণে আমরা নিখরচায় বেশ উমদা নিরামিষ জলযোগ করেছিলাম। আর আসামের মেয়েরাও বেশ রূপবতী, বুঝলি --- যাই হোক। ফিরে আসার সময় মজনু ওস্তাদ এক কান্ড বাধিয়ে বসলেন। পোস্টে রিপোর্ট করে টোকেন নিয়ে আমরা বেশ সাঁটিয়ে বনমুরগির ঝোলঝাল দিয়ে ভাত খেয়েছিলাম, তাই পেটে ভালোমন্দ পড়ার পর মজনু ওস্তাদ স্বরূপে আবির্ভূত হলেন। ‘এদের দেখিয়ে দিতে হবে, যে আমরা বাঘের জাত। এই ট্রফি আমাদের জিততেই হবে। পোস্ট থেকে আমাদের বলা হয়েছে, আমরা গত বছরের টীমের তুলনায় বেশ জলদি জলদি এসে পৌঁছেছি। কাজেই যদি জলদি জলদি পা চালিয়ে যেতে পারি, এই ট্রফি আমাদেরই হবে। কাজেই বান্দারা, আমরা এখনই পা চালাবো, আর সারা রাত হাঁটবো!’ স্বাভাবিকভাবেই আমি প্রতিবাদ করলাম, আমার ভবিষ্যত ঘুমের বিপদ আঁচ করে, চিঁ চিঁ করে বললাম, ‘গত বছরের লেট লতিফ টীমটা যে বাংলাদেশ থেকে আসেনি, তার কী প্রমাণ?’ মজনু ওস্তাদ বললেন, ‘তাতে কিছু আসে যায় না।’ ‘বাঘের জাতের লোক যদি রাতবিরাতে জঙ্গলের মধ্যে পা চালিয়ে যাবার সময় বাঘের পেটে যায়, সেটা কি ভালো দেখাবে?’ এবার শফি বলে। বাকি দু’জন, ঘাগু ট্রেকার, তারা চুপ করে তর্ক শোনে। কিন্তু মজনু ওস্তাদ হাসেন। ‘বাঘ? আসুক বাঘ, লাগাবো এক থাপ্পড়!’ বাঘকেও তিনি তাঁর পূর্বোক্ত আযাবভোগী লোকজনের লিস্টে ফেলতে চান। কাজেই এরপর আর তর্ক চলে না, একটা ঢেঁকুর দিয়ে মজনু ওস্তাদ পা চালাতে বলেন। এবার আমরা পাহাড় ধরে নামছি, কাজেই সবার চলার গতি আগের তুলনায় দ্রুত। বিকেল নাগাদ আমরা সেই গতরাতের গ্রামটাতে এসে পৌঁছলাম। আমি করুণ চোখে আমাদের তাঁবুর জায়গাটা একবার দেখে নিয়ে জোরসে পা চালালাম, কারণ দেরি হলে আমাকে ফেলেই বাকি চারজন ছুট লাগাবে। সারারাত ধরে হাঁটার সেই বীভৎস অভিজ্ঞতা বিস্তারিত শুনলে তোরা ভয় পাবি, তাই অল্প কথায় বলছি, সে ছিলো এক আযাবের রাত! শবে আযাব বলতে পারিস। চাঁদের আলোয় পথ চলছি আমরা, কোথাও খাদের পাশ দিয়ে, কোথাও ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চলেছে সে পথ। দূরে হাতি ডাকছে, শেয়াল ডাকছে, আর আমরা প্রায় ছুটছি। পেঁচার ডাক শুনে একবার গাছের দিকে তাকিয়ে তো আমার আত্মা ফুরুৎ হওয়ার শামিল, দেখি গোল গোল দুটো চোখ কাবাবের কয়লার মতো জ্বলছে!  ভয় পেলি? আচ্ছা থাক, আর বলবো না। তবে যে কথাটা না বললেই নয়, সেটা হচ্ছে, ভোর হবার সাথে সাথে আমরা একটা পাহাড় থেকে খানিক সমতলে নামলাম, আর ওখানেই শফি পা মচকালো। মজনু ওস্তাদ বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘ধ্যৎ, পা ভাঙার জায়গা পেলি না আর?’ ‘ভেঙে গেছে? অ্যাঁ?’ শফি ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললো। ‘চোপ! ভাঙেনি, মচকেছে। এখন এই খোঁড়া বলদটাকে নিয়ে কী করা যায়?’ বলে মজনু ওস্তাদ আমার দিকে ফেরেন। ‘গবুচন্দ্র, বুদ্ধি বাতলাও!’ আমি খুবই প্রতিশোধপরায়ণ বালক ছিলাম। গম্ভীর গলায় বললাম, ‘এই ছাগলটা হাঁপিয়ে পড়বে। পদে পদে ওর জন্য থামতে হবে। ওর জন্যেই হারবো আমরা।’ শফি চোখ মুছে সেটাকে খানিকটা করুণরসে সিক্ত করে আমার দিকে তাকালো, আমি মোটেও পাত্তা দিলাম না, আমার সেই আগের ভ্রুকুটি ভুরুজোড়ায় আমদানি করে আরেকদিকে তাকিয়ে রইলাম। এতক্ষণে সেই বাকি দুই ঘাগু স্কাউট, যমজ ভাই, দিলদার আর গুলশান মুখ খুললো। ‘থোন এই হালারে এই গাছের বগলে ফালায়া। আগে জিতি, পরে আইসা অরে লয়া যামুগা।’ শফি একেবারে মিসেস সিরাজুদ্দৌলার মতো চেঁচিয়ে কাঁদতে থাকে, আর মজনু ওস্তাদ মোহাম্মদী বেগের মতো একটা মুচকি হাসি দ্যান। ‘ভালো বুদ্ধি!’ এই বলে তিনি শফিকে অনায়াসে বগলদাবা করে একটা গাছের নিচে নিয়ে যান। ‘এইখানে তোকে তাঁবু খাটিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। চুপচাপ শুয়ে ঘুমিয়ে পড়। চেঁচামেচি করে বাঘভাল্লুক ডেকে আনিস না। আমরা আগে ট্রফিটা জিতে নিই, পরে তোকে নিয়ে যাবো। আর যদি দেখিস দেরি হচ্ছে, তাহলে পা চালিয়ে চলে আসবি। ভয়ের কিছু নেই, বিপদ দেখলেই গাছে উঠে পড়বি --- তবে দেখিস, ভালুক হলে ঝেড়ে দৌড় লাগানোটাই ভালো ---।’ শফি অনেক প্রতিবাদ করে, কিন্তু দিলদার আর গুলশান ততক্ষণে তাঁবু খাটানোর কঞ্চি কাটার জন্যে ভোজালি বের করে ফেলেছে। সেটা দেখেই শফি চুপ করে যায় বুদ্ধিমানের মতো, কারণ দিলদার এক বছর মজনু ওস্তাদের কাছে কুংফু শিখেছে, আর তার মেজাজটাও সুবিধার না। কোপটোপ বসিয়ে দিলে আরো ল্যাঠা। কিন্তু আমাদের সব আয়োজন স্তব্ধ হয়ে যায় একটা দৃশ্য দেখে। গাছের গোড়ায় পৌঁছুতেই আমরা দেখি, আমাদের দিকে পেছন ফিরে একটা ঝোপের দিকে ঝুঁকে আছে একজন মানুষ, পরনে একটা চাদর আর ধুতি। কী যেন খুঁজছেন তিনি। আর কী তাজ্জব, বাম হাতে নিজের পশ্চাদ্দেশ, অর্থাৎ ঠিক যে অংশটায় লাথি মেরে আরাম পাওয়া যায়, সেই মহার্ঘ্য স্থানটিকে পরম যত্নে মালিশ করে যাচ্ছেন ভদ্রলোক। মজনু ওস্তাদ একটা কাশি দেন, আর লোকটা পেছন ফিরে তাকায়। তখন আমরা বুঝতে পারি, লোকটা বেশ বুড়ো। সারা মুখে পাকা দাড়ি, চোখে ঘোলা চশমা। ঝামেলা হলো, অহমিয়া ভাষা আমরা কেউ বলতে পারি না, যদিও অল্প অল্প বোঝা যায়। তাই কী বলবো বুঝতে না পেরে আমরা একে অপরের দিকে তাকাই। মজনু ওস্তাদ ফিসফিসিয়ে বলেন, ‘গবুচন্দ্র, জিজ্ঞেস কর তো, এখানে আশেপাশে বাড়িঘর আছে কি না?’ আমি ঘাবড়ে গিয়ে বলি, ‘আমি কিভাবে বলবো?’ মজনু ওস্তাদ দাঁত খিঁচিয়ে একটা রদ্দার ভঙ্গি করেন, অর্থাৎ কিভাবে বলবো সেটা আমার হ্যাপা। কিন্তু লোকটাই সব কাজ সহজ করে দেয়, কুঁজো হয়েই এগিয়ে এসে পরিষ্কার বাংলায় বলে, ‘গবুচন্দ্র? হুম, বাঙালি নাকি?’ আমরা খুশি হই, শুধু আমিই আমার মজনুদত্ত নামটিকে অপ্রমাণ করতে চাই। কিন্তু শফি বলে ওঠে, ‘হ্যাঁ! আপনিও বাঙালি?’ বুড়ো মাথা নাড়েন। ‘না। আমি আসামের লোক, তবে বুঝতেই পারছো, বাংলা জানি। আমার নাম ভূতেন হাজারিকা।’ --- কি হলো, এমন করছিস কেন? আসামের লোকজনের নাম এমনই হয়। --- উঁহু, ভূপেন নয়, ভূতেন। ভূতেন হাজারিকা। আমরাও প্রথমটায় একই ভুল করেছিলাম। যাই হোক, গল্পটা শোন। --- আমি বিনীত গলায় বলি, ‘ইয়ে, আমরা স্কাউট। আমাদের একজন আহত। এখানে কি আশে পাশে ঘরবাড়ি আছে?’ বুড়ো খানিক ভেবে বলে, ‘অ্যাঁ? না বোধহয়, চোখে তো পড়েনি। আর ঠিক বলতে পারি না, বুঝলে, আমি তো আসলে এই এলাকার লোক না।’ আমার কৌতূহল মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। বলি, ‘তাহলে কী করছেন এখানে?’ ‘খুঁজছি একটা জিনিস।’ মলিন গলায় বলে বুড়ো। আমরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করি। কী খুঁজছে বুড়ো, এই ভোরবেলায়? আশেপাশে কোন বাড়িঘর নেই, চারদিকে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। বুড়ো এলোই বা কোথা থেকে? ‘হুম! তোমাদের আগ্রহ টের পাচ্ছি। হাতে সময় থাকলে বসো, বলছি কী খুঁজছি। যেন তেন জিনিস তো নয়! তেমন হলে কি আর সেই বেয়াল্লিশ সাল থেকে খুঁজি?’ ও বাবা! প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে খুঁজছে বুড়ো? গুপ্তধন নাকি? আমি প্রশ্নটা জোরেই করে ফেলি। বুড়ো হাসে। ‘হ্যাঁ, তা বলতে পারো। বেশ গুপ্তই ছিলো।’ আমরা সারারাত পাহাড় ভেঙে ভেঙে কাহিল হয়ে গিয়েছিলাম, তাই সবাই গাছতলায় বসে পড়ি, ট্রফির কথা ভুলে গিয়ে। গুপ্তধন যদি ইত্তেফাকন মিল ভি যায়ে, তাহলে তো কেল্লা ফতে! বুড়ো দাঁড়িয়েই থাকে, আর আনমনে নিজে পেছনে হাত বোলাতে থাকে। তারপর উদাস গলায় বলে, ‘এইখানে, বুঝলে, সেই বেয়াল্লিশ সালের এক রাতে, আমি আর আমার বন্ধু ঐ পাহাড়টার ওপরের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম!’ বলে আঙুল তুলে আমাদের টপকে আসা পাহাড়টার উল্টোদিকের দানবমার্কা খাড়া পাহাড়টার দিকে দেখায় সে। ‘নিচ থেকে দেখলে বুঝবে না, কিন্তু ঐ পাহাড়টার চূড়ো থেকে একটু নিচে মোটর চলার রাস্তা আছে। তখনও ঐ রাস্তাটা ছিলো।’ শফি বলে, ‘আপনি আর আপনার বন্ধু মোটর চালিয়ে যাচ্ছিলেন?’ অমনি বুড়ো হেসে ফেলে। ‘হ্যা হ্যা হ্যা  ভারি মজার কথা বললে তো তুমি? আমার বন্ধু, মহেন্দ্র খিটকেলকে চিনলে আর এ কথা বলতে না। সে শুধু আমার বন্ধুই ছিলো না, সে ছিলো আমার একমাত্র বন্ধু, আমার ব্যবসার পার্টনার, এবং আমার ভায়রা। আমি তাকে হাড়ে হাড়ে চিনি। তার মতো বজ্জাত, কমবখত, উদখুল আমি আর দুটো দেখিনি। --- আর, সে ছিলো খুনী, এক নম্বরের মিথ্যাবাদী ও কঞ্জুষ। মোটর কেন, এরোপ্লেন কেনার সামর্থ্যও তার হতো, যদি না সব টাকা সে মদ আর মেয়েমানুষের পেছনে খরচ না করতো --- তবুও তার হাতে টাকা পয়সা কম ছিলো না, কিন্তু সে চলতো একটা একঘোড়ার গাড়িতে। সেটাতে চড়েই আমরা দুজন ঐ রাস্তা ধরে চলছিলাম।’ আমরা রোমাঞ্চিত হই এই গল্প শুনে। শফি বলে, ‘রাতের বেলা কেন যাচ্ছিলেন?’ বুড়ো মাথা নাড়ে। ‘বিপদে পড়ে। আমরা দুজনেই কাঠ আর মধুর ব্যবসা করতাম, সেই উত্তর কাছাড়-নগাঁও পেরিয়ে ব্রহ্মপুত্রের কাছে। ভয়ানক বিচ্ছিরি জঙ্গল ছিলো তখন এদিকটায়।’ ‘কী বিপদে পড়েছিলেন?’ জানতে চান মজনু ওস্তাদ। ‘এক মাড়োয়ারির পোষা গুন্ডারা আমাদের খুন করার জন্যে খুঁজছিলো।’ বিমর্ষ গলায় বলে বুড়ো। ‘তাই ব্রক্ষপুত্র ধরে পালাতে না পেরে সেই ঘন জঙ্গলের মধ্যে করা নতুন রাস্তা ধরে আমরা পালাচ্ছিলাম। সিলেট হয়ে চট্টগ্রামে যাওয়ার ধান্ধা ছিলো আমাদের, করাচীর জাহাজ ধরার জন্যে।’ আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনি। কিন্তু মজনু ওস্তাদ সেই মারোয়াড়ির পোষা গুন্ডাদের ওপর চটে যান। ‘কেন আপনাদের খুন করতে চাইছিলো?’ জানতে চান তিনি, রীতিমতো বিরক্ত গলায়। ‘চাইবে না কেন? সেই মারোয়াড়ি ছিলো আমাদের ব্যবসার পার্টনার। কথা ছিলো, আমরা খাটবো, আর সে খাটবে না, বরং খাটাবে, টাকা খাটাবে আমাদের ব্যবসায়, লাভের তিনভাগের একভাগ সে নেবে। কিন্তু ব্যাটা বিবেকরাম তলে তলে অর্ধেকের বেশি গাপ করে নিতো। তাই আমার বন্ধু, মহেন্দ্র, একদিন ক্ষেপে গিয়ে, বুঝলে, গলা পর্যন্ত মদ গিলে --- পিপে পিপে মদ খেতে পারতো মহেন্দ্র --- একটা হাতি মারা বন্দুক নিয়ে গেলো বিবেকরামের বাড়িতে। মহেন্দ্র অবশ্য চুরি করে হাতিও মেরেছে বিস্তর, ওস্তাদ শিকারী ছিলো সে, সেগুলোর দাঁত আমরা চট্টগ্রামে পাচারও করতাম।’ আমরা একে অপরের মুখ দেখি। বুড়োর ব্যবসা খুব একটা সুবিধের ছিলো না তাহলে! ‘আমাদের ব্যবসাটাও,’ যেন আমাদের ভাবনা বুঝতে পেরেই বলে বুড়ো, ‘খুব একটা সুবিধের ছিলো না। যে কাঠ আর মধু আমরা চালান দিতাম, সেগুলো যেসব গাছ থেকে আসতো, সেই গাছগুলোই এর জন্যে দায়ী, বুঝলে? সেই গাছগুলো ছিলো ফিরিঙ্গি ফরেস্ট্রির জমিতে। কিন্তু ওরকম বাছা বাছা সেগুন আর মেহগনি, আর ওরকম চোস্ত মধু তো ফেলে রাখা ঠিক না। তাই আমরা লোক লাগিয়ে সেগুলো একটু চুপচাপ কেটে নিয়ে আসতাম --- কাঠ মধু সব --- হাঙ্গামা হলে দু’চারটে গলাও কাটতে হতো। তাই বিবেকরাম --- নামেই বিবেকরাম ছিলো ব্যাটা, কিন্তু বিবেক বলে ওর কিছু ছিলো না --- আমাদের মিষ্টি কথায় ভয় দেখিয়েছিলো, ট্যাঁফোঁ করলে সে আমাদের ইংরেজ পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেবে। থানাদাররা সব ওর কথায় উঠবস করতো, জানোই তো পুলিশ কেমন ঘুষখোর, তাই আমরা লাভের ভাগ বাঁটোয়ারায় গোলমাল টের পেয়েও অনেকদিন চুপ করেছিলাম। কিন্তু মহেন্দ্র খিটকেল, বড় বিটকেল স্বভাবের লোক ছিলো। পেটে মদ পড়লে তারা মাথাটা গরম হয়ে যেতো। তাই একদিন, হাতি মারা বন্দুকটা বের করে আমাকে বললো, যাই, একটা হাতি মেরে আসি। দাঁতগুলো সোনার, বেশ লাভ হবে। --- তখন ওর কথা বুঝতে পারিনি, ভাবলাম মদের ঝোঁকে বলছে, আর ধারেকাছে শিয়ালের চেয়ে বড় কোন জন্তু ছিলো না। কিন্তু মাঝরাতে যখন আমার ঘরে এসে বললো, সে বিবেকরাম খোদাওয়ালাকে এই হাতি মারা বন্দুক দিয়ে শেষ করে এসেছে, বিবেকরামের সোনার এগারোটা দাঁত উপড়ে নিয়ে এসেছে, আর ওর গাড়ির জন্যে বিবেকরামের আরবী ঘোড়া সোহাগীকেও লুট করে এনেছে, তখন আমি খুব ঘাবড়ে গেলাম। মদের ঘোরে যে কী ভয়ানক বিপদে মহেন্দ্র নিজে পড়েছে, আর আমাকেও সেই গাড্ডায় টেনে নিয়ে ফেলেছে, তা সে জানে না। বিবেকরামের বড় ছেলে বন্দেগিরাম একটা আস্ত বদমাশ গুন্ডা, সে সোজা এসে আমাদের দুজনকে ধরবে। হোক মারোয়াড়ি ভেজিটারিয়ান, ঘাস তো আর সে খায় না।’ আমরা ঢোঁক গিলে শুনতে থাকি। ‘পরদিন বন্দেগিরাম আমাদের সেরেস্তায় এসে হাজির। সালাম করে সে বললো --- রাম রাম বাবুজী, সুনা হায় কেয়া হুয়া? কিসি পাগল আদমীনে পিতাজীকো গোলিসে মার ডালা, উনকা সোনে কা দাঁতোঁকো ভি আলগ করকে লুট লিয়া, উনকা যো আচ্ছে ঘোড়ে হ্যায় না, ও সোহাগী, উসকো ভি চুরা লিয়া। আচ্ছা কিয়া, মেরে কোয়ি এত্রাজ নাহি হ্যায়, কে ইস কাম কিয়া গায়া হ্যায়, কিঁউকি আজ সে ম্যায় পিতাজীকা হর কারবারকে মালিক বন গায়ে হুঁ, শুকর দেনা চাহিয়ে থা উস কামিনোঁকো। লেকিন ওহ সুয়ার কে আওলাদনে পিতাজীকা সিন্দুকভি তোড় ডালা, অওর না জানে কিতনে সোনে-জহরত-প্যয়সা লুট লিয়া। --- ম্যায় কেহতা হুঁ আপকো বাবুজী, ওহ জিয়েগা ন্যহি। আগার আপ উসকো পেহচানতেঁ, তো উসকো ইয়ে বোল সাকতেঁ কে মেরা হক্ক ছিন কর ওহ ইস দুনিয়া মে জিয়েগা ন্যহি!’ হিন্দি ছবির কল্যাণে আমরা তখন হিন্দুস্থানী ভাষা ভালোই বুঝি, সবাই বন্দেগিরামের হুমকির কৌশল দেখে ঢোঁক গিলি। কঠিন ভিলেন! ‘সেই রাতেই মহেন্দ্র এসে হাজির।’ বুড়ো বলতে থাকে, তার পেছনে হাত বোলানোতে বিরতি না দিয়ে। ‘আমি তাকে চেপে ধরলাম, বললাম, কী ব্যাপার মহেন্দ্র, তুমি টাকা পয়সা সোনা দানা লুটেছো নাকি? তাহলে তো আমাকেও ভাগ দিতে হচ্ছে!’ আমরা চমকে উঠি। বুড়োটা দেখছি মহা ধান্ধাবাজ! ‘কিন্তু মহেন্দ্র আদৌ স্বীকার করলো না। বরং হাসি হাসি মুখে বললো --- যা বললো, শুনে আমার হার্টফেল করার কথা --- বন্দেগিরামে গুন্ডারা এদিকেই আসছে, কারণ তারা টের পেয়ে গেছে যে ভূতেন হাজারিকাজীই নাকি খুনটা করেছে, কারণ বিবেকরামের শোবার ঘরে হাজারিকাজীর এক পাটি চপ্পল পাওয়া গেছে, আর সোহাগীর আস্তাবলে পাওয়া গেছে তাঁর টোপি, অতএব তাঁকে খতম করা হোক --- ভেবে দ্যাখো, কতবড় শয়তান এই মহেন্দ্র খিটকেল, সে আমার বাড়ি থেকে আমার টুপি চপ্পল চুরি করে বিবেকরামের ঘরে রেখে এসেছে আমাকে ফাঁসানোর মতলবে, যাতে আমি ওর কথা শুনতে বাধ্য হই। ভেগে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় আমার ছিলো না। মহেন্দ্র আরো বললো, সে-ও নিরাপদ বোধ করছে না, কারণ নদীর ঘাটে বন্দেগিরামের লোক টহল দিচ্ছে, অতএব আমাদের উচিত নগাঁও উত্তর কাছাড় পেরিয়ে সিলেট হয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছানো। তাহলে আমরা নিশ্চিন্তে করাচীর জাহাজ ধরতে পারবো। --- বিপদ আঁচ করে আমি তৎক্ষণাৎ বন্দুক টোটা আর টাকাপয়সা নিয়ে মহেন্দ্রর সাথে বেরিয়ে পড়লাম। মহেন্দ্রর সেই গাড়ির সাথে জুতে রাখা সোহাগী, অ্যাতোবড় একটা প্রমাণকে কিভাবে আমার ঘাড়ে চাপালো মহেন্দ্র, সেটা আমি ঠিক ধরতে পারলাম না।’ আমরা শুনে যাই। ‘যাই হোক, বন্দেগিরামের গুন্ডারা কল্পনাও করেনি, আমরা সেই আসামী জঙ্গল পেরিয়ে দক্ষিণ দিকে যাবো। তারা ভেবেছিলো, পূবে বা পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্রের পার ধরে আমরা নৌকা ধরার তালে থাকবো। কিন্তু ধুুরন্ধর মহেন্দ্র তার এক ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে জঙ্গল ভেঙে এগোতে লাগলো নিচের দিকে। পেছন পেছন যখন ওরা তাড়া করে আসতে লাগলো, ততক্ষণে আমরা বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছি।’ মহেন্দ্র খিটকেলের বিটকেল বুদ্ধির প্রশংসা না করে আমরা পারি না। ‘--- হ্যাঁ, খুবই চতুর ছিলো সে। যাই হোক, তার প্রশংসা করতে আমার ভালো লাগে না। কয়েকদিন ধরে চলতে চলতে একদিন রাতে আমরা এই পাহাড়ের গা বেয়ে যাওয়া রাস্তায় এসে হাজির হলাম। ঘুটঘুটে রাত, আশেপাশে থাকার কোন জায়গা নেই বলে আমরা অনেকক্ষণ ধরে ঘোড়া ছুটিয়ে তবে এখানে এসেছি, সোহাগী বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে --- আর হবে না কেন, সে কালেভদ্রে সওয়ারী নিয়ে অভ্যস্ত, সারাটা জীবন তার কেটেছে আস্তাবলের আরামে, সহিসের দলাইমলাই খেয়ে, এমন বলদের মতো গাড়ি টেনে নয়, তার খানদানের কথা চিন্তা করে আমি মহেন্দ্রকে বলেছিলাম বেচারীকে একটু বিশ্রাম দিতে, তবে বিবেকরামের হাতির মতো গতর বয়ে যে অভ্যস্ত, তার অত অল্পতে কাহিল হলে পোষায় না, এই যুক্তি দেখিয়ে মহেন্দ্র তাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ছুটিয়েই চলছে। তাই ঐ যে দেখতো পাচ্ছো,’ আঙুল তুলে আমাদের মাথা বরাবর পাহাড়ের চূড়োর দিকে দেখায় বুড়ো, ‘ওখানে এসে সোহাগী বেঁকে বসলো, থেমে গেলো সে।’ আমরা রূদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করি। ‘আর থামা মাত্রই, বুঝলে, অন্ধকার পাহাড়ী জঙ্গল থেকে হুড়মুড় করে চেঁচাতে চেঁচাতে নেমে এলো কয়েকটা লোক, তাদের সবার মুখে কাপড় বাঁধা, হাতে বন্দুক, ইয়া লম্বা চওড়া একেকজন। আমাদের গাড়িটাকে ঘিরে ফেললো তারা, আর একজন সোহাগীকে গাড়ি থেকে খুলে আলাদা করে ফেললো।’ আমাদের উত্তেজনা বেড়ে যায়। ‘মহেন্দ্র কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু তার আগেই তাকে কানে ধরে টেনে নামালো ওরা, তারপর কষে কয়েকটা লাথি হাঁকালো কাঁকালে। লাথি খেয়ে মহেন্দ্র গোঁ গোঁ করতে করতে পড়ে গেলো। আমাকে ওরা দেখলেও মারধোর করেনি, এমনকি গাড়ি থেকে টেনেও নামায়নি, মহেন্দ্রর ওপরই ওদের রাগ বেশি দেখা গেলো। --- তখন বুঝলাম, এরা আমাদের ধাওয়া করে আসা গুন্ডাদের কেউ নয়, বরং স্থানীয় ডাকাত। মহেন্দ্রকে যখন ওরা লাথি মারছিলো আর বন্দুক দিয়ে বাঁটিয়ে যাচ্ছিলো, শুনতে খারাপ শোনালেও, ভীষণ ভালো লাগছিলো আমার।’ আমরা চমকে উঠি। ‘হোক মহেন্দ্র খিটকেল আমার বন্ধু  আমার একমাত্র বন্ধু --- আমার পার্টনার, ভায়রা, ইত্যাদি, কিন্তু ওর জন্যেই এই গাড্ডায় এসে পড়েছি আমি, বেকার, ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত। কাজেই ওর ধোলাইভোগে আমি স্বাভাবিকভাবেই আনন্দিত হই, বলি, বহোত খুব, মারো শালেকো আওর দোতিন দফা।’ আমরা আঁতকে উঠি। ভূতেন হাজারিকাকে মহেন্দ্র খিটকেলের যোগ্য বন্ধু বলেই আমাদের ধারণা হয়। এই কারণেই বোধহয় বুড়োর একমাত্র বন্ধু, পার্টনার, ভায়রা ছিলো মহেন্দ্র খিটকেল। সে ছাড়া অন্য কেউ এই বুড়োর সাথে টিকতে পারতো বলে মনে হয় না। ‘আমার কথা শুনে ওদের একজন এগিয়ে আসে, চোস্ত হিন্দিতে বলে, কৌন হ্যায় আপ?  আমি বলি, আমি এক গরীব নাদান, আর এই কমবখত চাবাগানের কুলির দালাল, আমাকে বন্দুকের মুখে অপহরণ করে নিয়ে চলছে, ফিরিঙ্গিদের কুলি হিসেবে বিক্রি করে দেয়ার জন্য। প্রমাণ হিসেবে আমি মহেন্দ্রর বিলিতি পোশাক আর আমার বন্দুকটাও দেখাই। ওরা বন্দুকটা টোটাসহ বাজেয়াপ্ত করে, তারপর মহেন্দ্রকে কষে ঠ্যাঙায়। মহেন্দ্র কাতরাতে থাকে।’ আমাদের মায়াই লাগে বেচারা খিটকেল সাহেবের জন্যে। ‘তারপর ওরা গাড়িটা আঁতিপাতি করে সার্চ করে, কিন্তু তেমন কিছু পায় না। আমার টাকা পয়সা আমি আমার পাগড়িতে লুকিয়ে নিয়েছিলাম, ওরা আর সেখানে হাত দেয়নি। তারপর ওরা মহেন্দ্রকে সার্চ করলো, কিন্তু কিছুই পেলো না। --- আমি জানতাম কিছু লুকোতে চাইলে মহেন্দ্র ওর জুতো অথবা জাঙ্গিয়ার ভেতরে রাখে, তাই বললাম, উসকে জুতে কে অন্দর দেখখো, থোড়ে বহোত মিল যায়েগা। বাস্তবিক, মহেন্দ্রকে লুন্ঠিত হতে দেখে আমার প্রবল আনন্দ হচ্ছিলো। ওকে নিঃস্ব করে দেয়ার একটা হিংস্র বাসনা কাজ করছিলো মনের মধ্যে! --- এবং সত্যি! একতাড়া কোম্পানীর নোট পাওয়া গেলো মহেন্দ্রর উঁচু জুতোর ভেতরে। ডাকাতের দল সন্তুষ্ট চিত্তে সেগুলো গেরেফতার করে মহেন্দ্রকে সোজা দাঁড় করালো, তারপর আমি কিছু বলার আগেই এক লাথিতে তাকে এই খাড়া পাহাড়ের ওপর থেকে ফেলে দিলো! আর দেখতেই পাচ্ছো, পাহাড়টা প্রায় দেড় হাজার ফিট উঁচু!’ আমরা আঁতকে উঠি, আমাদের শিশু মন ঘাবড়ে যায়। ‘--- আমার তো তখন মাথার চুল ছেঁড়ার অবস্থা। আমি নিশ্চিত ছিলাম সোনাদানাহীরাজহরত সব মহেন্দ্রর জাঙ্গিয়ার ভেতরে লুকোনো আছে। সেগুলোর খোঁজ করেনি এই ইস্টুপিট গাঁওয়ারগুলো। ওরা তখন সোহাগীকে এনে আবার আমার গাড়িতে জুতে দিচ্ছে। কিন্তু আমার কী যে হলো, আমি বলে উঠলাম, তুমলোগোঁ জ্যায়সে নিকম্মেঁ অওর নাঠাল্লেঁ হাম কাভি নাহি দেখা। উসকো পাতলুনকে অন্দর কিঁউ নাহি ঢুনঢা? --- লোকগুলো একে অপরের মুখ দেখে। সেই হিন্দিঅলা আমাকে বলে, উসকা পাতলুনকে অন্দর কেয়া থা? আমি চটে গিয়ে বললাম, না জানে কেয়া হীরেজহরত থা! লোকগুলো এগিয়ে গিয়ে পাহাড়ের তলাটা দেখে নিজেদের মধ্যে আলাপ করে, কিন্তু ঐ পাহাড় বেয়ে নামতে গেলে গর্দান ভাঙা ছাড়া আর কোন ফল হবে না। তখন ওরা আমার ওপর চটে যায়। পেহলে কিউঁ নাহি বোলা, সালা বুডঢে? এই বলে প্রবল মারধর করে তারা আমাকে। সবশেষে যা করে, আর কহতব্য নয়!’ বুড়ো করুণ মুখ করে মাথা নাড়তে থাকে। আমার কেমন একটা খটকা লাগে, আমি কিছু বলতে যাই, কিন্তু শফি রূদ্ধশ্বাসে বলে, ‘তারপর?’ বুড়ো পেছনে হাত বোলাতে বোলাতে বলে, ‘তারপর? এই তো। চেতনা হবার পর থেকে আমি মহেন্দ্র খিটকেলের ডেডবডি খুঁজে বেড়াচ্ছি, কারণ আমি জানি, খুঁজলে ওর জাঙ্গিয়ার নিচে বিবেকরাম খোদাওয়ালার হীরেজহরত পাওয়া যাবে। --- এইখানেই কোথাও ওর বডি পড়ার কথা, সেই বেয়াল্লিশ সাল থেকে খুঁজে আসছি, রোজ, কিন্তু পাচ্ছি না শালাকে ।’ আমার খটকা প্রবলতর হয়। বুড়ো বলে, ‘শুনলে তো আমার গল্প। --- এবার তোমরা নিজেদের কাজে যাও।’ আমরা উঠে পড়ি, অনেক বিশ্রাম নেয়া হয়েছে। আর এই বুড়োটা মোটেও সুবিধার লোক নয়। মজনু ওস্তাদ বলেন, ‘কিরে শফি, ভূপেনবাবুর কাছেই তোকে রেখে যাই তাহলে?’ কিন্তু আমার মতো বোধহয় শফিরও খটকা লেগেছে, সে রাজি হয় না, বরং খোঁড়াতে খোঁড়াতে উঠে দাঁড়ায়। তার মুখ তখন জন্ডিসের মতোই হলুদ। ‘--- ভূপেন নয় খোকা, ভূতেন। ভূতেন হাজারিকা।’ বুড়ো তার পশ্চাদভাগসেবা অক্ষুণ্ন রেখে বলে। আমি আমতা আমতা করে বলি, ‘আপনি সেই বেয়াল্লিশ সাল থেকে রোজ খুঁজে বেড়াচ্ছেন?’ বুড়ো মাথা নাড়ে। ‘হ্যাঁ। এই গোটা পাহাড়টা চষে ফেলেছি বলতে পারো। --- কিন্তু বিলকুল ভ্যানিশ, কোথাও নেই সে।’ আমি শুকনো গলায় বলি, ‘তাহলে থাকেন কোথায়?’ বুড়ো মিটিমিটি হাসে, কিছু বলে না। মজনু ওস্তাদ কাঁধে ব্যাগ তুলে নিয়ে হেসে বলেন, ‘বোধহয় আপনার বন্ধু ভূত হয়ে চট্টগ্রাম চলে গেছে।’ বুড়োও হাসে। ‘তা যেতে পারে। খুব সম্ভবত তা-ই সে গেছে। তবে ভূত হলেও সে আমার হাত থেকে নিস্তার পাবে না। আর ও ভূত হলেও, ডেডবডিটা তো থাকবে। কিংবা কঙ্কালটা। তাই না?’ আমরা সায় দিই। কিন্তু আমার কেন যেন মনের খটকা যায় না। আমি আবারো আমতা আমতা করে বলি, ‘আপনাকে ঐ ডাকাতগুলো কী বলে গালি দিয়েছিলো, সালে বুডঢে?’ ‘হ্যাঁ।’ বুড়ো মাথা নাড়ে। ‘তখন আপনি জোয়ান ছিলেন না? সেই পঞ্চাশ বছর আগে?’ বুড়ো বিরক্ত মুখে মাথা নাড়ে। ‘তখন আমার বয়স ছিলো ষাট, আর মহেন্দ্রর পঞ্চাশ। বেয়াদবটা আমার চেয়ে ঝাড়া দশ বছরের ছোট ছিলো, কিন্তু সেজন্যে কোন সম্মান সে আমাকে দেখায়নি, রাসকেল ---।’ মজনু ওস্তাদ শুকনো মুখে বলেন, ‘তাহলে এখন আপনার বয়স কত?’ বুড়ো মাথা চুলকায়। ‘বলা মুশকিল, বুঝলে। বেঁচে থাকলে শ’ ছাড়িয়ে যেতাম, তাই না?’ আমি ঢোঁক গিলে বলি, ‘বেঁচে থাকলে মানে?’ বুড়ো মাথা নাড়ে, ‘--- ওহহো, বুঝতে পারছি। হয়েছে কি, আমি আর বেঁচে নেই। ঐ যে বললাম না, সেই গাঁওয়ারগুলো যা করেছে তা কহতব্য নয়? ব্যাটারা আমাকে, একজন ষাট বছরের বৃদ্ধকে পাহাড়ের কিনারা থেকে পাছায় লাথি মেরে সোজা নিচে ফেলে দিয়েছিলো, আর পড়ার সাথে সাথেই আমার দফা রফা হয়ে গেছে। দেখো না, কতক্ষণ ধরে মাজার নিচে মালিশ করছি? পঞ্চাশ বছর হয়ে গেলো, ব্যথাটা এখনো যায় নি। ভাবতে পারো ---?’ আমরা আর ভাবতে পারি না, সবাই ততক্ষণে চোঁ চাঁ দৌড় লাগিয়েছি। খোঁড়া শফি সবার আগে আগে বাঁই বাঁই করে ছুটছে স্টেরয়েডখাওয়া বেন জনসনের মতো। দিলদার আর গুলশান গল্প শুরু হওয়ার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো, তাই তারা কিছুই বোঝেনি, ভেবেছে এখন দৌড়াতে হবে, তাই দৌড়ুচ্ছে। তবে আমাদের মজনু ওস্তাদ আসলেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন, আমরা আমাদের বেসে পৌঁছানোর পর তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গোঁ গোঁ করছিলেন, ‘বাপ রে --- ভূত, ভূতেন!’ তবে মজনু ওস্তাদের স্বপ্ন আমরা পূরণ করেছি। ওরকম ভূতের তাড়া খাওয়া দৌড় না দিলে আমাদের হয়তো সেকেন্ড হতে হতো। কিন্তু ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ আমাদের পারফরম্যান্স দেখে হতবাক, তারা ট্যাঁফোঁ না করে চুপচাপ ট্রফিটা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে, আমাদের পিঠ চাপড়ে সাবাস বলতেও ভুলে গেছে। আমাদের ঘুমকাতুরে জিল্লুর স্যার হাই তুলে শুধু বলেছিলেন, বেশ বেশ। --- কী বললি? অ্যাই, কী বললি তুই? কিছু বলিসনি বলছিস? আমি যেন শুনলাম, তুই বলছিস, চাপা! অ্যাঁ? বলিসনি? বলিসনি তো? বলিস না!",False fe,"একটি ব্যক্তিগত পাঠ _ যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালির বইমেলা একটি ব্যক্তিগত পাঠ : যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালির বইমেলা ফকির ইলিয়াস=====================================কোনো কোনো বই আছে বার বার পড়া যায়। পড়ে নিতে হয়। একটি গ্রন্থপাঠের দশ বছর পর সে গ্রন্থপাঠের অভিজ্ঞতা বদলে যেতে পারে পাঠকের। গ্রন্থটিকে দশ বছর আগে যে চোখে বিশ্লেষণ করেছিলেন পাঠক, এক দশক পর সে অভিজ্ঞতায় সংযোজন-বিয়োজন দুটোই ঘটতে পারে। পাঠাভিজ্ঞতা নিয়ে পাঠক যখন বইটি নতুন করে খুলে বসেন, তখন তার কাছে গ্রন্থটির অনেক কিছুই নতুন মনে হতে পারে। পাঠকের বিন্যাসিত এই যে অভিজ্ঞতা, তাই একটি সাহিত্যকে পরিপূর্ণতা দান করে।প্রায় দু’যুগ আগে যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসি, পাঠক হিসেবে আমার একটি প্রশ্ন ছিল মনে, সুদূর আমেরিকায় বাংলা বই পত্র-পত্রিকা কোথায় পাবো? কিভাবে পাবো? এক সময় ছিল যখন ডাকযোগে বাংলাদেশ থেকে দৈনিকের সাহিত্য পাতাগুলো আনিয়ে পড়তাম নিয়মিত। সমকালীন সাহিত্যের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত না রাখতে পারলে, যে কোনো পাঠক কালের গহ্বরে হারিয়ে যান। যেতে বাধ্য হন। তার কারণ হচ্ছে এই, সাহিত্য কারো জন্য অপেক্ষায় না থেকে নিজ গতিতেই এগিয়ে চলে। পাঠককে সাহিত্যের সাথেই হেঁটে যেতে হয়। চোখ মেলে দেখে নিতে হয়। কখন কোন নতুন লেখক এসে স্থান দখল করে নিয়েছে।একজন পাঠক হিসেবে বলতে পারি, সে তৃষ্ণা মিটাতে এগিয়ে এসেছে ‘মুৃক্তধারা’। এই ‘মুক্তধারা’ কি যুক্তরাষ্ট্রে বৃহত্তম বইবিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াতে চেয়েছিল? সে প্রশ্নের উত্তর আমি একটু বিশদভাবে খুঁজে দেখতে পারি।‘মুক্তধারা’ এবং ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চ’ নামে দুটি সংস্থা ও সংগঠনের উদ্যোগে বইমেলা শুরু হয় নিউইয়র্কে ১৯৯২ সালে। ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চ’ ছিল মূলত : এক ঝাঁক শানিত তরুণের সাংস্কৃতিক ফোরাম। প্রকাশে বাংলা ভাষা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং লালন তকরার প্রত্যয় নিয়েই জন্ম নেয় এই সংগঠনটি। মহান ভাষা দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ চত্বরে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন ও শুরু হয় এই মুক্তধারা ও বাঙালির চেতনা মঞ্চের উদ্যোগে।নিজ কাঁধে বইয়ের বাক্স বহন করে ফিরে বইমেলা জমাবার প্রত্যয়ী ছিলেন মুক্তধারার কর্ণধার শ্রী বিশ্বজিত সাহা। আমি দেখেছি, চোখে বুকে একটিই স্বপ্ন, প্রবাসে পরিশুদ্ধ পাঠক শ্রেণী গড়ে উঠবে। আমি এখনো ভাবি, এক সময়ের তুখোড় সাংবাদিক বিশ্বজিত সাহা তো প্রবাসে এসে অন্য পেশাও গ্রহণ করতে পারতেন। তিনি তা করেননি কেন? করেননি এ জন্য, বাংলা ভাষা-সাহিত্য সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন প্রবাসী বাঙালির মাঝে। প্রশ্নটির উত্তর আমি এখন পেয়ে যাই খুব সহজে। যখন দখি জ্যাকসন হাইটেসের সুপরিসর ‘মুক্তধারা’ গ্রন্থকেন্দ্রে বসে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা ড. হুমায়ুন আজাদ তাদের বইয়ে পাঠককে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন, দিয়েছেন। নিউইয়র্কে ১৯৯২ সালে প্রথম বই মেলাটির উদ্বোধক ছিলেন ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত। ১৯৯৩ সালে কবি শহীদ কাদরী মেলা উদ্বোধন করেন। ১৯৯৪ সালে ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ১৯৯৫ সালে পুরবী বসু, ১৯৯৬ সালে আব্দু গাফফার চৌধুরী, ১৯৯৭ সালে হুমায়ুন আহমেদ, ১৯৯৮ সালে সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, ১৯৯৯ সালে দিলারা হাশেম, ২০০০ সালে ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন, ২০০১ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বইমেলা উদ্বোধন করেন। ২০০১ সালে দশম বইমেলার বর্নিল আয়োজনে একযোগে এসেছিলেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, হুমায়ুন আহমেদ ও ইমদাদুল হক মিলন। ২০০২ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন ড. হুমায়ুন আজাদ। ২০০৩ সালে কবি জয়গোস্বামী আসেন উদ্বোধক হিসেবে। মুক্তধারার উদ্যোগে ২০০৪ সালে দুটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এ বছর নিউইয়র্কর বইমেলা উদ্বোধন করেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ও লসএঞ্জেলেসে রাবেয়া খাতুন। ২০০৫ সালের বইমেলার উদ্বোধক ছিলেন ড. আবদুন নূর। ২০০৬ সালে পঞ্চদশ বইমেলা উদ্বোধন করেন কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক।যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আঙ্গিকে বইমেলা শুরু হয়েছে ২০০৭ সাল থেকে। বইবিপণী ‘মুক্তধারা’র সহযোগী সংগঠন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বইমেলা রূপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবে। এই উৎসবের অংশ হিসেবে চারটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০৭ সালে। নিউইয়র্কে ড. গোলাম মুরশিদ, ডালাসে ড. আনিসুজ্জামান, লস এঞ্জেলেসে সমরেশ মজুমদার এবং নিউজার্সিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এসব বইমেলা উদ্বোধন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা উৎসবের কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। কারণ তরুণ পাঠক-পাঠিকা আগ্রহী হয়ে উঠছে গ্রন্থপাঠে। মনে পড়ছে ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চের’ দুজন বীর সংস্কৃতি কর্মীর কথা। শামীম ও দিলওয়ার। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এই দু’জনের স্মৃতি ও বেদনা এখনো বহন করে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী বাঙালি সমাজ। যে দু’জন একটি পরিশুদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল গড়ায় দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন। গান, নাটক, বইপত্র, লিটল ম্যাগ, দৈনিক সাপ্তাহিক পত্রিকাসহ শিল্পকলার সকল অনুশীলন সামগ্রীই সহযোগী হয়ে এগিয়ে একটি সমাজকে। বইমেলা মানুষের মিলন ঘটনায়। সমন্বয় সাধন করে চর্চার। যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব সেই চেতনাকে ধারণ করেই এগিয়ে চলেছে। ------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ডেসটিনি । ১৭ জুন ২০০৮ মংগলবার প্রকাশিত",False mk,"স্বাধীন বাংলাদেশ ও প্রতিরক্ষা সহযোগী ১৯৭১ সালে বিশ্বের পরাশক্তির স্নায়ুযুদ্ধ যখন তুঙ্গে তখন রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিলেও কেউ ভাবতেও পারেনি দেশটি সাড়ে চার দশকে এসে উন্নয়ন ও অগ্রগতির আইকন হয়ে দাঁড়াবে। দরিদ্রতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত দেশটির ক্ষুধা মেটাতে বিদেশের দ্বারে-দ্বারে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরতে হতো। বিদেশি সাহায্য সময়মত না এলে দুর্ভিক্ষ ছিল অবশ্যম্ভাবী। স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য একটি সক্ষম প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলার পূর্ণ সামর্থ্য না থাকলেও স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যে জন্ম নেওয়া সামরিক বাহিনী হাঁটি হাঁটি পা পা করে দেশের উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মিশর সফরে গিয়ে ট্যাংকের প্রথম সংগ্রহ এনেছিলেন। তারপর ধীরে-ধীরে সাজ সরঞ্জাম ও যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহের পাশাপাশি বাড়তে থাকে কলেবর।প্রচলিত অস্ত্রের সরবরাহ এসেছে সবচেয়ে বেশি চীন থেকে যার অধিকাংশই ছিল ব্যবহূত নতুবা অত্যাধুনিক নয়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্রাস্ত্র কিনতে ও পরে উত্পাদন করতে পারলেও ভারি অস্ত্র দিতে কোনো দেশের আগ্রহের দেখা মেলেনি। নগদ টাকায় ক্রয় সম্ভব হলেও সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা চাহিদা মেটাতে পারেনি। অস্ত্রের সাশ্রয়ী যোগান এসেছিল চীন থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে কেনা মিগ ২৯ যুদ্ধ বিমান ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রথম সংযোজন। ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় দেশ, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সেতু হিসেবে বাংলাদেশের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করেছে। ৪০৯৬ কিলোমিটারের বিশাল সীমান্ত দিয়ে তিন দিক দিয়েই ঘিরে রেখেছে ভারত। পূর্বদিকে অল্প সীমানা রয়েছে মিয়ানমারের সাথে। কিন্তু দক্ষিণের খোলা বঙ্গোপসাগর হয়ে ভারত মহাসাগরের বিশাল জলরাশি বাংলাদেশকে করেছে সম্পদশালী। মধ্যপ্রাচ্যের তেলের আধার, চীন, জাপান ও ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং ভবিষ্যত্ বাণিজ্যের নৌপথ হিসেবে ভারত মহাসাগরের গুরুত্ব যতই বেড়েছে বাংলাদেশে ততই আগ্রহী চোখের সমাহার ঘটে চলেছে। বাংলাদেশ শুরু থেকেই কারো সাথে বৈরিতা নয় সকলের সাথে বন্ধুত্বের সরল পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করলেও বন্ধুরা সরলভাবে কাছে আসেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি ঘুরিয়েছে। পাকিস্তানি তত্পরতা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে থেকেছে।ভারত মহাসাগর যে নিয়ন্ত্রণ করবে সে ভবিষ্যতের বিশ্ব নিয়ন্ত্রক হবে এই ধারণা এখন সবাই বিশ্বাস করে। ভারত মহাসাগরে আধিপত্য স্থাপন করার জন্য পরাশক্তির মধ্যে প্রতিযোগিতা এখন সুস্পষ্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “এশিয়া পিভট” কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে। চীন এবং ভারত উদীয়মান শক্তি হিসেবে পারস্পরিক স্বার্থ ধরে রাখতে দ্বান্দ্বিক অবস্থানে রয়েছে। দুটি রাষ্ট্র প্রতিবেশী হলেও ভারত মহাসাগরের মধ্যমনি হিসেবে ভারতের অবস্থান কিন্তু চীনের ভূখণ্ড ভারত মহাসাগরের উপকূল ধরতে পারেনি। ভারত সংলগ্ন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিজ বলয়ে নিয়ে ভারত মহাসাগরের আধিপত্য সুবিধা নিতে কৌশল তৈরি করেছে সুচারুভাবে। চীনকে কোণঠাসা করতে অপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বেড়েই চলেছে। মার্কিন কংগ্রেসে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সামরিক সহযোগী হিসেবে ঘোষণা করে বিল পাস হয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি ভারত সফর করেন এবং একই সময়ে দুই দেশ লজিস্টিক্স সাপোর্ট চুক্তি সই করে। এক দেশের সেনা, নৌ ও বিমান অপর দেশের ঘাঁটিতে রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা নিতে পারবে। এটি সামরিক চুক্তির কাছাকাছি হলেও ভবিষ্যত্ সামরিক বলয় তৈরিতে বেশ এগিয়ে গেল। বাংলাদেশের সাথে একই ধরনের চুক্তি করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে ঘাঁটি নির্মাণের মার্কিন সদিচ্ছার কথা অনেক আগে থেকে শোনা গেলেও আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশ সন্তর্পণে এড়িয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের সাথে মার্কিন সামরিক সহযোগিতা প্রশিক্ষণ, বিশ্বশান্তি রক্ষা, দুর্যোগ মোকাবিলা, সন্ত্রাস দমনে সীমাবদ্ধ রয়েছে। ইদানীংকালে যোগ হয়েছে সমুদ্র সম্পদ রক্ষা। বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের তিন স্তর ভিত্তিক সহযোগিতা চলমান রয়েছে।স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের বন্ধুত্বের নামে সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ভেটোর কারণে বাংলাদেশের বিজয় ত্বরান্বিত হয়েছিল। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সাথে সামরিক সম্পর্ক গাঢ় হয়। চীনের পরেই রাশিয়া বাংলাদেশে যুদ্ধাস্ত্রের সরবরাহকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়। ২০১৩ সালে রাশিয়া বাংলাদেশকে যুদ্ধাস্ত্র কেনার জন্য বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা দিয়েছে যা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সামরিক সাহায্য হিসেবে পরিগণিত। যার মধ্যে অত্যাধুনিক জেট ট্রেনার ও হেলিকপ্টার অন্তর্ভুক্ত ছিল। চীনের প্রেসিডেন্টের ৩০ বছর পর বাংলাদেশ সফর এবং ২৫ বিলিয়ন ডলারের অনেকগুলো চুক্তি সম্পাদনের পর বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন ভাবনা শুরু হয়েছে ভারত, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। গতমাসে চীনের তৈরি দুটি ডিজেল সাবমেরিন বাংলাদেশ গ্রহণ করলে আঞ্চলিক সামরিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ হয়। যদিও গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে চীনা কোম্পানির প্রস্তাব বাংলাদেশ গ্রহণ না করায় ভারত কিছুটা স্বস্তি পেলেও বাংলাদেশের নৌশক্তি বৃদ্ধিতে চীনা যুদ্ধ জাহাজের সংযোজন শঙ্কা বাড়িয়েছে। চীন থেকে দুটি অত্যাধুনিক করভেট পেয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়াও সমুদ্র সীমানা নিয়ে মিয়ানমার ও ভারতের সাথে বিরোধের সুরাহা হয়ে যাওয়ায় প্রায় বাংলাদেশের আয়তনের সমপরিমাণ সমুদ্র এলাকার প্রতিরক্ষার জন্য কোস্ট গার্ড ইতালি থেকে পেট্রোল বোট কিনেছে। সমুদ্র সম্পদ রক্ষার জন্য আরো সামর্থ্য বৃদ্ধির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। ভারত মহাসাগর উপকূলীয় দেশগুলোকে নিজ বলয়ে রেখে ভারত মহাসাগর নিয়ন্ত্রণ ও ভারতের প্রকৃতিজাত সুবিধাকে কাটছাঁট করতে চীনের ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশকে পেতে চায়। তাই গত চল্লিশ বছর ধরে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের সাথে সামরিক সম্পর্ক গভীর করেছে। সামরিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহকারী হিসেবে সবার উপরে অবস্থান ধরে রেখেছে। প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগে বিশাল অংশীদার হয়ে সম্পর্ককে স্ট্রাটেজিক পর্যায়ে উন্নীত করেছে। ঐতিহাসিক সিল্ক রুটের পুনর্জীবন দিয়ে ভবিষ্যত্ বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর “এক বেল্ট ও এক পথ” কৌশলের স্থল ও নৌ অংশে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রীয় অবস্থানে রয়েছে।সামরিক সরঞ্জামের জন্য চীনের উপর বাংলাদেশের নির্ভরতা কমাতে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রথমবারের মত বাংলাদেশ সফরে এসে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার গভীরতা বাড়াতে একটি রূপকল্প রেখে গেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময়ে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর হবার সম্ভাবনার কথা ভারতীয় মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলদেশকে চীনের বলয় থেকে সরিয়ে আনতে ভারতের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর বড় বাধা চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতা থেকে ভারতের পিছিয়ে থাকা। চীনের মত বড় বিনিয়োগ করার অর্থনৈতিক সক্ষমতা ভারতের এই মুহূর্তে নেই। ভারতের সামরিক সামর্থ্যতা বেড়ে চললেও বাংলাদেশের সামরিক চাহিদা মেটানোর উত্পাদন সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রশিক্ষণ, সন্ত্রাস দমন ও যৌথ মহড়া ও দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ভারত সামরিক সহযোগিতা চলমান থাকলেও যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রে একেবারেই নেই। সমষ্টিগত নিরাপত্তার ধারণা অন্য অঞ্চলে দেখা গেলেও দক্ষিণ এশিয়াতে দৃশ্যমান হতে পারেনি পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতার কারণে। সাথে কাজ করেছে প্রতিরক্ষার সনাতনী ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পারার ব্যর্থতা। ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় মূল্যবোধের এককেন্দ্রিকতা থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় একসাথে লড়াই সম্ভব হয়েছিল। ভারতের দেওয়া অস্ত্র হাতে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিল। নিরাপত্তা ঝুঁকির উত্স ও মাত্রার অভিন্নতা দুই দেশকে কাছাকাছি টেনে আনলেও ভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতার জন্য সামরিক সম্পর্ক নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে যেতে পারেনি এবং পারস্পরিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারেনি।বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়ে চলেছে। ভারত মহাসাগরের আধিপত্যের টানাপড়েনে বাংলাদেশকে অংশীদার হিসেবে এখন অনেকেই পেতে চাচ্ছে। এক বলয়ের সামারিক সহযোগিতা অপর বলয়কে নাখোশ করে তোলে। বাংলাদেশ তার আগ্রগতি ধরে রাখা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সামরিক দান্দ্বিকতার গ্যাড়াকলে পড়ে উন্নয়নের গতি হারাতে পারে। বাংলাদেশের উন্নতির সাথে সাথে সম্পদের সুরক্ষার জন্য সামরিক সামর্থ্যতা বৃদ্ধির চাহিদা যেমন সহযোগিতার মাত্রাকে চাঙ্গা করছে অপরদিকে যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের বাড়তি সক্ষমতা নতুন বাজারের সম্ভাবনা তৈরি করছে। ফলে যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম সংগ্রহে চীন নির্ভরতা কমাতে ভারতসহ অন্যান্য দেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। সামরিক সহযোগিতার প্রতিযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ নিজ স্বার্থকে এগিয়ে নিতে আগের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় চলে এসেছে। প্রথাগত অস্ত্রের বাইরে গিয়ে দূরপাল্লার কৌশলগত অস্ত্র সংগ্রহ বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে। রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত এস ৪০০ মিসাইল সিস্টেম কিনছে কয়েক বিলিয়ন ডলার দিয়ে যা ভারতকে পারমাণবিক হামলা মোকাবিলায় নতুন সক্ষমতার জোগান দিচ্ছে। সামরিক সহযোগিতা নিঃসন্দেহে বন্ধুত্বের গভীরতা তৈরি করে। সমষ্টিগত প্রতিরক্ষা অনেক সাশ্রয়ী পন্থা। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আঞ্চলিকভাবে মার্কিন নির্ভরতা কমাতে সমষ্টিগত সামরিক বাহিনী তৈরির ভাবনায় মেতেছে। সামরিক সহযোগিতা চুক্তি করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা বিভিন্ন দেশের তাগিদ বাংলাদেশকে দোটানায় ফেলেছে। তবে ঝুঁকির উত্স ও মাত্রার অভিন্নতা, স্বার্থের সদৃশ্যতা ও মিলকে বিবেচনায় রেখে সাশ্রয়ী প্রস্তাব নিয়ে সামরিক সহযোগিতার ভিত তৈরি করতে হবে। অহেতুক সংঘাত এড়াতে ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি ও কৌশলী সামরিক সহযোগিতা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রাখতে পারবে। সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৪",False ij,"কলদিয় সভ্যতা, সম্রাট ২য় নেবুচাদনেযার, রানী আমুহিয়া ও ব্যাবিলনের সেই ঝুলন্ত বাগান ___ সুপ্রাচীন কাল থেকেই প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের দজলা (তাইগ্রিস) ও ফোরাত (ইউফ্রেতিস) নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলটি অনেক সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়ে রয়েছে: সুমের আক্কাদ আসুর ব্যাবিলন। ব্যাবিলন নগরকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল ব্যাবিলনিয় সভ্যতা; যে সভ্যতাটি নির্মান করেছিল সেমেটিক কলদিয় ( Chaldeans) জাতি। আসিরিয় সভ্যতার পতনের পর পরই গড়ে উঠেছিল কলদিয় সভ্যতা। মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রপ্রাচীন ইতিহাসে কলদিয় সভ্যতাটি নব্য ‘ব্যাবিলনিয় সাম্রাজ্য’ নামে পরিচিত। কলদিয় জাতির শাসন স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ৮৭ বছর: ৬২৬ থেকে ৫৩৯ খ্রিস্টপূর্ব । এত স্বল্প সময়ের মধ্যেই সভ্যতাটি অর্জন করেছিল বিস্ময়কর সাফল্য ও শ্রেষ্ঠত্ব। কলদিয়াঐতিহাসিকদের ধারণা, ৮০০ খ্রিস্টপূর্ব নাগাদ এক সেমিটিকভাষী গোত্র ব্যাবিলন নগরের দক্ষিনে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে; অত্র অঞ্চলে তারা এসেছিল আরব উপদ্বীপ থেকে । এদের ভাষা ছিল আরামিয়। বসতি স্থাপনের কয়েক শ বছর পর এরা নিজেদের বাসভূমিকে বলে: ‘মাট কালদি’; এর মানে, ‘কলদিয় দেশ’। আরবি ভাষায়, ‘কালদান।’ কলদিয়া ছিল ব্যাবিলনের দক্ষিণে, পারস্য উপসাগরে কাছে এবং টাইগ্রিস নদীর দক্ষিণ তীর ঘেঁষে । টাইগ্রিস ও ইউফ্রেতিস এর মাঝখানটি উর্বর ভূখন্ডটিই ব্যাবিলনিয়া নামে পরিচিত। ভূখন্ডটি অত্যন্ত উর্বর; বিস্তীর্ণ উজ্জ্বল শষ্যক্ষেত্র ও দ্রাক্ষাকুঞ্জে পরিপূর্ন। মিশরের নীলনদের পার্শ্ববর্তী উর্বর ভূখন্ডের সমতূল্য। কলদিয়রা ছিল জ্যোর্তিবিদ্যা চর্চার অগ্রদূততবে কলদিয় জনগনের ভাগ্যে সুখ তেমন ছিল না। কেননা, সে সময়টায় ব্যাবিলনিয়া শাসন করছিল দুর্দান্ত আসিরিয় সাম্রাজ্য; যে সাম্রাজ্যটির রাজধানী ছিল নিনেভ। ২০০ বছর ধরে কলদিয়রা আসিরিয় শাসন শোষনে ছিল জর্জরিত । আসিরিয় রাজতন্ত্র কর্তৃক দরিদ্র কলদিয় কৃষকদের ওপর উচ্চহারে করারোপ করা হত, এরুপ নির্মম শোষন নির্যাতন ছাড়াও আসিরিয়রা কলদিয়দের সঙ্গে নানান বৈষম্যমূলক আচরণ করত। আসিরিয়রা কলদিয়দের বলত, কালদু। আসিরিয়রা তখনও বোঝেনি যে তারা নিজেদের কবর খুঁড়ছে। কলদিয়দের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ন আচরণ করলে আসিরিয় সভ্যতাটি হয় তো আরও কয়েক শ বছর টিকে থাকত, কলদিয়দের দ্বারা ধ্বংস হয়ে যেত না। হায়, ইতিহাস থেকে কেউই শিক্ষা নেয় না! আসিরিয় সাম্রাজ্যশোষিত কলদিয় জাতি দীর্ঘকাল এক নেতার আবির্ভাবের প্রতীক্ষায় ছিল, যে নেতা আসিরিয় শাসনের তান্ডব থেকে কলদিয় জাতিকে মুক্ত করবে। খ্রিস্টপূর্ব ৬৫৮। জন্ম হল কলদিয় মুক্তিদাতার; নাম রাখা হল: নাবোপোলাসসার। নাবোপোলাসসার কলদিয় দের ঐক্যবদ্ধ করে আসিরিয় সাম্রাজ্য আক্রমন করতে থাকে । আসিরিয় সম্রাট সে সময় আসুরবানিপাল। কলদিয় আক্রমনে আসিরিয় সাম্রাজ্যে দূর্বল হতে থাকে। খ্রিস্টপূর্ব ৬২৬। আসুরবানিপাল মৃত্যুবরণ করেন। আসিরিয় সম্রাট ২য় আশহুর উবাললিট ক্ষমতা গ্রহন করেন। লাভ হয়নি। কেননা, ঐ বছরই (খ্রিস্টপূর্ব ৬২৬) নাবোপোলাসসার নিনেভ ধ্বংস করেন। যদিও ২য় আশহুর উবাললিট প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তিনি পালিয়ে যান। প্রাচীন ইতিহাসে কলদিয় সভ্যতাটি নব্য ‘ব্যাবিলনিয় সাম্রাজ্য’ নামে পরিচিত। কলদিয় জাতির শাসন স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ৮৭ বছর: ৬২৬ থেকে ৫৩৯ খ্রিস্টপূর্ব । এত স্বল্প সময়ের মধ্যেই সভ্যতাটি অর্জন করেছিল বিস্ময়কর সাফল্য ও শ্রেষ্ঠত্ব।ব্যাবিলননিনেভ নয়, ব্যাবিলন নগরকেই নাবোপোলাসসার কলদিয় সাম্রাজ্যের রাজধানী ঘোষনা করেন । ব্যাবিলনিয়ার প্রাচীন নগর ব্যাবিলন । সম্রাট হাম্মুরাবির (খ্রিস্টপূর্ব ১৮১৮) সময় থেকেই নগরটি ক্রমশ সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠতে থাকে । ব্যাবিলন নগরটির অবস্থান ছিল বর্তমানে ইরাকের বাবিল প্রদেশের আল হিললা; বাগদাদ শহরের ৫৫ মাইল দক্ষিণে। মনে রাখতে হবে, প্রাচীন ব্যাবিলন নগরটি অবস্থিত ছিল ইউফ্রেতিস নদীর পাড়ে, আর বর্তমান বাগদাদ শহরটি টাইগ্রিস এর পাড়ে অবস্থিত। ব্যাবিলন গ্রিক শব্দ; উৎপত্তি ‘বাবিলু’ শব্দ থেকে। ‘বাব’ শব্দের মানে, দরওয়াজা; আর, ‘ইলি’ শব্দের অর্থ, ঈশ্বর। ব্যাবিলন শব্দের মানে, ‘ঈশ্বরের দরওয়াজা।’ হারান। পলাতক ও পরাজিত আসিরিয় রাজা ২য় আশহুর উবাললিট হারান নগরে আসিরিয় রাজধানী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলেন। জায়গাটি বর্তমান সিরিয়ায়। নাবোপোলাসসার সসৈন্য হারান নগরে এগিয়ে যান। মনে ঘৃনা। নাবোপোলাসসার-এর পাশে তাঁর যোগ্য পুত্র, ২য় নেবুচাদনেযার ( খ্রিস্টপূর্ব ৬০৫-৫২৬); নাবোপোলাসসার শখ করে ছেলের নাম রেখেছেন: নেবুচাদনেযার । তার কারণ আছে। নাবু ছিলেন ব্যাবিলনিয়ার প্রধান দেবতা মারদুকের পুত্র। নেবুচাদনেযার শব্দটির মানে, ‘ওহ্ দেবতা নাবু!’ তখন কে ভেবেছিল নেবুচাদনেযারই একদিন ব্যাবিলন নগরকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া জয় করে বিশাল এক কলদিয় সাম্রাজ্য গড়ে তুলবেন। যাক। ৬১০ খ্রিস্টপূর্বে পিতাপুত্রের যৌথ উদ্যেগে হারান কলদিয়দের নিয়ন্ত্রণে আসে। কলদিয় সীমানা৬০৫ খ্রিস্টপূর্ব। নাবোপোলাসসার মারা যান। কলদিয় সৈন্যদের দায়িত্বভার গ্রহন করেন ২য় নেবুচাদনেযার । ওদিকে কলদিয়দের ধ্বংস করতেই আসিরিয় রাজা ২য় আশহুর -উবাললিট হাত মেলায় মিশরের সঙ্গে। ফারাও ২য় নেকো সে সময় মিশরের সম্রাট। ৬০৯ খ্রিস্টপূর্বে মিশরিয় সৈন্যরা ব্যাবিলনের দিকে অগ্রসর হয়। সিরিয়ার কারচেমিশ এ দুপক্ষ মুখোমুখি হয়। প্রচন্ড রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ২য় নেবুচাদনেযার জয়ী হন, যার ফলে আসিরিয় সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে এবং ব্যাবিলনের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় সূচিত হয়। মিশর ও আসিরিয় যৌথবাহিনীকে পরাজিত করে ৬০৫ খ্রিস্টপূর্বের ৭ সেপ্টেম্বর ২য় নেবুচাদনেযার ব্যাবিলনিয়ার সিংহাসনে আরোহন করেন। পরবর্তী আট বছর তিনি সিরিয়া ফিলিস্তিন মিশর ও আরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। জুদাহ জুদাহ রাজ্যের রাজা ছিলেন Jehoiachin; ৫৯৭ খ্রিস্টপূর্বের ১৬ মার্চ। ২য় নেবুচাদনেযার জেরুজালেম আক্রমন করে দখল করে নেন। রাজাকে ও বহুসংখ্যক ইহুদিদের জিম্মি করে ব্যাবিলন নিয়ে যান।পরবর্তীতে জুদাহ বিদ্রোহ করে। অত্যন্ত নির্দয় উপায়ে সম্রাট ২য় নেবুচাদনেযার ইহুদিদের দমন করে ব্যাবিলনে নির্বাসিত করেন। এই ঘটনা নিয়েই কুড়ি শতকের বিশিষ্ট পপ ব্যান্ড বনি এম এর গান ‘বাই দ্য রিভার্স অভ ব্যাবিলন।’ By the rivers of Babylon, there we sat downye-eah we wept, when we remembered Zion.২য় নেবুচাদনেযার এর নির্দেশে কলদিয় সৈন্যরা ১৩ বছর ফিনিসিয় নগর টায়ার অবরোধ করে রেখেছিল। ৫৬৮ খ্রিস্টপূর্বে মিশর আক্রমন করেন ২য় নেবুচাদনেযার । যাহোক। নতুন কলদিয় সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সম্রাট ২য় নেবুচাদনেযার ব্যাবিলন নগরীটিকে সুন্দর করে সাজাবেন ঠিক করলেন, গ্রিক রাষ্ট্রনায়ক পেরিক্লিস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৯৫-৪২৯) প্রাচীন আথেন্স নগরীকে যেমন সাজিয়েছিলেন । বিজিত রাজ্য থেকে অর্জিত (লুন্ঠিত) ধনসম্পদ ও অব্যাহত ভাবে প্রাপ্ত কর দিয়ে ব্যাবিলন গড়ে উঠতে থাকে, আধুনিক সময়ে লন্ডন যেমন উপনিবেশসমূহ থেকে প্রাপ্ত সম্পদে হয়ে উঠেছিল ঝলমলে বর্ণাঢ্য । ২য় নেবুচাদনেযার ব্যাবিলন নগরকে ঢেলে সাজাতে উচ্চভিলাষী সব পরিকল্পনা গ্রহন করেন। রাজকীয় প্রাসাদ, উপাসনালয়, নগর দূর্গ, ইশতার দরওয়াজা, শোভাযাত্রার পথ ইত্যাদি তৈরিতে সময় লেগেছিল ৮৮ বছর । বলাবাহুল্য দরদালান নির্মানে খেতে মরত বন্দি দাসেরা ও শ্রমিকেরা । ফিলিস্তিন থেকে হিব্রুভাষীদের বন্দি করে আনা হয়েছিল। সেই সময়কার ব্যাবিলনিয় স্থাপতে হিব্রু স্থাপত্যশিল্পের প্রভাব পড়ার কথা। শিল্পীর আঁকা ব্যাবিলন। নদীটি ফোরাত বা ইউফ্রেতিসবলাবাহুল্য প্রাচীন ব্যাবিলনিয়ার জনজীবনে ধর্ম ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। ব্যাবিলনিয় উপাসনালয়ের নাম জিগুরাট-যা ছিল বিশালাকার কাঠামোর স্থাপত্য। জিগুরাটে উপাসনা করা হত দেবতা মারদুক-এর, যে দেবতা প্রাচীন সুমেরিয় দেবতা এনলিল-এর স্থলাভিষিক্ত হয়ে ব্যাবিলনিয় জনগনের গভীর শ্রদ্ধা আর ভক্তি অর্জন করেছিলেন। ব্যাবিলন নগরের জিগুরাটটির নাম, ‘ইটিমেনানকি’। সুমেরিয় ভাষায় ইটিমেনানকি শব্দটির মানে- স্বর্গমর্তের ভিত্তি। আসিরিয় রাজা সেনাচেরিব ৬৮৯ খ্রিস্টপূর্বে ব্যাবিলন আক্রমন করে ধ্বংস করেছিলেন, সে সময় ইটিমেনানকিও ধ্বংস করা হয়। ২য় নেবুচাদনেযার ইটিমেনানকিটি পুর্ননির্মানের উদ্যেগ গ্রহন করেন যেমন গ্রিক রাষ্ট্রনায়ক পেরিক্লিস গ্রিক ধর্মীয় পীঠস্থান অ্যাক্রপলিস পুর্ননির্মানের উদ্যেগ গ্রহন করেছিলেন । পারসিকরা বিদ্বেষবশত অ্যাক্রপলিসটির শীর্ষে অবস্থিত গ্রিক প্যানথিওন ধ্বংস করেছিল। ব্যাবিলনের ইটিমেনানকিটি ছিল সাত ধাপবিশিষ্ট ... প্রায় ৯১ মিটার উঁচু। ওপরে এসাগিলা, অর্থাৎ মারদুক দেবতার উপাসনালয়।জিগুরাট ইটিমেনানকি।ইশতার ছিলেন পরম পূজনীয় কলদিয় দেবী । সময়টা ৫৭৫ খ্রিস্টপূর্ব।২য় নেবুচাদনেযার তারই নামে ব্যাবিলন নগরের উত্তর দিকে একটি সুদৃশ্য দরওয়াজা নির্মানের নির্দেশ দেন । নীল রঙের ঝলমলে টাইলস ইশতার দরওয়াজার বৈশিষ্ট্য । ছাদটি নির্মিত হয়েছিল সিডার কাঠ দিয়ে। ইশতার দরওয়াজাটি দিয়ে নববর্ষের ধর্মীয় শোভাযাত্রা যেত; দুপাশে দেওয়াল, দেওয়ালে অঙ্কিত দেবতা মারদুকের ড্রাগন, ঝলমলে সিংহ-যা তৎকালীন শিল্পীদের শিল্পরুচির প্রকাশ। মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘরটি নির্মানের পূর্ব পর্যন্ত প্রাচীন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি ছিল ইশতার দরওয়াজা। ব্যাবিলন নগরের ইশতার দরওয়াজাটি আজও ২য় নেবুচাদনেযার-এর এক অনন্য কীর্তিকে বহন করে আছে। প্রাচীন বিশ্বে নীল রঙের প্রাধান্য। ভাবলে অবাক হতে হয়। আমি ভাবতাম নীল রঙের প্রয়োগ অধুনা। ইশতার দরওয়াজাটি দিয়ে নববর্ষের ধর্মীয় শোভাযাত্রা যেত; সুখি ও পরিতৃপ্ত সম্রাট ২য় নেবুচাদনেযার দেখছেন নগর ব্যাবিলন।২য় নেবুচাদনেযার এর রাজত্বের শেষ সময়ে কলদিয় সাম্রাজ্যের উত্তরপুবে মদ্র (Medes) জাতির উত্থান ঘটছিল। মদ্র-আগ্রাসন ঠেকাতে প্রাচীর নির্মান করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ২য় নেবুচাদনেযার: যা ‘মেডিয়ান ওয়াল’ নামে পরিচিত।বর্তমান কালের মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র। ইরাক ছিল ২য় নেবুচাদনেযার এর রাজত্ব। রঙিন অংশটুকু প্রাচীন পারস্যের উত্তরে মদ্র সাম্রাজ্য। প্রাচীন ইরানি ট্রাইব দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। ক) মদ্র ও খ) পারস। মদ্ররা ছিল উত্তরে আর পারস-রা ছিল দক্ষিণে। মদ্ররা প্রথম ঐ অঞ্চল শাসন করেছিল। পরে পারস- রা। পারস থেকেই পারস্য। ২য় নেবুচাদনেযার মদ্রদের সঙ্গে অনর্থক যুদ্ধের পথে না গিয়ে রাজনৈতিক কূটকৌশলের আশ্রয়ও নিয়েছিলেন। ২য় নেবুচাদনেযার-এর সমসাময়িক মদ্রদের রাজা ছিলেন সিয়াক্সজারেক্স। তারই এক কন্যার নাম আমুহিয়া ( খ্রিস্টপূর্ব ৬৩০-৫৬৫)। ২য় নেবুচাদনেযার মদ্রদের হুমকি প্রশমিত করতেই সম্ভবত আমুহিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ঝুলন্ত উদ্যানতো, বিয়ের পর আমুহিয়ার একবার খুব অসুখ হল । সম্রাট অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হলেন। উদ্বিগ্ন হয়ে ভাবলেন, মদ্ররাজ্য ধূসর ব্যাবিলনের তুলনায় অধিক সুজলাসুফলা, যে কারণে সবুজ সুধারস থেকে বঞ্চিত হয়েই আমুহিয়ার অসুখ করেছে । ২য় নেবুচাদনেযার একটি সবুজাভ উদ্যান নির্মানের কথা ভাবলেন। উদ্যান নির্মিত হল বটে, তবে নির্মিত হল বড় একটি দালানের ওপর। এই ছবিটা দেখলেই বোঝা যাবে ব্যাপারটা আসলে কী রকম ছিল। লোকে বলল, ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান। আসলে তো ঠিক ঝুলন্ত না। আসলে সম্রাটের প্রেম, সেকালের দোদন্ড প্রভাবশালী সম্রাট, কত নারী লভ্য-তারপরও মদ্র রানী আমুহিয়া ...আশ্চর্য ...মানুষের এই হৃদয় ...পুরুষের এই প্রেম ...সম্রাট ২য় নেবুচাদনেযার মারা যান খ্রিস্টপূর্ব ৫৬২ অক্টোবর মাসে। তাঁর পুত্র আমেল মারদুক ব্যাবিলনের ক্ষমতা গ্রহন করে। সে তেমন সুশাসক ছিল না, হয়তো বখে যাওয়া টাইপ ছিল। যে কারণে পারসিকদের পক্ষে কলদিয় সভ্যতা গ্রাস করে নিতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। কলদিয়াসম্রাট ২য় নেবুচাদনেযার তাঁর বিক্রমঝুলন্ত উদ্যান ইশতার দরওয়াজা",False mk,"ওরা আদিবাসী নয়, অভিবাসী বক্ষ্যমাণ নিবন্ধের শিরোনামে 'আদিবাসী' পদ (Term)-এর আগে 'তথাকথিত' শব্দটি দ্বারা সুস্পষ্টরূপে নির্দেশ করা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীভুক্ত নিখাদ (তাদের একটি ক্ষুদ্রাংশ বাদে) নাগরিকদের রক্তধারা-উপধারাগত সামাজিক-সাংস্কৃতিক গোত্রীয় পরিচয় এবং এই ভূখণ্ডে বসবাসের অতীত সময়কালকে অযৌক্তিকভাবে একীভূত করে সম্প্রতি যত্রতত্র ব্যবহৃত 'আদিবাসী' পদটি সত্য নয় এবং কোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে এর অর্থ এই নয় যে বাংলাদেশে এসব জনমানুষের নৃগোষ্ঠীগত নিজস্ব পরিচয় বিশাল বাঙালি নৃগোষ্ঠীভুক্ত নাগরিকদের চেয়ে এতটুকুও তুচ্ছ এবং তাদের যাবতীয় নাগরিক অধিকার-দায়িত্ব-কর্তব্য একবিন্দু কম। সবাই বাংলাদেশের সম্মানীয় নাগরিক। এখানে একটি অসত্য পারিভাষিক শব্দের (Terminological inexactitude) চিন্তাশূন্য প্রয়োগ ও ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে মাত্র। ১৯৪০-৪৭ সালের শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও গণমাধ্যমসহ রাজনীতিকদের একাংশের 'দ্বি-জাতি' পদ ব্যবহারের ভুলের খেসারত এখনো এই বাংলাদেশেরই অর্ধশতাধিক ক্যাম্পে ধুঁকে ধুঁকে দিচ্ছে লাখ লাখ অবাঙালি অভিবাসনকারী। এ প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্ত সামনে রেখে নির্দেশ করা অত্যাবশ্যক যে তথাকথিত আদিবাসী প্রচারণা দেশের ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীভুক্ত নাগরিকদের কল্যাণঘাতী, বাঙালি নৃগোষ্ঠীর সব রাজনৈতিক সংগ্রাম ও স্বপ্নঘাতী এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থঘাতী।বাংলাদেশের বিদাহী রাজনীতির পরিমণ্ডলে নাভিশ্বাস ওঠা প্রাত্যহিক জনজীবনে এটি আরেকটি অশুভ সংযোজন, যার প্রবল ধাক্কা অতি নিকট ভবিষ্যতে এ দেশের জনগণকেই সামলাতে হবে। এই অশনিসংকেতের মুখোমুখি ব্যথিত প্রশ্ন, অথবা দাহিত হতাশা, আর কত?১. বাংলাদেশে আদিবাসী-ভুল প্রচারণার চারিত্র্যবাংলাদেশে 'আদিবাসী' পদটি একাধারে একটি সাম্প্রতিক আরোপণ, একটি ভুল পারিভাষিক পদ প্রচারণা, একটি ক্রমশ বিস্তৃত বিভ্রান্তি, একটি খাপছাড়া ভাবাবেগ, পূর্বাপর সংগতিবিহীন 'উদারতাবাদী' অভিধা লাভের অভিলাষ এবং দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে নানা মারাত্মক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।রাজনীতির সূক্ষ্ম-জটিল, কখনো ক্রুর-কঠিন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান অমনস্ক যেকোনো আবেগপ্রবণতার চড়া মূল্য অবধারিত। বাংলাদেশে 'আদিবাসী ভুল প্রচারণায় যাঁরা নির্বিকার অংশগ্রহণ করছেন তাঁরা হয়তো বা তাঁদের অজান্তেই জাতীয় স্বার্থবিরুদ্ধ অবস্থানে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন।'আদিবাসী প্রচারণা আরেকটি মারাত্মক ইতিহাস বিকৃতি। বাংলাদেশ আজ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির কবলে নিপতিত। শুদ্ধ বুদ্ধিজীবীরা আজ বহুদিন 'চিৎকার' করছেন, কিন্তু জনজীবন উৎসজাত 'প্রকৃত' রাজনীতিকদের দুর্বলতা বা অদূরদর্শিতা অথবা ব্যর্থতা-অপারগতায় আজও তাদের প্রতিহত করা যায়নি। অবাধে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ বিচরণ করছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধীরা। নানা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে, আগুনে, মৃত্যুতে, নির্যাতনে পতিত এখন জনজীবন।২. 'আদিবাসী বললে কী হয়?নিবন্ধের এই উপশিরোনামটি লেখিকার কাছে উত্থাপিত অনেকের সরল প্রশ্ন এবং মৌখিক ভাষার এই সংক্রমণ থেকে তিনি নিজেও রেহাই পাননি। অল্প সময়ে এই সংক্রমণ কাটিয়ে ওঠা গেছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান শাস্ত্রের পারিভাষিক শব্দ বিশ্লেষণের আবশ্যকতায়। নিজ অভিজ্ঞতা সূত্রে দুটি বিষয় স্পষ্ট যে প্রথমত, দেশে শব্দটি প্রচলিত হচ্ছে; দ্বিতীয়ত, এর পেছনের উদ্দেশ্য ছোট-বড় নৃগোষ্ঠীভুক্ত সাধারণ জনগণের কাছে অজানা। এর প্রচলন এমন সরল আদলে ঘটছে, যেন বাঙালি ছাড়া অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর, প্রধানত মঙ্গোলীয় আদলের চেহারার জনগণের জন্য ঢালাওভাবে 'আদিবাসী' শব্দটিই প্রযোজ্য এবং তা বাংলা ভাষার একটি আধুনিক রূপ! সেই সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে 'অনগ্রসর' শব্দটি; যদিও বাংলাদেশের কয়েক লাখ গরিব-দুঃখী ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীভুক্ত জনগণের বৃহদাংশ শুধু নয়, বিশাল বাঙালি নৃগোষ্ঠীর কয়েক কোটি গরিব-দুঃখী জনগণও একই ধরনের অনগ্রসর। খাদ্য-পুষ্টি-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা এবং শোষণ, অপশাসন ইত্যাদি বিচারে কার চেয়ে কে অনগ্রসর, কে 'বেশি' দুঃখী, কে 'বেশি' নিপীড়িত-নিষ্পেষিত বলা কঠিন বৈ নয়।নৃগোষ্ঠীগত বিভাজন পারস্পরিক দূরত্ব, সন্দেহ, অবিশ্বাস ও প্রীতিহীনতার জন্ম দেয়। রাষ্ট্রের অর্থ-সম্পদ-সুবিধাদির বরাদ্দ নৃগোষ্ঠী বিভাজনপূর্বক নয়, মানুষের প্রয়োজন ও এলাকাভিত্তিক বাস্তব চাহিদার ভিত্তিতে অকুণ্ঠ হওয়া আবশ্যক। ছোট ও বড় নৃগোষ্ঠীর যে একটি ক্ষুদ্র অংশ 'আঙুল ফুলে কলাগাছ' হয়ে যাচ্ছে অথবা হয়ে আছে, ভূমি, সম্পদ ও সুবিধা বণ্টনের বিচারিক দৃষ্টিভঙ্গি সেদিকে নিবদ্ধ করে কিছু করা গেলে সব নৃগোষ্ঠীর দুঃখী মানুষদের অগ্রসর জীবন নিশ্চিত করা অনেক সহজ হতো। সেটাই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি।বর্তমান নিবন্ধে তথাকথিত আদিবাসী প্রচারণা বিষয়ে জনগণের হাতে কয়েকটি রাষ্ট্রীয় স্বার্থগত সংগত প্রশ্ন তুলে দেওয়া হলো।এক. ছোট নৃগোষ্ঠীগুলোর জন্য 'আদিবাসী' পদটি কি বাংলাদেশের ইতিহাস সমর্থিত?দুই. এই 'পদ'টির প্রতি, অতিসম্প্রতি ছোট নৃগোষ্ঠীগুলোর (প্রধানত: পার্বত্য চট্টগ্রামের) নেতৃত্বের এত আগ্রহ সৃষ্টি হলো কেন?তিন. 'আদিবাসী' পদ ও জাতিসংঘের ঘোষণা কি বাংলাদেশের জন্য আদৌ প্রযোজ্য?চার. 'আদিবাসী' পদ প্রতিষ্ঠা দ্বারা বাংলাদেশের ভূমির অখণ্ডতার (Territorial integrity) ওপর কি কোনো আঘাত আসতে পারে? দেশের প্রতি ইঞ্চির ভূমির ওপর রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের স্বরূপ কী হবে?পাঁচ. 'আদিবাসী' পদকেন্দ্রিক নৃগোষ্ঠীগত রাজনীতি কি বাংলার জনজীবনের শান্তি বিঘি্নত করতে পারে?ছয়. ইতিহাস অসমর্থিত 'আদিবাসী' শব্দের পক্ষে পুস্তক-পুস্তিকা, মুদ্রণ মাধ্যম, 'ইলেকট্রনিক' মাধ্যম ইত্যাদিতে এখন যাঁরা ভাবাবেগে অংশ নিচ্ছেন, সারা দেশে যদি এই কৃত্রিমতার প্রায়োগিক বাস্তবতায় নৃগোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব-সংঘাত, রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা সৃষ্টি হয়, তাঁরা তখন কিভাবে সামাল দেবেন? পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের দৃষ্টান্ত সামনেই আছে।সাত. এই নৃগোষ্ঠীগত রাজনীতি (Ethnic-politics) কি জাতীয় সংহতি (National integration) অর্জন সাপেক্ষে জাতীয় শক্তি (National power) বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে?আট. এই পদ বাংলাদেশে কি নিরাপত্তার কোনো হুমকি সৃষ্টি করতে পারে?৩. জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র ও বাংলাদেশে 'আদিবাসিত্বের' কৃত্রিম পুঁজিওপরে উত্থাপিত প্রশ্নগুলো সূত্রে এ মর্মে কৌতূহল স্বাভাবিক যে এই একটিমাত্র ছোট শব্দ এত বহুমাত্রিক সমস্যার সম্ভাব্য উৎস কেন ও কিভাবে হয়?সংক্ষিপ্ত উত্তর, ২০০৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬১তম অধিবেশনের United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples, বাংলায় যা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক ঘোষণাপত্র, যা বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। শাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও বর্তমান বিশ্বের রাষ্ট্র ব্যবস্থার বাস্তবতায় ঘোষণাপত্রটি পাঠপূর্বক প্রতীয়মান হয় যে এর উদ্দেশ্য মহৎ হলেও এটি অনেক ক্ষেত্রে সংগতিপূর্ণ নয় এবং রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতা বা সার্বভৌমত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে এর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নসাপেক্ষ। সর্বোপরি এই ঘোষণাপত্রটি একপেশে বক্তব্যে আকীর্ণ এবং নির্বিঘ্ন শান্তির সংকেত দেয় না।ইতিহাসের বাস্তবতায় বাংলাদেশের জন্য অপ্রযোজ্য এই ঘোষণাপত্রটি পার্বত্য ছোট নৃগোষ্ঠীগুলোর ক্ষুদ্র একটি অংশের আদিবাসী পদের প্রতি আকর্ষণের মূল কারণ। এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য বাংলাদেশের কোনো কোনো ভূখণ্ড, অরণ্য, নদী, প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ছোট গোত্রজ নৃগোষ্ঠীর মালিকানা প্রতিষ্ঠা। ভূমি প্রসঙ্গে জাতিসংঘের ঘোষণার অনুচ্ছেদ ২৭-এর নির্দেশনা দৃষ্টিগ্রাহ্য- 'আদিবাসীদের ঐতিহ্যগতভাবে মালিকানাধীন কিংবা এর অন্যথায় ভোগ দখলে থাকা বা ব্যবহার্য ভূমি, ভূখণ্ড ও সম্পদসহ তাদের ভূমি, ভূখণ্ড ও সম্পদের ওপর তাদের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া বা বৈধতা দানের লক্ষ্যে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এর আইন, ঐতিহ্য, প্রথা ও ভূমিস্বত্ব ব্যবহারের যথাযথ স্বীকৃতি প্রদানপূর্বক রাষ্ট্র আদিবাসীদের সঙ্গে যৌথভাবে একটি অবাধ, স্বাধীন, নিরপেক্ষ, উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন করবে।'মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের ছোট নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রধানত চাকমাদের একটি ক্ষুদ্র স্বার্থগোষ্ঠীর (সব চাকমা নয়) দাবি, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি, ভূখণ্ড, অরণ্য, নদী, পাহাড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তাদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, প্রশাসন ইত্যাদিও তাদের হাতে থাকতে হবে। অন্য কথায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম তাদের ও বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের নাগরিক বাঙালিরা সেখানে তাদের অনুমোদন ছাড়া জমি ক্রয় বা বসবাস করতে পারবে না। বিগত তিন-চার দশকে যেসব বাঙালি, প্রধানত গরিব-দুঃখী-ভূমিহীন বসতি স্থাপন করেছে, কিংবা বাংলাদেশ সরকার বসতি স্থাপনের সুযোগ দিয়েছে, সেসব বাঙালিকে ওই অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিতে হবে। প্রশ্ন, যে গরিব বাঙালি ৩০-৪০ বছর আগে ৩০ বছর বয়সে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করেছে, আজ তার বয়স ৬০ বা ৭০ বছর। বাংলাদেশের নাগরিকদের বাংলাদেশেরই একটি ভূ-অঞ্চল থেকে উচ্ছেদ করার সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অমানবিক দাবিকে জোরদার করতে জাতিসংঘের ঘোষণায় আশ্রয় খুঁজছে এই ক্ষুদ্র স্বার্থগোষ্ঠীটি। এ দাবি একজন নাগরিকের চরম মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত।পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে, ইতিমধ্যেই দু-একজন করে বাঙালি প্রশ্ন করতে শুরু করেছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ছোট নৃগোষ্ঠীদের জমি ক্রয়-বিক্রয় ও বাসা-ফ্ল্যাটে বসতি, রাষ্ট্রের প্রশাসনে চাকরি ইত্যাদির আগ্রহ ও অধিকার নিয়ে। বাঙালির এই উষ্মার দু-একটি ফুলকি ভবিষ্যতে যদি দাবানলের মতো কোটি কোটিতে ছড়ায় তার দাহ কি ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীভুক্ত নাগরিকরা সহ্য করতে পারবে? তখন কি জাতিসংঘ থেকে 'শান্তি মিশন' পাঠানো হবে? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাইরের স্বার্থবাদীদের সে ধরনের কথাবার্তাও নজরে এসেছে। স্মরণে রাখা প্রয়োজন, শান্তি মিশন ও সার্বভৌমত্ব যেহেতু দ্বান্দ্বিক যখন, তখন এর প্রস্তাব উত্থাপন প্রশ্নাতীত হতে পারে না। পার্বত্যের দাবিদাওয়া তাই প্রশ্নসাপেক্ষ।জানা যায়, ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য দরদি বহির্বিশ্বের সাহায্য-সহযোগিতার ৯৮ শতাংশ ব্যয় হয় ছোট নৃগোষ্ঠীদের জন্য এবং ২ শতাংশ বড় নৃগোষ্ঠীভুক্ত বাঙালিদের জন্য। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে ছোট ছোট নৃগোষ্ঠী ও বাঙালি নৃগোষ্ঠীর জনসংখ্যা প্রায় সমান-সমান। সুতরাং প্রথম প্রশ্ন, নৃগোষ্ঠী বিভাজন করে এভাবে 'দুঃখী' খুঁজে বের করার রহস্য কী? দ্বিতীয় প্রশ্ন, বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে গারো, কোচ, সাঁওতাল, মণিপুরি, হাজং ইত্যাদি আরো যে ৩৫-৪০টি ছোট নৃগোষ্ঠী রয়েছে, বহির্বিশ্বের দুঃখমোচন তৎপরতা কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামে কেন? তাহলে ছোট নৃগোষ্ঠী নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূখণ্ডটিই কি মূল উদ্দেশ্য? এ ছাড়া দেখা যাচ্ছে, বর্হিবিশ্ব ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধার সিংহভাগ যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং প্রধানত চাকমা সুবিধাভোগীদের (সাধারণ গরিব-দুঃখী চাকমা নয়) ভাগে। এমনকি পার্বত্যের তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, মারমা ও অন্যরা এত সুযোগ পাচ্ছে না। এ ধরনের সুবিধাভোগিতা বিষয়ে ভবিষ্যতে অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া এই রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নতুন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে কি? অতি বিস্ময়কর ও সন্দেহ উদ্রেককর তথ্য এই যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছোট নৃগোষ্ঠীর নেতৃত্বের সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের আলোচনার মধ্যে বিদেশিরা বাঙালি সরকারি অফিসারকে থাকতে দেয় না। বাংলাদেশ সরকার এই ঔদ্ধত্যের কোনো জবাব চেয়েছিল কি? প্রশ্ন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বহির্বিশ্বের কাদের দৃষ্টি ও স্বার্থ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে এবং কেন? বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডটি বহির্বিশ্বের কাদের সামরিক পরিকল্পনার জন্য উপযোগী? আরো প্রশ্ন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীভুক্ত সাধারণ সরল, বাংলাদেশের নাগরিকরা আন্তর্জাতিক কূটিল রাজনীতির ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে না তো? ড. খুরশীদা বেগম অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়",False ij,"শোকার্ত উপকূল মাঝরাতে চাঁদ ডুবে গেলে, ঘুমের ঘোরে, তোমার আলোটুকুর দিকে চেয়ে হাঁটছি। দিকচিহ্ণহীন এই, আমি সহসা বৃষ্টিতে মনে হয় মায়াবী তুমি দাঁড়িয়ে পাশে। ২০০০ সাল। মাঝামাঝি। ভীষন মন খারাপ। জানি আর দেখা হবে না। দেখা হলেও কথা তো হবে না। দেখা হলেও ভীষন চমকে যাব। কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের মিল থাকবে না। কাজেই,মন খারাপ। ভীষন খারাপ। বসে থেকে সিগারেট টানছি আর কাগজে আঁকবুঁকি কাটছিল। একটা সময় কতগুলি কথা ভাসল মনে। লিখলাম- তবুও অপেক্ষায় থেকো রাত জেগে। আমি ফিরতেও পারি কথার টানে। তোমার অজস্র শব্দের মুঠোয় জীবন আমার নিয়ত ক্ষয়ের পাশে কেন যে বাঁচতে চায়? তখন কত পরিচিত মনে হয়েছিল ওকে। এখন কেমন অন্ধকার আর সুদূর। কেন এমন হল? আমার কি কোথাও কোনও ভুল হয়েছিল? তাই লিখলাম- তবুও তোমার গান বুঝিনি আমি বুঝেঝি শুধু তোমার কাছে যাওয়ার পথ নেই। অথচ, হাঁটছি ম্লান জোছনায় শোকার্ত উপকূল ছুঁয়ে। নিজের মনের করুন অবস্থা তুলে ধরার জন্য আরও লিখলাম- মাঝরাতে চাঁদ ডুবে গেলে, ঘুমের ঘোরে, তোমার আলোটুকুর দিকে চেয়ে হাঁটছি। দিকচিহ্ণহীন এই, আমি সহসা বৃষ্টিতে মনে হয় মায়াবী তুমি দাঁড়িয়ে পাশে। জন। যথাসময়ে এল। লেখাট দেখল। গিটার টেনে নিল। তারপর? তারপর ইতিহাস। জন গানটার নাম নিয়ে ভারি ঝামেলায় পড়েছিলাম। কী নাম দেই, কী নাম দেই। এমন মুশকিলে পড়লাম যে কী বলব; মাথার চুল ছেঁড়ার মতন অবস্থা। তখন সুমন এর (কবির সুমনের) একটা গান খুব ভাল লাগত। চেনা দুঃখ, চেনা সুখ চেনা চেনা হাসি মুখ ... কাজেই, নাম দিলাম ""চেনা দুঃখ""। কথাটা জন আজও জানে না। কেননা, ওদের জেনারেশন কবির সুমন শোনে না। অবশ্য ওর একটা গান (অন্ধ ) শুনে কবির সুমন কোলকাতা থেকে ওকে ফোন করে আর্শীবাদছিল। বলেছিল-উত্তরাধিকার নিয়ে আর দুশ্চিন্তা নেই! যারা এ কথা শুনে মুখ বাঁকাবেন-তারা যেন ""অন্ধ"" গানটার সরোদটুকু শোনে। জন ও বাতুল। বাতুল ওদের বন্ধু। আমার লেখা আমার প্রিয় একটা কবিতার গানের সার্থক রুপায়নের জন্য জনের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। (অবশ্য ওর অনেক উচ্চারণ নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ওদের বাংলা উচ্চারণ আমি শিখাইনি। ...) আর হ্যাঁ, চেনা দুঃখই ব্ল্যাক-এর প্রথম গান। জি সিরিজ থেকে বেরিয়েছিল। ""চেনা দুঃখ"" গানটা শুনতে ইচ্ছে করলে- http://www.mediafire.com/?jyjyzvtmvmb সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৭",False rg,"পেঁয়াজের ঝাঁজ ঠেকায় কে!!! কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। পাইকারীদারগণ বলছেন, বিদেশে পেঁয়াজের দাম কমায় আর আমদানি বেশি হওয়ায় বাজারের তার প্রভাব পড়ছে। প্রতিবেশী ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয় বাংলাদেশে। ভারতে পেঁয়াজের দাম কমেছে যার প্রভাব এখন বাংলাদেশের বাজারেও পড়ছে। তাছাড়া শীত মৌসুমের নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করেছে। হরতাল, অবরোধ বা পরিবহণ ধর্মঘট না থাকলে পেঁয়াজের দাম আরো সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। কিন্তু হঠাৎ করেই চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ কি? দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ ছাড়াও বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় পেঁয়াজের অবাধ বাজার লক্ষ্য করা যায়। কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া এভাবে পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজি প্রতি একশো টাকার উপরে চলে যাবার রহস্য কি?আমার কাছে পেঁয়াজের দাম বাড়ার যেসব কারণ রয়েছে বলে মনে হয় সেগুলো এরকম-১. কোরবানীর ঈদের সময় দেশে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের প্রচুর চাহিদা বাড়ে। যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুন বেশি। দুবৃত্ত ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট সেই মোক্ষম টাইমে একটি কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ব্যাটে বলে ছক্কা হাঁকিয়েছে। ২. প্রতি বছর কোরবানীর ঈদে গরম মশলার বাজার একটু গরম হয়। এবার যেহেতু গরম মশলার বাজার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল, তাই দুবৃত্ত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৌশলে পেঁয়াজের উপর থেকেই মুনাফা ঘরে তুলেছে।৩. এ বছর ভারত থেকে চোরাই পথে কোরবানীর গরু কম আসতে পেরেছে। ফলে চোরাকারবারীদের গরুতে ব্যবসা তেমন হয়নি। গরুতে ব্যবসা না হলে কি তারা মুনাফা তুলবে না? তাই পেঁয়াজের উপর সেই ঝাঁজ মিটিয়েছে তারা। ৪. ভারত থেকে চোরাই পথে গরু কম আসায় চোরাই পথের পেঁয়াজও তেমন আসতে পারেনি। যা পেঁয়াজের দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করেছে।৫. চোরাই পথে পেঁয়াজ কম আসায় পেঁয়াজ আমাদানি খরচে বেড়ে গেছে। যা পেঁয়াজের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আরেকটি ভূমিকা পালন করেছে। ৬. আরতদারগণ সেই সুযোগে পেঁয়াজের মজুদ বাড়িয়ে দিয়েছে, যা পেঁয়াজের দাম বাড়াতে পাইকারী/খুচরা ব্যবসায়ীদের আরো উসকে দিয়েছে।৭. আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছু বাড়তির দিকে ছিল, সেই সুযোগটি স্থানীয় দুষ্টচক্র শতভাগ কাজে লাগিয়েছে।৮. প্রধান বিরোধীদলের ডাকা ঘন ঘন হরতাল, অবরোধ আর পরিবহণ মালিকদের অকারণে পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে সারা দেশে পেঁয়াজের স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়েছে। যা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। ৯. সরকারিভাবে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির আরেকটি অন্যতম কারণ। পরবর্তী সময়ে অবশ্য খোলাবাজারে সরকারি উদ্যোগে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ পেঁয়াজের দাম কমানোর কৌশল না হলেও মানুষের আস্থা অর্জনের কৌশল ছিল। যে কৌশলটি দুষ্টু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সবাই নজরদারীতে রেখে শতভাগ সুযোগ নিয়েছে পেঁয়াজের আরেক দফা দাম বাড়িয়ে। ১০. পেঁয়াজ একটি পচনশীল খাদ্যপন্য। স্বল্প সময়ে এটাকে মজুত করা সম্ভব হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এটাকে মজুদ করাটা ঝুঁকিবহুল। ফলে স্বল্প সময়ের মুনাফা বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে পেঁয়াজ মজুদ করা হয়েছিল। আর দাম বাড়িয়ে এটা থেকে মুনাফা ঘরে তোলার পর এখন দাম কমা শুরু করেছে।এখন প্রশ্ন হল, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক দ্রব্য থেকে দুষ্টু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এবার পেঁয়াজ নিয়ে কেন বাজার অস্থির করলো? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আপনাকে অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ হবার প্রয়োজন নাই। চোরাকারবারীদের দৌরাত্ম সম্পর্কে একটু ধারণা থাকাই যথেষ্ট। চোরাকারবারীরা মিডিয়ার পেছনেও ইনভেস্ট করে। মৌসুম এবং বাজারে চাহিদা বুঝেই তারা কোন দ্রব্যের দাম নিয়ে খেলবে, সেটি আগে ভাগে ঠিক করে। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে চলমান ফালানি হত্যা মামলা'র পর কোরবানী ঈদের সময় যে ভারত যে চোরাই পথে গরুর উপর কড়াকড়ি আরোপ করবে এটা চোরাকারবারীরা জানতো। গরু রান্না করতে যেসব মশলা লাগবে, বাজারে সেসব মশলার সরবরাহ মোটামোটি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু পেঁয়াজের মৌসুম না হওয়ায়, পেঁয়াজের একটি কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করা দুষ্টু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের পক্ষে যতোটা রাতারাতি সম্ভব, ততোটা অন্য মশলা দিয়ে অতোতা সহজ নয়। গরম মশলার বাজার গরম হলেও ভোক্তা তখন গরম মশলা কেনা অনেকটা কমিয়ে দেয়। কিন্তু পেঁয়াজ খুবই প্রয়োজনীয় দ্রব্য। এটার ভোগ রাতারাতি কমানো সম্ভব নয়। তাছাড়া গরুর মাংসে পেঁয়াজের প্রয়োজনটা সবচেয়ে বেশি। সুতরাং দুষ্টু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সেই সুযোগটি এবার গ্রহন করেছে। সেজন্য তারা মিডিয়ায় একটি উড়ো খবর প্রচার করার চেষ্টা করেছে। মিডিয়া বুঝে হোক আর সিন্ডিকেটের পয়সার জোরে হোক, পেঁয়াজ নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি রকম খবর প্রচার করে ব্যবসায়ীদের সেই গোপন ইচ্ছাকে আরো শক্তি যুগিয়েছে। ফলে সারা দেশে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে একশো'র উপরে চলে গেছে। যদি আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ ঠিক মতো কাজ করত, হয়তো দু'চারজন মিডিয়া ব্যবসায়ীদের এই পেঁয়াজের গলদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ হাতে নাতে ধরতে পারতো। কিন্তু আমাদের দুষ্টু সিন্ডিকেট টাকা দিয়ে সব পথ কিনে রাখে। তারা মিডিয়াকে টাকা দেয়। পেঁয়াজের উপর গরম খবর প্রচার করার জন্য। পরিবহণ মালিকদের টাকা দেয় একটা পরিবঞন ধর্মঘট চালাতে। হয়তো দেশের প্রধান বিরোধীদলও পেঁয়াজের দাম বাড়ায় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে, সেখানে গোপন লেনদেন থাকাটা বিচিত্র কিছু নয়। কিন্তু আমরা পেঁয়াজের ভারী ঝাঁজ দেখলাম এটাই আসল খবর। শীত আসছে। এখন আর শত চেষ্টা করেও পেঁয়াজ কৌশল কাজে লাগবে না। এটা দুষ্টু সিন্ডিকেটও জানে।",False rn,"শেখার আনন্দ শেখা, এটাই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, দুর্বল কখনো ক্ষমা করতে পারে না। আজ তাই তোমরা শক্ত হও। শৈশবের ক্ষতের যা প্রভাব আজকের জীবনে পড়ছে, তা কাটিয়ে ওঠো। আজ থেকে শোনা যাক এক নতুন সংগীত। সে সংগীত শিশুদের হাসির। চলো সবাই মিলে সারিয়ে তুলি এই পৃথিবীর যত ক্ষত, বেদনা। সবাই সুখী হও।"" কখনো হার মেনে বসে থাকা যাবে না। সব সময় চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে, লেগে থাকতে হবে নিজের কাজের পেছনে। জীবনকে অনেকভাবেই মাপা যায়; বয়স, সময় কিংবা লক্ষ্য দিয়ে বোঝানো যায় জীবনের পথচলা। সৃষ্টি যখন সবার সামনে উন্মোচিত হয়, তখনই তা স্রষ্টার থেকে আলাদা হয়ে জনগণের সম্পদ হয়ে যায়।যখন তুমি ভেঙে পড়বে, যখন সারা পৃথিবী তোমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে, তখন টিকে থাকার একটাই উপায়। আর তা হলো, তোমার প্রকৃত সত্তাকে আঁকড়ে ধরা। পৃথিবী তোমাকে না বুঝতে পারে, ভুল বুঝতে পারে। কিন্তু অন্তত তোমার নিজেকে চিনতে হবে। নিজেকে চিনতে শেখো, নিজের ওপর থেকে কখনো বিশ্বাস হারিয়ো না। নিজের জীবন নিয়ে কখনো হতাশ হয়ো না। জীবনের ওপর হতাশা আর বিতৃষ্ণা তোমার যত ক্ষতি করবে, তেমনটা আর কোনো কিছুই করতে পারবে না।সাফল্য অনেক আকাঙ্ক্ষিত হলেও, বেশির ভাগ সময়ই তা আমাদের বড় কিছু শেখাতে পারে না।নিজেকে বিশ্বাস করো।আজকালকার তরুণেরা তাদের মা-বাবা, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে অনেক উপদেশ পায়। কিন্তু কোন উপদেশটি তার জন্য ভালো, এটা তাকেই বুঝতে হবে।তুমি মনে রেখো, তোমার জীবনে তুমিই সব, তুমিই সেনাপতি। সব মিলিয়ে জীবনটা তোমারই, তাহলে কেনই বা অন্য একজনকে সুযোগ দেবে তোমার জীবনের নিয়ম তৈরিতে।জীবনে একটা স্বপ্ন থাকতে হয়, সেই স্বপ্নকে ভালোও বাসতে হয়।’ তোমার মধ্যে থাকতে হবে দেশের প্রতি, জাতির প্রতি মমত্ববোধ। তুমি যা-ই করো না কেন, করার আগে শুধু ভাববে তুমি দেশের একজন প্রতিনিধি, দেশের প্রতি তোমার দায়িত্ব আছে। দেখবে সেই কাজটির বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা তোমার মধ্যে আপনা-আপনিই চলে এসেছে।তুমি কি জানো, মধ্যরাতে রঙিন স্বপ্ন দেখে কীভাবে জেগে উঠতে হয়? এবং তুমি কি জানো, তোমার বেডের পাশে কাগজ আর কলম না থাকলে ওই স্বপ্ন তুমি কীভাবে মনে রাখবে?সুতরাং চেষ্টা চালিয়ে যাও। আর চেষ্টা চালাও অনেক ভালো স্বপ্ন দেখতে। যে স্বপ্নের মধ্যে থাকবে তোমাকে আলাদা করার ক্ষমতা।যেসব তরুণ কাজ জোটাতে পারোনি, তাদের বলি, তোমরা হতাশ হোয়ো না। সুযোগকে কাজে লাগাতে শেখো। বড় হোক ছোট হোক, কাজে যোগ দাও। শুধু শুধু অন্যের ওপর নির্ভর কোরো না। নিজেই নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। নিজের জন্য নিজেই সুযোগ তৈরি করো। সরকারের দেওয়া ছোট কোনো কাজ, হতে পারে সেটা কৃষিকাজ, তুমিও যোগ দাও।সব যুবক যদি এক হয়, সব মানুষ যদি এক হয়, তবে দেশে এমন একটা পরিবেশ গড়ে উঠবে, যেখানে সবাই মিলে সুখে-শান্তিতে বাস করা যায়। তোমরা সাহসী হও। শেখায় মনোনিবেশ করো। নিজেদের দক্ষতা বাড়াও। মতৈক্য গড়ে তোলো। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তোমরা তোমাদের জাতির ভবিষ্যৎটাকে উজ্জ্বল করো, আলোকিত করো।মানুষের জীবন মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যায়। তারপরও মানুষের প্রত্যাশা থাকে পরিশ্রম, সাহস, ইচ্ছাশক্তি, একাগ্রতা আর প্রতিভার সমন্বয়ে জীবনে সফল হবার।মানুষের ভাগ্য তাদের হাতে নেই। কিন্তু নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করার সমস্ত যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে।যারা নিজের এই ভাগ্যকে মানুষের কল্যানের জন্য পরিবর্তন করতে পেরেছে তাহারা পৃথিবিতে সফল মানুষ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন থাকে। কিন্তু স্বপ্নের পথে পা বাড়ালেই একের পর এক আসতে থাকে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। যে ব্যক্তি এসব প্রতিবন্ধকতা টপকে এগিয়ে যাবেন তিনিই হবেন সফল।নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করার সমস্ত যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে।চলতি পথে অনেক ব্যর্থতা আসবে, সেটা স্বীকার করে নাও। মনে রেখো, অনেক বাধাবিপত্তি আসতেই পারে। তোমার ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে, অন্যদের ভুল থেকেও। সাফল্যের মধ্যে কমই শেখা যায়।একবার এক অনুষ্ঠানে আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনি একটু সহজ করে আপনার তত্ত্বটা আমাদের বোঝাবেন?’ আইনস্টাইন তখন এই গল্পটা শোনালেন। আমি একবার বন্ধুর সঙ্গে হাঁটছিলাম। বন্ধুটি ছিল অন্ধ। আমি বললাম, দুধ পান করতে ইচ্ছা করছে। ‘দুধ?’ বন্ধুটি বলল, ‘পান করা বুঝি, কিন্তু দুধ কী জিনিস?’ ‘একটা সাদা তরল পদার্থ।’ বললাম আমি। ‘তরল আমি বুঝি, কিন্তু সাদা জিনিসটা কী?’ ‘বকের পালকের রং।’ ‘পালক আমি বুঝি, কিন্তু বক কী?’ ‘ঘাড় কুঁজো বা বাঁকানো ঘাড়ের এক পাখি।’ ‘ঘাড় সে তো বুঝি। কিন্তু এই কুঁজো কথাটার মানে কী?’ এরপর আর ধৈর্য থাকে, বলুন! আমি তার হাতটা ধরে এক ঝটকায় টানটান করলাম। বললাম, ‘এটা এখন একদম সোজা, তাই না। তারপর ধরো, কনুই বরাবর এটা ভেঙে দিলাম। এবার তোমার হাতটা যেমন আছে সেটাকেই কুঁজো বা বাঁকানো বলে, বুঝলে?’ ‘আহ্!’ অন্ধ বন্ধু বলল, ‘এবার বুঝেছি, দুধ বলতে তুমি কী বুঝিয়েছ।’",False rn,"আমার বাংলাদেশ ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ।১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ।আমি অনেক চিন্তা করে দেখলাম 'বাংলাদেশ' একদিন হারিয়ে যাবে পৃথিবীর মানচিএ থেকে।বাংলাদেশের মানুষ চোর,মিথ্যাবাদী,লোভী,স্বার্থপর,দূরনীতিবাজ।তাহলে ভাষার জন্য কারা জীবন দিয়েছিলেন? ৭১'এ কারা এ দেশ স্বাধীন করে ছিলেন।পৃ্থিবী ধ্বংস হবার আগেই বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।চার ভাগের এক ভাগ মানুষ মরবে ভূমিকম্পে,এক ভাগ মরবে পানিতে ডুবে,এক ভাগ মরবে আগুনে পুড়ে আর এক ভাগ নিজেরা নিজেরা মারামারি করে।অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ বলেন-একটি দেশের জনসংখ্যা কিন্তু অভিশাপ না আর্শীবাদ।যে দেশ যত শিক্ষিত সে দেশ তত উন্নত।আমাদের দেশে শিক্ষার হার অনেক কম।কিন্তু যে সামান্য শিক্ষিত লোক আছেন তাড়া কি দেশ নিয়ে ভাবেন?খারাপ কাজ গুলোই শিক্ষিত মানুষরাই বেশী করেন।আমি এমন লোক দেখেছি তাড়া সমাজের কাছে সম্মানিত কিন্তু তাদের কথা ভাবলে আমার বমি পায়।দূরনীতি কারা করে?শিক্ষিত মানুষরাই বেশী অসৎ হয়।আর দেশের সোনার ছেলেরা সব চলে যাচ্ছে বিদেশ।তাড়া লেখা পড়া শেষ করে আর দেশে ফিরে আসতে চান না।রাস্তায় বের হলেই জ্যাম।আর জ্যাম মানেই ভিক্ষুক।কোথাও যেতে হলে অনেক সময় হাতে নিয়ে যেতে হয়।দশ মিনিটের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে এক ঘন্টা দশ মিনিট।সব কাজেই এখন লাইন ধরতে হয়।আমরা যেভাবে সময় অপচয় করি পৃ্থিবীর অন্য কোনো দেশ এতো সময় অপচয় করে না।কোনো দেশের শ্রমিক যদি ধর্মঘট পালন করে তারপরও তাড়া কাজ বন্ধ রাখে না।যেমন একটি জুতোর কারখানায় ধর্মঘট চলা অবস্থায় ও তাড়া কাজ বন্ধ রাখে না।তাড়া একপাটির জুতো বানায়।আমাদের দেশের কোনো শ্রেনীর মানুষ'ই ভালো না।সবাই শুধু নিজের কথা ভাবে।দেশের কথা ভাবে না।আমাদের দেশের সবচেয়ে খারাপ মানুষ হল রাজনীতিবিদেরা।শুধু বঙ্গবন্ধু আর দু'চার জন ছাড়া।এই গাধা রাজনীতিবিদ গুলো মরে না কেন?আমি যদি পারতাম তাহলে এই গাধা রাজনীতিবিদ গুলোকে কোনো এক মরু ভূমিতে রেখে আসতাম।আমার মনে আছে ডঃ হুমায়ুন আজাদ তার এক প্রবন্ধে লিখেছেন- আমাদের দেশের প্রধানমন্তী'র প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা হওয়ার ও যোগ্যতা নেই,কিন্তু সে একটি দেশের প্রধানমন্তী।তাহলে দেশের উন্নতি হবে কি করে?(উল্লেখ্য,সে সময় ক্ষমতায় ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া)। আমি আমাদের দেশের প্রতিটি বিষয় খুব মন দিয়ে দেখি-বুঝতে চেষ্টা করি।অবাক হই আর কষ্ট পাই।তারপর ভাবি এই দেশ ছেড়ে চলে যাবো।না..না,আর না।আর এই দেশে থাকব না।ভাবা পর্যন্ত'ই।যাওয়া আর হয় না।একবার তো পাসপোর্ট ভিসা সব হয়ে গেলো,যাওয়ার আগের দিন ভাবলাম আমি দেশ চেড়ে চলে যাচ্ছি! আমি !আমার দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি!বাংলায় কথা বলতে পারব না।ইচ্ছা করলেই রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খেতে পারব না!চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে রবীন্দ্রনাথ আর নারী রহস্য নিয়ে আড্ডা দিতে পারব না!বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে 'হিমি'র বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না।আমি কোথাও যাবো না।আমার বঙ্গ দেশ'ই ভালো।দরকার নাই আমার ডলার।এই জন্য'ই 'মুহাম্মদ জাফর ইকবাল' স্যার কে আমার এতো ভালো লাগে।আহ্ আমাদের দেশের সব মানুষ যদি জাফর স্যারের মতো হতো।তাহলে আমরা বছরের পর বছর দূরনীতিতে চ্যাম্পিয়ন না নতুন নতুন আবিস্কারে চ্যাম্পিয়ন হতাম।কষ্ট হয়।খুব কষ্ট হয়।আমাদের দেশের যে সমস্ত ফুটপাত দিয়ে মানুষজন সচারাচর হাঁটাহাটি করে না সে সমস্ত ফুটপাত অনেক সুন্দর অনেক চওড়া।কোথাও কোথাও বসার বেঞ্চও আছে।আর যে সমস্ত ফুটপাত দিয়ে প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষের যাওয়া আসা করে সেই সব ফুট পাতের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ।সামান্য পনের মিনিটের বৃষ্টিতে রাস্তায় রাস্তায় গলিতে গলিতে পানি জমে যায়।আহ কী চরম দুর্ভোগ।সকারী হাসপাতাল গুলোর অবস্থা আরো বেশী মারাত্মক।রোগী গুলো বারান্দায় শুয়ে থাকে।ডাক্তার নেই,ঔষধ নেই,চিকিৎসা নেই।তাদের আহাজারি দেখলে বুক ফেটে যায়।কি কষ্ট! কি কষ্ট!বাংলাদেশের জীবন ব্যাবস্থা এমন হয়েছে যারা ধনী তাড়া আরো বেশী ধনী হচ্ছে।আর দরিদ্র মানুষ গুলো দিন দিন আরো বেশী দরিদ্র হচ্ছে।আমি দেখেছি মধ্য রাতে এখনও ঢাকা শহরে বড়ো বড়ো হোটেল গুলোতে এখনও মধ্য যুগের মতো নারী কেনা বেঁচা হয়।পাঁচ তারা হোটেল গুলোতে লেট নাইট পার্টি।যারা এই পার্টি গুলো আয়োজন করেন-তাদের কথাই আবার খবরের কাগজের ফ্রন্ট পেজে দেখতে পাই।তখন আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে ইশ্বর কে খুঁজি।সেলুকাস!তারপর ও আমি স্বপ্ন দেখি একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।দেশের সব মানুষের মুখে থাকবে হাসি।আরে স্বপ্ন'ই যদি না দেখি তাহলে বাঁচব কেমন করে!আমি অপেক্ষা করি।অপেক্ষা করতে আমার ভালোই লাগে।National AnthemMy Bengal of Gold,I love you.Forever your skies,Your air set my heart in tuneAs if it were a flute.In spring, O mother mine,The fragrance from your mango grovesMakes me wild with joy,Ah, what a thrill!In autumn, O mother mine,In the full blossomed paddy fieldsI have seen spread all over sweet smiles.Ah, what a beauty, what shades,What an affection, and what a tenderness!What a quilt have you spreadAt the feet of banyan treesAnd along the banks of rivers!",False rn,"জামাত শিবির এখন তাদের পরাজয় এর দিন গুনছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে গঠিত চার দলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শরিক হিসেবে সরকার গঠনে ভূমিকা পালন করে।এই দলটির ছাত্র শাখার নাম বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। দলটির বর্তমান প্রধান যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী।জামায়াত আর রাজাকার সমার্থক শব্দ।১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করে। ২৫ মার্চ রাতে সংঘটিত অপারেশন সার্চলাইট এর ছয় দিন পর গোলাম আযম ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে একটি ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি ভারতের কড়া সমালোচনা করেন। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ প্রভৃতি বাহিনী গড়ে তোলেন।১৯৭১ সালের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াত ও এর আওতায় পড়ে। ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সকল ধরণের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন।পরে গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ গঠিত হয়। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর দৃষ্টিতে দ্বীন ও ইসলামী জীবন বিধান একই অর্থবোধক পরিভাষা। তাই ইসলামী জীবন বিধান কায়েম করাই কুরআন মজীদে ব্যবহৃত ‘ইকামাতে দ্বীন’ পরিভাষাটির সঠিক অর্থ।কুরআন শরীফের অনেক আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক প্রথমে ঈমান আনার কথা এবং পরে আমলের কথা বলেছেন। ইসলাম বিদ্বেষী কাফির-মুশরিকরা তাই মুসলমানদের ঈমানী চেতনায় বিভেদ তৈরীর জন্য সদা সক্রিয়। আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেনঃ “তারা পূর্ব থেকেই বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ সন্ধানে ছিল এবং আপনার কার্যসমূহ উলট-পালট করে দিচ্ছিল।” (সূরা তওবা ৪৮) যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সম্পর্কে জামায়াত বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। ইসলাম প্রিয় সাধারণ মানুষকে যতটা বোকা মনে করা হয় আদৌ তারা বোকা নন। তারা শান্তিপ্রিয়, তাই অনেক অনাচার, অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে।বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রধান লক্ষ্যঃ ""আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল সাঃ প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পূণর্বিন্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।""অনেক কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির আছে। অনেক বন্ধুই দিবালোকের মতো স্পষ্ট এই সত্য দেখতে অপারগ। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিজস্ব প্যাটার্ন রয়েছে। ব্লগে কি করে শিবির থাকে? কেন তাদের ব্যান করা হয়না? এক গাধা বলে- সরকারের অমানবিক ও অগণতান্ত্রিক আচরণের শিকার বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ।বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এই দলটির পূর্বতন নাম ছিল পাকিস্তান ছাত্র সংঘ।১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে শিবির প্রতিষ্ঠিত হয়।ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অধিভুক্ত ন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর স্টাডি অব টেরোরিজম অ্যান্ড রেসপন্স টু টেরোরিজমের তৈরি ফাইলে ছাত্র শিবিরকে একটি ""ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠন"" হিসেবে উল্লেখ করা হয়।আরও বলা হয় যে এটির সাথে পৃথিবীর বৃহৎ জঙ্গী সংগঠনসমূহের সম্পর্ক রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কটুক্তি, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিষেদগার, যুদ্ধপরাধীদের পক্ষ নিয়ে প্রজন্ম চত্ত্বরের আন্দোলনের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে রোববার নতুন করে আরো ৫টি ব্লগ ও সহস্রাধিক ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর আগে শনিবার একই অভিযোগে জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রত সোনার বাংলা ব্লটি বন্ধ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আমরা আমাদের বাংলাদেশে সুখী সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে চাই । জামাত শিবির ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবং করছে- তাই তাদের দেশ থেকে নির্মুল করতে হবে ।সব মানুষের আজ একটাই দাবী- ""রাজাকারের ফাসী চাই। ধর্ম ভিত্তিক রাজিনীতি নিষিদ্ধ হোক।""",False rn,"শিক্ষিত ছেলেদের মগজ ধোলাই (ব্রেইনওয়াশ) কিভাবে সম্ভব_ বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা করে আইএস-এর কি লাভ? বাংলাদেশে তারা বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করছে। বিদেশী নাগরিক সব দেশেই আছে তাহলে হত্যা বাংলাদেশেই কেন? যেসব বিদেশী হত্যা হয়েছে তাদের সাথে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সাথে কোন না কোনভাবে জড়িত। আইএস কারো জন্য ভাড়া খাটছে নাতো? আমাদের প্রধান দায়িত্ব আইএসের অস্তিত্ব সরাসরি অস্বীকার করা। সেদিন পৃথিবীটায় সব কিছু যদি ঠিকঠাক থাকত, সব অঙ্ক যদি হিসেব অনুযায়ী চলত, তা হলে তারিশি-নিবরাসের বন্ধুত্ব হওয়ার কথা ছিল সে রাতে। কিন্তু সে রাতে হোলি আর্টিজান কোনও রেস্তোরাঁ ছিল না, তা নরকে বদলে গিয়েছিল! নরকে যা ঘটা উচিত, তাই ঘটল।আমি আর আমার মেয়ে। আপনার বাচ্চাকে হার্ডকোর মুমিন না বানিয়ে একজন ভালো বিবেকবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। যদি বিবেক তৈরি হয়, তখন সে এমনিতেই সঠিক বেঠিক যাচাই করতে পারবে, নিজ ধর্ম সম্পর্কে শুদ্ধ জ্ঞ্যান অর্জনে অর্জিত করতে পারবে। নূন্যতম ইসলামী জ্ঞান এই সব জঙ্গিদের নেই। এই সব দেখিয়া শুনিয়া মাথায় গিট্টু লেগে গেল। আমাদের মতো নির্বিরোধী, শান্তিপ্রিয়, অতিথিপরায়ণ দেশে এবারে যে নজিরবিহীন ভয়াবহ ঘটনা ঘটলো তার ভিত একদিনে তৈরি হয়নি। দিনশেষে, আমরা কারো উপরই আস্থা খুঁজে পাচ্ছি না। ক্ষমতাসীনেরা কখনো বিপদে পড়ে না, বিপদ হয় দেশের। ফেসবুকে এখন শত শত কমান্ডো, নিরাপত্তা বিশ্লেষক! সেনা অভিযান নিয়ে একশত প্রশ্ন! সেনাবাহিনীর এই করার দরকার ছিলো, সেই করার দরকার ছিলো! সরকারের আন্তরিক ইচ্ছা প্রমানিত হলে, দেশের ১৬ কোটি জনগন তাদের পাশেই থাকবে। দেশে শত শত বিদেশী আসছে যাচ্ছে কিন্তু সবাই খুন হচ্ছে না। শুধুমাত্র গার্মেন্টস বায়াররাই টার্গেট হচ্ছে। কেন? কোরিয়ার ভদ্রলোকের ভিডিওটা ছিলো বলে মানুষ কিছুটা সঠিক তথ্য পেয়েছে। আমাদের দুই নেত্রীই নিজ নিজ দলের কিছু অযোগ্য আর চুড়ান্ত চাটুকার দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেই বুঝি অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ফলে তারা অনেক কিছুই হয়ত চাইলেও করতে পারেন না। আমরা ভয়ঙ্করভাবে বিভক্ত এক জাতি হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। জাতির অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে দিতে এরকম একটা ঘটনাই যথেষ্ট। বিদেশিদের কাছে আমরা ক্রমেই বিপদজনক রাষ্ট্রে পরিনত হয়ে যাচ্ছি। যারা ফেসবুকে বুদ্ধিজীবী হিসাবে পরিচিত তারা মাঝে মাঝে এমন কিছু কাজ করে বসেন যা খুবই হাস্যকর মনে হয়। অতীতে বেশ কিছু জঙ্গি ধরা হয়েছে কিন্তু বিষবৃক্ষ কাটা হয়নি। সমাজকে বাঁচাতে হলে, দেশকে বাঁচাতে হলে শুরুটা নিজেদের পরিবার থেকেই করতে হবে। অনেক দেরী হয়ে গেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমি খুবই আশাবাদী। জনগন সচেতন হবে। এই সব কালো ছায়ারা আর কোনোদিন সুযোগ পাবেনা এই দেশে! পরকীয়া প্রেমের মজা কোথায় জানেন? দায়িত্ব না নিয়েই এঞ্জয় করা যায় .. আর সেটা করতে পারলে আর বিয়ে করার কি দরকার ... যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করতে পারলেই উদ্দেশ্য সাধন ... আমরা শান্তিময় একটা দেশ চাই, যেখানে হাজারো দুঃখ-কস্ট মেনে নিয়ে হাসি মুখে ঘুমাতে যেতে পারি। এতটুকুই আমাদের চাওয়া সরকারের কাছে। সরকারকে আরো কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। আল্লাহ ফেরাউনের মত ঐ সব সন্ত্রাসীদের নাশ কর। মদিনা আক্রমন হলে তো আর কিছু বাকি থাকলনা। মসজিদে নববীর মত স্থানে কাফেরদের বোমা হামলা..! আল্লাহর আজাব সন্নিকটে তাতে কোনো সন্দেহ নেই...! তারপরেও বলবো মহানবী (সাঃ) -এর পবিত্র জন্ম ভূমিতে এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। আহ! ইসলামকে আর কত ছোট করবে এরা... সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:০০",False rg,"মোবাইল বিড়ম্বনা!!! যে কোনো ধরনের ফোন আমার কাছে খুবই বিরক্তিকর। আর মোবাইল তার চেয়ে কয়েক ডিগ্রি বেশি। আমার ধারণা, দেশে মোবাইল আসার পর থেকে মানুষের মিথ্যা কথা বলার পরিমাণ আগে চেয়ে বেড়ে গেছে। আমি মোবাইল ফোনে অনেককে দিব্যি খুব সুন্দর করে মিথ্যা কথা বলতে দেখেছি। যাদের অনেকেই মিথ্যা বলছেন, স্রেফ খামাখা। অথচ মিথ্যা না বললেও তাদের চলতো। যেমন ধরুন, ফোনের অপর পাশ থেকে হয়তো জিজ্ঞেস করা হয়েছে, কোথাও আছ? জবাবে অনায়াসে বলা যেতো, কাঁঠালবাগান, বন্ধুর বাসায়। তা না বলে জবাব দিচ্ছে, এই রকম- ফার্মগেট, মতিঝিল, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, মিরপুর। এই যে মিথ্যা বলার অনুশীলন, এটা একটা জাতিকে খুব ধীরে ধীরে শুধু নষ্ট করেই দেয় না, সেই জাতির অস্থি-মজ্জ্বা বিবেককেও কলুষিত করে দেয়। চোখের সামনে যারা এভাবে দিব্যি মিথ্যা কথা বলতে পারে, পেছনে তারা আরো বেশি বেশি মিথ্যা বলে, এটাই আমার ধারণা। যাক, অন্য মানুষের কথা বলে লাভ নেই। মোবাইল নিয়ে কিছু নিজের কথা বলি এবার। তখন আমার বন্ধুদের প্রায় সবার হাতে হাতেই মোবাইল ফোন। আমার কোনো মোবাইল নেই। তবে আমার পকেটে সব সময় কিছু মোবাইল নাম্বার একটা কাগজে লেখা থাকে। কয়েকজন কাছের বন্ধুদের মোবাইল নাম্বার। আগে টিএন্ডটি নাম্বার আমি মুখস্থ করেই রাখতাম। মোবাইল আসার পর প্রথম দিকে সব নাম্বার মুখস্থ রাখতাম। পরে যখন ডিজিট বেরে গেল, তখন ওই কাজে আমি ইচ্ছে করেই বিরতি দিলাম। কারণ, খামাখা আমার মস্তিস্কের একটা অংশ এই আজেবাজে সংখ্যা দিয়ে ভরাট করার কোনো মানে হয় না। দেরিতে হলেও ব্যাপারটা আমার উপলদ্ধিতে এসেছিল। তবে এই কাজে একটা মস্তিস্কের ব্যায়াম হত। তবুও আমি ওটা ছেড়ে দিলাম। ২০০৩ সালের জুন/জুলাই মাস। আমরা থাকি কাঁঠালবাগানের বিখ্যাত ১৯ নাম্বারে। বিখ্যাত এই কারণে যে, ওই বাড়ির ঘটনাবলী নিয়ে বন্ধুবর মহাত্মা টোকন ঠাকুর একটা উপন্যাস লিখেছিলেন। `সুঁই' নামের সেই উপন্যাসটি কোনো এক ঈদ সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। পরে ওটি বড় গল্প আকারে বইয়ে ঠাই পেয়েছে। ওই 'সুঁই' দিয়ে আবার বন্ধুবর সুমন শামস একটা ফিল্ম বানালেন। ধানমন্ডি'র আলিয়াঁস ফ্রান্সিসে 'সুঁই'র প্রিমিয়ার শো হয়েছিল। আমাদের প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুন সেই অনুষ্ঠান উদ্ভোধন করেছিলেন। ছবি'র যে দৃশ্যে নায়ক সুঁই দিয়ে নিজের দুই চোখ নষ্ট করে, সেই অংশ গুন'দা চোখ বন্ধ করেছিলেন। গুন'দার ভাগ্নে ইমন ওই অংশ শেষ হবার পরেই গুন'দাকে চোখ খোলার জন্য বলেছিল। তো পরে হাসপাতালে দেখা গেল, ছেলেটি'র একটা চোখ নষ্ট হয়েছে, আরেকটি আঘাতপ্রাপ্ত। ওটি চিকিৎসা নেবার পর ভালো হয়ে যাবে। উপন্যাসের শুধু নায়ক ছাড়া বাকি প্রায় সকল ক্যারেক্টার কাঁঠালবাগানের সেই বিখ্যাত ব্যাচেলর বাড়ি'র সদস্য। রাজীব, রিয়াজ, রেজা, পবন, পুলক, নাছিম, খোকন, রোকন, নয়ন। তো, পুরো ঘটনা জানতে হলে আপনাদের টোকন ঠাকুরের 'সুঁই' বড় গল্পটি পড়তে হবে। নতুবা সুমন শামসের 'সুঁই' ছবিটি দেখতে হবে। তো যে কথা বলছিলুম, মোবাইল তখনো আমার ছিল না। কারো সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন হলে মোবাইলের দোকানে গিয়ে ফোন করতুম। নতুবা বন্ধুদের মোবাইল থেকে একটা/দুইটা কল দিতুম। কিন্তু বন্ধুরা একটু একটু বিরক্ত হত। তো বন্ধুরা সবাই আবদার করলো, তোর একটা মোবাইল থাকাটা খুব জরুরী। আমি অবশ্য তখনো মোবাইলের গুরুত্ব নিয়ে ততোটা উদ্বিগ্ন নই। শেষ পর্যন্ত ভোরের কাগজের বন্ধুবর বড় ভাই মহাত্মা শামীম আহমেদ ও বন্ধুবর কবি জাফর আহমদ রাশেদ বললেন, একটা মোবাইল তোমাকে নিতেই হবে। নইলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। তো সিদ্ধান্ত হল, শামীম ভাই ভোরের কাগজে আমার লেখক বিলগুলো একসঙ্গে দেবার একটা ব্যবস্থা করবেন। তাই দিয়ে মোবাইল কেনা হবে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে হেঁটে বাংলা মটর ভোরের কাগজ অফিসে গেলাম। শামীম ভাই লেখক বিলের একটা অংশ ছাড় করাতে সক্ষম হলেন। এক হাজার টাকা। সেই এক হাজার টাকা আমার পকেটে। শামীম ভাই সন্ধ্যার আগে বের হতে পারবেন না। পেস্টিং শেষ করে বেরোবেন। তো বন্ধুবর মহাত্মা জাফর আহমদ রাশেদ আমাকে নিয়ে চললেন ফোনের দোকানে। সোনারগাঁ রোডের একটা দোকানে আমরা গেলাম। সিমকার্ডের দাম-ই তখন এক হাজার পঞ্চাশ টাকা। আমি একটু গড়িমসি করছি দেখে জাফর পকেটে হাত দিয়ে পঞ্চাশ টাকা বের করলেন। এক হাজার পঞ্চাশ টাকায় সিমকার্ড কেনা হল। এবার ফরম পূরণের পালা। এককপি ছবিও তাদের দিতে হল। মহা ঝামেলার ব্যাপার। তো, সিমকার্ড হাতে নিয়ে আমরা হেঁটে হেঁটে কাঁঠালবাগানের বাসায় আসলাম। এখন মোবাইল সেট না হলে আর ফোন করা যাবে না। মোবাইল ফোনের কি দরকার আমি তখনো বুঝতেছি না। সন্ধ্যায় একে বেকে বন্ধুদের সবাই আসলো। সব রথি-মহারথিরা পরামর্শ দিল, এবার তোমাকে একটা মোবাইল সেট কিনতে হবে। আমি তখন একপায়ে খাড়া, কিছুতেই আর মোবাইল সেট কেনার টাকা যেমন আমার নেই, তেমনি ইচ্ছাও নেই। বন্ধুবর মহাত্মা মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ নাহিদের মোবাইল সেটে আমার সিমকার্ড ঢুকিয়ে কিছু নাম্বার টেপাটিপি করে নাহিদ ওটি চালু করলো। আমরা হরিবল হরিবল বলে হৈ হৈ করে উঠলাম। কাকে ফোন করা যায়? বন্ধুবর গল্পকার মহাত্মা রোকন রহমান চট্টগ্রাম গেছে। তো রোকনের নাম্বারে ফোন করলাম। হ্যালো, কোই তুমি? - আমি মনসুরাবাদ। এইডা কার নাম্বার?- এইডা আমার নাম্বার। - ফোন কিনলা? টাকা কোই পাইলা?- না, ফোন কিনি নাই, সিমকার্ড কিনছি। নাহিদের মোবাইলে ঢুকাইয়া ফোন দিছি তোমারে।- দাও একটু নাহিদ্যারে?তারপর নাহিদকে ফোন দিলাম। নাহিদ কথা শেষ করে একটু হাসলো। জানতে চাইলাম, হাসলা ক্যান? জবাবে নাহিদ কইলো- সন্ধ্যার আগেই হেয় জায়গা মত হাজির। হেয় মানে রোকন।আমাদের চারতলার বাসায় আগতরা সবাই আমার নাম্বার নিজেদের মোবাইলে সেভ করলো। কিন্তু সমস্যা হল, আমাকে কেউ ফোন করে পাবে না। কারণ, শুধু সিমকার্ড তো আর কথা বলার জন্য যথেষ্ট নয়। কবি জাফর আহমদ রাশেদ বললেন, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত ওয়েট করেন। আমি একটা নতুন মোবাইল সেট কিনব। আমার এই পুরানটা আপনাকে দেব। পরের বৃহস্পতিবার শামীম ভাইকে সঙ্গে নিয়ে জাফর আরেকটা নতুন মোবাইল সেট কিনলেন। আমাদের বাসায় আসার পর সেই নতুন সেটে জাফরের সিমকার্ড ঢুকালেন শামীম ভাই। তারপর ওটা চার্জে বসানো হল। আর আমার সিমকার্ড জাফরের সেই পুরান সেটে ঢুকালেন শামীম ভাই। পরদিন ধানমন্ডি লেকের পারে জাফর আমাকে চার্জার দিলেন। সে এক বিশাল অভিজ্ঞতা। আমার হাতেও একটা মোবাইল ফোন আছে! কি ভাগ্যবান রে!!!ওই মোবাইল ফোনের বিশেষত্ব হল, ওটি পকেটে রাখা যায় না। সাইজে এতোই বড় যে, ওটি হাতে নিয়েই চলাফেরা করতে হয়। তাতে কি? আমারও যে একটা মোবাইল আছে, তাতো রাষ্ট্রের জানা দরকার!! তারপর মোবাইল হাতে নিয়েই আমার চলাফেরা শুরু হল। সে এক বিরাট কাণ্ড বটে!!তো এরপর শুরু হল আরেক বিড়ম্বনা। মোবাইলে কথা বলতে তো টাকা লাগবে। কিন্তু আমার ফোনে সব সময় টাকা থাকে না। তো বন্ধুবর মহাত্মা সুদত্ত চক্রবর্তী পবন, বন্ধুবর মহাত্মা পুলক বিশ্বাস, বন্ধুবর হযরত রিয়াজুল হক শিকদার, বন্ধুবর মহাত্মা মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ নাহিদ, বন্ধুবর মহাত্মা জাফর আহমদ রাশেদ, বন্ধুবর মহাত্মা রোকন রহমান, বন্ধুবর মহাত্মা টোকন ঠাকুর, বন্ধুবর গল্পকার মহাত্মা খোকন কায়সার, বন্ধুবর মহাত্মা রাজীব নূর, বন্ধুবর বড়ভাই মহাত্মা শামীম আহমেদ, বন্ধুবর মহাত্মা রেজাউল কবীর মাহমুদ নাছিম, বন্ধুবর মহাত্মা আমিনুর রহমান মুকুল, বন্ধুবর মহাত্মা শাহীনুর রহমান, বন্ধুবর মহাত্মা ডাক্তার কল্লোল চৌধুরী, বন্ধুবর বড়ভাই মহাত্মা গোলাম রসুল, বন্ধুবর মহাত্মা নয়ন মনি চৌধুরী, বন্ধুবর মহাত্মা তারেক মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, বন্ধুবর মহাত্মা সুমস শামস, বন্ধুবর মহাত্মা মইনুল বিপ্লব, বন্ধুবর মহাত্মা জাহেদউদ্দিন, বন্ধুবর মহাত্মা সত্যজিৎ পোদ্দার বিপু সহ আরো অনেকে নানা পরামর্শ দিলেন। রাজীব দা বললেন, আপনি আমাকে মিসকল দিলে আমি কলব্যাক করবো। রিয়াজ বললো, আমিও তোমার মিসকলে কলব্যাক করবো। পুলক, পবন, নাছিম, মুকুল এরা প্রায় সবাই বললো, তুমি মিসকল দিবা, আমরা কলব্যাক করবো। তারপর শুরু হল মিসকল খেলা। কখনো কখনো অপ্রয়োজনেও সেই মিসকল খেলাখেলি শুরু হল। মোবাইল মানুষকে যন্ত্রের মত দানব বানিয়ে ফেলে!!তো নাহিদ, রিয়াজ আর আমি এই মিসকল নিয়ে একটা গবেষণা করে ঠিক করলাম যে, শুধু মিসকল দিয়েই কিভাবে আমাদের মেসেজ ঠিকঠাক পাঠানো যায়, তা আমরা ঠিক করলাম। তার আগে আমরা আমাদের আড্ডার জায়গাগুলো কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করলাম। কাঁঠালবাগান হল 'ক' অঞ্চল, ধানমন্ডি হল 'খ' অঞ্চল। ফকিরাপুল/মতিঝিল/পল্টন হল 'গ' অঞ্চল। কারওয়ান-গারোয়ান-দারোয়ান এলাকা হল 'ঘ' অঞ্চল। আর অন্যান্য এলাকা হল 'ঙ' অঞ্চল। যদি একটা মিসকল দি, তাহলে আমি 'ক' অঞ্চলে আছি বুঝবে সবাই। এভাবে মিসকলের সংখ্যা যতো বাড়বে সেভাবে অঞ্চল ভাগ কবে। তো ধানমন্ডি লেকের পারে এক সন্ধ্যায় বন্ধুবর মহাত্মা টোকন ঠাকুর একদিন বললেন, রেজা মিসকলের খেলাটা মাঝে মাঝে বিরক্তি'র পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এখন থেকে একটা নতুন আইন আমার বেলায় হবে। বন্ধুদের যে আমাকে মিসকল দেবে, তার ফোন নাম্বার আমি আমার মোবাইল থেকে মুছে ফেলবো। আর পারি না এদের নিয়ে। তো এই ঘোষণা দিয়ে টোকন ঠাকুর নিজেকে মিসকল খেলা থেকে প্রত্যাহার করলেন। ধীরে ধীরে সেই প্রত্যাহারের সংখ্যাও এক সময় বাড়তে লাগলো। আমরা শুধু মিসকল দিয়েই আমাদের কিভাবে কখন কোথায় দেখা হবে তা প্রায় শতভাগ নিশ্চিত করতাম সে যুগে। তো একবার নাহিদ আমি যাচ্ছি কাঁঠালবাগান থেকে শাহবাগ। সেখান থেকে আমরা ধানমন্ডি ৩২-এ ফিরবো। আমরা যখন সোনারগাঁ রোড ধরে শাহবাগ যাচ্ছি, ওই সময় বন্ধুবর মহাত্মা জাহেদউদ্দিন আমাকে মিসকল দিল। নাহিদ একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে কইলো, তুমিও একটা মিসকল মারো। আমিও জাহেদকে একটা মিসকল দিলাম। মানে আমি বাসায় আছি। দুই মিনিট পরে নাহিদ কইলো, এখন আরেকটা মারো। আবার জাহেদকে একটা মিসকল মারলাম। জবাবে জাহেদও মিসকল মেরে জানতে চাইলো ঘটনা কি? এই কইলা কাঁঠালবাগান, আবার এখন কইতাছো ধানমন্ডি? আসল ব্যাপার হল তখনো জাহেদের মিসকল ছিল সবচেয়ে লম্বা। অনেকটা ফোনের মত। তো আমি ফোন রিসিপ করলাম। জাহেদ ওপাশ থেকে কইলো, এ্যাঁ? সেকি ধইরা ফেলাইলা যে? তারপর ফোন কেটে গেল। মানে জাহেদের ফোনে টাকা নাই। আমরা শাহবাগ পৌঁছে জাহেদকে ফোন করলাম। বললাম, শাহবাগ আছি। জাহেদ আমাদের বাকি কথা না শুনে বললো, থাকো আসতিছি। জাহেদ ফোন রেখে দিল। আমি আর নাহিদ ঝিগাতলা যাবো নাহিদের আপার বাসায়। সেখান থেকে ধানমন্ডি ফিরবো। তো জাহেদের জন্য অপেক্ষা করলে তিনজনের রিক্সাভাড়া বেশি পড়বে। সেই হিসেবে জাহেদকে আবার ফোন করলো নাহিদ। কইলো, তুমি ধানমন্ডি আসো। আমরা ঝিগাতলা যাইতেছি, ওখান থেকে ধানমন্ডি আসবো। জবাবে জাহেদ কইলো, আমি তো এখন কাঁঠালবাগান থেকে আবার রিক্সা নিয়ে ঢাল পর্যন্ত আসছি। দেখো দেখি কাণ্ড? তোমরা এখন কোই ঠিক কইরা কও তো? জবাবে নাহিদ কইলো, আমরা এলিফ্যান্ট রোড ক্রোস করে সিটি কলেজের সামনে এখন। জবাবে জাহেদ কইলো, ঠিক আছে, তোমরা তাড়াতাড়ি ফেরো। হুদাই রিক্সাভাড়া দিলাম। সন্ধ্যায় ধানমন্ডি লেকের পারে জাহেদের কাছে জানা গেল, মিসকল বিড়ম্বনায় আজ ভুল বোঝাবুঝি হইছে। তোমাগো প্রথম মিসকলে আমি ধরে নিলাম তোমরা বাসায় আছো। আমি ইস্কাটন থেকে সরাসরি কাঁঠালবাগান রিক্সা নিলাম। কাঁঠালবাগান পৌঁছানের আগে আগে শুনলাম তোমরা শাহবাগ। রিক্সা ঘুরাইলাম। ভাড়া ডাবল। পরে শুনলাম তোমরা ঝিগাতলা যাইতেছো? পুরাডাই গোয়া মারা গেল!!আমরা জাহেদের দুঃখের কথা বুঝতে পেরে জাহেদকে আজিজ আঙ্কেলের মাথা ধরার বিখ্যাত বড়ি দিয়ে আপ‌্যায়ন করলাম। আমরা তখন নানান ধরনের গাছ-গাছরা, আমলকি-হরতকি, পাওয়ার এ্যান্ড হিট নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। কখনো বুড়ি'র দোকানের তাম্রকুট, কখনো নরসিংদি'র মোহিনী, কখনো আজিজ আঙ্কেলের বিখ্যাত বড়ি, কখনো এরাম সাহেবের শীতলক্ষার তরল, কখনো চাঁনখারপুলের রোকন থেরাপি, কখনো হাবিবের দোকানের বেশি চিনি'র চা নিয়েই আমরা তখন ভারী ব্যস্ত যৌবন কাটাচ্ছি। আর তার মধ্যে মোবাইলে টাকা না থাকলে মিসকল বিড়ম্বনা শুরু হত। সে এক ঘোর লাগা মোবাইল যুগ। সে এক ঝাঁঝাঁঝিঁঝিঁ দুপুর। সে এক মায়ায় পরা দৌড়ঝাপ। আহা দিনগুলি মোর। দীর্ঘ দশ বছর টানা আমরা ধানমন্ডি নদীর পারে রোজ সন্ধ্যায় আড্ডা দিতাম। কখনো সারাদিন। রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো দিন আমাদের আড্ডা বন্ধ হয়নি। আমিও কাঁঠালবাগান ছাড়লাম, ধানমন্ডি'র সেই আড্ডাও এক সময় বন্ধ হয়ে গেল!!!",False fe,"একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও বর্তমান প্রজন্মের প্রত্যয় একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও বর্তমান প্রজন্মের প্রত্যয়ফ কি র ই লি য়া স======================================চারদিকে একাত্তরের পরাজিত শক্তির উদ্যত ফণা! ওরা দেশজুড়ে পুলিশের ওপর হামলে পড়েছে। খবর বেরিয়েছে, মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিকরা তাদের টার্গেট। দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দেয়া শুরু হয়েছে। এমন সময়ে এসব মৌলবাদী দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে তৎপর হয়েছে। আর তাদের মদদ দিচ্ছে কিছু রাজনীতিক, যারা নিজেদের ‘মুক্তিযুদ্ধপন্থী দল’ মনে করে।বস্তিতে বস্তিতে কিংবা গ্রাম-গ্রামান্তরে মৌলবাদ ছড়িয়ে দেয়ার যে প্রবণতা তা বাংলাদেশে নতুন নয়, আগেও হয়েছে। মানুষ তখন ততটা সচেতন ছিল না। ধর্মের দোহাই দিয়ে কারা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে, তা সবারই জানা। ‘বিবি তালাকে’র ফতোয়া আনার জন্য কয়েক মাইল পথও হেঁটেছে আগেকার দিনে কেউ কেউ। ধর্মীয় তমদ্দুনের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে এক ধরনের ‘সামাজিক ব্যবসা’ও করেছে সেসব তালাকপত্র লেখক ফতোয়াবাজ। তারা মানুষের কাছ থেকে টাকাকড়িও নিয়েছে। ‘বিবি তালাক হয়ে গেছে’ এ মর্মে আড়াইশ’ টাকা ফি নিয়ে ফতোয়া দিয়েছেন একজন। ‘না, বিবি তালাক হয়নি’ এমন মর্মে লিখিত ফতোয়া দিয়েছেন অন্যজন পাঁচশ’ টাকা ফি গ্রহণ করে। সবই ছিল টাকার খেলা।আমার মাতামহী একটি প্রবাদ প্রায়ই বলতেন। তা হচ্ছে, ‘মিয়ায় যদি মিছা কয়, সবাই বলে অয় অয়, অমাবস্যায় দেখিয়াছি চাঁন।’ অর্থাৎ প্রবল পরাক্রমশালী গ্রামের ‘মিয়া’ যদি বলেন অমাবস্যায়ও চাঁদ দেখেছেন, তার সঙ্গে সবাই ‘হ্যাঁ হুজুর, হ্যাঁ হুজুর’ করত।এটা হচ্ছে সামন্তবাদের আদি স্বরূপ। তা কি এখন নেই? হ্যাঁ, আছে। এবং বহাল তবিয়তেই রয়েছে নতুন রূপে, নতুন আঙ্গিকে। এর প্রবক্তা কারা? প্রবক্তা তারাই, যারা এখনও সেই মৌলবাদের দোর্দণ্ড প্রতাপ খাটাতে চায় সমাজের চারপাশে।মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ছাতকছড়া গ্রামের নুরজাহানকে দোররা মেরে হত্যার ঘটনা খুব বেশিদিন আগের নয়। এমন ঘটনা এখনও ঘটছে। ভাবতে খুবই অবাক লাগে, এই ফতোয়াবাজদের সমূলে প্রতিহত করা যাচ্ছে না। কেন যাচ্ছে না, তা ভেবে বারবার কেবল হতাশই হতে হয়।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেই দিয়েছেন, ২০১৩ সালে জামায়াত-শিবিরের এসব নগ্ন হামলা প্রমাণ করছে, দেশ থেকে মৌলবাদী জঙ্গিরা এখনও নির্মূল হয়নি। বাংলাদেশের মানুষের হাতে হাতে এখন মুঠোফোন। অথচ কোন গ্রামে যখন কোন ভণ্ড ফতোয়াবাজ এ সমাজের নারী-পুরুষকে দংশন করতে তৎপর হচ্ছে, তখন এসব মুঠোফোন একসঙ্গে বেজে উঠছে না। তারা মোবাইল ফোনে একসঙ্গে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না। তারা পারস্পরিক বোঝাপড়া করে মোকাবেলা করছে না অপরাধীদের। কেন তা হচ্ছে না?হ্যাঁ, বাংলাদেশের বস্তিতে বস্তিতে মৌলবাদের বীজ ছড়ানোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের ব্রেইন ওয়াশ করার জন্য মাঠে নামানো হয়েছে কিছু নারী কর্মীকে। তারা বিভিন্ন গ্রাম-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ে কোমলমতি স্কুল ছাত্রছাত্রীদের মনকে মৌলবাদী উন্মাদনায় সংক্রমিত করার চেষ্টা করছে। ধর্মকে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে তারা মানবতার বিকাশকে বাধা দিচ্ছে।বাংলাদেশে এই যে মৌলবাদের ভয়ংকর চেহারা ক্রমেই বেরিয়ে পড়ছে, তা রুখতে মানুষ কতটা সাহস নিয়ে দাঁড়াচ্ছে, রাষ্ট্রই বা কতটুকু সচেতন? এসব প্রশ্নও বিভিন্ন কারণে মুক্তচিন্তার অধিকারী মানুষের মনকে বিদ্ধ করছে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র কিংবা এর সর্বোচ্চ জনপ্রতিনিধি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও যে হুমকি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না, তাও আমরা দেখছি। মৌলবাদীরা যত্রতত্র বলে বেড়াচ্ছে, তারা দেশ অচল করে দেবে। এটা সবার জানা এবং বোঝা উচিত বাংলাদেশে মৌলবাদ যারা সমাজের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে, তাদের জীবনাচার এর বিপরীত। তাদের ছেলেমেয়েরা পড়ছে বিদেশের দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আর তারা বাংলাদেশে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে চাঁদা তুলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। একই অবস্থা মধ্যপ্রাচ্যের সেসব দেশে, যারা উপমহাদেশে তথা বাংলাদেশে মৌলবাদ প্রতিষ্ঠার বর্তমান কারিগর। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের আধুনিক মেয়েরাই এখন ‘হিজাব’ ছুড়ে ফেলে দিয়ে সমকালের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পোশাক পরছে। অফিস, আদালত, ব্যাংক-বীমা, দফতর চালাচ্ছে। আর সেই হিজাবকে আরোপ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বাংলাদেশে। সিলেটে শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর্য নির্মাণে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে একাত্তরের পরাজিত শক্তিরাই। মুক্ত মত, মানবতার স্বপক্ষের রাজনীতিকদের নিঃশেষ করে উপমহাদেশে জঙ্গিবাদী থাবা বিস্তার করতে অত্যন্ত তৎপর একটি মহল। এরই মধ্যে প্রকাশিত মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক রিপোর্টে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে এই বলে যে, বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের উর্বর ভূমি বলে বিবেচনা করছে একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র। ওয়েব মিডিয়ার কল্যাণে এখন যে কেউ ‘অনলাইন দৈনিক’ করার সুযোগ গ্রহণ করছে। তাতে তাৎক্ষণিক সংবাদ ছড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। এ কায়দায় মৌলবাদীরাও ওয়েবকে তাদের সংগঠিত হওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। মৌলবাদের ভয়ংকর চেহারা হচ্ছে, সরাসরি পবিত্র কোরআন শরিফ নিয়ে রাস্তায় নেমে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। যদি এ অর্ধশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টিকারীরা প্রকৃত শিক্ষিত হিসেবে গড়ে উঠত, তবে তারা এমন মানসিকতা ধারণ করতে পারত না।আফগানিস্তানের বর্তমান ভয়াবহ পরিণতির কথা আমরা জানি। ধর্মীয় গোঁড়ামির সুযোগ নিয়েই সেখানে আল কায়দার মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র তাদের অন্যতম সদর দফতর সেখানে স্থাপন করতে পেরেছিল। এর পাশাপাশি পাকিস্তানের অসমতল পর্বত উপত্যকাকে বেছে নিয়েছে তাদের অভয়ারণ্য হিসেবে। সাকর্ভুক্ত দেশ আফগানিস্তানের নিকটবর্তী বাংলাদেশের জন্য তা অবশ্যই সুখকর সংবাদ নয়। কারণ নব্বইয়ের দশকে ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’- এ ধরনের স্লোগান যারা দিয়েছিল, তাদের চেহারা তো ভিডিও ফুটেজে বাংলাদেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে থাকার কথা।বেশ শংকার কথা, হায়েনারা তাদের সেই দানবীয় চেহারা দেখানোর জন্য বেশ তৎপর হয়েছে। এর শিকড় উৎপাটনে দেশের প্রত্যেক সচেতন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। জামায়াতিদের হরতাল দেখে আমরা জেনে গেছি, সারাদেশে তাদের সংখ্যা অত্যন্তই সীমিত। নজর রাখতে হবে সেসব নাটের গুরুদের প্রতিও, যারা মৌলবাদী চক্রকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন।যারা রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে, তাদের আইনের মুখোমুখি করা হোক। তাদের বিচার করার জন্য সর্বাÍক ব্যবস্থা নেয়া হোক। তা না হলে আশকারা পেয়ে তারা দেশের ভবিষ্যৎ ক্রমেই অনিশ্চয়তার দিকেই ঠেলে দেবে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত এ ভূখণ্ড কোন মৌলবাদী দানবতন্ত্রের লীলাক্ষেত্র হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই সব সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করে এদেশের মানুষ। এদেশের প্রধান শক্তি হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। তাদের প্রত্যয়ই এ দেশকে জঙ্গিবাদীদের চক্রান্ত থেকে রক্ষা করতে পারে।---------------------------------------------------------------দৈনিক যুগান্তর / ঢাকা / ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ বুধবার",False rn,"রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই-৯৭ আমার এক সময় ধারনা ছিল রবীন্দ্রনাথ চা খেতেন না। বিশেষ করে রাস্তার পাশের কোনো দোকান থেকে। কখনও খেলে- শখ করে খেতেন। চার পাশের মানুষদের খেতে দেখে হয়তো একটু শখ করে খেলেন, জিনিসটা কেমন! ঢাকা শহরের সব রাস্তায় রাস্তায় অসংখ্য চায়ের দোকান আছে। একদিন দুপুরবেলা হঠাত আকাশ কালো করে ঝুম বৃষ্টি নামল। আমি ভিজতে ভিজতে রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে এক কাপ চা খেলাম। খুব মুগ্ধ হলাম। আশ্চর্য ব্যাপার সাথে সাথে আমার রবীন্দ্রনাথের কথা মনে পড়ল। রবীন্দ্রনাথ কি কখনও বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খেয়েছেন? খেলেও আমার মতো মুগ্ধ কী কখনও হয়েছেন ! আমাদের দেশে রবীন্দ্রনাথ সড়ক আছে, যশোর জেলায়। যশোরের মনিহার সিনেমা হল থেকে চৌরাস্তার মোড় পর্যন্ত রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ সড়ক। রবীন্দ্রনাথের নামে নামাঙ্কিত আরেকটা জায়গার নাম- ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরেবার। সেখানে একটা মুক্তমঞ্চও আছে, যেখানে প্রায়ই নানা অনুষ্ঠান হয়।রবীন্দ্র সরোবর ভারতেও একটা আছে। কলকাতার সবচেয়ে বড়ো হ্রদটারই নামকরণ করা হয়েছে কবিগুরুর নামে।কলকাতায় রবীন্দ্রনাথের নামে নামকরণ করা হয়েছে আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের; হাওড়া- কলকাতা শহর দু’টির সংযোগ সেতুর নাম রবীন্দ্র সেতু। ওখানকার একটা বিখ্যাত সিনেমা হলের ভবনের নাম দেয়া হয়েছে রবীন্দ্রসদন, ওটা এখন ওখানকার তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অফিস। পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কারেরও নামকরণ করা হয়েছে কবিগুরুর নামে- রবীন্দ্র পুরস্কার। মানুষ, প্রকৃতি, ঈশ্বর- এই তিনে মিলে একাত্ম। জীবন-মৃত্যু যেন এক অদৃশ্য সুতোয় গাঁথা বাস্তবতা। তাই মৃত্যুর জন্য শোক অর্থহীন। ঈর্ষা মানব চরিত্রের এমন এক ভয়ংকর উপকরণ, যার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা কঠিন। হোন না তিনি প্রতিভাবান কবি ও শিল্পী বা দার্শনিক। রবীন্দ্রনাথের অন্তরঙ্গমহল সেই কালো ঈর্ষার শিকার। গীতাঞ্জলির মানুষ-ঈশ্বর-ভালোবাসা মূল্যহীন হয়ে দাঁড়ায়। কবির সবচেয়ে কাছের মানুষ আর্নেস্ট রিজ ৯ জানুয়ারি (১৯১৪) রবীন্দ্রনাথকে লেখেন : A rather sharp wedge has been driven into our close circle, since you left us, but we try to be stoical. heaven be good to you. দিন কয় পর স্টার্জ মুর কথাটা আরো স্পষ্ট করে লেখেন : Your having won the Nobel prize when Hardy had been the official candidate of the Royal Society of Literature ... has made you a certain number of enemies whose ill will is not solely due to the fickleness of their minds, আরেক ঘনিষ্ঠজন কবি রবার্ট ব্রিজেস রবীন্দ্রনাথকে অভিনন্দন জানান সাত মাস পর। এডওয়ার্ড থমসন হিসাব করেছেন তার কবিতার লাইনের সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি। গদ্যের আয়তন হবে তার দ্বিগুণ। কবি হিসেবে তিনি শেক্সপিয়র, গ্যেটের সমপর্যায়ের। ছোটগল্প লেখক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ, মোপাসা, চেখভ এক কাতারে দাঁড়িয়ে আছেন। রবীন্দ্রনাথ যে মহাকবি, বিশ্বকবি এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।রবীন্দ্রনাথের বহু রচনা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হওয়া সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথ যে কত বড় কবি তা পৃথিবী এখনও জানে না। পৃথিবী বলতে আমি সাহিত্য অনুরাগী শিক্ষিতজনের কথাই বলছি।মার্ক্সবাদীরা রবীন্দ্রনাথকে তার ভাববাদী আচরণটুকু বাদ দিয়েই রসাস্বাদন করবেন এবং মানব প্রগতির পক্ষে কাজে লাগাবেন। লেনিন যে কারণে তলস্তয়কে মহান বলে বর্ণনা করে রুশ বিপ্লবের দর্পণ বলেছিলেন (যদিও তলস্তয় আগাগোড়া ভাববাদী), মার্ক্সস যেভাবে বুর্জোয়া লেখক বালজাকের লেখার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, সেই একইভাবে রবীন্দ্রনাথকেও আমরা সমাজপ্রগতি ও মুক্তির পক্ষের শক্তি বলে বিবেচনা করতে পারি। 'বলাকা' রবীন্দ্রকাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। কিন্তু তারপরই পলাতকা থেকে কবি নেমে এসেছেন ধুলামাটি মাখা পৃথিবীতে। কবিতায়, ছোটগল্পে স্থান পেয়েছে এই সংসারের সাধারণ মানুষ, গরিব ও মধ্যবিত্ত, ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি ব্যবস্থায় নির্যাতিত নারী। রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস গোরা’য় দেখি গোঁড়া হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী গোরা চরিত্রের বিশ্ব মানবতায় উত্তরণ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুর অল্প আগে সভ্যতার সঙ্কট প্রবন্ধে যে রাজনৈতিক দলিল আমাদের জন্য রেখে গেছেন তার অপরিসীম মূল্য এখনও রয়েছে। কবি এই দলিলে পাশ্চাত্ত্যের সভ্যতার সঙ্কট তুলে ধরেছেন।সর্বোপরি মানুষের মহাকবি মানুষের প্রতিই আস্থা ঘোষণা করেছেন, ‘আর একদিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহত্ মর্যাদা ফিরে পাবার পথে। মনুষ্যত্বের অন্তহীন প্রতিকারহীন পরাভবকে চরম বলে বিশ্বাস করাকে আমি অপরাধ মনে করি।’ একবিংশ শতাব্দীর মানুষ আমরাই যেন হতে পারি, সেই অপরাজিত মানুষ, হতে পারি রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকার, যা তিনি আমাদের জন্যই রেখে গেছেন। ১৯৪১ সালে ‘সাহিত্যের মূল্য’-এ রবীন্দ্রনাথ বলেন: ‘জীবন মহাশিল্পী। সে যুগে যুগে দেশে দেশান্তরে মানুষকে নানা বৈচিত্র্যে মূর্তিমান করে তুলছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের চেহারা আজ বিস্মৃতির অন্ধকারে অদৃশ্য, তবুও বহুশত আছে যা প্রত্যক্ষ, ইতিহাসে যা উজ্জ্বল। জীবনের এই সৃষ্টিকার্য যদি সাহিত্যে যথোচিত নৈপুণ্যের সঙ্গে আশ্রয় লাভ করতে পারে তবেই তা অক্ষয় হয়ে থাকে। সেইরকম সাহিত্য ধন্য–ধন্য ডন কুইক্সট্ ধন্য রবিনসন ক্রুসো। ১৩১৯ সালে পথের সঞ্চয়-এ ‘কবি ইয়েটস্’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘ইংলন্ডের বর্তমানকালের কবিদের কাব্য যখন পড়িয়া দেখি তখন ইহাদের অনেককেই আমার মনে হয়, ইহারা বিশ্বজগতের কবি নহেন। ইহারা সাহিত্যজগতের কবি।…কবিরা যেন ওস্তাদ হইয়া উঠিয়াছে, অর্থাৎ প্রাণ হইতে গান করিবার প্রয়োজনবোধই তাহাদের চলিয়া গিয়াছে, এখন কেবল গান হইতেই গানের উৎপত্তি চলিতেছে। যখন ব্যথা হইতে কথা আসে না, কথা হইতেই কথা আসে, তখন কথার কারুকার্য ক্রমশ জটিল ও নিপুণতর হইয়া উঠিতে থাকে। আবেগ তখন প্রত্যক্ষ ও গভীরভাবে হৃদয়ের সামগ্রী না হওয়াতে সে সরল হয় না; সে আপনাকে আপনি বিশ্বাস করে না বলিয়াই বলপূর্বক অতিশয়ের দিকে ছুটিতে থাকে; নবীনতা তাহার পক্ষে সহজ নহে বলিয়াই আপনার অপূর্বতা প্রমাণের জন্য কেবলই তাহাকে অদ্ভুতের সন্ধানে ফিরিতে হয়। ‘নবযুগের কাব্য’-এ রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘বালক-বয়সেই ইংরেজি সাহিত্যের আঙিনায় যাওয়া-আসা শুরু করেছি। ভাষার আভিধানিক বেড়াটা যেমনি পার হয়েছি অমনি ওখানকার ফলের বাগান থেকে ফল পাড়বার আনন্দে বেলা কেটেছে। যেটুকু বাধা পেয়েছি তাতে ঠেকিয়ে রাখতে পারে নি বরঞ্চ ঔৎসুক্য বাড়িয়েছে। ইংরেজি সাহিত্যের পথে এই সর্বজনীনতার আহ্বান পেয়েছিলুম একে সমতলতা বললে অসংগত হবে। এর মধ্যে বাঁকচোর উঁচুনিচু যথেষ্ট ছিল। লেখকদের মধ্যে ব্যক্তিগত বৈষম্যের অভাব ছিল না। কিন্তু রূঢ়ভাবে কোনো দেউড়ি থেকে কোনো দ্বারী ঠেকিয়ে রাখেনি। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যের আলোচনায় বলেন, ‘বঙ্কিমবাবুর নভেলগুলি ঠিক নভেল যত বড়ো হওয়া উচিত তার আদর্শ। ভাগ্যে তিনি ইংরাজি নভেলিস্টের অনুকরণে বাংলায় বৃহদায়তনের দস্তুর বেঁধে দেন নি, তা হলে বড়ো অসহ্য হয়ে উঠত, বিশেষত সমালোচকের পক্ষে। এক-একটা ইংরাজি নভেলে এত অতিরিক্ত বেশি কথা, বেশি ঘটনা, বেশি লোক যে, আমার মনে হয় এটা একটা সাহিত্যের বর্বরতা। সমস্ত রাত্রি ধরে যাত্রাগান করার মতো। প্রাচীনকালেই ওটা শোভা পেত। তখন ছাপাখানা এবং প্রকাশক সম্প্রদায় ছিল না, তখন একখানা বই নিয়ে বহুকাল জাওর কাটবার সময় ছিল।’’ রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘আত্মপরিচয়ে’ বলছেন, ‘রুচির প্রমাণ তর্কে হতে পারে না। রুচির প্রমাণ কালে। কালের ধৈর্য অসীম, রুচিকেও তার অনুকরণ করতে হয়।’ তাঁর বয়স যখন ত্রিশকে ছুঁইছুঁই করছে তখন তিনি চাচ্ছেন সরল সুন্দর মধুর উদার লেখা। তলস্তয়ের ‘আনা কারেনিনা’র মতো Sickly বই পড়ে কী সুখ তিনি বুঝতে পারেন না। ত্রিশ পেরিয়ে তিনি বলছেন, সমগ্র মানুষ যেখানে মুক্তিলাভ করেছে সেই সুবৃহৎ অনাবরণের মধ্যে অশ্লীলতা নেই। শেক্সপীয়র, রামায়ণ বা মহাভারত অশ্লীল নয়। কিন্তু এমিল জোলা ও ভারতচন্দ্র অশ্লীল–কেননা সেখানে মানুষ কেবল আংশিকভাবে অনাবৃত। দু-এক বছর পরে তিনি বলছেন, শেক্সপীয়রের ‘ওথেলো’ দ্বিতীয়বার পড়তে তাঁর কিছুতেই মন উঠে না। তার কারণ, ওথেলোর মধ্যে যেটুকু করুণা আছে তা তাঁকে আকর্ষণ করে, কিন্তু নাটকের শেষ অংশের বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা তাঁকে বিমুখ করে। ( ( আমি খুব দুঃখিত, রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই-৫১ পর্ব লিখে শেষ ঘোষনা করেছিলাম । পরে দেখি আরো কিছু বিষয় লেখার বাকি আছে, তাই আবার লিখতে হলো । এর আগে একবার ১৮ পর্ব লিখে শেষ পর্ব ঘোষনা করেছিলাম । আরও কিছু ব্যাপার না লিখলেই নয়, তাই আবার লিখতে হলো । কিছু ঘটনা না লিখলে এই ধারাবাহিক লেখাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে । আর অসম্পূর্ণতা আমার ভালো লাগে না । একশো পর্বে লেখাটি শেষ হবে। আর মাত্র তিন পর্ব বাকি।সবাইকে ধন্যবাদ । ভালো থাকুন । )",False ij,"গল্প_ শট্ ফিলমের টিকিট এই যে নিন।কি?একটা টিকিট। কিসের টিকিট?শট্ ফিলমের টিকিট? শট্ ফিলম? কি নাম? লোহিত জলস্রোত।লোহিত জলস্রোত? ভারি অদ্ভূত নাম তো ।হ্যাঁ। অদ্ভূত বৈ কী । ছবিটা কোন্ হলে চলছে? পত্রিকায় বা টিভিতে তো এই নামের কোনও ছবির বিজ্ঞাপন দেখিনি।দেখবেন কি করে- লোহিত জলস্রোত ছবিটা তো এখনও মুক্তিই পায়নি।মুক্তি পায়নি? বলেন কি! তাহলে টিকিট বিক্রি করছেন যে?করছি। কারণ পরিচালকের কাছে ছবিটা বানানোর মতন পয়সা নেই; অগ্রীম টিকিট বিক্রির টাকায় ছবির পরিচালক ছবি নির্মান করবেন। এই টিকিটও পরিচালকের এক বন্ধুর প্রেসে ফ্রি ছাপা হল। ওহ্। লোকে কিনছে?কেউ কেউ কিনছে বৈ কী; আবার কেউ কেউ এড়িয়েও যাচ্ছে।তা ছবির পরিচালকের কি নাম?শ্যামল মামুন।নামটা তো কখনও শুনিনি।শোনার কথাও নয়। কারণ শ্যামল মামুন তেমন বিখ্যাত কেউ নন ।বুঝলাম। কিন্তু, যে ছবি রিলিজই হয়নি তার অগ্রীম টিকিট আপনি বিক্রি করছেন?হ্যাঁ।লোকে টিকিট কেন কিনবে? যাকে চেনে না।হুমম। অস্বীকার করব না যে আপনার কথাটা সত্যি।আর পরিচালক শ্যামল মামুন যদি অগ্রীম টিকিট বিক্রির টাকা পেয়ে ছবি নির্মান না করেন? তখন?করবেন। করবেন। শ্যামল মামুন হলেন ছবিপাগল এক মানুষ; অনেকটা ক্ষেপাটে, তিনি শিল্প ছাড়া অন্য কিছু বোঝেন না। আর এ জন্যেই পরিচালক শ্যামল মামুন একজন সৎ মানুষ।কোথায় থাকেন তিনি?এ শহরেই।এমনিতে কি কাজ করেন তিনি?কাজ বলতে যা বোঝায় ঠিক সেরকম কিছু তিনি করেন না। এখন অনেকটা বাউন্ডুলে জীবন যাপন করছেন । চাকরি-বাকরি ভাল্ লাগে না। ভালো লাগবে কেন- আকন্ঠ শিল্পে ডুবে আছেন। তবে শ্যামল মামুন এককালে পড়ত চারুকলায় ।ওহ্, তার মানে তিনি একজন শিল্পী?শিল্পী তো বটেই।আচ্ছা। শ্যামল মামুন নামটি কি ছদ্মনাম?আংশিক।আংশিক?হ্যাঁ। আংশিক।কী রকম?পরিচালক শ্যামল মামুন-এর আসল নাম মামুন মিদ্দা মানে মামুন মৃধা । এ কারণেই তার ছদ্মনামটি আংশিক সত্য।দেশের বাড়ি?চাঁদপুর।তারপর?তারপর মেঘনা পাড়ের বিষ্ণুপুর নামে এক গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম এক শিশুর। জন্মের পর শিশুটির নরোম পাটল শরীরে মেঘনাপাড়ের রোদজল আর আলো মেখে বেড়ে ওঠা। প্রথম প্রেম মায়ের মুখ, প্রথম গন্ধ মাতৃদেহের শাল দুধের ও সর্ষের তেলের; নদীপাড়ের বাতাস এসে মিদ্দা বাড়ির উঠানে লুটোপুটি খেত, দাওয়ার ওপর পাতা থাকত পাটি। সে পাটিতে শুয়ে শিশু মামুন হাত-পা ছুঁড়ত। শিশুটির দৃষ্টি ছিল উৎসূক, চলায় ছিল ছন্দ। ছিল সৌন্দর্যপ্রেমি- কেননা সে দোয়েল পাখির সাদাকালো সুন্দর লাবণ্যে মুগ্ধ হয়ে যেত; কান পেতে শুনত গরুর হাম্বা রব । ... কখন যে শিশুটি হয়ে ওঠে বালক। বালকটি নদীর ধার ঘেঁষে দৌড়াতে দৌড়াতে সহসা কিশোর হয়ে ওঠে আর আবিস্কার করে যে সেও পাখির মতন ডানা মেলে উড়তে চায়। সে আরও আবিস্কার করে যে সে কাঠকয়লা দিয়ে ছবি আঁকতে পারে। জীবনে প্রথম সে একটি দোয়েল আঁকার চেষ্টা করে এবং সফল হয়; তখন সে স্কুলে পড়ে ক্লাশ এইটে। বিষ্ণুপুর স্কুলের বাংলার শিক্ষক মোহাম্মদ হান্নান বললেন: বাহ্, দোয়েল আমারও অত্যন্ত পছন্দের পাখি। মনে রেখে মামুন দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি এবং দোয়েলের ইংরেজি নাম: ম্যাগপাই রবিন। আর যে দোয়েলটির উপরিভাগ চকচকে নীলাভ কালো- সেটি পুরুষ; আর মেয়ে দোয়েলের দেহের কালো অংশগুলি বাদামি এবং ময়লা বালির মতো দেখায়। জান কি দোয়েল অন্যান্য পাখির ডাক নকল করতে পারে? (মামুন মাথা নাড়ে।) শিক্ষক মোহাম্মদ হান্নান বললেন: ডিম পাড়ার সময় হলে পুরুষ দোয়েল খুব ভোরে ও পড়ন্ত দুপুরে সুরেলা গলায় অত্যন্ত জোরে গান গায়। দোয়েলের ডিম দেখেছ কখনও? (মামুন মাথা নাড়ে।) বিষ্ণুপুর স্কুলের বাংলার শিক্ষক মোহাম্মদ হান্নান বললেন: দোয়েলের ডিমের রং ফ্যাকাশে। কথাগুলি মাথায় গেথে নিয়েছিল মামুন। পরে স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ হান্নানই বলেছিলেন শহর যেতে এবং আঁকা শেখার স্কুলে ভর্তি হতে । হ্যাঁ, মেধা যতই থাক-কমবেশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চাই। এই কথার পর চাঁদপুর লঞ্চঘাটে পৌঁছে লঞ্চে ওঠা। ঢাকা শহরে এসে দেখে যে বিচিত্র সব রাস্তাঘাট, ঘোড়াগাড়ি আর দরদালান; সে খুব অবাক হয়ে গিয়েছিল। যা হোক। এক পরিচিত আত্মীয়ের বাড়ি উঠেছিল মামুন । তারপর ভর্তি হয়েছিল চারুকলায়।হু। বুঝলাম । তা লোহিত জলস্রোত ছবির থিম কি?একটি দোয়েল পাখির মৃত্যু।মানে?মানে। ধরুন যে একটি নদী। তার পাড়ে জলস্রোত; জলস্রোতের রং রুপালি। মেঘনার জল ঘোলাটে হলেও আপনাকে ধরে নিতে হবে যে মেঘনার জলের রং রুপালি। নদীর পাড়ে বটের একটি গাছ। তার ছায়ায় একজন গ্রামীণ মেষপালক। শ্যামল সে ছেলে দিনেরবেলায় বসে থাকে নদীর পাড়ে । অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে রুপালি জলস্রোত দিকে। কখনও রাতদুপুরের জোছনায় অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে রুপালি জলস্রোত দিকে। গোচরণ মাঠে দেখে গোপীগনের নাচ শোনে কীর্তনের সুর; অত্যন্ত ঘোর লাগে তার । একদিন দুপুরে সেই শ্যামল মেষপালক দেখল রুপালি জলস্রোত রং বদলে যেতে থাকে। মেষ পালক অবাক হয়। দূরে একটা মিলিটারি লঞ্চ। তার ভটভট ভটভট আওয়াজ । মেষপালক ভীত হয়ে ওঠে। সে উঠে দাঁড়ায়; লুকিয়ে পড়ে বটের আড়ালে। শেষদৃশ্যে বোঝা যায় না মেষপালক নিহত হয় কি না। তবে রুপালি জলস্রোত রং বদলে যেতে লোহিত বর্ণের হয়ে উঠতে থাকে।হুমম। প্রতীকবাদী মনে হচ্ছে। হ্যাঁ। আরও কিছু বৈশিষ্ট্য থাকবে ছবিটায়। যেমন?যেমন, ছবির মধ্যে দর্শকদের ইনভলভ করা। কাজেই সবটা বলা হবে না। যেমন, শেষদৃশ্যে বোঝা যায় না মেষপালক নিহত হয় কি না। কিংবা মেষপালক কে? কি তার নাম? কোথায় তার বাড়ি। মিলিটারি লঞ্চটি কাদের। এসব বিষয়ে ডিটেইলস বলা হবে না। তা ছাড়া ছবিতে গান কি কৃত্রিম সংগীত ব্যবহার করা হবে না। শুধুমাত্র ন্যাচারাল সাউন্ড ধারণ করা হবে। তা হলে কি ছবিটা প্রামাণ্যচিত্র হয়ে যাবে না?দেখা যাক। ছবির কাজ এখনও শুরুই হয়নি। শেষ হওয়ার পর বোঝা যাবে প্রামাণ্যচিত্র হয়ে উঠল কিনা। প্রকৃত শিল্পী বলেই ছবির আঙ্গিক নিয়ে সারাক্ষণ দারুণ উৎকন্ঠায় থাকেন পরিচালক শ্যামল মামুন। তিনি পরীক্ষা করে দেখতে চান বাস্তবতা নিজেকে অবিকৃতভাবে তুলে ধরতে পারে কিনা।তা কি করে সম্ভব?কেন?যে বিষয়ের ওপর শুটিং হয় সে সময়টা তো অনেক আগেই অতীত হয়ে গেছে। হ্যাঁ। বুঝতে পেরেছি আপনি কি বলতে চান। সময় বহমান। বাস্তবতাও বহমান। কাজেই সত্যেরও বদলে যাওয়ার কথা। আসলে এখনও ছবির পুরো আইডিয়াটা আছে শ্যামল মামুন এর চিন্তাচেতনায়; যেমন বটগাছের পাতার আড়ালে একটি দোয়েল পাখির গতিবিধির ওপর সাড়ে তিন মিনিট দৃশ্যায়ন, সমান্তরালে একটি মিলিটারি লঞ্চের ভট ভট ভট ভট শব্দ। গাছের নিচে প্রশস্ত ছড়ানো কান্ডের ওপর বসে রয়েছে এক উদাসী তরুণ-যেনবা তরুণ লালন।ওহ্।তরুণ লালন বললাম। তবে দৃশ্যটি গ্রহন করা হবে বাউল গানের আবহসংগীত ছাড়াই। দেখানো হবে গুলির শব্দে একটি দেয়েল পাখি চমকে উঠে কী ভাবে মারা গেল।গুলি কি দোয়েলের গায়ে লাগবে?না না। গুলির শব্দেই মারা যাবে পাখিটি; কেননা বোঝানো হবে নির্জন গ্রামীন পাখিটি এর আগে এত কাছ থেকে কখনোই এত মর্মান্তিক আর বিকট শব্দ শোনেনি। এ কারণেই ছবির নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ছবির নাম লোহিত জলস্রোত ছাড়া হতে পারে: “একটি দোয়েলের মৃত্যু।” দোয়েলের মৃত্যুটি অবশ্য সিম্বলিক। হ্যাঁ। বুঝতে পেরেছি।পরিচালক শ্যামল মামুন তাইই বিশ্বাস করেন: প্রকৃতিতে যে ধরনের নির্মম ঘটনা ঘটে চলচ্চিত্রের উচিত তার সত্যাসত্য পরীক্ষা করে দেখা । তা ছাড়া ছবির শুটিং চলাকালীন সময়ে একটি দোয়েলের মৃত্যুও ঘটানো হতে পারে। তবে সেটা করা উচিত হবে কিনা সে বিষয়েও চলছে জোর তর্ক । পরিচালক শ্যামল মামুন এর বন্ধুবান্ধবরা সব পরিবেশ সচেতন। পরিচালক শ্যামল মামুন নিজেও নির্মল বাতাস, সবুজপাতা আর রোদ ভালোবাসেন। আসলে খড়কূটো দিয়ে কৃত্রিম দোয়েল বানিয়ে কৃত্রিম মৃত্যুর দৃশ্য দেখাতে চাইছেন না শ্যামল মামুন। আসলে হলভর্তি দর্শকদের একটি দোয়েল পাখির মৃত্যু যন্ত্রণা টের পাইয়ে দিতে চান পরিচালক শ্যামল মামুন। বুঝলাম। তারপর কি হবে?তারপর কী হবে মানে?ছবি শেষ হলে সিনেমা হল থেকে দর্শক যখন বেরিয়ে যাবে। তারপর?। তারপর তো সেই অভ্যস্ত জীবন, নানারকম অন্যায় মেনে নেওয়া, মনে মনে প্রতিবাদ করে নিজেকে সাহসী ভাবা; কেউ-বা পাখিদের হত্যাকারী হয়ে ওঠা। মুরগীও তো পাখি। ধরেন যদি সে রাত্রে কারও ডিনারে চিকেন থাকে তো?স্বীকার করছি। আপনার কথাগুলি ভাববার মতো।তা সব মিলিয়ে ছবির ডিউরেশন ঠিক কতক্ষণের হতে পারে?দৈর্ঘ্যও এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে কুড়ি মিনিটের বেশি হবে না।মাত্র কুড়ি মিনিটের জন্য দর্শক সিনেমাহলে যাবে?যাবে। এখন তো অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে। তবে দর্শকদের প্রতি পরিচালক শ্যামল মামুনের একটি বিনীত অনুরোধ থাকবে।কি?ছবি শেষ হওয়ার পর দর্শকরা যেন অন্তত দশ মিনিট- সম্ভব হলে আরও অনেকক্ষণ চুপচাপ সিটে বসে থাকে।কেন?কারণ। হলভর্তি দর্শকদের একটি দোয়েল পাখির মৃত্যু যন্ত্রণা টের পাইয়ে দিতে চান পরিচালক শ্যামল মামুন। দোয়েল পাখির মৃত্যু যন্ত্রণা অনুধাবন করার জন্য দর্শকরা অন্তত দশ মিনিট-সম্ভব হলে আরও অনেকক্ষণ চুপচাপ সিনেমা হলের সিটে বসে থাকা দরকার।ওহ্। তা ছবি শেষ করতে কত টাকা লাগবে?লো বাজেট মুভি। অন্তত লাখ খানেক তো লাগবেই । কিনবেন টিকিট?হ্যাঁ কিনব। তা কতদিন লাগবে ছবি শেষ করতে?তা তো জানি না। আপাতত টিকিট বিক্রি করছি। দেখা যাক। লোহিত জলস্রোত কিংবা একটি দোয়েলের মৃত্যু ছবিটা শ্যামল মামুন একদিন না একদিন শেষ করবেনই। আসলে গল্পটা ওর গ্রামের স্কুলের শিক্ষক এর মুখে শোনা। কার কথা বলছেন?ঐ যে বললাম-বিষ্ণুপুর স্কুলের বাংলার শিক্ষক মোহাম্মদ হান্নান।ওহ্ ।অনেক অনেক বছর আগে, মোহাম্মদ হান্নান তখন তরুণ, বসে ছিলেন মেঘনা নদীর তীরে। মাঝে মাঝেই এ রকম বসে থাকেন। কখনও বসে থাকতে থাকতে ঘোর লাগে। মোহাম্মদ হান্নান একজন ঘোর লাগা মানুষ। পূর্ব বাংলায় সময়টা তখন অত্যন্ত দুঃসময়। ভটভট শব্দে একটা মিলিটারি লঞ্চ আসছিল। মোহাম্মদ হান্নান প্রথমে আত্মমগ্ন থাকায় টের পাননি। পরে সচকিত হয়ে মিলিটারি লঞ্চ দেখে ভীত হয়ে ওঠেন। গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়তে যাবেন- ঠিক তখুনি রাইফেলের গুলি ছোড়া হল মিলিটারি লঞ্চ থেকে। মোহাম্মদ হান্নান বেঁচে গেলেও গুলির বিকট শব্দে একটি দোয়েল বট গাছ থেকে পড়ে ছটফট করতে করতে মরে যায়। ওহ্। ... টিকিট আমি নিলাম। হ্যাঁ। নিন। ছবিটা শেষ হলে আপনি ঠিকই খবর পেয়ে যাবেন। টিকিটটা যতœ করে রাখবেন।রাখব।",False mk,"মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত বনাম বিকৃত ইতিহাস ও রাজনীতি আমরা স্বীকার করি অথবা না-ই করি, বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত বনাম বিকৃত ইতিহাস ও রাজনীতি এখন পরস্পরবিরোধী দুই মতাদর্শের অনাকাঙ্ক্ষিত একটি বাস্তবতা। এমন অনভিপ্রেত বাস্তবতা পৃথিবীর অন্য কোনো স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের ক্ষেত্রে খুব একটা দেখা যায় না। অথচ দুঃখজনক হলেও বাংলাদেশে এমন বেদনাদায়ক বাস্তবতাকে আমাদের মেনে চলতে হচ্ছে। সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বনাম বিপক্ষের শক্তির ধারণার বিষয়টি বহুলভাবে দেশে আলোচিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে পরস্পরবিরোধী দুটি অবস্থান আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে। একটি পক্ষ অবশ্য স্বীকার করতে নারাজ যে তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিপক্ষের শক্তি। সেটি মেনে নিলে অবশ্য তাদের দেশবিরোধী অবস্থান প্রমাণিত হয়ে যায়। সে কারণেই তারা তা মানবে—এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং তারা এও দাবি করছে যে তারাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একমাত্র শক্তি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন ও বিকৃত ইতিহাসকে সম্বল করেই সমাজ ও রাজনীতিতে তাদের উত্থান ঘটেছে—এটি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করা মোটেও অসম্ভব ব্যাপার নয়। বাস্তবতা হচ্ছে, ইতিহাস অস্বীকার করার মনোবৃত্তি যাদের রয়েছে তাদের পক্ষে ঐতিহাসিক সত্যকে স্বীকার করা বেশ কঠিন। বাংলাদেশে ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা, এর মৌলনীতি, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব ও এর অর্জনসহ কোনো বিষয় নিয়েই কোনো মহলে বিভ্রান্তির চেষ্টা খুব একটা পরিলক্ষিত হয়নি। তবে কিছু কিছু উগ্র বাম ও তত্ত্বসর্বস্ব গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধকাল থেকেই মুক্তিযুদ্ধকে তাদের বিশ্বাসের বিপ্লবে রূপান্তরিত করার কথা বলার চেষ্টা করেছে। তবে গণভিত্তি না থাকায় জনমনে বা দেশের সামগ্রিক রাজনীতিতে তাদের প্রভাব তেমন একটা ছিল না। কিন্তু ১৯৭৫ সালের আগস্ট-নভেম্বরের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ও সরকার উত্খাতের ঘটনাবলি নিতান্ত একটি সরকার পরিবর্তনের বিষয় ছিল না, এটি ছিল দেশি-বিদেশি নানা অপশক্তির গোপন একটি পরিকল্পিত যড়যন্ত্র; যারা মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শে বাংলাদেশ গঠনের ধারা থেকে দেশটাকে সরিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর ছিল, একইভাবে ১৬ ডিসেম্বর পরাজিত পাকিস্তানের ভাবাদর্শের রাষ্ট্রব্যবস্থার একটি নতুন সংস্করণ ঘটানোর গভীর ষড়যন্ত্র লুকানো ছিল। তাদের পরিকল্পনাটি ছিল বেশ সুদূরপ্রসারী। মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কিছুসংখ্যক প্রভাবশালী সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিকে সম্মুখে নিয়ে অগ্রসর হয়েছিল, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা বেশ কঠিন ছিল। ভেতরে ও বাইরে নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসররা সক্রিয় ছিল, বাম-হঠকারী গোষ্ঠী, সুবিধাবাদী, সাবেক মুসলিম লীগ ভাবাদর্শের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কর্তৃত্ব ছিল। একদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর হত্যা, জুলুম-নির্যাতন ও বৈরী পরিবেশ প্রবলতর করা হলো; অন্যদিকে রাষ্ট্রক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী নতুন একটি শক্তিকে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থেকে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেওয়া হলো। বস্তুত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের শক্তিকে অবরুদ্ধ রেখে দেশে ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা, ভারতবিরোধী ও বঙ্গবন্ধুবিরোধী প্রচার-প্রচারণাকে উজ্জীবিত করা হলো। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে ভিন্নধারার নতুন রাজনৈতিক মতাদর্শ তৈরির সোপানটি গড়ে তুলতে মোটেও ভুল করেনি। খুব সচেতনভাবেই মুক্তিযুদ্ধের মন্ত্রদাতা স্লোগান ‘জয় বাংলা’ বাদ দিয়ে ‘জিন্দাবাদের’ আমদানি করা হলো, রাষ্ট্রীয় কাজে। ১৯৭৭ সালে সামরিক ফরমানবলে সংবিধানে এমনই নানা পরিবর্তন আনা হলো, ‘জাতীয় মুক্তির জন্য একটি ঐতিহাসিক সংগ্রাম’-এর পরিবর্তে ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধ’ ধারণাটি সংবিধানে যুক্ত করা হলো। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাকে সাম্প্রদায়িক ব্যাখ্যায় উপস্থাপন করা হলো। মূলত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উদারবাদী ভাবাদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা থেকেই এসবের প্রবর্তন করা হলো। সংবিধানে এসব পরিবর্তন করার এখতিয়ার ক্ষমতা দখলকারী সরকারের ছিল না। সংবিধানে এসব পরিবর্তন আনার সে রকম কোনো দাবিও কেউ করেনি। স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই এসব করার উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু সরকার ধর্মবান্ধব নয়, ধর্মবিরোধী ছিল—এমনটি দেখিয়ে রাজনীতিতে সুবিধা আদায় করা। যেসব পরিবর্তন এরই মধ্যে আনা হলো তার সব কটিই মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক আদর্শ ও চেতনার পরিপন্থী লক্ষ্য থেকেই করা হয়েছিল।দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হলো, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান সেই প্রতিক্রিয়াশীল ধারার মূল উদ্যোক্তা হলেন, ওই ধারার রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে তিনি দেশের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক ধারার মেরুকরণের ব্যবস্থা করেছেন। এর ফলে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ শক্তির অবস্থান ক্রমেই শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পায়, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সেই পরিস্থিতিতে নানা কঠিন ও বৈরী পরিস্থিতির মুখোমুখি পতিত হয়। রাজনীতিতে সেই থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিপরীতে একটি বিপরীত ধারার বিস্তার ঘটানোর সুযোগ করে দেওয়া হলো। রাজনীতিতে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুনভাবে লেখার নামে বিকৃতি ঘটানো শুরু করা হয়। সেভাবেই শুরু করা হলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর জায়গায় জিয়াউর রহমানকে প্রতিস্থাপনের জবরদস্তির প্রক্রিয়া। বিশেষভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা, এর নেতৃত্বকে হেয় করার মাধ্যমে একটি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রজন্ম তৈরির জন্য এই শক্তি পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ক্রমাগতভাবে বিকৃতি ঘটাতে থাকে। ১৯৭৮ সালপরবর্তী সময়ে প্রকাশিত স্কুল পাঠ্যপুস্তকে চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার প্রসঙ্গটি গুরুত্ব দেওয়া হয়, বঙ্গবন্ধুর ওই ঘোষণার প্রচারে এম এ হান্নান ও মেজর জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়। একটি দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিতে পারেন বা কার নামে আসতে পারে, তা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের ভালোভাবে জানা ছিল। তারা ১০ এপ্রিলের ঘোষণাপত্রে সে কারণেই যথাযথভাবে তা লিপিবদ্ধ করেছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বা ১৯৭৮ সাল পূর্বপর্যন্ত বাংলাদেশে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। এর আগে শিক্ষাব্যবস্থার কোনো স্তরের পাঠ্যপুস্তকে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার জন্য চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বিষয়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ১৯৭৮-৭৯ সালে পাঠ্যপুস্তকে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নানের পর ২৭ মার্চ অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা মেজর জিয়াউর রহমানের একটি ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়।১৯৯১ সালের পর এম এ হান্নানের নাম পাঠ্যপুস্তক থেকে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, জিয়াউর রহমানের ছবি ও নাম গুরুত্ব পেতে থাকে। এর ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্পর্কে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর চারদলীয় জোট সরকার পাঠ্যপুস্তক থেকে সম্পূর্ণরূপে বঙ্গবন্ধুকেই সরিয়ে দিয়ে জিয়াউর রহমানকে এককভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। শুধু তা-ই নয়, বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণকারী, আওয়ামী লীগ নেতাদের ভারতে পলায়নকারী হিসেবে পাঠ্যপুস্তকে উপস্থাপন করা হয়। জিয়াউর রহমানকে ‘সময়ের সাহসী সন্তান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে গোটা মুক্তিযুদ্ধ তাঁর নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে—এমনটিই পাঠ্যপুস্তকে তুলে ধরা হয়। এমনকি ২০০৪ সালে জিয়াউর রহমানের নামে একটি নকল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ১৬ খণ্ডের দলিলপত্রের তৃতীয় খণ্ডে সংযুক্ত করা হয়। ২০০৫ সালের পাঠ্যপুস্তকে সেই দলিলের উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের এমন বিকৃত ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে লেখার বিষয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটসহ সব উগ্র বাম ও ডান পন্থায় বিশ্বাসীদের সমর্থন ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বলেও বিএনপির শীর্ষপদ থেকে দাবি করা হয়েছে, অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিএনপির এসব কথাবার্তা, ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে দ্বিমুখী নীতি প্রদর্শন করা, দেশের অসাম্প্রদায়িক ধারার কোনো দলের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য বা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার নজির না থাকায় বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান একেবারেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। তিন দশকের অধিক সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপিকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত যে ধারাটির উত্থান ও বিকাশ ঘটেছে সেটির শক্তি, প্রভাব ও ভোটের স্থিতি মোটেও কম নয়। এটি যে সত্যকে উন্মোচন করছে তা হচ্ছে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের অভিন্ন আদর্শের ধারা দেশের রাজনীতির উভয় মেরুতে সমানভাবে অবস্থান করছে না বা গুরুত্ব পাচ্ছে না। নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ ও আরো কিছু দলের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রাসঙ্গিকতা এখনো যথেষ্ট রয়েছে, অথচ বিএনপির নেতৃত্বের ধারাটি শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ, দখল, উপেক্ষা, বিকৃত ও প্রত্যাখ্যান করে আসছে। দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতি এমন পরস্পরবিরোধী বিভাজিত অবস্থা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার জন্য খুবই আতঙ্কের এবং অগ্রহণযোগ্য বিষয়। রাজনীতিতে এমন বিভাজন প্রমাণ করে যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন দেশের বিরাট একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কাছে অবহেলিত বিষয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও একইভাবে তাদের কাছে উপেক্ষিত হচ্ছে। ফলে নতুন প্রজন্মের যে অংশ তাদের রাজনীতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে তারা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা থেকেই বিচ্যুত হচ্ছে, বিকৃত ধারণায় বেড়ে উঠছে। বিএনপি ও তাদের জোটভুক্ত ভোটার, সদস্য, সমর্থক ও নেতাদের জীবনেও মুক্তিযুদ্ধের শৌর্য-বীর্য, চেতনা ও প্রেরণার কোনো গুরুত্বই থাকছে না। কোনো স্বাধীন দেশে এমনটি কি মেনে নেওয়া যায়? এ ধরনের বাস্তবতায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ মোটেও নিরাপদ থাকার কথা নয়। সুতরাং রাজনীতি ও শিক্ষা সচেতন মহলকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।ড. মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী লেখক : অধ্যাপক ও ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক ও ভাষা অনুষদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:০৪",False fe,"মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ ১৯ জানুয়ারী স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি - যুক্তরাষ্ট্র শাখা -------------------------------------------------------------------- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্টা বার্ষিকী আজ ১৯ জানুয়ারী ।শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের এই দিনে সংগঠনটি জন্ম নিয়েছিল। আঠারোতম প্রতিষ্টা বার্ষিকীর এই দিনে মনে পড়ছে আজ অনেক স্মৃতি। অনেক কথা । শহীদ জননীর নেতৃত্বে এই কমিটি গঠিত হয়েছিল দুটি পৃথক কমিটির সমন্বয়ে।একটি ছিল '' মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন পরিষদ '' আর অন্যটি ছিল '' একাত্তরের ঘাদক দালাল নির্মূল কমিটি ''। এই দুটি কমিটি একত্র করে গঠিত হয় - '' মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি ''। এর আহ্বায়ক এর দায়িত্ব দেয়া হয় শহীদ রুমীর আম্মা বেগম জাহানারা ইমামকে। কমিটি যাত্রা শুরুর পরই , তৎমালীন সাপ্তাহিক বিচিত্রা - য় একটি আহ্বান ছাপা হয় । তাতে শহীদ জননী বহির্বিশ্বে এই কমিটির শাখা গঠনের আহ্বান জানান। ছিল ফোন নম্বর ও । আমি সে সপ্তাহেই নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় ফোন করি । কথা হয় শহীদ জননীর সাথে। তাঁর '' একাত্তরের দিনগুলি'' পাঠ করে আমিও হয়ে পড়েছিলাম তাঁর সন্তান। শহীদ জননী আমাকে দিক নির্দেশনা দিলেন । বলে দিলেন কীভাবে কী করতে হবে। আমি তখন টগবগে তরুণ । নিউইয়র্কে সংগঠন গড়ার কাজ আমার রপ্ত ছিল ভালোই। কাজে লেগে গেলাম। ফোনে কথা হলো অনেকের সাথে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে আহ্বান জানালাম। আমরা ক'জন তরুণ মিলে আহ্বান করলাম সভা। আব্দুর রউফ খান মিষ্টু, দেওয়ান শাহেদ চৌধুরী , নাজমুল হক হেলাল, চন্দন দত্ত, আবু তালেব, সালেহ আহমদ মনিয়া, ...... আমার পাশে একঝাঁক তরুণ। আমরা পর পর ক'টি সভা করলাম। প্রায় প্রতিদিনই কথা বলে নির্দেশনা নিলাম শহীদ জননীর। এলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিকরা। ড. নুরুন নবী ও কাজী জাকারিয়া - কে যৌথ আহ্বায়ক করে গঠিত হলো কমিটির যুক্তরাষ্ট্র শাখা। সদস্য সচিব করার জন্য আমার নাম প্রস্তাব করা হলো । আমি সবিনয়ে বললাম , আমি তরুণ। সিনিয়র কাউকে সে দায়িত্ব দেয়া হোক। সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হলো বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ফরাসত আলী কে। আমাকে দেয়া হলো সহকারী সদস্য সচিব এর দায়িত্ব। ........................... আমরা কাজে নেমে পড়লাম। শুরু হলো না না লবিয়িং। ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় গণ আদালত বসলো । আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একজন বিশিষ্ট আইনজীবি পাঠালাম। তার নাম - টমাস কে কিটিং । তিনি গণআদালত প্রত্যক্ষ করার জন্য ঢাকায় গেলেন । আমেরিকায় ফিরে কাজ করলেন আমাদের পক্ষে , বিভিন্নভাবে। ............................... এক অসম সাহসের অধিকারিনী ছিলেন মা, জাহানারা ইমাম। তাঁকে আমি '' মা '' ডাকতাম। তাঁর সাথে কাজ করার স্মৃতি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রেরণা । এই সেই জাহানারা ইমাম , যাকে ১৯৮১ সালে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান তার কেবিনেটে মহিলা বিষয়ক উপদেষ্টা বানাবার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই সময় অনেক বাম- ডানপন্থীরা জিয়াউর রহমানের সাথে যোগ দিলেও শহীদ জননী তা প্রত্যাখান করেছিলেন দৃঢ়তার সাথে। ............................. এই সেই জাহানারা ইমাম , যাকে দেশের মফস্বল এলাকার তরুণেরা চিঠি লিখে বলেছে , - মা আপনি হুকুম দিন। নরঘাতক গোলাম আজম কে হত্যা করে আমি ক্ষুডিরামের মতো হাসিমুখে ফাঁসিতে ঝুলবো। এমন চিঠিপত্র সে সময় জাতীয় দৈনিকেও ছাপা হয়েছে। গণআদালত বসার একসপ্তাহ আগে নির্মূল কমিটির ঢাকা মহানগর শাখা ঘোষণা দিয়েছিল, গণ আদালতের কর্মসূচি সফল করার জন্য মৃত্যুন্জয় স্কোয়াড গঠন করা হবে। যারা নিজের জীবন দিয়ে হলেও এই কর্মসুচি সফল করবে। এই ঘোষনা পত্রিকায় ছাপা হবার পর প্রতিদিন শত শত তরুণ নির্মূল কমিটির অফিসে এসে নাম লিখিয়েছে। অংগীকারনামায় সাক্ষর করেছে। ................................ মনে পড়েছে, সেই বছরই জাতিসংঘে ভাষণ দেবার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদ জিয়া নিউইয়র্কে এলে , আমরা হাজারো প্রবাসীরা প্লাজা হোটেলের সামনে থমকে দিয়েছিলাম তার গাড়ীর বহর। তীব্র প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ছুটে এসেছিলেন বাঙালীরা আমেরিকার বিভিন্ন অংগরাজ্য থেকে। ............................. আজ সেই সংগঠনের প্রতিষ্টা বার্ষিকী । মা , তুমি নেই । আমরা বেঁচে আছি । আছে প্রজন্ম। এই শ্যামল বাংলায় ঘাতক- রাজাকার- আলবদর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই , মা । তোমার সন্তানেরা তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেই , ইনশাআল্লাহ । সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:০০",False hm,"ঢাকা একটি জলামাতৃক শহর স্বর্গে দুধের নহর বইতো। গাছে গাছে ঝুলতো অপূর্ব থোকা থোকা জাঝা, আহারের ইচ্ছা করলেই তা আপনা আপনি মুখে এসে হাজির। শরাবন তহুরার সরবরাহও অঢেল, শুধু কষ্ট করে চাইতে হবে। আনাচে কানাচে হাসিমুখে নিয়ত ঘোরাঘুরি করতো যৌবনবতী হুর আর কচি গেলমান। স্বার্গিকদের ব্যাপারস্যাপারই আলাদা। তারা খায় আর কোপায়, কোপায় আর খায়। হঠাৎ একদিন স্বর্গে ব্যাপক গুঞ্জরণের সৃষ্টি হলো। দুধের নহরে চর পড়ে গেছে। বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে যে দুধের নহর সতত প্রবাহমান, তাতে হঠাৎ চর পড়ে যাওয়ায় একটু শোরগোল তো হবেই। কিন্তু স্বার্গিকরা এর কারণ চিহ্নিত করতে পারলো না। কারণ আদৌ চিহ্নিত করা প্রয়োজন, এ-ও মনে করলো না তারা। যে দুয়েকজন মুখ খুলেছিলো, তাদের মুখে দুয়েকটা হুরপরীর মাইলব্যাপী স্তন গুঁজে দিয়ে চুপ করানো হলো। কিছুদিন পর আবারও হইচই। দুধের নহরের দুধ নাকি একটু নোনতা হয়ে গেছে। স্বার্গিকরা এবার একটু চটলো। কে রে বেয়াদবটা, দুধের নহরে চোনা ফেলেছে? খুঁজে এনে সাইজ করতে হবে। কয়েকজন যুক্তিবাদী স্বার্গিক এই প্রস্তাবনায় খুঁত ধরলো। স্বর্গে তো মলমূত্রাদির ব্যাপার নেই, চোনা আসবে কোত্থেকে? কারই বা সময় আছে চোনা ফেলার যন্ত্রকে হুর-গেলমানদের কোমল আর্দ্র রন্ধ্রগুলি থেকে বার করে দুধের নহরের কাছে নিয়ে যাবার? কিন্তু তাহলে দুধ নোনতা হয়ে গেলো কেন? এক স্বার্গিক বললো, দুধে মনে হয় ব্যাকটেরিয়া ধরেছে। পুণ্যবান ব্যাকটেরিয়া কি থাকতে পারে না? সবাই খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো। ব্যাকটেরিয়া মানেই অসুখ বিসুখ। না জানি গনোরিয়া হয়। সবাই যে যার হুর-গেলমানদের চোখে চোখে রাখার সিদ্ধান্ত নিলো। কিছুদিন পর আবারও শোরগোল। স্বর্গের সবচেয়ে চোস্ত জায়গাটা, যেটাকে স্বর্গের ঈশ্বরধানী বলা যেতে পারে, সেখানে দুগ্ধাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। হাঁটু পর্যন্ত দুধ ঠেলে চলাফেরা করতে হচ্ছে, কোথাও কোথাও আবার কোমর পর্যন্ত দুধ, সেই দুধে আবার বিশ্রী ছানা ছানা গন্ধ। সব স্বার্গিক ক্ষেপে গেলো। স্বর্গে এসব হচ্ছেটা কী? কর্তৃপক্ষ কী করছেন? দুয়েকজন ফেরেশতা এসে অভয় দিলেন, এ দুধাবদ্ধতা সাময়িক। কেটে যাবে। মহাকালের এ সময়টা মৌসুমি দুদুপ্রবাহের ফলে এমন হতেই পারে। স্বার্গিকরা এসব ছেঁদো কথায় কান দিতে নারাজ, তারা একটা তদন্ত কমিশন গঠন করে ফেললো। তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে দেখা গেলো, কিছু বাঙালি স্বার্গিক স্থানে স্থানে দুধের নহর দখল করে ঘরবাড়ি তৈরি করে ফেলেছে। এ জন্যেই দুধের নহরে চর পড়েছে, নহরের দুধ নোনতা হয়ে গেছে, এবং ঈশ্বরধানীতে ব্যাপক দুধাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ঈশ্বরের কার্যালয়ের সামনেই বুকসমান দুধ। একজন বললো, কিন্তু তাহলে দুধে এমন গন্ধ কেন? দেখা গেলো, তারা দুধের নহরে কিছু কয়লা ধোয়ার চেষ্টাও করেছে। এই কার্যক্রমের নামও দেয়া হয়েছে রাশভারি, কয়লা সংস্কার প্রকল্প। স্বার্গিকদের এসব কারবার দেখে স্বর্গের এক কোণায় এক কর্মক্লান্ত ঢেঁকি কপালের ঘাম মুছতে মুছতে ধান ভানার ফাঁকে বললো, আবালের দল।",False rg,"ইমরান খান হল লেঃ জেঃ আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি'র ভাতিজা!!! ইমরান খানের পুরো নাম ইমরান খান নিয়াজি। বাবা'র নাম ইকরামুল্লাহ খান নিয়াজি। মায়ের নাম শওকত খানম। ইমরান খানের বাবা ইকরামুল্লাহ খান নিয়াজি'র চাচাতো ভাই হল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। যিনি একে খান নিয়াজি নামে পরিচিত। এই একে খান নিয়াজি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের কমান্ডিং অফিসার। যাকে সবাই লেফটেন্যান্ট জেনারেল একে খান নিয়াজি নামেই চেনে। এই লেফটেন্যান্ট জেনারেল একে খান নিয়াজি-ই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে ভারত বাংলাদেশ যৌথবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা'র কাছে আত্মসমর্পণ করেন। জেনারেল নিয়াজিকে এক সময় বলা হত টাইগার নিয়াজি। কিন্তু সেই টাইগার নিয়াজিকেই বাংলাদেশের মুক্তিপাগল সাধারণ মানুষের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল। ১৯৭১ সালের সেই পরাজয়ের কারণে টাইগার নিয়াজি বাস্তবে একজন বিলাই নিয়াজিতে পরিনত হয়েছিলেন। সৈনিক জীবনের সবচেয়ে বড় পরাজয় হল যুদ্ধে আত্মসমর্পণের সময় বিপক্ষের কাছে জেনারেল ব্যাচ আর পিস্তল জমা দেওয়া। নিয়াজি'র জীবনের সবচেয়ে বড় পরাজয় লিখিত হয়েছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে। পৃথিবীর ইতিহাসে গোটা বিশ্ববাসী সেই অনুষ্ঠান সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন। সেই পরাজয়ের স্মৃতি মিস্টার নিয়াজি ইহকালে আর ভুলতে পারার কথা নয়। মিস্টার আমির আবদুল্লাহ খানের সঙ্গে সম্পর্কে মিস্টার ইমরান খান নিয়াজি চাচা ভাতিজা। অর্থ্যাৎ ইমরান খানের বাবা ইকরামুল্লাহ খান নিয়াজি'র চাচাতো ভাই হলেন এই লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তো, চাচার সেই পরাজয়ের গ্লানি তো জনাব ইমরান খানেরও পরিবারের সদস্য হিসাবে খুব সাংঘাটিকভাবেই লাগার কথা। যে কারণে মিস্টার ইমরান খান কখনোই বাংলাদেশকে সহ্য করতে পারেন না। নিজের রক্তের এমন পরাজয় কে সহ্য করতে পারে? সুতরাং জনাব ইমরান খান জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পরে যা বলার কথা, যেমন কষ্ট পাবার কথা, যেমন উক্তি করার কথা, স্বাভাবিক কারণেই তাই করেছেন। আমরা ইতিহাস না জেনেই ইমরান খানকে একজন ক্রিকেটার হিসেবে অনেকে অনেক উঁচুতে বসিয়েছি। আসলে তিনি তো সেই পরাজিত শক্তির একেবারে ফ্যামিলি মেম্বার। যাকে বলে স্বয়ং একে খান নিয়াজি'র পরিবারের সদস্য। সো, সেই ইমরান খান এখন পাগলের মত প্রলাপ বকবে, এ আর নতুন কি!!! সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৪",False rg,"নতুন রাষ্ট্রপতি হলেন অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ।। রেজা ঘটক সকল জল্পনা কল্পনা অবসানের পর অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ-ই হলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি। গতকাল আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদকে মনোনয়ন দিয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর মেয়াদকাল হবে শপথ গ্রহণের দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১-এর ৭ ধারায় বলা হয়েছে-নির্বাচনী কর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন। পরীক্ষার পর একজনের মনোনয়নপত্র বৈধ থাকলে নির্বাচন কমিশন ওই ব্যক্তিকে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করবেন। তবে একাধিক ব্যক্তি'র মনোনয়নপত্র বৈধ থাকলে বৈধভাবে মনোনীত ব্যক্তিদের নাম মনোনয়নপত্র পরীক্ষার দিন ঘোষণা করা হবে। আজ সোমবার সকাল ১০ টায় সিইসির কক্ষে মনোনয়ন বাছাই করা হবে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। গতকাল মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে আর কেউ মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ায় নির্বাচন কমিশন আজ আবদুল হামিদকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করতে পারে। নির্বাচনী কর্মকর্তা নতুন রাষ্ট্রপতির নাম ঘোষণার পর তা গেজেট আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন প্রধান বিচারপতি। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯ মেয়াদে ১৬ জন রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। নির্বাচিত হলে আবদুল হামিদ হবেন দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি। দেশের ১৯ তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান গত ২০ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ গত ৯ এপ্রিল এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী: ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিটামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তাঁর পিতার নাম হাজী মোঃ তৈয়েবউদ্দিন এবং মাতার নাম তমিজা খাতুন। তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাশ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করেন। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মাধ্যমে আবদুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। গুরুদয়াল কলেজ থেকে তিনি ১৯৬৩ সালে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৫ সালে ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬১ সালে কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। এই সময় তিনি আউববিরোধী আন্দোলনের জন্য কারাগারে যান। ১৯৬৪ সালে আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে কিশোরগঞ্জ জজ কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত হন অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। তিনি কিশোগঞ্জ জেলা বার এসোসিয়েশান থেকে ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ মেয়াদে মোট ৫বার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে আবদুল হামিদ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছর (২০১৩) তাঁকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের মেঘালয়ে মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি মুজিব বাহিনীর সাব সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। এছাড়া তিনি ভারতের মেঘালয়ে মুক্তিযোদ্ধা ইয়োথ রিসেপশান ক্যাম্পের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সপরিবারে নিহত হবার পর ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত আবদুল হামিদ কারাগারে বন্দী ছিলেন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ১১ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি স্পিকার হিসেবে সংসদ পরিচালনা করেন। অষ্টম জাতীয় সংসদে ১লা নভেম্বর ২০০১ থেকে ২৭ অক্টোবর ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয় বারের মতো ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য ও স্পিকার হিসেবে বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও সিম্পুজিয়ামে অংশগ্রহন করেন। এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডা, রাশিয়া, চিন, ভারত, সৌদি-আরব, কুয়েত, মিশর, ইরান, সিংগাপুর, দুবাই, আবুধাবী, থাইল্যান্ড, মরক্কো, মঙ্গেলিয়া, জিব্রাল্টার, দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, সুইজারল্যান্ড, বারবাডোস, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের অসুস্থতার কারণে গত ১১ মার্চ ২০১৩ সালে স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ পান অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব। গতকাল নবম জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। বিগত ৩ এপ্রিল ২০১৩ সালে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে চলতি ১৭তম সংসদ অধিবেশন আহবান করেন। আর চলতি এই সংসদ অধিবেশনে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। ব্যক্তিগত জীবনে আবদুল হামিদ তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক। আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমীর আজীবন সদস্য। এছাড়া তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, কিশোরগঞ্জ রাইফেলস ক্লাব ও কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সম্মানিত সদস্য। নতুন রাষ্টপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মপন্থা কোন দিকে যাবে, সেসব বিষয় নিয়ে কুঁড়িতম রাষ্টপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদকে বেশ কঠিন সময় মোকাবেলা করতে হবে। বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা প্রবর্তণ করা, দেশের সংকটকালে দলমত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দলের এক টেবিলে বসা, দেশের স্বার্থে সকলকে একত্রিত করা, এবং দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে একটি গঠনমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ গঠন করার প্রতিই আবদুল হামিদকে সবচেয়ে বেশি মনযোগী হতে হবে আমি মনে করি। একুশ শতকের নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্যে আবদুল হামিদকে অনেক কঠিন, সুস্থ, নিরপেক্ষ এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগামীর সেই নতুন চ্যালেঞ্জগুলো নতুন রাষ্টপতি সুনিরপেক্ষভাবে এবং দলীয় সংকীর্নতার উর্ধ্বে উঠৈ, কাউকে খুশি করার পরিবর্তে দেশের স্বার্থে করবেন বলেই আমরা প্রত্যাশা করতে পারি। আমরা নতুন রাষ্ট্রপতিকে একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেখতে চাই। দেখতে চাই নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নতুন রাষ্ট্রপতি'র নের্তৃত্বে সফলভাবে বাস্তবায়ন হোক। আবারো নতুন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে স্বাগতম ও শুভেচ্ছা জানাই। সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:৪৬",False ij,"গল্প_ জলের আয়না পন্ডিত চন্দ্রকান্তর কথায় বিষ্ণুপুর রাজ্যের মহারাজা সামন্ত সেন-এর ভুঁরু কুঁচকে উঠল। বল কি পন্ডিত! হ্যাঁ রাজামশায়। পন্ডিত চন্দ্রকান্ত বললেন। আজ মহারাজা সামন্ত সেন হালকা মেজাজে ছিলেন। সকাল বেলায় সভাসদ্ নিয়ে বসে খোশগল্প করছিলেন। কথায় কথায় মহারাজা জিগ্যেস করেছিলেন: ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টি করেছেন কেন। তখন পন্ডিত চন্দ্রকান্ত বললেন, মহারাজ, আমরা যাকে ঈশ্বর বলি ... হ্যাঁ। তিনি হলেন নারী ... নারী! মহারাজা সামন্ত সেন আঁতকে উঠলেন। হ্যাঁ, রাজামশায়, নারী। পন্ডিত চন্দ্রকান্ত বললেন। স্ত্রীলোক যেমন আয়নায় মুখ না দেখে পারে না, তেমনি নারীরূপী ঈশ্বর নিজেকে দেখবেন বলেই বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। কথাটা শুনে মহারাজা সামন্ত সেন অনেক ক্ষন গুম হয়ে বসে রইলেন। পন্ডিত চন্দ্রকান্ত যা বললেন তা কি সত্য ? মেয়েরা আয়নায় মুখ দেখে বটে ...কিন্তু তাই বলে ... পন্ডিত চন্দ্রকান্ত বৃদ্ধ হয়েছেন। চন্দ্রকান্ত সমতট রাজ্যের বিশিষ্ট তান্ত্রিক পন্ডিত; বঙ্গজুড়ে মেঘনা পাড়ের সমতট রাজ্যের নারীবাদী পন্ডিতগনের সুনাম আছে। পন্ডিত চন্দ্রকান্তর কথায় অবিশ্বাস করা যায় কি? মহারাজা সামন্ত সেন পন্ডিত চন্দ্রকান্ত কে বললেন, নারীরূপী ঈশ্বর নিজেকে দেখবে বলেই বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন আর এ জন্যই স্ত্রীলোক আয়নায় মুখ না দেখে পারে না? হ্যাঁ রাজামশায়। পন্ডিত চন্দ্রকান্ত বললেন। সভাসদ্ নিঃস্তব্দ। রাজার থলথলে গোলাকার মুখে ঘাম ফুটতে শুরু করেছে। উদ্বেগ বোধ করছেন তিনি। রানী মহামায়ার মুখটি মনে পড়ে গেল তার। রানী মহামায়া মহারাজা সামন্ত সেন-এর স্ত্রী, অতি বিচক্ষনা ও মেধাবী নারী; রাজা ঠিকই জানেন- রানীর সুপরামর্শ ব্যতীত রাজ্যপরিচালনা সম্ভব নয়। তবে কি অনাদি অনন্ত মহাচেতনা নারীরূপে জগতে অবস্থান করছেন? মহারাজা সামন্ত সেন শিউরে উঠলেন। পন্ডিত চন্দ্রকান্ত বললেন, আপনি না হয় আজই ঢেঁড়া পিটিয়ে দিতে বলুন-এ রাজ্যের মেয়েদের আয়নায় মুখ দেখা নিষেধ। তারপর চর লাগিয়ে দেবেন। কেন? তাহলেই চরের মুখে শুনবেন মেয়েদের আয়নায় মুখ দেখা নিষেধ করায় রাজ্যজুড়ে নারীমহলে কেমন কান্নাকাটি পড়ে গেছে। তখনই টের পাবেন আমার কথা সত্য কি মিথ্যা। মহারাজা সামন্ত সেন যেন কথাটা বুঝতে পারলেন। তিনি রীতিমতো হুঙ্কার ছেড়ে বললেন, তবে তাই হোক। তবে তাই হোক। সভাসদ্গন প্রতিধ্বনি তুলল। পন্ডিত চন্দ্রকান্ত মুচকি হাসলেন। অন্তঃপুরে প্রবেশ করে মহারাজা সামন্ত সেন রানী মহামায়া কে তার নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানালেন। রানী মহামায়া মুচকি হাসলেন। ২ পরদিনই রাজার পাইক-পেয়াদারা বিষ্ণুপুর রাজ্যজুড়ে এই বলে ঢেঁড়া পিটিয়ে দিল: অদ্য হইতে এ রাজ্যের নারীগনের আয়নায় মুখ দেখা নিষেধ : অদ্য হইতে এ রাজ্যের নারীগনের আয়নায় মুখ দেখা নিষেধ : নিষেধাজ্ঞা অমান্য করিলে কঠিন রাজদন্ড ভোগ করিতে হইবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করিলে কঠিন রাজদন্ড ভোগ করিতে হইবে। শুধু তাই নয় রাজার সৈন্যসামন্তরা বিষ্ণুপুর রাজ্যের কৃষকের বাড়ি বাড়ি ঢুকে জোর করে আয়না ছিনিয়ে নিল, তারপর ভেঙে ফেলতে লাগল। মেয়েদের চিৎকার তাদের পাষান হৃদয় গলাল না। ৩ উপমা । বিষ্ণুপুর রাজ্যের এক কিশোরী কৃষককন্যা। আজ রাতে উপমার চোখে ঘুম আসছিল না। বিছনায় শুয়ে ছটফট করছিল ও। তার কারণ আছে। উপমা আজ সারাদিন আয়নায় ওর শ্যামল সুন্দর মুখটি দেখতে পায়নি। আয়নায় মুখ দেখ নিষেধ- বাবা কাল দুপুরে হাট থেকে ফিরে কথাটা জানাতেই উপমা এক দৌড়ে ঘর থেকে ওর আয়নাখানি বাড়ির পিছনের খড়ের গাদায় লুকিয়ে রেখেছিল। তারপর সামন্ত রাজার পাইক-পেয়াদারা যখন আয়নার খোঁজে এ বাড়ি এল তখন ওদের একজনের কেমন সন্দেহ হল। চলে যাওয়ার সময় হাসতে হাসতে খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে দিয়ে গেল ওরা । ভাগ্যিস বাড়িতে আগুন ধরে যায় নি...এসব কারণেই এক ধরনের অস্থিরতা উপমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আর অস্থিরতার কারণেই চোখ থেকে ঘুম পালিয়েছে। বাইরে আজ রাতটায় কিন্তু জোছনার বান ডেকেছে। সঙ্গে উথাল-পাথাল বাতাস। জানালার ফাঁক গলে জোছনার কিছু সাদা আলো মাটির ঘরটিতে ঢুকে পড়েছিল। হঠাৎই কি মনে হতে উপমা বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল। তারপর দরজা খুলে প্রথমে অন্ধকার দাওয়ায় ও পরে আলোকিত উঠানে নেমে এল। উঠান ঘেরা সার সার নাড়কেল গাছ। তার পাতায় পাতায় বাতাসের খুব জোর শব্দ হচ্ছিল। প্রবল বাতাস যেন উপমাকে ঠেলে ফেলে দেবে। উপমা হাঁটতে থাকে। বাঁশঝাড়েরর পাশ দিয়ে জ্যোøালোকিত পথ। সে পথ অর্ধাবৃত্তাকারে চলে গেছে তেপান্তরের মাঠের দিকে। তেপান্তরের মাঠের পুব দিকে তালতমালের বিস্তীর্ণ ঘন বন। সে তালতমালের বনের দক্ষিণে বিশাল এক চতুস্কোন পদ্মদিঘী। সে দিঘীর জল এখন ধবল জোছনার কারণেই তরল রূপার মতন দেখায়। পদ্মদিঘীর পাড়ে পাড়ে কত না গাছগাছালি। এখন নিঃস্তব্দ রাতের জোছনার ভিতরে পদ্মদিঘীর জলে দিকে ঝুঁকে রয়েছে যেন। আকাশপথে টি টি করে ডেকে উড়ে গেল একঝাঁক রাতচরা পাখি। উপমা চমকে উঠল কি? না, ও বরং মুচকি হাসল। পদ্মদিঘীর পূর্ব পাড়ে এসে দাঁড়াল উপমা ।দিঘীর ঠিক মাঝখানে পূর্ণ বয়স্কা চাঁদখানি ভাসছে। পদ্মদিঘীর পূর্ব পাড়ের ঘাটটি শ্বেতপাথরের বাঁধানো । উপমা ধীরে ধীরে সিঁড়ি ভেঙে ঘাটে নেমে এল। তারপর উবু হয়ে বসল জলের কিনারে। তারপর পদ্মদিঘীর রূপাগলা জলে নিজের সুন্দর মুখটি দেখে নিয়ে মুচকি হাসল। যদিও মাঝে-মাঝেই ঝিরিঝিরি বাতাসেরা এসে ভেঙে দিচ্ছিল জলের আয়নাটি ... সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:১৫",False mk,"সেনাবাহিনী নিয়ে বিএনপির রাজনীতি ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা বাংলাদেশের গৌরব; সুশৃক্সক্ষল একটি সেনাবাহিনী। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাংলাদেশের রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। দেশের ক্রান্তিলগ্নে জনগণের পাশে বন্ধু হয়ে দাঁড়ায় আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা। এর উদাহরণ আমরা অনেক দেখেছি; আইলা দুর্গত এলাকায়, নিমতলীর অগ্নিকা-ে, এমনকি সর্বশেষ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতেও, এর বাইরে নানারকম উন্নয়ন কর্মকা-ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের মেধা ও মননের পরিচয় দিয়েছেন। দৃষ্টি-নন্দন হাতিরঝিঁল তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। নানা সময়ে দেশের অভ্যন্তরে জনমানুষের যা কল্যাণকর, মঙ্গলজনক সেখানে প্রয়োজনমতো পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তিনবাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু একটি চক্র এই সেনাবাহিনীকে বিতর্কে আনার চেষ্টায় লিপ্ত সর্বসময়ে, সুযোগ এলেই সেনাবাহিনীকে নিয়ে রাজনীতিও করতে দ্বিধা করেন না। ১৯৭৫ এ সেনাবাহিনীকে একটি জগণ্যতম হত্যাকা-ে জড়িয়ে এর শুরু, এরপর নানা সময়ে এর অভ্যন্তরে বিশৃক্সক্ষলাসহ ক্যু তৈরি এবং রাজনৈতিক কাজে সেনাবাহিনীকে অপব্যবহার করে আসছেন একটি রাজনৈতিক দল। বলতে দ্বিধা নেই, এক্ষেত্রে বিএনপি ও তার প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের অগ্রণী ভূমিকা সবারই জানা। এমনকি জেনারেল জিয়ার শাসনামলে বিভিন্ন ছোটবড় সামরিক অভ্যূত্থানে সেনা সদস্যদের মৃত্যু নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। তৎকালীন বিএনপি শাসনামলে ১৯৭৭-১৯৮১ সাল পর্যন্ত সংঘঠিত ২১ টি সামরিক অভ্যূত্থানে ১২০০'র বেশি সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য নিহত হলেও এসব অভ্যূত্থানের কোন দৃশ্যমান বিচার হয়নি। আবার জিয়ার শাসনামলেই বিনাবিচারে সেনাসদস্যদের নির্মম ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানোর মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনাও ঘটেছে। সেগুলোর বিচার আজ অবধি হয় নি। এটা সবারই জানা, জেনারেল জিয়ার সময় সামরিক বাহিনীতে সেনা অভ্যুত্থানের সাথে যারা সম্পৃক্ত ছিল বা সম্পৃক্ত ছিল বলে সন্দেহ করা হয়েছে তাদেরকে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করা হয়েছে। সাধারণত অভ্যুত্থানের যারা নেতৃত্ব দিয়ে থাকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে তাদের ২/৪ জনের মৃত্যুদ- হয়ে থাকে। সম্পৃক্ত বাকিদের অন্যান্য শাস্তি দেওয়া হয়। কিন্তু তার সময়ে অভ্যুত্থানকারীদের প্রায় সকলের মৃত্যুদ- হয়েছে। সে সময় ২ সহ¯্রাধিক মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের মৃত্যুদ- হয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে। শেষ পর্যন্ত তিনি সেনাঅভ্যুত্থানেই নিহত হয়েছেন। অথচ প্রচার করা হয়ে থাকে তিনি নাকি সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছেন। দীর্ঘ ধারাবাহিক চক্রান্তের আরেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায় ঘটে যায় ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রয়ারি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক একটি অধ্যায় রচিত হয়ে যায়, রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর জওয়ানদের কথিত বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র এক মাসের মধ্যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে নবগঠিত মহাজোট সরকার। অবিশ্বাস হলেও সত্য, এই ন্যাক্কারজনক হত্যাকা-ের ঘটনায় বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানদের নানাভাবে সহযোগিতায় বিএনপির একাধিক নেতার জড়িত থাকার প্রমাণ জাতি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিডিআর জওয়ানদের বিরুদ্ধে বিচারকার্যের সময় বিপক্ষের আইনজীবিরা সবাই ছিল বিএনপিপন্থী। তবে সবচেয়ে বিষ্ময়কর বিষয়টি হলো, বিডিআর বিদ্রোহের সময় রহস্যজনকভাবে আত্মগোপণে থাকা খালেদা জিয়ার অবস্থান, এ নিয়েও জনমনে রয়েছে ব্যাপক সন্দেহ। মহাজোট সরকার বিজিবিকে পুর্নগঠনের লক্ষ্যে নতুন আইনের খসড়া মন্ত্রীসভায় অনুমোদনের পর ‘বর্ডার গার্ড আইন ২০১০’ সংসদে পাশ করা হয়েছে। ফলে বিডিআর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি নামে আতœপ্রকাশ করেছে। এছাড়া বিডিআর হত্যাকা-ের বিচারের জন্য এবং বিজিবিতে ভবিষ্যতে যেকোন প্রকার বিদ্রোহ বন্ধের জন্য “বিজিবি এ্যাক্ট-২০১০” সংসদে পাস করেছে, যা আর্মি এ্যাক্টের অনুরূপ। এই আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-। আইন প্রয়নণের পর এই আইনের আলোকেই বিচারকার্য সম্পন্ন হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে আসামীর সংখ্যা বিবেচনায় এত বড় বিচার কার্যক্রম কোথাও কখনও অনুষ্ঠিত হয়নি। সংগত কারণেই এই বিচারকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও প্রশ্নাতীত করার লক্ষ্যে কিছুটা সময় লেগেছে। এরই সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট এই বিচার বাধাগ্রস্থ করার লক্ষ্যে বিরতিহীনভাবে নানাবিধ অপপ্রচার চালিয়ে গেছে। এমনকি তারা ক্ষমতায় গেলে বিজিবি’র নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম এবং পোশাক বহাল রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে বলেও জানা যায়। দু:খজনক হলেও সত্য, বিএনপি-জামাত জোটের অনেকেই ঐ সময় সেনা বিধি ০৫ (পাঁচ) মোতাবেক সেনা আইনে এ বিদ্রোহের বিচারের বিরোধিতা করেছিল। বিডিআর এর বিচার সংক্রান্ত বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে সেনাবাহিনী এবং দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চক্রান্তে জড়িত ছিলো। সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী হিসেবে বেগম জিয়া দীর্ঘদিন ক্যান্টনমেন্টের ৬ মইনুল রোডের বাড়িটিতে থেকে রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু বাড়িটি ছাড়ার পর তিনি সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে নানারকম গুজব ছড়িয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। এমনকি সশস্ত্রবাহিনী দিবসে তাঁকে নিমন্ত্রণ করলেও তিনি আর সেখানে যাননি। অপরদিকে, ২০১২ সালে খালেদা জিয়া বিভিন্ন জায়গায় লংমার্চ, রোডমার্চের নামে যুদ্ধপরাধীদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য দেশব্যাপী বিভিন্ন সভা সেমিনার করেন, সেখানে সেনাবাহিনীকে নিয়েও মন্তব্য করেন। সবসময় তাদের আহ্বান করেন ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খালেদা জিয়ার এই আহ্বানকে অগণতান্ত্রিক পন্থা বলে কোনো প্রকার ভ্রুক্ষেপ করেনি। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্য নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়। মূলত তিনি একটি অগণতান্ত্রিক সরকার আনার চক্রান্তই করেছেন বিভিন্ন সময়ে। অতীতের মতো বর্তমানে ও বাংলাদেশের রাজনীতি সেনাবাহিনী নিয়ে সরগরম করে তোলার জন্য মূলত তিনি এরকম বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেন বিভিন্ন সময়ে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী প্রভাব বিস্তার করেছে। ক্ষেত্র বিশেষে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক ভূমিকা জনগণ কতৃক প্রশংসিত হয়েছে। তাই দেখা যায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা কেননা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিল সেনাবাহিনী। বিগত সরকার গুলোর লুঠপাট, দুর্নীতি আর ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জনগণ যখন প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতায় ভূগছে তখন সেনাবাহিনীকে সে ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনৈতিক ভূমিকায় ব্যবহার করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, দেশের পরিস্থিতি যাই হোক, সেটা ক্ষমতাসীন সরকারের বাইরে বরাবর খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা গ্রহণের আমন্ত্রণ অনেকটা রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর আস্থাহীনতার পরিচয় দিয়ে আসছেন তিনি। গত কয়েক বছরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের অংগ্রহণ দেশ ও দেশের বাইরে অনেক প্রশংসিত হয়েছে। এ ধরনের মিশনে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর বিদেশে যে শুধু মর্যাদা বাড়িয়েছে তা-ই নয়, বরং বিভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে নিজেদের অভিজ্ঞতার পরিধি বিস্তৃত হতে সহায়তা করেছে এবং বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য ও চর্চার সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছে। মূলত, পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা, কর্তব্যপরায়নতা ও মানবতাবোধের কারণে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা সারা বিশ্বের আস্থা অর্জন করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে জাতিসংঘের মহাসচিব জনাব বান কি মুন সাউথ সুদানের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী প্রেরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান। জাতিসংঘের মহাসচিব সাউথ সুদানে জরুরিভিত্তিতে বাংলাদেশের একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন, একটি সামরিক হাসপাতাল ইউনিট, সামরিক পরিবহন বিমান এবং সামরিক হেলিকপ্টার প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। উক্ত অনুরোধের ভিত্তিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনী জরুরি ভিত্তিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাউথ সুদানে জনবল ও বিমান প্রেরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘের জরুরী অনুরোধের প্রেক্ষিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের আশু ব্যবস্থা গ্রহণ বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধিসহ ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ অর্জন একদিনে হয় নি। জাতির পিতা তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের মাধ্যমে এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বাঙালিদেরকে সামরিক দিক দিয়েও স্বাবলম্বী করতে চেয়েছিলেন। তাঁর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এ অঞ্চলে একটি মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠা হোক। তাই স্বাধীনতার পর তিনি সেনাবাহিনীতে দক্ষ অফিসার গড়ে তোলার জন্য কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে জাতির পিতা কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়কালেও অব্যাহত রয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যাপক অগ্রগতি ও উন্নতি সাধিত হয়েছিল। এই সময়কালে সেনাবাহিনীর উন্নতিকল্পে নেয়া হয়েছিল নানা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ঐ সময়কালে গঠিত হয় একটি কম্পোজিট ব্রিগেড, একটি পদাতিক ব্রিগেড, একটি সাঁজোয়া ইউনিট, দুটি আর্টিলারি রেজিমেন্ট, একটি রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, দুটি ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন, তিনটি পদাতিক রেজিমেন্ট ও একটি এসটি ব্যাটালিয়ন। তিনটি ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সমন্বয়ে ব্রিগেড আকারের স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনও গড়ে তোলা হয়। উন্নত অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহসহ সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয় দুটি ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ট্যাংক। এর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সিনিয়র অফিসার ও সমমর্যাদার অসামরিক কর্মকর্তাদের প্রতিরক্ষা নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে এদেশের শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং। আধুনিক কারিগরি শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের জন্য গড়ে তোলা হয় মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে দেশকে আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য গড়ে তোলা হয় আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ। নতুন বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট গঠনসহ এই রেজিমেন্টের সদস্যদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার এবং নন-কমিশন্ড অফিসারদের উপযুুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় এনসিওস একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সার্বিক সমন্বয়ের জন্য পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল সেনাবাহিনীতে মহিলা অফিসার নিয়োগ। এছাড়া সেনাবাহিনীকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত করার পাশাপাশি উন্নত বাসস্থান, সৈনিকদের রসদ ভাতা বৃদ্ধি এবং টিফিন ভাতা প্রবর্তনসহ তাদের জন্য দুপুরে রুটির পরিবর্তে ভাতের প্রচলন করা হয়। সেনাসদস্যদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠা করা হয় ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয় নতুন মডেলের বিভিন্ন দূরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র। প্রতিষ্ঠিত হয় তিনটি নতুন পদাতিক ব্রিগেড, আটটি নতুন পদাতিক ইউনিট, ৪টি আর্টিলারি রেজিমেন্ট। সেই সাথে প্রতিষ্ঠা করা হয় ট্রেনিং ডিভিশন ‘আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড’ সংক্ষেপে আর্টডক।সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের এই ধারা মহাজোট সরকারের বর্তমান শাসনামলেও অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী সদস্যদের খাবারের মান বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিন বাহিনীতে কর্মরত সৈনিকদের রেশনে সমতা আনা হয়েছে। সেনাবাহিনী সদস্যদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার ও অন্যান্য পদবির সদস্যদের অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটি ৪ মাস হতে ৬ মাসে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও সেনা সদস্যদের সাধারণ পারিবারিক অবসর ভাতা ২৫% হতে বৃদ্ধি করে ৩৯% করা হয়েছে।সেনাবাহিনীর অপারেশনাল ক্ষমতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের জন্য অত্যাধুনিক ট্যাংক, এআরভি, মিসাইল, ওয়েপন লোকেটিং রাডারসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ কামান ও ট্যাংকের গোলাবারুদ ক্রয় করা হচ্ছে। সাঁজোয়া ইউনিটসমূহকে আধুনিকীকরণ ও আর্টিলারি রেজিমেন্টের জন্য সেলফ প্রপেন্ড কামান ও সাউন্ড রেঞ্জিং ইকুইপমেন্ট, পদাতিক রেজিমেন্টের উন্নয়ন ও কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে নতুন করে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। একই সাথে সেনাবাহিনীর কল্যাণ কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্রাস্ট ব্যাংক ও হোটেল র্যাডিসন চালু করা হয়। সেনাবাহিনীকে আরো কার্যকর ও যুগোপযোগী করতে উন্নত প্রযুক্তির সমরাস্ত্র সংগ্রহের কার্যক্রম নেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রয়োজনীয় খসড়া জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি ও ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন প্রকল্পে বর্তমান সরকার রাশিয়া হতে এক বিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র ক্রয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। ভবিষ্যতে এসব অস্ত্র-সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সর্বোপরি, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে- নিরলস কাজ করে গেছে। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও যাতে দেশের সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে পারে তার জন্য সময়োপযোগী সব পদক্ষেপও সবসময় নিয়েছে সরকার। তাই সচেতন দেশবাসীকে সবসময় সজাগ থাকতে হবে, যেন এই বাহিনীটিকে নিয়ে কোনরকম সংশয় ও শংকা তৈরি না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে।",False fe,"অজান্তেই যখন বর্বরতাকে লালন করা হয় অজান্তেই যখন বর্বরতাকে লালন করা হয় ফকির ইলিয়াস ======================================= কয়েকদিন আগে একটি ভিডিও কনফারেন্স করেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সেই কনফারেন্স বেশ কিছু আজব আজব প্রস্তাব করেছেন ক’জন অংশগ্রহণকারী। একজন বলেছেন, গাঁজা জাতীয় নেশা দ্রব্যগুলোকে লিগ্যাল করা হোক। ‘মারিজুয়ানা’-যুক্তরাষ্ট্রে একটি বহুল প্রচারিত শব্দ। সেই গাঁজা, ভাংকে আইনসিদ্ধ করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি দ্রুত চাঙ্গা হয়ে যাবে বলেও মত প্রকাশ করেছেন সেই ব্যক্তি। নেশাদ্রব্য চোরাই পথে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হচ্ছে এটা ঠিক। যারা এটার আইনসিদ্ধতা চাইছেন, তারা বলছেন- তা থেকে যুক্তরাষ্ট্র ট্রিলিয়ন ডলার ট্যাক্স পাবে। আর সেটাই হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের শক্তি। জেগে উঠবে অর্থনীতি। না, প্রেসিডেন্ট ওবামা এতে সায় দেননি। তিনি বলেছেন, না- এটা নৈতিকতাবিরোধী কাজ। প্রকাশ্যে গাঁজা খেয়ে আমি আমার প্রজন্মকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। এই ভিডিও কনফারেন্সে আত্মহত্যাকে প্ররোচনা করা, স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে বেছে নেয়া, গর্ভপাত, সমকামীদের লিগ্যাল ম্যারেজ, প্রভৃতি উদ্ভট ইস্যু নিয়েও কথা বলেছেন অনেকে। প্রেসিডেন্ট ওবামা এর কোনোটাতেই সায় দেননি। হ্যাঁ, কথা বলার অধিকার মানুষের আছে। কিন্তু বলার আগে ভাবা উচিত, যা বলা হচ্ছে- তা মানুষের জন্য কল্যাণকর কি না। হ্যাঁ, আমি বৃহৎ মানবগোষ্ঠীর কথাই বলছি। বর্তমান বিশ্বের চারদিকে এখন চরম বর্বরতা। ঘৃণ্য আদিমতা ঘিরে রেখেছে আমাদের প্রতিটি সকাল। ভোরে জেগেই আমরা জেনে যাচ্ছি- বিশ্বের কোথাও না কোথাও সহিংসতার কথা। চরম রক্তপাতের কথা। খুন হচ্ছে। খুনিরা দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিচ্ছে। কি নগ্ন আধুনিকতা আমাদের চারপাশে। বিশ্বে বেশ কিছু বিষয় আছে যা খুবই সংবেদনশীল সবসময়ই ছিল। এখনো আছে। এর প্রধান বিষয়টি হচ্ছে ধর্ম। ধর্মের কথা শুনলেই আমাদের অনেকেরই বুক কেঁপে ওঠে। আমরা ক্রমশ ঋজু হয়ে যাই একটি নীতিমালার কাছে। নিবন্ধনের কাছে। খোঁজ করলে দেখা যাবে, প্রতিটি ধর্মের মৌলিক চেতনা কিন্তু এক। সব অসত্য, সব দীনতা, সব অন্যায়ের বিরুদ্ধেই কথা বলেছে প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ। কিন্তু ধর্মীয় চেতনাকে সৃজনশীলতার আলোকে কাজে না লাগিয়ে তাকে মৌলবাদী চেতনায় কাজে লাগালে এর ফল কি দাঁড়াতে পারে? এর উদাহরণ আমরা এখন প্রায়ই দেখছি। আমাদের সমাজে বেশ কিছু মুখোশধারী মানুষ আছে, যারা পোশাক-পরিচ্ছদে আধুনিক দাবি করলেও মূলত ধারণ করে হীন আদিমতা। এরা নিজেরা ধর্ম পালন করে না। কিন্তু অন্যকে ধর্মীয় উস্কানি দিতে আরামবোধ করে। ভারতের রাজনীতিক লালকৃষ্ণ আদভানীর জীবনাচার নিয়ে কলকাতার বামপন্থী নেতা মমতা ব্যানার্জী কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ভূতের মুখে আবার রাম নাম! এমন জ্যান্ত দানব বাংলাদেশেও আছে। আছে পাকিস্তানেও। পাকিস্তানের চরমপন্থীরা তো রীতিমতো হুমকি দিয়ে বসে আছে তারা শিগগিরই ওয়াশিংটন আক্রমণ করবে! সাধারণ মানুষের কাছে এদের পৌঁছার প্রধান কৌশলই হচ্ছে ধর্মীয় তমদ্দুন। ভাবতে অবাক লাগে যে, আরব মুল্লুকে আল কোরআন নাযিল হয়েছিল, সেখানে চলছে একনায়কতন্ত্রের বাদশাহী শাসন। আর ইসলামী জোশের জিহাদ করে ধর্মীয় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জঙ্গিরা বেছে নিয়েছে আফগান-পাক-ভারতসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নরম মাটি। কেন নিয়েছে? কারণ এই অঞ্চলের জনমানুষেরা ধর্মপ্রাণ। তারা মুখস্থ ধর্মবিদ্যা রপ্ত করেই কাটিয়ে দিতে চেয়েছেন গোটা জীবন। জঙ্গি মৌলবাদী চক্রটি সেই সরলতাকে পুঁজি করেই আজ শিকড় গড়তে চাইছে এই অঞ্চলে। বাংলাদেশে আজ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এই কওমী মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা কারিকুলাম কি? তা কি আধুনিক-যুগোপযোগী? না নয়। বিজ্ঞানসম্মত বাস্তবতা দূরে থাক, রাষ্ট্রীয় সঠিক ইতিহাসই সেখানে ভালোভাবে পড়ানো হয় না। কোমলমতি শিশুদের আদিম কায়দায় দীক্ষিত করায় প্রচেষ্টা চলে। শুরু থেকেই একধরনের গোঁড়া, সীমাবদ্ধ চেতনার মাঝে তাদের বন্দি রাখা হয়। ভেবে অবাক হই, বাংলাদেশের এক ধরনের স্বঘোষিত শিক্ষিত শ্রেণী এই গোঁড়ামি, জাহেলিয়াতের পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষক। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের প্রয়োজনে তারা অনৈতিক-অন্যায় কাজগুলোর পক্ষেও তালিয়া বাজাচ্ছেন। আর তাদের সামনেই ধ্বংস হচ্ছে একটি প্রজন্ম। অথচ তাদের সন্তানরা পড়ছে ইউরোপ-আমেরিকায়। নিদেনপক্ষে ভারতের কোনো ইংলিশ স্কুলে। হিপোক্র্যাসি আর কাকে বলে! আর একটি শ্রেণী আছে, যারা মনের অজান্তেই লালন করে বর্বরতা। তারা ধর্মের নামে নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলা কে পাপের শামিল মনে করে। অথচ একনায়কতন্ত্রের দেশে মানুষ যে সুখে-শান্তিতে আছে, গণতন্ত্রের দেশে মানুষ সেই শান্তি ভোগ করতে পারছে না। সেই মধ্যপ্রাচ্যের বাদশাহ, আমীর, খলিফা, সুলতান, কিংদের পরোক্ষ সাহায্য সহযোগিতায় গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে জঙ্গি, সন্ত্রাসী পোষা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক দেশের মানুষদের এই বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে। কোনো ধরনের ভন্ডামিই সমাজ নির্মাণে কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে পারে না। অতীতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। কামানের বিরুদ্ধে ঢিল ছুড়া যাবে। কিন্তু তাতে লাভ হবে কি? শোষণটা সাম্রাজ্যবাদের হোক, আর মৌলবাদের হোক- এর স্বরূপ, গতি-প্রকৃতি এক এবং অভিন্ন। কোনো আধিপত্যবাদই মানুষের অগ্রসরমানতার প্রয়োজনে দরকারী নয়। সুশিক্ষা মানুষের মনের প্রখর জানালা খুলে দেয়। আর সে জন্যই প্রকৃত শিক্ষিত হয়ে গড়ে ওঠার কোনো বিকল্প নেই। আমার বেশ হাসি পায়, যখন দেখি কোনো কোনো অর্বাচীন জেনে বুঝেই বর্বরতাকে সাপোর্ট দেয়। এই শিকল ভেঙে বেরুবার পথ খুঁজতে হবে সবাইকে, সম্মিলিতভাবে। -------------------------------------------------------------------- দৈনিক ডেসটিনি। ঢাকা। ১০ এপ্রিল ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০০৯ ভোর ৬:৪২",False hm,"দন হুয়ান দি মার্কো দন হুয়ান দি মার্কো যখন প্রথম দেখি তখন আমি সদ্য তরুণ। বায়রনের দন হুয়ান পড়িনি। টেলিভিশনে তখন স্টার মুভিজে রোজই সিনেমা দেখায় দেদারসে, এইচ এস সি পরীক্ষা বোধ করি সামনে তখন, এক মাস ধরে এর নানা রকম ট্রেলার দেখাচ্ছে। জনি ডেপ, মার্লোন ব্রা...দন হুয়ান দি মার্কো যখন প্রথম দেখি তখন আমি সদ্য তরুণ। বায়রনের দন হুয়ান পড়িনি। টেলিভিশনে তখন স্টার মুভিজে রোজই সিনেমা দেখায় দেদারসে, এইচ এস সি পরীক্ষা বোধ করি সামনে তখন, এক মাস ধরে এর নানা রকম ট্রেলার দেখাচ্ছে। জনি ডেপ, মার্লোন ব্রান্ডো আর ফে ডানাওয়ে আছেন, নানারকম কথাবার্তা, ইন্টারভিউ, আর তারই ফাঁকে ফাঁকে মাইকেল কামেন আর ব্রায়ান অ্যাডামসের কম্পোজ করা দুর্দান্ত গান, হ্যাভ ইউ রিয়েলি এভার লাভড আ উওম্যান। সেই গানের বাণী শুনে আর দৃশ্যায়ন দেখে আমি কাত। সিনেমাটা দেখে আমি প্রবল আলোড়িত হয়েছিলাম, মনে আছে স্পষ্ট। জনি ডেপ আত্মহত্যা করবে উঁচু এক ছাদ (নাকি টাওয়ার) থেকে লাফিয়ে, কারণ সে দন হুয়ান দি মার্কো, তার অনেক ভালোবাসার ভার, এ জীবন সে আর রাখবে না। অ্যাসাইলামের মনোরোগবিদ মার্লোন ব্রান্ডো তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে আসেন অ্যাসাইলামে। জনি ডেপ গোঁ ধরে, ঘুমের ওষুধ সে খাবে না, তার জীবনের গল্প শুনতে হবে ডাক্তারকে। তারপর শুরু হয় গল্প। গোটা গল্পটাই বায়রনের দন হুয়ানের সাথে এক ব্যক্তিগত কষ্টের অভিজ্ঞতার এক দুর্দান্ত মিশেল, আর ডাক্তারের নিজের জীবনে এক আশ্চর্য পরিবর্তন নিয়ে। সিনেমা নিয়ে আর কথা বলবো না, তাহলে যারা সিনেমাটা দেখেননি তাদের মজা নষ্ট হয়, কিন্তু মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তিন অভিনেতা অভিনেত্রীর পারফরম্যান্স দেখে। পরিচালক (জেরেমি লেভেন সম্ভবত) খুব পটুতার সাথে সিনেমার কাহিনীর সাথে দন হুয়ানকে মিশিয়ে গেঁথে দারুণ এক জিনিস বানিয়েছেন। এই সিনেমাকে ঘিরে অনেক পরে একজন বন্ধুও পেয়েছিলাম, দীর্ঘদিন তাঁর সাক্ষাৎ পাই না, কেন, জানি না। সিনেমার সুর করেছিলেন মাইকেল কামেন, যেহেতু কাহিনী হিসপানিক পটভূমিতে, গোটা সিনেমাতেই স্প্যানিশ ধাঁচের সুরের ছড়াছড়ি। পরে জানি, এই ছবিতে কামেনের সাথে কাজ করেছেন পাকো দে লুসিয়া, আন্দালুশার প্রবাদপ্রতিম গীটারিস্ট, গীটারের ঈশ্বরও বলা হয় তাঁকে। ব্রায়ান অ্যাডামসের সাথে মিউজিক ভিডিওতে তাঁকে দেখা যায়, বারের এক প্রান্তে বসে চোখে পট্টি লাগিয়ে আনমনে গীটার বাজাচ্ছেন। অনেক পড়ে পিটুপি ডাউনলোডের সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাকো দে লুসিয়ার অনেক কম্পোজিশন নামিয়ে শুনেছিলাম। আজ অবসরের সুযোগে ইউটিউব থেকে পাকো দে লুসিয়ার পুরনো দিনের কিছু টেলিভিশন পরিবেশনা দেখলাম, স্তম্ভিত করে দেয়ার মতো হাতের কাজ তাঁর। সেই নব্বই দশকের মাঝামাঝিতেই দে লুসিয়া প্রৌঢ়ত্বের সীমায় পৌঁছে গিয়েছিলেন (একুশ তারিখে ৬০ বছর পূর্তি হবে বেচারার), ইউটিউবে আছে তাঁর যুবা বয়সের কীর্তিগুলি, সুদর্শন হিসপানিক এক যুবক তন্ময় হয়ে বাজাচ্ছেন গীটার, তাঁর আঙুল নির্ভুল প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে গীটারের তারগুলির ওপর। অবিশ্বাস্য তাঁর গতি আর লয়জ্ঞান। কিছু সংযোজন করলাম এখানে।",False hm,"মোবিলিনির উৎপাত আমি খুব মনোযোগ দিয়ে একটা কাজ করছিলাম। অফিসের কাজ আর কি। হঠাৎ ফোন বাজলো। মানে, আমার মোবাইল ফোনটা। মিসড কল। আমার কাজের মনোযোগ কিছুটা নষ্ট হলো। ধরেন, ১০০ থেকে কমে ৭০? আমি মোবাইল ফোনটা সাবধানে তুলে ডায়ালে নাম্বারটা দেখলাম। অচেনা নাম্বার। আমি অস্ফূটে বললাম, এই সস্তার দিনে মিসড কল দেয় কোন শালার ভাই? ঘরে কেউ নাই। ভরসা করে আবার গালি দেই, বোকাচো! জবাবে আবার মিসড কল আসে। কাজে ফিরতে গিয়েও ফেরা হয় না। নামাজ আমার হইলো না আদায়। কিছুক্ষণ রোষকষায়িতলোচনে তাকিয়ে থাকি মোবাইল ফোনটার দিকে। যারা রোষকষায়িতলোচন বোঝেন না, তাঁদের জীবনের চার আনাই মিছে। কাজে ফিরে যাই খানিক বাদে। মনোযোগের পারদ আবার চড়তে থাকে একটু একটু করে। ধরেন, ৮৫। আবার মিসড কল আসে। এইবার ফোনটাকে পাকড়াও করি ডি মেজরে। কল দিয়ে বলি, ""হ্যালো?"" এক বিদঘুটে, ঘড়ঘড়ে নারীকণ্ঠ বলে, ""হ্যাল'।"" আমার মেজাজটা বিষিয়ে যায়। বলি, ""কাকে চাইছেন?"" ঐপ্রান্ত থেকে এক পাশবিক আহ্লাদী আবেগ ফুটে ওঠে, ""আমি ত আপনারেই চাই!"" আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলে যায় রাগে, ক্ষোভে। বলি, ""দুঃখিত, আপনি রং নাম্বারে ফোন করেছেন। আমি আপনা নই। আমি অন্য কেউ।"" ফোন কেটে দিই তারপর। কিন্তু কাজে আর মন বসানোর সুযোগ হয় না। আবার আসে মিসড কল। আবার। আবার। আবার। আবার ফোন করি, বলি, ""আপনি মিসড কল দিচ্ছেন কেন বারবার?"" এবার এক জঘন্য হেঁড়ে স্টেটমেন্ট ভেসে আসে, ""আপনারে আমার খুব ভাল লাগে!"" ক্ষোভে দুঃখে ইচ্ছা করে মাটিতে মিশে যাই। কেন এই ক্ষ্যাত মাগীর কবলে পড়তে হলো আমাকে? কেন? কেন? অ্যায় দুনিয়া, কেয়া তুঝসে কাহেঁ? বলি, ""উত্তম! খুবই ভালো লাগলো জেনে। কিন্তু আমি একটা জরুরি কাজে ব্যস্ত। অনুগ্রহ করে আর মিসড কল না দিলে বাধিত হই। ধন্যবাদ।"" কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। আবার মিসড কল আসে, আবার। আমার মোবাইল সেটখানা সুপ্রাচীন। লোকচক্ষুর সামনে সাধারণত বার করিনা। অফিসদত্ত সেট হারিয়ে ফেলেছি (এটা নিয়ে অন্য পোস্টে ফ্যানাবো), নতুন সেট কেনা হচ্ছে না কার্পণ্য ও আলস্যবশত। পুরনো সেটে কল বার করার অপশন খুঁজতে গিয়ে দেখি নানারকম ধুনফুন কথাবার্তা বলে। বিরক্ত হয়ে ফোনের কম্পন আর ঘন্টন বন্ধ করে ফোন করি বন্ধুবর বগাকে। বগা ফোন ধরে উৎফুল্ল গলায়, ""কে, ইয়ে নাকি?"" আমি বলি, ""বোগ্লু, ইয়ে বলছি। আচ্ছা, আমি অমুক ফোন কোম্পানিতে অভিযোগ করবো ভাবছি। নাম্বার আছে তোর কাছে?"" বগা একটু বিরতি নেয়। বলে, ""কী অভিযোগ?"" আমি কাঁচা ভাষায় বলি, ""আর বলিস না, এক আবাল ফোন করে বিরক্ত করছে। এদিকে এক বস্তা কাজ।"" বগা বলে, ""ছেলে না মেয়ে?"" আমি বলি, ""মেয়ে বললে মেয়েদের অপমান হয়। যা ঘড়ঘড়ে গলা!"" বগা উৎফুল্লতর হয়ে ওঠে, বলে, ""আরে এ নিয়ে অভিযোগের কী আছে? একটা মেয়ে ফোন করে জ্বালাচ্ছে, এ তো এক পরম সাফল্য!"" আমি আরো কাঁচা ভাষায় চলে যাই,বলি, ""তোর সাফল্যের জননীকে আমি রমণ করি। নাম্বার দে ভগ্নিধর্ষক।"" বগা পিছিয়ে যায়, বলে, ""আমি তো এসব নাম্বার জানি না। আমার কাছে মেয়েরা ফোন করলে আমি মহানন্দে কথা বলি।"" আমি ভাবি, বগার নাম্বার এ মাগীকে গছিয়ে দিলে কেমন হয়? বগা কাজের অজুহাত দেখিয়ে ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে। আমি বিদায় নিই। ওদিকে বহু বহু মিসড কলে ফোন পূর্ণ। বাধ্য হয়ে ফোন ধামাচাপা দিয়ে হাগনকোঠিতে চলে যাই। ফিরে এসে হাতের কাজ গুছিয়ে ধামার নিচ থেকে ফোন বার করি। সেই ঘড়ঘড়ে লালিমা পাল গঙ্গারামের মতোই অধ্যবসায়িনী, ঊনিশটি বার মিসড কল দিয়েছে এর মধ্যে। ফোন পকেটস্থ করে বেরিয়ে পড়ি অফিস ছেড়ে। পাকড়াও করি এক লুপ্তপ্রায় সহৃদয় সিয়েনজিয়েরোকে, যে আমাকে বিনা বাক্যব্যয়ে বাড়ি পৌঁছে দিতে রাজি হয়ে যায়। বাড়ি ফেরার পথে ফোন করতে গিয়ে ফোন বার করে দেখি, নিঃশব্দে কল এসেই চলছে। এবার পাকড়াও করে কিছু কর্কশ গালমন্দ করি বেটিকে। বলি, আপনার খেয়েদেয়ে কাজ না থাকলে ঘর ধোয়ামোছা করেনগা। অপরপ্রান্ত থেকে লালসাজর্জরিত হুমকি ভেসে আসে, ""আমি তো আপনারেই ধোয়ামোছা কইরা দিতে চাই!"" কথাটা ভালো লাগে আমার কাছে, কিন্তু কথার উৎপত্তিস্থলে আক্রমণ শাণিত করি। মিনিট দুয়েক প্রমিত ভাষায় বকাবকি করার পর আবার ফোন পকেটস্থ করি। সিয়েনজিয়েরো ক্ষেপে যায়। বলে, ভাই, এই মবাইলই দ্যাশটারে খাইল। দিন নাই রাত নাই খালি ধুনফুন। আমি কী আর বলবো। বাড়ি ফিরে মোবাইল বার করে দেখি কল এসেই চলছে, এসেই চলছে। এবার কলধারিণী তার ঘড়ঘড়ে গলায় কিছুটা আবেগ সঞ্চারিত করে। বলে, আমার কথাটা তো একটু শুনবেন? আমি বলি, জ্বি বলেন? সে আবারও পৈশাচিক হাসে। বলে, আপনারে আমার খুবোই ভাল লাগে। আমি বলি, আপনাকে আমার ভালো লাগছে না। আপনি লোক খারাপ। বেহায়া আওরাত। ধুয়েমুছে দিতে চান ভালো কথা, কিন্তু তার আগে লব্জ ঠিক করেন। আবার যদি ফোন করেন তাহলে কিন্তু ...। মাগী হেসে ওঠে শ্মশানের হাঁকিনীর মতো। বলে, কী করবেন? এক সিম বন্ধ হইয়া গেলে আরেক সিম দিয়া গুতামু! আমি এবার বিরক্ত হয়ে বলি, ড়্যাবের কাছে নাম্বার দিয়ে দিবো কিন্তু। এবার কাজ হয়। ঘড়ঘড়ে গলা আঁতকে ওঠে, বলে, ছি, আপনি ভীতু পুরুষ! আমি সানন্দে সায় দিই। বলি, হ্যাঁ, ক্ষ্যাতদের সাথে ধোয়ামোছা মারপিট করার সাহস আমার নাই। আলবিদা! অনেকক্ষণ হলো আর কোন মিসড কল হচ্ছে না। হে ড়্যাব, তুমি মহান।",False fe,"বাংলাদেশের জনশক্তি ও আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার আইন বাংলাদেশের জনশক্তি ও আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার আইন ফকির ইলিয়াস ------------------------------------------------------------- কুয়েতে অত্যন্ত নির্মমভাবে নির্যাতিত হয়েছে বাংলাদেশের শ্রমিকরা। তাদের ওপর অমানবিক হামলে পড়েছে সেদেশের পুলিশ, আধা-সামরিক বাহিনী। বেদমভাবে লাঠিপেটা করা হয়েছে। বাংলাদেশী শ্রমিকদের অপরাধ, তারা তাদের বেতন-ভাতা ও সুবিধার জন্য আন্দোলনে নেমেছিলেন। রাজতন্ত্রের দেশ কুয়েতে আন্দোলন, মিছিল, মিটিং যে করা যায় না- তা বাংলাদেশী প্রবাসী সমাজের অজানা নয়। তারপরও তারা কেন এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হলেন তার কারণ খোঁজা খুবই জরুরি। এটা বিশ্বের সব সভ্য সমাজই জানেন, মধ্যপ্রাচ্যে এখনও বহাল রয়েছে এক ধরনের দাসপ্রথা। যারা ভিসা প্রদান করে কিংবা যারা বিভিন্ন ছোট-বড় কোম্পানির মালিক তাদের আরবিতে বলা হয় ‘কফিল’ বা ‘আরবাব’। আর যিনি চাকরি নিয়ে যান তাকে আরবিতে বলা হয়ে থাকে ‘আমাল’ বা ‘নফর’। আরবাব শব্দের আভিধানিক প্রতিশব্দ হচ্ছে প্রভু। আর ‘নফর’-এর প্রতিশব্দ হচ্ছে চাকর। আর এভাবেই মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে উঠেছে এক ধরনের প্রভু-দাস প্রথা। দুঃখের কথা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দরিদ্র শ্রমশক্তিকে তা জেনেশুনেই চাকরি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যেতে হচ্ছে। জীবনের অন্বেষণে আপস করতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ সফরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে আমি স্পষ্ট বলতে পারি, এসব দেশে দরিদ্র জনশক্তির প্রতি সবল কফিলদের আচরণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে অমানবিক। এসব দেশের অধিকাংশগুলোতেই কোন বিদেশী স্বনামে কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খুলতে পারেন না। ব্যবসা করতে হয় ওই আরব কফিলের নামে। আর ব্যবসা জমে উঠলে পাষণ্ড কফিল ওই বিদেশী ব্যবসায়ীকে বিনা কারণেই তার দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে পারে ভিসা বাতিল করে। অতীতে এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে। এখনও ঘটছে। কখনও কাউকে বিনা কারণে জেল খেটেও দেশে আসতে হয়েছে। সেসব দেশের কফিলগুলো এতই পরাক্রমশালী, সেদেশের লেবার ডিপার্টমেন্ট সব সময় কফিলদের পক্ষেই থাকে। মোট কথা, প্রতিটি বিদেশী শ্রমিকের ভাগ্য নির্ভর করে আরবি কফিলের হাতের ওপর। সেদেশে যাওয়ার পরপরই প্রতিটি শ্রমিকের পাসপোর্ট জমা নিয়ে নেয় কফিল। দেশে আসার আগ পর্যন্ত পাসপোর্টের মালিককে আর তা দেখার সুযোগটুকু পর্যন্ত হয় না। আর এভাবেই মানসিক চাপের মুখে রাখা হয় শ্রমিককে প্রবাস জীবনের প্রথম দিনটি থেকে। এক সময় ছিল যখন কুয়েতে একশ’ দিনার, ওমানে আশি রিয়াল, দুবাইয়ে দেড় হাজার/দুই হাজার দিরহাম, সৌদি আরবে দেড়-দুই হাজার রিয়াল মাসিক বেতনে শ্রমিক নিয়োগ করা হতো। এই মাসিক বেতনের পরিমাণ এখন অর্ধেকেরও নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। অথচ দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বেড়েছে দেড়-দুই গুণ। আমরা জানি এবং দেখছি, আন্তর্জাতিক শ্রমশক্তির বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয়, কাউকে নামমাত্র বেতনে কঠিন শ্রম দেয়ার মুখোমুখি ঠেলে দেয়া হবে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, ইউরোপের দরিদ্রতম দেশ থেকে কিন্তু চল্লিশ-পঞ্চাশ দিনার মাসিক বেতনে কোন শ্রমিক কুয়েতে যাচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশেই এ রকম নিু মজুরিতে নেয়া হচ্ছে নাÑ যাবেও না ইউরোপ থেকে শ্রমিক। অথচ বাংলাদেশী শ্রমিকরা কুয়েত-সৌদি আরবসহ অন্যান্য তেল সম্পদের দেশে শ্রম দিচ্ছে সপ্তাহে ষাট ঘণ্টারও বেশি। জনশক্তি রপ্তানিকারকরাও নানা মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় নিচ্ছে। দুই. মধ্যপ্রাচ্যে এই যে নির্মম শ্রম বাণিজ্য চলছে, এর মুনাফালোভী বেনিয়ারা কোনভাবেই আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার আইন মেনে চলছে না। অথচ জাতিসংঘ সংবিধানে শ্রম অধিকার খুব স্পষ্টভাবেই বর্ণিত আছে। জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর এসব আইনি নীতিমালা মেনে চলারই কথা। কিন্তু তারা তা মানছে না। বরং অমানুষিক নির্যাতন করছে শ্রমিকদের ওপর। গৃহবাবুর্চির চাকরির নামে হরণ করছে নারীর সম্ভ্রম। ইউরোপ-আমেরিকায় একজন শ্রমিক প্রতি সপ্তাহে তার বেতন পান। এসব দেশে সপ্তাহে মজুরি দেয়া হয় ঘণ্টাপ্রতি। একজন দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক কাজ করেন সপ্তাহে চল্লিশ ঘণ্টা। এর বেশি কাজ করলে তা ওভারটাইম হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ্বে পয়লা মে যে মহান মে দিবস পালিত হয় এর মূলমন্ত্রই ছিল শ্রমিকের শ্রম অধিকার আইন সংরক্ষণ করা। বিশ্বের সভ্য দেশগুলো সে আলোকেই শ্রম আইনে সংযোজন-বিয়োজন ঘটাচ্ছে প্রায় প্রতি বছর। আমার প্রশ্ন হচ্ছেÑ মধ্যপ্রাচ্যের আলখেল্লাধারী রাজ শাসকরা কি নিজেদের সভ্যতার পথে অগ্রসরমাণ বলে দাবি করেন না। যদি করেন তবে তারা তাদের শ্রম আইনগুলো আরও উদার করছেন না কেন? কেন আটকে রাখা হচ্ছে শ্রমিকের বেতন মাসের পর মাস? এখানে আরেকটি বিষয় বলা দরকার, বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক নেতা ও দল মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশকে তাদের মিত্র মনে করেন। তথাকথিত ভ্রাতৃপ্রতীম সৌহার্দ্য রয়েছে বলেও দাবি করেন তারা। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এসব রাজনীতিক শ্রম অধিকার আইন সংশোধনে মধ্যপ্রাচ্যের বাদশাহ, খলিফা, সুলতান, আমিরদের সঙ্গে কথা বলেন না কেন? লিয়াজোঁ তৈরি করেন না কেন? চাপ প্রয়োগ করেন না কেন? আমরা দেখছি কুয়েতে শ্রমিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তাদের হীনভাবে দমন করা হয়েছে। এ বিষয়ে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেনি প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বর্তমান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী প্রবাস বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকলেও তিনি সে অফিস নিয়মিত করছেন না। পড়ে আছে ফাইলের স্তূপ। এ বিষয়ে ৩১ জুলাই ’০৮ বৃহস্পতিবার চ্যানেল আই একটি সংবাদ রিপোর্ট করেছে, যা হতবাক করেছে সব সচেতন মানুষকে। বাংলাদেশের শ্রমশক্তিকে বিদেশে পাঠিয়ে কাজে লাগাতে হলে কিছু কাজ করা খুব জরুরি। আর তা হচ্ছে,- ১. মধ্যপ্রাচ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে সেসব দেশগুলোর প্রতি প্রস্তাবনা পাঠাতে হবে। ২. বাংলাদেশের রিক্রটিং এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠানোর চুক্তিনামা প্রবাসী মন্ত্রণালয়কে পরখ করে দেখতে হবে। ন্যূনতম বেতন কত হলে লোক পাঠানো যাবে তার একটা গাইড লাইন তৈরি করতে হবে। সে প্রক্রিয়ায় লোক পাঠাতে হবে। বিশ্বে নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে হবে। ৩. মধ্যপ্রাচ্যের বাংলাদেশ দূতাবাসকে শ্রমিকদের সর্বপ্রকার সহযোগিতা দিতে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে প্রবাসী বাঙালিরা তাৎক্ষণিক তাদের সমস্যায় সহযোগিতা পান। প্রতিটি দূতাবাসে একটি মনিটরিং সেল বা তত্ত্বাবধান শাখা থাকতে হবে। ৪. কোন বাংলাদেশী শ্রমিক যাতে অমানবিকভাবে নিগৃহীত না হন, সেজন্য রাজনৈতিকভাবে আলোচনা করতে হবে। উটের জকি, গৃহপরিচারিকা, অবৈধভাবে পাচার ও দাসপ্রথা বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে যত শিগগিরই উদ্যোগী হবে ততই মঙ্গল হবে প্রবাসী সমাজের। ------------------------------------------------------------------------------ দৈনিক সংবাদ । ২২ আগষ্ট ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি - রণজিত দাস সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০০৮ ভোর ৫:৫৩",False rn,"টুকরো টুকরো সাদা মিথ্যা- ২৪ বুকের মধ্যে ভীষন একটা চাপা কষ্ট নিয়ে তোমাকে লিখছি । তোমাকে হিমি বলে ডাকতেই আমার বেশী ভালো লাগে । কিন্তু যে নামেই তোমাকে ডাকি একদিন তুমি আমাকে আমার ডাকে সাড়া দিবে না ।এটাই কি নিয়তি ? অন্য অনেকের মতন আমি সৌজন্যতা দেখাতে পারি না । এখন গভীর রাত। পায়ের কাছে খবরের কাগজ পড়ে আছে। আচ্ছা, হিমি তুমি কি জানো কিছু মানুষের মুখের চেয়ে কুকুরের মুখ অনেক বেশী সুন্দর । কুকুরের মুখে যে হাসি উজ্জলতা দেখা যায় তা অনেক মানুষের মুখে দেখিনি ।সূরা আলে ইমরানের ১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন: “মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত সোনা-রূপা, চিহ্নিত বা বাছাইকৃত ঘোড়া, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ-সামগ্রী। আমার আজকে মনে হচ্ছে, বারবার মনে হচ্ছে যে জীবনে একজন মানুষ কত পায়, কতবার পায়, তাতে কিছুই যায় আসে না, কিন্তু সে কী পায় এবং কেমন করে পায় তাতে অনেক কিছু যায় আসে । হিমি, তোমার সঙ্গে আর হয়তো দেখা হবে না । আমি কোথাও হারিয়ে যাবো না অথবা পালিয়ে । তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো, আনন্দে থেকো । তোমার সাথে আমার যা ঘটে গেছে তার জন্য আমি মোটেও দুঃখিত নই । সারারাক্ষণ তোমাকে ভালোবাসতেই চেয়েছি। তুমি তো জানো আমার রাগ বেশী । হুট করে ভয়ানক রেগে যাই আর তখনই খারাপ ব্যাবহার করে দেলি । পরে নিজেকেই নিজে ক্ষমা করতে পারি না ।তাছাড়া যে সমস্ত ভুল গুলো আমাদের হয়েছে- তার দায়-দায়িত্ব নিশ্চয় আমার একার না ।বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে যার মূল কথা হল, মানুষের ব্যবহারই তার আসল পরিচয় তথা ভেতরের স্বরূপ ফুটিয়ে তোলে। তাই এটা স্পষ্ট চরিত্র বা নৈতিকতাই হল মানুষের জন্য সবচেয়ে দামী ও স্থায়ী সম্পদ। এ সম্পদের সাথে বস্তুগত সম্পদের কোনো তুলনাই হয় না। একসাথে মনের মধ্যে এত কথা আসছে যে চিঠিটা গুছিয়ে লিখতে পারছি না । তুমি তো জানো আমার সব কিছুই অগোছালো এবং বিশ্রী রকম ।কখনই মনে পাপ বোধ জন্মাতে দিও না । মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক অবশ্যই একটা সম্পর্ক পবিত্র ব্যাপার । সম্পর্কে আনন্দ থাকতে হবে ভালোবাসা থাকতে হবে । কখনও যেন অনুশোচনা না আসে । তাহলে যে মানুষটার সাথে সম্পর্ক তাকে ছোট করা হয় । তোমার মধ্যে বাচ্চা সুলভ একটা আচরণ আছে- যা আমার অনেক ভালো লাগে । আমি চাই এই বাচ্চাসুলভ আচরণ সারা জীবন তোমার মধ্যে থাকুক । এই জন্যই তোমার ভালোবাসা এত সহজ স্বচ্ছ ।মনে রেখ, নিঃস্বার্থ ভাবে মঙ্গল কামনা করার জন্য একজন লোক তোমার আছে । আর শোনো, আমাকে সব সময় মনে রাখার দরকার নেই । মাসে অথবা বছরের প্রথম বৃষ্টির দিনে একটু মনে করো তাহলেই আমি ধন্য ।ভালোবাসার মানুষকে যে বিয়ে করতেই হবে এমনতো কোন কথা নেই, তাকে আজীবন মন থেকে ভালোবাসলেই হয়। যেখানে সে থাকুক সে যেন সুখে থাকে এটাই কামনা করতে হবে।আধুনিকতার নামে নোংরামি , ছেলে মেয়ের অবাধ মেলামেশা এগুলো এখন আমাদের বাংলাদেশের আধুনিক ছেলেমেয়েদের জন্য ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।জানো, হিমি তোমার জন্যই বুঝতে পেতেছি- জীবনে ষোল আনা পাওয়াই সব নয়। তার পরেও কিছু থাকে । তোমার স্পর্শে আমার জীবনে দিনের আলোর মতন অনেক কিছু পরিস্কার হয়েছে । তুমি আমাকে নিয়ে গেলে অন্য এক আনন্দময় আকাশে । তোমার জন্য কিছু করতে পারি সেই যোগ্যতা আমারা নেই । সত্যিই নেই । হয়তো তোমার কিছু প্রয়োজনও নেই । আমার কি-ই বা দেওয়ার আছে তোমাকে । তোমার তো সবই আছে । তবে তোমাকে যা দিয়েছি তা আর কাউকে দেইনি । তোমার স্মৃতি বুকে নিয়ে একটা জীবন পার করে দেওয়া কোনো ব্যাপারই না । তবে একটা কথা মনে রেখ- মানসিক ক্ষত অনেক সময় শারীরিক ক্ষতের চেয়েও অনেক বেশি ভয়ংকর। আমি অনেককে দেখেছি, মেয়েরা সম্পর্ক ভেঙে গেলে কাছের কোনো বান্ধবীকে জড়িয়ে হাপুস নয়নে কাঁদতে থাকে। কিংবা ‘পুরুষ বড় নির্বোধ’ জাতীয় কবিতা লেখা শুরু করে এবং নতুনভাবে জীবনটা শুরু করার চেষ্টা করে। আর ছেলেরা ব্রেকআপ হওয়ার ছয় মাস পরও সাবেক প্রেমিকাকে রাতবিরেতে ফোন করে ‘ডাইনি, তুই আমার জীবনটা শেষ করে দিলি’—এ জাতীয় ডায়ালগ ঝাড়তে থাকে। আমি সব কিছুই খুব মন দিয়ে দেখি । একটা ছবি তোলার পর একজন ফোটোগ্রাফার যেভাবে দেখে ঠিক সেভাবে দেখি । আমি অখ্যাত বলেই আমার অনেক সুবিধা । বিখ্যাত লোকদের বিচারক সকলেই, তাদের বিচারের যোগ্যতা থাক বা না থাক । কিন্তু আমার বিচারের ভার শুধু তোমার হাতে ।আমার যা কাজ, যাদের নিয়ে কাজ, তাতে আমার নিজেরই অজান্তে আমি অনেক বদলে গেছি । প্রিয় মানুষকে কাছে রাখার চেয়ে, দূরে দূরে রাখাই বুঝি কাছে রাখার একমাত্র উপায় । আর খুব বেশী কাছাকাছি থাকলে- ভালোবাসাটা হালকা হয়ে যাবার ভয় থাকে । হে বন্ধু বিদায় । ভালো থেকো ।",False hm,"প্রবাসে দৈবের বশে ০০১ ১. ধরা যাক, এয়ারলাইন্সের নাম ""ল যাইগা""। একটু অশ্লীল, তবে ঠিকাছে। তাঁরা আমাকে আমার গোদা স্যুটকেস আর রুকস্যাক ওজন মাপার বেল্টে রাখতে বললেন। আমি আমার সুদূর অতীতের বোঝা কাঁধে পাহাড় বাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে আন্দাজ করেছিলাম, সব মিলিয়ে ওজন আটাশ কেজির বেশি হবে না। আমার পেহলওয়ান ভাই কিছুক্ষণ স্যুটকেস নিয়ে লোফালুফি করে বলেছিলেন সব মিলিয়ে চব্বিশ কেজির বেশি হতেই পারে না। কিন্তু দেখা গেলো চৌতিরিশ কেজি পার হয়েও হিজিবিজি অঙ্ক ফুটে উঠেছে কাউন্টারে। ""হয় আপনাকে ওজন কমাতে হবে, অথবা ডিউটি দিতে হবে।"" হাসিমুখে জানালেন ভদ্রলোক। পকেটে টাকা ছিলো কিছু। যে অঙ্কটার কথা বলা হয়েছে, টায়ে টায়ে সেটাই ছিলো। ওজন কমানোর প্রশ্নই আসে না, একেবারেই যা নিলে নয় তা-ই নিয়েছি। কড়ি খরচ করবো। কড়ি খরচ করার জন্যে আমাকে আবার গরীবগুর্বোদের কাউন্টার ছেড়ে বেওসাদারদের কাউন্টারে যেতে হলো। সেখানে এক শ্যামাঙ্গীসুন্দরী খুব গম্ভীর মুখে কাজ করে যাচ্ছেন। ফট করে উদয় হলেন তাদের সবার বস, হাতে ওয়াকি টকি। তিনি এসে একটা হুলুস্থুলু করলেন। জানলাম, ঢাকা-ফ্রাঙ্কফুর্টে অতিরিক্ত ওজনের জন্য আমাকে আরো মাল ছাড়তে হবে (এ মাল সে মাল নয়)। ঊনিশ নয়, প্রতি কেজি চব্বিশ ডলার। ""যান, ডলার ভাঙিয়ে আনুন।"" জানানো হলো আমাকে। ডিপারচারের যাত্রী অ্যারাইভালে যেতে পারবে না, এ-ও যথাসময় জানানো হলো আমাকে। ডিপারচারের যাত্রীদের জন্যে টাকাপয়সার লেনদেনের কোন ব্যবস্থা নেই, এটিএম ও নেই। আমি খোঁজখবর নিয়ে এসে বিষণ্নবদনে বললাম, আমি পুরোটা ডলারে পরিশোধ করতে চাই। কিন্তু না, ডলারে তাঁরা নেবেন না, আমার উপকার করতে তাঁরা বদ্ধ পরিকর। অবশেষে ঘন্টাখানেক পর তাঁরা কৃপা করলেন, ডলারেই যা নেয়ার নিলেন। ঝকঝকে রিসিট লিখে দিলেন অবশ্য, ছিয়ানব্বই ডলার পরিশোধের গর্ব নিয়ে আমি বিষণ্নতর হয়ে ইমিগ্রেশনের কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেলাম। এক ঘন্টা ডিলে হলো ফ্লাইট। খানিক দাঁড়িয়ে খানিক বসে সহ্য করে গেলাম। পাশে এক ভদ্রলোক কেবল রসমালাইয়ের প্যাকেট হাতে হাসি হাসি মুখে মোবাইলে গল্প করে যাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যবাসী কারো সাথে, বিকেলেই দেখা হবে এ কথাটা মিনিটে কয়েকবার জানাচ্ছেন। আমি কয়েকটা হাতব্যাগ সামলাতে সামলাতে তাঁর পরিতৃপ্ত হালকা চেহারা দেখতে দেখতে ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠলাম। যা হোক, সব পাখি ঘরে ফেরে, সব নদী ... আর এটা তো ল যাইগার বিমান। একসময় দেখলাম বসে পড়েছি জানালার পাশে একটা সীটে। একসময় সাঁ করে আকাশে উঠে পড়লো বোয়িং ৭৭৭, নিচে ঢাকা শহরটা ছোট হতে হতে একসময় অচেনা আর সুন্দর হয়ে গেলো। আমি একটা ছোট শ্বাস ফেললাম শুধু। ২. ল যাইগা ঢাকা-মধ্যপ্রাচ্যেরসেইশহর রুটে সম্ভবত আদবদুরস্ত স্টুয়ার্ডিঙের কোন প্রয়োজনবোধ করেনি। জনৈক রুমানিয়ান স্টুয়ার্ড একটু পর পর এসে বিনা বাক্যব্যয়ে আমার সীটবেল্ট ধরে টানাটানি করে, সীট সোজা করে দেয়, ফুটরেস্ট নামিয়ে দেয়, কী করে না করে ... সর্বোপরি আমার দিকে বিষদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে যায় হনহন করে। আমি যেন কেমন, এমন খাতির পেয়ে কিছুতেই ভালো বোধ করিনা। তবে প্রচুর সিনেমা চলছে সমানে, আমি কিছুক্ষণ গুঁতাগুঁতি করে পেয়ে যাই ইয়াং ফ্রাঙ্কেনশ্টাইন, আমার খুবই প্রিয় কমেডি। বহু বহুদিন পর দেখতে দেখতে আর হাসতে হাসতে কিছু সময় পার করা গেলো। মধ্যপ্রাচ্যের সেই শহরে ট্রানজিটের সময় ছিলো এক ঘন্টা পঁচিশ মিনিট, কিন্তু অলটিচ্যুড বাড়িয়ে হারানো এক ঘন্টার অনেকখানি পুষিয়ে দেয়া হয়েছে, কাজেই ট্রানজিট ফ্লাইট মিস করার আশঙ্কার কোন কারণ নাই, জানালেন ক্যাপ্টেন। বিমান থেকে নেমেই ঝেড়ে দৌড় লাগালাম, ল যাইগার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। জুতা-ঘড়ি-বেল্ট খুলে আরেকদফা সিকিউরিটি চেক হবার পর দিলাম আরেক দৌড়। বেশ বড়সড় এয়ারপোর্ট, একেবারে এক প্রান্তের গেটে আমার গন্তব্য। পৌঁছে বুঝলাম দৌড় দিয়ে ভালোই করেছি। ৩. পাকা চল্লিশ মিনিট রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে রইলো বিমান। দরদর করে ঘামছি। আশেপাশে সবাই ধলা, তারা কোঁ-কোঁ করছে নানা ভাষায়। বহুৎ ভুগিয়ে অবশেষে আবার উড্ডীন হওয়া গেলো। এবার লম্বা যাত্রা ফ্রাঙ্কফুর্টের উদ্দেশ্যে। আমি দিলাম ঘুম। অচিরেই পড়শী বিচ্ছুদের উৎপাতে ঘুম ভাঙলো। তাদের বাপ এক মুশকো দক্ষিণ ভারতীয়, মা মুশকোতর জার্মান, বাচ্চাগুলি অবশ্য বেশ ফুটফুটে, কিন্তু সব কয়টাই বুথ সাহেবের বাচ্চা। একটু পর পর তারা বিকট কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। বাচ্চাদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যেরসেইশহর-ফ্রাঙ্কফুর্ট রুটে দেখলাম ভাবসাব আলাদা, একটু পর পর পুতুল, ব্যাগ, এটাসেটা দিয়ে যাওয়া হয়। প্রকান্ড এক এয়ারহোস্টেস এসে মিষ্টি গলায় স্তোকবাক্য শুনিয়ে যায় তাদের, কিন্তু বুথ সাহেবের বাচ্চা বলে কথা। আমার ইচ্ছা হলো আমিও গলা ছেড়ে কেঁদে উঠি। কাঁদতে না পেরে ভাবলাম বিয়ার খাই। কয়েকটা বিয়ার খাওয়ার পর মনটা কিঞ্চিৎ শান্ত আর ভ্যাবদা হয়ে উঠলো। একটা অ্যানিমেশন ফিল্ম দেখা শুরু করলাম, সেখানে এক পেঙ্গুইন সার্ফিং প্রতিযোগিতা করতে আসে এক দ্বীপে, আরো নানা কাহিনী। খেতে খেতে আর দেখতে দেখতে আবার ঘুম দিলাম। ফ্রাঙ্কফুর্টে নামার সময় শুনলাম বিশেষ পাসপোর্ট চেক করা হচ্ছে। অবশ্য কোন ঝামেলার মুখে পড়তে হলো না, শ্প্রেখেন জি ডয়েচ এর ইতিবাচক উত্তর পেয়ে টুকটাক প্রশ্ন করে ছেড়ে দিলো পাহাড়প্রমাণ জার্মান পুলিশ। ইমিগ্রেশন পুলিশ এক ভুরু উপরে তুলে জিজ্ঞাসা করলো, ভো হাবেন জি ডয়েচ গেলের্ন্ট, আন ডের শুলে? স্কুলে নয়, গোয়েটে ইনস্টিটুটে শিখেছি শুনে সে ঠোঁট উল্টে মাথা ঝাঁকালো। ইউনিভার্সিটির নাম শুনে এবার তার মুখে হাসি ফুটলো, জানলাম সে-ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাল। আর কোন প্রশ্নের মুখোমুখি হলাম না, আইনেন শোয়েনেন আউফএন্টহাল্টের শুভকামনা নিয়ে বেরোলাম পোঁটলাপাঁটলি খুঁজতে। সবকিছু খুঁজে পেতে বার করে ঠ্যালার ওপর চাপিয়ে বের হয়ে দেখি এক বিশাল শ্মশ্রুধারীগুম্ফমান ঝুঁটিয়াল হাসিমুখে দাঁড়িয়ে। চুলদাড়ি মাইনাস করলেই লোকটাকে সুমন চৌধুরী বলে চালিয়ে দেয়া যায়।",False mk,"বাংলাদেশের জনশক্তি ও উন্নয়ন আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন, প্রধানমন্ত্রীর কানাডা সফর, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তৃতা, চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর, ভারতের গোয়ায় বিম্সটেক সম্মেলন, বিশ্বব্যাংক প্রধানের আগমন—এইরূপ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। বাংলাদেশ নিয়ে, বাংলাদেশের জনশক্তির বিনিয়োগ নিয়ে, বিভিন্ন প্রকল্প, চুক্তি স্বাক্ষর, বিভিন্ন প্রক্রিয়াকরণ এলাকা তৈরি, বন্দর নির্মাণ, যোগাযোগ সেতু নির্মাণ প্রভৃতির ক্ষেত্রে বেশ লক্ষণীয় তোড়জোড় নজরে আসছে। এসব দেখে পুরনো কথা মনে পড়ল। সেই ১৯৭২ সালে ‘ক্লাব অফ রোম’ নামে একটি ছোট্ট সংস্থা Limits of Growth নামে একটি গ্রন্থে উল্লেখ করেছিল যে, ১৯৮১’র মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত খনিজ সোনা তোলা হয়ে যাবে এবং এভাবে তামা, সীসা, গ্যাস সব ১৯৯৩-তে শেষ হবে। তারপর পৃথিবীব্যাপী নেমে আসবে মহাদুর্ভিক্ষ। শুধু তাই নয়, এমন আশঙ্কার কথা নিয়ে পল এলিরিখও The Population Bomb বলে নিও-ম্যালথেসীয় একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেছিলেন। তাতে তিনি বলেন, ১৯৭০ সাল নাগাদ পৃথিবীর জনবিস্ফোরণ এমন এক পর্যায়ে যাবে তাতে গোটা পৃথিবী দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে। কিন্তু বাস্তবত এসবের কোনোটাই এখনও সত্যে পরিণত হয়নি। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কার্যত এখন আর কেউ না খেয়ে মারা যায় না। স্বাধীনতার পরে অনেকটা সময়ে এ জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। দারিদ্র্যকে দূর করে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণের প্রচেষ্টায় ব্যস্ত। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব! কোন্ প্রক্রিয়ায় সে অগ্রগমন ঘটবে! তথ্য-পরিসংখ্যান যাই হোক, অধিকাংশ মানুষের মাঝে কাজ করার প্রবণতা এখন বেড়েছে। আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে, কিন্তু আবাদ বেড়েছে। খন্দ আর হাইব্রিডিটি বাংলাদেশের ঊর্বর জমিকে আরো উত্পাদনমুখী করেছে। পোলট্রি খামার, মত্স্য উত্পাদনে প্রাচুর্য এসেছে। সবজি চাষেও এখন নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। আসলে প্রয়োজন থেকেই তো উত্পাদনের প্রশ্ন আসে— তাইতো দার্শনিক কার্ল মার্কস বলেছেন, উত্পাদন ব্যবস্থা ও শ্রেণি সম্পর্কই সমাজ বদলিয়ে ফেলে। শ্রম-ঘনত্ব, শ্রমের যথাযথ মূল্য প্রদান উত্পাদনের অনিবার্য ক্ষেত্র। সেটি বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খুব মনে আসে ১৯৯৮ সালে যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দেশের বৃহত্ বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করেন তখনই বুঝি এক বিরাট জানালা দেশবাসীর সম্মুখে খুলে গিয়েছিল। এই জানালাটি আসলে কী? শুধুই যোগাযোগের নয় এটি— সম্পর্ক-আত্মোন্নয়ন-উত্পাদনের চ্যালেঞ্জ প্রভৃতি। এটি যেন খুলে দিয়েছিল উত্তরের সঙ্গে গোটা দেশের মানুষের উন্নয়ন-সম্পর্ক। অবশ্যই এটি বিশ্বাস করা কঠিন নয় যে, বঙ্গবন্ধু সেতুর ফলেই সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে এখন চা-কমলা-পাথর-পোলট্রি ছাড়াও শত শত জমিতে এবং ছোট ছোট শাখা নদীতে নানামুখী উত্পাদন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বগুড়া অঞ্চলে বিস্ময়করভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে মেশিনারিজ সামগ্রী ও হাতে তৈরি যানবাহন ও পণ্যের তুমুল সম্প্রসারণ ঘটেছে। যা একটা শ্রেণির মানুষের ভেতর যোগাযোগের ক্ষেত্রকে সহজতর করেছে। হাতে তৈরি তিন চাকার যানবাহন এখন পল্লী-প্রান্তরে মানুষের পরিবহনের ক্ষেত্রে নতুন প্রান্ত খুলে দিয়েছে। এতে মানুষের চলাফেরা, হাট-বাজার, ব্যবসা-বাণিজ্য সমানতালে ঊর্ধ্বগতিতে সম্প্রসারিত হয়েছে। এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রায় নেই-ই। ব্যক্তি উদ্যোগেই এসব অটোমোবাইল তথা মেশিনারিজ শিল্প ডেভেলপ্ড করেছে। এসবের ঝুঁকি নিয়ে হয়তো নানা অভিযোগ আছে কিন্তু ইকোনমি হওয়ার কারণে কোনো অভিযোগই ধোপে টিকছে না। এছাড়া সিরাজগঞ্জ-নাটোর-পাবনা-বগুড়া অঞ্চলে সব্জি ও মাছের চাষ এখন বেশ তুঙ্গে। দারিদ্র্য দূরীকরণের পথে এই একটি সেতু কী অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে মানুষের মনে। আজকে রাস্তাঘাটে যানচলাচল দেখলেও পরিবর্তনের জন্য মানুষের ভেতরে উদ্যমতার শক্তিটি চেনা যায়। কর্মমুখরতার এ জায়গাটি সৃষ্টি করে দিয়েছে যেন ওই সেতুটি। কিন্তু একইভাবে হয়তো এর বিপরীত বিষয়ও কম নেই! অনেককিছু সহজলভ্য এবং অর্থকড়ির বিচিত্র সঞ্চালনের ফলে জন-জাগরণের যে জোয়ার তাতে সহজলভ্যতাও কিছু ঘটেছে। সেটি তো অস্বীকার করা যাবে না। আমরা শরত্চন্দ্রের উপন্যাসে পড়লে দেখি যে, ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে রেল লাইন বসালো, রেল চালু হলো— যোগাযোগ-অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসলো কিন্তু সাথে করে নিয়ে এলো কী! মহামারী-প্লেগ-দুর্ভিক্ষ আর শ্রমিক-মানুষকে পশু বানাবার ব্যবস্থা। একই ট্রাকে মানুষ আর পশু একসঙ্গে উঠছে। লেখক বলছেন, ওদের ভেতরে বুঝি কোনো ভেদ নেই। তাই এ সেতু হয়তো কেড়েও নিয়েছে অনেক আনন্দের বেগ। কিন্তু প্রাপ্তি তো অনেক। তবে অর্থযোগে ‘অনুত্পাদনশীল অর্থ’ও বাড়ে। মধ্যস্বত্বভোগী, দালাল তৈরি হয়। সেখানে কৃষক-উত্পাদক অনেকটাই অসহায়। উচিত দাম না পেয়ে মাল ফিরে নিয়ে গেলেও বাধ্য হয়ে পরেরদিন আরো কম মূল্যে বেচতে হয়— এ সময় কৃষক ন্যায্যমূল্য পায় না। ফড়িয়ারা বিনা শ্রমে অর্থ লুটে নেয়। বিষয়গুলো প্রান্তিক চাষিদের জন্য অন্যায়— কিন্তু ওরা ভাগ্যের দোষ দিয়েই বিদায়। তবে এখন হয়তো তারা এতোটা প্লেন চিন্তা করে না— কিন্তু ফড়িয়াদের হাতেই অনেক অর্থই যে চলে যায়— তার আর রক্ষা কোথায়! তবে সমাজে অনর্থ সৃষ্টি হলেও বিস্ময়কর পরিবর্তনগুলো দারিদ্র্য দূরীকরণের বিপক্ষে বিরাট শক্তি। বেকারত্ব প্রশমিত করে জীবনের বাঁকে এনেছে নতুন পরিবর্তনের ধারা।২.পল্লীর ব্যস্ত জীবনাচরণের একটি বড় প্রবণতা এখন টেলি-কমিউনিকেশন প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি উঠে এখন এসেছে প্রায় সকলের হাতে। শিক্ষা-সংস্কৃতি-ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বত্র এর প্রভাব বেড়ে চলছে। প্রযুক্তির তো একটা প্রবাহ আছে। সেখানে বর্তমান প্রজন্ম বড় গতিশক্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষ হলো তখন বিশ্ববাসীর যে পারমাণবিক অভিজ্ঞতা— সেটা এমন একটি নৈরাশ্যমূলক ধারণা প্রজন্মের মাঝে সৃষ্টি করেছিল তাতে অনেকেরই মনে হয়েছিল সামনে ভবিষ্যত্ বুঝি তীব্র উত্কণ্ঠাময় ও জটিল। মানুষে মানুষে ভেদ বৃদ্ধি পাবে, ঐক্য আর রইবে না। সংস্কৃতিই হয়ে উঠলো যেন বিভক্তির। ফলে মানুষ দাঁড়াবে কোথায়। কিন্তু আশ্চর্য রকমভাবে আটের দশকে স্নায়ুযুদ্ধের নতুন রূপ তৈরি হলো। চিন উঠে আসলো। ভারত বৃহত্তর জনশক্তি নিয়ে প্রযুক্তিকে উপযোগের অংশীদার করলো। ফলে শাসক ও শোষিতের মধ্যে যে নতুন দ্বন্দ্ব দেখা দিল তা একদিকে চির প্রচলিত মূল্যবোধগুলোর অস্বীকৃতি আর অন্যদিকে তা গ্রহণ করার অনিবার্য নতুন প্রচেষ্টা। এতেই শামিল হলো বৃহত্তর জনতা। এই ধারাবাহিকতায় এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে শিশুটি জন্ম নিচ্ছে সেও একপ্রকার প্রাযুক্তিক জৌলুসকে বা তার উদ্ভূত বলিহারি ঝাঁ-চকচক খবরদারীকে স্বাচ্ছন্দে মেনে নিচ্ছে। সেভাবে তার মানস-গঠনও তৈরি হচ্ছে। গ্রাম-গঞ্জে এখন তো দেখা যাচ্ছে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বটেই— পাসপোর্ট, হজে যাওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্র করা প্রভৃতিতে সর্বপ্রকার অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে এবং চাকরি-বাকরি থেকে শুরু করে জীবনের সব পর্যায়ে ব্যবসা-সওদা কিংবা মাছ বিক্রেতা পর্যন্ত এর সত্যকে নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেছে। প্রত্যেকটি কাজের অংশীদার এখন এই প্রযুক্তি। সেটি কোনো শ্রেণি বা বর্ণ বলে কথা নয়। আর এতে করে ক্রেতা-বিক্রেতার সংশ্রবও বেড়েছে। এমনকি ই-মেইল-ইন্টারনেট-ইউটিউবও কম জনপ্রিয় নয়। তবে এর কুফল যাই থাক— সুফল অস্বীকার করা যাবে না। আর বর্তমান বিশ্বে কোনো বেড়া দিয়ে একে ঠেকিয়েও রাখা যাবে না। তাই চ্যালেঞ্জটি নেওয়াই সঙ্গত। কিন্তু এজন্য জ্বালানি দরকার। সরকারের এখন যে জ্বালানি চ্যালেঞ্জটা— সেটা যদি পুরোপুরি সফল হয়— তাহলে প্রযুক্তির উপলক্ষ্যগুলো প্রাত্যহিক কাজের মতোই গতি পাবে। এই স্বাচ্ছন্দ্যের ভেতরে গড়ে উঠবে জীবনযাপনের স্বপ্ন ও বাস্তবায়নের সংকল্পগুলো। এখনও গ্রামের অনেক এলাকা বিদ্যুিবহীন। ফলে কিছু কাজের জন্য পার্শ্ববর্তী বিদ্যুত্প্রবণ এলাকায় তাদের যেতে হয়। সরকারকে এখন এই কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। চিনা সরকারের সঙ্গে যে চুক্তিগুলো হলো— তাতে কিছু বড় বড় প্লান্ট তৈরির ব্যাপার এসেছে। সেগুলো ঠিকঠাক হলে যে রেটেই হোক একটা পরিবর্তন আসতে পারে। আর এভাবেই এগুনোর পথ প্রশস্ত হবে।৩.উন্নয়ন আসলে শুধু প্রবৃদ্ধির স্কেলে মাপা যাবে না। এটি মানবসম্পদ উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ মানবসম্পদের পরিবৃত্ত কোনো শ্রেণি বা এলাকায় নয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর ফলে জনজীবনের যে চাঞ্চল্যের কথা বলেছি সকলের নিশ্চয়ই আরো একটি আশাবাদ আছে দক্ষিণাঞ্চলের পদ্মাসেতু নিয়ে। এটিও উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বৃহত্তর ভূমিকা রাখবে, সন্দেহ নেই। দক্ষিণাঞ্চল অসংখ্য নদী-উপনদী-জলাজঙ্গলে ঊর্বর ও সমৃদ্ধিপ্রবণ এলাকা। সেটি উন্নয়নের রোডম্যাপে যুক্ত হলে আশা করা যায় জীবনের গতি আরো বাড়বে। যেটি বলেছি, দুর্ভিক্ষ বা খাবার না পাওয়ার চিন্তা সত্তর দশকের গোড়ায় অনেক চিন্তাবিদ করেছিলেন। তখনও বুঝি প্রযুক্তির এ ফ্ল্যাশ তাদের নজরে আসেনি। একপ্রকার তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাতেই তারা ম্যালথাসের তত্ত্বকে নবায়ন করেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর মার্কিন ষড়যন্ত্রে (যারা তলাহীন ঝুড়ির দেশ বলেছিল) যুদ্ধবিধ্বস্ততা কাটিয়ে ওঠার আগেই এক আরোপিত দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছিল। হয়তো কিছুটা প্রশাসনিক অদক্ষতাও তার ভেতরে লুকিয়েছিল। তখন এদেশের জনসংখ্যাও এখনকার মতো ছিল না। পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের এ জনপদে গ্রামের মানুষ তখনও আবেগে গৃহকাতর ছিল। তখন শিক্ষার প্রতি আগ্রহ একটি বিশেষ মহলেরই ছিল। যোগাযোগেও ছিল নাজুকদশা। সেটি দীর্ঘ সময়ে আজকের পর্যায়ে উঠে আসার যে শক্তি ও সামর্থ্য সেটি তো বাংলার মানুষের সংগ্রামী সরলমনা শক্তিরই ফল। এখন গত দুই-তিন প্রজন্ম ধরে স্বপ্ননির্ভর সম্পাদনার যেন বাস্তবে সত্যরূপ লাভ করেছে। এই সত্যরূপের জয়শক্তি হলো তরুণরা। তারাই দারিদ্র্য দূরীকরণের শক্তি। তরুণদের মেধা ও কর্মচঞ্চলতাও সে স্বীকৃতিই দেয়। আর সেই প্রবাহ বেয়ে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে তৈরি হওয়ার ইচ্ছে ব্যক্ত করছে। এটি অর্জনের জন্য এখন দুর্নীতি কমাতে হবে। পরিকল্পনা আরও বৃহত্তর হতে হবে। পুরনো আমলাতান্ত্রিক লাল সুতোর দৌরাত্ম্য থেকে বেরুনোর পথ খুঁজতে হবে। স্মরণ রাখা জরুরি, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নির্ধারিত কাজ যেমন রয়েছে তেমনি জনকল্যাণের স্বার্থে তার পরিধি বিস্তারেরও সুযোগ আছে। কিন্তু রিজিড হওয়ার কিছু নেই। আর এক বিভাগের সঙ্গে অন্য বিভাগের সংঘর্ষের সুযোগও নেই। প্রশাসনে শৃঙ্খলা থাকাটা জরুরি। যারা গুণী তাদের কাজের মর্যাদা দিতে হবে। সরকার কিছুতেই নির্ধারিত কারো ওপর নির্ভরশীল হবে না। দেশের উন্নয়নের চলতি ধারা এখন সরকারপ্রধান ছাড়া কার্যত কারো উপরই নির্ভরশীল নয়। ক্ষমতাসীন দলের যে কর্মশক্তি, জনসেবার যে প্রত্যয়— তার ভিত্তিতেই সরকারের পরিকল্পনা থাকতে হবে। বস্তুত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা জনস্বার্থে এসব বাস্তবায়ন করবেন। এগুলো কারো একক কৃতিত্বের ব্যাপার নয়। জনতার সংগ্রামের ভেতর দিয়ে অনেক রক্ত ক্ষয় করা এ স্বাধীনতা যেন কল্যাণমূলক হয়। সকলের হয়। সার্বজনীনতা থাকে। সম্মুখে চলাটা চ্যালেঞ্জিং— সে চ্যালেঞ্জটুকু জনগণ নিচ্ছে কিন্তু অভ্যন্তরীণ ভূত যাতে তা কোনোভাবেই তছনছ না করে— সে সতর্কতা থাকা চাই। এজন্যই কল্যাণকর শক্তির একাগ্রতাই ঐক্য— সেটিই হোক নিশ্চিন্ত অগ্রবর্তী পথ। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮",False hm,"প্রবাসে দৈবের বশে ০২০ অবশেষে শেষ হলো সেমিনার। বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে কাসলার সিম্পোজিয়ুম, নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হচ্ছে। কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ইনস্টিটিউট ইজেট গোটা ইয়োরোপেই বেশ সমাদৃত, জার্মানিতে তো বটেই। বড় বড় নবায়নযোগ্য শক্তি শিল্পোদ্যোক্তারা গবেষকদের সাম্প্রতিক সংযোজন সম্পর্কে জানতে এসেছেন, পাশাপাশি গবেষণার জন্যেও আলাদা তাগাদা দেয়া হবে। ওদিকে আমার সেমিনার নিয়ে বিষম দৌড়ের ওপর ছিলাম। এই সেমিনারের উদ্দেশ্য হচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বকপোলকল্পিত উদ্যোগকে সহায়তা করা। সেমিনারের অধ্যক্ষ ডাকসাইটে প্রফেসর য়ুর্গেন শ্মিড স্বভাবসুলভ মৃদু কণ্ঠে জানালেন, পোলাপানকে পাশ করার পর দুনিয়াতে একা ছেড়ে দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ না। তাকে বিভিন্ন রাস্তা দেখানোও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্য। একজন প্রকৌশলী নিজে কোন উদ্যোগ নিতে গেলে শুরুতেই বিরাট হোঁচট খেতে পারে, কারণ হয়তো ব্যবসা সম্পর্কে তার কিছুই জানা নেই। ওদিকে সেন্ট গালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ছাত্ররা হয়তো ব্যবসা সম্পর্কে খুবই ভালো জানে, কিন্তু প্রযুক্তির সাম্প্রতিক বাস্তবতা সম্পর্কে তাদের ব্যবহারিক জ্ঞান খুব কম। কাজেই এই সেমিনারের মাধ্যমে এই দুই পক্ষের দূরত্ব কমিয়ে আনার একটা চেষ্টা করা হচ্ছে। একদল প্রকৌশলী একটা নতুন আইডিয়া উপস্থাপন করবেন, একদল ব্যবসায় প্রশাসক সেই আইডিয়ার বাণিজ্যিক উপযোগিতা যাচাই করে একটা বিজনেস মডেল দাঁড় করাবেন, এ-ই ছিলো আড়াই দিনের সেমিনারের মূল কাজ। আমার আইডিয়া নিয়ে প্রাথমিক উপস্থাপন মোটামুটি ভালোই হয়েছিলো, গতকাল চারজন সুইস মোটামুটি ছাই দিয়ে ধরলো আমাকে আইডিয়ার আগাপাস্তলা বোঝার জন্যে, মার্কেটিং ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে তিনজন আর ফিনান্স থেকে একজন। আমার প্রস্তুতি ভালোই ছিলো, নানা প্যাঁচঘোঁচ গলিঘুঁপচি নিয়ে আলোচনা শেষে তারা ঝড়ের বেগে একটা কাঠামো দাঁড় করিয়ে ফেললো। আজ সকালে সেটার ওপর শেষ দফা উপস্থাপন হলো, মনটা ভালো, কারণ বেশ মসৃণভাবে শেষ হয়েছে জিনিসটা। প্রথম যেদিন প্রফেসর শ্মিডের সামনে উপস্থাপন করেছিলাম, শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তির কারণে একটু গুলিয়ে ফেলেছিলাম, তিনি বেশ সুন্দরভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে এমন উপস্থাপন নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট নন, আরো ভালো কিছু চান। আজকে দেখলাম তিনি সব কিছু শেষ হবার পর এসে জানালেন, ভালো হয়েছে। সুইসরা বেশ স্নব হয় নানা ব্যাপারে, আমার অন্য তিন আরব সহকর্মীর সাথে যারা গ্রুপ করেছে তারা দেখলাম তাদের আইডিয়াটা নিয়ে বেশ হাসাহাসি করলো। অপমানিত হতে কে-ই বা আর ভালোবাসে, ফিলিস্তিন, তিউনিসিয়া আর জর্দানের তিন তরুণ মুখ কালো করে কর্তব্যকর্ম করে গেলো। উপস্থাপন শেষে ওদের গিয়ে সান্ত্বনা দিলাম, বেচারারা খুবই মন খারাপ করেছে এমন অনাকাঙ্খিত সারকাজমের শিকার হয়ে। তবে সুইস দলের কয়েকজন যাবার আগে এসে আরো খোঁজখবর নিয়ে গেলো আমার আইডিয়া নিয়ে ভবিষ্যত চিন্তার। আমার গ্রুপের সদস্যরা বেশ সিরিয়াস কিসিমের লোক, ফিনান্সের ফাবিয়ান অল্প কথায় কিছু টিপস দিলো আমাকে, ছোকরার মাথা দারুণ সাফ। গতকাল সকালে আবার গোটা দলের সাথে এক্সকারশনে গিয়েছিলাম কাসেলের অন্যতম এক ইলেকট্রনিকস ইন্ডাস্ট্রিতে। ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা এককালে কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণায় গবেষণা সহকারী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন, ১৯৮১ সালে তাঁরা তিন সহকর্মী ও বন্ধু মিলে সেই ইন্ডাস্ট্রির গোড়াপত্তন করেন। এখন সেই ইন্ডাস্ট্রি ইনভার্টার নির্মাতা হিসেবে দারুণ সফল। কাসেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং এই ইন্ডাস্ট্রি একে অপরকে গবেষণা বিষয়ে সহায়তা করে লাভবান হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচিত কিছু অংশ ঘুরে দেখার পর প্রতিষ্ঠাতা এসে উপস্থিত হলেন, ছাত্রদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে। তাঁর কথা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিলো, বাংলাদেশে শিল্পোদ্যোক্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারস্থ হলে অনেক লাভবান হতেন। উদ্ভাবনের কোন বিকল্প নেই, জানালেন হের ক্রামার, আর উদ্ভাবন নিয়ে দেরি করলে পস্তাতে হবে। আমি শুনি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলি। হায় বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তা, হায় আমার প্রিয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। এই সেমিনার করতে গিয়ে যা শিখলাম, তা হচ্ছে, পূর্বপ্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আমার উপস্থাপন আমি সব মিলিয়ে চারবার চর্চা করেছি, শিক্ষকদের কাছে তিনবার আর আমার পড়শী লম্বু জামুয়েলের কাছে একবার। পাশাপাশি SWOT বিশ্লেষণ করে দুর্বল জায়গাগুলোর জন্য জবাব তৈরি করে রেখেছিলাম। আমার আরব সহকর্মীদের অবস্থা দেখে বুঝেছি, পূর্বপ্রস্তুতির বিকল্প হচ্ছে হাস্যাস্পদ হওয়া। কোন কিছু ঠিকমতো বোঝাতে না পেরে কারো দাঁত ক্যালানো দেখার মতো বিড়ম্বনা আর হয় না। জানি না অনাগত উপস্থাপনগুলির জন্য এমন সময় পাবো কি না, কিন্তু দেখানোর মতো বত্রিশ দাঁতের পাটির যে অভাব হবে না এই দেশে, এটা বুঝলাম। আমার সহপাঠীদের দেখেছি, কেউ কোন উপস্থাপন করতে গিয়ে ফেঁসে গেলে তাকে একটু টোকা দিয়ে ছেড়ে দিতে, খুব একটা প্যাঁচে কেউ কাউকে ফেলে না। কিন্তু সহপাঠীদের সামনে জীবনে খুব বেশিবার কোন কিছু উপস্থাপন করতে হয় না, নানা দেশের নানা রুচির মানুষের সামনেই হয়তো হাজিরা দিতে হবে বার বার।",False rn,"দাজ্জাল কাহিনী রাসুল (সাঃ) একদিন ফজর নামাজ আদায় করার পর সাহাবীদেরকে বললেন সবাই নিজ নিজ নামাজের স্থানে বসে থাক।তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তোমরা কি জান আমি কেন তোমাদেরকে এখানে একত্র করেছি? তোমাদেরকে কোন কিছুর প্রতি উৎসাহ কিংবা কোন কিছু থেকে ভীতিপ্রদর্শনের জন্য একত্রিত করিনি। বরং, আমি তোমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় জানানোর জন্য একত্রিত করেছি। আর তাহল-তামীম দারী ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং তার বিগত একটি সামুদ্রিক সফরের ঘটনা বর্ণনা করেছে, যা আমার পূর্বেকার ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করেছে।সে অন্যদের সাথে একটা সামুদ্রিক সফরে ছিল। সেখানে সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ তাদেরকে নিয়ে খেলা করেছে। একমাস পর তারা একটা দ্বীপের কাছে এসে একটি জন্তুর দেখা পেল। তাকে জিজ্ঞাসা করল: কে তুই? সে বলল: আমি পাহারাদার। সামনে ওই ঘরটার দিকে যান। সেখানে একজন লোক আছেন। তিনি আপনাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য নেয়ার জন্য খুবই আগ্রহী। আমরা মনে করলাম হয়ত সে কোন শয়তান হবে। আমরা সেখানে গিয়ে বিশালদেহী একজন মানুষকে দেখলাম। এ রকম মানুষ কখনো আমরা দেখিনি। তার হাতগুলো ঘাড়ের সাথে বাঁধা। সে তাদেরকে বায়সান খেজুর বাগান, জুগার কুপ ও উম্মী নবী (মুহাম্মদ সা.) সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করল। তারপর, সে নিজের পরিচয় দিল। বলল: আমি দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি সারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াব মক্কা ও তাইবা ব্যতিত। রাসুল (সাঃ) বললেন: শুনে রাখ! এটাই (মদীনা) তাইবা। এখানে সে প্রবেশ করতে পারবে না। (মুসলিম, আবু দাউদ) মহা-দুর্ভিক্ষের কালে দাজ্জাল খাদ্যদ্রব্য নিয়ে এসে বলবে, “আমি হচ্ছি সমগ্র জগতের পালনকর্তা। হে লোকসকল! তোমরা আমার প্রতি ঈমান আন! আমি তোমাদের খাদ্য দেব, পানীয় দেব, সম্পদ দেব, যা চাও- সব দেব”। নবী করীম সা. বলেছেন- “স্মরণ রেখো! দাজ্জাল কিন্তু একচোখে কানা হবে। আর তোমাদের প্রকৃত পালনকর্তা কানা নন!!” (বুখারী)এক কথায় দাজ্জাল খাট, বিশাল দেহ, বিশাল মাথা, উভয় চোখে ত্রুটিযুক্ত, ডান চোখটি ভাসমান আঙ্গুর সদৃশ (কানা), বাম চোখে চামড়া, ঘন কুকড়ো ও অগোছালো চুল, সাদা চামড়ার দেহ, দুই নলার মধ্যবর্তী স্থানে যথেষ্ট ফাক এবং দুই চোখের মাঝে ك ف ر (কাফের) লেখা বিশিষ্ট হবে।দাজ্জাল পৃথিবীতে কয়দিন অবস্থান করবে? প্রশ্নের উত্তরে নবী করীম সা. বলেছেন- চল্লিশদিন। প্রথম দিন এক বৎসর, দ্বিতীয় দিন এক মাস, তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের ন্যায় হবে। নবী করীম সা. বলেন- “প্রাচ্যের দিক থেকে দাজ্জাল মদীনায় আগ্রাসণের উদ্দেশ্যে আগমন করবে। উহুর পর্বতের পেছনে অবতরণ করা মাত্রই ফেরেশতারা তার চেহারাকে শামের দিকে ঘুরিয়ে দেবেন। সেখানেই তার বিনাশ ঘটবে।-” (মুসলিম)“ঈসা বিন মারিয়াম দাজ্জালকে লুদ শহরের প্রধান ফটকের কাছে হত্যা করবেন।-” (তিরমিযী)হাদিসের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, শেষ জমানার সকল যুদ্ধ-ই তীর তলোয়ার এবং অশ্বের মাধ্যমে সংঘটিত হবে।দাজ্জাল আসার আগে পৃথিবীতে ইহুদী এবং খ্রিষ্টান যুদ্ধ হবে। যুদ্ধে ইহুদীরা অনেক খ্রিষ্টান মেরে ফেলবে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইহুদীদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সাপোর্ট দিবে খ্রিষ্টানরা।দাজ্জাল যখন বের হবে তখন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম যমীনে তাশরীফ আনবেন। যখন ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম নামাযে দাড়াবেন, ইকামত চলতে থাকবে এমন সময় উনি ছাদে নামবেন। পরে সিড়ি দিয়ে উনাকে নিচে নামানো হবে এবং ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাকে বলবেন প্রথম ওয়াক্ত আমি আপনার পেছনে নামায আদায় করব এরপর থেকে আমি নামায পড়াব। আল্লাহর রসুল বলেছেন- আদমের সৃষ্টি থেকে কেয়ামত পর্যন্ত এমন কোন বিষয় বা ঘটনা হবে না, যা দাজ্জালের চেয়ে গুরুতর ও সংকটজনক (হাদীস- এমরান বিন হোসায়েন (রাঃ) থেকে মোসলেম)। তিনি এ কথাও বলেছেন যে- নুহ (আঃ) থেকে নিয়ে কোন নবীই বাদ যান নি যিনি তাঁর উম্মাহকে দাজ্জাল (Dajjal) সম্বন্ধে সতর্ক করেন নি (হাদীস- আবু ওবায়দা বিন যার্‌রাহ (রাঃ) ও আব্দুলাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে আবু দাউদ, বোখারী, মোসলেম ও তিরমিযি)। শুধু তাই নয়, আল্লাহর নবী নিজে দাজ্জালের সংকট (ফেত্‌না) থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন (হাদীস- আয়শা (রাঃ) থেকে বোখারী)।দাজ্জাল (Dajjal) শব্দের অর্থ চাকচিক্যময় প্রতারক, যেটা বাইরে থেকে দেখতে খুব সুন্দর কিন্তু ভেতরে কুৎসিত। যেমন মাকাল ফল, দেখতে অতি সুন্দর, মনে হবে খেতেও অতি সুস্বাদু, কিন্তু আসলে খেতে বিস্বাদ, তিক্ত। সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৩",False rg,"উদ্ভট উটের পিঠে চলছে ডিজিটাল বাংলা একাডেমি_ দেখার কেউ নেই!!! আপনি কি কখনো বাঙালি জাতির মননের প্রতীক 'বাংলা একাডেমি'র ওয়েব সাইট ভিজিট করেছেন? যদি না করেন, সময় করে একবার ভিজিট করে আসুন, প্লিজ। আপনি যদি বাঙালি হন, আপনার নাগরিকত্ব যদি বাংলাদেশী হয়, আপনার জাতির মননের প্রতীককে একবার অন্তঃত ডিজিটাল যুগে দেখে নিন। ১৯৫৩ সালের ৩রা ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। চলতি বছর ৩রা ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি ৬০ বছরে পদার্পণ করবে। অথচ দীর্ঘ ৬০ বছরে জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতীক এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি খুড়িয়ে চলার অভ্যাস একদমই ত্যাগ করেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪২ বছর আগে। সেই হিসেবে দেশের সবচেয়ে সেরা প্রতিষ্ঠান হবার কথা ছিল বাংলা একাডেমি'র। অখচ সরকার দলীয় লেজুর বৃত্তির বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমি কোনোই নজির স্থাপন করতে পারেনি। ঠুটো জগন্নাথের মতো খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে দেশের জাতির মননের প্রতীক দাবিদার বাংলা একাডেমি। বাংলা একাডেমি'র ওয়েব সাইটে ঢু মারলে প্রথমেই নজরে আসে একাডেমি বানান নিয়ে বিভ্রান্তি। কোথাও 'ই-কার' কোথাও 'ঈ-কার'। আসলে আমরা কোনটা লিখব, সেই ব্যাখ্যাও কোথাও নেই। অসংখ্য বানান ভুলে জর্জরিত বাংলা একাডেমি'র অফিসিয়াল ওয়েব সাইট। এর দায় কার? অথচ বাংলা একাডেমিতে একজন মহাপরিচালক কর্মরত আছেন। এগারো সদস্যের একটি কার্যর্নির্বাহী পর্ষদ আছে। অনেকগুলো বিভাগ আছে। প্রস্তাবিত বাংলা একাডেমি আইন, ২০১১-এর (খসড়া) ধারা ১১:-এর একাডেমির কার্যাবলি অংশে প্রথমেই বলা হয়েছে 'একাডেমি বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও প্রমিতকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য রোধ করা'। কিন্তু খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে, বাংলা একাডেমি'র বানান বিভ্রাট, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য কে রোধ করবে? আমি গ্যারান্টি দিয়েই বলতে চাই, বাংলা একাডেমি'র ওয়েব সাইটে এখন পর্যন্ত প্রদর্শিত যে সকল বিষয় রয়েছে, সেগুলো'র বানান বিভ্রাট, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য দূর করার জন্য মাত্র কয়েক ঘণ্টা প্রয়োজন। অথচ, দায়িত্ব নিয়ে সেই কাজটি কেউ করছেন না। আমি বাংলা একাডেমি'র মাননীয় মহাপরিচালক জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, প্লিজ, দয়া করে বাংলা একাডেমি'র ওয়েব সাইটে বর্ণিত বানান বিভ্রাট, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য প্রতিরোধে কার্যকর কিছু একটা করুন। বাংলা একাডেমি'র ওয়েব সাইটের দৈন্যতার কথা কি বলবো! বাংলা একাডেমি'র প্রাক্তন সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী মারা গেছেন ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ সালে। এরপর ডক্টর আনিসুজ্জামান হন বাংলা একাডেমি'র সভাপতি। অথচ ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বরের পরে সেই নামটি পর্যন্ত সভাপতি'র জায়গায় আপডেট করা হয়নি। এটা করতে এক মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। বাংলা একাডেমিতে এতো বিজ্ঞ লোকজন আছেন, অথচ কেউ এটা করার জন্য তাগিদ অনুভব করেননি। সবাই বাংলা একাডেমিতে চাকরি করছেন। প্রাণ দিয়ে কাজটা কেউ করছেন না। বাংলা একাডেমি'র প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো পাতায় গেলে দেখা যায় মোট বারো বার 'প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো' কথাটি সেখানে খোদানো আছে। আহারে বাংলা একাডেমি'র প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো!! বিভিন্ন কার্যক্রম পাতায় অনেক খবরাখবর আছে। সেগুলো বাস্তবে কতোটা কাজ করছে তা স্বয়ং খোদা মালুম। পত্রিকাগুচ্ছ পাতায় বাংলা একাডেমি'র পত্রিকাগুলো'র নাম আছে। কিন্তু আপনি যদি কোনো পত্রিকা পড়তে চান, তাহলে হয়তো আপনাকে হার্ডকপি সংগ্রহ করতে হবে। প্রকাশনা পাতায় কি বলা হয়েছে তা মোটেও সুস্পষ্ট নয়। কোথাও অনুজ্ঞাবাচক, কোথাও করা হচ্ছে, কোথাও করা হয় ইত্যাদি ব্যাপার স্যাপার চোখে পড়ে। বাংলা একাডেমীর গ্রন্থাগার পাতায় বইয়ের একটি তালিকা সংযোজন করা থাকলে এবং সেটি আপডেট থাকলে ভালো হত। জাদুঘরসমূহ পাতায় কিছুই প্রদর্শিত হয় না। কিসের জাদুঘর ব্যাপারটা রহস্য হয়েই থাকলো। বাংলা একাডেমির বিভিন্ন প্রকল্প পাতায় অনেক ফিরিস্থি রয়েছে। আমি ছোট একটা বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই। বাংলা একাডেমি'র ভাষ্য মতে, 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থানুকূল্যে, জুলাই ’৯৫ থেকে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে একজন প্রকল্প পরিচালকের মাধ্যমে এই প্রকল্পের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। জুলাই ’৯৫ থেকে জুন ’৯৭ পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের দু’টি অর্থবছরে মোট ১৬০ জন (প্রতি ব্যাচে ৪০ জন ৬ মাস মেয়াদী) তরুণ লেখককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রথম পর্যায়ের ৪টি ব্যাচের প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ছিল মোট ১৩৯টি। গ্রন্থগুলোর মধ্যে কাব্যগ্রন্থ ৫০টি, ছড়া ১১টি, ছোটগল্প ২৩টি, উপন্যাস ২২টি, নাটক ১২টি এবং প্রবন্ধগ্রন্থ ২১টি। তরুণ লেখক প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয় জুলাই ’৯৭ থেকে। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রথম ব্যাচে ৪০ জন তরুণ লেখককে এই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।' কিন্তু এই দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রথম ব্যাচের ৪০ জন তরুণ লেখকের কোনো বই কি প্রকাশিত হয়েছে? যদি হয়ে থাকে, তার আপডেট কি? যদি না হয়ে থাকে, কেন তা হয়নি? তার ব্যাখ্যা কি? বাংলা একাডেমির বার্ষিক অনুষ্ঠানমালা পাতায় অনেক বাহারি চমক আছে! সেই চমকের সঙ্গে অর্থ খরচের একটি যোগসূত্রও আছে বৈকি। কিন্তু বানান বিভ্রাটের কারণে সকল অনুষ্ঠানের মাজেজা উদ্ধার করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। স্বরণীয় কয়েকটি অনুষ্ঠান নামে একটি পাতা আছে। সেখানে মাশাল্লা সবকিছুই ভারী স্বরণীয় বলে কিছুই দেখার উপায় নেই। কারণ, পাতাটি ফাঁকা এবং স্বরণীয় বটে। সাহিত্য পুরস্কার পাতায় ২০১১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্তদের একটি তালিকা অবশ্য আছে। কিন্তু থাকা উচিত ছিল ১৯৬০ সাল থেকে ২০১৩ (বর্তমান) পর্যন্ত সবার নাম। অন্যরা কি দোষ করলো? তার মানে ২০১১ সালের পর আর বাংলা একাডেমি'র ওয়েব সাইটে একাডেমি'র কেউ কোনো কাজ করেননি এটাই প্রমাণ করে কিনা? অন্যান্য পুরস্কার পাতায় ২০১০ এবং ২০১১ সালের কয়েকটি পুরস্কারের খবর আছে বটে। ওই পুরস্কারগুলো কি এখন আর দেওয়া হয় না? যদি দেওয়া হয়, তার আপডেট কিভাবে জানা যাবে? বাংলা একাডেমিতে গিয়ে জানতে হবে? কার কাছে জানতে হবে? ফেলোগণ পাতায় সম্মানসূচক ফেলোশিপপ্রাপ্ত সুধীদের একটি তালিকা আছে। সেখানে ১০৭ জন সম্মানিত ফেলোদের নামের তালিকা আছে। আর ১৯৬০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক (ফেলো)দের একটি তালিকা আছে। ২০১০ সালের পর কি বাংলা একাডেমি থেকে কেউ ফেলো পাননি? যদি পেয়ে থাকেন, তাদের নাম সেখানে আসল না কেন? যতোদূর জানি, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকরা অটোমেটিক এই সম্মানিত ফেলো'র সদস্য বনে যান। তো, ২০১০ সালের পর ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালে অনেককে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে তাঁদের নামও সেখানে আসার কথা। অবশ্য মৃত ব্যক্তিরা আবার নাকি সম্মানিত ফেলো হতে পারেন না, এমন একটা আইনি জটিলতা আছে প্রস্তাবিত বাংলা একাডেমি আইন ২০১১-তে। বিষয়টা আসলে সত্যিই গোড়ায় গলদের মতো অবস্থা! জীবনসদস্য ও সদস্য পাতাটি রহস্যপূর্ণ ফাঁকা!! প্রস্তাবিত বাংলা একাডেমি আইন, ২০১১-এর খসড়া পাতার কথা আর কি বলবো? বানান বিভ্রাটের কারণে গোটা জিনিস পড়াই দায় বটে। তবে প্রস্তাবিত আইনের অনেক বিষয় নিয়ে নানান বিতর্ক চারদিকে শুনতে পাচ্ছি। ধারা ৩৭' নিয়ে এর আগে কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদের একটি লেখায় বলেছিলাম। পুরো আইনটি পড়লে কারোরই বুঝতে অসুবিধা হবে না যে, আমাদের দেশ থেকে ব্রিটিশরা চলে গেলেও ব্রিটিশ ভূত যায়নি। ফরম্যাটের কোনো বদল হয়নি। নতুন চিন্তা করারও যেনো কেউ নেই। অসহায় জাতি মরিছে কাঁদিয়া হাঁকিয়া ভবিষ্যৎ!! আইনের লোক না হয়েও যাতে বাংলা একাডেমি'র নতুন আইন সবাই বুঝতে পারে, এটাকে সেভাবে করা খুব জরুরী। আর মাথা থেকে ব্রিটিশ ফরম্যাটটা সবার আগেই ছেটে দিতে হবে। নইলে কাগুজে আইন কাগজেই থাকবে। মাঝখান থেকে কিছু লোক সরল বিশ্বাসে যা যা অপকর্ম করার তা করতেই থাকবে। বিজ্ঞাপন পাতাটি এখনো রহস্যজনকভাবে ফাঁকা। হয়তো বাংলা একাডেমি খরচ বাঁচাতে কোনো বিজ্ঞাপন ঝামেলায় যাচ্ছে না। কিন্তু একটু মাথা খাটালে ওই পাতা থেকে ইনকাম করাও যায়। যদি অন্যদের বিজ্ঞাপন না দিতে চায়, তো নিজেদের টা তো দেবেন, নাকি? নইলে ওই পাতার দরকার কেনো? সেটা কি? কোনো হদিস নেই কেন? যোগাযোগ পাতায় বাংলা একাডেমি'র কর্মকর্তাদের নাম ও টেলিফোন নম্বর দেওয়া আছে। কিন্তু অনেকের নামের বানান চোখে পড়ার মতো ভুলে ভরা। নিজেরা কাজকাম না করেন, নিজেদের নামের বানানটা অন্তঃত ঠিক করেন। নইলে আমরা যদি ওই ভুল বানানের নামে চিঠিপত্র, নিমন্ত্রণপত্র লিখতে শুরু করি, তখন কেমন হবে! বাংলা একাডেমি'র বয়স ৬০ হতে চললেও প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি এখনো কিশোর পর্যায়ে রয়ে গেছে। অথচ বাংলাদেশে বাংলা একাডেমি'র হওয়া উচিত ছিল এক নাম্বার প্রতিষ্ঠান। যারা এখানে কাজ করেন, তারা সবাই গায়ে বাতাস লাগিয়ে বেড়ান। মাস শেষে বেতন নেন। আহা কি মজা। যদি বাংলা একাডেমি'র ওয়েব অ্যাড্রেস রাখতে হয়, তাহলে সেটাকে যথাযথভাবে নিয়ম পালন করেই চলতে হবে। নিয়মের বাইরে কেউ নন। মাননীয় মহাপরিচালকের কাছে আমার বিনীত নিবেদন, দয়া করে বাংলা একাডেমি'র ডিজিটাল পার্ট নিয়ে গঠনমূলক কিছু করেন। নইলে ডিজিটাল জিনিসটা ডিলিট করে দেন। এটা দেখলে জাতির মননের প্রতীক হিসেবে ঠিক মেনে নিতে যে কারোর কষ্ট হবে। উদ্ভট উটের পিঠে চলছে ডিজিটাল বাংলা একাডেমি। সো, সাধু সাবধান।। সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৬",False rg,"ওরে আমার থিংক ট্যাংক!!! সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ সংক্ষেপে যা সিপিডি। এটি আসলে বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থায় একটি চতুর টাইপের এনজিও। কিন্তু তারা নিজেদেরকে দেশের সিভিল সোসাইটির থিংক ট্যাংক মনে করেন। বছরের বিভিন্ন সময়ে তারা সরকারকে কিছু পরামর্শ দেবার চেষ্টা করেন। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কিছু ভুল ধরার চেষ্টা করেন। দেশ বিদেশের অর্থনীতির গতি প্রকৃতি নিয়ে নানা সময়ে গুরুগম্ভীর আলোচনাও করেন। বর্তমান সরকারের পঞ্চম অর্থ বছরের বাজেটের তিনমাস পরের ও নির্বাচনের তিনমাস আগে দেশের বর্তমান অর্থনীতি নিয়ে গতকাল সিপিডি একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি'র সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও সিপিডি'র নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সিপিডি ঘটা করে সংবাদ সম্মেলনে যা যা বলতে চাইলেন, তার সংক্ষিপ্ত চিত্রটা এরকম। দেশের নির্বাচনী বছরে প্রবৃদ্ধি কমে যায়। যেমন ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ হলেও ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে তা ছিল ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। কারণ, ১৯৯৬ সাল ছিল নির্বাচনী বছর। আর সেই বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম ছিল ০.৩০ শতাংশ। একইভাবে ২০০০-০১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ২০ শতাংশ, যা ২০০১-০২ অর্থবছরে হয়েছিল ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। কারণ, ২০০১ ছিল নির্বাচনী বছর। সে বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম ছিল ০.৮০ শতাংশ। আর ২০০৭-০৮ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশ, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে গিয়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৭০ শতাংশে। কারণ, ২০০৮ ছিল নির্বাচনী বছর। সে বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম ছিল ০.৩০ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৪ সাল যেহেতু নির্বাচনী বছর। তাই ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, নির্বাচনী বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে না এবং তা ৬ শতাংশেরও কম হবে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, মূলত গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এসে অর্থনীতির গতি এতটাই মন্থর হয়ে পড়েছে, যা চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও প্রতিফলিত হচ্ছে। এর ফলে যেসব পূর্বানুমানের ওপর ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট এবং ৭ দশমিক ২০ শতাংশ হারে যে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেসব পূর্বানুমান এখন অবান্তর হয়ে পড়ছে। ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, নির্বাচনের বছরে আগের চেয়ে বেশি হারে কর আদায় হবে বলে মনে হয় না। বিগত তিনটি নির্বাচনী বছরের সঙ্গে আগের বছরের কর আদায় কিছুটা কম হওয়ার তুলনা দেখিয়েছেন তিনি। তিনি দাবী করেছেন, চলতি অর্থবছর আগের বছরের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও, গত বছরের সংশোধিত বাজেটের ভিত্তিতে তা দাঁড়ায় ৩০ শতাংশ, যা অভূতপূর্ব। কিন্তু প্রথম দুই মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ। এছাড়া নির্বাচনের বছরে রাজস্ব ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ কমে যাওয়ার আগের বছরের তথ্য-উপাত্তও তুলে ধরেন তিনি। ডক্টর দেবপ্রিয় বলেন, গত অর্থবছরও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের ঘাটতি অনেকটা মিটিয়েছিল সরকারি বিনিয়োগ। কিন্তু এবার আর তা হবে না। তিনি দাবী করেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর একটি যৌথ স্বার্থ আছে। আর আছে কিছু অভিন্ন স্বার্থ। কাজেই এই জায়গায় সমঝোতা করার সুযোগ আছে। এমন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন না হয় যাতে মানুষের জীবন-জীবিকা বিঘ্নিত হয়, সম্পত্তি বিনষ্ট হয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। সেজন্য অর্থনীতির জন্য একটি রক্ষাকবচ তৈরি করতে হবে, যা হতে হবে রাজনীতির ঊর্ধ্বে। সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নের জবাবে সিপিডি'র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সম্প্রতি সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ছে। কিন্তু আসলে কতোটা যন্ত্রপাতি দেশে আসছে আর কতোটা ওভার ইনভেয়সিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। বিশেষত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করে ব্যবহার বিষয়টি উৎপাদনে এখনো সেভাবে প্রতিফলিত হয়নি। প্রায় সব মূলধনী যন্ত্রপাতি'র আমদানির শুল্কহার শূন্য। কাজেই শুল্ক আদায়ের তথ্য-উপাত্ত থেকেও প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে না। প্রতিবছর গড়ে ১৫০ কোটি ডলার দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে যায়। গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি'র এই তথ্য উদ্বৃত্ত করে প্রফেসর মোস্তাফিজ বলেন, বিগত সময়ে নির্বাচনের বছরকে সামনে রেখে টাকা পাচার বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। সংবাদ সম্মেলনে ডক্টর দেবপ্রিয় দাবী করেছেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এর আগেও রাজনীতিকরা ঐকমত্য দেখিয়েছেন। বাটেক্সপোতে সরকারি ও বিরোধীদল উভয় পক্ষের নেতারাই আসেন। এটাকে আরো সম্প্রসারণ করা উচিত। এবার আসা যাক, দেশের দুইজন অর্থনীতি'র পণ্ডিত আমাদের কি কি খবর দিলেন সেই আলোচনায়। সারা বছর একটি দেশের প্রধান বিরোধীদল সংসদে যায় না। সদস্যপদ রক্ষার জন্য মাঝে মাঝে যায়। বাকি সময় নানান ঢঙের কথাবার্তা বলে হরতাল, ধর্মঘট, সভা-মিছিল-বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও মানুষ হত্যা সহ নানা ধরনের অপরাধ করে বেড়ায়। সিভিল সোসাইটি'র থিংক ট্যাংকের নজরে সেই অপরাধে সংঘটিত দেশের অর্থনীতিতে কতোটা ক্ষতি হয়, কিংম্বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি'র কত রকম বারোটা বাজে, সেই হিসেব নেই। কিন্তু তারা দেশের মস্তবড় থিংক ট্যাংক। বাংলাদেশের মত একটি গরিব দেশের রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নের মহড়ার হিড়িকের মধ্যে নির্বাচনী বছরে সুযোগসন্ধানী দুবৃত্তরা যে বিদেশে অর্থ পাচার করে, বউ ছেলেমেয়ে পাচার করে, নিরাপদ থাকার একটা সেইফ গার্ড গড়ে তোলে, সেটা বোঝার জন্য মস্তবড় অর্থনীতিবিদ হওয়া লাগে না। শহরের মোড়ের একজন ফলবিক্রেতাও সেই খবর জানে। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে যে ১৫০ কোটি ডলার পাচারের সংবাদ সম্মেলন করে জানানোর মহড়া, সেটি স্রেফ এক ধরনের মিডিয়াবাজী। আরে ১৫০ কোটি ডলার পাচার করা তো মাত্র কয়েকজনের জন্য মামুলি ব্যাপার। কত হাজার কোটি ডলার পাচার হচ্ছে, সিপিডি'র মত মস্তবড় থিংক ট্যাংকের কাছে সেই খবরটি নেই। মানি লন্ডারিং করে কত হাজার কোটি ডলার পাচার করা হচ্ছে সেই খবরও তাদের কাছে নেই। তাদের কাছে খবর হল, মেশিনারিজ কতোটা উৎপাদনে ব্যবহৃত হল কিনা সেই চিন্তায় প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমানের ঘুম হারাম। আহারে আমাদের অর্থনীতিবিদগণ!! বছরে একবার সরকারী আর বিরোধীদলের দুই প্রধান বাটেক্সপো সম্মেলনে হাজিরা দিলেই দেশের অর্থনীতিতে রাজনীতিবিদের ঐক্য বোঝা যায়? কতো বড় গাড়ল হলে এমন অর্থনীতি বুঝতে পারেন ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মহাশয়। আর সারা বছরে প্রধান দুই দলের পারস্পরিক সংঘর্ষ, কলহ, হামলা, মামলা, খুন, গুম ইত্যাদিতে দেশের অর্থনীতি'র কোথায় তারা ঐক্য দেখান? সেই সব বিদ্যমান সাংঘর্ষিক ব্যবস্থায় দেশের অর্থনীতি'র তারা যে ক্ষতি করেন, তার হিসেব কি ভট্টাচার্য মহাশয়ের মাথায় আসে না? সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ, সুধী সমাজ ইত্যাদি'র নাম করে আপনারা দেশের যে পরিমাণ কর ফাঁকি দেন, সেই করফাঁকি জনিত কারণে অর্থনীতি'র কতোটা জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমলো, সেই হিসেব আপনাদের কাছে নেই কেন? বিদেশে বিভিন্ন সভা সেমিনার সেম্পুজিয়াম গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবার নাম করে আপনারা বিদেশে যে অর্থ পাচার করেন, সেই অর্থের পাচার জনিত কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি'র কতোটা ক্ষতি হল, সেই হিসেব আপনাদের থিংক ট্যাংক কখনো দেখায় না কেন? নির্বাচনী বছরে সংঘাত, সহিংসতা থাকলেও ভোটের হিসেবের সঙ্গে নানা কারণে টাকা ওড়ে, যা অর্থনীতিকে অনেকটা ঈশ্বরের হাতের মত সচল রাখে। এটা বোঝার জন্য অর্থনীতিতে বড় বড় ডিগ্রি নেবার দরকার হয় না। একজন রিক্সাচালকও জানে, ভোটের আগের কয়দিন রিক্সায় খ্যাপ মারলে ইনকাম কত? আর নির্বাচনী প্রচারে গেলে ইনকাম কত? আর আপনারা জানেন না? হায়রে থিংক ট্যাংক!!! আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সেজন্য আপনারা সংঘাতমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছেন। আহারে আমার দেশপ্রেম? দেশের মানুষ যারা তিন বেলা ভাত পায় না, সুচিকিৎসা পায় না, বসবাসের জন্য ঘরের ছাউনি নেই, ডাক্তার দেখানোর টাকা নেই, পোষাক কেনার অর্থ নেই, চাল-চুলো কিচ্ছু নেই, নদী ভাঙনে অনেকে নগরের বস্তিবাসী, তাদের আপনারা ভাবমূর্তি দেখাচ্ছেন? আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি খায়, নাকি মাথায় লয় মিস্টার ভট্টাচার্য? সুশীল সমাজের নামে, নাগরিক সমাজের নামে, সুধী সমাজের নামে এক শ্রেণী'র এনজিও নানা ব্যানারে বাংলাদেশে এতো বেশি বেড়েছে যে, এরা কথায় কথায় জাতিকে বিনা পয়সায় নানা ধরনের পরামর্শ বণ্টন করেন। যা দিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষের পেট ভরে না। অসহায় রোগীদের চিকিৎসা হয় না। বস্তিবাসীদের নির্মল অক্সিজেন নেবার সুযোগ হয় না। এসব বুলি দেওয়ার পেছনে আরেকটি রহস্যময় ভাগ বাটোয়ারার রাজনীতি আছে। সেই ভাগাভাগি কিছু দিন বন্ধ থাকলেই এই সব সুশীল, নাগরিক, সুধী মিডিয়ার সামনে কিছু কথার ঝুড়ি নিয়ে হাজির হন। এদের পেছনের চকচকা শার্টের খবর, এদের শহরের বাড়ির বিশাল উঠোনের খবর, এদের গাড়ির মডেলের খবর, এদের চিকিৎসা'র খবর কেবল দেশবাসী জানতে পারে না। এদের আড়ালের অনেক অনেক খবরও আমরা জানি না। আমরা কেবল এদের মিডিয়াবাজীতে কিছু কথার ঝুড়ি শুনি। যা দিয়ে আমাদের সত্যি সত্যিই পেট ভরে না। সিভিল সোসাইটি'র থিংক ট্যাংকের নামে এরা দেশের কি কি সম্পদ কিভাবে দখল করে আছে, সেই হিসেব নেবার সময় এসেছে। সো, সাধু সাবধান। থিংক ট্যাংক... নাকি গুজব ট্যাংক!!! সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৯",False rg,"সুরের কন্যা রুপশী রুপশ্রী।। রেজা ঘটক সুরের কন্যা রুপশী রুপশ্রী।। রেজা ঘটকসেদিন ছিল ২রা এপ্রিল ২০১০ শুক্রবার। ছুটির দিন। চৈত্রের তাপদাহ ভ্যাবসা গরমে ঢাকার সড়কগুলো কিছুটা যেনবা ফাঁকা ফাঁকা। লোকজন তবে কি আজ বাইরে বের হতে চাচ্ছে না? এমনিতে লোডসেডিংয়ের তাণ্ডবে সবাই ভারী অতিষ্ট। তবু ঘরে বসে থাকাটা কেমন যেন বিরক্তিকর। আলস্য ভেঙে এক সময় সিদ্ধান্ত নিলাম বাইরে যাওয়া যাক। পকেটের অবস্থা যদিওবা তথৈবচ। তবু বন্ধু মিজানকে বললাম গুলশানে একটা সঙ্গীত সন্ধ্যায় গেলে কেমন হয়! মিজান জানতে চাইল কে গান করবে? জবাবে বললাম শিল্পী আমার কাছেও নতুন। আমাদের হাতে আছে ৫০ মিনিট। আগে বলো আমরা মগবাজার থেকে ৫০ মিনিটে গুলশান-১ এ পৌঁছাতে পারব কিনা? মিজান বলল আজকে রাস্তাঘাটের যে অবস্থা আমরা একটা রিক্স নিলে পারতেও পারি। আমি শীতল কণ্ঠে বলি রিক্সটা নিলে কেমন হয়? মিজান হ্যা সূচক সায় দেয়। আমরা গাবতলা পালাকারের রিহার্সেল রুম থেকে ঝটপট বেরিয়ে পড়ি। তার আগে একবার চা আর সিখারেট খেয়ে আরেকবার সময় নিয়ে কঠিন হিসাব নিকাশ করি। কারণ সঙ্গীত অনুষ্ঠানে এক মিনিট লেট হলে নাকী আর প্রবেশ করা যাবে না বলে বন্ধু বাবলীর হুঁশিয়ারীটা বারবার পেন্ডুলামের মতো মাথায় চক্কর মারতে থাকে। আমরা ঠিক করলাম যদি গান শোনা না যায় তাহলে বেশি অর্থ খরচের কোনো মানে হয় না। ঝটপট মগবাজার চৌরাস্তা থেকে বলাকায় উঠে পড়ি। মহাখালী নেমে আবার বাস অথবা রিক্সা নেবার ইচ্ছে। কী আশ্চার্য মহাখালী পৌঁছালাম মাত্র ১৫ মিনিটে। ঘড়ির কাঁটায় ৭:১০টা। মিজান বলল আমরা বাসে গেলে লাগবে ১০ মিনিট। আর রিক্সায় গেলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। আমরা রিক্সাই পছন্দ করলাম। তাহলে বড়লোক পাড়ায় অন্তত কিছুটা হাওয়া খাওয়া যাবে ফ্রি ফ্রি। রিক্সায় উঠেই সময়টা আরেকটু বাঁচাতে বাবলীকে ফোন দিলাম। আমরা এখন মহাখালী। কোন পথে আসলে দ্রুত আসা যাবে বলো। বাবলীর কণ্ঠের অবস্থা আজ কিছুটা উন্নতির দিকে। ২৬শে মার্চ থেকে বাবলীর কণ্ঠের বারোটা বেজে আছে। যাক বেচারা হয়তো আমার টিপস ফলো করেছে। টিপস হিসেবে বলেছিলাম- তোমার প্রোগ্রামের আগে কারো সাথে কথা বলবে না। হাতে কাগজ কলম নিয়ে লিখে লিখে কথা বলো। আর লবণ দিয়ে কুসুম গরম জল খাও। আর প্রতি ঘণ্টায় গলার মধ্যে একটা লবঙ্গ চালান করতে ভুলো না যেন। বাবলী শর্টকার্ট পথের দিকনির্দেশ দিল। আমরা ঠিক ৭:২৫টায় বসতি ড্রিমের নীচে পৌঁছালাম। হাতে এখনো ৫ মিনিট। আরেক পশলা চা আর সিখারেট না হলে আর জমে না। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সন্ধ্যা ৭:৩০ টা। আমরা লিফট থেকে কয়েক সিড়ি নীচে নেমেই বাবলীর সাউন্ড অব মিউজিক পেয়ে গেলাম। দরজা ঠেলে উঁকি দিতেই বাবলীর চাঁদমুখখানা হাসিতে চকচক করে উঠল। ঘর ভরতি মানুষ। কোথায় বসি আমরা? বসার আগে আমাকে ওজন কমাতে হবে। বাবলীকে বাম হাতের কনে আঙুল দেখালে ও বুঝতে পারল আমার কী চাই। গাদাগাদি করে বসলাম একেবারে শিল্পী থেকে মাত্র তিন হাত দূরে। শিল্পী ডক্টর নুসরাত মমতাজ রুপশী। ভায়োলিন হাতে আসন গ্রহণ করলেন। বাকশ থেকে ভায়োলিন বের করলেন। খুব মন দিয়ে টিউন করলেন। চারদিকে এক নজর তাকালেন। তারপর মুখ খুললেন। আমি ছয় বছর ভায়োলিন বাজাই। ভায়োলিনে ডক্টরেট করেছি। কিন্তু আমি মনে করি এখনো আমি ছাত্র। ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতেই আমি স্বাচ্ছন্দবোধ করি। এখানে আমার টিচারও উপস্থিত আছেন। আমি একটা চেস্টা চালাব। আজ আমি রাগ বাজাব। আমি সাধারনত রাগ-রাত্রি দিয়ে শুরু করি। আর শেষ করি রাগ-ভৈরবী দিয়ে। আপনারা কেউ বুঝতে না পারলে বুঝব আমার চেস্টা ব্যর্থ হয়েছে। আর যদি আপনাদের মধ্যে টু পারসেন্টও বুঝে থাকেন আমি কী বাজালাম, তাহলে বুঝব ওরা যেহেতু বুঝেছে। তার মানে আমার বোঝানোর ক্ষমতা ওইটুকু। তো শুরু করি। আমি যে রাগটা দিয়ে শুরু করব- ওটায় আপনাদের মন খারাপ হতে পারে। মনে হতে পারে মনের সব দুঃখবোধ বুঝি উজানের মতো আপনাকে তাড়া করেছে। এমনকি আপনাদের কান্নাও পেতে পারে। আবার ভালো লাগাও তৈরি হতে পারে। আর কথা নয়। এবার শুরু করি। এরপর রুপশী তাঁর সহশিল্পী হিসেবে তবলায় আর ড্রামে যাঁরা আছেন তাঁদের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন। রুপশী বাজানো শুরু করেন।সত্যি কথা বলতে কী আমি গানের একজন কঠিন সমঝদার হলেও ওইদিন প্রথম কোনো ভায়োলিন প্রোগ্রামে যাওয়া। অন্যান্য যন্ত্র সঙ্গীত আমার অনেক শোনা হয়েছে। সেসব অনুষ্ঠানে ভায়োলিন হয়তো বেজেছে। কিন্তু সরাসরি ভায়োলিন লিড করছে সেরকম প্রোগ্রাম এটাই প্রথম। সেজন্য বন্ধু বাবলী যার আসল নাম ফৌজিয়া জেড চৌধুরী, সাউন্ড অব মিউজিক ইস্কুলের যিনি প্রিন্সিপাল তাঁকে একটা মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম। রুপশী ভায়োলিন বাজাচ্ছে। আমরা ঘর ভরতি প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রোতা পিন পতন নিরাবতায় তা উপভোগ করছি। আমার মনে হচ্ছে আমি তখন নরওয়ের রাজধানী অসলোর কোনো নির্জন রাস্তা ধরে একাকী হাঁটছি। দুপাশে সারি সারি কমলা, বাতাবি আর আপেল গাছ। সময়টা হয়তো গ্রিস্মেও কোনো অপরান্থ। ঝাঁকে ঝাঁকে তারার মতো ঝুলে থাকা কমলা বাতাবি আর আপেল ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমি কোনো হেমিলিনের বাঁশীওয়ালার পিছু নিয়েছি। যতোই হাঁটছি ততোই ভালো লাগছে। বাঁশীওয়ালা সম্ভবত আমাকে যাদু করেছে। কী আশ্চার্য আমি যতোই তার কাছাকাছি যাচ্ছি বাঁশীওয়ালা ততোই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছেন। এক সময় আমি আপেল বনে পথ হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু কানে বাজছে বাঁশিওয়ালার সেই মন ভোলানো যাদুকরী সুর। আর সেই সুরে যেনবা বাজছে- পথ হারালে খোকা আমায় পাবে না। কিন্তু আমি পথ ভুলে গেছি। চিনচিন একটা বেদনাবোধ ভিতরে ভিতরে আমাকে কী একটু একটু কাবু করে ফেলেছে? নাকী গহীন আপেল জঙ্গলে বিদেশ বিভুঁই আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ়! নাকী আমি তখন বাসন্তী মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে আপেল বনে খুঁজে ফিরছি হেমিলিনের বাঁশীওয়ালাকে! একটু পরেই সূর্য ডুবে যাবে। আর একা আমি ছোট্ট খোকা পথ হারিয়ে কার বাড়িতে যাবো? অসলোর রাস্তায় আমাকে যে কেউ চেনে না। হায়। ঠিক সেই সময় রুপশীর ভায়োলিনের প্রথম রাগ-রাত্রী শেষ হল। দেখলাম আমি অসলোর আপেল জঙ্গলে মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাস দাঁড়িয়ে নয়। আমি বাবলীর গানের ইস্কুলের ছোট্ট কক্ষে এক ভায়োলিন বাজনেওয়ালীর পাশে চুপটি করে বসে আছি। রুপশীর হাতের আঙুলগুলো আমার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে চোখ বন্ধ করে বাকী জীবন এই বাজনা শুনে শুনে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ি।রাত্রী যতো গভীর হচ্ছে রুপশী ততোই যেনবা সুরের মূর্ছণায় চারপাশ মাতিয়ে তুলছে। কাছে কোথাও হয়তো বা কামিনী ফুল ফুটেছে। আকাশ ভরা জোসনা। একটু আগে বুঝি বর্ষা এসে গাছগাছালিকে স্নান করিয়ে গেছে। আজগুবি রহস্য নিয়ে মেঘদুত মেতেছে লাখো মাইল দৌড় প্রতিযোগীতায়। চরাচরে আজ আর কেউ জেগে নেই। একা আমি আর ওই দূরপ্রবাসী মন পাগল করা চাঁদ। বাতাস গান করছে। কিন্তু কাউকে দেখা যাচ্ছে না। ছলনাময়ী হিহি টিপ্পনিমারা হাসি ভেসে আসছে যেনবা নদীর ওপার থেকে। আর আমি এক জোড়া ডানার অভাবে এপাশ ওপাশ করছি। সময় তুমি সবুজ ডাইনি। সন্ধ্যার উঠোনে নাবিকের হাড় দিয়ে কবেকার সেই হারিয়ে যাওয়া জাহাজের ছবি একে একে তুমি আমাকে একটা গল্পই কেবল শুনিয়ে যাও। আর বোকা আমি কেবল তোমার সেই না ফুরানো রহস্যময় গল্পটাই শুনতে থাকি। পৃথিবীর উপকূল থেকে আমাকে তুমি কোথায় নিয়ে যেতে চাও শুনি?দূর নক্ষত্ররা যেখানে থাকে সেখানে আর কার কার বাড়ি আছে বলো? সেখানে কী পৃথিবীর মতো মায়া আছে? ছায়া সুনিবিঢ় শান্তির গ্রাম আছে? মন চুরি করা চন্দ্রমুখী আছে? প্রাণ উদাস করা গানের পাখী আছে? দূর থেকে ভেসে আসা নির্জন মধ্যরাতের গির্জার ঘণ্টার ঢং ঢং বিদারী আছে? নইলে আমার মন এতো উচাটন করছে কেন আজ? রুপশীর হাতে সত্যি সত্যি এক অভিনব যাদু আছে। সুরের সেই যাদুতে আমরা হাবুডুবু খেতে খেতে মাঝ নদীতে নৌকা না ডুবিয়ে তীরের যখন প্রায় কাছাকাছি, তখন রুপশী আবার কথা বলেন। রাগ ভৈরবী দিয়ে শেষ করতে চান আজকের আসর। রুপশী বলেনÑ বধূ বিদায় বা কনে বিদায়ের সময় আমাদের মনে যেমন একটা না বলা চাপা কষ্ট ছটফট করে, তেমন একটা কষ্ট হয়তো বাজাবো এবার। আমরা কষ্ট নেবার জন্য আরো নিবিষ্ট হই সুরে। হয়তো তখন ভোর। পূবাকাশে একাকী শুকতারা জ্বলজ্বল করছে। একটু আগে চাঁদ ডুবেছে। কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে মধুমতীর তীরে বধূ বিদায় দিতে দাঁড়িয়ে পিসিমা। ছেলেটা তার কলকাতায় নতুন ডাকঘরের ডাকহরকরার চাকরি নিয়ে ছয়মাস ধরে সেখানে। প্রিয় বধূ তার ছেলের কাছে যাচ্ছে একা একা। মনে তার স্বামীকে দেখার বাসনা। দীর্ঘদিন ছয় মাস পরে ভালোবাসা বুকে নেবার আশা। আর পিসিমার মন সেই কাকডাকা ভোরে কীসের কষ্টে অতো মলিন। পিসিমা কতোক্ষণ মধুমতীর তীরে ওভাবে একাকী কুয়াশার মধ্যে মন উদাস করে দাঁড়িয়ে ছিল আমরা জানি না। তার প্রিয় পুত্রবধূ কখন যে কুয়াশার মধ্যে ছদ্মবেশ নিয়ে কতোক্ষণে আড়াল হল আমরা জানি না। আমরা শুধু জানি সূর্য ব্যাটার তীর্যক ঝলক যখন পিসিমার মুখমণ্ডলে এসে গরম একটা হুহু লাগিয়ে দিল, তখন পিসিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন। কী ছিল তার মনের দুঃখ! নাকী ছেলের সুখের কথা ভেবে পিসিমা নিজেকে নিজে প্রবোদ দেনÑ তুই ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকিরে খোকা।রুপশী যখন গান শেষ করলেন, তখন আমরা পিসিমাকে ছেড়ে বাবলীর ইস্কুলে হৈহৈ করে উঠি। সত্যিই মুগ্ধ করার মতো একটা সন্ধ্যার সাথে অনেক দিন পর আমার সাক্ষাৎ হলো। এমনিতে গোধূলীর বাউলি লাগলে আমি কেমন উদাস হয়ে যাই। ইচ্ছে করে ওই দূর পাহাড়ে গিয়ে একাকী কোনো টিলায় বসে থাকি। আদিবাসী প্রনয়ী মেয়েটি ওই পথ থেকে যাবার সময় আলতো করে পেছন থেকে আমায় ছুঁয়ে দিয়ে মেঘের আড়ালে পালিয়ে যাবে। আর আমি গোটা সন্ধ্যে তার চলে যাবার পথের দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে শত-সহস্র সনেট বানাই। হ্যা, রুপশীর ভায়োলিন আমি আরো শুনতে চাই। শুনতে চাই ভরা বর্ষার কোনো মাতাল করা রাতে রুপশী আমাদের সুরের যাদুতে নতুন কোনো জগতে নিয়ে যাক। সারারাত শুধু সুরের মায়ায় আমরা দলবেধে হারিয়ে যাই নতুন কোনো ঠিকানায়। বর্ষা রাতে ভায়োলিন হয়তো রুপশীর হাতে আরো যাদুকরী ডাক দিয়ে আমাদের নতুন কোনো তীর্থে যাবার জন্য তাড়িয়ে বেড়াবে। আমরা সেই ভরা বর্ষার মোহনীয় রাতের প্রাণ মাতাল করা সুরের হাতছানিতে ভুলে যেতে চাই। হতে চাই বর্ষারাতের কোনো তীর্থযাত্রী। জয়তু ভায়োলিন। জয়তু রুপশী সুরশ্রেষ্ঠা। ৫ এপ্রিল ২০১০। ২২ চৈত্র ১৪১৬। সোমবার। গাবতলা, মগবাজার।।",False rg,"গল্প_ শিখা অনির্বাণ!! রেজা ঘটক রেজা ঘটক শিখা অনির্বাণ তাকে দোষী সাবাস্থ করার আগে আমরা যদি তার একটা কাল্পনিক বায়োগ্রাফি প্রস্তুত করতে পারি, তাহলে ব্যাপারটা বুঝতে হয়তো আমাদের সুবিধা হবে। আরেকটা জিনিস আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত হবে কিনা যে, পরবর্তী প্রজন্মের কোনো অনুসন্ধানী গবেষক আমাদেরকে যদি পাল্টা প্রশ্ন করে এটা প্রমান করতে সক্ষম হয় যে তাকে হত্যার জন্য বিচারের দায়ভার তোমরা কেমন করে পেলে, সেইসব প্রশ্নের কোনো প্রত্যুত্তর আমাদের জানা আছে কিনা, অথবা আমরা সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা রেখে যাবো কিনা? নতুবা তখন যদি আমাদের আত্মার উপরে তাকে হত্যার জন্য পাল্টা বিচারকার্য অনুষ্ঠিত হয় এবং আমরা যদি তখন দোষী সাব্যস্ত হই, তখন কি উত্তর প্রজন্ম আমাদের কবরের এপিটাপে খোদাই করে রাখবে যে নির্দোষ ব্যক্তিকে হত্যার জন্য এরাই দায়ী ছিল অথবা সংক্ষেপে স্রেফ একটি শব্দ- 'পাপী'। তখনকার প্রজন্মের চিন্তাবিদদের-ইবা ঠিক কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যা কি আমরা মোটেও কল্পনা করতে পারি? আমাদের ভাগ্য খুব ভালো যে, লোকটা মোটেও অসৎ নয় আর সে জীবনে কখনো বানিয়েও মিথ্যা বলতে রাজী ছিল না। বরং তার ওই অহংকার আর নেহাত ধর্মকে অস্বীকার করার জন্য তার ফাঁসির হুকুম হল আর তৃষ্ণার্ত যূপকাঠে দাঁড়ানোর আগে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে সে কি এমন রহস্যময় বাণী ছুঁড়ল অথবা স্রেফ নির্বাক থাকল যে, তার পরিনতি আমরা এখনো ভোগ করছি। তার সেই রহস্যময় বাণী অথবা নির্বাক চোখের ভাষা আমরা কেউ কি আজ পর্যন্ত অনুবাদ করতে পেরেছি? যা হয়তো যারা বুঝতে পারছে তারাই শুধু তা অনুসরন করছে আর সমগ্র জাতিকে একটা কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আমরা এখনো জানি না বা অনুমান করতে পারি না পরবর্তী প্রজন্মের মানুষ সেইসব রহস্যময় অনুচ্চারিত শব্দগুলো কিভাবে বর্ননা করবে। তবু একুশ বছর পর আবারো যখন তার কথা উঠলো আমরা দায়ভার এড়ানোর প্রচেষ্টা হিসাবে কিছু ব্যাখ্যা এখানে হয়তো রেখে যাবো। আর আমাদের এখনো একথা স্বীকার করতে হবে যে, লোকটা ছিল সহজ সরল গোবেচারা টাইপের এক খাঁটি আদমি। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখেও কেমন একঘুয়ে গোঁয়ার্তুমিটা সে দিগ্বিজয়ীর মত আগলে রেখেছিল। তার পরিনতি নিয়ে আমরা শুধু একথা বলতে পারি যে, মানুষ হয়তো একদিন তাকে নিয়ে খুব আফসোস করবে অথবা চলমান বাস্তবতায় অন্য অনেকের মতো সেও হারিয়ে যাবে এবং পৃথিবীবাসী কখনোই তার নাম আর উচ্চারন করবে না। আবার উল্টো যদি তার ওই ব্যতিক্রমী বলিদানকে কেউ কেউ মহাবীরের পর্যায়ে তুলনা করে এবং দেশের সবচেয়ে উত্তাল নদীকে তার নামে নামকরন করা হয় তাহলেও হয়তো আমরা অবাক হবো না। আবার হয়তো কেউ যদি তার ওই নির্মোহ বলিদানকে স্রেফ দুঃস্বপ্ন বলে উড়িয়ে দেয় তখনও আমাদের হয়তো কিছুই বলার থাকবে না। নদীর পাশে জন্ম হওয়ায় তার বেড়ে ওঠার ইতিহাস আমরা জানি। প্রকৃতির স্বাভাবিক রীতির একটু উলোট-পালোট হলেই সে বড়ো বিচলিত হতো। যদিও তার দুর্দান্ত দুঃসাহসের কথা এখনো যারা তার বিরুদ্বাচারন করে তারাও উচ্চকণ্ঠে স্বীকার করে। হাঁটতে শেখার আগে সাঁতার শেখা লোকটি কোনোদিন হয়তো ভাবতেও পারেনি নদী থেকে অনেক দূরে কোনো জনাকীর্ন নগরে তার একদিন এভাবে এক ভরা চাঁদনী রাতে ফাঁসি হবে। আর তার ফাঁসির দিনে সারা শহরে উজানের মতো মানুষ ছুটবে আর স্ফুর্তিতে তারা প্রলয় নৃত্য করবে। শুধুমাত্র ধর্মকে অস্বীকার করার দুঃসাহসের জন্য তাকে যে অমোন পরিনতি বরণ করতে হতে পারে, তা হয়তো লোকটি আগেভাগেই জানতো। তবু তার কথা যখন বলছি তখন আমাদের খুব দুঃখ হয় এই ভেবে যে স্রেফ হাড্ডিসার গড়নের দৃঢ়চেতা লোকটা কেমন বেকুবের মতো অসহায় প্রাণ বিসর্জন দিল জন সমুদ্রে ঘেরা উত্তাল কোলাহলের মধ্যে। রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন আগেভাগেই ঠিক করে রেখেছিল যে একেবারে মধ্যরাতের কাঁটায় কাঁটায় বারোটা এক মিনিট বাজার সাথে সাথে লোকটাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। আর সেই দৃশ্য যাতে উৎসুক শহরবাসী সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে পারে সেজন্য স্বাধীনতা চত্বরের উন্মুক্ত মঞ্চেই তাকে ফাঁসি দেওয়া হলো। যদিও মধ্যরাত্রি বারোটা বাজার অনেক আগেই সারা শহর থেকে দলে দলে নানান বাদ্যযন্ত্র নিয়ে উৎসুক জনতার ভিড় বেড়েছিল স্বাধীনতা চত্বরে। আর অমোন উন্মুক্ত ফাঁসির দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার জন্য সেদিন নগরপিতাও নগরে বিশেষ ছুটি ঘোষণা করেছিলেন, যাতে সাধারণ জনতাও বিষয়টি বেশ আনন্দের সাথে উদযাপন করতে পারে। পৃথিবীর অন্তত কয়েকশো দেশের গণমাধ্যমের লোকজন অমোন দুর্লভ ফাঁসির দৃশ্য সরাসরি ধারণ করার জন্য আগাম বিমানের টিকিট নিলেন। আর একথা আমরা এখন নিশ্চিত করেই জানি যে লোকটার সেই ফাঁসি থেকে সে বছরই সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা আয় হয়েছিল রাষ্ট্রের সারা বছর লোকসানে থাকা সিভিল এভিয়েশন বিভাগের। আর বিদেশি গণমাধ্যমের যারা অন্তত এক ঢিলে দুই পাখি মারায় ওস্তাদ, তাদের কেউ কেউ স্বাধীনতা চত্বরে বিশেষভাবে নির্মিত ফাঁসির মঞ্চের খুব কাছাকাছি অবস্থান নিয়ে গোটা দৃশ্য ধারণ করার পাশাপাশি উপস্থিত জনতারও প্রতিক্রিয়া নিচ্ছিল। কিন্তু একটা ব্যাপারে তারা রহস্য উন্মোচনের প্রচেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছিল যে, স্বাধীনতা গানের নতুন সুরকার হিসেবে ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তা পাওয়া লোকটার বিরুদ্ধে কেন গোটা রাষ্ট্র অমোন তড়িঘড়ি একটা বিচারকার্য শেষ করেছিল। আর আত্মপক্ষ সমর্থনের চিরাচরিত সুযোগ থাকলেও লোকটা কেন সেই সুযোগকেও প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাদের কাছে একটা জিনিস একেবারেই রহস্যময় থাকলো যে রাষ্ট্রীয় আইনে ধর্মকে যেভাবে বিবেচনায় নেয়া হয় সেই তুলনায় লোকটার গোঁয়ার্তুমির মাত্রা-ইবা কতোটুকু ছিল? তবু ফাঁসিতে লোকটাকে টানা একুশ মিনিট ছুলিয়ে রাখা হয়েছিল। আর প্রচলিত ফাঁসিতে যেখানে দণ্ডপ্রাপ্তের দেহ ফাঁসিমঞ্চের নিচে চলে যায়, সেখানে লোকটার বেলায় তার দেহ মঞ্চ থেকে আড়াই ফুট উঁচুতে ঝুলে ছিল। এ বিষয়ে কোনো কোনো পণ্ডিতের কিছু কিছু লেখা পরবর্তী সময়ে সংবাদপত্রে প্রকাশ পেলেও একটা পর্যায়ে তারাও যখন লোকটার পক্ষ ত্যাগ করল। আর তাদের নির্লজ্ব রাষ্ট্রপক্ষে ঝুঁকে যাবার পিছনে কিসের রহস্য ছিল তা অবশ্য কেউ আর মুখ ফুটে উচ্চারণ করল না। তবু আগাগোড়া নাস্তিক লোকটা যে গোটা গোটা বিশ্বেই নেহাত অল্প সময়ের জন্য হলেও একটা আলোচনার ঝড় তুলেছিল, তা ওই সপ্তাহের কাগজগুলো আর টেলিভিশন ফুটেজ দেখলে স্পষ্ট বোঝা যায়। এমন কি একেবারে কট্টর ধর্মীয় রাষ্ট্রগুলোর গণমাধ্যমেও লোকটার প্রতি দু’একবার করুণার আহবান থাকলেও, সে বিষয়ে ভীষণ একরোখা লোকটা একবারও প্রতিক্রিয়া দেখায় নি। সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হয়েছিল ফাঁসির পরে লোকটার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে খোদ রাষ্ট্র যখন বিপাকে পড়ল তখন। বিচারকদের কাছে শেষ অভিপ্রায় হিসেবে লোকটা নাকি আবদার করেছিল, তার মৃতদেহ যেনো চিকিৎসা সেবায় উৎসর্গ করা হয়। অথচ লোকটার মৃতদেহকে যখন কবরস্থ করার প্রক্রিয়া চলছিল তখন বিদেশি গণমাধ্যমের রিপোর্টারদের প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপক্ষ তা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছিল। আর শেষ পর্যন্ত লোকটার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া যে ওভাবে বিলম্বিত হবে, আর তা নিয়ে তিন সপ্তাহ পর রাষ্টপক্ষকে গণভোটের আয়োজন করতে হবে, তা হয়তো আগেভাগে কেউই অনুমান করতে পারেনি। আর পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো মৃতব্যক্তির লাশ নিয়ে কোনো রাষ্ট্রের গণভোট আয়োজনের ব্যাপারটা সেবারই প্রথম ঘটায়, পরবর্তীতে কেউ কেউ যখন এমোন অভিমত রাখতে শুরু করল যে, শয়তান লোকটা মারা গেলেও আমাদেরকে কেমন উৎকণ্ঠার মধ্যে রেখে গেল। হয়তো তার পাপিষ্ঠ আত্মা আমাদের এইসব পাগলামি দেখে দূরে কোথাও বসে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এসবের মধ্যে আবার শহরের যেসব রাস্তা দিয়ে লোকটা নিয়মিত যাতায়াত করতো, সিটি করপোরেশানের বিশেষ উদ্যোগে সেই সকল রাস্তা বিশেষ ব্যবস্থায় ধোয়া মোছা করা হল। যদিও ওটা ছিল হয়তো কট্টরপন্থী কিছু ধার্মীক লোকদের পাগলামি বা খামখেয়ালিপনা। যা মানুষ কেবল বেশ উৎসাহ নিয়েই দেখল। কিন্তু অমোন উৎসাহের মধ্যে ঠিক একুশ দিন পরে যখন সত্যি সত্যি লোকটাকে সমাধিস্থ করা হল, তখন তার প্রতিবাদে স্বাধীনতা চত্বরের ঠিক যেখানে লোকটার ফাঁসির মঞ্চ করা হয়েছিল, তার পাশে গিয়ে একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা আত্মাহুতি দিল। তখন নতুন করে সারা শহরে লোকটা সম্পর্কে আবারো রহস্য আর আতংক শুরু হল সবার মনে। আর ঠিক পরবর্তী একুশ দিনের মাথায় নগরবাসী আবারো আরো দুই জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকার আত্মাহুতি প্রত্যক্ষ করল ঠিক স্বাধীনতা চত্বরের আশেপাশে। তখন সারা শহরে সবার মধ্যে একটা গুজব ছড়ালো যে, হয়তো বদমায়েশ লোকটা গোপনে তার কিছু অনুসারী রেখে গেছে। আর তারা সবাই কেবল ওইভাবে আত্মহুতি দেবে। পরবর্তী একুশ দিনের মাথায় অর্থাৎ লোকটার ফাঁসি কার্যকর হবার ঠিক তেষট্টিতম দিনে যখন আবারো চার জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা স্বাধীনতা চত্বরে একইভাবে আত্মাহুতি দিল, তখন রাষ্ট্রপক্ষের খেয়াল হলো যে, ঘটনার সঙ্গে 'একুশ' সংখ্যাটির একটা রহস্যময় মিল রয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেশের আইনসভায় একটা অদ্ভুত আইন পাশের জন্য যখন জনপ্রতিনিধিরা পরস্পর তুমুল বিতর্কে লিপ্ত, ঠিক তখন সেখানে খবর পৌঁছালো যে বিশেষ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বেষ্টনির তোয়াক্কা না করেই শহরের বাইরে অন্তত আটজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা আত্মাহুতি দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আইনসভায় যে আইনটি পাশ করা হলো সেটি ছিল, লোকটার করা স্বাধীনতা গানের নতুন সুরটি পরিবর্তন করা হবে। আর স্বাধীনতা চত্বরে কোনো প্রেমিক-প্রেমিকা জুটির প্রবেশাধিকার থাকবে না। আইনসভায় পাশ করা নতুন এই আইন নিয়ে পরবর্তী সময়ে সারা শহর তখন প্রতিবাদ মিছিলে উত্তাল। তাদের দাবী, লোকটার করা স্বাধীনতা গানের নতুন সুরটি কিছুতেই পরিবর্তন করা যাবে না। আর স্বাধীনতা চত্বর সবার জন্যই উন্মুক্ত রাখতে হবে। রাষ্ট্রপক্ষ দাবী না মানলে প্রতিবাদকারীরা সবাই একযোগে আত্মাহুতি দেবে বলেও হুঁসিয়ারি দিল। সেই থেকেই লোকটার নাম নতুন করে সবাই আবার জানার চেষ্টা করছে। এখন আমরা স্বাধীনতা চত্বরে যে শিখা অনির্বাণ দেখি, কারো করো অভিমত লোকটার আত্মাকে যথেষ্ঠ সাজা দেবার জন্য ওটা নাকি গনতন্ত্রপন্থীদের একটা নেহাত কারসাজি... কাঁঠালবাগান, ঢাকা ৩১ শে ডিসেম্বর ২০০৯ সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৬",False ij,"ইউরোপের ইতিহাস_ পোপতন্ত্রের উত্থান পোপ শব্দের মানে, বাবা। পোপকে ক্যাথলিক খিশ্চানরা বরাবরই বাবার মতো দেখে এসেছে। কাজে কাজেই ইউরোপ মুখে যতই secularism-এর কথা বলুক না কেন- পোপতন্ত্র বা papacy আজও ওদের ধর্মীয়জীবনের মূলে। যারা গির্জায় যায় না, তারা যায় না; আর যারা যায়, তাদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু, কীভাবে পোপতন্ত্রের জন্ম হল? আমরা তাই আজ দেখব। আগের একটি লেখায় আমি বলেছি যে ইউরোপীয় ইতিহাসে জার্মারিক ট্রাইবগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গভীর। অভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির অধীন পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের গোষ্ঠীগুলিই ছিল জার্মানিক জাতি । খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতক থেকে খিস্টীয় পঞ্চম শতক অবধি এরা ইউরোপের ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে ছিল সক্রিয়। ২ চতুর্থ শতকের শেষের দিকে জার্মানিক জাতিগুলো বাস করছিল রোমান সাম্রাজ্যের উত্তর ও পুবে । রোমানরা ওদের বর্বর বললেও আদতে তারা ঠিক বর্বর ছিল না। জার্মানিক জাতিগুলি কৃষিকাজ করত। যাপন করত চারণজীবন । যাযাবর চারণ জীবনের বৈশিষ্ট্যই হল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া। তারা পশ্চিম ও দক্ষিণে অগ্রসর হতে থাকে। ৩ এই জার্মানিক অভিবাসনের সময়টায় রোমান সাম্রাজ্য সম্মুখীন হয়েছিল এক তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটের। অর্থনৈতিক উন্নয়নের আশায় সাম্রাজ্যের পতিত খাস জমিগুলি ওই অগ্রসরমান জার্মানিক গোষ্ঠীগুলিকে দিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষার ব্যাপারে রোমান প্রশাসন থাকে সতর্ক। যেমন, ভূমধ্যসাগরীয় নৌবন্দরগুলি ছিল রোমান সাম্রাজ্যের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ন। কেননা, ওসব বন্দর দিয়েই আফ্রিকা থেকে খাদ্যশষ্য আসত। যা হোক। ৫ম শতকের মাঝামাঝি, পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য ওইসব জার্মানিক জাতিসমূহের উপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন নিতে সফল হয়। ৪ ৫ম শতকের প্রথম প্রথম গল-এ (আজকের ফ্রান্স) জাঁকিয়ে বসল ফ্রাঙ্করা। ইতালিতে গথরা পৌঁছল ওখানকারই এক সম্রাটের আমন্ত্রণে। ৫০৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভিসিগথরা স্পেনে তাদের আধিপত্য কায়েম করল। ভ্যান্ডালস্ রা উত্তর আফ্রিকার কিয়দংশ দখলে নিল-সময়কাল ৪২৮ খ্রিস্টাবে। ৫ জার্মানিক ট্রাইবগুলোর দরকার ছিল ভূসম্পদ । রোমান সম্রাটের বদান্যতায় তাই তারা পেল। এবার রোমানদের মতোই বাঁচতে চাইল তারা। (মানে নাগরিক সুযোগসুবিধা, সম্মান, নিরাপত্তা ... ইত্যাদি।) কাজেই সাংস্কৃতি লেনদেন শুরু হল। যেমন হয়। দুপক্ষই দুপক্ষকে করছিল প্রভাবিত। দুপক্ষই অবশ্য শান্তিপূর্ন সহাবস্থানের নীতি মেনে চলছিল। গোল বাঁধল অন্যত্র। ধর্ম! ৬ পশ্চিম জার্মানিক জাতিগুলি ছিল চরিত্রে পৌত্তলিক। তারা বিবিধ আকাশ দেবতার উপসনা করত। সেই সঙ্গে উপসনা করত নানান প্রাকৃতিক বস্তুনিচয়ের। পুবের জার্মানিক জাতিগুলি অবশ্য এরই মধ্যে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়ে গিছল। তার পিছনে ছিল সাধু উলফিলাস এর একক প্রচেস্টা। সাধু উলফিলাস অবশ্য প্রচলিত খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাস করতেন না, সাধু উলফিলাস বিশ্বাস করতেন Arianism-এ । Arianism মতে, যিশু ছিলেন আগাগোড়া মানব- কিছুতেই স্বর্গীয় নয়। যা হোক Arianism-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছিল। রোমের খ্রিস্টানধর্মের ধারকবাহকরা চিন্তিত হয়ে পড়লেন।Thus, it was less as enemies of Roman political control than as bearers of a rival version of Christianity that the Germanic peoples were hated and feared. (Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved.) ৭ ৩৮০ খ্রিস্টাব্দের দিকে খ্রিস্টীয় বিশপঘেঁষা রোম কর্তৃপক্ষ Arianism -কে খ্রিস্টবিরোধী বলে চিহ্নিত করল। এর আগেই, অর্থাৎ ৩১৩ খ্রিস্টাব্দে মিলান ঘোষনার মাধ্যমে সম্রাট কনস্টানটাইন দ্য গ্রেট খ্রিস্টধর্মকে বৈধ রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দিয়ে গেছেন। তিনিই ছিলেন প্রথম দীক্ষিত খ্রিস্টান সম্রাট। তারপর থেকে রোমে খ্রিস্টীয় সাধবিশপদের আনাগোনা বাড়ছিল। মাননীয় সাধু পিতরকেই রোমের প্রথম বিশপ ধরা হয়। ৮ আরিয়ান ও জার্মানিক জাতিগুলোর অব্যাহত পৌত্তলিকতা ও Arianism চর্চায় খ্রিস্টীয় গির্জা টলে টলে উঠছিল। তখনকার গির্জে প্রশাসন ভারি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন। গির্জের নবতর সংস্থান হয়ে পড়ছিল অনিবার্য। তখনকার গির্জে প্রশাসন ছিল রোমান প্রাদেশিক প্রশাসনের আদলে তৈরি। গির্জের নিয়ন্ত্রণ ছিল স্থানীয় বিশপদের হাতে। এই বিশপরা ছিলেন পুরোপুরি স্বাধীন। আলেকজান্দ্রিয়া, অ্যান্টিওক এবং রোমের বিশপদের পদ ছিল গুরুত্বপূর্ন। এই বিশপদের ছিল প্রভূত সম্মান। শুধু তাই নয়-এই তিনজনকে বলা হল:পোপ। মানে, পিতা। রোমের পোপ আবার নিজেকে সাধু পিতরের উত্তাধিকারী দাবি করে বসলেন। সুতরাং তার সম্মান আরও বেশি। ৯ রোমের পোপদের নানা উদ্যোগ ও কর্মতৎপরতায় পোপতন্ত্র বিকশিত হতে থাকে। এর পিছনে ছিল জার্মানিক জাতির জনপ্রিয় ধর্মীয় মতাদর্শ Arianism এবং পৌত্তলিকতা। তবে পোপতন্ত্রের দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের দূর্বলতা ও পতনও সমানভাবে দায়ি। রাজনৈতিক কর্তৃত্বশূন্যতায় পোপরা প্রাচীন প্রথাপদ্ধতি চালু করার সুযোগ পেল। আর সিনেটের হাতে রইল না রোম। পোপরা সাধু পিতরের পবিত্র আসনে অধিষ্ঠিত হলেন। তথ্যসূত্র Smith, David A., et al. ""Europe."" Microsoft® Student 2008 [DVD]. Redmond, WA: Microsoft Corporation, 2007. Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved. সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৫",False rn,"কোরআনের বানী পৃথিবীর প্রত্যেক তিনজন ব্যাক্তির মধ্যে একজন মুসলমান। ইসলাম ধর্মে কোনো দলবাজী বা ফিরকাবন্দী নেই।মুসলমানদের বিভক্ত হওয়া থেকে এবং ধর্মে নানা মতের সৃষ্টি করা থেকে কঠোরভাবে সাবধান করা হয়েছে।চার ইমামের মৃত্যুর অনেক বছর পরে তাঁদের নামে মাযহাব তৈরি হয়েছে।আমার খুব প্রিয় এবং খুব পছন্দের পবিত্র কোআনের কিছু বানী, আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম । ১/ আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সুরা আন নিসা-১৮ ) ২/ আর আমি তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জান-মালের ক্ষতি আর ফল ফসলের লোকসান দ্বারা। আর ধৈর্যশীলদের জন্য সুসংবাদ। যারা তাদের উপর কোন বিপদ এলে বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য আর আমরাতো তারই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। সুরা বাকারাহ (১৫৫-১৫৬) ৩/ হে ঈমানদারগন, তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর আর তোমরা মুসলমান না হইয়া মরো না। তোমরা সকলে আল্লাহর রশিকে শক্তভাবে ধর এবং বি্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে তিনি তোমাদের অন্তরে প্রীতি সঞ্চার করেন ফলে তোমরা তার অনুগ্রকে পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা আগুনর কিনারায় ছিলে অতৎপর তিনি তোমাদের উদ্বার করেছেন্। এরূপে আল্লাহ তার নির্দশন সমূহ প্রকাশ করেন যাতে তোমরা সৎপথ পেতে পার। তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ যারা লোকদেরকে কল্যানের দিকে ডাকবে এবং অসৎ কাজ হতে বিরত করবে আর এসকল লোকই হবে সফলকাম। সুরা আল ইমরান (১০২-১০৪) ৪/ তুমি আরো দেখতে পাবে যে, ফেরেশতারা আরশের চারদিক বৃত্ত বানিয়ে তাদের রবের প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করছে৷ মানুষের মধ্যে ইনসাফের সাথে ফায়সালা করে দেয়া হবে এবং ঘোষণা দেয়া হবে, সারা বিশ্ব-জাহানের রবের জন্যই সমস্ত প্রশংসা৷ সুরা যুমার (৬৭-৭৫) ৫/ পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ। বাকারা:-১১৬। ৬/ সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার। বাকারা:-১৭৭। ৭/ নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। (সূরা আল আহযাব ৩৫ ) ৮/ তুমি যদি তাদের জিজ্ঞাসা কর আকাশ থেকে কে বৃষ্টি বর্ষণ করে? তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ!’ বল: ‘সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহরই!’ না! তাদের অধিকাংশেরই কোন চেতনা নেই। (সূরা আনকাবুত ২৯:৬৩) ৯/ মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলেস্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি তাদের আস্বাদন করান হয় যাতে তারা সৎপথে ফিরে আসে। (সূরা আর রুম, ৩০:৪১)",False rn,"ইতিহাস ও মতবাদ (ঈশ্বর বলেনঃ আমাকে কোথায় খুঁজছ হে বান্দা,আমি তো রয়েছি তোমার পাশেই।আমি মন্দিরে-মসজিদে-কাবায়-কৈলাসে থাকিনে।)উনিশ শতকের আগে মানুশ যন্ত বিজ্ঞানের আবাধ প্রসাদ থেকে ছিল বঞ্চিত।তখন মানুষের জীবন ছিল স্থানের ও কালের সীমায় আবব্ধ।যে-কোন নতুন যুগ সাধারনভাবে দৈশিক মানব-প্রগতির'ই নামান্তর।জগৎ কি,জীবন কেন,স্রষ্টা কি,সৃষ্টি কেন,জীবনের সার্থকতা কি,পরিনাম কি?- এমনি জিজ্ঞাসার উওর সন্ধান দুনিয়ার সব মানুষের কাছেই স্বাভাবিক।পাকিস্তানের রাজধানী হলো করাচি এবং পরে রাওয়লপিন্ডি বা ইসলামাবাদ।১৯৪৬ সনে দিল্লী কনভেনশনে মুসলীমলীগ সদস্যগন অভিন্ন ও একক পাকিস্তান রাষ্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।বাংলার দাবী নিয়ে শুরু হলো দ্বন্দ্ব-কোন্দল-সংঘর্ষ।অবশেষে অন্যতর রাষ্ট্রভাষা হিসেবে কাগুজে স্বীকৃ্তি পেল বাংলা।আভিধানিক অর্থে এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর সংজ্ঞানুসারে স্বাধীন পাকিস্তানে বাঙালীও ছিল স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীন নাগরিক।সুতরাং বাঙ্গালীরা ১৯৪৭ সালে ১৪ আগষ্ট থেকেই স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের মালিক।কবি শামসুর রাহমান তার স্বাধীনতা কবিতায় গনমুক্তির এ উল্লাসকেই বলেছেন স্বাধীনতা।১৫১৬ সাল থেকেই পর্তুগীজেরা চট্রগ্রামে আসা শুরু করে।এক'শ বছরের মধ্যে য়ূরোপীয় বেনে কোম্পানীরা-পর্তুগীজ,দিনেমার,ওলন্দাজ,ফরাসী,ইংরেজ এবং আর্মেনীয়ারা- সমুদ্রপথে ভারতের আন্তজার্তিক ব্যবসা-বানিজ্য নিয়ন্তন করছে।তখন বিনিময় মাধ্যম পন্য থেকে মুদ্রায় পরিবর্তিত হয়েছে বহুল পরিমানে।ইংরেজের হাতে শাসন ক্ষমতা যাওয়ার সাথে সাথে সেনাবিভাগের তুর্কী-মুঘল-ইরানীরা ও উওরভারতীয় পদস্থ কর্মচারীরা উওরভারতের দিকেই পালাল।কোলকাতা,মাদ্রাজ ও বোম্বাই বন্দরেই ছিল ইংরেজ কোম্পানীর আসর ও আড্ডা।১৭৯৩ সালের দিকে কেউ কেউ নিলামে জমিদারী কিনে হল জমিদার।নতুন ও পুরনো জমিদারদের কেউ কেউ ছিল মুর্শিদকুলী খান নিয়োজিত ইজারাদার বংশীয়ও।কিন্তু মজার ব্যাপার হলো- উনিশ শতকের আগে রামমোহন ব্যতীত কেউ তেমন ইংরেজী ভাষা জানত না। রেঁনেসাস বিতর্কিত বিষয় হয়ে উঠেছে।রেঁনেসাস হচ্ছে জীবনের জাগরন,পুরোনো ধারার বা অতীতের পরিপ্রেক্ষিতে এর অর্থ নবজাগরন বা নবজন্ম।ইতালীতে পনেরো শতকে 'জর্জো ভাসারি'-ই নবজাগরন বা নবজন্ম ঘটানো সৃষ্টি-সম্ভব মনস্বিতা অর্থে 'রেঁনেসাস' শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।রেঁনেসাসের প্রভাবে জনজীবনে তথা জাতীয় জীবনে- সমাজ,রাষ্ট্র,ভাষা,সাহিত্য,শিল্প,সংস্কৃ্তি,বিজ্ঞান,দর্শন প্রভৃতিয় বিবর্তন ঘটে।অতএব,পরিনামে মানুষের মন-মননের উৎকর্ষ সাধিত হয়।রেঁনেসাস বহুজনের নানা ভাব-চিন্তা-কর্ম-আচরনের ফসল।তবু এদের মধ্যে দূর থেকে চেনা যায় তিন মিনারের মতো -তিন আলোক-স্তম্বের মতো তিন ব্যক্তিত্বকে--প্রথেমে রামমোহন,মধ্যে বিদ্যাসাগর ও পরে বঙ্কিমচন্দ্র।এদের সহচর-অনুচর,সঙ্গী-সহযোগী ছিলেন অনেকেই।রামমোহন ছিলেন সংশয়বাদী,বিদ্যাসাগর ছিলেন নাস্তিক,বঙ্কিমচন্দ্র প্রথমে নাস্তিক শেষে ভক্তিমার্গী হিন্দু।(এইখানে একটা কথা মনে পড়লো- মাইকেল মধুসূদন দওই নাকি বাঙালীদের মধ্যে প্রথম বিলেতী পোশাক-পরুয়া ব্যক্তি।)এক-কথায় যা কিছু শ্রেয় সেসবের প্রতি সাধারনকে আকৃষ্ট করে -জাতীয় জীবনে যে উন্নয়ন ও উওরন ফহটান তার'ই নাম রেঁনেসাস।বছরের বারো মাস'ই কোনো না কোনো তরুতে-লতায় ফুল পাওয়া যায়,এবং একটা গাছ দিয়ে বাগান হয় না।সুবিন্যস্ত বহ তরু-লতার সমাবেশে তৈরী স্থানই বাগান।যে কোনো কালে ও স্থানে সাধারন মাপের দু'চারজন মনীষী থাকেন'ই- বুদ্ধিজীবী থাকে অসংখ্য।তাতে রেঁনেসাস হয় না; প্রথম শ্রেনীর বহু কৃ্তী ও কীর্তিমান মনীষীর অবদান'ই কেবল রেঁনেসাস।বাঙালীরা চিরটাকাল বিদেশী-শাসিত-বিজাতি-শাসিত।বাংলাদের যেসব ধর্ম সেগুলোও বিদেশ থকে আগত-হিন্দু,বৌদ্ধ ও ইসলাম বদেশ থেকে আসা,-উওর ভারত থেকে আসা আগত,আরব থেকে আসা,এবং হিব্রু অঞ্চল থেকে আসে খ্রীস্টান ধর্ম।আমাদের ভাষাও হচ্ছে উওর ভারতীয়।বাঙালীর যে গৌরব এবং গর্ব আমরা করছি,প্রাচীন এবং মধ্যযুগের বাংলা ও বাঙালীর গৌরব- তার কোন্টাই বাঙালীর কীর্তি নয়।এইটাই হচ্ছে দুঃখের কথা।আমরা বাংলাদেশের ইতিহাস যখন বলি-তখন মিথ্যা গর্বে গর্বিত হতে চাই।তাতে স্বদেশের,স্বজাতির আসল পরিচয় গোপন করে নানা কাল্পনিক কাহিনী দিয়ে মন ভরাতে চাই।কেন?আমাদের বুঝতে হবে যে,'বাঙালী-বাঙালী' 'বাংলাদেশী-বাংলাদেশী' করে চিৎকার করলেই আমাদের আত্নপরিচয় মিলবে না।আড়াই হাজার বছর ধরে যে-ই বাঙালী চরিএ সম্পর্কে আলোচনা করেছে সে-ই বলেছে যে,বাঙালী চোর,মিথ্যাবাদী,ভীরু,কাপুরুষ,পরশ্রীকাতর,ঈর্ষাপরায়ন ইত্যাদি।এর কারন কি?কারন আমরা পরাধীন ছিলাম।যে পরাধীন যে দাস,সে-তো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না,মেরুদন্ড ঋজু রাখতে পারে না,সামনা-সামনি কথা বলে ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিতে পারে না।আশার কথা হলো-এত পীড়নের মধ্যেও বাঙালী টিকে আছে।বাঙালীর চাই শিক্ষা, মনুষ্যত্ব,চাই মহত্ব,চাই আর্দশপরায়নতা,চাই সুন্দরের জন্য সাধনা ও সংগ্রাম।এসব অর্জনের চেষ্টা করলে বাঙালীর সুপ্ত শক্তি,অবদমিত শক্তি,আড়াই হাজার বছরের অবদমিত শক্তি জেগে উঠবে।বাঙালী পৃ্থিবীর বুকে মানুষ হয়ে দাঁড়াবে- প্রকৃ্ত আত্নপরিচয় ঘোষনা করবে।তখন পৃথিবীকে জানাবার মত একটা নতুন বানী নিয়ে বাঙালী দাড়াবে।আমাদের শুধু দরকার এই মনোভাব যে-আমাদের বাঙালীদের বড় হবার সম্ভাবনা ছাড়া কিছুই নেই- সব আমাদের করে নিতে হবে এবং সব আমরা করে নেব।",False ij,"দোম আন্তোনিও দো রোজারিও _ যার লেখা একটি বই বাংলা গদ্যের আদি নিদর্শন। আমাদের একটা আবছা ধারণা রয়েছে যে বাংলা গদ্যের জন্ম হয়েছিল রাজা রামমোহন রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাতে। আসলে যিনি প্রথম সাধু ভাষায় বাংলায় গদ্য লিখেছিলেন তাঁর নাম দোম আন্তোনিও দো রোজারিও। আনুমানিক ১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম হয়েছিল ভূষণায়। তো ভূষণা কোথায়? মাগুরার অল্প কয়েক মাইল পূর্বে অবস্থিত ছিল ভূষণা। একসময় যশোর জেলারও অংশ ছিল ভূষণা; শুধু তাই নয় বর্তমান ফরিদপুর জেলার একটি অংশও ভূষণার অর্ন্তভূক্ত ছিল। মুর্শিদকুলী খান (মৃত্যু ১৭২৭) ছিলেন বাংলায় নওয়াবী শাসনের প্রতিষ্ঠাতা। বাংলায় কর্মজীবন শুরু হয় প্রাদেশিক দীউয়ান হিসেবে। মুগল যুগে দীউয়ান শব্দটিতে রাজস্ব বিভাগের প্রধান ব্যাক্তিকে বোঝাতো। এত কথা বলার কারণ, In the Revenue Settlement of murshid quli khan, Bhusna was made a chakla that included a part of the present Faridpur district. চাকলা শব্দটির আভিধানিক অর্থ জেলা বা বৃহৎ প্রশাসনিক অঞ্চল। এ প্রশাসনিক বিভাগ মুগল আমলে সুবাহ বাংলায় আঠারো শতকের প্রথম দিক থেকে চালু হয়। প্রবর্তন করে মুর্শিদকুলী খান। দোম আন্তোনিও দো রোজারিও ছিলেন ভূষণা রাজ্যের রাজপুত্র। তাঁর প্রকৃত নাম ও উপাধি জানা যায় না। সুশান্ত সরকার লিখেছেন, In 1663, he was kidnapped by Portuguese pirates and taken to Arakan to be sold as a slave. Rescued by a Portuguese priest, Manoel de Rozario, he embraced christianity and took the name Dom Antonio de Rozario.( বাংলাপিডিয়া) ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে দোম আন্তোনিও দো রোজারিও ভূষণায় ফিরে আসেন। পাদ্রি মনোএল্ দো রোজারিও কাছে কৃতজ্ঞ ছিলেন;- স্ত্রী, আত্মীয়বর্গ ও প্রজাদের খিস্টানধর্মে দীক্ষিত করেন দোম আন্তোনিও। ভূষণার কোথাও কোষাভাঙা নামে একটি গ্রাম ছিল। সে গ্রামে সাধু নিকোলাস তলেন্তিনো গির্জা ও মিশন স্থাপন করেন। পরে ভূষণা থেকে গির্জা ও মিশন ঢাকার ভাওয়াল পরগনার নাগোরি গ্রামে সরিয়ে নেওয়া হয়। সম্ভবত দোম আন্তোনিও দো রোজারিও-এর মৃত্যুর পর। আজীবন খ্রিস্টধর্ম প্রচার করেছিলেন দোম আন্তোনিও। শিক্ষিত ছিলেন। 'ব্রাহ্মণ- রোমান- ক্যাথলিক' সম্বাদ নামে একটি বই লিখেছিলেন। বাংলায়। ১২০ পৃষ্ঠার ছিল সে বই। এটিই বাংলা সাধু গদ্যরীতির আদি নিদর্শন হিসেবে খ্যাত। ১৯৩৭ সালে বইটি সুন্দ্রেনাথ সেনের সম্পাদনায় কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মুদ্রিত হয়। তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়ায় সুশান্ত সরকারের একটি নিবন্ধ সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:০৯",False rg,"চলে গেলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম ।। রেজা ঘটক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার রাত একটায় (১৬ মার্চ ২০১৩) চট্টগ্রাম নগরের মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি ফুসফুসের সংক্রমণ ও হূদরোগের নানা জটিলাজনিত কারণে কয়েক দিন আগে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভৌতবিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। অধ্রাপক জামাল ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিন্ডিকেট সদস্য। জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া করার পর তিনি মেরিট লিস্টে পাকিস্তানের লরেঞ্জ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি সিনিয়র ক্যামব্রিজ ও উচ্চতর সিনিয়র ক্যামব্রিজ পাশ করেন। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেন্ট জ্যাভিয়ার কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৬৪ সালে তিনি লন্ডনের ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে বিএ ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৮২ সালে তিনি লন্ডনের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত গণিত ও তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট অফ থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে কাজ করেন। এরপর তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পর ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিত বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। ১৯৮৪ সালে দেশে ফিরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন পরে এখান থেকেই অবসর গ্রহন করেন। কুলজীবন থেকেই তিনি গণিতের প্রতি ভীষনভাবে অনুরাগী ছিলেন। ক্যালকুলেটর ব্যবহারে অনীহার পরিবর্তে তিনি গণিতের জটিল হিসাব মুখেমুখে করতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠকদেরও প্রেরণা যোগাতেন অধ্যাপক জামাল। দেশের উন্নয়ন নিয়েও তাঁর ভাবনা ছিল প্রবল। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ বন্ধের উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন।তাঁর 'দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স' বইটি ১৯৮৩ সালে প্রকাশের পর সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলে বিশেষভাবে সাড়া জাগায়। বইটি জাপানি, ফরাসি, পর্তুগিজ ও যুগোশ্লাভ ভাষায় অনুদিত হয়। ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি, রোটেটিং ফিল্ড্‌স ইন জেনারেল রিলেটিভিটি, অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি, স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘কৃষ্ণ বিবর’, ‘মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ’, ‘শিল্প সাহিত্য ও সমাজ’ ইত্যাদি।মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় অবদানের জন্য ২০০১ সালে তাঁকে একুশে পদকে সম্মানীত করা হয়। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি স্বর্ণপদক পান। ১৯৯৮ সালে ইতালির আব্দুস সালাম সেন্টার ফর থিওরটিক্যাল ফিজিক্সে থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্স অনুষ্ঠানে তাঁকে মেডাল লেকচার পদক দেয়া হয়। ২০১১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্জাক-শামসুন আজীবন সম্মাননা পান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। রোববার জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে জানাজার পর গরিবুল্লাহ শাহ মাজার কবরস্থানে প্রয়াত এই বিজ্ঞানীকে সমাহিত করা হবে।",False ij,"অতুলপ্রসাদ সেন। অতুলপ্রসাদ সেন। মোদের গরব মোদের আশা/ আ মরি বাংলা ভাষা। মাত্র একটি গানের জন্য অতুল প্রসাদ সেন চিরকাল বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে রইবেন। অথচ এই বাংলা ভাষাপ্রেমীর জীবনের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছিল বাংলার বাইরে। অসম্ভব দানশীল ছিলেন অতুলপ্রসাদ। জীবনের উপার্জিত অর্থ অধিকাংশই ব্যয় করেছিলেন জনকল্যাণে। এমন কী তিনি তাঁর বাড়িটিও অবধি দান করে গিয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর লেখা সমস্ত গ্রন্থের স্বত্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে দান করে যান। আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ এই যে-অতুল প্রসাদ সেন-এর জন্ম হয়েছিল ঢাকায়। ১৮৭১ সালের ২০ অক্টোবর। অবশ্য অতুলপ্রসাদের আদি নিবাস ফরিদপুরে, ফরিদপুরের দক্ষিণ বিক্রমপুরের মগর গ্রামে। ছেলেবেলায় অতুলপ্রসাদের বাবা মারা যায়। যে কারণে মায়ের হাত ধরে মাতামহের বাড়িতে উঠে আসতে হয়েছিল। ঘটনাটি পরিনামে শাপে বর হয়েছিল। কেন? বলছি। অতুলপ্রসাদের মাতামহ কালীনারায়ণ গুপ্ত ছিলেন সুকন্ঠ গায়ক, গানও লিখতেন। ভক্তিগীতি। কালীনারায়ণ গুপ্ত দৌহিত্র অতুলকে সঙ্গীতে হাতেখড়ি দিয়েছিলেন নিশ্চয়ই। পরবর্তী জীবনে অতুলপ্রসাদ খ্যাতনামা আইনজীবি হলেও গানের জন্যই দু’বাংলার বাঙালি আজও তাঁকে মনে রেখেছে। গানের পাশাপাশি কালীনারায়ণ গুপ্ত বিদ্যা অর্জনকেও গুরুত্ব দিতেন। যে কারণে গান শেখার পাশাপাশি অতুলের পড়াশোনাও চলছিল। ১৮৯০। প্রবেশিকা পাস করল অতুল। তারপর শুরু হল কোলকাতা জীবন। প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন। তারপর বিলেত গেলেন “ল” পড়তে। ফিরে এসে কোলকাতায় আইন ব্যবসা শুরু করলে। আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ এই যে- রংপুরে ছিলেন কিছুদিন আইনব্যবসা করেছিলেন অতুলপ্রসাদ। পরে লক্ষৌতে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেন। আমৃত্যু লক্ষৌতেই ছিলেন । তাইই তখন বলছিলাম-মাত্র একটি গানের জন্য অতুল প্রসাদ সেন চিরকাল বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে রইবেন। অথচ এই বাংলা ভাষাপ্রেমীর জীবনের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছিল বাংলার বাইরে। পেশাগত জীবনে সফল ছিলেন। লক্ষৌর বার অ্যাসোসিয়েশনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। অতুলপ্রসাদের বাড়িতে সন্ধ্যায় বা গানের আসর বসত। বিখ্যাত সব ওস্তাদরা আসতেন। গান পাগল ছিলেন অতুলপ্রসাদ। একবার গানের সুরের ঝোঁক চাপলে আদালত মক্কেল ভুলে যেতেন। সব মিলিয়ে অতুলপ্রসাদের গানের সংখ্যা ২০৬। এর মধ্যে ৫০-৬০টি জনপ্রিয়। তাঁর গানকে তিন ভাগে ভাগ কর যায়। (ক) স্বদেশিসঙ্গীত। (খ) ভক্তিগীতি ও (গ) প্রেমের গান। অতুলপ্রসাদের গানের সমগ্রর নাম “কাকলি”। ১৯৩০ সালে (২ খন্ডে) বেরয় কাকলি। ৭১টি গানের স্বরলিপি আছে কাকলিতে। কাকলি সম্পাদনা করেছেন সাহানা দেবী। সম্পর্কে অতুলপ্রসাদের মামাতো বোন হন সাহানা দেবী। অন্য গানগুলি গ্রথিত হয়েছিল “গীতিপুঞ্জ” নামক বইয়ে। ১৯২২ সালে কোলকাতা থেকে প্রথম গানের রেকর্ড বেরয় অতুলপ্রসাদের । গানে কন্ঠ দিয়েছেন সাহানা দেবী ও হরেন চট্টোপাধ্যায়। পরে আরও রেকর্ড বেরিয়েছিল। তবে সে সব গানে সুরতালের বিকৃতির অভিযোগ উঠেছিল। লক্ষৌ ছিল তৎকালীন উত্তরভারতের সঙ্গীতের অন্যতম কেন্দ্র। উল্লেখ্য বাংলায় ঠুংরির প্রচলন করেছিলেন লক্ষৌর বিশিস্ট সঙ্গীতজ্ঞ নবাব ওয়াজেদ আলী শাহ্। লক্ষৌজীবন গভীর প্রভাব রেখেছিল অতুলপ্রসাদের সঙ্গীতজীবনে। অতুলপ্রসাদই প্রথম ঠুংরি অঙ্গে বাংলা গানের প্রচলন করেন। রাগপ্রধান ঢংয়ে বাংলা গান রচনা তাঁর থেকেই শুরু। যার ফলে বাংলা গানে একটা নতুনত্ব এসেছিল। পরবর্তীকালে নজরুল যার আরও বিকাশ সাধন করেন। যা হোক। অতুলপ্রসাদ-এর ঠাঁই আজও বাঙালির হৃদয়ে। তার কারণ আছে। বিশিষ্ট গবেষক খান মোহাম্মদ সাঈদ লিখেছেন-His moder garab, moder asha/ a mari bangla bhasa (Our pride, our hopes the Bangla language) speaks of his love for his mother tongue. This song inspired our people during the language movement and the War of Independence. It has retained its charm even now. He enriched Bangla songs through his experiments with lyrics, tune, measure, pathos, etc. He died in Lucknow on 26 August 1934. (বাংলাপিডিয়া) তথ্যসূত্র-বাংলাপিডিয়া। অতুলপ্রসাদের গান শোনার জন্য- Click This Link Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২৮",False mk,"প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও অগ্রগতি আছে___ গত বছর থেকে আমাদের রাজনৈতিক পরিম-লে কালো-মেঘের প্রাদুর্ভাব দেখে যে কোনো দেশপ্রেমিক বাঙালি এদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিচলিত হতে বাধ্য। রাজনৈতিক সহিংসতা আর কুখ্যাত সব যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে স্লোগান দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর ওপর হামলা কিংবা নিরীহ ব্যক্তির প্রাণনাশ- এসব ঘটনা-প্রবাহ অব্যাহত থাকলে দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে বলে বারবার রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারক ব্যক্তিবর্গ গুরুত্বপূর্ণ মতামতও ব্যক্ত করেছেন। তাহলে দেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে- এ ভাবনা এখন সকলের। রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুস্থ ও স্বাভাবিক ধারা দেশের অগ্রগতির জন্য যে জরুরি একথা এখন সাধারণ ও নিরক্ষর মানুষও বুঝতে পারেন কিংবা উপলব্ধি করেন। তাছাড়া সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা রক্ষার জন্য সরকারের ভাল কাজের প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন জানানো এবং খারাপ কাজের সমালোচনা করা বিরোধী দলের দায়িত্ব রূপে গণ্য করা হয়। সেদিক থেকে সরকার ও বিরোধী দলের দেশপ্রেমিক নাগরিকদের মতো ভূমিকা জনতার কাছে প্রত্যাশিত হবে এটাই স্বাভাবিক। তবু বলতে হয় নানা বাধা-বিপত্তি ঠেলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তার অগ্রগতি শিখরস্পর্শী।স্বাধীনতা অর্জনের ৪২ বছরে পদার্পণ অর্থাৎ বয়সের মাপে আমাদের দেশ ধনী কিংবা গরিব হওয়ার বিষয়ে অথবা কতদূর এগিয়ে গেল সে সম্পর্কে মূল্যায়নে খুব বেশি কঠোর হওয়ার দরকার নেই। কারণ ভারত অথবা মিশরের দু’হাজার বছরের রাষ্ট্রীয় ইতিহাস এবং স্বাধীনতার অনেকদিন অতিবাহিত হলেও তারাও খুব বেশি এগিয়েছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। অন্যদিকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড মাত্র দেড়’শ বছরে উন্নয়নের যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা তাদের ধনী রাষ্ট্রের তকমা এনে দিয়েছে। আবার অনেক সময় রাষ্ট্রের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই সেই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের অঢেল প্রাপ্তিকে নির্দেশ করে থাকেন; অথচ যা একেবারে ভ্রান্ত ধারণা হিসেবে পরিগণিত। কারণ ক্ষুদ্র সীমানা আর আশি শতাংশ পার্বত্য ও ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা নিয়ে জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি কীভাবে হয়েছে? সেখানে আবাদি জমি নেই বললেই চলে, পশুপালনের জন্য চারণভূমি কম, তবু শিল্প-কারখানায় কাঁচামাল আমদানি করে বিশ্বব্যাপী তাদের পণ্যসামগ্রী ছড়িয়ে দিয়েছে। কেবল নিজেদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা কী যথেষ্ট ছিল না? সুইজারল্যান্ডে নারকেল গাছের প্রাচুর্য নেই অথচ তারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চকলেট উৎপাদনকারী রাষ্ট্র। ক্ষুদ্র দেশটিতে বছরের মাত্র চারমাস শস্য উৎপাদনের জন্য উপযোগী আবহাওয়া থাকে। অথচ তারাই দুগ্ধ উৎপাদনে বিশ্বের নন্দিত ও আদর্শ হিসেবে স্বীকৃত দেশ। দেশটি শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বসবাসের সর্বোত্তম জায়গা হিসেবে শীর্ষ স্থান দখল করে আছে এখনো। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য ধনী ও উন্নত দেশের তকমা লাগানো রাষ্ট্রের বুদ্ধিজীবী-জ্ঞানী ব্যক্তিদের চেয়ে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের জ্ঞানী ব্যক্তিরা একেবারে পিছিয়ে নেই। বরং পেশাজীবীদের মধ্যে জ্ঞান গরিমায় পার্থক্য কম। বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরস্পর পরস্পরের আন্তঃসম্পর্কের মধ্য দিয়ে সেই দিকটিও আজ স্পষ্ট। উপরন্তু দেশের অগ্রগতিতে ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের সমস্যাও মুখ্য নয়। বরং ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশ অপর দেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীদের বলপ্রয়োগে শ্রম আদায় করে যেভাবে ধনী রাষ্ট্রের শীর্ষে পৌঁছেছে- সেই ধরনের ঘটনারও সম্মুখীন হতে হয়নি আমাদের গত ৪১ বছরে। তাহলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে আমাদের মূল সমস্যা কী? আসলে বর্তমান বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের মৌল পার্থক্য চেতনা ও আচরণের। আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি সেই ভাবে গড়ে তোলা হয়নি। ফলে নিজের দেশের সম্পদ বিনষ্টিতে আমরা আনন্দ লাভ করি। মনে করি দেশের সম্পদ আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি নামক দলের। আসলে এই মানসিকতার পরিবর্তন না হলে দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। আজ বড় বেশি দরকার শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর আত্মসচেতনতা আর যুব সমাজের ইতিহাসচেতনা। দেশকে এগিয়ে নিতে যুব সমাজকে যথার্থ পথ-নির্দেশনা দিতে হবে।ইতিহাস আমাদের বর্তমানকে নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ করে। আজকের সমাজ ও বিগতকালের সমাজের মধ্যে সংলাপ চলে ইতিহাসে। অতীতকে বর্তমান আলোতে বোধগম্য করতে হয়। অর্থাৎ বর্তমানকে বুঝতে হলে অতীতের আলো প্রয়োজন হয়। এই হিসেবে বর্তমান যুব সমাজের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার চেতনা বারবার সামনে আনা দরকার। তারা যা করছে কিংবা ভালমন্দ বিবেচনা না করে যেসব আচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে তাকে মিডিয়ার মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে সংক্রমিত না করে একটি পরিশীলিত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার গড়ে তোলার সময় এসেছে স্বাধীনতার এই ৪২ বছরে। কারণ বর্তমান শিক্ষিত যুব সমাজকে টার্গেট করেছে মৌলবাদী ও জঙ্গিগোষ্ঠী। ধর্মের দোহাই দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে তাদের দলে ভিড়াতে চাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেককেই ভিড়িয়েছে। হিজবুত তাহেরীর ও অন্যান্য জঙ্গিবাদে তাদের অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে। কিংবা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে যে জামায়াত-শিবির নামক রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে সেখানে সম্পৃক্ত আছে বিপুল সংখ্যক তরুণ। এ বছরের শুরু থেকে সেই ধর্মান্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর হরতাল ও অবরোধে আমরা দেখেছি যুব সমাজকে নাশকতায় অংশগ্রহণ করতে। এই বিপথগামীকে উদ্ধার করার জন্য আমাদের গৌরবান্বিত ইতিহাসের যে অর্থে প্রচার দরকার ছিল, তা হয়নি। রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব ঠিক ঠিক গতিপথে যুব সমাজকে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্যই গতবছর ৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের মধ্যে মৌলবাদী মতাদর্শের শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করে বিশ্বজিতের মতো নিরীহ যুবকের প্রাণ বিনষ্টিতে মেতে উঠেছিল(?) কিন্তু কক্সবাজারের রামু, উখিয়া, টেকনাফ কিংবা চট্টগ্রামের পটিয়ার বৌদ্ধ ও হিন্দু বসতি এবং উপাসনালয়ে হামলা হলে কেবল সেই সব সম্প্রদায়ই প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল- এ অভিযোগ দেশের বিশিষ্টজনরাই সামনে এনেছেন। ব্যাপক অর্থে নির্বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায় হিন্দু-মুসলমান একত্রে প্রতিবাদে নামেনি কেন? হিন্দু-বৌদ্ধ কিংবা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হলে আগে সব সম্প্রদায়ের যুব সমাজ সোচ্চার হয়েছে; রাজপথে নেমেছে; কিন্তু সেই চিত্র পরিবর্তন হয়েছে বর্তমানে। অথচ আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস সেই কথা বলে না।১৯৪৭-এর দেশভাগের একবছর পরে এক সার্বিক সংগ্রামে মেতে উঠেছিলেন সেই সময়ের পূর্ব বাংলার যুবকরা। তারা তাদের যৌবনকে ব্যয় করেছিলেন মুক্তিসংগ্রামের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায়। নিজের পরিচয়কে, নিজের স্বাধিকার চেতনাকে উজ্জীবিত করার সে-প্রচেষ্টা ছিল সেই সময়ের যুব সমাজের কাছে স্বপ্ন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আর একুশে ফেব্রুয়ারি, আজ যা আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তা থেকেই বাঙালি নিজেকে চিনেছিল। পরাধীনতার যন্ত্রণা একদিন কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে যাদের তারা রাজপথে নেমেছে, আর সেই পথই তাদের নিয়ে গেছে আলোর দিকে। সেই সময় থেকে চেতনার নানা মাত্রা স্ফূরিত হয়েছে। বাঙালির স্বাধিকার চেতনার জয়গান ছিল মধ্যবিত্তের ঘরে। সেই সময় নিম্নবর্গের মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না এর তাৎপর্য। কা-ারি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুসহ অনেক জাতীয় নেতা; তারাও ছিলেন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। দীর্ঘ ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তাঁদের গড়ে তুলতে হয়েছিল আমাদের একাত্তরের বিজয় মুহূর্তের প্রস্তুতি। এক বৃহৎ পটভূমি ও সময়পর্বে দাঁড়িয়ে সেই সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেছিলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মুক্তিকামী জনশক্তি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পেরেছি, ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়-গোষ্ঠীসহ সকল বাঙালি ও বিদেশি বন্ধু জনগোষ্ঠীর আত্মত্যাগ এবং অবদানের মহিমার কথা। তবে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর নেতৃত্ব ছিল তখনকার বাস্তবতা। সেই সত্যকে মেনে নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের উচিত এখনকার নিম্নবর্গকে গড়ে তোলা। নিম্নবর্গের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তবুদ্ধির চেতনাকে অনুপ্রবিষ্ট করাতে হবে শিক্ষিত যুব সমাজকেই। আদর্শ নাগরিক হতে হলে ইতিহাস সচেতন হতে হবে। কেবল প্রযুক্তির ব্যবহারে স্মার্ট হলেই চলবে না।আজকে আমরা বিশ্বের ধনী কিংবা উন্নত রাষ্ট্রের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখতে পাই, সেখানে তারা জীবনের মূলে কতগুলো রীতিনীতিকে অনুসরণ করে এগিয়ে চলেছে। তাদের জীবনে নৈতিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। স্বচ্ছতা, সততা, দায়িত্বশীলতা, আইন ও নিজ নিজ সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা, উত্তম নাগরিক হিসেবে অন্যের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা, কাজের প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা, উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধির জন্য শ্রমদান এবং নিয়মানুবর্তিতা তাদের উন্নতির অন্যতম নিয়ামক। আমাদের মতো উন্নয়নশীল কিংবা গরিব দেশের নাগরিক এর কোনো কোনোটি অনুসরণ করলেও প্রাত্যহিক জীবনে ভোগবাসনাকে গুরুত্ব দান করে সময় কাটায়। সঞ্চয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি করে। দেশপ্রেম অনুপস্থিত, একাধিক সন্তান ছাড়া অর্থনৈতিক উৎপাদন শূন্য আমাদের জীবনে। আমাদের দেশ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ কিন্তু এর ঠিক ঠিক ব্যবহার আমরা জানি না। বুঝি না প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত; এর অপচয় রোধ করি না। আমরা গরিব কারণ আমাদের শুভ আচরণের ঘাটতি রয়েছে। ইতিহাস থেকে আমরা শিক্ষা নিতে চাই না। ধনী রাষ্ট্রগুলো কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা দেখেও দেখি না। অথবা সরকারের ইতিবাচক উদ্যোগকে ব্যর্থ করার চেষ্টায় মেতে উঠি। আমাদের চিন্তায় থাকা দরকার, আমরা এই ভূখ-ের অধিবাসী কারণ আমরা এখানে বসবাস করি। সবকিছুই আমাদের জীবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। এই রাষ্ট্রে গত ৪১ বছরে অনেক ভুল কাজ সংঘটিত হয়েছে। নির্মমভাবে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। আর স্বাধীনতা বিরোধীরা এখনো দেশের মধ্যে সক্রিয় নানা অপতৎপরতায়। এসব অশুভ কর্মযজ্ঞ থেকে দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব সকলের। আমাদের দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সেই স্পৃহা ও অনুপ্রেরণা থাকতে হবে; যা একজন উন্নত বিশ্বের নাগরিকের থাকা বাধ্যতামূলক। দেশকে ভালোবাসুন আর কর্মোদ্যমী হয়ে উন্নয়নে অংশগ্রহণ করুন। চিন্তা করুন দেশের সকল ইতিবাচক অগ্রগতিকে নিয়ে। বর্তমান সরকারের আমলে অর্জিত অগ্রগতির সূচকগুলো জনগণকে জানান।",False ij,"যদি প্রতিদিন একটি ফুল আমায় খুঁজতে বেড়ে ওঠে তোমার ঠোঁটের দিকে ___ একটি কথা আমি তোমাকে জানিয়ে দিতে চাই ।তুমি কি জান আমি যখন আমার জানালার বাইরেমন্থর হেমন্তের লাল ডালেস্ফটিক চাঁদটির দিকে তাকাই,যদি ছুঁয়ে দিইআগুনের কাছটিতেঅবোধগম্য কিছু ছাইকিংবা কাটা গুঁড়ির বৃত্তাকার শরীর-এসবই তোমার নিকটে আমায় বহন করে নিয়ে যায়,যেনবা- যা কিছু অস্তিত্বশীল,সুগন্ধ, আলো, কিংবা ধাতুসমূহ,যেনবা ছোট্ট নৌকাযা বইছেআমার জন্য অপেক্ষমান তোমার দ্বীপ অভিমূখেঠিক আছে, এখন,যদি অল্প অল্প করে আমায় ভালোবাসা কমিয়ে দাওআমিও অল্প অল্প করে তোমায় ভালোবাসা কমিয়ে দেব।সহসা তুমি আমায় ভুলে গিয়েআমার দিয়ে চেও না,কেননা, এরই মধ্যে আমি তোমায় ভুলতে বসেছি।যদি তুমি অনেকক্ষণ ধরে এসব ভাব আর পাগল হয়ে যাও-পতাকার বাতাসযা বয় আমার জীবনের মধ্য দিয়ে,আর তুমি সিদ্ধান্ত নাওআমায় ছেড়ে যাবে হৃদয়ের পাড়েযেখানে আমার শিকড়,মনে রেখ যে: ঐ দিনে,ঐ মুহূর্তে,আমি আমার হাত তুলবআর আমার শিকড় যাত্রা করবেঅন্য কোনও ভূমির সন্ধানে।কিন্তু, প্রতি দিনেপ্রতি প্রহরেতুমি অনুভব করবে আমিই তোমার নিষ্ঠুর মধুর নিয়তি ...যদি প্রতিদিন একটি ফুলআমায় খুঁজতে বেড়ে ওঠে তোমার ঠোঁটের দিকে- আহ্ আমার প্রেম, আহ্ আমার আমি,আমার ভিতরে সমস্ত আগুন পুর্নবার হয় আবর্তিত আমার ভিতরে নিভে যায়নি কিছুই, কিংবা হয়নি বিস্মৃত আমার প্রেম তোমার প্রেম পেয়ে বাঁচে, প্রিয়তম,আর আমাকে পরিত্যাগ না করে যতদিন বাঁচবে তোমার আলিঙ্গনে রবে আমার প্রেম।( যদি আমায় তুমি ভুলে যাও: পাবলো নেরুদা) If You Forget MeI want you to knowone thing.You know how this is:if I lookat the crystal moon, at the red branchof the slow autumn at my window,if I touchnear the firethe impalpable ashor the wrinkled body of the log,everything carries me to you,as if everything that exists,aromas, light, metals,were little boatsthat sailtoward those isles of yours that wait for me.Well, now,if little by little you stop loving meI shall stop loving you little by little.If suddenlyyou forget medo not look for me,for I shall already have forgotten you.If you think it long and mad,the wind of bannersthat passes through my life,and you decideto leave me at the shoreof the heart where I have roots,rememberthat on that day,at that hour,I shall lift my armsand my roots will set offto seek another land.Butif each day,each hour,you feel that you are destined for mewith implacable sweetness,if each day a flowerclimbs up to your lips to seek me,ah my love, ah my own,in me all that fire is repeated,in me nothing is extinguished or forgotten,my love feeds on your love, beloved,and as long as you live it will be in your armswithout leaving mine.",False rg,"শুভ জন্মদিন কবি নির্মলেন্দু গুন।। রেজা ঘটক ১৯৪৫ সালের ২১ জুন (আষাঢ় ৭, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ) কবি নির্মলেন্দু গুণ নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা থানার কাশবনে জন্মগ্রহন করেন। বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। বর্তমানে জীবিত কবিদের মধ্যে তিনি প্রবল জনপ্রিয়দেরও একজন। মাত্র ৪ বছর বয়সে কবি মা বীণাপনিকে হারান। মা মারা যাবার পর তাঁর বাবা আবার বিয়ে করেন৷ কবি'র পড়াশুনা শুরু হয় বারহাট্টা করোনেশন কৃষ্ণপ্রসাদ ইন্সটিটিউটে ভর্তির মাধ্যমে। ১৯৬২ সালে কবি দুই বিষয়ে লেটারসহ মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পান। কবি'র স্কুল থেকে তখন মাত্র ৩ জন প্রথম বিভাগ পেয়েছিল। তখন তাঁর বাবা কবি'র মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন- “কৃষ্ণ কৃপাহি কেবলম''। মেট্রিক পরীক্ষার আগেই নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণের প্রথম কবিতা ‘নতুন কান্ডারী’৷ মেট্রিকের পর আই.এস.সি. পড়তে কবি চলে আসেন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে৷ মেট্রিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের সুবাদে পাওয়া রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপসহ পড়তে থাকেন সেখানে। তখন থেকেই ময়মনসিংহ-যাওয়া আসার মধ্যে ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকা ও আড্ডায় অনেক কবি বন্ধু জুটে যায়। নেত্রকোণার মনোরম সাহিত্যিক পরিমন্ডলে তাঁর সময় কাটতে থাকে। ১৯৬৪ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত আই.এস.সি. পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ১১৯ জন প্রথম বিভাগ অর্জনকারীর মাঝে নির্মলেন্দু গুনই একমাত্র নেত্রকোণা কলেজের ছাত্র৷ বাবা চাইতেন পুত্রধন ডাক্তারি পড়ুক। কিন্তু কবি চান্স পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগে৷ ভর্তির প্রস্তুতি নেন নির্মলেন্দু গুণ ৷ তখন ঢাকায় হঠাৎ শুরু হয় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। সেই দাঙ্গার কারণে কবি ফিরে যান গ্রামে৷ ঢাকার অবস্থার উন্নতি ঘটলে ফিরে এসে দেখেন, তাঁর নাম ভর্তি লিষ্ট থেকে লাল কালি দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে৷ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া হলো না৷ কবি ফিরে গেলেন গ্রামে৷ আই.এস.সি.-তে ভালো রেজাল্ট করায় তিনি ফার্স্ট গ্রেড স্কলারশিপ পেয়েছিলেন৷ মাসে ৪৫ টাকা, আর বছর শেষে আরও ২৫০ টাকা৷ তখনকার দিনে সেটা অনেক টাকা৷ পরে ১৯৬৯ সালে প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে বি.এ. পাশ করেন কবি নির্মলেন্দু গুন। যদিও কবি নাকি আজ পর্যন্ত সেই বি.এ. পাশের সার্টিফিকেট তোলেননি! মাঝখানে অবশ্য ১৯৬৫ সালে আবার বুয়েটে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু কবি কি আর ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের দিকে সহজে যায়!! কবি রহস্যময় এক কারণে পড়েন নি সেই বিলম্বিত চাণ্স পাওয়া বুয়েটের ইজ্ঞিনিয়ারিং৷ স্বাধীনতার পূর্বে কবি এক সময় সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। পাশপাশি জড়িত ছিলেন সাংবাদিকতায়ও। আর সেই সঙ্গে চালাতেন তুমুল সাহিত্য চর্চা। কবি নির্মলেন্দু গুন প্রধানত একজন আধুনিক কবি। শ্রেণীসংগ্রাম, স্বৈরাচার-বিরোধিতা, প্রেম ও নারী তাঁর কবিতার মূল-বিষয় হিসেবে অসংখ্যবার এসেছে। কবিতার পাশাপাশি তিনি ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন। নিজের লেখা কবিতা এবং গদ্য সম্পর্কে তাঁর নিজের বক্তব্য হলো- “অনেক সময় কবিতা লেখার চেয়ে আমি গদ্যরচনায় বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করি। বিশেষ করে আমার আত্মজৈবনিক রচনা বা ভ্রমণকথা লেখার সময় আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি যে, আমি যে গদ্যটি রচনা করতে চলেছি, তা আমার কাব্য-রচনার চেয়ে কোনো অর্থেই ঊনকর্ম নয়। কাব্যকে যদি আমি আমার কন্যা বলে ভাবি, তবে গদ্যকে পুত্রবৎ। ওরা দুজন তো আমারই সন্তান। কাব্যলক্ষ্মী কন্যা যদি, গদ্যপ্রবর পুত্রবৎ।”কবি নির্মলেন্দু গুনের বহুল আবৃত্ত কবিতাসমূহের মধ্যে - হুলিয়া, অসমাপ্ত কবিতা, মানুষ (১৯৭০ প্রেমাংশুর রক্ত চাই), আফ্রিকার প্রেমের কবিতা (১৯৮৬ নিরঞ্জনের পৃথিবী) অন্যতম। কবি নির্মলেন্দু গুন বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮২ সালে 'বাংলা একাডেমী পদক' এবং ২০০১ সালে 'একুশে পদক' লাভ করেন। কবি নির্মলেন্দু গুনের প্রকাশিত গ্রন্থ:কাব্যগ্রন্থ:'প্রেমাংশুর রক্ত চাই' (১৯৭০), 'না প্রেমিক না বিপ্লবী' (১৯৭২), 'কবিতা, অমিমাংসিত রমণী' (১৯৭৩), 'দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী' (১৯৭৪), 'চৈত্রের ভালোবাসা' (১৯৭৫), 'ও বন্ধু আমার' (১৯৭৫), 'আনন্দ কুসুম' (১৯৭৬), 'বাংলার মাটি বাংলার জল' (১৯৭৮), 'তার আগে চাই সমাজতন্ত্র' (১৯৭৯), 'চাষাভুষার কাব্য' (১৯৮১), 'অচল পদাবলী' (১৯৮২), 'পৃথিবীজোড়া গান' (১৯৮২), 'দূর হ দুঃশাসন' (১৯৮৩), 'নির্বাচিতা' (১৯৮৩), 'শান্তির ডিক্রি' (১৯৮৪), 'ইসক্রা' (১৯৮৪), 'প্রথম দিনের সূর্য' (১৯৮৪), 'আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও' (১৯৮৪), 'নেই কেন সেই পাখি' (১৯৮৫), 'নিরঞ্জনের পৃথিবী' (১৯৮৬), 'চিরকালের বাঁশি' (১৯৮৬), 'দুঃখ করো না, বাঁচো' (১৯৮৭), '১৯৮৭' (১৯৮৮), 'যখন আমি বুকের পাঁজর খুলে দাঁড়াই' (১৯৮৯), 'ধাবমান হরিণের দ্যুতি' (১৯৯২), 'কাব্যসমগ্র, ১ম খণ্ড' (১৯৯২, সংকলন), 'কাব্যসমগ্র, ২য় খণ্ড' (১৯৯৩, সংকলন), 'অনন্ত বরফবীথি' (১৯৯৩), 'আনন্দউদ্যান' (১৯৯৫ ), 'পঞ্চাশ সহস্র বর্ষ' (১৯৯৫ ), 'প্রিয় নারী হারানো কবিতা' (১৯৯৬), 'শিয়রে বাংলাদেশ ইয়াহিয়াকাল' (১৯৯৮ ), 'আমি সময়কে জন্মাতে দেখেছি' (২০০০), 'বাৎস্যায়ন' (২০০০), 'মুঠোফোনের কাব্য'।গল্পগ্রন্থ: 'আপন দলের মানুষ'ছড়ার বই:'১৯৮৭ সোনার কুঠার'আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ:'আমার ছেলেবেলা' 'আমার কণ্ঠস্বর' 'আত্মকথা ১৯৭১'(২০০৮)অনুবাদ:'১৯৮৩ রক্ত আর ফুলগুলি'ভ্রমণ কাহিনী:'পুনঃশ্চ জাপান যাত্রা'আজ কবি নির্মলেন্দু গুনের ৬৯তম জন্মদিন। কবিকে অন্তরের শুভেচ্ছা...",False rg,"সংশয়ের রাজনীতি ও এলোমেলো কথামালা___ ২৫ অক্টোবর ২০১৩ সালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি নের্তৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট যে সমাবেশ করলো, সেই সমাবেশ দেশের জনগণকে কি কি বার্তা দিল? তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র মোটামুটি এরকম-১. সমাবেশ স্থলে সামনের দিকে ছিল জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের অবস্থান। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন ধরনের ফেস্টুন, ব্যানার এবং বেলুন। আর মাথায় ছিল তাদের ব্রান্ডিং কাগজের টুপি। তাদের ব্যানার ফেস্টু আর বেলুনের দাবীগুলো ছিল সুস্পষ্ট। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল যাদের সাজা দিয়েছে এবং যারা এখনো বিচারাধীন, তাদের মুক্তি দাবী করেছে তারা।২. বিএনপি এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল শেষ পর্যন্ত জায়গা ঠেলাঠেলিতে জামায়াত শিবিরকে ছাড় দিয়েছে। ৩. সমাবেশ থেকে মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী একবারও বলেননি যে, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের দাবীগুলো তাদের নিজস্ব। যার সংগে বিএনপি'র কোনো সম্পর্ক নেই। মানে দাড়ায়, দাবীগুলো'র সঙ্গে বিএনপিও নিরব সমর্থক।৪. মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী গতকাল প্রেসক্লাবে দাবী করেছিলেন, ২৫ শে অক্টোবর থেকে বর্তমান সরকার অবৈধ। আজ সমাবেশে বললেন, আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে বর্তমান সরকার অবৈধ। মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী'র কথা অনুযায়ী যদি সরকার অবৈধ হয়, তাহলে তারাও সংসদের বিরোধী দল হিসেবে অবৈধ। কিন্তু বিশ্বের কোথাও সংসদের মেয়াদ শেষ হবার আগে সাংবিধানিকভাবেই সরকার অবৈধ হবার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান সরকারের চলতি নবম সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৪ জানুয়ারি ২০১৪। অর্থ্যাৎ ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত বিরোধী দল মানুক আর না মানুক সরকার সাংবিধানিকভাবেই বৈধ।৫. মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী সরকারের প্রশাসন, পুলিশ, নিরাপত্তা রক্ষা বাহিনী, এবং বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক ও পেশাজীবীদের কাছে একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যার অর্থ হল, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আতংকের কোনো কারণ নেই। ক্ষমা করে তাদের পক্ষে টানার একটি প্রক্রিয়ার অংশ এটা। পাশাপাশি বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেছেন, আগামীতে এই সরকারের কোনো নির্দেশ যেনো প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অনুসরণ না করেন, সেজন্য তাদের আহবান জানিয়েছেন।৬. মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের যে রূপরেখা এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে দিয়েছিলেন, সেখান থেকে এক চুলও নড়েন নি। বরং আজ সমাবেশে আবার বললেন, সংসদেও আমরা বলেছি, সংলাপ হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার কিভাবে গঠিত হবে, তা নিয়ে। আর সেই সরকারে উপদেষ্টা কারা হবেন তা নিয়ে। ৭. বিরোধীদল বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে না।এবার আসা যাক আওয়ামী লীগ নের্তৃত্বাধীন বর্তমান ১৪ দলীয় জোট সরকারের নির্বাচন কালীন সরকারের রূপরেখা কেমন ছিল? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতি'র উদ্দেশ্য ভাষণে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি ধারণা দিয়েছেন। সেটি কি ছিল?১. নির্বাচনকালীন সরকার হবে সর্বদলীয় সরকার। প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে সেই সরকারে আসার জন্য আহবান করেছেন।২. যদি বিএনপি সেই সরকারে যোগ দেয়, তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করবেন বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিতে।৩. প্রধান বিরোধীদলকে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেবার জন্য সংলাপে বসার আহবান জানিয়েছেন।৪. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র ভাষণে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের সরকারপ্রধান কে হবেন সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল না। সেই সরকারের মন্ত্রীসভার আকার কেমন হবে, সে বিষয়েও কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল না। ৫. সর্বদলীয় সরকারে যদি বিএনপি যোগ দেয়, তাদের সেই সরকারে কি কি মন্ত্রণালয় দেওয়া হবে, বা কয়টি মন্ত্রণালয় দেওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্টতা ছিল না।৬. সর্বদলীয় সরকারে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে কয়টি মন্ত্রণালয়ে ভাগ পাবে সে বিষয়েও কোনো স্পষ্টতা ছিল না।৭. সর্বদলীয় সরকার নির্বাচন কমিশনকে কিভাবে সহায়তা করবে বা নির্বাচন কমিশনকে কিভাবে শক্তিশালী করবে, বা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবে কিনা, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্টতা ছিল না।এবার আসা যাক, মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের যে রূপরেখা দিয়েছেন, সেটি কেমন? ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের ২০ জন উপদেষ্টা থেকে ১০ জন উপদেষ্টা নেবার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপি ৫ জন এবং আওয়ামীলীগ ৫ জন করে উপদেষ্টা দেবেন। সরকারপ্রধান হবেন গ্রহনযোগ্য কোনো ব্যক্তি। ইতোমধ্যে সেই ২০ উপদেষ্টা নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, উপদেষ্টা দুই সরকার মিলে আসলে ১৮ জন। তাদের মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। ৪ জন শারীরিকভাবে অসুস্থ। ২ জন নতুন সরকারে যোগ দেবার ব্যাপারে অপারগতা জানিয়েছেন। একজন ইতোমধ্যে বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন। আর দুইজনের বক্তব্য পাওয়া যায় নি। অর্থ্যাৎ মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীর রূপরেখা অনুযায়ী, কোনোভাবেই ৫ জন + ৫ জন = ১০ জন উপদেষ্টা পাওয়া সম্ভব নয়।যদি মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী'র রূপরেখা আওয়ামী লীগ মেনে নেয়, তখন দেশের অবশিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো আবার নতুন ইস্যু নিয়ে হাজির হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের গঠন এবং আকার নিয়েই বিতর্ক আরো দীর্ঘ হবে। এবার আসি, আমরা দেশের সাধারণ মানুষ কি চাইছি? বাংলাদেশের সর্বস্তরের সকল শ্রেণীপেশার সাধারণ মানুষ কি কি মনে করছে? সাধারণ মানুষের চাওয়া গুলো হতে পারে এরকম-১. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী একটেবিলে সংলাপের সূচনা করুক। একটি দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের দুই নেত্রী ২৩ বছর কথা বলেন না, এটাই দেশের সবচেয়ে বড় সংকটের প্রতীক।২. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ফোন না করেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী কেন ফোন করছেন না? ফোন করে দুইজন প্রতিদিনই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন, এটাই আমরা দেখতে চাই।৩. জাতীয় যে কোনো প্রয়োজনে প্রধান দুই নেত্রী একসঙ্গে বসে সংকটের সমাধান খুঁজবেন, এটাই আমাদের চাওয়া। শুধু পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনকালীন সংকটের সময় কথা বলার বিষয় নয়, সারা বছরই তারা কথা বলবেন, পরম্পর খোঁজখবর নিবেন, দেখা করবেন, একসঙ্গে বেড়াতে যাবেন, একসঙ্গে কফি খাবেন, একসঙ্গে আড্ডা দেবেন, একসঙ্গে একই অনুষ্ঠানে যাবেন, সারা বছরই যাবেন, এটাই আমরা চাই।৪. বাংলাদেশের বয়স ৪২ বছর হয়ে গেছে। এখন আমাদের জাতীয় স্বার্থের কথা ভেবে অন্তত একটা জাতীয় স্বার্থ রক্ষা কমিটি থাকা প্রয়োজন। যেখানে দুইনেত্রী একসঙ্গে বসে সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী থেকে শুরু করে সবার অংশগ্রহে একটি জাতীয় স্বার্থরক্ষা কমিটি গঠন করা দরকার। এই কমিটি যে কোনো রাজনৈতিক সরকারকেও গঠনমূলক পরামর্শ প্রদান করবে। সরকারের যে কোনো ভুল কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করবে। জাতীয় যে কোনো বিপর্যয়ে সর্বোচ্চ সহনশীলতা প্রদর্শন করে যুক্তিসঙ্গত সমাধান বের করবে।৫. আমরা একটি স্থায়ী নির্বাচন কালীন সরকারের কাঠামো চাই। যাতে পাঁচ বছর পরে আবার আপনারা বেওয়াজ করতে না পারেন। প্রয়োজনে সেই কাঠামো ঠিক করতে সংবিধান পুনরায় সংশোধন করেন। কিন্তু কোনো অযৌক্তিক কারণে মাত্র এবারের নির্বাচনের জন্য সংবিধান সংশোধন করাটা হবে নির্বুদ্ধিতার কাজ।৬. সকল রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য নিজ নিজ দলের বক্তব্য পেশ করুক। সবার বক্তব্য থেকে গ্রহনযোগ্য বিষয়গুলো মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনকে আমরা শক্তিশালী করি।৭. রাজপথ, হরতাল, মিছিল, মিাটিং, সমাবেশ এগুলো একটি স্বাধীন দেশে আপনারা আর কত করবেন? দেশের যদি আপনারা সত্যিকার উন্নয়ন করতে চান, আপনারা যদি সত্যিই জনগণের সেবা করতে চান, তাহলে তো আপনাদের মিছিল মিটিঙ সমাবেশ করার সময় পাওয়ার কথা না। আপনারা তো করছেন নিজেদের স্বার্থের রাজনীতি। নিজেদের সুবিধা আর ক্ষমতায় যাওয়া আর ক্ষমতা ধরে রাখার রাজনীতি। প্রকৃত জনগণের রাজনীতি আপনারা করছেন না। আপনাদের রাজনীতির কার্যকলাপ থেকে আপনাদের দেশপ্রেমই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ৮. দুর্নীতি বন্ধের জন্য আপনারা এক টেবিলে একযোগে একটা ঘোষণা দিন। হরতাল বন্ধের জন্য আপনারা এক টেবিলে একযোগে একটি ঘোষণা দিন। দলীয়করণ বন্ধের জন্য আপনারা এক টেবিলে একযোগে একটা ঘোষণা দিন। স্বজনপ্রীতি বন্ধের জন্য আপনারা এক টেবিলে একযোগে একটা ঘোষণা দিন। কালোবাজারী বন্ধের জন্য আপনারা এক টেবিলে একযোগে একটা ঘোষণা দিন। তাহলেই বুঝবো, আপনাদের দেশপ্রেম কতোটা আছে? আপনাদের এখন জনগণের কাছে সত্যিই দেশপ্রেমের পরীক্ষাটাই দিতে হবে সবার আগে।৯. ইতিহাস বিক্রি করে আপনারা আর কতোকাল খাবেন? সেই ইতিহাসেও আপনারা নিজেদের মত করে অদলবদল করেন। নিজেদের মত লেখেন। কিন্তু আসল ইতিহাস নিজেই লিখে রাখে কালের গায়ে, যা কেউ পাল্টাতে পারে না। তা নিজেই একটা ইতিহাস। আর আপনাদের পাল্টানোর ইতিহাসও আরেকটি কালো ইতিহাস।১০. যদি আমরা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসি, তাহলে, নির্বাচনের যেখানে তিনমাসও নেই, আপনাদের কে কি আগামীতে করবেন, সেই রূপরেখাগুলো কোথায়? সেগুলো বরং এসময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় হবার কথা। সেই বিষয়গুলো কি আপনারা এখনো রচনা করতে পারেন নি। নাকি সোনার হাঁস এসে সেগুলৌ রাতারাতি পয়দা করে দিয়ে যাবে??১১. আমরা যদি সত্যিই বাংলাদেশকে ভালোবাসি, নিরহ মানুষের ঘাড়ে বন্দুব রেখে ক্ষমতা দেখানোর রাজনীতি করে আর লাভ হবে না। মানুষ এখন অনেক বেশি রাজনীতি সচেতন। সো, সাধু সাবধান।",False rg,"।। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাই বর্তমান সমাজের অনাচারের জন্য দায়ী।। বাংলাদেশের বয়স ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে ৪২ বছর পূর্ণ হবে। অথচ এই ৪২ বছরে দেশে একটি আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হতে পারেনি। শিক্ষা পদ্ধতির বর্তমান যে চিত্র বিদ্যমান তা অনেকটা জগাখিচুরির মতোন। একদিকে বাংলা মিডিয়াম। যে পদ্ধতির দিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি গড় মানুষের ঝোক। নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও আংশিক উচ্চ মধ্যবিত্তের সন্তানরা এই বাংলা মিডিয়ামের স্টুডেন্ট। দ্বিতীয়টি ইংলিশ মিডিয়াম। উচ্চ বিত্ত ও আংশিক উচ্চ মধ্যবিত্তের সন্তানরা এই ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্ট। আর তৃতীয়টি হল মাদ্রাসা শিক্ষা। একেবারে গরিব, নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তের সন্তানরা এই মাদ্রাসার স্টুডেন্ট। এটি একটি সাধারণ চিত্র বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে। উচ্চ বিত্তের কোনো সন্তানকে মাদ্রাসায় বাটি চালান দিয়েও পাওয়া যাবে না। আবার একেবারে গরিব বা নিম্নবিত্তের কারো সন্তানকে ইংলিশ মিডিয়ামের কোনো স্কুলে হাজার তল্লাশি চালিয়েও পাওয়া যাবে না। তাহলে, আমাদের রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা যখন বলেন, সবার জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই কথাটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা। গরিব, নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত (আংশিক) এই পরিবারগুলোকে শিক্ষা ব্যবস্থার চলমান পদ্ধতির মাধ্যমেই দাবিয়ে রাখার একটি সুস্পষ্ট কৌশল বিরাজমান। এই কৌশলটি উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের (আংশিক) ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার একটি হাতিয়ার মাত্র। মধ্যবিত্তের সন্তানরা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মেধার যোগ্যতায় হাজির হয়। সেখানে এই প্রভাবশালী মহলটি ছাত্র-রাজনীতি'র নামে একটি স্বপ্নের মূলা ঝুলিয়ে রেখেছে। সেই মূলার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ এবং প্রচ্ছন্ন মদদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এখন হুমকির পথে। ছাত্র ধর্মঘট, দলীয় বিরোধ, নানামুখী রাজনৈতিক ক্যাচালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্থির। নির্দিষ্ট সময়ে কোর্স শেষ হয় না। শিক্ষকরা ক্লাশে নিয়মিত আসেন না। তাদের অনেকে আবার কনসালটেন্সি নিয়ে ব্যস্ত। শিক্ষক রাজনীতি তো আছেই। আর যারা ক্ষমতায় বা ক্ষমতার অপেক্ষায় তাদের সবার সন্তানরা বিদেশে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-রাজনীতি মুক্ত পরিবেশে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছেন। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো যে সকল বিষয়ে পড়ানো হয় এগুলো উন্নত বিশ্বে অনেক আগেই সেকেলে হয়ে গেছে। আমাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজাসটার ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট নেই। অথচ বাংলাদেশে এটাই হওয়া উচিত সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নাম্বার সাবজেক্ট। ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট নেই। অথচ বাংলাদেশে পানি একটি বড় সমস্যা। ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট নেই। অথচ আমাদের মহানগরগুলো যানজটে হাজার হাজার শ্রমঘণ্টা নষ্ট করছে বছরের পর বছর। মোট কথা আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মমুখী শিক্ষার একটি বড় ধরনের ঘাটতি চলমান শিক্ষা পদ্ধতিতে ক্ষমতাধররা ইচ্ছে করেই রেখে দিয়েছেন। নইলে রাজনীতি পানসে হয়ে যাবে। আমাদের মাদ্রাসাগুলোতে যারা পড়াশুনা করছে, তাদের ভবিষ্যৎ কি? সেখান থেকে কেউ কি কোনো দিন ব্যাংকার হবেন? বা সচিব হবেন? বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হবেন? এককথায় কোনো দিন সেই সুযোগ তাদের নেই। তারা বড় জোর কোনো একটা মসজিদের ইমাম হবেন। কেউবা কাঁচামাল বা সবজি বিক্রেতা হবেন। কেউবা বড়লোকের বাসায় হাউস টিউটর হবেন। কারণ, বড়লোকের ছোট্ট সন্তানটিকে একটু কোরআন শেখাবেন। একটু আরবি পড়া শেখাবেন। অথবা বাসার মিলাদে নিমন্ত্রণ রক্ষা করবেন। আর জানাজা পড়ানোর জন্য দু'একজন ডাক পাবেন। আমাদের রাজনীতির দুষ্ট চক্রের ব্যবসায়ীক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন মাদকের ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কলেজে ইয়াবা, ফেন্সি-ডাইল, ট্যাবলেট, মদ। বাংলা মিডিয়ামে ফেন্সি-ডাইল, মদ-গাঁজা। আর মাদ্রাসায় অন্ধ বিশ্বাস। এগুলো সবই মাদক। আমাদের ক্ষমতাধররা বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এগুলোর রমরমা ব্যবসার কথা জেনেও না জানার ভান করছেন। আর গোপনে সেই কারবারের লাভক্ষতি হিসাব করছেন। আর একটি জিনিস স্টুডেন্টদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে মেটা হল চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি। এটাও মাদকের মত শক্তিশালী একটি অস্ত্র। আমাদের নষ্ট রাজনীতির দূবৃত্তায়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এই মাদক এখন ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। সেই ভয়ংকর মাদকের খপ্পরে এখন নতুন প্রজন্ম। তাই এখানে ইফটেজিং একটি সামাজিক ব্যাধি। তাই এখানে ইয়াবা একটি টিনএজ ফ্যাশন। তাই এখানে মদ-গাঁজা-ট্যাবলেট একটি তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। গোটা জাতি এভাবে নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চক্রে তীলে তীলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের ক্ষমতাধরগণ কিভাবে এই প্রলয় ধ্বংসের মধ্যে আগামীতে আরো মূলা ঝুলিয়ে কিভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে সেই প্রহর গুনছেন। জাতির শরীরে এখন পচন ধরেছে। সেই পচনের জন্য আমাদের নষ্ট রাজনীতি সবচেয়ে বেশি দায়ী। ৪২ বছরে সেই পচনে এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যতোদিন আমরা একটি আধুনিক যুগোপযুগী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে না পারবো, ততোদিন এই দুর্গন্ধ, এই পচন থামানো যাবে না। সমাজকে শ্রেণীবিভাজনে আবদ্ধ রেখে সমাজের গোড়ার ক্ষত সারানো যাবে না।",False ij,"যুদ্ধ ও নির্লিপ্ততা বিষয়ক একটি চিত্রনাট্যের খসড়া ___ কাজী নুরুল হক, ৬৪; বাইফোকাল চশমার ফাঁক দিয়ে আমেরিকান মেয়েটিকে দেখছেন। দীর্ঘাঙ্গি সাদা শরীর, সোনালি চুল, নীল চোখ; নীল রঙের শাড়ি পরেছে লরেনা। ভালোই তো ...তবে - কাজী নুরুল হক মৃদু কাশলেন। উয়ারির গ্রিন ভিলার আট তলার এই সাজানো গোছানো ড্রয়ইরুমে এই মাত্র ট্রেতে তিন কাপ চা নিয়ে আর নোনতা বিসকিট নিয়ে ঢুকল নদী। মৃদু হেসে নতুন ভাবীর দিকে এগিয়ে যায় ও। আরিফ বসেছে ওর মায়ের পাশে: কালো প্যান্ট আর সাদা পাঞ্জাবি পরেছে আরিফ, ওর বসার ভঙ্গিটা অনেকটাই রিল্যাক্স। রিসেসন নিয়ে টেনশন নেই-আরিফ আছে আই টি-তে। আরিফের মা মিসেস মমতাজ হক ও দেখছেন লরেনাকে-আরিফের বউ; কী সুন্দর। আর আরিফের বাপ বলে -ইহুদি। হুহ! একটি চিত্রনাট্যের খসড়া; মাথায় ঘুরছে অনেকদিন হল -লিখতে পারছি না। হ্যাঁ, প্লট খানিকটা জটিল বিধায়। ভিন্ন সময়ে ঘটা সমান্তরাল চারটে ঘটনা ... হ্যাঁ, বিষয়টি খানিক জটিল হয়ে ওঠে। ভিন্ন সময়ে ঘটা সমান্তরাল চারটে ঘটনা -তবে কোথায় যেন মিল আছে। বললাম-চিত্রনাট্য; আসলে গল্পও হতে পারে -কিংবা উপন্যাস। কিংবা একুশ শতকে হয়তো সব শিল্পসাহিত্যের সংজ্ঞাই অবলুপ্ত হয়ে গেছে-তাই কেবলি লেখার খসড়া বলা যায় -কিংবা কেবলি ভাবনা-যা আমার মাথায় ঘুরছে কিছুদিন ধরে কিন্তু লিখতে পারছি না যেভাবে অনেক কাল আগে লেখা হয়েছিল ইলিয়দ কি রামায়ন ...ওসব লেখা যুগযুগ ধরে মানুষ পড়েছে-এখনও লেখা হয়-প্রতিদিন-অজস্র লেখা-মানুষ পড়ে-আবার ভুলে যায়- ইলিয়দ কি রামায়ন ঠিকই মনে রেখেছে -যুদ্ধের কারণে ...আমার লেখাটাও যুদ্ধ নিয়েই ...যুদ্ধ নিয়ে মানে ...যুদ্ধ ও নির্লিপ্ততা নিয়ে ... নির্লিপ্ততা এই কারণে যে -এমন একটা দৃষ্টিভঙ্গির প্রশ্রয়-যুদ্ধ তো স্বাভাবিক; যেমন - অনেক কাল আগে চর্যাপদের কবি লিখেছেন “আপনা মাংসে হরিণা বৈরী।” যুদ্ধ বা আক্রমন বা প্রতিআক্রম সভ্যতার অনিবার্য রীতি -এ নিয়ে মাতম অর্থহীন। এভাবে ...লিখে লাভ নেই তবুও মাথায় ঘুরছে ভাবনা -আমার অস্তিত্ব; অস্তিত্ব; কেননা, আমি ভাবছি বলেই আমি আছি। অথচ, সে ভাবনা অর্থহীন-কারও কাছে কোনও মূল্য নেই-এই হতাশ্বাস-এই অসহায়তা। একটি চিত্রনাট্যের খসড়া; মাথায় ঘুরছে অনেকদিন হল -লিখতে পারছি না। তারপরও ওয়ার্ড প্রসেসরে ফুটে ওঠে - দৃশ্য ১: বাগবাদের ঘন জনবসতি ... বিস্ফোরন ...মার্কিন হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত দৃশ্য ২: ঢাকার এক বস্তি ...আগুন লেগেছে ...শিশুর মৃত্যু ... দৃশ্য: ৩ আমেরিকার কোনও অঞ্চল। ধরা যাক মিনোসোটা। মিনোসোটার সুখি মানুষ। দৃশ্য: ৪ সুন্দর করে সাজানোগোছানো ঢাকার একটি বহুতল ভবনের এ্যাপার্টমেন্ট ... তাই বলছিলাম -হ্যাঁ, প্লট খানিকটা জটিল বটে। ভিন্ন সময়ে ঘটা সমান্তরাল চারটে ঘটনা ... বললাম-চিত্রনাট্য; আসলে গল্পও হতে পারে -কিংবা উপন্যাস। তবে, ফিলম হলে ভালো হয়। সারা পৃথিবীর মানুষ বুঝবে। কাহিনীবিন্যাস ... হক দম্পত্তি একটা অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। ঢাকায়। তাদের জানা নেই গ্রিন টাওয়ারের জায়গায় আগে ঘিঞ্জি বস্তি (বসতি নয়) ছিল; বহুতল গ্রিল টাওয়ার নির্মানের আগে আগুন লেগেছিল। শিশুরা পুড়ে মরেছিল। অ্যাপার্টমেন্টে ওঠার পর মিসেস মমতাজ হক সেই করুণ কাহিনী জানলেন ঠিকে কাজ করতে আসা মধ্যবয়েসী এক স্থানীয় মহিলার কাছে। মর্মান্তিক তথ্যটা অবশ্য ওনার মনে দাগ কাটেনি। হক দম্পতির একছেলে এক মেয়ে। মেয়ে পড়ে ইডেনে। ছেলে বাইরে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করছে। ষ্টেটস। একদিন ছেলের ফোন এলো মিনোসোটা থেকে। আরিফ বিয়ে করবে লরেনাকে। মেয়েটি অ্যামেরিকান। আরিফের কলিগ। হক পরিবারে নেমে আসে এক ধরনের বিষাদ মাখানো গাম্ভীর্য। নদীর মন খারাপ। কত শখ ছিল সুমিপুর সঙ্গে ভাইয়ার বিয়ে হবে। কাজী নুরুল হক; ভীষন নামাজী। তিনি আমেরিকাকে মনে করেন ইহুদি। তিনি ভীষন মর্মাহত হয়ে অক্টোবরের এক বিকেলে ফকিরাপুলে গেলেন এক পুরনো বন্ধুর কাছে । সৈয়দ আমজাদ আলী বিশিস্ট হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক। তিনি সব শুনে কাজী নুরুল হক কে অভয় দিয়ে বললেন-কোনও অসুবিধা নাই। আরিফে কুনও ভুল করে নাই। কাজী নুরুল হক এরপরও মিনমিন করেন। সৈয়দ আমজাদ আলী ধমক দিয়ে বলেন-আরে, শেখ হাসিনা মাইনা নিল-তুমি আর কী? যাও, বাড়ি যাও। তয়, শোন-মাইয়ারে বিয়ার আগে কলেমা পড়ায় নিবা। ওয়ারি ফিরতে ফিরতে কাজী নুরুল হক ভাবলেন: বিয়া হইয়া গেছে কি না তা আল্লাই জানে। এই অবধি তিনটে লিঙ্ক জোর দেওয়া গেল। দৃশ্য ২: ঢাকার এক বস্তি ...আগুন লেগেছে ...শিশুর মৃত্যু ...দৃশ্য: ৩ আমেরিকার কোনও অঞ্চল। সে অঞ্চলের সুখি মানুষ। দৃশ্য: ৪ সুন্দর করে সাজানোগোছানো ঢাকার একটি বহুতল ভবনের এ্যাপার্টমেন্ট ... ইরাক? ডিসেম্বরের শেষে আরিফ আর লরেনা এলো ঢাকায়। ছেলের পাঠানো টাকায় গ্রিন টাওয়ারের এই ফ্ল্যাটটা কেনা-তেমন হইচই হল না। নদীও গিফট পেয়ে চুপ। লরেনার সুগন্ধী সাদা শরীর, সোনালি চুল-নীল চোখ; নদী অবশ বোধকরে। ও ওর সুমি আপুকে ভুলে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে হক পরিবার সব জানতে পারে। লরেনার একটাই ভাই ; সে ইউ এস আর্মিতে ছিল। ইরাক যুদ্ধে নিহত ... আব্বা, আপনার মনে নাই? ২০০৬ সালে একটা হেলিকপ্টার বাগদাদের এক বাড়ির ওপর ভাইঙ্গা পড়ছিল ...লরার ...লরার ভাই ঐ হেলিকপ্টারের পাইলট ছিল। কাজী নুরুল হক-যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মনে করেন ইহুদিরাষ্ট্র-শীতল কন্ঠে বললেন: অ। কন্ঠে সামান্য উষ্মা-ইহুদি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হইছে তো কী ... তাই তখন বলছিলাম, আমার চিত্রনাট্যের খসড়াটা যুদ্ধ নিয়েই ...যুদ্ধ নিয়ে মানে ...যুদ্ধ ও নির্লিপ্ততা নিয়ে ... নির্লিপ্ততা এই কারণে যে -এমন একটা দৃষ্টিভঙ্গির প্রশ্রয়-যুদ্ধ তো স্বাভাবিক; যেমন - অনেক কাল আগে চর্যাপদের কবি লিখেছেন “আপনা মাংসে হরিণা বৈরী।” তেলের জন্য ইরাক আক্রমন তো স্বাভাবিক। পারস্যের সম্রাটদের ধনসম্পদের লোভে যুদ্ধবাজ আলেকজান্দার পারস্য আক্রমন করেছিলেন-তার পরও তিনি গ্রেট । যুদ্ধ বা আক্রমন বা প্রতিআক্রম সভ্যতার অনিবার্য রীতি -এ নিয়ে মাতম কি চিত্রনাট্য লেখা অর্থহীন ... সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:৩৯",False rn,"বাংলা সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (আট) ৭১। 'কলকাতার কাছেই', 'পৌষ ফাগুনের পালা' এবং 'উপকন্ঠ' লেখক- গজেন্দ্র কুমার মিত্র। এই তিনটি খন্ড আমার অনেক বেশি প্রিয়। আসলে এটি ত্রিপিটক উপন্যাস, খাস ইংরেজিতে যাকে বলে 'ট্রিলজি'। একটা কিনলে বা পড়লে পরবর্তী বাকী দু'টির জন্য হাঁসফাস করবেন! একেকটি বই যেন একেকটি নেশা। পৌষ ফাগুনের পালা শেষেরটি পড়ার পরেও দুঃখ হয় তারপর কি ...। কথাসাহিত্যিক গজেন্দ্র কুমার মিত্রের সর্বোত্তম সাহিত্যসৃষ্টি। উনবিংশ শতাবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর শুরু -এই রকম সময়ের পটভূমিতে এই ট্রিলজি কাহিনীর সূত্রপাত। কুলীন ব্রাহ্মণের বিধবা পত্নী রাসমণি ও তার তিনি কন্যার জীবন নিয়ে এই উপন্যাস-ত্রয়ীর কাহিনী শুরু। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মধ্যমা শ্যামাকে কেন্দ্র করে কাহিনী আবর্তিত হয়েছে, তবু রাসমণির তিন কন্যার ক্রমবর্ধমান পরিবারের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার নরনারী বিভিন্ন ঘটনাসূত্রে কাহিনীতে অসাধারণ বৈচিত্রের সৃষ্টি করেছে এবং শেষ পর্যন্ত কাহিনীর অখন্ডতা লাভ করেছে। সংস্কারে সংস্কৃতিতে উন্নত অথবা নিদারুণ দারিদ্র ক্লিষ্ট মধ্যবিত্ত সমাজের এই সব মানুষের ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র স্বার্থ-সংকীর্ণতা, আশা-নিরাশা, ছোট বড়, সুখ দুঃখ. বিপদ আপদ সবকিছুর মধ্যদিয়েও তাদের অপরাজেয় জীবনাকোঙ্ক্ষার এবং জীবনযুদ্ধের এক নিটোল অনবদ্য কাহিনী শুনিয়েছেন লেখক যা আমরা আগে শুনিনি, আজকাল শোনা যায় না, অদূর ভবিষ্যতে শুনব কিনা সন্দেহ। অনেকেই হয়তো গজেন্দ্র মিত্রকে সেভাবে জানেন না। পড়ুন এবং তারপর জানবেন। ৭২। 'আমার প্রিয় ভৌতিক গল্প'- হুমায়ূন আহমেদ সম্পাদিত। মোট চব্বিশটি গল্প আছে। দারুন সব গল্প, ভূতের গল্প। জনপ্রিয় সব লেখকদের- চমৎকার সব গল্প। পড়ুন। আমার বিশ্বাস আপনাদের অনেক ভাল লাগবে। ৭৩। 'অসাধু সিদ্ধার্থ' লেখক- জগদীশ গুপ্ত। উপন্যাসের নটবর দলছুট চরিত্র। সে 'লঘু-গুরুর' বিশ্বম্ভর কিংবা পরিতোষের মতো 'স্বভাবসিদ্ধ ইতর' বা 'কোমরবাঁধা শয়তান' নয়; শয়তানিতে তার দক্ষতা প্রশ্নাতীত, কিন্তু উপন্যাসের আখ্যানে এটি অতীত, তার মানুষ আর প্রেমিক হয়ে ওঠার সাধনাটুকুই তার সপ্রাণ বর্তমান। এই বর্তমানটুকু মনে রাখলে তার বাইরের এবং ভেতরের মানুষটিকে চেনা যায় সহজেই। তার পরিণতির বেদনাটুকুও বোঝা যায়। জগদীশ গুপ্তের উপন্যাসে সব সময়ই দ্রুত ঘটে যায় সব ঘটনা। ৭৪। 'সেয়ানা' লেখক- সত্যেন সেন। সত্যেন সেন জেল প্রকোষ্ঠে বসেও তিনি লিখেছেন নিরন্তর। এক সময় জেলখানায় পত্রিকা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে বাইরের খবর তিনি জানতেই পারতেন না। তখন সময় কাটবে কি করে ? এটা ব্রিটিশ যুগের কথা। ও সময় অবশ্য পত্রিকা বন্ধ করে বাইবেল দেয়া শুরু হলো। তাতেই সন্তুষ্ট হলেন সত্যেন সেন। তিনি বইবেলের কাহিনী নিয়ে লিখলেন দু”খানা উপন্যাস- অভিশপ্ত নগরী ও পাপের সন্তান। সেয়ানা নামের উপন্যাসটির নায়ক জেল খানারই হয়তো কেউ। তিনি লিখতেন একদম ভেতর থেকে। তাই তার লেখা মানুষকে স্পর্শ না করে পারে না। সত্যেন দা” জেলে বসেও উবু হয়ে নিরন্তর লিখে চলতেন। জেলখানায় তো চেয়ার টেবিল ছিলো না, তাতে সত্যেনদার কিছু যেত আসতো না। সিমেন্টের ফ্লোরে দিনের পর দিন উবু হয়ে বসে লিখতে লিখতে তার কনুইয়ের চমড়া ইস্পাতের মতো হয়ে গিয়েছিলো। ৭৫। কাশবনের কন্যা' লেখক- শামসুদ্দীন আবুল কালাম। শামসুদ্দীন আবুল কালামের দু’টি উপন্যাস সম্পর্কে হাসান আজিজুল হকের মন্তব্য। তিনি লিখেছেন, “... শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘কাশবনের কন্যা’ এবং ‘কাঞ্চনমালা’য় সমসাময়িক রাজনীতির কোনো ছাপ নেই... সময়ের কোনো বোধ নেই... ‘কাশবনের কন্যা’ ও ‘কাঞ্চনমালা’য় নরনারীর প্রেমই তো আসল বিষয়। তবু বলতে হয়, শামসুদ্দীন আবুল কালাম একটি স্থূল ও পুরুষ্টু কাহিনী ছাড়া আর কিছুই আমাদের দেন না। বরিশাল অঞ্চলের গ্রামজীবনকে কেন্দ্র করে ‘কাশবনের কন্যা’ উপন্যাসটি যেভাবে এগিয়ে চলে তা পাঁচশো বছর আগেকার গ্রাম হতে পারতো এবং যে-কোনো গ্রাম্য পুঁথির বিবরণ হলে তাতে কোনো বাধা ছিলো না। আধুনিক বাংলা উপন্যাসের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে উপন্যাস দুটি যে কাহিনী আমাদের উপহার দেয়, তার মধ্যে চিরায়ত বাংলাদেশের কোনো সত্যও ধরা পড়ে না। শ্লথ গদ্যে লেখা এই কাহিনী দুটিতে এক ধরনের আন্তরিকতা ছাড়া আর কিছু তেমন ধরা পড়ে না।...” ৭৬। 'জলরাক্ষস' লেখক- আবুবকর সিদ্দিক। লেখক আবু বকর সিদ্দিকীর ”জলরাক্ষস” বইটি প্রকাশিত হবার পর এরশাদের সামরিক-শাহী লেখকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। লেখককে সংক্ষিপ্ত বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তার প্রায় বিশ বছর পর এই লেখকেরই কন্যা বিদিশা সেই বিশ্ববেহায়ার অঙ্কশায়িনী হয়েছে। চেতনা বোধহয় প্রজন্মান্তরে বাধাহীনভাবে প্রবাহিত হয় না। নয়ত পিতাকে নির্যাতন আর অপমানকারীকে আলিঙ্গন করতে কন্যার বাধে না কেন? আবুবকর সিদ্দিক কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রে কট্টর বস্তুবাদী, সমাজনিষ্ঠ শিল্পী। আর বামপন্থী রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে জীবনকে সমীক্ষা করার একটা স্বতঃস্ফূর্ত প্রবণতা এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয়। জীবনের একটা প্রধান সময় তাঁর অতিবাহিত হয়েছে বাম চিন্তাদর্শের ঘনিষ্ঠ সানি্নধ্যে। সেখান থেকে যে গভীর অভিজ্ঞতা ও প্রেরণার শাঁস তুলে এনেছেন তা যেমন বাস্তববাদী, তেমনি অকৃত্রিম। ৭৭। 'বিলোরিস' লেখক- অঞ্জলি লাহিড়ী। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন কমিউনিষ্ট বিপ্লবী। তেভাগা আন্দোলনের সক্রীয় কর্মী। বাংলা দেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও অসম মেঘালয়ে সক্রীয় স্বেচ্ছাসেবী, জীবনের পঞ্চাশ বছর পার করে লিখতে শুরু করেন অঞ্জলি লাহিড়ি। ক্রমেই অসমের বাংলা সাহিত্যের অভিবাবক স্বরূপা হয়ে উঠেন। নিজে অবিভক্ত কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য ছিলেন যখন বিয়ে করেছিলেন তখনকার আর সি পি আই দলের আরেক কর্মী প্রয়াত নিরেন লাহিড়িকে। ৭৮। 'বাওয়ালী উপাখ্যান' লেখক- হুমায়ূন রহমান। নাম কি তোমার? করিম বাওয়ালী।- ভয়ার্তকন্ঠ বাওয়ালীর কুঠির খাতায় নাম লিখিয়েছিলে?-সক্রোধ দৃষ্টি রেনী সাহেবের। না হুজুর! আর কোন প্রশ্ন করার প্রয়োজন মনে করলো না রেনী সাহেব, শপাং শপাং চাবুকের আঘাতে ককিয়ে উঠলেন করিম বাওয়ালি, মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। বাবার এই অবস্থা দেখে গোলপাতার আড়ালে আর লুকিয়ে থাকতে পারলোনা কিশোরী কমল। সুন্দরবনের বাঘের হাত থেকে বাঁচার জন্য যে বর্শাটা সে সাথে রাখতো সবসময়ে, সেটাই সর্বশক্তি দিয়ে আকড়ে ধরে লাফিয়ে এসে পরলো রেনীর সামনে। এই আতর্কিত হামলার জন্য রেনী প্রস্তুত ছিল না, কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই কমল বর্শাটা ছুড়ে দিল রেনীর বুকের দিকে লক্ষ করে। তবে রেনী ভাগ্যভাল যে সেটা বুকে না লেগে বাহুতে লাগলো, যন্ত্রনায় চিৎকার করে উঠলো সে। অতো কিছু খেয়াল করার সময় নেই কমলের; সে তার বাবা দুজনে মিলে রেনীর চাবুকটা দিয়েই পেচিয়ে তাকে বেধে রেখে তার ঘোড়ায় করে গহীন অরন্যের দিকে হারিয়ে গেলেন। তারপর? ... বইটা পড়ুন। পুরান বইয়ের দোকানে গিয়ে দেখুন বইটা খুঁজে পান কিনা।৭৯। 'মোহিনীর থান' লেখক- নাসিমা আনিস। কবি ও সাহিত্যিকদের কলমে আরেক উপেক্ষিত হচ্ছে হিজড়া সম্প্রদায়। তাদের সুখ-দুঃখ নিয়ে কেউ মাথা ঘামাননি; ব্যতিক্রম নাসিমা আনিসের সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘মোহিনীর থান’। ৮০। 'কুহেলিকা' ও 'মুত্যুক্ষুধা' লেখক- কাজী নজরুল ইসলাম। ""কুহেলিকা"" নজরুলের শ্রেষ্ট একটি সৃষ্টি। এই উপন্যাস পাঠকদের মন ছুঁয়ে যাবে। কুহেলিকা'র মূল চরিত্র ""জাহাঙ্গির"" পার্শ্ব চরিত্র আরো আছে। তবে আমাকে ভবিয়েছে জাহাঙ্গিরের জন্ম সংক্রান্ত বিদ্রোহের বর্ণনা। বন্ধু হারুণের সাথে হারুণের বাড়ীর দিকে যাত্রা। হারুণের পাগলী মায়ের অদ্ভুত আচরণ। তাঁর অন্ধ পিতা, খোন্দকার সাহেব সহ তাঁর দুই বোনের চরিত্র, সাথে উপন্যাসের সংলাপ গুলো গভীর মনস্তাত্বি ভাব বহন করে। মৃত্যুক্ষুধা প্রথম মহাযুদ্ধ পরবর্তীকালের রচনা। এ উপন্যাসের ভাষা একান্তই নজরুলীয় বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ। তিনি চরিত্রের স্বাভাবিকতার স্বার্থে যার যার মুখে যে সংলাপ প্রযোজ্য তাই রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। উপন্যাসের প্রথমাংশ কৃষ্ণনগরে এবং শেষাংশ কলকাতায় রচিত। কৃষ্ণনগরে অবস্থানকালে নিদারুণ দুঃখ-কষ্ট এবং দুঃসাধ্য কৃচ্ছ্রসাধন ছিল নজরুলের নিত্য জীবনযাত্রার অঙ্গ। তাই দারিদ্রের চিত্র, সাম্য ও বিপ্লবীচেতনা এ উপন্যাসের রূপকল্পের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।",False rg,"সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী।। রেজা ঘটক ২০১০ সালের ১০ থেকে ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই সফরের উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল, ভারত ও বাংলাদেশ কতগুলো দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে পারস্পারিক উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করতে অঙ্গীকার করে। সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ৫১ দফা যৌথ দ্বিপাক্ষিক ইস্যুর আর্টিকেল ৩৫ অনুসারে ২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সচিব এবং ভারতের বিদ্যুৎ সচিব একটি এমওইউ (memorandum of understanding) চুক্তি সাক্ষর করেন। ওই এমওইউ অনুযায়ী, ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (the National Thermal Power Company of India) ও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (the Power Development Board of Bangladesh) যৌথভাবে বাগেরহাটের রামপাল এলাকায় একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ এপ্রিল ২০১৩ সালে ঢাকায় বিদ্যুৎ ভবনে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি আসলে কী? ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য বাগেরহাটের রামপালে এই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণ করা হবে। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই নির্মাণ ব্যয়ের শতকরা ৭০ ভাগ বৈদেশিক ঋণ থেকে ধার করা হবে। বাকী শতকরা ৩০ ভাগ প্রকল্প ব্যয় বাংলাদেশ ও ভারত সমানভাবে অর্থ্যাৎ শতকরা ১৫ ভাগ হারে বহন করবে। এই প্রকল্প থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সেই বিদ্যুৎ কিনবে ভারতের কাছ থেকে! আর বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত হবে একটা ফর্মুলা অনুসারে। কী সেই ফর্মূলা? যদি কয়লার দাম প্রতি টন ১০৫ ডলার হয় তবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম হবে ৫ টাকা ৯০ পয়সা। আর যদি কয়লার দাম প্রতি টন ১৪৫ ডলার হয় তবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম হবে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কয়লার দাম প্রতি টন ১৪৫ ডলার চূড়ান্ত করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ এই প্রকল্প থেকে বাংলাদেশ যদি বিদ্যুৎ কিনতে চায় তবে, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম হবে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা। অথচ এর আগে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, খুলনার লবণচরা এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারায় যে তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যাপারে বাংলাদেশের ওরিয়ন গ্রুপের সঙ্গে পিডিবির চুক্তি করেছিল, সেখানে পিডিবি মাওয়া থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে ৪ টাকায় এবং আনোয়ারা ও লবণচড়া থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে ৩ টাকা ৮০ পয়সা হিসেবে। কিন্তু রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্ট থেকে পিডিবি'র প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা। এটা কার স্বার্থে করা হল? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ অংকের এই খেলা বুঝবে না, তাই? নাকী একদল লোক সরাসরি পার্সেন্টেজ ব্যবসায় জড়িত!! তারা কত শক্তিশালী তা আমাদের মতো আমজনতার বোঝার সাধ্য নাই। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে কি পরিমাণ জমি লাগবে? রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ওই এলাকায় সরকারকে মোট প্রায় ১৮৩০ একর ধানী জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ১৮৩০ একর ধানী জমি অধিগ্রহণের ফলে ওই এলাকা থেকে প্রায় ৮ হাজার পরিবারকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রতি পরিবারে যদি গড়ে পাঁচজন সদস্য হয়, তাহলে মোট প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করতে হবে। ৪০ হাজার মানুষকে তাদের বাপদাদার বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদ করে আমরা কী পাব? ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুৎ আবার কিনতে হবে প্রায় দ্বিগুন দামে। কার স্বার্থে আমরা এই বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করব? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আরো ভয়ংকর বিষয় সামনে চলে আসবে। যদিও এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মাত্র ৬০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কেন্দ্রটিতে ৬৬০ মেগাওয়াটের মোট দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট থাকবে। যার মধ্যে প্রথম ইউনিটটি নির্মাণ করতে প্রায় সাড়ে চার বছর সময় লাগবে। অর্থ্যাৎ প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে ২০১৮ সাল নাগাদ। আর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে পরবর্তী ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সময় লাগবে আরো সাড়ে চার বছর। অর্থ্যাৎ ২০২৩ সাল নাগাদ এই রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে আমরা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতে পারি। ততোদিন ওই এলাকায় কী কী হতে পারে একবারও কী আমাদের সরকারের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা তা ভেবে দেখেছেন? এই নয় বছরে গোটা এলাকার পরিবেশ, কৃষি, মৎস্য ও পানিসম্পদের উপর বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। যে কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে আমাদের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের প্রায় গোটাটাই ধ্বংস হয়ে যাবে। মানে হল, ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিনিময়ে আমরা সুন্দরবন ধ্বংস করার বীজ রোপন করেছি!!! রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প দিয়ে আমরা কীভাবে সুন্দরবন ধ্বংস করব তার একটি সংক্ষিপ্ত খতিয়ান তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ১.রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত এলাকাটি আগে সুন্দরবনের অংশ ছিল। বর্তমানে সুন্দরবন থেকে ওই এলাকার দূরত্ব মাত্র ৫ থেকে ১৪ কিলোমিটার। সুন্দরবনের এতো নিকটে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করলে তা সুন্দরবনকে অবশ্যই ধ্বংস করবে। ২. রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সকল প্রয়োজনীয় মালামাল ও যন্ত্রপাতি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নদীপথে পরিবহন করা হবে। ফলে বাড়তি নৌযান চলাচল, তেল নিঃসরণ, শব্দদূষণ, আলো, বর্জ্য নিঃসরণ ইত্যাদি সুন্দরবনের টোটাল ইকো সিস্টেমকে, বিশেষ করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, ডলফিন, ম্যানগ্রোভ বন ইত্যাদির উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। ৩. ভারী নৌযান চলাচলের জন্য প্রয়োজন হবে নদী ড্রেজিংয়ের। নদী ড্রেজিংয়ের কারণে নদীর পানি ঘোলা হবে। নদী ড্রেজিং সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বাড়তি তেল-গ্রিজ ইত্যাদি নিঃসৃত হয়ে নদীর পানি দূষিত হবে। ফলে ওই অঞ্চলের সকল নদীর মাছ ও ডলপিন মারা যাবে। ৪. মালামাল ও ভারী যন্ত্রপাতি খালাসের জন্য প্রকল্প এলাকায় জেটি নির্মাণ করতে হবে। এই জেটি নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে পশুর নদের তীরবর্তী বর্তমানে যে ম্যানগ্রোভ বনের সারি আছে, তা কাটা পড়বে। নদীতীরের ঝোপঝাড় কেটে ফেলার কারণে ঝোপঝাড়ের বিভিন্ন পাখি, বিশেষ করে সারস ও বকজাতীয় পাখির বসতি নষ্ট হবে। ৫. বিদ্যুৎ কেন্দ্র যখন অপারেশনে থাকবে তখন ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন অন্তঃত প্রায় ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাই-অক্সাইড ও ৮৫ টন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে। যা ওই অঞ্চলে চরম পরিবেশ ভারসাম্য নষ্ট করবে। ৬. বিদ্যুৎ কেন্দ্র যখন অপারেশনে থাকবে তখন পশুর নদ থেকে প্রতিঘণ্টায় ৯ হাজার ১৫০ ঘনমিটার করে পানি প্রত্যাহার করা হবে। যা পশুর নদের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করবে। ৭. রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরিশোধন করার পর তরল বর্জ্য বা ইফ্লুয়েন্ট ঘন্টায় ১০০ ঘনমিটার হারে পশুর নদীতে নির্গত করা হবে, যা গোটা সুন্দরবন এলাকার পরিবেশ ধ্বংস করবে। ৮. রামপাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ২৭৫ মিটার উচু চিমনি থেকে নির্গত গ্যাসীয় বর্জ্যের তাপমাত্রা হবে ১২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে আশপাশের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। যা সুন্দরবন অঞ্চলের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। ৯. কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বছরে অন্তঃত ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টন ফ্লাই অ্যাশ ও ২ লক্ষ টন বটম অ্যাশ উৎপাদিত হবে। যাতে বিভিন্ন ভারী ধাতু, যেমন- আর্সেনিক, পারদ, সীসা, নিকেল, ভ্যানাডিয়াম, বেরিলিয়াম, ব্যারিয়াম, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, রেডিয়াম মিশে থাকবে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। ১০. এই বিষাক্ত ছাই পরিবেশে নির্গত হলে যেমন ব্যাপক দূষণ হবে তেমনি এই ছাই দিয়েই প্রকল্পের মোট ১৮৩০ একর জমির মধ্যে ১৪১৪ একর জমি ভরাট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে! এই বর্জ্যছাইয়ের বিষাক্ত ভারী ধাতু নিশ্চিতভাবেই বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে প্রকল্প এলাকার মাটি ও মাটির নিচের পানির স্তর দূষিত করবে। এর প্রভাব শুধু প্রকল্প এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। গোটা সুন্দরবন এলাকায় ছড়িয়ে যাবে। ভবিষ্যতে যা সুন্দরবন অঞ্চলে প্রতিনিয়ত এসিড বৃষ্টির কারণ হতে পারে। ১১. সাধারণতঃ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রতি ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রায় ২.২ বিলিয়ন গ্যালন পানির প্রয়োজন হয়। রামপালের প্রকল্পের ক্ষেত্রে পানির এই প্রয়োজন নিঃসন্দেহে মেটানো হবে পশুর নদের পানি থেকে। পশুর নদের পানি নোনা ও মিঠা জলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের প্রয়োজন মেটাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই নদীর সঙ্গে ওই গোটা অঞ্চলের সামগ্রিক জীববৈচিত্র্যের সংযোগ রয়েছে। এটি ওই অঞ্চলের জনবসতির ক্ষেত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নদ। পশুর নদের পানির ভারসাম্য নষ্ট হলে গোটা সুন্দরবন অঞ্চলে বিপর্যয় নেমে আসবে। যা আসলে আমাদের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে ধ্বংস করে ফেলবে। এবার আসি কিছু প্রয়োজনীয় কথায়। যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত একটি গবেষণা জরিপে দেখা গেছে, ২০১০ সালে দেশটির মোট কার্বন ডাই-অক্সাইডের ৮১ ভাগ উদগীরণ করেছে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলো। যা থেকে মোট শক্তির মাত্র ৪১ ভাগ পাওয়া গেছে। এ বিবেচনায় বিশ্বব্যাপী সকল দেশেই কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আমেরিকার মতো সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে পারবে না। তা এখনই একশোভাগ নিশ্চিত করে বলা যায়। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো মারাত্মকভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে বলে সাধারণতঃ বনাঞ্চলের কাছাকাছি এই ধরনের প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় না। রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা সুন্দরবনের ঘোষিত সংরক্ষিত ও স্পর্শকাতর অঞ্চল থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে। বিশ্বের কোথাও মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটায় বলে সংরক্ষিত বনভূমি ও বসতির ১৫-২০ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয় না। কিন্তু রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কীভাবে অনুমোদন দেওয়া হল? এই অনুমোদনের আগে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে কোনো গবেষণা কী করা হয়েছে? বাংলাদেশের মতো একটি গরিব দেশে সুন্দরবনের মতো ইকো সিস্টেম ধ্বংস করার জন্য কেন আমরা এই প্রকল্প অনুমোদন করব, তা স্বাভাবিক কারণে কারোর পক্ষেই কাম্য হতে পারে না। বিগত ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আয়ালার পর সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। সিডর ও আয়ালা ছিল প্রাকৃতিক ঘটনা। তাই সুন্দরবন আবারো তার জৌলুস নিয়ে ফিরে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু মানুষ সৃষ্ট বিপর্যয় থেকে সুন্দরবন কোনো দিনও বাঁচতে পারবে না। রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে তা আমাদের সুন্দরবনকে ধ্বংস করে দেবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আকুল আবেদন, রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন করবেন না। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প গোটা সুন্দরবনকে ধ্বংস করে দেবে। তাছাড়া এই প্রকল্পে ভারত মাত্র শতকরা ১৫ ভাগ বিনিয়োগ করে মুনাফা পাবে শতকরা ৫০ ভাগ। আবার এই প্রকল্পে ভারতীয় কোম্পানির মালিকানাও থাকবে অর্ধেক। আবার আমাদের বিদ্যুৎ কিনতে হবে দ্বিগুন দামে। এটা কোনোভাবেই কোনো গ্রহনযোগ্য প্রকল্প হতে পারে না। এর আগে, এই ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসির ভারতের মধ্যপ্রদেশে প্রস্তাবিত একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ভারত সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় বাতিল করে দিয়েছিল। ভারতের পরিবেশ মন্ত্রক তখন বলেছিল, “বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য প্রস্তাবিত স্থানটি কৃষিজমি। যা মোটেই প্রকল্পের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া নর্মদা নদী থেকে প্রকল্পের জন্য ৩২ কিউসেক পানি টেনে নেওয়া প্রকল্পের জন্য বাস্তবসম্মত নয়। কৃষি জমির সল্পতা, নিকটবর্তী জনবসতি, পানির সল্পতা, পরিবেশগত প্রভাব এসব বিবেচনায় এই প্রকল্প বাতিল করা হল।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যে বিবেচনায় এনটিপিসি নিজের দেশ ভারতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারেনি, সেই একই বিবেচনায় বাংলাদেশে তাদের প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হবে আত্মঘাতী। যা আমাদের গোটা সুন্দরবনকেই ধ্বংস করে দেবে। তাছাড়া চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় কোম্পানিকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত মুনাফার উপর কোনো করও দিতে হবে না। এটা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তির সুস্পষ্ট বৈষম্যমূলক নীতি এবং বাংলাদেশের জন্য অলাভজনক। তাছাড়া, নয় বছরে মাত্র ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য আমাদের সুন্দরবনকে ধ্বংস করতে দেওয়ার সুযোগটি কোনো সুস্থ মাথার চিন্তা হতে পারে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সুন্দরবনকে বাঁচাতে চাইলে, গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জীব-বৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষা করতে চাইলে, এখনই বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী এই রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করুন। নইলে সভ্যতার কোনো সম্পূরক টিকাই এই ধ্বংস থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারবে না। রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল কর, করতে হবে। নইলে গোটা সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে চোখের সামনে। আসুন এই রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের জন্য সবাই একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। সুন্দরবনের স্বাভাবিক জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করতে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সকল পরিবেশবাদী মানুষের এক কাতারে সামিল হবার জন্য অনুরোধ করছি। সুন্দরবন কারো ব্যক্তি সম্পত্তি নয়। সুন্দরবন ধ্বংস করার যে কোনো চক্রান্ত রুখে দিতে হবে। সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:১৯",False mk,"শান্তি মিশনে বাংলাদেশ_ নেতিবাচক প্রচারে এসিএইচআর এসিএইচআর এর আগে ডানঘেঁষা অধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খানের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের নেতিবাচক প্রচারে দেখা গেছে।সংস্থাটি বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ: সেন্ডিং ডেথ স্কোয়াড টু কিপ দ্য ইউএন’স পিস’ শিরোনামে তাদের ২০১৪ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, এ বিষয়ে এটিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন।আর এমন এক সময়ে এসিএইচআর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করল, যখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হার্ভে ল্যাডসাউ বাংলাদেশ সফর করছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ যে সেনা সদস্যদের শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠায়, তাদের মধ্যে অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং র‌্যাপিড অ্যাকশ ব্যাটালিয়নে (র‌্যাব) দায়িত্ব পালন করেছেন। আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে র‌্যাবকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা হয়েছে। এসিএইচআর- এর দাবি, বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ১৫টি বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া ৪৬৪ জনকে আটক, ৩৭৪টি নির্যাতন, জোর করে উচ্ছেদের ২৮৫টি ঘটনা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ১ হাজার ৭০টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় জড়িত। একইসঙ্গে ২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের পর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সন্দেহভাজন অন্তত ৭০ জনকে হেফাজতে নিয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।এছাড়া র‌্যাব সদস্যরা ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ‘ক্রসফায়ারের নামে’ ৭৭৬ জনকে হত্যা করেছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, যে বাহিনীর ২০৮ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৮৩ জনই সেনাবাহিনীর।প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকা’ এই সেনা সদস্যদের একটি বড় অংশকে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে পাঠিয়েছে।এসিএইচআর- এর পরিচালক সুহাস চাকমা বলেন, “র‌্যাবের বিচার বহির্ভূত হত্যা ধামাচাপা দেয়ার একটি নগ্ন চেষ্টা হলো এই ক্রসফায়ার। ২০০৪ সালে এই বাহিনী গঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধী চক্র এবং সন্ত্রাসীদের সঙ্গে র‌্যাবের অসংখ্য ক্রসফায়ারের কথা বলা হলেও তাতে এই বাহিনীর একজন সদস্যও মারা যাননি।” প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যুক্ত হতে পারা যথেষ্ট লোভনীয় একটি সুযোগ, কেননা সেখানে একজন সেনা কর্মকর্তা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বাইরেও প্রতি মাসে ২ হাজার ২০০ ডলার করে পান। আর একজন সৈনিক সেখানে পান ১ হাজার ১০০ ডলার। অন্যদিকে বাংলাদেশে একজন সেনা কর্মকর্তার বেতন মাসে ১৫ হাজার টাকা (২০০ ডলারের মতো) এবং সাধারণ সৈনিক পান ৭ হাজার ৭১৭ টাকা ( ১০০ ডলার)।অবশ্য সেনাবাহিনীর বেতন কাঠামো অনুযায়ী বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের বেতন এসিএইচআর- এর দাবির তুলনায় বেশি। শন্তি মিশনে যোগ দেয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে ৯৩ শতাংশই আসেন সেনাবাহিনী থেকে। বাকিরা পুলিশ, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্য।শান্তি মিশনে যাওয়ার সুযোগ থেকে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ‘বঞ্চিত’ করাও ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ছিল বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।ওই বছর ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় রক্তাক্ত বিদ্রোহের সেই ঘটনায় নিহত ৭৪ জনের মধ্যে ৫৭ জনই ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। এসিএইচআর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সে সময় বিডিআর সদস্যদের অভিযোগের নিষ্পত্তি না করে জনগণকে জানানো হয় যে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের নিতে আপত্তি তুলেছে।সুহাস চাকমা বলেন, “এটাও ছিল একটি নির্জলা মিথ্যা।… বাংলাদেশ সরকারই শান্তি মিশনে বিডিআর ( পরে যে বাহিনীর নাম হয়েছে বিজিবি) সদস্যদের না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়, কেননা পিলখানার সেই বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে জাতিসংঘের চাকরি করায়ত্ত করার পেছনে সেনাবাহিনীর বিশাল স্বার্থের বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।”প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রায় ৭ শতাংশ সদস্য জাতিসংঘ শান্তি মিশনে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কোনো সময়ই এই হারের নড়চড় হয়নি। বাংলাদেশের ওপর ‘সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ক্রমাগতভাবে বাড়াতে’ জাতিসংঘও অবদান রেখে আসছে বলে মন্তব্য করা হয় এই প্রতিবেদনে। তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ ২৪.কম",False rn,"চরের জীবন লেখার সাথে সামঞ্জস্য আছে এমন ছবি খুঁজে পেলাম না। তাই আমার বইয়ের প্রচ্ছদটি লেখার সাথে ব্যবহার করলাম। ইদানিং আমার সব কিছু ফেলে 'চর' এ চলে যেতে ইচ্ছে করছে। যেদিকে চোখ যাবে শুধু ধু ধু বালি আর বালি। ছোট্র একটা টিনের ঘর বানাবো। ছোট্র একটা উঠান থাকবে। জোছনা রাতে উঠানে বসে চাঁদ দেখব। একটা স্কুল করব। চরের ছোট ছোট বাচ্চাদের লেখা পড়া শেখাবো। বিশেষ বিশেষ দিনে চরের সমস্ত মানুষ মিলে একসাথে রান্না করবে। সবাই একসাথে বসে খাবে, গল্প করবে। যার গলা ভালো সে গান করবে। বাংলাদেশের চরগুলিকে পাঁচটি উপ-এলাকায় ভাগ করা হয়েছে, যথা: যমুনা নদী, গঙ্গা নদী, পদ্মা নদী, আপার মেঘনা এবং লোয়ার মেঘনা নদীর চরসমূহ। এ সকল চর ছাড়াও অন্যান্য চর রয়েছে যেমন, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী এবং তিস্তা নদীর চরসমূহ। তবে প্রধান প্রধান নদীর চরগুলির তুলনায় এ সকল চর খুবই সামান্য ভূমি নিয়ে গঠিত। অন্যান্য সকল নদীর তুলনায় যমুনা নদীতে চরের সংখ্যা সর্বাধিক।আচ্ছা, চর কি সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া যায়? যায়। নিজের বিশাল একটা চর থাকলে মন্দ হতো না। সারা চর আমি ঘুরে বেড়াতাম। ছুটি-ছাটায় ভাই বন্ধু, আত্মীয় স্বজন আমার চরে বেড়াতে আসবে, ভালো ব্লগারদের বিশেষভাবে দাওয়াত করব। নদীর ধারে সবাইকে নিয়ে পিকনিক করবো। আমার চরে শান্তিনিকেতনের মতো একটা স্কুল করব। তবে একটা বিশাল লাইব্রেরী করবো। সেই লাইব্রেরীতে অসংখ্য বই থাকবে। আমি বাংলাদেশের অনেক চর ঘুরে বেড়িয়েছি। বিকেলবেলা খালি পায়ে বালির মধ্যে সন্ধ্যা পর্যন্ত হেঁটেছি। খুব আনন্দ পেয়েছি। চরের বাতাস খুব ঠান্ডা হয়। খুব জোরে বাতাস এলে- বাতসে বালি ওড়ে। চোখে এসে লাগে। সুন্দর বনের দুবলার চরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলাম। আমার ধারনা ৫০/৬০ লাখ লোক চরে বাস করে।বাংলাদেশের প্রতিটা চরের সুন্দর একটা ইতিহাস আছে। এবং সুন্দর-সুন্দর নাম আছে। যেমন- উড়ির চরের ইতিহাস হলো- ১৯৭০ সালের দিকে সন্দ্বীপের উত্তর পশ্চিম দিকে মেঘনা মহোনায় একটি দ্বীপ জেগে উঠে। দ্বীপের জম্মের কিছু দিন পর সন্দ্বীপের জনগন এই দ্বীপে গিয়ে দেখতে পায় সমস্ত দ্বীপে ঘাস আর ঘাস, এই ঘাস কে সন্দ্বীপের আঞ্চলিক ভাষায় উড়ি বলা হয়। কালাপানিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মরহুম আসাদুল হক চৌধুরী সন্দ্বীপের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভূমীহীন মানুষদেরকে ১৯৮০/৮১ সালে উড়ির চরে এনে বসতি করে দেয়। এই চরে হাসিনা, খালেদা এবং এরশাদ সাহেবও গিয়েছেন। ৫ বছর আগে আমি, ভোলা শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে মাঝের চরে ঘুরতে গিয়েছিলাম। বহু চরে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঘাস জন্মায়। এ সকল তৃণভূমি গবাদিপশুর জন্য উত্তম চারণভূমি হিসেবে ব্যবহূত হয়ে থাকে। পদ্মার এক চরে আমি এক মেয়েকে নিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম। সে কাহিনি আর একদিন বলব। হুমায়ুন আহমেদ চর নিয়ে সুন্দর একটা বই লিখেছেন। বইটির নাম- 'শুভ্র গেছে বনে'। অনেক বাংলা সিনেমায় উঠে আসছে- চর। যেমন- মনপুরা এবং বাপজানের বায়েস্কোপ। যাই হোক, - অনেক বছর আগে আমার নানী বাড়ি পদ্মায় ভেঙ্গে যায়। পুরা গ্রাম তলিয়ে যায় পানিতে। একেবারে বিলীন। আমার মা মাঝে মাঝে আফসোস করেন- তোরা আর নানী বাড়ি বেড়াতে যেতে পারবি না। মায়ের কাছে শুনেছি- একরাতের মধ্যে তিনটা গ্রাম পদ্মায় খেয়ে নিল। কিছুদিন আগে শুনলাম- চর জেগেছে। আমার মা আর গ্রামবাসী সবাই মিলে চরে পিকনিক করেছে। সবাই ইলে টাকা দিয়ে পিলার গেঁথে দিয়েছে। ব্যস্ততার কারনে আমি যেতে পারিনি। উইকিপিডিয়া তে বলা হয়েছে- সাধারণত নদীর আপন গতিশীলতায় অথবা মোহনায় পলি জমাট বাঁধতে বাঁধতে যে স্থলভাগ গড়ে উঠে, তাকে চর বলে আখ্যায়িত করা হয়। আমরা খবরের কাগজে প্রায়ই পড়ে থাকি- জেগে উঠছে বিশাল চর। চর দখল কেন্দ্র করে মারা গেছে তিনজন। এখনও পানির নিচে থাকা বিশাল এলাকা আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই জেগে উঠবে। সেখানে মানুষ আবার বসতি গড়ে তুলবে। এসব জেগে ওঠা চরকে সরকার নানাভাবে কাজে লাগাতে পারে। শত বছর ধরে পদ্মা-মেঘনা আর সাগরে ভেঙ্গেছে লোকালয় জনপদ। আবার প্রকৃতির অপার মহিমায় সাগর থেকে জেগে উঠেছে হাজার হাজার একর নতুন ভূমি। চলছে দখল পাল্টা দখলের লড়াই। জেগে উঠা এসব চর গুলো কৃষির জন্য খুবই উর্ব্বর। উপকূলের মানুষ রক্তঘাম ঝরিয়ে এখানে উৎপাদন করছেন নানান ফসল। সরকারের কোনোরুপ সাহায্য সহযোগীতা ছাড়া এরা উৎপাদন করছেন নানান ফসল। এগুলো সরকারী খাস জমি। এই খাস জমি পাওয়ার অগ্রাধিকার রয়েছে ভূমিহীনদের। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য যে এসব খাসজমির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে উপরতলার প্রভাবশালী মহলের। নানান কায়দায় এরা গোগ্রাসে গিলে খাচেছ এসব খাস জমি। যেখানেই চর জাগে সেখানেই থাবা দেয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা। বর্ষা এলে পানি উঠে ঘরবাড়িতে। বর্ষা গেলে শহরে যেতে শুকনো নদী হেঁটে পার হতে হয়। কিছু দূরে এসে দু-দুবার নৌকা পার হতে হয়। অসুখ-বিসুখ হলে সেই কষ্ট বেড়ে যায় আরো কয়েক গুণ। চরে কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিক নেই। আমি অবশ্যই একটা ক্লিনিক বানাবো। ঢাকা থেকে বড় বড় ডাক্তার নিয়ে যাব। চরের ছেলে মেয়েরা লেখা পড়ার ভালো সুযোগ পায় না। অভাবের কারণে ছেলেরা অল্প বয়সেই লাঙ্গল কাঁধে নেয় আর মেয়েদের বিয়ে হয় অল্প বয়সে। অল্প বয়সে বিয়ে হবার প্রধান কারণ হচ্ছে- অভাব। সেই বিয়েতে আবার যৌতুক বাধ্যতামূলক। আমি চরের যৌতুক প্রথা বিলুপ্ত করবো। চরের লাখে মানুষের ভাসমান জীবনতরীর সুখ-দুঃখের শেষ নেই। কেননা চরের জীবন মূল ভূ-খ- থেকে অনেকটাই আলাদা। স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা, জীবন-জীবিকা, অন্যান্য সেবা ও সুযোগ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন চরের লাখো মানুষ। জেগে ওঠা চর গুলোতে প্রথম প্রথম চাষ করা যায় না। এ জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৭ বছর। কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাকের পদ্মা নদীর চরের মানুষজনের জীবনযুদ্ধ নিয়েই লিখেছেন ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’। চরের জীবন রৌদ্র-কঠোর, প্লাবন চিহ্নিত এক অনিঃশেষ সংগ্রামী জীবন। চর দখলের লড়াই এই জীবনের অন্যতম প্রধান একটি বিষয়। হিংস্রতার নেশা নয়, এর পেছনে আছে বেঁচে থাকার অনিবার্য তাগিদ। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনের যে হর্ষ-বিষাদ এঁকে তুলেছেন, এক কথায় তা অনবদ্য। এই উপন্যাস কি তাই বলে শুধুই চর দখলের লড়াইয়ের গল্প তুলে ধরেছে? না, জমি-জমার ব্যাপার– স্যাপার ছাড়াও এখানে আছে নর-নারীর হৃদয়ের গভীর কথা। বস্তুত, ‘চর'-এর প্রথাসিদ্ধ কোনো গল্প নেই৷ আবার আছেও গল্প। এক বহতা নদীর গল্প, সেই নদীর খেয়ালখুশির সঙ্গে জুড়ে থাকা কিছু মানুষের বেঁচে থাকার গল্প, নদীর চরের হঠাৎ জেগে ওঠা এবং একদিন নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার মতোই ওই মানুষগুলোর স্বপ্নের ভাঙা-গড়ার গল্প। চরের মানুষ গুলো, যারা ওই বেওয়ারিস নদী-চরের মতোই বেওয়ারিস, বাতিল কিছু মানুষ অথচ যারা হার মানতে চায় না। বুভুক্ষু নদী যতই ওদের পায়ের তলার মাটি কেড়ে নেয়, ততই মরীয়া হয়ে ওরা খুঁজে নেয় বেঁচে থাকার নতুন ঠিকানা, নতুন চর! কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। নদীগুলোর পাড় আর নদীর চরে বাস করে এক কোটিরও বেশি মানুষ। এই এক কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত নদীর সাথে লড়াই করছে। লড়াই করছে নদীর নিষ্ঠুর ভাঙনের সাথে। লড়াই করছে অভাবের সাথে। বিশাল পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, ধরলা ব্রহ্মপুত্রের চরসহ নদী পাড়ে বসত করা এসব মানুষ নদীর গতি প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। চরবাসীদের মনে বদ্ধমূল ধারণা, ভাঙা গড়াই নদীর খেলা। তাদের একটিই কথা, নদীর টানেই তারা পড়ে থাকে চর থেকে চরে। নদী যেমন দুঃখ দেয়, কেড়ে নেয় ঘর-বাড়ি, জোতজমি। তেমনি নদীই তাদের সৌভাগ্য বয়ে আনে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে তারা পেশা বদল করে। এক সময় জেলে। কোন সময় নৌকার মাঝি। আবার এক সময় কৃষক। সময়ে ঘাটের ঘাটে কুলি-মজুরের কাজ করে। চরবাসির দাবি চরের জেগে ওঠা জমির সুষ্ঠু বণ্টন বা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা অপরিহার্য। চরগ্রাসীদের কবল মুক্ত করা হলে চরের মানুষের দুঃখ থাকবে না। মৌসুমে একটা সময় আসে যখন হাতে কাজ থাকে না। সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২১",False rg,"একাত্তর টেলিভিশনের এক্সক্লুসিভ নিউজ এক্সক্লুসিভলি রিজেক্ট !!! গত ৪৩ বছরে ব্যাঙের ছাতার মত বাংলাদেশে মিডিয়ারও ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। মিডিয়ার এই প্রসারের পেছনেও রয়েছে ব্যাপকহারে অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অনিয়ম ও দুবৃত্তায়ন। প্রাইভেট টেলিভিশন, এফএম রেডিও, দৈনিক, সাপ্তাহিক, অনলাইন নিউজপেপার, সবখানেই এই দুবৃত্তায়ন এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। এসব প্রাইভেট সংবাদ মিডিয়ার (ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া) মালিকদের কিছু সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা আছে। প্রথম এজেন্ডা এরা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র। দ্বিতীয় এজেন্ডা এরা নিজেদের আয়ের বিশাল আয়কর ফাঁকি দেবার জন্য একটি করে মিডিয়ার মালিক বনে গেছেন। আয়কর ফাঁকি দেবার জন্য একটি মিডিয়া থাকা মানে, দেশে সে যা খুশি তাই রটিয়ে দিতে সক্ষম। রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধাগুলো বাগিয়ে নিতে সক্ষম। সরকারি বিজ্ঞাপনের ভাগ পাওয়ার ভাগিদার। অনেক অনেক সুযোগ সুবিধা। মিডিয়ার মালিকরা বলতে গেলে সবাই অর্ধ-শিক্ষিত বা মুর্খ। কিন্তু মিডিয়ার ব্যবস্থাপনায় যাদের তারা নিয়োগ দেন, সেখানে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকেন মালিকপক্ষের কিছু খাস লোক। যাদের একমাত্র ও প্রধান যোগ্যতা চামচামি, তোষামোদি। কিন্তু একটি প্রাইভেট টেলিভিশন বা একটি এফএম রেডিও বা একটি দৈনিক সংবাদপত্র বা একটি অনলাইন নিউজপেপার চালানোর জন্য যে পরিমাণ দক্ষ, মেধাবী, রুচিশীল, চৌকশ সংবাদকর্মী প্রয়োজন, টেকনিশয়ান প্রয়োজন, তা বলতে গেলে কারোরই নেই। এক ধরনের জোড়াতালি, কপি-পেস্ট, নকল, অনুকরণ, একই ধরনের অনুষ্ঠান, একই ধরনের উপস্থাপনা, একই ধরনের আতলামি, একই ধরনের বাকবাকুম সবখানে। আমাদের প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল এখন কয়টি? কম করে হলেও ২৬/২৭টি। আরো ৭/৮টি পাইপলাইনে আছে। শিঘ্রই তারা টেলিকাস্টে যাবে। অথচ যে পরিমাণ দক্ষ লোকবল এতগুলো চ্যানেল চালানোর জন্য প্রয়োজন, তা আমাদের নেই। কিন্তু একটার পর একটা প্রাইভেট চ্যানেল বাজারে আসছে। আসছে সেই হযবরল হয়েই। কোনো নতুনত্ব নেই। কোনো সঠিক পরিকল্পনা নেই। কোনো রুচিবোধ নেই। নতুন কোনো আইডিয়া নেই। সব একই গদবাধা মুল্লুক ফতেহাবাদ। বিশেষায়িত চ্যানেল করার মত মেধাবী ও দক্ষ লোকজন তো একদম নেই। এরা এক সময় দৈনিক সংবাদপত্রের সাংবাদিক ছিল। দেশে টেলিভিশন চ্যানেল আসায় সেই সংবাদকর্মীরাই এখন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী। তাদের তো ইলেকট্রনিক বিষয়ে কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা ছিল না। তো যারা আগে আগে এই লাইনে যুক্ত হয়েছে, তারাই এখানে হত্যা-কর্তা গোছের। টেলিভিশন চ্যানেলে এরা কী করবে, কেন করবে, কিভাবে করতে হবে, নিজেরাই ভালো বোঝে না। কিন্তু এক একজন বড় বড় কর্মকর্তা সেজে বসে গেছেন। তো তাদের দিয়ে বেশি প্রত্যাশা করারও কিছু নেই। কারণ তাদের যোগ্যতা ওই মোল্লার মসজিদ দৌড় পর্যন্ত। ঘটে বুদ্ধি যতটুকু আছে, তার বেশি সে কোথায় পাবে? তাই অন্য চ্যানেলের অনুষ্ঠান নকল, একই টাইপ, একই বকরবকর, একই ইতরামি সবখানেই। কোনটা খবর আর কোনটা খবর নয়, অনেক সময় এই জ্ঞান পর্যন্ত এসব মিডিয়া কর্মীর নেই। এদের কাছে কোরবানির গরুর হাট লাইভ প্রচার করাই একটা বিশাল ব্যাপার। খবরের পিছনে না গিয়ে এরা নিজেরাই খবর বানাতে এখন ব্যস্ত গলদঘর্ম করে বেড়ায়। বাংলাদেশে এখন যে কোনো মিডিয়ার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক অনেক আগে যে কোনো সংবাদ প্রচারে অনেক বেশি কার্যকর। মিডিয়ার এখানেই দেউলিয়াত্ব সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ে। কোন চ্যানেল কতজন দর্শক দেখে, কতক্ষণ দেখে, এ বিষয়ে এসব চ্যানেলের কোনো ধারণা নাই। এসব জানারও এরা প্রয়োজনবোধ করে না। তবু এরা একটার পর একটা অখাদ্য অনুষ্ঠান বানিয়ে যাচ্ছে। বানিয়ে যাচ্ছে নিজেদের অরুচিকর অখাদ্যের ভাগাড়। কোনো নতুনত্ব নেই। কোনো মেধার যোগসূত্র নেই। কোনো আগামাথা নেই। সাম্প্রতিক সময়ে মিডিয়ার সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হল গোসিপ। কোনটা যে কি ধরনের গোসিপ, সেই বিষয়ে এরা নিজেরাও ততটা বোঝে না। কিন্তু গোসিপ তাদের করতেই হবে। এটাই তাদের একমাত্র পন। সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় রুবেল হোসেন ও তার কথিত প্রেয়সি হ্যাপির ফোনালাপ দিয়ে একাত্তর টেলিভিশন করেছে এক্সক্লুসিভ একাত্তর। কতোটা নিম্নরুচির হলে একটি প্রাইভেট টেলিভিশন একটি পার্সোনাল বিষয়কে এক্সক্লুসিভ নিউজ করার মত ঔদ্বত্ত দেখায়, স্পর্ধা দেখায়, সে বিষয়ে কি বলব! এরা এই স্পর্ধা কোথায় পেল? একাত্তর টেলিভিশনের সংবাদকর্মী শামসুল আরেফিন, রুবেল-হ্যাপির গোপন ফোনালাপ নিয়ে তিনপর্বের ধারাবাহিক এক্সক্লুসিভ নিউজ করেছেন। মিস্টার শামসুল আরেফিন, নিউজ করার মত হাজারো বিষয় থাকতে আপনার কাছে কিনা কারো ব্যক্তিগত বিষয় হয়ে গেল এক্সক্লুসিভ। একাত্তর টেলিভিশনের ম্যানেজমেন্ট টিমে যারা আছেন, তাদের রুচিবোধ বা কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো? এত রুচিবোধ নিয়ে আপনারা একটি প্রাইভেট চ্যানেল চালান কি করে? আপনাদের ঘটে তো অনেক বুদ্ধি দেখছি!!!সংবাদ খুঁজে না পেয়ে একটা গোপন আঁড়িপাতা বা চুরি করা ফোনালাপ আপনাদের কাছে এক্সক্লুসিভ নিউজ? ওরে আমার ফুটানি রে!!!এক্সক্লুসিভ নিউজ কি, এই বিষয়ে একাত্তর টেলিভিশনের আদৌ কোনো ধারণা আছে কিনা, তাই বরং এখন সন্দেহ হয়। সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে গত ৯ ডিসেম্বর একটি তেলের ট্যাংকার ডুবে আমাদের প্রাকৃতিক রক্ষাঢাল সুন্দরবন এখন মারাত্মক ধ্বংসের মুখে। সুন্দরবনের সেই দুর্ঘটনাস্থলে একাত্তরের ক্যামেরা কখন পৌঁছালো? কী নিউজ করল? এক্সক্লুসিভ হওয়ার মত বিষয় তো এটা। আপনাদের কাছে রুবেল-হ্যাপির গোপন প্রাইভেট ফোনালাপ হয়ে গেল এক্সক্লুসিভ?!! আপনারা পারেন বটে। বেহায়া বললেও বেহায়া শব্দটাকে অপমান করা হবে। জাতীয় দলের খেলোয়াড় রুবেল এখন একাত্তর টেলিভিশনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারে। মানহানীর মামলা অভিনেত্রী হ্যাপিও করতে পারে। অন্তত তারা উকিল নোটিশ দিতে পারেন একাত্তরকে। আমাদের মহামান্য আদালতের বিচারকগণ অনেক সময় নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন ইস্যুতে রুল জারি করেন। সংবাদ বিষয়ে মহামান্য বিচারকগণ একটু নজরদারী করতে পারেন। দুইনেত্রীর ফোনালাপ আমাদের টেলিভিশন মিডিয়া যেভাবে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে রাষ্ট্র করেছিল, সেখানে তবু মানুষের আগ্রহ ছিল, কিন্তু একজন ক্রিকেটার বা একজন অভিনেত্রীর গোপন ফোনালাপ কী করে এক্সক্লুসিভ হয়? একাত্তর টেলিভিশনের ম্যানেজমেন্ট টিম কি সেই প্রশ্নের উত্তর জানে?কোনটা সংবাদ আর কোনটা সংবাদ নয়, এই বোধ যাদের নাই, তারা একটি টেলিভিশন চ্যানেল কিভাবে চালায়? এমনিতে আমাদের দেশে এখন সাংবাদিক না পুলিশ কে বেশি অসৎ এ নিয়ে বরং বিতর্ক হতে পারে। সাংবাদিকরা পুলিশের কাছ থেকেও ঘুষ খায়, এমন ঘটনাও আমার জানা আছে। হলুদ সাংবাদিকতা দিয়ে মানুষের অন্তর জয় করা যায় না। হলুদ সাংবাদিকতা সব সময়ই রাষ্ট্র ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর। মিডিয়ার একটি নিজস্ব দায়িত্ববোধ আছে। সেই দায়িত্ববোধের কথা যদি তারা ভুলে যায়, তখন তাদের আর মিডিয়া ভাবা যায় না। তারা তখন অন্য অনেক দুবৃত্তায়নের মত একটি দুবৃত্ত, একটি অসৎ চক্র। তখন কোনো ভাবেই এরা রাষ্ট্রের চতুর্থ/পঞ্চম/ষষ্ঠ অঙ্গ নয়!টেলিভিশন সাংবাদিকতায় দেশ এখনো একেবারে প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। সেখান থেকে উন্নতির চেষ্টার পরিবর্তে যদি এই হয় আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর রুচিবোধ, দায়িত্ববোধ, কর্মকাণ্ড, তাহলে এদের দিয়ে বরং জাতির কপালে আরো অনেক হ্যাপা আছে। আরো অনেক দুঃখ আছে। আরো অনেক অঘটন আছে। কারো অর্জনকে মিডিয়া স্বীকার করুক বা না করুক, কারো অর্জনকে খাটো করার দুঃসাহস মিডিয়া কোথায় পায়? কিভাবে পায়? একাত্তর টেলিভিশনের উত্থানের পেছনে কারা আছে? তাদের ব্যবস্থাপনায় কারা? তাদের হাউজ কিভাবে এমন একটি ব্যক্তিগত বিষয়কে আইটেম বানিয়ে একেবারে এক্সক্লুসিভ নিউজ করে? একাত্তরের দৃষ্টিতে যা এক্সক্লুসিভ তা হয়তো আদৌ কোনো নিউজই নয়। মানুষকে কোন জিনিসের খবর দেবেন, তা যদি একটি মিডিয়া হাউজের নিজস্ব নীতিমালায় সুস্পষ্ট না থাকে, আদৌ কোনো নীতিমালা এসব হঠাৎ গজিয়ে ওঠা প্রাইভেট চ্যানেলগুলোর আছে কিনা, তাই বরং এখন দেখার বিষয়। একটি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলকে চালানোর সুযোগ দেবার আগে রাষ্ট্রের বরং এসব বিষয়ে আরো খোঁজখবর নেওয়া উচিত। দক্ষ লোকবল, যন্ত্রপাতি, অনুষ্ঠানমালা, কোনো প্রোগ্রাম অন্য কারো নকল কিনা, অনুকরণ কিনা, এসব বিষয়ে আরো কঠোর হওয়ার সময় এখন। অখাদ্যকে খাদ্য বানানোর প্রতিযোগিতায় আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যে পরিমাণ গলদঘর্ম করছে, তা বরং এখন বাংলাদেশের জন্য এক নতুন বোঝা। জগাখিচুরি অনুষ্ঠান দিয়ে এক একটি চ্যানেল এক একটি দোকান খুলে বসেছে। সে দোকানের সামনে কোনো দর্শক ক্রেতার ভিড় না থাকলেও তারা গলাবাজি করছে। এভাবে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উন্নয়ন সম্ভব নয়। আদৌ সম্ভম নয়। সবচেয়ে আগে যেটি প্রয়োজন, সেটি হল দক্ষ লোকবল তৈরি করা। তা না করে আমাদের মিডিয়া একপাল গরুছাগলকে দিয়ে যা খুশি তাই গোটা জাতিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। বিশেষায়িত চ্যানেল হওয়ার দিকে কারো ঝোক নেই। কারণ, আগে তো ঘটে সেই পরিমাণ বুদ্ধি, মেধা, রুচিবোধ, আর দক্ষতা থাকতে হবে। সেদিকে কোনো চ্যানেলের যাবার প্রস্তুতিও নেই। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, এরা কোনটা খবর আর কোনটা খবর নয়, এই জ্ঞানটুকুরও ধার ধারে না। নতুন চিন্তা তো অনেক দূরবর্তী অজানা বিষয়।একাত্তর টেলিভিশনের শামসুল আরেফিনের তিনপর্বের এক্সক্লুসিভ নিউজকে এক্সক্লুসিভলি প্রতিবাদ করা হল। এ ধরনের অপনিউজ থেকে একাত্তর টেলিভিশন যদি ফিরে না আসে, ভবিষ্যতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে রাষ্ট্রের যে কোনো নাগরিক নালিশ দিবে বলেই আমার বিশ্বাস। জনাব শামসুল আরেফিন, আগে সংবাদ কী, তা বোঝার চেষ্টা করুন, চেনার চেষ্টা করুন, নইলে এই লাইনে আপনার গলদঘর্মের দৌড় বেশি দূর যাবে না। সো, সাধু সাবধান।...............................২১ ডিসেম্বর ২০১৪ঢাকা",False ij,"None নাঈমের বউকে আমি ভালোবাসি। ব্যাপারটা মনে হয় না নাঈম টের পেয়ে গেছে; ও এমন ক্রিকেট পাগল লোক; প্রয়োজন বাদে সুন্দরী বউয়ের দিকে তাকায় কিনা সন্দেহ। এ নিয়ে শম্পার মনের মধ্যে কোনওরুপ ক্ষোভ কিংবা অভিমান আছে কিনা তারও বোঝার উপায় নেই। শম্পা, আমি যতটুকু বুঝেছি, ভারি চাপা স্বভাবের মেয়ে। তবে আমি যে শম্পাকে ভালোবাসি-শম্পা তা টের ঠিকই পেয়েছে। আমার দিকে কেমন গাঢ় চোখে তাকায়, মিটমিট করে হাসে আর যেসব প্রশ্নের উত্তর হয় না আমাকে সেসব প্রশ্ন করে। এবং আমাকে ফোন করে, কিংবা দুস্টুমি করে মিস কল দেয়। হয়তো অফিস থেকে বেরুচ্ছি, তখন, কী ভাবে যেন টের পায় শম্পা আমি একা । গোপনে আমি শম্পার একটা ছবিও তুলেছি। ছবিটা মাঝেমাঝেই দেখি; যখন একা থাকি, শম্পাকে নিয়ে আমি রঙীন কল্পনায় ডুবে যাই । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কবিতা লিখতাম, তেমন কিছু না। ব্যর্থ কবি বলে আমার খ্যাতি থাকলেও আমার মনের গভীরে কাব্যবোধ এখনও রয়ে গেছে। তারই মহিমায় প্রায়ই নির্জন সবুজ উপত্যকায় শম্পাকে নিয়ে চলে যাই, গাঢ় ছায়ার বিকেলের পাহাড়ি নদীর পাশে পাশে হাঁটি । শম্পা অনর্গল কথা বলে যায় ... জানেন, আমার মেয়েবেলা কেটেছে ভৈরবে ... বাবা ছিলেন রেলওয়ের ডাক্তার ... স্টেশনের খুব কাছেই কোয়ার্টার ... রাতদিন ঝমঝম করে ট্রেনের শব্দ হত। শীতের গভীর রাতে ট্রেনের শব্দ শুনতান । আমার তখন কীরকম যে লাগত। আমাদের ঘরের দেওয়ালের রং ছিল টিয়ে রঙের। সন্ধ্যার পর টিউব লাইট জ্বলতাম। আমরা খাওয়ার টেবিলে পড়তে বসতাম। পড়ব কি-বারান্দায় খাঁচায় যে ময়না পাখি, বারবার ছুটে যেতাম ... (আমি শিওর এ কথাগুলি শম্পা নাঈমকে কখনও বলেনি।) জীবন তো কেবল স্বপ্নকবিতা নিয়ে নয়-জীবনে কামও সত্য। কাজেই আমি কখনও কখনও কোনও ছায়াময় নির্জন ঘরে কালো রঙের সোফার ওপর শম্পাকে ধীরে ধীরে নগ্ন করি। রুবিনার সঙ্গে যা করা হয়নি কখনও, শম্পার যেন তাতেই উৎসাহ। চুম্বনে চুম্বনে ওকে অস্থির করে তুলি, তারপর গভীর মনোযোগ দিয়ে শম্পার তীব্র শীৎকার শুনতে থাকি ... আমার পাশে রুবিনা শুয়ে থাকে। ও এসব অজাচার (কিংবা প্রেম) টের পায় কিনা কে জানে। রুবিনা কেও আজকাল কেমন উত্তেজিত দেখায়। (আমাকেও কি ক্ষেপাটে আর উত্তেজিত দেখায়?) কার সঙ্গে যেন টেলিফোনে কথা বলে রুবিনা । ব্যাপারটা আমি টের পেলেও উপেক্ষা করি। বিয়ের পর আমি যেমন রুবিনার তলপেটে লম্বা কাটা দাগ আবিস্কার করেও নিশ্চুপ ছিলাম। যেমন আমি কাকলীর ছবিগুলি/চিঠিগুলি সব পুড়িয়ে ফেলিনি; বুক সেলফ গোছাতে ওসব রুবিনা নিশ্চয়ই দেখেছে। বলেনি কিছু। বলে কী লাভ। অতীত নিয়ে খোঁচাখুচি করা কি বুদ্ধিমানের কাজ? বরং আমাদের এই বর্তমান সময়টা ভীষণই উত্তেজক। কিন্তু,কার সঙ্গে কথা বলে রুবিনা? আমার ভীষণই কৌতূহল হয়। সেই সঙ্গে ফোনের রিং বাজার পর রুবিনা বারান্দায় কি পাশের ঘরে চলে আমার খানিকটা অস্বস্তিও হয় । শম্পা সেরকম অস্বস্তিতে রুবিনাকে কখনও ফেলে না। শম্পা সময় বুঝেই ফোন করে। হয়তো রুবিনা বাথরুমে, তখন। শম্পা কী ভাবে যেন টের পায় আমি একা । দিন কাটছিল। একদিন সবই কেমন ওলোটপালোট হয়ে যায়। একদিন নাঈমের মেয়েটা হারিয়ে যায়। ওদের একটাই মেয়ে। কেয়ামনি। ক্লাস সিক্সে পড়ে। চশমা পরা ভারি কিউট একটা মেয়ে। আমাকে ‘আঙ্কেল’, ‘আঙ্কেল’ করে। কেয়ামনি ঠিক ওর মায়ের মতো হয়নি। ওর মা শ্যামলা; কেয়ামনি সেরকম হয়নি। শেষ আশ্বিনের দিনটা কেমন মেঘলা। বারোটার মতন বাজে। আমি অফিসে বসে কাজ করছিলাম। আমার ফোনের রিং বাজল। শম্পা। ভয়ানক উত্তেজিত কন্ঠস্বর। ...ভাই, কেয়ামনিকে খুঁজে পাচ্ছি না। খুঁজে পাচ্ছি না মানে! আমি ভীষণ অবাক হয়ে চাপাস্বরে চিৎকার করে উঠি। শিগগির আসুন ... আমি অফিস থেকে বেরিয়ে দ্রুত একটা ট্যাক্সি নিয়ে নাঈমের বাসায় ছুটে যাই। বেল বাজানোর পর কাজের মেয়েটা দরজা খুলল। আমাকে দেখে খানিকটা অবাক হয়েই বলল, খালু ত অফিসে গেছে। জানি। কেয়ামনি কই? স্কুলে। খালাম্মা কেয়ামনিরে আনতে গেছে। শম্পা কি আমাকে স্কুলে যেতে বলল? শম্পাকে ফোন করব কিনা ভাবলাম। কেয়ামনি স্কুলটা বাড়ির কাছেই, দুটো গলির পর । ফোন না-করে আমি সেদিকেই ছুটলাম। স্কুল গেটের সামনে শম্পা দাঁড়িয়ে । কাঁদছিল। আমাকে দেখেই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিল, সামলে নিল। গলিতে আরও লোকজন ছিল ...নাঈমকে দেখলাম না। আশ্চর্য! শম্পা নাঈমকে ফোন না-করে আমাকে করেছে। হয়তো আমার অফিসটা কাছে বলেই। কেয়ামনিকে শেষমেশ পাওয়া গেল। ঘটনা তেমন কিছুই না- শম্পার আজ স্কুলে আসতে খানিকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল, সেই ফাঁকে কেয়ামনি ওর এক ক্লাসমেটের সঙ্গে গেছিল কনফেকশনারিতে আইসক্রিম খেতে; কনফেকশনারিটা সামান্য দূরে বলেই শম্পা ওর মেয়েকে খুঁজে পায়নি। শম্পার মুখচোখ টেনশনে বসে গেছে। কেমন উদভ্রান্তর মতন দেখাচ্ছিল। মেয়েকে জড়িয়ে কাঁদল অনেকক্ষণ। বারবার বলল, আমায় তুই ক্ষমা করে দে মা। আমায় তুই ক্ষমা করে দে ... আশ্চর্য! কেয়ামনি তার মাকে ক্ষমা করবে কেন? ওর মা কি করেছে? আমি ওদের বাড়ি অবধি পৌঁছে দিতে চাইলাম । শম্পা শীতল স্বরে বলল, থাক, আপনার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। এর পর থেকে শম্পাকে আর আগের মেজাজে পাওয়া গেল না। আমার দিকে গাঢ় চোখে আর তাকায় না, মিটমিট করে হাসে না আর যেসব প্রশ্নের উত্তর হয় না আমাকে সেসব প্রশ্নও করে না। সময়মতো ফোনও করে না। আমার স্বপ্নেও সেভাবে আসে না। চোখ বুজে আমি শম্পাকে নিয়ে সবুজ নির্জন উপত্যকায় বিকেলের গাঢ় ছায়ার একটি পাহাড়ি নদীর পাশে হাঁটার চেষ্টা করলে একটি শিশুর চিৎকার করে ওঠে: আমায় তুই ক্ষমা করে দে ... আমায় তুই ক্ষমা করে দে ... রুবিনাকেও ইদানিং ভারি অন্যমনস্ক মনে হয়। চোখমুখ কেমন ফোলা ফোলা। লুকিয়ে কাঁদে মনে হয়। চুপ করে থাকলে কেমন দেখায়-তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম: কি হয়েছে? কিছু না-বলে রুবিনা এড়িয়ে গেল। আমিও চাপাচাপি করলাম না। সেই অপরিচিত পুরুষটি হয়তো রুবিনাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল। সেই স্বপ্ন কি ভেঙ্গে গেছে? মনে হয়। হয়তো সেই পুরুষটিও ছিল ক্লান্ত; ক্লান্তি এড়াতেই ভালোবেসেছিল এক নারীকে-যেমন আমি শম্পাকে ...। যাই হোক। আমরা দুজন আবার দুজনার কাছে ফিরে এলাম। ফিরে আসার পর একে অপরকে আরও বেশি যেন অপরিচিত মনে হল। আমাদের মধ্যে কথা কমে গেল। আসলে আমাদের মধ্যে কথা অনেক আগেই কমে গেছে। লোকে বলে, কথা কম বলা নাকি গভীর বোঝাপোড়ার লক্ষণ। আমরা দুজন আবার দুজনার কাছে ফিরে আসার পর এক রাতে বৃষ্টির নামল। রাতের বৃষ্টি রুবিনার ভালো লাগে। আমার ভালো লাগে ভোরের বৃষ্টি । যা হোক। এসব নিয়ে আমাদের মধ্যে কখনোই ঝগড়া বিবাদ হয়নি। আমরা দুজনই কমবেশি ক্লান্ত-এই যা। আমি আর রুবিনা অন্ধকার বারান্দায় বসে। পাশাপাশি। এখন অনেক রাত। বারান্দায় অনেকটা অন্ধকার আর গ্রিলের পাতাবাহারে বৃষ্টির ছাঁট, মৃদু ঝিরঝির শব্দ। শেষ আশ্বিনের বৃষ্টি, জলময় হলেও ঝাঁজ কম, আমাদের সম্পর্কের মতো। তবুও বৃষ্টি তো ... সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৬",False rn,"বর্ডার দিনাজপুর জেলার চারপাশ ঘীরে রয়েছে সীমান্ত এলাকা। আর সীমান্ত এলাকায় পাশ্বর্তী দেশ ভারত কাটা তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে। ভারতের কাটা তার দিয়ে ঘেড়া দেওয়ার বাইরেও থেকে গেছে মন্ডপাড়া গ্রাম। যে গ্রামের বাসিন্দরা ভারতীয় নাগরিক হলেও বাংলাদেশের মোবাইল -সীম ব্যবহার, প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা করে আসছে। ধ্বংস হয়ে গেছে বাংলাদেশের যুব সমাজ।শুধুই মাদক নয় পাশ্ববর্তী এলাকা জুরে অস্ত্র পারাপারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহারও হচ্ছে।যে ভাবে মাদক বাংলাদেশে আসছে যুব সমাজ শেষ হতে আর বেশি দিনের অপেক্ষা করতে হবে না।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের (ইপিআর) সদস্যরা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ বাহিনীর রয়েছে গৌরবময় অবদান। স্বাধীনতাযুদ্ধে ইপিআরের ৮০০ সদস্য শাহাদত বরণ করেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ও বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আবদুর রউফ। বেনাপোল বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম যেখানে একটি সীমান্ত তল্লাশী ঘাঁটি ও আন্তর্জাতিক স্থল বন্দর অবস্থিত।ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বেনাপোল গ্রামটি বাংলাদেশের যশোর জেলার শার্শা উপজেলার অন্তর্গত। বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের দিকের অংশটি পেট্রাপোল নামে পরিচিত। বেনাপোল হতে কলকাতা মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই পথে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণকারী চলাচল করে থাকে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত বিভাগের পর ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার্স রাইফেলসের নাম পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস। এর সংক্ষিপ্ত নামকরণ করা হয় ইপিআর। কলকাতা মেট্রোপলিটন আর্মড পুলিশের একটি দল এবং বাঙালি ও পশ্চিম পাকিস্তানের এক হাজার সেনা এ বাহিনীতে যোগ দেয়। দক্ষ নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনার জন্য ইপিআরে সামরিক বাহিনী থেকে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।২০০৯ সালে পিলখানা সদর দপ্তরে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের বিভীষিকাময় নারকীয় হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিডিআরের ২১৫ বছরের গৌরবময় অধ্যায়ের ছন্দপতন ঘটে। এ বাহিনীর নাম ও পোশাক পরিবর্তন করে নতুন আইনও প্রবর্তন করা হয়। ২৩ জানুয়ারি ২০১১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবির পতাকা উত্তোলন করেন। সীমান্তরী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য উৎকোচের বিনিময়ে ভারতে পাট পাচারে সহায়তা করছে। প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় প্রতিদিন চরফ্যাশন, মনপুরা, হাতিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক শ’ টন ইলিশ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর হয়ে পাচার হচ্ছে ভারতে।সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রতিরাতে অবাধে পাচার হচ্ছে কোটি টাকার রাবার। এলাকার পাচারকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বাগানের একশ্রেণীর কর্মকর্তাও। বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে জ্বালানি তেলের দাম বেশি। সেই সুযোগে প্রতিদিন দেশ থেকে দেড় লক্ষাধিক লিটার জ্বালানি তেল পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। এই পাচারের নেপথ্যে রয়েছে রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকের চালকরা। সাতক্ষীরার তলুইগাছা, কাকডাঙ্গা ও মাদরা সীমান্ত দিয়ে ব্যাপকভাবে বাংলাদেশ থেকে রসুন ভারতে পাচার হচেছ। এ তিনটি সীমান্ত দিয়ে একইভাবে ভারত থেকে আসছে আমদানী নিষিদ্ধ ফেনসিডিল ও গাঁজা।রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে এবার অবাধে ভারতে পাচার হচ্ছে পেঁয়াজ। রাজশাহীর মতিহার, গোদাগাড়ী, বাঘা, চারঘাট এবং শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পেঁয়াজ বস্তায় ও গরুর গাড়ীতে করে সীমান্ত দিয়ে চলে যাচ্ছে ভারতে। সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ফেনসিডিল, হেরোইন, নেশার ইনজেকশন, গাঁজা, মদ, নেশা জাতীয় ট্যাবলেটসহ নানা প্রকার মাদকদ্রব্য পাচার হয়ে আসছেই। বিভিন্ন সময়ে এসব মাদকদ্রব্যের বড় বড় চালান পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি’র সদস্যদের হাতে আটক হলেও জঘন্য এ অবৈধ ব্যবসার নেপথ্যে থাকা অপরাধীচক্র থাকছে সম্পূর্ন ধরাছোঁয়ার বাইরে।কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হচ্ছে হাইব্রীড ধান বীজ এবং ভারত থেকে আসছে মদ,গাজা,ফেন্সিডীল, ইয়াবা সহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য।কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে চোরাই পথে আসছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্য। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ তাদের প্রতিরোধে হিমশিম খাচ্ছে। ভারতীয় কাঠ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। আবার এ চক্র বিভিন্ন পরিচয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের চোরাচালানী ব্যবসা। ভারতীয় যেসব কাঠ সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে আসছে তার মধ্যে বিশেষ করে রয়েছে সুন্দি, গামাইর, শীলকরই, রামডালা, চাকরাশি প্রভৃতি মূল্যবান কাঠ রয়েছে।ঠাকুরগাঁও সীমান্ত দিয়ে পাচার করে আনা হচ্ছে ফেনসিডিল। বিশেষভাবে তৈরি ভেলাযোগ সীমান্তবর্তী নদী পার হয়ে আসছে এসব ফেনসিডিলের চালান। এ ধরনের বিভিন্ন মাদকদ্রব্য অটো রিকশার চেসিসের নিচে, সাইকেলে, ভ্যানে স্তূপ ফসলের নিচে, কাপড়ের বান্ডিলের মধ্যে এপারে আনছে চোরাচালানকারিরা। বিশেষ করে রাতে সীমান্তের ওপার থেকে ভেলায় করে বস্তাভর্তি ফেনসিডিল ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে।",False rg,"ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর এ_কে_ আজাদ চৌধুরী স্যারকে খোলা চিঠি।। রেজা ঘটক বরাবর,প্রফেসর এ.কে. আজাদ চৌধুরীচেয়ারম্যানবিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনআগারগাঁও, ঢাকা-১২০৭বিষয়: প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কঠোর নজরদারী ও অনিয়ম বন্ধের প্রসঙ্গেস্যার,আমরা খুব দুঃখের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি যে, একশ্রেণীর কালোটাকার মালিক অথবা অসৎ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা ধ্বংসের নামে প্রতারণামূলক শিক্ষা ব্যবসা চালু করেছে। এ সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলোর নিজস্ব কোনো ক্যাম্পাস নেই। কিন্তু তারা কমিশনকে না জানিয়ে বা কোনো ধরনের অনুমোদন না নিয়ে ২৫% কমিশনে অন্য কোনো দলীয় বা স্বজন চামচাকে নতুন ক্যাম্পাসে একই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা লুটে নিচ্ছে। এ সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলোতে টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট বিক্রি'র মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অথচ রাষ্ট্রীয় টাকায় পোষ্য একটি স্বাধীন কমিশন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তা না দেখার ভান করছে অথবা পরোক্ষভাবে আড়ালে আবডালে এসব কালোটাকার অবৈধ মালিকদের বা অসৎ ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছে। অথবা এদের চোখ রাঙানির কাছে পিছু হটছে।বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্থাপিত একটি স্বায়ত্ত্ব শাসিত ও স্বাধীন সংস্থা কিভাবে এমন অনাচার এ উচ্চ শিক্ষা ধ্বংসের অবাধ বিচররণ ক্ষেত্র সহ্য করছে তা মোটেও বোধগম্য নয়। বাংলাদেশে প্রায় সকল স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো নির্লজ্ব এবং দুর্নীতি ও অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে একাট্টা। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন একটি দুর্নীতি'র আকড়া। বাংলাদেশের সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় একটি সরকার দলীয় পোষ্যালয়। বাংলাদেশ কর কমিশন একটি ঘুষের আস্তাবল। বাংলাদেশ বিগত ৪২ বছরে অবৈধ ও অসৎ কার্যাকলাপের চরম অব্যবস্থপনায় রাষ্ট্রীয় অর্থের সবচেয়ে বেশি অপচয় হয়েছে এসকল সংস্থাগুলোতে। যার কোনো জবাবদিহিতা আমরা কোনো দিন দেখিনি।১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচনে স্থাপিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। গত ৪২ বছরে এই কমিশনের কোনো জবাবদিহিতা কোনো ব্যর্থতা রাষ্ট্রের কোথায় উল্লেখ করা হয়নি। উচ্চ শিক্ষার নামে দেশে এই সংস্থাটি পাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ব্যাঙের ছাতার মত একশ্রেণীর কোচিং ব্যবসাই কেবল উৎপাদন করতে পেরেছে। উচ্চ শিক্ষা দিনে দিনে ধ্বংসের দোর গোরায় গিয়ে ঠেকেছে। কমিশন থেকেও যোগ্য নের্তৃত্ব, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, বলিষ্ঠ পরিকল্পনা এবং আধুনিক শিক্ষায় জনবল সৃষ্টিতে উচ্চ শিক্ষার যথাযথ প্রসার সৃষ্টিতে এটি ব্যর্থ একটি ঠুটো জগন্নাথে পরিনত হয়েছে। আমরা রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে এমন অকর্মন্য ও ব্যর্থ স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা আর পালতে চাই না।বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার মান এখন এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, এখানে গবেষণা একদম নেই বললেই চলে। সিনিয়র ছাত্রদের নোট কালেক্ট করে পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর পাওয়ার একটি প্রয়াশ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষকরা প্রায় সবাই এখন এনজিও ব্যবসার বনসালট্যান্ট হিসেবে সময় নষ্ট করেন। ঠিক সময় মতো ক্লাশ নেন না। পরীক্ষা নেন না। দু'পাইস কামানোতে তাদের সময় চলে যায়। তাদের বাজারের থলে হাতে সারা বছর যে সকল ছাত্রছাত্রী তোষামোদীতে লেগে থাকেন বছর ঘুরে তারাই ভালো ফলাফল পায়। এই চিত্র যেনো দেখার কেউ নেই। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দরকারটা কি?সবচেয়ে ভয়ংকর জিনিসটি হল অনেক প্রাইভেট বিশ্বিবদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের থেকে টাকা নিয়ে নতুন ক্যাম্পাসে ভর্তি বাণিজ্য শুরু করেছে। ছাত্রছাত্রীরা জানেও না তিন-চার বছর পর তারা সার্টিফিকেটও পাবেন না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়টি হয়েতা অবৈধ। যার সার্টিফিকেট দেবার ক্ষমতা নেই। কারো কারো তো অনুমোদনই নেই। তারা ২৫% শেয়ারে নতুন জায়গায় নতুন ক্যাম্পাসের নামে এই ভর্তি বাণিজ্য শুরু করেছে।আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এই জিনিসটি খুব সতর্কতার সঙ্গে খতিয়ে দেখুক। যারা এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের অনুমোদন বাতিল করুক। অন্তঃত ১০টি প্রথম শ্রেণীর দৈনিক পত্রিকায় এবং ১০ টি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলে এবং বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে এই তালিকা অন্তঃত এক মাস প্রচার করা হোক। যাতে অভিভাবকরা এবং ছাত্রছাত্রীরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাণিজ্যের কুফল থেকে নিজেরা অন্তঃত সচেতন হতে পারে। আর ইতোমধ্যে যেসব ছাত্রছাত্রী এই ঝামেলার শিকার হয়েছে তাদের কোনো বৈধ ক্যাম্পাসে ভার্তির ব্যবস্থা করা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের থেকে ছাত্রছাত্রীদের যতো আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা জরিমানা সহ আদায় করা। এবং কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যারা এই অসৎ ব্যবসা করছে তাদের আইনের আওতায় আনা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া।এই কাজগুলোর বাইরেও কমিশন একটি জবাবদিহিতা এড়াতে পারে না। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের জীবন থেকে মূল্যবান সময় যে চলে গেল তার দায় কে নেবে? এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ছিল ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬। আমার সার্টিফিকেটে অনার্স ১৯৯১ এবং মাস্টার্স ১৯৯২ লেখা। কিন্তু আমার রেজাল্ট হয়েছে অনার্স ১৯৯৪ সালে আর মাস্টার্স ১৯৯৬ সালে। আমার জীবনের এই মূল্যবান ৪/৫ বছর সময়ের মূল্য তো রাষ্ট্র দেয় নি। আমার জীবনের এই মূল্যবান তারুণ্যের নষ্ট সময়ের হিসেব তো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন করেনি। আমার জীবনের বেকারত্বের দীর্ঘ কষ্টের অফুরন্ত সময়কে তো কোনো রাজনৈতিক দল বা রাষ্ট্র বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন মেটায় নি। আমার জীবনের সময়ের মূল্য যদি এই রাষ্ট্র থেকে আদায় করার কোনো সুযোগ আইনগতভাবেই থাকতো তাহলে আমার ধারণা, আমার মতো হাজার হাজার ভুক্তভোগীরা তা অবশ্যই আদায় করতো।তাই সরাসরি বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করতে না পারে, তাহলে আমরা আর বাংলাদেশে কমিশন দেখতে চাই না। আমরা আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাশ টাইমে কনসালট্যান্ট ব্যবসা দেখতে চাই না।জীবনের একটি দীর্ঘ সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলামের স্যারের নগর গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। স্যারকেও বহুবার কমিশনকে কিছু একটা করার জন্যে বারবার অনুরোধ করেছিলাম। স্যার কিছুটা শুরু করেছিলেন কিন্তু শেষ করতে পারেননি। এখন আপনার সেই শেষ করার দায় রয়েছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি হিসেবে আপনার সেই দায় আরো বেশি। দেশের উচ্চ শিক্ষাকে যুগোপযুগী ও আধুনিক করার জন্য আপনাকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে স্যার। নইলে এমন কমিশন আর সেই কমিশনের ছত্রছায়ায় ভর্তি বাণিজ্য এবং উচ্চ শিক্ষা ধ্বংসের চলমান পথ বন্ধ হবে না।সবশেষে আপনার সুস্বাস্থ্য এবং বলিষ্ঠ নের্তৃত্ব এবং কঠোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সহিষ্ণু ও হৃদয় জাগ্রত হোক, এই কামনা করছি।বিনীত নিবেদকরেজা ঘটক",False fe,"প্রয়োজন এখন শাণিত তারুণ্যের ঐক্য প্রয়োজন এখন শাণিত তারুণ্যের ঐক্যফকির ইলিয়াস========================================ষাট ঘণ্টার হরতাল অতিক্রম করলো বাংলাদেশ। হরতালকারীরা বলছেন- আরো হরতাল আসছে সামনে। সব মিলিয়ে অবস্থা খুবই নাজুক। না- ২৫ অক্টোবর তেমন কিছুই ঘটে যায়নি বাংলাদেশে। বলা হচ্ছে, দেশে কোনো বৈধ সরকার নেই। কেন নেই। মহাজোট ক্ষমতায় এসেছিল ৫ বছরের জন্য। তাদের সময় তো এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তারপরও একটি কালোশক্তিকে উসকে দেয়া হচ্ছে কেন?ষাট ঘণ্টার হরতালে কারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তা দেশের মানুষ দেখেছেন। এরা খুবই চেনাজানা লোক। এরা মহাজোটের নেতাদের বাড়িতেও আক্রমণ করেছে। আক্রান্ত হয়েছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলার সাক্ষী, প্রসিকিউটার। দেশের বরেণ্য সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক, রাজনীতিকরা বোমা হামলার শিকার হয়েছেন। এটা বাংলার মানুষ একাত্তরেও দেখেছিল। আবার ২০১৩-তে দেখলো। এই পরাজিত রাজাকার শক্তিই রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে চায়। আর এদেরকে ম“ দিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী একটি চক্র। এদেরই একজন ফরহাদ মজহার। এই লোকটি গণমাধ্যমগুলোর বিপক্ষে কথা বলেছেন, মৌলবাদী কিছু মিডিয়ার পক্ষ নিয়ে। তিনি বলেছেন, “আপনি তো (গণমাধ্যম) প্রথমে সন্ত্রাস শুরু করেছেন। পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে, আমি অনেকগুলো গণমাধ্যমকে ফোন করে বলেছি- আপনারা সন্ত্রাসী। দেশের এই পরিস্থিতির জন্য আপনারাই দায়ী।”বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তরের সামনে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা টেনে এনে তিনি বলেন, “আমি তো মনে করি পটকা ফোটানো খুবই কম হয়েছে, আরো বেশি হওয়া উচিত ছিল। অন্য যে কোনো দেশে এ ধরনের পরিস্থিতিতে আরো বেশি হয়। আর এটার পক্ষে একটা জনমত কাজ করে।” তার এই বক্তব্যের পর তাকে গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।দেশের দুই প্রধান নেত্রী ইতোমধ্যে ফোনে কথা বলেছেন। তা এখন দেশের আলোচিত বিষয়। এদিকে খবর বেরিয়েছে, আন্দোলন ও আলোচনা একসঙ্গে চালিয়ে নিয়ে সরকারকে চাপে রেখে দাবি আদায়ের কৌশলে এগোচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এ লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে সামনের দিনগুলোতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়েছে তারা। ১৮ দলের অন্য শরিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সরকারের বাকিটা সময় রাজপথেই থাকবে বিএনপি। আর প্রয়োজনমাফিক আন্দোলন কর্মসূচিগুলো কঠোর থেকে কঠোরতর হবেÑ এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে শীর্ষস্থানীয় নেতারা।এ ধারাবাহিকতায় আগামী ৪ থেকে ৬ নভেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশের রাজপথ, রেলপথ ও নৌ-পথ অবরোধ ও ৭ নভেম্বর গণসংহতি দিবস পালনের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।এছাড়া ৭ নভেম্বরের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাসভবন ও সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকার যদি এর মধ্যে দাবি মেনে না নেয় তাহলে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে অসহযোগ আন্দোলন। একই সঙ্গে সারা দেশের মানুষকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানাবেন খালেদা জিয়া। এদিকে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার নির্বাচনের দিকেই এগুচ্ছে একতরফাভাবে।প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ গেলো মঙ্গলবার বলেছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের তারিখ ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনের তফসিলের বিষয়ে সিইসি বলেন, কমিশন বৈঠকে আমরা এই নিয়ে বসবো। আচরণবিধি চূড়ান্ত হয়ে গেলে একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারবো। আশা করছি শিগগিরই আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত করতে পারবো। রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে নির্বাচনকালীন প্রশাসনে বদলি হবে না। আমরা প্রয়োজন মনে করলে বদলি করতে পারি। তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনে খোঁজখবর রাখছি, বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বিষয়টি দেখবো। ডিসি-এসপিসহ প্রশাসনে রদবদল করতে হবে এরকম কোনো কথা নেই। নির্বাচনকালীন বদলি করার ধারাবাহিক নিয়ম রয়েছে। তবে পূর্বে যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল সেটা ভিন্ন কথা এখন সেই রকম অবস্থা নেই। সরকার তার রুটিন দায়িত্ব পালন করছে। কথা হচ্ছে, নির্বাচন যে সুষ্ঠুভাবে করতে দেয়া হবে না, তা তো আওয়ামী লীগও জানে। ঐ সময়ে লাগাতার হরতাল দিয়ে বসলে তারা কী করবে? একটা কথা কারো অজানা নয়, এই সুযোগে বেশ কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী তাদের মনের মতো করে আগ্রাসী কর্মকা- চালাবার চেষ্টা চালাতে পারে। দেশকে চরম নৈরাজ্যে পরিণত করা হতে পারে। এ থেকে মুক্তির উপায় কীÑ তা এই তরুণ প্রজন্মকে ভাবতে হবে।নির্বাচনী কাজে অংশ নিতে দেশে ফিরেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। জয় প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, “বিএনপি সংলাপে আসতে চায় না বলেই নানা রকম ছুতা দেখিয়ে যাচ্ছে। তারা সংলাপে আসবে এমন আশা করলেও কোনো লক্ষণ তো দেখছি না।” হরতালে বোমা হামলার মাধ্যমে বিরোধী দলের ‘আসল চেহারা’ দেখা গেছে বলেও দাবি করেন জয়। তিনি বলেন, “যেভাবে বিচারপতি-সংবাদ মাধ্যম-পুলিশের ওপর বোমা হামলা করা হয়েছে সেটা ভয়ঙ্কর।”বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি থাইল্যান্ডের সমান হবে দাবি করে তিনি বলেন, “এর মধ্যেই আমরা নেক্সট মালয়েশিয়া হওয়ার পথে চলে এসেছি।” সন্দেহ নেই দেশ এখন চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই কঠিন প্রয়োজনে কিছু কাণ্ডারি দরকার। এই কা-ারি দেশের তরুণ প্রজন্ম। যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে মহাজোটকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছিল। দেশকে বাঁচাতে হবে। রক্ষা করতে হবে অজগরদের হাত থেকে। এরা মুখে “প্রতিহিংসার রাজনীতি” করে না- করবে না বললেও ষাট ঘণ্টার হরতালের সময় কী করেছে- তা দেশবাসী দেখেছেন। এদের চরিত্র যেমন ছিল, তেমনই আছে। তাই এদের খপ্পর থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। আর এজন্য শাণিত তারুণ্যের ঐক্য ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।---------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ২ নভেম্বর ২০১৩",False rg,"মোদির বাংলাদেশ সফরে ডজনখানেক চুক্তির আড়ালে চাপা পড়ছে তিস্তা ইস্যু !!! ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগামী ৬ ও ৭ জুন দু'দিনের জন্য বাংলাদেশ সফর করবেন। মোদির এই সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রায় এক ডজন চুক্তি সাক্ষরিত হবে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ট্রানজিট সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি সাক্ষর হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দু'দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে চুক্তি হবে। সংশোধিত বাণিজ্য চুক্তি এবং সংশোধিত নৌট্রানজিট প্রটোকল সাক্ষর হবে। উপকূলীয় জাহাজ চলাচলে পৃথক একটি চুক্তি সাক্ষর হবে। মানব পাচার, জলবায়ু পরিবর্তন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও দিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকল সাক্ষর হবে। এছাড়া নতুন একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। ভারতের প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথভাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার তারাপুর সীমান্তের ২০৩৯ নং পিলার সংলগ্ন সীমান্ত হাটের উদ্বোধন করবেন। এছাড়া তিনি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হাত থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়িকে দেওয়া সম্মাননা পদক গ্রহন করবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর বক্তৃতা দিবেন। । বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনী বিল ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর মোদির উপস্থিতিতে ঢাকায় এই চুক্তির অনুসমর্থন সম্পন্ন করা হবে। তবে মোদির এই সফরে বহুল আলোচিত তিস্তা পানি চুক্তি হচ্ছে না। গত বছর মে মাসে ভারতের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর এটাই হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম বাংলাদেশ সফর। ক্ষমতায় আরোহনের পর থেকেই মোদি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। মোদি এই এক বছরে প্রতিবেশী ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ছাড়াও পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর, জাপান, চীন, মাঙ্গোলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া; দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল; উত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা; ইউরোপের ফ্রান্স ও জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়া সফর করেছেন। এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এবং নেপালে অনুষ্ঠিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদির সাক্ষাত হয়েছে। দু'বারই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান।কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। এর মধ্যে দীর্ঘ ৬৮ বছরের সীমান্ত জটিলতা দূর করতে ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি উভয় দেশের সম্পর্কে একটি নতুন মাইলফলক রচনা করবে। স্থল সীমান্ত চুক্তির আওতায় উভয় দেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হবে। যার মাধ্যমে ছিটমহলবাসীরা নাগরিকত্ব সুবিধা পেতে যাচ্ছেন। এছাড়া এই চুক্তির আওতায় উভয় দেশের মধ্যে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকার বিষয়েও স্থায়ী নিষ্পত্তি হবে। এছাড়া উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করতে কিছু নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হতে পারে। বিশেষ করে নেপাল ও ভুটানে ভারত যেভাবে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, এবার বাংলাদেশেও তারা একই ধরনের প্রকল্প শুরু করতে আগ্রহী। কুমুদিনী ট্রাস্টের একটি পানি প্রকল্পের মাধ্যমে হয়তো এর শুভ সূচনা হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ট্রানজিট সংক্রান্ত একাধিক চুক্তির অংশ হিসেবে ঢাকা-কলকাতা-আগরতলা সরাসরি বাস চলাচল এবং ঢাকা-সিলেট-শিলং-গৌহাটির মধ্যে যাত্রীবাহী বাস চলাচল সংক্রান্ত চুক্তি হবে। এই চুক্তির খসড়া গতকাল বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে 'এগ্রিমেন্ট বিটুইন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) অ্যান্ড ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বিআইএস) অন কোঅপারেশন ইন দি ফিল্ড অব স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন অ্যান্ড কনফরমিটি অ্যাসেসমেন্ট-চুক্তির খসড়াও অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এই চুক্তি সাক্ষরের পর উভয় দেশের সংস্থা দুটি পণ্যের মান সংক্রান্ত একে অন্যের সনদ গ্রহণ করবে। এছাড়া পরস্পরের মধ্যে ঠিক করা নির্ধারিত সময়ে পণ্যের মান নির্ণয় করবে। একই সঙ্গে একে অপরের মান নির্ণয়ের পদ্ধতি সমন্বয় করবে, যাতে পণ্যের মান একই ধরনের হয়। এ চুক্তি কার্যকর হলে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি ফলে বাংলাদেশের রফতানির ক্ষেত্রে অশুল্ক বাণিজ্য বাধা অনেকাংশে দূর হবে। গত বছর এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহুপক্ষীয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক সচিব সুজাতা মেহতা দ্বিতীয় মেয়াদে সহজ শর্তে এক বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব করেছিলেন। যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ১১টি উন্নয়ন প্রকল্পের একটি খসড়াও ইতোমধ্যে তৈরি করেছে। এছাড়া মোদির সফরের সময় বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ভারতকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হবে। সংশোধিত বাণিজ্য চুক্তি এবং সংশোধিত নৌট্রানজিট প্রটোকল সংক্রান্ত দুটি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের বাইরে তৃতীয় দেশ হিসেবে নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহন করার সুযোগ রাখা হবে। উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির আওতায় ভারতের তিনটি সমুদ্রবন্দর বিশাখা পত্তম, প্যারাদ্বীপ ও হলুদিয়া সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরের মধ্যে উপকূল ঘেঁষে ছোট ও মাঝারি জাহাজ চলাচল করবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার তারাপুর সীমান্ত হাট চালু হলে এটি হবে ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তের মধ্যে চতুর্থ সীমান্ত হাট। এর আগে ভারত-বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি অনুযায়ী, কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার বালিয়ামারী, সুনামগঞ্জ সদরের ডলোরা এবং ফেনী ছাগলনাইয়ার পূর্ব মধুগ্রাম-ছয়ঘরিয়ার মধ্যবর্তী স্থানের সীমান্তে তিনটি সীমান্ত হাট চালু হয়েছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এসব চুক্তির মাধ্যমে ট্রানজিট সুবিধা আরো বিস্তৃত হবে। এসব চুক্তির আওতায় উভয় দেশের মধ্যে সড়ক, রেল, নদী, সমুদ্রপথে এবং বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে কানেকটিভিটি শক্তিশালী করতে ট্রানজিট সুবিধা বাড়ানো হবে। ট্রানজিট শব্দটি স্পর্শকাতর হওয়ায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৌশলে কানেকটিভিটি শব্দ ব্যবহার করা হবে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও শক্তিশালী করার যে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছেন, তা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পরাস্পরিক সম্পর্ক নিঃসন্দেহে আরও দৃঢ় করবে। ওয়ান ইলেভেনের পর গোটা বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট এককভাবে যেভাবে বাজার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল, তার বিপরীতে চীন ও ভারতের মধ্যে নতুন সম্পর্ক উন্নয়নের যে পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে, তা কেবল এশিয়া অঞ্চলেই বাজার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত করবে না, বরং গোটা বিশ্বে মার্কিন আধিপত্যকে নতুন চ্যালেঞ্জ জানাবে। দক্ষিণ-এশিয়ায় ভারতের একক বাজারের বিপরীতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি দূরীকরণে ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ছোট দেশগুলোকে ভারতের গুরুত্ব দেওয়ায়, এই অঞ্চলে শান্তি ও পরাস্পরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় মোদির কূটনৈতিক তৎপরতা ভবিষ্যতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি সত্ত্বেও ভৌগলিক অবস্থানগত সুবিধার কারণে ভারত বর্তমানে বাংলাদেশের সাথে অনেক ইস্যুতেই নমনীয় আচরণ করছে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে ভারতের সাতটি প্রদেশের অবস্থান। ভারতের অন্যান্য এলাকার চেয়ে এই সাতটি প্রদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেকটা পিছিয়ে। তাছাড়া সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে দমাতে হলে এই সাতটি প্রদেশে কেন্দ্রীয় সরকারের আরও নিয়ন্ত্রণ জরুরী। জবরদস্তিমূলক নিন্ত্রয়ণ নীতি এই সাতটি প্রদেশকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে, সেই আশঙ্কায় মোদি সেখানে উন্নয়ন কর্মসূচি জোড়দার করতে ইচ্ছুক। সেজন্য বাংলাদেশের ভেতর থেকে স্থল, নৌ ও আকাশপথে সেখানে নানান প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন ভারত সরকারের মুখ্য বিষয়।মোদির বাংলাদেশ সফরে ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের আড়ালে ভারতের প্রধান টার্গেট ট্রানজিট সুবিধা এবং চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুবিধা। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ মিটিয়ে ট্রানজিট ও বন্দর ইস্যুতে সুবিধা নিতে চায়। ইতোমধ্যে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা সরাসরি বাস সার্ভিস এবং ঢাকা-সিলেট-শিলং-গৌহাটির মধ্যে যাত্রীবাহী বাস সার্ভিসের পরীক্ষামূলক উদ্ভোধন হয়েছে। ভবিষ্যতে এই দুটি পথেই ট্রেন সার্ভিস চালুর চিন্তাও করছে ভারত। এছাড়া শিলং-তমাবিল-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-আগরতলা, দার্জেলিং-পাটগ্রাম-ঢাকা-কলকাতা, সিকিম-বাংলাবান্দা-সোনামসজিদ-কলকাতা- এমন অনেক রুটে পণ্য চলাচল ও যাত্রীবাহী বাস সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। এছাড়া কলকাতা-যশোর-মংলা রুট দিয়ে মংলা বন্দর ব্যবহারের ইচ্ছাও ভারতের পরিকল্পনায় রয়েছে। আবার মংলা বন্দর থেকে ঢাকা-সিলেট-শিলং রুটে পণ্য চলাচল সুবিধার চিন্তাও রয়েছে ভারতের। এক ডজন চুক্তির আড়ালে কে কী পাচ্ছে?১. বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সীমান্ত জটিলতার একটি স্থায়ী সমাধান হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট ১৬২টি ছিটমহল। যার মধ্যে ভারতের ভূ-খণ্ডে বাংলাদেশের রয়েছে ৫১টি ছিটমহল, যার মোট আয়তন ৭ হাজার ১১০.০২ একর এবং লোকসংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। আর বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে ভারতের রয়েছে ১১১টি ছিটমহল, যার মোট আয়তন ১৭ হাজার ১৫৮.০৫ একর এবং লোকসংখ্যা প্রায় এক লাখ। ১৬২ ছিটমহলের মোট আয়তন ২৪ হাজার ২৬৮.০৭ একর। ছিটমহল বিনিময়ে বাংলাদেশ ভারতের তুলনায় বেশি পাচ্ছে প্রায় ১০ হাজার ১৪৮.০৩ একর ভূমি। পাশাপাশি ছিটমহলের বাসিন্দাদের জন্য নাগরিকত্বের সুবিধা উন্মুক্ত থাকায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিছুটা লাভবান হবে। কারণ ভারতের প্রায় এক লাখ মানুষের বিপরীতে বাংলাদেশে যুক্ত হচ্ছে ৭০ হাজার মানুষ। ২. সংশোধিত নৌট্রানজিট প্রটোকল এবং উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির আওতায় বেশি সুবিধা পাচ্ছে ভারত। মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা জয়ের পর তড়িঘড়ি করে যেভাবে সমুদ্র ও যৌথ নদীগুলোতে ভারতকে বেশি সুবিধা প্রদান করেছে, তা বাংলাদেশের জন্য এক ধরনের কূটনৈতিক পরাজয় ছিল। রায়মঙ্গল ও হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর উপর বাংলাদেশের একক আধিপত্য ভারতের কাছে বাংলাদেশ বিসর্জন দিয়েছে। সমুদ্রে ভারতীয় নৌবাহিনীকে অবাধ চলাচলের সুবিধা দিতে গিয়ে ইতোমধ্যে আমরা ভারতের কাছ থেকে সুন্দরবন ধ্বংসের রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করেছি। যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বুমেড়াং প্রকল্প। এই প্রকল্প বাংলাদেশের সুন্দরবনকে আগামী বিশ-ত্রিশ বা পঞ্চাশ বছরের মধ্যে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেবে। ইতোমধ্যে সুন্দরবন অঞ্চলে নৌ দুর্ঘটনার যে হিরিক পড়েছে, এটা সুন্দরবন ধ্বংসের নীলনকশারই প্রতিফলন। যে ঘটনায় প্রতিবারই বাংলাদেশের মানুষকে সরকার বারবার ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে।নতুন করে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির আওতায় ভারতের তিনটি সমুদ্রবন্দর বিশাখা পত্তম, প্যারাদ্বীপ ও হলুদিয়া সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরের মধ্যে উপকূল ঘেঁষে ছোট ও মাঝারি জাহাজ চলাচলের কথা বলা হলেও, আসলে বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় নৌবাহিনীর অবাধ ও নিছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই নতুন করে এই উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি। শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত এই চুক্তির আওতায় নিশ্চিত বেশি লাভ ঘরে তুলবে। ৩. স্থল, জল ও আকাশ পথে অবাধ অবাধ যোগাযোগের লক্ষ্যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে ট্রানজিট চুক্তি হতে যাচ্ছে, সেখান থেকে বাংলাদেশ যদি ভারতীয় পণ্যের উপর যথার্থ শুক্ল আদায় করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ট্রানজিটের নামে ভারত বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে বেশি লাভবান হবে। একদিকে ভারত পূর্বাঞ্চলের সাতটি প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের আড়ালে নানান কিসিমের উন্নয়ন কৌশলের কথা বলছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ভারত যদি পণ্যের নামে এসব অঞ্চলে সামরিক সরঞ্জাম আনা নেওয়া করে, তাহলে চুক্তিতে বাংলাদেশের জন্য রক্ষাকবজ কি তা এখনো সুস্পষ্ট নয়। পুরোপুরি ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য ট্রানজিট হলে তাতে বাংলাদেশের লাভ হবে। কিন্তু ট্রানজিটের সুযোগে ভারত যদি এসব রুটে সামরিক গোলাবারুদ ও ভারতীয় সেনা আনা নেওয়া করে তাহলে বাংলাদেশের জন্য তা এক ধরনের নতুন নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করবে। কারণ স্থল সীমান্তের জটিলতা দূর হলেও এখনো ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) গুলিতে প্রতিদিন বাংলাদেশীদের মৃত্যুর খবর আসছে। সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ গুলি চালানো যে একেবারে বন্ধ করবে, তার গ্র্যান্টি কি? তাহলে উভয় দেশ যখন সীমান্ত জটিলতা নিরসনে এতদূর অগ্রসর হল, এই সময়েও কেন বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশীদের মৃত্যু হচ্ছে? উভয় দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ মিটলেও সীমান্তে গুলি বিনিময় বন্ধ না হলে, এই ঐতিহাসিক চুক্তি কতটুকু সুফল বয়ে আনবে?৪. স্থায়ী মেয়াদে না হলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়নের সুযোগ রেখে বাংলাদেশ-ভারত সংশোধিত বাণিজ্য চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে আমাদের মন্ত্রিসভা। এতে চুক্তির মেয়াদ তিন বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর করা হয়েছে। সংশোধিত বাণিজ্য চুক্তির খসড়ায় ভারত সম্মত হয়েছে। গত ৩১ মার্চ বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ফলে চুক্তির ধারাবাহিকতায় ১ এপ্রিল থেকে সংশোধিত চুক্তি কার্যকর হবে। কিন্তু বাণিজ্য চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ কি কি পণ্যের উপর ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে তা এখনো সুস্পষ্ট নয়। তবে বিদ্যমান চুক্তিতে সমঝোতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও ভারত বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য একে অন্যের স্থল, নৌ ও রেলপথ ব্যবহার করতে পারে। এখন নতুন এই বিধান অনুযায়ী, তৃতীয় দেশ হিসেবে নেপাল ও ভুটান যুক্ত হওয়ায় আপাত দৃষ্টিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। এ চুক্তির আওতায় ভারতের স্থল, নৌ ও রেলপথ ব্যবহার করে দেশ দুটির সঙ্গে বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারবে। কিন্তু ভারতে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার কতোটা গুরুত্ব পাচ্ছে, তার উপর এই বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়টি ঝুলে থাকবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ শিল্পগোষ্ঠী আম্বানীদের অর্থানুকুল্যে চলা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক – অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দু'পাশে ৩০ কিলোমিটার এলাকায় বিশেষ সীমান্ত অঞ্চল গড়ে তোলার প্রস্তাব করেছে। যেখানে উভয় দেশের যৌথ প্রশাসনিক ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। সীমান্ত এলাকার মানুষদের জন্য ওয়ার্ক পার্মিটের পাশাপাশি ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাচার বন্ধ করার জন্যই এই উদ্যোগ, যা ভারত সরকার এখন বিশেষভাবে বিবেচনা করছে। বাংলাদেশে গরুর মাংসের চাহিদা ক্রমবর্ধমান থাকায় ওই প্রস্তাবে ভারত থেকে গরু পাচারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত সীমান্ত হাটগুলির মাধ্যমে গরু রপ্তানিকে আইনী সিলমোহর দেওয়ার কথা ভাবছে ভারত। যা থেকে ভারতের রাজস্ব আদায় যেমন হবে তেমনি সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ হবে। যা ভারতের জন্য সুফল বয়ে আনবে। ৫. বাংলাদেশ ও ভারতের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে 'এগ্রিমেন্ট বিটুইন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) অ্যান্ড ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বিআইএস) অন কোঅপারেশন ইন দি ফিল্ড অব স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন অ্যান্ড কনফরমিটি অ্যাসেসমেন্ট-চুক্তির আওতায় লাভের পাল্লা ভারতের দিকে। কারণ বিএসটিআই অনুমোদিত অনেক পণ্যের মান স্বয়ং বাংলাদেশের দেশীয় ভোক্তাদের কাছেই এখন পর্যন্ত মান উত্তীর্ণ হতে পারে নি। বিএসটিআই-এর বিদ্যমান মান নিয়ে ভারতের বিআইএস-এর সঙ্গে পাল্লা দেবার আড়ালে দুর্নীতিকে আরো শক্তিশালী করার একটি উপায় হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভারত ইচ্ছে করলে যে কোনো ইস্যুতে এই মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশী পণ্যের ভারতে অবাধ চলাচলের উপর কড়াকড়ি আরোপ করতে পারে। যতদিন না আমরা বিএসটিআই-কে মান উত্তীর্ণ পর্যায়ে নিয়ে যেতে না পারব, ততদিন এই চুক্তি হয়তো কাগজে কলমে কেবল শ্রীবৃদ্ধি করবে, কাজের কাজ কিছুই হবে না। ৬. ভারত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করার নামে পূর্বাঞ্চলের সাতটি প্রদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশিচত করতে চায়। ইতোমধ্যে কুস্টিয়ার ভেড়ামাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারত থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ আমদানি করছে, তার হিসাব নিকাশ এখনো সাধারণ মানুষের কাছে ততোটা স্বচ্ছ নয়। সেক্ষেত্রে ভারতীয় বিনিয়োগে রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প যেমন বাংলাদেশের জন্য সুন্দরবন ধ্বংসের উপলক্ষ্য হয়েছে, তেমনি নিজেদের বিদ্যুৎখাতে স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে চিন্তা না করে ভারত থেকে যে কোনো ধরনের বিদ্যুৎ আমদানিতে একটা বড় ধরনের শুভংকরের ফাঁকির ব্যাপারটি মোটেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ভারতের এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশের শিল্প-কলকারখানার চেয়ে কিছু ভারতপন্থী ব্যবসায়ীদের পকেট মোটাতাজাকরণে ব্যবহার হবার ঝুঁকি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, আমরা ইতোমধ্যে কুইক রেন্টালের কুফল হারে হারে টের পাচ্ছি। মানুষ অতিরিক্ত দামে বিদ্যুৎ কিনছে। কিন্তু দুর্ভোগ মোটেও কমছে না। মাঝখান থেকে লাভের মৌ পিঁপড়ায় খেয়ে যাচ্ছে। ৭. দ্বিতীয় মেয়াদে সহজ শর্তে ভারত বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব দিয়েছে। যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ১১টি উন্নয়ন প্রকল্পের একটি খসড়াও ইতোমধ্যে তৈরি করেছে। বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ভারতকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দেবে বাংলাদেশ। এটি বাংলাদেশের জন্য লাভবান হবে। তবে এক বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্তগুলো মিডিয়ায় তেমন আলোচনা না হওয়ায় এর মধ্যে কোনো শুভংকরের ফাঁকির কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ৮. ভারত এখন পর্যন্ত গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশকে দেয় না। শুষ্ক মৌসুমে ভারত মাঝে মাঝে এক তরফাভাবে ফারাক্কা থেকে পানি প্রত্যাহার করে। আবার বর্ষা মৌসুমে ভাগিরথী নদী উপকূলে বন্যা আশংকা দেখা দিলে বাংলাদেশের উপর বন্যা চাপিয়ে দৈয় ভারত। ফলে গঙ্গার পানি চুক্তি যতোটা কাগজে কলমে বাস্তবে ভারত তা এখনো পুরোপুরি মানে না। বরং প্রায়ই অনিয়ম করে। অথচ গঙ্গা পানির ন্যায্য হিস্যা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। মোদি'র বাংলাদেশ সফরের সময়ও গঙ্গায় পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে বাংলাদেশ কোনো প্রসঙ্গ তুলছে না। যা বাংলাদেশের জন্য এক ধরনের কূটনৈতিক পরাজয়। ৯. ২০১১ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফর করেন। মনমোহন সিং-এর বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হবার কথা ছিল। তখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশের সংলগ্ন পাঁচটি ভারতীয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের আসার কথা থাকলেও শেষ মূহুর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রস্তাবিত তিস্তা চুক্তির বিষয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়ে ঢাকায় আসেন নি। ফলে তখন তিস্তা পানি চুক্তি হয়নি। যে কারণে বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তি থেকে পিছিয়ে গিয়েছিল। তিস্তা চুক্তি না করার আড়ালে ওটা ছিল স্রেফ একটি ভারতীয় কূটনৈতিক চালাকি। এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি'র বাংলাদেশ সফরে বহুল আলোচিত তিস্তা চুক্তি হতে যাচ্ছে, এমনটি শুরু থেকে শোনা গেলেও শেষ সময়ে সেই মমতা বন্দোপাধ্যায় আবারো এটি আটকে দিলেন। আর আশ্চার্যজনকভাবে বাংলাদেশ সরকারও অনেকটা ভারতীয় প্রদেশের মত নমনীয় আচরণে তা মেনে নিল! এবার মমতা বন্দোপাধ্যায় শর্ত দিয়েছেন তিস্তা নিয়ে কোনো কথা হলে তিনি বাংলাদেশে আসবেন না। বাংলাদেশ যাতে তিস্তা নিয়ে মোদি'র সঙ্গে কোনো আলোচনা না তোলে সেজন্য এবার মমতা বন্দোপাধ্যায় ঢাকায় আসবেন ৫ জুন আর ৬ জুন চলে যাবেন। নরেন্দ্র মোদি'র মুখ রক্ষা আর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সফরের সময় পদ্মার ইলিশ খাওয়ার সৌজন্যতা দেখাতে মমতা ঢাকায় আসবেন। কিন্তু এটা যে ভারতের সেই পুরানো কৌশল এটা বাংলাদেশ বুঝেও কেন মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। তার মানে ভাপরত সুস্পষ্টভাবে যেটা বলতে চায় সেটা হল তিস্তা পানি চুক্তি সহসা হচ্ছে না। তাহলে কখন হবে তিস্তা পানি চুক্তি?তিস্তার উজানে ভারতের সিকিম রাজ্য সরকার একাধিক বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তিস্তার উজানে যতদিন ভারতের একাধিক বাঁধ সম্পন্ন না হচ্ছে, ততদিন ভারত যে কোনো অযুহাতে তিস্তা পানি চুক্তি এড়িয়ে চলবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হল ভারতের কৌশলের একটি ঘুটি মাত্র। কিন্তু বাংলাদেশ কিন্তু তিস্তা চুক্তি না করেই সেই ট্রানজিট দিয়ে দিচ্ছে। বরং এবার ট্রানজিটের আওতা আরো বিস্তৃত হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধের পর ভারত যেমন নামকাওয়াস্তে গঙ্গা পানি চুক্তি করেছে, তিস্তার বেলায়ও ভারত একই কৌশল নিয়েছে। যা মেনে নেওয়া মানে বাংলাদেশের বিশাল কূটনৈতিক পরাজয়। তিস্তার উজানে সিকিম সরকারের এসব প্রকল্প অব্যাহত থাকলে আগামীতে ভারতের সঙ্গে কাগজে কলমে তিস্তা চুক্তি হলেও বাংলাদেশের তেমন কোনো লাভ হবে না। তিস্তার উজানে ভারতের চলমান প্রকল্পগুলোর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক ফলাফল ভবিষ্যতে বাংলাদেশকেই বহন করতে হবে। অন্যদিকে হিমালয় থেকে উৎপন্ন হওয়া ব্রহ্মপুত্রের উজানে বাঁধ দিয়ে চীন সরকার দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভারত ও বাংলাদেশে বন্যা ও নদী ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। উজানের যে কোনো আন্তর্জাতিক নদীতে ভারত ও চীনের কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে ভাটি অঞ্চলের বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হবে। এসব বিষয় যথাযথভাবে বিবেচনায় না রাখলে, দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশে নদী অববাহিকার দু’পাশের জনগণের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। উজানে পানি প্রত্যাহার করা হলে ভাটি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যও নষ্ট হবে। আন্তর্জাতিক নদী ইস্যুতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতা এবং তোষামোদিতাই মূলত এজন্য দায়ী। ১০. ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর বাংলাদেশ সফরের সময় ফেনী নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারেও কোনো চুক্তি হয়নি। এবারো নরেন্দ্র মোদি'র বাংলাদেশ সফরে ফেনি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হচ্ছে না। এমন কি ভারতের পানি সম্পদমন্ত্রী মোদি'র সঙ্গে ঢাকায় আসছেন না। ফলে নদী ও পানি প্রশ্নে বাংলাদেশের পকেটে এবারো ফলাফল শূণ্য। আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ব্যবস্থাপনার জন্য নদীর উৎসস্থল থেকে সমুদ্র পর্যন্ত সব দেশের অংশগ্রহণে যৌথ নদী কমিশন গঠন করতে হবে। এটা না করলে প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থার সংকট বাড়তে থাকবে। আন্তর্জাতিক নদীতে কোনো একক দেশের ইচ্ছায় কোনো নদীর উজানে পানি প্রত্যাহার করলে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ সাময়িকভাবে উপকৃত হলেও ভাটির অঞ্চলের জনগণের সম্মতি ছাড়া এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন যাতে কেউ ঘটাতে না পারে, সে বিষয়ে বাংলাদেশকে আরো জোড়ালো ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে উজান ও ভাটি অঞ্চলের জনগণের মধ্যকার আস্থার সংকটে যে ক্ষতি হবে, ভবিষ্যতে তা কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব হবে না। বর্ষা মৌসুমে পানি ধরে রাখার জন্য যৌথ উদ্যোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদীগুলো শুষ্ক মৌসুমের তিস্তার মত করুণ দশায় পতিত হবে। বাংলাদেশকে এই বিষয়গুলো নিয়ে শুধু ভারত নয় চীনের সঙ্গেও জোড়ালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। ১১. বাংলাদেশের হাতে এখন একটি মাত্র পয়েন্ট। কক্সবাজারের অদূরে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর। কারণ ভারত ও চীন উভয়েই এখন বাংলাদেশের কক্সবাজারের অদূরে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজটি পেতে চায়। একই প্রকল্প পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সিঙ্গাপুর, বৃটেনসহ অনেকেই একপায়ে দাঁড়ানো। বাংলাদেশের উচিত হবে আন্তর্জাতিক নদীগুলোতে পানির ন্যায্য হিসাব কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিয়ে তবেই এসব বিষয়ে দক্ষ পদক্ষেপ নেওয়া। সেক্ষেত্রে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে কোনো একটি দেশকে একক দায়িত্ব না দিয়ে একেক দেশকে একেক ধরনের দায়িত্ব দিয়ে বাংলাদেশের উচিত হবে ‘আসল চাবিটি’ নিজেদের হাতে রাখা। কারণ, ভারত বাংলাদেশকে পানির হিসাব পুরোপুরি না বুঝিয়ে দিয়ে বিভিন্ন বাণিজ্য সুবিধা আর ঋণ চুক্তির আড়ালে ট্রানজিটসহ অন্যান্য সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে। তিস্তা চুব্তি না করেই বাংলাদেশ এবার ভারতকে ট্রানজিট দিতে রাজি হয়েছে। আগামীতে হয়তো টাকার অংকের হিসাব নিকাশে পদ্মা সেতুর মত সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পও বাংলাদেশ যে কাউকে না বুঝেই দিয়ে দেবে। যদি এমনটি হয়, তা হবে বাংলাদেশের জন্য চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতা। ১২. ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কূটনৈতিক হিসাব নিকাশে এক চুলও ছাড় দিলে তা হবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে ভারতের একটি প্রদেশে পরিণত হওয়ার চূড়ান্ত নীলনকশা। তাই সরকার বাহাদুরকে প্রতিটি চালই বুঝে শুনে হিসাব কষে দিতে হবে। মোদি'র ঢাকায় আসার আগেই তিস্তা ইস্যুতে বাংলাদেশের পিছু হাঁটা নীতি মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক যুক্তিতর্ক ছাড়াই তিস্তা ইস্যু থেকে বাংলাদেশের পিছিয়ে আসা বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্র নীতিরই প্রতিফলন। তিস্তা প্রশ্নে এবারো ট্রানজিট বিষয়ে বাংলাদেশের অনড় থাকার কৌশল হতে পারত সঠিক কূটনৈতিক দক্ষতার প্রতিফলন। সেক্ষেত্রে ভারত হয়তো আরো নমনীয় হতে চেষ্টা করত। ভারতকে সেই স্বার্থযুদ্ধের দিকে ঠেলে না নিয়ে মমতাকে দেখিয়ে আবারো শেষ মুহূর্তে তিস্তা চুক্তি আটকে দেওয়ার ভারতীয় কৌশলের কাছে বাংলাদেশ পুরোপুরি পরাজয় স্বীকার করেছে। বাচ্চা না কাঁনলে স্বয়ং মমতাময়ী মা অনেক সময় দুধ দেয় না। সেখানে ভারতের মত পরাশক্তিকে দরকষাকষি করার মত সকল অস্ত্র যদি এভাবে বাংলাদেশ একে একে হাতছাড়া করে, তাহলে তা হবে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য চরম ক্ষতির কারণ। যা হয়তো ক্ষমতাসীন সরকার পুরোপুরি বোঝারও চেষ্টা করেনি। আমাদের আরেকটি জিনিস পরিস্কারভাবে মনে রাখতে হবে যে, মোদি বাংলাদেশে আসছেন গোটা ভারতের সকল দলের যৌথ মতামত ও সিদ্ধান্তকে পকেটে পুরে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এখনও কোনো ইস্যুতেই দেশের অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি। ভারতের সঙ্গে যে কোনো ইস্যুতে চুক্তি করার আগে সরকারের উচিত ছিল এসব বিষয় নিয়ে মোদির পথ অনুসরণ করেই সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া। নইলে ভারতের সঙ্গে যে কোনো চুক্তিতে বাংলাদেশের চুল পরিমাণ পরাজয়ের দায়ও কিন্তু বর্তমান সরকারকেই বহন করতে হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বিরোধীদলগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই ভারতের সঙ্গে যে এক ডজন চুক্তি করতে যাচ্ছে, যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি চুক্তিতে ভারত চুক্তির আগেই হিসাব নিকাশে এগিয়ে আছে। অন্য চুক্তি গুলো ভারত যে পুরোপুরি অনুসরণ করবে তারও কোনো গ্র্যান্টি নাই। ফলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি'র বাংলাদেশ সফরে ডজনখানেক চুক্তি হবার সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশের কূটনৈতিক পরাজয়ের সুস্পষ্ট আভাস এই বার্তা দিচ্ছে যে, সুদূর ভবিষ্যতে এসব চুক্তির ফলে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতই বেশি সুফল ভোগ করবে। পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের এই দুর্বল অবস্থান ও নতজানু নীতি হয়তো সরকারি দলকে ক্ষমতায় থাকতে সহায়তা করবে, কিন্তু তা বাংলাদেশকে সত্যিকারের সাবলম্বি হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পিছিয়েই রাখবে। ....................................৩ জুন ২০১৫ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৫ ভোর ৪:৫৩",False rg,"টাইগার্সদের ৭ রানের রুদ্ধশ্বাস জয়!!! আমি যখন বাসায় ফিরি তখন জয়ের জন্য আফগানিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৬৬ বলে ৮০ রান। হাতে ছিল ৮ ইউকেট। বন্ধুবর মঈনুল বিপ্লব ছোট্ট করে কমেন্ট দিলো, ধরা খাইতাছো নিকি!!! জবাবে আমি কনফিডেন্টলি বললাম, চান্স ৫০ ফিফটি। খেয়াল করলাম, ৪০তম ওভারে তাইজুল ইসলাম মাত্র ১টি রান দিয়েছিলেন। ওটাই ম্যাচ প্রেডিক্ট করতে আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছিল। টিএসসিতে বসে ম্যাচ হেরে যাচ্ছি, এমন একটি আশংকা নিয়েই শেষের ওভারগুলো বাসায় দেখব বলে চলে আসি। ৪১তম ওভারে ম্যাচের অবস্থা দাঁড়ালো জয়ের জন্য আফগানিস্তানের প্রয়োজন ৬০ বলে ৭৭ রান। কিন্তু শাকিব আল হাসানের এই ওভারটি আসলে আজকের ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। ৪১তম ওভারে শাকিব মাত্র ৩ রান দিয়ে রহমত শাহ'র মূল্যবান ইউকেটটি তুলে নিলেন। মুশফিকের হাতে স্ট্যাম্প হবার আগে রহমত শাহ ৯৩ বলে করেছিলেন মূল্যবান ৭১টি রান। ৪২তম ওভারে তাইজুল ৮ রান দিলে জয়ের জন্য আফগানিস্তানের প্রয়োজন পড়ে ৪৮ বলে ৬৬ রান। হাতে তখন ৭টি ইউকেট। ক্রিজে তখন অপর সেট ব্যাটসম্যান হাসমতুল্লাহ শহীদি। তাসকিন ৪৩তম ওভারে দিলেন ৯ রান। গ্যালারির দর্শকরা কিছুটা চিন্তিত। কিন্তু পরের ওভারে তাইজুল আবার দারুণভাবে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনলেন। ৪৪তম ওভারে তাইজুল ৮ রান দিলেও হাসমতুল্লাহ শহীদির মূল্যবান উইকেটটি নিলেন। হাসমতুল্লাহ শহীদি ১১০ বলে ৭২ রানের দারুণ একটি ফাইটিং ইনিংস খেলেছেন। ম্যাচের ভাগ্য তখনো পেন্ডুলামের মত দুলছিল। কারণ মোহাম্মদ নবি তখনো দারুণভাবে ব্যাট করে আফগানদের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন। ৪৪ ওভার শেষে আফগানদের তখন প্রয়োজন ৩৬ বলে ৪৯ রান। হাতে ৬টি উইকেট। ক্রিজে তখন মোহাম্মদ নবি। ৪৫তম ওভারে রুবেল দিলেন ১১ রান। আফগানদের স্কোর তখন ৪৫ ওভার শেষে ২২৮। হাতে তখনো ৪ উইকেট। ৪৬তম ওভারে ক্যাপ্টেন মাশরাফি আঘাত হানলেন শত্রু শিবিরে। আফগানদের স্কোর দাঁড়ালো ৪৬ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রান। ২৪ বলে দরকার ২৮ রান। ম্যাচে তখন চরম উক্তেজনা। যে কেউ এই ম্যাচ জিতবে এমন অবস্থা। এই সময় আবারো আফগানদের রানের টুটি চেপে ধরলেন শাকিব। শাকিব নিচের দশম ওভারে মাত্র ১টি রান দিয়ে ম্যাচে ফেরালেন বাংলাদেশকে। তখন থেকে বাংলাদেশ দল আবারো উজ্জীবিত। এরপরের ওভারে অর্থ্যাৎ ৪৮তম ওভারে তাসকিন তুলে নিলেন সেই ঐতিহাসিক জোড়া উইকেট। ম্যাচ ঝুকে গেল টাইগার্সদের দিকে। ৪৮ ওভার শেষে আফগানদের স্কোর ৭ উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রান। জয়ের জন্য প্রয়োজন ১২ বলে ২১ রান। ৪৯তম ওভারে রুবেল শেষ বলে রশিদ খানের উইকেট তুলে নিলে আফগানদের অবস্থান দাঁড়ায় ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫৩ রান। অর্থ্যাৎ জয়ের জন্য শেষ ৬টি বলে প্রয়োজন ১৩ রান। বাংলাদেশের তখন প্রয়োজন শেষ দুটি উইকেট। ৫০তম ওভার করতে আসলেন তাসকিন। প্রথম বলে মিরওয়াইজ আশরাফ নিলেন ২ রান। আফগানদের তখন প্রয়োজন ৫ বলে ১১ রান। দ্বিতীয় বলেই তাসকিন এলবিডব্লিউ করে দিলেন মিরওয়াইজ আশরাফকে। আফগানদের দরকার আরো ১১টি রান। টাইগার্সদের দরকার মাত্র একটি উইকেট। তাসকিনের তৃতীয় বলে লেগ বাই ১ রান। চতুর্থ বলে দৌলত জর্ডান নিলেন ২টি রান। আফগানদের প্রয়োজন ২ বলে ৮ রান। তাসকিন ৫ম বলটি ডট দিলেন। এবার আফগানদের দরকার ১ বলে ৮ রান। বাংলাদেশের দরকার একটি উইকেট অথবা একটি মাত্র ভালো বল। শেষ পর্যন্ত তাসকিনের শেষ বলে দৌলত জর্ডান শাব্বিরের হাতে ক্যাচ দিলে অলআউট হয় আফগানরা। বাংলাদেশে জিতে যায় ৭ রানে। ঠিক দশ মাস পর একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নেমে টাইগার্সরা এক রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শেষ পর্যন্ত আফগানদের বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে নিয়েই বুক উঁচিয়ে মাঠ ছাড়েন। এর আর টসে জিতে ক্যাপ্টেন মাশরাফি প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। আকাশের অবস্থা বিবেচনা করেই ব্যাট করার সিদ্ধান্ত। কারণ আকাশে বৃষ্টির খুব ভালো আলামত ছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ ৩০০ রানের মত আশা জাগিয়ে শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৬৮ রান তুলেছে এবং ৭টি উইকেট হারিয়ে আফগানদের মত ইনিংসের শেষ বলে অলআউট হয়। তার আগে তামিম ও মাহমুদুল্লাহ'র হাফ সেঞ্চুরি এবং শাকিব ও ইমরুলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটিংয়ের উপর ভর করে ২৬৫ রানের একটি ফাইটিং স্কোর করতে সক্ষম হয়। যদিও আমি আজকে ২৮০ রানের প্রেডিক্ট করেছিলাম। মনে হচ্ছিল টাইগার্সরা অন্তত ১৫টি রান কম করতে পেরেছে। আজকের ম্যাচেও সেই ১৫ রানের কারণেই এত এত টান টান উক্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। আগামী মাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে নামার আগে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ তিনটি ওডিআই ও দুটি টেস্ট খেলবে। যার প্রথমটি আজ ৭ রানে জিতে নিল টাইগার্সরা। দশ মাস পরে ওডিআইতে মাঠে নেমে আবারো দর্শকদের মান রক্ষা এবং নিজেদের দারুণভাবে ম্যাচে ফেরার যে দৃশ্যায়ন আজ টাইগার্সরা করলেন, তাতে টাইগার্সদের জন্য হৃদয় নিড়ানো অভিনন্দন। আজ সৌম্য সরকার একটি বল খেলে শূন্য রানে আউট হবার সময় বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১ রান। সেই তলানি থেকে তামিম ও ইমরুল দারুণ একটি পার্টনারশিপ দিয়ে দলকে তুলে আনেন। তামিম একটু ছটফট না করলে আজকে সেঞ্চুরিটা আসতে পারতো। দলীয় সর্বোচ্চ ৮০ রান এসেছে তামিমের ব্যাট থেকে। কিন্তু তামিম বল খরচ করেছেন অনেক। যা তামিমের স্বাভাবিক খেলার সঙ্গে মোটেও যায় না। ৯৮ বলে তামিম করেছেন ৮০ রান। মাহমুদুল্লাহও বলের চেয়ে রান কম করেছেন। দলীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬২ রান করতে মাহমুদুল্লাহর লেগেছে ৭৪ বল। শাকিব ৪০ বলে করেছেন ৪৮ রান। এছাড়া ইমরুল কায়েস করেছেন ৫৩ বলে ৩৭ রান। চৌকশ ব্যাট বলের জন্য ম্যাচ সেরা শাকিব। আফগানদের পক্ষে দৌলত জর্ডান ছিলেন সবচেয়ে সফল বোলার। তিনি ১০ ওভারে ৭৩ রান দিলেও নিয়েছেন ৪টি উইকেট। আফগান বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো বল করেছে রশিদ খান। দারুণসব গুগলিতে টাইগার্স ব্যাটসম্যানদের নাকানিচুবানি খাইয়েছেন এই তরুণ আফগান লেগ স্পিনার। ১০ ওভারে ৩৭ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। এরপর ভালো বল করেছেন মোহাম্মদ নবি। নবি ১০ ওভারে ৪০ রান দিয়ে নিয়েছেন ২টি উইকেট। আজকের ম্যাচে আফগানদের ডেব্যু তরুণ বোলার নাভিন-উল হক মাত্র একটি উইকেট দিয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ান শুরু করলেন। ১০ ওভারে ৬২ রান দিয়ে নিয়েছেন মাশরাফি'র উইকেটটি। এটি নাভিনের ডেব্যু উইকেট। বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন আইসিসি'র নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে নেমে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরেছেন। ১০ ওভার বল করে ৫৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। মূলত তাসকিনের দুই ওভারের দুই জোড়া উইকেট আজকের ম্যাচ জিততে টাইগার্সদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। ৪২ রানে মাশরাফি ২টি, ২৬ রানে শাকিব ২টি, ৬২ রানে রুবেল ১টি ও ৪৪ রানে তাইজুল ১টি উইকেট নেন। আফগানদের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেন হাসমতুল্লাহ শহীদি ৭২ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭১ রান করেন রহমত শাহ। টাইগার্সদের জন্য একাদশ গঠনে এখনো একটু খাপছাড়া ভাব রয়েছে। আমি সৌম্য সরকারকে ওয়ান ডাউনে নামানোর পক্ষে। তামিম ও ইমরুলকে দিয়ে ওপেন করানোর পক্ষে। পরের ম্যাচে আমি রুবেল ও তাইজুলের জায়গায় মোসাদ্দেক হোসেন ও সাইফুল ইসলামকে নেবার পক্ষে। সৌম্যকে আরো একটি ম্যাচ সুযোগ দিতে চাই। কারণ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যাতে সৌম্য ফর্মে ফিরতে পারে, সেই সুযোগটি দেবার জন্য। পাশাপাশি আজকে আমি সবচেয়ে বেশি হতাশ মুশফিকের উপর। মাহমুদুল্লাহ আউট হবার পর মুশফিকের কাছে যেটি আশা করেছিলাম, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তবুও দিন শেষে টাইগার্সদের এই রুদ্ধশ্বাস কষ্টের জয় জয়ের ধারাকে টেনে নেবে এই প্রত্যাশা। জয়তু টিম টাইগার্স। জয়তু ক্রিকেট। .................................২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০১",False hm,"ঝাকানাকা ধরা খেলেন বহুদিন গল্প লিখি না। বহু পুরনো এক অসমাপ্ত গল্প পালিশ করতে গিয়ে দেখলাম কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে ভেতরে। পাঠকপাঠিকারা নিশ্চয়ই ভারি উৎসুক, কিভাবে ঝাকানাকা ধরা খেলেন জানার জন্যে? আর উৎসুক হবেন না-ই বা কেন, আপনাদের উৎসাহ আছে কী করতে তাহলে? কিন্তু একটা ব্যাপার আপনাদের এখনই ভালোমতো বুঝতে হবে। নায়কেরা সহজে ধরা খায় না, আর দুর্ভাগ্যের চক্রান্তে খেয়ে ফেললেও তা হজম করতে চায় না। তাই সেই বদহজমির ছাপ পড়ে কাহিনীর ওপর। এই গল্পের কথাই ধরুন। বহুকষ্টে এর বর্ণনা যোগাড় করতে হয়েছে, তা-ও একজনের কাছ থেকে নয়, তিন তিনজনের কাছ থেকে। কাজেই মূল গল্পটাকে তিন টুকরো করেই আপনাদের সামনে হাজির করা হচ্ছে। এতে করে অনেকে নাখোশ হতে পারেন, তাতে আমার বয়েই গেলো, কিন্তু আমার মতে, আস্ত পাঁঠার চেয়ে কাটা পাঁঠা অনেকগুণে ভালো। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, গল্পের সাথে পাঁঠার তুলনা কেন দেয়া হচ্ছে? এর জবাব হচ্ছে, আমার গল্প আমি দরকার হলে লেজে কাটবো, দরকার হলে মুড়োয় কাটবো, আপনার তাতে কী আসে যায় ---? প্রথম টুকরো: দৈনিক “পড়ুন, নইলে মরুন” পত্রিকার জুন ৮, ২০০৪ থেকে উদ্ধৃতি অভাবনীয় কান্ড: বিশ্বখ্যাত গোয়েন্দার হাতে একই পরিবারের সকলে আগাপাশতলা প্রহৃত! নিজস্ব সংবাদদাতা। গতকাল ভোরবেলা বিশ্বখ্যাত গোয়েন্দা জনাব ঝাকানাকার হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে প্রহৃত হয়েছেন দেশের খ্যাতনামা ব্যবসায়ী, মোহাব্বত গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর স্বত্বাধিকারী, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবী, আলহাজ্ব মোহাব্বত আলি কালু ওরফে কাল্লু শেখ (৭০)। তাঁর দিলশানস্থ প্রাসাদোপম বাসভবন থেকে সকাল নটায় অ্যামবুলেন্স সহযোগে পরিবারের সবাইকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। প্রহৃত অন্যরা হচ্ছেন কাল্লু শেখের স্ত্রী দুলারি শেখ (২৪), তাঁর পরিচারিকা বিজলি বানু (২৫), জনাব কাল্লু শেখের সেক্রেটারি মদন মাহবুব (২৬), তাঁর বাড়ির গভর্নেস গুলবদন আরা (৪০), তাঁর খানসামা ইলতুতমিশ খাঁ (৪০), খানসামার স্ত্রী ও বাবুর্চি সোহাগী বেগম (৩০) এবং কাল্লু শেখের দেহরক্ষী দিলদার বেগ (৩৫)। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দিলদার বেগের অবস্থা আশঙ্কাজনক, কিন্তু আহত অন্যেরা তুলনামূলকভাবে বিপদের শঙ্কামুক্ত। গোয়েন্দাপ্রবরের পাকা হাতের মার খেয়ে সকলে এখনো অচেতন। গোয়েন্দা ঝাকানাকার একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হলো ছয়ের পৃষ্ঠায় তিনের কলামে। উদ্ধৃতি সাক্ষাৎকার: গোয়েন্দা ঝাকানাকা প,নম: জনাব ঝাকানাকা, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার কী ব্যাখ্যা আপনি দেবেন? গোঝা: কোন ন্যাক্কারজনক ঘটনা? প,নম: এই যে, কাল্লু শেখকে সপরিবারে মারধর করা ---। গোঝা: ওহ, তাই বলুন। আমি ভাবছিলাম আপনি আমার সুন্দরী সেক্রেটারি মিস মিলির সাথে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারির গোপন-আপত্তিকর-কিন্তু-প্লেটোনিক প্রেমের কথা বলছেন --- কাল্লু শেখের ব্যাপারটার কী ব্যাখ্যা দেবো? আর ব্যাখ্যা আমি আদৌ দেবো কি না সেটাও একটা প্রশ্ন হতে পারে। প,নম: ঠিক বুঝলাম না। গোঝা: আপনি আবার বুঝবেন কী? আপনারই যদি সব বুঝে ফেলতেন তাহলে তো কথাই ছিলো না --- আরে মিয়া, জানেন ঐ কাল্লু শেখের পরিবার কী ভীষণ বিপদের মধ্যে আছে? প,নম: থাকবে না আবার? যেভাবে পেঁদিয়ে গুষ্টিসুদ্ধু লাট করে দিয়ে এসেছেন ---। গোঝা: খামোশ! না বুঝে খামাখা কথা বলবেন না। সময়মতো না প্যাঁদালে যে কী ভয়ানক বিপদে তারা পড়তেন, তা সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা আছে? প,নম: ধারণা নেই বলেই তো আপনার কাছে জানতে চাওয়া। গোঝা: আপনার মতো একটা মুখ্যুকে জানিয়ে আমি তাঁদের আরো বড় কোন বিপদে ফেলতে চাই না। সব কিছু পত্রিকায় বেরিয়ে গেলে তাঁরাই সমস্যায় পড়বেন। আর সবুর করুন, সময়ই আপনাকে সব জানিয়ে আর বুঝিয়ে দেবে, কত ধানে কত চাল! প,নম: তবুও যদি একটু আভাস দিতেন ---? গোঝা: শুধু এটুকু বলতে পারি যে, কোন সাধারণ ঠ্যাঙানি আমি তাদের দিইনি, সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পন্থায় প্রাচীন তিব্বতীয় চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি গোপন পদ্ধতিতে তাদের ওপর একটি চিকিৎসামূলক ইয়ে, মানে ধোলাই, প্রয়োগ করেছি। প,নম: অর্থাৎ, আপনি তাঁদের চিকিৎসা করার জন্যে ঠেঙিয়েছেন বলছেন? গোঝা: ঠিক তাই। আই হ্যাড টু বি খ্রুয়েল ঔনলি ঠু বি ক্ষাইন্ড। প,নম: তিব্বতী পদ্ধতিটি সম্পর্কে ---। গোঝা: দুঃখিত, এ সম্পর্কে কোন তথ্য আমি ফাঁস করতে পারবো না, এ ব্যাপারে ঝালাই লামার কঠোর নিষেধ আছে। শুধু এটুকু বলতে পারি যে একটি তিব্বতী গুম্ফায় পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই ঝাড়া ছয়মাস কঠোর পরিশ্রম ও ধ্যানের ফলেই এই বিদ্যা আমার আয়ত্ত্বে এসেছে। প,নম: ডাক্তাররা বলেছেন, কাল্লু শেখের দেহরক্ষী দিলদার বেগের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আপনি তাঁকে ওভাবে কেন ঠেঙালেন? মানে, বলতে চাইছি যে চিকিৎসামূলক ঠ্যাঙানি অত গুরুতর কেন হবে, যে চিকিৎসিত ব্যক্তি সকল চিকিৎসার ঊর্ধ্বে উঠে যাবেন? গোঝা: দেখুন, অত দেখে শুনে নামগোত্র বিচার করে ঠেঙাইনি, অত সময়ও ছিলো না, তবে অত্যন্ত কাহিল চেহারার একজন ভদ্রলোক ভারি অভব্য আচরণ করছিলেন, তাঁর প্রতি একটু কঠোরই হতে হয়েছিলো, তিনিই যদি দিলদার বেগ হয়ে থাকেন, তাহলে কিছু বলার নেই। প,নম: আপনি কি জনাব কাল্লু শেখের বাড়িতে গায়ে পড়ে এই চিকিৎসামূলক তিব্বতী ধোলাইটি প্রয়োগ করতে গিয়েছিলেন? গোঝা: পাগল না ছাগল আপনি? আমার অতো সময় কোথায় যে গায়ে পড়ে এসব করতে যাবো? আমাকে দস্তুরমতো ফোন করে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো ---। প,নম: চিকিৎসার জন্যে? গোঝা: বেকুবের মতো কথা বলবেন না ভাইসাহেব, মেজাজ কিন্তু খারাপ হয়ে যাচ্ছে। গোয়েন্দাকে লোকে কেন ডাকে, বিশেষ করে আমার মতো গোয়েন্দাকে? --- ঐ চিকিৎসামূলক মারপিট করেছি, যাকে বলে, ঐ অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণের মতো। প,নম: অর্থাৎ আপনি বলতে চাইছেন ---। গোঝা: আমি আর কিছুই বলতে চাচ্ছি না। এখন আমার গোসলের সময় হয়ে গেছে, আপনি আসুন। মেলা বকালেন আমাকে দিয়ে। অ্যাই আবুল, আমার গরম পানি দিয়ে যা ---। প,নম: আপনাকে ধন্যবাদ। গোঝা: এখনও ওঠেননি চেয়ার ছেড়ে? বটে? দেখতে চান নাকি, সেই সুদূর দাগেস্তানের নামকরা কুস্তিগীর রোস্তাম জুলুমভের কাছে কী আলুভর্তা প্যাঁচ শিখে এসেছি? তৃতীয় টুকরো: কাল্লু শেখের প্রাসাদ, ৬ই জুন, রাত সাড়ে এগারোটা বদরু খাঁ হাই তোলে, তারপর আড়মোড়া ভাঙে। তারপর ডানে বামে তাকায়। ছ’ছ’জন তাগড়া দারোয়ান আশেপাশে হাত পা ছড়িয়ে চিৎপাত হয়ে শুয়ে নাক ডাকাচ্ছে। দুটো ভয়ঙ্কর দাঁতালো কুকুর দাঁত বার করে পড়ে আছে অদূরে, এ জীবনে আর উঠবে কি না সন্দেহ। উঁহু, কোন ঘুমপাড়ানি মাসিপিসির ফুসমন্তরে নয়, খোদ দস্যুসম্রাট বদরু খাঁর নির্মম জংলি মার খেয়েই এদের এই দশা। মারতে চায়নি বদরু খাঁ, মারপিট করতে তার ভালোও লাগে না। কিন্তু দারোয়ানগুলো অত্যন্ত গোঁয়ার ও অশিক্ষিত, এতো রাতে তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়ার ব্যাপারে তারা প্রবল আপত্তি জানিয়েছে, তা-ও কী বর্বর অসংস্কৃত ভাষায়! আদব কায়দা এরা একেবারেই শেখেনি, অথবা শিখলেও বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় সঙ্গে রাখতে ভুলে গেছে। সব কিছুর পরও ক্ষমা করে দেয়া যেতো নরাধমদের, কিন্তু দু’জন তাকে চড় উঁচিয়ে হুমকি দিয়েছে, দু’জন উঁচিয়েছে শটগান, আর বাকি দু’জন কুকুর উঁচিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। বদরু খাঁ রীতিমতো ভদ্রলোকের সন্তান, এ ধরনের দুর্ব্যবহার তার পক্ষে সহ্য করা কঠিন, তাই চটেমটে কয়েক ঘা জুলুমসই জুলু মার, যা সে দক্ষিণ আফ্রিকায় সোনা লুট করতে গিয়ে শিখে এসেছিলো, লাগিয়ে দিয়েছে সবাইকে। যারা চড় উঁচিয়েছে, তারা নুলো হয়ে থাকবে অন্তত আগামী দু’মাস, যারা শটগান দেখিয়েছে, তারা আগামী তিনমাস একটা কুটোও এখান থেকে সরিয়ে ওখানে রাখতে পারবে না, আর কুকুর লেলিয়ে দিয়েছে যারা, তাদের কুকুরপেটাই করেছে বদরু খাঁ, কুকুর দুটোর সাথেই। বদরু খাঁ কোন খরগোশ নয় যে তার ওপর কুকুর ছেড়ে দেয়া সে বরদাশত করবে। বদরু খাঁ এবার ধীরেসুস্থে শিস দিতে দিতে লনের ওপর দিয়ে এগিয়ে যায়। গত কয়েকদিন ধরে বদরু খাঁ নজর রাখছে এ বাড়িটার দিকে। বাড়িতে কে কী করে, কে কখন ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজে আর কে কখন দাঁত মেজে ঘুমোতে যায়, সব সে একটা নোটবুকে টুকে রেখেছে। বাড়ির কোন জানালা, কোন দরজা, কোন ঘুলঘুলি কখন খোলা থাকে, সঅব এখন তার মুখস্থ। কখনো নারকেল গাছের মাথায় চড়ে, কখনো উল্টোদিকের বাড়ির ছাদে উঠে বদরু খাঁ দূরবীণ বাগিয়ে এ বাড়ির সবার চালচলন পর্যবেক্ষণ করেছে ভালোমতো। বদরু খাঁ কিছুদিন ডিসকভারি চ্যানেল দেখে দেখে কুমীরের শিকার ধরার পদ্ধতি মকশো করেছে, যাতে কাজে কোন খুঁত না থাকে। বাড়ির তিনতলার বারান্দার নিচে এসে বদরু খাঁ সুদক্ষ বানরের মতো এটা-ওটা খামচে ধরে উঠে পড়ে। আগে সে দড়ির মাথায় রবারের আংটা লাগিয়ে ছুঁড়ে মেরে দড়ি বেয়ে উঠতো, কিন্তু মাস দুয়েক ডিসকভারি চ্যানেলে বাঁদরের বাঁদরামো দেখে দেখে সে অনেক গুহ্যবিদ্যা আয়ত্ব করে ফেলেছে। বারান্দায় উঠে বদরু খাঁ কান পাতে। ভেতরের ঘরে বেশ শোরগোল হচ্ছে। খনখনে গলায় কে যেন খুব ধমকাধমকি করছে। বদরু খাঁ এবার বারান্দার দরজা লাথি মেরে খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ঘরের সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বদরু খাঁর দিকে। এত রাতে কার এত বড় সাহস? কে এই ব্যাটা রোমশ পাঁঠা, যে কি না এই হিমহিম হাওয়ার রাতে কেবল একটা স্যান্ডো গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট পরে, কাঁধে একটা শান্তিনিকেতনী বোঁচকা ঝুলিয়ে, মুখের ওরকম খাট্টাসমার্কা গোঁফে তা দিতে দিতে এমন বিটকেল ভঙ্গিতে হাসে? দিলদার বেগ গর্জে ওঠে, সিনেমার ভিলেনের মতো, ‘তবে রে শয়তান! হতচ্ছাড়া ইডিয়েট! কে রে তুই? কী চাস তুই এখানে, এই রাতবিরাতে?’ একটি ভুরু উত্তোলন করে একবার ঘড়ির দিকে তাকায় সে, জবাবে ঘড়িটা বলে, ঢং। রাত একটা বাজে। বদরু খাঁ ব্যথিতচিত্তে চুকচুক করে ওঠে। ‘ভেরি ব্যাড। ছেলেবেলায় এর বাবা মা আদব লেহাজ একদম শেখায়নি। আর জন্মের পর মুখে যে মধুটা দিয়েছিলো, তাতে নিশ্চয়ই বিস্তর ভেজাল পঁচা তালের গুড়ের সিরাপ ছিলো। কী ভাষা! ছিহ! --- ওহে ছোকরা, এভাবেই অতিথিদের আপ্যায়ন করো নাকি তুমি?’ ‘অতিথি? এ বাড়ির অতিথি হবার যোগ্যতা আছে তোর?’ দিলদার বেগ এবার পকেট থেকে একটা পিস্তল বার করে। ‘আর ছোকরা বলছিস কাকে? য়্যাঁ? এটা দেখেছিস? চোখ মেলে তাকিয়ে দেখ! ভালথার পিপিকে, খোদ মাসুদরানা পর্যন্ত এটা ব্যবহার করে ---!’ বাধা পেয়ে থেমে যায় সে। ‘করতো।’ শুধরে দেয় বদরু খাঁ। ‘অনেক আগে করতো, যখন তুমি ক্লাস ফাইভে পড়তে। এখন আর মাসুদরানা ওসব ছুঁয়েও দেখে না। আর এখনও মাসুদরানা পড়ো নাকি তুমি? ছোহ! ওসব ছাইপাঁশ ফেলে যদি আলোছায়া প্রকাশনীর নিঝুমপুরীর “ঝাকানাকা” সিরিজের বইপত্র পড়তে, তাহলে এখন এমন উজবুকের মতো আমার সামনে দাঁড়িয়ে বোলচাল ঝাড়তে না!’ দিলদার বেগ পিস্তল আর ভুরু নব্বই ডিগ্রী ফেজ রেখে ঝাঁকায়। ‘বটে? কে রে তুই, ব্যাটা ভুঁইফোঁড়?’ বদরু খাঁ এবার খানিকটা চটে ওঠে। ‘দ্যাখো ছেলে, তখন থেকে তুই তোকারি তো করছোই, আজেবাজে গালিগালাজও চালিয়ে যাচ্ছো সমানে। তোমার মক্তবের মৌলানাও যে তোমাকে কোন আদব শিক্ষা দেননি, বুঝতে পারছি। আমাকেই আজ এসব শেখানোর দায়িত্ব নিতে হবে।’ দিলদার বেগ এবার ঢাকাই সিনেমার খলনায়কের মতো খলখল করে হেসে ওঠে, কী যেন বলতে চায়, কিন্তু তার আগেই বদরু খাঁ নড়তে থাকে। প্রথমে ক্ষুদে পিস্তলটা দিলদার বেগের হস্তচ্যুত হয়, তারপর তার চোয়ালের গন্ডাখানেক দাঁত নড়ে যায়, দুয়েকটা পড়েও যায়, সে নিজে অজ্ঞান হয়ে ছিটকে পড়ে এক কোণায়, কিন্তু বদরু খাঁ তাকে নিস্তার দেয় না, ছুটে গিয়ে কষে একটা গোলকিক করে দিলদারে প্রশস্ত অংশে। ধুপধাপ শব্দে পাড়া কেঁপে ওঠে, ইলতুতমিশের বউ সোহাগী আঁতকে উঠে মুখে আঁচল চাপা দেয়, গুলবদন আড়চোখে তাকায় সোহাগীর দিকে। বদরু খাঁ এবার তার ঝোলা হাতড়ে একটা বিকট চেহারার বিশাল পিস্তল বার করে সবাইকে দেখায়। ‘দেখুন সবাই। এই না হলে পিস্তল?’ পিস্তলটা ডানে বামে নেড়ে বলে সে। ‘এর চেহারা দেখেই অনেক ঘাগু পুলিশ খাকি ভিজিয়ে ফেলেছে। এর গুলির বারূদের গন্ধ নাকে যাওয়ায় ফিট হয়ে গেছে এক প্লাটুন এলটিটিইর গেরিলা। এই পিস্তলের শব্দ শুনে হার্টফেল করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মেডেল পাওয়া কম্যান্ডো। আর এর গুলি খেয়ে যে কত তাবড় তাবড় লোক ঘায়েল হয়েছে, সেটা খামাখা আর গুনে রাখিনি। আর লোক তো লোক, লড়াকু বিমান পর্যন্ত এর গুলি খেয়ে গোঁৎ খেয়ে পড়েছে --- কাজেই সবাইকে সাবধান করে দিচ্ছি, তুই তোকারি বা গালিগালাজ তো চলবেই না, একটু বেচাল বেয়াদবি দেখলেই একেবারে ভুঁড়ি ফাঁসিয়ে দেবো! কোন নড়াচড়া চলবে না!’ এবার সেই থুত্থুড়ে বুড়োটা ফোকলা মাড়ি খিঁচিয়ে বলে, ‘মদন, নোট করো, এই গুড ফর নাথিং দিলদার বেগকে কালই চাকরি থেকে খেদিয়ে দিতে হবে!’ মদন পকেট থেকে নোটবই বার করার জন্যে নড়ে উঠেছিলো, বদরু খাঁ ভারি কুটিল চোখে তাকায় তার দিকে, ঘাবড়ে গিয়ে থেমে যায় মদন। বুড়োটা আবার চেঁচায়, ‘কী হলো মদনা?’ মদন কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, ‘কিন্তু --- এই লোকটা নড়তে মানা করছে তো!’ বুড়ো এবার ইজিচেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে খোনা গলায় গর্জে ওঠে, ‘তুই ব্যাটা ফাজিল আমার পয়সায় বেতন খাস, নাকি এই কেলে ডাকাতটার? য়্যাঁ? --- কদিন ধরেই দেখছি আমি, আমার কথাবার্তা তুই একদম কানে নিচ্ছিস না! পাখা গজিয়েছে তোর? দাঁড়া, তোকেও কালকে খেদিয়ে দেবো --- বেল্লিক কোথাকার ---!’ বদরু খাঁ আর বসে থাকতে পারে না, চটেমটে এগিয়ে গিয়ে কষে সেই পেল্লায় পিস্তলের বাঁট দিয়ে এক ঘা বসায় বুড়োর মাথার ওপর। বুড়ো দাঁত ছরকুটে বিশুদ্ধ কায়দায় এলিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ইজিচেয়ারের ওপর। দুলারির মুখে পাতলা একটা হাসির ছায়া খেলে যায়। গুলবদন চেঁচিয়ে ওঠে, ‘জানোয়ার কোথাকার, এ কী করলে তুমি?’ বদরু খাঁ মুহাহাহাহা করে ভিলেনি হাসি দিয়ে বলে, ‘চোপ! ঐ বিটকেল বুড়োটা জেগে থাকলেই বরং ওর বিপদ বাড়তো। আমার পাকা হাতের নৃশংস কাজকারবার দেখে ঐ কাঁচা হার্ট ফেল করে মরতো ব্যাটা! তারচেয়ে ঘন্টা পাঁচেক ফিট হয়ে পড়ে থাকুক, নিরাপদে থাকবে। ল্যাংটার নাই বাটপারের ভয়!’ মদন উসখুস করছিলো, তার চেহারায় ছাইচাপা আগুনের মতোই একটা ভয়চাপা আনন্দের ভাব, কাল্লু শেখের পরিণতি দেখে তাকে মোটেও দুঃখিত মনে হচ্ছে না। বদরু খাঁ এবার তার দিকে ফেরে। ‘বলো, মোহাব্বত আলি কালু, ওরফে কাল্লু শেখ,’ নাটুকে সুরে বলে বদরু, ‘তোমার গোপন সিন্দুকটা কোথায়?’ মদন খুব ঘাবড়ে যায়, ডানে বামে তাকায়। ‘কী হলো কাল্লু?’ পৈশাচিক হাসে বদরু খাঁ। ‘তোমার দাদুর পরিণতি দেখেও তোমার মনে ভয়ডর জাগেনি? দেবো নাকি কানের পেছনে আলু তুলে?’ মদন গলা খাঁকরায়, ‘দেখুন, আপনি ভুল করছেন ---।’ বদরু খাঁ গর্জে ওঠে, চোখ পাকিয়ে বলে, ‘আমি? ভুল?’ মদন খুব ঘাবড়ে গিয়ে গুলবদনের দিকে তাকায়। বদরু খাঁ গর্জে ওঠে, ‘এ কি লসাগু গসাগু পেয়েছো যে ভুল করবো?’ মদন সিঁটিয়ে গিয়ে বলে, ‘ইয়ে ... হ্যাঁ, ভুল একটা হচ্ছে তো ... মানে উনি আমার দাদু নন ----!’ বদরু খাঁ তাচ্ছিল্যের সাথে বলে, ‘উনি তোমার দাদু না হলে নানা, নানা না হলে ফুপা, ফুপা না হলে তালুই, একটা কিছু হবেন, তাতে আমার কিসসু যায় আসে না হে ছোকরা, তোমার বুড়ো হাবড়া আত্মীয়স্বজন নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। --- কিন্তু এখন আবার বলে বসো না যে তুমি কাল্লু শেখ নও! আমার কাছে অকাট্য চাক্ষুষ প্রমাণ আছে যে তুমিই কাল্লু শেখ!’ মদন খুব ঘাবড়ে যায়, গুলবদনের দিকে তাকায় সাহায্যের জন্যে, তারপর আমতা আমতা করে কিছু বলতে যায়, কিন্তু বদরু খাঁ পিস্তল নাচিয়ে গর্জে ওঠে, ‘চোপ বেওকুফ! কথা কম! কাজ বেশি! কাজের আগে কাজের কথা বলো, তোমার গোপন সিন্দুক কোথায়?’ গুলবদন ঝাঁঝিয়ে ওঠে, ‘গরু কোথাকার!’ বদরু খাঁ গুলবদনের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয়, ‘ঠিক! এটা আসলেই একটা গরু!’ মদন গলা খাঁকরে বলে, ‘না, মানে ... উনি আপনাকেই গরু বলেছেন ---!’ থেমে যায় সে। বদরু খাঁ যেন বাজ ফেলে গলায়। ‘কী? অ্যাতোবড় সাহস!’ গুলবদনের দিকে ফেরে সে। গুলবদন নির্বিকার মুখে বলে, ‘ঐ ছোকরা কাল্লু শেখ হতে যাবে কেন?’ বদরু খাঁ হাসে ঠা ঠা করে। ‘বটে? এখন সবাই মিলে অস্বীকারের চেষ্টা? আমাকে কী এমনই যদুমধু পেয়েছো যে দুগগি দিয়ে যা খুশি চালিয়ে দেবে? আমি আঁটঘাট বেঁধেই কাজে নামি! --- শোন তাহলে!’ দুলারি শেখের দিকে তার সেই দেখতেভয়ানকশুঁকতেভয়ানকশুনলেপরেআরোভয়ানক বারো ছররার সাইলেন্সার আঁটা দোয়াজদাহাম পিস্তল তাক করে সে। ‘এই মহিলা হচ্ছে দুলারি শেখ, এককালের বিখ্যাত মডেল, প্রাক্তন চাক্কা সাবান ফটোসুন্দরী, কাল্লু শেখের চতুর্থ স্ত্রী? --- অস্বীকার করে কোন লাভ নেই, পেপারে আমি ওর বিস্তর বিকিনি পরা ছবি দেখেছি, এখনও আমার আলমারির দরজায় ওর একটা ওরকম পোস্টার টাঙানো আছে!’ ঘরে উপস্থিত সবাই মাথা ঝাঁকায়, শুধু গুলবদন রোষকষায়িত চোখে একবার দুলারিকে দেখে নিয়ে বলে, ‘এমন কোন বিখ্যাত মডেল ও ছিলো না! জামাকাপড় কম পরলেই বিখ্যাত হওয়া যায় না!’ দুলারি জিঘাংসু দৃষ্টিতে গুলবদনকে আপাদমস্তক দেখে, কিন্তু কিছু বলে না, তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে, যার অর্থ হচ্ছে, সবাই জামাকাপড় কম পরে বিখ্যাত হতে পারে না। ‘আর এ বাড়িতে ঢোকার আগে আমি দেখেছি, এই লোকটা ---,’ মদনের দিকে পিস্তল ফেরায় সে, ‘বারান্দায় দাঁড়িয়ে এই দুলারি শেখকে রীতিমতো শব্দ করে চুমো খাচ্ছে!’ বিজয়ীর ভঙ্গিতে বলে বদরু খাঁ, আর সারা ঘরে একটা গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। ‘তাহলে এখন আমাকে বলো, ও কাল্লু শেখ না তো কী?’ মদন আর দুলারি ফ্যাকাসে হয়ে যায়, গুলবদন চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, ‘আচ্ছা? তবে এই কান্ড? বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা, অ্যাঁ?’ দুলারি চেঁচিয়ে বলে, ‘মিথ্যা কথা! সব মিথ্যা কথা! এই ... এই গুন্ডাটা,’ বদরু খাঁর দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলে সে, ‘ডাঁহা মিথ্যা কথা বলছে!’ মদনও মাথা ঝাঁকায়। ‘ইয়ে --- মিথ্যা কথা, আমি কখনোই শব্দ করে --- ইয়ে, মানে চুমো খাই না। আমার চুমোগুলি নিঃশব্দ, নির্বাক!"" বদরু খাঁ কিন্তু হাসে মিটিমিটি। ‘আচ্ছা? মিথ্যা কথা?’ নিজের ঝোলা হাতড়ে একগাদা ছবি বার করে সে। ‘কিন্তু আমার টেলিফোটো লেন্স লাগানো পোলারয়েড ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলোও কি মিথ্যাবাদী?’ ছবিগুলো সে ছুঁড়ে দেয় গুলবদনের দিকে। গুলবদন ছবিগুলো পাকড়ে ধরে উল্টেপাল্টে দেখতে থাকে। প্রথম ছবিটায় দুলারি আর মদন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। দ্বিতীয় ছবিটায় একজন আরেকজনের আলিঙ্গনে। তৃতীয় ছবিটায় তারা চুমো খাচ্ছে। চতুর্থ ছবিটার অবস্থা অতি ন্যাক্কারজনক, কহতব্য নয়! দুলারি ফ্যাকাসে মুখে পাগলের মতো ছুটে যায় গুলবদনের হাত থেকে ছবিগুলো কেড়ে নিতে, কিন্তু তার আগেই বদরু খাঁ গর্জে ওঠে, ‘খবরদার! অ্যাকেবারে গুলি করে চালুনি বানিয়ে দেবো কিন্তু!’ গুলবদন ক্রুর হাসে। ‘আমার হাত থেকে এই ছবি এখন কেউ কেড়ে নিতে পারবে না!’ দুলারির দিকে তাকিয়ে চোখ টেপে সে। দুলারি ফোঁস ফোঁস করতে থাকে। বাড়ির অন্যেরা একে একে ছবিগুলোর দিকে হাত বাড়ায়। ইলতুতমিশ খাঁ ছবিগুলো হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখে, বিশেষ করে চতুর্থ ছবিটা, তারপর বদরু খাঁর দিকে ফিরে গদগদ গলায় বলে, ‘আপনার হাতটা স্যার সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে রাখা উচিত! কী চমৎকার সব ছবি উঠেছে! বিশেষ করে এই রাতের বেলায় এতো চমৎকার এক্সপোজার আর শাটার স্পিড সেট করে ছবি তোলা তো বাহাদুরের হাতের কাজ! মারহাবা!’ সবাই কড়া চোখে তাকায় ইলতুতমিশের দিকে। কিন্তু গুলবদন দুলারির দিকে ফিরে খ্যাঁক করে ওঠে, ‘আচ্ছা! তাই তো বলি, এর আগের সেক্রেটারি মিস চপলা চর্মকারকে খেদিয়ে দেয়ার জন্যে আমাদের বেগম সাহেবা এতো উদগ্রীব কেন ছিলেন? --- যাতে সেই বেচারা মেয়েটার জায়গায় এই কঅক্ষরগোমাংস, বকলম, আমড়া কাঠের ঢেঁকি, উদখুল মদনটা স্যারের সেক্রেটারি সেজে ওনার সাথে নিয়মিত অবৈধ অশালীন শারীরিক প্রেম চালিয়ে যেতে পারে!’ মদন তেড়ে ওঠে, ‘খবরদার গুলবদন! প্রেম তুলে কথা বলবা না!’ দুলারি তিক্ত গলায় বলে, ‘চপলা মেয়েটা ছিলো একটা নষ্ট বেলেল্লা দুই নাম্বার --- কাল্লুর সাথে প্রেম করার জন্যে হেন কাজ নেই যে সে করেনি! খাটো খাটো টাইট জামাকাপড় পরে থাকতো, সেজে থাকতো শাকচুন্নির মতো, সুযোগ পেলেই গায়ে ঢলে ঢলে পড়তো --- আর সেক্রেটারি হবার কোন যোগ্যতাই তার ছিলো না, আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, সে ইন্টারমিডিয়েটে প্রাণীবিদ্যা আর ভৌত রসায়নে ফেল করেছিলো!’ গুলবদন দাঁতে দাঁত ঘষে। ‘বটে? তাহলে এই উজবুক মদনটা সেক্রেটারি হয় কী যুক্তিতে? --- আমিও তো খোঁজ নিয়েছি ওর সম্পর্কে, ও তো এসএসসি-টাই ঠিকমতো টপকাতে পারেনি, একবার পাটীগণিত আরেকবার ধর্মশিক্ষায় লাড্ডা মেরে পড়াশোনার পাটই চুকিয়ে দিয়েছে! চপলা চর্মকার বরং মদনের চেয়ে অনেক বেশি কোয়ালিফায়েড ছিলো! --- আর খাটো টাইট জামা আর শাকচুন্নির মতো সাজগোজের কথা বলছেন? আপনি যে এর বিরূদ্ধে কথা বলবেন তা কখনো ভাবতে পারিনি! --- আর ওসব তো স্যারই তাকে পরার পরামর্শ দিয়েছিলেন, বেচারির কী দোষ?’ মদন একটা কিছু বলতে গিয়ে চুপ করে যায়। কিন্তু দুলারি হাল ছাড়ে না, দিশেহারার মতো বলে, ‘আর --- আর স্ত্রী হিসেবে আমার কর্তব্য ছিলো ওরকম নষ্ট একটা মেয়েমানুষের হাত থেকে আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে রাখা, ওই ধিঙ্গি ছেমরির সাথে পাল্লা দিয়ে প্রেম করতে গেলে কাল্লু কবে হার্টফেল করে মরতো!’ এবার কথা বলে ওঠে ইলতুতমিশ, ‘কিন্তু ম্যাডাম, ছবিগুলো দেখে তো মনে হচ্ছে স্ত্রী হিসেবে আপনি কিছু অকর্তব্যও পালন করছেন ইদানীং, এই চার নাম্বার ছবিটার কথাই ধরুন না,’ ছবিটা বাড়িয়ে দেয় সে, ‘যদিও স্যারের হার্ট খুবই চালু জিনিস, আপনার জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে অনেক অ্যাডভেঞ্চারমূলক কার্যকলাপের সাথেই তিনি জড়িত --- কিন্তু এটা দেখলে তো স্যারের হার্ট তো হার্ট, কাঠের গোড়ালিটা পর্যন্ত ফেল করবে!’ ছবিটা দেখে দুলারির মুখ সাদা হয়ে যায়, সে কুচি কুচি করে সেটাকে ছিঁড়ে ফেলে চেঁচিয়ে ওঠে, ‘মিথ্যা! এই ছবি মিথ্যা! কম্পিউটারে বানানো! ইন্টারনেট থেকে নামানো! ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ ডট দুষ্টুমেয়ে ডট কম থেকে কপি করা! এই --- এই গুন্ডাটা,’ বদরু খাঁকে দেখিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে সে, ‘সব সাজিয়ে এনেছে আমাকে হেনস্থা করার জন্যে! বদরু খাঁ এতক্ষণ একটা সোফায় বসে সব শুনছিলো মনোযোগ দিয়ে, কী ঘটছে, কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না। কিন্তু মিথ্যার অভিযোগ শুনে সে আর চুপ করে থাকতে পারে না --- আর যাই হোক না কেন, সে ভদ্রবংশের ছেলে --- ক্ষেপে উঠে ঝোলা হাতড়ে একটা ক্যাসেট রেকর্ডার বের করে। ‘এটাও তাহলে মিথ্যা? --- শুনুক সবাই!’ বোতামে চাপ দিতেই শোনা যায়, শব্দ, শুনে মনে হতে পারে গাছ থেকে পুকুরে তাল পড়ছে, ঝপাস চকাস ফটাস, কিন্তু উপস্থিত সবাই বুঝে ফেলে, এটা সেই পূর্বোল্লেখিত চুমোর বজ্রাদপি কঠোর আওয়াজ ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না। এবং সুধীজনের ধারণাকে সমর্থন যোগায় একটা নারী কন্ঠস্বর, ‘ওহ, মদন, কী যে করো না, দুষ্টু!’ মদনের পৈশাচিক হাসি শোনা যায়, ‘কী যে করি মানে? মুহাহাহাহা!’ তারপর শোনা যায় নারীকন্ঠের আদুরে ধমক, ‘হচ্ছেটা কী, অ্যাঁ? জানোয়ার!’ মদন খ্যাক খ্যাক করে হাসে আর খেঁকশিয়ালের ডাক নকল করে ডাকতে থাকে, ‘হুক্কা হুয়া ---।’ বদরু খাঁও সেভাবেই হেসে ক্যাসেট প্লেয়ারটা বন্ধ করে ঝোলায় পুরে রাখে, তারপর ইলতুতমিশের হাত থেকে ছবিগুলো ছিনিয়ে নেয়। ‘কী বোঝা গেলো এবার? এই ছোকরা হচ্ছে দুলারি শেখের স্বামী, কাল্লু শেখ!’ কিন্তু তার এই সরল অনুসিদ্ধান্তকে কেউ পাত্তা দেয় না, সবাই চোখ পাকিয়ে তাকায় দুলারির দিকে। দুলারি ফুঁপিয়ে ওঠে, ‘এটা মোটেও আমার গলার স্বর নয়! এটা --- এটা এই সোহাগীর গলার আওয়াজ!’ ইলতুতমিশের বউয়ের দিকে আঙুল তুলে দেখায় সে। ‘এত বড় সাহস, লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ির সেক্রেটারির সাথে প্রেম করো!’ সোহাগী ফুঁসে ওঠে, ‘ছবিগুলোও তো আমার, তাই না?’ ওদিকে গুলবদন নিষ্ঠুর হাসে। ‘আর মদনের মতো একটা মদনের সাথে সোহাগী কেন প্রেম করতে যাবে, যেখানে দিলদার বেগের মতো একটা শক্ত সমর্থ জোয়ান ধারেকাছে আছে?’ ইলতুতমিশ খাঁ আঁতকে উঠে সোহাগীর দিকে তাকায়। সোহাগী ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও সামলে ওঠে, বলে, ‘অন্যের নামে মিথ্যা কলঙ্ক রটানোর আগে হাটে নিজের হাঁড়িটাই ভাঙেন, ম্যাডাম গুলবদন! আপনি যে বামন হয়ে প্রায়ই চাঁদে হাত দিয়ে বসেন, খোদ স্যারের সাথেই ইঙ্কিলিঙ্কি করেন, তা এই বাড়ির সবাই জানে!’ ইলতুতমিশ খাঁ সমর্থন যোগায় তার বউকে, ‘ঠিক ঠিক!’ দুলারি চোখ পাকায়, ‘আচ্ছা, তাই নাকি?’ গুলবদন একটুও ঘাবড়ায় না। ‘বাড়ির সবাই ঘোড়ার ডিম জানে। আমার নামে এইসব উদ্ভট গুজব কেউ বিশ্বাস করবে না, কারণ আমার কাজ তো স্যারের ধারেকাছে নয়। তাছাড়া বিজলি বানুর মতো এমন একটা শাঁসালো ছেমরি হাতের নাগালে থাকতে আমার মতো এক পড়ন্তযৌবনার সাথে স্যার ইঙ্কিলিঙ্কি করবেন, সেটা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়!’ বিজলি বানু ফুঁপিয়ে ওঠে, ‘মিথ্যা কথা! আমি কখনো ওনার হাতের নাগালে যাই না --- উনি খুব খাচ্চর প্রকৃতির লোক!’ এদিকে দুলারি বড় গলায় চোখ লাল করে বলে, ‘হাতের নাগালে না গিয়ে তুই বুঝলি কিভাবে যে ও খাচ্চর প্রকৃতির লোক?’ বিজলি বানু মদনের দিকে আঙুল তুলে বলে, ‘ঐ যে, মদন ভাই সাবধান করে দিয়েছেন!’ সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় মদনের এহেন পরোপকারে। কিন্তু পুরনো কথার খেই ধরে ইলতুতমিশ হাসে, ‘পড়ন্তযৌবনা? পড়ন্ত? আর কদ্দিন ধরে পড়তে থাকবে, য়্যাঁ? মাধ্যাকর্ষণটর্ষণ কী সব উঠে গেলো দুনিয়া থেকে? নাকি আপনি ভাবেন, আপনার আকর্ষণ মাধ্যাকর্ষণের চেয়েও বেশি কাবিলি? --- হে হে হে গুলবদন, পড়ন্ত নয়, বলুন পতিতযৌবনা --- অথবা গতযৌবনা! আর কতদিন ছুকরি সেজে স্যারের সাথে এইসব অসামাজিক কারবার চালিয়ে যেতে চান?’ গুলবদন এবার ক্ষেপে ওঠে, দাঁত খিঁচিয়ে বলে, ‘খবরদার ইলতু! বাংলায় এম এ পাশ করেছো বলে বেশি ব্যকরণ ফলাতে এসো না আমার সাথে, যতবড় মুখ নয় ততবড় কথা? ইন্টারমিডিয়েটে ফেল করা মিস চপলা চর্মকারকে চাকরি দেয়ার জন্যে সুপারিশ কে করেছিলো, শুনি? আর তাকে খেদিয়ে দেয়ার সময় কে সবচে বড় গলায় প্রতিবাদ জানিয়েছিলো? --- শোনো লম্পট ইলতুতমিশ খাঁ, তোমার কান্ডকারখানাও আমার সব জানা!’ সোহাগী এবার কড়া চোখে ইলতুতমিশের দিকে তাকায়। চাপা গলায় বলে, ‘আচ্ছা, তাহলে তলে তলে এইসব করা হয়?’ ইলতুতমিশ উদাস চোখে তাকায় দাঁত বের করে হাত পা ছড়িয়ে পড়ে থাকা দিলদার বেগের দিকে, তারপর বলে, ‘গুলবদন ম্যাডাম এই দিলদারের কথা কী যেন বলছিলেন ---?’ অমনি সোহাগী বলে, ‘থাক, এই গুলবদনের বাজে কথায় কান দিয়ে কোন ফায়দা নেই, বুড়ি বেটি, যা মুখে আসে বলে যায় ---।’ ইলতুতমিশ মাথা ঝাঁকায়, ‘হ্যাঁ, আমিও তো তা-ই বলি!’ দুলারী শেখ রোষকষায়িত চোখে তাকায় বিজলি বানুর দিকে, চাপা গলায় বলে, ""বটে?"" গুলবদন মদনের দিকে তাকিয়ে গর্জন ছাড়ে, ""খালি মনিবের পাতে হাত, য়্যাঁ?"" ইলতুতমিশ কী যেন বলতে যাচ্ছিলো, এমন সময় বদরু খাঁ এক হাঁক ছাড়ে নীলনদের জলহস্তির মতো, ডিসকভারি দেখে বহুকষ্টে রপ্ত করা সে হাঁক, যা শুনলে যে কোন মানুষের রক্ত জল হয়ে যেতে বাধ্য। এই হাঁকডাকে কাজ হয়। ঘরের সবাই চুপ করে একে অপরের দিকে তাকায়। বদরু খাঁ হুঙ্কার ছেড়ে মদনকে বলে, ‘বলো কাল্লু শেখ, কোথায় তোমার গোপন সিন্দুক?’ মদন ফ্যাকাসে মুখে অজ্ঞান কাল্লু শেখকে দেখিয়ে বলে, ‘উনি জানেন!’ বদরু খাঁ দাঁত কিড়মিড় করে। বলে, ""দ্যাখো, টাইগারের লেজ দিয়ে কান চুলকাচ্ছো কিন্তু! আমি কিন্তু রেগে গেলে চেতে যাই! ভালোয় ভালোয় বলো, সিন্দুক কোথায়, নয়তো,"" সে পিস্তল তাগ করে ভূপাতিত কাল্লু শেখের দিকে, ""তোমার এই বুড়ো মুরুব্বির তালুতে আরো একটা আলু তুলে দেবো কিন্তু!"" মদন হাতজোড় করে বলে, ""ভাই, আমি কাল্লু শেখ না! কাল্লু শেখ হতে চাইও না। আমি শুধু প্রেমপিয়াসী এক আত্মা, যে শুধু সন্ধান করে ভালোবাসার অমৃত ধারা ...।"" ইলতুতমিশ তেড়ে আসে, তর্জনী উঁচিয়ে গর্জন করে ওঠে, ""খবরদার! ভালো হবে না বলে দিচ্ছি! ওটা তুমি আমার কবিতা থেকে চোথা মেরেছো!"" মদন ভাবুক চোখে তাকায় ইলতুতমিশের দিকে, বলে, ""ও হ্যাঁ, তাই তো, চপলাকে উৎসর্গ করে লেখা তোমার সেই কবিতা, ""গুপ্ত ভালোবাসার দুয়েন্দে"" না কী যেন ...।"" বদরু খাঁ মহা ক্ষেপে গিয়ে দোয়াজদাহাম পিস্তল বাগিয়ে ধরে। ""অনেক হয়েছে, আর না! এইবার গুল্লি চলবে গুল্লি!"" সবাই ঘাবড়ে গিয়ে চুপ করে যায়। (চলবে শিগগীরই)",False rn,"একটি সহজ সরল ভূতের গল্প আজ সারা বাড়িতে আমি একা। বড় ভাই ভাবী গিয়েছে রাঙ্গামাটি । মা গিয়েছে কুমিল্লা ফাহিমদের বাসায় ।ছোট দুই ভাইয়ের একজন গেছে কলিগের বিয়েতে নারায়নগঞ্জ আর ছো্টজন উত্তরা বন্ধুর বাসায়- সেখানে আজ তাদের বারবিকিউ পার্টি ।আমার কোথায় যাওয়ার জায়গা নেই। সারাদিন বাইরে বাইরে ছিলাম ।এখন বাসায় ।নিজেকে কেমন জানি এতিম এতিম লাগছে ।টিভিতে রাত ১১ টার খবর দেখলাম ।হঠাত খুব ক্ষুধাবোধ হতে লাগল ।সন্ধ্যায় হালিম দিয়ে নান রুটি খেয়েছিলাম ।মনে হয়েছিল রাতে আর খেতে হবে না ।বিস্কুটের ডিব্বা, চানাচূরের বোতল খালি । ফ্রীজ খুলে দেখলাম কোনো খাবার নেই ।দু'টা দিম আছে । ডিম দু'টা সিদ্ধ করে খেলাম । ক্ষুধা দমন হলো । রাত সাড়ে ১২টায় সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে ব্যালকনিতে বসলাম । এক কাপ চা পেলে ভালো লাগল । আমি চা বানাতে পারি না ।এই চায়ের জন্যই বিয়ে করতে হবে। যখন খুশি তখন এক কাপ চা- তো পাওয়া যাবে ।একটার পর একটা সিগারেট শেষ করে করে- এলোমেলো অনেক বিষয় নিয়ে ভাবলাম ।কখন রাত দুইটা বেজে গেলো বুঝতেই পারিনি । আধা গ্লাস পানি খেয়ে বিছানায় গেলাম ।তখন কোনো কারন ছাড়াই একটা কৌতুক মনে পড়লো- টিচার : শাহজাহান কে?টিংকু : জানিনা।টিচার : পড়া লেখায় মন দে, তাহলে জানবি।টিংকু : স্যার, রিংকু কে?টিচার : জানিনা।টিংকু : আপনার মেয়ের দিকে মন দেন, তাহলে জানবেন!!লাইট অন করে আমি ঘুমাতে পারি না । পাতলা একটা চাদর গায়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে আছি । চোখে একটুও ঘুম নেই । ঠিক এমন সময় আমার ঘরের দরজায় কে যেন নক করছে । জন্মগত ভাবে আমি অনেক ভীতু। খুব অল্পতেই অনেক ভয় পাই । কিন্তু আজ এই মধ্যেরাত্রে নিজেকে বললাম- গুল্লু সোনা ভয় পেও না । সাহসী হও । যাও দরজা খোলো । যে আসছে তাকে স্বাগত জানাও । নিজের কাছ থেকেই পেয়ে গেলাম এক আকাশ সাহস । দরজা খুলে দেখি একটি মেয়ে দাঁড়িয়েছে । সাদা রের শাড়ি পরা । সারা শাড়িতে হাতের কাজ করা ।হাসি খুশি মুখ । চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া। হাত ভরতি লাল সবুজ কাঁচের চুড়ি। নিচের মেইন গেট লাগানো, মেয়েট কিভাবে আমার দরজার সামনে এসে দাড়ালো- কে জানো ! ঠিক করেছি আজ আমি ভয় পাবো না । সব কিছুই সহজ ভাবে নিবো । আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম- আসো, ভেতরে আসো । আমাকে এক কাপ চা বানিয়ে দাও । আর তোমার ইচ্ছা হলে নিজের জন্যই এক কাপ বানাতে পারো । মেয়েটি খুব অল্প সময়েই এক মগ চা নিয়ে এলো আমার জন্য । আমি ধন্যবাদ দিতে কার্পণ্য করলাম না । চা শেষ করে আমি মেয়েটিকে বললাম- আমি ঘুমাই । সকালে পরোটা আর ডিম বাজবে । নাস্তা রেডী করে আমাকে ডাক দিবে । গোছলের জন্য গরম পানি করতে ভুলে যেও না । মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল- আমি কে তুমি জানো ? আমি একটা ভূত । তুমি আমাকে ভয়ই পাচ্ছো না । আমি বললাম যাও- বেবি কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করো না । ঘুম পাচ্ছে ঘুমাতে দাও । মেয়েটি বলল- আমি কোথায় ঘুমাবো ? আমি জবাব দিলাম না । মেয়েটি গুটিসুটি মেরে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ল, একটা হাত রাখল আমার বুকের উপর । আমি চলকে গেলাম । ভুত মেয়েটির হাত ভয়াবহ ঠান্ডা । মেয়েটি বলল- আসো আজকের রাতটি গল্প করে কাটিয়ে দেই । আমি বললাম -কিসের গল্প ? ভূতের গল্প ? মেয়েটি বলল- না, ভালোবাসার গল্প । আমি বললাম বাহ, ভূতনী করবে ভালোবাসার গল্প ! মেয়েটী একটু রাগ দেখিয়ে বলল- আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখো- আমাকে কি ভূতনীর মতন লাগছে ? দেখো, তুমি যেমন পছন্দ করো, তোমার মনের করে সেজে এসেছি । আমি উঠে বসে ভূতনীর দিকে ভালো করে তাকালাম । আসলেই ভূতনীকে দারুন সুন্দর লাগছে । হঠাৎ আমার মধ্যে এক ধরনের তীব্র আবেগ অথবা মোহ ভর করলো । ভূতনীকে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করলো । এক আকাশ আদর করতে ইচ্ছা করলো । ভূতনী সম্ভবত আমার মনের তীব্র ইচ্ছাটা বুঝতে পারলো । ভূতনী তার ঠোঁট আমার ঠোঁটে রাখল । সারাটা রাত আদর করে পার করে দিলাম । আমার বুকে আদরের দাগ।ভূতনীর চোখে মুখে খেয়াল করলাম এক আকাশ আনন্দে ঝলমল করছে । ভূতনী আমার বুকে মাথা রেখে বলল- আমাদের বাবুর নাম কি রাখবো ? আমি বললাম- গেদু । ভূতনী বলল- এটা আবার কি রকম নাম হলো ? আমি বললাম- নাম কোনো ব্যাপার না, মানুষের কর্মটাই হচ্ছে আসল । আমরা যাদের কে মনে রাখি- তাদের কর্মের জন্যই মনে রাখি ।ভূতনী খুব আদুরে গলায় আবদার করলো- আমাকে শাহবাগ প্রজন্ম চত্তরে নিয়ে যাবে ? আমি ভূতনীর কপালে একটা ছোট্র চুমু দিয়ে বললাম- হুম, নিয়ে যাবো । আমরা দুইজন চিৎকার করে বলল- রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই । জামাত শিবিরের রাজনীতি বন্ধ করা হোক । জয় বাংলা । ভূতনী বলল- আমি লাল সবুজ একটা শাড়ি পড়বো । আমি বললাম আচ্ছা । লাগল ভালো, মন ভোলালো, এই কথাটাই গেয়ে বেড়াই--দিনে রাতে সময় কোথা, কাজের কথা তাই তো এড়াই।মজেছে মন, মজল আঁখি-- মিথ্যে আমায় ডাকাডাকি--ওদের আছে অনেক আশা, ওরা করুক অনেক জড়ো--আমি কেবল গেয়ে বেড়াই, চাই নে হতে আরো বড়ো ॥",False ij,"কবিতা থেকে গান_ অপলাপ দীর্ঘ রাত জাগে চোখের গভীরে দেওয়ালে কার ছায়া কাঁপে যদিও এই রাত এক প্রবল প্রতিপক্ষ তোমার অপসৃত মুখে ওঠে ঢেউ জানালার আলো ছেড়ে ঘরে যাও ওখানে অন্ধকারে মুখ লুকাও বিক্ষত বুকে কারও স্পর্শ পাবে বলে ... গভীর অন্ধকার থেকে এসে তোমার আলোকিত ঘরে তোমাকে পাইনি বলে চলে যাচ্ছি আরও গভীর আঁধারে ... জানালার আলো ছেড়ে ঘরে যাও ওখানে অন্ধকারে মুখ লুকাও বিক্ষত বুকে কারও স্পর্শ পাবে বলে ... এই কবিতার শিরোনাম: অপলাপ। অপলাপ মানে, মিথ্যা ভাষণ। এই কবিতার শিরোনাম অপলাপ কেন? মানে এই কবিতার শিরোনাম কেন মিথ্যা ভাষণ? কবিতার শিরোনাম এই কারণে মিথ্যা ভাষণ যে ...তবে এটুকু বলতে পারি: গভীর অন্ধকার থেকে এসে তোমার আলোকিত ঘরে তোমাকে পাইনি বলে চলে যাচ্ছি আরও গভীর আঁধারে ... এই কথাগুলি রবীন্দ্রনাথের একটি বাণীর বিকল্প রুপ বলা যায়: কেন বাণী তব নাহি শুনি নাথ হে অন্ধজনে নয়ন দিয়ে অন্ধকালে ফেলিলে ... অপলাপ কবিতাটি বা গানটি প্রেমের বা বিরহের নয়। তীব্র এক ""ম্যাটাফিজিকাল এংজাইটি"" থেকে লিখেছি -যে কারণে কথাগুলি ক্রোধের ...তার কারণ ... কেন বাণী তব নাহি শুনি নাথ হে/অন্ধজনে নয়ন দিয়ে অন্ধকালে ফেলিলে ...জগতে বেঁচে থেকে জগতের জগৎকর্তাকে না দেখে না চেনা একটি মিথ্যে ভাষণ নয় কি? কবিতাটি গানে উর্ত্তীণ করল জন। কবিতার থিম নিয়ে আমাদের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠক হয়নি। এখানেই আশ্চর্য হতে হয়। সিনিয়ার বলে আমি ওকে দীর্ঘ অহেতুক দার্শনিক লেকচার দিইনি। জন যা বোঝার বুঝে গেছিল ... প্রচন্ড ক্রোধ টের পেলাম কম্পোজিশনে। বিস্ময়কর সৃজনশীলতাও টের পেলাম মিউজিক্যাল কম্পোজিশনে; টের পেলাম গানের পৃথিবীতে খুলে দিচ্ছে নতুন এক পথ ... অডিও লিঙ্ক http://www.mediafire.com/?dzzonjjtkju ঠিক সেভাবে অপলাপ এর মিউজিক ভিডিও আজও হয়নি, তবে ব্ল্যাক এর একজন ফ্যান (তানভীর) চমৎকার একটি কাজ করেছে অপলাপ নিয়ে ... উৎসর্গ: হাসান মাহাবুব। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ৯:০১",False ij,"কারা ছিল আজীবিক _ এই ছবিটি একালের একজন বৃদ্ধর। ইন্টারনেটে পেয়েছি। তবে আমার কেন যেন মনে হয়- আজীবিক ধর্মসম্প্রদায়ের গুরু গোশাল মংখলিপুত্ত দেখতে কতকটা এরকমই ছিলেন। যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৬০০ বছর আগে কথা। প্রাচীন ভারতে তখন এক নতুন সময়ের আগমনী সুর বাজছিল। পুরনো ট্রাইবাল জীবনধারা ভেঙ্গে পড়ছিল; তার জায়গায় গড়ে উঠছিল-রাষ্ট্র। গঙ্গার দুপাশের তীরে তীরে গড়ে উঠছিল পেশাভিত্তিক সব নগর, গড়ে উঠছিল বানিজ্যকেন্দ্রিক সব জনপদ। নগর-জনপদের বাইরে ছিল অবারিত ফসলের মাঠ। সে মাঠে কৃষিকাজ হত। শূদ্রকৃষক খাটত সেসব মাঠে। মাঠের পাশে ছিল চওড়া ধূলিময় পথ । সে পথে চলত হাজার হাজার গরুর গাড়ি: সার্থবাহের দল যেত দূর নগরের উদ্দেশ্যে। হয়তো, রাজগৃহ থেকে শ্রাবস্তী। পথে সাধু সন্ন্যাসীদেরও দেখা যেত। দলবেঁধে কিংবা একা। যে কালের কথা বলছি- সে কালে সাধুসন্ন্যাসীর ভীষন সম্মান ছিল। অবারিত প্রান্তরের কোণে কিংবা নির্জন অরণ্যে ধর্মালোচনায় মগ্ন কিংবা ধ্যানে বসে থাকতে দেখা যেত সাধুসন্ন্যাসীদের। সে সময়টায় গড়ে উঠছিল শত শত ধর্মীয় মঠ; শত শত সন্ন্যাসী সংঘ। এমন কী সাব্বী (নারী) সংঘও গড়ে উঠেছিল তৎকালীন ভারতবর্ষে। জৈনধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীর স্বাধীন নারী (সাব্বী) সংঘ স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধের অনেক আগেই; এমনই বিস্ময়কর যুগ ছিল সেটি । যে সময়টার কথা বলছি, সেই সময়টায় ব্যবসাবানিজ্যে সামরিক শক্তিতে উন্নত এক রাজ্য ছিল মগধ (বর্তমান বিহার)। মগধের রাজধানী ছিল রাজগৃহ। সে সময়কার লোকের মুখের ভাষা ছিল মাগধী (বা অর্ধমাগধী) মগধ। মগধের ভাষাই মাগধী। মগধের রাজা ছিলেন বিম্বিসার; ভারি প্রজাবৎসল রাজা। অধিকন্তু, সাধুসন্ন্যাসীদের পৃষ্টপোষকতা করতেন। রাজগৃহ নগরে ছিল সাধুসন্ন্যাসীদের ভিড়। রাজগৃহ নগরের লোকেরা জাগতিক শ্রীসম্পদের পাশাপাশি জানছিল নতুন নতুন ধর্মমতের কথা। জৈন, বুদ্ধ আজীবিক-আরও কত মত, কত পথ। বৌদ্ধ গ্রন্থ অঙ্গুত্তর নিকায়, মহানিদ্দেস ও চুল্লনিদ্দেসে সেই সময়কা কয়েকটি স¤প্রদায়ের নাম উল্লেখ আছে। যেমন- নির্গ্রন্থ জটিলক পরিব্রাজক অবিরুদ্ধক মুন্ডুশ্রাবক মাগন্ডিক ত্রৈদন্ডিক গৌতমক (বৌদ্ধ নয়) দেবধার্মিক প্রভৃতি। এরা সবাই ছিল বেদপ্রামাণ্যবিরোধী। ২ এইসব বেদপ্রামাণ্যবিরোধী মতের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল বৌদ্ধ ও জৈনমত। তবে সেই সময়ে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের মতো আজীবিক মতটিও প্রাধান্য পেয়েছিল ভারতীয় সমাজে। বলাবাহুল্য, মতটিও ছিল নাস্তিক ও বেদপ্রামাণ্যবিরোধী। একজন ইউরোপীয় ঐতিহাসিক আজীবিক ধর্মের উত্থান সম্বন্ধে লিখেছেন- About the time of the rise of Buddhism, there was a sect of religious mendicants, the Ajivikas, who held unorthodox views. In the strict sense, this name is applied to the followers of one Makkhali Gosala, but in a wide sense it is also applied to those who taught many different shades of heretical teachings. Primary sources of knowledge about these are the Digha Nikaya, Anguttara Nikaya, Samyutta Nikaya, the Sutrakrtanga-sutra, Shilanka's commentary on the Sutrakrtanga-sutra, the Bhagavati-sutra, the Nandi-sutra, and Abhayadeva's commentary on Samavayanga-sutra. Ajivika শব্দটার মানে ভীষন ঘোলাটে। মনে হয় “অজীব” শব্দ থেকে আজীবিক শব্দটা উদ্ভূত। অ-জীব মানে জীব নয়; প্রাণশূন্য। মানে, যারা জীবিত নয় মৃত। এই কথার সামান্য ব্যাখ্যা দরকার। আজ তক আজীবিক সম্প্রদায়ের নিজেদের কোনও লেখা (ধর্মগ্রন্থ) পাওয়া যায়নি। যাও বা পাওয়া গিয়েছে তা সবই জৈন ও বৌদ্ধ সূত্রে উল্লেখিত। জৈন ও বৌদ্ধদের সঙ্গে আজীবিকদের ছিল দা-কুমড়ো সম্পর্ক। কাজেই আজীবিকদের বিরুদ্ধে কুৎসা তারা রটাতেই পারে। সম্প্রদায়ের নাম দিতে পারে আজীবিক। তারা বলতেই পারে আজীবিক মত হল ফালতু, প্রাণশূন্য বা আজীব (!) যাহোক। আজীবিক সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গোশাল মংখলিপুত্ত। তিনি ছিলেন বুদ্ধ ও মহাবীরের সমসাময়িক। গোশাল মংখলিপুত্ত প্রখর নিয়তিবাদী ছিলেন বলেই বুদ্ধ ও মহাবীর তার ওপর ভীষন চটে ছিলেন। ৩ মংখ মানে চারণ কবি ও চিত্রকর। তাহলে মংখলিপুত্ত মানে মংখ-এর ছেলে। কাজেই গোশাল মংখলিপুত্তর বাবা ছিলেন একজন চারণ কবি ও চিত্রকর। মংখলিপুত্ত-এই শব্দটা পালি। সংস্কৃতে কথাটা মংখলিপুত্র। গোশাল মানে বোঝা যায়। যার জন্ম গোয়াল ঘরে। হতে পারে। আজও গ্রামের বাড়িতে আঁতুর ঘর আর গোয়াল ঘরের পার্থক্য কী এমন! আর জগতের শ্রেষ্ট এক মানুষের জন্ম হয়েছিল গো-শালায়। অবশ্য, মংখলিপুত্তর জন্ম গোশালায় না ও হতে পারে। আগেই বলেছি- জৈন ও বৌদ্ধদের সঙ্গে আজীবিকদের ছিল দা কুমড়ো সম্পর্ক। কাজেই, তারা আজীবিকগুরুর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতেই পারে। বৌদ্ধ ধর্মের এক বিখ্যাত টীকাকার ছিলেন বুদ্ধঘোষ। বুদ্ধঘোষ একবার বলেছিলেন, আরে, গোশাল মংখলিপুত্ত! ছোঃ সে ছিল এক পলাতক দাস! কাজেই -অহিংসপন্থীদের মনে সামান্য হলেও হিংসা ছিল? ৪ যা হোক, অনুমান করা যায় যে যথা সময়ে গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছিল গোশাল। সম্ভবত তরুন বয়েসেই। তারপর? তারপর আর কি? বহু বছর ঘুরল প্রাচীন ভারতের পথে পথে গোশাল। যে পথের দুপাশে ছিল অরণ্য কিংবা অবারিত ফসলের মাঠ। আর সে পথ ছিল চওড়া ও ধূলিময়। পথে সার্থবাহের দল চলেছে দূর নগরের উদ্দেশ্যে। অযোধ্যা কিংবা অবন্তী। সে পথেই হাঁটছিল গোশাল মংখলিপুত্ত। ইষৎ বিভ্রান্ত। সে জানতে চায় জীবন ও জগতের মানে। জীবনে কেন এত দুঃখ। কেন এত শীর্ষসুখ। কেন ভিজে চুম্বনসুখ! কেন নীল দংশনবিষ! মাথায় কত কথা ঘোরে। ক. আমি কে? কে আমি? একা আমি? ভিড়ের আমি? তুমি কে? কে তুমি? তুমি আমি আমি তুমি আমি তুমি তুমি আমি খ. সাপ কেন এঁকে বেঁকে আসে? বিষ ঢেলে চলে যায় শেষে? রমনীর জংঙ্ঘাগুহা কামার্ত। ডাকে। কেন সুখ হয় মাংশের কোমল সংঘাতে? ৫ প্রাচীন ভারতের ধর্মমত নিয়ে গবেষনা করেছেন বিশিস্ট গবেষক নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি লিখেছেন- “তাঁর (গোশালের) পূর্ববর্তী দু’জন আজীবিক গুরুর নাম পাওয়া যায়। নন্দ বচ্চ ও কিস সংকিচ্চ। ” (দ্র:ধর্ম ও সংস্কৃতি: প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট। পৃষ্ঠা, ৭৪) অতএব কল্পনা করি- হাঁটতে হাঁটতে একদিন গোশাল এক অরণ্যের কাছে চলে এল। ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে গেছে। অঘ্রান মাস। দুপুর রোদে শীতার্ত হাওয়ার মৌন কাঁপন। সোনালি রোদে কত যে পাখপাখালি ডাকছিল। আশেপাশে কত যে গাছ। নিম, কড়ই, হরীতকী। হঠাৎ চোখে পড়ল: একটা হরীতকী গাছের নিচে দুজন সন্ন্যাসী বসে ছিলেন। দুজনেই বৃদ্ধ। দুজনেই শীর্ণ কালো ও হাড্ডিসার। চুলে জট। নগ্ন। নগ্ন সাধু যে আগে গোশাল দেখেনি- তা নয়। তবু কী এক কৌতূহলভরে গোশাল তাদের কাছে এগিয়ে গেল। সাধুদের মুখোমুখি বসল। নগ্ন সন্ন্যাসী দুজন তাকে দেখল। কিছুক্ষণ মৌন কাটল। তারপর গোশাল তার পরিচয় জানাল। সন্ন্যাসীদের একজন বললেন, আমার নাম কিস সংকিচ্চ। অন্যজন বললেন, আমার নাম নন্দ বচ্চ। গোশাল বলল, আমি জ্ঞান তৃর্ষাত। জগৎ সম্বন্ধে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি লাভের উদ্দেশ্যে আমি গৃহত্যাগ করেছি। আমাকে বলুন। আপনারা কী বিশ্বাস করেন। গোশালের কথায় বৃদ্ধ সন্ন্যাসীরা সন্তুষ্ট হলেন। জ্ঞানীমাত্রেই জ্ঞানের আলোচনা পছন্দ করেন। কাজেই কিস সংকিচ্চ বললেন, মহারাজ সত্ত্বগনের সংক্লেশের হেতুও নাই, প্রত্যয় নাই; হেতু ও প্রত্যয় বিনা সত্ত্বগণ সংক্লিষ্ট হয়। সত্ত্বগণ শুদ্ধির হেতুও নাই। প্রত্যয়ও নাই। হেতু ও প্রত্যয় বিনা তাহাদের শুদ্ধি হয়। আত্মা-কার নাই, পর-কার নাই, পুরুষ-কার নাই, বল নাই, বীর্য নাই,পুরুষ-স্থাম নাই, পুরুষ পরাক্রম নাই, সর্বসত্ত্ব, সর্ব প্রাণি, সর্ব ভূত, সর্ব জীব অবশ, অবল, নির্বীর্য। তাহারা নিয়তি ও সংযোগ পরিচালিত এবং ষড়বিধ জাতিভুক্ত হইয়া স্বীয় স্বীয় জাত্যানুসারে সুখদুঃখ অনুভব করে। কথাগুলি শুনতে শুনতে গোশাল কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেল গোশাল। সবই কি নিয়তি? গ্রামের শান্ত জীবন আর নেই। সবাই নগরমুখী। নগরে ভিড়। কাম। লোভ। রিরংশা। সবই কি নিয়তি? নন্দ বচ্চ এবার বললেন, কেহ কেহ মনে করিতে পারেন ‘আমি এই শীল, এই ব্রত, এই তপ, অথবা এই ব্রহ্মচর্যের দ্বারা আপরিপক্ক কর্মের পক্কতা সাধন করিব, অথবা পরিপক্ক কর্মকে ভোগ করিয়া উহার অন্ত করিব।’ কিন্তু তাহারা কৃতকার্য হইবেন না। সংসারে দ্রোণ-তুলিত সুখদুঃখের পরিবর্তন হয় না। উহার হ্রাসও নাই, বৃদ্ধিও নাই, উৎকর্ষ নাই,অপকর্ষও নাই, যেমন সূত্রগুল ক্ষিপ্ত হইলে তাহার গতি বেষ্টনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, সেইরুপ, মূর্খ ও পন্ডিত সকলেই পুন: পুন: জন্মগ্রহন করিয়া দুঃখের অন্ত করিবে। (বৌদ্ধ গ্রন্থ দীগ নিকায়ে গোশাল মংখলিপুত্তর জবানীতে এই কথাগুলি রয়েছে; আমি কেবল নাট্যদৃশ্যের মত করে উপস্থাপন করলাম।) কিস সংকিচ্চ আর নন্দ বচ্চর কথাগুলো খুব টানল গোশালকে। মায়ের কথা মনে পড়ল তার। মাকে সাপে কেটেছিল; অথচ মা ছিল পরের দুঃখে কাতর। গ্রামের সবার খোঁজ খবর নিত। নিজের মুখের ভাত তুলে দিত ক্ষুধার্তকে। সেই মাকেই কিনা সাপে কাটল! ঈশ্বর বলে কেউ নেই। সবই নিয়তি। গোশাল কিস সংকিচ্চ আর নন্দ বচ্চর নিয়তিবাদ গ্রহন করবে বলে ভাবল। তাঁর সম্বন্ধে এক ইউরোপীয় ঐতিহাসিক লিখেছেন-Makkhali's views may be thus summarized. There is no cause of the depravity of things; they become depraved without any reason or cause. There is also no cause of the purity of beings; they become pure without any reason or cause. Nothing depends either on one's own efforts or on the efforts of others. All things are destitute of power, force, or energy. Their changing states are due to destiny, environment, and their own nature. Thus, Makkhali Gosali denies sin, or dharma, and denies freedom of man in shaping his own future. He is thus a determinist, although scholars have held the view that he might leave room for chance, if not for freedom of will. He is supposed to have held an atomistic cosmology and that all beings, in the course of time, are destined to culminate in a state of final salvation. He believes not only in rebirth but also in a special doctrine of reanimation according to which it is possible for one person's soul to be reanimated in the dead bodies of others. Thus, the Ajivikas are far from being materialists. গোশাল জিজ্ঞেস করল, আপনারা নগ্ন কেন? কেন আর।জীবনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। নন্দ বচ্চ বললেন। জীবন তো আমরা চাইনি। এ জীবনের সুখও না, দুঃখও না। কিস সংকিচ্চ বললেন। কী ভেবে গোশাল উঠে দাঁড়াল। শরীরের কাপড় খুলে ফেলল। তারপর নন্দ বচ্চ ও কিস সংকিচ্চ কে প্রণাম করে আবার পথে নামল। ৬ নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য লিখেছেন-“ মহাবীর তার সন্ন্যাসজীবনের তৃতীয় বর্ষে গোশালের সাক্ষাৎ পান এবং তাঁর সাহচর্যে ছয় বৎসর কাটান।” ধর্ম ও সংস্কৃতি: প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট। (পৃষ্টা, ৭৫) এক ধর্মশালায় আহারের সময় এক যুবকের সঙ্গে আলাপ হল গোশালের। বৈশালীর সেই যুবকের নাম: মহাবীর। প্রথম দৃষ্টিতেই পরস্পর পরস্পরকে কেমন টানল। বন্ধুত্বও হল। তারপর মহাবীরের সঙ্গে বছর ছয়েক কাটল গোশালের। তারপর দুজনের মধ্যে মতবিরোধ হয়। গোশাল মংখলিপুত্ত প্রখর নিয়তিবাদ মেনে নিতে পারছিল না মহাবীর। গোশালের ওপর প্রথম থেকেই বিরক্ত ছিলেন। এই যে বণিকেরা জনপদে জনপদে এত যে প্রভূত উন্নতি করছে-এ কি প্রচেস্টা ও কোনও কর্মফলের জন্য নয় ? ক’জনের লাভ হয় বল? বেশির ভাগই তো পথে বসে। গোশালের উত্তর। এই সব অক্রিয়বাদী কথাবার্তার কারণে গোশালের ওপর ভয়ানক ভীষন চটে উঠল মহাবীর। দুজনের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। তবে অনেকই মনে করেন যে মহাবীরকে প্রভাবিত করেছিলেন গোশাল। মহাবীরের নগ্নতা নাকি গোশালেরই প্রভাব। পরে মহাবীরের সে নগ্নতার ওপর আরোপিত হয়েছিল অহিংসবাদ। এমন কী যা প্রেরণা যুগিয়েছিল পরবর্তীকালের জৈন দিগম্বরদের। ৬ নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য লিখেছেন- “শ্রাবস্তীতে এক কুম্ভকুম্ভকারণীর গৃহ তার (গোশালের) প্রচারের কেন্দ্র হয়। ” ধর্ম ও সংস্কৃতি: প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট। (পৃষ্টা, ৭৫) গোশাল মংখলিপুত্ত আবার পথে নামল। একা। আমি কে? কে আমি? একা আমি? ভিড়ের আমি? তুমি কে? কে তুমি? তুমি আমি আমি তুমি আমি তুমি তুমি আমি একা ও নিয়তিবাদী। মনের ভিতর ভয়ানক তিক্ততা। মহাবীর মেধাবী। সে কেন বুঝল না-আত্মা-কার নাই, পর-কার নাই, পুরুষ-কার নাই, বল নাই, বীর্য নাই,পুরুষ-স্থাম নাই, পুরুষ পরাক্রম নাই, সর্বসত্ত্ব, সর্ব প্রাণি, সর্ব ভূত, সর্ব জীব অবশ, অবল, নির্বীর্য। তাহারা নিয়তি ও সংযোগ পরিচালিত এবং ষড়বিধ জাতিভুক্ত হইয়া স্বীয় স্বীয় জাত্যানুসারে সুখদুঃখ অনুভব করে। হাঁটছিল গোশাল। প্রাচীন ভারতের পথে পথে । যে পথের দুপাশে ছিল অরণ্য কিংবা অবারিত ফসলের মাঠ। আর সে পথ ছিল চওড়া ও ধূলিময়। পথে সার্থবাহের দল চলেছে দূর নগরের উদ্দেশ্যে। উজ্জ্বয়নী কিংবা অশ্মক। অনির্দিষ্টভাবে ঘুরতে ঘুরতে শ্রাবস্তী নগরের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন গোশাল। ওই নগরেই ছিল এক কুমাড়পাড়া। কুমাড়পাড়ায় ছিল এক কুম্ভকারণীর বাড়ি। সেই মধ্যবয়েসী কুম্ভকারণীর নাম ছিল- ধরা যাক, বিমলা। ধরা যাক বিমলা ছিল বিধবা। একদিন ভোরবেলা দিঘিতে জল আনতে গেছিল বিমলা। ফেরার পথে পথের ধারে নগ্ন সাধুকে বসে থাকতে দেখে থমকে দাঁড়াল বিমলা। বুকের ভিতরটা ধক করে উঠল। সাধু যে দিগম্বর। বিমলা সাধুর দিকে এগিয়ে যায়। তবে সবেমাত্র রোদ ফুটতে শুরু করেছে। কলসিটা মাটিতে নামি রেখে বসল সাধুর মুখোমুখি। মুখ তুলে তাকাল সাধুটি। কে এই নারী? একেবারে মায়ের মুখের আদল। মা আবার ফিরে এলেন? সবই নিয়তি। আমি যে সময়টার কথা বলছি-সে কালে সাধুসন্ন্যাসীর বিস্তর সম্মান ছিল। সুতরাং, বিমলা বলল, বাবা। আমার ঘরে দিনকত বাস করলে ভারি কেতার্থ হতুম। কোথায় তোমার ঘর গো? গোশালের কন্ঠস্বরে ঝরে ঝরে পড়ে কৌতুক। হাত তুলে বিমলা বলল, ঐ যে গো। কুমোড়পাড়ায়। কাছেই। স্বামী বেঁচে নেই। একাই থাকি। আমায় তুমি কেতার্থ কর না বাবা। এবারে গোশাল বলল-তুমি ঘর পেয়েছ বুঝি মা? আমি এখনও পাইনি। বলছ যখন- চল তা'লে। দেখি কেমন তোমার খুপরি। বলে উঠে দাঁড়ালেন গোশাল। ততদিনে বয়স হয়েছিল গোশালের। শরীরও চলছিল না । কোথাও থিতু হবেন ভাবছিলেন। স্থান জুটল। নিয়তি? গোশালকে ঘরে নিয়ে গেল বিমলা। ঘটনাটির ফ্রয়েডিও ব্যাখ্যা থাকলেও থাকতে পারে। তবে আমরা এও জানি যে-কোনও কোনও নারীর ভিতর ধর্মপালনে কেমন এক উদগ্র তাড়না থাকে। বিমলা হয়ত সেই ধরনেরই। তো, কুম্ভকারণীর ঘরে দিন কাটছে গোশালের। খবর রটল: কুমারপাড়ার বিধবা বিমলা কোন্ এক যোগী নগ্ন অলীক সাধুকে নাকি ঘরে তুলে এনেছে। খুব নাকি যতœ নিচ্ছে সাধুটির। বিধবা কুম্ভকারণীর ঘরে লোকেরা ভিড় করল এসে। বেশির ভাগই নিুকায়। জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন সব। নগ্ন সাধুটি যদি উদ্ধারের পথ দেখাতে পারে। লোকে গোশালের কাছে এল। তিনি যা বলার বললেন। There is no cause of the depravity of things; they become depraved without any reason or cause. There is also no cause of the purity of beings; they become pure without any reason or cause. Nothing depends either on one's own efforts or on the efforts of others.লোকে শুনল সে কথা । আত্মা-কার নাই, পর-কার নাই, পুরুষ-কার নাই, বল নাই, বীর্য নাই,পুরুষ-স্থাম নাই, পুরুষ পরাক্রম নাই, সর্বসত্ত্ব, সর্ব প্রাণি, সর্ব ভূত, সর্ব জীব অবশ, অবল, নির্বীর্য। তাহারা নিয়তি ও সংযোগ পরিচালিত এবং ষড়বিধ জাতিভুক্ত হইয়া স্বীয় স্বীয় জাত্যানুসারে সুখদুঃখ অনুভব করে। ৭ বিদ্যমান শ্রেণিকাঠামোর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন গোশাল। গোশালের ব্যাখ্যায় বৈদিক সমাজের নিুবর্গীয় শূদ্ররা শান্ত্বনা পেয়েছিল প্রভূত। গোশাল মংখলিপুত্ত শিষ্যদের মধ্যে শূদ্ররা ছিল বেশি। প্রথম দিকে বৌদ্ধদের চেয়ে আজীবিক সংখ্যা ছিল বেশি। গোশালের কথা ছিল সহজ সরল । সুতরাং, গোশাল-মত জনপ্রিয় হয়েছিল। আদর্শিক বিরোধ নিয়ে বৌদ্ধদের সঙ্গে আজীবিকদের প্রতক্ষ সংগ্রাম সূচিত হয়েছিল । পরে অবশ্য বৌদ্ধরাই জিতেছিল। এর একটা কারণ, গোশালের মত ছিল একপেশে। অদৃষ্টবাদী। অদৃষ্টবাদ নতুন বণিক কেন্দ্রিক সমাজের সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৬০০ বছর আগের প্রাচীন ভারতের ওই সময়টার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল বণিক শ্রেণির উত্থান। বণিক শ্রেণির কার্যকলাপই ষোলটি জনপদের ভিত রচনা করে দিয়েছিল। নগরজীবন হয়ে উঠেছিল গুরুত্বপূর্ন। পুরনো ট্রাইবাল আদর্শ লুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল। কিস সংকিচ্চ এবং নন্দ বচ্চর মতো সন্ন্যাসীরা নতুন আর্দশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছিল না; কাজেই তারা হয়ে উঠেছিল নিয়তিবাদী। নবতর জীবনবোধের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি গোশালও। কিস সংকিচ্চ এবং নন্দ বচ্চর প্রভাবে গোশাল হয়ে উঠেছিল নিয়তিবাদী । তৎকালীর সামাজিক পরিবর্তনের তাৎপর্য উপলব্দি করতে পারেন নি বলেই গোশাল নিয়তিবাদী হয়ে পড়েছিলেন। বললেন: মানুষ অসহায়। সৎ কাজ করে মানুষ তার ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। কেননা, ঈশ্বর বলে কেউ নেই। আর সবই নিয়তি নির্দিস্ট। মানুষকে দুখের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ৮৪০০০০০ বার জন্ম নিতে হবে। এ বিষয়ে জ্ঞানী মূর্খের মধ্যে পার্থক্য নেই। অথচ। নতুন জীবনবোধের সঙ্গে বুদ্ধ ও মহাবীর ঠিকই খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছিলেন। কাজেই দেখা গেল- বৌদ্ধ ও জৈনরা ছিল বণিক শ্রেণির স্বার্থের প্রতি সদয়। ঋণদান সুদগ্রহন ও দাস রাখা বৌদ্ধ ও জৈনরা অনুমোদন করেছে। কর প্রদানকে বলা হয়েছে গুণ ! নতুন রাষ্ট্রের উপযোগী হয়ে উঠেছিল বেদপ্রামাণ্যবিরোধী ধর্মদুটি। বলল, প্রানিহত্যা মহাপাপ। বলল, হে অজ্ঞ ব্রাহ্মণগন, যজ্ঞে অত ষাঁড় মেরো না। তা হলে বণিকেরা তাদের পণ্য নিয়ে কী ভাবে এক জনপদ থেকে অন্য জনপদে যাবে? ৮ একদিন বিমলার মুখে ভয়ঙ্কর এক দুঃসংবাদ শুনলেন গোশাল। মগধের সম্রাট ছিলেন বিম্মিসার। তাঁর ছেলে অজাতশক্র । বাবাকে হত্যা করেছে অজাতশক্র। আহারে। মগধের রাজা বিম্বিসার। ভারি প্রজাবৎসল। সাধুসন্ন্যাসীদের পৃষ্টপোষকতা করতেন। গোশাল বিষন্ন হয়ে পড়লেন। কয়েক মাস পর। শিষ্যদের মুখে আরেকটি ভয়ানক দুঃসংবাদ শুরে ভারি মুষড়ে পড়লেন গোশাল। গঙ্গার উত্তরের ছত্রিশটি গনরাজ্য অজাতশক্রর বিরুদ্ধে মিত্রসংঘ গঠন করেছে। যুদ্ধ আসন্ন। উন্মাদ হয়ে গেলেন গোশাল। বিমলাই হয় তো আগলে রেখেছিল সে সময়টা। গোশালের মৃত্যু। ৪৮৪ খ্রিস্টপূর্ব। ৯ গোশাল মংখলিপুত্তর মৃত্যুর পরও তাঁর নিয়তিবাদী আজীবিক মতটি টিকে ছিল আরও অনেক অনেক বছর। মৌর্য যুগে ভারি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল আজীবিক ধর্মমতটি । স্বয়ং মৌর্য সম্রাট বিন্দুসার ছিলেন গোশাল মংখলিপুত্তর একনিষ্ট ভক্ত। সম্রাট অশোকের পিতা ছিলেন বিন্দুসার। অশোকের এক পৌত্র ছিল। নাম দশরথ। আজীবিক স¤প্রদায়ের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠেছিলেন দশরথ। নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যর মতে- ত্রয়োদশ শতকের পর নবজাগ্রত বৈষ্ণবধর্মের মধ্যে মতবাদটি লুপ্ত হয়ে যায়। ১০ ভারতে আজীবিকরা আজও রয়ে গেছে! সে দিন নব্য আজীবিকদের একটা ওয়েবসাইট দেখলাম। http://www.rev.net/~aloe/ajivika/ গোশাল মংখলিপুত্ত আজও তাই একেবারেই বিস্মৃত হননি। বেঁচে রয়েছেন। অন্যভাবে। তথ্যসূত্র: বই ১) নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য লিখিত-ধর্ম ও সংস্কৃতি: প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট। ২) সুনীল চট্টোপাধ্যায় লিখিত-প্রাচীন ভারতের ইতিহাস। (১ম খন্ড) ওয়েবসাইট- Click This Link Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৫৯",False fe,"কবিতার গ্রহপথে হেঁটে যায় মৌন কাব্যকার কবিতার গ্রহপথে হেঁটে যায় মৌন কাব্যকারফকির ইলিয়াস======================================কবিতা কেন লিখতে হয়, কথাটি আমার কাছে জানতে চেয়েছিল যে মেয়েটি, আমার সাথে তার বয়সের ফারাক তিরিশ বছরের। আমি বলি, কবিতা আমি লিখি না। কবিতা আমাকেই লিখে নেয়। কীভাবে লিখে ! সে জানতে চায়। আমি হাসি। বলি- দুই সত্তা যখন এক হয়ে যায়, তখন আর কারো কোনো নিজস্ব পরিচয় থাকে না। তাহলে আমার পরিচয় কি ? কবিতা - না কবিপিতা ! কেউ কেউ বলেন- 'কবিতাকার'। কে কি বলেন তা এখন আর আমার কাছে মুখ্যকিছু মনে হয় না। আমি কবিতার জন্য অনেক পথ হাঁটি। অনেক বয়স বিনিয়োগকরি। এই কদিন আগে ৫০টি বছর অতিক্রম করে এসেছি আমি। কিন্তু মনে হয়, এইতো সেদিন ! তিন দশকেরও বেশি সময় পেরিয়েছি কাব্যসংসার নিয়ে।আমার ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে 'জলভূমি' ওয়েব ম্যাগাজিন একটি বিশেষ আয়োজন করেছিল। তিনদিন ব্যাপি ওয়েব স্পেস তারা দিয়েছেন আমাকে। আমার কাছে মনে হয়েছে- এটা এক বিরল সম্মান। 'জলভূমি' যারা চালান- তাদের কয়েকজনকে আমি ওয়েব ভুবনেই চিনি। শিফাতসালমান, শিবানি মিত্রসেন, বোরহান বীজান্ত। আরও কয়েকজন আছে তাদের টীমে। তারা এই যে কবিতাকে ভালোবাসেন- এর পেছনে কী স্বার্থ আছে ? কিংবাকোনো প্রত্যন্ত এলাকা থেকে যারা ছোটকাগজ বের করেন ! মূলতঃ এরাই সাহিত্যের প্রাণশক্তি।আমার জন্মদিনে কবি শিবানি মিত্রসেন একটি নিবেদিত কবিতা লিখেছেন। কবিতাটি আমি অনেকবার পাঠ করেছি। পড়া যাক তার কবিতাটি। '' কিছু জল ছিটিয়ে যাই। কিছু বৃষ্টি রাখি জমা - এই নীরব নিঃশ্বাসেউড়ে যাওয়া নদীর বিত্ত, তোমাকে স্পর্শ করে কবি, আর তুমিধ্যানী ঋষির মতো এঁকে যাও ফুলের পাহাড়। আমাদের ভরাট নদীগুলো দেখে বার বার কাঁদে এই পাখিদের দল।যে পুষ্পবিতানে একদিন মানুষের আনাগোনা ছিল,সেখানে এখন বাস করে বিষধর সাপ।বাদুড়েরা ঝুলে থাকে শোষকের মুখোশ পরেআর নদীওয়ালা একাকী বাউল ভাঙা দোতরার তারঠিক করতে করতে অতিক্রম করে পথের প্রদেশ। আমরাও অতিক্রম করতে চাই কবি, পঞ্চাশ সহস্র বছরএই কবিতালয়ে, আকাশে, মগ্ন অনুপ্রাসে।'' [ নদীওয়ালা / শিবানি মিত্রসেন ] এই যে অতিক্রম করে যাওয়ার স্বপ্ন, তা কবিই দেখতে পারেন। অনেকেই বলেন,রাজনৈতিক মুক্তি না এলে সমাজ বদলায় না। তারা আরও বলেন, সমাজকে,রাষ্ট্রকে নতুন জীবন রাজনীতিকরাই দেন। কথাটা হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে সত্য। কিন্তু আমি তো কোনো কবিকে যুদ্ধের হুকুম দিতে দেখিনি। আমিতো কোনোকবিকে গণহত্যার সাথী হতে দেখিনি। বরং কবিরাই সমস্বরে বলেছেন-' স্টপ জেনোসাইড'। কবিরা স্বপ্ন ফেরি করেন। অথবা দুপুর বিক্রি করে যোগান দেন প্রেমিকার চুলের লালফিতার মূল্য। কবি আবু হাসান প্রেমিকের প্রতিদ্বন্ধী হতে চেয়েছিলেন। তা আমরা তার কবিতায়ই পড়েছি। ''অতো বড় চোখ নিয়ে, অতো বড় খোঁপা নিয়েঅতো বড় দীর্ঘশ্বাস বুকের নিশ্বাস নিয়েযতো তুমি মেলে দাও কোমরের কোমল সারশযতো তুমি খুলে দাও ঘরের পাহারাযতো আনো ও-আঙ্গুলে অবৈধ ইশারা যতো না জাগাও তুমি ফুলের সুরভীআঁচলে আগলা করো কোমলতা, অন্ধকারমাটি থেকে মৌনতার ময়ূর নাচাও কোনআমি ফিরব না আর, আমি কোনদিনকারো প্রেমিক হবো না; প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী চাই আজআমি সব প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হবো '' [ প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী / আবুল হাসান ] না , কবিতা কোনো দ্বন্ধ রেখে যায় না। যা রেখে যায়, তা অনুভবের অনুসৃতি। কেউ সেই ভাবনায় নিজেকে মিলিয়ে নিতেই পারে, যদি চায়। আর না চাইলেওকবির কিছুই করার থাকে না। কবিতার বিবর্তন কামনা করে যে কবি পুরো রাত চাঁদের সাথে কথোপকথনে কাটিয়ে দেন, তার এর চেয়ে বেশি কিছুই চাওয়ার থাকে না। তিনি মনে করেন,আমি যে চাঁদ দেখছি- তা গোটা বিশ্বালোকের মানবসমাজই দেখছে। তাহলে চাঁদেরজ্যোতিরেখা নিয়ে আমার দেখর বিশেষত্ব কি ?হ্যাঁ, আমরা দেখতেই পারি এই পংক্তিগুলোর অমোঘ বিশালতা। ''সারাদিন পিঠের ওপর মাকড়শার জাল বুনে আজ তুমিঅতিশয় ক্লান্ত হয়েছ। চারিপাশে নগ্নহাঁস ও ময়ূরেরানতুন নতুন গৃহ নির্মাণ করছে। চারিপাশে আবারসাপ ও জবা ফুলের শৃঙ্গারও শুরু হয়ে গেছে। তুমি,একা তুমি, মাথা ফাঁক কোরে বিশ্বসংসারের খোঁপায়স্বপ্ন বুনে দিতে গিয়ে, আজ বুঝেছ, গোধূলি কখনওকারো আত্মীয় হয়না, তোমার ভাঙা হাতের উপরচাঁদ এসে বার বার চন্দনা করে, তোমার ভাঙাহাতের উপর হরিণীর কান্না এসে হরিণা করে,তুমি, একা তুমি, খাঁচাভর্তি অন্ধকার নিয়েআজও দাঁড়িয়ে আছ, চারিদিকে জল চমকায়, ভাসমানজল চমকায়, তোমার খাঁচা থেকে অন্ধকার ক্রমাগতগড়িয়ে আসে '' [ চাঁদ ও বন্দনা / জহর সেন মজুমদার ] কবি মানেই একেকজন স্বৈরশাসক। কারণ একজন প্রকৃত কবি পুরো নগরবাসীকেজানিয়ে একটি কবিতা লিখতে পারেন না। তাহলে কেউ বলতে পারেন, কবিতা কী তবে আরোপিত কোনো বস্তু কিংবা শক্তির নাম ?কবিতার শিল্পলেখপর্ব সারার আগে কবি যার সাথে প্রথম বোঝাপড়া করেন সে হচ্ছে নিজ পাঁজর। একজন কবি প্রতিদিন যে নতুন সূর্যের ছবি আঁকেন তা , তার স্বনির্ভর আধুনিক চেতনারই ফসল। আমি মনে করি, কবি নিজেই নির্মাণ করেন তার নিজ উপনিবেশ। তার কক্ষপথেকোনো আঁধার দাঁড়িয়েই বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারে না। পড়া যাক এই কবিতাটি ------ ''জলরঙে এঁকেছিলে যে আগুনসে আগুন আগুনই থেকে গেল শেষতক, জল হলোনা যে!তোমার আঙ্গুলে যে রঙ লেগেছিলতাও ছুঁয়ে গেল প্যাষ্টেলে নাকি আগুনে? একদা জল ভেবে যে আগুন গলাধঃকরণ করেছিলে তুমিতার তাপেই পুড়ে গেছে ঘরদোরপুড়ে গেছে তৈজস, প্রেমপত্রগুলোপুড়ে গেছে দীর্ঘ ভালোবাসা, চুম্বনের দাগ। কতদূর গেলে আকণ্ঠ পান হবে, লভ্য হবে তৃষ্ণার জলজলরঙ আগুন হবে প্রকৃতই জল আগুন পেরোলেই নদীতারপর স্থিত সরোবর,জল শুধু জলকিংবা অবারিত, তীব্র খরতর। '' [তোমার আঙ্গুলে যে রঙ লেগেছিল / তমিজ উদদীন লোদী ] কবি মানেই নিঃসঙ্গ নাবিক। তার হাতে আঁকা আলোররেখা গুলো একসময় তিনিঅন্যের হাতে তুলে দেবার জন্য উদ্গ্রীব হন। এই 'অন্যপক্ষ' হচ্ছে তার পাঠক।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুব যথার্থই বলেছেন, ''কে লইবে মোর কার্য্য, কহে সন্ধ্যা রবি শুনিয়া জগত রহে নিরুত্তর ছবি। মাটির প্রদীপ ছিল, সে কহিল, স্বামী-আমার যেটুকু সাধ্য করিবো তা আমি। ''আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, আমি এই ধরণীতে মাটির প্রদীপ হতেই চেয়েছি।একটু আলো জ্বেলে দিতে চেয়েছি। 'যুদ্ধ নয় শান্তি চাই' এই প্ল্যাকার্ড বুকে ঝুলিয়ে নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে দাঁড়িয়ে শত শত কবি যখন মৌন মিছিল করেছেন তখন আমার বার বার মনে হয়েছে, বিশ্ব একদিন শান্তির গ্রহপথ খুঁজে পাবেই। কোনো সামন্তবাদই কবি ও কবিতাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না--------------------------------------------------------------দৈনিক যায়যায়দিন ::সাহিত্য সাময়িকী ::/ ঢাকা / ৮ মার্চ ২০১৩ শুক্রবারClick This Link",False fe,"মত প্রকাশে স্বেচ্ছাচার ও বাতিলদের ঐক্য মত প্রকাশে স্বেচ্ছাচার ও বাতিলদের ঐক্য ফকির ইলিয়াস=======================================মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আমরা সবাই কথা বলি। কিন্তু কেউ যদি মত প্রকাশের নামে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নেয়, তাকে কী বলা যাবে? সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অবশ্যই চাই। কিন্তু এই স্বাধীনতার অপব্যবহার কাম্য নয় কোন মতেই। কোন মিথ্যা সংবাদ, মিথ্যা প্রতিবেদন যদি সমাজ, রাষ্ট্র, মানবতার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, তবে তাকে তো মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলা যাবে না। কেউ দুর্নীতি করলে তার বিরুদ্ধে লেখা উচিত। প্রতিবাদ করা উচিত। কিন্তু তা হতে হবে সত্যনির্ভর। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অথবা কারও জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করার জন্য কখনওই সংবাদ মাধ্যম ব্যবহৃত হতে পারে না। হওয়া উচিতও নয়।সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক অঙ্গন একটি সংবাদকে কেন্দ্র করে কেঁপে উঠেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে সংবাদটি প্রকাশ করেছে 'দৈনিক আমার দেশ' পত্রিকা বেশ নেতিবাচকভাবে।তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এরই মধ্যে এর প্রতিবাদ করেছেন। তিনি আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছেন। এ লেখাটি যখন লিখছি তখন পর্যন্ত জয়ের পক্ষ থেকে সরাসরি কোন প্রতিবাদ পাওয়া যায়নি। 'আমার দেশ' পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এবং সজীব ওয়াজেদ জয় বিদেশী খনিজ উত্তোলন কোম্পানি শেভরনের কাছ থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার উৎকোচ নিয়েছেন!তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরীর ভাষ্যমতে এ সংবাদ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। তিনি এর সূত্র-প্রমাণ জানানোর জন্যও সংশ্লিষ্ট পত্রিকার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।এ প্রসঙ্গে কিছু বিষয় খোলাসা করা দরকার। 'দৈনিক আমার দেশ' কাগজটির অন্যতম মালিক মোসাদ্দেক আলী ফালু, বেগম জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠজন। তা কারও অজানা নয়। সেই কাগজের বর্তমান সম্পাদক যিনি রয়েছেন তিনিও একজন অতি ডানপন্থী বলে খ্যাত। মাহমুদুর রহমান বেগম জিয়ার শাসনামলে জ্বালানি উপদেষ্টা ছিলেন। এই সেই মাহমুদুর রহমান যিনি 'উত্তরা ষড়ন্ত্রের'ও অন্যতম নায়ক। বেগম জিয়ার পরিবার এবং ডানপন্থী তমদ্দুনের আশীর্বাদ পেয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক হিসেবে নাজেল হন। দায়িত্ব নেন জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী হিসেবে মাঠে নামার।লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই আমার দেশ পত্রিকাটি নানাভাবে নেতিবাচক রিপোর্ট ছাপা শুরু করে। এবং সেটা তারা অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি তারা এর ধরনে যুক্ত করেছে নতুন মিথ্যাচার। তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই চরিত্র হননের নানা প্রকল্প। এখানে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার, তা হচ্ছে ৫ মিলিয়ন ডলার অঙ্কটি কী খুব বড় অঙ্ক?তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। যিনি জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এই দেশের স্বাধীনতা এনেছেন। আর সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্র। একজন কৃতী প্রযুক্তিবিদ। রাষ্ট্রকোষ থেকে অবৈধভাবে 'পাঁচ মিলিয়ন ডলার'ক্ষমতাবানদের জন্য নেয়া কোন বিষয়ই নয় যদি কেউ অবৈধভাবে নিতে চান। জয় যেহেতু এখনও ক্ষমতার ধারে কাছেও নেই, তাই তার নাম জড়িয়ে এমন মিথ্যাচারের হেতু কী? আর যদি প্রমাণ থেকেই থাকে তবে প্রমাণাদিসহই অবস্থার মোকাবেলা করা উচিত নয় কী?দুই'আমার দেশ' পত্রিকায় রিপোর্টটি ছাপার পর দেশে-বিদেশে তোলপাড় হচ্ছে। এর সূত্র ধরে 'আমার দেশ' অফিসে মত প্রকাশে স্বাধীনতায় বিশ্বাসীদের একটি সমাবেশের ছবি দেশবাসী দেখেছেন। ইন্টারনেটের কল্যাণে বিদেশে অবস্থানরত বাঙালিরাও দেখেছেন। সেখানে একাত্তরের রাজাকারপ্রধান মতিউর রহমান নিজামী বেশ জোশ বক্তব্য দিয়েছেন। তারা সরকারকে দেখে নেয়ার হুমকি-ধমকিও দিয়েছেন। গত নির্বাচনে জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত এসব বাতিলের ঐক্য নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। হঠাৎ করে 'সব শিয়ালের এক রা' হওয়ার কারণ কী? আমরা জানি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল রায় পুনর্বহালের পর জাতি নব উদ্দীপনা ফিরে পেয়েছে। ঘাতক দালালদের বিচারের প্রত্যয়ে মহান বিজয় দিবস সম্প্রতি পালিত হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের ডানপন্থি মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী তথাকথিত জাতীয়তাবাদীরা নানাভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ খুঁজছে। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে দলে ফিরিয়ে নিয়েছে বিএনপি। এটি দেশবাসীর অজানা নয়, এই লুৎফুজ্জামান বাবর কুখ্যাত 'হাওয়া ভবনের' অনেক কুকর্মের দোসর ও সাক্ষী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে 'লুকিং ফর শত্রুজ' খ্যাত চুলে জেলমাখা এ হাওয়া ভবন ক্যাডারযুক্ত সেটা এখন ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে ধৃত ব্যক্তিদের সাক্ষ্য থেকে। বাবর হঠাৎ করে হাওয়া ভবনে শীর্ষ কর্ণধারদের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়ে যান কি না সেই ভয়েই খুব দ্রুত তাকে দলে ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। বর্তমানে পলাতক হারিছ চৌধুরী, জেলে আটক আবদুস সালাম পিন্টু কিংবা মুফতি হান্নানের মতো জঘন্য জঙ্গিকেও এখন যদি বিএনপি সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে তবেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এটি কারোরই অজানা নয়, বাংলাদেশে ডানপন্থি মিডিয়াগুলো নানাভাবে সরকারকে হেনস্থা করতে ব্যস্ত। আর সেজন্য বিভিন্ন টক শো, কলাম, বিতর্কে অংশ নিয়ে মৌলবাদের মদদপুষ্ট কিছু বুদ্ধিজীবী কখনও শেখ মুজিবকে, কখনও শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়কে বিতর্কিত করার ইজারা নিয়েছেন। তাদের কথার বাণ থেকে শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকীর বিদেশে অবস্থানরত-অধ্যয়নরত সন্তানরাও বাদ যাচ্ছেন না। অন্যদিকে তাদের পরামর্শেই পরিকল্পিতভাবে কথিত যুবরাজকে তার দুর্নীতির পুরস্কার হিসেবে লোভনীয় পদটি দেয়া হয়েছে। এটি চরম লজ্জাকর বিষয় বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে জড়িয়ে এ পর্যন্ত যে মিথ্যা রিপোর্টগুলো করা হয়েছে এর স্বপক্ষে এসব মিডিয়া কোন প্রমাণ দাঁড় করতে পারেনি। কেউ দুর্নীতিবাজ হলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অবশ্যই হবে। কিন্তু কারও জনপ্রিয়তায় হিংসাপরায়ণ হয়ে তার বিরুদ্ধে মত প্রকাশের নামে স্বেচ্ছাচার তো কাম্য হতে পারে না। বাংলাদেশে পুলিশের পোশাক বদলের নামে, বিদ্যুতের খাম্বা লাগানোর নামে, বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকে হত্যাকা- ধামাচাপা দেয়ার জন্য উৎকোচ নেয়ার নামে কারও কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তারা, জনগণের এসব খবর অজানা নয়। আজ তাদের কাতারেই জয়কে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। দল, রাজনীতি, কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতার ধারে কাছে না যাওয়ার আগেই তাকে ঘায়েল করার ফন্দি আঁটা হচ্ছে। প্রতিটি সরকারের ধারে কাছেই কিছু দুর্নীতিবাজ আশ্রয় নেয়। আওয়ামী লীগ কর্তৃক তিরস্কৃত জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমান, হাজী সেলিম প্রমুখ নেতা এখনও দলে তেমন সক্রিয় নয়। যারা তথাকথিত 'সংস্কারপন্থি' বলে পরিচিত তারাও তাদের সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের এর আগে প্রায় চলে গিয়েছেন। অথচ বাংলাদেশে নতুন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করছে বিএনপি। দুর্নীতিবাজ, আন্তর্জাতিক চোরাচালানি চক্রের মদদদাতা ও জঙ্গিদের আশ্রয়দাতাদের পুনর্বাসিত করছে। পুরস্কার দিচ্ছে রাজনৈতিকভাবে। একটি জাতির জন্য এটা কোন মতেই শুভ সংবাদ নয়। তাদের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে সেই সব রাজাকার আবারও স্বার্থ হাসিলের ধান্দা করছে। যেভাবে জিয়াউর রহমানের হাত ধরে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছিল। ২০০১-এ বেগম জিয়ার মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিত্ব পেয়েছিল। আবারও বলি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। সবাইকেই আইনের আওতায় রাখা উচিত। কিন্তু তাই বলে তথ্য-প্রমাণ ছাড়া কারও চরিত্র হননও মেনে নেয়া যায় না। বর্তমান রাষ্ট্রপ্রশাসন আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এসব স্বেচ্ছাচারী বর্ণচোরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলেই জাতির প্রত্যাশা। অন্যদিকে কেউ দুর্নীতি- স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে যেন কার্পণ্য না হয়। মনে রাখতে হবে এদেশের মেহনতি জনতা বড় কষ্টে জীবনযাপন করেন। তারা যেন আর প্রতারিত না হন। নিউইয়র্ক, ২২ ডিসেম্বর ২০০৯ --------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ।ঢাকা। ২৫ ডিসেম্বর ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিতছবি- ড্রাগন ডেইল",False rn,"তিন অপদার্থ (কাল্পনিক গল্প) সময় বিকেল তিনটা। স্থান ধানমন্ডি লেকের পাশে। অফিসের নাম- থমাস এডিসন। থমাস এডিসন কোম্পানিটি বিদেশ থেকে নানান জিনিস পত্র বাংলাদেশে আনে আবার বাংলাদেশ থেকে নানান জিনিস পত্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেয়। ইউরোপে তাদের শাখা অফিসও আছে। আর ঢাকা অফিসের'ই তিন অপদার্থ একটা কফি শপে কফি খাচ্ছে। তিন জনের হাতেই একই ব্র্যান্ডের সিগারেট। তারা একটি মেয়েলি সমস্যা নিয়ে খুব আলোচনা করছে। দেড় ঘন্টা পার হয়ে গেছে- কিন্তু তারা এখনও উপসংহারে পৌঁছেতে পারেনি। তাতে সমস্যা কিছু নেই। তাদের অফিস টাইম বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। তারা অফিস থেকে লাঞ্চ শেষ করে কফি খেতে বের হয়েছে। প্রতিদিনই তারা ফালতু বিষয় নিয়ে লম্বা আলোচনা করেন। গত এক বছরে তারা অফিসকে কি দিয়েছে খুঁজে পাইনি। অফিসের উন্নতি হোক- এমন আলোচনা তাদের কখনও করতে দেখিনি। বেশি ভাগ সময়'ই তারা নারী, জামা কাপড়, আর রাজ্যের যত ফালতু কথা আছে- সেইসব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক নিয়ে ব্যস্ত। মেয়েদের মতো- এত কথা কিসের তাদের, ভেবে পাই না। অফিসের সবচেয়ে বড় পদে যিনি আছেন মানে মুসা সাহেব- তিনি'ই সবচেয়ে বড় অপদার্থ। মূসা সাহেব সম্পর্কে থমাস এডিসন কোম্পানির এমডি'র মামাতো ভাই। এমডি অফিসে না থাকলে তিনি রাজত্ব করেন। তার খুব পাওয়ার। এই পাওয়ার প্রতিটা লোককে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বার বার বুঝিয়ে দেন। মাস শেষে মোটা অংকের টাকা বেতন নেন। সহজ সরল সত্য কথা হলো- এই লোক'টা মূলত নির্বোধ। বস্তুত তার অফিসে কোনো কাজ'ই নেই। এম'ডি সাহেব অফিসে না থাকলে, অন্য দুই বদ'কে নিয়ে দরজা বন্ধ করে সিগারেট খাওয়াই তার প্রধান কাজ। মূসা সাহেব অফিসেরর কাম-কাজ একেবারে কিছুই বুঝেন না। কিন্তু সব কিছুতেই নাক গলাতে থাকেন। অফিসের প্রতিটা লোককে বিরক্ত করেন। সবাই চুল করে সহ্য করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। দুনিয়ায় কত রকম মানুষ, আর কত বিচিত্র চরিত্র। কিছু লোক আছে তোষামোদকারী আবার কিছু লোক আছে চাটুকার। এই দুই শ্রেনীর লোক সাধারনত কাজে ফাকিবাজ। দ্বিতীয় অপদার্থের নাম- আহমেদ রফিক। তিনি বয়সে অফিসে সবার চেয়ে বয়সে বড়। এবং সবচেয়ে বদ। কিন্তু তার আড়ম্বর খুব বেশি। তার প্রধান কাজ সময় সুযোগ পেলেই দরজা বন্ধ করে থ্রি এক্স ভিডিও দেখা। তার মতো- ৬৭ বছর বয়সের লোক যে অফিসে এই রকম কর্ম করতে পারেন- ভাবাই যায় না। আহমেদ শফিক সাহেব হলেন থমাস এডিসন কোম্পানীর এমডি'র দূর সম্পর্কের আত্মীয়। তিনি অফিসের প্রতিটা লোককে ডেকে যন্ত্রনা দেন। বিশেষ করে মেয়েদের। কিছু দুষ্টলোক সব জায়গায় থাকে। মক্কা- মদীনা বা গুলিস্তান- সদরঘাট। আহমেদ রফিকের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাওয়া উচিত ছিল- সদর ঘাটের সব্জি'র আড়তের বেপারি হওয়া। কিন্তু তিনি বড় পদ নিয়ে বসে আছেন। সুযোগ পেলেই অধীনস্ত কর্মচারীদের অপমান করেন। এই ব্যাপারে তিনি বিশেষ পারদর্শী। তৃতীয় অপদার্থের নাম- সাদেক উল্লাহ। উনি অফিসে নতুন জয়েন করেছেন। যে কোনো মেয়েদের উপর খুব অল্প সময়ে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন। নারী সঙ্গ তার খুব প্রিয়। অপ্রয়োজনে অফিসের নারী কর্মীদের তার রুমে ডেকে নিয়ে যান। কথায় কথায় বলেন, আমার রাশি হলো- কন্যা রাশি। এই জন্য'ই সব মেয়েরা আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। সত্য হলো- অফিসে কোনো মেয়েই- তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে না, বরং তিনি'ই ঝাঁপিয়ে পড়েন। অফিসের প্রতিটা মেয়েই তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতে চেষ্টা করে। অবশ্য তিনি মেয়েদের নানান কাজের কথা বলে- তার রুমে নিয়ে যান। আজাইরা প্যাচাল পারেন। এই প্যাচালে অফিসের দশ পয়সাও লাভ হয় না। অযথা হাজারটা ফালতু কথা বলে বসিয়ে রাখেন। গত পরশু অফিসে একটা নতুন মেয়ে এসেছে। নাম- মিম। ভদ্র ভালো এবং সহজ সরল। হাসি খুশি, প্রানবন্ত। সাদেক উল্লাহ সাহেব মিমকে অফিসের বাইরে মিটিং এর কথা বলে- বসুন্ধরাতে সিনেমা'তে দেখাতে নিয়ে গেলেন। মিম তো প্রচন্ড অবাক!! মাস শেষে মিম চাকরি ছেড়ে চলে যায়। কথা হলো- এই লোকের বউ আছে, বাচ্চা আছে। ঠিক আছে তোর যখন এত চুলকানি তাহলে তুই তোর বউ কে নিয়ে সিনেমা দেখতে যা। সবচেয়ে মজার ব্যাপার- থমাস এডিসন কোম্পানির এম'ডি এই তিন অপদার্থকে খুব'ই পছন্দ করেন। এদের ছাড়া তিনি কোনো মিটিং'ই করেন না। এদের উপর অগাধ আস্থা। এমডি সাহেব কি তাদের চরিত্র সম্পর্কে কিছুই জানেন না? উনি তো অফিসের সব খোঁজ খবর'ই রাখেন। নাকি জেনেও না জানার ভান করছেন? এই তিন ভয়াবহ মিথ্যাবাদীরা এমডি'কে সব সময় মিথ্যা সাত-পাঁচ বলে, ধোঁকা দিয়ে থাকে। কোম্পানী যে দিন দিন অধপতনের দিকে যাচ্ছে- সেদিকে অফিসের সাধারণ কর্মচারীরা খেয়াল করলেও- তিন বলদদের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। তারা সারাদিন এসি রুমে বসে থাকে। একটু পর বাইরে গিয়ে কফি খায়। সিগারেট খায়। দাদাগিরি ভাব দেখায়। সাধারন কর্মচারীদের দৌড়ের উপর রাখে। একটু পর পর পিয়নকে ডেকে নানান আজাইরা হুকুম দেয়। একটা অফিসে শুধু অপদার্থ'ই থাকে না, কিছু যোগ্য লোকও থাকে। তার জান-প্রান দিয়ে কাজ করেন। কিছু অপদার্থ সব যুগেই সব জায়গায়'ই থাকে। আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা- অযোগ্য লোক মামা চাচার ক্ষমতায় জোরে বড় বড় পদে আসন পেয়ে- ধরাকে সরাজ্ঞান করছে। এই তিন অপদার্থ থমাস এডিসন কোম্পানীকে ধীরে ধীরে পথে বসিয়ে দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানী চোখের সামনে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এই করুন ব্যাপারটি কি এমডি'র চোখে পড়ছে না? না, উনার চোখে পড়ছে না। উনি প্রতিষ্ঠানটি আরও বড় করার জন্য দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এবার একটি কৌতুক- শিক্ষক –বলতো পদার্থ কাকে বলে?ছাত্র –জানি না স্যার।শিক্ষক –অপদার্থ কোথাকার! যার ওজন ও আয়তন আছে তাকেই পদার্থ বলে।ছাত্র –তাহলে আমাকে অপদার্থ বললেন কেন? আমার তো ওজন আয়তন দুটাই আছে! (এই গল্পের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক। কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে, আমি দায়ী নই। ) সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৩৭",False hm,"বেঁচে থাকো সর্দি কাশি ইহা হয় একটি পুরানো গল্প। ১. পাড়ার ডাক্তারের কাছে গিয়ে নাকাল হয়ে ফিরে এসেছে শিবলি৷ একটা বাজে সর্দি অনেকদিন ধরে জ্বালিয়ে মারছে তাকে, মুজতবা আলির পরামর্শ মানতে চাইছে না রোগটা, এক হপ্তা তো দূরের কথা, সাত দিনেও সারেনি সেটা৷ হাঁচি, কাশি, কফ --- আলুর মতোই নানা রকম শাখাপ্রশাখায় বাড়ছে রোগটা৷ হাঁচতে গেলে কফের ধাক্কায় তার দম বন্ধ হয়ে আসে, আবার কাশতে গেলে নাকটা এমন সুড়সুড় করে ওঠে যে হেঁচে কূল পায় না বেচারা৷ অনেকটা বাধ্য হয়েই দাবাইদাতার কাছে যেতে হয়েছে তাকে৷ নইলে কথায় কথায় ডাক্তারের কাছে ছুটবে, শিবলি তেমন অমানুষই নয়৷ তবে কিপ্টেমি করতে গিয়েই শিবলি ধরাটা খেয়েছে৷ খানিকটা পয়সা খর্চা করলে সে একজন ভালো ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিত্‍সা করাতে পারতো৷ কিন্তু শিবলি খতিয়ে দেখলো, ভালো ডাক্তারের ফি-টাও পরিমাণে বেশ ভালো৷ তাছাড়া তাঁদের যা স্বভাব, শরীরের যাবতীয় কঠিন ও তরল পদার্থগুলোকে পরীক্ষার জন্যে প্যাথলজিওয়ালাদের দিকে তাকে ঠেলে দিতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে তার মোটা টাকা গচ্চা যেতে পারে৷ তারচেয়ে বিনা পয়সায় আমাদের পাড়াতুতো ডাক্তার, অর্থাত্‍, জামান ভাইয়ের কাছে ধর্ণা দেয়াটাই সব দিক থেকে মঙ্গলজনক৷ কাজেই এক বিকেলে শিবলি পদব্রজে জামান ভাইয়ের চেম্বারে হানা দিলো৷ এক হিসেবে, জামান ভাই খুব ভুল পাড়ায় জন্মেছেন৷ কিংবা বলা যায়, এ পাড়ায় জন্মে ডাক্তারি পড়েই আরো ভুল করেছেন তিনি৷ অথবা বলা যায়, নিজের পাড়ায় ডাক্তারি করতে গিয়েই ধরাটা খেয়েছেন তিনি৷ কারণ এ পাড়ার লোকগুলো যথাক্রমে কঞ্জুষ ও স্বাস্থ্যবান, পিন্টুর মেজমামা বাদে৷ এ পাড়ার পিচ্চিগুলো দুর্ধর্ষ প্রকৃতির, ছেলেবেলাতেই টীকা দিয়ে দিয়ে বড়সড় রোগগুলোর হাত থেকে তাদের বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে, আর দিনরাত বদমায়েশি করে আর গান্ডেপিন্ডে গিলে একেকজনের গতর কেঁদো বাঘের মতো, বুদ্ধিশুদ্ধি হবার পর এরা কেউ ডাক্তারের চেহারাও দেখেনি, ডাক্তার আর রোগী কথাগুলো তারা কেবল ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের খতরনাক ট্র্যান্সলেশনগুলোতেই পড়েছে৷ আর ছেলেছোকরাগুলো (অর্থাত্‍ আমরা) অসুখবিসুখকে সাধারণত পাত্তা দেয় না৷ কেমন যেন তাদের স্বভাব, তারা নিয়মিত কড়া জল পান করে, কিন্তু লিভার সিরোসিসের ঝামেলায় পড়ে না, নির্বিকারচিত্তে পান-তামাক-বড়তামাক খায়, কিন্তু কখনো ক্যানসার বাধায় না৷ বয়স্ক লোকজন সেই আদ্যিকালের খাঁটি ঘিদুধ খেয়ে বড় হয়েছেন, অসুখে পড়ার ঝোঁক তাদের বড় একটা নেই, তবে কদাচিত্‍ দু'একজন মুরুবি্ব যেন পরোপকারের উদ্দেশ্যেই অসুস্থ হয়ে জামান ভাইয়ের রোগীতে পরিণত হন৷ কিন্তু কষ্ট করে উজিয়ে জামান ভাইয়ের গ্যারেজ, থুক্কু, চেম্বারে যাবেন, অত তেল তাদের কারো নেই৷ তারা বেশির ভাগই জামান ভাইয়ের বাবার দোস্তো গোত্রীয়, তাই তাকেই খেটেখুটে বেরিয়ে গিয়ে সেইসব মরশুমি ব্যারামিদের দেখে আসতে হয়৷ আর এ যেন জামান ভাইয়েরই গরজ৷ এসব ক্ষেত্রে তার ভিজিট হিসেবে সাধারণত এক কাপ চায়ের সাথে টোস্ট বিস্কুট, কিংবা আমসত্ত্ব, অথবা ভাগ্য ভালো থাকলে বাড়িতে বয়ে নিয়ে যাবার জন্যে এক বয়াম ঘরে-বানানো-আচার জোটে৷ পোড় খাওয়া ঘাগু কঞ্জুষ রোগীদের সংখ্যাই বেশি, জামান ভাই চিকিত্‍সা করে ওষুধ বাতলে দিয়ে শুকনো মুখে খালি হাতে তাদের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাবার ঠিক পরপরই তারা দারাপুত্রপরিবারের সাথে গজগজ করেন, 'দেখেছো, কলিযুগের কান্ড? কতবড় পিশাচ দেখেছো, অ্যাদ্দিন পর বাড়িতে এলো, কোথায় মিষ্টিদই নিয়ে আসবে, না, খালি হাতেই লাটসাহেবের মতো গটগটিয়ে চলে এসেছে! ডাক্তার হয়ে খুব দেমাগ হয়েছে ছ্যামরার৷ আমরাই তো কোলেপিঠে করে মানুষ করলাম, কোন কৃতজ্ঞতা বোধ নেই! বয়স বাড়লে এটাও তার বাপের মতোই চামার হবে --- বুঝলে মকবুলের মা, এ বড় কঠিন জামানা, শ্রদ্ধাভক্তি সমাজ থেকে উঠেই গেছে ---!' রেজা সেদিন হিসেব করে বের করেছে, গ্যারেজে চেম্বার না খুলে সেটাকে গ্যারেজ হিসেবে ভাড়া দিলেও জামান ভাইয়ের হাতে বেশি পয়সা আসতো৷ তো, এমন একজন ডাক্তারের কাছে গিয়ে পয়সা খরচ করার কোন মানেই হয় না৷ শিবলি বরং চেম্বারে গিয়ে একরকম সুনামই বাড়ালো তার৷ কিন্তু চেম্বারে ঢুকে শিবলি বেশ ঘাবড়েই গেলো৷ এক মুমূর্ষু চেহারার লোক মুখ থুবড়ে বসে আছে রোগীর খাটে, আর জামান ভাই তার পালস চেপে ধরে স্টেথোস্কোপ কানে গুঁজে ধ্যানী মুনির মতো চোখ বুঁজে বসে আছেন৷ এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য, জামান ভাইয়ের চেম্বারে পরপর দুজন রোগী! রোগা লোকটা চোখ খুলে কাতর গলায় বললো, 'ছেড়ে দিন ডাক্তার সাহেব, কিরা কেটে বলছি, এবার সব ঠিক আছে, কোন সমস্যা নেই৷' জামান ভাই চোখ খুলে সে দুটোকে বেশ রোষকষায়িত করলেন৷ 'তাই নাকি? আপনি গতবারও এ কথা বলেছিলেন৷ কিরা কেটেই বলেছিলেন, তারপর দেখা গেলো বিস্তর গন্ডগোল! কোন কিছুই ঠিকমতো কাজ করে না, সবক'টাতেই একটা না একটা গলদ ---৷' রোগী হাত জোড় করে বললো, 'এবার সব ঠিক পাবেন, আমি নিজে চেক করে দেখে এসেছি৷' জামান ভাই উঠে দাঁড়ালেন, 'ঠিক তো?' রোগী বললো, 'ঠিক!' জামান ভাই বললেন, 'আচ্ছা ঠিক আছে৷ আজকের মতো ছেড়ে দিলাম আপনাকে, পেনিসিলিন ইঞ্জেকশনটা আর দিলাম না৷ তবে হুঁশিয়ার, গতবারের মতো গন্ডগোল হলে কিন্তু আমি আপনাকে বাড়ি গিয়ে ফুঁড়ে দিয়ে আসবো৷ তখন কিরা কেন, আমার জন্যে খাসি মোরগ কাটলেও কোন লাভ হবে না৷' সিড়িঙ্গে লোকটা একটা ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে নক্ষত্র বেগে চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলো, পয়সা না দিয়েই৷ জামান ভাই এবার মুখ তুলে শিবলিকে দেখলেন৷ 'কী রে, তুই এখানে কী চাস?' কেমন যেন সন্দিহান গলায় বলেন তিনি৷ শিবলি মুগ্ধ হয়ে জামান ভাইয়ের চিকিত্‍সার ধরনটা দেখছিলো৷ এই না হলে ডাক্তার? ডাক্তারের ভয়ে রোগী থরহরিকম্প! শুধু তাই না, ডাক্তারের কাছে আসার আগে সে নিজেই একবার নিজেকে চেক করে আসে! তবে পেনিসিলিনটা হয়তো লোকটার ন্যায্যত পাওনা ছিলো, সেটা কেন তাকে দেওয়া হলো না, এটা ভাবনার বিষয়৷ তবে জামান ভাইয়ের প্রতিশ্রুতিটাও ফ্যালনা না, রোগীর হালচাল একটু এদিকওদিক হলেই বাড়িতে গিয়ে গায়ে পড়ে দিয়ে আসবেন৷ বাহ! বিনা পয়সায় এমন চিকিত্‍সা যদি সব ডাক্তার করতো, এই দেশের লোকেরা স্বাস্থ্যে ফুলেফেঁপে একাকার হয়ে যেতো৷ জামান ভাই এবার বিরক্ত হয়ে বললেন, 'দাঁত কেলিয়ে আছিস কেন? কি চাস?' শিবলি ভাবনার চটকা ভেঙে বেরিয়ে এসে বললো, 'এই, এমনি৷' জামান ভাইয়ের কাছে কোন রোগের কথা যেচে পড়ে বলতে সে নারাজ৷ জামান ভাই ভুরু কুঁচকে শিবলিকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বললেন, 'নাক টানছিস কেন ওরকম করে, সর্দি লেগেছে নাকি?' শিবলি কুন্ঠিত হয়ে বললো, 'এই আর কি৷' জামান ভাই দরাজ গলায় বললেন, 'আয় দেখি, তোর ওপর এই স্টেথোটা একটু পরখ করে দেখি৷' শিবলি এগিয়ে গিয়ে খাটে বসে বললো, 'ঐ লোকটা কে?' জামান ভাই বললেন, 'কোন লোকটা?' শিবলি বললো, 'এই যে, এই মাত্র চিকিত্‍সা করিয়ে গেলো?' জামান ভাই নাক সিঁটকে মুখ বাঁকিয়ে বললেন, 'ওহ, ঐ ব্যাটা? মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টিটিভ৷ আমাকে ছোটখাটো ওষুধ, প্যাড, কলম এইসব দিয়ে যায়৷ এই যে, এসব৷' টেবিলের ওপর রাখা প্যাড আর কলম দেখিয়ে বলেন তিনি৷ শিবলি এবার বুঝতে পারে ঘটনাটা৷ প্যাড কলম গছানোর বদলে একটা ফ্রি চেকআপও করিয়ে যায় লোকটা৷ কী বুদ্ধি! একে জাতিসংঘে রিপ্রেজেন্টিটিভ বানিয়ে পাঠানো উচিত! জামান ভাই এদিকে শিবলির ভুঁড়িতে স্টেথোস্কোপ ধরে কি সব যেন শুনলেন, তারপর আনমনে বললেন, 'হুম৷' এরপর শিবলির কব্জি চেপে ধরে পালসের তালে তালে একটা পুরানো দিনের হিন্দি গান গুনগুন করলেন৷ তারপর শিবলিকে হাঁ করিয়ে তার জিভ গলা নাক ইত্যাদি এক ঝলক দেখে নিজের চেয়ারে ফিরে গেলেন৷ তারপর একটা প্যাড টেনে নিয়ে একটা লাল রঙের কলম দিয়ে খসখস করে কী কী সব যেন লিখলেন৷ তারপর একটা কালো কলমে আরেক দফা কী যেন লিখলেন৷ তারপর সবুজ কলমটা দিয়ে কী কী সব টিক চিহ্ন দিলেন৷ সব শেষে নীল কলম দিয়ে একটা জবরদস্ত সই করলেন কাগজটার নিচে৷ শিবলি বসে বসে সব দেখছিলো, সে বললো, 'জামান ভাই, আপনাকে সিভিট দিয়ে যায় না লোকটা?' জামান ভাই বললেন, 'অ্যাঁ? সিভিট? হ্যাঁ, আছে৷ এক বাক্স দিয়ে গেছে গত বছর, সেটা এখনো শেষ করা হয়নি৷ আমার ভাগি্নটা যখন বেড়াতে আসে তখন খুব শখ করে খায়৷ দাঁড়া দুই মিনিট, ভেতরের ঘরে আছে, তোকে দিচ্ছি৷ এখনো এক্সপায়ার করেনি, হপ্তাখানেক সময় আছে এখনো, খেতে পারবি৷' জামান ভাই ঘরের ভেতরে সিভিট আনতে চলে গেলেন, শিবলি এগিয়ে গিয়ে প্যাড থেকে প্রেসক্রিপশনটা ছিঁড়ে নিয়ে পকেটে পুরলো৷ জামান ভাই খানিক বাদে ফিরে এসে বললেন, 'সিভিট সর্দির জন্যে বেশ উপকারী, খেয়ে দেখতে পারিস৷ আর এই ছোঁয়াচে রোগ নিয়ে পথেঘাটে ঘুরে বেড়ানোর মানে হয় না, ঘরে বসে বিশ্রাম নে৷' শিবলি একটা সিভিট মুখে দিয়ে হৃষ্টচিত্তে বেরিয়ে এসে কাছের ফার্মেসীর দিকে এগিয়ে গেলো৷ বিনাপয়সায় বেশ উমদা রকমের চিকিত্‍সা করানো গেলো৷ ২. কম্পাউন্ডার ভদ্রলোক প্রেসক্রিপশনটা হাতে নিয়ে মিনিটখানেক সেটার দিকে চেয়ে রইলেন৷ তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে আরো মিনিটখানেক কী যেন ভাবলেন, হয়তো হায় চিল, সোনালী ডানার চিল নিয়ে আপসোস করলেন মনে মনে, তারপর কাগজটা উল্টো করে ধরে আবারো মিনিটখানেক চেয়ে রইলেন৷ তারপর, যুগপত্‍ বিফল ও বিরক্ত হয়ে, বিষম হতাশায় নাকমুখ কুঁচকে বললেন, 'কে লিখেছে এটা?' শিবলি ইশারায় জামান ভাইয়ের চেম্বারটা দেখিয়ে দিলো৷ কম্পাউন্ডার সাহেব নাক সিঁটকে বললেন, 'ওহ, মফিজ সাহেবের ছেলে! আমি ভেবেছিলাম এটা গালিদাস চর্মকারের কোন রাফ ছবি হয়তো! --- দ্যাখো ছেলে, আমার বয়স হয়েছে, জীবনে বহু কিছু দেখেছি, বহুদিন ধরে ওষুধের দোকানে কাজ করছি, বহু নামীদামী ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে, কিন্তু এমন বিচ্ছিরি হাতের লেখা আমি জীবনে কখনো দেখিনি৷ এটা কী প্রেসক্রিপশন, নাকি কোন বিমূর্ত চিত্র? এর তো আগামাথা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না!' শিবলি মুখ সূঁচালো করে বললো, 'এমন কী জটিল হতে পারে, বলুন? ওষুধের নাম, দিনে ক'বার খাবো, আর ডাক্তারের সই --- ব্যস, এই তো৷ প্রত্যেকটা জিনিস আলাদা আলাদা কালিতে আমার সামনে বসে লিখেছেন ডাক্তার সাহেব৷' কম্পাউন্ডার ভদ্রলোক চোখ কটমটিয়ে শিবলির দিকে তাকান৷ 'বটে?' গুরুগম্ভীর গলায় বলেন তিনি৷ 'এতোই সোজা?' কী যেন একটা ঘটতে থাকে তাঁর মাঝে৷ খিচুড়ির মতোই তিনি অলক্ষ্যে ভেতরে ফুটতে থাকেন৷ শিবলি বিরক্ত হয়ে বলে, 'হওয়াই উচিত৷' এবার প্রৌঢ় ভদ্রলোকের বক্তৃতা সংযমের বাঁধ ভেঙে গলগলিয়ে বেরিয়ে আসে৷ 'পড়াশোনা করে এসবই শিখছো? সবকিছুকে সহজ বানিয়ে ফেলতে চাও? খালি আরাম আর আরাম? একখানা কাগজ এনে আমাকে গছিয়ে দিলে, সেটা আমি গড়গড়িয়ে পড়ে তোমাকে আলমিরা খুলে ওষুধ বার করে দেবো, এতই সহজ দুনিয়া? ইজ দ্য ওয়ার্ল্ড দ্যাট মাচ সিম্পল টু ইউ?' শিবলি এবার খুবই বিস্মিত হয়৷ ব্যাপারটা ঠিক অতটা সিম্পল বলেই জানে সে, অন্তত এতোদিন ধরে তো তা-ই হয়ে আসছে৷ ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লিখবেন, কম্পাউন্ডার সেটা পড়ে ওষুধ বার করে দেবেন, ওষুধের দাম রেখে ভাঙতি পয়সা বার করে দেবেন, আর পরিচিত কম্পাউন্ডার হলে একটা কি দুটা সিভিট দেবেন সাথে, এমন সিম্পলপনার সাথেই তো যুগযুগ ধরে কাজ হয়ে আসছে৷ ইনার দোকানে কি এই সহজ প্রাচীন পদ্ধতি খাটে না? নূতন কোন জটিল আমলাতান্ত্রিক নিয়ম কি চালু হয়ে গেছে? শিবলিকে কি এখন নিজের দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি সহ কোন ফর্ম ফিলাপ করে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিয়ে সেই জমার রসিদ দেখিয়ে ওষুধ তুলতে হবে? শিবলির ভাবনায় বজ্রপাত ঘটে, কম্পাউন্ডার ভদ্রলোক দাঁত খিঁচিয়ে বলেন, 'হাঁ করে কী দেখছো? জানো, এই কাজ কত জটিল? কত হাজারো ওষুধের নাম মুখস্থ রাখতে হয়? কত হাজারো ধরনের হাতের লেখা চিনতে হয়? কোনটা ডাবি্লউ আর কোনটা এম সেটা আলাদা করে জানতে হয়? বোঝো এসব?' শিবলি কাঁদোকাঁদো হয়ে বললো, 'একটা কিছু দিন তো, ভয়ানক সর্দি লেগেছে আমার!' কম্পাউন্ডার এবার সোজা হয়ে বসে বললেন, 'সর্দির ওষুধের জন্যে প্রেসক্রিপশন?' শিবলি খানিকটা আশ্বস্ত হয়ে বললো, 'জ্বি৷' কম্পাউন্ডার ফেটে পড়েন এবার, 'সর্দির জন্যে ডাক্তার দেখানো? ইয়ার্কি পেয়েছো? পয়সা বেশি হয়েছে তোমার? পকেটে আর টাকা রাখা যায় না, তাই না, ছিটকে ছিটকে পড়ে যায় রাস্তায়? পয়সার গরম দেখাতে এসেছো আমার কাছে? যাও, এই জঘন্য হাতের লেখাওয়ালা প্রেসক্রিপশন নিয়ে দূর হও! বেরোও আমার দোকান থেকে!' সোজা হাঁকিয়ে দিলেন তিনি শিবলিকে৷ 'সর্দির জন্যে ওষুধ, আহ্লাদের আর সীমা নাই!' গজগজ করতে থাকেন তিনি৷ বাধ্য হয়ে খানিকটা এগিয়ে আরেকটা ওষুধের দোকানে যেতে হলো শিবলিকে৷ সেখানে এক ইয়াংম্যান অলস ভঙ্গিতে চেয়ারে এলিয়ে বসে, হাতে একটি বিপজ্জনক চেহারার ম্যাগাজিন, তার সামনের মলাটে এক স্খলিতবসনা দলিতআসনা গলিতদশনা সুন্দরী সোজা শিবলির দিকে আধো আধো চোখে চেয়ে, আর পেছনের মলাটে তারই সাথে সংশ্লিষ্ট একটি পণ্যের বিজ্ঞাপন, যে পণ্যটি দোকানে যথেষ্ঠ পরিমাণে বর্তমান৷ সেই মনোযোগী পাঠকের হাতে একরকম জোর করেই তথাকথিত প্রেসক্রিপশনটা গছিয়ে দিলো শিবলি৷ ব্যাজার মুখে ম্যাগাজিন বুঁজিয়ে রেখে এক পলক কাগজটা দেখেই ইয়াংম্যান কম্পাউন্ডার বললো, 'এই রাস্তা বরাবর সোজা যান, দুইটা গলি ছেড়ে দিয়ে হাতের বাঁয়ে তিন নাম্বার গলিতে ঢুকবেন৷ শেষমাথায় দোতলা লাল ইঁটের বাড়িটাই ছিদ্দিকুর রহমানের বাড়ি৷' শিবলি তো হতভম্ব৷ ব্যাটা বলে কী? কিসের লাল ইঁট, আর ছিদ্দিকুর রহমানটাই বা কে? এ কাগজে কি তা-ই লেখা? ছিদ্দিকুর রহমানের কাছে তাকে রেফার করা হয়েছে? ছিদ্দিকুর রহমানের নাম ঠিকানাই তবে চাররঙা কালিতে লিখে দিলেন জামান ভাই? যদি তা-ই হয়, তাহলে অ্যাতো সোজা জিনিসটা আগের দোকানের বুড়ো নীতিবাগীশ জটিলতাপ্রেমী ভামটা পড়তে পারলো না কেন? নাকি এই দোকানের কম্পাউন্ডার জামান ভাইয়ের হাতের লেখা সম্পর্কে একজন এক্সপার্ট? ঘটনা কী? শিবলির মনে হাজারো প্রশ্ন ফেনায়িত হতে থাকে, কিন্তু তাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ দিলো না এই ইয়াংম্যান কম্পাউন্ডার, কী একটা কাজে ম্যাগাজিনটা বগলদাবা করে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো সে, এক পিচ্চির ওপর দোকান সামলানোর দায়িত্ব দিয়ে৷ অগত্যা তৃতীয় এক দোকানে পদার্পণ করতে হলো শিবলিকে৷ এই দোকানের কম্পাউন্ডার মাঝবয়েসী, বেশ সুফী চেহারা, লম্বা দাড়ি, কুর্তা পায়জামা পরনে৷ সহাস্যে শিবলিকে আপ্যায়ন করলেন তিনি, কিন্তু প্রেসক্রিপশনটা আগাগোড়া দেখে নিয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, 'বাবা, সেই ছোটবেলায় মক্তবে পড়াশোনা করার সময় শেষ ফারসি কেতাব পড়েছিলাম, এখন বয়স হয়েছে, সব মনে নাই৷ তবে আমাদের পাড়ার ছিদ্দিকুর রহমান সাহেব খুব ভালো ফারসি জানেন, তাঁর কাছে যাও, উনি এর তর্জমা করে দিতে পারবেন৷ বাসা চেনো না? খুব সোজা, দুশো ছিয়াশি নাম্বার বাসা ---৷' শিবলি অবিলম্বে তাঁকে হাত তুলে থামিয়ে দিলো, 'কী যে বলেন, এ পাড়ার ছেলে হয়ে ছিদ্দিকুর রহমান সাহেবের বাসা চিনবো না মানে? আলবাত চিনি৷ সামনে দুইটা গলি ছেড়ে হাতের বাঁয়ে তিন নাম্বার গলির শেষ মাথায় লাল ইঁটের দোতলা বাড়িটায় থাকেন না উনি? --- অনেক মেহেরবানি৷' গটগটিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এসে শিবলি প্রথমবারের মতো ভালো করে কাগজটা চোখের সামনে তুলে দেখলো, সত্যিই, সেই কাগজের লেখা, অথবা আঁকার মর্ম উদ্ধার করা আসলেই দুরূহ কর্ম৷ একমাত্র ছিদ্দিকুর রহমানরাই বোধহয় একে সত্‍কার করতে পারবেন৷ তবু শিবলি শেষ চেষ্টা করে দেখে, শেষ দোকানটায় হানা দেয় সে৷ এ দোকানে অনেক লোকের ভিড়, এক জঙ্গী চেহারার কম্পাউন্ডার বিক্রিবাটায় মহাব্যস্ত৷ পিলপিল করে লোক ঢুকছে, প্রেসক্রিপশন বাগিয়ে ধরে হৈহল্লা করছে, আর কম্পাউন্ডার চরকির মতো ঘুরপাক খেয়ে একের পর এক আলমারি খুলে নানা রঙের ট্যাবলেট, ক্যাপসুল আর বোতল বের করে দিচ্ছেম সেই চিরাচরিত সিম্পলায়িত নিয়মে৷ শিবলি মিনিট দশেক লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলো, তারপর শেষ পর্যন্ত তিতিবিরক্ত হয়ে বেরিয়ে এলো৷ নাহ, এই লোকের দোকানের কাটতি যেমন, ফারসি প্রেসক্রিপশন দেখলে সময় নষ্টের দায়ে তাকে মেরেধরে বসতে পারে৷ তারচেয়ে ছিদ্দিকুর রহমানের কাছে গিয়ে এটাকে অনুবাদ করিয়ে আনা যাক৷ শিবলি পরামর্শ মতো দুশো ছিয়াশি নাম্বার বাসা খুঁজে বের করে৷ লাল ইঁটের দোতলা রঙের বাড়িতে গিয়ে দরজায় কিল মারে সে৷ 'ছিদ্দিকুর রহমান সাহেব কি আছেন?' দোতলার বারান্দায় এক চুলদাড়িওয়ালা প্রৌঢ় ভদ্রলোকের আবির্ভাব ঘটে৷ 'কে হে ছোকরা, নাম ধরে ডাকছো যে বড়?' শিবলি কিঞ্চিত্‍ ভাবিত হয়ে বলে, 'ইয়ে, আমার একটা দরকার ছিলো৷' ভদ্রলোক এবার খটখটিয়ে নিচে নেমে আসেন৷ এরপর শিবলি প্রায় ছয় সাতটা ছিটিকিনি খোলার শব্দ পায়৷ আধডজন ছিটকিনিকে বন্ধনমুক্ত করে বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে আসেন ছিদ্দিকুর রহমান, চোখে ভাবুক দৃষ্টি, যা কেবল ফারসি ভাষায় সুপন্ডিত কাউকেই মানায়৷ 'কী দরকার তোমার? লজ্জা কেন, মুখ ফুটে বলো? শাহনামার গল্প শুনতে চাও? খৈয়ামের রুবাই নিয়ে আলোচনা করতে চাও? নাকি জালালুদ্দিন রুমির কিছু লাজওয়াব শের শুনতে চাও? কোনটাতে তোমার দিলচসপী, বলো?' শিবলি কাগজটা বাড়িয়ে ধরে৷ ছিদ্দিকুর রহমান চোখে একটা চশমা এঁটে কাগজটা খুঁটিয়ে দেখেন৷ তারপর বিড়বিড় করে বলেন, 'আশ্চর্য! --- এসো এসো, ভেতরে এসো৷' শিবলি তাঁর পিছু পিছু দোতলায় একটা ঘরে ঢোকে৷ ঘরভর্তি আলমারি, তাতে ধূলোপড়া হাজারো বইপত্র, আর তাড়া বাঁধা কাগজ৷ টেবিলে খোলা কয়েকটা বই, আর সেগুলো নিঃসন্দেহে ফারসিতে লেখা, আঁকাবাঁকা হিলহিলে হরফে হিজিবিজি সব দাগ৷ ছিদ্দিকুর রহমান একটা আতশ কাঁচ বের করেন পকেট থেকে, তারপর কাগজটা আরো মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা করেন৷ তারপরও সন্তুষ্ট না হয়ে আলমারি খুলে একটা প্যাথলজিস্টের মাইক্রোস্কোপ বের করেন, সেটার তলায় কাগজটা ফেলে কিছুক্ষণ স্ক্রু নেড়েচেড়ে দেখেন৷ তারপর খেঁকিয়ে উঠে বলেন, 'তুমি এই কাগজ কোথায় পেয়েছো, অ্যাঁ?' শিবলি আমতা আমতা করে বলে, 'এই তো, ইয়ে ---৷' ছিদ্দিকুর রহমান সাহেব তেড়ে আসেন, 'এটা কোন শের হলো? চার লাইনের শের, সেটা বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু পড়ার জো নেই, এতো বিচ্ছিরি লেখা! তিরিশ বছর তেহরানের প্যাথলজি ল্যাবে কাজ করেছি, নোঙরা ময়লা কতো ঘেঁটেছি, কিন্তু এমন বাজে জিনিস কখনো চোখে পড়ে নি! --- কে লিখেছে এই রুবাই?' শিবলি আরো ঘাবড়ে যায়৷ 'ইয়ে ---৷' 'জানো না, তাই তো? রাস্তাঘাট থেকে পদ্য টুকে নিয়ে এসেছো আমার কাছে?' ছিদ্দিকুর রহমান তড়পাতে থাকেন৷ 'পেয়েছোটা কী তোমরা আমাকে? শান্তিমতো আমাকে শাহনামার ওপর গবেষণাও করতে দেবে না? ওমর খৈয়ামের অপ্রকাশিত গজলগুলো নিয়ে কাজ করতে বসেছি, আর অমনি যত রাজ্যের লোকজন এসে উত্‍পাত শুরু করেছে! রুমির শায়েরিতে মঙ্গোল দসু্যদের প্রভাব নিয়ে একটা প্রবন্ধ সেদিন আদ্ধেকটা লিখে শেষ করেছি, কোত্থেকে এক তালেবান ছোকরা এসে হাজির, বলে কি না, আফগানিস্তানে জেহাদ করতে যাবে, ওর মেট্রিকইন্টারমিডিয়েটের সার্টিফিকেটগুলো পশতুতে অনুবাদ করে দিতে হবে! যতই বলি, পশতু আমি জানি না, সে আরো বেশি করে চেপে ধরে, বলে সহযোগিতা না করলে নাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলে আমাকে রিমান্ডে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে, বদতমিজ অসভ্য নওজোয়ান একটা --- শেষমেষ ফারসিতেই তর্জমা করে দিতে হয়েছে ছোকরাকে! আর আজ তুমি এসেছো, একটা রুবাই দেখাতে, কার লেখা, সেটাও বলতে পারছো না, আর এমন জঘন্য লেখা --- আমি তো বলি, এটা আদপে ফারসিই নয়, বরং পুরানো আমলের খারোষ্ঠী হরফের সাথে মিল আছে খানিকটা ---৷' শিবলি একটা হাঁচি দেয়৷ অমনি ছিদ্দিকুর রহমান কথা থামিয়ে এক তুর্কি লাফে পিছিয়ে যান, তারপর আঙুল তুলে দরজার দিকে দেখান৷ 'নিকালো! আভি নিকালো!' উদর্ুতে গর্জে ওঠেন তিনি৷ 'অসুখ বাঁধিয়ে এসেছো আমার বাসায় জীবাণু ছড়াতে! বেরোও তোমার বিচ্ছিরি চেহারার পদ্য নিয়ে!' শিবলি কোনমতে হাঁচি চাপতে চাপতে বেরিয়ে আসে৷ সন্ধ্যে হয়ে এলো প্রায়৷ তবে এখন আর অন্য কোন ফার্মেসিতে যাওয়ার উপায় নেই৷ শিবলি চটেমটে সব গন্ডগোলের গোড়ায় হামলা চালানোর সংকল্প নিয়ে জোর পায়ে হাঁটতে থাকে৷ ৩. 'আমি জানতে চাই, এই কাগজের টুকরোটাতে আসলে কী লেখা আছে!' শিবলি কাগজটা জামান ভাইয়ের নাকের নিচে বাগিয়ে ধরে৷ ঝিমুনি ঝেড়ে কাগজটা চোখের কাছে ধরে ভালোমতো দেখেন জামান ভাই৷ তারপর ড্রয়ার থেকে একটা চশমা বের করে সেটা দেখেন৷ তারপর ভারি বিরক্ত হয়ে শিবলির দিকে তাকান৷ 'কিসের কাগজ এটা?' গম্ভীর গলায় জানতে চান তিনি৷ 'বলছি৷ তার আগে আপনি বলুন, এতে কী লেখা আছে৷' শিবলি ততোধিক গম্ভীর গলায় বলে৷ 'লেখা? কিসের লেখা? এটা একটা লেখা হলো? জঘন্য হাতের লেখা --- এই কাগজের লেখা পড়ার সাধ্য আমার নেই৷' কাগজটা দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ফেলে দেন জামান ভাই৷ 'আর আমি একজন ডাক্তার, লেখাবিশারদ তো নই৷ সবচেয়ে বড় কথা, আমি আরবীফারসিউদর্ু পড়তে পারি না৷ এখন, যদি আর কিছু বলার না থাকে, তুই ভাগ৷ আমি ঘুমোবো৷' শিবলি এবার ফেটে পড়ে৷ 'আহ্লাদ? আরবীফারসিউর্দু পড়তে পারেন না? পড়তে যখন পারেন না, তখন লিখতে গেলেন কেন?' 'আমি? আমি লিখেছি এই ছাইপাঁশ?' জামান ভাই চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে ওঠেন৷ 'আলবাত!' গর্জে ওঠে শিবলি৷ 'আপনার নিজের হাতে লেখা প্রেসক্রিপশন এটা! আজ বিকেলে আপনি এই প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছেন আমাকে! আপনার এই জঘন্য হাতের লেখার কারণে আমাকে আজকে দুই কিলোমিটার হেঁটে হেঁটে ফার্মেসীর পর ফার্মেসী চষে বেড়াতে হয়েছে! না, কোন কম্পাউন্ডার এই লেখা পড়তে পারেনি, কারণ তারাও কেউ আরবীফারসিউর্দু পড়তে জানে না! এমনকি ছিদ্দিকুর রহমান, যিনি দুইটা গলি ছেড়ে হাতের বাঁয়ে তিন নাম্বার গলির শেষ মাথায় লাল ইঁটের দোতলা বাড়িতে থাকেন, যিনি ফারসি ভাষার একজন মহাপন্ডিত, যিনি ফেরদৌসির শাহনামার ওপর গবেষণা করছেন, খৈয়াম-রূমি ছাড়া যিনি কথা বলেন না, তিনি পর্যন্ত আপনার এই জঘন্য হাতের লেখা ফারসি প্রেসক্রিপশন পড়তে পারেননি৷ শুধু তাই না, তিনি বলেছেন, এটা আদপে ফারসিই নয়! আরও শুনবেন? কম্পাউন্ডাররা বলেছে, বহু বড় বড় ডাক্তার চরিয়ে তারা খেয়েছে, কিন্তু এমন বাজে হাতের লেখা তারা জীবনে কখনো দেখেনি! নার্সারির বাচ্চারাও আপনার চেয়ে সুন্দর করে ফারসি লিখতে পারবে!' জামান ভাইও ফেটে পড়েন৷ 'ফারসি? ফারসি দিয়ে আমি কী করবো? ফারসি আমি লিখতে যাবো কেন? আমি কি খোমেনি না খামেনি? আমার কি ঠ্যাকা পড়েছে ফারসি লেখার জন্যে?' শিবলিও চ্যাঁচাতে থাকে, 'তাহলে কী এটা?' কাগজটা কুড়িয়ে এনে ডলে ডলে সমান করে আবার জামান ভাইকে দেখায় সে৷ 'এটা আপনার হাতের লেখা না বলতে চান? এই যে, আপনার ডাক্তারি প্যাডের কাগজ এটা, নাড়িভুঁড়ির জলছাপ মারা!' জামান ভাই কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যান, তারপর কাগজটা ভালো করে দেখে বলেন, 'আরে, তাই তো!' শিবলি চেঁচিয়ে ওঠে, 'আবার বলছেন আপনি ফারসি লিখতে পারেন না!' জামান ভাই খানিকক্ষণ কাগজটা ভালো করে দেখে নিয়ে বলেন, 'তুই বলতে চাস, এটা আমার লেখা?' শিবলি গদাম করে একটা কিল বসিয়ে দেয় ডেস্কের ওপর, 'হ্যাঁ, এটা আপনার নিজের হাতে লেখা ফারসি প্রেসক্রিপশন!' জামান ভাই গর্জে ওঠেন, 'খবরদার, ফারসি নিয়ে কোন কথাই বলবি না! ফারসি আবার আসে কোত্থেকে? ফারসি কি আমি ধুয়ে খাবো?' শিবলিও চ্যাঁচায়, 'ফারসি হোক, পশতু হোক, খারোষ্ঠী হোক, এটা আপনার লেখা প্রেসক্রিপশন!' জামান ভাই এবার হঠাত্‍ ভারি অবাক হয়ে বললেন, 'প্রেসক্রিপশন? কিসের প্রেসক্রিপশন? আমার তো সব প্র্যাকটিস মাগনা, সবাইকে মুখে মুখে ওষুধ দিয়ে আসি! আমি গত দুই বছরে আদৌ কোন প্রেসক্রিপশনই লিখিনি!' এবার শিবলি ঘাবড়ে গিয়ে বললো, 'বা রে, এই যে বিকেলে এসেছিলাম আপনার কাছে, আপনি আমাকে দেখেটেখে একটা প্রেসক্রিপশন দিলেন না?' জামান ভাই ভুরু কুঁচকে খানিকক্ষণ ভেবে বললেন, 'বলিস কি? তুই এসেছিলি আমার কাছে? কেন, কী সমস্যা তোর?' শিবলি এবার গর্জে ওঠে, 'ধিক! শতধিক! কেমন ডাক্তার আপনি? রোগী দেখেছেন কি না সেটাই ভুলে যান? আর আপনার কাছে তো মাসে একজন রোগী আসে, আপনার উচিত তাদের ছবি তুলে এনলার্জ করে স্টীলের ফ্রেমে বাঁধিয়ে চেম্বারের দেয়ালে টাঙিয়ে রাখা!' জামান ভাই দাঁতে দাঁত পিষে বললেন, 'মেলা কপচাচ্ছিস! সমস্যাটা কী ছিলো তোর?' শিবলি নাকে সর্দি টেনে বললো, 'সর্দি৷' এবার জামান ভাইয়ের মুখে রক্ত জমলো৷ তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মেঘস্বরে বললেন, 'তুই সর্দির চিকিত্‍সা করাতে আমার কাছে এসেছিলি? কখন?' শিবলি অবাক হয়ে বললো, 'আজকে, বিকেলে, যখন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভ লোকটার চিকিত্‍সা করছিলেন, আপনাকে প্যাড আর কলম দিয়ে গেলো লোকটা, তখনই তো ---৷' জামান ভাই অন্যমনস্ক হয়ে যান, আনমনে খানিকক্ষণ ভাবেন, তারপর হঠাত্‍ তুড়ি দিয়ে চেঁচিয়ে ওঠেন৷ 'ইউরেকা! --- আরে রামছাগল, আমি তো প্যাডের ওপর আঁকিবুঁকি দিয়ে দেখছিলাম, কলমগুলো থেকে ঠিকমতো কালি বেরোয় কি না --- ঐ শালা সবসময় রদ্দি মালগুলো আমাকে গছিয়ে দিয়ে যায়! সেজন্যেই তো সবসময় পেনিসিলিন ইঞ্জেকশনটা তৈরি করে রাখি, নষ্ট কলম দিয়ে গেলেই দেবো পেছনে ফুঁড়ে! --- আর তুই সেই বাতিল কাগজটা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় দোকানে দোকানে ঘুরে বেরিয়েছিস, আর বলে বেড়িয়েছিস যে ডাক্তার জামান তোর সর্দির চিকিত্‍সা করে এই প্রেসক্রিপশন দিয়েছে?' শিবলি মাথা নাড়ে৷ 'তাই তো৷' জামান ভাই এবার বাঘের মতো গর্জে ওঠেন, 'হারামজাদা কোথাকার! সর্দির জন্যে ডাক্তার দেখাতে চাস, ইয়ার্কি পেয়েছিস? তোর সর্দির চিকিত্‍সা করবো আমি, ডাক্তার জামান? সর্দি চিকিত্‍সার লায়েক কোন রোগ? জানিস না, সর্দি চিকিত্‍সা করলে এক হপ্তায় সারে, আর চিকিত্‍সা না করলে সাত দিনে? মুজতবা আলির লেখায় পড়িসনি, মূর্খ কোথাকার? আবার সারা মহল্লায় রটিয়ে দিয়েছিস, আমার হাতের লেখা খারাপ, আমি ফারসি লিখতে পারি না, আমি শুধু সর্দির চিকিত্‍সা করি? য়্যাঁ? এক বাঙ্ সিভিট দিলাম তোকে, তার এই প্রতিদান? কৃতঘ্ন পামর!' শিবলি এবার ঘাবড়ে গিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, 'কী করবো, আমার সর্দি সারে না তো!' জামান ভাই চিল চিত্‍কার দিয়ে বললেন, 'সর্দি হয়েছে তো হিস্টাসিন আর প্যারাসিটামল খেয়ে শুয়ে থাক না! বেশি নবাবি শিখেছিস, তাই না? পয়সা বেশি হয়ে গেছে তোর? সর্দি লেগেছে দেখে ডাক্তারের কাছে এসেছিস? যা, বেরো চোখের সামনে থেকে, ফাজিল কোথাকার! আর কোনদিন তোকে আমার চেম্বারের ধারেকাছে দেখলে এমন ফারসি ধোলাই লাগাবো যে ফরসা হয়ে যাবি! যা ভাগ!' শিবলি নাকের জল চোখের জল একাকার করে জামান ভাইয়ের চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসে৷ ৪. তবে ভাইসব, গল্প এখানেই শেষ নয়৷ শিবলির কল্যাণে এ পাড়ার সব কম্পাউন্ডারদের সর্দি লেগেছে৷ ভয়ানক সর্দি৷ তারা গলায় মাফলার জড়িয়ে হ্যাঁচ্চো হ্যাঁচ্চো করছে৷ কারো কারো বুকে কফ জমে গেছে, খকখক করে খোনা সুরে কাশছে তারা৷ পাড়ায় ডাক্তার বলতে ঐ এক জামান ভাই, কিন্তু তার কাছে তারা যেতে নারাজ, কারণ প্রথমত, তার প্রেসক্রিপশন দেখে কিছু বোঝা যায় না৷ আর ফারসি প্রেসক্রিপশন তর্জমা করাতে হলে ছিদ্দিকুর রহমান সাহেবের কাছে যেতে হবে, ফেরদৌসি-খৈয়াম-রূমি শোনার সময় কিংবা দিলচসপী তাদের কারো নেই৷ ছিদ্দিকুর রহমান সাহেব দরজায় আরেকটা ছিটকিনি লাগিয়ে নিয়েছেন৷ এমনিতেই তালেবানরা সার্টিফিকেট তর্জমা করানোর জন্যে তাঁকে উত্‍পাত করে মারে, শান্তিমতো ফেরদৌসি-খৈয়াম-রুমি নিয়ে গবেষণা করতে পারেন না, তার ওপর তিনি লোকমুখে শুনতে পেয়েছেন, পাড়ায় একটা সর্দির মহামারী লেগে গেছে, কোন রকম ঝুঁকি নিতে তিনি নারাজ৷ সেদিন এক হোঁত্‍কা সর্দিবাজ ছোকরা এসেছিলো, তাকে দেখেই সাবধান হয়ে গেছেন তিনি৷ আর জামান ভাইয়ের অবস্থা আরো খারাপ৷ না, সর্দি তার লাগে নি, তবে নাড়িভুঁড়ির জলছাপ আঁকা ডাক্তারি প্যাডের ওপর দিনরাত হাতের লেখা সুন্দর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি৷ একটা ফাজিল বখাটের জন্যে তার নামে অযথা দুর্নাম রটুক, এটা তিনি মোটেও চান না৷ আর সৈয়দ মুজতবা আলি? তিনি তো বলেই গেছেন, 'বেঁচে থাকো সর্দি কাশি, চিরজীবী হয়ে তুমি!'",False fe,"রাজনীতির অভিভাবকত্ব, রাজনীতিকের দেউলিয়াপনা রাজনীতির অভিভাবকত্ব, রাজনীতিকের দেউলিয়াপনা ফকির ইলিয়াস ------------------------------------------------------------------ চলে গেলেন উপমহাদেশের প্রাজ্ঞ রাজনীতিক জ্যোতি বসু। পরিণত বয়স হয়েছিল। পুরো জীবনটাই উৎসর্গ করে গেছেন মানুষের জন্য। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও ছিল তার অসীম দাপট। প্রধানমন্ত্রিত্বের চেয়ে নিজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছিল তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পিছিয়ে থাকা পশ্চিমবঙ্গের গণমানুষের উন্নয়ন ছিল তার কাছে প্রধান। নিজে বাম ধারার রাজনীতি করতেন। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, গণমানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। জ্যোতি বসু মনেপ্রাণে ছিলেন একজন বাঙালি। জাতিসত্তার প্রতি তার দরদ আমরা দেখেছি পদে পদে। একাত্তর সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিলেন সক্রিয়ভাবে। কোটি শরণার্থী যখন ভারতমুখী, তখন জ্যোতি বসু বলেছিলেন, ভারতের বাঙালিরা খেলে-শরণার্থীরাও খাবে। কথা রেখেছিলেন। ঘুরেছেন শরণার্থী শিবিরে শিবিরে। তারপর শরণার্থী ফিরিয়ে দেয়া, বাংলাদেশের জাতির জনক হত্যাকান্ডের শোকগাথা, সামরিক শাসনের জাঁতাকল, বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানে শঙ্কা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন- সব সময়ই জ্যোতি বসু থেকেছেন বাংলাদেশের মানুষের পাশে। গঙ্গার পানি চুক্তিতে তার অতন্দ্র ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। জ্যোতি বসু ছিলেন রাজনীতির অভিভাবক। কেন ছিলেন? ছিলেন এজন্য, কারণ তার কোন লোভ-লালসা ছিল না। বিশ্বে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরও সাম্যবাদের লাল ঝান্ডা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন উপমহাদেশের একপ্রান্তে। পশ্চিমা অনেক নেতার কাছেও জ্যোতি বসু ছিলেন সমাজতন্ত্রের আইকন। সব যুগের রাজনীতি সবসময় যোগ্য অভিভাবক পায় না। কোলকাতা পেয়েছিল। ধন্য হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতভূমি। তার মহাপ্রয়াণে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার শেষকৃত্যে উপস্থিত হয়ে জাতির পক্ষে যথাযথ সম্মান দেখিয়েছেন। তা বাঙালি জাতিসত্তার জন্য আনন্দের, গৌরবের বিষয়। কারণ যে জননেতার পূর্বপুরুষের নাড়ি এই বাংলাদেশেই পোঁতা, তার প্রতি সম্মান দেখানো জাতীয় কর্তব্যও বটে। একজন আদর্শ রাজনীতিক কমরেড জ্যোতি বসু এমন এক সময় এই বিশ্ব থেকে বিদায় নিয়েছেন, যখন বিশ্বে চলছে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা। ধনিক শ্রেণীর শাসকরা দাবিয়ে রাখতে তৎপর গণমানুষের অধিকার। মিথ্যার বেসাতিতে ভরে গেছে রাজনীতির প্রাঙ্গণ। মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী, জংলিরা ফনা তুলেছে যত্রতত্র। এক ধরনের চরম বিষণ্নতা মানুষকে ঘিরে ধরছে প্রায় প্রতিদিন। এই যে চরম শঙ্কা, এই যে ভীষণ হতাশা তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী? সেই প্রশ্নটি বারবার উঠছে প্রজন্মের মনে। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের বাণী ধার করে বলি, 'একটি জাতির আত্মপরিচয়ই সেই জাতিকে বলীয়ান করে তোলে।' বাঙালি কি সে কথাটি ভুলতে বসেছে? বাঙালি প্রজন্ম কি সেই চেতনা হারাতে চলেছে? এমন কিছু প্রশ্ন তুলেছেন আরেক শতবর্ষী বর্ষীয়ান নেতা বিনোদবিহারী চৌধুরী। সম্প্রতি তার জন্ম শতবার্ষিকী পালিত হয়েছে। তিনি বড় ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, যে দেশে মাস্টার দা সূর্য সেনের সম্পত্তি 'এনিমি প্রপার্টি' হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে, সে দেশের প্রজন্ম নিরাপদ থাকতে পারে না। তিনি সেই বাঙালির শাণিত চেতনা সবাইকে ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। আমাদের মনে আছে ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় ঘাতক রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে 'গণআদালত' আয়োজনের তথাকথিত অপরাধে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে 'দেশদ্রোহী' ঘোষণা করেছিল তৎকালীন বেগম খালেদা জিয়ার সরকার। সরকারি এ ঘোষণার পর আমার ফোনে কথা হয়েছিল শহীদ জননীর সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির যুক্তরাষ্ট্র শাখার প্রতিষ্ঠাতা সহকারী সদস্য সচিব হিসেবে শহীদ জননীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। তার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে আমি ফোন করার পর, মা জাহানারা ইমাম হেসে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, 'বাপু, একটা কথা তোমরা বুঝছো না কেন। আমি যদি দেশদ্রোহী হই তবে সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানও দেশদ্রোহী। কারণ তিনি সেই সময়ের রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়া সেই মুক্তিযুদ্ধেরই অসমাপ্ত কাজ। আমরা সেটাই চাইছি। তাতে যদি খালেদা জিয়ার সরকার আমাদের দেশদ্রোহী বলে তবে তা তো হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়।' বাংলাদেশে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব এভাবেই প্রতিষ্ঠা করেছে একটি ডানপন্থি মহল। যারা এখনও জাতীয় ঐক্যের পথে অন্তরায় হয়েই আছে। এখনও তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য চরম মিথ্যা আর গুজব ছড়াচ্ছে দেশবাসীর কাছে। দুই. সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পর, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন-দেশ নাকি ভারতের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। 'একটা গোপন চুক্তি'র কথাও বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন সংবাদ সম্মেলনে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, সেই গোপন চুক্তি কি তা খালেদা জিয়া যদি জানেন, তবে অবশ্যই জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কথাগুলো খুবই যৌক্তিক। খালেদা জিয়া সেই গোপন চুক্তির বিস্তারিত দেশবাসীকে জানাচ্ছেন না কেন? না হলে মিথ্যা বলার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছেন না কেন? রাজনীতিকে তারা আর কত দেউলিয়া করবেন? খালেদা জিয়া বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে '১৫০তম রবীন্দ্র জয়ন্তী' পালন নিয়েও নগ্নভাবে প্রশ্ন তুলেছেন। এনেছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামও পাশাপাশি। এতে খুব সূক্ষ্মভাবে মানসিক হীনমন্যতাই প্রকাশ করেছেন বেগম জিয়া। 'রবিঠাকুর' আর 'কাজী নজরুল' দু'জন নিজ নিজ আসনে উজ্জ্বল। তা যে কোন 'পাগল'ও বুঝে। 'পাগল' শব্দটি এজন্য ব্যবহার করলাম, প্রিয় পাঠক-আপনাদের মনে আছে এই সেই বেগম জিয়া, যিনি বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কনসেপ্ট শুধু 'পাগল' আর 'শিশু' ছাড়া কেউ বুঝবে না। প্রশ্ন হচ্ছে- শেষ পর্যন্ত সেই কনসেপ্ট বুঝতেই হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। এখন তিনি রবীন্দ্র-নজরুলকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করে তার সংকীর্ণ মনস্কতা জাহির করছেন কেন? তিনি যা বলতে চান, তা তো মাওলানা নিজামী বলেই বেড়াচ্ছেন। সাকা চৌ, জামায়াতী বুদ্ধিসেবী মরহুম ড. আফতাব আহমদরা যে হিন্দু কবির লেখা জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের অপচেষ্টা করেছিলেন তা তো বাঙালি জাতি ভুলে যায়নি। বেগম জিয়া নতুন করে তা মনে করিয়ে দিতে চান, অন্যভাবে? বেগম জিয়ার আন্দোলনমুখী বক্তব্যের পরপরই তার সোনার ছেলেরা নিজেদের মাঝে আত্মঘাতে লিপ্ত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রদল বলছে, ছাত্রলীগের বহিরাগতরা নাকি ছাত্রদলের নাম ধরে আক্রমণ করেছে। এ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশ, দেশের জাতীয় সংসদ। তা নিয়ে কথা হচ্ছে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর টকশো'তেও। তেমনি একটি টকশো'তে বিএনপি'র একজন তরুণ নেতাকে দেখলাম যিনি নিজে এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম করা ক্যাডার ছিলেন ছাত্রদলের। বিএনপি'র নতুন কমিটিতে কেন্দ্রীয় নেতা হয়েছেন। এটা আমরা জানি সামরিক জান্তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পচাত্তর পরবর্তী ছাত্রসমাজকে ব্যবহার করেছে ব্যক্তিগত হাতিয়ার হিসেবে। এরাই সশস্ত্র ক্যাডার গড়ে তুলেছে শিক্ষাঙ্গনে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ থেকে সরে এসেছেন। ছাত্রলীগ এখন সরকারি কোন বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে না। কথা হচ্ছে, বিএনপি কী সেই নীতি মানছে? না মানছে না। বরং ছাত্রদলকে আন্দোলনে নামার জন্য তৈরি হতে বলছে। রাজনীতির মাঠে একতরফা সততা প্রতিষ্ঠা কি এভাবে সম্ভব? বিএনপি ছাত্রদলকে সৎভাবে থাকতে দিচ্ছে না কেন? বিষয়গুলো সাধারণ মানুষকে মনে রাখতে হবে। দোষী যেই হোক তার বিচার-শাস্তি প্রয়োজন। এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর হাতে হবেই। ক্যাডারভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির অবসান ঘটাতেই হবে বাংলাদেশে। নিউইয়র্ক, ২০ জানুয়ারী ২০১০ -------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ। ঢাকা। ২২ জানুয়ারী ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- ক্যারল সমডের সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:৩৮",False hm,"লাইলির গল্প ১. পা এ সাগ বুসিদা মজনু শখস এ পুশত --- ইয়ে চিস্ত গোফত ইয়ে সাগ গাহে গাহে রাহ এ লায়লা রফতাহ বুদ.১। ২. লাইলি ঘুম ভাঙার পর একেবারে বারান্দায় গিয়ে আড়মোড়া ভাঙে। হাত উঁচু করে মাথার পেছনে নিয়ে কয়েকবার ডানে বামে শরীর মোচড়ায় লাইলি, তারপর চোখ বন্ধ করে কোমরে ভাঁজ ফেলে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বড় বড় সশব্দ শরীরদোলানো শ্বাস নেয়। ইয়োগা। ওদিকে রাতে সে ঘুমায় একটা পাতলা নাইটি পরে। তাই ভোরবেলা লাইলিদের বাড়ির সামনে জগারদের ভিড় জমে। অনেক চিনাবাদামওয়ালা লাইলিদের বাড়ির সামনে ফুটপাতে চোঙা পেতে বসার জন্যে সেই ভোরবেলা এসে দখল নেয়। খেজুরের রস, আখের রস, চিরতার রস প্রভৃতি বিভিন্ন রসের রসিকরা তাদের গামছা ঢাকা পাতিল নিয়ে বসে যায় ফুটপাথের ওপর, লাইলির আড়মোড়াভঙ্গের নিয়মিত দর্শকরা দশ পনেরো মিনিট বাদাম চিবাতে চিবাতে অপেক্ষা করে, আর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে লাইলি বারান্দায় বেরোলে সেই দৃশ্য মিনিট পাঁচেক রূদ্ধশ্বাসে অবলোকনের পর চোঁ চোঁ করে এই রস সেই রস পান করে ঘামতে ঘামতে বাড়ি ফিরে যায়। ছেলে থেকে বুড়ো সকলেই আছে সেই স্বাস্থ্যপ্রেমী (নিজের স্বাস্থ্য এবং লাইলির স্বাস্থ্য) জনতার মাঝে। ছেলেরা আসে সহজাত টানে, বুড়োরা আসে, মরার-আগে-আরেকটু-দেখে-যাই কমপ্লেক্সে ভুগে। তবে সিরিয়াস ব্যায়ামচি কিংবা খেজুরের রসের একনিষ্ঠ ভক্ত কয়েকজন আছেন, ওঁরা লাইলিকে নিয়ে অত মাথা ঘামান না, ব্যায়াম করতে করতে কিংবা রস খেয়েই লাইলিদের বাড়ি পেরিয়ে যান। অন্যান্য লোকজন এঁদের সন্দেহের চোখে দ্যাখেন। নিন্দুকেরা বলে, বাদামওয়ালা, রসওয়ালা এদের সাথে লাইলির বন্দোবস্ত আছে, নাহলে বাড়ির দরওয়ান কিছু বলে না কেন? অন্যেরা বলে, আরে বন্দোবস্ত থাকলে হয়তো দরওয়ানের সাথেই আছে, এর মধ্যে লাইলিকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া ক্যান? কিন্তু লাইলিকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়ার স্বপ্ন সবার মধ্যেই কাজ করে। লাইলি বলতে গেলে পাড়ার প্রাইম মুভার! তবে ঘরে ফিরতে হয় সকলকেই, যখন লাইলি ঘরে ফিরে যায়। তাছাড়া লাইলির পাগলা বাপটার শটগানের লাইসেনস আছে নাকি, শটগানও থাকতে পারে দুয়েকটা, আর জানের ভয় তো সবারই আছে! লাইলি আড়মোড়া ভাঙার সময়, বা ইয়োগা করার সময় নাকি চোখ বুঁজে থাকে, তাই হয়তো এই দর্শকের ভিড় তার চোখে পড়ে না। নিন্দুকেরা বলে, আরো ছোহ, ছেমরি মহা সেয়ানা! তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার আগে লাইলি আবার বারান্দায় আসে, এবার ঠিকমতো ঢেকেঢুকে, ছোট ছোট টবে মিষ্টি ফুলের গাছে পানি দিতে। ততক্ষণে বাড়ির সামনে রাস্তা সুনসান হয়ে যায়। আজ পানি দিতে বেরিয়ে এসে লাইলি কী ভেবে রাস্তার দিকে তাকালো, আর অমনি ঘটে গেলো এক ঘটনা। লাইলির পেলব বুক ছ্যাঁৎ করে উঠলো! বাদুড়কালা টিংটিঙে একটা ছেলে, লাল একটা গেঞ্জি পরে লাইলিদের বাড়ির সামনের রাস্তার ওপাশে গোড়ালিতে ভর দিয়ে বসে আছে, তার হাতে ধরা পাড়ার একটা কুকুরের সামনের একটি পা। ছোকরা নির্নিমেষ নয়নে কুকুরের পা দেখছে। কুকুরটার গায়ের রং বাদামী, বেশ তেজি চেহারা, সে জিভ বার করে হ্যাহ হ্যাহ করে হাঁপাচ্ছে। লাইলি হুড়োহুড়ি করে কিছু টবে বেশি পানি আর কিছু টবে কম ... কয়েকটা টবে পানি না দিয়েই ঘরে ফিরে বারান্দার দরজা লাগিয়ে তাতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বুঁজে থেকে বড় বড় শ্বাস নেয়, তার জনপ্রিয় বুক ওঠানামা করে শ্বাসের তালে। সেদিন লাইলি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় না, গুম হয়ে ঘরে বিছানায় বালিশ গুঁজে শুয়ে দিন কাটিয়ে দ্যায়। পরদিন আবার ইয়োগা সেরে যথারীতি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার আগে দুরুদুরু বুক নিয়ে লাইলি বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। নাহ, আজকে সে ছোকরাকে আর দেখতে পায় না সে। লাইলি নিশ্চিন্ত মনে সব ক''টা টবে সুষম পানি দিয়ে নিচে নামে। আহ, কী সুন্দর একটা দিন! কিন্তু রিকশা নিয়ে গলির মোড় ঘুরতেই লাইলির পীনোদ্ধত বুক হিম হয়ে আসে কী এক আশঙ্কায়! ঐ তো সেই ছোকরা, গলির মোড়ে, একটা কেলে কুকুরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে কুকুরের ঠ্যাং হাতে নিয়ে বিড়বিড় করে কী যেন বকছে, আর কুকুরটা জিভ বার করে কত্তজ্ঞ হাঁপাচ্ছে। লাইলি রিকশা ঘুরিয়ে বাড়ি ফিরে আসে, তারপর দোর দেয়। সারাদিন একলা ঘরে গুম মেরে বসে থাকে। এভাবেই চলতে থাকে কয়েকদিন। কখনো লাইলির বাড়ির সামনে, কখনো গলির মোড়ে, কখনো আরেকটু সামনে বা পেছনে, সেই ঘোর আবলুসবরণ কৃশ যুবাটি কুকুরের পা হাতে নিয়ে সৌম্য ভঙ্গিতে বসে থাকে পথের ওপর। আর লাইলি গুমরে মরে, তার আর বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া হয় না। কিন্তু তারপর একদিন আর থাকতে না পেরে লাইলি রিকশা থেকে নেমে ছুটে যায় সেই ছোকরার কাছে, ছোকরা তখন একটা সাদা কুকুরের পা তুলে ঠ্যাকাচ্ছিলো নিজের মস্তকে, লাইলি ছুটে দাঁড়ায় তার সামনে গিয়ে। ''আমি জানি!'' ডুকরে ওঠে সে। ''আমি জানি, তুমিই মজনু! দিনের পর দিন ... তুমি লাইলির পথে হাঁটা সব কুকুরের পা ধরে সালাম করে চলেছো! কিন্তু এ হতে পারে না মজনু, এ হবার নয়!'' ছোকরা থতমত খেয়ে যায়, বলে, ''জ্বি?'' লাইলি ওড়না তুলে কান্না চাপে, ছোকরা হাঁ করে তাকায় অরক্ষিত অংশের দিকে। লাইলি বলে, ''তোমার আমার মিলন যে হবার নয় মজনু! আমাদের জীবনের কপালে যে শুধু বিরহ লেখা!'' ছোকরা ঢোঁক গিলে বলে, ''ইয়ে, আমার নাম তো মজনু না!'' লাইলি ধীরে ধীরে আবার ওড়না ঠিক করে। ''মজনু না?'' ছোকরার বোধহয় মন খারাপ হয়, ওড়না স্বস্থানে ফিরে যাওয়ায়, সে মনমরা হয়ে বলে, ''না! আমার নাম হিমু, আমি জীববিজ্ঞানের ছাত্র, শহুরে কুকুরের বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করছি ... এই যে দেখুন না, আপনাদের পাড়ার সব মিলিয়ে একুশটা কুকুরের ড্যাটা যোগাড় করে ফেলেছি ... আরো হাজার খানেক লাগবে, বুঝলেন ... কিন্তু আপনি মজনুর কথা কী যেন বলছিলেন?'' লাইলি আমতা আমতা করতে থাকে, রজ্জু ভ্রমে সর্পের মতো মজনু ভ্রমে গবেষক ... কিন্তু হিমু তার সাথে খাতির জমিয়ে ফ্যালে, এবং আশ্বাস দ্যায় যে তার অভিসন্দর্ভে লাইলির নামোল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবে। এ উদ্দেশ্যে সে লাইলির জিমেইল অ্যাড্রেস ও এমএসএন আইডিটিও হস্তগত করে। গল্প অনেকদিক দিয়েই শেষ করা যেতো, কিন্তু বেশি মিথ্যে কথা বলা ভালো নয়। হিমু লাইলির সাথে টুকটাক আলাপ করে মাঝেমাঝে, আর লোকমুখে লাইলির ব্যায়ামের খবর শুনে একদিন ভোরবেলা এসে এক ছটাক বাদাম ও পরবর্তীতে সব রসের এক গ্লাস করে পান করে, তারপর বাড়ি ফিরে অনেক ভেবে চিন্তে একটি বিরাট সিদ্ধান্ত নেয়। সে তার গবেষণার ফোকাস পালেট ফ্যালে। কুকুরদের ছেড়ে সে মুগুরদের ধরে, মানে লাইলিদের পাড়ার ব্যায়ামচিদের মেটাবলিজমের ওপর বিরাট এক গবেষণা করবে বলে স্থির করে। হাজার খানেক কুত্তার পা ধরে সালাম করতে গেলে তার বছর লেগে যাবে, পক্ষান্তরে লাইলির বাড়ির সামনে হাজির আদমদের কাছ থেকে তার এক কাচ্চা ড্যাটা যোগাড় করতে দুই হপ্তাও লাগবে না। .১ মজনু এক কুকুরের পদচুম্বন করছে। একজন শুধালো, ব্যাপারটা কী? মজনু উত্তর দিলো, লাইলির বাড়ি যে সরণিতে, সেখানে এ কুকুরের প্রায়শ যাতায়াত আছে।",False rn,"অ ল স দু পু র বৃদ্ধ মা বাবা কে আপনি যেমন করে ভালবাসবেন , ঠিক তেমনটাই আপনি ফেরত পাবেন আপনার সন্তানদের মাধ্যমে ! তাই বলছি , নিজের সুখের জন্য হলেও মা বাবার সেবা যত্ন করো ! '' রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা '' নবী হযরত মোহাম্মদ (সা) একদা মদিনায় বৃক্ষ নীড়ে অবকাশ যাপন করছিলেন । সুযোগ মত এক ইহুদি উম্মুক্ত তরবারি নিয়ে তার উপর তাক করে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলেন হে মুহাম্মদ আপনাকে এখন কে বাচাবে । নবীজী বললেন আল্লাহ। সাথে সাথে তার হাত হতে তরবারি খসে পড়ল এবং নবীজী ঐ ইহুদির গাড়ে চেপে বললেন এখন তোমাকে কে বাচাবে । ইহুদি কাপতে কাঁপতে বলল আপনি । ধর আমি আর আমার বউ দুজনে মিলে বাজারে গেছি । আমরা রাস্তা দিয়ে হাটছি । হঠাৎ রাস্তায় দাড়ানো একটা পাগল আমার বউকে একটা চড় মেরে দিল কোন কারন ছাড়াই । ""তো তোমরাই বল আমার তখন কি করা উচিত ?"" সব জায়গাতেই যেমন নিজের পন্ডিত্ব জাহির করা সাজে না তেমনি সব জায়গাতে নিজের শক্তি দেখানো ঠিক না ।কুত্তা যদি তোমাকে কামড় দেয় নিশ্চয় তুমি কুত্তাকে কামড়াতে যাবে না ।আমাদের সমাজে আশপাশে এমন অনেক কুত্তা দেখতে পাওয়া যায় তাদের এড়িয়ে যাওয়াই ভাল । এ জগতের সবকিছুই উদ্দেশ্যহীন। এই বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড সৃষ্টির পেছনে কোন উদ্দেশ্য নেই, এই বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড ও বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডের সব কিছুই সৃষ্টি হয়েছে সৃষ্টির নিয়মে, কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই। ঈশ্বর এসব কিছুই সৃষ্টি করেননি, এসব সৃষ্টি হয়েছে সৃষ্টির নিয়মে। আর এসব কিছু হঠাৎ একদিনে সৃষ্টি হয়নি, হয়েছে ধীরে ধীরে পরিবর্তনের মাধ্যমে। মহাখালি ব্রিজের উপর থেকে একটা বাইক খুব দ্রুত গতিতে বনানীর দিকে নামছে । বাইকে চালাচ্ছে গুল্লু । গুল্লুকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে হিমি । হিমির চুল, শাড়ির আঁচল বাতাসে উড়ছে । বাইক চলছে ৮০ কিঃমিঃ স্প্রীডে। গুল্লুর বাম পাশে একটা প্রাইভেট কার । ঠিক এই সময়, লাল জামা পড়া একটা মেয়ে গুল্লুর বাইকের কাছে চলে আসে । মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল । হাঁটতে হাঁটতে লাল জামা পড়া মেয়েটি একটি ছেলের সাথে কথা বলছিল, মেয়েটি হঠাৎ ফুটপাতা ছেড়ে গুল্লুর বাইকের কাছে চলে আসে । মেয়েটি কথার মধ্যে ডুবে ছিল- তাই সে গুল্লুর বাইকটি খেয়াল করেনি । গুল্লু বাম পাশে চাপতে পারেনি প্রাইভেট কারের জন্য । লাল জামা পড়া মেয়েটিকে বাঁচাতে গিয়ে গুল্লু ছিটকে পড়ে ২৫ গজ দূরে । হিমি প্রাইভেট কারের সাথে ধাক্কা খেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকে । লাল জামা পড়া মেয়েটি হাঁটুতে সামান্য ব্যাথা পায় । গুল্লুর অনেক পেছনে একটা ভেসপাতে থাকা দুই ভদ্রলোক পুরো ঘটনা টা দেখেন । বাইকটা বাতাসের সাথে উড়ে এসে পড়ে গুল্লুর পায়ের লাছে । সময় তখন বিকেল ৫ টা। হিমির একটা হাত ভেঙ্গে গেছে । মাথা ফেটে বৃষ্টির মত রক্ত পড়ছে । রক্তে ভিজে যাচ্ছে রাস্তা । তবুও হিমির চোখ গুল্লুকে খুঁজছে ।সে চিকৎ্কার করে বলতে চাচ্ছে- আমার বাবুই কই, আমার বাবুই । কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না । আর ২৫ গজ দূরে গুল্লুর হাত পা ছিলে ভয়ানক অবস্থা । তার সারা শরীর অবশ লাগছে । কথায় বলে, যার কেউ নাই- তার আল্লাহ আছে । এমন সময় এক লোক তার গাড়িতে করে গুল্লু এবং হিমিকে হাসপাতালে নিয়ে জান । চিকিৎসার জন্য হিমিকে ইন্ডিয়া যেতে হয়েছিল । দুই মাস গুল্লু হিমির কাছে হাসপাতালে ছিল । হিমিকে ছেড়ে কোথাও যায়নি । হিমি ঘুম ভেঙ্গেই দেখতে গুল্লু তার হাত ধরে বসে আছে । এক আকাশ আনন্দে হিমির চোখ ভিজে যেত।",False rn,"আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি একজন শিশু জন্ম দেয়া কি খুব বেশি প্রয়োজন? একটি ছেলে-মেয়ের বিয়ের পর আত্মীয় স্বজন সবাই বাচ্চার জন্য তাড়া দেয় কেন? বাচ্চা না নিলে সমস্যা কি? এই ঘুনে ধরা সমাজে একটি বাচ্চাকে পৃথিবীতে নিয়ে আসার কোনো মানে হয় না। এই সমাজ, দেশ এবং দেশের মানুষজনতো সহজ সরল সুন্দর নয়। একটা শিশু জন্ম নেয়ার পর থেকে, বড় হতে থাকবে, আর পদে পদে ধাক্কা খাবে। স্কুলে ভর্তি হতে নানান সমস্যা, খাদ্যে সমস্যা, পাড়ায় মহল্লায় সব জাগায় সমস্যা। বড় হবে নেশা করবে, প্রেম করবে, পরকীয়া করবে। শিশুটি বড় হবে হাজার হাজার সমস্যার মধ্যে দিয়ে। শিশুটির পথ মসৃন থাকবে না। পথ থাকবে নানান কাটাময়। জটিল, কুটিল। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই দরিদ্র। তারা অভাবে-অভাবে বড় হয়। লেখা-পড়া শিখে, কোনো একটা চাকরি করে, ডাল ভাত খেয়ে জীবন পার করে দেয়। শান্তি, আনন্দ আর বিনোদন বলতে তাদের কিছু থাকে না। ধনীর ঘরে শিশু জন্মালেও সমস্যা আছে। তারা বড় হয়ে ভালো মানুষ হবে না জঙ্গি হবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই সমাজে কেউ ভালো থাকতে পারবে না। কেউ না। দিনদিন পৃথিবীটা নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছে। কাজেই আমি মনে করি, এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে একটা শিশুকে ছেড়ে দেওয়া আর আগুনে ফেলে দেয়া একই কথা। বর্তমান যুগে যেসব বাবা-মা এই ভয়ংকর পৃথিবীতে শিশু জন্ম দিচ্ছেন- তারা কি একবার ভাবেন(?) তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে কোথায় রেখে যাচ্ছেন? আপনারা ছেলে-মেয়ে জন্ম দিবেন, লেখা পড়া শেখাবেন, বিয়ে দেবেন- তারপর আপনারা মরে যাবেন। আর যতদিন আপনার ছেলে-মেয়ে বেঁচে থাকবে তাদের যুদ্ধ করে যেতে হবে। আমি বলব, কেন তাদের এই ভয়ঙ্কর দুনিয়াতে আনলেন(?) প্রতিটা মুহূর্ত যুদ্ধ করার জন্য, কষ্ট করার জন্য? জন্মের সময় আমাকে যদি বলা হতো- 'তুমি কি পৃথিবীতে যেতে চাও? আমি চিৎকার করে বলতাম- না, আমি যাব না। এখন আমাকে প্রতিটা দিন যুদ্ধ করতে হয়, আমি শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারি না। কোথাও শান্তি নেই। মানুষ আর মানুষ নেই, তারা পশুর চেয়ে বেশি নিষ্ঠুর। তাদের মন মানসিকতা নোংরা। হিংসুটে, লোভী, চতুর। যত খারাপ বিশেষণ আছে- সব বললেও কম বলা হবে। আমার বাবা-মা যদি আমাকে পৃথিবীতে না আনতো- তাহলে কি আমাকে প্রতিদিন যুদ্ধ করতে হতো? হিমসিম খেতে হতো? মিথ্যা বলতে হতো? প্রতারনার স্বীকার হতে হতো? কুকুরের মতো পরিশ্রম করতে হতো? অভাবে-অভাবে জীবন যাপন করতে হতো? টেনশনে থাকতে হতো? ভয়ে থাকতে হতো? কারো গোলাম হতে হতো? বেকার জীবন যাপন করতে হতো? খাওয়া পড়ার চিন্তা করতে হতো? অসুখ বিসুখের চিন্তা করতে হতো? আরও কত কি... ধরে নিলাম, আপনি বিয়ে করেছেন। মোটামোটি একটি চাকরি করছেন। বিয়ের দুই বছর পর একটা মেয়ে শিশুর জন্ম দিলেন। এই মেয়েকে অনেক আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করছেন। লেখা-পড়া শেখাচ্ছেন। মেয়েটি বড় হবে- আর আপনার টেনশন বাড়তে থাকবে। এই আধুনিক যুগেও একটি মেয়ে আজও কোথাও নিরাপদ না। যে কোনো সময় ধর্ষণ এর স্বীকার হতে পারে, অথবা এক বখাটের সঙ্গে পালিয়ে কোথাও চলে যেতে পারে অথবা কোনো চতুর লোভী ছেলে প্রেমের অভিনয় করে- পেটে বাচ্চা দিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেল অথবা দিনের পর দিন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আপনার মেয়েকে ভোগ করতে থাকলো। তখন আপনার মান সম্মান কোথায় যাবে? এই যে তিলে তিলে কত কষ্ট করে, কত আদর ভালোবাসা দিয়ে মেয়েকে বড় করলেন- তার ফলাফলটা কি দাঁড়ালো শেষ পর্যন্ত? এখন হয়তো, আপনি বলবেন- আমার মন মানসিকতা খুব নিচু। ঠিক আছে, তাহলে ধরে নিলাম- আপনার মেয়ে ধর্ষণ এর স্বীকার হলো না, বা কোনো ছেলে প্রেম ভালোবাসার সস্তা কথা বলে তাকে বিছানায় নিলো না, কিংবা কোনো বখাটের পাল্লায়ও পড়লো না। মেয়েকে বড় করলেন, লেখাপড়া শেখালেন- তারপর ভালো একটা ছেলের সাথে ধূমধাম করে বিয়ে দিয়ে দিলেন। বিয়ের পর যে সেই সংসার টিকবে তার নিশ্চয়তা কি? মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন তার সাথে ভালো আচরণ করবে তার নিশ্চয়তা কি? এবার ধরুন, আপনার একটি ছেলে সন্তান এর কথা। অনেক আদর ভালোবাসা দিয়ে তাকে বড় করলেন, লেখা-পড়া শেখালেন। এই ছেলে- জঙ্গি হবে না তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? এই ছেলে কোনো প্রেমেকে ধর্ষণ করবে না- তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? সে যে একজন ঘুসখোর হবে না, অসৎ হবে তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? এই সমাজে কে ভালো? কার মধ্যে সততা আছে? মমতা আছে? আপনি হাজার চেষ্টা করলেন, আপনার ছেলে-মেয়েকে পৃথিবীর কোনো পাপ স্পর্শ করতে পারল না। কিন্তু আপনি কতদিন বাঁচবেন? এই সমাজ, এই দেশ দেশের মানুষ কাউকে ভালো থাকতে দিবে না। নো নেভার। বাবা-মা তো ছেলে মেয়ে জন্ম দিয়ে বড় বড় স্বপ্ন দেখেন, আমার ছেলে ডাক্তার হবে, আমার মেয়ে ইঞ্জিয়ার হবে। হেন হবে, তেন হবে। আসলে হয় ভন্ড, লুচ্চা আর বদমাশ। কিন্তু কোনো বাবা-মা'ই স্বীকার করবেন না। সব বাবা-মা'র চোখেই তার ছেলে-মেয়ে খারাপ না। তাহলে এই সমাজের নষ্ট ছেলে-মেয়ে গুলো কাদের? কয়জন বাবা-মা'র ছেলে ভালো হয়? স্কুলের বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা প্রেম করে, গাঁজা খায়। রাত জেগে মোবাইলে কথা বলে, কোচিং এর কথা বলে বন্ধুর খালি ফ্লাটে গিয়ে সেক্স করে। আর যারা খুব সাহসী তারা ভিডিও করে রাখে। পরে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হলে, সেই সব ভিডিও দেয় নেটে ছেড়ে। এই সবই অহরহ ঘটছে এখন। প্রতিটা ঘরে ঘরে। সেক্সের ব্যাপারে ধনী গরীব বুড়ো জুয়ান কেউ পিছিয়ে নেই। সবাই এগিয়ে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বলে একটা সস্তা কথা আছে। আরও হাস্যকর কথা হলো- পুরুষ চায় তার জিন টিকিয়ে রাখতে, তাই যত বেশি সেক্স তত সম্ভবনা.. তাই পুরুষের বীযে` মিলিয়ন মিলিয়ন সুক্রানু...। সারভাইভাল অফ ফিটেস্ট। আপনি হয়তো বলবেন, কিন্তু আমরা মানুষ। আমাদের আবেগ/চিন্তা/বিবেক আছে.... তাই সবাই পশুর মতন চিন্তা করেনা.... কিছু মানুষের মতন চিন্তা করে.... কাজেই আপনি বিয়ে করেছেন, এখানেই থামুন। ছেলে-মেয়ে জন্ম দিবেন না। কি দরকার লুচ্চা বদমাশ জন্ম দিয়ে। হুম... যদি আপনার ছেলে-মেয়ে আইনস্টাইন হয়, মদার তেরেসা হয়, রবীদ্রনাথ হয়, বঙ্গবন্ধু হয়, স্টিভ জবস হয়, টমাস আলভা এডিসন হয়, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার হয়, অ্যারিস্টটল হয়, স্বামী বিবেকানন্দ হয়, রবার্ট ফ্রস্ট হয় তাহলে জন্ম দেন। প্রতি বছর জন্ম দেন। কোনো সমস্যা নাই। সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:১৭",False rn,"শেষ কথা- ২০ মেঘনা নদীতে লঞ্চ চলছে । লঞ্চের নামটি মনে করতে পারছি না ।আমরা বাড়ির সবাই মিলে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে কুমিল্লা যাচ্ছিলাম । আমি লঞ্চের ছাদে বল খেলছিলাম । হঠাৎ আমার বলটি মেঘনা নদীতে পড়ে যায় । আমি লাফ দিয়ে বলটি ধরতে গিয়ে মেঘনা নদীতে পড়ে যাই। জানি না সাঁতার । তখন আমার বয়স ১৩ । মুহূর্তের মধ্যে ডুবে গিয়ে মেঘনা নদীর পানি খেয়ে নিলাম পেট ভরে । তারপর কে বা কারা আমাকে বাঁচায় কিছু মনে নেই । পাবনা যাচ্ছিলাম, বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করতে । তখন বড় ভাই পাবনা ক্যাডেট করলেজে লেখা পড়া করতো ।আরিচা ফেরী ঘাটে। ফেরীর দোতলায় রেলিং এ বসতে গিয়ে ধাম করে নদীতে পড়ে যাই । ভাগ্য ভালো ছিল, তখনও ফেরী ছাড়েনি । তখন আমার বয়স ১৬ বছর । অল্প পানির মধ্যেই ডুবে গেলাম। কে বা কারা আমাকে যথা সময়ে বাচিয়েছিল মনে নেই, একটুও মনে নেই । বাংলাদেশের প্রতিটা নদী আমার খুব ভালো লাগে । পৃথিবীর কোথাও আর এতো সুন্দর সুন্দর নদী নেই। আমাদের দেশের নদীর নাম গুলোও অনেক সুন্দর। আমাদের গ্রামের বাড়ির কাছেই পদ্মা নদী । পদ্মা নদী আমার অনেক প্রিয় একটি নদী হঠাত ইচ্ছা করলো মনের স্বাদ মিটিয়ে পদ্মা নদীতে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে গোছল করবো । একদিন সব বন্ধু-বান্ধব নিয়ে চলে গেলাম গ্রামের বাড়িতে । আমার গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর। মধ্যদুপুর বেলা সব বন্ধু নিয়ে নামলাম নদীতে । আমি হাফ প্যান্ট নিতে ভুলে গিয়েছিলাম । তাই চাচার কাছ থেকে একটা গামছা নিয়ে কোমরে প্যাচিয়ে নদীতে নামলাম । মনের স্বাদ মিটিয়ে বিকেল পর্যন্ত নদীতে লাফালাফি করলাম । কিন্তু আমি নদী থেকে লজ্জার কারণে উঠতে পারছি না । কোথায় কখন যেন আমার গামছাটি খুলে গেছে । বন্ধুদের ও গামছা হারিয়ে যাবার কথা বলতে পারছি না । যদি বলি ওরা হাসাহাসি করবে । উফফ...ভয়াবহ লজ্জায় পড়েছিলাম ।ঢাকার বাসাবো তে একটি বড় পুকুর আছে । পুকুরের পাশেই কালী মন্দির । সেই পুকুরে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম ৩৪ নং ওয়ার্ডের কমিশনারের সাথে । মাছ বড়শি ফেলতে গিয়ে আমিই ঘাট থেকে পুকুরে পড়ে গেলাম, আর কি আশ্চর্য সাথে সাথে ডুবেও গেলাম । পুকুরের মাটি অসম্ভব নরম- আমি কিছুতেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না । সেদিন অনেক পুকুরের পানি খেয়েছিলাম। পেট ফূলে গিয়েছিল । এখনও মনে আছে- অনেক গুলো স্যালাইন খেতে হয়েছিল। ২০০০ সা্লে জাহাজে করে বঙ্গোপসাগর ঘুরতে গিয়েছিলাম । বঙ্গোপসাগর বিশাল । চার দিন বঙ্গোপসাগরেই ছিলাম । সাগর পাড়ের বাতাস কি ঠান্ডা ! মধ্যরাতে জাহাজের ছাদে উঠলাম আমি একলা । জোছনা রাত ছিল । মনে হলো- বঙ্গোপসাগর যেন জ্বলছিল । পানি চিক চিক করছিল । জাহাজ যাচ্ছিলো সুন্দরবনের দিকে । হঠাত আমার খুব তীব্র ইচ্ছা হলো- বঙ্গোপসাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ি । এত সুন্দর সহ্য হচ্ছিল না । সেই প্রথম আমার মাথায় স্বেচ্চায় মৃত্যু চিন্তা এলো। স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না- ঝাপ দিবো কিনা । আমার কপাল ঘামে ভিজে উঠলো! অতঃপর সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম ঝাঁপ দিবো- কিন্তু তার আগে একটা সিগারেট শেষ করবো । মজার ব্যাপার হলো- সিগারেট শেষ হওয়ার আগেই দেখি আব্বা পেছনে এসে দাঁড়িয়ে আছে । নদী আমার অনেক ভালো লাগে । দিনে রাতে নদীর সৌন্দর্য একেবারেই ভিন্ন ভিন্ন । একসময় আমি নদীর কাছেই ফিরে যাবো । নদী আমাকে ভালোবাসে। ভালোবেসে যে আমাকে ডাকে আমি তার কাছে চলে যাই ।",False hm,"সায়েন্স ফিকশনঃ বদরুলের ডিএনএ বদরুল মুন্সি একটু নার্ভাস বোধ করে। লোকটা এমন চোখ গোল করে তাকিয়ে আছে কেন তার দিকে? ""মিস্টাহ বোদহ্রুল"", কেমন করে যেন বলে লোকটা, ""আপনি কেমন আছেন?"" বদরুল ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বলে, ""ভালো আছি। আমার রিপোর্টটা কি তৈরি?"" ""হ্রিপোখত, হ্রিপোখত ..."", বিড়বিড় করে লোকটা, ""হ্যাঁ, ওটা তৈরি। এই যে।"" একটা নীল খাম ধরিয়ে দেয় সে। বদরুল নীল খাম থেকে একটা কাগজ বের করে পড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু লেখাগুলি পড়ে সে কিছুই বোঝে না। নানারকম সাংকেতিক কথাবার্তা লেখা। ""আচ্ছা, এর মানে কী?"" বদরুল জানতে চায়। লোকটা এবার ঝুঁকে পড়ে তার দিকে। ""মিস্টাহ বোদহ্রুল, আপনি নিজে আমাদের কাছে এ টেস্ট করাতে এসেছেন, আর আপনি বলতে চাচ্ছেন, আপনি এগুলি বোঝেন না?"" বদরুল মাথা নাড়ে। ""না।"" লোকটা এবার উৎসাহের সাথে শার্টের হাতা গুটিয়ে বসে কাউন্টারের ওপর হাতের ভর রেখে। ""খুব ভালো। তাহলে আমি আপনাকে বুঝিয়ে বলি। ... আপনার ডিএনএ থেকে জানা গেছে, আপনি পৃথিবীর অন্যতম এক আশ্চর্য।"" বদরুল হাসে বোকার মতো। ""কীরকম?"" লোকটা হাসে। ঠান্ডা হাসি। ""বলছি বলছি। আপনি কি জানেন, আপনার শরীরের একটা অংশ শুধু মায়ের কাছ থেকে আসে? তাকে বলে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ।"" বদরুল উৎসাহ বোধ করে না। বলে, ""তো?"" লোকটা বকে যায়। ""মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ জিনিসটা নিউক্লিয়ার ডিএনএর চেয়ে অনেক ছোট, যাচাই বাছাই করা সহজ। তো, আমরা আপনার মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ থেকে হাইপারভ্যারিয়েবল সিকোয়েন্সটা আলাদা করে নিয়েছি।"" বদরুল বলে, ""আলাদা করে নিয়ে কী পেলেন?"" লোকটা এবার থেমে চুপ করে দেখে বদরুলকে। ""যা দেখলাম তা অতি আশ্চর্য তথ্য, মিস্টাহ বোদহ্রুল।"" বদরুল বলে, ""কী তথ্য?"" লোকটা কাউন্টারে আঙুল দিয়ে এক পশলা তবলা বাজায়। ""মানুষের সাথে মানুষের বেশ পার্থক্য ধরা পড়ে এই সিকোয়েন্সে। গড়ে এই ইন্টারস্পেসিফিক পার্থক্য হচ্ছে ৮ এর মতো। মানে, যে কোন দু'জন মানুষের সিকোয়েন্স পাশাপাশি রাখলে আপনি আট জায়গায় পার্থক্য পেতে পারেন।"" বদরুল এবার একটু আগ্রহ বোধ করে, ""তাই?"" লোকটা হাসে। ""হ্যাঁ। আবার ধরুন, মানুষের সাথে শিম্পাঞ্জির তুলনা করলে, এই পার্থক্য দাঁড়ায় গড়ে ৫৫।"" বদরুল এবার একটু সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ""আমার সাথে কি মানুষের ৫৫ টা পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন?"" লোকটা মাথা নাড়ে। ""উঁহু।"" বদরুল বলে, ""তাহলে ক'টা?"" লোকটা বদরুলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে, ""২৬ টা।"" বদরুল চমকে ওঠে। ভাঙা গলায় বলে, ""এত কেন?"" লোকটা একটা টিস্যু এগিয়ে দেয় বদরুলের দিকে। ""কপালের ঘাম মুছে ফেলুন। ... আপনি কি জানেন, মানুষের সাথে ২৬ টা পার্থক্য পাওয়া গেছে, এমন কেস আমরা আগেও পেয়েছি?"" বদরুল বলে, ""কে সেই লোক?"" লোকটা এবার বাঁকা চোখে তাকায় বদরুলের দিকে। ""নিয়ান্ডার্টাল মানব।"" বদরুল কেঁপে ওঠে। ""মানে?"" লোকটা এবার টুল ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ""ধারণা করা হয়, নিয়ান্ডার্টালরা মানুষের একটা অন্য ধারা। আপনি তো জানেন না বোধহয়, আজ মানুষের প্রজাতি একটাই। আমরা সবাই হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স। নিয়ান্ডর্টাল মানুষেরা ছিলো হোমো নিয়ান্ডার্টালেন্সিস। বেশ খানিকটা অন্যরকম। ধারণা করা হতো, এই দুই প্রজাতির মধ্যে কোন ধরনের মিশ্রণ ঘটেনি। মিশ্রণ ঘটলে অবশ্য আর এদেরকে দুটো আলাদা প্রজাতি ধরা হতো না ... যাই হোক।"" বদরুল বলে, ""আমি কি তাহলে নিয়ান্ডার্টাল?"" লোকটা বলে, ""আপনার চেহারা বা খুলির গড়ন সেটা বলে না। আপনি দেখতে একদমই হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স। কিন্তু আপনার ডিএনএ বলছে, মানুষের সাথে আপনার অনেক পার্থক্য।"" বদরুল প্রায় কেঁদে ফেলে, ""এখন আমি কী করবো?"" লোকটা বদরুলকে অভয় দেয়, ""চিন্তার কিছু নেই। আপনার ডিএনএর কিছু স্যাম্পল পাঠানো হয়েছে মিউনিখে, ডক্টর স্ভান্তে প্যাবোর বিখ্যাত ল্যাবে। সেখানে নিয়ান্ডার্টাল মানবের ডিএনএ স্যাম্পল রক্ষিত আছে, আপনারটা ওর সাথে মিলিয়ে দেখা হবে। যদি মিল পাওয়া যায় ...।"" লোকটা আঙুল মটকাতে থাকে চিন্তিত মুখে। বদরুল ঢোঁক গেলে, ""মিল পাওয়া গেলে?"" লোকটা এবার মুখ তুলে তাকায়। ""আপনি কখনো কোন নিয়ান্ডার্টালের চেহারার পুনর্নির্মাণ দেখেছেন?"" বদরুল বলে, ""না, কেন?"" লোকটা নাক সিঁটকায়। ""দেখতে ভালো না। ভয়ানক কুচ্ছিত বললেই চলে। আপনার সাথে কোন নিয়ান্ডার্টালের ডিএনএর মিল পাওয়া গেলে বুঝতে হবে, আমাদের পূর্বপুরুষ বা পূর্বমহিলাদের কেউ একজন বিরাট বদরুচির ছিলো।"" বদরুল ক্ষেপে যায়, ""বলছেন কী এসব যা তা?"" লোকটাও ক্ষেপে ওঠে, ""আরে মশাই, ডিএনএ কি উড়ে এসে ঢুকেছে নাকি আপনার শরীরে? বংশে কেউ একজন কোন নিয়ান্ডার্টাল মাগীর সাথে আকামকুকাম করেছে দেখেই তো এই অবস্থা, নাকি?"" বদরুল নীল খামটা ছুঁড়ে ফেলে লম্বা লম্বা পা ফেলে ল্যাব থেকে বেরিয়ে আসে। পেছনে লোকটা চেঁচাতে থাকে, ""ঠিকানাফিকানা সব টোকা আছে আমার কাছে। একদম ঘর থেকে পাকড়াও করে নিয়ে আসবো, পালাবেন কোথায় মশাই ...?""",False rn,"আলাপচারিতা ইদানিং খুব মনে হয়-আমি প্রকৃ্তিকে বেশী ভালোবাসলে তুমি প্রকৃ্তির মধ্যে সুন্দরতর প্রকৃ্তি।তোমাকেই ভালোবাসি।আর ঘর ছেড়ে বৈরাগী হলে তোমাকে নিয়েই হব।যেমন করে বেঁচে আছি তেমনি তোমাকে ভালোবাসি গো ভালোবাসি।মনে মনে বলি আমি খুব বেশী রোমান্টিক।তাই আমার এতো দিনেও বাস্তব বুদ্ধি হলো না। এখন গভীর রাত।আকাশ ঘন কালো মেঘে ভরা।আর কি ঠান্ডা বাতাস।মহাকাশের মাঝে যে বিশাল শূন্যতা,যে তীব্র নিঃঙ্গতার বেদনা যেন বুকের মধ্যে হাহাকার করে যেতে থাকে।তোমাকে ছাড়া সব কিছুই মিথ্যে মনে হয়।আমার নিজের খুশি হওয়া বা আনন্দ হওয়া নির্ভর করে তোমার উপর।তোমাকে হাসি খুশি দেখলে আমিও খুশি হয়ে যাই।তোমার মন খারাপ হলে আমার মন খারাপ হয়ে যায়।এখন তোমার দায়িত্ব বেড়ে গেলো।আমাকে হাসি খুশি রাখার জন্য তোমাকে ও হাসি খুশি থাকতে হবে। হিমি তোমাকে যা বলতে চাই,তা তোমার বুড়ো প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ আগেই বলে গেছেন।তাই তার কথাই আমার কথা- ""অক্সিজেন একভাবে বয় বাতাসে অদৃশ্য থেকে,সে না হলে প্রান বাঁচে না।আবার অক্সিজেন আর একভাবে কয়লার সঙ্গে যোগে জ্বলতে থাকে,সেই আগুন জীবনের নানা কাজে দরকার- দুটোর কোনোটাকেই বাদ দেয়া চলে না। জীবনে অনেক সুযোগ ঘটতে পারে কিন্তু ঘটে না।যে মানুষ অর্ধেক রাজত্ব আর রাজকন্যা এক সঙ্গেই মিলিয়ে পায় তার ভাগ্য ভালো;যে তা না পায়,দৈবক্রমে তার যদি ডান দিক থেকে মেলে রাজত্ব আর বাঁ দিক থেকে মেলে রাজকন্যা,সেও বড় কম সৌভাগ্যের নয়। আমি রোমান্সের পরমহংস।ভালোবাসার সত্যকে আমি এক'ই শক্তিতে জলে স্থলে উপলব্দি করি,আবার আকাশেও ।নদীর চরে রইল আমার পাকা দখল,আবার মানসের দিকে যখন যাএা করবো,সেটা হবে আকাশের ফাঁকা রাস্তায়।জয় হোক আমার হিমি'র।জয় হোক আমাদের আপনজন-প্রিয়জনদের।আর সব দিক থেকেই ধন্য হোক- 'এই আমি'। একটা কথা তোমাকে স্পষ্টই তোমাকে বলি।রুপক দিয়েই বলতে হবে,নইলে এসব কথার রুপ চলে যায়-কথা গুলো লজ্জিত হয়ে উঠে।তোমার সাথে আমার সম্পর্ক ভালোবাসার'ই।কিন্তু সে যেন কুয়ার তোলা জল- প্রতিদিন তুলব,প্রতিদিন ব্যবহার করব।আর তোমার সাথে আমার যে ভালোবাসা সে রইল দিঘি,সে ঘরে আনবার নয়,আমার মন তাতে সাঁতার দিবে।"" ""তোমারে হৃদয়ে রাখি সদানন্দ মনে থাকি শ্মশান অমরাবতী দুই ভালো লাগে। ভক্তি ভাবে এক তারে মজেছি তোমার ধ্যানে কমলার ধনমানে নাহি অভিলাষী।"" কবিতা টা কার বলতে পারবে? সব সময় মনে রেখ,এই চিঠি তুমি বার বার পড়বে।আচ্ছা তুমি কি আমার শূন্যতা উপলব্দি করতে পারো?আমি পৃথিবীর আর সবার মত না।আমার পৃথিবী অনেক গভীর।আমার প্রায়ই মনে হয় পৃথিবীর প্রথম মানব মানবীর শ্বাসবায়ু আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। মিতু ইদানিং আমার কিচ্ছু মনে থাকে না।তবে খুব বুঝতে পারি- মানুষ কঠিন পরিশ্রম করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভারেষ্টের চূঁড়ায় উঠতে যায়।মাঝে মাঝে হঠাৎ মনে হয় সব মানুষকে তার ব্যক্তিগত এভারেষ্টের চূড়ায় উঠতে হয়।মানুষের এই হচ্ছে নিয়তি। অজানা ভুবনের এক আকাশ অতলস্পর্শী ক্লান্তি আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে।পৃথিবীতে এত কষ্ট কেন?বুকের মধ্যে যেন কেমন করে।কোনো ভাষা ব্যাবহার করে এ ব্যাথাবোধ বোঝানোর উপায় নেই।তোমার জন্য মন টা হু হু করে।তবু আমি তোমার কাছে যাই না।তবে তুমি যদি সারা জীবন এই ভালোবাসা টিকিয়ে রাখতে পারো,তবে সে কৃতিত্ব তোমার। তোমার উপর কখনও রাগ করা উচিত নয় আমার।তুমি না পেরে না বুঝে অনেক কিছু কর।তবে তোমার অনেক আদর মায়া ভালোবাসা আছে।যা আমাকে জ্যোতিময় সত্যের পথ দেখায়।আমি বুঝি না এতটুকু শরীরে এত আদর মায়া ভালোবাসা তুমি কোথায় ধারন করো?আর কিছু ক্ষন পর আকাশ ফরসা হতে শুরু করবে।তোমার জন্য আমার খুব কষ্ট হয়।জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালাম।ভাবছি- চিঠি যে লিখে তার কৃতিত্বের চেয়ে অনেক বড় কৃ্তিত্ব যে চিঠি লিখিয়ে নেয় তার। তোমার চোখে কি দেখেছিলাম কে জানে!একজনের দু'টি চোখ আমার জীবনের সমস্ত চাওয়া,সমস্ত প্রাপ্তি.....! এই বিষাদ এবং ভালোবাসা,এই জ্বালা এবং শান্তি-এই সব কিছুই ভাগাভাগি করে- এক সঙ্গে বেঁচে থাকতে হবে। ""আমাকে নিয়ে নানান গল্প আছে সেই গল্পে আছে একটা ফাঁকি বিরাট একটা বৃও এঁকে নিয়ে ভেতরে নাকি আমি বসে থাকি। কেউ জানে না হিমি,তোমাকে বলি বৃও আমার মজার একটা খেলা বৃও কেন্দ্রে কেউ নেই,কেউ নেই আমি বাস করি বৃওের বাইরেই।"" সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০৭",False mk,"অস্ত্র প্রয়োজন, মাথা ব্যথা কেন_ রাশিয়ায় তিন দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। তার এই সফর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক এখনও পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় চলছে, চায়ের টেবিলও বাদ যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত বিরতি দিয়ে বিদেশ সফর করেন, কিন্তু অতীতে কখনও তার অন্য কোন সফর নিয়ে এত কথাবার্তা হয়েছে বলে মনে হয় না যেমনটি তার রাশিয়া সফর নিয়ে হচ্ছে। ১৯৭২ সালের পর বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের রাশিয়ায় এটি দ্বিতীয় দ্বিপাক্ষিক সফর, যদিও শেখ হাাসিনা ২০১০ সালের নবেম্বর মাসে টাইগার সামিটে যোগ দিতে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ সফরে গিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে ১ হতে ৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নতুন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাশিয়া সফর করেছিলেন। যদিও সে সফরটি ছিল একটি নতুন দেশের প্রধানমন্ত্রীর একটি বন্ধুপ্রতিম দেশে প্রথম সফর-তথাপি সেই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ তখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, চীন, মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশসমূহ বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। একাত্তরে আমদের মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক পরিম-লে রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) অসামান্য অবদান রেখেছিল। ১৯৭১ সালে ৩ ডিসেম্বর ঢাকা মুক্ত করার জন্য যখন চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয় তখন পাকিস্তানের বন্ধুরা সেই যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তিনটি পৃথক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব আনে যা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোর কারণে ভেস্তে যায়। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব যদি গৃহীত হতো তা হলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বের সামরিক ভারসাম্য নিশ্চিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক হয়েছে সত্য, কিন্তু এখনও পুরনো সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যে কয়েকটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে তার মধ্যে রাশিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী এবং জাতিসংঘে তার ভেটো প্রয়োগ ক্ষমতা অটুট রয়েছে। অন্যদিকে একবিংশ শতকে যে কটি দেশ প্রথম দিকে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে বলা হচ্ছে তার মধ্যে রাশিয়া অন্যতম। রাশিয়ার বর্তমান গড় উৎপাদনের পরিমাণ আনুমানিক ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ১৪ কোটি জনসংখ্যার এই দেশটিতে বাংলাদেশের মতো একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি করার অপার সম্ভাবনা রয়ে গেছে।বঙ্গবন্ধু এবং তার কন্যা শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের মাঝখানে প্রায় এক চল্লিশ বছর পার হয়েছে। এই একচল্লিশ বছরে রাশিয়ার সাথে আমাদের বন্ধুত্বের বেশ খানিকটা চিড় ধরেছে এবং ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ রাশিয়ার বেশ কয়েকজন কূটনীতিককে এই দেশ হতে বহিষ্কারও করেছে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়া আমাদের নতুন রাষ্ট্রদূত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং সে সময় আমাদের একটি বাণিজ্য মিশনের রাশিয়া সফর বাতিল করেছিল। অন্য কোন দেশের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাসে এমনটি পূর্বে কখনও ঘটেনি, অথচ এই রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়ন) বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ছিল একটি অসাধারণ বন্ধুপ্রতিম দেশ। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর তিন দিনের রাশিয়া সফর বাংলাদেশের কূটনীতির জন্য একটি বড় ধরনের অর্জন বলতে হবে। কারও কারও মতে হঠাৎ করে বাংলাদেশের এই ‘রাশিয়া অভিযান’ তার সাথে অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সাথে বিরাজমান সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই ‘অন্যান্য দেশ’ বলতে সাধারণত আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে বুঝিয়ে থাকি। এমনটি ঘটার কোন কারণ নেই। কারণ বর্তমান রাশিয়া আর সত্তর-আশির দশকের ঠা-া লড়াইয়ের যুগের ভøাদিমির লেনিন প্রতিষ্ঠিত সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের কোন মিল নেই। বর্তমান রাশিয়া সার্বিক অর্থেই একটি বাজার অর্থনীতির দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ই চায় রাশিয়ার সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নয়ন হোক। বাংলাদেশ রাশিয়া হতে চার বছরে যে এক বিলিয়ন ডলারের (আট হাজার কোটি টাকা) অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি করেছে তা নিয়ে বিভিন্ন জনে নানা প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করছেন। কেউ কেউ জেনে করছেন আর কেউ কেউ না জেনে ঢালাও মন্তব্য করছেন। কারও মতে, রাশিয়ার অস্ত্র নিম্নমানের, আবার অন্যরা বলেন রাশিয়া বাংলাদেশকে বোকা বানিয়ে তাদের পুরনো অস্ত্র গছিয়ে দেবে। এসব মন্তব্য যারা করেন তাদের এই বিষয়ে সঠিক তথ্যের প্রচ- ঘাটতি রয়েছে, অথচ আন্তর্জাতিক অস্ত্রবাজার সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য ইন্টারনেট টিপলেই তা সহজে পাওয়া যায় ।রাশিয়া হচ্ছে বর্তমান বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারক দেশ (২৪%)। তার উপরে আছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র (৩০%)। আবার সেই যুক্তরাষ্ট্রও রাশিয়া হতে সামরিক হেলিকপ্টার ক্রয় করে। ২০১১ সালে পেন্টাগন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রশোবোরনএক্সপোর্ট (Rosoboronexport) হতে ৪১১ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ২১টি এম-আই ১৭ হেলিকপ্টার ক্রয় করেছে। পেন্টাগন এটি স্বীকার করেছে, আফগানিস্তানের মতো দুর্গম এলাকায় চলাচলের জন্য এক ধরনের হেলিকপ্টারের কোন বিকল্প নেই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ফ্র্যাঙ্ক কেন্ডাল গত বছর ২৭ জুলাই এই বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে পেন্টাগন এমআই ১৭ এর কোন ভাল বিকল্প খুঁজে পায়নি।’ বাংলাদেশ অস্ত্রক্রয়ের যে চুক্তি করেছে তা এই মডেলের আরও উন্নত সংস্করণ, এম-আই ১৭১। শুধু রাশিয়া নয়, বাংলাদেশ যদি অন্য কোন দেশের সাথে অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি করে তাহলে সেই অস্ত্র সংযোজনের প্রতিটি পর্যায়ে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বহিনীর প্রকৌশলীরা পর্যবেক্ষণ করেন। তারা ছাড়পত্র দিলেই অস্ত্র সংযোজন কাজ শুরু হয়। এমনটি চলে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরে। আর যদি বংলাদেশ কোন দেশ হতে পুরনো অস্ত্র ক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় তা হলে অন্য কথা। সাধারণত যুদ্ধ জাহাজ ক্রয়ে অনেক সময় পুরনো জাহাজ ক্রয় করা হতে পারে। নতুন যুদ্ধজাহাজের আন্তর্জাতিক মূল্য অনেক বেশি। খুশির খবর, বাংলাদেশ এখন নিজেই যুদ্ধজাহাজ তৈরি করা শুরু করেছে। রাশিয়া হতে অস্ত্র ক্রয়ে চীনের নাখোশ হওয়ার কোন কারণ নেই, কারণ চীন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। এই কিছুদিন আগে বাংলাদেশ চীন হতে ক্রয় করা ৪৪টি ট্যাংক তার সাঁজোয়া বাহিনীতে সংযোজন করেছে। তবে চীনের সাথে সব সময় সব চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করে না। বিগত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ ১১৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চীন হতে ১৬টি এফ-৭ জঙ্গী বিমান ক্রয়ের চুক্তি করেছিল। চুক্তি সইয়ের এক মাসের মাথায় বাংলাদেশকে কিস্তি পরিশোধ শুরু করতে হয়, যদিও সে বিমানের কোন চালান তখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়নি। এই বছর চীনকে তার এই বিমান ক্রয় বাবদ শেষ কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। অন্যদিকে রাশিয়া হতে যে সমরাস্ত্র ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে তার প্রথম কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে ২০১৮ সাল হতে এবং দশ বছরে বিশ কিস্তিতে তা পরিশোধ করতে হবে; আর ক্রয় শেষ করতে হবে ২০১৭ সালের মধ্যে। কী কী অস্ত্র বা সরঞ্জাম বাংলাদেশ রাশিয়া হতে খরিদ করবে তার তালিকা বাংলাদেশে প্রস্তুত করবে। যে কোন মুহূর্তে বাংলাদেশ এই চুক্তি হতে বের হয়ে আসতে পারবে; তবে তার জন্য তাকে ০.৭৫% সাভিস চার্জ দিতে হবে।যুক্তারাষ্ট্র হতে বাংলাদেশে তেমন কোন সমরাস্ত্র ক্রয় করে না। তবে অতীতে জেনারেটর, ভারি উদ্ধার যান, পরিবহণ বিমান, ভ্রাম্যমাণ পানি শোধনাগার ক্রয় করেছে। পরিবহনের জন্য গাড়ি এসেছে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান আর কোরিয়া হতে। যুক্তরাজ্য হতে ক্রয় করেছে শব্দের দূরত্ব নির্ণয় যন্ত্রপাতি। বর্তমানে রাশিয়া হতে যে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের চুক্তি হয়েছে তার মাধ্য আছে এপিসিÑ ট্যাঙ্কের মতো দেখতে। ভিতরে দশ থেকে বারজন সৈনিক বসতে পারে। এমন যান বর্তমানে পুলিশেরও আছে। হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী রকেট, পন্টুন ব্রিজ, যা অনেক সময় রিলিফ কাজে ব্যবহার করা হয়। মোদ্দাকথা, এগুলোর সবই সেনাবাহিনীকে গতিশীল করবে। কোনটিই আক্রমণাত্মক সরঞ্জাম নয়। এই তালিকা ইতোমধ্যে সামরিক কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করেছে। আর যেহেতু রাশিয়ার সাথে চুক্তিটি হয়েছে দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে এবং সব সরবরাহই করা হবে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হতে সেহেতু এখানে কোন মধ্যস্বত্বভোগী নেই এবং কমিশন বাণিজ্যের কোন সুযোগও নেই। কেউ কেউ এই প্রশ্নও তুলেছেন, এই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে সামররিক সরঞ্জাম না কিনে তা কী শিক্ষা বা স্বাস্থ খাতে ব্যবহার করা যেত না? অবশ্যই ভাল এবং এটি আদর্শ প্রস্তাব। তবে বাস্তবে যেহেতু এই অর্থ রাশিয়া হতে নির্দিষ্ট খাতের জন্য ঋণ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে তা অন্য কোন খাতে ব্যবহার করা যাবে না। আর এই অর্থটি যাবে সামরিক বাজেট হতে। এই সব ক্রয়ের জন্য বাড়তি কোন বরাদ্দ নেই। শুনতে খারাপ লাগলেও দাতা গোষ্ঠী বা ঋণ সহায়তা দেশগুলোকারী যত সহজে মূলধনী যন্ত্রপাতি বা সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য অর্থ সাহায্য করতে চায় অথবা ঋণ দেয় তত সহজে শিক্ষা বা স্বাস্থ্য খাতে দিতে চায় না। শেখ হাসিনার পূর্ববর্তী সরকারের আমলে আমি তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর দফতরে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের শাটল ট্রেন চলাচল উন্নয়ন করার জন্য দেনদরবার করতে। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন তার জন্য কোন বাজেট বরাদ্দ নেই। তার অফিস কক্ষে বেশ বড় অনেক নবনির্মিত রেল সেতুর ছবি ছিল। তাকে বলি, এর একটার অর্থ দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেনের বেশ উন্নতি ঘটানো সম্ভব। তিনি জানালেন, এগুলো সবই বিদেশী সহায়তায় নির্মিত, আর তারা তাদের ভাষায় কোন অলাভজনক প্রকল্পের জন্য তেমন অর্থ যোগান দেয় না।চীন হতে বাংলাদেশ নিয়মিত সামিরক সরঞ্জাম ও অস্ত্র ক্রয় করে। তা নিয়ে তেমন কোন আলোচনা-সমালোচনা হয় না; যেমনটি রাশিয়ার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে এই সব সমালোচনা বেশ কৌতুকোদ্দীপক। যেমন চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন বিএনপি নেতা সেদিন টেলিভিশনের এক টকশোতে বলছিলেন, তার নেতা জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশ সেনা বাহিনীকে প্রথম আধুনিকায়ন করেছেন। তার কাছ হতে জানা গেলÑ একবার পাঁচত্তরের পনেরই অগাষ্টের পর জিয়া চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অবস্থানকালে সেনা সদস্যরা পতাকা নামানোর সময় তিনি আবিষ্কার করলেন স্যালুটের সময় সেনা বাহিনীর বুটের আওয়াজ নেই। পরে তাদের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন তাদের পায়ে কাপড়ের জুতা। সম্পূর্ণ একটি ডাহা অসত্য তথ্য। প্রথমত. পতাকা নামানোর কাজটি ঐতিহাসিকভাবে পুলিশের কাজÑ সেনাবাহিনীর নয়। সেনানিবাসের অভ্যন্তরে হলে তা অন্য কথা। দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগ পর্যন্ত জিয়া সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান ছিলেন। এই পদটি বঙ্গবন্ধু জিয়ার জন্যই সৃষ্টি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর এই পদটি বিলুপ্ত করা হয়। বঙ্গবন্ধু জিয়াকে পুত্রবত ¯েœহ করতেন। তো, একজন সেনা উপ-প্রধানকে কেন এত দেরিতে আবিষ্কার করতে হবেÑ সেনাবাহিনী কাপড়ের জুতা পরে তাদের ডিউটি করছেন? বাস্তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কখনও কাপড়ের জুতা পরে ডিউটি করেনি। মুক্তিযুদ্ধের পর আমার কমপক্ষে ডজন খানেক বন্ধু সেনাবাহিনীতে থেকে গিয়েছিলেন। সেদিন তিনি আরও প্রশ্ন করলেন কার জন্য এত সব ট্যাঙ্ক ক্রয়? আমাদের তিন দিকে মিত্রদেশ ভারত। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। ট্যাঙ্কগুলো কী আমরা বঙ্গোপসাগরে চালাব? তিনি ক্রয় তালিকায় ট্যাঙ্ক কোথায় পেলেন তা বোঝা গেল না। আর ট্যাঙ্ক থাকলেও অসুবিধা কী? কোন দেশ তো বর্তমানে অন্য দেশ আক্রমণ করার জন্য সমরাস্ত্র ক্রয় করে না। নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য এসবের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ তার প্রথম ট্যাঙ্ক সংগ্রহ করেছিল বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে, মিসর হতে। তাও রাশিয়ায় প্রস্তুতকৃত। সেই ট্যাঙ্ক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, রাশিয়ার সাথে চুক্তির আওতায় যে অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করা হবে তা মূলত জাতিসংঘ শান্তি রক্ষাবাহিনীতে ব্যবহারের জন্য। একজন সৈনিকের জুতা হতে শুরু করে পানির ট্যাঙ্ক, আসবাবপত্র, তাঁবু, ট্যাঙ্ক অথবা গাড়ি যা-ই আমাদের শান্তিরক্ষা বাহিনী তাদের কাজে ব্যবহার করে তার প্রত্যেকটিরই ভাড়া দেয় জাতিসংঘ। যেমন ১৯৯৯ সালে সাড়ে চার লাখ ডলার দিয়ে যে এপিসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চীন হতে ক্রয় করেছে তার মাসিক ভাড়া আট হাজার ডলার। পাঁচ বছরে প্রতিটি এপিসির দাম উঠে এসেছে আর এপিসিগুলিও বাংলাদেশের রয়ে গেছে। শান্তিরক্ষা মিশনে একটি যুদ্ধবিমান উড়লে ঘণ্টায় বাংলাদেশ জাতিসংঘ হতে আড়াই হাজার ডলার ভাড়া পায়। আনুমানিক তিন বছরে এর মূল্য উঠে আসে। দেশে ফেরার সময় এই বিমান আমরা দেশে নিয়ে আসি। বর্তমান সরকারের আমলে মিয়ানমারের সাথে আমাদের সমুদ্রসীমানা চিহ্নিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশে বঙ্গোপসাগরের এক বিশাল এলাকাজুড়ে তার সার্বভৌমত্ব কায়েম করেছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারে বিমান বাহিনীর জন্য একটি নতুন ঘাঁটি স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান বর্তমানে কৌশলগত দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসবের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে অবশ্যই একটি আধুনিক সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তুলতে হবে। কোন দল ক্ষমতায় থাকল তা তেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই কথাগুলো কোন টকশোতে তেমন একটা কেউ বলেন না। সরকারের টকশো সমালোচকরা হয় অজ্ঞতা কারণে এসব তথ্য সাধারণ মানুষকে পরিবেশন করেন না অথবা জেনেশুনে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেন।রাশিয়া হতে অস্ত্রক্রয় চুক্তি নিয়ে সশস্ত্র বাহিনী ছাড়াও খোদ প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। এটিও একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় এমনটিই হওয়া উচিত। এটি ঠিক যে, অনেক সময় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কারণে অনেক তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরা যায় না। তবে যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু কখনও করা হয় না। সে সব তথ্য ভিন্ন দেশের প্রকাশিত তথ্যের সূত্র ধরে জনগণকে জানতে হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী বা সশস্ত্র বাহিনী যতই বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দিক না কেন ব্যারিস্টার মওদুদ-তরিকুল ইসলাম গং এসব নিয়ে আরও কিছুদিন অপরাজনীতি করতেই থাকবেন। তবে এতে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়। বঙ্গবন্ধু একটি আধুনিক সেনাবাহিনীর গোড়াপত্তন করেছিলেন। এটি এখন বিশ্বে একটি সম্মানিত সেনাবাহিনী। তবে এই সেনাবাহিনীর কিছু বিপদগামী সদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু আর জিয়া নিহত হয়েছেন। তাদের কিছু ক্ষমতালোভী কর্মকর্তা দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জবরদখল করার জন্য ব্যবহার করেছেন। এদের কারণেই এক-এগারোর পর একটি অসাংবিধানিক সরকার জোর করে দুই বছর রাষ্ট্র-ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। দেশের মানুষ আশা করে আগামীতে তেমন কোন ক্ষমতালোভী গোষ্ঠীর হাতে তারা আর কখনও ব্যবহৃত হবেন না।",False mk,"হেফাজতের তাণ্ডবে ক্ষতি ও নারীর অগ্রগতি ১। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, গত ৫ মে হেফাজতে ইসলামের কারণে শুধু ২২টি ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে ২৪ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার ৫৫০ টাকা। চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসাবে ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপী ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৫১ হাজার ১৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এছাড়া দেশের জনসংখ্যার হিসাবে জনপ্রতি বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ হচ্ছে সাড়ে ১১ হাজার টাকা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ চার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করেছে। একই সময়ে সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হলে টেবিলে উপস্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী। বিএনপির মোসাম্মৎ শাম্মী আক্তারের লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলী ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত ট্রেজারি বিল এবং বন্ডের মাধ্যমে দুই লাখ তিন হাজার ৯২৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। একই সঙ্গে পরিশোধ করা হয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু সংক্রান্ত সরকারি দলের মুহিবুর রহমান মানিকের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অনুদান গ্রহণের লক্ষ্যে ৪৭টি ব্যাংকের সবগুলো শাখায় হিসাব খোলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর সেই হিসাবে জমাকৃত অর্থের বিবরণী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা থাকে। চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে স্বেচ্ছা অনুদান সহায়তা (নিবাসী)’ হিসাবে এক লাখ ১৭ হাজার ৫২ টাকা ২২ পয়সা জমা হয়েছে। এছাড়া ‘পদ্মা সেতু নির্মানে স্বেচ্ছা অনুদান সহায়তা (অনিবাসী)’ হিসাবে সংগৃহীত বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ হচ্ছে এক হাজার মার্কিন ডলার। নাজিম উদ্দিন আহমদের লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার জনপ্রতি বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ প্রায় ১১৪ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় সাড়ে ১১ হাজার টাকা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করেছে ৫৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৩৪ দশমিক আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ এবং ২৪ দশমিক ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, বৈদেশিক সাহায্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় অবকাঠামো ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচীতে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ব্যয় জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের আসল সাত হাজার ৯০৫ কোটি টাকা এবং সুদ হিসাবে এক হাজার ৭২৫ কোটি টাকা বাজেটে বরাদ্দ রাখ হয়েছে। বেগম রেহানা আক্তার রানুর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে কিছু ঘাটতি থাকতে পারে। গত এপ্রিল পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৮৩ হাজার ৩১ কোটি তিন লাখ টাকা। এ সময়ের মধ্যে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৭ হাজার ২৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ছয় হাজার ৯৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে। বেগম নাসরিন জাহান রতনার প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ৩১ মে পর্যন্ত দেশের সবগুলো স্থলবন্দর থেকে ১৬ হাজার ৬৪৯ কোটি ২০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। নুরুন্নবী চৌধুরীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রাক্কালে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৩৪৯ দশমিক ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৭ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক বিশ্বে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সংসদ নেতা ও সরকারপ্রধান একজন নারী। সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা এবং স্পীকারও নারী। বাংলাদেশের এ অর্জন অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখছে। নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন এবং বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক তৈরির লক্ষ্যে সোমবার ঢাকায় কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দশম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সকল ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। নারীর সার্বিক ক্ষমতায়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। দরিদ্র এবং সুযোগ বঞ্চিত নারীদের ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল কমলেশ শর্মা এবং সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ৩০ দেশের প্রতিনিধিরা। তিন দিনব্যাপী সম্মেলনটিতে অংশ নিয়েছেন কমনওয়েলথ সদস্যভুক্ত বিভিন্ন দেশের ১৫ জন মন্ত্রীসহ ৩০টি দেশের সংশ্লিষ্ট উধর্তন কর্মকর্তারা। যৌথভাবে সম্মেলনটির আয়োজন করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য অধিদফতর এবং কমনওয়েলথ সচিবালয়। এই বৈঠকে কমনওয়েলথ দেশগুলোতে নারীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং সমতা নিশ্চিতকরণে অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় ঠিক করা হবে। ত্রিবার্ষিক এ বৈঠকের এবারের প্রতিপাদ্য ‘উদ্যোক্তা উন্নয়নে নারীর নেতৃত্ব।’ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে নারীর ক্ষমতায়ন দ্রুততর হবে। যদিও পুরুষ শাসিত বিশ্বসমাজে কাজটি করা এতো সহজ নয়। এই চ্যালেঞ্জকে বিবেচনায় নিয়ে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমান সরকার সকল ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। নারীর সার্বিক ক্ষমতায়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। দরিদ্র এবং সুযোগ বঞ্চিত নারীদের ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু নারীর এ অগ্রযাত্রাকে স্থায়ী রূপ দিতে ১৯৭২ সালের সংবিধানে সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা অন্তর্ভুক্ত করেন। নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। সংসদে নারীর জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষণ করেন। আওয়ামী লীগ সরকার নারী আসন সংখ্যা ৫০এ উন্নীত করেছে। বর্তমানে জাতীয় সংসদে ৭০ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন, যা মোট সদস্যের শতকরা ২০ ভাগ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক বিশ্বে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সংসদ নেতা ও সরকার প্রধান একজন নারী। সংসদ উপনেতা ও বিরোধীদলীয় নেতা নারী। সংসদের স্পীকারও এক জন নারী। মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ ৬ জন নারী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। স্থানীয় সরকারেও প্রায় ১৪ হাজার ২শ’ নারী নির্বাচিত হয়ে জনসেবা করছেন। এই অর্জন অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীরা দায়িত্ব পালন করছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও নারী পুলিশরা শান্তিরক্ষী হিসেবে অবদান রাখছেন। সরকারী চাকরিতে নারীর জন্য কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে শতকরা ৬০ ভাগ নারী কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করেছি। এর আওতায় বিভিন্ন সংস্থা নারী উন্নয়ন কেন্দ্রিক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করতে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। বাজেট বরাদ্দের শতকরা প্রায় ২৮ ভাগ নারী উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে। মাতৃকালীন ছুটি বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়েছে।’ তিনি জানান, এ সরকারের সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় প্রায় ৩৩ লাখ দরিদ্র, দুস্থ, বিধবা ও বয়স্ক নারীকে মাসিক ভাতা দেয়া হচ্ছে। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ২ লাখেরও বেশি দরিদ্র গর্ভবতী মা ও কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাকে মাসিক ভাতা দেয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের সমাজের অংশ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। দুস্থ মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। দেশের ৯ লাখ ২০ হাজার নারীকে এই কর্মসূচীর আওতায় আনা হয়েছে। নারী দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে নারী শিক্ষায় যুগান্তকারী পরিবর্তন ও উন্নয়ন হয়েছে। নারী শিক্ষিত হচ্ছে। এর ফলে নারী উন্নয়নে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। তাদের জীবন মানের উন্নয়ন হয়েছে। তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। নারীরা এখন অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নারীরা এখন অর্থনীতিসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারছে। কৃষি উন্নয়নে অবদান রাখতে পারছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এর গতি অত্যন্ত মন্থর। উন্নত বিশ্বেও চাকরি, বেতন-ভাতা, অন্যান্য সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামির শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, নারীর সমঅধিকার নিশ্চিতে দেশের ভেতরে-বাইরে সর্বত্র সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। সম্মিলিতভাবে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। বিশ্ব অঙ্গনে নারীর ভূমিকা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ এ ধরনের আন্তর্জাতিক উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ জন্য নারীর আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি, এই বৈঠকের মাধ্যমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ পাব। যা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যা কমবে।’ উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে- কীভাবে কমনওয়েলথ এবং সদস্যভুক্ত দেশগুলোর নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে তার একটি রোডম্যাপ তৈরি করা। ১৯৮৫ সাল থেকে প্রতি তিন বছর পর পর কমনওয়েলথ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়গুলোর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক বৈঠকের প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর কিছু অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয় এবং পরবর্তী তিন বছরে তা বাস্তবায়ন করা হয়। এদিকে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক গ্রুপ আলোচনা হবে। সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে প্লেনারি সেশন। এতে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল কমলেশ শর্মা। এতে ‘কমনওয়েলথে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রে নারী নেতৃত্ব’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ব্যবসা ও পেশাজীবী নারীদের আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ফ্রিদা মিরিখলিস। এরপর সম্মেলনের উপজীব্য এবং নারী উদ্যোক্তা, টেকসই উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিতে জেন্ডার সমতা বিষয়ে তিনটি পৃথক আলোচনা হবে। এ ছাড়া বেসরকারী খাতে নারীর কর্পোরেট নেতৃত্ব বিষয়ে আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হবে সন্ধ্যা ৬টায় হোটেল রূপসী বাংলায়। এটা আয়োজন করবে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা। সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১০:১৬",False mk,"উই নিড মোর বার্ন ইউনিট! ট্রাকে বালু নিয়ে যাচ্ছিলেন চালক ও হেলপার। সেই বালু নামানোর জন্য ছিলেন আরো ছয় শ্রমিক। মাগুরার আড়পাড়া এলাকায় বালু নামিয়ে দ্রুত বাড়ি ফেরার তাগিদ থাকায় গত শনিবার দুপুরের খাবারের কথা একরকম ভুলেই গিয়েছিলেন তাঁরা। সকালে তাঁদের সঙ্গে ছিল চারজনের খাবার, তা-ই ভাগ করে খেয়েছিলেন ৯ জন। বিকেলে বাড়ি ফিরে পেট ভরে ভাত খাওয়া যাবে- এমন চিন্তা নিয়েই ফিরছিলেন বাড়ি; কিন্তু আর ফেরা হয়নি। হাড়ভাঙা খাটুনির পর ক্ষুধার্ত সেই শ্রমিকদের খাবার খাওয়ার সুযোগ দেয়নি দুর্বৃত্তরা। অবরোধে পেট্রলবোমার আগুনে পুড়ে এরই মধ্যে না-ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনজন। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বাকি ছয়জন। তাঁদের মধ্যে ইয়াদুল মোল্লার শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গেছে। বার্ন ইউনিটে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিনি।ইয়াদুল শেষবার কথা বলেছিলেন রবিবার সকালে। জ্ঞান ফিরতেই কাতরকণ্ঠে স্বজনদের কাছে খাবার চেয়েছেন তিনি। গত শনিবার রাতে দগ্ধ হওয়ার পরও একবার জ্ঞান ফিরেছিল ইয়াদুলের। তখনো স্বজনদের কাছে খাবার চেয়ে আকুতি জানান তিনি। স্বজনরা শেষবারের মতো তাঁর মুখে খাবার তুলে দিতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছে। ইয়াদুলের বোন জাকিয়া বেগম ও চাচাতো ভাই মাজেদুল মোল্লা গতকাল সোমবার এ শঙ্কার কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। জাকিয়া বেগম বিলাপ করে বলেন, 'হুঁশ ফিরছিল দুইবার। সারাডা শরীর পোড়া। ঠিকমতো কথা কইতে পারে নাই। হুঁশ ফিরা কয় খাইতে দেও। আমার ভাইডা দুইডা ভাতও খাইতে পারল না।'মাজেদুল মোল্লা বলেন, 'আমার ভাই শাকিল ভুক (ক্ষুধা) নিয়াই মইরা গেল।সারা দিন কাম করলে কী পরিমাণ খিদা লাগে কন? ইয়াদুলেরও শরীরডা নাই! ডাক্তাররা আশা ছাইরা দিছে। হেই মানুষটা হুঁশ ফিরা খাওন চায়। শাকিলরে পারলাম না একটু খাওয়াইতে, ভাই ইয়াদুল আর বোনজামাই (ভগ্নিপতি) ইমরানরেও পারমু না হয়তো।' এসব কথা বলতে বলতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন মাজেদুল।জানা যায়, গত শনিবার রাতে মাগুরার মঘীরঢাল এলাকায় ট্রাকে পেট্রলবোমার আগুনে দগ্ধ ৯ জনের মধ্যে তিনজনই মাজেদুল ও জাকিয়ার স্বজন। ট্রাকটির হেলপার ইয়াদুল ও নিহত শ্রমিক শাকিল মোল্লা চাচাতো ভাই। চালক ইমরানের স্ত্রী লাবলী হলেন ইয়াদুলের বোন। ইমরান ট্রাকের চালক হওয়ার সুবাদে ইয়াদুল সহকারী হিসেবে কাজ নেন। চালক হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণও তাঁর শেষ হয়েছিল। শিগগিরই অন্য ট্রাকে চালকের কাজ নেওয়ার কথা ছিল ইয়াদুলের। ইমরান আর ইয়াদুলের সূত্রেই ওই ট্রাকে কাজ করতে যান মাগুরার মালিগ্রাম এলাকার আরো ছয় শ্রমিক। তাঁদের মধ্যেও চারজন একে অপরের আত্মীয়।স্বজনরা জানায়, দগ্ধ চালক ইমরানের বাড়ি ফরিদপুরের কামারখালী এলাকায়। তাঁর শরীরের ৬০ শতাংশই পুড়ে গেছে। গতকাল বার্ন ইউনিটের এইচডিইউতে গোঙানি ছাড়া তাঁর কোনো কথা শোনা যায়নি। স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে ইমরানকে। অল্প কথা বলতে পারছেন তিনি। এর মধ্যে দুইবার স্বজনদের কাছে না খেয়ে থাকার কথা বলেছেন ইমরান।ইয়াদুলের বোন জাকিয়া জানান, মাগুরার মালিগ্রামের মৃত জহুর মোল্লার ছয় মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ষষ্ঠ ইয়াদুল। বাবার মৃত্যুর সময় ইয়াদুলের বয়স ছিল পাঁচ বছর। এরপর কৈশোরেই সংসারের হাল ধরেন তিনি। দিনমজুরি করে চার বোনের বিয়ে দিয়েছেন ইয়াদুলই। বৃদ্ধ মা আয়েশা বেগমকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। ভগ্নিপতির সঙ্গে থেকে গাড়ি চালনা শিখেছিলেন। স্বপ্ন ছিল চালক হয়েই বিয়ে করবেন। সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। 'ভাইডা মইরা গেলে মারে ক্যামনে বাঁচামু, এই চিন্তায় আছি। আমাগো দিকে কে চাইবো? একটাই ভাই আমাগো...।'আরব আলীর চোখে বিভীষিকা : বার্ন ইউনিটে শয্যায় কাতরাচ্ছেন বালু শ্রমিক আরব আলী। তাঁর গোঙানির শব্দের সঙ্গে যেন যোগ হয়েছে আর্তনাদ। ব্যান্ডেজে মোড়ানো এ যুবকের চোখে এখন শঙ্কার রেখা। ভয়ে কেঁপে উঠছেন বারবার। কাঁপাকণ্ঠে বললেন, 'আমার চোখের সামনে শেষ হইয়া গেল। কাউরে বাঁচাইতে পারলাম না। নিজেও বাঁচলাম না। চোখে যেন কেয়ামত দেখলাম।''হঠাৎ শব্দ, আগুনের গোলা' : আরব আলীর পাশের শয্যায় কাতরাচ্ছেন তাঁরই চাচা ইলিয়াস বিশ্বাস। একই সঙ্গে পুড়েছিলেন আরেক চাচা রওশন ও চাচাতো ভাই মতিন। শনিবার রাতে রওশন এবং রবিবার মতিন মারা গেছেন আরবের সামনেই। আরবের শরীরের ২৯ শতাংশ পুড়েছে। ঘটনার ব্যাপারে তিনি বলেন, 'হঠাৎ শব্দ, আগুনের গোলা। এরপর গাড়ি ক্যামনে পড়ল আর আমি কিভাবে পড়লাম মনে করতে পারছি না। খালি আগুন আর আগুন। বাঁচার জন্য চিৎকার দিতে দিতে অজ্ঞান হইয়া যাই। পরে দেখি হাসপাতালে।' ইলিয়াসের শরীরের ৫০ শতাংশই পুড়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ইয়াদুল, ইমরানের মতোই বেশি সংকটে আছেন ইলিয়াস। শ্বাসনালি পোড়ার কারণে মাগুরায় দগ্ধ সব রোগীই আশঙ্কাজনক। অপর দুই শ্রমজীবী ফারুকের শরীরের ২৮ শতাংশ এবং নাজমুলের শরীরের ২০ শতাংশ পুড়েছে।বার্ন ইউনিটে এখনো ২৮ জন : ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল গতকাল বলেন, 'মাগুরার রোগীসহ এখন আমাদের কাছে ২৮ জন রোগী আছে। তাদের মধ্যে মাগুরায় দগ্ধ ইয়াদুল ও চাঁদপুরে দগ্ধ খোরশেদকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। সংকটাপন্ন সব রোগীকে পর্যবেক্ষণে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।'প্রকাশিত: দৈনিক কালের কণ্ঠ",False rg,"১৩ দিন গার্মেন্টসে কাজ করেছিলাম।। রেজা ঘটক পোষাক শিল্পের সুতা থেকে যন্ত্রপাতি-মেশিনারি ইত্যাদি আমাদানি ব্যয়টা সাধারণ মানুষের জানা প্রয়োজন। কোনো টক শো বা সরকারের কোনো মন্ত্রীর মুখে এই আমদানি ব্যয়ের হিসেবের কথা শোনা যায় না। পোষাক শিল্পের রপ্তানি থেকে দেশের যে আয় হয়, তা থেকে এই আমদানি ব্যয় বাদ দিলেই সত্যিকারের বৈদেশিক মুদ্রায় আয়ের চেহারা বেরিয়ে আসবে। কিন্তু আমরা কেবল সবখানেই শুনি, হাজার হাজার বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের কথা। পোষাক শিল্পের আমদানি ব্যয়ের কথা কালেভদ্রেও শোনা যায় না কেন? কারণ তখন আর মালিকরা আয়ের সংখ্যাটা বড় বলে দাবি করতে পারবে না। আসল কথা হল, দেশের শ্রমিকদের সকল মালিকশ্রেণীরাই শোষণ করে। আর তৈরি পোষাক শিল্পে সেই শোষণের কোনো মা-বাপ নেই। সেখানে প্রত্যেক মালিকের অধিনে যে ৫/৬/৭ হাজার শ্রমিক কাজ করেন, তারা সবাই গিনিপিগ। শ্রমের যথাযথ মূল্য না দিয়ে সস্তায় তারা কাজ করিয়ে নেয়। আর শ্রমিক শোষণের পাশাপাশি এইসব কথিত মালিকরা আবার নির্যাতনও চালায়। সেই নির্যাতন চাকরি বাঁচাতে গরিব শ্রমিকরা নিরবে মেনে নিয়ে কাজ করেন। শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ ঠিক করার দিকে তাদের কোনো নজর নেই। শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে তাদের কোনো উৎসাহ নেই। কারখানায় আগুন লাগলে গেইটে তালা লাগিয়ে দেয় মালিক নামের শুয়োররা। গার্মেন্টসে আমার তেরো দিন কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতায় সেখানকার চিত্র দেখার সৌভাগ্যও আমার হয়েছিল। ২০১০ সালে আমি একটি তৈরি পোষাক শিল্পে প্লানিং বিভাগে কাজ করেছিলাম। আমাদের জাতীয় ফুটবল দল, জাতীয় ক্রিকেট দল, এবং স্থানীয় সকল ফুটবল ও ক্রিকেট দলের জার্সি বানায় এরা। তো মালিক জানতে চাইলেন, আমার বেতন কতো দিতে হবে? আমি বললাম, বয়স যেহেতু ৪০ হয়েছে, তাই বয়সের হিসেবে হলেও ৪০ হাজার দিতে হয়। মালিক বললেন, এই পোষ্টে আগে যে ছেলেটি ছিল সে ১৫ হাজার টাকা বেতন নিতো। ছেলেটি অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে। তাই আপনাকে নিতে চাই। প্রথমে আমার বেতন নিয়ে দরকষাকষির এক পর্যায়ে আমি বললাম, ঠিক আছে ৩৫ হাজার দিয়েন। বলে আমি চলে আসি। আমি তখন মগবাজারে পালাকারের গ্রুপে থাকি। বাংলা মটর ওভার ব্রিজ যখন ক্রোস করছি তথন আবার সেই মালিকের ফোন। বললেন, আরেকটু কম দিতে চাই। আপনি আমার সাথে কাজ করেন। আমি বললাম, ৩৫ হাজারের নিচে আমি করব না। সন্ধ্যায় তিনি আবার ফোন দিলেন। সেই একই ক্যাচাল। আরেকটু কমান। আমি সরাসরি বলে দিলাম ৩০ হাজারের নিচে আমার পক্ষে সম্ভব না। তিনি রাজি হলেন। পরদিন সকাল থেকে আমাকে অফিস করতে বললেন। আমি পরদিন সকালে অফিসে গেলাম। মালিকের রুমেই আমার বসার ব্যবস্থা করলেন। আমাকে ওনার বায়ার লিস্ট দিয়ে বললেন, সবার সঙ্গে ফোন করে পরিচয় হবেন। আর নতুন কোনো বায়ার পাওয়ার চেষ্টা করেন। যে ছেলেটি আমার এসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ করবে সে বললো, রহিম আফরোজের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। ওনাদের একটা বড় কাজ হবে। আপনি একটু কথা বলেন। আমি কথা বলে পরদিন মিটিংয়ের সিডিউল করলাম। রহিম আফরোজের ফ্যাক্টরি অফিস সাভারে। বিকেএসপি'র ঠিক উল্টো পাশে। ওই ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে আমি পরদিন গেলাম। রহিম আফরোজের ইভেন্টটি খুব নিকটে থাকায় তাদের বিকল্প গার্মেন্টস খোঁজার সময় নেই। আমাদের স্যামপল আর কোয়ালিটি দেখে তারা ৪৪ লাখ টাকার ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে দিলেন। ছেলেটি আমাকে বললো, আপনি খুব লাকি। স্যার খুব খুশি হবেন। চাকরির তৃতীয় দিনেই ৪৪ লাখ টাকার ওয়ার্ক অর্ডার বাগিয়ে আমিও খুশি। পরদিন আমাকে পাঠানো হল গুলশান। সেভরনের সঙ্গে মিটিং করতে। আমি ছেলেটিকে সঙ্গে নিলাম। কারণ সে অফিস চেনে। সেভরনে নিয়মিত কাজের আরো কিছু অর্ডার নিয়ে আমরা গেলাম গ্রামীন ফোনে। তাদের একটি ইভেন্টে তারাও কিছু টি-শার্টের অর্ডার দিল। সেখান থেকে বনানী। আমোরা নামে একটি প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড কাপ ত্রিকেটের জার্সি বানানো নিয়ে আর একটি ইভেন্ট নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বললো। সন্ধ্যায় জিগাতলার অফিসে ফিরে মালিককে বললাম, মার্কেটিংয়ের কাজ কিন্তু আমি করব না। তিনি বললেন, আগে সবার সঙ্গে পরিচিত হন। আর ফাঁকে ফাঁকে প্লানিং করবেন। চালাকিটা আমি ধরে ফেলেছি। পরদিন আমাকে পাঠালো হোটেল শেরাটনে। তারা কিছু টি-শার্টের অর্ডার দিলেন। শেরাটনের পিআরও আবার মালিকের বন্ধু। আমার সঙ্গে রাত নয়টায় ধানমন্ডি খেলার মাঠে আরেকটা মিটিং করবেন। এবার মালিকও আমার সঙ্গে চললেন। আমার মিটিং শেষে তারা দুই বন্ধু সেখানে আড্ডা মারেন। আমার যিনি তখন মালিক তিনি বিসিবি'র একজন প্রাক্তন পরিচালক এবং আবাহনী ক্রিকেট দলের প্রাক্তন ক্যাপ্তেন। কথা বার্তায় বেশ আমুদে লোক। তারা একটা পিকনিক করবেন। আমাকে ইভেন্টের দায়িত্ব দিলেন। পরিদন আমি সেই প্লান করলাম। আর ধানমন্ডি ও এলিফ্যান্ট রোডে মালিকের তিনটি ব্যাংক একাউন্টের চলতি হিসাব আপডেট করে সার্টিফিকেট নিলাম। এলিফ্যান্ট রোডের উত্তরা ব্যাংক শাখা দুপুরে সার্টিফিকেট দিলেন। শংকর বাসস্ট্যান্ডের ব্র্যাক ব্যাংক শাখা বিকালে দিলেন। আর চার্টার্ড স্ট্যান্ডার্ট ব্যাংকে মালিকের মেয়ের বান্ধবীর কাছে সব জমা দিলাম মালিকের ইচ্ছায়। সেটি সেদিন পাওয়া গেল না। সেটা হাতে পেতে বৃধবার পেরিয়ে রবিবারে চলে গেল। মালিকের মূসক সার্টিফিকেটের জন্য ব্যাংক আপডেট সার্টিফিকেট লাগবে। আমি মালিককে বললাম, আপনার পরিচিত লোকই ঠেকিয়ে দিল। নইলে ওটাও আজ পেতাম। মালিক আবার অবসরে একটু লেখালেখি করেন। রাত আটটার পর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত জিগাতলায় ওনা বাসায় আবার আমি ওনার সেই লেখার এডিটর। কাজের বহর দেখে আমি বললাম, শোনেন, আপনার সঙ্গে আমার কথা ছিল সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আমার ফরমাল অফিস। এর বাইরে আমাকে কাজ করাতে চাইলে আবার বেতন নিয়ে আমাদের বসতে হবে। মালিক খুব চালাক। আমাকে বললেন, হ্যা সেজন্য তোমাকে আলাদা টাকা দেব। ইতোমধ্যে আমাকে তিনি তুমি বলা শুরু করেছেন তার বাসায় এক রাতে সাড়ে দশটা পর্যন্ত এডিটরের কাজের কারণে। ওয়ার্ল্ড কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের জার্সির কাজটা পাওয়ার জন্য তিনি তার বন্ধু মোস্তফা কামাল (বিসিবির সভাপতি) কে ফোন দিলেন। তাদের তুই তুই সম্পর্ক। পরদিন আমাকে কামাল সাহেবের কাছে পাঠাবেন। কিন্তু পরদিন সকালে বললেন, আজ অফিসে বসেন। কামাল দেশে নাই। দুপুরে দুবাই যাচ্ছে। সেদিন আমাদের অফিসের একটি ছেলে নারায়নগঞ্জে গেছিল সুতা রঙ করাতে। সুতা নিয়ে ফেরার সময় সে একসিডেন্ট করেছে ফতুল্লায়। আমরা সবাই সেই ছেলেটিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। সেদিন আমি দেখলাম মালিক কিভাবে শ্রমিকদের সঙ্গে মিসবিহাব করে। সবাইকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছিলেন। ঘটনা থামার পর আমাকে গরম মেজাজ নিয়ে জানতে চাইলেন, তুমি সারাদিন কি করেছো? জবাবে আমি বললাম, শোনেন, আমার সঙ্গে ওই টোনে কথা বলে যাবে না। আগে আপনার টোন নামান। তারপর কথা বলি। তিনি স্বাভাবিক হয়ে আমাকে বললেন, চলেন আমার বাসায়। ওনার বাসায় গিয়ে আবার সেই এডিটিং। আমি বললাম, এসব করার আগে আমার একটা কথা আছে। আমি আপনার এখানে জয়েন করার সময় দুটো শর্ত ছিল। এক বেতন দুই কাজের সময়। আপনি দু্টো শর্তই ভঙ্গ করেছেন এই বারো দিনে। অলরেডি আমার বেতন ২৭ হাজার ৫০০ তে ফাইনাল হয়েছে। আর কাজের টাইম সন্ধ্যা ছয়টা পেরিয়ে রাত দশটা সাড়ে দশটায় চলে যায়। আমি বললাম, শোনেন, আপনি আমার সঙ্গে দুটো শর্তই ভঙ্গ করেছেন। আমি আপনার অফিসে সন্ধ্যা ছয়টার পর এক মিনিট থাকবো না। নইলে আমি নাই। আর আপনার লেখার বিষয়ে আলাদা শর্তে কাজ করব। চুক্তিভিত্তিকও হতে পারে। আমাকে সব বুঝিয়ে দেবেন। আমি আমার অবসরে বাসায় করবো ওটা। আপনার বাসায় করতে পারব না। পরদিন আমি অফিসে গেলাম। উনি অফিসে না এসে আমাকে বাসায় যাবার জন্যে বললেন। উনি নাকি অসুস্থ। আমি যাবার পর বললেন, আমি তো হজে যাবো। তার আগে আপনাকে কিছু বাড়তি কাজের দায়িত্ব দিতে চাই। হজ্ব শেষে উনি আবার আমেরিকায় মেয়ের কাছে বেড়াতে যাবেন। ফিরতে প্রায় তিন মাস লাগবে। নতুন কাজ কি? সেটা বলঅর আগে বললেন, আমি আসার পর আপনি বেতন ৩০ হাজার করেই পাবেন। এই তিন মাস আপনার প্রবেশনারি পিরিয়ড। এই তিন মাসে আমার অনুপস্থিতে মাসে ১৫ হাজার করে পাবেন। আমি বললাম, তার আর দরকার নেই। আমি চললাম। আসার আগে বললাম , আপনি হজ্বে যাচ্ছেন ভালো কথা। কিন্তু আপনার হজ্ব হবে না। কারণ আপনার মাথায় মানুষ ঠকানোর বুদ্ধি কাজ করে। বলেই আমি সোজা চলে আসি। পরে উনি অন্তঃত ১৫ বার ফোন দিয়েছেন। আমি আর রাজি হইনি। হজ্বে যাবার আগে আমাকে ফোন করেছেন। দোয়া চেয়েছেন। হজ্ব করে আমেরিকা লন্ডন ঘুরে ফিরে আসলেন প্রায় চার মাস পর। এসেই আবার আমাকে ফোন করলেন। প্রথম বক্তব্য, মক্কায় বসে ওনার বারবার নাকি আমার কথাটি কানে বেজেছে। যে আপনার হজ্ব হবে না। কারণ আপনার মাথায় মানুষ ঠকানোর বুদ্ধি কাজ করে। তার দুই তিন মাস পরে তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। লোকটি ব্যক্তি জীবনে খেলোয়ার ছিলেন। তাই মুখের কথাবার্তা ভালো। লোক হাসাতে জানতেন। বেশ আমুদে আর পেটুক। কিন্তু গার্মেন্টস মালিক হিসেবে তার আচরণ আমি তেরো দিন দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। হজ্ব শেষে ফিরে এসে তিনি আমাকে তেরো দিনের বেতন নেবার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। আমি যাই নি। আমি বলেছিলাম, আমার তেরো দিনের বেতনের শিক্ষা থেকে যদি আপনি কিছু শেখেন, তাহলে বাকি জীবনে আপনি শ্রমিকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন। লোকটির সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। আমি মাত্র তোরো দিন গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করে শ্রমিক শোষণের গোটা ব্যাপারটা ধরতে পেরেছিলাম। আমার তবু মালিকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ ছিল। কিন্তু যেখানে মালিক নয়, মালিকের পোষ্য উচ্চ বেতনের কিছু চামচাকে দিয়ে শ্রমিক শাসনের ঠিকা কাজ দেওয়া হয়, সেই চিত্র যে কতো ভয়াবহ হতে পারে তা আমি অনুভব করতে পারি। তাই শ্রমিকের কর্ম পরিবেশ এবং নিরাপত্তার বিষয়টি যতোদিন গার্মেন্টস শিল্পে প্রতিষ্ঠা না পাবে ততোদিন এই দুরাবস্থা শেষ হবে না। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:২০",False fe,"সংস্কৃতির শক্তি, রাষ্ট্রের স্বীকৃতি সংস্কৃতির শক্তি, রাষ্ট্রের স্বীকৃতিফকির ইলিয়াস===============================সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। কলেজ শেষ করে শহরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে আড্ডা দিই। সিলেটের ‘লালকুঠি’ সিনেমা হলের দোতলায় ‘তৃষ্ণা রেস্টুরেন্ট’ আমাদের আড্ডাস্থল। বিশিষ্ট শিল্পী বিদিত লাল দাস এর অন্যতম কর্ণধার। সেখানেই আড্ডা দিয়ে কথা শুনি মহাজনদের। শাহ আব্দুল করিম, গীতিকার সিদ্দিকুর রহমান, গীতিকার ও শিল্পী সৈয়দ মোফাজ্জিল আলীসহ অনেকেই আসেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই আসেন গীতিকার গিয়াস উদ্দিন আহমদ। আমি তখন দু’চারটে বাউল গান লিখতে শুরু করেছি। একদিন সাহস করে গিয়াস ভাইকে বলেই ফেলি- গিয়াস ভাই আমিও তো কয়েকটি গান লিখলাম। কিন্তু কেউ আমার গানগুলো তো গায় না। গাইতে চায় না। হেসে ওঠেন গিয়াস ভাই। বলেন, ‘আরে ধুর, আমি গান লিখি ২৫ বছর যাবৎ আমাকেই কেউ পাত্তা দেয় না।’কথা শুরু করেন বিদিত লাল দাস। বলেন- ‘লেগে থাকো হে! এই মাঠে লেগে থাকতে হয়!’ আমাদের মনে আছে, ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়’- এই প্রখ্যাত গানটির গীতিকার গিয়াস উদ্দিন আহমদকে লাইম লাইটে নিয়ে এসেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। না- গিয়াস উদ্দিন আহমদ তার জীবদ্দশায় তেমন কোনো স্বীকৃতি পাননি। তিনি অনেকটা হতাশা নিয়েই ছেড়ে গেছেন আমাদের। এখন ফেব্রুয়ারি মাস। মহান ভাষা আন্দোলনের মাস। ঢাকায় ইতোমধ্যে বইমেলা শুরু হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বইমেলা উদ্বোধন করেছেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদানের যে লড়াই-সংগ্রাম তার পথ ধরে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। একুশ আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে।এবারের বইমেলা উদ্বোধন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের শহীদ দিবসই নয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দুজন প্রবাসী বাংলাদেশি এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মান লাভ করে। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতি বিশ্ব দরবারে খুনি জাতির পরিচিতি লাভ করেছিল। আজ আবারো আমরা আমাদের ভাবমূর্তি বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে পেরেছি। বিশ্বে বাংলাদেশ আজ অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি বলেন, সাহিত্য চর্চা পারে যুবসমাজকে সঠিক পথে ধরে রাখতে। বই পারে আমাদের চিন্তা-চেতনা বিকশিত করতে। আজ আমরা অসাম্প্রদায়িক জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি। আর কখনো বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হবে না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বই এবং বইমেলার প্রতি ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদে থাকায় ইচ্ছে থাকলেও মেলায় আসতে পারেন না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। এর পাশাপাশি, শিশুদের মাঝেও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।বাংলা একাডেমি ১৯৮৪ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বইমেলা আয়োজনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এর প্রসার বেড়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এখন নিয়মিত বইমেলা আয়োজন হচ্ছে। বইমেলা ঘিরে লেখকদের উত্তেজনা ও বই প্রকাশ অব্যাহত আছে। প্রকাশনা ও লেখকদের সংখ্যা বাড়ছে। যুক্ত হচ্ছে নানা সমস্যা। এর মাঝে নিরাপত্তা বিষয়টিই এখন প্রধান। আমরা দেখছি, এই একুশের মাসেই বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে। রাষ্ট্র তার যোগ্য সন্তানদের এই সম্মাননা দেয়। এ বছর অন্যদের সঙ্গে এমন একজনকে পুরস্কার দেয়া হয়েছে- যিনি একজন বিতর্কিত লেখিকা ও অধ্যাপক। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু রিপোর্ট ছাপা হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়ায়। তার নাম নিয়াজ জামান। অনুবাদে বিশেষ অবদান রেখে এ বছরের বাংলা একাডেমি পুরস্কার জেতা অধ্যাপক নিয়াজ জামান তার এক লেখায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বর্ণনা করেছিলেন ‘স্বভাবসুলভ স্বৈরাচার’ হিসেবে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু সরকারের কড়া সমালোচক হিসেবে ভূমিকা রাখা সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকায় ১৯৯৪ সালের ২ ডিসেম্বর প্রকাশিত ওই লেখায় নিয়াজ জামান লিখেছিলেন- ‘ডযবহ ঃযব ঝযবরশয পধসব ঃড় ঢ়ড়বিৎ, যব বসবৎমবফ ধং ধ হধঃঁৎধষ ফরপঃধঃড়ৎ যিড় পড়ঁষফ হড়ঃ ধপপবঢ়ঃ ধ ভৎবব ফরংপঁংংরড়হ ড়হ ধহু ড়ভ যরং নবফৎড়ড়স ফবপরংরড়হং.’ অর্থাৎ ‘ক্ষমতায় আসার পর ‘শেখ’ একজন স্বভাবসুলভ স্বৈরাচারীর রূপ নিলেন। তিনি তার শয়নকক্ষে নেয়া কোনো সিদ্ধান্ত সম্পর্কেই কোনো খোলামেলা আলোচনা গ্রহণ করতে পারতেন না’।ঢাকাটাইমস২৪ডটকম তাদের রিপোর্টে জানাচ্ছে- ‘পাঞ্জাবি বংশোদ্ভূত নিয়াজ জামান মাগুরার নির্বাচনে বিতর্কিত মেজর জেনারেল মাজেদুল হকের আত্মীয়। রাজধানীর কয়েকটি আর্কাইভে ৯০ দশকে হলিডে পত্রিকার একাধিক সংখ্যা পড়ে দেখা গেছে, নিয়াজ জামানের অধিকাংশ নিবন্ধ পাকিস্তান রাষ্ট্রের অখণ্ডতা রক্ষায় পাকিস্তানি মুসলমান আর বাঙালি মুসলমানদের ব্যর্থতাকে উপজীব্য করে লেখা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক প্রবীণ শিক্ষক নাম না প্রকাশ করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, হলিডে পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়াজ জামান তার এক লেখায় বঙ্গবন্ধুকে ‘ংবৎঢ়বহঃ’ বা দানবীয় সাপ বলে অভিহিত করেছিলেন। দীর্ঘদিন পত্রিকার কপিটি তার কাছে ছিল, কিন্তু ইদানীং আর খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে সরকারের উচ্চমহল থেকে পুরনো হলিডে পড়ে দেখলেই এ লেখা পাওয়া যাবে। এই অধ্যাপক বলেন, ‘সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকায় যিনি নিয়মিত লিখতেন, যিনি বঙ্গবন্ধুকে কোনোদিন সম্মান করে কথা বলেননি, তিনি কীভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাংলা একাডেমি পুরস্কার জেতেন আমরা ভেবে পাই না। তবে কি চেতনার, বিশ্বাসের কোনো মূল্যায়ন নেই?’ বাংলা একাডেমি পুরস্কার-২০১৬ জেতা অধ্যাপক নিয়াজ জামান, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। জানা গেছে, নিয়াজ জামানকে অনুষ্ঠানে আসতে বারণ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন সংবাদপত্র ঢাকাটাইমস২৪কম-এ নিয়াজ জামানের বঙ্গবন্ধুবিরোধী লেখা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এর একটি কপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনা হয়। পরে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যোগাযোগ করে অধ্যাপক নিয়াজ জামানকে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসতে বারণ করতে বলা হয় বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়।তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক রামেন্দু মজুমদার পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার নিতে অনুরোধ করার সময় বলেন, শারীরিক অসুস্থতার জন্য নিয়াজ জামান অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। বাংলা একাডেমি এবার একাধিক ভুল করেছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ বিভাগে এমন একজনকে পুরস্কার দেয়ার কথা বলা হয়েছিল, যে মুহাম্মদ ইব্রাহীম আগেই এই একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। কথা হচ্ছে, এসব বিষয় বাংলা একাডেমি আগে যাচাই-বাছাই করে দেখে না কেন? বিশ্ব বদলাচ্ছে। পরিবর্তিত বিশ্বে অনেক কিছুই ঘটে যাচ্ছে আমাদের চোখের সামনে। গীতিকবি বব ডিলান নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তার গীতিকবিতার জন্য। তাকে খ্যাতি দেয়া হয়েছে- ‘গানের কবি’। সুইডিশ অ্যাকাডেমি বলেছে, ‘আমেরিকার সঙ্গীত ঐতিহ্যে নতুন কাব্যিক মূর্ছনা সৃষ্টির’ জন্য ৭৫ বছর বয়সী রক, ফোক, ফোক-রক, আরবান ফোকের এই কিংবদন্তিকে নোবেল পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছে তারা। ডিলান তথাকথিত সাহিত্যিক নন। তবে এখন তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে টমাস মান, রুডইয়ার্ড কিপলিং, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, বার্ট্রান্ড রাসেলদের সঙ্গে। নোবেলের ১১২ বছরের ইতিহাসে এ পুরস্কারজয়ী প্রথম সঙ্গীতশিল্পী ও গীতিকার তিনি। গার্ডিয়ান লিখেছে, এর আগে বহুবার নোবেলের মনোনয়নের তালিকায় নাম এলেও সাহিত্যের সবচেয়ে সম্মানজনক এ পুরস্কারের ঘোষণায় ডিলানের নাম যে বিস্ময় হয়েই এসেছে। পুরস্কার ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমির স্থায়ী সচিব সারা দানিউস বলেছেন, তাদের এবারের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা হবে না বলেই তিনি আশা করছেন। ডিলানকে তিনি বর্ণনা করেন ইংরেজি বাচন রীতির ‘এক মহান কবি’ হিসেবে, নোবেল পুরস্কার যার ‘প্রাপ্য’। তিনি বলেন, ‘৫৪ বছর ধরে চলছে তার এই অভিযাত্রা, প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে চলেছেন, সৃষ্টি করছেন নতুন পরিচয়।’ডিলানের ‘দ্য টাইমস দে আর আ-চেইঞ্জিং’ গানটিকে দানিউস তুলনা করেছেন গ্রিক কবি হোমার আর শ্যাফোর সঙ্গে। আমরা যদি ৫ হাজার বছর পেছনে ফিরে যাই, আমরা হোমার আর শ্যাফোকে পাব। তাদের গীতিকবিতা লেখাই হত গেয়ে শোনানোর জন্য। বব ডিলান একই কাজ করেছেন।’ না- বাংলাদেশে গীতিকবি বিভাগে কোনো ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’ নেই। অথচ বাংলা একাডেমি একটি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান। তারা বাংলাদেশের লোকসাহিত্যকে কোনো সময়ই ‘পুরস্কারের যোগ্য’ মনে করেননি কিংবা করছেন না।বাংলাদেশে অনেক বড় বড় লোককবি, গীতিকবি আছেন। সম্প্রতি প্রয়াত কুটি মনসুরের নাম উল্লেখ করা যায়। কুটি মনসুরের মূল নাম মো. মনসুর আলী খান হলেও তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হওয়ায় আদর করে মায়ের ডাকা নাম ‘কুটি মনসুর’ নামেই তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। ১৯২৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার লোহারটেক গ্রামে জন্ম নেয় কুটি মনসুর। তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পরিদপ্তরের অধীনে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধকরণের নিমিত্তে তার রচিত ৩০০ গান দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাউল শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের কণ্ঠশিল্পী অডিশন বোর্ডের সম্মানিত বিচারক হিসেবে দীর্ঘদিন তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমিতে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মাননীয় অধ্যক্ষ হিসেবে এবং আনসার ভিডিপিতে ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সঙ্গীত প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৫২-’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬’র ছয় দফা, ১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও দেশভিত্তিক প্রচুর গান ও কবিতা রচনার পাশাপাশি তিনি প্রায় ৫০টি বিষয়ে এ পর্যন্ত ৮ হাজার গান রচনা ও ৪ হাজার ৫০০ গানের সুরারোপ করেছেন। তার রচিত ও সুরারোপিত আড়াইশ গান ঢাকা রেকর্ড ও ইপসা রেকর্ড নামের দুটি গ্রামোফোন কোম্পনি থেকে লং প্লে ডিস্ক রেকর্ডে প্রকাশ হয়েছে। এসব গানের মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে- ‘ন্যায্য কথা বলতে গিয়া শেখ মুজিবুর জেলে যায়, বাঙালিরা দোষী কোন জায়গায়, শিয়াল কয় খাটাশ ভাইরে, যৌবন জোয়ার একবার আসে রে।’ তিনি তার মৃত্যুর আগে কি বলে গেছেন তা শুনবেন প্রিয় পাঠক?গভীর কষ্ট ও ক্ষোভ থেকে তিনি বলেছেন, ‘বেঁচে থাকতে যেহেতু কোনো মূল্যায়ন হলো না, তাই আমি মারা যাওয়ার পর কোনো মরণোত্তর পুরস্কার দেয়া হলে তোমরা তা গ্রহণ করো না’ এই হলো বাংলাদেশ! এই হলো বাংলাদেশের সংস্কৃতি! আচ্ছা জানতে চাই- সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কি জানে না দেশের কোন গুণীকে কদর করতে হবে?বইমেলা আয়োজনের দায়িত্ব বাংলা একাডেমির অতিরিক্ত দায়িত্ব। দেশে পরিশুদ্ধ সাহিত্যের চর্চাকে এগিয়ে নেয়া একাডেমির মূল কাজ। খবরদারি করা, সেন্সর করা, অপছন্দের লেখক-প্রকাশককে হয়রানি করা একাডেমির কাজ নয়। কিন্তু হালে আমরা কী দেখছি? কেন দেখছি? সংস্কৃতির একটা নিজস্ব শক্তি আছে। কি সেই শক্তি তা আমরা ১৯৫২, ৬৯, ৭০-৭১ এ দেখেছি। দেখেছি ১৯৯০ এ-ও। তাহলে আমরা আমাদের অতীত ভুলে যাচ্ছি কেন। সময় এসেছে বদলাবার। বাংলা একাডেমির পুরস্কার ক্যাটাগরিতে ‘গীতিকবি’-কে সম্মান দেয়ার ব্যবস্থা যোগ করতে হবে। রাষ্ট্রকেই পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসতে হবে অকৃপণভাবে। কথায় নয়, তা কাজে প্রমাণ করতে হবে।--------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:২৪",False mk,"অপারেশন জ্যাকপট বাঙালি মাত্রই গান ভালোবাসেন। এর বাণী হূদয়কে করে পুলকিত ও বিকশিত। আবার এ গানই যে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিতে পারে বা রণাঙ্গনে হামলার সিগন্যাল হতে পারে, সে কথা কি কেউ ভেবেছে কোনো দিন? বিস্ময়কর ব্যাপার হলেও সত্যি যে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে দুটি গান শত্রু পাকিস্তান বাহিনীর ওপর হামলা পরিচালনার সংকেত বা সিগন্যাল হিসেবে ব্যবহূত হয়েছিল। আর এই অভিনব পদ্ধতিতে সিগন্যাল পেয়েই ১৯৭১ সালের মধ্য আগস্ট সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় সব কটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক ও নদীবন্দরে একই সময়ে একযোগে পরিচালনা করা হয়েছিল সফল নৌ-কমান্ডো অভিযান। সারা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে শুনেছিল আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা। অপারেশন জ্যাকপটের কথা।১৯৭১ সালে নৌ-কমান্ডো হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। নয় সদস্যবিশিষ্ট আত্মঘাতী দলের দলনেতা হিসেবে অপারেশন জ্যাকপটের মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি ফেরিঘাটে প্রথম নৌ-অপারেশন পরিচালনা করি।প্রশিক্ষণ শেষে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের বিভিন্ন সামুদ্রিক ও নৌবন্দরে অপারেশন পরিচালনার জন্য কয়েকটি দল গঠন করা হয়। দুটি দলকে সড়কপথে পাঠানো হয় খুলনায়। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে আক্রমণ পরিচালনার জন্য তিনটি দলকে সেনাবাহিনীর লরিতে করে ব্যারাকপুর সেনানিবাস হয়ে কলকাতার দমদম বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। একটি দলে ছিলাম আমি। ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি ডাকোটা বিমানে করে আমাদের পৌঁছে দেওয়া হয় আগরতলায়। এটা ছিল আমার জীবনে প্রথম বিমানভ্রমণ। আমাদের একটি ক্যাম্পে নেওয়া হয়। নাম ছিল ‘নিউ ক্যাম্প’।৫ বা ৬ আগস্ট সাবমেরিনার আবদুল ওয়াহেদ (এ ডব্লিউ) চৌধুরীর (বীর উত্তম) নেতৃত্বে ৬০ জন কমান্ডো সড়কপথে হরিণা ক্যাম্প হয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। তাদের টার্গেট ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর। আমরা বাকিরা নারায়ণগঞ্জে রওনা দেওয়ার অপেক্ষায় থাকি।৭ বা ৮ আগস্ট। ভারতীয় নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট দাস আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘তুমি তো সাবমেরিনার আবিদুর রহমানের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ অপারেশনে যাচ্ছ?’ আমি হ্যাঁসূচক জবাব দিতেই তিনি বললেন, ‘না, তোমাকে নারায়ণগঞ্জ যেতে হবে না। কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি ফেরিঘাটে অপারেশন পরিচালনার জন্য নয় সদস্যবিশিষ্ট স্বতন্ত্র একটি কমান্ডো দল হবে। তোমাকে এ দলের লিডার বা দলনেতা মনোনীত করা হয়েছে।’লেফটেন্যান্ট দাসের কথা শুনে আমি বিস্মিত এবং একই সঙ্গে আনন্দিত ও রোমাঞ্চিত হই। কারণ সব লক্ষ্যস্থলে অপারেশনের জন্য নৌ-কমান্ডোদের দলনেতা হিসেবে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাবমেরিনারদেরই নিয়োগ করা হয়েছে। আমাকে দলনেতা করা ব্যতিক্রম। অন্যদিকে রোমাঞ্চিত ও আনন্দিত এই ভেবে যে একটি স্বতন্ত্র নৌ-কমান্ডো দলের নেতৃত্ব পাওয়া আমার জন্য খুবই গর্বের এবং সম্মানের বিষয়।লেফটেন্যান্ট দাস আমাকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘সামরিক দিক বিবেচনায় দাউদকান্দি ফেরিঘাট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফেরিঘাটটি মেঘনা নদীর কারণে বিচ্ছিন্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগস্থলে অবস্থিত। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আনীত শত্রুপক্ষের সামরিক সরঞ্জামাদি, গোলাবারুদ, অস্ত্রশস্ত্র, রসদ ইত্যাদি পারাপার করা হয়ে থাকে এই ফেরিঘাটের মাধ্যমে। এ জন্য দাউদকান্দি ফেরিঘাটটি ধ্বংস করে দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। ঘাটের পন্টুনসহ আশপাশে যে কটি ফেরি রয়েছে সেগুলো ধ্বংস করে দিতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে তোমরা এ অভিযানে সফলকাম হবে। তোমার সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে কমান্ডো মতিউর রহমান (বীর উত্তম)।আলোচনার এক ফাঁকে বললেন, গান শুনবে—বাংলা গান? আমি মাথা নেড়ে সায় দিতেই তিনি উঠে গিয়ে একটি টেপরেকর্ডার এনে পরপর দুটো পুরোনো দিনের বাংলা গান আমাকে বাজিয়ে শোনালেন। গানগুলোর অন্তরা বা প্রথম কলি ছিল—‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলেম গান/ তার বদলে আমি চাই নে কোনো দান’ এবং ‘আমার পুতুল আজকে যাবে শ্বশুরবাড়ি/ ওরে, তোরা সব উলুধ্বনি কর।’শেষে লেফটেন্যান্ট দাস বললেন, আসল কথা। এ গান শুধু গানই নয়, এ গানের আরও অর্থ আছে। আমি অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি বললেন, ‘তোমরা যখন টার্গেটের কাছাকাছি পৌঁছে কোনো গোপন হাইডআউটে থাকবে তখন আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে এ গান দুটো শুনতে পাবে। আর গানের মাধ্যমেই সিগন্যাল পাবে কোন দিন এবং কখন নির্ধারিত টার্গেটে হিট করতে হবে। প্রথম গানটি শোনার পর মহিলা শিল্পীর কণ্ঠে গাওয়া দ্বিতীয় গানটি শোনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকবে। দ্বিতীয় গানটি যখন শুনবে তখন বুঝবে, ২৪ ঘণ্টা পর টার্গেটে আঘাত করতে হবে। এর ভিত্তিতে তোমাদের জিরো আওয়ার ঠিক করে নিতে হবে। সাবধান আর কেউ যেন, এমনকি তোমার সহযোদ্ধাদের মধ্যেও কেউ যেন বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে অপারেশনের সিগন্যাল প্রেরণের বিষয়টি জানতে বা বুঝতে না পারে। দলনেতা হিসেবে তোমাকে একটি ছোট ট্রানজিস্টার দেওয়া হবে।আবহাওয়ার রিপোর্ট, চন্দ্র-তিথি, জোয়ার-ভাটা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় বিবেচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে অপারেশনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছিল। আগস্ট মাসের ১১ তারিখ সন্ধ্যার পর আমি আমার কমান্ডো দলকে নিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বকসনগর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। চাঁদপুরের দলও আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন সাবমেরিনের আমিন উল্লাহ শেখ (বীর বিক্রম)। আমাদের পথ দেখিয়ে গন্তব্যস্থানে নিয়ে যাওয়া এবং গোপন হাইড আউটে রাখার ব্যবস্থা করার জন্য সঙ্গে দুজন করে গাইড দেওয়া হয়। প্রত্যেক দলের জন্যই গাইডের ব্যবস্থা ছিল। আমাদের সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে ছিল একটি করে অটোমেটিক স্টেনগান। প্রয়োজনীয় গুলিসহ একটি ম্যাগাজিন। প্রত্যেকের জন্য এক জোড়া সাঁতার কাটার ফিন্স, একটি লিমপেট মাইন এবং একটি দুদিকে ধারালো কমান্ডো নাইফ। অতিরিক্ত হিসেবে আমার কাছে ছিল একটি ট্রানজিস্টার।বকসনগর থেকে রওনা হয়ে আমরা কখনো ধানখেতের আইল ধরে, আবার কখনো বা পায়ে চলা পথ ধরে হেঁটে সামনের দিকে এগোতে থাকি। কিছু দূর যাওয়ার পর চাঁদপুরের দল ভিন্ন পথ ধরে গন্তব্যের দিকে যায়। আর আমরা কুমিল্লার কংশনগর বাজার হয়ে বন্ধরামপুর পৌঁছি।১৩ আগস্ট, ১৯৭১ আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে কাঙ্ক্ষিত সেই গানটি প্রচারিত হয়। আমার অন্য সঙ্গী কমান্ডোরাও আমার সঙ্গে ট্রানজিস্টারে গান শুনছিল। এ গানের মর্মার্থ তারা না বুঝলেও আমি বুঝে গেলাম। ৪৮ ঘণ্টা পর আমাদের অপারেশনে যেতে হবে। গানটি শুনে আমি কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। তবে দ্রুতই আমার আবেগ সংবরণ করি। অপারেশনের প্রাথমিক সিগন্যাল পেয়ে গেছি, এটা কাউকেই বুঝতে দিইনি। রাতের বেলা আমি সহদলনেতা মতিউর রহমানকে (বীর উত্তম) পরামর্শের ছলে বললাম, সফলভাবে অপারেশন পরিচালনা করতে হলে টার্গেট এলাকা আগেভাগে রেকি করে নিলে ভালো হয়। আমার কথায় মতি রাজি হয়ে গেল।আমি ও মতি লুঙ্গি ও হাফ শার্ট পরে ভাড়া করা একটি ছইওয়ালা নৌকায় ১৪ আগস্ট সকাল আনুমানিক নয়টার দিকে দাউদকান্দির উদ্দেশে রওনা হই। আমাদের সঙ্গে চটের ব্যাগে ফোল্ডিং করে লুকিয়ে রাখা স্টেনগানটি ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। দাউদকান্দি ফেরিঘাটের উত্তর-পশ্চিমে মেঘনা নদী, আর দক্ষিণে গোমতী নদী। তখন ফেরিঘাটের উত্তর-পশ্চিম দিকে মেঘনা নদীর মাঝখানে একটি ছোট্ট চর ছিল। চর থেকে ফেরিঘাটের সবকিছু দেখা যেত। চরের পাশে কিছুক্ষণের জন্য নৌকা রেখে আমরা লক্ষ করলাম যে ফেরিঘাটের পন্টুন থেকে একটু দূরে পশ্চিম দিকে নদীতে দুটি ভাসমান ফেরি নোঙর করা অবস্থায় আছে। এ দুটি ফেরি আর পন্টুনই হলো আমাদের টার্গেট। অপারেশন এলাকা ও টার্গেট ঠিক করার সময় আমাদের নৌকাটি চলছিল। একপর্যায়ে নৌকার গতি কমিয়ে আমি একটি গামছা পরে নদীতে নেমে পড়ি। ভাবটা এমন যে নদীর পানিতে গোসল করতে নেমেছি। নামার উদ্দেশ্য নদীর পানির স্রোতের বেগ ও গতিধারা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ। তখন বর্ষাকাল ছিল। ফেরিঘাটটি মেঘনা ও গোমতী নদীর সঙ্গমস্থলে। আরও লক্ষ করলাম বর্ষাকালের ভরা নদীতে স্রোত তেমন নেই। উজানে এবং ভাটিতে সহজেই সাঁতার কেটে যাওয়া যায়। তবে নদীর তীরবর্তী ফসলের জমিতেও অথই পানি থাকায় কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই।বন্ধরামপুরে ফিরে আসার পর থেকে শুরু হলো আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় গানটি শোনার জন্য অপেক্ষার পালা। ১৪ আগস্ট সন্ধ্যার পর আকাশবাণীর নিয়মিত অনুষ্ঠানে হঠাৎ ‘আমার পুতুল আজকে যাবে শ্বশুরবাড়ি, ও রে! তোরা সব উলুধ্বনি কর’ গানটি শুনতে পেলাম। তার অর্থ তখন থেকে ঠিক ২৪ ঘণ্টা পর টার্গেটে আঘাত হানতে হবে। আমি মনে মনে হিসাব করে দেখলাম, ১৫ আগস্ট দিবাগত রাতে অর্থাৎ ১৫-১৬ আগস্ট মধ্যবর্তী রাত আমাদের জন্য জিরো আওয়ার। ওই সময় এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে আমাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে হবে।সেই রাতে সঙ্গী কমান্ডোদের কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ থাকলাম। ১৫ আগস্ট সকালে সবাইকে ডেকে বললাম, আজ রাতেই আমাদের অপারেশনে যেতে হবে। সন্ধ্যার পর খাওয়া-দাওয়া করে, গায়ে সরিষার তেল মেখে, সুইমিং কস্টিউমসহ যার যার লিমপেট মাইন ও ফিন্স নিয়ে একটি খোলা নৌকাযোগে অপারেশনে বের হয়ে পড়লাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পথিমধ্যে প্রচণ্ড ঝড়-তুফানে পড়ে আমরা রাস্তা হারিয়ে ফেলি। তার ওপর গাইড ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে শীতে কাঁপতে থাকে। অসুস্থ বোধ করায় সে আমাদের সঙ্গে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে। আমরা তাকে কোনোমতেই যেতে রাজি করাতে পারছিলাম না। এদিকে রাতও প্রায় শেষ হয়ে পূর্ব আকাশে ভোরের আলোর আভা ফুটে উঠতে থাকে। এ সময় অপারেশনে যাওয়া খুবই বিপজ্জনক। এমতাবস্থায় আমাদের অনন্যোপায় হয়ে ওই দিনকার মতো অপারেশন স্থগিত করে অস্থায়ী ঘাঁটিতে ফিরে আসতে হয়।যা-ই হোক সংকল্পে অটুট থেকে আমরা পুনরায় প্রস্তুতি নিয়ে ১৬ আগস্ট দিবাগত রাত আনুমানিক একটার সময় দাউদকান্দি ফেরিঘাটের একটি পন্টুন ও দুটি ফেরিতে নৌ-কমান্ডো হামলা পরিচালনা করি। ওই তিনটি টার্গেটে মাইন ফিট করে আমরা পূর্ব নির্দিষ্ট স্থানে রক্ষিত নৌকায় ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই চারদিক প্রকম্পিত করে একে একে মাইনগুলো বিস্ফোরিত হতে থাকে। আর নৌকায় নিরাপদ দূরত্বে থেকে আমাদের চোখমুখ বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। এরপর আর কালবিলম্ব না করে আমরা আমাদের গোপন আস্তানা বন্ধরামপুরের উদ্দেশে নৌকাযোগে দ্রুত রওনা হই। আমাদের হামলায় দাউদকান্দি ফেরিঘাটের একমাত্র পন্টুনটিসহ অদূরে নোঙর করা দুটি ফেরি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পানিতে ডুবে যায়।আমাদের মতো অন্যান্য দলও ১৫ আগস্ট, ১৯৭১ সালের মধ্যরাতের পর একই সঙ্গে এই সময়ে চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর, মংলা সামুদ্রিক বন্দর, খুলনা, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জে সিরিজ নৌ-কমান্ডো হামলা পরিচালনা করে। তারা ডুবিয়ে দেয় সমুদ্রগামী জাহাজ ও বার্জ। ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় বহুসংখ্যক নৌযান ও পন্টুন। সব নৌপথে সৃষ্টি হয় মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা। আলোড়ন পড়ে যায় সারা বিশ্বে। এভাবেই সমাপ্ত হয় একটি বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত গানের মাধ্যমে পাওয়া সিগন্যাল অনুযায়ী পরিচালিত আমাদের দুর্ধর্ষ নৌ-কমান্ডো অভিযান।এরপর বিদেশি জাহাজ চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরে আসতে অস্বীকৃতি জানায়। সামরিক ভাষায় এই নৌ-কমান্ডো হামলা ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নামে খ্যাত। নৌ-কমান্ডোদের দুর্ধর্ষ ও সফল হামলার পরদিন যুদ্ধবাজ পাকিস্তানি সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণ দেয় এবং বলে, ভারতীয় নৌবাহিনীর ডুবুরিরা এসব আক্রমণ চালিয়েছে। কিন্তু তারা ভাবতেই পারেনি বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরাই চালিয়েছে এসব আত্মঘাতী কমান্ডো হামলা। চূর্ণ করে দিয়েছে তাদের সব অহংকার। বাংলাদেশের বিভিন্ন সমুদ্র ও নদীবন্দরে একই সময় পরিচালিত এই সফল নৌ-কমান্ডো হামলা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ এবং বিজয় ত্বরান্বিত করে। প্রথম আলো থেকে সংগৃহীত।  শাহজাহান সিদ্দিকী বীর বিক্রম: অপারেশন জ্যাকপটের অন্যতম দলনেতা, সাবেক সচিব",False hm,"ফুটোস্কোপিক গল্প ০৬ ফুটোস্কোপিক গল্প হচ্ছে ফুটোস্কোপ দিয়ে দেখা কোন গল্প। সামান্যই দেখা যায়। রবীন্দ্রবাবু নিচু গলায় বললেন, ""আচ্ছা এই যে একেবারে বক্সে বসলুম, বিনোদ তো আমাকে চেনে। ছুঁড়িটা আমাকে দেখলে কী ভাববে বলো তো?"" ভূতোনাথ বিরক্ত হয়ে বলে, ""আপনাকে নিয়ে এ-ই এক সমস্যা বাবু। ফূর্তি করতে এসে এতো সাতপাঁচ ভাবলে চলে? ক্যাবারে থ্যাটারে কেউ কাউকে চেনেনা, চিনলেও না চেনার ভান করে। আপনি খামোশ মেরে নাচ দেখবেন, লোট ছুঁড়ে মারবেন, সিটি বাজাবেন ... অত চিন্তা কিসের?"" রবীন্দ্রবাবু ছটফট করে উঠলেন, ""না না ভূতো, তুমি বুঝতে পারছো না! বিনোদ আমাকে বড়ই শ্রদ্ধা করে! রীতিমতো ভক্তি যাকে বলে! তো, সে যদি দেখে আমি তার নাচ দেখতে এসেছি ...।"" ভূতোনাথ বলে, ""নিন তো স্যার, পপর্কন চিবোন বসে বসে। এসব শ্রদ্ধাভক্তির কতা ভুলে যান। হাপপ্যান্ট পরা বিনোদিনী দাসী একবার স্টেজে নামলে এসব টেনসন আর থাকবে না আপনার!"" রবীন্দ্রবাবু অসহায় মুখে বসে দাঁতে ভূট্টার খই কাটতে লাগলেন। একটু পরেই পাদপ্রদীপের আলোকে মলিন করে হাফপ্যান্টপরিহিতা বিনোদিনী দাসীর মঞ্চে আগমন ঘটে। সব দর্শক হই হই করে ওঠে। ভূতোনাথ বলে, ""কী স্যার, কেমন লাগচে?"" রবীন্দ্রবাবু ঢোঁক গিলে বলেন, ""অদ্ভূত! এ যে নতুন যৌবনের দূত!"" কিন্তু বিনোদিনীর চোখ যায় সটান বক্সের দিকে। কে এই সৌম্যকান্তি পুরুষ? ও মা, এ যে রবীন্দ্রবাবু! বিনোদিনী মাথায় ঘোমটা দিয়ে উইংসের আড়ালে চলে যেতে চেষ্টা করে, ইমপ্রেসারিও রমণীমোহন এসে তাকে পাকড়াও করে। ""কী হলো বিনোদ, নাচতে নেমে ঘোমটা দিচ্ছিস যে বড়?"" বিনোদিনী দাসী ডুকরে ওঠে, ""উনি আমার অ্যাক্টো দেখতে এয়েচেন। আমি কিচুতেই ওঁর সামনে এই আধাপেন্টুলুন পরে নাচতে পারবোনি!"" রমণীমোহন পান চিবাতে চিবাতে বললো, ""নেকি! পারবি না কেন? মারবে নাকি তোকে?"" বিনোদিনী বলে, ""আমি ওঁকে ভক্তি করি, বড় শ্রদ্ধা করি! কী করে তাঁর সামনে নেংটো হয়ে ক্যাবারে নাচি? ছিহ!"" রমণীমোহন বলে, ""আ, মরণ! পয়সা খরচ করে সে নাচ দেখতে এসেছে, নেচে দেখিয়ে দে! নাচলে তো আর তোর ভক্তিছেদ্দা নষ্ট হচ্ছে না!"" বিনোদিনী আঁচলে নাক মোছে, ""আমায় মাপ করে দাও রমণীকর্তা ... এ আমি পারবোনি!"" রমণীমোহন ঘাগু লোক, এসবে ভুলবার পাত্র নয়। সে চিবিয়ে চিবিয়ে ভয় দেখায় বিনোদিনীকে। বিনোদিনীও ঘাগু মেয়েছেলে, অনেক ঘাটের জল খেয়েই আজ হাফপ্যান্টের ওপর ঘোমটা টেনেছে, সে-ও শুরু করে দেয় হাফপ্যান্টের ওপর আঁচল পেঁচিয়ে গিঁট মেরে তর্ক। ওদিকে দর্শক তুমুল খাপ্পা। তারা বিনোদিনীর ক্যাবারে দেখতে এসেছে, কোন নাটক নয়। রবীন্দ্রবাবু অস্থির হয়ে ভূতোনাথকে শুধালেন, ""কী ব্যাপার, আবার মাথায় ঘোমটা চাপালে কেন? নাচে না কেন? য়্যাঁ?"" ভূতো বিরক্ত হয়ে বলে, ""তার আমি কী জানি?"" বিনোদিনী আর রমণীমোহন মঞ্চের ওপরেই তুমুল তর্ক করতে থাকে। অধৈর্য হয়ে এক পর্যায়ে রবীন্দ্রবাবু পকেট থেকে এক তাড়া কাগজ বার করেন। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে মন্দ্রস্বরে বলেন, ""আমি কিছু বলতে চাই।"" রমণীমোহন আর বিনোদিনী দাসী, দু'জনেই চুপ করে যায়। হলে নেমে আসে পিনপতন নিস্তব্ধতা। রবীন্দ্র বলেন, ""বিনোদিনী, মন দিয়ে শোন।"" তারপর একখানা কাগজ উঁচিয়ে ধরে ধীরে ধীরে, সুললিতকণ্ঠে আবৃত্তি করেন, ""সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ করে পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা!""",False mk,"ডালিম হোটেলের জল্লাদের ফাঁসি কাশিমপুর কারাগারে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।তানভীর আহমেদ, আজিজুর রহমান, ইমরান রহমান ও এম নজরুল ইসলাম কাশিমপুর কারাগার থেকে : রচিত হলো দায়মুক্তির আরেকটি অধ্যায়। তৈরি হলো জাতির স্বস্তি ও উল্লাসের আরেকটি উপলক্ষ। ফাঁসির রজ্জুতে ঝোলানো হলো আরেক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীকে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ‘ডালিম হোটেলের জল্লাদ’ মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দণ্ড কার্যকর করা হয় গতকাল শনিবার। রাত সাড়ে ১০টার দিকে জামায়াতে ইসলামির এই নেতাকে সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয় বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন আহমেদ। গত শুক্রবার দুপুরের পর মীর কাসেম আলী প্রাণভিক্ষা চাইবেন না বলে কারা প্রশাসনকে জানিয়ে দিলে আপিল বিভাগের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকরের ক্ষণ গণনা শুরু হয়। পরে কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ সরকারি নির্দেশনা পেয়ে গতকাল ফাঁসি কার্যকর করেন। মীর কাসেম আলীর মৃতুদণ্ড কার্যকরের মধ্যদিয়ে এই প্রথম কাশিমপুর কারাগারে কোনো যুদ্ধাপরাধীর সাজা কার্যকর করা হলো। আর কাসেমের দণ্ড কার্যকরের খবরে স্বস্তি ও উল্লাস প্রকাশ করে গোটা জাতি।মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের পদক্ষেপ হিসেবে কারা বিধি অনুযায়ী স্থানীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জন এবং কারা মহাপরিদর্শকের কাছে অবহিতকরণ চিঠি পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। একই চিঠি পাঠানো হয় মীর কাসেমের গ্রামের বাড়িতেও। লাল খামে ভরে গতকাল সকাল ১১টায় বিশেষ কারা বার্তা বাহকের মাধ্যমে চিঠিগুলো পাঠানো হয়। ৩ আগস্ট শুক্রবার দুপুরের পর মীর কাসেম আলী প্রাণভিক্ষা চাইবেন না বলে কারা প্রশাসনকে জানিয়ে দিলে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন কারা কর্তৃপক্ষ। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেলার নাশির আহমেদ জানান, শনিবার দুপুরের পর সরকারের আদেশ আমাদের কাছে পৌঁছে। পরে গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারাগারে প্রবেশ করেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম আলম, জেলা পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ, জেলা সিভিল সার্জন আলী হায়দার, জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলাম ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান। এর আগে সন্ধ্যা ৭টার পর মীর কাসেম আলীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে গোসল করানো হয়। পরে তাকে হালকা খাবার দেয়া হয়।পরে মীর কাসেম আলীকে তওবা পড়ান কাশিমপুর কারাগার মসজিদের ইমাম হেলাল উদ্দীন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় তাকে। দড়িতে ২০ মিনিট ঝুলিয়ে রেখে লাশ নামানোর পর দুই পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সেখানে তার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া প্রহরায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার লাশবাহী এম্বুলেন্স মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চালা গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে। এর আগে কাশিমপুর কারাগারের জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক কারাফটকে সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তৈয়ব আলীর ছেলে মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে।কারা সূত্র জানায়, মীর কাসেম আলীর ফাঁসির প্রধান জল্লাদের দায়িত্ব পালন করেন জল্লাদ শাজাহানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল। শনিবার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের দক্ষিণ পূর্ব কোণে ফাঁসির মঞ্চটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মোম মাখানো দড়িতে আনুমানিক ওজনের বালির বস্তা বেঁধে প্রাথমিক মহরাও দেয়া হয়। ওইদিনই মীর কাসেম আলীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেষ বারের মতো সাক্ষাতের জন্য তার পরিবারের সদস্যদের ডাকে কারা কর্তৃপক্ষ। পরে বিকেল ৩টা ৩৬ মিনিটে মীর কাসেম আলীর পরিবারের সদস্যসহ ৪৫ জন আত্মীয় ৬টি মাইক্রোবাসযোগে কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছেন। তাদের মধ্যে ৩৮ জনকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় বলে জানান জেলার নাসির আহমেদ। মীর কাসেমের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট থেকে পৌনে ৬টা পর্যন্ত মীর কাসেম আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিটে কারাগার থেকে বের হন।কারাগারের মূল ফটকের বাইরে মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, মীর কাসেম আলী মৃত্যুকে ভয় পান না। শেষ মুহ‚র্তে তিনি তার ছেলেকে না পেয়ে আক্ষেপ করেছেন। ফাঁসি কার্যকরের পর সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ফাঁসির রায় কার্যকরে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। সে সময় ২০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল তাকে।কড়া নিরাপত্তার চাদরে কাশিমপুর কারাগার এলাকা : এদিকে রায় কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল সন্ধ্যায় কারাগারের আশপাশে ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান বাহিনীটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসিন রেজা।শনিবার সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাব সদস্যরা কাশিমপুর কারাগারের সড়কে এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে ছিল বিপুলসংখ্যক কমিউনিটি পুলিশ। বিকেল ৪টায় কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি। পুলিশের জলকামান আগের রাতেই কারাগারের ভেতরে নিয়ে রাখা হয়েছিল। কারাগারের আরপি চেকপোস্ট সংলগ্ন দোকানপাট দুপুরেই বন্ধ করে দেয় পুলিশ।গতকাল শনিবার গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, শুধু কাশিমপুর এলাকা নয়, পুরো গাজীপুর জেলা জুড়েই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ জন্য টঙ্গী, স্টেশন রোড, বোর্ডবাজার, ভোগড়া বাইপাস মোড়, চান্দনা-চৌরাস্তা, গাজীপুর শহর, রাজেন্দ্রপুর, কোনাবাড়ি, চন্দ্রা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এসব এলাকায় সর্বাত্মক সতর্কতা বজায় রাখার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়। রায়কে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। কাশিমপুর কারাগারের সামনে মূল কারা ফটকে বাড়ানো হয় অতিরিক্ত কারারক্ষীর সংখ্যা। কারাগারে প্রবেশের প্রধান সড়কের সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে কারাগারের প্রধান ফটক পর্যন্ত সড়কের ৫টি স্থানে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরা অবস্থান নেয় সেখানে।৩১ আগস্ট বুধবার সকালে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় মীর কাসেম আলীকে পড়ে শোনান কারা কর্তৃপক্ষ। পূর্ণাঙ্গ রায় পরে শোনানোর পর মীর কাসেম আলী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন কিনা কারা কর্তৃপক্ষ তা জানতে চান। পরে ১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার আবারো প্রাণভিক্ষার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ জানতে চাইলে মীর কাসেম আলী সময় চান। এদিকে ৩১ আগস্ট বুধবার মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন মীর কাসেম আলীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মীর কাসেম আলীর দাবি, ২২দিন আগে সাদা পোশাকধারী লোকজন তাদের ছেলে ব্যারিস্টার আহম্মেদ বিন কাসেমকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। মার্সি পিটিশনের সিদ্ধান্তের আগে সরকারের কাছে তাদের নিখোঁজ ছেলেকে ফেরত চেয়েছেন মীর কাসেম আলী।উল্লেখ্য, মীর কাসেম আলী হলেন জামায়াতের পঞ্চম শীর্ষ নেতা, চার দশক আগের অপরাধের কারণে যাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে। আর ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্র্যকর করেন কারা কর্তৃপক্ষ। তাদের দুজনের রিভিউ আবেদন একদিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়, পরে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। এর পর জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় একই দিনে গতবছর ২১ নভেম্বর। তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করলেও রাষ্ট্রপতি তা নাকচ করে দেন বলে সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে গত ১১ মে জামায়াত ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ তাকে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তানের খান সেনাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হওয়া ‘বাঙালি খান’ হিসেবে। সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫০",False rn,"বুড়িগঙ্গার পানি আর পানি নেই। বিষ হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গা নদী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। পলিথিন, ট্যানারিসহ শিল্প-কারখানার বর্জ্য, হাসপাতাল-ক্লিনিকের পরিত্যক্ত কেমিক্যাল, লঞ্চ-জাহাজের পোড়া তেল-মবিল, টনকে টন বিষ্ঠা বুড়িগঙ্গাকে বিষে জর্জরিত করে তুলছে।বুড়িগঙ্গার তলদেশে প্রায় ১০ ফুট পলিথিনের স্তর জমে গেছে।ঢাকা রক্ষাবাঁধ থেকে পাগলা পর্যন্ত এখনও অসংখ্য স্থাপনা বুড়িগঙ্গাকে দখল করে রেখেছে।১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে যে ঢাকার লোকসংখ্যা ছিল ৯ হাজার, কালের সাক্ষী বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের সেই ঢাকার লোকসংখ্যা এখন প্রায় দেড় কোটির মতো। বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজ করেছিলেন বাংলার সুবাদার মুকাররম খাঁ। তার শাষণামলে শহরের যেসকল অংশ নদীর তীরে অবস্থিত ছিল, সেখানে প্রতি রাতে আলোক সজ্জা করা হতো। এছাড়া নদীর বুকে অংসখ্য নৌকাতে জ্বলতো ফানুস বাতি।ঢাকা সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা শহরের গৃহস্থালি ও অন্যান্য শিল্প থেকে প্রতিদিন ৭ হাজার টনের বেশি বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। এরমধ্যে ৬৩ শতাংশ অপরিশোধিত সলিড বর্জ্য বিভিন্ন সংযোগ খালের মধ্য দিয়ে বুড়িগঙ্গায় পড়ছে। বুড়িগঙ্গা নদী রক্ষায় বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টবিজয়ী মুসা ইব্রাহিম চারটি সুপারিশ পেশ করেছেন। ১৮০০ সালে টেইলর বুড়িগঙ্গা নদী দেখে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন- বর্ষাকালে যখন বুড়িগঙ্গা পানিতে ভরপুর থাকে তখন দুর থেকে ঢাকাকে দেখায় ভেনিসের মতো।সদরঘাটসহ নদীর আশপাশে কেউ প্রবেশ করলে নাকে রুমাল গোঁজা ছাড়া উপায় নেই। পরিবেশ অধিদফতর ১০ বছর আগেই বুড়িগঙ্গার পানি যে কোনো কাজে ব্যবহার নিষিদ্ধ করে তা ভয়াবহ হিসেবে ঘোষণা করেছে।বুড়িগঙ্গা নদীর এই করুণ পরিণতির জন্য দায়ী মূলত অবৈধ দখলদারদের অপ্রতিরোধ্য আগ্রাসন আর দূষণকারী একশ্রেণীর অবিবেচক নাগরিক। অবৈধভাবে নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা অসংখ্য শিল্প-কারখানা, বহুতল মার্কেট, ইট-পাথর-সিমেন্টের মহাল, কাঁচামালের আড়ত, ছিন্নমূল মানুষের শত শত বস্তি, নদী ভরাট করে মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরির কারণে ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে নদীর প্রস্থ। সেই সঙ্গে একশ্রেণীর বিবেকহীন মানুষের যথেচ্ছ অপব্যবহারে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে দূষণ অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। ঢাকার মিরপুর ব্রিজ থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত প্রায় ২৭ কিলোমিটার জুড়ে নদীর পানি বিবর্ণ ও দুর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে।নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জ থেকে ২৫-৩০টি খালের মধ্য দিয়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি বুড়িগঙ্গায় পড়ছে।এ নদীর পানি এত কালো এবং কুশ্রী হয়ে গেছে স্বাভাবিকভাবে পানির দিকে তাকানো যায় না।পানি গায়ে লাগলে চুলকানি শুরু হয়ে যায়। বুড়িগঙ্গা নদীর পানিপ্রবাহের মূল উৎস যমুনা। যমুনা থেকে তিনটি শাখা ধলেশ্বরী, তুরাগ ও বংশী নদীর মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা পানিপ্রবাহ পেয়ে থাকে। আরও কয়েকটি উৎস থেকে বুড়িগঙ্গায় পানি আসে। এর একটি হচ্ছে কালিগঞ্জ নদী, অপরটি হচ্ছে নাগরপুরের সলিমাবাদ-বিনানুই থেকে ছোট নদীর পানি বুড়িগঙ্গায় পতিত হয়। তবে মূল প্রবাহ তুরাগ নদী থেকে শতকরা ৭০ ভাগ পানি আসে বুড়িগঙ্গায়। ৫০ বছর আগেও বিকেল-সন্ধ্যায় আশপাশের এলাকার মানুষ ছুটে যেত বুড়িগঙ্গার নির্মল বায়ু সেবনের জন্য। অনেকে নৌকা ভাড়া করে বুড়িগঙ্গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরে বেড়াত। সেই সদরঘাট, সোয়ারীঘাট কিংবা বাকল্যান্ডের বাঁধের ধারে ভ্রমণ আর নির্মল বায়ু সেবন এখন অকল্পনীয়। পানি দূষণ ছাড়াও নদী দখলের কারণে বুড়িগঙ্গার দু’পাশ দিনদিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। বুড়িগঙ্গা দখলের সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে অনেক প্রভাবশালী জড়িত।বুড়িগঙ্গার পানিতে এখন লেড ও ক্যাডমিয়ামসহ ৬ ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে৷ তা শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, আশেপাশের ৫৬ কিলোমিটার নদীকে দূষিত করছে৷বুড়িগঙ্গার এই দূষিত পানিতে ৪০ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷নদীর দুই পাড়ের মানুষ এ পানি ব্যবহার করার কারণে প্রায় সবাই এখন নানা ধরনের চর্মরোগে ভুগছেন। অনেকের হাতে-পায়ে ঘা হয়ে গেছে। আগে নদীতে অনেক মাছ পাওয়া যেত। বুড়িগঙ্গা এখন মাছশূন্য। সোয়ারীঘাটের মাছের আড়ত বাদামতলী ও শ্যামবাজারের ছোট-বড় অনেক ফলের আড়ত এবং নদীর তীরবর্তী অসংখ্য হাটবাজারের আবর্জনা সরাসরি ফেলা হচ্ছে পানিতে। পাগলার কাছে বুড়িগঙ্গার উভয় পাড়ে গড়ে উঠেছে দু’শতাধিক ইটের ভাটা।সদরঘাট টার্মিনালসহ ঢাকা নদী বন্দরের বিভিন্ন ঘাট থেকে প্রতিদিন ৪৯টি নৌর""টের শতাধিক যাত্রীবাহী লঞ্চসহ স্টিমার এবং বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী নৌযান নানা গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। অনুরূপভাবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও সমসংখ্যক নৌযান প্রতিদিন এখানে আসে।চোখের সামনে অত্যাচারে অনাচার, লোভের-লাভের চাপে ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গার মৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে দেখেও আমরা ঢাকার নাগরিকসমাজ প্রতিবাদে সচল হচ্ছি না, আশ্চর্য মনে হচ্ছে। এক দশকে বুড়িগঙ্গা দখল উচ্ছেদের জন্য কয়েক দফা অভিযান চালানো হয়েছে। তারপরও প্রভাবশালীরা নানা কৌশলে তাদের দখল অব্যাহত রেখেছে। স্থানীয়রা বলেছেন, একদিক থেকে উচ্ছেদ শুর"" হলে শেষ না হওয়ার আগেই আবার দখল শুর"" হয়ে যায়। ২০১১ সালের ১ জুন হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছিল, বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এ পানিকে আর পানি বলা যাবে না। ওই সময় বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে সমস্ত সংযুক্ত পয়ঃপ্রণালি এবং শিল্প কারখানার বর্জ্য নিষ্কাশন লাইন বন্ধ করতে ওয়াসার চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু নির্দেশ ওই পর্যন্তই। প্রতিরোধ তো দূরের কথা নদী দূষণ দিন দিন আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। যমুনা নদী থেকে পরিষ্কার পানি এনে বুড়িগঙ্গাকে ধৌত করা হবে মর্মে একটি পরিকল্পনার কথা শোনা গিয়েছিল।নদী বাঁচতে হবে। মানুষ বাঁচাতে হবে। ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামীলীগ কেন বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি- তার জন্য তাদের বিচার করা হোক। তাদের সময় তো শেষ- গত বছরে তারা কেন বুড়িগঙ্গাকে গুরুত্ব দিলো না !",False rg,"পাঁচ মিনিটে সাঈদীর রায় !!! ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪) আপিল বিভাগ আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।আসামি পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি আপিল সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের মতে আংশিক মঞ্জুর করে এ রায় দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আজ বুধবার সাঈদীর বিরুদ্ধে এই রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।আজ সকাল ১০টা পাঁচ মিনিটে এজলাসে আসেন প্রধান বিচারপতিসহ বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি। সকাল ১০টা সাত মিনিটে রায় দেওয়া শুরু হয়। শেষ হয় ১০টা ১০ মিনিটে।আপিলে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। মামলায় ১০ নম্বর অভিযোগ ছিল বিসাবালিকে হত্যার, ১৬ নম্বর অভিযোগ ছিল তিন নারীকে অপহরণ করে আটকে রেখে ধর্ষণের এবং ১৯ নম্বর অভিযোগ ছিল প্রভাব খাটিয়ে ১০০-১৫০ হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করার।সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের মতে মামলার ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলার ৬ নম্বর অভিযোগ ছিল লুণ্ঠনের, ১১ নম্বর অভিযোগ ছিল হামলা ও লুণ্ঠনের এবং ১৪ নম্বর অভিযোগ ছিল ধর্ষণের।৮ নম্বর অভিযোগের অংশবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের মতে সাঈদীকে খালাস দেওয়া হয়। একই অভিযোগের অংশবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের মতে তাঁকে ১২ বছর কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। মামলায় অষ্টম অভিযোগটি ছিল হত্যা ও অগ্নিসংযোগের।এ ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের মতে মামলার ৭ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। মামলার সপ্তম অভিযোগ ছিল নির্যাতন ও বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ।মামলায় ৮ নম্বর অভিযোগ ছিল ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করা ও ১০ নম্বর অভিযোগ ছিল বিসাবালি হত্যা। এই দুই অভিযোগে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুন্যাল এর আগে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দিয়েছিলেন।ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল। এগুলো ছিল: ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগ।এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগ হত্যার, ১৪ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ ধর্ষণের এবং ১৯ নম্বর অভিযোগ ধর্মান্তরিত করার। বাকিগুলো নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন এবং এ ধরনের অপরাধে সহযোগিতার অভিযোগ।সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় ৬ নম্বর অভিযোগ ছিল মাখনলাল সাহার ২২ সের স্বর্ণ লুট করা।মামলায় ৭ নম্বর অভিযোগ ছিল মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম সেলিমকে নির্যাতন ও তাঁর বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ।মামলায় ৮ নম্বর অভিযোগ ছিল একাত্তরের ৮ মে ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা এবং পিরোজপুরের পারেরহাট এলাকায় হিন্দুদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ।মামলায় ১০ নম্বর অভিযোগ ছিল একাত্তরের ২ জুন বিসাবালিকে হত্যা এবং উমেদপুর হিন্দুপাড়ার ২৪টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ।মামলায় ১১ নম্বর অভিযোগ ছিল মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে হামলা ও লুণ্ঠন।মামলায় ১৪ নম্বর অভিযোগ ছিল মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়ায় এক নারীকে ধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ।মামলায় ১৬ নম্বর অভিযোগ ছিল তিন নারীকে অপহরণ করে আটকে রেখে ধর্ষণ।মামলায় ১৯ নম্বর অভিযোগ ছিল ধর্মান্তরিত করার, প্রভাব খাটিয়ে পারেরহাটসহ অন্য গ্রামের ১০০-১৫০ হিন্দুকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা।মামলায় ইব্রাহিম কুট্টি (৮ নম্বর অভিযোগ) ও বিসাবালিকে হত্যার (১০ নম্বর অভিযোগ) দায়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের দুটি, ধর্মান্তরিত করার একটি এবং লুটপাট, অগ্নিসংযোগ নির্যাতনের তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হলেও দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় অন্য অভিযোগগুলোতে তখন আলাদা করে কোনো দণ্ড দেওয়া হয়নি।আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ১ থেকে ৫ এবং ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৭, ১৮ ও ২০ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এর মধ্যে গণহত্যার চারটি (২, ৪, ১২, ১৫), ধর্ষণের দুটি (১৭ ও ২০) ও হত্যার (১, ৫, ১৩ ও ১৮) চারটি অভিযোগ। বাকি দুটি অভিযোগ ছিল লুটপাটের।রায়ে বলা হয়েছিল, প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ, নথি ও যুক্তির ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল মনে করেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও ধর্মান্তরিত করা এবং এ ধরনের অপরাধে সহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও দশম অভিযোগে বিসাবালি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অপরাধের গভীরতা ও গুরুত্ব বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল মনে করেন, আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।চূড়ান্ত আদেশে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন, আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হলো। বাকি ছয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তা মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার মতো নয়। তাই এগুলোতে তাঁকে আলাদা কোনো শাস্তি দেওয়া হলো না। প্রমাণিত না হওয়া ১২টি অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দেওয়া হলো।এর আগে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ২০১০ সালের ২৯ জুন সাঈদীকে গ্রেপ্তার করা হয় । পরে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাঈদীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।এর আগে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়েছিল। রায়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তখন তাণ্ডব চালিয়েছিল জামায়াত-শিবির। তখনকার সহিংসতায় প্রথম তিন দিনেই অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছিল।এই মামলায় আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত ১৬ এপ্রিল আপিল বিভাগ রায় অপেক্ষমাণ রাখেন। এর ঠিক পাঁচ মাসের মাথায় আজ রায় ঘোষণা করা হলো। এর মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলা আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হলো। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার: ১৯৭১ সালের মুক্তযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত দুইটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল এখন পর্যন্ত নয়টি মামলার রায় দিয়েছেন। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ১০। তাঁদের মধ্যে আবুল কালাম আযাদ এবং চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান পলাতক থাকায় আপিল করেননি। দণ্ডপ্রাপ্ত অপর সাতজন আপিল করেছেন। শুধুমাত্র আপিল নিষ্পত্তি হওয়া একটি মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ।এছাড়া মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে আজ বুধবার সাঈদীর রায় হওয়ায় পরেও আরো চারটি মামলা আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকছে। এগুলো হলো জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম (৯০ বছর কারাদণ্ড), সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ (মৃত্যুদণ্ড), সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান (মৃত্যুদণ্ড) ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (মৃত্যুদণ্ড) আপিল। এর মধ্যে কামারুজ্জামানের করা আপিলের শুনানি চলছে।বিএনপির নেতা আবদুল আলীমের আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। তিনি আপিল করলেও মারা যাওয়ার কারণে গতকাল মামলা বাতিল করে দেন আপিল বিভাগ।",False rn,"হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা ছোট গল্প- 'চোখ' আজ বাদ-আছর খেজুর কাঁটা দিয়ে মতি মিয়ার চোখ তুলে ফেলা হবে। চোখ তুলবে নবীনগরের ইদরিস। এই কাজ সে আগেও একবার করেছে। মতি মিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে বরকতসাহেবের বাংলাঘরে। তার হাতপা বাঁধা। একদল মানুষ তাকে পাহারা দিচ্ছে, যদিও তার প্রয়োজন ছিল না। পালিয়ে যাওয়া দূরের কথা, মতি মিয়ার উঠে বসার শক্তি পর্যন্ত নেই। তার পাঁজরের হাড় ভেঙেছে। ডান হাতের সব কটা আঙুল থেঁতলে ফেলা হয়েছে। নাকের কাছে শিকনির মতোরক্ত ঝুলে আছে। পরনের শাদা পাঞ্জাবি রক্তে মাখামাখি হয়ে গায়ের সঙ্গে লেগে গেছে। ঘন্টাখানিক আগেও তার জ্ঞান ছিল না। এখন জ্ঞান আছে, তবে বোধশক্তি ফিরেছে বলে মনে হয় না। তার চোখ তুলে ফেলা হবে এই খবরেও সে বিচলিত হয়নি। ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেলে বলেছে, নয়ন কখন তুলবেন? এই পর্ব বাদ-আছর সমাধা হবে শুনে সে মনে হলো নিশ্চিত হলো। সহজ গলায় বললো, পানি খামু, পানি দেন। পানি চাইলে পানি দিতে হয়। না দিলে গৃহস্থের দোষ লাগে। রোজ হাশরের দিন পানি পিপাসায় বুক যখন শুকিয়ে যায় তখন পানি পাওয়া যায় না। কাজেই এক বদনা পানি এনে মতির সামনে রাখা হলো। মতি বিরক্ত গলায় বললো, মুখের উপর পানি ঢাইল্যা না দিলে খামু ক্যামনে? আমার দুই হাত বান্ধা। আপনেরার এই কেমুন বিবেচনা? হাসান আলি মতিকে কেন্দুয়া বাজার থেকে ধরে এনেছে। মতির ওপর এই কারণেই তার অধিকার সবাই স্বীকার করে নিয়েছে। মতির বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে হাসান আলীর মতামত জানা দরকার। হাসান আলী পানি বিষয়ে কোনো মতামত দিল না, বিস্মিত হয়ে বললো, হারামজাদা কেমন ঢঙে কথা কয় শুনছেন? তার চউখ তোলা হইব এইটা নিয়ে কোনো চিন্তা নাই। ক্যাটক্যাট কইরা কথা বলতাছে। কী আচানক বিষয়! ঐ হারামজাদা, তোর মনে ভয়-ডর নাই? মতি জবাব দিলো না, থু করে থুতু ফেলল। থুতুর সঙ্গে রক্ত বের হয়ে এল। তাকে ঘিরে ভিড় বাড়ছে। খবর ছড়িয়ে পড়ছে। একজন জীবিত মানুষের চোখ খেজুর কাঁটা দিয়ে তুলে ফেলা হবে এমন উত্তেজক ঘটনা সচরাচর ঘটে না। আশা করা যাচ্ছে, আছর ওয়াক্ত নাগাদ লোকে লোকারণ্য হবে। মতিকে দেখতে শুধু যে সাধারণ লোকজন আসছে তা না, বিশিষ্ট লোকজনও আসছেন। কেন্দুয়া থেকে এসেছেন রিটায়ার্ড স্টেশনমাস্টার মোবারক সাহেব। নয়াপাড়া হাই স্কুলের হেডমাস্টার সাহেবও এসেছেন। হাসান আলী নিজের চেয়ার ছেড়ে দিয়ে তাঁকে বসতে দিলো। তিনি পাঞ্জাবীর পকেট থেকে চশমা বের করতে করতে বললেন, এরই নাম মতি? হাসান আলী হাসিমুখে বললো, জ্বে হেডমাস্টার সাব, এই হারামজাদাই মতি। বাদ-আছর হারামজাদার চোউখ তোলা হইবে। ‘এরে ধরলা ক্যামনে?’ ‘সেইটা আপনের এক ইতিহাস’। পানদানিতে পান চলে এসেছে। হেডমাস্টার সাহেব পান মুখে দিতে দিতে উৎসাহের সঙ্গে বললেন, ঘটনাটা বলো শুনি। সংক্ষেপে বলবা। হাসান আলী এগিয়ে এল। মতিকে ধরে আনার গল্প সে এ পর্যন্ত এগারবার বলেছে। আরো অনেকবার বলতে হবে। বিশিষ্ট লোকজন অনেকেই এখনো আসেননি। সবাই আলাদা আলাদা করে শুনতে চাইবেন। তাতে অসুবিধা নেই। এই গল্প একলক্ষ বার করা যায়। হাসান আলী কেশে গলা পরিস্কার করে নিলো। ‘ঘরে কেরাছি ছেল না। আমার পরিবার বললো, কেরাছি নাই। আমার মিজাজ গেল খারাপ হইয়া। হাটবারে কেরাছি আনলাম, আর আইজ বলে কেরাছি নাই, বিষয় কি! যাই হউক, কেরাছির বোতল হাতে লইয়া রওনা দিলাম। পথে সুলেমানের সঙ্গে দেখা। সুলেমান কইলো, চাচাজি, যান কই? মতি নিজেও হাসান আলীর গল্প আগ্রহ নিয়ে শুনছে। প্রতিবারই গল্পের কিছু শাখা-প্রশাখা বের হচ্ছে। সুলেমানের কথা এর আগে কোনো গল্পে আসেনি। এইবার এল। সুলেমানে ভূমিকা কী কিছু বোঝা যাচ্ছে না। হাসান আলী গল্প শেষ করলো। হেডমাস্টার সাহেব মুগ্ধ গলায় বললেন, বিরাট সাহসের কাম করছ হাসান। বিরাট সাহস দেখাইছ। কামের কাম করছ। মতির সঙ্গে অস্ত্রপাতি কিছু ছিল না? ‘জ্বে না।’ ‘আল্লাপাক তোমারে বাঁচাইছে। অস্ত্রপাতি থাকলে উপায় ছিল না। তোমারে জানে শেষ কইরা দিত।’ উপস্থিত সবাই মাথা নাড়ল। হেডমাস্টার সাহেব বললেন, চউখ তোলা হইব কথাটা কি সত্য? ‘জ্বে সত্য। এইটা সকলের সিদ্ধান্ত। চউখ তুললেই জন্মের মতো অচল হইব। থানা-পুলিশ কইরা কোনো ফায়দা নাই।’ ‘অতি সত্য কথা, কোনো ফায়দা নাই। তবে থানাওয়ালা ঝামেলা করে কিনা এইটা বিবেচনায় রাখা দরকার।’ ‘আছে, সবই বিবেচনার মইধ্যে আছে। মেম্বর সাব থানাওয়ালার কাছে গেছে।’ মতি লক্ষ করল, হেডমাস্টার সাহেব তার দিকে তাকিয়ে আছেন। হেডমাস্টার সাহেবের চোখে শিশুসুলভ বিস্ময় ও আনন্দ। মনে হচ্ছে, চোখ তোলার ঘটনা দেখার জন্য তিনি আছর পর্যন্ত থেকে যাবেন। মতি তেমন ভয় পাচ্ছে না। প্রাথমিক ঝড় কেটে গেছে এটাই বড় কথা। প্রথম ধাক্কায় চোখ চলে যেতে পারতো। সেটা যখন যায়নি তখন আশা আছে। আছরের আগেই কেউ না কেউ দয়াপরবশ হয়ে বলে ফেলবে—‘থাউক, বাদ দেন। চউখ তুইলা লাভ নাই। শক্ত মাইর দিয়া ছাইড়া দেন।’ একজন বললেই অনেকে তাকে সমর্থন করবে। তবে একজন কাউকে বলতে হবে। মতি নিজে ক্ষমা চাইলে হবে না। এতে এরা আরো রেগে যাবে। সে দুর্বল হলে সর্বনাশ। দুর্বলকে মানুষ করুণা করে না, ঘৃণা করে। মতি ঠান্ডা মাথায় ভাবে। চোখ বাঁচানোর পথ বের করতে হবে। হাতে অবশ্যি সময় আছে। আছরের এখনো অনেক দেরি। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করাও সমস্যা হযে দাঁড়িয়েছে। সারা শরীরের যন্ত্রণা, পিপাসায় বুক শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির বদনা সামনে আছে কিন্তু কেউ মুখে ঢেলে না দিলে খাবে কিভাবে? হেডমাস্টার সাহেব সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, কিরে মতি সিগ্রেট খাবি? সবাই হো-হো করে হেসে ফেললো। মতি চিন্তিত বোধ করছে। এটা ভালো লক্ষণ না। এরা তাকে দেখে মজা পেতে শুরু করেছে। মানুষ মজা পায় জন্তু-জানোয়ার দেখে। এরা তাকে জন্তু-জানোয়ার ভাবতে শুরু করেছে। হাত-পা বাঁধা একটা ভয়াবহ প্রাণী। ভয়াবহ প্রাণীর চোখ ওঠানো কঠিন কিছু না। তাছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন মজা পাবার জন্যে আসছে। মজা না পেয়ে তারা যাবে না। মতি হেডমাস্টার সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো—স্যার, পানি খাব। একজন বদনার পুরো পানিটা তার মুখের উপর ঢেলে দিলো। সবাই আবার হো-হো করে হেসে উঠল। মতির বুক ধক করে উঠল। অবস্থা ভালো না। তাকে দ্রুত এমন কিছু করত হবে যেন সে পশুস্তর থেকে উঠে আসতে পারে। কি করা যায় কিছুই মাথায় আসছে না। চোখদুটা কি আজ চলেই যাবে? মায়া-মমতা দুনিয়া থেকে উঠে যাচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন তার মতো লোকের শাস্তি ছিল মাথা কামিয়ে গলায় জুতার মালা ঝোলানো। তারপর এল ঠ্যাং-ভাঙা শাস্তি, ঠ্যাং ভেঙে লুলা করে দেওয়া। আর এখন চোখ তুলে দেওয়া। একটা খেজুর কাঁটা দিয়ে পুট করে চোখ বের করে আনা। এতগুলি লোক তাকে ঘিরে আছে, কারো চোখে কোনো মমতা নেই। অবশ্যি হাতে এখনো সময় আছে। মমতা চট করে তৈরি হয় না। মমতা তৈরি হতেও সময় লাগে। মতি হাসান আলীর দিকে তাকিয়ে হাসল। মানুষের হাসি খুব অদ্ভুত জিনিস। জন্তু-জানোয়ার হাসতে পারে না। মানুষ হাসে। একজন ‘হাসন্ত’ মানুষের ওপর রাগ থাকে না। হাসান আলী চেঁচিয়া উঠল, দেখ, হারামজাদা হাসে। ভয়ের চিহ্নটা নাই। কিছুক্ষণের মইধ্যে চউখ চইল্যা যাইতেছে, তারপরেও হাসি। দেখি, এর গালে একটা চড় দেও দেখি। প্রচণ্ড চড়ে মতি দলা পাকিয়ে গেল। হাত-পা বাঁধা, নয়তো চার-পাঁচ হাত দূরে ছিটকে পড়ত। কিছুক্ষণের জন্যে মতির বোধশক্তি লোপ পেল। মাথার ভেতর ভোঁ-ভোঁ শব্দ হচ্ছে। চারদিক অন্ধকার। এরা কি চোখ তুলে ফেলেছে? মনে হয় তাই। পানির পিপাসা দূর হয়েছে। পিপাসা নেই। এটা মন্দ না। মাথার ভেতর পাক দিচ্ছে, মনে হচ্ছে সে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। অজ্ঞান হবার আগে আগে এরকম হয়। অজ্ঞান হওয়া খুব আনন্দদায়ক ব্যাপার। দ্রুত শরীরের ব্যথা-বেদনা চলে যায়, শরীর হালকা হতে থাকে। না, চোখ যায়নি। চোখ এখনো আছে। এইতো সবকিছু দেখা যাচ্ছে। মতি মনে-মনে বলল, ‘শালার লোক কী হইছে! মেলা বইস্যা গেছে।’ বেলা পড়ে এসেছে। আছর ওয়াক্ত হয়ে গেল নাকি? না মনে হয়। আলো খুব বেশি। তাকে বাংলা-ঘর থেকে বের করে উঠোনে শুইয়ে রাখ হয়েছে। এইজন্যেই আলো বেশি লাগছে। মতি বলল, কয়টা বাজে? ‘কয়টা বাজে তা দিয়া দরকার নাই। সময় হইয়া আসছে। যা দেখনের দেইখ্যা নে রে মতি।’ মতি চারদিকে তাকাল। তার আশেপাশে কোনো ছোট ছেলেমেয়ে নেই। মহিলা নেই। এদের বোধহয় সরিয়ে দেয়া হয়েছে। লোকজন তাকে ঘিরে গোল হয়ে আছে। তার সামনে জলচৌকির উপর নীল গেঞ্জি এবং শাদা লুঙি পরে যে বসেআছে সে-ই কি চোখ তুলবে? সে-ই কি নবীনগরের ইদরিস? কখন এসেছে ইদরিস? লোকটার ভাবভঙ্গি দশজনের মতো না। তাকাচ্ছে অন্যরকম করে। তার চেয়েও বড় কথা, আশেপাশের লোকজন এখন নীল গেঞ্জিঅলাকেই দেখছে। মতির প্রতি তাদের এখন আর কোনো আগ্রহ নেই। তারা অপেক্ষা করছে বড় ঘটনার জন্য। নীল গেঞ্জি-পরা লোকটার সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটা জেনে নেয়া যায়। মতি অপেক্ষা করছে কখন লোকটা তাকায় তার দিকে। যেই তাকাবে অমনি মতি কথা বলবে। চোখের দিকে না-তাকিয়ে কথা বললে কোনো আরাম নেই, কিন্তু লোকটা তাকাচ্ছে না। ‘ভাইজান, ও ভাইজান’ নীল গেঞ্জি তাকাল মাতির দিকে। মতি সঙ্গে সঙ্গে বলল, আফনের নাম কি ইদরিস মিয়া? নীল গেঞ্জি জবাব দিল না। মাথা ঘুরিয়ে নিল। মতি আরো আন্তরিক ভঙ্গিতে বলল, ভাইজান, আফনেই কি আমার চউখ তুলবেন? পেছন থেকে একজন বলল—হারামজাদা কয় কী! সঙ্গে সঙ্গে সবাই হেসে উঠল। এই কথায় হাসার কী আছে মতি বুঝতে পারছে না। কথাটা কি সে বিশেষ কোনো ভঙ্গিতে বলেছে? সাধারণ কথাও কেউ কেউ খুব মজা করে বলতে পারে। তার বৌ পারত। অতি সাধারণ কথা এমনভাবে বলত যে হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে যেত। ভাত বেড়ে ডাকতে এলে বলত—ভাত দিছি, আসেন। কষ্ট কইরা তিন-চাইরটা ভাত খান। না, বৌয়ের কথা ভাবার এখন সময় না। এখন নিজের নয়ন বাঁচানোর বুদ্ধি বের করতে হবে। নয়ন বাঁচলে বৌয়ের কথা ভাবা যাবে। নয়ন না-বাঁচলেও ভাবা যাবে। ভাবার জন্যে নয়ন লাগে না। বৌয়ের কথা সে অবশ্যি এমনিতেও বিশেষ ভাবে না। শুধু হাজতে বা জেলখানায় থাকলেই তার কথা মনে আসে। তখন তার কথা ভাবতেও ভালো লাগে। মেয়েটার অবশ্যি কষ্টের সীমা ছিল না। সে জেলে গেলেই রাতদুপুর চৌকিদার, থানাঅলা বাড়িতে উপস্থিত হত। বিষয় কি? খোঁজ নিতে আসছে মতি ঘরে আছে কি-না। সুন্দর একটা মেয়ে। খালি-বাড়িতে থাকে। থানাঅলারা তো রাতদুপুরে সেই বাড়িতে যাবেই। বাড়িতে যাবে। পান খাবে। আরও কত কি করবে। ডাকাতের বৌ হল সবার বৌ। এই অবস্থায় কোনো মেয়ে থাকে না। তার বৌটা তারপরেও অনেক দিন ছিল। মতি প্রতিবারই বাড়ি ফিরত আতঙ্ক নিয়ে। বাড়ির সামনে এসে মনে হত এইবার বাড়িতে ঢুকে দেখবে, বাড়ি খালি। কেউ নেই। বৌ চলে গেছে গত বৈশাখ মাসে। কোথায় গেছে কেউ জানে না। পাড়ার কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেছিল। কেউ বলতে পারে না। একজন বলল—অনেক দিন তো থাকল, আর কত? বাজারে গিয়া খোঁজ নেও। মনে হয় বাজারে ঘর নিছে। জগতের অনেক সত্যের মতো এই সত্যও সে গ্রহণ করেছে সহজভাবে। চোর-ডাকাতের বৌদের শেষ আশ্রয় হয় বাজার। বাজারে তারা মোটামুটি সুখেই থাকে। মুখে রঙ-চঙ মেখে সন্ধ্যাকালে চিকন গলায় ডাকে—ও বেপারি, আহেন, পান-তামুক খাইয়া যান। শীতের দিন শইলডা গরম করন দরকার আছে। অবসর পেলেই মতি আজকাল বাজারে-বাজারে ঘোরে। বৌটাকে পাওয়া গেলে মনে শান্তি। তাকে নিয়ে ঘর-সংসার আর করবে না। তাতে লাভ কী? বৌটা কোনো-এক জায়গায় থিতু হয়েছে এটা জানা থাকলেও মনে আনন্দ। মাঝেমধ্যে আসা যাবে। আপনার মানুষের কাছে কিছুক্ষণ বসলেও ভালো লাগে। আপনার মানুষ সংসারে থাকলেও আপনার, বাজারে থাকলেও আপনার। বৌ কেন্দুয়া বাজারে আছে এরকম একটা উড়া-খবর শুনে মতি কেন্দুয়া এসেছিল। উড়া-খবর কখনো ঠিক হয় না। তার বেলা ঠিক হয়ে গেল। বৌ এখানেই আছে। নাম নিয়েছে মর্জিনা। বাজারে ঘর নিলে নতুন নাম নিতে হয়। মর্জিনার সঙ্গে দেখা করতে যাবার মুখে এই বিপদ। আজান হচ্ছে। আছর ওয়াক্ত হয়ে গেছে। মতি অনেক কষ্টে পাশ ফিরল। তারা চোখ কখন তুলবে? নামাজের আগে নিশ্চয়ই না। কিছুটা সময় এখনো হাতে আছে। এর মধ্যে কত কিছু হয়ে যেতে পারে। মহাখালি রেলস্টেশনে সে একবার ধরা পড়ল। তাকে মেরেই ফেলত। ট্রেনের কামরা থেকে একটা মেয়ে ছুটে নেমে এল। চিৎকার করে বলল—আপনারা কি মানুষটাকে মেরে ফেলবেন? খবরদার, আর না। খবরদার! মেয়েটির মূর্তি দেখেই লোকজন হকচকিয়ে গেল। লোকজনের কথা বাদ থাক, সে নিজেই হতভম্ব। জীবন বাঁচানোর জন্যে মেয়েটিকে সামান্য ধন্যবাদও দেয়া হয়নি। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। সেই মেয়ে চলে গেছে কোথায়-না-কোথায়! আজ এই-যে এত লোক চারপাশে ভিড় করে আছে, এদের মধ্যেও নিশ্চয়ই কেউ-না-কেউ আছে ঐ মেয়েটির মতো। সে অবশ্যই শেষমুহূর্তে ছুটে এসে বলবে, ‘করেন কী! করেন কী!’ আর এতেই মতির নয়ন রক্ষা পাবে। এইটুকু বিশ্বাস তো মানুষের প্রতি রাখতেই হবে। মতি মিয়া অপেক্ষা করে। কে হবে সেই লোকটি। না-জানি সে দেখতে কেমন। সেই লোকটির চোখ কি ট্রেনের মেয়েটির চোখের মতো মমতামাখা হবে?—যে চোখের দিকে তাকালে ভালো হয়ে যেতে ইচ্ছা করে? মতি মিয়া চাপা উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করে, অপেক্ষা করতে তার ভালোই লাগে।",False mk,"এমডিজি অর্জনের পথে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনের পথে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যগুলো অর্জনের ডেডলাইন বা সময়সীমা হচ্ছে ২০১৫ সাল। কিন্তু তার আগেই অনেক লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের প্রথম লক্ষ্য দারিদ্র্য কমানোর পথে রয়েছে। চলতি ২০১৩ সালেই এ লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের এ স্বল্পোন্নত দেশটি।এমডিজির আটটি মূল লক্ষ্যের অধীনে ২১টি লক্ষ্যামাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রাগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে মোট ৬০টি সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪টি সূচকে পরিমাণগত লক্ষ্য আছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) সূচী অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে এমডিজি বাস্তবায়নের সময়সীমা শেষ হতে যাচ্ছে। এর আগে নয়টি সূচকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ১০টি সূচকে অর্জন লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি। তবে বাকি ১৫টি সূচকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও কাজ করতে হবে বাংলাদেশকে।মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০০০ সাল থেকেই বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশ এমডিজি অর্জনে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু করে। এমডিজি অর্জনকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা ঢেলে সাজায়। বাংলাদেশ শুরুর কয়েকটি বছর এমডিজি অর্জনে একটু ঢিমেতালে এগোলেও বিগত চার-পাঁচ বছরে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এগিয়েছে।সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ প্রণীত এমডিজি অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০১২ থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এগুলো হলো: দারিদ্র্যের ব্যবধান কমিয়ে আনা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা আনয়ন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মুত্যৃহার কমানো, এইচআইভি সংক্রমণ রোধ, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের কীটনাশকের হাত থেকে রক্ষায় মশারির নিচে ঘুমানো, যক্ষ্মা রোধ চিহ্নিতকরণ ও নিরাময় ইত্যাদি।অপরদিকে দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিশুদের অপর্যাপ্ত ওজনের প্রকোপ, প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হার, মাতৃমৃত্যুর হার, শিশুদের টিকা প্রদানের আওতা বৃদ্ধি এবং সংক্রমক রোগের বিস্তার কমিয়ে আনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।তবে যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অধিক মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন সেগুলো হলো- ক্ষুধাজনিত দারিদ্র্য কমানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির হার ও বয়স্ক শিক্ষা হার বৃদ্ধি, মহিলাদের জন্য আরও অধিক পরিমাণে মানসম্মত কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রসূতিকালীন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর উপস্থিতি বৃদ্ধি, এইচআইভি বা এইডস-সংক্রান্ত সঠিক ও অধিক তথ্য জানানো, বনাঞ্চল বৃদ্ধি এবং তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের সম্প্রসারণ।লক্ষ্যগুলোর পুরোপুরি বাস্তবায়ন ও পিছিয়ে থাকা অগ্রগতির ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমস্যাকে প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে কাক্সিক্ষত হারে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারছে না সরকার। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহও ব্যবসার বাইরে এসে সামাজিক উন্নয়নে অর্থ বিনিয়োগ করতে চায় না। বিভিন্ন দাতা দেশ এবং উন্নয়ন সংস্থাও বাংলাদেশের এমডিজি অর্জনে প্রতিশ্রুত হারে আর্থিক সহায়তা দেয়নি। এর ফলে পূর্বনির্ধারিত ২০১৫ সালের মধ্যে বেশকিছু সূচকে এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনিশ্চিত।এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, ‘উন্নত দেশগুলো এ লক্ষ্য অর্জনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে তাদের জাতীয় আয়ের দশমিক সাত শতাংশ হারে উন্নয়ন সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করেনি। ফলে বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনে যে সাফল্য অর্জন করেছে তা নিজস্ব সম্পদ ও অর্থেই করেছে।’তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ সহায়তা দিলে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সকল সূচকে এমডিজি অর্জনে সফল হতাম।’যুদ্ধের অভিশাপ থেকে পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচানোর লক্ষ্যে ষাট বছর আগে জন্ম হয়েছিল জাতিসংঘের। বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এসে জাতিসংঘের স্থপতিরা বিশ্বের মানচিত্র থেকে দারিদ্র্য ও বঞ্চনাকে দূর করার এক নয়া অঙ্গীকার করেন। সেই অঙ্গীকারের নামই মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) বা সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ। ২০০০ সালে সেই মিলেনিয়াম ডিক্লারেশনে বিশ্বের ১৮৯টি দেশ স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশ এর একটি স্বাক্ষরকারী দেশ। সেই অঙ্গীকার থেকেই বাংলাদেশ এমডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।সূত্র জানায়, জাতিসংঘের সহস্রাব্দ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে। সেই সম্মেলনেই সদস্য দেশগুলোর সম্মতিতে আটটি সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য গৃহীত হয়। স্বল্পোন্নত (এলডিসি) ও কম উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন প্রধান টার্গেট হলেও কর্মপরিকল্পনায় উন্নত-অনুন্নত-শিল্পোন্নত সব দেশেরই করণীয় নির্ধারণ করা হয়। সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। যদিও আফ্রিকার ৩৪টি, এশিয়ার বাংলাদেশসহ ১৪টি, লাতিন আমেরিকার হাইতিসহ মোট ৪৯টি এলডিসির ৮৮ কোটি মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করাই এমডিজি নির্ধারণের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য, যাতে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের মর্যাদা, স্বাধীনতা ও সমঅধিকার নিশ্চিত হয়। প্রতিটি মানুষ একটা ন্যূনতম জীবনমান বজায় রাখতে পারে, যাতে মানুষ ক্ষুধা ও নির্যাতনের শিকার না হয়। বিশ্বব্যাপী সহনশীলতা ও পারস্পরিক সহানুভূতি বৃদ্ধি পায়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ই এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এ লক্ষ্য পূরণে কার কি দায়িত্ব তাও এ সম্মেলনে নির্ধারণ করা হয়।এ সম্মেলনের পর ২০১৫ পরবর্তী টার্গেট কি হবে তা নির্ধারণে গত বছরের জুনে ব্রাজিলের রিওডি জেনিরোতে জাতিসংঘ আয়োজিত টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে এমডিজির ওপর ভিত্তি করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। এসডিজি গৃহীত হলে ২০১৫ সালের পর থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে।জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) বিশ্বব্যাপী এমডিজি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে। আর বাংলাদেশে এ বিষয়টি দেখভাল করছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।বাংলাদেশের এমডিজি লক্ষ্য অর্জনে ইউএনডিপির পর্যবেক্ষণ কি জানতে চাইলে সংস্থাটির বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি নেইল ওয়াকার বলেন, ‘বাংলাদেশ এমডিজির অনেক লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছে। বাকি লক্ষ্যগুলো অর্জনে পুরোমাত্রায় প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বিশেষ করে বনায়ন ও পরিবেশ এবং পুষ্টির নিশ্চয়তার ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে।’তবে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচেন এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১২ সালের খানা জরিপ অনুযায়ী, ১৯৯১-৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরে দারিদ্র্য কমেছে দুই দশমিক ৪৭ শতাংশ হারে। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশ ২০১২ সালেই দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়।এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ২৯ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৩ সালেই তা অর্জন করে ফেলেছে। এ বছরই বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ২৬ শতাংশে নেমে আসবে। সেই সঙ্গে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যও কমে এসেছে। এটা বাংলাদেশের একটি বড় সাফল্য। তবে দারিদ্র্যের অনুপাত কমে এলেও এখনও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা চার কোটি ৭০ লাখ। তাই দারিদ্র্যের হার কমার আত্মতুষ্টিতে না ভুগে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনার যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে হবে।তিনি বলেন, ‘এমডিজি অর্জিত হওয়ার কথা ছিল বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতায়, কিন্তু সেটা হয়নি। আমরা পর্যাপ্ত সহায়তা না পেলেও এমডিজি অর্জনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছি। নিজস্ব সম্পদেই এমডিজির প্রধান সূচকগুলোতে বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এটাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা উচিত।’তবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে এলেও ন্যূনতম খাবার গ্রহণে অক্ষম ব্যক্তি কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনেক দূরে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জনে প্রতিদিন ন্যূনতম ২১২২ ক্যালরি খাবার প্রয়োজন। ২০১৫ সালের মধ্যে এ পরিমাণ খাবার কিনতে অক্ষম মানুষের সংখ্যা ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এমডিজির ভিত্তি বছরে এর মাত্রা ছিল ৪৮ শতাংশ। গত কয়েক বছরে তা ৪০ শতাংশে নেমেছে।এমডিজি বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমডিজির ৮টির মধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও পরিবেশের বিষয়টি বাংলাদেশের হাতে নেই। তাছাড়া অন্য ৫টিতে বাংলাদেশের ভাল অগ্রগতি হয়েছে। তুলনামূলক দুর্বলতা রয়েছে, মাতৃমৃত্যুর হারে ও কর্মসংস্থানের জায়গায়। তবে সর্বোপরি আফ্রিকার যে কোন দেশের তুলনায় ভাল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রাথমিক শিক্ষায় অনেক উন্নতি করলেও সেটা সংখ্যার দিক থেকে হয়েছে। গুণগত মানের দিক থেকে হয়নি। এছাড়া, অর্থনীতির মূল ধারাতে যারা নেই তাদের কিভাবে মূল ধারায় আনা যায় তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমরা চাহিদার পুরোপুরি খাদ্য উৎপাদন করতে পারি না। আমাদের জাতীয় সঞ্চয়ের হারও কম। বাণিজ্যের হার কম। জ্বালানি সঙ্কট তো রয়েছেই। এছাড়া উন্নয়ন কর্মকা-ের অনেক অংশ এখনও উন্নয়ন সহযোগীদের ওপর নির্ভরশীল। তারপরও আমাদের সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমডিজির অনেক লক্ষ্যমাত্রা আমরা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।’অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্রমবর্ধমান হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি আমাদের অন্যতম সমস্যা। তার চাইতেও বড় সমস্যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি। স্বাস্থ্য খাতে আপাতত বড় কোন সমস্যা না থাকলেও কিছুদিনের মধ্যেই এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। তথ্যপ্রযুক্তির অনেক অগ্রগতি হলেও প্রযুক্তির ব্যবহার খুব বেশি বাড়েনি।তিনি বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সময় হতে পারে ২০৩০ সাল। ওই সময় আমরা কোথায় ও কিভাবে যাব তার কৌশল সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থনীতি, বাজার, পরিবেশের বিবেচনায় ভঙ্গুর দেশসমূহের বিষয়ে সামষ্টিক পদক্ষেপ নিতে হবে।’(চলবে)",False rg,"'মা' আমার প্রথম উপন্যাস!! আমার প্রথম উপন্যাস 'মা'। 'মা' প্রকাশ করেছে আল-আমিন প্রকাশন ২০১২ সালে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী চারু পিন্টু। যারা ম্যক্সিম গোর্কি'র 'মা' পড়েছেন, বা মুনীর চৌধুরী'র 'জননী' পড়েছেন, বা শওকত ওসমান-এর 'জননী' পড়েছেন বা আনিসুল হকের 'মা' পড়েছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আমার লেখা 'মা' উপন্যাসটি পড়ার জন্য। এই মা একজন বাঙালি মা। একজন গ্রামের মা। একজন সাধারণ অশিক্ষিত মা। যার সন্তানরা সবাই শিক্ষিত। যার কাকতলীয়ভাবে বারো মাসে বারোটি সন্তানের জন্ম। আট ছেলে চার মেয়ে। তিনটি ছেলে ছোটবেলায় মারা যায়। আর একটি ছেলে হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়া ছেলেটি বাড়িতে তার লেখা কিছু ডায়েরি ফেলে যায়। এই মা ছেলেকে মনে পড়লেই হারিয়ে যাওয়া সেই ছেলের লেখা ডায়েরির পাতা থেকে পড়েন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু থেকে একুশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত প্রায় সত্তর বছরের বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক ঘটনার প্রতিচ্ছবি মা এই ডায়েরি পড়ে ইতিহাসের সঙ্গে মিলিয়ে নেন। যারা ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন, তাদের জন্য আমার 'মা' উপন্যাসটি একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে। যারা ইতিহাসের সত্যিকার ঘটনার অন্তরালের খবরে উকি দিতে চান, তারা হয়তো আমার 'মা' উপন্যাসে অনেক অজানা তথ্যের সন্ধান পাবেন। 'মা' উপন্যাসটি শুরু হয়েছে এই বাঙালি মায়ের স্বামী'র শবযাত্রা দিয়ে। আর এটি শেষ হয়েছে হারিয়ে যাওয়া ছেলের একটি চিঠি দিয়ে। উপন্যাসে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মনান্তর, দেশ বিভাগ, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, ভাষা আন্দোলন, কয়েকজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সত্যিকারের পরিচিতি, কয়েকটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের খবর, পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসন, ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণ-আণ্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী, '৭৫-এর ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনা, জেলহত্যা, সামরিক শাসন, গণতন্ত্রে উত্তরণ, ডক্টর হুমায়ুন আজাদের উপর হামলা, কর্নেল তাহের হত্যাকাণ্ড, সত্তরের ঘূর্ণিঝড় গোর্কি, ঘূর্ণিঝড় সিডর, হজ ও রেমিটেন্স, মহাভারত-রামায়ন, হিমালয় কন্যা নেপালের গল্পসহ অনেক অনেক ঘটনা ও ঘটনার অপ্রচলিত ভিন্নধারার বিবরণ। প্রচলিত উপন্যাসের কোনো কাঠামো এই উপন্যাসে আমি গ্রহন করিনি। এই উপন্যাসের কাঠামো ও দেশ-কাল-স্থান আমার নিজস্ব স্টাইলে রচিত। যারা প্রচলিত উপন্যাস পড়ে অভ্যস্থ তাদের হয়তো এই উপন্যাস একটু বিচলিত করতে পারে, কিন্তু নতুনকে গ্রহন করার মত মানসিকতা নিয়ে আমার 'মা' উপন্যাসটি কেউ পড়া শুরু করলে, বাংলাদেশের সত্তর বছরের একটি কমপ্যাক্ট ধারণার পাশাপাশি একটি নতুন জিজ্ঞাসা হয়তো সেই পাঠকের মনের খোাড়াক যোগাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান যেদিন বার্মা আক্রমন করল, সেই ঘটনার পর বার্মা থেকে ভারতে চাল রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হল। এদিকে ভারতের শাসক ব্রিটিশরা ব্রিটিশ সেনাদের জন্য চাল মজুত করল। একই সময়ে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস আর খড়ায় গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে কৃষি ফসল উৎপাদন নষ্ট হল। শুরু হল তেতাল্লিশের মনান্তর। যার প্রধান ছোবলটা গেছে বাংলাদেশের উপর দিয়ে। ইতিহাসের এসব ঘটনার প্রতিটি মুহূর্ত 'মা' উপন্যাসে এসেছে। নথুরাম গডসে'র সেভেন স্টার বাহিনী মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করার জন্য মোট পাঁচবার আক্রমন করেছিল। পঞ্চমবার তারা সফল হয়েছিল। কিন্তু কিভাবে? সে প্রশ্নের জবাব মিলবে 'মা' উপন্যাসে। দেশবিভাগের সময় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি'র কেমন বিতর্কিত ভূমিকা ছিল, সেসব ঘটনার অন্তরালের খবর পাওয়া যাবে উপন্যাস 'মা'-তে। ইতিহাসের অনেক ঘটনার সম্পূর্ণ সত্য ঘটনার কিছু স্ন্যাপশট হুবহু উঠে এসেছে আমার উপন্যাস 'মা'-তে। যা আগ্রহী পাঠকের হয়তো অনেক অজানা বিষয়ের খোড়াক যোগাবে। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় 'মা' উপন্যাসটি পাওয়া যাচ্ছে আল-আমিন প্রকাশন-এ। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে, স্টল নং ৩০০। সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:২৮",False ij,"জাপানি কবি তানিকাওয়া শুনতারো এবং তাঁর কবিতা কবি তানিকাওয়া শুনতারো। জাপানের ভীষন জনপ্রিয় কবি তিনি। বলা যায়, আমাদের যেমন জীবনানন্দ- শুনতারো তেমনি জাপানের । ২য় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে জীবনের ওপর হতাশ হয়ে পড়েছিলেন শুনতারো । পরে, বিটোফেনের সঙ্গীত শুনে জীবনের ওপর বিশ্বাস ফিরে পান । বেশ কিছুদিন ধরে আমি বিদেশি ভাষার বিদগ্ধ কবিদের কবিতা অনুবাদ করছি। প্রথম প্রথম দ্বিধা ও সঙ্কোচ ছিল। তবে কয়েকজন বিদগ্ধজনের উৎসাহ পেয়ে দ্বিধা কাটছে। কাজে কাজেই এখন থেকে কবিতার মাধ্যমে প্রায়শ আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব বিদেশি ভাষার বিদগ্ধ সব কবিদের । শুনতারোর জন্ম ১৫ ডিসেম্বর ১৯৩১ সালে জাপানের টোকিয়োতে। বাবা ছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক। যা হোক। ছেলেবেলায় একদমই স্কুলে যেতে চাইত না বালক শুনতারো । তারপরও স্কুলের চৌকাঠ পেরুনো গেল কোনওমতে। মা-বাবা আর জোর করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাননি। ১৮ বছর থেকে কবিতা লেখা শুরু। জাপানের এক বিখ্যাত কবির হাতে শুনতারোর কবিতার খেড়ো খাতাটি পড়ার পর সেই কবিটি শুনতারোর কবিতা ছেপে দিলেন। জাপানের শিল্পবোদ্ধা মহল শুনতারোকে গ্রহন করল। শুনতারো শিল্পে নিমগ্ন হলেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুনতারোর শিল্পধ্যানকে বিনষ্ট করল। মর্মাহত শুনতারো সাইকেলে ঘুরে ঘুরে দেখলেন বিধ্বস্ত জাপান । চতুদির্কে পোড়া ঘরবাড়ি। বির্দীণ পথঘাট। পশু-পাখি ও শিশুদের লাশ! ভীষন হতাশ হয়ে পড়লেন শুনতারো । নিজেকে গুটিয়ে নিলেন সবকিছু থেকে। যাহোক। এরপর বিটোফেন শুনলেন শুনতারো । শুনে শুনতারো বললেন,‘জীবন সম্ভব।’ তারপরই আবার কবিতায় ফিরলেন শুনতারো । এই কথা কটি জানানোর জন্যই এই লেখা। প্রায়ই শোনা যায়-শুনতারো নোবেল পাবেন নোবেল পাবেন। পাননি। যা হোক। নোবেল না-পেলেও তাঁর অসাধারনত্ব ম্লান হয়নি মোটেও। এবার তাঁর তিনটে কবিতা পড়া যাক। যাদুঘর কাঁচের ওধারে রাখা শান্ত কুঠার নক্ষত্রপুঞ্জরা ঘুরে যায় অবিরাম আমাদের অনেকেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে অনেকেই আবার এসেছে তারপর ধূমকেতুর সংঘর্ষ এড়িয়ে অক্ষুন্ন মৃৎপাত্র, কয়েকটি ভাঙ্গা দক্ষিণ মেরুর ওপর হাঁটছে এস্কিমোদের কুকুর পূর্বে ও পশ্চিমে উঠেছে বিস্তর সমাধি বই ও কবিতা করা হয়েছে উৎসর্গ সম্প্রতি পরমাণুকে ভাঙ্গা হয়েছে আরও। একজন রাষ্ট্রপতির মেয়ে গান গাইছে এইসব ...আর আরও অনেক কিছুই ঘটছে কাঁচের ওধারে রাখা শান্ত কুঠার। বৃদ্ধি অর্থহীন রেখা আঁকলে শিশুরা বলে আপেল। আপেলের মতো আপেল আঁকলে চিত্রকর বলে: ‘আপেল।’ আপেল না-অথচ তার ছবি আঁকলে শিল্পী বলে: সত্যিই আপেল। অন্যকিছু কিংবা আপেল না আঁকা আকাডেমী অভ আর্টের সদস্যরা শব্দ করে আপেলের রস খায়। আপেল ,আপেল, লাল আপেল আপেল কি তিক্ত? আপেল কি তিতা? দশ ইয়েনের কয়েন তার শেষ দশ ইয়েনের কয়েন দিয়ে ছেলেটি ফোন করতে চাইল। রুঢ় ভাষায় ঘনিষ্ট কারও সঙ্গে কথা বলতে চাইল অথচ ওর কোনও বন্ধুরই টেলিফোন নেই। তার মুঠোয় দশ ইয়েনের কয়েনটি ভিজে যাচ্ছে। ধাতব গন্ধ, (চকোলেট কেন কিনব? এই দশ ইয়েনের কয়েন দিয়ে আরও ভালো কিছু করব।) ছেলেটি তারপর গাড়িটা দেখল। সুন্দরী নারীর মতন ঝলমলে গাড়ি। অধরা আনন্দের মতন ভয়ানক গাড়ি কোন ও কিছু বোঝার আগেই দশ কয়েন হাতে নিয়ে সেই সৌন্দর্যে ধাক্কা লাগল। তারপর লম্বা গভীর ক্ষত- সবটুকু শক্তি দিয়ে ছেলেটি দশ ইয়েনের কয়েনটি শহরের ভিড়ের মধ্যে ছুঁড়ে মারল । সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৮",False hm,"পানশালা ০৬ [পানশালায় পানই মুখ্য। পান করে যে শালারা, তাদের জন্যেই পানশালা খোলা। ধন্যবাদ।] ১. ফাকরুল ভাইকে বহুদ্দিনবাদে হোটেল গিলগামেশ বার অ্যান্ড রেস্তোরাঁর এক পরিচিত চিপায় দেখতে পেয়ে উল্লসিত হই। মাঝে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন, বোধহয় যৌথ বাহিনীর ভয়ে। গিলগামেশের কিয়দংশ বুলডোজারের ষন্ডামোতে ভাঙা হয়েছে, বসার জায়গা কিছুটা কমে গেছে, কিন্তু ফাকরুল ভাই ফিরে এসেছেন এটাই বড় কথা। আমি হইহই করে তাঁর সাথে আহ্লাদি করি। ""কই ছিলেন? ক্যামন আছেন?"" ফাকরুল ভাই অর্ধনিমীলিত নয়নে আমার দিকে করুণ দৃষ্টিবাণ হানেন। চেয়ে দেখি, মদের ঝোঁকে নয়, বাম চোখে কালসিটে পড়ে আছে। আমি ফিসফিস করে বলি, ""কেসটা কী ছিলো?"" ফাকরুল ভাই করুণ কণ্ঠে বলেন, ""কেস তো কয়েকটা ছিলো ... কার্লসবার্গ, ফস্টারস ... কিন্তু খাইয়া ফালাইছি তো!"" আমি থতমত খেয়ে বলি, ""আরে না, ঐ কেস না, কোন কেসে মাইর খাইলেন?"" ফাকরুল ভাই দুইটা হাতিমার্কা বিয়ার দিতে বলেন আর্তনাদ করে। সাথে অনুপান হিসাবে বাদামের ইল্লিবিল্লি। ২. না, যৌথ বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে মার খাননি ফাকরুল ভাই। তিনি ন্যায়নিষ্ঠ ভদ্দরলোক, মোটেও সুশীল ঘরানার লোক নন। নিয়মিত ট্যাক্স দ্যান, ডানে বামে নানা শুল্ক দ্যান, মদ খাওয়ার লাইসেন্সও তাঁর রয়েছে, তাঁকে ফাঁসানোর মতো অপরাধ তিনি তাঁর জানামতে করেননি। এ ক'দিন তাহলে কেন গা ঢাকা দিয়েছিলেন, এ প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর না দিয়ে তিনি আমার হাতে ধরা হাতি মার্কা ক্যানটা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেন। আমি প্রসঙ্গ পাল্টাই। ""চোখের দাগটা?"" ফাকরুল ভাই শান্ত হন। এক ঢোঁক পিয়ে বলেন, ""ঐটা বাংলা ভাষার দোষ।"" ""কে এই বাংলা ভাষা?"" আমিও এক ঢোঁক গিলে গর্জে উঠি। ফাকরুল ভাই অনেকখানি গলায় ঢেলে ঢুলুঢুলু চোখে আমাকে দেখে নিয়ে বলেন, ""মদে ধরছে তোমারে। বাংলা ভাষারে চিনো না।"" আমি আবারও প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাই, কিন্তু ফাকরুল ভাই শুরু করে দ্যান। কিছুদিন পূর্বে তাঁর মোবাইলে সিজ্যুস নাম্বার থেকে একটি কিন্নরীকণ্ঠ তাঁর সাথে কথাবার্তা বলার আগ্রহ ব্যক্ত করে। সেই মহিলার কণ্ঠ বেশ সিজ্যুস করার মতোই, মাংসের চাটের মতোই সিডাকটিভ কথাবার্তা নাকি শুরু থেকেই চলতো, তাই ফাকরুল ভাই সিদ্ধান্ত ন্যান তিনি কিছুদিন ঘরে বসে পান করবেন। কথা বলতে বলতে গিলবেন, গিলতে গিলতে বলবেন। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর বলতে বলতে গেলা আর গিলতে গিলতে বলার নেশা ধরে যায়। মহিলাটি জনৈকা বাংলার শিক্ষিকা, কী এক কলেজে তিনি ব্যাদড়া ছেলেমেয়েদের বাংলা সাহিত্য পড়ান, বয়স নাকি বেশি নয়, একা বাস করেন। নিঃসঙ্গ বোধ করেন বলে তিনি মাঝে মাঝে অপরিচিত ব্যাটাছেলেদের সাথে ফোনে গপ্পোসপ্পো করেন। তাঁর দুর্ভাগ্য, এই ড়্যানডম নাম্বারের লোকগুলি এযাবৎ বেশির ভাগই লুচ্চা এবং অসংস্কৃত প্রমাণিত হয়েছে। তারা সাক্ষাতের আগে নানারকম মধুময় কথাবার্তা বললেও একসময় সাক্ষাতের জন্য ক্ষেপে ওঠে, এবং সাক্ষাতের পর নানা অশালীন ইঙ্গিত করে বন্ধুত্বের সম্পর্কের মূলেই কুঠারাঘাত করে। পুরুষগুলি সবাই নাকি ইতর, তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। শুনে ফাকরুল ভাইও পুরুষদের ওপর ক্ষেপে ওঠেন। নামঠিকানাফোন্নাম্বার জানতে চান সেইসব ছোটলোকগুলির, তিনি একদম যৌথ বাহিনী দিয়ে প্যাঁদাবেন শালাদের, এমন কঠিন সংকল্প উচ্চারণ করেন। মহিলা রিনিকিঝিনিকি হাসেন, বলে না না, তোমাকে এসব করতে হবে না। পালোয়ানগিরি না করে আমার সাথে কথা বলো। তবে অচিরেই ফাকরুল ভাইও সাক্ষাতের জন্যে কিছুটা আগ্রহী হয়ে ওঠেন, এবং বারম্বার এই আগ্রহের কথা আকারে ইঙ্গিতে ঘুরপথে মহিলার গোচরে আনেন। মহিলা প্রথমবার শুনে ক্ষিপ্ত হন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির কথা স্মরণ করেন, পুরুষদেরকে আরেকপ্রস্থ ইতর বলেন, কিন্তু পরে আস্তে আস্তে সুর নরম করেন। এক শুভ মাঝরাতে তিনি সাক্ষাতে সম্মতি জানান, তিনদিন পর তিনি ভড়ং ক্যাফেতে ফাকরুল ভাইয়ের সাথে দেখা করবেন। তাঁর পরনে থাকবে কালোর কাজ করা সাদা শাড়ি, সাদার কাজ করা কালো ব্লাউজ, কালো নাইলনের ব্রা, ঘিয়া রঙের পেটিকোট, চিকন লেসের কালো স্যান্ডাল, হাতে থাকবে একটা কালো হাতব্যাগ, ঠোঁটে কালচে লাল লিপস্টিক, কানে কালো পাথরের দুল, গলায় একটা কালো পাথরের হার। ফাকরুল ভাই পরদিন সকালেই তাঁর এক ভাগ্নিকে ফোন করেন। জানান যে তিনি তাঁর এক সহকর্মীর স্ত্রীকে জন্মদিনে কিছুমিছু উপহার দেবেন ঠিক করেছেন, এমন কিছু দিতে চান যা অন্য কেউ দেবার কথা ভাববে না। ভাগ্নি কিছুক্ষণ ভেবে বলে, মামা, ছম্মাকছল্লো থেকে কপালের টিপ কিনে দাও। ফাকরুল ভাই পরদিনই ছম্মাকছল্লো ফ্যাশন হাউসের বেইলিরোডস্থ বিক্রয়কেন্দ্রে হানা দেন, এবং এক হাজার একটি নানা রঙের টিপ কেনেন। তাঁর ফোনান্তরের শেহরজাদিকে তিনি এক হাজার এক রাতে পরার টিপ উপহার দেবেন, প্রতি রাতে একটি টিপ ললাটে লিখে সে ললনা লীলালাস্যে তাঁর সাথে গল্প করে যাবেন। হ্রঁদেভুতে হানা দিয়ে ফাকরুল ভাই সেই শিক্ষিকাকে শনাক্ত করে ফ্যালেন তার দু'দিন পর। মহিলা মধ্যযৌবনা, রীতিমতো সেইরম, মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত যৌনাবেদন মাইকিং করে বলে যাচ্ছে, একটি জরুরি ঘোষণা, একটি জরুরি ঘোষণা ...। কালোর কাজ করা পাতলা সাদা শাড়ির নিচে সাদার কাজ করা পাতলা কালো ব্লাউজের নিচে কালো নাইলনের ব্রায়ের নকশা আড়ে আড়ে চেয়ে দেখে দরদর করে ঘামতে ঘামতে ফাকরুল ভাই কোনমতে হাল্কা খাবারের অর্ডার দ্যান। কামড়ে খাবার জিনিস সমুচা সেই সুন্দরী কিভাবে শোষণ করে খেলেন, সে দৃশ্য নাকি বর্ণনার শত্রু। ফাকরুল ভাই তিন বোতল মিনারেল ওয়াটার গিলে ফ্যালেন। সাক্ষাতপর্ব শেষে, বিলটিল চুকিয়ে ফাকরুল ভাইয়ের চোখ পড়ে সুন্দরী মহিলাটির অনলঙ্কৃত কপালে, তিনি তখন হাসিমুখে পকেটে হাত ঢোকান। ""ইয়া ... কী জানি বলে ... তোমারে একটা কথা বলতে চাই ...।"" ঢোঁক গিলে শুরু করেন তিনি। মহিলার তখনই আঁচল খসে পড়ে যায় দৈবাৎ, হয়তো ভস্মীভূত মদনা হারামির শরের মোমেন্টামে। ফাকরুল ভাই এক বিঘৎ হাঁ করে সেই যবনিকাপাত দেখেন। সুন্দরী অবশ্য আঁচল পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসনে যথেষ্ঠ সময় ও কসরৎ নেন। বলেন, ""হ্যাঁ, বলো ...।"" গদগদ গলায় ফাকরুল ভাই চোখ না সরিয়েই তাঁর উপহারের প্রসঙ্গ টানেন, ""আমি তোমারে অনেকগুলি টিপ দিতে চাই!"" ৩. আমি গম্ভীর মুখে বলি, ""বাংলা ভাষা আসলেই লোক খারাপ।""",False rg,"।। ফেসবুক বনাম বই পড়া- কোনটায় আমাদের কতোটা আগ্রহ বা দায়।। বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক চালু হবার পর বই পড়ুয়াদের সম্পর্কে বাজারে একটা বদনাম এখন চালু হয়েছে। প্রথম কথা হল- বইয়ের পাঠক কি তাহলে কমে গেছে? বইয়ের পাঠক কমে গেলে সেক্ষেত্রে ফেসবুক কতোটা দায়ী? যারা সত্যিকারের পাঠক, তাদের মধ্যে ফেসবুক কতোটা প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে? নাকি ফেসবুক আসায় বইয়ের পাঠক আগের তুলনায় বেড়েছে? দ্বিতীয় কথা হল- জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের কবি লেখক সংখ্যাও বেড়েছে। সেই তুলনায় পাঠক কয়জন বাড়লো? প্রকাশকের সংখ্যাও বেড়েছে। বই প্রকাশের সংখ্যাও বেড়েছে? কিন্তু কোয়ালিটি বই কতোটা বাড়লো? নাকি বাজারে যা বই আকারে বাড়ছে, সেগুলো সব আবর্জনা? শুধু কাগজের শ্রাদ্ধ? তৃতীয় কথা হল- দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে বর্তমানের কবি লেখকরা কতোটা ভূমিকা পালন করছে? নাকি শাসক দলের আস্থাভাজন প্রকল্পের অনুসারী হয়ে বোগল বাজানো কবি লেখকরাই কেবল দেশীয় সংস্কৃতির লালনপালনকারী? অন্যরা সবাই ক অক্ষর মুর্খ্য? সংস্কৃতি চর্চার রাষ্ট্রীয় বাজেটে দেশের কবি লেখকরা শতকরা কত ভাগ পাচ্ছে? বাকী বাজেট কারা কিভাবে খরচ করছে? সর্বশেষ কথা হল- রাষ্ট্র দেশের কবি লেখকদের জন্য স্বাধীনতার পর এই ৪৩ বছরে কি কি দায়িত্ব নিল?অনেকগুলো প্রশ্ন। এই প্রশ্নগুলোর জবাব কি কি হতে পারে বলে আপনি মনে করছেন? আমি আমার ভাবনাটা একটু বলি। ফেসবুক চালু হলেও দেশে পাঠক সংখ্যা বেড়েছে বলেই আমার ধারণা। নইলে প্রতি বছর এভাবে বই বিক্রি বাড়তো না। এভাবে কবি লেখক সংখ্যাও বাড়তো না। এভাবে প্রকাশকদের সংখ্যাও বাড়তো না। পাঠক সংখ্যা বেড়েছে বলেই কবি-লেখক-প্রকাশক সংখ্যা বেড়েছে। বইয়ের বিক্রিও বেড়েছে। বইয়ের প্রকাশ সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু আরেকটা গোপন বিষয়ও বই বিক্রির সঙ্গে জড়িত। বিক্রিত বই কয়টা কতটুকু পড়া হচ্ছে? আমি নিজেকেই যদি প্রথম আসামি বানাই, সেখানে দেখা যায় যে, গত বছরের বইমেলা থেকে কেনা বইগুলোর সব এখনো পড়া শেষ হয়নি। আবার কোনো কোনোটা দুই-তিনবারও পড়েছি। তার মানে বইগুলো কেনার সময় আরো সতর্ক হবার প্রয়োজন ছিল। যে বইগুলো আদৌ পড়া হবে না, সে বইগুলো অযথা বুকসেলফে জায়গা দখল করে বসে আছে। এরকম বইগুলো আমি কোনো লাইব্রেরিতে দিয়ে দেবার পক্ষপাতি। তাতে আমার সময়ও বাঁচে। বুকসেলফে নতুন কিছু বই রাখারও সুযোগ হয়।বই পড়ার ক্ষেত্রে ফেসবুক আমার মতে অনেকটাই দায়ী। আমি নিজে দেখেছি, কোনো কোনো দিন অকাজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকে অকারণে ঘোরাফেরা করাটা একটা নেশার মত। এতে খুব সময় নষ্ট হয়। আবার ফেসবুকে একটু ঢু না মারলে মনের ভেতর যেনো কেমন কেমন একটা চুলকানি। এই চুলকানি বই পড়ার যথেষ্ট বারোটা বাজিয়েছে। যে বইটি তিন দিনেই পড়া শেষ হয়ে যাবার কথা, সেটি শেষ করতে অনেক সময় সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনোটা হয়তো আর শেষ করাই হচ্ছে না। ফেসবুক এই জায়গায় যে ঝামেলাটা করছে, এজন্য মিস্টার মার্ক জুকারবার্গ মশাইয়ের বিরুদ্ধে আমরা আদালতে মামলা ঠুকতে পারি কিনা? সেই মামলায় যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা দিয়ে না হয় আরো কিছু পছন্দের বই কিনলাম। জনাব জুকারবার্গের বিরুদ্ধে লড়াই করার মত উকিল কোথায় পাবো? সেই উকিল ফি কত নিবে? ফি ছাড়া অ্যাডভ্যান্স কাজ করে দেবার মত উকিল কেউ আছে কিনা? তার ফি বা কত? আইনি লড়াই শেষে যা পাওয়া যাবে, তা উকিলের পাওনা মিটিয়ে অবশিষ্ট থাকবে তো? না থাকলে পকেটের পয়সা খরচ করে মিস্টার জুকারবার্গের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা ঠিক হবে কিনা? তবে, আমি যদি উপযুক্ত কোনো উকিল পাই, যিনি নিজ দায়িত্বে লড়াই করে আদালতকে এটাই বোঝাতে সক্ষম হবেন যে, আমার মক্কেলের এই ফেসবুকের কারণে এত ঘণ্টা বই পড়ায় নষ্ট হয়েছে। ঘণ্টা হিসেবে সেই সময়ের এত মিলিয়ন ডলার মূল্য। আর যদি সেই লড়াইয়ে আমার উকিল আমাকে জয়ী করতে পারে, আমি হলপ করে বলতে পারি, সেই টাকায় সারা বাংলাদেশে একটি আদর্শ পাঠাগার আমি চালু করব। যেখান থেকে যে কেউ পড়ার জন্য পছন্দের বইটি নিতে পারবে। কোনো ধরনের ফি ছাড়াই। কিন্তু তেমন উকিল এই জনমে মিলবে কিনা সন্দেহ।বই পড়ায় ফেসবুক যে পরিমাণ অনিহা সৃষ্টি করেছে, তার জন্য মিস্টার জুকারবার্গের বিরুদ্ধে অন্তত কয়েক লাখ মামলা হবার কথা। কিন্তু বাস্তবে সেই মামলার কোনো আলামত না দেখে আমরা বুঝতে পারি, পাল্লাটা বই পড়ার চেয়ে এখন ফেসবুকের দিকেই বেশি। ভবিষ্যতে হয়তো শোনা যাবে, পছন্দের বইয়ের চুম্বক অংশটুকু ফেসবুকেই পাওয়া যাচ্ছে। অন্তত পাঠক সময় বাঁচাতে সেই অংশটুকু পড়ে নিচ্ছে। তাহলে ফেসবুকের মাধ্যমেও নতুন পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষন করার একটা মত একটা সুযোগ কিন্তু আছে। সেক্ষেত্রে আমাদের যারা সচেতন পাঠক, তাদের কিছু বাড়তি দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে। কি সেই দায়িত্ব? আপনার পড়া কোনো ভালো একটি বইয়ের চুম্বক অংশটুকু আপনি ফেসবুকে অনেকটা বুক রিভিউ'র মত যদি আমাদের সামনে হাজির করেন, তাহলেও একটা পাঠক শ্রেণী তৈরি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আর আপনার লেখা সেই বুক রিভিউটি পড়ে হয়তো অনেকের বইটা পড়ারও ইচ্ছে তৈরি হবে। আমি বলতে চাইছি, অন্তত আপনি সপ্তাহে বা পনের দিনে বা মাসে অন্তত একটি বইয়ের রিভিউ ফেসবুকে আপলোড করেন। আপনি একজন ফেসবুক ইউজার হলেও আপনি এভাবে একজন সত্যিকারের পাঠক তৈরি করতে নিরবে ভূমিকা পালন করতে পারেন। আমি সময় পেলেই আমার পড়া বইয়ের উপর দু'চার কথা ফেসবুকে লিখি। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল, সেই লেখাগুলো খুব কম সংখ্যক বন্ধুরাই পড়েন।এই ফাঁকে ফেসবুকে লাইক আর পড়ার মধ্যে একটা আসল পার্থক্যের কথা আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। কোনো লেখার লাইক সংখ্যা দিয়ে আদৌ জানার উপায় নাই, কয়জন লেখাটি পড়েছেন? আর কয়জনের লেখাটি ভালো লেগেছে? আর কত জন লেখাটিতে লাইক না দিয়েও পড়ার কাজটি করেছেন? পড়ার কাজটি নিরবে ঘটলেই ভালো। তার সংগে লাইক আর কমেন্টসের ব্যাপারটা অনেকটাই গৌন। তবে লাইকের তুলনায় কমেন্টস অনেকটা মুখ্য। অন্তত পাঠকের এক ধরনের প্রতিক্রিয়া সেখানে প্রতিফলিত হয়। সেক্ষেত্রে আমি পাঠকের প্রতিক্রিয়াকেই প্রাধান্য দেব। যদি আপনি বিষয়টি পড়েন, তাহলে কিছু না কিছু লিখুন। আপনার মতামত অন্তত জানা যায় তাতে। হোক সে বিপক্ষের মত। তবু অন্তত ওই বিষয়ের উপর একটা নতুন চিন্তার প্রতিফলন তো পাওয়া যায়। কিন্তু কোনো কমেন্টস না করে শুধু হাজার খানেক লাইক দেখে কিছুই বোঝার সাধ্য নাই। আমি দেখেছি, ফেসবুকে সিরিয়াস লেখার চেয়ে চটুল বিষয়ের প্রতি মানুষের আকর্ষন বেশি। অংশগ্রহনও বেশি। এই চিত্র দেখেই বোঝা যায়, এই ফেসবুক বই পাঠের উপর কেমন নেগেটিভ প্রভাব ফেলেছে। তাই ফেসবুক ইউজারগণ যাতে অন্তত কিছুটা পড়ার অভ্যাসও ধরে রাখে, সেজন্য আমাদের কাউকে না কাউকে তো কিছুটা বাড়তি দায়িত্ব পালন করতেই হবে। কে কে আছেন সেই দলে, আওয়াজ দিয়েন।স্বাধীনতার সময় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। এখন এই ৪৩ বছরে তা বেড়ে দ্বিগুনেরও বেশি। সাধারণত ৩৫ বছরে কোনো একটি দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুন হবার ব্যাপার প্রচলিত। সেই হিসেবে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কবি-লেখক-প্রকাশকের সংখ্যা বেড়েছে। বই প্রকাশের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় কোয়ালিটি বই প্রকাশের সংখ্যা কিন্তু বাড়েনি বলেই আমার মনে হয়। কোয়ালিটি বই প্রকাশ করা বলতে আমি বুঝি, যেমন ধরুন, ভারত ভাগের পর দেশভাগ নিয়ে অনেক ভালো ভালো বই লেখা হয়েছে। সে তুলনায় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর অনেক বই লেখা হলেও এখনো কোনো কোয়ালিটি বই কিন্তু উল্লেখ করার মত নেই। এত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করেও স্বাধীনতার উপর কোয়ালিটি বই কোনটা কোনটা? আমরা কিন্তু জানি না। এই সংখ্যাটি বাড়লো না কেন? এই দায় কিন্তু আমাদের যারা সিনিয়র কবি-লেখক তাদের ঘাড়েই বর্তায়। রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাধীনতার উপর তেমন কোনো বই লেখা হল না কেন? অন্তত মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস টুকু রাষ্ট্রীয়ভাবে কেন পাঠকের হাতে তুলে দেবার ব্যবস্থা হল না? পাঠ্যবইয়ে কেন সঠিক ইতিহাসটুকু স্থান পেল না? ইতিহাস কেন ইচ্ছাকৃত ভাবে পাল্টে দিয়ে মিথ্যা দিয়ে পূরণ করতে হবে? তাহলে জাতীয়ভাবে আমরা কোন ইতিহাস লালন পালন করছি? এই দায় কিন্তু রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। আমাদের বিগত শাসকরা এড়াতে পারে না। বর্তমান শাসকরা যদি এই উদ্যোগ গ্রহন না করে, তারাও কিন্তু এড়াতে পারে না। আর কোয়ালিটি বই প্রকাশের জন্য প্রকাশকদের আরো দায়িত্ববান হবার যে দায় রয়েছে, তারাও সেই দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাতে পারে না। এই ব্যর্থতার দায় কমবেশি সবার ঘাড়েই কিছু কিছু পড়ে। তবু যদি আমরা সেই ভুলগুলো বুঝতে পেরে এখন থেকে অন্তত বছরে দশটি কোয়ালিটি বই প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহন করি, সেটুকুর জন্য প্রকাশকদের জন্য আমার অন্তর থেকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা থাকবে। আপনারা হাজার হাজার বই না ছাপিয়ে অন্তত আমাদের বছরে দশটি কোয়ালিটি বইয়ের সন্ধান দিন। আমরা না হয় এই ফেসবুকের যুগে ওইটুকু পড়েই শান্তিতে থাকি। নইলে আমরা আর কত কাগজের শ্রাদ্ধ করব?স্বাধীনতার পর এই ৪৩ বছরে রাষ্ট্র আমাদের কবি লেখকদের কতোটা দায়িত্ব নিল? আদৌ কি নিল কিছু? নাকি কেবল দলীয় কবি লেখকদের কিছু হিল্লে হবার নামে চলছে এক সংস্কৃতি চর্চার মহা উৎসব? বাংলাদেশের গত ৪৩ বছরের সংস্কৃতি চর্চার দিকে তাকালে দুই শ্রেণীর মোটা দাগের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর অস্তিত্ব খুব ভালো ভাবেই টের পাওয়া যায়। কেউ কেউ জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী। আর কেউ কেউ আওয়ামী বুদ্ধিজীবী। এর বাইরে যে দুর্বল শ্রেণী, সেটা অনেকটা ধজভংগ টাইপের বুদ্ধিজীবী। এছাড়া মিডিয়াবাজ নামক একটি নতুন বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর উৎপাত সাম্প্রতিক সময়ে বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে। এদের বাইরে যারা কবি লেখক, তাদের কোনো শ্রেণী ক্যাগরিতে ভাগ করাও হয় না। তাদের কণ্ঠস্বরকে বিবেচনায়ও ধরা হয় না। অথচ, এই অশ্রেণীভুক্ত কবি লেখকদের মধ্যেই হয়তো লুকিয়ে আছে আমাদের আগামী দিনের বিভূতিভূষণ। আমাদের আগামী দিনের জীবনানন্দ। আমাদের আগামী দিনের এক একজন আহমদ ছফা, হুমায়ুন আজাদ, আরজ আলী মাতুব্বর। হয়তো এই অশ্রেণীভুক্ত কবি লেখকদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক একজন গোর্কি, ট্যাগোর, অ্যাডগার অ্যালান পো, ইবসেন, গ্যাটে বা গালিব। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আমাদের বিদ্যমান সংস্কৃতি চর্চায় এই অশ্রেণীভুক্ত কবি লেখকদের আবিস্কার করার কোনো উদ্যোগ রাষ্ট্রীয়ভাবে বা ব্যক্তি উদ্যোগে এখনো গড়ে ওঠে নি। রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত আমাদের কবি লেখকদের জন্য কোনো সত্যিকারের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন কি বছর বছর সংস্কৃতি চর্চার নামে বাজেটে যে বিপুল অংকের টাকা বরাদ্দ করা হয়, তা কোথায় কিভাবে ব্যয় হচ্ছে, কারা সেই টাকা পাচ্ছে, কেন পাচ্ছে, কি কারণে পাচ্ছে, এসবের কোনো যুক্তি সঙ্গত পরিমাপ যেমন নেই বা গড়ে ওঠে নি। তেমনি যারা এই বাজেটের টাকা হাতে পাচ্ছেন, তারাও সেই কাজটি যেভাবে করার কথা, সেভাবে করছে বলে আমার মনে হয় না। এই কাজটি যথাযথভাবে করা হলে, তার একটা চেহারা আমরা দিব্য চোখে দেখতে পারতাম। বাজেটে সংস্কৃতি চর্চার নামে যা ব্যয় হচ্ছে, তার বেশিরভাগই অপচয়। বছর শেষে যেটুকু সাফল্য দাবি করা হচ্ছে, তার আদৌ কোনো প্রভাব কি আমাদের বেড়ে ওঠা সমাজে কোনো ভূমিকা পালন করছে? রাষ্ট্রীয় এই বাজেটের তুলনায় বরং কর্পোরেট যুগের বিরক্তিকর বিজ্ঞাপনই কেবল আমাদের সমাজের গোড়ায় গোড়ায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিদেশি সংস্কৃতির মাতাল হাওয়া ঢুকিয়ে দেবার ক্ষেত্রে অনেকটাই সফল বলা চলে। তাহলে স্বাভাবিক প্রশ্ন হল, বাজেটের টাকা কারা পেল? তারা সেই টাকা নিয়ে করলটা কি? সেই টাকার কাজ কোথায়? আর রাষ্ট্র সেই কাজের জবাবদিহিতা চায় না কেন?একটি জাতি গঠনে দেশের কবি লেখকদের ভূমিকাকে কখনোই অস্বীকার করার সুযোগ নাই। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা দাবি করে, আমাদের কবি লেখকরা মৃত্যুর পর এখন কিছু কিছু সম্মান পাচ্ছেন। আর জীবদ্দশায় তারা নানান কিসিমের কষ্টভোগ করছেন। তখন রাষ্ট্র এক ইঞ্চিও এগিয়ে আসে না। ইতিহাস এটাই সাক্ষ্য দেয়। যে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে কবি লেখকদের লালন পালন করা হয় না, সেই দেশের সাংস্কৃতিক বিকাশ কতদূর অগ্রসর হতে পারে? আদৌ পারে কিনা? সেটা নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখার বিষয়।অথচ আমাদের এখানে এখনো মেধাস্বত্ব বা কপিরাইটের চেয়ে পাইরেসি অনেক শক্তিশালী। আমরা কবি লেখকদের কপিরাইট দিতে যেমন ব্যর্থ। ঠিক পাইরেসি দমন করতে তারচেয়েও বেশি ব্যর্থ। আমাদের শিল্পীরা মেধাস্বত্ব ঠিকমত পায় না। আমাদের কবি লেখকরা কপিরাইট টুকু পায় না। অথচ আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর ৪৩ বছরে প্রকাশনা জগতে অনেকটা বিপ্লব ঘটে গেছে। নতুন নতুন ছাপার মেশিন এসেছে। ভালো কাগজ এসেছে। উন্নত মানের বাইন্ডিং হচ্ছে। কিন্তু সেই লেখক না খেয়ে ধুকে ধুকে মরছে। আর প্রকাশকরা ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সাইড বিজনেস খুলছেন। শুধু বই বিক্রিতে তাদের প্রকাশনা টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। তাই তারা কাপড় বিক্রি করছেন। ফ্যাশন হাউজ দিচ্ছেন। কফিহাউজ দিচ্ছেন। আর কিছু না হোক অন্তত নানান ঋতুতে নানান নামে বই উৎসব করে বই বিক্রি বাড়িয়ে ব্যবসায় টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যে কাজটিতে আসলে প্রকাশকদের মনযোগী হবার কথা, সেখানে তারা আদৌ কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।আমাদের প্রকাশনা জগতে বিপ্লব ঘটে গেলেও আমাদের এখানে ভালো এডিটর নাই। একটি ভালো বই প্রকাশের প্রথম শর্ত হল- একজন ভালো এডিটর। একজন ভালো এডিটর লেখককে দিয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়টি লিখিয়ে নিয়ে, অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সেটি পাঠক আকৃষ্ট করার মত টেকসই পদ্ধতিতে উপস্থাপন করবেন যাতে, বইটি পড়ায় পাঠকের আগ্রহটি অন্তত পাঠের শেষ পর্যন্ত থাকে। দুঃখের বিষয়, আমাদের এডিটর তো একদম নেই। এমন কি অনেক প্রকাশকের প্রুভরিডার পর্যন্ত নাই। হাজার হাজার বানান ভুলে ভরা বই, হাজার হাজার কপি প্রকাশ পাচ্ছে। বানান ভুলে ভরা বই, সে আমার নিজের লেখা হলেও, সেটি পড়তে আমার খুব বিরক্তি লাগে। বই প্রকাশ পেল কিন্তু হাজার হাজার বানান ভুল। তাহলে সেই প্রকাশনার মান নিয়ে নিশ্চয়ই প্রশ্ন করা যায়। এখন আমাদের প্রকাশকরা যদি এই বিষয়ে যত্নবান না হন, তারা যদি এডিটর নিয়োগ দান না করেন, তারা যদি বইটির যথাযথ দায়িত্ব পালন না করেই সেটি দায়সারাভাবে বাজারে আনেন, সেই বই কতটুকু বা পাঠকের নজর কাড়তে পারে?আরেকটি বিষয় হল বইয়ের দাম। ইদানিং আমার নিজেরও মনে হয়, বইয়ের দাম অনেক বেশি। যে দাম দিয়ে আমি বইটা কিনব, পড়ার পর অন্তত সেটুকু আত্মতৃপ্তি যদি উঠে না আসে, তাহলে আমার পয়সা কেন এভাবে জলে দেব? আমার সময় বা কেন নষ্ট করব? কাগজের দাম, বাইন্ডিং, প্লেট, ছাপা, নানান অযুহাতে বইয়ের দাম বাড়ানোর কথা শুনি। কিন্তু বইটি পড়ার পর যা আমার লাভ হবার কথা, সেটুকু লাভ যদি না হয়, তাহলে তো টাকাই জলে গেল। আর এভাবে একজন পাঠক যখন বারবার ঠকে যায়, তখন বই কেনায় তো তার নিরুৎসাহিত হবার কথা। আমাদের প্রকাশকদের বই প্রকাশে আরো যত্নবান হবার পাশাপাশি আরো প্রফেশনাল হওয়াটা খুব জরুরী। প্রতিটা বই প্রকাশের আগে এডিটর দিয়ে সেটির একটা ভালো এডিট খুব জরুরী। বানান নির্ভুল হওয়া জরুরী। বইয়ের দাম আরো কম হওয়া জরুরী। অর্থনীতির ভাষায় বলা যায়, কম মুনাফা, দিয়ে বিক্রি বাড়িয়ে, মুনাফা বাড়ানো পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরী। বেশি লাভ, কম বিক্রি, বেশি মুনাফার চেয়ে, কম লাভ, বেশি বিক্রি, বেশি মুনাফা থিউরি বেশি কার্যকর হবে, যদি আমাদের প্রকাশকগণ প্রকাশনায় এই প্রফেশনালিজমটুকু অন্তত কষ্টকর হলেও একটা পর্যায়ে উন্নীত করতে পারে। নইলে বইয়ের দোকানের জায়গায় বছর শেষে আরো কিছু ফ্যাশন হাউজ ঢুকে যাবে। বইয়ের দোকান বন্ধ হয়ে বই হয়তো গুদামে চলে যাবে। তখন আর যা হোক, পোকার লাভ হলেও দু'চারজন যারা বই পোকা, তাদের বড্ড অসুবিধা হবে বৈকি।রাষ্ট্রীয়ভাবে কোয়ালিটি বই প্রকাশের উপর আরো জোর প্রদান খুব জরুরী। প্রকাশকদেরও আরো প্রফেশনাল ওয়েতে বই প্রকাশে উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবী। পাশাপাশি, কবি লেখকদের যথাযথ মেধাস্বত্ব প্রদানের বিষয়টি নিয়মিত চর্চার মধ্যে আনাটা খুব জরুরী। বছরে শুধু হাতে গোনা কয়েকজন কবি লেখক প্রকাশক থেকে টাকা পাবেন, আর বাকীরা সবাই জালের কাঠি, এটা হতে পারে না। তাহলে তাদের বই প্রকাশ কেন করলেন? বই প্রকাশ যখন করলেন, তখন সেই বই বিক্রি করার জন্য যথাযথ উদ্যোগটি কিন্তু প্রকাশকেরই নেবার কথা। তা না নিয়ে ব্যবসার পুঁজি ওঠাতে সাইড বিজনেস চালুর উদ্যোগ কিন্তু এক ধরনের ফটকাবাজি। তাহলে আপনার আসলে প্রকাশক হবার কথা নয়। আপনি ভুল করে এই লাইনে ব্যবসা করতে এসেছেন। এখন ব্যবসা লোকসান দেখে আপনার ভেতরের মুখোশ বের করছেন সাইড ব্যবসা করে। আমাদের তো হাজার হাজার প্রকাশক দরকার নাই। আমাদের কোয়ালিটি প্রকাশক দরকার। সারা দেশে এমন কি সারা বিশ্বে যার বই প্রচার করার মত নেটওয়ার্ক আছে, তাদেরই প্রকাশনায় থাকা উচিত। আপনি বই প্রকাশ করলেন, আর ফেব্রুয়ারি মাসের পর সেই অবিক্রিত বইগুলো বাংলাবাজার গুদামে পরে থাকল, আর বছর শেষে আপনি লেখকের ঘাড়ে সেই দায় চাপাতে পারেন না। আপনি সারা দেশে সেই বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারেন নি। তাই বই বিক্রি হয় নি। আমাদের এখন বইয়ের প্রকাশকদের চেয়ে কবি লেখকদের ঘাড়েই বই বিক্রির দায়টা চাপানোর একটা প্রবনতা লক্ষ্য করছি। এটা সম্পূর্ণ ভুল। একজন স্বনামধন্য কবি বা লেখকের বই আপনি যেভাবে প্রচার করছেন, একই ভাবে না হোক, অন্তত যদি ন্যূনতম একটি প্রচারও সেই অপরিচিত কবি লেখকের বইটি পায়, আর সেটি যদি দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়, অথবা সারা বিশ্বে সেই বই পৌঁছে দেবার মত নেটওয়ার্ক প্রকাশকের থাকে, তাহলে ওই বইটিও খরচ ওঠানোর মতই বিক্রি হবে। কিন্তু বইটি কতটুকু কোয়ালিটি বই নাকি বিজ্ঞাপন সর্বস্ব আশ্চার্য মলম, সেটিও একটা বড় প্রশ্ন। আমাদের রাষ্ট্র আমাদের কোয়ালিটি বই প্রদানে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তেমনি আমাদের প্রকাশকরাও কোয়ালিটি বই প্রকাশে তেমন উৎসাহ দেখায়নি। মাঝখান থেকে ওই অশ্রেণীভুক্ত কবি লেখকদের ঘাড়ে সব দায় চাপানো হচ্ছে। এ যেনো একুশ শতকের আরেক মহা নিয়তি।আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র, নীতি নির্ধারকগণ, আমাদের প্রকাশকগণ এবং অবশ্যই আমাদের কবি লেখকগণ যতক্ষণ না এ নিয়ে সোচ্চার না হবেন, ততদিন এই নিয়ে সত্যিকারভাবে কোনো আশার আলো দেখতে পাই না। পাশাপাশি একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে আমাদেরও অনেক দায়িত্ব আছে। আমরা খামাখা ফেসবুকে সময় নষ্ট না করে অন্তত চব্বিশ ঘণ্টার যদি মাত্র এক ঘণ্টাও বই পড়ায় অভ্যস্থ হই, তাহলে আমাদের বছরে যে পরিমাণ সামাজিক দায়িত্ব পালন করা হবে, তার চেয়েও বেশি আমরা নিজেদের প্রতি সচেতন হব, নিজেদের সময় জ্ঞান সম্পর্কে সচেতন হতে পারব। এমন কি কিছু ভালো বই পড়ায় অন্তত সময় খরচ করব। এক হাজার বছর বই না পড়ে বাঁচার চেয়ে মাত্র মাত্র ত্রিশ-চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর ভালো ভালো কয়েকটি বই পড়ার পর মরে যাওয়া অনেক ভালো। আমরা কোনটি করব, সেই সিদ্ধান্ত কিন্তু আমাদেরই নিতে হবে। সো, সাধু সাবধান।।ঢাকা১৮ নভেম্বর ২০১৪",False rg,"বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখা ।। রেজা ঘটক বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখা রেজা ঘটক আমি তখন কাস ফাইভে পড়ি। ১৯৮০ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের ঘটনা। সম্ভবত দিনটি ছিল রোববার। আমি আর আমার বন্ধু প্রকাশ, দু’জনে মিলে ঠিক করলাম টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যাব। দু’জনেই তখন মাত্র নতুন সাইকেল চালানো শিখেছি। কিন্তু কারোরই দূরযাত্রার অভিজ্ঞতা নেই। এক ঢিলে দুই পাখি মারার ইচ্ছা নিয়ে আমরা সকালের দিকেই সুজিতদা’র গ্যারেজে উপস্থিত হলাম। সুজিতদা’র গ্যারেজে রাজ্যের যতো সাইকেল। কোনোটির ব্রেক নেই। কোনোটির মাডগার্ট নেই। কোনোটির টায়ার লিক। কোনোটির বেল নেই। কোনোটির স্পোক ভাঙা। কেনোটির ঘন ঘন চেইন পড়ে। কোনোটির প্যাডেল ভাঙা। কোনোটির বডি ছুটে গেছে। কোনোটির স্ট্যান্ড নেই। কোনোটির মেরুদন্ড ভেঙে গেছে। এরকম বাহারি সাইকেলগুলো সার্ভিসিংয়ের জন্য সুজিতদা’র গ্যারেজে রোজ জমা হয়। আর প্রত্যেকটি সাইকেলই সুজিতদা’র হাতের যাদুতে তাজা সাইকেল হয়ে ওঠে। এমনিতে সুজিতদা’ আমদের ঘন্টায় এক টাকা দরে সাইকেল ভাড়া দেয়। কিন্তু আমরা তার হাতের কিছু কাজ করে দিলে বিপরীতে খানিক ওভার টাইমও চালানো যায়। আমরা তখন প্রায়ই ওই সুযোগ কাজে লাগাই। দু’জনের সম্বল মাত্র বারো টাকা। ডাবলিংটা শেখা থাকলে কিছু টাকা হয়তো বাঁচানো যেত। কিন্তু সুজিতদা’ আমাদের মতো লিলিপুটদের ডাবলিংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছেন। অবশ্য আমারা তখন সুজিতদা’র চালাকিও পুরোপুরি ধরতে পারি। কিন্তু আমরা যেহেতু টুঙ্গিপাড়া যাব সেজন্যে দু’জন একত্রে না গিয়ে, আধা ঘন্টা বিরতি দিয়ে একটি করে সাইকেল নিয়ে কেটে পড়লাম। দীঘিরজান বাজারের কাঠের পুলের ওপর দু’জনে দুই সাইকেলে পুনরায় মিলিত হলাম। এর আগে হরিদাস কাকার কাছ থেকে টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার পথঘাট কিভাবে যেতে হবে সবকিছু শুনে নিয়েছিলাম আমরা। এমনিতে মাটিভাংগা পর্যন্ত আমরা নিজেরাই চিনি। সে পর্যস্ত কোনও সমস্যা নেই। মাটিভাংগা বাজারে এসে অম্বরেশ বাবু’র দোকানে জিজ্ঞেস করলাম- বাংলাবাজার যাব কোন পথে ? অম্বরেশ বাবু আমাদের পথ দেখিয়ে দিলেন। বাংলাবাজারের পথে দেখা হলো মহানন্দদা’র সাথে। বাংলাবাজারের ওপারে শৈলদাহ গ্রামে আমাদের মহানন্দদা’র মামা বাড়ি। মহানন্দ দা তার মামীমাকে নিয়ে তখন ওইপথে ফিরছিলেন। আমাদের জিজ্ঞেস করলেন- কই যাও তোমারা ? আমারা বললাম- বাংলাবাজার। তাহলে জোড়ে চালাও, খেয়া এপার আছে, মহানন্দদা’ জবাব দিলেন। আমরা খেয়াঘাটে পৌঁছে অন্য কোনো যাত্রীর দেখা না পেয়ে নিজেরাই খেয়া চালিয়ে ওপারে রওনা হলাম। কিন্ত বলেশ্বরের এই জায়গাটা বানিয়ারীর যেখানে আমাদের বাড়ি ওখানকার চেয়ে অনেক বেশি খরস্রোতা। তাই আমরা অনেক ভাটিতে ওপারে খেয়া থামাতে পারলাম। মাঝি যে ওপারেই ছিল, তা বুঝতে পারলাম ঘাটে ঠিকমতো খেয়া নিতে না পারার কারণে। ওপার থেকে সে আমাদের ভারী গালাগাল দিচ্ছিলেন আর ভারী তোর-জোর করছিলেন। তার সেই হুঙ্কার শুনে আমাদের কেল্লা তখন কেতাদুরস্থ। হিসাবে এক টাকা ভাড়া হয় (দু’জন চার আনা করে আট আনা আর সাইকেল চার আনা করে আট আনা)। কিন্তু ওই ব্যাটা আমাদের থেকে দুই টাকা নিবেন। আর আমরা নিজেরা চালিয়ে এসেছি বলে আট আনা দিতে চাই। এই নিয়ে তখন মহা ক্যাচাল। শেষে পাশের কাঠের আড়ৎঘর থেকে এক বয়সি চাচা উঠে এসে আট আনায়-ই ব্যাপারটির রফা করে দিলেন। চাচার কাছ থেকে আমারা শৈলদাহ যাবার পথ চিনে নিলাম। আর মনে মনে তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিলাম। শৈলদাহ আসার পথে লক্ষ্য করলাম, প্রকাশের সাইকেলের পেছনের চাকায় হাওয়া কমে যাচ্ছে। পথে একজন বললো্- সামনে রাজনগর একটা গ্যারেজ আছে। রাজনগরের সেই গ্যারেজ পর্যন্ত গিয়ে আমরা সাইকেলে হাওয়া দিলাম। দরকার ছিল প্রকাশের সাইকেলের পেছনের চাকার। কিন্ত আমার সাইকেলের সামনের চাকায়ও একটু হাওয়া দিলাম। তাই দেখে প্রকাশও ওর সাইকেলের সামনের চাকায় হাওয়া দিল। হাওয়া দেয়ার বিল হয় বারো আনা। কিন্তু গ্যারেজ অ’লা এক টাকার কম নিবে না বুঝতে পেরে আমার সাইকেলের পেছনের চাকায়ও হাওয়া দিলাম। সাইকেলে হাওয়া একটু বেশি দেয়ায় আর রাস্তা একটু খারাপ থাকায় দু’জনেই তখন ঝাঁকাঝাঁকিটা খুব টের পাচ্ছিলাম। সাইকেলের ঝাঁকাঝাঁকি কমাতে আমরা চিংগইরের পথে একবার উভয় সাইকেল থেকে একটু একটু হাওয়া কমিয়ে নিলাম। তারপর সামনেই মধুমতি খেয়াঘাট। নদী এখানে বড়, তাই ভাড়াও ডাবল। জনপ্রতি আট আনা। আর সাইকেল প্রতি আট আনা। মোট দুই টাকা। এখানে আমরা শুধু পরস্পর চোখাচোখি ছাড়া অন্য কোনও দুষ্টু বুদ্ধি খাটানোর সাহস পেলাম না। ওপারে নেমে কিছুদূর যাবার পরেই একটা বড়বাজার পেলাম। ওখানে রাস্তার পাশের টিউবওয়েল থেকে আমরা জল খেলাম। আর দোকান থেকে চারটা চকলেট কিনলাম। দোকানদার আমাদের টুঙ্গিপাড়ার রাস্তা দেখিয়ে দিলেন। বড় রাস্তা থেকে ডানদিকে এগিয়ে ছোট রাস্তা ধরে যেতে হবে। দু’পাশে সবুজ পাট ক্ষেত। মাঝখানে সেই ছোট রাস্তা। রাস্তার সমান্তরাল খাল। টুঙ্গিপাড়ার সেই রাস্তা পেয়ে আমরা আনন্দে একটু জোড়ে সাইকেল চালাতে লাগলাম। আর সেই সুযোগে একটু অসাবধানতার কারণে প্রকাশের সাইকেলের পিছনের চাকা লিক হল। এবার দু’জনেই সাইকেল ঠেলে ছেলে যাচ্ছি। আর একটু আগালে বাধাগ্রাম। দুইদিকে দুই রাস্তা। আমরা কোনদিকে যাবো? কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে। আমরা ধারণা করেছিলাম, বড় রাস্তা ধরেই বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। কিন্তু এক লোক আমাদের দেখিয়ে দিলেন ছোট রাস্তা। আমরা আবারো পরম্পর চোখোচোখি করলাম। লোকটি আমাদের সন্দেহ আন্দাজ করতে পেরে বললেন- সামনেই একটা রাইস মিল আছে। ওখানে গ্যালিই শ্যাখের বাড়ি দ্যাখফানে। আমরা সাইকেল ঠেলে রাইস মিল পর্যন্ত গেলাম। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি কোনটা জানতে চাইলাম। বয়স্ক এক চাচা বললেন- ওইতো। আমরা এখানে সাইকেল রাখতে পারি কিনা জানতে চাইলে, সে আবার বললেন- না কিচ্ছু হবে নানে, থুইয়া যাও না। আমরা রাইসমিলের সামনে একটা কড়ই গাছের সাথে সাইকেল ঠেস দিয়ে রেখে বঙ্গবন্ধু’র বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলাম। দু’বন্ধুর কারোরই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা ছিল না। ক্লাস টুয়ের বাংলা বইতে যতটুকু পড়েছিলাম, ওইটুকু সম্বল স্মরণ করে করে আমরা বাড়ির দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম। বাড়িতে ঢোকার মুখে একটা ছাদওয়ালা বৈঠকখানা। প্রথমে আমরা তাই মনে করেছিলাম। ওখানে কিছুক্ষণ বসলাম। দেখি, সামনে দুটো কবর সুন্দর করে পাথরে বাঁধানো। স্মৃতিফলকে বঙ্গবন্ধুর মা-বাবার জন্ম ও মৃত্যু সন উল্লেখ করা। পরে বুঝলাম এটা আসলে গোরস্থান। আমাদের ওভাবে বসাটা মনে হয় উচিত হয়নি। দেখলাম উঠানে মাঝবয়সি একজন লোক মুরগি তাড়া করে আমাদের দিকে আসছেন। আমরা তার কাছে জানতে চাইলাম, বঙ্গবন্ধুর কবর কোথায় ? লোকটি আমাদের কথা শুনে মুরগি তাড়ানো বন্ধ করে এক পলক আমাদের দেখলেন। তারপর বললেন- ওই তো, ওই যে বঙ্গবন্ধুর কবর। আমরা গুটি গুটি পায়ে বঙ্গবন্ধুর কবরের দিকে গেলাম। একদম কাছে গিয়ে দু’জনেই চুপচাপ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। লাল পুরনো ইটগুলো বেরিয়ে আছে। কবরের তেমন কোনও যত্ন নেই। পাশে একটা ডালিম গাছ। তার ছায়া কবরের ওপরে বাতাসের দোলায় শুধু নড়ছিল তখন। কবরের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে কিছু ফুলগাছ। দু’চারটা ফুল তখনো ফুটে ছিল। আমরা কি করব বুঝতে পারছিলাম না। দু’জনে এদিক-ওদিক ভাল করে দেখে ওখান থেকে দু’টো ফুল ছিঁড়ে চুপচাপ কবরের ওপরে রেখে দিলাম। বঙ্গবন্ধু তা দেখলেন কি না আমরা জানি না। সেই লোকটি আমাদের কাছে ডাকলেন। আমরা জানতে চাইলাম- বঙ্গবন্ধু কোন ঘরে ঘুমাতেন, কোথায় বসতেন, কোথায় খাবার খেতেন- এসব। লোকটি আমাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দো’তলা বাড়িটার আগাগোড়া দেখালেন। আমরা এই প্রথম বঙ্গবন্ধুকে চিনতে শুরু করলাম। এরপর লোকটি আমাদের নিজেদেরকে ইচ্ছামতো ঘুরতে বলে পাশের খালে গোসলের জন্য চলে গেলেন। আর এক মহিলাকে ডেকে বললেন- ওরা যেন ভাত খেয়ে যায়, তার ব্যবস্থা করতে। আমরা মহিলার চোখ ফাঁকি দিয়ে একবার দোতালায় উঠলাম। আবার পরক্ষণেই নামলাম। এরপর পা টিপে টিপে আবার বঙ্গবন্ধুর কবরের কাছে গেলাম। সেখানে মিনিট খানেক উঁকিঝুঁকি মেরে সোজা রাইসমিলের ওখানে। দেখলাম, সেই লোকটি গোসল সেরে বাড়ির ভেতরে ঢুকছেন। সেই ফাঁকে আমরা দু’জনেই সাইকেলে চাপলাম। প্রকাশের সাইকেল আগে থেকেই লিক ছিল, আর জোরে চালানোতে তার আরও বারোটা বাজল। বড় রাস্তায় এসে দেখলাম- আমার সাইকেলটারও একই দশা। তারপর পাটগাতী বাজার পর্যন্ত ঠা ঠা রোদে সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে বঙ্গবন্ধুর কথা আমরা সত্যিই কি ভুলে গেলাম? বঙ্গবন্ধুর সেই কবরের কথা তো আজও ভুলতে পারলাম না। বাঙালি জাতির জন্য তাঁর অবদানের কথা না হয় না-ই বললাম। এভাবেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাঙালি বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখেছিলাম। তাই আগস্ট এলেই বারবার বঙ্গবন্ধু'র কথা মনে পড়ে। আর তখন প্রায়ই রবীন্দ্রনাথের ওই গানটি গেয়ে উঠি- 'নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।' লেখাটি প্রকাশিত হয়- সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ৭ বর্ষ ৩৭ সংখ্যা ১২ আগস্ট ২০০৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪১২ সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৩৪",False rg,"অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি!!! গতকাল বইমেলায় গেছি শিল্পী শেখ শাহেদ আলী আর আমি একসাথে পায়ে হেঁটে। আর বইমেলায় ঢুকতেই সাতটা বেজে গেছে। প্রথমে গেলাম স্টুডেন্ট ওয়েজে। স্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে এবার প্রকাশ পেয়েছে শাহেদ ভাই'র দ্বিতীয় বই 'মালেকা রোকযানা অ্যালবামের গল্প'। গতবছর একই প্রকাশনা থেকে শাহেদ ভাই'র প্রকাশ পেয়েছিল প্রথম বই 'আত্মজীবনী লেখা যায় না' যা বইমেলায় বেস্ট সেলার বই ছিল। এবারের বইটিও বেস্ট সেলার তালিকায় আছে। বইমেলায় আমরা গতকাল শুরু করেছিলাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে। কিছুক্ষণ আড্ডা হলো বন্ধু সাইমন জাকারিয়ার সাথে। স্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে শাহেদ ভাই আর আমি গেলাম বিদ্যাপ্রকাশের স্টলে। সেখানে যথারীতি মোহিত ভাই নাই! কিন্তু পেলাম লেখক জুলফিয়া ইসলামকে। কিছুক্ষণ পর আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন লেখক-অনুবাদক সোহরাব সুমন। বইমেলা'র প্রথম বই উপহার পেলাম বন্ধু জুলফিয়া'র কাছ থেকে। জুলফিয়াকে ধন্যবাদ। যথারীতি আমরা বিদ্যাপ্রকাশের ঐতিহ্যবাহী পিয়াজু আর নাস্তা খেয়ে মেলায় ঘুরতে বের হলাম। বাংলাপ্রকাশের স্টলের সামনে দেখা হলো রমনী বেষ্টিত লেখক হুমায়ুন কবীর ঢালী'র সাথে। আমরা এলোমেলো ঘুরছিলাম। একপর্যায়ে গেলাম বাতিঘর স্টলে। এ বছর বন্ধু শিল্পী শাহীনূর রহমান একটি মাত্র স্টলের নকশা করেছেন। বাতিঘর-এর। শাহীনের কাজটি দেখার মত। যে কোনো বইপ্রেমী বাতিঘরের স্টলে ঢুকে নিজের পছন্দ মত বই নিয়ে কাউন্টারে টাকা দেবার সুযোগ গোটা বইমেলায় আর দ্বিতীয়টি নজরে পড়েনি। সত্যি এবার যদি স্টল সজ্বায় কোনো পুরস্কার থাকে তাহলে বাতিঘর কঠিন প্রতিদ্বন্ধিতা করবে! বাতিঘরের প্রকাশক বন্ধু দীপংকরকে পেলাম না। দীপংকর চট্টগ্রাম গেছে। ফিরলে নিশ্চয়ই আড্ডা হবে। বাতিঘরের সামনে আমাদের সঙ্গে যোগ দিল বন্ধু সাংবাদিক-লেখক নজরুল কবীর। তারপর এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে গেলাম শ্রাবণ প্রকাশনীতে। সেখানে দেখা হলো আমার প্রকাশক বন্ধু রবীন আহসান, বিপ্লবী বাবুদা, সাইদুর, নারীবাদী লেখক সাদিয়া নাসরিন প্রমুখের সাথে। সাইদুর আমার 'ফিদেল দ্য গ্রেট' বইতে অটোগ্রাফ নিল। ধন্যবাদ সাইদ। বইটি পড়ে তোমার মতামত জানিও। কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে শাহেদ ভাই আর আমি আলাদা হলাম। আমি চলে আসলাম বাংলা একাডেমি'র লিটল ম্যাগ চত্বরে। দেখা হলো আড্ডা হলো শারমিনা আপা, তুলা ভাবী, নীল সাধু, উপমা, রুদ্র খড়, ফারাহ নাজিয়া, শিমুল কিবরিয়া, অয়ন আবদুল্লাহ, কবি শাফি সমুদ্র, লেখক ঋষি এস্তেবান, লেখক কাওসার মাসুম, কবি মাহমুদুল হাসান মাসুম, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, আয়ুষী ঘোষ, নওরীন ওশিন, সেরা বন্যা, শিল্পী শতাব্দী ভব, শতাব্দী সানজানা, ফায়েজুস সালেহীন, কবি অমিতাভ পাল, কবি মাহবুব আলম, মেঘ সম্পদক কবি লতিফ শাহীন, কবি ও সম্পাদক শরীফ খিয়াম আহমেদ ঈয়ন সহ অনেকের সাথে। আজ লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে দ্রষ্টব্য থেকে প্রকাশ পেয়েছে কবি কামরুল হুদা পথিকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'মাতাল শহরের গল্প'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী চারু পিন্টু। কামরুল হুদা পথিক একদিকে সম্পাদক, অত্যন্ত শক্তিশালি গদ্যলেখক, গল্পকার এবং কবি। তিনি বাংলা ভাষায় প্রতিষ্ঠান বিরোধি ছোট কাগজ দ্রষ্টব্য এবং করাতকলের সম্পাদক। অভিনন্দন পথিকদা। আপনার কাব্যযাত্রা শুভ হোক। আজ লিটলম্যাগ চত্বরে অনেকক্ষণ আড্ডা হলো গাণ্ডীব সম্পাদক তপন বড়ুয়ার সঙ্গে। তপনদা সুন্দরবন ঘুরতে যেতে চান নদীপথে, ফিরতে চান সড়ক পথে। আমি যতটুকু চিনি সেভাবে তপনদাকে রুট বলার চেষ্টা করেছি। রামপাল ও সুন্দরবন এলাকার কোনো বন্ধু যদি আমার এই লেখা পড়েন, প্লিজ কমেন্ট বক্সে তপনদাকে সুন্দরবন ও রামপাল যাবার ডিটেইল ও সহজ পথ বলে দেবেন।গতকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে প্রকাশকদের প্রত্যাশা ছিল অনেক বই বিক্রি হবে। কিন্তু বইমেলায় প্রচুর দর্শক আসলেও তারা ফুল ও অন্য জিনিসে যে অর্থ খরচ করেছে, তারচেয়ে বই কেনার প্রতি তাদের ছিল যথারীতি অনাগ্রহ। বইমেলায় যত মানুষ গেছে তার শতকরা ৯০ শতাংশ মানুষ আসলে ঘুরতে গেছে, সেলফি তুলতে গেছে। কেউ বই কেনেনি। যারা বইয়ের প্রকৃত পাঠক, কেবল তাদের হাতেই বই দেখা গেছে। বাংলাদেশে বইমেলা এখন ঘোরাঘুরি আর সেলফি তোলার একটা জায়গা হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বইমেলার খাবারের দোকানগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সেখানে তারা অনায়াসে গোগ্রাসে খাবার গিলেছে মাগার বই কেনার প্রতি তাদের তেমন আগ্রহ নজরে পড়েনি। বরং অনেকে ফ্রি বই পাওয়ার লোভে বইমেলায় ভিড় করছে। কী জানি সেই ফ্রি বই এরা নীলক্ষেতের পুরান বইয়ের মার্কেটে বিক্রি করে বিড়িয়ানী খায় কিনা, কে জানে! বাঙালির প্রধান কাজ এখন দুটি। একটি ঘুম থেকে উঠেই মার্ক জুকারবার্গের ফেসবুকে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া। দ্বিতীয়টি হলো বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সেলফি তোলা। এটা এখন একটা সংক্রামক রোগের পর্যায়ে চলে গেছে। দুনিয়ায় আর কোথাও হয়তো ফেসবুক এত জনপ্রিয়তা পায়নি, যতটা পেয়েছে বাংলাদেশের অকর্মন্য বাঙালির কাছে। এরা আর কিছু পারুক আর না পারুক, ফেসবুক চালাতে শিখেছে। সেলফি তুলতে শিখেছে। বইমেলায় দেখা গেছে সেলফি তোলার ক্যামেরা স্ট্যান্ড ঘাড়ে নিয়ে এক ফেরিওয়ালাকে ঘুরতে। তার বিক্রি যে কোনো লিটলম্যাগ প্রকাশকের চেয়ে কয়েকশো গুণ বেশি। দুনিয়ায় সবচেয়ে খারাপ যত জিনিস আছে, তা বাঙালি সবার আগে গ্রহন করে আর ভালো জিনিসটা দিনদিন ভুলতে চায়। বাংলাদেশের এখন প্রায় নব্বই শতাংশ মানুষ বই পড়ে না। কিন্তু তাদের অনেকেই ফেসবুক চালায়। তবে এই হতাশার মধ্যেও কিছু ভালো লক্ষণ দেখা গেছে, যদিও তা প্রত্যাশার তুলনায় খুবই নগন্য। এবারের বইমেলায় বড়দের বইয়ের চেয়ে শিশুদের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। মা-বাবারা হয়তো ভাবছেন নিজেরা যতই ফাঁকিবাজি করি না কেন, নিজের সন্তানের জন্য বই কিনি। এই সদিচ্ছার কারণে এখনো হয়তো শিশুদের বই বিক্রি হচ্ছে। বইমেলায় আজ নিরাপত্তা পরিস্থিতি ছিল খুবই ঢিলেঢালা। আজকে মানুষের উপস্থিতি বেশি অথচ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এত ঢিলেঢালা, ব্যাপারটা আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। গেট থেকে বইমেলায় প্রবেশ পথে অনেককেই পুলিশ তল্লাশি করেনি। আমি নিজের চোখে দেখেছি এটা। যে কারণে বইমেলায় নিরাপত্তাহীনতা এখন সবচেয়ে বড় আতংকের জায়গা। চারদিকে প্রচুর পুলিশের উপস্থিতি। কিন্তু তল্লাশিতে এত ঢিলেঢালা ভাব, এটা কাদের জন্য আমার মাথায় আসে না! বাংলা একাডেমির উচিত পুলিশের জন্য বইমেলার মাঠের বাইরে কঠোর তল্লাশি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এটা দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি এবং গোটা বইমেলা প্রাঙ্গন জুড়েই খুব জরুরী। এর আগে ডক্টর হুমায়ুন আজাদ সন্ত্রাসীদের হাতে বইমেলা থেকে বের হবার সময় আক্রান্ত হয়েছিলেন। বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে পুলিশের সামনেই। লেখক বন্যা আহমেদকে কুপিয়ে জখম করেছে। বইমেলা যতই শেষের দিকে আগাচ্ছে, পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ততই রহস্যময় গাছাড়া ভাবটা আমার ভারী সন্দেহ হচ্ছে। নতুন কোনো অঘটনের ঘটনা ঘটলে, তা যে পুলিশের এই দায়িত্বহীনতার কারণেই ঘটবে, তা আজকের বইমেলার চেহারা দেখে আন্দাজ করা যায়। বন্ধুদের অনেকেই বইমেলা অলরেডি প্রত্যাখ্যান করেছেন। কবি-সাহিত্যিকদের অনেকেই বইমেলায় আসে না এই নিরাপত্তাহীনতার কারণেই। আমরা একটি নিরাপদ ও সফল বইমেলা দেখতে চাই। বাংলা একাডেমি এই বই মেলার আয়োজক। তাই প্রথমেই সকল দায় গড়াবে একাডেমির উপর। আর পুলিশের দায়িত্বহীনতা আজ যেমন চোখে পড়েছে, বাস্তবে এটা আরো কত ভয়াবহ বা রহস্যময় তা কেবল পুলিশ-ই বলতে পারে! বইমেলায় পুলিশের রহস্যময় ঢিলেঢালা আচরণ সত্যি সত্যিই বড় চিন্তার বিষয়। বইমেলার নিরাপত্তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। নইলে সরকারও এর দায় থেকে নিজেদের এড়াতে পারবে না। বই কিনুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। অমর একুশে বইমেলা নিরাপদ ও সফল হোক। প্রকাশকদের মধ্যে অলরেডি বই বিক্রি না হবার কারণে এক ধরনের হতাশার চেহারা সুস্পষ্ট দেখা গেছে। আশা করি বইমেলার বাকি দিনগুলোতে এই চিত্র বদল হবে। বইমেলায় আগত বইপ্রেমীরা বই কেনায় উৎসাহী হবে। সবাই ভালো থাকুন। নিরাপদে থাকুন। ................................১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৪:৫৭",False ij,"গল্প_ ভাগ্যবতী আমি বরং কোনও ওল্ডহোমেই চলে যাই শিপন। এসব তুমি কী বলছ মা! আমাদের সঙ্গে থাকতে তোমার সমস্যা কোথায়? এই ফ্ল্যাটটা তো ছোট না; তা ছাড়া তুমি আমাদের সঙ্গে থাকলে জেরিনের আপত্তি নেই। ও তোমাকে কত রেসপেক্ট করে-তুমি জান। সে আমি জানি রে- ওর মত মেয়ে হয় না। তবুও। তোরা নতুন বিয়ে করেছিস। এখন তোদের প্রাইভেসি দরকার। আমি সবসময় ড্রইংরুমের টিভি দখল করে বসে থাকি। তোরা অফিস থেকে ফিরে বিরক্ত হোস। কে বলল! না! ঠিক আছে বিরক্ত হোস না- মেনে নিলাম। আরেকটা টিভি যে কিনবি সে টাকা কোথায়? অফিস থেকে লোন করে বিয়ে করলি। সেই টাকা আগে শোধ করতে হবে না? শেলটেক এখনও সাত লাখ টাকা পায়। সেই ইন্সলমেন্ট। তাই বলে ওল্ডহোমে চলে যাবে? হ্যাঁ রে। আমিও ... আমিও শেষ সময়টা একটু নিরিবিলি কাটাতে চাই। এই বয়েসে একা একা বসে আকাশপাতাল ভাবতে বড় ভালো লাগে রে শিপন; বয়স না-হলে বুঝবি না। মউ শুনে কী বলবে বল তো মা? মিছেমিছি জেরিনের দোষ দেবে। না রে, তুই যা ভাবছিস তা ঠিক না । মৌ এই যুগের মেয়ে। ও ঠিকই বুঝবে কেন আমি আলাদা হতে চাচ্ছি। ও এ নিয়ে জেরিনকে দুষবে না দেখিস। আর ওরা তো আর ফিরছে না দেশে। ৮/৯ মাস হয়ে গেল একটা ফোনও করে না, মেইলও করে না। মৌকে নিয়ে তুই ভাবিস না। এই ফ্ল্যাট কেনার টাকা তুমিই তো দিলে মা-আর তুমিই এখন তোমার ফ্ল্যাটে থাকবে না? ফ্ল্যাট কেনার টাকা আমি একা দিইনি-তুই সেটা ভালো করেই জানিস শিপন। ফ্ল্যাট কেনার টাকা তোর বাবাও দিয়েছে। আমিও দিলাম কিছু। তোর বাবার মতন কষ্ট করে ইনকাম করে তো আর দিইনি। ওয়ারিতে তোর নানাবাড়িটা বিক্রি হল। এত দিন ছায়া দিয়েছিল বাড়িটা। ছায়াটা এখন ভাগ হল। আর ছেয়েমেয়ের সঙ্গে মায়ের অত হিসেবের কথা ওঠে কেন? তা ছাড়া মউ ওর ভাগটা নিল না। একমাত্র ভাই বলে তোকে দিয়ে দিল। তারপরও ভেবে দেখ মা। কত আর ভাবব রে শিপন। এসব নিয়েই তো সারাদিনই ভাবি। শোন মা, সমাজ বলে একটা জিনিস আছে; তুমি চলে গেলে চারিদিকে লোকে ছিঃ ছিঃ করবে না? না রে। এখন এসব নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। লোকের হাতে এত সময় কই বল? লোকে আগে পরের ব্যাপারে ঘামাত-এখন আর গা করে না। একেক সময়ের একেক ধাত। জেরিন তোমাকে কিছু বলেছে? আমাকে সত্যি করে বল ত মা। তখন বললাম না যে-ওর মতো মেয়ে হয় না আকারে ইঙ্গিতে? এই সংসারটা জেরিনের শিপন। তোর বাবার মারা যাওয়ার দিনই আমার সংসার শেষ হয়ে গেছে। তাহলে তুমি আর আমাদের সঙ্গে থাকছ না? আমি একরকম সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছি। শুধু- বল। তোর বাপের মৃত্যুবার্ষিকীটা নিয়মিত করিস বাবা। ঘরে মিলাদ না-দিলেও পাড়ার মসজিদে পাঁচশ টাকা দিস। ঠিক আছে। ও নিয়ে তুমি ভেবো না মা। আর একটা কথা। বল। আমার লাশটা সম্ভব হলে ঝিকরগাছা নিয়ে গিয়ে তোর বাবার কবরের পাশে কবর দিস। মা। হ্যাঁ। আমি সে সবের সমস্ত খরচ তোকে দিয়ে যাব। মা! তুমি এখন চুপ করো তো মা। চুপ কর ... ২ এ্যাই, চলনা নেক্স মান্থে নেপাল যাই-তোমার না ছুটি পাওনা আছে? হু। সেবার হানিমুনে নেপাল গেলাম- অথচ পলিটিকাল আনরেস্টের জন্য পোখরা যাওয়া হল না। শুনেছি পোখরা নাকি কাঠমুন্ডুর চেয়েও সুন্দর। এবার চল-কয়েক দিন কাঠমুন্ডু ঘোরাঘুরি করে পোখরা যাই। সিনথিয়ারা দু-মাস আগে পোখরা গেল। সিনথিয়ার সঙ্গে কথা হলেই কথাটা বারবার বলে। ফেসবুকেও পোখরার ছবিগুলি সিনথিয়া আপলোডও করেছে । দেখলে কী যে খারাপ লাগে। যাবে? চল। ইস্, আমার আবার পাহাড় দেখতে ইচ্ছে করছে। সেই পাহাড়গুলো কী সুন্দর আর শব্দহীন। মনে আছে তোমার শিপু? হুু। জানই তো-কলেজ জীবনে আমি কবিতা লিখতাম-তারপর বিবিএ পড়ার চাপে কবিতা মাথায় উঠল। তারপর কাঞ্চনজঙ্গা দেখে আবার কবিতার ঝোঁক ফিরে এল; অবশ্য ইংরেজিতে। বাংলা আর কেন জানি আসে না -মনে হয় বিবিএর বইগুলি সব ইংরেজিতে সেইজন্য। আহ্ নেপাল। ওহ্, দ্যাট লোনলি মাউন্টেইন। এই ফাঁকা ফ্ল্যাটের মতন শুনশান পাহাড় । জান, আমার এমনই স্বপ্ন ছিল- এমন ফাঁকা ফ্ল্যাটে থাকব আমি আর আমি যাকে ভালোবাসি-সে। হু। তোমার মাটা যে কী ভালো মহিলা-সবাই যদি তোমার মায়ের মত হত। সিনথিয়ার শ্বাশুড়িটা না এমন ঝামেলা করছে-ঘাড় থেকে নামানো যাচ্ছে না। কেস করার হুমকী দিচ্ছে। বেচারা সিনথি এখন কী করে। জান, সিনথিরা নতুন একটা ডিভান কিনেছে। আমরাও তো ড্রইংরুমটা আরও ভালোভাবে সাজাতে পারি। পারি না? তুমিই বল। হ্যাঁ, পারি। আমাদের ড্রইংরুমে অবশ্য ডিভান আছে। তাহলে কাটাবন থেকে একটা বড় অ্যাকুয়ারিয়াম কিনে আনলে কেমন হয়? ভালো হয়। আচ্ছা একটা বুকশেলফ বানালে কেমন হয়? নাকি অটবি থেকে কিনব? ওদেরগুলা যা সুন্দর। কেনা যায়। এই শিপু? বল। একটা ৩৪ ইঞ্চি স্যামসঙ প্লাজমা টিভির দাম কত হতে পারে? কেন? আহা, আজ হোক কাল হোক একটা প্লাজমা টিভি কিনতে হবে না। নইলে লোকে কী বলবে। বলবে আমরা ক্ষ্যাত আর দরিদ্র। শুনেছি স্যামসঙ ভালো না। স্যামসঙ ভালো না? না। তা হলে এলজি? সেদিন সনি সেটম্যাক্সে দেখলাম এলজির অ্যাড। কত হতে পারে দাম? এক-দেড় লাখ মনে হয়। এত! বল কী! হ্যাঁ। তা হলে এককাজ কর। কী। নেপাল বাদ। অ্যাকুয়ারিয়াম-বুকশেলফও বাদ- টিভিই কিনি। ওকে। সেদিন সিনথি বলল: ওরা নাকি ২৭ ইঞ্জি ফিলিপস এলসিডি কিনবে। হ্যাঁ। ওর এক দুলাভাই নাকি ট্রান্সকমে আছে। ইন্সটলমেন্টে কিনবে সম্ভবত। কিনুক। ফিলিপস ফালতু। ফিলিপস ইস্ত্রি শুধু ভালো; আর হট ওয়াটার কেটলি। এই? কী? সত্যি স্যামসঙ ভালো না? ফারহান তো তাইই বলে। ওদের টিভির চেয়ে নাকি মোবাইল ভালো। ওয়াইডস্ত্রীন টিভি নাকি ফেইড হয়ে যায়। ইস্, স্যামসঙ এর কালারটা কত ভালো। এলজিরটার কেমন যেন...এ্যাই বল। টিভি কিনব না। কেন? আমার মোবাইল লাগবে। কেন নকিয়া কি হল? সেদিন না ফাইভ এইট জিরো জিরোটা কিনলে? নকিয়া আর ভাল্ লাগছে না। ভাল লাগছে না? না। ফেসবুকের স্ট্যাটাস আপডেট করা যায় বলে কিনলে- তখন-তখন। এখন আর ভাল্ লাগছে না। আচ্ছা, শিপন? বল? আমার এই ফাইভ এইট জিরো জিরোটা এখন বিক্রি করলে কত পাওয়া যাবে? বেচবে? সত্যি? হ্যাঁ। কত পাওয়া যাবে? জানি না। দেখি। শামসের সঙ্গে কথা বলে। ও সেকেন্ডহ্যান্ড মোবাইলের ব্যবসা করে। শোন। বল। যে কিনবে তাকে আবার শামস বলে না যে আমারটায় বেশিক্ষণ চার্জ থাকে না। আচ্ছা। বলব না। নকিয়া ভালো সেট। আমরটাই খারাপ পড়ছে। আমারও তাইই মনে হয়। এটা বেচে কিছু টাকা অ্যাড করে নতুন একটা কিনব। কি কিনবে? নোকিয়া? না। স্যামসঙ স্টার। থ্রিজি। টাচ ফোন। হ্যাঁ। সেদিন আই পি এলের সময় অ্যাড দেখেছি। ঝাক্কাস। ঢাকায় পাওয়া যাবে? মনে হয়। কাল্ তাহলে বসুন্ধরায় চল। কাল্ না তোমার মাবাবাকে রাতে খেতে বললে? ক্যান্সেল! ওকে যা বল। আম্মুকে কাল সকালে ফোন করে দেব। এখন অনেক রাত হয়ে গেছে। তুমি যা বল। এই তো আমার লক্ষ্মী ছোনা। সব সময় আমার কথা শোনে। শোনো - বল। কাল আমাদের বসুন্ধরা যাওয়া ক্যান্সেল। কেন? কী হল আবার? আমার একটা জরুরি কথা মনে পড়েছে। কী? বলছি। মোবাইল কিনব না। মোবাইল কিনব আরও দুয়েক মাস পরে। তা হলে? ল্যাপটপ কিনব। ল্যাপটপ? হ্যাঁ। ল্যাপটপ। লেনোভো। একেবারে নতুন। থিঙ্ক প্যাড-জি সিরিজ। থিঙ্ক প্যাড-জি সিরিজ তো ঝাক্কাস। একেবারে কে-ক্লাস। কোথায় দেখলে? এখনও দেখিনি। তা হলে? আমার এক কলিগ বিক্রি করবে। জিনিসটা তার কাজিনের। মাত্র সাত মাস ইউজ করেছে। এতক্ষণ মনে পড়েনি। চাচ্ছে কত? সিক্সটি ফাইভ। মাত্র। সস্তাই তো। হু। এই শিপু। বল? তোমার মায়ের সেই টাকাটা তোমার কাছে আছে না? আছে। ১ লাখ? না? না। না। তাহলে! এক লাখ পয়ত্রিশ। বল কী! এক লাখ পয়ত্রিশ। হ্যাঁ। এক লাখ পয়ত্রিশ। কাল বুধবার। আমাকে ওখান থেকে ফিফটি তুলে দেবে। ধার। পরে আমার ফেরৎ দিয়ে দেব। ও কে। দেব। এখন এসব কথা বাদ দাও। কেন? এসো এদিকে। হি হি। ৩ নাঃ, আপা, আমার ডাকনাম বানু না। আমার ডাকনাম পরী। ভালো নাম সিতারা বানু। আমার মায়ের নাম ছিল আসমা বানু। আর আমার নানীর নাম ছিল জোহরা বানু। ছোটবেলায়-আমরা তখন ঢাকার পুরানা পল্টন থাকতাম- আমার নানা তখন আমার নানীকে আদার করে ডাকত নয়নতারা বলে। ও। আপনারা কি ঢাকাতেই বর্ন অ্যান্ড ব্রটাপ? না। না। আমরা যশোরের । যশোরের ঝিকরগাছার। ফিফটি সেভেনে আব্বা ঢাকায় বদলী হয়ে এলেন। প্রথমে আমরা থাকতাম গেন্ডারিয়া। গেন্ডারিয়ায় সেই সময় বিক্রমপুর মানে মুনশীগঞ্জের লোকজনে ভরতি ছিল। ওরা একটু অন্যরকম। কেমন? পরে শুনেন। আচ্ছা। এখন বলেন। আমাদের বাড়িঅলা ছিল বিক্রমপুরের এক কাপড়ের ব্যবসায়ী-আব্বার সঙ্গে ওনার বনিবনা হল না। আব্বা পরে নানার সঙ্গে কথাবার্তা বলে পুরানা পল্টন মসজিদের কাছে একটা তিনরুমের বাসা ভাড়া নিলেন। মসজিদের কাছে যে বটগাছ আছে-তার খুব কাছে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, চিনি চিনি। আমার এক দূর সম্পর্কের খালার বাড়ি ওখানেই। তাই নাকি? হ্যাঁ। তো। পুরানা পল্টনে থাকতেই নানা মারা গেলেন। নানীও। নানা মারা যাওয়ার আগে ঝিকরগাছার সম্পত্তি বেচে আমার আব্বাকে বারো হাজার টাকা দিয়েছিল। দেশের ধানী জমি বেচলেও ভিটেমাটি বিক্রি করেনি। এখনও আমাদের পুকুর ভিটেবাড়ি উঠান নিজস্ব কবরস্থান আছে। আপনি ভাগ্যবতী। তাই? হ্যাঁ। তো, ঝিকরগাছার সম্পত্তি বেচা টাকায় আব্বা উয়ারিতে জমি কিনলেন। সাড়ে সাত কাটা। বাড়ির কাজে হাত দিলেন অবশ্য আরও পরে- সিক্সটি সিক্স-এ। ও। আপনার দাদাবাড়ি কি যশোরেই? হ্যাঁ। মনিরামপুর। আমার দাদী মারা গেলে আমার দাদা আবার বিয়ে করেছিলেন। আমার আব্বা সৎ মায়ের সংসারে অনাদরে মানুষ হচ্ছিল । কী কষ্ট! কী কষ্ট! খেতে দিত না, পরতে দিত না। শেষমেশ অতিষ্ট হয়ে আব্বা ঝিকরগাছায় খালার বাড়ি পালিয়ে যায়। আব্বা তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। তারপর ওখানে খালার কাছেই মানুষ। আমার মা আর আমার আব্বা আপান খালাতো ভাইবোন। আমার নানা-যার কথা তখন বললাম- তিনি সম্পর্কে আমার আব্বার খালু। ও। আমাদের ওয়ারির র‌্যাঙ্কিন স্ট্রীটের সেই বাড়িতে কত যে গাছ ছিল আপা কী বলব। আম-জাম-কাঁঠাল-কামরাঙা-লিচু। বেলগাছও ছিল। বেলগাছের ছায়ায় ভরদুপুরে আমরা ভাইবোনেরা বসে থাকতাম। ঝিরিঝিরি বাতাসে ইকড়িমিকড়ি রোদের ভিতর বসে থাকতে কী যে ভালো লাগত আমাদের কী বলব। বড়পা নুন আর কাঁচা মরিচ মেখে কতবেল ভর্তা করত। আমরা জিভের পানি মিশিয়ে খেতাম। হায়,তখন বুঝিনি দিনগুলি সব পদ্মপাতার জলবিন্দুর মতন ফুরিয়ে যাবে। আর কোনদিনই ফিরে পাব না। সেই বাড়িই বিক্রি হল বছর পাঁচেক আগে। আমার ভাইয়েরা সব বিদেশ থাকে। এক ভাই অবশ্য দেশেই থাকেন- তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সাইন্সের অধ্যাপক। বাপের বাড়ি বিক্রির টাকার ভাগ পেয়েছেন? হ্যাঁ পেয়েছি। ইসলামিক মতেই পেয়েছি। সেই টাকায় তো চার বছর আগে ফ্ল্যাট কিনলাম। ভাগ্যিস আমার স্বামী ফ্ল্যাটটা দেখে যেতে পেরেছেন। ফ্ল্যাটটা কি আপনার নামে আপা? না। না। ফ্ল্যাট আমার ছেলের নামে। আমার স্বামী ছিল শিপন-মানে আমার ছেলে বলতে অজ্ঞান। বলত, ছেলেই তো জীবনের আশাভরসা-শেষজীবনে দেখবে। শিপনের আব্বা সরকারি চাকরি করতেন। রেলওয়েতে। এলপিআরে গিয়ে পয়ত্রিশ লাখের মতন পেলেন; তবে তার সবই ফ্ল্যাটের পিছনে গেল। বলেন কী! হ্যাঁ। প্রথমে ওরা বলল গ্যারেজসহ পয়ত্রিশ লাখে হয়ে যাবে-১৮৫০ স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাট-বড়জোর দু-তিন লাখ এদিক-সেদিক হতে পারে। আপনার ফ্ল্যাট কোথায় আপা? শান্তিনগর। ইর্স্টান প্লাসের কাছে। ও। পরে ওরা বলল, রডের দাম বেড়ে গেছে- ফ্ল্যাটের পজেশন বুঝে নিতে আরও সাতে সাত লাখ টাকা বেশি লাগবে। দিলাম। তারপর ৬ মাস পরে বলল বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসের দাম আরও বেড়ে গেছে; আরও সাড়ে এগারো লাখের নিচে নাকি ফ্ল্যাটের পজেশন পাব না। দিলাম। এই করে করে ফ্ল্যাটের দাম পঞ্চাশ লাখ ছাড়িয়ে গেল। ওরা আরও সাত লাখ টাকা পায়। শিপনের আব্বার সব টাকা ফুরিয়ে গেল- বাইপাস হল না। ইন্ডিয়া যাওয়ার কথা ছিল। যাওয়া হল না। কী আর করা-ফ্ল্যাট না নিয়ে বসে থাকা তো যায় না। মানসিক চাপ। আমার স্বামী বুকে প্রচন্ড ব্যাথা নিয়েই মারা গেলেন। আপনার শুনেছি একটা মেয়েও আছে। হ্যাঁ। মেয়েকে ফ্ল্যাটের ভাগ দেবেন না? আপনি পেয়েছেন যখন- মউ-মানে আমার মেয়ে-ওই নিল না। বলল, একটাই ভাই-আর আল্লা তো আমাদের অনেক দিয়েছেন; বিদেশে সুখে আছি। কই থাকে আপা আপনার মেয়ে ? বস্টন । ও। জামাইয়ের অবস্থা কেমন? ভালোই। ছেলেটার ওষুধের ফার্মেসী আছে। আসলে আশরাফের ফ্যামিলি অনেক আগে থেকেই ওখানে সেটলড। ছেলের সঙ্গে থাকতে অসুবিধা-মেয়ের সঙ্গে থাকলেই তো পারতেন। মেয়ে নিল না? থাক। ওরা ভালো থাক। একবার গেছিলাম। মেয়ের যখন বাচ্চা হল। দুইরুমের ঘরে থাকে। বস্টন খুব কস্টলি শহর আপা। আর আমার জামাই আবার ভীষনই হিসাবি। আর ওরা তো আর ফিরছে না দেশে। ৮/৯ মাস হয়ে গেল একটা ফোনও করে না, মেইলও করে না। ও। তো আমি একজনকে চিনি আপা। সেই ভদ্রমহিলার তিন ছেলেমেয়ে। ছেলেমেয়েরা সব কানাডা অস্ট্রেলিয়া আর লন্ডনে থাকে। সারা বছর ধরেই এই মেয়ে সেই ছেলের কাছে খুব ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভদ্রমহিলা। কী কপাল একবার ভাবেন। হু। সবার কী একই রকম ভাগ্য হয়? তা ঠিক। অনেক ভাগ্যে এখানে এসেছি। তা ঠিক। আপন ছায়া হাতছাড়া হয়ে গেছে। এখন বৃদ্ধনিবাসের ছায়া নিচ্ছি। আপনি ঠিকই বলেছেন আপা। আমার শেষ ছায়া হবে যশোরের ঝিকরগাছার একটা গ্রামের আমগাছের তলায়। আমার স্বামীর কবরের পাশে। যার জন্য আমার ছেলেকে টাকাও দিয়ে এসেছি। আপনি ভাগ্যবতী আপা। আমার তো সেই সামর্থ নেই। মরে গেলে এরাই যা করার করবে। আপনি সত্যিই ভাগ্যবতী আপা। ভাগ্যবতী? হ্যাঁ। কে জানে? সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:৪৯",False ij,"আজকের বই_ Nietzsche রচিত Thus Spake Zarathustra_ নিৎসে যে ঈশ্বরের বিশ্বাস করতেন না সে কথা এই বইতে আছে। নিৎসে ঘোষনা করেছিলেন ঈশ্বর মৃত। আর এক অতিমানবের আগমন আসন্ন। যে জন্ম দেবে এক নবতর নৈতিকতা ... ২. প্রাচীন পারস্যে অগ্নিউপাসক ধর্মপ্রবক্তা জরথুশত্রর বয়ানে দর্শন নৈতিকতা সম্বন্ধে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন নিৎসে; যদিও বাইবেলে বিশ্বাস করতেন না নিৎসে- আশ্চর্য এই- Thus Spake Zarathustra বইটির রচনাভঙ্গিমা সেরকমই, অর্থাৎ, বাইবেলিয়। ৩ নিৎসের জরথুশত্রকে পছন্দ হওয়ার কারণ আছে। জরথুশত্রর জন্ম-অনুমান করা হয়-যিশুর জন্মের ১২/১৩ শ বছর আগে। তো, সেই সময় পারস্যে চলত সূর্যদেব মিথ্রার উপাসনা। উপাসনায় নানাবিধ প্রাণি বলি দেওয়া হত। আলোর দেবতা আহরু মাজদার ইঙ্গিত পেয়ে প্রাণিহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন জরথুশত্র। এভাবে পারস্যের প্রাচীন সমাজে এক নবতর নৈতিক ভিত্তি দাঁড় করিয়েছিলেন মহান জরথুশত্র। কেননা, জরথুশত্রর ধর্মেই আমরা প্রথম পাই -মিথ্যে কথা বলার বিরুদ্ধে প্রবল হুঁশিয়ারি ও দরিদ্র জনগনের জন্য আন্তরিক কল্যাণভাবনা। ৪. Thus Spake Zarathustra বইটি ১৮৮ ৩১৮৮৫ সালের মধ্যে লিখে শেষ করেছিলেন নিৎসে। জার্মান গদ্যের এক উৎকৃস্টতর নমুনা নাকি এটি। কী এক মহাঘোরের বশবর্তী হয়ে লিখেছেন নিৎসে-কী এক প্রচন্ড উন্মাদনায়। ৫. নিৎসে ঘোষনা করেছিলেন ঈশ্বর মৃত। এই দাবীর সূক্ষ ব্যাখ্যা প্রয়োজন। আসলে ঈশ্বরের মৃত্যু হয় নাই। মৃত্যু হয়েছে ঈশ্বরের প্রতি মানুষের বিশ্বাসের। উনিশ শতকের মানুষ যন্ত্রদেবতার পেষনে এমনই যন্ত্রনাকাতর এলিয়েনেটেড যে-তার আর ঈশ্বরে বিশ্বাস নাই। সে অসহায় মানুষ নির্লিপ্ত ঈশ্বরে বিশ্বাস করে কী করবে! ৬. সে যাই হোক। নিৎসে যে ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন-তা আজও পূরিত হয়নি। অতিমানবের বদলে সভ্যতা দেখেছে যুদ্ধবাজদের উত্থান! (বুশ ও হিটলার) সৎ নৈতিকতার বদলে দেখেছে পুঁজিবাদের যৌনবিপ্লব! (পর্নোগ্রাফির সুলভ প্রচার) ধনের সমবন্টনের বদলে দারিদ্র আর প্রাচুর্যের বৈপরীত্য! (দরিদ্র এশিয়া-আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা) ৭. তবে নিৎসের স্বপ্ন আজ বিশ্বাসীদের মনে নিভু নিভু আশার আলোর মতন রয়ে গেছে এবং তা রুপ লাভ করেছে যিশুর দ্বিতীয় আগমনে ও ইমাম মাহদির জন্য অপেক্ষায়। না। মানুষের মনে ঈশ্বরে বিশ্বাস আজও মরে যায়নি, বরং, আরও তীব্র হয়েছে। কেননা, এ গ্রহটি আজও মানুষের আয়ত্বে এল না; গ্রহটি আজও আদিম পৃথিবীর সমস্ত হিংস্রতা নিয়ে টিকে রয়েছে। ৮. তবে, নিৎসের অতিমানবের অন্যরকম ব্যাখ্যাও রয়েছে। ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো স্যাবেজ নিৎসেকথিত আতিমানব নন তো? তিনি কেন প্রবল পুঁজিবাদী স্রোতে গা না ভাসিয়ে দেশটির আপামর গরিব জনগনের কল্যানে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে গেলেন? তিনি কি জানতেন না যে গরিবের পাশে দাঁড়ালে পেন্টাগনের মার্কিন কর্মকর্তারা তাঁকে হত্যা করার নীলনকশা আকঁবে? ওমনই এক নীলনকশা অনুসরন করেই তো জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাঙালি এক অতিমানবের '৭৫-এ। ৯. উনিশ শতকে বসে এরকম সব অতিমানবের ছবি একেঁছেন বলেই নিৎসে আজও অগ্রহনীয় নয় বলেই মনে করি। পুনশ্চ: ষাটের দশকেই এই বইটির বাংলায় অনূদিত হয়েছিল। সেই অনুবাদেও প্রচন্ড নিৎসীয় আবেগের থরথর কম্পন টের পাওয়া গিয়েছিল। Click This Link Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:১৩",False rg,"BLACKOUT_ A VIGOROUS-BOLD-EXPERIMENTAL STORY WITHOUT A TALE BLACKOUT: A VIGOROUS-BOLD-EXPERIMENTAL STORY WITHOUT A TALEBy: Fahmidul HaqueA one-day-fine-arts-student and poet Tokon Thaakoor starts his journey in the premises of cinematography with Blackout. Not strictly a biography, though, it is a part of the same. He, here, himself apportioned into two, as does a bacterium; the two main protagonists Rafi and Madol are an artist and a poet respectively. In many way, they are identical with Thakoor- above thirty, unmarried, live on a garret (an attic), smitten with reverie-love-lust... all carnal desires. The way the poet (in the Blackout) is overwhelmed of his childhood, it seems, Thakoor is visualizing his autobiography. Though Blackout doesn’t show us the every details of an autobiography, it is certainly a documentation of a part of contemporary youth lifestyle and practice of dreamy obsession, the worse for intoxicating drug or liquor, unmet desire for sex. Specially, it is the documentation of artistry-love-lust of those fresh-blood youths, within a-some hundred yards between Dhaka Fine Arts Institute and Aziz Super Market, by whom the contemporary Dhaka-based art-culture-literature is being practiced and exercised. Rather the director didn’t follow the usual narrative of conventional documentary or feature-film; he went through the complex experimental course of metaphor-metaphysics in addition to animation. Probably, it is the Blackout presents before us with large-scale experimental relish ever in our country.The prime criterion of this video fiction is its statelessness; self-perception dominates here as does in experimental short story. A used-to-viewer of simple narrative cinematography doesn’t feel ease here. This is rather an expression of feelings of this transition period youth- as a poetry, or as an artwork, partly revealed, the rest remains unrevealed. Blackout will definitely touch those young afflicted with creativity-love-lust-liquor-agony; also those non-young interested to realize the present-day youth. Others may refuse to accept Blackout, due partly to its unconventional complex type of presentation, and partly to its immoral (!) unaccustomed (!) commentary. Fortunately, it was not captured in celluloid; in that case, the scythe of the censor-board would be sharper. Here, in Blackout, an artist sketches a mature penis and calls it missile; masturbation contexts are there; character here is both homo- and hetero-sexual. Films released from FDC shows raw nudity, unreliably though; even then, those easily pass the censor-board. Nevertheless, undoubtedly, Blackout would be caught by the board.In brief, the story of this film is: poet Madol and artist Rafi lives in a garret of two compartments. They sleep together, share all their weal and woe. Rafi named his room Tahiti, the name he borrowed from the Tahiti series of paintings of European Artist Gauguin. Rafi has a girlfriend, he imagines her as Tahiti-girl, loves her, and even wants to marry her. But the girl Miti, though doesn’t disregard him, not certainly loves him. Rafi wants to portrait Miti, he wants Miti offers him a sitting as a model for that. Miti doesn’t exactly want to be a model for him, but for commercial advertisement. At the end of the film, she flies away from Rafi’s Tahiti Island to the Island Bali; she becomes model of an advertisement. However, before that, their relation came off. Another protagonist, Poet Madol is a homebird, depressed; in many of his poetry, there is reference of a girl Shalmoli. Visibly, their relationship didn’t develop anyway. Shalmoli is in her imagination: far away from the town, laid down beneath thousands of Marigold flower on a foggy open meadow, he approaches her crossing the meadow, uncovers her face of flowers, and kisses her. The snapshot of her face covered with colorful flowers remains deeply static in his mind; nothing more than this he can remember. Rafi has got another world outside the room- Miti, Dadu (common Dadu, the living legendary Grandfather of all at Fine Arts Institute), many other friends he often meets on road, senior artist Dhruba Esh, and he has aimless walking on footpath. On the contrary, Madol has a world of one room, the top of the roof, standing on that bickering through beckoning with the little girl at the neighbor building, and a vast world of imagination, where he remember an incidence of his childhood- rubbing his nose on the ground as a punishment for smoking, the very moment of blowing the trumpet of the missing Baul, and some women like Shalmoli-Shokuntola. If Rafi’s room is Tahiti, then Madol’s room is Mokam, where he composes poetry in Photoshop instead of MS-Word. When Rafi goes on a dating with Miti, Rafi has got the option of masturbation. The rest of the film shows casual conversation between Rafi and Madol, sitting or lying on the bed; sometimes discuss on important issues however.In the film, there is no-story in the above-described story. No-story is the story of this film. So what is the film about? The director wanted to visualize his Time. Madol writes a poetry on a photoshop file: Time, you greeny witch/ you live across the earth/ in the twilight zone/ you sketch the picture of the sunken ship/ with the dead sailor’s bones. Here in Blackout, Dhaka Fine Arts Institute and Aziz Super Market is present as it is, as well is present contemporary singer Kofil Ahmed and his songs, artist Dhruba Esh, writer Ahmad Sofa and his Pushpo Brikshya and Bihongopuraan. This is how accurately the director wanted to present his Time before us. Multiple presence of the song Time, you greeny witch... also indicates that. However, he wanted to visualize his time, but only a part of that could he visualize. Except a still picture of the Buddhijibi Smritishoudho (Martyr Monument) at Royer Bazaar, no other context of his present-time own national politics or fanatic fundamentalism was visualized. The commercial usage of the female in this globalization era is presented through the character Miti a bit; something in reference to politics or others could have been represented through the main two protagonists.Through the two principal protagonists (probably the two halves of director himself), the references of cannabis-liquor-masturbation-homosexuality were visualized. These were so long been avoided carefully in the visual media of our country. The social structure and the viewers’ conservative mental structure might be the leading cause there. Tokon Thakoor, overcoming that conservatism, took a groundbreaking enterprise obviously. Homosexuality demands a further elaboration in this regard. The two main protagonists pass their casual time together, one leaning on another, or one makes another his pillow. Touching each other or passing one’s hand lightly caressingly over another’s is a very natural for them. Rafi makes inquiries whether Madol has taken something after taking liquor. Their attraction for each other is deep, but the expression is quite natural. Rafi has a Miti, Madol is devoid of any female mating. Once, Miti leaves Rafi. The only real friend remains is Madol, with whom Rafi can share each and everything in the world. Depressed Rafi expresses his pain to Madol; to let alone those pains, they together sings and dances. In the meantime, it is revealed that Madol is truly depressed; he expresses that to singer Kofil: he finds nothing good in anything. In a very sensitive moment of self-contempt, Rafi wants to kiss Madol. Madol says, “O my Elton John, this is Bangladesh”. In response to that, Rafi come back telling, “Oh I was about to forget that”. No other but this kissing scenario represents the homosexuality. Rafi didn’t get Miti, nor did Madol Shalmoli. The real friendship, the real love sustains between Madol and Rafi. Taking reference from Freud’s psychoanalysis, it is a sort of homosexuality. There are a number of artistic films on homosexuality and lesbianism in Europe and America. Specially, Gay-films are studied in queer studies. Moly Huskel terms these films as Buddy Movies. Tokon touches this special field in his artwork.In addition to the subject matter, he also experimented in relation to the artistry form. Let me repeat, it is the Blackout, the full-length video-film, presents before us with large-scale experimental relish ever in our country. The complex narrative is structured taking help from metaphor-metaphysics. Thakoor acknowledges and dedicates this film to Hrithwik Ghotok and Kuroshawa as his Murobbi (Senior) at title-card, though no sign of Hrithwik’s melodrama or Kuroshawa’s Samurai culture is observed. Rather, it seems he is a follower of Bunuel or Fellini. The horse presented here with a great metaphor. Thakoor’s production company is Astabol (a stable for horse) Love Factory. The calling-bell of Madol-Rafi’s garret sounds the neigh. The neigh sound is also used several times in the soundtrack of Ornob. At the end of the title card, a horse is seen coming from a mountain down along the valley. May be, it symbolizes youth, power, force and virility. Thakoor used foggy morning for his metaphysics. To symbolize blowing trumpet, to make the running of Rafi to flower-cover faces of Shalmoli dreamy, he used foggy mornings. Nevertheless, the limitations of the director must also be noted. One among those is: still pictures of Rafi and Miti are being visualized while in soundtrack, lovely poetic but enigmatic dialogues are being heard. After this sequence, Rafi and Miti is seen coming up on a staircase wearing wedding dress. After that, they stand before a gate. Rafi wants to open the lock on the gate, but the lock doesn’t response. Embarrassed Rafi told Miti that he had brought a wrong key. Here this dreamy scene came to an end. The scene is really nice as a concept that Miti is not going to be his life-partner. This scene could have been visualized in a more attractive and artistic way: let us visualize ourselves a white staircase, no wall around, only emptiness all around, at the end of the staircase there is a metaphysical gate, and a lock of that sort... We may rememorize the scenario of Federico Fellini’s Eight And Half. There are a number of long shot in Blackout, but the action of big close-up will be able to attract the vision of alert viewers. The question of excessive big close-up remains unanswered. Does Thakoor, this way, like to create his own cinematographic language? Visualization of adolescent and young Madol, dissolving the time boundary, is praise-worthy presentation of the director.The acting phenomenon here is very casual, so reliable and praise-worthy. Tanvir Hasan and Rahul Ananda deserves appraisal for working as Rafi and Madol character respectively. But, Tina as Miti is not so spontaneous. Specially, her dialogue throwing was weak enough. Bappi Ashraf, Borsha Bivabori, Belayet Hossain, Zuena Ferdous Mitul and Dadu worked very well. The conversation between Rafi and Dhruba Esh could have undergone more perfection. Dialogue in this frame seemed to be a bit irrelevant. Rafi comes out of Dhruba Esh’s residence, even then their conversation at floor is seen. Is it editorial problem, or unconventional whimsy of narrative, remains undetermined?One of the major contributions of this film is its music. Shayan Chowdhury Ornob is a young musician, known for fusion of Bangla songs. He used western musical instrument tremendously here, especially notable here is piano. He is also the sound director of the dreamy part of the film. Therefore, he could handle the music and literary part himself with proven creativity. He proved his excellence in singing the songs “why is the moment so long” and “Time, you greeny witch...”. The former he sang with his own characteristic tone and tune; and the later, actually a poetry of renowned poet Ronojit Das, “Time, you greeny witch...” carried us to a desert. Kofil Ahmed’s song “I eat fire, Sleeps in fire...”, “Be here friend...”, “Jesus....” made a different exaggeration in this film. His songs, non-romantic non-rebellious, are well-put in Thakoor’s film.Most of the videography, editing and sound editing was perfectly performed by young genius Sameer Ahmed. He has done a great job with tremendous perfection. The superimposition technique, ultimately mandatory for dreamy scenarios, used by the editor is excellent to acknowledge. Along with documentation of the script, like documentary, camera moved without prior preparation. Drinking scenario at garret is to be noted here. The editor proved his expertise in visualizing, at the end of the film, the artwork of Picasso-Dali-Van Gough-Matisse-Bonnard-Klee-Chagall-Jackson Pollock-Kandinski-and-others, photography of known-unknown faces, attractive and erotic images of female body-parts within moments. In the background of this kolas, along with journey-music soundtrack of Azarbizan-Iranian sufi singer Ashik Hasan Iskandari, there was soundtrack of Nigerian singer Fela Kuti and Femi Kuti, songs of Bimol Baul, Lalon’s songs, and Don Mackmillan’s Van Gugh song… Starry starry night...Another notable portion of Blackout is its animation and imagery. Sketching, art direction, playing card design and title animation- this Herculean job was done by Abdul Halim Chanchal. Such extensive animation works were never used in Bangla film before. The director visualized the metaphorical scene “a lonely eagle at moonlit night” with the help of animation, in addition to the title-card at starting and at the end. Chinmoy Devorshi paid his utmost care in visualizing this scene, and the scenario of coming down of the tired horse from the mountain along the valley. The animation at the end title card conceptualized from Dali’s “persistence of memory” is a nice creation indeed. Richard Rozario has done a great job in the field of still photography. A complete sequence was synthesized with the help of still photography only.Well, Blackout, a 97-minute-video-format film, is straight in its statement, is experimental in its form-technique. Director Tokon Thakoor proved his talent-maturity in his very first film. It seems, he had a long course of preparation before going in for Blackout.Translate the text into English by Auboni Aunarjo.",False mk,"রেলে নাশকতা, বিএনপি জামাতের তাণ্ডবলীলা রুখে দিন জামায়াত ও বিএনপির হরতাল ও অবরোধে এ পর্যন্ত রেলে শতাধিক নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। রেলের তথ্যানুযায়ী, এতে রেলের ক্ষতি হয়েছে ৩০ কোটি টাকারও বেশি। রেলে সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের, আহত শতাধিক। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনেই অবরোধকারীরা উপড়ে ফেলেছে প্রায় ২০০ মিটার রেল লাইন। আগুন দিয়েছে ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগিতে। দুর্ঘটনায় ফেলে বিপর্যস্ত করেছে রেল চলাচল। ঐ তিনদিনের নাশকতায়ই প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে রেলওয়ে সূত্রে। মানুষের জীবনের ঝুঁকি আর বিড়ম্বনার হিসাবে তো বাদই। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে রেলে পরিকল্পিত এ ধরনের নাশকতা নজিরবিহীন। আগে হরতাল-অবরোধে রেলপথ অবরোধ করাসহ বিচ্ছিন্ন কিছু নাশকতা ঘটলেও তার মাত্রা এতোটা ভয়াবহ ছিল না কখনো। রাতের অন্ধকারে রেল লাইন উপড়ে ফেলে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে হাজার হাজার যাত্রীর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করার মতো অমানুষিক বর্বরতা আমাদের দেখতে হচ্ছে ইদানীং। উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা সাঈদীর রায় প্রকাশের পরই রেল ব্যাপক নাশকতার শিকার হয়। তারপর থেকে এখন ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচিতে নিয়মিতই রেল আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে। দিনদিন তার মাত্রা বেড়েই চলেছে। গত অক্টোবর-নভেম্বরে বিএনপি-জামায়াত জোটের দুই দফায় ১২০ ঘণ্টার হরতালের সময় রেলপথে প্রায় ১শ স্পটে নাশকতা চালানো হয়েছে। সম্প্রতি বিরোধী দলের একটানা ৭১ ঘণ্টার সহিংস অবরোধ পালনের পরপরই দ্বিতীয় ধাপে পুনরায় ৩০ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টা টানা অবরোধে পরিকল্পিত হামলার শিকার হয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলে এ ধরনের পরিকল্পিত নাশকতা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। রেল তো রাষ্ট্রীয় মানে জনগণের সম্পদ। জনগণের সম্পদ বিনষ্ট করে, জনগণের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে যারা নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল করতে চায়, তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এ ধরনের নাশকতা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ হতে পারে না। যারা এসব করে দুষ্কৃতকারী হিসেবেই এদের বিচার করতে হবে। হরতাল-অবরোধে এরকম নাশকতার দায় নিতে হবে রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও। জাতীয় সম্পদ রেলকে নাশকতার হাত থেকে রক্ষা করতে, রেলযাত্রীদের জানমাল নিরাপদ করতে প্রথমেই দরকার আন্দোলনকারী রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে নীতি ও মানবিক বোধের জাগরণ। সরকারের করণীয় হলো নাশকতা বেশি ঘটেছে এরকম স্পর্শকাতর স্পটগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর টহল জোরদার করা। নাশকতার সংকেত নিকটবর্তী স্টেশনে জানার জন্য ইলেকট্রিক এলার্ম ব্যবস্থা এবং সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থাও নেওয়া যেতে পারে। সর্বোপরি, জাতীয় সম্পদ ও জানমাল রক্ষায় জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে।",False mk,"জঙ্গিবাদ দমনে সরকার কঠোর উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে বাংলাদেশের তরতর করে এগিয়ে চলাটা বিশ্বের কাছে বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে নিম্নমধ্যম আয়ের সীমা ছাড়িয়ে ২০২১ সালে মধ্যমআয় এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবার আকাঙ্ক্ষা স্বপ্ন বিলাস বলে যারা মনে করছিল তারাও এখন নিঃসংকোচে মেনে নিয়েছে বাস্তবতা। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দেশজ আয়ের প্রবৃদ্ধি শতকরা ৭.১১ ভাগ অর্জন, সার্থকতার ঘণ্টাকে তীব্র করেছে। শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা উন্নয়নের পূর্বশর্ত সেখানে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার উপায় নিয়ে মতভেদ নিরন্তর। গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের উপায় হিসেবে সহিংসতার চর্চা দেশকে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ করে তোলে যা বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে অনেকবার। রাজনৈতিক ব্যঞ্জনে সহিংসতার সংমিশ্রণ দেশের অগ্রগতিকে পেছন থেকে টেনে ধরলেও থামাতে পারেনি। ভুল রাজনীতির মারপ্যাঁচে আটকা পড়ে বিএনপি-জামায়াত জোটকে বেশ খাবি খেতে দেখা যাচ্ছে।মউদুদিবাদকে অনুসরণ করে ইসলামের খণ্ডিত ও বিকৃত ব্যাখ্যাকে উপলক্ষ করে জিহাদের নামে নিরীহ মানুষ খুনের জঙ্গিবাদী মতাদর্শকে ভিত্তি করে গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকল্প হাতিয়ার হিসেবে নব্বইয়ের দশকে জঙ্গিবাদের জন্ম হয়। হুজি থেকে জেএমবি’র উত্থান পতনের মাঝে হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে জীবন দিতে হয়েছে অনেক নিরীহ সাধারণ মানুষকে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ না হয়েও সহিংস রাজনীতির বলি হতে হচ্ছে নিরীহ মানুষদের। যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে জামায়াতের সহিংস কৌশলের অযুহাত হিসেবে জঙ্গিবাদ নতুন নতুন অবয়ব ও চরিত্র নিয়ে বারবার আঘাত হেনেছে। ফলে জঙ্গিবাদ জননিরাপত্তার সবচেয়ে বড় হুমকিতে পরিণত হয়েছে বিশ্ব জুড়ে।গত বছরের নভেম্বরে ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজারকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ইসলামের নামে জিহাদ শুরু করে। ইরাক-সিরিয়া ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের তকমা লাগিয়ে নিরস্ত্র ও নিরীহ মানুষ খুনের নতুন ধারা শুরু হয়। তারপর চলতে থাকে একের পর এক চাপাতি দিয়ে খুনের রাজনৈতিক উত্সব। রংপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জাপানি নাগরিক হোসিও কুনিকে খুন করা হলে ইতালি ও জাপানিদের আক্রমণের পেছনের কারণ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। একের পর এক বলি হতে থাকে অরক্ষিত নিরীহ মানুষ। নাস্তিক ও মুরতাদ হত্যার নামে নিধন শুরু হয় ব্লগার, সাধক, সেবায়েত, পূজারি, যাজক, সঙ্গীতপ্রেমী, পীর মাশায়েক, সমকামী প্রচারক। জঙ্গি সংগঠনের গোপন কাঠামো, সুচারু পরিকল্পনা ও অদৃশ্য মদদ সব মিলিয়ে নেটওয়ার্ক ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকতে সমর্থ হয়। জঙ্গিদের আপাত দৃষ্টির সফল হামলা ও অভেদ্য কৌশল তাদেরকে বেপরোয়া করে তোলে এবং বড় হামলার জন্য উত্সাহী করে তোলে। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর নৃশংস হামলা করে মানুষকে কাঁপিয়ে দেয়। বাংলাদেশ একটি অনিরাপদ গন্তব্যে পরিণত হয়। ঘৃণিত হামলাকে নিন্দা করার বদলে ‘দুঃশাসনের বহিঃপ্রকাশ’ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হলে জঙ্গিবাদ নিরুত্সাহিত হবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। এখানেও ভিক্টিম হয় ইতালীয় ও জাপানিরা। জাপান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দাতা দেশ এবং ইতালীয়রা তৈরি পোশাকের অন্যতম ক্রেতা। উন্নয়নের পেছনের ক্রীড়নকদের তাড়াতে পারলে উন্নয়নের গতিকে রোখা যাবে সহজেই। নিরাপত্তার অভাব, গণতন্ত্রের ঘাটতি ও সুশাসনের অনুপস্থিতিকে পুঁজি করে বিশ্ব থেকে সহজেই বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে। দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে উন্নয়নের সড়ক থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে জঙ্গিবাদ প্রধান ভূমিকা রাখবে মনে করে জঙ্গিবাদের বিস্তার রাজনৈতিক লক্ষ্যে পরিণত হয়। গত ১৪ মাসে ছোট বড় মিলে ৪০টি হামলা হয়। দেশের মানুষ হামলা আতঙ্কে ভুগতে থাকে, সাধারণ জীবনযাত্রায় অনেক ব্যাঘাত ঘটতে থাকে। মানুষের মুক্তচিন্তা ও সংস্কৃতি চর্চার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয় মারাত্মকভাবে। বিদেশিরা নিরাপত্তার অভাবকে বড় করে দেখে অনেক কার্যক্রম বাতিল ও সংকুচিত করে আতঙ্ককে দীর্ঘ করতে থাকে। জাপানিরা দেশ ছেড়ে চলে যায়, থেমে যায় ঢাকা মেট্রো রেলের কাজ। বিদেশিরা নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার চাপ সৃষ্টি করে।ইউরোপ-আমেরিকায় জঙ্গি হামলা নৈমিত্তিক হলেও বাংলাদেশের হামলাগুলোকে ভূ-রাজনৈতিক কারণে তারা সব সময় অন্য চোখে দেখে। জঙ্গি অধ্যুষিত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য ইরাক-সিরিয়া ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে সম্পৃক্ততা খুঁজে পেতে কিছুটা হণ্যে হয়ে ওঠে। অত্যন্ত দক্ষতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে বহুমুখি চাপ সামাল দিয়েছেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গি বিরোধী নীতির স্বচ্ছতা ও শক্ত প্রয়োগ এবং জন সম্পৃক্ততা ও রাজনৈতিক প্রত্যয়ের কারণে জঙ্গি দমনে অতি স্বল্প সময়ে সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সেটাও অবাক করেছে বিশ্বকে। নব্য জেএমবি নামের সংগঠনটি বেশ অনেকদিন ধরেই গোপনে বেড়ে উঠেছিল। নতুন সাজ ও নতুন কৌশল নিয়ে এগিয়ে চলা সংগঠনটি অনেকগুলো হামলা চালাতে সমর্থ হয়। গুলশান, শোলাকিয়া, কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ, মিরপুর, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয় পুলিশ। নেতৃত্ব চিহ্নিত হয়, নেটওয়ার্ক উন্মোচন হয় এবং অসাধারণ ক্ষতির মুখে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে পড়ে। জঙ্গি হামলার আশঙ্কা দ্রুতগতিতে কমে গিয়ে জন মনে শংকা দূর হয়, বিদেশিরাও স্বস্তি ফেরত পায়। ত্বরিত জঙ্গি দমন বিশ্ব নেতাদের আরেকটি বিস্ময়ের জন্ম দেয়। গোয়াতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস ও বিমসটেক আউটরিচ শীর্ষ সম্মেলনের সাইড লাইনে হাসিনা-মোদি বৈঠকের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চেয়েছিলেন কি করে জঙ্গি দমন সম্ভব করলেন। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণু নীতি বাংলাদেশ গোড়া থেকেই অনুসরণ করে আসছিল এবং বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে না দেবার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করেছে। বাংলাদেশ নিজ মাটি থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদিদের তাড়িয়েছে অনেক আগেই। ফলে আস্থা ও বিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছে অঞ্চল জুড়েই।গত সপ্তাহে ঢাকায় আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। জাঁকজমক এবং উত্সব মুখর পরিবেশে বিশ্বের ১০টি দেশ থেকে ৫৫ জন রাজনৈতিক তাদের দলের প্রতিনিধি হয়ে সম্মেলনে যোগ দেয়। সবার মুখে ছিল বাংলাদেশের উন্নয়নের অভাবনীয় প্রশংসা। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাফল্যের জয়জয়কার। জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণে দলের কৌশল ও নীতি গ্রহণে বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে জনমানুষের প্রত্যাশাকে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে এগিয়ে চলার প্রত্যয় নতুন নজীর সৃষ্টি করল। সম্মেলন থেকে জঙ্গিবাদ দমনে রাজনৈতিক প্রত্যয়কে মজবুত ভিত্তি দেওয়া হলো। উন্নয়নের প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে জঙ্গিবাদকে চিহ্নিত করে নেতাকর্মীদের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান রাখা হয়েছে।রাজনীতির সঙ্গে জঙ্গিবাদের সম্পৃক্ততা জননিরাপত্তায় ঝুঁকি যোগ করেছে। রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে জঙ্গিবাদ বেড়ে ওঠার দৃষ্টান্তগুলো ক্রমেই জ্বলন্ত হয়ে উঠেছে। উপমহাদেশে পাকিস্তান জঙ্গিবাদের আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে। সরকার ও রাজনৈতিক দলের গোপন ও প্রকাশ্য পৃষ্ঠপোষকতা সবচেয়ে বেশি দায়ী। পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিনা খান পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে সরাসরি দুষেছেন। পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের সুস্পষ্ট নীতি গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। সামরিক বাহিনী নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে জঙ্গিবাদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে অবলীলায়। ভারত ও আফগানিস্তানের ভেতরে হামলা চালিয়ে সস্তা জনসমর্থন ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়েও নিজেদেরকে জঙ্গি হামলা থেকে মুক্ত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। কোয়েটার পুলিশ একাডেমি সর্বশেষ জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছে এবং ৬১ জনের জীবনহানি ঘটেছে।জঙ্গিবাদ দমনে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক প্রত্যয়ের অনুপস্থিতি ও রাজনৈতিক সুরক্ষার প্রাপ্তি নিয়ে জঙ্গিবাদ বেঁচে থাকে। নিজ ভূমিতে জঙ্গি পুষে প্রতিবেশীকে ঘায়েল করার ছায়া যুদ্ধে নেমে পাকিস্তান জঙ্গি রফতানি করছে বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তানে। পাকিস্তানপুষ্ট জঙ্গিরা অহরহ হামলা করছে প্রতিবেশী দেশগুলোকে এবং বাংলাদেশকেও রেহায় দিচ্ছে না। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করে পাকিস্তান রাষ্ট্র উন্নয়নের পথ থেকে ছিটকে গিয়ে বিফলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। জঙ্গিবাদ দমন কৌশল রচনায় শক্ত ও নমনীয় পথের ভারসাম্যপূর্ণ সংমিশ্রণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। গুলশান হামলার পরে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের রুখে দাঁড়ানোর নজীর বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ দমনে অনেক শক্তি জুগিয়েছে। শক্ত হাতে সাহসের সঙ্গে সশস্ত্র জঙ্গি নিধন জনমনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে উন্নয়নের রূপকল্পের পাশাপাশি জঙ্গি দমনের সুস্পষ্ট নীতি প্রণয়ন ও গ্রহণ করে শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রত্যয় সৃষ্টি করেছে। যা নিঃসন্দেহে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও উপমহাদেশের রাষ্ট্রগুলোর জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়েই থাকবে। মৌলবাদী মতাদর্শের ক্ষেত্রকে রাজনৈতিক পুঁজি করে ধর্ম রক্ষার নামে জনসমর্থন আদায়ের কৌশল নিয়ে ধর্মীয় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান সুস্পষ্ট করা দুষ্কর। নীতি ও অবস্থানের দোদুল্যমানতা নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে সফল হওয়া যায় না। এবারের সম্মেলনে জঙ্গি দমন দলের রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে রূপ পেয়েছে যা জঙ্গি নির্মূলে নতুন অবদান রাখবে।বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করার হাতিয়ার হিসেবে গণ্য হয়ে এসেছে। বৈশ্বিক জঙ্গিবাদের প্রভাবকে অনুঘটক হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে দানবীয় শক্তি দিয়ে ‘ভয় দিয়ে জয়’ করার কৌশল বারে বারে অসফল হলেও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও রাজনৈতিক সুরক্ষার রাস্তা ধরে চলা বন্ধ হয়নি। জন নিরাপত্তার ঝুঁকি কমাতে হলে সব রাজনৈতিক দলকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান সুস্পষ্ট করতে হবে এবং জঙ্গি দমনের দলীয় কৌশল জনগণের সামনে স্বচ্ছভাবে উন্মুক্ত করেই জনসমর্থনের পাল্লা ভারী করায় প্রয়াসী হতে হবে। রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের উপায় হিসেবে জঙ্গিবাদকে ব্যবহার না করে জঙ্গি দমনকে রাজনৈতিক লক্ষ্য বানাতে হবে তাহলে জঙ্গি নির্মূল সম্ভব। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪২",False ij,"প্রজেক্ট আরণ্যক আমার সৌভাগ্য এই যে- অভ্যন্তরীণ পর্যটনের তত্ত্বটা প্রয়োগ করার একটা অভাবনীয় সুযোগ এসে গেল। নোমানের কথা আগের এক লেখায় বলেছি। ওর বাড়ি টেকনাফের উনচিপ্রাং। তো কোথায় জায়গাটা? কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার পথে উনচিপ্রাং। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার পথে পড়বে লিঙ্করোড> চেইন্দা> মরিচ্যা> কোটবাজার> উখিয়া> কুতুপালং> বালুখালি> থাইংখালি> পালাংখালি> উলুবনিয়া> হোয়াইখং> উনচিপ্রাং> নয়াপাড়া> খারাংখালী> মৌলভীবাজার> হ্ণীলা> রঙ্গিখালী> লেদা> তারপর টেকনাফ। হাইওয়ের পাশে একটি গ্রাম উনচিপ্রাং; আর সেই গ্রামের পিছনে রয়েছে একটি ছোট পাহাড়। পাহাড়ের ওপাশে সৈকত। সৈকতের শেষে বিখ্যাত বঙ্গোপসাগর । উনচিপ্রাং গ্রামটির পিছনের পাহাড়ে রয়েছে ঝর্না, রয়েছে বিবিধ জীবজন্তু; রয়েছে বন বিভাগের অফিস। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নোমানের ভালো সম্পর্ক। নোমানরা ওখানকার স্থানীয়। ওর পরিবার বেশ প্রভাবশালী। কাজেই প্রজেক্ট আরণ্যক ও শুরু করতেই পারে। স্থানীয় বখাটেরা বাধ সাধতে আসবে না। উনচিপ্রাং গ্রামের খুব কাছেই কয়েক ঘর আদিবাসীদের বাস। ওই আদিবাসীদের গ্রামেই নোমানদের কয়েক কাঠা জমি রয়েছে। বাঁশ আর কাঠ দিয়ে সেখানে কতগুলি কটেজ তোলা যায়। সেই কটেজে থাকবে বেশ ক’টা ছিমছাম পরিচ্ছন্ন ঘর; ঘর-সংলগ্ন পরিস্কার বাথরুম। বড় একটা প্লাস্টিকের ড্রামে পানি। ওই উনচিপ্রাং আদিবাসী গ্রামেই শুরু হতে যাচ্ছে প্রজেক্ট আরণ্যক-অভ্যন্তরীণ পর্যটন তত্ত্বের বাস্তবায়ন। ব্লগার আশাবাদী নিরাপত্তার কথা বারবার বলছেন। বিষয়টি ভাবার মতো নিশ্চয়ই। একটা কাজ করা যেতে পারে। সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনে স্থানীয় থানার টেলিফোন নম্বর দেওয়া যেতে পারে। তা হলে থানার সঙ্গে সরাসরি কথা বলে অতিথিরা ভ্যারিফাই করে নিতে পারবেন । থানা অবশ্যই সাহায্য করবে। কারণ-থানা হচ্ছে সরকার। আগেই বলেছি- অভ্যন্তরীণ পর্যটনের অন্যতম একটা উদ্দেশ্য সরকারের আয় বাড়ানো। কাজেই, স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। আমি আশাবাদী। কেননা, এরই মধ্যে প্রজেক্ট আরণ্যকের প্রথম অতিথিকে পেয়ে গেছি। সৌম্য। ভ্রমণবিষয়ক সৌম্যর অতুলনীয় ছবিগুলো নিশ্চয়ই দেখেছেন আপনারা। বগা লেকের ছবি দেখে তো আমি রীতিমতো মুগ্ধ। আশা করছি আগামী বছর সৌম্য উনচিপ্রাং ঘুরে এসে প্রজেক্ট আরণ্যক বিষয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা বিস্তারিত লিখবে। উনচিপ্রাং গ্রামের পিছনে রয়েছে পাহাড়। সে পাহাড় থেকে নাকি মাঝেমাঝে হাতি নেমে আসে লোকালয়ে। ভাগ্য ভালো হলে সৌম্যর তোলা সে ছবিও দেখতে পারবেন আপনারা। অভ্যন্তরীণ পর্যটনের শুরুর কথাটা আবার স্মরণ করি। নানা কারণে আমাদের মনে বাস্প জমে। তখন দুচোখ যেদিকে যায় চলে যেতে ইচ্ছে করে। চাকরি ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে। আলাদা থাকার কথা ভাবি। আপনি তখন করবেন কি- উনচিপ্রাং এর আরণ্যক প্রজেক্টে ফোন করবেন। ফোন করে ঘর বুক করবেন। তারপর অভিমান বশত কাউকে কিছু না বলেই রওনা হবেন। উনচিপ্রাং বাসস্টপে দাঁড়িয়ে থাকবে ২২/২৩ বছরের তরুণ রতন চাকমা। ওর পরনের সাদা টি র্শাট। বুকে লেখা প্রজেক্ট আরণ্যক। আপনি আশ্বস্ত হবেন। যাক ভুল যায়গায় নামি নি তা হলে। আপনি রতনের পাশাপাশি হাঁটছেন। জায়গাটা আদিবাসীদের গ্রাম মনে হল। শেষ বেলার আলোয় বাচ্চারা খেলছে। পাতা পোড়ানোর গন্ধ পেলেন। দূরে একটা পাহাড়ের কালচে নীলাভ শরীর। রতন আপনাকে তখনও বলেনি ওই পাহাড় থেকে মাঝেমাঝে নেমে আসে বুনো হাতির দল। একটা উঠান। উঠান ঘিরে কতগুলি কটেজ। বাঁশ আর কাঠের তৈরি। সিঁড়ি দিয়ে উঠে ভিতরে ঢুকে আপনি মুগ্ধ। ঘরের ভিতরে কাঁচা বাঁশের গন্ধ। বেতের বিছানা। ধবধবে সাদা চাদর। জানালায় নেট লাগানো। জানালার পাশে বেতের চেয়ার। ঘর-সংলগ্ন বাথরুম। বাথরুমে আনকোরা লাক্স সাবান। বড় একটা প্লাস্টিকের ড্রামে পানি। সব দেখে শুনে সন্তুষ্ট হলেন। ইউসুফ চা এনে দিল। সঙ্গে বিসকিট। চিনি কম খান। দুধও। ঠিক তেমনি করেছে। জামাকাপড় বদলেছেন আপনি । ঘরে তখন সন্ধ্যার নিবিড় ছায়া। জানালার বাইরে ঝিঁঝির তীব্র আওয়াজ । একটা সিগারেট ধরিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। বুকে তখনও তীব্র অভিমান। কখন ঘুমিয়ে পড়লেন। মাদলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গল। কি ব্যাপার? ঘরে আবছা অন্ধকার। বাইরে এলেন। ঘড়ি দেখলেন। ৮ টা বেজে ১০। আজ কত তারিখ? উঠানে জ্যোস্না। উঠানের একপাশে কে একজন ধিতাং ধিতাং বোলে মাদল বাজাচ্ছে। কী মাদক শব্দ! আদিবাসী গ্রামের কেউ? একপাশে কয়েকটি চেয়ার পাতা। আপনি পায়ে পায়ে হেঁটে চেয়ারে বসলেন। তারপর রতন চাকমার মাসি মিতালি চাকমার গান শুনে ততক্ষণে আপনার সব অভিমান ধুয়ে মুছে গেল। মোবাইল অফ করে রেখেছিলেন। এখন অন করলেন। কিছুক্ষণ পরে বললেন, হ্যালো। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৫৯",False fe,"ভাষার আলো, প্রজন্মের স্বনির্ভরতার পথ ভাষার আলো, প্রজন্মের স্বনির্ভরতার পথ ফকির ইলিয়াস -------------------------------------------------------------------- ভিশন ২০২১ এর কথা ভাবলে আমরা যে চিত্রটি প্রথমেই দেখি, তা হচ্ছে একটি অগ্রসরমান প্রজন্মের ভবিষ্যৎ। তা নির্মাণে নিরলস অধ্যবসায়। একটি প্রজন্ম শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে দুটি শক্তির প্রয়োজন পড়ে খুব বেশি। প্রথমটি হচ্ছে সৎভাবে সমাজের অবকাঠামো নির্মাণ। আর দ্বিতীয় হচ্ছে সমকালের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কর্মপরিধি ব্যপ্তি ঘটানো। কাজ করতে হলে, একটি যোগ্য কর্মী বাহিনীর প্রয়োজন পড়ে। যারা তাদের মেধা ও মনন দিয়ে কাজ করবে নিরন্তর। জ্ঞানার্জনে ভাষা একটি ফ্যাক্টর তো বটেই। কারণ মানুষ না জানলে, সেই তথ্য তত্ত্ব এবং সত্রগুলোকে নিজের জীবনে, সমাজের জীবনে প্রয়োগ করতে পারে না। আর সেজন্য প্রয়োজন পড়াশোনা। পড়াশোনা করতে হলে শিক্ষার প্রয়োজন। প্রয়োজন সেই ভাষাটিও রপ্ত করা। বাংলাদেশের নিরক্ষর মানুষরা, প্রয়োজনীয় অক্ষর জ্ঞান পেলে নিজেদের জীবনমান যেমন বদলাতে পারবেন, তেমনি পারবেন সমাজের চিত্রও বদলে দিতে। একজন শিক্ষিত মা-ই পারেন একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে। আমরা সে কথাটি সবাই জানি এবং মানি। ভাষার যত রকম প্রয়োজনীয়তার সংজ্ঞা আমরা তুলি না কেন প্রধান কথাটি হচ্ছে­ একটি জাতিকে শিক্ষিত করে তোলার গুরুত্ব। মানুষ সুশিক্ষিত হলেই তার জ্ঞান খুলবে, সে উদার হবে­ সে সৎ কাজগুলো করবে। এটাই নিয়ম। পাশ্চাত্যে আমরা উচ্চ শিক্ষিতের যে হার দেখি এই জনশক্তিই সে রাষ্ট্র গঠন, পরিচালনায় একটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে­ তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমার এক বু আছেন যিনি নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পোলিশ এই বন্ধুটির সঙ্গে আমার নানা বিষয়ে কথা হয়। সমাজবিদ্যার এই শিক্ষক আমাকে বারবার বলেন, শক্তিশালী ভাষাই বিশ্বে পুঁজির আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ করছে। তার কথাটি মোটেই মিথ্যে নয়। নিউইয়র্ক তথা গোটা উত্তর আমেরিকার একটি বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্খা নরটন এন্ড কোম্পানির বেশ কয়েকজন কর্ণধারের সঙ্গে ‘ভাষা ও সাহিত্য’ বিষয়ে আড্ডা দেয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। তারা একবাক্যে বলতে চান, মুনাফার লোভেই তারা মহাকবি ওমর খৈয়াম, জালালুদ্দিন রুমী থেকে নাজিম হিকমত, রবীন্দ্রনাথ কিংবা মাহমুদ দারবিশের রচনাবলীকে তারা ইংরেজিতে অনুবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন নিজস্ব আঙ্গিকে। তারা তা ইংরেজিতে ছাপিয়েছেন। বাজারজাত করেছেন। এতে বিশ্ব সাহিত্যে ওসব মহৎ লেখকরা যেমন আদৃত হচ্ছেন কিংবা হয়েছেন, তেমনি তাদের বই বিক্রি করে আয় হয়েছে লাখ লাখ ডলারও। বাংলা ভাষার সন্তান বাঙালি জাতি। জাতিসত্তা থেকে এই চেতনা আমরা কোনমতেই সরাতে পারব না। পরার কথাও নয়। কিন্তু এই বলে আমরা অন্যভাষা রপ্ত করব না বা করার আগ্রহ দেখাব না­ তা তো হতে পারে না। এখানেও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তির বিষয়টি আগে আসে খুব সঙ্গত কারণে। ভারতের কেরালা, তামিলনাড়ূ নামে দুটি অঙ্গরাজ্যের কথা আমরা জানি। কেরালা অঙ্গরাজ্যের মানুষেরা দুটি ভাষা জানে বিশেষভাবে। একটি কেরালাদের নিজস্ব ভাষা মালেআলাম আর অন্যটি ইংরেজি। সেখানে হিন্দির তেমন দাপট নেই। একই অবস্খা তামিলনাড়ূতেও। তারা তামিল এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষ। বিদেশে চাকরি নিয়ে কেরালা-তামিল থেকে যারা আসে, তাদের দেখলে মনে হয় ইংরেজি যেন তাদের মাতৃভাষাই। তাদের লক্ষ্যটি হচ্ছে ভাষার আলো গ্রহণ করে একজন দক্ষ আইন প্রফেশনাল কিংবা টেকনোলজিস্ট হওয়া। আর সেজন্য তারা ইংরেজিকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয় স্কুল জীবন থেকেই। দুই. স্যাটেলাইট টিভির বিভিন্ন চ্যানেলে বাংলাদেশের বইমেলার ওপর অনুষ্ঠানগুলো প্রায় প্রতিদিনই দেখি। সেদিন দেখলাম একজন লেখক তার বইয়ের প্রচার করছেন একটি লাইভ অনুষ্ঠানে। তার গ্রন্থ বিষয়­ কীভাবে আলুর অধিক ফলন করা যায়। বিষয়টি চমকপ্রদ। বর্তমান বিশ্বে আলু চাষের প্রতিযোগিতা চলছে। খাদ্য হিসেবে পাশ্চাত্যে বিভিন্ন আইটেমের আলুখাদ্য জনপ্রিয় হলেও প্রাচ্যে তা জনপ্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি মনে করি একজন শিক্ষিত কৃষক ক্ষুদ্র আকারে তার নিজের অধিক ফলন অভিজ্ঞতা বিষয়টি হাতে লিখে, কম্পোজ করিয়ে অন্যদের মাঝে বিতরণ করতে পারেন। বিষয়টি ক্ষুদ্র হলেও প্রধান দিকটি হচ্ছে­ একজন শিক্ষিত কৃষকই তা পারবেন। আর সেজন্যই শিক্ষার বিষয়টি আগে আসছে। শিক্ষিত হলেই মনের প্রখরতা বাড়ে। আর শিক্ষা গ্রহণ করা যায় জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত। কয়েক বছর আগে আমরা ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কয়েকটি কৃষিফার্ম সফর করতে গিয়েছিলাম। ফ্লোরিডায় বেশকিছু ফার্ম আছে, যেগুলোর সব কর্মীই স্প্যানিশ ভাষাভাষী। এরা ইংরেজি একটি অক্ষরও জানে না। সেখানে কৃষিবিষয়ক সরকারি পুস্তিকাগুলো স্প্যানিশ ভাষায়ই বিতরণ করা হয় সরকারি উদ্যোগে। হ্যাঁ, ভাষার আলো ছড়িয়ে দিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা উদ্যোগের প্রয়োজন খুবই জরুরি। বাংলাদেশের ভেতরে আদিবাসী ভাষার অনেক কবি, সাহিত্যিক, মনীষী, চিন্তাবিদ, দীক্ষক আছেন যাদের নামটি পর্যন্তও হয়তো আমরা জানি না। তাদের এই চিন্তা-চেতনা যদি বাংলায় রূপান্তরিত হতো তবে বাংলা ভাষাভাষীরা হয়তো তা জেনে উপকৃত হতে পারতেন। একই দেশের ভেতরেই আছে অনেক ভাষা। আর এক বিশ্বে কত ভাষা আছে­ তা জানার সুযোগ হয়তো সব মানুষের পুরো জীবনেও আসবে না। আমি সব সময়ই রূপান্তরে বিশ্বাস করি। রূপান্তরই হচ্ছে ফিরে আসা, অনদিত হওয়া কিংবা বিতর্কিত হওয়া। বিবর্তন না হলে নতুনের উন্মেষ ঘটে না। তুলনামলক আলোচনা ছাড়া জানা যায় না বিশ্বের ভাষার নান্দনিক বিবর্তন কীভাবে ঘটছে। লক্ষ্য করেছি, এবারের ২০০৯ এর বইমেলায় বেশ কিছু দুর্লভ প্রাচীন ভাষা ও সাহিত্য যেমন চর্যাপদ, সিলেটী নগরী, আদিবাসী শ্লোক নিয়ে বেশ কাজ হয়েছে। এগুলো আশার বিষয়। আমি মনে করি এসব উৎস সন্ধানই প্রজন্মকে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি সাধনের পাশাপাশি ভাষা ও সাহিত্য অঙ্গনেও এগিয়ে যাবে স্বপ্নের বাংলাদেশ। সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকা, এই লেখাটির শেষ প্রান্তে এসে নিজের দায়বদ্ধতা থেকে আপনাদের একটি সুসংবাদ দিতে চাই। বাংলা কবিতা ও বিশ্বকবিতার মাঠে গেল বিশ বছর হেঁটে বিভিন্ন উপাত্ত নিয়ে আমি একটি বই লিখেছি। প্রবন্ধেরএই বইটির নাম ‘কবিতার বিভাসূত্র’। বইটি ২০ ফেব্রুয়ারি থেকেই একুশের বইমেলায় পাওয়া যাবে। বইটি প্রকাশ করেছে ‘ভাষাচিত্র’। বাংলা ভাষার জয় হোক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা সবাইকে। নিউইয়র্ক, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ --------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৯:১২",False rn,"আফগানিস্তান আফগানিস্তান, যার সরকারী নাম আফগানিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্র ।দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। রাষ্ট্রটি ইরান, পাকিস্তান, চীন, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যস্থলে একটি ভূ-বেষ্টিত মালভূমির উপর অবস্থিত। আফগানিস্তান একটি রুক্ষ এলাকা - দেশটির অধিকাংশ এলাকা পর্বত ও মরুভূমি আবৃত। পর্বত উপত্যকাগুলি আর উত্তরের সমভূমিতেই কেবল গাছপালার দেখা মেলে। এখানকার গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া গরম ও শুষ্ক এবং শীতকালে এখানে প্রচণ্ড শীত পড়ে। কাবুল দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। ১৯৭০-এর দশকে দেশটির উত্তরাঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাসের উল্লেখযোগ্য মজুদ আবিষ্কৃত হয়। এছাড়া পেট্রোলিয়াম ও কয়লাও এখানে পাওয়া যায়। দেশটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তামা, লোহা, বেরাইট, ক্রোমাইট, সীসা, দস্তা, গন্ধক, লবন, ইউরেনিয়াম ও অভ্রের মজুদ আছে। আফগানিস্তান প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিস্থল হিসেবে পরিচিত। বহু প্রাচীন বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণ এই দেশের মধ্য দিয়েই সংঘটিত হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু লোক আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে চলাচল করেছেন, এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসতি স্থাপন করেছেন। দেশটির বর্তমান জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্য এই ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়। আফগানিস্তানে বসবাসরত সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হল পশতু জাতি। এরা আগে আফগান নামেও পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে আফগান বলতে কেবল পশতু নয়, জাতি নির্বিশেষে রাষ্ট্রটির সব নাগরিককেই বোঝায়। ২০০৩ সালে আফগানিস্তানের মোট শ্রমিক সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ। এদের প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষিকাজ বা পশুপালনের সাথে জড়িত। যুদ্ধের কারণে আরও অনেক ধরনের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বেকারত্ব এবং দক্ষ শ্রমিক ও প্রশাসকের অভাব সবচেয়ে বড় সমস্যা।১৯শ শতকে দেশটি ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ও রুশ সাম্রাজ্যের মধ্যে এক বিরাট খেলার মধ্যবর্তী ক্রীড়ানক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ১৯৭৩ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে সামরিক অফিসারেরা রাজার পতন ঘটান এবং একটি প্রজাতন্ত্র গঠন করেন। ১৯১৯ সালে তৃতীয় ব্রিটিশ-আফগান যুদ্ধশেষে আফগানিস্তান দেশটি ব্রিটেন থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে।প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান খনন করে দেখা গেছে উত্তর আফগানিস্তানে প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে মনুষ্য বসতি ছিল। ধারণা করা হয় আফগানিস্তানের কৃষি খামার সম্প্রদায় বিশ্বের প্রাচীনতমগুলির একটি।আফগানিস্তানের আরেকটি পরিচয় অবৈধ আফিম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে এটি মায়ানমারকে হটিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিমাণ আফিম উৎপাদক দেশে পরিণত হয়। আরও তৈরি হত হাশিশ। ২০০০ সালের জুলাই মাসে তালেবান সরকার ইসলামে আফিমের ব্যবহার নিষিদ্ধ বলে পপি গাছের চাষ বন্ধ করে দেয়। ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে আফগানিস্তানে এক দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিপ্রায়ে ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েতরা আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং এর সাথে সাথে দেশটিতে আবার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে তালেবান নামের একটি মুসলিম মৌলবাদী গোষ্ঠী কাবুলের দখল নেয়। তালেবান সন্ত্রাসবাদী দল আল-কায়েদাকে আফগানিস্তানে আশ্রয় দেয়। ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০০১-এর সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং ২০০১-এর শেষে তালেবানদের উৎখাত করে। ২০০৪ সালে আফগানিস্তানের সংবিধান নতুন করে লেখা হয় এবং একটি রাষ্ট্রপতি-ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা চালু হয়। ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পর মধ্য এশিয়া থেকে এই এলাকায় লোক আসতে শুরু করে। এদের অধিকাংশই ছিল আর্য, যারা ইরান ও ভারতেও বসতি স্থাপন করেছিল। তখন এই এলাকার নাম ছিল আরিয়ানা।খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পারস্য সাম্রাজ্য আরিয়ানা দখল করে। ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহামতি আলেকজান্ডার পারস্যের সম্রাটকে পরাজিত করে আরিয়ানার পূর্ব সীমান্ত ও তারও পূর্বে চলে যেতে সক্ষম হন। ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর অনেকগুলি রাজ্য তাঁর এশীয় সাম্রাজ্যের দখল নেয়ার চেষ্টা করে। জহিরুদ্দীন মুহম্মদ বাবর ছিলেন মায়ের দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর আর বাবার দিক থেকে তৈমুর লঙের বংশধর। তিনি ১৫০৪ সালে কাবুল দখল করেন এবং তারপর ভারতে গিয়ে মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। ২০০১-এর ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। তার ৬ মাস পরে একটি মধ্যবর্তী সরকার গঠিত হয় যা ২০০৪ সালে একটি নতুন সংবিধান পাশ করে। আফগানিস্তান প্রশাসনিকভাবে ৩৪টি প্রদেশ বা ওয়েলায়েত-এ বিভক্ত। প্রতি প্রদেশের নিজস্ব রাজধানী আছে। প্রদেশগুলি আবার জেলায় বিভক্ত। একেকটি জেলা সাধারণত একটি করে শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল নিয়ে গঠিত।আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দেশটির পূর্ব-কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত। অন্যান্য প্রধান শহরের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণের কান্দাহার, পশ্চিমের হেরত এবং উত্তরের মাজরে শরীফ। ছোট শহরগুলির মধ্যে আছে পূর্বের জালালাবাদ, কাবুলের উত্তরে অবস্থিত চারিকার, এবং উত্তরের কন্দোজ ও ফয়েজাবাদ। আফগানিস্তানের বেশির ভাগ প্রধান নদীর উৎপত্তি পার্বত্য জলধারা থেকে। দীর্ঘস্থায়ী শুষ্ক মৌসুমে বেশির ভাগ নদী শীর্ণ ধারায় প্রবাহিত হয়। বসন্তে পর্বতের বরফ গলা শুরু হলে এগুলিতে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। বেশির ভাগ নদীই হ্রদ, জলাভূমি কিংবা নোনাভূমিতে পতিত হয়। এদের মধ্যে কাবুল নদী ব্যতিক্রম; এটি পূর্বে প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানের সিন্ধু নদের সাথে মেশে, যা পরে ভারত মহাসাগরে গিয়ে পতিত হয়। আফগানিস্তানের উদ্ভিদরাজি সংখ্যায় অল্প কিন্তু বিচিত্র। পর্বতে চিরসবুজ বন, ওক, পপলার, হেজেলনাট ঝাড়, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি দেখা যায়। বরফজমা ভোর থেকে দুপুরে ৩৫° তাপমাত্রা ওঠা বিচিত্র নয়। অক্টোবর ও এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টিপাত হয়। মরুভূমি এলাকায় বছরে ৪ ইঞ্চিরও কম বৃষ্টি পড়ে। অন্যদিকে পর্বত এলাকায় বছরে জলপাতের পরিমাণ ৪০ ইঞ্চিরও বেশি, তবে এর বেশির ভাগই তুষারপাত। পশ্চিমের হাওয়া মাঝে মাঝে বিরাট ধূলিঝড়ের সৃষ্টি করে, আর সূর্যের উত্তাপে স্থানীয় ঘূর্ণিবায়ু ওঠাও সাধারণ ঘটনা। আফগানিস্তানে বহু বিচিত্র জাতির বসবাস। এদের প্রায় সবাই মুসলিম। আফগানিস্তানের সঙ্গীত মূলত ঐতিহ্যবাহী লোক সংগীত, গাথা ও নৃত্য। তার দিয়ে তৈরি বাদ্যযন্ত্র রোহাবকে পশ্চিমের ভায়োলিন বা চেল্লোর পুরানো রূপ হিসেবে মনে করা হয়।কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ১৯৩১ সালে স্থাপিত হয় এবং সোভিয়েতদের সাথে যুদ্ধে ও পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধের সময় এর বহু বই চুরি হয়ে যায়। জাতীয় আর্কাইভও লুট হয়। তালেবান সেনারা ইসলামী মৌলবাদ প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে গ্রান্থাগার ও যাদুঘরের বহু বই পুড়িয়ে ফেলে।ইউকিপিডিয়া থেকে।",False fe,"ভাষার বিকৃতি, ভাষার আরাধনা ভাষার বিকৃতি, ভাষার আরাধনাফকির ইলিয়াস=========================================বাংলাদেশে একটি শব্দ খুবই পরিচিত। ‘আর-জে’। রেডিও জকি। বাংলাদেশে একটি ব্যাপক বিপ্লব ঘটিয়েছে এফএম রেডিও। এই খবরটি অনেকটাই তলিয়ে যেতে বসেছে। এর কারণ, মানুষ এখন টিভি, ইন্টারনেট নিয়েই ব্যস্ত। ব্যস্ত ফেসবুক, টুইটার নিয়ে। তারপরও তরুণ প্রজন্মের মাঝে একটা ক্রেজ তৈরি করেছে এই রেডিও ব্যান্ড। তার একমাত্র কারণই ওই রেডিও জকির নতুন নতুন ভাষ্য।প্রিয় পাঠক, আপনারা কি সেই ভাষ্য মাঝেমধ্যে শোনেন? কী বলেন এই রেডিও জকিরা? তারা কি বাংলা বলেন? কোন বাংলা ভাষা ব্যবহার করেন তারা? বাংলার সঙ্গে ইংলিশ মিলিয়ে একটা ভাষা তৈরি হয়েছে বেশ আগেই। কেউ বলেন, ‘বাংলিশ’, কেউ বলেন ‘বাংরেজি’। এই বিষয়টি সম্প্রতি আবার সামনে এসেছে। এ নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন- ‘নতুন প্রজন্মের ইংরেজি ঢঙে বাংলা বলার প্রবণতা ছাড়াতে কী করা যায়, সে পথ বের করতে হবে।’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কথ্য ভাষা বলব, ঠিক আছে। দয়া করে আমাদের ভাষার যে প্রচলিত ধারা সেটাকে এভাবে বিকৃত করে .. বাংরেজি বলে ফেলছি; এটা যেন আর না হয়। এদিকে একটু বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘এটা ছেলেমেয়েদের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে। যেন ওইভাবে কথা না বললে তাদের মর্যাদাই থাকে না। এই জায়গা থেকে আমাদের ছেলেমেয়েদের সরিয়ে আনতে হবে। যখন যেটা বলবে, সেটা সঠিকভাবে বলবে, সঠিকভাবে উচ্চারণ করবে, সঠিকভাবে ব্যবহার করবে।’প্রধানমন্ত্রী ১৯৫২-এর ভাষা শহীদদের স্মরণ করে বলেন, ‘আমাদের ভাইয়েরা জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে এই ভাষা আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন। এর মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমাদের ছেলেমেয়েদের এই ভাষা শিখতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এই ইনস্টিটিউট একদিন তাদের গবেষণা, ভাষা সংরক্ষণ, ভাষা সম্পর্কে আরো জ্ঞান সংরক্ষণ করবে। প্রত্যেকটা ভাষার উৎস কী, কীভাবে বিকশিত হলো, কীভাবে ভাষা বিভিন্ন জাতির কাছে এলো, তা নিয়ে গবেষণার আধার হয়ে উঠবে। আমরা সেভাবে এই ইনস্টিটিউটকে গড়ে তুলতে চাই। আশা করি, বিশ্বের বুকে একদিন এই ইনস্টিটিউট আলাদা মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হবে।’ প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলা ভাষাভাষীর স্থান ষষ্ঠ। সেই হিসাবে জাতিসংঘের একটি ভাষা হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ করে কিনা- এ ব্যাপারে আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। যদিও এটা কার্যকর করতে অনেক রকম সমস্যা আছে। তবুও আমরা আমাদের দাবিটা তুলে রেখেছি। আমরা দাবিটা একদিন বাস্তবায়ন করতে পারব।’প্রধানমন্ত্রীর এই আশাবাদের যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে। বাংলা ভাষাভাষীরা এখন বিশ্বে দাঁড়াচ্ছেন মাথা উঁচু করে। তারা দেখিয়ে দিচ্ছেন, একাত্তরের শৌর্য-বীর্যের ধারাবাহিকতা। কিন্তু এই বাংলাদেশেই একটি শ্রেণি বাংলা ভাষাকে নিয়ে এমন মশকারা করছে কেন? ‘দৈনিক শ্রমিক কণ্ঠ’ নামের একটা কাগজের প্রথম পাতা ছবিসহ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তাতে তারা মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে বলেছে- ‘মহান স্বাধীনতা দিবস’। এই কাগজের সম্পাদক কে? এখানে কারা সাংবাদিকতা করেন? এমন চিত্র বাংলাদেশে বাড়ছেই। টিভিতে দেখলাম, নতুন প্রজন্মের কেউ কেউ বলছে, তারা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে শহীদ মিনারে এসেছে! এরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। এদের কি শেখানো হচ্ছে? কারা তা শেখাচ্ছেন?একুশের চেতনার সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির সম্পর্ক খুবই প্রগাঢ়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা ছিল বাংলায়। সেটি ছিল নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশন। অধিবেশনে সভাপতি ছিলেন আলজেরিয়ার মুক্তি সংগ্রামের নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আবদেল আজিজ বুতেফ্লিকা। সভাপতি ‘বাঙালি জাতির মহান নেতা’ হিসেবে পরিচিতি জানিয়ে বক্তৃতা মঞ্চে আহ্বান করেছিলেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বাঙালির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু সদর্পে বীরোচিত ভঙ্গিমায় আরোহণ করেছিলেন বক্তৃতা মঞ্চে। প্রথম এশীয় নেতা, যিনি এই অধিবেশনে সবার আগে ভাষণ দিয়েছিলেন। দৃপ্ত পায়ে বক্তৃতা মঞ্চে উঠে ডায়াসের সামনে দাঁড়ালেন বঙ্গবন্ধু। মুহুর্মুহু করতালি। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা শুরু করেন মাতৃভাষা বাংলায়। যে ভাষার জন্য ঢাকার রাজপথে বাঙালি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। সেই ভাষায় প্রথম ভাষণ জাতিসংঘে। বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে আবার ঠাঁই করে দিলেন। এর আগে ১৯১৩ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল প্রাপ্তির মধ্যদিয়ে বিশ্ববাসী জেনেছিল বাংলা ভাষার উজ্জ্বল অক্ষরগুলো। এর ষাট বছর পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে উচ্চারণ করলেন বিশ্বসভায় বাংলা ভাষার অমর শব্দগুলো। জাতিসংঘে বিশ্বের সব নেতা নিজ নিজ মাতৃভাষাতেই ভাষণ দিয়ে থাকেন। জাতিসংঘের সরকারি ভাষা ছয়টি- ইংরেজি, ফরাসি, রুশ, চীনা, স্প্যানিশ ও আরবি। এই ৬ ভাষাতেই বক্তৃতা রূপান্তরিত হয়ে থাকে। আমরা আজ সেখানেই আমাদের বাংলা ভাষাকে যুক্ত করার প্রচেষ্টা করছি জোরালোভাবে।আমার মনে পড়ছে, ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন বলেছিলেন, ‘যে ভাষার জন্য সংগ্রাম হলো, জীবন দিতে হলো সেই বাংলা এখনো সর্বস্তরে চালু হয়নি- এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, বাঙালিদের ভালো করে ইংরেজি শিখতে হলেও বাংলা জানতে হবে। কারণ ভালো বাংলা ছাড়া ভালো ইংরেজিও শেখা যাবে না।’ ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪তম সমাবর্তন বক্তৃতায় আব্দুল মতিন বলেছিলেন, ‘সর্বস্তরে মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ভাষাবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। এই কমিশনের দেয়া রিপোর্ট ও সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তার আশাবাদ ছিল- ‘আমরা ১৯৫২ সালে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, ১৯৭১ সালে যে স্বপ্ন বুকে ধারণ ও লালন করেছিলাম, তা আজো পূরণ হয়নি। আজকের তরুণ ছাত্ররাই পারে সেই অপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে। তার জন্য দরকার অবারিত দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ।’এই কথাগুলো আজকের প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে। আজ আঞ্চলিক ভাষার কথা বলা হচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ভাষা বেশ শুদ্ধ। এরকম বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাতেই আলাদা আলাদা আঞ্চলিক ভাষাগুলো আমাদের ভাষাকে আরো প্রাচুর্যময় করেছে। আঞ্চলিক ভাষা আমাদের ভাষা থেকে হারিয়ে যাবে না। তারপরও ভাষার শুদ্ধতার জন্য যেমন কাজ করা দরকার তেমনি এর আঞ্চলিক ভাষাগুলোর সংরক্ষণ করাও আমাদের দায়িত্বের আওতায় পড়ে। কালের আবর্তে আমরা প্রমিত ভাষার চর্চা করে যাবই। কিন্তু ইচ্ছা করলেই আঞ্চলিকতাকে আজই শুদ্ধ হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযেগ্য করা সম্ভব হবে না। তা সম্ভবও নয়। কিছু আঞ্চলিকতা বাংলা ভাষাকে আরো বেশি মধুর করে তুলেছে আমাদের মনের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে। কত বিচিত্র এই বাংলা ভাষা। বিচরণ না করলে কখনই বোঝা যাবে না বাংলা ভাষা বলার ভঙ্গিমায় কী রকম আলাদা আলাদা ব্যকুলতা রয়েছে। যা আমাদের কথা বলার আত্মতৃপ্তি সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।আরো যে বিষয়টি মনে রাখা দরকার, এই ভূখণ্ডে আরো অনেক জাতি-গোষ্ঠীর বাস আছে। তারাও তাদের মায়ের ভাষায় কথা বলবে, পড়ালেখা করবে, সংস্কৃতির চর্চা করবে। বাঙালি সেদিন স্লোগান তুলেছিল- ‘বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা চাই’। এখানেই বাঙালির ভাষা সংগ্রামের অনন্যতা। তার সংগ্রামে কোনো উগ্র জাতীয়তাবাদ কিংবা জাতিগত সংকীর্ণতার চিন্তা স্থান করে নিতে পারেনি। কিন্তু ব্যর্থতাও আছে।আমরা কি পেরেছি প্রতিটি বাঙালি সন্তানকে তার নিজের মাতৃভাষাকে চেনাতে, জানাতে, পাঠে সক্ষম করতে? আমরা কি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে বর্তমান প্রজন্মের মননে-ধ্যানে-অনুশীলনে বাংলা ভাষাকে বিশেষ স্থান করে দিতে পেরেছি? পেরেছি কি বাংলাদেশের ভাষাভাষী মানুষকে তার মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার দিতে? একজন বাঙালির সন্তানেরা যদি জন্মের পর তার নিজের ভাষায় কথা বলার, সেই ভাষাতেই লেখাপড়া করার অধিকার থাকে তাহলে একজন আদিবাসী সন্তান কেন তার মাতৃভাষায় শিক্ষিত হতে পারবে না? বায়ান্নর ৬৫ বছর পর আজো কেন সমাজে শ্রেণিবৈষম্য, শোষণ, সাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্রহীনতা দেখতে হবে? বাংলা ভাষার আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আজ সারাবিশ্বেই স্বীকৃত। মাতৃভাষার জন্য সংগ্রাম করে একুশ যে আজ আন্তর্জাতিক দিবসে পরিণত হতে পেরেছে তার মূল কারণই হচ্ছে এই সংগ্রামের আত্মার মধ্যে কোনো উগ্রজাতি বিদ্বেষ বা জাতীয় সংকীর্ণতা ছিল না। আমরা প্রত্যেক জাতির মাতৃভাষার বিকাশের পক্ষেই ছিলাম। আমরা সেই ভাষার আরাধনা চাই। ভাষার বিকৃতির রোধ চাই। চাই মানুষ দাঁড়াবে ভাষার শক্তি নিয়ে। শুদ্ধ ভাষার চর্চা করে। সঠিক ইতিহাস চর্চা করে। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই নয়, বছরজুড়ে ভাষার চর্চা হোক পরিশুদ্ধভাবে। আসুন আমরা এই ধ্যানে ও মননে ঐক্যবদ্ধ হই।------------------------------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৪:৪৩",False rg,"None কবি খন্দকার আশরাফ হোসেনের ফেইসবুকে শেষ স্টাটাস ছিল এটি (১২ জুন ২০১৩ সালে লেখা).... (Last status of Poet Khondakar Ashraf Hossain on his facebook timeline) Some more about my dear colleagues and teachers: In some cases, you'll have to cut the jewels off their stone settings. ধর্মদীপ চৌ Said the man, ""the zoo-ruler is a lamb!"" শ্যাম শুদ্ধ হ! Alamgir, the Voiced One. হরিবন্ধু eats all! কাজ হল বিনা আরজি..... ১৯৫০ সালের ৪ জানুয়ারি কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন জামালপুরে জন্মগ্রহন করেন। আর আজ ১৬ জুন ২০১৩, রবিবার তিনি আর জীবিত নেই!!! ভাবতে পারছি না!!!! গতকাল কবিকে ফুসফুসে ব্যথা অনুভবের পর রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বেশ কিচু দিন ডায়াবেটিস ও হার্টের অসুখে ভুগছিলেন। আজ দুপুর ১২টার দিকে তিনি পরলোক কমন করেন!!! মৃত্যুকালে কবি'র বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন পড়াশনা করেছেন ইংরেজি সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন দীর্ঘদিন। সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে সরকার নিয়োগ প্রদান করে। উপাচার্য হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে খোন্দকার আশরাফ হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। গত ৬ মে ২০১৩ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন তিনি।মূলত ১৯৮৫ সাল থেকে সম্পাদনা করতেন সাহিত্যের কাগজ একবিংশ। কবিতার প্রতিই তাঁর বেশি ঝোঁক ছিল। তিনি বাংলাদেশের একজন অন্যতম কবি, প্রবন্ধকার, অনুবাদক এবং ইংরেজি ভাষার শিক্ষক। তিনি ইংরেজি থেকে বাংলা এবং বাংলা থেকে ইংরেজি'র পাশাপাশি তিনি জার্মান থেকে ইংরেজি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনেক অনুবাদ করেছেন। তিনি একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। একবিংশ। গতমাসে আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল একবিংশে আমি কেন লেখা দেই না। কবিকে আম ডাকতাম খন্দকার ভাই। একবিংশের জন্য আমার লেখাটি এখনো রেডি হয়নি। খন্দকার ভাই জানালেন, কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি হিসেবে যোগ দেবার পর একটু ব্যস্ত হয়ে গেছেন। একবিংশের জন্য সময় বের করতে পারছেন না। আজ আজফার হোসেনের ফেইসবুকে দুঃসংবাদটি দেখে অনেকক্ষণ চুপ হয়ে গেলাম। বিশ্বাস করতে পারছি না খন্দকার ভাই আর অমর একুশে বইমেলায় লিটলম্যাগ চত্বরে বই সাজিয়ে আড্ডায় মেতে উঠবেন না। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভাগীয় প্রধান, হলের প্রভোস্ট, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের চেয়ারম্যান, উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেনের জীবনপঞ্জী: ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এম.এ. ইংরেজি সাহিত্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পোস্টগ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা, লীডস বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য এম. এ. (ভাষাতত্ত্ব ও ধ্বনিতত্ত্ব), লীডস বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য পিএইচ. ডি. (ইংরেজি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা : অধ্যাপনা, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৩ থেকে অদ্যাবধি)। উপাচার্য : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। কবি খন্দকার আশরাফ হোসেনের বইগুলো আমাদের কাছে চিরদিন বেঁচে থাকবে। তাঁর বইগুলো হল: কাব্যগ্রন্থ: ১. তিন রমনীর ক্বাসিদা (১৯৮৪) ২. পার্থ তোমার তীব্র তীর (১৯৮৬) ৩. জীবনের সমান চুমুক (১৯৮৯) ৪. সুন্দরী ও ঘৃণার ঘুঙুর (১৯৯১) ৫. যমুনাপর্ব (১৯৯৮) ৬. জন্ম বাউল ৭. তোমার নামে বৃষ্টি নামে ৮. আয়না দেখে অন্ধ মানুষ ৯. রাজা ঈডিপাস সংকলন: ১. নির্বাচিত কবিতা (১৯৯৫) ২. কবিতা সমগ্র ৩. অন বেহুলা'স রাফট ৪. ১০. সাহিত্যত্ত্ব, ৫. রবীন্দ্রনাথ ইয়েটস গীতাঞ্জলি ৬. বাঙালির দ্বিধা ও রবীন্দ্রনাথ এবং বিবিধ বিবেচনা ৭. আলসেসটিস ৮. মিডিআ ৯. কুয়াশার মুশায়েরা ১০. 'টেরি ঈগলটন: সাহিত্যতত্ত্ব' (২০০৪) ১১. পাউল সেলানের কবিতা' (১৯৯৭) ১২. কবিতার অন্তর্যমী ১৩. 'ইউরিপিডিসের মিডিআ' (১৯৮৭), ১৪. 'ইউরিপিডিসের আলসেস্টিস' (১৯৮৭) প্রবন্ধ সংকলন: ১. বাংলাদেশের কবিতা অন্তরঙ্গ অবলোকন (A Study on Bangladeshi Poetry) (১৯৯৫) ২. চিরায়ত পূরাণ (Classical Mythology) (২০০২) ৩. 'সফোক্লিসের রাজা ইদিপাস' (১৯৮৭) ৩. কবিতার অন্তর্জামী ৪. আধুনিক উত্তরাধুনিক ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (Bangla Poetry in the contexts of Modernism, postmodernism and other trends) (২০১০) ৫. বিশ্ব কবিতার সোনালী শস্য (Gleanings from World Poetry) ৬. Modernism and Beyond: Western Influences on Bangladeshi poetry ৭. এডিথ হ্যামিল্টন ৮. 'রবীন্দ্রনাথ ইয়েটস গীতাঞ্জলী' (২০১২) ৯. 'বাঙালির দ্বিধা ও রবীন্দ্রনাথ এবং বিবিধ তত্ততালাশ' (২০১৩) গদ্য সংকলন: ১. রোমান্টিক ও আধুনিক কবিতার অক্ষদ্রাঘিমা (Romantic and Modern: Latitudes and Longitudes of Poetry) অনুবাদ: ১. Selected Poems of Paul Celan ২. Oedipus Rex by Sophocles ৩. Medea by Euripides ৪. Alcestis by Euripides ৫. 'Selected poems of Nermalendu Goon' (২০০১) ৬. On Behula’s Raft ৭. 'Folk Tales from Bangladesh' (১৯৮৫) ৮. 'Folk Poems from Bangladesh' (১৯৮৫) পুরষ্কার: ১. আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ২. জীবনানন্দ পুরস্কার, ৩. পশ্চিমবঙ্গ লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছেন খোন্দকার আশরাফ হোসেন। সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৫৮",False rg,"হ্যারল্ড পিনটার_ ব্রিটিশ নাটকের নটবর ।। রেজা ঘটক রেজা ঘটকহ্যারল্ড পিনটার: ব্রিটিশ নাটকের নটবর২০০৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন ব্রিটিশ নাট্যকার হ্যারল্ড পিনটার। সুইডিশ একাডেমী হ্যারল্ড পিনটারকে ইংরেজি নাটকে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের ‘দি টাওয়ারিং ফিগার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বৃহষ্পতিবার (১৩ অক্টোবর ২০০৫) সুইডিশ একাডেমীর সাহিত্য বিষয়ক নোবেল কমিটির স্থায়ী সেক্রেটারি হোরেস ইংডাল (ঐড়ৎধপব ঊহমফধযষ) পুরষ্কার ঘোষণায় বলেনÑ –‘দৈনন্দিন পাঁচালীর আদ্যোপান্ত উম্মোচনে এবং জটিলতাতাড়িত বদ্ধ ঘরের ভেতরে নিয়ে যেতে প্রলুদ্ধ জাগাতে হ্যারল্ড পিনটার বড়োই অমায়িক।’ ইংডাল বলেন- ‘পিনটার থিয়েটারের মৌলিক উপাদানগুলোতে উজ্জীবন ঘটিয়েছেন, কেননা মানুষ নিজেদেরকে কেবল অভাবনীয় সংলাপের ভেতরই খুঁজতে চায়, যেখানে সব ধরণের ভণ্ডামীর সমাপ্তী দেখতেই তারা কেবল পছন্দ করে । আর পিনটারের নাটকে আমরা শুধু সেইসব ভাষাই খুঁজে পাই।’ পিনটারের নোবেল প্রাপ্তিতে মিডিয়াজগত ও গুনিজনদের ভাষ্য: হ্যারল্ড পিনটারের এক সময়ের কঠোর সমালোচক লন্ডনের ‘দ্য র্গার্ডিয়ান’ পত্রিকা জানায় যেÑ ‘এমন একজন লেখককে এবছর নোবেল দেয়া হলো যিনি লেখার কাজটি শুধু সুন্দর ভাবেই করেন না বরং অনেকের কাছেই অনুকরনীয় এমন একটা নতুন ঘরনাও তিনি সৃষ্টি করতে পেরেছেন নাটকে। জীবনের প্রকৃত সত্য আসলে কী এবং শিল্প জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা পিনটার নাটকের মাধ্যমে আমাদের দেখিয়ে দেন।’ নোবেল প্রাপ্তির পর পিনটার সম্পর্কে ফরাসি পত্রিকা ‘লা মঁদ’ লিখেছেÑ ‘পশ্চিমাদের কাছে হ্যারল্ড পিনটার কেবল ইরাক যুদ্ধের একজন কট্টর সমালোচক হলেও তাঁর নাটকে যে জীবনের রহস্যময় বাঁকগুলোর মিশলে বাস্তব সত্যের প্রায়ই পুনঃপুনঃ সন্ধান মেলে, তা কার্যত নোবেল কমিটি স্বীকার করে নিলেন।’ বিশিষ্ট সমালোচক ক্রিষ্টোফার হিসেন্স বলেনÑ ‘সাহিত্য কর্মের জন্য হ্যারল্ড নোবেল পেলেও তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্য এবং যুদ্ধনীতির বিপরীতে তাঁর কঠোর অবস্থানকে মোটেও খাটো করে দেখার উপায় নেই।’ অপর সমালোচক কোরিন রেডগ্রেভ বলেনÑ ‘মুনাফা লুটের আশায় যারা সাধারণ মানুষকে শোষণ করেন, তাদের বিরুদ্ধে হ্যারল্ড বরাবরই একটি তীব্র প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। আর অবশ্যই তা একজন বড় প্রার্থীর বড় রকমের বিজয়।’ ডাবলিনের ‘দ্যা গেট থিয়েটার-এর শিল্প নির্দেশক মিশেল কোলগ্যান বলেনÑ ‘আমাদের মতো থিয়েটার ওয়ালারা হ্যারল্ডের বরাবরই গুনমুদ্ধ থাকলেও,বাস্তবে কখনোই তাঁর কাজের ঠিকঠাক মূল্যায়ন করা হয়নি। সুইডিশ একাডেমী এবার সেই অসামান্য কাজটিই করলো।’ আমেরিকান ম্যাগাজিন ‘দ্য নিউ ক্রাইটেরিয়ন’-এর সম্পাদক বলেনÑ ‘হ্যারল্ডের হাস্যরসাত্মক ব্যাঙ্গ নাটকের আছে অতি নিরব এক প্রতিবাদী ভাষা। তাই ইরাক ও আফগানিস্তানের জনগনের ওপর ইঙ্গ-মার্কিন বোমা হামলাকে এবং র্নিবিচারে গনহত্যা চালানোর র্মার্কিন-ব্রিটিশ নীতিকে হ্যারল্ড কখনোই সমর্থন করতে পারেননি।’ ব্রিটিশ লেখক জন গ্রেডি পিনটারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পিনটারের ঢঙটাই অনুসরন করে একটি নাটক লিখলেন । (ডিনার টেবিল) জ্যাক : তো ... ... (বিরতি), সে তাহলে নোবেলজিতলো! (বিরতি) জিল : হু !জ্যাক : হ্যা ........(র্দীঘশ্বাস)। (বিরতি)।জ্যাক : লোকটাকে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। জিল : হুঁ ।জ্যাক : ও, অপেক্ষাও করেছে অনেক। (বিরতি)জিল : হ্যা, খুব দীর্ঘ অপেক্ষা .......। (বিরতি)জ্যাক : আমার কী মনে হয় জানো ?.........(বিরতি)জিল : ... ... ... (বিরতির পর) কাজগুলো ওর ভালোই,তুমি কী বলো ? জ্যাক : হ্যা।জিল : ঠিক তাই। (বিরতি) জ্যাক : এখন সবাই তাই-ই বলবে। আরো বলবে ওয়েলডান। জিল : (সামান্য বিরতির পর) সত্যিই ওয়েলডান (মৃদ্যুস্বরে) জ্যাক : হ্যা, সবাই এখন তাই বলবে।জিল : (দীর্ঘ বিরতির পর) খাবারটা দারুন হয়েছে, তাই না ? জ্যাক : হু, ঠিক ওই খবরটির মতোই দারুন। (বিরতি) পিনটারের শৈশব ও স্কুল : ১৯৩০ সালের ১০ অক্টোবর লন্ডনের ইস্ট ইন্ড-এর পার্র্শ্ববর্তী হ্যাকনি শহরের এক ইহুদি পরিবারে হ্যারল্ড পিনটার জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন নিতান্তই একজন পোশাক নির্মাতা (দর্জি)। ফলে শ্রমজীবি পরিবেশে পিনটার বেড়ে উঠেছেন। কিন্তু বালক পিনটার একা একা থাকতেই বেশি পছন্দ করতেন। চারপাশের বাস্তব জগতটাকে তৃতীয় নয়ন দিয়ে যাচাই বাছাই করার অভ্যাসটা তিনি তখন থেকেই রপ্ত করেছেন। ফলে সম্পূর্ন ভিন্ন একটা ধারায় তাঁর মনের বিকাশটা ঘটেছে। হ্যাকনি ডাউন স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর পিনটার তাঁর ভাবনাগুলোকে গল্প ও কবিতায় রূপ দিতে শুরু করেন। পোয়েট্রি লন্ডন ম্যাগাজিনে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৫০ সালে। এর আগে ১৯৪৮ সালে তিনি ‘রয়্যাল একাডেমী অব ড্রামাটিক আর্ট কলেজে’ ভর্তি হন। কিন্তু মাত্র দুই টার্ম পরেই তাঁর মোহ নিবিষ্ট হয় অভিনয়ের প্রতি। আর কলেজ ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন অভিনয়। অভিনয়ের নেশা তাঁকে এতোই পাগল করেছিল যে মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১৯৪৯ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের অতি লোভনীয় সরকারি চাকরি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। একজন বিবেকবোধ সম্পন্ন প্রতিবাদী মানুষ হওয়ার জন্য, এরপর তিনি শুধু বিরামহীন লিখেছেন। অভিনয়ের ফাঁকে ফাঁকে যতোটুকু সময় পেতেন শুধু লিখতেন কবিতা আর নাটক। নাট্যকার হ্যারল্ড : ১৯৫৭ সালে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরোধে মাত্র ৪ দিনে পিনটার লিখেন তাঁর প্রথম নাটক ‘দ্য রুম’। নাটকটি তখন এতোই হৃদয়গ্রাহী আর জনপ্রিয় ছিল যে, তৎকালীন ‘সানডে টাইমস’-এর নাট্য উৎসব সংখ্যায় ‘দ্য রুম’ নাটকটির পুরোটাই তখন প্রকাশিত হয়েছিল। পিনটারের ভাষায় ‘ প্রায়ই আমরা যে শব্দগুলো শুনি তা অশ্র“ত শব্দ মালারই দিক নির্দেশ করে। আর এসব শব্দমালাকে আমি নাটকে প্রবেশ করাই। ‘দ্য রুম’ প্রকাশের পর থেকেই ইংরেজি নাটকে পিনটারের সত্যিকারের নটবরের ভূমিকায় যাত্রা শুরু। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত হয় পিনটারের দ্বিতীয় নাটক ‘দ্য বার্থডে পার্টি’। যা একই সঙ্গে পিনটারের প্রথম ধ্র“পদি নাটক। স্টানলির সমুদ্র উপকূলের একটি বোডিং-এ এক রহস্যময় দম্পত্তি বাস করেন। যারা তাঁদের পালক সন্তানের জন্মদিনের উৎসবে দারুনভাবে আনন্দে মত্ত। বালকটি সেই উৎসবের কিছুই ঠাওর করতে পারে না। একজন শিল্পীর প্রতিকৃতি যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে, বালকটি সেই রকম কি কল্পনায় বুদ হয়ে থাকে। ১৯৬০ সালে আইটিভি চ্যানেলে ‘দ্য বার্থডে পার্টি’ স¤প্রচারিত হওয়ার পর পিনটারের নাট্য খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে যায়। পিনটারের তৃতীয় নাটক ‘দ্য কেয়ারটেকার’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। এরপর একে একে তিনি লেখেন ‘দ্য হোম কামিং’ (১৯৬৪), ‘বিট্রেয়াল’ (১৯৬৫)। পিনটারের প্রথম দিকের এসব নাটকের গল্প অতি সাধারণ হলেও কথোপকথন আর লুকোচুরি খেলার মতো তা ধীরে ধীরে নাটককেই কেবল সুসংহত করে । যা অনেকটা এ্যাবসার্ড নাটকের বর্ধিত সংস্করনের মতো। এভাবে ধীরে ধীরে পিনটার কমেডি লিখতে মনোনিবেশ করেন। যে সব নাটকের চরিত্রগুলোতে এমন কতগুলো মানুষ, যারা অন্যের একেবারে অর্ন্তগত জীবনে অনার্থক প্রবেশের বিরুদ্ধে ভীষণ সজাগ। এবং নিজেদের কামনা বাসনার মধ্যেই নিজেদেরকে নিয়ন্ত্র—ন করতে পছন্দ করেন অথবা নিজেদের অস্তিত্বের মধ্যেই নিজেরাই কেবল পুলকিত হন। পিনটারের নাটকের চরিত্রগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট হলো অস্থির চিত্ততা আর বিস্মৃতি মুগ্ধতা। ঝাঁ-ঝাঁ, ঝিঁ-ঝিঁ। কেবল নিজের মতোই ছুটে চলা। যা কেবল চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক বাস্তবতাকেই অনুসরন করে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পিনটারের নাটকগুলোতে ধীরে ধীরে গীতিময় আর কাব্যিক ঢঙ পরিস্ফুটিত হতে থাকে। তাঁর ‘ল্যান্ডস্কেপ’ (১৯৬৭) এবং ‘সাইলেন্স’ (১৯৬৮) যেনো রবীন্দ্র ঘরনারই নাটক। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘মনোলোগ’। যা টেলিভিশনের পর্দায় স¤প্রচারিত তাঁর প্রথম রঙিন নাটক। নাটক লেখা ও অভিনয়ের পাশাপাশি মাঝেমাঝে তিনি নাটক পরিচালনাও করতেন। পিনটার মোট ২৭টি নাটক পরিচালনা করেছেন। এছাড়া তিনি চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য লিখেছেন প্রায় ২১ টি । চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যে ভাষার ব্যবহার প্রসঙ্গে পিনটার বলেনÑ ‘মানুষের কথোকথনের মধ্যে যদি আপনি কান পাতেন, শুনবেন- সবাই কেমন একটা অনিবার্য নগ্নতাকে আড়াল করার কী প্রানান্ত চেষ্টাই না করেন। রাজনীতিতে যোগদান : আশি’র দশকের শেষদিকে পিনটার বৃটেনে বাম রাজনীতিতে নাম লেখান। তখন থেকেই তিনি সারা বৃটেনে একজন সোচ্চার প্রতিবাদী কন্ঠী হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সারা জাগানো নাটক ‘নো-ম্যানস-ল্যান্ড’। ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয তাঁর ‘অন ফর দ্য রোড’। ১৯৮৮ সালে ‘মাউন্টেন ল্যাঙ্গুয়েজ’ এবং ১৯৯১ সালে ‘দি নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়ার’ প্রকাশিত হলে রাজনৈতিক নাটক হিসেবে অনেকেই তা তখন প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৮৫ সালে মার্কিন নাট্যকার আর্থার মিলারের সঙ্গে পিনটার তুরস্কে রাজনৈতিকভাবে নির্যাতিতদের পরিদর্শনে নামেন। মার্কিন দূতাবাস মিলারের সম্মানে এক নৈশ ভোঁজের আয়োজন করলে পিনটারও সেখানে বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। তুরস্কে রাজনৈতিকভাবে নির্যাতন চিত্রের সেই সব ভয়াল ঘটনা পিনটার বর্ননা শুরু করেন। একপর্যায়ে দূতাবাসের ক্ষুদ্ধ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে তাঁকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করলে পিনটার থু থু মেরে দূতাবাস থেকে বেড়িয়ে আসেন। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় বৃটেনের ‘হাউজ অব কমনস’-এ পিনটার নিকারাগুয়ার পক্ষে বক্তৃতা দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। সার্বিয়ায় যখন মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোবাহিনী বোমা হামলা চালায় তখন গার্ডিয়ানের পাতায় পাতায় ছাপা হতো পিনটারের হাজারো ধিক্কার আর প্রতিবাদ। বৃটেনের ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকা তখন পিনটারের অনেক বক্তব্যকে খোঁচা মেরে অথবা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ছাপাতো। এক পর্যায়ে গার্ডিয়ানের সাথে পিনটারের দ্বন্দ্ব যুদ্ধ শুরু হয়। ২০০১ সালে ইতালির ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির পিনটার কঠোর সমালোচনা করেন। আফগানিস্থানে মার্কিন আগ্রাসন এবং ইরাকে ইন্দো-মার্কিন হামলার সমালোচনা করতে গিয়ে পিনটার দু‘টো দেশের দুই নেতাকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দেন। পিনটারের ভাষায়Ñ ‘টনি ব্লেয়ার হলো গাধাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাবা আর বুশ হলো হিটলারের চেয়েও বড় হত্যাকারী।’১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় পিনটারের বিখ্যাত নাটক ‘এ্যাসেজ টু এ্যাসেজ’। এই নাটকে তিনি দেখিয়েছেনÑ কীভাবে নাজিরা ঠান্ডা মাথায় গণহত্যার পাশাপাশি যৌন নিপীড়ন চালয়। নাটকে এক নারী তার প্রেমিকের ভালোবাসা কতোটা রোমান্টিক ও আনন্দময় ছিল, সেই স্মৃতি রোমন্থন করেন। আর দেখেন- কীভাবে নাজি বাহিনী মায়েদের কোল থেকে শিশুদের ছিনিয়ে নিয়ে সমুদ্রের কাছে জড়ো করে। আর সাগরের প্রবল জোযার এসে সেইসব শিশুদের কীভাবে নির্দয় ভাবে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আর তখন সেই উঁচু উঁচু ঢেউগুলোতে কেবলই ভাসতে থাকে ওইসব শিশুদের পরিত্যক্ত জামাকাপড় আর খেলনা। হ্যারল্ড পিনটার এ পর্যন্ত ৩০ টির মতো নাটক লিখেছেন। তাঁর সর্বশেষ নাটক ‘রিমেমবারেন্স অফ থিংস পাস্ট’ ২০০০ সালে প্রকাশিত হয়। ইতোমধ্যে এই নাটকটি লন্ডনের ন্যাশনাল থিয়েটার-এ (হাউসফুল দর্শককূলের উপস্থিতিতে) বেশ কয়েকবার মঞ্চায়িত হয়েছে।পিনটারের জীবনীকার মাইকেল বিলিংটন তাঁর ‘ওল্ড টাইমস’ নাটকটিকে একটি ‘সুন্দর স্মৃতিকাতরময় বিষন্নতা ও নৈতিক বিকৃতির নিদর্শন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ওই নাটকে কেট, তার স্বামী ও তাদের বন্ধু আন্নার সাথে ২০ বছর পর পুনরায় মিলিত হয়ে স্বৃতিচারণ করেন। কিন্তু দেখা যায় যতোই তারা পুরোনোদিনের কথা স্মৃতিচারণ করছেন, ততোই তারা পরস্পর এক ধরনের সন্দেহ আর অবিশ্বাসের গ›দ্ধ অবিষ্কার করেন এবং শেষদিকে তারা পরস্পর পরস্পরকে কেবল ভৎসনা করেন। এছাড়া পিনটারের ‘মাষ্টার অব ড্রামাটিক পজ’ নাটককে রাজনৈতিক ইস্যুতে তাঁর নৈতিকতা ও মানবতার সপক্ষে তাঁকে একজন আমৃত্যু যোদ্ধা হিসেবে আমরা পাই । ২০০১ সালে বিখ্যাত সাংবাদিক ম্যাথু টেমপেস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পিনটার আর্ন্তজাতিক আদালতে সার্বিয়ার স্বৈরশাসক স্লোবোদান মিলোসোভিচের প্রহসনমুলক সাজানো বিচারকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানান । পিনটারের ভাষায়Ñ ‘মিলোসোভিচ হলো বেলগ্রেডের কসাই।’বিয়ে বিচ্ছেদ ও পছন্দ: ব্যক্তিগত জীবনে হ্যারল্ড পিনটার ছিলেন প্রেমিক পুরুষ। দীর্ঘদিন তিনি টেলিভিশন উপস্থাপিকা জোয়ার বেকওয়েলের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করেছেন। তাঁর এই প্রেমের গল্প জানা সত্ত্বেও অভিনেত্রী ভিভিয়েন মার্চেন্ট পিনটারের প্রেমে মুº হন এবং ১৯৫৬ সারে তাঁরা বিয়ে করেন। কিন্তু ১৯৭৭ সালে তাঁদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর ১৯৮০ সালে পিনটার আবারো বিয়ে করেন লংফোর্ডের সপ্তম লর্ডের বড় কন্যা ল্যাডি অ্যান্টনিও ফ্রেজারকে। বউয়ের মতো পিনটার ক্রিকেট খেলারও অসাধারন ভক্ত । ক্রিকেটের প্রতি তাঁর অপরিসীম আগ্রহকে সম্মান দেখিয়ে লন্ডনের গেইটিস ক্রিকেট ক্লাব তাঁকে ক্লাবটির চেয়ারম্যান পদে অভিষিক্ত করেন।সাহিত্যে অন্যান্য ব্রিটিশ নোবেল লরিয়েটদের পাশে পিনটার: সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়ে ৭৫ কছর বয়সী হ্যারল্ড পিনটার স্বদেশী যাঁদের দলে নাম লেখালেন তাঁরা হলেনÑ স্যামুয়াল ব্যাকেট (ঝধসঁবষ ইবপশবঃঃ), জন স্টিনব্যাক (ঔড়যহ ঝঃবরহনবপশ), স্যার উইনস্টাইন চার্চিল (ঝরৎ ডরহংঃড়হ ঈযঁৎপযরষষ), টি. এস. ইলিয়ট (ঞ.ঝ. ঊষরড়ঃ), ফ্রেন্সম্যান জিনপল সার্ত্রে (ঋৎবহপযসধহ ঔবধহ-চধঁষ ঝধৎঃৎব) ও ভি. এস. নাইপল (ঠ.ঝ. ঘধরঢ়ধঁষ)। এরমধ্যে ১৯৬৪ সালে সার্ত্রে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পেলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।পুরষ্কার ও সম্মাননা: ‘দ্য লাভার’ নাটকের জন্য ১৯৬৩ সালে পিনটার জেতেন ‘প্রিক্রা ইতালিয়া টেলিভিশন এওয়ার্ড।’ ১৯৬৬-তে তাঁকে দেয়া হয় ‘সিবিই’ পুরষ্কার। এছাড়া তিনি পান ‘শেক্রাপিয়ার প্রাইজ’ (হামবার্গ); ‘দ্য ইউরোপিয়ান প্রাইজ ফর লিটারেচার’ (ভিয়েনা); ‘দ্য পিরেনভেলো প্রাইজ’ (পালেরমো); ‘দ্য ডেভিড কোহেন ব্রিটিশ লিটারেচার প্রাইজ; ‘লরেন্স অলিভিয়ার এ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘মলিয়ের ডি অনার’ নামক একটি আজীবন সম্মাননা। ব্রিটিশ সরকারের ‘রয়্যাল নাইট’ উপাধি তাঁকে দেয়া হলে তিনি তা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। এছাড়া বিশ্বের প্রায় ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সম্মানজনক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। নোবেল পাওয়ার খবর শুনে: গার্ডিয়ান প্রতিনিধি মাইকেল বিলিংটোনের কাছে পিনটার নোবেল প্রাপ্তিতে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেন এভাবেÑ ‘বৃহষ্পতিবার থেকে আমি ছিলাম ডাবলিনে একটা চমৎকার উইক-এন্ড উৎসবে। গেট থিয়েটার আমাকে সেখানে সম্মানিত করেছে। সোমবার ফিরতি উড়োজাহাজ ধরার জন্য আমি এয়ারপোর্ট যাচ্ছিলাম। তখন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। গাড়ি থেকে নামার সময় ছড়িটা রাস্তায় পেছলে গেলে আমি পড়ে গিয়ে রক্তারক্তি কান্ড। ৯টা সেলাই লাগলো কপালে। টিভি চ্যানেলগুলোর সংবাদ পাঠকদের আমার মৃত্যু সংবাদ পাঠ করার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা সিদ্ধান্ত পাল্টিয়ে জানাচ্ছে যে হ্যারল্ড পিনটার নোবেল সাহিত্য পুরষ্কার জিতেছে। তার মানে দাঁড়ালো আজ আমার পুর্নজন্ম হলো! অ্যান্তোনিওকে নিয়ে আমি শ্যাম্পেন খেলাম। সারাদিন ব›দ্ধুরা ফোন করল, অভিনন্দন জানালো। আর সাংবাদিকরা আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। দরজায় তারা সারাদিন ধরে ঘন্টা বাজাচ্ছে। যেনো আমি একটা শিম্পানজি আর তারা খেলা দেখার জন্য দলবেঁধে আসছে। লাখ লাখ লোক বাদ দিয়ে বিরল প্রজাতির এক চর্ম রোগ আমার মুখেই বাসা বেঁধেছে। গামলা ভরতি ওষুধ গিলছি। যদিও খাদ্যনালীর ক্যান্সারটা ২০০২ সাল থেকেই খুব ভোগাচ্ছে। কিন্তু সকালে যখন অ্যান্তোনিও আমাকে ক্যানবেরি জুস দেয় আর আমি গার্ডিয়ান পড়তে থাকি, তখন জীবনটা আর রাজনৈতিক থাকে না গো। রেজা ঘটক১০০ কাঁঠালবাগানঢাকা।ফোনঃ ০১৬৭৪১৮০১৬৩ .",False ij,"ব্রাহ্মসমাজ ও তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা। প্রখ্যাত সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়। ইনি ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম বাংলার রাধানগর গ্রামে এক রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তরুণ বয়েসে সংস্কৃতসহ বেশ ক’টি ভাষা শিখেছিলেন রামমোহন। তার মধ্যে আরবি ও ফারসি ছিল অন্যতম। ইসলাম ধর্ম সম্বন্ধে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। ইতিহাসের গভীর পাঠ নিয়েছিলেন বলে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায় এবং বহু ঈশ্বরবাদী সনাতন ধর্মের প্রতি অনুরাগ কমে যায়। ফলত একেশ্বরবাদের প্রতি ঝুঁকে পড়েন রামমোহন এবং একেশ্বরবাদ সাধনার উদ্দেশ্যে ১৮২৮ সালে আগস্ট মাসে কোলকাতায় ব্রাহ্ম সভা প্রতিষ্ঠা করেন। পরে অবশ্য ব্রাহ্ম সভার নাম বদলে হয় ব্রাহ্ম সমাজ। এর অর্থ-ঈশ্বরের সমাজ। রামমোহনের দাবী ছিল ব্রাহ্ম সমাজকে সর্বজনীন ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তবু পরে এই প্রতিষ্ঠানটি হিন্দুধর্মের একটি শাখায় পরিণত হয়। ১৮৩৩ সালে রামমোহন মারা যান। তাঁর একেশ্বরবাদী আন্দোলনটি নানা বাধার সম্মুখীন হয়। সে সময় প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ও তাঁর পুত্র দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (ইনিই রবীন্দ্রনাথের বাবা) এগিয়ে আসেন। যার ফলে ব্রাহ্ম সমাজ নতুন মাত্রা ও বৈশিষ্ট্য পরিগ্রহ করে। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর তত্ত্ববোধিনী সভা নামে একটি সমিতি প্রতিষ্টা করেন যা ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শ প্রচারে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। ১৮৪৩ সালের ১৬ আগস্ট ব্রাহ্ম সমাজের মুখপাত্র হিসেবে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’টি আত্মপ্রকাশ করে। অক্ষয় কুমার দত্ত পত্রিকাটির সম্পাদক নিযুক্ত হন। পত্রিকার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজনারায়ন বসু ,দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো প্রতিথযশা লেখক পত্রিকাটিতে নিয়মিত লিখতেন। ফলে, কাব্যের পাশাপাশি বাংলা গদ্যের বিকাশ লাভ করছিল। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার লেখকগন প্রত্যেকেই ছিলেন সংস্কারপন্থি। এ প্রসঙ্গে সমরেশ দেবনাথ লিখেছেন, All its contributors and patrons were reformists. Although propagation of religious matters was its primary objective, the journal also published valuable articles on general knowledge and science, history, literature, religions, politics, economics, sociology and philosophy. It used to print pieces urging Bengalis to venture out into international trade and equip themselves adequately for political independence. In this way the journal made significant contributions towards developing Bengali culture and civilization. (বাংলাপিডিয়া।) একেশ্বরবাদী ব্রাহ্মধর্ম আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকাটি তখন গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। পূর্ববঙ্গে ব্রাক্ষ্মধর্মের প্রচার মূলত তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার মাধ্যমেই হয়েছে। ঢাকার ব্রাহ্মসমাজ গঠনের উদ্যোক্তা ব্রজসুন্দর মিত্র এ পত্রিকা পড়েই ব্রাহ্মসমাজের প্রতি আকৃষ্ট হন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইচ্ছে ছিল পত্রিকাকে বিশুদ্ধ ধর্মচর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, কিন্তু অক্ষয়কুমার চাইতেন বিজ্ঞান ও জড়বাদী চিন্তার সঙ্গে যুক্ত হতে এবং শেষ পর্যন্ত তা- ই হয়েছে। কাজেই, তৎকালীন বুদ্ধিজীবিদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছিল। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকাটি ১৯৩২ সাল অবধি প্রকাশ হত । রবীন্দ্রনাথও পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছেন। সূত্র: বাংলাপিডিয়া। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:১৭",False rn,"রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৯৪ জমিদার রবীন্দ্রনাথ নিজেকে প্রথাসিদ্ধ জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাননি। তাই ভালোবাসা পেয়েছেন, কাছের মানুষ হতে পেরেছেন প্রজাদের। পতিসরের প্রজাদের জন্য তাঁর ভালোবাসার কমতি ছিল না। তাই ছিন্নপত্রের এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘…অন্তরের মধ্যে আমিও যে এদেরই মত দরিদ্র সুখদুঃখ কাতর মানুষ। এইসমস্ত ছেলেপিলে-গরুলাঙল-ঘরকন্না-ওয়ালা সরল হূদয় মানুষ প্রথম থেকে আমাকে কি ভুল-ই না জানত! …আমাকে এখানকার প্রজারা যদি ঠিক জানত, তাহলে আপনাদের একজন বলে চিনতে পারত।’ জমিদারি কার্য পরিচালনার পাশাপাশি চলত তাঁর সাহিত্যচর্চা। পতিসরে অবস্থানকালে আছে তাই তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্য রচনা। দুই বিঘা জমিসহ কথা ও কাহিনীর পুরো অংশই পতিসরে অবস্থানকালে রচিত। এ ছাড়া কাব্যগ্রন্থ চিত্রা, চৈতালী, কল্পনা, ক্ষণিকা, ছড়াছবির অনেক কবিতা এখানকার রচনা। ছোটগল্প প্রতিহিংসা, ঠাকুরদা, উপন্যাস গোরা ও ঘরে বাইরে-এর অংশবিশেষ রবীন্দ্রনাথ পতিসরে বসে লিখেছিলেন। “আমি অন্তরে অসভ্য, অভদ্র।। আমার জন্য কোথাও কি একটা ভারি সুন্দর অরাজকতা নেই? কতকগুলো খ্যাপা লোকের আনন্দমেলা নেই?” ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীর উদ্দেশে একটি চিঠিতে এই পঙ্ক্তি কটি লিখে ফেলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আর মনে হয়েছিল তাঁর যে কী বকছেন তিনি!“মানুষ কি লোহার কল যে ঠিক নিয়ম অনুসারে চলবে? মানুষের মনের এত বিচিত্র এবং বিস্তৃত কাণ্ড-কারখানা।। তার এত দিকে গতি।। এবং এত রকমের অধিকার যে এ দিকে-ও দিকে হেলতেই হবে। সেই তার জীবনের লক্ষণ, তার মনুষ্যত্বের চিহ্ন, তার জড়ত্বের প্রতিবাদ। এই দ্বিধা, এই দুর্বলতা যার নেই তার মন নিতান্ত সংকীর্ণ এবং কঠিন এবং জীবনবিহীন। যাকে আমরা প্রবৃত্তি বলি এবং যার প্রতি আমরা সর্বদাই কটুভাষা প্রয়োগ করি সেই তো আমাদের জীবনের গতিশক্তিঃ।” ভাইঝি ইন্দিরার উদ্দেশে যুবক রবির এই চিঠি ১৮৯০ সালের ১০ অক্টোবর লেখা।“আমি তো পূর্বেই বলেছি জীবনটা একটা গম্ভীর বিদ্রƒপ, এর মজাটা একটু বোঝা শক্ত।। কারণ যাকে নিয়ে মজা করা হয়, মজার রসটা সে তেমন গ্রহণ করতে পারে না। এই মনে করো দুপুর রাত্রে খাটে শুয়ে আছি, হঠাৎ পৃথিবীটা ধরে এমনি নাড়া দিলে যে কে কোথায় পালাবে পথ পায় না। মতলবটা খুব নতুন রকমের এবং মজাটা খুব আকস্মিক তার আর সন্দেহ নেই। বড়ো বড়ো সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকদের অর্ধেক রাত্রে উর্ধশ্বাসে অসম্বৃত অবস্থায় বিছানার বাইরে দৌড় করানো কি কম কৌতুক! এবং দুটো-একটা সদ্যোনিদ্রোত্থিত হতবুদ্ধি নিরীহ লোকের মাথার উপরে বাড়ির আস্ত ছাদটা ভেঙে আনা কি কম ঠাট্টা! হতভাগ্য লোকটা যেদিন ব্যাংকে চেক লিখে রাজমিস্ত্রীর বিল শোধ করছিল, রহস্যপ্রিয়া প্রকৃতি সেইদিন বসে কত হেসেছিল!” লক্ষ না করে পারি না, রবীন্দ্রনাথ এখানে রহস্যপ্রিয়া প্রকৃতির কথা বলেছেন, ঈশ্বরের কথা নয়। রবীন্দ্রমানসের স্বরূপ বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে রামমোহন রায়কে ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। কারণ, রামমোহন রায়ের সুযোগ্য উত্তরসাধক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলায় রেনেসাঁর সূচনা করেন রামমোহন এবং সমাপ্তি টানেন রবীন্দ্রনাথ।রামমোহন যেমন সত্য সন্ধানী ছিলেন তেমনি ছিলেন মানব কল্যাণে সোচ্চার। ধর্মীয় সত্যকে তিনি সন্ধান করেছেন কোরআনে, পুরানে, বাইবেলে এবং মহাপুরুষদের জীবন ও বাণীর মধ্যে। যুক্তিবাদী রামমোহন হিন্দু ধর্মের প্রতিমা পূজা ও বহুদেবতার ওপর শ্রদ্ধা হারিয়েছিলেন। কিন্তু হিন্দু ধর্মের উচ্চতর দার্শনিক সিদ্ধান্তের ওপর তাঁর আস্থা ছিল অটুট।রবীন্দ্রনাথের বাবা যেমন ছিলেন ঈশ্বরপ্রেমিক তেমনি ছিলেন হাফিজের অনুরাগী ও ভক্ত।জোড়াসাঁকোতে থাকতে রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনা যে রকম ছিল শান্তিনিকেতনে যাওয়ার পর তা কিন্তু ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছিল। বিশেষ করে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী ছাত্রদের কাছে বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে তার ধর্মীয় ভাবনায় পরিবর্তন এসেছিল। গৌতম বুদ্ধ, যীশু খ্রিস্ট, গুরু নানক প্রমুখ ধর্মগুরুর সম্মানে তিনি কবিতা ও গান রচনা ও পরিবেশন করেছেন। তাঁদের জীবন ও দর্শন সম্পর্কে আলোচনাও করেছেন। হযরত মোহাম্মদ (সা-এর জন্মদিনে শান্তি নিকেতনের মন্দিরের অনুষ্ঠানে ‘কোন আলোকে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আসো’ গানটি গাওয়া হতো।। রামমোহন ভাবুক ছিলেন, সংস্কারক ছিলেন।। শিল্পী ছিলেন না। কিন্তু তার উত্তরসাধক রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কবি ও শিল্পী। তাই নানা উৎস থেকে উপাদান সংগ্রহ করে শিল্পরূপ দেয়ার সময় তাঁর ওপর শিল্পীর ব্যক্তিজীবন ও রুচির প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।",False hm,"ঈস্টার দ্বীপ ০১ ঈস্টার দ্বীপের রহস্যভেদের গল্প বলার আগে ঈস্টারদ্বীপের রহস্যের গল্প বলাই বোধ করি ভালো। ঈস্টার দ্বীপ প্রশান্ত মহাসাগরে ছোট্ট একটি দ্বীপ, এ কথা আগেই বলেছি। চিলি থেকে প্রায় ২,৩০০ মাইল পশ্চিমে, আর পিটকেয়ার্ন দ্বীপপুঞ্জ থেকে ১,৩০০ মাইল পূর্বে অবস্থিত এই দ্বীপটি বর্তমানে চিলির অন্তর্ভুক্ত, স্থানীয়রা একে ডাকে ইজলা দে লা পাস্কুয়া নামে। ঈস্টারের অন্যতম দর্শনীয় বস্তু, যা একসময় রীতিমতো রহস্যামোদীদের খোরাক ছিলো, এবং যা থেকে এরিক ফন দানিকেন এবং থর হাইয়ারডালের মতো ""গবেষক""রা জন্ম দিয়েছেন বিচিত্র সব তত্ত্বের, হচ্ছে এর সৈকত জুড়ে স্থাপিত বিশালকায় সব পাথরের মূর্তি। মূর্তিগুলির উচ্চতা ৫ মিটার থেকে ১২ মিটার, ওজন ১০ থেকে ২৭০ টন। সম্পূর্ণ-অসম্পূর্ণ প্রায় নয়শো মূর্তি সারা দ্বীপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ঈস্টারের আদিবাসীদের কোন ক্রেন ছিলো না, ছিলো না চাকা, যন্ত্র, ধাতব অস্ত্র, ভারবাহী পশু, এক মানুষের পেশীশক্তি ছাড়া অন্য কোন যান্ত্রিক শক্তি তারা কাজে লাগায়নি এই বিশাল মূর্তিগুলি খোদাই, পরিবহন এবং স্থাপনের কাজে। ওলন্দাজ নাবিক ইয়াকব রগেভেন ১৭২২ সালের ঈস্টার উৎসবের দিনে (৫ এপ্রিল) দ্বীপটি আবিষ্কার করেন। তিনি যখন দ্বীপে পা দেন, গোটা দ্বীপ জুড়ে রোগাভোগা মানুষ আর সরু কিছু গাছ ছাড়া আর যা তিনি দেখেছিলেন, তা হচ্ছে এই মূর্তিগুলি। ঈস্টারবাসীদের নৌকাগুলির বিশদ বর্ণনা রগেভেন দিয়েছিলেন, তাঁর বক্তব্যমতে সেগুলি ছিলো রীতিমতো পলকা এবং বিপদজনক, বড়জোর দু'জন লোক সেই ফুট দশেক লম্বা নৌকায় বসতে পারে, পাতলা কিছু লতা দিয়ে সে নৌকার তক্তা একটা আরেকটার সাথে জোড়া লাগানো। যে দ্বীপের লোকজন ভালো একটা নৌকা পর্যন্ত বানাতে পারে না, তারা কী করে এমন বিশাল সব মূর্তি দাঁড়া করালো, তা রগেভেন বুঝতে পারেননি। তিনি আন্দাজ করেছিলেন, এসব মূর্তি দাঁড় করাতে গেলে মজবুত কাঠ আর মোটা দড়ি লাগবে, যার কোনটাই ঈস্টার দ্বীপে সে সময় ছিলো না। শুধু তা-ই না, যে দ্বীপে লোকজনের ভালো নৌকা নেই, সে দ্বীপে বসতি কিভাবে গড়ে উঠলো? কী করে, কখন, কোত্থেকে, কারা এসে ঈস্টারে প্রথম বসতি স্থাপন করেছিলো? তারচেয়ে আরো সূক্ষ্ম চিন্তার উদয় হয় ঈস্টারের ভূপ্রাকৃতিক চারিত্র্য বিশ্লেষণ করলে। এর প্রাকৃতিক সম্পদ ছড়িয়েছিটিয়ে আছে গোটা দ্বীপ জুড়ে: খোদাইপাথরের খনি (কোয়্যারি) আছে পূর্ব প্রান্তে, যন্ত্র তৈরির পাথর দক্ষিণপশ্চিমে, মাছ ধরার জন্য সেরা সৈকত উত্তরপশ্চিমে, সেরা আবাদি জমি দক্ষিণে। এই সমস্ত সম্পদ কেন্দ্রীভূত করে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন বেশ জটিল কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সেটা কী করে গড়ে উঠলো এই ন্যাড়া ন্যাংটো দ্বীপে? এইসব মূর্তি খোদাই, বহন, স্থাপনের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন বিভিন্ন কাজে পারদর্শী বিপুল মানবসম্পদ, তারা এই রুক্ষ দ্বীপে কী খেয়ে বেঁচেছিলো, যদি এক মুরগি আর পোকামাকড় ছাড়া আর কোন জীবজন্তু দেখে না থাকেন রগেভেন? যদি জটিল কোন সামাজিক ব্যবস্থা এখানে গড়েই উঠে থাকে, তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছিলো? রুক্ষ, ন্যাড়া, অনুর্বর ঈস্টার দ্বীপে ঘিরে এই ""রহস্যের"" মনমতো উত্তর যোগানোর জন্য পরবর্তী সময়ের ইয়োরোপিয়রা বিভিন্ন চমকপ্রদ তত্ত্ব হাজির করেছেন। ""অসভ্য"" পলিনেশিয়রা এমন চমৎতার মূর্তি খোদাই বা স্থাপন করতে পারে, এ কথা মেনে নিতে নারাজ ছিলো অনেকেই। নরওয়ের পরিব্রাজক থর হেয়ারডাল, যিনি স্বীকার করতে চাননি যে পলিনেশিয়রা এশিয়া থেকে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ঈস্টারে বসতি স্থাপন করতে পারে, এক তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন যে দক্ষিণামেরিকার আদিবাসীরাই পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ঈস্টারে বসতি গড়ে তুলেছিলো, আর এ কাজ যেহেতু তারা করতে পেরেছিলো, নিশ্চয়ই অতীতের কোন সমৃদ্ধ জাতি আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে দক্ষিণামেরিকায় সভ্যতার গোড়াপত্তন করেছিলো! থর হেয়ারডালের বিখ্যাত কন-টিকি অভিযান, নল-খাগড়ার ভেলায় চড়ে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ির চেষ্টা এ তত্ত্বকেই প্রতিষ্ঠা করার জন্য। ঈস্টারের একটি সাধারণ ""মোয়াই"", মাঝপথে ফেলে রাখা সুইস শৌখিন প্রত্নতাত্ত্বিক এবং পার্থিব সভ্যতার অপার্থিব উৎস তত্ত্বের প্রবক্তা এরিক ফন দানিকেন সরাসরি দাবি করেছিলেন, ঈস্টারের মূর্তিগুলি ভিনগ্রহের কোন উন্নততর বুদ্ধির জীবের তৈরি, যারা এককালে ঈস্টারে আটকা পড়েছিলো, সময় কাটানোর জন্য এসব মূর্তি গড়েছিলো তাদের উন্নততর যন্ত্রপাতি দিয়ে, তারপর উদ্ধার পেয়ে দ্বীপ ছেড়ে চম্পট দিয়েছিলো। পেছনে পড়েছিলো তাদের মূর্তিগুলি, আর ঈস্টারের রোগাভোগা লোকজন। ঈস্টারের রহস্য ভেদ হয়েছে বেশ ভালোমতোই, তার গল্প শুরুর আগে ঈস্টারের ইতিহাস নিয়ে কিছু বলবো। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জগুলি সাধারণত প্রবাল দ্বীপ, অথবা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট। ঈস্টার দ্বীপ দ্বিতীয় কিসিমের, ত্রিকোণাকৃতির এই দ্বীপটির তিন কোণায় রয়েছে সাগর থেকে উঠে আসা তিনটি মৃত আগ্নেয়গিরি। উত্তর কোণে তেরেভাকা, দুই লক্ষ বছর আগে যার অগ্ন্যুৎপাতে ঈস্টারের ৯৫% ভূমি তৈরি হয়েছে, দক্ষিণ কোণে সবচেয়ে প্রাচীন আগ্নেয়গিরি পোইকে, আর দক্ষিণ পশ্চিমে রানো কাউ। পলিনেশিয়ার অন্যান্য দ্বীপের তুলনায় ঈস্টার অনেক সমতল, আয়তনেও ক্ষুদ্র, মোটে ৬৬ বর্গমাইল, অবস্থান ২৭ ডিগ্রী দক্ষিণ অক্ষাংশে। আগ্নেয় ভস্ম আর ক্রান্তীয় অবস্থানের কারণে ঈস্টারের মাটি নিঃসন্দেহে এককালে যথেষ্ঠ ঊর্বর ছিলো। তবে বসতি স্থাপনকারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এমন চমৎকার পরিবেশ অতোটা সুবিধার না-ও হতে পারে। ঈস্টারের আদি বসতিদাররা এসেছে উত্তরপশ্চিম দিক থেকে, যারা মূলত বিষুবীয় অঞ্চলের লোক। তাদের, তাদের শস্য ও পশুপাখির চোখে ঈস্টার যথেষ্ঠ ঠান্ডা একটা জায়গা বলেই বিবেচিত হয়েছিলো, সন্দেহ নেই। এর অন্যতম প্রমাণ, অন্যান্য পলিনেশিয় দ্বীপের সাথে ব্যতিক্রমানুসারে ঈস্টারে নারিকেল গাছ ছিলো না, পরবর্তীতে ইয়োরোপিয়দের হানাদারির পরই কেবল ঈস্টারে নারিকেল গাছ রোপণ করা হয়েছিলো, এবং দেখা গেছে, ঈস্টারের আবহাওয়া নারিকেল গাছের জন্য অনুকূল নয়। ঈস্টারের চারপাশের সাগরও প্রবাল প্রাচীর গড়ে ওঠার মতো ঊষ্ণ নয়, যে কারণে পলিনেশিয় দ্বীপগুলির মতো ঈস্টারে প্রবাল, এবং প্রবালপ্রাচীর নির্ভর ঝিনুক বা মাছ নেই। ঈস্টারের চারপাশের সাগরে মোটে ১২৭ প্রজাতির মাছ পাওয়া গেছে, যা কি না ফিজিতে হাজারের ওপরে। আরো একটা সূক্ষ্ম সমস্যা, যা চট করে চোখে পড়ে না, সেটা হচ্ছে, ঈস্টার আক্ষরিক অর্থেই ""বায়ুগ্রস্ত"" দ্বীপ, ওখানে হাওয়ার বেগ যথেষ্ঠ বেশি, যে কারণে ঠিকমতো পেকে ওঠার আগেই ঈস্টারে রুটিফল গাছের ফল ডাল ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে যায়! কোন সন্দেহ নেই, প্রাচীন বসতিদারদের জন্য এই জায়গা কমবেশি ঝামেলারই ছিলো। মোটের ওপর, এ সিদ্ধান্তে আসা যায় যে ঈস্টারে খাবারদাবার অন্যান্য দ্বীপের তুলনায় কম ছিলো। গোদের ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে বলা যেতে পারে ঈস্টারে মিষ্টি পানির সরবরাহ। বছরে গড়ে ১২৫০ মিমি বৃষ্টিপাত হয় ঈস্টারে, খুব একটা কম নয়, কিন্তু পলিনেশিয়ার তুলনায় বেশ কম। যা বৃষ্টি হয়, তা ঈস্টারের আগ্নেয় মাটিতে চুঁইয়ে চলে যায় নিচে। ঈস্টারে ছোট্ট, অনিয়মিত একটা ঝর্ণা আছে কেবল, আর আছে কিছু কুয়ো। মিষ্টি পানির জন্যে যে ঈস্টারের আদিবাসীদের যথেষ্ঠ খাটতে হতো, তাতে কোন সন্দেহ নেই। হেয়ারডাল নিজের সংস্কারের ব্যাপারে গোঁ ধরে ছিলেন বলে ঈস্টারের আদিবাসীদের উৎস নিয়ে অনেক প্রমাণ ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রথম কথাই হলো, ঈস্টারের মূর্তিগুলির আদল পলিনেশিয়, এবং এমন ধাঁচের মূর্তি আরো দ্বীপে পাওয়া গেছে, কেবল আকারে অনেক ছোট, এ-ই যা। ঈস্টারবাসীদের মাছ ধরার বঁড়শি, পাথরের যন্ত্রপাতি, হারপুন, প্রবালের তৈরি উকো, সবই মেলে পলিনেশিয়দের সাথে। শুধু তা-ই না, ক্যাপ্টেন কুক ১৭৭৪ সালে যখন ঈস্টারে কয়েকদিন ছিলেন, তখন তাঁর পাকড়াও করা এক তাহিতিবাসী দিব্যি কথা বলেছে ঈস্টারের লোকজনের সাথে। পরবর্তী গবেষণায় দেখা গেছে, ঈস্টারের ভাষা পূর্ব পলিনেশিয় ঘরানার, যাকে বলা হয় আদি মাঙ্গারেভিয়। শুধু তা-ই না, আদি ঈস্টারবাসীদের খুলির গড়ন মেলে পলিনেশিয়দের সাথে, কঙ্কাল থেকে পাওয়া ডিএনএ থেকে পরিষ্কার দেখা গেছে, পলিনেশিয়দের সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎ নয়টি বিশেষ বেস-পেয়ারের লুপ্তি আর তিনটি বিশেষ বেস-পেয়ারের প্রতিস্থাপন সেখানে আছে। এই বৈশিষ্ট্য দক্ষিণামেরিকার আদিবাসীদের মধ্যে নেই, কাজেই হেয়ারডালের হাইপোথিসিস যে রগে রগে ভুল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাছাড়া ঈস্টারের ফসল, অর্থাৎ কলা, টারো, মিষ্টি আলু, আখ আর কাগুজে মালবেরি, এগুলি সবই পলিনেশিয় মাল। ঈস্টারের একমাত্র গৃহপালিত প্রাণী হচ্ছে মুরগি, যা কি না পলিনেশিয়া তথা এশিয়া থেকে ছড়িয়েছে। পলিনেশিয় বিস্তারক বলা হয় মানুষের ইতিহাসে নৌযাত্রার সবচেয়ে চমকপ্রদ অধ্যায়। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে পূর্বদিকে কয়েক হাজার বছর ধরে মানুষের বসতি বিস্তৃত হয়েছে, পদ্ধতিটিকে সাধারণত প্রজাতিবিস্তারের ভাষায় বলা হয় আইল্যান্ড হপিং, আমি এর বাংলা করতে চাই দ্বীপতিড়িং। দ্বীপতিড়িং ব্যাপারটা সহজে বোঝা যায়, যদি এর পেছনে যথেষ্ঠ সময়কে বিবেচনা করা হয়। ঝড়ে উপড়ে পড়া নারিকেল গাছ, আর সেই গাছে আশ্রয় নেয়া ইঁদুর, পাখি ও পোকামাকড় যে শয়ে শয়ে কিলোমিটার দূরত্ব সাগরে ভাসতে ভাসতে অতিক্রম করে কোন দ্বীপে গিয়ে ঠেকে বংশবিস্তার করতে পারে, এ রীতিমতো পরীক্ষিত সত্য। মানুষও প্রাগৈতিহাসিককালে এমনই ঘটনার শিকার হয়ে মূল ভূখন্ড থেকে কোন দ্বীপে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে, ঐতিহাসিকরা এমনই অনুমান করে থাকেন। তবে পলিনেশিয় বিস্তার এমন কোন অঘটনের শিকার হয়ে ঘটেনি, ঝড়ের কবলে পড়ে পথ হারিয়ে সাগরে ভাসতে ভাসতে কোন দ্বীপে গিয়ে ঠেকেনি অতীতের পলিনেশিয়রা, বরং রীতিমতো পরিকল্পিত অভিযান চালিয়ে তারা প্রশান্ত মহাসাগরের প্রতিটি বাসযোগ্য দ্বীপে বসতি স্থাপন করেছে। ১২০০ খ্রিষ্টপূর্ব সাল পর্যন্ত এশিয়া থেকে পূর্বদিকে দ্বীপগুলিতে বিস্তার থিতু ছিলো নিউগিনির পূর্বে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত। এ সময়ে কৃষিজীবী এবং নাবিক একটি জাতি (ধারণা করা হয় নিউগিনির উত্তরপূর্বে বিসমার্ক দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসী এঁরা) অতি দ্রুত পূর্ব দিকের প্রায় হাজারখানেক মাইল সমুদ্র অতিক্রম করে ফিজি, সামোয়া ও টোঙ্গায় বসতি স্থাপন করে। এদেরকেই চিহ্নিত করা হয়েছে পলিনেশিয়দের পূর্বপুরুষ হিসেবে। এদের সনাক্ত করা হয় একটি নির্ভুল নিদর্শন দিয়ে, যাকে বলা হয় লাপিতা মৃৎকর্ম, একটি বিশেষ ধরনের মৃৎপাত্র তৈরির ধরন। পলিনেশিয়দের না ছিলো ধাতব যন্ত্রপাতি, না ছিলো কম্পাস বা চার্ট, কিন্তু নৌযাত্রায় তারা ছিলো অসামান্য কুশলী জাতি। পেছনে ফেলে আসা বিভিন্ন নিদর্শন দিয়ে পলিনেশিয়দের বিস্তারের যাত্রাকে মোটামুটি নিখুঁতভাবে পুনর্চিত্রায়ন করা হয়েছে। ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ, অর্থাৎ মোটামুটি আড়াই হাজার বছরে পলিনেশিয়রা হাওয়াই, নিউজিল্যান্ড ও ঈস্টার দ্বীপের মধ্যবর্তী ত্রিকোণাকৃতি মহাসাগরের সব দ্বীপে বসতি গড়ে তোলে। কেন ঝড়ের খেয়ালে পথ হারানো নিরুদ্দেশ যাত্রা নয়, কেন পরিকল্পিত অভিযাত্রা, তার সবচেয়ে বড় যুক্তি হচ্ছে এর সবই ছিলো পশ্চিম থেকে পূবে, অর্থাৎ স্রোত ও বাতাসের বিপরীতে। শস্য আর গৃহপালিত পশুর উপস্থিতিও প্রমাণ করে, এ অভিযানগুলি ছিলো বসতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে, যেখানে সাথে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বসতিতে টিকে থাকার জন্যে প্রয়োজনীয় মূল্যবান খাবারের যোগান। স্রোত আর বাতাসের গতি বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হয়, ঈস্টারের বসতি স্থাপনের জন্যে মাঙ্গারেভা, পিটকেয়ার্ন আর হেন্ডারসন দ্বীপকে মাঝসোপান হিসেবে ব্যবহার করেছিলো আদি পলিনেশিয়রা। ঈস্টারের ভাষার সাথে মাঙ্গারেভার ভাষার মিল, ঈস্টারে ব্যবহৃত পাথুরে যন্ত্রের সাথে মাঙ্গারেভা আর পিটকেয়ার্নে ব্যবহৃত যন্ত্রের মিল, আর ঈস্টারে পাওয়া কঙ্কালের খুলির সাথে হেন্ডারসনে পাওয়া খুলির সাদৃশ্য দেখে এ অনুমান আরো জোরদার হয়। ১৯৯৯ সালে পুনর্নির্মিত পলিনেশিয় ধাঁচের ক্যানো হোকুক'আ ১৭ দিনে মাঙ্গারেভা থেকে ঈস্টারে এসে পৌঁছেছিলো। প্রশ্ন জাগতে পারে, একটা ক্ষুদে ক্যানোতে চড়ে আন্দাজে পূর্বদিকে বেরিয়ে পড়ে কী করে একদল লোক মাত্র নয় মাইল চওড়া একটা দ্বীপ আবিষ্কার করে ফেললো? এটা কি একটু বেশি আন্দাজ হয়ে যাচ্ছে না? তেরোশো মাইল দূর থেকে রওনা দিয়ে মোটে নয় মাইল চওড়া একটা অজানা দ্বীপ আবিষ্কার? সম্ভব। স্থলবাসী সামুদ্রিক পাখি এ কাজটি সহজ করে দেয়। ঈস্টারে একসময়ে প্রশান্ত মহাসাগরের সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক পাখিগুলির আবাস ছিলো (পরবর্তীতে আবিষ্কৃত কঙ্কাল থেকে আবিষ্কৃত তথ্য), যারা খাবারের সন্ধানে নিজের বাসা ছেড়ে একশো মাইল দূরত্ব পর্যন্ত পাড়ি দেয় কখনো কখনো। সেক্ষেত্রে সাগরের বুকে নয় মাইলের ছোট্ট একটা বিন্দু নয়, বরং দুশো মাইল ব্যাসের একটি বেশ ডবকা এলাকা খুঁজে পাবার কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়হিসাব করে দেখলাম, মোটামুটি নয় ডিগ্রী এলাকা। ঈস্টার দ্বীপে চলতি গল্প, যার অনেকগুলিই নিবন্ধিত হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীতে, অনুসারে হোতু মাতু'আ (বড় বাবা) নামে এক সর্দার দু'টি ক্যানোতে চড়ে তাঁর দুই বউ, ছয় ছেলে, আর তাদের বালবাচ্চাসহ ঈস্টারে এসে হাজির হন। এই গল্পের সত্যাসত্য যাচাই করা মুশকিল, কারণ ঘটনার হাজার বছর পর কতটা আসল আর কতটা রং চড়ানো তা বোঝা প্রায় অসম্ভব। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, আবিষ্কৃত, অধিকৃত এবং বাসযোগ্য হবার পর কি আগের দ্বীপগুলির সাথে ঈস্টারের যোগাযোগ ছিলো কি না১। প্রত্নতাত্ত্বিক রজার গ্রীন ঈস্টারে ব্যবহৃত পাথুরে যন্ত্র, আর বসতি স্থাপনের কয়েকশো বছর পর মাঙ্গারেভার কিছু যন্ত্রের মধ্যে সাদৃশ্য দেখিয়ে দাবি করছেন, যোগাযোগ ছিলো, যেমনটা ছিলো পলিনেশিয়ার বেশির ভাগ ""মূলদ্বীপ"" ও ""বসতিদ্বীপের"" মধ্যে। কিন্তু ঈস্টারে কুকুর, শূকর এবং কিছু পলিনেশিয়ায় চলতি কিছু শস্যের অনুপস্থিতি নির্দেশ করে উল্টোটাই। পরবর্তীতে যদি যোগাযোগই থাকবে, তাহলে পলিনেশিয়দের সংস্কৃতিতে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এ শস্য ও প্রাণীগুলি ঈস্টারে থাকার কথা, বরং পরের যাত্রাদেই এদের চলে আসার কথা, যদি হোতু মাতু'আ ইতিমধ্যে এদের নিয়ে না আসেন। আরেকটি জোরালো যুক্তি হচ্ছে, প্রতিটি দ্বীপের পাথরেরই একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংযুক্তি আছে, সেটি সেই দ্বীপের পরিচয় বহন করে। মার্কেসাস, পিটকেয়ার্ন, মাঙ্গারেভা, হেন্ডারসন আর সোসাইটিজ দ্বীপপুঞ্জে এরকম অহরহ এক দ্বীপের জিনিস অন্য দ্বীপে পাওয়া গেছে, কিন্তু ঈস্টারের পাথর অন্য কোথাও, কিংবা অন্য কোন জায়গার পাথুরে যন্ত্র ঈস্টারে পাওয়া যায়নি। এ থেকে অনুমান করা ভুল হবে না, যে হোতু মাতু'আ-র পদার্পণের পর প্রায় হাজার খানেক বছর ঈস্টার দ্বীপ সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো, ইয়াকব রগেভেন তার কূলে জাহাজ ভেড়ানোর আগ পর্যন্ত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হোতু মাতু'আ বা তিনি যিনিই হোন, ঈস্টারে এসেছিলেন কবে? এ ব্যাপারে বেশ বড় ধরনের বিতর্ক আছে। প্রকাশিত বিভিন্ন প্রবন্ধ ও গ্রন্থে ৩০০-৪০০ খ্রিষ্টাব্দ সময়ের মধ্যে ঈস্টার দ্বীপে বসতি স্থাপন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে, যার ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়, গ্লটোক্রোনোলজি, বা ভাষার বৈভিন্ন্যের সূত্র ধরে ব্যবহৃত কালনির্ণয় পদ্ধতি, আহু তে পেউ (স্থাপিত মূর্তির মঞ্চগুলিকে আহু বলা হয়, সারা দ্বীপ জুড়ে বিভিন্ন আহু ছড়িয়ে আছে, প্রতিটি আহু ও মূর্তির আলাদা নামও আছে), পোইকে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ আর এককালের হ্রদের থিতিয়ে পড়া পলিতে পাওয়া তিনটি চারকোলের নমুনার রেডিওকার্বন পদ্ধতিতে কালনির্ণয়, যাকে মানুষের হাতে বন ভস্মীকরণের নমুনা হিসেবে ধরা হচ্ছে। এ সূত্রগুলিকে ক্রমাগত প্রশ্নের সম্মুখীন করা হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। কারণ, গ্লটোক্রোনোলজি দিয়ে নির্ণীত সময়ের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ, বিশেষ করে ঈস্টারের ভাষার ক্ষেত্রে, কারণ এক্ষেত্রে দোভাষী হিসেবে কাজ করেছে তাহিতি ও মার্কেসাসের অধিবাসীরা, যাদের মাধ্যমে সহজেই উপাদানগুলির দূষণ ঘটা সম্ভব। চারকোলগুলি যে পদ্ধতিতে কালনির্ণয় করা হয়েছে, সে পদ্ধতিটি এখন পুরনো এবং কম নির্ভরযোগ্য হিসেবে পরিগণিত, আর এই অঙ্গারের সাথে মানুষের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করা যায় না, দাবানলে বা বজ্রপাতেও অনেক সময় অঙ্গার পাওয়া যায়। পরিবর্তে পুরাপ্রাণীতাত্ত্বিক ডেভিড স্টেডম্যান এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউদিও ক্রিস্তিনো ও প্যাট্রিশিয়া ভার্গাস প্রস্তাব করেছেন আনুমানিক ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের কথা। তাঁদের অনুমানের ভিত্তি হচ্ছে ঈস্টারের সবচেয়ে প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান , আনাকেনা সৈকতে পাওয়া কাঠের চারকোল আর মানুষের খাওয়া কাছিমের হাড়। ঈস্টার দ্বীপে ক্যানো ভেড়ানোর মতো খুব বেশি সৈকত নেই, গোটা দ্বীপের চারপাশটাই খুব গভীর, অল্প দুয়েকটা জায়গা বাদে, আনাকেনা তার মধ্যে ক্যানো ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে ভালো সৈকত, ধারণা করা যেতে পারে প্রথম অভিযাত্রীরা এখানেই প্রথম নৌকো ভিড়িয়ে থিতু হয়েছিলো। যে পদ্ধতিতে কালনির্ণয় করা হয়েছে, তা একেবারেই নতুন ও নিখুঁত প্রযুক্তি, যাকে বলা হয় অ্যাক্সিলারেটর ম্যাস স্পেকট্রোমেট্রি বা এএমএস। এই কাল নির্ণয় পদ্ধতিতে এক দফা শুদ্ধিও চালানো হয়েছে, কাছিমের মতো সামুদ্রিক জীবের হাড়ের রেডিওকার্বন ডেটিঙের জন্য মেরিন রিজারভয়ার কারেকশন। কিন্তু এই নিদর্শনগুলিকে শুরুর দিককার বলে ধরে নেয়া হবে কেন? এগুলি কি বসতি স্থাপনের ছয়শো বছর পরের নিদর্শন হতে পারে না? পারে, কিন্তু কাছিমের হাড়ের সাথে একই বয়সী এমন কিছু সামুদ্রিক পাখির হাড় পাওয়া গেছে, যা খুব দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে গেছে ঈস্টার এবং প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যান্য দ্বীপে, এবং মানুষর পদার্পণই এর একমাত্র কারণ বলে ধরা হয়। এ কারণে ৯০০ খ্রিষ্টাব্দকেই ঈস্টারের নির্জনতাভঙ্গের সময় বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। ১ এ প্রসঙ্গে আমার নিজস্ব কিছু বিশ্লেষণ আছে, সম্পূর্ণ অন্য প্রসঙ্গের আলোকে যদিও। তবে এ নিয়ে এক দফা কপচানোর সুযোগ ছাড়ছি না।",False hm,"পাকিস্তানে লাল মসজিদ সংকট ইসলামাবাদের অদূরেই বাজার এলাকায় এই লাল মসজিদ ইসলামাবাদের হোমড়াচোমড়াদের মনপসন্দ; প্রেসিডেন্ট, সেনাপতি, প্রধানমন্ত্রীরা সেখানে যাওয়াআসা করতেন। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক সেনানায়ক জিয়াউল হক লাল মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, মুখে জিহাদের তুবড়ি ছোটানো মাওলানা আবদুল্লাহর সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে জানা যায়। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় তখন, আফগানিস্তানে মুজাহিদিনদের সাথে দখলদার সোভিয়েত সেনাদের সংঘর্ষ তখন তুঙ্গে, জিহাদের বাণী ও বুলি তখন জনপ্রিয় এবং স্বীকৃত। লাল মসজিদের কাছেই অবস্থিত পাকিস্তানের আইএসআই সদর, আইএসআইয়ের লোকজন সেখানে যাতায়াত করেন বলেও জানা যায়। সেই সময় থেকেই লাল মসজিদ কড়া শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে নাম করেছে। আশেপাশের মাদ্রাসায় কয়েক হাজার নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থী প্রতিপালন করে এই মসজিদ। নব্বই এর দশকের শেষের দিকে মাওলানা আবদুল্লাহ এই মসজিদেই নিহত হয়। তার দুই পুত্র, মাওলানা আব্দুল আজিজ ও মাওলানা আব্দুল রশিদ গাজি তার পর থেকে লাল মসজিদের সবকিছুর দায়িত্ব গ্রহণ করে। আল কায়দার অনেক বাঘা নেতার সাথে যোগাযোগের কথা এই দুই ভাই স্বীকার করেছে। এ সবই সেপ্টেম্বর ১১, ২০০১ এর আগের কথা, যখন জিহাদ পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে স্বীকৃত একটি কৌশল ছিলো। ৯/১১ এর পর লাল মসজিদ সুর পাল্টে ফেলে, উগ্রপন্তী ইসলামী দলগুলির সাথে কোন যোগসূত্রের কথা অস্বীকার করে কর্তৃপক্ষ। তবে আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদের ব্যাপারে তারা সোচ্চার এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফকে তারা খোলাখুলি নিন্দা জানিয়ে আসছে। পারভেজ মুশাররফ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়ার পর লাল মসজিদ মুশাররফকে হত্যার ব্যাপারে কথাবার্তার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এসব বক্তিমাদাতাদের মধ্যে জৈশ-এ-মুহাম্মদ নেতা মাওলানা মাসুদ আজহারও রয়েছে, যার দলের অনেকে পরবর্তীতে মুশাররফের ওপর হামলার সাথে জড়িত ছিলো বলে প্রমাণিত হয়েছে। লাল মসজিদের ছাত্ররা বেশিরভাগই উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলি থেকে আগত, আব্দুল রশিদ গাজি প্রকাশ্যে জানিয়েছে, মসজিদের বিরুদ্ধে কিছু করা হলে ওয়াজিরিস্তান তালেবান তাদের হয়ে উপযুক্ত জবাব দেবে। ২০০৫ সালে লন্ডনে আত্মঘাতী বোমা হামলার সাথে জড়িত শেহজাদ তানভীরের সাথে লাল মসজিদের যোগসূত্র নিয়ে তদন্ত করতে গেলে মসজিদ সংলগ্ন জামেয়া হাফসা মাদ্রাসার ছাত্রীরা লাঠি হাতে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয়। এদিকে মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্টরা পাকিস্তানে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ উগ্রপন্থীদের ব্যাপারে সক্রিয়কণ্ঠ, ধারণা করা হয় এসব উগ্রপন্থীদের গোপনে কোথাও বন্দী করে রেখেছে পাক আইনপ্রয়োগকারীবাহিনী। মুহাম্মদ (সাঃ) কে ব্যঙ্গ করে আঁকা কার্টুন প্রসঙ্গে ড্যানিশদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভেও লাল মসজিদ অগ্রণী ভূমিকা প্রদর্শন করে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে নির্মিত বিভিন্ন মসজিদের অংশবিশেষ ভাঙা শুরু করলে লাল মসজিদ ও জামেয়া হাফসা মাদ্রাসা সর্বাত্মক প্রতিরোধের ডাক দেয়। তারা কর্তৃপক্ষকে মসজিদ এলাকায় প্রবেশে বাধা দেয় এবং একটি পার্শ্ববর্তী শিশু পাঠাগার দখল করে নেয়। এ কাজে জামেয় হাফসা মাদ্রাসার ছাত্রীদের কালাশনিকভ হাতে সক্রিয় হতে দেখা যায়। ২৪ ঘন্টা সশস্ত্র প্রহরার মাধ্যমে তারা কর্তৃপক্ষকে মোকাবেলা করার ঘোষণা দিলে কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু চাপের মুখে কর্তৃপক্ষ মসজিদের ভেঙে দেয়া অংশ পুনর্নির্মাণ করে, এবং লাল মসজিদ কর্তৃপক্ষ শহরের আরো ছ'টি মসজিদের ভেঙে দেয়া অংশও পুনর্নির্মাণের দাবি জানায়। এপ্রিল মাসে মাওলানা আব্দুল আজিজ লাল মসজিদের ভেতরে একটি আদালত বসায় এবং ইসলামাবাদকে ইসলামী শাসনের আওতায় নিয়ে আসতে ঘোষণা দেয়। জুন মাসে মাদ্রাসার ছাত্ররা একটি আকুপাংচার ক্লিনিক থেকে সাত চীনাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়, তাদের মতে এ চীনারা পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত ছিলো। জুনের ১৪ তারিখে মাওলানা আজিজ মুশাররফ সরকারকে উৎখাত করে পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের ব্যাপারে লাল মসজিদের উদ্যোগের কথা টেলিভিশনকে দৃঢ়কণ্ঠে জানায়। জুলাইয়ের ৩ তারিখে প্রায় দেড়শো ছাত্রছাত্রী আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠি হাতে পার্শ্ববর্তী পুলিশ চেকপোস্টে হামলা করে, এবং বেশ কিছু অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে চার সরকারী কর্মচারীকে অপহরণ করে। এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে মাদ্রাসা ছাত্রদের সংঘর্ষ শুরু হয়। কালাশনিকভ হাতে এবং গ্যাসমুখোশ মুখে ছাত্ররা নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে গুলি বিনিময় শুরু করে এবং আশেপাশের সরকারী ভবন ও রাস্তার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। লাউডস্পীকারে নিরাপত্তারক্ষীদের ওপর আত্মঘাতী হামলার জন্য আহ্বান জানানো হয়। সেদিন এ সংঘর্ষে একজন সৈন্য, একজন টিভিক্যামেরাম্যান ও একজন পথচারী সহ ১১ জন নিহত হয়। মসজিদ এলাকায় বালির বস্তার আড়ালে সশস্ত্র ছাত্রদের ""জিহাদ!"" বলে হুঙ্কার দিতে শোনা গেছে। পরদিন লাল মসজিদ এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়, এবং গুলি বিনিময় চলতে থাকে। পরে এক পর্যায়ে বোরখা পরে মেয়ে সেজে পলায়নের সময় অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আজিজ নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে ধরা পড়ে। তার ভাই উপাধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল রশিদ গাজি এখনো মসজিদের ভেতরে প্রতিরোধের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ১২২১ জন ছাত্রছাত্রী সেদিন আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু পরবর্তীতে ৬০ জনের মতো গোঁড়া জিহাদী বাকি ছাত্রদের আত্মসমর্পণ করতে বাধা দেয় এবং প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে বলে। স্বরাষ্ট্র সচিব কামাল শাহ অভিযোগ করেছে, উগ্রপন্থী ছাত্ররা নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। শাহ আরো জানায়, জঙ্গিরা মসজিদের ভেতরে মাইন পুঁতে রেখেছে। ওদিকে মাওলানা আজিজের স্ত্রী উমে হাসান জানিয়েছে, ৩০ জন নারী সহ প্রায় ৮০ জন মারা গেছে মসজিদের ভেতরে। উমে হাসান আরো জানায়, ছাত্রীরা মসজিদের ভেতরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারী ভাষ্যমতে, মসজিদের ভেতরে কতজন মারা গেছে তা তাদের জানা নেই। কামাল শাহ জানিয়েছে,নিরীহ ছাত্ররা আত্মসমর্পণ করলে তাদের চলে যেতে দেয়া হবে, কিন্তু মোল্লা এবং তার জঙ্গি স্যাঙ্গাৎদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। জুলাই ৫ তারিখ আজিজকে আদালতের সামনে হাজির করা হয় হত্যা ও উগ্রপন্থার অভিযোগসহ, আদালত তাকে সাতদিনের জন্যে আটকাদেশ দেন। আজিজ জানিয়েছে, ৬০০ নারী ও শিশু সহ প্রায় ৮৫০ জন এখনো মসজিদের ভেতরে রয়েছে। আজ মসজিদ থেকে পালানোর জন্য কিছু ছাত্র সংঘবদ্ধ আক্রমণ শুরু করলে ঘিরে থাকা সৈন্য ও রেঞ্জারদের সাথে আবারও সংঘর্ষ শুরু হলে মৃতের সংখ্যা ২১ এ পৌঁছায়। উপাধ্যক্ষ মাওলানা গাজি জানিয়েছে, তাকে গ্রেফতার বা হয়রানি না করলে সে মসজিদ এলাকা ত্যাগ করতে রাজি আছে, অন্যথায় আমৃত্যু এ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সে বদ্ধপরিকর। সরকারী দূত চৌধরী সুজাত হোসেইনকে মাওলানা গাজি জানিয়েছে, তারা আত্মসমর্পণ করবে যদি গাজিকে সপরিবারে নিরাপত্তা দেয়া হয়, এবং হগাজি তার অসুস্থ মায়ের সেবা করার জন্য থেকে যেতে চায়। তথ্য উপমন্ত্রী তারিক আজিম খান বলেছে, নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে হবে গাজিকে। সূত্রঃ সৈয়দ শোয়েব হাসান, বিবিসি নিউজ। পিটার ওয়াকার, গার্ডিয়ান আনলিমিটেড। খালিদ কাইয়ুম ও খালিক আহমেদ, ব্লুমবার্গ.কম।",False ij,"পাকিস্থানে 'মুজরা' নিষিদ্ধ হওয়ায় লাহোরে নর্তকীদের ধর্মঘট ও অন্যান্য প্রসঙ্গ। মুজরা নৃত্যরত একজন তাওয়াইফ বা বাঈজী। তাওয়াইফ বা বাঈজীর ইংরেজী প্রতিশব্দ করা যায় courtesan। আসলে বিষয়টিতে সেরকমই অসামাজিক অনুষঙ্গ জড়িত। মুগল ঐতিহ্য বলেই মুজরা উত্তর ভারতেও প্রচলিত। তবে মুজরাকে পাকিস্থানের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মনে করা হয়। মুজরায় শিল্প ও যৌনতা একাকার হয়ে যাওয়াটা পাকস্থানীরা ঠেকাতে পারেনি। মুজরার প্রচলন শুরু মুগল আমলে। তখনকার অবস্থার কথা বলা যাচ্ছে না-মানে মুজরার সঙ্গে তখন ঠিক কীরকম গীতবাদ্য বাজত। পরে নাকি মুজরার সঙ্গে ঠুমরি-গজল সঙ্গত করা হত । এবং সে প্রসঙ্গে বাহাদুর শাহ্ জাফরের কথা ওঠে। সে যাই হোক। মুজরা আসলে এক ধরনের দেহ সর্বস্ব নৃত্য। তেমনই হওয়ার কথা। কেননা, মুগল আমলে নারীর কি-ই বা সম্মান ছিল গর্ভধারণ ও পুরুষের মনোরঞ্জন বাদে? নারীর প্রধান কাজ পুরুষের মনোরঞ্জন করা-সে সময়টায় এমনটাই ভাব হত। অনুমান করি-মুগল পুরুষরা সব ঘিরে বসে রয়েছে জলসায়। আর এক নারী নেচে চলেছে। খালি পায়ে। ওড়না বেসামাল। নারীটি সমাজের চোখে বাঈজী। তাওয়াইফ। এবং এই পাকিস্থানের সংস্কৃতির অনিবার্য অংশ! লালন একবার একটি গানে আক্ষেপ করে বলেছেন- হাতের কাছে হয় না খবর কি দেখতে চাও দিল্লি লাহোর। বাউল শ্রেষ্ঠর কথাই ঠিক। তবে মাঝে মাঝে দিল্লি-লাহোরের খবর নিতেই হয়। খবর নিয়ে জানা গেল-লাহোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এখন টানটান উত্তেজনা। কেননা, গত মাসে লাহোর হাইকোর্ট মুজরা নিষিদ্ধ করেছে । গত ৪০০ বছর ধরে মুজরা পাকিস্থানী সংস্কৃতির অংশ। সংস্কৃতি কখন যে ব্যবসা হয়ে ওঠে। কাজেই, মুজরা নিষিদ্ধ হওয়ায় নর্তকীরা ও তাদের পৃষ্টপোষকগন ধর্মঘটে নেমেছে। অনেকের মতে এটি পাকিস্থানকে তালিবানিকরণের প্রক্রিয়ার অংশ। কথাটা ভাবার মত। কেননা, পাকিস্থানের সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে পাকিস্থানের গোয়েন্দা সংস্থা আই এস আই। তারা আবার আম্রিকার পা চাটা কুকুর। আম্রিকা আই এস আই-এর সঙ্গে একজোট হয়ে আফগানিস্থানে তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। সেই পাকিস্থানে তালিবানিকরণ? উলটো হয়ে গেল না? পাকিস্থানী সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে। বিজ্ঞ আদালত এখন বলছে যে-মুজরা নাচা চলবে। তবে নাচার সময় জুতা পড়তে হবে । মুজরা খালি পায়ে নাচা হয়- যা আদালতের চোখে অশ্লীল! বিজ্ঞ আদালত আরও বলছে-কেবল জুতা পড়লেই চলবে না- নাচার সময় ঘাড়-কাঁধ প্রভৃতি শালে জড়িয়ে রাখেতে হবে। গত ৪০০ বছর ধরে মুজরা নাচার সময় বাঈজী-তাওয়াইফগন যে তা করেনি সেটি লেখাবাহূল্য। রাষ্ট্রের এহেন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একজন তো খেপে গিয়ে বলেই বসল: আপনারা কি চান তাওয়াইফগন বোরখা পরে নাচবে? মুজরা যেহেতু একশ্রেণির ব্যবসা । কাজেই, ক্ষেপার তো কথাই। ২ পাকিস্থানের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক পার্থক্যর কথা বলা হত ষাটের দশকে । এখন তো মনে হচ্ছে সাংস্কৃতিক পার্থক্যও যথেষ্টই ছিল। এখনও আছে। লাহোরের ‘লাল আলো এলাকা’ হল হীরামন্ডি। মন্ডি মানে বাজার। সব মিলিয়ে হীরামন্ডি মানে হীরার বাজার। যদিও হীরামন্ডিতে কখনোই হীরা বিক্রি হয়নি। এ হচ্ছে পাকি-মুগল ভন্ডামীর আরেকটি উদারহরণ। খুশওয়ান্ত সিং লিখেছেন,Hira Mandi was named after Hira Singh - the minister in charge of this district during the rule of Maharaja Ranjit Singh. Prior to that, it was referred to as Shahi Mohalla (""Royal Neighborhood"") due to its proximity to the royal quarters of the Moghals. হীরামন্ডির আরেক নাম শাহী মহল্লা। আবারও, মুগল অনুষঙ্গ। আসলেও মুগল আমলে ওখানেই ছিল বাঈজী- তাওয়াইফদের আস্তানা। এখনও ওই প্রাচীরঘেরা এলাকাটি বাঈজী- তাওয়াইফদের হিজরাদেরও দেখা যায়। তবে হীরামন্ডির প্রধান আকর্ষন: মুজরা। যা ইউরোপের ট্যুরিস্টদের চোখে দক্ষিণ এশিয়ার ইক্সোটিক ডান্স। দিনের বেলায় হীরামন্ডিতে খাবারের দোকান, জুতার দোকান আর মিউজিক্যাল ইনসট্রুমেন্টের দোকানে থাকে খদ্দেরের ভিড়। সন্ধ্যা নামলে মুগলদের প্রেতাত্বাগুলি নামে নব্য পাকি পুরুষের ঘাড়ে চেপে। বাংলাদেশ ও পাকিস্থানের পাথর্ক্য এখানেই। বাংলাদেশে রয়েছে ধানমন্ডি-পাকিস্থানে হীরামন্ডি। কেননা, আমাদের মুগল তেমন গ্রাস করতে পারে নাই। সম্প্রতি আমি পাকিস্থানী কিশোরীদের (পেশাদার নয়) হোমমেড মুজরা দেখলাম একটা সাইটে। ধিক। বাঙালি কিশোরী মেয়েদের তেমন অশ্লীল ভঙ্গিমা ভাবাই যায় না। এই বিকৃতরুচিদের সঙ্গে ছিলাম আমরা ২৪ বছর কেবলমাত্র ধর্মের নামে! তাই ভাবছিলাম ষাটের দশকের রাজনৈতিক আন্দোলন আসলে সাংস্কৃতিক পার্থক্যেরই পরোক্ষ ফল। তবে ঢাকায় বাঈজীরা এসেছে মুগলদের হাত ধরেই। অনুপম হায়াৎ লিখেছেন-In dhaka, performance of dances and of songs by baijees began during the Mughal rule. Baijees performing dances and songs in the court of Subedar Islam Khan (in the first part of the seventeenth century) were called kanchani. The baijees were at the peak of their performance in the nineteenth century during the time of Nawab Nusrat Jang, Nawab Shamsuddowla, Nawab Quamruddowla, nawab abdul ghani and nawab ahsanullah. Baijees used to perform at the Rangmahal of ahsan manzil, Ishrat Manzil of Shahbagh, and garden house of Dilkusha. ( বাংলাপিডিয়া) আজও ঢাকার অনেক পাকিস্থাপন্থি মুসলিম অভিজাত পুরুষ মুজরার ভক্ত, আজও তারা তাওয়াঈফ নাচায়- যেহেতু পাক মুগল সংস্কৃতিই জগতের শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতি! ঢাকার ডানপন্থি অভিজাত পাকিপন্থিরা এখনও “আমরা ঢাকাবাসী” নামে সংগঠন করে। তাদের অনুষ্ঠানে মুগলদের মত করে ঢাকার মেয়েদের হাতে মেহদি লাগায়। আমি অবশ্য একেবারেই মেহেদির বিপক্ষে নই, কথাটা বলা অন্য কারণে,আমরা জানি, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ভালোমন্দ আছে। সে দিক দিয়েও পাকিস্থানেরও উজ্জ্বল দিক কম নেই। যেমন, মেহেদি হাসান, গুলাম আলী, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ এবং অন্যান্য শ্রদ্ধেয় মানবতাবাদীগন। সে যা হোক। পাকিস্থানীরা বরাবরই জানত মুজরা ততটা শীলিত নয় নারীর দেহপ্রদর্শন । আধুনিক মনোবিজ্ঞানের ভাষায়- যা 'এক্সিবিশনিষ্ট'।কাজেই মুজরাকে শিলিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে মুজরা কেবল অশ্লীল নয়, এর মধ্যে একটা ধ্রুপদী ব্যাপারও রয়েছে। এর উত্তরে বলা হয়েছে-A common, but mistaken, opinion is that this dance form took away the more classical elements of the pure kathak dance to make it more appealing to the audience of that time, and added sensuality fitting a courtesan's dance. In fact, it has been convincingly demonstrated (by Margaret Edith Walker, in: Kathak Dance - A Critical History, PhD dissertation, University of Toronto, 2004) that there was no dance called Kathak until the 20th Century, nor a community/caste called Kathak until the 19th. Moreover, the more formalized elements of Kathak were added to the Tawaif dance form in order to classicize it and appropriate it from its original practitioners in the last century. তখন হীরামন্ডি সংক্রান্ত পাকি ভন্ডামীর কথা বলছিলাম। কথাকলি, কত্থক, মনিপুরী, ভারত-নাট্যম -এইসব ভারতীয় নৃত্যগুল সবই শীলিত আর শৈল্পিক; যে কারণে বিশ্বজুড়েই গভীর শ্রদ্ধা কুড়িয়েছে। আর পাকিস্থানের মুজরা? ভারত ও পাকিস্থানের পার্থক্য এখানেই। তখন আমি ধানমন্ডি ও হীরামন্ডির পার্থকের কথা বলছিলাম। তারপরও ভারতেও মুজরার গভীর প্রভাব রয়েছে। হিন্দির ছবির ডান্স-যা অশ্লীল , তাই মুজরা। বানিজ্যিক কারণে, ভারতীয় প্রযোজকরা একে ব্যবহার করেছে। যে কারণে বলা হয়েছে- Most kathak related dances in Bollywood films are mujra in reality. It has taken a new form in Pakistan by becoming less artistic and more seductive, especially in Punjabi stage dramas. মুজরা অশ্লীল। কেন? এক রোমহর্ষক বিরাট পুরুষতান্ত্রিক পাকিস্থানের ঐতিহ্য বলেই কি? ওখানে দীর্ঘদিন ধরে শক্ত পুরুষতন্ত্র ও সামরিকতন্ত্র বিদ্যমান বলেই মুজরার কদর কখনোই কমেনি। আমি ভাবছি এদ্দিন পর লাহোর হাইকোর্ট কী ভেবে মুজরা নিষেধ করল- ৪০০ বছর পর? এককালে যা মুগলদের স্বাভাবিক মনে হত-তাই আজ এক শ্রেণির পাকিস্থানীদের কাছে অস্বভাবিক মনে হচ্ছে কেন? বিশাল এক পরিবর্তন কি ঘটতে চলেছে ঐ কৃত্রিম রাষ্ট্রটিতে? ৩ মিডিয়ার কারণে আজকাল তথ্য আদানপ্রদান আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রবল দাবীর পিছনেও তথ্যের সহজলভ্যতা অন্যতম কারণ বলে আমার কাছে মনে হয়। আপনাদের মনে থাকার কথা বেনজির ভুট্টো হত্যাকান্ডের ঠিক আগে আগে প্রায় ৭০ টি পাকিস্থানী সংগঠন একাত্তরে পাকিস্থানের বর্বর আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়েছিল। যা-১৯৮০ কি ৯০ সালে লক্ষ্য করা যায়নি। এই স্বস্তিদায়ক ঘটনাটির পিছনেও তথ্যের সহজলভ্যতা অন্যতম কারণ বলেই আমার কাছে মনে হয়। তথ্য সহজলভ্য হওয়াতেই বিশ্বের সামনে পাকিস্থানের তথাকথিত অপরিশীলিত ঐতিহ্যবাহী দিকগুলি ক্রমশ প্রকাশ হয়ে পড়ছে। এই লজ্জ্বা কি কাজ করছে মুজরা নিষিদ্ধ হওয়ার পিছনে? মুজরায় শিল্প ও যৌনতা একাকার হয়ে যাওয়াটা পাকস্থানীরা ঠেকাতে পারেনি-তার ওপর বাংলাদেশে গনহত্যায় দায়, ক্ষমা না চাওয়া-এসব তো বিশ্ববাসী এখন জানে। এই গ্লানীবোধ। তার ওপর আম্রিকাপন্থি মিলিটারির খপ্পড় থেকে না বেরুতে পারার জাতীয় নৃপুংসতা? যে কারণে লেজেগোবরে পাকানো পাকিস্থান নামের কৃত্রিম রাষ্ট্রটির অভ্যন্তরে বোমা হামলার উদ্দেশ্যে সহজেই মার্কিন বোমারু বিমান পাক সীমান্ত ক্রস করতে পারে? এসবই আসলে মুগল ঐতিহ্যপ্রীতির খেসারত। পাকিস্থান কি বদলে যাচ্ছে? পাকিস্থানকে বদলাতেই হবে। ৪ আমি অবশ্য ভাবছি অন্য কথা। হীরামন্ডির মুজরা নর্তকীরা এখন কী ভাবে বেঁচে থাকবেন-সে কথা। কেননা, আমার জীবনদর্শন সমাজের ২য় শ্রেণির কোনঠাসা নারীর স্বার্থই আগেদেখতে নির্দেশ দেয়। লাহোর হাইকোর্টের নিধেষাজ্ঞার ফলে হীরামন্ডির নারীদের জীবনধারণ এখন হুমকীর মুখে। ওদের এখন কী হবে- ওদের তো শরীর দেখিয়ে ঝোল-রুটির ব্যবস্থা করতে হয়। পাকিস্থানী সরকারের কাছে মুজরাশিল্পে জড়িত নারীদের পুনর্বাসনে দাবী জানাই। পাকিস্থানী প্রশাসনের ভাব উচিত, ওই নারীরা দুভার্গজনকভাবে পুরুষের লালসার শীকার, পুরুষতন্ত্র যাদের মেয়েবেলা থেকেই ঘাড় ধরে অশ্লীল নাচটি শিখিয়েছে যেহেতু ৪০০ বছরেও পাকিস্থানী পুরুষেরা বদলায়নি, যেহেতু তাদের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্না অনেক আগেই মুজরা নিষিদ্ধ করে বাঈজী-তাওয়াইফদের বাঈজী-তাওয়াইফ হওয়ার পথ বন্ধ করেননি। কেন? যেহেতু, ওই ঐ ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রটিতে একটি পুরুষতান্ত্রিক সামরিক-ধর্মেরই জয়জয়াকার; যে ধর্মে নারী বিপথগামী হলে নারীকে পাথর ছুঁড়ে মারার ব্যবস্থা আছে। আশ্চর্য এই -গত ৪০০ বছর ধরে হীরামন্ডির মেয়েদের কেউই পাথর ছুঁড়েনি। বরং দেওয়াল তুলে হীরমন্ডিকে সযত্নে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। যেহেতু, মধ্যযুগ মানেই অপরিসীম ভন্ডামী! কারও ক্ষতি না করে মধ্যযুগকে বিদায় জানান। ৫ একটা দিনের জন্য অপেক্ষা করে আছি- যখন পাকিস্থানে আর কোনও বালিকাকেই বাধ্য করা হবে না মুজরা নাচ শিখতে। কেননা, নাচ, অপূর্ব শিল্পরুপ বলেই অশ্লীল -যা মূলত মনোঃসংযোগের ব্যাঘাত ঘটায়- তাই অশ্লীল হওয়া উচিত না বলেই আমি বিশ্বাস করি। এককালে চিনে মেয়েশিশুদের পায়ে লোহার জুতা পরিয়ে রাখা হত, খোল হত না-যাকে করে মেয়েশিশুটি বড় হয়ে ভালো করে হাঁটতে না পারে। আজ সেরকম কথা চিনে কেউই ভাবে না। ৬ পরিশেষে আবারও পাকিস্থানী সরকারের কাছে মুজরাশিল্পে জড়িত নারীদের পুনর্বাসনে দাবী জানাই। ৭১ এ আমরা পৃথক হয়েছিলাম। এখন থেকে অনেকানেক মানবিক পদক্ষেপ গ্রহন করে আমরা আবার আমাদের মৃত ও শীতল হৃদয়ের কাছে ফিরতেও পারি। অন্যভাবে। তথ্যসূত্র:ইন্টারনেট। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:০৮",False ij,"গল্প_ দার্শনিক সময়কাল : খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০. স্থান: প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের নিনেভ নগর। ধূসর রঙের পাহাড় ঘেরা উপত্যকাটি অত্যন্ত মনোরম । ধূসর পাহাড়ের মাঝে বিস্তর সবুজ বৃক্ষরাজি এবং একটি তুষারাচ্ছন্ন শিখর পরিলক্ষিত হয়। শিখরটি সারা বছরই তুষারাচ্ছন্ন থাকে বলেই মনে হয়। উপত্যকায় এঁকেবেঁকে একটি নদী বয়ে চলেছে। নদীটির নাম টাইগ্রিস-যার দু-পাড়েই ফলবান শষ্যের বিস্তীর্ণ প্রান্তর দিগন্ত অবধি ছড়িয়ে রয়েছে । আদিগন্ত শষ্যের প্রান্তরটি অত্যধিক উর্বর । প্রান্তরের বেশির ভাগ ক্ষেতই যব-এর। যবক্ষেতে কৃষ্ণকায় ও তাম্রাভ বর্ণের কর্মঠ কৃষকদের কর্মরত দেখা যায়। শষ্যের অতিমাত্রায় ফলনের কারণে স্থানীয় সেচপ্রকল্পসমূহ যে অতি উন্নত তা সহজেই অনুমিত হয়। এখন হলুদ রঙের অবারিত যবক্ষেতের ওপর শেষ বিকেলের নম্র হলুদ আলো এসে পড়েছে । আর, ওপরের আকাশটি শেষ বেলার ফিরোজা রং ধারণ করেছে। বাতাস মৃদুমন্দ। আর, যবক্ষেতের মধ্যে একজন বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন দেখা যায়। বৃদ্ধকে স্থানীয় কৃষক বলে বোধ হয় না: বরং তাঁর পরনের পোশাক-পরিচ্ছেদই বলে দেয় যে বৃদ্ধটি ভিনদেশি পর্যটক। ঈষৎ ঝুঁকে যব ফুলের হলুদ বরণ সৌন্দর্য অবলোকন করছেন। কী কারণে মিটমিট করে হাসছেন তিনি। পশমী কাপড়ের তৈরি কালো রঙের আলখাল্লা পরিহিত বৃদ্ধের শরীরটি দীর্ঘ ও শীর্ণ, দেহের রং -যদ্দূর বোঝা যায়-ঈষৎ তাম্রাভ, ভেড়ার লোমের তৈরি ছাই বর্ণের মস্তক আবরণীটির নিচে পলিতকেশ পরিলক্ষিত হয়, পাকা ভ্র“র নিচে চোখ দুটি বহু পুরাতন নীলকান্ত মনির ন্যয় নীলাভ আর ধূসর, তামাটে বর্ণের মুখটিতে অজস্র বলিরেখা- যা তাঁর বিপুল অভিজ্ঞতারই নির্দেশ করে। সৌম্য দর্শন দার্শনিকটির দাঁড়ানোর ভঙ্গিতেও প্রশান্ত ও সমাহিত ভাবটি প্রকট। যেন তিনি এই মনোরম উপত্যকাটিতে মিশে রয়েছেন। যে কারণে মৌমাছিরা তাঁর উপস্থিতি টের পাচ্ছে না। কাছেই একটি দলছুট নিঃসঙ্গ মৌমাছি যব ফুলে বসে মধু আরোহণ করছিল। সেদিকে অপলক চেয়ে থেকে বৃদ্ধ ভাবলেন: কী সুন্দর ঈশ্বর-সৃষ্ট কালো-হলুদ রঙের প্রাণি! যব ফুলের মধুও ঈশ্বরের সৃস্টি। তবে ঈশ্বর তার সৃষ্টিলোকে কখনোই হস্তক্ষেপ করেন না। তার মানে আমি এখন মৌমাছিটিকে ধরে আঙুলে পিষে মেরে ফেললেও ঈশ্বর এটিকে বাঁচাতে আসবেন না ...কিংবা আমাকে একটি বিষধর সাপ ছোবল মারলেও ঈশ্বর আমাকে বাঁচাতে আসবে না । তবে আমার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি আছে। আমি মৌমাছিটিকে মারব না বরং বাঁচিয়ে রাখব। কেননা মৌমাছিটি জনসমাজে পুষ্ঠিকর মধুর যোগানদাতা, তাছাড়া এটি একটি সুন্দর প্রাণি। জগতে সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করা প্রতিটি বিচক্ষণ মানুষের দায়িত্ব। তিনি আরও ভাবলেন মৌমাছির বোধবুদ্ধি সীমিত ও অপরিবর্তণীয়। তার তুলনায় মানুষ এক মহৎ প্রানি-যদি তার মনে কুসংস্কারের বদলে স্বাধীন বিচারশক্তি পূর্নমাত্রায় সক্রিয় থাকে। হ্যাঁ। বৃদ্ধ একজন দার্শনিক। তাঁর নাম এরিদু। এই উপত্যকা থেকে সুদূর দক্ষিণে নীল নদের দেশ। সেখানকার নুবিয়া অঞ্চলে আজ থেকে আশি বছর আগে তাঁর জন্ম। চল্লিশ বছর অবধি জন্ম-নগরেই ছিলেন দার্শনিক এরিদু; এরপর স্থানীয় শাসকের সঙ্গে মতের অমিল ঘটে, যে কারণে বলপূর্বক তাঁকে নির্বাসিত করা হয়। এরপর চল্লিশ বছর ধরে ভ্রমনরত আছেন। বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে ঘুরে জ্ঞানের সঙ্গে অভিজ্ঞতার মিশ্রণ ঘটছে বলে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। বিচক্ষণ মানুষের দেশভ্রমন বাধ্যতামূলক বলেই তিনি মনে করেন। ইলাম লাঘাশ নিপপুর উর উরুক প্রভৃতি নগর ভ্রমন শেষ করে দার্শনিক এরিদু এখন নিনেভ নগরে যাচ্ছেন। হ্যাঁ। টাইগ্রিস নদীর পাড়ে নগরটির নামই নিনেভ । গভীর পরিখা ও ধূসর রঙের সুউচ্চ প্রাচীর ঘেরা বিশাল নগরটি অত্যন্ত সুরক্ষিত। সর্বদা শক্রপক্ষের হুমকির মধ্যে রইলেও অত্যন্ত প্রাণচঞ্চল নগর নিনেভ-দাসদাসীসহ অধিবাসীর সংখ্যা প্রায় দুই লক্ষাধিক। নগরকেন্দ্রে পাথরের বিশাল চতুস্কোন চত্তর; উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিম থেকে চারটি সুপ্রশস্ত সড়ক এসে চত্তরে মিলেছে। সড়কে ঝলমলে রাজকীয় রথ ও সড়কের দুপাশে সাদা রঙের একতলা-দোতলা দরদালান পরিলক্ষিত হয়, পরিলক্ষিত হয় বিপনী বিতান ও রাজকীয় ভবনসমূহ, প্রাসাদ ও স্থাপত্য। সড়কে দাসদের ব্যস্ত পদচারণা। ধনীদের গৃহগুলি অমলিন ও মনোরম। দার্শনিক এরিদু কিঞ্চিত বিস্মিত। ধনে-মানে নিনেভ কে বেশ সমৃদ্ধশালী নগর বলেই মনে হচ্ছে । নগরপ্রান্তে একটি অতিথিশালায় উঠেছেন। রাত্রিকালে অতিথিশালার ছাদে শুয়ে ঝলমলে নক্ষত্রের পানে প্রহরের পর প্রহর চেয়ে থাকেন ... নগরের প্রধান উপাসনালয়টি নগরকেন্দ্রের কাছেই। ধাপে ধাপে বিশাল কাঠামোটি ওপরে উঠে গেছে । মাটি থেকে চওড়া সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরে । ওপরে পাথরের সমতল চাতালে দেবতা মারদুক এর জমকালো উপাসনালয় । এতদ্বঞ্চলের অত্যন্ত শক্তিশালী দেবতা মারদুক । সারা বছরই দেবতার আরাধনা করা হয়। তা ছাড়া নববর্ষের সময় দেবতাকে সন্তুষ্ট রাখতে শিশুবলি দেওয়া হয়। তখন শিশুর চিৎকার নাকি বহুদূর থেকে শোনা যায়; তখন নিনেভ নগরের বাতাসে মাংসপোড়া গন্ধ ভাসতে থাকে। উপাসনালয়টির নিচে অনেকগুলি ছোট ছোট কুঠুরি। তারই একটিকে বাস করেন নিনেভ নগরের প্রধান পুরোহিত। কুঠুরিগুলি অন্ধকার অন্ধকার। দিনের বেলায় মশাল জ্বেলে রাখতে হয়। প্রধান পুরোহিতের ঘরেও দিনের বেলায় প্রদীপ জ্বলে। নববর্ষের পরেই প্রধান পুরোহিত তালিকা তৈরি করেন কোন্ কোন্ পরিবার থেকে বলির শিশু নেওয়া হবে। প্রধান পুরোহিত এখন আগাম কাজ সেরে রাখছেন। লোকটার মাথার চুল নিখুঁত ভাবে কামানো। বয়স পঞ্চাশের মতো, গায়ের রং তামাটে। তাঁর কুঠুরিতে প্রচুর গ্রন্থ পরিলক্ষিত হয়। কীলক (পেরেক) আকৃতির বর্ণমালায় লেখা গ্রন্থগুলি শুকনো কাদার তৈরি। দেখতে দেখতে নববর্ষের দিনটি এসে গেল। নগরবাসী উৎসবে মেতে উঠেছে। তাদের পরনে উজ্জ্বল পরিচ্ছদ, রং বেরঙের পোশাক, তাদের হাতে নানাবর্ণের পতাকা । প্রাণবন্ত তালে ঢোল বাজাতে বাজাতে ধর্মীয় সংগীত গাইতে গাইতে তারা হাঁটছে। কয়েকজনের কাঁধে একটি বিশাল কাঠের মঞ্চ। মঞ্চের ওপর দেবতা মারদুক-এর মূর্তি। চলমান মূর্তির পিছনে দীর্ঘ মিছিল। মিছিলটি অত্যন্ত বর্নাঢ্য। মঞ্চের ওপর অজস্র ভক্ত অর্ঘ্য নিবেদন করছে। সেই সঙ্গে শিশুবলিও চলছে। শিশুর চিৎকার বহুদূর ছড়িয়ে যাচ্ছে । মাংসপোড়ার গন্ধ ভাসছে নগরের উৎসবমূখরিত বাতাসে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন দার্শনিক এরিদু । দেবতা মারদুকের মুখটি অবিকল শেয়ালের মুখের মতন। বৃদ্ধর বিবমিষা বোধ হয়। একটি শিশুর আর্তচিৎকার শুনতে পেলেন। আশে পাশের মানুষজন কেমন নির্বিকার। দার্শনিক এরিদু অত্যন্ত বিষন্ন বোধ করলেন। তিনি একটি মমতাময় হৃদয়ের অধিকারী, তাছাড়া দার্শনিক বলেই গভীর সৌন্দর্যবোধের অধিকারী। রৌদ্রময় উপত্যকায় যবক্ষেতের ভিতর প্রহরের পর প্রহর দাঁড়িয়ে থেকে যব ফুলের হলুদাভ সৌন্দর্য উপভোগ করেন, রাত্রিকালে অতিথিশালার ছাদে শুয়ে ঝলমলে নক্ষত্রের পানে প্রহরের পর প্রহর চেয়ে থাকেন, কখনও গলির বেড়ালছানার নিষ্পাপ মুখের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকেন দার্শনিক এরিদু, নগরনটীদের কন্যাসম মনে করেন, তাঁর হৃদয়ে প্রমোদবালাদের প্রতি বিন্দুমাত্র ঘৃণাবোধ নেই-এমন সংবেদী হৃদয়ের মানুষ কেন শিশুহত্যার মতন জঘন্য অপকর্ম মেনে নেবেন । তিনি মনে করেন, নিনেভ নগরের অনেক বিষয়ই প্রশংসাযোগ্য, যেমন: নগর-পরিকল্পনা ও এর চতুর্দিকের নাগরিক শোভা...দক্ষ প্রশাসনব্যবস্থা; বানিজ্যিক কর্মতৎপরতা, নিনেভের মৃৎশিল্পের মান, নিচ্ছিদ্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও কীলকলিপিতে রচিত গ্রন্থসমূহ ...তবে শিশুবলি যেন ঠিক মেনে নেওয়া যায় না। তাঁর আশেপাশে ব্যাপক ভিড়। তাঁর পাশে একজন ঝলমলে পোশাক পরে মোটাসোটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তাকে বললেন, এই যে শুনছেন? জ্বী। বলুন। আচ্ছা, নববর্ষের সময় এ নগরে শিশুবলি দেওয়া হয় কেন? সে কি! আপনি কি নগরে নতুন এসেছেন? হ্যাঁ। দার্শনিক এরিদু মাথা নাড়েন। ও, তাই বলেন। সময়টা মধ্যাহ্ন বলেই সূর্যটা ঠিক মাথার ওপরে ছিল। মোটাসোটা লোকটা হাতের চেটোয় কপালের ঘাম মুছে নিল। তারপর বলল, শিশুবলি দিলে দেবতা মারদুক খুশি হন। এ কারণে নববর্ষের সময় শিশুবলি দেওয়া হয় কথাটা মনে হয় আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনের কানে গেছিল। তারা সমস্বরে বলে উঠল, হ্যাঁ, হ্যাঁ। শিশুবলি দিলে দেবতা মারদুক খুশি হন। দেবতা খুশি হন। ও, আচ্ছা, তাই? দার্শনিক এরিদু ফ্যাকাশে হাসলেন। ভিতরে ভিতরে অত্যন্ত শূন্য বোধ করছেন। জনতার মুখোমুখি হলেই তাঁর এরকম শূন্যবোধ হয়। হ্যাঁ, হ্যাঁ। তাই। জনতা সমস্বরে বলে উঠল। দার্শনিক এরিদু প্রচন্ড বিরক্ত বোধ করলেন। তিনি বিশ্বাস করেন দেবতা বা ঈশ্বর নির্বিকার সত্ত্বা। যে কারণে দেবতা বা ঈশ্বরের খুশি বা অখুশি হওয়া সম্ভব না। তা ছাড়া ঈশ্বর তার সৃষ্টিকর্মে কখনোই নাক গলান না। দার্শনিক এরিদু এবার পালটা প্রশ্ন করে বসলেন, শিশুবলি দিলেই যে দেবতা মারদুক খুশি হন এই কথাটা প্রথম কে বলেছে আপনারা জানেন? লোকজন চুপ। সেই মোটা লোকটা আমতা আমতা করে বলল, তা আমরা বলতে পারব না তবে ... তবে? তবে প্রাচীনকাল থেকেই নিনেভ নগরে দেবতা মারদুক এর উদ্দেশ্যে শিশুবলি হয়ে আসছে। জন্মের পর থেকে আমরা এমনই দেখছি। দার্শনিক এরিদু সামান্য উষ্মা প্রকাশ করে বললেন, আহা, তাই বলে কেউ ভেবে দেখবে না শিশুবলির মতন এমন রোমহর্ষক কান্ড কেনই-বা করতে হবে? লোকজন চুপ। দার্শনিক এরিদু বললেন, আমি যদি বলি শিশুরা জীবিত থাকলে দেবতা বেশি খুশি হন-তাহলে? দার্শনিক এরিদুর কথায় কী ছিল, ভিড়ের মধ্যে প্রথমে অস্বাভাবিক নীরবতা নেমে এল, তারপর গুঞ্জন উঠল, তারপর সে গুঞ্জন বহূদূরে ছড়িয়ে পড়ল। একে অন্যের মুখের দিকে চাইল। লোকেদের মুখেচোখে স্পস্ট বিস্ময়ের ছাপ- দার্শনিক এরিদুর কথায় যেন নীরবে বজ্রপাত ঘটে গেছে। শিশুরা জীবিত থাকলে দেবতা বেশি খুশি হন? লোকজন একে অন্যের সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলতে লাগল। সবার অলখে দার্শনিক এরিদু ভিড়ের মধ্য থেকে সরে যেতে লাগলেন। তাঁর আরব্ধ কাজটি সম্পন্ন হয়ে গেছে। দ্রুত পায়ে নগর তোরণের দিকে যেতে যেতে মুচকি মুচকি হাসছেন তিনি। দীর্ঘকাল ধরে দার্শনিক এরিদু বিশ্বাস করে আসছেন: মানুষ আসলে এক মহৎ প্রানি-যদি তার মনে কুসংস্কারের বদলে স্বাধীন বিচারশক্তি পূর্নমাত্রায় সক্রিয় থাকে। এইমাত্র তিনি নিনেভবাসীর মনে স্বাধীন বিচারশক্তি পূর্নমাত্রায় সক্রিয় করে দিয়েছেন। অবিলম্বে নিনেভ নগরে জীবনধারায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। আমি যদি বলি শিশুরা জীবিত থাকলে দেবতা বেশি খুশি হন-তাহলে? এক পর্যটক দার্শনিকের এই কথাটাই নিনেভ নগরের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে যায়। আশ্চর্য! এমন করে তো আগে কেউই বলেনি। ভাবেওনি । কথাটা অবশ্যই ভাবার মতো। তাই তো ...শিশুবলিতে দেবতার কী লাভ! শিশুরা জীবিত থাকলেই বরং দেবতার বেশি খুশি হওয়ার কথা। নগরের নারীরা ঘন ঘন একে অন্যের সঙ্গে দেখা করতে লাগল। তাদের মধ্যে চলল ফিসফাস। শিশুবলি দেওয়ার সময় তাদেরই যে বুক বেশি পোড়ায়। আট-ন’মাসের দুধের শিশুকে প্রধান পুরোহিতের হাতে তুলে দিতে হয়। কী দরকার শিশু বলির- শিশুরা জীবিত থাকলেই তো মারদুক দেবতা বেশি খুশি হন। নববর্ষের পরেই প্রধান পুরোহিত তালিকা তৈরি করেন কোন্ কোন্ পরিবারের শিশু নেওয়া হবে, তখন কার না বুক ফেটে যায়। দার্শনিক এরিদুর কথায় নগরময় পুরুষেরাও বিচলিত। শিশু সন্তান তো তাদেরও। তাদের চোখের সামনে যেন এতকাল একটি পর্দা ছিল। কালো রঙের পর্দা। এখন সে পর্দা সরে উপত্যকায় উজ্জ্বল আলো এসে পড়েছে। ঠিকই তো- শিশুরা জীবিত থাকলে দেবতা মারদুক কি বেশি খুশি হন না? কথাটা নানা কান হয়ে রাজার কানে পৌঁছতে দেরি হল না। তার আগে প্রধান পুরোহিতের কানে উঠল। তিনিও পরম বিস্মিত ও ভীষণ বিচলিত হলেন। তিনি পুরোহিত হতে পারেন, হলেও রক্তমাংসের মানুষ তো। শিশুবলি দিলে দেবতা মারদুক খুশি হবেন এই কথাটা প্রথম কে বলেছে ? প্রধান পুরোহিত গভীর ভাবনায় নিমজ্জ্বিত হলেন। নিনেভ নগরের রাজা প্রধান পুরোহিতকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, শিশুবলি যে দিতেই হবে এমন কোনও কথা কি প্রাচীন গ্রন্থগুলির কোথাও লেখা রয়েছে? উত্তর দেওয়ার জন্য অত্যন্ত বিনীত ভঙ্গিতে তিনদিন সময় চাইলেন প্রধান পুরোহিত । রাজা অনুমতি মঞ্জুর করলেন। তিন দিন ধরে প্রধান পুরোহিত নগরের প্রাচীন গ্রন্থাগারে তন্নতন্ন করে খুঁজলেন উত্তর। তিনদিন পর তিনি রাজাকে বললেন, নাঃ। শিশুবলি দিতেই হবে এমন কোনও কথা প্রাচীন গ্রন্থসমূহে আমি খুঁজে পাইনি। রাজা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। তা ছাড়া শিশুবলি রদ করার জন্য রানিও ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিলেন। রানি হলেও তো তিনি আসলে নারীই; ক’দিন ধরেই রানিও এক তৃপ্তিকর ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছেন: শিশুরা জীবিত থাকলে দেবতা মারদুক অবশ্যই বেশি খুশি হবেন। এই আমি যেমন বেঁচে আছি বলে দেবতা মারদুক খুশি। রাজা সাধারণত যে কোনও গুরুত্বপূর্ন ধর্মীয় সিদ্ধান্তের আগে প্রধান পুরোহিতের সঙ্গে পরামর্শ করেন। আজ প্রধান পুরোহিতের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই রাজা ঘোষনা করলেন, আজ থেকে নিনেভ নগরে শিশুবলি রদ করা হল। সংবাদটি নগরকেন্দ্রে পৌঁছামাত্র উপস্থিত জনসাধারণ তীব্র উল্লাসে ফেটে পড়ল। সংবাদটি বিদ্যুতের গতিতে নগরময় ছড়িয়ে গেল। তারপর নিনেভবাসী দীর্ঘকালীন এক আনন্দময় উৎসবে মেতে উঠল। এতোসব হই-হট্টগোলের ভিতরে কেউ কেউ সেই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন দার্শনিকটির খোঁজ করল। ততদিনে আরেকটি কুসংস্কারগ্রস্থ নগরের উদ্দেশে নিনেভ নগর ত্যাগ করেছেন দার্শনিক এরিদু । সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:২৪",False mk,"গুডবাই কামারুজ্জামান জামায়াত নেতা এম কামারুজ্জামানের ভাগ্য ঝুলে আছে রিভিউ পিটিশন নিষ্পত্তির ওপর। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে তাকে রিভিউ পিটিশন করতে হবে। তবে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানিয়েছেন, ওই গণনা শুরু হবে রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পর। তিনি আশা প্রকাশ করেন, রবিবারের মধ্যেই সার্টিফায়েড কপি প্রকাশিত হবে। যদি তাই হয় তাহলে মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে হবে।গতকাল বুধবার কামারুজ্জামানের ফাঁসির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে আপিল বিভাগ। কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, রায়ের সত্যায়িত নকল পাওয়ার পর তারা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করবেন।গত বছরের ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে ফাঁসির আদেশ দেয়। এর আগে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালও ফাঁসির দণ্ড দিয়েছিল। আপিল বিভাগের বিচারপতি এসকে সিনহার (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি) নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ চূড়ান্ত রায়ে এ ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখে। আপিল বিভাগের একজন বিচারক ফাঁসির প্রশ্নে দ্বিমত পোষণ করেন। আপিল বিভাগের রায়ে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। বিচারপতি এসকে সিনহা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সোহাগপুর হত্যাকাণ্ডে ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির রায় বহাল রাখেন। গতকাল প্রকাশিত রায়টি ৫৭৭ পৃষ্ঠার। পূর্ণাঙ্গ রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এ রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করে নিজস্ব অভিমত দিয়েছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।রায়ের শুরুতে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের শোষণ-নিপীড়নের ইতিহাস বর্ণনা করে বলেছেন, এটা স্বীকৃত সত্য যে, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্য যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল এবং হত্যার মতো অপরাধে জড়িত ছিল তারা ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকে। কেউ কেউ জামায়াতে প্রাণশক্তি সঞ্চার করে। কেউ কেউ যোগ দেয় অন্যান্য দলে। এরপর থেকে দায়মুক্তির সংস্কৃতি চলে আসছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতরা স্বাভাবিক রাজনীতিতে অংশ নিতে থাকে। এমনকি তাদের কেউ কেউ সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীর মতো উচ্চপদেও আসীন হয়। ক্ষমতায় গিয়ে তারা শুধু আইনি তথ্যাদিই ধ্বংস করেনি তারা মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসেও বিকৃতি ঘটায়।প্রসিকিউশনের সাক্ষীরাও এটা দাবি করেননি যে, কামারুজ্জামান সেনা কর্মকর্তা ছিলেন অথবা রাজাকার বাহিনীর ডিরেক্টর ছিলেন। তথ্য প্রমাণে দেখা যায় কামারুজ্জামান ময়মনসিংহ অঞ্চলের আল-বদর কমান্ডার ছিলেন। প্রসিকিউশনের সাক্ষ্য-প্রমাণে হয়তো কিছু অসংগতি রয়েছে, তবে আমরা যদি আদালতে প্রমাণ হিসেবে পেশকৃত দলিল বা জব্দ তালিকা এবং মৌখিক সাক্ষ্য একসঙ্গে বিবেচনায় নেই; তবে নিরাপদে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায় যে, কামারুজ্জামান ইসলামী ছাত্র সংঘের একজন নেতা হিসেবে ময়মনসিংহ অঞ্চলে আল-বদর বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। এ আল-বদর বাহিনী ময়ময়নসিংহ অঞ্চলে সব অমানবিক অপরাধ সংঘটন করে। এ বাহিনীর নেতা হিসেবে কামারুজ্জামানের দায় এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। আল-বদর বাহিনী প্রতিষ্ঠা এবং সোহাগপুরের নৃশংস ও অমানবিক হত্যা ও ধর্ষণে সম্পৃক্ততার কারণে কামারুজ্জামান কোন ধরনের করুণা পেতে পারেন না।বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তার অভিমতে বলেছেন, যেভাবে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যেভাবে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, অপরাধের নির্মমতা, হত্যার শিকার মানুষের সংখ্যা, ভিকটিমদের অসহায়ত্ব, ধর্ষিত নারীদের দুর্দশা যদি আমরা বিবেচনায় নেই তাহলে ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তকে যে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে তার বাইরে অন্যকোন সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছতে পারি না। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী তার অভিমতে বলেন, এটা আমাদের ইতিহাসের চরম দুঃখজনক অধ্যায় যে, এরূপ মানবরূপী দৈত্যদের অনেক দশক ধরে বিচারের আওতায় আনা যায়নি। এরজন্য দায়ী তারা যারা ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর অসাংবিধানিকভাবে বহু বছর ধরে ক্ষমতায় ছিল। যারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ১৯৭১ পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। আমি মনে করি, এ মামলায় অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র ন্যায়বিচার। যাই হোক, অবশেষে হলেও তাদের বিচার হয়েছে এবং কলংকমুক্ত হয়েছে জাতি। এখন তাদের জন্য চরম শাস্তি অপেক্ষারত। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, এসব মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ব্যাপারে আমাদের দয়া অথবা অনুকম্পা প্রদর্শনের কোনই সুযোগ নেই। তারা যেসব অপরাধ করেছে এবং সেইসব অপরাধের যে বিষক্রিয়া শুধু একাত্তরের প্রজন্মের লোকদের জন্যই নয় বরং একাত্তর পরবর্তী সমস্ত প্রজন্মের জন্য রেখে গেছে চরম বিষাক্ত আবহাওয়া, সুতরাং তাদের শাস্তি হওয়া উচিত, তাদের অপরাধের সাথে যা সামঞ্জস্যকর তাই। অর্থাত্ মৃত্যুদণ্ড। রায়ে বলা হয়, এই অপরাধীকে (কামারুজ্জামান) ফাঁসির কাষ্ঠে না ঝুলালে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে না। তিনি বলেন, শুনানিতে প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় কামারুজ্জামানের সুপিরিয়ার রেসপনসিবিলিটির কথা বলা হয়েছে। আমাদের কাছেও প্রতিয়মান হয়েছে, সুপিরিয়ার রেসপনসিবিলিটির জন্যও এই অপরাধীও দায়ী।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের একটি উক্তি উল্লেখ করে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী রায়ে বলেন, শুধু এ সমস্ত অপরাধীদের সাজা না দেয়াটাই অন্যায় হবে না, তারা যেসব অপরাধ করেছে সেসব অপরাধকেও নির্মূল করতে হবে। নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জাস্টিস জ্যাকসনের একটি উক্তি উল্লেখ করে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, আমরা আজ যে সমস্ত দলিলাদির ওপর বিচার করছি, এসব দালিলাদির ওপর ইতিহাস আমাদের বিচার করবে।এ রায়ের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে রায় লিখেছেন বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা। তিনি তার রায়ের অভিমতে বলেছেন, কাদের মোল্লার রায়ে বলা কথাটির আবারও পুনরাবৃত্তি করতে চাই। মানুষ এবং এ ভূমির সন্তান হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনী, তাদের সহযোগী ও অন্যান্যরা যে নৃশংস বর্বরতা চালিয়েছিল তাতে আমিও আঘাতহত এবং আমারও আবেগপ্রবণ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তবে ভয়-ভীতি, অনুরাগ-বিরাগের ঊর্ধ্বে উঠে আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে আমি শপথাবদ্ধ। বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা তার রায়ে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা আপিলে বিবেচ্য প্রতিটি অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি সাক্ষ্যের নানা অসংগতি তুলে ধরেন এবং প্রয়োজনীয় সাক্ষীকে হাজির না করার বিষয়টিও উত্থাপন করেন। তার রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশন ১, ২, ৪ এবং ৭ নাম্বার অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এসব অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হলো। ৩ নাম্বার অভিযোগে কামারুজ্জামানকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলো।যে আদেশে রিভিউর সুযোগজামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশন নিষ্পত্তি করে ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ পিটিশন দাখিলের পক্ষে অভিমত দিয়েছিলো আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ বলেছে, বিচার বিভাগের প্রাথমিক কাজ হলো, পক্ষগুলোর মধ্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। যাকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। তবে এটা সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে নয় উল্লেখ করে ওই রায়ে বলা হয়, ১৯৭৩ সালের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল আইনটি একটি সুরক্ষিত আইন। তাই সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। সংবিধানের ৪৭(ক)(২) অনুসারে মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িতদের সংবিধানের আলোকে প্রতিকার চাইতে পারেন না। তারা আপিলের অধিকার পায় ১৯৭৩’র আইনের আলোকে সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে নয়। যদি ১০৩ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য না হয়, তাহলে রিভিউ করার জন্য ১০৪ ও ১০৫ অনুচ্ছেদও প্রযোজ্য হবে না। স্বাভাবিকভাবে সুপ্রিম কোর্ট (আপিল বিভাগ) রুল-১৯৮৮ ও প্রযোজ্য হবে না। রায়ে বলা হয়, আপিল বিভাগ রুলসে রিভিউ দায়েরের ক্ষেত্রে যে সময়সীমার কথা বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনের অধীনে রায়ের রিভিউর ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। এক্ষেত্রে ১৫ দিনের সময়সীমা অনুসরণ করতে হবে এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হবে। এ রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কামারুজ্জামান রিভিউ পিটিশন দায়েরের সুযোগ পেলেন।ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুপরোয়ানা জারি করবে : অ্যাটর্নি জেনারেলঅ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেছেন, কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুপরোয়ানা জারি করে তা কারাগারে পাঠাবে। মৃত্যুপরোয়ানা কারাগারে পৌঁছলে সরকারের পক্ষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন ধার্য করতে কোন অসুবিধা নেই। তবে কামারুজ্জামান রিভিউ পিটিশন দায়ের করলে দণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যাবে। গতকাল নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশনের রায়ে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কামারুজ্জামানকে রিভিউ করতে হবে। রিভিউ হলে শুনানি কখন হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সর্বোচ্চ আদালতই ঠিক করবেন। আমরা প্রত্যাশা করব, এটা যেন ঝুলে না থাকে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এটা যেন নিষ্পত্তি করা হয়। তিনি বলেন, কামারুজ্জামান যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা করেন অবশ্যই সেই অধিকার সংবিধানে দেয়া আছে। তবে স্বাভাবিকভাবে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রাণভিক্ষার নিয়ম।",False hm,"ঈস্টার দ্বীপ ০৩ ঈস্টার দ্বীপের মূর্তিগুলি মোয়াই নামে পরিচিত, আর যে বিশাল প্ল্যাটফর্মের ওপর মূর্তিগুলি দাঁড়িয়ে আছে, তাকে বলা হয় আহু। ঈস্টারে প্রায় তিনশো আহু আছে, যার বেশির ভাগই ছোটখাটো আর মূর্তিশূন্য, ১১৩টা আহুতে মূর্তি আছে, যার মধ্যে ২৫টা রীতিমতো বিশাল। ঈস্টার দ্বীপের প্রতিটি অঞ্চলেই এক থেকে পাঁচটা করে বিশাল আহু রয়েছে। প্রায় সবগুলি সমূর্তি আহুই সৈকতসংলগ্ন, প্রতিটি মূর্তির মুখ দ্বীপের দিকে ফেরানো। কোন মূর্তিই সমুদ্রমুখী নয়প্রশ্ন ১। ঈস্টার জুড়ে নির্মিত আহু আহু চতুষ্কোণাকৃতির প্ল্যাটফর্ম, যার চারপাশটা ব্যাসল্ট পাথরের চাঁই দিয়ে ঘেরা, আর মাঝে ভর্তি নুড়ি। কিছু কিছু আহুর (যেমন আহু ভিনাপু) দেয়াল দেখলে ইনকা স্থাপত্যের কথা মনে পড়তে পারে, যা দেখে থর হেয়ারডাল দক্ষিনামেরিকার সাথে ঈস্টারের যোগসূত্র খুঁজেছিলেন। তবে ঈস্টারের আহুর দেয়ালগুলির আস্তর কেবল পাথরের, ভরাট পাথরের টুকরো দিয়ে তৈরি নয়, যেমনটা ইনকা দেয়ালগুলি। ঈস্টারের এই এক একটা দেয়ালের আস্তরের ওজন ১০ টন (ইনকা দেয়ালে এক একটা টুকরোর ওজন আরো বেশি, যেমন সাকসাহুয়ামান দুর্গে ৩৬১ টন পর্যন্ত)। এক একটা আহু গড়ে ১৩ ফিট উচ্চতার, কোন কোন আহু ৫০০ ফিট চওড়া। আহুগুলির ওজন ৩০০ টন থেকে ৯,০০০ টন পর্যন্ত। আহুর পেছনে রয়েছে আরো এক বিচিত্র জিনিস, দেহভস্ম সংরক্ষণাগার, যেখানে হাজার হাজার মানুষের দেহের ভস্ম ও অন্যান্য অংশ রয়েছে। মৃতদেহ সৎকারের ক্ষেত্রে গোটা পলিনেশিয়ায় ঈস্টারই একমাত্র ব্যতিক্রম, অন্যান্য সব দ্বীপে মৃতদেহ সাধারণত সমাধিস্থ করা হয়। আহু আর মোয়াই, দুই-ই এখন ধূসর, তবে অতীতে আহুগুলি সাদা, হলুদ আর লাল রং দিয়ে সজ্জিত ছিলো। মোয়াইয়ের পাথরগুলি ছিলো হলুদ। ধারণা করা হয়, মোয়াইগুলি পূর্বপুরুষদের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রত্নতাত্ত্বিক জো অ্যান ভ্যান টিলবার্গ ৮৮৭টি মোয়াই লিপিবদ্ধ করেছেন, যার অর্ধেকই আছে রানো রারাকুর ""কারখানায়""। এক একটা আহুতে ১ থেকে ১৫টা করে মোয়াই স্থাপন করা হয়েছে। আহুর ওপর স্থাপিত সব মোয়াই-ই রানো রারাকু জ্বালামুখের খনির পাথর, যাকে বলা হয় টাফ, দিয়ে তৈরি, তবে দ্বীপের অন্যান্য জায়গায় মোট ৫৩টি মোয়াই পাওয়া গেছে, যেগুলো টাফের পরিবর্তে অন্য পাথর (ব্যাসল্ট, লাল স্কোরিয়া, সাদা স্কোরিয়া আর ট্র্যাকাইট) দিয়ে তৈরি। সাধারণ একটা মোয়াইয়ের উচ্চতা গড়ে ৪ মিটার, আর ওজন ১০ টন। স্থাপিত মোয়াইগুলির মধ্যে সবচেয়ে উঁচুটির নাম পারো, উচ্চতা ১০ মিটার, আর ওজন ৭৫ টন। পারোর চেয়ে সামান্য বেঁটে একটি মোয়াই আছে আহু টোঙ্গারিকিতে, যার ওজন ৮৭ টন। আহু হাঙ্গা তে তেঙ্গা-তে পারোর চেয়ে ইঞ্চি কয়েক উঁচু একটি মোয়াইকে বয়ে নিয়ে যেতে পারলেও সেটিকে স্থাপনের সময় দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিলো ঈস্টারবাসীরা, যার ফলে সেটি টাল খেয়ে পড়ে গিয়েছিলো। রানো রারাকু-তে আরো বিশাল সব অসমাপ্ত মোয়াই পড়ে আছে, যার মধ্যে সবচেয়ে উঁচুটি ২৩ মিটার উঁচু আর ২৭০ টন ওজনের। এরিখ ফন দানিকেনের মতো ভিনগ্রহীপন্থীদের কাছে ঈস্টারের এই বিশাল মূর্তিগুলিকে অপার্থিব মনে হয়েছিলো, যে ধারণা সমর্থনের জন্য তাঁরা নানা আজগুবি তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন। তবে পলিনেশিয়াতে এমন নির্মাণের আরো প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে। অনেকটা আহুর মতোই প্ল্যাটফর্ম ছড়িয়ে আছে পলিনেশিয়ায়, যাদের বলা হয় মারায়ে। পিটকেয়ার্ন দ্বীপে, যেখান থেকে ঈস্টারের আদি বসতিদাররা যাত্রা শুরু করেছিলো বলে অনুমান করা হয়, এমন তিনটি মারায়ে রয়েছে। তবে মারায়েগুলি ব্যবহার করা হতো মন্দিরের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। মার্কেসাস আর অস্ট্রাল দ্বীপপুঞ্জে বড়সড় পাথরের মূর্তি রয়েছে, যেগুলি লাল স্কোরিয়া আর টাফ দিয়ে তৈরি। তাহিতিসহ অন্যান্য দ্বীপে রয়েছে কাঠের মূর্তি। ঈস্টারের মূর্তিনির্মাণ সংস্কৃতি ভুঁইফোঁড় কিছু নয়, পলিনেশিয়ার সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠা। মূর্তিগুলি ঠিক প্রথম কবে গড়া হলো, তা জানা একটু মুশকিল, কারণ পাথরের রেডিওকার্বন ডেটিং করা যায় না। এ কারণে পরোক্ষ কালনির্ণয় পদ্ধতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে, যেমন আহুতে পাওয়া অঙ্গারের রেডিওকার্বন টেস্ট, অবসিডিয়ান-হাইড্রেশন পদ্ধতিতে কাটা অবসিডিয়ানের কাল নির্ণয়, বাতিল মূর্তির নির্মাণশৈলী (বাতিলগুলিকে প্রাচীনতর ধরা হয়) আর আহুর বিভিন্ন নির্মাণ পর্যায়। তবে একটি পর্যবেক্ষণ স্পষ্ট, সেটি হচ্ছে সময়ের সাথে মোয়াইগুলির উচ্চতা বেড়েছে (তবে ওজন সবসময় বাড়েনি), আর বিশালতম আহু কয়েক দফায় নির্মাণ-পুনর্নির্মাণের ভেতর দিয়ে গেছে, সময়ের সাথে আরো বড় হয়েছে। ধরা হয়, ১০০০-১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে আহুগুলি নির্মাণ করা হয়েছে। এ তারিখকে সমর্থন যুগিয়েছে জে. ওয়ারেন বেক এবং তাঁর সহকর্মীদের চালানো একটি পরীক্ষায়, যেটিতে মোয়াইগুলির চোখে ব্যবহৃত প্রবালের আর আহু সাজানোর জন্য ব্যবহৃত শৈবালের কালনির্ণয় করা হয়েছে রেডিওকার্বন পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে সরাসরি নির্ণয় করা হয়েছে, আনাকেনা সৈকতে আহু নাউ নাউয়ের প্রথম নির্মাণ শুরু হয়েছে ১১০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে, আর শেষ দফা শেষ হয়েছে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে। ধারণা করা হয়, শুরুর দিকের আহুগুলিতে কোন মোয়াই ছিলো না, পলিনেশিয়ার অন্যান্য দ্বীপে দেখা মারায়ে-র মতো ছিলো সেগুলি। যেসব মোয়াইকে শুরুর দিকের বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলি ছিলো ছোটখাটো, গোলগাল আর আরো বেশি মনুষ্যসদৃশ, টাফ ছাড়াও বিভিন্ন আগ্নেয় পাথর দিয়ে সেগুলি তৈরি, আর পরবর্তীতে আহুর পুনর্নির্মাণে সেগুলিকে ব্যবহার করা হয়েছে মশলা হিসেবে। শেষমেশ ঈস্টারবাসীরা রানো রারাকুর টাফ পাথরকেই খোদাইয়ের কাজে বেছে নিয়েছিলো, কারণ এই পাথর খোদাইয়ের জন্যে সবচেয়ে ভালো। প্রচন্ড শক্ত ব্যাসল্টের চেয়ে অনেক সহজে খোদাই করা যায় টাফ, আবার লাল স্কোরিয়ার চেয়ে অনেক বেশি মজবুত। সময়ের সাথে রানো রারাকুর কারখানার মোয়াইগুলি আরো বড় হয়েছে, আরো চতুষ্কোণাকৃতির হয়েছে, আরো বেশি শৈলীযুক্ত হয়েছে সেগুলিতে, আর প্রায় গণহারে নির্মিত হয়েছেঅনেকটা ওবেলিস্কের মেনহির তৈরির মতো। তবে প্রতিটি মূর্তিই দেখতে অন্যগুলির চেয়ে একটু ভিন্ন। সময়ের সাথে মূর্তির আকারবৃদ্ধি থেকে অনুমান করা যায়, এক গোত্রের সাথে আরেক গোত্রের মোয়াই নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিলো। পরবর্তীকালের একটি সংযোজন ছিলো পুকাও, লাল পাথরের তৈরি একটি খন্ড, যা মূর্তিগুলির মাথায় স্থাপন করা হতো। পারো-র মাথার পুকাওটির ওজন বারো টন। প্রশ্ন জাগতে পারে, কী করে ঈস্টারবাসীরা ১২ টন ওজনের একটা জিনিস কোন ক্রেন বা যন্ত্রপাতি ছাড়া ১০ মিটার উঁচু একটা মূর্তির মাথায় বসালো? এ প্রশ্নের উত্তরে ভিনগ্রহীদের মারদাঙ্গা প্রযুক্তি এনে হাজির করেছিলেন ফন দানিকেন, তবে উত্তরটা আরো পানসে, মোয়াই আর পুকাও, দু'টোই একসাথে উত্তোলিত। কেন এই গোদা গোদা মূর্তিগুলি বানিয়ে তার মাথায় লাল পাথরের এই পুকাও বসানো হলো? ধারণা করা হয়, এই পুকাওগুলি সর্দারদের মাথায় লাল পালকের উষ্ণীষের প্রতিনিধিত্ব করে। পলিনেশিয়া জুড়েই লাল রঙের বড় কদর, স্প্যানিয়ার্ডরা যখন প্রথম বিভিন্ন ক্যারিবীয় দ্বীপে পা রাখে, তখন দ্বীপবাসী তাদের জাহাজ, তলোয়ার, বন্দুক বা আয়না দেখে ততটা পাত্তা দেয়নি, যতোটা দিয়েছিলো তাদের পরনে লাল কাপড় দেখে। পুকাওগুলি তৈরি হয়েছে লাল স্কোরিয়া পাথর দিয়ে, ঈস্টারে কেবল একটা জায়গাতেই তা পাওয়া যায়, পুনা পাউ নামের এক জ্বালামুখে। সেখানেও অনেক অসমাপ্ত পুকাও পড়ে আছে। মোয়াইগুলির মাথায় পুকাও চাপানোর অন্যতম কারণ হতে পারে, ফুটাঙ্গি দেখানো। কোন গোত্র হয়তো ৯ মিটার উঁচু কোন মোয়াই খাড়া করেছে, তো অন্য কোন গোত্র ১০ মিটার উঁচু একটা মোয়াই এনে তার মাথায় পুকাও চাপিয়ে বলেছে, দ্যাখ ব্যাটারা, পারলে এরচে ভালো কিছু কর! কিন্তু সারা পলিনেশিয়াতেই তো কমবেশি প্ল্যাটফর্ম আর মূর্তি তৈরির চল ছিলো, কেবল ঈস্টার দ্বীপেই এরকম আখাম্বা ইশটাইলে মূর্তি বানানোর হুজুগ উঠেছিলো কেন? কোন দুঃখে তারা এমন খরুচে, কঠিন, জটিল কাজে হাত দিয়েছিলো? জ্যারেড ডায়মন্ড এ প্রশ্নের উত্তরে চারটি সম্ভাব্য যুগপৎ কারণ নির্দেশ করেছেন। খোদাইয়ের জন্য টাফ পাথরের উপযোগিতা। অন্যান্য পাথরের চেয়ে এ পাথর খোদাইয়ের কাজে এতো বেশি সরেস যে যেকোন খোদাইকারী হাতের নাগালে এ পাথর পেলে খোদাইয়ের কাজে লেগে যাবে। পলিনেশিয়ার অন্যান্য দ্বীপগুলির বাসিন্দারা কয়েক দিন সাগরে কাটালেই অন্য কোন দ্বীপে গিয়ে হাজির হতে পারে, তাই তারা তাদের সময় আর শক্তি ব্যয় করেছে সেসব প্রতিবেশী দ্বীপে বাণিজ্য, হানাদারি, অভিযান, বসতিস্থাপন কিংবা দ্বীপান্তরে। পক্ষান্তরে, ঈস্টারের বাসিন্দারা এসব করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলো, কারণ বাইরের দুনিয়া থেকে ঈস্টার একেবারেই বিচ্ছিন্ন ছিলো। পলিনেশিয়ার কোন দ্বীপের সর্দার যখন ফুটাঙ্গি দেখানোর জন্য তার পড়শীর ওপর হামলা করে, সেখানে ঈস্টার দ্বীপের সর্দার তেমন কিছু করতে না পেরে আরো বড় একটা মূর্তি খাড়া করে। পলিনেশিয়ার অন্যান্য দ্বীপ ঈস্টারের মতো সমতল বা মৃদুবন্ধুর নয়, রীতিমতো গভীর খাদ আর খাড়া পাহাড় দিয়ে ভাগ করা। যে কারণে বিভিন্ন দ্বীপে প্রায়শই সামাজিক ঐক্য গড়ে ওঠেনি, একেক উপত্যকা একেক গোত্রের অদীনে বিচ্ছিন্ন হয়ে থেকেছে, সম্পদের বন্টনও তাই ছিলো অনেকখানি বিষম। তুলনামূলকভাবে ঈস্টারে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিলো এর সমতল ভূপ্রকৃতির সুবাদে, যার ফলে সব অঞ্চলের গোত্রগুলিই রানো রারাকুর টসটসে টাফ পাথরের নাগাল পেয়েছে মূর্তি খোদাইয়ের জন্য। সম্পদের ওপর অবাধ (?) অধিকারের কারণেই হয়তো মূর্তি নির্মাণ ব্যাপারটি প্রতিযোগিতায় রূপ নিতে পেরেছেমন্তব্য ১। রাজনৈতিক কোন্দল থাকলে কেবল টোঙ্গারিকি অঞ্চল, যে অঞ্চলে কি না রানো রারাকু অবস্থিত, হয়তো মূর্তি বানানোর ওপর একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করতো, কিংবা অন্য অঞ্চল হয়তো ""পাড়ায় আহিস খালি"" গোছের হুমকি দিয়ে তাদের ওপর দিয়ে মূর্তি পরিবহনে বাধা দিতো। শেষ কারণটা হচ্ছে, মূর্তি গড়ে পোষাতো, ব্যাপারটা আদপেই সম্ভব ছিলো, কারণ মূর্তি বানানোর কাজে নিয়োজিত লোকদের উঁচু ভূমির পাথুরে বাগানের ফসল দিয়ে খাওয়ানো যেতো। কিন্তু বড় প্রশ্ন হচ্ছে, ঈস্টারের আদিবাসীরা কোন যন্ত্রপাতি ছাড়া কী করে মূর্তিগুলি খাড়া করলো? ছবিসূত্র। প্রশ্ন ১ কেন? মন্তব্য ১ পূজার সময় পশ্চিমবাংলার টিভি চ্যানেলে উপভোগ করার মতো একটা জিনিস হচ্ছে দশভূজার হরেক রকমের মূর্তি। পাড়ায় পাড়ায় পূজার প্যান্ডেল, কোন পাড়ায় কত বেশি জৌলুসময় মূর্তি গড়ে তোলা যায় তার একটা বাহারী প্রতিযোগিতা। সুপুরির দুর্গা, ঝিনুকের দুর্গা, পুঁতির দুর্গা, ইত্যাদি হরেক রকম দুর্গার রীতিমতো প্রদর্শনী হয় তখন। পশ্চিমবাংলার মূর্তির কারিগরেরা যেখানে প্রতিযোগিতায় একজন আরেকজনকে টেক্কা দেবার জন্যে (আসলেই এমন প্রতিযোগিতা হয় নিশ্চয়ই) আশ্রয় নিয়েছেন শৈলীবোধের, দর্শনইন্দ্রিয়কে মোহিত করার জন্যে তারা ব্যবহার করেন বিভিন্ন উপকরণ, কাহিনী, ভঙ্গি। কিন্তু ঈস্টারদ্বীপের মূর্তির কারিগরদের ওপর হয়তো সর্দারদের নন্দনবোধই চাপিয়ে দেয়া হয়েছিলো। ""পাশের ওদেরটার চে বড় বানাবি"" গোছের হুকুমই হয়তো চাপিয়ে দেয়া হয়ে থাকতে পারে বেচারাদের ওপর। ফলে, প্রতিযোগিতাটি মানদন্ড হিসেবে বেছে নিয়েছে আকারকে।",False ij,"আজ তা হলে সলিল চৌধুরীর কথাই বলি 'I want to create a style which shall transcend borders - a genre which is emphatic and polished, but never predictable'. Salil Chowdhury সলিল চৌধুরীর সুরের ভালোমন্দ বিচার করার যোগত্যা তো নেই। কাজেই সংক্ষিপ্ত জীবনী আলোচনা করছি এই সর্বশ্রেষ্ঠ একজন বাঙালি সুরকারের। জন্ম ১৯ নভেম্বর। ১৯২২। আসামের এক চা বাগানে । বাবা ওখানকারই চিকিৎসক ছিলেন। বাবা মানুষটি ছিল একেবারে অন্য ধাতের। যাকে বলে মাটির মানুষ। রবীন্দ্রনাথের সময়ে বেঁচেছিলেন তো। তাই। বাগানের কুলিকামিনদের নিয়ে নাটক নাটক করতেন। আর প্রচন্ড রকমের ব্রিটিশবিরোধী ছিলেন। চা-শ্রমিকদের নিয়ে ছিলেন ভারি উদ্বিগ্ন । বালক সলিল খুব কাছে থেকেই বাবাকে দেখেছিল। জীবনের পরবর্তী ধাপগুলি তৈরি হয়ে যাচ্ছিল। বাবার সংগ্রহে ম্যালা পশ্চিমা সংগীতের অ্যালবাম ছিল। ভাগ্যিস! গানের বীজটি ওই সময়েই রোপিত হয়েছিল। মানে শৈশবে। কিশোর বয়স পেরিয়ে কোলকাতার পড়তে এলেন। বঙ্গবাসী কলেজে । বাবা ডাক্তার। গান করি আর যাই করি- অন্তত বিএ পাশটাতো করতে হবে। গানের পাশাপাশি বাম রাজনৈতির ব্যাপারটাও তখনই যুক্ত হল। বাগানের কুলিকামিনদের নিয়ে নাটক নাটক করতেন বাবা। আর প্রচন্ড রকমের ব্রিটিশবিরোধী ছিলেন। চা-শ্রমিকদের নিয়ে ছিলেন ভারি উদ্বিগ্ন । তখন ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। খুব কাছে থেকে দুর্ভিক্ষের করুন বিভৎরুপ দেখলেন সলিল। দেখলেন চল্লিশের দশকের রাজনৈতিক অস্থিরতার ঘুর্ণি। এসবই গানের কথায় আঁচড় কাটল। আর কাটবে না কেন? শৈশব থেকেই বাবার প্রেরণায় সামাজিক দায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন এক মানুষ সলিল। এ সময়ই ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েসান যোগ দিলেন সলিল। নাম লেখালেন ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টিতেও । ওই সময়ে অনেক প্রতিবাদী গান কম্পোজ করলেন সলিল। থিয়েটার নিয়ে গেলেন গ্রামবাংলার তৃণমূল মানুষের কাছে । সলিলের প্রতিবাদী গানে মানুষ উদ্বেলিত হত। ধিতাং ধিতাং বোলে এ মাদলে তাল তুলে আয় ছুটে সকলে ... আয়রে আয় লগন বয়ে যায় মেঘ গুর গুর করে চাঁদের সীমানায় ... সলিল গনসঙ্গীতকে বলতেন, “জাগরনের গান”, “চেতনার গান”। আসলে সামাজিক বৈষম্য কিছুতেই সইতে পারতেন না মহৎ হৃদয়ের ওই মানুষটি। তাঁর ছিল সাম্যবাদী শিক্ষা। এ ক্ষেত্রে বাবা ছিল পথপ্রদর্শক। সঙ্গীতেও। সলিলের বিরল সৌভাগ্য যে হাতেখড়ি ঘরেই হয়েছিল শৈশবে। অন্যত্র যেতে হয়নি। সেই স্বাধীনতা পূর্ব সময়টায় ওই গানগুলি কি ভাবে যে স্বাধীনতাকামী মানুষকে উদবেলিত করেছিল প্রেরণা যুগিয়েছিল, সেই সঙ্গে মানুষকে দিয়েছিল সুরের সমুদ্রের অবগাহনের অপার আনন্দ। গানগুলো আজও গাওয়া হয় দু বাংলায়। এই একুশ শতকেও। বাঙালি এখানেই ব্যতিক্রম। সে তার স্বপ্ন দেখা ছাড়তে পারে না। সময় পেলে আজও জাপানের কোনও শহরে শহীদ মিনার স্থাপন করে সে। বাঙালি এখানেই ব্যতিক্রম। বাঙালি আর কারও মত না। ১৯৪৭। ভারত স্বাধীন হল। গনসঙ্গীতের জোয়ার খানিক স্তিমিত হয়ে এল। কী করা যায়। বসে তো থাকা যায় না। এবার রোমানটিক বাংলা গান কম্পোজ করতে লাগলেন সলিল। রাতারাতি বাংলা গান বদলে গেল। কী কথায় কী সুরে ... রাতারাতি বাংলা গান বদলে গেল। আসামের চাবাগানে বড় হওয়া এক সুরকার রাতারাতি বাংলা গান বদলে দিলেন। না, মন লাগে না এ জীবনে কিছু যেন ভালো লাগে না। লতাজির গাওয়া এই গানটি আরেকবার শুনে দেখুন তো! “ভালো” শব্দটি সলিলের নির্দেশে কী ভাবে উচ্চারণ করেছেন লতাজি। শুনুন আরেকবার।প্লিজ। আর কবিতা? এ নদীর দুই কিনারে দুই তরনি ................................ কাছে যেতে তাই পারিনি তুমিও ...তুমিও ওপার থেকে যাও চলে যাও। না, মন লাগে না গানটি আবার শুনে দেখবেন “তুমিও ওপার থেকে যাও চলে যাও” বলার সময় কী ভাবে ক্লান্তি ঝরে ঝরে পড়ছে লতাজির কন্ঠ থেকে। কল্পনা করি, কোলকাতার স্টুডিওতে বসে সলিল চৌধুরী বলছেন, দিদি এভাবে না, কন্ঠস্বরে আরও ক্লান্তি আনুন ...তুমিও ওপার থেকে যাও চলে যাও। এক নারীর জীবনের সব দুঃখ এই চরণে ... তুমিও ওপার থেকে যাও চলে যাও। এই হল সলিল। আমাদের প্রাণপ্রিয় সলিল চৌধুরি। ঈশ্বরের কাছে থেকে যিনি পেয়েছিলেন গান বাধার অলীক এক প্রতিভা। তাতেই বাঙালিকে আজও মুগ্ধ করে রাখছেন। আজও বাজে,“ও মোর ময়না গো ...” নতুন জেনারেশন জানে হাবিবের গান। জুলির গান। ভিডিয়োতে মিথিলা মডেল। আক্ষেপ এখানেই। অথচ, সলিল চৌধুরী সম্বন্ধে লতাজি একবার বলেছিলেন- ""At one time composer and musician Salil Chowdhury was a commanding presence in the movie world in the city of Bombay. Previously, when he had been associated with the Indian Peoples' Theatre Association (IPTA), his fame had spread well beyond Bengal. Eventually the IPTA disbanded. Salil Chowdhury then found his new arena of work in the city of Bombay. That is when I first made his acquaintance. I respected him a great deal. He has made me sing for Bengali movies. I have also issued Puja recordings of my Bengali songs composed by Salil Chowdhury. These song were all extraordinary in both melody and lyrics. … Over the course of my life I have worked with over a hundred music directors. Of these, perhaps only ten understood both music and the cinema. And of these ten, Salil was the foremost. Salil Chowdhury's melodies were different from those of the others. He had both a highly developed sense and a great understanding of Bengali folk music. On his way from Calcutta to Bombay, he had disappeared for several months. He spent this time in some faraway, long forgotten village, in order to get acquainted with village music, to familiarize himself with its tunes and tempos. Of course he was also very well acquainted with the folk music of other parts of the country. This folk music he has melded wonderfully with Indian classical music. Sometimes he would spend days on end without food or sleep in critical examination of one of his compositions, before deciding for himself how the tune should be developed. I have sung songs by him for over two generations. I have never before seen the equal of composer Salil Chowdhury. "" যাহোক। সলিলের জীবনে স্পস্ট দুটো পর্ব দেখতে পাই। ১) চল্লিশের দশক থেকে মধ্য পঞ্চাশ অবধি। ২) মধ্য-পঞ্চাশ থেকে আমৃত্যু। মধ্য-পঞ্চাশ এর পর ভারত কাঁপাতে বোম্বাই যেতে আগ্রহী হলেন সলিল। তারপরই খুলে গেল আরেক সুরের দুয়ার। সর্বভারত দেখল বাঙালির প্রতিভা। আগেই অবশ্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে আলাউদ্দীন খাঁ, রবীশঙ্কর প্রমূখের বাদনে মুগ্ধ হয়েছিল। এবার দেখল এক বাঙালি সুরকারের ফিল্মি গানের চমক। বোম্বের জীবনে প্রথম প্রথম মনে হয় খানিকটা স্ট্রাগল ছিল সলিলের। বাঙালি বিদ্বেষ রাহুল দেব বর্মনের জীবনকে কী ভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল সেসব কথা আমরা অনেকেই জানি। যাক। সেসব অবশ্য আরও পরের কথা। বোম্বে যাওয়ার পর সলিল শুনলেন এক প্রডিউসার নতুন ছবিতে হাত দেবেন। সলিল কাজ চাইলেন। প্রডিউসার আমতা আমতা করলেন। দুজনে নাকি সন্ধের পর সাদা রঙের অ্যাম্বাসেডর গাড়ির ভিতরে বসেছিলেন। তখন বর্ষাকাল। ঝরঝর বৃষ্টি। গাড়ির জানালার কাচে বৃষ্টি। সলিল কৌতুক করে বললেন, আমি তো আপনার ছবি হিট করাব বলে আগেভাগেই সুর তৈরি করে রেখেছি। প্রডিউসার অবাক হয়ে বললেন, বলেন কী। সুর তৈরি করে রেখেছেন! আচ্ছা, ভাইয়া শোনন তো। সলিল সুর ভাঁজলেন। প্রডিউসার কেঁপে উঠলেন। অভিভূত। সলিলের হাত ধরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন, প্লিজ ভাইয়া গানটা আর কাউকে দিয়েন না ... সলিল হেসে বললেন, আরে, আপনার গান অন্যকে দেব কেন? কোন্ গানটা? লতাজির গাওয়া ....না যেও না রজনী এখনও বাকি ... আপনাদের কি গানটার অন্তরার কথাগুলি মনে আছে? আমি যে তোমারই শুধু জীবনে মরণে ... আহ সুরাটা! সুরের পরতে পরতে একেবারে মৌলিক সলিল ...একেবারে মৌলিক সলিল আমাদের সলিল। বাংলার মাটি সুরেও যে ...এসব কথা লিখলে চোখে জল আসে। সলিলপ্রতিভা নিয়ে অন্যরা কী বলেন পড়ুন-The noted playback singer, KJ Yesudas said: 'When Salil and I sat together by the piano and heard his compositions, I was overwhelmed by a divine feeling that his music brought and I have never felt this magnitude of divinity in any other composer’s music.'[citation needed] Raj Kapoor once said about Salil: 'He can play almost any instrument he lays his hands on, from the tabla to the sarod, from the piano to the piccolo'.[citation needed] His music for movie ""Anand"" is teworthy and popular. his compositions ""Jiya lage na"" enderd by Lata, ""O sajana barkha bahar aayi"", rendered by Lata Mangeshkar, ""Koi hota Jisko apna"" rendered by kishorekumar , ""Gujar gaye din "" rendered by kishorekumar re very diffiult to sing and they are very ipressive and melodious. এবার সলিলের বিশাল কর্মযজ্ঞের সামান্য পরিচয় দিই। Hindi films o 1953 Do Bigha Zameen o 1954 Biraj Bahu; Naukri o 1955 Amaanat; Taangewaali o 1956 Awaaz; Parivaar; Jagte Raho o 1957 Aparadhi Kaun; Ek Gaaon ki Kahaani; LaalBatti; Musafir, Zamaana o 1958 Madhumati o 1960 Jawaahar; Honeymoon; Qaanoon; Parakh; Usne Kaha Tha o 1961 Chaardeewaari; Chhayaa; Kaabuliwaala; Maaya; Memdidi; Sapan Suhaane o 1962 Half Ticket; Jhoola; Prem Patra o 1965 Chand Aur Suraj; Poonam Ki Raat o 1966 Pinjre Ki Panchhi; Netaji Subhash Chandra Bose; Jawaab Aayega o 1969 Ittefaq; Sara Akaash o 1970 Anand o 1971 Gehraa Raaz; Mere Apne o 1972 Annadata; Anokha Daan; Anokha Milan; Mere Bhaiyaa; Sabse Bada Sukh o 1974 Rajnigandha o 1975 Mausam; Chhoti Si Baat; Sangat o 1976 Jeevan Jyoti; Mrigayaa; Udan Choo o 1977 Minoo; Anand Mahal o 1979 Jeena Yehaan o 1980 Chehre Pe Chehra; Chemmeen Lahrein; Chirutha; Kuhaasa; Naani Maa; Room no.203; Daisy o 1981 Plot no. 5; Agni Pareeksha; Atmadaan o 1982 Dil Ka Saathi Dil; Darpok ki Dosti; Artap o 1984 Kanoon Kya Karega o 1986 Zevar o 1988 Trishaagni o 1989 Kamla Ki Maut; Nehru the Jewel of India o 1990 Triyaatri o 1991 Netraheen Saakshi; o 199? Aakhiri Badlaa o 199? Tiriacharittar (or Striyascharittram) o 1994 Swami Vivekananda o 1995 Mera Damaad o ???? Hamaari Shaadi; Maange Miley na Pyaar; Raat Ki Uljhan; Mitti Ka Dev * Bengali films o 1949 Poribartan o 1951 Barjaatri o 1952 Paasher Baari o 1953 Baansher Kella o 1953 Bhor Hoye Elo o 1954 Aaj Sondhaay o 1954 Mohila Mahal o 1955 Rickshawaala o 1956 Raat Bhore o 1956 Ak din Raatre o 1959 Baadi Thekey Paaliye o 1960 Ganga o 1961 Rai Bahadur o 1964 Kinu Goaalaar Goli o 1964 Ayanaanto o 1964 Laal Paathor o 1966 Paari o 1972 Marjina Aabdullah o 1972 Raktaakto Baangla †This film was made in Bangladesh o 1977 Kobita o 1977 Sister o 1979 Jibon Je Rakam o 1979 Srikaanter Will o 1979 Rupali Soikate †This film was made in Bangladesh o 1980 Byapika Bidaay o 1980 Parabesh o 1980 Akaler Sandhaney o 1980 Antarghaat o 1982 Artap o 1985 Protiggya o 1985 Debikaa o 1985 Mowchor o 1986 Jibon o 1989 Swarnatrishaa o 1990/91 Aashrita **(background: Salil) (MD:Hridaynath Mangeskar) o 1994 Mahabharoti o 19?? Komol Gandhaar o 19?? Haraaner Naatjamaai o 19?? Ei Ritur Akdin o 19?? Chalo Kolkataa o 19?? Obhisake o 19?? Aswamedher Ghoraa o 19?? Sei Samoy * Malayalam films o 1965 Chemmeen o 1968 Ezhuraathrikal o 1970 Abhayam (Background music only) o 1973 Swapnam o 1974 Nellu o 1975 Neelaponman o 1975 Raagam o 1975 Rasaleela o 1975 Thomasleeha (or St. Thomas) o 1975 Prateeksha o 1976 Aparadhi o 1976 Thulavarsham o 1977 Dweep o 1977 Samayamayilla Polum o 1977 Etho Oru Swapnam o 1977 Madanolsavam o 1977 Vishukkanni o 1978 Devdasi o 1979 E Ganam Marakkumo o 1979 Chuvanna Chirakkukal o 1979 Puthiya Velicham o 1980 Air Hostess o 1982 Anthiveylile Ponnu o 1990 Vaasthuhaara (background music only) o 1994 Thumboli Kadappuram o 1984 Vellam (background music only) * Tamil films o 1971 Uyir (Salil composed background music only - MD was Ramana Sridhar) o 1973 Karumbu o 1978 Parumavazhai o 1979 Azhiyatha Kolangal o 1980 Thooraththu Idimuzhakkam * Kannada films o 1971 Samsayaphala o 1975 Onde Rupa Eradu Guna o 1977 Chinna Ninna Muddaduve; Kokila * Other films o Gujrati 1971 Ghar Sansaar o Assameese 1970 Aparajeyo o Assameese 1985 Manas Kanya o Oriya 1981 Batasi Jhada o Marathi 1962 Sunbai o Telugu 1974 Chairman Chalamayya সলিলের জীবনাবসান সেপ্টেম্বর ৫। ১৯৯৫। মৃত্যু। ৭৫তম জন্মবার্ষিকীর ঠিক আগে। আরও জানতে চাইলে- http://www.salilda.com/ সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:০৫",False rn,"আমাদের এই পৃথিবী বাইবেলে বলা হয়েছে, “God created man in His own image”। বাইবেলের কথাটা বদলে বলা যায়, “Man created God in his own image”। প্রায় সব ধর্মেই তাই। তাই ঈশ্বরও মানুষের মতো। তিনি জীবের দুঃখে কাতর হন, আনন্দে উল্লসিত, ক্রোধে উন্মাদ।তাই বলা যায় ঈশ্বর আসলে সৃষ্টির সেরা গুজব। পৃথিবী নিজের অস্থিত্বের জন্য কখনও মানুষের প্রয়োজনীতা অনুভব করেনা। বরং মানুষের অস্থিত্বের জন্য পৃথিবীকে তার প্রয়োজন অনেক বেশী।পৃথিবী সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ।পৃথিবী হল মানুষ সহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল হল।৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। এক বিলিয়ন বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বুকে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে।পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ ও এর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস ও কক্ষপথ এই যুগে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়ক হয়েছে।মনে করা হচ্ছে, আরও ৫০ কোটি বছর পৃথিবী প্রাণধারণের সহায়ক অবস্থায় থাকবে। পৃথিবীতলের প্রায় ৭১% লবণাক্ত জলের মহাসাগর দ্বারা আবৃত।অবশিষ্টাংশ গঠিত হয়েছে মহাদেশ ও অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে।মহাবিশ্বের অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বিশেষ করে সূর্য ও চাঁদের সঙ্গে এই গ্রহের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।গ্রহের খনিজ সম্পদ ও জৈব সম্পদ উভয়ই মানবজাতির জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। এই গ্রহের অধিবাসীরা প্রায় ২০০টি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে সমগ্র গ্রহটিকে বিভক্ত করে বসবাস করছে। সূর্যের ভেতরে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের বিস্ফোরণ থেকে তৈরী হয় এনার্জি। আর সেই এনার্জি থেকে ইলেক্ট্রন, প্রোটনের মতো নানা পার্টিকল পৃথিবীতে এসে পৌছায় এবং এগুলোর ক্ষতিকর প্রভা এসে পরে পৃথিবীর উপর। পৃথিবী জুড়ে সমুদ্রের লেভেল বাড়ছে। গ্রীনল্যান্ড ও আ্যন্টার্কটিকার বরফও গলে যাচ্ছে। ফলে এক সময় হয়তো প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাবে সারা পৃথিবী।অধিকাংশ প্রাচীন সভ্যতায় উল্লেখ থাকে যে, অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন কেউ একজন দূর থেকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি ঘটনা সেই একজনের বিশাল বড় এক ঐশ্বরিক প্ল্যানের অংশ বিশেষ।নাসা (NASA) ধারণা করছে ২০১৯ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারীর পৃথিবীতে একটা বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।পৃথিবী সূর্য থেকে খন্ডিত একটি গ্রহ মাত্র। সূর্য থেকে ১৪,৯০,০০,০০০ কিমি দূরে এর অবস্থান এবং এর ব্যাস ১২,৭৫৬ কিমি। অর্থাৎ ১৩,০০০ কিমি লম্বা একটি রড এটার পেটে ঢুকিয়ে দিলে এদিক থেকে ওদিকে বেড়িয়ে যাবে। সভ্যতার সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ নির্দশন ছিল ২০০০ বছর আগেকার মায়া সভ্যতা।প্রাচীন মিথ, জ্যোতিষশাস্ত্র কিংবা প্রাচীন বুদ্ধিমান সভ্যতার ওপর যাদের আস্থা চরম তাদের প্রথম পছন্দ মায়া সভ্যতা।পৃথিবী ধ্বংস নিয়ে অন্য যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, তার মধ্যে ২০২৩ সালও রয়েছে। ধর্মতাত্ত্বিক ইয়ান গার্নির মতানুসারে, ২০২৩ সালে পৃথিবী ধ্বংস হবে। তবে একজন আইরিশ সাধকের ভবিষদ্বাণী অনুযায়ী, পৃথিবীর মানুষ হয়তো আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে। মালাচি নামের ওই আইরিশ সাধক ১১৪৩ সালে বলেছিলেন, পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আগে আরও ১১২ জন পোপ পৃথিবীতে আসবেন। বর্তমান পোপ ১১১ নম্বর। তার মানে আরও একজন পোপ না আসা পর্যন্ত পৃথিবী ধ্বংস হচ্ছে না। আল্লাহ বলেছেন, “মানুষের সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সৃষ্টি কঠিনতর; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা অনুধাবন করেনা”। সূরা আল-মুমীন ৫৭। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের একমাত্র জীবনতরী এ বিশ্ব ব্রহ্মান্ড আজ হুমকির মুখে পর্যবসিত হয়েছে। পৃথিবী একটা শিলাময় পাথুরে গ্রহ, মঙ্গলও তাই, শুধুমাত্র তফাত পৃথিবীতে বিপুল তরল পানি আছে মঙ্গলে তা নেই, যদিও ধারণা করা হয় অতীতে হয়ত সেখানে তরল পানির অস্তিত্ব ছিল আর তখন ছিল হয়ত বা কোন জীবানু সদৃশ জীবের অস্তিত্ব।কেপলার দুরবীণের আগে অতি বৃহৎ গ্রহ যেমন বৃহস্পতি বা নেপচুনের মত আকৃতির গ্রহ আবিষ্কার করা যেত কিন্তু পৃথিবীর মত আকৃতির গ্রহ আবিষ্কার করা যেত না, কেপলারের নতুন উন্নত মানের যন্ত্রপাতী সে সমস্যা দূর করার ফলে পৃথিবী আকৃতির গ্রহ আবিষ্কার সম্প্রতি ২০০ গুনের মত বৃদ্ধি পেয়েছে।পৃথিবীর আয়তনের চেয়ে সূর্যের আয়তনের কি বিরাট ব্যবধান! সূর্যের তুলনায় পৃথিবী একটি ক্ষুদ্র বিন্দুর মত। পৃথিবীর চেয়ে সূর্য প্রায় ১৩ লক্ষ গুন বড় এবং এর ব্যাস ১৩,৯০,০০০ কিমি। পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর একবার ঘুরতে সময় নেয় ৮৬,৪০০ সেকেন্ড। আমরা একে হিসাবের সুবিধার জন্য ২৪ ঘণ্টা হিসাবে ধরে ১ সৌরদিন বিচার করে থাকি। পৃথিবীর উপরিতলে রয়েছে সিলিকেট সমৃদ্ধ মাটি, নানবিধ জৈব ও অজৈব উপাদান। আর কেন্দ্রে রয়েছে কঠিন লৌহ পিণ্ড। পৃথিবীর উপরিতল থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ৫১০০-৬৩৭৮ কিলোমিটার।পৃথিবীর সবচেয়ে উপরে অংশ এবং সবচেয়ে পাতলা স্তরটি হলো ভূত্বক। প্রাচীন গ্রীসে বিশ্ব ব্রহ্মান্ড এবং দেব দেবী নিয়ে গড়ে উঠেছিল অনেক মজার মজার গল্প।এরোস EROS ছিলেন সৃস্টির দেবতা । আফ্রোদিতি পুত্র এরোস থেকে পৃথক হিসেবে দেখাতে তাকে ফানেস বা প্রটোগনস হিসেবে ও ডাকা হত। এরস ছিলেন ভাল বাসার দেবতা । সৃস্টির শুরুতে আকাশ দেবতা ইউরেনাস এবং ধরিত্রী দেবী গায়ার মনে ভালবাসার সঞ্চার করেন এরোস, সেখানেই সৃস্টির সূচনা।থালাসা THALASSA - সমুদ্র বা সমুদ্র পৃষ্ঠের প্রাথমিক দেবী হলেন থালাসা। ইথার এবং হেমেরার মিলন থেকে তার জন্ম। দেবতা পন্টাসের গভীর জলের সাথে মিশে তিনি লালন করতেন মাছেদের। ইসলাম ধর্মে কেয়ামত বা কিয়ামত হলো সেই দিন যে দিন এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে আল্লাহ সৃষ্ট সকল জীবকে পুনরুত্থান করা হবে বিচারের জন্য| সকল জীবকে তার কৃতকর্মের হিসাব দেয়ার জন্যে এবং তার কৃতকর্মের ফলাফল শেষে পুরস্কার বা শাস্তির পরিমান নির্ধারণ শেষে জান্নাত/বেহেশত/স্বর্গ কিংবা জাহান্নাম/দোযখ/নরক এ পাঠানো হবে| এই পৃথিবীতে আমরা যা কিছু দেখছি বিভিন্ন পদার্থ, গাছপালা, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ, মানুষ ইত্যাদি সমস্ত কিছু কতগুলো পরমাণুর সমষ্টি। তবে মানুষের ক্ষেত্রে শুধু পরমাণুর সমষ্টি বললে সম্পূর্ণ বলা হয় না তাই বলতে হবে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল কতগুলো পরমাণুর সমষ্টি। কারণ প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট জীব, মানুষই এসেছে সবার শেষে।বিস্ফোরণের প্রথম ৩ মিনিটের মধ্যে যা ঘটেছিল, বিশ্বব্রহ্মান্ডের গোটা ইতিহাসে আর কখনো তা ঘটেনি। বিশ্বসৃষ্টির রহস্য ঐ ৩ মিনিট সময়ের মধ্যেই ধরা আছে। তখনই প্রকৃত অর্থে বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল। আজকের বিশ্বে আমরা যা কিছু দেখি তার বীজ সৃষ্টি হয়েছিল তখন। তখন নিউক্লিয়ন ইত্যাদি বহু কণিকা গঠিত হয়েছিল এবং কণিকাগুলো পরস্পরের সাথে ক্রিয়া করতে আরম্ভ করেছিল। এই যে পারস্পরিক ক্রিয়া, বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে মিথস্ক্রিয়া। বহুকাল ধরে বিভিন্নভাবে এই মিথস্ক্রিয়া হওয়ার ফলে বিভিন্ন পদার্থের সৃষ্টি। এইভাবেই আস্তে আস্তে উদ্ভিদ, পশু, পাখি, মানুষ প্রভৃতি জীব সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমে সৃষ্টি উদ্ভিদের তারপর প্রাণীর। পৃথিবীতে জীবসৃষ্টির পর দু’টি ধারায় জীবজগৎ বিভক্ত হয়ে গেল-একটি উদ্ভিদজগৎ আর একটি প্রাণীজগৎ। উদ্ভিদজগৎ আর প্রাণীজগৎ মিলে জীবজগৎ। মানুষ এসেছে সবার শেষে। মানুষের আগমণ মাত্র ত্রিশ লক্ষ বছর আগে। মানুষও একেবারে পৃথিবীতে আসেনি। এককোষী প্রাণীর থেকে যে রূপান্তর সৃষ্টি হয়েছিল, তারই শেষ পরিণতি মানুষ। সৃষ্টির এই যে তত্ত্ব, বিজ্ঞানের ভাষায় একেই বলে বিবর্তনবাদ। সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩৬",False rn,"আসুন আয়ারল্যান্ড দেশটি সম্পর্কে জানি আয়ারল্যান্ড উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। রাজধানী ডাবলিন যা আয়ারল্যান্ড দ্বীপের সর্ববৃহৎ শহর। ডাবলিন নগরী বেশ ছিমছাম, রাস্তাঘাটে মানুষের ভিড়ও তেমন নেই। লন্ডনকে যেমন ব্যস্ত নগরী মনে হয়, ডাবলিন সে তুলনায় একেবারে শান্ত-সৌম্য। মানচিত্রে দেখতে লম্বাটে। উত্তর-দক্ষিণের দৈর্ঘ্য মাত্র ৪৬৫ কিলোমিটার এবং পাশে মাত্র ২৮৫ কিলোমিটার, বলা যায় বাংলাদেশের অর্ধেক। বড় শহর বলতে ডাবলিন, যেখানে জনসংখ্যা মাত্র ছয় লাখের মতো। ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ এবং পৃথিবীর বিশতম বৃহত্তম দ্বীপ। আইরিশ মানুষ কথোপকথন ভালবাসে এবং অন্যান্য মানুষের প্রতি তাদের প্রকৃত আগ্রহ আছে। আয়ারল্যান্ড একটি ছোট্ট দেশ আয়তন মাত্র ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার। চার পাশে পানি উথাল-পাথাল করে। রয়েছে অসংখ্য পাহড়-পর্বত, বেশ কয়েকটি নদী এবং অনেক হ্রদ। দক্ষিণে ও পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর; আড়াই হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করলেই আমেরিকা। আইরিশরা প্রধানত ক্যাথলিক ক্রিশ্চিয়ান। এরা খুবই ভদ্র, নম্র ও অতিথিপরায়ণ। আয়ারল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৫০ লাখের কাছাকাছি। আয়ারল্যান্ডের প্রধান ক্রীড়া- সকার এবং রাগবি।আলু আইরিশদের প্রধান খাদ্য। কত শত প্রকারের খাবার যে আলু দিয়ে তৈরি হয় তার সীমা নেই। আয়ারল্যান্ডের মাটি চাষবাসের জন্য খুব একটা উপযোগী নয়। পাথর আর কঙ্কর মিশ্রিত থাকায় ফসল ফলানো কঠিন। ১৮৪০-এর দশকে আয়ারল্যান্ডে ঘটে যায় এক মর্মান্তিক ঘটনা। কয়েক বছর আলু ও অন্যান্য উৎপাদন মারাত্মক মার খায়। এক ধরনের রোগে আলু পচে যায়। খাদ্যাভাবে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এতে প্রায় ১০ লাখ লোক মারা যায়। আয়ারল্যান্ড আমাদের মতোই ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল দীর্ঘদিন। মাত্র ১৯২১ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। এদের রাষ্ট্রভাষা দুটো : ইংলিশ ও আইরিশ গ্যালিক। আইরিশদের জাতীয় পতাকার তিনটি রঙ; এর মধ্যে দুটো রঙ দুটো ধর্মকে প্রতিনিধিত্ব করে। সবুজ রঙ রোমান ক্যাথলিক এবং কমলা রঙটি প্রোটেস্ট্যান্টদের। সাদা রঙটি ঐক্যের প্রতীক। জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ, মৃদু শীত, ঠান্ডা গ্রীষ্ম, নিয়মিত আদ্রতা, অর্ধেক সময় মেঘাচ্ছন্ন।আয়ারল্যান্ডের উচ্চতর শিক্ষা ব্যবস্থা সুযোগ অনেক বিস্তৃত এবং চতুর্দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সেক্টর, প্রযুক্তিগত ক্ষেত্র,শিক্ষার জন্য প্রাইভেট কলেজ ও স্বতন্ত্র কলেজ। প্রতিষ্ঠানগুলো যা প্রথম তিনটি গ্রুপের মধ্যে পড়ে, স্বায়ত্তশাসিত এবং স্ব নিয়ন্ত্রক, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রই তহবিল প্রদান করে। জ্ঞান বা বিদ্যা, নব্য ধ্রুপদী এবং নব্য গোথিক শৈলীতে ১৭, ১৮ এবং ১৯ শতকে নির্মিত মহিমান্বিত বাসগৃহ যেমন- কাসল ওয়ার্ড, কাসলটাউন হাউস, বেনট্রি হাউস ও পর্যটকদের আগ্রহের কারন। আয়ারল্যান্ডের নারীদের ৩৬ শতাংশ পরকীয়ায় জড়িত। রাতের আলোতে ডাবলিন শহরকে দিনের চেয়েও সুন্দর মনে হয়। আলো ঝলমল রাতের আঁধারে শত শত পর্যটক ক্যামেরা কাঁধে ঝুলিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করেন। আয়ারল্যান্ডে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে গড়ে উঠছে একের পর এক মসজিদ। বর্তমানে আয়ারল্যান্ডে ৫০ হাজারের মতো মুসলমান বসবাস করেন। যা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ। তবে মুসলমানদের সংখ্যা ২০২০ সালে এক লাখে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। আয়ারল্যান্ডের প্রত্যেক শহরেই মসজিদ এবং মক্তব রয়েছে। সেখানকার মুসলিম ছাত্রীরা হিজাব পরে স্কুলে যেতে পারে। আয়ারল্যান্ডে রয়েছে ইসলামি পোশাকে প্রচুর চাহিদা। কিন্তু সেসব আমদানি করতে হয় বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে। আয়ারল্যান্ডের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলমান শিক্ষার্থীদের জন্য প্রার্থনা কক্ষ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অগণিত ছাত্রছাত্রী আয়ারল্যান্ড গমন করে। আয়ারল্যান্ডে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করার আনুমানিক ব্যয় ১০ হাজার ৫০০ ইউরো থেকে ১৫ হাজার ১৫০ ইউরো। মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করতে আনুমানিক ব্যয় ৭ হাজার ৪০০ ইউরো থেকে ১৫ হাজার ৭২০ ইউরো পর্যন্ত লাগতে পারে। সাহিত্যের জন্য ডাবলিন একেবারে অন্যরকম। খানকার সাহিত্য আসরগুলো শুড়িখানার মতো। সাহিত্য আর সুরায় এক অনবদ্য মিল যেখানে উপভোগ করার মতো। ‘ডাবলিন লিটারেরি পাব ক্রলে’ আপনি ঢুকে যেতে পারেন। পানশালা আর সাহিত্য এখানে একাকার। একেবারে আনন্দের মধ্য দিয়ে সাহিত্য। এই ডাবলিন শহরেই আসতেন জেমস জয়েসের মতো বিখ্যাত আইরিশ ঔপন্যাসিক ও কবি সাহিত্যিকরা। সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:২৪",False rn,"নীতিহীন মানুষেরা নীতিহীন মানুষ হওয়ার অপেক্ষায় এই আমি... মিরপুর থেকে শাহবাগ আসছিলাম বাসে করে। কাওরান বাজার বাস সিগনালে দাঁড়িয়ে আছে। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। হঠাত দেখলাম এক পাগল রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে দুই হাত উপরে তুলে বিক্ষিপ্ত মেজাজে চিৎকার করে বলছে- 'ঢাকা শহরে একটাও মানুষ নেই, সব শুয়োরের বাচ্চা।' বারবার চিৎকার করে এই কথাটাই বলে যাচ্ছে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে- কথাটা সত্যই বলছে। সারাদিন নানান কাজে আমাকে বাইরে থাকতে হয়। অজস্র মানুষের সাথে কথা বলে- কাওরান বাজারের ওই পাগলের মতোমারও চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে- 'ঢাকা শহরে একটাও মানুষ নেই, সব শুয়োরের বাচ্চা।' এ সমাজে মায়া-মমতা, ভালোবাসা মানুষের কাছে আশা করা ভুল। সবাই আজ বড় বেশি নিষ্ঠুর হয়ে গেছে। হিংস্র হয়ে গেছে। একজন আরেকজনকে টেক্কা দিয়ে, আঘাত দিয়ে, অপমান করে এগিয়ে যাবার চেষ্টায় সব সময় মশগুল থাকে। আমার এক বন্ধু রমিজ নাম। একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। খুব সহজ সরল ছেলে। এই ছেলেকে অফিসের লোকেরা চাকরের মতোন খাটায়। খাটতে সে বাধ্য। অন্যথায় তার চাকরী চলে যাবে। চাকরী চলে গেলে তার সংসার চলবে কেমন করে? তাই সে অফিসের সবার ব্যাক্তিগত কাজ করে দেয়। তাকে চাকরের মতোন খাটায়। সে যখন আমার কাছে এসে এইসব মানুষের কর্মকাণ্ডের কথা আমাকে বলে, তখন আমার খুব রাগ হয়- কষ্ট লাগে। কিন্তু আমি রমিজের জন্য কিছুই করতে পারি না। রমিজ তাদের বাজার করে দেয়, তাদের ব্যাংকের কাজ করে দেয়। দিনের পর দিন এইভাবেই চলছে। এই সমাজে যারা প্রতিনিয়ত ধান্ধাবাজি করে, চামচাগিরি করে এবং দালালি করে- তারাই ভালো থাকে। তারা তিনবেলাই ভালো ভালো খাবার খায়। পনের-বিশ টাকা বাচানোর জন্য অনেকখানি পথ হাটতে হয় না। দুপুরে ভাতের বদলে রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে চা বিস্কুট খেতে হয় না। অফিস শেষে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরতে হয় না। বিশ তারিখের পরে সংসার কি করে চলবে তা নিয়ে চিন্তা করতে হয়। ছোট মেয়েটার অসুখ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কোনো চিন্তা করতে হয় না। স্কয়ার অথবা ইউনাইটেড হাসপাতাল আছে না। প্রচুর টাকা থাকলে যা খুশি তাই করা যায়। অন্যায় করা যায়, অবিচার করা যায়। কাজেই এই সমাজে সুন্দরভাবে চলতে হলে, সুন্দরভাবে বাঁচতে হলে নীতিহীন হতে হবে। বদমাশ হতে হবে। শুয়োর হতে হবে। ধান্ধাবাজ হতে হবে। দালালি করতে হবে। সব রকম খারাপ কাজ করলেই ভালো ভাবে থাকা যাবে। ধর্ষণ করে এসে ফেসবুকে নারী আন্দোলন নিয়ে স্ট্যাটাস দিতে হবে। পকেটে ঘুষের টাকা নিয়ে, চিৎকার করে বলতে হবে দুর্নীতি করবেন না। চামচাগিরি করে নিজের অবস্থান মজবুত করতে হবে। তারপর অধীনস্তদের দাপিয়ে বেড়াতে হবে। এই তো নিয়ম। এভাবেই এই সমাজে ভালো থাকা যাবে। আর এই সমাজের অল্প কিছু ভালো মানুষেরা যতই চেষ্টা করুন কোনো লাভ নেই। তারা কোনো কিছুতেই একফোটা পরিবর্তন করতে পারবে না। নো নেভার। তাদের পরিবর্তন করতে দেয়া হবে না। হাসপাতালের আয়া থেকে একজন ডাক্তার পর্যন্ত তাদের মধ্যে কোনো মায়া-মমতা নেই। সরকারি অফিসের লোকদের মধ্যে কোনো মানবিকতা নেই। সামান্য একটা কাজে গেলেও তাদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা দিতে হবে। ঘরে বাবা-মার ভদ্র ছেলেটি বাইরে কোনো মেয়ে দেখলে বিশ্রীভাবে তাকাবে এবং অবশ্যই বিশ্রী মন্তব্য করবে। দিনের পর দিন তো এইভাবেই চলছে। মাঝে মাঝে আমার বন্ধু রমিজকে বলতে ইচ্ছে করে- একটু পরিশ্রম করে, একটু বুদ্ধি করে অবৈধ ভাবে প্রচুর টাকা কামাও। তারপর দেখবে সবাই তোমার কাছে এসে হুজুর হুজুর করবে। তোমার জয়গান করবে। সবাই জানবে তুমি অবৈধভাবে কোটি টাকার সম্পদ করেছো কিন্তু কেউ বলতে সাহস পাবে না। বরং দিনের মধ্যে অজস্র বার সালাম পাবে। কাজেই বলা যায়, নীতিহীন মানুষ হলে এ পৃথিবীতে তুমি এক আকাশ আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। সহজ সরল ভালো মানুষ এই সমাজে একেবারে অচল। হে প্রভু আমাকে নীতিহীন মানুষ বানিয়ে দাও। দাও। দাও। সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৮",False mk,"জয়পুরহাটে ১ লাশ, আর কতো চাই খালেদার গণতন্ত্রের জন্য! চোরাগোপ্তা বোমাবাজি, যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। রবিবার এ কর্মসূচী চলাকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে হরতালকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ৮ থেকে ১০টি বোমা নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় ২৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। রাত আটটার দিকে যাত্রাবাড়ীতে ঝটিকা মিছিল ও বাস ভাংচুর করেছে শিবিরকর্মীরা। এ সময় এক শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। জয়পুরহাটে এক যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা মারার পর বাসটি রাস্তার পাশে পড়ে গেলে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত যাত্রী উজ্জ্বল কুমার মারা যায়। এ সময় ৩ শিবিরকর্মীকে ধরে গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। যশোরে সার্কিট হাউস গেটসহ ৪ স্থানে ৫টি বোমা বিস্ফোরণ করেছে হরতালকারীরা। নাশকতার অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমিরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভোলায় বোমা বিস্ফোরণে তিন বোন আহত হয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে রবিবার রাত আটটার দিকে শিবিরের ঝটিকা মিছিল ও বাস ভাংচুরের সময় নারী ও শিশুসহ কয়েকজন আহত হয়েছে। এ সময় মিছিল থেকে ককটেল নিক্ষেপের সময় পুলিশ গুলি করলে আবদুল্লাহ আল মামুন (২০) নামে এক শিবিরকর্মী আহত হন।যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, হরতালের সমর্থনে শিবিরের ২০-২৫ জনের একটি দল ঝটিকা মিছিল বের করে। মিছিল শেষে তারা পরপর কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও যাত্রীবাহী বাস ভাংচুর চালায়। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও হাতবোমা ছোড়ে। আত্মরক্ষায় পুলিশও তাদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে মামুনের পায়ে একটি বুলেট বিদ্ধ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। শিবিরকর্মীদের ভাংচুরের সময় পাঁচ থেকে ছয় বাসযাত্রী আহত হন। এর মধ্যে দু’জন শিশু। এর আগে পল্টন মোড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ ও যানবাহন ভাংচুরে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৫ জনকে আটক করে পুলিশ। সকাল ১০টায় পল্টন মোড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ৮ থেকে ১০টি ককটেল নিক্ষেপ করে হরতাল সমর্থকরা। সেই সঙ্গে তারা একটি যাত্রীবাহী বাসসহ তিনটি যানবাহন ভাংচুর করে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। এ ঘটনার পর দুপুর পর্যন্ত পল্টন ও তোপখানা এলাকায় অভিযান চালায় এবং সন্দেহভাজন ২৫ জনকে আটক করা হয়। আটকদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন এমদাদুল হক, মনিরুজ্জামান, তাজুল ইসলাম ও দীপক ঘোষ। বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। জয়পুরহাট ॥ জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার ক্ষেতলাল-মোলামগাড়ী সড়কের করিমপুর নামক স্থানে রবিবার বিকেলে জনকল্যাণ নামে একটি যাত্রবাহী বাসে ৬ শিবির ক্যাডার ২ মোটরসাইকেলযোগে এসে পেট্রোলবোমা ও ককটেল ছুড়লে বাসটি রাস্তার পাশে নেমে যায়। এ সময় বাসযাত্রী উজ্জ্বল কুমার মহন্ত (৩৭) মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে জয়পুরহাট হাসপাতালে ভর্তি হলে সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ঘটনার পর পরই এলাকার লোকজন শিবির ক্যাডারদের ধাওয়া করলে ৩ শিবির ক্যাডারকে ধরে এলাকাবাসী গণপিটুনি দিতে শুরু করে। এ সময় একটি মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যাওয়া ৩ শিবিরকর্মী নিশ্চিন্তা নামক স্থানে গেলে এলাকাবাসী ধরে ফেলে। আটককৃত ৩ শিবির ক্যাডারের কাছে ৫টি পেট্রোলবোমা, একটি ককটেল পাওয়া যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা মোটরসাইকেলটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ৩ শিবিরকর্মীকে গণপিটুনি শুরু করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। আহত শিবির ক্যাডাররা হচ্ছে জয়পুরহাট সদরের সগুনা গ্রামের রমজান আলীর পুত্র হাসান আলী (২৪), মাধবপাড়া গ্রামের আব্দুর রহমানের পুত্র নূর আলম (২৬), হিচমী দক্ষিণ পাড়া গ্রামের আশরাফ আলীর পুত্র আব্দুল্লা (২৬), আক্কেলপুর উপজেলার ভালুকান্দা গ্রামের রেজাউল করিমের পুত্র শাখাওয়াত হোসেন (২৭), নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার রসুলপুর গ্রামের রেজাউল করিমের পুত্র আব্দুল খালেক (২৫), পতিœতলা উপজেলার চকছাদের গ্রামের হাবিবুর রহমানের পুত্র ছানাউর রহমান (২৮)। আহত এক শিবির ক্যাডারকে বগুড়ায় শজিমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। অপর ৫ শিবির ক্যাডার সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ক্ষেতলাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুলিশের তত্ত্বাবধানে ভর্তি রয়েছে।ভোলা ॥ সদর উপজেলার পৌর চরজংলা এলাকায় রবিবার ভোরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৩ বোন আহত হয়েছে। গুরুতর অবস্থায় তাদের ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন, জান্নাত (১২), সুফিয়া (৭) ও ফামেতা (৫)। তারা উভয়ই ওই এলাকার মোস্তফা কামালের মেয়ে। যশোর ॥ শনিবার রাতে যশোর সার্কিট হাউস গেটসহ শহরের চার স্থানে ৫টি বোমা বিস্ফোরণ করেছে হরতালকারীরা। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অল্প সময়ের ব্যবধানে সার্কিট হাউসের গেট লক্ষ্য করে দুটি বোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। শহরের মুজিব সড়কে অবস্থিত সার্কিট হাউস এলাকায় এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পাশে অবস্থিত প্রেসক্লাবে অবস্থানরত সাংবাদিকরাও বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। জানতে চাইলে সার্কিট হাউসের কর্মচারী নাসির দুটি বোমা বিস্ফোরণের কথা নিশ্চিত করেন। তবে যশোরের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আবদুল মালেক বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না।চট্টগ্রাম ॥ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরী শাখার ভারপ্রাপ্ত আমির প্রফেসর আহসান উল্লাহকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার গভীর রাতে হালিশহর এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতার অভিযোগের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (গোয়েন্দা) এসএম তানভীর আরাফাত সাংবাদিকদের জানান, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছিলেন নগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির আহসান উল্লাহ। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ তাকে একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করে। এছাড়া গ্রেফতার করা হয় ছাত্রশিবিরের স্কুলবিষয়ক সম্পাদক সফিকুল ইসলাম শোভনকে (২২)। তার বিরুদ্ধেও হালিশহর ও ডবলমুরিং থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সিএমপির বাকলিয়া থানার ওসি মোঃ মহসিন জানান, ২০১২ সালের ৯ নবেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন জামায়াত নেতা আহসান উল্লাহ। গ্রেফতার এড়াতে জামায়াতের এ নেতা পালিয়ে ছিলেন। আদালতের নির্দেশে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বাকলিয়া থানার রসুলবাগ এলাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ তার অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করে। গ্রেফতারের পর এই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।গাইবান্ধা ॥ নাশকতা ও সহিংসতা বিরোধী অভিযানে গাইবান্ধায় জামায়াত-শিবিরের ১৭ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যৌথ বাহিনী ও পুলিশ পৃথকভাবে শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।বাসে পেট্রেলবোমা মেরে মানুষ হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন নাশকতা মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। জেলা পুলিশ কন্টোল রুম সূত্রে জানা যায়, জেলার সদরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া ইউনিয়নের ফুলমালীর চালা গ্রামের স্থানীয় হেলালের উদ্দিনের খড়ের গাদা থেকে রবিবার সকালে ৯ পেট্রোলবোমা ও ৩টি ককটেল উদ্ধার করেছে ঘাটাইল থানা পুলিশ।ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মাকসুদুল আলম ও এলাকাবাসী জানান, সকালে উপজেলার ধলাপাড়া ইউনিয়নের ফুলমালীল চালা গ্রামের করিমগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিনের বাড়ির খড়ের গাদা থেকে খড় আনতে যায় তার ভাই আবু সাইদ। এ সময় সে খড়ের গাদায় লুকানো অবস্থায় একটি কাগজের বাক্স দেখতে পায়। তিনি এলাকাবাসীকে ডেকে বাক্সটি খুললে তার ভেতরে থাকা ৯ পেট্রোলবোমা ও ৩টি ককটেল দেখতে পায়। পরে বিষয়টি ঘাটাইল থানা পুলিশকে অবহিত করলে সাগড়দিঘী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই সাইদুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৯ পেট্রোলবোমা ও ৩টি ককটেল উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলার প্রস্তুতি চলছিল।জামালপুর ॥ মাদারগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মুখলেছুর রহমানকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। রবিবার সকালে জামালপুর পৌর শহরের পাঁচরাস্তা মোড় এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। জামালপুর ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে ডিবি পুলিশের একটি দল ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। এদিকে মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুল আওয়াল জানান, আটক ছাত্রদল নেতা মুখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে মাদারগঞ্জ থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা রয়েছে। সে ওই মামলার পলাতম আসামি। প্রকাশিত: আজকের জনকণ্ঠ",False fe,"সাহিত্যের ভবিষ্যৎ _ বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর সাহিত্যের ভবিষ্যৎ বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ======================= বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর সাহিত্যে একটা দিক দর্শন স্পষ্ট। সে হচ্ছে সাহিত্যের পর্যালোচনার ক্ষেত্রে রাজনীতি অপ্রাসঙ্গিক নয়। সাহিত্যের একটা দিক হচ্ছে কলোনির সময়, অপরটি হচ্ছে স্বাধীনতা-উত্তর সময়। এই দুই সময়কেই বোঝার জন্য দরকার কলোনিয়াল এবং স্বাধীনতা-উত্তর সামাজিক অভিজ্ঞতার অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। এই দুই মিলিয়ে সাহিত্যে কলোনিয়াল অ্যাডভেঞ্চার এবং এই দুই মিলিয়ে কলোনিয়াল সাহিত্যের স্বরূপ এবং বাংলাদেশি সাহিত্যের উত্থান। কলোনিকালের লেখক পাকিস্তানি কলোনি কাল এবং ব্রিটিশ কলোনি কালের বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। এসব তত্ত্বের মধ্যে আছে শ্বেতাঙ্গদের সভ্যতার মিশন এবং পাকিস্তানিদের ইসলামীকরণের মিশন, সে জন্য দু'ক্ষেত্রেই সামাজিক প্রয়াসকে যুক্তিশীল করা হয়েছে। কলোনিয়াল অভিজ্ঞতার অর্থ হচ্ছে, সাহিত্যের সমাদর্শিক অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ, এই বিশ্লেষণে যুক্ত বাংলা সাহিত্যের কলোনিয়াল এবং রেসিয়াল উপাদানগুলো। কলোনিয়াল উপাদানগুলো এসেছে পাকিস্তানি এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে। রেসিয়াল উপাদানগুলো এসেছে শ্বেতাঙ্গ শাসন বনাম বাঙালি জনজীবন, শ্বেতাঙ্গ শাসনের শ্রেষ্ঠত্ব বনাম বাঙালি জনজীবনের নিকৃষ্টতা, বাঙালি জনজীবনের মধ্যে ক্রিয়াশীল আবার হিন্দু সমাজের শ্রেষ্ঠত্ব বনাম মুসলমান সমাজের নিকৃষ্টতা; আবার বাঙালি জনজীবনের শ্রেষ্ঠত্ব বনাম পাহাড়ি, আরণ্যক সমাজের নিকৃষ্টতা। সাহিত্যে কলোনিয়াল এবং রেসিয়াল অভিজ্ঞতার প্রতিফলন নেহাতই অভিজ্ঞতার ভিন্নতা নয়, এখানে স্পষ্ট শ্রেষ্ঠ সমাজের নিকৃষ্ট সমাজের বিরুদ্ধে ঘৃণা। এই ঘৃণা মানুষের বিরুদ্ধে মানুষের ঘৃণা, একই ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে বসবাসকারী নিকৃষ্ট মানুষগুলোর অধিকারহীন জীবনযাপন। কলোনিয়াল সমাজে বাঙালিদের কতক অংশ 'ইংরেজ' হওয়ার চেষ্টা করেছে, তেমনি বাঙালিদের কতক অংশ 'পাকিস্তানি' হওয়ার চেষ্টা করেছে, তেমনি পাহাড়ি ও আরণ্যক জনগোষ্ঠীর কতক অংশ 'বাঙালি' হওয়ার চেষ্টা করেছে। কলোনিয়াল সমাজ সে জন্য কলোনাইজড জনসমষ্টির যারা কলোনাইজার (ক্ষেত্র বিশেষে ইংরেজ, পাকিস্তানি, বাঙালি) তাদের প্রত্যাখ্যান কেবল নয়, এই বিরোধ কিংবা বিষম অবস্থানে উচ্চারিত গভীর এক নির্ভরশীলতার বোধ। এই বোধে উচ্চারিত যারা আদিবাসী, ইংরেজদের চোখে বাঙালি, কিংবা পাকিস্তানিদের চোখে বাঙালি কিংবা বাঙালিদের চোখে পাহাড়ি ও আরণ্যক জনগোষ্ঠী হচ্ছে নষ্টামির অন্তঃসার, এই নষ্টামি থেকে উৎসারিত দূষণ, অন্যদিকে কলোনাইজার জনসমষ্টির মধ্যে ক্রিয়াশীল নৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের বোধ। কলোনাইজার জনসমষ্টি ক্ষমতার জোরে কেবল শাসন করেছে তাই নয়, কলোনাইজড জনসমষ্টির তুলনায় তারা নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠ। কলোনিয়াল সমাজের সাহিত্যে অন্তঃশীল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কিংবা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে কিংবা বাঙালিদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা কিংবা স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করার আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সাধারণ মানুষের অবস্থান বিবেচনা করা জরুরি। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অবস্থান দুই ধরনের। প্রথমত, এ সব আন্দোলন হয়েছে গণমানুষের সমর্থন নিয়ে। দ্বিতীয়ত, এ সব আন্দোলনে গণমানুষের অংশগ্রহণ নূ্যনতম। এ বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে, শিক্ষিত রাজনৈতিক এলিটরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কিংবা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে কিংবা বাঙালিদের বিরুদ্ধে পপুলার সমর্থন ব্যবহার করেছে, কিন্তু এ এলিটদের কোনো আকাঙ্ক্ষা ছিল না কলোনিয়াল আমলের কিংবা (স্বাধীনতা-উত্তর আমলের) সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর মৌলিক পরিবর্তন করা কিংবা যে জনসমষ্টিকে তারা শোষণ করেছে তাদের সঙ্গে ক্ষমতার শেয়ার করা। এই এলিটদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল (অথবা আছে) কলোনিয়াল আমলাতন্ত্রের হাত থেকে নিজেদের কাছে ক্ষমতা বদলি করা। এলিট এবং সাধারণ মানুষের মধ্যকার এই প্রভেদ, তফাত, ব্যবধানের অর্থ হচ্ছে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তন গণমানুষের জীবনকে স্পর্শ করতে পারেনি। লেখকের প্রজেস্ট হচ্ছে সাহিত্য নির্মাণ করা। যে সাহিত্য কলোনিয়াল সমাজ ক্ষেত্রে উৎসারিত এবং স্বাধীনতা-উত্তর সমাজে প্রবাহিত সে প্রজেক্টে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, রেসিয়াল এবং নৈতিক সমস্যাগুলো ঘুরে ঘুরে বারে বারে আসে। কলোনিয়াল সমাজের বিভিন্ন সংগঠন সাহিত্যের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে সাংস্কৃতিক আইডেনটিটি তৈরি হবে কিভাবে? সাংস্কৃতিক আইডেনটিটি হচ্ছে নিজের সত্তা এবং অন্যের সত্তার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করা, নিজেদের প্রতি এবং অন্যদের প্রতি সম্মান তৈরি করা। এই সম্মান বাংলাদেশের মতো মাল্টিরেসিয়াল সমাজে কত দূর পর্যন্ত তৈরি করা সম্ভব। এখানে লেখকের সঙ্গে তার সমাজের প্রকৃত আইডেন্টিফিকেশনের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে রাষ্ট্রসৃষ্ট আইন-কানুন, সমাজসৃষ্ট তার রং, তার বর্ণ, তার শ্রেষ্ঠত্ব কিংবা নিকৃষ্টতার দ্বন্দ্ব। এই সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে, কখন কোন অর্থে জাতীয় বাঙালি সাহিত্য সৃষ্টি করা যাবে। মাল্টিরেসিয়াল সমাজে জাতীয় সাহিত্য তৈরি হয় না, তৈরি হয় কলোনিয়াল সাহিত্য; যার মধ্যে ক্রিয়াশীল ইউরোপিয়ান সাহিত্য, পাকিস্তানি ধর্মমনস্ক সাহিত্য, শ্রেণী সাহিত্য। কলোনিয়ালিজমের অবসান দরকার সব অর্থে, যাতে করে জাতীয় চেতনা এবং সাহিত্য সৃষ্টি করা যায়। নিজের সত্তা এবং অন্যের সত্তার মধ্যে তার সম্পর্ক সাহিত্য এবং সমাজের মধ্যকার সম্পর্ক, জাতীয় সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের মধ্যকার সম্পর্কের মাধ্যম হচ্ছে মতাদর্শ। এই মতাদর্শ হচ্ছে জীবন্ত সম্পর্কের পরিশীলিত স্বরূপ। যদি কোনো মতাদর্শ অসম্পূর্ণ থাকে, সেক্ষেত্রে সাহিত্য কিংবা সাহিত্যের কোনো টেক্সট তা সম্পূর্ণ করতে সক্ষম। নান্দনিকতা কিংবা নান্দনিক কোনো কাজ সমাধানহীন সামাজিক বৈপরীত্যের সমাধান করতে পারে কাল্পনিক কিংবা ফর্মাল সম্পর্ক উদ্ভাবন করে। সাহিত্যের ভবিষ্যতের প্রশ্নে এই কথাগুলো মনে রাখা দরকার। ----------------------------------------------------------------- দৈনিক কালের কন্ঠ / ১০ জানুয়ারি ২০১০ ছবি - মাইকেল কেন্টন সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:০৭",False rn,"ফোটোগ্রাফী- ৩১ যেহেতু আমি একটা পত্রিকা অফিসে ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করি, তাই ফটোগ্রাফী নিয়ে অনেকের নানান রকম প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। তাদের প্রশ্ন গুলো এই রকমঃ১। পুরান ঢাকায় কি কোনো ভালো প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি কোর্স করায়?২। ফটোগ্রাফি শেখার ভালো কোন বই আছে কী? ৩। দেশে কারা প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি কোর্স করায়? ৪। ফটোগ্রাফি করতে চাইলে কোন ধরনের ক্যামেরা কিনতে হবে? ৫। উড়ন্ত পাখীর ছবি তোলার জন্য কোন ফোকাসিং মোড ইউজ করবো? ৬। নয়েজ রিডাকশন এর কাজ কী? ৭। নাইকন ভালো না ক্যানন ভালো?৮। পেছনে ঘোলা করে কিভাবে?৯। ক্যামেরার ISO কি? ১০। ফটোগ্রাফি শিখতে চাই কিভাবে শুরু করব ? ১১। কোন লেন্স কিনব? ১২। একটি ক্যামেরা কিনতে চাই। বাজেট ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কী ক্যামেরা কেনা যায় ? ১৩। ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে সর্বোচ্চ কতটি ছবি তোলা যায়?ড. জাকির নায়েক প্রশ্ন করা হয়েছিল- ইসলামে ফটোগ্রাফি (ছবি তোলা) অনুমোদিত কি নিষিদ্ধ?উত্তরে ড.জাকির নায়েক ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন- এ প্রশ্নের পিছনে রয়েছে মুলত একটি হাদীস যেটা আছে সহীহ্ বুখারিতে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেছেন: “কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি ভোগ করবে [জীবন্ত বস্তুর] ছবি তৈরী কারিরা।” [বুখারী: ৫৯৫০; মুসলিম: ২১০৯] এবং ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যে কেউই ছবি তৈরী করল, আল্লাহ তাকে [কিয়ামতের দিন] ততক্ষণ শাস্তি দিতে থাকবেন যতক্ষণ না সে এতে প্রাণ সঞ্চার করে, আর সে কখনোই তা করতে সমর্থ হবে না।” [বুখারী:২২২৫; মুসলিম: ২১১০] এখন একজন মানুষের পক্ষে তো ছবিতে জীবন দেয়া সম্ভব না।এ হাদীস টা বলছে আসলে হাতে আঁকা ছবি ও ভাস্কর্যের কথা। কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন যে এর মধ্যে ফটোগ্রাফ ও পরবে। তবে পরে যখন ফটোগ্রাফি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। এ হাদীসটা ফটোগ্রাফ এর কথা বলছে না কারণ ফটোগ্রাফি হল আসলে প্রতিবিম্ব, যেটা ধারণ করা হয় কাগজে।ভিডিওগ্রাফি ও একি রকম,ভিডিওগ্রাফি এক ধরনের প্রতিবিম্ব যেটা হয়ত ধারণ করা হয় ফিল্মে। নবীজির সময় কোন সাহাবী যদি পানিতে প্রতিবিম্ব দেখে চুল আচরাতেন। নবী (সা তাকে কখনই বাঁধা দেন নি, তিনি কখনো মুসলিমদের আয়না দেখতে নিষেধ করেন নি। এ ভাবে আমরা জানতে পেরেছি যে ফটোগ্রাফি এ ক্যাটাগরিতে পরে না ছবি আঁকার যে ক্যাটাগরিটাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখানে মুলত বলা হচ্ছে হাতে আঁকা ছবি ও ভাস্কর্যের কথা। ফটোগ্রাফি জিনিসটা আসলে নিষিদ্ধ না। তবে এখানে আমাদের এটা দেখতে হবে যে কোন উদ্দেশ্যে সেটা ব্যাবহার করছি। এখন যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ছুরি জিনিসটা ভাল না খারাপ, যদি ছুরি দিয়ে শাক-সবজি কাটা হয় তাহলে ভাল, যদি ডাকাতির জন্য ব্যবহার করা হয় তাহলে খারাপ, একি ভাবে ফটোগ্রাফির ব্যাপারেও। যদি ফটোগ্রাফি ব্যাবহার করেন কোন ভাল উদ্দেশ্যে, তাহলে অবশ্যই অনুমতি আছে, তবে যদি ফটো ব্যবহার করেন খারাপ উদ্দেশ্যে যেমন - [পর্নোগ্রাফি, অশ্লীলতা] ইত্যাদি, তাহলে ইসলামে এটা নিষিদ্ধ এবং কেউ যদি অশ্লীল ফটো তুলে, যেটা শরিয়ত বিরোধী। তাহলে এর দ্বারা উপার্জিত অর্থও হারাম হবে। শুধু ছবি তুললে হবে? ধাঁধাও জাণোটে হবে- রফিক সাহেব কিছু খরগোশ নিয়ে বাগানে বেড়াতে গেছেন। তার এক বন্ধু তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, সে জিজ্ঞাসা করল, আপনার কয়টি খরগোশ? রফিক সাহেব একটি ধাঁধার মাধ্যমে উত্তর দিলেন, তিনি বলেন, “দুইটি খরগোশের ডানে দুটি খরগোশ, দুইটি খরগোশের বামে দুটি খরগোশ, দুইটি খরগোশের সামনে দুটি খরগোশ, দুইটি খরগোশের পিছনে দুটি খরগোশ।""তখন তার বন্ধু সাথে সাথে উত্তরটি সঠিক ভাবে বলে দিলেন। বলুন তো রফিক সাহেব এর কয়টি খরগোশ? আর তার বন্ধুই বা এত দ্রুত উত্তর কিভাবে দিলেন? সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৪৬",False rn,"টুকরো টুকরো সাদা মিথ্যা- ২৬ সাদা গেঞ্জি পরা ছেলেটার পেছনে পেছনে আমি যাচ্ছি। ছেলেটাকে আমি চিনি না। আজ সারাদিন আমার কোনো কাজ নেই। তাই ভাবলাম- সারাদিন সাদা গেঞ্জি পরা ছেলেটার পেছনে পেছনে যাব। সকাল এগারোটা বাজে। ঝকঝকে রোদ। ছেলেটা মৌচাক মার্কেটের সামনে স্বকল্প বাস কাউন্টার এর সামনে এসে থামল। তারপর কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে মিরপুর-১ এর টিকিট কেটে বাসে উঠে পড়ল। আমিও টিকিট নিয়ে বাসে উঠে পড়লাম। ছেলেটার পেছনের সীটে আমি বসলাম। আজ ভাগ্য ভালো। জানালার পাশে সীট পেয়েছি। সাদা গেঞ্জি পরা ছেলেটি দেখতে সুন্দর। গায়ের রঙ ফরসা। মাথার চুল লম্বা লম্বা।হঠাত করে ছেলেটির মোবাইল বেজে উঠে- ছেলেটি কি বলল বুঝতে পারলাম না। বাস বিশ মিনিট ধরে বাংলামটর সিগন্যালে আটকে আছে। বাস ভর্তি যাত্রী। বাইরে কড়া রোদ। শুধু আমি না সারা বাসের যাত্রী ঘামছে। মৌচাক থেকে বাংলা মটর আসতে সময় লাগল পঞ্চাশ মিনিট। ছেলেটা একটু পর পর প্যাকেট থেকে মোবাইল বের করে সময় দেখছে। বাস ফার্মগেট আসতেই ছেলেটা উঠে দাঁড়ালো, সাথে সাথে আমিও উঠে দাঁড়ালাম। মনে মনে ভাবলাম- আজ সারাদিন ছেলেটার সাথে সাথেই থাকব। দেখা যাক না কি হয় ! ছেলেটাকে ফোলো করে খুব আনন্দ পাচ্ছি। রোমাঞ্চ অনুভব করছি। একটু একটু করে আগাতে আগাতে বাস এখন মিরপুর-দশ নম্বরে। আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে চারপাশের মানুষজনের ব্যস্ততা দেখছি খুব আগ্রহ নিয়ে। মিরপুর কর্মাস কলেজের সামনে গিয়ে ছেলেটি বাস থেকে নামল, আমিও নামলাম। তখন সময় দুপুর দুইটা। ছেলেটি একটা রিকশা নিয়ে বেড়ি বাধের কাছে একটা সাত তলা বাড়ির সামনে রিকশা থামালো। ভাড়া দিয়ে ছেলেটি বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল। আমি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম, ছেলেটি কার বাসায় গেল ? এবং কেন গেল? কখন নীচে নামবে? কোন ফ্ল্যাটে যাবে ইত্যাদি নানান কথা ভাবতে লাগলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম- ছেলেটি যদি মধ্যরাত্রে নীচে নামে- ততক্ষন পর্যন্ত আমি দাঁড়িয়ে থাকব। আশে পাশে কোনো চা সিগারেটের দোকান নেই- খুব বিরক্ত লাগছে। ছেলেটি যদি আজ নীচে না নামে ? কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকব, এখনই পা ব্যাথা করতে শুরু করেছে। তাছাড়া কতক্ষন আর একটা অপরিচিত বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যায় ? এখন মনে হচ্ছে, ছেলেটির পেছন পেছন আসা বোকামি হয়েছে। এক ঘন্টা পনের মিনিট পর ছেলেটি নীচে নামল। হাতে একটি আপেল। ছেলেটি হাঁটতে হাঁটতে এসে বড় রাস্তায় দাঁড়ালো। রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা সিগারেট খেল। আমিও চা বিস্কুট সিগারেট খেলাম। হঠাত রোদের তেজ কমে গিয়ে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। এই সময় ছেলেটির মোবাইলে রিং বেজে উঠল- কথা শেষ করে একটা রিকশা ঠিক করল। তার কিছুক্ষন পর পরীর মতন সুন্দর একটা মেয়ে এলো। তারা দুইজন হাসতে হাসতে রিকশায় চেপে বসল। এতক্ষন ফলো করেছি একজনকে, এখন ফলো করতে হবে দুইজনকে। কাজ বেড়ে গেল। এদিকে আকাশের অবস্থাও ভালো না। যাই হোক, দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়? সবাই সব কিছুর শেষ দেখতে পারে না। কিন্তু আমি তো সবার মত না। শুরু যখন করেছি- কাজেই শেষও করবো। ছেলে-মেয়েটি চিড়িয়াখানার ভেতর ঢুকল। আমিও টিকিট কেটে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করলাম। তখন সময় বিকাল চার টা। ছেলেটি বানর দেখতে চাইল- মেয়েটি বলল- বানর কি দেখবে ? তারপর ছেলেটি এক আকাশ অভিমান করে বলল- হাতী আমি দেখবই। হাতী আমার প্রিয় প্রানী। মেয়েটি হেসে ফেলল। তাদের পেছন পেছন আমি হাঁটতে হাঁটতে শেষ। আমার পা ব্যাথা হয়ে গিয়েছে- কিন্তু তারা হেঁটেই যাচ্ছে। আমার ইচ্ছা করছে- তাদের গিয়ে বলি- আর কত হাঁটবেন? দয়া করে এখন একটু বসুন। আমি আর পারছি না। অবশেষে তারা চিড়িয়াখানার ময়লা লেকের সামনে একটা ভাঙ্গা বেঞ্চে বসল। আমি তাদের পাশের বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। এর আগে আমি কখনো ঢাকা চিড়িয়াখানায় আসি নাই। এত নোংরা আর বিচ্ছিরি। ছিঃ । ছেলেটি অনেক আগ্রহ নিয়ে হাতী আর গন্ডার দেখলো। সন্ধ্যা হবার কিছুক্ষন আগে তারা চিড়িয়াখানা থেকে বের হলো। তাদের সাথে সাথে আমিও। তারা বাদাম কিনল। ছেলেটি বাদাম ছিলে দিচ্ছে- মেয়েটি কুট কুট করে চাবাচ্ছে। তারা রিকশা নিয়ে বেনারশী পল্লী গেল। একটা বিরানীর দোকানে ঢুকে, ছেলেটি খিচুরী আর মেয়েটি মোরগ পোলাউ খেল। আমি খেলাম তেহারী। তারপর তারা এই গলি সেই গলি হাঁটতে শুরু করলো। আমিও তাদের পেছন পেছন আবার হাঁটা শুরু করলাম। মেয়েটি আইসক্রীম খেল, ছেলেটি সিগারেট। মেয়েটি পপ কর্ণ খেল। আরও কি কি যেন কেনাকাটা করল। ঝালমুড়ি, গেন্ডারির রস- আমলকি। সাত রঙের চুরী এবং দুইটা টাউজার। সাড়ে সাত টায় ছেলেটি মেয়েটিকে তার বাসায় নামিয়ে দিল। তারপর ছেলেটি একা একা অনেকক্ষন হাঁটল, রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা সিগারেট খেল। দিনের শুরুতে রোমাঞ্চ লাগছিল কিন্তু এখন বিরক্ত লাগছে। ইচ্ছা করছে নরম বিছানায় কিছুক্ষন ঘুমাই। চায়ের দোকানে বসে ঝিমুচ্ছিলাম। হঠাত দেখি ছেলেটি নাই। আশে পাশে খুঁজে কোথাও পেলাম না। নিজের উপরই খুব রাগ লাগল। মন খারাপ নিয়ে রাত দশটায় বাসায় ফিরলাম। গোছল করে খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম। ঘুমানোর আগে অনেকক্ষন ছেলে-মেয়েটির জন্য প্রার্থনা করলাম। তারা ভালো থাকুক, তাদের সব প্রিয় মানুষেরা ভালো থাকুক, ভালো থাকুক সমগ্র মানবজাতি। পাশের বাসায় গান বাজছে- ""যদি আমার কোনও পালাবার জায়গানা থাকে – দিন, রাত্রি, অন্ধকারে।/ তুমি কি আমার হাতটা একটু ধরবে।/ ওগো বন্ধু, তুমি কি আমার হাতটা একটু ধরবে।""",False fe,"জয় জনতার , জয় কবিতার এই শ্লোগান নিয়ে আজ জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু হয়েছে ঢাকায়। এই জাতির চরম ক্রান্তিকালে এক শক্তিশালী প্লাটফর্ম হিসেবে জন্ম হয়েছিল জাতীয় কবিতা পরিষদ এর । এগিয়ে এসেছিলেন এদেশের সচেতন কবিকূল। কবিতা এগুবেই মানুষের প্রেমের আলো নিয়ে যুগে যুগে , কালে কালে। ঢাকার সুহৃদ ব্লগার বন্ধুরা কবিতা উৎসব ঘুরে এসে এখানে অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে পারেন। আমরা জানতে পারবো কবিতার কথা। কবিতার পথচলার কথা । ========================================== দৈনিক ভোরের কাগজ / ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ - রিপোর্ট জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু : গণতন্ত্রের পক্ষে প্রত্যয় কাগজ প্রতিবেদক : ভাষার মাসে কবি ও কবিতার এক হয়ে মিশে একুশের পদযাত্রাকে ভিন্ন মাত্রা দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি চত্বরে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় কবিতা উৎসব। পাশাপাশি মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং অগণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে সবসময় কথা বলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে এ উৎসবে। ‘জয় জনতার, জয় কবিতার’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে জাতীয় কবিতা উৎসবের ২৩তম আসর। কবি খালেদা এদিব চৌধুরী ও সমুদ্র গুপ্ত স্মরণে উৎসর্গ করা হয়েছে এবারের উৎসব। উৎসবের উদ্বোধন করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি কবি সৈয়দ শামসুল হক। সকালে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসব শুরু করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে কবিতাকে ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। উৎসবের উদ্বোধন করতে গিয়ে সৈয়দ শামসুল হক বলেন, দীর্ঘ এক দুঃসময়ের পর দেশ এখন সুসময়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে মানুষের শুভ চেতনার জন্য। দেশে যে গণতান্ত্রিক ধারার সূচনা হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে সংস্কৃতি চর্চার জয় হবে। তিনি বলেন, জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু হয় সেই স্বৈরাচারী শাসনের সময়ে যখন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। তখন ছিল সংস্কৃতির অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ। সেই যুগকে মোকাবেলা করে আমাদের এতোদূর আসা। প্রতিক্রিয়াশীলগোষ্ঠী সবসময়ই সংস্কৃতির গলা টিপে ধরতে চায়। কিন্তু ওরা কখনই সফল হয়নি। সাংস্কৃতিক কর্মীদের এ ক্ষেত্রে সবসময় মাথা উঁচু করে থাকতে হবে। সৈয়দ শামসুল হক আরো বলেন, ’৫২ সাল থেকে কবিরা দেশ ও মাটির কথা বলে আসছেন। তবে সবসময় তারা স্বাধীনভাবে তাদের কথা বলতে পারেননি। বেশ কয়েকবারই তাদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে; কিন্তু কবিরা তাদের কবিতা ছাড়েননি। এখন দিনবদলের পালা শুরু হয়েছে। কবিরাও দিনবদলের কথা বলবেন, দেশের কথা বলবেন, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলবেন। তিনি কবিতাকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ারও আহ্বান জানান। উৎসবের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহন রায়হান। এতে বলা হয় - যতোবার এই দেশ, জনতা অবরুদ্ধ হয়েছে, মানুষের বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, ততোবারই কবিতা দেশ ও জনগণের অধিকার হয়ে জ্বলে উঠেছে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে যাত্রা শুরু করা কবিতা উৎসব সবসময়ই দুঃশাসন, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। কবিতা উৎসবের যুগ্ম আহ্বায়ক তারিক সুজাত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগটি সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে লেখক ও পাঠকদের জন্য প্রসারিত হয়েছে নতুন দিগন্ত। প্রতিটি জাতীয় পত্রিকা যেভাবে অনলাইন সংস্করণ করছে, তাতে করে ই-বুকসের মাধ্যমে পাঠকদের হাতে ডিজিটাল কনটেন্ট পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি সম্ভব বলে মনে হয়। উৎসবের আহ্বায়ক রবিউল হুসাইন পয়লা ফেব্র“য়ারিকে জাতীয় কবিতা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি কবিদের জন্য একটি আলাদা ভবন তৈরির দাবি জানান যেখানে একটি মিলনায়তন, পাঠাগার, গবেষণাগার ও জাদুঘরের ব্যবস্থা থাকবে। কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া পিনু প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরী, রফিক আজাদ, আসাদ চৌধুরী, হাসান ইমাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, মোহন রায়হান, রবীন্দ্র গোপ, ড. মুহাম্মদ সামাদ, আনিসুল হক, আসলাম সানী প্রমুখ কবি উপস্থিত ছিলেন। এবারের কবিতা উৎসবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুরসহ ৩০টি দেশের বাংলাভাষী কবিরা কবিতা উৎসবে অংশ নিচ্ছেন। বিদেশ থেকে আগত এবং সারা দেশ থেকে আগত সব মিলিয়ে চার শতাধিক কবি উৎসবে অংশ নেবেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ সারা দেশ থেকে কয়েকশ কবি ও ছড়াকার অংশ নিচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের স্বাতী চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জলী বন্দ্যোপাধ্যায়, কাজল চক্রবর্তী, রাতুল দেব বর্মণ, নিলচার্য, পিনাকী ঠাকুর, রফিক-উল ইসলাম, ধনঞ্জয় ঘোষাল, চন্দনা খান, সিদ্ধার্থ সিংহ, শিবাশীষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ কবিরা এ উৎসবে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন। পাশাপাশি এবার চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী ও আবৃত্তিশিল্পীও এতে অংশ নিচ্ছেন। ২০ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে কবিতা পাঠের এই আসর। উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে তৎকালীন স্বৈরশাসনের সময় ‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’ স্লোগান নিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু হয়। সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:৪৫",False rn,"মৃত্যুর আগে যে ১০০ টি মুভি আপনাকে দেখতে হবে (তিন) ২১। দ্যা সিক্সথ সেন্স (The Sixth Sense) কাহিনীটা কিন্তু আধাভৌতিক। কোল নামের এক ছেলে ভয়াবহ এক সমস্যায় আক্রান্ত। সমস্যাটা মানসিক নাকি সত্যি- তার দ্বন্দ্ব মুভির আদ্দেকটা জুড়ে। ৯ বছর বয়সি এক ছেলে কেন এত চুপচাপ, কারও সাথে মিশে না, কেন একা একা খেলে, কি তার সেই সিক্রেট - সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে এ মুভিতে। ‘কোল’ তার সমস্যার কথা ম্যালকমকে জানায় যে- ‘সে মৃত ব্যাক্তিদের দেখতে পায় এবং তারা জীবিতদের মতই ঘুরে বেড়ায় কিন্তু তারা জানে না যে তারা মৃত।’ ম্যালকম কোলের কথা বিশ্বাস করে। এক পর্যায়ে কোল এবং ম্যালকম বুঝতে পারে যে মৃত ব্যাক্তিরা কোলের সাথে দেখা দেয় কারন তারা কোন একটি বিষয়ে কোলের সাহায্য চায় এবং কোলকে দিয়ে কিছু কাজ করিয়ে নিতে চায়।২২। লাইফ ইজ বিউটিফুল (Life Is Beautiful) ১৯৩৯ সাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালীন ঘটনার পটভূমিতে নির্মিত।গুইডো অরিফিস একজন আমুদে এবং ক্যারিশমেটিক তরুণ জিউস যিনি নগরীতে চাকুরী খুজছেন।তিনি এক স্কুল শিক্ষিকার ডোরার প্রেমে পড়লেন। কমেডি রোমাঞ্চের মধ্যে এগিয়ে যেতে থাকা ছবিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাজী বাহিনির কনসেন্ট্রশেন ক্যাম্পে আটকা পরেন গুইডো। স্বপরিবারে। সেখানে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মমতা দিয়ে গুইডো তার ছেলে যশুয়ার বন্দী জীবনের নিষ্ঠুরতাকে একটা লোভনীয় খেলা বানিয়ে ফেলেন। একজন বাবা কিভাবে ভয়ানক বন্দীদশাকে তার শিশুর জন্য খেলায় পরিণত করে ফেলতে পারে তারই নিখুত চিত্রায়ণ ছবিটি ।একজন হৃদয়বান প্রেমিকের অসাধারণ প্রেমকাহিনি ,একজন মহান বাবার পুত্র স্নেহের তীব্র আবেদনে নির্মল আনন্দ বেদনার অসাধারণ ছবি। ২৩। দ্য গডফাদার (The Godfather) ইতালীয় মাফিয়া ডন ভিত্তো কর্লিওন অপরাধ সাম্রাজ্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। মার্কিন মুল্লুকে বাস করে তিনি পুলিশ তথা রাষ্ট্রীয় সব ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে নিজের আইন-কানুন চালু করেছেন। বড় ছেলে সনি কর্লিওন পিতার সাম্রাজ্য দেখা-শোনায় সাহায্য করে। কিন্তু সে অতি রগচটা এবং পিতার তীক্ষ্ণ বুদ্ধিও পায়নি। মেঝো ছেলে ফ্রেডো যথার্থ অর্থে এ পরিবারের অযোগ্য, সে ভিতু এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন। ছোট ছেলে মাইকেল ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। প্রাক্তন সৈনিক হিসাবে তার সুনাম আছে। সে বাবার ‘ব্যবসা’ পছন্দ করে না। পিতার সাথে এক তর্কের পর সনি বাড়ি ছেলে চলে যায়। এদিকে ডনকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। পরিবার ও মাফিয়া সাম্রাজ্যের খাতিরে সামনে এগিয়ে আসে মাইকেল। পারিবারিক বন্ধু টমের সহায়তায় মাইকেল একই সঙ্গে খুনিদের খুঁজে বের করে এবং অসুস্থ পিতার সাম্রাজ্য চালানোর দায়িত্ব নেয়। ২৪। শশাঙ্ক রিডেম্পশন (The Shawshank Redemption) একটা জেলখানা। আর তার ভিতরে বন্দীদের জীবন যাপন। ক্ষতবিক্ষত সময়। একজন মানুষের গল্প, যে তার স্ত্রী এবং স্ত্রীর প্রেমিককে খুন করার অপরাধে জেল খাটছে। IMDB তে অবস্থান ১ এবং রেটিং- ৯.৩। এই চলচ্চিত্রটি ১৯৯৪সালে মুক্তি পায়। ২৫। দি সিক্রেট ইন দেয়ার আইজ (The Secret in Their Eyes) আগাগোড়া একটি ভালোবাসার মুভি। রোমান্টিক মুভি নির্মান করতে নর-নারীর আবেগের অত্যাধিক ছড়াছড়ি আর যৌনতার যে প্রয়োজন নেই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ দি সিক্রেট ইন দেয়ার আইজ। মুভিটির ফিনিশিং এক কথায় দুর্দান্ত।বেঞ্জামিন একজন অবসরপ্রাপ্ত ফেডারেল জাস্টিস এজেন্ট। অবসর জীবন কাটাতে তিনি একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। উপন্যাসের বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নেন ২৫ বছর আগের তার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। ২৫ বছর আগে কমবয়সী এক গৃহিণী ধর্ষিত ও খুন হওয়ার একটি তদন্তে তিনি, তার মদ্যপ বন্ধু পাবলো আর একজন এডভোকেট আইরিন জড়িয়ে পড়েছিলেন। তদন্তটি তারা সফলভাবে শেষ করে দোষীকে খুঁজে বের করতে পারলেও ক্ষমতাশীল মহলের চাপে খুনি এক বছরের মধ্যেই সাজামুক্তি পায়। খুনি বেঞ্জামিনকে হত্যা করার চেষ্টা চালায় কিন্তু নিহত হয় পাবলো। বেঞ্জামিন আত্মগোপন করে। সময়ের স্রোতে ২৫ বছর পর বেঞ্জামিন এ ঘটনাটি নিয়ে উপন্যাস লেখার জন্য সাহায্য চাইতে তার পুরাতন বান্ধবী আইরিনের কাছে যায়। ২৬। কুং ফু পান্ডা (Kung Fu Panda) এটি একটি এ্যানিমেশন মুভি। মুভিটিতে শিক্ষনীয় অণেক কিছু পাবেন। কাহিনী গড়ে উঠেছে PO নামক এক পান্ডাকে নিয়ে যে কুংফু খুবই ভালোবাসে কিন্তু নিজে কুংফুর কিছুই জানেনা। চায়না'র পিচ অফ ব্যালিতে নামক শহরের কুংফু গুরু ওগোয়ে একদিন মাস্টার সিফোকে ডেকে জানায় যে অবাধ্য ছাত্র টাইলন যাকে ২০ বছর ধরে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে সে আবার এই শহরে ফিরে আসবে শহরকে ধ্বংস করে দিবে তখন ওগোয়ে একজন ড্রাগন ওয়ারিওর নির্বাচন করার কথা বলে যে টাইলনকে হারাতে পারবে কিন্তু দুঘটর্নাবশত PO যে কুংফুর কিছুই জানেনা সে ড্রাগন ওয়ারিওর নির্বাচিত হয়। অবশেষে ঠিকই PO ভিলেন টাইলনকে হারাতে পারে। আমার রেটিং অবশ্যই ১০/১০। ২৭। দ্য পিয়ানিষ্ট (The Pianist) একজন পোলিশ পিয়ানিষ্টের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যে করুণভাবে বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্প নিয়ে এই মুভিটি হৃদয়ে দাগ কেটে যাওয়ার মত। তবে এ ধরণের মুভি দেখতে কিছুটা হলেও মানসিক শক্তি প্রয়োজন। যুদ্ধের হানাহানি ছাপিয়ে মানবতাবোধ আর সুকুমার প্রবৃত্তির প্রতি ভালবাসাই মূর্ত হয়ে উঠেছে এই চলচ্চিত্রে। ছবির গল্প, নির্মাণশৈলি, অভিয়ন, উপস্থাপনা সব কিছু অসাধারণ। ২৮। দি পারস্যুট অব হ্যাপিনেস (The Pursuit of Happyness) মুভিটি যারা দেখেননি, তারা জানেন না কি দেখেননি। আমি দেখেছি, আবার দেখবো। যারা শুন্যের উপর দাড়িয়ে জীবন বাজি রেখে লড়ে...তাদের জন্য অনুপ্রেরণা ছবিটা । শীর্ষ বিক্রি হওয়া বই ‘দ্য পারস্যুট অব হ্যাপিনেস’ অবলম্বনে মুভিটি তৈরি করা হয়েছে। রাতে খুঁজে ফেরে থাকার জায়গা। অনেক সংস্থা একরাতের জন্য থাকার জায়গা দেয়। মার্কিন হোমলেসরা লাইন ধরে সেই জায়গা পেতে চেষ্টা করে। লাইনে দাঁড়ায় ক্রিস ও ক্রিস্টোফার। মাঝে মধ্যে চাতুরীর আশ্রয়ও নিতে হয় একটু খাদ্য আর আশ্রয়ের সংস্থানের জন্য। এমনকি একদিন তারা পাতালট্রেন স্টেশনের বাথরুমেই কাটাতে বাধ্য হয় রাত। তবে উল্লেখ বিষয় এটাই যে, এত কিছুর মাঝেও ক্রিসের ছোট্ট ছেলেটি কিন্তু কোনও অভিযোগ-অনুযোগ করে না। বরং বন্ধুর মতন পিতাকে সহায়তা করে প্রতিটি মুহূর্তে। ২৯। ট্যাক্সি ড্রাইভার (Taxi Driver) ভিয়েতনাম যুদ্ধের আগে আগে নিউ ইয়র্কের পরিবেশ ছিল ছবির পটভূমি। এই পটভূমিতে এক ট্যাক্সিক্যাব চালকের অদ্ভুত জীবন নিয়ে ছবির কাহিনী গড়ে উঠেছে। গল্পটার আসল শুরু হলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার ক্যাম্পে। এক প্রার্থীর প্রচার ক্যাম্পে সুন্দরীকে দেখে পিছু নিলেন ডি-নিরো। কয়েকবার দূর থেকে দেখার পর সামনাসামনি। কথা হলো, অ্যাপেল পাই আর কফি খাওয়া হলো। দ্বিতীয় সাক্ষাতেই মিসটেক। সিনেমা দেখার অফার। জোরাজুরিতে মেয়েটা রাজি হলেও অঘটন ঘটলো অন্যখানে। ছবিটা ছিল অ্যাডাল্ট। মাঝখানেই হল ছেড়ে বেরিয়ে আসলো মেয়েটা। আরে ভাই সব বলে দিলে মুভি দেখার আগ্রহ থাকবে নাকি? যান, ছবি দেখেন গিয়া।৩০। শিন্ডলার্স লিস্ট (Schindler’s List) ১৯৯৩ সালে নির্মিত এই মুভিটি সাদাকালো। কিন্তু প্রচন্ড আকর্ষণী ক্ষমতাধর এই ছবিটি আপনার প্রতিটি মুহূর্তকে আবেগময় করে তুলবে। এই মুভির মূল চরিত্র অস্কার শিন্ডলার একজন জার্মান ব্যবসায়ী। যিনি ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় চলাকালীন হলোকাস্ট বা ইহুদী নিধনের সময় প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন ১,০০০ এরও বেশি ইহুদীর। সে সময় যে সব জার্মানই ইহুদিদের প্রতি মায়া দেখাচ্ছিলেন বা সাহায্যের চেষ্টা করছিলেন তাদের কঠোর শাস্তি দিচ্ছিলো হিটলার বাহিনী। এমন অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, হিটলার সেনাদের নানা কৌশলে ভুলিয়ে ন্যায়ের পথে থাকা এই ব্যক্তি আমাদের শেখাবে কিভাবে কোন সৎ ইচ্ছা বাস্তবায়ন করা যায়, মানুষকে ভালবেসে ঝুঁকি নেয়া যায়। এই মুভিটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত।সিনেমা দেখা আমার অন্যতম প্রিয় একটা কাজ। সেরা মুভি বাছাই করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি শুধু আমার খুব প্রিয় কিছু মুভির কথা বলব। তবে একটা কথা, এই মুভিগুলো কারো পছন্দ না হলে খুবই আশ্চার্য হব। যাদের এই মুভিগুলো এখনো দেখার সুযোগ হয়নি তারা শিঘ্রই দেখে ফেলুন। মুভিগুলো দেখা হয়ে থাকলে অথবা কারো প্রিয় কোন মুভি বাদ পরলে অবশ্যই করে কমেন্ট করে জানাবেন।যাতে অজানা ভালো ভালো মুভি দেখা বাদ না পড়ে। এই মুভিগুলো দেখতে বলার পেছনে আরেকটা কারণ আছে, সেটা হল জীবনে চলার পথে কোন না কোন সময় এগুলো আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।আমি একদিন মারা যাব, এই সত্যটা নিয়ে আমার খুব বেশি আক্ষেপ নেই। তবে, আমার মৃত্যুর পর আরও অসংখ্য অসাধারণ সব বই লেখা হবে, গান হবে, চলচিত্র নির্মিত হবে। কিন্তু আমি সে সব পড়তে, শুনতে কিংবা দেখতে পারবো না। এই সত্যটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।",False mk,"তারুণ্যের জয় সম্প্রতি শাহবাগ চত্বরে যা ঘটেছে, তাকে গণঅভ্যুত্থান বললেও অতুক্তি হবে না। তারুণের জোয়ার সৃষ্টি করেছে এক মহাগণজাগরণ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে এসেছে আবাল, বৃদ্ধ-বনিতা। ৬ মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে এসেছেন মা। স্বামী-স্ত্রী ছেলে-মেয়ে নিয়ে এসেছে গোটা পরিবার। গ্রাম থেকে ছুটে এসেছে মুক্তিযোদ্ধা কৃষকের সন্তান। কারখানা থেকে এসেছে শ্রমিক। সারাদিন অফিস করে চাকরিজীবীরা রাত কাটাচ্ছেন এই চত্বরে তারুণ্যের সহচার্যে। একটা বিপ্লবী প্রক্রিয়া সমাধানের জন্য যেসব সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের প্রয়োজন, তার সব কিছুই আছে এখানে। গান, কবিতা, নাটক, নৃত্য, কার্টুন, গণসঙ্গীতের আসর বসেছে এই চত্বরের বিভিন্ন এলাকায়। মুহুর্মুহু সস্নোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে এই চত্বর। এই তরুণরা মুক্তিযুদ্ধ করেনি, মুক্তিযুদ্ধ দেখেওনি। তবুও নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আর এক মুক্তিযুদ্ধে। এটা দেশ ও জাতিকে বাঁচানোর যুদ্ধ। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। যে লক্ষ্য সামনে রেখে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সে লক্ষ্য অর্জনের যুদ্ধ। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ঋণ শোধের যুদ্ধ। নৃশংসভাবে নিহত হওয়া জাতীয় বুদ্ধিজীবীদের অত্মার তৃপ্তির যুদ্ধ। এই যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। অসূম্পর্ণ বিপ্লবকে পূর্ণতা দিতেই হবে। তা না হলে শহীদদের অত্মা শান্তি পাবে না। একটা রায় ঘোষণা জনগণের প্রত্যাশা পূরণের ব্যর্থ। কয়েকজন যুবকের পারস্পরিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযোগ। একটা ব্যানার নিয়ে শাহবাগ স্কয়ারে উপস্থিত। আর মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কয়েক লাখ লোকের সমাগম, কোন দল নয়, সুদৃঢ় নেতৃত্ব নয়, দলীয় সাংগঠনিক তৎপরতা নয়। কাউকে আসার জন্য আবেদন জানানো হয়নি, যাতায়াত খরচ বাবদ পথ ভাড়া দেয়া হয়নি, করা হয়নি এমন কোনো আয়োজন- যার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলসমূহ জনসমাবেশ ঘটায়। অথচ লাখ লাখ মানুষ আবাল-বৃদ্ধ ও বনিতা হাজির হয়েছে কয়েকজন যুবকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে। এ এক বিস্ময়কর ব্যাপার। তা হলে কেমন করে এটা ঘটল। ঘটেছে এ কারণে জণগণের অতৃপ্ত ক্ষুব্ধ শোকাহত হৃদয়- যা সুদীর্ঘ ৪ দশক ধরে অপেক্ষণমান ছিল ওদের বিচারের রায়ের। যারা ১৯৭১ সালে আমাদের ২.৫ লাখ মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে, ৩০ লাখ শহীদের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হয়ে দেশত্যাগ করে আবার ফিরে এসেছে, এই স্বাধীন বাংলার মাটিতে প্রতি বিপ্লব সফল করে। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তযুদ্ধের মহানায়ককে হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় ৪ নেতাকে জেলাখানায় হত্যা করা হয়েছে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে আজ পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমর্থকদের। যে দেশ ওরা স্বাধীন করতে চায়নি, শত্রুপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশে পৃথিবীর বর্বরতম হত্যাকা- সংঘটিত করেছে, সেই দেশেই ফিরিয়ে আনা হয়েছে তাদের সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে। প্রদান করা হয়েছ নাগরিকত্ব, রাজনীতি করার অধিকার, অংশীদারিত্ব দেয়া হয়েছে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রক্রিয়া। সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বিপুল অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহের। নতুন করে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে জঙ্গি তৎপরতায়। লক্ষ্য একটাই, বাংলাদেশ আর কখনো যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের ধারায় ফিরে না যায়। সুদীর্ঘ দুই দশক ধরে নির্যাতন চালানো হয়েছে স্বাধীনতার সপক্ষের বৃহত্তম দল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস এবং স্বাধীনতার সপক্ষের অন্যান্য শক্তিকে দুর্বল করার জন্য। এ ব্যাপারে তারা বেশ কিছুটা সফল হয়েছে। সফল হয়েছে বলেই সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। যুদ্ধাপরাধী ও খুনিদের বিচার করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬- এই ২১ বছর বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকৃতির অনুরূপ ছিল না। স্বাধীন বাংলাদেশ ছিল পরাধীনতার গ্লানিতে আবৃত। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবিষ্ট হওয়ার পরই এই পটের পরিবর্তন হতে শুরু করে। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে গণতন্ত্র ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কিছুটা সফল হয় ১৯৯৬ সালের বিজয়ের মধ্যদিয়ে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে শেখ হাসিনা দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় বেশ কিছুটা ফিরিয়ে আনেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার শুরু হয়। দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সে রায় কার্যকর হয়। ২০০৮ সালে নির্বাচনের পূর্বেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হয়ে ওই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। আইনের শাসনের ধারায় সে বিচার সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। সুদীর্ঘ ৪ বছর পর রায় কার্যকর করা হয়। যুদ্ধাপরাধী প্রথম আসামি বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদ-াদেশ দেয়া হয়। তিনি দেশের বাইরে থাকায় তার রায় কার্যকর করা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। দ্বিতীয় রায় ঘোষিত হয়েছে আরেক যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার। মাননীয় ট্রাইব্যুনাল তাকে যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত করেছেন। কিন্তু জনগণ এই রায়ে তুষ্ট হতে পারেনি। দেশবাসী সুদীর্ঘ ৪ দশক ধরে যে আশা করেছিল, তার প্রতিফল হয়নি এই রায়ে। বিক্ষুব্ধ তরুণসমাজ সেই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে সেই প্রতিবাদ বিক্ষুব্ধ জনগণ 'ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই' বলে রাজপথে নেমে এসেছে। শুধু শাহবাগ নয়, বাংলাদেশের ছোট-বড় প্রতিটি শহরে শাহবাগের মতো প্রতিবাদ স্কয়ার গড়ে উঠেছে। দিন যতই গড়াচ্ছে, জনগণের সম্পৃক্ততা ততই বাড়ছে। দিন নেই, রাত নেই, সকাল নেই, সন্ধ্যা নেই, আহার নেই, নিদ্রা নেই- শুধুই সস্নোগান আর সস্নোগান। 'জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধ কর-করতে হবে'। স্বাধীনতার শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে, স্বাধীন বাংলার মাটিতে তারা যেন আর কোনো দিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। প্রয়োজন বোধে আর একটা মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে। নতুন প্রজন্মের এই যুদ্ধ সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার যুদ্ধ। অন্যায় ও অসত্যের চির অবসানের যুদ্ধ, মাত্র গুটিকয়েক লোককে ফাঁসি দিলেই এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটবে না। ১৯৭১-এর অসূম্পর্ণ বিপ্লবকে সফল করার এই যুদ্ধ সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য, তা ছিনিয়ে আনতে চায়। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তারা বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধী সব স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বিচার করে শাস্তি দেয়ার। স্বাধীনতা অর্জনের পর সুদীর্ঘ ৪ দশক অতিক্রান্ত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। ১৯৭৫-এর প্রতিবিপ্লবের নেতা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল জিয়াই তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশীদারিত্ব দিয়েছেন, সামাজিক শক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। পরবর্তীতে তার স্ত্রী বেগম জিয়া তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট গঠন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় তাদের অধিষ্ঠিত করেছেন। এমনভাবে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তি হিসেবে তাদের অভ্যুদ্বয় ঘটেছে। জেনারেল জিয়া ও বেগম জিয়ার লক্ষ্য ছিল, স্বাধীনতার এই শত্রুদের পুনর্বাসিত করে তাদের সমর্থনে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে চিরতরে প্রতিহত করা এবং ক্ষমতার ভীতকে চিরস্থায়ী করা। তাদের অনেকেরই ধারণা, সুদীর্ঘ আড়াই দশক ধরে তারা যেভাবে দেশ শাসন করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে রাষ্ট্রের ক্রিয়া-কর্মের বাইরে রাখতে সক্ষম হয়েছে, তাতে করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ বাংলার মাটি থেকে চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু তারা কেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি অনুধাবন করতে পারেনি যে, আমাদের যুবশক্তি বিশেষ করে তরুণসমাজ ও আপামর জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঠিক ১৯৭১-এর মতো এখনো ধারণ করে। এবার গণজাগরণই প্রমাণ করেছে, তার সত্যতা। শুধু কয়েকজন যুবকের আহ্বানে নয়, এদেশের লক্ষ-কোটি মানুষ ভুলতে পারেনি ১৯৭১-এর সেই বর্বরতা। তাদের শোকাহত হৃদয় গভীরভাবে অপেক্ষমাণ ছিল স্বাধীনতার শত্রু ও মানবতাবিরোধীর বিচার করার অদম্য বাসনা। আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি এখন ক্ষমতায়। জাতির জনকের কন্যা এখন প্রধানমন্ত্রী। এই সরকারের নেতৃত্বেই ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে ওদের বিচার করার জন্য। এই বিচারের রায় বৃথা যাবে- এটা জনগণ কখনো মেনে নিতে পারে না। সুদীর্ঘ দিনের সঞ্চিত ক্ষোভ দুঃখ-বেদনা তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই অকল্পনীয় গণবিস্ফোরণের মাধ্যমে। কোন দল নয়, নেতা নয়, গণমানুষই এই গণজাগরণের নেতৃত্বে ইন্ধন যুগিয়েছে আমাদের যুব ও তরুণসমাজ। তারা সঠিক সময়, সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে নেমেছে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করার। 'ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই।' মৃত্যুদ- চাই তাদের, যারা আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে লক্ষ্যহীন করেছে। ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে বেইমানি করেছে। জাতীর জন্য যা অর্জন করা সম্ভব ও স্বাভাবিক ছিল, তা অর্জন করতে দেয়নি। তাই আজকের এই বিপর্যয়। প্রতিবিপ্লবের পর বিপ্লব ঘটিয়েই একটা দেশ ও সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করা সম্ভব। কোনো দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার পরিসমাপ্তি নেই। একটা নিরন্তর প্রক্রিয়া তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পেঁৗছে দেয়ার জন্য আবহ থাকে। বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়ে তা সফল করতে পারেন নি। এটাও ছিল আর একটি মুক্তিযুদ্ধ। যে যুদ্ধে তাকে জীবন দিতে হয়েছে এবং তার অনুপস্থিতির কারণেই মুক্তিযুদ্ধ সফল পরিণতিতে পেঁৗছতে পারে নি। যুবসমাজ এভাবে সত্যিকার উপলব্ধি করে থাকে যে, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং এই যুদ্ধে তাদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে। তাদেরই দেশকে বিজয়ের সিংহাসনে পেঁৗছে দিতে হবে। তাহলে অবশ্যই শত সাহসী দেশপ্রেমিককে সঠিক নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। মাত্র গুটিকয়েক অপরাধীকে ফাঁসি দিলেই দেশ ও জাতি সঠিক পথে এগুতে সক্ষম হবে না। যদি না একটি সুদৃঢ় অর্থবহ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে সফল না করা যায়। হঠাৎ করে যে বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে আমরা পেঁৗছে গেছি, তা সফল করা বেশকিছুটা দুরূহ হলেও অসম্ভব নয়। কেবল জাতি ঐক্যবদ্ধ হলেই অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। ডা. এস এ মালেক: রাজনীতিক ও কলাম লেখক",False fe,"জন্মদাগ মুছে ফেলা যায় না! জন্মদাগ মুছে ফেলা যায় না! ফকির ইলিয়াস=======================কোথায় যেন একটি স্খবিরতা। আন্তরিকতার অভাব। না হলে কথা দিয়েও বারবার পিছু টান, টানতে হবে কেন? নতুন উপদেষ্টারা শপথ নেয়ার পর কাজ দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সংলাপ শুরু করে বিভিন্ন দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় বিষয়ে আলোচনা করার কথা ছিল। তা এখনও শুরু হয়নি। বরং বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেন এই শর্ত? যদি জনগণের কল্যাণ সাধনই মুখ্য উদ্দেশ্য হয় তবে বৃহৎ কল্যাণের কথা ভাবতে হবে। চাপিয়ে দেয়া সংস্কার যেমন জনগণ মেনে নেবে না, তেমনি দীর্ঘ মেয়াদে তা ফলপ্রসূও হবে না। বিশ্বে এমন উদাহরণ রয়েছে প্রচুর।আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাকারী বলে কথিত আজম জে. চৌধুরী আবারও আলোচনায় এসেছেন। তার বক্তব্য, তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করেননি। করেছিলেন শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে। সরকার পক্ষ বলছে, আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলছে। ব্যবসায়ী আজম চৌধুরীর মামলা, ঘুষ দেয়ার প্রক্রিয়া, মামলার আসামি­ এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। এখন সেই আজম চৌধুরী নিজেই বলেছেন, তিনি মামলা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করেননি। তাহলে সরকার কি পরিকল্পিতভাবেই এমন টানাহেঁচড়া করছে? প্রশ্নটি দানা বাঁধছে বিভিন্নভাবে।সরকারের সংস্কারের ধাপের প্রধান লক্ষ্যটি হচ্ছে কিছু রাজনীতিককে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেয়া। কিন্তু তা করতে হলে তো তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে। মামলা করে, রায় হয়ে আইনি প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। যারা প্রধান লক্ষ্য, তাদের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ তেমন কিছু এ পর্যন্ত করতে পেরেছে কি? যদি করতে না পারে, তবে এমন ইচ্ছামাফিক তাদের বন্দি করে রাখা যাবে কি?এসব জিজ্ঞাসা এখন বাড়ছে দেশে-বিদেশে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সিনেটর হিলারি ক্লিনটন নিউজার্সিতে এক সমাবেশে বলেছেন, তিনি শেখ হাসিনার মুক্তির বিষয়ে বর্তমান সরকারের কাছে জানতে চাইবেন। এবং কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে তিনি, শেখ হাসিনার মুক্তির দাবি করবেন।বহির্বিশ্বে বাড়ছে খালেদা জিয়ার পক্ষে লবিংও। তার দলের প্রবাসী কর্মীদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। এরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আইনি সহায়তা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরুও করেছেন। একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট, যতই দিন যাচ্ছে ততই বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিচ্ছে। নব্বই দিনের মধ্যে কেন সংসদ নির্বাচন হবে না­ এই মর্মে মামলা করা হয়েছে আদালতে। যদিও আমি মনে করি এটা একটা ‘নাগরিকের দায়িত্বগত মামলা’ বলেই ধরে নিচ্ছে সরকার। এবং দীর্ঘ দৌড়ে মামলাতে সরকার পক্ষই জয়ী হবে।কিন্তু তারপরও বিতর্ক তো হচ্ছে। প্রায় পনেরো মাস হতে চললো দেশে কোন নির্বাচিত সরকার নেই। দেশ চলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা। এর মাঝে উপদেষ্টাদের রদবদলও হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। কিন্তু তারপরও কোথায় যেন একটি অসঙ্গতি, অসম্পূর্ণতা থেকেই যাচ্ছে, যা বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্তগুলোকে নানাভাবে প্রশ্নের মুখোমুখি করেই চলেছে।দুই.একটি বিষয় আমরা খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করছি, বর্তমান সরকারের সময়ে একটি মহল খুব কৌশলে বেঁচে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা সব ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে এক ধরনের কুয়াশা তৈরি করে নিজেদের আড়াল করে রাখছে।ধরা যাক, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার খুনিদের কথা। এই মামলা নতুন করে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান সরকার। ফলে মামলার পুরনো আসামিদের খালাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এসব সিদ্ধান্তকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন শাহ কিবরিয়ার পরিবার। বেগম আসমা কিবরিয়া অত্যন্ত সুদৃঢ়ভাবে বলেছেন, প্রকৃত আসামিদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। এ বিষয়ে কোন কারচুপি তারা মেনে নেবেন না।একজন বরেণ্য কূটনীতিক, রাজনীতিককে বাংলাদেশে যে নির্মম কায়দায় খুন করা হয়েছে তা মানবিকতার চরম বর্বরতম ঘটনা। আরও বেদনাদায়ক হচ্ছে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও এর বিচার করতে না পারা। কেন বিচার করা গেল না? কেন বারবার তদন্তের নামে প্রকৃত নায়কদের বাঁচানোর চেষ্টা চলছে? নাকি এর নেপথ্যে এমন কেউ কেউ ছিল যারা বর্তমান সরকারের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছে এখন?একটি কথা সবার জানা, কোন খুনি কিং বা খুনের মদদদাতাকে প্রশ্রয় দিয়ে শান্তির সমাজ গঠন কোনমতেই সম্ভব নয়। যারা বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ মন্ত্রী, নেতা ছিলেন এদের অনেকেই এখন পর্যন্ত রয়ে গেছেন স্পর্শের বাইরে। মান্নান ভূইয়া, সাদেক হোসেন খোকারা এখনও সংস্কারের মুলা ঝুলিয়ে দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছেন সময়। করছেন সুসময়ের অপেক্ষা। এসব তো জাতিকে নতুন সূর্য উপহার দেয়ার পূর্বশর্ত হতে পারে না।প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা চলছে নানাভাবে। আওয়ামী লীগের চার সংস্কারপন্থি নেতা আমু, রাজ্জাক, সুরঞ্জিত, তোফায়েল রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। তারা কি চান? তারাও কি তবে কোন কৌশলে নিজেদের অতীত দফারফা করার চেষ্টা করছেন?তিন.বাংলাদেশকে কীভাবে লুটেপুটে খাওয়া হয়েছে, এর প্রমাণ আমরা প্রতিদিন পাচ্ছি। একটি ভয়ানক সংবাদ বেরিয়েছে। তিতাস গ্যাস কোম্পূানির ১২৬ জন কর্মচারী চারশ’ কোটি টাকার সম্পূদ সরকারকে ফেরত দেয়ার কথা জানিয়েছেন। বাহ! কি দানবীর তারা! সরকারকে ফেরত দিচ্ছেন, ঘুষে অর্জিত সম্পূদ। এই চিত্র শুধু তিতাস গ্যাসের নয়। বাংলাদেশে এমন আরও অন্তত ২শ’ বড় বড় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পূানি পাওয়া যাবে সেগুলোর কর্মচারীরা ফুলে-ফেঁপে উঠেছে অত্যন্ত অস্বাভাবিকভাবে। তাদের আয়ের উৎস কি? এত টাকা কোথা থেকে এলো? তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় এই অসাধারণ দুর্নীতিবাজ-সাধু ব্যক্তিরা বা তাদের সব লুণ্ঠিত অর্থ ফেরত দিচ্ছেন? ফেরত দিয়েই কী তাদের শাস্তি থেকে মাফ করে দেয়া হবে? অন্য দুর্নীতিবাজ-সাধুদের কী হবে? তারা কোথায়?বিদেশ থেকে মাসে হাজার হাজার ডলার, পাউন্ড, উপার্জন করেও বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীদের কারও কারও সঙ্গে পাল্লা দেয়া যায় না। এত টাকা এরা কীভাবে কামাই করেন?এটা খুবই দু:খ ও বেদনাদায়ক যে, দেশের বেশকিছু ‘সুশীল সমাজ’ও নানা ঘাপলায় জড়িয়ে পড়েছে। তাদের আয়ের উৎস প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। যারা শুদ্ধ সমাজ গঠনের প্রবক্তা দাবিদার তাদের এমন পতন কাম্য ছিল না কোনমতেই। মুখে যতই বড় বড় কথা বলা হোক না কেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাতারাতি বদলানো যাবে এমন কোন সম্ভাবনা নেই, যা বর্তমান সরকারও জানে। আর জানে বলেই আগামী সংসদ নির্বাচনের পর দলগুলোর অবস্খান কি হবে­ তাও শর্তে ঢুকাতে চাইছে সরকারপক্ষ। এর কারণ কি? কারণটি হচ্ছে, সরকার শঙ্কিত বিভিন্ন কারণে। কিন্তু এই শঙ্কা এবং সম্ভাবনা কি জাতির ভাগ্য বদলে সহায়ক হবে?আরও একটি কথা বলি। রাজধানী ঢাকার কথাই ধরা যাক। আন্তর্জাতিক সিটি প্লানিংয়ের জরিপে দেখা গেছে ঢাকা একটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত নগরী। এটা ঢাকার জন্মদাগ হয়েই লেগে আছে শরীরে। এই নগরী ভেঙে নতুন নগরী গড়া সহজে কীভাবে সম্ভব? পুরান ঢাকার চিত্রটি মানসে ভেসে উঠলে এখনও এক ধরনের বস্তির কথাই মনে পড়ে।বাংলাদেশের রাজনীতিতেও তেমনি কিছু জন্মদাগ লেগে আছে। এসব দাগ মুছে ফেলা কঠিন। কোন কোন ক্ষেত্রে অসম্ভবও। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, কালোবাজারি, মুনাফাখোরি, এমনকি মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িকতার বিষফণাও মিশে গেছে এদেশের রাজনীতিতে। হ্যাঁ, আমি এগুলোকে জন্মদাগই বলব। মনে হচ্ছে বর্তমান সরকারও এসব জন্মদাগে নতুন প্রলেপ দিতে চাইছে মাত্র।নিউইয়র্ক, ২৯ জানুয়ারি ২০০৮---------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ১ ফেব্রুয়রি ২০০৮, শুক্রবার।",False rn,"ফোটোগ্রাফী- ২৯ ফিল্মের যুগে বেশিরভাগ ক্যামেরাই ছিল এস এল আর। ডিজিটাল যুগে হলো ডি এস এল আর; ‘ডি’ দিয়ে কি বোঝায় বলেন তো? নিখুঁত ছবি তোলার চাবিকাঠি হচ্ছে প্রচুর ছবি তোলা। আর এর জন্যই ছবি তুলতে কার্পন্য না করাই ভাল।আপনার ডিএসএলআর ক্যামেরার ব্যাটারীর চার্জিং ক্ষমতা বৃদ্ধি যেভাবে করবেন- আপনি আপনার ক্যামেরা দিয়ে ছবি উঠানোর সময় লাইভ ভিউ এবং বিল্ট ইন ফ্লাস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। লাইভ ভিউ ব্যবহারের সেন্সরের উপর প্রভাব পরে অন্যদিকে অতিরিক্ত ব্যাটারী খরচ হয়। অনেক সময় আমরা ক্যামেরা দিয়ে ছবি উঠানোর পর ছবিটাকে স্কিনে ক্ষণিক সময় দেখতে পাই । এই ইমেজ রিভিউ অপশন বন্ধ রেখে ব্যাটারী চার্জ দীর্ঘস্থায়ী করতে পারি। দিয়ে ছবি উঠানোর পর অনেকে ক্যামেরা অফ করতে ভুলে যাই । আপনার ক্যামেরায় যদি অটো পাওয়ার অফ অপশনের টাইম সর্বনিম্ন থাকে তবে ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্ধ হবে এবং পাওয়ার সেভিং মোড চালু থাকবে ।আপনি যদি আবার চালু করতে চান তাহলে সাটার রিলিজ বাটনে হার্ফ প্রেস করার সাথে সাথে ক্যামেরা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে। এভাবে প্রচুর পরিমান ব্যাটারী সঞ্চয় করা সম্ভর। ক্যামেরার বাটন প্রেস করার সময় অথবা ক্যামেরার অপশন ব্যবহার করার সময় যে সাউন্ড (বিফ) শুনতে পাই সেটি বন্ধ রাখা। এই সাউন্ড আসলে কোন কাজে লাগে না । বিফ অফ রেখে ব্যাটারীর চার্জ রক্ষা করতে পারি। মেগাপিক্সেলের সঙ্গে ছবির মানের সম্পর্ক খুব একটা নেই। ক্যামেরার মেগাপিক্সেল বেশি হওয়া মানে ওই ক্যামেরার ছবির সাইজ বেশি বড় আসবে। মাত্র পাঁচ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরায়ই ১২ বাই ১৮ ইঞ্চি মাপের ছবি ধারণ করা যায়। তাই পাঁচ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাকেই স্ট্যান্ডার্ড বলা যায়। ক্যামেরা কেনার সময় তাই মেগাপিক্সেলের দিকে চোখ না দিয়ে ক্যামেরায় অন্য কী সুবিধা আছে, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।ক্যামেরা কেনার সময় মনে রাখবেন আপনার ভালো একটা ক্যামেরার ব্যাগ কিনে নেয়াটা খুবই জরুরি। অবশ্যই সূর্যের আলো কিংবা বৃষ্টির পানি যেন ভেতরে ঢুকে আপনার লেন্সের ক্ষতি না করতে পারে এমন ব্যাগ। অনেকেই সাংবাদিকতা করার জন্য ক্যামেরা কিনেন। মনে রাখবেন, যদি ফটোজার্নালিস্ট হতে চান তবে আপনাকে মেধাবী হতে হবে। মুহূর্তেই ফ্রেমিং বুঝে ছবি তুলে আনতে হবে। হয়তো আপনার হাতে সময় আছে ১ মিনিট এ সময়ের মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত ছবিটি তুলে আনতে হবে। এজন্য প্রচুর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তাই ফটোজার্নালিস্ট হতে চাইলে শুরুতেই দামি ক্যামেরা না নিয়ে সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে চর্চা শুরু করে দিন। অনেকেই জানতে চান, ভালো নতুন ক্যামেরা কোথায় কিনতে পাওয়া যায়, তাদের জন্য বলছি- আমাদের দেশে শুধু ক্যামেরার জন্য আলাদা কোনো বাজার গড়ে ওঠেনি। তবে কম্পিউটার মার্কেটগুলোতে সাধারণত ক্যামেরা পাওয়া যায়। বাংলাদেশে 'নাইকন' ক্যামেরার পরিবেশক ফ্লোরা লিমিটেড। 'ক্যানন' ক্যামেরার পরিবেশক জেএএন অ্যাসোসিয়েটস। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে তাদের শোরুম রয়েছে। ক্যানন ক্যামেরার খোঁজখবর এখান থেকেই পাওয়া যাবে। প্যানাসনিকের পরিবেশক এসিআই লিমিটেড। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে তাদের একটি শোরুম আছে। সনি ক্যামেরার পরিবেশক র‌্যাংগস ইলেকট্রনিকস। ক্যামেরার খোঁজ পেতে সনির শোরুমে যেতে হবে। এ ছাড়া আইডিবি ভবনের বিসিএস কম্পিউটার সিটির অনেক দোকানে প্রচলিত প্রায় সব ব্র্যান্ডের ক্যামেরাই পাওয়া যাবে। ক্যামেরার জন্য সুনাম আছে এমন কয়েকটি দোকান বসুন্ধরা সিটিতেও রয়েছে। এই মার্কেটের লেভেল ৬-এ রয়েছে সনি ব্রাভিয়া স্টোর। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররম, এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার ও স্টেডিয়াম মার্কেটে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্যামেরা পাওয়া যায়। ক্যামেরা কেনার আগে ইন্টারনেট থেকে রিভিউ দেখে নিন। একসঙ্গে দু-তিনটি ওয়েবসাইট থেকে নির্দিষ্ট ক্যামেরার রিভিউ দেখলে ক্যামেরার কোয়ালিটি সম্পর্কে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে বিস্তারিত জানা যাবে। এখানে পেয়ে যাবেন ব্যবহারকারীদের মন্তব্যও। http://www.dpreview.com, http://www.reviews.cnet.com/digital-cameras, http://www.trustedreviews.com, http://www.cameralabs.com, http://www.pcmag.com/reviews/digital-cameras I http://www.digitalcamerainfo.com সাইটগুলো ক্যামেরা রিভিউয়ের নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট। আপনার ক্যামেরাটি পরিষ্কার ও ঝকঝকে রাখার জন্য সবসময় ক্যামেরা ব্যাগে যে জিনিষগুলো থাকা প্রয়োজন তা হল-· মাইক্রোফাইবার কাপড়- আঙ্গুলের ছাপ ও নোংরা দাগ মোছার জন্য।· ডাস্ট ব্লোয়ার- ময়লা ও ধুলার স্তর দূর করার জন্য।· ক্লিনিং পেন এবং ব্রাশ কম্বো- যথাযথ ভাবে ফিঙ্গার প্রিন্ট পরিষ্কারের জন্য। ক্যামেরা ক্রয় করার পরে আপনাকে মেমরি কার্ড, লেন্সের ফ্লিটার, স্কিন প্রটেকটর, বহনের জন্য ব্যাগ কিনতে হবে। মূল ক্যামেরার বাজেটের বাইরে আপনাকে আর হাজার তিনেক টাকা যুক্ত রাখতে হবে এই জন্য। ঘন কুয়াশার মধ্যে ক্যামেরা ব্যবহার না করা ভালো। এতে কুয়াশার জলকণা ঢুকে ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ক্যামেরায় সমস্যা দেখা দিলে নিজে ঠিক করার চেষ্টা না করে ভালো সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া উচিত। লেন্সে ধুলো পড়লে হাত দিয়ে, ঘষে বা ফুঁ দিয়ে সরানোর চেষ্টা না করে ব্লোয়ার ব্যবহার করুন। ব্লোয়ার না থাকলে নরম কাপড় (যেমন ফ্লানেল) ব্যবহার করুন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর থেকে বের হওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে ক্যামেরাটি ব্যাগে ভরে রাখুন। ক্যামেরা খোলা অবস্থায় বের করা হলে লেন্সে বিন্দু বিন্দু পানি জমা হয়। ফলে প্রথমে কিছুটা ঝাপসা মনে হবে এবং পরে লেন্সে স্থায়ী দাগ পড়তে পারে। মনে রাখবেন, ডিএসএলআর মোটেও কোনো খেলনা না। যত্ন করতে হবে মন থেকে। সবসময় ক্যামেরার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিদিন খেয়াল করবেন ক্যামেরার সবকিছু ঠিক আছে কিনা। লেন্সগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে, সেন্সরে কোনোভাবেই ধুলোবালি ঢুকতে দেয়া যাবে না। মোট কথা ধুলোবালি থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৪২",False fe,"দীর্ঘ প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দীর্ঘ প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর ফকির ইলিয়াস======================================== প্রশ্নগুলো অত্যন্ত দীর্ঘ। কিন্তু উত্তর খুবই সংক্ষিপ্ত। প্রশ্ন হচ্ছে, যে জাতি রক্তবন্যা বইয়ে রাষ্ট্র স্বাধীন করেছিল, সে জাতির ভাগ্যে আজ এত দুর্ভোগ কেন? কেন কািক্ষত লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছতে এত হোঁচট খেতে হচ্ছে। আর উত্তর হচ্ছে­ কিছুই হয়নি। কিছুই হচ্ছে না। কিছুই হবে না। যেমন ছিল তেমনি থেকে যাচ্ছে সবকিছু।ঈদের ছুটি শেষ হলো। এখন দেশে চলছে দুর্গাপজার উৎসব। ঈদে বেশকিছু টিভি অনুষ্ঠান দেখলাম। নন্দিত নাট্যকারের একটি নাটক দেখলাম। এর নাম ‘মহান চৈনিক চিকিৎসক ওয়াং পি’। হাসির নাটক। নাট্যকার খুব ভাল করে বুঝিয়ে দিলেন দেশ যেমন ছিল তেমনি অবস্খায় ফিরে যাচ্ছে। অভিনেতা ডা. এজাজ ছিলেন ‘মহান চৈনিক চিকিৎসক’। একটি ভণ্ড চিকিৎসকের চরিত্রে। নাটকের শেষ দৃশ্যে তিনি ‘থু’ বলে শেষ করেন তার সংলাপ।হ্যাঁ, সবাই তাদের সেই পুরনো চরিত্রে ফিরে যাচ্ছে। মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে দুর্নীতিবাজরা। নষ্ট রাজনীতির পালে এখন নতুন হাওয়া। প্রশিকার ড. কাজী ফারুক নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে মাঠে নেমেছেন। ‘সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলন’। কারা এই দেশের নাগরিক? লুটেরা বণিক শ্রেণী, নাকি শোষিত মজলুম মানুষ, যারা ঘামে-শ্রমে কাটান প্রতিদিন? এসব প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। যারা যা করার কথা নয় তারাই তা করছে। সবকিছুই নাগরিক অধিকার। আর সে অধিকারে সুশীল ভাবনার ছড়াছড়ি। এই সুশীল ভাবনা আপামর মানুষের কোন কাজে আসে কি না সেদিকে নজর কারও আছে বলে মনে হয় না। মনে না হওয়ারই কথা। কারণ যারা শোষণ করে তাদের শ্রেণী চরিত্র একই। সমাজে হোক আর রাজনীতিতে হোক। এরা মনে করে জনগণ তাদের তাঁবেদার। যা চাপিয়ে দেয়া হবে জনগণ তা মেনে নেবে। মেনে নেয়ও জনগণ। না নিয়ে উপায় থাকে না। মাঝে মাঝে জনতা বিদ্রোহীও হয়। জন্ম দেয় নতুন নতুন ফুলবাড়ীর।নতুন অফিসে যাত্রা শুরু করেছে বিএনপির রাজনীতি। হাওয়া ভবনের আদলেই অনেকটা। এখন শুধু তারেক জিয়া নেই। এটি সভানেত্রী বেগম জিয়ার কার্যালয়। কথা ছিল শফিক রেহমানের বাসাটি ব্যবহার করা হবে অফিস হিসেবে। তা এখন বাদ দেয়া হয়েছে পত্রপত্রিকার সমালোচনার মুখে। বিএনপি ভেতরে ভেতরে রাজনীতিমুখী। কিন্তু আওয়ামী লীগ কি করছে? তাদের অবস্খা যে খুব সুসংহত তা বলা যাবে না। শেখ হাসিনার স্খায়ী জামিন এখনও হয়নি। মামলাগুলোর খড়গের নতুন নতুন দামামা বাজানো হচ্ছে।দুই.একটা বিষয় বেশ নিশ্চিত বর্তমান সরকার বেশকিছু ভিআইপিকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। যে কারণে বেশকিছু মামলার রশি ধরে টান দেয়া হচ্ছে জোরেশোরেই। সাইফুর রহমান ও আলী আহসান মুজাহিদের বিরুদ্ধে আবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আবার নেপথ্যে জামিনের ব্যবস্খাও করা হচ্ছে! তাহলে প্রকৃত ঘটনা কি? কি করার চেষ্টা করা হচ্ছে?যারা মুক্তি পেয়েছেন কিংবা পাচ্ছেন, তারা নির্বাচন করতে পারবেন কি না, তাও নিশ্চিত নয়। নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা নির্বাচনের জন্য তৈরি। সে কথা ভাষণের মাধ্যমে জাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। কিন্তু কারা নির্বাচন করতে পারবে কারা পারবে না, বিষয়টি অমীমাংসিতই থেকে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত।একদিকে নির্বাচন থেকে দরে রাখার প্রচেষ্টা, অন্যদিকে নতুন দল তৈরির কারিগরি, দুটো বিপরীত ধর্মী না হলেও একটা গোপন ইচ্ছে থেকেই যাচ্ছে এর নেপথ্যে। সেটা কি তা জনগণ হয়তো সময় মতোই জানতে পারবে। কিন্তু কথা হচ্ছে তা থেকে দেশের মানুষের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু রয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। আর তা হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবু শেখ মুজিবুর রহমানও একসময় ভেবেছিলেন, এদেশে আলবদর রাজাকার আর কোনদিনই রাজনীতি করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে এর উল্টো ঘটনা। জাতির জনককে হত্যার মাধ্যমেই একটি বিশেষ শ্রেণী ঘাতক দালালদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এদেশে সুদৃঢ় করে। পরে এরা ক্ষমতারও ভাগীদার হয়। আজ এই ২০০৮ সালেও যেভাবে দাবার ঘুঁটি পরিচালনা করা হচ্ছে তাতে সেই পরাজিত শক্তিকেই পুনর্বাসিত করার সুপ্ত ইচ্ছা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম ঘাতক দালালদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও বর্তমান সরকার এ বিষয়ে অত্যন্ত রহস্যজনক ভমিকা পালন করে যাচ্ছে।কীভাবে ওয়ান ইলেভেনের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হবে কিংবা আদৌ হবে কি না তা বর্তমান নীতিনির্ধারকরাই বলতে পারবেন। তবে জরুরি অবস্খার ছায়া বহাল রেখে তারা যে নির্বাচন করে পার পেতে চাইছেন তার সত্র ধরেই নির্বাচন পরবর্তী সময় উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। যে পক্ষ পরাজিত হবে তারাই এর রশি টানাটানিতে নেতৃত্ব দিতে পারে। সাময়িকভাবে, কৌশলগত কারণে নির্বাচন থেকে ‘বিরত রাখা’ নেতারা বিভিন্ন মারমুখী ইস্যুর নেতৃত্বে চলে আসতে পারে।বাংলাদেশ এমন কোন গণতান্ত্রিক দেশ নয়, যে দেশের রাজনীতির বহমানতা পরিশুদ্ধ নেতা তৈরি করে। এদেশে নেতা গণতান্ত্রিকভাবে তৈরি হয় না। নেতা তৈরি হয় দলীয় প্রধানের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে। ফলে নবম জাতীয় সংসদে অনেক বিজ্ঞ নতুন মুখ দেখা যাবে বলে যারা ফুলঝুরি ওড়াচ্ছেন­ তা শেষ পর্যন্ত ফাঁকা বুলি বলেই প্রমাণিত হতে পারে। তার কারণ হচ্ছে, রাতারাতি গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দলকে এদেশের মানুষ সহজে গ্রহণ করে না তা বার বারই প্রমাণিত হয়েছে। বিকল্পধারা, গণফোরাম, এলডিপি, পিডিপি, সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলন সবই দু’চারটার বেশি আসন পাওয়ার আপাতত সম্ভাবনা নেই। আমরা জানি রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। তারপরও যখন দেখি সহস্র শ্বেতাঙ্গ বারাক ওবামার ছবি বুকে লাগিয়ে দৃঢ় ভাষায় বলছেন­ ‘ইউ আর মাই লিডার,’ তখন মনে হয় মানুষ বৈষম্য দু:শাসনের বিরুদ্ধে জয়ী হবেই। আহা! বাংলাদেশের রাজনীতি যদি সে আলোকে পরিচালিত হতো। সুপ্রিয় পাঠক, শারদীয়া শুভেচ্ছা সবাইকে।নিউইয়র্ক, ৮ অক্টোবর ২০০৮---------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ১০ অক্টোবর ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত",False hm,"গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও বিষ্ণুমূর্তি রহস্য গোয়েন্দা ঝাকানাকা একটি ভুরু উত্তোলন করে দারুণ এক অট্টহাসি দিলেন। দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি গম্ভীর মুখে বসে রইলেন। ""কেস খুবই সরল।"" ঝাকানাকা এক গাল মুড়ি চিবাতে চিবাতে বললেন। ""বিষ্ণুমূর্তি আদৌ চুরি যায়নি।"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""কিন্তু ...।"" ঝাকানাকা চোখ পাকিয়ে তাকালেন শুধু। কিংকু চৌধারি থেমে গিয়ে মুড়ির গামলার দিকে হাত বাড়ালেন। ঝাকানাকা বললেন, ""দেখুন, পুলিশে চাকরি করেন ...[justify]গোয়েন্দা ঝাকানাকা একটি ভুরু উত্তোলন করে দারুণ এক অট্টহাসি দিলেন। দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি গম্ভীর মুখে বসে রইলেন। ""কেস খুবই সরল।"" ঝাকানাকা এক গাল মুড়ি চিবাতে চিবাতে বললেন। ""বিষ্ণুমূর্তি আদৌ চুরি যায়নি।"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""কিন্তু ...।"" ঝাকানাকা চোখ পাকিয়ে তাকালেন শুধু। কিংকু চৌধারি থেমে গিয়ে মুড়ির গামলার দিকে হাত বাড়ালেন। ঝাকানাকা বললেন, ""দেখুন, পুলিশে চাকরি করেন বলেই যে বুদ্ধু হতে হবে এমন কোন কথা নেই। ভাবুন মন দিয়ে। গোটা ব্যাপারটাকে দেখুন চোখের সামনে। শুধু একটা বাক্সকে নিয়ে চিন্তা করলেই তো হবে না। থিঙ্ক আউট অব দ্য বক্স!"" কিংকু চৌধারি মুড়ি চিবাতে চিবাতে বললেন, ""কিন্তু ...।"" ঝাকানাকা বললেন, ""কোন কিন্তু নাই। ঘটনা সরল। মূর্তি চুরি হয় নাই।"" কিংকু চৌধারি আরেক খামচা মুড়ি নিলেন। ঝাকানাকা উঠে পড়লেন সোফা ছেড়ে। বললেন, ""আপনাদের হাতে আসলে আছে কী? একটি ভিজা, স্ক্রু খোলা বাক্স, যার গায়ে যাদুঘরের সীল আছে। আর আছে কী? আছে অকুস্থল, বিমানবন্দরের পাশে একটা জলা, যেখানে আপনাদের লোকেরা লোক দেখিয়ে হাঁচড়পাঁচড় করেছে। আর আছে কী? ভারত-নেপাল সীমান্ত থেকে আটক করা একটা ট্রাক, যার সীটের নিচে এক হালি বিষ্ণুমূর্তি।"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""ঠিক!"" ঝাকানাকা বললেন, ""আর এগুলি থেকে আপনারা ভাবছেন বিষ্ণুমূর্তি চুরি হয়েছে। ভুল।"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""কেন?"" ঝাকানাকা বললেন চোখ পাকিয়ে, ""ভাবুন! ভেবে দেখুন!"" কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে আরেক খামচা মুড়ি তুলে নেন। ""রাত দু'টো পর্যন্ত পুলিশ পাহারায় ছিলো এয়ারপোর্টে। তারপর তারা চলে যায়। কেন চলে যায়? কারণ তাদেরও তো ঈদ আছে। তারাও তো গরুর মাংস দিয়ে পোলাও খেতে চায়। বেশ। খাক। কিন্তু তারপর কী হলো? একটা বাক্স লোপাট হয়ে গেলো। হই হই রই রই। সেই বাক্স আবার খুব বেশি কষ্ট করতে হলো না, ধারেকাছেই একটা জলায় তাকে পাওয়া গেলো। তার মাথার স্ক্রু খুলে পড়ে গেছে, ভেতরটা ফাঁকা। ... এখানে ভাবতে হবে, কেন? কেন বাক্সটা পাওয়া গেলো? বাক্সসুদ্ধুই কেন মূর্তিগুলি সরানো হয়নি?"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""বারে, বাক্সসুদ্ধু নিলে ধরা পড়ার একটা সম্ভাবনা থাকে না?"" ঝাকানাকা বললেন, ""তা থাকে। কিন্তু বাক্সের গা থেকে কাগজের লেবেলটা টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেললেই কিন্তু ঝামেলা চুকে যেতো। বাক্স খুলে জিনিসটা বার করতে হতো না। আর এইসব মূর্তি খুব সাবধানে প্যাক করতে হয়। বাক্সের ভেতরে থাকলেই বরং জিনিসটা নিরাপদ থাকে। চোরও তা জানে। চোর জানে এই জিনিস গদাম করে গাড়ির বুটে ফেলে নেয়ার জিনিস নয়। সামান্য দাগদুগ পড়লেই কালোবাজারে এর দাম ফস করে নেমে আসবে একশো ভাগের এক ভাগে। তারপরও সে এতো কাঁচা কাজ করলো কেন?"" কিংকু চৌধারি একটা পুলিশি হাসি দ্যান। বলেন, ""আপনি ভুলে যাচ্ছেন স্যার! বাক্সসহ জিনিসটা লোপাট করতে গেলে এয়ারপোর্টের দুর্ধর্ষ সিকিউরিটির হাতে বমাল ধরা পড়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়!"" ঝাকানাকা হাসেন। বলেন, ""মুহাহাহাহাহাহা! তাই নাকি? তো বাক্স ছাড়া লোপাট করার সময় কি এয়ারপোর্টের দুর্ধর্ষ সিকিউরিটি ঘুমাচ্ছিলো?"" কিংকু চৌধারির মুখটা কালো হয়ে যায়। তিনি আমতা আমতা করে বলেন, ""হয়তো কোন কাপড়টাপড় দিয়ে ঢেকেঢুকে, কিংবা ব্যাগে ভরে ...।"" ঝাকানাকা বলেন, ""বাক্সটা টিভিতে দেখেছি। ওটাকেও তো কাপড়টাপড় দিয়ে ঢেকে নেয়া যেতো। কিংবা ব্যাগে ভরে। নিলো না কেন?"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""দেখুন, এইসব চোরছ্যাঁচড়ের কারবার বোঝা বড় দায় ...।"" ঝাকানাকা বলেন, ""হুমম। আপনার আমার কাজই ওটা। ঐ দায় নিয়েই চলতে হবে। এখন ভাবুন। কেন বাক্সটা পাওয়া গেলো, একেবারে নাকের ডগায়?"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""কেন?"" ঝাকানাকা বলেন, ""কারণ বাক্সটার নিয়তিই ছিলো ধরা পড়া। আশেপাশে কোথাও খালি পেট নিয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় ধরা পড়া।"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""মানে?"" ঝাকানাকা বলেন, ""মানে হচ্ছে, সময়মতো যদি বাক্সটা সরিয়ে ফেলা না হতো, এবং স্ক্রু খুলে তাকে কোথাও ফেলে রাখা না হতো, তাহলে ওজন করার সময় এয়ার ফ্রান্সের লোকজন বুঝে ফেলতো যে বাক্সটা আসলেই খালি, ওর ভেতরে কোন মূর্তি ছিলো না। তখন তারা হাউকাউ শুরু করতো।"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""মানে কী?"" ঝাকানাকা হাসেন। বলেন, ""যদি ধরে নেই, রাত দু'টোর পর, পুলিশ চলে যাবার পর বাক্স থেকে মূর্তি দুটো চুরি হয়েছে, তাহলে কিভাবে ভোরবেলা ভারত-নেপাল সীমান্তে চারটা বিষ্ণু পাওয়া যায়? ভুলে যাবেন না, গতরাতে ঘন কুয়াশা ছিলো দেশে। উত্তরাঞ্চলের রাস্তা এ সময় কুয়াশায় ছেয়ে থাকে। হাজার বড় তালেবর ড্রাইভারও ঘন্টায় ষাট কিলোমিটারের বেশি গতিতে ঐ রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবে না। উত্তরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পার করতে গেলে অন্তত পক্ষে আট ঘন্টা লাগবে। সেখান থেকে ভারত নেপাল সীমান্ত আরো ঘন্টা তিনেকের রাস্তা। হিসাব তো মিলছে না।"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""তাহলে?"" ঝাকানাকা বলেন, ""সম্ভাবনা দু'টো। এক, ঐ ট্রাকে যেসব বিষ্ণু আছে, সেগুলি আমাদের নয়। সেগুলি নকল বা অন্য বিষ্ণু। দুই, ঐ চারটার মধ্যে দু'টো আমাদের বিষ্ণুর রেপ্লিকা। তিন ...।"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""আপনি না বললেন দু'টো সম্ভাবনা?"" ঝাকানাকা বললেন, ""চোপ! তিন, ঐ চারটার মধ্যে দু'টো আমাদের আসল বিষ্ণু।"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""এখন?"" ঝাকানাকা বললেন, ""যদি এক বা দুই হয়, তাহলে হয়তো বিষ্ণু এয়ারপোর্ট থেকেই চুরি গেছে, এবং এই মূহুর্তে সে নিরাপদে চোরের আস্তানায় চলে গেছে। সেটা কোথায় বলতে গেলে অনেক লোককে খুব ভালোভাবে প্যাঁদাতে হবে। আর যদি তিন হয়, তাহলে এয়ারপোর্ট থেকে চুরি হয়নি, আমি যা ভাবছি তা-ই হয়েছে। যাদুঘর থেকে খালি বাক্স প্যাক করা হয়েছে। হোমবাউন্ডের গাড়ি পাহারা দিয়ে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ, কিন্তু কিছু হাতসাফাই তাদের পক্ষেও করা সম্ভব, কাজেই এমনও হতে পারে যে ভরা বাক্স মাঝপথে পাল্টে খালি বাক্স লোড করা হয়েছে এয়ারপোর্টে। ওদেরকেও প্যাঁদানোর লিস্টে রাখুন।"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""খালি বাক্স?"" ঝাকানাকা বললেন, ""হুম। খালি বাক্স পাঠিয়ে বিষ্ণুদু'টোকে চুপিচুপি ছালার বস্তায় ভরে তুলে দেয়া হয়েছে দুপুরের দিকেই। তারা চলে গেছে সীমান্তের দিকে। সেখান থেকে রাতে তারা বাংলাদেশ ছেড়ে ঢুকে পড়েছে ভারতে।"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""এখন হয়েছে কোনটা? এক, দুই না তিন?"" ঝাকানাকা বলেন, ""প্যাঁদাতে হবে, বুঝলেন, প্যাঁদালেই বেরিয়ে পড়বে সব গড়গড় করে। তিব্বতি উষ্টাটা কাজে লাগাতে হবে এবার ... এতো কষ্ট করে শিখলাম, কাজে লাগাতে পারিনা ...।"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""দুই নাম্বার সম্ভাবনাটা বুঝি নাই। আমাদের বিষ্ণুর রেপ্লিকা কেন ধরা পড়বে নেপাল সীমান্তে?"" ঝাকানাকা হাসেন। বলেন, ""যে কারণে খালি বাক্স ফেরত এসেছে, সে কারণেই! রেপ্লিকা ফেরত আসবে, তারপর বিষ্ণুর জায়গা দখল করে বসে পড়বে যাদুঘরে।"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""মানে? লোকজন বুঝে ফেলবে না?"" ঝাকানাকা হাসেন। বলেন, ""না। যারা বুঝবে তারা মুখ বুঁজে থাকবে হয়তো।"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""কিন্তু ফ্রান্সের ওরা তো ঠিকই বুঝে ফেলবে!"" ঝাকানাকা হাসেন। বলেন, ""একবার চুরি যাবার পর কি আর ঐ জিনিস এতো সহজে আর ফ্রান্সে যাবে?"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""আরেশশালা, তাই তো!"" ঝাকানাকা বলেন, ""মুড়ি খান।"" কিংকু চৌধারি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকান ঝাকানাকার দিকে, গালি দিলো নাকি? . . . গোয়েন্দা ঝাকানাকা! | Promote Your Page Too",False rg,"বন্ধুদের আমলনামা-৯ _ _ ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি অলক চক্রবর্তী ।। রেজা ঘটক আলোকিত মানুষ গড়ার কাজে সর্বদা নিয়োজিত কবি অলক চক্রবর্তী। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি নিয়ে সারা ঢাকা শহর ঘুরে বেরায় অলক। হৃদয়ে যার কবিতার আঁকর তার এমন লাইব্রেরি নিয়ে ঘোরাই কেবল মানায়। তবু যদি কিছু মানুষ বই পড়ে আলোর সন্ধান পায় ক্ষতি কি! কবি অলক চক্রবর্তী'র জন্ম ১৯৭৬ সালের ১০ নভেম্বর চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সুচক্রদণ্ডী গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই কবি জাফর আহমদ রাশেদের কাছে সাহিত্যের অলিগলি'র পাঠ নিয়ে নিজেও সাহিত্য চর্চা শুরু করলো। রাশেদের সম্পাদনায় সাহিত্যের কাগজ 'আড্ডারু'র একজন নিয়মত কবি অলক। আমার সঙ্গে অলককের পরিচয় রাশেদের মাধ্যমে। অলক ঢাকায় আসল একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। এক ইন্টারভিউতেই চাকরি হয়ে গেল। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি নিয়ে জগত ঘুরে বেড়ানোর চাকরি। বইয়ের সঙ্গে সব সময় ওঠাবসা। ব্যাপারটা খারাপ না। সন্ধ্যায় আমরা ধানমন্ডি নদীর পারে আড্ডা দিচ্ছি। রাশেদের সঙ্গে আসল অলক। দু'এক কথার পর থেকেই আমরা বন্ধু। তারপর প্রায় আট দশ বছর হয়ে গেল। মাঝে অলক খুলনা ছিল বছর তিনেক। ওই সময় বিয়ে করেছে। বউয়ের নাম সুমী চক্রবর্তী। অলক-সুমী'র এক ছেলে। রবীন্দ্রনাথের গল্পের নায়ক অভীক। অভীক চক্রবর্তী। নিক নেম অক্ষয়। অলক খুলনা ঘুরে আবারো ঢাকায়। কিন্তু অনেক দিন দেখা হয় না। কারণ ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি নিয়ে সপ্তাহের ছয় দিন অলক গোটা রাজধানীর মানুষকে বই পড়তে দেয়। তারপর ছুটির আগের রাতে চট্টগ্রাম দৌড় মারে। ছুটি'র দিনটি পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে তারপর রাতে আবার ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দেয়। টাইট সিডিউল। আগের মতো আমরা যেহেতু ধানমন্ডি নদীর পারে আড্ডা মারি না। তাই ধানমন্ডি'র দিকে অলক বইয়ের লাইব্রেরি নিয়ে গেলেও আমাদের সঙ্গে দেখা হয় না। অলকের একটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। 'তারা খসতে দেখলে ফুলের নাম নিতে হয়'। যদি কেউ তারা খসে পড়ার সময় ফুলের নাম না নেয়, তার কপালে নাকি দুঃখ আছে। সেই দুঃখের কোনো মা-বাবা নেই। তারা সাত ভাই এক বোন। তাদের বাড়ি বান্দরবনের চুম্বক পাহাড়ের চূড়ায়। সেখানে বোনটি সারাদিন বসে বসে ভাইদের জন্য রান্না করে। আর সাত ভাই গোটা বান্দরবনের সব উঁচু উঁচু পাহাড় ডিঙ্গিয়ে আচ্ছা মতো ক্ষুধা লাগিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে বলে আজও পেলাম না। কি পেল না সাত ভাই? বোনের জন্য সুন্দর একজন পাত্র। পাত্রকে হতে হবে হিমালয়ের মতো দুঃসাহসী। নীলগীরির মতো তাগড়া জোয়ান। নাগেশ্বরী মন্দরি বোনের বিয়ে হবে বলে পবন ঠাকুরকে বসিয়ে রাখা হয়েছে সেখানে। কারণ, বোনের জন্য পাত্র মিললেই বিয়ে। আর তারপর একে একে সাত ভাইও বিয়ে করবেন একসঙ্গে। পবন ঠাকুরের একসঙ্গে পরপর অষ্ট বিয়ে পড়াতে হবে। এই নিয়ে কেওক্রাডাং পর্বতের চূড়ায় মিস্টার তাজিং ডং বেওক্রাডাং আর বাবা আদিনাথের মধ্যে এক গোপন বৈঠক বসলো। সাত ভাইকে নিজেদের পক্ষে রাখার জন্যে তাজিং ডং ও কেওক্রাডাং বাবা আদিনাথকে বোঝালেন, অন্তঃত আপনার একটি মেয়ে যেনো সাত ভাইয়ের মধ্যে কারো জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। তাহলে ভবিষ্যতে পাহাড়ের দখলটা আমাদের মধ্যেই থাকবে। বাবা আদিনাথের সঙ্গে সেই গোপন বৈঠকের খবর কারা যেনো ফাঁস করলো। এক সময় সেই খবর বাবা আদিনাথের মেয়ের কানেও পৌঁছালো। মেয়ে সাত ভাইয়ের প্রবল প্রতাপে ভয় পেয়ে গেল। সে কান্না জুড়ে দিল। সেই কান্নায় কেওক্রাডাং পাহাড়ের অদূরে বিশাল এক লেকের সৃষ্টি হল। যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ লেক। কেউ যদি বান্দরবানের রুমা হয়ে বম পাড়া মারিয়ে কেওক্রাডাং চড়তে যান, পাহাড় চূড়ায় সেই সর্বোচ্চ লেকের সন্ধান পাবেন। আর তারা খসতে দেখার সময় কেউ যদি ফুলের নাম নেন, তার পরের বছর বিয়ে হবে। শর্ত থাকে যে, মেয়েদের বেলায় বয়স অন্তঃত একুশ হতে হবে। কারণ, বাবা আদিনাথের মেয়ের বয়স ছিল একুশ। আর যদি ছেলেরা তারা খসতে দেখে ফুলের নাম কেউ নেয়, তাদের মিনিমাম বয়স পঁচিশ হতে হবে। কারণ, বাবা আদিনাথ সাত ভাইয়ের মধ্যে যাকে মেয়ের-জামাই বানানোর কথা মনে মনে ভাবছিলেন, তার বয়স ছিল পঁচিশ।",False mk,"আইসিটি সেক্টরে ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে _ পলক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ২০২১ সাল নাগাদ কয়েক বিলিয়ন ডলার আইটি খাত থেকে রফতানি করবে। এ ছাড়া ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান আইসিটি সেক্টরে করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে মাল্টিমিডিয়া ও ডিজিটাল ক্লাসরুম এবং কম্পিউটার ল্যাব বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে খুদে কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা-২০১৬ আসরের ঢাকা মহানগর আঞ্চলিক পর্বের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পেশালাইজড ল্যাব করা হয়েছে। সারা বাংলাদেশে দুই হাজার হাইস্কুল ও কলেজে শেখ রাসেল কম্পিউটার কাম ল্যাংগুয়েজ ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।বাংলাদেশে এক লাখ ৭০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ডিজিটাল ক্লাসরুম এবং কম্পিউটার ল্যাব যত দ্রুত সম্ভব স্থাপন করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। একটাই লক্ষ্য; বাংলাদেশকে শ্রমনির্ভর অর্থনৈতিক দেশে থেকে ডিজিটাল অর্থনৈতিক দেশে রূপান্তর করতে চাই।’শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে জুনাইদ আহমেদ বলেন, ‘সম্ভাবনার দ্বার প্রযুক্তি। এ জন্য প্রোগ্রামিং জানতে হবে, কোডিং জানতে হবে। বিজ্ঞান, অঙ্ক, ইংরেজি ভালো করে শিখলে জীবনে ভালো কিছু করা যায়, এর সঙ্গে আরেকটি বিষয় ছোটকাল থেকে শুরু করতে হবে- তা হচ্ছে প্রোগ্রামিং এবং কোডিং।’ প্রতিযোগিতা আয়োজনের উদ্দেশ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘শিশু কিশোর তরুণদের ভবিষ্যতের পৃথিবী জয় করার জন্য এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকায় আগামী ৫ বছরে ২০ লাখ প্রোগ্রামার দরকার হবে, আমাদের দেশেও আগামী ৫ বছরে কয়েক লাখ প্রোগ্রামার দরকার হবে। আমরা টার্গেট ঠিক করেছি, ২০২১ সাল নাগাদ কয়েক বিলিয়ন ডলার আইটি খাত থেকে রফতানি করবো।আমরা ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান আইসিটি সেক্টরে করবো।’ প্রযুক্তি জ্ঞানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক উৎকর্ষের দিকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘প্রযুক্তির পাশাপাশি মানসিকতার দিক থেকেও এগিয়ে যেতে হবে। নিজেদের পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’ আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশের ১৬টি অঞ্চলে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।এ পর্বের বিজয়ীরা ৯ এপ্রিল ঢাকায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় বসবেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে দেশব্যাপী এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে মোবাইল অপারেটর রবি। অনুষ্ঠানে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড পিপল অফিসার মতিউল ইসলাম নওশাদ বলেন, ‘এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত। এ প্রতিযোগিদের মধ্য থেকে ভবিষ্যৎ কর্ণধার বের হয়ে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের (আইআইটি) পরিচালক ড. কাজী মুহাইমিন-আস-সাকিব, মুনির হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১৩",False mk,"জনরোষে জামাত সরকারের কঠোর অবস্থান, একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর বিচার, লাগাতার সন্ত্রাসী তৎপরতা আর গণজাগরণ মঞ্চের প্রভাবে ছোট হয়ে আসছে জামায়াত-শিবিরের বলয়। কোণঠাসা ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এ দলটি। নেতাদের সমন্বয়হীনতা, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আর জামায়াতের সঙ্গে শিবিরের মতবিরোধে কর্মসূচী দিয়েও সফলতার মুখ দেখছে না। চোরাগোপ্তা হামলা, ঝটিকা মিছিলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে কর্মকা-। কর্মসূচী পরিচালিত হচ্ছে ই-মেইল, ফেসবুক, এসএমএসেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থান আর জনরোষের ভয়ে নেতাকর্মীরা দেশ ত্যাগ করে পাড়ি জমাচ্ছেন। কেউ কেউ চাকরির চেষ্টা করছেন। দলের ভবিষ্যত নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে হতাশা। এদিকে দুর্বল হয়ে পড়েছে জামায়াতের পাওয়ার হাউস হিসেবে স্বীকৃত ছাত্রশিবির। শিবির করাকে আর ভাল চোখে দেখছে না পরিবারগুলো। অভিভাবকরা জেনে গেছেন জামায়াত-শিবির ইসলামী সংগঠন নয়, রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে গেছে শিবিরের রিক্রুটমেন্ট।স্বাধীনতাবিরোধী এ গোষ্ঠীর অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, নিজেদের ভয়াবহ সাংগঠনিক দুবর্লতার কথা সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছে জামায়াতের নিজেদের এক পর্যালোচনাতেই। যেখানে শিবিরের রিত্রুুটমেন্ট বন্ধ, পরিবারগুলো থেকে সন্তানদের শিবির থেকে চলে আসার চাপসহ নেতাকর্মীদের নিজের স্বার্থে চাকরি বা বিদেশে চলে যাওয়ার প্রবণতাকে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এমনকি জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, মোটা দাগে অন্তত পাঁচটি কারণে এই মুহূর্তে জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীটি। কারণগুলো হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একের পর এক জামায়াতের শীর্ষনেতাদের ফাঁসির আদেশ ও রায় কার্যকরের উদ্যোগ, গুরু গোলাম আযমের মৃত্যু, স্বল্পসময়ের ব্যবধানে কয়েক হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার এবং মানবতাবিরোধী বিচারবন্ধে ক্রমশ বিদেশীবন্ধু রাষ্ট্রগুলোর হস্তক্ষেপ ও প্রভাব হ্রাস। নিবন্ধন বাতিলের সঙ্গে সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়েছে দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগে। শীঘ্রই বিল আকারে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সংসদে উত্থাপনের প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের। জনরোষের ভয়ে জোট ও ভোটবন্ধু বিএনপিও সেভাবে সমর্থন করতে পারছে না জামায়াতকে, যা জামায়াতের চিন্তার আর এক কারণ। তবে সব কিছু ছাপিয়ে সরকারের কঠোরতা ও সাধারণ মানুষের মাঝে লাগাতার সন্ত্রাসীমূলক কর্মকা-বিরোধী মনোভাব জেগে ওঠাকেই ভয় পাচ্ছে জামায়াত-শিবির। সাধারণ মানুষের মনে মুুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তোলার জন্য গণজাগরণ মঞ্চকে ভয় পাচ্ছে এ গোষ্ঠী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধীরে ধীরে একা হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার পর এত দুঃসময় কখনও যায়নি দলটির। জামায়াত-শিবির কোন সিদ্ধান্তই এখন আর ঠিকভাবে নিতে পারছে না। কর্মসূচী দিলেও আগের মতো কাজে আসছে না। গত কয়েক দিনের হরতাল ছিল নামকাওয়াস্তে। ভেঙ্গে পড়েছে সাংগঠনিক কাঠামো, কর্মসূচীতে লাভ হচ্ছে না ॥ দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে সক্রিয় নেতাকর্মীরাও রয়েছেন আত্মগোপনে। মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, পুরানা পল্টনের মহানগরী অফিসসহ অধিকাংশ মহানগর, জেলা-উপজেলা কার্যালয় এখন তালাবদ্ধ। প্রকাশ্যে কর্মসূচীর ঘোষণা দিলেও সফল করতে পারছে না দলটির নেতাকর্মীরা। ৭৫-এর পরে এমন সঙ্কট আর আসেনি বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। দলীয় কার্যালয় দূরের কথা, বাসাবাড়ি, ব্যক্তিগত অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোথাও একটানা অবস্থান করছেন না তারা। ঝটিকা মিছিল, ভাংচুর ছাড়া চলছে না প্রকাশ্য কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম। নিত্যনতুন কৌশল নির্ধারণ করেও খুব বেশি সুবিধা করতে পারছে না। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেকে দেশ ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকরির জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন বলেও তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে তথ্য আসছে আবার কেউ কেউ রাজনীতি ছেড়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি নেয়ার চেষ্টা করছেন বলেও খবর আসছে কেন্দ্রে। এ বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলেছে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বকে। কেউ এ নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে রাজি না হলেও তারা বলছেন, সঙ্কটে পড়লেও মাঠপর্যায়ে দল ত্যাগ করে চলে যাওয়া কিংবা দলের ঘোষণার পরেও মাঠে নামেনি এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। যা ঘটেছে গত কয়েক দিনে একের পর এক দলের নেতাদের ফাঁসির রায়ের পরে। সর্বশেষ তিন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায়ের পর টানা কর্মসূচী চললেও হরতাল ডেকে লাপাত্তা ছিল অধিকাংশ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী আবার অনেক স্থানে নাশকতার চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থানে সফল হয়নি তারা। জামায়াত ও ছাত্রশিবির এ মুহূর্তে ঝুঁকি নিতে রাজি নয় বলে জানিয়েছেন মাঠপর্যায়ের নেতারা। দেশের যেসব এলাকায় জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে, সেসব এলাকায়ও হরতালে দলটির তেমন তৎপরতা ছিল না। নেতৃত্ব সঙ্কটের কারণেও আন্দোলন জোরদার হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১০ জন জামায়াত নেতা বিচারের সম্মুখীন হওয়ায় দলটি নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে জামায়াতের বিভিন্ন নেতাকর্মী সবচেয়ে বেশি সহিংস হয়ে উঠেছিলেন। তারা ধারণা করেছিলেন, জামায়াতের পর্যাপ্ত পেশীশক্তি রয়েছে এবং সঙ্গে রয়েছে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি সুতরাং পেশীশক্তি ব্যবহার করে বিচার বাধাগ্রস্ত করতে পারবেন। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে। দলটির সেই জৌলুস এখন আর অবশিষ্ট নেই। জামায়াতের ধারণা ছিল অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেফতার হলে দেশ ও বিদেশে প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে এবং সরকার ও অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিপাকে পড়বে, তা হয়নি। ইতোমধ্যেই জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মী দেশব্যাপী সহিংসতার পথ অবলম্বন করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছে। এ নিয়ে সরকার এখন কোন চাপই অনুভব করছে না। মাঠে বর্তমান পরিস্থিতি এমন, যেন জামায়াত একটি নিষিদ্ধ দল। জামায়াতের রাজনীতির অধিকার নয়, বরং তাদের বিরুদ্ধে যে কোন শক্ত অবস্থানকেই স্বাগত জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ। আগামীকাল ১৩ নবেম্বর দশম সংসদের চতুর্থ অধিবেশন বসবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই অধিবেশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিল উত্থাপিত হতে পারে। যদি তাই হয়, তাহলে দলটি আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সে ক্ষেত্রে অনেকে মনে করেন, জামায়াত আন্ডারগ্রাউন্ড তৎপরতা শুরু করতে পারে। তাতে অবশ্য জামায়াতের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। কারণ এমনিতেই আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠীর আদলে আন্ডারগ্রাউন্ডে সক্রিয়। সেখানে সকল জঙ্গীর মূল শক্তি যে জামায়াত তার প্রমাণও মিলেছে বহুবার। নিষিদ্ধ হলে প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিক দলের সুবিধা নিয়ে সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করে আর তৎপরতা চালাতে পারবে না। জামায়াতের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য হচ্ছেবাড়িতে বাড়িতে প্রবেশ করে প্রচার চালিয়ে ও ধর্মের প্রতি মানুষের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে এককভাবে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং বাংলাদেশকে ইসলামের নামে মূলত তালেবানী রাষ্ট্রে পরিণত করা। নিষিদ্ধ হলে প্রকাশ্যে অপতৎপরতা চালানো পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এ পথে ৭৫-এর পর তারা অনেকটা এগিয়েছিল। কিন্তু বড় ধরনের ধাক্কাটি এসেছে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় লাভের মধ্য দিয়ে। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর জামায়াত পুনরায় বাংলাদেশে রাজনীতির সুযোগ পেয়ে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ১০টি, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ১৮টি, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনটি, ২০০১ সালের নির্বাচনে ১৭টি ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুটি আসন লাভ করে। ১৯৯৯ সালে বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত শুধু ১৭টি আসনে জয়লাভই করেনি, দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। শুধু তাই নয়, মন্ত্রিপরিষদেও তারা হয়ে ওঠেন অত্যন্ত প্রভাবশালী। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয় এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এই সরকার অনুধাবন করে যে বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র দিনে দিনে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে উঠেছে। সুতরাং সরকার স্বাধীনতাবিরোধী, যারা ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালে খুন, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। প্রাথমিকভাবে জামায়াতের ১০ শীর্ষ ও বিএনপির দুজন প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হয়। চলছে বিচার আর একের পর এক রায়ে এখন দিশেহারা স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী।জনবিচ্ছিন্ন জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে জাগছে পরিবার ॥ ধর্ম ব্যবসায়ী স্বাধীনতাবিরোধী দলটি এ যাবত একটি নির্দিষ্ট উগ্রবাদী জনগোষ্ঠীর সমর্থন নিয়ে টিকে থাকলেও লাগাতার সহিংস অবস্থান নেয়ায় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের মাঝে নানামুখী টানাপোড়েন দিয়ে বেকায়দায় জামায়াতের পাওয়ার হাউস হিসেবে স্বীকৃত ছাত্রশিবির। শিবির নেতাকর্মীদের বাবা-মা ভাই-বোনরাও আছে আতঙ্কে। ছেলে কখন ধরা পড়ে। কখন কারাগারে যায়। কখন গুম হয়। কখন ক্রসফায়ারে পড়ে। এ উদ্বেগ তাদের নিত্যসঙ্গী। অনেক অভিভাবকই চাইছেন তার সন্তানরা শিবির ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। অভিভাবকরা অভিযোগ করছেন, তাদের সন্তানদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কারণ অনেকেই জেনে গেছেন জামায়াত-শিবির যত না ইসলামী সংগঠন তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। শিবির অতীতে আর এত বড় সঙ্কটে পড়েনি বলেও মনে করছেন সংগঠনটির নেতারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিবিরের উপস্থিতি এক তরফা আর নেই। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সংগঠনটির দাপট। সেখানেও দাপট একচ্ছত্র নেই। শিবিরের মাঠপর্যায়ে থেকে আনা নানা তথ্য ভাবিয়ে তুলেছে জামায়াত-শিবিরকেই। সূত্রগুলো বলছে, সারাদেশে শিবির করাকে এখন আর ভাল চোখে দেখছে না পরিবারগুলো। আসছে সংসার থেকেও চাপ। শিবিরের এসব সঙ্কট নিয়ে দলের নেতারা কেউ মুখ খুলছেন না। প্রতি মুহূর্তে তারা মোবাইলের সিম বদলান ধরা পড়ার ভয়ে। থাকারও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। পুলিশ তাদের ধরেছে। তারা যেখানে থাকতেন সেখান থেকেই। এ নিয়েও সংগঠনটির মধ্যে চলছে নানা টানাপোড়েন। শিবিরের অনেক নেতা সন্দেহ করছেন সরকার হয়ত তাদের মধ্যেই নিজেদের লোক ঢুকিয়ে দিয়েছে। তা না হলে কী করে নেতারা হুটহাট ধরা পড়েন। এদিকে এসব প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে প্রথমবারের মতো সংগঠনটি রিক্রুটমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। তরুণরা নতুন করে কেউ শিবিরে যোগ দিচ্ছে না। কারণ শিবির পরিচয়টি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণ মানুষের মধ্যে শিবিরের গ্রহণযোগ্যতা এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে। গণজাগরণ মঞ্চ শিবিরকে অনেকটাই কোণঠাসা করতে পেরেছে। গণজাগরণ মঞ্চ তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে যে, জামায়াত ইসলামী দল নয়। এরা ধর্ম ব্যবসায়ী। এরা স্বাধীনতাবিরোধী। নারী অগ্রগতিবিরোধী। দেশবিরোধী। একাত্তরের ঘাতক। গণজাগরণ মঞ্চের অব্যাহত প্রচারে সাধারণ মানুষ দেখতে পারছে জামায়াত-শিবিরের আসল চেহারা। পরিবারগুলো বুঝতে পারছে, মুখে শান্তির ধর্ম আর বাইরে রগ কাটার নীতি একসঙ্গে চলতে পারে না।কর্মসূচী আটকে গেছে ই-মেইল, ফেসবুক, এসএমএসে ॥ কার্যক্রম চোরাগোপ্তা হামলার মধ্যে আটকে থাকা উগ্রবাদী সংগঠন জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচীসহ দলীয় কর্মকা- সারাদেশে পরিচালিত হচ্ছে এখন ই-মেইলে ও এসএমএসে। সারাদেশ এমনকি বিদেশের নেতাকর্মীদের কাছেও কর্মসূচী ও সর্বশেষ অবস্থান পৌঁছানো হচ্ছে একই কৌশলে। একই সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে শিবিরের বাঁশের কেল্লাসহ নিজস্ব সব ওয়েবসাইট ও ওয়েবপেজ। কেবল তাই নয়, পুলিশের খাতায় পলাতক হলেও প্রায় দেড় বছর ধরে জামায়াত-শিবিরের সকল কর্মসূচী ও বক্তব্য গণমাধ্যমের কাছে আসছে আত্মগোপনে থাকা নেতাদের নামেও। এদিকে অস্তিত্বহীন ও নামমাত্র অনলাইন পত্রিকার ভুয়া কার্ড ব্যবহার করে জামায়াত-শিবিরের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছে শিবিরের একটি বিশেষ গ্রুপ। তথাকথিত এ সাংবাদিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জামায়াত-শিবিরকে নাশকতা চালাতে সাহায্য করছে। প্রকাশ্যে কোন সংবাদ সম্মেলন বা সমাবেশ করে কর্মসূচী না দিলেও কিভাবে কর্মকা- পরিচালিত হচ্ছে তা নিয়ে জনমনে জন্ম নিয়েছে বিশেষ কৌতূহল। তাহলে কিভাবে চলছে জামায়াত-শিবিরের কর্মকা-? এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে প্রযুক্তির এ ব্যবহারের কথাই জানা গেছে। অন্তত দুই বছর ধরে কর্মসূচীসহ দলীয় কর্মকা- পরিচালনা করা হচ্ছে এখন ই-মেইলে আর মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হচ্ছে। তবে সারাদেশের নেতাকর্মীদের কাছে ফোন করা ছাড়া এসব মোবাইল সেট থেকে সাধারণত কোন ফোন রিসিভ করা হয় না। ফোন করেই বন্ধ করে দেয়া হয় সেট। জানা গেল, সাংবাদিকদের কাছে কেবল কল করার জন্যই কিছু মোবাইল সেট ও নম্বর ব্যবহার করছে জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতারা। তবে কথা বলেই বন্ধ করে দেন সেট আবার কথা বলার দরকার হলেই কেবল সেট চালু করেন তারা। পুলিশের নজরদারির ভয়ে ভরকে গেছে তারা। কর্মসূচী ঘোষণা করে মাঠেও থাকেন না নেতারা। মাঠে না থাকলেও মাঝে মধ্যে চোরাগোপ্তা হামলা করে অস্তিত্ব জানান দেয় দলটি। যোগাযোগ করার জন্য জামায়াতের কোন পর্যায়ের নেতাকর্মীকেই পাওয়া যায় না। কেবল তাদের কথা বলার প্রয়োজন হলে দেয়া হচ্ছে কল। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শীর্ষ নেতারা আটক হওয়ার পর থেকেই মূলত এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দলটির কোন নেতাকর্মী এখন আর দলীয় কার্যালয়ে যান না। দারোয়ান মোহাম্মদ আলী বলেন, শীর্ষ নেতারা আটক হওয়ার পর কোন নেতাকর্মীকে এখানে আসতে দেখিনি এবং কে, কোথায় থাকে তাও জানি না। মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, বর্তমানে কে, কোন্ দায়িত্বে আছেন তা আমার ভালভাবে জানা নেই। জনরোষের ভয়ে জোট বন্ধু বিএনপিও ছায়া দিতে পারছে না ॥ জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে মানিকজোড় সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ জনরোষ। বিএনপি এখন বুঝতে পারছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে জামায়াতের প্ররোচনায় কোনক্রমেই সহিংসতায় অংশ নেয়া উচিত হয়নি। কারণ রাস্তায় মানুষ পুড়িয়ে মারার সে দায় অনেকটাই বিএনপির ওপর বর্তেছে। দ্বিতীয়ত, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রশ্নে বিএনপি চুপ হয়ে গেছে। এর প্রধান কয়েকটি কারণ রয়েছে। এক. বিএনপি এখন আর নিজেদের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের সহযোগী শক্তি হিসেবে দেশবাসীর সামনে পরিচয় দিতে চায় না। কারণ শুধু ধর্মভিত্তিক কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়া এ দেশের নতুন প্রজন্মের ভোটারদের কাছে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক আদর্শ পছন্দনীয় নয়। দুই. বিএনপি তার চেয়েও বেশি উপলব্ধি করেছে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ, বিশেষ করে ভারত, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি উষ্ণ আচরণ করবে না। সুতরাং বিএনপি নিজেদের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির আধার হিসেবে যে বদনাম রয়েছে সেই দাগটি মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের গাঁটছড়ায় চিড় ধরার বিষয়টি অতিসম্প্রতি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতিটি রায়ের পর জামায়াত হরতালের যে ডাক দিচ্ছে, তাতে বিএনপি কোন সমর্থন দিচ্ছে না। মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ দেয়ার পরও বিএনপি মুখ খোলেনি। বিচারের রায়ের বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেনি। এমনকি সাবেক আমির গোলাম আযমের সাজা খাটা অবস্থায় বার্ধক্যজনিত মৃত্যুর পর বিএনপির কোন শীর্ষ নেতা তার জানাজায় অংশগ্রহণ করেননি। বিষয়টি ভাল চোখে দেখেনি জামায়াত। তারই বহির্প্রকাশ ঘটেছে গোলাম আযমের পুত্র আমান আযমীর মন্তব্যে। তিনি বিএনপিকে অকৃতজ্ঞ আখ্যা দিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, জামায়াতের সহযোগিতা ছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারবে না। হয়ত বিএনপির প্রতি জামায়াতের খেদ আরও বেশি দেখা যেত। কিন্তু এই মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে গায়ে গা মিলিয়ে লেগে থাকা ছাড়া জামায়াতের কোন উপায় নেই। সেটা তারা ভালই বুঝতে পেরেছে। তাই বিএনপির সঙ্গে একাকার হয়ে থাকার পুরনো কৌশল আবারও দেখা গেছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাটোরের সমাবেশে। নাটোরের নবাব সিরাজউদ্দৌলা সরকারী কলেজ মাঠের জনসভা জামায়াতের কর্মীরা দখল করে নেয়। জামায়াতের ছাত্রসংগঠন শিবিরের নেতাকর্মীদের চাপের মুখে জনসমাবেশের সম্মুখভাগ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় যুবদল-ছাত্রদলের কর্মীরা। পিঠ বাঁচাতে পালাচ্ছে, ভারতেও জামায়াতী তৎপরতা ॥ সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে দলের অনেকে দেশ ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকরির জন্য পাড়ি জমাচ্ছে এমন খবর কিছুদিন ধরেই তৃণমূল থেকে জানতে পেরেছিল জামায়াত। কেউ কেউ রাজনীতি ছেড়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি নেয়ার চেষ্টা করছেন বলেও তথ্য আসে কেন্দ্রে। বাংলাদেশ সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে, এই আশঙ্কায় বহু কট্টর জামায়াতী মৌলবাদী নেতাকর্মী সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে বলে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএসএফকে সতর্কও করে দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সতর্কবার্তা পেয়ে বাংলাদেশ-সীমান্তে নদীপথে বিএসএফ নজরদারিও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন তথ্য দিচ্ছে ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলো। ভারতীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, খুলনা, চট্টগ্রাম এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চলছে। মূলত সাতক্ষীরা এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে। সেখান থেকেই কট্টর মৌলবাদীরা নদী পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করছে। কিন্তু ওই মৌলবাদীরা ভারতে প্রবেশ করলে এলাকার পরিস্থিতিও খারাপ হতে পারে বলে বিএসএফ এবং পুলিশ আশঙ্কা করছে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের ধারণা, বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার যে মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছে, তাতে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে। সেই কারণেই মৌলবাদীরা নদী পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। তারা আপাতত রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা দেগঙ্গা, হাসনাবাদ প্রভৃতি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং ও নামখানা এলাকায় প্রবেশ করেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর। বিএসএফ সূত্রে জানা গেছে, ইছামতী, কালিন্দী ও রায়মঙ্গল নদী দিয়ে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। তাই এই তিনটি নদীপথেই স্পিডবোটের মাধ্যমে নজরদারি চলছে। সামশেরনগর এলাকাটি নদী দিয়ে ঘেরা। এখান থেকে বাংলাদেশ খুবই কাছে। এই এলাকায় বিএসএফের একটি ভ্রাম্যমাণ সীমান্ত চৌকি আছে। এদিকে সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে নারকীয় তা-ব ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত জামায়াতের শতাধিক শীর্ষনেতা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে আত্মগোপন করে আছে বলে জানা গেছে। সাজানো আত্মীয়তার পরিচয় নিয়ে ওরা সাময়িক মাইগ্রেশন করে দেশের মধ্যেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে আশ্রয় নিয়ে আছে আবার পুলিশ ও বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে মোস্ট ওয়ানটেড অনেক শীর্ষ জামায়াত নেতা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে লুকিয়ে আছে। সাতক্ষীরা জেলার ১শ ২৮ কিলেমিটার এলাকায় সীমান্তে রয়েছে অবৈধপথে ভারতে যাতায়াতের নিরাপদ রুট। মানুষ পারাপার ও চোরাচালানের মাল পাচারের ঘাট হিসেবে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে দুদেশের চোরাচালান ও পাচারকারী চক্র। মানুষ ও চোরাচালানি পণ্য পাচারের পাশাপাশি এসব ঘাট এখন জঙ্গীদের পারাপারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ইছামতী নদী পার হলেই ভারত। সদর উপজেলার ভোমরা, ঘোজাডাঙ্গা লক্ষিদাড়ি, গাজিপুর, বৈকারী, কালিয়ানি ছয়ঘরিয়া, তলুইগাছা; কলারোয়ার চান্দুড়িয়া, চন্দনপুর, ভাদিয়ালি, কাকডাঙ্গাসহ শতাধিক ঘাট রয়েছে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে। অপরাধ সংঘটনের পর এসব ঘাট দিয়ে জঙ্গীরা অবাধে দুদেশের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতে জঙ্গী কর্মকান্ডে জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ষড়যন্ত্রে জামায়াতে ইসলামীও জড়িত এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে ভারতীয় তদন্তেও। জেএমবি ছাড়াও উলফাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে জামায়াত। পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য রয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের জামায়াতুল মুজাহেদিনের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে শামিল বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীও। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনা ছাড়াও উলফাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী যোগাযোগ রাখছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শেরপুর জেলার বিভিন্ন ঘাঁটিতে চলছে জঙ্গী প্রশিক্ষণ। পাকিস্তানী প্রশিক্ষকরা এসব ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এ রকম দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং সেখানকার প্রশিক্ষকদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। তাহলে কোন্ পথে জামায়াত?স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জামায়াত নিষিদ্ধ ছিল। নিষিদ্ধ করেছিল বঙ্গবন্ধুর সরকার। পরে জিয়ার সরকার এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন। প্রথম দিকে তারা ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগ (আইডিএল) নামে তাদের কার্যক্রম চালায়। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের সরকারের তথাকথিত গণতন্ত্র চালু করলে জামায়াতে ইসলামী আবারও রাজনীতি করার সুযোগ পায়। সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জামায়াত নিষিদ্ধ হলে ভিন্ন কোন নামে কার্যক্রম চালাবে দলটি। এ ক্ষেত্রে একজন সিনিয়র আইনজীবী নেতার তত্ত্বাবধানে একটি প্রতিনিধি দল কাজ করছে। দলের একটি অংশ মনে করে, নতুন নামে নতুনভাবে এলে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার মতো গালমন্দ থেকেই রেহাই পাওয়া যাবে। তবে নেতাকর্মীরা অপেক্ষা করছেন জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত। ইতোমধ্যে নামও চূড়ান্ত হয়ে গেছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যদিও জামায়াত সরাসরি এসব তথ্য স্বীকার করছে না। নতুন সংগঠনের নাম-ইসলামী লিবারেল পার্টি-আইএলপি হতে পারে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় জামায়াতের ভবিষ্যত রাজনীতি নিয়ে কৌতূহল চারদিকে। ২০১১ সালে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক পত্রিকায় লেখা এক কলামে নিজের রাজনৈতিক ভাবনা প্রকাশ করেছিলেন। ওই লেখায় তিনি লিখেছিলেন, ভারতে ৬০ বছরের জামায়াত তার নাম পরিবর্তন করে ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়া নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে পুরনো জামায়াতের ব্যর্থতার কারণে। ভারতের নতুন দলটিতে ১৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ক্যাথলিক খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের একজন ফাদারসহ ৫ অমুসলিমকে রাখা হয়। জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান কারাগার থেকে লেখা এক চিঠিতে দলে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওই চিঠিতে তিনি নতুন নামে দল গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। চিঠিতে গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতি অব্যাহত রাখতে বর্তমানে কার্যকর নেতাদের পরামর্শ দেয়া হয়।",False fe,"মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিঃ আমাকে আঁকড়ে ধরেছিলেন আমার মা মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিঃ আমাকে আঁকড়ে ধরেছিলেন আমার মা ফকির ইলিয়াস=======================================ঐতিহ্যবাহী সুরমা নদীর শাখা নদী 'বাসিয়া'। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকা স্পর্শ করে বিশ্বনাথের দিকে বয়ে গেছে এই বাসিয়া নদী। সিলেট-লক্ষ্মীবাসা এলাকার লোকাল বোর্ডের সড়কটি গিয়ে শেষ হয়েছে এ নদীটির তীরেই। এ নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত এলাকার নাম কামাল বাজার। সিলেট শহর থেকে মাত্র সাড়ে তিন মাইল পশ্চিমে।একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ এলাকার মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ, বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি উজ্জ্বল হয়ে আছে আমার মানসপটে। মার্চের শুরুতেই একটি অনিবার্য মুক্তিযুদ্ধের জন্য তৈরি হয়ে থাকেন এ এলাকার মানুষ। পঁচিশে মার্চের কালোরাতে পাক হায়েনারা যখন বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন মিছিলমুখর হয়ে উঠেন এ অঞ্চলের মানুষ। মনে পড়ছে হাজারো জনতার একটি বিশাল মিছিল বাসিয়া নদীর পারে সমবেত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় সিলেট শহর অভিমুখে।কারও হাতে বাঁশের লাঠি, কারও হাতে রামদা। না তাদের হাতে মারাত্মক কোন অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। তবুও মনের বলে তারা ছিলেন বলীয়ান। হাজার হাজার মানুষের সেই মিছিলটি 'মকনের দোকান' পর্যন্ত যেতে পেরেছিল। এরপরই পাক বাহিনীর গুলি চালানোর সম্ভাবনা বিবেচনা করে ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিলেন জনতা।এ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের শাণিত চেতনার নেতৃত্ব যারা দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম শহীদ সোলেমান হোসেন। এ বীর তরুণ লাউড স্পিকার দিয়ে গ্রামে গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাইকেল চালিয়ে তিনি ঘুরেছিলেন সর্বত্র। মহান বিজয়ের মাত্র ক'দিন আগে অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে শহীদ হন সোলেমান হোসেন। তিনি যুদ্ধের প্রাক্কালেই বলছিলেন, প্রাণের বিনিময়ে হলেও এ দেশ স্বাধীন করব। কথা রেখেছিলেন প্রাণ দিয়ে।একাত্তরের জুলাই মাস। দেশজুড়ে তুমুল যুদ্ধ চলছে। সুরমা নদী দিয়ে ভেসে আসছে প্রতিদিন অগণিত লাশ। হঠাৎ একদিন শুনলাম, সুরমার সংযোগ নদী, বাসিয়া নদী দিয়েও লাশ ভেসে আসতে শুরু করেছে। আমাদের বাড়ির সামনেই নদীর চরে 'তারা' গাছের শেকড়ে আটকা পড়েছে এক জোড়া লাশ। সেদিন বিকেলে বড় ভাইর সঙ্গে দেখতে গেলাম চুপি চুপি। দু'জন তরুণ-তরুণী। স্বামী-স্ত্রী অথবা প্রেমিক-প্রেমিকা হবে বলেই মনে হলো। দু'জনের হাত এক সঙ্গে বাঁধা। উবু হয়ে পড়ে আছে লাশ দুটি। পেছন থেকে বুলেটগুলো ঝাঁঝরা করে দিয়েছে দেহ। শুধু একবার কাছ থেকে দেখলাম। আর স্থির থাকতে পারলাম না। ছুটে এলাম বাড়িতে। বেশ ক'রাত ভয়ে ঘুমাতে পারিনি।একাত্তরের আগস্ট মাসে হঠাৎ একদিন পাক হানাদার বাহিনী আক্রমণ করল আমাদের এলাকা। কে একজন দৌড়ে বলে যেতে থাকল-'পাঞ্জাবি আসছে, পাঞ্জাবি আসছে'। গ্রামের মানুষ হানাদার জল্লাদদের 'পাঞ্জাবি' বলেই সম্বোধন করতেন। আমাদের এ এলাকায় বেশকিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস। কোন দালাল নাকি তথ্য দিয়েছিল, এসব হিন্দু সম্প্রদায় তথাকথিত 'পাকিস্তান'র বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তাই এ আক্রমণ।মনে পড়ছে, বাসিয়া নদীর তীরে এসে পাক সেনাদের জিপ, ট্রাকগুলো থামল। সেখান থেকে তারা সামরিক কায়দায় দৌড়ে এসে ঢুকে পড়ল গ্রামের অভ্যন্তরে। বাড়ি বাড়ি ঢুকে তল্লাশি শুরু করল।'ইধর কোই হিন্দু হ্যায়'?- কথাগুলো এখনও কানে বাজে আমার। গ্রামের মানুষ উর্দু জানেন না। উর্দু জানেন না, আমার মা - ও। প্রাণের ভয়ে অনেকেই তখন চৌকির নিচে, ঝোপঝাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন।যাদের ওরা সামনে পেয়েছে, দাঁড় করিয়েছে বাড়ির উঠোনে। 'হিন্দু' শব্দটি শুনেই সবাই ভয়ে মাথা নাড়ছেন। না, আমরা 'হিন্দু' নই!আমি তখন স্কুলছাত্র। পালাব কোথায়? কিছুই ভাবতে না পেরে দৌড়ে গিয়ে মায়ের কাছে আশ্রয় নিলাম। আমার মা আমাকে বুকে চেপে ধরলেন। বাবা তখন প্রবাসে। নিজেদের পৃথিবীর অসহায়তম মানুষ বলেই মনে হলো।পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনী আমাদের বাড়ি পর্যন্ত এসে পৌঁছার আগেই মা আমার মাথায় একটি সাদা গোল টুপি পরিয়ে দিয়েছিলেন। যাতে একথা প্রমাণিত হয়, আমি হিন্দু নই-আমি মুসলমান। তারপরও পাকিস্তানি সেনার মুখোমুখি দাঁড়াতে হলো আমার মাকে, আমাকে নিয়ে। ব্যাজ ও স্টার দেখে বুঝলাম, সে একজন অফিসার। আমার মাকে বেশ দাম্ভিকভাবে জিজ্ঞাসা করল 'এই বুড্ডি, ইয়ে লাড়কা তোমারা হ্যায়? ইয়ে হিন্দু তো নেহি?'আমার মা মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দিলেন। অথচ এ প্রশ্নটি না শোনার জন্যই আমার মা আমাকে টুপি পরিয়েছিলেন। দুঃখ হয়, আমার মাথার টুপিটিও সেদিন আমার প্রকৃত ধর্মীয় পরিচয় তুলে ধরতে পারেনি পাক হানাদারদের কাছে।মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের গোটা এলাকা যেন নিথর হয়ে পড়ল। আমাদের বাড়ির পশ্চিমে দু'টি এবং উত্তরে একটি বাড়ি ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। সেসব বাড়ির নারী-পুরুষ-শিশু সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন পশ্চিমের গ্রামগুলোতে। পাক সেনারা ওসব বাড়িতে ঢুকেই পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকল আগুনের লেলিহান শিখা।আমাদের বাড়ির পশ্চিমের বাড়িটি বসন্ত কাকাদের। বসন্ত কুমার দেব। ছোটকাল থেকেই তার স্নেহ পেয়ে বেড়ে উঠেছি আমরা। অকৃতদার,এই মানুষটি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ডাক কর্মচারী। পোস্টমাস্টারের কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছিলেন। বাড়ির সবাই দৌড়ে পালাতে পারলেও, তিনি পালাতে পারেননি। ফলে ঘাতকরা তাকে বাড়িতেই পেয়ে যায়। তারা পেছন থেকে তার হাত বেঁধে ফেলে। আমাদের বাড়ির পাশ দিয়েই পথ। তিনটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে উল্লাস-নৃত্য করতে করতে ফিরে যাওয়ার সময় বসন্ত কাকাকে সঙ্গে করেই নিয়ে যাচ্ছিল খুনিচক্র।এ সময় তিনি হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। তার গগনবিদারী চিৎকারে আঁতকে উঠেছিলাম আমরা, প্রতিবেশীরা। 'আমাকে নিয়ে যাচ্ছে কেন? আমি তো কোন অপরাধ করিনি। আমাকে ছেড়ে দাও না'... প্রবীণ এ মানুষটির আকুতি ছিল হৃদয়বিদারক। পাক সেনাদের গাড়িতে তোলা পর্যন্ত অনেকেই দেখেছিলেন তাকে। এরপর আর তাকে দেখা যায়নি। কোনদিনই গ্রামের পথ ধরে ফিরে আসেননি আমাদের বসন্ত কাকা।যেসব শহীদের রক্তের স্মৃতি বহন করে চলেছে আমার মাতৃভূমি কামাল বাজার এলাকা, তারা হচ্ছেন- শহীদ সোলেমান হোসেন, শহীদ এনামুল হক, শহীদ বসন্ত কুমার দেব, শহীদ নরেশ চন্দ্র দেব ও শহীদ বারিক আলী।শহীদ এনামুল হক, যিনি একজন স্কুলছাত্র হিসেবেই অংশ নেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হন তিনিও। এ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ শতাধিক। তারা সিংহভাগই এখন বেঁচে আছেন বড় দীনতা নিয়ে।এসব কথা যখন মনে পড়ে তখন কেবলই ভাবি কী চেয়েছিলেন তারা? তারা কী কোটিপতি হওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন? গোটা বাংলাদেশের সিংহভাগ মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন ছিল একটাই, আর তা ছিল-একটি স্বাধীন জন্মভূমি। একটি মানচিত্র। বাঙালি সেই পতাকা পেয়েছিল ঠিকই ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি মহান চেতনার সূর্যছবি। কারণ, কতিপয় চিহ্নিত রাজাকার বাদে বাকি সবাই সেদিন একটি রাষ্ট্রের জন্য ছিলেন উদগ্রীব।মনে পড়ছে, নভেম্বরের এক গভীর রাতে আমাদের এলাকার বেশক'জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন আমার বড়ভাই। আগেই সংবাদ জানানো হয়েছিল। তাই আমার বড় বোন, মা, চাচিরা সবাই রান্না করে অপেক্ষায় ছিলেন গভীর রাত পর্যন্ত। মুক্তিসেনারা মাত্র দুই ঘণ্টার জন্য বাড়িতে এসেই আবার হারিয়ে গিয়েছিলেন রণাঙ্গনের উদ্দেশে।আমার আজও খুব মনে পড়ে সেই সরদার মাঝির কথা। যে গভীর রাতে বাসিয়া নদীর খেয়া পার করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের। আর সরদার মাঝি আমার বড় চাচাকে বলেছিল, 'চাচা আমি তো যুদ্ধে গেলাম না। বড়ভাইদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) খেয়া পার করে দিয়েছি, এটাই আমার সান্ত্বনা।' নিউইয়র্ক, ২৪ মার্চ ২০১০ ----------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ।ঢাকা। ২৬ মার্চ ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত",False hm,"পিচ্চিতোষ গল্প ০৮: রামকাঙার গল্প ছোট্ট মানু রাতে ঘুমোবার সময় খুব ছটফট করে। তাকে রোজ রোজ গল্প শোনাতে হয়। মানু ছোট্ট হলেও বোকা নয়, পুরনো গল্প তাকে শোনালে সে ভারি রাগ করে। সব গল্পই তার মনে থাকে, কোন পুরনো গল্প একটু শুরু করলেই সে ক্ষেপে ওঠে। মানুর মা যেমন সেদিন বলছিলেন, ""এক দেশে ছিলো একটা রাজা ...।"" মানু চুপ করে শোনে। অনেক গল্পই রাজার গল্প, অনেক গল্পই রাজা দিয়ে শুরু হয়। মানুর মা বলেন, ""রাজার ছিলো দুইটা রাণী। একটা সুয়োরাণী আরেকটা দুয়োরাণী ...।"" মানু চুপ করে থাকে। রাজাদের একটার বেশি রাণী থাকাই দস্তুর। এর আগের গল্পের রাজাটার সাতটা রাণী ছিলো, এই রাজাটার দুইটা। এই রাজাটাকে আরো পাঁচটা বিয়ে করতে হবে। মানুর মা বলেন, ""একদিন রাজার দেশে এলো একটা রাক্ষস, তার হাতে একটা বাঁশি। সেই বাঁশিতে ফুঁ দিলে যে শোনে সে-ই ঘুমিয়ে পড়ে ...।"" অমনি মানু ক্ষেপে ওঠে। ""না না না এই গল্পটা আমি শুনবো না আর। এটা আমি আগেও শুনেছি। ঐ রাক্কোসটা সবাইকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়, তারপর তারপর ঐ যে রাখাল ছেলেটা গিয়ে রাজাকে বলে রাজাবাবু আমি এই রাক্কোসকে জব্দ করবো ... না না না, নতুন গল্প বলতে হবে নতুন গল্প ...।"" মানুর মা হেসে ফেলেন। বলেন, ""ওহহো, এটা আগে শুনে ফেলেছে মানুসোনা? আচ্ছা কাঁদে না, কাঁদে না, হাত পা ছোঁড়ে না, বিছানায় ওলটপালট খায় না, বলছি নতুন গল্প, বলছি। এক দেশে ছিলো একটা গোলাপী বাঘ ...।"" সব গল্প মানুর ভালোও লাগে না। তার জেদে মাঝে মাঝে রাজকন্যাকে আবার জাদুর ওষুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে তুলতে হয়, দুষ্টু মন্ত্রীকে কানে ধরে ওঠবোস করাতে হয় একশোবার, টগবগপুরের রাজার ঘোড়াটা দিয়ে দিতে হয় ধুধুনগরের গরীব ঘুড়িওয়ালার ছেলেকে। তারপরেই মানু সন্তুষ্ট হয়ে ঘুমোতে যায়। মানুর মা একেবারে হাঁপিয়ে ওঠেন এত গল্প বলতে বলতে। মানুর বাবা মাঝে মাঝে বাচ্চাদের গল্পের বই কিনে আনেন, কিন্তু তাতেও সব পুরনো গল্প। লাইব্রেরি থেকে আনানো বইগুলির গল্প মানুর জন্যে নয়, সেগুলি শুনে তার ভালো লাগে না। মানু ছোট্ট মানুষ, তার জন্যে কেউ গল্প লেখে না। একদিন মানুর ছোট মামা বেড়াতে এলেন অনেক দূরের দেশ থেকে। মানুর ছোট মামা টিঙটিঙে প্যাঁকাটির মতো দেখতে, কিন্তু মুখে মস্ত গোঁফ, আর অনেক কথা বলেন। মানুর মা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন, বললেন, ছোটন, যতদিন এখানে আছিস, মানুকে রোজ রাতে একটা করে গল্প বলবি। আর দিনের বেলা তিনটা করে গল্প লিখে দিবি আমাকে, তুই চলে গেলে ওকে শোনাবো। মানুর ছোট মামা গম্ভীর মুখে গোঁফে তা দিয়ে বললেন, ""তথাস্তু!"" সেদিন রাতে মানু খুব উৎসাহ নিয়ে গল্প শুনতে এলো তার মামার কাছে। ছোট মামা বললেন, ""মানুকুমার, তুমি কি রামকাঙাদের গল্প শুনতে চাও?"" মানু বললো, ""হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ, শুনতে চাই চাই!"" ছোট মামা বললেন, ""মানুকুমার, তুমি আবার রামকাঙাদের গল্প শুনে ভয় পাবে না তো?"" মানু বললো, ""না না না, ভয় পাবো না।"" ছোট মামা বললেন, ""ঠিক আছে মানুকুমার! তুমি সাহসী বালক, তোমাকে এই গল্প শোনানো যায়। তবে তুমি আবার তোমার মা-কে এই গল্প বোলো না, তোমার মা খুব ভীতু!"" মানু হাসে, ""আচ্ছা বলবো না।"" ছোট মামা বলেন, ""তুমি তো জানো মানুকুমার, আমি অনেক দূরের একটা দেশে থাকি। সেই দেশের নাম জামরুলনগর। সেখানে পথের পাশে, মাঠেঘাটেহাটে, নদীর দুই ধারে শুধু জামরুল গাছ! তাই সে দেশের নাম জামরুলনগর।"" মানু অবাক হয়ে শোনে। বলে, ""জামরুল ছাড়া ঐ দেশে আর কোন গাছ নেই?"" ছোট মামা বলেন, ""জামরুল ছাড়া ঐ দেশে আর কোন গাছ নেই। একটা কামরাঙা গাছ ছিলো, সে বুড়ো হয়ে মারা গেছে কয়েক বছর আগে। আহা, সে বড় ভালো গাছ ছিলো। সবাই তাকে ভালোবাসতো।"" মানুর মনটা খারাপ হয়ে যায় জামরুলনগরের কামরাঙা গাছটার জন্য। ছোট মামা বলেন, ""জামরুলনগরের লোকজন সেই জামরুল খেয়ে বাঁচে। দিন নেই রাত নেই তারা শুধু জামরুল খায়। তাদের পকেটে হাত দিলেই তুমি চার পাঁচটা জামরুল পেয়ে যাবে। তাদের স্কুলব্যাগেও এক ছটাক করে জামরুল থাকে টিফিনের জন্য।"" মানু অবাক হয়ে যায়। বলে, ""ওরা আইসক্রীম খায় না?"" ছোটমামা বলেন, ""ওরা জামরুলের আইসক্রীম খায়।"" মানু অবাক হয়ে ভাবে লোকগুলির কথা। ছোটমামা বললেন, ""একদিন জামরুলনগরের লোকজন দেখলো, একটা জামরুল গাছের নিচে কী যেন একটা শুয়ে আছে।"" মানু বললো, ""কী শুয়ে আছে?"" ছোটমামা বললেন, ""সেটা দূর থেকে প্রথমে বোঝা গেলো না। কিন্তু সে এক মস্ত জন্তু! তার মস্তবড় ল্যাজ!"" মানু গুটিসুটি হয়ে শোয়। বলে, ""তারপর?"" ছোটমামা বলেন, ""তার দুটো ডানাও আছে!"" মানু বলে, ""উড়তে পারে?"" ছোটমামা বলেন, ""সবাই ভাবলো তা-ই। এত বড়ো জন্তু যদি ওড়ে, তাহলে কী ভীষণ কান্ড!"" মানু বলে, ""কেন, ভীষণ কান্ড কেন?"" ছোটমামা বললেন, ""উড়তে উড়তে যদি বাথরুম করে?"" মানু ভাবে, তাই তো! ছোটমামা বলেন, ""কেউ সে জন্তুর কাছে যেতে সাহস পাচ্ছিলো না। সবাই ভাবলো, যদি কামড়ে দেয়!"" মানু বললো, ""তারপর?"" ছোটমামা বললেন, ""জামরুলনগরের রাজা আমাকে এসে বললেন, জনাব, এই পরিস্থিতিতে আপনাকেই একটা কিছু করতে হবে।"" মানু বললো, ""রাজা কি তোমার বন্ধু?"" ছোটমামা বললেন, ""না, রাজাকে চিনি ছোটবেলা থেকে। খুব ভালো ছেলে। তারপরে কী হলো শোন। ... আমি গিয়ে দেখি, ওটা একটা রামকাঙা!"" মানু বললো, ""রামকাঙা কী?"" ছোটমামা বললেন, ""রামকাঙা জানো না? রামকাঙা এক অদ্ভুত জন্তু। তার ডানা আছে পাখির মতো, কিন্তু উড়তে পারে না। তার মস্ত লেজ আর ঠ্যাং আছে কাঙারুর মতো, কিন্তু লাফাতে পারে না।"" মানু বললো, ""সে তাহলে কিভাবে চলে?"" ছোটমামা বললেন, ""সে কেবল ডিগবাজি খায়।"" মানু বললো, ""সে ওখানে কী করছিলো?"" ছোটমামা বললেন, ""আমিও তো তাই জিজ্ঞাসা করলাম। বললাম, রামকাঙা! তুমি এখানে কী করো? সে বলে, আমি কামরাঙা খাবো।"" মানু বললো, ""কিন্তু জামরুলনগরে তো কামরাঙা নাই, কামরাঙা গাছ তো মরে গেছে!"" ছোটমামা বললেন, ""হ্যাঁ, সেটাই তাকে তখন বললাম।"" মানু বলো, ""তারপর?"" ছোটমামা বললেন, ""দুঃখে রামকাঙা কেঁদে ফেললো। বললো, আমি তাহলে এখন কী খেয়ে বাঁচবো?"" মানু বললো, ""রামকাঙারা জামরুল খায় না?"" ছোটমামা বললেন, ""না, জামরুল খেলে রামকাঙাদের পেটে অসুখ করে।"" মানু বললো, ""তারপর?"" ছোটমামা বললন, ""আমি রামকাঙাকে বললাম, কেঁদো না রামকাঙা। কামরাঙা নেই তো কী হয়েছে, তুমি জলপাই খাও। রামকাঙা তখন খুশি হয়ে ডিগবাজি খেতে খেতে সদর রাস্তা ধরে পাশের রাজ্য জলপাইনগরে চলে গেলো। সেখানে শুধু জলপাই গাছ।"" মানু বললো, ""তারপর?"" ছোটমামা বললেন, ""তারপর আর কী! রাজা এসে আমাকে বললেন, জনাব, আপনি আমাদের প্রাণ রক্ষা করেছেন। আপনাকে আমি রাজকন্যা আর অর্ধেক রাজত্ব দিতে চাই!"" মানু বললো, ""তারপর?"" ছোটমামা বললেন, ""আমি বললাম, রাজা, আমি রাজকন্যা আর অর্ধেক রাজত্ব চাই না, একমাস ছুটি দাও বরং। তারপর ছুটি নিয়ে তোমাদের বাসায় এসেছি।"" মানু বললো, ""রামকাঙাটা কেমন আছে?"" ছোটমামা বললেন, ""রামকাঙাটা ভালো আছে। সে শুধু ডিগবাজি আর জলপাই খায়।""",False rg,"প্রসঙ্গ কান চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৬!! ফ্রান্সে কান চলচ্চিত্র উৎসব চলাকালীন কেউ যদি কান ঘুরে এসে বলেন, আমার ছবি কান ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হয়েছে! এর চেয়ে ডাহা মিথ্যা কথা আর কী হতে পারে! বাংলাদেশ থেকে কোনো ছবি যদি কান ফেস্টিভালে সত্যি সত্যি চান্স পেতো, সেই নিউজ তো স্বয়ং কান ফেস্টিভালের অফিসিয়াল ওবেব সাইটেই থাকার কথা। আমি এখানে কানের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট দিলাম। http://www.festival-cannes.com/en/। যে কেউ ইচ্ছে করলেই এ বছরের কান ফেস্টিভালের যে কোনো বিভাগে, কোন দেশের, যে কোন পরিচালকের কোন ছবি অফিসিয়ালি প্রদর্শিত হচ্ছে, দেখে নিতে পারেন। তার আগে বলে রাখি, বাংলাদেশ থেকে কান ফেস্টিভালে কোনো ছবি যায়নি। অথচ প্রথম আলো'র মত চুতিয়া দৈনিকও এটি নিয়ে গোটা জাতির সামনে মিথ্যাচার করছে। দুনিয়ার সবাইকে কী এরা বোকাচোদা মনে করে নাকি!!অথচ কান ফেস্টিভালের নামে বাংলাদেশের অমিতাভ রেজার 'আয়নাবাজি' ও তৌকীর আহমেদের 'অজ্ঞাতনামা' ছবি প্রদর্শনের দাবি করা হচ্ছে। এটা একটা ডাহা মিথ্যা সংবাদ। সবাই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার থাকুন। বিশেষ করে যারা চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িত, তাদের এসব ভাওতাবাজির খবর সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত!একটা উদাহরণ দিলে সবাই বুঝতে পারবেন আসল বিষয়টি। আমাদের অমর একুশে বইমেলার সময় জাতীয় গ্রন্থ ও বাংলা একাডেমি অফিসিয়ালি বাংলাদেশের কিছু প্রকাশকদের স্টল বরাদ্দ দেন। কিছু লিটল ম্যাগাজিনও অফিসিয়ালি অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহন করে। কিন্তু পুরো বইমেলার সময় দোয়েল চত্বর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ফুটপথে পাইরেসি বইয়ের হাট বসে। যারা বইমেলায় যায় তাদের কেউ কেউ এসব পাইরেসি বইও ফুটপথ থেকে ক্রয় করেন। তাই বলে এসব পাইরেসি বইয়ের দোকানদারগণ তো আর অমর একুশে বইমেলার প্রকাশক বা লেখকদের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। কিন্তু তারাও বইমেলার সময় একটা বড় ধরনের ব্যবসা করতে পারেন বটে। ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসব বিশ্ব চলচ্চিত্রের একটি বড় বাজার। মূল ফেস্টিভালের সময় আমাদের ফুটপথের পাইরেসি বইয়ের দোকানের মত কানের মূল ফেস্টিভালের আশেপাশে অসংখ্য অডিটরিয়াম ব্যক্তিগতভাবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য ভাড়া নেওয়ার সুযোগ আছে। ইচ্ছে করলে পৃথিবীর যে কোনো দেশের যে কোনো চলচ্চিত্র নির্মাতা বা সেই ছবির প্রযোজক সেই সব হল প্রাইভেটভাবে ভাড়া নিয়ে কান উৎসব চলাকালীন নিজেদের ছবি সেখানে প্রদর্শনের সুযোগ পান।কিন্তু এক্ষেত্রে সেই হলের ভাড়া আপনাকেই গুণতে হবে। আর সেখানেও নানান দেশের দর্শক পাবার সুযোগ আছে। এখন কান উৎসবকে ঘিরে বাংলাদেশ থেকে যদু মধু আবদুল সবদুল রাম শ্যাম যে কেউ নিজের টাকায় এধরনের হল ভাড়া নিয়ে যদি নিজেদের ছবি প্রদর্শন করেন, সেটা তো মূল কান উৎসবের কোনোভাবেই অংশ নয়। সেখানে নিজেদের পকেটের টাকায় হল ভাড়া নিয়ে আপনি ছবি দেখাচ্ছেন। সেটি তো কান ফেস্টিভালের ছবি নয় রে পাগল। কান ফেস্টিভালে যে সকল ছবি দেখানো হয়, সেগুলোর সকল নিউজ কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটেই আছে। https://www.youtube.com/watch?v=8H3TB-Cg1cI। এমন কী সে সকল ছবির লাইভ প্রোগ্রাম আপনিও ঘরে বসে এখান থেকে ইচ্ছে করলেই দেখতে পারেন। এর বাইরে দুনিয়ার যত যদু মধুদের ছবি কানের নামে নিউজ করা হোক না কেন, সেগুলো ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা প্রদর্শন। কানে কারো ছবি প্রদর্শন হলে সেখানে সেই ছবির পরিচালক বা প্রযোজকের কোনো খরচ নেই। কান কর্তৃপক্ষই সেই খরচ বহন করে। বাংলাদেশের মত মুর্খদের দেশে ফরিদুর রেজা সাগরের মত ধুরন্দরদের এসব ধান্দাবাজিকে ঘিরে এখন আপনি যদি মনে করেন বাংলাদেশের দুটি ছবি কান ফেস্টিভালে এবার প্রদর্শিত হয়েছে। প্রথম আলো'র মতে আজ নাকি বাংলাদেশের দিন! তখন হাসুম না কান্দুম কিচ্ছু বুঝি না। এরা কী দুনিয়ার সবাইকে বলদ মনে করে?অমর একুশে বইমেলার সময় আমাদের ফুটপথের পাইরেসি বইয়ের কোনো দোকানদার যদি দাবি করেন, তিনিও বইমেলায় আসছেন, বই বিক্রি করছেন। সেই কথা অফিসিয়ালি যতটুকু সত্য, তারচেয়েও ডাহা মিথ্যা হবে কেউ যদি কান ফেস্টিভালের সময় ব্যক্তি উদ্যোগে এমন হল ভাড়া নিয়ে নিজেদের ছবি প্রদর্শন করে বলেন, এই যে আমার ছবি কান ফেস্টিভালে প্রদর্শন হয়েছে। আমার মাথায় একটি জিনিস কাজ করে না। একজন সৃজনশীল মানুষ যে কিনা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, এত বড় ওপেন দুনিয়ায় সে কেন এই মিথ্যার আশ্রয় নেবেন? যেখানে একটা গোগল সার্স দিলেই তার বানানো গল্পের সকল মিথ্যা এক মিনিটেই ধরা পড়ে। পাগলে কিনা কয় আর ছাগলে কিনা খায়। এসব ধান্দাবাজদের সম্পর্কে সবাই সতর্ক থাকুন। এরাই আপনাকে মিথ্যা বিষয় বুঝিয়ে আপনার পকেটের টাকা ছিনিয়ে নেবার কাজে ওস্তাদ। অতএব সাধু সাবধান। ১৭ মে ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫১",False rn,"আজাইরা পোষ্ট ( হাতে ফালতু সময় থাকলে পড়তে পারেন।) সারা জাগানো একটি ছবি। এ ছবিটি একটি ছোট মেয়ের, যে কিনা ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল। কেমোথেরাপির কারণে তার মাথার চুল সব পড়ে যায়। আয়নাতে কি মেয়েটি তার মনের ইচ্ছাটুকুই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছিল? মেয়েটি এখনো বেঁচে আছে কিনা জানা নেই। ছবিটি কে তুলেছেন তার নাম সংগ্রহ করতে পারি নাই।# ""এক দাদা আর এক দাদী চিন্তা করল.....যে তারা তাদের যৌবনকালের সময়কে আবার ফিরিয়ে আনবে। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিলো যে তারা আবার নদীর কিনারায় দেখা করবে। পরেরদিন সকালে দাদা ঘুম থেকে উঠে সেজেগুজে গোলাপ ফুল নিয়ে নদীর কিনারায় গেলো কিন্তু দাদী নেই।অনেক্ষন অপেক্ষা করে দাদা রাগ হয়ে বাড়িতে চলে আসল। এসে রাগ হয়ে দাদীকে বলল তুমি নদীর কিনারায় আসলানা কেনো? দাদী লজ্জা পেয়ে হাসলো এবং বললো মা যেতে দেয়নি ""....।# এক বৃদ্ধ লোক একটা ইয়াং মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলো...বৃদ্ধ: সরি!মেয়ে: স্টুপিড!ঠিক তখনি ঐ মেয়েটা আরেকটা ইয়াং ছেলের সাথে ধাক্কা খেলো...ছেলে: সরি!মেয়ে: ইট'স ওকে বৃদ্ধ: তাইলে আমার সরির বানান টা কি ভুল ছিলো!!! # এক সাহিত্যিক ভদ্রলোক একটা স্কুল দেখতে গেছেন। সেখানে ক্লাস ফাইভের ছেলে-মেয়েরা তাকে ধরে বসলো, কি করে ছোট গল্প লেখা যায় তা শিখিয়ে দিতে হবে। সাহিত্যিক ভদ্রলোক রাজি হয়ে বললেন, ""গল্প লেখা খুব সহজ কাজ। গল্পের প্রথমে একটা আধ্যাত্মিক ভাব থাকবে। তারপরেই একটু অভিজাত পরিবারের কথা মেশাতে হবে। এবার কিছুটা সামাজিক, গার্হস্থ্য জীবনের বিবরণ দিয়ে শেষে একটু রহস্য দিলেই সুন্দর একটা ছোট গল্প তৈরি হয়ে যাবে।"" এই বলে সাহিত্যিক ভদ্রলোক স্যারদের সাথে গল্প-গুজব শুরু করলেন।৫ মিনিট পরে একটি মেয়ে উঠে বললো, ""আমার গল্প তৈরি হয়ে গেছে।""সাহিত্যিক ভদ্রলোক আশ্চর্য হয়ে বললেন, ""তাই নাকি? পড়ে শোনাও দেখি।"" মেয়োটি তার গল্প পড়ে শোনাল: 'হায় আল্লাহ !' (আধ্যাত্মিক ভাব) সৈয়দ বংশীয়া চেচিয়ে উঠলেন (অভিজাত পরিবার), 'আমার একটি বাচ্চা হয়েছে, (গার্হস্থ্য জীবন) কিন্তু আমি জানি না এর বাবা কে?' (রহস্য) ।# একবার এক মেষ শাবক পানি পান করতে এক জলাশয় এর ধারে গেলো। সেই সময় এক নেকড়ে সেখানে উপস্থিত। সে মেষ শাবক কে দেখে বলল, গতকাল তুই আমার পানি ঘোলা করেছিস। মেষ শাবক বলল, না আমি তো করিনি! আমার জন্মই তো আজ। নেকড়ে বলল, তাহলে তোর মা করেছে। এই বলে সে শাবকটিকে খেয়ে ফেললো। অসহায় মা যখন জানতে পারলো যে নেকড়ে তার শাবক কে খেয়ে ফেলেছে তখন সে শিং দিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলো। আর তখনি নেকড়ে বলল দেখ সন্ত্রাসী ,দেখ সন্ত্রাসী। # এক লোক মরুভূমিতে হারিয়ে গেছে। পথ চলতে চলতে ক্লান্ত, হঠাৎ খুঁজে পেলো এক চেরাগ। তুলে ঘষা দিতেই বেরিয়ে এলো দৈত্য। যে কোন হুকুম তামিল করবে সে। লোকটা বললো, আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই। দৈত্য বললো, তথাস্তু, আমার পিছু পিছু আসুন। এই বলে বালির ওপর হাঁটা ধরলো সে। কিছুদূর হেঁটে চটেমটে লোকটা বললো, আমি আরো জলদি জলদি বাড়ি ফিরতে চাই। দৈত্য বালির ওপর দৌড় শুরু করে বললো, তথাস্তু, আমার পিছু পিছু দৌড়ান। যাঁরা এই গল্প পড়ে হাসলেন, তাদের এবার জিজ্ঞেস করি, কেন হাসলেন? কোন জায়গায় এসে হাসলেন? যাঁরা হাসেননি, তাঁদেরও বলি, কেন হাসলেন না?",False fe,"আদর্শ বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতার জন্য আঁতাত আদর্শ বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতার জন্য আঁতাত ফকির ইলিয়াস-------------------------------------------------------------------------------বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে গ্রেফতারের খবর প্রকাশের একটা হিড়িক পড়েছিল। এরপর আর কে গ্রেফতার হচ্ছেন? আতঙ্ক এবং উদগ্রিবতা দুটিই ছিল মানুষের মনে। মাত্র আঠার মাসের মধ্যে পাল্টে গেছে সে দৃশ্যপট। এখন মানুষ দেখছে­ যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তারা ক্রমেই ছাড়া পাচ্ছে। একটা চেক এন্ড ব্যালান্স অর্থাৎ সমঝোতা করে প্রধান দুই দলের নেতাদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে। ছাড়া পেয়ে প্রথম রাজনৈতিক মতবিনিময়টি তারেক রহমান করেছেন জামায়াতের সেক্রেটারি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে। তারেক জানিয়েছেন, তিনি সুস্খ হয়ে এদেশের মানুষের সেবা করতে চান। রাজনীতি করতে চান। কার মিত্র কে, কে কার আদর্শের রাজনীতি করে সবই জানেন বাংলাদেশের মানুষ। তারপরও কিছু কিছু মুখকে একত্রে দেখলে আলোচনার ঝড় উঠে। মানুষ জানতে চায়, এরা নতুন কি শলাপরামর্শ করছে! তারেক-মুজাহিদের দীর্ঘ সাক্ষাৎ ও আলোচনা তেমনি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।একটি বিষয় আমার কাছে বোধগম্য হচ্ছে না, যারা দুর্নীতিবাজ তাদের বিরুদ্ধে এত হুঙ্কার দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। সেই হুঙ্কার এখন এত মিনমিনে, ফ্যাকাশে হয়ে গেল কেন? কেন দুদকের আপিলও এখন ধোপে টিকছে না? হয়তো বলা হবে জামিন পাওয়া আর মুক্তি পাওয়া এক নয়। কিন্তু বাংলার ইতিহাস তো সেটাই বলে জামিন প্রাপ্তির মাধ্যমে মামলা থেকে রেহাই দেয়ার প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করা হয় কিংবা যায়। আমার মনে পড়ছে টিভির বিভিন্ন চ্যানেলে দুদকের একটি বিজ্ঞাপন প্রচারিত হতো। ‘এখনই সময় জনগণের’। মাত্র দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে সে বিজ্ঞাপনের ভাষা পাল্টে ‘এখনই মুক্তির সময় দুর্নীতিবাজদের’ হয়ে যাবে তা কি ভেবেছিল কেউ? কেউ কি ভেবেছিল এভাবে চুপসে যাবে ওয়ান-ইলেভেনের চেতনা!এটা খুবই শঙ্কার কথা দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত মোস্ট ওয়ানটেড সন্ত্রাসীরাও মুক্তি পেতে শুরু করেছে। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাকে গ্রেফতার করা হবে। তার বিচার হবে। তার সাজা হবে এটাই নিয়ম। কিন্তু বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে যা ঘটে গেল, তাকে শুধু ‘চার্জশিট মহড়া’ ছাড়া আর কিছুই বলা যাচ্ছে না। তার ওপর রয়েছে আগাম জামিনের সুযোগ। বাংলাদেশে এই মুহর্তে আগাম জামিনের যে দাপট চলছে­ তা আগে করা হয়নি কেন? ওয়ান-ইলেভেনের এই মাজেজা দেখানোর প্রকৃত উদ্দেশ্যই যদি ছিল­ তাহলে কিছু শীর্ষ দুর্নীতিবাজকে এত আলোচনার মধ্যমণি করার কি কারণ ছিল? কেন পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া এভাবে গণহারে গ্রেফতার করে পরিস্খিতি ঘোলাটে করে তোলা হয়েছিল?জামিনে ছাড়া পেয়েই বেশ দাম্ভিক উচ্চারণ শুরু করেছেন কুখ্যাত রাজাকারদের হোতা সা.কা চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এই বিভ্রান্ত নির্বাচন কমিশন দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বর্তমান সরকারেরও নানা সমালোচনা করেছেন। এর মাধ্যমে একটা বিষয় বেশ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, দেশ ক্রমেই পূর্ব পরিস্খিতির দিকে যেতে শুরু করেছে। এভাবে কিছুটা বাদ-প্রতিবাদ, তারপর আন্দোলনের মাধ্যমে বিষিয়ে তোলা হবে বাংলার মাটি। যারা ওয়ান-ইলেভেন নিয়ে অর্জনের স্বপ্ন দেখেছিলেন­ তারা কি এই সমান্তরাল সমীকরণটি মেলাতে পারছেন?দুই.বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রহমানের জামিনে মুক্তির মধ্য দিয়ে নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বিএনপি। যে বরকতুল্লাহ বুলু, এহছানুল হক মিলনরা সংস্কারের নামে কিংস পার্টি করার ধান্দায় ছিল তারাও তারেকের পা চাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এজন্য তারা সাধারণ কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিতও হয়েছে। অন্যদিকে সংস্কারপন্থি মহাসচিব হাফিজউদ্দিনও বেগম জিয়ার অনুকম্পা পাওয়ার তদবিরে রয়েছেন। বিএনপির ধারাবাহিক ইতিহাস এই সাক্ষ্য দেয়, বেগম জিয়া প্রকাশ্যে মান্নান ভূঁইয়া, হাফিজউদ্দিন, মোফাজ্জল করিম, জেড-এ খানসহ কোন সংস্কারপন্থি নেতাকেই দল থেকে বহিষ্কার করবেন না। বরং সবাইকে নতুনভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলবেন। দলের কিছুটা পরিবর্তনও হয়তো আনতে পারেন বেগম জিয়া। তবে সংস্কারপন্থিদের ভীষণ স্নায়ুচাপের মধ্য দিয়ে দলে কোণঠাসা করে রাখা হবে­ এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। যে যাই বলুক না কেন, আমার মতে ওয়ান-ইলেভেনের এই খড়গ খেলাতে বেগম খালেদা জিয়ারই আরেক দফা জয় হয়েছে। তিনি, ‘আপসহীনতা’র মাধ্যমে তার পুত্রদ্বয়কে মুক্তির পরই নিজের মুক্তির পথ প্রশস্ত করেছেন। নিজ দেশে যে কোন মল্যে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তার সুদৃঢ়তা দেখিয়েছেন। রাজাকার জামায়াতীদের সঙ্গে তার পরিবার ও দলের ঐক্যের উদাহরণও দেখিয়েছেন দেশবাসীকে। জেলে গিয়ে বেগম জিয়ার সঙ্গে মিটিং করেছেন জামায়াতের আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। আবার হাসপাতালে গিয়ে তারেক জিয়ার সঙ্গেও দীর্ঘ আলোচনা করেছেন তিনি।বিএনপির এই যে চরিত্র তা তো নতুন নয়। কিন্তু প্রগতি আর অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথার ফুলঝুরি উড়ায় যে আওয়ামী লীগ­ তারা কি করছে এখন? সৌদি রাষ্ট্রদতের ইফতার মাহফিলে রাজাকার নিজামীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান। এই করমর্দনের ছবি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন বিতর্কের। সেই বিতর্কে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে নিজেদের দীনমানসিকতা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, যদি কোন জামাতে নামাজের ইমাম যুদ্ধাপরাধী হয়­ তবে তারা তার পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়বেন। এ বিষয়ে কিছু কথা খোলসা হওয়া দরকার। যে ইমাম যুদ্ধাপরাধী, তার তো কোন মসজিদে চাকরি পাওয়ারই কথা নয়। কারণ যে হত্যা-ধর্ষণের ইন যুগিয়েছে, তার পেছনে দাঁড়িয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নামাজ আদায় করবেন কোন যুক্তিতে? বাংলাদেশে কি আলেম-ওলামার এতোই অভাব যে যুদ্ধাপরাধী ইমামের পেছনে নামাজ পড়তে হবে? প্রকারান্তরে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের জগাখিচুড়ি মার্কা মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। দেখিয়েছেন দীনতা। বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি ক্ষমতা পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা জামায়াতী ঘাতকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছিলেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতি প্রার্থী বদরুল হায়দারের জন্য তারা জামায়াতীদের সমর্থনও চেয়েছিলেন। মাত্র দু’বছর আগে ইসলামী মৌলবাদী একটি মোর্চার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল। ক্ষমতার জন্য আওয়ামী লীগ যে আবারও রাজাকার-আলবদরদের কাফেলার নিচে গিয়ে দাঁড়াবে, সেই আগাম সংবাদটি কি দিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম? ভাবতে সত্যি কষ্ট হচ্ছে বৈ কি!আমার খুব ýপষ্ট মনে হচ্ছে, এই দেশ, এই জাতির ভাগ্যে আরও চরম দুর্গতি অপেক্ষা করছে। কারণ এখন চলছে আদর্শ বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতার ঐক্য প্রতিযোগিতা। আর এতে লাভবান হবে তারাই, যারা মলত আদর্শশন্য। যাদের জন্মই হয়েছে অন্য কোন শক্তির স্বার্থ রক্ষার জন্য। ‘কিংস পার্টি’ বলে যারা পরিচিত হয়েছিলেন তাদের কণ্ঠেও নেমে এসেছে চরম হতাশা। বর্তমান নীতি নির্ধারকরা যেভাবেই তাদের এক্সিট নিশ্চিত করতে চান না কেন­ বিএনপি ও তাদের জোট সংলাপ, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে এক্সিটকে তীব্র পঙ্কিল করে তুলতে পারে। এর পরে ক্ষমতাসীনরা কি করেন­ তাই এখন দেখার বিষয়।নিউইয়র্ক, ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮----------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত",False rn,"ধাবমান কালো চোখে আলো নাচে (৩) সকাল ৭ টা। হাজী শারাফত আলীর ছেলে মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। রাতে তার ভালো ঘুম হয়নি। তার ভাই বোনদের কথা মনে পড়লেই তিনি আকাশের দিকে তাকান। ছোটবেলা থেকেই তিনি জানেন- তার বাবা-মা, ভাই বোন ওই আকাশেই থাকেন। তার পরিবারের সবাই তাকে আদর করে চেগা মিয়া বলে ডাকতেন। বারা মা মরে যাবার পর চেগা মিয়া চাচা ইবরাহিম এর কাছে চলে যান। চেগা মিয়া অসহযোগ আন্দোলন করে প্রায় এক বছর জেল খাটলেন। ১৯২৫ সালে তিনি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন মহম্মদ চৌধুরীর মেয়ে আলেমা খাতুনকে বিবাহ করেন। স্ত্রীর সাথে চেগা মিয়ার দিনের পর দিন দেখা হয়, কথা হয় না। আসলে যারা মানুষকে ভালোবাসেন তারা নিজের ঘর সংসারের কথা খুব একটা মনে পড়ে না। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য তারা নিজেদের উৎসর্গ করে দেন। চেগা মিয়া তার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন। চেগা মিয়া যেখানেই যেতেন- একদল মানুষ তাকে সব সময় ঘিরে থাকত। ঘিরে থাকা মানূষ গুলো চেগা মিয়াকে অসম্ভব ভালোবাসেন। সবাই ভালোবেসে চেগা মিয়াকে ডাকত- লাল মাওলানা নামে। অনেকে লাল মাওলানার কাছ থেকে পানি পড়া নিতে আসতো। চেগা মিয়া অর্থাৎ লাল মাওলানা এক আকাশ আগ্রহ নিয়ে কিছুক্ষন বিড় বিড় করে পানিতে ফু দিতেন। সেই পানি পড়া খেয়ে নাকি অনেকেই উপকার পেতেন। দূরদুরান্ত থেকে গ্রামের সহজ সরল মানুষ তার কাছে পানি পড়া নিতে আসেন। তার সাদা দাড়ি, মাথায় টুপি আর সূফি চেহারার কারনে- খুব সহজেই তিনি মানুষের মনে স্থান পেতেন। একদিন এক স্কুল শিক্ষক তার কাছে এসে বললেন- আপনি একজন অদ্ভুত মানুষ! এই সমাজে আপনার মতো মানুষ আমাদের খুব বেশি দরকার। মাওলানা শিক্ষককে বললেন, পৃথিবীর মজলুম মানুষ সবাই এক, তারা যেখানেই বাস করুক। শিক্ষক তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আমি মনে করি একজন মুজিব আর একজন ভাসানীর মাঝে বড় পার্থক্য রয়েছে, আপনার রাজনৈতিক গ্রুমিংটা হয়েছে অনেকটাই একক ভাবে, আসামের জঙ্গলে। একারণে একদিকে আপনি চীনের লাল মাওলানা, অন্যদিকে আপনি মুরিদদের পানিপড়াও দিচ্ছেন, এমন জটিলভাবে চলেছে আপনার রাজনৈতিক দর্শন। ১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে লাল মাওলানা কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। তারপর থেকে তার নাম রাখা হয় 'মাওলানা ভাসানী'। কিন্তু বাঙ্গালীদের কাছে তিনি 'মজলুম জননেতা' নামে বেশি পরিচিত। মজলুম নেতার পুরো নাম আবদুল হামিদ খান ভাসানী। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এর ভাষণ শুনে ভাসানী রাজনীতিতে অণুপ্রাণিত হন। 'বাঙ্গাল খেদাও' আন্দোলনে বাঙ্গালীদের সাহায্য করার জন্য তিনি বারপেটা, গৌহাটিসহ আসামের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ান এবং গ্রেফতার হোন। গ্রেফতার হওয়ার পর অনেক শিক্ষিত বাঙ্গালীকে বলতে শোনা গেছে- ভাসানী রাজনীতি বহুলাংশেই উদ্ভ্রান্ত ও বিভ্রান্তিমুলক। কিছু দুষ্টলোক সব জাগায়ই থাকে। তাদের কাজই হচ্ছে সংঘাত তৈরি করা। বাঙ্গালীদের অপমান করে এক প্রকার গলা ধাক্কা দিয়ে আসাম থেকে বের করে দিচ্ছে- এই ব্যাপারটা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না, তাই তিনি মাও সে তুং থেকে শুরু করে আমেরিকার প্রসিডেন্ট সহ অনেক কাছে চিঠি লিখে সহযোগিতা চাইলেন। দুঃখজনক ব্যাপার হলো কেউই তখন সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেন না। আসামের কারাগারে ভাসানী সাহেবকে দেখতে যান ওমর আলী। কিন্তু ওমর আলীকে ভাসানীর সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। ওমর আলী করুন গলায় ডিউটি অফিসারকে বললেন, আমার স্ত্রী সরলা বিবির দুই ভরি গহনা আপনি নিয়ে যান- তবু ভাসানীর সাথে একবার দেখা করতে দেন। ডিউটি অফিসার নারায়ন চন্দ্র দুই ভরি গহনা রেখে দিয়ে ওমর আলীকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন। আর বললেন, ভাগো হিয়াসে। তোম বাঙ্গালী হো। ওমর আলী তখনও জানতেন না, চিরদিনের জন্য আসাম ছেড়ে চলে যাবেন এই শর্তে ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে তাকে মুক্তি দেয়া হবে। ওমর আলীর মনে করেন ভাসানী সাহেব একজন শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী। বিতর্কের উর্ধে একজন মানুষ। যিনি দেশের স্বার্থে কাজ করবেন। তাই তাকে প্রতিটা বাংলী এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে মনে রাখবে চিরজীবন। ক্ষমতাবিমুখ রাজনীতির এক মহান পুরুষ ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তার সমতুল্য আর কে আছে? ওমর আলী চোখের পানি মুছে মনে মনে এক মহান সত্য ভাবলেন- মাওলানা ভাসানীকে বাদ দিয়ে ইতিহাস রচনা সম্ভব নয়। ওমর আলী আগামীকাল সকালে স্ত্রীকে নিয়ে আসাম ছেড়ে চলে যাবেন। স্ত্রীর গর্ভে তার প্রথম সন্তান। আসাম ছেড়ে চলে যেতে দুঃখে তার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। এখানে তিনি এবং তার স্ত্রী সরলা ভালোই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দেশের হর্তা-কর্তারা নির্বোধ হলে দুঃখের আর শেষ থাকে না। আজ ওমর আলীর ভাসানীর একটা কথা খুব বেশি মনে পড়ছে- আসাম আমার, পশ্চিমবঙ্গ আমার ত্রিপুরাও আমার। এগুলো ভারতের কবল থেকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতা ও মানচিত্র পূর্ণতা পাবে না। ( প্রায় তিন বছর আগে দেশ ভাগ, ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা উপন্যাস লিখতে শুরু করেছিলাম। দুই পর্ব লিখে শেষ করলাম, প্রিয় সামু ব্লগে পোষ্ট করলাম। তারপর লেখা আর কিছুতেই এগোয় না। দিনের পর দিন যায়। মাসের পর মাস। বছরের পর বছর। মাথার মধ্যে লেখা সাজিয়ে লিখতে বসি- কিন্তু এক লাইনও লিখতে পারি না। আজ অফিস ছুটি। স্ত্রী বাসায় নেই। হঠাত কি হলো-৩য় পর্বটা লিখে ফেললাম।) সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫",False rn,"নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে___ (পর্ব- ছয়) একটা সহজ সরল কথা দিয়ে লেখাটা শুরু করি- আমাদের কপাল ভাল হুমায়ূন আহমেদের মতো একজন লেখক বাংলাদেশে জন্মেছে। সারা বাংলাদেশের মানুষ গর্ব করতে পারে এমন একজন লেখক হচ্ছেন হুমায়ুন আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদ মারা যান ১৯ জুলাই। অন্যদিকে ১৯ জুলাই লেখক-প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্মদিন। হূমায়ূন আহমেদ কাজী আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে এক পাতা মন্তব্য লিখেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, 'কাজী আনোয়ার হোসেন একজন উঁচুদরের লেখক, পাঠক তৈরিতে অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি।' সাপ্তাহিক রোববার এর কভার স্টোরি করা হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের মন্তব্যটি। সেই সময় অসংখ্য কপি বিক্রি হয়েছি এই ম্যাগাজিনটি।হুমায়ূন আহমেদে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'আত্মপ্রকাশ' উপন্যাসটি পড়ে, আমার মনে হয়েছিল-এমন ঝর-ঝরে গদ্য তো চাইলে আমিও লিখতে পারি। মেদহীন গদ্যের ধারনা হুমায়ূন আহমেদের মাথায় ঢুকিয়ে দেন সুনীল। এক সময় হুমায়ূন আহমেদ নিউমার্কেট থেকে প্রচুর বই কিনতেন। এমন কি তাঁর পুত্র নুহাশকেও কিনে দিতেন।পরপর আট বছর পশ্চিমবঙ্গের 'দেশ' পত্রিকায় হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ছাপা হলো। এই দেখে পশ্চিমবঙ্গের প্রচেত গুপ্ত নামে এক লোক হুমায়ূন আহমেদের লেখা নকল করে লিখতে শুরু করলেন। কিন্তু প্রচেত গুপ্ত পাঠকের হৃদয়ে ঝড় তুলতে পারেন নি। ২০১০ সালে টিভি চ্যানেলের এক সাংবাদিক ঈদের দিন হুমায়ূন আহমেদকে ফোন দিল। ঈদ স্পেশাল রিপোর্ট হবে। হুমায়ূন আহমেদ সারা বছর নানান কাজে ব্যস্ত থাকেন। এক হিসেবে নিজের পরিবারকে সময়ই দিতে পারেন না। তাই ঈদের দিনটি ঠিক করে রেখেছিলেন শুধু পরিবারের জন্য। সেই রিপোটার ফোন দিল, হুমায়ূন আহমেদ মন দিয়ে সব শুনলেন। এবং স্পষ্টভাবে বললেন, ''শোনো মেয়ে, অনেক বড় বড় লেখক আছে, দেখবা তারা তোমাদের টিভিতে মুখ দেখানোর জন্য বইসা আছে, তাদের ফোন দাও লাভ আছে। ঈদ হলো পরিবার পরিজন নিয়ে উপভোগ করার বিষয়, সুন্দর সাদা পাঞ্জাবী পড়ে সেমাই খাবো, দুপুরে লাল পাঞ্জাবী পড়ে বিরানী খাবো- এইসব কথা বার্তা দর্শকদের সাথে শেয়ার করার কোনো আগ্রহ আমার নেই। তোমাকে কি অন্য লেখকের নাম্বার দিব? রিপোর্টার খুব অপমানিত বোধ করল। সে আবার ফোন দিল এবং বলল, ... থাক, এই ব্যাপারে আমার আর কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে না। শুধু এইটুকু বলি, কিছু কথার পরে হুমায়ূন আহমেদ রিপোর্টারকে বললেন, আম্মা আপনি কি আমার সাথে এক কাপ চা খেতে আসবেন? আমি খুব খুশি হব কিন্তু ক্যামেরা আনবেন না। তাহলে আমি খারাপ ব্যবহার করবো। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর। এদিনে জন্ম নেয় রানী এলিজাবেথ-এর ছেলে প্রিন্স চার্লস। একই দিনে বাংলাদেশে জন্ম নেয় এক পুলিশ কর্মকর্তার প্রথম সন্তান। মায়ের খুব আফসোস হয়েছিল রানীর ছেলেকে নিয়ে পৃথিবীময় মাতামাতি, তারও যে একটু পুত্র সন্তান হয়েছে সেদিকে কেউ নজর করছে না। বাবা স্ত্রীকে বলেছিলেন, প্রিন্স চার্লসকে নিয়ে উৎসব হচ্ছে তাঁর মা-বাবার কারনে। আমার ছেলে একদিন তাঁর নিজের যোগ্যতায় বড় হবে, তখন সারা দেশ তাকে নিয়ে মাতামাতি করবে।হুমায়ূন আহমেদকে দেখলাম মন খারাপ করে ধানমন্ডি লেকে বসে আছেন। আমি খুব সাহস নিয়ে তার পাশে গিয়ে বসলাম। হঠাত এক চা বিক্রেতা আমাদের সামনে আসতেই- আমি বললাম দু'কাপ চা দাও। হুমায়ূন আহমেদ খুব আরাম করে চা খেলেন। তারপর সিগারেট। তারপর সন্ধ্যা পর্যন্ত নানান বিষয় নিয়ে গল্প বললেন। আমি অবাক হয়ে অদ্ভুত সব গল্প শুনলাম। আমি এর আগে এত সুন্দর করে, এত সহজ করে কাউকে গল্প বলতে শুনিনি। স্যার আমাকে বললেন- তুমি শ্রোতা হিসেবে খুব ভাল। চলো আজ তোমাকে পুরান ঢাকা নিয়ে গিয়ে ভোলা ভাইয়ের বিরানী খাওয়াবো। হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আমি একটা কবিতা লিখেছি। যদিও আমি কবিতা লিখতে জানি না। তারপরও চেষ্টা করলাম। হুমায়ূন আহমেদ আমাদের কাছে- কখনও হিমু, কখনও শুভ্র কখনও মিসির আলিশত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে এক খন্ড আনন্দ আপনিআপনি অনেক যত্ন নিয়ে অনেক শিখিয়েছেনআপনার মৃত্যু নেই, নেই এবং নেই আপনার সাজানো বাগানে আপনি আছেন বাংলার মানচিত্র থেকে- কোনো শকুন আপনাকে মুছে ফেলতে পারবে না কোনো ভয় নেই, কোনো চিন্তা নেই,বলি পরিস্কার-আমাদের মনের নরম ঘরে আপনাকে দিয়েছি স্থান।",False ij,"স্মৃতি_ নয়নের জন্য জোছনা-বিষয়ক দু-লাইনের কবিতা মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ করলে আমার ভীষন খারাপ লাগে। মাঝারিদের পরীক্ষার রেজাল্ট যা হয় হোক; কিন্তু, প্রকৃত মেধাবীরা কোনও কারণে রেজাল্ট খারাপ করে যখন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে - আমি তখন মর্মাহত হই। সেরকম ঘটনাই একবার ঘটেছিল। যার ফলে জোছনা-বিষয়ক দু-লাইনের অদ্ভুত এক কবিতার জন্ম হয়েছিল। আজ অনেকদিন পর সে কথা মনে পড়ল ... ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি। এম এ পাস করে ঘরে বসে আছি। খানিকটা অসুস্থ। মাস কয়েক আগে টাইফয়েড হয়ে গেছে। শরীর দূর্বল। হাঁটতে অসুবিধে হয়। সারাদিন শুয়ে বসে থাকি আমার বিবর্ণ ঘরে। মগ ভরতি করে হরলিকস খাই। সিগারেট খাই; তেতো লাগে। বই পড়ি। সুনীলের ‘একা এবং কয়েকজন’। কিংবা, সেলিনা হোসেনের ‘ক্ষরণ’। কবিতাও পড়তাম। যেমন, আবুল হাসান। “সে এক পাথর আছে/কেবলি লাবণ্য ঝরে।” ইত্যাদি। তো, বাবু নামে আমাদের পাড়ায় একটি ছেলে থাকত। ফরসা মতন, হাসিখুসি একটা ছেলে-সেবার এইচ এস সি পাশ করে মেডিকেলে পরীক্ষা দিয়েছে। বয়েসে বাবু আমার অনেক ছোট হলেও আমাদের মনের মিল ছিল। তার কারণ, বাবু হাওয়াইন গিটার বাজাত-আমি স্পেনিশ। সেই সূত্রেই আমার ঘরে মাঝেমাঝে আসত ও। দু-জনে মিলে মিউজিক থিওরি নিয়ে আলাপ করতাম। একদিন। বাবু এল। ওর সঙ্গে শ্যামলা মতন কোঁকড়া চুলের চশমা পরা একটি ছেলে। আমার চোখে কৌতূহল। বাবু বলল, ইমন ভাই, এ হইল নয়ন। আমরা একসঙ্গে কলেজে পড়ছি। ও। বস, নয়ন। ওরা বসল। নয়নকে কেমন অস্থির মনে হল। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। পরনের শার্টটা ময়লা। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। কোনও কারণে অস্থির হয়ে আছে নয়ন? আমার ঘরটা শান্তির জায়গা। বই, গিটার, সনি ডেক সেট। বাবু কি ওর বন্ধুকে আমার এখানে সেকারণেই নিয়ে এসেছে? ভাবতে চেষ্টা করলাম। অ্যাফেরারসংক্রান্ত কোনও সমস্যা? এই বয়েসে সে রকম হতেই পারে। বাবু বলল, ইমন ভাই, নয়নে গিটার শিখতে চায়। ওরে একটু তালিম দেন। আচ্ছা দেব। আমি যা পারি ওকে শেখাব। আমি হেসে বললাম। এই ঘটনার পর থেকে নয়ন প্রায়ই আমার কাছে আসতে লাগল। তখনও গিটার কেনেনি। আমার গিভসনটা দিয়েই কর্ড ধরার চেষ্টা করত। ই মাইনর -সি-বি-সেভেন-ই মাইনর। কখনও এ-মাইনর। জেমস তখন ভীষন হিট। ‘চেয়ে দেখো, উঠেছে নতুন সূর্য ...’ইত্যাদি। আস্তে আস্তে নয়নের বিমর্ষতার কারণ জানলাম। এইচ এস সি পরীক্ষায় ওর রেজাল্ট ভালো হলেও ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পায়নি। ভালো করে পড়তে পারেনি। কী হয়েছিল? আমি খানিকটা বিমূঢ়। কী আর হবে-ফ্যামিলি প্রোবলেম। ওর গলার ভয়েস কেমন ফ্যাফ্যাসে। আমার দীর্ঘশ্বাস পড়ল। ও টের পেল না।মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ আমার ভীষন খারাপ লাগে। মাঝারিদের পরীক্ষার রেজাল্ট যা হয় হোক; কিন্তু, প্রকৃত মেধাবীরা কোনও কারণে রেজাল্ট খারাপ করে যখন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে - আমি তখন মর্মাহত হই। আমি বললাম, মন শক্ত কর। পরের বার ভালো করে দাও। নয়ন কাঁধ ঝাঁকাল। ভঙ্গিটায় অস্থিরতা প্রকট। আমি ছেলেটাকে পছন্দ করতে শুরু করেছি। দারুন মেধাবী। রসিক। ছোট ছোট মন্তব্যে চমকে উঠতে হয়। কন্যা রাশি। সেপ্টেম্বর ৭। বাবু মেডিকেলে চান্স পেয়ে গেছে। নয়নের অন্য সব বন্ধুরাও এখানে-ওখানে টিকে গেছে। ওদের এক বন্ধু, মামুন, শ্যামলীতে থাকে-আমেরিকা চলে গেল। নয়ন একেবারেই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। অ্যাপ্লাইড ক্যামিষ্ট্রিতে পড়ার ইচ্ছে ছিল; হল না। বন্ধুদের এড়িয়ে চলছে। ওদিকে ওর ফ্যামিলি প্রবলেম বাড়ছিল। ওর মা-বাবা ... নীলক্ষেত যেত নয়ন। পুটুলি কিনে ভরত সিগারেটে; ভরে টানত। তারপর ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটত। তারপর বিকেলের দিকে কিংবা সন্ধ্যার মুখে ক্লান্তবিধ্বস্ত হয়ে আমার কাছে আসত। আমি রান্নাঘর থেকে একপ্লেট ভাত- আর তরকারী যা থাকত, না থাকলে আম্মাকে বলতাম ডিম ভেজে দিতে- ভাত এনে বলতাম, আগে খেয়ে নাও। পরে সব কথা শুবব। ও খেতে খেতে আমাকে সব বলত। ওর ফ্যামিলি। ওর মা-বাবা। আমি বলতাম, শক্ত হও, শক্ত হও। জীবন এখানেই শেষ না। অন্ধকার নিকষ রাতই সব না। জোছনার আলো বলেও একটা জিনিস আছে। একটা ঘটনা ঘটে গেলে তার কারণ তখনই বোঝা যায় না, বোঝা যায় অনেক পরে। তুমি তো জান-জীবন রহস্যময়। আর, নীলক্ষেতে না গেলেই কি না? কথাটা এড়িয়ে নয়ন বলল, বাড়িতে পড়া যাচ্ছে না। এমন গোলমাল। পরের বার কি হবে কে জানে। আমি খানিক ক্ষণ ভাবলাম। তারপর বললাম, দেখ, অন্য কোথাও থেকে পড়তে পার কি না। মামুন তো আমেরিকা চলে গেছে। দেখ, ওদের শ্যামলীর বাড়িতে থেকে পড়তে পার কি না। ওর মা-বাবা তোমাকে পছন্দ করেন। নয়ন তাই করল। মামুনদের শ্যামলীর বাড়িতে থেকে পড়তে লাগল। ঢাকা ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে এল। এবারে নয়ন ভার্সিটিতে টিকে গেল। সুসংবাদটা দিতে খালি হাতে আসেনি-২ কেজি মধুমিতার রসগোল্লা নিয়ে এল। ওর মুখ হাসিতে উদ্ভাসিত। আমারও। ক’দিন পর এসে খুশি খুশি কন্ঠে বলল, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি পেয়ে গেছি ইমন ভাই! আমার মনে পড়ল ও প্রাণ রসায়নেই পড়তে চেয়েছিল। আমার মনের ভিতরে, মস্তিস্কের কোষে কোষে বিদুৎ খেলে গেল। শীর্ষেন্দুর মানবজমিন বইটি সদ্য কিনেছি। সেই বইটা টেনে নিয়ে সে বইয়ের প্রথম পাতায় বল পয়েন্টে লিখলাম- জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণরসায়ন জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন? তারপর বইটি নয়নকে উপহার দিলাম। ও কৃতজ্ঞচিত্তে গ্রহন করল। জানিনা বইটি আজও নয়নের কাছে আছে কি না। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১১",False hm,"ঈস্টার দ্বীপ ০৫ ঈস্টারে বনবিলোপ নিয়ে পাঁচ ধরনের সূত্র পাওয়া যায়। বেশির ভাগ পামফলের বীজের রেডিওকার্বন পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এগুলি ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের আগের, অর্থাৎ ধরে নেয়া যেতে পারে, ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের পর পাম গাছ হয় বিরল অথবা বিলুপ্ত হয়ে পড়ে। পোইকে উপদ্বীপ, ঈস্টারের যে অংশে মাটি সবচেয়ে অনুর্বর, সেখানে পামগাছ লোপ পায় ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। সেখানে বন পুড়িয়ে ভূমি সাফ করার কারণে যেসব অঙ্গার পাওয়া গেছে, সেগুলো ১৪৪০ খ্রিষ্টাব্দের আগের সময়ের। তবে এর পরেও সেখানে মানুষের কৃষি কার্যক্রমের নমুনা দেখে বোঝা যায় যে বন পরিষ্কার করে সেখানে চাষাবাদ করা হয়েছে কিছু সময়। অরলিয়াকের অঙ্গারের রেডিওকার্বনপরীক্ষা থেকে দেখা যায়, বিভিন্ন চুলা আর ময়লার গাদায় ১৬৪০ সালের পর থেকে কাঠের পরিবর্তে ঘাস আর লতাপাতা পোড়ানো হয়েছে, এমনকি অভিজাতদের বাড়িতেও, যারা কি না কাঠের ব্যবহারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতো বলে অনুমান করা যায়। ফ্লেনলির পরাগ পরীক্ষা থেকে দেখা যায়, ৯০০ থেকে ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পাম, ডেইজি, তোরোমিরো আর বিভিন্ন গুল্মের পরাগের বদলে আস্তে আস্তে ঘাস আর লতাগাছের পরাগ জায়গা দখল করা শুরু করেছে। ক্রিস স্টিভেনসনের উঁচুভূমির চাষাবাদ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, এই ক্ষেতে চাষাবাদ চালু ছিলো ১৪০০-১৬০০ খ্রিষ্টাব্দ সময়ের মধ্যে। ধারণা করা হয়, যখন মূর্তিনির্মাণের পর্যায় সবচেয়ে তীব্র ছিলো, তখনই এই ক্ষেতের প্রয়োজন পড়ে। অর্থাৎ, কাঠ আর দড়ি, তথা এদের উৎস যেসব গাছ, সেগুলি কর্তনের যখন জমজমাট অবস্থা, তখনই এ ক্ষেত চালু ছিলো। কাজেই উপসংহারে পৌঁছানো যায় যে ঈস্টারে মানুষের বসতি শুরু হবার কিছুদিনের মধ্যেই বননিধন শুরু হয়, ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ তা তুঙ্গে পৌঁছায়, আর ১৪০০ থেকে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কোন এক সময়ে তা পরিশেষিত হয়। ঈস্টারের বনবিলোপের উদাহরণ সম্ভবত পৃথিবীতে বনবিলোপের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রান্তিক, পুরো বন গায়েব, প্রতিটি প্রজাতির গাছ বিলুপ্ত। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছিলো ঈস্টারের মানুষদের ওপর, কাঁচামালের উৎস শেষ, বুনো খাবারের সংস্থান নেই, ফসলের ফলনও কম। কাঁচামাল শেষ হবার ফলে কাঠের অভাবে থমকে পড়ে মূর্তির পরিবহন ব্যবস্থা, আর সাগরগামী ক্যানো নির্মাণ। ১৮৩৮ সালে এক ফরাসী জাহাজের ক্যাপ্টেন ঈস্টারে নৌকা ভিড়িয়ে পাঁচটি ক্যানোতে চড়ে রসদ যোগাতে আসা কয়েকজন ঈস্টারবাসীর আচরণের বর্ণনায় বলেছিলেন, কিভাবে কাঠ দেখে তারা প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে পড়ে, বারবার ""মিরু"" শব্দটি উচ্চারণ করে তারা কাঠ চাইতে থাকে। পরে ক্যাপ্টেন জানতে পারেন, যে কাঠ দিয়ে ক্যানো তৈরি হয় তাকে গোটা পলিনেশিয়াতেই মিরু বলা হয়। ঈস্টারের সর্বোচ্চ পর্বতের নাম ""তেরেভাকা"", যার অর্থ দাঁড়ায়, ""ক্যানো জোটানোর জায়গা""। এককালে এই পর্বতের ঢালেই ছিলো সেইসব বৃক্ষের অরণ্য, যা দিয়ে দ্বীপবাসী এককালে ক্যানো তৈরি করতো। আজও সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাথরের তুরপুণ, বাটালি, ছুরি, আর অন্যান্য কাঠের কাজের যন্ত্রপাতি। কাঠের অভাবে নিশ্চয়ই জ্বালানিতে টান পড়েছিলো, বিশেষ করে ঈস্টারের শীতে বৃষ্টির রাতে, যখন তাপমাত্রা নেমে আসে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। প্রমাণ রয়েছে যে এর পরিবর্তে ঈস্টারবাসীরা বিভিন্ন ঘাস-খড় আর আখের ছোবড়া পোড়াতো। নিঃসন্দেহে এই ডালপালার জন্যে মারাত্মক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো। ঘরবাড়ির ছাদ ছাওয়ার জন্যে, টুকিটাকি জিনিসপত্র তৈরির জন্যেও নিশ্চয়ই কাঠের অভাব হয়েছিলো। কাঠের অভাবে এককালে মৃতদেহ দাহ করার ঐতিহ্যও মুখ থুবড়ে পড়ে, লোকজন তখন মৃতদেহ মমি করা অথবা সমাধিস্থ করা শুরু করে। সাগরগামী ক্যানোর অভাবে সামুদ্রিক খাবারের ভরসা ফুরিয়ে যায়। বুনো খাবারের সংস্থানও নেই, কারণ বন বলেই আর কিছু নেই। খাবারের গাদা থেকে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের পর উধাও হয়ে যায় ডলফিনের হাড়গোড়। সেখানে খুঁজে পাওয়া মাছের কাঁটাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসে, যা পাওয়া যায় তা মূলত অগভীর সাগরের মাছ। ডাঙার পাখি পুরোপুরি বিলুপ্ত, সামুদ্রিক পাখিও মূল দ্বীপ ছেড়ে দূরে গিয়ে বাসা বাঁধে। সেইসাথে কমে ফসলের ফলন। বনবিলোপের ফলে শুরু হয় ভূমিক্ষয়, যার প্রমাণ মিলেছে ফ্লেনলির খুঁজে পাওয়া কাদার স্তরে। পোইকে উপদ্বীপে উৎখননে জানা গেছে, সেখানে পাম গাছের ফাঁকে ফাঁকে চাষাবাদ চলতো, পামের ছায়া মাটিকে রক্ষা করতো রোদ, হাওয়া আর তীব্র বৃষ্টিজনিত ক্ষয় থেকে। পাম গাছ ফুরিয়ে যাবার পর ক্ষয় হয়ে এসব মাটি ঢাল পেরিয়ে গিয়ে ঢেকে দিয়েছে নিচের অনেক ঘরবাড়ি আর আহু কিছুদিন আগেই চট্টগ্রামে এই দৃশ্য দেখেছি আমরা। পোইকে উপদ্বীপ এ কারণেই ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে পরিত্যক্ত হয়। পরে আবার সেখানে তৃণভূমি গড়ে ওঠার পর ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে সেখানে চাষাবাদ শুরু হয়, কিন্তু আবারো পরিত্যক্ত হয় আরেকদফা ভূমিক্ষয়ের পর। মাটি শুষ্কতর হয় গোটা দ্বীপেই, আর মাটির পুষ্টিও ক্ষয় হতে থাকে দ্রুত। চাষীরা আগে কম্পোস্ট তৈরি করতো বনের পাতালতাফলমূল দিয়ে, এসবের অভাবে সারের যোগান দিতেও তারা ব্যর্থ হয়। এসবের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবে ঈস্টারের জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে এক সময় ঈস্টারে দেখা দেয় নরমাংসভোজনমন্তব্য ১। ঈস্টারের বিভিন্ন খাবারের গাদায় পাওয়া গেছে মানুষের ফাটানো হাড়, যেগুলি থেকে মজ্জা বার করে নিয়ে খাওয়া হয়েছে। এমনকি ঈস্টারবাসীদের ভাষাতেও এ সংক্রান্ত প্রমাণ রয়েছে, যাদের অন্যতম জঘন্য গালিটি হচ্ছে, ""তোর মায়ের মাংস আমার দাঁতের ফাঁকে আটকে আছে।"" দুর্ভিক্ষের প্রমাণ মেলে ঈস্টার জুড়ে ছোট পাথরের এক ধরনের মূর্তির বিস্তার দেখে, যেগুলিকে বলা হয় মোয়াই কাভাকাভা, পাঁজরের হাড় বার করা, বসে যাওয়া গালঅলা মানুষের মূর্তি সেগুলি। ১৭৭৪ সালে এসে ক্যাপ্টেন কুকও ঈস্টারবাসীকে ""ক্ষুদে, হ্যাংলা, ভীতু, হতভাগা"" বলে বর্ণনা করেছেন। তীরবর্তী নিচু এলাকা, যেখানে বেশিরভাগ মানুষ বসবাস করতো, সেখানে আবাসস্থলের পরিমাণ কমে আসে ১৪০০-১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের পরিমাণের ৩০% এ। ঈস্টারের সর্দার আর পুরোহিতরা তাদের অভিজাত অবস্থা (রীতিমতো নবাবি) ধরে রাখার জন্যে দেবতাদের সাথে বিশেষ যোগাযোগপ্রসূত পবিত্র ক্ষমতার (মানা) বড়াই করতো, জনতাকে প্রতিশ্রুতি দিতো ভালো ফসল ফলনের। নিজেদের এই দাবি টিকিয়ে রাখার জন্যে তারা বিশাল সব মূর্তিনির্মাণ, আর সে সংক্রান্ত কর্মসংস্থান আর ভোজ দিয়ে লোকজনকে তুষ্ট রাখতো। যখন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে তাদের এই দাবি টুনকো বলে প্রমাণিত হলো, তখন এক পর্যায়ে ঈস্টারের যোদ্ধাগোষ্ঠী (মাতাতোয়া) ১৬৮০ সালের দিকে এদের হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে। ঈস্টারের সমাজব্যবস্থা ধ্বসে পড়ে এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে। আজও সারা দ্বীপে ছড়িয়ে আছে অবসিডিয়ানের তৈরি বল্লমের ফলাগুলি। এককালে যে জায়গা সংরক্ষিত ছিলো কেষ্টুবিষ্টুদের রাজকুটির হারে পায়েঙ্গার জন্যে, সেখানে পত্তন হলো সাধারণ মানুষের বাড়িঘরের। অনেকে আশ্রয় নিলো পাহাড়ের গুহায়, যার মুখ পাথর দিয়ে সংকীর্ণভাবে তৈরি নিরাপত্তার খাতিরে। এসব গুহায় খুঁজে পাওয়া জিনিসপত্র দেখে বোঝা যায়, সাময়িক আশ্রয় নয়, দীর্ঘসময় বসবাসের জন্যেই এসব গুহা বেছে নেয়া হয়েছে। সর্দার আর পুরোহিতদের পতনের সাথে সাথে ঈস্টারের ধর্মটিরও পতন হয়। শেষ আহু আর মোয়াইয়ের নির্মাণ হয়েছিরো ১৬২০ সালে (লোকায়ত ইতিহাস), শেষ কয়েকটি মূর্তির মধ্যে একটি ছিলো পারো। উঁচুভূমির ক্ষেতগুলি ১৬০০ থেকে ১৬৮০ সালের মধ্যে একে একে পরিত্যক্ত হয়। সময়ের সাথে আকারে বাড়তে থাকা মোয়াইগুলি শুধু সর্দারদের মধ্যে প্রতিযোগিতার বৃদ্ধিকেই নির্দেশ করে না, ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে দেবতাদের প্রতি আরো আকূল আবেদনকেও বোঝায়। ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দের পর মোয়াই নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়, তখন দ্বীপের বিভিন্ন গোত্র শুরু করে এক ভিন্ন প্রতিযোগিতা, তারা একে একে মোয়াইকে টেনে নামিয়ে ভাংতে থাকেমন্তব্য ২। মোয়াইগুলিকে টেনে নামানোর সময় এক টুকরো পাথরের ওপর সেটাকে ফেলা হতো, যাতে মূর্তিটা ভেঙে কয়েক টুকরো হয়। ঠিক কতদিন ধরে কী হারে চলেছে এই মূর্তিনিধন, বলা মুশকিল। রগেভেন নেমেছিলেন শুধু একটি মূর্তির সামনে। ক্যাপ্টেন কুক ১৭৭৪ সালে চারদিন ছিলেন ঈস্টারে, তখন তিনি ভাঙা আর আস্ত, দু'ধরনের মূর্তিই দেখেছেন। দাঁড়িয়ে থাকা মূর্তির শেষ ইয়োরোপিয়ান সাক্ষ্য ১৮৩৮ সালে। ১৮৬৮ সালে ঈস্টারের একটি মূর্তিও আর দাঁড়ানো ছিলো না। দ্বীপের লোকায়ত ইতিহাস থেকে জানা যায়, পারো ছিলো শেষ মূর্তি যাকে টেনে নামানো হয় ১৮৪০ সালের দিকে। এক মহিলা তার স্বামীর সম্মানে পারোকে তৈরি করিয়েছিলেন, তার পরিবারের প্রতিপক্ষরা পারোকে টেনে নামিয়ে ধড় বরাবর দু'টুকরো করে ভাঙে। আহুগুলি থেকেও টেনে আলাদা করা হয় পাথরের স্ল্যাব, তা দিয়ে আহুর পাশেই তৈরি করা হয় ক্ষেতের বেড়া, অথবা কোন সমাধির পরিধি। ফলে যেসব আহু আবার মেরামত করা হয়নি, সেগুলিকে দেখে কিছু পাথরের স্তুপ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। জ্যারেড ডায়মন্ড বর্ণনা দিয়েছেন তাঁর অভিজ্ঞতার, As Jo Anne Van Tilburg, Claudio Cristino, Sonia Haoa, Barry Rolett, and I drove around Easter, saw ahu after ahu as a rubble pile with its broken statues, reflected on the enormous effort that had been devoted for centuries to constructing the ahu and to carving and transporting and erecting the moai, and then remembered that it was the islanders themselves who had destroyed their own ancestors' work, we were filled with an overwhelming sense of tragedy. যেভাবে মিশনারিরা ধর্মান্তর করার পর নষ্ট করেছেন পুরনো ধর্মের নিদর্শনকে, সেভাবেই হয়তো ক্ষমতা হাত বদলের পর ঈস্টারবাসী একে একে ধ্বংস করেছে তাদের পুরনো ধর্মের চিহ্নগুলিকে, যে ধর্ম পালন করতে গিয়ে তাদের পূর্বপুরুষ ঈস্টারের পরিবেশকে ঠেলে দিয়েছে বিপর্যয়ের মুখে। তবে ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দের পর যে ঈস্টারবাসীরা একেবারেই মরে পঁচে গেছে, তা নয়, তারা যতটা পেরেছে, সামলে নেয়ার চেষ্টা করেছে। ঈস্টারে মুরগিপালনের যে আকাশচুম্বি বিস্তার, তা ঘটে এসময়েই। সামরিক মাতাতোয়া গোষ্ঠী প্রবর্তন করে এক নতুন ধর্মের, সৃজনকর্তা দেবতা মাকেমাকে-কে ঘিরে গড়ে ওঠে এই নতুন ধর্ম, যার কেন্দ্র ছিলো রানো কাউ আগ্নেয়গিরিমুখের প্রান্তে ওরোঙ্গো গ্রামে। মূর্তিনির্মাণের বদলে এই নতুন ধর্মের শিল্পিত প্রকাশ ঘটে খোদিতলিপিতে (পেট্রোগ্লিফ)। বিভিন্ন পাথরে, টেনে নামানো মোয়াইয়ের গায়ে তারা খোদাই করেছে নারীর জননাঙ্গ, পক্ষীমানব আর পাখির ছবি। প্রতিবছর ওরোঙ্গো-রীতির অনুসারীরা এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতো, ওরোঙ্গো থেকে এক মাইল দূরে ছোট দ্বীপ থেকে গভীর হাঙ্গর-অধ্যুষিত সাগর সাঁতরে পেরিয়ে সামুদ্রিক পাখির ডিম অক্ষত অবস্থায় নিয়ে ফিরতে পারতো যে, সে হতো সে বছরের পক্ষীমানব। ১৮৬৭ সালে এই প্রতিযোগিতার শেষ আয়োজনের সাক্ষী ক্যাথলিক মিশনারিরা। ১৭৭৪ সালে ক্যাপ্টেন কুকের আগমনের পর থেকেই রয়েসয়ে ঈস্টারে পা রাখতে শুরু করে ইয়োরোপীয়রা। হাওয়াই, ফিজিসহ প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যান্য দ্বীপে যা ঘটেছিলো, ঈস্টারেও তা-ই ঘটে, ইয়োরোপের অসুখবিসুখ ছড়াতে শুরু করে দ্বীপে। ১৮৩৬ এ দেখা দেয় গুটিবসন্তের মড়ক। ১৮০৫ সাল থেকে শুরু হয় Blackbirding বা অপহৃত শ্রমিক সংগ্রহ, ১৮৬২-৬৩তে এই অপকর্ম তার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায়, যখন পেরুর দুই ডজন জাহাজে করে ১,৫০০ ঈস্টারবাসীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় (মোট জনসংখ্যার অর্ধেক) পেরুর বিভিন্ন গুয়ানো খনি আর অন্যান্য খনিতে দাস হিসেবে নিলামে বিক্রি করার জন্যে। বেশিরভাগ বন্দীই মৃত্যুবরণ করে, পরে আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে বারোজনকে ঈস্টারে ফিরিয়ে দেয় পেরু, যারা আরেকদফা গুটি বসন্ত বয়ে আনে ঈস্টারে। ১৮৬৪তে ক্যাথলিক মিশনারিরা ঈস্টারে আড্ডা গাড়ে। ১৮৭২ সালে ঈস্টার দ্বীপ, স্থানীয় ভাষায় রাপা নুই, এককালের ভূস্বর্গ, মানুষ আর পাখির সুখী আবাসস্থল, পরিণত হয় একশো এগারো জন রুগ্ন ঈস্টারবাসীর বাস করার নিঃস্ব, রিক্ত, ন্যাড়া একটি ভূখন্ডে। পরবর্তী পর্বে যোগ করবো ঈস্টারকে নিয়ে কিছু বিতর্ক, সমান্তরাল তত্ত্ব, সাম্প্রতিক গবেষণা ও প্রস্তাব, আমার নিজের তুচ্ছাতিতুচ্ছ পর্যবেক্ষণ, আর আমার তৈরি একটি গাণিতিক মডেলের আলোকে সামান্য কপচানো। মন্তব্য ১ এ নিয়ে জ্যারেড ডায়মন্ডের সাথে অন্য বিজ্ঞানীদের রীতিমতো মতসংঘর্ষ রয়েছে। ডায়মন্ড যখন নরমাংসভোজনের কথা বলেন, অনেকের সে বর্ণনা শুনে মনে হতে পাড়ে, এ ব্যাপারে তাঁর ফেটিশ রয়েছে, তবে ভিন্ন প্রসঙ্গে তিনি একবার ব্যাখ্যা করেছেন, নরমাংসভোজনের ব্যাপারে আমাদের সংস্কারের প্রেক্ষিতে কিভাবে আমরা ব্যাপারটিকে কোন একটি জনগোষ্ঠীর প্রতি অভিযোগের মতো করে দেখি। ডায়মন্ড প্রায় ৩৪ বছর পাপুয়া নিউগিনির বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন, যেখানে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়রা যত্ন করে মৃতদেহটিকে খেয়ে ফেলে। ডায়মন্ড এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন, পাপুয়া নিউগিনির বেশির ভাগ অঞ্চলেই লোকজন অধিক শর্করা এবং কম প্রোটিন গ্রহণ করে। ঐ অঞ্চলে উচ্চপ্রোটিনের উৎসও কম। ফলে নরমাংস তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি প্রোটিনের উৎস কেবল। পৃথিবীর অন্যান্য জায়গাতেও যেখানে নরমাংসভোজন একটি প্রচলিত চর্চা, সেখানে উচ্চপ্রোটিনের অভাব রয়েছে। - মন্তব্য ২ ""দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান"", মনে পড়ে? আমরাও দেখেছি, লেনিন, চসেস্কু, সাদ্দাম হোসেন। আরো দেখবো।",False fe,"সভ্যতার সংকট _ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজ কবিগুরুর মহাপ্রয়ান দিবস। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁরই একটা লেখা তুলে দিলাম। যা কোনোদিনই পুরনো হবার নয়। --------------------------------------------------------------------------------- সভ্যতার সংকট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ------------------------------------ আজ আমার বয়স আশি বৎসর পূর্ণ হলো, আমার জীবনক্ষেত্রের বিস্তীর্ণতা আজ আমার সম্মুখে প্রসারিত। পূর্বতম দিগন্তে যে জীবন আরম্ভ হয়েছিল তার দৃশ্য অপরপ্রাপ্ত থেকে নিঃসক্ত দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি এবং অনুভব করতে পারছি যে, আমার জীবনের এবং সমস্ত দেশের মনোবৃত্তির পরিণতি দ্বিখন্ডিত হয়ে গেছে, সেই বিচ্ছিন্নতার মধ্যে গভীর দুঃখের কারণ আছে। বৃহৎ মানববিশ্বের সঙ্গে আমাদের প্রত্যক্ষ পরিচয় আরম্ভ হয়েছে সেদিনকার ইংরেজ জাতির ইতিহাসে। আমাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে উদঘাটিত হলো একটি মহৎ সাহিত্যের উচ্চশিখর থেকে ভারতের এই আগন্তুকের চরিত্রপরিচয়। তখন আমাদের বিদ্যালাভের পথ্য-পরিবেশনে প্রাচুর্য ও বৈচিত্র্য ছিল না। এখনকার যে বিদ্যা জ্ঞানের নানা কেন্দ্র থেকে বিশ্বপ্রকৃতির পরিচয় ও তার শক্তির রহস্য নতুন নতুন করে দেখাচ্ছে তার অধিকাংশ ছিল তখন নেপথ্যে, অগোচরে। প্রকৃতিতত্ত্বে বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা ছিল অল্পই। তখন ইলেজি ভাষার ভিতর দিয়ে ইংরেজি সাহিত্যকে জানা ও উপভোগ করা ছিল মার্জিতমনা বৈদগ্ধ্যের পরিচয়। দিনরাত্রি মুখরিত ছিল বার্কের বাগ্মিতায়, মেকহলের ভাষাপ্রবাহের তরঙ্গ ভঙ্গে; নিয়তই আলোচনা চলত শেক্স্পিয়ারের আটক নিয়ে, বায়রনের কাব্য নিয়ে এবং তখনকার পলিটিকসে সর্বমানবের বিজয় ঘোষণায়। তখন আমরা স্বজাতির স্বাধীনতার সাধনা আরম্ভ করেছিলুম, কিন্তু অন্তরে অন্তরে ছিল ইংরেজ জাতির ঔদার্যের প্রতি বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস এত গভীর ছিল যে এক সময় আমাদের সাধকেরা স্থির করেছিলেন যে, এই বিজিত জাতির স্বাধীনতার পথ বিজয়ী জাতির দাক্ষিণ্যের দ্বারাই প্রশস্ত হবে। কেননা, এক সময় অত্যাচার-প্রপীড়িত জাতির আশ্রয়স্থল ছিল ইংল্যান্ডে। যারা স্বজাতির সম্মানরক্ষার জন্য প্রাণপণ করছিল তাদের অকুণ্ঠিত আসন ছিল ইংল্যান্ডে। মানবমৈত্রীর বিশুদ্ধ পরিচয় দেখেছি ইংরেজ চরিত্রে। তাই আন্তরিক শ্রদ্ধা নিয়ে ইংরেজকে হৃদয়ের উচ্চাসনে বসিয়েছিলেম। তখনো সাম্রাজ্যমদমত্ততায় তাদের দাক্ষিণ্য কলুষিত হয়নি। আমার যখন বয়স অল্প ছিল ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেম। সেই সময় জন ব্রাইটের মুখ থেকে পার্লামেন্ট এবং তার বাইরে কোনো কোনো সভায় যে বক্তৃতা শুনেছিলেম তাতে শুনেছি চিরকালের ইংরেজের বাণী। সেই বক্তৃতায় হৃদয়ের ব্যাপ্তি জাতিগত সকল সংকীর্ণ সীমাকে অতিক্রম করে যে প্রভাব বিস্তার করেছিল সে আমার আজ পর্যন্ত মনে আছে এবং আজকের এই শ্রীভ্রষ্ট দিনেও আমার পূর্বস্মৃতিকে রক্ষা করছে। এই পরনির্ভরতা নিশ্চয়ই আমাদের শ্লাঘার বিষয় ছিল না। কিন্তু এর মধ্যে এইটুকু প্রশংসার বিষয় ছিল যে, আমাদের আবহমানকালের অনিভজ্ঞতার মধ্যেও মনুষ্যত্বের যে একটি মহৎ রূপ সেদিন দেখেছি তা বিদেশীয়কে আশ্রয় করে প্রকাশ পেলেও, তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করবার শক্তি আমাদের ছিল ও কুণ্ঠা আমাদের মধ্যে ছিল না। কারণ, মানুষের মধ্যে যা কিছু শ্রেষ্ঠ তা সংকীর্ণভাবে কোনো জাতির মধ্যে বন্ধ হতে পারে না, তা কৃপণের অবরুদ্ধ ভা-ারের সম্পদ নয়। তাই, ইংরেজের যে সাহিত্যে আমাদের মন পুষ্টিলাভ করেছিল আজ পর্যন্ত তার বিজয়শঙ্খ আমার মনে মন্দ্রিত হয়েছে। সিভিলিজেশন, যাকে আমরা সভ্যতা নাম দিয়ে তর্জমা করেছি, তার যথার্থ প্রতিশব্দ আমাদের ভাষায় পাওয়া সহজ নয়। এই সভ্যতার যে রূপ আমাদের দেশে প্রচলিত ছিল মনু তাকে বলেছেন সদাচার। অর্থাৎ তা কতকগুলি সামাজিক নিয়মের বন্ধন। সেই নিয়মগুলির সম্বন্ধে প্রাচীন কালে যে ধারণা ছিল সেও একটি সংকীর্ণ ভুগোলখন্ডের মধ্যে বদ্ধ। সরস্বতী ও দৃশদ্বতী নদীর মধ্যবর্তী যে দেশ ব্রহ্মাবর্ত নামে বিখ্যাত ছিল সেই দেশে যে আচার পারস্পর্যক্রমে চলে এসেছে তাকেই বলে সদাচার। অর্থাৎ, এই আচারের ভিত্তি প্রথার উপরেই প্রতিষ্ঠিত, তার মধ্যে যত নিষ্ঠুরতা, যত অবিচারই থাক এ কারণেই আমাদের আচার-ব্যবহারকেই প্রাধান্য দিয়ে চিত্তের স্বাধীনতা নির্বিচারে অপহরণ করেছিল। সদাচারের যে আদর্শ একদা মনু ব্রহ্মাবর্তে প্রতিষ্ঠিত দেখেছিলেন সেই আদর্শ ক্রমশ লোকাচারকে আশ্রয় করলে। আমি যখন জীবন আরম্ভ করেছিলুম তখন ইংরেজি শিক্ষার প্রভাবে এই বাহ্য আচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেশের শিক্ষিত মনে পরিব্যাপ্ত হয়েছিল। রাজনারায়ণবাবু কর্তৃক বর্ণিত তখনকার কালের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের ব্যবহারের বিবরণ পড়লে সে কথা স্পষ্ট বোঝা যাবে। এই সদাচারের স্থলে সভ্যতার আদর্শকে আমরা ইংরেজ জাতির চরিত্রের সঙ্গে মিলিত করে গ্রহণ করেছিলেম। আমাদের পরিবারে এই পরিবর্তন, কী ধর্মমতে কী লোকব্যবহারে, ন্যায়বুদ্ধির অনুশাসনে পূর্ণভাবে গৃহীত হয়েছিল। আমি সেই ভাবের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলুম এবং সেইসঙ্গে আমাদের স্বাভাবিক সাহিত্যানুরাগ ইংরেজকে উচ্চাসনে বসিয়েছিল। এই গেল জীবনের প্রথম ভাগ। তারপর থেকে ছেদ আরম্ভ হলো কঠিন দুঃখে। প্রত্যহ দেখতে পেলুম, সভ্যতাকে যারা চরিত্র-উৎস থেকে উৎসারিত রূপে স্বীকার করেছে, রিপুর প্রবর্তনায় তারা তাকে কী অনায়াসে লঙ্ঘন করতে পারে। নিভৃতে সাহিত্যের রসসম্ভোগের উপকরণের বেষ্টন হতে একদিন আমাকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। সেদিন ভারতবর্ষের জনসাধারণের যে নিদারুণ দারিদ্র্য আমার সম্মুখে উদঘাটিত হলো তা হৃদয়বিদারক। অন্ন-বস্ত্র-পানীয়-শিক্ষা আরোগ্য প্রভৃতি মানুষের শরীরমনের পক্ষে যা-কিছু অত্যাবশ্যক তার এমন নিরতিশয় অভাব হয় পৃথিবীর আধুনিক শাসন-চালিত কোনো দেশেই ঘটেনি। অথচ এই দেশ ইংরেজকে দীর্ঘকাল ধরে তার ঐশ্বর্য জুগিয়ে এসেছে। যখন সভ্য জগতের মহিমা ধ্যানে একান্তমনে নিবিষ্ট ছিলেন তখন কোনোদিন সভ্যনামধারী মানব-আদর্শের এত বড়ো নিষ্ঠুর বিকৃত রূপ কল্পনা করতেই পারিনি; অবশেষে দেখছি, একদিন এই বিকারের ভিতর দিয়ে বহুকোটি জনসাধারণের প্রতি সভ্যজাতির অপরিসীম অবজ্ঞাপূর্ণ ঔদাসীন্য। যে যন্ত্রশক্তির সাহায্যে ইংরেজ আপনার বিশ্বকর্তৃত্ব রক্ষা করে এসেছে তার যথোচিত চর্চা থেকে এই নিঃসহায় দেশ বঞ্চিত। অথচ চক্ষের সামনে দেখলুম, জাপান যন্ত্রচালনার যোগে দেখতে দেখতে সর্বতোভাবে কী রকম সম্পদবান হয়ে উঠল। সেই জাপানের সমৃদ্ধি আমি স্বচক্ষে দেখে এসেছি, দেখেছি সেখানে স্বজাতির মধ্যে তার সভ্যশাসনের রূপ। আর দেখেছি রাশিয়ার মস্কোও নগরীতে জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের আরোগ্যবিস্তারের কী অসামান্য অকৃপন অধ্যবসায়, সেই অধ্যবসায়ের প্রভাবে এই বৃহৎ সাম্রাজ্যের মূর্খতা ও দৈন্য ও আত্মাবমাননা অপসারিত হয়ে যাচ্ছে। এই সভ্যতা জাতিবিচার করেনি, বিশুদ্ধ মানব সম্বন্ধের প্রভাব সর্বত্র বিস্তার করেছে। তার দ্রুত এবং আশ্চর্য পরিণতি দেখে একই কালে ঈর্ষা এবং আনন্দ অনুভব করেছি। মস্কোও শহরে গিয়ে রাশিয়ার শাসনকার্যের একটি অসাধারণতা আমার অন্তরকে স্পর্শ করেছিল। দেখেছিলেম, সেখানকার মুসলমানদের সঙ্গে রাষ্ট্র-অধিকারের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে অমুসলমানদের কোনো বিরোধ ঘটে না, তাদের উভয়ের মিলিত স্বার্থসম্বন্ধের ভিতরে রয়েছে শাসন ব্যবস্থার যথার্থ সত্য ভূমিকা। বহুসংখ্যক পরজাতির উপর প্রভাব চালনা করে এমন রাষ্ট্রশক্তি আজ প্রধানত দুটি জাতির হাতে আছে- এক ইংরেজ, আর-এক সোভিয়েট রাশিয়া। ইংরেজ এই পরজাতিয়ের পৌরুষ দলিত করে দিয়ে তাকে চিরকালের মতো নির্জীব করে রেখেছে। সোভিয়েট রাশিয়ার সঙ্গে রাষ্ট্রীক সম্বন্ধ আছে বহুসংখ্যক মরুচর মুসলমান জাতির। আমি নিজে সাক্ষ্য দিতে পারি, এই জাতিকে সকল দিকে শক্তিমান করে তোলবার জন্য তাদের অধ্যবসায় নিরন্তর। সকল বিষয়ে তাদের সহযোগী করে রাখবার জন্য সোভিয়েট গভন্র্মেন্টের চেষ্টার প্রমাণ আমি দেখেছি এবং সে সম্বন্ধে কিছু পড়েছি। এই রকম গভর্ন্মেন্টের প্রভাব কোনো অংশে অসম্মানকর নয় এবং তাতে মনুষ্যত্বের হানি করে না। সেখানকার শাসন বিদেশীয় শক্তির নিদারুণ নিষ্পেষণী যন্ত্রের শাসন নয়। দেখে এসেছি, পারস্যদেশ একদিন দুই য়ুরোপীয় জাতির জাঁতার চাপে যখন পিষ্ট হচ্ছিল তখন সেই নির্মম আক্রমণের য়ুরোপীয় দংষ্ট্রাঘাত থেকে আপনাকে মুক্ত করে কেমন করে এই নবজাগ্রত জাতি আত্মশক্তির পূর্ণতাসাধনে প্রবৃত্ত হয়েছে। দেখে এলেম, জরথুসট্রিয়ান্দের সঙ্গে মুসলমানদের এক কালে যে সাংঘাটিত প্রতিযোগিতা ছিল বর্তমান সভ্যাশাসনে তার সম্পূর্ণ উপশম হয়ে গিয়েছে। তার সৌভাগ্যের প্রধান কারণ এই যে, সে য়ুরোপীয় জাতির চক্রান্তজাল থেকে মুক্ত হতে পেরেছিল। সর্বান্তকরণে আজ আমি এই পারস্যের কল্যাণ কামনা করি। আমাদের প্রতিবেশী আফগানিস্তানের মধ্যে শিক্ষা এবং সমাজনীতির সেই সার্বজনীন উৎকর্ষ যদিচ এখনো ঘটেনি। কিন্তু তার সম্ভাবনা অক্ষুন্ন রয়েছে। তার একমাত্র কারণ, সভ্যতাগর্বিত কোনো য়ুরোপীয় জাতি তাকে আজও অভিভূত করতে পারেনি। এরা দেখতে দেখতে চারদিকে উন্নতির পথে, মুক্তির পথে, অগ্রসর হতে চলল। ভারতবর্ষ ইংরেজের সভ্যশাসনের জগদ্দল পাথর বুকে নিয়ে তলিয়ে পড়ে রইল নিরূপায় নিশ্চলতার মধ্যে। চৈনিকদের মতন এত বড়ো প্রাচীন সভ্য জাতিকে ইংরেজ স্বজাতির স্বার্থসাধনের জন্য বলপূর্বক অহিফেনবিষে জর্জরিত করে দিলে এবং তার পরিবর্তে চীনের এক অংশ আত্মসাৎ করলে। এই অতীতের কথা যখন ক্রমশ ভুলে এসেছি তখন দেখলুম, উত্তর-চীনকে জাপান গলাধকরণ করতে প্রবৃত্ত ইংল্যান্ডের রাষ্ট্রনীতিপ্রবীণেরা কী অবজ্ঞাপূর্ণ ঔদ্ধত্যের সঙ্গে সেই দস্যুবৃত্তিকে তুচ্ছ বলে গণ্য করেছিল। পরে এক সময় স্পেনের প্রজাতন্ত্র গভন্র্মেন্টের তলায় ইংল্যান্ড কী রকম কৌশলে ছিদ্র করে দিলে, তাও দেখলাম এই দূর থেকে। সেই সময়েই এও দেখেছি, এক দল ইংরেজ সেই বিপদগ্রস্ত স্পেনের জন্য আত্মসমর্পণ করেছিলেন। যদিও ইংরেজির এই ঔদার্য প্রাচ্য চীনের সংকটে যথোচিত জাগ্রত হয়নি, তবু য়ুরোপীয় জাতির প্রজাস্বাতন্ত্র্য রক্ষার জন্য যখন তাদের কোনো বীরকে প্রাণপাত করতে দেখলুম তখন আবার একবার মনে পড়ল, ইংরেজকে একদা মানব-হিতৈষীরূপে দেখেছি এবং কী বিশ্বাসের সঙ্গে ভক্তি করেছি। য়ুরোপীয় জাতির স্বভাবগত সভ্যতার প্রতি বিশ্বাস ক্রমে কী করে হারানো গেল তারই এই শোচনীয় ইতিহাস আজ আমাকে জানাতে হলো। সভ্য শাসনের চালনায় ভারতবর্ষের সকলের চেয়ে যে দুর্গতি আজ মাথা তুলে উঠেছে সে কেবল অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা এবং আরোগ্যের শোকাবহ অভাব মাত্র নয়, সে হচ্ছে ভারতবাসীর মধ্যে অতি নৃশংস আত্মবিচ্ছেদ, যার কোনো তুলনা দেখতে পাইনি, ভারতবর্ষের বাইরে মুসলমান স্বায়ত্তশাসনচালিত দেশে। আমাদের বিপদ এই যে, এই দুর্গতির জন্য আমাদেরই সমাজকে একমাত্র দায়ী করা হবে। কিন্তু এই দুর্গতির রূপ যে প্রত্যহই ক্রমশ উৎকট হয়ে উঠেছে, সে যদি ভারতশাসনযন্ত্রের ঊর্ধ্বস্তরে কোনো এক গোপন কেন্দ্রে প্রশ্রয়ের দ্বারা পোষিত না হতো তা হলে কখনোই ভারত ইতিহাসের এত বড়ো অপমানকর অসভ্য পরিণাম ঘটতে পারত না। ভারতবাসী যে বুদ্ধিসামর্থ্যে কোনো অংশে জাপানের চেয়ে ন্যূন, এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ দুই প্রাচ্যদেশের সর্বপ্রধান প্রভেদ এই, ইংরেজশাসনের দ্বারা সর্বতোভাবে অধিকৃত ও অভিভূত ভারত, আর জাপান এইরূপ কোনো পাশ্চাত্য জাতির পক্ষছায়ার আবরণ থেকে মুক্ত। এই বিদেশীয় সভ্যতা, যদি একে সভ্যতা বলো, আমাদের কী অপহরণ করেছে তা জানি; সে তার পরিবর্তে দ- হাতে স্থাপন করেছে যাকে নাম দিয়েছে খধি ধহফ ড়ৎফবৎ, বিধি এবং ব্যবস্থা, যা সম্পূর্ণ বাইরের জিনিস, যা দারোয়ানি মাত্র। পাশ্চাত্য জাতির সভ্যতা-অভিমানের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা অসাধ্য হয়েছে। সে তার শক্তিরূপ আমাদের দেখিয়েছে, মুক্তিরূপ দেখাতে পারেনি। অর্থাৎ মানুষে মানুষে যে সম্মন্ধ সব চেয়ে মূল্যবান এবং যাকে যথার্থ সভ্যতা বলা যেতে পারে, তার কৃপণতা এই ভারতীয়দের উন্নতির পথ সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে দিয়েছে। অথচ, আমার ব্যক্তিগত সৌভাগ্যক্রমে মাঝে মাঝে মহদাশয় ইংরেজের সঙ্গে আমার মিলন ঘটেছে। এই মহত্ত্ব আমি অন্য কোনো জাতির কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখতে পাইনি। এরা আমার বিশ্বাসকে ইংরেজ জাতির প্রতি আজও বেঁধে রেখেছেন। দৃষ্টান্তস্থলে এন্ড্রুজের নাম করতে পারি; তাঁর মধ্যে যথার্থ ইংরেজকে, যথার্থ খৃষ্টানকে, যথার্থ মানবকে বন্ধুভাবে অত্যন্ত নিকটে দেখবার সৌভাগ্য আমার ঘটেছিল। আজ মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষণীতে স্বার্থকসম্পর্কহীন তাঁর নির্ভীক মহত্ত্ব আরো জ্যোতির্ময় হয়ে দেখা দিয়েছে। তাঁর কাছে আমার এবং আমাদের সমস্ত জাতির কৃতজ্ঞতার নানা কারণ আছে, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে একটি কারণে আমি তাঁর কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞ। তরুণ বয়সে ইংরেজি সাহিত্যের পরিবেশের মধ্যে যে ইংরেজ জাতিকে আমি নির্মল শ্রদ্ধা একদা সম্পূর্ণচিত্তে নিবেদন করেছিলেম, আমার শেষ বয়সে তিনি তারই জীর্ণতা ও কলঙ্ক-মোচনে সহায়তা করে গেলেন। তাঁর স্মৃতির সঙ্গে এই জাতির মর্মগত মাহাত্ম্য আমার মনে ধ্রুব হয়ে থাকবে। আমি এদের নিকটতম বন্ধু বলে গণ্য করেছি এবং সমস্ত মানবজাতির বন্ধু বলে মান্য করি। এদের পরিচয় আমার জীবনে একটি শ্রেষ্ঠ সম্পদরূপে সঞ্চিত হয়ে রইল। আমার মনে হয়েছে, ইংরেজদের মহত্ত্বকে এরা সকল প্রকার নৌকোডুবি থেকে উদ্ধার করতে পারবেন। এঁদের যদি না দেখতুম এবং তা না জানতুম তা হলে পাশ্চাত্য জাতির সম্বন্ধে আমার নৈরাজ্য কোথাও প্রতিবাদ পেত না। এমন সময় দেখা গেল, সমস্ত ইউরোপে বর্বরতা কী রকম নখদন্ত বিকাশ করে বিভীষিকা বিস্তার করতে উদ্যত। এই মানবপীড়নের মহামারী পাশ্চাত্য সভ্যতার মজ্জার ভিতর থেকে জাগ্রত হয়ে উঠে আজ মানবাত্মার অপমানের দিগন্ত থেকে দিগন্ত পর্যন্ত বাতাস কলুষিত করে দিয়েছে। আমাদের হতভাগ্য নিঃসহায় নীরন্ধ্র অকিঞ্চনতার মধ্যে আমরা কি তার কোনো আভাস পাইনি? ভাগ্যচক্রের পরিবর্তনের দ্বারা একদিন না একদিন ইংরেজকে এই ভারতসাম্রাজ্য ত্যাগ করে যেতে হবে। কিন্তু কোন্ ভারতবর্ষকে সে পিছনে ত্যাগ করে যাবে? কী লক্ষ্মীছাড়া দীনতার আবর্জনাকে? একাধিক শতাব্দীর শাসনধারা যখন শুষ্ক হয়ে যাবে, তখন কী বিস্তীর্ণ পঙ্কশয্যা দুর্বিষহ নিষ্ফলতাকে বহন করতে থাকবে? জীবনের প্রথম আরম্ভে সমস্ত মন থেকে বিশ্বাস করেছিলুম ইউরোপের অন্তরের সম্পদ এই সভ্যতার দানকে। আর আজ আমার বিদায়ের দিনে সে বিশ্বাস একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেল। আজ আশা করে আছি, পরিত্রাণকর্তার জন্মদিন আসছে আমাদের এই দারিদ্র্যলাঞ্ছিত কুটিরের মধ্যে; অপেক্ষা করে থাকব, সভ্যতার দৈববাণী সে নিয়ে আসবে, মানুষের চরম আশ্বাসের কথা মানুষকে এসে শোনাবে এই পূর্বদিগন্ত থেকেই। আজ পারের দিকে যাত্রা করেছি, পিছনের ঘাটে কী দেখে এলুম, কী রেখে এলুম, ইতিহাসের কী অকিঞ্চিৎকর উচ্ছিষ্ট সভ্যতাভিমানের পরিকীর্ণ ভগ্নস্তূপ! কিন্তু মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ, সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত রক্ষা করব। আশা করব, মহাপ্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে। আর-এক দিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়-যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহৎমর্যাদা ফিরে পাবার পথে। মনুষ্যত্বের অন্তহীন প্রতিকারহীন পরাভবকে চরম বলে বিশ্বাস করাকে আমি অপরাধ মনে করি। এই কথা আজ বলে যাব,প্রবলপ্রতাপশালীরও ক্ষমতা মদমত্ততা আত্মম্ভরিতা যে নিরাপদ নয় তারই প্রমাণ হবার দিন আজ সম্মুখে উপস্থিত হয়েছে; নিশ্চিত এ সত্য প্রমাণিত হবে যে - অধর্মেনৈধতে তাবৎ ততো ভ্রমাণি পশ্যতি। ততঃ সপত্নান্ জয়তি সমূলস্ত বিনশ্যতি ঐ মহামানব আসে, দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে মর্তধূলির ঘাসে ঘাসে। সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক এল মহাজন্মের লগ্ন। আজি অমারাত্রির দুর্গতোরণ যত ধূলিতলে হয়ে গেল ভগ্ন। উদয়শিখরে জাগে মাভৈঃ মাভৈঃ রব নবজীবনের আশ্বাসে। জয় জয় জয় রে মানব-অভ্যুদয় মন্দ্রি উঠিল মহাকাশে। --------------------------------------------------------------------------------- আজ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৬৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে এখানে সংকলিত হলো ‘সভ্যতার সংকট’ শীর্ষক ভাষণ সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০০৮ ভোর ৫:২৩",False mk,"আর কতো খা-লেদা! বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধের ৩৬তম দিন গেছে গতকাল মঙ্গলবার। এই অবরোধের পাশাপাশি রবিবার থেকে ডাকা হরতালের তৃতীয় দিনে গতকাল রাতে ময়মনসিংহ শহরে সদর ভূমি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফেনীতে যাত্রীবাহী বাস ও নেত্রকোনায় ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ হয়েছে অন্তত ১৩ জন। এ ছাড়া ভোলায় তেলবাহী লরি, ঝালকাঠিতে উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি, পিরোজপুরে দুটি বাস, গাইবান্ধায় একটি ট্রাক ও নোয়াখালীতে একটি প্রাইভেট কার ও অটোরিকশায় আগুন দেওয়া হয়েছে।ফেনী শহরের একটি পুলিশ ফাঁড়িতে ককটেল হামলায় আহত হয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য। রাজধানীতে একটি যাত্রীবাহী বাসে ককটেল হামলায় আহত হয়েছেন একজন পোশাক শ্রমিক। এর আগের সোমবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রামের পটিয়ায় কয়েকটি সরকারি কার্যালয়ের প্রধান ফটক ও দরজার তালায় সুপার গ্লু দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।অন্যদিকে সোমবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ১০২ জনকে গ্রেপ্তার ও আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।বিস্তারিত আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও আঞ্চলিক অফিস থেকে পাঠানো খবরে :ময়মনসিংহে ভূমি কার্যালয়ে আগুন : গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের বাসাবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ময়মনসিংহ সদর ভূমি কার্যালয়ের একটি কক্ষে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কার্যালয়ের পশ্চিম প্রান্তের একটি কক্ষের খোলা জানালা দিয়ে দুর্বৃত্তরা ভেতরে আগুন ছুড়ে দেয়। এতে ওই কক্ষের টেবিলে থাকা কয়েকটি খাতা পুড়ে গেছে। তবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আগুন জ্বলতে দেখে পাশের মার্কেটের লোকজন এসে পানি দিয়ে নিভিয়ে ফেলে। পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।যাত্রীবাহী বাস ও পাথরবাহী ট্রাকে পেট্রলবোমা : ফেনীর দাগনভূঁঞায় একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলায় ১১ যাত্রী দগ্ধ হয়েছে। এ ছাড়া নামতে গিয়ে আহত হয়েছে আরো প্রায় ২৫ যাত্রী। ফেনী থেকে ছেড়ে যাওয়া বসুরহাটগামী কবিরহাট এক্সপ্রেস নামের বাসটি দাগনভূঁঞার আমীরগাঁও পৌঁছলে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। পেট্রলবোমায় বাসটিতে আগুন ধরে যায়। দগ্ধরা হলো মিলন, খোকন, বেলাল, মামুন, হোসাইন, মানিক, সোবহান, সবুজ, মাকসুদ, খোকন ও ছেমনা খাতুন। তাদের মধ্যে খোকন, সবুজ ও ছেমনা খাতুনকে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ফেনী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান। বাকিরা এখনো ফেনী ও দাগনভূঁঞার কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।দাগনভূঞা থানার ওসি মো. আবুল ফয়সল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পুলিশ আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি এলাকায় সোমেশ্বরী সেতুর কাছে রাত ৯টার দিকে নুড়ি পাথরভর্তি একটি ট্রাকে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে চালক আশরাফুল ইসলাম (৩৮) ও তাঁর সহকারী সোহাগ মিয়া (২৮) দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের প্রথমে দুর্গাপুর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাত ১০টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমদাদুল হক খান জানান, সেতুর কাছে বিকল্প সড়কে পিসিনল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঢোকার সময় ট্রাকটিকে লক্ষ করে হরতাল সমর্থকরা পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে পড়ে যায় এবং আগুন ধরে যাওয়ায় চালক ও তাঁর সহকারী দগ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে আশরাফুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।দুর্গাপুর থানার ওসি মো. রেজাউল ইসলাম খান জানান, দুর্বৃত্তরা ট্রাকটিতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে পালিয়ে গেছে।সরকারি অফিসের দরজার তালায় সুপার গ্লু : চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটক, যুব উন্নয়ন অফিস, সমাজসেবা অফিস, সমবায় অফিস ও পৌর সদরের আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় এবং পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে বিভিন্ন কক্ষের তালায় সুপার গ্লু ঢেলে দেওয়া হয়।এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মহিউদ্দিন চেয়ারম্যান বলেন, ‘অবরোধকারীরা রাজপথে আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়ে অভিনব কায়দায় অফিসের প্রধান ফটকে সুপার গ্লু লাগিয়ে দিয়েছে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকেয়া পারভীন বলেন, ‘অধিকাংশ অফিসের দরজা ও ফটকে সুপার গ্লু লাগিয়ে দেওয়ায় সকালে অফিস করতে কর্মকর্তাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। তবে তালা ভেঙে স্বাভাবিক অফিস করেছেন কর্মকর্তারা।’ঢাকার চিত্র : রাজধানীর জনজীবন ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোথাও যানবাহনে আগুন ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়নি। ভোরে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে ককটেল হামলায় একজন পোশাক শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে পরপর দুটি ককটেল ফাটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে এতে কেউ হতাহত হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ককটেল হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ছাত্রদল নেতা আব্দুর রহমান পাটোয়ারীসহ ২২ জনকে আটক করা হয়। আব্দুর রহমানকে ধানমণ্ডি এলাকা থেকে আটক করা হয়। আটক অন্যদের মধ্যে বিএনপির ১৭ জন ও জামায়াত-শিবিরের পাঁচজন রয়েছে।আগুন, ভাঙচুর, নাশকতা : গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর দুটি পৃথক স্থানে দুর্বৃত্তরা একটি প্রাইভেট কার, একটি অটোরিকশায় আগুন দেয়। তারা একই সময়ে দুটি অটোরিকশা ও দুটি পণ্যবোঝাই পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করে। নোয়াখালী সুধারাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এসব ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলেও কাউকে আটক করা যায়নি।ফেনী শহরের এসএসকে সড়কে শহর পুলিশ ফাঁড়ির ভেতরে ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে পুলিশ কনস্টেবল শামসুদ্দিন আহত হয়েছেন। তাঁকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামে একটি যাত্রীবাহী বাসে ঢিল ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে শহিদুল আলম নামের বাসচালকের সহকারী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বন্দর থানা এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় একজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। ভোলা চরফ্যাশনের বাংলাবাজার এলাকায় তেলবাহী লরিতে আগুন ও ট্রাক ভাঙচুর করেছে শিবিরের কর্মীরা। ঝালকাঠির নলছিটিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনুস লস্করের সরকারি গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার বত্রিশ মাইল এলাকায় ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়েছে। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় দুটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা বাসচালকের সহকারী অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাটসংলগ্ন বাখরেরকান্দি থেকে দুটি বোমা ও তিন লিটার পেট্রল উদ্ধার করা হয়েছে। নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিতে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে মাদারীপুর পুলিশ। সোমবার রাত ১০টার দিকে রাজশাহী নগরীর অক্ট্রয় মোড় এলাকায় চলন্ত যাত্রীবাহী বাস ও পুঠিয়ার বানেশ্বরে ট্রাকে বোমা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। দুটি ঘটনায় নারীসহ পাঁচজন আহত হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।গ্রেপ্তার-আটক : মৌলভীবাজারের বড়লেখার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের ওয়ার্ড জামায়াতের সেক্রেটারি সিদ্দিকুর রহমান দুদু (২৭) এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শিবির সেক্রেটারি সাইদুল ইসলাম আটক হয়েছেন। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে উপজেলা জামায়াতের আমির আমিনুর রহমানকে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।গতকাল দুপুরে নোয়াখালী শহরে গোপন বৈঠক চলাকালে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার পাঁচ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলো সোনাইমুড়ী উপজেলার সুমাইয়া আক্তার, হাতিয়া উপজেলার মাহমুদাতুল ইসলাম, সদর উপজেলার ফতেপুরের নাফিসা ইসলাম, কাশিপুরের তাছনুভা মেহেরীন ও সদর উপজেলার রতনপুরের নাদিরা ফেরদৌস। হবিগঞ্জে বিএনপি ও যুবদলের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য মহিবুল ইসলাম শাহীন, বাহুবল উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুষার চৌধুরী ও চুনারুঘাট উপজেলা যুবদল সভাপতি আব্দুল মতিন। চাঁদপুরে বিএনপি-জামায়াতের আট নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।পঞ্চগড়ে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীসহ ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের রানীরবন্দর এলাকায় ককটেলসহ বিএনপির দুই কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে আরো ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যশোর কেশবপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রংপুরের মিঠাপুকুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গাইবান্ধায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ১৯ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। বরিশালে নাশকতা ঠেকাতে তিন প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।ময়মনসিংহের তারাকান্দার মধুপুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ফুলপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবুল বাশার আকন্দ এবং তারাকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোতাহার হোসেন তালুকদারসহ মোট ৩১ জনকে আসামি করেছে পুলিশ।মুন্সীগঞ্জ সদর থানার পুলিশ গতকাল ভোর ৪টার দিকে উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি সিরাজ ঢালীসহ (৪৫) চার নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। জেলার অন্যান্য থানায় আরো তিনজনকে আটক করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলার ছয় থানায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ৯ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।- See more at: Click This Link",False rn,"ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন ১৮১৮ সালে মেরি শেলির বিখ্যাত উপন্যাস ‘ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’ দিয়ে শুরু হয় সায়েন্স ফিকশনের জয়যাত্রা।মেরি শেলি উনিশ শতকের ইংরেজ সাহিত্যিক। মেরি শেলির পর আসেন জুলভার্ন ও এইচজি ওয়েলস। সায়েন্স ফিকশনের জগতে জুলভার্নকে বলা হয়ে থাকে মুকুটহীন সম্রাট।১৮৫৮ সালে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পর্যটন কাহিনী লিখে পয়সা রোজগার করতে থাকেন জুলভার্ন।প্রথম উপন্যাস ‘ফাইভ উইকস ইন অ্যা বেলুন’ বইটি প্রকাশ করেন। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে সাড়া ফেলে দেয় এই বই। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান জুলভার্ন। বছরে দুটো করে মোট আশিটির মতো উপন্যাস লিখেছিলেন জুলভার্ন।১৯০৫ সালের ২৪ মার্চ ফ্রান্সের অ্যামিয়েস শহরে মারা যান জুলভার্ন।জুল ভার্নকে বলতে চাই ‘অমৃতের পুত্র’। তিনি জন্মেছেন আজ থেকে ঠিক ১৮৩ বছর আগে (৮ ফেব্রুয়ারি ১৮২৮)। জুল ভার্নের কয়েকটি বইয়ের নাম বলা যাক- অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ (১৮৭৩), তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত ক্ল্যাসিক। আগেই বেরিয়ে গেছে অ্যা জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দ্য আর্থ (১৮৬৪), টুয়েন্টি থাউজেন্ডস লিগস আন্ডার দ্য সি (১৮৭০)। ১৮৭৪ সালে বেরোল আরেকটি অমর গ্রন্থ, মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ড। ভার্ন হয় কোন বিজ্ঞানী ছিলেন নয়তো বিশ্ব-পর্যটক। কারণ মানুষ চাঁদে যাওয়ার অনেক আগেই কল্পনায় তিনি মানুষকে চাঁদে পাঠিয়েছিলেন (ফ্রম দি আর্থ টু দি মুন)। অ্যারাউন্ড দি ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ, এ বইয়ের কাহিনী, এই রকম- ফিলিয়াস ফগ একজন ধনী মানুষ। তিনি প্রতিদিন নিয়ম করে প্যারিসের এক সরাইখানায় বন্ধুদর সাথে আড্ডা দেন। এভাবে ভালোই চলছিলো সবকিছু। একদিন বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার সময় পত্রিকার একটা রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। হঠাৎ সেই আলোচনা গড়ায় তর্কে। ফিলিয়াস চিন্তা ভাবনা না করেই বলে বসে, সে সারা পৃথিবী আশি দিনের মধ্যে ঘুরে আসতে পারবে। ঝটপট বন্ধুরা বাজি ধরলো। কারন তাদের বিশ্বাস এটা অসম্ভব। ফিলিয়াস যদি ৮০ দিনের মধ্যে পৃথিবী এক চক্কর দিয়ে আসতে পারে তাহলে বন্ধুরা মিলে তাকে দুই হাজার ডলার দেবে। ফিলিয়াসের জেদ চেপে গেলো। আগপিছু না ভেবে চাকরকে নিয়ে পরদিনই যাত্রা শুরু করলেন তিনি। কখনো বেলুনে কখনো জাহাজে, কখনো হাতির পিঠে কখনোবা পায়ে হেঁটে তিনি একসময় ভারতে পৌছান। সেখানে এক অসহায় মেয়েকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচায় তারা। এদিকে ফিলিয়াসকে ব্যাংক ডাকাত ভেবে তাদের পিছু নেয় এক পুলিশ অফিসার। এক মুহূর্তও দেরি না করে তারা মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়েই একে একে পার হয় সাংহাই, প্রশান- মহাসাগর, নিউ ইয়র্ক শহর, শিকাগো, লিভারপুল, আটলান্টিক মহাসাগর, আয়ারল্যান্ড। এর মাঝে আমেরিকায় ডাকাতরা তাদের ওপর ট্রেনে হামলা চালায়, হাঁপাতে হাঁপাতে তারা অবশেষে নিজের শহরে ফিরে আসে। কিন্তু ততেক্ষনে পাঁচ মিনিট লেট হয়ে গেছে। হতাশ ফিলিয়াস বন্ধুদের সঙ্গে দেখা না করে বাড়িতে ফিরে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্তু ফিলিয়াসই জিতেছিলো পুরো দুই হাজার ডলার। জানতে চাও কিভাবে? সেটা না হয় বইটি পড়েই জেনে নিও। এই বইটি বাংলায় অনুবাদ হয়েছে অনেক আগে। বাংলা বইটির নাম রাখা হয়েছে ‘আশি দিনে বিশ্ব ভ্রমণ’। এই মজার বইটি পড়ে দেখতে পারো। বাংলা ভাষায় প্রথম কল্পবিজ্ঞানের সূচনা হয় জগদীশচন্দ্র বসুর ‘পলাতক তুফান’ গল্পটির মাধ্যমে।বাংলায় প্রথম সার্থক কল্পবিজ্ঞানের গল্প লেখেন প্রেমেন্দ মিত্র। ১৯৩১ সালে তার রচিত ‘পিঁপড়ে পুরান’ উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রতিবছর গুণী কল্পবিজ্ঞান লেখকদের নেবুলা ও হিউগো অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করা হয়।১৯৭৩ হুমায়ূন আহমেদ (তোমাদের জন্য ভালোবাসা) [ বাংলা সাহিত্যের প্রথম পূর্ণাঙ্গ এবং সার্থক সায়েন্স ফিকশান।]১৯৭৬ মুহম্মদ জাফর ইকবাল (কপোট্রনিক সুখ দুঃখ) [নকলের অভিযোগ উঠেছিল প্রথম গল্পটি প্রকাশ হবার পর। এর পর একই ধারায় আরো কিছু নতুন গল্প লিখে প্রকাশ করেন। ] ষাটের দশকে সত্যজিত লিখেছিলেন মি. এলিয়েন ।শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর পাতাল ঘরের রহস্য নিয়ে নির্মিত পাতালঘর মুভিটি ২০০৩ সালে নির্মিত হয় । (সম্ভবত বাংলা কল্পবিজ্ঞান অবলম্বনে নির্মিত প্রথম মুভি ) সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৪",False ij,"কারা ভাইকিং_ সেই ইতিহাসের শুরু থেকেই তস্করতা কেবল স্থলেই ঘটায়নি মানুষ; জলের উপরিতলেও মানুষ এক রক্তাক্ত অপরিমেয় লুন্ঠন টেনে নিয়ে গিয়েছিল । এককালে যোগাযোগের প্রয়োজনই মানবিক বোধবুদ্ধি খাটিয়ে কাষ্ঠ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল নৌযান। তারপর একটা সময়ে নৌযানই হয়ে উঠল সমুদ্রদস্যুতার করার অন্যতম অবলম্বন । প্রাচীন ও মধ্যযুগে পৃথিবীর নানা প্রান্তে জাহাজে করেই দস্যুতা করত জলদস্যুরা। সেই ঐতিহ্য আজও একেবারেই স্তিমিত হয়ে আসেনি। আজও নাকি দক্ষিণ চিন সমুদ্রে নৌদস্যুদের খপ্পরে পড়ে নাজেহাল হয়ে যায় বানিজ্য জাহাজ। ভাইকিংস শব্দট নর্স ভাষার শব্দ। নর্স ভাষা কি? নরওয়ের ভাষাকে নর্স বলা হয়। তো, নর্স ভাষার ভাইকিংস শব্দটার মানে, “জলদস্যু।” আমরা আজকাল যেমন বলি: পিকনিকে যাওয়া। নর্স ভাষায় তেমনই এককালে বলা হত ভাইকিং-এ যাওয়া, মানে জাহাজে উঠে অন্যের সর্বনাশ করা! শব্দটার অন্য মানেও হয় অবশ্য। যেমন, “উপসাগরে বসবাসকারী” মানুষ। আবার এককালে স্ক্যানডেনিভিয়া লোকদের ""ভিকস"" বলা হত। ভিকস আর ভাইকিং শব্দের সম্বন্ধ সহজেই অনুমেয়। তো, কারা স্ক্যানডেনিভিয়? সুইডেন নরওয়ে আর ডেনমার্ক- এই তিনটে দেশকে বলা হয় স্ক্যানডেনিভিয়া। ওই স্ক্যানডেনিভিয় এলাকায় মধ্যযুগে জলদস্যুদের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখন ওই অঞ্চলের জলদস্যুদের বোঝাতে ভাইকিংস শব্দটা প্রয়োগ করা হয়। ৮০০ থেকে ১০৫০ খ্রিস্টাব্দ। এই সময়কালকে ইউরোপের ইতিহাসে বলা হয় ""স্ক্যানডেনিভিয় সম্প্রসারণ"" বা ‍""ভাইকিং এজ""। কেননা, ওই সময়ে নরওয়ে ডেনমার্ক ও সুইডেন থেকে দুঃসাহসী অভিযাত্রীরা সমুদ্র পথে অভিযানে বেরিয়ে অত্র অঞ্চলে ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল। তবে এরা যে কেবল আক্রমনকারী ছিল -তা কিন্তু নয়। ভাইকিংসরা ব্যবসাও করত। উপরোন্ত তারা ছিল ভূ-আবিস্কারক; এমন কী অন্যত্র বসতিস্থাপনকারীও। ভাবলে কেমন যে লাগে-সেই মধ্যযুগে আটলান্টিক সমুদ্রে ভেসে বেড়াত ভাইকিংস জলদস্যুদের ভয়ঙ্কর সব জাহাজ। পালে নরখুলির চিহ্ন আকাঁ। জাহাজগুলি এমনভাবে তৈরি করা হত যে ওগুলি ভেড়ার জন্য নির্দিস্ট বন্দর না হলেও চলত। নদীর ধারে কি সমুদ্রপাড়ে ভিড়তে পারত। লুন্ঠন করার জন্য মানুষের র্দুবুদ্ধি! তবে, আজও স্ক্যানডেনিভিয় অঞ্চলের উপকথায় লোকগাথায় ভাইকিংসদের কত কথা যে উকিঁ দেয়! ভাইকিংসদের নিয়ে লেখা একটি অসাধারণ বইয়ের লিঙ্ক: http://www.mediafire.com/?j4rhzmqvqno সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০৩",False hm,"যৌথবাহিনীকাহিনী উঁহু, আমাকে এখনও তাঁরা কারণে বা অকারণে পাকড়াও করেননি। মাঝে মাঝে অফিসে যাবার পথে রাস্তায় নামিয়ে ভুরু কুঁচকে আগাপাস্তলা দেখে অবশ্য ড়্যাবের সদস্যরা নানা প্রশ্ন করেন। তাঁদের কেউ কেউ বিনয়ের অবতার, সালাম দিয়ে বিনম্র কণ্ঠে প্রশ্ন করেন কী করি না করি; কেউ শুরুতেই ধরে নেন আমি বনসংরক্ষক বা হাওয়াভবনেরপান্ডা, কর্কশ রুক্ষ গলায় জানতে চান কী করা হয়। আমি ঘুম ঘুম গলায় ঘাম মুছতে মুছতে সদুত্তর দিয়ে তাঁদের সন্তুষ্ট করতে চাই, তাঁরা রোষকষায়িতলোচনে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ইশারা করেন আবার বাহনারোহণের, তারপর পরের আটককৃত বাহনের যাত্রীকে হুহুঙ্কারে শঙ্কিত করে তোলেন। আমার বন্ধুদের সাথে দীর্ঘদিন পর সেদিন আড্ডা হলো, একজন জানালো যৌথবাহিনী তাকে আরেকটু হলেই পাকড়াও করে ফেলেছিলো আর কি। আমরা জানতে চাইলাম, এর মানে কী, যৌথবাহিনী তাকে কেন তাড়া করলো? তারপর সে জানায় এক আজব কাহিনী। আমার সেই বন্ধু, ধরা যাক তার নাম তারেক, সে চাকরি করে এক কুখ্যাত লোকের গৃহনির্মাণ সংস্থায়। একদিন সে দুপুরে পেটপুরে ভাত খেয়ে বাইরে একটু ধোঁয়া টানার জন্য নিচে নামে, দেখতে পায় বাইরের দরজায় দারোয়ান তালা মেরে দন্ডায়মান। সে হেঁকে ওঠে, ""অ্যাই দরজা খোলো।"" দারোয়ান জানায়, ""না স্যার, স্যারের হুকুম, দরজা খোলন যাইবো না।"" তারেক আরো হেঁকে ওঠে, ""আরে বলে কী? সিগারেট খাবো, দরওয়াজা খোলো!"" রীতিমতো উর্দু উর্দু ভাব এনে, দরওয়াজা ...। দরওয়ান দরওয়াজা খোলার আগেই বাইরে থেকে দরজার ফোঁকর দিয়ে উঁকি দেয় এক মুখ। ""ভাই, দরজাটা খোলেন না একটু, ভেতরে আসবো।"" তারেক বলে, ""কে, কে আপনি?"" এবার সেই মুখ বলে, ""এত কথার কী আছে ভাই? ম্যানেজারের কাছে যাবো, দরজাটা খোলেন।"" তারেক বলে, ""উঁহু, আপনি ওনাকে ফোন করেন।"" মুখটা বলে, ""আরে ভাই দরজা খোলেন।"" তারেক হেঁকে ওঠে, ""অ্যাই দরওয়াজা খুইলো না।"" এমন সময় বাইরে একটা গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে নামেন দুই স্বাস্থ্যবান মানুষ, একজন টাই পরা, আরেকজন টাই ছাড়া। দু'জনেরই কেশ ফৌজি ঢঙে ছাঁটা। টাইধারী বলেন, ""ভাই দরজাটা একটু খুলুন তো।"" তারেক বলে, ""দরজা তো খোলা যাবে না।"" টাইধারী কথা বেশি বাড়ান না, বলেন, ""কেন যাবে না ভাই?"" বলতে বলতেই সেই ফোকর দিয়ে খপ করে তারেকের হাত পাকড়ে ধরেন। তারেক ঘাবড়ে গিয়ে আঁচড়েকামড়ে সেই হাত ছাড়িয়ে নেয়। ও মা, হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সে দ্যাখে, টাইহারা সেই অপর ভদ্রলোক, যে কি না রীতিমতো ধোপদুরস্ত জামাকাপড় পরা, সে দেয়াল বেয়ে ওঠা শুরু করেছে! তারেকের মনে হয়, আজ আর তার রক্ষা নাই! দরওয়ান এবার তার হাত চেপে ধরে, ব্যাকুল কণ্ঠে বলে, ""স্যার স্যার স্যার কী করুম স্যার?"" টাইধারী বিরক্ত হন। বলেন, ""অ্যাই তুমি সিনক্রিয়েট করো না তো। নামো দেয়াল থেকে, নামো! ওনারা এমনিতেই দরজা খুলে দেবেন।"" বলতে বলতে আবার সে ফোকর গলিয়ে হাত বাড়ায়, দরওয়ানের কলারখানা চেপে ধরে সাপটে, তারপর নিজের দিকে সজোরে টানে। দরওয়াজায় বাড়ি খেয়ে দরওয়ানের মুখ থেঁতলে যায়, সে প্রায় অচেতন হয়ে ঝুলতে থাকে টাইধারীর হাতে, তার হাতে ধরা চাবিটা নিয়ে তালা খুলে টাইধারী ধীরেসুস্থে ভেতরে ঢোকেন। তারপর তারেকের বাহু পাকড়াও করে বলে, ""আসুন দেখি আমার সাথে। কথা কম।"" তারেক ভেজা বেড়ালের মতো আবার উঠতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে। অফিসের বেয়াড়া বেয়ারাটা হাসিমুখে এসে জিজ্ঞেস করে, ""কী ব্যাপার স্যার?"" অমনি বিকট এক চড় তার গালে। সে চোখ মিটমিট করে কোনমতে বলে, ""মারেন ক্যান?"" এবার বিকট এক লাথি। তারপর মোটামুটি তান্ডব বয়ে যায়। অফিসের লোকজন একেবারে অ্যাটেনশন হয়ে থাকে। ম্যানেজার নিখোঁজ। তারেকের কিউবিকল ম্যানেজারের রুমে যাবার পথেই পড়ে। টাইধারী তারেককে শুধান, ""আপনি জানেন না উনি কখন বেরিয়ে গেলো? দেখেন নাই?"" তারেক দেখে নাই তার ম্যানেজারকে, সে মাথা নাড়ে। টাইধারী এবার ক্ষেপে ওঠে। বলে, ""আপনি কিন্তু সহযোগিতা করছেন না। এর পরিণতিও বুঝতে পারছেন না। চিন্তা করতে থাকেন।"" তারপর তাঁরা, মানে টাইধারী আর টাইহারা, পাকড়াও করেন আরো উঁচু হর্তাকর্তাদের। একজনই উপস্থিত ছিলেন, এককালের সচিব, এখন পরামর্শদাতা, তিনি কিছু আমলাতান্ত্রিক বোলচাল ঝাড়েন। টাইধারী বিনয়ের সাথে বলেন, ""স্যার, আসলে আমরা এখানে আমাদের কাজ ঠিকমতো করছি না। কোথাও গিয়ে আমরা প্রথমেই পাঁচ মিনিট করে পিটাই সবাইকে। আপনাকে কিন্তু স্যার মিনিট পাঁচেক পিটালে আপনি গড়গড়িয়ে সব বলে দিতেন, ঐ লোক কোথায় কখন গেছে, সঅব।"" আমরা রুদ্ধশ্বাসে শুনি, বলি, তারপর? তারেক বলে, তারপর আর কী? নামধাম লিখে নিয়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে আছি। চাকরি ছেড়ে দেবো ভাবছি। গ্যানজাইমা লোকের চাকরি করে শেষে বেহুদা মাইর খেয়ে মরি আর কি! এই গল্পের সকল চরিত্র কাল্পনিক, আমি বাদে। কারণ আমি কাল্পনিক হলে কল্পনাটা করলাম কখন?",False mk,"প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ জাপান। আর জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের নাগোয়ায় জি-সেভেন আউটরিচ বৈঠকে যোগ দিতে ৪ দিনের জাপান সফরে রয়েছেন। শনিবার তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নকল্পে বেশ কিছু প্রস্তাবও তুলে ধরেন বৈঠকে। শনিবার বিকালে টোকিওতে বাংলাদেশের নিজস্ব দূতাবাস ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক জাপান সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ সফরের মধ্যদিয়ে দুই দেশের আস্থার সম্পর্কটি নতুনমাত্রা পাবে এমনটিই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, দীর্ঘদিন ধরে জাপান বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বিভিন্ন খাতে নিঃশর্ত সহযোগিতা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশও জাপানের সমর্থনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে এসে দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরো পোক্ত করেছে। বিষয়টি জাপানের শীর্ষ নেতৃত্ব অত্যন্ত ইতিবাচক ভাবে নিয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। জাপান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে, অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিবিড় করেছে- যা অন্য দেশগুলোর জন্যও অনুসরণীয় হতে পারে- বিশেষজ্ঞরা এভাবেই দুই দেশের সম্পর্ককে মূল্যায়ন করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জাপানের মতো দেশ যদি বাংলাদেশের সঙ্গে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ কেন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে না!স্বাধীনতার চার দশকে জাপানের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটেছে। লক্ষ্যণীয়, দুই দেশের পারস্পরিক কোনো ইস্যুতে সম্পর্কের অবনতি তো দূরের কথা, নূ্যনতম মতপার্থক্যও সৃষ্টি হয়নি। জাপান শুধু বাংলাদেশের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারই নয়, আন্তর্জাতিক পরিম-লে দুই দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের ক্ষেত্রেও জাপান ভূমিকা রাখছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর পরই অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জাপানের স্বীকৃতিদানের মধ্যদিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। পরের বছরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সফরের মাধ্যমে সম্পর্ককে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করান। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে উভয় দেশের সম্পর্ক বিভিন্ন দিকে সম্প্রসারিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, কৃষি, সামাজিক, সংস্কৃতি খাত তথা এমন কোনো খাত নেই যেখানে জাপানের অবদানকে খাটো করে দেখা যায়। উপরন্তু বাংলাদেশে নির্মিতব্য সর্ববৃহৎ অবকাঠামোগত প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণেও জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেক দেশই সহযোগিতা দিয়ে আসছে। কিন্তু উল্লেখ করার বিষয় হলো, জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে যে সহযোগিতা দিয়ে আসছে তা শর্তমুক্ত। এছাড়া কোনো ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে দেশটি নাক গলায় না। জাপানের এই মনোভাব বন্ধুত্বের এক অভূতপূর্ব নিদর্শন বলেই মনে করা যায়। স্বাধীনতার পর থেকেই জাপানের নিঃশর্তভাবে সহযোগিতা প্রদানের মধ্যদিয়েই তা স্পষ্ট। আমরা মনে করি, এই সম্পর্ককে আরো নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলে তা বাংলাদেশের অগ্রগতিকে আরো ত্বরান্বিত করবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক হামলার পর জাপান শুধু সমরশক্তিই নয়, অর্থনৈতিক শক্তিতেও সফল হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ দু-তিনটি দেশের মধ্যে জাপান একটি। ফলে জাপান আমাদের সঙ্গে থাকলে অর্থনৈতিক শক্তির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ঘুড়ে দাঁড়ানো অসম্ভব নয়। ফলে জাপান শুধু উন্নয়ন সহযোগীই নয়, আমাদের জন্য অনুকরণীয়ও হতে পারে। বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা সমীচীন। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ বর্তমানে যে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে তাতে জাপানের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেকেই এখন সহযোগিতা দিতে আগ্রহী। তবে জাপানের মতো নিঃস্বার্থ সহযোগী পাওয়া অত্যন্ত সৌভাগ্যের। জাপান যেহেতু বাংলাদেশের পাশে রয়েছে সুতরাং জাপানের এই সহযোগিতা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সরকার আরো সচেষ্ট হবে- এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৬ সকাল ১০:২৮",False fe,"নগর নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয়ের পর নগর নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয়ের পরফকির ইলিয়াস========================================== কবি শহীদ কাদরীর সঙ্গে নিউইয়র্কে প্রায়ই আমার কথা হয়। মতবিনিময় হয় বিভিন্ন প্রসঙ্গে। তার সঙ্গে মতামত শেয়ার করি। ১৫ জুন ২০১৩ শনিবার তার আয়োজনে ‘একটি কবিতা সন্ধ্যা’র ত্রৈমাসিক অনুষ্ঠানটি ছিল। সাড়ে তিন ঘণ্টার অনুষ্ঠান শেষ করে কবির সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। ঐদিনই বাংলাদেশে চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। চারটিতেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন। কবিকে বললাম, ‘শহীদ ভাই- একটা প্রশ্ন করতে চাই। যদি আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামাত তথা ১৮ দলীয় জোট জিতে আসে, তবে কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, রায় অব্যাহত থাকবে?’ কবি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। বললেন, ‘আমার মনে হয় না বিএনপি জোট ক্ষমতায় এলে এই রায় কিংবা বিচার প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাতিল করে দেবে। তবে দ- কমিয়ে দিয়ে কাজটা তাদের মতো করে শেষ করবে।’ কবি আরো বললেন, ‘বিচার বিভাগের প্রতি সম্মান দেখিয়েই বিএনপি পুরো সব কিছু বাতিল করবে না বলেই আমার বিশ্বাস।’ তার উত্তর আমি শুনলাম। আমার মনে পড়লো, জাতির জনক হত্যাকা-ের রায় অসমাপ্ত রেখেই আওয়ামী লীগ ২০০১ সালে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছিল। বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসে। তারা ফারুক-রশীদ খুনি চক্রকে জেল থেকে ছেড়ে দেয়নি। ছেড়ে দেবার সাহস করতে পারেনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর বিচারকাজ পুরো শেষ করে রায় কার্যকর করা হয়। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রেক্ষাপট কি সেরকম? নাÑ আমার মনে হয় না। মনে না হবার অনেক কারণ রয়েছে। তার কিছু আমি এখানে তুলে ধরতে চাই। ১। আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোট জিতে ক্ষমতায় যাবার আগেই প্রাথমিক শর্ত হবে জামাত নেতাদের ছেড়ে দিতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করতে হবে। ২। বিএনপির উদীয়মান নেতা তারেক রহমান যেহেতু জামাতের প্রতি উদারপন্থী, তাই তিনি সে পথেই অগ্রসর হবেন। ৩। জামাতের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের ব্যবসায়িক যে উচ্চ পর্যায়ের অবস্থান রয়েছে, এর খাতিরেই বিএনপির সিংহভাগ সিনিয়র নেতা জামাতের বড় নেতাদের নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে উঠবেন। ৪। ডানপন্থী ইসলামি দলগুলো চাইবে মহাজোট সরকারের প্রতি তাদের ক্ষোভের পুরো প্রতিশোধ নিতে। কারণ আরো হতে পারে। এসব বিষয় যে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা জানেন না, তা কিন্তু নয়। তারপরও তারা কেন উদাসীনতা দেখালেন, কিংবা দেখাচ্ছেন তা কারোই বোধগম্য নয়। চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে মারাত্মকভাবে। আমি একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক হিসেবে ১৪ জুনই ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম, সিলেট রাজশাহী ও বরিশালে বিএনপি প্রার্থীরা জিতবেন। আমার ক্ষীণ আশা ছিল খুলনায় তালুকদার আব্দুল খালেক জিততে পারেন। তাও শেষ পর্যন্ত মিলিয়ে যায়। নির্বাচনের পর অনেকে অনেকভাবে বিশ্লেষণ করছেন। তা তারা করতেই পারেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন চার প্রার্থী তাদের ব্যক্তিগত ব্যর্থতার জন্য হেরেছেন। তা-ই যদি হয়, ঐ ব্যর্থ ব্যক্তিদের আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিলো কেন? দলে আর যোগ্য নেতা ছিলেন না? আওয়ামী লীগ যে ক্ষমতাসীন হিসেবে অনেক ভুল করছে, সেই সিগনাল চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনেই এসেছিল। আওয়ামী লীগ তা পাত্তা দেয়নি। শোধরায়নি। কেন শোধরায়নি? তারপর কুমিল্লায় তাদের পরাজয় হলো। স্থানীয় সরকার নির্বাচন যদি তৃণমূল মানুষের আস্থা-অনাস্থার প্লাটফর্ম হয়, তাহলে মহাজোট তথা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানুষ ফুঁসে উঠছেÑ তা শীর্ষ ক্ষমতাবানরা বুঝে ওঠেননি কেন? প্রতিটি দলের অভ্যন্তরীণ জরিপ কর্তৃপক্ষ থাকে। যারা দলকে তৃণমূলে অবস্থানের গোপন খবর দেয়। আওয়ামী লীগের দলপ্রধান শেখ হাসিনার সেই গ্রুপটি কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমুচ্ছিল কিংবা ঘুমাচ্ছে? অথবা তারা যথাদায়িত্ব পালন করেননি। কোনটা মেনে নেবে এদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ। আওয়ামী লীগের এই সিরিয়ালি হেরে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে। তার অন্যতম হচ্ছে- শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিকে সামাল দিতে না পারা, দলের কিছু উঠতি নেতার চরম দুর্নীতির মহড়া, বিভিন্ন স্তরে দখলের রাজনীতি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু দুর্নীতির মারপ্যাঁচ, রেলের কালো বিড়ালের নগ্ন উৎপাত, বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিরোধী দল দমনে উৎপীড়ন নীতিসহ আরো বেশ কিছু কাজ। আওয়ামী লীগ কে শত্রু কে মিত্র তা চিনতে অতীতে যেমন ভুল করেছে, এই মেয়াদেও তা করেছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্য করেও একক নিরঙ্কুশতার কারণে এরশাদ ও তার দলকে পাত্তা দেয়া হয়নি। যার ফলে এবারের সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভোট পড়েছে আওয়ামী বিরোধী বাক্সে। এখন যে বিষয়টি সামনে আসছে, তা হলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবে তো? ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকা এ নিয়ে সংশয়বাদী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গেলো ১৮ জুন ২০১৩। জ্যাসন বার্ক লিখিত এই সংবাদটির শিরোনাম ছিল- ‘ভায়োলেন্স এন্ড প্রোটেস্টস কুড ডিরেল বাংলাদেশ ইলেকশনস।’ ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অবিচল থাকলেও বিক্ষোভ ও সহিংসতার কারণে বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বেড়েই চলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে রাজপথে সহিংসতা এবং আগামীতে বিরোধী দলের আন্দোলনের কারণে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ বিশৃৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা গওহর রিজভী গার্ডিয়ানকে বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ সঠিকপথে রয়েছে। সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিছু বাধা-বিপত্তি থাকলেও সংবিধানসম্মতভাবে সময়মতো নির্বাচন হবে। তবে তত্ত্বাবাবধায়ক সরকার পুনর্বহালে বিএনপির দাবির বিষয়টি উল্লেখ করে গার্ডিয়ান বলেছে, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এখনো অনেক বিষয় অমীমাংসিত রয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা রিজভী বলেন, নির্বাচনকালীন সব নির্বাহী ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং তারা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। কিন্তু এটা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে যথেষ্ট নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এরপর মূল ‘লড়াই’ শুরু হতে পারে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিতে পারে। সেগুলো হলো- ইসলামি দলগুলোর ভূমিকা, চলমান মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধের বিচার এবং তরুণ ভোটারদের সংগঠিত হওয়া। ইসলামি দলগুলোর মধ্যে জামাতে ইসলামী সবচেয়ে বড় এবং তারা বিএনপির দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তদের অধিকাংশই এ দলের নেতা। জামাতে ইসলামীর বাইরে হেফাজতে ইসলাম নামে নতুন একটি ইসলামপন্থী শক্তি দেখা দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ঐ প্রতিবেদনে। এ প্রসঙ্গে গেলো ৫ মে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের তা-বের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। অন্যদিকে জামাতও যে নতুন পরিকল্পনা করছে, তা উঠে এসেছে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রাজ্জাকের কথায়। গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, রাজপথে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকার সবারই আছে। সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে সব পক্ষের এ বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে ওঠার মধ্যেই বিপদের সঙ্কেত দেখছে গার্ডিয়ান। তাদের প্রতিবেদনের সমাপ্তি টানা হয়েছে এভাবে- ‘মনে হচ্ছে, শুধু একটি বিষয়ে সবাই একমত- তা হলো সংগ্রাম; রাজপথেই যার জয় বা পরাজয় নির্ধারিত হবে।’ শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন- যদি তত্ত্বাবধায়ক দাবি বহাল থাকে তবে হয়তো নির্বাচনই হবে না। এ কথাকে অশনি সংকেত বলে বিবেচনা করছে বিএনপি। তারা বলছে, আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চায়। সবমিলিয়ে দেশে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের প্রতি গণমানুষের আস্থা কেন এমনভাবে কমে গেলো, তা ক্ষমতাসীনদের ভাবা দরকার। অর্থমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন- মনে হচ্ছে এদেশের মানুষ একেক টার্মে দুই প্রধান দলকে ক্ষমতায় বসাবে। তার অর্থ হলো, আগামী ইলেকশনে বিএনপি জোটই ক্ষমতায় আসছে। এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনলাম। তিনি বলেছেন- জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় থাকবো, না দিলে নাই। আমি ভেবে পাই না, এই চরম দুর্যোগকালীন আওয়ামী লীগ কেন দলের মেধাসম্পন্ন, কর্মঠ, ত্যাগী নেতাদের কাছে ডাকছে না? কেন অতীতের মনোমালিন্য ভুলে গিয়ে রাজনীতির মাঠের চৌকস নেতাদের মূল্যায়ন করছে না? দেখার বিষয় হচ্ছে, আগামী কয়েক মাসের সমস্যাগুলো সরকার কিভাবে মোকাবেলা করে। যে কথাটি বলে রাখি দেশের তৃণমূল পর্যায়ের অবস্থান নির্ণয়ে আওয়ামী লীগ যদি চরমভাবে ব্যর্থ হয়, তবে এর মাশুল তাদের দিতে হবে খুব চড়ামূল্যে। যা দেশের গণতন্ত্রকামী, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষদের আরো হতাশ করে তুলবে। আর এই প্রজন্ম মুখ ফিরিয়ে নেবে অনেক বাঘা বাঘা রাজনীতিকদের দিক থেকে।------------------------------------------------------------------ দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : শনিবার, ২২ জুন ২০১৩",False rn,"বই কথন ১। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি নিঃসন্দেহে হুমায়ূন আহমেদের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এই মাপের একটি সৃষ্টিই একজন সাহিত্যিককে অমর করে রাখার জন্যে যথেষ্ট। এই উপন্যাসটি তার সময়ের সীমাকে অতিক্রম করেছে। এমনকি এই উপন্যাসের কিছু কিছু বিষয় শুধু বাঙালি জাতি বা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই নয়, বরং যে কোন সমাজের জন্যেই সমানভাবে সত্য। প্রথম পুরুষে লেখা উপন্যাস সব সময়ই পছন্দের। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলা সাহিত্যে এই ধরনের উপন্যাস খুব কমই পাওয়া যায়। ‘অচিনপুর’ নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যে এই ঘরানার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। মহৎ সাহিত্যের রসাস্বাদনে আগ্রহী সকল পাঠকের জন্যেই এই উপন্যাসটি অবশ্যপাঠ্য।২। পৃথিবীর পুরনো ও বিখ্যাত প্রায় সব বই এখন ইন্টারনেটেই পাওয়া যাচ্ছে। শুধু অনলাইনে বই পড়তে অভ্যস্ত হয়ে থাকলে আর কোন চিন্তা নেই। কষ্ট করে লাইব্রেরী গিয়ে সিরিয়াল দিয়ে লাইনে দাড়িয়ে বই নিতে হবে না। হতে পারে কোন গবেষণা করতে গিয়ে অথবা কৌতুহল বশত আপনার দু’শ বছর আগের কোনো বই দরকার। হতাশ হবেন না। বিশ্বের কোন বিখ্যাত পুরনো লাইব্রেরীতে খোজ করতে হবে না। দিন বদলে গেছে। গুগলে সার্চ দিন।৩। ""আমার লাইফটা একটু অন্যরকম। যেমন, আমরা দশ ভাইবোন৷ ছয় ভাই ও চার বোন। বাবা চাকরি করেন। বাবার চাকরির ওপর আমরা নির্ভরশীল। আমার একটা ভয় ছিল সবসময়। বাবা যদি ফট করে মারা যান, তখন আমাদের কী হবে? আমার বড় ভাই চিটাগংয়ে চাকরি নিয়ে চলে গেছেন। মেঝো ভাই সিনেমায়। থার্ড ভাই বাড়িতে থাকেন না। আমি ফোর্থ ভাই। আমিও বাড়িতে থাকি না। আমার মা একদিন বললেন, 'তোর বাবা রাতে ঘুমান না। ছাদে পায়চারি করেন।' আমি একদিন ছাদে উঠে গিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'তুমি নাকি রাতে ঘুমাও না, কেন ঘুমাও না?' তিনি পায়চারি করতে করতেই বললেন, 'তা জেনে তোমার কী? তোমার কী?' ধমক খেয়ে চুপ করে গেলাম। মায়ের ঘরে ফিরে গিয়ে দেখি মা কাঁদছেন। আমি আবার ছাদে উঠে গিয়ে বাবার সাথে চুপচাপ হাঁটতে লাগলাম। বাবা তখন বললেন, 'দেখ, আমার চারটে মেয়ে আছে, তোমরা আছ, আমি যদি মারা যাই তোমাদের কী হবে? এ চিন্তায় আমার ঘুম আসে না।' বলে বাবা কেঁদে ফেললেন। তাঁর যে শারীরিক অসুবিধা দেখা দিয়েছে তা কিন্তু বললেন না। বাবাকে এই প্রথম আমি কাঁদতে দেখলাম। আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। পরদিন থেকেই আমি কাজের খোঁজ শুরু করলাম। খোঁজ, খোঁজ আর খোঁজ।"" বলুন- কোন লেখকের কথা বলছি আমি ?৪। ‘খালের ধারে প্রকাণ্ড বটগাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়া হারু ঘোষ দাঁড়াইয়া ছিল। আকাশের দেবতা সেইখানে তাহার দিকে চাহিয়া কটাক্ষ করিলেন। …স্থানটিতে ওজনের ঝাঁজালো সামুদ্রিক গন্ধ ক্রমে মিলাইয়া আসিল। অদূরের ঝোপটির ভিতর হইতে কেয়ার সুমিষ্ট গন্ধ ছড়াইয়া পড়িতে আরম্ভ করিল। …মরা শালিকের বাচ্চাটিকে মুখে করিয়া সামনে আসিয়া ছপ-ছপ করিয়া পার হইয়া যাওয়ার সময় একটা শিয়াল বার বার মুখ ফিরাইয়া হারুকে দেখিয়া গেল। ওরা টের পায়। কেমন করিয়া টের পায় কে জানে!’ বাংলা সাহিত্যে এমন সূচনার উপন্যাস আর নাই।এমন নির্লিপ্ত করে একটা মৃত্যুঘটনার বর্ণনার মাঝে কোথায় যেন একটু সূক্ষ্ম ব্যাঙ্গ আছে।বিশেষত আকাশের দেবতার কটাক্ষ করার ব্যাপারটা।এরপর একটি মৃত্যুকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন পশু পাখির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এবং সেই বোধটুকুও চমৎকার। উপন্যাসটির নাম বলুন তো?৫। আমাকে একটা বুদ্ধি দিন। আমি আমার স্ত্রীর জন্য বই পড়তে পারছি না। অফিস থেকে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে বই হাতে নিই। কিন্তু আমার স্ত্রী রাজ্যের আজে বাজে ফালতু কথা শুরু করে। আমি বারবার বলি দয়া করে এখন বিরক্ত করো না- আমি বই পড়ছি। কিন্তু সে আমার কথা শুনে না। ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকে। বই পড়া আমার জন্য দারুন আনন্দময় একটা ব্যাপার। কিন্তু আমার স্ত্রী বারবার ব্যাঘাত ঘটায়। তাকে বুঝিয়ে বলার পরেও বুঝে না। বরং বলে তুমি তো আমাকে সময়ই দিচ্ছো না। যখন আমাকে অতি মাত্রায় বিরক্ত করে তখন ইচ্ছা করে গলা টিপে ধরি। এদিকে প্রতিদিন কোনো না কোনো বই না পড়লে রাতে আমার ঘুমই আসে না। বউকে কিছু বললে, বউ থাকে গাল ফুলিয়ে থাকে- এই জন্য পড়ায় মনও দিতে পারি না।৬। বইটির নাম হল “তবুও একদিন”। লেখক ‘সুমন্ত আসলাম’। এই প্রথম আমি এমন একটি চিন্তা ধারার বই পরলাম যা পড়ে মনে হল হুমায়ন আহমেদ বা মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর লেখনির প্লাটফর্মের বাইরে এমন অভিভূত করার মত লেখা আসলেই আছে, যা আমাদের আশে-পাশের ঘটে যাওয়া বর্তমান ঘটনাবলীর উপাদান বিদ্যমান আছে। অসম্ভব রকম ভাল লেগেছে “তবুও একদিন” বইটি। এর কিছু মৌলিকত্ব আমার অত্যান্ত ভাল লেগেছে। পারলে আপনারাও এই বইটি একটু সময় নষ্ট করে পড়ে ফেলুন। ভালো লাগবেই।৭। হুমায়ূন আহমেদের এমন কোনো বই নেই যা আমি পড়িনি। বরং প্রতিটা বই এক'শো বার-দুই'শো বার করে পড়া। এখনও প্রতিটা দিন হুমায়ূন আহমেদের কোনো না কোনো বই পড়ি। বারবার পড়ি, প্রতিদিন পড়ি। একটুও বিরক্ত লাগে না। যে কোনো বইয়ের কাহিনী আমি নিমেষেই বলে দিতে পারি। যে কোনো চরিত্রের নাম বলতেও আমার এক মুহূর্ত সময় লাগে না। এজন্য আমি অনেক গর্বিত।",False hm,"প্রবাসে দৈবের বশে ০০৭ জার্মানির বাড়িঘরগুলি কমবেশি একই রকম। টালির ছাদ, চারতালা বা পাঁচতালা বাড়ি, বেসমেন্টে কাপড় ধোয়াশুকানোর জায়গা। ছাত্রাবাসগুলিতে গড়ে বর্গমিটার পিছু সবশুদ্ধু ভাড়া পড়ে তেরো ইউরোর কিছু বেশি। পরে খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন খুঁটিয়ে দেখলাম। কয়েকজন মিলে একসাথে বাস করার ব্যাপারটা এখানে ভেগে (ভোওনগেমাইনশাফট) নামে পরিচিত। কোন অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিলে আগে থেকে জানিয়ে দিতে হয় যে ভেগে হিসেবে নেয়া হচ্ছে, তখন বাড়িঅলা ভেগে-র সদস্যদের আলাদা ভাড়াটে হিসেবে গণ্য করবে এবং সেই অনুযায়ী চুক্তি হবে। বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞাপনগুলিতে অ্যাপার্টমেন্টের মোট ক্ষেত্রফল, ঘরের সংখ্যা আর ভাড়ার রকমসকম জানানো হয়। ঘর গরম করার খরচ বাদে যে ভাড়া তাকে কাল্টমিটে বলে লোকে, সেই ঠান্ডা ভাড়া, আনুষঙ্গিক খরচ (নেবেনকস্টেন) আর নিরাপত্তা খরচ (কাউৎসিওন) সব মিলিয়ে যা আসে। তবে সরজমিন খোঁজ নিলে দেখা যায় আরো হ্যাপা। হয়তো অ্যাপার্টমেন্টে রান্নাঘর নেই, চুলা আর ফ্রিজ কিনে রান্নাঘর বানিয়ে নিতে হবে! হয়তো টয়লেটে পানির নিরাপদ সংস্থান নেই। নানা ল্যাঠার সম্ভাবনা প্রবল। একসাথে বিভিন্ন দেশের লোক থাকতে গেলেও মুশকিল। একেকজনের একেক রকম অভ্যেস। আমার পড়শী জামুয়েল যেমন চুলো প্রায় ব্যবহার করেই না, মাঝেমধ্যে চা খাওয়ার জন্য পানি গরম করে শুধু। সে কিভাবে দিনের পর দিন পাঁউরুটিতে জ্যাম, বা মাখন বা জেলি বা পনির মাখিয়ে খেয়ে যাচ্ছে দেখে আমি শুরুতে বিস্মিত হয়েছিলাম। একইভাবে জামুয়েলও আমার পর্বতপ্রমাণ মশলাসহ তরকারি রান্নার তোড়জোড় দেখে আতঙ্কিত। মিউনিখে যে ভোওনহাইমে ছিলাম, সেখানে এক ফ্লোরে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মহাদেশ থেকে কেউ না কেউ ছিলো, তখন দেখেছি চীনা বা ফরাসীরা টয়লেটের মায়া না করেই মুষলধারে হেগে রেখে চলে যায়, চীনা আর কোরিয়ানদের রান্নার পর রান্নাঘরের চেহারা আর গন্ধে গ্রাউন্ড জিরো ছাড়া আর কিছু মনে হয় না, আর একটা মাত্র কিচেন নিয়ে আট-দশজনের মধ্যে হালকা খিটিমিটি লেগে যায়। সুমন চৌধুরীর এক পড়শিনী নানা ছুতো তুলে ঝগড়া করে যেমন হোস্টেল ছেড়ে চলে গেছে। আমাদের রান্নার বদনাম কেউ করতে চাইলে একটাই করতে পারে, একটু ঝাঁঝালো ব্যাপারস্যাপার হয়। তবে সুমন চৌধুরীর নতুন কানাডিয়ান পড়শী ইতিমধ্যে ভেড়া আর গরুর মাংসের ভুনার ভক্ত হয়ে গেছে, সে রীতিমতো চেয়ে চেয়ে খায়! ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ঘরে টেবিল, চেয়ার, বইয়ের শেলফ, আলমারি আর একটা দিনে-সোফা-রাতে-খাট দেয়া হয়। জার্মানদের আসবাব অত্যন্ত মজবুত, প্রায়ই ভারি আর আর্গোনোমিক হয়। এছাড়া রান্নাঘরে ফ্রিজ, দুইপদের চুলা, ক্যাবিনেট আর খাবার টেবিলচেয়ার দেয়া হয়। নিজের ঘরে ওঠার পর ইকেয়াতে গিয়েছিলাম হাঁড়িকুড়ি সহ আর যা যা বালছাল লাগে সেগুলি কিনতে। অনেক খুঁজে, অনেক ঢুঁড়ে, অনেক দামী জিনিসের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে শ' শ' শেলফের গহীনতম কন্দর থেকে ভালোর মধ্যে সবচে' সস্তা জিনিস খুঁজে বার করে কিনেছি। তার মধ্যে আছে হাঁড়ি, সসপ্যান, ছুরি, কাটাকুটির বোর্ড, থালাবাসন, ভাজাভুজির জিনিস, চামচ-কাঁটা-ছুরি, টেবিল ল্যাম্প, খোসাসুদ্ধু কম্বল, প্রভৃতি। ইকেয়া নিয়ে পরে আরো কিছু বকার বদিচ্ছা রইলো, এখন কিছু খাই, পেটটা চোঁ চোঁ করছে।",False fe,"কবি সৈয়দ হায়দার _ বিদায়ের লালপাপড়ি শোকে ভাষা আসে না , আসে নিঃস্ব শ্বাস ফুল ঝরে , দ্যাখে কি নীল প্রজাপতি ? ছুঁয়ে যায় মৃত্যু পর্বত , মাটি রাত চায় অগ্নি - যাক পুড়ে যাক আজ যদি অন্ধকার , আজ-ই ভোর যাকে খোঁজো এখানে সে কি ছিলো আজ ? যার সাথে কথাও হয়েছিলো রাতে চ'লে যাবে ব'লেই কথা বলে গেছে ! [ নিঃস্ব শ্বাস / কাব্যগ্রন্থ - কে বিতর্কিত কে তর্কাতীত / সৈয়দ হায়দার ] -------------------------------------------------------------------- চলে গেলেন সৈয়দ হায়দার । তাঁর এই চিরবিদায়ে বাংলা সাহিত্য হারালো একজন নিভৃতচারী কবি কে। এই লেখার সাথে দুটি লেখা যুক্ত হলো, যা থেকে জানা যাবে একজন প্রকৃত কবি কে। একজন মহৎ মানুষ কে। ======================================== কবি সৈয়দ হায়দার সাধারণ হয়েও অসাধারণ সালাম সালেহ উদদীন =========================== বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গন বড় অস্থির। দেশে আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা বিদ্যমান থাকলে শিল্প-সংস্কৃতি কিংবা সাহিত্যের অঙ্গন স্থির ও ক্রমবিকাশশীল থাকার কথা নয়। তারপরও তুলনামূলকভাবে বেশ উজ্জ্বল। এ উজ্জ্বলতার ছাপ সঙ্গীতে-চিত্রকলায় যেমন স্পষ্ট, তেমনি সাহিত্যের প্রতিটি শাখাও। জাতির মানস গঠনে এবং স্বপ্নবিলাসী জাতি হিসেবে পথ চলতে সাহিত্যের ভূমিকা তুলনাহীন। তা সত্ত্বেও এ দেশে কবি-সাহিত্যিকরা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উপেক্ষিত। উপেক্ষা, বঞ্চনা, উপহাস যেন এদের নিত্যসঙ্গী। পাঁচ-দশজন ব্যতিক্রমবাদে লেখকদের সামাজিক মর্যাদা প্রায় শূন্যের কোটায়। মেধা ও শ্রম দিয়ে যে লেখক সারাজীবন লিখে চলেন, ওই লেখক পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনের কাছেও উপেক্ষিত হন, গণ্য হন হাসির পাত্র হিসেবে। যেন লেখালেখি করা একটা অপরাধ। অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র বলেছেন- ‘পা থাকলেই হাঁটা যায়, হাত থাকলেই লিখা যায় না।’ বাংলাদেশে যারা লেখেন- তাদের অধিকাংশই মূল্যায়নহীনভাবে রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ান। অবহেলা-অবজ্ঞার শিকার হন। তাদের হাতেরই কী মূল্য আর পায়েরই বা কী মূল্য। মুষ্টিমেয় খ্যাতিমান লেখক ছাড়া প্রকাশকরা তাদের বই প্রকাশ করতে চান না। যেসব লেখকের সামাজিক-রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা রয়েছে, রয়েছে বিপুল অর্থবিত্ত- তাদের কথা আলাদা। ওই লেখকদের একটা অংশ নিজ খরচে বই প্রকাশ ও বিপণন করেন। আবার এমনও বিত্তবান মানুষ এ সমাজে রয়েছেন, যারা অর্থের বিনিময়ে নিজের নামে লেখা প্রকাশ করে খ্যাতিমান হয়েছেন। তাদের গ্রন্থের যখন প্রকাশনা উৎসব হয় এবং তারা বাহ্বা কুড়ান- তখন ওই ভাড়াটে লেখক হন পেছন সারির দর্শক। অর্থের মানদন্ডে অন্য সবকিছু বিচারের পাশাপাশি সাহিত্যের বিচারও ইদানীং হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যেসব লেখককে পুরস্কৃত করা হয়, ওই পুরস্কারও থাকে অর্থ ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আগেই ঘটা করে উৎসব ও স্তুতিমুখর পরিবেশে নিজের জন্মদিন পালন করা হয়। এমনকি জন্মদিনের সচিত্র সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশের জন্য সম্পাদকের কাছে ধরনা ধরেন। প্রকাশিত হয় বিশেষ সংখ্যাও। এ যখন দেশের সাহিত্যাঙ্গনের পরিস্থিতি, এমন একসময়ে চলে গেলেন সত্তর দশকের অন্যতম প্রধান কবি, গীতিকার ও শুল্ক কর্মকর্তা সৈয়দ হায়দার। তিনি ১৯৫০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার সাতছৈয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন ২৯ ডিসেম্বর ২০০৯ সালে। তিনি দুই মাস ধরে লিভার ক্যান্সারে ভুগছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেয়া সৈয়দ হায়দার স্বাধীনতার পরপরই সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। এ পর্যন্ত তার কাব্যগ্রন্থ পঁচিশটি। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কোনো সুখবর নেই’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ভুলগুলো নাড়া দেয় (১৯৮৫), ধ্বংসের কাছে আছি (১৯৮৬), ভাঙলে মাটির মতো (১৯৮৬), পাতা থেকে পাখি (১৯৯১), বয়স যখন দিচ্ছে তাড়া (১৯৯৫) ইত্যাদি। মৃত্যুর মাস দুয়েক আগে এক সকালে মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে তার সঙ্গে আমার হঠাৎ দেখা। তাকে দেখে আঁতকে উঠলাম। ঘর্মাক্ত শরীর, স্বাস্থ্য ভেঙে গেছে। ভাবলাম, ডায়াবেটিক রোগী। তখনো জানতাম না, নীরব ঘাতক ক্যান্সার তার শরীরে বাসা বেঁধেছে। অভিযোগের কণ্ঠে বললাম- আমি যায়যায়দিনে যোগ দিয়েছি প্রায় দেড় বছর হলো। আমার দুর্ভাগ্য, আপনার একটি লেখা ছাপারও সুযোগ হলো না- না কবিতা, না কলাম। আমার অভিযোগকে তিনি আমলে নিলেন না। বললেন- আগামী মাস থেকে তোমার বাসার কাছাকাছি, মুনসুরাবাদ যাচ্ছি। নতুন বাসায় গিয়ে তোমাকে লেখা দেবো। ওইদিন বাসায় যেতে অনেক অনুরোধ করলেন। সময়ের অভাবে যেতে পারলাম না। আমার সঙ্গে ছিলেন লেখক-সাংবাদিক জাহিদ রহমান। এর মাস ছয়েক আগে ইকবাল রোড থেকে তার অফিসের গাড়ি করে আমাকে শ্যামলী নামিয়ে দিলেন। ওইদিন লেখা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, আমি তাকে অনুরোধ করি আর তার কবিতা প্রকাশিত হয় অন্য পত্রিকায়। ফোনে তাকে বিষয়টি জানালে তিনি বললেন ফোন করে লেখা পাঠিয়ে দেবো। লেখা পাঠানোর তিনি আর সুযোগ পেলেন না। তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় নব্বই দশকের শুরুতে। আজকের কাগজের অন্যতম পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর যে ক’জন খ্যাতিমান লেখকের কলাম জোগাড় করার শর্ত দিয়েছিলেন, তাদের একজন ছিলেন সৈয়দ হায়দার। তখন তার কাছে আমি কবিতা নয়, কলাম চেয়েছিলাম। তখনো তিনি ইকবাল রোডের একই বাসায় থাকতেন। প্রচারবিমুখ হায়দার ভাই আমার প্রিয় মানুষদের একজন। তার কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল- যেমন তিনি ফোন ধরে হ্যালো বলতেন না, বলতেন ‘বলুন’ এবং কথা শেষে বলতেন ‘ছাড়ছি’। তিনি ছিলেন মাটির মানুষ। আমি তাকে কখনো রাগতে দেখিনি। ১৯৯৩ সালে আজকের কাগজে আমি তার কাব্যগ্রন্থ ‘পাতা থেকে পাখি’ আলোচনা করি। ঠিক আলোচনা বলা যাবে না, সমালোচনাই বলতে হবে। তিনি আমাকে বললেন, বেশ রসিয়ে রসিয়ে লিখেছো। ভালো হয়েছে। আমার ধারণা, সত্তর দশকের এমন অনেক ‘নাক উঁচু’ কবি রয়েছেন- যারা আজো জীবিত, তাদের বই সম্পর্কে এমন সমালোচনা লিখলে হয় তারা আমাকে মারতে আসতেন, না হয় সম্পাদককে নালিশ করে চাকরি খাওয়ার হুমকি দিতেন। সত্তর দশকে যারা একটু ভিন্ন মাত্রার কবিতা লেখেন, সৈয়দ হায়দার ঠিক ওই গোত্রের কবি ছিলেন না। তারপরও তার কবিতা আমার ভালো লাগতো। এক ধরনের সহজবোধ্যতা তার কবিতার প্রধান দিক। তার কবিতায় নিরীক্ষার উপস্থিতি কম থাকলেও তিনি যেসব উপমা-চিত্রকল্প ব্যবহার করেছেন সহজ ভাষায়, তা পাঠক আকৃষ্ট করার মতো। আমার লেখার তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ অনুরাগী। যখনই আমার সঙ্গে দেখা হতো, তিনি ‘অদূরবর্তী কেউ’ (গল্পগ্রন্থ) আর ‘জন্মদৌড়’ উপন্যাসের প্রশংসা করতেন। প্রশংসার মাত্রা এতোই ব্যাপক হতো যে, আমার মনে হতো তিনি মিথ্যা বলছেন। গত বিশ বছরে ইকবাল রোডের বাসায় কমপক্ষে ত্রিশবার গিয়েছি। কবি মোস্তফা মীর, সাংবাদিক আবুবকর চৌধুরীসহ গিয়েছি বেশ ক’বার। তার অতিথি আপ্যায়নের কথা ভোলার নয়। তার উৎসাহে ১৯৯৩ সালে সাপ্তাহিক খবরের কাগজে দুই সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব সুরকার দেবু ভট্টাচার্য (প্রয়াত) এবং সঙ্গীতশিল্পী বশীর আহমেদের সাক্ষাৎকার নিই। তিনি চতুর্পাশের নেতিবাচকতার মধ্যে সবসময় ইতিবাচকতায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি সাপ্তাহিক খবরে কাগজে ‘সাড়াশব্দ’ নামে নিয়মিত কলাম লিখতেন, যা পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। আজকের কাগজ বন্ধ হওয়ার আগপর্যন্ত তিনি সেখানে অনিয়মিত কলাম লিখতেন। যতোদিন জীবিত ছিলেন, সরকারি চাকরির পাশাপাশি নিরলস ও নিরবচ্ছিন্নভাবে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেছেন। যদিও তার লেখক-বন্ধুরা তার লেখা পছন্দ করতেন না। কট্টরপন্থী দু’চারজন আমার সামনে আজেবাজে মন্তব্যও করতেন। সম্ভবত তার কানেও এসব কথা পৌঁছতো। তাতে কী আসে-যায়, হায়দার ভাই চলতেন নিজের মতো করে। তার নিজস্ব জগৎ ছিল সমৃদ্ধ। সহনশীল, পরোপকারী, বন্ধুবৎসল এ মানুষটি যে এভাবে পরপারে চলে যাবেনÑ তা কখনো ভাবতে পরিনি। সৈয়দ হায়দারকে কখনই মিডিয়ার পেছনে ছুটতে দেখিনি। ‘আমার ছবি, লেখা ছাপো, কাউকে দিয়ে আমার কবিতার ওপর লেখাও’- এ ধরনের অনুরোধ আমার দুই দশকের সম্পাদনা জীবনে তাকে করতে শুনিনি। সম্ভবত এই একটি কারণেই তিনি আমার কাছে নমস্য। তিনি সবসময়ই আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। বছর দুয়েক আগে আমার সদ্য প্রকাশিত উপন্যাস ‘নারীর বিপরীতে একজীবন’ যখন তাকে উপহার দিতে বাসায় গেলাম- তখন সকাল ৯টা। ফোন করে আগের দিন আসার বিষয়টি জানিয়েছিলাম তাকে। তিনি যখন নাশতার টেবিলে আমাকে আহ্বান করলেন- তখন দেখি রীতিমতো দুপুরের খাবার। অথচ এ শহরে এমন অনেক লেখক আছেন, বাসায় দুই ঘণ্টা আড্ডা মারলে এক কাপ চা পর্যন্ত অফার করেন না। যেন সামাজিক আচার-আচরণ-সৌজন্যতাবোধ সম্পর্কে তারা একেবারে অজ্ঞ। লেখকরা তো সমাজেরই মানুষ। অতিথিপরায়ণ হতে, ভালো ব্যবহার করতে তাদের আপত্তির জায়গাটা কোথায় তা বুঝতে পারছি না। এ ক্ষেত্রে আহমদ শরীফ, নীলিমা ইব্রাহিম, মমতাজউদ্দীন আহমদ এবং হাসনাত আবুল হাই হচ্ছেন অতিথিপরায়ণ। শরীফ স্যার শুধু আপ্যায়ন করতেন না, তিনি পিঠে হাতে রেখে বাসার গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন। এ নিয়ে আপত্তি করলে বলতেন, ‘অতিথি হচ্ছে নারায়ণ, অতিথিকে অমর্যাদা করতে নেই।’ একজন মানুষকে স্মরণ রাখার উৎকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে তার ভালো ব্যবহার বা ভালো মানুষিপনা। একজন ভালো ও জনপ্রিয় লেখককে মনে রাখে তার পাঠক, আর একজন ভালো মানুষকে মনে রাখেন সবাই। হায়দার ভাই একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি আর আজ আমাদের মাঝে নেই, মিলিয়ে গেছেন দূর আকাশে সুদূর নীলিমায়। তার মৃত্যুতে সাহিত্যাঙ্গনে শূন্যতার সৃষ্টি হলো আর আমি হারালাম একজন প্রিয় মানুষকে। তার সাহিত্যকর্মই তাকে পাঠকদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে। # ( দৈনিক যায়যায়দিন/ ৮ জানুয়ারি ২০১০ ) ======================================== বন্ধু কবি সৈয়দ হায়দারের প্রতি আফরোজা পারভীন ------------------------------- সৈয়দ হায়দার : জন্ম ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, মৃত্যু ২৯ ডিসেম্বর ২০০৯ ------------------------------------------------------------------- এই লাইনগুলো বড় প্রিয় ছিল। মানুষ বড় কাঁদছে/ তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও/ এসে দাঁড়াও ভেসে দাঁড়াও/ এবং ভালবেসে দাঁড়াও, শুধু লাইনই আওড়াতেন না। কবিতার মর্মবাণী নিজ জীবনে গভীরভাবে অনুসরণ করতেন কবি সৈয়দ হায়দার। যে মানুষ অসহায়, যে মানুষ দুঃখী, যে মানুষ নির্যাতিত সবসময় তাদের পাশে দাঁড়াতে দেখেছি তাকে। সে জন্য তাকে কাউকে ডাকতে হয়নি, কাউকে বলে দিতে হয়নি। সবার আগে এসে নিজেই দাঁড়িয়েছেন। দুঃখীর মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টা করেছেন। সর্বদা গমগম করত তার বাড়ি। ডাইনিং টেবিলে প্লেটের পর প্লেট পড়ছে, ড্রইংরুমের সোফায় বসে গল্প-গুজব চলছে। বিছানায় জায়গা না হওয়ায় মেঝেতে বিছানা পড়েছে। তার বাড়িতে গিয়ে না খেয়ে কেউ এসেছেন এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। সে কারণে তার মৃত্যুসংবাদে লোকের ঢল নেমেছিল হাসপাতালে। বন্ধু আর চেনা মহলে নেমে আসে বিষণ্নতার কালো ছায়া। এমন হৃদয়বান মানুষ সমাজে ভীষণ প্রয়োজন আজ। সৈয়দ হায়দার মানুষকে প্রশংসা করতে ভালবাসতেন। বন্ধু আর চেনা মানুষের ছোটখাটো সাফল্যকে অনেক বড় করে দেখতেন। মানুষকে পরিচয় করাতে গেলেই বলতেন, অনেক বড় লেখক, খুব বড় মনের মানুষ। প্রশংসা করতে করতে প্রগলভ হয়ে উঠতেন তিনি। যার প্রশংসা করা হতো মাঝেমধ্যে সে বিব্রতও হতো। কিন্তু মানুষকে ভালো বলায়, বড় করাতেই যেন ছিল তার আনন্দ। সম্পাদক সাংবাদিক বেনজির আহমেদ মাঝেমধ্যে হাসতে হাসতে বলতেন, 'হায়দারের কাছে সবাই অসাধারণ।' ২৯ ডিসেম্বর রাতে জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্ট নিয়ে যখন হায়দার ধুঁকছিলেন সে দৃশ্য ছিল অসহ্য কষ্টের। অত দীর্ঘদেহী মানুষটি কুঁকড়ে কেমন ছোট হয়ে গেছেন! শুধু অতিকষ্টে শ্বাস টানার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। হাসপাতালের সবার চোখে জল। সবাই একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ইসিজি লাইনটির দিকে। ওটা স্ট্রেট হয়ে গেলেই সব শেষ। দেখছিল স্যালাইন ড্রপ বন্ধ হয়ে যায় কি-না। বন্ধ হয়েছিল। ইসিজি লাইন স্ট্রেট হয়েছিল রাত ৯টা ২০ মিনিটে। আমাদের ছেড়ে প্রিয়তম স্ত্রী খুকু ভাবি, প্রাণপ্রিয় পুত্র শুদ্ধ আর বৃদ্ধা মাকে কাঁদিয়ে চিরতরে চলে গেলেন হায়দার। লন্ডনপ্রবাসী একমাত্র পুত্রের মুখটিও দেখে যেতে পারলেন না। পরিচয়ের পর থেকে প্রায় প্রতিটি দিন সৈয়দ হায়দার আমাকে লেখার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করেছেন। আমার না পড়া কত বই যে সে দিয়েছেন, আমাকে দিয়ে পড়িয়েছেন তার কোনো শেষ নেই। বইগুলো পড়ে আমি বুঝতে পেরেছি আমার লেখা কতটা অসার। বুঝতে পেরেছি কত অল্প লেখাপড়া নিয়ে আমি লিখতে শুরু করেছিলাম। আমরা কয়েক বন্ধু মিলে খুব বেড়াতাম। মাঝে মধ্যেই ছুটির সকালে বেরিয়ে পড়তাম, ফিরতাম গভীর রাতে। কখনও দু-চারদিন ছুটি নিয়ে বেড়াতে বেরোতাম। এই ভ্রমণকে আমরা বলতাম 'গতিভ্রমণ।' হায়দার, আতাহার খান, শিহাব সরকার, বেনজির আহমেদ, আবু করিম ,পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, নুরুল আমিন আর আমি চষে বেড়িয়েছি সারা বাংলাদেশ। কখনও কখনও আমাদের সঙ্গী হয়েছেন তিতাশ চৌধুরী আর খায়রুল আলম সবুজ। বান্দরবান, কক্সবাজার, মহেষখালী থেকে শুরু করে বাড়ির কাছের ময়মনসিংহ পর্যন্ত একাধিকবার গেছি। বারবিকিউ বানিয়ে খেয়েছি। গভীর রাতে কান পেতে সাগরের গর্জন শুনেছি। আদিবাসীদের ঘরের কাঠের মেঝেতে বসে খেয়েছি তাদের নিজস্ব খাবার। শৈলপ্রপাতের ঝরনায় হাত ডুবিয়েছি। বেড়াতে গেছি হায়দারের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের সাতসৈয়া গ্রামে। ঘুরে বেড়িয়েছি সারা গ্রাম। দেখেছি গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতার সঙ্গে তার গভীর সখ্য। একজন মানুষ যে কত মানুষের ভালোবাসা পেতে পারে হায়দারকে না দেখলে তা বুঝতাম না। ঢাকা শহর ভালোবাসতেন না হায়দার। জীবনের বিরাট অংশ ঘুরে বেড়িয়েছেন মফস্বলে। যেখানেই গেছেন সেখানকার সাহিত্য সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে মিশে গেছেন সহজেই। শেষ জীবনে খুলনায় স্থায়ীভাবে বসবাস করার ইচ্ছা ছিল তার। তাই একটু একটু করে খুলনা অভিমুখী হচ্ছিলেন। তার মধ্যেই এই বিপর্যয়। মাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। বারবার ছুটে যেতেন মায়ের কাছে। তাই চরম বিপর্যয়ের খবরটা জ্ঞান থাকা অবধি মাকে জানাতে দেননি। কাফকার ভক্ত ছিলেন হায়দার। কিন্তু নৈরাশ্যবাদী ছিলেন না। তবে মাঝেমধ্যেই বলতেন মানুষের জীবনের অসহায়ত্বের কথা। বলতেন মানুষমাত্রেই নিঃসঙ্গ, বিচ্ছিন্ন, একা। তাই মেটামরফসিসের নায়ক রেলের সেলসম্যান গ্রেগা সামছাকে তেলাপোকায় রূপান্তরিত হয়েও সময়মতো কাজে পেঁৗছানোর কথা ভাবতে হয়েছে। আসলেই মানুষ যে কত অসহায় তা হাসপাতালে জীবনের শেষ দিনগুলোতে কবি সৈয়দ হায়দারকে দেখে উপলব্ধি করেছি। আর একাই তো তাকে চলে যেতে হয়েছে সব ছেড়েছুড়ে। কায়কার ভক্ত হয়েও ছিলেন বড়বেশি জীবনবাদী। সেজন্যই হয়তো তার বইয়ের নাম 'আঁধারের শেষ ভালোবাসি।' কবিতা, গদ্য, ছড়া, কলাম সব মাধ্যমেই কাজ করেছেন হায়দার। তার লেখা অনেক জনপ্রিয় গান বেতার-টিভিতে শোনা যায়। বেতারের প্রতি ভালোবাসা ছিল খুব। তাই শত ব্যস্ততার মধ্যেও বেতারে প্রোগ্রাম করতেন নিয়মিত। গদ্য নিয়ে ভালো কিছু কাজ করার ইচ্ছা ছিল তার। ইচ্ছা ছিল একটা পত্রিকা বের করার। হলো না। হাসপাতালের শেষ শয্যায় শুয়েও ছটফট করছিলেন কিছু লিখতে পারছিলেন না বলে। হায়দারের লেখালেখি নিয়ে অনেকেই লিখবেন। আজ আমি আমার প্রিয় বন্ধুর কিছু স্মৃতিচারণ এখানে লিখতে চাই। লাইফ সাপোর্টে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত অনর্গল কথা বলেছেন, হেসেছেন, ডাক্তারদের সঙ্গে মজা করেছেন। কোথায় কষ্ট, ডাক্তাররা জিজ্ঞাসা করলে বলেছেন, 'মনে'। হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সরা তার বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। আমরা যারা হাসপাতালে যেতাম তাদের নিয়ে তার দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। কী করে ফিরব, খেয়েছি কি-না, শরীর খারাপ কি-না এসব প্রশ্ন ছিল তার নিয়মিত। বাড়ির মতোই হাসপাতালেও জোর করে চা-কফি খাওয়াতেন। হায়দার বড় কবি ছিলেন। তার চেয়েও বড় কথা তিনি ছিলেন অনেক বড় মানুষ। বড় লেখক পাওয়া যায়। কিন্তু তার মতো বড় মানুষ খুঁজে পাওয়া আজকাল সহজ ব্যাপার নয়। তার সঙ্গে যারা মিশেছেন প্রত্যেকেই গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন তা। তিনি ছিলেন পুরোপুরি আধুনিক। এই আধুনিকতা প্রতিফলিত হতো তার জীবনাচরণে। বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। তাই তার বাসায় অন্য ধর্মের মানুষ বছরের পর বছর কাটিয়ে দিত নিজের বাসার মতো। শেষদিকে নিজের ভঙ্গুর অবস্থা বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন হায়দার। খুকুভাবির জন্য হয়ে পড়েছিল ভীষণ চিন্তিত। ডাক্তারের হাত জড়িয়ে ধরে বলেছিল, 'মাত্র একটা মাস আমাকে বাঁচিয়ে দিন ডাক্তার সাহেব।' সত্যিই কি হায়দার চলে গেছেন! কেন যেন বিশ্বাস হয় না। এখনও ভুল করে মোবাইলে নাম্বার টিপি । এই বুঝি শুনব, বলছি কিংবা বলুন। তিনি কখনও 'হ্যালো' বলতেন না। আমার মোবাইলে সেফ করা হায়দারের তিনটি নাম্বার। নাম্বার রেখে হায়দার চলে গেছেন। মানুষ কত অসহায়! ছোট একটি যন্ত্রের শক্তি আর স্থায়িত্ব মানুষের চেয়ে কত বেশি বলে হঠাৎ মনে হয়। হায়দার, প্রিয় বন্ধু আমার, এই গভীর রাতে জেগে জেগে লিখছি আপনার কথা। লেখা শেষ করে ফোন করব আপনাকে। জবাব পাব তো বন্ধু। সেই ভরাট কণ্ঠ বলবে তো- শুভরাত্রি? ( দৈনিক সমকাল / ৮ জানুয়ারি ২০১০ ) সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:১৭",False ij,"None কবি মুকুন্দদাস। ব্রিটিশ শাসনশোষনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন এই কবি। বিলেতি পন্য বর্জন এবং ব্রিটিশের শাসন-শোষনের কথা তিনি অত্যন্ত সহজবোধ্য ভাষায় বর্ণনা করতে পারতেন। লিখেছিলেন: ‘ ছিল ধান গোলা ভরা/শ্বেত ইঁদুরে করল সারা।’ কাজেই ইংরেজ সরকার কবিকে গ্রেপ্তার করে। তারপর বিচারের নামে প্রহসন। তিন বছরের কারাদন্ড। জরিমানার অর্থ জোগান দিয়ে হন সর্বস্বান্ত। তাইই বলছিলাম-মুকুন্দদাস কেবলি চারণকবি ছিলেন না -ছিলেন তার চাইতেও অনেক বড় ... ১৮৭৮ সালে মুকুন্দদাসের জন্ম। কোথায়? ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে। পরিবারটির ছিল নৌকার কারবার। অর্থাৎ মাঝি ...যা হোক। মুকুন্দদাসের পিতার নাম গুরুদয়াল। তিনি আর নৌকা না বেয়ে পরিবারসমেত বরিশাল চলে এলেন । বরিশালের ডেপুটি আদালতে আরদালির কাজ নিলেন। ছেলে বড় হচ্ছিল-মানে মুকুন্দ। আসলে মুকুন্দর নাম ছিল- যজ্ঞেশ্বর। গুরুদয়াল ছেলের এই নামই রেখেছিলেন। যজ্ঞেশ্বর রামানন্দ নামে এক সাধকের কাছে দীক্ষা নেয়। এই রামানন্দ সম্ভবত কালীসাধক ছিলেন-সম্ভবত তিনি রামকৃষ্ণপরমহংসদেবের কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন। রামানন্দের কাছে দীক্ষা নেওয়ার পর যজ্ঞেশ্বর নতুন নাম গ্রহন করেন। মুকুন্দদাস। মুকুন্দদাসের কাব্যভাবনায় কালী মায়ের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। দানব দলনী হয়ে উন্মাদিনী, আর কি দানব থাকিবে বঙ্গে।। মুকুন্দদাস বরিশাল জেলা স্কুল ও ব্রজমোহন স্কুলে এন্ট্রাস পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ফাইনাল পরীক্ষায় অবশ্য কৃতকার্য হতে পারেননি। যা হোক। বড় গান ভালোবাসতেন। তখন মুকুন্দর বয়স উনিশ। বীরেশ্বর গুপ্তের কন্ঠে শুনলেন কীর্তন-যোগ দিলেন কীর্তনদলে। পরে নিজেই একটি গানের দল গঠন করে গানের জগতে ডুব দিলেন। (আরও অনেক অনেক বছর পর একই জায়গায় -অর্থাৎ বরিশালে- আলতাফ মাহমুদ গানের দল করে গান গাইবেন। আলতাফ মাহমুদও সুর করবেন ভাষার গান ...স্বাধীনতার গান ...বাংলা এভাবে ...) সময়টা বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভকাল। ঐ সময়ে সারা ভারতবর্ষজুড়ে চলছিল স্বদেশী আন্দোলন। বরিশালের নিস্তরঙ্গ জীবনেও আছড়ে পড়েছিল সেই উত্তাপ। বরিশালের কংগ্রেস নেতা তখন অশ্বিনীকুমার দত্ত। মুকুন্দদাস তাঁর কাছে দীক্ষা নিলেন। অশ্বিনীকুমার দত্ত বললেন, মুকুন্দ, তুমি তো ভালো গান লিখ। গান লিইখা ইংরেজগোরে জ্বালাইয়া পোড়াইয়া দাও দি। দিমু গুরু। মুকুন্দদাস আপ্লুত হয়ে বললেন। গান লিখলেন মুকুন্দদাস । কী গান? যে গান আমরা এই একুশ শতকেও শুনি। ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে, মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে।। তাথৈ তাথৈ থৈ দ্রিমী দ্রিমী দং দং ভূত পিশাচ নাচে যোগিনী সঙ্গে। দানব দলনী হয়ে উন্মাদিনী, আর কি দানব থাকিবে বঙ্গে।। সাজ রে সন্তান হিন্দু মুসলমান থাকে থাকিবে প্রাণ না হয় যাইবে প্রাণ।। লইয়ে কৃপাণ হও রে আগুয়ান, নিতে হয় মুকুন্দে-রে নিও রে সঙ্গে।। বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায় মুকুন্দদাসের লেখা গান বেরুল। তুমুল হইচই পড়ে গেল। লোকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধু হল। ভারি তেজ ও উদ্দীপনা সে গানে। গান লিখে- গান গেয়ে জীবনে বহু মেডেল পেয়েছেন মুকুন্দদাস। ১৯০৮ সালে মুকুন্দদাসের লেখা “মাতৃপূজা” নামে গানের একটি সংকলনও প্রকাশ হয়। সাধনসঙ্গীত, পল্লীসেবা, ব্রহ্মচারিণী, পথ, সাথী, সমাজ, কর্মক্ষেত্র প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এর কয়েকটি তাঁর জীবদ্দশায় এবং বাকিগুলি মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়। আগেই বলেছি ব্রিটিশবিরোধী গান লিখে ৩ বছর কারাভোগ করেছেন মুকুন্দদাস। কিন্তু দমে যান নি। ১৯২২ সালের অসহযোগ আন্দোলন ও ১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। গানে গানে আগুন জ্বালিয়ে দেন। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল তখন বেঁচে। তাঁদের কানে মুকুন্দদাসের গান পৌঁছল। তাঁরা মুকুন্দদাসকে চারণকবি বলে অবহিত করলেন। কিন্তু, মুকুন্দদাস কি কেবলি চারণকবি? এই প্রশ্নটি তরুন প্রজন্মের কাছে রইল। রাস্ট্রদ্রোহী মামলায় জরিমানার অর্থ জোগান দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন মুকুন্দদাস। বিত্তশালী পরিবারের ছেলে ত ছিলেন না তিনি ...সেই সময় তাঁর পরিবারটিকে অন্নের সংস্থান করতে কী রকম যুদ্ধ করতে হয়েছিল একবার কল্পনা করে দেখুন ... তারপরও আমরা তাঁকে কেবলি চারণকবিই বলি। তাঁর ছবি নতুন প্রজন্মকে দেখাব বলে ইন্টারনেট ঘেঁটেও ভালো একটা ছবি অবধি পাওয়া গেল না ... এই আক্ষেপ। ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে ...গানটি নিয়েছি আবু নাঈমের ব্লগ থেকে Click This Link সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:৩২",False ij,"সন্ত নানক সন্ত নানক। ষোড়শ শতকের এক ভারতীয় সন্ত। যিনি মনে করতেন, মানবজীবনের একমাত্র মোক্ষ ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ । সে জন্য ঐকান্তিক সাধনার প্রয়োজন। তবে আত্বকেন্দ্রিক মানুষ কখনও সাধনায় সিদ্ধি লাভ করতে পারে না। আত্বকেন্দ্রিক মানুষ মায়ার ঘোরে পড়ে ক্ষণিকের সুখলাভ করে মাত্র ...নানক আরও বলেছিলেন যে ...উচ্চতম সত্যকে জানতে হবে ঠিকই, তবে তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন সত্যপূর্ন জীবনযাপন করা ... নানক এর জন্ম হয়েছিল অবিভক্ত ভারতবর্ষে ...তালভানদি গ্রামটি ছিল বর্তমান কালের পাকিস্থানের লাহোরের কাছে। এখন অবশ্য জায়গাটির নাম নানকানা সাহিব। সেই তালভানদি গ্রামেই বাস করতেন ত্রিপ্তা দেবী নামে এক নারী। ভারি শ্রীময়ী দেখতে ছিল ত্রিপ্তা । ঢলোঢলো। শ্যামলা। গাঁয়ের মেয়েরা তাঁকে ঠোঁট টিপে হাসত। আর বলত, দেখিস, তোর কোলআলো করে একদিন এক শিশুর জন্ম হবে।তাই হল কিন্তু।১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দ। এপ্রিল মাস, ১৫ তারিখ।ত্রিপ্তা দেবীর ঘর আলো করে জন্ম হল এক শিশুর।যে শিশুটি বড় হয়ে জাতপাতের বিরুদ্ধে প্রবল রুখে দাঁড়িয়েছিল।শিশুটির বাবার নাম ছিল কল্যান দাশ বেদী। কল্যান দাশ বেদী ছিলেন জাতে ক্ষত্রিয়, তবে পেশায় পাটোয়ারি। পাটোয়ারি মানে কিন্তু হিসাব রক্ষক, ঠিক পাটচাষি নয়।তালভানদি গাঁয়ের জমিদার ছিলেন মুসলমান। তখন তো পাঞ্জাবে মুসলিম শাসন চলছে। তবে মুগলরা তখনও দিল্লীতে ঠিক অধিষ্ঠিত হয় নি। (এখানে আরও বলে রাখি যে পাটোয়ারি উপাধী দেখে অনেকেই মনে করেন যে পাটোয়ারিরা পাটচাষি কিংবা পাটজাত সামগ্রীর ব্যবসা করেন। আসলে তা নয়। পাটোয়ারিরা ছিল হিসাবরক্ষক। মুগল আমলে পদটির সৃষ্টি। )তো, শিশুটির নাম রাখা হল নানক। মায়ের ইচ্ছেতেই কি? কে বলতে পারে?শিশুটি যথাসময়ে বড় হল। বালক হল। বালক নানক ছিল অন্যরকম। কেমন, চুপচাপ, লাজুক,অল্পভাষী, গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে খেলে না। একা একা থাকে। আর কী যেন ভাবে। আসলে তেমনই তো হওয়ার কথা। কেননা সে বড় হয়ে বলবে ...""Realisation of Truth is higher than all else. Higher still is truthful living""নানকের এক বোন ছিল। নাম, নানাকি। নানক বোনকে বড্ড ভালবাসত। তবে মুখে বলত না। বোন যা আবদার করত তা সে দৌড়ে এনে দিত। এভাবেই নানক ছিল অন্য রকম।তারপর একদিন কিশোর বয়েসে পৌঁছল নানক।কাম নিয়ে কেমন এক উদগ্র কৌতূহল ছিল তার আশৈশব। কাম এড়িয়ে প্রেমের আরাধনা করতে চায় কিশোর। পারে না। পিছলে যায়। মনে মনে গান বাঁধল-করি মানা কাম ছাড়ে না মদনেআমি প্রেমরসিক হব কেমনে?শেষমেশ বিয়ে করল নানক। দুটি সন্তানও হল তার বউটির। ভালো কথা। তো এখন সংসার চলবে কি ভাবে? বাবা তো তেমন কিছু রেখে যাননি। নানকের টনক নড়ল।তো, সেই সময় পাঞ্জাবের সুলতানপুর শহরের প্রাদেশিক শাসনকর্তা ছিলেন দৌলত খান লোদী। তারই শরনাপন্ন হলেন নানক। যাহোক। দৌলত খান লোদী অধীনে কোনওমতে পাটোয়ারির চাকরি জুটল একটা।পাটোয়ারির চাকরি করছে নানক। মন বসে না। হিসেবে গড়মিল হয়ে যায়। যার অন্তরে অসীমের প্রেরনা- তার ওই সামান্য হিসেবনিকেশে কী হয়।বয়স নানকের যখন তিরিশ ... ঠিক তখনই ভিতরের ডাক শুনতে পেল সে।কে কথা কয় রে দেখা দেয় নানড়েচড়ে হাতের কাছেখুঁজলে জনম-ভর মেলে না।দুর ছাই! চাকরি করে কে! আমি অনন্তের পাখি।নানক দৌলত খান লোদীর কাচারি ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন।কোথায়?পথে।কী আশ্চর্য! ঠিক সেই সময়ই মারদানার সঙ্গে পরিচয় হল। পথে। মারদানা ছিলেন মুসলিম সুফি। দীর্ঘদেহী ফরসা কালো পাঞ্জাবি পরা উদার মনের এক মানুষ মারদানা। কাছে গেলে আতরের তীব্র গন্ধ পাওয়া যায়। ঝোলার মধ্যে গোটা দুই জালালি কবুতর। শুকনো কিসমিস আর ফারসি ভাষায় লেখা হাল্লাজের পুথি।এই রকম একটা জ্ঞানী ছন্নছাড়া সংসারত্যাগী মানুষের সান্নিধ্য পেয়ে ভারি আনন্দ হল নানকের।তো, নানকের মনে তখন বোধি লাভের প্রচন্ড আশা। বোধি মানে- জীবনজগৎ সম্বন্ধে একটি স্বচ্ছ ধারনায় পৌঁছনো। বোধি লাভ করতে হলে তীর্থে যেতে হয়। কাজেই, মারদানার সঙ্গেই ভারতবর্ষের বিখ্যাত সব তীর্থগুলি দর্শন করল নানক। বৃন্দাবনেও গেল, আজমিরও গেল। আসলে, দুজনের মনেরই ভীষন মিল হয়েছিল। দু’জনই জাতপাতের তীব্র বিরোধী। মারদানা আবার বাদশাহিবিরোধী। প্রায়ই তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,“বুঝলে নানক, এই যে মুসলিম বাদশাদের জাঁকজমক দেখ। নিমকহারামরা সব যাকাত না দিয়ে হেরেম তৈরি করছে। ওদের কি বেহেস্তে যায়গা হবে বল?”নানক মাথা নাড়ে। যাকাত না দেওয়া তো অন্যায়। অন্যায়কারীরা বেহেস্তে যায় কি করে।তো, দু’জনে তীর্থে তীর্থে ঘুরছেন। সে সময়ই মারদানার মুখে নানক শুনল পারস্যের ফরিদউদ্দীন আত্তারের কথা; বাগদাদের মনসুর হাল্লাজের কথা; কোনিয়ার জালালউদ্দীন রুমীর কথা।নানক উত্তেজনা বোধ করে। অনুপ্রানিত হয়। কী এক স্বপ্ন দেখে সে।১৫২০ দিকের কথা। পাঞ্জাবের কাছে ছিল কর্তারপুর নামে এক গ্রাম । একেবারে রবি নদীর পাড়ে। বহুপথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে সেই গ্রামেই এসে থিতু হলেন নানক। বয়স হয়েছে। শরীর আর চলে না।(নানক তাঁর জন্মগ্রামে ফিরলেন না কেন? তাঁর বউ বাচ্চারই-বা কি হল? এই প্রশ্ন দুটি আমাকে ভাবায়।)যাহোক। আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে ভীষন নাম ছড়াল নানকের। উপরোন্ত, লালনের মতই জাতপাত ঘৃনা করতেন নানক। কাজেই বহু লাঞ্ছিত নরনারী এসে জড়ো হল কর্তারপুর গ্রামে। নানকের শিষ্যত্ব বরণ করল তারা। নানক শিষ্যদের বলতেন “শিখ”। শিখ মানে শেখ, জাতপাত যে ভালো না, তাই আমার কাছে এসে শেখ।শিখ শব্দটি অবশ্য উদ্ভুত হয়েছে সংস্কৃত শিক্ষা শব্দটি থেকে। শব্দটির মূলগত অর্থ- শিক্ষা বা শিষ্য।শিখধর্মটি বর্তমানে বিশ্বের ৫ম সাংগঠনিক ধর্ম। কর্তারপুর গ্রামে যে ধর্মটির সূত্রপাত। নানক ছাড়াও আরও ৯ জন গুরু শিখধর্মটি প্রতিষ্ঠিত করেছে।১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে নানকের দেহখাঁচা ছেড়ে উড়ে গেল অনন্তের সেই পাখিটি। যে পাখি অনন্ত থেকেই উড়ে এসেছিল একদিন।নানকের প্রিয় শিষ্য ছিলেন অঙ্গদ। নানকের তিরোধানের পর ইনিই নব্য ধর্মস¤প্রদায়টির হাল ধরলেন। তারপর ক্রমে ক্রমে নানকের উপদেশের কর্তারপুর গ্রামে গড়ে উঠেছিল এমন এক ধর্মীয় গোষ্ঠী-যারা কেবল পরবর্তীকালে পরম পরাক্রমশালী মুগলদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়নি, কুড়ি শতকে হয়ে উঠেছিল আধুনিক ভারত সরকারের এক প্রবল প্রতিপক্ষ।কিন্তু, কি ছিল নানকের শিক্ষা? নানক।নানকের জীবদ্দশায় উত্তর ভারতের হিন্দু সন্তরা মরমী কবিদের মতো একেশ্বরবাদের শিক্ষা প্রচার করতেন। তারা সামাজিক সাম্য ও সৎগুরুর প্রত্যক্ষ ভূমিকার কথা বলতেন। নানকের ওপর এই মরমী কবিদের প্রভাব পড়েছিল। নানক সন্তদের মতোই প্রাত্যহিক জীবনের দৃশ্যাবলীর আড়াল ভেদ করে ‘সহজ’ অর্জন করতে চেয়েছেন। সহজ কি? সহজ অর্থ - ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া। নানক এর মতে ঈশ্বর যুগপৎ অজ্ঞেয় এবং মানবসত্ত্বায় অস্তিত্বশীল; কঠোর বৈরাগ্য কিংবা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা দ্বারা ঈশ্বরলাভ সম্ভব নয় ... এর জন্য প্রয়োজন সৎগুরুর নির্দেশে ঐকান্তিক সাধনা। আত্বকেন্দ্রিক মানুষ সাধনায় সিদ্ধি লাভ করতে পারে না, তারা মানুষ মায়ার ঘোরে পড়ে ক্ষণিকের সুখলাভ করে মাত্র । স্বর্গীয় নামের জপ আর আধ্যাত্মিক অন্তঃদর্শন (স্পিরিচুয়াল ইন্ট্রোস্পেকশন) পারে মানুষের এই আত্মকেন্দ্রিকতা দূর করতে। এভাবে মহাবিশ্বের শব্দ সম্বন্ধে সচেতন হওয়া যায়। যে শব্দে ভক্তসহ সবই হল রূপ (ফর্ম)। এই সত্যে ক্রমাগত ধ্যান করে সবকিছুর ভিতরে এক ‘অনাহত’ শব্দ সম্বন্ধে ভক্ত সচেতন হয়ে ওঠে। এবং বিশৃঙ্খল সত্ত্বার বিরুদ্ধে ক্রমশ সংগ্রাম করে ভক্ত সহজ অর্জনের পথে এগিয়ে যায়।প্রতিদিনের জীবনে বেঁচে থেকে ঐশ্বরিক উপলব্ধিই নানকশাহী পন্থা। নানক শিষ্যদের অতিরিক্ত সন্ন্যাস নিষেধ করতেন; প্রতিদিনের কাজকর্মের ভিতরেই আধ্যাত্মিক অনুভূতি প্রকাশ পেতে পারে। এ কারণে সংস্কৃত কিংবা আরবি ভাষায় নয়-সাধারণ মানুষের কথ্য ভাষায় ধর্মের ব্যাখ্যা করতেন। নানক এর জনপ্রিয়তার এইই কারণ। নানক এর পরবর্তী ন’জন অনুসারী তো বটেই আজও বিশ্বজুড়ে অসংখ্য শিখ নানকের সুগভীর উপলব্ধি আপন জীবনের ব্রত করেছে। আদি গ্রন্থ নানকের শিক্ষা শিখদের পবিত্র গ্রন্থ আদিগ্রন্থে লেখা রয়েছে। ‘আদি গ্রন্থ’ শব্দ দুটি পাঞ্জাবি । এর অর্থ: প্রথম বই। আদিগ্রন্থের অন্য নাম- গুরু গ্রন্থ সাহিব। এতে ৬,০০০ প্রার্থনাসংগীত রয়েছে; সবই নানকসহ অন্যান্য শিখগুরুরা সাধুরা লিখেছেন। প্রার্থনাসংগীতগুলি রাগভিত্তিক। প্রথম এবং ৩য় গুরু নানক এবং অমর দাস (১৪৭৯-১৫৭৪) নিজের ধর্মগীতি সংকলন করে ও অন্যান্য আদিকবিদের গান অর্ন্তভূক্ত করেন। অমৃতসর। মানচিত্র। ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দে পঞ্জম গুরু অর্জন সিং আদিগ্রন্থে আরও গান অর্ন্তভূক্ত করেন এবং এভাবে আদিগ্রন্থের প্রথম সংস্করণটি সম্পূর্ন হয়। তিনি এটি অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে রাখেন। অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির; শিখদের পবিত্র তীর্থ। স্বর্ণমন্দিরে অভ্যন্তরে ১৭০৪ খ্রিষ্টাব্দে শিখদের শেষ গুরু গোবিন্দ সিং তাঁর পিতা গুরু তেগ বাহাদুরের ভক্তিসংগীত আদিগ্রন্থে অর্ন্তভূক্ত করে আদিগ্রন্থের সঙ্কলন সম্পন্ন করেন। গোবিন্দ সিং য়ের মৃত্যুর আগে তিনি গ্রন্থটিকে শিখদের ‘গুরু’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে যান। শিখরা আজ অবধি আদিগ্রন্থকে তাদের গুরু হিসেবে মান্য করে। শিখ প্রর্থনালয়ে (গুরুদোয়ারা) বইটির অনুলিপি রক্ষিত আছে। গুরুদোয়ারা। শিখ-জীবনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এখানে আদিগ্রন্থ সকালে খোলা হয় ও রাত্রে মুড়িয়ে রাখা হয়। আদিগ্রন্থের গীত গাওয়া হয়। আদিগ্রন্থের সামনে জুতা খুলে যেতে হয়। আর মাথা ঢেকে রাখতে হয়। এটি পাঠকালে বাতাস করা হয়; যেন গ্রন্থটি জীবন্ত আর সম্মানিত ... ঢাকার গুরুদোয়ারা। শিখ। Sikh শব্দটি পাঞ্জাবি। এর অর্থ ছাত্র। বা শিষ্য। কার শিষ্য? গুরুর। গুরুমৎ ধর্ম। শিখ ধর্মে সৎগুরুর নির্দেশনার কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে।",False fe,"যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্ধ যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্ধ ফকির ইলিয়াস -------------------------------------------------------------------------------- যারা একসময় প্রবাসে দেশের রাজনীতি করতেন , এরা অনেকেই এখন মসজিদমুখি। সব সাধনা শেষ ! এখন মুখে দাড়ি। মাথায় গোলটুপি। কিন্তু খাসলত বদলায়নি। মসজিদ কমিটিতে ঢুকার জন্য তাদের অপার চেষ্টা দেখলে হাসি পায়। মসজিদ কমিটির প্রেসিডেন্ট - সেক্রেটারি হবার জন্য এদের কেউ কেউ মরিয়া হয়ে মাঠে নামেন। মুসল্লিদের ভোট কেনেন।পাশ করতে না পারলে এরপরই শুরু করেন কোন্দল।কমিটি, পাল্টা কমিটি। মামলা- পাল্টা মামলা। যুক্তরাষ্ট্রে এ বছরও ২ দিনে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। কেউ কেউ ঈদ করছেন মঙ্গলবার। আবার কেউ কেউ ঈদ করেছেন বুধবার। মুসল্লিদের বিভক্তিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এ বছর। একই মসজিদের মুসল্লিরা বিভক্ত হয়ে ২ দিনে ঈদ উদযাপন করেছেন। এর জন্য তারা দায়ী করেছেন মসজিদ কমিটি ও ইমামদের সামন্তবাদী মানসিকতাকে। নিউইয়র্কে চাঁদ দেখা কমিটি বা হিলাল কমিটির ব্যানারে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের নেতৃত্বে এ বিষয়ে বৈঠক হয় রমজান মাসেই। সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয় সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ঈদ করবেন গ্লোবাল বিশ্বে চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। সোমবার ২৯ রোজা পূর্ণ হওয়ায় বিকেলে জানা যায়, সৌদি আরবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সৌদি আরবসহ মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন দেশই ঈদ পালন করবে মঙ্গলবার। ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন মসজিদও মঙ্গলবার ঈদ উদযাপনের ঘোষণা দেয়। নিউইয়র্কে এ নিয়ে সোমবার রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত চলে নানাভাবে ম্যারাথন টেলিকনফারেন্স। শেষ পর্যন্ত জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারসহ নিউইয়র্কের প্রধান প্রধান মসজিদগুলো সিদ্ধান্ত নেয় মঙ্গলবার ঈদ করার। সে মোতাবেক তাদের ফোনের অ্যান্সারিং মেশিনে ঈদের জামাতের সময়সূচিও ঘোষণা করা হয়। এর পরই দেখা দেয় একটি পক্ষের মতবিরোধ। যারা জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারকে ‘আইকন’ ঘোষণা করে ঈদ উদযাপনের পূর্ব ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাদের একাংশ মত পাল্টাতে শুরু করেন। আর এতেই বেঁকে বসেন সাধারণ মুসল্লিদের বৃহদাংশ। সাধারণ মুসল্লিরা বিভিন্ন মসজিদের কর্মকর্তাদের মঙ্গলবার জামাত অনুষ্ঠানের অনুরোধ করেন। এতে কমিটির বিভিন্ন কর্মকর্তা অপারগতা প্রকাশ করলে সাধারণ মুসল্লিরা নিজেদের আয়োজনেই একই মসজিদে নামাজ আদায়ের ঘোষণা দেন। এস্টোরিয়ার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এবং শাহজালাল মসজিদ ইতিপূর্বে সব সময়ই জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সঙ্গে একই দিনে ঈদ করে আসছিল। এবারই দেখা দেয় বিপত্তি। ডিটমার্স ব্লুবার্ডের বায়তুল মোকাররম মসজিদের কোষাধ্যক্ষ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল জলিল জানান, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সঙ্গেই ঈদ করবো। কিন্তু সোমবার রাতে কমিটির একটি মহল হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত পাল্টানোর ঘোষণা দেন। আমরা তা মেনে নিতে পারিনি। তাই মঙ্গলবারই আমরা অন্য একজন বিশিষ্ট আলেমের ইমামতিতে ঈদের নামাজ আদায় করেছি। বায়তুল মোকাররম মসজিদে আরেকপক্ষ নামাজ পড়েছেন বুধবার। একই অবস্থা ঘটেছে এস্টোরিয়ার শাহজালাল মসজিদের মুসল্লিদের বেলায়ও। সিটির বিল্ডিংস কর্তৃপক্ষ ওই মসজিদটি বন্ধ করে দেয় গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮। মসজিদটির বিরুদ্ধে বিল্ডিংস রুলস ভায়োলেশনের অভিযোগ ছিল। শাহজালাল মসজিদের মুসল্লিদের একাংশ মঙ্গলবার ঈদের নামাজ পড়েন এস্টোরিয়া ম্যানর ভাড়া নিয়ে। পরদিন এ মসজিদের অন্যপক্ষ একই স্থানে ভাড়া নিয়ে নামাজ পড়েন। ওজোন পার্কের বায়তুল আমান মসজিদের মুসল্লিদের বৃহদাংশ স্থানীয় পার্কে অনুমতি নিয়ে নামাজ পড়েন মঙ্গলবার। সেখানে মাঠ থেকে ৬০ হাজার ডলার সংগ্রহের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। ওই অঞ্চলে আরেকটি মসজিদ গড়ে তোলার প্রক্রিয়াও বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র। এদিকে নিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদের কমিটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের বিষয়টি ক্রমশ মাথাচাড়া দিয়েই উঠছে। পার্কচেস্টার মসজিদ, ওজোন পার্কের বায়তুল আমান মসজিদ, এস্টারিয়ার আল আমীন মসজিদ, বায়তুল মোকাররম মসজিদের পরিচালনা কমিটিগুলোতে চলছে নেতৃত্বের নীরব স্নায়ুযুদ্ধ। যা মাঝে মধ্যে সংঘাতেরও রূপ নিচ্ছে। এসব বিষয় সাধারণ প্রবাসী সমাজের মর্মপীড়ার কারণ হচ্ছে বারবার। প্রবাসের বিভিন্ন শ্রেণীর বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই মসজিদে রাজনীতির চির অবসান কামনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সমাজসেবক তাজুল ইসলাম বলেছেন, এই দূর প্রবাসেও এক শ্রেণীর মানুষের সামন্তবাদী মানসিকতা মেনে নেয়া যায় না। এমনকি আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশেও তো মসজিদ কমিটি নিয়ে এমন হানাহানি নেই। তাহলে প্রবাসে হবে কেন? কেন কমিটিক নিয়ে দ্বন্ধ মারামারিতে পর্যবসিত হবে। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিশিষ্ট কবি শামস আল মমীন বলেন, আমরা আমাদের প্রজন্মকে সভ্যতা শিখানোর পক্ষেই থাকতে হবে। আমরা তাদেরকে কোনো আত্মঘাতী কর্মের দিকে ঠেলে দিতে পারি না। আমাদের অনৈক্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের শামিল। এস্টোরিয়ার বাসিন্দা জালাল আহমেদ বলেন, সাধারণ প্রবাসীরা প্রতিবাদী হতে শুরু করেছেন। তারা আর বিশেষ শক্তির হাতে বন্দি থাকতে রাজি নন। সাধারণ প্রবাসীদের সিংহভাগের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে গ্লোবাল চাঁদ দেখার নীতি মেনে নাকি লোকাল চাঁদ দেখার নীতি মেনে রোজা, ঈদ হবে- এ বিষয়ে সবাইকে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিশ্বের কোথাও চাঁদ দেখা গেলে এর নির্দিষ্ট সময় আগে-পরে যুক্তরাষ্ট্রে চাঁদ জন্ম নেয়ার কথা। বিজ্ঞান মানলে সে সত্য মানতেই হবে। এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন গ্লোবাল চাঁদ দেখার পক্ষের অনুসারীরা। এদিকে নিউইয়র্ক নগরীতে পাবলিক স্কুলগুলো ঈদের ছুটিতে বন্ধ রাখার একটি বিল উত্থাপিত হয়েছে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে। ‘রেজুলেশন ১২৮১’ নামে এ বিলটি উত্থাপন করেছেন কাউন্সিলম্যান মি. রবার্ট জ্যাকসন। সিটিতে এই বিলটি পাস করানোর প্রয়োজনেও মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। তা না হলে চাঁদ দেখা বিতর্ক মসজিদ নিয়ে হানাহানি আরো বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। --------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক ডেসটিনি । ৪ নভেম্বর ২০০৮ মংগলবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:৫৫",False ij,"হুন! ইনি সেন্ট উরসুলা। ব্রিটিশ খ্রিস্টান নারী সাধু। নিস্পাপ ও নির্মল চরিত্রের জন্য সকলের শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন। মহামান্য পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে ১১ জন কুমারীকে নিয়ে রোমে গিয়েছিলেন সেন্ট উরসুলা। ফেরার পথে জার্মানির কোলন-এ বর্বর হুনদের আক্রমনের শিকার হলেন। সময়টা ৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ । নৃশংস হুনেরা ১১ জন কুমারীকে একে একে শিরোচ্ছেদ করে হত্যা করে। হুন রাজা আত্তিলা সেন্ট উরসুলার রুপে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করতে চাইলেন। সেন্ট উরসুলা ঘৃনাভরে অস্বীকার করলে আত্তিলা নিস্পাপ সাধিকাকে তীর বিদ্ধ করে হত্যা করে। এ হল হুনদের বর্বরতার উদারহরণ । বর্বর যাযাবর ট্রাইব হুনদের শিক্ষাদীক্ষা ধর্ম কিংবা শিল্পকলায় আগ্রহ ছিল না। তারা কেবল ধ্বংসই করতে জানত। খ্রিস্টপূর্ব ২০০ থেকে খ্রিস্টীয় ৫ম শতক অবধি তারা এশিয়া ও ইউরোপে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম রেখেছিল । হুন যোদ্ধা তুর্কি গোত্রের বাস ছিল মধ্য এশিয়ায়। হুনরা এদেরই একটি শাখা। যে কারণে হুনদের ভাষা ছিল তুর্কি। এদেরই আরেকটি শাখা পরবর্তীতে তুরস্কে অটোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। যা হোক, হুনরা চিনাদের কাছে জিঅং-নু নামে পরিচিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে তারা চিনা সাম্রাজ্য আক্রমন করতে থাকে। হুনদের আক্রমনে চিনারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এদের উৎপাত থেকে রক্ষা পেতেই সম্রাট শি হুয়াং তি চিনের প্রাচীর নির্মানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রাচীর তুলে চিনারা হুনদের প্রতিরোধ করতে সমর্থ হয়। সে সময় হুনদের নেতা ছিল মাও-তুন। তারই নেতৃত্বে হুনরা নিরাপদ বাসভূমির সন্ধানে চিন ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে । দলটি ছোট ও বড় -এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। ছোট দলটি ভারত অভিমূখে যাত্রা করে। বড় দলটি যেতে থাকে সাইবেরিয়ার উত্তর পশ্চিমে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সম্ভবত পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে রাশিয়া পাড় হয়ে খ্রিস্টীয় ৩৫০ শতকে শক দের (আরেকটি বর্বর ট্রাইব) ধ্বংস করে ইউরোপের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয় এবং বর্তমান হাঙ্গেরি তে স্থায়ী বাসভূমি গড়ে তোলে। হাঙ্গেরিয়ার আশেপাশে বাস করত ভিসিগথ অসট্রোগথ প্রভৃতি জার্মানিক ট্রাইব। হুনদের আক্রমনের মুখে পড়ে তারা পশ্চিম ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ে। এবং রোমান দের মুখোমুখি হয়। হুনদের আক্রমনে এরা কেউই টিকে থাকতে পারেনি। প্রতিপক্ষের ওপর হুনদের আধিপত্যের অন্যতম কারণ হুনরা ঘোড়ার রেকাব আবিস্কার করেছিল। রেকাব হল অশ্বারোহীর পা রাখার নির্দিষ্ট স্থান। রেকাবে পা রেখে যুদ্ধ করতে সুবিধা। হাঙ্গেরির মানচিত্র; Hungary শব্দটির মধ্যে Hun শব্দটি এখনও আছে। ইউরোপে তখন রোমানদের শাসন। রোমান সাম্রাজ্য পূর্ব ও পশ্চিম-এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। পশ্চিমের রাজধানী ইটালির রোম। পুবের কনসটানটিনোপোল। দুভাগে বিভক্ত রোমান সাম্রাজ্য রোমান সাম্রাজ্য হুন নেতা রুগুলাস ৪৩৩ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য আক্রমন করে। রোমান শাসকদের তারা বাধ্য করেছিল কর দিতে। কর দিতে হত স্বর্নে। হুনদের আগ্রাসন ও তান্ডব রোমান সাম্রাজ্যের আতঙ্ক ও ঘৃনার সৃষ্টি করেছিল। রোমান ঐতিহাসিক অ্যামিয়ানুস মারসেলিনিয়াস লিখেছেন : ইহারা মানবের মতন দেখিতে বটে তবে মোটেও সভ্যভব্য নয় কেননা ইহারা আগুনের ব্যবহার জানে না। ইহারা কোনওপ্রকার স্বাদগন্ধযুক্ত আহারাদি প্রস্তুতে অপারগ এবং পথের পার্শ্বের মূল খাইয়া বাঁচিয়া আছে; উপরোন্ত ইহারা যে কোনও প্রাণির অর্ধপক্ক মাংশ ভক্ষন করে। প্রতিপক্ষকে আক্রমনের সময় হুনগন কখনও যথার্থ সমরনীতির কৌশল প্রয়োগ করে আবার কখনও যথার্থ সমরনীতির কৌশল প্রয়োগ করে না। মাঝেমধ্যে তাহারা সারিবদ্ধভাবে যুদ্ধ করে, আবার কখনও তাহারা কর্কস চিৎকারধ্বনি করিয়া স্বর্গ মর্ত তোলাপাড় করিয়া ফেলিয়া শক্রপক্ষের ভীতির সঞ্চার করে। ইহারা দ্রুত রণক্ষেত্র হইতে ছড়াইয়া পড়ে, আবার চোখের পলকে ফিরিয়া আসিয়া কিছু বুঝিয়া উঠিবার আগেই শক্রর ওপর ঝাঁপাইয়া পড়ে। প্রতিপক্ষ যদিবা তরবারি লইয়া কাটিয়ে আসে তো হুনগন জাল ছুঁড়িয়া মারিয়া প্রতিপক্ষকে বধ করে। অশ্বারোহী হুনযোদ্ধা ৪১৮ খ্রিস্টাব্দ। রোমের সঙ্গে হুনদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল। সম্পর্ক ভালো রাখতে হুনরা রোমানদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি বিনিময় করে। এক হুন কিশোর ২ বছর রোমে গিয়ে থাকে। রোমের জৌলুষ দেখে কিশোরের বিস্ময়ের উদ্রেক করেছিল। সে একদিন বিজয়ের বেশে রোমে ফিরবে শপথ নেয়। পরিনত বয়েসে কিশোরটি হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য হুন যোদ্ধা আত্তিলা । আত্তিলা । ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম ব্যাক্তি ৪৩৩ খ্রিস্টাব্দে হুনদের রাজা রুগুলাস মারা যায়। তার ভাইয়ের ছেলে আত্তিলা (জন্ম ৪০৬ খ্রিস্টাব্দ ) ও ব্লেডা হুনদের নেতা নির্বাচিত হয় । আত্তিলার নিষ্ঠুরতা ছিল ভীতিকর। ৪৪৫ খ্রিস্টাব্দে ভাইকে হত্যা করে আত্তিলা হুনদের একক নেতা হয়ে ওঠে। আত্তিলাকে নিয়ে অনেক কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। সে নাকি যুদ্ধের দেবতা মঙ্গলের তরবারি পেয়েছিল। সম্ভবত সে মৃত এক হুন যোদ্ধার তরবারি পেয়েছিল । তার মতন নিষ্ঠুর যোদ্ধা ইতিহাসে খুব কমই আছে। নির্বিকারে নগরের পর নগর ধ্বংস করেছে, নারী ধর্ষন করেছে। আত্তিলা ছিল অত্যন্ত ক্ষমতালোভী। ক্ষমতার লোভে আপন ভাইকে হত্যা করতে পিছপা হননি। নিয়মিত ঘোটকির দুধ রক্ত ও মাংস খেত। পোশাক ছিল পশুর তৈরি চামড়া। ঘোড়ার রেকাবে পা রেখে দাঁড়িয়ে তীর ছোঁড়ার দক্ষতা ছিল। নরমাংসখাদকও নাকি ছিল। তবে প্রমাণ মেলেনি। তবে রোমানরা আত্তিলাকে বলত ঈশ্বরের অভিশাপ। আত্তিলার অধীনে সংঘবদ্ধ হয়ে হুনরা ধ্বংযজ্ঞ চালাতে থাকে। ৪৩৪ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট ২য় থিওডোসিয়াস আক্রমন না করার শর্তে বাৎসরিক ৬৬০ পাউন্ড সোনা প্রদানের অঙ্গিকার করেন। ৪৪০ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ বাধল। রোমার বিশপ মারগাস দানিয়ুব নদী পাড় হয়ে হুনদের রাজকীয় সমাধি লুঠ করে। ক্ষিপ্ত হয়ে হুনেরা ঝড়ের গতিতে রোমান সাম্রাজ্যে প্রবেশ করে। আত্তিলা অধিক পরিমানে কর দাবী করে। হুন সাম্রাজ্য এক রোমান রোমান রাজকুমারীর হঠকারী সিদ্ধান্তে ইউরোপের জনগনের ওপর নেমে এসেছিল মৃত্যুর অভিশাপ। জাস্টা গ্রাটা অনোরিয়া ছিল রোমান সম্রাট ৩য় কনসটানটিয়াস এর একমাত্র কন্যা। মা গালা প্লাসিডিয়া। ভাই রোমান সম্রাট ৩য় ভালেনটিনিয়ান (৪২৫-৪৫৫)। রাজকুমারী অনোরিয়া ছিল উচ্চভীলাষী ও ভাইকে মনে করত দূর্বল । জাস্টা গ্রাটা অনোরিয়া ইউজেনিয়াস নামে এক রাজকীয় কর্মচারী ছিল, তার সঙ্গে ভালোবাসার অভিনয় করে ভাইয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অনোরিয়া। পরিকল্পনা ফাঁস। মায়ের অনুরোধে সম্রাট ৩য় ভালেনটিনিয়ান অনোরিয়াকে হত্যা না করে কনসটানটিনোপলের কনভেন্টে পাঠিয়ে দেয়। ঘটনা শুরু এখানে। অনোরিয়া আগুন নিয়ে খেলবে ঠিক করল। আত্তিলার কাছে সাহায্য চেয়ে চিঠি পাঠাল। সঙ্গে এনগেজমেন্ট রিং। আত্তিলা ভাবল অনোরিয়া তাকে বিয়ে করতে চায় । বিয়ের যৌতুক হিসেবে সে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের অর্ধেক দাবী করে বসল।আত্তিলার অধীনে হুনরা এই প্রথম ইউরোপের গভীরে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। নারীযোদ্ধাও ছিল হুন সৈন্যবাহিনীতে । চালোন জায়গাটি উত্তর ফ্রান্সে। এখানেই রোমান দের মুখোমুখি হয় হুন সৈন্যরা। ইতিহাসে এই যুদ্ধের নাম: ‘দ্য ব্যাটেল অভ কাটালাউনিয়ান প্লেইনস।’ রোমান জেনারেল ছিলে ফ্লাভিয়াস এইটিয়াস। তার সঙ্গে জোট বেধেছিলেন ভিসিগথ রাজা প্রথম থিওডোরিক। ৪৫১ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত যুদ্ধে রোমান ও ভিসিগথদের কাছে হুনরা পরাজিত হয়। পরাজিত আত্তিলা ক্ষিপ্ত হয়ে ইটালীর রোম নগর ধ্বংস করার উদ্যেগ নেয় । পোপ লিও ১ তাকে নিরস্ত করে। প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে রোম তখন বিধস্ত নগরী । যা হোক, আত্তিলা রোম আক্রমন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। মনে থাকার কথা ১১ জন কুমারীকে নিয়ে রোমে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ খ্রিস্টান সেন্ট উরসুলা । ৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ ফেরার পথে জার্মানির কোলন-এ হুনদের আক্রমনের শিকার হওয়ার পর ১১ জন কুমারীকে তৎক্ষনাৎ শিরোচ্ছেদ করে হত্যা করা হয়। আত্তিলা সেন্ট উরসুলা রুপে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করতে চাইলে সেন্ট উরসুলা অস্বীকার করেন, সেন্ট উরসুলাকে তীর বিদ্ধ করে হত্যা করে আত্তিলা ...আত্তিলা ঐ বছরই অর্থাৎ ৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে বিয়ে করে । এর আগে ছজন স্ত্রী ছিল, ৭ম স্ত্রী হিসেবে আইলিকোকে বিয়ে করে। বিয়ের রাতে পানাহার চলল,আত্তিলা যে খুব মদ খেত তা কিন্তু নয়। কী মনে করে সে রাত্রে খেল। পরের দিন সকালে মরে পড়ে থাকতে দেখা গেল। নাকে রক্তপাত হয়েছিল। রক্তে নিঃশ্বাস আটকে যায়। সন্দেহ নতুন স্ত্রীকে। যদি তাইই হয়-কেন হত্যা করল? সব কথা তো ইতিহাসে লেখা থাকে না। আত্তিলার মৃত্যুর পরেই ইতিহাস থেকে হুনেরা মুছে যায়। নির্মল হৃদয়ের অধিকারীণি সেন্ট উরসুলাকে তীর বিদ্ধ করে হত্যা করেছিল বর্বর আত্তিলা। যে দৃশ্যটি শিল্পীর মনকে করেছিল বিচলিত ... হাঙ্গেরিতে পাওয়া হুন কড়াই হাঙ্গেরি: ছিল একদা হুনদের বাসভূমি সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৮",False mk,"সাবাশ শিবির, সাবাস গুন্ডে বাহিনী দেশে নানা অপকর্মের পর এবার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের তালিকায় নতুন 'উচ্চতায়' আসীন হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর (নন-স্টেট আর্মড গ্রুপ) সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী হামলার পরিমাণ দ্রুত গতিতে বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে এসব হামলার পরিমাণ ১৫০ শতাংশ বেড়েছে। এর পরিমাণ ২০০৯ সালের সাত হাজার থেকে ২০১৩ সালে সাড়ে ১৮ হাজারে পৌঁছেছে। আর বিভিন্ন দেশে এসব হামলায় যারা জড়িত, ২০১৩ সালে এমন শীর্ষ ১০টি গোষ্ঠীর ৩ নম্বরে অবস্থান করছে ইসলামী ছাত্রশিবির।আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ে লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা 'জেন'স টেরোরিজম অ্যান্ড ইনসারজেন্সি সেন্টারের (জেটিআইসি) প্রকাশিত 'বিশ্ব সন্ত্রাস ও জঙ্গি হামলার তালিকা ২০১৩-এর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটি ২০১৩ সালের ইনডেস্কটি প্রকাশ করে। প্রসঙ্গত, জেটিআইসি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোভিত্তিক আইএইচএস ইনকরপোরেশনের একটি প্রতিষ্ঠান।'জেটিআইসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালে অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী তথা রাষ্ট্রযনে্ত্রর বাইরে অবৈধ বিদ্রোহী দলগুলোর হামলায় বিশ্বে তাত্পর্যপূর্ণভাবে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে 'আরব বসন্ত' এই হামলার পরিমাণ বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ। সিরিয়ায় এই হামলা গত দুই বছরে দ্বিগুণ বেড়েছে। ইরাকে আল-কায়েদার আত্মঘাতী হামলার পরিমাণ চারগুণ বেড়েছে। আর এসব হামলায় আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।প্রতিবেদনে ২০১৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি সক্রিয় অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে এক. থাইল্যান্ডের 'বারিসান রিভলিউসি ন্যাশনাল, দুই. তালেবান, তিন. বাংলাদেশের ইসলামী ছাত্রশিবির, চার. কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী), পাঁচ. ইরাকের আল-কায়েদা, ছয়. হরকাত আল-শাবাব আল-মুজাহিদীন বা আল-শাবাব, সাত. কলম্বিয়ার ফারক, আট. ফিলিপাইনের নিউ পিপলস আর্মি, নয়, সিরিয়ার জাবাত আল-নুসরা এবং দশ. ইউনাইটেড কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী)।প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে বিদ্রোহী হামলাগুলোর এপিসেন্টার (উত্সস্থল) বলা যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্য। যার বিকিরণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে জেটিআইসির ব্যবস্থাপক এবং এ-সংক্রান্ত গবেষক ম্যাথু হেনম্যান বলেন, '২০০৭ সালে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ছিল সাত হাজার ২১৭টি। আর ২০১৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৮ হাজার ৫২৪টি। অর্থাত্ এই সময়ে হামলার পরিমাণ বেড়েছে দেড়গুণ। আর এই সময়ে আমরা বিশ্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গি হামলায় নাটকীয়ভাবে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে দেখেছি। ২০১২ সালে বিশ্বে ১৩ হাজার ৮৭২ জন জঙ্গি এবং ১০ হাজার ৫৬২ জন মানুষ হতাহত হয়। ২০১৩ সালে এর পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এই বছর সাধারণ মানুষের হতাহতের সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৫৫৪ জন এবং জঙ্গিদের হতাহতের সংখ্যা ২১ হাজার ৪৯০ জন।' - See more at: Click This Link",False mk,"নেতৃত্ব সংকটে বিএনপি__ রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বিপদাপন্ন সময় পার করছে বিএনপি। সাংগঠনিক দুর্বলতা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সুবিধাবাদ, সময়োপযোগী সঠিক রাজনৈতিক কৌশল ও সিদ্ধান্তের অভাবে দলের আজ এ অবস্থা। তারপর আবার বেগম জিয়া ছাড়া জিয়া পরিবারের সকল সদস্য দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। বেগম জিয়া এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নানারকম মামলার খড়গ ঝুলছে। বিএনপিতে বিভিন্ন দলছুট সুবিধাবাদী রাজনীতিক ব্যক্তির সংখ্যা বেশি হওয়ায় নীতি-আদর্শহীন দলে পরিণত হয়েছে বৃহৎ এ দলটি। দলের অভ্যন্তরেই রয়েছে নানা দল-উপদলীয় কোন্দল-দ্বন্দ্ব, সন্দেহ, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের টানাপোড়েন। অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে সংস্কারপন্থী ও সরকারপন্থী-সুবিধাভোগের অপবাদও। ফলে কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না; দলে নেই কোনো চেইন অব কমান্ড। সব মিলিয়ে যেন এক প্রকার স্থবিরতা নেমে এসেছে বিএনপিতে। ফলে এক সময়ের প্রচণ্ড ক্ষমতাসীন এই দলটি ক্রমেই যেন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। জনপ্রিয়তা বাড়ানোর কৌশলের অভাব থাকলেও ক্ষমতায় যাওয়ার অদম্য ইচ্ছার ঘাটতি নেই দলটির। নানা সংকটে পড়ে দলটি আন্দোলন কর্মসূচি জোরদার করতে না পেরে বিদেশিদের সঙ্গে এক প্রকার আঁতাত করতেই যেন ব্যস্ত হয়ে পড়ছে এই বৃহৎ দলটি। ক্ষমতার রাজনীতির দৌড়ে তাদের রাজনীতি এখন কূটনৈতিক নির্ভর হয়ে পড়েছে। নেতৃত্বশূন্যতা, দক্ষ ও দূরদর্শী সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে এক্ষেত্রেও ব্যর্থ হচ্ছে দলটি। ফলে চরম হতাশ হয়ে পড়েছে দলের নেতা-কর্মীরা। এদিকে মামলার বেড়াজালে আবদ্ধ বিএনপি। সারাদেশে বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মীর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের অনেকেই গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আবার অনেকে নতুন মামলায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় রয়েছে। জানা যায়, দলের স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে ৪ জন বাদে সকলের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নামেও আছে ৫টি মামলা। খালেদা জিয়ার ২ পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো মামলার ভয়ে দেশ আসতেই সাহস করছেন না। পাশাপাশি দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির শীর্ষ ও মাঝারি পর্যায়ের কোনো নেতাই মামলার ভয়ে রাজপথের রাজনীতিতে সক্রিয় নেই। ফলে ঝিঁমিয়ে পড়েছে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। খালেদা জিয়ার নির্দেশ সত্ত্বেও বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথ ফাঁকা। এতে স্বয়ং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই উদ্বিগ্ন-হতাশ। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বিএনপি। সম্প্রতি মানিকগঞ্জের ভাষণে সাধারণ মানুষের বিরাগ ভাজন হয়েছেন খালেদা জিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে সংলাপের বিপরীত পথে হাঁটার অভিযোগ জনগণের। গত ৪ মে খালেদা জিয়া ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে চূড়ান্ত আল্টিমেটাম দেয় সরকারকে। ইদানিং আবারও সংলাপের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সহিংস হরতাল করছে বিএনপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্য বিশ্লেষণ করে বলছেন, সংলাপে শান্তি নয়, সহিংসতায় মুক্তি খুঁজছেন বিএনপি প্রধান। তাই চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সর্বমহলের প্রত্যাশিত সংলাপের পথই মাড়াচ্ছেন না তিনি।এদিকে তারেক জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। কবে তিনি দেশে ফিরবেন, আদৌ ফিরতে পারবেন কিনা, রাজনীতিতে তার অবস্থান কি হবে, তা নির্ভর করছে বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর। বেগম জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা, বয়স, তার ওপর রাজনৈতিকচাপসহ নানারকম রাজনৈতিক দুর্যোগের মধ্যেই তিনি বসবাস করছেন। বিএনপি এখনো সুসংগঠিত নয়। দলের নেতাদের মধ্যে বিভাজন, বাহাস, অনৈক্য, সুবিধাবাদ সুস্পষ্ট। সরকারের অব্যাহত চাপের মুখে দলের অনেক নেতা সরকারের সঙ্গে নানা ধরনের গোপন আপসকামিতার মধ্যে আছেন। এরকম অবস্থায় বিএনপিকে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে আনতে অতীতের যেসব ভুলপথ তাদের ক্ষমতাচ্যুত করেছিল সেসব বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। বিশেষত তারেক জিয়ার কারণে চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের যে ফাঁটল তৈরি হয়েছিল, তা মেরামত করা ছাড়া এ দুর্যোগ থেকে রেহাই পাবার কোনো উপায় নেই। বিএনপি এখন সে কারণেই অনেক বেশি বিদেশমুখী পথে হাঁটছে।বিএনপি যে অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েও কূটনৈতিক নির্ভর হয়ে পড়ে উইকিলিকসে সেই চিত্র ধরা পড়ে। সেখানে বলা হয়, দুর্নীতিগ্রস্ত বড় ছেলে তারেক রহমানকে রক্ষা করাই খালেদা জিয়ার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ব্যর্থতা।২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্যসচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী বাংলাদেশ নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসকে এ কথা বলেছিলেন। হৈ চৈ ফেলে দেওয়া ভিন্নধারার গণমাধ্যম উইকিলিকস এ খবর প্রকাশ করেছে।২০০৫-এর ১৩ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের সঙ্গে ৪০ মিনিটের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে হ্যারি কে টমাস কামালউদ্দিনকে উপদেশ দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ব্যাপারে তারেক রহমানের অনুরোধ রক্ষা করা সম্ভব হবে না। বৈঠকে হ্যারি টমাস এও বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি বিকাশমান গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়।’ একই বৈঠকে কামালউদ্দিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও সেসময়ে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের বৈঠকের কারণে খালেদা জিয়া বুঝতে পেরেছিলেন যে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সুনামের জন্য রাজশাহীতে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যদের রক্ষা করা যাবে না এবং জেএমবি গ্যাংস্টারদের গ্রেপ্তার করতে হবে। সেই বৈঠকে তিনি এও বলেন, এটাই বিএনপি সরকারের সমস্যা। এ সরকার কেবল চাপের মধ্যে পড়ে কাজ করে।ফলে কয়েক মাস আগে যা করা উচিৎ ছিল, তা পরে করার ক্রেডিট বিএনপি সরকার নিতে পারে না। খালেদা জিয়ার মুখ্যসচিব হ্যারি কে টমাসকে আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নেত্রী (আইভি রহমান) ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এসএএমএস কিবরিয়ার হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি আনতে বাংলাদেশ সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপ অত্যাবশ্যক।এদিকে তারেক জিয়া, আরাফাত রহমানসহ জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যদের বিদেশবাস নিশ্চিত, নির্বিঘœ ও নিরাপদ করতে হলে পশ্চিমা দেশসহ ক্ষমতাধর চীন, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে তারেক জিয়ার উদ্যোগে বাংলাদেশে তাইওয়ানের দূতাবাস খোলার কারণে বিএনপির পুরানো মিত্র চীনের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়। অন্যদিকে হাওয়া ভবনের নানাবিধ অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্ট। ভারত, বিএনপি বিশেষত তারেক জিয়া সম্পর্কে খুবই নেতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করে। জিয়া পরিবারের নানা দুর্গতির জন্য এই বিষয়টিকে বড় কারণ হিসেবে দেখা হয়। মহাজোট সরকার সেই সুযোগ গ্রহণ করে বিএনপিকে কোণঠাসা করতে নানামুখী প্রয়াস চালায়।এই সমস্যাগুলো মোকাবেলা ছাড়া বিএনপির পুনর্জাগরণ অসম্ভবÑ এই সত্যটা বেগম জিয়া উপলব্ধি করেছেন। এবং এক্ষেত্রে দলের কোনো নেতার ওপর নির্ভর করে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় তাও তিনি জানেন। সে কারণেই চীন ও ভারত সফরে দলের নেতৃত্বের বড় অংশকে তিনি সঙ্গে নেননি। সাবেক আমলাদের একটা অংশকে ওয়ার্কিং টুলস হিসেবে ব্যবহার করে নিজেই দেনদরবার করেছেন।সুতরাং হঠাৎ করে বিএনপির ভারতমুখী নীতি গ্রহণের সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির যতটা সংযোগ আছে, তার চেয়ে জিয়া পরিবারের বর্তমান দুর্যোগ কাটানোর পথ বের করার বিষয়টিই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে বলে জানা যায়। ভারতের সঙ্গে যেসব বিষয়ে প্রকাশ্যে তিনি নিশ্চয়তা দিয়ে এসেছেন, অন্তরালে আরও অনেক বিষয়ে দেনদরবার হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর এ বিষয়ে দলের নেতারা কেউ ওয়াকিবহাল নন। বেগম জিয়া নিজেই এসব ফেস টু ফেস নেগোসিয়েশনের কাজটা সেরেছেন। তাই বিদেশি কূটনীতি নিয়ে ব্যস্ত বিএনপি, নেই রাজনৈতিক কঠোর কর্মসূচি। বিএনপির সাম্প্রতিক ডিমেতাল কর্মসূচি বিদেশি কূটনৈতিক নির্ভরতা সুস্পষ্ট করে তুলছে। ইদানিং বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনারা। কখনো কূটনীতির ভাষায় কখনো ‘কূটনীতির রীতিনীতি বহির্ভূত’ কথাবার্তা বলছেন তারা। কিন্তু কেন? এদেশে কি জ্ঞানী গুণীর অভাব? বিষয়টি বুঝতে হলে বেগম জিয়ার চীন, ভারত, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য সফরগুলোর দিকে নজর দেয়া দরকার।চীন সফর শেষ করেই ভারত সফর করেছেন বেগম জিয়া। ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ, বিরোধীদলীয় নেত্রী সুষমা সরাজ, বিজেপির প্রেসিডেন্ট নিতিন গড়করি, নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন ভারতীয় সরকার, আমলাতন্ত্র, বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠকের পর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার সফরসঙ্গীরা ভারতীয় মিডিয়ায় বলেছেন, বিএনপি ও ভারতের নতুন সম্পর্ক শুরু হলো। ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র একে ‘সামনে তাকানো’ নয়া দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ভারতীয় মিডিয়ার বড় অংশ একে বাংলাদেশের বহুদলভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে ভারতের নিবিড় যোগাযোগের অধ্যায় বলে অভিহিত করেছেন। ট্রানজিট, নিরাপত্তা বিষয়ে বিএনপির ভারতবিদ্বেষনীতি এক সফরে পুরো উল্টোপথে হেঁটে ভারত সহযোগিতার কথা ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের নিরাপত্তা বিঘিœতকারীদের কোনো জায়গা তার দল দেবে না। ভারতীয় সরকারের আমন্ত্রণে গিয়ে বেগম জিয়া তার সপ্তাহব্যাপী নানা বৈঠক, নানা আলোচনার মধ্য দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের কাছে এই বার্তা পরিষ্কার করেছেন, বিএনপি ভারতবিদ্বেষের অতীত নীতি পরিহার করছে। ভারত বিষয়ে আওয়ামী সরকার যেসব নীতি নিয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে ভারতকে সহায়তা করবে বিএনপি। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে নেয়া সকল ইতিবাচক পদক্ষেপ অটুট রাখবে। বিএনপির এই ভারত ঘোষণা মহাজোট সরকারকে দারুণ নার্ভাস করে দেয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বিগ্নতা কমাতে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার দেখা করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দলীয় মুখপাত্রদের নানান বক্তব্যে তা প্রমাণিত হতে থাকে। যেসব ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ভারতপ্রীতিতে যুক্ত, সেসব জায়গায় ভাগ বসাতে চলেছে বিএনপি। বেগম জিয়া ভারতে গিয়ে এ রকম উষ্ণ অভ্যর্থনা পাবেন, ভারতের সঙ্গে তার নীতিগত বৈরিতা ইতিবাচক সম্পর্কে মোড় নেবে তা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেনি সরকার ও আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার শেষপ্রহরে এসে বিরোধী দলকে ভারত এত গুরুত্ব দেবে এবং বিএনপির সঙ্গে ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টের সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ ঘটবেÑ এ বিষয়ে সরকারের ভেতরে-বাইরে কোনো তথ্য না থাকা, প্রস্তুতি না থাকায় সরকার কিছুটা সন্ত্রস্তও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।এখন প্রশ্ন হলো, বিএনপি নেত্রীর এই ভারতনীতি কি হঠাৎ করেই তৈরি হলো? নাকি এর প্রস্তুতি চলছিল অনেক দিন ধরে নীরবে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পররাষ্ট্র বিশ্লেষকের অভিমত, মূল খেলাটি খেলেছে আমেরিকা। বলা হয় বাংলাদেশস্থ আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজিনা বেগম জিয়ার এই কূটনৈতিক ভোলবদলের মূল কারিগর। এর নেপথ্যে কাজ করেছে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের প্রিয়ভাজন একজন সাবেক কূটনীতিকের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি থিংক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান। বেগম জিয়ার ভারত সফরের আগে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার নিজ নামে একটি ইতিবাচক লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস জার্নালে বেগম জিয়ার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। এ দুই জায়গাতেই খালেদা জিয়া পরিষ্কার করেছেন, ভারত সম্পর্কে বিএনপি তার পুরানো দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে।ভারতের সঙ্গে এই সম্পর্কের বদলে বেগম জিয়াকে রাজি করতে এর পেছনে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে এর নেপথ্য কারিগরদের। যে কারণে বেগম জিয়া ভারত সফরের আগে চীনে যেতে চেয়েছেন। চীন থেকে ফিরেই তিনি ভারত সফর করেছেন, যাতে মনে না হয়, বেগম জিয়া শুধু ভারতের সঙ্গেই সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চান।ভারতও এই কূটনীতিকে সম্মান দিয়েছে। চীনে বেগম জিয়া যেসব দৃশ্যমান দাবি তুলেছেন তার মধ্যে রয়েছে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রে ডিপ-সি পোর্ট নির্মাণে চীনা অর্থায়ন। চীন এসব বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, ভারতের নয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনা বিনিয়োগের সঙ্গে ভারতকে অংশীদার করার আগ্রহ দেখিয়েছেন বেগম জিয়ার কাছে। কাজেই এটা খুব সুস্পষ্ট বেগম জিয়ার চীন ও ভারত সফরের মধ্যে রাজনৈতিক সাযুজ্য আছে। এবং এটি নেপথ্য কারিগরদের বড় রাজনৈতিক প্লানের অংশ হিসেবেই পরিকল্পিত উপায়ে ঘটেছে।সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কর্মকাণ্ডে তাই একটা পরিবর্তিত বিএনপিকে দেখা যাচ্ছে অনেক নমনীয় রাজনীতির চেহারায়। হরতাল, অবরোধসহ ভাঙচুরের রাজনীতির পথ থেকে অনেকটা ভিন্ন পথে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে বিএনপিকে। বিএনপির এই নয়ানীতি দলের মধ্যে দক্ষিণপন্থীদের নিরাশ করছে। তারেক জিয়ার নাম ভাঙিয়ে দলের মধ্যে ‘ভাইয়াতন্ত্রে’র পূজারিদের ক্রমশ ম্রিয়মাণ হতে দেখা যাচ্ছে। দলে মধ্যমপন্থী যারা, তারা অবস্থা বুঝে বেগম জিয়ার আস্থাভাজন হতে চাইছে নয়ানীতি অনুসরণ করে। দেখা যাচ্ছে দলের প্রগতিশীল, চাণক্য অংশকে দ্রুত সামনে এগিয়ে আসতে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, বিএনপিতে দক্ষিণপন্থী, উগ্র ডানপন্থীদের অবস্থান ততই দুর্বল হচ্ছে।তবে ইদানিং প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতায় এক প্রকার সমন্বয়হীনতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও তৎপরতার অভাবে অনেক ইতিবাচক বিষয়েও প্রতিকূল ও জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ফলে দলের এই দুঃসময়ে কূটনৈতিক তৎপরতার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সাম্প্রতিক ভূমিকাকে ব্যর্থতার দৃষ্টিতেই দেখছেন প্রবীণ ও জ্যেষ্ঠ নেতারা। আর এ ব্যর্থতার কারণে এত দিন কোনোরকমে চললেও সরকারের শেষ সময়ে এসে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে মার্কিন মুল্লুকের অনুকূল হাওয়ায় উল্টো স্রোত বইতে শুরু করেছে- এমনটাই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া বিএনপির পক্ষে যারা এই তৎপরতা চালানোর দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের মধ্যে চরম সমন্বয়হীনতা, দু-একজন ছাড়া সংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ নেতার অনভিজ্ঞতা, অপরিপক্বতা ও অনেকের দাম্ভিকতাসহ এককেন্দ্রিক মনোভাবকেও এ প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টির জন্য দায়ী করা হচ্ছে। অথচ আন্তর্জাতিক এ সম্পর্ক বা তৎপরতার ব্যাপারে দলীয় হাইকমান্ডকে সম্পূর্ণ আড়াল করে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। উপরন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা পর্যন্ত অমান্য করে চলেছেন সংশ্লিষ্ট এ নেতারা। সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক ব্যর্থতার সমালোচনা করে দলীয় পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট উইয়ের নেতাদের দায়ী করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তারা মনে করছেন গত ৩ মার্চ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ৩ দিনের বাংলাদেশ সফরকালীন সময়ে খালেদা-প্রণব মুখার্জির নির্ধারিত সাক্ষাৎসূচি বাতিল করে বিএনপি দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনীতি-বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েনডি শেরম্যানের সাম্প্রতিক ঢাকা সফরকে এর সর্বশেষ প্রমাণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ এমন সাবেক একাধিক মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ওয়েনডি শেরম্যানের সাক্ষাৎকার বাতিলের বিষয়টিকে দলীয় ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, শেরম্যান নিজেই ঢাকা ছাড়ার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের সামনে পরিষ্কার ভাষায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করে গেছেন। বলে গেছেন, হঠাৎ করে হরতাল আহ্বানের কারণে আগে থেকে নির্ধারণ করা কর্মসূচি বাতিলে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে হরতাল-সহিংসতা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদও দিয়ে গেছেন বিরোধী দলকে। এর আগে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশ সফরকালেও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাত বাতিলের ক্ষেত্রেও কিছু অতি-ভারতবিরোধী ছাড়া বেশির ভাগ অভিজ্ঞ ও প্রবীণ নেতা দলের কূটনৈতিক তৎপরতার ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন। তাদের মতে, ঢাকা সফরকালে প্রণব মুখার্জি অধীর আগ্রহে অপেক্ষাও করেছিলেন বলে জানা যায়। এ ছাড়া গত বছর ভারত সফরকালে প্রথম দিন অনিবার্য কারণে শিডিউল পরিবর্তনের পরও প্রণব মুখার্জি সফরের শেষ দিন ৩ নভেম্বর ২০১২ সকাল ১০টায় সে দেশের রাষ্ট্রপতি ভবনে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের আয়োজন করেন। সেখান থেকে বের হয়ে দিল্লি বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সামনে বেগম জিয়া বলেছিলেন, ‘আমি অভিভূত। রাষ্ট্রপতি ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সবার আতিথেয়তা ও আন্তরিকতায় আমি আনন্দিত।’ নয়াদিল্লি ছাড়ার আগে বেগম খালেদা জিয়া প্রণব মুখার্জিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানিয়ে আসেন একাধিকবার। কিন্তু সেই রাষ্ট্রপতি যখন আগে থেকেই সাক্ষাতের জন্য সময় নির্ধারণ করে বাংলাদেশে এলেন, তখন বিরোধীদলীয় নেতা তাঁর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎও করলেন না। এ সিদ্ধান্ত কোথা থেকে এলো তা আজও জানেন না দলের অনেক নীতিনির্ধারক। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিজ হাতে তৈরি ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটি’র কার্যক্রমকেও পরোক্ষভাবে বাধাগ্রস্ত করে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে হ্যাঁ বা না কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান ওই কমিটির আহ্বায়ক বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান।বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে, দলের এমন একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা ও দলের নীতিনির্ধারক বলেন, ‘আমরা বড় বড় অনেক দেশের অ্যাম্বেসি থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগতভাবে দাওয়াত পাই। অ্যাম্বাসেডর ও তাদের দেশের মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগও রয়েছে ভালো। কিন্তু বিএনপি থেকে যখন কোনো কিছুর আয়োজন করা হয়, কিংবা প্রয়োজন হয়, তখন দলের পক্ষ থেকে আমাদের কিছুই জানানো হয় না। ফলে সঠিক সমন্বয়টা আর হয়ে ওঠে না।’বিএনপির হাল রাজনীতির এই লেজেগোবরে অবস্থা শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে কোথায় দাঁড় করাবে তা অবলোকন করার জন্য নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাহলে কি বেগম জিয়ার দল নির্বাচনে অংশ নেবে? কূটনীতি পাড়ার ব্যতি-ব্যস্থতা ও আমাদের রাজনীতিবিদগণের আনাগোনা ইঙ্গিত দিবে কোন দিকে মোড় নিবে সংলাপ কিংবা সমঝোতা। তবে জনবিচ্ছিন্নতা যে কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত ফল বয়ে আনে না তা এ দেশবাসী ভালভাবেই জানেন।",False fe,"পাকিস্তানে দানবশক্তি _ ভয়ের কারণ আমাদেরও আছে পাকিস্তানে দানবশক্তি : ভয়ের কারণ আমাদেরও আছে ফকির ইলিয়াস =================================== পাক ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে, আরেকটি মর্মান্তিক দু:খজনক ঘটনা ঘটে গেল। শক্তিশালী আত্মঘাতী বোমা হামলায় নৃশংসভাবে নিহত হলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। এই চরম লজ্জাজনক ঘটনাটি জানান দিয়ে গেল, উপমহাদেশে একটি কালো দাঁতাল শক্তি কতো জঘন্য ভাবে বেড়ে উঠছে। মাত্র আড়াই মাস আগে বেনজির দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে পাকিস্তানে ফিরেছিলেন। তার এই ফেরা নিয়ে নানা কথা হচ্ছিল। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার নাকি, স্বৈরশাসক পারভেজ মুশাররফের সাথে আাঁতাত- নিয়ে বিতর্ক ছিলে। কিন্তু বেনজির খুব সুদৃঢ় কন্ঠে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি মৌলবাদ মুক্ত, স্বৈরশাসনমুক্ত পাকিস্তান চান। যে কোন মূল্যে তিনি কাজ করে যাবেন সে লক্ষ্যে। বেনজির তাঁর প্রাণ দিয়ে কথা রক্ষা করেছেন। পাকিস্তানের ইতিহাসে বেনজির ভুট্টোর নামটি রাজনৈতিক ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। তার পিতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর ছায়ায় তাঁর রাজনীতির শুরু হলেও ক্রমশ: তিনি নিজের আসনটি সুপ্রতিষ্ঠিত করে নিতে পেরেছিলেন। মূলত: একাত্তর সালের ষোলই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় সাধিত হবার পর ‘পশ্চিম পাকিস্তানের’ শরীর থেকে পশ্চিম শব্দটি খসে পড়ে। একক পাকিস্তান রাষ্ট্রের পুনর্জন্ম হয়। যা ১৯৪৭ সালেই হতে পারতো। বাঙালীদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম সে সময়ে হলেই তা হতো উত্তম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি। ফলে চব্বিশ বছর ‘হামভি মুসলিম, তুমভি মুসলিম’ এই বুলি আওড়িয়ে পশ্চিম পাকিস্তানী উর্দু ভাষীরা বাঙালি জাতিকে শাসন এবং শোষণ দুটিই করে। জিন্নাহ-লিয়াকত আলীরা যে গণতন্ত্রী ছিলেন না- তা সে সময়ের ইতিহাসই বলেছে। গণতন্ত্র মানলে সংখ্যাগরিষ্ট বাঙালী জাতির শাসক, সংখ্যালঘিষ্ট উর্দু ভাষীরা হয় কি করে? কিন্তু তারপরও রাজনীতিকদেরকে চিরতরে ধ্বংষ করে দিতে তৎপর ছিল সামরিক জান্তারা। ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খাঁ, কিংবা জে. ইয়াহিয়া খাঁ-রা জনগণের টুটি চেপে ধরতেই ক্ষমতা গ্রহণের নামে মার্শাল ল’ জারি করেন। এমন কি তারা বাঙালি জাতিকে মাতৃভাষা বাংলা পরিত্যাগ করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের বল প্রয়োগ করার ধৃষ্ঠতা দেখান। এরপরে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির অভ্যুদ্বয় ছিল এ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ঘটনা। কিন্তু তারপরও কি পাকিস্তানে গণতন্ত্র চর্চা হয়েছে? না হয়নি। বেলুচ, সিন্ধী, পাঞ্জাবী, পাঠান প্রভৃতি গোত্র-সম্প্রদায়ের নানা কুটকৌশলের কাছে পাকিস্তানীরা নিজেদের কাছেই প্রতারিত হতে শুরু করে বিভিন্ন ভাবে। শাসক জুলফিকার আলী ভুট্টোর দগি কেঁপে উঠে বিভিন্ন কারণে। কারণ তার গণতন্ত্র চর্চা স্বচ্ছ ছিল না। কিন্তু তা যাই হোক না কেন আবার সামরিক শাসক জে. জিয়াউল হকের ক্ষমতা গ্রহণ প্রমাণ করেছিল, পাকিস্তানীরা গণতন্ত্রের চেয়ে গাদ্দারী মার্কা একনায়কতন্ত্রই বেশী পছন্দ করে। বিভিন্ন টালবাহানা করে প্রায় জোর করেই ভুট্টোর ফাঁসির হুকুম দেয় সামরিক জান্তারা। যে জুলফিকার আলী ভুট্টো জনরায় না মেনে দুই পাকিস্তানের শাসক হতে চেয়েছিলেন, তাকে বিদায় নিতে হয় অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে। জেনারেল জিয়াউল হক বিভিন্ন ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে শাসন চালাতে থাকেন। এরপর মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় জিয়াউল হককে নিহত হলে দেশের রাজনৈতিক প্রবাহ ভিন্নখাতে প্রবাহিত হয়। একটি কথা লক্ষ্যনীয় পাকিস্তানে মৌলবাদী জঙ্গীরা কিন্তু মূলত: সংঘটিত হতে শুরু করে জেনারেল জিয়াউল হকের সময়েই। কারণ এ রকম একটি মোল্লাবাদীতন্ত্রের খুব প্রয়োজন ছিল জিয়াউল হকের। এরপরে পাকিস্তান শাসন করেন বেনজীর ভুট্টো। কিন্তু জঙ্গীবাদের বিষক্রিয়া তিনি থামাতে পারেননি। তাছাড়া তার নিজ স্বামী আসিফ জারদারীসহ মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের সিংহভাগের দুর্নীতি ছিল সীমাহীন। ফলে তিনি টিকে থাকতে পারেননি। ক্ষমতায় আসেন নওয়াজ শরীফ। কিন্তু জঙ্গীবাদ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাষ্ট্রীয়ভাবে দেউলিয়া করে তুলে তার সরকারকেও। বিশেষভাবে সীমান্তবর্তী দেশ আফগানিস্তান থেকে আল-কাযেদা পন্থী জঙ্গীবাদের দাপট কাঁপিয়ে তুলে পাকিস্তানের গুহা, মরু, পর্বত। কারো কারো মতে পাক গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআই খুব কৌশলে নিজেদের রাষ্ট্রটিকে আংশিক অকার্যকর করে তোলে। সে সুযোগ নিয়ে খুব পারিকল্পিতভাবে নওয়াজ শরীফকে হটিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নেন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। দুই. জে. মোশাররফ শুরু থেকে কি বলে আসছেন, তা বিশ্বাবাসীর অজানা নয়। তিনি যে গণতন্ত্রকে ভয় পান, তা কারোই না জানার কথা নয়। বেনজীর এবং নওয়াজকে নির্বাসনে পাঠিয়ে তিনি খুব কঠোরভাবে চালাতে থাকেন তার ষ্টীম রোলার। সবচেয়ে মারাত্মক কথা হচ্ছে, জে. মোশাররফ ও জেনারেল জিয়াউল হকের কায়দায় পাকিস্তানে জঙ্গীবাদী নেটওয়ার্ককে মদদ দিয়েছেন, নিজে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। বাংলাদেশে জোট সরকার প্রাকশ্যে যেমন বাংলা ভাই, শায়খ রহমানকে মদদ দিয়েছিল জে. মোশাররফ একই কাজটি করেছেন নওয়াজ-বেনজীরের জনপ্রিয়তা কে হরন করার জন্য। আর খুব দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলতে হয়, জে. মোশাররফের এসব ভাওতাবাজী, ভন্ডামীকে সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, বুশ প্রশাসন। জে. মোশাররফ ওয়াশিংটনে এসে বুশের সাথে করমর্দনরত ছবি ছাপিয়েছেন, বিশ্ব মিডিয়ায় আইওয়াশ করেছেন বিশ্ববাসীর। অথচ তার প্রধান লক্ষ কি তা প্রমাণিত হয়েছে, নওয়াজ শরীফকে প্রথমবার দেশে আসতে বাধা দেয়া। এরপরে বেনজীর ভুট্টোকে কৌশলে পাকিস্তানে ফিরিয়ে এনে তার জীবন বিপন্ন করে তোলা। বেনজীর পাকিস্তান আসার পরপরই আক্রান্ত হন। কিন্তু তারপরও তার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়নি। লাল মসজিদে জঙ্গীরা যে কান্ড ঘটিয়েছে, তা ছিল গোটা পাকিস্তানের প্রতিচিত্র। কিন্তু জে. মুশাররফ তা কঠোর হস্তে দমন করতে পারেননি। বরং প্রকারান্তরে ডানপন্থী ছোট ছোট রাজনৈতিক গ্রুপগুলোর সাথে মোর্চা করে কিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়, সে ভাবনায় বিভোর রয়েছেন। বেনজীর আক্রান্ত হতে পারেন, তা তিনি নিজেও জানতেন। তারপরও জঙ্গীমুক্ত স্বদেশ ছিল তার একমাত্র আরাধ্য মাতৃভূমি। রাওয়ালপিন্ডিতে তার শেষ জনসভায়ও তিনি তা বলেছেন খুব স্পষ্ট ভাষায়। পাকিস্তান পিপলস পার্টির ব্যর্থতা যতো বেশীই থাকুক না কেন, জঙ্গীবাদী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে পিপিপি যে কঠোর ভাষা উচ্চারণ করে যাচ্ছে, বর্তমান বিশ্বে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ, স্বার্থক দিক। পাকিস্তানের আপামর মানুষও বেনজীরের পাকে সাড়া দিয়ে সমবেত হতে শুরু করেছিলেন। বেজনীরকে কে বা কারা হত্যা করেছে, তা খোঁজার পাশাপাশি তাকে কেন হত্যা করা হয়েছে, তার নিগুঢ় কারণটি বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে খুঁজে দেখতে হবে। কারণ বিশ্বে জঙ্গীবাদ দমনে বেনজীর একা ছিলেন না। তার সহযোদ্ধ অনেক নেতা এখনো বেঁচে আছেন। এমন কি আছেন বুশ প্রশাসনও। পাকিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেনজীরকে হত্যার মাধ্যমে খুনীরা জানিয়ে দিয়েছে- তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য কি। জে. মুশাররফ যে কালো সাপগুলো তার আস্তিনের পকেটে পুষেছেন এবং পুষছেন- এরা একদিন তাকেই কামড় দিতে পারে। বেনজীরের পর চরমভাবে বিপন্ন হতে পারে নওয়াজ শরীফের জীবনও। পাকিস্তানে এই যে দানব শক্তি রক্তাক্ত মহড়া দেখাচ্ছে তা গুড়িয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত ব্যবস্খা গ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি। ভারত-সরকার ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়ে গভীরভাবে ভেবে সিদ্ধান্ত নেবার আহ্বান জানিয়েছে। সেদিন হয়তো আর খুব দুরে নয়, আফগাস্তান থেকে ইঙ্গঁ-মার্কিন বাহিনী ইসলামাবাদ অভিমুখে মার্চ শুরু করতে হতে পারে। কারণ পাক-আফগান সীমান্তবর্তী মরু অঞ্চলই এখন শীর্ষ সন্ত্রাসী আল কায়েদা গ্রুপের ব্যাপক নিরাপদ আশ্রয় বলে চিহ্নিত হচ্ছে। শীর্ষ মার্কিন মুখপাত্ররা, বিশেষজ্ঞরা এ বিয়ে বেশ কিছুদিন থেকেই একমত পোষন করে আসছেন। তারপরও মুশাররফ প্রশাসনকে, বুশ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান ছিল খুব দুর্ভাগ্যজনক, লজ্জাজনক ঘটনা। পাকিস্তানে দানব শক্তির উথান, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, গোটা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্ববাসীর জন্য শংকার কারণ চরমভাবে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী উপমহাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ বিয়ে মার্কিন সিনেট-কংগ্রেসে লবিং শুরু করেছেন। পাক-আফগান সীমান্তে অবস্খানরত জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্খা নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি বদ্ধপরিকর। কিন্তু এর পাশাপাশি যে সব রাষ্ট্রনায়করা জঙ্গীবাদকে মদদ দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্খা গ্রহণ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। কারণ, জঙ্গীরা মানবতাবাদের প্রকৃত শত্রু। সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১১:২৩",False mk,"যুদ্ধাপরাধীকে ‘ধর্মগুরু’ বানাচ্ছে বিশ্ব মিডিয়া স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী নেতা কামারুজ্জামানকে ‘ইসলামী নেতা’ বলছে সুপরিচিত অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। সোমবার (৬ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দণ্ড পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তাকে ‘মুসলিম যাজক’ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে এসব সংবাদমাধ্যমে।সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পরপরই খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল, ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপি, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়াহু নিউজ, সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইট টাইমস, ভারতের জি নিউজ, পাকিস্তানের ট্রিবিউন, কাতারের আল জাজিরাসহ বিশ্ব সংবাদমাধ্যমগুলো। কিন্তু জামায়াতের ঢালা অঢেল টাকাতে বশ মেনে বিতর্কিত অনেক সংবাদমাধ্যম এ খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে কামারুজ্জামানকে ধর্মের লেবাসে মুড়ে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের প্রকাশ ঘটায়। এসব বিতর্কিত সংবাদমাধ্যম যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের পরিচয় প্রকাশের চেয়ে তাকে ‘ইসলামী নেতা’ বলে পরিচিত করতে বেশি চতুরতা দেখিয়েছে।ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপি ব্রেকিং নিউজ হিসেবে খবরটি প্রকাশের মাধ্যমে জানায়, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন ইসলামী নেতার রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত।জি নিউজ, ট্রিবিউন, স্ট্রেইট টাইমস, ইয়াহু নিউজসহ প্রায় বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম এএফপির বরাত দিয়ে ঠিক এ ধরনের চাতুর্য দেখিয়ে খবরটি প্রচার করে।এ খবর প্রচারে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের শিরোনাম একেবারে চমকে দেওয়ার মতো। ‘মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আপিলে হেরে গেলেন বাংলাদেশের ইসলামী নেতা’ শিরোনামে দ্য গার্ডিয়ান বলেছে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নৃশংসতা চালানোয় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এক ইসলামী নেতার রায়ের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত।অবশ্য, জামায়াতের আন্তর্জাতিক মুখপত্র হিসেবে পরিচিতি আল জাজিরা এ সংবাদ প্রচারে গা-বাঁচানোর কৌশল নিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি এ খবরের শিরোনাম লিখেছে, ‘ফাঁসির বিরুদ্ধে আপিলে হেরে গেলেন বাংলাদেশের জামায়াত নেতা’।এর আগে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম রায়ে আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ হওয়ার সময়েও এসব বিশ্ব সংবাদমাধ্যম তাকে ‘মুসলিম যাজক’ আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রচার করেছিলো।এমনকি মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষ নেওয়া একাধিক মিডিয়াকেও দেখা যায় বাচ্চু রাজাকারের পক্ষে সাফাই গাইতে।সেই ধারাবাহিকতায়ই এবার কামারুজ্জামানকে ‘মুসলিম ধর্মগুরু’ প্রমাণে তৎপর এসব বিশ্ব মিডিয়া।আর এর পেছনে যে অর্থের প্রভাবই কাজ করছে তা নিশ্চিত করেছে গোয়েন্দা সূত্রগুলোও। সূত্র: বাংলানিউজ২৪.কম",False fe,"সংস্কারবাদী মানুষের নির্মাণের নিজস্বতা সংস্কারবাদী মানুষের নির্মাণের নিজস্বতা ফকির ইলিয়াস=====================================বৃক্ষ রোপণের জন্য সাধারণত মে-জুন, জুলাই-আগস্ট মাসকেই বেছে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের পার্ক ও বন বিভাগ। বিভিন্ন ভবনের সামনে ভাসমান পুষ্প সমাহার বদলানো হয় দু’সপ্তাহ পরপর। মাটিসহ ছোট ছোট পুষ্পগুচ্ছ তুলে নিয়ে একই স্খানে অন্য প্রজাতির পুষ্পগুচ্ছ গুঁজে দিচ্ছে পার্ক বিভাগের কর্মীরা। মাটিসহ এসব পুষ্পচারা সংরক্ষিত থাকে। একটি চাক সরিয়ে অন্য চাকটি বসিয়ে দেয়া হয় মাত্র। দু’সপ্তাহ পরপর একই স্খানের ভিন্নতা আনার জন্যই এ চেষ্টা। অন্য কথায় এটাকে সংস্কারও বলা যেতে পারে।সংস্কার শব্দটি এ সময়ে গোটা বিশ্বে বহুল আলোচিত। জঙ্গিবাদীরা তাদের মতো করে সংস্কার চাইছে। গণতন্ত্রীরা চেয়েছে তাদের নিজের মতো বিশ্বের সংস্কার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ চেয়েছেন তার ইচ্ছামতো বিশ্বে শান্তির সংস্কার ওয়ার অন টেরোরিজমের নামে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র প্রশাসনকেই সংস্কার করে ঢেলে সাজানো হয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়টি জন্মই দেয়া হয়েছে নাইন-ইলেভেনের পর। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছে ফেডারেল সিকিউরিটি ফোর্সকে। সংস্কার সম্পর্কে কিছু চমৎকার কথা বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এ সময়ে বহুল আলোচিত চিত্রপরিচালক মাইকেল মুর। তিনি ফারেনহাইট নাইন-ইলেভেন ছবিটি পরিচালনা করে সাড়া জাগিয়েছেন গোটা বিশ্বে। নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরিতে তার সঙ্গে জমপেশ আড্ডা দিচ্ছিলাম আমরা ক’জন। মাইকেল মুর বুশের যুদ্ধনীতির কড়া সমালোচক। তিনি বলেছিলেন, আপনি নিশ্চয়ই বহুদিন একটি শার্ট পরতে চাইবেন না। পুরনো শার্টটি ফেলে দিয়ে কিছু দিন পর নিশ্চয়ই একটি নতুন শার্ট কেনেন। আর এটাই হচ্ছে নিজের সংস্কার। মইকেল মুর আরও বলেছিলেন, বুশ প্রকৃতপক্ষে বিশ্বে একটি সংস্কার চেয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, বুশের সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মানবদেহের রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে। তাহলে নিশ্চয়ই আমরা এমন সংস্কার চাই না, যা কি না আমাদের বসবাসযোগ্য বিশ্বকে বিষিয়ে তোলে।কোন কোন ব্যক্তির একটি কথাই অনেক কিছু আমাদের বুঝিয়ে দেয়। এর জন্য বেশি বলার দরকার হয় না। বললে তো শব্দ হয়। অনেকে তা শোনে। কোন শব্দ না করেও কিছু বলা যায়? হ্যাঁ যায়। আমরা তাকে চোখের ভাষা বলি। এ প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের কবি জন ব্যারিম্যানের কথা। প্রখর মানবতাবাদী, মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের এই কবি তার প্রেমিকাকে বলেছিলেন তুমি যদি পাঁচ মিনিট আমার দুটি চোখে চোখ রেখে অপলক তাকিয়ে থাক তবে আমি পাঁচশ’ লাইনের একটি কবিতা লিখে ফেলতে পারব নিশ্চিন্তে। এই পাঁচ মিনিট কী দেখবেন কবি? কী খোরাক পাবেন তিনি পাঁচশ’ লাইন লেখার? তা কবিই বলতে পারবেন। আর হয়তো তারাও পারবেন, যারা চোখের ভাষা বোঝেন।আবারও সংস্কার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপ্রধান ড. ফখরুদ্দীন আহমদও একজন সংস্কারবাদী মানুষ। জাতীয় দিবসগুলো ছাড়াও পয়লা বৈশাখ কিংবা রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তীতে যে সরকারপ্রধান জাতিকে আশার বাণী শোনান তার মনন ও মনীষার ব্যাপক প্রশংসা না করে উপায় নেই। বর্তমান তদারকি সরকারপ্রধান মানুষকে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন। বাঙালির চেতনাকে শাণিত করার কথা বলছেন বারবার। এটা আমরা সবাই জানি বাংলাদেশের মানুষই শ্রেষ্ঠ সংস্কারবাদী। কত দুর্যোগ, দুর্ভোগ সহ্য করে যারা আবার নিজেদের নির্মাণ করতে পারেন, তারাই তো অন্যতম সংস্কারক। সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া সিডরের কথাই ধরা যাক। সিডর-উপদ্রুত এলাকার মানুষ আবার জেগে উঠছে। অথচ সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরকারি সাহায্য এখনও বন্টিত হয়নি। এক শ্রেণীর মাফিয়া-ফঁড়িয়ারা চাঁদা নিচ্ছে তরমুজ চাষিদের কাছ থেকে সেই সিডর-আক্রান্ত এলাকায়। কী অমানবিক দৃশ্যাবলি। অথচ সরকারি আইন প্রয়োগকারী সংস্খা নির্বিকার ভমিকা পালন করছে। একটি রাষ্ট্রের উঠে দাঁড়ানোর একমাত্র শক্তিই হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। এ কাজটি করতে আমাদের সমাজের ধনপতিরা খুবই কৃপণ। তারা কেউ কেউ মনে করেন, সমাজের সিংহভাগ মানুষ যদি শিক্ষিত হয়ে যায়, তবে এ ধনবান মোড়লদের তুঘলকি চলে যাবে। দুই.বিশ্বের ধনবান, সুসভ্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে ব্যক্তিগত সাহায্য, শিক্ষা-চিকিৎসা ব্যবস্খার উন্নয়নে একটি সুবৃহৎ সহযোগী শক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের নামিদামি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুলগুলোতে অনেক ধনপতিই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ট্রাস্ট বানিয়ে বড় বড় ফান্ড দান করে যান। এগুলো তাদের নিজের নামে বৃত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে গেলে তাকে সে বৃত্তিগুলোর বিবরণ সংবলিত ব্রোসিয়র ধরিয়ে দেয়া হয়। কোন কোন বৃত্তি আবার এথনিক সোসাইটির (গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজের) মধ্যে সীমাবদ্ধ। যেমন শুধু ম্প্যানিশ কিংবা গ্রিক সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরাই আবেদন করতে পারবে। না এর অর্থ কোন বৈষম্য নয়। দাতা তার দানপত্রে বলে গেছেন তার উল্লিখিত সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্রছাত্রীরাই শুধু এ সুবিধা পাবে। কোন দাতার ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা তো থাকতেই পারে। একইভাবে দেখা যায়, কেউ কোন নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসা গবেষণার জন্য বিলিয়ন ডলার দিয়ে গেছে। ক্যান্সার, লিক্যুমিয়া, হৃদরোগের চিকিৎসা সাহায্যার্থে এসব দানের পরিমাণ ইউরোপ-আমেরিকায় বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে এমন উদারতার উদাহরণ খুবই বিরল। বিভিন্ন ব্যক্তি উদ্যোগে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে সেগুলোতে বৃত্তি প্রদানের হার আশাব্যঞ্জক নয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা চিকিৎসা ক্লিনিকগুলো তো রীতিমতো কসাইবৃত্তি করে। এমন খবর পত্রপত্রিকায় আমরা প্রায়ই পড়ি। অথচ উন্নত বিশ্বে রোগীকে জিজ্ঞাসা করা হয় না, আপনি বিল পরিশোধ কীভাবে করবেন। আগে চিকিৎসা। বিলের ব্যাপারটি আসে পরে। তিন.বাংলাদেশের চলমান প্রেক্ষাপটে জুন মাসকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন মহলের মতে, অনেক কিছুই ঘটে যাবে এ কয়েক সপ্তাহে। সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছেন। এরপর পরই সেনাবাহিনীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ রদবদল হওয়ার সংবাদ বেরিয়েছে। সেনাবাহিনীই শুধু নয়, যে কোন সরকারি প্রশাখায় রদবদল একটা চলমান প্রক্রিয়া। প্রধান বিচারপতির পদেও নতুন মুখ এসেছেন। আমরা একটা কথা জানি এবং মানি, সর্বাগ্রে জনগণের স্বার্থ। এ স্বার্থ রক্ষায় যা কিছু দরকার, তাই করবে সরকার। এদিকে সংলাপ শেষ করে বিভিন্ন দলের নেতারা তাদের মতামত জানাচ্ছেন। ড. কামাল হোসেন আবারও জাতীয় সরকারের দাবি জানিয়েছেন। জাতীয় সরকার কীভাবে হবে এবং তারা জাতীয় স্বার্থ কীভাবে রক্ষা করে এগিয়ে যাবেন, তাও দেখার বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বড় দুই দল নির্বাচনে অংশ না নিলে সেই কল্পিত জাতীয় সরকারের রূপরেখা এবং স্খায়ীত্বই-বা কতটা শক্ত হবে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীনরা কোন মতেই ওয়ান-ইলেভের আগের অবস্খায় জাতিকে ফিরে যেতে দেবেন না। এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও অন্যান্য দলের সমন্বয়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর নবম জাতীয় সংসদের মাধ্যমে কিছু জরুরি সংশোধনীও সংযোজিত হতে পারে সংবিধানে। এর মধ্যে হরতাল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার ধারাও যুক্ত হতে পারে। রাজনৈতিক বিধিমালা বিষয়ে রাষ্ট্রীয় বেশ কিছু আইনও সংযোজিত হতে পারে।শুরুতেই বলেছি একটি সংস্কারই নতুন কিছু নিয়ে আসে সমাজের জন্য, মাটির জন্য, মানুষের জন্য। এ বছরের শেষ মাসে যদি নির্বাচন হয়, তবে পরিবর্তনের সুবাতাস নিয়ে যারা আসবেন তাদের কর্মকাণ্ড কী হবে, তা স্খির করে যেতে হবে বর্তমান ক্ষমতাসীনদেরই। তারা সে কাজ করছেনও, ভেতরে ভেতরে তা অনুধাবন করছেন দেশের মানুষ। কিন্তু একটি কথা মনে রাখতে হবে, এই রাজনীতির যোগ-বিয়োগে যদি ভুল হয় তবে এর মাশুল জাতিকে অনেক পেছনে ঠেলে দিতে পারে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কিংবা শেখ হাসিনা তার আইনজীবীদের মাধ্যমে যা বলছেন তা আন্দোলনের আগাম সঙ্কেত বহন করছে। এই ত্রিশঙ্কু অবস্খায় জনগণ কোথায় দাঁড়াবে, নেপথ্যের পেশিশক্তি হঠাৎ দেশকে উত্তাল করে তুলবে কি না­ তা নিয়ে ভাবতে হবে। জামায়াত ইতোমধ্যেই চারদলীয় জোটের ছায়াতলে আশ্রয় চেয়েছে। আমি স্পষ্টত মনে করি, জনগণের প্রকৃত স্বার্থ রক্ষায় যদি অন্তরিকতা দেখানো না হয়, তবে দুষ্ট সুবিধাবাদীরাই উপকৃত হবে বেশি। নিউইয়র্ক, ৩ জুন, ২০০৮--------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ৬ জুন ২০০৮শুক্রবার প্রকাশিত",False rn,"একজন ভবিষ্যবক্তা লেখক ফ্রানৎস কাফকা কাফকার লেখাগুলো অসংখ্য আত্মজীবনীর উপাদানে ভরপুর (কিন্তু তার মানে এমন না যে কাফকার সাহিত্যকর্ম তাঁর কোনো লুকানো-সাজানো আত্মজীবনী)। কাফকা নিয়মিত ব্যায়াম ও খেলাধুলা ভালোবাসতেন, ভালো সাইকেল চালাতেন, সাঁতার পছন্দ করতেন, নৌকার দাঁড় টানায় দক্ষ ছিলেন। কাফকার মতো চালাক সম্ভবত আর কেউ ছিলেন না; তাঁর মতো স্বচ্ছতা নিয়ে বিশ্বব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থার ফাঁকগুলোও আর কেউ বোধ হয় ধরতে পারেননি। কাফকার রসবোধ (সেন্স অব হিউমার) নিয়ে চিন্তা করলেই মনে হয়, কীরকম গুরুতর সব পরিস্থিতিকে কীরকম কমিক বানিয়ে ছেড়েছেন তিনি।জার্মান ভাষার উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখক ফ্রানৎস কাফকা। জার্মান-ইহুদী জার্মানভাষী মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। নোবেল বিজয়ী ১০৯ জন লেখকের মধ্যে ৩২ জনই তাঁদের লেখায় কাফকার সরাসরি প্রভাব আছে বলে স্বীকার করেছেন। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের পরে আর কোনো লেখককে নিয়ে এতটা লেখালেখি বা গবেষণা হয়নি, যা হয়েছে কাফকাকে নিয়ে। শারীরিক এবং মানসিক নিষ্ঠুরতা, বিচ্ছিন্নতাবোধের আদিরূপ, পিতা-মাতা-সন্তানের দ্বন্দ্ব, আতঙ্ক, আমলাতন্ত্রের গোলকধাঁধা আর রহস্যময় রূপান্তরকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে কাফকার অধিকাংশ রচনা৷ সমাজের বিভিন্ন দিক, বিভিন্ন সময় উদ্ভট রূপ পেয়েছে তাঁর উপন্যাসে, ছোট গল্পে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের অধ্যয়নের শেষের দিকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাক্স বোর্ড নামে একজন ছাত্রের সাথে পরিচিত হন যার সাথে কাফকার আজীবন বন্ধুত্ব ছিল। কাফকা একজন আইনজীবী হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সফল সার্থক লেখার অনুভূতি কাফকার জন্য শুধু ওরকম চূড়ান্ত আনন্দের কিছু ছিল, কেবল তা-ই নয়; সার্থক কোনোকিছু লেখার মধ্যে দিয়ে তিনি তার জীবনের দুঃখ-কষ্ট থেকেও দূরে সরতে চাইতেন।কাফকা চারজন লেখককে তাঁর ‘সত্যিকারের রক্তের ভাই’ বলে ভাবতেন: দস্তয়ইয়েফ্স্কি, ফ্লবেয়ার, ফ্রানৎস গ্রিলপারসার ও হাইনরিখ ফন ক্লাইস্ট । এর পাশাপাশি চেক সাহিত্য ভালোবাসতেন কাফকা আর গ্যেয়টেকে খুব পছন্দ করতেন। যৌন বিষয়ে কাফকার ঘৃণা, অপরাধবোধ এবং একই সঙ্গে তার অনেকবার পতিতালয়ে যাওয়া, পর্নোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ– এসব নিয়েও কম গবেষণা হয়নি। ১৯১৭ সালের আগস্টে কাফকার স্বরযন্ত্রের ক্ষয়রোগ (যক্ষ্মা) ধরা পড়ে। ১৯১৮-এর অক্টোবরে তিনি স্প্যানিশ ফ্লুুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর একদম কাছাকাছি চলে যান। বলা যায়, তাঁর প্রায় সারাটি জীবনই কেটেছে অসুস্থতাজনিত বিষণ্ণতা এবং সামাজিক উদ্বেগের মধ্য দিয়ে৷ মারা যান ৪১ বছর বয়সে৷ মৃত্যুর কিছুকাল আগে নিজের যাবতীয় পাণ্ডুলিপি এবং না পাঠানো চিঠি ও স্মৃতিচারণামূলক বই দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর দীর্ঘকালের বন্ধু, সাহিত্যিক ও প্রকাশক মাক্স ব্রোডকে৷ দেয়ার সময় একটা অনুরোধও করেছিলেন – সব কিছুই যেন তাঁর মৃত্যুর পর ধ্বংস করে ফেলা হয়৷ ব্রোড তা করেননি৷ কাফকা বেঁচে থাকতে তাঁর খুব কম রচনাই প্রকাশিত হয়েছিল৷ মৃত্যুর পরই সিংহভাগ প্রকাশিত হয়৷The Street Window(রাস্তার জানালা) ভাষান্তর: বাসুদেবনির্জন জীবন যাপন করেও কেউ যদি যখন তখনই চায় নিজেকেকোথাও জড়াতে, কেউ যদি দিনের পথ পরিবর্তনের সঙ্গে, আবহাওয়াবা কাজকর্মের বা এই ধরনের বদলের সঙ্গে তাল রেখে হঠাৎ ইচ্ছে করেকোনো বাহুলগ্ন হতে-- সে কিছুতেই বেশিক্ষণ রাস্তার মুখোমুখি জানালাটাকে এড়িয়ে চলতে পারে না এবং তার যদি অন্য কিছু চাওয়ার মতো মেজাজও না থাকে এবং ক্লান্তভাবে তার জানালার কাছেগিয়ে দাঁড়ায়, তার প্রকাশ্য জগৎ থেকে দৃষ্টি আকাশের দিকে তুলে এবংনামিয়ে এবং বাহিরের দিকে তাকাতে যদি সে না চায়, মাথাটা ঈষৎ ওপরের দিকে ঝাঁকিয়ে--- তবুও নিচের ঘোড়াগুলো তাকে টেনে আনবেসারিবদ্ধ গাড়ি এবং প্রবল হট্টগোলের মধ্যে-- এবং অবশেষে এক মাননীয় ঐকতানের মাঝখানে। পুরো নাম: ফ্রানৎস কাফকাজন্ম: ৩রা জুলাই, ১৮৮৩, প্রাগ, চেক প্রজাতন্ত্র৷ (তখন নাম ছিল বোহেমিয়া৷ অঞ্চলটি তখন অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির অন্তর্ভুক্ত ছিল৷)মৃত্যু: ৩রা জুন, ১৯২৪, কিয়ারলিং,অস্ট্রিয়াপেশা: লেখকবাবা: হ্যারমান কাফকামা: জুলিউল্লেখযোগ্য সাহিত্য কর্ম: দি ফ্যারভান্ডলুং (দ্য মেটামরফোসিস), ডাস উয়রটাইল (দ্য জাজমেন্ট), ডেয়ার প্রোৎসেস (দ্য ট্রায়াল), ডি বেত্রাখটুং (কন্টেমপ্লেশন)",False mk,"পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি ছিল না পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ও তাদের স্থানীয় অনুসারীরা ছয় বছর আগে যা করেছিল, তা পদ্মার বিশাল জলরাশিকেও রীতিমতো ঘোলা করে দিয়েছিল। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝখানে এক দিশাহীন অবস্থার মধ্যে পড়েছিল। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন বাংলাদেশ প্রধান, কয়েকটি গণমাধ্যম ও টক শোর কিছু চেনা মুখ ‘এত বড় দুর্নীতি’র জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের তুলাধোনা করছিলেন প্রতিদিন। চাপে থাকা সরকার মন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েছিল। একজন সচিব ও একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল এবং তাঁদের কিছুদিন কারাবাসও করতে হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পেতে কানাডার একটি কম্পানি ঘুষ দিতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ব্যাপারে দুই দফা তদন্ত করেও অভিযোগের সত্যতা পায়নি। পূর্বোক্তরা তখন দুদককেও একহাত নিয়েছিল। এই রটনার পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয় কানাডার একটি আদালতেও। সম্প্রতি সে মামলার রায় হয়েছে। আদালত একে নিছকই অনুমান ও গুজব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং কানাডার সেই কম্পানির অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এ খবর বাংলাদেশে পৌঁছার পর থেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা বাংলাদেশের মানুষ সংবিৎ ফিরে পেয়েছে। জাতিকে কলঙ্কিত করার জন্য তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে। ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভুয়া অভিযোগের কারণে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তাঁরাও। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, বিশ্বব্যাংকের মতো একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান এমন অন্যায় আচরণ কেন করল?বিশ্বব্যাংকের এমন আচরণের নানা দিক এখন পত্রপত্রিকায় উঠে আসছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রধান ছিলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি শুধু দেশে নন, আন্তর্জাতিকভাবেও একজন খ্যাতিমান প্রকৌশলী ও শিক্ষাবিদ। তাঁর নেতৃত্বে মূল্যায়ন কমিটি প্রথম দফায় পাঁচটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য বিবেচনা করেছিল। সেই তালিকা বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠানো হলে বিশ্বব্যাংক পুনরায় দরপত্র আহ্বান করতে বলে। দ্বিতীয় দফায়ও পাঁচটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করে তালিকা পাঠানো হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক তালিকার বাইরে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে বলে। মূল্যায়ন কমিটি জানায়, কম্পানিটি কিছু ভুয়া তথ্য দেওয়ায় তাদের বিবেচনা করা হয়নি। পরে জানা যায়, চীনা কম্পানির অজান্তেই তাদের বাংলাদেশি এজেন্ট সই জাল করে এই দরপত্র দিয়েছিল। চীনা কম্পানি তখন দরপত্র প্রত্যাহার করে নেয় এবং এজেন্সি বাতিল করে। এতে আহত হয়ে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলে এবং চুক্তি বাতিল করে। যে মানুষের ভেতর ন্যূনতম দেশপ্রেম আছে, তারা বিশ্বব্যাংকের এই আচরণ মেনে নিতে পারে না। এই রায়ে বাংলাদেশ সরকারের নৈতিক জয় হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা ছিল সঠিক।বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। কিছুদিন আগে বিশ্বব্যাংকের প্রধান বাংলাদেশ সফর করে গেছেন এবং বর্ধিত উন্নয়ন সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু যাঁদের কারণে পদ্মা সেতু তিন বছর পিছিয়ে গেল, বাংলাদেশ অপমানিত হলো, তাঁদের জবাবদিহি করাটা কি বিশ্বব্যাংকের কর্তব্য নয়? স্থানীয় যাঁরা সেদিন কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই দেশের কপালে কলঙ্কতিলক এঁকেছিলেন, তাঁদেরও বিচারের মুখোমুখি করা যায় কি না তা ভেবে দেখতে হবে, তা না হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হবে না সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪৯",False hm,"ভূতের গুল্প ০১ ১. খুব বিষ্টি পড়ছে তো? পড়ছে। কারেন্টও চলে গেছে? গেছেই তো। ঠান্ডা ভেজা বাতাস চালিয়েছে না? আবার জিগস! অ্যাই, এসব আবার কী কথা? এসবই তো আমরা বলি রে বুড়ো! বুড়ো? আমি বুড়ো? ষাট বছর বয়সে কেউ বুড়ো হয়? হয় তো। যা ফোট। তোদের দাদাবাড়ির লোকের মতো দুবলা না আমি। এখনও সতেজ, নবীন। একটু পেকেছি আর কি। এখনও গেন্ডারি ছুলে খাই দাঁত দিয়ে। এই দ্যাখ কি থোকা থোকা মাসল, গেঞ্জি পরে বারান্দায় দাঁড়ালে তোদের পাশের বাড়ির মেয়েরা বারান্দায় এসে গুলুগুলু চোখ করে তাকিয়ে থাকবে, হুঁ ...। গেঞ্জি নাই তোমার? শাহালোমের মা ধুতে দিয়েছে বোধহয় ... যাকগে, মুড়ি হলে ভালো হতো। এখন অন্ধকার, মুড়ি বানানো যাবে না। মুড়ি বানানো না গেলেও মাখানো তো যাবে! ওটাকেই বানানো বলি আমরা। ক্যানো ঘরে কি মোম্বাতি নাই? মুড়ি ছাড়াই বলো। কী? গল্প। গল্প আবার কোত্থেকে এলো? হচ্ছিলো মুড়ির কথা। বিষ্টি হচ্ছে, কারেন্নাই, ভেজা বাতাস, খ্যাতামুড়ি দিয়ে এখন সবাই গল্প শুনবো। তাহলে তো মুড়ি ফরজ। বুলি তুই বানিয়ে নিয়ে আয় তো এই বকাবাজ বুড়োটার জন্য। আই বেগ ইয়োর পার্ডন? আই বেগ ইয়োর পার্ডন? কোন মাপ নাই কারো। বুড়োটার মুড়ি বুলি বানাবে। তাহলে আমি না আসা পর্যন্ত কোন গল্প হবে না। কবুল। রাজি। আমিও। ২. মুড়ি বানানো খারাপ হয়নি। যদিও চানাচুরটা মন খারাপ করে আছে, আচারের তেলটাতে ঝাঁঝ কম, পেঁয়াজগুলোও বোকাটে মার্কা ... এটা কী, য়্যাঁ? গরুর মাংসের কুচি। বলিস কী? মুড়িতে মাংস খাওয়া শুরু করে দিয়েছিস নাকি? নানীর মতো মোটা হয়ে যাবি তো! ব্যাম করি দাদু, ব্যাম করি। অ। বা, বেশ। ভালো মুড়ি। এবার গল্প বলো। হে হে হে, আমি বকবো তোরা খাবি তা কি হয়? খাবো না। আমরা শুনবো। আমাদের অতো মুড়ির বায়না নাই। আহহা, গুড গুড। আমি একাই খাই। শুরু করো। কীসের গল্প শুনবি? শিকারের? তুমি শিকার করেছো? আরে না, ছিহ। অকারণে প্রাণীহত্যা মহাপাপ। নানী যে ঐদিন বললো তোমার বন্দুকের টিপ নাকি খুব ভালো ছিলো? ছিলো কেন? আজও আছে। কিন্তু শিকারফিকার করিনি। গুলি করেছি দরকারে। বলো কী! হুঁ। জানোয়ার মেরেছি কয়েকটা ... যাই হোক, সে অন্য গল্প। তাহলে কীসের গল্প শুনবি? ভূতের। হুমম। শেষ মেশ ভূত? এই ২০০৭ সালে এসে? হ্যাঁ। আচ্ছা ঠিকাছে। কিন্তু গল্পের মাঝে কোন প্রশ্ন করা চলবে না। প্রশ্নোত্তর সেশন চলবে গল্পের পর, ঠিকাছে? ঠিকাছে। ৩. আমার বন্ধু বদরুলই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো হাসমতের সাথে। বলে, এই হচ্ছে হাসমত, মহা অলস। অন্যদের খাটিয়ে মারে। বদরুল কে? অ্যায় তো! অ্যায় তো! জানতাম আমি, গল্পের মধ্যে প্রশ্ন করবি। যাহ, তারচে মুড়িটা আরাম করে চিবাই ...। না না না না, আর প্রশ্ন করবো না। ঠিক্তো? হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক্তো। আচ্ছা ... বলি। ... ৪. বদরুল আমার খুব ভালো একজন বন্ধু। মাথায় কিছু সমস্যা ছিলো, তাই বন্ধুত্ব টিকে গেছে। গল্প বলতে গেলেই বদরুল চলে আসে গল্পে। যাই হোক, বদরুল বেছে বেছে বিদঘুটে লোকজনের সঙ্গে পরিচিত হয়, তাই হাসমতকে বেশি পাত্তা দিলাম না আমি। লোকটা বাঁশের মতো সরু, কিন্তু হাতে মোষের মতো জোর, করমর্দন করতে গিয়ে সে আমার হাতটা প্রায় ভর্তা বানিয়ে ফ্যালো আর কি। জানলাম, বদরুল ব্যবসা করে নানারকম। আপাতত সে কাঠের ব্যবসা করছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। বদরুল নাকি কোথায় কার সঙ্গে কী এক পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে হাসমতের দেখা পেয়েছে, খুব খাতির হয়ে গেছে তার সাথে। আমি বললাম, অন্যকে খাটিয়ে মারে মানে? হাসমত হাসিমুখে বললো, দেখুন সর্দার সাহেব, আপনার বন্ধুর কথার ছিরিটা দেখুন, খালি পদে পদে খোঁটা দেন। বদরুল কিন্তু কথা ফেরায় না। বলে, উঁহু, আমাকে চাটগাঁ থেকে ঢাকা গোটা রাস্তা গাড়ি চালাতে হয়েছে বলে বলছি না, আমি দেখেছি, হাসমত সাহেব তাঁর লোকদের রীতিমতো ঘাম ছুটিয়ে ছাড়েন। হাসমত হাসে, একেবারে হায়েনার হাসি যাকে বলে। হাসি শেষে বলে, আমরা খেটে খাওয়া লোক বদরুল সাহেব, নিজে খাটি বলেই অন্যকে খাটাই। বদরুল বলে, এই খাটাখাটনি উপলক্ষে তাহলে হবেনাকি একটু বোতলসেবন? ছি দাদু, তুমি মদ খেতে? নাহ। তবে বদরুল খেতো। আমাকে সাধাসাধি করতে করতেই সিকি বোতল খেয়ে ফেলতো। হুম। গল্পের মাঝখানে প্রশ্ন করলে কী শাস্তি তা জানিস? চা বানিয়ে আনা। গুড! ভেরি গুড! মিলি তুই বানাবি চা, আমি মুড়ি মাখিয়ে এনেছি। আই বেগ ইয়োর পার্ডন? কোন মাপ নেই, আমার চা মিলিকেই বানাতে হবে। তাহলে আমি না আসা পর্যন্ত গল্প সামনে বাড়বে না। তথাস্তু। ৫. চা বেশ ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ। এবার আবার শুরু হোক। হুমমম। কী বলছিলাম? ওহ। তো সেদিন বদরুলের বাড়িতে আমি আর বদরুলের খানসামা মতি ছাড়া সবাই মাতাল হয়ে গেলো। আর কে ছিলো ওখানে? বদরুল আর হাসমত। ওহ। তারা দু'জনে মিলেই পাঁচজনের সমান মাতাল হয়ে গেলো। বদরুল মাতাল হলে চমৎকার গান ধরে। ওর গলা খুবই সুরেলা ছিলো, কিন্তু কথাগুলি উল্টাপাল্টা হয়ে যেতো আর কি। হাসমতও তার হায়েনার গলায় একটা গান ধরলো, পাতলা কোমর ত্যারছা নজর ...। বলো কী? তখনও ছিলো এসব? এসব আজীবন থাকবে। যাই হোক, গল্পের মধ্যে বকাবি না। আমি দুই মাতালের কান্ড দেখতে দেখতে কাবাব খাচ্ছিলাম। তো, মাতাল বদরুল মাতাল হাসমতকে জিজ্ঞেস করলো, হাসমত সাহেব, আপনি এতো টাকাপয়সা কিভাবে বানালেন বলুন তো? চোরাকারবার করেন না তো? মাতাল হাসমত বললো, আরে বদরুল সাহেব, চোরাকারবার না করে কেউ পয়সা বানাতে পারে আজকাল? এটা কোন সময়ের কথা? ঊনিশশো তিরাশি ... বা চুরাশি। তো, আমি বললাম, কীসের চোরাকারবার করেন আপনি? হাসমত সোফায় আধশোয়া হয়ে বলে কী, মদ পিলিয়ে পেটের গোপন কথা বার করে নিচ্ছেন? বলবো না। কিছুতেই বলবো না যে আমি সোনা চোরাচালান করি। আমি বেশ মজা পেলাম। বদরুল হতভাগাটা বলে কি, সেদিন যে আমাকে সারাটা রাস্তা ধরে গাড়ি চালাতে হলো বদরুল সাহেব, কাজটা কি ঠিক হলো? সোনার কারবার করেন, আর একটা ড্রাইভার রাখতে পারেন না? হাসমত মজা পেয়ে গেলো। বলে, আমার নাম তো বদরুল নয়। আপনি মাতাল হয়ে কী আজেবাজে বকছেন? এই বলে কী হ্যা হ্যা করে হাসি তার। বদরুলটাও মাতালের হাসি দিতে লাগলো দাঁত কেলিয়ে। হাসমত সোফায় আরো কাত হয়ে শুয়ে বললো, কী করবো বদরুল ভাই, আমার ড্রাইভার টেকে না। বদরুল বললো, টিকবে কেন? ওরকম খাটিয়ে মারলে ড্রাইভার টেকে নাকি? হাসমত জড়ানো গলায় বলে, না না না, আমি ভালো ড্রাইভারের খুব কদর করি। কিন্তু ওরা ভয় পায়। নোকরি ছেড়ে ভাগে। আমি বলি, কীসের ভয়? হাসমত বলে, ভূতের। (চলবে ... একটু রয়েসয়ে আর কি ...)",False rg,"প্রসঙ্গ তিন সিটি করপোরেশান নির্বাচন _ টক ঝাল মিষ্টি পর্ব তিন!!! বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চন্দ্রনাথ কন্যা রূপসী চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের আলোচনায় যাবার আগে চলুন কিছু পরিসংখ্যানে একটু চোখ বোলানো যাক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশান : ★ মেয়র প্রার্থী ১২ জন। ★ কাউন্সিলর পদে সাধারণ ২১৩ জন। ★ কাউন্সিলর সংরক্ষিত আসনে ৬১ জন। ★ সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা ৪১টি। ★ সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৪টি। ★মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৭১৯টি ★ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪৯০৬টি। ★অস্থায়ী ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৩টি। ★অস্থায়ী ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪৫২টি। ★মোট ভোটার সংখ্যা ১৮,১৩ ৪৪৯ জন। ★ পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৯,৩৭,৫৩ জন। ★ নারী ভোটার সংখ্যা ৮,৭৬ ৩৯৬ জন। চট্টগ্রামের মেয়র প্রার্থীরা হলেন: ১. মোহাম্মদ মনজুর আলম। ২. আ জ ম নাসির উদ্দীন। ৩. মো. আবুল কালাম আজাদ। ৪. মো: শফিউল আজম। ৫. সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা। ৬. আরিফ মইনুদ্দীন। ৭. এম এ মতিন। ৮. সোলায়মান আলম শেঠ। ৯. মো. আলাউদ্দিন চৌধুরী। ১০. হোসাইন মোহাম্মদ মুজিবুল হক। ১১. সাইফুদ্দিন আহমেদ (রবি)। ১২. মো. ওয়াজেদ হোসেন ভূঁইয়া। নির্বাচনী ফলাফল: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন। মোট ৭১৯টি কেন্দ্রের সবগুলোর ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে হাতি প্রতীক নিয়ে নাছির পেয়েছেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম কমলা লেবু প্রতীকে পেয়েছেন ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন (চরকা) ১১,৬৫৫ ভোট, ওয়ায়েজ হোসেন ভুঁইয়া (টেবিল ঘড়ি) ৯,৬৬৮ ভোট, জাতীয় পার্টি সমর্থিত সোলায়মান আলম শেঠ (ডিশ অ্যান্টেনা) ৬,১৩১ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্টের হোসাইন মোহাম্মদ মুজিবুল হক শুক্কুর (ময়ূর) ৪,২১৫ ভোট, সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি (ফ্লাক্স) ২,৬৬১ ভোট, গাজী মো. আলাউদ্দিন (টেলিস্কোপ) ২,১৪৯ ভোট, বিএনএফের ‍আরিফ মঈনুদ্দিন (বাস) ১,৭৭৪ ভোট, আবুল কালাম আজাদ (দিয়াশলাই) ১,৩৮৫ ভোট, সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা (ক্রিকেট ব্যাট) ৮৪৫ ভোট এবং শফিউল আজম (ইলিশ) ৬৮০ ভোট পেয়েছেন। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে, মনজুর আলম আর নাছির উদ্দিনের মধ্যেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। যদিও নির্বাচন বর্জন করায় নাছির উদ্দিন এক লাখ ৭০ হাজার ৫২৪ ভোটের ব্যবধানে মঞ্জুর আলমকে পরাজিত করেছেন। কিন্তু মনজুর আলম নির্বাচন বর্জন না করলে এই ব্যবধান হয়তো আরো কমে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতো। এসএসসি পাস মনজুর আলম অনেকটা একজন গোবেচারা টাইপের ভদ্রলোক। যার রাজনৈতিক গুরু হলেন আওয়ামীলীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। মহিউদ্দিন চৌধুরী যখন চট্টগ্রামের মেয়র, তখন তিনি ছিলেন একজন কমিশনার। পরে ২০১০ সালের ১৭ জুনের নির্বাচনে বিএনপি'র সমর্থন পেয়ে গুরুকে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে চট্টগ্রামের মেয়র হয়েছিলেন। কিন্তু মনজুর আলম মেয়র নির্বাচিত হয়েও কখনো গুরুর বিরুদ্ধে কিছু করেননি। বরং গুরুর কথা মত চট্টগ্রাম সিটির কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সে তুলনায় বরং স্নাতক পাস নাছির উদ্দিন তুলনামূলকভাবে আওয়ামীলীগ সমর্থিত অনেকটা তরুণ প্রার্থী। যিনি একজন ক্রীড়া সংঘটক ও ছাত্রনেতা থেকে বর্তমানে চট্টগ্রাম আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তিনি একজন সহ-সভাপতি। সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনজুর আলমকে টেক্কা দেবার মত তুখোর তরুণ নেতা। চট্টল্লার জলাবদ্ধতার দায় মনজুর আলমের ঘাড়ে চাপিয়ে যিনি চট্টল্লাবাসীর কাছে আলোড়ন তুলেছেন। অন্যদিকে ২৮ এপ্রিলের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে মনজুর আলম আরেকটু সময় নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের সিনিয়র নেতাদের চাপাচাপিতে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেওয়ার সময় ক্ষোভ আর হতাশায় তিনি রাজনীতি থেকেই বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দেন। বিএনপি নেতারা ভাবতেই পারেননি, নির্বাচন বর্জনের কথা বলতে গিয়ে রাজনীতি বর্জনেরও ঘোষণা দেবেন মনজুর আলম! এ ঘোষণায় হতবাক হওয়ার পাশাপাশি বিব্রত অবস্থায় পড়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। প্রশ্নঃ বাংলাদেশের কোনো মিডিয়ায় বিএনপি'র বড় বড় নেতাদের ভোট দেবার কোনো ছবি দেখলাম না কেন? তিন সিটিতে নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে বিএনপি সমর্থকদের কোনো নির্বাচনী ক্যাম্প ছিল না কেন? ভোটকেন্দ্রে বিএনপি সর্বত্র পুলিং এজেন্ট নিয়োগ দিল না কেন? মন্তব্য: ## ভোটারদের জন্য সাধারণত ভোটার নাম্বার খুঁজে দিতে প্রত্যেক প্রার্থীর কেন্দ্রের আশেপাশে নির্বাচনী ক্যাম্প থাকে। ভোটাররা সেখান থেকে ভোটার নাম্বার সংগ্রহ করেন। বিএনপি'র প্রার্থীরা কেন এবার সেই সৌজন্যতা দেখালো না? এসব অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর হল, বিএনপি'র হাই কমান্ড থেকে একেবারে পাতিনেতা পর্যন্ত সবাই ভোটের দিন সকাল থেকেই তাদের ভোট বর্জনের বিষয়টি জানতেন। যেহেতু ভোট বর্জন করা হবে, তাই আর আগ মারিয়ে কেউ বাড়তি দায়িত্ব পালন করেনি। আচ্ছা মওদুদ কি ঢাকার ভোটার? কোন কেন্দ্রে মওদুদ ভোট দিতে গেছিল? মির্জা আব্বাস কি নিজের ভোট দিয়েছিল? কোন কেন্দ্রে দিয়েছিল? তার কোনো ছবি প্রথম আলো'র কাছে নাই কেন? আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী কোন কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন? তার কোনো ছবি পত্রিকায় নাই কেন? আবদুল্লাহ আল নোমান কোন কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন? সেই ছবি পত্রিকায় নাই কেন? আবদুল আউয়াল মিন্টু কোন কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন? সেই ছবি পত্রিকায় নাই কেন? মির্জা আব্বাসের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা কোন কোন কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন? সেই ছবি প্রথম আলোতে নাই কেন? যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়াপরশির ঘুম নাই। মির্জা সাহেব কোথায় লুকিয়ে আছেন? কেউ জানেন কি? মনজুর আলম ভোট বর্জনের আগে আরো সময় কেন নিতে চেয়েছিলেন? হঠাৎ এভাবে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর ঘোষণা দেবার রহস্য কি? তাহলে কি বিএনপি'র হাই-কমান্ডের ইচ্ছাকে সায় দিতে গিয়ে বলি হওয়াটা মানতে না পারার ক্ষোভ থেকেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিলেন? ## বিএনপি সিটি নির্বাচনকে ব্যবহার করে বহির্বিশ্বে মূলত দুইটি বার্তা দিতে চেয়েছে। নাম্বার এক, দেখো আমরা নির্বাচনমুখী একটা দল। দলীয় সরকারের অধীনে সিটি নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহন করলাম। বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় ভোট ভিক্ষা করে সেই নাটক জায়েজ করার চেষ্টা করেছেন। নির্বাচনের আগের দিন বেগম জিয়া সংবাদ সম্মেলনে যে রহস্যময় হাসি হাসি ভাব দেখালেন, তখন থেকেই তারা জানতেন ভোট বর্জন কখন কিভাবে করবেন। ভোটের মাধখান থেকে ভোট বর্জন করে দ্বিতীয় যে বার্তাটি তারা দিতে চেয়েছেন তা হল, হে বিশ্ববাসী এই দেখো, আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্টু হয় না। তার মানে আমরা বিএনপি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে প্রথম থেকেই আন্দোলন করে আসছি, সেই দাবি দেখো কতোটা ন্যায্য দাবি!! ## কিন্তু এতোসব ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে বিএনপি তার আসল চেহারাটাই প্রকাশ করেছে। নির্বাচনে তাদের কোনো বিশ্বাস নাই। বন্দুকের নল দিয়ে ক্ষমতায় যাবার পর যে দলটি বন্দুকের নলকেই ক্ষমতার উৎস মনে করে, তার তো নির্বাচন নিয়ে কখনো মাথা ব্যথা হবার কথা না। ষড়যন্ত্র করে যেনোতেনো উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়াই বিএনপির মূল লক্ষ্য। তাই মুখে নির্বাচনের কথা বললেও এই দলটির নির্বাচনের প্রতি কোনো আস্থা নেই। নির্বাচনে সাধারণ জনগণের সাথে ভোটারদের সাথে যে ধরনের স্বাভাবিক সৌজন্যতা দেখানোর কথা, দলীয় নেতাকর্মীদের যে ধরনের একটিভিটিজ থাকার কথা, সেগুলো ছিল ভোটের দিন সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে অনুপস্থিত। সিটি নির্বাচনে দাঁড়িয়ে বিগত তিনমাসের পেট্রোল বোমা হরতাল অবরোধের ঘটনাকে কিছুটা চাপা দেওয়া গেছে বটে। জনগণের কাছাকাছি যাবার সুযোগও তৈরি করা গেছে। খালেদা জিয়া রাস্তায় বেরোতে পারছেন। এসব কি খুব কম অর্জন? সেই সুযোগে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচন উপলক্ষ্যে কিছুটা গোছানো গেছে। যা আগামীতে আন্দোলন সংগ্রাম করতে দলকে চাঙ্গা রাখতে ব্যবহার করা যাবে। তাই সিটি নির্বাচনে ভোট বর্জন বা হারা কোনোটাই বিএনপিকে বিব্রত করেনা বরং এটা বিএনপি'র জন্য একটা সুযোগ তৈরি করেছে আরো কিছুদিন দলটিকে লাইফসাপোর্ট দিয়ে আইসিইউতে বাঁচিয়ে রাখার। ## যে দলটি গুহায় বসে গুপ্ত স্থান থেকে আন্দোলন করেছে। জনগণের কাছাকাছি যাবার যার কোনো সুযোগই ছিল না। সিটি নির্বাচনকে ঘিরে গুহা থেকে কিছুটা হলেও বের হওয়া গেছে। এতো মোটেও কম অর্জন নয়। বিএনপি এখন পত্রপত্রিকায় আর মিডিয়ার টকশো আর উচ্চবাচ্যেই কেবল ধুকধুক করে জীবিত আছে। মিডিয়ার মাধ্যমে এখনো বিএনপি বেঁচে আছে। মিডিয়া না থাকলে বিএনপি এতোদিন মুসলিম লীগের মত অবস্থা বরণ করত। এই দেশে মুসলিম লীগের করুণ বিলুপ্তির খবর কি আমারা জানি না? বিএনপি তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য শেষ সময়ের শেষ চেষ্টাটা করছে এখন। হয়তো সেই দিন আর বেশি দূরে নয় মনজুর আলমের মত গোটা বিএনপি দলটিই রাজনীতি থেকে অবসর নেবে। কারণ তারা কি পরিমাণ অপরাধ করেছে তা তারা একশোভাগ নিশ্চিত করেই জানে। সরাসরি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে তারা আন্দোলনের নামে যুদ্ধ করেছিল। এখনো হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের কথা প্রথম আলো ভুলে যায় কি করে? বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু বার্ন ইউনিটের আর্ত চিৎকার এখনো শুনতে পায়। তাই বিএনপি পালানোর যে পথটি খুঁজেছিল, সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সেই আশা শতভাগ পূর্ণ হয়েছে। আর তারাও দলের শক্তিমত্তা যাচাই করার জন্য একটি এসিড টেস্ট করার সুযোগ পেয়েছিল। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, বাংলাদেশে আর দশ বিশ বছর পরে বিএনপি নামে কোনো রাজনৈতিক দল খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপ লাগবে। জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে, আইএসআইএস, আলকায়েদার সঙ্গে হাত মিলিয়ে যে বাংলাদেশে ক্ষমতায় যাওয়া গেল না। জিয়াপুত্র তারেকের সকল রাজনৈতিক কৌশল যে ভুল ছিল, তা বেগম জিয়া ইতোমধ্যে টের পেয়েছেন। এই রাজনৈতিক ভুলের কারণে বিএনপি এখন অস্তিত্ব সংকটের মধ্যেই আগামী কিছুদিন ধুক ধুক করে বাঁচবে। নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে বলে নতুন করে আন্দোলন সংগ্রাম করার মত শক্তি বিএনপি'র আর নেই। নইলে ভোট বর্জনের মুহূর্তেই ধুর্ত মওদুদ হরতাল ডাকতে এক পারসেন্টও ভুল করতো না। আবার হরতাল ডাকলে যে আরো ভয়াবহ পরিনতি হবে, এটা মওদুদ গংরা খুব ভালো করেই জানেন। এখন মিডিয়ার কল্যানে বিএনপি যতদিন ইতিহাসে বেঁচে থাকে, সেটাই বিএনপির একমাত্র চাওয়া। বেগম জিয়া যতদিন বেঁচে আছেন ততদিন মিডিয়ার মাধ্যমে এভাবেই দলটি বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে। তারপর আর এই দলকে বাংলাদেশে দেখা যাবে না। ওটা মুসলিম লীগের মত ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে ঠাই নেবে। তবে সিটি নির্বাচনে যোগ দিয়ে বেগম জিয়া দলটির আয়ু কিছুদিন বাড়ালেন বটে। মাত্র তিন সিটি নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের পাশে নির্বাচনী ক্যাম্প করার মত সক্ষমতা যে দলটির নেই, সেই দলটির মিডিয়ার কাছে মিথ্যা ঝাড়িঝুড়ি বানোয়াট গল্প, গুজবকে মানুষ এক সময় স্বাভাবিক নিয়মেই ভুলে যাবে। ## ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের তিন সিটি নির্বাচন যে কারণে ভবিষ্যতে ইতিহাসের অংশ হবে সেটি হল, এই নির্বাচনের মাধ্যমেই বিএনপি বাংলাদেশে তাদের রাজনৈতিক মৃত্যুর বার্তা পেয়েছেন। বাংলার মানুষ যে বিএনপিকে, বিএনপির ভুল রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, সেটা পুরোপুরি বোঝার জন্য বেগম জিয়ার হয়তো এটাই বাংলাদেশে শেষ নির্বাচনে যাওয়ার উদাহরণ হয়ে থাকবে। তাই নিজেই রাস্তায় নেমে শেষ চেষ্টা করে দেখেছেন। কিন্তু যথা পূর্বং তথাই পরং। পাপে ছাড়ে না বাপেরে। এই শিক্ষা বিএনপি এই সিটি নির্বাচন থেকে হাড়ে হাড়ে শিখল। ................................. ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ঢাকা তথ্যসূত্র: বিভিন্ন পত্রিকা, ব্লগ, নির্বাচন কমিশন, টেলিভিশন। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:১৮",False rn,"কাজ নাই তো খৈ ভাজ ___ ১। নাট্য সম্পাদনা কাজ করতে করতেই শেক্সপিয়র অনুভব করলেন দর্শকের মনোরঞ্জনের উপযোগী ভালো নাটকের একান্তই অভাব। সম্ভবত মঞ্চের প্রয়োজনেই শেক্সপিয়রের নাটক লেখার সূত্রপাত। ২। কলম্বাস চিঠি লিখলেন সে যুগের বিখ্যাত ভূগোলবিদ Pagolo Toscanelli কে। Pagolo কলম্বাসের চিঠির জনাবে লিখলেন, তোমার মনের ইচ্ছার কথা জেনে আনন্দিত হলাম। আমার তৈরি সমুদ্রপথের একটা নকশা পাঠালাম। যদিও এই নকশা নির্ভুল নয়, তবুও এই নকশার সাহায্যে প্রাচ্যের পথে পৌঁছতে পারবে। যেখানে ছড়িয়ে আছে অফুরন্ত হীরা, জহরত, সোনা-রূপা, মণি-মুক্তা, মাণিক্য।এই চিঠি পেয়ে কলম্বাসের মন থেকে সব সংশয় সন্দেহ দূর হয়ে গেল। শুরু হয়ে গেল তার যাত্রার প্রস্তুতি। ৩। ২১ জানুয়ারি ২০০৬ সালে জাকির নায়েক ভারতের বেঙ্গালুরুতে প্রায় ১০ লক্ষ লোকের সম্মুখে হিন্দুদের জনপ্রিয় ধর্মীয় গুরু শ্রী শ্রী রবি শংকরের সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হন। যার বিষয় ছিল “হিন্দু ও ইসলাম ধর্মে প্রভুর ধারনা”।তিনি ওসামা বিন লাদেন সম্পর্কে বলেন আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না এবং তার সাথে আমার কোনদিন সাক্ষাত হয়নি। দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ২০১০ সালের শ্রেষ্ঠ ১০০ ক্ষমতাশালী ব্যক্তির তালিকায় জাকির নায়েক ৮৯ তম স্থান লাভ করেন। ৪। ড. রমাদাশ আদালতে দাড়িয়ে বলল: আমি এ কোরআন পড়ে দেখলাম যে এ কোরআনে শুধু নারী অধিকার নয়, বরং পথিবীর সকল মানুষের সকল অধিকার সর্ম্পকে বলা আছে।একথা বলেই সাথে সাথে তিনি বলে ফেললেন,""লা ইলাহা ইলল্লাহহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্""। ৫। কুরআন অনুবাদ শেষ করে ভাই গিরিশচন্দ্র্র সেন বলেছিলেন : আজ কুরআনের সমাপ্ত দেখিয়া আমার মনে যুগপৎ হর্ষ-বিষাদ উপস্থিত। হর্ষ এই যে, এত কালের পরিশ্রম সার্থক হইল। বিষাদ এই যে, ইহার প্রথমাংশ শ্রী মদাচার্য্য কেশবচন্দ্রের করকমলে অর্পণ করিয়াছিলাম। তিনি তাহাতে পরমাহ্লাদিত হইয়াছিলেন এবং তাহার সমাপ্তি প্রতীক্ষা করিতেছিলেন। শেষাংশ আর তাঁহার চক্ষুর গোচর করিতে পারিলাম না। ঈশ্বর তাঁহাকে আমাদের চক্ষুর অগোচর করিলেন। তিনি অনুবাদের এরূপ পক্ষপাতী ছিলেন যে, তাহার নিন্দা কেহ করিলে সহ্য করিতে পারিতেন না। আজ অনুবাদ সমাপ্ত দেখিয়া তাঁহার কত না আহ্লাদ হইত, এছাড়াও তাঁহার কত আশীর্ব্বাদ লাভ করিত।কুরআনের সম্পূর্ণ খন্ড একত্রে প্রকাশিত হয় ১৮৮৬ সালে। সম্পূর্ণ খন্ডেই প্রথম তিনি স্বনামে আত্মপ্রকাশ করেন। ভাই গিরিশ্চন্দ্র সেন অনূদিত কুরআনের চতুর্থ সংস্করণে মৌলানা আকরাম খাঁ একটি প্রশংসাসূচক ভূমিকা লিখেছিলেন। ৬। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁকে ওকালতি ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানে আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন। স্যার আশুতোষ শহীদুল্লাহকে যে সংক্ষিপ্ত পত্র লিখে ছিলেন এই একটি মাত্র পত্র সেদিন শহীদুল্লাহর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন স্যার আশুতোষ। স্যার আশুতোষের এই অবদানের কথা শহীদুল্লাহ জীবনে কখনো ভোলেননি। তিনি তাঁর ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থটি স্যার আশুতোষের নামে উৎসর্গ করতে গিয়ে এই পত্রেরই উদ্ধৃতি দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন। এর ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ঢাকা চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। তাঁর কর্ম জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করে।",False fe,"সেলফি, সোসাইটি, সিক্যুরিটি সেলফি, সোসাইটি, সিক্যুরিটিফকির ইলিয়াস------------------------------------------------------------প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করি প্রিয় পাঠক-পাঠিকা। লেখাটির নাম হতে পারতো- আত্মছবি, সমাজ ও নিরাপত্তা। কিন্তু ‘সেলফি’ শব্দটি হালে এতো বেশি বাজার পেয়েছে, ফলে সেই শব্দটি ব্যবহার করছি আমি। আজকের অগ্রসরমান পাঠক ইংরেজিতে অনেকটাই অভ্যস্ত। কথায় কথায় ইংরেজির প্রভাব। বলে রাখি, আমি কিন্তু এর পক্ষে। বিদেশে প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ইংরেজি ভাষা রপ্ত ছাড়া বিশ্বে চলা খুবই কঠিন তা দেশে হোক আর বিদেশেই হোক।পবিত্র ঈদুল আজহা শেষ হলো। আমি আশা করছি, সকলের ঈদ আনন্দেই কেটেছে। একটা সংবাদ দিয়ে শুরু করি। না ঠিক সংবাদ নয়। একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস। নিজের টাইমলাইনে লিখেছেন বাংলাদেশের এই সময়ের কৃতী ছড়াকার জুলফিকার শাহাদাৎ। তার লেখার শিরোনাম- ‘চামড়া সন্ত্রাসী’। তিনি লিখেছেন, ‘কুরবানির পর যথারীতি গরুটির চামড়া ছিলানো হলো। একটু পর দেখি, তাগড়া তিন জোয়ান এসে বললেন, চামড়াটি তাদেরকে দিতে হবে। বললাম, ইতোমধ্যে এটির মূল্য ২১০০ টাকা বলে গেছেন একজন। আপনারা তার বেশি পারলে বলেন। চামড়া সন্ত্রাসীরা তখন পরিচয় দিলেন, ওরা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতা। কাউকে এ চামড়া নিতে দেবেন না তারা। তারাই চামড়াটি নেবেন। সে মুহূর্তে চামড়া নিয়ে লড়াই করবো না মাংস নিয়ে বাসায় ফিরবো এ ভাবনায় দ্বিধান্বিত ছিলাম। পরে বললাম, ঠিক আছে; আগে যে দাম উঠেছে ঐ দামই দেন আপনারা। ওরা কোনো কথা না শুনে জোর করে আগের দামের চেয়ে অনেক কম টাকা গছিয়ে দিলেন। প্রতিবাদ করতে পারলাম না। তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।আহারে আমার সোনার বাংলাদেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ। চামড়া সন্ত্রাসীদের তা-বে তোমার বুকে আজ আমরা কতো অসহায়। কতো অসহায়! একজন লেখক কী ভীতি নিয়ে ঈদ উদযাপন করেছেন- সে চিত্র আমরা পেলাম। এই কি সেই সোনার বাংলাদেশ! ‘আমি তোমায় ভালোবাসি’ বলে আমরা কিনা আহাজারি করি!বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এগিয়েছে। আমি দেখেছি, ফেসবুকে গরুর সঙ্গে অনেক মানুষের ছবি। কুরবানির গরু এখন প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার। কে কতো বেশি টাকার গরু কুরবানি দিচ্ছেন তা এখন প্রচারের অন্যতম বিষয়। ধর্ম কি আত্মপ্রচারকে সমর্থন করে? দানের বিষয়টি হলো এরকমÑ দান করলে ডানহাত যে দান করেছে তা যেন বাম হাতও না জানে। আমরা কি তা তামিল করছি? আমাদের নৈতিক অবক্ষয় এতো নিচে নেমে গেলো কেন?একটি বিষয়ে বিশ্বব্যাপী বিতর্ক শুরু হয়েছে। তাহলো ‘সেলফি’। অর্থাৎ সেলফ পোর্টেট বা আত্মছবি। খবর বেরিয়েছে এবার পবিত্র হজে গিয়েও অনেকে মুঠোফোন দিয়ে আত্মছবি প্রচার করেছেন বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমে।মক্কায় মুসলিমদের অন্যতম পবিত্র একটি স্থানের সামনে বাবাকে জড়িয়ে ধরে সেলফির জন্য হাত বাড়িয়ে দেন একজন কুয়েতি যুবক ইউসুফ আলী। এবারের হজে এই প্রবণতা দেখা গেছে ব্যাপকভাবে। হাজার হাজার তরুণ পুণ্যার্থী ক্যামেরা ও স্মার্টফোনে নিজেদের ছবি তুলে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পোস্ট করেছেন। বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিতে পারেননি অনেকে। রক্ষণশীল মুসলিমদের মধ্যে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক দৈনিক টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।মুসলিম সম্প্রদায়ে অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব হজ। এ বছর ২০ লাখেরও বেশি মুসলিম হজ পালনের জন্য সৌদি আরবের মক্কায় সমবেত হন। এদেরই একজন ২৪ বছর বয়সী কুয়েতের ইউসুফ আলী বলেন, ‘এটি আমার প্রথম হজ। তাই আমার চারপাশে যা ঘটছে সেসব ধরে রাখা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ মিনায় শয়তানকে পাথর ছোড়ার স্থানে একটা দেয়ালে সবুজ রংয়ে ‘বড় জামারাহ’ লেখার পাশে দাঁড়িয়ে নিজের ছবি তোলেন তিনি। তিনি বলেছেন-‘আমি যেখানে যাই সেখানেই ছবি তুলি। বিশেষ করে এখন আমাদের কাছে এই ক্ষুদ্র ক্যামেরাগুলো আছে। এটি দিয়ে এই এলাকার পুরো দৃশ্য তুলে নেয়া যায়’।আমরা লক্ষ করছি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই বিষয়টি অবশ্য সবার কাছে সমান গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। রক্ষণশীল মুসলিমরা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ টুইটারে নিজেদের ছবি তোলা (সেলফি) হাজিদের সমালোচনা করেছেন। একজন তার ব্যক্তিগত টুইটারের পাতায় লিখেছেন- ‘নব্বই দশকের মাঝামাঝি আমরা যখন ওমরা করতে গিয়েছিলাম, ‘হারাম!’ বলে চিৎকার করে বাবা তখন নিজের ক্যামেরা প্রায় বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। এখন হজ সেলফি একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ কি এক বিশ্ব!’ কাহবা নামের অপর একজন লিখেছেন, ‘এটি আল্লাহর সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার এবং নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার সময়। এ সময় সেলফি নেয়া উচিত নয়।’অন্যদিকে এই সেলফি বা আত্মছবির পক্ষেও বলছেন অনেকে। আব্দুল মুফেজ শহীদ একজন প্রশ্ন করেছেন, ‘হজ সেলফি নিয়ে লোকজন বিরাট একটি ইস্যু তৈরি করছে। হজের সময় যদি ছবি তোলার অনুমোদন দেয়া হয় তাহলে সেলফিতে সমস্যা কোথায়?’এ বিষয়ে সৌদি আরবের ইসলামি শরিয়া আইনের এক অধ্যাপক বলেন, ‘ছবি যদি ব্যক্তিগত স্মৃতির জন্য তোলা হয় এবং আত্মপ্রচারের জন্য না হয়, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘কিন্তু এগুলো যদি লোক দেখানোর মানসিকতা থেকে হয়, তাহলে তা নিষিদ্ধ। হজের সময় যে সব ছবি তোলা হচ্ছে তা প্রায়ই এ ধরনের। তাই মুসলিমদের জন্য এটি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।’যারা সেলফির পক্ষে তারা বলছেন, ‘ক্যামেরা মোবাইলের মতোই একটি যন্ত্র। ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরাও মোবাইলে নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে নিজেরাই ব্যবহার করেন, তাই আধুনিক সময়ে আরেকটি যন্ত্রকে নিষিদ্ধ করা কেন?’হ্যাঁ- অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের একজন সিনিয়র মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে নিউইয়র্কে যে কা- ঘটে গেলো, তার মূল হাতিয়ার কিন্তু এই মোবাইল ডিভাইস। যতোটুকু জানি, কেউ একজন তার হাতের শক্তিশালী মোবাইলে রেকর্ড করেই ঐ মন্ত্রীর বক্তব্য ফেসবুক, ওয়েবে ছড়িয়ে দেন। এরপরই মিডিয়াগুলো তা লুফে নেয়। যা মন্ত্রীকে হিরো থেকে জিরো বানিয়ে ফেলে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে। সামাজিক গণমাধ্যম এখন একটি বিরাট শক্তি। জাতীয় দৈনিক বের হয় ২৪ ঘণ্টা পর। টিভি আপডেট হয় ঘণ্টায় ঘণ্টায়। আর হ্যান্ড মোবাইল চলে মিনিটে মিনিটে। খবর ছড়িয়ে পড়ে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই। এই প্রবণতা সমাজের জন্য ক্ষতির কারণও বটে। কারণ সামাজিক অবক্ষয়, অন্যকে ব্ল্যাকমেল করা, কারো বিনা অনুমতিতে ছবি আপলোড করা সমাজের, মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে। যা খুবই শঙ্কার কারণ।গণমাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই জরুরি হওয়া উচিত। এ বিষয়ে বাংলাদেশের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কিছু কথা তুলে ধরা দরকার। তিনি কিছুদিন আগে এক সেমিনারে বলেছেন- ‘যে দেশে জঙ্গিবাদকে ও তেঁতুল হুজুরদের রাখার কথা বলা হয় সে দেশে সামাজিক নিরাপত্তা এবং অবাধ তথ্য অধিকার দুর্বল হয়ে পড়ে। আর এটি তখনই সচল হয় যখন গণতন্ত্র নামে কিছু থাকে।’ তিনি বলেন, ‘আমি সকল মিডিয়ার কাছে অনুরোধ করবো, আপনারা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে দেশের জনগণের স্বার্থে অন্তত কিছু সময়ে ‘তথ্য অধিকার আইন বা তথ্য সম্ভার’ নামে অনুষ্ঠান প্রচার করে জনগণকে জানান তাদের অধিকার সম্পর্কে।’আবারো ফিরে আসি বৈষম্যহীন সমাজ বিষয়ে। শান্তির সমাজ চাইলে ক্ষমতাসীনদের ভোগবিলাস ত্যাগ করতে হয়। বাংলাদেশ মূলত ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে সেই চেতনায়ই স্বাধীন হয়েছিল। আজ সেই চেতনা ভূলুণ্ঠিত। কেন ভূলুণ্ঠিত, কেন এ দেশে ঈদেও চামড়া সন্ত্রাসী দাপট দেখাবে- তা খুঁজতে হবে। ক্ষমতা কারো চিরস্থায়ী নয়। ক্ষমতার পালাবদল এ দেশে আগেও হয়েছে। লুটেরা যে দলেরই হোক না কেন- সরকার তাকে দমন করবে সেটাই নিয়ম। তা না হলে আত্মপ্রচার করে সমাজের কলুষতা দূর করা যাবে না।----------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : ১১/অক্টোবর/২০১৪ শনিবার প্রকাশিত",False hm,"পর্নস্টার ভদ্রলোককে দেখেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের মানুষ। বোধহয় বোঝা যায় আমাকে দেখেও। তিনি বেশ একগাল হাসি নিয়ে সোজা আমার টেবিলে চলে এলেন ট্রে হাতে। ""আপনি বাংলাদেশের লোক।"" প্রশ্ন নয়, একেবারে রায় দিয়ে দিলেন তিনি। আমি আড়চোখে তাকালাম তার হাতের ট্রের দিকে। মাছ আর সব্জি, আর অবধারিতভাবেই ফরাসী কায়দায় ভাজা আলু। আমি আমার প্লেটে আধখাওয়া শুয়োরের পরিপাটা ভাজা মাংসে ছুরি চালানো বন্ধ করে বলি, ""হুমম, একেবারে ঠিক ধরেছেন।"" ভদ্রলোক দুম করে বসে পড়েন আমার উল্টোদিকে। ""শুয়োর যত কম খাওয়া যায়, ততই মঙ্গল।"" আবারও রায় দ্যান তিনি। ""বড় বেশি চর্বি।"" আমি রাজি হয়ে যাই। বলি, ""ঠিক বলেছেন।"" তিনি কাঁটা চামচ উঁচিয়ে বলেন, ""গুটেন আপেটিট১!"" আমি মুখে ততক্ষণে এক টুকরো পমেস, মানে সেই ফরাসী ছাঁটে ভাজা আলু মুখে পুরে দিয়েছি। মুখে খাবার নিয়েই বলি, ""এবেনফালস২!"" ভদ্রলোক মাছের একটি সূক্ষ্ম কুচি মুখে দিয়ে বলেন, ""আপনি ছাত্র।"" কী মুশকিল, ইনি দেখি শুধু সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান। কোন প্রশ্ন নেই, কোন জিজ্ঞাসা নেই, কেবল রায়। আমি বলি, ""হ্যাঁ, এখনও। আপনি?"" ভদ্রলোক হাসেন। বলেন, ""আমি একজন পর্নস্টার।"" আমি একটু গম্ভীর হয়ে যাই কেন যেন। বিশ্ববিদ্যারয়ের মেনজায় বসে একজন পর্নস্টারের সাথে এক টেবিলে বসে লাঞ্চ করা অন্যায় নয় নিশ্চয়ই, কিন্তু তবুও কেন যেন মনটা ভারি হয়ে যায়। তিনি বলেন, ""গুম মেরে গেলেন একটু। কিন্তু পর্নস্টাররাও মানুষ।"" আমি বলি, ""বেশ সৌভাগ্যবান মানুষ।"" তিনি এবার হেসে ওঠেন খলখল করে। বলেন, ""আর সৌভাগ্য!"" আমি এবার বেশ নির্মমভাবে ছুরি চালাই শূকরের মাংসে। আমার চোয়ালের পেশী নিশ্চয়ই ফুলে ওঠে, মানসচোখে দেখতে পাই। ""তা, আপনি কী ধরনের পর্নস্টার?"" ভদ্রলোক একটুকরো আলু চিবাতে থাকেন চোখ বুঁজে। বলেন, ""প্রচলিত ঘরানারই। অর্থাৎ, শুধু নারীদের সাথেই কাজ করি।"" বচনের ব্যবহারে আমার মনের মধ্যে গুমোট ভাবটা আরো বেড়ে ওঠে। নারী, আবার দের! অযথাই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জোরে চিবাতে থাকি মাংসের টুকরোটাকে। বলি, ""কতদিন হলো?"" ভদ্রলোক বললেন, ""মাস চারেক। এর আগে আপনার মতোই নিরীহ লোক ছিলাম।"" আমি নিরীহ শুনে নিজের ওপর রাগ হয়। ঝালটা ঝাড়ি এক টুকরো আলু ভাজার ওপর। বলি, ""বটে?"" তিনি বলেন, ""হুম।"" বললাম, ""আপনার আত্মীয়স্বজন আপত্তি করেননি?"" তিনি বললেন, ""সবাই করেছে। রীতিমতো হইচই।"" আমি বললাম, ""এত ঢাকঢোল পেটালেন কেন? এই কাজে নেমে তো লোকে শুনেছি ছদ্মনাম নেয়।"" তিনি বললেন, ""আমিও নিয়েছি। আমার ছদ্মনাম কার্লো শ্নেললয়ফার৩। তাতে বিশেষ একটা লাভ হয়নি।"" বললাম, ""কেন?"" তিনি বললেন, ""দেশ ছেড়ে আসার পর থেকেই আছি বিপদে। কাজকাম জোটাতে পারি না। লেখাপড়া করতে গিয়ে চোখে অন্ধকার দেখি। ওদিকে দেশ থেকে পাড়াতুতো কাকাদের খবরদারি। এক একজন ফোন করেন, মেইল করেন। বলেন, হালাল হারাম বেছে খাবি। আমি বলি, ঠিক আছে তাহের কাকু, খাবো। আরেকজন বলেন, মদ খাবি না। আমি বলি, ঠিক আছে মোতালেব চাচা, খাবো না। আরেকজন বলেন, তোর বাবা কতো সজ্জন লোক, তার ছেলে হয় তুই কখনোই বেশ্যাপাড়ায় যেতে পারিস না, এ ভরসা আমার আছে। আমি বলি, কী যে বলেন হানিফ চাচা, তা-ই কী হয়?"" আমি বলি, ""তারপর?"" তিনি বলেন, ""বহুকষ্টে একা একা এই বিশ্রী দেশে দিন কাটাচ্ছিলাম। কাজ যা পাই, বেশিদিন থাকে না। একেবারে আধপেটা অবস্থা। একদিন দেখি এক ন্যাংটো ক্লাবের বাইরে ঘটা করে বিজ্ঞাপন, এক ঘন্টার অভিনয়ের জন্য একশো মুদ্রা। আর কিছু ভাবলাম না। দুম করে ঢুকে পড়লাম।"" আমি বলি, ""বলেন কী?"" তিনি বললেন, ""হ্যাঁ। ওরাও আমার অভিনয় দেখে হতবাক। এমন লায়েক লোক নাকি এই লাইনে কমই জোটে। আমিও লজ্জা পেয়ে গেলাম।"" আমি বলি, ""বলেন কী এসব?"" তিনি বললেন, ""হুঁ। সেই থেকে শুরু। মাসখানেকের মধ্যেই বড় বড় চুক্তি করলাম কয়েকটা স্টুডিওর সাথে। আপনি যদি ইন্টারনেটে এই বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র দেখে থাকেন তাহলে হয়তো শিগগীরই আমাকে দেখতে পাবেন পাইকারি হারে।"" কেন যেন ভালো লাগে না কথাটা। তিনি মাছ খান আর বকে চলেন, ""মাস দুয়েকের মধ্যেই দেশ থেকে তাহের কাকুর ফোন এলো। বললেন, হারামজাদা, শেষ পর্যন্ত ন্যাংটা সিনেমায় নামলি? মোতালেব চাচা বললেন, একটুও লজ্জা লাগলো না? হানিফ চাচা বললেন, তুই নিজেই একটা বেশ্যা হয়ে গেলি?"" আমি খাবি খাই। বলি, ""ওরা ...?"" ভদ্রলোক বললেন, ""হুমম। মনে হচ্ছে ওদের কাছে সব লেটেস্ট সিডি-ডিভিডি পৌঁছে যায়। তো, আমার পরিবারের লোকজনও ওদের যন্ত্রণায় জেনে গেলো সব। সে কী এক বিড়ম্বনা।"" আমি বলি, ""কিন্তু ...।"" তিনি বললেন, ""হুমম। কেউ আপনাকে বেছে খাবার উপদেশ দিলে সাবধান, কখনো ন্যাংটো ছবিতে অভিনয় করবেন না। জানাজানি হয়ে যাবে।"" ১ শুভ ক্ষুধা। ২ আপনাকেও। ৩ হাইস্পিড মোটর। মন্তব্য গল্প কাল্পনিক। ঈমানে কইতাছি হালায়।",False rg,"!! ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন !! গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ঢাকার পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের নের্তৃত্ব দিচ্ছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, পিএসসি জি-এর নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এবং ভারতীয় দলের নের্তৃত্ব দিচ্ছেন বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী সুভাষ যোশী-এর নেতৃত্বে ২০ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক, রিজিয়ন কমান্ডারবৃন্দ, বিজিবি সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট ষ্টাফ অফিসারবৃন্দ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সার্ভে অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ভারত যৌথ নদী কমিশন এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ প্রতিনিধিত্ব করবেন। আর ভারতীয় প্রতিনিধি দলে বিএসএফ সদর দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, ফ্রন্টিয়ার আইজি, ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন। সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সীমান্ত এলাকায় নিরস্ত্র বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা/গুলি করা, নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের অপহরণ/প্রহার, সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে বাংলাদেশে মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের চোরচালান বন্ধ করা, অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম, পূর্বানুমোদিত উন্নয়ন কাজে প্রতিবন্ধকতা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে অননুমোদিত নির্মান কাজ বন্ধ করা ইত্যাদি। এছাড়া অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে অস্ত্র ও গোলা বারুদ পাচার , বাংলাদেশ-ভারত জেলা প্রশাসক পর্যায়ে সীমান্ত বৈঠকের সম্ভাব্যতা এবং উভয় বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর বিজিবি-বিএসএফ জেআরডি (জয়েন্ট রেকর্ড অব ডিসকাশন্স) স্বাক্ষরের মাধ্যমে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে। বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মলনে ফেলানি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারটি আলোচ্য সূচিতে সেভাবে নেই। হয়তো, নিরস্ত্র বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যার মধ্যে ফেলানি'র ব্যাপারেও আলোচনা হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক মোট কতজন নিরস্ত্র বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে, তা এবার প্রকাশ করা হোক। শুধু ফেলানি হত্যা নয়, বিগত ৪২ বছরে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক যতো বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে, তার বিচার চাওয়া হোক। গড়ে বছরে যদি ৩০০ জন বাংলাদেশীকে ভারতীয় বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে, তাহলে বিগত ৪২ বছরে সেই সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। বাংলাদেশের মিডিয়া এবং হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশানগুলোর কাছে এই সংখ্যাটি নিশ্চয়ই রয়েছে। এমন কি বিজিবি এবং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছেও এই সংখ্যাটি থাকার কথা। আমরা বিএসএফ কর্তৃক নিরস্ত্র বাংলাদেশী হত্যার মোট খতিয়ানটি জানতে চাই। সেই সংখ্যাটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলনে প্রকাশ করা হোক। বিচার বহির্ভূত এই হত্যাকাণ্ডগুলো থেকে বিএসএফ কোনোভাবেই নিজেদের এড়াতে পারে না। এই হত্যাকাণ্ডের দায় বিএসএফকে নিতে হবে। এবং ভবিষ্যতে নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা করা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের উচিত বিষয়টি সম্মলেনে জোড়ালোভাবে উপস্থাপন করা। সীমান্ত সমস্যার মধ্যে বিচার বহির্ভূত হত্যা সবচেয়ে প্রধান বিষয় উচিত। ১৫০ গজের যে নো-ম্যানস ল্যান্ডের কথা রয়েছে, তা উভয় পক্ষের আইনগতভাবেই মানা উচিত। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪১০০ কিলোমিটার সীমান্তের প্রতিটি ইঞ্চি'র বড়ায় গণ্ডায় সমান সমান বোঝাপড়া হওয়া উচিত। বাংলাদেশকে সীমান্ত সমস্যার বিষয়ে জোড়ালো পদক্ষেপ নিয়েই আগাতে হবে। আমরা আশা করব, উভয়-পক্ষ একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সীমান্ত সমস্যার সমাধানে রাজী হবেন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান আমাদের সকলের প্রত্যাশা।",False ij,"গল্প_ অপুরুষভূমি সাদা রং করা কাঠের বেড়ার ওপাশে আমলকি গাছের নীচে কে যেন ছায়ামূর্তির মতো দাঁড়িয়ে। কে? অরূপ? সোমা পায়ে পায়ে ওদিকে এগিয়ে যায়। ওর পায়ে শিশির জড়ায়। ভোরবেলার বাগানে ধূসর কুয়াশা আর গভীর নির্জনতা ছড়িয়ে ছিল। বাগানের গাছে গাছে ঘুমিয়ে-থাকা পাখিরা এখনও জেগে ওঠেনি। দীর্ঘ ইউক্যাপিস্টাস গাছগুলিও ঘন কুয়াশায় নিথর দাঁড়িয়ে। কেবল সোমাদের কালচে রঙের কাঠের দোতলা বাড়িটা জলমগ্ন জাহাজের মতো ভেসে আছে যেন। বাড়িটির পিছনে কমলার নিবিড় বন ও ছাড়া-ছাড়া দেবদারু গাছ এবং চিরল রেললাইন। আধ ঘন্টা আগে একটা শাটল ট্রেন চলে গেছে দোতলা বাড়িটিকে কাঁপিয়ে। দোতলার সর্ব দক্ষিণের ঘরটাই সোমার। সে ঘরে ঘুমিয়ে ছিল ও। ট্রেনের হুইশিলের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল ওর । তখন ওকে ঘন অন্ধকার আর শীত আঁকড়ে ধরেছিল। আর এক রাশ শূন্যতা গ্রাস করেছিল। একটা অদ্ভূত স্বপ্ন দেখছিল সোমা। কে যেন ...মনে হল ছোট কাকা ...হ্যাঁ, ছোট কাকাই হবে। একটা পাহাড়- পাহাড় জায়গায় দাঁড়িয়ে ছোট কাকা বলল ... আমি আসছি রে সোমা। অপেক্ষা কর। ঘুমের রেষ কেটে যেতেই সোমা অবাক। অন্ধকার বিছানায় শুয়ে নিজেকে প্রশ্ন করল: আমি ছোট কাকাকে দেখলাম কেন? ছোট কাকাকে অনেক ছোট থাকতে দেখেছে সোমা, ঠিক মনে নেই। ছোট কাকা অনেক দিন হল নিরুদ্দেশ। লোকে বলে ছোট কাকা আসামের পাহাড়ে থাকে। কোনওদিনই আর ফিরবে না। তাহলে আমি ছোট কাকাকে দেখলাম কেন?এই প্রশ্নটি ওকে এই কুয়াশার ভোরে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।কচি কমলা পাতার গন্ধ পেল সোমা । অরূপ-এর কাছাকাছি চলে এসেছে । । অরূপের হাতে কি যেন। একটা প্যাকেট মনে হল। অরূপের পরনে জিন্স আর কালো রঙের ঘন উলের সোয়েটার । এক মাথা ঝাঁকড়া চুল। ফরসা মিষ্টি মুখ। চোখে চশমা। চশমায় কুয়াশার প্রলেপ। অরূপ আমায় ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছে তো? সোমা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।অরূপ হেসে বলল, আমি জানতাম। তোমাকে আমি এই মুহূর্তে এখানে পাব।সোমা হাসল। অরূপ তো জানেই ও ভোরের বাগানে দুঃখী রাজকন্যার মতো একা একা হাঁটে। গন্ধ নেয় কুয়াশার, ঘাসের, ফুলের, ও উৎকর্ণ হয়ে ওঠে ঘুমন্ত পাখিদের জেগে ওঠার জন্য। এটা রাখ। অরূপ বলল। বলে হাতের প্যাকেটটা এগিয়ে দিল।কি এটা? সোমা অবাক হয়ে যায়। আমার ডায়েরি। কেন? সেদিন বললে না ...আমার কবিতা পড়বে। ওহ্ । দাও। হাত বাড়িয়ে সোমা বাদামী রঙের প্যাকেট নিল। প্যাকেটের ভিতরে ডায়েরি । সোমা গায়ে একটা চাদর। প্যাকেটা চাদরে ঢেকে নিল। নইলে শিশিরে ভিজে যাবে। সময় করে পড়ো কিন্ত। অরূপ বলল।পড়ব। সোমা শ্বাস টানে। পড়ে বলো কেমন লাগল। অরূপ হাসছে।আচ্ছা, বলব।সোমা আমরা নৌকাভ্রমনে যাচ্ছি। অরূপ বলল।সোমার বুক ধক করে ওঠে। ও অবাক কন্ঠে বলল, কোথায়? কবে? আজই। সোনাই নদীতে ।ওহ্। আমি ভাবলাম জুরী নদীতে।না, সোনাই । ঢাকা থেকে আমার কাজিনরা সব এসেছে। বাড়িতে খুব হইচই হচ্ছে। না?হ্যাঁ।তাই পালিয়ে এলে এত সকালে?হ্যাঁ।সোমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বড়লেখা আর কুলাউড়া স্টেশনের মাঝখানে সোনাই নদী । এই শীতের ঝকঝকে রোদের ভিতরে নৌকাভ্রমন কি আনন্দের। সোমা বিষন্ন বোধ করে। ওরও ইচ্ছে হয় অরূপদের সঙ্গে যাওয়ার। সে তো সম্ভব না। দাদু ভীষণ অসুস্থ। দাদুকে ওই দেখাশোনা করে। সোমার বাবা ব্যাঙ্কে চাকরি করেন। বছর দুয়েক হল সিলেট শহরে বদলি হয়ে গেছে। মা সিলেট আর বড়লেখা আসাযাওয়ার মধ্যে থাকে। বাড়িতে যদিও মালী ও কাজের লোক আছে। তারপরও বলতে গেলে এত বড় বাড়িতে একাই থাকে সোমা । ও বড়লেখার একটি গার্লস স্কুল থেকে এবার এস এস সি দিল। অরূপও এবার এস এস সি দিল। বাবা রেলের ডাক্তার। নতুন বদলি হয়ে এসেছে। গত বছর দূর্গার পূজার সময় দেখা। অরূপের সঙ্গে পরিচয় সোমার নিঃসঙ্গতা ঘুচিয়ে দিয়েছে। অরূপের পিছনে করমচা আর মেহেদির ঘন ঝোপ। ওখানে কি যেন নড়ে উঠল। খরগোশ? আমি এখন যাই। সোমা বলল। এক্ষুনি দাদুর ঘুম ভাঙবে।অরূপ চশমা খুলে রুমাল দিয়ে মুছে নিল। তারপর সোমার চোখের দিকে তাকাল। যেন অনন্তের ওপার থেকে দেখছে। সোমা হাসে। সাদা রং করা কাঠের বেড়ার ওপাশে অরূপ ঝুঁকে পড়ে। সোমাও ঝুঁকে পড়ে। তারপর সোমা ওর ঠোঁটে অরূপের শিশির ভেজা ঠোঁটের স্পর্শ পায়। ঠিক সেই মুহূর্তে বাগানের কাকেরা ডেকে ওঠে আর সোমার সারা শরীরে কী রকম একটা ভালো লাগার মতো তাপ ছড়িয়ে পড়ল টের পায়। সোমা চোখ বোজে ...সোনাই নদীতে অরূপদের সলিল সমাধির সংবাদ বড়লেখা শহরের মানুষজনকে শোকাচ্ছন্ন করে তোলে। প্রত্যেকেই ভয়ানক বিচলিত বোধ করে। শহর ক’দিন থমথম করে। যেন কোনও স্বৈরশাসক সান্ধ্যআইন জারি করেছে ... ঘিয়ে রঙের চাদর জড়িয়ে একতলার কাঠের বারান্দায় বসে ছিল সোমা। বাগানে অপরাহ্নের মিষ্টি আলো ছড়িয়ে ছিল । লাল-হলুদ সূর্যমুখির ঝার, অন্যান্য ফুলেরা এবং রোদ আর ঘাস, ঘাসের ওপর বসে থাকা নির্বিকার কাক। , ঝোপের আড়ালের খয়েরি রঙের খরগোস-এসবই এই মুহূর্তে শেষ দুপুরের নরম আলোয় ডুবে আছে। সূর্যমুখির ঝারের ওপাশে উবু হয়ে বসে কাজ করছে নৈনি । নৈনি এ বাগানের মালী। মাঝবয়েসী নৈনি জাতে খাসিয়া। চমৎকার বাঁশী বাজায় । কত কত রাত যে নৈনির বাজানো বাঁশী মুগ্ধ হয়ে শুনেছে সোমা।সোমা শ্বাস টানল। আর কাঁদছিল না ও। কত আর কাঁদবে। বরং পাথরের মতোই হয়ে ছিল। কেবল টের পাচ্ছিল ভিতরের খলখল শূন্যতার শব্দ। কাল রাতে অরূপের ডায়েরি নিয়ে বসেছিল ও। খুলে পড়তে সাহস হয়নি। কবিতায় হয়তো অরূপের স্বপ্নের কথা লেখা। কে জানত মৃত্যু ওর স্বপ্নকে কেড়ে নেবে। একবার মনে হয় অরূপ খুব কাছে আছে। এত কাছে যে আঙুলে স্পর্শ করা যায়। আবার মনে হয় অরূপ তো কাছে নেই। অরূপ রূপহীন হয়ে আছে।সোমা শ্বাস টানল। ওর সারা শরীর কেঁপে উঠল।দাদুও মারা গেলেন। যেদিন অরূপদের দূর্ঘটনার খবর বড়লেখায় এসে পৌঁছল -ঠিক তার পরদিনই। সিলেট থেকে বাবা আর মা এল । দু’দিন থেকে ওরা আবার সিলেটে ফিরে গেছে। সোমাকে সিলেট নিয়ে যেতে চেয়েছিল তারা। সোমা যায়নি। ও এখন গভীর নির্জনতা প্রয়োজন। ও এখন গভীর নির্জনতায় বসে অরূপের ধ্যান করবে। বাগানের গেটের কাছে ক্যাঁচ করে শব্দ হল। সোমা চমকে উঠে মুখ ফিরিয়ে চাইল। কে যেন ঢুকল। এলোমেলো চুল। মুখ ভরতি দাড়িগোঁফ। চশমা পরা। পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা। কাঁধে ঝুলি। তিরিশের কাছাকাছি বয়স মনে হল।সোমা অবাক হল। স্বপ্নে দেখা ছোট কাকার মতন লাগছে। যে ছোট কাকা নাকি আসামের পাহাড়ে থাকে। সে দিন স্বপ্নে বলল, আমি আসছি রে সোমা। অপেক্ষা কর।লোকটা বারান্দায় উঠে এসেছে। সোমা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, আপনি?লোকটা হাসল। বলল, আমি সৈয়দ রায়হান কবির । আমি এ বাড়ির ছোট ছেলে। ওহ্ । ছোট কাকা! সোমার শরীর ভীষণ কাঁপছে। কী মধুর আর গম্ভীর কন্ঠস্বর। মা বলত তোর ছোট কাকা কবি। চমৎকার সরোদ বাজাত। পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজাতে চায়। মানুষের সংর্কীণ সংসারে ভালো লাগল না বলে পাহাড়ে সহজসরল মানুষের কাছে চলে গেল।ছোট কাকা বলল, আজ সকালে সীমান্তের এপারে এলাম। তখন আয়ূবের মুখে শুনলাম বাবা আর নেই ... শুনেই ছুটে এলাম। ছোট কাকা!তুই সোমা না?হ্যাঁ, আমি। বলে সোমা ছোট কাকাকে জড়িয়ে ধরল। অনেক ক্ষণ। ছোট কাকার শরীরে পাতাবিড়ির বিচ্ছিরি গন্ধ। তবু ভালো লাগল। আদুরে গলায় সোমা বলল, এত দিন কই ছিলে তুমি?ছিলাম গভীর জঙ্গলে। ছোট কাকা হাসছেন।সোমা মুখ তুলে বলল, গভীর জঙ্গলে? কেন? হাতি ধরতাম। হাতি। ছোট কাকা রসিকতা করে বলে হাসল। তারপর বলল, অনেকদিন পর বাড়ি এলাম। এবার চল বাড়িটটা একটু ঘুরে ঘুরে দেখি।চল।একতলার বসার ঘরটা বেশ বড়। মেঝেতে ধূসর রঙের কার্পেট আর পুরনো দিনের ফার্নিচারে ঠাসা। বড় বড় জানালা দিয়ে হু হু করে রোদ ঢুকেছে। কার্পেটের ওপর দেয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা একটা সরোদ। দেয়ালে সাদা রং করা। এ বাড়িটা নাকি কোন্ চা বাগানের ম্যানেজারের ছিল। পাকিস্তান আমলে দাদু কিনে নিয়েছে। দেওয়ালে বেশ ক’টা হরিণের মাথা আর বাঘের ছাল টাঙানো ।জৈন্তিয়া ছোট কাকাকে দেখে অবাক হল। বছর পাঁচেক হল এ বাড়িতে কাজ করছে জৈন্তিয়া । মালী নৈনির দূর সম্পর্কের পিসি হয় জৈন্তিয়া । মধ্যবয়েসী জৈন্তিয়ার মুখটি হলদে আর মঙ্গোলীয়। ছোট কাকা জৈন্তিয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। মাথা ঘোমটা দিয়ে রান্নাঘরে চলে যায় জৈন্তিয়া । সোমা জিজ্ঞেস করে, তুমি ভাত খাবে ছোট কাকা?না রে। আমি আইয়ূবের ওখানে খেয়ে এসেছি।তাহলে চা খাও।চা?হ্যাঁ।দিতে পারিস।সোমা রান্নাঘরে গিয়ে জৈন্তিয়া কে চায়ের কথা বলে এল।বাঁ দিকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। সোমা আর ছোট কাকা পাশাপাশি উঠছে। ছোট কাকা সোমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। সোমার শরীর শিরশির করে। ছোট কাকা না -জড়িয়ে ধরলেও পারত। সোমার কপালে আলতো করে চুমুও খেল ছোট কাকা। সোমা কেঁপে ওঠে। ছোট কাকা কপালে আলতো করে চুমু না-খেলেও পারত। ছোট কাকা কি জানে না সোমার শরীরের কোষে কোষে অনুভূতিরা লজ্জ্বাবতী লতার মতন ঘুমিয়ে থাকে।দোতলায় উঠে ছোট কাকা বলল, তোর এত মন খারাপ কেন রে সোমা? বাবাকে খুব ভালোবাসতিস।সোমা কী বলবে বুঝতে পারে না। অরূপের সুন্দর নিষ্পাপ মুখটি মনে পড়ে গেল। তাতে চোখে জল এসে যায়। ছোট কাকা রুমাল বের করে পরম স্নেহে চোখের জল মুছিয়ে দিল। ওরা দোতলার বারান্দায় এল। এখানে কয়েকটা বেতের চেয়ার। ছোট কাকা একটা চুরুট ধরিয়ে বসল। সোমা পাশে বসল। রোদ মলিন ঠেকে। সোমা সব খুলে বলল।ছোট কাকা সব শুনল। মুখ ভীষণ গম্ভীর।সোমার বুক ধকধক করছে। কী জানি-ছোট কাকা এখন কি বলেন। ছোট কাকা বললেন, আমার মনে হয় আমি আমি জানি অরূপ কোথায় আছে।কোথায়? সোমা ভীষণ চমকে ওঠে। পরে বলব। তার আগে আমার সঙ্গে চল। কোথায়?সীমান্তের কাছাকাছি। no man’s land -এ। সীমান্তের কাছাকাছি? কেন? জৈন্তিয়া একটা ট্রেতে দু’কাপ চা নিয়ে এল। সঙ্গে একটা প্লেটে পাঁপড় ভাজা। চায়ের ট্রে রেখে চলে গেল জৈন্তিয়া । ছোট কাকা চায়ের কাপ তুলে নিয়ে বলল, আমার মনে হয় অরূপ ওখানেই আছে। সীমান্তের কাছাকাছি নো ম্যান্স ল্যান্ডে। সোনাই নদীর পাড়ের সেই অপুরুষভূমিতে । অপুরুষভূমিতে সবার স্বপ্ন সার্থক হয়। কথাটা শুনে সোমা হিম হয়ে যায়। আয়ূব পরদিন সকালে একটা লাল রঙের মিৎশুবিসি জিপ নিয়ে এল । কাল রাতে ছোট কাকা গিয়ে খবর দিয়ে এসেছে। সকালে ব্যস্ত থাকবে বলে দুপুরের পর এল। মাঝারি উচ্চতার মিশমিশে কালো আর থলথলে চেহারার লোক আয়ূব । ধূসর বর্ণের পুরনো ময়লা সাফারি সুট পরে ছিল। মাথায় সাদা রঙের মেক্সিকান হ্যাট। সোমাকে দেখে হ্যাট খুলে অভিবাদন জানাল। সোমার হাসি পেল। কাল রাতে ছোট কাকা বলেছিল লোকটা সীমান্ত এলাকায় কাঠের ব্যবসা করে।কাল অনেক রাত অবধি ছোট কাকার পাশে দোতলার বারান্দায় বসে ছিল সোমা। তখনই ছোট কাকা বলল, সপ্তাহ দুয়েক আগে সোনাই নদীর পাড়ের নো ম্যান্স ল্যান্ডে এক ষোল সতেরো বছর বয়েস ছেলে অচেতন অবস্থায় পড়েছিল। নদীর পাড়ে নিংথাউযার ছাপড়া ঘর । নিংথাউযা থুত্থুরে বুড়ি, জাতে মনিপুরী। বুড়ি একাই থাকেই; সেই ছেলেটিকে ঘরে তুলে এনে এখন সেবা যত্ন করছে। সোমার শ্বাস আটকে আসে। ছেলেটি কি অরূপ?কি ভাবে বলব। তুই না দেখলে নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। যদিও অপুরুষভূমি তে মানুষের স্বপ্ন সার্থক হয়।সোমা শ্বাস টানল। হু হু করে জিপ ছুটছে। বাঁ পাশে সোনাই নদী। রোদে চিকচিক করছে। ওই নদীই তো অরূপকে কেড়ে নিল। এখন আবার ফিরিয়ে দিল কি? ডান পাশে রেললাইন। ধীরে ধীরে ডান দিকে বেঁকে গেল রেললাইন । দেখতে দেখতে সোনাই নদীও আরও বাঁ পাশে সরে গেল। এখন পিচ রাস্তার দু’দিকে দেবদারু গাছ আর কড়ুই গাছের সারি। চড়াই পথ, ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে একটি হাতি চলছে হেলেদুলে। হাতির পিঠে দু’জন সুন্দরী খাসিয়া যুবতী। একজনের চেহারা অনেকটা জৈন্তিয়ার মতো। রাস্তার পাশে হাট। আইয়ূব জিপের গতি কমিয়ে দেয়। ইংরেজিতে ছোট কাকাকে কী যেন বলে। ছোট কাকা মাথা নেড়ে বললেন: অবভিয়াস। দু’জন একপাশে একটা ঝাঁকড়া তেঁতুল গাছের নীচে মনিপুরী নারী কমলার ঝুড়ি নিয়ে বসেছে। এদের একজন মাঝবয়েসী। মাঝবয়েসী নারীটি অবিকল খুমান এর মতো দেখতে। মনিপুরী মেয়ে খুমান সোমার ক্লাসমেট। বড়লেখায় থাকে। সোমা আর খুমান এর সম্পর্ক গভীর এবং গোপন । মাঝে মাঝে রাতে সোমাদের বাড়ি এসে থাকে খুমান। এসব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে সোমা জিজ্ঞেস করল, ছোট কাকা আসলে তুমি কি কর আসামের পাহাড়ে জঙ্গলে? ছোট কাকা চুরুট ধরিয়েছিল। এক মুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলল, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে আদিবাসীরা রয়েছে। এই ধর মনিপুরে, ত্রিপুরায়,আসামে। তাই না? হ্যাঁ।এরা অবহেলিত আর নির্যাতিত । সংখ্যালঘু বলেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা পৃথিবীর সর্বত্রই অবহেলিত আর নির্যাতিত।সোমা মাথা নাড়ে। খুমান ওর দুঃখকষ্টের কথা সব খুলে বলেছে।এই সব সংখ্যালঘু আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে লড়াই করছি।তুমি একা?না, না। একা কেন? সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ আমাদের পাশে রয়েছে। যেমন আমরা দক্ষিণ আমেরিকা কি আফগানিস্তানের দরিদ্র জনগনের অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াইয়ের পাশে আছি।ওহ্ । সোমা শ্বাস টানল। তার মানে ছোট কাকা বিপ্লবী। মা বলত তোর ছোট কাকা কবি। চমৎকার সরোদ বাজাত। পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজাতে চায়। মানুষের সংর্কীণ সংসারে ভালো লাগল না বলে পাহাড়ে সহজ-সরল মানুষের কাছে চলে গেল। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। সীমান্তের ওপরের আকাশে নানা রঙের খেলা। ঝাঁক বেঁধে পাখিরা উড়ছে । চরাচর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে কুয়াশা। তারপরও দূরে পাহাড়ের শরীর স্পস্ট বোঝা যায়। সোমার শীত করছে। সোমা আজ জিন্সের ওপর ফুলস্লীভ টীশার্ট পরেছে। তার ওপর পুলোভার, চাদর। চাদর টেনে নিল। চোখ বন্ধ করলেই অরূপের মুখটা ভেসে উঠছে। গত বছর দূর্গার পূজার সময় যখন দেখা হল তখন অপলক চোখে তাকিয়ে ছিল। সোমাও কেঁপে উঠেছিল। সোমার সঙ্গে ছিল ফরিদা আফসানা খুমান আর শ্রাবণী সাহা। সোমার হাতে ফুল ছিল। জবা। কেমন এক ঘোরের মধ্যে ছিল বলেই অরূপকে সে লাল রঙের ফুল না দিয়ে পারেনি। মিষ্টি হেসেছিল অরূপ। আর আফসানা ফরিদা খুমান আর শ্রাবণী সাহারা খিলখিল হাসিতে ভেঙে পড়েছিল। সোমা ওর ভিতরের নিজস্ব ঈশ্বরকে বলে ছিল আমি এত ভাগ্যবতী কেন। আশ্চর্য! অরূপ কি সুন্দর! সেই অরূপ হারিয়ে গেল!ফাঁকা মতন জায়গায় জিপ থামল।ছোট কাকা বললেন, নাম।সোমা নামল। দূর পাহাড় থেকে ছুটে এসে শীতেরা ওকে জড়িয়ে ধরে। সোমা কেঁপে ওঠে। অরূপের সন্ধানে বেরিয়েছে। এ যাত্রা সহজ হবে না।আয়ূব জিপ ঘুরিয়ে নিয়ে চলে যায়।সোমারা পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। ছোট কাকা চুরুট ধরিয়েছে। নোনা তামাকে গন্ধ বাতাসে মিশেছে। বলল, এই হল no man’s land বা অপুরুষভূমি সোমা ; এই জায়গা কোনও দেশের সীমানা না। এখানে তোর স্বপ্ন সার্থক হবে দেখিস। চারিদিকে ফুটফুটে জোছনা। ফুটফুটে জোছনা আর শীত। আর কুয়াশা। সীমান্তের পাহাড়। একটা নদী। সোনাই নদী কি? নদীতে পাথর। পাহাড়ের কাছে এসে নদী পাহাড়িয়া হয়ে উঠেছে। আর দূরের পাহাড়ের মাথায় চাঁদ উঠেছে। তার নিষ্পভ আলো। কুয়াশার ঘোরাটপ সরিয়ে আলো পৃথিবীর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে। সোমার ভিতরে কোথাও নিভৃত বীণা রিন রিন করে বেজে ওঠে। এ নদীর পাড়েই কোথাও বুড়ি নিংথাউযার ছাপড়া ঘর । অরূপ কি এখানেই আছে? এই অপুরুষভূমি তে? সোমা শ্বাস টানে। ও ঠিক নিশ্চিত না- ছোট কাকা যে ছেলেটির কথা বলছে সেই অরূপ কি না। তবে অরূপের সন্ধানে বেরিয়ে ওর ভালো লাগছে। ভালো লাগছে এই পাথর-নদী- জোছনা ছোট কাকার ছায়া ...ওর নিজের ছায়া ...মনে হয় অরূপের সন্ধানে এই পথচলা কোনওদিনই ফুরোবে না ...এই অপুরুষভূমিতে হাঁটতে ভালো লাগছে ওর ...",False fe,"জাতীয় চার নেতা _ যাঁদের ঋণ শোধ হবার নয় একটা টিভি চ্যানেলে একটি অনুষ্টান দেখছিলাম। জাতীয় চার নেতা কথা বলছিলেন। এরা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন আহমদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, ও এম. মনসুর আলী। ফুটেজগুলো ১৯৭১ সালে ধারন করা। তাঁরা বলছিলেন সম্ভাব্য স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি,মানবতাবাদ,পররাষ্ট্রনীতি,সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইত্যাদি বিষয়ে। কী স্বপ্ন ছিল তাঁদের ! কী চেতনা ছিল তাঁদের ! অথচ সেই স্বপ্ন গুলোকে চুরমার করে দিয়ে তাঁদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কাপুরুষ হায়েনারা জানতো , এরা বেঁচে থাকলে সোনার বাংলা একদিন তার স্বনির্ভরতা ফিরে পাবেই। খুনীরা তা জানতো বলেই শেষমুহুর্তে এসে এই জেলহত্যাকান্ডটি ঘটায়। ভাবতে অবাক লাগে , এই খুনীদেরকেই বাঁচাতে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বিচার ঠেকাতে ইনডেমনিটি বিল পাশ করা হয় । আজই কাগজে দেখলাম জেল হত্যাকান্ডের পুন:বিচার করবে সরকার। এই চার নেতার ঋণ জাতি চিরদিন স্মরণ করবে শ্রদ্ধার সাথে । রিপোর্ট টি এখানে..... দৈনিক ভোরের কাগজ / ৩ নভেম্বর ২০০৯ ------------------------------------------------------ জেলহত্যা মামলার বিচার পুনরায় হবে : আইন প্রতিমন্ত্রী কাগজ প্রতিবেদক : ''জেলহত্যা মামলা নিয়ে বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকার প্রহসন করেছে। বিচারের নামে জাতির সঙ্গে এই ছেলে খেলার কারণে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন ও আমিসহ চার জন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কৌঁসুলি পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। পরবর্তীতে আদালতের রায়ে দেশের জনগণ আশাহত হয়েছেন। চার নেতার পরিবার এই রায় প্রত্যাখান করে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার মামলার বিচারের পর অবশ্যই এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পুনঃবিচার হবে।'' গতকাল বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে জেলহত্যা দিবসের আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম একথা বলেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা চলচ্চিত্রাভিনেতা ফারুকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জেলহত্যা দিবসে শহীদ জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর ছেলে মোঃ নাসিম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল ইসলাম লস্কর, যুগ্ম আহ্বায়ক অরুন সরকার রানা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আখতারুজ্জামান, কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ করিম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুল হক সবুজ প্রমুখ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন উল্লেখ করে এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিচারের স্থান হিসেবে আব্দুল গনি রোডের বাড়িটি চেয়ে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা দ্রুত বিচার বা প্রশ্নবিদ্ধ বিচার চাই না। চাই আন্তর্জাতিক মানের বিচার। সরকার বিচার বিভাগের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ করছে না মন্তব্য করে কামরুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের সময় জাতীয় চার নেতা হত্যাসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছিল। ফলে প্রকৃত হত্যাকারীরা রেহাই পেয়ে গেছে এবং আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, শেখ সেলিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসির মামুনসহ অসংখ্য নেতাকর্মী ও সাংবাদিককে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করা হয়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরকে রিমান্ডে নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। অহেতুক নির্যাতনের জন্য নয়। হত্যার রাজনীতি বন্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মোঃ নাসিম বলেন, দেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এখন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনাকে রক্ষা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তাবায়ন, দেশ থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ নিমূর্লের জন্য বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জাতীয় চার নেতা মামলা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার করতে হবে। সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:৩২",False fe,"তাৎক্ষণিক সাক্ষাতকারে নোবেল বিজয়ী হেরটা মুলার তাৎক্ষণিক সাক্ষাতকারে নোবেল বিজয়ী হেরটা মুলার''স্বৈরশাসন ছাড়া আমার সামনে লেখালেখির জন্য আর কোন ল্যান্ডস্কেপ ছিল না '' =======================================গত ৮ অক্টোবর এ বছরের সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে রেডিও লিবার্টি ২০০৯ সালের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী লেখক হেরটা মুলারের এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করে। তাদের ওয়েব সাইট থেকে সংগৃহীত এই সাক্ষাৎকারটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন মারসিয়া টিকুডিয়ান। সংবাদ সাময়িকীর জন্য সাক্ষাৎকারটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন নাফিসা নাওয়াল'আমার জন্ম রুমানিয়ায়। আমি বেড়ে উঠেছি সেখানে; আর ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত আমি সেখানেই ছিলাম। তবে এক জটিল মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে আমাকে দেশ ছাড়তে হয়; যা আমি আমার প্রথম গ্রন্থে লিখেছি। আমার প্রথম গ্রন্থ, ইংরেজিতে যার নাম ল্যান্ডস্কেপ। এটি ছিল একটি শিশুর দৃষ্টিতে জার্মান অধ্যুষিত এলাকা 'বানাত'-এর বর্ণনা। বানাত_ পশ্চিম রুমানিয়ায় অবস্থিত। আমার ঐ গ্রন্থে এবং পরবর্তীকালে অন্যান্য গ্রন্থে আমি বারবার যে বিষয়টি লিখেছি এবং লিখতে চেয়েছি তা হলো_ স্বৈর-শাসন। এমন না যে আমি এই বিষয়টি নিয়েই লিখতে চেয়েছি; আসলে আমার সামনে এটি ছাড়া আর কোন বিষয় ছিল না। কিংবা অন্য কোন বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতাও ছিলনা_ যা নিয়ে আমি লিখতে পারতাম। আমি বারবার না জেনে, না বুঝে এই বিষয়টিই টেনেছি আমার লেখায়_ কেননা অন্য কোন 'ল্যান্ডস্কেপ' আমার নেই। যে এলাকা থেকে আমি এসেছি সেটাই আমার লেখার ল্যান্ডস্কেপ। আমি দেখাতে চেয়েছি চরমপন্থার মধ্যে_ সামাজিক বিভিন্ন স্তরে এবং কাঠামোতে যখন স্বৈরতন্ত্র বিরাজ করে তখন মানবতা কীভাবে অপদস্ত হয় পদে পদে, কীভাবে মানবাত্মা নীরবে-নিভৃতে কাঁদে । তবে আমি মনে করি আমি বিষয়টিকে বেছে নেইনি, বিষয়টিই বরং আমাকে বেছে নিয়েছে। আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে। এক্ষেত্রে আমার নিজস্ব কোনো স্বাধীনতা ছিল না। আমি বলতে পরতাম না, এ বিষয় নিয়ে লিখতে চাই, ও বিষয় নিয়ে লিখতে চাই। কেননা, আমার সত্তায় যে বিষয়টি সবসময় আমাকে আলোড়িত করেছে তাই নিয়ে আমি লিখেছি।' 'সারা পৃথিবীতে আমি জানি, এক ধরনের সাহিত্য আছে যা আত্মজীবনীমূলক রচনা। একজন লেখকের জীবন তার সঙ্গে সঙ্গে সমান্তরালভাবে হাঁটে। যা তার জীবনে ধ্রুবসত্য। পূর্ব ইউরোপে একটি নির্দিষ্ট ধারায় ছিল স্বৈরশাসন, লেবার ক্যাম্প, হিটলারের ইহুদী নিধন। বহু লেখকের লেখায় এই বিষয়গুলি ঘুরেফিরে এসেছে। কেননা সেইসব লেখক এই ধারার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। তাদের লেখায় সমান্তরাল জীবন হিসেবে এই কথাগুলোই বার বার উঠে এসেছে। আমি মনে করি এ ধারার লেখাই টিকে থাকবে_ কিউবা থেকে চায়না পর্যন্ত।''নিওশিডর্ফ_ বানাতের একটি শহর। যেখানে জার্মানভাষীরা বসবাস করত। তারা ছিল ঐ এলাকার সংখ্যালঘু জার্মান। আমার দাদা ছিলেন ধনী কৃষক এবং ব্যবসায়ী। বাবাও তাই। মাকে দীর্ঘদিন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সেস্নভ লেবার ক্যাম্পে কাটাতে হয়েছিল। দীর্ঘ পাঁচ বছর তিনি সেখানে ছিলেন_ ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত। এগুলোই আমার লেখার মূল উপজীব্য।'হিত্রা মুলারের মূল ভাষা 'জার্মান' হলেও তিনি 'রুমানিয়া' ভাষায় সমান পারদর্শী। টিসিসোয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি 'জার্মান স্টাডি' এবং 'রুমানিয়া সাহিত্যে' পড়াশোনা করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি একজন অনুবাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাক্টরিতে। ১৯৭৯ সালে কমিউনিস্ট গ্রোত্রভুক্ত 'সিক্রেট পুলিশে'র সাথে সহযোগিতা না করার জন্য তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর তিনি একটি কিন্ডারগার্টেনে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেসময় তিনি ব্যক্তিগতভাবে জার্মান শিখতে শুরু করেন। তাঁর প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় এসময়। যা ছিল একটি সেন্সরড ভার্সন। যদিও তখন সব লেখাই সেন্সরড হয়ে প্রকাশিত হতো। ১৯৮৭ সালে তার বিয়ে হয় জার্মান ঔপন্যাসিক রিচার্ড ভাগনারের সঙ্গে। বিয়ের পর তিনি স্বামীর সঙ্গে বার্লিনে চলে যান। এরপর তিনি জার্মানি এবং বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি লেকচারার হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি বার্লিনে অবস্থান করছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি 'জার্মান একাডেমি ফর রাইটিং এন্ড পয়েট্রি'র সদস্যপদ লাভ করেন। মুলারের প্রথম বইটি ১৯৮২ সালে সেন্সরড অবস্থায় প্রকাশিত হয়। এর দুই বছর পর জার্মানি থেকে যখন বইটি প্রকাশিত হয় তখন মুলার যা লিখেছিলেন তাই হুবহু ছাপা হয়। একই বছর রুমানিয়া থেকে তার আরেকটি গ্রন্থ 'ড্রাকেনডার ট্যাঙ্গো' প্রকাশিত হয়। তবে রুমানিয়ার প্রেস তার কাজকে মোটেও সুনজরে তেদখেনি। অন্যদিকে জার্মান প্রেস সানন্দে তাঁর লেখাগুলো প্রকাশ করেছে। রুমানিয়ার সু-নজরে না দেখার কারণ হিসেবে তিনি মনে করে, খোলামেলাভাবে স্বৈরশাসকের সমালোচনা করেছেন তাঁর লেখায়। তার গল্পের পরতে পরতে তিনি দেখিয়েছেন জার্মান অধ্যুষিত এলাকার মানুষদের বেদনা, স্বৈরশাসকদের দুর্নীতি, সীমাহীন অহিষ্ণুতা এবং মানবতার চূড়ান্ত অবদমন।[দৈনিক সংবাদ সাময়িকী / ১৫ অক্টোবর ২০০৯ ]",False hm,"লোডশেডিঙের কবলে ব্লগের শুরুতেই একটা ক্যাটেগরির কম্বোবাক্স চলে আসে। যা লিখতে চাই তা স্মরণ করেই চোখে আঁসু চলে এলো। কী বলা যায় একে? দিনপঞ্জি তো বটেই। আত্মজীবনীও বলা যেতে পারে। সমসাময়িকই তো, নাকি? ১. মারাত্মক লোডশেডিং চলছে। এই বিদ্যুৎ আছে, এই নাই। ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে, ব্লগ যবে পাই দেখিতে, হারাই হারাই সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে। এদিকে গরম। আগুনের পরশমণি সারা গায়ে। চিটচিটে ঘাম। মিনমিন করে বিধাতার কাছে আরজ গুজার করি, আমার এ দেহখানি তুলে ধরো, তোমার ঐ দেবালয়ের প্রদীপ করো। পাশের গাড়িতে বাজছে রেডিও (টুডে না ফূর্তি জানি না), তাতে এক আপামণি আকূল কাতর স্বরে চ্যাঁচাচ্ছেন, বেহায়া পানি হায়য়য়য়য়য় ... অঙ্গ ভিজাইলো অঙ্গ ভিজাইলো অঙ্গ ভিজাইলো পানিইইইইই। অন্তরাত্মা জ্বলে যায়। বাড়ি ফিরে গোসল করে দেখি একই হাল। বিদ্যুৎ নির্দিষ্ট ছন্দে আসছে যাচ্ছে। একটু পরেই আবার কুলকুল করে ঘেমে পুনর্মূষিক হলাম। ২. বেশ কিছুক্ষণ দখিনা বাতাসের মতো আসাযাওয়া করার পর বিদ্যুতের মর্জি ফিরলো। নিশ্চিন্ত মনে বসে কী একটা কাজে হাত দিয়েছিলাম, ইচ্ছে হলো একটু মুড়িমাখা খাবো। এমন সময় ফুট। আবারও আঁধার। একেবারে নিকষ অন্ধকার চারদিকে। গোটা শহরে ব্ল্যাকআউট। জেনারেটর চালু হয়নি। অন্ধকারে পা বাড়াতে যেয়ে ঘটলো এক দুর্ঘটনা। বড়ই লজ্জাস্কর ব্যাপার। অন্ডকোষ নিয়ে আমার কোন শভিনিজম নেই। আমি একে ঠিক চেষ্টাচরিত্র করে অর্জন করিনি। পেয়েছি, বয়ে বেড়াচ্ছি, কাজে লাগাচ্ছি কালেভদ্রে। পৃথিবীতে সব স্ট্যান্ডার্ড অন্ডই মোটামুটি শক্ত খোলসের মধ্যে পুরে ডেলিভারি দিয়েছেন ঈশ্বর, হার্ড প্যাকড যাকে বলে। আমাদের কপালেই যে কেন পলিপ্যাকে এলো জিনিসটা, বুঝলাম না। ডোন্ট পুট অল ইওর এগস ইন দ্য সেম বাস্কেট, বলে আংরেজিতে, বাস্কেটের অভাবে ব্যাগে করে সবেধন নীলমণি দু'টি অন্ড বয়ে বেড়াচ্ছি এই জালেম দুনিয়ায়, অন্ধকারে বেখেয়ালে বার করে রাখা চেয়ারে ধাক্কা খেয়ে সব বুঝি পয়মাল হলো। দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা থাকে না, চেয়ারে গুঁতো খেয়ে অন্ডকোষাধ্যক্ষ পদ থেকে একেবারে পড়িমড়ি করে পড়লাম আর কি। এহেন মহার্ঘ্য বাবাজিদের ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্ট'স গার্ড রেজিমেন্টের মতো সদা সতর্ক প্রহরায় আগলে আগলে রাখবো, এই পেতিজ্ঞা মনে মনে করতে করতে প্রাণপণে দম নেয়ার চেষ্টা করি। একই সাথে মনে হয়, এই ব্যাটারা তো অন্ড নয়, শুক্রকোষ! অন্ডকোষ নাম রাখার মানে কী? পরক্ষণেই বুঝতে পারি কারণটা। ডিমের মতোই সাবধানে আগলে রাখার পরোক্ষ শিক্ষা আছে কথাটার মধ্যে। দম ফিরে পাবার পর গালিকোষটাও খুলে উল্টেপাল্টে দেখি। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী টুকু তো সপরিবারে জেলের লপসি চাটছে, কিন্তু জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে রেখে (লোডশেডিং আর অন্ডকোষে আঘাত, উভয়ার্থেই) গেছে। আমলা আ ন হ আখতারের নামেও মামলা ঝুলছে দেখলাম। খাম্বারাজ যুবরাজ কোন অন্ধকার কারাকক্ষে আটক, আশা করি ওখানেও চেয়ার আছে। কিছু গালি ইনসাফের সাথে ভাগবাঁটোয়ারা করে দেবার পর ব্যথাটা যেন কিছুটা প্রশমিত হয়। এর মধ্যে আবার বিদ্যুৎ আসে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে টয়লেটে গিয়ে দেখি একেবারে জাতির বিবেকের মতো চেহারা হয়ে আছে আমার।",False rn,"ভবিষ্যৎ ভাবনা বর্তমানে দেশের অবস্থা ভালো না। সারা বাংলাদেশের অবস্থাই ভালো না। অল্প কিছু নোংরা মানুষ মিলে দেশের অবস্থা খারাপ করে রেখেছে। তাদের বিচার করবেন আল্লাহ। খবরের কাগজ পড়া বাদ দিয়ে দিয়েছি। টিভি দেখা বাদ দিয়েছি। পত্রিকা এবং টিভি- মন মেজাজ আরও বেশী বিক্ষিপ্ত করে দেয়। আমি থাকতে চাই- সহজ সরল শান্ত হয়ে থাকতে। টিভির খবর আর পত্রিকার খবর পড়লে- মুহূর্তেই মেজাজ চরম বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। কারো সঙ্গ ভালো লাগে না। ওই...মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। কাজেই ঠিক করেছি গ্রামে চলে যাব। যদিও সারা জীবন ঢাকায় থেকেছি। গ্রামে যাবো, চাষবাস করবো। মূরগী পালব,পুকুরে মাছ চাষ করবো। একদন টাটকা শাক সবজি খাবো। অলরেডী আমি কৃষিকাজ নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা শুরু করেছি। আমার নিজের কোনো জমিজমা নেই। অন্যের জমি বর্গা নিবো। যদি আমার সাথে বউ গ্রামে যেতে রাজী না হয়- তাহলে আমি একাই যাবো। আমার ধারনা বউ রাজী হবে। সে আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসা। ফজরের আযানের পর-পর ঘুম থেকে উঠেই, পানি ভাত লবন আর মরিচ দিয়ে খেয়ে- গলায় গামছা বেঁধে নেমে যাবো জমিতে। আমন ধান লাগাবো। ধানক্ষেতের খুব যত্ন নিবো। অনেক ফসল হবে। নিজের জন্য রেখে বাকিটা বাজারে বিক্রি করে দেব। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে- দুইটা গরু কিনব। প্রতিদিন সকালে গরুর দুধ বাজারে বিক্রি করবো। অন্যের পুকুর লিজ নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে মাছ চাষ শুরু করবো। আমার বিশ্বাস আমি কৃ্ষি কাজে অনেক ভালো করবো। জমিতে কাজ করতে-করতে দুপুর হয়ে যাবে। দুপুরবেলা বউ খাবার নিয়ে আসবে। একটা গাছের নীচে বসে খাবো। খাবার মেন্যু সামান্য গরম ভাত, আলু ভর্তা অথবা কোনো শাক বাজি। সাথে থাকবে কাচা মরিচ এবং এক টিকরো পেঁয়াজ। গাপ গাপ করে করে হাসি মুখে খেয়ে নিবো। বউ ছোট ধমক দিয়ে বলবে- এই আস্তে খাও তো। আমি বলব- আরে...না, জমিতে সেচ দিতে হবে। অনেক কাজ বাকি। খাওয়া শেষ করে বউ এর ছেঁড়া শাড়ির আঁচলে মুখ মুছতে মুছতে বলল- বউ সামনের বৈশাখে তোমাকে দু'টা নতুন শাড়ি কিনে দেব। সারাদিন কাজ শেষ করে বারান্দায় বসবো। বউ চা বানিয়ে হাতে দিবো। টুকটাক কথা বার্তা বলব। নিজের পুকুরের মাছ এনে বউ কে বলব- আজ এই তেলাপিয়া মাছ ভালো করে ভেজে রান্না করো তো। বউ রান্না করবে, আমি বউ এর পাশে চুপ করে বসে থাকব। রান্না হবে মাটির চুলায়। রাতে দুইজন মিলে খুব আরাম করে খাবো। ঘুমানোর আগে বউ সুন্দর করে সাজবে। চোখে মোটা করে কাজল দিবে। কপালে টিপ পড়বে। আমি বউকে মন ভরে দেখব। তারপর ফু দিয়ে কুপি নিভিয়ে বউকে জড়িয়ে ধরব। এক বছর পর হাতে বেশ কিছু টাকা জমবে। অবশ্য ততদিনে সংসারে এক-দুইটা বাচ্চা এসে যাবে। ততদিনে একটা নিজের পুকুর হয়ে যাবে। দুইটা গরু হয়ে যাবে। অল্প পরিমান জমির মালিক হয়ে যাবো। সংসারে কোনো অভাব থাকবে না। তাছাড়া আমি বুদ্ধি করে বাড়ির চারপাশে- ভালো জাতের নানান ফলের গাছ লাগিয়ে দেব। কোনো কিছুই আর বাজার থেকে কিনতে হবে না। একদম ফরমালিন মুক্ত- মাছ দুধ ফল। আহ ! ভুলেও আর শহরে যাবো না। নো নেভার। কাউকে শহরে পাঠিয়ে প্রিয় বই গুলো কিনে আনব। অবসর সময়ে পড়বো।ধানক্ষেত, পুকুর, গরু বাছুর আর নিজের বউ বাচ্চা নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ব। পত্রিকা পড়ব না, টিভিতে খবর দেখব না। মন-মেজাজও বিক্ষিপ্ত হবে না। শান্তি আর শান্তি। যখন কোনো কাজ থাকবে না, উঠানে পাটি বিছিয়ে বউ বাচ্চা নিয়ে গল্প করব। আমি অনেক গল্প জানি। বউ বাচ্চারা অবাক বিস্ময়ে আমার গল্প শুনবে- অনেকদিন আগে একটা গাছ ছিল। একটা ছোট ছেলে প্রতিদিন সেই গাছের কাছে আসত। আর গাছতলায় পরে থাকা পাতা কুড়িয়ে সে নানান ধরনের খেলনা বানাত। কখনো বানাত চশমা, কখনো ঘড়ি, কখনো মুকুট। ছেলেটা সেই পাতার মুকুট মাথায় দিয়ে রাজা সাজত। যেন সে মাঠের রাজা, আর গাছটা তার রাজপ্রাসাদ। কখনো কখনো ছেলেটা গাছ বেয়ে উপরে উঠত, খেলত, আবার কখনো গাছের ডাল ধরে দোল খেত। আর ক্লান্ত হয়ে পড়লে সে গাছের ছায়ায় ঘুমাত।",False hm,"পিচ্চিতোষ গল্প ০৭: মিতুন যেদিন ডাল রাঁধলো মিতুন খুব খুঁতখুঁতে মেয়ে। সে সব কিছুতে শুধু ভুল ধরে। মিতুন বড় জেদি। কোনকিছুতে জেদ চেপে গেলে সে আর হাল ছাড়ে না। মিতুনদের বাড়িতে কাজ করতে এসেছে দুলি। দুলি আগে কখনো শহরে আসেনি। এই প্রথম সে গ্রাম থেকে এসেছে। তার কথায়, চেহারায়, শরীরে তার ফেলে আসা গ্রাম কুসুমপুরের ছবি এখনো দেখা যায়। দুলির বয়স মিতুনের চেয়ে সামান্য বেশি। কিন্তু দুলি রান্না করতে পারে। মিতুন পারে না। মিতুন কিন্তু শুরুতেই খুঁত ধরলো। সে তার মা-কে বললো, ""মা, দুলি এক হাবা কেন? শুধু হাঁ করে তাকিয়ে থাকে সবকিছুর দিকে?"" মিতুনের মা মুখ টিপে হাসেন। বলেন, ""দুলি তো নতুন এসেছে, তাই ও সবকিছু দেখে অবাক হয়ে গেছে। কিছুদিন পর ও আর হাঁ করে সবকিছু দেখবে না।"" তা-ই হলো। দুলি আস্তে আস্তে সবকিছু দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেলো। সে মাথার ওপর জোরে পাখা ঘুরতে দেখলে আর অবাক হয় না, ফোন বেজে উঠলে ভয় পায় না, টিভি ছাড়লে কাজ ফেলে ছুটে আসে না। কিন্তু মিতুন খুঁত ধরতে ছাড়ে না। সে তার মা-কে বলে, ""মা, দুলি এভাবে টেনে টেনে কথা বলে কেন?"" মিতুনের মা হেসে ফেলেন। বলেন, ""দুলি তো এতদিন গ্রামে ছিলো, ওখানে সবাই এভাবে কথা বলে।"" মিতুন তবুও দুলির অনেক খুঁত বার করতে থাকে। দুলি শুধু শুধু দাঁত বের করে হাসে, জোরে জোরে কথা বলে, রাতের বেলা ঘুমের মধ্যে কাঁদে। দুলির অনেক খুঁত। দুলি কিন্তু মিতুনকে খুব ভালোবাসে। মিতুন কিছু করতে বললে সে ছুটে ছুটে এসে করে দেয়। মিতুন যদি বলে, দুলি আমাকে ওটা এনে দাও, সে তক্ষুণি ছুটে ওটা এনে দেয়। মিতুন যদি বলে, দুলি আমাকে সেটা করে দাও, দুলি তক্ষুণি সব কাজ ফেলে সেটা করে দেয়। তবুও মিতুন ক্ষেপে থাকে দুলির ওপর। একদিন মিতুন রাতে খেতে বসে খুব অনর্থ করলো। তার ডাল খেতে খুব ভালো লাগে। দুলি মুসুরের ডাল রান্না করেছে। মিতুনের মা আর বাবা ডাল দিয়ে চুপচাপ ভাত মাখছিলেন, মিতুন ডাল মুখে দিয়ে চিৎকার করে ওঠে, ""ডালে এতো লবণ কেন? ডালের রংটা এমন পানসে কেন? কোন ঝাঁঝ নেই কেন ডালে?"" মিতুনের বাবা মিতুনের মায়ের দিকে তাকান গম্ভীর চোখে। মিতুনের মা বলেন, ""খেয়ে নাও সোনা, কাল তোমাকে মজার ডাল রান্না করে খাওয়াবো নাহয়।"" মিতুন রাজি হয় না, সে বলে, ""এই দুলিটা কোন কাজ ভালোমতো পারে না, এটা কোন ডাল হলো? পঁচা ডাল এটা, এটা আমি খাবো না! এরচেয়ে ভালো ডাল তো আমিই রান্না করতে পারি!"" দুলি রান্নাঘরে চুপ করে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে। মিতুন খাবার ফেলে দুড়দাড় করে উঠে চলে যায়। মিতুনের বাবা খুব রাগী লোক। তিনি পরদিন অফিস থেকে সন্ধ্যেবেলা ফিরে মিতুনকে ডাক দেন, ""মিতুন!"" মিতুন তার বাবাকে ভয় পায়, সে এসে বলে, ""জ্বি বাবা!"" মিতুনের বাবা মিতুনের হাত ধরে রান্নাঘরে নিয়ে যান। ""তুমি আজকে ডাল রান্না করবে। আমরা রাতে খাবো।"" মিতুন খুব ঘাবড়ে যায়। বলে, ""আমি কেন ডাল রান্না করবো?"" মিতুনের বাবা বলেন, ""কেন, তুমিই তো কালকে বললে, তুমি দুলির চেয়ে ভালো ডাল রান্না করতে পারো? আজকে তাই তুমি রান্না করে আমাদের খাওয়াবে।"" মিতুন তারা বাবার দিকে তাকিয়ে খুব ভয় পায়। সে শুকনো মুখে ডাল রান্না করতে শুরু করে। কিন্তু মিতুন তো আর ডাল রান্না করতে জানে না, কিভাবে কি করতে হয়, কিছু সে জানে না। কিন্তু মিতুন ভীষণ জেদি, সে ঠিক করে, বাবাকে সে ডাল রান্না করে খাওয়াবে। সে মায়ের ঘর থেকে একটা রান্নার বই এনে সেটা খুলে বই পড়ে পড়ে রান্না শুরু করে। প্রথমে সে ডাল সিদ্ধ বসায়। ডাল পানিতে টগবগ করে যখন ফুটবে, তখন কিছু ভাজা মশলা দিতে হয়। মিতুন একটা সসপ্যানে তেল ঢালে। তারপর একটা পেঁয়াজ নিয়ে কুচি করতে বসে। পেঁয়াজ কুচি করতে গিয়ে তার চোখে ঝাঁঝ লাগে, দরদর করে পানি পড়তে থাকে চোখ দিয়ে। রসুনের খোসা ছাড়াতে গিয়ে তার রীতিমতো আঙুল ব্যথা হয়ে যায়। আদা কুচি করতে গিয়ে মিতুন হাতের নখে ব্যথা পায়। মিতুনের বাবা চুপচাপ সব দেখে যান। তেল গরম হলে মিতুন তাতে হড়হড় করে সব কুচি ঢেলে দেয়। অমনি গরম তেল ছিটকে এসে লাগে ওর হাতে আর জামায়। মিতুন হাউমাউ করে ওঠে। মিতুনের বাবা রান্নাঘরের বেসিনের ট্যাপ ছেড়ে তাতে মিতুনের হাত ধুইয়ে দেন। মিতুন এক হাতে চোখ ডলতে থাকে। পেঁয়াজ-রসুন-আদা ভাজা ভাজা হয়ে আসার পর মিতুন সেটা ডালে ছেড়ে দেয়। তারপর একটু লবণ দেয়। কয়েকটা মরিচ কুচিয়ে দেয় ডালে, যেভাবে বইতে লেখা আছে। তারপর কুকিং প্যানে ঢাকনা দিয়ে চুলার আঁচ একটু কমিয়ে দেয়। রাতে খেতে বসে ডাল মুখে দিয়ে মিতুন চুপ করে যায়। একটুও মজা হয়নি খেতে। পানসে হয়ে গেছে ডাল। ইশশশ, তাড়াহুড়োয় তখন হলুদ আর জিরা দেয়া হয়নি। লবণও হয়নি ডালে। ডালটাকে দেখাচ্ছে তরকারি ধোয়া ময়লা পানির মতো। মিতুনের বাবা বলেন, ""মিতুন, মা, ডাল তো মজা হয়নি।"" মিতুনের মা বলেন, ""হুঁ, পানসে হয়ে গেছে ভীষণ।"" দুলি কিন্তু রান্নাঘর থেকে ছুটে আসে, ""না চাচাজান, ডাইল মজা হইছে খুব!"" মিতুনের বাবা কিছু বলেন না। সেদিন রাতে ঘুমের ঘোরে দুলি কেঁদে ওঠে, হয়তো স্বপ্নে সে দ্যাখে তার ফেলে আসা গ্রামকে, তাদের গ্রামের পুকুরগুলিকে, সেখানে ভেসে বেড়ানো হাঁসগুলিকে, তাদের গ্রামের গাছগুলি, গাছের ওপরে আকাশকে, মেঘকে, তার আদরের ছোট ভাইটাকে, তার বাবাকে, মা-কে। দুলি ঘুমের মধ্যেই কাঁদতে কাঁদতে তার মা-কে ডাকে, ""মা, ও মা, মা!"" মিতুন ছুটে যায় বিছানা ছেড়ে। সে দুলিকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলে, ""দুলি, কাঁদছো কেন? স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছো?"" এ গল্পটি পরবর্তীতে অ্যারিজোনা থেকে বাংলাদেশ থিয়েটার অব অ্যারিজোনার উদ্যোগে প্রকাশিত বার্ষিক পত্রিকা ""সিঁড়ি""র বর্ষ ৫ এ প্রকাশিত হয়েছে।",False ij,"কবিতা থেকে গান_ ইচ্ছা আমার প্রার্থনা এই: এই দুঃখের কাছে নত যেন না হই; নিজেকে ধরে রাখি জীবনের মাঝে।আমার প্রার্থনা এই :আবার যেন যাই জলের কিনারায়স্বর্গের সিঁড়িটা যেন চিনতে পারি।আমার প্রার্থনা এই :পৃথিবীর সব ক্রোধ এক ঝড়ের রাতে ফেলে দিই সমুদ্রের জলের গভীরে। আমার প্রার্থনা এই :আবার যেন যাই জলের কিনারায়স্বর্গের সিঁড়িটা যেন চিনতে পারি।মানুষের মনে কত রকম ইচ্ছে যে থাকে। সে ইচ্ছে কখনও কথায় কখনও কান্নায় কখনও সুরে প্রকাশ পায়। তখন অন্য মানুষ সে ইচ্ছের কথা জানতে পারে। এই হল মানুষের ধারা। এভাবে তৈরি হয় সংযোগ । কেউ কেউ বৃহৎ সংযোগের কথা বলেন। যেমন পদার্থবিদ ডেভিড বোম্ ইমপ্লিকিট অর্ডার বা নিহিত সংহতির কথা।যা হোক। অন্যদের মতো আমারও ইচ্ছে জীবনসংগ্রামে জয়ী হওয়া। যে জীবনসংগ্রামে প্রত্যেকেই অবতীর্ণ। আমার প্রার্থনা এই: এই দুঃখের কাছে নত যেন না হই; নিজেকে ধরে রাখি জীবনের মাঝে।জীবনের মাঝে আছে আনন্দ । দুঃখ সে আনন্দকে প্রায়শ ম্লান করে দেয়। একে কোনওমতেই এড়ানো যায় না। এরা জীবনে অনিবার্য। তবে এই দুঃখের কাছে নত হওয়া চলবে না। কেননা, সুখ আবার ঘুরে আসে। শরীর ও মনে বল ফিরে আসে। ‘ইচ্ছা’ কবিতার বিষয়: ক্রোধকে বিসর্জন দিয়ে অনিবার্য দুঃখের কাছে নত না হওয়ার ইচ্ছা-প্রার্থনা; আর, জলের কিনারায় যাওয়ার ইচ্ছে। নারীর মতো জলও কবিকে টানে। স্বর্গের সিঁড়িটা যেন চিনতে পারি। কেননা, সিঁড়িটা চেনা খুব জরুরি। সুপ্রাচীন গ্রন্থসমূহে লিখিত আছে: ‘একদা স্বর্গপথের দরজা খুলিয়া যাইবে।’ সেই অদৃশ্য সিঁড়িটা আমাদের ধারেকাছেই থাকে। কখনও দেখা যায় কখনও দেখা যায় না। নিজের অহং ভুলে বস্তুপ্রকৃতির সঙ্গে প্রাণের সম্যক সংযোগ ঘটলেই কেবল দেখা যায়। এর জন্য আবশ্যক অভেদ জ্ঞান। ভেদ মানেই সংকীর্ণতা। সমাজের কোণঠাসা মানুষদের কোনওমতেই ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। স্বর্গের সিঁড়িটা চিরস্থায়ীভাবে দৃশ্যমান রাখতেই প্রত্যেকেই যেন নিজ নিজ অধিকার ফিরে পায়। অডিও লিঙ্কhttp://www.mediafire.com/?emcnmzehmmd জন ও তাহাসান বাদে ব্ল্যাক এর তিন জন সদস্য। ওপরে জাহান (বাঁয়ে) ও মেরাজ; নীচে জাহান ও টনি। জাহান এর ছবি দুবার এসেছে। ‘ইচ্ছা’ গানটায় (টনির বাজানো) ড্রামস ঢোলের মতই বেজেছে। এবং গানটা একটা রক ব্যান্ডের পরিবেশনা হলেও তাহাসানের কীবোর্ডে বাজানো এর উদ্বোধনী সুরটায় যেন গ্রামবাংলার মেলার সুরের ছোঁওয়া পেয়েছে;- এবং সেটিও কম আকর্ষনীয় নয়। কেননা, এতে করে রক ব্যান্ডের আয়োজনে বাঙালিআনার পরশ পেল। বাংলার বিজয় হল। কেননা, রক গান আর রক গান রইল না। তাহাসান। এই গানের কিবোর্ডের পিসটা ওরই বাজানো। জন। (বাঁয়ে) এই গানের ভোকাল। ডানে জাহান।এবং আমার ইচ্ছে ছিল এই গানটির ভিডিও সুচারু রুপে সম্পন্ন করা হোক। এবং সে ভিডিও তে বাংলাদেশের কোনও নদীপাড়ের একটি প্রাচীন মন্দিরের সিঁড়িতে নানা বর্ণের অনেক মানুষের অংশগ্রহনে দূর্গা পূজার দৃশ্য ধারণ করা হোক এবং উৎসবে মাতা পূজারীদের সঙ্গে ব্যান্ডের সদস্যরাও নেচে গেয়ে উঠুক। কেননা,আমার প্রার্থনা এই :আবার যেন যাই জলের কিনারায়স্বর্গের সিঁড়িটা যেন চিনতে পারি।আজও আমার সে ইচ্ছে পূরিত হয়নি। উৎসর্গ: ভাঙ্গন।",False hm,"নিজ্ঞাপন ০৪ খালি বাড়িতে যুবক তাড়া করছে যুবতীকে। তবে রয়েসয়ে। যুবকের পরনে গেঞ্জি আর লুঙ্গি, যুবতী শাড়ি। শুধু শাড়িই নয়, যুবতীর পরনে অন্যান্য আনুষঙ্গিকে কাপড়চোপড়াদিও আছে। নেপথ্য বাজছে গান পোরো, পোরো চৈতালি সাঁঝে কুসুমী শাড়ি আজি তোমার রূপের সাথে চাঁদের আড়ি পোরো, পোরো চৈতালি সাঁঝে (উঁহু, অনুপ জলৌটার গাওয়া গানে হবে না। এখানে আরো মাদকতা চাই। আরো রস চাই। আরো ইয়ে চাই। সেক্সি আবহাওয়া লাগবে।) যুবকের হাতের ছোবলে যুবতীর আঁচল কিছুটা স্খলিত হয়ে পড়ে। সেটা সামলাতে গিয়ে যুবতী যুবকের আলিঙ্গনে কিছুক্ষণের জন্য বন্দিনী হয়ে পড়ে। যুবক মুখ নামিয়ে আনে চুমো খাওয়ার জন্য, কিন্তু যুবতী আলিঙ্গন ছাড়িয়ে আবার ছুট দেয়। গান বাজতে থাকে পোরো ললাটে কাঁচপোকার টিপ পোরো ললাটে কাঁচপোকার টিপ আলতা পোরো পায়ে তুমি আলতা পোরো পায়ে হৃদি নিঙাড়ি তুমি আলতা পোরো পায়ে হৃদি নিঙাড়ি পোরো, পোরো চৈতালি সাঁঝে ... রান্নাঘর থেকে বারান্দা, বারান্দা থেকে অন্দরমহলে কিছুক্ষণ ছুটোছুটির পর শোবার ঘরে এসেই যুবতী ফাঁদে আটকা পরে। যুবক দরজার গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়, যুবতী কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে শ্বাস ফেলতে থাকে, তার ঊর্ধ্বাঙ্গ আন্দোলিত হয় শ্বাসের ঢিমে তালে। (দর্শক মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে নিজ্ঞাপন, যেখানে স্ফূরিতবক্ষা মডেলা প্রচুর দৌড়ঝাঁপ করে আর হাঁপায়। মাহবুব লীলেন হাসেন।) গানেরও তাল ফেরে। দাদরার (নাকি দাদরার কোন খালাতো ভাই) সাথে লয় মিলিয়ে যুবক এবার ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় যুবতীর দিকে। মতলব খারাপ। গান বাজতে থাকে। প্রজাপতির ডানাঝরা সোনার পাতে প্রজাপতির ডানাঝরা সোনার পাতে ভাঙা ভুরু জোড়া দিও ভাঙা ভুরু জোড়া দিও রাতুল শোভাতে বেল-যুঁথিকার গোড়ের মালা পোরো খোঁপাতে বেল-যুঁথিকার গোড়ের মালা পোরো খোঁপাতে দিও উত্তরীয় শিউলি বোঁটার রঙে ছোপাতে এই গানের সাথেই যুবক দুহাত বাড়িয়ে যুবতীর মুখ নিজের করপুটে নিয়ে আদর শুরু করবে। ভুরুর প্রসঙ্গে সে আঙুলে ছুঁয়ে দেখবে ভুরু, খোঁপার প্রসঙ্গে টান দিয়ে খোঁপা খুলে দেবে। ইত্যাদি। বেশি ধ্যাষ্টামো না করলেই ভালো। রয়েসয়ে। আবার তাল ফিরবে। যুবক এক ঝটকায় যুবতীর দুই বাহুমূল ধরে আকর্ষণ করবে নিজের দিকে। শাড়ি খসে পড়বে কাঁধ থেকে, বেচারির এখন ব্লাউজই সম্বল। গান বাজবে। রাঙা সাঁঝের সতিনী তুমি রূপকুমারী রাঙা সাঁঝের সতিনী তুমি রূউউউউপকুমারী পোরো, পোরো চৈতালি সাঁঝে কুসুমী শাড়ি ...। যুবতী এবার যুবকের কব্জি চেপে ধরবে। ফিসফিস করে মাদকতাময় কণ্ঠে বলবে, ""তুমিও কিছু পোরো!"" যুবক বুঝতে পারবে না, বলবে, ""কী পরবো?"" যুবতী লজ্জারুণ হাসি হাসবে। এই হাসির দাম বর্তমান বাজারে পৌনে দুই লাখ টাকা ভরি। যুবক এবার বুঝতে পারবে। খুব ধীরে ধীরে হাসি ছড়িয়ে পড়বে তার মুখে। ক্যামেরা পিছিয়ে আসবে, ঘরের আলো ঘোলা হয়ে আসবে, ফোকাস সরে আসবে এই যুগলের ওপর থেকে, বেরসিক নেপথ্য কণ্ঠ ফিসফিস করে বলবে, ""দুর্নিবার কনডম! সকল পুরুষের পরিধেয়!!"" (পরবর্তী নিজ্ঞাপন সংসারে এক সন্ন্যাসীর ফরমায়েশ অনুযায়ী নারীদের সেবনীয় জন্মনিয়ন্ত্রণবড়ি। কনডমের প্রস্তাবনাটিও তাঁরই ছিলো। পাঠকপাঠিকা পরবর্তী নিজ্ঞাপনের মশলা যুগিয়ে দিতে পারেন আমাকে। ধন্যবাদ।)",False mk,"মুখোশ উন্মোচন_ পিয়াস করিমকে চিনছইন_ জামায়াত-শিবির অনুরাগী ‘বুদ্ধিজীবী’ পিয়াস করিমকে সারাদেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার প্রজন্ম চত্বর থেকে আন্দোলনকারীরা এই কথিত বুদ্ধিজীবীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, শুধু পিয়াস করিমই নয় যেসব বুদ্ধিজীবী বিভিন্ন টিভি টকশোতে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে প্রতিনিয়ত বক্তব্য দিয়ে আসছেন তাঁরাও ’৭১-এর অপরাধে সমঅপরাধী। সারাদেশ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জেগে উঠেছে তখন কথিত এসব বুদ্ধিজীবীর কর্মকা-ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে এ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের সদস্যরা।প্রজন্ম চত্বরে শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এফ এম শাহিন বুধবার জনকণ্ঠকে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। এই আন্দোলনে সারাদেশের মানুষ শামিল হয়েছে। এর বাইরে রয়েছেন গুটিকয়েক মানুষ যাঁদের অনেকেই চেনেন। এরা নানাভাবে জামায়াত-শিবির এবং যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চাইছেন। পিয়াস করিম তাঁদের অন্যতম। সম্প্রতি অংশ নেয়া সব টকশোতেই তিনি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করেছেন আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি এসব বুদ্ধিজীবীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। তিনি বলেন, এরাও ’৭১-এর দোষে দোষী।এদিকে বুধবার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু প্রজন্ম চত্বরে ঘোষণা দেন দৈনিক নয়া দিগন্ত, দিগন্ত টেলিভিশন, সংগ্রাম এবং আমার দেশসহ সকল জামায়াতী প্রচার মাধ্যমে যে সব ব্যক্তি টকশো বা কলাম লেখেন তাদের শাহবাগে অবাঞ্ছিত করা হলো। এদের শাহবাগে কোন প্রয়োজন নেই। তিনি দেশের বিবেকবান মানুষকে এসব মাধ্যমে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।আন্দোলনকারীরা বলছেন, যেসব বৃদ্ধিজীবী টিভি টকশোতে জামায়াত বিএনপির পক্ষ নেয় তাদের মধ্যে পিয়াস করিম নগ্নভাবে যুদ্ধাপরাধী এবং জামায়াত শিবিরের পক্ষে কথা বলেন। সব ক্ষেত্রেই তিনি আলোচকদের কথা কেড়ে নিয়ে সরকারবিরোধী বক্তব্য দিতে গিয়ে কৌশলে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেন। তাঁদের রাজনীতির বৈধতার পাশাপাশি ’৭১-এ জামায়াত-শিবিরের কর্মকা- সমর্থন করেন। শুরুর দিকে কথিত এই বৃদ্ধিজীবী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন নিয়ে বিভিন্ন টকশো মাতালেও এখন তিনি প্রায়ই জামায়াত-শিবিরের সমর্থনে কাজ করছেন।আন্দোলনকারীদের মতে, দিগন্ত টেলিভিশনে একটি নিয়মিত টকশোতে সঞ্চালক হিসেবে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক রণাঙ্গনের বীর সৈনিক বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমকে। তিনি ওই টকশোতে সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই শাহবাগ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের এই জামায়াত প্রীতিতে আমরা বিস্মিত। যেখানে তার উচিত ছিল আমাদের নতুন প্রজন্মকে পথ দেখানো সেখানে আমাদের বিভ্রান্ত করার অর্থ খুঁজে পাই না। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে টানা নয়দিন ধরে আন্দোলন চললেও এই বীর মুক্তিযোদ্ধা একবারও সংহতি প্রকাশ করতে আসেননি। আন্দোলনকারীরা বলছেন, কাদের সিদ্দিকী জামায়াতের অর্থে তাঁর রাজনীতি পরিচালনা করছেন।এ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের সদস্য তন্ময় আহমেদ বেসরকারী টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে তথাকথিত এসব বুদ্ধিজীবীকে পরিত্যাগ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এঁরা জাতিকে বিভ্রান্তিতে ফেলেন। এঁরা ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করছেন। এঁদের কেউ কেউ বলছেন, শাহবাগের আন্দোলনকারীরা ইতিহাস জানে না। কথিত ওসব বুদ্ধিজীবীকে শাহবাগে আহ্বান জানিয়ে তন্ময় বলেন, এখানে এলে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস জেনে যাবেন। কিন্তু তারা আসবে না, কারণ তারা বর্ণচোরা।",False mk,"খালেদার বক্তব্য কোনটি ঠিক_ খাড়ার উপরে সংসদে দাঁড়িয়ে কিভাবে ম্যাডাম মিথ্যা কথা বলে ? গত জানুয়ারীমাসের ৩০ তারিখে ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকায় খালেদার লিখা চিঠি নিয়ে ঝড় বয়ে যায় দেশে। বিশেষ করে, জিএসপি সুবিধা বাতিল করে সরকারকে চাপে রাখতে অনুরোধ জানানোয় খালেদার উপর ব্যপক সমালোচনা হয় । তো আজকে উনি সংসদে দাঁড়িয়ে কি বলেছেন জানেন ?খালেদা জিয়া - ‘জিএসপি-সুবিধা বহাল রাখতে ব্যর্থ হয়ে সরকার এখন বিভ্রান্তি ছড়াতে বিভিন্ন কথা বলছে। আমি নাকি চিঠি দিয়েছি। কোনো চিঠি দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’এ সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি চিঠির কপি হাতে নিয়ে তুলে ধরেন। যেখানে একটি অংশ বিশেষভাবে চিহ্নিত করা আছে।তখন খালেদা জিয়া বলেন, ‘এটা আমার চিঠি নয়।’ মন্তব্য - এই চিঠি যে আপনি নিজে লিখেন নাই সেইটা আমরা জানি কারন ক্লাস এইট পাস কারোই এতভাবে ভাল ইংলিশে চিঠি লিখা সম্ভব না, তবে চিঠির লেখক হিসেবে আপনার নাম ই আছে এবং সেটাই প্রমান করে চিঠির প্রতিটা শব্দের সাথে আপনি একমত ।পালানোর পথ নাই ম্যাডাম এই যুগে মিথ্যা কথা বলে!!! ২য় অংশঃ২রা ফেব্রুয়ারী/২০১৩ তারিখে জনাবে মৌদুদ সাহেব বলেন- "" সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ওয়াশিংটন টাইমস-এ লেখা খালেদা জিয়ার নিবন্ধে সরকারের আঁতে ঘা লেগেছে। জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সাংসদেরা যেভাবে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন, তাতে প্রমাণ করে যে দুর্নীতি ও দুঃশাসন নিয়ে সত্য কথা লেখা হয়েছে। তিনি বলেন, এই লেখায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ১৬ কোটি মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ সব শুভাকাঙ্ক্ষী দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।"" সূত্র - Click This Linkবিএনপি-জামাতের প্রিয় পত্রিকা দৈনিক পশ্চাতদেশে কি বলা হইছে এইটা একটু দেখি - অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ""খালেদা জিয়া দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। দেশের সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরে তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে নিবন্ধ লিখেছেন। এতে দেশের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ববাসী বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছে। এ ধরনের নিবন্ধ ও প্রবন্ধ প্রতিনিয়তই বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে।""লিঙ্কঃ Click This Linkআজকে - এই চিঠি আমি লিখি নাই, কে লিখেছে জানিনা - বেজি ( বেগম জিয়া )৩০শে জানুয়ারী ২০১৩, জিএসপি সুবিধা বাতিল সহ বহুবিধ নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকারকে চাপে রাখতে আমেরিকার কাছে খালেদার চিঠি। ছাপা হয় ওয়াশিংটন টাইমসে ( Click This Link)ম্যাডাম আপনি কি পাবলিকরে বলদ পাইছেন ? না সবাই ক্লাস এইট পাশ ভাবেন ? সেই দিন কি আর আছে ? রাজনীতির নামে আর কত নষ্টামি করবেন ? কবরে যেতে হবে তো নাকি একদিন ?",False ij,"প্রাগৈতিহাসিক বাংলা_ সঙ্গীতের উন্মেষ। মানবজাতির লিখিত ইতিহাসের পূর্বেই সঙ্গীতের উন্মেষ হয়েছিল বিধায় সঙ্গীতের উদ্ভবের প্রকৃত কারণ আজও ধোঁয়াচ্ছান্ন। তবে কারও কারও মতে প্রাকৃতিক শব্দ ও ছন্দই এর উদ্ভবের মূল কারণ। এই প্রাকৃতিক শব্দ ও ছন্দের আঙ্গিক, পুনরাবৃত্তি ও স্বর-এসবই সঙ্গীতে প্রতিফলিত হয়ে থাকবে। আজও কোনও কোনও সংস্কৃতিতে সঙ্গীতের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক শব্দ ও ছন্দকে অনুসরণ করতে দেখা যায়। কখনও ওঝাদের নৃত্যগীতে ...সঙ্গীত খেলাধুলার অনুসঙ্গ হিসেবেও সঙ্গীতের বিকাশ হয়ে থাকবে। শিকারের সময় শিকার বস্তর অনুকরণে ডাকা হত। আদিম মানুষ এসবও নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছে। তা ছাড়া, পাখির গান তো আছেই; বাঁদরও ফাঁপা কাঠে ঢোল বাজায়। এই কাজে সৃজনশীলতা মোটেও নেই -তা বলা যাবে না। প্রকৃতিকে সব সময়ই এক রকম call and response-এর ব্যাপার চলেছে। তবে মনে হয় সর্বপ্রথম সঙ্গীতযন্ত্রটি ছিল মানুষ্যকন্ঠ। গলা দিয়ে কী না করা যায়-গান গাওয়া, গুনগুন করা, শিস দেওয়া এমন কী হাই তোলা, কাশা ... সবচে পুরনো নিয়ানডারথাল ফসিল ৬০ হাজার বছরের পুরনো। আর সবচে পুরনো হাড়ের বাঁশী ১০ হাজার বছরের পুরনো। তবে সঙ্গীতযন্ত্র আরও পুরনো হতে পারে। হাত তালিই সবচে পুরনো ছন্দ বা তালযন্ত্র বলেই অনুমিত হয়। পাথরে পাথর ঘঁষলে বা অন্য কিছু ঘঁষলেও এক ধরনের তাল ও ছন্দের সৃষ্টি হয়। আদিম মানুষ এসবও নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছে। তবে পুরোপুলীয় বা ঢ়ধষবড়ষরঃযরপ যুগের সংগীত যন্ত্রের কথাও ভাবা হয়। তবে কোনটা সঙ্গীতযন্ত্র আর কোনটা নয়- সে ব্যাপারে বির্তক এখনও চলছে। Examples of paleolithic objects which are considered unambiguously musical are bone flutes or pipes; paleolithic finds which are open to interpretation are pierced phalanges (usually interpreted as 'phalangeal whistles'), objects interpreted as bullroarers, and rasps. পুরোপুলীয় যুগের ওল্ডওয়ানা পর্যায়ের পূর্বেও সঙ্গীতের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। ... the anthropological and archeological designation suggests that music first arose (amongst humans) when stone tools first began to be used by hominids. The noises produced by work such as pounding seed and roots into meal is a likely source of rhythm created by early humans...Prehistoric music varies greatly in style, function, general relation to culture, and complexity. The Timbila music of the Chopi is considered one of the most complex preliterate musics. কিন্তু, প্রাগৈতিহাসিক বাংলায় সঙ্গীতের উন্মেষ কখন হয়েছিল? নিঃসন্দেহে প্রাগৈতিহাসিক বাংলার সঙ্গীতের জন্ম হয়েছিল আদি-অস্ত্রালদের হাতে। (অন্যান্য পর্ব দেখুন) আদি অস্ত্রালরা প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে এশিয়ার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভারতবর্ষ থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের ইষ্টার দ্বীপ অবধি ছিল তাদের বিস্তার। কৃষির আবিস্কার হয়েছে আজ থেকে বার হাজার বছর আগে। (লিঙ্ক) আদি অস্ত্রালরা প্রাগৈতিহাসিক বাংলায় বসতি গেড়েছে, কৃষির পত্তন ঘটিয়েছে-এসব অনুমান করাই যায়। আগেই বলেছি, সবচে পুরনো হাড়ের বাঁশী ১০ হাজার বছরের পুরনো। নিশ্চয়ই আদি অস্ত্রালরা সাংস্কৃতিক আচরণে ব্যাতিক্রম ছিল না। তারাও প্রাথমিক সঙ্গীত চর্চার জন্য হাড়ে বাঁশী তৈরি করেছিল নিশ্চয়ই। আগের একটি পর্বে উল্লেখ করেছি- আদি-অস্ত্রাল পুরুষেরা দলবেঁধে শিকার করত। শিকারের সময় বন্য পশুপাখির অনুকরণে ডাকাডাকি করতে হয়। সেই প্রাগৈতিহাসিক বাংলার আদিম আদি-অস্ত্রাল মানুষেরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছে। অধিকন্তু, প্রাকৃতিক শব্দ ও ছন্দই সঙ্গীতের উদ্ভবের মূল কারণ বলে মেনে নিলে এই প্রাকৃতিক শব্দ ও ছন্দের আঙ্গিক, পুনরাবৃত্তি ও স্বর আদি-অস্ত্রালদের সঙ্গীতে প্রতিফলিত হয়ে থাকবে। আজও কোনও কোনও সংস্কৃতিতে সঙ্গীতের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক শব্দ ও ছন্দকে অনুসরণ করতে দেখা যায়। হয়তো আদি-অস্ত্রাল ওঝাদের নৃত্যগীতের মাধ্যমে, অবশ্য আরও পরে, প্রাগৈতিহাসিক বাংলায় সঙ্গীতের বিকাশ হয়েছিল। তারপরে খেলাধুলার মাধ্যমে এর বিকাশ হয়েছিল। পাখির গান তো আছেই; বাঁদরও ফাঁপা কাঠে ঢোল বাজায়। এই কাজে সৃজনশীলতা যে মোটেও নেই তা বলা যাবে না। এক রকম call and response -এর ব্যাপার চলে। সেটাই সঙ্গীতের প্রাথমিক ধরন হতে পারে। সেই প্রাগৈতিহাসিক বাংলার আদিম আদি-অস্ত্রাল মানুষেরা সেসব নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছে। প্রাগৈতিহাসিক বাংলায় সঙ্গীতের উন্মেষ ঠিক কখন হয়েছিল তা জানা না গেলেও সঙ্গীতের অভিষেকের কৃতিত্ব আদি-অস্ত্রালদেরই। লিঙ্ক: http://en.wikipedia.org/wiki/Prehistoric_music Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৪৯",False mk,"টার্গেট কিলিং এবং জঙ্গি পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আখতারের স্ত্রী দুই সন্তানের জননী মাহমুদা আখতার মিতু সন্তানকে স্কুল বাসে তুলে দিতে এসে রাস্তায় অপেক্ষমাণ অবস্থায় প্রকাশ্য জঙ্গি হামলার নির্মম শিকার হয়ে নিহত হন। দেশের মানুষ শোকে মুহ্যমান হয়েও জঙ্গিবাদের নিন্দায় ফুঁসে উঠেছে। এই প্রথম কথিত জিহাদিরা হামলা করলো একজন পুলিশ কর্মকর্তার পত্নীর উপর। মাহমুদা খানম মিতুর হত্যাকাণ্ডটি জঙ্গি হামলায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পুলিশ সুপার বাবুল আখতার চট্টগ্রামে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অনেক সাহসী ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে জঙ্গি আস্তানা ভেঙেছেন ও অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করেছেন। জঙ্গি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোয় তার উপর আক্রোশ তুঙ্গে ছিল। বাবুল আখতারকে হামলা করার অভিপ্রায় সার্থক না হওয়াই প্রতিহিংসার লক্ষ্যবস্তু করেছে তার স্ত্রীকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পরিবারের ওপর হামলার মধ্যদিয়ে জঙ্গিরা নজিরবিহীন ঔদ্ধত্য ও ধৃষ্টতা দেখালো। রাষ্ট্রের প্রতি অবজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ ঘটাল। এই পাশবিক ও নৃশংস হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা নিজেদের অস্তিত্ব ও শক্তি উভয়ই প্রদর্শন করল।মাহমুদা আখতার হত্যা দেশে ও বিদেশের গণমাধ্যমের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে বাংলাদেশের জননিরাপত্তা নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্ববাসীকে। জঙ্গিদের টার্গেট কিলিং বন্ধ করতে না পারার কারণে ভিন্ন ভিন্ন ব্যখ্যার উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। সুযোগ তৈরি হচ্ছে বিদেশীদের বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা তৈরিতে। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত স্টিফেনস মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, বাংলাদেশে যে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাগুলো ঘটছে, তা বিশ্বজুড়ে চলতে থাকা সন্ত্রাসী হামলা থেকে আলাদা কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্রগুলো মিলে এই হামলা মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করতে চায়। তিনি বলেন, আমাদের কাছে থাকা প্রতিবেদন বলছে, এখানকার সন্ত্রাসী হামলা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদেরই অংশ, এর বাইরে কিছু নয়। গত ১৫ মাসে বাংলাদেশে ৪০টির বেশি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সবাইকে নিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরিকর।গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা শহরে ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যার পর থেকে দেশে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) আছে কি নেই এ নিয়ে এক ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের জঙ্গিদের সঙ্গে আইএসের সম্পৃক্ততা আছে এমন ধারণা পাকাপোক্ত করতেই জঙ্গিরা গুপ্তহত্যার পরিধি বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের জঙ্গিরা নিজেদের অবস্থানের দৃঢ়তা প্রমাণ করতে চাইছে। অপর দিকে স্থাপন করতে চাইছে গণতন্ত্রের অভাব ও সরকার বিরোধীদের রাজনৈতিক সংকোচন থেকে জঙ্গিবাদের বৃদ্ধি ঘটার সনাতনী ধারণাকে। যদিও উন্নত বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোও জঙ্গিবাদের আক্রমণ থেকে মুক্ত নয়। পুলিশের হিসেব মতে বিগতকালে ঘটে যাওয়া ৩৪টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ১৫টির দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট ও ৮ টির দায়ভার নিয়েছে আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট। যদিও সরকার এটাকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছে এবং জঙ্গিদেরকে দেশজ আখ্যা দিয়ে আসছে। ইসলামিক স্টেটের অন লাইন মাগ্যাজিন “দাবিক” গত নভেম্বরে “দি রিভাইভাল অব জিহাদ ইন বেঙ্গল” শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে বিদেশিরা ভিত্তি হিসেবে গণনা করছে সাথে ব্যবহার করছে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টকে। আল কায়েদার দেওয়া ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশ ঘিরে জিহাদের আহবান ছিল এবং উভয়ের দৃষ্টিতেই সরকারের যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জঙ্গি বিরোধী অভিযান ইসলাম বিরোধী আখ্যায়িত করে উত্খাতের ডাক দেওয়া হয়েছে।ইসরাইলের ক্ষমতাসীন দলের নেতা মেন্দি এন সাফাদি জঙ্গি হামলার শিকার সংখ্যালঘুদের বিষয়কে প্রণিধানযোগ্য করে সরকারকে মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে তুলনা করে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে। বাংলাদেশের বিএনপি রাজনীতিক আসলাম চৌধুরীর সাথে সরকার উত্খাতে ক্রিয়াশীল হয়েছে। শঙ্কার বিষয় হলো গুপ্তহত্যার লক্ষ্যবস্তুর পরিধি ও ব্যাপ্তি ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। সর্বশেষ মাহমুদা আখতার হত্যা এই নতুন ধারণা পোক্ত করলো। জঙ্গিরা পছন্দমত লক্ষ্যবস্তু বেছে নিচ্ছে তাদের ইচ্ছামত সময় ও স্থানে হত্যা করছে। তারা হত্যার স্বাধীনতা ভোগ করছে চরমভাবে। ফলে জনমনে ভীতি ও শঙ্কার শিহরণ ছড়িয়ে পড়েছে। পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু কেউ না জানলে অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ বহনকারী সবাই ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না বলে জনমত ঘনীভূত হচ্ছে। জঙ্গি বিরোধী অভিযানের ঘোলাটে কৌশল ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা কোনো ফল দিচ্ছে না। অনুসৃত কৌশল অকার্যকর হয়ে পড়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পূর্ণ সুরক্ষা নিচ্ছে জঙ্গিগুলো। সাথে পাচ্ছে গণতন্ত্র চর্চাকারী দলগুলোর রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া। দেশি ও বিদেশি মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা পুষ্টি যোগাচ্ছে। জামায়াত-বিএনপির সরকার উত্খাতের উদ্দেশ্য পূরণে জঙ্গিদলের হামলা পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে বিধায় মৃত্যুর হোলিখেলায় জামায়াত-বিএনপির নির্লিপ্ততার চেয়ে সম্পৃক্ততার ধারণা দিন দিন স্বচ্ছতা পাচ্ছে।সংখ্যার দিক থেকে জঙ্গি হামলার মাত্রা তুলনামূলক ভাবে কম হলেও প্রবৃদ্ধির হার বেশি। চলতি বছরে উল্লেখ করার মত জঙ্গি হামলা ১৫ ছাড়িয়েছে। ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত বা বিবর্জিত নৈতিকতার অপরাধে নিরীহ মানুষ হত্যার যৌক্তিকতা ছড়ানো হয়েছিল সুকৌশলে। জঙ্গি চরিত্র, উদ্দেশ্য ও অপকৌশলের গতিধারা গণনায় না নিয়ে সহিংসতা এড়াতে সরকারও বিশ্বাস করেছিল ধর্মের বিরুদ্ধে লেখা বন্ধ হলে গুপ্তহত্যা বন্ধ হবে। গুপ্তহত্যার কুশীলবদের পাকড়াও করার চেয়ে হত্যার শিকারকে শাসন করার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রচারণা পেয়েছে যদিও তার পেছনে অপশক্তি সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। অসাম্প্রদায়িক শাসক দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা মৌলবাদীরা ধর্মকে নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া না করার ধুয়া তুলে মৌলবাদী চক্রের সাথে কুটুম্বিতার কৌশলকে বেশি সাশ্রয়ী ও কার্যকর বলে বোঝাবার চেষ্টা করেছে। হেফাজত ই ইসলামের আস্ফাালনকে দমিয়ে ওলামা লীগের আস্ফাালনে পরিণত করাকে সফলতা ভাবছেন। জঙ্গি বিরোধী অভিযানের নমনীয়তার সুযোগ কাজে লাগিয়ে জেএমবি’ দখল করে নিয়েছে ইসলামি ছাত্রশিবির। সেই সুবাদে জামায়াত ই ইসলামের হাতে চলে গেছে জঙ্গিত্বের চাবিকাঠি। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারে শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি হলেও অন্যদেরকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টার কসরত এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে বহুমুখি ও যুগপত্ আক্রমণ।নরম ও শক্ত ব্যবস্থার সংমিশ্রিত বহুমুখি জঙ্গি বিরোধী কৌশল রচনার কোনো বিকল্প নাই। সশস্ত্র জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠিন ও শক্ত অবস্থান না নিলে তারা গোপন আস্তানায় বসে শান্ত মাথায় টার্গেট কিলিং চালিয়ে যাবে। দেশি-বিদেশি চাপের মুখে নমনীয়তা প্রকান্তরে দুর্বলতায় পরিণত হয়ে যাবে। হত্যার ধারাবাহিকতা বন্ধ হবে না। অপশক্তি গণতন্ত্রের সুরক্ষা বঞ্চিত হলেও নিরীহ মানুষের বাঁচার অধিকারকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দিতে হবে। আদর্শিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মদদ দাতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রাখলে জঙ্গিদের পুষ্টি বঞ্চিত করে নির্জীব করা সহজ হবে। জেএমবির মতো ভয়ঙ্কর জঙ্গিগোষ্ঠীকে র্যাব যুগপত্ আক্রমণের মধ্য দিয়ে ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু এখন জঙ্গি নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের ‘হচ্ছে’ বা ‘হবে’ নীতি অনুসরণ করলে জঙ্গিরা আবার পুনর্গঠিত হবে। জঙ্গিদের কার্যক্রম রুখতে তাদের দৌড়ের ওপর রাখতে হবে। কিন্তু এমনটি করা যাচ্ছে না বলেই তারা প্রায়ই সংগঠিত হয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে ভেঙে পড়া জেএমবির টুকরো অংশগুলোকে জড়ো করে ইসলামী ছাত্র শিবির নেতৃত্ব ও সরবরাহ দিয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলামসহ আরও অনেক জঙ্গি দল গঠন করছে। টার্গেট কিলিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করছে এবং সাহস ও ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। জঙ্গিরা মাহমুদা আখতার মিতুকে হত্যা করে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে পরিবার নিরাপত্তার ভীতি ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছে এবং নিজেদেরকে অপ্রতিরোধ্য বানাতে চেয়েছে। তাদের এই দুঃসাহস ভেঙে দিতে না পারলে ফলাফল সুদূর প্রসারী হবে। আমরা লক্ষ্য করছি, ভিন্ন ধর্মাবলম্ব্বীদের সঙ্গে শিয়া, আহমেদিয়া ও ইসলামী সুফিবাদে বিশ্বাসীদেরও হত্যা করা হচ্ছে। ধারণা করছি, আইএস যেভাবে টার্গেট কিলিং করে, বাংলাদেশের জঙ্গিরাও নিজেদের অস্তিত্বের প্রকাশ ঘটাতে আইএসের মতো করে সহজেই হত্যা করা যায় এমন মানুষদের হত্যা করছে। বাংলাদেশেও আইএস আছে এই বার্তা বিশ্বকে জানানোর জন্যই তারা এমন করছেন। দেশে সম্প্রতি জঙ্গি হামলায় অপরাধীদের গ্রেফতারে সামান্য অগ্রগতি হয়েছে। চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে অভিজিত্ ও জুলহাস মান্নান হত্যাকাণ্ডসহ অনেক হত্যা মামলায় পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধীদের গ্রেফতার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। এই কথাও সত্য যে, এই আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর ক্ষেত্রে অপরাধী শনাক্ত করার ধীরগতি থেকে স্বজনদের মনে হতাশা জন্ম নিয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি যাই হোক না কেন অনেক হত্যাকারী ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে আবার অনেকেই অচিহ্নিত রয়ে গেছে। এর ফলে জনমনে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। জঙ্গিদের পরবর্তী টার্গেট কে হবেন তা নিয়ে সাধারণের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং অস্বস্তিতে ভুগছেন।ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের পুলিশি নিরাপত্তার প্রতিরোধমূলক কৌশল সাময়িকভাবে কার্যকরী হলেও জঙ্গি হামলা বন্ধে খুব একটা অবদান রাখবে বলে মনে হয় না। আক্রমণাত্মক কৌশল দিয়ে প্রতিরক্ষার ব্যূহ গড়তে হবে। জঙ্গিদলের কিলার সেলগুলোর ভেতরে ঢুকে তা উচ্ছেদ করতে হবে। চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে দ্রুত হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা দরকার। প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় জঙ্গিদের শাস্তি প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এজন্য দ্রুত বিচার ব্যবস্থার আওতায় এনে জঙ্গিদের গ্রেফতার ও শাস্তি দেওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। জঙ্গিবিরোধী আইনের আওতায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল চালু করে জঙ্গিদের দ্রুতবিচার নিশ্চিত করতে হবে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কোনোভাবেই নমনীয় হওয়ার সুযোগ নেই। বরং এদের বিরুদ্ধে শিগগিরই শক্ত অভিযান শুরু করতে হবে। জঙ্গিদের মদদদাতাদের চিহ্নিত করে জঙ্গি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। জঙ্গিদের ব্যাপারে আর একমুখি কৌশলে থাকা যাবে না। এজন্য সংশ্লিষ্টদের বহুমুখি নতুন কৌশলে যেতে হবে। সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৩৮",False rg,"!! সুচক্রদণ্ডীর উঠোনে কুচক্রীদের কোলাহল !! 'দ্য ওল্ড ওয়াইন ইন এ নিউ বোটল' সেই একই পুরানা প‌্যাচাল। জন্মের পর হইতে কেবল ক্যাচাল করিতেই তাহারা বড্ড ভালোবাসে। ঘোষাল মহাশয়ের কুলেজ পড়ুয়া মেয়েটি কেন গ্রামের সব্বার চাইতে সুন্দরী হইলো? ইহা ক্যাচাল সাহেবরা কিছুতেই মানিয়া লইতে পারিতেছেন না। আর যাহা হউক ভগবানের এমুন একটা কাজ করা উচিত হয় নাই! কুতুব সাহেব গ্রামের মোড়ল, অথচ তাহার মেয়েটি এখনো আইবুড়ু হইয়া রহিলো। রাখালবালকরা পর্যন্ত কুতুব মোড়লের মেয়ের দিকে ফিরিয়াও তাকায় না। কারণ, তাহার রূপের মধ্যে কিসের যেনো একটা আধিক্য আসিয়া রূপকে শ্রীহীন করিয়া রাখিয়াছে। যাহার কুদরতি বুঝিবার সাধ্য ক্যাচালেও উদঘাটন হয় না সত্য, কিন্তু কুতুব মোড়লের মুখের আড়ালে যে গভীর ক্ষত তাহা দেখিয়া যে কেউ সেই কষ্টের ঠিকানা মালুম করিতে পারেন।মলম দিয়াও সেই ক্ষত ঢাকিবার মতো প্রচেষ্টাও কম হয় নাই। কিন্তু সেই চেষ্টায়ও কুতুব মোড়লের আউবুড়ু মেয়েকে পার করা সম্ভব হয় নাই। তাই পেছনে অনেকে এই বলিয়া খোটা মারে, কুতুব মোড়লের ইহা কপালের দোষ। হিন্দুদের জমি দখল করিয়া মোড়লগিরি করিতে গিয়া স্বয়ং খোদার ইচ্ছায় তিনি এই শাস্তি ভোগ করিতেছেন। ইহাতে মানুষের কোনো হাত নাই...ঘোষাল মহাশয়ের নিজের জমি সবটুকু দখল হইয়া গিয়াছে। কিন্তু নিজের সৎ পরিশ্রমে তিনি যাহা কিছু আয় করেন, তাহা দিয়া মেয়েকে লেখাপড়া করাইতেছেন। ভগবানের কৃপা থাকলে খারাপ মানুষের হাজারো বদমতলব বা কুচেষ্টাকেও পাশ কাটাইয়া জীবনে জয়ী হওয়া যায়। ঘোষাল মহাশয়ের মেয়েও যেমন সুন্দরী তেমনি মেধাবী। দেখিতে দেখিতে চোখের সামনে ওয়ান-টু-থ্রি-ফোর-ফাইভ করিয়া এখন কলেজ পাশের দরজায় আসিয়া আরেকটা চমক দেবার দিন গুনিতেছে। আসল নাম লক্ষী হইলেও ঘোষাল মহাশয়ের এই মেয়ে স্বরস্বতী'র আশির্বাদও পুরোপুরি পাইয়াছে। আপর রূপ তো তাহার স্বয়ং মা লক্ষী'র মতো হইয়াছে। তো, লক্ষী যাহাই ভালো করুক, তাহা নিয়াই কুতুব মোড়লের লোকজনের রাতের ঘুম হারাম। প‌্যাচাল পারিতে পারিতে ক্যাচাল বাধাইবার জন্য তাহারা যেনো উঠিয়া পরিয়া লাগিয়াছে। ঘোলা জলে কোলের পোলাও মাছ শিকাড় করিতে সক্ষম। কিন্তু স্বচ্ছ জলে দক্ষ মাছ শিকাড়ি ছাড়া সেই বাহাদুরী দেখাইবার জো নাই। পোলার বাপের তখন ন্যাংটি খুলিয়া টুপি বানাইলেও মাছ ধরিবার কৌশলে নিশ্চিত ফেল করিবার দশা। তবু বুকের মধ্যে বড় স্বপ্ন নিয়া ঝোপ বুঝিয়া কোপের আশায় তাহারা বসিয়া থাকে। তাহাতে দুনিয়াদারির কিছুই যায় আসে না। সূর্য আগের মতো পূর্বে উঠিয়া পশ্চিমে অস্ত যায়। দোল পূর্ণিমায় লক্ষীদের উঠোনে ভারী আনন্দে সবাই যখন রামায়ন শুনিতেছিল, তখনই কুচক্রীদের কেউ পেছন থেকে ঘোষাল মহাশয়ের ঘরে আগুন লাগাইয়া দেয়! কিন্তু তাহাতে ঘোষাল মহাশয়ের মনের স্বর্গে কেউ উত্তাপ তৈরি করিতে পারে না। ইহাই পরবর্তী সময়ে কুচক্রীদের বড়োই দুঃশ্চিন্তার বিষয়। .................................চলবে................................",False hm,"ল্যাটিন শেখা সহজ নয় বন্ধু সগীর কালেভদ্রে এমএসএনে আমার কুশল জিজ্ঞাসা করে। সামনাসামনি দেখা হওয়ার ব্যাপারটা তো বছর দেড়েক ধরে হয় না। সগীর কোথায় যেন কী একটা ধান্ধা করে, আমিও অন্য কোথায় যেন কী আরেকটা ধান্ধা করি। দেখাসাক্ষাতের ব্যাপারটা পরস্পরের অনলাইনে থাকার প্রোবাবিলিটির অঙ্কে চলে গেছে তাই। আমার নেট সংযোগ সক্রিয় থাকার সম্ভাবনাকে সগীরের নেট সংযোগ সক্রিয় থাকার সম্ভাবনা দিয়ে গুণ করলে একটা কাঁচা সম্ভাবনা পাওয়া যায়, তাকে আবার নানা সম্ভাবনা দিয়ে গুণ করার খাটনির কথা বাদই দিলাম। যেমন, আমার এখন সগীরের সাথে যেচে পড়ে কথা বলার সম্ভাবনা প্রায়শই শূন্যের কাছাকাছি থাকে। সগীরেরও আমার সাথে যেচে পড়ে কথা বলার সম্ভাবনাটা বড় গলায় বলার মতো কিছু না। তাই, এই প্রোবাবিলিটির গণিতই আমাদের দূরে ঠেলে রাখে। বস্তুত সগীরের চেহারাটাই ভুলে গিয়েছিলাম, হঠাৎ দেখি ধাম করে একটা উইন্ডো এসে হাজির, তাতে এক অচেনা লোকের ছবি, চোখে মিহি চশমা, পরনে কুর্তা, ভাবুক দৃষ্টি, হাতে একটি কলম, গালে একটি হাত। হাতটি সম্ভবত তার নিজের নয়। আমি বিস্মিত হয়ে ভাবি, কে এই আদম? ভালো করে পাঠ করে দেখি, সে লিখেছে, দোস্ত, আসোস? ঠিকানাটি পড়ে আমি মাথামুন্ডু কিছু বুঝি না, জটিল কোন একটি ম্লেচ্ছ শব্দ@হটমেইল.কম লেখা। তবুও দোস্ত সম্ভাষণের মর্যাদা রেখে আমি বলি, ""কীরে ইয়েরভাই, কেমন আসোস?"" সগীর অবশ্য মনক্ষুণ্ন হয়। সে হয়তো ভাবে, আমি তাকে চিনতে পারিনি (ঠিকই ভাবে), বলে, ""দোস্ত চিনসোস? আমি সগীর।"" আমি উচ্ছ্বসিত হয়ে লাজ আবরণ খুলে ফেলে বলি, ""আব্বে চোটনা কেমন আসোস?"" সগীর বোধ করি বিষণ্ন হয়ে যায় ওপাশে, বলে, ""তুই দেখি আগের মতোই খচ্চর আসোস!"" আমি হাসি। আমি আগের চেয়ে ভদ্র হবার মতো কি কিছু ঘটেছে এ পৃথিবীতে? বা আগের চেয়ে খচ্চরতর হবার? বলি, ""মায়রে বাপ, তোর খবর ক।"" সগীর হাল ছেড়ে দেয়, বলে, ""দোস্ত, সাহায্য লাগবো।"" আমি একটু মনমরা হয়ে যাই। অবশ্য সাহায্য না লাগলে কেন সেই অমোঘ প্রোবাবিলিটির গণিতের দেয়াল ভেঙে সগীর টোকা দেবে আমাকে? তবু দোমনা হয়ে লিখি, ""হ দোস্ত, ক। কী সাহায্য লাগবো খালি ক একবার।"" সগীর কিছুক্ষণ গুম মেরে থাকে। বোধহয় ভাবে, এ বুঝি তাকে দেয়া আরেকটা গালি। সতর্কভাবে আমার নিরীহ বাক্যটিকে বার কয়েক ওজন করেই বুঝি সে বলে, ""FONDODUS মানে কী?"" আমি আকাশ থেকে পড়ি। ফন্ডোডাস আবার কী? বলি, ""আমি কী জানি?"" সগীর ক্ষেপে যায়। বলে, ""আরে বল না। এইটুকু হেল্প করতে পারবি না?"" আমি বিপাকেই পড়ি। বলি, ""গুগুল মার না। গুগুলে কী কয় দেখ।"" সগীর আবারো গুম হয়ে যায়। আমিও গুগুল করি, এফ ও এন ডি ও ডি ইউ এস। কিন্তু না। গুগুল হতাশ করে আমাকে, বলে য়োর সার্চ ফনডোডাস ডিড নট ম্যাচ এনি ডকুমেন্টস। সগীরও একই অভিযোগ হানে চ্যাটবাক্সে। ""কিছু পাওয়া যায় না। তুই খুইজ্যা বাইর কর।"" আমি আবারও আকাশ থেকে পতিত হই। যা গুগুল খুঁজে বার করতে পারে না, তা আমাকে খুঁজে বার করতে হবে, ভেবেই ব্যাপারটাকে সগীরের অন্যায় আব্দার ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। বছরখানেক পর কী দোস্ত কেমন আসোস এর বিনিময়ে এমন হারকিউলিয় খাটনি আমাকে ধরিয়ে দেয়াটাকে আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। বলি, ""সব খুইলা ক। ঘটনা কী? কী ফন্ডোডাস কে ফন্ডোডাস?"" সগীর বলতে চায় না। গাঁইগুঁই করে। আমিও চেপে ধরি। শেষ পর্যন্ত কিছু বাজে গালি বিনিময়ের পর সগীর হার মানে। জানায় এক আশ্চর্য কাহিনী। কোন এক সুন্দরীর সাথে তার সম্প্রতি নেটে খাতির জমে উঠেছে। অফলাইনেও সগীরের সাথে তার দুয়েকবার কথাবার্তা হয়েছে। সগীর তাকে দেখে মোহিত। সে নানা ছলে এখন কুপ্রস্তাব দিচ্ছে। মেয়েও তাকে লেজে খেলাচ্ছে। লেজে খেলানোর ধরনটা শুনতে চাই আমি। বলি, ""মেয়ের লেজে খেলছিস? কীরকম? মেয়েটার ছবি সেন্ড কর। ভিডিও থাকলে ভিডিও-ও পাঠাতে পারিস!"" সগীর ক্ষেপে ওঠে, বলে, ""খালি ঘুরায়। প্রবাদ প্রবচন বলে, কী কী সব ভারি ভারি সাহিত্য থিকা কোট করে, অহন ধরছে ল্যাটিন!"" আমি বিষম খাই। বলি, ""কস কী?"" সগীর বলে, ""হ! ঐদিন কইলাম চলো লং ড্রাইভে যাই। কয়, লাইফ ইজ শর্ট। আমি কইলাম, আরে না, আমি ভালো ড্রাইভ করি, ডরানোর কিছু নাই। কয়, খালি ড্রাইভই করবা? আমি কইলাম, দেখি আর কী করা যায়। কয়, তাহলে তো লাইফ ইজ শর্ট। আমি তো ঠেইকা গেলাম, কইলাম, আরে না, আমি অন্য অনেক কিছুর পাশাপাশি ড্রাইভ ভালো করি। কয়, তোমার মতো লোক ক্যান যে ঢাকা-ময়মনসিং রুটে বাস চালায় না, জানো, ঐ রুটের বাস ড্রাইভার গুলি কত শয়তান! কী কমু ক? কইলাম, ফাউল কথা রাখো,গেলে চলো। কয়, লাইফ ইজ শর্ট, বাট আর্ট ইজ লং। তুমি কি লঙের আর্ট ঠিকমতো পারো? ... চিন্তা কর, কত বড় বদমাইশ মাইয়া, সাইজ তুইলা কথা কয়! আমি অরে সাইজ কইরা ছাড়ুম!"" আমি তো সগীরের দুঃখের কাহিনী শুনে ঘায়েল হয়ে পড়ি। আসলেই তো, সগীর তো অসাধ্য সাধনে নেমেছে। সে আসলেই লেজে খেলছে। খেলছে আবার হাবলাবুলের মতো। পদে পদে আউট হবার শিহরণ। আমি বলি, ""কস কী? তারপর?"" সগীর জানায়, লং ড্রাইভে নিতে না পেরে সে একদিন একসাথে নিরিবিলি কান্দাহারি কোরমা রান্নায় অংশগ্রহণের প্রস্তাব দেয়। কান্দাহারি কোরমা রান্নার রেসিপিতেই লেখা আছে এ রান্না নিরিবিলি করতে হয়, সবচে ভালো হয় যদি একটি পুরুষ ও একটি নারী মিলে খালিবাড়িতে এটি রাঁধে। মেয়ে আবারও লেজ সাপটায়, বলে, কান্দাহার! সৈয়দ মুজতবা আলীর কথা মনে পড়ে যায়। আপনি শবনম পড়েছেন? সগীর শবনম পড়েনি, সে এ কথা কিভাবে বলে। হুঁ হাঁ করে কাজ চালাতে পারে না সে, মেয়ে তাকে চেপে ধরে শবনমের কাহিনী আলোচনায়। যতই সগীর কান্দাহারি কোর্মার দিকে যায়, ততই মেয়ে শবনম শবনম করে। শেষমেশ সগীর হার মানে, মেয়ে বলে, তাহলে দ্য বুকসেলার অব কাবুল পড়েছেন নিশ্চয়ই? সগীর কাবুল থেকে আর কান্দাহারে ফিরতে পারে না, কারণ মেয়ে বুকসেলারকে ছেড়ে দিয়ে ধরে বাচা সাক্কোকে, তারপর জহির শাহ, বারবাক কামাল হয়ে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে কী একটা কাজের কথা বলে নেট ছেড়ে বিদায় নেয়। আমি সানন্দে শুনি। সগীরের ব্যর্থ লাম্পট্য কেন যেন আমাকে আনন্দ দেয়। ""আজকে"", আমি যেন সগীরের কাঁদো কাঁদো কণ্ঠই শুনতে পাই, ""শুরু করছে ল্যাটিন। একটা কিস সাইন পাঠাইসিলাম, জবাবে এই ঢং শুরু করছে। বদ মাগী। কয়, এরারে হুমানুম এস্ত। এইটার মানে কী, জিগাইলাম, কয় না না, হনুমান না, হিউম্যান নিয়েই কথা হচ্ছে। এই কথা সেই কথার পর বললাম, তোমার কথা ভাইবা মনে কেমন জানি লাগে, চলো বেড়াইতে যাই নিরিবিলি কোথাও, তখন কয়, মেন্স সানা ইন কর্পোরে সানো। কইলাম, এইটা আবার কী? কয়, ব্যায়াম করো, সুস্থ দেহে সুস্থ মন। দেহ ঠিক থাকলেই মন ঠিক হয়ে যাবে।"" আমি হাসি। একটা স্মাইলি পাঠাই। সগীরটা ক্ষেপে ওঠে, বলে, ""ঐ ঐ, হাসস ক্যা?"" আমি বলি, ""তারপর?"" সগীর বলে, ""এখন কইলাম, ওরে আমার খুব আদর করতে ইচ্ছা করতাছে। আরেকটা ল্যাটিন ছাড়ছে। ক ফন্ডোডাস মানে কী?"" আমি বললাম, ""আমি কেন? মেয়েকে জিগেস কর।"" সগীর গোঁ ধরে, বলে, ""না, কমবেশি ল্যাটিন আমিও পড়ছি বায়োলজিতে। ক ফন্ডোডাস মানে কী?"" আমি হার মানি,বলি, ""আমিও জানি না।"" সগীর বলে, ""GOLA মানে কী?"" আমি আবারও নিঃশঙ্কচিত্তে অজ্ঞানতা জ্ঞাপন করি। সগীর বলে, ""তাইলে ক DIUM মানে কী? এটা আমার কাছে চেনা চেনা লাগে, বলি, ""ডিউম? ডিউম মানে মনে হয় দিন! ঐ যে, কারপে ডিয়েম! সিজ দ্য ডে! দিবসকে পাকড়াও করো।"" সগীর গোঁ গোঁ করে বোধহয় ওপাশে, লেখে, ""প্যাচ লাগাইয়া দিলি তো। ফন্ডোডাসের প্লুরাল হইতাছেস ফন্ডোডাই, গোলা-র প্লুরাল হইতাসে গোলায়ে, আর ডিউম মানে কইতাসস দিন? কী হইলো তাইলে?"" আমি বলি, ""কী আপদ, আমি কী আর তোগো মতো ল্যাটিনে খাচরামি করি নাকি? সহজ সরল বাঙগালি পোলা, যা মনে আসে বাংলায় বলি। আমি বাংলায় গান গাই ...।"" সগীর কয়, ""ধুর, দ্যাখ না কী হয়?"" আমি বলি, ""জিগা অরে।"" সগীর কয়, ""নাই এখন, অফলাইনে গেছেগা।"" আমি বলি, ""আচ্ছা কী লিখছে কপি কইরা পেস্ট মার দেখি, কী করা যায়। তোর গবেষণায় কাম দিতাসে না।"" সগীর লেখে, ""FONDODI GOLAE DIUM!"" আমি মন দিয়ে পড়ি। ফন্ডোডাই গোলায়ে দিউম। কঠিন ল্যাটিন। সগীর ঘ্যানাতে থাকে, ""পাইলি, কিসু পাইলি?"" আমি হঠাৎ কী ভেবে জিজ্ঞেস করি, ""মেয়ে কি চিটাগোনিয়ান নাকি? চট্টলার চটুলা?"" সগীর লেখে, ""হ, তুই জানলি ক্যামনে???"" (সমাপ্ত। আর একেবারেই কাল্পনিক।)",False rg,"ফিরে দেখা গঙ্গা পানি চুক্তি এবং ভারতের কাছে বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি_ কিছু সোজাসাপটা কথা !!! ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড়া ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানি চুক্তি সাক্ষর করেন। গঙ্গা পানি চুক্তি'র ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের পদ্মায় কতটুকু পানি এসেছে এই ১৮ বছরে? ভারত কি গঙ্গা চুক্তির শর্তগুলো এই ১৮ বছর পুরোপুরি অনুসরণ করেছে? গঙ্গা পানি চুক্তি'র মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র ১২ বছর বাকি। এখন প্রথম যে প্রশ্নটি আওয়ামী লীগ সরকারকে করতে ইচ্ছে করে সেটি হল, দয়া করে আমাকে কি একটু বুঝিয়ে বলবেন, গঙ্গা পানি চুক্তি কোন অযুহাতে ঐতিহাসিক চুক্তি? গঙ্গা থেকে যদি পদ্মায় পানি এসেই থাকে, তাহলে পদ্মার উপর নির্ভরশীল অন্য ৫১টি নদী এই ১৮ বছরে মরল কেন? আমি জানি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই প্রশ্নের কোনো যৌক্তিক জবাব নেই। এমন কি তাঁর লক্ষাধিক টাকার বেতনভুক্ত কোনো উপদেষ্টাও এই প্রশ্নের সঠিক জবাব দিয়ে অন্তত আমাকে বোঝাতে সক্ষম হবেন না। যে কারণে গঙ্গা পানি চুক্তিকে আমি আর ঐতিহাসিক বলতে রাজী নই। চলুন এবার গঙ্গা পানি চুক্তির প্রধান প্রধান বিষয়গুলো কি ছিল একটু চোখ বুলিয়ে আসি। গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদ ৩০ বছর হলেও প্রতিবছর কেবল শুষ্ক মৌসুমে এর কার্যকাল মাত্র ৫ মাস। ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ মে পর্যন্ত। বছরের বাকি ৭ মাস গঙ্গা চুক্তি বলে কোনো নিয়মকানুন মানতে রাজি নয় ভারত। অর্থ্যাৎ খোলা চোখে প্রতি বছরের ৫ মাসের পানির হিসাব নিকাশের ব্যাপার। তাহলে কি ছিল সেই হিসাবনিকাশে? সেই হিসাব বোঝার আগে একটু ভারতীয় নদী বিশেষজ্ঞদের তৈরি করা সেই জটিল সমীকরণটি একটু বোঝার চেষ্টা করুন। প্রতি মাসের ৩০ দিনকে তিন ভাগ করে ১০ দিন ভিত্তিক মেয়াদ হল একটি পর্যায়। মাসে তিনটি পর্যায়। ৫ মাসে মোট ১৫ টি পর্যায়ে। অর্থ্যাৎ বছরের ওই ৫ মাসকে মোট ১৫টি পর্যায়ে ভাগ করে ভারত কিছু পানি বাংলাদেশকে দেবার অঙ্গীকার করেছিল। এবার আসা যাক কি পরিমাণ পানি দেবার কথা ছিল? সেখানে আবার তিনটি প্রধান অনুশর্ত ছিল। সেগুলো হল- ক. প্রবাহ যদি ৭৫ হাজার কিউসেকের বেশি হয়, তাহলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি এবং বাদবাকী ৩৫ হাজার কিউসেক বা তার বেশি পানি পাবে বাংলাদেশ। খ. প্রবাহ যদি ৭০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার কিউসেকের মধ্যে হয় তাহলে বাংলাদেশ পাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি এবং আর বাদবাকী ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার কিউসেক পানি পাবে ভারত। গ. প্রবাহ যদি ৭০ হাজার কিউসেকের কম হয় সেক্ষেত্রে দুই দেশ (বাংলাদেশ ও ভারত) সমানভাবে পানি ভাগ করে নিবে। এরপর আরো কিছু টুকরো অনুশর্ত ছিল। সেগুলো হল- ১. প্রবাহ ৭০ হাজার কিউসেকের চেয়ে কমে গেলেও ১১-২০ মার্চ, ১-১০ এপ্রিল, ও ২১-৩০ এপ্রিল এই তিনটি সময়ে বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক পানি গ্যারান্টি সহকারে পাবে। ২. প্রবাহ ৭০ হাজার কিউসেকের চেয়ে কমে গেলেও ২১-৩০ মার্চ, ১১-২০ এপ্রিল ও ১-১০ মে এই তিনটি সময়ে ভারত ৩৫ হাজার কিউসেক পানি গ্যারান্টি সহকারে পাবে। ৩. একটি দেশ যখন গ্যারান্টিড পানি পাবে অন্যদেশ তখন মোট প্রবাহ থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাই পাবে। এখন প্রশ্ন হতে পারে, ভারতীয় নদী বিশেষজ্ঞগণ কিভাবে এই সমীকরণ আবিস্কার করলেন? আর সেই সমীকরণ না বুঝেই কেন বাংলাদেশ তা মেনে নিল? গঙ্গা চুক্তির এই পানিবন্টন সমীকরণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ফারাক্কায় গঙ্গার হিস্টরিকাল প্রবাহের উপর ভিত্তি করে। এই ৪০ বছরের উপাত্তের ১০ দিন ভিত্তিক গড় আসলে গঙ্গা চুক্তির সমীকরণ প্রনয়ণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ গঙ্গা চুক্তির এই সমীকরণে প্রথমেই যে অংশটি নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে সেটি হল, এই ৪০ বছরের মধ্যে ফারাক্কা ব্যারাজ-পূর্ব (১৯৪৯-১৯৭৫) এবং ফারাক্কা ব্যারাজ-পরবর্তী (১৯৭৫-১৯৮৮) পানি প্রবাহের হিসাবে ভারত একটি কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল। যেটি বাংলাদেশ আদৌ বোঝারই চেষ্টা করেনি। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফারাক্কা ব্যারেজের ফলে খোদ ফারাক্কাতেই পানির প্রবাহ কমেছে। অথচ চুক্তি করার সময় এই দুই পর্যায়ের গড় পানির প্রবাহ নিয়ে সমীকরণ তৈরি করা হয়েছে। যা কোনো মতেই গঙ্গায় পানি প্রবাহের বাস্তব চিত্র নয়। ভারত এই সমীকরণ তৈরি করতে অনেক কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। যা বাংলাদেশ বুঝে হোক না বুঝে হোক মেনে নিয়েছে। ভারত নিজ দেশে জানুয়ারি থেকে জুন এই ছয় মাস শুষ্ক মৌসুম গণনা করে। এই ছয় মাসে ভারত ফারাক্কা ব্যারাজ দিয়ে অন্তত গড়ে ৪০ হাজার কিউসেক পানি হুগলী নদীতে প্রবাহিত করে। যা ২৫ মাইল লম্বা ফিডার ক্যানেল দিয়ে ভাগিরথী নদীতে গিয়ে পড়ে। অথচ গঙ্গা চুক্তিতে শুষ্ক মৌসুম গণনা ধরা হয়েছে পাঁচ মাস। এখন প্রশ্ন হল, ভারত কি গঙ্গা চুক্তিতে বর্ণিত সেই ৫ মাসের ১৫টি পর্যায় অনুযায়ী বাংলাদেশকে পানি দিয়েছে? এর সরাসরি জবাব হল ভারত চুক্তির পর থেকে এই ১৮ বছরের কোনো বছরই ১৫ টি পর্যায়ে বাংলাদেশকে প্রাপ‌্য পানি দেয় নি। প্রতি বছরই ভারত এই চুক্তি লংঘন করেছে। প্রতি বছরের ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে অন্তত ৭ থেকে ১০ টি পর্যায়ে তা লংঘন করেছে। অর্থ্যাৎ গড়ে বছরে ভারত গঙ্গা চুক্তি ৭ থেকে ১০ বার লংঘন করে থাকে। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশন এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার কথা থাকলেও বাংলাদেশ নদী কমিশন আশ্চার্য রহস্যময় কারণে কোনো বছরই গঙ্গায় প্রাপ্ত পানির সঠিক হিসাব সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ করে না। কেবল কোনো বছর এটা নিয়ে পত্রিকায় বেশিমাত্রায় খবর প্রকাশ পেলে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তাহলে এবার প্রশ্নের পিঠে আরেকটি প্রশ্ন আসে, এই গঙ্গা চুক্তি কি বাংলাদেশকে ভারতের এক ধরনের শান্তনা দেওয়ার মত ব্যাপার নয় কি? সত্যি সত্যি কি বাংলাদেশ গঙ্গা থেকে পানি পাচ্ছে? প্রতি বছর কি বাংলাদেশ এই পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিচ্ছে? বাংলাদেশের পক্ষে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে না নেবার অযুহাত কি? এর একটাই অযুহাত বা জবাব, ভারত চুক্তি করেছে এই তো ঢের। পানি কতটুকু আসল, তা আর কয়জনে দেখছে। সেই সুযোগে পদ্মার ভাটিতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫১টি নদী মরতে বসেছে। এই অঞ্চলের জলবায়ুতে মরুভূমির মত পূর্বাভাষ দেখা যাচ্ছে। দিনের বেলায় প্রচণ্ড গরম, রাতের বেলায় তাপাত্রার বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে। এবার তাহলে বলুন গঙ্গা পানি চুক্তি করে কি পেল বাংলাদেশ? আর কোন যুক্তিতে এটাকে ঐতিহাসিক চুক্তি বলব??? আরেকটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, প্রতিবছরই বারবার ভারত গঙ্গা চুক্তির নিয়ম কানুন লংঘন করলেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এক ধরনের নিরব থাকার কৌশল বা কখনো দায়সারা গোছের আওয়াজ দেবার যে প্রচলন শুরু হয়েছে, এটা কিন্তু একটা স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বকীয়তাকে মারাত্মক প্রশ্নের সামনে ফেলে দেয়। তাহলে গঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের এমন ইচ্ছাকৃত বলির পাঁঠা সাজার পেছনে আর কি যুক্তি থাকতে পারে? একটা যুক্তি হতে পারে, বাংলাদেশের যে দলের সরকারই গঙ্গা চুক্তিতে ভারতের এমন খামখেয়ালী সহ্য করার সামর্থ্য দেখাবে, সেই দল ক্ষমতায় থাকাকালীন ভারত তুলনামূলক বাংলাদেশকে একটু স্বস্তিতে রাখার চেষ্টা করবে। যদি কোনো দল বাংলাদেশে ক্ষমতায় গিয়ে গঙ্গা ইস্যুতে কড়ায় গণ্ডায় ন্যায্য হিসাব দাবি করবে তো, সেই সরকারকে ভারত শান্তিতে থাকতে দিবে না। সোজা সাপটা কথা। আপনি মানেন আর না মানেন, বোঝেন আর না বোঝেন, এটাই ভারত করে যাচ্ছে। তাই গঙ্গা চুক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার যতই এটাকে ঐতিহাসিক মাইলফলক, বিশাল অর্জন, ইত্যাদি প্রপাগাণ্ডা চালাক না কেন, বাংলাদেশ গঙ্গা চুক্তিতে এক ধরনের নাকখপতা দিয়েছে। চুক্তির ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে নদী মারা যাবার ক্রান্তিকাল ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ক্রমবর্ধমান হারে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটেছে। এই অঞ্চলের জীব বৈচিত্রে মারাত্মক পরিবর্তন ঘটেছে। অনেক প্রাণীসম্পদ এই দীর্ঘ সময়ে ধ্বংস হয়েছে। এবার বলুন তো, এই যে ভারত বাংলাদেশের নদীগুলো এভাবে মেরে ফেলছে, এটাতে সরকার বাহাদুর চুপচাপ কেন? ১৯৯৭ সালে ঘোষিত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নদী কনভেনশনে বাংলাদেশ কেন এখনো সাক্ষর করলো না? এই প্রশ্নের জবাব লিখলে তা উপন্যাস হয়ে যাবে। দুই কথায় বলি। এক নাম্বার- বাংলাদেশে নদী যত মরবে, তত সরকার দলীয় চ্যালাচামুণ্ডাদের সেই খাস জমি দখল করার অবাধ সুযোগ। যত নদী মরবে তত বেশি জায়গা দখলের সুযোগ। দুই নাম্বার- আন্তর্জাতিক নদী কনভেনশনে বাংলাদেশ সাক্ষর করেনি, কারণ বাংলাদেশ সাক্ষর করলে ভারতের বিরুদ্ধে সেখানে নালিশ করার একটা প্লাটফরম তৈরি হয়। যা ভারতের জন্য মোটেও সুখকর নয়। ভারতকে খুশি রাখতেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নদী কনভেনশনে সাক্ষর করেনি।এবার কি পাঠক আপনি বুঝতে পারছেন, কেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরকালে তিস্তা পানি চুক্তি হবে না? কারণ তিস্তার উজানে টিপাইমুখী বাঁধ এবং সিকিম রাজ্য সরকার একাধিক বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতের সেসব প্রকল্পের মাঝপথে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা পানি চুক্তি করলে তো ভারতের এসব প্রকল্প বেহেস্তে যাবে। বাংলাদেশের সরকার বাহাদুর চায় না বড় ভাই বন্ধু প্রতিবেশী ভারত রাষ্ট্রের এমন সাজানো বাড়া ভাতে ছাই দিতে। বরং আগে তিস্তার উজানে প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হোক। ফরাক্কা বাঁধ দিতে ভারতের লেগেছিল ১৯৬১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১৪ বছর। তিস্তার উজানে একাধিক বাঁধ দিতে তো ভারতের আরো একটু বেশি সময় লাগতে পারে। তো বাপুরা, ততদিন না হয় সবুর করো। তারপর তিস্তার উজানে এসব বাঁধ থেকে ভারত যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে, সেই বিদ্যুৎ না হয় বাংলাদেশ কিনবে। কারণ, বাংলাদেশের তো ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো লাগবে। ফেনী নদী নিয়ে বাংলাদেশ কোনো কথা তুলছে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় মোদ্দাকথা বাংলাদেশ পানি নিয়ে কোনো কথা তুলে ভারতকে লজ্বা দিতে চায় না। মাঝখান থেকে ভারত বিস্তৃত আকারে ট্রানজিট ভাগিয়ে নিচ্ছে। আমাদের পররাষ্ট্র নীতির এককথায় এখন স্বর্ণযুগ চলছে। এক ডজন চুক্তি হবে এই তো অনেক বড়। সীমান্ত জটিলতার নিরসন হতে যাচ্ছে। এটাই তো ডাবল ঐতিহাসিক ঘটনা। বরং এবার নরওয়ের নোবেল শান্তি কমিটির কাছে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেবার জন্য এখন থেকেই দুতিয়ালি শুরু করা হোক। বলা তো যায় না, ভাগ্যে থাকলে তা ঠেকায় কে!!!..............................৩ জুন ২০১৫ঢাকা",False mk,"গন্তব্য কোথায়_ প্রতিবেশী দেশ ভারত যখন বিশ্ব সেরা অর্থনীতির দ্বারপ্রান্তে, তখন অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক সূচকে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশে চলছে জ্বালাও-পোড়াও আর প্রাণহাণির ঘটনা। নিত্যশংকায় নাগরিক জীবন প্রায় বিপন্ন। প্রতিদিনই পুড়ছে কেউ না কেউ। প্রাণহানি আর গাড়ি পোড়ানো-ভাংচুরের ঘটনায় গোটা সমাজ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। থমকে যাচ্ছে প্রতিবছরই বাড়তে থাকা অর্থনীতি। দেশের বাইরে ইমেজ সংকট আর ভেতরে এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে ‘এগিয়ে যাওয়ার মানসিক শক্তি’ হারিয়ে যাচ্ছে উদ্যোক্তাদের। সবাই শংকায়, গন্তব্য কোথায়?ব্যবসায়ীরা বরাবরই বলছেন, এসব বন্ধ হোক। তারা সম্ভাবনাময় এই দেশটিকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে চান। তাদের মতে, ‘শুধু রাজনৈতিক স্থিরতা দিন, প্রবৃদ্ধি আরো তিন শতাংশ বাড়ানোর দায়িত্ব আমাদের।’এমন সম্ভাবনার মধ্যেও সহিংসতার রাজনীতি বন্ধ হচ্ছে না। ইতিমধ্যে জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। গত ২২ দিনে পেট্রোল বোমা, আগুন ও সংঘর্ষে মারা গেছে ২৭ জন। প্রায় সাড়ে ৩শ’ গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছ। ভাংচুর করা হয়েছে সাড়ে ৪শ’ গাড়ি। পাঁচ দফায় রেলেও নাশকতা চালানো হয়েছে। সর্বোপরি যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়া দুরূহ হয়ে পড়বে যদি হরতাল-অবরোধ বন্ধ না হয়।ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর তথ্য মতে, রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে। ইমেজ সংকট তো হচ্ছেই, যা টাকার অংকে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে উন্নত দেশগুলোর নাগরিকদের ভ্রমণেও সাবধানতা জারি করা হয়েছে। ভ্রমণ স্থগিত করেছে বিদেশি বিনিয়োগকারী, ক্রেতারাও। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে এ খাতের প্রতিযোগী দেশ যেমন ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনস, মায়নমার, ভারত প্রভৃতি দেশ এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া এ খাতের ক্রেতা রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানসমূহ রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে নিরাপত্তার অজুহাতে পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়ার সুযোগ নিতে পারে।বাণিজ্য সংগঠনগুলো এই হরতাল-অবরোধে তাদের ক্ষয়ক্ষতির যে বিবরণ দিয়েছে তা স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে অনাকাঙ্ক্ষিত। এক দিনের অবরোধ-হরতালে ৬৯৫ কোটি টাকার পোশাক রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়। কৃষি খাতে দিনে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২৮৮ কোটি টাকা। পোল্ট্রি শিল্পে দিনে ক্ষতি ১৮ দশমিক ২৮ কোটি টাকা। হিমায়িত খাদ্য খাতে সেই ক্ষতি প্রায় ৮ কোটি টাকা। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে দিনে ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকার বেশি।জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, চলমান অবরোধে ২০ হাজার টন পাট-সুতা রফতানি কমেছে। পণ্য জাহাজীকরণ সময়মত না হওয়ায় ক্রেতারা বিক্রয় চুক্তি বাতিল করার হুমকি দিচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি শহিদুল করিম জানান, এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের ২৫০টি পাটকল অচিরেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এভাবে প্রতিটি খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে।অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, বিশ্বজুড়ে যে প্রতিযোগিতা চলছে তাতে টিকে থাকার জন্য আমাদের যে উদ্যম ও পারিপার্শ্বিক সহায়ক ভূমিকা দরকার তা হচ্ছে না। বরং অবিরত সহিংস রাজনীতির শিকার হয়ে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির ক্ষতি করে এমন রাজনীতি কাদের স্বার্থে-সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।",False mk,"মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে প্রথমবার যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তা কোন অধিকার বলে দেয়া হয়েছিল? এ প্রশ্ন আজ সমগ্র জাতির। অবশ্য জিয়া নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে তার জীবদ্দশায় কোনো সময় দাবি করেননি। বরং সাপ্তাহিক বিচিত্রায় একটা লিখিত প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু করেছিলেন বলে বর্ণনা দিয়েছেন। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে পরে তার অনুসারীরা তাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। অবশ্য তারা জিয়ার প্রথমবারের ঘোষণার কথা বলেন। কিন্তু তিনি সংশোধন করে দ্বিতীয়বার যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, যাতে মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, তার অনুসারীরা সে ঘোষণাকে ইতিহাসবহির্ভূত মনে করেন। প্রথমবারের ঘোষণা সঠিক ছিল না বলেই তো তিনি তার সংশোধিত বক্তব্য পেশ করেন। সেই সংশোধিত বক্তব্যের ব্যাপারে নীরব থেকে, প্রথমবারের ঘোষণা প্রচার একেবারেই উদ্দেশ্যমূলক। তার অনুসারীরা হয়তো ভেবেছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্থলে যদি জিয়াকে স্বাধীতার ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় তাহলে তাদের রাজনীতি (বিএনপির রাজনীতি) দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে এবং মরহুমের স্ত্রী বেগম জিয়াকে নিয়ে সুদীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকতে সক্ষম হবেন। তা না হলে তাদের মতে যিনি স্বাধীনতার ঘোষক, সেই জিয়াউর রহমান তার জীবদ্দশায় নিজেকে ঘোষক হিসেবে দাবি করেননি কেন?আসলে মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতারা বিশেষ ভুল করেছিলেন বলেই মনে হয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পর এমনকি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক বক্তব্যের পর, আর কারো মুখ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার কোনো প্রয়োজন ছিল কি? চট্টগ্রামের নেতাদের মধ্যে যারা সেদিন মনে করেছিলেন একজন মেজরকে দিয়ে ওই ঘোষণা দেয়াতে পারলে মুক্তিযুদ্ধে আরো গতি আসবে, তারা বোধ হয় সেদিন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা ছিল না বলেই তারা ওইরূপ সিদ্ধান্ত নেন, যার খেসারত জাতিকে এখনো দিতে হচ্ছে। সেদিন মুজিবনগর সরকারের কর্তব্য ছিল যখনই জিয়া বিপ্লবী সরকারের কাছে রিপোর্ট করেন, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা_ কোন অধিকার বলে তিনি প্রথমবারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সঠিক জবাব না পেলে তৎক্ষণাৎ তার কোর্ট মার্শাল করা উচিত ছিল।অবশ্য সুদীর্ঘ তিন দশক ধরে চেষ্টা করেও একমাত্র বিএনপির কিছু সমর্থক ছাড়া আর কাউকে দেশের অভ্যন্তরে হোক আর বিদেশে হোক জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়নি। বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসের বাস্তবতা বলে দিয়েছে কে স্বাধীতার প্রকৃত ঘোষক? যা সাংবিধানিকভাবে আজো স্বীকৃত আছে এবং চিরদিন থাকবে।প্রশ্ন হচ্ছে, কেন জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে নিজেকে সেনাবাহিনী ও সরকারপ্রধান হিসেবে ঘোষণা দিলেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জিয়ার কোনো সঠিক ধারণা ছিল না। তার সংশ্লিষ্টতা ছিল একেবারেই শূন্যের কোঠায়। ২৭ মার্চ হঠাৎ করে তিনি মুক্তিযোদ্ধা বনে যান। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন যা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পেঁৗছে গেল এবং বাংলাদেশের জনগণ প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করল তখন চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে কে স্বাধীনতার ঘোষণা দিল বা না দিল তার কি কোনো গুরুত্ব থাকতে পারে? তা ছাড়াও ২৬ মার্চ পর্যন্ত জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কেউ ছিলেন না। আর ছিলেন না বলেই হানাদার বাহিনীর পক্ষে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে উদ্যত হয়েছিলেন। তখন তার সহযোগীরা তাকে ওই কাজ থেকে বিরত করতে না পারলে অবধারিত মৃত্যুই ছিল জিয়ার পরিণতি। তাই ২৬ মার্চ পর্যন্ত যিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষাবলম্বন করেননি তার পক্ষে ২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া সম্ভব ছিল কি? পরবর্তী পর্যায়ে হত্যাকা- সংঘটিত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নেয়ার পর তার ভেতর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে এবং যেভাবে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন তা কি যথেষ্ট নয়, সশস্ত্র স্বাধীনতাযুদ্ধ ও তার কিছুটা সংশ্লিষ্ট থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে তার কাছে কিছু ছিল না। এ চেতনার অনুপস্থিতি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের সঠিক মূল্যায়ন করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ আলোকে বিচার করতে হবে। জিয়ার মতো একজন পাকিস্তানের অনুগত সৈনিক হঠাৎ করে কখনো মুক্তিযোদ্ধা হয়ে উঠতে পারেন না। আসলে জিয়া চেয়েছিলেন জাতীয় জীবনের ক্রান্তিলগ্নে অকস্মাৎ একটা সুযোগ গ্রহণের। তিনি ভেবেছিলেন ২৫ মার্চে ক্র্যাকডাউনের পর নিরস্ত্র বাঙালি কখনো তাদের মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে না। তার ধারণা ছিল নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যরা যারা দেশত্যাগ করে ভারতে গিয়েছিলেন তারা আর কখনো দেশে ফিরতে পারবেন না। তিনি হয়তো এ ধারণা করেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে অবশ্যই ততক্ষণে পাকিস্তানিরা মেরে ফেলেছে। তাই নেতৃত্বের ওই শূন্যতার ভেতর যদি তার নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন তাহলে তিনি হয়তো মুক্তিযুদ্ধের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন। অথবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোনো শক্তি ওই অবস্থা থেকে তাকে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরামর্শ দিয়েছিল। তারা ভেবেছিল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিহীন পাকিস্তানের অনুগত একজন সৈনিক। তাই তিনি যদি তাদের পক্ষের হয়ে নেতৃত্ব দিতে পারেন, তাহলে একটা পর্যায়ে আপস-মীমাংসা করে পাকিস্তান রক্ষা করা সম্ভব হবে।অনেকে হয়তো বলবেন আমার এ ধারণা একেবারেই অমূলক। কিন্তু মুজিবনগর সরকারের ভেতর যারা মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আপস করতে চেয়েছিলেন সেই মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষী গংদের সঙ্গেই পরবর্তী পর্যায়ে জিয়াকে সংশ্লিষ্ট হতে দেখা যায়। তার আরো অকাট্য প্রমাণ হচ্ছে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে জাতির জনক নিহত হন এবং স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়। এর নেতৃত্বেও ছিলেন জিয়া। আরো প্রমাণ হচ্ছে জিয়া ক্ষমতাসীন হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মূল্যবোধ, অর্জিত সংবিধান সবকিছুই ধ্বংসের চেষ্টা চালান।জিয়া যদি স্বাধীনতার ঘোষকই হবেন, তাহলে তার ভারতে গিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বলা উচিত ছিল 'আমি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছি আপনারা আমাকে সমর্থন জানান'। তা না করে তিনি কেন আওয়ামী লীগ কর্তৃক গঠিত মুজিবনগর সরকারের কাছে একটা চাকরির জন্য ধরনা দিলেন? কেননা তিনি ভালো করেই জানতেন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত নেতৃত্বে কারা আছেন। তাদের অগ্রাহ্য করে অকস্মাৎ কোনো কারণে কী বলেছিলেন তার ধারাবাহিকতা রাখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর একজন অনুগত অফিসার হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় কিছু দায়িত্ব অবশ্যই পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে তিনি জাতির জনকের কাছ থেকে বিশেষ সুযোগও নিয়েছেন। আবার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সমন্বিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ব্যাপারে তিনি সবচেয়ে বৃহৎ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আসলে অনেকেরই ধারণা বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত খুনি জিয়া আর মোশতাক হচ্ছেন তার অ্যাবেটার।স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকে ২৩ বছর নিরবচ্ছিন্ন প্রতিরোধ সংগ্রাম পরিচালিত করতে হয়েছিল। আগরতলা মামলার এক নাম্বার আসামি না হলে এবং '৬৬-তে ছয় দফা ঘোষণা না করলে '৬৯-এ গণঅভ্যুত্থান ও '৭০-এ নির্বাচন সম্ভব হতো না। '৭০-এর নির্বাচনে একচ্ছত্র বিজয়ী হয়ে তিনি বাংলাদেশের একমাত্র মুখপাত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাই '৭০-এর নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার জাতীয় অধিবেশন ডেকেও তা বাতিল করে এবং ২৫ মার্চের কালরাতে বাঙালির বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। তখন স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার একমাত্র অধিকার ছিল বঙ্গবন্ধুর। আর কোনো লোকের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশের ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামের সঙ্গে জিয়ার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এমনকি বাঙালির সামরিক বাহিনীর নামে যে আগরতলা মামলা করা হয়েছিল তার সঙ্গেও জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তাকে একজন আগন্তুক হিসেবে দেখা যায়নি। বরং পাকিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগের অনুগত একজন সৈনিক হিসেবে তাকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। সেই অনুগত অফিসারই যাকে চট্টগ্রামের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলতে গেলে ধরে নিয়ে উপস্থিত করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণাটি বেতার মারফত প্রচার করতে বলেন। তখন তিনি অযাচিত অসৌজন্যমূলক অসংযতভাবে ওই ঘোষণা দিয়েছিলেন। আসলে ইতিহাস কি কেউ কোনো দিন মনে না রেখে ওইভাবে নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই যে যাই বলুক না কেন যেভাবেই ঘটনাপ্রবাহের অপব্যাখ্যা দেয়া হোক না কেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তার অবস্থানে রয়েছেন ও থাকবেন। আর জিয়া চিহ্নিত হয়ে থাকবেন খুনি, ক্ষমতালোভী, ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে।'৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে '৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত পূর্ব বাংলার বাঙালিরা স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম পরিচালনা করেছিল তার একচ্ছত্র নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সর্ববৃহৎ দল ছিল আওয়ামী লীগ। যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল আর তার সঙ্গে ছিল স্বাধীনতার পক্ষের বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তি। এর কোথাও জিয়া নামে কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিএনপি নামের কোনো দলের তো প্রশ্নই ওঠে না। তাই স্বাধীতার ঘোষণা দেয়ার চেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, কে সেই অধিকার অর্জন করেছিলেন। যার নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে কোথাও সংশ্লিষ্ট ছিল না, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি যে দল অস্বীকার করত তারা কী বলছে, তা নিয়ে বাঙালি জাতি কখনো বিব্রতবোধ করেনি। আগামীতেও করবে না। যারা মুক্তিযুদ্ধের সস্নোগান জয় বাংলা, জাতির জনক, জাতীয় সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ নিয়ে এখনো বিতর্ক তোলেন তারাই তো বর্তমান গোলযোগ সৃষ্টিকারী। স্বাধীতনার শত্রুদের সহযোগিতা ছাড়া যাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় তারাই তো তাদের সঙ্গে নিয়ে বর্তমান বাংলাদেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। কোনো জাতি তার জনক, স্বাধীনতার ঘোষণা, মহান মুক্তিযুদ্ধের সস্নোগান নিয়ে এভাবে অযৌক্তিক, অবাঞ্ছিত, হাস্যকর মন্তব্য করে না। এটা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য।ডা. এসএ মালেক: রাজনীতিক ও কলাম লেখক সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৪০",False rg,"।। নাসেরি থেকে স্নোডেন_ বসবাস যখন এয়ারপোর্টের টার্মিনালে।। আপনাদের নিশ্চয়ই ইরানের সেই বিখ্যাত রিফিউজি মেহরান করিমি নাসেরি'র কথা মনে আছে? ১৯৮৮ সালের ২৬ আগস্ট নাসেরিকে ফ্রান্সের চার্লস ডি গলে এয়ারপোর্টে লাগেজ হারিয়ে জীবনের ১৭ টি বছর এয়ারপোর্টের 'টার্মিনাল-১'-এ কাটাতে হয়েছিল। নাসেরি'র লাগেজ চুরি হয়েছিল, যার সঙ্গে ছিল তার বেলজিয়ামে আশ্রয় নেয়া পাসপোর্ট। ইরানের শাহ সরকার ১৯৭৭ সালে নাসেরিকে ইরান থেকে বহিস্কার করার পর নাসেরি বেলজিয়ামে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর চেষ্টা করছিলেন বৃটিশ নাগরিক মায়ের (স্কটল্যান্ডের) সূত্রে বৃটেনে বৈধভাবে বসবাসের। কিন্তু কপালে দুর্গতি থাকলে যা হয়, পাসপোর্ট আর লাগেজ হারানোর পর ১৯৮৮ সালের ২৬ আগস্ট থেকে ২০০৬ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত নাসেরিকে ফ্রান্সের চার্লস ডি গলে এয়ারপোর্টের 'টার্মিনাল-ওয়ান'-এ কাটাতে হল। দীর্ঘ ১৭ বছর নাসেরি এয়ারপোর্টের টার্মিনালে বসে বই পড়েছেন, ডায়েরি লিখেছেন আর এয়ারপোর্টের কর্মচারীদের খাবার খেয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন। এছাড়া এয়ারপোর্টের ওই কর্মচারীরা অবশ্য নাসেরিকে খবরের কাগজ পড়তে দিতেন। নাসেরি'র সেই ১৭ বছরের দুঃসহ জীবনের স্মৃতি নিয়ে নাসেরি যে বইটি লিখেছেন, সেটির নাম 'দ্য টার্মিনাল ম্যান'। অবশ্য নাসেরি একা ওই বইয়ের লেখক নন। সঙ্গে কো-রাইটার হিসেবে যুক্ত ছিলেন বৃটিশ লেখক এন্ড্রু ডনকিন। পরবর্তীতে আমেরিকান ফিল্মমেকার ইস্টেভেন স্পিলবার্গ নাসেরি'র সেই ১৭ বছরের টার্মিনাল জীবন নিয়ে নির্মাণ করলেন কমেডি ফিল্ম 'দ্য টার্মিনাল'। যেখানে নাসেরি'র চরিত্রে অভিনয় করেন টম হ্যাংকস এবং তার বিপরীতে অভিনয় করেন ক্যাথেরিন জেটা জোন্স। অনেকে হয়তো স্পিলবার্গের 'দ্য টার্মিনাল' দেখে নাসেরি'র কথা মনে করতে পারবেন। ঠিক তেমন আরেকটি নাটক হতে যাচ্ছিল সাম্প্রতিক কালের মার্কিন নাগরিক এডোয়ার্ড জোসেফ স্নোডেনের ক্ষেত্রে। স্নোডেন একজন মার্কিন গোয়েন্দা। আমেরিকার ও বৃটেনের কিছু গোপন নথিপত্র ফাঁস করে দেওয়ায় সারা দুনিয়ায় মার্কিন গোয়েন্দারা স্নোডেনকে এখন খুঁজে বেড়াচ্ছে। স্নোডেন হাওয়াই থেকে হংকংয়ে যাচ্ছিলেন। হংকংয়ে বসেই তিনি আমেরিকার সেই বিখ্যাত 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে'র কিছু গোপন তথ্য ফাঁস করে দেন। ২০ মে ২০১৩ সালে স্নোডেন সেই তথ্য বোমাটি ফাটান হংকংয়ে বসে। তারপর থেকেই তার উপর মার্কিন রেড এলার্ট জারী হয়। ২৩ জুন ২০১৩ সালে স্নোডেন রাশিয়ায় গমন করেন। ২৩ জুন ২০১৩ সালে স্নোডেন মস্কো'র শেরেমেটেভো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নামেন। কিন্তু রাশিয়ায় ঢুকতে তার বৈধ কাগজপত্র ছিল না। দীর্ঘ ৩৯ দিন স্নোডেন মস্কো'র এয়ারপোর্ট টার্মিনালে নাসেরি'র মতো এক অনিশ্চিত জীবন শুরু করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত গতকাল ১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে রাশিয়া স্নোডেনকে এক বছরের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান করেছে। স্নোডেনকে নিয়ে এখন আমেরিকা - রাশিয়া আরেকটি নতুন কূটনৈতিক টানাপোড়ন শুরু হয়ে গেল। খেলা হয়তো জমে উঠবে। দেখা যাক, রাশিয়া এবার কেমন খেলা দেখায়!!! সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:০৭",False hm,"পিচ্চিতোষ গল্প ০৪: বুলুদের বারান্দায় চড়ুইগুলি বুলুদের বারান্দাটা বেশ বড়। বুলু বারান্দায় অনেক ছুটোছুটি করে, একা একাই। বিকেলের আগে তার বাইরে যাওয়া বারণ। বারান্দায় রেলিং এর ওপরে কাঠের আস্তরণ দেয়া। বুলু এখনো ছোট, সে পায়ের পাতায় ভর করেও রেলিঙের ওপর দিয়ে কিছু দেখতে পায় না। সেই রেলিঙের ফাঁক দিয়ে সরু একটা পৃথিবী দেখা যায়, সেটা বুলুর পছন্দ নয়। বুলু একদিন একটা মোড়া এনে তাতে চড়ে বারান্দার ওপাশে মাঠ দেখতে চাইছিলো, বুলুর মা হাঁ হাঁ করে ছুটে এলেন। ""বুলু তুমি কি করছো? তুমি তো পড়ে যাবে!"" এই বলে তিনি বুলুকে কোলে নিয়ে মোড়াটা সরিয়ে নিয়ে গেলেন। বুলু ভারি ব্যাজার হয়ে আবার বারান্দায় ঘুর ঘুর করতে লাগলো। অবশ্য পড়ে গেলে বুলু অনেক ব্যথা পাবে। দোতলার বারান্দা থেকে পড়ে গেলে তাকে হাসপাতালে যেতে হতে পারে। বিকেল হলে বুলু খেলতে মাঠে নামে, বারান্দায় বসে বুলুর মা বই পড়তে পড়তে বুলুর দিকে চোখ রাখেন। বুলু মাঠে ছোটাছুটি করে, পড়ে গিয়ে ব্যথা পায়, আবার উঠে ছোটাছুটি করে। কিন্তু বারান্দায় বসে মাঠটা দেখার মজা অন্যরকম। বুলু শুধু ভাবে সে কবে আরেকটু লম্বা হবে, তখন সে সারাদিন বারান্দায় বসে শুধু মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকবে। মাঠের এক কোণে একটা বাচ্চা কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে, আর দূরে আছে একটা অনেক উঁচু কৃষ্ণচূড়া গাছ। বুলু ভাবে, ঐ বাচ্চা কৃষ্ণচূড়া গাছটাও নিশ্চয়ই ভাবে, কবে সে বুড়ো গাছটার মতো অনেক উঁচু হবে! বুলুদের বারান্দার ঘুলঘুলিতে কয়েকটা চড়ুই থাকে। তারা দিনভর কিচিরমিচির করে, ঠোঁটে খড় নিয়ে উড়তে উড়তে আসে, এসে ঢোকে ঘুলঘুলির ভেতরে, তারপর আবা ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে যায়। বুলুর খুব ভালো লাগে চড়ুইগুলিকে। অবশ্য চড়ুইপাখি ধরা খুব কঠিন। তারা প্রায়ই বারান্দায় এসে বসে, নাচতে নাচতে লাফাতে লাফাতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায়, আর মানুষের সাড়া পেলেই উড়ে চলে যায়। অথচ বুলু কিন্তু পাখিগুলোকে ধরে মারবে না, সে শুধু একটু হাতে নিয়ে দেখতে চায় কাছ থেকে। পাখিগুলি এ কথা বুঝতে চায় না। একবার বাইরে খুব ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে, বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে পাশের বাড়ির টিনের চালে, আর সোঁ সোঁ বাতাস চালাচ্ছে, তখন একটা চড়ুই পাখি হঠাৎ বুলুদের ঘরে ঢুকে পড়লো। ঘরের ভেতর কয়েকজন মানুশ, তার ওপর আবার ফ্যান চলছে, বাইরে ঝড় হচ্ছে, পাখিটা নিশ্চয়ই খুব ভয় পেয়েছিলো। বুলুর বাবা সাথে সাথে ফ্যানটা বন্ধ করে দিলেন, পাখিটা কিছুক্ষণ ঘরের ভেতর উড়তে উড়তে শেষটায় ফ্যানের ওপরে গিয়ে বসলো। বুলু বাবার কাছে বায়না ধরেছিলো, পাখিটা ধরে দিতে, কিন্তু বুলুর বাবা সব আব্দার রাখেন না। তিনি বুলুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ""পাখি ধরতে হয় না। পাখি মারতে হয় না। পাখি শুধু দেখতে হয় আর শুনতে হয়।"" বুলুর তবুও ইচ্ছা করে একট চড়ুই পাখি হাতে নিয়ে দেখতে। সে তো আর পাখি মারবে না। সেদিন বিকেলে হঠাৎ করেই খুব অন্ধকার হয়ে গেলো একদিকের আকাশ, বুলুর বাবা তখনও ঘরে ফেরেননি। কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হলো প্রচন্ড বৃষ্টি, সাথে আবার শিল পড়ছে। বুলুর মা ঘরের ভেতর থেকে ডাকলেন, ""বুলু, বারান্দা থেকে চলে এসো, বৃষ্টিতে ভিজে যাবে!"" বুলু ঘরের ভেতরে যাবার আগেই থপ করে একটা শব্দ হলো। বুলু দেখলো, একটা খয়েরি চড়ুই পাখি মাটিতে পড়ে আছে! বুলু দৌড়ে গিয়ে পাখিটাকে হাতে তুলে নিলো। কী ছোট্ট, নরম একটা পাখি, তিরতির করে কাঁপছে, একটু ভেজা ভেজা তার পালকগুলি, কেমন একটা ধূলা ধূলা গন্ধ তার গায়ে! পাখিটা বুলুর হাতে পড়ে কিচমিচ করে উঠলো। বুলু পাখিটাকে দু'হাতে সাবধানে নিয়ে মায়ের কাছে ছুটে গেলো। ""মা, দ্যাখো চড়ুই পাখি! বারান্দায় পেয়েছি!"" বুলুর মা পাখিটাকে হাতে নিয়ে বললেন, ""আহারে পাখিটা, বাতাসে উড়তে গিয়ে চোট পেয়েছে। যা ঝড় হচ্ছে বাইরে!"" বুলু খুব উৎসাহ নিয়ে বললো, ""ওকে কি তাহলে আমরা পুষবো?"" বুলুর মা বললেন, ""ওকে এখন কাপড়ের ঝুড়িতে রেখে দিচ্ছি। তোমার বাবা ফিরলে জিজ্ঞেস করো পুষবে কি না।"" বুলুর মা চড়ুই পাখিটাকে যত্ন করে পুরনো কাপড়ের ঝুড়িতে ভরে রাখলেন। একটু পরে বুলুর বাবা ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরলেন। বুলু ছুটে গিয়ে বাবাকে চড়ুই পাখিটার খবর দিয়ে দিলো। বুলুর বাবা একটা তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বললেন, ""চলো, আমরা পাখিটাকে ওর ঘরে রেখে আসি।"" বুলু অবাক হয়ে বললো, ""কোন ঘর?"" বুলুর বাবা বললেন, ""কেন? ওরা তো সবাই ঐ ঘুলঘুলিটার ভেতরে বাসা বানিয়ে থাকে।"" বুলুর বাবা একটা উঁচু টুল এনে ঘুলঘুলিটার কাছে দাঁড়ালেন। বুলু কাপড়ের ঝুড়ি থেকে চড়ুই পাখিটাকে মুঠোয় ভরে নিয়ে এলো বাবার কাছে। বুলুর বাবা পাখিটাকে সাবধানে ধরে ঘুলঘুলির ভেতরে ছেড়ে দিলেন। সেখানে আরো কয়েকটা পাখি কিচকিচ করে উঠলো। বুলু বললো, ""ওরা আমাকে দেখলে উড়ে চলে যায় কেন?"" বুলুর বাবা বুলুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ""পাখিরা এমনই। ওদের সাথে ভাব জমাতে হবে এখন থেকেই। একদিন দেখবে ওরাই তাহলে উড়ে উড়ে এসে তোমার খোঁজ নিয়ে যাবে।""",False ij,"সাধু পল যিশু খ্রিস্ট ছাড়াও আরও দুজনের কাছে খ্রিস্টধর্ম ঋনী। এক. মা মেরি। দুই. সাধু পল। মা মেরি যিশুকে জন্ম দিয়েছেন। সাধু পল যিশুর শিক্ষাকে পুর্নজন্ম দিয়েছেন। কী ভাবে? সাধু পলের জীবন পর্যালোচনা করলেই বিষয়টি স্বচ্ছ হবে। সাধু পলের জন্ম হয়েছিল তারসাস-এ। তো, কোথায় তারসাস? তারসাস জায়গাটা ছিল বর্তমান তুরস্কের দক্ষিণে। তুরস্ক মানে এশিয়া মাইনর। তারসাসের লোকের মুখের ভাষা ছিল গ্রিক; তার মানে তারসাস ছিল একটা গ্রিক উপনিবেশ। যে সময়ের কথা বলছি, সে সময় অনেক গ্রিক উপনিবেশ এজিয়ান সমুদ্রের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। যা হোক। সবে প্রথম শতাব্দী আরম্ভ হয়েছে; মাত্র ১০ বছর কেটেছে। সেই সময় তারসাস বন্দরের এক কট্টর ইহুদি পরিবারে পলের জন্ম হল। তারসাস ছিল রোমান সাম্রাজ্যভূক্ত । পলের পরিবার ছিল অভিজাত। পরিবারটি রোমান নাগরিকত্ব লাভ করেছিল। পলের বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে ইহুদি ধর্মের ওপর পান্ডিত্য অর্জন করবে। পলের বয়স হলে তিনি ছেলেকে জেরুজালেম পাঠালেন। পলের শিক্ষা আরম্ভ হল জেরুজালেমের বিশিষ্ট এক ইহুদি পন্ডিতের কাছে। জেরুজালেমের তখন সদ্য ক্রশবিদ্ধ যিশুর অনুসারী, অর্থাৎ নব্যখ্রিস্টানদের সংখ্যা বাড়ছিল। পল নব্যখ্রিস্টানদের ওপর ভয়ানক ক্রদ্ধ ছিল। নব্য খ্রিস্টানদের নিষ্ঠুরভাবে দমনের জন্য যা যা করার দরকার ছিল পল সেসব করতে পিছপা ছিল না। সেই সময় স্তেফেন নামে একজন বিশিষ্ট খ্রিস্টানকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয়েছিল প্রকাশ্য দিবালোকে জেরুজালেম নগরে। পলের সেই হত্যাকান্ডে সমর্থন ছিল। এ সময় তিনি একবার দামাস্কাস রওনা হলেন। উদ্দেশ্য, ওখানকার নব্যখ্রিস্টানদের নির্যাতন করা। দামাস্কাস যাবার পথে একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটল। যা পলের জীবনকে আমূল বদলে দিল। কী হল পথে? দামাস্কাস যাওয়ার পথে এক জায়গায় পলের চোখ ধাঁধিয়ে গেল তীব্র আলোয়। কার কন্ঠস্বর শুনতে পেলেন পল। “পল, পল। তুমি আমায় নির্যাতন করছ কেন? পল চমকে উঠলেন। কে আপনি! আমি যিশু। ব্যস। পলের জীবন আমূল বদলে গেল। তর পর থেকে তিনি যেন কেমন হয়ে গেলেন। ভীষন চিন্তামগ্ন হয়ে দামাস্কাসের পৌঁছলেন। সেখানে খ্রিস্টানদের নির্যাতন করা তো দূরের কথা- তাদের দ্বারা যিশুর ধর্মে দীক্ষিত হলেন। দামাস্কাসের নব্য খ্রিস্টানদের সান্নিধ্যে বছর তিনেক থাকলেন। পরে যখন তিনি তার জন্মনগর তারসাস-এ ফিরে এলেন; তখন তিনি পুরোপুরি খ্রিস্টভক্ত। নতুন নাম গ্রহন করলেন। পল। নতুন নাম গ্রহন করে বেরুলেন ধর্মপ্রচারে । প্রথমে এশিয়া মাইনর। তারপর এজিয়ান সমুদ্রের আশেপাশের গ্রিক সম্প্রদায়। তারপর সাইপ্রাস দ্বীপে। যেখানেই তিনি গেলেন নব্য খিস্টানদের দ্বারা অর্ভ্যথনা পেলেন। সিনাগগে (ইহুদি উপাসনালয়) ধর্মপ্রচার করলেন। সিনাগগে? হ্যাঁ। কেননা, খ্রিস্টানরা তখনও ইহুদি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত ছিল, তখনও গির্জার ধারনা গড়ে ওঠেনি। সাধু পল নব্যদীক্ষিত খ্রিস্টান ও অখ্রিস্টান-এই দুপক্ষের কাছেই খ্রিস্টের বানী পৌঁছে দিতেন। ইহুদিরা রোমান সাম্রাজ্যে শান্তিপূর্নভাবে বেশ সুখে-শান্তিতেই বাস করছিল। বিপদের আশংকায় সাধু পল তাদের কাছে হয়ে উঠলেন চক্ষুশূল। প্রায়শ তারা সাধু পলকে নগর থেকে বার করে দিত। একবার তো তারা তাঁকে ৪৯ বার চাবুক মারল। ৪৯ বার। কেননা, ৫০ বারের বেশি চাবুক মারার যে নিয়ম নেই ইহুদিদের শাস্ত্রে! সাধু পল সবই মুখ বুঁজে সহ্য করলেন। কেননা, তাঁর কাছে যিশু সত্য। দামাস্কাস যাওয়ার পথে এক জায়গায় চোখ দুটি ধাঁধিয়ে গিয়েছিল তীব্র আলোয়। প্রভু যিশুর কন্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিলেন পল। “পল পল তুমি আমায় নির্যাতন করছ কেন?” দুঃখ-যন্ত্রনার সময় সেই স্বর্গীয় কন্ঠস্বর স্মরণ করে নিজেকে শান্তুনা দিতেন তিনি। ৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি গ্রিসে গেলেন। জায়গাটার নাম থেসালোনিকা। জায়গাটা এখনকার নাম অবশ্য সালোনাইকে। থেসালোনিকায় পরপর তিনটে সাবাথ-এর দিনে ইহুদিদের ধর্মাপোদেশ দান করলেন সাধু পল। বললেন যে, যিশুই একমাত্র উদ্ধারকর্তা। মেজেজের বিধান পুরনো হয়ে গেছে। তোমরা সব যিশুর পবিত্র ছায়ার নিচে আস। আসলে অল্প সংখ্যক ইহুদিই পলকে বিশ্বাস করেছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ রোমান প্রশাসকের কাছে গিয়ে সাধু পলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করল যা এর আগে যিশুর বিরুদ্ধেও করা হয়েছিল .... this man is an affront to Caesar, for he claims that there is another king. Paul makes a timely escape and moves south to Athens. সাধু পল প্রমাদ গুনলেন। এখনও প্রচারকার্য বাকি। এখন ফেঁসে যাওয়া ঠিক হবে না। তিনি টিমোথি নামে এক শিষ্যকে থেসালোনিকায় রেখে নিরাপদে কোরিন্থ পৌঁছলেন। এর কিছু দিন পর থেসালোনিকা থেকে ফিরে এসে কিছু সমস্যার কথা বলল টিমোথি। টিমোথি বলল যে- থেসালোনিকায় যিশুর শিক্ষা নিয়ে অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। সাধু পল তখন কী ভাবলেন। তারপর থেসালোনিকাবাসীর উদ্দেশ্যে দীর্ঘপত্র লিখতে বসলেন। এটিই নিউ টেস্টামেন্টের আদি টেক্সট। গ্রিক ভাষায় পেপিরাস-এর উপর লিখেছিলেন সাধু পল - Paul begins with fraternal greetings; then he praises the Thessalonians for their devotion to God and his son Jesus; he exhorts them to be steadfast in suffering for the cause; he slips in a reminder that they must abstain from fornication; then he gives them the crucial assurance that dead Christians will enter heaven (indeed they will rise from their graves and ascend before the living at the last trump). He ends with a warning. The final moment may come at any time. Be well prepared. এ লেখার প্রারম্ভে বলেছিলাম, সাধু পল যিশুর শিক্ষা পুর্নজন্ম দিয়েছেন। ৫৫ খ্রিস্টাব্দ। পল জেরুজালেম পৌঁছলেন। অনেক ইহুদিই সদয় ছিল সাধু পলের ব্যাপারে। তারা ভেবেছিল সুকঠোর ইহুদিনীতি সামান্য নমনীয় করাই ছিল সাধুর উদ্দেশ্য। অন্যরা অবশ্য ক্রদ্ধ হয়ে বলল যে, পল আমাদের বিশ্বাসের জগৎ ধ্বংস করতে এসেছে। ওকে ধ্বংস কর। অবস্থা এভাবে বিপদজনক পর্যায়ে পৌঁছল। একদিন। জেরুজালেম-এর একটা সিনাগগে প্রার্থনায় রত ছিলেন সাধু পল। ঠিক তখনই একদল অসহিষ্ণু ইহুদি লাঠিসোটা নিয়ে হুড়মুড় করে সিনাগগে ঢুকে তাঁকে লাঞ্ছিত করল। পরে অবশ্য রোমান আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন এসে তাঁকে রক্ষা করেছিল। রোমান আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন বছর দুয়েক সাধু পলকে নিজেদের কাস্টডিতে রাখল। কেননা, ইহুদি স¤প্রদায়ের কাছে হস্তান্তরিত করলে সাধু পলের মৃত্যু ছিল অনিবার্য। রোমান নাগরিক হিসেবে অবশ্য রোমান সম্রাট সিজারের কাছে আপিল করতে পারতেন তাঁর বিচার কার্য রোমে স্থানান্তর করার জন্য। অবশেষে তাই করলেন তিনি। বন্দি হিসেবেই রোমের উদ্দেশে জাহাজে উঠলেন। খ্রিস্টাব্দ ৬০। রোমে পৌঁছলেন সাধু পল। ভাড়া বাসায় বছর দুয়েক থাকলেন রোমে। বিচার চলছিল। কৌতূহলী লোকেরা তাঁর কাছে আসত। সাধু পল তাদের যিশুর অলৌকিক মাহাত্মের কথা বলতেন। এরপরের ঘটনা অবশ্য স্বচ্ছ নয়। পলের মৃত্যু নিয়ে বির্তক আজও চলছে। কারও মতে সম্রাট নিরোর সময়ে ৬৪ খ্রিস্টাব্দে রোমে যে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটেছিল তাতেই পল অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। কারও কারও মতে রোমান সম্রাট নিরোই তাঁর শিরচ্ছেদ করেছিল। কারও মতের মৃত্যুর বছর অনুমান করা হয় ৬২। তবে তাঁর মৃত্যু যেভাবেই হোক না কেন- যিশুর বাণী প্রচার করতেই তাঁর জীবনপ্রদীপ নিভে গিয়েছিল। সেই কতকাল আগে দামাস্কাস যাওয়ার পথে যিশুর অলীক কন্ঠস্বর শুনে এক বিপদজনক জীবন বেছে নিয়েছিলেন সাধু পল। তারপর নিজের জীবনের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছিলেন প্রভু যিশু। লিঙ্ক: Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:০৭",False hm,"পিচ্চিতোষ গোয়েন্দাগল্প: কেষ্টা ব্যাটাই চোর হরিণাবিষ্ঠ রাজ্যের রাজা পুরন্দরাদিত্যের রাজধানী শৃগালন্দস্থ রাজবাড়ি ""বিউটি হাউস"" এ এক দুর্ধর্ষ চুরি ঘটে গেছে! রাজার জন্যে উপহার হিসেবে পাঠানো একটি রাগেস্তানি কমলা চুরি গেছে! এই গল্পের পদে পদে তাই বিস্ময়বোধক চিহ্নের ছড়াছড়ি! উঠতে বসতে শুধু এই চিহ্ন!! রাজা পুরন্দরাদিত্য ফলমূল বড় ভালোবাসেন। এক কামড়ে একটা কলা খেয়ে ফেলতে পারেন। ভালো কাঁঠাল পেলে নিজেই মাঝে মাঝে ছাল ছাড়িয়ে কোষকে কোষ সাফ করে ফ্যালেন। রাজার জ্বালায় রাজ্যে কেউ শান্তিমতো আম ফলাতে পারে না, রাজা নিজেই পাইকলস্কর নিয়ে এর ওর বাগান থেকে আম পেড়ে খান। একবার খাটো একটা গাছ থেকে জাম্বুরা পেড়ে না খেয়ে ফুঁড়ে খেয়ে ফেলেছিলেন। মোট কথা রাজা ফল খুব ভালোবাসেন। এটা খুবই সাধারণ কথা, তাই এতে কোন বিস্ময়বোধক চিহ্ন নেই। রাজা কিন্তু মূল অতটা ভালোবাসেন না। যদিও বলেছিলাম ফলমূল ভালোবাসেন, কিন্তু বলতে গিয়ে মনে পড়লো, বিভিন্ন রকম মূল রাজা তেমন একটা পছন্দ করেননা। রাণী মৃগনাভি আবার মূল চিবাতে ভালোবাসেন। তিনি মূলা, শালগম, গাজর ইত্যাদি নানা রকম কন্দগোছের জিনিস দিয়ে তরকারি রান্না করেন, রাজা পুরন্দরাদিত্যের মুখ তখন খুব ব্যাজার হয়ে ওঠে। তো এমনই রাজার জন্যে রাগেস্তানের সুলতান শাহেনশাহ উল্লুকজাদে একটি রাগেস্তানি কমলা উপহার পাঠিয়েছিলেন। অদ্ভূত সে কমলা!! আকারে তরমুজের মতো বড়, রং রংধনুর মতো, আর তার এক একটি কোয়া নাকি অমৃত চোঁয়া! রাজা রাগেস্তানের দূতের সামনে হ্যাংলাপনা করতে চাননি বলে কমলাটাকে নিজের খাবার ঘরের টেবিলে বালিশখন্দি কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখার হুকুম দিয়েছিলেন। সে কম্বল আসে বালিশখন্দ থেকে, উজবুকি ভেড়ার ডান বগলের পশমের সাথে সোনারূপা মিশিয়ে বোনা সে জিনিস, তা মুড়ি দিয়ে বড় বড় রাজাগজারা শীতকালে ঘুমুতে যায়, সে জিনিস দিয়ে কমলা মোড়ানো হচ্ছে শলুনলে নিশ্চয়ই শাহেনশাহ উল্লুকজাদে খুশি হবেন! দূত বললো, ""আমি ফিরে গিয়ে সুলতানদের সুলতান, পৃথিবীর বুকে চাঁদের জ্যোতি, লাখো শয়তানের ভোররাতের দুঃস্বপ্ন সুলতান শাহেনশাহ উল্লুকজাদেকে বেশক্ বলবো, আপনি তাঁর কমলার কেমন খাতির করেছেন!"" পুরন্দরাদিত্য বললেন, ""নিশ্চয়ই বলবে দূত! আমার রাজ্যে তো ফল তেমন ফলে না, যা ফলে তা আমি আর কাকে খেয়ে নষ্ট করে ফেলি, তবে মূল ফলে চমৎকার! শাহেনশাহ উল্লুকজাদে নাকি শালগমের খুব ভক্ত শুনেছি, সত্যি নাকি?"" দূত বললো, ""হাঁ! শালগম পেলে উনি নিজে সোনার কুড়াল দিয়ে কুচিয়ে তরকারি রান্না করে খান, এমনকি সুলতানা দুম্বিশেহরকেও ভাগ দেন না!"" পুরন্দরাদিত্য বললেন, ""গুড! রাণী সুলতানাদের উচিত নয় দিনভর শালগম চিবানো।"" বলে তিনি আবার আড়চোখে রাণী মৃগনাভির মহলের দিকে তাকান। যাই হোক, মূল গল্পে ফিরে যাই। সেই রাগেস্তানি কমলাটি চুরি গেছে। রাগেস্তানের দূত বিদায় নেয়ার ঘন্টাখানেক পর জানা গেছে এ সংবাদ। রাজার তো মাথায় হাত। রংধনুরঙা রাগেস্তানি কমলা, সে এভাবে হাতছাড়া হয়ে গেলো? কে সেই নরাধম পামর, রাজার কমলায় দেয় কামড়? রাজা হুকুম দিলেন, ""মন্ত্রী, জল্লাদ ডাকো!"" রাজার আবার জল্লাদ ডাকার খুব শখ। তিনি মাঝে মাঝেই জল্লাদ ডাকিয়ে এনে তরমুজ কাটান। মন্ত্রী কূট বাহাদুর শাস্ত্রী বৃদ্ধ মানুষ, আর তিনি সব কাজে গড়িমসি করেন। তিনি বললেন, ""মহারাজ, কাল ডাকি?"" পুরন্দরাদিত্য অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন, ""সে কী মন্ত্রী, তুমি শুধু কামচুরি করো কেন? এখনই ডাকো! আর তোমার কাল মানে তো পরশু!"" লজ্জা পেয়ে মন্ত্রী তখনই পেয়াদা ডেকে জল্লাদ ডাকতে পাঠালেন। জল্লাদ নিকুচি পালোয়ান একটা বড় কুড়াল কাঁধে একটু পর এসে হাজির হলো। সে এসে লম্বা সেলাম ঠুকে বললো, ""কোন বদমায়েশের মাথা কেটে আপনার খেদমত করতে পারি হুজুর?"" পুরন্দরাদিত্য বললেন, ""আজ তোমাকে সত্যিকারের মাথা কাটতে হবে নিকুচি! কোন এক বদমায়েশ চোর আমার রাগেস্তানি কমলা চুরি করে নিয়ে গেছে। তার মাথা কেটে একটা তশতরির ওপর সাজিয়ে নিয়ে এসো।"" নিকুচি বললো, ""জরুর হুজুর! কিন্তু কে সেই চোর?"" রাজা বললেন, ""তাই তো!"" তারপর মন্ত্রীকে ডেকে বললেন, ""মন্ত্রী, কে সেই চোর?"" মন্ত্রী বললেন, ""মহারাজ, কালকে বলি?"" রাজা খুব ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ""মন্ত্রী, তুমি শুধু কামচুরি করো কেন? বেতন কেটে রাখবো কিন্তু! এখনই বলো!"" মন্ত্রী কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, ""উঁহুহু মহারাজ, চোরের পরিচয় জানতে গেলে তো গোয়েন্দা ডাকতে হবে। সে প্রথমটায় এসে তন্নতন্ন করে হন্তদন্ত তদন্ত করবে, সাক্ষীদের জেরা করবে, তারপরে না চোর খুঁজে বার করবে? তাতে তো একটা দিন সময় লাগবেই!"" রাজা বললেন, ""হুমম। ঠিকাছে, ডাকো গোয়েন্দা।"" মন্ত্রী পেয়াদা ডেকে গোয়েন্দা ডাকতে পাঠালেন। একটু পরে গোয়েন্দা পাজিরাম পাকড়াশী এসে হাজির। সে রাজ্যের অনেক পাজিকে আগে পাকড়াও করে কোতোয়ালের হাতে সোপর্দ করেছে। তাছাড়া সেনাপতি মারকাট উ সিংহের নির্দেশে সে প্রতিবেশী বিভিন্ন রাজ্যে ছদ্মবেশে মাসুদ্রানাগিরি করেছে বিভিন্ন সময়ে। অবসর সময়ে সে কষে ফেলুদামঙ্গল পুঁথি পড়ে আর বায়োস্কোপে জেমসবন্ডনামা দ্যাখে। পাজিরাম এসেই রাজাকে সেলাম ঠুকে পকেট থেকে পাইপ বার করে বলে, ""আজ্ঞা হোক মহারাজ। কী রহস্য ভেদ করতে হুকুম করেন?"" রাজা পুরন্দরাদিত্য বললেন, ""তোমার হাতে ওটা কী?"" পাজিরাম বলে, ""এটা ম্লেচ্ছ হুঁকো। তামুক না খেলে গোয়েন্দাদের বুদ্ধি খোলে না। সেই শার্লক দাদুর আমল থেকে এই ভাও চলে আসছে।"" রাজা বললেন, ""তোমার তো স্পর্ধা কম নয় পাজিরাম! তুমি রাজার দরবারে তামুক খেতে চাও!"" পাজিরাম বলে, ""তামুক আমি বাড়ি থেকেই টেনে এসেছি মহারাজ! এই পাইপটা মাঝে মাঝে শুঁকে ঘ্রাণে অর্ধস্মোকিং করে নেবো।"" রাজা বললেন, ""হুম! তোমার তো অনেক বুদ্ধি! এখন যাও, কে আমার রাগেস্তানি কমলা চুরি করেছে খুঁজে বার করো।"" পাজিরাম বললো, ""আমাকে গোটা ঘটনা খুলে বলতে হবে মহারাজ!"" পুরন্দরাদিত্য বিরক্ত হয়ে বললেন, ""অ্যাই কে আছিস গোটা ঘটনা এই পাজিটাকে খুলে বল! ব্যাটা গোয়েন্দা হয়ে একেবারে মাথাটা কিনে বসেছে! তাকে তামুক খেতে দিতে হবে, তাকে সবকিছু খোলাসা করে আখ্যান করতে হবে ... আর কী চাও বাপু এবেলায় চটপট বলে ফ্যালো! পদে পদে আব্দার করা চলবে না!"" মন্ত্রী কূট বাহাদুর শাস্ত্রী পাজিরামকে সব খুলে বলেন। সব কিছু শুনে পাজিরাম বলে, ""হুমম! এলিমেন্টারি, মাই ডিয়ার ওয়াটসন!"" পুরন্দরাদিত্য বললেন, ""ওটা কী বললে? গাল দিলে না তো?"" পাজিরাম জিভ কেটে বলে, ""না হুজুর, এটা গোয়েন্দাদের একটা বুলি। সেই শার্লকের আমল থেকে চলে আসছে।"" রাজা বললেন, ""সব তো শুনলে, তামুকও তো খেয়ে এসেছো, এবার চোর বার করো।"" পাজিরাম বলে, ""উঁহু মহারাজ, শুধু শুনলেই হবে না। এবার চোখে দেখে আর নাকে শুঁকে আসতে হবে। অকুস্থলে সরজমিন হন্তদন্ত তদন্ত করতে হবে। তারপর এক এক করে কাহিনীর জট ছাড়াতে হবে।"" রাজা হাল ছেড়ে দিয়ে বললেন, ""বুঝলাম, আজ আমার আর সেই রাগেস্তানি কমলায় দাঁত বসানোর জো নাই। ওরে কে আছিস, কী তরকারি রান্না হলো আজ? ভাত দে ভাত খাই।"" রাজার চাকর কেষ্টা এসে বললো, ""মূলাশাকের ঘন্ট রান্না হয়েছে জাহাঁপনা!"" রাজা বললেন, ""দূর হ বদমাশ। আর এই গোয়েন্দাটাকে সঙ্গে নিয়ে ঐ রাগেস্তানি কমলা কোত্থেকে খোয়া গেছে তা দেখিয়ে নিয়ায়!"" পাজিরাম পাকড়াশী রাজাকে সেলাম করে কেষ্টার সাথে চলে গেলো। গেলো তো গেলো, আর আসার নাম নেই! দশ মিনিট গেলো, কুড়ি মিনিট গেলো, পাকড়াশী আর আসে না! এদিকে রাজার পেটে ক্ষিদে, মেজাজ খারাপ। ঝাড়া চল্লিশ মিনিট পর পাকড়াশী এসে হাজির। সে বিরাট এক ঢেঁকুর তুলে বললো, ""এলিমেন্টারি, মাই ডিয়ার ওয়াটসন!"" পুরন্দরাদিত্য গর্জন করে বললেন, ""এতোক্ষণ ছিলে কোথায়?"" পাজিরাম কুর্নিশ করে বলে, ""হন্তদন্ত তদন্তে মহারাজ! বিষয় অতি জটিল!"" রাজা বললেন, ""তদন্ত করতে চল্লিশ মিনিট লাগে?"" পাজিরাম বলে, ""আম লোকের রহস্যভেদ করতে আমার দশমিনিটও লাগে না। কিন্তু হরিণাবিষ্ঠ রাজ্যের ভূবনজয়ী রাজা পুরন্দরাদিত্যের শৃগালন্দস্থ রাজপ্রাসাদের রহস্য অতিশয় জটিল, একটু সময় লেগে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাছাড়া আমার দুপুরে আহার করা হয়নি, কেষ্টার সাথে মূলাশাক দিয়ে এক থালা ভাত খেলাম। রাজবাড়ির আহার ... আহা, অমৃতও তার কাছে তুশ্চু!"" রাজার পেটে অনেক খিদে, তিনি দাঁত কড়মড় করে বললেন, ""কাজের কথা বলো মূর্খ!"" পাজিরাম বললো, ""মহারাজ, আপনার রাগেস্তানি কমলাটিই যে শুধু চুরি গেছে, তাই নয়, তার পরিবর্তে সেই ধূর্ত চোর একটি সুপক্ক বুলবুলিস্তানি শালগম রেখে গেছে!"" রাজা এবার হুঙ্কার দিয়ে সিংহাসনের ওপর চড়ে বসে বললেন, ""কে কে কে সেই নরাধম, কমলার বদলে রেখে যায় শালগম?"" পাজিরাম বললো, ""মহারাজ, আমি হন্তদন্ত তদন্ত করে দেখেছি, কোন বহিশত্রু দরজা বা জানালা বা ঘুলঘুলি পথে এ প্রাসাদে বলপূর্বক প্রবেশ করেনি। প্রহরীরাও জানিয়েছে তারা কোন অপরিচিত লোককে প্রাসাদে প্রবেশ করতে দেয়নি। অতএব ...।"" রাজা সিংহাসন থেকে নেমে বললেন, ""অতএব?"" পাজিরাম বললো, ""অতএব এ-ই প্রতীয়মান হয় যে চোর প্রাসাদের অভ্যন্তরেই ছিলো, এবং সে পরিচিত কেউ!"" সকলের মাথায় যেন বাজ পড়ে! রাজা পুরন্দরাদিত্য জল্লাদ নিকুচিকে বলেন, ""নিকুচি, দেখছো কি, সবক'টার গর্দান নাও! এখানে যারা আছে সবার!"" মন্ত্রী ডুকরে কেঁদে বলেন, ""মহারাজ, এটা কোন কথা হলো? এই পাজিরাম পাকড়াশী একটা গেঁজেল, ঐ ম্লেচ্ছ হুঁকোয় ভরে চৌপর গাঁজা টানে, আপনি ওর গুলগপ্পো শুনে সবার গর্দান নিতে চান?"" রাজা বললেন, ""মন্ত্রী, তুমি শুধু অলসই নও, ভীরুও বটে! অন্যায়ের কাছে নত কভু নাহি শির, ভয় পায় কাপুরুষ লড়ে যায় বীর! যাও, পারলে নিকুচির সাথে লড়াই করো।"" পাজিরাম বললো, ""মহারাজ! এখানে সবাই তো চোর হতে পারে না। চোর হতে পারে একজন, মহা ধূর্ত সেই ব্যক্তি!"" রাজা বললেন, ""কেন সবাই চোর হতে পারে না কেন?"" পাজিরাম বললো, ""মহারাজ, রহস্যগল্পের ওটাই দস্তুর! ফেলুদামঙ্গলে তেমনটাই লেখা আছে!"" রাজা বললেন, ""তাহলে সে একজনটাকে খুঁজে বার করো বাপু!"" পাজিরাম বললো, ""আসুন দেখি সন্দেহের তালিকায় কে কে আছেন! যারা যারা প্রাসাদের ভেতর ছিলেন, সবাই সম্ভাব্য তস্কর!"" রাজা বললেন, ""কে কে ছিলো প্রাসাদের ভেতর?"" পাজিরাম ডানে বামে তাকিয়ে বললো, ""মহারাজ আপনি, মন্ত্রী কূট বাহাদুর শাস্ত্রী, সেনাপতি মারকাট উ সিংহ, কোতোয়াল ডান্ডে রাও, খাজাঞ্চি মোল্লা মোহর খাঁ, পেয়াদা বজরং বর্মা আর আপনার পরিচারক কেষ্টা।"" রাজা বললেন, ""আমি, পুরন্দরাদিত্য, এই হরিণাবিষ্ঠ রাজ্যের রাজা, আমি সম্ভাব্য তস্কর? তাই বলতে চাও তুমি? নিকুচি! এর গর্দান নাও এখুনি!"" পাজিরাম জিভ কেটে বললো, ""তা কি কখনো হয় মহারাজ?"" রাজা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। ""যাক আমি তাহলে বাদ।"" মন্ত্রী বললেন, ""আমি, কূট বাহাদুর শাস্ত্রী, এই হরিণাবিষ্ঠ রাজ্যের মন্ত্রী, আমি সম্ভাব্য তস্কর? তাই বলতে চাও তুমি? নিকুচি! এর গর্দান নাও এখুনি!"" পাজিরাম জিভ কেটে বললো, ""তা কি কখনো হয় মন্ত্রী মহাশয়? আপনি কেন চোর হতে যাবেন?"" মন্ত্রী হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। ""যাক আমি তাহলে বাদ।"" সেনাপতি বললেন, ""আমি, মারকাট উ সিংহ, এই হরিণাবিষ্ঠ রাজ্যের সেনাপতি, আমি সম্ভাব্য তস্কর? তাই বলতে চাও তুমি? নিকুচির নিকুচি করি! আমি নিজেই আমার তলোয়ার দিয়ে তোমার ঐ মোটা মাথা গর্দান থেকে নামিয়ে দিচ্ছি এখুনি! ব্যাটা অপশক্তি কোথাকার!"" পাজিরাম জিভ কেটে বললো, ""তা কি কখনো হয় স্যার? আপনি কেন চোর হতে যাবেন? সেনাপতিরা কখনো চুরি করে না।"" সেনাপতি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। ""যাক আমি তাহলে বাদ।"" কোতোয়াল বললেন, ""আমি, পুরন্দরাদিত্য, এই হরিণাবিষ্ঠ রাজ্যের কোতোয়াল, সকল তস্করকে পাকড়ে ঠেঙিয়ে লাট করি, আর আমি কি না সম্ভাব্য তস্কর? তাই বলতে চাও তুমি? নিকুচি! এর গর্দান নাও এখুনি!"" পাজিরাম জিভ কেটে বললো, ""তা কি কখনো হয় বস? আপনি না আমার বস?"" কোতোয়াল হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। ""যাক আমি তাহলে বাদ।"" খাজাঞ্চি বললেন, ""আমি, মোল্লা মোহর খাঁ, এই হরিণাবিষ্ঠ রাজ্যের খাজাঞ্চি, সোনাদানা সব হিসেব কষে রাখি একটু নয়ছয় হয় না, আর আমি সম্ভাব্য তস্কর? তাই বলতে চাও তুমি? রোসো, তোমার বেতন কোত্থেকে আসে দেখে নেবো!"" পাজিরাম জিভ কেটে বললো, ""তা কি কখনো হয় হুজুর? আপনি সামান্য একটা কমলা কেন চুরি করবেন, সোনাদানা ফেলে?"" খাজাঞ্চি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। ""যাক আমি তাহলে বাদ।"" পেয়াদা বলে, ""আমি, বজরং বর্মা, এই হরিণাবিষ্ঠ রাজ্যের রাজার পেয়াদা, আমি সম্ভাব্য তস্কর? তাই বলতে চাও তুমি? ব্যাটা ফাজিল কোথাকার! দাঁড়া য়্যাক চড়ে যদি তোর দুটো দাঁত না খসিয়েছি ...।"" পাজিরাম জিভ কেটে বললো, ""তা কি কখনো হয় দোস্তো? তুমি হলে পেয়াদা, তুমি করবে চুরি?"" পেয়াদা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। ""যাক আমি তাহলে বাদ।"" রাজা এতক্ষণ সব শুনছিলেন, তিনি বললেন, ""তাহলে কী দাঁড়ালো?"" পাজিরাম বললো, ""এই কেষ্টা ব্যাটা চোর। ও-ই চুরি করে কমলাটা খেয়ে সেটার জায়গায় একটা শালগম রেখে দিয়েছে।"" কেষ্টা চোখ রাঙিয়ে বললো, ""ওরে ইষ্টুপিট, তোকে সেধে সেধে মূলাশাক দিয়ে এতগুলি ভাত খাওয়ালাম সে কি আমাকে চোর বলে কল্লাটা কাটিয়ে নেবার জন্য? ব্যাটা পাজি ভূত!"" এই বলে সে কোত্থেকে একটা খাটো লাঠি জোগাড় করে ধাঁই করে পাজিরামের পেছনে একটা বাড়ি কষিয়ে দেয়। পাজিরাম পাকড়াশী প্রাণ হাতে নিয়ে বাইরের দিকে ছোটে, পেছনে পেছনে তাড়া করে যায় কেষ্টা। পাজিরাম ছুটতে ছুটতে একেবারে প্রাসাদের বাইরে চলে যায়, কেষ্টাও তার পিছে ছুটতে থাকে। আর গোয়েন্দার অভাবে ভালো একটা রহস্যকাহিনী একদম অকালে মাঠে মারা পড়ে।",False hm,"সাংস্কৃতিক স্পেসিয়েশন ১. আমি বিবর্তনবাদের একজন আগ্রহী শিক্ষার্থী। এই তত্ত্বটি নানা সময়ে আক্রান্ত হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে, তবে হামলাবাজরা আক্রমণেই আনন্দ পেয়েছেন বেশি, ব্যাপারটা নিয়ে লেখাপড়ার বা পড়াশোনার উদ্যোগ তেমন নেননি। ডারউইন, জীবজগতে বিবর্তনবাদের অনেক প্রবক্তার মধ্যে প্রথমেই তাঁর নাম আসা উচিত, তাঁর আমলে এর বিরুদ্ধে ঢালতলোয়ার তুলেছিলেন যাজকগোষ্ঠী, ডারউইনের হয়ে লড়েছিলেন টমাস হেনরি হাক্সলি। বিবর্তন শুধু প্রাণীজগতেই হয় না, ভাবজগতেও হতে পারে, এমন একটি প্রস্তাবনা থেকে রিচার্ড ডকিন্স (ডকিন্স নিওডারউইনিজম বলে একটি ভাবনার ঘরানার প্রবক্তাদের একজন, যাঁরা বিবর্তনবাদের প্রয়োগে প্রাণীজগতে বিভিন্ন আচরণের ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন, তাঁদের বিদ্যাচর্চার দিকটি এথোলজি বা আচরণবিদ্যা নামেই পরিচিত) মিম বলে একটি শব্দের প্রবর্তন করেন তাঁর সেলফিশ জিন বইটিতে। প্রাণীজগতে বিবর্তনের পেছনে প্রধান বিনিময়যোগ্য উপাদান জিন যেমন, ভাবজগতে তেমনি উপাদান হচ্ছে মিম, এ হচ্ছে একটি ভাবনার একক, যা ছড়িয়ে পড়ে মন থেকে মনে। প্রাণীজগতে বিবর্তনবাদের মূল মডেলটি অনেকটা এমন। ধরা যাক কোন একটি প্রাণী কুমড়োপটাশ কোন একটি পরিবেশ খিলখিল্লির মুল্লুকে বাস করছে, তারই ভাই ঝিঙ্গাপটাশ বাস করে দূরে টাকচূড়ো নগরে। আমরা ঝিঙ্গাপটাশের কথা আবার পরে শুনবো, এখন কুমড়োপটাশই নায়ক। কুমড়োপটাশের দৈহিক আকৃতি, আচরণ, সবই খিলখিল্লির মুল্লুকের সাথে খাপ খাওয়ানো। খিলখিল্লির মুল্লুকের নানা প্যারামিটারের সাথে একই মেজাজে কুমড়োপটাশের সব কিছু বাঁধা। এখন কোন কারণে যদি খিলখিল্লির মুল্লুকে কোন একটি বা একাধিক প্যারামিটারে পরিবর্তন ঘটে, তাহলে কুমড়োপটাশের দিক থেকে চেষ্টা থাকবে সে পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেবার। এখন প্রসঙ্গ আসে খাপ খাইয়ে নেবার পদ্ধতির সাথে। প্রাণীর দেহে অনিয়মিত হারে তার জিনতথ্যে পরিবর্তন ঘটে, যাকে মিউটেশন বলা হয়। এই পরিবর্তিত জিনের স্থায়িত্ব নির্ভর করে প্রাণীদেহে সে জিনের প্রভাব প্রাণীর টিকে থাকা ও বংশবিস্তারের উপযোগী কি না তার ওপর। কাজেই, এই পরিবর্তিত জিনের প্রভাব যদি কোনভাবে খিলখিল্লির মুল্লুকের পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে কুমড়োপটাশ খিলখিল্লির মুল্লুকের পরিবর্তিত পরিবেশের সাথেও টিকে থাকতে পারবে। পরিবেশের পরিবর্তন অনুযায়ী মিউটেশন না-ও হতে পারে, বরং না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, এবং অতীতে খিলখিল্লির মুল্লুকের মতো আরো আরো মুল্লুক থেকে কুমড়োপটাশের মতো অসংখ্যা প্রাণী লোপ পেয়েছে, একেবারে নির্বংশ হয়ে গেছে। আমাদের কুমড়োপটাশ আলোচনার খাতিরে সৌভাগ্যবান, সে টিকে যাক। তো এভাবে বছরের পর বছর চলতে থাকলো, খিলখিল্লির মুল্লুকের বিভিন্ন পরিবেশগত প্যারামিটার পাল্টাতেই থাকলো, আর সৌভাগ্যবান কুমড়োপটাশের বংশধরেরা তার সাথে তাল মিলিয়ে নিজের জিনতথ্যে পরিবর্তন ঘটিয়ে চললো। এভাবে কয়েক মিলিয়ন বছর চলার পর কুমড়োপটাশের এক দূর বংশধরের সাথে সেই ঝিঙ্গাপটাশের এক দূর বংশধারিণীর দেখা হলো। একজন তো আরেকজনকে দেখে অবাক। চেহারায় কত তফাৎ, কত তফাৎ আচরণে! এ যা খায় ও তা ছুঁয়েও দেখে না। এর দাঁত মস্তো, ওর দাঁত খুদে। এ ছোটে ধীরেসুস্থে, ও ছোটে বিদ্যুতের মতো। ব্যাপারটা কী? যা-ই হোক, অসভ্য এই নতুন প্রজন্ম একজন আরেকজনের প্রেমে পড়ে গেলো। নিরোধ ছাড়াই শুরু করে দিলো উদ্দাম প্রেম। কিন্তু না, অনেক নষ্টামোর পরও ঝিঙ্গাপটাশের বংশধারিণী গর্ভবতী হলো না। হতাশ হয়ে তারা গেলো এক পশুচিকিৎসকের কাছে। তিনি সব দেখে শুনে বললেন, বাচ্চা হবে না, আর হলেও হবে নপুংসক। কারণটা কী? ডাক্তার বললেন, স্পেসিয়েশন হয়ে গেছে। দু'জনের জিনে এখন অনেক তফাৎ। চাকচূড়ো নগরেও তো অনেক পরিবেশগত পরিবর্তন হয়েছে, তার সাথে খাপ খাইয়ে পরিবর্তিত হয়েছে ঝিঙ্গাপটাশের বংশধরদের জিন। তাই ইবনে কুমড়োপটাশ আর বিনতে ঝিঙ্গাপটাশের শরীরে এখন দু'রকম জিন, একটা আরেকটার সাথে মেশে না। যেমনটা হয়েছে মানুষের আর গোরিলায়, বাঘে আর বেড়ালে। মোদ্দা কথা হলো, প্রাণী টিকে থাকবে তার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে। যদি দু'রকম পরিবেশে একই প্রাণীর দু'রকম প্রজাতি নিজেদের মধ্যে কোন রকম ""যোগাযোগ"" ছাড়া বহুবছর বাস করে, এবং এই দুই পরিবেশের উপাদান দু'রকমভাবে পরিবর্তিত হয়, তবে সম্ভাবনা আছে তারা দু'জনে দু'টি প্রজাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়বে। যেমন কুমড়ো আর ঝিঙ্গার দুই দূর-নাতিনাতনী পটাশদ্বয়। ডারউইনের সময় বিবর্তনের ব্যাখ্যায় জিনপ্রবাহের কথাটি ছিলো না (কারণ জিন আবিষ্কৃত হয়েছে গত শতকের ষাটের দশকে), নিওডারউইনবাদে এটি সংযুক্ত হয়েছে। প্রাণীজগতে বিবর্তনবাদের হামলাবাজরা যে একটি ব্যাপারে মনোযোগ দেন না, তা হচ্ছে সময়। প্রাণীজগতে বিবর্তন একটি শ্লথ প্রক্রিয়া, এক পুরুষে দেখার নয়। কয়েক লক্ষ পুরুষে গিয়ে এই প্রজাতিতে ভাগ হয়ে যাওয়া বা স্পেসিয়েশন১. ব্যাপারটি চোখে দেখে ঠাহর করা যায়। তবে তেজস্ক্রিয়তার পাল্লায় পড়লে জিনে মিউটেশন ঘটে দ্রুত, চেরনোবিল এলাকার লতাগুল্ম দেখলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে। ২. সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বিবর্তনবাদ আরো দ্রুত ক্রিয়াশীল। সাধারণত উচ্চস্তরের প্রাণীদেহে জিনপ্রবাহ ঘটে যৌন প্রজননের ধারায়, তাই এটির পর্যায়কাল ন্যূনতম এক পুরুষ। মিমপ্রবাহ ঘটে আরো অনেক অল্প সময়ে, হয়তো একটি বই পাঠ করে, কিংবা একটা ফুলের ঘ্রাণ নিয়ে। আমি কথা বলতে চাই বিস্তৃত অর্থে বাঙালি সমাজের স্পেসিয়েশন নিয়ে। ১৯৪৭ সালে ভারতবিভাগের সময় বাঙালি সমাজ একটি বড় দাগে বিভক্ত হয়েছে, ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাপে ভৌগলিক সীমারোপের মধ্য দিয়ে (ব্যতিক্রম খুলনা ও মুর্শিদাবাদ)। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিমবঙ্গ নামে দু'টি ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশে বিভক্ত বাঙালি সমাজে তার পরও দীর্ঘদিন মিম বিনিময় ঘটেছে নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান পরিচয় লোপের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্মের পর আরো একটি বিভাজন ঘটে, পশ্চিম পাকিস্তান ওরফে পাকিস্তানে মূলছিন্ন হয়ে রয়ে যান অনেক বাঙালি। তাঁদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে এই পরিবেশের মধ্যে মিমি বিনিময় সংকুচিত হয়ে এসেছে। পাশাপাশি প্রবাসে বেড়ে ওঠা একটি ""তৃতীয় বাংলা"" বিবর্তিত হয়েছে নিজের ভিন্ন পরিবেশে। আমার ব্যক্তিগত মত, সাংস্কৃতিক স্পেসিয়েশন ঘটে গেছে এবং আরো ঘটছে এই সমাজগুলোর মধ্যে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ল্যাটিন আমেরিকায় সেটলার ইয়োরোপীয়রা, যাদের পূর্বপুরুষ কয়েকশো বছর আগে সেখানে আড্ডা গেড়েছে, এবং যারা পরবর্তীতে ইয়োরোপের চিন্তার বিবর্তনের সাথে পরিচিত নন, তারা প্রাচীন ইয়োরোপের গোঁড়ামিগুলো প্রায় পূর্ণমাত্রায় বহন করেন। সাংস্কৃতিক স্পেসিয়েশনের এটি একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। তাছাড়া শুনেছি এবং পড়েছি যে অস্ট্রেলিয়ানরা নাকি ব্রিটিশদের চেয়েও অধিকমাত্রায় ব্রিটিশ। এখানেও সেই স্পেসিয়েশন, আদিভূমিপুত্ররা বিবর্তিত হয়েছে, দখলভূমিপুত্ররা হয়নি। ৩. আমি সাংস্কৃতিক স্পেসিয়েশনের পক্ষে বা বিপক্ষে নই। আমি আগ্রহী এই স্পেসিয়েশনের বিভিন্ন মাত্রা সম্পর্কে জানতে। আমার এই জিজ্ঞাসা মেটাতে পারে ব্লগ, আরো ভালোভাবে বলতে, সচলায়তন। পশ্চিমবঙ্গ ও পাকিস্তানবাসী বাঙালিরা ব্লগিঙের মাধ্যমে তাঁদের সাংস্কৃতিক মন্ডলসম্পর্কে আমাদের আরো অবহিত করবেন, এমন আশাই করছি। প্রবাসী বাঙালি গোষ্ঠী ব্লগে অনেক সক্রিয়, তাই তাঁদের কথা আর নতুন করে বলছি না। ৪. উৎস ভাই, আপনার ব্যস্ততা বা অবসাদ জলদি কাটুক। মিস করছি আপনাকে, ভাই। ১. স্পেসিয়েশন কথাটির যুৎসই পরিভাষা প্রয়োজন। তার গায়ের রং শ্যামলা, দৈর্ঘ্য বেশি নয়। যদি কোন সহৃদয় ব্যক্তি উহার সন্ধান পাইয়া থাকেন ...। []",False rg,হরেক রকম বাহারি ইস্যুর সমাহারে ভরপুর বাংলাদেশ !!! আগামী ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে বাংলাদেশের বয়স ৪২ বছর পূর্ণ হবে। ৪২ বছর বয়সি বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার নানা অজুহাত রয়েছে। এসব অযুহাতকে যদি আমরা ইস্যু বলি। চলুন সেই ইস্যুগুলোর একটি তালিকা করি। সেই তালিকায় বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কে কোন দিকের তা সহজে ভাগ করা যাবে। প্রিয় পাঠক আপনারাও এই তালিকায় আরো ইস্যু যেগুলো আমার মনে পড়েনি সেগুলো যোগ করতে পারবেন। আপনার মতে দেশের প্রধান দুই দল কে কোন পক্ষে সে বিষয়ে খোলামনে মতামত তুলে ধরতে পারবেন। তো চলুন আমরা একটা তালিকা করি। পরে এই সম্মিলিত তালিকা নিয়ে আমরা আরো আলোচনা করব। রাজনৈতিক ইস্যু:১. নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার২. মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার৩. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা৪. বঙ্গবন্ধু'র খুনীদের অসমাপ্ত বিচার৫. জামায়াতে ইসলামী'র নিবন্ধন৬. সংবিধান সংশোধন৭. নির্বাচন কমিশন পুনঃগঠন৮. গণ-জাগরণ মঞ্চ৯. হেফাজতে ইসলাম১০. নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন১১. জেল হত্যা মামলা১২. কর্নেল তাহের হত্যা মামলা১৩. মঞ্জুর হত্যা মামলা১৪. হরতাল প্রসঙ্গ১৫. নির্বাচনী আচরণ বিধি১৬. অর্থনৈতিক ইস্যু:১. রপ্তানি২. আমদানি৩. বন্দর৪. বিদ্যুৎ কেন্দ্র৫. কয়লা খনি৬. গ্যাস৭. পানি৮. খনিজ সম্পদ৯. ট্রানজিট১০. সামাজিক ইস্যু:১. ধর্ষণ২. নির্যাতন৩. ইফটেজিং৪. এসিড নিক্ষেপ৫. গৃহকর্মী নির্যাতন৬. ভিক্ষুক৭. বস্তি৮. মাদক৯. নারী ও শিশু পাচার১০. ধর্মীয় ইস্যু:১. রাষ্ট্র ধর্ম২. সংখ্যাগুরু ধর্ম৩. সংখ্যালঘু ধর্ম৪. ওয়াজ মাহফিল৫. ধর্মীয় প্রার্থণা৬. কীর্তন রামায়ন৭. কবিগান৮. স্নান৯. মঙ্গল শোভাযাত্রা১০. সাংস্কৃতিক ইস্যু:১. পহেলা বৈশাখ পালন২. বর্ষবরণ উৎসব৩. বর্ষ বিদায় উৎসব৪. থার্টি ফার্স্ট ডিসেম্বর উৎসব৫. মঞ্চ নাটক৬. পথনাটক৭. সিনেমা৮. টেলিভিশন নাটক৯. মেহেদী উৎসব১০. ঘুড়ি উৎসব১১. নৌকাবাইচ১২. ঈদ১৩. পূজা১৪. বৌদ্ধ পূর্ণিমা১৫. খ্রিস্টমাস১৬. অমর একুশে গ্রন্থমেলা ১৪. শিক্ষা ইস্যু:১. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি২. ইংলিশ মিডিয়াম৩. মাদ্রাসা শিক্ষা৪. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি৫. শিক্ষকদের হাতে ছাত্রী নির্যাতন৬. কোচিং৭. নৈর্বেত্তিক প্রশ্নমালা৮. শিক্ষক রাজনীতি৯. এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান১০. শিক্ষকদের বেতন কাঠামো১১. অতিথি শিক্ষকতা১২. পরীক্ষা পদ্ধতি১৩. ভর্তি পরীক্ষা১৪. ভর্তি বাণিজ্য১৫. প্রাইভেট টিউশনি১৬.শিল্প ইস্যু:১. তৈরি পোষাক শিল্প২. পরিবহণ শ্রমিক৩. বন্ধ কলকারখানার শ্রমিক৪. পরিবেশ ইস্যু:১. নদী দূষণ২. কলকারখানার বর্জ৩. কলকারখানার ধোয়া৪. নদী দখল৫. নদী ভরাট৬. গাড়ির ধোয়া৭. গাছকাটা৮. রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ৯. প্রতিবেশী ইস্যু:১. তিস্তা নদীতে টিপাইমুখী বাঁধ২. ফারাক্কা বাঁধ৩. ছিটমহল৪. স্থল সীমানা নির্দিষ্টিকরণ ৫. সমুদ্র সীমা নির্দিষ্টিকরণ৬. বিএসএফ-এর গুলিতে সীমান্তে হত্যা৭. কালোবাজারী৮. পাচার৯. দখল১০. বাজেট ইস্যু:১. নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম২. ট্যাক্স৩. ভ্যাট৪. আয়কর৫. কর্পোরেট কর৬. শুল্কমুক্ত৭. সার্ভিস চার্জ৮. ভর্তুকি৯. গোল্ডেন হ্যান্ডসেক১০. আদালত ইস্যু:১. রাজনৈতিক মামলা২. দলীয় লোকদের বিচারক নিয়োগ৩. সরকার দলীয় মামলা প্রত্যাহার৪. রাজনৈতিক বিবেচনায় দণ্ডমুক্তি৫. বাজার ইস্যু:১. গ্রামের হাটে জিনিসের দাম২. শহরের মার্কেটে জিনিসের দাম৩. শপিংমলে জিনিসের দাম৪. খোলাবাজারের জিনিসের দাম৫. পাইকারী বাজারে জিনিসের দাম৬. ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট৭. ফরমালিন৮. ভেজাল মাল৯. পেশাজীবী ইস্যু:১. শিক্ষকদের দলবাজী২. ডাক্তারদের দলবাজী৩. প্রকৌশলীদের দলবাজী৪. উকিলদের দলবাজী৫. বুদ্ধিজীবীদের দলবাজী৬. সাংস্কৃতিক কর্মীদের দলবাজী৭. সাংবাদিকদের দলবাজী৮. মিডিয়ার দলবাজী৯. সেবা ইস্যু:১. ডাক্তারের ফিস২. ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠানের টেস্ট৩. ভুল চিকিৎসা৪. হাসপাতালের দালাল৫. হাসাপাতালে সিট ব্যবসা৬. হাসপাতালের ওষুধ৭. ভুয়া ডাক্তার৮. ভুয়া লাইসেন্স৯. কল্যান ইস্যু:১. এনজিও রাজনীতি২. এনজিও ব্যবসা৩. মাল্টি কোঅপারেটিভ বিজনেস৪. মাইক্রো ক্রেডিট৫. এমএলএম৬. ভুইফোঁর প্রতিষ্ঠান৭. দালাল৮. উপদেষ্টা৯. দুর্যোগ ইস্যু:১. ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম২. সরকারি সাহায্য চুরি৩. দুর্যোগ দেখিয়ে এনজিও ব্যবসা৪. দুর্যোগ সংবাদে বিভ্রান্তি৫. দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণে বিভ্রান্তি৬. পরিবার ইস্যু:১. বঙ্গবন্ধু পরিবার২. জিয়া পরিবার৩. প্রয়াত সাংসদদের পরিবার৪. পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতি৫. ইত্যাদি ইস্যু:১. ভিক্ষুক২. নদী ভাঙন৩. সরকারি ভাতা৪. সরকারি রেশন৫. রাজনৈতিক হত্যা৬. রাজনৈতিক গুম৭. দেশের সম্পদ পাচার৮. বিদেশে নিরাপদ সেকেন্ড হোম৯. শুল্কমুক্ত গাড়ি১০. সংসদ বর্জন১১. রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা১২. দলীয় নিয়োগ১৩. প্রশ্নপত্র ফাঁস১৪. মালের অবৈধ গুদামজাতকরণ১৫. নকল টাকা১৬. অবৈধ অস্ত্র১৭. দুর্নীতি১৮. স্বজনপ্রীতি১৯. দলীয়করণ২০. রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠন২১. টেন্ডারবাজী২২. নিয়োগ বাণিজ্য২৩. ঘুষ২৪. সরকারি গাড়ির ব্যবহার২৫. খাসজমি দখল২৬. অবৈধ হাউজিং ব্যবসা২৭. বিদেশী চুক্তি২৮. বিদেশী সাহায্য২৯. সরকারি ক্রয় বিক্রয়৩০. সরকারি পতিত জমি৩১. ওএসডি৩২. অর্পিত সম্পত্তি৩৩. যৌথ অভিযান৩৪. দায়মুক্তি অধ্যাদেশ৩৫. ক্রোস ফায়ার৩৬. পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু৩৭. ডাকাতি৩৮. চুরি৩৯. ছিনতাই৪০. ১৪৪ ধারা৪১. মানি লন্ডারিং৪২. ব্যাংক ঋণ৪৩. বেকার সমস্যা৪৪. বেতন বৃদ্ধি৪৫. লাইসেন্স৪৬. জিএসপি সুবিধা৪৭. দুর্ঘটনা৪৮. বিদেশী মেহমান৪৯. সাম্প্রদায়িক হামলা৫০. আউট সোর্সিং৫১.,False rg,"বিনা টিকিটে বন্ধু নাজিরের সঙ্গে মহানগর প্রভাতীতে!!! আজ থেকে ঠিক ১৩ বছর আগের কথা। ২০০৩ সালের ২৪ জুলাই। বন্ধু নাজিরের নেতৃত্বে আমরা চার বন্ধু নাজির, রিয়াজ, পুলক আর আমি আখাউড়া যাচ্ছিলাম নাজিরদের বাড়িতে। নাজির বলেছিল, আমরা এয়ারপোর্ট থেকে চট্টগ্রামগামী সকালের ট্রেন ধরব, তোরা সকাল সাতটার আগেই এয়ারপোর্ট রেল স্টেশনে আসবি। রিয়াজ, পুলক আর আমি তখন একসাথে থাকি কাঁঠালবাগানে। আমরা তিন জন সকাল সাতটার আগেই এয়ারপোর্ট রেল স্টেশনে হাজির হলাম। নাজির আসবে মিরপুর থেকে। কিছুক্ষণের মধ্যে নাজিরও পৌঁছালো। আমরা মহানগর প্রভাতীর অপেক্ষায়। পুলক প্রস্তাব করলো, ট্রেন আসার আগে টিকিট কেটে নাস্তা কইরা ফেলাই?নাজির ধমক দিয়ে কইলো, নাস্তা ট্রেনে করিস। আর টিকিট ফিকিট লাগতো না। তোরা কার লগে যাইতাছোস, এখনো চিনলি না! নাজিরের কোনো দিন টিকিট লাগে না। তো কী আর করা। আমরা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি আর সকালের টাটকা সংবাদপত্রে চোখ বুলাচ্ছি। সবগুলো পত্রিকা হেডলঅইন করেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে ছাত্রদল ও পুলিশের তাণ্ডব! মধ্যরাতে ছাত্রদল ও পুলিশ শামসুন্নাহার হলে অভিযান চালায়। ছাত্রীদের বেদম প্রহার ও লাঞ্চনার পাশাপাশি কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়। সারা রাত থানায় আটক ছাত্রীদের নির্যাতন করা হয়। আমরা সবাই তখন কিছুটা চিন্তিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গরম হয়েছে। অর্থ্যাৎ সামনে কঠোর আন্দোলন আসেতেছ! হয়তো ভিসি আনোয়ারউল্লাহকে হটানোর দিকেই এটা মোড় নেবে। ততক্ষণে ট্রেন এসে গেছে। আমরা লাফিয়ে লাফিয়ে মহানগর প্রভাতীতে উঠে পড়লাম। আমাদের কারোর কাছেই টিকিট নাই। আমরা আখাউড়া পর্যন্ত যাব। ট্রেনে ওঠার সময় পুলক, রিয়াজ আর আমি উঠেছি যে কামরায়, নাজির সেই কামরায় উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা ট্রেনের জানালা দিয়ে নাজিরকে বললাম, তুই যে কোনো একটা কামরায় উঠে পড়। নাজির পেছনের দিকে একটা কামরায় উঠল। আমরা ট্রেনের ভেতরে পেছনের দিকে নাজিরের দিকে যাচ্ছিলাম আর নাজির আমাদের দিকে আসছিল। ঘটনা মাত্র কয়েক মিনিটের। এর মধ্যে বন্ধু নাজির টিটিদের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েছে! টিকিট ছাড়া আর কেউ নাজিরের সঙ্গে আছে কিনা জিজ্ঞেস করে আমাদের কথাও অ্যাডভান্স জেনে গেছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে টিটি আমাদের তিনজনকেও পাকরাও করলো। ট্রেনের একেবারে সামনের দিকে ড্রাইভারের পাশে ইঞ্জিন রুমের কাছে একটা কামরায় আমাদের নিয়ে আটকানো হলো। এখন উপায়?আমরা পরামর্শ করলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার একটা জুতসই ব্যাখ্যা দিয়ে টিটিদের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার। আমরা ছোট্ট বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকতে ফুকতে এই কাহিনী ফাঁদলাম। কিছুক্ষণ পর টিটি এসে আবার ধমক দিলেন, এই আপনারা বারান্দায় কেন? সেই সুযোগে আমরা আমাদের পরিকল্পিত ঘটনা খুলে বললাম। বললাম, রাতে ভার্সিটিতে ঝামেলা হয়েছে। হল ভ্যাকেন্ট হয়েছে। আমরা এখন বাড়িতে যাচ্ছি। টিকিট কাটার টাকা নাই। কাহিনী হয়তো টিটি সাহেবরা বিশ্বাস করলেন। বললেন, আপনারা এই কামরার বাইরে কোথাও যাবেন না। যদিও আমাদের ওই বারান্দা পর্যন্ত যাবার একটা অলিখিত পারমিশান হয়ে গেল! বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়ার মজা আমরা সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। যতবার আমাদের সেই বিড়ম্বনার কথা মনে পড়েছে, ততবার আমরা তিনজন নাজিরকে আচ্ছামত গালাগালি করেছি। জবাবে নাজির বললো, তোরা চুপ কর। আখাউড়া গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর আখাউড়া রেল স্টেশনে নেমেই নাজির আমাদের পছন্দ মত জিনিসপত্র দিয়ে ভারি আপ্পায়ন করলো। আহা, যাবার পথে, বিকালে বিরতিতে, আবার সন্ধ্যায় ফিরতি ট্রেনে ওঠার আগে নাজিরের সেই আপ্পায়ন একদম ভোলার না।দুপুরে নাজিরদের বাড়িতেও আমাদের জন্য বিশাল খাবারের আয়োজন হয়েছিল। কিন্তু বিকালে ফেরার পথে নাজির যে কাহিনী শুরু করলো, তা থেকে বাঁচার জন্য আমরা তিন জন প্রায় গোটা বিকাল স্টেশনে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ালাম। মহানগর পারাবাত স্টেশনে আসার পরেই আমরা যখন লাফিয়ে লাফিয়ে আবার ট্রেনে উঠলাম, তখন নাজির আবার আমাদের দেখে চিৎকার করলো, কিরে তোরা কই আছিলি? তোগো খুঁইজা পাই না! আমরা ট্রেনের জানালা দিয়ে কইলাম, সেই আলাপ পরে, আগে তুই লাফিয়ে ট্রেনে ওঠ হারামজাদা! বন্ধু নাজির এখন আর বেঁচে নাই। পরের বছর একটি মাইক্রোবাস বন্ধু নাজিরকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছিল! বন্ধু নাজিরের কথা এখনো অনেক মনে পড়ে। অনেক পাগলা বন্ধু ছিল একটা নাজির। নাজির তুই কোথায় এখন কেমন আছিসরে বন্ধু! বন্ধু কী খবর বল? কত দিন দেখা হয় না!!.....................................২৩ জুলাই ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৯",False ij,"কবি নিকানোর পাররার দুটি কবিতা কবি নিকানোর পাররা। চিলির কবি। দুর্দান্ত সাহসী এই কবির মানুষের ব্যাক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস ছিল প্রখর । ১৯৭৩ সালে চিলির গণমানুষের মহান নেতা সালভাদর আলেন্দেকে এক রক্তক্ষয়ী অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে উৎখাত করে স্বৈরাচারী পিনোশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ইঙ্গিতে চিলির রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয়। চিলির গনতন্ত্রমনা বুদ্ধিজীবিরা তারপর স্বৈরাচারী পিনোশের রোষানলে পড়ে-তাদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। কিন্তু, পাররা ছিলেন নির্ভীক-তিনি সান্তিয়াগোর প্রধান গির্জের প্রবেশমুখে টুপি পেতে বসে যান। কেন? কবিতা পড়ে নির্যাতিত বুদ্ধিজীবিদের জন্য অর্থ সাহায্য করবেন। এমনই মানুষ পাররা। ১৯১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নিকানোর পাররার জন্ম দক্ষিণ চিলির এক দরিদ্র পরিবারে । চিলির মানচিত্র ছেলেবেলায় বাড়ির কাছের এক কবরখানার ভিতরে খেলতেন ভাইবোনদের সঙ্গে। মেধা ছিল পাররার। গণিত ও জ্যোতিপদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে চিলির রাজধানী সান্তিয়াগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তারপর অক্সফোর্ড উচ্চতর গবেষনার জন্য অক্সফোর্ড । সেখানেই ইংরেজ কবি জন ডান-এর কবিতা পড়ে মুগ্ধ হন এবং আমৃত্যু কবিতায় নিমজ্জিত হওয়ার সংকল্প করেন। কবি জন ডান; লিখেছিলেন Death be not proud ... তারপর দেশে ফিরে সান্তিয়াগোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন। সান্তিয়াগোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ১৯৩৭ সালে বেরয় পাররার প্রথম কবিতার বই: ‘নামশূন্য গানের খাতা’। ১৭ বছর পরে দ্বিতীয় বই। ‘কবিতা ও প্রতিকবিতা।’ এ লেখার প্রথমে দেখেছি কেমন বেপরোয়া পাররা। তাঁর কবিতাও তেমনি। খোলামেলা। কথ্য। বিস্তর গালাগালি করেন কবিতায়। জয়তু স্টালিন ঐ খানকির পোলারা আমাকে ওভারকোট নেওয়ার সময় পর্যন্ত দিল না। কোনও রকম হুঁশিয়ারি ছাড়াই ওরা আমায় ধরে টেনে হিঁচড়ে ফেলে দিল রাইফেলের বাট ঠেকাল একজন আমার বুকে আরেক কুত্তার বাচ্চা থুতু দিল আমি অবশ্য ধৈর্য্য হারাইনি তারপর তারা আমাকে পেট্রলকারে তুলল একটি পরিত্যক্ত রাস্তায় রেলস্টেশনের কাছে গাড়িটি থামিয়ে ওরা বলল; ঠিক আছে। তুমি মুক্ত, তুমি যেতে পার। এর মানে আমি জানি। খুনিরা! বলে আমি চিৎকার করতে পারতাম তার বদলে মৃত্যুর আগে চিৎকার করে বললাম- ‘ভিভা স্টালিন!’ পাররার সতর্ক-বার্তা কবিতায় পিনোশের শাসনামলের বিভীষিকা ফুটে উঠেছে: প্রার্থনা করা যাবে না; নাক ডাকা যাবে না থুতু ফেলা যাবে না; প্রশংসা করা যাবে না, হাঁটু গেড়ে বসা যাবে না উপাসনা না, চিৎকার না, কাশি না এই চৌহদ্দিতে ঘুমনো নিষেধ রোগের চিকিৎসা না; কথা বলা না; যোগাযোগ না স্বরসঙ্গতি না, পালানো যাবে না, ধরা যাবে না দৌড়ানো একেবারেই নিষিদ্ধ সিগারেট টানা যাবে না; যৌনসঙ্গম না। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:০৬",False mk,"উন্নয়নের বছর ৫ জানুয়ারি ২০১৪’র নির্বাচনের তিন বছর পূর্ণ হলো বর্তমান সরকারের। বাংলাদেশের রাজনীতির পশ্চাত্পদতা হলো এদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে যতটুকু অগ্রসর হয়েছে আমাদের রাজনীতিটি ততটা পারেনি। এরফলে গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে যে সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোগুলো তৈরি হওয়া দরকার ছিল তা গড়ে ওঠেনি। যেমন- নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন পদ্ধতি। আমরা পাঁচ বছর অন্তর অন্তর নির্বাচন এলে এডহক ভিত্তিতে কতগুলো সমাধান বের করে নিয়ে আসি। ১৯৯৬ সালে তিন বছরের জন্য এডহক ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। পরে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট ব্যবস্থাটিকে ভ্রান্ত হিসেবে গণ্য করেছেন। সেক্ষেত্রে মূল জায়গাটি হলো নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহ দূর করা, অবাধ নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে অভিযোগ বা শঙ্কা না থাকা। সেটা নিয়ে একটা সংলাপ বা আলোচনা হতে পারতো। কিন্তু সমস্যা হলো একটি দল যখন আন্দোলন করে- বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতসহ (বিশ দল) মাঠে নামে। তবে বিশ দলের অনেক সংগঠনই নামসর্বস্ব বা ব্যক্তিসর্বস্ব। তারা হাইকোর্টের রায়ে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির দাবি নিয়ে হাজির হয়। এটা নিয়ে ২০১৩ সালের পুরো বছরটা দেশজুড়ে অপতত্পরতা চালিয়ে অচল করে রেখেছিল। সে সময় তারা আন্দোলনের নামে বিভিন্ন নিপীড়ন-নির্যাতন চালায়। তবে নাশকতা করেও আন্দোলনে সাফল্য আসেনি। বরং তা ভেস্তে গেছে। তখন প্রচুর প্রাণহানি, অগ্নিসংযোগ আর সহিংসতায় এদেশ হয়ে উঠেছিল ভয়ঙ্কর। তাদের সেই আন্দোলনে মানুষের কোনো সমর্থন তখনো ছিল না, এখনো নেই। দলীয় ভিত্তিতে কিছু মানুষের সমর্থন থাকলেও সাধারণ মানুষ পরিত্রাণ খুঁজছিল। আন্দোলনের নামে অরাজকতার অবসান হয় নির্বাচনের মধ্যদিয়ে। ২০১৩ সাল জুড়ে যে অবস্থা ছিল তা থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটে। মূলত মানুষের জীবনে স্বস্তি ও নিরাপত্তা এসেছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর। এই নির্বাচনের আগে-পরে এমন কোনো নাশকতার ঘটনা নেই যার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তারা মানুষকে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে মেরেছে, পথচারীকে আক্রমণ করেছে, নির্বাচনের আগে বিভীষিকাময় সেই সময় মানুষ এখনো ভুলতে পারেনি। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আমরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। দৃশ্যমান বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। আগে কেবল বড় বড় প্রকল্পের কথা কাগজে-ফাইলে থাকতো, এখন ফোর লেন রাস্তা, পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র, ফ্লাইওভার, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবে মানুষ দেখতে পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতায় উন্নয়নের চাকা সচল রয়েছে। এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে অনেকেই মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ার কথা বলেন। অথচ ষাটের দশকে এসব দেশের শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশে পড়তে আসতো। এখন তারা আমাদের ছেড়ে এগিয়ে গেছে। এখন আমরা যাচ্ছি তাদের দেশে। মালয়েশিয়ার কথা বললে প্রথমেই বলতে হয় সেখানকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথের মোহাম্মদ অতি-রাজনীতি বন্ধ করে উন্নয়নের চাকাকে গতিশীল করেছিলেন। কম-রাজনীতি বেশি উন্নয়ন এই দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর একই নীতি অর্থাত্ কম-রাজনীতি বেশি উন্নয়ন নীতিকে গ্রহণ করেছিল। আমাদের দেশে ওইসব দেশের মতো উন্নয়ন ভালভাবে চলতে দিতে হবে। তবে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাকে বিসর্জন না দিয়ে অহিংস রাজনীতি চর্চাকে উত্সাহী করতে হবে। আর পরিশীলিত গণতান্ত্রিক ধারা প্রবর্তন করা গেলে উন্নয়নের ধারাও বেগবান হবে। এদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে শেখ হাসিনা সরকার কাজ করছে। তার জন্য কম-রাজনীতি করতে হবে; অর্থনৈতিক কর্মসূচি নির্বিঘ্নে চলতে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার বলে সহিংস রাজনীতি করা চলবে না। সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়াকে অনুসরণ করা যেতে পারে। হরতাল-জ্বালাও-পোড়াও এগুলো বেশি রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। এগুলোর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ। স্বাভাবিক রাজনীতি হলো জনমত গঠন, জনগণের পক্ষে র্যালি ও মানববন্ধন করা। যদিও এগুলো সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো অনেক জায়গায় নিয়ন্ত্রিত। আমাদের দেশে এগুলো প্রচলিত হলে ভাল ফল দিতে পারে। রাজনৈতিক সমাবেশের নামে রাস্তাঘাট অবরোধ করার পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জনসভার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। সেখানে শুক্র-শনিবার দু’দিন দু’বেলায় বড় চারটি দলের জনসভা প্রতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে। রাজনৈতিক মতপ্রকাশের একটি স্থায়ী জায়গা এভাবে তৈরি করা যায়। ঢাকা শহরের অন্যান্য কার্যদিবসে জনসমাবেশ হলে যে ভোগান্তি হয় তা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। যানজট হলেও তা সহনীয় থাকবে। সপ্তাহে একাধিক সভা করার জন্য ঢাকা শহরে আসলে কোনো জায়গা নেই। রাস্তা দখল করে সমাবেশ করলে পুরো ঢাকা অচল হয়ে পড়ে, ঢাকা অচল মানে পুরো দেশ অচল। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেই বর্তমান সরকারের ওপর মানুষের আস্থার জায়গাটি তৈরি হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের নামে যদি পুরোনো নাশকতার দিনে অর্থাত্ ২০১৩ সালের মতো পুলিশ হত্যা, পেট্রল বোমা মেরে আগুনে পুড়িয়ে মারা, গাড়িতে আগুন দেওয়া প্রভৃতি নাশকতায় ফিরে যাওয়া হয় তাহলে মানুষ তা মেনে নিবে না।সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে বেগম খালেদা জিয়া ১৩ দফা দাবি পেশ করেছেন। সেখানে স্বাধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের প্রসঙ্গ রয়েছে। অর্থাত্ যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জাতীয় নির্বাচন কীভাবে হবে বিএনপির রাজনীতির মূল ইস্যু এটাই। নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে পরে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী বিল-২০১১ থেকে বাতিল করা হয়েছে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, সরকারের মেয়াদের শেষ ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন হবে। ওই সময় সরকার থাকলেও তারা কেবল রুটিন কাজ চালিয়ে নেবে। অসাংবিধানিকভাবে কেউ ক্ষমতা দখল করলে তা রাষ্ট্রদ্রোহ বলে বিবেচিত হবে। উল্লেখ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রায় ছিল। অবশ্য এই রায়ে কিছু অপশন রয়েছে। পর পর দুটি নির্বাচন এ ব্যবস্থার মাধ্যমে হতে পারে; প্রধান উপদেষ্টার প্রসঙ্গও আছে। বিষয়টি নিয়ে ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচনের আগে প্রতিদিন টকশোতে আলোচনা চলেছে; পত্রিকায় কলাম লেখা হয়েছে। কিন্তু রায়ের সারকথা বুঝতে অনেকেই ব্যর্থ হয়েছেন। তা হচ্ছে বাংলাদেশ এক মুহূর্তের জন্য অনির্বাচিত সরকার দ্বারা পরিচালিত হতে পারবে না। নির্বাচিত প্রতিনিধি ব্যতীত অন্য কোনো ব্যবস্থায় রাষ্ট্র চলবে না বলেই সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। এজন্যই সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদের শাসনকালকেও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কেন হাইকোর্টের রায়ে ওই পদ্ধতি বাতিল হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয় না। রায় অনুযায়ী এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। একসময় যে কারণে এই ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। যদিও অতীতের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর একে অপরের প্রতি আস্থাহীনতার কারণ রয়েছে তবু বলা যায় অতীতে নির্বাচন জালিয়াতির কালচার এখন পাল্টে গেছে। বর্তমান মহাজোট সরকারের অধীনে যেসব নির্বাচন (পাঁচ হাজারের অধিক) হয়েছে তার দিকে তাকালেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। গণতান্ত্রিক দেশে সরকার নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতা লাভ করে। এজন্য নির্বাচন কমিশন রয়েছে। বর্তমান সংবিধানে ক্ষমতা বেড়েছে নির্বাচন কমিশনের। এজন্যই পূর্বের সেই ‘সাময়িক’ ব্যবস্থার গুরুত্ব এখন আর নেই। যদিও তিনটি জাতীয় নির্বাচন সেই পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট চোরাপথে ও কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। তত্কালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ তার বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানায়। একপর্যায়ে ২০০৭ সালে সামরিকবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে। সেই সময় তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় দেশের মানুষের। প্রধান দুই দলের নেত্রীসহ বহু রাজনীতিবিদ, ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী ভয়ঙ্কর অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হন। সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মায়। তবে সেই ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন হয়ে গত মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছিল। আর সেই সরকারের আমলেই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। স্বাধীন বিচার বিভাগ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে রায় পাওয়া যায়। সংবিধান অনুযায়ী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে আস্থার সংকট এখনো কাটেনি। মনে রাখতে হবে ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ব্যক্তি বিচিত্র ফর্মুলা নিয়ে কথা বলা শুরু করেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে নির্দলীয় সরকার হতে পারে। আলোচনা করে এ সরকারের প্রধান ঠিক করা হবে। তবে এর ক্ষমতা হবে সীমিত। রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা ন্যস্ত হবে নির্বাচন কমিশনের ওপর। আর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত ছিল। সঠিক ভোট ব্যবস্থাপনায় ভোটচুরি বা কারচুপি বন্ধ করা, পেশিশক্তির ব্যবহার রোধ করা জরুরি। এজন্য সে সময় আলোচনার ভিত্তিতেই নির্বাচনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছিল। কারণ তার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কেউ কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের জন্য গণভোটের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিশিষ্টজনরা বলতে পারেননি, কার অধীনে সেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে? গত সরকারের অধীনে তা সম্পন্ন হলে বিরোধী দলের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে নিশ্চয়তা কি ছিল ? এক কথায় এসবের কোনো গুরুত্ব নেই। সংবিধান মানুষের জন্য। ঐক্যবদ্ধভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কীভাবে আগামী নির্বাচন সম্পন্ন হতে পারে। সংসদে আলোচনা হতে পারে। জনপ্রতিনিধিরাই সংসদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। নির্বাহী ক্ষমতা কার ওপর বর্তাবে সেই সিদ্ধান্তও। আর এভাবেই সংকট উত্তরণ সম্ভব। সংসদে আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যার মীমাংসা হতে হবে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে আমরা দেখেছি রেলে আগুন দেয়া হয়েছে গভীর রাতে, নির্জন মুহূর্তে, নাশকতা চালানো হয়েছে নির্বিকারচিত্তে, দেশের সর্বত্র। পাকিস্তান আমলে আন্দোলনে আমরা কখনো রেলে আগুন দেইনি। কারণ জরুরি ব্যবহারের জন্য একটি যোগাযোগ মাধ্যম সচল থাকা দরকার। আর গণপরিবহন হিসেবে রেলে বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক বিশ্বাসের মানুষ চলাচল করে। অথচ হরতালকারীরা ঢিল মেরেছে গণপরিবহনে, পুলিশকে মেরে মাথা থেঁতলে দিয়েছে, কব্জি কেটে নিয়েছে। এসবের পিছনে তখনও মুখ্য ভূমিকা ছিল জামায়াত-শিবিরের, এখনো তাদের সেই অপতত্পরতা দেখা যাচ্ছে। তাদের ট্রেনিংপ্রাপ্ত ক্যাডাররা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আক্রমণ করছে। কারণ একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের অন্যতম অনুষঙ্গ পুলিশবাহিনী। এজন্যই একাত্তরে পাকিস্তানিরা ২৫ মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আক্রমণ করে। রাষ্ট্রের এই দৃশ্যমান প্রতীককে হামলা করার মধ্যদিয়ে জামায়াত-শিবির যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর পাকিস্তানি কৌশল অনুসরণ করে চলেছে। আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা বর্তমান সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এটি সহজ কাজ নয়। ইতোমধ্যেই অনেক যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হয়েছে, ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এটা একটি দৃঢ় পদক্ষেপ। দেশ এগিয়ে যাবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না। সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৫",False mk,"২০১৮ সালে জাতীয় গ্রিডে আসছে আরও ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে আগামী ২০১৮ সাল নাগাদ দেশে নির্মিত হচ্ছে ২৭টি ছোট বড় নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে সরকারি উদ্যোগে ১৭টি এবং বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত হবে ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। চলতি ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল নগাদ নির্মিতব্য এই ২৭টি কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে আরও ৬ হাজার ৯৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তখন দেশে সর্বমোট উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ হবে ১৪ হাজার ৩৫১ মেগাওয়াট। বর্তমানে (২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ৭ হাজার ৪১৮ মেগাওয়াট।তবে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিতব্য ২৭টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৬টি। এর মধ্যে সরকারি উদ্যোগে ১২টি এবং বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত হবে উল্লেখযোগ্য ৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। সরকারি হিসাব মতে, ২০১৮ সালে এই ১৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত ৫ হাজার ৬৪৬ মেগাওয়াট মোট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এর মধ্যে সরকারি উদ্যোগে স্থাপিত ১২টি কেন্দ্র থেকে পাওয়া যাবে ৪ হাজার ২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত ৪টি কেন্দ্র থেকে পাওয়া যাবে ১ হাজার ৬২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।উল্লেখযোগ্য ১২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে- আশুগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট (দক্ষিণ) কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (৩য় ইউনিট), শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (ডুয়েল ফুয়েল) আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট (উত্তর) কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, ভেড়ামারা ৩৬০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, বড়পুকুরিয়া ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র (৩য় ইউনিট) এবং বিবিয়ানা দক্ষিণ ৩৮৩ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট।বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিতব্য উল্লেখযোগ্য ৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে- বিবিয়ানা ২ হাজার ৩৪১ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, মাওয়া- মুন্সীগঞ্জ ৫২২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প, খুলনা ৫৬৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এবং আশুগঞ্জ ১৯৫ মেগাওয়াট মড়ুলার বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। সবকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই চলতি ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে উৎপাদনে যাবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়লেও ক্ষমতার স্বল্পতা এবং গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির জন্য গত কয়েক বছরে দেশের প্রকৃত বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়নি। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮৭ মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছর সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৩৫৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হলেও বিদ্যুতের সংকট কাটেনি। ২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ হচ্ছে ৭ হাজার ৪১৮ মেগাওয়াট।বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২০ বছরে দেশে সর্বমোট বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে ৫ হাজার ৩৩১ মেগাওয়াট। যদিও আলোচ্য সময়ে দেশে স্থাপিত কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১১ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াট।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, পরিকল্পনা মাফিক ২০১৮, ২০২১, এবং ২০৪১ সালকে টার্গেট করে এগুচ্ছি। সবকিছু ঠিক থাকলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো কষ্টসাধ্য কিছু নয়। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে এক সময় আসবে তখন লোডশেডিং দেখতে জাদুঘরে যেতে হবে।http://www.banglatribune.com/news/show/102384 সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৩৫",False hm,"গোয়েন্দা ঝাকানাকা ১. 'মুহাহাহাহাহা!' চারপাশ কেঁপে ওঠে। কাঁপবেই তো। পাঠক হয়তো এ শব্দটার কোন কিনারা করতে পারবেন না, আর করবেনই বা কিভাবে, যা বিদঘুটে আওয়াজ, বাব্বাহ্ --- কিন্তু অভিজ্ঞ পাঠক বুঝে ফেলেছেন, এটা একটা হাসির শব্দ। তবে অভিজ্ঞ পাঠকদের মধ্যেও জাতভেদ আছে, স্বীকার করতেই হবে। এনাদের মধ্যে যাঁরা একটু নিচু জাতের, তাঁরা হয়তো এটাকে কোন ভিলেন কি টপটেররের অট্টহাসি ভাবছেন। বড়জোর কোন মন্ত্রী-সাংসদ। কিন্তু না, নিচু জাতের অভিজ্ঞ পাঠক ভাইসব, এ হাসি সেই কুখ্যাত খুনে দসু্য বদরু খাঁ, যে শুধু রাত বারোটায় খুনখারাপি করে, তার বিকট কন্ঠনিঃসৃত নয়, কিংবা চতুর চোরাচালানবাজ আদমাহানি ইস্পানজি, যে কেবল ভোর তিনটেয় ট্রাকের পর ট্রাক সীমান্তের এপারওপার করে, সেও অমন হাসির জন্যে দায়ী নয়, এ হাসি হাসছেন আমাদের গল্পের নায়ক, উপমহাদেশের স্বনামখ্যাত গোয়েন্দা, গোয়েন্দা ঝাকানাকা, যাঁকে সনাক্ত করতে পেরেছেন কেবল আমাদের উঁচু জাতের অভিজ্ঞ পাঠক সমাজ! ঝাকানাকার হাসির শব্দে চারপাশ যেমন কেঁপে ওঠে, তেমনই কেঁপে ওঠেন বৈঠকখানায় বসে থাকা তিন ভদ্রলোক। সোফার পাশে চার পা মুড়ে বসে থাকা ছাগলটাও দাড়ি কাঁপিয়ে ম্যাঅ্যাঅ্যা করে ডেকে ওঠে। 'আপনাদেরকে যদিও তিন ভদ্রলোক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে,' আলাপের সুরে বললেন ঝাকানাকা, আর বলবেন না-ই বা কেন, তিনি তো আলাপই করছেন, আলাপের মাঝে তো আর বিলাপের সুর তোলা ভালো কাজ নয়, 'কিন্তু আদতে আপনাদের মধ্যে কেবল দুজন ভদ্রলোক। বাকিজন হচ্ছে লুচ্চা, গুন্ডা, বদমাশ, খুনে, ইতর এক বোঁচকামারা বাটপার!' আবারও চারপাশ কেঁপে ওঠে ঝাকানাকার আলাপের সুরে, দুই ভদ্রলোক আর লুচ্চা, গুন্ডা, বদমাশ, খুনে, ইতর এক বোঁচকামারা বাটপার আরো বেশি করে কেঁপে ওঠেন। ছাগলটা আবারও ম্যা বোল তোলে। ঝাকানাকা তৃপ্তির হাসি হেসে চায়ে চুমুক দেন আর গোঁফে একবার তা দেন। 'আসুন, পরিস্থিতিটা একবার বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।' গোয়েন্দাশ্রেষ্ঠ উঠে পড়েন সোফা থেকে, তারপর পায়চারি করতে থাকেন ঘরের এ কোণ থেকে ও কোণ। আর এরই ফাঁকে পকেট থেকে একটা জাবদা চেহারার নোটবই বের করে তিনশো একান্ন নাম্বার পৃষ্ঠা বার করেন। 'গত পরশু দিন, রাত বারোটার সময় এখানে একটা নৃশংস খুন হয়।' গোয়েন্দা ঝাকানাকা ডায়রি দেখে হেঁকে বলেন। এবার আরেকটা সোফায় বসা দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি, যাঁকে অভিজ্ঞ পাঠক সমাজ (উঁচু ও নিচু দুজাতেরই) কিংকু চৌধারি নামেই চেনেন, মোলায়েম একটা কাশি দেন। ঝাকানাকা থেমে পড়ে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকান। 'গতকাল রাত বারোটায়।' বিনীত গলায় বললেন কিংকু চৌধারি, আর বলবেন না-ই বা কেন, চৌধারি বংশের সন্তান, চৌদিকেই ধারালো তিনি, বিনয়-আদব তাঁর রক্তে মিশে আছে। তাছাড়া গোয়েন্দা ঝাকানাকার সাথে বিনয় না দেখিয়ে তাঁর উপায়ও নেই, বেয়াদবি করলেই তাঁকে ঘাগড়াছড়িতে বদলি করা হতে পারে, যেমন করা হয়েছিলো এই থানার ভূতপূর্ব দারোগা ঘুষেন্দ্র মালদারকে। গোয়েন্দা ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে বলেন, 'কিন্তু কিংকু সাহেব, আপনিই তো আমাকে গতকাল ভোর একটায় ফোন করলেন?' কিংকু চৌধারি একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, 'ভোর একটা? হ্যাঁ, তা বলতে পারেন।' ঝাকানাকা বুক ঠুকে বললেন, 'অবশ্যই বলতে পারি, রাত বারোটার পরই তো ভোর। --- যাকগে এসব বাজে আলাপ, যা বলছিলাম, গত পরশু, রাত বারোটায় একটা খুন হয় এ বাড়িতে। কাকে খুন করা হয়েছিলো যেন?' ডায়রির পাতা উল্টে যান তিনি, 'ও হ্যাঁ --- এ বাড়ির মালিক, সরফরাজ জবরদস্ত-কে।' তিন ভদ্রলোক, থুক্কু, দুই ভদ্রলোক আর লুচ্চা, গুন্ডা, বদমাশ, খুনে, ইতর এক বোঁচকামারা বাটপার এবার ভারি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন ঝাকানাকার দিকে। ছাগলটাও যেন ঘাবড়ে গিয়ে একবার এদিক, আরেকবার ওদিকে তাকায়। কিংকু চৌধারি ভারি বিনীত গলায় শুধরে দেন, 'জি্ব না, তাঁর নাম আওরঙ্গ আলম।' গোয়েন্দা ঝাকানাকা এবার ডায়রিটা চোখের কাছে ধরেন, তারপর পকেট থেকে একটা চশমা বের করে ডায়রিটা আলোর দিকে ফিরিয়ে ধরেন, তারপর সোজা হয়ে বলেন, 'ঠিক, আওরঙ্গ আলমই বটে।' তারপর গলা খাঁকরে কিংকু চৌধারির দিকে ফিরে কড়া গলায় বলেন, 'এমন জড়ানোপাকানো বিচ্ছিরি হাতের লেখা, কী লেখা হয়েছে, কিচ্ছু বোঝার উপায় নেই --- কে লিখেছে এসব?' কিংকু চৌধারি বিনয়ে মাথা নত করে লাজুক গলায় কী যেন বললেন। কিন্তু ঝাকানাকা উত্তর শুনে মহা চটে গেলেন। 'আপনার সুন্দরী সেক্রেটারি মিস মিলি? কেন এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লেখার দায়িত্ব আপনি আপনার সুন্দরী সেক্রেটারি মিস মিলিকে দেন? আর দেবেন না বলে দিচ্ছি। শুধু গ্ল্যামার থাকলেই কাজ চলে না, গ্রামারও কিছু জানতে হয়! মেয়েটার হাতের লেখা যে কী বিচ্ছিরি, বলে বোঝানোর উপায় নেই। ভবিষ্যতে ওকে আর এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেবেন না, বরং হালকা কোন কাজ, যেমন ধরুন, আমার সাথে যোগাযোগ করার দায়িত্ব, এ ধরনের কোন কাজ দেবেন আপনার সুন্দরী সেক্রেটারি মিস মিলিকে।' কিংকু চৌধারি অবাক হয়ে বিনয়ে মাথা সোজা করে বললেন, 'কিন্তু স্যার, আমি তো সরকারি চাকরি করি, দারোগার আবার সুন্দরী সেক্রেটারি আসবে কোত্থেকে? তাছাড়া, মিস মিলি তো আপনার সেক্রেটারি!' ঝাকানাকা চটে গিয়ে বললেন, 'তাহলে আপনি কেন বললেন, এসব আপনার সুন্দরী সেক্রেটারি মিস মিলির লেখা?' কিংকু চৌধারি ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, 'সেটাই তো বললাম স্যার, ওই নোটবুকে যা কিছু সব আপনার সুন্দরী সেক্রেটারি মিস মিলির লেখা।' গোয়েন্দা ঝাকানাকা গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়েন, তারপর কটমট করে কিংকু চৌধারির দিকে তাকিয়ে বলেন, 'ওহ!' ওদিকে দুই ভদ্রলোক আর লুচ্চা, গুন্ডা, বদমাশ, খুনে, ইতর এক বোঁচকামারা বাটপার একে অপরের মুখের দিকে তাকায়। তবে ছাগলটার মুখের দিকে কেউ তাকায় না, তাকাবেই বা কেন বলুন, ছাগলের মুখ তো আর তাকিয়ে থাকার মতো কিছু নয়, তাই ছাগলটা সবাইকে একবার করে দেখে নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেয়ালে ঝোলানো আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে দেখে। যাই হোক, ঝাকানাকা নিজেকে সামলে নিয়ে আবার পায়চারি শুরু করেন। 'যা বলছিলাম, গত পরশু রাত বারোটায় এ বাড়িতে নৃশংসভাবে খুন হন এ বাড়ির মালিক, আওরঙ্গ আলম। মৃতু্যকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো --- দাঁড়ান দেখি কত,' আবারো ডায়রিটা খুলে ধরেন তিনি, কিছুক্ষণ চোখ কুঁচকে তাকিয়ে থেকে সেটা বন্ধ করে পকেটে গুঁজে রাখেন, তারপর গলা খাঁকরে বলেন, 'ইয়ে --- অনেক বয়স হয়েছিলো বেচারার। কয়েকদিন বাদেই হয়তো অসুখবিসুখে পড়ে মারা যেতেন, কিন্তু না!' নাটকীয়ভাবে শরীর মোচড় দিয়ে ঘোরেন তিনি সোফার দিকে, যেখানে সেই তিন --- ব্যক্তি বসে আছে। 'কয়েকদিন সময় তাঁকে দিতে চায়নি সেই লুচ্চা খুনেটা। তাঁকে রাতে ঘুমের মধ্যে মুখের ওপর বালিশ চেপে ধরে নির্মমভাবে খুন করে সে। ধস্তাধস্তির শব্দ শুনে বাড়ির লোকজন ছুটে আসে। এসে দেখে যে শোবার ঘরে মরে পড়ে রয়েছেন অসহায় আওরঙ্গ আলম, মুখের ওপর তখনও বালিশটা পড়ে রয়েছে,' পকেট থেকে ডায়রিটা আবার বের করে পড়েন ঝাকানাকা, 'ঘাতক বালিশের ছিলো নীল রঙের ওয়াড়, ওজন প্রায় এক কেজি, নীলক্ষেতের তুলোর দোকান থেকে বানানো হয়েছিলো --- ইয়ে, বছর পাঁচেক আগে, হুমম। যাকগে, আওরঙ্গ আলম মৃতু্যর আগে পর্যন্ত চরম ধস্তাধস্তি করেছিলেন, এ থেকে বোঝা যায়, তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠেছিলেন, অথবা আদপে ঘুমোননি --- তবে বালিশটাকে আঁচড়ে কামড়ে একেবারে ফালাফালা করে ফেলা হয়েছে। অবশ্য পাঁচ বছরের পুরনো বালিশ, ধস্তাধস্তি সহ্য করার ক্ষমতা তার আদৌ ছিলো বলে মনে হয় না। যাই হোক, আমরা ধরে নিতে পারি, খুন হবার আগে তিনি সচেতন ছিলেন, কে জানে, হয়তো হত্যাকারীকে চিনেও ফেলেছিলেন। ধস্তাধস্তির শব্দ শুনে দোতলার ঘরে ছুটে আসেন তাঁর কন্যা, বনানী পারভিন, যিনি এখন মানসিক আঘাত পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন, আর আপনি,' বসে থাকা তিন ব্যক্তির মধ্যে একজনের দিকে আঙুল তুলে বাজখাঁই গলায় বলেন ঝাকানাকা, সেই ব্যক্তি কেঁপে ওঠেন, '--- জিন্দাদিল জব্বলপুরী, তাঁর জামাতা। এসে দেখেন, ঘরের দরজা খোলা, ভেতরে খাটের ওপর পড়ে আছেন আওরঙ্গ আলম, তাঁর মুখের ওপর বালিশ। তাই তো?' জিন্দাদিল জব্বলপুরী ইতিবাচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়েন। 'হুম। আপনারা দুজন তখন জোর চিৎকার করে ওঠেন। এই চিৎকার শুনে কোত্থেকে যেন ছুটে আসেন, আপনি,' দ্বিতীয় ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করেন দুর্ধর্ষ গোযেন্দা, 'নিহত আওরঙ্গ আলমের ভাগ্নে, বজরঙ্গ বাহরাম। ঠিক?' বজরঙ্গ বাহরাম শুষ্ক মুখে মাথা নাড়েন। 'তারপর আপনিও দৃশ্যটা দেখে চিল চিৎকার করে ওঠেন। আপনাদের চিৎকার শুনে, বাইরে থেকে ছুটতে ছুটতে ঘরে ঢোকেন আপনি,' কটমটিয়ে অবশিষ্ট ব্যক্তিটির দিকে তাকান ঝাকানাকা, 'আওরঙ্গ আলমের শালা, বিল্লাল বসুনিয়া, নাকি ভুল বললাম?' নেতিবাচকভাবে মাথা দোলান বসুনিয়া। 'তারপর আপনারা সবাই মিলে পাড়া মাথায় তুলে চ্যাঁচাতে চ্যাঁচাতে ঘরে ঢুকে নিহত আওরঙ্গ আলমের মুখের ওপর থেকে বালিশটা সরান। সরিয়ে দেখেন, তিনি মুখ ভেটকে পড়ে আছেন, তাই না?' এবার সবাই মাথা নাড়েন, এমনকি ছাগলটাও। 'আপনারা তাই দেখে ভয়ে আরো জোরে চেঁচিয়ে ওঠেন। এবার ঘটে এক আছায্য ঘটনা, আওরঙ্গ আলম চোখ খোলেন। তারপর হাত পা নাড়ান। তারপর একটা হাত তুলে বলেন, ""ব --- ব --- ব --- ব ---"", তারপর তিনি আবার মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়েন। নাকি?' এবার কিংকু চৌধারি মৃদু কাশেন। 'আবার নয়, তখনই তিনি মৃতু্যর কোলে প্রথম ও শেষবারের মতো ঢলে পড়েন।' 'ঐ হলো। যেই লাউ সেই কদু।' ঝাকানাকা হাতে হাত ঘষেন। 'উনি কবার মরলেন, সেটা বড় ব্যাপার নয়। বড় ব্যাপার হচ্ছে, মরার আগে তিনি চারবার ""ব"" বলেছেন। কেন?' এবার জিন্দাদিল জব্বলপুরী লাফিয়ে ওঠেন, 'আমি জানি কেন! তিনি খুনীকে চিনিয়ে দিয়ে গেছেন! এই বজরঙ্গ আর এই বসুনিয়া, দুই ব-ওয়ালা বখাটে বকলম বদমাশ মিলে বালিশ দিয়ে চটকে আব্বাসাহেবকে খুন করেছে! দেখেছেন ওদের স্বাস্থ্য? এই বজরঙ্গ হারামজাদাটা দিন রাত বারবেল ভাঁজে, সারাটাক্ষণ গুন্ডামির তোড়জোড় করে ব্যাটা, আব্বার পয়সায় ছোলামটর খেয়ে খেয়ে দেখুন কেমন কেঁদো শরীর বানিয়েছে বদমাশটা, দেখুন, বাইসেপ ট্রাইসেপ সব কেমন বাগিয়ে বসে আছে! আর --- আর ঐ বসুনিয়াটাও কম যায় না, সারারাত ধরে গাঁজা খেলে কী হবে, সকালে উঠেই দুসের দুধ খেয়ে ক্ষেতিটা একেবারে সুদে আসলে পুষিয়ে নেয় ব্যাটা বাটপার!' 'বটে?' সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে বাকি দুজনের দিকে তাকান ঝাকানাকা। 'সত্যি নাকি?' জিন্দাদিলের দিকে এক পশলা জিঘাংসু দৃষ্টি হেনে বজরঙ্গ বলেন, 'হ্যাঁ স্যার।' ঝাকানাকা গর্জে ওঠেন, 'হ্যাঁ স্যার মানে? কী --- কী বলতে চাও তুমি? তোমরা দুজন মিলে আওরঙ্গ আলমকে একটা পাঁচ বছরের পুরনো ময়লা বিটকেলে গন্ধওয়ালা বালিশ চেপে খুন করেছো? আবার এতবড় সাহস, সরাসরি কবুল করো আমার সামনে, আমাকে মাথা ঘামানোর বিন্দুমাত্র সুযোগ না দিয়ে? কিংকু সাহেব, দিন তো ফিচলে দুটোর হাতে হাতকড়া এঁটে!' বজরঙ্গের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়, সে তাড়াতাড়ি বলে, 'না স্যার, আমি সে কথা বলছি না।' ঝাকানাকা এবার খানিকটা প্রসন্ন মুখে বললেন, 'তবে কী বলতে চাও?' 'আপনি যে বললেন, সত্যি কি না, আমি ভাবলাম, ব্যায়ামের কথা বলছেন বুঝি, তাই হ্যাঁ বলেছি স্যার। আমার স্যার, একটু স্বাস্থ্যবাতিক আছে আর কি, তাই খুব ভোরে উঠে ব্যায়াম করতে বসি। ডন বৈঠক দেই, আর ছোলাটোলা খাই, আপনাদের দোয়ায় স্বাস্থ্য আমার খারাপ না।' সত্যি সত্যি শার্টের হাতা গুটিয়ে দোয়াদত্ত এক গুচ্ছ চারতলা পেশি দেখিয়ে দেয় সে। 'কিন্তু এই ব্যাটা বল্টু যা বলছে, তা মোটেও সত্যি নয় স্যার। আমি কেন মামাকে খুন করতে যাবো?' 'বল্টু কী?' ঝাকানাকা প্রশ্ন করেন। 'কী নয়, বলুন কে! এই যে, এই অকর্মার ধাড়িটার নামই তো বল্টু!' জব্বলপুরীকে দেখিয়ে বলে বজরঙ্গ। 'ব্যাটার নাম তো খুব জাঁকের, জিন্দাদিল জব্বলপুরী, কিন্তু সবাই ওকে বল্টু নামেই চেনে।' 'আচ্ছা!' মোচে তা দিলেন ঝাকানাকা। 'আর ও মোটেও সত্যি বলেনি স্যার!' বসুনিয়া এই ফাঁকে ডুকরে ওঠেন। 'আমি স্যার, গাঁজাফাঁজা খাই না স্যার। সারারাত জেগে থাকতে হয়, সকালে একটু দুধ না খেলে শরীরে বল আসে না স্যার। তাতেও এই বল্টু শালার আপত্তি। আর নিজে দুলাভাইয়ের পয়সায় ঘিচপচপ পরোটা আর মুগর্া মোসল্লম ওড়ায়! ওর স্বাস্থ্যটাই বা খারাপ কিসে, বলুন? বছরে পর বছর মাগনা খেয়ে খেয়ে ওর ভুঁড়িটা কেমন হয়েছে, একবার পাঞ্জাবী উল্টে পরখ করে দেখুন না স্যার। ওরকম একটা ভুঁড়ি থাকলে বালিশ লাগে? ঐ ভুঁড়ি দিয়েই তো ও দুলাভাইকে খুন করেছে!' 'হুমম।' জব্বলপুরী ওরফে বল্টুর পাঞ্জাবীআবৃত ভুঁড়ির দিকে একটি কটাক্ষ হানেন ঝাকানাকা। 'হ্যাঁ, ভুঁড়িটা তো নেহায়েত ফেলনা নয় --- যদিও ভুঁড়িটুড়ি ফেলে দেয়াই ভালো।' বল্টু এবার দাঁতে দাঁত পিষে বলেন, 'আমি আমার শ্বশুরের পয়সায় খাই, তাতে তোদের এতো জ্বলে কেন রে, পরগাছার দল? দাঁড়া, এবার তোদের পেঁদিয়ে এই বাড়িছাড়া যদি না করেছি তো আমার নাম বল্টু, মানে জিন্দাদিল জব্বলপুরীই নয়!' ছাগলটা ম্যা করে ওঠে। ঝাকানাকা গর্জে ওঠেন, 'খামোশ!' সবাই থেমে যায়, ছাগলটাও। ঝাকানাকা খানিকটা পায়চারি করে বলেন, 'খুবই সন্দেহজনক। এ বাড়িতে নিহত আওরঙ্গ আলম বাদে আর মাত্র চারজন বাস করেন, বনানী, বল্টু, বজরঙ্গ আর বসুনিয়া। চারজনের নামই তো ব দিয়ে শুরু। আবার আওরঙ্গ সাহেব দ্বিতীয় মৃতু্যর আগে যে প্রথম গানটা জুড়ে দিয়েছিলেন, তাতেও ব আছে চারবার! মনে তো হচ্ছে, চারজন মিলেই কাজটা করেছে!' এবার সবার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। ঝাকানাকা আড়চোখে তিনজনকে দেখেন। তারপর গলা খাঁকরে বলেন, 'মিসেস বল্টু, মানে বনানী পারভিন তো হাসপাতালে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। তাঁকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি। তবে তিনিও আমাদের সন্দেহের তালিকায় বিদ্যমান। যাই হোক, আপনাদের প্রাথমিকভাবে যখন পুলিশ জেরা করেছে, আপনারা একেকজন একেকরকম কাহিনী পয়দা করেছেন। আপনাদের তিনজনের মধ্যে একজনের কাহিনীতে গলদ থাকবে, স্বাভাবিকভাবেই, কারণ খুনটা সেই ব্যাটাই করেছে! আসুন দেখি, আরেক দফা শোনা যাক গল্পগুলো। প্রথমে আপনি, বল্টু, বলুন, কী হয়েছিলো সে রাতে?' বল্টু ঘাবড়ে গিয়ে বলেন, 'আমি? আমি কেন শুরুতে বলবো? এই বজরঙ্গ আর ঐ বসুনিয়া, ওরাই বলুক না আগে। ওদের গল্পেই বিস্তর গলদ পাবেন আপনি। মিথু্যকগুলো রোজ বাজারের পয়সা মারতো, আর হিসেব দিতে গিয়েই আব্বাসাহেবের কাছে ধরা খেতো!' বজরঙ্গ বাইসেপ ফুলিয়ে বল্টুর দিকে ফেরেন। 'আর তুই? ব্যাটা ঘাগু চোর! তোকে তো মামা একদিনও পাকড়াতে পারেনি, অথচ তুই রোজ বাজারের পয়সা ঝেড়ে দিয়ে সিনেমা দেখিস, বিড়ি খাস, ফকিরকে পয়সা বিলিয়ে বেড়াস, ব্যাটা ফাজিলের ঝাড়!' বসুনিয়াও ফুঁসে ওঠেন, 'বাজারের পয়সা মেরে মেরে তুই গাঁজা খাস রাতের বেলা, তুই!' 'চোপ!' গর্জে ওঠেন ঝাকানাকা। 'কী হলো, বল্টু?' বল্টু গলা খাঁকরে বলেন, 'আচ্ছা, আচ্ছা, বলছি শুনুন।' আড়চোখে বাকি দুজনের দিকে চেয়ে দেখলেন একবার, তারপর বলতে লাগলেন। 'আমাদের ঘরটা দোতলায়, ডানদিকে। তো, রাতে শুয়ে আছি, এমন সময়, নিচে ক্যাঁঅ্যাঁচ ক্যাঁঅ্যাঁচ করে একটা শব্দ হলো। আমি বনুকে বললাম, ""এটা কিসের শব্দ?"" বনু বিরক্ত হয়ে বললো, ""তোমার মাথা!"" আমি বললাম, ""চোর না তো?"" বনু বললো, ""তোমার কি মাথা খারাপ? চোর এসে কী ঘোড়ার ডিম চুরি করবে, এ বাড়িতে চুরি করার মতো আছে কিছু? তাছাড়া এ বাড়িতেই তো জলজ্যান্ত দুটো চোর বাস করে, বাইরে থেকে আবার চোর আসতে হবে কেন?"" তো, আমি ভেবে দেখলাম, কথা সত্য ---।' বজরঙ্গ আর বসুনিয়া, দুজনই শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে উঠে দাঁড়ালেন। বল্টু জব্বলপুরী তাড়াতাড়ি বললেন, 'আমি ভেবে দেখলাম, কথা সত্য, এ হচ্ছে আব্বাসাহেবের মতো হাড়কেপ্পনের বাড়ি, এখানে চোর আসবে কেন? তো, আমি আবার ঘুমোনোর চেষ্টা করছি, এমন সময় সিঁড়িতে খুটখুট আওয়াজ হলো। আমি আবার বললাম, ""বনু, সিঁড়িতে কিসের শব্দ?"" বনু ঘুমিয়ে পড়েছিলো, সে মহা ক্ষেপে গিয়ে বললো, ""আমার মাথা!"" তো, আমি ভাবলাম, নিশ্চয় বসুনিয়া কোথাও থেকে গাঁজাটাজা খেয়ে বাড়ি ফিরেছে, তো, আবার শুয়ে পড়লাম।' বসুনিয়া পাঞ্জাবীর হাতা আবার কব্জি পর্যন্ত সমান করে এনেছিলেন, তিনি এ কথা শুনে আবারও তা গোটাতে শুরু করলেন, কিন্তু ঝাকানাকা একটি রক্তজলকরা কটাক্ষ ঝেড়ে তাঁকে নিবৃত্ত করলেন। জব্বলপুরী বলতে লাগলেন, 'একটু পরেই কেমন একটা হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ির শব্দ হতে লাগলো, আমি বনুকে বললাম, ""বনু, একটা মারামারির শব্দ হচ্ছে, শুনতে পাচ্ছো?"" বনু এবার চোখ খুলে বললো, ""হ্যাঁ, তাই তো!"" এরপর আবার সিঁড়িতে একটা খটখট শব্দ হলো, তারপর আবার ক্যাঁঅ্যাঁচ ক্যাঁঅ্যাঁচ করে শব্দটা হলো। আমি উঠে বসে বললাম, ""চলো, দেখে আসি।"" বনু বললো, ""হ্যাঁ, চলো।"" তারপর আমরা দুজন ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি, আব্বাসাহেবের ঘরের দরজা খোলা, ভেতরে আলো জ্বলছে! তখনই বুঝলাম, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়, কারণ আব্বাসাহেব কখনো রাতে নিজের ঘরে আলো জ্বলতেন না, পয়সা বাঁচানোর জন্যে। বনু তো ভেতরে গিয়ে উঁকি দিয়েই চেঁচাতে লাগলো। তারপর আমিও উঁকি দিয়ে দেখি, আব্বাসাহেব খাটের ওপর তিনভাঁজ হয়ে পড়ে, মুখের ওপর বালিশ। এই দুই বদমায়েশকে ডাকাডাকি শুরু করলাম। একটু পর নিজের ঘর থেকে এই বজরঙ্গ শালা বের হয়ে এলো, চোখ ডলতে ডলতে, এমন একটা ভাব যেন সে ঘুমোচ্ছিলো, কিন্তু মুখ দিয়ে ভকভকিয়ে তাড়ির গন্ধ বেরোচ্ছে, মাতাল কোথাকার! --- তারপর ঘরে ভেতরে একবার উঁকি দিয়েই সে চেঁচাতে লাগলো। তখন বাইরে থেকে গদাম করে দরজা খুলে বসুনিয়াটা লুঙ্গি মালকোঁচা মেরে ছুটতে ছুটতে এলো --- তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে সিঁড়ি বেয়ে উঠলো, তারপর ঘরে ঢুকে বিকট একটা চিৎকার দিলো। তো, আমি সবাইকে কোনমতে শান্ত করে বললাম, চলো, বালিশটা উল্টে দেখি! তখন এই বজরঙ্গ বলে কি, ""আমি ঐ বালিশে হাত লাগাতে পারবো না, ওটা কয় মাস ধোয়া হয় না কে জানে, চিমসে একটা গন্ধ বেরোচ্ছে, দেখছো না?"" আমি বললাম, ""তবে রে অকৃতজ্ঞ, যার পয়সায় খেয়েপরে বেঁচে আছিস, তার জন্যে এটুকুও করতে পারবি না, পাষন্ড কাঁহিকা?"" তখন বজরঙ্গ আমায় তেড়ে মারতে এলো। তখন বনু সবাইকে ধমকে এগিয়ে গেলো। সে বালিশটা তুলতেই দেখি, আব্বাসাহেবের মুখ নীল হয়ে আছে, চোখ উল্টে জিভ বের করে পড়ে আছেন! সেই চেহারা দেখে আমরা আবার চিৎকার করে উঠলাম, আর এই বসুনিয়াটা, জানেন, খিকখিক করে হেসে ফেললো! তখন আব্বাসাহেব পট করে একটা চোখ খুললেন। তারপর কাঁপতে কাঁপতে একটা হাত তুলে একবার বজরঙ্গকে, আর একবার বসুনিয়াকে দেখিয়ে বললেন, ""ব --- ব --- ব --- ব ---"", তারপর তাঁর হাতটা বিছানাতে পড়ে গেলো। আমি তখন কাছে গিয়ে ওনার বুকে কান পেতে দেখি, কোন শব্দ হচ্ছে না। তারপর বনু কাঁদতে কাঁদতে ফিট হয়ে গেলো। তারপর এই বজরঙ্গ ডাক্তার আর পুলিশকে ফোন করলো। তারপরই তো আপনারা এলেন।' ঝাকানাকা মনোযোগ দিয়ে সব শুনলেন, তারপর বজরঙ্গ আর বসুনিয়ার দিকে ফিরলেন। দুজনেই মহা চটে বল্টু জব্বলপুরীর দিকে রোষকষায়িত চোখে তাকিয়ে আছে, দুজনেরই পাঞ্জাবীর হাতা গোটানো, বাইসেপ বিপজ্জনকভাবে উদ্যত। 'ইনি যা বললেন, তা সত্যি?"" 'মোটেও না!' গরম গলায় বলে বজরঙ্গ। 'মিথু্যকটা আগাগোড়া মিথ্যে কথা বলছে! আমাদেরকে কায়দা করে ফাঁসিয়ে দিতে চায় ব্যাটা ফেরেব্বাজ! আর আমি মোটেও তাড়িফাড়ি খাই না, বরং এই ব্যাটা বল্টুই মাঝে মাঝে রাতে ছাদে গিয়ে ব্যাটারিভেজানো ধেনো খায়!' 'হ্যাঁ!' জোর গলায় সমর্থন জানালেন বসুনিয়া। 'ও ব্যাটা নিজে খুন করে আমাদের ওপর দোষ চাপাতে চায়! ও আগেও এমন করেছে। বাজারের পয়সা মেরে আমার ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছে!' 'চোপ!' গর্জে ওঠেন ঝাকানাকা। 'এবার বজরঙ্গ, আপনি বলুন। কী ঘটেছিলো সে রাতে?' বজরঙ্গ গলা খাঁকরে শুরু করেন। 'আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। অনেক ভোরে উঠতে হয় ঘুম থেকে, ব্যায়াম করতে হয়, নাশতা করতে হয়, তো, সকাল সকাল না ঘুমোলে আমার পোষায় না। আমার ঘরটা দোতলার এক কোণে, এই বল্টুর ঘরের উল্টোদিকে, সিঁড়ির এপাশে। চেঁচামেচির শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়, আমি উঠে বসি। তারপর শুনতে পাই, বনা বলছে, ""হায় হায়, এখন কী হবে?"" তার জবাবে শুনলাম বল্টু বলছে, ""চিৎকার করো না বুদ্ধু মেয়েছেলে, পাড়াপড়শী সবাই এসে জড়ো হবে তাহলে।"" এই শুনে আমি আমার ঘর থেকে বের হই, দেখি মামার ঘরের দরজায় বনা দাঁড়িয়ে, আর এই বল্টু মামার ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। আমার খটকা লাগলো, আমি দৌড়ে গিয়ে ঘরে ঢুকে দেখি, ঘরে আলো জ্বলছে, মামা হাত পা কেৎরে বিছানার ওপর শুয়ে, মুখের ওপর সেই ময়লা বালিশটা গোঁজা। আমি বুঝলাম, একটা ঝামেলা করেছে বল্টু। আমি চিৎকার করে বসুনিয়াকে ডাকতে লাগলাম। তো, আমার চিৎকার শুনে বসুনিয়া দৌড়ে এলো বাইরে থেকে। সে এই ঘটনা দেখে হাউমাউ করে চেঁচিয়ে উঠলো। তখন বল্টু বললো, ""রাখ রাখ, আর মরাকান্না কাঁদিসনি, খুন করে রেখে গেছিস, আবার চোখের জল ঝলসাচ্ছিস যে বড়! এই বজরঙ্গ, বালিশটা তুলে দেখ, কঞ্জুষ বুডঢার কী অবস্থা।"" আমি বললাম, ""তুই দেখ না, আমি ঐ ময়লা বালিশে হাত দিতে পারবো না।"" আমার আবার, স্যার, একটু শুচিবাই আছে। তো, এই কথা শুনে বল্টু খুব লাফাতে লাগলো, বললো, ""খুন করার সময় তো ঠিকই ধরেছিলি, আর এখন ধরতে মানা? ভন্ডামির আর জায়গা পাস না? পীর সাজতে চাস? আউলিয়া বনতে চাস? পেঁদিয়ে তোর পীরগিরি যদি না ছোটাই তো আমার নাম বল্টুই নয়!"" তো, আমিও স্যার, লুঙ্গিটা মালকোঁচা মেরে তৈরি হয়েছি, শালাকে মাথার ওপর এক পাক ঘুরিয়ে একটা আছাড় মারবো, তখন বনা বললো, 'বল্টু, ভাইয়া, তোমরা যদি বেশি গ্যাঞ্জাম করো, দুজনকেই ঝাড়ু মেরে খেদিয়ে দেবো কিন্তু!"" তো, আমরা এই কথা শুনে চুপ করে গেলাম। তখন বনা এগিয়ে গিয়ে মামার মুখ থেকে বালিশটা সরালো। দেখলাম, মামার মুখ পুরো নীল হয়ে আছে, মুখে ফেনা, চোখ বন্ধ। বসুনিয়া তখন ""দুলাভাই গো"" বলে কেঁদে উঠলো, আর এই বল্টু শালা বললো, ""হে হে হে, এক্কেবারে সিনেমার মতো, ঠিক সিনেমার মতো!"" তখন মামার হাত নড়ে উঠলো। তারপর মামা চোখ খুলে একটা হাত উঁচু করে কোনমতে বললেন, ""ব --- ব --- ব --- ব ---।"" তারপর তিনি ঢলে পড়ে গেলেন। এই সিন দেখে বনা গেলো ফিট হয়ে। --- এই তো, তারপর আমরা আপনাদের খবর দিলাম।' 'ইন্টারেস্টিং!' বলে উঠলেন ঝাকানাকা। 'খুবই।' মাথা দোলালেন কিংকু চৌধারি। বল্টু লাফিয়ে উঠলেন। 'একগাদা মিথ্যে বলেছে এই বজরঙ্গ হারামীটা!' গলার রগ ফুলিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি। 'মোটেও আমি আব্বার ঘরে আগে ঢুকিনি! আমরা সবাই একসাথে আব্বাসাহেবের ঘরে ঢুকেছি! আর --- আর কখনো আমি আব্বাসাহেব সম্পর্কে এমন বাজে --- এমন বাজে উক্তি করিনি!' 'এহেহেহেহে!' ভেঙচে উঠলেন বসুনিয়া। 'উক্তি করিনি! উক্তি করিনি! --- উক্তি করিসনি মানে? দিনরাত দুলাভাইকে গাল দিয়ে বেড়াতিস, আবার এখানে সাধু সাজতে চাস!' ঝাকানাকা একটা সম্ভাব্য মারামারিকে গলা টিপে মেরে ফেলেন। 'চোপ! বল্টু, বসে পড়ুন, নয়তো সোজা গারদে পুরে দেবো। আর বসুনিয়া, এবার আপনার পালা। বলুন, কী হয়েছিলো সে রাতে?' বসুনিয়া অস্বস্তিতে শরীর মুচড়ে শুরু করেন, 'ইয়ে --- মানে, আমি থাকি বাইরের ঘরটাতে। এ বাসায় কোন দারোয়ান নেই, তাই আমাকেই অনেকটা চারদিকে ইয়ে --- মানে, মাঝে মাঝে রাতে চোখকান একটু খোলা রাখতে হয় আর কি। কিন্তু, সেদিন সন্ধ্যাবেলা আবার আমাকে আটা কিনতে বাজারে যেতে হয়েছিলো। আমরা আবার কয়েকমাসের আটা একবারে কিনে রাখি, তাতে দরে সস্তায় পড়ে তো! তাছাড়া এই বজরঙ্গ ছেলেটা, সত্যি বলতে কি, খায় একটু বেশি।' বজরঙ্গ একটু নড়েচড়ে বসে, কিন্তু কিছু বলে না। 'তো, সেই কয়েকমণ আটা বয়ে এনে বেজায় কাহিল লাগছিলো আমার। তার ওপর, রাতে বনা রান্না করেছিলো খিচুড়ি আর মাছ ভাজা। তো, আমার এমন ঘুম পাচ্ছিলো, বুঝলেন, একটু জলদি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ---।"" বল্টু লাফিয়ে ওঠেন, 'এই ব্যাটার কাজ হচ্ছে দারোয়ানগিরি করা, আর এই শালা রাতে জেগে থেকে হয় গাঁজা খায়, নয়তো আদপে জেগেই থাকে না, পড়ে পড়ে ঘুমোয়। ওর গাফিলতির জন্যেই এই বজরঙ্গ বদমাশটা মামাকে খুন করতে পেরেছে!' বজরঙ্গ এবার তেড়ে যান বল্টুর দিকে। 'বটে? আর তুই খুব সাধু নাকি? তোরও তো হপ্তায় তিন দিন দরোয়ানের ডিউটি করতে হয়, তুই তখন কী করিস রে, য়া্যাঁ, শুনি? তুই তো তখন এই বসুনিয়ার কল্কেতে করেই গাঁজা টানিস, ব্যাটা নেশারু!' বসুনিয়া চেঁচিয়ে ওঠেন, 'ডাঁহা মিথ্যে কথা, আমার কোন কল্কে নেই!' ছাগলটা এবার সটান দাঁড়িয়ে গিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, ম্যাঅ্যাঅ্যা! ঝাকানাকা গর্জে ওঠেন, 'চোপ!' কল্কে না পেয়ে সবাই বসে পড়ে। ছাগলটাও। 'বসুনিয়া, বলে যান। এরপর যে কথার মাঝখানে কথা বলবে তাকে শরীরের নরম অংশে দু'ঘা বেত লাগানো হবে।' ফাঁকতালে বজ্রকন্ঠে বলে ওঠেন কিংকু চৌধারি। ঝাকানাকা আড়চোখে তাকান তাঁর দিকে। বসুনিয়া বলতে থাকেন, 'আমি সেদিন ভরপেট খেয়ে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ একটা গোলমালে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। আমি শুনলাম, ওপরে বজরঙ্গ আমাকে ডাকছে, ""বসুনিয়া, জলদি আয়, খুন, খুন হয়েছে!"" আমি তাড়াহুড়ো করে চাবি দিয়ে দরজা খুললাম, তারপর ভেতরে ঢুকে আবার চাবি দিয়ে দরজা বন্ধ করলাম। তারপর দৌড়ে ওপরে উঠে দেখি, দুলাভাইয়ের ঘরের ভেতরে সবাই ভিড় করে দাঁড়িয়ে, মামার ঘরে আলো জ্বলছে। আমি বুঝলাম, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। ভেতরে ঢুকে দেখি, দুলাভাই বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে পড়ে আছে, মুখের ওপর একটা বালিশ চাপা দেয়া, আর বনা খুব কান্নাকাটি করছে। তখন, আমিও চিৎকার করে উঠলাম। তখন এই বল্টু শালা আমাকে ভ্যাঙাতে লাগলো, বললো, আমিই নাকি খুন করে রেখে গেছি, এখন বাঙলা সিনেমায় শাবাহানার মতো ন্যাকা সেজে নকল কান্নাকাটি করছি। তারপর বল্টু বজরঙ্গকে বললো বালিশটা তুলে দেখতে। বজরঙ্গ বললো, সে এসব ময়লা জিনিসে হাত লাগাতে পারবে না, তার নাকি তাহলে পরে চুলকানি হতে পারে। বল্টু তখন মুখ ভেঙচে বললো, ""বটে? তাহলে খুন করার সময় কি দস্তানা লাগিয়ে ধরেছিলি নাকি? এক চড়ে মামাবাড়ি পাঠিয়ে দেবো, ব্যাটা বেলি্লক, মুখের ওপর কথা বলিস!"" বজরঙ্গ তখন ধমক দিয়ে বললো, এটাই তার মামাবাড়ি। বল্টু তখন বললো, এই মামাবাড়ি নয়, সে বজরঙ্গকে জেলখানার মামাবাড়িতে পাঠিয়ে দেবে। বজরঙ্গ তখন হো হো করে হেসে উঠে বললো, ""অশিক্ষিত কোথাকার, লোকে জেলখানাকে মামাবাড়ি বলে না, বলে শ্বশুরবাড়ি।"" তখন বল্টু একটা ঘুষি পাকিয়ে খুব লম্ফঝম্ফ করতে লাগলো। তখন বনা দুজনকে ধমকে দিয়ে নিজেই গিয়ে বালিশটা তুললো। তুলতে দেখি, দুলাভাইয়ের মুখ নীল হয়ে আছে, মুখে ফেনা গড়াচ্ছে, চোখ উল্টে আছে। আমরা এটা দেখে আবারো হায় হায় করে উঠলাম, বল্টু খ্যাকখ্যাক করে হাসতে লাগলো, আর বজরঙ্গ বললো, ""এহহে, কী অস্বাস্থ্যকর!"" তখন দুলাভাই চোখ খুললেন, একটা হাত তুললেন, তারপর বল্টুকে দেখিয়ে চোখ পাকিয়ে বললেন, ""ব --- ব --- ব --- ব ---!"" তারপর তিনি মারা গেলেন। বল্টু তখন বললো, ""মরে গেলো? গেলো তো? নাকি আবারও উঠবে?"" বজরঙ্গ আর আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, বল্টু এগিয়ে গিয়ে দুলাভাইয়ের পালস দেখলো, গালে চাপড় মারলো, শেষে বুকে কান পেতে শুনলো। তারপর বললো, ""খতম!"" বনা তখন চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে কাঁদতে লাগলো, তারপর মুখে গ্যাঁজলা তুলে ফিট হয়ে গেলো। ব্যস, তারপর আমরা ডাক্তার আর পুলিশে ফোন করলাম।' বল্টু চোখ লাল করে কিছু একটা বলতে যাবেন, এমন সময় কিংকু চৌধারি বেতটা বের করে সবাইকে দেখালেন, সবাই চুপ করে গেলেন। গোয়েন্দা ঝাকানাকা এবার এগিয়ে এসে বসলেন। তাঁর চোখ সরু, হাবভাব সুবিধের নয়। তিনি একটা বাঁকা হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বললেন, 'বটে? দেখা যাক। সব কিছু চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।' এই বলে তিনি নিজেই একটা নোটবই খুলে পেন্সিল বাগিয়ে ধরেন। আর সেইসাথে তাঁর খেইল শুরু হয়। 'মৃত আওরঙ্গ আলম, তিনি ছিলেন বিপত্নীক, এবং অপুত্রক। নবীন পাঠকদের সুবিধার জন্যে সোজা বাংলায় বলছি, তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন, এবং কোন ছেলে জন্মায়নি। তিনি প্রচুর টাকা পয়সা এবং সম্পত্তি রেখে গেছেন, যাঁর অংশীদার, যথাক্রমে তাঁর কন্যা, জামাতা, ভাগ্নে আর শালা। এঁরা ছাড়া তাঁর নিকটাত্মীয় কেউ ছিলো না। এবং, এঁরা অনেকদিন ধরেই তাঁর সাথে বাস করছেন।' ঝাকানাকা পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে মুখে পুরে দেন। অন্যান্য গল্পের গোয়েন্দাদের মতো পানতামাক খাবার বদভ্যেস তাঁর নেই। চকলেট খেতে খেতে আবারো বলতে থাকেন তিনি। 'কিন্তু, আওরঙ্গ আলম ছিলেন, যাকে বলে হাড়কেপ্পন, মাইজার টু দ্য কোর। এত টাকা থাকা সত্ত্বেও তিনি রিকশায় চড়তেন, গাড়ি কেনেননি। একটা বালিশ দিয়েই তিনি বছরের পর বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি খবরের কাগজ পড়তেন বছরে তিনবার, নাপিতের দোকানে গিয়ে। তাঁর বাড়িতে কোন কাজের লোক নেই, বরং ঘরের লোককেই সেখানে কাজ করে খেতে হয়। তাঁর রাঁধুনীর দায়িত্ব পালন করতেন বনানী পারভিন, তাঁর বাজারু-কাম-দরোয়ানের দায়িত্ব পালন করতেন জিন্দাদিল জব্বলপুরী, তাঁর পিয়ন-কাম-বাটলারের দায়িত্ব পালন করতেন বজরঙ্গ বাহরাম, আর তাঁর দরোয়ান-কাম-বাজারু ছিলেন বিল্লাল বসুনিয়া। শুধু তাই না! এঁদের প্রত্যেককেই পালা করে গোটা বাড়ি ঝাঁট দিতে হতো, নিজেদের জামাকাপড় নিজেদের কাচতে হতো, নিজেদের বাসনকোসন নিজেদের মাজতে হতো। আর জামাকাপড়ের অবস্থাও তথৈবচ, কারণ গতকাল গোটা বাড়ি আমি তন্নতন্ন করে তল্লাশী করেছি, এই দেয়াল আলমারিটা বাদে, কারণ ওটা চাবি লাগানো। কিন্তু একেকজনের কপালে পুরনো কয়েকটা মোটে জামা ছাড়া আর কিছুই জুটতে দেখিনি। এ বাড়িতে সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে বিদু্যতের খরচ বাঁচানোর জন্যে। এ বাড়ির টেলিভিশনটা আদ্যিকালের মডেলের, তাতে সরকারি টেলিভিশন ছাড়া আর মাত্র দুতিনটে চ্যানেল ধরে, নাচগানওয়ালা কোন চ্যানেল তাতে দেখা সম্ভব নয়। আর ধরলেও লাভ হতো না, কারণ, আওরঙ্গ আলম স্যাটেলাইটের কানেকশন নেননি। এমনকি লোকে বাঁশের আগায় হাঁড়িপাতিল ফিট করেও তো দুয়েকটা চ্যানেল পাকড়াতে পারে, কিন্তু তিনি সে চেষ্টাও করেননি।' সবাই অধোবদনে বসে থাকে। 'এর মানে কী? এর মানে হচ্ছে, এ বাড়ির সদস্যরা, যারা হয়তো আধুনিক জীবন সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করতে চান, তাঁরা বাধ্য ছিলেন কৃপণের মতো জীবন যাপন করতে। কিন্তু কে না চায়, বুয়ার হাতে রান্না খেতে, কাজের লোকের হাতে বাজার করাতে, দারোয়ানের হাতে গ্যাসপানিবিদু্যতের বিল পাঠাতে? কে না চায় হাল ফ্যাশানের জামাকাপড় পরে শপিং করতে, লেটেস্ট মডেলে গাড়িতে চড়ে দামী রেস্তোরাঁয় খেতে যেতে, সন্ধ্যেবেলা টিভি ছেড়ে ইদানীংকার নাচে গানে ভরপুর সিনেমাগুলো দেখতে? কাজেই, এই হাড়ভাঙ্গা হাড়কঞ্জুষ জীবন থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে বিলাসব্যসনে জীবন কাটানোর একটি মাত্রই পথ খোলা ছিলো তাঁদের সামনে, সেটি হচ্ছে, আওরঙ্গ আলমকে তার জীবন থেকে নিষ্কৃতি দেয়া। অর্থাৎ, আমি বলতে চাইছি, এ ব্যাপারে তাঁদের প্রত্যেকেরই একটি জোরালো মোটিভ ছিলো। কাজেই, এঁদের মধ্যে যে কোন এক, বা একাধিক লোক এই খুন করে থাকতে পারেন। আপনাদের জোরালো কোন অ্যালিবাই নেই, কাজেই আমার চোখে এখানে সবাই খুনী। তবে, আমার ধারণা, খুনের ফলে সবাই উপকৃত হলেও, খুনটা করেছে একজন, বা দু'জন।' তবুও সবাই অধোবদনে বসে থাকে। 'এবার আসুন, আমরা আরো দূর অতীতকে যাচাই করে দেখি। প্রথমেই যিনি অনুপস্থিত, সেই বনানী পারভিনের ঘটনা। এ ঘটনা আমরা জানতে পেরেছি প্রতিবেশী মিসেস হাক্কানীর কাছ থেকে, যিনি মাঝে মাঝে এ বাড়িতে বেড়াতে আসতেন। গত পরশু দিন, সন্ধ্যে ঊনিশশো ঘন্টায়, আওরঙ্গ আলমের সাথে বনানীর তুমুল বচসা হয়। বনানী বলেন, সারাটা জীবন তিনি আওরঙ্গ আলম আর তাঁর একপাল জ্ঞাতিগোষ্ঠীর খেদমত করে আসছেন, রান্নাঘরেই তিনি গোটা জীবনটা কাটিয়ে দিয়ে গেলেন, নিজের জামা কেচে, নিজের বাসন মেজে, আর নিজের ঘর ঝাঁট দিতে দিতে তাঁর হাতে কড়া পড়ে গেছে। বদলে তিনি কী পাচ্ছেন? শান্তিমতো একটু বসে চা খেতে খেতে ইদানীংকার হিন্দি কুচুটে সিরিয়ালগুলোতে শাশুড়ি-বউয়ের ঝগড়ার আধুনিক কানুন সম্পর্কে যে একটু ওয়াকেবহাল হবেন, তারও তো উপায় নেই। সরকারি টিভিতে প্রধানমন্ত্রী আর তার তেলবাজ চ্যালাচামুন্ডাকে দেখে দেখে চোখ ব্যথা হয়ে গেলো। আর ঐ টিভিতে যেসব নাটকসিনেমা দেখায়, সেটা ভদ্রলোকের দেখার উপযোগী নয়। তাছাড়া ওতে শিক্ষণীয় কিছু নেই, যাবতীয় আধাশিক্ষিত লোকজন সেখানে উপস্থাপক-নাট্যকার-নির্দেশক। কাজেই অবিলম্বে বাড়িতে ডিশের সংযোগ দিতে হবে। এর জবাবে আওরঙ্গ আলম বলেন, তিনি যখন চুল কাটাতে যান, তখন নাপিতের দোকানে বসে খবরের কাগজ পড়ার সুযোগ হয় তাঁর। ওতে তিনি পড়েছেন, আকাশ সংস্কৃতি নামের একটা বাজে জিনিস নাকি এই ডিশের কল্যাণে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। তাঁর মোটেও ভালো লাগেনি জিনিসটা। আর তাছাড়া, বসতে দিলেই লোকে শুতে চায়। এই ডিশের সংযোগ বাড়িতে এলে দুদিন পর বনানী পারভিন আবারো একটা বায়নাক্কা ধরবেন। ওসব তিনি বরদাশ্ত করবেন না। কাজেই যেমন ছিলো, তেমনই চলবে। তিনি বেঁচে থাকতে, আই রিপিট, তিনি বেঁচে থাকতে এ বাড়িতে ডিশের সংযোগ লাগবে না।' তিন ব্যক্তি একে অপরের দিকে তাকান। 'কি, খুব চমকে গেলেন? ভাবছেন, বনানী পারভিনই খুন করেছেন? দাঁড়াও পথিকবর! এবার জিন্দাদিল জব্বলপুরী, ওরফে বল্টু। গত পরশু সকালে আপনার সাথেও আওরঙ্গ আলমের এক চোট ঝগড়া হয়েছে। এর সাক্ষী বাজারে পানের দোকানদার মন্টু মিয়া, যাঁর দোকানে আপনি একজন নিয়মিত খরিদ্দার। কোন এক অজ্ঞাত কারণে সেদিন আওরঙ্গ আলম স্বয়ং আপনার সাথে বাজারে গিয়েছিলেন, উদ্দেশ্য, জিনিসপত্রের সত্যিকার দাম যাচাই করা। সম্ভবত, তিনি টের পেয়েছিলেন, যে আপনি মাঝে মাঝেই বাজারের জন্যে বরাদ্দ টাকাপয়সা থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেন। সেদিন বাজারে ঘুরে ঘুরে আলু, পেঁয়াজ, সব্জি, মুরগী, গরু, খাসি, মাছ, মশলা ও ফলের দরদাম করে তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন, এবং আপনাকে ছোটলোক, বাটপার বলে গালাগালি করেন। সবই আপনি সহ্য করে যান। এরপর পানের দোকানদার মন্টু মিয়ার দোকানের সামনে দিয়ে যাবার সময় সে হঠাৎ আপনাকে ডেকে বলে, ""ভাইজান, আজকে পান খাবেন না?"" অমনি আওরঙ্গ আলম তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন, এবং মন্টু মিয়াকে উপর্যুপরি জেরা করে জানতে পারেন, আপনি মন্টুর বহু বছরের পুরনো কাস্টোমার। এতে তিনি আরো ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন, আপনাকে শাপশাপান্ত করতে থাকেন, এবং হুমকি দেন, ভবিষ্যতে আর তিনি আপনাকে বাজার করতে পাঠাবেন না, এ দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন বজরঙ্গ বাহরামের ওপর, অথবা, তিনি নিজেই রোজ বাজার করতে বেরোবেন। এবং এরপর তিনি আরো গজগজ করতে থাকেন, আপনি যে এভাবে বাজারের পয়সা মেরে পানতামাক খেয়ে খেয়ে মোটা হয়েছেন, সেটা তিনি মোটেও বুঝতে পারেননি, তিনি ভেবেছিলেন আপনি মোটা বংশের ছেলে, কিন্তু এখন তিনি বুঝতে পারছেন, আপনাদের বংশ ঠিক কী পদ্ধতিতে মোটা হয়েছে। মন্টুর সাক্ষ্য অনুযায়ী, আপনিও এতে খুব ক্রুদ্ধ হন, এবং বলেন, ""আব্বাসাহেব, বংশ তুলে কথা বলা ঠিক নয়! আমরা জব্বলপুর থেকে আগত জমিদার বংশের লোক, আমার পূর্বপুরুষ হাঁসের মাংস আর যবের রুটি খেয়ে খেয়ে তাগড়াই হয়েছিলেন!"" তখন নাকি আওরঙ্গ আলম দাঁত খিঁচিয়ে বলেছিলেন, ""বটে? তা ঐ হাঁস আর যব কি ক্ষেত থেকে ধরে আনা, নাকি বাজারের পয়সা মেরে কেনা?"" এর উত্তরে আপনি কিছু বলেন না, মাথা চুলকাতে থাকেন। তখন আওরঙ্গ সাহেব বলেন, জীবন থাকতে তিনি আর আপনার মতো একটা গাঁটকাটাকে বাজারে পাঠাবেন না, তাঁর অনেক শিক্ষা হয়েছে। আপনাকে তিনি আর বুকে বসে দাড়ি ওপড়ানোর সুযোগ দেবেন না, এই মর্মে ঘোষণা দিয়ে তিনি মন্টুর দোকান ত্যাগ করেন। মন্টু তখন আপনাকে বিড়বিড় করে অকথ্য গালাগালি করতে শুনেছে, এবং আপনি নাকি বলেছিলেন, ""দাঁড়া বুডঢা, আজকেই তোর হালুয়া টাইট করে ছাড়বো!"" এরপর আপনারা দুজন রিকশায় করে বাড়ি ফিরে যান।' বল্টু ভীষণই উত্তেজিত হয়ে বলেন, 'মোটেও না, আব্বাসাহেব আমাকে ভীষণই স্নেহ করতেন, তিনি নিজেই আমাকে লুকিয়ে পয়সা দিতেন পান খাওয়ার জন্যে, আর আমি মোটেই ওসব গালাগালি করিনি! এই মন্টু হারামজাদা মিছে কথা বলেছে!' ঝাকানাকা মৃদু হাসেন। তারপর চোখ পাকিয়ে কড়া গলায় বলেন, 'বটে? আহ্লাদের আর জায়গা পাও না? তুমি বাদে সবাই খালি মিছে কথা বলে, আর তুমি বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী, খালি সত্য কথা কপচাও, অ্যাঁ? একদম চুপ করে বসে থাকো। ট্যাঁফোঁ করলেই বেত।' কিংকু চৌধারি বেতটা উঁচিয়ে দেখান সবাইকে। বল্টু চুপ করে বসে পড়েন, তাঁর মুখ চুন। এরপর বজরঙ্গ বাহরামের দিকে ফেরেন তিনি। 'এইবার, আপনার পালা, জনাব বজরঙ্গ বাহরাম। গত পরশুদিন সকালে আপনার সাথেও আওরঙ্গ আলমের মতবিভেদ হয়েছে। এর সাক্ষী পাশের বাড়ির হাক্কানী সাহেব। তিনিও আপনার মতো ব্যায়ামবাগীশ লোক, আপনার মতো তাঁরও কিঞ্চিৎ স্বাস্থ্যবাতিক রয়েছে, তিনিও আপনার মতো রোজ ছাদে উঠে ব্যায়াম করেন। নাকি? হ্যাঁ। তার কথা মতো, পরশুদিন ভোরে, যখন আপনি ব্যায়াম করছিলেন, তখন আওরঙ্গ আলম ছাদে উঠে আসেন। এসে আপনাকে কষে বকাবকি করতে থাকেন। তিনি বলেন, রোজ ভোরে এরকম ধুপধাপ করা চলবে না। ওরকম মোষের মত গতর নিয়ে ছাদের ওপর দাপিয়ে বেড়ালে মানুষের ঘুমের দস্তুরমতো ব্যাঘাত হয়, এটা কি আপনি বোঝেন না? আর এত জায়গা ফেলে ছাদে উঠে কেন ব্যায়াম করতে হবে আপনাকে? নাকি ছাদে উঠে ব্যায়াম করা নয়, বরং পাশের বাড়ির কতিপয় তরুণীকিশোরীর সাথে টাঙ্কি মারাই আপনার উদ্দেশ্য? হাক্কানী সাহেবের একটি তরুণী কন্যা মাঝে মাঝে ভোরে ছাদে ফুলগাছে পানি দিতে আসে, কাজেই আওরঙ্গ সাহেবের সন্দেহ হয়তো অমূলক নয়। তখন আপনি ব্যায়াম থামিয়ে মাথা চুলকে বলেন, আপনাকে কোন একটা জিমনেসিয়াম কি ব্যায়াম ক্লাবে ভর্তি করিয়ে দিতে, অথবা কিছু ব্যায়ামের যন্ত্রপাতি কিনে দিতে, যাতে আপনি হয় বাড়ি থেকে দূরে, অথবা ঘরে বসে নিঃশব্দে ব্যায়াম করতে পারেন। তখন আওরঙ্গ আলম জানতে চান, টাকা কি আদৌ গাছে ধরে কি না। যদি ধরে থাকে, তাহলে ওরকম একটা গাছ তিনি শিগগীরই আনাবেন, কারণ সেই গাছের গোড়ায় যোগানোর মতো গোবর সারের অভাব মাশাআল্লা আপনার মাথায় নেই। আপনার এই মোষের মতন গতরের পেছনে এমনিতেই নাকি তাঁর মাসে মোটা অঙ্কের টাকা গচ্চা যায়, আপনার খোরাকির টাকায় নাকি এক ডজন লোক পোষা যায়, আর আপনি কোন সাহসে এর পরও তাঁর কাছে টাকা চাইতে সাহস করেন। তখন আপনি চড়া গলায় বলেন, আপনার মামা আপনাকে যে হারে খাটিয়ে মারেন, যেভাবে আপনাকে পায়ে হেঁটে এখানে ওখানে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়, এবং মাঝে মাঝে যেভাবে পাওনাদারদের ওপর গুন্ডামি করতে হয়, তাতে করে চামচিকের মতো গতর পোষা আপনার পোষায় না। মোষের মতো কাজ করতে হলে তো গতরটাও সেই অনুপাতে, নূ্যনতম মোষের মতোই হওয়া চাই। শুয়ে বসে থেকে আর কব্জি শুকনো রেখে খাওয়দাওয়া করে তো তা হওয়ার নয়। কাজেই এমন হারে ব্যায়াম আর ভোজন আপনাকে চালিয়ে যেতেই হবে। আর ছাদের ওপরটাই আপাতত আপনার ব্যায়ামের জন্যে প্রশস্ত স্থান, সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোহাওয়া আসে। তখন আওরঙ্গ সাহেব বলেন, তিনি বেঁচে থাকতে এই ছাদের ওপর ব্যায়ামের নামে অত্যাচার চলতে দেবেন না। আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করলে তিনি আপনার খোরাকি কমিয়ে দেবেন, বিশেষ করে ছোলার পেছনে যে খামাখা পয়সাটা বেরিয়ে যায়, সেটা নাকি তিনি আটকে দেবেন। তখন আপনি ক্ষেপে গিয়ে বলেন, পালোয়ানদের দুধঘিকাবাব খেতে হয়, আর আপনি খান সামান্য ছোলা, তাতেও আওরঙ্গ সাহেবের গা জ্বলে কেন? তখন আওরঙ্গ সাহেব আপনাকে বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে তিনি আপনাকে জুতিয়ে আঞ্জুমানে মফিদুলের গোডাউনে পাঠিয়ে দেবেন। তখন আপনি নাকি বাইসেপ বাগিয়ে শাসান, আপনার মামা নাকি সাপের পাঁচ পা আর ঘুঘু দুটোই দেখেছেন, কিন্তু ফাঁদ দেখেননি। আপনি তাঁকে উৎপাত করতে নিষেধ করেন, এবং আরো হুমকি দেন, আপনি সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে ঘিয়ের বোয়াম কাত করতে জানেন। তখন আওরঙ্গ সাহেব কোন কথা না বলে গটগটিয়ে নিচে নেমে যান।' বজরঙ্গ মাথা নেড়ে বলেন, 'মামা আমাকে দুদিন পরপরই এমন করে শাসাতেন। প্রায়ই ছোলামটর বন্ধ করে দেবার ভয় দেখাতেন, আর আমিও মেজাজ গরম করতাম। এটা এমন কিছু নয়।' বল্টু আবারো তড়াক করে দাঁড়িয়ে যান। 'এমন কিছু নয়? ব্যাটা মর্কট, রোজ ভোরে ধুপধাপ করে কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে দিস, আবার বলিস এমন কিছু নয়? তোর জ্বালায় আমরা বছরের পর বছর ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠছি! আব্বাসাহেবের উচিত ছিলো চাবকে তোকে ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলা!' বজরঙ্গ কিছু বলেন না, শুধু রক্তচক্ষু মেলে তাকিয়ে থাকেন বল্টুর দিকে। কিংকু চৌধারিও অনুরূপ রক্তিম দৃষ্টিতে বেতটা বল্টু জব্বলপুরীর নাকের সামনে থেকে ঘুরিয়ে আনেন। ঝাকানাকা এবার বসুনিয়ার দিকে তাকান। 'আর আপনি, জনাব বসুনিয়া, আপনিও একজন ঘুঘু। আপনার নামে অভিযোগ গুরুতর। এর সাক্ষী উল্টোদিকের বাড়ির দারোয়ান খেলাত মিয়া। আপনাকে নাকি সেদিন দুপুরে আওরঙ্গ সাহেব পাড়া মাথায় তুলে ধমকাধমকি করেছেন, শাসিয়েছেন বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবেন বলে। তিনি আপনাকে গ্যাস, পানি আর বিদু্যতের বিল দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু আপনি গত পাঁচমাস ধরে বিল দেননি, বরং ব্যাঙ্কের সীল এবং সইসাবুদ জাল করে সেই টাকা গাপ করেছেন, খুব সম্ভবত গাঁজার বাজেট যোগানোর জন্যে। তখন তিতাস-ওয়াসা-ডেসা সব জায়গা থেকে লোক এসেছিলো যথাক্রমে গ্যাসপানিবিদু্যতের লাইন কেটে দিতে, তাদের নিরস্ত করতে আওরঙ্গ সাহেবকে রীতিমতো পয়সা খরচ করতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, গত পাঁচ মাসের বিলও পরিশোধ করতে হয়েছে নতুন করে। এ ছাড়াও, আপনার দুলাভাইয়ের ধারণা, আপনি রাতে ঠিকমতো পাহারা দেন না, বরং নেশা করে ঘুম দেন, তিনি নিজে তার আগের দিন রাতে আপনার নাক ডাকার শব্দ শুনেছেন। তখন আপনি বলেছিলেন, তাতে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে, দরোয়ান বলে কি আপনি মানুষ নন? আপনার কি সাধআহ্লাদ নেই? তখন আওরঙ্গ সাহেব গর্জন করে বলেছেন, ""শালা ছোটলোক, তুই যদি এই পাঁচমাসের বিল কড়ায়গন্ডায় চুকিয়ে না দিস আমাকে, তোর নামে আমি মামলা করবো, তোকে জেলের রুটি খাইয়ে ছাড়বো। তোর ঘরে যে গাঁজার পেটি রাখা আছে, জানি আমি।' তখন আপনি নাকি বলেছেন, ""বেশি তেড়িবেড়ি করবেন না দুলাভাই, দিনকাল খারাপ, রাতকাল আরো খারাপ!"" তখন আপনার দুলাভাই বলেন যে তিনি আগামীকাল ভোরেই পুলিশ দিয়ে আপনাকে হটিয়ে দেবেন বাড়ি থেকে।' বসুনিয়া ঢোঁক গিলে বলেন, 'কিন্তু আমি তো পরে দুলাভাইয়ের কাছে মাফ চেয়েছি, উনি বলেছিলেন, আমি ছোট মানুষ, তাই এবারের মতো আমাকে মাফ করে দিয়েছেন, ভবিষ্যতে যাতে এমন আর না করি!' বল্টু মুখ ভেঙচে বলেন, 'মাফ চেয়েছিস তুই? তোর মতো একটা ইতর, যে কি না সারাটা জীবন গুন্ডামি করে বেরিয়েছে, তোর ভয়ে আব্বাসাহেব রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারতেন না, আর তুই চাইবি মাফ?' বসুনিয়া গর্জে ওঠেন, 'আর তুই? তুই আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে আমার ঘরে বসে আমারই কল্কেতে করে গাঁজা খাস, আর সেই তুই-ই তো দুলাভাইয়ের কাছে গিয়ে চুকলি কেটেছিস, ব্যাটা জাত ছোটলোক!' বল্টু চেঁচিয়ে ওঠেন, 'খবরদার, জাত তুলে কথা বলবি না, জানিস, আমরা জব্বলপুরের জমিদার বংশের লোক, তোর মতো লোক আমাদের জুতো পাহারা দিতো ---।' বসুনিয়াও চিল চিৎকার দেন, 'কারণ জুতো ছাড়া আর কিছু তোদের জুটতো না পরার জন্যে, চোট্টা কাঁহিকা!' বজরঙ্গ নাক সিঁটকে বললেন, 'বসুনিয়া, তুই না একটু আগে বললি, তোর কোন কল্কে নেই?' ছাগলটা ম্যা করে ডেকে ওঠে। ঝাকানাকা বেতটা হাতে তুলে নেন, সবাই চুপ করে যায়। গোয়েন্দাপ্রবর এবার একটা ক্রুর হাসি দিয়ে বলেন, 'বেশ বেশ, অনেক কিছু জানতে পারলাম আমরা। বনানী পারভিনের জবানবন্দি নিলে আরো অনেক কিছু জানতে পারবো আমরা, আশা করা যায়। এবার গোটা চিত্রটা খুঁটিয়ে দেখি আমরা। আওরঙ্গ আলম মারা গেছেন, এবং যে রাতে মারা গেলেন, তাঁর আগের দিনই আপনাদের চারজনের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া, বলা যায়, সিরিয়াস ঝগড়া হয়েছে। এবং চারটি ক্ষেত্রেই তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন, যাতে আপনারা প্রত্যেকেই তাঁকে তড়িঘড়ি করে খুন করার জন্যে উৎসাহিত হতে পারেন। তাঁকে চটজলদি মেরে ফেললে বনানী পারভিন ডিশের সংযোগ দিতে পারবেন, বল্টু সাহেব বাজারের দায়িত্বে বহাল থাকতে পারবেন, বজরঙ্গ সাহেব ছোলামটর খেয়ে ছাদে ব্যায়াম চালিয়ে যেতে পারবেন, এবং বসুনিয়াও এই বাড়িতে বহাল থেকে গাঁজা খেতে পারবেন। তাই না?' তিন ব্যক্তি এ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। 'কাজেই, আপনাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যিনি আওরঙ্গ আলমের মৃতু্যতে উপকৃত হননি, উপকারের কিসিম যতই বিদঘুটে হোক না কেন।' ঝাকানাকা ঠা ঠা করে হাসেন। 'এবার তবে চলুন, আপনাদের গপ্পো অনুযায়ী ঘটনাটা যাচাই করে দেখা যাক।' সবাই নড়েচড়ে বসেন, ছাগলটা ডান কাতে শুয়ে ছিলো, সে বাম কাতে শোয় এবার। 'বল্টু!' হাঁক ছেড়ে বলেন ঝাকানাকা। 'আপনার কথামতো, সেদিন রাতে নিচে একটা ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ হয, তারপর সিঁড়িতে খুটখাট শব্দ হয়, তারপর আওরঙ্গ আলমের ঘরে ধস্তাধস্তির শব্দ হয়, তারপর আবার সিঁড়িতে খুটখাট শব্দ, এবং সবশেষে আবার ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ হয়। তাই তো?' বল্টু জব্বলপুরী মাথা নাড়েন। 'আপনার সাক্ষ্য থেকে ধরে নেয়া যেতে পারে, কেউ একজন নিচ থেকে ওপরে উঠে এসেছিলো, তারপর আওরঙ্গ আলমকে মুখে বালিশ চেপে ধরে খুন করেছিলো, তারপর আবার নিচে নেমে গিয়েছিলো। তাই না?' বল্টু আবারো মাথা নাড়েন। 'তাহলে, আপনার ভাষ্য অনুযায়ী, খুনী নিচে নেমে যাবার পর আপনি এবং বনানী পারভিন নিহত আওরঙ্গের ঘরে যান।' 'হ্যাঁ।' জোর দিয়ে বলেন বল্টু। 'এবং আপনাদের চিৎকার শুনে দোতলার ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন বজরঙ্গ বাহরাম?' 'হ্যাঁ।' 'তাহলে বজরঙ্গ বাহরাম তো খুন করতে পারেন না, তাই না?' বল্টু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ঢোঁক গিলে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলেন, 'কেন, পারে না কেন?' 'কারণ আপনার কথামতো খুনী নিচে নেমে গেছে, আর বজরঙ্গ বের হয়েছেন দোতলার ঘর থেকে। তিনি খুন করলে নিচে গেলো কে, আর তিনি নিচে গেলে দোতলার ঘর থেকে বেরোলেন কী করে?' বল্টু নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, 'এটা একটা কথা? ওই ব্যাটা এক ছুটে নিচে নেমে গিয়ে, আবার পা টিপে টিপে দোতলায় নিজের ঘরে ঢুকে গিয়েছিলো। অথবা রেলিং ধরে দোল খেয়েও ওপরে উঠে যেতে পারে। ওর পক্ষে সবই সম্ভব।' 'সেটা তিনি কেন করবেন?' 'আমাদের ধোঁকা দেয়ার জন্যে।' এবার বল্টুর মুখে হাসি ফোটে। 'তাছাড়া ওর স্বাস্থ্যটা দেখুন না। আব্বাসাহেবের মতো লোককে মুখে বালিশ চেপে খুন করার মতো তাগদ ওর আছে!' এবার বজরঙ্গ মুখ খোলেন, 'সেটা তো তোদের দুজনেরও আছে। তুই আর বনা মিলে যে কাজটা করিসনি তার কী প্রমাণ আছে রে ব্যাটা নির্বংশের পো?' বল্টু তেড়েফুঁড়ে ওঠেন, 'খবরদার, বংশ তুলে কথা বলবি না! আমার খুন করার কী দায় পড়েছে রে? আমি জামাই মানুষ, নিতান্ত আপনজন। তুই ব্যাটা ভুঁইফোঁড় ভাগ্নে, ভাগ নেয়ার তালে ফোকটে বছরের পর বছর খেয়ে চলছিস, যেই আব্বাসাহেব খেদিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন, অমনি খুন করে বসেছিস!' 'থামুন, থামুন!' ঝাকানাকা হেঁকে ওঠেন। 'উঁহু বল্টু, আপনার থিয়োরি বড্ড ঝামেলা করছে। খুনখারাবা করার পর অত দড়াবাজি করা কি পোষায়, বলুন? আর বজরঙ্গের যা মোষের মত গতর, সিঁড়ির রেলিং ধরে দোল খেতে চাইলে গোটা রেলিং ধ্বসে পড়তে পারে। বল্টু, আপনার কথা সত্যি হলে বজরঙ্গকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।' 'ইয়াহু!' হাততালি দিয়ে ওঠেন বজরঙ্গ। 'উঁহু, অত খুশি হবার কিছু নেই, জনাব বজরঙ্গ। কারণ, বল্টু যে সত্যি কথা বলছেন, তার কোন প্রমাণ নেই। যাই হোক, বল্টুর কথামতো, চিৎকার করার পর নিচ থেকে ছুটে আসেন বসুনিয়া। কাজেই, তাঁকে আমরা খুনী হিসেবে সন্দেহ করতে পারি।' বসুনিয়া চেঁচিয়ে ওঠেন, 'এটা একটা কথা হলো? আমি নিচে থাকি, এটাই আমার পাপ?' 'উঁহু, বসুনিয়া, চেঁচাবেন না, চেঁচালেই পাছায় বেতের বাড়ি পড়বে, বলে দিচ্ছি! --- আপনি নিচ থেকে ছুটে এসেছেন, কথা সত্য। আরেকটা সত্যি কথা হচ্ছে, আপনি গদাম করে দরজাটা খুলে, তারপরে ভেতরে ঢোকেন। আপনাদের বাহিরের দরজা আমি পরীক্ষা করে দেখেছি, সেটা খোলার সময় কোন ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ হয় না, বরং কুকুরের হাই তোলার মতো একটা আওয়াজ হয়। আর দরজা বন্ধ করলে যে শব্দটা হয়, সেটা ঠিক গদাম নয়, বরং ধড়াম! যাই হোক, যেই লাউ সেই কদু, কাজেই এই ক্যাঁচক্যাঁচ আর গদামই আপনাকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে, কারণ আপনি যদি বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকতেন, তাহলে শুরুতেই একটা কুকুরের হাই শোনা যেতো, তারপর বেরিয়ে যাবার সময় একটা গদাম শোনা যেতো। সেটা যখন শোনা যায়নি, তখন আপনি সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ।' বসুনিয়া দুহাতে কল্কে ধরার ভঙ্গি করে বললেন, 'হক মাওলা!' 'উঁহু, বসুনিয়া, অত নাচবেন না। কে জানে, বল্টু হয়তো গোড়া থেকেই মিছে কথা বলে চলছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনাদের দুজনকে বাদ দিলে থাকেন কে কে? বল্টু আর বনানী। আবার, বজরঙ্গ বল্টুকে ঘরের ভেতর থেকে বেরোতে দেখেছেন। সেক্ষেত্রে কান চেপে ধরতে হচ্ছে মিস্টার অ্যান্ড মিসেস বল্টুর।' বল্টু প্রতিবাদের জন্যে মুখ খোলেন, ঝাকানাকা বেত নিয়ে তেড়ে যান তার দিকে। এমন সময় ঘরের দরজায় টোকা পড়ে। কিংকু চৌধারি হাঁক পাড়েন, 'কে ওখানে?' বাহির থেকে উত্তর আসে, 'হাসপাতাল থেকে এসেছি, মিসেস পারভিনকে নিয়ে।' কিংকু চৌধারি এগিয়ে গিয়ে দরজা খোলেন। সাদা পোশাক পরা দুই অ্যাটেন্ড্যান্ট বনানী পারভিনকে নিয়ে বাড়িতে ঢোকেন, পেছনে ভারপ্রাপ্ত পুলিশের ডাক্তার জনাব মুশকিল আহসান। 'এনার স্বামী কে?' কড়া গলায় প্রশ্ন করেন ডাক্তার। 'আমি।' উঠে দাঁড়ান বল্টু। 'নিন, এই রসিদে সই করুন, এই যে লেখা আছে, আমি রোগীকে সুস্থ অবস্থায় আমার হেফাজতে বুঝিয়া পাইলাম।' একটা রসিদ এগিয়ে দেন ডাক্তার। বল্টু কলম হাতে ইতস্তত করতে থাকেন, তারপর বলেন, 'ও এত জলদি সুস্থ হয়ে গেলো, ডাক্তার সাহেব? আরো মাসখানেক হাসপাতালে থাকলে কি আরো সুস্থ হতো না?' ডাক্তার মুশকিল কড়া চোখে আপাদমস্তক দেখেন বল্টুকে। তারপর বলেন, 'না, একেবারেই চলতো না। আর উনি একদম ফিট, খামাকা হাসপাতালের সিট দখল করে পড়ে থাকবেন কেন? আর শুনুন জনাব, আপনার স্ত্রী জ্বালিয়ে একশা করে মেরেছে আমাদের। হাসপাতালের টেলিভিশনের সামনে দিনরাত হাঁ করে পড়ে থাকতেন, বস্তাপঁচা হিন্দি কিছু সিরিয়াল দেখায় কী একটা চ্যানেলে, সেগুলো গিলতেন বসে বসে। ইংল্যান্ড আর সাউথ আফ্রিকার ওয়ানডে ম্যাচ ছিলো একটা, ওনার জ্বালায় কেউ খেলা দেখতে পারেনি!' বনানী পারভিন কাংস্যবিনিন্দিত গলায় বলেন, 'কী হলো বল্টু, হাঁ করে তাকিয়ে আছো কেন? পটাপট একটা সই করে এই বাজে লোকটাকে বিদায় করো না!' বল্টু একটা সই দেন। ডাক্তার সাহেব তাঁর অনুচরদের নিয়ে বিদায় হন। ঝাকানাকা মোচে তা দেন। 'বসুন, মিসেস বল্টু। এখানে পরিস্থিতি গুরুতর। যতদূর মনে হয়, খুনটা আপনি আর বল্টু সাহেব মিলেই করেছেন।' বনানী পারভিন কষে একটা ধমক দেন, 'চোপ! ফালতু কথা বলার জায়গা পান না? ঝাড়ু মেরে খেদিয়ে দেবো বাসা থেকে!' এদিক ওদিক তাকিয়ে ঝাড়ু খোঁজেন তিনি। 'একটা দিন আমি বাড়িতে নেই, কী বিশ্রী হাল হয়েছে ঘরদোরের। একগাদা আবর্জনা জমেছে, আর এসে জুটেছে কিছু ফালতু লোকজন ---!' ঝাকানাকা নিরাপদ দূরত্বে সরে গিয়ে বললেন, 'দেখুন, ভায়োলেন্স আমি মোটেও পছন্দ করি না। ভালোয় ভালোয় যদি তদন্তে সহযোগিতা না করেন, তাহলে কিন্তু কোমরে দড়ি বেঁধে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে।' বনানী উজ্জ্বল মুখে বললেন, 'থানায় টিভি আছে?' ঝাকানাকা মাথা নাড়েন। 'জ্বি না ম্যাডাম। ওখানে ছারপোকা আর অপরাধী ছাড়া কিছু নেই। কাজেই দয়া করে বলুন, কে খুন করেছিলো আওরঙ্গ সাহেবকে, আপনি, বল্টু নাকি আপনারা দুজনেই?' বনানী চটে গিয়ে বলেন, 'আপনারা আমাদের নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করছেন কেন? বাবাকে খুন করেছে ওনার এক পাওনাদার!' সবাই এবার চুপ হয়ে যায়। 'বলেন কী?' হতভম্ব ঝাকানাকা কোনমতে বলেন। 'হ্যাঁ। এক মাস ধরে হুমকি চিঠি পাঠাচ্ছিলো লোকটা, পাওনা টাকা শোধ না করলে নাকি সে বাবাকে খুন করবে। তো, এমন অনেক পাওনাদারই হুমকিটুমকি দিতো বাবাকে, বাবা পাত্তা দিতো না। সেদিন সন্ধ্যাবেলা লোকটা বাসায় ফোন করেছিলো, আমিই ফোন ধরেছিলাম। লোকটা আমাকে বললো, যেহেতু টাকা শোধ করা হয় নি, কাজেই আমার বাবার হায়াত নাকি শেষ, শিগগীরই পটল তুলবেন তিনি। আমি বললাম যে বাবার মতো কঞ্জুষ দুনিয়াতে দুটো নেই, কাজেই তিনি যেন এই টাকার আশা বাদ দেন। তখন লোকটা বললো, টাকার আশা সে বাদ দিয়েছে এর মধ্যেই, কিন্তু আমরাও যাতে বাবার বাঁচার আশা বাদ দেই, আজ রাতেই নাকি সে একটা হেস্তনেস্ত করে ছাড়বে। বললো, বদরু খাঁ-র টাকা মেরে বেঁচে থাকবে, এমন বান্দা নেই দুনিয়াতে ---।' 'কী নাম বললেন?' গর্জে উঠলেন ঝাকানাকা। 'বদরু খাঁ।' একটু অবাক হয়ে বলেন বনানী। উত্তেজনায় লাফিয়ে ওঠেন কিংকু চৌধারি। 'আলবাত!' দাঁতে দাঁত পিষলেন ঝাকানাকা। 'বদরু খাঁ ছাড়া আর কে-ই বা হতে পারে? সেই পিশাচ খুনে, যে খুন করতে দ্বিধা করে না, যে রাত বারোটা ছাড়া কখনো খুন করে না, যে ছদ্মবেশে আমার মতোই পাকা, যাকে আমি এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারিনি, যে আমার প্রতিটি গল্পে হাজির হয়ে আমার তদন্তের বারোটা বাজায়, সেই বদরু খাঁ ছাড়া আর কে-ই বা করতে পারে এই খুন? এই বল্টু-বজরঙ্গ-বসুনিয়া তো বদরুর কাছে নস্যি! আর তার নামও তো, যাকে বলে গিয়ে, ব দিয়ে শুরু! য়্যাঁ? তার মানে, বদরু খাঁ-ই খুনটা করেছে, আর তার নামই বলতে চাচ্ছিলেন হতভাগা আওরঙ্গ আলম, কিন্তু ব-এর বেশি এগোতে পারেন নি!' সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচে, বিশেষ করে বল্টু। 'মিসেস বল্টু ---।' থেমে পড়তে বাধ্য হন ঝাকানাকা। 'আমার নাম বনানী, খবরদার মিসেস বল্টু বলবেন না!' বনানী গর্জে ওঠেন। 'আচ্ছা, নিশ্চয়ই, মিসেস বনানী। সেই হুমকি চিঠিগুলো কোথায় রেখেছেন? নাকি ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছেন?' 'বাবা ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছিলো, কিন্তু আমি দিইনি, জমিয়ে রেখেছি।' 'কেন জমিয়ে রেখেছেন?' ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে বলেন। 'ভেবেছিলাম কাগজওয়ালার কাছে বেচে দেবো, লোকটা যা লম্বাচওড়া চিঠি লিখতো, সব মিলিয়ে কয়েক কেজি কাগজ জমেছিলো ---।' 'ঠিক আছে, কোথায় রেখেছেন সেটা, নিয়ে আসুন।' ঝাকানাকা পায়চারি করতে থাকেন। 'এই যে, নিচতালার দেয়াল আলমারিতে।' বনানী এগিয়ে যান। আঁচলে বাঁধা চাবি দিয়ে দেয়াল আলমারিটা খুলতেই একটা চেনা শব্দ ঘরে ছড়িয়ে পড়ে, ক্যাঁচক্যাঁচ ক্যাঁচক্যাঁচ! ঝাকানাকা ঝট করে ফেরেন। তারপর ছুটে যান দেয়াল আলমারির দিকে। কঞ্জুষদের আলমারি যেমনটা হয়, প্রায় ফাঁকা। সেখানে অনায়াসে একজন মানুষ লুকিয়ে থাকতে পারে। 'তার মানে, এই আলমারিতেই লুকিয়ে ছিলো বদরু খাঁ!' চেঁচিয়ে ওঠেন ঝাকানাকা। 'এখান থেকে বেরিয়েই সে আওরঙ্গ সাহেবকে খুন করে, তারপর আবার এখানে এসে ঢোকে!' কিংকু চৌধারি মোলায়েম ভাবে কাশেন। 'কিন্তু, তাহলে আলমারিটা তো খোলা থাকার কথা, এটা বন্ধ ছিলো কেন?' হক কথা। ঝাকানাকা চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিংকু চৌধারি সমাধান যুগিয়ে দেন, 'অবশ্য, এই সামান্য তালা বদরু খাঁ-র কাছে কোন সমস্যাই নয়! যে লোক জর্দানের বাদশার ব্যক্তিগত গুদাম থেকে উট চুরি করতে পারে, তার কাছে এসব তালা তো বাম হাতের কড়ে আঙুলের মামলা!' হক কথা। ঝাকানাকার মুখে হাসি ফোটে। 'তাহলে ভাইসব, আসুন দুয়ে দুয়ে চার মেলাই।' উদাত্ত গলায় বলেন ঝাকানাকা, আর বলবেন না-ই বা কেন, রহস্যের জট যখন খুলে গেছে। 'কোন এক ফাঁকে আপনাদের বাড়িতে এসে ঢোকে বদরু খাঁ। সেটা তার জন্যে কোন সমস্যাই নয়, বিশেষ করে, দরোয়ানের দায়িত্বে যখন একজন গাঁজাখোর বহাল থাকেন। সে এসে এই দেয়াল আলমারির মধ্যে লুকিয়ে থাকে। তারপর বারোটা বাজতেই সে বেরিয়ে পড়ে --- কেন না রাত বারোটা না বাজলে এই খুনজখমের কাজটা তার ঠিকমতো আসে না --- যথাক্রমে ক্যাঁচক্যাঁচ এবং খটখট শব্দ করে ওপরে উঠে গিয়ে আওরঙ্গ আলমকে তুমুল ধস্তাধস্তির পর বালিশ চেপে খুন করে, তারপর আবার, যথাক্রমে খটখট ও ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ করে এসে ঢোকে এই আলমারির ভেতরে। কিন্তু তাঁর খুনের মধ্যে গলদ ছিলো, যেমনটা থাকে প্রত্যেক খুনে, আওরঙ্গ আলম পুরোপুরি মরেননি। মুখের ওপর থেকে বালিশ তুলতেই তিনি আবার জ্যান্ত হয়ে ওঠেন, তাঁর আততায়ীর নাম বলার চেষ্টা করেন, তারপর মারা যান। এখন যেহেতু মিসেস বল্টু --- ইয়ে, মিসেস বনানীর জবানবন্দি আমরা অনেক দেরিতে পেয়েছি, তাই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে আমাদের একটু দেরি হয়েছে। আর, যেহেতু আপনাদের সবার নামই ব দিয়ে শুরু, কেন কে জানে, তাই স্বাভাবিকভাবেই আপনাদের ওপর সন্দেহ এসে পড়ে। তাছাড়া, আপনারা ছাড়া তো এই বাড়িতে আর কেউ থাকারও কথা নয়, তাই আপনাদের একটু জ্বালাতন করতে হলো। কিছু মনে করবেন না। --- যাই হোক, এখন আমাদের কর্তব্য বদরু খাঁকে গ্রেপ্তার করা! সে কোন জাহান্নামে পালিয়ে গেছে কে জানে?' কিংকু চৌধারি কাশেন। 'না স্যার, সেটা সম্ভব নয়। আমার লোক এখানে আসার পর থেকেই গোটা বাড়ি কর্ডন করে রেখেছে।' ঝাকানাকা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসেন। 'কী যে বলেন চৌধারি সাহেব! আপনার লোকগুলো সব জরদ্গব। বদরু খাঁকে জানেন না আপনি? সে কোন ফাঁকে কী ছদ্মবেশে বেরিয়ে গেছে, আপনার লোক বুঝবে কিভাবে?' কিংকু চৌধারি তবুও আপত্তির চেষ্টা করেন, কিন্তু ঝাকানাকা তাঁকে থামিয়ে দেন। 'বের হবার জন্যে অনেক সময় পেয়েছে সে। সবাই যখন ওপরে হাউকাউ করছিলো, তখনই সে আলমারি ছেড়ে বেরিয়ে এসে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে।' বসুনিয়া বলেন, 'কিন্তু, আমি তো দরজায় তালা মেরে এসেছিলাম।' ঝাকানাকা বলেন, 'আরে, শুনলেন না, সামান্য একটা তালা তার জন্যে কোন সমস্যাই নয়। যে লোক জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত গুদাম থেকে হাতি চুরি করতে পারে, তার কাছে তো এসব তালা নস্যি ---।' বসুনিয়া তবুও আপত্তি তুলতে চান, বলেন, 'কিন্তু স্যার, লৌহজং কোম্পানির তালা, খুব মজবুত ---।' ঝাকানাকা ভ্রুকুটি করেন, বসুনিয়া চুপ করে যান। 'যাই হোক,' বলেন ঝাকানাকা, 'আপনারা চিন্তা করবেন না, তাকে আমরা ঠিক পাকড়াও করবো।' সবাই একটা আনন্দের ধ্বনি তোলে, আর তুলবে না-ই বা কেন, এখন থেকে বনানী ডিশের সংযোগ নিতে পারবেন, বল্টু জব্বলপুরী বাজারের পয়সা ইচ্ছেমতো চুরি করতে পারবেন, বজরঙ্গ ছাদে ইচ্ছেমতো ব্যায়াম করতে পারবেন, বসুনিয়াও নিজের ঘরে বসে গাঁজা খেতে পারবেন। সবার সুদিন। ছাগলটাও একটা আনন্দসূচক ম্যা বোল তোলে। অমনি বনানী পারভিন ঘোরেন সেটার দিকে। 'এ কি? আপনার তো সাহস কম নয়?' ঝাকানাকার দিকে তর্জনী তুলে গর্জন করে ওঠেন তিনি। 'ছাগল নিয়ে ঢুকেছেন আমার বাড়িতে? --- ইশ, বড়ি ছেড়ে আর হিসি করে ড্রয়িংরূমটাকে নোঙরা করে ছেড়েছে জানোয়ারটা!' এতক্ষণে ঝাকানাকার চোখ পড়ে ছাগলটার দিকে, তিনি বিস্মিত হয়ে কিংকু চৌধারির দিকে ফেরেন। 'ও কি, কিংকু সাহেব? ছাগল নিয়ে তদন্ত শুরু করলেন কবে থেকে? আমি তো জানতাম, পুলিশ কুকুর নিয়ে তদন্তে আসে?' বল্টু দাঁত বের করে আসেন। 'আরে এখন তো ছাগলেরই যুগ চলছে ভাই, কুকুরের তো খুবই দুর্দিন যাচ্ছে। লোকে হোটেলে ছাগলের মাংস না চালিয়ে কুকুরের মাংস চালিয়ে দিচ্ছে, আর ঐ ছাগলগুলো সব পুলিশে চাকরি পেয়ে যাচ্ছে, হে হে।' কিংকু চৌধারি চটে গিয়ে বলেন, 'আশ্চর্য! আমি ছাগল নিয়ে ইন্সপেকশনে আসবো কেন? আমি তো সেই রাত থেকেই দেখছি, এই ছাগলটা আপনাদের বৈঠকখানায় ঘুরঘুর করছে। একবার তো প্রায় বেরিয়েই যাচ্ছিলো, আমার এক কনস্টেবল দেখতে পেয়ে আবার তাড়া করে ধরে নিয়ে এসেছে, বললো যে আপনাদের কুলখানির ছাগল ---।' 'কুলখানি? ছাগল কেটে কুলখানি?' বল্টু হে হে করে হাসে। 'আব্বাসাহেবের টাকাপয়সা সব ব্যাঙ্কে, উকিল এসে বলেছে, সম্পত্তি নিয়ে মিটমাট হতে দেরি হবে। আমাদের হয় চিঁড়াবাতাসা, নয়তো গুড়মুড়ি দিয়ে কুলখানি করতে হবে।' 'তাহলে ছাগল কেনার পয়সা পেলেন কোথায়?' চটে উঠলেন ঝাকানাকা। 'কী আশ্চর্য!' চেঁচিয়ে উঠলেন বনানী। 'বলছি এটা আমাদের ছাগল নয়! কখনো শুনেছেন, ছাগল কেউ ঘরের ভেতরে পোষে?' 'রাখে বৈকি!' মিটিমিটি হাসে বল্টু। 'আমাদের ঘরে যেমন একটা পেল্লায় সাইজের ছাগলকে ছোলামটর খাইয়ে বছরের পর বছর ধরে পোষা হচ্ছে!' বজরঙ্গ হাতা গোটান। বসুনিয়া বলেন, 'এত প্যাচালের কী দরকার? ছাগল যখন একটা হাতের নাগালে চলেই এসেছে, এটাকেই কেটেকুটে গুড়মুড়ির সাথে চালিয়ে দেয়া যেতে পারে।' ছাগলটা মেঝে থেকে সটান দাঁড়িয়ে যায়। 'থামুন!' বজ্রকন্ঠে বলেন ঝাকানাকা। 'ওটা আপনাদের ছাগল নয়, পুলিশের ছাগলও নয়, আর, অবশ্যই আমার ছাগল নয়, তাহলে সেদিন রাত থেকে এটা এখানে আছে কিভাবে?' সবাই থেমে যায়। ঝাকানাকা তীক্ষ্ম চোখে তাকান ছাগলটার দিকে। ছাগলটাও পাল্টা তার দিকে তাকিয়ে থাকে, সেই তীক্ষ্ম চোখ করেই। ঝাকানাকা হঠাৎ বলেন, 'এই ছাগলটার থুতনিতে দাড়ি আছে।' কিংকু চৌধারি মাথা নাড়েন, 'আছে।' 'বদরু খাঁ-রও থুতনিতে দাড়ি আছে।' ফিসফিস করে বলেন ঝাকানাকা। সবাই চমকে ওঠে। ঝাকানাকা ছাগলটার দিকে এক পা এগিয়ে যান। ছাগলটা দু'পা পিছিয়ে যায়। ঝাকানাকা আরো এগোন, ছাগলটা পায়ে পায়ে পিছিয়ে যেতে থাকে। তারপর ঝাকানাকা একটা হুঙ্কার ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন ছাগলটার ওপরে। আর ছাগলটাও হঠাৎ করে তেড়ে আসে ঝাকানাকার দিকে। একটা হুটোপুটি বেঁধে যায়। অচিরেই ঘটে এক অশৈলী কান্ড, পিচকিনি সেই ছাগলের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে ইয়া তাগড়া সাড়ে ছয়ফুট লম্বা এক ভীমরূপী লোক, তার থুতনিতে ছাগুলে দাড়ি, চোখ দুটো জ্বলছে ভাটার মতো। অভিজ্ঞ পাঠকেরা, নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন, এ আর কেউ নয়, সেই আলোচ্য খুনী দসু্য, বদরু খাঁ! দাঁতে দাঁত পিষে বদরু খাঁ বলে, 'অনেকক্ষণ ধরে তোর এই ছাগলামি সহ্য করেছি, ঝাকানাকা! সবকিছুরই একটা সীমা আছে! আর সহ্য করবো না। আজ তোর একদিন কি আমার একদিন!' উত্তরে ঝাকানাকা বিপজ্জনক মুদ্রায় মোচে তা দেন। 'বটে? সারাটা ঘর পাঁঠার গন্ধে ম' ম' করছে, বড়ি ছেড়ে আর হিসি করে জায়গাটা নর্দমার চেয়ে ময়লা করে ফেলেছিস, আর ছাগলামির দোষ চাপাচ্ছিস আমার ঘাড়ে? দেখা যাক আজ কার ঘাড়ে ক'টা মাথা!' দুজন চক্রাকারে ঘুরতে থাকেন ঘরের মধ্যে। বনানী পারভিন একটা বিকট চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন আগেই, এবার বল্টু বজরঙ্গ বাহরামের পেছনে আত্মগোপনের চেষ্টা করতে থাকেন, বজরঙ্গ বাহরাম সটান শুয়ে পড়ে বড়বড় শ্বাস নিতে থাকেন, বোধহয় শবাসন বা এমনি কোন আসন, আর বিল্লাল বসুনিয়া কপাল চাপড়ে হায় আফসোস করতে থাকেন, এমন নধর একটা ছাগল হাতছাড়া হয়ে যাবার দুঃখে। আর কিংকু চৌধারি লাফিয়ে সোফার পেছনে গিয়ে দাঁড়ান, আর উত্তেজনার বশে পিস্তলের বদলে বেতটা বাগিয়ে 'হ্যান্ডস আপ, হ্যান্ডস আপ' বলে চেঁচাতে থাকেন। বদরু খাঁ হিসিয়ে ওঠে, 'ওরকম কলুর বলদের মতো পাক খাচ্ছিস কেন? সাহস থাকে তো আয় না কাছে! আজ তোকে পেঁদিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবো, ব্যাটা রামছাগল!' ঝাকানাকা পাল্টা খেঁকিয়ে ওঠেন, 'মুখ্যু পাঁঠা, জানিস না, এটা মারামারির একটা কায়দা? আর তোর সাহস থাকে তো তুই আয় না কাছে!' কিন্তু বদরু খাঁ দূরত্ব বজায় রেখে পাক খেতে থাকে, ভুলেও কাছে আসে না, কারণ সে জানে, ঝাকানাকার মারপিটকুশল দাঙ্গাপরায়ণ ভাঙচুরপ্রবণ মারাত্মক হাতপায়ের নাগালে আসাটা বোকামি। আর ঝাকানাকাও তফাতে থেকে পাক খেয়ে চলেন, কারণ তিনিও জানেন, বদরু খাঁয়ের গায়ে গন্ডারের মতো জোর। কিন্তু অচিরেই বদরু খাঁ হুঙ্কার ছেড়ে সামনে লাফিয়ে পড়ে, আর ঝাকানাকাও ডিগবাজি খেয়ে বদরুর ঘাড়ের ওপর বর্ষিত হন। ঘোর মারামারি চলতে থাকে দুজনের মধ্যে। ঝাকানাকা প্রথমে জাপানে শেখা কায়দায় বদরুর কানের ওপর একটা কিল বসিয়ে দেন, বার্মার জঙ্গলে গেরিলাদের কাছে শেখা কৌশলে বদরুর গালে একটা খামচি দেন, সবশেষে মঙ্গোলিয়ার মরুভূমিতে তদন্তের কাজে গিয়ে তাতার যাযাবরদের কাছে শেখা রীতিতে কষে একটা চড় মারেন বদরু খাঁর ছয়ফুট উঁচুতে অবস্থিত গাল দুটোয়। ওদিকে বদরু খাঁও দুনিয়ার অনেক দেশে গুন্ডামি করতে গিয়েছে, প্যাঁচ পয়জার সে-ও কিছু কম শেখে নি। গুয়াতেমালার বিদ্রোহীদের স্টাইলে সে ঝাকানাকার পাঁজরে কষে একটা কনুই বসিয়ে দেয়, মরোক্কোর তুয়ারেগদের কায়দায় ঝাকানাকার পিঠে একটা কিল বসায়, আর গুলিস্তানের মোড়ে এক অন্ধ ভিক্ষুকের কাছে শেখা বিশ্রী সব দেশী গালাগালি দিতে থাকে সমানে। কিন্তু বদরু খাঁ টের পায়, গায়ে তার যতোই জোর থাকুক না কেন, কৌশলে সে ঝাকানাকার কাছে নস্যি। সে আরো টের পায়, বার্মার জঙ্গলের গেরিলাগুলোর কায়দা গুয়াতেমালার বিদ্রোহীদের চেয়ে ভালো, আর মঙ্গোলিয়ার যাযাবররাও এ ব্যাপারে মরক্কোর তুয়ারেগদের চেয়ে অনেক বেশি কামেল, আর সর্বোপরি, যেসব গালি সে গুলিস্তানের কানা ফকিরটার কাছে শিখেছে, সেগুলোও ঝাকানাকার ওপর কোন আছর ফেলতে পারছে না। তাই হঠাৎ কী একটা নামনাজানা বিদেশি প্যাঁচ কষে বদরু খাঁ আমাদের গল্পের নায়ককে ছুঁড়ে ফেলে দূরে, তারপর ছুটে গিয়ে জানালার ওপর লাফিয়ে পড়ে। ঝনঝন করে ভেঙে পড়ে সেটা, চোখের পলকে সে বাইরে অদৃশ্য হয়ে যায়। তার টিকিটিও আর দেখা যায় না, আর দেখা যাবেই বা কিভাবে, বলুন, তার মাথায় আদৌ টিকিই নেই! ঝাকানাকা মেঝে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে টলতে টলতে সেদিকে ছুটে যান। কিন্তু জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পান না। ঝাকানাকা পিঠের কাছটা ডলতে ডলতে বলেন, 'দাঁড়া ব্যাটা, আসছে গল্পে তোকে যদি সেই তিব্বতী উষ্টাটা না মারি, তবে আমার নাম ঝাকানাকাই নয়!' ২. নবীন পাঠক ভাইসব, আপনারা নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন, দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা ঝাকানাকা এই দুর্ধর্ষ দসু্য বদরু খাঁ-কে এত সহজে ছেড়ে দেবেন না, তিনি বদলা নিয়েই ছাড়বেন, আর সেই প্রতিশ্রুত তিব্বতী উষ্টা, যেটি তিনি দালাই লামার সাক্ষাৎ সহচরের কাছ থেকে কয়েক বছর আগে --- দেখে নয়, ঠেকে --- শিখেছিলেন, সেটিও প্রয়োগ করবেন। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, বদরুর খাঁর খোঁজ পেতে হলে ভবিষ্যতে কোন এক রাত বারোটায় আরেকটা খুন হতে হবে, নইলে তার হদিস পাওয়া বড় শক্ত। কাজেই, ভাইসব, অপেক্ষা করুন, শিগগীরই আলোছায়া প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে নিঝুম পুরীর লেখা গোয়েন্দা ঝাকানাকা সিরিজের খুনজখমে ভরপুর পরবর্তী বই, ""বদমাশ বদরু খাঁ বনাম গোয়েন্দা ঝাকানাকা""।",False fe,"প্রবাসীদের কল্যাণে একজন রাজনীতিবিদের ভাবনা প্রবাসীদের কল্যাণে একজন রাজনীতিবিদের ভাবনা ফকির ইলিয়াস---------------------------------------------------------------'আমার কর্মধ্যানে আমি দুটি আসনের জনমানুষের প্রতিনিধিত্ব করি। একটি আমার নিজ সংসদীয় আসন সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া-জুড়ি আসন। আর অন্যটি সকল প্রবাসী বাংলাদেশের স্বার্থবিষয়ক দাবি-দাওয়ার আসন।'- কথাগুলো খুব সুদৃঢ় চিত্তেই বললেন একজন রাজনীতিবিদ। তিনি এমএম শাহীন। অষ্টম জাতীয় সংসদে জননির্বাচিত এমপি ছিলেন। পাস করেছিলেন মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে।তার একটি বিশেষ পরিচয় আছে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছিলেন দীর্ঘদিন। সে হিসেবে অভিবাসী বাঙালির জীবনকে পরখ করেছেন খুব ঘনিষ্ঠভাবে। প্রবাসে থাকাকালে এমএম শাহীন ছিলেন একজন তুখোড়-তরুণ সমাজসেবক। পালন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন 'বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা'র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। ব্যাপকভাবে কাজ করেছেন মার্কিন মুল্লুকের শক্তিশালী আঞ্চলিক সংগঠন 'জালালাবাদ এসোসিয়েশন অফ আমেরিকা'র সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও।তিনি প্রবাসীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সব সময়ই ছিলেন সোচ্চার। মনে পড়ছে, ১৯৮৫-৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে 'প্রবাস বিষয়ক মন্ত্রণালয় চাই' দাবির ভিত্তিতে আমরা যারা বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনে ব্রত ছিলাম, এমএম শাহীন ছিলেন এর পুরোধা ব্যক্তিত্ব। 'প্রবাস বিষয়ক মন্ত্রণালয়' সে সময় ছিল প্রবাসীদের কাছে স্বপ্নের মতো। অব্যাহত দাবি উত্থাপনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে সরকার এ মন্ত্রণালয়টি স্থাপন করতে বাধ্য হয়। সাবেক এই এমপি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসেছেন। কথা হয় তার সঙ্গে বিভিন্ন প্রসঙ্গে। তিনিও জানান, তার সংসদীয় কর্মকান্ডের অতীত খতিয়ান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে।তিনি খুব জোর দিয়েই বললেন, প্রবাসীরা হচ্ছেন বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। দেশের কাঠামো টিকে আছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর ভর করে। অথচ এই প্রবাসীদের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না। নিজ দেশে গিয়ে নানা হয়রানি, অসঙ্গতির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা।তিনি বলেন, বিগত সরকার ২০০২ সালে প্রবাসীদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে 'ওয়ান স্টপ সেন্টার' নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এ সেন্টার থেকে প্রবাসীদের সাময়িক আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, টিকেট, ব্যাংকিংসহ সব সেবা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। এ ভবনটির কাজ শেষ হলেও সে সেবা কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। তা যথা শিগগির শুরু করা প্রয়োজন।এমএম শাহীন বলেন, বিদেশের বিভিন্ন দেশগুলোতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেবার মান সমান নয়। বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। যেসব দেশগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ প্রবাসী রয়েছেন সেসব দেশে মিশনের পাশাপাশি 'প্রবাসী সেবা উইং' স্থাপন করা প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে। যারা প্রবাসী বাঙালির সমস্যা ও সম্ভাবনা মনিটরিং করবেন। আমাদের এ বিষয়ে মনে রাখতে হবে, পররাষ্ট্র এবং প্রবাস বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকা- সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিদেশে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে সুযোগ পাচ্ছে না। কারণ তাদের অন্যান্য কাজের চাপ রয়েছে। এ চাহিদা পূরণে প্রবাস বিষয়ক মন্ত্রণালয়কেই এগিয়ে আসতে হবে।সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, তুলনামূলকভাবে প্রবাসীরা সচ্ছল। তাই দেশে গিয়ে তারা কিডন্যাপ, হত্যা, অত্যাচার, হয়রানিসহ নানা রকম জটিল ও বেদনাদায়ক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। যা একটি রাষ্ট্রের জন্য অশনি সঙ্কেত। এখানে রাষ্ট্রপক্ষের মনে রাখা দরকার, একজন শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ কিংবা একজন কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান বাংলাদেশে গেলে যেমন সুযোগ-সুবিধা পান, একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশী একজন আমেরিকান বাংলাদেশী নাগরিকেরও তেমন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত। এমন অবস্থা চলতে থাকলে প্রবাসী প্রজন্ম, নিজ মাতৃভূমিতে শেকড়ের টানে যেতে ভয় পাবে। ফলে ক্রমে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিরাট অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে।তিনি খুব বেদনাহত চিত্তে বলেন, এই যে গুরুতর সমস্যাবলি এর প্রয়োজনে প্রবাসীরা বিদেশে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছেন না- এটা খুবই দুঃখজনক। নিজেদের সমস্যা সমাধানে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে প্রবাসী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। তা না করে বিভিন্ন সরকারের সময় কেউ কেউ বিচ্ছিন্নভাবে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন।তা কোন মতেই কাম্য হতে পারে না। কারণ দেশমাতৃকার উন্নয়ন চাইলে সেখানে কোন ব্যক্তিস্বার্থ মুখ্য বিষয় হতে পারে না।বিদেশের বিত্তবৈভব তুচ্ছ করে একদিন মাটির টানেই দেশে ফিরেছিলেন এমএম শাহীন। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে নিজ এলাকায় গণমানুষের রাজনীতি করছেন। এজন্য কি তাকে তীব্র প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি সহাস্যে বললেন, প্রতিকূলতা তো থাকবেই। আগেও ছিল এখনও আছে। তবে আমাকে বেশি প্রেরণা দিয়েছেন আমার মা। আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েই জনসেবাকে জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছি। আর আমাকে সর্বক্ষণ সঙ্গে থেকে সাহস জুগিয়েছেন আমার সহধর্মিণী নাজনীন শাহীন। তার সহযোগিতা আমাকে এগিয়ে নিয়েছে অনেক পথ। আমি আমার অগ্রযাত্রার জন্য তাদের কাছে, এলাকার মানুষের কাছে, প্রবাসী সমাজের কাছে কৃতজ্ঞ।অষ্টম জাতীয় সংসদ সদস্য থাকাকালে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। 'জাতীয় সংসদে এমএম শাহীন দেশ ও প্রবাসের প্রিয় প্রতিনিধি' নামে তার বক্তব্য, কর্মকান্ড নিয়ে একটি সুবিশাল গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে ঠিকানা পাবলিকেশন্সের পক্ষ থেকে। সে গ্রন্থে রয়েছে সংসদে তাদের ভাষণের বিবরণ।এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রবাসীদের একটি জটিল সমস্যা হচ্ছে তাদের ভূমি-সম্পত্তি নিয়ে। একটি দখলদার, ভূমিখেকো চক্র প্রবাসীদের সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে তৎপর। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ প্রবাসীই দেশে গিয়ে ভূমি সংক্রান্ত মামলায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি বলেন, অষ্টম জাতীয় সংসদে আমি 'ভূমি সংস্কার আইন ২০০২-০৬' বিলটি উত্থাপন করি। এবং সার্বিক বিচার বিশ্লেষণ শেষে জনস্বার্থে এ আইনটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস করে অষ্টম জাতীয় সংসদ। যার সুবিধা প্রবাসীদের এ সংক্রান্ত দুর্দশাকে অনেকটা লাঘব করেছে। এমএম শাহীন বলেন, উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে জমির সীমানা নিয়ে কোন বিরোধ নেই। এখানে আইনগত ভিত্তি খতিয়ে দেখে শুধু টাইটেল পরিবর্তন হয়। আমরা যদি আধুনিকতার কথা বলি, তবে আমাদের সব দিকে আধুনিকতার যোগ্যতা-মানসিকতা অর্জন করতে হবে।বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কার্যক্রম পরিলক্ষণের সুযোগ হয়েছে এ রাজনীতিবিদের। সে অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তি নির্মাণে প্রবাস বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া দরকার। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার দক্ষ জনশক্তি যদি পারে, আমরা তা পারব না কেন? তিনি বলেন, আমার মনে হয় দেশে প্রবাস বিষয়ক মন্ত্রণালয়টি 'বায়রা' অর্থাৎ শ্রম রপ্তানি এজেন্সির মতোই কাজ করছে। এ অবস্থার দ্রুত উত্তরণ প্রয়োজন।বাংলাদেশে প্রবাসীদের আবাসন সমস্যা নিয়ে অষ্টম জাতীয় সংসদে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে পূর্বাচলে ৩ হাজার ৩০০ প্রবাসী প্লট পেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তখন ১ হাজার প্রবাসীকে প্লট দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আমি তা দেন-দরবার করে ৩ হাজার ৩০০-তে উন্নীত করি। তিনি আরও জানান, বারিধারার নিউ ডিওএইচএস এলাকায় প্রবাসীদের জন্য প্রায় ৫ শতাধিক ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে তা অর্ধসমাপ্ত হয়ে পড়ে আছে।স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অষ্টম জাতীয় সংসদের সাবেক এই এমপি জানান, 'আমার দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই রাষ্ট্রে প্রবাসীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ নিতে প্রবাসী প্রজন্ম এ ১০ শতাংশ কোটার সুযোগ নিতে পারেন।'এমএম শাহীন বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি আলোচনা পর্বে এখন প্রবাসীরা আলোচিত। বাজেটে মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে এখন রয়েছেন প্রবাসীরা। এটা আনন্দের বিষয়। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছাড়া এই দেশ সোমালিয়া কিংবা কঙ্গোর মতো হতে পারত। প্রবাসীরা গোটা দেশের উন্নয়নে প্রায় ৫০ শতাংশ ভূমিকা রাখছেন। সিলেট বিভাগে এ পরিসংখ্যান প্রায় ৭৫ শতাংশ।ব্যক্তিগত জীবনে এমএম শাহীন কৃতী সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। 'সাপ্তাহিক ঠিকানা' যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বহির্বিশ্বে সর্বাধিক প্রচারিত কাগজটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তিনি। এখন পালন করেছেন সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব।বললেন, প্রবাসী মেধাবী পেশাজীবীদের দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে রেখে দেশের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ দেয়া উচিত। কারণ রাষ্ট্রটি এগিয়ে নিতে সম্মিলিত মহৎ পরিকল্পনার বিকল্প কিছু নেই। তিনি বলেন, আমি প্রবাসীদের সার্বিক সমস্যাগুলো খুব কাছে থেকে দেখি। আর তাই আজীবন অর্থনীতি, সমাজ উন্নয়ন, রাজনীতিতে প্রবাসীদের অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আমি। -----------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ২১ মে ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত",False mk,"ভূয়া মুক্তিযোদ্ধারা ভয়ে, বাতিল হচ্ছে আরো ৫ হাজার সনদ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আরও পাঁচ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ। নানা অভিযোগে তদন্তাধীন থাকা এসব মুক্তিযোদ্ধার বিবরণীতে বিভিন্ন ধরনের ত্র“টি খুঁজে পাওয়া গেছে। এত বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার সনদ কোন প্রক্রিয়ায় বাতিল করা হবে তা নির্ধারণ করতে আগামী ৬ আগস্ট বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। ওই বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে সনদ বাতিলের প্রক্রিয়া। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক শনিবার যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতি ১৫১ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বর্তমানে পাঁচ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদের বিষয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব সনদের বিষয়ে সরকার নানাভাবে তদন্ত করছে। অনেকের বিষয়ে সত্যতাও মিলেছে। এসব সনদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ৬ আগস্ট বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কোন প্রক্রিয়ায় এসব সনদ বাতিল করা হবে তা সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দিন দিন বাড়ছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা। বিষয়টি নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরাও উদ্বিগ্ন। কারণ মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয় কলংকমুক্ত করতেই এবার সরকার জোরেশোরে উদ্যোগ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের আমলে নানাভাবে তদন্ত করে প্রায় দু’শত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের উপ-সচিব, রেলের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক ও সরকারি স্কুলের শিক্ষকসহ নানা পেশার লোক রয়েছে।সূত্রমতে, শিগগির আরও পাঁচ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল হতে যাচ্ছে। নানা অভিযোগে তদন্তাধীন থাকা এসব মুক্তিযোদ্ধার সনদে বিভিন্ন ধরনের ত্র“টি খুঁজে পেয়েছে তদন্তের কাজে নিয়োজিত সরকারের একাধিক সংস্থা। এত বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার সনদ কোন প্রক্রিয়ায় বাতিল করা হবে তা নির্ধারণ করতে আগামী ৬ আগস্ট রাজধানীর মগবাজারে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বৈঠকে বসছে। আট সদস্যের শক্তিশালী এ কমিটির প্রধান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক। এ ছাড়াও রয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। এর বাইরে আরও তিনজন সংসদ সদস্য এ কমিটির সদস্য। কমিটিতে রয়েছেন সাবেক সচিব রাশিদুল হক ও মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকার হাসান। ওই বৈঠকে বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। ওদিকে আগামী দু-একদিনের মধ্যে আরও ১০-১২ জন মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর প্রজ্ঞাপন জারি অপেক্ষায় রয়েছে।নতুন প্রজ্ঞাপন শিগগির : যারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় মুক্তিযোদ্ধা নন বলে অঙ্গীকার করেছেন, অথচ তাদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ রয়েছে এমন কর্মকর্তাদের ব্যাপারে নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি চূড়ান্তপ্রায়। দু-একদিনের মধ্যে তা জারি হতে পারে।জানা গেছে, অনেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করেননি, অথচ পরে মুক্তিযোদ্ধার সনদ সংগ্রহ করে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারী বলে দাবি করেছেন। সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন তাদের অনেকে। তাদের বিষয়ে সনদ বাতিলসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা ফেরত দান এবং বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশনা আসতে পারে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা না দিয়ে যারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেছেন তাদের মুক্তিযোদ্ধা করার বিষয়ে কারও কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এমন নির্দেশনাও আসছে ওই প্রজ্ঞাপনে। এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে গত ২১ জুলাই নিজ দফতরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যারা মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তার সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হবে। যারা আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন, তা ফেরত নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বলা হবে। এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হবে। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ২০১৪ সালের পর ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটি আর থাকবে না।এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা হলেও যেহেতু সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় ঘোষণা দেননি, কাজেই তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। আর প্রতারণার কারণে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই মামলা হওয়া উচিত।প্রসঙ্গত, বর্তমানে দুই লাখ ১২ হাজার গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ভুয়া সনদের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তা তদন্তাধীন। চলতি মাসেই উপসচিবসহ ৩৫ মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হয়। এর আগে ১১৬ জনের সনদ বাতিল করা হয়েছিল। - See more at: Click This Link",False rg,"আজ থেকে ঢাকায় ‘কান্ট্রি উইদাউট বর্ডার’ আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনী !!! শিল্পের সুনির্দিষ্ট কোনো দেশ নেই, নেই কোনো জাতিভেদ, নেই কোনো স্থির সীমারেখাও। একজন সত্যিকারের শিল্পী কখনো কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখায় বাঁধাও পড়েন না। শিল্প ও শিল্পীর এই সীমাহীন বোধ নিয়ে ‘কান্ট্রি উইদাউট বর্ডার’ শিরোনামে আজ থেকে ঢাকায় শুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক দলীয় শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। এ প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশ ও ভারতের মোট চার জন শিল্পী। বাংলাদেশ থেকে শিল্পী চারু পিন্টু ও এশা জাবিন এবং ভারত থেকে শিল্পী পিনাকি আচার্য ও অশোক কুমার দে। আজ ২১ অক্টোবর, শুক্রবার, বিকেল চারটায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল। প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলর্টানেটিভ 'ইউডা'-এর চারুকলা অনুষদের চেয়ারম্যান বরেণ্য শিল্পী প্রফেসর শাহজাহান আহমেদ বিকাশ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাংবাদিক অঞ্জন রায়, বরেণ্য আবৃত্তিকার শিমুল মুস্তাফা, সাহিত্যপত্রিকা 'দ্রষ্টব্য'র সম্পাদক ও কবি কামরুল হুদা পথিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এমরান কবির চৌধুরী প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন 'কান্ট্রি উইদাউট বর্ডার-বাংলাদেশ'-এর আহ্বায়ক কথাসাহিত্যিক ঋষি এস্তেবান। প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ ও ভারতের চার শিল্পীর মোট ৩৯টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। আগামী ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রদর্শনীটি চলবে। প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।‘কান্ট্রি উইদাউট বর্ডার’ শিরোনামের এ আন্তর্জাতিক দলীয় শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে শিল্প সাহিত্যের ম্যাগাজিন 'ভিন্নচোখ'। প্রদর্শনী আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক লেখক ঋষি এস্তেবান প্রদর্শনী সম্পর্কে বলেন, মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের বিভিন্ন দেশের শিল্পী-সাহিত্যিকদের ঐক্যবদ্ধভাবেই সাংস্কৃতিক চর্চা চালিয়ে নিতে হবে। বিশ্ব মানচিত্রে বিভিন্ন দেশের ভৌগলিক সীমারেখা থাকলেও শিক্ষা-সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকতে পারে না। শিল্পী এবং শিল্প কোন সীমান্তের তোয়াক্কাও করে না। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো বাণিজ্যিক এই পৃথিবীতে দীর্ঘদিন থেকেই সীমানা টেনে নেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। আমরা এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেই শিল্পী ও শিল্পের সেই সীমানা দেয়াল ভেঙ্গে দিতে চাই। শিল্পী আর শিল্পের বাণিজ্যিক চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আমরা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শিল্পীর শিল্পকর্মের সঙ্গে এদেশের শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর মাধ্যমে একটা মজবুত সেতুবন্ধন তৈরি করতে চাই। আমাদের সেই লক্ষের প্রথমধাপ হিসেবে এই সময়ে বাংলাদেশ এবং ভারতের দু'জন করে শিল্পীর শিল্পকর্ম নিয়ে এবারের প্রথম আয়োজনে করতে যাচ্ছি এই প্রদর্শনী।‘কান্ট্রি উইদাউট বর্ডার’ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন সম্পর্কে 'ভিন্নচোখ'-এর সম্পাদক ও কবি আলী আফজাল খান বলেন, আমরা দেশের শিল্প-সাহিত্য নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছি। এবার আমরা দেশীয় শিল্পীদের সঙ্গে অন্যদেশের শিল্পীদের নিয়ে একযোগে কাজ করতে চাই। এদেশের শিল্পী ও শিল্পের সঙ্গে অন্য দেশের শিল্পী এবং শিল্পকর্মের মধ্যে একটা সোহার্দ গড়ে তোলার প্রয়াস হেসেবে এই আন্তর্জাতিক দলীয় শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। এবার আমরা আমাদের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ ভারতের দু'জন শিল্পীকে আমন্ত্রণ করেছি। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কর্নধার প্রফেসর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ‘কান্ট্রি উইদাউট বর্ডার’ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে বলেন, এটি একটি সুন্দর উদ্যোগ। আমি তো বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র নিয়েই ব্যস্ত থাকি। এখানে একটি চিত্রশালা করেছি। এখন শিল্পীরা এগিয়ে এসে নিয়মিত এই চিত্রশালায় প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিলে তা আমাদের সংস্কৃতি চর্চাকে আরো মজবুত করবে। আমাদের সংস্কৃতিকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে এভাবেই আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ‘কান্ট্রি উইদাউট বর্ডার’ আন্তর্জাতিক দলীয় প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের শিল্পী চারু পিন্টু'র শিল্পকর্মের শিরোনামগুলো হলো- 'ক্রুনিং অব দ্য ডেড সিটি-১', 'ক্রুনিং অব দ্য ডেড সিটি-২', 'ক্রুনিং অব দ্য ডেড সিটি-৩', 'ক্রুনিং অব দ্য ডেড সিটি-৪', 'ক্রনিকল অব অ্যানসিয়েন্ট স্লানবার', 'মোনাসটারি অব ফায়ার', 'ইন সার্স অব হোমল্যান্ড', 'দ্য আনওয়াইজ ম্যান অব রিকাও হিলস' ও 'এ প্রমিজ টু রিটার্ন'। বাংলাদেশের অপর শিল্পী এশা জাবিনের শিল্পকর্মের শিরোনামগুলো হলো- 'আনটাইটেলড-১', 'আনটাইটেলড-২', 'আনটাইটেলড-৩', 'ওয়ে অব এক্সপ্রেশান', 'লাইফ ইজ এভরিহোয়ার', 'ডেলিসিয়েট মাই সিটি নাইটমেয়ার-১', 'ডেলিসিয়েট মাই সিটি নাইটমেয়ার-২', 'এডেঞ্জারড বিউটি', 'ব্যাংক অব ট্রি' ও 'আনটাইটেলড-১০'। ভারতের শিল্পী পিনাকি আচার্যের শিল্পকর্মের শিরোনামগুলো হলো- 'আনটাইটেলড ডায়লগস (২০১৬)-১', 'আনটাইটেলড ডায়লগস (২০১৬)-২', 'আনটাইটেলড ডায়লগস (২০১৬)-৩', 'আনটাইটেলড ডায়লগস (২০১৬)-৫', 'আনটাইটেলড ডায়লগস (২০১৬)-৬', 'আনটাইটেলড ডায়লগস (২০১৬)-৭', 'টুওয়ার্ডস দ্য ননকনসেপ্টুয়াল (২০১৬)-২', 'টুওয়ার্ডস দ্য ননকনসেপ্টুয়াল (২০১৪)-৫', 'টুওয়ার্ডস দ্য ননকনসেপ্টুয়াল (২০১৬)-৬' ও 'টুওয়ার্ডস দ্য ননকনসেপ্টুয়াল (২০১৬)-৭'। ভারতের অপর শিল্পী অশোক কুমার দে'র শিল্পকর্মের শিরোনামগুলো হলো- 'আনটাইটেলড-১', 'আনটাইটেলড-২', 'আনটাইটেলড-৩', 'আনটাইটেলড-৪', 'আনটাইটেলড-৫', 'আনটাইটেলড-৬', 'আনটাইটেলড-৭', 'আনটাইটেলড-৮', 'আনটাইটেলড-৯' ও 'আনটাইটেলড-১০'। ...............................২১ অক্টোবর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:৩০",False ij,"গল্প_ মহিমা তব উদ্ভাসিত রাতের আকাশে কুয়াশার চাদর বেশ পুরু। পূর্ণিমার চাঁদটাও প্রখর। কুয়াশার পুরু চাদর ছিঁড়ে সে যুবতী ধবল চাঁদ সাদা আলো ফেলছে সমস্ত চরাচরে । রাত এখন কত? পৌষের রাতে এই আদিবাসী গ্রামটি কেমন নিঝুম হয়ে আছে। আর, ডাকবাংলোর সিঁড়িতে বসে মিলি গাইছিল-মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে,বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে।আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর।রাজীব বসেছে কাঠের সিঁড়ির ধাপে হেলান দিয়ে । ওর কোলের ওপর একটা কালো রঙের ইয়ামাহা এক্যুয়েস্টিক গিটার। গানের সঙ্গে রিদম বাজিয়ে যাচ্ছিল ও। চাঁদের আলোর শুভ্র প্রতিফলন পড়েছে ওর গিটারের ওপর । কালো প্যান্ট আর লাল রঙের পুলোভার পরেছে রাজীব; রংটং অবশ্য অত বোঝা যাচ্ছে না। অল্প অল্প শিশির পড়ছিল। শীত সত্ত্বেও মিলি আর রাজীব ঠান্ডা শিশিরপাত অগ্রাহ্য করছিল। অন্যরা বসেছে ঈষৎ আবছা অংশে-ডাকবাংলোর বারান্দায় কার্পেট পাতা মেঝের ওপর। শামস আর আফসানা সিগারেট ধরিয়েছিল। রিফাইন্ড তামাকের হালকা গন্ধ ভাসছিল ডাকবাংলোর বাতাসে। ওরা দুজন কাজিন। ছোটবেলা থেকেই লালখান বাজারে ওরা একসঙ্গে বড় হয়েছে-সম্পর্কটা অনেকটা বন্ধুর মতন। তুই তোকারি করে। রিয়া বসেছে একেবারে সিঁড়ির প্রান্তে, মিলির একটু পিছনে। মিলির গলা চমৎকার। মুগ্ধ হয়ে শুনছিল রিয়া। মিলির গার্টস আছে। গভীর মাসসিন আঘাত সহ্য করেও গান গাইছে মিলি; ওর কোনও অনুযোগ নেই। তবে মিলি থানচি আসতে চায়নি। ডিপরেসড। রিয়াই তখন বলেছিল, থানচি চল। ভালো লাগবে। থানচি উপজেলার এই আদিবাসী গ্রামটির নাম: ‘পাঙখুঙ’। জায়গাটা রুমা থেকে অনেকটাই দক্ষিণ-পুবে এবং প্রায় মায়ানমার সীমান্তসংলগ্ন । ডাকবাংলোটির সামনে নীলাভ জলের বিস্তীর্ণ একটি হ্রদ। সে হ্রদের নাম লালমতি। হ্রদের অনেক ওপরে পাঙখুঙ গ্রাম। এলাকাটি বিশেষ করে ম্রো অধ্যুষিত। শামস এর এক পরিচিত লোক ‘ট্রাইবাল মুন’ - এ চাকরি করে; চট্টগ্রাম-বেইজড এই ট্যুরিস্ট কোম্পানিটি বেশ ক্রিয়েটিভ - ডাকবাংলোটি ওদেরই। ডাকবাংলোটির নামও লালমতি। ডাকবাংলোটি সম্পূর্নত কাঠের এবং এর অবস্থান একটি পাহাড়ি জলস্রোতের ওপর । কেয়ারটেকার একজন মারমা। কেয়ারটেকারটি বেশ বুড়ো, নাম: লুঙদি। তামাটে বর্ণের দীর্ঘদেহী বুড়োটির মাথায় সাদা শনের মতন পাকা চুল ও ঘোলাটে চোখ। বেশ ভালো বাংলা জানে। বুড়োর একটি পোষা হাতি আছে। হাতির নাম আদম। কথাটা শুনে আফসানা চিৎকার করে উঠেছিল। আশ্চর্য! বান্দরবানের গহীন অরণ্যের হাতির নাম আদম!হতে পারে। মাথা নেড়ে শামস বলেছিল তখন। আজই বিকেলে এসে ওরা ডাকবাংলোয় উঠেছে। তখনও দিনের আলো ছির। তারপর বিশ্রাম নিয়ে ডিনার শেষে এসে বারান্দায় বসেছে। মিলির গান শুনবে। রবীন্দ্রসংগীতে মিলি কিন্নরকন্ঠী। তবে গিটারে রাজীবের হাতও ভালো। রবীন্দ্রসংগীতের আগে রাজীব পাগানিনি বাজিয়ে শোনাল। এরপর ‘আনন্দলোকে’ গানটা ধরে মিলি। কে বলবে মিলিকে ভীষণ এক কষ্ট কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। ভাবতেই রিয়ার কেমন যেন করে। ২ বছর আগে যেভাবে বিধবা হল মিলি- লাইফ এত ফানি! নৈলে জামিল ভাই আজ এখানে থাকত। তবুও মিলি গাইছে: “আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর।” ইস্, ওর বাচ্চাটাও যদি বেঁচে থাকত! রিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ওর শীত করে। শালটা গায়ে জড়িয়ে নেয় ও । এবার কি বেশি শীত পড়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায়? সময়টা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। সবে পৌষের শুরু। এরকম সময়ে পাহাড়ে শীত তো পড়বেই। কাল ভোরে থানচির আরও গভীরে যাওয়ার কথা। সেখানে কেমন শীত কে জানে । গান শেষ হতেই রিয়া বলল, রবীন্দ্রনাথের জন্য হলেও অবাঙালিদের বাংলা শেখা উচিত। আমাদের যেমন ইংরেজি শিখতে হয় প্রয়োজনে, ঠিক তেমনি হৃদয়ের টানেই অবাঙালিদের বাংলা শেখা উচিত। রবীন্দ্রনাথের গান আত্মার ভাষা। অন্তরের ভাষা। রাজীব জাপানে থাকে। ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ করছে। ও বলল, হ্যাঁ। জাপানে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনেক দিন ধরে ভীষন আগ্রহ । ওখানে অনেকে বাংলা জানে। অবশ্য বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। না। আমি বলছি সাধারন মানুষের কথা। রিয়া বলল।রাজীব বলল, হ্যাঁ, বুঝেছি। সাধারন বিদেশিদের বাংলা শেখা উচিত। অন্তত রবীন্দ্রনাথের গান বোঝার জন্যই। তবে একেক কালচার একেকরকম -তারা কীভাবে নেবে ব্যাপারটা। শামসের কন্ঠে সংশয় ফুটে ওঠে।আফসানা বলল, আমার মাথায় একটা আইডিয়া এল।কী আইডিয়া?আফসানা বলল, আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে গানটা বিশ্বসংগীত করলে কেমন হয়?রিয়া জিজ্ঞেস করল, বিশ্বসংগীত? মানে?আফসানা বলল, বিশ্বসংগীত মানে বিশ্বসংগীত । যেমন প্রত্যেক দেশে জাতীয় সংগীত আছে। বিশেষ সময়ে গাওয়া হয়। তেমনি আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে গানটা হবে জাতিসংঘের সংগীত। বিশ্বসংগীত। যে কোনও আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে সবাই সব জাতি গাইবে।রাজীব শিস দিয়ে উঠে বলল, আইডিয়া মন্দ না। আফসানা বলল, থ্যাঙ্কস। আফসানা পরেছে ধূসর রঙের কোট। পকেট থেকে চকলেট বের করে বিলাতে লাগল। শামস বলল, আইডিয়া ভালো। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল প্রস্তাবটি জাতিসংঘ মেনে নেবে কিনা।রিয়া বলল, মেনে নেওয়ার জন্য আমরা ... মানে বাঙালিরা বিশ্বজুড়ে ক্যাম্পেইন করব। মানববন্ধন করব। সংশ্লিস্ট মহলে চিঠি দেব। রাজীব বলল, হ্যাঁ। এমন একটি মহৎ উদ্যেগের জন্য ক্যাম্পেইন করাই যায়।শামস বলল, হ্যাঁ। রবীন্দ্রনাথের আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে গানটা বিশ্বসংগীত হওয়াই উচিৎ। কোপেনহেনে বিশ্ব জলবায়ূ সম্মেলন হয়ে গেল। সেখানে গানটা গাওয়া উচিত ছিল। কল্পনা কর, ওবামা আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে গানটা গাইছেন। শামস চকলেট মুখে ভরে বলল। নাম্বার ওয়ান, আমরা অবিলম্বে একটি ওয়েব সাইট খুলব। নাম্বার টু, ইংরেজিসহ প্রতিটি ভাষায় গানটা ট্রান্সলেইট করব। নাম্বার থ্রি, তারপর ওয়াল্ড ওয়াইড প্রচারে নামব। রাজীব বলল, দ্যাটস ফাইন্যাল।সিগারেট ধরিয়ে আফসানা বলল, ভীষন জোশ পাচ্ছি মিলি। গানটা তুই পুরোটা আরেকবার গা। রাজীব গিটার তুলে নেয়। মিলি এতক্ষণ মন দিয়ে ওদের কথা শুনছিল। বিষাদ কেটে যাচ্ছিল। এবার গানটা গাইতে লাগল। আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর।মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে,বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে।গ্রহতারক চন্দ্রতপন ব্যাকুল দ্রুত বেগেকরিছে পান, করিছে স্নান, অক্ষয় কিরণে।ধরণী’পর ঝরে নির্ঝর, মোহন মধু শোভাফুলপল্লব-গীতগন্ধ-সুন্দর-বরনে।বহে জীবন রজনীদিন চিরনূতনধারা,করুণা তব অবিশ্রাম জনমে মরণে।স্নেহ প্রেম দয়া ভক্তি কোমল করে প্রাণ,কত সান্ত্বন করো বর্ষণ সন্তাপহরণে।জগতে তব কী মহোৎসব, বন্দন করে বিশ্বশ্রীসম্পদ ভূমাস্পদ নির্ভয়শরণে।গান শেষ হলে গভীর নীরবতা নেমে আসে। গানের কথাগুলি রিয়ার ভিতরে আশ্চর্য এক অদৃশ্য তরঙ্গ তুলতে থাকে। রিয়া ভাবে: কেমন আদিম স্পর্শ গানের শরীরে; গান তো নয় যেন সংগীত। আদিম অরণ্যের প্রাচীন পুরোহিতের প্রার্থনাসংগীত। এমন মহান বাণী, এমন ভাবগম্ভীর সুর - কেন বুঝবে না অবাঙালিরা। অসহ্য এক অনুভূতি গুমরে ওঠে রিয়ার মনে। বিশ্ববাসী গানটি গ্রহন করলে বাঙালির সুমহান কীর্তি যেন উপলব্দি করতে পারবে- উপলব্দি করতে পারবে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি সাধকের অনুভূতির গভীরতা। শামস গম্ভীর কন্ঠে বলল, গানটা অতি অবশ্য সভ্যতার বিশ্বসংগীত হওয়া উচিৎ। কেবলি গডের প্রশস্তি নেই। মায়ামমতার কথাও রয়েছে। এ গান সম্বন্ধে বিশ্বের প্রতিটি জাতির স্পস্ট ধারণা থাকা উচিত। গানটি সবারই গাওয়া উচিত । আমি সিডনি ফিরেই প্রবাসী বাঙালিদের মিটিং ডাকছি।রাজীব বলল, সবই ঠিক আছে। কিন্তু, এখন প্রশ্ন হল অন্য কালচারের লোকজন প্রস্তাবটি মেনে নেবে কি না।রিয়া বলল, সহজে মানবে না। ওয়াল্ড ওয়াইড হেভি ক্যাম্পেইন করতে হবে। কলকাতায় অনীশ আর দীপাবলীকে কালই ফোন করব। এখনই কর না, রাত বেশি হয় নি। মাত্র সাড়ে দশটা বাজে। রাজীব বলল।নেট ওয়ার্ক নেই রে। আর আমার মোবাইল চার্যে। রিয়া বলল। ও শান্তিনিকেতনে পড়ত। তখনই টালীগঞ্জের অনীশ আর দীপাবলীর সঙ্গে ঘনিষ্টতা। নেটের কল্যাণে সম্পর্কটা এখনও টিকে আছে। আফসানা বলল, ফেসবুকে গ্রুপ খুলতে হবে। আফসানা নেটওয়ার্কিং নিয়ে কাজ করছে সিডনিতে।এতক্ষণে মিলি বলল, তোমাদের প্রস্তাব ভালো লাগছে। মিলি চট্টগ্রামে একটা স্কুলে পড়ায়। মায়ের সঙ্গে থাকে কাজিরদেউরী। আগে মুরাদপুর থাকত। সে ঘর দু’বছর হল ভেঙ্গে গেছে।ঘড়ির দিকে চেয়ে শামস চিৎকার করে উঠল। ওরে বাবা। এত রাত হয়ে গেছে। কাল আবার ভোরে উঠতে হবে। রিয়াও ঘড়ি দেখল। কাল সকালে হাতির পিঠে চেপে অরণ্যের আরও গভীরে যাওয়ার কথা। মারমা বুড়ো লুঙদির সঙ্গে কথা হয়েছে। ঘরে ঢোকার আগে আফসানা বলল, রাজীব এর প্রপোজালটা নিয়ে একটু ভাবিস মিলি।আমি কী ভাবব? মিলি হিসহিস করে ওঠে। কি ভাবছি মানে! আফসানা চাপা গলায় বলে, তোর জীবনের কথা ভাববি।মিলি শ্বাস টানে। মাথা টলছে ওর। আফসানা এবার নরম সুরে বলে, মঞ্জুরুল ভাই ভালো একটা মানুষ। তোর কথা জানে। সব মেনে নিয়েছে। ঘরোয়া মেয়ে চায়। আর জাপান কী সুন্দর দেশ মিলি! না গেলে বিশ্বাস করবি না। আমারও প্রথম প্রথম ওদেশ ভলো লাগেনি। এখন ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছি। আফসানা আরও কি কি সব বলল । মিলি ঘরে চলে আসে। মিলি একা থাকবে। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে বাঁচবে। ও জানে কেবল রবীন্দ্রনাথের গান নিয়েই একটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়। ঘরটায় আবছা অন্ধকার আর অ্যারোসেলের গন্ধ। জানালায় পূর্ণিমা রাতের রুপালি ধারা। মিলির ঘুম আসছিল না। দু’বছর ধরে ঘুম হয়ও না তেমন। লেপ সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়ে ও। তারপর স্লিপার পরে নেয়। শীত করছে। চাদরটা চেয়ারের ওপর রাখা । তুলে নেয়। ধীরে দরজা খোলে। করিডোরে অন্ধকার। অ্যারোসেলের গন্ধ ছড়ানো। দুপাশে বন্ধ দরজা। রিয়া আর শামসের ঘরের সামনে দিয়ে হেঁটে যায়। দরজায় কান পাতে না। আরেকটা ঘরের ভিতরে আফসানা রাজীবকে আঁকড়ে ধরে আছে। ও দিকে আর গেল না মিলি। বরং বারান্দায় চলে আসে। জামিল জামিল। তুমি কোথায়? বারান্দায় এসে দাঁড়াল মিলি। সাদা শঙ্খের রঙের মতন নিঝুম রাতের আলো । চাঁদের আলো আর শীত। বাতাস থমকে আছে। রাজীবকে আঁকড়ে ধরে ঘুমুচ্ছে আফসানা । আমি বেঁচে থাকব কেন? ঐ নিচের হ্রদে ঝাঁপিয়ে পড়িনা কেন? ভাবতেই রাতের ফুলের মিষ্টি সুবাস পেল মিলি। সিঁড়ি ভেঙ্গে বাগানে নামল ও। ঠিক তখনই আকাশপথে চি চি চি চি করে কী এক পাখি উড়ে গেল আরও গভীর পাহাড় অরণ্যে দিকে। মিলি ম্লান হাসে। ঈশ্বর এখন কলকাঠি নাড়তে শুরু করেছেন। ফুলের গন্ধ শোঁকালেন। রাতচরা পাখি পাঠালেন। আরও কত কী করবেন তিনি! বাগান পেরিয়ে গেলেই নীলাভ জলের বিস্তীর্ণ হ্রদটি । কিনারে একটা দীর্ঘ ইউক্যালিপটাস গাছ। মিলি ও দিকে যেতে থাকে। হ্রদটি নিঝুম হয়ে আছে। আকাশে তখনও কুয়াশার পুরু চাদর, তাতে শুভ্র আলোর ঢল আটকে রাখতে পারছে না। রাত এখন কত? চরাচর শুনশান হয়ে আছে। হ্রদের জলে টলটলে পূর্ণিমার ধারা। জলে পরিপূর্ন বৃত্তাকার চাঁদের প্রতিফলন। কে যেন ওপাশে দাঁড়িয়ে। কে? ওহ! ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার; মারমা বুড়ো লুঙদি। দিনের আলোয় দেখেছে মিলি বুড়োকে। তামাটে বর্ণের দীর্ঘদেহী বুড়োটির মাথায় সাদা শনের মতন পাকা চুল; চোখ দুটি ঘোলাটে । মিলি এগিয়ে যায়। মিলিকে দেখতে পেয়েও মারমা বুড়ো লুঙদি চমকে ওঠে না। ওরা পাশাপাশি দাঁড়ায়। দুজনের ছায়া পড়েছে শিশিরভেজা ঘাসের ওপর। মারমা বুড়ো লুঙদি এত রাতে এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন? লোকটারও কি আমার মতো রাতে ঘুম আসে না? কেন? কি দুঃখ তার? সে কি নিঃসঙ্গ? আমার মত কাউকে হারিয়েছে লুঙদি? লুঙদি কি তার সুখদুঃখের কথা বলবে? তা কি করে হয়? লুঙদি তো কেবল প্রয়োজনীয় কথাগুলিই বাংলায় বলতে পারে। তার সুখদুঃখের কথাগুলি মনে হয় মারমা ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় বলতে পারে । মিলি তো মারমা ভাষা জানে না। তা হলে? মিলি ওর একান্ত দুঃখ-কষ্টের কথাটি মারমা বুড়ো লুঙদি কে বলতে চায়। বাংলায়। মিলির সুখদুঃখের কথাগুলি আর ওর মা আর বন্ধুরা শুনতে চায় না। ওরা কেবল বলে: ভুলে যা মিলি, ভুলে যা। নতুন করে জীবন শুরু কর। জামিল মিলির প্রতি উদাসী হলে মিলি ঠিকই জামিলকে ভুলে যেত। কিন্তু জামিলের পুরুষসত্ত্বায় কী এক অলৌকিক কারণে মিশে ছিল আশ্চর্য এক নারীহৃদয়। মিলিকে সে গভীরভাবে বুঝতে পারত। রবীন্দ্রনাথের গানের চর্চার কারণেই কি না কে জানে-যৌন সম্পর্কে কিশোরী বয়েস থেকেই ভয় পেত মিলি-জামিল সে ভয় ভেঙ্গে দিয়েছিল। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি মেয়ের সঙ্গে বিছানায় শুয়ে যে যা-খুশি-তাই করা যায় না-জামিল কীভাবে যেন সেটা জানত। যৌনসম্ভোগের আগে ও পরে, শীৎকারের সময় আশ্চর্য সংযত ছিল জামিল। ভালোবাসত রবীন্দ্রনাথের গান। আরও অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ে জামিল ছিল অন্য অনেক পুরুষের চেয়ে অনেকই অন্যরকম। মিলি যত ওর পরিচিত মেয়েদের কাছ থেকে বিবাহিত জীবনের ভয়ানক সব রিপোর্ট পাচ্ছিল, তত জামিলকে বেশি ভালো লাগছিল ওর । সেই জামিল হারিয়ে গেল। হায়। প্রিয়তমের ভ্রুন ধারণ করেছিল গর্ভে। প্রবল শোকের দহনে গর্ভপাত হয়ে গিয়েছিল। হায়। মিলি লুঙদির দিকে তাকাল। সুপ্রাচীন এক নির্বাক মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে হ্রদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বৃদ্ধ। কী যেন খুঁজছে। কি খুঁজছে লুঙদি? মারমা বৃদ্ধটির চোখ দুটি বোঝা না গেলেও বৃদ্ধের চৌকো মুখখানি চাঁদের আলোয় অনেকখানিই স্পস্ট। মিলি শ্বাস টানে। ডিসিসন নেয়। মিলি লুঙদি কে বলবে (বাংলায়) ২ বছর আগে ঠিক কি হয়েছিল । জানেন, জামিল একটা প্রাইভেট ব্যাঙ্কে চাকরি করত; একবার, দু-বছর আগে। ব্যাঙ্কার্স ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হবে। ওও খেলবে। তখনও বুঝিনি। ওর খেলাটা ঠিক হয়নি। ফিল্ডিং করার সময় বাউন্ডারির দিকে দৌড়ে যাবার সময় মাঠের ওপর ঢলে পড়ল। জীবন এমন ফানি। জামিল খুব সিগারেট খেত। মাঠের ওপর পড়ে রইল আমার স্বামী। আমি গ্যালারিতে বসে। তখনও বুঝিনি। মাঝে মাঝে ফান করত জামিল। আমি ভাবলাম সেরকম। পরে অ্যাম্বুলেন্স এল ...লুঙদি চুপ করে থাকে। হাত বাড়ায়। মিলির মাথায় চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। যেন আপন কন্যাকে আদর করছে। মিলি কাঁদে। কাঁদতেই থাকে । লুঙদি চুপ করে থাকে।আকাশপথে চি চি চি চি করে কী এক পাখি উড়ে যায় আরও গভীর পাহাড় অরণ্যে দিকে।জ্যোস্নারা গাঢ় হয়ে ওঠে।এইসব পার্বত্য নিথর প্রকৃতিযেন দুলে ওঠেক্ষণিকেরজন্য।অনেকক্ষণ পর মিলি কেঁদে কেঁদে শান্ত হল। কেঁদে কেঁদে বুকের ভার নামাল। ও জানে আর ওকে দুঃখ স্পর্শ করবে না। ও জানে ও আর মর্মাহত হবে না। এক আদিবাসী বৃদ্ধর স্পর্শ পেয়েছে। আদিম স্পর্শ। এখন ওর নতুন জীবন শুরু হবে। মঞ্জুরুল। রাজীবের কলিগ। মঞ্জুরুলও ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ করছে । দারুন দাবারু নাকি মঞ্জুরুলও আর বেশ রসিক। আফসানা বলে, তোর জীবন সুখে আর হাসিতে ভরিয়ে রাখবে মঞ্জুরুল ভাই। দেখিস। তুই এত সুন্দর রবীন্দ্রসংগীত গাস মিলি। মঞ্জুরুল ভাই আবার রবীন্দ্রসংগীতের ভীষণ পোকা। বলে হি হি করে হেসে উঠেছিল আফসানা। মিলির ভয় কাটে না। আসলে মঞ্জুরুল লোকটা কেমন কে জানে? জামিলের মতো কি? সে কি সম্ভব? কী এক অলৌকিক জামিলের পুরুষসত্ত্বায় মিশে ছিল আশ্চর্য এক নারীহৃদয়। মঞ্জুরুল জামিলের মতো কি? মঞ্জুরুল রবীন্দ্রসংগীতের ভক্ত; কিন্তু, রবীন্দ্রভক্তিই যে সব না। শিরিন আপার বর নাজমূল দুলাভাইও তো রবীন্দ্রসংগীতের ভক্ত; শিরিন আপা সুইসাইড করার আগ পর্যন্ত নাজমূল দুলাভাই নিয়মিত রেপ করত শিরিন আপাকে ... আকাশপথে চি চি চি চি করে কী এক পাখি উড়ে যায় আরও গভীর পাহাড় অরণ্যে দিকে।থানচি উপজেলার নিভৃত পাহাড়ি পল্লীতে পৌষ-রাতের চাঁদের আলো আরও গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে উঠতে থাকে। লুঙদির মারমার বুকে মাথা রাখে মিলি। যেন লুঙদি মারমা এক পরম শান্তিদাতা। আদিপিতা। যেন লুঙদি মারমা এক দূর্গা মা: যে তার সান্ত্বনার সমস্ত রকম নীরব ভাষা নিয়ে অরণ্য পাহাড়ের মর্মমূলে মিলির অপেক্ষায় ছিল । মিলি আদিম স্পর্শ পায়। এবং ফিসফিস করে বলে, আমিও আদিবাসী, পিতা। আমিও শ্বাশত। এবং শেষাবধি তুমি আর আমি রয়ে যাব। লুঙদি কিছু বুঝল কি? নৈলে সে মাথা নাড়বে কেন? তার চোখে জল কেন? সম্ভবত লুঙদির এক পুত্র ছিল । সেই পুত্রের নাম ছিল তাঙদেঙ। এবং লালমতি হ্রদে বহুকাল আগে নিমজ্জ্বিত হয়েছিল তাঙদেঙ । হয়তো বা বালক তাঙদেঙ এরকম পৌষের জোছনারাতে উঠে আসে। নাঃ, আজ আর তাঙদেঙ উঠে এল না। কিংবা নবরুপে তাঙদেঙ ফিরে এসেছে। লুঙদির জীবনের সময় ফুরিয়ে এল। মাস দুয়ের ধরে এক ধরনের ঘড়ঘড়ে কাশি হচ্ছে তার। আগামী বছর অবধি বেঁচে থাকবে কি না কে জানে। এ জন্য লুঙদির বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই। সে এক উজ্জ্বল কন্যাকে পেয়ে গেছে। যে কন্যা দূরের এক সমৃদ্ধশালী নগরে বাস করে । যে কন্যাটি নগরে বাস করেও গভীর সংবেদী ও নির্মল রয়ে গেছে। সে তার এই কন্যার নাম দিল লালমতি। তারপর সময় আরও গড়ালে লালমতি গাইতে থাকে-মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে,বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে।আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর।মারমা বুড়ো লুঙদি শব্দহীন এই রাতের আলোয় খুব কাছ থেকে কান পেতে শুনতে থাকে সে অপার্থিব সংগীত। কেমন এক আদিম স্পর্শ জড়িয়ে থাকা গানটির রচয়িতা যা যা বলতে চেয়েছেন সে সব কথা আপন কন্যার ভাষায় যেন সে ঠিকই বুঝে নিতে পারে ...",False rn,"রাস্তায় পাওয়া ডায়েরী থেকে- ২৭ চার বছর আগে আমি একটি ডায়েরী রাস্তায় কুড়িয়ে পাই। কার ডায়েরী আমি জানি না, কোনো নাম-ঠিকানা লেখা নেই। অদ্ভুত একটা ডায়েরী। নানান ধরনের কথা লেখা । ডায়েরীটা আমি পাঁচ বার পড়েছি। কিন্তু কোনো তথ্য বের করতে পারিনি। একবার মনে হয়- কোনো বদমাশ ছেলে নিজের মনের আবোল তাবোল কথা লিখেছে এবং ছেলেটি মানসিক রোগী। আবার কখনও মনে হয় কোনো বুদ্ধিমান মেয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করে ডায়েরী টা লিখেছে।মিসির আলী বেঁচে থাকলে হয়তো হাতের লেখা দেখেই সব বলে দিতে পারতেন।যাই হোক, যখন আমি নিশ্চিত হলাম ডায়েরীর মালিককে খুঁজে পাবো না- তখন ভাবলাম ডায়েরীটা পুড়িয়ে না ফেলে- ডায়েরীর লেখা গুলো বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি।এর আগে এই ডায়েরীর ২৬ টা লেখা পোষ্ট করেছি। আজ নতুন বছরের প্রথম দিন। বিকালে সংসদ ভবনে গিয়েছিলাম। বাচ্চা একটা মেয়ে এক গ্লাস পানি খাওয়ালো। কিন্তু বাচ্চাটিকে আমি কোনো টাকা দিতে পারিনি। বাচ্চাটিকে বললাম তোমার নাম কি ? মেয়েটি হাসি দিয়ে বলল- আমার নাম জান্নাতি। জান্নাতিকে বললাম- তোমার জন্য এক আকাশ ভালোবাসা, ভালোবাসা এবং ভালোবাসা। বাসা থেকে রাগ করে বের হয়েছি- ম্যানিব্যাগ সাথে নেই। মন খারাপ নিয়ে বাসায় ফিরলাম। রাতে কিছু খেলাম না। রাত দুইটায় ছাদে গেলাম। কিন্তু কিছুটা চিন্তিত- সিগারেট আছে মাত্র তিনটা- সারা রাত পার করবো কিভাবে ? প্যাকেট ভরতি সিগারেট থাকলে- নানান এলোমেলো বিষয় নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। আগামীকাল সুকন্যার সাথে দেখা হবে। এখন আমার একমাত্র আনন্দ সুকন্যা। বাবা-মার সুত্রে আমি মুসলমান।কিন্তু ধর্ম ব্যাপারটা আমার কাছে খুব হাস্যকর লাগে। আমি যদি দিনে পাঁচ বার উঠা বসা করি- তাহলে নাকি ঈশ্বর আমাকে মৃত্যুর পর পুরস্কৃত করবেন । হা হা হা...খুবই হাস্যকর একটা ব্যাপার । যুক্তি খুঁজে পাই না। যারা ধর্মের বানী প্রচার করে- তাদেরকে আমার ভন্ড বলে মনে হয়। আমি তো জানি- ধর্মের কারনে পৃথিবীতে এত হানাহানি। মাঝে মাঝে ভাবি- ধর্ম না থাকলে, এই পৃথিবীর মানুষ গুলো কি খুব বেশী সৎ বা অসৎ হয়ে পড়ত। অথবা খুব সুখে জীবন যাপন করতে পারত ? পৃথিবীতে এখন সব মানুষের ধর্ম আছে- ঈশ্বর আছে- কিন্তু পৃথিবীর মানুষ গুলোতো ভালো নেই। পৃথিবীর জন্মের পর থেকে ঈশ্বর তো কোনো অলৌকিক কিছু দেখাতে পারেনি। মুসলমানদের কিছু কিছু ব্যাপার খুবই হাস্যকর । প্রায়ই শোনা যায়- কোরবানীর মাংসে আল্লার নাম, মাছের গায়ে আল্লাহর নাম, আলুর মধ্যে- টোমেটোর মধ্যে আল্লাহর নাম । এই সবের মানে কি ? ফোটোশপ দিয়ে যে কোনো জাগায় আল্লাহর নাম বসিয়ে দেওয়া কোনো ব্যাপার না, দুই মিনিটের মামলা।আচ্ছা, ধরে নিলাম- ফোটোশপ দিয়ে আল্লাহর নাম বসানো হয়নি, এটা মহান আল্লাহর অলৌকিক খেলা। কিন্তু এই খেলা খেলে লাভ কি ? দেশের দরিদ্র মানুষ গুলো তিনবেলা পেট ভরে খেতে পারবে ? দুর্নীতিবাজরা ক্ষমা চেয়ে তাদের কালো টাকা দেশের কাজের জন্য দিয়ে দিবে? সেদিন একটা চায়ের দোকানে বসে ছিলাম- হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি নামল। দেখলে দেখতে রাস্তায় পানি জমে গেল। এমন সময় একজন বললেন- বৃষ্টির পানি হচ্ছে আল্লাহর রহমত। আমি দেখলাম, রহমতের পানি রাস্তায় জমে জনজীবন বিধ্বস্ত । আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এর 'চিলেকোঠার সিপাই' বইটি পড়ে শেষ করলাম আজ ।ঊনসত্তরের গণঅভ্যুথ্থানের প্রেক্ষাপটে রচিত ।বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ'র পরেই আখতারুজ্জামান সর্বাধিক প্রশংসিত বাংলাদেশী লেখক।সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী বলেছেন, ""কি পশ্চিম বাংলা কি বাংলাদেশ সবটা মেলালে তিনি শ্রেষ্ঠ লেখক''।দু’টি মাত্র উপন্যাস - চিলেকোঠার সেপাই (১৯৮৭) ও খোয়াবনামা (১৯৯৬) বাংলা সাহিত্যে তাঁর অক্ষয় আসনটি নির্মাণ করে দিয়েছে। রাজনীতির সঙ্গে লেখকরা সবসময়ই নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখেছেন। ইলিয়াসই প্রথম এতটা সার্থক শিল্পসম্মতভাবে প্রধান দুটি আন্দোলনকে তার দুই উপন্যাসে ধারন করলেন। ইলিয়াস যখন মারা যান তখন তাকে নিয়ে ফরহাদ মযহার একটি কবিতা লিখেছিলেন। পত্রিকাতে দেখেছিলাম। খুবই সুন্দর একটি কবিতা। সংগ্রহে নাই। সুমির কারনে ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছা করে না। সুমির মাকে দেখলাম, উনি ইলিশ মাছ কেটে আমার জন্য ভাজতে শুরু করলেন । মাছ ধুয়ে নিলেন না। আমি বললাম, আন্টি আপনি মাছ কাঁটার পর- ধোয়ার কথা কি ভুলে গেলেন ? আন্টি অবাক হয়ে বললেন- বোকা ছেলে ইলিশ মাছের গন্ধটাই আসল,ধুতে গেলে গন্ধটা চলে যাবে। আমি দেখলাম রক্ত মাখা মাছ আন্টি হলুদ মিশিয়ে ভেজে আমাকে খেতে দিলেন।ভাজা মাছ দেখে আমার বমি বমি পাচ্ছে। এরপর আর কোনো দিন সুমিদের বাসায় যাইনি। কিন্তু সমস্যা হলো- যখন ইলিশ মাছ খাই- তখন আন্টির কথা মনে পড়ে, ইলিশ মাছ খাওয়ার ইচ্ছা চলে যায় । আমার মা কত সুন্দর করে ইলিশ মাছ রান্না করে। কিন্তু সুমির মা আমার প্রিয় মাছ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। এতক্ষন ডায়েরীর কথা লিখলাম। এখন আমি বলি- কোনো লেখাতেই তারিখ দেওয়া নেই। সময় দেওয়া নেই।তারিখ সময় দেওয়া থাকলে ভালো হতো। তবে হাতের লেখা সুন্দর ।পড়তে বিরক্ত লাগে না। তবে এই ডায়েরী যে লিখেছে- সে অবশ্যই নাস্তিক। তা না হলে কেউ এত সহজে ধর্ম এবং ঈশ্বর নিয়ে রসিকতা করতে পারে না। সে ধর্ম নিয়ে আরও বিকট সব কথা বার্তা লিখেছে। আমি সেসব এখানে দেইনি। খুবই অশালীন কথা, এবং আমার কাছে যুক্তিহীন মনে হয়েছে। আচ্ছা, যে এই ডায়েরীটা লিখেছে- সে কি বেঁচে আছে ? আর বেঁচে থাকলে তার বয়স কত ? সে কি বিয়ে করেছে? বাচ্চা কাচ্চা আছে ? যাই হোক, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন এবং প্রিয় মানুষদের ভালো রাখুন। বোধিবৃক্ষের নিচে গভীর ঘ্যানে মগ্ন ছিলেন গৃহত্যাগী রাজকুমার সিদ্ধার্থ ওরফে গৌতম বুদ্ধ। হঠাৎই ঘোড়া ছুটিয়ে সেখানে এলেন এক নৃপতি নন্দন। বুদ্ধের ধ্যান ভাঙিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভদ্রে, ঈশ্বর কি আছেন’? বুদ্ধ বললেন, ‘আমি কি বলেছি তিনি আছেন?’ নৃপতি নন্দন বললেন, ‘ও আচ্ছা, ঈশ্বর তাহলে নেই?’ বুদ্ধ পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘আমি কি বলেছি তিনি নেই?’ সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৫৬",False rg,"কীভাবে জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেব বাংলা একাডেমিতে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন!!! বাংলা একাডেমি আইন ২০১৩ (২০১৩ সালের ৩৩ নং আইন) এর ২৩ ধারায় বাংলা একাডেমি'র নির্বাহী পরিষদ কীভাবে গঠিত হবে, তার দিক নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে- ২৩। (১) একাডেমির একটি নির্বাহী পরিষদ থাকিবে, যাহা নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হইবে, যথা :-(ক) মহাপরিচালক, পদাধিকারবলে, যিনি ইহার সভাপতিও হইবেন;(খ) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;(গ) অর্থবিভাগ কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;(ঘ) কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা, ভাষাতত্ত্ব ও ইংরেজি বিভাগ এবং বিজ্ঞান অনুষদ হইতে সরকার কর্তৃক মনোনীত একজন করিয়া সর্বমোট চারজন অধ্যাপক;(ঙ) সরকার কর্তৃক মনোনীত একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও একজন বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ;(চ) নির্বাহী পরিষদ কর্তৃক মনোনীত একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও একজন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী;(ছ) ফেলোগণ কর্তৃক নির্বাচিত তিনজন ফেলো;(জ) সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত চারজন সদস্য;(ঝ) সচিব, যিনি ইহার সদস্য-সচিবও হইবেন। অর্থ্যাৎ, বাংলা একাডেমি আইনে নির্বাহী পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এই নির্বাহী পরিষদের পদাধিকার বলে সভাপাতি। এবার চলুন একই আইনের ২৬ ধারায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নিয়োগের বিষয়টি পড়া যাক। সেখানে বলা হয়েছে-২৬। (১) একাডেমির একজন মহাপরিচালক থাকিবেন।(২) বাংলাদেশের নাগরিক এইরূপ কোনো ফেলো অথবা প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বা গবেষকদের মধ্য হইতে সরকার মহাপরিচালক নিয়োগ করিবে এবং তাহার চাকুরির শর্তাবলি সরকার কর্তৃক স্থিরীকৃত হইবে।(৩) মহাপরিচালক তাহার কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে ৩ (তিন) বৎসর মেয়াদে স্বীয় পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন :তবে শর্ত থাকে যে, একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের অধিক নিয়োগ লাভ করিবেন না।(৪) সরকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে মহাপরিচালক স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।(৫) মহাপরিচালকের পদ শূন্য হইলে, বা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে মহাপরিচালক তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে, নবনিযুক্ত মহাপরিচালক কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত কিংবা মহাপরিচালক পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত, সচিব অস্থায়ীভাবে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে, ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করিবেন।বাংলা একাডেমি আইনের ২৬ ধারার ২৬(৩) অনুযায়ী, একজন মহাপরিচালকের মেয়াদ হবে তিন বছর। তবে শর্ত থাকে যে, একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের অধিক নিয়োগ লাভ করিবেন না। এবার আসুন, জনাব শামসুজ্জামান খান বাংলা একাডেমিতে কখন মহাপরিচালকের দায়িত্ব কখন নিয়েছেন একটু দেখে আসি। ২০০৯ সালের ২৪ মে জনাব শামসুজ্জামান খান বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুসারে, পরপর একই ব্যক্তি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হতে পারবেন না। সেই হিসেবে, জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবের মহাপরিচালকের মেয়দ শেষ হবার কথা ২০১২ সালের ২৩ মে। কিন্তু তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তখন বাংলা একাডেমি আইনের সংশোধন করাতে সরকারকে ব্যস্ত রাখার কৌশল নিয়েছিলেন। নতুন আইনে একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের অধিক নিয়োগ লাভ করিবেন না শর্ত জুড়ে দিয়ে তিনি সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে দ্বিতীয় মেয়াদে মহাপরিচালক হিসেবে থেকে যান। সেই হিসেবে জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবের দ্বিতীয় মেয়াদের শর্ত পূরণ হয়েছে ২০১৫ সালের ২৩ মে। বাংলা একাডেমি আইন ২০১৩ অনুসারে, একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের অধিক নিয়োগ লাভ করিবেন না বলে যে শর্ত রয়েছে, সেটি ভঙ্গ করে তিনি তৃতীয় মেয়াদে আবার বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক হিসেবে এখন দায়িত্ব পালন করছেন। যা আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বাংলা একাডেমির ৬১ বছরের ইতিহাসে কোনো মহাপরিচালকের এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার কোনো রেকর্ড নাই।পরিবর্তিত বাংলা একাডেমি আইন অনুসারে জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেব ২০১৫ সালের ২৩ মে'র পর থেকে বাংলা একাডেমিতে অবৈধভাবে মহাপরিচালক হিসেবে আছেন। মজার বিষয় হলো, সরকারকে নানান কিসিমের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি তৃতীয় মেয়াদে মহাপরিচালকের পদ লাভ করেছিলেন ১৫ জুলাই ২০১৫ তারিখে। অর্থ্যাৎ জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবে বাংলা একাডেমিতে তৃতীয় মেয়াদে নিয়োগ পাওয়ার আগে ২৩ মে থেকে ১৫ জুলাই (৫৩ দিন) পর্যন্ত সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে ক্ষমতায় ছিলেন। তৃতীয় মেয়াদে নিয়োগ লাভের পর জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবের তৃতীয় মেয়াদ কার্যত শেষ হবে আগামী ২০১৮ সালের ২৩ মে। কীভাবে জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেব বাংলা একাডেমিতে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, তার নমুনা বুঝতে হলে বর্তমান নির্বাহী পরিষদের দিকে তাকাতে হবে। বাংলা একাডেমি আইনে বলা আছে নির্বা্হী পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা হবে ১৯ জন। কিন্তু বাংলা একাডেমির বর্তমান নির্বাহী পরিষদে মোট সদস্য সংখ্যা মাত্র ১২ জন। ৭ জন সদস্য কম রয়েছে। কেন ৭ জন সদস্য নির্বাহী পরিষদে কম থাকবে? তার ব্যাখ্যা বোঝার জন্য জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবের চতুরপনা বুঝতে হবে! বাংলা একডেমির বর্তমান নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা হলেন- ১. জনাব শামসুজ্জামান খান (মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি), ২. অধ্যাপক ড. অনুপম সেন (নির্বাহী পরিষদ কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ৩. জনাব সেলিনা হোসেন (নির্বাহী পরিষদ কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ৪. ড. বেগম আকতার কামাল (সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ৫. অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম (সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ৬. অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ (সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ৭. জনাব সুব্রত বড়ুয়া (সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ৮. অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ আলী (সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ৯. এ.টি.এম. জাকারিয়া স্বপন (সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ১০. জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম (সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ১১. শেখ মেহাম্মদ সলীম উল্লাহ্ (অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য) ও ১২. জনাব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (সচিব, বাংলা একাডেমি, সদস্য-সচিব)। এবার আসুন বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য ১৯ জনের পরিবর্তে মাত্র ১২ জন কেন, তার ব্যাখ্যা জানার আগে মহাপরিচালককে অপসারণ করার আইনগত বিষয়টি একটু দেখে আসি। বাংলা একাডেমি আইনের ২৮ ধারায় কীভাবে মহাপরিচালককে অপসারণ করা যাবে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-২৮। (১) এই আইন লঙ্ঘন বা গুরুতর অনিয়ম বা অসদাচরণের অভিযোগে নির্বাহী পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য লিখিতভাবে একাডেমির সভাপতির নিকট মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করিলে, একাডেমির সভাপতি উক্ত বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে অনুরোধ করিবেন এবং সরকার তাঁহাকে অপসারণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সরকার মহাপরিচালককে তাঁহার পদ হইতে অপসারণ করিতে পারিবে, যদি তিনি-(ক) কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হন;(খ) পারিশ্রমিকের বিনিময়ে স্বীয় দায়িত্ব-বহির্ভূত অন্য কোনো পদে নিয়োজিত হন;(গ) কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতস্থ ঘোষিত হন; বা(ঘ) নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন। এবার একটু খেয়াল করে দেখুন, জনাব শামসুজ্জামান খান কীভাবে নিজের অপসারণকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রহিত করে রেখেছেন। নির্বাহী পরিষদের ১৯ সদস্যের যদি দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য লিখিতভাবে একাডেমির সভাপতির কাছে মহাপরিচালকের অপসারণ দাবি করেন, তাহলে সভাপতি তা সরকারকে অবগত করবেন। ১৯ সদস্যের দুই তৃতীয়াংশ হলো ন্যূনতম ১৩ জন সদস্য। কিন্তু বর্তমান নির্বাহী পরিষদে মোট সদস্য মাত্র ১২ জন। অর্থ্যাৎ ১২ জনের দুই তৃতীয়াংশ মানে হলো ন্যূনতম ৮ জন। তার মানে হলো বর্তমান নির্বাহী পরিষদের ৫ জন সদস্য জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবকে সমর্থন দিলে তাকে আর অপসারণ করা সম্ভব নয়। তিনি ঠিক সেই সুযোগটিরই অপব্যবহার করছেন। নির্বাহী পরিষদের ৫ জন সদস্যকে ম্যানেজ করা জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবের পক্ষে তেমন কঠিন কোনো ব্যাপার না। দুনিয়া যেখানে চলে রহস্যময় ইসারায়! সুতরাং জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেব বাংলা একাডেমিতে এক্সপায়ার হিসেবে একজন স্বৈরাচারীর চরিত্রে অবতীর্ণ হয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া তার পক্ষে এত দীর্ঘ সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে থাকার রেকর্ড একটি অযৌক্তিক ও অসম্ভব ব্যাপার। ক্ষমতার অপর নাম স্বৈরাচারী আচরণ, এটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটি প্রমাণিত সত্য। অতএব সাধু সাবধান। ................................৩০ ডিসেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:২১",False hm,"২২শে অগাস্ট আজ অফিসে যাবার পথে অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়েনি। প্রতিদিনের মতোই তপ্ত সকাল, ভাঙা রাস্তা, ক্যাব-স্ক্যুটারের যাত্রায় অসম্মতি, রিকশায় করে সিয়েনজি-শিকার ...। অফিসে অবশ্য আজ কাজে কারো মন নেই। ডেইলি স্টারের পাছার পাতায় ছাপা হওয়া ছবি দেখে অনেকের চক্ষুস্থির। জনৈক উর্দিধারীর পেছনে শূন্যে পদাঘাতক এক ব্যক্তি, সেনাটি পশ্চাদপসরণ নীতি অবলম্বন করেছে। ছবিটা দেখে হর্ষবোধ করিনি। নিজের দেশের বীর সেনাদের এমন ছবি দেখতে চাইনি কখনো। পাকিস্তান নয়, বাংলাদেশে বাস করি আমরা। কিন্তু ছবিটি একই সাথে মনে করিয়ে দেয় গতকাল ঢাবি-র ছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার কথা, যার কারণ কোন এক মাথামোটা সেনার উদ্ধত আচরণ। আরো মনে হলো, সেনাবাহিনীর প্রতি ছাত্রদের এমন রুষ্ট মনোভাবের পেছনে দায়ী কে? কোন স্পর্ধায় একজন সেনা একজন স্নাতক পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের কলার চেপে ধরে তাকে মারধর করে? ""বেসামরিক জনগণের প্রতি সদাচরণ"" কেন সেনাদের প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না? আরো খারাপ লেগেছে সারিবদ্ধ গাড়ি ভাঙচুরের দৃশ্য দেখে। আমি গাড়ির মালিক নই, কিন্তু গাড়ি ভাঙা, গাড়ি পোড়ানোর দৃশ্যে উৎফুল্লবোধ করিনি কখনো। আমি চাই না আমাদের কোন বিশ্ববিদ্যালয়, কোন কলেজ বা কোন স্কুলের ছাত্ররা তাদের ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে গাড়ি ভাঙাকে জনপ্রিয় করে তুলুক। এটা একটা ধ্যাষ্টামো। গায়ের ঝাল অন্য লোকের গাড়ির ওপর ঝাড়া ছাত্রসুলভ কাজ নয়। কিন্তু গতকাল রাতে পুলিশের লাঠিপেটার দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে, এমন মার খেলে ছাত্রদের আর সুবুদ্ধির অবকাশ থাকে না। আমাকে কেউ এমন গরুর মতো প্রহার করলে আমি হয়তো জাহাজ ভাঙতাম। কাজের ফাঁকে ফাঁকে খালি মারপিটের খবর পাচ্ছি। টীমের সদস্যরা ফোনে জানাচ্ছে একই কথা, ""বস, ভাঙচুর হচ্ছে ..."", ""ভাইয়া, গন্ডগোল চলছে ...""। সর্বত্র বিক্ষোভ। এরপর জানতে পারলাম কারফিউয়ের কথা। অফিস কিছুটা আগে ছুটি হয়ে গেছে। বেরিয়ে দেখি রাস্তাঘাটে শুধু পায়ে হাঁটা মানুষের ঢল। গাড়ি চোখে পড়ছে, ক্যাব বা স্ক্যুটার নেই, রিকশাও নেই। বহুদূর হেঁটে এসে দেখি একটা বাস, তাতে হিংস্রভাবে চড়ছে মানুষ। এ ওকে মেরে গুঁতিয়ে ঝুলে ঝুলে যাচ্ছে। একটা রিকশার ওপর হামলে পড়ছে দশজন লোক। আমি মাথা নেড়ে হেঁটে সামনে এগিয়ে গেলাম, এভাবে পোষাবে না, দরকার হলে হেঁটেই যাবো। ভাগ্য প্রসন্ন ছিলো, আরেকটু এগিয়ে দূরে এক গলির সুদূর চিপায় এক ঝলক সবুজ চোখে পড়লো। চা খাচ্ছিলেন সিয়েনজিয়েরো চাচামিয়া, আমি মধুরতম সম্ভাষণে তাঁকে অনুরোধ জানালাম আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে, তিনিও মিনিট পাঁচেক আলোচনার পর, ঐ পথে যে কী ভয়ানক যুদ্ধ হয়েছে তার বিবরণ শোনানোর পর রাজি হয়ে গেলেন। আর কিমাশ্চর্যম, তিনি মিটার অনুযায়ীই ভাড়া নেবেন, জানালেন, বাড়তি কিছু আমি যদি দিই তা আমার সেন্স অব ইনসাফ। বেশ নির্বিঘ্নেই বাড়ি ফিরেছি, কিন্তু গোটা পথে ভাঙা কাঁচের টুকরো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে টায়ারের ভস্ম থেকে ভেসে আসছে ভারি ঘ্রাণ। গোটা পথে পথিকস্রোত। ভালো লাগেনি, গোটা ঘটনা যেদিকে গড়ালো, একদম ভালো লাগেনি।",False fe,"কবিতা পড়ে যে উপলব্ধি জন্মে, তা-ই কবিতার অর্থ _ শঙ্খ ঘোষ সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন কবি শঙ্খ ঘোষ । তিনি আমার একজন প্রিয় কবি। যিনি বলেন- এই শহরের রাখাল আমি । কবিতা বিষয়ে তার ভাবনাগুলো অনেককেই ভাবাবে বলে আমার বিশ্বাস। তার এই ভাষণ টি তাই এখানে শেয়ার করলাম কবিতা প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের জন্য । ******************************************************************* কবিতা পড়ে যে উপলব্ধি জন্মে, তা-ই কবিতার অর্থ শঙ্খ ঘোষ ------------------------------------------------------------- সাতচল্লিশ সালের পরে সাতানব্বই সালে আমি বরিশাল জেলার বানারিপাড়ায় আমার জন্মগ্রামে প্রথম গিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশে সাতানব্বই সালের আগে আমি বেশ কয়েকবার এসেছি। উনিশশ পঁচাত্তর, তিরাশি এবং পঁচানব্বই সালে আমি বাংলাদেশে এসেছি। এছাড়াও সাতানব্বই সালের পরে দুহাজার এক সালে একবার এসেছি। সুতরাং যিনি আমার সম্পর্কে বললেন যে সাতচল্লিশ সালের পর সাতানব্বই সালে আমি প্রথম বাংলাদেশে আসি, তার জানার মধ্যে অসম্পূর্ণতা আছে। বেশির ভাগ সময়ই আমি বাংলাদেশে এসেছি বেড়াতে। সভার ব্যাপারটা আমার কাছে বোরিং লাগে। আমার মেয়ের সঙ্গে উনিশশ পঁচানব্বই সাল থেকে বাংলাদেশের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। সে আমাকে বলেছে যে, আমার মেয়ের মেয়েদের অর্থাৎ আমার নাতনিদের নিয়ে বাংলাদেশে যেতে হবে। আমি তাকে না করে দিয়েছি। আমি বলেছি যে, আমি তোমাদের সঙ্গে যাবো না, আমরা যদি যাই নিজেরা নিজেরা যার, তোমাদের সঙ্গে কেন যাবো। আমার মেয়ের ব্যক্তিত্ব অত্যন্ত প্রবল। আমি তাকে ঠেকাতে পারিনি। ফলে ঠিক হয়েছিল যে এ সময়টায় আমরা আসবো। আসার দিন পাঁচ ছয়েক আগে আমার এতোটাই শরীর খারাপ করলো যে, আসাটা প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। তখন এ রকম একটা কথা হয়েছিল যে, যেতেই হবে, গিয়ে চুপ করে এক জায়গায় বসে থাকবে। এখানে হয়তো আসা হতো, একা একা, লুকিয়ে লুকিয়ে। দু-চার জনের সঙ্গে হয়তো দেখা হয়ে যেতো, তবে এভাবে অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হয়ে বসা হতো না। লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণের পক্ষ থেকে এরা যোগাযোগ করেছে বলেই আজকের সভায় আসা হলো। এইমাত্র একজন আমার শৈশবস্মৃতি সম্পর্কে জানতে চাইছে। ঠিক আছে, বলছি। আমার জন্ম হয় মামার বাড়িতে। চাঁদপুরে আমার মামার বাড়ি ছিল। সেখানে আমার জন্ম। বানারিপাড়া আমার গ্রাম। কিন্তু বাংলাদেশ বললে আমার কাছে সবচেয়ে বড় যে জায়গাটা, সেটা চাঁদপুরও নয়, বানারিপাড়াও নয়, সেটা পাকশি। পাবনার পাকশি, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সংলগ্ন যে ছোট্ট রেলওয়ে স্টেশনটা সেটা হলো পাকশি। আমার গোটা স্কুলের পড়াশোনা করেছি পাকশি স্কুলে। মানে আমার স্কুল ওই একটাই, পাকশি স্কুল। এর বাইরে আমার কোনো স্কুলের অভিজ্ঞতা নেই। এর একটা কারণ ছিল যে, আমার বাবা ওই স্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন। ফলে বাবার স্কুলে পড়েছি। আমার দাদা বাবার স্কুলে পড়েছে ৬ মাস, আমার ছোট ভাই ক্লাস সিক্স পর্যন্ত। একমাত্র আমি পুরোপুরি বাবার স্কুলে পড়েছি। এবং আমি একটা গর্ব গর্ব ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম যে বাবার স্কুলের একমাত্র ছাত্র আমি। পাকশি জায়গাটা আমার শৈশবের একটা বড় অংশ যেখানে কেটেছে তা হচ্ছে পাকশি। পঁচাত্তর সালে যখন বাংলাদেশে এলাম, হঠাৎ করে বললাম যে পাকশি যাব, আমাকে পাকশি নিয়ে চল, না হয় আমি একাই যাবো। কিন্তু আমাকে যারা আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তারা একা ছাড়বেন না। দুজন তখন আমার সঙ্গী ছিল, তখন তরুণ লেখক- আবুল হাসনাত, মফিদুল হক। পাবনা খুব ছোট্ট শহর কিন্তু আমার আতঙ্ক হচ্ছিলো। আতঙ্কটা হলো, আমি সাতকাহন করে বলেছি যে পাকশি দারুণ একটি জায়গা, কিন্তু এবার এরা এসে তো সেটা দেখতে পাবে না। আমার চোখে আমি যা দেখছি এরা তা দেখতে পাবে কি? এদের কীভাবে ঠেকাবো? পরে ভাবলাম যে ওদের বলব, আপনারা এখানে বসুন আমি ঘুরে দেখছি। কিন্তু তাদেরকে দেখলাম আমার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুরছে। যেতে যেতে ওদের খুব ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, জায়গাটা খুব খারাপ লাগছে। তারা যা বললো, সত্যি কথা, তারা বললো যে এ রকম জায়গা আমরা কখনো দেখিনি। তখন আমার মনে হলো, সত্যি সত্যি জায়গাটার মধ্যে আছে কিছু। ছোট্ট মফস্বল শহর। খুব গোছানো রেলওয়ে কলোনি। পেছনে ছিল একটা বন। সেটা এখন কেটে ফেলা হয়েছে। ভোরবেলা উঠে পদ্মার তীরে গেলাম বেড়াতে। নানারকম খেলার মাঠ, ছোট স্কুল, খুব বেশি ছাত্র নেই সেখানে। পনের বছর বয়স পর্যন্ত আমার একটা স্বপ্নের মধ্যে কেটেছে বলে মনে হয়। ষোল বছর বয়স যখন আমার, সেটা সাতচল্লিশ সাল, আমি স্কুল পরীক্ষা দিলাম, কলেজে এসে ভর্তি হলাম। তারপর কলেজে এসে চলে গেলাম কলকাতায়। একটা অন্যরকম জীবন শুরু হলো। ফলে এ তিনটি জায়গা, চাঁদপুর, বানারিপাড়া আর পাকশি - এ তিনটি জায়গার জন্য মায়া রয়ে গেছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি পাকশির জন্য। সত্যি বলতে কি, যিনি যে স্কুলে পড়েছেন সে স্কুলটা হানা দিতে থাকে সারা জীবন। আমার কাছে যেমন পাকশি স্কুল। আমি এখনো ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখতে পাই, কিছু না কিছু ঘটছে সে স্কুলে। আমার ধারণা সবারই এ রকম হয়। নাকি আমার বয়স হয়েছে বলেই এ রকম হয় ঠিক বলতে পারছি না। হ্যাঁ, পদ্মার চরেও বেড়াতে যেতাম। তখনো চর ছিল। এখন সেটা আরো বড় হয়েছে। এদিক থেকে ওদিক জল আসতো। সে সরে অনেক বিপদেও পড়েছি। আমার এক বন্ধু ছিল খুব দুষ্ট। সে সবাইকে ধোঁকা দিতো। সে একদিন চরে গিয়ে বললো যে এই আমাকে ধর, আমি তলিয়ে যাচ্ছি। আমরা তাকে ছেড়ে আসছিলাম। কিন্তু যখন দেখা গেলো কোমর পর্যন্ত তলিয়ে গেছে, তখন বোঝা গেলো চোরাবালিতে আটকে গেছে। তখন দৌড়ে সবাই তাকে সেই চোরাবালি থেকে উদ্ধার করলাম। সুতরাং চর ছিল, চোরাবালিও ছিল। আরেকটা ব্যাপার ছিল, ছোটবেলায় ঘরে ঘরে হঠাৎ রটে গেলো যে, ইলিশের নৌকা এসেছে, ইলিশের নৌকা এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সব দৌড়ালাম সেখানে। দৌড়ে গিয়ে দেখি নৌকার ওপর একেবারে পাহাড় করা ইলিশ। আমরা জোড়ায় জোড়ায় সবাই ইলিশ কিনে বাড়ি ফিরে এসেছি। এ রকম ছিল আমাদের মফস্বল শহরের জীবন। পাকশিতে আমি গিয়েছিলাম, আমি কিন্তু কোনো দায়িত্ব নিয়ে যাইনি। গিয়ে একটা দায় বোধ করেছিলাম। কারো ভালো লাগলো কি লাগলো না তার ওপর আমার কিছু নির্ভর করছে না। সাতানব্বই সালে যখন প্রথম বানারিপাড়ায় গেলাম, আমার এক কাকা ছিল। তিনি বানারিপাড়ায় প্রায় সব সময় থাকতেন। তিনি তিপ্পান্ন সালে চলে গেছেন, তারপরে পঁচাশি-ছিয়াশি সালে তিনি একবার দেশের বাড়িতে গিয়েছিলেন। আমি যখন বানারিপাড়া থেকে ফিরে গেলাম, কাকা আমার বাড়িতে থাকতেন। বললেন, কী দেখলে, কী দেখে এলে? আমি বললাম, ‘লাবণ্য’। তিনি বললেন, ‘চিনতে পারলে কিছু’। আমি বললাম, ‘সব’। কাকা বললেন, সব বাজে কথা, আমি দশ বছর আগে গিয়েছি তখন কিছুই চিনতে পারেনি। আর তুমি দশ বছর পরে গিয়ে সব চিনে গেলে। সব বাজে কথা। আমি কিন্তু মনে করিনি যে, কাকা বাজে কথা বলছে, সমস্যাটা হলো, আমি কী আশা করি তাই নিয়ে। অনেক সময় কী হয়, একটা গ্লাসে আধাআধি জল আছে। যদি জিজ্ঞেস করা হয়- কেউ বলবে অর্ধেক খালি, কেউ বলবে অর্ধেক ভর্তি। কে কোনটা দেখছে সেটার ওপর নির্ভর করছে। ব্যাপারটা সাইকোলজিক্যাল। আমি যাদের দেখতাম তারা নেই। পঞ্চাশ বছরে কোনো জায়গা বদল না হয়ে পারে না। সেটা অস্বাস্থ্যকর। যেমন পাকশিতে আমাদের ছেলেবেলায় যে জায়গাটাতে শুধু সাইকেল চালাতাম, পঁচাত্তর সালে কিংবা তারপরে সেখানে যখন গিয়েছি তখন দেখেছি সেখানে রিকশা চলছে। সুতরাং পরিবর্তন তো কিছু হয়েছেই। নতুন তুন কিছু বাড়ি হয়েছে। কিন্তু একটা শহরের বা একটা গ্রামের যে চরিত্র থাকে সেই চরিত্রটাই যে পরিবর্তিত হয়েছে সেটা আমার কাছে মনে হয়নি। বানারিপাড়া এবং পাকশিতে চোখ বন্ধ করে আক্ষরিক অর্থে আমি দেখেছি। এখানে এ রকম থাকার কথা ছিল, ওখানে ওরকম। থাকবার কথা, যারা সঙ্গী ছিল তাদেরকে বলেছি। কিন্তু আমার বাড়ি, যে বাড়িতে ছিলাম, কাকা সেটা দেখে হাহাকার করবে সেটা বুঝতে পারি। শৈশবে আমাদের বাড়িটায় একটা বড় দালান বাড়ি ছিল। রান্নাঘর, কাচারি ঘর, মণ্ডপবাড়ি ইত্যাদি ঘর ছিল আমাদের বাড়িতে। কিন্তু সেই ঘরগুলোর একটাও নেই। কিন্তু আমার উল্লাসের কারণ দালান বাড়িটা সে রকম আছে। ফলে আছে- নেই এর মধ্যে ইল্যুশন তৈরি হয়। বানারিপাড়াতে আমার তেমন কোনো বন্ধু নেই। পাকশিতে দুতিন জনের খোঁজ করেছিলাম। একজনকে পেয়েছিলাম। সে আমার ঠিক বন্ধু নয়, আমার চেয়ে বয়সে একটু বড়। আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু একজন ছিল তার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। আমার সহপাঠী বন্ধু ছিল। আমি তার কথা জিজ্ঞেস করলাম। তখন সবাই বললো যে, হ্যাঁ, তাকে তো আর পাবেন না। একাত্তর সালে পাক বাহিনীরা যাদেরকে মেরে ফেলেছে সে তাদের মধ্যে একজন। একজন লোক আমাকে দেখালো যে, এ জায়গাটাতে তাকে পুঁতে ফেলা হয়েছে। দুবছর আগে আমি রাত এগারটায় বাড়ি ফিরেছি। বাড়িতে যে কাজ করে মেয়েটি, সে ছাড়া কেউ ছিল না। সে বললো যে তোমার একটা ফোন এসেছিল, সে একটা নম্বর দিয়েছে, বলেছে যে যতো রাতই হোক তুমি যেন তাকে ফোন কর। আমি বললাম, নাম বলেছে। বললো, হ্যাঁ, নাম বলেছে। নাম লেখা দেখি আনোয়ারুল ইসলাম। সে একটা গ্র্যান্ড হোটেলে এসে উঠেছে। খুব করে বলেছে যে, আজকে যতো রাতই হোক যেন ফোন করি, কারণ কাল সকালবেলা সে চলে যাবে। আমি রাত ২টা পর্যন্ত ফোন করে তাকে পেলাম না। পরদিন সকালবেলা আবার ফোন করলাম। হোটেলে ফোন করে, যোগাযোগ করে কিছুই বুঝতে পারলাম না। গিয়ে জানলাম যে সে চলে গেছে। আনোয়ার হয়তো অপেক্ষা করেছিল আমি তাকে ফোন করবো। আর আমি চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাচ্ছি না। সে হয়তো ভেবেছে যে আমি তাকে ভুলে গেছি। অথচ প্রত্যেক সময় আমি তাকে মনে করছি। এ রকম কতো মজা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় আবু সয়ীদ আইয়ুবের হাতে শামসুর রাহমানের কিছু কবিতা আমার কাছে যায়। সেই সময় তার কিছু কবিতা দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়। মনে হলো, এসব কবিতা দিয়ে চট করে একটা বই করে ফেলা যায় কিনা। ‘দুঃসময়ে মুখোমুখি’ ছাপা হয়েছিল। এখানেও ছাপা হতে দেখেছি ‘দুঃসময়ের মুখোমুখি’। মুক্তিযুদ্ধের সময় আল মাহমুদ তো ওখানেই ছিল। আল মাহমুদ নামে তার অনেক লেখা ছাপা হতো। আনোয়ার পাশার কথা মনে পড়ে। এমএ তে আনোয়ার পাশা আর আমি একই ক্লাসে পড়তাম। আমাদের ইউনিভার্সিটি পত্রিকা যেটা বছরে একবার করে বেরুতো, সে বছরে সম্পাদনার দায়িত্ব আমার ছিল। তবে আনোয়ারের কবিতাও ছিল। সে সময় ও কবিতাটা ছাপতে চেয়েছিল মোহাম্মদ আনোয়ার নামে। তারপর থেকে সে আনোয়ার পাশা নামেই লিখেছে। ওর কবিতার বইয়ের আগে ওর রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্প নিয়ে একটা বই ছিল। ও বললো যে আমি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে একটা চাকরি পেয়েছি। ও বললো আমি চললাম। আমি বললাম, সত্যিই চলে যাচ্ছে, ও বলল হ্যাঁ চলে যাচ্ছি। তুমি আমাদের দেশে থাক, আমি তোমাদের দেশে চলে যাচ্ছি। সেটা উনিশশ একষট্টি-বাষট্টি সালের কথা। তারপর আর দেখা হয়নি। আমার একটা কবিতা সম্পর্কে জয় একবার লিখেছিল। কখন কীভাবে লিখেছিলাম মনে নেই। জয়ের লেখা পড়ে মনে হলো একেবারে ঠিক আছে। কিন্তু একজন এসে আমাকে বললো যে, জয় যা লিখেছে তা মোটেও ঠিক নেই। আমি বললাম, একেবারে ঠিক বলেছ! তবে এটা ঠিক কবিতা পাঠের পর নিজের কাছে একটা অর্থ দাঁড়িয়ে যাবে। কবিতা পড়ে যে উপলব্ধি জন্মে তা-ই কবিতার অর্থ। ভারতের সিমলায় আমি কিছুদিন ছিলাম। সেখানে এডভান্স স্টাডি সেন্টার বলে একটা জায়গা আছে। সেখানে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেশ-বিদেশ থেকে জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিরা আসেন। পড়াশুনা করেন। সেমিনার করেন। তো বলা হলো যে, এখানে একজন আসবেন, তাকে আর যেতে হবে না, পুরো এক বছর থাকবেন। সৌভাগ্যক্রমে আমিই হলাম সেই ব্যক্তি। আমি বললাম, এখানে আমি এক বছর থেকে কী করবো। তারা বললো যে, যা খুশি করবেন, আপনার যা ভালো লাগে। সেখানে জ্ঞানী পণ্ডিত ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে সেই সময়টা আমার কেটেছিল। সিমলার সবচেযে উঁচু যে জায়গাটা, সামার ভিউ তার নাম। তার উপরেই বাড়িটা, বাড়িটা সবার পরিচিত। যেখানে সিমলা চুক্তি হয়েছে। বিরাট রাজ প্রাসাদ ওই উঁচুতে তিনতলা বাড়ি। বিশাল বিশাল ঘর একেকটা। ওখানে পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। অনেকে এসে পড়াশোনা করে চলে যেতেন। আমি ওই বিশাল বাড়িতে গোটা ৫ দিন একা ছিলাম। পাহাড়ের উঁচুতে বাড়িটাকে মেঘ ঘিরে রেখেছে, একটা অবিশ্বাস্য অবস্থাকে আমি উপভোগ করেছিলাম। এ রকম একটা দিনে হঠাৎ একটি লেখা শুরু করেছিলাম। শান্তি নিকেতনে আমি এক বছর ছিলাম। একা থাকতাম। মাঝে মাঝে আমার স্ত্রী-কন্যা এসে থাকতো। একা থাকতাম বলে, কলকাতা থেকে তরুণ কবিরা বলতো, মাঝে মাঝে আমরা এসে থাকবো, আড্ডা দেবো। আমি বললাম এসো। অনেকে গেছে থেকেছে। ভাস্কর চক্রবর্তী বললো যে, আমি যদি আরো তরুণ কাউকে নিয়ে আসি সমস্যা হবে। আমি বললাম নিয়ে এসো। তো সে একজন তরুণকে নিয়ে এলো। রাতে খেতে বসে বলছে সে, জানেন তো আমার মা আমাকে কিছুতেই আসতে দেবেন না। আমি বললাম, কেন, শান্তি নিকেতন উনি পছন্দ করেন না। বললো, না না শান্তি নিকেতন উনি পছন্দ করেন। মা বললেন, শান্তি নিকেতনে যাবে যাও, কিš' যেখানে যাবে বলছ সেখানে গেলে আমি কিছুতেই যেতে দেবো না। তখন উনি আমার নাম উল্লেখ করে ছেলেকে বললেন, তুমি ভেবেছো আমি কিছু জানি না, উনি যে সারাক্ষণ মদে চুর থাকেন সেকথা আমি খুব ভালো করেই জানি। তখন তার ছেলে বললেন, মা তুমি ভুল করছ- সেটা উনি নন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। বুদ্ধদেব বসু আমাদের সম্পর্কে কিছু বলতে যাবেন কেন- এখানে তো তার সঙ্গে আমাদের কোনো ঈর্ষার সম্পর্ক নেই। এটা একটা বয়সের সমস্যা। ধরা যাক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা, সুনীল ছন্দে একটা কবিতা লিখে সেটাকে আবার ভেঙে ফেললো। পুরোনো কোনো কবি হয়তো বুঝতে পারবে না এটা কেন হলো, কী করে হলো, কেন ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়া একটা শব্দকে কতোটা ছন্দে কতোটা শুষে নেওয়া যায় এটা নানা সময় নানাভাবে ঘটতে থাকে। পুরোনো দিনের লোকেরা অনেক সময় সেটা ধরতে পারেন না। ধরতে চান না। কারণ মনে করেন এটা ছন্দ হয়নি। বুদ্ধদেব বসু একা নন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় একবার আমাকে বলেছিলেন, তোমার বন্ধুরা ছন্দে বড্ড গোলমাল করে। আমি বললাম যে আপনি ধরে দেখিয়ে দেন। একটা জায়গা দেখান কোথায় গণ্ডোগোল করছে। তিনি বললেন এটা ধরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আমি বললাম, এটা আপনি বলছেন সুভাষ মুখোপাধ্যায় হয়ে, পদাতিকের কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় হয়ে। আপনিই তো শিখিয়েছিলেন কীভাবে কবিতার মধ্যে শব্দকে শুষে নিতে হয়। সুনীলের গদ্যে কিংবা কবিতায়, শক্তির কবিতায় যেমন আছে- ভাল্লাগে না, ভাল্লাগে না আমাকে সুভাষ দা একদিন বললেন যে তোমাদের এ ব্যাপারটা ঠিক হচ্ছে না। ভাল্লাগে না এটা আবার কী রকম কথা। ওতো ওভাবে লিখছে- তা হলে আপনি বলে দিন কীভাবে লিখবে। সুভাষ দা ছেলে মানুষির মতো বললেন, যদি এভাবে যদি ধরো সে লিখলো, ভালো লাগে না। কথাটা শুনালো ভাল্লাগে না। এ পর্যন্ত বলে অবশ্য নিজেই হেসে ফেললেন। ছন্দের বারান্দা পাড়ে কেউ ছন্দ শিখতে চাইলে ভুল করবেন। ছন্দের বারান্দা ছন্দ শিখার বই আদৌ নয়। ছন্দ যে জানে, সে বুঝতে পারবে আমাদের কয়েকজন কবির ছন্দ ব্যবহার বৈশিষ্ট্য নিয়ে বলা আছে। (সম্প্রতি শাহবাগস্থ আজিজ সুপার মার্কেটে লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গণ আয়োজিত আড্ডায় প্রদত্ত বক্তৃতা) ------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ সাময়িকী । ১৪ নভেম্বর ২০০৮ সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:৪৫",False ij,"Hittites কারা_ ভূমধ্যসাগরসহ পশ্চিম এশিয়ার মানচিত্র। ভূমধ্যসাগরের উত্তরে Hittites দের রাজ্যটি দেখা যাচ্ছে। এরাই এককালে সভ্যতা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রভাবিত করেছিল মেসোপটেমিয়াকে। এমনকী প্রাচীন মিশরের সঙ্গে লিপ্ত হয়েছিল কাদেশ যুদ্ধে। Hittitesরা ছিল প্রাচীন এক জাতি। কোথাকার? প্রাচীন আনাতোলিয়ার। তা কোথায় আনাতোলিয়া? আনাতোলিয়া পশ্চিম এশিয়া। বর্তমানে তুরস্ক। Hittitesরা কথা বলত Hittites ভাষায়। ভাষাটি ছিল আনাতোলিয় ভাষারই একটি শাখা; তবে ইন্দোইউরোপীয়। Hittitesরা ওদের রাজ্যকে বলত HATTUSA । এর মানে, ওদের ভাষায় land of hatti. Hittites সভ্যতার সময়কাল? ২০০০ খ্রিস্টপূর্বে Hittitesরা আনাতোলিয়ায় এসেছিল। কোত্থেকে? তা জানা যায়নি। তবে কারও কারও অনুমান Hittitesরা আগে বুলগেরিয়া ও ইউক্রেইন-এ ছিল। ১৮০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ১৪০০ খ্রিস্টপূর্বে উন্নতির চরম শিখরে উঠেছিল Hittitesরা। তাদের রাজ্য ছড়িয়ে ছিল বেশির ভাগ আনাতোলিয়ায়; সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চল;পুবে মেসোপটেমিয়া অবধি। ১১৮০ খ্রিস্টপূর্বের পর Hittites দের রাজ্যে ভাঙ্গন ধরে। নতুন কতগুলি রাজ্যের উদ্ভব ঘটে। যাকে বলা হয় নতুন Hittites রাজ্য। এই নতুন রাজ্যগুলি ৮০০ খ্রিস্টপূর্ব অবধি টিকে ছিল। হিব্রু বাইবেলে Hittitesদের কথা রয়েছে। বলা হয়েছে Hittitesরা নাকি হেত এর সন্তান। হেত ছিল কনানের ছেলে। ২ তো, জগতে এত জাত থাকতে আজ Hittitesদের স্মরণ করা কেন? দুটো কারণে। ১/ এরা লোহার ব্যাবহার শিখিয়েছিল মানবসভ্যতাকে। ২/ এরা ছিল প্রথম রাজতান্ত্রিক সংবিধানের প্রনেতা। তার মানে Hittitesরাই প্রথম ইতিহাসে সংবিধান রচনা করেছিল। কাজেই এদের সম্বন্ধে শ্রদ্ধাশীল ও কৌতূহলী হতেই হয়। Hittites দের সমাজে সবার উপরে ছিল রাজা। রাজার ছিল রাজকীয় পরিবার। রাজার কার্যক্রম পর্যবেক্ষনকারীদের বলা হত- পানকু। আর ছিল অভিজাত শ্রেণি। Hittitesদের বিচারব্যবস্থা বিশ্লেষন করলে অবাক হতেই হয়। সেইকালে এত নমনীয় ছিল বিচারব্যবস্থা। গুরুতর অপরাধেও মৃত্যুদন্ড ছিল না। চুরির শান্তি ছিল চুরি করা জিনিস ফেরৎ দেওয়া। এই। Hittites সমাজ আমাদের আরও মনোযোগ দাবি করে। ৩ পাথর পূজা করে Hittitesরা উপাসনা করত। তাদের ধর্ম এবং উপকথা মেসেপটেমিয় ধর্ম এবং উপকথাকে প্রভাবিত করেছিল। এবং উলটোটাও সত্য হতে পারে। Hittitesদের বজ্রের দেবতার নাম ছিল তারহুন্ট। তারহুন্টের বাবার নাম ছিল কুমারবি। তার নামে বহু গান প্রচলিত ছিল। কুমারবির আরেক ছেলের নাম উলিকুমমি। সে আসলে ছিল পাথরের রাক্ষস! বজ্রের দেবতা তারহুন্টের ছেলের নাম তেলেপিনু। মেয়ের নাম ইনারা। বসন্ত উৎসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইনারা। অধিকন্তু ছিলেন Hittitesদের রক্ষাকারী দেবী। Hittitesদের শপথের দেবীর নাম ইশারা। Hittitesদের সূর্যদেবী ছিলেন আরিননা। ৪ মিশরের সঙ্গে Hittitesদের এক যুদ্ধের কথা জানা যায়। কাদেশ যুদ্ধ। কাদেশ ছিল ওরঅনতেস নদীর ধারে। জায়গাটা বর্তমানে সিরিয়ায়। কাদেশ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ১২৪৭ খ্রিস্টপূর্বে। এত বড় রথযুদ্ধ এর আগে মানক ইতিহাসে সংগঠিত হয়নি। ধারণা করা হয় ৬০০০ রথ কাদেশ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। জনৈক ঐতিহাসিক লিখেছেন- Hittite prosperity was mostly dependent on control of the trade routes and metal sources. Because of the importance of Northern Syria to the vital routes linking the Cilician gates with Mesopotamia, defense of this area was crucial, and was soon put to the test by Egyptian expansion under Pharaoh Rameses II. The outcome of the battle is uncertain, though it seems that the timely arrival of Egyptian reinforcements prevented total Hittite victory. The Egyptians forced the Hittites to take refuge in the fortress of Kadesh, but their own losses prevented them from sustaining a siege. This battle took place in the 5th year of Rameses (c.1274 BC by the most commonly used chronology). Hittitesদের সম্বন্ধে আরও জানার জন্য দেখুন- http://en.wikipedia.org/wiki/Hittites সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:১২",False mk,"জঙ্গিবাদ ও রাজনৈতিক দল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যার ত্রিশ বছর পরে সেই আগস্ট মাসেই আবারও গণহত্যার ঘটনা ঘটে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলা ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট তথা খালেদা-নিজামীর নীলনকশা আর জঙ্গিবাদ উত্থানের ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত। সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় তিনশোর বেশি নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন; নিহত হন আওয়ামী মহিলা লীগের নেতা ও সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতির সহধর্মিনী আইভি রহমানসহ ২৪ জন। বিশ্ব জুড়ে তোলপাড় করা গ্রেনেড হামলার সেই ঘটনার ভয়াবহতা আমাদের হতবাক করে দিয়েছিল। পরের বছর ঠিক একই মাসের ১৭ তারিখে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে পাঁচ শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ ও নিহত মানুষের স্বজনদের আর্তনাদ এবং আহত মানুষের কান্নায় আমাদের মনে ক্ষোভ ও ঘৃণা আরও তীব্র হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বোমা হামলার ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলো শুরু হয়েছিল তারও আগে থেকে। ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরের টাউন হল মাঠে উদীচীর সমাবেশে এক বোমা হামলায় নিহত হয় ১০ জন। একই বছর ৮ অক্টোবর খুলনার নিরালা এলাকায় অবস্থিত কাদিয়ানীদের উপাসনালয়ে বোমা বিস্ফোরণে ৮ জন নিহত হয়। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে সিপিবির মহাসমাবেশে বোমা হামলায় ৬ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়। ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসবে সংঘটিত বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় ১১ জন। ৩ জুন বোমা হামলায় গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর গির্জায় সকালের প্রার্থনার সময় নিহত হয় ১০জন; আহত হয় ১৫ জন। সিলেটে একাধিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এস এম কিবরিয়া নিহত হন গ্রেনেড হামলায়। ২০০৪ সালের ২১ মে হযরত শাহ জালাল (রহ.) মাজার পরিদর্শনে গেলে গ্রেনেড হামলায় আহত হন তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার হোসেন; যিনি সিলেটি বাংলাদেশির সন্তান। এছাড়াও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমাবেশে, অফিসে, নেতার গাড়িতে, সিনেমা হলে একাধিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে বোমা ও গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। অথচ ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট এ ধরনের তৎপরতা বন্ধে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। হামলা প্রতিরোধ ও জঙ্গি দমনে তৎকালীন সরকারের নিষ্ক্রিয়তা জঙ্গিবাদ উত্থানে সহায়ক হয়ে উঠেছিল; ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় খালেদা-নিজামী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বর্তমানে আরও স্পষ্ট হয়েছে।সে সময় খালেদা-নিজামী জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কমিটি করে জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিল; নষ্ট করা হয়েছিল গ্রেনেড হামলার সকল আলামত। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে জজ মিয়াদের কোনো দোষ খুঁজে পায়নি। বরং ২০১১ সালের ৩ জুলাই ৫২ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হলে প্রকৃত অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচিত হয়। প্রধান আসামিদের তালিকায় নাম রয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর, জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদ, সাবেক উপমন্ত্রী পিন্টু, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান প্রভৃতি। এদের ভাই ও সঙ্গীদের অনেকেসহ হুজি নেতাদের সংশ্লিষ্টতা এখন প্রমাণিত সত্য। অর্থাৎ একদিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রেনেড হামলা অন্যদিকে জঙ্গিদের সঙ্গে তৎকালীন জোট সরকারের সুসম্পর্ক বর্তমানের তথাকথিত ২০ দলীয় বিরোধীদের রাজনীতির ভয়ানক চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপিত হচ্ছে। খালেদা-নিজামীরা যে খেলায় মেতেছিল সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে বর্তমান সরকারের আমলে। মানুষের আস্থা বেড়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর। আর এজন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টসহ বিশ্বের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এদেশ সফরে এসে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের অবস্থানের প্রশংসা করে গেছেন। সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:০০",False ij,"গল্প_ কী আজব সার্কাস এন্ড কোং আগের পর্ব এইবার শোন, কদিন ধরে গড়পাড়া গ্রামে কী মজার কান্ড হয়েছে। দিন সাতেক হল একটা সার্কাসের দল এসে উত্তরপাড়ার তালপুকুরের পাশে ময়নার মাঠের ওপর সারি সারি তাবু ফেলেছে। সার্কারে নাম -- কী আজব সার্কাস এন্ড কোং । সার্কাসের লোকেরা যে কত রকম খেলা দেখায়। ঘোড়ার খেলা, হাতির খেলা, বাঘের খেলা, দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটার খেলা- এরকম কত কী । রঙচঙা ভাঁড় ডিগবাজী খেয়ে কতরকম কসরত দেখায়। গ্রামের মানুষ হাসতে হাসতে এ-ওর গায়ে ঢলে পড়ে। হ্যাঁ, বিকেল হলেই গ্রামের ছেলেবুড়ো ভেঙ্গে পড়ে তালপুকুরের পাশে ময়নার মাঠে।তা, এই কী আজব সার্কাস এন্ড কোং-এর সত্ত্বাধিকারীর নাম গোলাম হায়দর রাব্বানী। সংক্ষেপে তাকে অবশ্য গো. হা রাব্বানী বা শুধু রাব্বানী বললেই চলবে। মাঝবয়েসি লোকটা ছ ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট দশাশই চেহারার এক তাগড়াই যোয়ান। শুধু তাইই নয় তার একটি ইয়া বড় গোঁফও রয়েছে থ্যাবড়া নাকে নীচে আর মাথাটা নিখুঁতভাবে কামানো বলেই চকচকে । সব মিলিয়ে কী আজব সার্কাস এন্ড কোং-এর সত্ত্বাধিকারী রাব্বানী দেখতে ষন্ডাপ্রকৃতির। গুজব এই, তার ভয়ে নাকি সার্কাসের নখ-দাঁত পড়ে-যাওয়া বুড়ো বাঘ আর হাড়জিরজিরে ঘোড়াগুটা নাকি এক গামলায় পানি খায়। কথাটা সত্যি কি মিথ্যে তা পরে জানা যাবে।আর ভীষন বেঁটে আর উটকো মতন দেখতে গাবু হল কী আজব সার্কাস এন্ড কোং-এর সত্ত্বাধিকারী গোলাম হায়দয় রাব্বানীর ডানহাত। বলাই বাহুল্য যে, সে একটা ভারি বদ লোক। মাথায় কোঁকড়া চুলে বাংলা সিনেমার এক হিট নায়কের মতন ব্যাক ব্রাশ করা । ব্যাক ব্রাশ করা চুলের ওপর বাহারি টুপি। শোনা যায় লোকটা কোন্ পিরের মুরিদ। গাবুর মুখ-ভরতি গোটা-গোটা ব্রনের দাগ। সব সময় উটকোটা গাঢ় হলুদ রঙের পাঞ্জাবী পরে থাকে। দিনেরাতে চোখে তার কালো রোদচশমা থাকবেই।তো সকাল বেলায় ইশকুল ফাঁকি দিয়ে তিতা আর কটূ তালপুকুরের পাশে ময়নার মাঠে ঘুরঘুর করছিল। কী ভাবে ওরা ভিতরে ঢুকেছে তা ওরাই জানে। হয়তো ময়নার মাঠের উত্তরদিকের আমগাছে চড়েই ঢুকেছে। কেউ খেয়াল করেনি। এখন সার্কাসের লোকজন অলস ভঙ্গিতে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছিল। কারণ, সার্কাস শুরু হয় বিকেলের দিকে। সার্কাসের হাতিটা একপাশে বাঁধা ছিল। দূর থেকে হাতি দেখিয়ে তিতা বলল, দেখেছিস কটূ কী বিশাল শরীর।যেন হাতি পোষে এমন ভঙ্গি করে কটূ বলল, হাতিদের এমনই হয়। বলে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, চল বাঘটা দেখে আসি।চল। ওদের মাথায় অনেক দুষ্টুবুদ্ধি ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু একটাও প্রয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছিল না। সার্কাসের মালিক রাব্বানী যা বদরাগী। যদি ওদের টুটিঁ চেপে খোদ বাঘের খাঁচায় ছুঁড়ে দেয়, তখন? এই তো সামনেই রাব্বানীর হলুদ রঙের তাবুটা দেখা যাচ্ছে। লোকটার সামনে না পড়াই ভালো। হয়তো এমনি এমনি গর্দান নিয়ে নেবে। ওরা ভয়ে ভয়ে জায়গাটা পেরিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় পিছন থেকে বাজখাই কন্ঠ শুনে ওদের পিলে চমকে উঠল। এই তোরা এখানে কী করছিস? এখানে ঢুকলি কী করে?সর্বনাশ! এতো সার্কাসের মালিক রাব্বানীর ভয়াবহ কন্ঠস্বর। ওরা ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে চোখ বুঁজে ফেলেছিল। চোখ খুলে দেখল যেখানে বাঘের ভয় ... হলুদ রঙের তাবুর সামনে বুক টানটান করে রাব্বানী দাঁড়িয়ে। কালো রঙের চামড়ার জ্যাকেট পরা। হাতে একটা চাবুক। কামানো মাথাটা সূর্যালোকে চকচক করছে। পাশে গাবু দাঁড়িয়ে। আজ একেবারে বাঘের মুখে পড়েছে।তিতা হাত জোর করে কোনওমতে বলতে পারল, মানে ...মানে একটু ঘুরে ফিরে দেখছিলাম আর কী। এই গাবু ও দুটোকে ধরে নিয়ে আয় তো। বলেই বিশালদেহী রাব্বানী হলুদ তাবুর মধ্যে ঢুকে গেল।অতি বেটে হলেও কিছু বোঝার আগেই গাবু ওদের চ্যাঙ্গদোলা করে তাবুর ভিতরে নিয়ে থপ করে ফেলল। ওরা ব্যথা পেয়ে কুঁই কুঁই করে উঠল। কটূ ফিসফিস করে তিতার কানে কানে বলল, এবার নিশ্চয়ই আমাদের আস্ত খেয়ে ফেলবে। কেন যে মরতে এসেছিলাম।ওরা ধূলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়াল।হুম। সার্কাসের মালিক রাব্বানী হুঙ্কার ছাড়ল।ওরা দেখল সার্কাসের মালিক রাব্বানী টেবিলের ওপর পা তুলে বসে চুরুট টানছে, গলার কাছে হলুদ রঙের তোয়ালে। আর একটা কালো করে শুকনো মতন লোক রাব্বানীর মাথাটা পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে। এই লোকটা হল নাড়ু নাপতে, হাটের দিন বটতলায় বসে। নাড়ু নাপতেকে দেখে ঠিকই চিনল তিতা-কটূ। মনে হল নাড়ু নাপতে সার্কাসের মালিক রাব্বানীর মাথা চেঁচে দেবে আজ। হ্যাঁ, তাই। শুকনো মতন লোকটা হাতে একটা কালো রঙের সেভিং ব্রাশ তুলে নিল। টেবিলের ওপর থালাভর্তি জিলেপি। এখন সকাল ১১টা বাজে ওদের খিদে পেয়েছে। ওরা জিলেপির দিকে কেমন করে তাকাল।এই তোরা কই থাকিস রে? রাব্বানী জিগ্যেস করল। গলার স্বরটা এখন তত বাজখাঁই নেই।তিতা এক ঝলক জিলিপী-ভরতি পে¬টের দিকে তাকিয়ে কোনওমতে বলতে পারল, আমরা এই গাঁয়েরই ছেলে। আমাদের বাবা নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন। হারুন মন্ডল।রাব্বানীর মুখটা নরম হল। ও, তোরা তাহলে হারুন মন্ডলের ছেলে। হ্যাঁ, তোদের বাবাকে ভালই চিনি। এখানে সার্কাস বাসানো আগে তাঁর পারমিশন নিতে হল। বেশ, ভালো ভালো। তোরা জিলিপী খাবি? এই নে খা। বলে পা দিয়েই থালাটা ঠেলে দিল রাব্বানী। বাবার কথায় তাহলে কাজ হল। কটূ ভীষন অবাক হয়ে তিতার মুখের দিকে তাকাল। তিতাও। খা। অত ভয় খাচ্ছিস কেন? আমি বাঘ না ভাল¬ুক না উল¬ুক?দুটোই। না না তিনটেই। মনে মনে বলল কটূ। তিতা একসঙ্গে দুটো জিলিপী তুলে নিল। কটূ তিনটে।শুকনো মতন লোকটা রাব্বানীর মাথায় সেভিং ক্রীম ঘঁষে চলেছে। রাব্বানীর চোখটা আরামের চোটে ছোট ছোট হয়ে এল। রাব্বানী জিগ্যেস করল, এ্যই,তোদের গ্রামে কি কি মজার মজার জিনিস আছে বল তো ? প্রশ্নটা বুঝতে না পেরে ওরা রাব্বানীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। রাব্বানীর ডান হাত গাবু তখন মোচে তা দিতে দিতে বলল, তোরা হুজুরের কথা বুঝতে পারলি নাতো? শোন, তাহলে আমিই সব খুলে বলছি। সার্কাসে এসে এখন আর লোকে বস্তাপচা পুরনো খেলা দেখে মজা পায় না। লোকে নতুন নতুন খেলা দেখতে চায়। হাতি-বাঘ-ঘোড়া-বানর, এইসব এখন বস্তাপচা হয়ে গেছে বুঝলি। এসব দেখে দেখে গ্রামের হদ্দ লোকেরও অরুচি ধরে গেছে। এখন আর তেমন লোক জোটে না। ভাবছি শেষে সার্কাসই না তুলে দিতে হয়। হুজুর তাই জানতে চাইছিলেন, তোদের গ্রামে কি কি মজার মজার জিনিস আছে যা দেখালে লোকে মজে যাবে।আরেকটা জিলিপী মুখে পুরে তিতা জিগ্যেস করল, একেবারে অন্য কিছু কী? গাবু লালা রুমালে মুখ মুছে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, অন্য কিছু মানে, এই ধর সাপ-ব্যাঙ- ইঁদুর- বিলাই- জ্বীন- ভুত, মানে এর আগে সার্কাসে যা দেখানো হয়নি। ও বুঝিছি। তিতা বলল। বলে ভাবল গড়পাড়া গ্রামে কি কি অদ্ভূত জিনিস আছে। এদের যে করেই হোক খুশি রাখতে হবে। তা হলে নিশ্চয়ই সার্কাসে ঢোকার ফ্রি টিকিট ছাড়াও অনেক টাকা পয়সা পাওয়া যাবে। টাকার দরকার। দুষ্টুমি করে বেড়ায় বলে বাসা থেকে হাতখরচ বন্ধ করে দিয়েছে। ওরা ভালো করেই জানে পূর্ণিমার রাতে ঝিলিমিলি নদীর পাড়ের বালুচলে পরিরা নামে। ফস করে জানতে চাইল কটূ, পরি হলে চলবে? পরি? বলিস কী! কোথায়? সার্কাসের মালিক রাব্বানী সিধে হয়ে বসতেই উঃ করে উঠল। কেটে গেল বোধ হয়। শুকনো দেখতে লোকটা হাতে এখন একটা চকচকে ধারালো ক্ষুর।চোখে কালো রোদচশমা পরা গাবুটাও দুপা এগিয়ে এল।একসঙ্গে দুখানা জিলেপী মুখে পুরে তিতা বলল, আছে।কোথায়?বললাম তো আছে।আহা বলনা কোথায়?বলব। তবে পরি ধরে দিলে কী পাব সেইটে আগে শুনি?তোরা কী চাস?তিতা-কটূর অনেক দিন ধরে ঘোড়ার শখ। একটা ঘোড়া জোগার করে বিকেলের দিকে গ্রামের পথে পথে ঘোরালে বেশ হয়। লোকে তাকিয়ে দেখবে। তা ছাড়া আগামী বছর ওদের বাবা হারুন মন্ডল ইলেকশানে দাঁড়াবে। তখন ঘোড়াটা কাজে লাগবে। তিতা বলল, সাদা রঙের ঘোড়াটা চাই।সার্কাসের মালিক রাব্বানী কী যেন ভাবল। ঘোড়াটা এমনিতেই হাড় জিরজিরে হয়ে গেছে। দুদিন পর এমনিতেই ওটাকে তাড়িয়ে দিতে হবে। রাব্বানী বলল, সত্যিই পরি ধরে দিতে পারবি?হ্যাঁ পারব। কটূ দৃঢ় স্বরে বলল।যা তাহলে, এক্ষুনি পরি এনে দে। দেখি তোদের মুরোদ কেমন? কটূ বলল, আঙুল চাটতে চাটকে বলল, সার, এখন তো প্রায় দুপুর। পরিরা আসে রাতদুপুরে। যদি জোছনা থাকে তবেই। তাই এব্যাপারে আমাদের কিছুই করার নেই সার, আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে সার।রাব্বানী বলল, হুঁ। ঠিক আছে, আমি না হয় অপেক্ষা করলাম।আমরা তাহলে যাই সার।যা।তিতা-কটূ হুড়মুড় করে তাবু থেকে বের হয়ে গেল।ক্রমশ ...",False ij,"গল্প_ শ্রীলেখার বুনোহাঁস।(২য় পর্ব) শ্রীলেখার বাবা আচার্য রামদেব ছিলেন যেমন রক্ষণশীল-তেমনি চন্ড প্রকৃতির। রামদেব অবশ্য তার কন্যাটিকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। কন্যাটিও- ‘নবান্নের গলির ধোঁওয়ায় মাথা ধরে আছে। নদীর পাড়ে যাচ্ছি’ বলে রথে উঠে বসত। কন্যার কথা শুনে রামদেব মিটমিট হাসতেন। সঙ্গে নবীন তো রয়েছে-চিন্তা কী। বয়সে প্রবীন হলেও নবীন দেবপরিবারের বিশ্বাসী সারথী। তাছাড়া রামদেবের কন্যাকে উক্তত্য করে এমন স্পর্ধা কার আছে এ নগরে। তো, পুন্ড্রনগরের বাগদি পাড়ার কাছেই শালবন। শালবনের ওপাশে চন্দ্রদিঘি। সে দিঘির নিরালা পাড়ে অপেক্ষা করত জয়ন্ত। অপরাহ্নের আলো মুছে না যাওয়া অবধি দুজনের কত কথা, চুম্বন-প্রনয়। কিশোরী শ্রীলেখার শরীরে তখন রক্তের বদলে করতোয়ার জল ঢুকে যেত। যে জলে ঝড়জল-প্লাবন। জয়ন্তের গানের গলা ছিল দরদী। যখন সে এতদ্বঞ্চলের একটি লোকপ্রিয় গান ধরত- তুমি আর আমি সখা, তুমি আর আমি। ভালোবাসি ভালোবাসি জানে অর্ন্তযামী। তখন ...তখন, শ্রীলেখার মনে হত চন্দ্রদিঘির কালো জলে সন্তরণশীল বুনোহাঁসেরা গানের টানে পাড়ের দিকেই এগিয়ে আসছে। চন্দ্রদিঘির পাড় ঘিরে দীঘল দীঘল শিলকড়–ই গাছ, কচু বন, আমরাঙা গাছ। সেসব গাছের গভীর ছায়া । পাড়ে উঠে এলেও বুনোহাঁসেদের আমাদের খুঁজে পেতে সমস্যা হবে-শ্রীলেখা তেমনই ভাবত। শেষ বেলার আলোয় অজস্র চুম্বনের পর বড় রাস্তার পাড়ে অপেক্ষমান রথের কাছে ফিরত শ্রীলেখা। রথের বুড়ো সারথী নবীন খুড়ো শ্রীলেখাকে ভারি ভালোবাসত। নবীন খুড়ো হেসে বলত, নদীর ধারে বেড়ানো হল। খুব হল খুড়ো? লাজুক হেসে বলত শ্রীলেখা। তাহলি এবার নখখি মেয়ের মতন রথের প’র উঠে পড়নি দেখি। সূর্যবাতি নিভবার আগেই ঘরে ফিরতি হবি যে- তানাহলে তোমার খ্যাস্টো পিতার কোপে পইড়তি হবি না? শ্রীলেখা রথ দুলিয়ে রথে উঠে পড়ত। নবীন খুড়ো তুরন্ত গতিতে রথ চালিয়ে সন্ধ্যের আগে আগেই নবান্নর গলিতে ফিরে যেতে পারত। তো, নবীন খুড়ো একদিন সকালে পট করে মরে গেল। শ্রীলেখা কী যে কাঁদল। রাতভর কাঁদল, দিনভর কাঁদল। ওর খুব কষ্ট হল । তারপর যা হয়-গুরু জন মরে গেলে আরও আরও বিপদ ঘনিয়ে আসে। জয়ন্তর সঙ্গে প্রনয়ের ব্যাপারটা শ্রীলেখার বাবার কানে পৌঁছল। নতুন সারথী কানাই-সেই প্রভূর বদান্যতার আশায় রামদেবকে যা বলার বলল। বৈদিক রক্তের বিশুদ্ধতা অক্ষুন্ন রাখার মরণ পণ ছিল রামদেবের -সেইটে হয়তো দোষের নয়, তবে রামদেবের স্বভাবটি ছিল চন্ড প্রকৃতির । সুকন্ঠ গায় জয়ন্তর সবই ভালো-তবে সে যে জাতে হাড়ি-এই তার পাপ। কানাইয়ের মুখে অচ্ছুতের সঙ্গে কন্যার দৈহিক সম্পর্কের কথা শুনে ক্রোধে অন্ধ হয়ে উঠলেন রামদেব । পারিবারিক কলঙ্কের হাত থেকে বাঁচতে উপযুক্ত সিদ্ধান্তই নিলেন। পুন্ড্রনগরের ধনবান শ্রেষ্ঠী অনন্ত কে ভালো করেই চিনতেন আচার্য রামদেব; শ্রেষ্ঠী অনন্তর ভিটেয় যজ্ঞানুষ্ঠানের মূল পুরুত তো তিনিই। ত্বরিত শ্রেষ্ঠী অনন্তর কাছে পৌঁছে যা বলার বললেন রামদেব । পুন্ড্রনগরের যোগীর ধাপনিবাসী শ্রেষ্ঠী সঞ্জয়ের এক দৌহিত্রের অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানে ষোড়শী শ্রীলেখাকে দেখেছিল শ্রেষ্ঠী অনন্ত । তন্বি শ্রীলেখার শ্যামবর্ণের উদ্ভিন্ন শরীরটি শ্রেষ্ঠী অনন্তর বিপুল কামপ্রদাহের উদ্রেক ঘটিয়েছিল। উপরোন্ত, শ্রেষ্ঠী অনন্তর প্রথমা স্ত্রী দেবী সুদেষ্ণা সদ্য গত হয়েছেন। শ্রীলেখাকে দেখার পর থেকেই শ্রেষ্ঠী অনন্ত শ্রীলেখাকে সম্ভোগের সুযোগ খুঁজছিল। সে সুযোগ এল। সে বিপুল উত্তেজনা চেপে রেখে রামদেবকে বলল, আপনি ভাববেন না আচার্য। যা করবার আমিই করছি। এই ঘটনার পর-শ্রীলেখা পরে শুনেছিল- অনন্ত শ্রেষ্ঠীর নির্দেশে তারই কতিপয় বশ্য পেশল পুরুষেরা কাল বিলম্ব না করে হাড়িপাড়ার উদ্দেশে যাত্রা করে দ্রুত হাড়িপাড়া ঘিরে ফেলে। তারপর জয়ন্তকে তারা ঘর থেকে বের করে টেনে হিঁচড়ে অপেক্ষমান রথে তুলে কালীদহ বিলের কাছে নিয়ে যায়। ঘাতকদের সবার হাতে ছিল কাঠের মুষল। তারা কাঠের মুষল দিয়ে জয়ন্তকে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে। সময়টা ছিল এরকমই মধ্য-আষাঢ়ের এক পূর্ণিমাসন্ধ্যা। অপহরণকারী ঘাতকরা নাকি মেরেই ফেলত জয়ন্তকে-একজন পেশলপুরুষ নাকি জয়ন্তর গানের ভক্ত ছিল-তাই প্রাণে মারেনি। যা, ভাগ, পুন্ড্রনগর থেকে। আর কখনও যেন এ নগরে না দেখি। এই ঘটনার পর আর কখনও জয়ন্তকে পুন্ড্রনগরে দেখা যায়নি। নিুবর্ণের হওয়ায় মূল্য দিল জয়ন্ত । আগে অবশ্য বর্ণের এহেন বিভেদ ছিল না পুন্ড্রে-যখন বৈদিকেরা এতদ্বঞ্চলের আসেনি। বৈদিকেরা অতিশয় যজ্ঞপ্রবণ- এবং তারা আনখশির বর্ণবাদীও বটে। তবে কী কারণে যেন শ্রীলেখার হৃদয়টি ঠিক তেমন সংকীর্ণ ছিল না। ও তো ঠিক করেই রেখেছিল যে- কোনও এক আশ্বিন শেষের দিনে শুধুমাত্র কামরাঙার ফুল বিনিময় করেই তবে তার আর জয়ন্তর বিয়ে হবে নির্জন শালবনের সেই চন্দ্রদিঘির পাড়ে। যে বিবাহ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবে কেবল বুনোহাঁসেরা। শ্রীলেখার নিভৃত স্বপ্নটি যে বর্ণবৈষম্যের তোড়ে এমনভাবে মিলিয়ে যাবে-কে জানত। যে দিন শ্রেষ্ঠী অনন্তর পোষ্য ঘাতকেরা জয়ন্তকে ধরে নিয়ে গেল-ঠিক সে দিন রাতেই পুন্ড্রনগরের আকাশে একঝাঁক বুনোহাঁস উড়তে দেখা গিয়েছিল। শ্রীলেখা তো বন্দি হয়েই ছিল। ওর ঘরটি ছিল নি®প্রদীপ। নি®প্রাণ মূর্তির মতো জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল শ্রীলেখা । আকাশে ছিল মধ্যআষাঢ়ী একটি পরিপূর্ন গোল চাঁদ ও ধবল পূর্ণিমা। হঠাৎ চোখ চলে গিয়েছিল আকাশে। এক ঝাঁক বুনোহাঁস হারের মতন অর্ধবৃত্তাকারে উড়ছিল দক্ষিণ অভিমূখে। চন্দ্রদিঘির বুনোহাঁস নয় তো? শ্রীলেখার প্রস্তর হৃদয়ে অসহ্য কষ্টেরা ভিজে ভিজে ছড়িয়ে পড়ছিল। পুন্ড্রনগরে এর আগে এ রকম কত অচ্ছুত যুবক খুন হয়েছে বর্ণবাদী গোষ্ঠীপিতাদের হাতে! ওকেও কি এখন ওরা খুন করে ফেলবে? এই ভাবনায় শ্রীলেখা হিম হয়ে যেতে থাকে। তা হলে আমিও কি খুনি নই বুনোহাঁস। এক ঝাঁক বুনোহাঁস হারের মতন অর্ধবৃত্তাকারে উড়ছিল দক্ষিণ অভিমূখে। হায়, আমি জয়ন্তকে খুন করেছি। হঠাৎ হাড়িপাড়ার দিক থেকে চীৎকার ভেসে আসল। শ্রীলেখা চমকে ওঠে। ওদিকটায় আগুনের লাল আভা। গনগনে। লাল। হাড়িপাড়ায় আগুন লেগেছে। শ্রীলেখার মাথা কেমন টলে ওঠে। পরদিনই শ্রেষ্ঠীর অনন্ত বরবেশে ক’জন অতিথি নিয়ে রাজর্ষী প্রাঙ্গনের পুবের নবান্নের গলিতে শ্রীলেখার বাড়িতে উপস্থিত হল। রামদেব প্রস্তুত হয়েই ছিলেন। অপেক্ষা করছিলেন। নামমাত্র বিয়ের পর প্রায় অচেতন শ্রীলেখাকে টেনে হিঁচড়ে রথে তুলে বন্দি করে নিয়ে গেল শ্রেষ্টী অনন্ত। শ্রীলেখাকে যখন শ্রেষ্ঠী অনন্ত ধর্ষন করছিল শ্রীলেখা তখনও প্রায় অর্ধচেতন। তারপর? তারপর শ্রেষ্ঠী অনন্তর ধানমোহনীর বাড়িতে শ্রীলেখার দীর্ঘ বন্দি জীবনের শুরু। কী লাভ হল? আচার্য রামদেবের মৃতদেহটি গত চৈত্রের এক মধ্যরাত্রে করতোয়ার দক্ষিণ পাড়ের বানেশ্বর শশ্মানের চিতায় পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। শ্রীলেখা ক্রর হাসে। কী লাভ হল? শ্রেষ্ঠী অনন্তর সেই নিরুঙ্কুশ প্রতাপ আর নেই। সে হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে অলাভজনক বানিজ্যে জড়িয়ে শ্রীহীন হয়ে পড়েছে আজ। শ্রীলেখা ক্রর হাসে। কী লাভ হল? জয়ন্ত এখন কোথায়? মধ্য আষাঢ়ের রাত্রিকালীন বাতাসে হরীতকীর পাতাগুলি সরসর করে ওঠে। পাতাগুলি যেন শ্রীলেখার মুক্তির আনন্দে উদবেলিত-একইসঙ্গে জয়ন্তর নিরুদ্দেশে দুঃখকাতর। অদূরে পুস্করিণীর জলে চাঁদের প্রতিফলিত বিভা। পুস্করিণীময় রুপো গলা জল। সেই রুপো গলা জল থেকে শ্বেতপাথরের সিঁড়ি উঠে গেছে ঝলমলে ঘাটে । ঘাটের ওপাশে ঘুমন্ত জৈন মন্দির। জলসিঁড়িমন্দির-সবই যেন আর্শীবাদ করছে শ্রীলেখাকে। বাতাসে বকুল ফুলের কড়া গন্ধ। শ্বাস টানে শ্রীলেখা। হরীতকী তলার গাঢ় ছায়ায় ছায়ার মতো মিশে রয়েছে। চোখ- চাঁদের আলোয় ঝলমলে পথের ওপর। কে যেন আসছে। এদিকেই। ভিক্ষু নয় তো। বুকের ভিতরে ক্ষীণ উত্তেজনা টের পায় শ্রীলেখা। ৪ হরীতকী গাছটির একটু দূরে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল সুমন্ত । গাছতলায় অন্ধকার। ওখানে কেউ রয়েছে বলে বোঝা যায় না। তা হলে? তার বুক ধক করে ওঠে। শ্রীলেখা আমায় ঠকালো? তখন তো দেখে ওকে সেরকম মনে হল না। এই যে আমি এখানে। শ্রীলেখা চাপা স্বরে বলল। তখনই করতোয়ার দিক থেকে বাতাস এল। বাতাসে বকুল ফুলের গন্ধটা গাঢ় হয়ে উঠল। কেন এমন হয়? দ্রুত পায়ে শ্রীলেখার কাছে এসে চীবরটা বাড়িয়ে সুমন্ত বলল, ধরুন। এটা পড়ে নিন। কী পরব? শ্রীলেখা থতমত খেল। চীবর। চীবর কেন? আমি তো ভিক্ষুণী হব না। ইষৎ তীক্ষ্ম হয়ে উঠল শ্রীলেখার কন্ঠস্বর। সুমন্ত ইষৎ হেসে বলল,ভিক্ষুণী হবেন না ঠিকাছে। ছদ্মবেশ ধারন করবেন না তাই বলে? একা একজন ভিক্ষুর সঙ্গে যাবেন-লোকে কী ভাববে ভেবেছেন। ওহ্। নিমিষে শ্রীলেখা নরম হয়ে এল। হরীতকী তলার অন্ধকারে পরনের কাপড়টি দ্রুত খুলে ফেলল শ্রীলেখা। তার নগ্ন দেহ ছুঁল মধ্য আষাঢ়ের মাঝরাত্রির শীতল বাতাস। গাছের অন্ধকারে নগ্নতা বিশেষ কিছু না। তবু সুমন্ত খুব কাছে দাঁড়িয়ে কেঁপে উঠল। তার বুদ্ধের সৌম মুখটি মনে পড়ে গেল। শ্রীলেখা নির্বিকার। ধীরেসুস্থে চীবর পরে নিল। সুমন্তর ঝুলিতে ক্ষুর ছিল। আরও কাছে এগিয়ে এল। বলল, আসুন। কেন? শ্রীলেখার গলার স্বর কেঁপে উঠল। চুল কাটব। কেন-ওহ্। শ্রীলেখা আরও এগিয়ে আসে। কুড়ি বছরের ভিক্ষুজীবনে কত সদ্য দীক্ষাপ্রাপ্তর নারীর চুল কেটে দিয়েছে সুমন্ত। ক্ষৌরকর্মে তার বিশেষ দক্ষতা জন্মেছে। শ্রীলেখা চোখ বন্ধ করে আছে। সুমন্ত অভ্যস্ত হাতে ক্ষুর চালালো। খসে পড়া গুচ্ছ গুচ্ছ চুলের জন্য মায়া লাগছিল শ্রীলেখার। জয়ন্তর রক্তাক্ত মুখটি মনে পড়তেই শক্ত হল। চুল কাটা শেষ হলে ক্ষুরটা ঝুলিতে ভরল সুমন্ত। তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল, তখন বলছিলেন যে শ্রাবস্তী যাবেন। সত্যিই কি আপনি শ্রাবস্তীই কি যেতে চান শ্রীলেখা? আগে এই নগর ছেড়ে চলে যাই চলুন। বেশ। চলুন তা হলে। বলে ঘুরে দাঁড়াল। করতোয়া পাড়ের শীলা দেবীর ঘাটটি এখান থেকে বেশি দূরে নয়। ঘাটে অনেক নৌকা থাকার কথা। কাল ভোর ভোর সময়ে ছাড়বে। সুমন্ত শীলা দেবীর ঘাটের দিকে হাঁটতে থাকে। শ্রীলেখা তার পিছন পিছন হাঁটছে । আমাকে এখন ঠিক কেমন দেখাচ্ছে? হাঁটতে হাঁটতে শ্রীলেখা ভাবল। এখন যদি আমায় আমার বৈদিক পিতা স্বর্গ থেকে আমায় দেখতে পেতেন! শ্রীরামদেব! কী লাভ হল আপনার? আমি তো আজ বেদবিরোধীদের ঘরেই চলে গেলাম। আপনি আর আপনার সংকীর্ণ সংস্কার আজ পরাজিত হল। মিছিমিছি রক্ত ঝরালেন। ঘৃনার তীব্র উদগার ছড়িয়ে শান্ত হল শ্রীলেখা। আজ আমি চীবর পড়লাম। জয়ন্ত আমায় চিনতে পারবে তো? চীবর পরার পর থেকে শরীরে কেমন যেন অবশ অবশ লাগছে। আমার মন বলছে: জয়ন্তকে আমি কখনও খুঁজে পাব না। এ জগৎ কত বড়? কেউ হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া সাধ্যি কি। আমি যে পথে বেরিয়েছি-এ আমার বৌদ্ধ হওয়ার ছল। অনেক অনেক দিন আগে নবীন কাকার মুখে শ্রীলেখা শুনেছিল: তথাগত বুদ্ধ যখনই কোনও নগরে পৌঁছোন-তখন কোনও না কোনও নারীর সংসার ত্যাগের উপলক্ষ তৈরি হয়ে যায়। নারীটি তারাপর সংসার ত্যাগ করে অহিংসধর্ম গ্রহন করে ধ্যানের নির্বানের শুদ্ধ নির্মল পথ বেছে নেয়। আমারও কি তাইই হল? শ্রীলেখা শিউরে উঠল। মধ্যরাত্রি বলেই পথ নির্জন। নির্জন এবং জ্যোøাময় । দু’পাশে শালের গাছ। ঝিঁঝির ডাক বেশ প্রগাঢ়। শালপাতার ওপর শিশির পতনের শব্দও শোনা যায় । এই সেই শালবন। শ্রীলেখার বুক ধক করে ওঠে। শালাবনের ওধারে চন্দ্রদিঘি। গাছপালার ফাঁকফোকর দিয়ে মাঝে মাঝে চোখে পড়ছে দিঘির রুপালি জল। বুনোহাঁসেরা সেই জলে ভাসত একদা। ভাসত কি? দিঘির ওপাশ থেকে দলবদ্ধ শিয়ালের ডাকও শোনা যায়। হঠাৎই ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ শোনা গেল। কী ব্যাপার? শীলাদেবীর ঘাট থেকে অশ্বারোহী সৈন্যের একটি দল এদিকেই আসছে। নিমিষেই সুমন্ত শ্রীলেখার হাত ধরে। তারপর চট করে সরে যায় শালগাছের আড়ালে। সৈন্যরা প্রায় কাছে এসে পড়েছে। কী মনে করে সুমন্ত শ্রীলেখাকে জড়িয়ে ধরে। এবং এই প্রথম সে শ্রীলেখার শরীরের কোমলতা ও ওম একই সঙ্গে টের পায়; সে জেগে উঠতে থাকে। শ্রীলেখা মুচকি হাসে। প্রথম দর্শনেই গতকাল ভিক্ষু ওকে ভালোবেসে ফেলেছিল । তখনই সামান্য স্পর্শ দেবার কথা নিজে থেকেই ভাবছিল। এই মুহূর্তে সুযোগ এল। শালের বনে ঝিঁঝির প্রগাঢ় ডাক, শ্রীলেখার পায়ের নীচে ভিজে ঘাসপাতা, তার ওপরে চুঁইয়ে পরা জ্যোøার রোদ, অশ্বক্ষরধ্বনি, শালপাতার ওপর শিশির পতনের শব্দ আরও স্পস্ট হয়ে উঠেছে । শ্রীলেখাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে সুমন্ত। মুখ নামিয়ে ঠোঁট রাখল জ্যোøা ঝরা শ্রীলেখার ঠোঁটের ওপর। নাঃ, শ্রীলেখা চোখ বন্ধ করল না। বরং, শালাবনের গাছপালার ফাঁকফোকর দিয়ে চোখ রাখল চন্দ্রদিঘির রুপালি জলে। জয়ন্ত ওখানে প্রথম আমার উরুসন্ধিতে জিভ রেখেছিল ... আমি আসছি জয়ন্ত। আমি জানি তুমি কোথায় আছ। আমি তোমার কাছে ঠিকই পৌঁছে যাব দেখো। চন্দ্রদিঘির বুনোহাঁসেরা আমায় পথ দেখাবে। অশ্বারোহী সৈন্যদলের ক্ষুরের শব্দ দূরে মিলিয়ে যায়। শ্রীলেখা। সামান্য জোর খাটিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। তারপর শালবন থেকে বেরিয়ে এল। সুমন্তর বুকটা ভীষন ধকধক করছিল। অনেকদিন পর চুম্বন করে খানিকটা বিহবল বোধ করছিল সুমন্ত। মাঝবয়েসি সে। আর, শ্রীলেখার কতই বা বয়েস। তাতে কি? শরীর ও শরীরের ভিতরে রয়েছে যে এক অলীক মনতন্ত্রবীণা-সেটি যে কোনও বয়েসেই ঈশ্বরের কারসাজিতে বেজে উঠতে পারে। আজ সত্যি সত্যি বেজে উঠল। তাতে প্রশ্নও তৈরি হল কিছু। কেননা, তখন বুদ্ধ বলছিলেন, যাহারা, অসার বস্তুকে সার বিবেচনা করে এবং সারকে অসার বিচেনা করে, মিথ্যাদৃষ্টির প্রশ্রয়দাতা-সেই ব্যাক্তি কখনও সার প্রাপ্ত হয় না। প্রেম কি আসলেই অসার? আর, ধর্মই কেবল সার? সুমন্ত এখন জানে, নারীপুরুষের প্রেমই জগতে একমাত্র সত্য বস্তু। সাবিত্রীর মৃত্যুর পর মিছিমিছি অত উদাস হওয়া ঠিক হয়নি। আরেকটি বিবাহ করা উচিত ছিল। তারপর উচিত ছিল দেহের ভোগে গা ভাসিয়ে দেওয়া। গৃহত্যাগ করে কী লাভ হল। কিন্তু, ধর্মের ধ্বজাধারী পুরুষেরা এত প্রেমবিমূহ কেন? বুদ্ধ? প্রেমে সুবিধে হয়নি বলে। সুমন্তর মাঝবয়েসী শরীরটি ছমছম করে ওঠে। তার পরনে এখনও চীবরবেশ। সুযোগ মতন এটি খুলে ফেলতে হবে। বড্ড ভার ভার ঠেকছে। শ্রীলেখার অনুভূতি অবশ্য ততখানি অবশ নয়। যদিও ভিক্ষু সুমন্ত ওর স্তনদুটি স্পর্শ করেছিল। দীর্ঘদিন বন্দিজীবন যাপন করে ভোঁতা হয়ে উঠেছে শ্রীলেখা। পুরুষস্পর্শ আর উপভোগ্য নয় জেনে শ্রীলেখা বিস্মিত হয়নি। শালবনের শেষে বাগদি পাড়া শুরু। পথের দুপাশে মাটিলেপা বেড়ার ঘরদোর। দরিদ্র মানুষের ঘরদোর। পাড়াটি ঘুমন্ত। এত রাতে কে আর জেগে। কেবল শিশুর কান্না শোনা যায়। শুকনো মাছের গন্ধ পেল শ্রীলেখা। বেড়ার ফাঁকে কূপীর মিটিমিটি আলো। এক বৃদ্ধ বাগদি কাশছে। তার কী অসুখ কে জানে। দ্রুত পায়ে হেঁটে বাগদি পাড়াটি পেরিয়ে যায় ওরা। পথের দুপাশে এখন সুপারি গাছের ঘন সারি । পথের ওপর ঘন হয়ে দুজনের ছায়া পড়েছে। বাতাসে শিশির ভেজা পাতা ও বাকলের কড়া গন্ধ । অনেকক্ষণ ধরে হাঁটছিল বলে পায়ের গোড়ালি হাঁটু উরু ব্যাথা করছিল শ্রীলেখার। জন্মাবধি এতটা হাঁটেনি শ্রীলেখা। এখন তো অনেকটাই পথ হাঁটতে হবে। মানুষরচিত সংকীর্ণ সংসার থেকে বহূদূরে সরে যেতে হবে। যন্ত্রণা হবে ওর। এই যন্ত্রণা টের পাওয়ার জন্যই ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টি করেছেন? হাড়ি-বাগদিদের কষ্টে রেখেছেন। জয়ন্ত তো হাড়ি বলেই ওকে কালীদহের বিলের ধারে পিটিয়ে মেরে ফেলা হল। লাশটা বিলের জলে ফেলে দিয়েছিল ওরা। তারপর হাড়িপাড়ায় আগুন দিয়েছিল। জানালা দিয়ে আগুনের লাল আভা শ্রীলেখার চোখে পড়ছিল সে রাতে-যে রাতের পর কেউই আর জয়ন্তকে পুন্ড্রনগরে দেখেনি। হাড়িপাড়া থেকে চীৎকার ভেসে আসছিল। শ্রীলেখা আজও শুনতে পায়। ও শিউরে ওঠে। আমি জয়ন্ত কে হত্যা করেছি। আমি জয়ন্ত কে হত্যা করেছি। আমি জয়ন্ত কে হত্যা করেছি। আমি জয়ন্ত কে হত্যা করেছি ... ৫ মধ্য আষাঢ়ের গাঢ় জ্যোøায় পথের দুপাশের সুপারি পাতাগুলি উতল বাতাসে কেমন সরসর করে ওঠে। ক্ষাণিকবাদে বাতাসের গন্ধ বদলে গেল। হাঁটতে হাঁটতে ওরা প্রায় শীলাদেবীর ঘাটের কাছে পৌঁছে গেল। এখন মধ্য রাতও পেরিয়ে গেছে। পূর্ণিমার চাঁদটাও আর আকাশের মাঝখানে নেই। তবে এখনও সমানে তরল রুপা ঢেলে চলেছে। ওরা ঘাটের চাতালের ওপর এসে দাঁড়াল। এমন নির্জন ঘাট- এমকী প্রহরী সৈন্যরাও জেগে নেই বলে মনে হয়। উথালপাথাল হাওয়া। নোনা গন্ধ। করতোয়ার জলে তরল রুপা। ঢেউ। ঘাটে অনেকগুলি ছোটবড় নৌকা। অবশ্য নিথর নয়। ঢেউয়ের দোলায় অল্প অল্প করে দুলছে। এখন মধ্যরাত বলে আগুনের ফুটকি চোখে পড়ল না। ছইওলা বড়নৌকাগুলির পাল গোটানো। নদীর ওপারে ক্ষীণ আভাস। চর। ওই পেরিয়ে আবার করোতোয়া নদী । তারপর ডাঙা। বহুকাল আগে শ্রীলেখাকে জয়ন্ত বলেছিল- করতোয়া পেরিয়ে ডাঙার ওপর ক্রোশ ক্রোশ পথ হাঁটলে যমুনা নামে একটি নদীর কাছে যাওয়া যায়। সেই কথা মনে করে শ্রীলেখা এখন কেঁপে উঠল। সমস্ত দৃশ্যটা পূর্ণিমার আলোয় কেমন এক ধূসর স্বপ্নের মতো মনে হয় সুমন্তর। সে ফিসফিস করে বলল, কাল ভোরে নৌকায় উঠব। চল, এখন বসি কোথাও। চুমু খেয়েছে তো। এখন তো ‘তুমি’, ‘তুমি’ করেই বলবে। শ্রীলেখা মনে মনে ভাবল। চলুন। শ্রীলেখা বলল। লোকটার জন্যও কী রকম খারাপ লাগছে । কোথ্ থেকে এসে একটা গল্পে ঢুকে পড়েছে। ইস্, লোকটা যদি বুনোহাঁসদের কথা জানত! বাঁ দিকে কয়েক পা হেঁটে ঘাটের ওপর বসল সুমন্ত। ইটের ওপর তার স্পস্ট ছায়া-শ্রীলেখারও। সুমন্তর পাশে, অল্প দূরত্ব রেখে বসল শ্রীলেখা। তখন শালবনের অন্ধকারের ভিতর সৈন্যদের সামনে পড়ে যাওয়ার আতঙ্কে আলিঙ্গন-চুম্বন হল বটে; কিন্তু, এখন প্রকাশ্য জ্যোøালোক; এখন এই মাঝবয়েসী ভিক্ষুটি ওর হাত ধরলে সঙ্কোচ বোধ করবেই শ্রীলেখা। ওরা যেখানে বসেছে-তার ঠিক দুধাপ নীচে একটি কুকুর শুয়ে ছিল। রাত শেষের চাঁদের আলোয় ওটার গায়ের রংটা ঠিক বোঝা গেল না। ওরা বসামাত্র কান খাড়া করল কুকুরটি। শ্রীলেখাকে দেখে নিশ্চিত হয়েই আবার থাবায় মুখ লুকালো। কুকুরটির পাশে কে যেন কাথা মুড়ে শুয়ে। বৃদ্ধা বলে মনে হল। শ্রীলেখা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এ জগতে নির্বাচিত কয়েকজন মানুষকে প্রেমের উপলব্দি দিতে কত কত প্রাণকে যে দুঃখকষ্টে রেখেছে ঈশ্বর। মলিন হাসে শ্রীলেখা। ওর হাতে একটা ছোট পোটলা । ওটা খুলে বলল, নেন, খান। কী। তেমন কিছু না-গুড়ের সন্দেশ। ওহ্। দাও। জয়ন্তর পাশে কত কত রাত যে শীলাদেবীর নির্জন ঘাটে বসে থেকেছে শ্রীলেখা। জয়ন্ত খুব গুড়ের সন্দেশ পছন্দ করত। ওর জন্য গুড়ের সন্দেশ তৈরি করতে শিখেছিল মনো মাসির কাছে। সেসব কথা মনে করে শ্রীলেখা বলল, কাল খানিক দইও পেতছিলাম। কিন্তু, আনি কী করে। কেন? বাড়িতে কি করঙ্গ ছিল না? সন্দেশে কামড় দিয়ে সুমন্ত বলল। বাহ্, বেশ স্বাদ তো। করঙ্গ? করঙ্গ কি? শ্রীলেখা তো অবাক। করঙ্গ চেনেন না মেয়ে? না তো। সুমন্তর পুরোন খোলশটি আজ একেবারেই খসে গিয়েছিল। এককালে সে যে গান গাইত সেকথা মনে পড়ে গেল তার। সে সন্দেশটা খেয়ে শেষ করে দীর্ঘদিন আগে শোনা পদ্মাপাড়েরর একটি লোকায়ত গান ধরল। একটি নারকেলের মালা, তাতে জল তোলা ফেলা- করঙ্গ সে। পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি বুঝবি শেষে। ওমাঃ, আপনি গানও জানেন? শ্রীলেখা কেমন উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। সুমন্তর কন্ঠস্বরে কে যেন ভর করে বলল: পুন্ড্রবঙ্গে যে জন্মেছে -সে অল্পবিস্তর গান জানে না-তা কি করে হয় গো মেয়ে? এ ভারি গানের দেশ। গানে ঝরে দুঃখ, প্রশ্ন ও সন্দেহ। তা ঠিক। শ্রীলেখা বলল। মনে মনে ভাবল-কী সুন্দর গান করত জয়ন্ত। এমন মানুষকে কেউ পিটিয়ে মারে। সুমন্তর মধুমেহ। তারপরও সে পরপর দুটি সন্দেশ খেয়ে শেষ করল। আহ্, চমৎকার স্বাদ। মনে মনে বলল, এই জীবন। কী লক্ষ তার? কে যেন করতোয়ার বাতাসে ভেসে এসে উত্তর দিল, পথে যেতে যেতে একটা আলোর মুখে দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য। আর? আর কী। ঐ কুকুরেরও? হ্যাঁ। তুমি কি নিশ্চিত যে সে কেবলই কুকুর-ওটি আকাশ পথ থেকে নেমে আসেনি? সুমন্ত বিভ্রান্ত বোধ করে। একা হলেই কে যেন কথা কয়ে ওঠে তার ভিতরে। কে সে? কে? শ্রীলেখা মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকালো। এক ঝাঁক বুনোহাঁস উড়ে যাচ্ছে পূর্ণিমার আকাশে। সেই চন্দ্রদিঘির বুনোহাঁসগুলো নয় তো ? চন্দ্রদিঘির কালো জলে সন্তরণশীল বুনোহাঁসেরা জয়ন্তর গান গুরে পাড়ে উঠে এসে ওদের খুঁজত। শ্রীলেখা জিজ্ঞেস করল, নৌকাগুলি কোথায় যায় জানেন? সুমন্ত বলল, কত জায়গায় যে যায়। শ্রীলেখা কী মনে করে বলল, আমি আমার স্বামীর মুখে গঙ্গাহৃদয় রাজ্যের কথা শুনেছি। বিদ্যাধরী নদীর ধারে। হ্যাঁ। চন্দ্রকেতু গড়। সুমন্ত বলল। আপনি গেছেন? হু। আমরা কি সেখানে যেতে পারি? পারি। শ্রীলেখা বলল, আচ্ছা, আপনি কি কখনও লঙ্কা দ্বীপে গিয়েছেন? হু। আমরা যদি লঙ্কা দ্বীপে চলে যাই তো? যাওয়া যায়। লঙ্কাদ্বীপের রাজধানী অনুরাধপুর। বেশ চমৎকার নগর। আরাভি আরু নদীর পাড়ে। কী? কী নদী বললেন? আরাভি আরু। আরাভি আরু? হ্যাঁ। শ্রীলেখার কী খিলখিল হাসি। শীলাদেবীর ঘাটের নির্জনতা খান খান করে দিল। সুমন্ত অবাক হয়ে যায়। যেন স্বপ্ন দেখছে সে। তখন বুদ্ধ বলছিলেন, যাহারা, অসার বস্তুকে সার বিবেচনা করে এবং সারকে অসার বিচেনা করে, মিথ্যাদৃষ্টির প্রশ্রয়দাতা-সেই ব্যাক্তি কখনও সার প্রাপ্ত হয় না। আমি কি মিথ্যাদৃষ্টির প্রশ্রয়দাতা? কে জানে। শ্রীলেখার হাত ধরল সুমন্ত। শ্রীলেখা কেঁপে উঠল কি? সুমন্ত নরম স্বরে জিগ্যেস করল, তুমি লঙ্কাদ্বীপ যেতে চাও শ্রীলেখা? হ্যাঁ। তাই যাই চল। ঠিক আছে চলেন। সেখানে কি জয়ন্ত আছে? কে জানে। সুমন্ত শ্রীলেখার হাতটা ধরেই আছে। কন্ঠে আবেগ এনে বলল, আমার বউয়ের নাম ছিল সাবিত্রী। বেশিদিন বাঁচেনি সাবিত্রী। শ্রীলেখা, তোমার সঙ্গে সাবিত্রীর মুখোশ্রীর এত মিল! এসবই করুণাময় ঈশ্বরের খেলা নয় নি? নইলে আমিই বা কে পুন্ড্রনগরে আসব। তোমার সঙ্গে আমারই বা দেখা হয়ে যাবে কেন। এসব শুনছিল না শ্রীলেখা। ও বরং আলত করে সুমন্তর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে জ্যোøাবিধৌত করতোয়া নদিটির দিকে তাকালো। নদীটির ওপারেই রুপহাটি। তার উত্তরে বিস্তির্ণ আখের ক্ষেত। চৌদ্দ বছর তিন মাস বয়েসে শ্রীলেখা প্রথম জয়ন্তকে দেখেছিল বৈশাখ মাসের প্রথম দিনের রৌদ্রমূখর অপরাহ্নে রুপহাটির মেলায় । রসিক ময়রার মিস্টান্নর আপণের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল জয়ন্ত। শ্রীলেখা তো ওকে দেখে থ। বুকে ঝড়। সে ঝড় বাহিরের প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল কি? নইলে আচমকা ঝড় উঠবেই বা কেন। ঘূর্ণি বাতাসে কে কোথায় যে ছিটকে গেল। মুহূর্তেই সমস্ত মেলা লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল। রুপহাটির উত্তরে যে বিস্তীর্ণ আখক্ষেত আছে-সেখানেই জয়ন্তর বুকে শ্রীলেখা নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিল। সন্ধ্যে অবধি। তারপর নিত্য দেখা হত জয়ন্তর সঙ্গে। তারপর? ৬ তারপর কথায় কথায় কখন যে ভোর হয়ে গিয়েছিল। পুন্ড্রনগরে একটি নতুন ভোরের জন্ম হয়েছিল। পূর্বাকাশের সূর্যদেবের রক্তিম রঙে ক্রমশ রাঙিয়ে উঠেছিল করতোয়ার জল। বাতাস হয়ে উঠেছিল সত্যিকারের ভোরের বাতাস। শীলা দেবীর ঘাটের ওপর শুয়ে থাকা সেই ককুরটির ঘুমও ভেঙে গিয়েছিল। যাত্রীর পদশব্দে ওটি সম্ভবত ঘুম থেকে জেগেই চুলকাতে লাফিয়ে কয়েকটা ধাপ ডিঙিয়ে শ্রীলেখাদের চোখের আড়ালে চলে গিয়েছিল। দক্ষিণ অভিমুখী নৌকা ছাড়বে। শ্রীলেখা ও সুমন্ত উঠে দাঁড়িয়েছিল। তারপর সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নেমে গিয়েছিল? কে জানে। কবেকার কথা। শ্রীলেখা সম্ভবত করতোয়ার জলের অনেকটা কাছে পৌঁছে জলের আষঁটে গন্ধ পেয়েছিল। জলের মৃদু ছলাত শব্দও শুনেছিল বোধ হয়। ঘাটে তো পাশাপাশি অনেক নৌকা থাকার কথা। দু-একজন ব্যস্ত যাত্রী। কিছু পণ্য উঠছিল। এই ধরা যাক আখ, সুপারি, গুড়ের হাঁড়ি। ওরা একটি নৌকায় উঠেছিল। বেশ বড়সরো নৌকা। ছইয়ের ওপর অনেকখানি জায়গা। সিঁড়ি বেয়ে ছইয়ের ওপর উঠেছিল ওরা? তখন দূরন্ত বাতাস ওদের ঠেলে ফেলে দিচ্ছিল প্রায়? পাল তুলছিল মাঝিমাল্লারা? ভালো করে রোদ ওঠার আগেই গলুই ঘুরে গিয়েছিল? শ্রীলেখারা ছইয়ের ওপরই বসল। শ্রীলেখা সম্ভবত শীলাদেবীর ঘাটের দিকে তাকিয়ে থাকে। কেননা, মধ্য-আষাঢ়ি বাতাসের তোড়ে পালের বুকে টান খাওয়ায় ওর চোখের সামনে থেকে শীলাদেবীর ঘাট ক্রমেই মিলিয়ে যাচ্ছিল। এই ঘাটে আর ফেরা হবে না। কবে যেন জয়ন্তর পাশে নির্জন মাঝরাতে ঘাটের পৈঠায় বসে থাকতাম। সে কবেকার কথা বলে মনে হয। লঙ্কা দ্বীপ কেমন? আমি জয়ন্তকে খুঁজব। কেন যেন মনে হয় অভিমানী জয়ন্ত লঙ্কা দ্বীপে লুকিয়ে আছে। জয়ন্ত কি সত্যিই লঙ্কাদ্বীপে রয়েছে? ও আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকায়। ভোরের শুভ্র আকাশে এক ঝাঁক বুনো হাঁসের সারি। দক্ষিণমুখি উড়ে চলেছে। শ্রীলেখা হাসল। ওরাই যে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। জয়ন্ত যেখানে আছে সেখানে। আকাশ থেকে চোখ নামিয়ে নেয় শ্রীলেখা। ভিক্ষু সুমন্তর দিকে তাকালো। লোকটাকে কেমন ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ছইয়ের এককোণে বড় একটি মাটির ধামা। ধামার ভিতরে কি আছে কে জানে। তারই আড়ালে ঘুমোবার আয়োজন করছে লোকটা। করুক। বয়েস হয়েছে তো। তা ছাড়া কাল সারারাত জেগেছে। এই বয়েসে এত সয়- তা ছাড়া এই গল্পের পরের অধ্যায়ে তার তো তেমন কোনও ভূমিকাই নেই। ঘুমাক, লোকটা ঘুমাক। শ্রীলেখা শুধু জেগে থাকুক বুনোহাঁসেদের উড়াল পথ চেয়ে। (সমাপ্ত) সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৩২",False rg,"।। দেশ বিভাগ নিয়ে কিছু পুরানা ক্যাচাল।। ১৯৪৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট এ্যাট্টলি ঘোষণা দিলেন যে, ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যেই ব্রিটিশ ভারতকে পুর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করা হবে। তবে দ্বিজাতী তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত পাকিস্তান যেভাবে ভাগ হবে, তার প্রদেশের সীমানা পুর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার পরে ঠিক করা হবে। ব্রিটিশ প্রশানমন্ত্রী'র সেই ঘোষণা'র মধ্যেই একটি বিশাল শুভংকরের ফাঁকি ছিল। সেই ফাঁকিটি পরবর্তী সময়ে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে যুদ্ধ, দাঙ্গা ও হাঙ্গামার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। ১৯৪৭ সালের ৩ জুন বার্মার সর্বশেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারত ভাগে উপর একটি সুত্র উত্থাপন করলেন। যেটি The Indian Independence Act 1947 নামে বহুল পরিচিত। মাউন্টব্যাটেন উত্থাপিত সূত্রটির প্রধান বিষয়গুলো ছিল-১. ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি স্বাধীন দেশ হবে।২. বেঙ্গল ও পাঞ্জাব প্রদেশ উভয় দেশের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।৩. উভয় দেশের নতুন গর্ভনর জেনারেলদ্বয় হবেন ব্রিটিশ রাজা'র প্রতিনিধি।৪. উভয় দেশের আলাদা আলাদা সাংবিধানিক অ্যাসাম্লি স্বাধীনভাবে প্রতিনিধিত্ব করবে। ৫. প্রিন্সলি স্টেটগুলো ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে নিস্ক্রিয় হবে এবং উভয় দেশের মধ্যে যেভাবে ভাগ হবে সেভাবে সেই দেশের অন্তর্ভুক্ত হবে।৬. ১৯৪৮ সালের ২২ জুনের পর থেকে ব্রিটিশ রাজা জর্জ সিক্স-এর সকল কর্তৃত্ব উভয় দেশের উপর থেকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হবে।এরপর ভারত পাকিস্তানের সীমানা কিভাবে ভাগ হবে সেখানে বলা হয়েছিল যেসব কথাবার্তা- ১. ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি নতুন দেশ হবে২. ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ হবে দেশ বিভাগের সময়সীমা৩. সীমানা হবে নিম্নরূপ-ক). পাকিস্তান পাবে- ইস্ট বেঙ্গল, ওয়েস্ট পাঞ্জাব, সিন্ধ, বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশখ). বেঙ্গল ও আসাম কিভাবে ভাগ হবে- ১. the Government of India Act 1935 কার্যকর হবে না ২. পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলা নামে বাংলা'র দুটি ভাগ হবে ৩. আসামের সিলেট জেলা পূর্ব বাংলার সঙ্গে যুক্ত হবেগ). পাঞ্জাব কিভাবে ভাগ হবে-১. the Government of India Act 1935 কার্যকর হবে না২. পূর্ব পাঞ্জাব ও পশ্চিম পাঞ্জাব নামে পাঞ্জাব দুটি ভাগ হবেএভাবে সেকশান ১২ তে গিয়ে দেখা যায় ফার্স্ট ও সেকেন্ড সিডিউল নামে একটা প‌্যারা। সেখানে কি আছে?সিডিউল ফার্স্ট অনুযায়ী পূর্ব বাংলা বা ইস্ট বেঙ্গল হবে যে সব ডিভিশান নিয়ে-১. চট্টগ্রাম ডিভিশান হবে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও টিপ্পারা নিয়ে২. ঢাকা ডিভিশান হবে ঢাকা, বাকেরগঞ্জ, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ নিয়ে৩. প্রেসিডেন্সি ডিভিশান হবে যশোর, মুর্সিদাবাদ ও নদিয়া নিয়ে৪. রাজশাহী ডিভিশান হবে বগুড়া, দিনাজপুর, মালদাহ, রাজশাহী ও রংপুর নিয়েপরে কি হল? কিভাবে ভারত আগ্রাসন চালিয়ে টিপ্পারা, মুর্সিদাবাদ, নদিয়া, মালদহ নিয়ে নিল!!! ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ, হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাধিয়ে কিন্তু ভারত টিপ্পারা, মুর্সিদাবাদ, নদিয়া, মালদহ নিয়ে গেল। যদি আপনি লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সেই সুত্র মানেন, তাহলে টিপ্পারা, মুর্সিদাবাদ, নদিয়া, মালদহ এগুলো কিন্তু এখন বাংলাদেশের অংশ। কারণ, সেই সময়ের পূর্ব বাংলা বা ইস্ট বেঙ্গলই এখন বাংলাদেশ। আর ছিটমহল সমস্যার শুরু কিন্তু এই কারণেই। সো, সাধু সাবধান...",False hm,"রুগ্ন বর্ষাকাল বর্ষাকাল আপাতত সকল সংস্কারের ঊর্ধ্বে। শ্রাবণ মাসে মেঘেরা অবসরে গেছে, আকাশে বেহায়া সূর্য বুক ফুলিয়ে হাঁটাহাঁটি করে। ছাতা একটা কিনেছিলো কে যেন, কালো, বিষ্টিবাদলের হাত থেকে মাথা বাঁচানোর জন্য। রোদ দেখে সেটাই টেনে বার করলো ঘরের চিপা থেকে। ছাতার ভেতরে আরশোলা থাকে, বলেছিলাম আমার ভাগ্নিটাকে, সে বললো কই দেখি দেখি? ওদিকে কাকে যেন কে বোঝাচ্ছিলো এই কুটকুটে গরমে কালো ছাতা মাথায় দিয়ে বেরোলে আরো বেশি গরম লাগবে। আমিও প্রাণপণে সেই আলাপের মধ্যে গিয়ে ঢুকি, ঢুকবার চেষ্টা করি, ঢুকাই আমার বক্তব্যকে, হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ ঐ যে পড়োনি পড়োনি কালো রং তাপ শোষণ করে সাদা রং তাপ বিকীরণ করে আর আরো কত কত বালছাল পড়োনি ফিজিক্সে? কিন্তু বিষ্টির মায়রে বাপ বলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া কি আর আগের মতো সহজ? রোদ লাগে তো। তো কে যেন বেরিয়েছিলো কালো ছাতা মাথায় দিয়ে, পেছনে চ্যাঁচাচ্ছিলাম আরে এর জন্যই তো জার্মানরা বলে জনেনশিয়ার্ম আর রেগেনশিয়ার্ম, হিস্পানিরা বলে পারাসল আর পারাগা, কিন্তু বাঙালি ছাতার জাতপাত এখনো বার করতে পাল্লোনা, ছাতা ছাতাই, তার আবার রোদবিষ্টি কী? কিন্তু ঐ যে কালো ছাতা দিলে গরম লাগে, সাদা ছাতা দিলে গরমটা কম লাগতে পারে, সৌরছাতা আর বর্ষাছাতার মধ্যে একটা ধুনফুন পার্থক্য তো থাকতে হবে, নাকি? কিন্তু ছাতাটা নিয়ে ভালোই করেছিলো কারণ মেঘগুলি এখনও অত হারামখোর হয়নি, হয়তো আরো দুটো ঘন্টা সময় দিলে হয়ে যেতো, একটু পরেই ইবলিসের পেচ্ছাপের মতো চড়চড় করে পড়া শুরু করলো। কে যেন বললো এটা কি বিষ্টি না বাল? শ্রাবণ মাসের হিসাব জানতে চাইলো একজন, আরেকজন দিলো প্রচন্ড ধমকি, আরে গেলি, শ্রাবণ মাস তো এখনও আষাঢ়ের পেট চিরে বেরোয়নি, খালি প্যাচাল! কালো হোক ধলো হোক ছাতাটা কাজে দিলো কিছুক্ষণ। ওমা, পেচ্ছাপের তোড় বেড়েই চললো, ছাতাঅলা গাল দিয়ে বললো, বাড়ার ছাতা বানাইছে। কে একজন জানতে চাইলো ক্যানো ক্যানো? সে বলে, মাথা বাচাইলে পাছা ভিজ্যা যায়। সবাই হাসে, হো হো হো, কে যেন বললো তাহলে পাছা বাচাও। সে বলে, তাইলে মাথার কী হবে? আমি বললাম, রেইনকোট কিনলে না কেন হে ভোদাই, হোগামাথা সবই বাঁচতো। সে বলে, এহ, আসছে চন্দ্রবিন্দু লাগাইতে। আমি বললাম, হ্যাঁ, রেইনকোট অনেক ভালো। সে বলে, হোক ভালো, বিষ্টি নামলে আমার দরকার ডাইরেক্ট অ্যাকশন। রেইনকোট পরতে পরতে তো ভিজ্যা যামু। মাথা পাছা সব। আমি বললাম আরে এখনও তো ভিজলেই। সে বলে না আমার ছাতাই ভালো, হোক না কালো। আমি বললাম সৌরছাতা দিয়ে বর্ষাছাতার কাজ চালাতে নেই, সে বলে যাও যাও তোমার থিওরি দিয়া আমি গু মুছি। শেষ পর্যন্ত দেখলাম কালো ছাতা মাথায় আরো অনেকে চলছে, কেউ কেউ আছে রঙিন ছাতা নিয়ে হাঁটছে রাস্তায়, আমি বিষ্টিতে ভিজে কাবু, ছাতা রেইনকোট কোনটাই সাথে নেই, রাস্তায় জমে থাকা পানি ঠেলে ঠেলে হাঁটছি যেন ম্যাথুশেলা বাজারে বেরিয়েছে, এক নির্ভেজাল চুদির্ভাই সাঁই করে গাড়ি চালিয়ে এসে কাদাপানির ছিটে দিয়ে আমার বর্ষাকালো ফুটে ওঠা টগরের মতো সাদা শার্টটায় দিলো ময়লা মাখিয়ে, আমি এই বিষ্টির দিনটায় গালিটালি না দিয়ে আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে রইলাম হতভম্ব প্রবাসী ক্যাকটাসের মতো।",False fe,"ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র শিবির আমেরিকায় সন্ত্রাসী সংগঠন চিহ্নিত হওয়ায় ইউরোপে দৌড়ঝাপঃনয়া পরিকল্পনা ঢাকা ও জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দখল নিউইয়র্ক থেকে এনা --------------------------------------------------------------চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীর মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয় দখলের পরিকল্পনা রয়েছে ইসলামী ছাত্র শিবিরের। এ লক্ষ্যে তারা এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের সকল মেস এবং হলগুলোতে ঘাঁটি গাড়ছে। শিবিরের পরিচয় গোপন রেখে অনেকে অন্য ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ চালাচ্ছে। জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের গ্রামে শিবিরের বেশ কিছু মেস রয়েছে। সেগুলো ব্যবহূত হচ্ছে গোপন তৎপরতার অস্থায়ী ঘাঁটি হিসেবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাথে ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র থেকে এহেন পরিকল্পনার তথ্য এসেছে লসএঞ্জেলেসে। উল্লেখ্য যে, ইসলামী ছাত্র শিবিরের বেশ কয়েক ডজন সাবেক নেতা-কর্মী পড়াশোনা করছেন যুত্ত্নরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ-ভার্সিটিতে। তাদের সাথেও যোগাযোগ করা হচ্ছে এ পরিকল্পনা নিয়ে। সূত্রগুলোর মতে, চট্টগ্রাম কিংবা রাজশাহীর মত সহজ কাজ নয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাঁটি গাড়া। কসমোপলিটন সিটি হওয়ায় ঢাকায় শিবিরের নামে কোন হল দখল করে স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্্‌ভব হবে না বিধায় তারা ভিন্ন সংগঠনের আড়ালে এগিয়ে চলেছেন। সূত্র উল্লেখ করেছে, রাজশাহীতে ছাত্রলীগের কর্মীকে হত্যার পর সারাদেশে যদি শিবিরের উপর হামলার ঘটনা চলতেই থাকে তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয় দখলের আচমকা অভিযান চালানো হবে। এর ফলে ছাত্রলীগসহ দেশবাসীর দৃষ্টি নিবদ্ধিত হবে ঐ প্রতিষ্ঠানদ্বয়ের উপর। সূত্রটি আরো উল্লেখ করেছে, তবে এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দখলের মহড়া হবে স্বল্প সময়ের জন্য। একটি ঝাঁকুনি দিয়ে সরকারকে জানান দিতে চায় শিবিরের সাংগঠনিক ভিত তো দৃঢ়। প্রয়োজনে তারা সারাদেশের শিবির ও জামাতে ইসলামীর ক্যাডারদের আমদানী করবে এ দুটি স্থানে-এমন পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। জানা গেছে, যুত্ত্নরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত শিবিরের সাবেক কর্মীরা রগ কাটার বিপক্ষে। তারা বলেছেন যে, এ বিষয়টি পুরনো হয়েছে। নতুনভাবে এগুতে হবে। জানা গেছে, শিবিরের এহেন পরিকল্পনায় এখন পর্যন্ত পাত্তা দেয়নি ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। ছাত্রদলের কর্মকর্তারা মনে করছেন, শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অভিযানে সহায়তা দেয়ার অর্থ হবে খাল কেটে কুমির আনা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অধিদপ্তরের সাথে কর্মরত ন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর দ্য স্টাডি অব টেররিজম এন্ড রেসপন্সেস টু টেররিজম (এসটিএআরটি) এর ফাইলে ইসলামী ছাত্র শিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার বিষয়টি নিয়েও প্রবাসী শিবির কর্মী ও সমর্থকরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এজন্যে তারা জামাতের আন্তর্জাতিক মুরুব্বীদের সাথেও যোগাযোগ শুরু করেছেন। তারা মনে করছেন, স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাথে জামাতের সুসম্পর্ক থাকা সত্বেও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের ঘনিষ্ট একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গবেষণা সংস্থা কীভাবে শিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফেডারেশন অব স্টুডেন্ট অর্গেনাইজেশনের সদস্য হিসেবে ইসলামী ছাত্র শিবিরের আন্তর্জাতিক লবিং রয়েছে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফেডারেশন অব স্টুডেন্ট অর্গেনাইজেশনের সাথেও রয়েছে তাদের সাংগঠনিক বন্ধুত্ব। ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ড· আবু তাহের এক সময় এ ফেডারেশনের মহাসচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু তাই নয়, ‘ওয়ার্ল্ড এ্যাসেম্বলী অব মুসলিম ইয়থ’ নামক একটি সংগঠনেরও সদস্য ইসলামী ছাত্র শিবির। পাকিস্তানী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স’র (আইসিআই) সাথে সর্বদা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলে ছাত্র শিবির ।এবং আইসিআই তাদেরকে অর্থকড়ি দেয়-এ তথ্যও রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ নিয়ে গবেষণারত ‘সাউথ এশিয়ান টেররিজম পর্টাল’ নামক একটি সংস্থার ওয়েবসাইটে। তারা আরো বলেছে যে, হুজি নামক উগ্রপন্থি-সন্ত্রাসী সংগঠনের নেটওয়ার্কে কাজ করছে ইসলামী ছাত্র শিবির। স্মরণ করা যেতে পারে, এর আগে সাউথ এশিয়া এনালাইসিস গ্রুপ নামক একটি গবেষণা সংস্থা ইসলামী ছাত্র শিবিরকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্যে মারাত্মক হুমকি বলে মন্তব্য করে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত করতেও শিবিরের কর্মকান্ড যথার্থ বলে তারা মন্তব্য করেছেন।",False fe,"ফিরে দেখা অতীত ও সিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয় ফিরে দেখা অতীত ও সিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয়ফকির ইলিয়াস==========================================ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তিনটি আসনেই জিতেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ভোটের দিন দুপুরে প্রধান অংশগ্রহণকারী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। কিভাবে তারা বর্জনের পরিকল্পনা করেছিলেন, সেই কথোপকথনের রেকর্ডিং বাজারে ঘুরপাক খাচ্ছে। তারা কি বুঝতে পেরেছিলেন- তারা হেরে যাবেন? এ জন্যই তারা এই কাজটি করেছিলেন? স্বীকার করি, ভোটের দিন বেশকিছু কেন্দ্রে লুটপাট হয়েছে। ভোট জালিয়াতি হয়েছে। প্রশ্ন করতে চাই- কোন ভোটে বাংলাদেশে জালিয়াতি হয়নি? বিএনপির সময়ে যে ভোট জালিয়াতি হয়েছিল, তা নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট ইতোমধ্যে মিডিয়ায় এসেছে।বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের আমলেও ঢাকাসহ তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছিল। গণমাধ্যমের সমালোচনার ঝড় উঠেছিল ওই নির্বাচন নিয়েও। তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ মেয়র পদে কোনো প্রার্থী না দিলেও বিএনপি ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে তাদের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনে। বাম জোটের মেয়র প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশাকে রাজশাহীর একটি কেন্দ্রে বিএনপির সমর্থকরা আটক করে লাঞ্ছিত করে। সেনাসদস্যরা তাকে উদ্ধার করে। ঢাকায় বিএনপির প্রতিদ্ব›দ্বী ছিল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। এই দলের সমর্থকদের ঢাকায় ব্যাপকভাবে লাঞ্ছিত করে বিএনপির কর্মীরা।২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হন বিএনপির প্রার্থী সাদেক হোসেন খোকা। ওই সময় নির্বাচন কমিশনার দাবি করেছিলেন- ঢাকায় প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটার ভোট দেয়। তবে তখন বিএনপিপন্থী নামে পরিচিত মানবাধিকার সংগঠন এই ভোটারদের হার নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ওই সময় নির্বাচন কমিশনার দাবি করেছিল, ঢাকায় ৩৪ দশমিক ৩৭ ভাগ, ৬৪ দশমিক ৪০ ভাগ খুলনায় এবং ৭১ দশমিক ৪১ ভাগ রাজশাহীতে ভোট পড়েছে। রিপোর্টে অধিকার আরো জানিয়েছিল, ঢাকায় ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির ঘটনা ঘটে। ভোট কেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাইয়ের অপরাধে ঢাকায় ৫২ জন, রাজশাহীতে ১৭ জন এবং ১৯ জন খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা সবাই ছিলেন বিএনপির কর্মী।২০১৫-এর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কে কত ভোট পেয়েছেন, তা একটু দেখা যাক। নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ভোটারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯০০টি। এই সিটিতে আনিসুল হক টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। আর নিকটতম পরাজিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বাস প্রতীকে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট পান। ঢাকা দক্ষিণে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৮ জন। এখানে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ইলিশ মাছ প্রতীকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ ভোট পেয়ে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী মির্জা আব্বাস মগ প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১টি। চট্টগ্রাম সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ জন। এই সিটিতে আ জ ম নাছির উদ্দীন হাতি প্রতীকে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী এম মনজুর আলম কমলালেবু প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭টি। একটা বিষয় খুব স্পষ্ট, বিএনপি প্রার্থীরা লাখ লাখ ভোট পেয়েছেন। এটাও পরিষ্কার হয়ে গেছে, বাংলাদেশে এই দুটি রাজনৈতিক দলেরই শক্ত প্রতিপত্তি রয়েছে। এর বাইরে যারা নির্বাচন করেছেন, তারা টক শোর যত বড় মাতব্বরই হোন না কেন, ফেসবুকে লাখো সমর্থকই থাকুক না কেন- মানুষ যে তাদের ভোট দেয় না, তা জানা গেছে এবারেও। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মাহী বি. চৌধুরী, জোনায়েদ সাকি, আবদুল্লাহ আল ক্বাফি, গোলাম মওলা রনি, নাদের চৌধুরীসহ মোট ৪২ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। সিটি নির্বাচন আমাদের চোখ আবারো খুলে দিয়েছে।এর আগে সিটি নির্বাচনগুলোতে বিএনপি একচেটিয়া জিতেছিল। কিন্তু এখন তাদের অবস্থা খুবই নাজুক। সিলেটের বিএনপি সমর্থিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি হওয়ার কারণে বরখাস্ত হয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের পদ থেকে অপসারণ করার অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। বহিষ্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এমনটা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। জানা গেছে পুলিশ প্রশাসনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশের চিঠিতে মো. মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নামে পাঁচটি মামলা থাকার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা মামলা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা কয়েকটি মামলার তথ্য দেয়া দিয়ে বলা হয়েছে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র পদে কর্মরত থাকলে মামলাগুলো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খুলনায় মো. মনিরুজ্জামান মনি এবং বরিশালে মো. আহসান হাবিব কামাল মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে। কুমিল্লার মেয়র মনিরুল হক সাক্কুও অনেকটা নিষ্ক্রিয় আছেন বলেই জানাচ্ছেন ওই সিটির মানুষজন।আওয়ামী লীগ বলছে, সরকারি দলের মেয়র হলেই বেশি কাজ করা সম্ভব। কিন্তু কথা হলো, তাহলে তো গণতন্ত্র বা মানুষের ভোটের অধিকারের কোনো মূল্যই থাকল না। এভাবে কি একটি জাতি, একটি দেশ গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্ত করে দাঁড়াতে পারে? না- পারে না।ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এসেছে নির্বাচন কমিশনে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে এই অভিযোগ ওঠেনি? এমনো দেখা গেছে, তদন্ত করতে করতেই কেউ তার মেয়াদ পালন করে চলে গেছে। ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট বর্জনের পর তা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগের সপক্ষে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। তাদের আহ্বানের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যে সমস্যা, ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করব, খতিয়ে দেখব। কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল আমার হাতে আসবে। কে কত ভোট পেয়েছে তা দেখতে পারব।’ এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, ১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর দিন লালবাগে গুলিবর্ষণে সাতজনের মৃত্যুর ঘটনা, দশম সংসদ নির্বাচনের সময় ৫৮২টি কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরেছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এর সঙ্গে তুলনা করলে, এই নির্বাচন খুবই সুষ্ঠু হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন- ‘হয়তো কিছু ঘটনা ঘটেছে। সাতাশশ কেন্দ্রের মধ্যে দুটি বন্ধ হয়েছে। ৪০/৫০টি জায়গায় কিছু ঘটনা ঘটেছে। ওই কেন্দ্রগুলোতে কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল, তারপর আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়।’ প্রার্থীদের পক্ষে বিএনপির অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, বর্জনের ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে বিএনপি মেয়র প্রার্থীরা এত ভোট পান কী করে? বলেছেন, যারা সমালোচনা করছে, তাদের জবাব দিতে হবে।এটা বলতেই হবে, এই নির্বাচনে মূলত ধনী পুত্র তাবিথ আউয়ালের অভিষেক হয়েছে। তিনি চলে এসেছেন বিএনপির ব্যানারে। দল হিসেবে এই অর্জন বিএনপিরই। বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে যা চলছে, তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত, তা দেশের মানুষকেই ভাবতে হবে। বিএনপি গেল সাড়ে তিন মাস দেশে যে অরাজকতা করেছে- তা না করলে হয়তো অবস্থা অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু মানুষ পুড়িয়ে মারার অরাজকতা মেনে নেয়নি। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির এই বোধোদয় না হলে, তাদের সামনে আরো কঠিন সময় আসতে পারে।------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৯ মে ২০১৫ প্রকাশিত",False hm,"পিচ্চিতোষ গল্প ০৩: হাবুলের জলদস্যু জাহাজ হাবুল ঠিক করেছে সে বড় হয়ে জলদস্যু হবে। এখন থেকেই সে তার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। হাবুল এখন ছোট, কিন্তু সে এর মধ্যেই অনেক ছবিসহ আর ছবিছাড়া জলদস্যুদের গল্প পড়ে ফেলেছে। জলদস্যুরা একটা কালো টুপি পড়ে থাকে এক চোখে। সেরকম একটা টুপি হাবুলের খালামণি হাবুলকে বানিয়ে দিয়েছেন। জলদস্যুদের একটা তলোয়ার থাকে, যেটাকে কাটলাস বলে। ছোটমামা তাকে একটা বেঁটে কাঠের তলোয়ার বানিয়ে দিয়েছেন, সেটা উঁচিয়ে হাবুল মাঝে মাঝে ঘোরাফেরা করে, ফুলির মার কোমরে মাঝেসাঝে দুয়েকটা খোঁচা দেয়, ফুলির মা চেঁচিয়ে ওঠে, ""ওরে মাইরা ফালাইলো!"" জলদস্যুদের একটা পা কাঠের হয়। কাঠের পা নিয়ে হাবুল একটু সমস্যায় আছে। তার দুটো পা-ই মাংসের। অবশ্য হাবুলের ছোটমামা বলেছেন, মাংসের পা নিয়েও জলদস্যু হওয়া যায়। তবে একটু খুঁড়িয়ে হাঁটলেই চলবে। হাবুল তাই একটা পা একটু টেনে টেনে হাঁটে। হাবুলের মা একদিন বারান্দায় বসে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে বললেন, ""হাবুলসোনা, পা টেনে হাঁটছো কেন বাঁদরের মতো?"" দুঃখে হাবুলের বুকটা ফেটে গেলো। সে চেঁচিয়ে বলে, ""আমি বাঁদর নই! আমি জলদস্যু!"" হাবুলের মা হেসে ফেলেন ফিক করে। বলেন, ""তাই তো! ভুলেই গিয়েছিলাম!"" হাবুল আবার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে চায়। জলদস্যুদের অনেক কষ্ট। কিন্তু জলদস্যুদের তো একটা বড় কাঠের জাহাজও থাকে। হাবুলের কাঠের জাহাজ নেই। ছোটমামাকে একবার সে অনেক আশা করে জিজ্ঞেস করেছিলো, ""মামা, কাঠের জাহাজ কি দোকানে কিনতে পাওয়া যায়?"" হাবুলের ছোটমামা ভুরু কুঁচকে বললেন, ""সে কি রে হাবলো, কেনা জাহাজ দিয়ে তো জলদস্যু হওয়া যাবে না! সত্যিকারের জলদস্যুরা গাছ কেটে নিজের জাহাজ বানিয়ে নেয়!"" হাবুল শুনে একটু মুষড়ে পড়েছিলো। গাছ কাটা নিশ্চয়ই খুব কঠিন কাজ। ফুলির মা রোজ শাক কাটতে গিয়ে আর আলু কাটতে গিয়ে আর মাছ কাটতে গিয়ে হাবুলের মা-র বকা খায়। আর একটা গাছ কাটা নিশ্চয়ই তারচেয়ে অনেক শক্ত কাজ? ফুলির মা কি হাবুলকে একটা গাছ কেটে দিতে পারবে? ছোটমামা মাথা নাড়েন। ""তাহলে তো ফুলির মা-ই জলদস্যু হয়ে যাবে। তোকে নিজের হাতে কেটে নিতে হবে।"" হাবুল শুকনো মুখে বলে, ""গাছ কাটা কি অনেক কঠিন?"" ছোটমামা বলেন, ""অ-নে-ক কঠিন। গাছ কাটা কঠিন বলেই তো আজকাল জলদস্যু এত কম। নাহলে সবাই একটা করে গাছ কেটে জাহাজ বানিয়ে জলদস্যু হয়ে যেতো।"" হাবুল বলে, ""গাছ কাটতে কী লাগে?"" ছোটমামা বলেন, ""গাছ কাটতে কুড়াল লাগে। তারপর গাছ কেটে ডাল ছেঁটে তক্তা চিরে বার করতে করাত লাগে। তারপর তক্তাকে ঘষে ঘষে সমান করার জন্য রাঁদা লাগে। তারপর সেই তক্তা কেটেকুটে জোড়া লাগানোর জন্য পেরেক, হাতুড়ি আর নাটবল্টু লাগে। অনেক কিছু লাগে।"" হাবুলের মনটাই খারাপ হয়ে যায়। সে বলে, ""কাঠমিস্ত্রির দোকানে গিয়ে বললে ওরা আমাকে একটা জাহাজ বানিয়ে দেবে না?"" ছোটমামা বলেন, ""ওরা কি আর জাহাজ বানাতে জানে? ওরা তো শুধু চেয়ার টেবিল আলমারি বানায়। জলদস্যুদের জাহাজ বানানোর কায়দা শুধু জলদস্যুরাই জানে!"" হাবুল বলে, ""তাহলে আমি কার কাছ থেকে শিখবো?"" ছোটমামা বলেন, ""বই পড়ে শিখবি। জলদস্যুদের জাহাজ বানানোর সব কায়দাকানুন বইতে লেখা আছে।"" হাবুল খুশি হয়ে ওঠে। সে বলে, ""ঐ বইটা কাঠমিস্ত্রিকে পড়ে শোনালে সে জাহাজ বানিয়ে দিতে পারবে না?"" ছোটমামা গম্ভীর হয়ে যান। বলেন, ""কাঠমিস্ত্রি জাহাজ বানানোর পর যদি তোকে না দেয়? যদি জাহাজ বানানোর পর সে নিজেই জলদস্যু হয়ে যায়?"" হাবুল ভাবে, তাই তো! সবাই তো জলদস্যু হবার জন্য মুখিয়ে আছে। তাহলে জাহাজ তাকে একাই চুপিচুপি বানাতে হবে। হাবুল বলে, ""কুড়ালের কি অনেক দাম?"" ছোটমামা বলেন, ""হুঁ! দাম তো বটেই। তারচেয়ে বেশি দাম করাতের। তারচেয়ে বেশি দাম পেরেক আর হাতুড়ির আর নাটবল্টুর। তারচেয়ে বেশি দাম রাঁদার। তবে সবচেয়ে বেশি দাম গাছটার।"" হাবুল বলে, ""কোন গাছটার?"" ছোটমামা বলেন, ""কেন, যে গাছটা কেটে জাহাজ বানাবি সেটার?"" হাবুল বলে, ""গাছ কোথায় কিনতে পাওয়া যায়?"" ছোটমামা বলেন, ""গাছটা পাওয়া যাবে দূরের একটা দ্বীপে। সেখানে গাছ কেটে তক্তা চিরে বার করে জাহাজ বানিয়ে সাগরে ভাসাতে হবে।"" হাবুল বললো, ""ঐ দ্বীপে কিভাবে যাবো?"" ছোটমামা বলেন, ""স্পিডবোট ভাড়া করে যাওয়া যায়, আবার লঞ্চে করেও যাওয়া যায়। একভাবে গেলেই হলো।"" হাবুল বলে, ""আমি লঞ্চে করে যাবো!"" ছোটমামা বলেন, ""কেন?"" হাবুল বলে, ""আমি লঞ্চে করে যাবো, তারপর জাহাজ বানিয়ে ঐ জাহাজে চড়ে এসে লঞ্চটাকে জলদস্যু করবো!"" ছোটমামা বলেন, ""ছি ছি, যে লঞ্চে চড়ে যাবি সেটাকে লুট করবি? তুই তো খুব পাজি জলদস্যু!"" হাবুল বলে, ""মুহাহাহাহাহাহা!""",False hm,"প্রবাসে দৈবের বশে ০০৪ কাসেলে আসা ইস্তক সুমন চৌধুরীকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখছি। চৌধুরী সাহেব ভোজনরসিক মানুষ, তাই তাঁর ল্যাংবোট হয়ে আমিও মাঝেসাঝে চর্ব্যচোষ্যলেহ্যপেয় সাঁটিয়ে চলছি। শুরুতে দু'দিন খান সাহেবের বাড়িতে অতিথি হয়ে বিস্তর খানদানি খোরাকি কুক্ষিগত করেছি, সে কাহিনী খান সাহেবের ইজাজৎ ছাড়া বয়ান করা ঠিক হবে না। তবে খান সাহেবের রান্না করা মুসুরির ডাল যে খায়নি সে নিতান্তই হতভাগ্য। কাসেলে গরুর মাংস কেনা হয় সাধারণত তুর্কি দোকান থেকে। তারা মাপমতো টুকরা করে রাখে, দেখে শুনে কিনে আনতে পারলেই হলো। ঘরে ফিরে সেই গবাংশকে নিজস্ব ছুরি দিয়ে নিজস্ব ছাঁটে নিজস্ব ঢঙে টুকরাটাকরা করে বিভিন্নভাবে রান্না করা যেতে পারে। সুমন চৌধুরী ফিকির খোঁজেন ল্যাটকা খিচুড়ি বা তেহরানি (বিরিয়ানির মশলাযোগে তেহারি) রান্না করার জন্য। সাথে খাওয়ার সময় সহপেয় হিসেবে শুকনো ওয়াইন। ওয়াইন সম্পর্কে আমার আকল নিতান্তই কচি ও কাঁচা পর্যায়ে ছিলো, চৌধুরী সাহেব শুরুতেই গেট্রেঙ্কেমার্কটে নিয়ে গিয়ে তিন মিনিটের একটি মনোজ্ঞ বক্তৃতা দিয়ে আমাকে তালিম দিলেন। খাওয়ার ফাঁকে গিলতে হলে শুকনো (ট্রকেন) ওয়াইন, আর খাওয়ার পর রয়েসয়ে গিলতে হলে লিবলিখ। মাংসের সাথে যাবে লাল ওয়াইন, মাছের সাথে যাবে সাদা ওয়াইন। আরো নানা ব্যকরণ আছে ওয়াইন পানের, সেগুলিও ধীরেসুস্থে শিখে ফেলবো মনে হচ্ছে। ঘরদোরের জিনিসপাতি কেনার সময় ওয়াইনের ছিপিউদঘাটক রীতিমতো তালিকার শীর্ষে চলে এসেছে শিক্ষা ও স্বাদ লাভের পর পর। কাসেলে এসে নতুন যে খাদ্যদ্রব্যটি আমার মনহরণ করেছে, তা হচ্ছে ফোরেলে (ট্রাউট)। মন হরণ করার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ফোরেলে খাওয়ার উপযোগী করার জন্য বেশি খাটতে হয় না, প্যাকেট থেকে খুলে গরম পানিতে বরফ গলিয়ে পেঁয়াজরসুনআদাকাঁচামরিচ লেবুর রসে মাখিয়ে তার আগে থেকে চিরে রাখা পেটে গুঁজে লবণ ছিটিয়ে ফয়েলে মুড়ে চুলায় বেক করতে দিয়ে দিলেই মিনিট চল্লিশেক পর দারুণ সুস্বাদু এক মাল বেরিয়ে আসে। জার্মানির আরেক মাছ, লাখস (ফোরেলেরই জাতভাই, এরা সব স্যামন জাতীয়) আগে চেখে দেখেছিলাম, খুব একটা ভালো লাগেনি, ফোরেলে তার তুলনায় অমৃত। প্রথম যখন জার্মানিতে আসি, তখন দারুণ উল্লসিত ছিলাম বিয়ার নিয়ে। জার্মান বিয়ারের গুণগান না করা আসলেই মুশকিল, আর মিউনিখে এক বোতল পানির দাম আর সম পরিমাণ এক বোতল বিয়ারের দামের প্রায় সমান। বিভিন্ন পাবে কাঠের ব্যারেল থেকে পরিবেশন করা হয় ফেনায়িত বিয়ার, বোতলের বিয়ারের চেয়ে দাম বেশি হলেও স্বাদে পরিস্কার পার্থক্য আছে। বিয়ারকে মোটা দাগে দু'ভাগে ভাগ করা যায়, সাদা (হেল) আর গাঢ় (ডুঙ্কেল), অথবা উৎস অনুযায়ী কয়েকভাগে, গম, ঈস্ট, ছত্রাক ইত্যাদি। এরডিঙ্গার, আউগুস্টিনার, পাউলানার, ফ্রানৎসিসকানার, লোয়ভেনব্রয়, হাকার-প্শর, বাঘা বাঘা সব ব্র্যান্ড। বিয়ারের বোতলে সাধারণত সাত-আট সেন্ট ফান্ড থাকে, বোতল ফিরিয়ে দিলে সে পয়সা ফেরত পাওয়া যায়। কাসেলে মেদবহুলা ফ্লাইশহেনশেন না খেয়ে স্বল্পমেদিনী জুপেনহেনশেন খাওয়াটাই স্থির করেছি। মুরগির দাম এখানে ঢাকার মতোই, একেবারে তৈরি মুরগির দাম কেজিপ্রতি এক ইউরোর কাছাকাছি। নয়শোগ্রামের ""দেশি"" মুরগি আর তেরোশোগ্রামের ""দেশি"" মুরগির দাম সমান। যে দেশে মুড়ি আর মিছরির সমান দর, সে দেশে নাকি বেশিদিন থাকতে নেই, কথাটা মনে পড়ে গেলো। জন্টাগহান বলে এক বস্তু মেলে এখানে, তার আকার সেইরকম ঢাকাই সিনেমার নায়িকার মতো, রোববার ছুটির দিনে সবাই মিলে খাবার জন্য বড় করা খাসি মোরগ, তার দাম আম মুরগির চেয়ে পাঁচগুণ বেশি। টার্কি বা পুটেনের মাংস স্বাদশূন্য প্লাস্টিকের মতো, রান্না করে না খাওয়াই ভালো, তবে পুটেনভুর্স্ট বা টার্কি সসেজ ভাজলে বেশ ভালো লাগে খেতে। জার্মান চকলেট, দুধ বা আইসক্রীম অতীব স্বাদু জিনিস, ফলমূলও খারাপ না। আফগান এক দোকানের সুবাদে কাসেলে যাবতীয় দেশি মশলা পাওয়া যায়, যদিও আমি দেশ থেকে গরম মশলা কিছু নিয়ে এসেছিলাম সাথে। সব্জির দাম দেশের অনুপাতে বেশ চড়া, গোল বেগুনের দাম রীতিমতো ঢাকাই রমজান মৌসুমের কথা মনে করিয়ে দেয়। এক কেজি আলুর দাম একতিরিশ সেন্ট, সে তো কিছুদিন অপেক্ষা করলে বাংলাদেশেও দেখা যেতে পারে। জার্মানরা সূর্যমুখী আর বাদাম তেল খায় বেশি, তবে সয়াবীন আর সরিষার তেলও মেলে। ঘি এর কাজ মাখন গলিয়ে চালানো হচ্ছে, এখানকার মাখন বেশ। তবে ডিমের আকার রীতিমতো ছোট, মুরগিগুলি বোধহয় এখনও উপলব্ধি করতে পারেনি যে তারা জার্মান। কিংবা কে জানে কোন শুকনোপটকা বাঙালি মোরগ উড়ে এসে জুড়ে বসেছিলো কি না! আমার বিগত প্রবাস জীবনে উপলব্ধি করেছিলাম, আমি একজন খাঁটি ভেতো। ভাতের প্রতি আমার উদরের টান শুধু রজকিনীপ্রেম নিকষিত হেমের সাথে তুলনীয়। বিয়োগান্তক নয়, এ প্রেমের কাহিনী মিলনান্তক, যেখানে শেষমেশ পেটের সাথে ভাতের দেখা মেলে, জাবড়াজাবড়ি হয়। কাসেলে কয়েক পদের চাল পাওয়া যায়, বাসমতি চালেরই কয়েক কিসিমের দেখা মেলে, কমদামিটা রেঁধে খাচ্ছি। ভাত রান্নার সময় কয়েক দফা স্যাম্পলিং করি, তাই চাল বা জাউ কোনটাই না খেয়ে খাঁটি ভাতই চিবাই। জীবনে প্রথম ডাল রান্না করে আমি আমার রন্ধনপ্রতিভায় মুগ্ধ। তবে খাওয়াদাওয়ার পর মনে পড়লো হলুদ বা ধনিয়া বা ঐ গোছের গরম মশলা ছাড়াই ডাল রান্না করেছি। হাঙ্গার ইজ দ্য বেস্ট সস কথাটাকে আপ্তবাক্য ধরে নিয়ে চরম খিদের মুখে নিজের রান্না খেতে বসলে কোন সমস্যা দেখা দেয় না বলে আমার বিশ্বাস। আমার প্রতিবেশী জামুয়েল ডালে আদা-রসুন-পেঁয়াজের ফোড়নের ঘ্রাণ ও শব্দে রীতিমতো বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। তার বাপ-মা থাকে অজনাব্রুয়কে, সেপ্টেম্বর মাস ফুরোলে তবে সে আবার ভোওনহাইমে ফিরবে। যদিও সে বলে গেছে, পরীক্ষা শেষ বলে ক'টা দিন সে বাড়ি থেকে কাটিয়ে আসবে, কিন্তু আমার ধারণা আমার ডাল রান্নার শুভ মহরতই তাকে ঘরছাড়া করেছে। আকলমন্দের জন্য ইশারাই কাফি।",False fe,"আমরা যখন সাহসী বাংলাদেশের মুখের দিকে তাকাই আমরা যখন সাহসী বাংলাদেশের মুখের দিকে তাকাইফকির ইলিয়াস-------------------------------------------------------------------------বাংলাদেশ জিতেছে। জিতেছে মহান স্বাধীনতার মাস। আমি ক্রিকেট খেলার ভক্ত নই। খেলা আমি বুঝি না। তারপরও বাংলাদেশ জিতলে আমি জিতে যাই। পরবাসে থেকে দুফোঁটা অশ্রæ গড়িয়ে পড়ে আমার চোখে। আমি জন্মমাটির প্রতি কৃতজ্ঞ হই। অনুগত হই আবারো আমার স্বজাতির প্রতি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই খেলা দেখেছেন সরাসরি। বিজয়ের পরে তার চোখেও আমরা আনন্দাশ্রæ আমরা দেখেছি। একটি রাষ্ট্রের প্রধান এভাবেই তার নাগরিকদের সাহস জোগান। এভাবেই এগিয়ে নিয়ে যান। আমরা জানি, রাজনীতিকরা দেশ পরিচালনা করেন। তারা দিকনির্দেশনা দেন। একজন রাজনীতিকের ভুল সিদ্ধান্ত একটি জাতিকে আঁধারে নিপতিত করতে পারে। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একটি বক্তব্য দেশে- বিদেশে বেশ আলোচিত হচ্ছে।ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের ইঙ্গিত করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, কিসের ভয়? আওয়ামী লীগ-বিএনপি এক থাকলে অন্য কেউ ক্ষমতা নিতে পারবে না। আমাদেরকেও জেলে নিতে পারবে না। গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিগত আন্দোলনে নিহত ও আহত বিএনপি কর্মীদের পরিবারের মধ্যে আর্থিক অনুদান তুলে দেয়ার জন্য জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম শাখা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা যদি একসঙ্গে থাকতাম, তাহলে কিচ্ছু করার সাহস তাদের ছিল না।খালেদা জিয়া বলেছেন, যদি দেশে গণতন্ত্র থাকে, আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ মেজর পার্টিগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে কেউ এসে ক্ষমতা নিয়ে যাবে, আমাদের জেলে পুরে দেবে, তা পারবে না। খালেদা জিয়া বলেন, ওয়ান ইলেভেন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই কথা উঠিয়েছেন। কিন্তু তিনিই তো তাদের কাছে শপথ নিলেন, মিডিয়ার সামনে বললেন, ওয়ান ইলেভেন আমাদের আন্দোলনের ফসল। তিনি তো এর দায় অস্বীকার করতে পারেন না। খালেদা জিয়া যে কথাটি বলেছেন, সেটা একটি পরিশুদ্ধ গণতন্ত্রের পথ-পরিক্রমা। এরকম, এই বাংলাদেশে হতে পারত। হতে পারত যদি বিএনপি নামক দলটি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত হতো। এ বিষয়ে আরো কিছু কথা বলা দরকার। একটি জাতিসত্তার প্রতি একজন ব্যক্তি, একটি দল কিংবা কোনো গোষ্ঠী কতটা অনুগত তা নির্ভর করে তার মৌলিক আচরণ প্রকাশের ওপর। আচরণটিও দুরকম হতে পারে। একটি লোক দেখানো, অন্যটি আত্মিক। যারা মনে-প্রাণে কোনো জাতিসত্তাকে স্বীকার করে, কল্যাণ চায় এবং ভালোবাসে তাদের দেশপ্রেম নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে না।প্রশ্ন ওঠে তাদের দেশপ্রেমের প্রতি, যারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু ভেতরে ভেতরে সুযোগ খোঁজে জাতিসত্তাকে ধ্বংস করে দেয়ার। মূলত এদের শ্রেণি চরিত্রটি হচ্ছে আত্মপ্রতারকের। তারা একটি দেশে অবস্থান করেও ব্যস্ত থাকে সে দেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে। তারা রাষ্ট্র এবং জনগণের পিঠে ছুরি মেরে নিজেদের কায়েমি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিংবা হাত মিলায় পরাজিত মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে। খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমান সেই কাজগুলো খুব কৌশলে করেছেন। খবর বেরিয়েছে, বিএনপিতে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী পাওয়া যায়নি। আবারো বিএনপি চেয়ারপারসন পদে খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে তারেক রহমান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, ৪ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা, ৫ মার্চ যাচাই-বাছাই ও ৬ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। ১৯ মার্চ হবে নির্বাচন। ওই দিনই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল। বিএনপি তার নিজ বলয়ের মাঝেই ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সাহস নিয়ে। এগোচ্ছে প্রজন্ম। এই প্রজন্মের মুখের দিকে তাকিয়েই আজ সব রাজনীতিকের উচিত, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের স্বরূপ সন্ধান করা। স্বাধীনতা হচ্ছে মানুষের অন্যতম জন্মগত অধিকার। কিন্তু সেই স্বাধীনতা যদি দীর্ঘসময় কোনো অপশক্তি দ্বারা শাসিত হয় তবে তা কতটা অর্থবহ হতে পারে? এ প্রসঙ্গে মহাত্মা মি. এডওয়ার্ড সাঈদকে আবারো স্মরণ করা যেতে পারে। সাঈদ বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতার শত্রুরা তৎপর থাকে দিনরাত। আর স্বাধীনতাভোগীরা তৎপর থাকে শুধু দিনের বেলা। তাই ওই শত্রুরা মাঝে মাঝে মহাপরাক্রমশালী হয়ে উঠতে পারে।’ বাংলাদেশের আজকের অবস্থানটি হয়েছে ঠিক তাই। ভোগবাদী একটি চক্র দেশকে গ্রাস করতে চাইছে, যারা আদৌ এই দেশকে, এই মাটিকে ভালোবাসে না। তাদের যোগসূত্র অন্যদের সঙ্গে। তারা চায় পঁয়তাল্লিশ বছরের এই স্বাধীন দেশটাকে ঔপনিবেশিক মৌলবাদীদের হাতে তুলে দিতে। আর এদের সঙ্গে আছেন আলখেল্লা পরা অনেক সুশীলও।এসব রাষ্ট্রীয় শত্রুদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া এবং মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এদের ‘রাষ্ট্রের শত্রু’ বলার সাহস দেশের সুশীল সমাজের কতটা আছে সে বিষয়ে আমি কিছু প্রশ্ন তুলতে চাই। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে দুরকমের স্বার্থপরতা রয়েছে। একটি হচ্ছে তাৎক্ষণিক ভোগবাদিতা। আর অন্যটি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ভোগবাদিতা। যারা চাঁদাবাজি, টেন্ডার টানাটানি করে দুপয়সা কামানোর ধান্ধা করছে, এরা হচ্ছে তাৎক্ষণিক ভোগবাদী। আর যারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এগিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে এরা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি সুদূরপ্রসারী ভোগবাদী।আমরা বাঙালিরা আসলেই আত্মভোলা জাতি! যদি না হতাম তবে অনেক ঐতিহাসিক সত্যই আমরা ভুলে যেতাম না। ২৬ মার্চ কিংবা ১৬ ডিসেম্বর আমাদের সে সব সত্য বারবার মনে করিয়ে দেয়। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান গাইতে আমাদের বুক কাঁপে। যে ভারতের ১০ হাজার মিত্রবাহিনীর সৈন্য তাদের প্রাণ দিয়েছিলেন আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে সেই ভারত আমাদের অনেকের গায়ের কাঁটা। যে ভারতের প্রতিটি নাগরিক কর দিয়ে আমাদের ১ কোটি শরণার্থীকে সাহায্য করেছিলেন সেই ভারতকে আমরা কথায় কথায় গালি দিই। কী আশ্চর্য জাতিসত্তা আমাদের। তাই বলে আমি বলছি না, ভারতের কোনো চোখ রাঙানি আমরা মেনে নেব। অথচ বাংলাদেশের ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো জোট করে যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, তখন নেপথ্যে তারাও ভারত তোয়াজ কম করেনি। ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে কীভাবে? বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে জামায়াত নতুন করে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এমন একটি খবর বাজারে রয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনীতির নতুন সংস্করণ তৈরি হতেই পারে। এরা তাদের পুরনো এজেন্ডা নিয়েই মাঠে থাকবে। যে বিষয়টি নিয়েও রাষ্ট্র ও মানুষকে ভাবতে হবে। আমাদের মনে রাখা দরকার, আজ যে পাকিস্তানকে ক্রিকেটে বাংলাদেশ হারিয়েছে, সেই পাকিস্তানে ২০০৯ সালে আক্রান্ত হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট খেলোয়াড়রা। কি জঘন্য মানসিকতা। এই সেই বিষধর জঙ্গিবাদি পাকিস্তান- যারা খেলোয়াড়কে খেলতে দেবে না, গায়ককে গাইতে দেবে না, শিল্পীকে আঁকতে দেবে না, লেখককে লিখতে দেবে না। তারপরও মানুষ কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? কিছুই করবে না- করতে পারবে না এদের বিরুদ্ধে? পারতে হবে। না পেরে উপায় নেই। এই অপশক্তি সমাজে আসকারা পেলে মানবিকতা হারিয়ে যাবে চিরতরে। এরা জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎকর্ষকে শুধু অস্বীকারই করছে না, বরং শিল্প-সংস্কৃতির মননও হরণ করতে চাইছে। সেই পাকিস্তান থেকেই একদিন স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ। বিশ্বে আজ সভ্যতার বিবর্তন ঘটছে। আর তা ঘটছে মানুষের আদিমতা পরিহারের পর থেকেই। মানুষ তার নিজস্ব অভিধায় অভিষিক্ত করছে নিজেকে। এই অভিধা সৃজনের। এই প্রচেষ্টা নতুনকে বরণ করে নেয়ার। এর মাঝে কোনো ধ্বংস নেই। নেই ভাঙনের কোনো জোয়ার। তারপরও যারা রক্তাক্ত মৃত্তিকার ধূলিতে দাঁড়িয়ে উল্লাসে নাচে, এরা আসলে কি চায়? তাদের সুপ্ত ইচ্ছেটি কি? তাদের লক্ষ্যবিন্দুই বা কোথায়?মানবতার পক্ষে দাঁড়াবে বলে মানুষ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল। প্রতিটি ধর্ম সে চেতনাটি ধারণ করেছে। ‘নরহত্যা মহাপাপ’-তা প্রতিষ্ঠিত যে কোনো ভাষাতেই। যে কোনো ধর্মগ্রন্থে। তাহলে এখন বিশ্বে যে যুদ্ধ চলছে তা কি ধর্মযুদ্ধ? ধর্মপ্রতিষ্ঠার যুদ্ধ? ধর্ম তো শান্তির কথা বলে। শৃঙ্খলার কথা বলে। হত্যা করে, ত্রাস সৃষ্টি করে তবে কি শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। প্রশ্ন উঠছে এমন অনেক। আবারও বলি, বাঙালি প্রজন্মকে আজ দেখতে হবে সাহসী জননীর মুখ। এটা স্বাধীনতার মাস। আমাদের জাগরণের মাস। সব অসত্য আর আঁধারের বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে দাঁড়াবার মাস। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই- আমরা যদি শিকড়ের সন্ধানে একাত্তরকে বুকে ধারণ করি।------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৫ মার্চ ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৩৩",False mk,"কী করছে ইউনূস সেন্টার ড. ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার একটি দীর্ঘ জবাব দিয়েছে ইউনূস সেন্টার। ইউনূস সেন্টার ড. ইউনূসের পক্ষে বা তাঁর কর্মকা- সম্পর্কে পজিটিভ প্রচার চালানো ও তাঁকে ডিফেন্ড করার জন্যই একটি প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি অনেকের কাছেই খটকা লাগে। অবশ্য, এটা রুচির বিষয়। যার যেমন রুচি তিনি তেমন কাজ করবেন। সমাজে এ স্বাধীনতা একটা পর্যায় পর্যন্ত থাকতে পারে। কিন্তু কেউ সীমা লঙ্ঘন করলে, সংবিধান নির্দেশিত প্রচারের বা কথা বলার স্বাধীনতার বাইরে গেলে তখন অবশ্য ভিন্ন প্রশ্ন। কারণ, সাংবাদিক হিসেবে আমরা জানি, সংবিধান আমাদের বলে দিয়েছে, আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আইনের দ্বারা বিধিবদ্ধ। যা হোক, ইউনূস সেন্টার ২৮ জানুয়ারি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পার্লামেন্টে দেয়া বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে শুরুতেই বলেছে, ...‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে বেশকিছু ভুল ও অসত্য মন্তব্য করেছেন।’ ভুল যে কেউ করতে পারেন। অসত্য কিন্তু ভুলের মতো কোন এক্সিডেন্টাল কিছু নয়, অসত্য সব সময়ে ব্যবহার হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোন বিষয়ের ক্ষেত্রে। মানুষ কোন একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই একটি অসত্য বলে থাকে। যেমন হেফাজতীরা বলেছিল সরকার মতিঝিলে তাদের সমাবেশে গুলি চালিয়ে কয়েক হাজার মানুষ হত্যা করেছে। মানবাধিকার কর্মীর নামে আদিলুর রহমান একটি অসত্য লিস্ট হাজির করেছিলেন। কিন্তু কেউই মৃতদের প্রকৃত নামের তালিকা ও ঠিকানা দিতে পারেনি। এগুলোই অসত্য। তাই কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে কোন তথ্য দেন তাকে অসত্য বলা যথেষ্ট ঔদ্ধত্য প্রকাশ। এই ঔদ্ধত্য ইউনূস সেন্টার দেখিয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি মিথ্যাবাদী বলেছে। এই একই ধরনের ঔদ্ধত্য আমরা সংবাদপত্রেও দেখেছিলাম। প্রথম আলো পত্রিকা তাদের প্রথম পাতায় একই শব্দ ব্যবহার করে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছিল, তাদের শিরোনাম ছিল- ‘শেখ হাসিনা অসত্য বলেছেন’। প্রথম আলো এ কথা লিখেছিল ১/১১-এর সামরিক সহায়তার সুশীলদের শাসন আসার মাত্র তিন মাস আগে এবং ওই ১/১১ এর অন্যতম এক কুশীলব ড. ইউনূসও। তিনি ১/১১ এর কুশীলবদের সহায়তায় রাজনৈতিক দলও গঠন করেছিলেন। তাই বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটা একটি অশনি সঙ্কেত। কারণ, এ মুহূর্তে নানা স্থানে ১/১১ এর লোকদের শক্তিশালী দেখা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে সুপ্রীম কোর্টে ১/১১ এ শেখ হাসিনার জামিন বিরোধিতাকারী আইনজীবীরাও নাকি এই আমলে বিচারপতি হতে যাচ্ছেন। তাছাড়া বিশিষ্ট নাগরিকের নামে ১/১১ এর অনেককে এখন নানা স্থানে সামনে দেখা যাচ্ছে। তাদের মতামত নেয়া হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য। তাই স্বাভাবিকই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে, গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষের কাছে ইউনূস সেন্টারের এই ঔদ্ধত্য কিন্তু অনেক বড় বার্তা। সরকারের এবং দেশের গণতন্ত্র প্রিয় মানুষদের এখনই কিন্তু এই ১/১১ এর কুশীলবদের মাথাচাড়া দেয়ার বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত।ড. ইউনূস যে ঠিকমতো কর দেন না, বরং উল্টো কর্তৃপক্ষের নামে মামলা করেন- প্রধানমন্ত্রী সংসদে এ কথা বলেছিলেন। এক্ষেত্রে ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য, ড. ইউনূস পুরোপুরি ট্যাক্স দিয়ে আসছেন। বরং হঠাৎ করে এনবিআরের কিছু আইনী পরিবর্তনের ফলে তাকে মামলা করতে হয়েছে। ড. ইউনূস অত্যন্ত প্রতিভাবান ব্যবসায়ী। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে যেমন তাঁর প্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তেমনি কর না দেয়ার ক্ষেত্রেও তার প্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। যেমন একটি ঘটনা উল্লেখ করলে বোঝা যায় তিনি কীভাবে অর্থকে হাওয়া করে ফেলেন। যেমন ১৯৯৭-৯৮ সালে নরওয়ে তাদের একটি অনুদান দেয় বন্যার্তদের হাউজিংয়ের জন্য। দুই বছর পরে নরওয়ে কর্তৃপক্ষ ওই টাকার আর কোন হদিস পাচ্ছিল না। কারণ, দুই বছর অডিট রিপোর্টে দেখানোর পরে আর ওই টাকা গ্রামীণ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে ছিল না। নরওয়ে কর্তৃপক্ষ অনেক খোঁজাখুঁজির পরে দেখতে পায়, ড. ইউনূস তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের সিস্টার অর্গানাইজেশন গ্রামীণ হাউজিং সোসাইটিকে ওই টাকা দিয়েছেন এবং সেখানে নরওয়ের শর্ত পালন করা হচ্ছে। অর্থাৎ নরওয়ে কর্তৃপক্ষের শর্ত ছিল, ওই টাকায় কোন সুদ নেয়া যাবে না। গ্রামীণ ব্যাংক তাই তাদের হাউজিং সোসাইটিকে দেয়া অর্থের ক্ষেত্রে সেটা সুদ ছাড়া দেখিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে হাউজিং সোসাইটি যাদের ওই টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে সেখান থেকে সুদ নিচ্ছে। নরওয়ের টাকাটা ছিল অনুদান। ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের হিসাবে ওটাকে অনুদান হিসেবে দেখিয়ে গেছেন অর্থাৎ সুদমুক্ত; কিন্তু সিস্টার অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে ঠিকই সুদ নিয়েছিলেন। নরওয়ে কর্তৃপক্ষ এটা শেষ অবধি জানতে পেরেও ড. ইউনূসের নাম ও খ্যাতির কারণে চুপচাপ মেনে নেয়। এই একটি ঘটনা থেকেই তো প্রধানমন্ত্রীর দুটি তথ্য সত্য প্রমাণিত হয়। এক. তিনি সুদখোর, দুই. তিনি ট্যাক্স দেন না। কারণ, যে টাকা দিয়ে তিনি আয় করছেন, অনুদান দিচ্ছেন না ওই টাকার জন্য তো তাকে কর দিতে হবে। তবে, তাঁকে ওই টাকা অনুদান হিসেবে দেয়া হলেও তিনি বুদ্ধি খাটিয়ে একজন পারফেক্ট সুদ ব্যবসায়ীর মতো ওই টাকা তাঁর অন্য কোম্পানিতে ব্যবহার করে সুদ উপার্জন করেছেন। সুদ ব্যবসা দোষের কিছু নয়। তবে অন্যের কাছ থেকে সুদ নেব না এই শর্তে অনুদান এনে চালাকি করে ওই টাকা নিজের অন্য কোম্পানিতে দিয়ে তার মাধ্যমে সুদ নেয়া এক ধরনের ক্রাইম। অপরদিকে ওই অর্থের বিপরীতে ট্যাক্স না দেয়াও ক্রাইম। ঠিক এমনি আরেকটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল দেশের বৃহত্তম নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ ২৪ডটকম। তাদের নিউজে দেখা যায়, গ্রামীণ ব্যাংকের মূল শর্ত ভেঙ্গে ড. ইউনূসের বাবার প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার চুক্তি হয়। চুক্তির এক পক্ষ ড. ইউনূস অপর পক্ষ তার বাবা ও অপর তিন ভাই। সেখানে ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত ঋণ হিসাবে দেয়া হয় দুই কোটি ৯৯ লাখ, ১০ হাজার ৮৬ টাকা। গ্রামীণ ব্যাংকের নীতি ও চরিত্রের সঙ্গে এই চুক্তি যায় না। তবে গ্রামীণ ব্যাংক সে সময়ে কোন মতে একটি প্রতিবাদ দাঁড় করিয়েছিল। তার থেকেও বড় ওই প্রতিষ্ঠান কিন্তু লাভ করেনি। তাদের পুঁজি কয়েক লাখ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু চুক্তিটি এমন ছিল যে লোকসান কাউকে বহন করতে হবে না। অর্থাৎ এখান থেকে নিশ্চয়ই সকলের যা বোঝার দরকার সেটা বুঝতে কোন কষ্ট হওয়ার নয়। দরিদ্রের টাকা কত পরিশীলিতভাবে যে পরিবারে ব্যয় হতে পারে এ উদাহরণ কিন্তু এখান থেকে শিক্ষণীয়। বিএনপি এখন ড. ইউনূসের খুব ভক্ত (জানি না হিলারির পরাজয়ের পরে আর তার ভক্ত কিনা); তবে তারেক ও বেগম জিয়া যদি এতিমের টাকার বিষয়ে ড. ইউনূসের পরামর্শ নিতেন মনে হয় তাদের আজ এই মামলায় পড়তে হতো না। যা হোক, ইউনূস সেন্টার বলেছে, এনবিআরের আইন পরিবর্তনের ফলে ড. ইউনূসকে করের প্রশ্নে মামলা করতে হয়েছে। ড. ইউনূসের করের বিষয় নিয়ে এখন তদন্ত শুরু করেছে এনবিআর কর্তৃপক্ষ। তাদের প্রতি অনুরোধ রইল, ১/১১ এর সুযোগ নিয়ে ড. ইউনূস এনবিআরকে কোন আইন করাতে বাধ্য করেছিলেন কিনা, সেই আইন পরবর্তীতে পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা- এ বিষয়গুলো যেন ওই তদন্তে বেরিয়ে আসে। তা হলে জাতি ড. ইউনূস সম্পর্কে আরও অনেক সত্য জানতে পারবে।প্রধানমন্ত্রীর পার্লামেন্টে দেয়া বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে ইউনূস সেন্টার একটি হাস্যকর যুক্তি উপস্থাপন করেছে। তাদের বক্তব্য হলো, গ্রামীণ ব্যাংক আইনে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অবসরের কোন বয়সসীমা নেই। তাদের এই যুক্তি আদালতে টেকেনি। আদালত ড. ইউনূসকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী অবসর দিয়েছে। তাই এ নিয়ে আবার যুক্তি উপস্থাপন আদালতের প্রতিই অনাস্থা। যা হোক, তবে দিনকে দিন ও রাতকে রাত বলতে হলে- সত্য বলতে হয়; সে সত্য হলো, দেশের সব ব্যাংকই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবিধিমালা অনুযায়ী চলবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের যে বয়সসীমা নির্ধারিত করেছে সেটাই সবাইকে মানতে হবে। গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য কেন আলাদা হবে? এ তো সংবিধানসম্মতও নয়। সংবিধানে কারও জন্য বিশেষ অধিকার রাখার কোন সুযোগ নেই। সংবিধানের মৌল চরিত্র অনুযায়ী, দেশের সবার জন্য আইন সমান হবে।প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, গ্রামীণ ফোনের লাইসেন্সটি তিনি ড. ইউনূসকে দিয়েছিলেন এ কারণে যে, এর মূল মালিক হবে গ্রামীণ ব্যাংকের নারী সদস্যরা। কিন্তু তিনি তাদের সে মালিকানা দেননি। ইউনূস সেন্টার এর উত্তর দিতে গিয়ে বলেছে, গ্রামীণ ফোনের ৪৫ ভাগ শেয়ারের মালিক বাংলাদেশীরা। তার দশ শতাংশ হাজার হাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। এর থেকে বেশি কিছু পরিষ্কার করেনি ইউনূস সেন্টার। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাব দেয়ার কিছুই তাদের হাতে নেই। মূলত প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ ব্যাংককে এই ফোন কোম্পানির লাইসেন্স দিয়েছিলেন এ জন্য যে, বাংলাদেশের ৪৫ ভাগ শেয়ারের মালিক হবে গ্রামীণ ব্যাংকের ৮৬ লাখ নারী সদস্য। প্রতি বছর যে কয়েক হাজার কোটি টাকা গ্রামীণ ফোন থেকে লাভ হয় ওই লভ্যাংশ এই ৮৬ লাখ নারীকে ভাগ করে দেয়া হবে। শেয়ার বাজারে এর শেয়ার গেলেও তার লভ্যাংশ ৮৬ লাখই পাবে। কিন্তু তা না করে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের সিস্টার অর্গানাইজেশন করে সোশ্যাল বিজনেসের নামে এই দরিদ্র নারীদের টাকা সেখানে নিয়ে যাচ্ছেন। দরিদ্র ৮৬ লাখ নারী এটা পাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের এ অংশের সারাংশ এই। এর উত্তর কিন্তু ইউনূস সেন্টার দিতে পারেনি। বর্তমান সরকার জঙ্গী অর্থায়ন বন্ধের জন্য ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনেছে। গ্রামীণ ফোনেও প্রধানমন্ত্রীর ওই সময়ের দেয়া শর্তে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত বর্তমান সরকারের।প্রধানমন্ত্রী সংসদে নাম না নিয়ে বলেন, তিনি ও আরেকজন সম্পাদক বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করান। ইউনূস সেন্টার এর উত্তরে বলেছে, তারা বরাবরের মতো এবারও বিষয়টি অস্বীকার করছে। এখানে কয়েকটি সহায়ক তথ্য উল্লেখ করা যেতে পারে। এক. বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন যখন বন্ধ করে ওই সময়ে আমাদের অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রোগ্রামে যোগ দিতে ওয়াশিংটন ছিলেন। তিনি ওয়াশিংটন থেকে নিউইয়র্কে এলে আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মোডি কেন তাকে প্রশ্ন করে, ‘আপনি কী মনে করেন এই অর্থায়ন বন্ধের পেছনে ড. ইউনূসের কোন হাত আছে? এর আগে তো আমাদের অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এমনকি মিডিয়াও এ প্রশ্ন ওঠায়নি যে, এ অর্থ বন্ধের পেছনে ড. ইউনূসের হাত আছে। তা হলে মোডির মতো একটি সংস্থার প্রধান কেন এ প্রশ্ন আমাদের অর্থমন্ত্রীকে করতে গেল? মোডির মতো সংস্থার প্রধান কি কোন তথ্য উপাত্ত তাঁর কাছে না থাকলে এমন একটি প্রশ্ন একটি দেশের অর্থমন্ত্রীকে করতে পারে? দুই. ওই সময়ে বাংলাদেশের কোন সম্পাদক ওয়াশিংটন ছিলেন। সেটা বের করা নিশ্চয়ই কোন কঠিন কাজ নয়। আর তা বেরিয়ে গেলে তাঁর সঙ্গে ড. ইউনূসের সম্পর্ক এবং তিনি শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারকে কীভাবে দেখেন, তাদের অতীত কর্মকা- সবটুকু মিলিয়ে নিলেই তো জনগণ শেখ হাসিনার কথার সত্যতা পাবে। আর তিনি যখন তাঁর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ রাখার জন্য হিলারিকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করিয়েছিলেন তখন হিলারিকে দিয়ে যে অন্য কোন লবি তিনি করাতে পারেন না বা কোন লবি করেননি- এটা মানুষ কেন বিশ্বাস করবে? পাশাপাশি ওই ঘটনার পরে পানি বহুদূর গড়িয়ে গেছে। হিলারি ও ইউনূসের অনেক ইমেল ফাঁস হয়েছে। আমেরিকার বর্তমান প্রশাসন ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে দেয়া ড. ইউনূসের অর্থের তদন্ত করবে। তাই ভবিষ্যত আরও সত্য বলে দেবে। সর্বোপরি বলা যায়, কেউ একজন সত্য বললে তাকে মিথ্যাবাদী বলে ক্ষেপে গিয়ে কখনই নিজের দোষ আড়াল করা যায় না। সত্য প্রকাশ হয়, এটাই সত্য। সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৩",False rg,"।। আমার হাইস্কুল।। পর্ব-২।। আমাদের স্কুলে কোনো টয়লেট ছিল না। প্রায় ৫০০ ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটা নিয়ে তখন কেউ মাথাও ঘামাতো না। স্কুলের পেছনেই হেডস্যারের বাড়ি। হেডস্যারের বাড়ির ঠিক উত্তর পাশে কাটা খাল সোজা পশ্চিমে চলে গেছে। কাটাখালের দু'পার দিয়েই রাস্তা। এই রাস্তা সোজা চলে গেছে বানিয়ারীর দিকে। হেডস্যারের বাড়ির পেছনের দিকে বিশাল জঙ্গল। শিয়ালও বসবাস করতো সেই জঙ্গলে। এছাড়া স্কুলের পেছনে দক্ষিণ পাশে সুজিতদাদের বাড়ি। সুজিতদাদের বাড়ি'র সামনে থেকে সোজা দক্ষিণে চলে গেছে আরেকটি রাস্তা। ওটা দিঘীরজান ও কুমারখালীর দিকে গেছে। আর দীঘিরজান বাজারের একেবারে উত্তর-পূর্ব কোনে বাজারের শেষ মাথায় হল মসজিদ। মসজিদের পাশেই ব্রিজ। ব্রিজ পারালে উত্তর পাশে আবার পূর্ব বানিয়ারী। মরা বলেশ্বরের পার ঘেঁষে সেই রাস্তা একেবেঁকে চলে গেছেপ্রথমে উত্তরে পরে বাঁক নিয়ে পশ্চিমে বানিয়ারী'র দিকে। একেবারে খাসেরহাট-চিতলমারী পর্যন্ত। আর স্কুলের পূর্ব পাশের মাঠের একেবারে পূর্ব পাশের মরা বলেশ্বর নদী ঘেঁষে ডিস্ট্রিক বোর্ডের রাস্তা রুহিতলা পর্যন্ত গিয়ে দু'ভাগ হয়েছে। একটি নদী বরাবর চলে গেছে পূর্ব দিকে বাইনকাঠির দিকে। আর ডিস্ট্রিক বোর্ডের রাস্তা সোজা দক্ষিণ-পূর্ব কোনে চলে গেছে নাজিরপুর থানা ও পিরোজপুর মহাকুমার দিকে। তো ছেলেদের হিসি পেলে হেডস্যারের জঙ্গল বা সুজিতদাদের বাগানে যাবার নিয়ম। আর স্যারদের জন্য জীবেস স্যারের বাসার পেছনে একটা অর্ধপাকা টয়লেট ছিল। সেখানে যেতেন তারা। ফাফরে ছিল স্কুলের মেয়েরা। দু'একজন সাহস করে জীবেস স্যারের বাসার টয়লেটে যেতো। আর বাকীরা? সুজিতদাদের বাগানে ঠিক রাস্তার পাশে পাশপাশি দুইটি খ্যাড়ের পালা। সেখানে ছেলেরাও যেতো। মেয়েরাও যেতো। যখন মেয়েরা যেতো তখন ছেলেদের যাওয়ায় অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা থাকতো। মেয়েরা যেতো দলবেঁধে। ছেলেরাও দলবেঁধে। ছেলেরা আগে গেলে মেয়েরা খ্যাড়ের পালার দিকে না এসে সুজিতদাদের বাড়িতে ঢুকে পড়তো। সুজিতদাদের বাড়ির পেছনে পুকুরের সাইডেও জঙ্গল। সেই জঙ্গলে বা কাঁচা টয়লেটেও তখন মেয়েরা প্রাকৃতিক কাজটি সারতো। এছাড়া স্কুলের উত্তর পাশে বাজারের স্থায়ী দোকানগুলো যে গুলো কাটা খালের সঙ্গে সমান্তরাল সেগুলো প্রায়ই ছিল পারিবার কাম দোকান। সামনের রুমে হয়তো টেইলার, মুদি দোকান বা ফার্মেসি বা রেডিও ঠিক করার দোকান। আর পেছনে তাদের পরিবার থাকতো। স্কুলের মেয়েরা সেই সব পরিবারের সঙ্গে খাতির পাতাতো। তারা প্রাকৃতিক কাজ সারতে একটি গ্রুপ তখন বাজারের দিকেও যেতো। সবচেয়ে বেশি হিসি দেবার ভিড় পড়তো টিফিন পিরিয়ডে। তখন প্রায়ই ছেলেমেয়রা কখনো কখনো অনাকাঙ্খিত মুখোমুখি হয়ে যেতো। আর সেটা প্রায়ই ঘটতো সুজিতদাদের খ্যাড়ের পালার আড়ালে। মেয়েরা সেখানে গেলে একজন অন্তঃত রাস্তায় পাহারা দিতো। কিন্তু কোনো পাহারা না থাকলে ছেলেরা অনায়াসে খ্যাড়ের পালার পেছনে ঢুকে পড়তো। আর তখনই মাঝে মাঝে বিপত্তি ঘটতো। এই ঘটনা যদি একই ক্লাশের ছেলেমেয়ের মধ্যে ঘটতো, তখন সেই ঘটনার রেশ ক্লাশরুমেও চলে আসতো। দেখা যেতো সুবোধের দিকে তাকিয়ে পুতুল আর মিনতী খুব মিটমিট করছে। আবার কখনো জীবনের দিকে তাকিয়ে শাহনাজ আর হেনা মিটমিট ফিসফাস করছে। একদিন নির্মল স্যারের বাংলা ক্লাশ চলছিল। মেয়েদের কলামে একেবারে পেছনের দিকে ঝর্ণা আর মাহফুজা খুব মিটমিট করছে। আর এদিকে ছেলেদের দুই কলামের একেবারে দ্বিতীয় কলামের সেকেন্ড রো'তে মোস্তফা আর স্বপন খুব মিটমিট করছে। ফিসফাস করছে। ছেলেদের দুই কলামের কেবল প্রথম কলামের ফার্স্ট রো ছাড়া সবাই ঘটনা বুঝে ফেলেছে। শুধু নির্মল স্যার, ছেলেদের ফার্স্ট বেঞ্চ আর মেয়েদের সামনের দিকের কয়েক বেঞ্চ ঘটনার আগামাধা কিছুই বুঝতে পারছে না। তো এক পর্যায়ে নির্মল স্যার মোস্তফাকে দাঁড় করালেন। এতো খুশি'র হেতু কি গোলাম মোস্তফা ছাহাব? মোস্তফা দুরুদুরু বুকে উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু মুখের হাসি আরেকটু যেনোবা বাড়লো। আর কোন ফাঁকে চোখ টেরা করে একবার মেয়েদের দিকের পেছনের বেঞ্চে বসা ঝর্না আর মাহফুজাকে দেখলো মোস্তফা। মোস্তফা'র চাহনিটি নির্মল স্যার ধরে ফেলেছিলেন। এবার স্যার ঝর্নাকেও দাঁড় করালেন। কি নিয়া এতো গুজুর গুজুর? জবাবে ঝর্না বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রসঙ্গ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিল। বললো, স্যার, আমরা একটা সেলাই নিয়া হাসতেছিলাম। আমাদের ক্লাশের পুতুল একটা রুমালে একটা ফুলের ছবি সেলাই করছে। তার পাশে কে যেনো কলম দিয়া লিখে রাখছে- 'আই লাভ ইউ'। ঝর্না বলতে চাইছে, ওটাই তাদের হাসির রহস্য। নির্মল স্যার এবার মোস্তফা'র উপর নজর দিলেন। তুমি কি জন্য হাসছো? জবাবে মোস্তফা বললো, হেইডা কইতে পারমু না, স্যার। স্যার তখন আরো কঠোর হয়ে ধমক মারলেন, কইতে পারবা না মানে? গোপন কিছু? হ' স্যার, এক্কেরে গোপন। নির্মল স্যার ঝর্না আর মোস্তফাকে দাঁড় করিয়ে রেখে ক্লাশ চালিয়ে গেলেন। আমি নিশ্চিত সেদিনের ক্লাশের বাকি সময়টায় কারো আর পড়ায় মনযোগ ছিল না। আমরা সবাই তখন সেই হাসির রহস্য নিয়ে মহাব্যস্ত। আর তাপসের নের্তৃত্বে তখন একদল লেগে গেল পুতুলের রুমালে কে লিখেছিল তা নিয়ে গোয়েন্দাগিরি করতে। তালেব আলী নানা ঘণ্টা পিটিয়ে দিলেন। দুই মিনিট পর নির্মল স্যার ক্লাশ থেকে বের হলেন। এর মধ্যেই মাহফুজা মোস্তফাকে বলে বসলো- শয়তান। তাই নিয়ে মোস্তফা আর মাহফুজা-ঝর্না ত্রিপক্ষীয় বাকবিতণ্ডা। ওদিকে পুতুলের থেকে সেই রুমাল চেয়ে নিয়ে আমাদের তাপস আর হারুন হাতের লেখা দেখে ঘোষণা করলো- এটা জীবনের হাতের লেখা। ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের বিজ্ঞানের ক্লাশ নিতে আসলেন অনন্ত স্যার। অনন্ত স্যার খুবই বদমেজাজী। এসেই চেয়ারে না বসে টেবিলের চক ফু দিয়ে উড়িয়ে হাতের খাতা দিয়ে একটু ঝেড়েঝুড়ে টেবিলেই আরাম করে বসতেন। উচুতে বসায় অনন্ত স্যারের ক্লাশে টু শব্দ করার কোনো জো ছিল না। করলেই সে ধরা পড়া যেতো। তো স্যার টেবিল ঝাড়তে ঝাড়তে জিজ্ঞেস করলেন, এতো হৈ চৈ কি নিয়ে? মেয়েদের মধ্য থেকে শাহনাজ আবার ফিক করে একটু হেসে ফেললো। শাহনাজকে সকল স্যাররা একটু বাড়তি স্নেহ করতেন। কারণ শাহনাজের বাবা দীঘিরজান প্রাইমারি স্কুলের সেকেন্ড স্যার শাহজাহান স্যার। অনন্ত স্যার শাহনাজকে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে? শাজনাজ বললো, স্যার পুতুলের রুমাল। আবার সেই হাসি। এবার একটু উচ্চস্বরে। এবার অনন্ত স্যার সেই রুমাল উদ্ধার করে নিজের কাছে নিলেন। গোটা ক্লাশ তখন ধমধমে। অনন্ত স্যার কয়েকবার 'নারায়ন, নারায়ন' বলে চিৎকার করলেন। মানে আমাদের দপ্তরি নারায়ন দা এবার লাইব্রেরি থেকে বেত নিয়ে আসবেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে নারায়ন দা বেত নিয়ে হাজির। অনন্ত স্যার ঘোষণা করলেন, জোড়া বেত লাগবে। নারায়ন দা আবার লাইব্রেরিতে গিয়ে জোড়া বেত নিয়ে আসলেন। ইতোমধ্যে তাপস, হারুন, শাজনাজ, হেনা, মিনতী এরা এই মর্মে সাক্ষ্য দিলেন যে, পুতুলের ফুলতোলা রুমালে কে বা কারা যেনো ওটা লিখেছে। কে লিখেছে, ওরা দেখেনি। তাপসরা কেউ কেউ স্বাক্ষ্য দিল, ওই হাতের লেখার সঙ্গে জীবনের হাতের লেখায় মিল আছে। তো আর কই যায়! অনন্ত স্যার প্রথমে শুরু করলেন শাহনাজকে দিয়ে। দুই হাতে চারটা। বামহাতের গোড়ার দিকে দুইটা। তারপর পুতুলকে ছয়টা। তারপর হেনাকে চারটা। তারপর মিনতীকে আটটা। মেয়েদের বেতানোর পর এবার ছেলেদের পালা। তাপসকে চারটা হাতে পিঠে দুইটা। হারুনকে ছয়টা হাতে দুইটা পিঠে। সবশেষে জীবনের পালা। জীবনকে সেদিন অনন্ত স্যার ঠিক গরুর মতোই পিটিয়েছিলেন। কয়টি তার হিসেব নেই। শুরু করেছিলেন দুই হাত দিয়ে। জীবন যখন আর হাতে সইতে পারছিল না তখন আর হাত পাতলো না। তখন পিঠে। পিঠে যখন আর সয় না তখন পাছায়। জীবন ততোক্ষণে হাইবেঞ্চের ফাঁক গলিয়ে স্যারের একেবারে সামনে চলে গিয়ে স্যারের পায়ে পরেছে। স্যার তখনো পেটালেন। তারপর অনন্ত স্যার বেত জানালা দিয়ে ছুড়ে মারলেন। আমাদের রোলকল খাতা আর চক ডাস্টার ক্লাশরুমে ছুড়ে দিলেন। আর ঘোঁদঘোঁদ করতে করতে ক্লাশরুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। ......................চলবে.......................... পর্ব-১ এই লিংকে Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:৩৬",False fe,"বাঙালির দেনা-পাওনা বাঙালির দেনা-পাওনা ফকির ইলিয়াস একটি আনন্দের সংবাদ। বিশ্ব মানবতার কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে অক্টোবর ’০৭ মাসেই বাংলাদেশের অন্যতম এনজিও সংস্খা ব্র্যাক যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কার্যক্রম চালু করছে। ‘ব্র্যাক ইউএসএ’ নামে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কাছে নিবন্ধনকৃত এই সংস্খা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের সেবামূলক কার্যক্রম ক্রমেই প্রসারিত করবে। ব্র্যাক ইউএসএর সিইও হিসেবে আছেন সুজান ডেভিস। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এনজিও ব্যক্তিত্ব এবং ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ফজলে হোসেন আবেদ গেল ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ সোমবার সন্ধ্যায় এই তথ্য জানান। নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনা রেস্টুরেন্টে তার সম্মানে আয়োজিত এক অনুষ্টানে তিনি সুধীবৃন্দ ও মিডিয়ার সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন। জনাব আবেদ ব্র্যাকের কর্মকাণ্ডের দীর্ঘ বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, কর্মস্পৃহা আমাদের এতদূর এগিয়ে নিয়ে এসেছে। তিনি জানান, ‘ব্র্যাক ইউকে’ এর যাত্রাও শুরু হচ্ছে শিগগিরই। ব্র্যাক ইতোমধ্যে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সাউদার্ন সুদান, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া এবং উগান্ডায় যে কর্মকাণ্ড পরিচালিত করছে তা বিশ্বে ব্যাপকভাবে নন্দিত হয়েছে। তিনি বলেন, কোন অপতৎপরতাই মানুষের উন্নয়ন এবং অগ্রসরমাণতাকে আটকে দিতে পারে না। বিশ্বের সব দেশের গরিবই একই শ্রেণীর। সুষ্ঠু গাইডলাইন পেলে, তাই তারা সমান উদ্যম নিয়েই এগুতে চায়। ব্র্যাক ইউএসএ’এর কর্মকাণ্ডে অভিবাসী বাঙালিদের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ফজলে হাসান আবেদ বলেন, মাত্র চল্লিশ ডলারের সমপরিমাণ অর্থের বিনিময়ে একজন ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ তার পুরো দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে পারেন। একজন দুস্খ মানুষের চক্ষু অপারেশনে মানবিক কারণে যে কোন প্রবাসী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন। ‘ব্র্যাক ইউএসএ’ প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চায়। তিনি জানান, তাদের ম্যানহাটান অফিসটি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পুরোদমে কাজ শুরু করবে। এ লক্ষ্যে সিটির মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। আগ্রহী প্রবাসীদের ম্যানহাটান অফিসে যোগাযোগের অনুরোধ জানন তিনি। এই উদ্বোধনী মতবিনিময় সভায় চমৎকার বক্তব্য রাখেন মিস সুজান ডেভিস। তিনি বাংলাদেশে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের ডাইরেক্টর ছিলেন। দীর্ঘ ২০ বছর তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে। মিস ডেভিস বলেন, বাঙালিরা খুব আত্মপ্রত্যয়ী জাতি, তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর দৃঢ় সাহস রাখেন। যদি তারা ঠিকমতো পথ প্রদর্শিত হন, তবে কোন প্রতিকূলতাই তাদের দমিয়ে রাখতে পারে না। তার কথা শুনে আমার বারবার মনে হলো, এই চেতনা নিয়েই তো বাঙালিরা মহান মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। কিন্তু আজ কোথায় সেই স্বাধীনতার স্বপ্ন। এ বছর ‘ক্লিনটন ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক সম্মাননা পদক পেয়েছেন ব্র্যাকের ফজলে হাসান আবেদ। একটি জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার হাতে পদকটি তুলে দেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। এই যে পাওয়া, তা শুধু সম্ভব হয়েছে কর্মের নান্দনিকতার মাধ্যমে। যদি এখানে ভোগের প্রচেষ্টা থাকত তবে হয়তো তা সম্ভব হতো না। দুই বাংলাদেশে এই যে ভোগবাদের উল্লাস এবং বর্তমানে যেসব ভোগবাদী অনেকের জেলবাস, এর যবনিকাপট কীভাবে ঘটবে? এই প্রশ্নটি করেছিলাম আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। তিনি কানাডা সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। সিলেট সদর থানা এসোসিয়েশনের ইফতার মাহফিলে এসেছিলেন তিনি। শ্রী সেনগুপ্ত বললেন, বাংলাদেশের মানুষের পাওনা মেটাতে পটপরিবর্তনের কোন বিকল্প ছিল না। যে রাজনীতি মানুষের কল্যাণে আসে না­ তেমন রাজনীতির দরকার কি? তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কার অত্যন্ত অপরিহার্য। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তবে কি খালেদা-হাসিনাকে বাইরে রেখেই নির্বাচন হবে? তিনি মুচকি হাসলেন। বললেন, সে প্রশ্ন আসছে কেন? বললাম, অবস্খা তো সেদিকেই গড়াচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা আইনি প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেই আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করব। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সংস্কারের স্বরূপ কি? বললেন, পরিবর্তন প্রয়োজন। যে চেয়ার মানুষের চেয়ে বড় হয়ে যায় সে চেয়ারের মূল্যায়ন মানুষকেই করতে হবে। চেয়ারের চেয়ে মানুষ যদি বেশি অহমিকাপূর্ণ হয়ে যায় তবে পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে। তাকে বললাম, এসব কথা দেড় বছর আগে বলেননি কেন? সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বলার সুযোগই তো পাইনি। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, টাস্কফোর্সের নতুন লিস্টে মান্নান ভূঁইয়া বা আরও বেশকিছুর নাম নেই কেন? তিনি বলেন, তা আমি বলতে পারব না। তিনি বলেন, যে যা করবেন সবকিছুর জন্যই এক সময় জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সবশেষে তিনি বলেন, একটি জাতীয় সংলাপ এবং জাতীয় সরকারই এই জাতিকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যবিন্দুতে নিয়ে যেতে পারবে বলে আমি মনে করি। কার সঙ্গে সংলাপ, কীভাবে সংলাপ এসব প্রশ্নের উত্তর অনেকটা এড়িয়ে গেলেন তিনি। তিন বর্তমান আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বক্তব্য মাঝে মধ্যে আমাদের বেশ হতাশ করে। তিনি বলেছিলেন, দেশের অবস্খা খুবই নাজুক। অনেক অশুভ শক্তি দেশে সঙ্কট সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এটি জানা কথা, বর্তমান সরকার যেভাবে সাহসী কাজগুলো করছে তাতে তাদের শক্রসংখ্যা বাড়বে বৈ কমার কথা নয়। বিএনপি নেতা আলী আসগার লবীর আরও সাজা হয়েছে একটি মামলায়। এজলাসে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন, সময় আবার তাদের আসবে। এই আশাবাদ দেশের অনেক দাগি ব্যক্তিদের। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা কামাই করে দেশে এমন অরাজকতা সৃষ্টি করেছিলেন যেন তাদের নিজস্ব তালুক ছিল গোটা দেশটাই। সংস্কার বলি আর পরিবর্তন বলি, যে স্বপ্নটি বাঙালি জাতি দেখে আসছে তা বাস্তবায়িত হবে তো? প্রশ্নটি নানাভাবে কঠিন সাজে আসছে আমাদের কাছে। অনেকে বলে বেড়াচ্ছেন সংস্কারে ধস নেমেছে। আবার জোটমুখী রাজনীতিই জোরালো হবে বাংলাদেশে। হঠাৎ করে বিএনপির একাংশের নেতা মান্নান ভূঁইয়ার খালেদাপ্রীতি নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। কারণ আপাতত হিসাব মতো মান্নান ভূঁইয়ার গ্রুপই বিএনপির ছাতা ধরে এগিয়ে যাওয়ার কথা। খন্দকার দেলোয়ার গ্রুপ যেহেতু খালেদাপন্থি তাই তাদের সুবিধাবঞ্চিত থাকারই কথা। কিন্তু হঠাৎ করে মান্নান ভূঁইয়া সুর পাল্টানোর চেষ্টা করছেন কেন? তবে কি অংকে কোথাও গোলমাল হচ্ছে? বড় দুই দলের দু’জন নেতা সাদেক হোসেন খোকা এবং তোফায়েল আহমদ সংস্কারপন্থি বলে এতদিন পরিচিত ছিলেন। টাস্কফোর্সের সর্বশেষ তালিকায় তাদের নাম থাকায় অনেকেই নতুন করে অংক কষছেন। আমি বলি, এমনও তো হতে পারে তারা সম্পত্তির হিসাব দেয়ার পর সৎ বলে প্রতীয়মান হয়ে যেতেও পারেন। সবই এখন কুয়াশাচ্ছন্ন। বলা যাবে না কার স্বার্থ কীভাবে রক্ষা করা হবে। কেন রক্ষা করা হবে। এখন আবার শোনা যাচ্ছে , দুই প্রধান নেত্রীকে চিকিৎসার নামে বিদেশে পাঠানো হতে পারে। তবে কি যে লাউ , সেই কদুই লটকে আছে বাঙালির ভাগ্যে ??? ব্র্যাক ইউএসএ চালুর সংবাদ দিয়ে লেখাটি শুরু করেছিলাম। ‘গ্রামীণ ইউএসএ’ও চালু হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগে। সেদিন ফজলে হাসান আবেদ খুব উচ্চকিত কণ্ঠে বলেছেন, বাঙালি জাতি শুধু নিতে পারে, দিতে পারে না এই ধারণা ভেঙে দিতে চাই। এবার আমরা বিশ্বকে দেব। আফগানিস্তানে ব্র্যাকের উদ্যমী কর্মসূচি স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে। হ্যাঁ, বাঙালিরা অবশ্যই দিতে পারত। যদি শুধু একটি সৎ রাজনীতির আবহ গড়ে উঠত বাংলাদেশে। এই প্রজন্ম এখনও সেই স্বপ্ন বুকে ধারণ করেই এগুচ্ছে। যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা এই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের সুযোগ অবারিত করে দেবেন, এটাই প্রত্যাশা কেবল। প্রতিটি দিন হোক আনন্দের। ============================================ দৈনিক সংবাদ। ৪ জানুয়ারী ২০০৮। সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৮:১৯",False ij,"None সকালের দিকে এ বাড়িটা নীরব হয়ে থাকে। সুলতান আহমেদ সে সময় নিজের ভিতরে অদ্ভূত এক বিষন্নতার উত্থান টের পান। তার জীবনের কর্মকোলাহল থেমে গেছে, দীর্ঘদিন ধরে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। কাজের মধ্যে দুপুরের আগে স্কুল থেকে নাতনী কে নিয়ে আসা। অবশ্য মীম একাই আসতে পারে। স্কুলটা বাড়ির খুব কাছেই। সকালের দিকটা কাটে খবরের কাগজ আর বই-টই পড়ে । আজ সকালে বইয়ের আলমারীর সামনে দাঁড়িয়ে হাতে শরৎসমগ্র তুলে পৃষ্ঠা ওল্টাতেই মাথা টলে উঠল । মলাটের এক কোণে নীল কালিতে রেহনুমার লেখা: ‘তোমার বীণা আমার মনোমাঝে’। তারপর স্বাক্ষরের ওপর চোখ আটকে যেতেই চোখ ঝাপসা হয়ে এল, বুকে কেমন এক চাপ টের পেলেন, হু হু কাতর দীর্ঘশ্বাস উঠে এল। কত বছর আগের কথা? রেহনুমা নামে একটি মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বাবার রেলের চাকরির সবাদে সুলতান আহমেদরা তখন পূর্ব পাকিস্তানের ছোট্ট একটি মফস্বল শহরের রেলওয়ে কলোনীতে থাকতেন। রেহনুমারাও ওই একই কলোনীতে পড়শী ছিল। তখন রেহনুমার তরুণী-হয়ে-ওঠা কিশোরী বয়স । ধবধবে ফরসা গোলপানা মুখের শ্রীছাঁদ অপূর্ব। বেনী-দোলানো চশমা পরা উচ্ছ্বল এক কিশোরী। রেহনুমা চমৎকার রবীন্দ্রসংগীত গাইত। বিশেষ করে এই গানটা- তোমার বীণা আমার মনোমাঝে কখনো শুনি, কখনো ভুলি, কখনো শুনি না যে।। আকাশ যবে শিহরি উঠে গানে গোপন কথা কহিতে থাকে ধরার কানে কানে তাহার মাঝে সহসা মাতে বিষম কোলাহলে আমার মনে বাঁধনহারা স্বপন দলে দলে। সুলতান আহমেদ টের পেলেন তার হাত দুটো ও শরীর অল্প অল্প কাঁপছে। এই বয়েসে অধিক উত্তেজনা সহ্য হয় না। শরৎসমগ্র অসম্ভব ভারী ঠেকছে। চোখের ঝাপসা ভাবটা কাটছে বলে মনে হল। চোখের পলকে ঘরের রোদটুকু মুছে গিয়ে মেঘ জমে ওঠে। ... সেই ছোট্ট মফস্বল শহরটাতেও মেঘ জমত, রেলওয়ে কলোনির মাঠে আঁধার ঘনাত, আঁধার ঘনাত মাঠের ওপারের হলুদ দেওয়াল, কলাঝোপ, কচুরি পানায় ভর্তি খাল আর রেল লাইনের ওপর । সেই সব দিনের স্মৃতির সঙ্গে রেহনুমা কেমন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। তা ছাড়া রেহনুমা জীবনের প্রথম প্রেম। বিয়ের আগে শরৎসমগ্র উপহার দিয়েছিল রেহনুমা। শেষ উপহার। সুলতান আহমেদ তখনও ছাত্র, স্বাধীনতার পরপর রেহনুমার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর কই যে হারিয়ে গেল রেহনুমা -আর দেখা হয়নি। উনিশ শ তিয়াত্তুরে সুলতান আহমেদ-এর বাবার পোস্টিং হল ঈশ্বরদী। জানালার কাছে একটি কাক তারস্বরে ডাকছিল। সম্বিৎ ফিরে পেলেন সুলতান আহমেদ। বইটা তাকে গুঁজে ডাকলেন, জোছনা, জোসনা। রান্নাঘর থেকে জোছনা বেরিয়ে এসে বলল, কি নানা, ডাতাছেন ক্যান? ততক্ষণে পাঞ্জাবি পরে নিয়েছেন সুলতান আহমেদ । বললেন, দরজা বন্ধ কর। আমি মীম কে আনতে যাচ্ছি। ২ সন্ধ্যায় মীম ওর মায়ের কাছে পড়তে বসে। ফরিদা এসব ব্যাপারে বেশ সিরিয়াস। সুলতান আহমেদও নাতনীকে পড়ান মাঝে- মাঝে, তবে ঠিক পড়ানো হয় না, মজার মজার সব কথাগল্পই হয়। মাগরিবের নামাজের পর আধো-অন্ধকার বারন্দায় এসে বসে থাকেন। বারান্দায় টবের সারি। তার স্ত্রী মমতা মারা যাওয়ার আগে গাছগুলির যতœ নিতেন। এখন সুলতান আহমেদ যদ্দূর পারেন দেখাশোনা করেন। দেখাশোনা ঠিক হয় না, তবে ফুলেদের সঙ্গে মনে মনে কথাবার্তা হয়। সন্ধ্যার মুখে ফুলের ঘ্রান অতি তীব্র হয়ে ওঠে। জীবনের এই সব আশ্চর্য সুন্দর দিকগুলির প্রতি এতকাল লক্ষই করা হয়নি, কেবল সংসার আর অফিস-আদালত নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন। আজকাল অস্তগামী সূর্যের আলোর দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে থাকেন অবসরপ্রাপ্ত এই বৃদ্ধ ভদ্রলোক, অপলক চোখে তাকিয়ে থাকেন আকাশপথে উড়ে যাওয়া ঘরমুখো পাখিদের ঝাঁকের দিকে ...তখন পুরনো গানও মনে পড়ে ...তোমার বীণা আমার মনোমাঝে/কখনো শুনি, কখনো ভুলি, কখনো শুনি না যে।। সন্ধ্যার পর বারান্দায় বসে এক কাপ চা খান তিনি। জোছনাই চিনি ছাড়া ‘র’ চা দিয়ে যায় । আজ আর জোছনা চা নিলে এল না। ওর বদলে চা নিয়ে এল ফরিদা। শ্বশুরকে চা দিয়ে পাশে বসল। বলল, বাবা? বল। আমার খালাতো ভাইয়ের মেজ মেয়ে ইয়াসমীনের- আপনি শুনেছেন তো? কার কথা বলছ? সুলতান আহমেদ রীতিমতো অবাক হয়ে গেলেন। কেন-মিলন ভাই আপনাকে গত পরশু ফোন করল না? ফরিদার কন্ঠে সামান্য ঝাঁঝ ফুটল যেন। ওহ্ হ্যাঁ, এবার মনে পড়েছে। সুলতান আহমেদ কেমন সঙ্কোচ বোধ করলেন। ফরিদা বলল, আমরা ক’দিনের জন্য কটিয়াদি যাচ্ছি। আপনি কি যাবেন আমাদের সঙ্গে? যাওয়ার ইচ্ছে ছিল ...শরীর ভালো না। সুলতান আহমেদ কন্ঠস্বর কেমন শুকনো শুকনো ঠেকল। চায়ে চুমুক দিলেন। ফরিদা বলল, ভাবছি, জোছনাকে নিয়ে যাব, মীমকে কে দেখবে। আপনার খাওয়া-দাওয়ার অসুবিধে হবে ক’দিন... সুলতান আহমেদ চুপ করে রইলেন। নিচের গলি থেকে রিকশা টুংটাং শব্দ উঠে এল ওপরে। খানিক মেঘও জমেছে, হাওয়াও শীতল হয়ে উঠছে, তবে আজ রাতে বৃষ্টি হবে কি না বোঝা যাচ্ছে না। বাবা? বল। শম্পা এবার এইচ এস সি পাস করল। সুলতান আহমেদ এবার উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে বললেন, ওহ্। শম্পা, মানে তোমার সেই খালাতো বোনের বড় মেয়ে তো, বগুড়া থাকে। হ্যাঁ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিবে শম্পা। মেধাবী ছাত্রী। সবাই বলছে টিকে যাবে। সুলতান আহমেদ মাথা নাড়লেন। আজকাল চারিদিকে স্কুল-কলেজে ভালো রেজাল্টের ধুম, সেকালের মতো ‘বি.এ ফেল’ কথাটা আর আজকাল শোনা যায় না। শম্পার মা নাসরিন আবার মেয়েদের হলে থাকা একেবারেই পছন্দ করে না। শম্পা আমাদের এখানেই থাকবে। আপনার ছেলেও রাজী। ওহ্। আসন্ন ভবিষ্যতের কথা বলে বুকের ভিতরে হিমস্রোত টের পেলেন সুলতান আহমেদ। কলিং বেল বাজল । ‘আবার কে এল’-বলে ফরিদা উঠে চলে যায়। সুলতান আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তিনি সবই বোঝেন। তিনি এখন সংসারের বোঝা হয়ে গেছেন। তখন ফরিদা বলল, ভাবছি, জোছনাকে নিয়ে যাব, মীমকে কে দেখবে। আপনার খাওয়া-দাওয়ার অসুবিধে হবে ক’দিন...আমি এ বাড়ি থাকায় এদের অস্বস্তি হচ্ছে। কর্মক্ষমতাহীন একজন অর্থব মানুষকে কে পুষতে চায়। বড় ছেলে ব্যাংকে চাকরি করে, বেতন ভালোই পায় । আজকাল সংসারে তেমন কনট্রিবিউট করতে পারেন না সুলতান আহমেদ। টাকা-পয়সা যা জমিয়েছিলেন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা আর বিয়ের পিছনে খরচ হয়ে গেল। চোখে অল্প ছানিও পড়েছে। অপারেশন করাতে হবে, ছেলে বা বউমা কারও সময় হয়ে উঠছে না, তা নয়। চোখে ছানি পড়ার কথাটা বাড়িতে জানান নি। এসব ভেবে গভীর শ্বাস টানলেন আটষট্টি বছরের বৃদ্ধ। নিজের ভিতরে অদ্ভূত এক বিষন্নতার উত্থান টের পাচ্ছেন। আধো-অন্ধকারে চুপচাপ থাকা ফুলগুলির মিষ্টি গন্ধ আর টের পেলেন না। নিচ থেকে উঠে আসা পোড়া ডিজেলের গন্ধ পেলেন। সিদ্ধান্ত এক রকম নেওয়াই ছিল। আগে থেকেই খোঁজখবর করে রেখেছেন। ওল্ডহোমটা শহরের বাইরে। একটা আধা-মফস্বল এলাকায়। ৩ তেইশ তারিখ সকালে ফরিদারা কটিয়াদি চলে গেল। তারপর সুলতান আহমেদ যখন নবীনগর বাসস্টপে বাস থেকে নেমে একটা রিকশা নিয়ে খয়েরি রঙের একটা লোহার গেটের সামনে এসে নামলেন- তখনও সকালের রেষ পুরোপুরি কাটেনি। এমনিতেই শহরের বাইরের সময় অনেক শ্লথ। আজ ছুটির দিন বলেই রাস্তা ফাঁকাই ছিল, অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছনো গেল। খয়েরি রঙের লোহার গেটের দু’পাশে সাদা দেওয়াল। ভিতরে সুপারি গাছে ঘেরা অল্পখানি সবুজ মাঠ। মাঠের চারধারে ছড়ানো-ছিটোন টিন সেডের ঘর সকাল বেলার রোদের আলোয় ঝলমল করছে। লাল সিমেন্টের মেঝে, এক পাশে সার- সার ঘর। অফিসে আনুষ্টানিকতা সেরে নিজের ঘরে এলেন। ঘরটি ছোট, তবে ছিমছাম। ধীরেসুস্থে সুন্দর করে গুছিয়ে নিলেন। শরৎ সমগ্র রাখলেন বিছানার ওপর বালিশের পাশে, বালিশের নিচে রাখলেন অনেক পুরনো মা-র একটা সাদাকালো ফটোগ্রাফ। চারধার কি অটুট নির্জন! শীতের দুপুরের মতো, অথচ এখন বর্ষাই কাটেনি। ঘরের জানালাটি বেশ বড়। বিছানায় বসে সেদিকে তাকালেন। আজ সকালেই টের পেয়েছেন, শহর ছাড়তেই চোখের ঝাপসা ভাবটি আর নেই। জানালায় তাকালে দূরের সবুজ মাঠ, নাড়কেল আর সুপারি গাছের সারি আর সাদা রং করা দেওয়াল চোখে পড়ে। মাঠের এক পাশে একটা দোলনা। বৃদ্ধনিবাসে কে দোলনা তৈরি করল? টের পেলেন মীমের জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। মৃত্যু অবধি এই যন্ত্রণা থাকবে। তিনি তো আর কোনওদিনই শহরে ফিরে যাবেন না। যে শহরে মীমকে একবার ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে ফেলেছিলেন ... মাস খানেক আগের ঘটনা। স্কুলে এসে দেখেন যে ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ের মধ্যে মীম নেই। বুক ধক করে উঠল। মুহূর্তেই শরীর ঘেমে উঠল। মীম কই গেল। এদিক-ওদিক তাকালেন। ইদানিং চোখে ঝাপসা দেখেন। স্কুলের উল্টোদিকে একটা কনফেকশনী । সেদিকে চোখ গেল। মীম কনফেকশনী থেকে বেরুচ্ছে, হাতে আইসক্রিম। ধড়ে প্রাণ ফিরে এল। দ্রুত হেঁটে মীমের কাছে পৌঁছলেন। তুমি কোথায় ছিলে দাদু? এই তো তোমার জন্য দোকানে আইসক্রীম কিনতে গেলাম। টের পেলেন শরীরের রক্ত চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়ে এল। মজা করে বললেন, আমি তো আইসক্রিম খাই না দাদু। মীম ফিক করে হেসে বলল, তা হলে আমিই খাই। খাও। ৪ দুপুরে খানিকটা তন্দ্রার ভাব এসেছিল। বিকেলে ঘর থেকে বেরুলেন। টানা বারান্দায় শেষ বেলার নরম আলো ছড়িয়ে আছে। কেমন অপরিচিত লাগছে জায়গাটা। কেমন সাদাকালো স্বপ্নে দেখা সাদা রং করা হাসপাতাল ... যেন এ জগতে নয়, অন্য কোথাও ... সবুজ লনে ছাই রঙের পায়রার ভিড়। খুঁটে খুঁটে কী যেন খাচ্ছে। দূরে দেওয়া ঘেঁষা নাড়কেল পাতায় এখনও মৃয়মান রোদ লেগে আছে-একটা টিয়ে পাখি দোল খাচ্ছে। হঠাৎইকে কানে এল ... যেন রবীন্দ্রসংগীত গাইছে তোমার বীণা আমার মনোমাঝে কখনো শুনি, কখনো ভুলি, কখনো শুনি না যে।। সুলতান আহমেদ চমকে উঠলেন। তারপর খানিকটা এগিয়ে যেতেই সবুজ পারের শাদা সুতির শাড়ি পড়া ধবধবে ফরসা চেহারার চশমা পরা এক বৃদ্ধাকে বসে থাকতে দেখে দ্বিতীয়বার চমকে উঠলেন। এত বছর পর প্রসন্ন ভঙ্গিতে বেতের সোফার ওপর বসে থাকা রেহনুমাকে ঠিকই চিনতে পারলেন ... সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১০ রাত ৮:২৮",False rn,"আসুন চীন দেশটি সম্পর্কে জানি “জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে চীনেও যাও” - এ উক্তিটি পবিত্র কুরআন শরীফে উল্লেখ আছে এমন ধারণা প্রচলিত আছে। তেমনি চীনা ভাষায় কথিত আছে “যদি বৌদ্ধ ধর্মের উৎসের সন্ধান চাও তাহলে পশ্চিমের স্বর্গে যাও”। ‘পশ্চিমের স্বর্গ’ বলতে সেই পুণ্যভূমির কথা বলা হয় যেখানে ভগবান বুদ্ধের জন্ম, যার নাম মগধ রাজ্য যা আজকের ভারতের বিহার রাজ্যের দক্ষিণে অবস্থিত।চীন পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার অধিকারী চীন পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল এবং আয়তনের দিক থেকে এশিয়ার সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র। চীনারা তাদের দেশকে চুংকুও নামে ডাকে, যার অর্থ ""মধ্যদেশ"" বা ""মধ্যবর্তী রাজ্য""। ""চীন"" নামটি বিদেশীদের দেওয়া; এটি সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকের ছিন রাজবংশের নামের বিকৃত রূপ। ৭ম শতাব্দী থেকে ১৪শ শতাব্দী পর্যন্ত চীন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর সভ্যতা। কাগজ, ছাপাখানা, বারুদ, চীনামাটি, রেশম এবং দিকনির্ণয়ী কম্পাস সবই চীনে প্রথম উদ্ভাবিত হয় এবং সেখান থেকে বিশ্বের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। চীনের স্থলসীমার দৈর্ঘ্য প্রায় ২২,৮০০ কিলোমিটার। বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ অস্ত্র রফতানিকারক দেশ হয়ে উঠেছে চীন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। বাংলাদেশ চীনের অস্ত্র রফতানির ৭ ভাগ ক্রয় করে। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনের অন্যতম সংখ্যালঘু হলো মুসলমান সম্প্রদায়। ১৯৪৯ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করে এবং চীনের মূল ভূখণ্ডে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ওয়েন চিয়া পাও। বর্তমানে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের অধীনে মোট ২৮টি মন্ত্রনালয় পর্যায়ের বিভাগ আছে। চীনের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হচ্ছেন লি চাও সিন । চীন হলো পাহাড় বহুল একটি দেশ ।এই সব পাহাড়ী অঞ্চলের আয়তন দেশের মোট আয়তনের দুই-তৃতীয়াংশ ।এদেশের জিডিপি (GDP) ৮.১৮৫ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার। রেলপথ চীনের প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা। বর্তমানে চীনের রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৮৬,০০০ কিমি।১৯৬২ সালে ভারত চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধ সমাধার জন্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তারপরই চীন-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ১৯৭১ সালে চীন ও আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দেয়নি। চীনের অভ্যন্তরীণ নদী আর সামুদ্রিক জলসীমা নিয়ে গঠিত সামুদ্রিক অঞ্চলের মোট আয়তন ৩ লক্ষ ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার। চীনের সামুদ্রিক অঞ্চলে ৫০০০-এরও বেশি দ্বীপ রয়েছে। মওলানা ভাসানী’র লেখা মাও সে তুঙ’র দেশে গ্রন্থে চীনের সাধারণ মানুষের সততার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। চীনের রাজধানী বেজিং-এ বসবাসকারি বাংলাদেশীর সংখ্যা শতাধিক। এদের বেশীর ভাগই ছাত্র। তারা মেডিকেল, আইটি সহ বিভিন্ন প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশুনা করছে। অনেকে লেখাপড়া শেষ করে এখানে চাকুরিও নিয়েছে। চীনে বাংলাদেশী দক্ষ শ্রমিকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সরকারি ভাবে একটু উদ্যোগ নিলে এখানে জনসংখ্যা রপ্তানী সম্ভব। আধা লিটারের একটি পানির বোতলের দাম ৩ ইয়েন, অর্থাৎ বাংলাদেশী মুদ্রায় ৪০ টাকার উপরে। বড় শপিং মলে দাম জানতে কষ্ট করার দরকার হয়না এমনকি চীনের ফুটপাতের ঝুড়িতেও অনেক সময় প্রাইস ট্যাগ থাকে।চীন এখন বাংলাদেশের পরম বন্ধু। খন্দকার মোশতাকই চীন ও সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নেন। তখন মোশতাক আহমদ চীনপন্থী সাংবাদিক ফয়েজ আহমদকে চীনে পাঠান। এরপরই চীন ও সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। চীনকে জানার জন্য কয়েকটি মাত্র মাধ্যম আছে। যার মধ্যে ইন্টারনেট হল অন্যতম। মাউস হাতে নিয়ে Bengali.cri.cn ক্লিক করলেই চোখের সামনে ডেসে উঠবে বর্ণময় এক জগত্। কেনাকাটার জন্যে চীনের চেয়ে ভাল জায়গা সম্ভবতঃ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। চীনারা শুধু যে প্রযুক্তিতে এগিয়েছে তাই নয়, বিভিন্ন ধরণের ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা মাথায় রেখে পণ্য প্রস্তুতের টেকনিকটাও তারা আয়ত্তব করেছে। চীনে সস্তার দোকান যেমন আছে দামী জিনিষের দোকানেরও অভাব নেই। কেনা কাটা খুবই আনন্দদায়ক এবং লাভ জনক হয় যদি আপনার প্রয়োজনটা দোকানিকে বোঝাতে পারেন।সাংহাই চীনের দক্ষিণাংশের একটি প্রধান শহর। এটি চীনের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলির অন্যতম। Yangtze নদীর মুখ অবস্হান সাংহাই শহর , সাংহাই প্রতি বছর প্রায় ৬.৭ মিলিয়ন দর্শক ভ্রমন করে। বাঁধ এবং শহরের ঈশ্বরের মন্দির পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। মূলত সাংহাই কে চীনের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয়। শিচুয়ান ইউনিভার্সিটি, চীনের নামকরা ইউনিভার্সিটি গুলোর একটি। রবীন্দ্র রচনাবলির প্রায় সবই চীনা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।রবীন্দ্রনাথের রচনা পড়ে চীনা পাঠকরা জানেন, বিশ্ব কবির দয়া ও উদারতা চিরদিন চীন দেশের লোকের মনে থেকে যায়। চীনা পাঠকদের রবীন্দ্রনাথের রচনা খুব ভালো লাগে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি তাঁদের গভীর ভালোবাসা। সারা বিশ্বে যতগুলো দেশ আছে এরমধ্যে চীন দেশ সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ। চীন দেশ প্রতিবেশি দেশ সহ সবদেশের সাথে সুন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রেখেছে। চীনের মহাপ্রাচীর মানুষের হাতে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থাপত্য। শত্রুর হাত থেকে চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষার জন্য পাথর ও মাটি দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। এটি সাংহাইপাস থেকে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে লোপনুর নামক স্থানে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক থেকে এই প্রাচীর নির্মাণ শুরু হয়। যায়। পৃথিবীর যেখানেই সভ্যতা সেখানেই নদী। তারই ধারাবাহিকতায় চীনে ইয়াং সিকিয়াং এবং হোয়াংহো নামে দুটি নদী আছে। মাঝ খানের সমতল ভূমিতে চীনারা বসবাস শুরু করল। চীনাদের এক রাজা ছিলেন নাম শি-হুয়াংতি,চীনের “প্রথম সম্রাট” বলে তাকে সম্মানিত করা হয়। চীনে জন্ম নেয়া মহাপন্ডিতদের একজন হচ্ছেন কনফুসিয়াস(খ্রীস্টপূর্বঃ ৫৫১-৪৭৯)। গণচীনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মাও একদিন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করলেন “গণচীনের চারপাশে শত্রুভাবাপন্ন রাষ্ট্র, আমাদের এ অবস্থায় কি করা উচিত?” কোনো জবাব না পেয়ে মাও নিজেই বললেন, “দেখো, জাপানের ওপাশে সাগর পাড়ের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমাদের পূর্বসূরী রাজন্যবর্গ কি এ উপদেশ দেননি যে কাছের শত্রুর সঙ্গে যদি যুদ্ধ করতেই হয় তাহলে সর্বাগ্রে দূরের কোনো শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালানো উচিত।” সে ছিল ১৯৬৯ সালের কথা। চীনের দ্বিতীয় রাজবংশ হিসেবে মহাপরাক্রমশালী হান রাজবংশের কথা চীনের ইতিহাসে সঙ্গত কারণেই উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে। হান বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন লিউ বাং নামীয় এক বিপ্লবী শ্রমিক নেতা। খৃষ্টপূর্ব ২০৬ থেকে ২২০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে এই রাজবংশের শৌর্য-গৌরব বিভিন্ন কারণে একটি বিশেষত্বের দাবীদার। আজো চীনের জনগণের এক বৃহৎ অংশ নিজেদের ‘হান’ বংশোদ্ভূত চীনা বলে দাবি করে। এমনকি প্রবাসী চীনাদের মধ্যে ‘হান’-চীনাদের প্রতিপত্তির প্রমান পাওয়া যায় যখন চীনা নববর্ষ তাদেরই সবচেয়ে বেশি জাকজমকের সাথে উদযাপন করতে দেখা যায় । পাঁচ হাজার বছর আগে চীনের সম্রাট হুয়াংয়ের পত্নী লুও জু প্রজাদের রেশমী পোকা চাষের পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন । চীনের কচ্ছপের খোলের উপরে খোদিত যে চীনা শব্দগুলো আবিস্কৃত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে তুঁত, রেশমী গুটি, রেশমী সুতো এবং রেশমী কাপড় প্রভৃতি শব্দ ছিল । জুলাই মাস শীর্ষক চীনের প্রথম কাব্য সংকলন “ কাব্য গ্রন্থ”এর একটি কবিতায় বলা হয়েছে : বসন্তের সুর্য্য উঠেছে , কোকিল গান গাইছে , গ্রামের মেয়েরা তুঁতের কচি পাতা সংগ্রহের জন্য হাতে ঝুলি নিয়ে মেঠো পথে হাঁটছে ।এই কবিতা পড়ে জানা যায় যে , প্রাচীনকালে চীনারা রেশমী পোকা চাষ,রেশমী সুতো তোলা এবং রেশমী কাপড় বোনার কৌশল আয়ত্ত করেছিলেন । প্রাচীন চীনে বিয়ের মোট ছয়টি অনুষ্ঠান আছে , এগুলোর মধ্যে আছে মেয়েপক্ষকে যৌতুক দেওয়া অনুষ্ঠান , বিবাহের বাগদান অনুষ্ঠান আর বিয়ের ভোজ ইত্যাদি । অতীতকালে একটি ছেলে যদি এক মেয়েকে পছন্দ করতেন , তাহলে তিনি মেয়ের বাড়ীতে বিয়ের প্রস্তাব করতে ঘটককে পাঠাতেন । যাওয়ার আগে ছেলেটি ঘটককে কিছু উপহার দেয়া ছাড়াও মেয়েকেও কিছু উপহার দিতেন । ঘটক দু পক্ষের নাম , বয়স আর পারিবারিক অবস্থা প্রভৃতি তথ্য দু পক্ষকে জানিয়ে দিত । দু পক্ষ মোটামুটি রাজি হলে ঘটক মেয়ে পক্ষের বাড়ীতে ছেলে পক্ষ যাওয়ার দিন বেছে দিত । ছেলে মেয়ের বাড়ীতে গিয়ে মেয়ের চেহারা নিজ চোখে দেখা ছাড়া মেয়ের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ও মেয়ের চরিত্র ও মেজাজ খোজখবর নিতে পারতেন । প্রাচীন চীনে বিয়ের আগে মেয়ে ছেলের বাড়ীতে যেত না , এখন যুগ পরিবর্তন হয়েছে ,আধুনিককালে বিয়ের আগে অনেক মেয়ে বাবা মার সংগে ছেলের বাড়ীতে গিয়ে ছেলে পরিবারের অবস্থার খোজখবর নেন । পেইচিংয়ের উপকন্ঠের কিছু কিছু জায়গায় এরকম রীতি আছে , যদি মেয়ে ও তার বাবা মা বা আত্মীয়সজন ছেলের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছেন এবং দুপুর বেলায় এক সংগে খেতে রাজী হন , তাহলে ছেলে পক্ষ বুঝতে পারে যে মেয়ে ছেলেকে পছন্দ করেছেন। সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস নামের মহানবীর এক সাহাবি ইসলামের দাওয়াত নিয়ে প্রথম চীনে আসেন ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে। তাং সম্রাট ইয়াং উই পছন্দ করেন এই সাহাবির বয়ে আনা বার্তা। তিনি দেখলেন যে ইসলামের বার্তা সে সময়কার সনাতনী কনফুসিয়াসের মতবাদের সঙ্গে অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ। রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় শিয়ান শহরে একটি মসজিদ বানানো হয়। চীনের প্রথম এই মসজিদটি বানানো হয় চীনা সনাতন পদ্ধতির বৌদ্ধ প্যাগোডার কায়দায়।বসন্তকালে চীনে ফুল ফোটার সময় এবং ছুটিতে প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। গত দশ বছরে বিদেশে চীনা পর্যটকের সংখ্যা বছরে ১৮ শতাংশ হারে বেড়েছে এবং পর্যটনের ধারাও পরিবর্তিত হয়েছে। নিউজিল্যান্ডে বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে চীনা পর্যটকের সংখ্যা দ্বিতীয় এবং চীন সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়নশীল একটি বাজার। চীনা পর্যটকরা ১ মে থেকে নিউজিল্যান্ডে দুই বছরের মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারছে। ২০১২ সালে ব্রিটেন ৩ লাখ চীনা নাগরিকের ভিসা আবেদন গ্রহণ করে এবং ৯৬ শতাংশকেই ভিসা দেয়।",False hm,"প্রবাসে দৈবের বশে ০০৯ ইস্কুল খুইলাছে। প্যান্ডোরার বাক্সও পাশাপাশি খুলে গেছে মনে হলো। বেশ কলিজা কাঁপানো কোর্স, হপ্তায় বিশ ঘন্টা ক্লাস, কিন্তু তার পরও প্যান্ট নষ্ট হয়ে যাবার একটা উজ্জ্বল হলদে সম্ভাবনা দেখছি চোখেমুখে। টানা দুই ঘন্টার ক্লাস, প্রফেসরেরা হাসি হাসি মুখে বকে চলে, এদিকে আমার অবস্থা কাহিল। প্রথম দু'দিন গেলো শক্তির অর্থনৈতিক হালচাল নিয়ে ব্লকফেরআনষ্টালটুং, সকাল আটটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত মুষলধারে লেকচার, মাঝে কেবল তিনটা দশ মিনিটের ব্রেক আর একটা রোগাভোগা লাঞ্চব্রেক। মেনজা (বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন)তে না খেয়ে হামলা করলাম সুমন চৌধুরীর রান্নাঘরের ওপর, যিনি কি না লেকচার হলের পাশের ভবনেই থাকেন। কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস বলা যেতে পারে হল্যান্ডিশার প্লাৎসকে। বেশ গোছানো সুন্দর ক্যাম্পাস, পুরোটা লাল ইঁটের, এককালে এটা ছিলো হিটলারের অস্ত্রকারখানা, একটা বিশাল চিমনি আজও রয়ে গেছে। লেকচার হল বেশ চমৎকার। আমার সহপাঠীদের মধ্যে অনেকেই মধ্যবয়স্ক, আবার একেবারে চ্যাংড়াও আছে কিছু। ব্লক ফেরআনষ্টালটুঙে পুরো একটা কোর্সের বক্তব্য দু'দিনে বোঝানো হয়, কাজেই প্রফেসর ফিশেডিক বেশ দ্রুত এগিয়ে গেলেন। প্রথম দফায় একটু সমস্যা হচ্ছিলো তাঁর কিছু কথা বুঝতে, প্রেজেন্টেশন না থাকলে হয়তো মাথার ওপর দিয়ে চলে যেতো। পরিবেশ প্রসঙ্গে দেখলাম সরাসরি বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হতে যাচ্ছে। কফিবিরতির সময় কয়েকজন এসে পাকড়াও করলো আমাকে, আমি বিমর্ষ মুখে জানালাম, দেশে গিয়ে ভালো দেখে একটা নৌকা কিনবো। মনে মনে ভাবলাম, বিএমডব্লিউকে ভালো দেখে কিছু মোটরবোট বানানোর পরামর্শ দেয়া যেতে পারে আমাদের গুলশানপট্টির হিজলতমালদের জন্য। পর পর দুইদিন নবায়নযোগ্য শক্তি, পরিবেশ আর অর্থনীতির চাপে পিষ্ট হয়ে আজ সকালে বায়ুশক্তির ওপর ক্লাস করতে গেলাম ইঙ্গশুলেতে। প্রফেসর হায়ার বেশ স্পষ্ট লেকচার দেন, বেশ রসিক মানুষ, শুরুতেই নিজের লেখা বইগুলি গছিয়ে দিলেন। পোলাপানও পোংটা কম না, একজন জানতে চাইলো, লেখকের কাছ থেকে কিছুটা সস্তায় বই পাওয়া যাবে কি না। হায়ার প্রশান্ত হাসি হেসে জানালেন, নিজের বই তিনি নিজে বিক্রি করতে পারেননা, আইনত পেজগি আছে। তবে দশবারোজন কিনতে চাইলে তিনি অর্ডার দিয়ে আনিয়ে দিতে পারেন। তাঁর লেখা জার্মান বই তুলনামূলকভাবে সস্তা হলেও ইংরেজি সংস্করণের দাম একশো ঊনত্রিশ ইউরো। এরপর তিনি কিছুক্ষণ মুলামুলি করে পরীক্ষার তারিখ ঠিক করলেন। একঘন্টার পরীক্ষা হবে, ক্রেডিটপিছু দশমিনিট করে। তারপর অনবদ্য লেকচার দিলেন জার্মানিতে বায়ুশক্তি নিয়ে। ভদ্রলোক এই ক্ষেত্রে খুবই অভিজ্ঞ, প্রাথমিক প্রায় সব বড় প্রজেক্টে ছিলেন, নিজের তোলা ছবি দিয়ে প্রেজেন্টেশন সাজিয়েছেন। আরো কিছু ক্লাস আজ না হওয়ায় বাড়ি ফিরে এসেছি। এই ক'দিন সচলে ঠিকমতো বসতে পারিনি, ভবিষ্যতে সমন্বিত বাঘ কিংবা অপরিণত ঘুড়ার খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে হবে মনে হচ্ছে। বুড়া বয়সে ক্যান যে আবার লেখাপড়া করতে গ্যালাম!",False fe,"তাহলে কী হচ্ছে! তাহলে কী হচ্ছে! ফকির ইলিয়াস=======================================বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সংশয় ক্রমেই বাড়ছে। আর তা বাড়িয়ে দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিকরা। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক আমলা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক মতবিনিময় সভায় বলেছেন, বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশে একাত্তরের ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সহজ কাজ নয়। তিনি বলেছেন, দেশের মাত্র ৩৫ শতাংশ মানুষ রাজনীতিকদের বিশ্বাস করে। রাজনীতিকদের অনুসরণ করে। বাকি ৬৫ শতাংশ মানুষ মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক এবং সমাজের অন্য ধর্মীয় নেতাদের অনুসরণ করে চলে। তিনি আরও বলেছেন, এমন একটি দেশে ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে অবস্থান করে যারা একাত্তরে মানবতাবিরোধী কাজ করেছে তাদের বিচার করা খুব দুরূহ কাজ। এছাড়াও সবার বিচার একসঙ্গে করা যাবে না। আমরা যতই বলি, বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে, বাস্তবতা তার উল্টো। প্রক্রিয়াগত কারণে এর বিচার বিলম্বিত হবে। তিনি বলেছেন, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রবাসেও বেশিরভাগ বাঙালি বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক। আমাদের সমর্থক যারা আছেন তারা ৫-৭ ভাগে বিভক্ত।আওয়ামী লীগের এ নেতা সিডনিতে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ঢাকার জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। এবং তার এ বক্তব্যটি আলোড়ন তুলেছে দেশে-বিদেশে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি বর্তমান সরকার মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে ক্রমে সরে যাওয়ার পথ খুঁজছে? তারা কৌশলে গুরুত্বহীন করে দিতে চাইছে তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার?ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর দাপটশালী আমলা ছিলেন। স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের 'খালকাটা প্রকল্প' নিয়ে একটি বইও লিখেছিলেন। তার সে বইটি 'নন্দিত' এবং 'নিন্দিত' দুটোই হয়েছিল। সেই মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বেই 'জনতার মঞ্চ' হয়েছিল বাংলাদেশে। সরকারি আমলাদের সরাসরি রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধাচারণ করার বিধিনিষেধ থাকলেও সে কাজটি সে সময় হয়েছিল। তারা খালেদা জিয়ার নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতে ক্ষমতায় আসার পর ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে প্রতিমন্ত্রীর পদ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এটা ছিল তার প্রাপ্য পুরস্কার।একজন মন্ত্রী হিসেবে তিনি কতটা সার্থক ছিলেন, তাও ছিল জনগণের জানা। ওয়ান-ইলেভেনের পর যে ক'জন রাজনীতিক কারারুদ্ধ হন, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। ড. আলমগীরের বিচারও অনুষ্ঠিত হয়। তার সাজাও হয়।২০০৯-এর নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। তারপর ক্রমেই তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো খারিজ হতে থাকে। লাঘব হয়ে যায় তার দন্ডও। এখন বলা হয়ে থাকে, তিনি আওয়ামী লীগের অন্যতম নীতি-নির্ধারক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাও হতে পারেন যে কোন সময়। তেমন একটি গুঞ্জনও রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে। সবদিক বিবেচনায় তিনি রাষ্ট্রের রাজনীতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, তা বলা যায় নিঃসন্দেহে।কিন্তু কথা হচ্ছে সেই গুরুত্বপূর্ণ নেতা কি সব বলছেন? তার ভাষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ কি তবে মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষকদের অনুসরণ করে? যদি তাই করে থাকে তবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা মহাজোট পেল কিভাবে?আমি খুব স্পষ্ট বলে দিতে পারি, '৫২-এর ভাষা আন্দোলন, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, '৭০-এর নির্বাচন, '৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, '৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কোনটাতেই কোন মৌলবাদী শক্তির নেতৃত্ব ছিল না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলার আপামর মানুষের সৌহার্দ্য, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূর্ত প্রতীক।ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের কথার জবাব আরও দেয়া যায়। তিনি বলেছেন, বিদেশের অভিবাসী বাঙালিদের সিংহভাগ নাকি বিএনপি-জামায়াতের আদর্শে বিশ্বাস করেন। কথাটা সঠিক নয়। বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের জানা উচিত, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। তিনি যখন স্বৈরাচারী জিয়া-এরশাদের রাষ্ট্রশাসনে আমলা ছিলেন তখন এ প্রবাসী বাঙালিরা ইউরোপ-আমেরিকা-কানাডার রাজপথে, জাতিসংঘ চত্বরে মিছিল-মিটিং করেছেন দেশে গণতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে। এই সেই প্রবাসীরা যারা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐতিহাসিক গণআদালত পরিলক্ষণ, পর্যবেক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে খ্যাতনামা আইনজীবী মি. মাইকেল কিটিংসকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন।প্রবাসী বাঙালির এমন শত শত গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের লিখিত ঘটনাবলি বিশ্ব বাঙালির অজানা নয়। তারপরও ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর তা না জানার ভান করছেন কেন? নাকি তিনি সরকারের পক্ষ থেকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছেন?সিডনির সে সমাবেশে ড. আলমগীর আরও বলেছেন, বাংলাদেশের সরকারকে নাকি তাদের 'বাইরের প্রভু'দের কথা মেনে চলতে হয়। তিনি বলেছেন, জার্মানি নাকি যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ডের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অথচ আমরা জানি, জার্মানিতে নাৎসিদের বিচার হচ্ছে এখনও। বিশ্বজুড়ে খোঁজা হচ্ছে নাৎসিদের।বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সর্বশেষ অবস্থা কি হবে তা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুখোশধারীদের সংখ্যা বাড়ছে। কথায় এবং কাজের অমিল বাড়ছে দিন দিন। আর তারা বেশি ব্যস্ত তাদের প্রভুদের মন রক্ষা করতে। ঘটনা যদি সেটাই হয় তবে বোঝা যাচ্ছে, ২০১০ সালের আধুনিক দিনবদলের সেস্নাগানের কালেও বাংলাদেশের মানুষ এখনও পরাধীন। একটি স্বাধীন দেশের মানুষ এভাবে পরাশক্তির কাছে নতজানু থাকবে কেন।আমরা খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করছি, বর্তমান মহাজোট সরকারের মন্ত্রী এবং উপদেষ্টাদের মাঝে একটি স্নায়ুযুদ্ধ লেগেই আছে। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টার মাঝে মতপার্থক্যের দ্বন্দ্ব এর সর্বশেষ উদাহরণ। এমন অসঙ্গতি সরকারের ভেতরে চলতে পারে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, যেসব মন্ত্রী পূর্ণ পারফরমেন্স দেখাতে পারবেন না, তাদের সরে যেতে হবে। নতুন মুখ দেখা যাবে মন্ত্রিপরিষদে। না, এর বাস্তবতা আমরা দেখছি না। সব মন্ত্রী নিজ নিজ দফতরে কৃতিত্ব তো দূরের কথা, ঠিকমতো চালাতেও পারছেন না। তাদের অব্যাহতি দিতে সরকারের হাত কাঁপছে কেন? যারা রাষ্ট্রশক্তির পরিচালক তাদের কথাবার্তায় পরিপক্বতা না থাকলে প্রজন্ম বিভ্রান্ত হয়। আর বিরোধীরা মাঠে নামে সেটাকে পুঁজি করে।নিউইয়র্ক, ২৫ মে ২০১০ ----------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ২৮ মে ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- জেন ওডেন",False hm,"ঈস্টার দ্বীপ ০৪ ঈস্টারবাসীদের মূর্তি নির্মাণ, পরিবহন এবং স্থাপন নিয়ে এখনো গবেষণা এবং উত্তপ্ত বিতর্ক চালু আছে। তবে এরিখ ফন দানিকেনের মতো এর কৃতিত্ব কেউ ভিনগ্রহীদের কাঁধে চাপিয়ে দেননি। কোন ইয়োরোপীয় অভিযাত্রীও ঈস্টারের কোন মূর্তি পরিবহন বা উত্তোলনের কাজ নিজের চোখে দেখে বর্ণনা দিয়ে যাননি, এ ব্যাপারে গবেষকরা তথ্য সংগ্রহ করেছেন দ্বীপের লোকায়ত কাহিনী এবং পরোক্ষ নিদর্শন থেকে। এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দাঁড় করানো তত্ত্বগুলির ওপর পরবর্তীতে বিভিন্ন পরীক্ষাও করা হয়েছে হাতেকলমে। রানো রারাকু খনিতে এখনও অনেক অসমাপ্ত মূর্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ব্যাসল্টের বাটালিগুলিও ছড়িয়ে আছে তার পাশে। একেবারেই অসমাপ্ত মূর্তিগুলি আর কিছু নয়, কেবল পাথর থেকে খোদাই করা একটা পাথরের টুকরো, মুখ আকাশের দিকে, পিঠ তখনো সরু একটা পাথরের দাঁড়ার মাধ্যমে যুক্ত আছে মূল পাথরের সাথে। এর পর মাথা, নাক, কান, হাত, নেংটি ইত্যাদি খোদাই করার কথা। এর পর পাথরের দাঁড়াটা ঠুকে ঠুকে ভেঙে মূর্তিটাকে পাহাড়ের গা থেকে আলগা করা হতো। অসমাপ্ত কোন মূর্তিরই চোখ নেই, এ থেকে ধারণা করা হয়, পরিবহন শেষে অথবা আহুর ওপর তুলে মূর্তিগুলির চোখ তৈরি করা হতোমন্তব্য ১। ১৯৭৯ সালে সোনিয়া হাওয়া এবং সের্খিও রাপু হাওয়া এক দারুণ আবিষ্কার করেছিলেন, একটি আহুর কাছে মাটি খুঁড়ে তারা পেয়েছিলেন সাদা প্রবালে তৈরি একজোড়া চোখ, যার মণিদু'টি লাল স্কোরিয়া পাথরের। এরকম আরো অনেক আহুর কাছে পরবর্তীতে খুঁড়ে আরো চোখ পাওয়া গিয়েছে। এই চোখগুলি মোয়াইয়ের চক্ষুগহ্বরে স্থাপন করলে এক দর্শনীয় চেহারা দাঁড়ায় মূর্তির। তবে খুব বেশি চোখ খুঁজে পাওয়া যায়নি, ধারণা করা হয়, অল্পই তৈরি করা হয়েছিলো, যা পুরোহিতদের পাহারায় থাকতো সারা বছর, আর বিশেষ অনুষ্ঠানে মূর্তির চোখে স্থাপন করা হতো। রানো রারাকু থেকে পথ বেরিয়ে গেছে দ্বীপের সব দিকে, উঁচু নিচু টিলা এড়িয়ে যা সমতল ধরে গেছে। রানো রারাকু থেকে পশ্চিমসৈকতে অবস্থিত আহুগুলির দূরত্ব ৯ মাইল। পৃথিবীর অন্যান্য জায়গাতেও প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলি পাথরের তৈরি, এবং সেখানে বেশিরভাগ সময়েই কেবল মানুষের পেশীশক্তি দিয়ে ভারি পাথর পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা ঈস্টার দ্বীপে মূর্তি পরিবহন নিয়ে নানা পরীক্ষা করেছেন, যার শুরু হয়েছিলো থর হেয়ারডালকে দিয়ে, যিনি মূর্তি পরিবহন করতে গিয়ে একটা মূর্তির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিলেন। আন্দাজ করা যায়, তাঁর পদ্ধতিটি সঠিক ছিলো না। অন্যান্য পদ্ধতি যা চেষ্টা করা হয়েছে, তা হচ্ছে দাঁড়ানো বা শোয়ানো মূর্তি টেনে নিয়ে যাওয়া, কাঠের স্লেডে রেখে টেনে নেয়া, কাঠের রোলারের ওপর রেখে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া, ইত্যাদি। জ্যারেড ডায়মন্ডের কাছে সবচেয়ে যুক্তিগ্রাহ্য মনে হয়েছে জো অ্যান ভ্যান টিলবার্গের পরামর্শ, যিনি বলেছেন, ঈস্টারবাসীরা পলিনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী কাঠের মই, যা সাধারণত ব্যবহৃত হয় জঙ্গলে গাছ কেটে সেটা খোদাই করে ক্যানো বানিয়ে সৈকত পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে, সেরকম মইয়ের ওপর দিয়ে মূর্তিগুলি টেনে নিয়ে গেছে। ডায়মন্ড নিজেও পাপুয়া নিউগিনিতে এমন মাইলখানেক লম্বা মই দেখেছেন, উঁচু এলাকা থেকে সৈকত পর্যন্ত ক্যানো বানাবার গাছ বয়ে নিয়ে যাবার জন্যে। হাওয়াই দ্বীপে কিছু কিছু ক্যানোর ওজন ঈস্টারের সাধারণ মূর্তির চেয়ে বেশি, যা কি না এই কাঠের ওপর দিয়ে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক গবেষণার আলোকে কিছু যোগ করবো আমি, পরে। জো অ্যান ভ্যান টিলবার্গ তত্ত্ব দিয়েই বসে থাকেননি, হাতে কলমে পরীক্ষা করে দেখেছেন। কাঠের স্লেডে শোয়ানো ১২ টন ওজনের একটা মূর্তিকে কাঠের মইয়েরও ওপর চড়িয়ে দড়ি বেঁধে তিনি ঈস্টারবাসীদের কয়েকজনকে দিয়েই টানিয়েছেন। তাঁর পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৫০ থেকে ৭০ জন লোক যদি দিনে ৫ ঘন্টা করে মূর্তি টানে, আর টান পিছু যদি ৫ গজ করে এগোয়, তাহলে ৯ মাইল রাস্তা পেরোতে সময় লাগে হপ্তাখানেক। এই পরীক্ষায় দেখা গেছে, মূর্তি পরিবহনের কাজটা অনেক সহজ হয়, যদি সবাই একসাথে, সমলয়ে টানে, যেভাবে বাইচের নৌকাতে সমলয়ে দাঁড় টানে সবাই। এই পরীক্ষা থেকে তথ্য নিয়ে হিসেব করে দেখা গেছে, পারো-র মতো ভারি মূর্তি পরিবহন করতে একই সময়ে ৫০০ লোক লাগবে, যা ঈস্টার দ্বীপের এক একটি গোত্রের পক্ষে (গোত্রের আকার এক থেকে দু'হাজার মানুষ পর্যন্ত) যোগান দেয়া সম্ভব। ঈস্টারবাসীরা থর হেয়ারডালকে দেখিয়েছিলো, কিভাবে এমন একটা মূর্তি আহুর ওপর খাড়া করা হয়। এ নিয়ে তারা রীতিমতো ক্ষেপেও ছিলো, যে প্রত্নতাত্ত্বিকরা তাদের একবার জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন পর্যন্ত বোধ করেনি। পরবর্তীতে উইলিয়াম মালয়, জো অ্যান ভ্যান টিলবার্গ, ক্লাউদিও ক্রিস্তিনো এবং আরো অনেকের গবেষণায় আরো তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ঈস্টারবাসীরা প্রথম পাথরের টুকরো দিয়ে হালকা ঢালু একটা ড়্যাম্প তৈরি করে নেয়, তারপর মূর্তির নিচের দিকটা ওপরে রেখে টেনে সেটাকে আহু পর্যন্ত তোলে। এরপর মূর্তির মাথাকে কাঠের লিভার দিয়ে চাঁড় দিয়ে একটু একটু করে তোলা হয়, ইঞ্চি দুয়েক তোলার পর মূর্তির মাথার নিচে পাথর গুঁজে দেয়। এভাবে পুরো মূর্তিটাকে খাড়া করা হয়। মূর্তির পুকাও একই সময়ে একই ঠেস কাঠামো দিয়ে সম্ভবত তোলা হতো। পাথরের ঢাল পরে সরিয়ে ফেলা হয়। সবচেয়ে বিপদজনক মূহুর্ত হচ্ছে খুব খাড়া কোণ থেকে একেবারে খাড়া করার সময়টুকু। মূর্তির ভরবেগ একটু এদিক সেদিক হলেই সেটা টাল খেয়ে পেছনে পড়ে যেতে পারে। এ কারণেই মূর্তির কারিগররা একে পুরোপুরি সমকোণে তৈরি করতো না, মূর্তির পাদদেশ থেকে হয়তো ৮৬-৮৭ ডিগ্রী কোণ করে মূর্তিটিকে তৈরি করা হতো। ফলে মূর্তিকে যখন খাড়া করা হতো, সেটা সামান্য সামনের দিকে ঝুঁকে থাকতো, ফলে টাল খেয়ে পেছনে পড়ে যাবার ঝুঁকি কমতো অনেকখানি। এরকম একটা মূর্তি খাড়া করার প্রকল্পই নিঃসন্দেহে প্রচন্ড খরুচে ছিলো। জনা বিশেক খোদাইকারীকে এক মাস ধরে নিশ্চয়ই খাওয়াতে হতো, কিংবা খাবার দিয়ে মজুরি শোধ করা হতো। এরপর বয়ে আনার জন্য ৫০ থেকে ৫০০ জন লোকের খাওয়া-মজুরি, তারপর মূর্তি খাড়া করার জন্যও একই পরিমাণ মানুষের খাওয়া-মজুরি, তারপর মূর্তি খাড়া হয়ে গেলে নিশ্চয়ই উৎসবে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করতে হতো, তাতে হয়তো যে গোত্রের এলাকা দিয়ে মূর্তি বয়ে আনা হয়েছে, তাদেরও আমন্ত্রণ জানাতে হতো। যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেব করতে বসেছিলেন, কী পরিমাণ ক্যালরি খরচ হয় এ কাজে, এবং তার সূত্র ধরে খোরাকির পরিমাণ নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন, তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন যে মূর্তির ব্যাপারটা গোটা প্রকল্পের ছোট একটা দিক, একটা আহুর ওজন মূর্তির চেয়ে কমসে কম ২০ গুণ বেশি, এবং সেই আহুর পাথরও বয়ে আনতে হতো। জো অ্যান ভ্যান টিলবার্গ এবং তাঁর স্থপতি স্বামী ইয়ান, যিনি লস অ্যাঞ্জেলসে নির্মাণ পেশার সাথে জড়িত, হিসেব কষে বার করেছেন, ঈস্টারের আহু এবং মোয়াইয়ের জন্য মূর্ত নির্মাণের ৩০০ বছরে ২৫% অতিরিক্ত খাবার প্রয়োজন হয়েছে। ক্রিস স্টিভেনসনের গবেষণার সাথে এ ফল মিলে যায়, যিনি ঈস্টারের কেন্দ্রসংলগ্ন উঁচু ভূমিতে পাথুরে ক্ষেতে চাষাবাদ নিয়ে গবেষণা করেছেন। এই ৩০০ বছর দ্বীপের মানুষকে অতিরিক্ত খাবার যোগাতে ঈস্টারবাসীকে বেছে নিতে হয়েছে অতিরিক্ত কৃষিকার্যক্রমের পথ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রগেভেন এবং অন্যান্য ইয়োরোপীয়রা ঈস্টারকে ন্যাড়া একটা দ্বীপ বলে বর্ণনা করেছিলেন, যেখানে ১০ ফিটের উঁচু কোন গাছই নেই। তাহলে ঈস্টারবাসীরা মূর্তি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করার জন্য কাঠ আর দড়ি পেলো কোত্থেকে? ঈস্টারদ্বীপে বর্তমানে মোটে ৪৮ প্রজাতির স্থানীয় উদ্ভিদ রয়েছে, এদের মধ্যে সবচে বড়টি, তোরোমিরো, গড়ে ৭ ফিট লম্বা হয়; বাকি সব হচ্ছে ঘাস, গুল্ম আর ঝোপ। তবে গত কয়েক দশকে অতীতের ফ্লোরার অস্তিত্ব ও প্রকৃতি যাচাইয়ের বেশ কিছু কৌশল উদ্ভাবিত হয়েছে, এবং এসব কৌশল প্রয়োগ করে দেখা গেছে, ঈস্টারে মনুষ্যবসতির আগে রীতিমতো উপক্রান্তীয় বনাঞ্চল ছিলো। এসব কৌশলের মধ্যে প্রথমেই আসে প্যালিনোলজি, উদ্ভিদের পরাগরেণু বিশ্লেষণ বিজ্ঞান। এ ধরনের বিশ্লেষণে সাধারণত কোন জলাশয়ের তলা থেকে মাটির স্তম্ভ খুঁড়ে আনা হয়। যদি জলাশয়ের তলদেশ কোন কারণে ব্যাপক ওলটপালট না হয়, তাহলে ধরে নেয়া যেতে পারে, মাটির স্তম্ভের ওপরের দিকটা সবচেয়ে নতুন পলি, নিচের দিকটা আরো প্রাচীন পলি। এভাবে যতো নিচে খোঁড়া যাবে, তত প্রাচীন পলি পাওয়া যাবে। রেডিওকার্বন পরীক্ষা দিয়ে বিভিন্ন স্তরের পলির বয়স নির্ধারণ করা যায়। এরপর শুরু হয় এক অবিশ্বাস্য খাটনির কাজ, সেই পলির স্তরে জমা হওয়া লক্ষ লক্ষ উদ্ভিদের পরাগরেণু মাইক্রোস্কোপের নিচে ধরে চলে বিশ্লেষণ। সাধারণত বর্তমান উদ্ভিদের পরাগরেণুর সাথে তুলনা করে নমুনা রেণুগুলিকে শ্রেণীবিন্যস্ত করা হয়। ঈস্টারে প্রথম এ ধরনের গবেষণা শুরু করে সুইডিশ পরাগবিজ্ঞানী ওলফ সেলিং, যিনি হেয়ারডালের ১৯৫৫ সালের অভিযানে রানো রারাকু আর রানো কাউ জ্বালামুখের জলাগুলি থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি এসব নমুনায় প্রচুর পরিমাণে পেয়েছিলেন এক জাতীয় পাম গাছের পরাগ, যে ধরনের পাম গাছ ঈস্টারে এখন আর নেই। ১৯৭৭ এবং ১৯৮৩ সালে জন ফ্লেনলি আরো কিছু পলির নমুনা সংগ্রহ করেন। তবে ফ্লেনলির কাছে তখন ছিলো সের্খিও রাপু হাওয়া-র কাছ থেকে পাওয়া কিছু অশ্মীভূত পাম ফল, সে বছরই একটি লাভা গুহায় ফরাসী অভিযাত্রীদের হাতে আবিষ্কৃত। ফলগুলি দেখতে অনেকটা চিলিয়ান ওয়াইন পামের মতো, তবে আকারে আরেকটু বড়। চিলিয়ান ওয়াইন পাম পৃথিবীর বৃহত্তম পাম প্রজাতির গাছ, যেগুলি লম্বায় ৬৫ ফিট পর্যন্ত উঁচু আর ৩ ফিট পুরু হয়। পরবর্তী অভিযাত্রীরা তেরেভাকা পাহাড়ের লাভা স্রোতে এমন কয়েক লক্ষ বছরের পুরনো পাম গাছের কাস্ট দেখেছেন। এই লাভাস্রোতে মমিকৃত পামের মূলের আকার দেখে ধারণা করা হয়, ঈস্টারের পামগাছগুলির ব্যাস ৭ ফিটেরও বেশি ছিলো, অর্থাৎ চিলিয়ান ওয়াইন পামও ওগুলোর তুলনায় শিশু। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, পৃথিবীর বৃহত্তম পামগাছ এক কালে ঈস্টারে ছিলো। চিলিতে এই ওয়াইন পামের কদর খুব। এই গাছ থেকে মিষ্টি সাদা কষ বেরোয়, যা থেকে মদ বানানো হয়, আবার ফুটালে গুড়ের মতো মিষ্টি পাওয়া যায়। ফলগুলির আঁটিও খেতে বেশ। এই পাম গাছের পাতা দিয়ে ঘরের ছাউনি দেয়া যায়, মাদুর, ঝুড়ি, নৌকার পাল তৈরি করা যায়। আর এর গুঁড়ি দিয়ে নিঃসন্দেহে মোয়াই পরিবহন আর ভেলা তৈরির কাজও করা হয়েছে। জন ফ্লেনলি আর সারা কিংসেই কাদার নমুনা থেকে আরো পাঁচটি বর্তমানে-বিলুপ্ত গাছের পরাগ খুঁজে পেয়েছেন। ফরাসী প্রত্নতাত্ত্বিক ক্যাথরিন ওরলিয়াক ঈস্টারের বিভিন্ন চুলো আর ময়লার গাদা খুঁড়ে ৩০,০০০ অঙ্গারের টুকরো ছেঁকে বার করেছেন। এর মধ্যে থেকে ২,৩০০ নমুনা তিনি তুলনা করেছেন পলিনেশিয়ায় বর্তমানে পাওয়া যায় এমন অন্যান্য কাঠের সাথে। আরো ১৬টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ তিনি শনাক্ত করেছেন, যেগুলি এখন পলিনেশিয়াতে আছে এবং এককালে ঈস্টারে ছিলো। অর্থাৎ, ঈস্টারে এককালে বেশ ফাঁদালো অরণ্য ছিলো। বিলুপ্ত এই ২১টি গাছ এখন হাতে পেলে ঈস্টারবাসীরা বর্তে যেতো। দু'টি গাছ, আলফিটোনিয়া জিজিফয়ডেস (১০০ ফিট) আর এলাইওকার্পাস রারোটোঙ্গেনসিস (৫০ ফিট) পলিনেশিয়ার অন্যান্য দ্বীপে ক্যানো বানানোর কাজে অত্যন্ত জনপ্রিয়। পলিনেশিয়ার অন্যান্য জায়গায় ট্রিয়ামফেটা সেমিট্রিলোবা-র ছাল দিয়ে দড়ি বানানো হয়, সম্ভবত ঈস্টারেও তা দিয়েই মোয়াইগুলি টানা হয়েছিলো। ব্রুসোনেশিয়া পাপিরিফেরা, অর্থাৎ কাগুজে মালবেরির ছাল পিটিয়ে তাপা নামের এক কাপড় বানানো হয়, সিডরাক্স ওডোরাটা দিয়ে বানানো হয় হারপুন আর ডিঙি, সিজিগিয়াম মালাক্কেনসে (মালয় আপেল) ছিলো খাবার ফলের গাছ, থেসপেজিয়া পপুলানেয়া থেকে পাওয়া যেতো নির্মাণকাজের জন্যে শক্ত কাঠ, তোরোমিরো থেকে পাওয়া যায় জ্বালানি কাঠ, আর যেহেতু অরলিয়াক এদের পোড়া অঙ্গার খুঁজে পেয়েছেন, তা-ই পরিষ্কার বোঝা যায়, এদের জ্বালানি হিসেবেই ব্যবহার করা হতো বা হয়েছিলো। আনাকেনা সৈকত, যেটি সম্ভবত ঈস্টারের বসতিদারদের নাও ভিড়ানোর কূল, এবং প্রথম বসতি, সেখানে খুঁজে পাওয়া ৬,৪৩৩টি হাড়ের সবক'টি যিনি পরীক্ষা করে দেখেছেন, তিনি প্রাণীপ্রত্নতাত্ত্বিক ডেভিড স্টেডম্যান। স্টেডম্যান তাঁর কাজে, বিশেষ করে পাখির হাড় বিশ্লেষণে অসাধারণ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছেন, হাড় দেখে তিনি বলে দিতে পারেন সেটি কোন প্রজাতির পাখির। আনাকেনায় পাওয়া হাড় পরীক্ষা করে স্টেডম্যান জানিয়েছেন, ঈস্টার, যেখানে আজ একটিও স্থানীয় ডাঙার পাখি নেই, অতীতে কমপক্ষে ছয় প্রজাতির ডাঙার পাখির আবাসস্থল ছিলো, এগুলোর মধ্যে রয়েছে এক প্রজাতির বক, মুর্গির মতো দু'টি প্রজাতির পাখি, দু'টি প্রজাতির টিয়া এবং একটি প্রজাতির প্যাঁচা। এরচেয়েও চটকদার ছিলো ঈস্টারের কমপক্ষে ২৫ প্রজাতির বাসাবাঁধা সামুদ্রিক পাখি, এবং সম্ভবত ঈস্টার ছিলো এককালে গোটা প্রশান্ত মহাসাগরে সামুদ্রিক পাখির সবচেয়ে বড় আবাস। এদের মধ্যে ছিলো অ্যালবাট্রস, বুবি, ফ্রিগেট, ফুলমার, পেট্রেল, প্রিয়ন, ঝোড়ো-পেট্রেল, টার্ন আর ক্রান্তীয়পাখি, যারা মানুষের আগমনের আগ পর্যন্ত ঈস্টারের খাদকশূন্য পরিবেশে সমানে বংশবিস্তার করেছিলো। স্টেডম্যান কতগুলি সীলের হাড়গোড়ও পেয়েছিলেন, যেগুলি ঈস্টারের পূবদিকে গালাপাগোস আর হুয়ান ফেরনান্দেজ দ্বীপপুঞ্জে বংশবিস্তার করে, তবে এগুলি কি স্থানীয় সীল নাকি বেড়াতে এসে ধনেপ্রাণে মারা পড়া সীল, তা বলা দুষ্কর। আনাকেনার উৎখনন থেকে ঈস্টারের আদিবাসীদের খাদ্যাভাস সম্পর্কে জানা যায় অনেক কিছুই। ৬,৪৩৩টি হাড্ডিগুড্ডির মধ্যে সবচেয়ে বেশি, প্রায় এক তৃতীয়াংশ, হচ্ছে দ্বীপের আশপাশে সবচেয়ে বড় প্রাণীটির, ডলফিন, ওজনে যা প্রায় ১৬৫ পাউন্ড পর্যন্ত হয়। পলিনেশিয়ার আর কোথাও এত বেশি পরিমাণে ডলফিন পাওয়া যায়নি খাবারের গাদায়। ডলফিন থাকে গভীর সাগরে, তীরবর্তী এলাকায় তারা আসেনা, কাজেই তীর থেকে জাল ফেলে বা ট্যাঁটা দিয়ে তাদের মারা সম্ভব না। ডলফিনের হাড় প্রমাণ করে, বড় সাগরগামী ক্যানোতে চড়ে গভীর সমুদ্রে শিকার করা এসব ডলফিন, হয়তো অরলিয়াকের খুঁজে পাওয়া সেই বিশাল গাছ দিয়েই তৈরি সেসব ক্যানো। আনাকেনায়া পাওয়া হাড়গুলোর মধ্যে মাছের হাড় মোটে ২৩%, পলিনেশিয়ার অন্যান্য জায়গায় যেখানে খাবারের ৯০%ই মাছ। ঈস্টারে তেমন মাছ নেই, কারণ ঈস্টারের চারপাশে অগভীর সমুদ্র কম, বেশির ভাগ জায়গায় সাগর খাড়া নেমে গেছে নিচে। এ কারণে ঈস্টারবাসীর খাবারের টেবিলে ঝিনুকজাতীয় মাছ বা সাগরের অমেরুদন্ডী প্রাণীও কম। এই অভাব পূরণ করেছে পাখি। পাখির স্যুপের সাথে হয়তো যোগ হয়েছিলো ইঁদুরের কাবাব, যেসব ইঁদুর বসতিদারদের নৌকোতে করেই হয়তো ঈস্টারে বাসা বেঁধেছিলো। ঈস্টার পলিনেশিয়ার একমাত্র দ্বীপ, যেখানে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননকেন্দ্রে মাছের হাড়ের চেয়ে বেশি ইঁদুরের হাড় পাওয়া গেছে। অন্যান্য আরো হাড় থেকে দেখা গেছে, ঈস্টারবাসীরা মাঝে মাঝে সামুদ্রিক কাছিম, বড়সড় গিরগিটি। এ সব খাবারই আগুনে সেদ্ধ বা পুড়িয়ে খাওয়া। তবে সময়ের সাথে ঈস্টারের খাদ্যতালিকা পাল্টেছে মারাত্মকভাবে। গোয়ালভরা গরু আর পুকুরভরা মাছ রূপকথার গল্প হয়ে গেছে পরবর্তীতে। গভীর সমুদ্রের শিকার, যেমন ডলফিন বা টুনা সম্পূর্ণ বাদ পড়েছে খাবারের তালিকা থেকে। যেসব মাছ ধরা হতো পরের দিকে, সেগুলি তীরবর্তী মাছ। ডাঙার পাখি সব ক'টাই একে একে বাদ পড়েছে, কারণ প্রতিটি প্রজাতিই অতিশিকার, বননিধন আর ইঁদুরের আক্রমণে লুপ্ত হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরে ঈস্টারের পাখিদের কপালেই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ লেখা ছিলো, যা ছাড়িয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড আর হাওয়াইতে পাখির প্রজাতিবিনাশকেও। ২৫টি সামুদ্রিক পাখির মধ্যে ২৪টি এখন আর ঈস্টারে আসে না, ৯টি মাঝেমধ্যে আসে, তা-ও মূলদ্বীপ থেকে দূরে কিছু টুকরো দ্বীপে। এমনকি খোলসমাছও (শেলফিশের বাংলা পরিভাষা আর কী হতে পারে?) অতিশিকারের কারণে আস্তে আস্তে কমেছে, সময়ের সাথে খাবারের গাদায় যোগ হয়েছে তুলনামূলকভাবে ছোট আকারের খোলস, যেগুলি স্বাদে ও পরিমাণে কম, অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত বড় প্রজাতিগুলি হারিয়ে গেছে ঈস্টারবাসীর নোলার উৎপাতে। হারিয়ে যাওয়া ২১টি গাছের অপমৃত্যু নিয়েও অনেক অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়। অরলিয়াকের অঙ্গারের নমুনা যেমন প্রমাণ করে, গাছগুলি পোড়ানো হতো। মৃতদেহ পোড়ানোর জন্যেও এ কাঠ ব্যবহার করা হতো, ঈস্টারের দেহভস্মাগারে হাজার হাজার মানুষের দগ্ধাবশেষ আর অস্থিভস্ম পাওয়া গেছে। বন ""পরিষ্কার"" করে ক্ষেত গড়ে তোলা হয়েছে সারা ঈস্টার জুড়েই, শুধু সর্বোচ্চ পাহাড়ি এলাকা বাদে। গভীর সমুদ্রের মাছ দেখে আঁচ করা যায়, ঈস্টারবাসী গাছ কেটে ক্যানো বানাতো, রগেভেন যেসব পলকা ফুটো হয়ে যাওয়া নৌকো ব্যবহার করতে দেখেছিলেন ঈস্টারের অধিবাসীদের, সেসবে চড়ে ডলফিন শিকার সম্ভব নয়। ঈস্টারের ইঁদুরগুলিও গাছগুলিকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করতো, ঈস্টারে পাওয়া প্রতিটি পাম ফলের বীজে ইঁদুরের দাঁতের দাগ আছে। বোঝা যায়, এসব বীজ থেকে আর গাছ গজানোর আশা ছিলো না। বননিধন নিশ্চয়ই মানুষের আগমনের পর, অর্থাৎ ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের পর শুরু হয়েছে, আর শেষ হয়েছে রগেভেন দ্বীপে পা ফেলার আগেই, অর্থাৎ ১৭২২ এর আগে। কিন্তু ঠিক কবে ঈস্টারে বন ধ্বংস হলো, জানা যায় কি? মন্তব্য ১ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন পূজাতেও কিন্তু মূর্তির চক্ষুদান হয় একেবারে শেষদিকে।",False rn,"শেষ কথা-২২ রোজার আগে সরকার বলেছে- বাজারে জিনিস পত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।সত্যি কথা বলতে কোনো জিনিস পত্রের দাম নিয়ন্ত্রনে নেই। আমাদের দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশী- কেউ তাদের খোঁজ রাখে না। আমি নিজে ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটা বাজার ঘুরে ঘুরে দেখেছি। একদল মানুষ পাগলের মতন শুধু কিনে যাচ্ছে। কোনো জিনিস দামা-দামী করছে না। আর একদল মানুষ দশটা টাকা কমানোর জন্য খুব দামা-দামী করছে। আর যারা একদম গরীব তারা বাজার ঘুরে ঘুরে সারাদিন সংগ্রহ করে পড়ে থাকা- একটা আলু, পেঁয়াজ এবং ফেলে দেওয়া শবজি ।গুলো বাসায় নিয়ে রান্না করে খায়। দুঃখের কথা হচ্ছে- এই পবিত্র মাসে দরিদ্র মানুষ গুলোর কষ্ট খুব বেশী কষ্ট হয়। কয়েকজন ব্লগারদের ধরে নিয়ে জেলখানায় আটকে রাখল।আর কু রুচির বুড়া, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী- মেয়েদের নিয়ে চূড়ান্ত রকমের অশালীন কথা বলেছে- তাকে কেন জেলখানায় পাঠানো হলো না? আমি যদি পারতাম বাংলাদেশের সমস্ত মাদ্রাসা বন্ধ করে দিতাম। মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা গ্রহন করে কোনো লাভ নেই। আলেম দিয়ে দেশের কোন উপকার টা হয় ? বরং জঙ্গি তৈরি হয়। ওয়াজ করা, মিলাদ পড়ানো, কেউ মরে গেলে কোরান খতম করা। আজাইরা কাজ কাম।অসংখ্য বিত্তবান মানুষ নিয়মিত মসজিদ মাদ্রাসায় টাকা দেয়। তারা টাকা দেয় কারন তারা এই টাকা গুলো অসৎ ভাবে ইনকাম করেছে। তাদের মনের মধ্যে তীব্র অপরাধ বোধ- সেই বোধ থেকে বাঁচার জন্য তারা মসজিদ মাদ্রাসা এতিম খানায় টাকা দেয়। যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন, কেন করেছেন ? যুদ্ধে শেষে স্বাধীনতা পাবার পর সরকারের কাছ থেকে সুবিধা পাওয়ার জন্য?কোটার মাধ্যমে যারা চাকুরীতে ঢুকতেছে এমনিতেই তারা কম যোগ্য। এতে করে রাষ্ট্র ও তার নাগরিকরা উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।বাংলাদেশের মেধাবী তরুণ সমাজ কোটা বাতিল এর জন্য আন্দোলন করছে।কোটা তাদের জন্যই প্রযোজ্য যাদের সমাজে চলার মত শক্তি নেই। আমি অনেক সরকারি অফিসে মুক্তিযোদ্ধাদের দেখেছি- তারা কোনো নিয়ম মানতে চান না। তারা কখনও লাইনে দাড়াবেন না। তাদের জামার পকেটে মুক্তিযোদ্ধা লেখা ব্যাচ থাকে। কেউ কেউ সনদপত্র নিয়ে আসেন- আমি মুক্তিযোদ্ধা আমার ছেলেকে চাকরী দিতে হবে। আমি মুক্তিযোদ্ধা আমি লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবি থেকে তেল চিনি আটা নিতে পারব না। আমাকে আগে দাও। মাঝে মাঝে আমাদের দেশের মন্ত্রী গুলো খুবই নির্বোধের মত কথা বলেন ।নির্বোধ দিয়ে কি দেশের উন্নতি সম্ভব? আমি ভুলতে পারি না- ফেলানির কথা, সাগর-রুনির কথা, বিশ্বজিতের কথা, ইলিয়াস আলীর কথা।আমি হাজার চেষ্টা করেও ভুলতে পারি না।মানুষের ছোট খাটো মানবিক আচরণগুলো আমাকে খুব স্পর্শ করে।আজ পৃথিবীটা কোথায় পৌছেছে? পৃথিবীতে আজ কেন এত বৈষম্য?দারিদ্রতা দূরীকরণে সরকার আজ নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করছে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট ভদ্র মহোদয় ও মহোদয়াগণ বিভিন্ন সভা সেমিনারে হাজার ও বক্তব্য প্রদান করছেন !আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি- হাসিনা খালেদার দল দেশের জন্য ভালো কিছু করার ক্ষমতা রাখেন না। দুই দলের সবাই সবচেয়ে ভালো পারেন- দুর্নীতি করতে। কোন দলের আমলেই দেশের আশানুরুপ উন্নয়ন হয় নি।যা হয়েছে তা হল- দূর্ণীতি, প্রশাসনে দলীয়করণ, বিচার বিভাগে নগ্ন হস্তক্ষেপ, জাতীয় প্রচার মাধ্যমকে দলীয় প্রচার মাধ্যমে পরিণতকরণ, বিভিন্ন স্থাপনার নাম ও ফলক পরিবর্তন, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্য, আইন-শৃংখলার অবনতি, এমপি-মিনিষ্টারদের সীমাহীন বিলাসিতা, ইভটিজিং, সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মবিরোধী আইন পাস, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ( প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, বন্দর ইত্যাদি) বিদেশী কোম্পানীদের কাছে লিজ দিয়ে দেশের মূল্যবান সম্পদ নষ্ট করা ইত্যাদি ইত্যাদি.....লিখে বোধ করি শেষ করা যাবে না। দুর্নীতি বাজদের ধরা কোনো ব্যাপার না। তাদের সবাই চিনে জানে। তাদের গ্রেফতার করে তাদের বিষয়-সম্পত্তি সব নিয়ে নেওয়া হোক। ইদানিং রাস্তায় মোড়ে মোড়ে অনেক পুলিশ চেকপোষ্ট দেখা যায়। এরা সাধারন মানুষদের হয়রানি করে। হা করে জিভ দেখে। ম্যানি ব্যাগ দেখে- নানান প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। আজাইরা এই কাজ গুলো করে। অবশেষে দুই চার জনকে নানান ভয় ভীতি দেখিয়ে-কিছু টাকা নিয়ে নেয়। সতিকার অর্থে পুলিশ'রা খুব ভালো করেই জানে- এসমাজে কারা খারাপ কাজ করে। কোথায় করে। ইচ্ছা করলে দুই ঘন্টার মধ্যে পুলিশ সমস্ত ঢাকা শহরের অসৎ লোকদের ধরে ফেলতে পারে। কিন্তু উপরের নির্দেশে তারা এই কাজ করবে না। আমি নিজে সারা ঢাকা শহর ঘুরে পুলিশ চেকপোষ্ট গুলোর কর্ম কান্ড দেখেছি।পুলিশ চেকপোষ্ট নিয়ে বড় করে একটা লেখা লিখব।যে ইয়াবা খায়- তাকে পুলিশ ধরবে আর যে ইয়াবা বিক্রি করে তাকে ধরবে না। আজিব ! ""শেষ কথা"" এটা আমার একটা ধারাবাহিক লেখা। শেষ কথাতে আমি সব সময় নিজের জীবনের কথা লিখি। কিন্তু এবার নিজের কথা কিছুই লিখলাম না। এখন রাত একটা। কম্পিউটার বন্ধ করে ব্যালকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট খাবো। সিগারেটের আগে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খাবো। আজ গোছল করা হয়নি। সকালে দাঁত ব্রাশ করতে ভুলে গিয়েছিলাম- বিকালে ব্রাশ করেছি। সারা দিনে রাস্তার পাশের দোকান থেকে বেশ কয়েক কাপ চা খেয়েছি- কিন্তু এক কাপ চা-ও আরাম করে খেতে পারিনি। একগাধা চিনি দিয়ে রাখে। বললে শুনে না। ওরা মনে করে চিনি বেশী দিলেই চা ভালো হয়। অনেকদিন ধরে গান শোনা হয় না। রবীন্দ্রনাথের দু'টা গান খুব শুনতে ইচ্ছা করছে- ""পাগলা হাওয়ার বাদ্দল দিনে"" আর ‘আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে' ।",False hm,"প্রবাসে দৈবের বশে ০১২ আজ কেবল বক্তৃতা শোনার ছিলো। ইথিওপিয়ার নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবস্থার সাম্প্রতিক অবস্থা ও সম্ভাবনা নিয়ে বক্তৃতা দিলেন আদ্দিস আবাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর-ইঞ্জ. আসেফা। ড. আসেফা ইংল্যান্ডে মাস্টার্স করেছেন, প্রোমোৎসিওন (ডক্টরেট) করেছেন জার্মানীর বাঘা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এরভেটেহা আখেন থেকে। তিনি আদ্দিস আবাবা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর একটি মাস্টার্স পর্যায়ের কোর্স প্রণয়ন করতে চান, এ ব্যাপারে নানা সহযোগিতা দেবে কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়। কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপশক্তিপ্রকৌশল বিভাগ এই বক্তৃতার আয়োজন করেছে, ড. ফায়েন তাঁর স্বভাবসুলভ খসখসে গম্ভীর গলায় জানালেন, ড. আসেফা যদিও জার্মান ভালো জানেন, কিন্ত সমস্যা হচ্ছে তিনি ইংরেজি আরো ভালো জানেন, তাই বক্তৃতাটা দেবেন ইংরেজিতে। তবে বক্তৃতার পরে জার্মান ভাষায় এক দফা আলোচনা হবে। ড. আসেফা তাঁর ল্যাপটপের সাথে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর জুড়তে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছিলেন, তিনি কাজ ফেলে হাঁ হাঁ করে উঠলেন, নে, আউফ এংলিশ! ড. ফায়েন মুচকি হেসে বললেন, দুঃখিত, অনেক বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলছি ছাত্রদের। ড. আসেফার বক্তৃতা শুনে খুব তৃপ্তি পেয়েছি বলা চলে না, ভদ্রলোকের প্রেজেন্টেশন কিছুটা তথ্যঅপ্রতুলতায় ভুগছিলো, আর মসৃণ প্রেজেন্টেশন হয়নি মোটেও। জার্মানরা যে কোন জিনিসের পরিমাণগত ব্যাপারে সবসময় খুব যত্নবান, কোন যন্ত্রের নকশা প্রেজেন্টেশনে ব্যবহার করলে সেটার মাপজোক সবসময় লেখা থাকবে। প্রশ্নোত্তর পর্বে এসে ড. আসেফা একটু হিমসিম খেয়ে গেলেন, কারণ অনেক প্রশ্নের উত্তরই তিনি জানেন না। আমি জানতে চেয়েছিলাম ইথিওপিয়ার কতভাগ লোকের আয়ত্বে ইলেকট্রিসিটি আছে, তিনি বেশ কিছুক্ষণ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে জানালেন, তাঁর সঠিক জানা নেই, তবে ২% হতে পারে, এর বেশি হবে না। জার্মান ছাত্ররা কয়েকজন দুর্দান্ত ইংরেজি জানে, তবে বেশিরভাগের ইংরেজিতে কিছু সমস্যা আছে, যেমন আমার জার্মানে আছে আর কি, সেই ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতেই কয়েকজন তর্ক শুরু করে দিলো। ড. ফায়েন কঠিন হেসে বললেন, কোন সমস্যা না, এ ব্যাপারে আমরা পরেও আলোচনা করতে পারি। ব্যস, তর্ক আবার শুষ্ক ভদ্রতার সীমার মধ্যে ফিরে এলো। ইথিওপিয়া বাংলাদেশের মতোই রাজনীতি আক্রান্ত দেশ, সেখানে মন্ত্রীমিনিস্টারদের সাথে ওঠবোস থাকলে অনেক কিছু সম্ভব, ড. আসেফার কথা থেকে বোঝা গেলো। ৭০০ মেগাওয়াটের মতো জলবিদ্যুৎশক্তি আছে এখন, তবে ২০ থেকে ৩০ গিগাওয়াট পর্যন্ত নাকি সেটাকে বাড়ানো সম্ভব। অনেকগুলি ছোট ইউনিট না বানিয়ে কয়েকটা বড় ইউনিট বানাতে আগ্রহী সরকার (কারণ বোঝা সহজ, একসাথে অনেক পয়সা নয়ছয় করা যাবে, আমাদের গন্ডার ব্যানাহুদার ম্যাগনেটিক ট্রেনের মতো)। এছাড়া সৌর বিদ্যুৎশক্তিও বেশ প্রতিশ্রুতিশীল, কিন্তু এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি গবেষণা ছাড়া। গবেষণার দশাও খুব একটা ভালো নয়। তবে ইথিওপিয়ায় কফিবীজ শুকানোর জন্য সৌরশুষ্ককারক ব্যবহার করা হয়। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশেপাশে বায়ুচিত্র বেশ ভালো, সেখানে বায়ু আর পানির বার্ষিক প্রোফাইল বেশ ইন্টারেস্টিং, একটা কমলে আরেকটা বাড়ে, কাজেই দুটোর খিচুড়ি বানালে বেশ কাজে দেবে। ইথিওপিয়া আফ্রিকার বৃহত্তম গবাদিপশুর দেশ, ড. আসেফা অকপটে জানালেন, এই পশুর গু না থাকলে ইথিওপিয়াও থাকতো না, কারণ গোটা দেশে বন প্রায় উজাড় হয়ে গেছে, গত পঞ্চাশ বছরে ৩৫% থেকে ৫% এ নেমে এসেছে বনভূমি। ইথিওপিয়ায় ১১ লক্ষ বর্গকিলোমিটারে ৭৮ মিলিয়ন লোক বাস করে, সরকার বাহাদুর হুকুম জারি করেছেন, প্রত্যেককে একটা করে গাছ লাগাতে হবে। আমি মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদায় পড়েছিলেম, ইথিওপিয়ার সম্রাট দ্বিতীয় মেনেসিস নাকি রাজধানী ঘিরে শুধু ইউক্যালিপ্টাস লাগিয়েছিলেন, আদ্দিস আবাবা শহরটাই নাকি ইউক্যালিপ্টাসের গন্ধে ভরা। মনে পড়ে গেলো জ্যারেড ডায়মন্ডের কোল্যাপ্সের কথা, অপরিকল্পিত বনায়নও মানুষের অকল্যাণ ডেকে আনতে পারে, বিশেষ করে ইউক্যালিপ্টাসের মতো পানিখোর গাছ। অবশ্য এ নিয়ে ড. আসেফার সাথে পন্ডিতি করার দুশ্চেষ্টা করিনি। তবে একটু বিস্মিত হয়েছি ড. আসেফার প্রস্তুতির অভাব দেখে। সম্ভবত তিনি একেবারেই গাণিতিক প্রয়োগের দিকটা দেখেন, প্রেজেন্টেশনের ব্যাপারে তাই কিছু কাঁচা জায়গা রয়ে গেছে। এদিকে আমার সামনে একটা বক্তৃতা দিতে হবে এক কোর্সে, ড. আসেফার অবস্থা দেখে আমিও রীতিমতো শঙ্কিত। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় একটা কাঁচা কাজ করেছে ছাত্রদের নিয়ে, প্রেজেন্টেশনের ওপর কোন গুরুত্ব দেয়নি। দীর্ঘ আন্ডারগ্র্যাড জীবনে আমি ক্লাসরুমে কোন প্রেজেন্টেশন করিনি, আমার প্রেজেন্টেশন দক্ষতা নেই বললেই চলে, যৎসামান্য যা আছে তা বিভিন্ন তৎপরতার সূত্রে। আমি এখন ফাটিয়ে প্রেজেন্টেশন পেপার বানাবো ঠিক করছি। লম্বু জামুয়েলকে মুরগি হিসাবে পাকড়াও করবো, ওর প্রশ্নগুলিকে সম্ভাব্য ধরে নিয়ে সেগুলির ওপর প্রস্তুতি নেবো। বসে বসে হ্যাজাবো না।",False fe,"প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বনাম ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বনাম ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাফকির ইলিয়াস---------------------------------------একটি সংবাদ আমাকে নিথর করে দিয়েছে। ব্যথিত হয়েছি, কিন্তু অবাক হইনি। কারণ এ দেশে এখনও এমন কিছু মানুষ আছে যারা মুক্তিযুদ্ধ মানে না। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করে না। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা চালায়। খবর বেরিয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও অসত্য তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছেন পাঁচ সচিব। দুদকের দীর্ঘ ৬ মাসের অনুসন্ধান শেষে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কী মারাত্মক কথা! এভাবেও মুক্তিযোদ্ধার সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করা যায়?এ দেশে ৪৪ বছর আগে মুক্তিসংগ্রাম হয়েছিল। আমি সেই মহান মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি। তাই জানি কী ভয়াবহ ছিল সেসব দিন। কীভাবে গোলার আওয়াজ স্তব্ধ করে দিয়েছিল আমার মতো লাখো বালক-বালিকার বুকের পাঁজর। সেই মুক্তিসংগ্রামে যারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা। জীবনবাজি রেখে তারা যুদ্ধ করেছিলেন দেশমাতৃকার জন্য। তাদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। আজ থেকে শত বছর পর এ বাংলাদেশে আর কোনো জীবিত মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা এ সত্য জানি ও মানি। তারপরও দেশের রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা সেই মুক্তিসেনানীদের নিয়ে নানারকম ‘কূটচাল’ করছে। দলীয়করণ করছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চাইছে। বিষয়গুলো ভাবতেই কষ্ট হয়।২০১১ সালে বাংলাদেশের সরকার নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর আগের তালিকা থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে বাদ দেয়াসহ মুক্তিযোদ্ধার তালিকাকে বিতর্কমুক্ত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি উপজেলা থেকে যাচাই-বাছাই করে ইউএনও’র মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছিল। বলা হয়েছিল, নতুন সফটওয়্যার খুলে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ডেটাবেজ তৈরির কাজ শুরু করবে। এরপর জনসম্মুখে তালিকা প্রকাশ করে তা চূড়ান্ত করা হবে। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাকে ৯টি সিকিউরিটি কোডমার্ক সংবলিত বিশেষ আইডি কার্ডও দেয়া হবে। তা কতটুকু হয়েছে আমার জানা নেই।সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই সরকার অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। যাতে কোনো অমুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান না পায় সেজন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে পাওয়া তথ্য সমন্বয় করে একটি অত্যাধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে মন্ত্রণালয় থেকে ডেটাবেজের মাধ্যমে এ তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। সরকারি নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, চলমান তালিকায় কোনো অমুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকলে তা অবশ্যই বাদ পড়বে।প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নির্ণয়ের এ প্রচেষ্টা নতুন ছিল না। তবে সব সময়ই তা করা হয়েছে নিজ নিজ দলীয় আদলে। মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা দেখেছি প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর স্বাক্ষর করা সনদ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হাতে। এরপর থেকেই তা বদলেছে শাসকগোষ্ঠীর ইচ্ছা অনুসারে। ফলে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ও একেক সময় একেক রকম তথ্য পাওয়া পাওয়া গেছে।আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধফেরত সৈনিকদের কদর কেমন তা জানি এবং দেখি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ভেটার্নস ডে’ পালন করা হয় শুধু যুদ্ধ প্রত্যাগত সৈনিকদের সম্মাননা জানানোর জন্য। এখানে সৈনিকদের জন্য নির্ধারিত সমাধিস্থলে গেলে মনে হয় কী পরম শান্তি ও শ্রদ্ধা-মমতায় ঘুমিয়ে আছেন তারা। আর জীবিত যুদ্ধ প্রত্যাগত সৈনিকরা যে সম্মান পাচ্ছেন, তা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিদান বলা যায়।অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা দিন কাটাচ্ছেন অনাহারে-অর্ধাহারে। এখনও অনেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত। সম্পদ ও কর্মহীন অনেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার তাদের পরিবারের সদস্যদের খাদ্যের জোগান দিতে এখনও ভিক্ষাবৃত্তি, দিনমজুরি, রিকশা চালানোসহ অনেক কঠোর পরিশ্রমের পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবনযাপন করছেন। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধ্বংস করে, মনগড়া কল্পিত ও মিথ্যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করে আদর্শহীন, দুর্নীতিবাজ একটি শ্রেণী সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত, নষ্ট ও ধ্বংস হয়েছে এদের হাতেই। অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে কিছু মুক্তিযোদ্ধাকেও।মুক্তিযুদ্ধে একটি বিশেষ অংশগ্রহণ ছিল নারী সমাজের। পরিসংখ্যান অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধে দেশের ৩০ লাখ মানুষ গণহত্যার শিকার হয়, যার অন্তত ২০ শতাংশ নারী। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সরকারি নথিপত্রে এর কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। বিভিন্ন ভাষ্যমতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ২ লাখ মা-বোন নির্যাতিত হয়েছেন। কিন্তু মাঠভিত্তিক গবেষণা চালাতে গিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের গবেষণা কর্মীদের মনে নিশ্চিত ধারণা জন্মেছে, মুক্তিযুদ্ধকালে নির্যাতিত নারীর সংখ্যা যা এতদিন বলা হয়ে আসছে, আসলে তা এর চেয়ে অনেক বেশি।তবে এতদিন পর তথ্য-প্রমাণ দিয়ে হয়তো এসব প্রমাণ করার সুযোগ কম। তাছাড়া নির্যাতিতরা সামাজিক সম্মান ও নিরাপত্তার কারণেই চান না এতদিন পর এসব নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি হোক। এসব কারণেই অনেক নির্যাতিত নারী তাদের ওপর নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনী গবেষণা কর্মীদের কাছে মুখে মুখে বললেও তা টেপরেকর্ডারে রেকর্ড করতে বা লিপিবদ্ধ করতে দিতে চাননি।এ প্রসঙ্গে একটি সাম্প্রতিক ঘটনা বলা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ওপেনিং স্টেটমেন্ট শেষ হয়েছে। প্রসিকিউশন তাদের স্টেটমেন্টে বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতা সাঈদী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাড়েরহাট বন্দরের বিপদ সাহার মেয়ে ভানু সাহাকে নিয়মিত যৌননির্যাতন করতেন। বিপদ সাহার বাড়িতেই আটকে রেখে অন্যান্য রাজাকারসহ ভানু সাহাকে নিয়মিত ধর্ষণ করতেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। একসময় ভানু সাহা দেশত্যাগে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।স্টেটমেন্টে আরও বলা হয়, সাঈদী একাত্তরে অসংখ্য হিন্দুকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করেছিলেন, নামাজ পড়তেও বাধ্য করেছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বধর্মে প্রত্যাবর্তন করেন এবং কেউ কেউ ভারতে চলে যান।এটি হল আমাদের মুক্তিসংগ্রামের একটি খণ্ডচিত্র। কী মূল্য দিয়ে কেনা আমাদের স্বাধীনতা! অতীতে যে তালিকাগুলো হয়েছে সেগুলো কি স্বচ্ছ ছিল? একটা উদাহরণ দেয়া যাক। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অনেক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম থাকলেও তাতে ঠাঁই হয়নি কুড়িগ্রামের বীরপ্রতীক তারামন বিবির নাম।আমরা জানি, মুক্তিযোদ্ধারা চিরদিন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন না। কিন্তু তাদের কর্ম, তাদের স্বপ্ন, তাদের গৌরবগাথা আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে। জাগ্রত থাকবে তাদের চেতনা। থাকতেই হবে। না থাকলে বাংলাদেশ থাকবে না। বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব থাকবে না। সেই প্রত্যয় ও ঐতিহ্যের শক্তিই প্রজন্ম ধরে রাখতে চায়।তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। আমরা দেখছি, আজ রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়ার চেষ্টা করছে। বোল পাল্টে হতে চাচ্ছে মুক্তির নিয়ামক। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সম্মান চান। যে দেশে কোটি কোটি টাকা লুটেরা শ্রেণী প্রতিদিন লুটপাট করে, সেই দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধা মাসে ৫ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা পাবেন না, তা মেনে নেয়া যায় না। তাই হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়, রাষ্ট্রীয় সম্মান, রাষ্ট্রের মানুষের সম্মান বাড়ানোর জন্যই জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক পুনর্বাসন দরকার। দরকার পরলোকগত মুক্তিযোদ্ধদের পোষ্য, সন্তান, পরিবারকেও সার্বিক সহযোগিতা করা। কারণ একাত্তরের বীরসেনানীরা বারবার জন্ম নেবেন না। আর যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, প্রকারান্তরে তারা আসল মুক্তিযোদ্ধাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করছেন।-------------------------------------------------দৈনিক যুগান্তর ॥ ঢাকা ॥ প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রোববার",False fe,"অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়ছে, শান্তির উদ্যোগ বাড়ছে না অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়ছে, শান্তির উদ্যোগ বাড়ছে নাফকির ইলিয়াস ======================================= নতুন করে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা কাঁপিয়ে তুলেছে বিশ্ব পরিস্থিতি। কদিন আগে ইরান দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিরীক্ষা করেছে। ত নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইরানের হাতে পরমাণু অস্ত্র গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের হাতে আণবিক বোমা থাকলে, ইরানের হাতে কেন থাকবে না? থাকলে অসুবিধা কোথায়? ইরানের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেছেন, তারা তাদের পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবেন। তা কেউ রুখতে পারবে না। তার মতে বিশ্বে অস্ত্র প্রতিযোগিতার সমতা রক্ষা করা দরকার।এর মধ্যেই হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সংবাদ শিরোনাম হয়েছে উত্তর কোরিয়া। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন উত্তর কোরিয়ার প্রতি। তিনি বলেছেন, উত্তর কোরিয়া যে নতুন মিসাইল টেস্ট করেছে তা বিশ্বশান্তির পরিপন্থী। ওবামা বলেছেন এর বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানো দরকার। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, উত্তর কোরিয়া তাদের ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও নিরীক্ষার পাশাপাশি দূরপাল্লার মিসাইল টেস্টও শুরু করেছে। তাদের এই দায়িত্ব জ্ঞানহীন প্রচেষ্টা মেনে নেয়া যায় না। এ জন্য তিনি জাতিসংঘসহ সকল বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সিকিউরিটি কাউন্সিল এর সমুচিত ব্যবস্থা নেয়া খুবই জরুরি। লক্ষণীয়, উত্তর কোরিয়া টেস্টগুলো সম্পন্ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পর পর দুটি বিবৃতি দিয়েছেন বারাক ওবামা। তিনি বলেছেন উত্তর-পূর্ব এশিয়ার মানুষের শান্তি আমরা এভাবে বিনষ্ট হতে দিতে পারি না। এটা খুবই দুঃখজনক, উত্তর কোরিয়া সকল নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পরমাণু অস্ত্র বানানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এদিকে উত্তর কোরিয়া বলেছে ২০০৬ সালে তারা যে অস্ত্র টেস্ট করেছিল, সে তুলনায় তারা এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। এবং তারা ভূগর্ভে ইতিমধ্যেই সে ধরনের টেস্ট সম্পন্ন করেছে। তারা মাটি থেকে আকাশের দিকে দূরপাল্লার মিসাইল নিক্ষেপের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন সূত্র। স্বল্প পাল্লার মিসাইল তারা নিক্ষেপ করতে সমর্থ হয়েছে বেশ আগেই।সম্প্রতি উত্তর কোরিয়াতে মিসাইলগুলো পর্যবেক্ষণ করেছে তা অতি শক্তিশালী বলে জানাচ্ছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা। মিসাইল টেকনোলজির ব্যাপক আধুনিকীকরণের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া বেশ শীর্ষে পৌঁছে গেছে বলেও জানাচ্ছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এর প্রেক্ষিতে ওবামা প্রশাসন, বেশ জোর দিয়েই বলছে, মিত্র শক্তিগুলোর সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়াকে রুখে দেয়ার এটাই উৎকৃষ্ট সময়।বারাক ওবামার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং অন্যান্য মিত্র শক্তিরা কি উদ্যোগ নেয় তা দেখার বিষয়। তবে উত্তর কোরিয়া এবং ইরান দুই দেশই পরমাণু শক্তি অর্জনের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য যে মরিয়া হয়ে উঠেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। উত্তর কোরিয়া যে শক্তি অর্জন করতে চাইছে, তাতে তারা নিজেরাই নিরাপত্তা এবং সম্মান দুটোই হারাবে। বারাক ওবামার এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ম্যাসেচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) এর পরমাণু বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হ্যারিস ব্রনসন বলেছেন, এই সময়ে প্রযুক্তির বিকাশ যখন গোটা বিশ্বকে বিকশিত করতে চাইছে তখন মারণাস্ত্র বানানোর প্রতিযোগিতা বন্ধের জন্য বৃহৎ শক্তিগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ গোপনে কোন দেশ কোথায় গবেষণা চালাচ্ছে সে খবর রাখা দুরূহ কাজ। তাছাড়া ‘তোমার কাছে আণবিক বোমা থাকবে আমার কাছে থাকবে’ না এমন মানসিকতাও কাজ করছে নেপথ্যে। ফলে বিশ্বে অস্ত্র প্রতিযোগিতার মহড়া যতোটা বাড়ছে, শান্তি উদ্যোগের প্রচেষ্টা ততোটা বাড়ছে না।এ বিষয়টি খুবই ওপেন সিক্রেট যে বিশ্বে শান্তিকামী মানুষের সংখ্যা বেশি থাকার পরও কতিপয় অস্ত্র ব্যবসায়ী, স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে বিশ্ব সভ্যতা এখন জিম্মি দশার ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। মুখে শান্তি প্রতিষ্ঠার সিঁড়ি নির্মাণের কথা বললেও ক্ষমতাবান শীর্ষরা, তা নানা কারণে পেরে উঠছেন না। বারাক ওবামা ক্ষমতায় আসার পর পর জোর দিয়েই বলেছিলেন, তার সরকার গুয়ান্তানামো বে বন্দী শিবির বন্ধ করে দেবেন। সেখানের বন্দী নির্যাতনের চির অবসান হবে। কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তা তিনি পারছেন না। মার্কিন সিনেট তা নিয়ে কয়েক দফাই বাধা দিয়েছে ওবামা প্রশাসনকে। মার্কিন সিনেটররা বলছেন, এই বন্দী শিবির বন্ধ করে দিলে যুক্তরাষ্ট্র তার দাপটের প্রত্যয় থেকে সরে আসবে। যা এক ধরনের নৈতিক পরাজয়ের শামিল। এই বন্দী শিবিরে মোহাম্মদ জাওয়াদ নামের বারো বছরের একটি আফগান শিশু বন্দী রয়েছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, সে দুজন মার্কিন সৈন্যকে কাবুলে গ্রেনেড আক্রমণ করে মারাত্মক আহত করেছিল। এই শিশুটির মামলা বিষয়ে কাবুল ও ওয়াশিংটনের বিচার ব্যবস্থা আবারো দাঁড়াচ্ছে মুখোমুখি। কাবুলের আইনজীবীরা বলছেন, শিশুটির প্রতি নির্মম আচরণ করা হয়েছে। তাকে কাবুলের হাতে ছেড়ে দেয়া দরকার। এভাবে বেশ কয়েকটি দেশের বন্দী নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখোমুখি নিত্যই হতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। ক্ষুন্ন হচ্ছে মানবাধিকার।এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্পিকার অব দ্য হাউস ন্যান্সি পেলোসি সম্প্রতি চীন সফর করেছেন। এ সময়ে তিনি চীনে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে বেশি কিছুই বলেননি। অনেকেই মনে করেছিলেন ন্যান্সি পেলোসি মানবাধিকার বিষয়ে চীনে জোরালো বক্তব্য দেবেন। কারণ বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থার মতে চীনে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ন্যান্সি পেলোসি এমন এক সময় চীন সফরে যান যখন সেখানে ১৯৮৯ সালে তিয়ানানমেন স্কোয়ারের গণতন্ত্র চাওয়ার অপরাধে ঐতিহাসিক ক্র্যাকডাউনের বিশতম পূর্তি পালনের প্রস্তুতি চলছিল।অবশ্য ‘আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন সাংহাই’-এর দেয়া এক সংবর্ধনা সভায় মার্কিন স্পিকার অব দ্য হাউস বেশ জোর দিয়েই বলেছিলেন, আমি চীনসহ বিশ্বের সকল দেশে মানবাধিকার ও শান্তির সপক্ষে আমার জোরালো বক্তব্য অব্যাহত রাখবো। কিন্তু চীনা শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় তিনি এমন কোনো দাবি তোলেননি।বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নেয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। তিনি বারাক ওবামার সঙ্গে ডিবেট করার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছেন। ‘আগামী মাসের অনুষ্ঠিতব্য ইরানের নির্বাচনে যদি নির্বাচিত হই তবে আসছে জাতিসংঘ অধিবেশনেই আমি ওবামার সঙ্গে ডিবেটে বসতে চাই’। এমন ইচ্ছাই জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। তিনি আরো বলেছেন, ধমকের মুখে ইরান ইউরোনিয়াম প্লান্ট বন্ধ করবে না।সব মিলিয়ে বিশ্বে অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং হুমকির রাজনীতি বেড়েই চলেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সেই তুলনায় শান্তির উদ্যোগ বাড়ছে না মোটেও। ক্ষমতাবানরা তাদের পেশিশক্তি দিয়ে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। যা নানা রকম ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। শুধুমাত্র পারস্পরিক আলোচনাই নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে। -----------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ।ঢাকা। ৩০ মে ২০০৯ শনিবার প্রকাশিত",False fe,"এ কেমন আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া! এ কেমন আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া!ফকির ইলিয়াস_____________________________________এটা কোনো যুদ্ধ নয়। এটা স্পষ্টত গণহত্যা। যা চলছে, তা মেনে নেয়ার কথা নয়। তারপরও বিশ্বের বড় বড় শাসকরা যেন নির্বাক। গণহত্যার প্রতিবাদ যে হচ্ছে না, তা নয়। কিন্তু তাতে তারা কর্ণপাত করছে না, যারা এই যুদ্ধ থামাতে পারে। সম্প্রতি নিউইয়র্কে আমরা একটি কবিতা পাঠ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। আগ্রাসনবিরোধী কবিতা। এই কঠিন সময়ে বিশ্বের অনেক দেশেই শিল্পী, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, শ্রমজীবী, পেশাজীবী, কবি, লেখক সবাই প্রতিবাদী। তাদের চোখে-মুখে তীব্র ক্ষোভ।নিউইয়র্কেও কবিদের এই প্রতিবাদী পঙ্ক্তিমালা আবারও জানিয়ে দিয়েছে, এই বিশ্বে আগ্রাসনের স্থান নেই। এই বিশ্ব হবে আগামী প্রজন্মের জন্য শান্তির নিবাস। গত ৩১ জুলাই বিকালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয় আগ্রাসনবিরোধী কবিতা পাঠ। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে কবি-আবৃত্তিকাররা অংশ নেন এ অনুষ্ঠানে।সৃজনশীল মানুষ মাত্রেই সব আগ্রাসনের প্রতিবাদ করেন। সব মানুষই শান্তি-সম্প্রীতি চান। বিশ্বে যারা ক্ষমতাবান, তাদের উচিত যুদ্ধ বন্ধে শিগগিরই উদ্যোগ নেয়া। কারণ গাজায় যে গণহত্যা চলছে, তা যুদ্ধাপরাধের শামিল। কবিতা পাঠপূর্ব আলোচনায় এমন কথাই ব্যক্ত করেন কবিরা। তারা বলেন, আরব মুল্লুকের নেতাদের নীরবতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে শংকা।দুই.গাজার গণহত্যা বিশ্বকে কোথায় নিয়ে যাবে, এমন প্রশ্ন অনেকের। একটি খবর আমাদের নজরে পড়ছে। ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসসহ সেখানকার অন্যসব প্রতিরোধ আন্দোলনকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করতে প্রস্তুত ইরান। ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আলী জাফারি এ কথা বলেছেন।তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোকে ইরান বিভিন্ন দিক দিয়ে সহায়তা করতে চায়। মুসলমানদের রক্ষার ক্ষেত্রে তেহরান শিয়া-সুন্নির বিষয়টি কখনও আলাদা করে দেখে না।গাজার চলমান সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে ইরানের এ কমান্ডার বলেন, বর্তমান ঘটনাবলী ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ শক্তি সীমাহীন এবং দিন দিন তা বাড়ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অবরুদ্ধ গাজা থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অভ্যন্তরে যে পরিমাণ রকেট ছোড়া হয়েছে এবং ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে হামাস যেভাবে স্থল অভিযানের সময় লড়াই করেছে, তাতে প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর শক্তি বেড়ে যাওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।জেনারেল জাফারি বলেন, গাজা ও ইরাকের চলমান ঘটনাবলী আমেরিকা ও ইসরাইলের যৌথ প্রকল্প। তবে শিয়া-সুন্নির ঐক্যের মুখে শিগগিরই দখলদার ইসরাইল সরকারের পতন হবে এবং ইরান সেদিনের জন্য প্রস্তুত।বিষয়টি ভাবার তো বটেই। কোথায় চলেছে বিশ্ব? কেন বিশ্বের নীতিনির্ধারকরা চোখ বুজে আছেন?জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফা এলাকায় জাতিসংঘের আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত স্কুলে ইসরাইলি হামলাকে অনৈতিক ও অপরাধমূলক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এ ধরনের মানসিক ভারসাম্যহীন কর্মকাণ্ড অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ইসরাইলের এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লংঘনের শামিল বলেও জানান তিনি। বান কি মুন বলেন, জাতিসংঘের স্কুলে ইসরাইলের হামলার ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লংঘন। তিনি আরও বলেন, স্কুলের অবস্থান সম্পর্কে ইসরাইলকে নিয়মিত অবহিত করা হয়েছে।প্রিয় পাঠক, আরও কিছু মিনমিনে ভাষার প্রতিবাদ এখানে পড়ুন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মহিলা মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের এ ধরনের লজ্জাজনক গোলাবর্ষণে মর্মাহত। তিনি এ ঘটনার একটি পূর্ণাঙ্গ ও ত্বরিত তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। সাকি বলেন, ইসরাইলিদের অবশ্যই তাদের মান বজায় রাখতে ও বেসামরিক প্রাণহানি এড়াতে আরও অনেক কিছু করতে হবে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বলেছেন, জাতিসংঘের স্কুলে হামলা অগ্রহণযোগ্য। তিনি জানিয়েছেন, ইসরাইল বলেছে স্কুলে হামলার ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর অনিচ্ছাকৃত যে কোনো হামলার জন্য তেলআবিব দুঃখিত। তবে তিনি হামাসের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের স্থাপনাগুলোকে সন্ত্রাসী আখড়ায় পরিণত করার অভিযোগ করেছেন।কী এক ভয়ানক পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে ফিলিস্তিন আর সে দেশের সাধারণ মানুষেরা! জুলুমেরও তো একটা সীমা আছে। ইসরাইলি জালেমরা আর কত শিশু-নারী-অসহায় মানুষের রক্তে তাদের হাত রাঙাবে?--------------------------------------------------------------দৈনিক যুগান্তর ॥ ঢাকা ॥ প্রকাশ : ০৭ আগস্ট, ২০১৪ বৃহস্পতিবার",False hm,"প্রবাসে দৈবের বশে ০১৫ জার্মানির খুব বেশি শহর আমার দেখা হয়নি। মিউনিখে প্রথমবার যখন আসি তখন রেগেন্সবুর্গে গিয়েছিলাম, ন্যুর্নবের্গ যাওয়া হয়নি, উলমেও না, গিয়েছি পূর্ব দিকে, অন্য দেশে, জালৎসবুর্গ আর ভিন এ। কাসেলে এবার আসার পর এরফুর্ট গিয়েছিলাম, আজ গেলাম ডর্টমুন্ডে। ফোক্সভাগেন যে একটা ভালো গাড়ি আজ রগে রগে টের পেয়েছি আমরা পাঁচজন। যিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি বেশ দুর্ধর্ষ ড্রাইভার আর দুর্দান্ত ঠান্ডা মাথার লোক, তাই এখনো বেঁচে আছি সবাই। জার্মানির আউটোবানগুলি সেইরকম, ঘন্টায় দেড়শো থেকে দু'শো কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলে, আমরাও চলছিলাম একশো আশিতে, ঘটনাটা যখন ঘটলো তখন গাড়ির গতিবেগ দেড়শো। সামনের একটা গাড়ি কথানেইবার্তানেই ফট করে বাঁয়ে চেপে গেলো। দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো মারাত্মক, ঘটেনি। ড্রাইভারের পাকা হাত, ফোক্সভাগেনের গড়ন, যে গাড়ি ধাক্কা মারলো তার হালকাপাতলা সাইজ, ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। তবে ততক্ষণে যা ঘটে গেছে সেটা হলো প্রায়দুর্ঘটনা। সেই ঘাতক গাড়ি আর আমরা, দু'জনেই ডানে চেপে গাড়ি সাইড করলাম। পিচ্চি এক মহিলা গাড়ি থেকে নেমে এসে আলাপ জুড়ে দিলেন আমাদের সাথে। গাড়ি থেকে একটা লাল হলুদ ""আখটুং!"" চিহ্ন বার করে শ'খানেক গজ দূরে রেখে আসা হলো। গাড়ি রেন্ট-আ-কারের, তাদের সাথে যোগাযোগ করার পর তারা পরামর্শ দিলো পুলিশকে জানাতে। আমাদের গাড়িতে একটা স্ক্র্যাচ পড়েছে শুধু, সেই মহিলার গাড়ির ডান দিকের রিয়ারভিউ মিরর ভেঙে গেছে। পুলিশ এলো কিছুক্ষণ পর। টেকো এক মহিলা পুলিশ, আর তার সাথে বিষণ্ন চেহারার এক পুরুষ পুলিশ। মহিলা সব দেখলেন, তারপর কাগজ কলম বার করে জার্মানপুলিশোচিত ঠান্ডা গলায় শুরু করলেন জিজ্ঞাসাবাদ। আমরা জানালাম কী ঘটেছে। সেই পিচ্চি মহিলা আমাদের বক্তব্যকে সমর্থন করে শুধু সাফাই দিলেন, তার সামনে আরো একটা গাড়ি ছিলো, যা হঠাৎ ব্রেক করার কারণেই এই বিপত্তি। মহিলা পুলিশ যাবতীয় তথ্য নোট করে দিয়ে রায় দিলেন। দোষ ঐ মহিলার। জরিমানা একশো ইউরো। একশো ইউরো তার সাথে নেই, আপাতত তিরিশ ইউরো দিয়ে মহিলা পার পেলেন, বাকিটা পরে শোধ করতে হবে। আমাদের গাড়ির যে ক্ষতিপূরণ ক্লেইম করবে রেন্ট-আ-কার, সেটাও মহিলাকে পরিশোধ করতে হবে। অবশ্য তারও তেমন সমস্যা নেই, হাফটফ্লিখটফেরজিখারুং (দায় বীমা, কারো কোন ক্ষতি করে ফেললে বীমা কোম্পানি ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করে) আছে তার। আমরা সৌজন্য বিনিময় করে চলে গেলাম। মহিলার রিয়ারভিউমিরর ভাঙা, আমাদের কাছে পরামর্শ চাইলেন, আরো সামনে যাওয়া উচিত হবে কি না। ইতিমধ্যে বন্ধুকে ফোন করেছেন তিনি সবকিছু জানিয়ে। আমরা তাকে পরামর্শ দিলাম ভাঙা রুয়কষ্পিগেল নিয়ে গাড়ি না চালিয়ে অপেক্ষা করতে। ডর্টমুন্ড ঘুরে ফিরে এসেছি আবার কাসেলে, তবে বেশ একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে। আমার চাকরি জীবনের একটা অংশ হিসেবেই খুব তীব্রভাবে ভ্রমণ করতে হয়েছে আমাকে দেশে, বহুবার বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েছি, কপাল ভালো খুব বড়সড় কিছু হয়নি কখনো। তবে যখন গন্ডগোল হয়েছে তখন পুলিশকে জড়ানোর কথা কখনো ভাবিনি, অন্যভাবে সমস্যার সমাধান করতে হয়েছে। বাংলাদেশের পুলিশ যদি জার্মান পুলিশের মতো আস্থাভাজন হতে পারতো, আমাদের দেশের শতকরা আশিভাগ সমস্যা বোধহয় মিটে যেতো।",False hm,"রসময় রেসিপি ০১ ভূমিকা প্রবাসে একাকী বাস করলে যা হয়, মাথায় শুধু পচা কথা ঘোরে। আবার সকালে নাস্তা করি মধু দিয়ে। অতএব সারাদিন সারারাত চায়ে গরম অবস্থা। ক্লাস করি, কামলা খাটি, সচলায়তনে গুঁতাগুঁতি করি কিছু একটা লিখে ফেলার আশায়, হয় না, হয় না রে ভাই হয় না। এত কাজের পর খিদা লেগে যায়। বাজার করতে ভালোই লাগে, কিন্তু ফ্রিজ খুলে দেখি কিছু নাই, এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হই প্রায়ই। আমার আবার ডিপ ফ্রিজ নাই, তাই দিন আনি দিন খাই জীবন নিয়ে বেঁচে আছি। এইসব অত্যাচারের ফলে মাঝে মাঝেই সৃজনশীল হতে হয়। চাকরি যখন করতাম, ইমিডিয়েট বসের সাথে শলা করে সৃজনশীলতা করতাম উচ্চতর বসকে চাপের মুখে ম্যানেজ করার জন্য, এখন পেট চালানোর জন্যই সৃজনশীলতা জরুরি। আমি যা রাঁধি তা পেটে পড়ার আগে জিভে চাবুক মেরে যায়। লবণ ব্যাপারটার আন্দাজ আমার ভালো ছিলো না কোন কালেই, ভাবছি একটা মাইক্রোপাল্লা কিনবো কিনা, যেটাতে মিলিগ্রাম মেপে লবণের ""আন্দাজ"" ঠিক করা যাবে। একই সমস্যা হয় মশলা নিয়েও। বিভিন্ন মশলার আবার নানারকম প্রিট্রিটমেন্ট বা প্রাগপ্রস্তুতি থাকে, যেমন মৌরি আর জিরা খালি তাওয়ায় ""আন্দাজমতো"" সময় ধরে ভেজে নিতে হয়, ইত্যাদি। রীতিমতো পূর্বরাগ। ফোরপ্লেয়ার হিসাবে একটা জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি। আজকে সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে কামলা খাটতে খাটতে সন্ধ্যার দিকে মেজাজটা বিষিয়ে গেলো। দীর্ঘদিন ধরে স্যান্ডউইচ খেয়ে দিন কাটিয়ে দিচ্ছি। দুই টুকরা ব্রেডের মাঝে চিজ আর শিঙ্কেন (বরাহমাংসের পাতলা ফালি), শিঙ্কেনের ওপর সরিষার পেস্ট দিয়ে সেটাকে ইলেকট্রিক তন্দুরে গলাই। রুটির ওপর চিজ বেশ গলো গলো হয়ে আসলে বার করে খাই। জিনিসটা বেশ সুস্বাদু, কিন্তু ভ্যারিয়েশন নাই। মাঝে মাঝে টমাটো বা শসা ঢোকানো যায়, কিন্তু ঐ পর্যন্তই। এরচেয়ে বেশি বৈচিত্র্য চাইলেই খাটনি। মাঝে মাঝে সুমন চৌধুরীর বাড়ি হামলা করি, তখন ভালোমন্দ রান্না হয়। বলাই মাঝে মাঝে সবার দুরবস্থা আন্দাজ করে নিজের বাড়িতে রান্নার দাওয়াত দ্যান, তখন ঢেঁকুরে একটু তৃপ্তি থাকে। ভ্যারিয়েশনবিহীন স্যান্ডউইচ খেতে খেতে মনে হলো মধ্যবয়স্কের বিবাহিত জীবন যাপন করছি। আঁৎকে উঠলাম রীতিমতো। আমি নিজে মধ্যবয়স্ক হলেও বিবাহিত তো নই। পণ করলাম, আজকে শালা রান্না করবো একটা কিছু। ফ্রিজ খুলে পনির আর শিঙ্কেনের প্যাকেটের মুখের ওপর মুহাহাহাহা করে হাসলাম। থাকো পড়ে সোনা, আ'ম গনা সুইং দ্য হেল আউট অফ মি। কিন্তু মুখের হাসি বাসি হতে সময় লাগে না। ফ্রিজে কিছু নাই। আজকে রবিবার, তার ওপর রাত আটটা বাজে। চারদিক সুনসান। আজকে কাসেলে শুধু সৃজনশীলতার দরজা খোলা আমার জন্য। প্রথমে ভাবলাম টয়লেটে যাই, ভাবনঘরে বসে ভাবি। কিন্তু আজকে নতুন কিছু করার একটা জেহাদি জোশ চেপেছে মাথায়, পায়চারি করতে করতে শুরু করলাম ভাবনা। নিজের আর্সেনাল খতিয়ে দেখলাম, চাল আছে, ডাল আছে। চারখানা পেঁয়াজের পাশাপাশি একটি রুগ্ন রসুন আর একটি গলাকাটা আদাকেও চোখে পড়লো। ফ্রিজের ভেতরে একটি বিষণ্ণ বাঁধাকপি, কতগুলি ডিম, ধনেপাতা আর কাঁচামরিচ। প্যানের ওপর আমার গতকালের ভাজা টুনামাছের আদ্ধেকটা। বিয়ার নাই ঘরে, পানি খেতে খেতেই নেশা ধরে যাওয়ার যোগাড়। অনেক চিন্তে অনেক ভেবে বার করলাম রেসিপি। ঠিক করলাম, এই রেসিপি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়া অতীব জরুরি। তাই একটা পোস্টই ছেড়ে দিচ্ছি। ডিশের নামঃ ""বালিকা, তোমায় চুমু"" উপকরণঃ আন্দাজ ষোল আনা। এটাই সবচেয়ে বড় উপকরণ। পদে পদে এটাকে পকেট থেকে বার করতে হবে। একদিন আগে এক ক্যান টুনামাছ ভাজুন। একটা কৌটায় দু'শো গ্রাম টুনামাছ থাকে। আন্দাজমতো পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচামরিচ, জিরা আর সামান্য হলুদের গুঁড়ো দিয়ে ভেষজ তেলে ভাজুন শালাকে। সয়াবিন পেলে সয়াবিন, সরিষা পেলে সরিষা, সূর্যমুখী পেলে সূর্যমুখী, বাদাম পেলে বাদাম। তেলের জাত বাছবেন না অত। তারপর আদ্ধেকটা খেয়ে বাকি আদ্ধেকটা ঢেকে রাখুন। তারপর আজকে ফ্রিজ খুলে প্রথমে মাথায় হাত দিয়ে বসুন। কিচ্ছু রাখা চলবে না ফ্রিজে। অনেক ভেবেচিন্তে তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ান। তারপর একটা হাঁড়ি টেনে নিয়ে আনমনে তাতে আন্দাজমতো মাখন কেটে নিয়ে ফেলে চুলায় মাঝারি আঁচে বসান। মাখন গলে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। তার মধ্যে একটা এলাচ দানা, এক চোকলা দারচিনি আর দুতিন কণা লবঙ্গ দিন। তারপর একটা পেঁয়াজকে যত্ন করে কুচি করুন। রসুন নিন দুই কোয়া। রদ্দা মেরে ন্যাংটা করা বোঝেন? বোঝেন না? বলেন কী? তাহলে তো আর রান্না হলো না আপনাকে দিয়ে। এখনও রসুন ন্যাংটা করতে পারেন না আবার রেসিপি পড়েন। যান মিয়া ভাগেন! যারা বোঝেন তারা রসুন কুচি করুন। আদাও নিন আন্দাজমিটারে মেপে। আগে পেঁয়াজকে ঢালুন গলা মাখনের ওপর। কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে রসুন আর আদাও দিন উমরাও জানের কথা ভাবতে ভাবতে। এরপর ঘুঁটা দিন সাবধানে। সাবধান! এই ঘুঁটার ওপরই স্বাদ নির্ভর করছে‌! উল্টাপাল্টা ঘুঁটা দিয়ে রান্না নষ্ট করবেন না! এরপর কুঁচকি চুলকাতে চুলকাতে কেবিনেট খুলে উল্লেখযোগ্য কী আছে দেখুন। জিরা পেলে খানিকটা দিয়ে দিন। তারপর আন্দাজমতো হলুদ আর ধনিয়ার গুঁড়াও দিন। তারপর আন্দাজমতো চাল, চালের বহিরাস্তর ঢেকে মসুর ডাল আর মসুর ডালের বহিরাস্তর ঢেকে মুগ ডাল দিন। কম বেশি হলে সমস্যা নাই। এরপর গোটা চারেক কাঁচামরিচকে চুলচেরা করে চিরে দিন এরওপর। কিছু ধনেপাতাকে নির্মমভাবে কুঁচিয়ে একশা করে ফেলুন ডেগচিতে। তারপর কিছুক্ষণ আন্দাজমতো ঘুঁটে যান। চালডালের মিশ্রণ ডেগচির সাথে সেঁটে যাচ্ছে মনে হলে পানি দিন আন্দাজমতো। উঁহু, কম হয়ে গেলো। আরেকটু বেশি দিন। তারপর কম আঁচে চুলা রেখে ডেগচি ঢেকে মিনিট পনেরো কিছু কুচিন্তা করুন। ভাবুন এই হিম ঠান্ডায় রান্নাঘরে আপনার সাথে আপনার উজবেক প্রতিবেশিনী থাকলে কী একটা পরিস্থিতির দিকে মোড় নিতে পারতো ঘটনা। মোড় যখন নিচ্ছে না তখন আবার রান্নায় ফিরে আসুন। আজেবাজে চিন্তা করে তো ডেগচির পানি আদ্ধেকটা শুকিয়ে ফেলেছেন, সময় থাকতে কিছু লবণ দিন। মাখন কিন্তু লবণনাশক। কাজেই এ কথা মনে রেখে আন্দাজমিটার রিক্যালিব্রেট করুন। আরো কিছুক্ষণ খাইষ্টা চিন্তাভাবনা করুন। আপনার সৌরতাপ কোর্সের পূর্ব ইয়োরোপিয়ান সহপাঠিনীর কথা ভাববেন না এই রাতের বেলা, রান্না পুড়ে ঝামা হয়ে যেতে পারে। বরঞ্চ মনে মনে ৩৪৫, ২৩ আর ২ এর ল.সা.গু. কষুন। উত্তরটাকে ভেরিফাই করতে করতে গতকালের ঢেকে রাখা টুনাভাজাটাকে প্রায় ভুনা খিচুড়ির ওপর ঢেলে দিয়ে আবার একটা ফ্রিস্টাইল ঘুঁটা দিন। তারপর চুলার আঁচ নিভিয়ে দিয়ে কী নিয়ে কুচিন্তা করা উচিত ছিলো ভাবতে ভাবতে বিরক্ত হয়ে এক পর্যায়ে ডেগচি চুলা থেকে নামিয়ে এনে খাবার পাতে বেড়ে গরমাগরম খাওয়া শুরু করুন। ঠান্ডা হলে এই খাবারের স্বাদ রীতিমতো অতিথিতাড়ানিয়া, কিন্তু গরম খেতে পারলে বেশ লাগে। এই ডিশের নাম হওয়া উচিত ছিলো টুনা দিয়া ভুনা খিচুড়ি। কিন্তু ""বালিকা, তোমাকে চুমু"" রাখার গূঢ় কারণ হচ্ছে, কোন দূরবর্তিনী বালিকার সাথে ফোনে নখড়া করার সময় ""কী করো"" জাতীয় ফালতু প্রশ্নের জবাবে গাঢ় স্বরে বলতে পারবেন, বালিকা, তোমাকে চুমু খাই। আপাতত এইটা খান। পরে দেখি আরো কিছু রেসিপি ছাড়া হবে। আগামী পর্বে থাকতে পারে ""ভ্যানগগ"" এবং ""গুয়ামা""। খুব খিয়াল কইরা।",False hm,"ঈস্টার দ্বীপ ০২ ঈস্টার দ্বীপে আদপেই কত লোক ছিলো? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বেশ জরুরি, যদি ঈস্টারের অলিপিবদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে কোন কিছু আঁচ করতে হয়। যে পদ্ধতিটি অনুসৃত হয়েছে তা হচ্ছে ঈস্টারে খুঁজে পাওয়া বাড়িগুলির পাথরের ভিত গুণে তা থেকে অনুমান করা। এ অনুমানে স্বতসিদ্ধ হিসেবে ধরা হয়েছে প্রতি বাড়িতে ৫ থেকে ১৫ জন বাসিন্দা, আর মোট বাড়ির তিন ভাগের এক ভাগ একই সময়ে মানুষের অবস্থান। এ পদ্ধতিতে দেখা গেছে, ঈস্টারের জনসংখ্যা ছিলো ৬ হাজার থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে, যা কিনা বর্গমাইল পিছু ৯০ থেকে ৪৫০ জন মানুষের বসবাসের প্রতি ইঙ্গিত করে (বাংলাদেশে বর্গমাইল পিছু বাস করে প্রায় দু'হাজার ছ'শো জন মানুষ)। ঈস্টারের কিছু কিছু জায়গা অতটা ঊর্বর ছিলো না, কাজেই জনসংখ্যার ঘনত্বের বিন্যাস স্বাভাবিকভাবেই হয়তো আরেকটু বেশি ছিলো অন্যান্য জায়গায়, তবে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দ্বীপের বিরাট অংশই চাষাবাদের কাজে ব্যবহৃত হয়েছিলো। ঈস্টারের প্রথম শুমারি (২,০০০ অধিবাসী) হয়েছিলো ১৮৬৪ সালে, যখন খ্রিষ্টান মিশনারিরা প্রথম সেখানে বসতি গাড়েন। এর আগের বছরই ঈস্টারে মারাত্মক এক গুটি বসন্তের মড়কে দ্বীপের অধিকাংশ বাসিন্দাই মারা গিয়েছিলো। তারও আগে পেরুর এক ঠগী জাহাজ ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রির জন্য ধরে নিয়ে গিয়েছিলো দেড় হাজার আদিবাসীকে, তারও আগে ১৮৩৬ সালে দুই দফা গুটিবসন্তের মড়ক দেখা দিয়েছিলো, আর সপ্তদশ শতাব্দীতে ঈস্টারের ইতিহাসে শুরু হয় ব্যাপক জনসংখ্যাধ্বস। এত কিছুর পরও যদি ১৮৬৪ সালে ২ হাজার মানুষ দ্বীপে থাকে, তাহলে ইতিহাসে এর সর্বোচ্চ জনসংখ্যা ১৫ হাজার বা তারচেয়ে বেশি হওয়া স্বাভাবিক। অন্তত প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউদিও ক্রিস্তিনো আর এডমুন্ডো এডওয়ার্ডস এমনই মনে করেন। এত মানুষের দ্বীপে সংস্থান করতে গেলে এর কৃষি কার্যক্রম যে অনেক তীব্র হবে, তাতে সন্দেহ নেই। এর প্রমাণ মেলে বিভিন্ন জায়গায় ঝর্ণার ওপর পাথরের তৈরি বাঁধ আর সেচের খাত দেখে। আর একটি হচ্ছে মুরগির বিশাল ঘরগুলি, যেগুলো পাথরের তৈরি, ২০ ফিট লম্বা, ৬ ফিট উঁচু আর ১০ ফিট চওড়া (এর চেয়ে বড়ও কিছু রয়েছে)। এর সাথে রয়েছে পাথরের দেয়াল দিয়ে ঘেরা উঠোন। মানুষের ঘর ভেঙেচুরে পড়ে গেছে, কিন্তু ঈস্টারের এই দানবীয় মুরগির ঘরগুলি রয়ে গেছে, যার সংখ্যা ১,২৩৩। এ ছাড়াও আছে আগ্নেয় পাথরে তৈরি বিভিন্ন দেয়াল, যেগুলি ব্যবহার করা হতো ঈস্টারের তীব্র বাতাস থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য। এ ছাড়া মাটি খুঁড়েও কিছু কিছু ""গর্তবাগান"" তৈরি করা হয়েছে কলা চাষের জন্য। এ ছাড়াও রয়েছে একেবারেই অভিনব কিছু উদাহরণ, যেমন জমিতে পাথর বিছিয়ে বা পুঁতে বাতাসের হাত থেকে শস্যকে রক্ষার চেষ্টা। প্রত্নতাত্ত্বিকরা পলিনেশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের চাষাবাদের সাথে তুলনা করে ঈস্টারের এই বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, কারণ এর জন্যে লক্ষ লক্ষ পাথর বয়ে আনা বা খোঁড়া হয়েছে। কেন ঈস্টারের চাষীরা এই তুমুল খাটনি খাটতে গেলো? ঈস্টার শুষ্ক, ঠান্ডা, আর তীব্র বাতাসের অঞ্চল। পৃথিবীর অন্যান্য শুষ্ক আবহাওয়ার অঞ্চলেও পাথরের সাহায্য শস্য রক্ষার এই পদ্ধতিটি পৃথকভাবে আবিষ্কৃত এবং অনুসৃত হয়েছে, উদাহরণ ইজরায়েল, দক্ষিণপশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, পেরু, নিউজিল্যান্ড। পাথর মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, তা না হলে হয়তো রোদ আর বাতাসে মাটির পানি বাষ্পীভূত হয়ে যেতো। দিনে রোদের তাপ শুষে রাতে তা মাটিতে ছড়িয়ে দেয় পাথর, কাজেই এভাবে মাটির তাপমাত্রাও কমবেশি একই রকম থাকে। তাছাড়া গাঢ় রঙের পাথর হালকা রঙের মাটিতে বেশি তাপ শোষণ করে তাপের সঞ্চয় করে, আর ধীরগতিতে খনিজ যোগান দেয় মাটিতে। এসব ফ্যাক্টর নিঃসন্দেহে ফসলের ফলন বাড়ায়, যেমনটা দেখা গেছে কৃষি গবেষণায়। প্রত্নতাত্ত্বিক ক্রিস স্টিভেনসন তাঁর গবেষণায় বলেছেন, ঈস্টারের আদিবাসীরা প্রথম ৫০০ বছর সৈকতসংলগ্ন নিচু এলাকাতেই বাস করতো, সম্ভবত সামুদ্রিক খাবারের যোগানের জন্যেই। আনুমানিক ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের পর দ্বীপের ভেতরের দিকে উঁচু ভূমিতে চাষাবাদের নমুনা পাওয়া যায়, যেখানে বৃষ্টিপাত বেশি, কিন্তু তাপমাত্রা কম। ঈস্টারের কেন্দ্রসংলগ্ন উঁচু ভূমির প্রায় সবটুকুই পাথুরে ক্ষেত। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, সেখানে কোন সাধারণ মানুষের বাড়িঘরের নমুনা নেই, কোন মুরগির ঘর নেই, কয়েকটা চুলো আর ছোট ঘর বাদে যা আছে সবই অভিজাতদের বাড়ি, অনেকটা আমাদের দেশে চা-বাগানের মতো। ধারণা করা হয়, উঁচু এলাকায় ম্যানেজার গোছের কেষ্টুবিষ্টুরা বাস করতো, পাথুরে ক্ষেতে চাষবাস তদারক করার জন্য, আর সৈকত সংলগ্ন এলাকা থেকে চাষীরা সেখানে কাজ করে আবার ফিরে যেতো। সৈকত থেকে উঁচু ভূমির দিকে পাঁচ মিটার চওড়া পাথরে বাঁধানো রাস্তাগুলি এই অনুমানকে সমর্থন করে। পলিনেশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের মতোই ঈস্টারে দুই কিসিমের মানুষের বাসস্থানের নিদর্শন পাওয়া যায়। সর্দার আর অভিজাত লোকজনের বাড়ি, যাকে বলা হয় হারে পায়েঙ্গা, দেখতে অনেকটা উল্টানো ক্যানোর মতো, ৪০ ফিট লম্বা, ১০ ফিট চওড়া, যার মেঝেগুলি নিখুঁতভাবে কাটা আর পালিশ করা ব্যাসল্টের তৈরি, ছাদ আর দেয়াল খড়ের। ঈস্টারের দু'শো গজ চওড়া সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় এর মূর্তিগুলি (যাকে বলা হয় মোয়াই) আর তার প্ল্যাটফর্ম (আহু) ছাড়া আছে কেবল ৬ থেকে ১০ টা করে হারে পায়েঙ্গা। অন্যদিকে সাধারণ লোকজন বাস করতো সৈকত থেকে দূরে, সেখানে তাদের সাধারণ ঘর, মুরগির খোঁয়াড়, ক্ষেত, বাগান আর ময়লা ফেলার জায়গা বাদে বিলাসিতার আর কোন নমুনা নেই। ঈস্টারের লোকায়ত গল্প আর প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা, দুটোতেই দেখা গেছে, দ্বীপটি ১১ বা ১২টি বিভিন্ন গোত্রের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে বিভক্ত ছিলো, অনেকটা পিৎজার বারোটা টুকরোর মতো, সৈকতের দিকে চওড়া, কেন্দ্রের দিকে সরু। প্রতিটি অঞ্চলের ছিলো নিজস্ব সর্দার আর মূর্তি। ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠানে এক গোত্র আরেক গোত্রের সাথে সবসময়ই প্রতিযোগিতায় মেতে থাকতো, যা কখনো কখনো রূপ নিতো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। পলিনেশিয়ার অন্যান্য দ্বীপেও এই একই কাহিনী পুনরাবৃত্ত হয়েছে বারবার। তবে ঈস্টারের ক্ষেত্রে অনুমান করা হয়, এই বারোটি গোত্র ধর্মীয়, অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একজন কেন্দ্রীয় সর্দারের অধীনে ছিলো। কোত্থেকে এলো এই ধারণা? ঈস্টারের সম্পদগুলি সুষমভাবে এই বারোটি অঞ্চলে ছড়ানো ছিলো না। যেমন, টোঙ্গারিকি এলাকায় ছিলো রানো রারাকু জ্বালামুখ, মূর্তি খোদাইয়ের জন্যে সেরা পাথরের একমাত্র উৎস। মূর্তির মাথায় চাপানো লাল টুপিগুলির পাথর এসেছে হাঙ্গা পৌকুরা অঞ্চলের খনি থেকে। ভিনাপু আর হাঙ্গা পৌকুরা অঞ্চলে ছিলো অবসিডিয়ানের খনি, ধারালো অস্ত্র বানানোর একমাত্র পাথর। ভিনাপু আর টোঙ্গারিকিতে ছিলো সর্দারদের রাজকুটির হারে পায়েঙ্গা বানানোর ব্যাসল্টের খনি। উত্তরে আনাকেনায় ছিলো দু'টি সেরা সৈকত, তার পাশে হেকি'ই তে ছিলো তৃতীয়টি। কিন্তু এরা আবার রুগ্ন ছিলো চাষাবাদে, কারণ ভালো চাষের জমি ছিলো সব দক্ষিণ আর পশ্চিমে। পাখির আড্ডা ছিলো সব ভিনাপুতে। অন্যান্য সম্পদ, যেমন কাঠ, প্রবাল আর কাগুজে মালবেরি (যার ছাল পিটিয়ে কাপড় বানানো হতো), এগুলিও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো। বারোটার মধ্যে মোটে পাঁচটা অঞ্চলে পাথুরে ক্ষেতের জমি ছিলো। গোত্রগত সংহতির অন্যতম প্রমাণ হচ্ছে, টোঙ্গারিকি আর হাঙ্গা পৌকুরার পাথর বাকি সব অঞ্চলের মূর্তিতেই পাওয়া গেছে। একই ভাবে ছড়িয়ে আছে অবসিডিয়ান, মাছ আর অন্যান্য সম্পদ। এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় সম্পদ স্থানান্তরের জন্য তৈরি রাস্তা নিঃসন্দেহে আরো কিছু অঞ্চলের ভেতর দিয়ে গেছে, এবং কোন কিছু সে রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করার জন্যে সে অঞ্চলের গোত্রের সম্মতি অবশ্যই প্রয়োজন। একটি কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা না থাকলে এতো সহজে এই সম্পদের বিন্যাস ঘটতো না। এত কিছুর পর ঈস্টারের আসল জিনিসগুলির কথা বলা শুরু করাই উচিত। এর দানবীয় মূর্তি আর তার প্ল্যাটফর্ম। [চলবে আজ আরো কিছুদূর]",False hm,"বিকল্প বাজে ইতিহাসঃ কেন আলেকজান্ডার বাংলা জয় করতে পারলেন না? ১. আলেকজান্ডার শতদ্রু নদীর তীরে ক্যাম্প ফেলে বসে বসে কবিতা লিখছিলেন, এখানে নদীর পারে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি ... ইত্যাদি। যেহেতু ইতিহাসের বিকল্প গল্প, তাই আলেকজান্ডারকে যদি এখনো শনাক্ত করতে না পেরে থাকেন তবে আপনি একটি নিরেট হাঁদা। আলেকজান্ডার ইবনে ফেলিপের গল্পই হচ্ছে এখানে। রাজা পুরুর সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জিতে আলেকজান্ডারের মনটা ভালো। কচি দেখে কয়েকটা ছেলে যোগাড় করতে পাঠিয়েছেন কিছু সৈন্যকে। মতিয়াস নিজুমিয়াস নামে এক স্থানীয় দালাল তাঁকে এলাকার যাবতীয় ডাঁসা ছোকরা যোগাড় করে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে। তার জীবন নাকি তাতে ধন্য হয়ে যাবে। আলেকজান্ডার নিজুমিয়াস আর তার সাঙ্গোপাঙ্গোদের আচরণে স্তম্ভিত। কোন মানসম্মান জ্ঞান নেই এদের। সোজা এসে আলেকজান্ডারের কাছে নতজানু হয়ে যাচ্ছে। জলপাই দেখলেই এরা পোঁদ উঁচিয়ে দেয়। সৈন্যরা সবাই আলেকজান্ডারের মতো খোকচোদ নয়, তারা এলাকার মেয়েদের হালহকিকত সম্পর্কে ডানে বামে খোঁজ নিচ্ছে। মতিয়াস নিজুমিয়াস তাদেরও যথাসাধ্য সহযোগিতা করছে। আলেকজান্ডার অবশ্য এখানেই থামবেন না। বছরখানেক হলো তিনি পূর্ব দিকে এক পল্টন সৈন্য পাঠিয়েছেন রেকি করার জন্য। তিনি আরো পূর্বে যাবেন। সেখানে বিশাল পূর্ব সমুদ্রের তীরে এসে পৃথিবী শেষ হয়ে গেছে। সেই সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে কিছুদিন ফূর্তিফার্তা করে তিনি আবার মেসেডোনিয়ায় ফিরে যাবেন। মদ খাবেন আর ছোকরা পোন্দাবেন। ভারতবর্ষ ধরে যাবার সময় প্রতি ক্যাম্পে তিনি এই দুষ্কর্ম করতে করতে যাবেন। দেশে গিয়ে বলবেন, আমি সারা দুনিয়া পোন্দাইয়া আসিয়াছি। ভাবতেই আলেকজান্ডারের মনটা খুশি হয়ে ওঠে। আহ, আরেকটা কবিতা লেখা যাক। সব পাখি ঘরে ফেরে, সব নদী ... ... এমন সময় এক সৈন্য এসে স্যালুট করে বলে, ""মহামতি আলেকজান্ডার, মেজর ভগ্নদূতিয়াস আপনার সাথে দেখা করতে চান।"" আলেকজান্ডার চোখ রাঙিয়ে বললেন, ""স্যার কই? স্যার কই? কথার আগে পিছে স্যার বলতে হয় জানিস না?"" সৈন্য ঢোঁক গিলে বললো, ""স্যার মহামতি আলেকজান্ডার, মেজর ভগ্নদূতিয়াস আপনার সাথে দেখা করতে চান স্যার!"" আলেকজান্ডার বললেন, ""পাঠিয়ে দে। আবার এমন ভুল করলে এমন গুয়ামারার ব্যবস্থা করবো যে ...।"" সৈন্য পালায়। মেজর ভগ্নদূতিয়াস বিবর্ণ মুখে এসে স্যালুট করে। ""স্যার, মেজর ভগ্নদূতিয়াস স্যার!"" আলেকজান্ডার হর্ষোৎফুল্ল মুখে বলেন, ""কী খবর ভগ্নদূতিয়াস? কেমন দেখলে পূর্ব দেশ?"" ভগ্নদূতিয়াস ভেঙে পড়ে একেবারে। ""খুব বাজে অবস্থা স্যার! অর্ধেক রাস্তা মরুভূমি, বাকি অর্ধেক নদীনালাখালবিল। বহুকষ্টে সব পেরিয়ে পূর্বদেশে গিয়েছি দলবল নিয়ে, স্যার।"" আলেকজান্ডার বলেন, ""তারপর?"" ভগ্নদূতিয়াস বলে, ""সে এক দারুণ সুন্দর দেশ স্যার। শস্য, মিষ্টিপানি, সুন্দরী নারী, কোন কিছুরই অভাব নেই, স্যার!"" আলেকজান্ডার বলেন, ""নারী দিয়ে আমি কী করবো?"" ভগ্নদূতিয়াস বলে, ""কিন্তু সে দেশের লোকজন অতি বিপদজনক স্যার!"" আলেকজান্ডার একটা গ্লাডিয়াস কোষ থেকে বার করে বলেন, ""বিপদজনক লোকই তো প্যাঁদানোর জন্য ভালো। সবাই এই মতিয়াস নিজুমিয়াসের মতো বিশ্বাসঘাতক শুয়ার হলে লড়াই করে কী লাভ?"" ভগ্নদূতিয়াস বলে, ""না স্যার! সে দেশের লোকজন সবাই একজন আরেকজনের পেছনে আঙুল দেয়! বাজারে দোকানদার খদ্দেরের পেছনে, খদ্দের পথচারীর পেছনে, এ ওর পেছনে, ও এর পেছনে, সবসময় একটা আঙুল ঢুকিয়েই রাখে স্যার!"" আলেকজান্ডার বললেন, ""বলো কী? চমৎকার! তারপর?"" ভগ্নদূতিয়াস বললো, ""আমরা যেতে না যেতেই তারা কিচিরমিচির করে কী যেন বললো, তারপর আঙুল উঁচিয়ে তেড়ে এলো আমাদের দিকে স্যার!"" আলেকজান্ডার বললেন, ""অতি উত্তম! কালই আমরা শতদ্রু পার হবো সবাই। শিঙায় ফুঁ লাগাও।"" ভগ্নদূতিয়াস বললো, ""না স্যার, ঐ খাচ্চরদের দেশে আমরা যাবো না স্যার। জান যায় তাও ভালো, কিন্তু কেউ পোঁদে আঙুল দিবে তা মেনে নেয়া যায় না স্যার!"" আলেকজান্ডার খেপে গিয়ে বললেন, ""তোমার তো সাহস কম না, আমার মুখের ওপর কথা!"" এমন সময় বাহিরে কী যেন একটা শোরগোল শোনা গেলো। আলেকজান্ডার তাঁবুর পর্দা উঁচিয়ে বাইরে দেখলেন, মিছিল হচ্ছে। তাঁর সৈন্যরা স্লোগান দিচ্ছেন, শতদ্রু পার হবো না, পোঙ্গামারা খাবো না! আলেকজান্ডার ফ্যাকাসে মুখে ধরা গলায় বললেন, ""এ কেমন কথা? আমার পূর্ব সমুদ্র দেখার সাধ কি তাহলে অপূর্ণ থেকে যাবে?"" সেলুকাস নিকাটর এমন সময় এসে হাজির হলো। আলেকজান্ডার বললেন, ""সেলুকাস, এ কী হচ্ছে? আমার সৈন্যরা এমন করছে কেন?"" সেলুকাস একটা পেয়ারা চিবাতে চিবাতে বললেন, ""স্যার, হয়েছে কি, পূর্ব দেশের লোকজনের পেছনে আঙুল দেয়ার খবর একেবারে দাবানলের মতো ছড়িয়ে গেছে। আমাদের সৈন্যরা স্যার, ভদ্রলোক। এসব আজেবাজে জিনিস তাদের সহ্য হবে না। তাছাড়া সেই ফিনিশিয়া থেকে শুরু করে ব্যাকট্রিয়া পর্যন্ত পদে পদে বহু ঝুটঝামেলা গেছে স্যার কপালের ওপর দিয়ে। আমার নিজেরই তো স্যার অর্শ হয়ে গেলো ঘোড়ায় চড়ে চড়ে! এখন যদি সামান্য সমুদ্র বিলাসের জন্য এই বিদঘুটে বড়বড় নদী খাল বিল পার হয়ে পেছনে আঙুল পেতে হয়, তাহলে কি পোষায় স্যার?"" আলেকজান্ডার কেঁদে ফেললেন, ""সেলুকাস! সত্যি কী বিচিত্র এ দেশ! আর কী চুৎমারানি তোমরা! এভাবে আমার সাথে বেঈমানি করলে? আমি খেলবো না!"" সেলুকাস আলেকজান্ডারকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ""কাঁদবেন না স্যার, কাঁদবেন না। চলেন, হাতমুখ ধুয়ে দুইটা রুটি খাবেন মদ দিয়ে। মতিয়াস নিজুমিয়া, স্যারের জিনিস যোগাড় হয়েছে?"" মতিয়াস নিজুমিয়াস ফুল্লমুখে এসে বললো, ""আইসতিছে!"" আলেকজান্ডার চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন, ""ঐ তাঁবু তোল! বাসায় যামুগা। এইখানে আর থাকুম না!"" ২. এভাবেই বাঙালি মেসিডোনোপারসোইন্দো বাহিনীর আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায়।",False ij,"প্রাগৈতিহাসিক বাংলা_ আদিম সাম্যবাদ যে ক’জন চিন্তাবিদ মানবসমাজের বিকাশের ধারা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন- কার্ল মাকর্স অন্যতম তাদের মধ্যে। তাঁর মত কেবল যৌক্তিকই নয়-বিজ্ঞানভিত্তিক বলে গ্রহনযোগ্যও বটে। মাকর্সের মতে- Human civilization has manifested itself in a series of organizational structures, each determined by its primary mode of production, particularly the division of labor that dominates in each stage.এই হল মার্কস-এর ঐতিহাসিক বস্তুবাদের মূলকথা। ঐতিহাসিক বস্তুবাদের প্রয়োগ যে কোনও সমাজের ক্ষেত্রেই সম্ভব-এমনকী প্রাগৈতিহাসিক বাংলার ক্ষেত্রেও। প্রাগৈতিহাসিক বাংলার আদিম সাম্যবাদী পর্যায়টি বুঝতে আমরা কেবল মানবসমাজের দুটো পর্যায় নিয়ে আলোচনা করব। ১) ট্রাইবাল সমাজ : আদিম ট্রাইবাল সমাজে, শ্রেণিবিভাজন বলতে আমরা যা বুঝি-সে রকম শ্রেণিবিভাজন ছিল না। সমাজের মূল ভিত্তি ছিল আত্মীয়তার বন্ধন। গৃহস্থালীর যাবতীয় কাজের দায়িত্ব ছিল নারীর। আর, পুরুষেরা সব দলবেধে শিকারে বেরুত। মাকর্সের মতে, ট্রাইবাল সমাজের এই স্তরটি অবশ্য একেবারেই প্রাথমিক। তবে প্রাকৃতিক ভাবে নির্ধারিত প্রাথমিক শ্রমবিভাগ পরিবারে ছিল; এই স্তরেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দাসশ্রম অনিবার্য হয়ে উঠতে থাকে। তখনও যুদ্ধ হত; বানিজ্যও হত অপরাপর সংস্কৃতির সঙ্গে- কাজেই, মাকর্সের মতে সমাজে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছিল। দাস সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গেই শ্রেণি বৈষম্যের সূত্রপাত হয়েছিল। ২) আদিম সাম্যবাদ: ""the ancient communal and State ownership which proceeds especially from the union of several tribes into a city by agreement or by conquest"" ( Marx, Karl and Frederick Engels. The German Ideology Part One, with Selections from Parts Two and Three, together with Marx's ""Introduction to a Critique of Political Economy."" New York: International Publishers, 2001.) এই সময়েই ব্যাক্তিগত সম্পত্তির ধারণা গড়ে উঠছিল। কাজেই সমাজে শ্রেণিবৈষম্য অনিবার্য হয়ে উঠছিল। লিঙ্ক: Click This Link প্রাগৈতিহাসিক বাংলায় কখন আদিম সাম্যবাদী পর্যায় ছিল? প্রোটো-অস্ট্রোলয়েড বা আদি-অস্ত্রালদের সমাজই মার্কসকথিত আদিম সমাজ। আদি-অস্ত্রাল নারীরা গৃহস্থালীর কাজ করত;আর আদি-অস্ত্রাল পুরুষেরা দল বেঁধে শিকারে বেরুত। কিন্তু,প্রাগৈতিহাসিক বাংলায় দাসতন্ত্রের উদ্ভব হল কখন? আদি-অস্ত্রালদের পরে বাংলায় এসেছিল দ্রাবিড় ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ। মার্কসের মতে দাসশ্রমের সঙ্গে যুদ্ধবিগ্রহের অনিবার্য সম্পর্ক রয়েছে। আদি-অস্ত্রালদের যুদ্ধ কি দ্রাবিড়দের সঙ্গেই হয়েছিল? সেরকম হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কেননা, মাকর্সের মতে- সমাজের এই স্তরেই (আদিম সাম্যবাদ) জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দাসশ্রম অনিবার্য হয়ে উঠতে থাকে। তখনও যুদ্ধ হত; বানিজ্যও হত অপরাপর সংস্কৃতির সঙ্গে- কাজেই, মাকর্সের মতে সমাজে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছিল। দাস সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গেই প্রাগৈতিহাসিক বাংলায় শ্রেণি বৈষম্যের সূত্রপাত হয়েছিল। পরবর্তীতে সে ধনবৈষম্যের ওপর পশ্চিম থেকে বর্ণবাদী আলপাইন আর্যরা এসে বর্ণভেদের প্রলেপ দিয়েছিল যার জের এখনও চলছে। অবশ্য সে আরও পরের কথা। ক্রমশ সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৫৪",False rg,"বইমেলার ডায়েরি (২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!! লেখক-প্রকাশক সম্পর্ক = টেস্ট ক্রিকেট ও বৃষ্টির লিলা!!! যথারীতি অমর একুশে বইমেলায় দ্বিতীয় দিনে সোমবারও দেখা হল অনেকের সাথে। আড্ডাও হল অনেক। মাগার বেচাবাট্টা নাই। এক বড় প্রকাশক ভারী দেমাগ দেখালেন। হাঁটছেন মাটিতে কিন্তু পা তাঁর আকাশে!!! লেখক আর প্রকাশকদের মধ্যে যেন টেস্ট ক্রিকেট আর বৃষ্টির সম্পর্কের মত এক রহস্যময় খেলা চলে সারাক্ষণ। প্রকাশকগণ যে জিনিসটা বুঝতে চান না, সেটি হল, লেখক না থাকলে তাদের ব্যবসা কিভাবে হবে!! ইয়েস, ব্যবসা হবে বটে অন্য কোনো লেখক বা কবি সাহিত্যিকের উপর ভর করে। তবে মোটেও আমার উপর ভর করে নয়, এটা একদম সত্যি!!!বইমেলায় উদ্যানে ঢুকেই দেখা হল বিজ্ঞান লেখক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী'র সঙ্গে। ফারসীমের অনুযোগ, বাইরে দেখা হলে নাকি আড্ডা দেই না। আমি আড্ডা দেই না, এটা কে কে বিশ্বাস করবে!!! কেউ কী বিশ্বাস করবে!!! পরে ফারসীম ও তার দলবলসহ গেলাম বাংলা একাডেমি চত্বরে। গিয়েই পেলাম প্রিয় জাহীদ ভাইকে (লেখক সাংবাদিক জাহীদ রেজানূর)। জাহীদ ভাইকে স্মরণ করিয়ে দিলাম আমার সঙ্গে প্রতিশ্রুত সেই বিষয়। জাহীদ ভাই প্রতিবছর আমাকে একটা পছন্দের বই কিনে দেন। এবারো দেবেন। আমি বলেছিলাম, এবার কোনো সমগ্র কিনে দাও। জাহীদ ভাই বলল, ওরে শয়তান, আমার মনে আছে, তোরে কইছি, একটা সিঙ্গেল বই কিনে দেব। জাহীদ ভাইরে কইলাম, তোমাদের স্টল তো এবার নরসিংদির কাছাকাছি। ভৈরব সেতু পার হয়ে ডানদিকে হাঁটলেই পাবা। জাহিদ ভাই বলল, যাই দেখে আসি। আমি এখনো যাই নাই। জাহীদ ভাই চলে যাবার পর লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ঢুকলাম। বহেড়াতলা এবার বসার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এবার আমি গোটা মাস নন্দনে বসব। কিন্ত চেয়ার নাই। কি করি রে ভাই! নন্দন স্টলে কবি বন্ধু আলফ্রেড খোকনের দেওয়া নন্দন গুলো সাজিয়ে রেখে গেলাম একাডেমি'র নতুন ভবনে। সরাসরি কবি সরকার আমিনের রুমে। বাংলা একাডেমি'র লিফটে উঠতে আমার খুব ভয় লাগে। সেদিন কবি সাজ্জাদ আরেফিন (মোবারক হোসেন) যা শোনালেন, লিফটে আটকা পড়েছিল কয়েকজন। তাদের উদ্ধার করার কাহিনী শুনে আমার আত্মা শুকিয়ে খাঁক। এর আগে কারওয়ান বাজারে এক পত্রিকা অফিসের লিফট থেকে পড়ে কবি টোকন ঠাকুর তিনমাস ধরাসাই ছিলেন। সেই ঘটনা মনে পড়ায় লিফটে ওঠায় আমার আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। সিড়ি বেয়ে আমিন ভাইয়ের রুম পর্যন্ত যাওয়া আর খোলা আকাশের নিচে নীলগিড়িতে ওঠা প্রায় সমান কষ্ট। আমিন ভাইয়ের (কবি ডক্টর সরকার আমিন) রুমে গিয়ে পেলাম অনু ভাইকে (ডক্টর অনু হোসেন)। দুই বন্ধু খুব আড্ডা দিচ্ছিলেন। আমিন ভাই তার এবং মুন্নী আপার (শাহনাজ মুন্নী) নতুন বই দেখালেন। আমিন ভাইয়ের 'চিন্তা ও দুশ্চিন্তার সংকলন- মুহূর্তের দর্শন' আর মুন্নী আপার উপন্যাস 'হৃদয় ঘরের বারান্দায়'। আমিন ভাইয়ের বইটা সত্যি সত্যি অনেক দর্শনের সমাহার। ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে আমিন ভাই মনোজাগতিক যেসব স্টাটাস লিখেছেন, তার একটা সম্পূর্ণ কোলাস ওটা। কবিদের গদ্য আমার খুব পছন্দ। আমিন ভাইয়ের বইটাও অনেক মজার বিষয় নিয়ে চিন্তার এক-একটা বিস্ফোরণ যেন। অনু ভাই একটা মজার তথ্য দিলেন। বিশ্ব সাহিত্যের প্রথম ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন কবি সত্যেন্দ্র নাথ দত্ত। যাঁকে বোদ্ধারা বলেন কবিশিল্প। কবিতার সকল নান্দনিক দিক যিনি হাতে কলমে জানেন এবং প্রয়োগ করেন, তিনিই কবিশিল্প। আমাদের আড্ডা জমে ওঠার এক ফাঁকে আমিন ভাই এক মিটিংয়ের কলে বেড়িয়ে গেলেন। অনু ভাই বসে বসে প্রুভ দেখতে লাগলেন। আমিও বেড়িয়ে গেলাম মুর্শিদ (মুর্শিদ আনোয়ার) ভাইয়ের রুমে। মুর্শিদ ভাই বাংলা একাডেমি প্রকাশিত 'অমর একুশে' স্মারকগ্রন্থ দিলেন। সঙ্গে চা আর সিগারেট। একটু পরে সেখানে আসল মাসুম অপু। দিন দিন অপু'র পেটটা যেন ঝালকাঠির দিকে যাচ্ছে। টোকা দিলেই আঙুলে ব্যথা লাগে!!একাডেমি ভবন থেকে বেড়িয়ে লিটল ম্যাগ চত্বরে এসে দেখা পেলাম শিল্পী সব্যসাচী হাজরা, 'পৌষ' (সব্য ও তনুজা'র কন্যা) আর শিল্পী চারু পিন্টুকে। পৌষ আমাকে রাক্ষস সেজে খুব ভয় দেখাল। বইমেলার মাঠে যতগুলো মাইকের স্পিকার আছে, তার চেয়ে পৌষের কণ্ঠ আরো বেশি চড়া যেন! পৌষ বিশাল এক রুই মাছের ঘুড়ি নিয়ে মেলায় এসেছে। সেই ঘুড়ি ততক্ষণ ওড়াচ্ছিল বন্ধু চলচ্চিত্র নির্মাতা সুমন শামস। সুমন জানাল, নদী নিয়ে কয়েকটি পর্বের ডকুমেন্টারির শুটিং শেষ। এখন এডিটিং চলছে। সব্য, পৌষ আর সুমন চলে যাবার পর পিন্টু আর আমি মেলায় ঢু মারতে গিয়েই বর্ধমান হাউজের সামনে পেলাম জাকির ভাইকে। কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার কথাসাহিত্যে ২০১৪ সালের বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। জাকির ভাই জানালেন, শাহবাগ উপন্যাসটা এবারের মেলায় আসবে না। ওটার জন্য আগামী মেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সেই সময় আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন কবি মাসুদুজ্জামান মাসুদ ও কবি দ্বিত্ব শুভ্রা। শুভ্রা জানাল, এবারের বইমেলায় তার প্রথম বই এসেছে। বইয়ের নাম ‘চৌপাহারার গেহ’। এটি নিশ্চয়ই আমাদের সমাজ, রাজনীতি, দেহ ও আত্মার পাহারায় নতুন অভিযোজনের এক সারাংশ লিপি হবে। মাসুদ ভাই বেশি আলোতে কবি'র সঙ্গে ছবি তুলবেন। তাই ট্যাব নিয়ে আলোতে চলে গেলেন পিন্টু আর শুভ্রাকে নিয়ে। জাকির ভাই আর আমি আড্ডা দিতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরে পাশ ফিরে দেখি রিটন ভাই (বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন) ভূতের মত মিটমিট করে মাযহার ভাইয়ের উপস্থাপনা দেখছেন। রিটন ভাই যে কাজে ফাঁকি দিচ্ছিলেন, এটা ধরে ফেলায় রিটন ভাই উল্টো আমারে ঝাড়ি দিয়ে বললেন, আরে মিঞা, তোমারেই তো খুঁজতাছি। আছো কেমন? কইলাম, আপনি টরন্টো থেকে আইসা কোথায় কোথায় টইটই করতাছেন? দেখা নাই, আড্ডা হয় না। রিটন ভাই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে কইলো- আইসো। আড্ডা হবে। এর মধ্যে মাযহার ভাই আবার ইসারায় রিটন ভাইকে লাইভ-যজ্ঞে ফিরিয়ে নিলেন। আমি জাকির ভাইয়ের কাছ থেকে লিটল ম্যাগ চত্বরে ফিরে পেলাম শিশিরকে। কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা আশরাফ শিশির। শিশিরের 'গাড়িওয়ালা' ছবিটি এবার যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র উৎসবে তিনটি পুরস্কার জিতেছে। শিশিরকে কংগ্রাচুলেট করে জিজ্ঞেস করলাম, রায়চৌধুরানী কোথায়? শিশির বলল, কলকাতা বইমেলায়। সেখানে কবি'র নতুন বই এসেছে 'উড়োমেল' (পত্রভারতী)। তাই নিয়ে ভারী ব্যস্ত কবি কাবেরী রায়চৌধুরী মানে আমাদের শিশিরের বউ। ৮ তারিখ কলকাতা বইমেলা শেষ হলে তারপর ঢাকায় আসবে। শিশির একটা টেলিভিশন চ্যানেলে গুলশান গিয়ে আড্ডা দেবার বায়না ধরল। কইলাম, আমি তো এখন ওইপাড়ায় নাই। এই পাড়ায় আইসা পড়ছি। বইমেলার সময় ওইপাড়ায় যাবার সময় কোথায়! শিশির বলল, তাহলে বইমেলায় একটা সিডিউল করি। একটু সময় দিয়েন। শিশিরের এবারের মেলায় দুইটা বই এসেছে। শিশির নিজের কাব্যগ্রন্থ ""কোন কোন বৃষ্টি কাউকে ভেজায় না'' দেখাল। শিশির নিজের বই নিজে প্রকাশ করেন। নিজের পছন্দমত খুব সুন্দর প্রডাকশন করেছে। ""কোন কোন বৃষ্টি কাউকে ভেজায় না'' পাওয়া যাবে লিটল ম্যাগ চত্বরের উন্মুক্ত স্টলে।তারপর আবার এসে নন্দনের সামনে দাঁড়াতেই দেখা হল বন্ধু কবি ও সঙ্গীত পরিচালক সাঈম রানার সঙ্গে। সাঈমের সঙ্গে লিটল ম্যাগের পেছনে গিয়ে সিগারেট খেলাম। সঙ্গীত নিয়ে একচোট আড্ডা হল। সাঈম চলে গেলে আবার নন্দনের সামনে ফিরে আসলাম। এসে দেখা পেলাম চিরনীল দম্পতি লেখক ও ঘুড়িব্লগের সম্পাদক নীলসাধু ও শিমুল ভাবী'র। নীলসাধু এবার 'এক রঙ্গা এক ঘুড়ি' থেকে প্রকাশ করেছেন বেশ কিছু নতুন বই। বইমেলায় দুই কপোত-কপোতি পাংখা লাগিয়ে ঘুরছেন। শিমুল ভাবী বললেন, চেনেন আমাকে। আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। নিশ্চয়ই সাধুদার কোনো রহস্যময় মদদ আছে এর পেছনে। এই সময় দেখা হল কানাডা থেকে উড়াল দিয়ে আসা লিটলমাস্টার কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ভাইয়ের সঙ্গে। দুলাল ভাই সকালে ঢাকায় নেমে কয়েক ঘণ্টা রেস্ট নিয়েই বইমেলায় এসেছেন। খুঁজছিলেন এক ভারতীয় কবিকে। বললাম, নতুন ভবনের নিচতলার অডিটরিয়ামে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন হচ্ছে, ওখানে পাবেন। দুলাল ভাই সেদিকে গেলেন।এরপর যথারীতি আবার দেখা হল কমরেড লেখক ঋষি এস্তেবান ও কবি সাফি সমুদ্র, মানিক জোড়ের সঙ্গে। না, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দোকানদারিতে আর পোসালে না। নতুন বই না আসা পর্যন্ত কি বেচাবিক্রি হবে না নাকি!!! তো সংসার চলবে কেমনে? বউ ছেলেমেয়ে খাবে কী!!! রাত আটটার দিকে নন্দনের সামনে আসলো অভিনেতা ইকতারুল ইসলাম আর অভিনেতা শাহজাহান সম্রাট। আমি দোকান গুটিয়ে ওদের সঙ্গে আবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢু মারতে গেলাম। মেলা দুইপাড়ে হওয়ায়, এই এক জ্বালা। এপারে থাকলে ওপারের কারো সাথে আর দেখা হয় না। ওদের নিয়ে উদ্যানের মূল মেলায় ঢুকেই পেলাম গণি ভাইকে। আগামী প্রকাশনীর বিখ্যাত প্রকাশক ওসমান গণি। গণি ভাইয়ের অতো সময় কোথায়! আমার মত পুচকে এক লেখকের সঙ্গে এক মিনিট কথা বলবেন! তো ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি অবস্থা। অন্যপ্রকাশের সামনে গিয়ে আবার দুলাল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হল। সেই ফাঁকে ইকতার আর সম্রাট হারিয়ে গেছে। ফোন দিয়ে শুনলাম, ওরা বাইরে উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চে নাটক দেখছে।এবার মেলায় ঘুরতে ঘুরতে গেলাম শ্রাবণ প্রকাশনীর সামনে। প্রকাশক ও কবি বন্ধু রবীন আহসান বলল, গরম গরম পেটিস খা। আজকে আমার ১৮ বছরের মেলার বয়সে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। খা খা গরম পেটিস খা। রবীনের যা আজ আয় তার তিন ভাগের এক ভাগ নাস্তায় ব্যয়। হরি বল হরি বল। কিন্তু মাগার পেটিস মুখে পুরে দেখি মাঘের শীতে তা ভারী ঠাণ্ডা। এবার পানি পাই কোথায়। রবীনের স্টলে পানি নাই। এই সময় গল্পপাঠ পত্রিকার ঢাকা প্রতিনিধি এহসান বলল, রেজা ভাই ত্রিশ মিনিটের একটা ইন্টারভিউ দেন। কইলাম, এখন সময় নাই। তুমি প্রশ্ন দিয়ে দাও মেইলে। লিখে দিমুনে। আরো জিগাইলাম, কুলদা রায় মেইলে আমাকে বিশাল এক লটবহর প্রশ্ন দিয়ে রেখেছেন কয়েকদিন আগে। বইয়ের প্রুফ কাটাই শেষ হয়নি। কখন ধরমু? এহসান জবাবে কইলো, ও তাই! আমিও সেই একই প্রশ্নই করব। বললাম, দেখি, প্রুফ শেষ হলে দেখা যাবে। এহসান বলল, ভাইয়া, ১০ তারিখের মধ্যে দিয়েন। এই সময় পেছন থেকে হাঁক দিল বন্ধু গল্পকার রুদ্রাক্ষ রহমান। রুদ্র উত্তরাবাসী হওয়ায় ওর সাথে খুব একটা দেখা হয় না। হারামজাদা লাস্ট একবার ধ্রুবদার বাসা থেকে মটর সাইকেলে সেই যে আমারে চৌরাস্তার জাহান্নামের মোড়ে গভীর রাতে নামিয়ে দিয়ে ফুটল, আর আজ দেখা। রুদ্র বলল, চল, সময় প্রকাশনে যাব। গোটা উদ্যান খুঁজে আমি যখন হয়রান, তখন দেখা পেলাম আরেক তূর্য কমরেড রম্যলেখক আহসান কবিরের। গতকাল কবির ভাইয়ের জন্মদিন ছিল। কবির ভাই টেলিভিশনে যোগ দেবার পর থেকে আমাদের আর চেনেন না। কি আর কমু, ধানমন্ডি লেকের পাড়ে খুব ভোরে আবার কখনো হাঁটতে গেলে ধরমু একদিন। সঙ্গে যথারীতি আরেক রম্যলেখক পলাশ মাহবুব। এই মানিকজোড়কে দেখলাম মেলায় এসেও মাথা থেকে টেলিভিশন ফেলে নাই। কারে নিয়ে টকশো করবে সেই আলাপে ব্যস্ত। আমি বিদায় নিয়ে বের হব। পেছন থেকে আরেক কমরেড লেখক রুদ্র সাইফুল চিৎকার দিল। রুদ্র'র সঙ্গে মাধবদার ত্রয়ী প্রকাশনে কিছুক্ষণ বসে আড্ডা দিলাম। ততক্ষণে বইমেলার বাতি নেভানোর সময় হয়ে গেছে। আমরা হেঁটে হেঁটে উদ্যানের বাইরে আসলাম। শাহবাগ এসে পেলাম আমাদের আড্ডার গ্যাং। বন্ধু কবি জাফর আহমেদ রাশেদ, বন্ধু শিল্পী মোবাশ্বির আলম মজুমদার, বন্ধু ইন্সপেক্টর হুমায়ুন কবির, কবি ফিরোজ এহতেশাম, মাস্টারনী ফারহা তানজিম তিতিল ও টাইগার ডোয়েলকে। তারপর ঘণ্টাখানেক তুমুল আড্ডা দিয়ে সরাসরি বাসায় ফিরলাম। মাথার মধ্যে অনেক কাজের চাপ। দুইটা বইয়ের প্রুফ দেখতে বাকি। মাসুক ভাইকে (শিল্পী মাসুক হেলাল) ফোন করলাম। মাসুক ভাই আমার একটা বইয়ের প্রচ্ছদ করবেন। মাসুক ভাই জানালেন, মাত্র বাসায় পৌঁছলেন। কাল সন্ধ্যায় শাহবাগ দেখা হবে। ক্ষুধায় তখন পেট চো চো করছে। ধুপধাপ খেয়ে প্রুফ দেখতে বসে গেলাম। .........................................২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ঢাকা",False rg,"আমরা নিরাপত্তা চাই, আমরা শান্তিতে বাঁচতে চাই!! ১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার নের্তৃত্ব যে মন্ত্রীসভা করেছিল তার তুলনায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম সংসদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষষ্ঠতা অর্জনের পর শেখ হাসিনার নের্তৃত্বে যে মন্ত্রীসভা গঠন করেছিল, এই দুই আওয়ামী মন্ত্রীসভার মধ্যে প্রথমটির চেয়ে দ্বিতীয়টি তুলনামূলক বেশি অদক্ষ ছিল। ৯৬'সালের প্রথম মন্ত্রীসভায় আওয়ামী লীগের অনেক প্রথম সারীর নেতানেত্রীরা মন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয়বারে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেও একটি দুর্বল মন্ত্রীসভা হঠন করেছিল। সেই দুর্বল মন্ত্রীসভায় খোদ আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অনেক নেতানেত্রী বাদ পড়েছিল। অনেকে সেই বাদ পরাকে ওয়ান ইলেভেনের সময় প্রথম সারির নেতাদের বিতর্কিত ভূমিকার কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু একটি দুর্বল মন্ত্রীসভা দিয়ে একটি নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠের সরকার যে খুব দক্ষতার সঙ্গে দেশের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে একটি যুগোপোযুগী সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশকে একটি সঠিক পথে অগ্রসর করতে সম্পূর্ণ না হোক অন্তত শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ ব্যর্থ হয়েছিল, সেই বিষয়টি এখন প্রায় দিবালোকের মতই সত্য। একটি নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠ দল ক্ষমতায় গিয়ে দুর্বল একটি মন্ত্রীসভা গঠন করলে কি হয়? শেখ হাসিনার নের্তৃত্বে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় মন্ত্রীসভার সেই দুর্বলা থেকে দেশের অনেক ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। মন্ত্রীসভায় আবুলদের মত মন্ত্রীরা সারা বছর নানাভাবে জনগণের কাছে হাসির খোরাকের যোগান দিয়েছে। পদ্মা সেতুর মত একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে নেহাত ছেলেমানুষী খেলেছে। দেশ বঞ্চিত হয়েছে একটি পদ্মা সেতু থেকে। শেখ হাসিনা তার দ্বিতীয় বারের মন্ত্রীসভার দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য গাদা গাদা উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছেন। যারা সবাই অনির্বাচিত ব্যক্তি। যারা তোষামোদের চরম ধৃষ্ঠতার কারণে জনগণের হার্টবিট বোঝার মত পরিবর্তে জনগণের যাতে আরো দীর্ঘমেয়াদী কল্যান নষ্ট হয় সেই সব কাজের অনেকগুলোর নজির রেখে গেছেন। উদারহরণ স্বরূপ বলা যায়- রামপাল কয়লা ভিক্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। কুইক রেন্টাল পদ্ধতি। রেলের নিয়োগ বাণিজ্য। শেয়ার বাজার কেলেংকারী। সোনালী ব্যাংক হলমার্ক কেলেংকারী। রানা প্লাজা'র আবির্ভাব। ছাত্রলীগের তাণ্ডব। যুবলীগের টেন্ডারবাজী ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদ ছিলেন আগের টার্মে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে এবার দায়িত্ব পেয়েছিলেন রাজনীতিতেই নবীন তথাকথিত ওভারস্মার্ট ডাঃ দীপুমনি। প্রথম দিকে যাকে আবার প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছিল একজন স্মার্ট ডক্টর হাছান মাহমুদের কাছে। সাহারা খাতুনের মত একজন অদক্ষ লোককে দেওয়া হল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। যিনি হেলমেটকে বলেন হ্যামলেট!! জোটের শরিক হিসেবে দিলীপ বড়ুয়াকে দেয়া হল শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব। শ্রমিক নেতা আর শিল্পমন্ত্রী তো এক জিনিস নয়! দ্বিতীয় বারের মন্ত্রীসভায় এমন অনেক মন্ত্রী ছিলেন যারা মন্ত্রীসভা থেকে চলে গেলেও তাদের নাম এই মুহূর্তে কারো মনে থাকার কথা নয়। একটি চাতুকরী যাদুবাস্তবতার মধ্যে প্রায় পাঁচ বছর কাটিয়ে দিয়ে শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের অনেক দক্ষ নেতাকে মন্ত্রী বানালেন যখন আর পাঁচ বছরের ভুল সামাল দেবার মত সময় একদম নাই। একটি দুর্বল মন্ত্রীসভা নিয়ে দেশ চালানো কোনোভাবেই কোনো প্রাজ্ঞ রাচনীতির পরিচয় বহন করে না। শেখ মুজিব নেতা ছিলেন। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য তাকে কারো চাটুকারী বক্তব্য না শুনলেও চলতো। কিন্তু শেখ হাসিনা তো রাজনীতি চর্চা করে নেতা হননি, তাই তার আশে পাশে চাটুকারদের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগ যাতে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো না হয়, সেজন্য প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদ, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, প্রয়াত আবদুল জলিল, তোফায়েল আহমদ, আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রমুখ নেতারা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের এক একজন নির্ভীক অভিযাত্রী। তাদের সম্মিলিত প্রাজ্ঞ রাজনীতি, দলীয় আদর্শ আর জনগণের মনের কথা বুঝতে পারা মত রাজনৈতিক দর্শনের গুনে প্রথম দফায় শেখ হাসিনা'র অনেক অর্জন ছিল। অন্তত ৯৬' সালের আওয়ামী সরকারের প্রথম তিন বছরের সাফল্য ছিল গোটা বাংলাদেশের মোট ৪২ বছরের রাজনীতিক ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখ করার মত। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় শেখ হাসিনা একটি দুর্বল কেবিনেটে নের্তৃত্ব দিতে গিয়ে কোনো চমক দিতে তো পারেননি বরং আগে অর্জিত সাফল্যগুলো ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছেন। ৯৬'সালে র সরকারের অর্জনের মধ্যে একটি পাবর্ত্য শান্তি ছিল, একটি ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি ছিল, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরুর অর্জন ছিল, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের খ্যাতি ছিল, আইন শৃঙ্খলা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিল। এমন অনেক অর্জন সে সময় ছিল। আর এবার? তিস্তা পানি চুক্তি হয়নি। ভারতের সঙ্গে সীমানা জটিলতার সমাধান হয়নি। পাবর্ত্য শান্তি চুক্তি'র যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে পারেনি। আইন শৃঙ্খলা মোটেও নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। বরং এসবের ফাঁক গলিয়ে পদ্মা সেতু কেলেংকারীসহ অনেক কেলেংকারী যুক্ত হয়েছে। এক মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা'র বিষয়টি এই সময়ে আন্তর্জাতিক আদালেতে শেষ হওয়ায় সেই ক্রেডিট যতোটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের, তার চেয়ে সেই বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতের এই সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করাটাই মুখ্য ছিল। এই সময়ের মধ্যে ওটা শেষ না হলে ওটা নিয়ে দীপুমনি এতো বাগরম্বর করতে পারতেন না। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সামনে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুবর্ন সুযোগ এসেছিল। একটি দুর্বল মন্ত্রীসভা গঠন করে তিনি সেটি নিয়ে তামাশা করেছেন। ক্ষতি হয়েছে দেশের, দেশের মানুষের। লাভ হয়েছে একটি চাটুকর শ্রেণীর। যারা এখন কোথায় পালিয়েছে, কে কোন দেশের ভিসা নিয়ে কোথায় নিরাপদ হোমে আছে কেউ জানে না। এমন একটি দুর্বল মন্ত্রীসভা দিয়ে কাজ চালাতে গিয়ে অনেক ছোট খাটো বিষয়ে পর্যন্ত স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। শেখ হাসিনার দ্বিতীয় দফার মন্ত্রীসভায় সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল সমন্বয়হীনতার। মন্ত্রীদের মধ্যে কে যে সরকারের আসল মুখপাত্র সেটি নির্নয় করা বেশ জটিল ছিল। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, নাকি যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নাকি দপ্তরবিহীন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, নাকি সৈয়দ আশরাফ, নাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, নাকি মাহবুবুল হক হানিফ, কে যে সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছে, সেটা নির্নয় করাটা স্বয়ং সরকারের জন্যই বেশ জটিল একটি পরীক্ষা ছিল। এদের প্রত্যেকের পেছনে মিডিয়ার একটি বিশেষ দল রোজ সময় নষ্ট করেছে। এখনো সেই প্রক্রিয়াটির সমন্বয় হয়নি। সবাই সরকারের মুখপাত্র সাজতে গিয়ে বরং সরকার প্রধানের দুর্বলতার চিত্রটাই ফুটে উঠেছে। এটা কেবল দুর্বল মন্ত্রীসভা আর অদক্ষ অযোগ্য অদূরদর্শী নের্তৃত্বের কাছ থেকেই এমনটি ঘটার কথা। নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে সংবিধানে এমন একটি সংশোধন আনা হল যেখানে সংসদীয় কমিটির বক্তব্য পর্যন্ত অগ্রাহ্য করা হল। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী'র একক বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এমন একটি জটিলতা তৈরি করা হল যে, যা নিয়ে এখন সারা দেশে সহিংস আন্দোলন চলছে। বিএনপি জামায়াত কতোটা সহিংস আন্দোলন করছে তার চেয়ে বড় কথা সেই আন্দোণলন হাতে ধরিয়ে দিতে কেন এমন একটি অমিমাংসিত ইস্যু সামনে আনা হল। নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে সেটি সকল পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে, গোটা দেশের সাধারণ মানুষের মতামত নিয়ে (প্রয়োজনে গণভোট নিয়ে), বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে এটি গঠন করা যেত। তখন আর বিএনপি'র চলমান আন্দোলনের কোনো অযুহাত তৈরি হত না। এমনিতে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি প্রায় পাঁচ বছর অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। জনগণের কোনো ইস্যু নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করেনি। তাদের নেতাদের দুর্নীতির মামলা নিয়েই তারা ব্যস্ত ছিল। আর সংসদ সদস্যপদ টিকিয়ে রাখতে ৯০ দিন শেষ হবার আগে তারা হাজিরা দিত। সেই বিএনপিকে এমন একটি মোক্ষম অস্ত্র সরকার হাতে তুলে দিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে। নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতার শক্তিকে পুঁজি করে শেখ হাসিনার সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার মত একটি স্পর্শকাতর ইস্যুতে হাত লাগালো। এই ইস্যুটি নিয়ে বিএনপি জামায়াতের পক্ষে থাকলেও কোনো জোরালো মতামত দিতে তারা বরাবার কিরত থেকেছে। একই সময়ে দ্বিতীয় আরেকটি স্পর্শকাতর বিষয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের মত বিষয়ে হাত দেয়াটা আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হয়েছে। নতুবা বিএনপি'র সামনে এখন কোনো ইস্যুই থাকতো না। ক্ষমতায় যে দলই থাকুক, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা হল হাওয়া ভবন, খাম্বা, ডেসটিনি, মানিলন্ডারিং, হলমার্ক, পদ্মা সেতু, রানা প্লাজা, শেয়ারবাজার ইত্যাদি ঘটনাগুলো ঘটবে। এই ঘটনাগুলো সামাল দেবার মত রাজনৈতিক দক্ষতা শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার নেই। ছাত্রলীগ ছাত্রদলকে সামাল দেবার মত ক্ষমতা দুই নেত্রীর হাতে নেই। যুবলীগ যুবদলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার মত দূরদর্শীতা দুই নেত্রীর নেই। যে কারণে এগুলো অনেকটাই স্বাভাবিক ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায়। এগুলো এখন যেমন ঘটছে, আগামী পঞ্চাশ বছরেও ঘটবে। সেটা কে কতোটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন, সেটাই বরং সাফল্য। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল দুটো প্রধান ইস্যু একসঙ্গে সামাল দেবার মত সক্ষমতা দুর্বল কেবিনেটের নাই। নইলে একটি শক্তিশালী সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তখন কিভাবে যাত্রীবাহী বাসে সন্ত্রাসীরা আগুন দিতে পারে? রেললাইন তুলে ফেলতে পারে? থেমে থাকা সরকারি বিআরটিসি বাস ডিপোতে আগুন দিতে পারে? সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা তাহলে কি করছে? সরকারের এতো বাহিনী তাদের কাছে কি এসব তথ্য নেই? তারা এসব তথ্য যদি সংগ্রহ করতে না পারে, তাহলে আমরা সাধারণ জনগণ কেন ট্যাক্স দিয়ে তাদের বেতন দিচ্ছি? শেখ হাসিনা সরকার যে কতোটা দুর্বল তা এক কথায় গীতা সরকার ব্যাখ্যা করেছেন। আমরা অসুস্থ সরকার চাই না। আমাদের নিরাপত্তা দিতে যে সরকার নিজেই ঘুমিয়ে আছে, সেই সরকার দিয়ে আমরা কি করবো? চলন্ত বাসে আগুনে পুড়ে আমরা আর মরতে চাই না। একটি দেশের পরিস্থিতি আর কতো অধপতনে গেলে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আর কতো নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে সরকার সেনাবাহিনী নামাবে? আমরা নিরাপত্তা চাই। আমরা শান্তি চাই। আমরা সরকার বুঝি না। কে সরকারে গেল কে বাইরে থাকলো তাও আমরা বুঝি না। আমরা বুঝি এমন চলতে থাকলে জিনিসপত্রের দাম আরো বাড়বে। আমরা চাল কিনতে গেলে টের পাই সরকার কি জিনিস? আমরা পেঁয়াজ কিনতে গেলে টের পাই সরকার কি জিনিস? আমরা পাবলিক বাসে উঠলে টের পাই সরকার কি জিনিস? অতএব আমাদের এই সরকার সরকার ছড়া দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে লাভ নেই। আমরা সোজা কথা নিরাপত্তা চাই। আমরা শান্তি চাই। শান্তিতে বসবাস করতে চাই। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার এই রাজনীতি আমরা আর দেখতে চাই না। আমাদের রাজনীতিবিদদের যতো দ্রুত শুভবুদ্ধির উদয় হবে ততো দ্রুত আমরা শান্তির পথ খুঁজে পাব। নইলে সামনে আমাদের জন্য আরো ঘোর অন্ধকার অপেক্ষা করছে। মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়বে। প্লিজ, আপনাদের এই কাসুন্দি বন্ধ করুন। আমরা নিরাপত্তা চাই। আমরা শান্তি চাই।",False rn,"টুকরো টুকরো সাদা মিথ্যা- ২৯ রিয়া অবাক হয়ে সমুদ্রের বিশাল ঢেউ দেখছে। বাঘের চেয়ে অনেক বেশী সুন্দর সমুদ্রের গর্জন। সমুদ্রের পাড়ের ঠান্ডা বাতাসে শাড়ির আঁচল উড়ছে, মাথার চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে। রিয়ার মনে হচ্ছে- বাতাসের ধাক্কা সে সামলাতে পারবে না- মাটিতে পরে যাবে। প্রতিদিন বিকেলে রিয়া সমুদ্রের পাড়ে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রিয়ার মনে হয়- সমুদ্রের বিশাল ঢেউ থেকে এক সুদর্শন যুবক এসে রিয়াকে সমুদ্রে নিয়ে যাবে। রিয়া সাঁতার জানে না, তারপরও সে সমুদ্র থেকে উঠে আসা যুবকের সাথে যাবে। সমুদ্রের গভীরে হয়তো অন্য কোনো জগত আছে- সে জগতের সাথে মিশে যাবে। সে জগতে মানুষের সব স্বপ্ন সত্যি হয়। রিয়া হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্রের অনেক কাছে চলে এসেছে। বিশাল বিশাল ঢেউ এসে তার পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। রিয়া সাহস করে সমুদ্রের দিকে তিন পা এগিয়ে গেল- ঠিক তখন বিশাল বড় একটা ঢেউ এসে রিয়াকে ধাক্কা দিল, রিয়া ধাক্কা সামলাতে পারল না, বালির উপর আছড়ে পড়ার আগেই এক যুবক তাকে ধরে ফেলল। রিয়া যুবকের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। এই যুবক কি সমুদ্র থেকে উঠে এসেছে ? যুবকটি দেখতে সহজ সরল সুন্দর। মাথার চুল গুলো লম্বা। সবচেয়ে সুন্দর যুবকটির চোখ। চোখের মধ্যে যেন এক আকাশ মায়া। রিয়ার ইচ্ছা করছে- যুবকটির বুকে মাথা রাখতে। ইচ্ছা করলেই অচেনা এক যুবকের বুকে মাথা রাখা যায় না। স্বপ্ন দেখা সহজ, স্বপ্নে আকাশে প্রাসাদ বানানো যায়। কিন্তু বাস্তব অন্য রকম। রিয়া এবং যুবকটি হাতে ডাব, তারা পাইপ দিয়ে ডাবের পানি খাচ্ছে। রিয়া বলেছে- ডাবের পানি খেয়ে, ঝালমুড়ি খাবে। কিছু কিছু সম্পর্ক অল্প সময়েই খুব গভীর হয়ে যায়। খুব অল্প সময়েই একজনকে খুব বেশী আপন মনে হয়। রিয় কাছে যুবকটিকে খুব আপন-আপন লাগছে। মনে হচ্ছে- যুবকটির সাথে তার হাজার বছর ধরে পরিচয়। ঝালমুড়ি শেষ করে রিয়া যুবককে বলল- এখন আমি তোমার হাত ধরে সমুদ্রের পাড় দিয়ে হাঁটবো। প্লীজ তুমি মানা করবে না। যুবকটি হেসে বলল, আচ্ছা। রিয়া খুব সুন্দর করে যুবকটির হাত জড়িয়ে ধরে হাঁটতে শুরু করল। বাতাসে রিয়ার চুল, শাড়ির আঁচল এসে পড়ছে যুবকটির গায়ে। রিয়ার সেদিকে হুশ নাই, সে হাত নেড়ে নেড়ে নানান গল্প করে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। যুবকটি বলল, চলো- তোমাকে বাসায় নামিয়ে দেই। রিয়া বলল, নো নেভার। আমি তোমার সাথে আরও অনেকটা সময় থাকতে চাই। যুবক বলল, সন্ধ্যার পর বাইরে থাকতে আমার ভালো লাগে না। চলো, আমার বাসায় চলো। আমার বাইক আছে, বাইকে করে গেলে সাত মিনিট লাগবে। রিয়া এক আকাশ খুশি হয়ে বলল- তোমার বাইক আছে! খুব ভালো কথা। চলো বাইক-এ করে তোমার বাসায় যাই। এক কাপ চা খেয়ে আসি। বাইকে বসে রিয়ার ইচ্ছা করল, দুই হাত দিয়ে - যুবকটির বুক জড়িয়ে ধরতে কিন্তু লজ্জার কারনে পারল না। যুবকটিও চাচ্ছিল রিয়া তাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরুক। বেশীর ভাগ সময়ই মানুষের গোপন ইচ্ছা গুলো কখনও পূরন হয় না। রিয়া বলল, তোমার ঘরটা অনেক সুন্দর। ঘর ভর্তি বই আর বই। যুবকটি বলল, চায়ের সাথে আর কি খাবে ? রিয়া বলল- তুমি যা দিবে তাই-ই খাবো। যুবকটি নুডুলস বানিয়ে রিয়াকে দিল, নিজেও খেল। নুডুলস খেয়ে রিয়া মুগ্ধ। কোনো যুবক এত মজা করে নুডুলস রান্না করতে পারে তার ধারনা ছিল না। চা খেয়েও- রিয়া মুগ্ধ। রিয়া বলল, আমার হাতে চা নুডুলস এত ভালো হয় না। হঠাত রিয়ার একটু মাথা ঘুরে উঠলো। চোখেও ঝাপসা দেখতে শুরু করলো। সুদর্শন যুবকটি রিয়ার চায়ের সাথে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে দিয়েছে। আজ রাতে রিয়াকে নিয়ে তার অনেক পরিকল্পনা আছে। রিয়া টলতে টলতে যুবকের হাত ধরে বলল- হঠাত শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। কি করি বলতো? যুবকটি রিয়াকে কোলে করে নিয়ে বিছায় শুইয়ে দিল। যুবকটির চোখ-মুখ অজানা এক খূশিতে ঝলমল করছে। রিয়া শরীরে শক্তি পাচ্ছে না। তার সারা শরীর অবশ অবশ লাগছে। যুবকটি খাটের সাথে রিয়ার হাত -পা শক্ত করে বাঁধল। রিয়া বলল, এই কি করছো ? যুবকটি রিয়ার কথার জবাব দিল না। যুবকটি ব্যাপক উৎসাহে একটা একটা করে রিয়ার শরীর থেকে জামা খুলে নিচ্ছে। রিয়া ছটফট করছে- কিন্তু সে নিজেকে ঢেকে রাখতে পারল না। যুবকটি অনেকক্ষন আগেই তার হাত-পা শক্ত করে বেঁধে রেখেছে। যুবকটি অবাক বিস্ময়ে রিয়ার নগ্ন শরীরে চেয়ে আছে। কি হতে যাচ্ছে- রিয়া কিছুই বুঝতে পারছে না। ঘুমে তার চোখে বন্ধ হয়ে আসছে। যুবকটি রিয়ার কানে ফিসফিস করে বলল- আজ সারারাত তোমাকে ধর্ষণ করবো। শুধু আমি একা না, আমার বন্ধুরা সহ। হা হা হা... এমন বিচ্ছিরি হাসি সে তার জীবনে দেখেনি। রিয়ার মনে হলো কোনো পশু হাসছে। ( সত্য ঘটনা অবলম্বনে এবং এই লেখাটি আমার এক হাজার তম পোষ্ট।) সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৭",False ij,"গল্প_ কবি ও কিশোরী গলির ঠিক মাথায় একটা সিডি-ক্যাসেটের দোকান। হাই-ভলিউমে একটা হিন্দি গান বাজছিল: খুদা জানে কে মেইন ফিদা হুন/ খুদা জানে মেইন মিট গয়া ... কোরাসের সুরে অত্যন্ত মেলোডিয়াস চিৎকার । তা ছাড়া গানের সুরে কেমন নিশ্চিন্ত ভাব, যেন জীবনে দুঃখকষ্ট বলে কিছু নেই, যেন জীবনে কখনোই মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটে যায় না .. যেন এ জীবন কেবলই আনন্দময়, যেন এ জীবনে ওড়না পেঁচিয়ে কোনও কিশোরীকে ফাঁস দিতে হয় না ... শান্তা দ্রুত পায়ে বাড়ি ফিরছিল । আজ শাড়ি পরেছিল বলে হাঁটতে অসুবিধে হচ্ছিল। আজ কলেজে নবীনবরণ ছিল, যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না, তারপরও যেতে হল। লাল পাড় হলুদ রঙের শাড়ি পরেছে, গলিটা সোনালি রোদে ভরে আছে বলে শান্তাকে অপূর্ব দেখাচ্ছিল; অথচ ওর মুখটা ফ্যাকাশে, বুকে জমাট কান্না। বারবার লাবনীর মুখটা ভেসে উঠছে, ইশ, আজ লাবনী বেঁচে থাকলে ওও শাড়ি পরত। শান্তা ফাংশানে আজ কবি মোস্তফা কামাল রচিত ‘ শ্রাবণের বৃষ্টির দিনে’ কবিতটি আবৃত্তি করেছে। ইশ, লাবনী বেঁচে থাকলে ফাহমিদা নবীর গান গাইত। ফাহমিদা নবীর ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’ গানটা লাবনীর ভীষণ পছন্দ ছিল। দূর থেকে রবিনকে দেখে শান্তার বুকটা ধক করে উঠল। হলুদ টি-শার্ট, কালো প্যান্ট পরে সজীব কনফেকশনারীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে রবিন, সামনে একটা টিভিএস মোটর সাইকেল । ছেলেটা এ পাড়ার মাস্তান বাদশার ঘনিষ্ট সহযোগী, লাবনীর মৃত্যুর পর থেকেই বাদশা পলাতক, লাবনীর মৃত্যুর পর পুলিশ এসেছিল, পুলিশ এখন আর আসছে না, এখন দেশে এমনই হচ্ছে, একটা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর খুব তোলপাড় ওঠে, তারপর ধীরে ধীরে সবাই ভুলে যায়। কনফেকশনারীর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় শান্তার দিকে ট্যারা চোখে তাকায় রবীন । গুনগুন করে ...খুদা জানে কে মেইন ফিদা হুন/ খুদা জানে মেইন মিট গয়া ... শান্তা রক্তস্রোতে আলোরণ টের পায়। ও চলার গতি বাড়িয়ে দেয়। বাদশাও লাবনীকে দেখে এই গানটি গাইত। আত্মহত্যা করার আগের দিনও কথাটা লাবনী শান্তাকে বলেছিল । কবি মোস্তফা কামাল চা-স্টলে বসে চা খাচ্ছিলেন। চা-স্টলটা মতিনের, সকালের দিকে কবি এখানে একবার এসে বসেন। চা শেষ করে সিগারেট ধরিয়েছেন কবি, শান্তাকে দেখতে পেলেন, দ্রুত হাঁটছে, পিছনে রবীন ছেলেটা দাঁড়িয়ে, কবি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন ... এই বখাটেদের জন্যেই ফুলের মতন একটি মেয়েকে প্রাণ দিতে হল। লাবনীকে চিনতেন কবি, কবির বন্ধু মোশারফের মেয়ে, মোশারফ হোসেন ভূইঁয়া একটা সরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি করে, বাড়ি বিক্রমপুর। আহা, নীরবে অপমান সহে ফুলের মতন ফুটফুটে মেয়েটি ফাঁস দিল, কাউকে কিছু বললও না। লাবনীর মৃত্যুর সময় কবি নেত্রকোনার দূর্গাপুর ছিলেন, হঠাৎই সোমেশ্বরী নদী দেখতে ইচ্ছে হল: কবির হঠাৎ হঠাৎ এমন ইচ্ছে হয়, তখন বেরিয়ে পড়েন। কবির বয়স ষাটের মতন, প্রেসের ব্যবসা আছে, সেটিই আয়ের প্রধান উৎস, ছেলেমেয়েদের বিয়েশাদী হয়ে গেছে। স্থানীয় গন্যমান্য লোক কবি মোস্তফা কামাল, মুক্তিযোদ্ধা কবি হিসাবে ওয়ার্ড কমিশনার থেকে পাড়ার সব বয়েসের নারীপুরুষ তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে। কবি কবজি উলটে ঘড়ি দেখলেন; বারোটার মতন বাজে। সিগারেটের শেষ অংশটুকু চায়ের কাপে ফেলে উঠে দাঁড়ালেন। রবীন কনফেকশনারীর সামনে তখনও দাঁড়িয়ে, শান্তাকে দেখতে পেলেন না, ওপাশের সাদা রঙের পুরনো একটি চারতলা দালানের ভিতরে ঢুকে গেছে শান্তা; দালানটা রফিক শিকদারের, রফিক শিকদার শান্তার বাবা, হাইকোর্টের ল’ইয়ার। শান্তাদের বাড়ির দোতলায় ভাড়া থাকেন রাশেদা বেগম, একাই থাকেন, অনেক দিন রাশেদা বুর সঙ্গে দেখা হয় না। আজ একবার রাশেদা বুর সঙ্গে দেখা করা দরকার। রবীনের হাবভাব ভালো ঠেকল না। কবি মতিনের চাস্টল থেকে বেরিয়ে ধীরেসুস্থে হাঁটতে থাকেন। কবির ধবধবে ফরসা শরীরটি এই বয়েসেও বেশ সবল। পরনে চেক লুঙ্গি আর সাদা ফতুয়া, মাথায় কাঁচাপাকা চুল, মুখে দাঁড়ি, চোখে কালো রঙের ফ্রেমের বাইফোকাল চশমা। দোতলায় উঠতে সামান্য হাঁপ ধরল। কলিংবেল বাজালেন। দরজা খুলল মনিরা। রাশেদাবু কইরে? কবি জিজ্ঞেস করেন। নানী আছে। আপনি বসেন মামা। আমি ডাক দিয়া দিতেছি। বলে মনিরা ভিতরে চলে যায়। বসার ঘরটি ভারি ছিমছাম, ঘর জুড়ে আগরবাতির গন্ধ। এক কোণে পুরাতর টিভি সেট। তার ওপরে মওলানা ভাসানীর একটি সাদাকালো ছবি। সোফা সেটটিও পুরনো, একটি সিঙ্গেল সোফায় বসলেন। একটু পর রাশেদা বেগম এলেন। পরনে কালো পার সাদা শাড়ি। ষাট বছর বয়েসি বিধবা মহিলা, দেখে মনে হয় না গত উনচল্লিশ বছর এই বৃদ্ধা কি ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন । ফরসা। চোখে কালো ফ্রেমের বাইফোকাল চশমা। রাশেদা বেগম একা থাকেন। ছেলেমেয়েরা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কবি নিস্তেজ কন্ঠে বললেন, পাড়ায় এমন কান্ড হয়ে গেল, মোশারফ হোসেন ভূইঁয়ার মেয়েটা ... রাশেদা বেগম বললেন, আমি শান্তার মুখে শুনছি, আমজাদের পোলা বাদশায় লাবনীরে অপমান করছিল । লাবনীরে বিয়া করব বইলা হুমকি দিসিলো। লাবনী বিয়ায় রাজী না হইলে তুইলা নিয়া যাইব বলছিল। কবি টের পেলেন তার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠছে। মনিরা ট্রে নিয়ে ড্রইংরুমে ঢোকে। একটা গ্লাসে বেলের সরবত। টেবিলের ওপর ট্রে রেখে চলে যাবে -এমন সময় রাশেদা বেগম বললেন, ডাইলে আম দিস রে মনি। দিমু নানী। বলে মনিরা চলে যায়। কবি এক চুমুকে বেলের সরবত শেষ করে বললেন, লাবনী তোমার কাছে আসত না বু? আসত, কম, শান্তার সঙ্গে আসত। শান্তাই বেশি আসত। বাড়িওলার মেয়ে। পাশাপাশি মেয়ে দুইটারে ভালো মানাইত। হ। কবি বললেন, তোমারে না পাকিস্তানি সৈন্যরা ধইরা নিয়া গেছিল, কত অত্যাচার করছে তখন, কই তুমি কি আত্মহত্যা করছ? রাশেদা বেগম চুপ করে থাকেন। এই কথায় কত কথা যে মনে পড়ে যায়। উনিশ ’শ একাত্তর সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি। নেত্রকোণার আটপাড়ার কাছের এক গ্রামে দূর সম্পর্কের এক মামার বাড়ি আশ্রয় নিয়েছেন। মামার ছেলেরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল ... স্থানীয় রাজাকার নুর আলীর যোগসাজশে পাকিস্তানি সৈন্যরা মধ্যরাত্রে বাড়ি আক্রমন করে ... উঠানে দাঁড় করিয়ে একে একে গুলি করে বাইশজন কে হত্যা করে ...তারপর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় ... সাতজন মেয়ের সঙ্গে রাশেদা বেগমকে ট্রাকে তোলে ...স্কুলঘরে নিয়ে বিভৎস নির্যাতন করে ... সেই সময়কার কথা মনে হলে শরীর আজও হিম হয়ে ওঠে ... কবি বললেন, একবার যদি লাবনীয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলত বু। যদি লাবনীয়ে জানত তোমার উপর দিয়া কি ঝড় গেছে যুদ্ধের টাইমে। তারপরেও তুমি মরণের পথ বাইছা লও নাই, আজও বাঁইচা আছো। রাশেদা বেগম চুপ করে থাকেন। তার চোখের কোণে ভিজে যায়। লাবনী আসত মাঝে-মাঝে। মেয়েটা বড় লক্ষ্মী ছিল। তবে কখনও বাদশার জ্বালাযন্ত্রণার কথা বলেনি । কবি বললেন, যারা বখাটেদের অত্যাচারে আত্মহত্যা করতেছে, তারা যদি জানত কত অপমানের পরও বাঁইচা থাকা যায়। আইজকাল কার অল্পবয়েসী মেয়েদের সঙ্গে তাহে মা-খালাগো সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে। যোগাযোগটা বজায় থাকলে মেয়েরা আর বদমাইশ পোলাপাইনের জ্বালায় গলায় ফাঁস দিয়া মরত না। লাবনীদের বয়েসী মেয়েদের বাঁচার জন্য দরকার বয়স্ক মহিলাদের অভিজ্ঞতা। কলিং বেল বাজল। রাশেদা বেগম উঠে দরজা খুললেন। শান্তা। শাড়ি বদলে সালোয়ার-কামিজ পরে এসেছে। হাতে একটা প্লেট । আয়। তোর হাতে কি রে? মায়ে মাছের বড়া করছে। আচ্ছা, তুই মামার কাছে বয়। আমি আসতেছি। বলে রাশেদা বেগম প্লেট নিয়ে ভিতরে যান। কবি বলেন, আয় শান্তা। বস, তোর লগে আমার কথা আছে। শান্তার বুক ঢিপঢিপ করে। বসল। কবি মোস্তফা কামালকে ভীষন শ্রদ্ধা করে। ছোটদের জন্য লেখা কবির ছড়াগ্রন্থ ‘পরীর হবে গায়ে হলুদ’ প্রিয়, প্রায়ই একা একা ‘হলুদ রোদের দিন’ ছড়াটা আবৃত্তি করে। এমন মানুষকে কি শ্রদ্ধা না করে উপায় আছে। কবি জিজ্ঞেস করলেন, তোরে কি সিরাজের পোলা রবীনে ডিসটার্ব করে মা? শান্তা চুপ করে থাকে। রাশেদা বেগম ফিরে এসেছিলেন। কথাটা রাশেদা বেগমের কানে গিয়েছিল। সোফায় বসতে বসতে বললেন, ক, সত্য কথা ক। শান্তা চুপ করে থাকে। অল্প অল্প কাঁদছে। কবি বললেন, বু, তুমি ওরে খুইলা কও ... সেভেনটি ওয়ানে সেইসব নরপশুরা তোমারে নিয়া কি করছিল। শুন শান্তা। রাশেদা বেগম বলতে থাকেন। সেই রোমহর্ষক বিভৎসকাহিনী শুনতে শুনতে শান্তার ফরসা রং নীলাভ বর্ণ ধারণ করতে থাকে। থরথর করে কাঁপতে থাকে। কবি বললেন, বুঝলি মা, কত অপমানের পরও বাঁইচা থাকা যায়। মা, প্রাণ হইল আল্লাহতালার পবিত্র সৃষ্টি। তিনি যখন ইচ্ছা করবেন প্রাণ নিয়া নিবেন, এই পবিত্র প্রাণকে নিজ হাতে বিনাশ করতে নাই। প্রাণ নিজ হাতে বিনাশ করলে আল্লাহতালা কষ্ট পান। শান্তা মাথা নিচু করে বসে আছে। রাশেদা বেগম উঠে জানালার কাছে গিয়ে উঁিক মারলেন। তারপর বললেন, সিরাজের পোলা রবিন এখনও কনফেকশনারীর সামনে খাড়ায়া আছে। বান্দির পুত। মনে হয় জুতা দিয়া পিটায়া মুখ থ্যাতা কইরা দেই। কবি উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, চল, নিচে চল। আজ এর একটা বিহিত করুম । আমার রক্তে মুক্তিযুদ্ধের তুফান বইতেছে। চল, নিচে চল। তিনজনে নিচে নেমে এল। শান্তার শরীর ভীষন কাঁপছিল। কত অত্যাচার সহ্য করে রাশেদা ফুপু এখনও বেঁচে আছেন। ইস্ , কেন যে লাবনী সুইসাইড করল! কবি বললেন, যা মা, তুই ওই বদমাইশটার সামনে দিয়া হাঁইটা যা। বাজে কিছু কইলে ওড়না দিয়া ওর গলা পেঁচায়া ধরবি। দেশে আইনকানুন নাই যখন, আবার হাতে আইন তুইলা নিব। শান্তা দাঁড়িয়ে থাকে। সামান্য ইতঃস্থত করে। লাবনীর মৃত মুখ মনে পড়ে। যে ওরনায় লাবনী ফাঁস দিয়েছিল সেই ওড়নাটি ওকে সঙ্গে নিয়ে কিনেছিল। রাশেদা বেগম বলেন, তুই যা, শান্তা, আমরা আছি, যা। তোর কোনও ভয় নাই। রবীন খারাপ কথা কইলে বটি দিয়া অর গলা আজই কাইটা ফালামু। এইভাবে লুবনার মতন মেয়েরা গলায় ফাঁস দিয়া মরলে আমার বাঁইচা থাকার কোনও দরকার নাই। শান্তা নির্ভয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে রবিনের দিকে। রবিন দাঁড়িয়ে আছে। শান্তা ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেখে হাসছে। শান্তা নির্ভয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে রবিনের দিকে। ওর আর ভয় লাগছে না। একজন মহৎপ্রাণ কবি মহাকাল থেকে অনেক অভয় তরঙ্গ এনে ওর কিশোরী শরীরে লেপন করে দিয়েছেন ... ওর আর ভয় লাগছে না। ও আর কখনও ভয় করবে না ... বাতাসে কী ভাবে মৃদু উত্তেজনা ছড়িয়ে যায়। হয়তো শান্তার হাঁটার ভঙ্গিতে কিছু একটা ছিল। জনতার ভিড় বাড়ছে গলিতে। এ দেশের বৃহত্তর জনতা আগামীকালের সংবাদপত্রে অন্যরকম একটি সংবাদ পাঠ করবে ... সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:৩২",False fe,"রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ও শিক্ষার মানদণ্ড রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ও শিক্ষার মানদণ্ডফকির ইলিয়াস=========================================এটা আমরা সবাই জানি, একটি জাতি শিক্ষিত হলে সেই রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন ঘটে। মানুষ যখন তার অধিকার বিষয়ে সচেতন হয় তখন সে অনেক দাবিও আদায় করতে পারে। অথবা নিজেই চেষ্টা করে ফেরাতে পারে নিজের ভাগ্য। কিন্তু একটি প্রজন্মকে সঠিকভাবে শিক্ষিত করে তোলা হচ্ছে কি? কিংবা তাদের সঠিক তথ্য জানিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে কি? এমন অনেক কথাই আসছে। বাংলাদেশে দুটি শিক্ষাপদ্ধতি বিদ্যমান। একটি স্কুল শিক্ষা আর অন্যটি মাদ্রাসা শিক্ষা। বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডও রয়েছে। এ যে দুটি পদ্ধতি, তা কি পরস্পরবিরোধী নয়? এ নিয়ে অনেক কথাই বলা যেতে পারে। শিক্ষা বিষয়ে আমাদের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা একটু পড়া যাক-ক. রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।এখানে আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর বলতে আমরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত প্রাইমারি শিক্ষাব্যবস্থাকে বুঝতে পারি। সংবিধানের উক্ত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে, প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা হবে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত, অবৈতনিক, বাধ্যতামূলক এবং দেশের সকল শিক্ষার্থীর জন্য একই পদ্ধতির। কিন্তু আমরা প্রাথমিক পর্যায়েই দেখছি- প্রাইমারি স্কুলের পাশাপাশি কওমী মাদ্রাসাগুলো বাংলাদেশে চালু আছে। সেই সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। বিভিন্ন ধারার অপরিকল্পিত শিক্ষা, শিক্ষাক্রম ও দর্শন পড়ানো হচ্ছে। শিক্ষার অর্থায়ন, ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়হীনতা প্রকট রূপ ধারণ করছে কোথাও কোথাও।বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার যে ধারাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে সেটা হচ্ছে আলিয়া মাদ্রাসার ধারা। সরকার যখন মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের কথা বলে, তা মূলত আলিয়া মাদ্রাসার ধারাকেই বুঝিয়ে থাকে। হাজার হাজার কওমী মাদ্রাসা সরকারের নজরদারির বাইরে এবং তারা কোনো প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা চায়ও না।বেশ শঙ্কার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের একটি রক্ষণশীল আধুনিক মুসলমানরা নিজেদের জন্য শহরগুলোতে গড়ে তুলেছেন এক ধরনের মাদ্রাসা ব্যবস্থা। যেগুলো ‘ক্যাডেট মাদ্রাসা’ ও নানা নামে পরিচিত। এসব প্রতিষ্ঠানে কখনও ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় আধুনিক পাঠদান করা হয়। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ আধুনিক। এখানে সহশিক্ষা চালু আছে এবং মেয়েদের আলাদা ঘরে শিক্ষা দেওয়া হয় না। টিভি-কম্পিউটার-নাটক-নৃত্য-স্পোর্টস-ছবি আঁকা এগুলোর কোনোটাই এখানে ধর্মবিরোধী নয়। খালি একটি বিষয়ই তারা লক্ষ রাখেন, সেটা হচ্ছে ‘ইসলামের পুনরুজ্জীবন’ এবং সমাজে, অর্থনীতিতে, রাজনীতিতে আদর্শগতভাবে ইসলামের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করা। ইসলাম তাদের কাছে একটি মৌলবাদী বিশ্বাস। সে দিকে থেকে এই ধারাটিকে ‘আধুনিক রাজনৈতিক ইসলাম’ হিসেবে অভিহিত করা যায়। এবং সেই সঙ্গে ক্রমশ মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী মানসিকতাও গড়ে তোলা হয়। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে যেসব জঙ্গি কার্যক্রম সাধিত হয়েছে- এসব ঘটনার হোতারা কিন্তু এ আধুনিক ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত।সবচেয়ে বেদনার বিষয় হচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা যেমন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র সংবিধানের খণ্ডিত রূপও তারা স্বীকার করে না। বিজয়, স্বাধীনতা, শহীদ দিবসে দল বেঁধে ফুল দেওয়া, প্রভাতফেরি, কুচকাওয়াজ ও মাঠে যাওয়া, জাতীয় সংগীত গাওয়াসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চেতনামূলক কর্মসূচি আয়োজনকে তারা ইসলামবিরোধী মনে করে। বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে তাদের ধারণা একমুখী, অনেকটা এ অঞ্চলে ইসলাম বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত। ভাষা ও স্বাধীনতা সম্পর্কে তাদের ধারণা খণ্ডিত। তারা সুযোগ পেলেই তাই ধর্মের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা দখলের কথা বলতেও কসুর করে না। আরো শঙ্কার কথা হচ্ছে- এ ভূতের আছর এখন প্রাথমিক শিক্ষাস্তরেও পড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি সাপ্লাইকৃত সরকারি বইয়ে যে ভুল দেখা গেছে- তা নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় কথা হছে প্রতিদিন। নতুন পাঠ্যপুস্তকে ভুলের জন্য শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্ট সরকারের দুই মন্ত্রণালয়ের কেউ দায়িত্ব নিতে চাইছে না। তারা একে অন্যের উপর দোষ চাপাচ্ছেন।ফলে পাঠ্যবইয়ের ভুল-ত্রুটি পর্যালোচনায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) একটি কমিটি করলেও কারা দায়ী, তা বই বিতরণের পর আজ পর্যন্ত চিহ্নিত হয়নি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এনসিটিবির প্রাথমিক উইংয়ের ২৪টি পদের ২০টিতেই নিজেদের ‘অযোগ্য’ কর্মকর্তাদের বসিয়ে রাখায় প্রাথমিকের বইয়ে ভুল থেকে গেছে। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলছেন, গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দেরিতে পাণ্ডুলিপি জমা দেওয়ার তা যাচাই-বাছাই না করেই ছাপাখানায় পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন তারা।এদিকে, প্রাথমিকের বইয়ে ভুল নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্বিগ্ন ও বিব্রত হয়েছে। তা জানিয়ে এ ভুলের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে তারা।মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘২০১৭ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে বেশ কিছু ভুল সম্পর্কে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হওয়ার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্বিগ্ন ও বিব্রত। প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এর দায় এড়াতে পারেন না।’শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীরবতার সমালোচনা করে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এবার প্রাথমিকের বইয়ে বেশি ভুল থাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কোনো তৎপরতাই দেখাচ্ছে না, অথচ এনসিটিবি তাদের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান।’এভাবেই চলছে পরস্পরকে দোষাদোষী। কিন্তু এ প্রজন্ম কি তা চাইছে? না চাইছে না। দেশবাসী উন্নয়ন চাইছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী বলছেন উন্নয়নের কথা। সম্প্রতি একটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের জেলা-উপজেলায় উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘আজকে আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদবিরোধী যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি, এক্ষেত্রেও আমি মনে করি প্রত্যেকের একটা সামাজিক চেতনা গড়ে তোলা উচিত, সচেতনতা সৃষ্টি করা উচিত। এজন্য জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্য সব শ্রেণি পেশার মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন- ‘দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ, সকলের সহযোগিতা আমি কামনা করি। সহযোগিতা চাই এ জন্য যে, দেশকে আমরা যে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এ গতি যেন থেমে না যায়। এ উন্নয়নের গতিধারা সবসময় যেন অব্যাহত থাকে।’প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন- ‘বাংলাদেশকে আজকে আর কেউ দরিদ্রের দেশ বা দুযোগ-দুর্বিপাকের দেশ বলে অবহেলা করতে পারে না। বরং আমাদের উন্নয়ন আজকে তাদের কাছে দৃশ্যমান।’ এসময় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এবার এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) গ্রহণ করা হয়েছে।‘উন্নয়ন যেন টেকসই হয় এবং জনগণ যেন সুফল পায় সে বিষয়টি মাথায় রেখেই নিয়মিত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করে যাওয়া হচ্ছে।’ যোগ করেছেন তিনি। উন্নয়ন মেলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেলার ফলে জনগণ জানতে পারবে তাদের অধিকারটা কী এবং যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে তারা অবহিত হতে পারবে। আমরা মুখে বলে যাচ্ছি এসডিজি। কিন্তু এটা কোন কোন খাতে সে বিষয়টা সম্পর্কেও মানুষ জানতে পারবে।’শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রত্যেক জেলায় কিছু নিজস্ব ইতিহাস, ঐহিত্য এবং পর্যটনের বিষয় রয়েছে। এসব বিষয় তুলে ধরা এবং যেসব এলাকায় যে যে পণ্য উৎপাদিত হয় সেসব পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরণের ওপর সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলবো। আমরা বাঙালিরা কখনো ভিক্ষুক জাতি হবো না।’এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। তাই জাতির প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানিয়ে বড় করে তুলতে হবে। যারা আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে- তাদের পড়াশোনা করতে হবে। রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্বের জন্য কিছু পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। আর তা হচ্ছে বিশ্বরাজনীতি নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা। জানা এবং বোঝা বিশ্বরাজনীতির পরিবেশ, পরিস্থিতি। গ্রন্থাদি পাঠ। বিজ্ঞ রাজনীতিকদের জীবন র্শন ঘনিষ্ঠভাবে অবলোকন করা। এ দেখার মাঝে লুকিয়ে থাকে জীবনের জাগরণ। যে জাগরণ আরো সহস্র জীবনকে জাগায়। ডাক দেওয়ার সাহস জোগায়। মার্কস, লেনিন কিংবা মাও সে তুংয়ের আদর্শ মানা না মানা পরের কথা। আগে জানতে হবে- তারা কী বলেছিলেন। কী ছিল তাদের মুখ্য চেতনা। সমাজ বদলে শত বছর আগে কী ভেবেছিলেন সেই সময়ের আলোচিত রাজনীতিকরা। কী দর্শন রেখে গেছেন তারা।আমাদের এখনো অনেক পথ বাকি। আজ যারা বাংলাদেশকে ডিজিটাল করে গড়ে তোলার কথা বলছেন, তাদের আগে এনালগ হাতগুলো মজবুত করতে এগিয়ে আসতে হবে। যে হাতগুলো এ পর্যন্ত বদলে দিয়েছে এ বাংলাদেশ। সেফ এন্ড সিকিউরড ইনভেস্টমেন্ট জোন গড়ে তুলতে মনোযোগী হতে হবে। কারণ সামাজিক নিরাপত্তা না পেলে কোনো প্রজন্মই শির উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। বাংলাদেশে এখনো অন্যতম সমস্যা নিরক্ষরতা। শিশুশ্রম এবং শিশুমৃত্যুর হার, নারীর বঞ্চনা, পুঁজিপতিদের দাপট এসব বিষয়গুলো তো আছেই। সমাজ বদল করতে হলে এর কাঠামো ঠিক করতে হবে আগে। মানুষকে শিক্ষিত সচেতন করার পাশাপাশি, সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মনে রাখতে হবে এনালগ হাতগুলোই ডিজিটাল আলোর প্রধান রশ্মি। আর যদি ভুল শিক্ষা কিংবা আদিম শিক্ষার বীজ রোপণ করা হয়- তাহলে এর ফসল কী উঠতে পারে তা ভাবতে হবে সবাইকে। ---------------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ সোমবার সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:১৫",False fe,"একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নসিহত _ আসিফ আহমদ একটি চমৎকার লেখা। মুখোশ ঝরে পড়ছে অনেক ভন্ড ব্যক্তিত্বের। আমরাসত্যের সন্ধানে এগিয়ে যাবোই।----------------------------------------------------------------------------------একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নসিহতআসিফ আহমদ--------------------------------------------------------------------------------বিচারপতিগণ অবসরে গেলে ব্রাকেটে অব. হন না। তাদের বিচার-বিশেষণ ক্ষমতা আয়ু যতদিন ততদিন থাকে বলেই হয়তো ধরে নেওয়া হয়। একাত্তরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যাতে বাঙালি নিধনযজ্ঞ আরো নিপুণভাবে চালাতে পারে সেজন্য রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠনের জন্য ইয়াহিয়া খানকে বুদ্ধি দিয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রাদেশিক আমির গোলাম আযম। ১৯৭১ সালের ২১ জুন জামায়াতে ইসলামীর পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামে লেখা হয় : ‘পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দুষ্কৃতকারীদের মোকাবেলার জন্য দেশের আদর্শ ও সংহতিতে বিশ্বাসী লোকদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছেন।’ এর পরদিন সংগ্রামের সম্পাদকীয়তে লেখা হয় : ‘দেশপ্রেমিকদের অস্ত্রসজ্জিত করা হলে অল্প সময়েই দুষ্কৃকারীদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হবে।’ গোলাম আযমের পরামর্শে জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের (এর নেতা ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, কামরুজ্জামান) নেতা-কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অস্ত্রসজ্জিত করেছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তারা বাংলাদেশ জুড়ে তৎপরও ছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের উচ্ছেদও করতে পারেনি। কিন্তু বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য, এ অপশক্তি ফের সত্রিক্রয় হয়ে উঠেছে। এমনকি তারা মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সমাবেশ ডেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনাশের জন্য বক্তব্য দেওয়ারও দুঃসাহস দেখায়। শুত্রক্রবার ঢাকায় তাদের এ ধরনের একটি সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি। তার মনে হয়েছে, একাত্তরের গণহত্যায় হানাদার বাহিনীকে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের সেই অপরাধ এখন আর তুলে ধরার দরকার নেই। গোলাম আযম ও মতিউর রহমান নিজামীর মতো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় তোলার দাবি তোলাও অযৌক্তিক। কারণ এতে দেশ গড়ার কাজ ব্যাহত হবে। বাহ! কী চমৎকার যুক্তি! কেউ একজন খুন করল। তাকে আসামির কাঠগড়ায় তুলতে অনেক দেরি হয়ে গেল। তারপর খুনির পক্ষের আইনজীবী যুক্তি দেখালেন, অনেকদিন আগের ঘটনা বিচারের কোনো অর্থ নেই। বিচারে তার দন্ড হলে তার সন্তানরা এতিম হবে। তিনি যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন তার কর্মচারীরা বেকার হয়ে যাবে। তাদের তরুণী স্ত্রীরা এ অবস্থায় এমনকি পতিতা হয়েও যেতে পারে। তারা সল্পব্দ্যায় খদ্দের ধরতে রাস্তায় নেমে পড়বে। তাতে এমনকি মাননীয় বিচারপতি আপনি যখন ওই সময়ে রাস্তায় বের হবেন আপনার গাড়িতেও তারা উঠে পড়ার চেষ্টা করতে পারে। অতএব, এ অবস্থায় আপনিই বলুন, এ মামলা কি চালানো উচিত? একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি জামায়াতে ইসলামীর মতো দলের একাত্তরের অপরাধ যেভাবে ঢাকতে চেয়েছেন তাতে মুক্তিযোদ্ধা শুধু নয়, প্রতিটি বাঙালির শংকিত হওয়ার কারণ রয়েছে। একাত্তর ভুলে গেলে বাঙালির কিছু থাকে না। আমাদের মর্যাদা ও গর্বের ওই সংগ্রাম ভুলে গেলে মাথা উঁচু করে চলার উপায় থাকে না। স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্য পূরণের সম্ভাবনা থাকে না। ওই অপশক্তির পক্ষে যারা নসিহত করে তারা এটাই চায়। এ কারণেই একাত্তরের ঘাতকদের পক্ষে আস্ফালনকারী অপশক্তি কে কোথায় লুকিয়ে আছে তার অনুসন্ধান দরকার। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ কোথাও বাঙালি জাতির গৌরবের দিনগুলোতে যারা শত্র“র পক্ষে ছিল তাদের সমর্থক কারো অবস্থান গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের, একাত্তরের চেতনার ধারকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির পাশাপাশি এ বিষয়টিও তাদের সমান মনোযোগ দাবি করে। ‘বিচারপতি, তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই জনতা...’ এ গান একাত্তরের প্রেক্ষাপট সৃষ্টিতে অবদান রেখেছিল। এ জনতা আজও বাঙালির ভরসা ও সাহসের উৎস। তারা জেগে উঠলে কারো নসিহত একাত্তরের ঘাতক ও তাদের দোসরদের রক্ষা করতে পারবে না।---------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সমকাল । ১৩ জুলাই ২০০৮ প্রকাশিত",False mk,"কাস্ত্র ও মুজিব ‘এত স্বাধীনতা আপনি আপনার শত্রুদের দিয়েছেন! ওরা একদিন আপনার ঘাড়ে চড়ে বসবে’—১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) শীর্ষ সম্মেলনের সময় এভাবেই বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। এ সতর্ক বার্তা শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্যই নয়, বাংলাদেশের জন্যও ছিল। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক উদারতার সুযোগে তাঁর শত্রু ও স্বাধীনতা-বিরোধীদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা করেছিলেন কাস্ত্রো। দুই বছরের মধ্যে সে আশঙ্কাই বাস্তবে রূপ নিল।আলজিয়ার্সে ন্যাম সম্মেলনের সময় স্থানীয় প্রাসাদে বঙ্গবন্ধু ও ফিদেল কাস্ত্রোর বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে অনেক ইস্যুর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বিষয় এসেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেই উদ্বেগকে তেমন গুরুত্ব দেননি। ফিদেল কাস্ত্রো অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু।১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় কাস্ত্রো বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন, পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু-কাস্ত্রোর বন্ধুত্বও ছিল বেশ জোরালো।১৯৭৩ সালে ভুট্টো ন্যামের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আরেকটি বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করেন। আলজিয়ার্সে ন্যাম সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতায় জোরালোভাবে বলেন, তিনি প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিশ্ব বলে কিছু মানেননি। তাঁর কাছে বিশ্বে দুটি গোষ্ঠী আছে। এর একটি শোষক, অন্যটি শোষিত গোষ্ঠী। বঙ্গবন্ধুর এ বক্তব্যে কাস্ত্রোর মতো নেতারা তাঁদের অবস্থানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর অবস্থানের বেশ নৈকট্য আছে বলে মনে করলেন। এভাবে বঙ্গবন্ধু ও কাস্ত্রো এবং বাংলাদেশ ও কিউবার মধ্যে আরো নৈকট্য সৃষ্টি হলো।বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক শেষে কাস্ত্রো তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, তিনি হিমালয় দেখেননি; কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছেন। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে বঙ্গবন্ধু বিশ্বের সবচেয়ে বড় পর্বতমালা হিমালয়েরই সমান। বঙ্গবুন্ধকে দেখা তাই তাঁর কাছে হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতাই।বঙ্গবন্ধু-কাস্ত্রোর নেতৃত্বে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়া সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় রপ্তানি চুক্তি থেকে। নিষেধাজ্ঞার কারণে কিউবা তার দেশের চিনি বিক্রি করতে পারছিল না। অন্যদিকে বাংলাদেশেরও পাট রপ্তানি করা প্রয়োজন ছিল। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ থেকে কিউবায় পাটের ব্যাগ রপ্তানির বিষয়ে একটি চুক্তি সই হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ওই চুক্তির প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দেয়। আজ কেউ জোর দিয়ে বলে না যে ওই অভিযোগ মিথ্যা।বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার ২০১৩ সালে ফিদেল কাস্ত্রোকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’য় ভূষিত করে। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১০",False fe,"জাতিসত্তার চেতনা ও রাজনীতির ধর্মপক্ষ জাতিসত্তার চেতনা ও রাজনীতির ধর্মপক্ষফকির ইলিয়াস===========================================একাত্তরের প্রধান যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম মারা গেছেন। তিনি দেহত্যাগ করেছেন ঢাকায়। তার জন্য মাতম হয়েছে পাকিস্তানে। সেখানে গায়েবানা জানাজা হয়েছে। খবরটি সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এ বিষয়ে বেশ কিছু আপত্তিকর কথা বলেছেন পাকিস্তানের কিছু রাজনীতিক। লাহোরে গোলাম আযমের গায়েবানা জানাজা পড়ান পাকিস্তান জামাতের আমির সিরাজুল হক। জানাজার সময় সিরাজুল হক বলেন, ‘অধ্যাপক গোলাম আযমের শাহাদাতে আমরা গর্ববোধ করি। ঢাকার কারাগারে নির্যাতনমূলক পরিবেশে গোলাম আযমের শাহাদাত বরণের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরাউন শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সরকারের স্থায়ী পতনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেছে।’করাচিতে গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেন পাকিস্তান জামাতের সাবেক আমির সৈয়দ মোনাওয়ার হোসেন। পাকিস্তান জামাতের অফিসিয়াল ফেসবুক পাতায় এসব জানাজার ছবি তোলা হয়েছে। তাদের ফেসবুক পাতায় গোলাম আযম এবং যুদ্ধাপরাধে ফাঁসিতে ঝোলা আব্দুল কাদের মোল্লার পরিচিতিমূলক একাধিক পোস্টারও তোলা হয়, স্বাধীনতার আগে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা এবং পরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের ‘ষড়যন্ত্রের’ স্বীকৃতিও দেয়া হয়।গোলাম আযমের পরিচিতি তুলে ধরে একটি পোস্টারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও গোলাম আযম পাকিস্তানের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করে গেছেন। পাকিস্তানের প্রতি ভালোবাসার কারণে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কারাভোগ করেছেন। এর কিছু উদাহরণ পড়া যাক-১. গোলাম আযম ওআইসির বৈঠকে আলাদা দেশ (বাংলাদেশ) গঠনের বিরোধিতা করেন। ২. পাকিস্তানকে সমর্থনের কারণে সাত বছর নির্বাসনে কাটান তিনি। ৩. গোলাম আযম ’৭১ সালে ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। ৪. হাসিনা ওয়াজেদের সরকার তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। ৫. ১৯৫৪ সালে জামাতে ইসলামীতে যোগ দেন গোলাম আযম। ৬. পূর্ব পাকিস্তান জামাতের সেক্রেটারি জেনারেল হন তিনি। ৭. ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান জামাতের আমির হন তিনি।যুদ্ধাপরাধে ফাঁসিতে ঝুলে মৃত জামাত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা ও গোলাম আযম নিয়ে যৌথ একটি পোস্টারে বলা হয়েছে, অধ্যাপক গোলাম আযমের সঙ্গী ছিলেন পাকিস্তানের শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা। বলা হয়েছে- ‘তারা দেশের পূর্বাঞ্চলকে (পূর্ব পাকিস্তান) বিচ্ছিন্ন করার ভারতীয় ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছেন।’ ’৭১ সালের যুদ্ধে নিজ দেশ পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের ও পাকিস্তানি বাহিনীকে সমর্থন দেয়ার অপরাধে শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সরকার গত বছর ১২ ডিসেম্বর ৬৫ বছর বয়স্ক কাদের মোল্লাকে তাকে ফাঁসিতে ঝুলায়।’ পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী সাঈদ রফিকের একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরে একটি পোস্টারে বলা হয়, ‘অধ্যাপক গোলাম আযমের অপরাধ ছিল পাকিস্তানের প্রতি ভালোবাসা।’ঢাকায় গোলাম আযমের যে জানাজা হয়েছে, তাতে অনেক লোক সমাগম হয়েছে। প্রশ্ন আসছে- এতো লোকই যদি মৌলবাদী-রাজাকার সমর্থক হয়, তাহলে ওরা কি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নেবে? স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস তা প্রমাণ করে না। বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক। কিন্তু তারা সা¤প্রদায়িক নন। আর নন বলেই এ দেশে জঙ্গিবাদী- মৌলবাদী শক্তি কখনই জনসমর্থন পায়নি- পাবেও না। গোলাম আযম যে রাজনীতি করতেন তা ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী রাজনীতি। তিনি ছিলেন পাকিস্তানের বহু বিতর্কিত ধর্মীয় নেতা আবুল আ’লা মওদুদীর অনুসারী। কে ছিলেন এই মওদুদী। তার জীবনের শেষ বছরগুলোর একটি তালিকা এখানে পড়া যেতে পারে। বছরওয়ারি কর্মকাণ্ড ও ঘটনাপ্রবাহ এরকম-১৯৫৩- ‘কাদিয়ানী সমস্যা’ নামে একটি বই লিখে কাদিয়ানী বা আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম প্রমাণ করেন মওদুদী। ফলে ইতিহাসখ্যাত বড় রকমের কাদিয়ানী বিরোধী হাঙ্গামার সৃষ্টি হয়। এ সময় অনেকগুলো সংগঠন একযোগে কাদিয়ানীদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তারা সর্বদলীয় কনভেনশনে ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন কমিটি’ গঠন করে। জামাত এই কমিটির বিরোধিতা করে অহিংস আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়। কিন্তু তথাপি মার্চ মাসের শুরুতে আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে এবং পুলিশের গুলিতে কিছু লোক নিহত হয়। পরে একটি সামরিক আদালত আবুল আ’লাকে এই গোলযোগের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়, (যদিও কাদিয়ানী সমস্যা নামক বইটি বাজেয়াপ্ত করা হয়নি)। অবশ্য সেই মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়নি।১৯৫৩- মৃত্যুদণ্ডাদেশ পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়, কিন্তু পরে তাও প্রত্যাহার করা হয়। ১৯৫৮- সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান ‘জামাতে ইসলামী’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৯৬৪- আবারো তাকে কারাবন্দী করা হয়। ১৯৬৪- কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৭১- পাকিস্তান থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হবে কিনা এ প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার পূর্ব পাকিস্তান জামাতের ওপর ন্যস্ত করেন। ১৯৭২- তাফহিমুল কুরআন নামক তাফসির গ্রন্থটির রচনা সম্পন্ন করেন। ১৯৭২- জামাতে ইসলামীর আমির পদ থেকে ইস্তফা দেন। ১৯৭৮- তার রচিত শেষ বই ‘সিরাতে সারওয়ারে আলম’ প্রকাশিত হয়। এটি হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর জীবনী গ্রন্থ। ১৯৭৯- চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। ১৯৭৯- যুক্তরাষ্ট্রে তার মৃত্যু হয়। ১৯৭৯- লাহোরের ইছরায় তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তার জানাজায় ইমামতি করেন শায়খ ইউসুফ আল ক্বারাদাওয়ি।মওদুদী মতবাদটি উপমহাদেশের হাক্কানি আলেমরা বারবারই খারিজ করেছেন। কি বলেছিলেন এই মওদুদী? তার কিছু উক্তি পাঠ করা দরকার। আবুল আ’লা মওদুদী (১৯০৩-১৯৭৯) পাকিস্তান ভিত্তিক দল জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা যা বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই তাদের ধর্ম ব্যবসা খুলে বসেছে। প্রথমদিকে মওদুদী পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করলেও ১৯৪০-এর দশকে এসে নিজের ভোল পাল্টান এবং তখন থেকেই তিনি পাকিস্তানে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হন। তিনি ইসলামকে একটি জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে প্রচার করতে শুরু করেন। ইসলামের মৌলিক নীতি ও ভিত্তিসমূহ, যেমন: তাওহিদ, এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, সালাত, সাওম, জাকাত, হজ ইত্যাদিকে উপেক্ষা করে মওদুদী শাসন ব্যবস্থার ওপর বেশি জোর দেন। রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব আকাক্সক্ষার ব্যাপারে তার মতামত: ‘তাই কর্তৃত্বের আকাক্সক্ষা ছাড়া কোনো দর্শনে আস্থাজ্ঞাপন করার কোনো অর্থ নেই, এবং কোনটি আইন সম্মত বা কোনটি নিষিদ্ধ অথবা নির্দেশিত আইন, কোনোটিরই কোনো মানে নেই।’ – তাজদিদ উদ দ্বীন, পৃষ্ঠা ৩২-৩৩অথচ হযরত মুহম্মদ (সাঃ) পরিষ্কারভাবে কর্তৃত্বের লালসাকে পুরোপুরি নিষেধ করে দিয়েছেন; ওনার মতে কর্তৃত্ব ও শাসন করার লোভ মানুষকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। তিনি বলেন: ‘নেতৃত্বের আকাক্সক্ষা করো না। কেননা তোমরা যদি নেতৃত্বের আকাক্সক্ষা করে তা পাও তবে সে দায়িত্ব তোমাদের একাই পালন করতে হবে। কিন্তু আকাক্সক্ষা না করেই যদি তোমরা নেতৃত্ব পাও তবে তোমরা সাহায্য পাবে (আল্লাহর কাছ থেকে)।’ – মুসলিম, ৪৬৯২এখানে মওদুদীর কিছু ইসলাম বিকৃতির নমুনা তুলে ধরা প্রয়োজন। এখানে পবিত্র কুরআন, হাদিস এবং মওদুদীর বিভিন্ন লেখা ও ভাষণ থেকে উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়েছে। তিনি লিখেছেন- ‘শাসন ও কর্তৃত্ব করার নামই হচ্ছে ধর্ম, শাসন ব্যবস্থার আইন হলো শরিয়া এবং উপাসনা হচ্ছে শাসন ব্যবস্থার ঐতিহ্যকে অনুসরণ করা’- খুতবা, পৃষ্ঠা ২১৭।‘লোকে সাধারণত বলে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ: এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, নামাজ, জাকাত, রোজা এবং হজ। এবং এগুলোই ইসলাম এই ভুল ধারণার মধ্যে তারা অনেকদিন ধরে আছে। আসলে এটা একটা বড় বিভ্রান্তি যা মুসলমানদের পথ এবং কর্মকে ধ্বংস করেছে।’ (কাউসার, ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫১- মওদুদীর ভাষণ থেকে উদ্ধৃত) অথচ সহিহ বুখারি এবং মুসলিম শরিফে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ইসলামের মূল স্তম্ভ পাঁচটি: ১. শাহাদাহ ২. সালাত ৩. বাধ্যতামূলক জাকাত প্রদান ৪. সাওম এবং ৫. হজ।শুধু তাই নয়, মওদুদী হাদিস শরিফের ও সমালোচনা করতে ছাড়েনি। মওদুদী এ সম্পর্কে বলেছে: ‘কোনো সত্যবাদী মানুষই এই দাবি করতে পারবে না যে ৬ – ৭ হাজার হাদিসের (সহিহ বুখারি শরিফ) সবগুলোই পুরোপুরি ঠিক।’ (১৯৫৫ সালের ১৫ মে বরকত হলে মওদুদীর দেয়া ভাষণ থেকে; যা পরে আল-ইতেশাম পত্রিকায় ২৭ মে ১৯৫৫ এবং ৩ জুন ১৯৫৫ তারিখে প্রকাশিত হয়।) শুধু এই নয়, হযরত মুহম্মদ (সাঃ) চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী বিয়ে (মুতাহ) হারাম ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মওদুদী হাস্যকর উদাহরণ টেনে তা হালাল করতে চেয়েছেন:‘ধরেন সমুদ্রের মাঝে একটি নৌকা ডুবে গেলো। একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বেঁচে গিয়ে এক নির্জন দ্বীপে গিয়ে ওঠে। এ অবস্থায় তাদের একসঙ্গে থাকতেই হবে। কিন্তু ইসলামি আইন মতে তারা নিকাহ করতে পারবে না। তাই তাদের কাছে যে একমাত্র রাস্তাটা খোলা আছে তা হলো নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে অস্থায়ী বিয়ে করা ততোদিনের জন্য যতোদিন না তারা লোকালয়ে পৌঁছাতে পারে বা লোকরা তাদের খুঁজে পায়। অস্থায়ী বিয়ে (মুতাহ) এ ক্ষেত্রে বা এর মত পরিস্থিতিতে জায়েজ।’ -তারজুমামুল কুরআন, ১৯৫৫, পৃষ্ঠা: ৩৭৯যুদ্ধবন্দী মহিলাদের ব্যাপারে মওদুদীর মতামত দেখুন: ‘এমনকি বর্তমান যুগেও যুদ্ধবন্দী মহিলাদের সৈনিকদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া উচিত এবং সৈন্যদের তাদের (মহিলাদের) ভোগ করার অনুমতি দেয়া উচিত।’ অথচ পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ দেয়া আছে। আল্লাহ বলেন: ‘অবশেষে যখন তাদেরকে (কাফিরদের) পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদের শক্ত করে বেঁধে ফেলো। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ করো, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও (এবং মুক্তি দাও)।’ – সুরা মুহাম্মদ, আয়াত ৪বাল্যবিবাহ নিয়ে মওদুদী বলেছেন: ‘নাবালিকা মেয়েদের (বয়োপ্রাপ্তির আগে) বিয়ে করা যায়। স্বামীরাও তাদের সঙ্গে সহবাস করতে পারে।’ -তাহফিমুল কুরআন, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৫৭১বিভিন্ন নবী-রাসুলদের নিয়ে মওদুদীর সমালোচনার বিস্তর উদাহরণ আছে। যেমন নিচের মন্তব্যে তিনি হযরত ইউসুফ (আঃ) কে মানুষ হত্যাকারী জঘন্য মুসোলিনির সঙ্গে তুলনা করেছেন- ‘কিছু মানুষ যে ধারণা পোষণ করে যে তিনি [হযরত ইউসুফ (আঃ)] মিসরের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব চেয়েছিলেন শুধু সেখানকার অর্থমন্ত্রী হওয়ার জন্য তা আদপে ঠিক নয়; প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন স্বৈরশাসক হতে চেয়েছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত ইউসুফ (আঃ) যে পদ পান তা বর্তমানকালের ইতালির মুসোলিনির অবস্থার সমতুল্য।’ – তাহফিমাত, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১২২, ৫ম সংস্করণমওদুদী হযরত সুলাইমান (আঃ) এর ১০০ স্ত্রী থাকার ব্যাপারে মন্তব্য করেছে: ‘হয় আবু হুরাইরা (রাঃ) নবীর কথা শুনতে ভুল করেছেন অথবা তিনি পুরো ব্যাখ্যা শোনেননি।’ -রাসাইল-ও-মাসাইল, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা: ২৭এখন ভাবা দরকার, কিভাবে- কোন সভ্য ও বিবেকবান মানুষ এই লোকের মতবাদে বিশ্বাস করতে পারে এবং একে ইসলাম বলে দাবি করতে পারে? এখানে অনেক উদ্ধৃতি ইংরেজি থেকে অনূদিত করা হয়েছে। এমন উদাহরণ আরো অনেক পাওয়া যাবে। গোলাম আযম সেই লোকের প্রধান খলিফা ছিলেন। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিষয়গুলো অনুধাবন করা দরকার।জানাজায় লোকসংখ্যার অনেক কারণই থাকতে পারে। বাংলাদেশের অনেক মানুষই মনে করেন- মৃত ব্যক্তির আর সমালোচনার দরকার নেই। লোকটি যেহেতু মুসলমান, তাই তার জানাজা পড়ায় যাওয়া দরকার। ইত্যাদি ইত্যাদি। গোলাম আযম বাঙালি জাতিসত্তার বিরুদ্ধে ছিলেন আমৃত্যু। তিনি নিমকহারাম না হলে এই মাটি ত্যাগ করে গেলেই পারতেন। যেমন গিয়েছিলেন তার আরেক অনুসারী মাহমুদ আলী। এই বাংলাদেশের জল-অন্ন খেয়েছেন তিনি। তারপরও তিনি বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেননি। এই দেশ যে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছিল- তাদের উত্তরসূরিরা গোলাম আযমকে ক্ষমা করেনি- করবেও না। এর প্রমাণ শেষ মুহ‚র্ত পর্যন্ত আমরা দেখেছি। গোলাম আযম বলেছেন, ভাষা আন্দোলন করা তার জন্য ভুল ছিল। তারপরও তাকে ‘ভাষাসৈনিক’ বলবে বাংলার মানুষ?ইতিহাস জেগে ওঠে। ইতিহাস ভরাট নদীর বুকেও তার শির দেখায় মাঝে মাঝে। তাই দুঃখ করার কিছু নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হয়েছে। রায় হয়েছে। সাজা হয়েছে। হচ্ছে। এটাই আজ ইতিহাস। প্রজন্ম এর সাক্ষী থাকবে অনেক কাল।------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১ নভেম্বর ২০১৪ প্রকাশিত",False mk,"এর নাম গণতন্ত্র উদ্ধার!!! স্বতন্ত্র পরিচিতি বজায় রাখার জন্য প্রত্যেকটি সামরিক অপারেশনের একেকটি আলাদা সাংকেতিক নাম থাকে। যেমন- ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চ লাইট বা ২০০২ সালে জামায়াত-বিএনপি সরকারের অপারেশন ক্লিনহার্ট ইত্যাদি। বেশির ভাগ সময়ে বাস্তব ক্ষেত্রে নামের সঙ্গে কাজের কোনো মিল থাকে না। ছদ্মবেশ বা ছদ্মাবরণ সৃষ্টি করার জন্য নাম নির্ধারণ করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুদ্ধরত পক্ষদ্বয় বা পক্ষগুলোর বাইরে থাকা জনমানুষ, বিশ্ব সমাজ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বিভ্রান্ত করা এবং ধোঁকা দেওয়ার অভিপ্রায়ে অথবা নিজেদের কার্যকলাপের যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য ভালো ভালো নাম দেওয়া হয়। যেমন- সার্চলাইট কথাটির বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় আলোর সন্ধানে। চমৎকার নাম। কিন্তু ৯ মাস বাংলাদেশে আলোর সন্ধানের নামে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে অন্ধকার জগতে প্রবেশ করেছিল তাতে একাত্তরে পাকিস্তান তো দুই টুকরা হয়েছেই, অধিকন্তু আজ পর্যন্ত সেই অন্ধকার গুহা থেকে পাকিস্তান বের হতে পারেনি। বরং দিন দিন আরও অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। জানুয়ারির ৫ তারিখ থেকে জামায়াত-বিএনপি জোট যা করছে তারা সেটির নাম দিয়েছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র উদ্ধার। কিন্তু আসলে কি তাই? নাকি এটি তাদের চলমান অপারেশনের একটি সাংকেতিক বা ছদ্মনাম? এই প্রশ্নের উত্তর প্রসঙ্গে আলোচনা করাই আজকের নিবন্ধের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু তার আগে গণতন্ত্রের বাস্তব চেহারা এখন বিশ্বব্যাপী কেমন, সে সম্পর্কে ২০১০ সালে 'দ্য ইকোনোমিস্ট' পত্রিকার ইন্টেলিজেন্স শাখা কর্তৃক পরিচালিত একটি সার্ভে রিপোর্টের কথা উল্লেখ করতে চাই। ওই সার্ভেতে যে উপাদানগুলো বিবেচনা করা হয় তা হলো- নির্বাচনী প্রক্রিয়া, বহুত্ববাদ, জনগণের স্বাধীনতা, সরকারের কর্মপদ্ধতি এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পূর্ণ গণতন্ত্র আছে বিশ্বের মাত্র ২৬টি দেশে। নরওয়ে শীর্ষে। সেখানে আমেরিকা ও ব্রিটেনের নাম থাকলেও গুণগত মান নেমে গেছে বলে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। ৫৩টি ত্রুটিযুক্ত গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে ভারতের নামও আছে। বাকি গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে শঙ্কর জাতীয় গণতান্ত্রিক অভিধায়, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত। তবে পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- বহু উন্নয়নশীল দেশ গণতন্ত্রের সূচকে পিছিয়ে পড়লেও বাংলাদেশ এ সময়ে ৮ ধাপ এগিয়ে ৮৩তম স্থানে আছে। এ রিপোর্টের কথাটি এখানে উল্লেখ করছি এ কারণে যে, গণতন্ত্রের মাপকাঠিতে বাংলাদেশে এখনো অনেক ঘাটতি আছে, যা ১৯৭৫ সালের পর দীর্ঘ সামরিক শাসনের ধারাবাহিকতায় চলে আসছে, কোনো একটি সরকার বা একটি মাত্র নির্বাচন এর জন্য দায়ী নয়। একনাগাড়ে ১৫ বছর পর পর দুজন সামরিক শাসক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সব কিছু এমন লণ্ডভণ্ড করেছে যে, সেখান থেকে আর বের হওয়া যাচ্ছে না।দশম সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৪ সালের এক বছরের পুরোটা সময় যে রাষ্ট্রীয় পরিবেশ বজায় ছিল তার সঙ্গে যদি ১৯৯১ থেকে ২০১৩, এই ২২ বছরের বিরাজমান পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করা হয় তাহলে গণতন্ত্র উদ্ধারের নামে যারা এখন নিরীহ মানুষ হত্যা করছে তারা কি সুনির্দিষ্টভাবে কোনো গণতান্ত্রিক উপাদানের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, ওই ২২ বছর এই এই উপাদান বিদ্যমান ছিল যেগুলো ২০১৪ সালে ছিল না। এমন তুলনামূলক মূল্যায়ন কেউ প্রকাশ করেছেন বলে দেখিনিই। সেটি কেউ করতে চাইলে উপরে উলি্লখিত দ্য ইকোনোমিস্টের মূল্যায়ন প্রতিবেদনের কথা খেয়াল রাখলে বাস্তবতা বুঝতে পারবেন। গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন প্রভৃতি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য গণতন্ত্র উদ্ধারকারীদের মুখে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য দেখিনি। তাদের সব কথা শুধু একটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, যে নির্বাচন সংবিধান ও আইনগতভাবে সম্পূর্ণ বৈধ এবং ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট ও সরকার বিশ্ব সম্প্রদায় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত। জনমানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন যদি গণতন্ত্রের লক্ষ্য হয় তাহলে ২০১৪ সালে তো সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়েছে। গত এক বছর ব্যবসা-বাণিজ্য, লেখাপড়া, চলফেরা, কাজকর্ম সবকিছুই মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে করেছে। নির্বাচনের পর গত এক বছরে জনজীবনে কোনো বিপর্যয় বা দুর্যোগ সৃষ্টি হয়নি। তাহলে এখনই এই সরকারের পতন বা দ্রুত সময়ের মধ্যে আরেকটি নির্বাচনের নামে এ নৈরাজ্য এবং হত্যাযজ্ঞ কেন? ভোট প্রদানের হার কম হয়েছে বা ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, তার জন্যই কি নতুন নির্বাচনের দাবিতে এই তাণ্ডব? বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একজন নির্বাচিত হওয়া আর শতাধিক নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে আইনের দৃষ্টিতে কোনো পার্থক্য আছে কি? নৈতিকতার কথা বলবেন। এক্ষেত্রে নৈতিকতার সীমানা কোথায়? সেই সীমানা কে নির্ধারণ করবে? কেউ একজন সীমানা নির্ধারণ করে দিলে সবাই কি তা মানবেন। একটি নির্দিষ্ট দল যখন বলে তাদের সব দাবি-দাওয়া ও ইচ্ছামতো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সাজাতে হবে, তাহলেই কেবল তারা নির্বাচনে যাবে, নইলে যাবে না। সব দলই যদি একই অবস্থান গ্রহণ করে তাহলে সেটির শেষ কোথায়? ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি কি সে রকম একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি? এখন যদি আরেকটি নতুন নির্বাচন হয়, তাতে যে দলেরই সরকার নতুন করে আসুক তাতে বিরাজমান গণতন্ত্রের কী উন্নতি ঘটবে অথবা মানুষের কী লাভ হবে? নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো যথাযথভাবে বাতিল হয়েছে। বাতিল প্রক্রিয়ায় কোনো নিয়ম ও আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। নিরপেক্ষ সরকারের প্রধান কে হবে তা ঠিক করা এবং পুরো সরকার গঠন করা নিয়ে যে কী লঙ্কাকাণ্ড ঘটতে পারে সেটি তো ২০০৬ সালে এ দেশের মানুষ দেখেছে। যার জের ধরে দুই বছর জরুরি আইন বহাল থেকেছে এবং সমগ্র দেশ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে এবং ভোটের দিনে বিএনপি-জামায়াত প্রতিহতের নামে যে অগি্নযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তাতে কি বৃহত্তর একটি জনগোষ্ঠীর গণতান্ত্রিক অধিকার জোরপূর্বক হরণ করা হয়নি? আপনি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী নির্বাচন বর্জন করবেন, সেটা ঠিক আছে। কেউ আপনার ওপর জোরজবরদস্তি করছে না। কিন্তু আরেকজন আপনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ভোট দিতে যাবে, তাকে আপনি পুড়িয়ে মারবেন, হত্যা করবেন, এটা কি গণতন্ত্রের কথা? তার পরেও আপনি বলবেন মানুষ ভোট দিতে যায়নি। কেউ দ্বিমত পোষণ করলে জোর করতে হবে! এটাই কি গণতন্ত্র উদ্ধারের উদাহরণ?এখন গণতন্ত্র উদ্ধার অপারেশনের কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক। কলামের সীমাবদ্ধতার কারণে বেশি পিছনের দিকে যাব না। অনেকের ভাষায় বিএনপি-জামায়াত জোট এখন গণতন্ত্র উদ্ধার অপারেশনে লিপ্ত। তাই বিএনপি নেতারা বলছেন, কীসের পরীক্ষা, কীসের লেখাপড়া, এটা কোনো বিষয় নয়। ১৫ লাখ ছাত্রছাত্রী, তাদের অভিভাবক শিক্ষকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তাদের কাছে গৌণ বিষয়। ১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপির শাসনামলে যে রকম গণতন্ত্র ছিল সেটা ফিরে এলেই বাংলাদেশের সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। যুদ্ধাপরাধী নিজামী-মুজাহিদ খালাস পেয়ে আবার মন্ত্রী হলে দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র ফিরে আসবে এবং মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে! বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থী জামায়াতের প্রেসক্রিপশন প্রদত্ত শিক্ষানীতির আলোকে আলোকিত হয়ে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠায় আত্দনিয়োগ করবে। এর থেকে তো ভালো কিছু আর হতে পারে না! তাই নিরীহ অসহায় এতিম মানুষকে পুড়িয়ে মারাকে বিএনপির নেতারা বলছেন কোল্যাটার্যাল ড্যামেজ বা পারিপার্শ্বিক ক্ষতি। কিন্তু তারা ভালো করে জানেন সাধারণ, মানুষকে টার্গেট করে সরাসরি আক্রমণকে পারিপার্শ্বিক ক্ষতি বলা হয় না। এটা একটি সামরিক টার্ম এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য এর একটি সংজ্ঞা আছে। দুই পক্ষ যখন যুদ্ধে লিপ্ত হয় তখন জেনেভা কনভেনশন বা নিয়মনীতি মেনে যুদ্ধরত অবস্থায় আকস্মিক কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য বেসামরিক জনগণ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেটাকেই কোল্যাটার্যাল ড্যামেজ বা পারিপার্শ্বিক ক্ষতি বলা হয়। নিরস্ত্র-নিরীহ মানুষকে সরাসরি আক্রমণ করা মানবতাবিরোধী অপরাধ। বিএনপির প্রভাবশালী শরিক জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের আদর্শ মতে গণতন্ত্র হলো কুফরি মতবাদ এবং হারাম। এ জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি কী ধরনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে? ২০০৮ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে বেগম খালেদা জিয়া যখন বিএনপির নেতাদের বাদ দিয়ে জামায়াত নেতা মুজাহিদের সঙ্গে দীর্ঘ শলাপরামর্শ করেন তখন বিএনপির হাইকমান্ডের ওপর জামায়াতের প্রভাব কতখানি তার নমুনা পাওয়া যায়। জামায়াত যদি শুধু নির্বাচনী জোট হয়ে থাকে, তাহলে ২০০১ সালে বিএনপি একা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরেও জামায়াতকে মন্ত্রিসভায় নিল কেন? মুজাহিদ সংসদ সদস্য না হয়েও টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী। একেই বলে নির্বাচনী জোট। অন্য শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের স্লোগান হলো- 'আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান'। এ অবস্থায় গণতন্ত্র কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের কথা বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভুলবে না। কারণ বাংলাদেশের সব অর্জন সেদিন ধূলিসাৎ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সেদিন বিএনপির সিনিয়র নেতারা হেফাজতের মঞ্চে উঠে ১৩ দফার সঙ্গে একাত্দতা প্রকাশ করে। হেফাজতের এই ১৩ দফার মাধ্যমে বিএনপি কোন ধরনের গণতন্ত্র উদ্ধার করতে চায় তার কি কোনো ব্যাখ্যা আছে? তারপর হেফাজতের লাঠিয়াল বাহিনী মতিঝিল, পল্টন এলাকাকে রণক্ষেত্র বানিয়ে দোকানপাট, দালানকোঠা এবং পবিত্র কোরআন শরিফে আগুন লাগিয়ে যখন ভয়াবহ নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল তখন বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির সব নেতা-কর্মীকে হুকুম দিলেন হেফাজতের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য। এটাই কি গণতন্ত্র উদ্ধারের সঠিক পথ? ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা সাঈদীর ফাঁসির হুকুম হলে জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও এবং বিশ্রামরত পুলিশ ও নিরীহ মানুষসহ সংখ্যালঘু হত্যায় মেতে ওঠে। জামায়াতের এই তাণ্ডবে যোগ দেওয়ার জন্য ১ মার্চ বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে হুকুম দেওয়া হয়। এভাবে কি গণতন্ত্র উদ্ধার হবে? তারপর ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিএনপি ঢাকায় তাদের ভাষ্যমতে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ ডেকেছিল। সেদিন কী ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা তারা করেছিল তার বিস্তারিত বিবরণ কয়েক দিন আগে ফাঁস হয়ে গেছে এবং পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলেছে, সহিংসতার পথ থেকে বিএনপিকে ফিরে আসতে হবে। বিএনপির নেতা-কর্মী ও পন্থিদের কথাবার্তায়ও এক ধরনের স্বীকারোক্তি বের হয়ে আসছে। কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে বিএনপি তা স্বীকার করতে পারছে না। কারণ সংবিধিবদ্ধভাবে বিএনপি চরমপন্থি, উগ্রবাদী বিপ্লবী দল নয়। গণতন্ত্র উদ্ধার অপারেশনে ২০ দলীয় জোটের বাইরে থেকে কিছু ব্যক্তি ও খুচরা দল মিত্রপক্ষ হিসেবে বিএনপির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিকল্পধারার ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে অত্যন্ত অগণতান্ত্রিকভাবে বিএনপি একরকম ধাক্কা দিয়ে যেভাবে বঙ্গভবন থেকে বি. চৌধুরীকে বের করে দিল এবং ছাত্রদলের ক্যাডার বাহিনী তাকে যেভাবে মগবাজারের রেলক্রসিংয়ের বাঁশের নিচ দিয়ে ধাওয়া করল, তাতে কী করে আবার তিনি মনে করলেন এ যাত্রায় বিএনপি গণতন্ত্র উদ্ধার করে ছাড়বে? একজন মানুষের আত্দমর্যাদার বালাই যদি না থাকে তাহলে তার দ্বারা গণমানুষের কোনো কল্যাণ করা কি সম্ভব? এর বাইরে আরও কিছু ব্যক্তি বের হয়েছেন যারা বাহ্যিকভাবে সজ্জন মানুষ হিসেবে পরিচিত। তারাই ২০০৭-২০০৮ সালের জরুরি আইনের প্রবল সমর্থক এবং আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলকে ভেঙে ফেলার চেষ্টায় সক্রিয়ভাবে সংযুক্ত ছিলেন। জরুরি আইনের প্রবল সমর্থকরা এখন গণতন্ত্র উদ্ধার অভিযানে বিএনপির ফ্ল্যাঙ্কিং ফোর্স বা পার্শ্ববাহিনী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এত মানুষ আগুনে দগ্ধ হলো, মৃত্যুবরণ করল- এত বড় মানবতাবিরোধী অপরাধ যারা করল তাদের নাম নিতে এসব সুশীল ব্যক্তি লজ্জা পান। জামায়াতের কথা জিজ্ঞাসা করলে বলেন, এসব ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এরাই এখন গণতন্ত্র উদ্ধারের সৈনিক!",False rg,"কোন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ___ আমি উদ্বিগ্ন। আমি আতংকিত। দেশের ষোলো কোটি মানুষের মতো আমিও গভীরভাবে উৎকণ্ঠিত। ক্ষমতায় থাকার লোভ আর ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ আমাদের রাজনীতিকে এতোই লালায়িত করেছে যে, আজ দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা নিরাপত্তা নিয়ে ভারী অসহায়। আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমি আমার বন্ধুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমি আমার প্রতিবেশী সকল সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর বাংলাদেশ নিয়েও আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। সেই উদ্বেগের কারণ অবশ্যই দুবৃত্তায়নের রাজনীতি আর আমাদের তথাকথিত রাজনৈতিক কালচার। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি সরকার এদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ভয় পায়। সাধারণ ভোটারের ম্যান্ডেটকে ভয় পায়। সাধারণ মানুষের অধিকারকে ভয় পায়। ভয় পায় ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার। ভয় পায় লুণ্ঠনকে হারানোর। ভয় পায় কালোবাজারীকে হারানোর। ভয় পায় দুঃশাসনের চপেটাঘাত জেল জুলুম। ভয় নাগরিক সভ্যতা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ভূমিকর কথা আমরা জানি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী এদেশে আগম ঘটা অন্যান্য মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কথাও আমরা কমবেশি জানি। বাংলাদেশে বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ভূমিকাও আমরা তাই আন্দাজ করতে পারি। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমেরিকা ও চীনের পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা আমরা জানি। আমেরিকার সপ্তম নৌবহর প্রেরণের খবরও আমরা জানি। বেইজিং-রাওয়ালপিণ্ডি দূতিয়ালীর খবরও আমরা জানি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হবার পর চীন ও সৌদিআরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমেরিকা, চীন ও সৌদআরবের রাষ্ট্রদূতদের নানামুখি তোড়জোড়ের খবরেও তাই আমরা উদ্বিগ্ন হই। বিশেষ করে যখন স্বাধীনতার ৪০ বছর পরে যুদ্ধাপরাধিদের নতুন করে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হল, তখন এই ত্রিমুখী দৌড়ঝাপ যেনো হাড়ে বাতাস পেয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের তাই আতংকিত হবার মত নানা মশলা চারিদিকে সক্রিয়। আমার ভাবতে খুব অবাক লাগে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেনরী কিসিঞ্জারের কাছ থেকে শান্তিপদক নিয়েছিলেন। আমার ভাবতে খুব অস্বস্থি লাগে যে, স্বাধীন বাংলাদেশে বিদেশী রাষ্টদূত/হাইকমিশনার গণ আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নানামুখী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চোখ থাকতেও তারা যেনো অন্ধ। আমাদের সরকারের বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জনমতের চেয়ে আন্তর্জাতিক রক্তচক্ষু বেশি পছন্দ। একবিংশ শতকে সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে চীন ও ভারত এমনভাবে অগ্রসর হচ্ছে যে, খোদ আমেরিকার তা নিয়ে ভারী উৎকণ্ঠা। সেই উৎকণ্ঠা লাঘবের জন্য চীন ও ভারতের কাছাকাছি তাদের কিছু শক্ত ঘাটি খুব প্রয়োজন। যে কারণে তারা মায়ানমার, ফিলিপাইনস ও ইন্দোনেশিয়ায় শক্ত ঘাটি গড়ে তুলেছে। এখন ভারতের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশে একটা শক্ত ঘাটি তাদের খুব দরকার। ভারতের ওপাশে আফগানিস্তানে বর্তমান মার্কিন ঘাটির ইতিহাস যদি ইতিবৃত্ত পর্যালোচনা করি, দেখি, প্রথমে তারা সেখানে একটি তালেবান সরকার গঠনে সব ধরনের সহায়তা করলো। বিন-লাদেন খোদ আমেরিকার ডলারে সৃষ্ট একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র। সেই চক্রের সরাসরি মদদে আফগানিস্তানে প্রথমে তালেবান সরকার গঠন করলো। পরে সেই তালেবান দমনে বর্তমান মার্কিন সেনাদের ঘাটি তৈরি করা হল। ঠিক যেভাবে আমেরিকা ইরাকে সাদ্দাম হোসেন সৃষ্টি করেছিল, সেই সাদ্দামকে পতনের জন্য সেখানে মার্কিন সেনার ঘাটি গেড়েছে। একই সূত্র তারা বাংলাদেশে যে প্রয়োগ করবে না, তার গ্রান্টি কি? বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দেশে বাংলা ভাই আমদানি হল। এখন চলছে হেফাজতের নামে সেই একই কায়দায় আরেক নগ্ন আমদানি। এর পেছনের আসল হোতা আমেরিকা-চীন। স্বার্থের ভাগ পেতে ভারতও সেই চক্রে সতর্ক অবস্থান করছে। হোয়াইট হাউজের গ্রিন সিগন্যাল যিনি পাবেন, তিনিই হবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, এই সমীকরণ যদি স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে এসে আমাদের হজম করতে হয়, তাহলে প্রশ্ন জাগে দুর্বল রাজনৈতিক নের্তৃত্ব কি ধীরে ধীরে দেশের স্বাধীনতাকে হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে? বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের এতো নাক গলানো সরকারের তরফ থেকে কেন হজম করা হচ্ছে? একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এটাতো আমাদের জন্য কলংকের কথা, যে তারা আমাদের নিজেদের বিষয়ে এতো ওঠাবসা করছেন? কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাদের নষ্ট রাজনীতি?আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরটা আমেরিকার খুব দরকার। সেই সুযোগে ভারত সুন্দরবনের কাছে রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত দেবার নাম করে মোংলা বন্দরকে করায়ত্ত করতে চায়। কিন্তু ভারতের সাথে আমাদের অমিমাংসিত সমুদ্রসীমা ও সীমানা ওবং ছিটমহল সমস্যার কি হল? ফারাক্কা বাধের পর এখন টিপাইমুখী বাধের খড়গ ছুলছে জাতির সামনে। আর আমাদের রাজনীতিবিদরা আছেন কে ক্ষমতায় যাবেন আর কে ক্ষমতায় থাকবেন সেই দৌড়ঝাপে। মাঝখান থেকে সহিংস হরতাল, জ্বালাও পোড়াও জনজীবন অতীষ্ট। কোথাও কারো জীবনের নিরাপত্তা নেই। একুশ শতকে আমরা কাদের ক্ষমতায় বসিয়ে কি পেলাম? আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে তা নিয়ে চলমান সহিংসতা আরো দীর্ঘতর হবার লক্ষণ সুস্পষ্ট। তাহলে আমাদের সাধারণ জনগণের কি অপরাধ? আমরা কেন আপনাদের ক্ষমতার লড়াইয়ে বলি হব?কি দোষ মনির হোসেনের? কি দোষ বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়া মানুষগুলোর? আপনাদের ক্ষমতার লড়াইয়ে আমরা কেন অসহায় বলি হব? আপনারা দেশের স্বাধীনতাকেই এখন হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আর নিজেরা লুটপাট, দুর্নীতি, করে রাষ্ট্রের সকল সম্পদ ভোগ দখল করছেন? এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। মহাত্মা মীর মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তা ধরে রাখা বেশি কঠিন। আজ সেই কথাটি বারবার মনে পড়ছে। বাংলাদেশ কি স্বাধীনতা ধরে রাখতে পারবে? আমেরিকা, চীন, ভারত, সৌদিআরব কি চায় বাংলাদেশ স্বাধীনতা ধরে রাখুক? নাকি তলে তলে সকল কলকাঠি নাড়ছে পরাজিত পাকিস্তানীরা? এ এক কঠিন প্রশ্ন এখন জাতির সামনে।",False mk,"ইতিহাস ও সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ সম্প্রতি প্রশ্ন উঠানো হয়েছে, স্বাধীনতা ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এ ধরনের একটি আচমকা-যুক্তিহীন ও ইতিহাসবিবর্জিত প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা না থাকলেও যেহেতু প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এ কে খন্দকারের লিখিত বই থেকে, সে জন্য এর প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো উত্থাপন ঐতিহাসিক কারণেই জরুরি। তবে এ প্রসঙ্গে তার উত্থাপিত মৌলিক প্রশ্ন সম্পর্কে সবিনয়ে সংক্ষিপ্তভাবে ঐতিহাসিক ও প্রাসঙ্গিক বিষয় আলোচনার দাবি রাখে। কেননা এর ফলশ্রুতিতে দেশ ও জাতির ভ্রান্তি নিরসনে যেমন নতুন মাত্রা যোগ হবে তেমনি সবচেয়ে উপকৃত হতে পারি আমি স্বয়ং।এক. মার্কিন গোপন দলিলে লিখিত আছে, 'মুজিব ও ইয়াহিয়া খান ২৩ মার্চ একটি সম্ভাব্য সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল অবিলম্বে বাংলাদেশের প্রাদেশিক সরকার গঠিত হবে এবং কেন্দ্রের হাতে কেবল দেশ রক্ষা, বিদেশনীতি এবং অর্থ সীমিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে'। কিসেঞ্জার সিআইএর প্রধান রিচার্ড হেলমসকে জিজ্ঞাসা করেন শেখ মুজিব গ্রেফতার হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? তিনি বলেন, বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবের যে অত্যুঙ্গ জনপ্রিয়তা ও আবেগ রয়েছে তার ফলে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে, যার পরিসমাপ্তি ঘটবে স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাধ্যমে। কিসেঞ্জার বলেন, পরিস্থিতি যাই হোক আমরা পাকিস্তানের পক্ষে থাকব। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা, স্টেটস ডিপার্টমেন্ট সবাই অবগত ছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেবেন না।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নিরীহ বাঙালির ওপর যে আক্রমণ করবে এ কথা বঙ্গবন্ধুর অজানা ছিল না। প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ওইদিন রাজনৈতিক সমঝোতার ঘোষণা না দিয়েই ছদ্মবেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। যাওয়ার আগে তিনি সামরিক বাহিনীকে আক্রমণের নির্দেশ দেন। এ বিষয়টি বঙ্গবন্ধু অবগত ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কে গবেষণায় দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকটি চ্যানেল প্রস্তুত করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে ছিল ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ও অন্যান্য স্থানে রক্ষিত ওয়্যারলেস, গুলিস্তানস্থ টিএন্ডটি ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি ও টেলিফোন অফিস থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত ঘোষণা প্রেরণের ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বিভিন্ন চ্যানেলে প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণা সমগ্র দেশে পৌঁছে যায়। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে এই ঘোষণা বিস্তারিত উল্লেখ আছে। এমনকি ১৫ মার্চ মার্কিন গোপন নথির এক তথ্যে বলা হচ্ছে- 'মুজিব দেশের শাসনভার গ্রহণ করেছেন।' ২৬ মার্চ হেনরি কিসিঞ্জারের জবাবে সিআইএ প্রধান তাকে জানান, A clandestine radio broadcast has Mujibur Rahman declaring the independence of Bangladesh.দুই. গ্রেফতারের পূর্বে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রাপ্ত শেষ ব্যক্তি হিসেবে দাবিদার বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রয়াত আতাউস সামাদ তার বইতে লিখেছেন, সামরিক বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলাতে বঙ্গবন্ধু তার দিকে মাথা নিচু করে যাতে তিনি শুনতে পান সেভাবেই বললেন, 'আই হ্যাভ গিভেন ইউ ইনডিপেন্ডেন্ট। নাউ গো অ্যান্ড প্রিজার্ভ ইট।' স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে বেলাল মোহাম্মদ বলেছেন, '২৫ মার্চ দিবাগত রাতে তারবার্তা আকারে বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে যে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন, যার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম শহরে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা মাইকিং করে প্রচার করা হয়। ঘোষণা সম্পর্কে সাইক্লোস্টাইল হ্যান্ডবিল বিতরণ করা হয়। ২৬ মার্চ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার আলোকে লিখিত বক্তব্য বেতারে প্রচার করেন। যা ঐতিহাসিকভাবে সত্য।তিন. বইটিতে প্রশ্নাকারে বিশদভাবে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেনাবাহিনীকে নির্দেশনা না দেওয়ার ফলে স্বাধীনতাযুদ্ধে সময় ক্ষেপণ হয়েছে ও বহুলোকের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের সুসংগঠিত করা হয়নি। আমি তখন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য। বঙ্গবন্ধু সব নেতাকে ৭ মার্চের পরই এলাকায় যাওয়ার ও সর্বত্র সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। তখনই সারা দেশে ট্রেনিং শুরু হয়। থানা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়। নিকটবর্তী ইপিআর বাহিনীর সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করা হয়। মার্কিন গোপন দলিলে বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ ৫০০০ বাঙালি সৈন্য এবং তার বিপরীতে ২০ হাজার পাকিস্তানি নিয়মিত সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করেছে। তা ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ইপিআর, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদবাহিনী সব মিলিয়ে আরও ১৩ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছিল। কিন্তু ইপিআর বাহিনীর যা ছিল মুক্তিযুদ্ধের অগ্রণী বাহিনীর অধিকাংশ ইউনিটে কমান্ডিং অফিসার ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা। সে সেনাবাহিনীর মনোভাব সম্পর্কে ১৯৭২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তিবাহিনীর সেনাপ্রধান জেনারেল ওসমানী বলেছেন, 'পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যদি শুধু ছাত্র-যুবক, শ্রমিক ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে তাদের আক্রমণ সীমাবদ্ধ রাখত তাহলে বাঙালি সেনা-অফিসাররা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করত কিনা সন্দেহ। যখন তাদের ওপর আক্রমণ শুরু হলো তখন কেবল তারা রাতারাতি মুক্তিবাহিনী হিসেবে এগিয়ে এলেন।' একটানা ১৯৫১-১৯৬৯ অর্থাৎ ১৮ বছর ধরে পাকিস্তানে কর্মরত বিমান বাহিনীর চৌকস ও মেধাবী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে এ কে খন্দকার বাংলাদেশে এসে অতি সহজে কর্মরত বাঙালি সেনাসদস্যগণের যে মনোভাব ছিল তার মনস্তাত্তি্বক বিশ্লেষণ করেছেন কিনা তা আমার জানা নেই। কারণ '৭০ সালের নির্বাচনের আগের ঘটনাবলি সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা সীমিত হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। আগরতলা মামলার অভিজ্ঞতা তার চিন্তা-চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে। সেসময় বাঙালি সেনা-কর্মকর্তাদের ওপর নানা ধরনের মানসিক চাপ ও পেশাগত অমর্যাদাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল এবং বাঙালি সেনা অফিসারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে তারা নিজেরাই একে অপরের সঙ্গে মনখুলে কথা বা সম্পর্ক রাখতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সে কারণে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক চটজলদি সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ বিভিন্ন গ্রুপে ও কমান্ডে বিভক্ত বাঙালি সামরিক সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি দেওয়া যথার্থ হতো কিনা তারও বিশ্লেষণ প্রয়োজন। কেননা আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর নিদারুণ-নির্যাতন তাদের মনে জ্বল জ্বল করছিল। এ ছাড়া পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত কিনা সেটাও বিবেচ্য। চট্টগ্রামে ইপিআরের ক্যাপ্টেন মেজর রফিক, মেজর সাফায়েত জামিল, খালেদ মোশাররফসহ দু-চারজন ব্যতিক্রম ব্যতীত অধিকাংশ সেনাছাউনিতে বাঙালি সেনা-কর্মকর্তারা পাকিস্তানিদের দ্বারা আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র তুলে নেননি। তারা নির্দেশ পেলেও একসঙ্গে যুদ্ধে এগিয়ে এসে খন্দকার সাহেবের মতে 'রাতারাতি দেশ স্বাধীন করতে পারতেন' কিনা সন্দেহ। একটি ক্ষুদ্র দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি দেখা একরকম যেমনটি দেখেছেন এ কে খন্দকার। কিন্তু সার্বিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের বিশ্লেষণ তার লিখিত পুস্তকে অনুপস্থিত থাকায় তার লেখা সম্পূর্ণ পটভূমিকে স্পর্শ করেনি।চার. আহমেদ সালিম রচিত 'ব্লাড বিটেন ট্র্যাক' পুস্তকে স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কে লিখেছেন, 'জেনারেল টিক্কা খানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের গ্রেফতার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে টিক্কা খান জবাব দেন, 'আমার কো-অর্ডিনেশন অফিসার একটি তিন ব্যান্ড রেডিও নিয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলেছিল, 'স্যার, শুনুন শেখ সাহেব স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন' এবং আমি নিজে রেডিওর এক বিশেষ ফ্রিকোয়েন্সিতে সেই স্বাধীনতার ঘোষণা শুনি। আমি তার কণ্ঠের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম তাই তাকে গ্রেফতার করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশ স্বাধীন করার অভিযোগে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত করেছিলেন। ২৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান প্রদত্ত বেতার-টিভির বক্তৃতায় তার প্রমাণ বিধৃত।পাঁচ. স্বাধীনতা ঘোষিত না হলে কীসের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয়েছিল? এ প্রসঙ্গে তিনি শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা সংবলিত বঙ্গবন্ধুর কাছে উত্থাপিত 'এক টুকরো কাগজে লেখা' পাঠ করেননি বলে খন্দকার সাহেব এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেননি। বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীন সাহেবকে বলেছিলেন, 'এই চিরকুটে ঘোষণার দরকার হবে না। মনি, সিরাজুল আলম কলকাতা থেকে ঘুরে এসেছে। চিত্তরঞ্জন সুতারের সঙ্গে কথা বলে এসেছে। সেই তোদের ব্যবস্থা করে দেবে।' সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করার পরিকল্পনা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু এক নম্বর আসামি ছিলেন। সে অভিজ্ঞতা তার মনে ক্রিয়াশীল ছিল। সেজন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে তার পরিকল্পনায় ছিল জনযুদ্ধ। ৭ মার্চ তিনি ওই জনযুদ্ধের নির্দেশনা প্রদান করেন।ছয়. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে যেমন জাতীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে হয়েছে, তেমনি জাতিসংঘ স্বীকৃত একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরুদ্ধে প্রথম আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত হলে জাতিসংঘের চার্টার অনুযায়ী আত্দনিয়ন্ত্রণের অধিকার সমুন্নত থাকে না। সে জন্য পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নিরীহ বাঙালিদের ওপর আক্রমণ শুরু করলে বঙ্গবন্ধু যথারীতি স্বাধীনতার ঘোষণা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।সাত. তাজউদ্দীন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলাম ভারত সীমান্তে পৌঁছালেন। বর্ডারে পৌঁছে তারা আশ্চর্য হলেন যে, যখন দেখলেন অপরিচিত দুজন লোক তাদের সেলুট দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। তাদের পরিচয় তারা বিএসএফের লোক। তাদের ওপর ইনেস্ট্রাকশন ছিল বিএসএফের প্রধান রুস্তমজির কাছে নিয়ে যাওয়া। তিনি অস্থিরভাবে অপেক্ষা করছেন। রুস্তমজির জিপে তারা উঠে বসলেন। রুস্তমজির সঙ্গে দেখা হলে তিনি বললেন, কলকাতা না গিয়ে সোজা দিলি্ল চলে যান, 'ইন্দিরাজির সঙ্গে সাক্ষৎ করুন।' সাক্ষাতে কয়েক দিন বিলম্ব হয়। এর মধ্যে পিএন হাস্কার, কাউলসহ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে দুজনের আলোচনা হয়। ৩ এপ্রিল ইন্দিরা গান্ধী সরকার গঠনের কথা জিজ্ঞাসা করলে তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন। সেই প্রেক্ষিতে তাকে প্রেসিডেন্ট করে ইতিমধ্যে সরকার গঠন করা হয়েছে। সেই আলোচনায় কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত। ক) সীমান্তের কাছাকাছি রণাঙ্গন নির্ধারণ। খ) ভারতে বসেই কূটনৈতিক তৎপরতা ও সরকারের কার্যপরিচালনার সুবিধাদি প্রদান। গ) অস্ত্র সাহায্য। ঘ) একটি শক্তিশালী বেতারযন্ত্র।আট . বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন বলেই তার ভিত্তিতে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম স্বাধীনতার খসড়া সনদ রচনা করেন, যা প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন কর্তৃক অনুমোদিত হয়। মূলত 'প্রোক্লেমেশন অব ইন্ডিপেনডেন্স' হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম সাংবিধানিক দলিল। অন্যকথায়, 'জেনেসিস অব দ্য কনেস্টেটিউশন'। যা সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদে চতুর্থ তফসিলে বর্ণিত ও সাংবিধানিকভাবে অনুমোদিত। স্বাধীনতার সনদ আইনানুগভাবে অনুমোদন করেন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণ। এই সনদের ভিত্তিতেই ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে আইনানুগ সরকার শপথ গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। এই সরকারের অধীনেই জেনারেল ওসমানী সেনাপ্রধান ও এ কে খন্দকার উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান ও দায়িত্ব পালন করেন।নয়. ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদে উদ্বোধনী ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ""২৫ শে মার্চ তারিখে আমাদের আক্রমণ করল। তখন আমরা বুঝতে পারলাম যে আমাদের শেষ সংগ্রাম শুরু হয়ে গেছে। আমি ওয়্যারলেসে চট্টগ্রামে জানালাম বাংলাদেশ আজ থেকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই খবর প্রত্যেককে পৌঁছে দেওয়া হোক- যাতে প্রতিটি থানায়, মহকুমায়, জেলায় প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে উঠতে পারে। সে জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছিলাম।"" এরই প্রেক্ষিতে ওই দিন পার্লামেন্টের প্রস্তাবের একাংশে বলা হয়, ""১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার যে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে ঘোষণা মুজিবনগর থেকে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বীকৃত ও সমর্থিত হয়েছিল এই সঙ্গে এই গণপরিষদ তাতে একাত্দতা প্রকাশ করছে।"" বাংলাদেশের সংবিধানেও মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রস্তাবনায় বিদ্যমান।দশ. তৃতীয় প্রশ্ন হলো ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে যে ঐতিহাসিক দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন, সে ভাষণ পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে আখ্যায়িত। যে ভাষণে বিধৃত আছে মুক্তিযুদ্ধের ও রাজনৈতিক কৌশলগত দিক। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির নির্দেশনা। বিশাল ওই জনসভায় তৎসময়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ সদস্য হিসেবে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। ভাষণের শেষে বঙ্গবন্ধু 'জয় পাকিস্তান' উচ্চারণ করেছিলেন এ কথা এ কে খন্দকার সাহেব তার বইতে উল্লেখ করলেও আমার মতো সচেতন মানুষের কর্ণকূহরে সেদিন তা প্রবেশ করেনি। এ সম্পর্কে এককালীন তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে 'জয় পাকিস্তান' নিয়ে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি আকাশ-পাতাল ঘেঁটেও সে চ্যালেঞ্জ প্রমাণ করতে পারেননি। সম্মানীয় আবদুল করিম খন্দকার জিয়াউর রহমানের আমলে (১৯৭৬-১৯৮২) পর্যন্ত রাষ্ট্রদূত, এরশাদের শাসনকাল (১৯৮২-১৯৮৬) সাল পর্যন্ত ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, ১৯৯৮ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদে সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬-১৯৯০ সময়সীমায় এরশাদ সরকারের এবং ২০০৯-২০১৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন। তার মতো অভিজ্ঞতা, বিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং বিদগ্ধবরেণ্য ব্যক্তি যদি তার বক্তব্যের স্বপক্ষে দলিল, প্রমাণপত্র উপস্থিত করতে পারেন তাহলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। না হলে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন ও ইতিহাসের চ্যালেঞ্জে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত হবেন। মূল লেখক: অধ্যাপক আবু সাইয়িদ",False hm,"দাড়ি সংকট ২০০৩ এর জুন মাসে লেখা। আমার ব্লগস্পট ব্লগ রয়েসয়ে এবং সম্ভবত সামহোয়্যার ইনেও প্রকাশিত হয়েছিলো। সচলায়তনে পোস্ট করছি আবারও। ১. লিটনটা কবিতার দিকে ঝুঁকেছিলো কলেজে উঠেই। স্কুল পেরিয়ে কলেজে উঠলেই ছেলেমেয়েদের হুট করে অনেক বদভ্যাস গজায়, নানা ফালতু কাজকারবারে জড়িয়ে পড়ে তারা, আবার পরে কালচক্রে সেগুলোকে ছেড়েও দেয়। এরই মাঝে শত টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে সিগারেটটা কিভাবে যেন টিকে যায়, আর প্রেমে পড়াটা প্রায় সবাই ভুলে যায়। আর কবিতা লেখার বাতিক দেখা দেয়া শতকরা আশি ভাগ কিশোরকিশোরীর। তবে লিটনের কবিতা ধরা, আর ছাড়া, দু’টিই ভারি আকস্মিক। লিটনটা স্কুলে থাকতে ছিলো আস্ত একটা বদমাশ, সিগারেট এমনই কায়দা করে টানতো যে আমাদের দারোয়ানটা পর্যন্ত হাঁ করে তাকিয়ে থাকতো। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাংলা সিনেমা দেখা ছিলো তার হবি, বেশ কয়েকটা বারে গিয়ে মদও খেয়ে এসেছে বেশ কয়েকবার, তবে সে-ই মদকে খেতো, মদ তাকে খেতে পারেনি কোনদিন; আর মেয়েদের দেখলে, বিশেষ করে নিজের চেয়ে সাত-আট বছরের বড় আপুদের দেখলে, মাথার টেরিটিকে উশকোখুসকো করে উসকে দিয়ে টেরিয়ে তাকিয়ে থাকতো যে ছোকরা, সেই বখা লিটন কলেজের চৌহদ্দির আলোবাতাসে এসে বেমালুম পাল্টে গেলো। কি যেন হলো তার, কি যেন পেয়ে বসলো তাকে, নাকি সে-ই কিছু একটা পেয়ে বসলো, মোটের ওপর, একেবারেই বদলে গেলো লিটন। হঠাৎ একদিন দেখি তার মুখ ভর্তি দাড়ি। লিটন আমাদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলো শেভের জন্যে। স্কুলের শেষদিকে এসে সবারই একটা গুম্ফপ্রীতি কি শ্মশ্রুপ্রেম জাগে। অনাগত দাঁড়িগোঁফের জন্যে কি আমাদের মন কাঁদেনি? আলবাত কেঁদেছে, কেঁদে ভাসিয়ে দিয়েছে একেবারে। কিন্তু হাজার শেভ করেও তাদের হাজির করানো যায়নি। টাকা আর দাড়ি, শিবরাম বলে গেছেন, কামাতে হয়, না কামালে তারা আসেনা। আমরা টাকা নিয়ে মাথা ঘামাতাম না, আম্মার কাছে কিছুক্ষণ ঘ্যানরঘ্যানর করলেই তাদের কিছু পরিমাণে কামানো যেতো, কিন্তু গোঁফ আর দাড়ি, তাদের জন্যে আম্মা কেন, আম্মার চেয়েও উঁচু দরবারে, খোদ আল্লার কাছে ঘ্যানঘ্যান করেও বিশেষ ফল পাইনি আমরা। রবীন্দ্রনাথ, রবিনহুড, শন কোনারি, সবারই দাড়িগোঁফ আছে, শুধু আমাদেরই সেই আমলে ছিলো না। তাই বলে কামানোর ব্যাপারে কামাই দিইনি আমরা। কামিয়ে গেছি সমানে। বৃথা। নাহক পয়সা খরচা করেছি রেজার আর শেভিংফোমের পেছনে, দাড়ি আর গোঁফ আমাদের অনেককেই কাঁচকলা দেখিয়ে চামড়ার গহীন অভ্যন্তরে কোন এক তেপান্তরে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে লুকিয়ে থেকেছে। ঐ এক লিটন বাদে। গোঁয়ারটা টাকা আর দাড়ি, দেদার কামিয়েছে স্কুলে থাকতেই। কোন এক রংবাজ ভাইয়ের চামুন্ডাগিরি করে ও প্রায়ই টাকাপয়সা কামাতো, নির্বাচন, সে যে মাপেরই হোক না কেন, নির্বাচনের বাতাস গায়ে লাগলেই লিটন মাঝে মাঝে আমাদের কয়েকজনকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতো, সে বিড়িই হোক কি বিরিয়ানি। আর রোজগারের খানিকটা রোজ সে গালে লাগাতো, মানে শেভ করাতো, একেবারে সেলুনে গিয়ে চেয়ারে চড়ে ম্যাগাজিন পড়তে পড়তে দাড়ি কামিয়ে আসতো লিটন। আর খোদা তাকে দাড়ি আর গোঁফ দুই-ই ভারি উদার হাতে দিয়েছিলেন। একদিন শেভ না করলে তাকে দেখাতো ফিদেল কাস্ত্রোর মতো। কিন্তু তাজ্জব, দাড়িগোঁফের ব্যাপারে লিটন ছিলো ভারি উদাসীন, এদের আদৌ পছন্দ করতো না সে। নদীর এপার সবসময়ই অন্য পারের দিকে তাকিয়ে উসখুস করে। আমরা যেখানে গোঁফদাড়ির জন্যে হেদিয়ে মরছি, সেখানে সে সেগুলোর জড় উপড়ে ফেলার জন্যে বদ্ধ পরিকর। কেন, আর কিছুই না, মুখে দাড়ি থাকলে নাকি বেজায় চুলকাতে থাকে। আমরা প্রায়ই শুনেছি লিটনকে গজগজ করতে, শেভের পেছনেই নাকি তার সব পয়সা চলে যায়, কিছুই সেভ করতে পারে না সে। যা কামায়, সবটাই কামিয়ে খরচ করতে হয় বেচারাকে। আমরা দাঁত কিড়মিড় করতাম। বিশেষ করে ঐ চুলকানোর কথা শুনলে আমাদের গা চিড়বিড় করতো। আরে, যে গরু দুধ দেয়, সে তো খানিক লাথি ছুঁড়বেই। ওরকম দাড়ি গজালে কি না চুলকে পারে কেউ? চুলকানোর ভয়ে কেউ কি গোঁফদাড়িকে অমন অসম্মান করে? আর আল্লা যাকে দ্যান, তাকে একেবারে চোয়াল ফুঁড়ে দ্যান, আর কেবল দেড়ে চোয়ালেই দাড়ি দ্যান তিনি। আল্লার এই তেলা মাথায় তেল দেয়া আমরা মোটেও পছন্দ করতে পারিনি। তো, কলেজে একদিন ক্লাস শেষে লিটনের মুখে দাড়ি দেখে আমরা হতবাক। কাস্ত্রোর মতোই গম্ভীর তার চেহারা, মাঝে মাঝে গলার কাছটা চুলকে নিচ্ছে শুধু। আমাদের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। তবে কি লিটনের রোজগার বন্ধ? দাড়ি কামানোর পয়সা নেই তার? নাকি এতদিনে মোচ আর দাড়ির মহিমা বুঝেছে বেক্কলটা? ওরা যে নাপিতখানার মেঝের বদলে ঠোঁটের ছাদে আর চেহারার মেঝে, মানে থুতনিতেই শোভা পায়, সেই দিব্যজ্ঞান লাভ করেছে লিটন এতদিনে? আমরা তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করি। কেন, কবে, কীভাবে? লিটন খুব গোমড়া মুখে শুধু এটুকু জানায় যে, সে এখন থেকে দাড়ি রাখবে, সে যতোই চুলকাতে থাকুক না কেন। চুলকে যেতে সে রাজি, চুলকে যাবে সে। কিন্তু দাড়িরা রয়ে যাবে। কিন্তু কেন, আমরা জানতে চাই। লিটন জবাব দেয়, তার ইচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করি, ‘মোচও রাখবি?’ লিটন বিরক্ত হয়। মোচ ছাড়া দাড়ি, সে তো বারিন্দাবিহীন বাড়ির মতো, জানায় সে সাথে সাথেই। পুরান ঢাকার আদ্যিকালের দালানের মতো অমন দৃষ্টিকটু হতে চায় না সে। আর আব্রাহাম লিংকন তো সে নয়, যে বিনা মোচে দাড়ি শানিয়ে ঘুরে বেড়াবে। আলবাত সে মোচ রাখবে। আর রাখার মতো মোচ যখন তার গজিয়েছে, রাখতে বাধা কী? আর রাখবে না-ই বা কেন? মোচকে মোচন করার কী এমন ঠ্যাকা পড়েছে তার? দাড়িকে দাঁড়াতে দিলে মোচকে কেন মচকে দেয়া হবে? আমরা লিটনের দাড়ি, এবং মোচ, খুঁটিয়ে দেখে তার সম্ভাব্য আকারআকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলি। ঠিক কেমন নকশায় তারা লিটনের হাড় জিরজিরে চেহারাখানা জুড়ে বসবে, বা দাঁড়াবে, আন্দাজ করার চেষ্টা করি। ফ্রেঞ্চ কাট, প্রিন্স কাট, কুদ্দুস কাট ইত্যাদি ছাঁটের নাম বাতলে দিই লিটনকে। কিন্তু মুখ্যুটা এসব বোঝে না। আমি খোলাসা করে বলি, ‘তোর মোচ আর দাড়ি কি জোড়া লেগে যাবে, নাকি আলাদা আলাদা থাকবে?’ লিটন একটু ভাবে। মোচ আর দাড়ি জোড়া লেগে গেলে তাদের নিজস্ব সত্ত্বা নিয়ে কোন দ্বন্দ্ব দেখা দেবে কি না, জানতে চায় সে। আমাদের কাছে কথাটাকে খুব শক্ত মনে হয়, আরো শক্ত লাগে লিটনের মুখ থেকে শুনে। এমন ভাষা তো তার মুখে আগে শুনিনি কখনো। দ্বন্দ্ব বলতে আগে লিটন মারামারিই বুঝতো, অমনই ছিলো তার নিজস্ব সত্ত্বা। এখন তার লব্জ পাল্টে গেছে বিলকুল। আমাদের ভ্যাবলা চোখ দেখে লিটন মাথা নাড়ে বিরক্ত ভঙ্গিতে, মোচ আর দাড়ির আইডেনটিটি ক্রাইসিস দেখা দেবে কি না, সে পুরনো প্রশ্নটাকে নূতন শব্দে বাঁধিয়ে জানতে চায়। এবারও আমরা আঁধারে থেকে যাই। শিবলি খানিকটা বুঝে ফ্যালে যদিও, সে লিটনকে আশ্বস্ত করে, উঁহু, জোড়া লাগলেও মোচকে মোচ আর দাড়িকে দাড়ি হিসেবে চিনে নিতে আমাদের কোন সমস্যা হবে না। তবে মোচ আর দাড়ির যে সন্ধিপ্রাঙ্গণ, সেই যোজনীটিকে কি মোচের ঝুল হিসেবে গণ্য করা হবে, নাকি দাড়ির শিং, সেটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই, সেটা একান্তই লিটনের ব্যক্তিগত ব্যাপার। চাইলে সে ওটাকে অন্য কোন নামও দিতে পারে, আপত্তি নেই আমাদের, যদি আকিকা হিসেবে আমাদের খাওয়ানো হয়। জুলফির মতো ওটাকে মোচফি ডাকা যেতে পারে, রেজা গায়ে পড়ে একটা নামও দিয়ে দিতে চায়, আকিকাটাকে এক ধাপ এগিয়ে নেবার লোভে। লিটন আরো খানিকটা ভেবে জানায়, আপাতত জোড়া লাগুক। কয়েকদিন সেই যুগলবন্দি মোচদাড়িকে বিশেষ পর্যবেক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ফেলে দেখবে সে। যদি যোজনী দুটোর সত্ত্বা নিয়ে বড় কোন ধরনের দ্বন্দ্ব কি দুর্যোগ দেখা দেয়, সে বৃথা কালক্ষেপ না করে সুয়েজ কি পানামা খুঁড়ে একেবারে সাইজ করে দেবে বেটিদের। কেন সে যোজনী দুটোর ওপর স্ত্রীচরিত্র আরোপ করছে, এ প্রশ্নের জবাবে লিটন কাস্ত্রোর চেয়েও গম্ভীর হয়ে বললো, দ্বন্দ্ব কি সংশয় সৃষ্টি একান্তই নারীর ভূমিকা, আর মোচ আর দাড়ির মতো ঘনিষ্ঠ দুই চরিত্রের মাঝে যে দ্বন্দ্বময় কাজকারবার নিয়ে আবির্ভূত হয়, তাকে বেটি না বলাটাই মূর্খামি। আর নারীকে যে নামেই ডাকো না কেন, নামের আড়াল সরিয়ে তাকে ঠিক ঠিক চিনে নিতে কোন সমস্যা নেইকো। লিটনের মতো পাঁড় বদমাশের মুখে এতো শক্ত বোলচাল শুনে আমরা ঘায়েল হয়ে যাই। এ কী রাতারাতি পরিবর্তন? দস্যু রতœাকরও এতো চটজলদি বাল্মীকি বনতে পারেননি, নিজাম ডাকাত থেকে নিজাম আউলিয়া হওয়ার পেছনেও যথেষ্ঠ সময় লেগেছে, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানরাও অমন হুট করে দেশপ্রেমিক সাজতে পারেনি, কিন্তু লিটন সেই অসাধ্যকে সাধন করে ছেড়েছে। পরবর্তী কয়েকদিনে লিটনের মোচ, আর দাড়ির কিছু পরীক্ষামূলক পরিবর্তন ঘটে। দ্বন্দ্বময়ী যোজনীটি কিছুদিন উপ্তাভাবে অবস্থান করে, তারপর একদিন হঠাৎ লুপ্তা হয়ে পড়ে, তারপর আবারও বেশরম আওরাতের মতো গজায়। দাড়িটিও লিটনের চাপা এবং থুতনির বিভিন্ন অঞ্চলে একেকদিন একেক কিসিমে কর্তিত হয়ে শেষ পর্যন্ত আবার সেই কাস্ত্রীয় রূপ ফিরে পায়। আমরা নিজেরাও নানা শাস্ত্রীয় শলাপরামর্শ দিই সেই দাড়ির অস্তিত্বের ব্যাপারে। ‘রাখবি যখন, রাখার মতো করেই রাখ।’ রেজা পরামর্শ দেয়। ‘ঘাসের মতো ছেঁটে রাখ। ঝোপের মতো রাখলে বিচ্ছিরি দেখাবে।’ শিবলি উল্টোদিক থেকে পোঁ ধরে। ‘না না। ওদেরকে তুই নিজের মতো করে বাড়তে দে। আর ভয় কী তোর? তোর দাড়িতে তো আর গোলাপ ফুল ধরবে না যে রোজ রোজ কাঁচি দিয়ে কুচিয়ে দিতে হবে। ওদেরকে তুই প্রাকৃতিক নিয়মে বাড়তে দে।’ আমি খানিকটা মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করি। ‘তা বাড়তে দে, তবে মাঝে মাঝে একটু কাঁচি চালাস। একেবারে বেড়ে গেলে কিন্তু তালেবান কমান্ডারের মতো দেখাবে।’ তবে একটা ব্যাপারে আমরা সবাই একমত হই। ‘নিয়মিত পানি দিস কিন্তু। শ্যাম্পুও করিস। নাহলে কিন্তু ভারি বিশ্রী গন্ধ ছড়াবে। উকুনটুকুনও হতে পারে, মাঝে মাঝে ফিনাইল দিস।’ লিটন শোনে শুধু, কিছু বলে না। তবে তার ভাবসাব দেখে মনে হয়, গোঁফদাড়ি নিয়ে তার কোন সাংঘাতিক গোপন পরিকল্পনা রয়েছে। ২. মাসখানেক পর লিটনের গোঁফদাড়ির আসল মকসদ আমাদের বোধগম্য হয়। কলেজের “ঢাকঢোল” ম্যাগাজিনে তার একটি আস্ত কবিতা প্রকাশিত হয়। কবিতাটা পড়ে আমাদের খুব সমস্যা হয়, আর ওটাকে কবিতা হিসেবে মেনে নিতেই আমরা হিমসিম খাই। আমরা ছেলেমানুষ, ওরে নবীন ওরে আমার কাঁচা কিংবা চপল পায় কেবল ধাই কেবল গাই পরীর গান, বড়জোর চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা গোছের কবিতা পাঠ্যপুস্তকে পড়ে অভ্যস্ত। আর লিটন সেখানে তার “কবিতায়” দুঃখকে একটি ফেরেববাজ নারী কাঠঠোকরার সাথে তুলনা দিয়েছে, যে কি না তার হৃদয়ের নরম শাঁসে দিন নেই রাত নেই শুধু ঠোকরায় আর ঠোকরায়, মেঘলা দিনে বিশালবক্ষা কালচেরঙ তরুণী মেঘেরা যখন আকাশে লীলা-লাস্যে ভেসে ভেসে যায়, মাঝে মাঝে বিদ্যুচ্চমকে চোখ মেরে ইশারা করে লিটনকে, তখন নাকি সেই কাঠঠোকরার উৎসাহ আরো বেড়ে যায়, ঠুকরে নাকি সেই বেটি লিটনকে একেবারে জেরবার করে ছাড়ে, ওদিকে নদীর নরম বাঁকে বালির চড়ায় রোদ পিছলে গিয়ে ঝলকাতে থাকে, যা কি না লিটনকে শুধু কোন এক নারীর জঙ্ঘার কাঞ্চনের কথা মনে করিয়ে দেয়, সেই রোদও নাকি অমন জোরে ঝলকায় না, যতটা ঝলকায় লিটনের হৃদয়ে জলের মতোন নরম কোরকে সেই কাঠঠোকরা হারামজাদির ঠোকরের স্ফূলিঙ্গ  ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে আমাদের ম্যাগাজিনের ভারপ্রাপ্ত বাংলা প্রভাষক সেটিকে খুব খাসা এবং পেডিগ্রি কবিতা হিসেবে রায় দিয়েছেন, তিনি লিটনকে আশ্বাস দিয়েছেন, কিছু কবিতাপরায়ণ লিটল ম্যাগাজিনের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেবেন। আমরা বুঝতে পারি, কবি হবার জন্যেই দাড়ি রেখেছে লিটন। রবীন্দ্রনাথের ছিলো, নির্মলেন্দুর আছে, লিটনেরও থাকবে। লিটনকে আমরা চেপে ধরি, ‘য়্যাঁ, তুই কবিতা লিখছিস, বলবি না আমাদের? আমরাও নাহয় তোকে হেল্প করতাম। দশে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ। সবার পরামর্শ নিয়ে লিখলে কবিতাটা আরো পোক্ত হতো।’ এতে লিটন ভারি বিরক্ত হয়, কবিতা কোন কালভার্ট কিংবা ঘূর্ণিঝড়আশ্রয়কেন্দ্র নয়, জানায় সে, যে সেটাকে পোক্ত করে গড়তে হবে। অপোক্ত অশক্ত কবিতার ধারই আলাদা। আবলুস কাঠকে পোক্ত হতে হয়, তাই বলে চাঁপা ফুলও পোক্ত হলে কি মানায়? তারপর না কামানো ভুরু কুঁচকে চোখ পাকিয়ে লিটন জানতে চায়, কখনো শুনেছি কি না আমরা, রবীন্দ্রনাথ কি নজরুল মেহফিল জমিয়ে দশজনের পরামর্শ নিয়ে কবিতা রচেছেন। কিংবা বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বসু আর সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সভা ডেকেছেন, নিজেদের কবিতার ওপর লোকজনের পরামর্শ নেয়ার জন্যে। আর, পরামর্শ যদি নিতেই হয়, সে আমাদের মতো কবিত্বের মন্বন্তরে ভোগা রুক্ষশুষ্ক দাড়িকামানো আর দাড়ি-না-গজানো ছেলেপিলেদের পরামর্শ কেন নেবে? সে তার কবিতার ব্যাপারে শামসু ভাই, মহাদেবদা আর নির্মলদার সাথে আলাপ করেছে। তাঁরা যথেষ্ঠ মূল্যবান পরামর্শই দিয়েছেন, যে কারো পরামর্শ নেয়ার দরকার নেই, আপন খেয়ালে ছাইপাঁশ যা মাথায় আসে লিখে যাও। এখন সে সেই পথেই চলছে, কিন্তু তার চলার পথে প্রেরণা যোগায় জীবুদা। এই শেষোক্ত ব্যক্তিটিকে আমরা প্রথম শোনায় সনাক্ত করতে পারি না, অনেক পরে খেয়াল হয়, নির্ঘাত জীবনানন্দ দাশ। লিটন শুধু কবিতাই লিখছে না, প্রতিষ্ঠিত কবিদের সাথে ভাইবেরাদারি পাতিয়ে একেবারে পারিবারিক করে তুলেছে ব্যাপারটাকে। রবিদা, জীবুদা ছাড়া সে কথাই বলে না। তবে হ্যাঁ, গোঁফদাড়ি ছাড়া ন্যাড়া কবি সে হবে না, কবিই যদি হতে হয় তো উলোঝুলো দেড়েল কবিই সে হবে। কিন্তু কেন এই সুখের ক্লিনশেভড জীবন ছেড়ে লিটন কবি হতে চায়? লিটনের বিবর্তনের রহস্য নিয়ে ভাবতে গিয়ে আমরা শুধু নানা প্রশ্নের গোলকধাঁধাঁয় আবর্তিত হতে থাকি, এবং এই ইস্যু নিয়ে ভাবতে ভাবতে আর গজগজ করতে করতে কয়েকজনের দাড়িগোঁফ ঠেলে গজিয়ে ওঠে। ওদিকে লিটন থামে না, সে কলেজের ম্যাগাজিন আর দেয়ালপত্রিকায় ঠেসে কবিতা লিখতে থাকে, সেগুলোতে নানারকম ইঙ্গিতপূর্ণ ফ্রয়েডীয় হাহাকার আর “অনির্বচনীয়” অথচ “নাতিশীতোষ্ণ” উপমা গিজগিজ করছে। কেউ কেউ লিটনকে খুব উৎসাহ দিতে থাকে, লিটনের কবিতা পড়ে রাতে তাদের ভালো ঘুম হচ্ছে, ক্লাসে লুকিয়ে লুকিয়ে কোন কিছু পড়ে প্রেরণা লাভ করতে হচ্ছে না, লিটন যাতে চালিয়ে যায়, কুইজ কি সেমেস্টার ফাইন্যাল এলে যাতে ঘাবড়ে গিয়ে তার লেখার ধার হারিয়ে না ফ্যালে। কবিতা রচনাকালীন সময়ে অনেকে তাকে পানতামাক কিনে এন পিঠ চাপড়ে দিয়ে যায় নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে। লিটন অবশ্য এই পৃষ্ঠপোষকতায় নির্বিকার। সে সমানে ক্যান্টিনের ধূমপাননিষিদ্ধ কোণাটাতে বসে বিড়ি খায় আর জ্বলন্ত তামাকের ফুলকিতে আধপোড়া দাড়িতে হাত বোলায়, আর লিখে যায়। আমাদের কয়েকজন অভিজ্ঞ সহপাঠী সেই সিগারেটের ধোঁয়ায় গাঁজার মৃদু ও মোলায়েম আভাস খুঁজে পায়। ৩. কলেজ জীবন দু’বছরের বেশি কি আর থাকে? আমরা ইন্টারমিডিয়েটপূর্ব আরাম আয়েশ বিসর্জন দিয়ে এদিকওদিক সুড়সুড় করে ঢুকে পড়ি, আর লিটনটা আমাদের সাথেই ইলেকট্রিক্যাল এনজিনিয়ারিং পড়তে চলে আসে। তার হাবভাব দেখে আমাদের অবশ্য মনে হয়নি সে কলেজ ঝাড়ার পর আদৌ পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে, কিন্তু সে বেশ ভালোভাবেই বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় উতরে গেলো। তবে কবিতা সে ছাড়েনি, কিংবা কবিতা তাকে ছাড়েনি। ক্লাস শুরু হওয়ার পর, সার্কিট থিওরি কি ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশনের কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে মাঝে মাঝে কাব্যরসের একটা হারামজাদি কাঠঠোকরা মাঝে মাঝে তার মগজের নরম শাঁসে ঠোকরাতে লাগলো। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের রুগ্ন সাহিত্য সাময়িকীটাকে লিটন কবিতা লিখে লিখে সাময়িকভাবে কব্জাই করে ফেললো প্রায়। নিজের নামে, ছদ্মনামে, মাঝে মাঝে আমাদের দু’একজনের নামে জবরদস্ত সব কবিতা লিখে চললো সে। খোঁজ নিলে দেখা যায়, সম্পাদকীয় বাদে বাকিটা ওরই লেখা, নামে বেনামে জমি কেনার মতো করে সে সবটাই জবরদখল করে ফেলেছে। অন্যান্য খুচরো কবি দু’একজন যারা ক্যাম্পাসে ছিলো, তারা এহেন সাহিত্যিক সন্ত্রাসের আক্রমণে কবিতা লেখা ছেড়ে টিউশনি করতে লাগলো সমানে। শুধু কবিতার কথা বললে ভুল হবে, লিটনের পোশাক, দাড়ি আর মোচের কথাও বলতে হবে সাথে। আগে কলেজে থাকতে লিটন গেঞ্জি আর জিন্স পরতো, দাড়িটা ছিলো চাপদাড়ি। জিন্স সে এখনও পড়ে, তবে জৈষ্ঠ্যের গরমেও গেঞ্জির ওপরে একটা মোটা সুতির পাঞ্জাবী পরে থাকে। বাঙালি কবির যে কেন এই পাঞ্জাবীপ্রীতি, বোঝা মুশকিল। আর তার সেই চাপদাড়ি এখন কলেবরে বর্ধিত হয়ে হাঁপদাড়ি, মানে দেখলেই হাঁপ ধরে আসে। এক বিঘত লম্বা দাড়ি আর ঝুলো গোঁফ নিয়ে লিটন গম্ভীর মুখে লিখে চলে। তাকে এক মাইল দূর থেকে সনাক্ত করা যায় কবি হিসেবে, আর কাছে এলে সে ধারণা আরো পোক্ত হয়। গোঁফদাড়িতে পানি কিংবা শ্যাম্পু লাগানোর মতো কুকীর্তি লিটন করে না, বেড়ালের মতোই নীর-সংসর্গ এড়িয়ে তার দাড়ি শশীকলার মতো বাড়তে থাকে। সেখানে একটা কেমন যেন গন্ধ, মানুষের গায়ে ওরকম গন্ধ হতে পারে সেটা বিশ্বাস করা মুশকিল, সেই ঘ্রাণে অর্ধেক ভোজন পেট ছেড়ে মুখ ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায়। সহপাঠী কি পাঠিনীরা কবিতার মর্ম অতটা বোঝে না, পুরনো বন্ধুদের অনেকেই কবিতার ঘায়ে কি কবির ঘ্রাণে মূর্ছা গিয়ে মানে মানে কেটে পড়েছে, আমরাই গুটি কয়েক পুরনো কমরেড নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও টিকে আছি, কাজেই নূতন কোন সাংঘাতিক কবিতা পয়দা করেই লিটন দৌড়ে চলে আসে আমাদের কাছে, এবং পুরোটা আমাদের শুনিয়ে ছাড়ে। সে এক যন্ত্রণাই বলতে গেলে। কারণ এই কয়েক বছরে তার কবিতা ও দাড়ি ক্লাসিক্যাল জাত ভুলে খানিকটা উত্তরাধুনিকের গলিতে পা রেখেছে। সেগুলো যেমন বিস্বাদ ও বিষাদময়, তেমনি পীড়াদায়ক। আমরা ওর কবিতাগুলো শুনি, আর কলেজ জীবনের সেই বিশালবক্ষা মেঘ কি নারীর জঙ্ঘার মতো নদীর বাঁকে বালির চরকে খুব মিস করি, আর দীর্ঘশ্বাস ফেলি। লিটনের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, সে নিজের মনে লিখে যায় আর বকে যায়। কিছু ঈর্ষাকাতর ছেলেমেয়ে, যারা এ জীবনে কেবল অন্যের কবিতাই মুখস্থ করে এসেছে, নিজে দু’চার পদ রচনার সাহস দেখায়নি, তারা অবশ্যি লিটনের পেছনে লাগে, তাকে “কবিরাজ” উপাধি দিয়ে ক্ষেপাতে চায়, কিন্তু তারা তো আর লিটনকে চেনে না। উল্টে দু’একজন অতি উৎসাহীর নামে লিটন আলগোছে কয়েকটা কবিতা মুখে মুখে ছড়িয়ে দেয়, এবং সেগুলোতে কাব্য সংক্রান্ত নানা রসের, আদি থেকে অন্ত, এতো সুষম বিন্যাস যে অনেকেই মুখে মুখে সেগুলোকে চর্চা করতে থাকে। ভিকটিমরা অবশ্য অশ্লীল অশ্লীল বলে খানিকটা চেঁচামেচি করেছিলো, কিন্তু তাতে কবিতাগুলোর আবেদন কমেনি। সেকেন্ড ইয়ারের শেষদিকেই লিটন একগাদা কান্ড ঘটিয়ে ফেলে। “লৈটনিক” নামে তার প্রথম কবিতাগুচ্ছ প্রকাশিত হয়, “ব্যাকপ্যাকে ক্যাকটাস” নামে একটা হ্রস্ব ম্যাগাজিনে দীর্ঘ সব কবিতা ছাপাতো লিটন, তারই সম্পাদক বাহাউদ্দিন বাচ্চু ভাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে লিটনের কবিতার বই প্রকাশ করেন। আগে লিটন বলে বেড়াতো, সে এ জীবনে কোন গ্রন্থ প্রকাশ করবে না, ত্রিদিব দস্তিদার আর জৈন মহাবীরের মতো নির্গ্রন্থ হয়ে ঘুরে বেড়াবে, হঠাৎ কেন সে অমনটা করলো আমরা বুঝলাম না, তবে অনেকদিন পর, সেই স্কুলআমলে রংবাজের চামুন্ডাগিরি ছেড়ে দেবার পর এই প্রথম লিটন আমাদের পুরোন ঢাকার বিরিয়ানি খাওয়ালো। আমরা সঙ্গত কারণেই লিটনের এহেন পদক্ষেপকে স্বাগত জানালাম। তবে শিবলি ব্যাপারটার খানিকটা অভ্যন্তরে ঢুকে তদন্ত করে জানালো, এই বাহাউদ্দিন বাচ্চু ভদ্রলোকের একটি বিখাউজ চেহারার মেয়ে আছে, কলকি না ফুলকি এ গোছের কি যেন নাম, সেও খুব কবিতাওয়ালি, এবং তার সাথে লিটনের বেশ কবিতাসংক্রান্ত দহরমমহরম রয়েছে। বই প্রকাশের পর কিছুদিন ধরে লিটন রোজ আমাদের খবরের কাগজের কাটিং সরবরাহ করতো। একটা ধুমসো রেজিস্টার খাতায় সেসব কাটিং সেঁটে রাখতো সে, আর আমাদের পড়ে শোনাতো। সবই ওর কবিতার সমালোচনা। সেগুলো লিটনের কবিতাগুলোর চেয়েও দুর্বোধ্য। সমালোচনার নামে সেখানে কাদা ছোঁড়াছুঁড়িই করা হয়েছে কেবল, আর মাঝে মাঝে ধান ভানতে শিবের গীতের মতো সমালোচক সাহেবরা নিজের কবিতাকে টেনে এনে সেটার প্রশংসা করেছেন। বেশিরভাগ সমালোচকদের নাম পরশুরামের কচি সংসদের চরিত্রগুলোর মতো, এমন নাম না হলে বোধহয় বাংলা কবিতার সমালোচক হওয়া যায় না। খাজাউদ্দিন লেনিন নামের এক কবিসমালোচক লিখেছেন, লিটন বাংলা সাহিত্যের অঙ্গণে প্রপার চ্যানেলে আসেনি, সে সিঁদ কেটে ঢুকেছে, তার কবিতার ছত্রে ছত্রে সেই সিঁদকাঠির কর্কশ কর্ষণচিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন তিনি, সে এক অখদ্দে অনুপ্রবেশকারী, আর সবশেষে বাংলা সাহিত্যের অঙ্গণ থেকে লিটনকে কানে ধরে বের করে দেয়ার সুপারিশ করেছেন। ওদিকে অধ্যাপককবি রামায়ণ আজাদ এই সমালোচনার সমালোচনা করে লিখেছেন, খাজাউদ্দিন লেনিন একটা বিকৃতমস্তিষ্ক পাঁঠা, গুটি কয়েক অশ্লীল কবিতা ও একটি অপন্যাস ছাড়া কিছুই রচনা করেনি সে, আর যা-ও যৎসামান্য রচনা করেছে, পড়েনি সে মোটেও। ক্লাস সেভেনের ছেলেমেয়েরাও বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে খাজা লেনিনের চেয়ে ভালো খোঁজ রাখে। তিনি “খোজা-লেনিন”-এর মতো আকাট নির্বোধ পাগলকে এখনও প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্রে মন্তব্য ছাপানোর সুযোগ করে দেয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট সাহিত্যসম্পাদককে একদফা ভর্ৎসনা করেছেন, আর সবশেষে জানিয়েছেন, লিটনের কবিতাগুলোর কয়েকটি তার ভালো লেগেছে, যা কি না লিটনের জন্যে খুব বড় একটি পাওয়া, কারণ আশি সালের পর নিজের কবিতা ছাড়া আর কারো কবিতাই তাঁর কাছে ভালো লাগেনি। কয়েকটি কবিতা পাঠ করে তিনি অশ্বারোহণের আনন্দ পেয়েছেন, একটি উৎকৃষ্ট মঙ্গোলীয় অশ্ব যখন নিজের খেয়ালে হাঁটতে থাকে, তখন তার আরোহী যেমন আয়েশ ও তৃপ্তি বোধ করে, তারই স্বাদ তিনি চাখতে পেরেছেন লিটনের কবিতায়, কারণ লিটন নিজের কবিতাকে কবিতার মতো করে চলতে দিয়েছে, তার ওপর অযথা বোঝা চাপিয়ে তাকে গাধার মতো শ্লথ করেনি, আবার কবিতার পাছায় চাবুকের চাপড় দিয়ে তাকে খচ্চরের মতো জোরসে ছোটানোর চেষ্টাও করেনি। প্রকৌশল ছাত্রের কাছে এমন সুকৌশল তিনি আশা করেননি। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে বাংলা কবিতার ওপর তিন চারটা কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি বলে মনে হয়েছে তাঁর কাছে। সবশেষে তিনি আরেকবার লেনিনকে ধুয়ে ছেড়েছেন, নূতন করে প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হয়ে কিছু সৎ ও সঠিক লেখাপড়া করার পরামর্শ দিয়েছেন, এবং ভবিষ্যতে সংবাদপত্রের সাহিত্যপাতায় এমন কদরুচির সমালোচনা লিখলে তাকে উপর্যুপরি শায়েস্তা করার হুমকি দিয়েছেন। এ ছাড়াও মৃদুমন্দ আরিফ, দুলকি পারভিন, রামধনু মহলানবিশ আর হেকমুদ্দিন গুলবুতিয়ার লিখেছেন, প্রায় একই রকমের সমালোচনা, তবে বিভিন্ন আলোকে; যেমন মৃদুমন্দ আরিফ লিটনের কবিতায় অযথা যৌনতার নিন্দে করেছেন, স্থানে স্থানে বিভিন্ন বস্তুর ওপর নারীত্ব আরোপ করে সেগুলোর প্রতি শরীরী ভালোবাসা প্রকাশের এই প্রবণতা তাঁর কাছে মোটেও ভালো ঠ্যাকেনি, এতে করে তরুণতর কবিরা নাকি বিভ্রান্ত হতে পারেন। আবার দুলকি পারভিন জায়গামতো লিটনের যৌনতাসম্পর্কিত দ্বিধাবোধের প্রতিবাদ করেছেন, সেগুলোকে খোঁড়া ঘোড়ার সাথে তুলনা দিয়েছেন, তিনি লিটনকে সংস্কারের চৌকাঠ ডিঙিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক কথাটি লিখে ফেলে ঘোড়ার কাছ থেকে ক্রাচ কেড়ে নেবার অনুরোধ জানিয়েছেন। রামধনু মহলানবিশের কাছে লিটনের কবিতাগুলোকে বিবর্ণ বলে মনে হয়েছে, যেন কেউ ব্লিচিং পাউডার দিয়ে কেচে লিখেছে কবিতাগুলোকে, শুধু হাহাকারের ধূসর রঙ সেখানে, তিনি জীবনের নানা রঙের দিকে লিটনের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চান। আর ওদিকে হেকমুদ্দিন গুলবুতিয়ার এই নাস্তিক বেদ্বীন কবিকে একশো ঘা দোররা মারার কঠোর আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন আলেম-শায়ের-সমাজের প্রতি, ইশবাল-আবুলআলামওদুদী-গোলামমোস্তফা-ফররুখআহমদ-মিলগোঁজাহিদীর লাজওয়াব শায়েরীগুলো লিটনকে পড়ে দেখবার অনুরোধ জানিয়ে তাকে সত্যের পথে দাওয়াত দিয়েছেন। তবে লিটন অবিচল। কিছুতেই সে টলে না। তবে গ্রন্থ প্রকাশের পর সমালোচনার তোপের মুখে পড়ে সে তার দাড়িটাকে খানিকটা চাপিয়ে আনলো, সেগুলো প্রায় তার নাভি পর্যন্ত লম্বা হয়ে পড়েছিলো, সেটাকে লিটন একমুঠো দাড়ির জায়েজ চেহারা দিলো। আমরাও খানিকটা নি®কৃতি পেলাম, কারণ লিটনের দাড়িতে এমনই বতু পাঁঠার মতো বিকট গন্ধ, যা কবিদের দাড়িতে মানালেও সমাজে অপাংক্তেয়। কিছু দাড়ির বিলুপ্তিতে গন্ধটারও যদি কিছুটা শক্তিক্ষয় হয়, তবে মন্দ কী? তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলোতে উত্তরোত্তর খারাপ করে করে, থার্ড ইয়ারে শুরুতে একদিন আসামের গৌহাটিতে তরুণকবিমহাসম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে যোগ দিয়ে ফিরে এসে লিটন জানালো, এখানে আর আসামী হয়ে থাকতে চায় না সে, ইলেকট্রিক্যাল এনজিনিয়ার হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তার, কবিদের এনজিনিয়ার হওয়া মানায় না, কারণ এনজিনিয়ারগুলি সব চুর। না, চুর সে হবে না, কাজেই শীগগিরই সে বুয়েটে ইস্তফা দিয়ে একটা লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আমরা যেন তাকে ঠিক সময়ে বিজ্ঞাপন যুগিয়ে বন্ধুত্বের প্রমাণ দিই। আমরা কিছু বলি না, বিষণœ চোখে একে অন্যের দিকে তাকাই, বিজ্ঞাপন সংগ্রহের হ্যাপায় পড়তে হবে ভেবে। অবশ্য লিটন সত্যি সত্যি পড়াশোনা ছাড়ে না, একটু ঢিল দেয় মাত্র। ভোরের ক্লাসগুলো ঠিকমতো করে না, স্যাররা তাকে খুঁজতে থাকেন, কই, ঐ দাড়িওয়ালা ছেলেটা কই গ্যালো, আর একজন দাড়িওয়ালা শিক্ষক তো কোর্স থেকে পারলে তাকে নাম কেটে বিদায় করে দ্যান, সবার ধারণা খানিকটা ঈর্ষাকাতর হয়েই স্যারের এই হঠকারী সিদ্ধান্তগ্রহণ। সেশন্যালে লিটন মাঝে মাঝে আসে, প্রায়ই আসে না, ভাইভার সময় হুড়মুড় করে এসে নামকাওয়াস্তে পরীক্ষা দিয়েই প্রেসে কি পত্রিকা অফিসে ছোটে। তার সম্পাদনাধীন কবিতার পত্রিকা “হঠাৎ কবিতা যদি ঠোকরায়, বেশ তবে, মন্দ কি, ঠোকরাক” বেশ ভালোই চলতে থাকে, কিন্তু লিটনের গ্রেডশীট বি মাইনাসে জর্জরিত হতে থাকে। ৪. থার্ড ইয়ারের মাঝামাঝি এসে লিটন যখন বাংলাদেশ কবি সংসদের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত “কাব্যাধীনতা” পুরস্কারের জন্যে মনোনয়ন পেলো, তখন চারিদিকে বেশ একটা দ্বন্দ্ব দেখা দিলো। লিটনকে যারা দুচোখে দেখতে পারে না, তারা দুয়ো দুয়ো করতে লাগলো, লিটন নাকি কবি সংসদের হর্তাকর্তাদের তেল মেরে আর ঘুষ দিয়ে এই পুরস্কারের নমিনেশন খরিদ করেছে, নইলে এইসব অখাদ্য কবিতা, যার আবেদন কেবল পাগল আর নিরক্ষরদের কাছেই স্পষ্ট, লিখে কিভাবে সে এমন একটা মাল অর্জন করে? আমরা অবশ্য এ কথাটা মেনে নিতে পারি না, কারণ লিটনের ঘুষ দেয়ার মতো পয়সা নেই, আর তেল দেয়ার মতো বুদ্ধি নেই। কে জানে, হয়তো এবারের পুরস্কার দেয়ার জন্যে খাজাউদ্দিন লেনিনকে মনোনয়ন করা হয়েছিলো, তখন হয়তো অধ্যাপক রামায়ণ আজাদের মতো মুরব্বি গোছের কেউ একজন ভেটো দিয়ে লিটনের ঘাড়েই এই কাব্যাধীনতা পুরস্কারের নমিনেশন চাপিয়ে দিয়েছে। তবে একটি মাত্র কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করে কোন কবিই এ যাবৎকালে এই পুরস্কারের মনোনয়ন হস্তগত করতে পারেননি, বেশ ক’টি পত্রিকায় এ তথ্য প্রকাশিত হয়, ‘ডাল মে জরুর কুছ কালা হ্যায়’ ভঙ্গিতে। তবে লিটনের অন্তরঙ্গ কিছু সাহিত্যানুরাগী বান্ধবকেও আমরা আবিষ্কার করি, তারা পত্রিকায় পত্রাঘাত করে লিটনকে অভিনন্দন জানায়, তাদের মাঝে দুলকি পারভিনের নাম উল্লেখযোগ্য, তারা জানায় যে বাংলা সাহিত্যে লিটনের আবির্ভাবকে স্বাগত জানানোর জন্যে কাব্যাধীনতা পুরস্কারটি তাকে হস্তান্তর করার চেয়ে চমৎকার কোন উপায় তাদের মাথায় আসছে না। লিটন পুরস্কারটিকে বগলদাবা করে কবিতার দুর্গম পথে তার জিনলাগামছাড়া কলমঘোড়াকে চাবকে চাবকে ছোটাবে, এই তাদের আশা, এই তাদের আশঙ্কা। এদিকে এতবড় পুরস্কারের নমিনেশন পেয়েও লিটনের কোন ভাবান্তর নেই। সে আগের মতোই মর্জিমাফিক ক্লাসে আসে যায়, মাঝে মাঝে ক্যান্টিনে তাকে বিড়ির ধোঁয়ার আড়ালে খুঁজে পাওয়া যায়, তবে বেশির ভাগ সময়েই সে হাওয়া। তার দাড়ি এখন আবার বাড়তির দিকে। একদিন অবসরে, কেরুমত্ত অবস্থায় হাজির হয়ে লিটন আমাদের জানালো, সে একাই নমিনেশন পায়নি, আরো দুখানা কবি নমিনেশন পেয়েছে, সুতপা তফাদার আর তির্যক জামশেদ পাহলভি, তাদের কাউকে ডিঙিয়ে এই পুরস্কার বাগানো তারপক্ষে সম্ভব নয়। সুতপা তফাদার নাকি লবিইং করে দফারফা করে ছেড়েছে, আর তার ক্ষেত্রে যৌনতা নাকি শুধু কবিতায় সীমাবদ্ধ নয়, কাজেই পুরস্কার তার পক্ষে হস্তগত করাটাই স্বাভাবিক। আবার তির্যক জামশেদ পাহলভি নাকি তির্যকভাবেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে সুতপা তফাদারকে, কিভাবে এই পুরস্কার তার হাত থেকে সুতপা ছিনিয়ে নেয় তা সে দেখে নেবে, কারণ তার নাকি পলিটিক্যাল ব্যাকআপ খুব ভালো, সমাজতান্ত্রিক মোল্লাবাদ-এর পক্ষে সে তার কবিতায় এককালে অনেক চেঁচামেচি করেছে, আর আরবিফারসিউর্দুপশতু ইত্যাদি জায়েজ ভাষাকে সে নিজের সমাজবাদী কবিতাগুলোয় যথাযথভাবে এস্তেমাল করতে পেরেছে, কাজেই বর্তমান সরকারের আমলে পুরস্কারটা তার হাতে যাওয়াটা স্বাভাবিক, যদি সুতপা তফাদারের পদ্ধতি কাজে না লেগে থাকে। তবে লিটনকে এরা কেউ হিসাবে ধরছে না। খাজাউদ্দিন লেনিন নাকি পত্রিকায় আরেকটা অনলবর্ষী সমালোচনা লিখেছে, লিটনের মতো একটা সিঁদেল কবিকে কাব্যাধীনতা পুরস্কারের জন্যে মনোনীত করার জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি সেখানে শ্লেষপূর্ণ দুয়োবাদ জানানো হয়েছে, সেইসাথে কাব্যাধীনতা পুরস্কার যে সাংস্কৃতিক অঙ্গণের একটি কলুষিত কলঙ্ক, একটি পুরোপুরি রাজনৈতিক-লবিতান্ত্রিক-সুপারিশজর্জরিত প্রহসনমাত্র, তা নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ হাজির করেছেন তিনি। লেনিন গবেষণা করে দেখিয়েছেন, বিগত যুগের কাব্যাধীনতা পুরস্কারের জন্যে মনোনীত, এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই চুর, বাটপার এবং খাইষ্টা কিসিমের লোক। কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, যেমন বছর আটেক আগে তাঁকেও একবার মনোনীত করা হয়েছিলো, কিন্তু আফসোস, তাঁর এই নাজুক হাত কবিতা লেখায় যতোটা দক্ষ, তেলমারায় ততটা নয়, তাই কোন এক অতিশয় পটু বাটপার তৈলমর্দক তাঁকে টপকে সেবার পুরস্কার পকেটে পুরেছিলো, সেইসাথে একজন খাঁটি মালকে পুরস্কৃত করে কাব্যাধীনতা পুরস্কারের সাথে জড়িয়ে থাকা কলঙ্কমোচনের শেষ সুযোগও কর্তৃপক্ষ হাতছাড়া করেছিলো। আর পাশাপাশি তিনি দেশের সচেতন মোল্লাগোষ্ঠীকে অনুরোধ করেছেন লিটনকে মুরতাদ ঘোষণা করার জন্যে। ওদিকে অধ্যাপক রামায়ণ আজাদ তিন মনোনীত প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, কিন্ত এবার তাঁর পক্ষপাত সুতপা তফাদারের প্রতিই বেশি, কারণটা আমরা আঁচ করতে পারি, আর খাজাউদ্দিন লেনিনকে তিনি এবার “বোঁচকামারা” উপাধি দান করে দস্তুরমতো শাসিয়েছেন, এসব প্রলাপ লিখে পত্রিকার মূল্যবান জায়গা নষ্ট করার অপতৎপরতার জন্যে, সেইসাথে খাজা লেনিন কবে কোন কবির কোন কবিতা থেকে দাঁড়িকমাসমেত পংক্তি চুরি করেছে, তার একটা লিস্টি ছাপিয়ে দিয়েছেন। লিটন দাড়ি হাওয়ায় দুলিয়ে জানালো, এসব নিয়ে সে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না, যদিও দাড়ির জন্যে ইদানীং চাপা খুব ঘামে, তার পত্রিকার কাজ নিয়েই সে ভয়ানক ব্যস্ত, তাছাড়া সামনে টার্ম ফাইন্যাল। এবার পরীক্ষায় তার প্রিপারেশন খারাপ, সে নকল করার ধান্ধায় আছে। খাজাউদ্দিন লেনিনের সমালোচনা পড়েই এই আইডিয়া এসেছে তার মাথায়। কবিতায় না হলেও টার্ম ফাইন্যালে সিঁদ কাটার একটা উদ্যোগ সে নিয়ে দেখতে চায়। ৫. পরীক্ষা যেদিন শুরু হলো, সেদিন আমাদের সবার বিষম খাওয়ার যোগাড়। লিটনের সীটে একটা অপরিচিত ছেলে এসে বসলো, পরনে চাপা গেঞ্জি আর দোনলা প্যান্ট, হিলহিলে শুকনো চেহারা, গাঁজাখোরের মতো ভাঙা চোয়াল, চোখ দুটো লাল। লিটন কি নকল করার সাহস না পেয়ে বেমালুম আরেকটা ছেলেকেই নিজের জায়গায় ফিট করে দিয়ে গেলো? আমরা নূতন ছেলেটাকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহসও পাই না। এরকম গুলিখোর হিরোইনচিদের পকেটে নাকি প্রায়ই ক্ষুরটুর থাকে, কখন বের করে গলায় পোঁচ বসিয়ে দেয় কে জানে। কিন্তু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভারি হুঁশিয়ার। পরীক্ষা শুরুর আগেই একজন এসে ছেলেটাকে খুঁটিয়ে দেখেন, আরেকজন এসে ছোকরার কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চান, ছেলেটাও ভারি বুক ঠুকে একটা লাল রঙের আইডি কার্ড তাঁর হাতে ধরিয়ে দেয়। স্যার সেটা এক নজর দেখে তর্ক করতে থাকেন। ‘এটা তোমার আইডি কার্ড, এই বলতে চাও তুমি?’ ছেলেটা মাথা নাড়ে। ‘এই আইডি কার্ডে যে ছবিটা আছে, সেটা তোমার?’ ছেলেটা আবারো মাথা নাড়ে। ‘তাহলে তোমার মোচ কই, কিংবা তোমার দাড়ি কই?’ ছেলেটা ভাঙা গলায় বলে, ‘স্যার, ফালায় দিছি।’ এবং গলার স্বর শুনে আমরা চিনে ফেলি, এ আমাদেরই লিটন। এ সেই লিটন, যার মোচ আর দাড়ি এখন আর নেই। ক্লাসের মধ্যে একটা হুল্লোড় ওঠে, কিন্তু লিটন ফিরেও তাকায় না। স্যার খুশি মনে তার আইডি ফিরিয়ে দ্যান, লিটন ঘাড় গোঁজ করে বসে থাকে। আমাদের মনে কৌতূহল ফেটে পড়ে। কিন্তু পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়, আমরা সেই বুকফাটা কৌতূহল চেপে রেখে ঘ্যাঁসঘ্যাঁস করে লিখতে থাকি। আমাদের পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই লিটন খাতা জমা দিয়ে গটগটিয়ে বেরিয়ে যায়। পরীক্ষা শেষ করে আমরা লিটনকে আঁতিপাতি করে খুঁজি, কিন্তু তাকে দেখি না। পরের পরীক্ষাগুলোও লিটন এমনিভাবে এড়িয়ে এড়িয়ে পার করে। একটু দেরিতে আসে, একটু জলদি বেরিয়ে যায়। আমরা কিছুতেই ওর টিকিটার নাগাল পাই না। ওকে যে মোচ আর দাড়ি ছাড়া অবস্থায় একটু ভালো করে দেখবো, সে উপায়ও নেই, আর ওর নতুন চেহারাটা এমন বিদঘুটে যে রাস্তাঘাটে দেখলে চিনতে পারবো না। কিন্তু শেষ পরীক্ষার দিন লিটন আমাদের কাছে ধরা পড়ে যায়। যদিও সে প্রথমটায় কাবাডি খেলোয়াড়ের মতো ছুট লাগিয়েছিলো, কিন্তু আমরা ওকে পাকড়ে ফেলে তিনজন মিলে টেনে হিঁচড়ে ক্যান্টিনে নিয়ে যাই। প্রথমটায় ফোঁস ফোঁস করছিলো সে, ‘ছাইড়া দে আমারে’ গোছের কথাবার্তা বলছিলো, কিন্তু ক্যান্টিনে লিটন কয়েক কাপ চা আর আধা প্যাকেট সিগারেট খেয়ে ধাতস্থ হয়, তারপর খবরটা ফাঁস করে। কাব্যাধীনতা পুরস্কার সে পায়নি, সুতপা তফাদার সেটাকে বাগিয়েছে। আমরা একটু চমকাই, পরীক্ষার ডামাডোলে এসব খবর রাখতে পারিনি কেউ। ‘তুই এই দুঃখে মোচদাড়ি ফেলে দিলি?’ শিবলি গালভর্তি দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে জিজ্ঞেস করে। পরীক্ষার আগে রাত সরস্বতীসাধনার ফল হিসেবে সবার মুখে এখন দাড়িপ্রসাদ, কেবল লিটন বাদে। সেই লিটন, যার মুখে ক্লাস এইট থেকে দাড়ি, যখন আমাদের মুখে দাড়ির কোন চিহ্নও ছিলো না। দাড়ির ব্যাপারে আমাদের গুরু, সেই আদি দাড়িবান, আজ দাড়িকে বিসর্জন দিয়েছে সামান্য একটা পুরস্কার ফসকানোর জন্যে, সামান্যতর একটি নারীর কাছে পরাজিত হওয়ার ক্ষোভে? লিটন মাথা নাড়ে। না। ‘তাহলে?’ আমরা চমকাই। লিটন হাতের তেলোয় চোখ মুছে বিড়িতে কষে টান দেয়, তারপর ওর দাড়ির পতনের ইতিবৃত্ত বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে। পরীক্ষা শুরুর দুদিন আগে দুপুরে লিটনের বাসায় ফোন আসে। বাঙলার কবিরা সাধারণত দুপুরের দিকেই ঘুম থেকে ওঠে, তাই মাহেন্দ্রক্ষণেই করা হয়েছে ফোনটা। লিটন ঘুমভাঙা গলায় ফোন ধরে। ভদ্রতাসূচক হ্যালোৎকার শেষ হবার পর তাকে জানানো হয়, কাব্যাধীনতা পুরস্কারের জন্যে তাকেই চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যেয় শিল্পকলা একাডেমীতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, লিটন যাতে সেখানে একটু সাজসজ্জা করে ঠিক সন্ধ্যে ছ’টায় উপস্থিত থাকে, বিশেষ করে সুগন্ধিটুগন্ধি যাতে ভালো করে মাখে। কবিদের গায়ে একটু আধটু বদগন্ধ থাকেই, কিন্তু মাননীয় পরিবেশমন্ত্রী আজ প্রধান অতিথি, কাজেই শরীরে কোন আপত্তিকর গন্ধ থাকা চলবে না। লিটন অসময়ে ঘুম ভাঙানোর জন্যে ব্যাটাদের ওপর বিরক্ত হয়, কিন্তু পুরস্কার যখন দিয়েই ফেলেছে, তখন সেটা আনতে না যাওয়াটা অভদ্রতা। কাজেই সে আরো ঘন্টাখানেক বিছানায় গড়িয়ে নিয়ে গোসল করতে ঢোকে। ঘন্টাখানেক গোসল করে শরীর থেকে গাঁজা, তামাক, কেরু ও ময়লার গন্ধ যখন হালাল সাবান ঘষে প্রায় দূর করে ফেলেছে, তখনই ওর খেয়াল হয় দাড়ির কথা। কি ভেবে দাড়িতে শ্যাম্পু করতে থাকে সে। শ্যাম্পু করতে করতে ওর খেয়াল হয়, ওর দাড়ি প্রায় কোমর পর্যন্ত নেমে এসেছে। তখন লিটনের মনে হয়, একটু ছেঁটে যাওয়া উচিত, নইলে পরিবেশমন্ত্রী মাইন্ড করতে পারেন। এই ভেবে সে দাড়িটাকে ছাঁটতে ছাঁটতে আবার চাপদাড়ি বানিয়ে ফেলে। দাড়ির এই হ্রস্বীকরণের পর, ততক্ষণে ঘন্টাখানেক কেটে গেছে, লিটন আয়নায় তাকিয়ে দেখে, চাপদাড়ির সাথে তার ঝোলা গোঁফ মোটেও মানাচ্ছে না। তখন সে তার জীবনের সেরা ভুলটা করে, মোচে কাঁচি চালায়। সেই ক্লাস টেনে থাকতে শেষ এই কাজ নিজের হাতে করেছিলো লিটন, তারপর কত জল ঘোলা হয়েছে বুড়িগঙ্গার দখল করা জমিতে, লিটন নিজের হাতে মোচে কাঁচি ছোঁয়ায়নি। এতদিনের অনভ্যাসে তার হাত এদিক ওদিক হয়ে যেতে থাকে। ক্রমান্বয়ে তার ঝোলা গোঁফ পরিণত হয় পাঠান মোচে, সেটার শুঁড়দুটোকে সাইজ করতে গিয়ে তা পরিণত হয় বাঙালি গোঁফে, শুধু তাই না, তা বামে ডানে অসম পরিমাণে রয়ে গিয়ে তার চেহারাটাকে ভারসাম্যহীন করে তোলে। ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে গিয়ে বান্দরের রুটি ভাগের মতো সেই বাঙালি মোচ পরিণত হয় মারাঠী হাফ-মোচে। তবুও ইমব্যালান্স দূর হচ্ছে না দেখে মরিয়া হয়ে লিটন আবারো কাঁচি চালায়, এবং একসময় নিজের মুখে হিটলারের বাটারফ্লাই অর্জন করে ছাড়ে। তারপর লিটন আবার ভালো করে খুঁটিয়ে দ্যাখে, চাপদাড়ির সাথে বাটারফ্লাই গোঁফে তাকে দেখাচ্ছে স্থানীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী হিটলার মজনুর মতো। মরিয়া হয়ে লিটন তার মোচকে পুরোপুরি কামিয়ে ফ্যালে, এবং আবিষ্কার করে, যে আব্রাহাম লিংকনকে সে কলেজজীবনে নিগৃহার আঁধারে ছুঁড়ে ফেলেছিলো, সেই আব্রাহাম লিংকনের মতো শুন্যগোঁফদাড়িমাত্র অবস্থা নিয়ে সে বাথরুমে গামছা পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। লিংকনের মতো খানদানী চেহারা থাকলেও একটা কথা ছিলো, গাঁজা আর কেরু খেয়ে খেয়ে তার চেহারাটা হয়েছে চিমসে চামচিকার মতো, শুধু দাড়িতে তাকে দেখাচ্ছে সম্প্রতি নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া একজন হাজী সাংসদের মতো। কাজেই বেপরোয়া লিটন সেই আশৈশবলালিত কষ্টার্জিত চাপদাড়িও সাঁ করে কামিয়ে ফ্যালে। অবশেষে দেখা যায়, তার বিরান চোয়ালে এখানে ওখানে কয়েকটা স্টিকিং প্লাস্টার তার এককালের জাঁদরেল গোঁফদাড়ির ইতিহাসের সাক্ষ্য দিচ্ছে। শুধু তাই না, তখন বাজে বিকেল পাঁচটা। যাই হোক, তাড়াহুড়ো করে শেভ করে বেরিয়ে কোনমতে সবচেয়ে পরিষ্কার একটা আধাময়লা পাঞ্জাবীতে ভালো করে ছোট ভাইয়ের পারফিউম ছিটিয়ে, আর কষে বড় ভাইয়ের ডিওডোরেন্ট গায়ে মেখে লিটন যেই না ঘর ছেড়ে বেরিয়েছে, অমনি পড়েছে তার ভাবীর সামনাসামনি। ভাবী “চোও, চোও” বলে চিৎকার করতে করতে ফিট হয়ে যায়, এবং লিটনের দুটো মুশকো ভাই, একটা বড় একটা ছোট, যথাক্রমে ডিওডোরেন্ট ও পারফিউমের মালিক, কোনরকম কথাবার্তার তোয়াক্কা না করে তাকে ইতস্তত মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে লিটন যখন নিজেকে লিটন হিসেবে আবার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, তখন বাজে পৌনে ছয়টা, আর কিলঘুঁষি খেয়ে লিটনের নিচের চোয়ালের দুটো দাঁত নড়ে গেছে, বাম চোখে কালসিটে। লিটনের বড় ভাই ছোট ভাইকে মিষ্টি আনতে পাঠাচ্ছিলেন, এতবড় একটা শুভ ঘটনা সেলিব্রেট করার জন্যে, লিটন গোসল করেছে, এবং এই উশকোখুশকো কবিজীবনের ইতি ঘটিয়ে সেজেগুজে বাইরে বেরোচ্ছে, এর চেয়ে আনন্দের আর কীই বা থাকতে পারে? কিন্তু লিটন কোনমতে এরকম গুন্ডাপ্রকৃতির ভাইদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে বাইরে বেরিয়েছে ট্যাক্সিক্যাব ধরার জন্যে। ভাগ্যক্রমে লিটন ট্যাক্সিক্যাব পেয়ে যায় মাত্র মিনিট বিশেক খোঁজাখুঁজির পর। ছয়টা বিশে যখন সে শিল্পকলা একাডেমীতে পৌঁছেছে, তখনও প্রধান অতিথি মাননীয় পরিবেশমন্ত্রী আর বিশেষ অতিথি মাননীয় শিল্পপতি আক্কাস আলি মৃধা এসে পৌঁছেননি। আয়োজকরা প্রথম দর্শনে লিটনকে চিনতে পারেননি, লিটন বহুকষ্টে নিজের পরিচয়কে পুনর্প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে, তার জন্যে এমনকি নিজের লেখা একটা বাহান্ন লাইনের কবিতা মুখস্থ বলতে হয়েছে তাকে। সুতপা তফাদার সেখানটায় উপস্থিত ছিলো, সে লিটনকে কোন এক বেঞ্জামিন দিগদর্শী হালদার নামক চাটগাঁইয়া কবি হিসেবে প্রমাণ করার জন্যে একটা বিশ্রী প্রোপাগান্ডা শুরু করেছিলো, কিন্তু সেই কবি আবার আয়োজকদের একজনের বাড়িতে প্রাইভেট টিউটর হিসেবে যাতায়াত করে বলে লিটন অল্পের জন্যে বেঁচে গেছে। তির্যক জামশেদ পাহলভি অনুষ্ঠানে ছিলো না, তাকে কয়েকদিন আগে যৌথবাহিনী বিনা পারমিটে এক কেস বিয়ার বহন করা এবং একটা বিয়ার অর্ধেকটা খেয়ে কৌটোটাকে যৌথবাহিনীর ভ্যানের ভেতর ছুঁড়ে ফেলার অপরাধে তুলে নিয়ে গিয়ে আচ্ছামতো রগড়ে দিয়েছে। আগামী একমাস সে আদৌ কোথাও নিজের উদ্যোগে চলাফেরা করতে পারবে বলে মনে হয় না। আর এমন বিতর্কিত ব্যক্তিত্বের অধিকারী কাউকে পুরস্কৃত করে কবি সংসদ যৌথ বাহিনীর কোপানলে পড়তে মোটেও ইচ্ছুক নয়, তির্যক জামশেদ পাহলভির যতোই ব্যাকিং থাকুক না কেন। আর তার ব্যাকিং সম্পর্কেও জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন কবি সংসদের কিছু মাননীয় হোমড়াচোমড়া কর্তাব্যক্তি, কারণ অতোই যদি ব্যাকিং থাকবে, সেনাপুলিশের হাতে এমন কচুয়া ধোলাই খেতে হলো কেন তাকে? যাই হোক, সোয়া সাতটায় প্রধান ও বিশেষ অতিথিরা এসে পৌঁছানোর পর ভ্যাজাল শুরু হয়। মঞ্চে পর্দা তোলার আগেই লিটন আর সুতপা তফাদারের সাথে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথির পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, কিভাবে তারা তেলতেলে হাসিমুখে করমর্দন করবে এ নিয়ে একটা হালকা রিহার্সাল দেয়া হয়, এবং মাননীয় অতিথিদের জানানো হয় যে লিটনকেই এ বছর কাব্যাধীনতা পুরস্কারের জন্যে নির্বাচন করা হয়েছে। প্রধান অতিথি তখন জানতে চান, লিটন কোন পাট্টি করে। লিটন জানায় যে শব্দটা পাট্টি নয়, পার্টি, আর সে কোন পার্টিই করে না, পার্টি ব্যাপারটা তার আদৌ পছন্দ না। তখন সুতপা তফাদার, যে অত্যন্ত স্বল্পায়তন আর সূক্ষ্ম কবিতা এবং শাড়ি পড়ে অভ্যস্ত, লাফিয়ে উঠে প্রথান অতিথিকে জানায় যে পার্টি তার খুব ভালো লাগে, সে প্রায়ই পার্টিতে যায়, এবং তার আপশোষ হচ্ছে, কেন কোন পার্টিতে সে এখনও মাননীয় প্রধান ও বিশেষ অতিথির দেখা পেয়ে ধন্য হতে পারেনি। অতিথিদ্বয় তখন এই উত্তরে বিশেষ পুলকিত হন, তারা সুতপা তফাদারের সাথে আরো একদফা উষ্ণ করমর্দন করেন, এবং শুধু কর নিয়েই তারা সন্তুষ্ট হন না, পরবর্তীতে করোত্তর কার্যকলাপেও বিশেষ আগ্রহী মনে হয় তাঁদের, সর্বোপরি নিজেদের মধ্যে মিনিটখানেক ফিসফাস করে আয়োজকদের জানান, এই অনুষ্ঠানে তারা থাকবেন, কেবল এবং কেবল যদি মিস সুতপা তফাদারকেই আজকে কাব্যাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়। আর আয়োজকরা যদি লিটনের মতো একটা বেআদব এবং বেদ্বীন, যার কিনা সামান্য দাড়ি পর্যন্ত নাই, তাকেই পুরস্কার দেয়ার ব্যাপারে গোঁ ধরে বসে থাকেন, তাহলে তাঁরা এই দন্ডেই বেরিয়ে যাবেন, হ্যাঁ, প্রধান-বিশেষ-সুতপা এই তিনজনেই বেরিয়ে যাবেন, আর কবি সংসদ তাদের ভবিষ্যত কার্যক্রমকে এখনই খোদা হাফেজ আলহামদুলিল্লা জানাতে পারে, কারণ বেরিয়ে গিয়ে তাঁরা প্রথমেই যে কাজটা করবেন, সেটা হচ্ছে কবি সংসদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। এখন যৌথ বাহিনীর যুগ, পান থেকে চুন খসলেই জর্দা মারার আইন হয়েছে, কাজেই কবি সংসদ যাতে নিজেদের ভালোমন্দের কথা খেয়ালে রেখে তাঁদের প্রস্তাব মেনে নেন। লিটন যখন এই হুমকি শুনে উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে জানতে চায় দাড়ির সাথে পুরস্কারের কী সম্পর্ক, তখন বিশেষ অতিথি ধমকে ওঠেন, জানান যে দাড়ি রাখা সুন্নত, দাড়ি যার নাই, দ্বীনের সাথেও তার কোন কুটুম্বিতা নাই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো মালাউন কবি পর্যন্ত দাড়ি রেখেছে, আর সেইখানে কোন সাহসে লিটন দাড়ি নিয়ে তর্ক করতে আসে? এরকম একটা নাস্তিক মানুষকে তাঁরা পুরস্কার পেতে দিতে পারেন না। লিটন তখন জানতে চায়, সুতপা তফাদারেরও তো দাড়ি নাই, তাকে কেন পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। তখন প্রধান অতিথি জানান, সুতপা তফাদারের মাশাল্লা অনেক গুণ আছে, দাড়ি নাই তো কী হয়েছে, দাড়ি নাই বলেই তাঁকে দেয়া হয়েছে, তাছাড়া তাঁদের ম্যাডাম নারীদের পুরস্কার দেয়ার ব্যাপারে তাঁদের সবসময় উৎসাহপরামর্শআদেশ দিয়ে থাকেন, কারণ তিনি নিজেও একজন নারী। নারী কবিদের কাব্যাধীনতা পুরস্কার দেয়া হবে, এই ছিলো তাঁদের শহীদ নেতার স্বপ্ন। তারপর আয়োজকদের সাথে কথা বলে লিটন যখন বুঝতে পারে যে আজ এই দাড়িহীনতার জন্যেই তার প্রাপ্য সম্মান কেড়ে নিয়ে একজন লবিবাজ নির্লজ্জ মহিলাকে পুরস্কার দেয়া হবে, তখন সে ভ্যাঁ করে কেঁদে ফ্যালে, এবং হাত পা ছুঁড়ে কাঁদতে কাঁদতে স্টেজ থেকে নেমে মিলনায়তন থেকে বেরিয়ে ঘন্টাখানেক খোঁজাখুঁিজ করে শেষ পর্যন্ত সিএনজি স্কুটারে চড়ে বাড়ি ফিরে আসে। এই এক ঘন্টা সে ভাবতে ভাবতে সিদ্ধান্তে আসে, আর পণ করে, আজ থেকে আর দাড়ি সে রাখবে না, কবিতাও লিখবে না। দাড়ি ছাড়া কবি হওয়া সম্ভব, লবি ছাড়া কবি হওয়া ভারি মুশকিল। আজ থেকে দাড়ি, কবিতা, লবিতা  সব বাদ। বাড়ি ফেরার পর থেকে বাকি সময়টা লিটন টার্ম ফাইন্যালের জন্যে ফাটিয়ে পড়াশোনা করেছে। ৬. আমার গুম হয়ে বসে এই কাহিনী শুনি। সেই স্কুল আর কলেজে লিটনের দাড়ি নিয়ে সংগ্রামের দৃশ্য আমাদের চোখে ভাসে। বেচারা। কবিতা আর দাড়ির পেছনে কতো পরিশ্রমই না করেছিলো লিটন। আজ এভাবে তাকে একসাথে সবকিছু খোয়াতে হলো। আমরা লিটনের পরবর্তী লক্ষ্য নিয়ে ভাবি। কী করবে সে এখন? জানতে চাই আমরা। লিটন জানায়, সে তার পত্রিকা, “হঠাৎ কবিতা যদি ঠোকরায়, বেশ তবে, মন্দ কি, ঠোকরাক”-এর সম্পাদনার ভার সেদিন খাজাউদ্দিন লেনিনকে উপহার দিয়ে এসেছে। লোকটা ধান্দাবাজ হলেও একেবারে অকৃতজ্ঞ নয়, উপহার পাওয়ার পরদিনই সে সুতপা তফাদারকে নিয়ে একটি ঝাঁঝালো সমালোচনা কলাম লিখে পাঠিয়েছে কাগজে। অবশ্য অধ্যাপক রামায়ণ আজাদ যথারীতি তার প্রতিবাদে আরেকখানা কলাম লিখেছেন, সেখানে একজন কবির কবিতায় যৌনাবেদনের ওপর বেশি জোর দেয়া, আর কবির নিজস্ব যৌনাবেদনকে অবজ্ঞা করা যে কতবড়ো মূর্খামি, তা বিশদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কাব্যাধীনতা পুরস্কার তো শুধু কবিতা দেখেই দেয়া হবে না, কবির নিজস্ব আবেদনও সেই পুরস্কার প্রাপ্তির জন্যে বিচারকদের মানদন্ডে যাচাইকৃত হতে হবে। এরপর বিচারকদের মান, দন্ড ও মানদন্ড সম্পর্কে অধ্যাপক আজাদ একটি মনোজ্ঞ প্রবন্ধ লিখেছেন। আমি জানতে চাই, ‘তাহলে, কী করবি এখন?’ লিটন বিড়িটা শেষ করে এক চুমুকে ঠান্ডা চা গলায় ঢেলে ততোধিক ঠান্ডা গলায় বলে, ‘আগে যা করতাম। সামনে ইলেকশন শুরু হচ্ছে। দেখি পাড়ার বড় ভাইদের সাথে যোগাযোগ করে। আর, এখন থেকে পাট্টি করবো ঠিক করেছি। এই ছুটির মধ্যেই ব্যবস্থা করে ফেলবো, দোয়া করিস।’ এই বলে গটগট করে বেরিয়ে যায় সে ক্যান্টিন ছেড়ে। আমরা বুঝলাম, লিটন আবার কামানো শুরু করবে। দাড়ি আর টাকা, এ দুটোর একটা কামানো বন্ধ করলে বাকিটাও আপনাআপনি কামানো বন্ধ হয়ে যায়। আবার যখন কামাচ্ছে লিটন, এবার কামাতেই থাকবে, আর কামাই করবে না।",False mk,"সেনাবাহিনী মোতায়েনে জনমনে স্বস্তি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে ২৬ ডিসেম্বর থেকে মাঠে নেমেছে। এদিন থেকেই সেনা সদস্যরা সারাদেশে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। যে ৫ জেলার সবকটি আসনে ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, সেগুলো বাদে বাকি ৫৯টি জেলায় সেনাবাহিনী তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনী মাঠপর্যায়ে অবস্থান করবে। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে ৯ জানুয়ারির পরও সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের দায়িত্ব পালন করবে।প্রতি জেলায় সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটিলিয়ন অর্থাৎ ৭৪০ জন সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, প্রতি জেলায় সেনাবাহিনীর ৮০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। সে হিসেবে সারাদেশে সেনা মোতায়েন হয়েছে ৪৭ হাজার ২০০ জন।প্রতি জেলায় ৮০০ হিসেবে সারাদেশে প্রায় ৫০ হাজার সেনা সদস্য মোতায়েন করায় জনমনে স্বস্তির সুবাতাস বইছে। তারা মনে করছে ২৫ নভেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত চক্র নির্বাচন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য যে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল; সেনা মোতায়েনের ফলে সেই পরিস্থিতির অবসান ঘটবে। এটা মানুষ মনে করছে আগের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে। এর আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, সেনাবাহিনী নামার আগ পর্যন্ত নির্বাচনি মাঠে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল, পেশীশক্তির ব্যবহার ছিল, কালোটাকার দৌরাত্ম ছিল, সংখ্যালঘুদের প্রতি হুমকি ছিল, ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধাপ্রদান ছিল এবং প্রার্থীদের প্রাণনাশের হুমকি ছিল। কিন্তু এবারকার মতো নির্বাচনের কয়েকদিন আগে যেই না সেনাবাহিনী নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের জন্য মাঠে নেমেছে ওমনি সব হুমকি, অস্ত্রের ব্যবহারসহ যাবতীয় নেতিবাচক কর্মকা- ভোজভাজির মতো নির্বাচনি মাঠ থেকে উধাও হয়ে গেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় ’৯০-এর পর থেকে অনুষ্ঠিত সবগুলো নির্বাচন হয়েছে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ। মানুষ নিশ্চিন্তে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। ’৯০-এর আগে যেভাবে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও ভোটের ফল উল্টে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যেত। নির্বাচনি দায়িত্বে সেনাবাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় এখন আর এসব উপসর্গ কল্পনা করা যায় না।মানুষ এ জন্যই স্বস্তি পাচ্ছে। কারণ ইতোমধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে ভোটাররা তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে হয়ে পড়েছিল শঙ্কিত। অনেকে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু ভোটাররা যখন জানতে পেরেছে নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ও ভোটাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে তখনই ভোটাররা তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ঢাকা-১৮ আসনের একজন ভোটার জসিম উদ্দিনের কথা। তিনি সাপ্তাহিক স্বদেশ খবর-কে বলেছেন, তাঁর পরিবারের মোট ভোট ৫টি। ভোট প্রদান গণতান্ত্রিক অধিকার হওয়ায় তাঁর পরিবারের সিদ্ধান্ত ছিল ৫ জানুয়ারি তারা ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন। কিন্তু গত ১ মাস অরাজক পরিস্থিতি দেখে তাঁর পরিবার জীবনের নিরাপত্তার খাতিরে সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছিলেন। কিন্তু যখন শুনলেন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে অন্যান্যদের সঙ্গে সেনাবাহিনীও থাকবে তখনই তিনি ও তাঁর পরিবার সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছেন। তারা ৫ জানুয়ারি উত্তরা হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবেন। জসিম উদ্দিন আরো বলেন, সেনাবাহিনীর পাওয়ারই অন্যরকম। দুর্বৃত্তরা ২০০ পুলিশ দেখে যতটা না ভয় পায় ২ জন সেনা সদস্য দেখে তার চেয়ে বেশি ভয় পায়। একটা কেন্দ্রে ৫ জন সেনা সদস্যের উপস্থিতিই যথেষ্ট। সব ঠা-া। নির্বাচন হয় শান্তিপূর্ণ এবং ভোটাররা ফেলতে পারে স্বস্তির নিঃশ্বাস।সেনাবাহিনী ২৬ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে মাঠে নামলেও শীতকালীন মহড়ার অংশ হিসেবে বিভিন্ন জেলার মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বেশ কদিন ধরেই অবস্থান গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছে। সেনাবাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে ২২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর বিরোধী দলের ডাকা অবরোধের মধ্যেও মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘœ রাখতে সেনা সদস্যরা পুলিশ ও র‌্যাবকে সহায়তা করেছে। শীতকালীন মহড়ার অংশ হিসেবে সেনা সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করায় নিজেদের যান চলাচলের স্বার্থেই তারা অনেক এলাকায় মহাসড়কে যান নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছেন। সেনা সদস্যরা ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও সাইবোর্ড এলাকায় টহল দিয়েছেন। এসব এলাকায় সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে যান চলাচল নির্বিঘœ রাখতে পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি সেনা সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২৩ ডিসেম্বর সকালে ফেনীর মহিপাল বাস টার্মিনাল থেকে সেনা সদস্যদের সহায়তায় ঢাকার উদ্দেশে কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায়। সেনা সদস্যদের সহায়তায় এদিন মহাসড়কে পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক চলাচলও বাড়ে। এছাড়া সেনাবাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় কুমিল্লা থেকে ঢাকা ও সিলেট রুটে বিআরটিসির বাস চলাচল করে। এর বাইরে অনেক পণ্যবাহী পরিবহনও চলাচল করে। ঢাকা-বগুড়া ও বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে সেনাবাহিনীর সহায়তায় দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করেছে। পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান ও আন্তঃজেলা ট্রাকও মহাসড়কে নির্বিঘেœ চলাচল করেছে সেনা সদস্যদের সহযোগিতায়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকরা সাপ্তাহিক স্বদেশ খবর-কে জানিয়েছেন, সেনা সদস্যরা অফিসিয়ালি নয় বরং শীতকালীন মহড়ায় অবস্থানকালে সাধারণ মানুষের সহযোগিতার জন্য মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে সহযোগিতা করেছে।সেনাবাহিনীর এই ভূমিকা মানুষের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পেয়েছে। শীতকালীন মহড়ার কারণেই হোক বা দেশের প্রতি দায়িত্ব পালনের কারণেই হোক অবরোধের মধ্যেও সেনাবাহিনী মহাসড়কে যাত্রীবাহী দূরপাল্লার বাস ও পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান চলাচলে যেভাবে সহায়তা করেছে তাতে স্বস্তির সুবাতাস বইয়ে গেছে পরিবহন মালিক, চালক, শ্রমিক ও যাত্রীদের মাঝে। এ প্রসঙ্গে চাঁদপুরের হাজিগঞ্জের বাসিন্দা মাহমুদুর বাসার জানান, চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে তিনি অবরোধে আটকা পড়েন। ২২ ডিসেম্বর পুলিশ-র‌্যাবের সহায়তায় তিনি সাহস করে চাঁদপুরগামী একটি বাসে উঠেন। তাঁর মনে শঙ্কা ছিল কাঁচপুরের পরে মহাসড়কে তিনি না কোন বিপদের মুখে পড়েন। কিন্তু তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন, তাকে বহন করা বাসটি নির্বিঘেœই এগিয়ে চলছে। কোথায়ও কোনো ব্যারিকেড নেই, রাস্তায় গাছ ফালানো নেইÑ সবকিছুই স্বাভাবিক। মাহমুদুর বাসার মনে করেন সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়ার কারণে মাহসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সেনা সদস্যদের টহলের কারণেই সড়ক-মহাসড়ক এমন নির্বিঘœ রয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সরকার যদি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানের চলাচল নির্বিঘœ করার জন্য ডিসেম্বরের শুরু থেকেই সেনা মোতায়েন করতো তাহলে বিদেশে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি অব্যাহত থাকতো। অর্থনীতি নাজুক হওয়ার ঝুঁকি থাকতো না।২৬ ডিসেম্বর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী নিজ নির্বাচনি এলাকা টুঙ্গিপাড়া, ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও সদরপুরে পৃথক পৃথক নির্বাচনি জনসভায় ভাষণ দেন। ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়ায় আসার পথে প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সদরপুর ও মোকসেদপুরে পৃথক পৃথক জনসভায় বক্তব্য রাখেন।প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি জনসভায় মানুষের ঢল লক্ষ্য করা যায়। মানুষ নির্বিঘেœ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব জনসভায় অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি জনসভায় পুরুষ ভোটারদের পাশাপাশি নারী ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্যণীয়। এসব জনসভায় আসা ভোটারদের চোখে-মুখে ছিল স্বস্তির ছাপ। প্রধানমন্ত্রীর টুঙ্গিপাড়ার জনসভায় আসা পরিমল বিশ্বাস ‘স্বদেশ খবর’ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভা হলেও এই জনসভায় আসতে দুই দিন আগেও আমার মধ্যে অস্বস্তি কাজ করেছিল। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত থেকেই নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী মাঠে নামায় আমার সে অস্বস্তি কেটে গেছে।’ শুধু পরিমল বিশ্বাসই নন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আসা লাখ লাখ মানুষের মধ্যেই একই ধরণের স্বস্তি কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর একই জনসভায় আসা ফাহমিদা আক্তার, তনু খন্দকার, রিতা ভৌমিক, আকলিমা, সুফিয়া খাতুন চোখেমুখে পরিতৃপ্তির ছাপ নিয়ে বলেন, ‘সেনাবাহিনী মাঠে নামায় আমাদের সব আতঙ্ক কেটে গেছে। আমরা কোনো ধরণের বাধা-বিপত্তি ছাড়াই জনসভায় আসতে পেরেছি। আমাদের ওপর গত দুই দিন আগেও হুমকি-ধামকি ছিল। কিন্তু ২৬ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী নির্বাচনি মাঠে নেমে যাওয়ায় সব ভোজভাজির মতো উড়ে গেছে।’ তারা আরো জানান, সেনাবাহিনী মাঠে নামায় তাদের মনোবল ও সাহস বেড়েছে। তারা আশা করছেন ৫ জানুয়ারি নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন এবং তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা সেনাবাহিনীর উপস্থিতি থাকায় তারা নিশ্চিন্তে নির্বাচনি প্রচারণায়ও অংশ নিতে পারবেন।প্রধানমন্ত্রীর ফরিদপুরের ভাঙ্গার জনসভায় আসা রফিকুল ইসলাম, হেদায়াত হোসেন, কবির ব্যাপারি, লিটু তালুকদার ও সাফায়াত হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় এত লোক সমাগমের পেছনে মাঠে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কাজ করেছে। আমরা যেমন নির্বিঘেœ জনসভায় আসতে পেরেছি, তেমনি প্রতিটি ভোটার নিশ্চিন্তে জনসভায় এসেছে। এখন সকলেই আমরা নিঃশঙ্কচিত্তে নির্বাচনি প্রচারণায় নামতে পারব। সেনাবাহিনী যেভাবে তাদের দায়িত্বপালন শুরু করেছে, সেভাবে শেষ করতে পারলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাবে।’প্রধানমন্ত্রীর মতো ২৩ ডিসেম্বর সারাদেশে ১৪৬টি আসনের অনেক প্রার্থী নির্বাচনি প্রচারণার কাজ শুরু করেছেন। এতদিন এসব প্রার্থীদের মধ্যেও আতঙ্ক কাজ করছিল। অনেক প্রার্থী ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে নির্বাচনি এলাকায় যেতেন। দু’একটি ঘরোয়া বৈঠক করে আবার ঢাকায় ফিরে আসতেন। জোরেসোরে নির্বাচনি প্রচারণা চালানো বলতে যা বুঝায় তা তারা করতে পারছিলেন না। কিন্তু ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচনি এলাকায় সেনাবাহিনী নামায় প্রার্থীদের আশঙ্কা ও ভয় কেটে গেছে। ২৬ ডিসেম্বরই তারা নিজেদের নির্বাচনি এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে গেছেন, নির্বাচনি বৈঠক করেছেন, নির্বাচনি অফিসে বসেছেন।২৬ ডিসেম্বর থেকে পটুয়াখালী-১ (সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকি) আসনে নির্বাচনি প্রচারণা ছিল জমজমাট। এদিন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রহুল আমিন হাওলাদারের পক্ষে নেতাকর্মীরা মাঠে নামায় নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে প্রচার-প্রচারণায়। নির্বাচনি উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। চলছে মাইকিং। সর্বত্র বিলি করা হচ্ছে লিফলেট। ঝুলানো হচ্ছে পোস্টার। এই আসনের তিনজন প্রার্থী জাতীয় পার্টির এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর মেয়র জেলা স্বাচিপ নেতা ডা. মো. শফিকুল ইসলাম (আনারস) ও জাসদের প্রার্থী কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতা মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত (মশাল)। এই প্রার্থীদের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারীরা জানান, তারা ২৬ তারিখের আগে প্রচার-প্রচারণা, মাইকিং, লিফলেট বিলি ও পোস্টার ঝুলানোসহ কোনো কাজই নির্বিঘœভাবে করতে পারছিলেন না বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের ভয়ে। ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত থেকেই পটুয়াখালী জেলা সদর ও ২৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে উপজেলাগুলোতে সেনাবাহিনী নেমে যাওয়ায় পুরো জেলায় জমে উঠেছে নির্বাচনি প্রচারণা। যেহেতু সেনাবাহিনী মাঠে আছে, তাই এ জমজমাট প্রচারণা অব্যাহত থাকবে ৩ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত। ৫ জানয়ারি ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। জাতীয় পার্টি, জাসদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারীরা জানান, এসবই সম্ভব হচ্ছে নির্বাচনি এলাকায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কারণে।পটুয়াখালীর মতো ২৬ ডিসেম্বর থেকে টাঙ্গাইলেও জমে উঠেছে নির্বাচনি প্রচারণা। টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য খন্দকার আব্দুল বাতেন (নৌকা) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি কাজী এটিএম আনিসুর রহমান বুলবুল (আনারস)। হেভিওয়েট এই দুই প্রার্থী এতদিন নির্বাচনি মাঠ গরম করতে না পারলেও ২৬ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর থেকেই নির্বাচনি প্রচারণায় ঝাপিয়ে পড়েছেন। তাদের সমর্থকরা ভয়-শঙ্কা কাটিয়ে এখন পুরোদমে মাইকিং, লিফলেট বিলি ও পোস্টার ঝোলানোর কাজ করছেন। এটিএম আনিসুর রহমান বুলবুলের একজন সমর্থক কামাল হোসেন স্বদেশ খবর-কে জানান, শুধু নাগরপুর-দেলদুয়ারই নয়, সেনাবাহিনী নামার পর থেকে পুরো টাঙ্গাইলের নির্বাচনি মাঠের চিত্রই পাল্টে গেছে। সর্বত্রই সাজসাজ রব। প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে যে শঙ্কা ছিল তা পুরোপুরি কেটে গেছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকায় উৎসাহ উদ্দীপনা কাজ করবে ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন পর্যন্ত। কামাল হোসেন বলেন, সেনাবাহিনী নামার পর থেকে তাঁর প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারণা যেভাবে চলছে, তাতে আনারস প্রতীকই জয়লাভ করবে। অপরদিকে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল বাতেনের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কেরও। তিনি জানান, নৌকার নির্বাচনি প্রচারণায় এতদিন যে আড়ষ্টতা ছিল, তা কেটে গেছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকায় সমর্থকদের মনোবল বেড়ে গেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আশা করি নৌকাই জয়যুক্ত হবে।ঝিনাইদহের হরিণাকু-ুতেও সেনাবাহিনী নামার পর নির্বাচনের চিত্র পাল্টে গেছে। এখানকার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম অপু (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী (আনারস) এতদিন নির্বাচনি প্রচারণায় মাঠেই নামতে পারেননি। কিন্তু ২৬ ডিসেম্বর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। উভয় প্রার্থীই জোর নির্বাচনি প্রচারণায় নেমেছেন। উভয়ই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। উভয়েরই বক্তব্য হলো, সেনাবাহিনী মাঠে সক্রিয়ভাবে অবস্থান করলে তাদের সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এবং তাদের জয়যুক্ত করবেন।স্বদেশ খবর-এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম মহানগরে সেনা সদস্যরা টহল দিতে শুরু করেছেন। তারা চট্টগ্রামের কাস্টমস ট্রেনিং একাডেমি ও হালিশহরের শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছেন। বরিশাল প্রতিনিধি জানান, বরিশাল মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৬টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছেন সেনাবাহিনী। নির্বাচনের সময়ে দায়িত্ব পালনের জন্য বরিশাল বিভাগ ও জেলার মধ্যে ভোলা ও বরগুনায় নৌবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। খুলনা প্রতিনিধি জানান, ২৬ ডিসেম্বর সকালে যশোর সেনানিবাস থেকে ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যরা গাড়ির বহর নিয়ে খুলনায় আসেন। সেনাবাহিনীর এই দলটি খুলনার শেখ আবু নাসের বিভাগীয় স্টেডিয়ামে ক্যাম্প স্থাপন করে নিয়মিত টহলের কাজে নেমে পড়েছেন। সিলেট প্রতিনিধি জানান, সিলেটের নির্বাচনি মাঠে সেনা সদস্যরা নেমে পড়েছেন। সিলেট নগরী এবং বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় ইতোমধ্যে সেনা সদস্যরা তাদের তৎপরতা শুরু করে দিয়েছিলেন। রংপুর প্রতিনিধি জানান, রংপুরে সেনাবাহিনীর ১ ব্যাটালিয়ন সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেনা সদস্যরা রংপুর-৩ (সদর), রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) ও রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে দায়িত্ব পালন করেছেন।নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক ও যানচলাচল নির্বিঘœ রাখতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় সেনাবাহিনীর টহল শুরু হয়েছে।মোট কথা, সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমানবাহিনীর অন্তত অর্ধলাখ সদস্য ইতোমধ্যে নির্বাচনি মাঠে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। তাদের চৌকস কার্যক্রমে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ও আস্থা ফিরে এসেছে। যারা ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার জন্য সংশয়ে ছিলেন তাদের সংশয় কেটে গেছে। যেসব প্রার্থী ছিলেন দোদুল্যমান অবস্থায়, তারা নির্বাচনি প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সেনাবাহিনী মাঠে নামায় প্রার্থী, সমর্থক, ভোটারাই শুধু নয়Ñসাধারণ মানুষ যারা এক মাস ধরে একপ্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন, তাদের মাঝে ফিরে এসেছে স্বস্তির সুবাতাস। তাদের অনেকেই বলেছেন, সেনাবাহিনী মাঠে নামায় ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট প্রদান নির্বিঘœই হবে না, স্বাভাবিক কাজকর্মেও আসবে গতি, অবসান হবে অবরুদ্ধ অবস্থার; দূর হবে জনভোগান্তির।",False fe,"কারা জয়ী হলে জনগণ বিজয়ী হবে কারা জয়ী হলে জনগণ বিজয়ী হবেফকির ইলিয়াস --------------------------------------দু’হাজার আট-এর ডিসেম্বর মাসটি বাঙালির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে জিতে কারা ক্ষমতায় যাবেন তা নিয়ে সর্বত্র জল্পনা। ইতোমধ্যে ১৭ ডিসেম্বর থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নিচ্ছে সরকার। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট, আর বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি। সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের এই দলটি অনেক দরকষাকষি শেষে ৪৯টি আসন নিয়ে মহাজোটে থাকতে পেরেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সাবেক স্বৈরাচারী শাসক এরশাদের জাতীয় পার্টির ঐক্য আদৌ হওয়া উচিত ছিল কি না তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন। কারণ এই এরশাদ শাহীর অবৈধ ক্ষমতায় থাকার নয় বছরে দেশে গণতন্ত্রকে হত্যার ব্যাপক তৎপরতা লক্ষণীয় ছিল। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য আদালতে মামলা হয়েছিল এরশাদের বিরুদ্ধে। সেলিম, দেলওয়ার, ডা. মিলন, বসুনিয়া, নূর হোসেন প্রমুখ শহীদদের বুক ঝাঝরা করা হয়েছিল এই স্বৈরশাসকের মসনদ বাঁচাবার জন্যই। ব্যাপক রক্তপাতের মাধ্যমে সৃষ্ট নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন এরশাদের পতনের সূত্রপাত করে। তিনি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান।জাতির জীবন থেকে এই যে একটি দশক অবৈধভাবে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন জেনারেল এরশাদ এর কোনো কৈফিয়ত তিনি কি রাষ্ট্রের জনগণকে দিয়েছেন? না, দেননি। বরং আজ তিনি আরেকটি প্রধান দলের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে রাষ্ট্রের নিয়ামক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আছেন। এ দুর্ভাগ্যটি গোটা রাষ্ট্রের মানুষের।অন্যদিকে বিএনপি এমন একটি দলের সঙ্গে মোর্চা করে নির্বাচন করছে, যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গোটা জাতির স্বপ্নের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। গণহত্যা, ধর্ষণ, নারীর সম্ভ্রমহানি, লুটপাট, বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ কোন হীন কাজটি রাজাকার আলবদররা করেনি? সেই বদর বাহিনীর প্রধান কর্ণধারদের মন্ত্রীত্ব দিয়ে বিএনপি তাদের মসনদ পাকাপোক্ত করার কাজটি সম্পন্ন করেছিল বিনাদ্বিধায়। ২০০৮-এর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই রাজাকার চক্রের সঙ্গেই ঐক্য করে মেনিফেস্টো দিচ্ছে বিএনপি।বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ মনে করেন আওয়ামী লীগ জাপার সঙ্গে ঐক্য না করেও নির্বাচনে ভালো ফলাফল পেতে পারতো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে সংশয়বাদী বলেই মনে হয়েছে। অনেকেই মনে করেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে এরশাদের জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করে দেশে বড়জোর দশটি আসন পেতে পারে। বিষয়টি শেখ হাসিনা তার বিভিন্ন জরিপ-সমীক্ষায় জানতে-বুঝতে পেরেছেন বলেই আমি বিশ্বাস করি। তারপরও পতিত স্বৈরাচারের সঙ্গে মহাজোট করার প্রয়োজন কি জরুরি ছিল? হয়তো জাপাকে বিএনপি জোটে যাওয়া থেকে বিরত রাখতেই এমনটি করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, মহাজোট যদি ক্ষমতায় যায় তবে এই সুযোগে জাপা আবারো তাদের দলকে সুসংহত করার কাজটি সেরে নেবে। এবং তা করবে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে ভর করেই। যেমনটি দুই পদে মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর জামায়াত করেছিল বিগত জোট সরকারের আমলে।নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এমনি এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন দেশে ওয়ান-ইলেভেন নামক একটি পরিবর্তনের ঝড় বয়ে গেছে বেশ জোরেশোরেই। মামলা হয়েছে বেশ কিছু প্রধান রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে। বেশ কিছু শীর্ষ রাজনীতিক প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন। ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি প্রমাণিত হলে প্রার্থী হওয়া যাবে না- তা এই প্রথমবারের মতোই দেখছে বাংলাদেশের মানুষ। যা একটি বিশেষ আশাজাগানিয়া দিক।অন্যদিকে, দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল তাদের বেশ কিছু রাজনীতিককে মনোনয়ন দেয়নি। এদের বিরুদ্ধে সংস্কারপন্থী হওয়ার অভিযোগ আনলেও প্রধান শীর্ষদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দই কাজ করেছে নেপথ্যে। যেভাবেই হোক, বেশ কিছু নতুন মুখ এসেছে প্রার্থী হয়ে উভয় বড় দলেই। এটা ওয়ান-ইলেভেনের একটি অর্জন বলা যায়। সাঁইত্রিশ বছর বয়সী বাংলাদেশে উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে রাজনীতিকদের ব্যর্থতা, লুটপাট এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের শক্তিকে বিনষ্ট করে দেয়া। যারা একাত্তরে পরাজিত হয়েছিল, সে সব রাজাকারচক্র স্বাধীন বাংলাদেশে সব সময়ে একটি নেপথ্য নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চেয়েছে এবং তা করতে গিয়ে তারা শেষ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ জঙ্গিবাদকে মদদ দিতেও কসুর করেনি। দেশের স্থিতিশীলতা ধ্বংস করাসহ দেশের ভাবমূর্তি এরা ক্ষুন্ন করেছে। বোমা হামলা করে মানুষ হত্যা করেছে নৃশংসভাবে। সেই হায়েনাচক্র ২০০৮-এর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন ব্যানারে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত আজ দাম্ভিকতা নিয়ে বলছে, তারা ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বাড়াবে। তারা এটাও বলে বেড়াচ্ছে চারদলীয় জোটের সময়ই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়টির জন্ম তারাই দিয়েছিল! এর চেয়ে বেদনাদায়ক একটি জাতির জন্য আর কি হতে পারে? ঘাতকরাই আজ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়াবার অঙ্গীকার করার মতো উপহাস করছে!আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কাদের জেতা উচিত? কারা জিতলে জনগণ জিতবে? এই প্রশ্নটি খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ একটি জাতি এমন পরিকল্পিত আঁধারে নিমজ্জিত থাকতে পারে না। এর থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ। বেরিয়ে আসতেই হবে। এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র এবং ছোট ছোট দলের বেশ কিছু যোগ্য প্রার্থী মাঠে আছেন। এদের অনেকেই সৎ এবং নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক বলেও পরিচিত। যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের কথা যদি বলা হয়, তবে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে, সৎ ব্যক্তিত্বদের নির্বাচিত করা উচিত।বাংলাদেশ গেল সাঁইত্রিশ বছরে ইজমের রাজনীতি কম দেখেনি। এই ইজমের প্রতিপত্তি বিস্তারের লক্ষ্যেই দেশে বিভিন্ন ‘ভবন রাজনীতির’ তালুক সৃষ্টি করা হয়েছিল। সে সব লুটেরা তালুকদারচক্র সাময়িকভাবে এখন রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও তারা সময়মতো এসে রাজনীতিতে জেঁকে বসতে পারে। তাই এসব লুটেরা ফড়িয়া শ্রেণী সম্পর্কে জনগণের সব সময় সতর্ক থাকা দরকার। যে রাজনৈতিক নিষ্পেষণ চৌদ্দ কোটি মানুষের ভাগ্যকে নির্মমভাবে বিড়ম্বিত করেছে, তা থেকে মুক্তি খুঁজতে হবে মানুষকেই। এ জন্য ঐক্য এবং সাহসের কোনো বিকল্প নাই।সাধারণ মানুষ জঙ্গিবাদমুক্ত শান্তির বাংলাদেশ চান। তারা চান ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা বাংলার মাটিতে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনার চিরঅবসান হবে। আর সে জন্যই গুণী, ত্যাগী, নিঃস্বার্থ এবং সৎ সাংসদ নির্বাচিত করতে হবে। যে কথাটি না বললেই নয়, তা হচ্ছে বাংলাদেশের মেরুদন্ডের প্রধান শক্তি, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তাই যুদ্ধাপরাধীমুক্ত, রাজাকার-হায়েনামুক্ত, একটি সংসদ গঠনে জনতাকে প্রত্যয়ী হতে হবে। গণতন্ত্রের যেমন বিকল্প নেই, তেমনি সুশিক্ষিত ভোটারেরও বিকল্প নেই। প্রতিবেশীকে সচেতন করে তোলা অন্য প্রতিবেশীরই নৈতিক এবং জরুরি দায়িত্ব। নিউইয়র্ক, ১৩ ডিসেম্বর ২০০৮ -------------------------------------------------------------দৈনিক ডেসটিনি । ১৫ ডিসেম্বর ২০০৮ সোমবার প্রকাশিত",False ij,"গ্রিক উপকথার সেই ‘এ্যামাজন’ নারী যোদ্ধারা এ্যামাজন নারীযোদ্ধা। সুদূর অতীতের কোথাও কি গড়ে উঠেছিল একটি নারীরাজ্য? যে নারীরাজ্যটিতে কেবল বাস করত নারীরা-যে নারীরাজ্যটি তে পুরুষের কোনওই অস্তিত্ব ছিল না। কী এর কারণ? যা আজও বিস্ময় ও কৌতূহলের সৃষ্টি করে চলেছে এবং অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। কেন তারা গড়ে তুলেছিল পুরুষবিহীন রাষ্ট্র? সুন্দরী রক্তপিপাসু নারী যোদ্ধাদের কথা ইউরোপীয় উপকথায় রয়েছে। কেমন ছিল এ্যামাজন যোদ্ধা নারীরা ? ইউরোপীয় মননে এ্যামাজন নারীদের প্রভাব এতই গভীর যে স্পেনিশ অভিযাত্রী ফ্রানসিসকো দে ওরেলানা দক্ষিণ আমেরিকার সবচে বড় নদীটির নাম দিয়েছেন এ্যামাজন । কেন? কারণ সেই নদীর পাড়ে যুদ্ধংদেহী নারী যোদ্ধাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন... ‘এ্যামাজন’ নারীরা যোদ্ধাদের কথা গ্রিক উপকথায় উল্লেখ আছে। গ্রিক উপকথামতে যুদ্ধের দেবতা আরেস ও সমুদ্রশঙ্খিনী (সি নিম্ফ) হারমোনিয়া থেকে ‘এ্যামাজন’ নারী যোদ্ধারা উদ্ভূত । তারা উপাসনা করত দেবী আর্তেমিসের। কেবল উপকথা নয়, ঐতিহাসিক হিরোডোটাসও ‘এ্যামাজন’ নারীদের কথা উল্লেখ করেছেন। হিরোডোটাস এর মতে ‘এ্যামাজন’ নারী যোদ্ধারা পুরুষ খুনি! তারা বিরতিহীন ভাবে যুদ্ধ করেই যেত গ্রিক এবং অন্য জাতির বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধকে গ্রিক ভাষায় বলা হয় Amazonomachy বা এ্যামাজন যুদ্ধ। ‘এ্যামাজন’ নারী যোদ্ধারা এমন কী ট্রয়যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তারা ট্রয়ের পক্ষেই ছিল। ‘এ্যামাজন’ রানী কে হত্যা করেছিলেন গ্রিকবীর অ্যাকিলিস। কিন্তু কোথায় ছিল ‘এ্যামাজন’ নারী যোদ্ধাদের রাজ্য? এশিয়া মাইনরে অবস্থিত কৃষ্ণসাগর। গ্রিকরা মনে করত ‘এ্যামাজন’ নারী যোদ্ধাদের রাজ্যটি ছিল এই কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে। এবার Amazon শব্দটির উদ্ভব বিষয়ে আলোচনা করা যাক। এ্যামাজন নারীরা ছিল মূলত যোদ্ধা। সে কালে তীরধনুক ছিল অন্যতম যুদ্ধাস্ত্র। এ্যামাজন সমাজে মেয়েদের বালিকা বয়েস থেকেই হতে হত দক্ষ তীরন্দাজ । ধনুক বাঁকাতে বুকে ডান দিকে চাপ পড়ে; যে কারণে বালিকার ডান স্তনটি নাকি তার মা পুড়িয়ে ফেলত। গ্রিক ভাষায় স্তনশূন্যতাকে বলে: এ্যামাজন। a মানে, ছাড়া; আর mazos মানে স্তন। এটি অবশ্য লোকভাষ্য। এর কোনও ভিত্তি নেই। কেননা, বর্তমান কালে নারী তীরন্দাজের শরীর অন্তরায় নয়। তা ছাড়া এ্যামাজন বালিকাদের স্তন পোড়ানোর বিষয়টিকে বিশেষজ্ঞ অবশ্য অস্বীকার করেন। তারা বলেন যে এতে যে ক্ষতের সৃষ্টি হত সেটির চিকিৎসাকৌশল সেকালে আয়ত্ম সম্ভব ছিল না! শিল্পে অবশ্য এ্যামাজন মেয়েরা সুন্দর, বিকলাঙ্গ নয়। প্রাচীন শিল্পে ফুলদানী কিংবা দেওয়ালচিত্রে এ্যামাজন নারীদের কেবল যুদ্ধরত অবস্থার ছবি রয়েছে। গ্রিক ভাষ্যমতে এ্যামাজন নারীদের সমাজ পুরুষশূন্য মাতৃতান্ত্রিক সমাজ । পরিশ্রমের কাজ করত দাসীরা। বছরে একবার প্রতিবেশী রাজ্যে যেত। উদ্দেশ্য যৌন মিলন। পুত্রসন্তান জন্মালে মেরে ফেলত কিংবা বাবার কাছে রেখে আসত। প্রথম তারাই ঘোড়াকে বশ মানিয়েছিল। তীরধনুক ছাড়াও যুদ্ধে ব্যবহার করত বর্শা ও কুঠার।তীরধনুক হাতে একালের নারীও যেন সুদূর এ্যামাজন নারীর প্রতীকগ্রিক ভাষ্যমতে এ্যামাজন নারীদের সমাজ শাসিত হত একজন রানীর মাধ্যমে। রানী হিপ্পোলিটা ছিলেন একজন বিখ্যাত নারীশাসক। আমি বারবার গ্রিক ভাষ্যমতে বলছি । কেননা, উল্লিখিত তথ্যগুলির উৎস গ্রিক উপকথা ও ঐতিহাসিক হিরোডোটাস। পরে আমরা এ্যামাজন নারীদের বিষয়ে আধুনিককালের ঐতিহাসিকদের বক্তব্য উল্লেখ করব। যা হোক। এ্যামাজন রানী হিপ্পোলিটার বাবা ছিলেন যুদ্ধের দেবতা আরেস। আরেস কন্যাকে একটি যাদুময় কোমারবন্ধনী (গার্ডেল) উপহার দিয়েছিলেন। যা হোক। আমরা উপকথায় প্রবেশ করি। ...থেসিয়াস ছিলেন পুরাকালের এথেন্স নগরীর একজন রাজা। তিনি গ্রিক উপকথার স্বর্গীয় বীর হেরাক্লেস কে এ্যামাজনদের বিরুদ্ধে সমরাভিযানে প্রেরণ করেছিলেন। সেই অভিযানে রাজা থেসিয়াস নিজেও অংশ গ্রহন ছিলেন। আসলে সেই অভিযানের পিছনে ছিল রানী হিপ্পোলিটার যাদুময় কোমারবন্ধনীর লোভ। যা হোক। এশিয়া মাইনরের কূলে রাজা থেসিয়াস এর জাহাজ ভিড়ল । ধরা যাক আজকের তুরস্কের উপকূলে। রাজা থেসিয়াস প্রথমেই আক্রমনাত্মক ভূমিকা অবলম্বন করলেন না । রানী হিপ্পোলিটা সন্তুষ্ট হয়ে হাজারো উপঢৌকন নিয়ে স্বয়ং গ্রিক জাহাজে এলেন। রানী হিপ্পোলিটা সম্ভত রূপবতী ছিলেন। কিংবা রাজা থেসিয়াস ছিলেন পুরুষ! জাহাজে উঠতেই জোর করে রানী হিপ্পোলিটা কে বিয়ে করে বসলেন রাজা থেসিয়াস । যাক বিয়ে করলেন! না করলেও পারতেন। জাহাজ ভেসে চলেছে পশ্চিমমূখি। জাহাজ যখন এথেন্স বন্দরে ভিড়ল ততদিনে রানী হিপ্পোলিটা গর্ভবতী। ওদিকে রাজা থেসিয়াস-এর এই জঘন্য অপকর্ম আরও একটি Amazonomachy-এর জন্ম দিল। মৃৎপাত্রে এ্যামাজন নারীদের ছবিরানী হিপ্পোলিটা যথা সময়ে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন। সেই পুত্র সন্তানের নাম রাখা হল হিপপোলিটাস। রাজার মোহভঙ্গ হল। রাজা হিপ্পোলিটা কে বললেন, ‘এবার তুমি নরকে যাও।’ হিপ্পোলিটা মনে আঘাত পেলেন। ফিরে গেলেন এশিয়া মাইনরে এ্যামাজনদের রাজ্যে । এখানেই শেষ নয়। রাজা থেসিয়াস বিয়ে করলেন ফেড্রাকে। কে ফেড্রা ? ফেড্রা ছিলেন ক্রিট দ্বীপের রাজা মিনোস এর কন্যা। এই মিনোসের নামেই ক্রিট দ্বীপের সভ্যতাকে বলা হয় মিনিয় সভ্যতা। যাক হোক। ঘটনা মোড় নিল অন্যদিকে। হিপপোলিটাস তখন কিশোর। কিশোর হিপপোলিটাস এর প্রেমে পড়লেন ফেড্রা । (উপকথা কেন এত লোকপ্রিয় তা নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে!) হিপপোলিটাস -ফেড্রার ভালোবাসা নিয়ে গ্রিক নাট্যকার ইউরিপিদেস নাটক লিখেছেন । দু-বার সে নাটক মঞ্চস্থ করেছেন এথেন্সের নাট্যশালায়। এমন কী শেকসপীয়ারের ‘আ মিডসামার নাইটস ড্রিম’ নাটকে আমরা রাজা থেসিয়াস আর রানী হিপ্পোলিটা দেখতে পাই। এ্যামাজন যোদ্ধা নারীগ্রিক ঐতিহাসিক হিরোডোটাস যাদের ‘পুরুষ খুনি’ বলেছেন, তারা আসলে কারা? গ্রিক উপকথার সেই ‘এ্যামাজন’ নারী যোদ্ধারা আসলে কারা? তারা কি সম্পূর্নতই উপকথারজাত? না, তাদের বাস্তবিক কোনও অস্তিত্ব ছিল? বর্তমানকালের ঐতিহাসিকগন এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেস্টা করেছেন। এশিয়া মাইনরে অবস্থিত কৃষ্ণসাগরের আশেপাশে গড়ে উঠেছিল সাইদিয় সভ্যতা। ৮০০ খ্রিস্টপূর্বে এদের অবস্থান সম্পর্কে গ্রিকরা সচেতন হয়। Scythians দের বাংলায় বলা হয় শক। গ্রিক উপকথার সেই ‘এ্যামাজন’ নারী যোদ্ধারা আসলে শক নারী! শক সভ্যতায় যে সক্রিয় নারীযোদ্ধা ছিল, তার প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমান মিলেছে। শকদের সভ্যতার কেন্দ্র ছিল বর্তমানকালের ক্রিমিয়া। শক সমাধিক্ষেত্রে খনন কার্য চালিয়ে সশস্ত্র নারীর অস্তিত্ব মিলেছে। দেখেশুনে মনে হয় শকদের সৈন্যবাহিনীতে অন্তত ২৫% নারী যোদ্ধা ছিল। আর সেসব শক নারী যোদ্ধাদের ধনুকসহ সমাধিস্থ করা হত। ক্রিমিয়ার মানচিত্র । ৮০০ খ্রিস্টপূর্বে এখানেই উদ্ভব হয়েছিল সাইদিয় বা শক সভ্যতার। যাদের নারীযোদ্ধা ছিল। এদেরই গ্রিকরা নানা ভাবে বনর্না করেছে। যাদের কথা ইউরিপিদেস থেকে শেকসপীয়ার অবধি রচনায় উল্লেখ করেছেন।কিন্তু কেন শকরা নারীরা যুদ্ধবিদ্যাকে অত সিরিয়াসলি গ্রহন করেছিল?রুশ প্রত্নতাত্ত্বিক ভেরা কোভালেভস্কায়া এর উত্তর দিয়েছেন। কোভালেভস্কায়া মনে করেন শক পুরুষরা যুদ্ধ কিংবা শিকারের জন্য দূরবর্তী স্থানে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করত। যে কারণে যাযাবর শক নারীরা তাদের পশু ও চারণভূমি প্রতিরক্ষার্থে হাতে যুদ্ধাস্ত্র তুলে নেয়। সে সময়টায়, অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ শতকের দিকে শকরা এশিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। ভেরা কোভালেভস্কায়া গবেষনা করে দেখেছেন এই প্রক্রিয়ায় একাধারে ২৮ বছর অবধি শক নারীদের একা পুরুষবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হত! পুরুষশূন্য সেই সব শক নারীদের বিরুদ্ধে বিচ্ছিরি সব কল্পকাহিনী ছড়িয়েছে গ্রিস। (এখনও বাংলাদেশি সমাজে নারী একা থাকলে কত কথা ওঠে!) শকদের পুরুষবিহীন সমাজটি গ্রিকদের নারীরাজ্য মনে হতেই পারে। আর নারীদের নিয়ে মুখরোচক আলোচনার তো শেষ নেই। ‘এ্যামাজন’ বালিকাদের তীরধনুক ছোঁড়া শিখতে হত। ধনুক বাঁকাতে বুকে ডান দিকে চাপ পড়ে; যে কারণে বালিকার ডান স্তনটি তার মা পুড়িয়ে ফেলত। গ্রিক ভাষায় স্তনশূন্যতাকে বলে: এ্যামাজন। ইত্যাদি ...ইত্যাদি ...পরিবারের প্রধান পুরুষ জীবিকার তাগিদে দীর্ঘকাল অনুপস্থিত থাকলে সেই পরিবারের বিপদশঙ্কুল পরিবেশে আত্মরক্ষার অধিকার তো আছে ...কি বলেন ... শকদের নিয়ে লেখা আমার একটি নিবন্ধ তথ্য ও ছবি। ইন্টারনেট।",False mk,"বাংলাদেশে বিএনপির ‘পরগাছা’ রাজনীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে। ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দলের কাউন্সিল অধিবেশন। তবে এর আগেই চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এই দুই শীর্ষ পদে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি পদগুলো কাউন্সিল অধিবেশনে শীর্ষ দুই নেতার ইশারা-ইঙ্গিতেই যে পূরণ করা হবে তাতে সন্দেহ নেই। এভাবেই শীর্ষ নেতৃত্বের অঙ্গুলি হেলনে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে। এভাবেই চলবে বাংলাদেশে ‘গণতান্ত্রিক রাজনীতির’ অভিযাত্রা।কিছুদিন আগে ‘সংসদীয় বিরোধী দল’ জাতীয় পার্টিতেও এই খেলা চলেছে। দলের প্রধান নেতা জেনারেল এরশাদ নিজের একক ইচ্ছায় সহসা ছোট ভাই জি এম কাদেরকে দলের নেতৃত্বে টেনে এনে তাঁর উত্তরাধিকারী করেছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজনীতিতেও চলছে বংশানুক্রমিক আধিপত্যের পালা। এরশাদ সাহেবের কোনো অবিতর্কিত পুত্রসন্তান নেই। থাকলে হয়তো তাঁকেই ছোট ভাইয়ের বদলে দলের নেতৃত্বের উত্তরাধিকারী করতেন।বিএনপির অন্যতম শীর্ষ পদে তারেক রহমানের আরোহণকে অনেকটা উল্লম্ফনের সঙ্গে তুলনা করা চলে। ভারতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে রাহুল গান্ধীর আরোহণ পর্যায়ক্রমিক। প্রথমে যুব কংগ্রেসে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে তাঁর যাত্রা শুরু। এরপর ধীরে ধীরে কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্বের পদের দিকে এগিয়েছেন। বাংলাদেশে তারেক রহমানের রাজনীতিতে আবির্ভাব সম্পূর্ণ উল্লম্ফন প্রক্রিয়ায়।বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এক যুগ আগে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েই মায়ের কৃপায় তিনি দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হন। আসলে হন অঘোষিত মহাসচিব। তখনকার মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়াসহ সিনিয়র মন্ত্রীরা পর্যন্ত তারেক রহমানকে দেখলে নতজানু হয়ে সালাম দিতেন। তাঁকে সামনের আসন ছেড়ে দিতেন। এরপর রাতারাতি ২০০৯ সালে তাঁকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। সবই মায়ের ইচ্ছায়। এখন সবাই জানে, পুত্রের ইচ্ছাতেই মা দলের রাজনীতি পরিচালনা করেন। পুত্র বিদেশে বসে দলের কলকাঠি নাড়েন। তাঁর ইচ্ছাতেই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কণ্ঠিবদলের রাজনীতি এবং আন্দোলনের নামে ব্যর্থ সন্ত্রাসের রাজনীতি। দলে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক নেতৃত্বের যে অংশবিশেষ ছিল বা আছে, তারেক রহমান তাদেরও দল থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেন অথবা নিষ্ক্রিয় করে ফেলেন।খালেদা জিয়া এখন খুব একটা সুস্থ নন। ফলে দলের সিংহাসনে পুত্রের অভিষেকের সব আয়োজন তিনি শুরু করেছেন। ঢাকার কাগজেই খবর বেরিয়েছে, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমানের ক্ষমতা বাড়ানো এবং কর্তৃত্ব নির্দিষ্ট করার জন্য বিএনপির দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রাচীন ভারতে রাজা ভরত যেমন রামচন্দ্রের পাদুকা সিংহাসনে রেখে রাজত্ব চালাতেন, তারেক রহমান বিদেশে বসে তেমনি মায়ের নাম ভাঙিয়ে নিজে দল চালাবেন। তাতে দলটির ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে তা ভেবে দলের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী উদ্বিগ্ন।কেউ কেউ বলছেন, ভারতে ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পুত্র সঞ্জয় গান্ধীকে দিল্লির সিংহাসনে তাঁর উত্তরাধিকারী করার চেষ্টা করতে গিয়ে যেমন নিজের জন্য এবং দলের জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছিলেন, বাংলাদেশে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তাঁর পুত্র তারেক রহমানকে বাংলার মসনদে বসানোর চেষ্টা দ্বারা তেমনি তাঁর নিজের নেতৃত্ব এবং দলের ভবিষ্যতের জন্যও এক মহাবিপর্যয়ের পথ খুলে দিয়েছেন।ভারতের সঞ্জয় গান্ধীর তবু নেহরু পরিবারের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞানের উত্তরাধিকার ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে সেনাপতিপুত্র হিসেবে সেনানিবাসে যাঁর জন্ম ও যৌবনকাল পর্যন্ত বসবাস, তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞান দূরে থাক, ব্যক্তিগত শিক্ষা ও জ্ঞানের সীমানা কতটুকু? বিলেতে বসে তাঁর প্রগলভ ইতিহাসচর্চা থেকেই কি তা বোঝা যায়নি? এ জন্যই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা কতটা সফল হবে এ ব্যাপারে অনেকে সন্দেহ পোষণ করেন।গণভিত্তি না থাকলে অথবা তা হারালে কোনো রাজনৈতিক দল বেশি দিন টিকে থাকে না। আওয়ামী লীগের বর্তমানে যত দুর্বলতা থাক, এই দলের একটা গণভিত্তি আছে। এই গণভিত্তির জন্যই শত দুর্বিপাকের মধ্যেও দলটি টিকে আছে এবং বারবার ক্ষমতায় আসছে। বিএনপির জন্ম সেনা ছাউনিতে। এই দলের কোনো গণভিত্তি ছিল না। বিভিন্ন দলের ও মতের ‘পরগাছা’ নিয়ে দলটির জন্ম।খালেদা জিয়া নেতৃত্বে এলে দলটির একটা গণভিত্তি গড়ে ওঠে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে এবং নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশ পরিচালনায় সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে এসে বিএনপির এই গণভিত্তি আরো শক্ত হয় এবং দেশের দ্বিতীয় প্রধান দল হিসেবে গড়ে ওঠে।এরপরই শুরু হলো দলটির নীতি ও নেতৃত্বের ভুল। খালেদা জিয়া একনায়ক এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলেন। কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট ছাড়লেন না। দলের গণভিত্তিকে উপেক্ষা করে তিনি ক্যান্টনমেন্টের শক্তিকেই তাঁর ক্ষমতার ভিত্তি হিসেবে ধরে নিলেন। রাজনীতিতে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরগাছার রাজনীতি। পরগাছা যেমন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জন করে না, তেমনি অন্যের সমর্থননির্ভর রাজনীতিও কখনো পায়ের তলায় মাটির সন্ধান পায় না।পরগাছার রাজনীতির অর্থ যাঁরা বুঝতে চান না, তাঁদের কবি মধুসূদন দত্তের ‘রসাল কহিল উচ্চে স্বর্ণ লতিকারে’ কবিতাটি পড়ে দেখতে অনুরোধ জানাই। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি চিরকাল পরগাছার রাজনীতি করেছে এবং এখনো তা করছে। এখানেই বিএনপির রাজনীতির চরম ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করলে বিএনপি ১৯ মার্চের কাউন্সিল অধিবেশনের পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।রাজনীতিতে পরগাছানীতি অনুসরণ করতে গিয়েই বিএনপি ক্যান্টনমেন্টের ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতার শত্রু জামায়াতের সমর্থন ও সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অথচ বিএনপির নিজস্ব গণভিত্তি গড়ে উঠেছিল, বিশাল জনসমর্থনও ছিল। তাকে উপেক্ষা করে তারেক রহমানের পরামর্শে খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে শুধু আঁতাত করা নয়, ক্ষমতায় তাদের অংশীদার করেন এবং তাদের সমর্থন ও সহযোগিতার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বর্জন করে জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে পেট্রলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে মারার সন্ত্রাসে যোগ দিয়ে বিএনপি তার আত্মহননের পথটি বেছে নেয়।নেতৃত্বের এই পরগাছা ভূমিকার সঙ্গে যুক্ত হয় বিএনপির নীতিগত ভ্রষ্টতা। আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে জামায়াতের পরামর্শে মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শের বিরোধিতা এবং বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে গিয়ে বিএনপি চরম ভুল করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর যে রাজনীতির ওপর দলটির প্রতিষ্ঠা, সেই রাজনীতিকে অস্বীকার করে এবং তার ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা চালিয়ে কোনো দল নিজের অস্তিত্ব দীর্ঘকাল টিকিয়ে রাখতে পারে কি? বিএনপি নেতারা গত চার দশকেও কেন এই সত্যটা অনুধাবন করতে পারলেন না যে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করা আর দেশের স্বাধীনতার মূল আদর্শের বিরোধিতা করা এক কথা নয়?সম্ভবত খালেদা জিয়া তাঁর স্বামীর সহকর্মী এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক যেসব নেতাকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতিতে নেমেছিলেন, তাঁদের পরামর্শ শুনলে এবং গণরাজনীতি বর্জন করে পরগাছার নীতি অনুসরণ না করলে বিএনপির এই বিপর্যস্ত অবস্থা আজ দেখা দিত না। তাঁর দলেরই অনেকের ধারণা, পুত্র তারেক রহমানের ভ্রান্ত পরামর্শে চালিত হয়েই তিনি আজ এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছেন। রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না। তারেক রহমানের রাজনীতি ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস ও মিথ্যাচারভিত্তিক বলে বাজারে অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগে তিনি মামলা-মোকদ্দমাতেও ঝুলছেন। তাঁকে কাণ্ডারি করে বিএনপি কতটা এগোতে পারবে?জামায়াতের প্রতি একটা অদৃশ্য নাড়ির টান এখনো বিএনপির রয়ে গেছে। ফলে জনসমর্থনের ভিত্তিতে ফিরে না এসে এখনো চলছে তার পরগাছা রাজনীতির পুনরাবৃত্তি। বিএনপির সাম্প্রতিক রাজনীতি হচ্ছে বিদেশি শক্তির সাহায্যের ওপর নির্ভরতা। ভারতে বিজেপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন বিএনপি অতি আশায় বুক বেঁধেছিল, বিজেপিই বুঝি ঢাকার মসনদ তাদের পুনরুদ্ধার করে দেবে। এ জন্য বিজেপির নির্বাচন জয়ে তারা ঢাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছে, বক্তৃতা-বিবৃতিতে মোদি-ভজনা শুরু করেছিল, বিজেপি সরকার তাদের অতি আশায় ছাই দিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে।পরনির্ভরতার এই রাজনীতি থেকে বিএনপি কোনো শিক্ষা নেয়নি। এখন তাদের আশা, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যদি হিলারি ক্লিনটন জিতে যান, তাহলে বাংলাদেশে হাসিনা সরকার বিপাকে পড়বে। বিএনপির বড় সহায় নোবেলজয়ী ড. ইউনূস। তিনি আবার হাসিনাবিরোধী। তাঁর পরামর্শে ও প্রভাবে হিলারি প্রশাসন নিশ্চয়ই হাসিনা সরকারের মিত্র হবে না। তাহলে বিএনপির পোয়াবারো।এই আশার গুড়েবালি পড়তেও বেশি দেরি হবে না। হিলারি ক্লিনটন যদি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হনও, তাহলে ভারতের নরেন্দ্র মোদির মতো তাঁর দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ঘুরে দাঁড়াবেন না এবং হাসিনা সরকারের পক্ষ নেবেন না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং সম্ভাবনাই বেশি। বিএনপিকে সম্ভবত আরো একবার আশাভঙ্গের বেদনায় ভুগতে হবে। বিএনপি যদি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে চায়, তাহলে তাকে পরগাছা নীতি ত্যাগ করতে হবে। দলের শক্তি হিসেবে গণভিত্তিকে গুরুত্ব ও প্রাধান্য দিতে হবে। দলের নীতি ও নেতৃত্ব সংশোধন করতে হবে। তারেক রহমানের লাগামহীন দৌরাত্ম্যে লাগাম টানতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিকল্প সুষ্ঠু, সবল ও গণতান্ত্রিক দল অবশ্যই দরকার। কিন্তু সেই দল হওয়ার আবশ্যিক সব শর্ত বিএনপিকে আগে পূরণ করতে হবে।লন্ডন, সোমবার, ১৪ মার্চ ২০১৬- See more at: Click This Link সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:০১",False rg,"বঙ্গবন্ধ হত্যাকাণ্ডের সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে উন্মোচন করতে হবে!!! ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পেছনে কেবল সেনাবাহিনীর গুটিকয়েক মধ্যম সারির সেনা কর্মকর্তা-ই জড়িত ছিলেন না। শেখ মুজিবকে হত্যার জন্য দেশী-বিদেশী চক্র অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী এক নীলনকশা করেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো। ১৯৯৮ সালে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নিম্ন আদালত থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় দেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার এবং সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দীর্ঘ সময় উচ্চ আদালতে আপিলের কার্যক্রম ঝুলে ছিলো। এরপর ২০০৯ সালে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে উচ্চ আদালত বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় দেয়। ২০১০ সালের ২৮ শে জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। বাকি দণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামীর ছয় জন এখনো বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আর একজন মারা গেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় কেবল সরাসরি হত্যাকাণ্ড এবং পরিকল্পনায় যারা অংশ নিয়েছিল, দেশের প্রচলিত আইনে অন্যান্য সাধারণ হত্যাকাণ্ডগুলো যেভাবে হয়ে থাকে, সেভাবেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে দেশী ও বিদেশী চক্রের যারা নানাভাবে জড়িত ছিল, তাদের ভূমিকা এবং তাদের কর্মকাণ্ডের কোনো বিচার এখনো হয়নি। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে দেশী-বিদেশী এই নীলনকশা প্রণয়নকারী চক্র সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো ধারণাও দেওয়া হয়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে একটি সুদূরপ্রসারী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতাকারী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চক্রের যে সুদূরপ্রসারী নীলনকশা ছিলো, সেই নীলনকশার অংশ হিসেবেই বঙ্গবন্ধুকে দেশী-বিদেশী এই চক্র মিলে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলো। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার, মার্কিন সামরিক হেড কোয়ার্টার পেন্টাগন ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই, সৌদি-রাজ পরিবারসহ আন্তজার্তিক অঙ্গনের অনেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে গোপনে কলকাঠি নেড়েছেন। আর তাদের এই গোপন মিশনে যুক্ত হয়েছিলো দেশীয় কুচক্রী মহলসহ কিছু বিপদগামী সেনা অফিসার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে এককভাবে সমর্থন দেওয়ার কারণে প্রেসিডেন্ট নিক্সন তাঁর উপরে ক্ষিপ্ত ছিলেন। যে কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য ভারতের স্বাধীনতা দিবসকেই সবচেয়ে মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নিয়েছিলো এই খুনীচক্র। এমন কি এই কুচক্রী মহল বঙ্গবন্ধু হত্যায় ভারতকে জড়িয়ে নানা প্রোপাগাণ্ডাও ছড়ানোর চেষ্টা করেছিলো তখন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশী ও বিদেশী এই কুচক্রী মহলের পরিচয় নানাভাবেই ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে। যে কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের রায়ে কেবল দেশীয় জড়িতদের একটা খণ্ডাংশের চিত্রই প্রকাশ পেয়েছে। গোটা হত্যাকাণ্ডে দেশী ও আন্তর্জাতিক মহলের যারা যেভাবে জড়িত ছিল, সেই অংশটি কার্যত বিচারের রায়ে প্রকাশ পায়নি। এমনকি দেশী-বিদেশী এই কুচক্রের পরিচয় পর্যন্ত এখনো পুরোপুরি আবিস্কৃত হয়নি। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে যে অভ্যন্তীরণ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল, সেটি নিয়েও এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট গবেষণা পর্যন্ত হয়নি। কিন্তু আকারে ইঙ্গিতে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে কারা কীভাবে জড়িত ছিলেন তা নিয়ে বিচ্ছিন্ন অনেক আলোচনা বা লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু সেটাকে মৌলিক গবেষণা হিসাবে এখনো কোনো কাজ হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে সেই সুদূরপ্রসারী নীলনকশার যারা রূপকার ছিলেন, তাদের সুস্পষ্ট পরিচয় এবং ভূমিকা নিয়ে যতদিন সুনির্দিষ্ট গবেষণা না হবে, ততদিন বঙ্গবন্ধুর আসল খুনীদের সেই মুখোশ উন্মোচিত হবে না। এমন কি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনী ডালিমদের সঙ্গে বাংলাদেশ বেতারে সেদিন সকালে প্রয়াত কর্নেল তাহেরের উপস্থিতি নিয়েও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে কিছু বলা হয়নি। অথচ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে বাংলাদেশ বেতারে খুনী ডালিমদের সঙ্গে কর্নেল তাহেরের উপস্থিতি বা তাঁর রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদের ভূমিকা নিয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট গবেষণা হয়নি। এমন কি খুনী খোন্দকার মোশতাক সরকারকে আনুগত্য প্রকাশকারী ঊর্ধ্বতন সামরিক অফিসারদের ভূমিকা নিয়েও কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি! যে কারণে দেশের প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার যে চূড়ান্ত রায় হয়েছে এবং দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে যাদের দণ্ড কার্যকর হয়েছে, তারা ছাড়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে জড়িত সবচেয়ে বড় অংশটির বিচার বা বিচারের প্রক্রিয়া এখনো কার্যত এগোয়নি। এমন কি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত বাকি সাত আসামিকে দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করাও এখনো সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে এই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করার কোনো লক্ষণ বা অগ্রগতিও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়।বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে জড়িত দেশী-বিদেশী সকল চক্রের সুস্পষ্ট ভূমিকা নিয়ে সুনির্দিষ্ট গবেষণা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বার্থেই করা উচিত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নীলনকশার সঙ্গে জড়িতদের দণ্ড দেওয়া সম্ভব না হলেও অন্তত তাদের পরিচয় উন্মোচন হওয়াটা ইতিহাসের দায় বটে। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জন্য ইতিহাসের এই কালো অধ্যায়ের সুস্পষ্ট দায় উন্মোচনকে বাংলাদেশ কিছুতেই এড়াতে পারে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের ৪১ বছর পেরিয়ে গেলেও ইতিহাসের এই দায় থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি পেতে হলে, ইতিহাসের এই কালো অধ্যায়কে সুস্পষ্টভাবে উন্মোচন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই। আর স্বাভাবিকভাবেই এই দায় যতটা না রাষ্ট্রের, তারচেয়েও বেশি বাংলাদেশের মানুষের। বাংলাদেশের মানুষকেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নীলনকশার সঙ্গে জড়িত সকল দেশী-বিদেশী কুচক্রী মহলের ভূমিকা ও কর্মকাণ্ডকে উন্মোচন করে এই দায় থেকে মুক্তি নিতে হবে। নইলে ইতিহাসের কাছে বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশের মানুষের এই দায় থেকেই যাবে। আর তা থেকে আমাদের মুক্তি নেই। খোন্দকার মোশতাকের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বা দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় ও দণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ড কার্যকরের মধ্যেই কেবল এই দায় শেষ হয়ে যায় না। বরং ইতিহাসের কাছে বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশের মানুষের এই দায়মুক্তি এখনো ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কোনো দলীয় নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতরে নিয়ে পরিমাপ করলে বাংলাদেশ এই দায় থেকে কখনোই মুক্তি পাবে না। দলমতের ঊর্ধ্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক হিসেবেই এই দায় মুক্তির অনুসন্ধান করতে হবে। ....................................১৫ আগস্ট ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:০৬",False hm,"পরিবেশবিরূপ আবাসন সংস্কৃতি জুন ১৩ ও জুন ১৪, ২০০৭ তারিখে প্রথম আলোর প্রথম পাতায় এসেছে আবাসন শিল্পের কর্ণধারদের নিয়ে প্রতিবেদন। রিয়েল এস্টেট ও গৃহায়ন শিল্পপতিদের সংগঠন রিহ্যাব অর্থ উপদেষ্টা মির্জা আজিজ এর কাছে অনুরোধ নিয়ে গিয়েছিলেন সাম্প্রতিক বাজেটে ঘোষিত একটি রদ করা রীতি আরো এক বছরের জন্যে চালু রাখতে। রীতিটি হচ্ছে, নির্দিষ্ট হারে কর দিলে জমি বা বাড়ি ক্রয়ে ব্যয়িত টাকার উৎস সম্পর্কে কিছু জানতে চাওয়া হয় না। সোজা কথায়, কালো টাকার মালিকদের নিশ্চন্ত মনে আরো এক বছর জমিজমা ঘরবাড়ি কেনাকাটা করে টাকার রংটা পাল্টে ফেলার সুযোগ দেয়া হোক। অর্থ উপদেষ্টা সাফ না বলেছেন। রিহ্যাবের কর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তাঁদের শিল্প মারাত্মক ধ্বসের মুখোমুখি হতে পারে। তার পরদিন এসেছে আবাসন শিল্পের মোঘল বসুন্ধরার ব্যবসায়িক অপচর্চা নিয়ে কিছু কথা। বসুন্ধরার কর্ণধার বর্তমানে প্রবাসে আছেন, তাঁর সম্পর্কে রাজনীতির পান্ডাদের উৎকোচ প্রদান থেকে শুরু করে পুত্রের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগকে ঘুষ দিয়ে ধামাচাপা দেয়ার তথ্য বেরিয়ে এসেছে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সাম্প্রতিক রিমান্ড জেরায়। প্রতিবেদন পড়ে যা বোঝা যায় তা হচ্ছে, আবাসন শিল্পের হর্তাকর্তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী (হয়তো ঘুষ হিসেবে প্লট/ফ্ল্যাট/বাড়ির আবেদন নগদ টাকার চেয়ে বেশি), এবং তাঁদের শিল্পের স্ফীতি বহুলাংশে কালো টাকার ওপর নির্ভরশীল। এবং টাকার ব্যাপারে বর্ণবাদী না হতে যে আহ্বান তাঁরা জানিয়েছেন, তা সরাসরি দুর্নীতিবাজদের সহায়তা করবে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান কালো টাকা সাদা করার জন্যে সে টাকা গৃহায়নে বিনিয়োগের সুযোগ চালু করেছিলেন। তার আগে টাকার ধোলাই করতে হতো শিল্পকারখানা খুলে (যেখানো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়)। রাতারাতি ধোপাবাড়ির ঠিকানা বদল হওয়ার কারণে অঢেল কালো টাকার স্রোত ধেয়ে চলে আবাসন শিল্পের দিকে। অর্থনীতির সরল সূত্র অনুযায়ী সীমিত সরবরাহের বিপরীতে বর্ধনশীল চাহিদা অল্প সময়ের মধ্যেই আবাসন শিল্পের পণ্যগুলির মূল্য বাড়িয়ে তোলে দেড় থেকে দুইগুণ। এর বিপরীতে রয়েছে ডেভেলপারদের পরিবেশউদাসীন কার্যক্রম। তারা অবলীলায় খাল বিল নদী সব দখল করেন, ভরাট করেন, তার ওপরে গৃহায়ন শিল্পের নানা প্রকল্প ঠাঁই গাড়ে। বর্ষায় এক রাতের বৃষ্টিতে এই ঘিঞ্জি ঢাকা শহরকে দেখায় অর্ধেক শুকিয়ে যাওয়া প্রবালতটের মতো। আশুলিয়াতে বর্ষার জলের তোড়ে ডুবে যায় গৃহায়ন প্রকল্পের প্লট তো কোন ছাড়, বিলবোর্ডও। বর্ষার স্রোতের মতই মানুষ ধেয়ে আসছে নগরের দিকে, নগরায়ন তাই ছড়িয়ে পড়ছে কোন কিছু না ভেবে। চট্টগ্রামে খাল দখল শেষ করে আবাসন শিল্প জিভ বাড়িয়ে চেটে নিচ্ছে পাহাড়গুলিকে। ১২ই জুনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় কি কোন আবাসন শিল্পপতি জীবন্ত সমাধিস্থ হয়ে মারা পড়েছেন? উঁহু, বড়জোর তাঁর কোন বিলাসবহুল গাড়ি নষ্ট হয়েছে এনজিনে পানি ঢুকে। জলবায়ুর সাম্প্রতিক পরিবর্তন প্রথমেই প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশের মতো বদ্বৈপায়ন দেশগুলিতে। ওপরে হিমালয়ের হঠাৎ গলে যাওয়া হিমবাহের জলস্রোত পাহাড় ধ্বসিয়ে বয়ে আনবে পলি, ভাটিতে বাংলাদেশের নদীগুলো ভরাট হয়ে ঘন ঘন বন্যা দেখা দেবে, ঢাকা শহরের কুৎসিত কুপরিকল্পিত কংক্রীটের স্তুপ ডুবে থাকবে এক মানুষ পানির নিচে। কেবল তখনই হয়তো আবাসন শিল্পকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া যাবে, তার আগে নয়। কেবল ক্রমশ দীর্ঘায়মান “সাময়িক” জলাবদ্ধতাই নয়, নগর বিপন্ন হতে পারে ভূমিকম্প থেকেও। নগরকে কুপরিকল্পনার হাত থেকে রক্ষার কাজে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের কর্তাব্যক্তিরা লুণ্ঠনে সহযোগিতা না করলে এভাবে ধর্ষিত হতো না শহরগুলি। হোক জল, হোক মাটি, নগর নিরাপদ নয় কারো হাত থেকেই। সাভারে শাহরিয়ার টেক্সটাইল আর তেজগাঁয়ে ফীনিক্স ভবন ধ্বসের পর উদ্ধারকার্যের মন্থরগতিই বলে দেয়, এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা কতটা অসহায় হয়ে পড়বো। বাংলায় এক কালে বাঘা নদী ছিলো করতোয়া, যমুনা ছিলো একটা খাল (হয়তো ভরাট হয়ে যেতো বেচারী)। হিমালয়ের গোড়ায় ভূমিকম্প হবার পর ব্রহ্মপুত্রের স্রোত পরিবর্তিত হয়ে করতোয়া-পুনর্ভবা-টাঙনের মতো বিশাল নদীগুলোকে স্রোতরুদ্ধ করে হত্যা করে, আর তাদের জল লুণ্ঠন করে যমুনা হয়ে ওঠে তেজস্বিনী এক বিশাল নদী। কিন্তু নদীর মৃত্যু ঘটায় বিপন্ন হয়ে পড়ে গৌড়ের প্রধান নগর লক্ষণাবতী, নদীর খাতে জন্ম নেয়া জলাশয় পরিণত হয় মশার অভয়াশ্রমে, এবং সুপেয় পানির অভাব আর পতঙ্গের দৌরাত্ম্যে মৃত্যু হয় ঝলমলে নগর লক্ষণাবতীর। ইতিহাস পুনরাবৃত্ত হয় না, কিন্তু নিজের সাথে ছন্দ মেলায়, মার্ক টোয়েন বলেছিলেন। ঢাকার অদৃষ্টে কী আছে, কে জানে? ভূমিকম্পেরও প্রয়োজন নেই তার, আবাসন সংস্কৃতিই যথেষ্ঠ। মুহাম্মদ বখতিয়ার সতেরোজন সেনা নিয়ে কমান্ডো হামলা করে পরাক্রমশালী লক্ষণ সেনকে হটিয়ে দিয়েছিলেন। রাজধানী তো দূরের কথা, ভাতের থালাও রক্ষা করতে পারেননি নদীয়ার রাজা। তবে পালিয়ে নিজের প্রাণ রক্ষা করতে পেরেছিলেন। আমাদের আবাসন সংস্কৃতি পা টিপে টিপে এসে ঘিরে ধরেছে আমাদের, দুর্যোগের সময় লক্ষণ সেনের মতো সৌভাগ্য সবার না-ও হতে পারে।",False hm,"ভিনগ্রহী এপ্রিল ১৭, ২০০৩ তারিখে লেখা দেখতে পাচ্ছি। সচলায়তনে প্রথম প্রকাশিত, নাকি? পাঠকের কর্তব্য মন্তব্য করা। ‘আলবাত!’ গদাম করে একটা কিল বসালেন মামা পুরানো নড়বড়ে একটা টেবিলের ওপরে, যার এপাশে আমরা তিনজন বসে, আমাদের রোজকার সান্ধ্য গাড্ডায়, আমাদের পাড়ার গর্ব, সেই দি আদি তেলোত্তমা রেস্তোরাঁয়। তেলোত্তমার কর্ণধার, যে এককোণায় পড়ে থেকে কেবল টাকাপয়সা গোণে, সেই কলিমুদ্দি কাউন্টারের মোমবাতির আবছায়ায় বসে ঝিমুচ্ছিলো, কিলের শব্দে সে লাফিয়ে উঠে চারপাশে খোঁজ করতে লাগলো কী যেন, বোধহয় ভেবেছে তার দোকানে বুশ-ব্লেয়ারের বোমা এসে পড়েছে। ‘ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে!’ গর্জে উঠলেন মামা। আমাদের তিনজনের ছয়টা হাতে একটা বিদেশী পত্রিকা পালাক্রমে ঘুরছিলো, যেটাতে অনেক তথ্য এবং ছবি বিশ্লেষণ করে ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা সম্পর্কে ব্যাপক তুলো ধুনে দেয়া হয়েছে। কবে কোন গ্রহে খাল পাওয়া গেছে, যেখানে নাকি ভিনগ্রহী প্রাণীরা গন্ডোলা চালাতো, কোন উপগ্রহে দানবাকৃতি পায়ের ছাপের ফসিল পাওয়া গেছে, তার মানে বড় গোছের কোন ভিনগ্রহী সেখানে আদ্যিকালে ব্যাপক হাঁটাহাঁটি করেছে, বহুদূর থেকে বিচিত্র সব রেডিও সিগন্যাল এসেছে পৃথিবীতে, এর মানে হচ্ছে ভিনগ্রহীরাও পল্লীগীতি আর সাবানের বিজ্ঞাপন শোনে --- ইত্যাদি। কিন্তু কোন বিজ্ঞজনোচিত বিশ্লেষণের ধারেকাছে না গিয়ে কেন মামা এমন অন্ধের মতো ঘুষোঘুষি শুরু করে দিলেন, সেটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কানাঘুষা চলতে থাকে। আমাদের সেই বিজবিজের মধ্যেই মামা আবার হুঙ্কার দ্যান, ‘শুধু তাই না, তারা পৃথিবীতে প্রায়ই আসে!’ এবার আমাদের কেমন কেমন যেন লাগে। এটা কি একটু বেশি বাড়াবাড়িই হয়ে যায় না? ভিনগ্রহীদের আনাগোনা নিয়ে অতটা নিশ্চিত হওয়াটা কি মামাকে সাজে? তাদেরকে ভিনগ্রহের আঙিনাতে চরতে দেয়াই কি শ্রেয় নয়? খাল কেটে কুমীরকে আপ্যায়ন করা কি অনুচিত নয়? আর এ কথা রটে গেলে উন্নত বিশ্বের চোখে আমাদের ভাবমূর্তিরই বা কী হবে? দাতারাই বা কী বলবেন? মামা এবার পাগলাটে চেহারা করে হাসেন। ‘এমনকি,’ ধোঁয়া ছাড়েন তিনি, ‘--- আমাদের পরিচিত অনেকেই হয়তো ভিনগ্রহ থেকে আমদানি করা!’ পরিচিতদের নামে এমন ধোঁয়াটে কুৎসা রটানোয় এবার আমরা চেতে যাই। ‘বললেই হলো!’ গর্জে ওঠে শিবলি। আমি আর রেজা মুখে আলুপুরি গুঁজে দিয়ে ওর হুঙ্কারে শামিল হই। মামা হাসেন। ‘ওরে মুখ্যুরা, বিশ্লেষণ করতে শেখ!’ শ্লেষ মেশানো গলায় বলেন তিনি। আমরা ঘাবড়াই না। ‘যেমন?’ ‘ভিনগ্রহীদের তো আর চেহারা দেখে তফাৎ করতে পারবি না, তাই না? তারা যখন উদ্যোগ নিয়ে এতো এতো আলোকবর্ষ পেরিয়ে পৃথিবীতে আসতে পেরেছে, নিশ্চয়ই সামান্য মানুষের রূপ ধরে ঘোরাঘুরি করার সামর্থ্য তাদের আছে। যে রাঁধতে জানে, সে কি আর চুল বাঁধতে জানবে না?’ সিরিয়াস চেহারা করে বলেন মামা। ‘তারা নিশ্চয়ই তাদের ওই উদ্ভট সিড়িঙ্গে পোকামাকড়ের মতো চেহারা নিয়ে মানুষের সমাজে মিশতে চাইবে না। চাক্কা সাবান ফোটো সুন্দরীদের মতো চালচলন নিশ্চয়ই তাদের মানাবে না, তাই না? --- তাদের চেহারা, আকার, সবই হবে সাধারণ মানুষের মতো। কিন্তু তাদের আচরণের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য, যা আমাদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হতে বাধ্য, সেসব থেকেই তাদেরকে আলাদা করে চেনা সম্ভব।’ এমন ধোঁয়াটে কথাবার্তার পরও আমরা ঘাবড়াই না। ‘যেমন?’ ‘যেমন ধর  তোরা কেউ আমাদের পাড়াতুতো গোয়েন্দাটাকে পানি খেতে দেখেছিস?’ এবার আমরা ঘাবড়ে গিয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করি। ‘গুল মোহাম্মদ ভাই?’ আমতা আমতা করে বলি আমি। ‘না তো --- কেন?’ মামা চেয়ারে হেলান দেন। ‘এই তো --- এখানেই তোদের স্থূল মগজ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। চাঙা কর সেটাকে, চাবি ঘোরা, স্টার্ট দে, দরকার হলে লাথি মার! গাধার দল, বিশ্লেষণ করতে শেখ! --- কেন আবার? গুল মোহাম্মদ পানি খায় না!’ আমি কথাটা মানতে পারি না। স্থূল মগজের ওপর উপরোক্ত অত্যাচারগুলো না করেই আমি বলি, ‘আমরা কেউ পানি খেতে দেখিনি বটে, কিন্তু তার মানে এই না যে গুল মোহাম্মদ ভাই পানি খায় না। আমরা তো তাকে বাথরুমও করতে দেখিনি, তাই বলে কি তার “বড় বাইরে” পায় না?’ বিশ্লেষণ করি আমি। মামা অসন্তুষ্ট ভঙ্গিতে মাথা নাড়েন। ‘আরে গাধা, ওটা তো রেখে ঢেকে পাওয়ার জিনিস। পাড়ার লোককে দেখিয়ে বড় বাইরে পাওয়ার নমুনা তো পাড়ার পাগলটারও নেই। পানি খাওয়ার কথা আলাদা। লোকে হরদম পানি খায়, নইলে চা খায়, নইলে অন্য কিছু খায়। ধর, খুব গরমেও যখন লোকে ঢকঢক করে ডাব খায়, পানি খায়, কোক খায় --- বেল আর আখের শরবত খায়, তখনও গুল মোহাম্মদ কোন কিছু পান করে না! টিকিটিকি যেমন পানি না খেয়ে থাকে, গুলুও তেমনি পানি না খেয়ে থাকে।’ আমরা এবার আরো ঘাবড়ে যাই। তাই নাকি? গুল মোহাম্মদের পানাভ্যাসের ব্যাপারে রেজা কিংবা শিবলিকেও খুব একটা নিশ্চিত দেখায় না, অর্থাৎ তাকে কখনো গুলঞ্চি বার অ্যান্ড রেস্তোরাঁতেও দেখা যায়নি। কাজেই আমরা একযোগে আমতা আমতা করতে থাকি। আমি তবুও দুর্বল একটা যুক্তিকে সেটার নিজের পায়ে দাঁড় করাতে চাই, গুলঞ্চি ছাড়াও অনেক বার আছে ঢাকা শহরে। ‘গুল মোহাম্মদ ভাইয়ের যা চালচলন, এমনও তো হতে পারে, সে পাঁড় মাতাল, বাংলা-কেরু-ধেনো ছাড়া আর কোন কিছু তার মুখে রোচে না --- হতে পারে না এমনটা?’ মামা মুচকি হেসে জানান, গুল মোহাম্মদকে সেসবও কখনো পান করতে দেখা যায়নি। কে জানে, কথাটা সত্যি হতেও পারে, কারণ আমিও তাকে কখনো বোতলবিলাসিতা করতে দেখিনি। শিবলি হঠাৎ বিড়বিড় করে বলে, ‘ঐ যে আসছে গুলু! দ্যাখ দ্যাখ!’ আমরা ঝট করে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি, আসলেই তো, সামনে রাস্তায়, গুল মোহাম্মদ মাথায় একটা তেলতেলে সবুজ টুপি আর কাঁধে একটা এই-সাবানের-যুগে-অযথা-ময়লা ঝোলা চাপিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে খুবই সন্দেহজনক ভঙ্গিতে কলিমুদ্দির দোকানের দিকে এগিয়ে আসছে। চলতে চলতে সে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে কি যেন দেখলো, তারপর আবার পা টিপে টিপে এগিয়ে এলো। রেজা বললো, ‘মনে হয়, ব্যাটা এখানেই আসবে।’ আমি হঠাৎ এবার মামাকে বহুদিন পর বাগে পেলাম। ‘ঠিক আছে মামা, দেখি আপনার বিশ্লেষণের জোর। গুলু ভাই যদি এখন পানি না খায়, তাহলে সে যে পানি খায় না, কথাটা মেনে নেবো আমি।’ শিবলি মাথা দোলায়, ‘আমিও।’ রেজা চোখ গরম করে আমার দিকে তাকায়, তারপর ‘আমারও মনে ছিলো এ ভাবনা, ব্যাটা কেমনে পারিলো জানতে’ গোছের একটা ভঙ্গি করে সায় দেয়। মামা রাজি হন, নিঃশব্দে। গুল মোহাম্মদ দোকানের পাশ দিয়ে চলে যায়, ভেতরে ঢোকে না প্রথমটায়। তারপর হঠাৎ পিছিয়ে এসে সট করে দোকানে ঢুকে পড়ে সে। দোকানের ভেতরটায় একবার জুলজুল করে চোখ বুলিয়ে নিয়ে একেবারে ভেতরে এক কোণায় গিয়ে বসে, তারপর টুশকি দিয়ে বেয়ারা জুম্মনকে ডাকে। আমরা আড়চোখে চেয়ে থাকি। পরবর্তী দশ মিনিটে গুল মোহাম্মদ এদিক ওদিক তাকিয়ে গোয়েন্দাসুলভ রহস্যময় ভঙ্গিতে চপাচপ গোটা আষ্টেক আলুপুরি শেষ করে ফ্যালে, তারপর ঝোলা থেকে একটা নোটবই গোছের কি একটা বের করে হিজিবিজি কাটে, তারপর সেটাকে আবার ঝোলাবন্দি করে, হাতের উল্টোপিঠে মুখ মুছে বিকট একটা ঢেঁকুর তুলে সে আবারো চারপাশটায় নজর বুলিয়ে নিয়ে চোরের মতো পা টিপে টিপে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় কলিমুদ্দিকে কী একটা ইশারা করে সে, কলিমুদ্দি একটা বিশাল জাবদা খাতা বিরস মুখে খুলে কী যেন লিখতে থাকে। কিন্তু মামার কথা ঠিক, গুল মোহাম্মদ পানি খায়নি। আটদশটা পুরি খেলে যে পরিমাণ পিপাসা পাওয়ার কথা, তাতে এক লিটার পানি খাওয়াটাও বিচিত্র কিছু নয়। আর ব্যাটা দিব্যি পানি না খেয়ে গটগটিয়ে বেরিয়ে গেলো? গুল মে কুছ কালা হ্যায়। শিবলি মাথা নাড়ে, ‘গুলু ভাই পানি খায় না!’ রেজা সায় দেয়। আমি তবু অবিশ্বাসীদের দলে থেকে যেতে চাই, ‘হয়তো সে খুব স্বাস্থ্যবাতিকঅলা। থাকে না কিছু লোক? বাড়ির বাইরে ফোটানো পানি ছাড়া পানি খায় না --- এমনই হয়তো?’ মামা বিকট চেহারা করে আমার দিকে তাকান, কিন্তু রেজা মীরজাফরের মতো পোঁ ধরে, মামাকে মুখ খুলতে দেয় না সে, নিজেই ফোঁপরদালালের মতো ফরফর করে ওঠে, ‘সে ধরনের লোকেরা কখনো বাড়ির বাইরে পুরি খায় না রে বোকচন্দর --- আর তারা নিজেদের সাথে সবসময় ফোটানো পানির গ্যালন বয়ে বেড়ায়।’ মামা একটা সন্তুষ্ট হাসি দ্যান। আমি মনমরা হয়ে বলি, ‘আচ্ছা মানলাম, গুল মোহাম্মদ পানি খায় না।’ বলতে বলতেই আমার চোখ পড়ে টেবিলের ওপর পড়ে থাকা ম্যাগাজিনটার দিকে, আর মনে পড়ে যায় আমরা কী নিয়ে কথা বলছিলাম। ‘কিন্তু গুল মোহাম্মদের পানি খাওয়া না খাওয়ার সাথে ভিনগ্রহে প্রাণের কি সম্পর্ক?’ মামা আবার চটে যাওয়া ভাবটা চেহারায় আমদানি করেন। ‘বিশ্লেষণ!’ খেঁকিয়ে ওঠেন তিনি। শিবলি নাক গলায়, ‘আপনি কি বলতে চান, গুল মোহাম্মদ একজন এলিয়েন?’ মামা আঙুল খাড়া করেন, ‘এগজ্যাক্টলি!’ রেজা আবার মামার দালালি করতে থাকে, হতভাগাটা, ‘হয়তো গুল মোহাম্মদ এমন কোন গ্রহ থেকে এসেছে, যেখানে পানি নেই। হয়তো পানি জিনিসটা ঐ গ্রহের জীবদের জন্যে খুবই ক্ষতিকারক, হয়তো পানি খেলে তাদের জটিল কোন ব্যারাম হয় --- হয়তো তারা এ কারণে পানিকে এড়িয়ে চলে!’ মামা আবার মাথা দোলান। ‘এগজ্যাক্টলি!’ রেজা হাঁক দেয়, ‘জুম্মন, পুরি আন তো!’ মামা আপত্তি করেন না। গুল মোহাম্মদকে ভিনগ্রহী ভাবতে আমার কোন আপত্তি নেই, সে তো আমার তালুই নয়, কেন তার হয়ে বৃথা ওকালতি করে যাবো? তাছাড়া লোকটার কাজকারবারও তো ঠিক পৃথিবীর মানুষের মতো নয়। সবসময় কাঁধে ঝোলা, মাথায় টুপি, চোরের মতো হাবভাব ---। শিবলিও সুর তোলে, ‘হ্যাঁ, লোকটা যেন কেমন ---।’ পুরি দিকে হাত বাড়ায় সে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। একটা পুরি তুলে নিয়ে গালে দিয়ে বলি, ‘কোন গ্রহ থেকে এসেছে এই ব্যাটা? কি মামা, আপনার কী ধারণা? নেপচুন? ইউরেনাস?’ মামা মাথা নাড়েন, ‘সৌরজগতের কোন গ্রহ না-ও হতে পারে। সৌরজগতের বাইরেও অনেক গ্রহ রয়েছে, সেখান থেকে আসতে পারে। তাদের মানা করার কেউ তো নাই ---।’ আমরা এই বহির্জাগতিকদের আনাগোনায় চিন্তিত হয়ে বিমর্ষ মুখে পুরি চিবাই। গুল মোহাম্মদের ওপরে মেজাজটা বিষিয়ে যায় আমার। ব্যাটা ফাজিল, ঘরবাড়ি ছেড়ে অ্যাতো দূরে এসে ঘাঁটি গেড়েছে, আবার গোয়েন্দা সেজে মশকরা করা হচ্ছে! মামা ফুস করে বিড়ির ধোঁয়া ছেড়ে বলেন, ‘আর, কলিমুদ্দিকে হিসাব থেকে বাদ দিচ্ছিস কেন তোরা?’ আমরা প্রায় বিষম খাই। ‘কলিমুদ্দি? সে-ও পানি খায় না?’ সাথে সাথে ঘাড় ফিরিয়ে দেখি কলিমুদ্দি বিশাল একটা মগে করে চুকচুক শব্দে চা খাচ্ছে। মামা হাসেন। ‘আরে গাধা, মাছের আলু আর মাংসের আলু এক করে ফেলিস না। কলিমুদ্দি পানি খায়। কিন্তু ---’, বিড়িটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখেন মামা, ‘--- পুরি খায় না!’ আমরা তাজ্জব বনে যাই। মনে করার চেষ্টা করি, আসলেই কলিমুদ্দিকে কখনো পুরি খেতে দেখেছি কি না। পুরি হাতে, কিংবা পুরি মুখে কলিমুদ্দি, আমাদের সেই মধুর দৃশ্য স্মরণে আসে না। নদী কভু নাহি করে নিজ জল পান। কলিমুদ্দি তাই নিজ পুরি নাহি খান? একটা সমাধানের জন্যে আমরা চুপচাপ তাকিয়ে থাকি মামার দিকে, নিজেদের মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা স্থূল মগজগুলোকে আর খাটাতে ইচ্ছে করে না। মামা ভুরু নাচান। ‘কী বুঝলি?’ রেজা গড়গড়িয়ে বলতে থাকে, ‘কলিমুদ্দি এমন কোন গ্রহ থেকে এসেছে, যেখানে পুরি খুব খতরনাক জিনিস।’ আমি আবার বিদ্রোহ করি, ‘তাহলে ও পুরির ব্যবসা করে কেন?’ রেজা দাঁত খিঁচিয়ে বলে, ‘ছদ্মবেশ, গাধা কোথাকার!’ শিবলি সম্মতি দিয়ে আরেক প্লেট পুরির জন্যে জুম্মনকে ডাকে। মামা এবার জুম্মনের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকান, চোখে কঠোর ঢুলুঢুলু দৃষ্টি। তারপর কোন কথা না বলে একখানা সপ্রশ্ন ইঙ্গিতচুকচুকে দৃষ্টি ঝাড়েন আমাদের দিকে। জুম্মন কী খায় না? জুম্মনকে আমি পুরি চিবাতে দেখি প্রায়ই, আর সেদিন দেখলাম খুব ডাঁটে একখানা হলুদ প্লাস্টিকের সানগ্লাস চোখে এঁটে টম ক্রুজের মতো ভাব নিয়ে টেরচা হয়ে দাঁড়িয়ে পাড়ার দোকান থেকে কোলা কিনে খাচ্ছে। তাহলে? সশব্দে ভাবতে থাকি। মামা গম্ভীর হয়ে আমার ভাবনার জবাবে বলেন, ‘জুম্মন ইকোলোকেশন করতে পারে।’ আমার তো দাঁতকপাটি লেগে যাওয়ার যোগাড়। ইকোলো--- কী যেন? মামা আবার বলেন, ‘ইকোলোকেশন  ধ্বনিনির্দেশ। মানে বুঝলি না? শব্দের মাধ্যমে কোন বস্তুর অবস্থান নির্ণয়। বাদুড় যা করে, তিমি-ডলফিন যা করে, উচ্চ কম্পাঙ্কের শ্রবণোত্তর শব্দতরঙ্গের প্রতিফলিত রূপ বিশ্লেষণ করে বস্তুর প্রকৃতি ও অবস্থান বুঝে ফেলতে পারে, রাডারের মতো --- সোজা বাংলায়, জুম্মন অন্ধকারে দেখতে পায়।’ জুম্মনের এই চমকপ্রদ বিজ্ঞানজর্জর ক্ষমতায় --- যার সাথে খাওয়াদাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই, যা পানি ও পুরি থেকে একেবারেই মুক্ত --- আমাদের তাক লেগে যায়, আর মামার এই জটিল বক্তৃতায় আমার মাথা ঘুরতে থাকে। কিন্তু যথারীতি আমি গলা উঁচাই, ‘আপনি বুঝলেন কিভাবে?’ মামা হাসেন, আর মাথায় টোকা দেন, অর্থাৎ, বিশ্লেষণ। ‘দাঁড়া, হাতেনাতে প্রমাণ করে দেখাই। অ্যাই জুম্মন,’ হাঁক ছাড়েন তিনি, জুম্মন কাছে এসে দাঁড়াতেই বললেন, ‘ঐ কোণা থেকে আমাকে একটা কাঁচের গ্লাস এনে দে তো। খবরদার, ইস্টিলের গ্লাস আনবি তো থাপ্পড়!’ আমরা কলিমুদ্দির কাউন্টারের মোমবাতি থেকে বহুদূরে, সভ্যতার আলো বিবর্জিত মিশমিশে অন্ধকারে ডুবে থাকা দোকানের কোণাটার দিকে তাকিয়ে থাকি। জুম্মন সেখান থেকে নিমেষের মধ্যে একটা ময়লা সবজেটে কাঁচের গ্লাস ছোঁ মেরে নিয়ে আসে। মামা সেটা হাতে নিয়ে মিষ্টি করে হাসেন। আর রেজা, নির্লজ্জ চাটুকারের মতো, মামার সমর্থনে ফিজিক্সের ঠাকুরমার ঝুলি খুলে বসে। ‘কাঁচ আর স্টিল, দু’টার বৈশিষ্ট্য দু’রকম। কাঁচ যেভাবে আলট্রাসোনিক ওয়েভকে প্রতিফলিত করবে, স্টিল সেভাবে করবে না। কাজেই অন্ধকারেও জুম্মন ঠিকই বুঝে ফেলেছে কোনটা কি। সে হাতড়ে বেড়ায় নি, যেমনটা হয়তো একজন পৃথিবীবাসী করতো --- স্পর্শের মাধ্যমে, কিংবা ওজনের আন্দাজে বোঝার চেষ্টা করতো আগে, কোনটা কাঁচ আর কোনটা ইস্পাত। যেহেতু জুম্মন ইকোলোকেশনে সক্ষম, সে একবারেই গোটা কাজটা নিখুঁতভাবে করে ফেলেছে --- হাতড়ায়নি, হোঁচট খায়নি, সময় নষ্ট করেনি। খুব সম্ভবত জুম্মন যে গ্রহ থেকে এসেছে, সেখানে দৃশ্যমান আলোর পরিমাণ খুব কম, যেখানে শব্দতরঙ্গ দিয়েই বাদুড়ের মতো দেখার কাজ করতে হয় ---।’ আমি আর শিবলি শিউরে উঠি, খানিকটা জুম্মনের খ্যামতার কথা ভেবে, আর খানিকটা রেজার তেলবাজ বুদ্ধিজীবী সাজার নমুনা দেখে, নিজের মগজটাকে লাথি মেরে মেরে একেবারে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটিয়ে আর খাটিয়ে বেড়াচ্ছে, ব্যাটা ফাজিল। আমার একবার মনে হলো, জুম্মন সেই আদ্যিকাল থেকে এই অন্ধকার দোকানে কাজ করছে, আর কয়টা গ্লাসই বা আছে এখানে, সব তো ওর মুখস্থ হয়ে যাবার কথা, কিন্তু এ ব্যাপারে নিজের মুখ খোলার সাহস হলো না। ওদিকে মামা বিমল একটা হাসি দ্যান। ‘এগজ্যাক্টলি!’ একটা স্নেহমাখা দৃষ্টি উপহার দ্যান তিনি রেজাকে, আর আমার দিকে তাকান চোখটাকে লাল করে কটমটিয়ে। এমন ভিনগ্রহের আবহাওয়ায় আমরা পুরির স্বাদ হারিয়ে ফেলি, কেমন যেন লাগে সেটা। পুরির স্বাদের সাথে জড়িত এক ও অদ্বিতীয় সুরেশ কারিগরের কথা মনে পড়তেই আমরা ঝট করে ঘাড় ফিরিয়ে তার দিকে তাকাই। সুরেশ একমনে পুরি ভাঁজছে, আর মাঝে মাঝে গাঁজার কল্কি তুলে দম দিচ্ছে। আমরা এবার মামার দিকে তাকাই একযোগে। মামা হাসেন। ‘এই তো লাইনে এসেছিস। সুরেশও।’ রেজা কিন্তু এইবার তেলের শিশি হারিয়ে ফেলে। ‘কী করে সুরেশ?’ ‘সুরেশের গাঁজার গন্ধ পেয়েছিস কখনো?’ মামার গাঁজাগুরি গপ্পের ঠ্যালায় সুরেশের কল্কিস্থ গাঁজার হদিশ পাইনি আমরা অ্যাদ্দিন, কিন্তু আজ এতো কিছু ঘটে যাচ্ছে, আমরা তার সাথে তাল মেলানোর জন্যেই নাক উঁচিয়ে নিঃশ্বাস নেই। নাহ, কিছু নেই। শুধু আলুপুরির মনপ্রাণ চাঙা করা গন্ধ, আর মামার বিড়ির উৎকট ঝাঁঝ। ‘গাঁজার গন্ধ তো বেশ কড়া, অথচ সুরেশের কল্কি থেকে কোন গন্ধ আসে না। তার মানে কী?’ মামা জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখেন। ‘তার মানে এটা গাঁজা না?’ এবার আমি মুখ খুলি। ‘কখনোই না।’ মামা মাথা নাড়েন। ‘নিশ্চয়ই এটা এমন কোন পদার্থ, যেটা পুড়িয়ে এমন কোন গ্যাস বেরোয়, যার কোন গন্ধ নেই, আর যেটা না নিলে সুরেশ বসাক পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে টিকতে পারবে না!’ রেজাও টেবিলে কিল মারে, চামচা কাঁহিকা। ‘ঐ কল্কি ছাড়া সুরেশ শ্বাস নিতে পারবে না, আর এর জন্যেই ওকে কখনো কল্কি ছাড়া দেখা যায় না!’ বিশ্লেষণের চূড়ান্তে পৌঁছে যায় সে, এবং আলগোছে আরেক প্লেট পুরির অর্ডার চলে যায় ইকোলোকেশনের তত্ত্বাবধানে, মানে জুম্মনের কাছে। আমরা নিজেদের বিশ্লেষণ, এবং কখনো কখনো মামার পথনির্দেশনায় পরবর্তী আধঘন্টায় আরো অনেক ভিনগ্রহীকে সনাক্ত করি। কনস্টেবল বাচ্চু মিয়া, যে কি না হঠাৎ হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে, এবং মাঝে মাঝে বহুদূরে চলে যেতে পারে নিমেষের মধ্যে। টেলিপোর্টেশন, নাম জুগিয়েছে রেজা। এর খুব কড়া উদাহরণও রয়েছে হাতে। পাড়ায় রাতে টহল দেয়ার দায়িত্ব বাচ্চু মিয়ার, কিন্তু কাজের সময় তাকে কখনোই দেখা যায় না, অতএব অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ক্ষমতাকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। আর গত পরশুদিন মাঝরাতে চোর ধরা পড়েছে নান্টুদের বাড়িতে, নান্টুরা সেই চোরকে একদফা কচুয়া ধোলাই দিয়ে বেঁধে রেখে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাকে সোপর্দ করার মতলবে বাচ্চু মিয়ার খোঁজে বেরিয়েছিলো। নিয়মানুযায়ী এই পাড়ার গন্ডির মধ্যেই তাকে খুঁজে পাওয়ার কথা, কিন্তু নান্টু আর নান্টুর বড় ভাই তাকে বহুদূরে, চল্লিশ মিনিট খোঁজাখুঁজির পর পাশের মহলার একটা পানের দোকানের সামনে কাচ্চু খেলারত অবস্থায় খুঁজে পেয়েছে। ডিউটি ফেলে পাশের পাড়ার ক্রীড়াজগতে অনুপ্রবেশের অভিযোগ করায় বাচ্চু মিয়া অম্লানবদনে জানিয়েছে, সে দু’মিনিট আগেও পাড়ার মোড়ে টহল দিচ্ছিলো। টেলিপোর্টেশনের এমন টাটকা আর মজবুত নমুনা আর বোধহয় পাওয়া যাবে না। সাংবাদিক বদিউল হুদাও এমনি আরেক ভিনগ্রহী। তাকে আজ পর্যন্ত কেউ ক্যামেরায় ফিল্ম কিংবা ব্যাটারি রিলোড করতে দেখেনি। যদিও বদিউল হুদা একবার ছবি তোলা শুরু করলে শ’খানেকবার ক্যামেরা নিয়ে টেপাটেপি না করে থামে না, কিন্তু তাকে কেউ নিজের চোখে ফিল্ম পাল্টাতে দেখেনি, ব্যাটারিও না। অথচ তার ছবি ঠিকই পত্রিকায় ছাপা হয়। তার এই ক্ষমতার জন্যে রেজা কোন শব্দ অবশ্য খুঁজে পায়নি, কিন্তু আমরা মেনে নিয়েছি, যা-ই হোক না কেন। মামা আমাদের হাত থেকে ম্যাগাজিনটা ছিনিয়ে নিয়ে, সেটাকে নিজের ব্যাগে পুরে, উঠে দাঁড়ালেন। ‘এইসব ছাইপাঁশ না পড়ে একটু বিশ্লেষণ করতে শেখ।’ শেষবারের মতো আমাদের মগজের বদনাম গেয়ে বিল মিটিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে যান তিনি, বিড়ি টানতে টানতে। আমি আর শিবলি তারপর বিশ্লেষণ করতে বসি। এরকম গাঁজাখুরি গল্পে সায় দিয়ে যাবার অসাধারণ ক্ষমতার জন্য প্রথমেই রেজাকে সনাক্ত করলাম বহুদূরে তেলচুকচুকে কোন গ্রহের বাসিন্দা হিসাবে, যাদের তেলের ভান্ডার কখনো ফুরোয় না। এতক্ষণ দিব্যি মামার চাপায় ঝাড়ি জোগাচ্ছিলো ব্যাটা, তাই আমরা দু’জনে বাগে পেয়ে কষে গালমন্দ করতে থাকি ওকে। ক্ষমতাসীন মন্ত্রী মাজনুল দুহা যেভাবে রাজাকারদের তেল দিয়ে বেড়ান, সেই ঘৃণ্য আচরণের সাথে রেজার চাটুকারিতার তুলনা দিই আমরা। রেজা প্রথমটায় কিছু বলে না, খানিকক্ষণ গুম হয়ে থেকে আমাদের ঝাড়ি শোনে, তারপর হঠাৎ খুব কাতর গলায় বলে, যেমনটা বহুদূরের তেলুয়া গ্রহের লোকজনের মুখে মানায়, ‘আচ্ছা, তোরা কি কেউ মামাকে বিড়ি ধরাতে দেখেছিস?’ আমি হাসি। ‘বেকুব পেয়েছিস আমাকে? রোজ ভুস ভুস করে বিড়িসিগারেট টানে ব্যাটা!’ রেজা চিন্তিত মুখে বলে, ‘উঁহু, সেটা বলছি না। সিগারেট তো সে খাচ্ছেই সমানে, এই এতক্ষণেই তো অনেকগুলো খেলো, কিন্তু কখনো তাকে বিড়িতে আগুন ধরাতে দেখেছিস?’ এবার আমরা একটু টলে উঠি। তাই তো, দেখেছি কি? মামার হাতে আগুন, আগুনের মুখে বিড়ির ডগা, এমন কোন দৃশ্য? আমাদের মনে পড়ে না। রেজা পাংশু মুখে বলে, ‘আচ্ছা শোন, এখানেই আশেপাশে তো একগাদা ম্যাচের পোড়া কাঠি পড়ে থাকার কথা, তাই না? চল খুঁজে দেখি।’ আমার আমাদের চারপাশে আবছা অন্ধকারের দিকে তাকাই। এর মধ্যে কিভাবে ম্যাচের পোড়া কাঠি খুঁজে বের করবো? কিন্তু অন্ধকার আমাদের তদন্তের জন্যে কোন সমস্যা নয়। রেজা হাঁক ছাড়ে, ‘অ্যাই জুম্মন, দ্যাখ তো, এখানে আশেপাশে ম্যাচের কাঠি আছে কি না?’ জুম্মন হেলেদুলে কাছে আসে, উবু হয়ে চারপাশের ঘন অন্ধকারে মনোযোগ দিয়ে দ্যাখে, কী দ্যাখে ও-ই জানে, তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একটা বেকুবমার্কা হাসি দেয়। ‘না বাইজান, নাই তো!’ জুম্মনের ইকোলোকেশনে সন্তুষ্ট হয়ে রেজা বিড়বিড় করে, ‘মনে হয়, মামা এমন কোন গ্রহ থেকে এসেছেন, যেখানকার প্রাণীরা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো যেকোন জিনিসের একটা বিশেষ অংশের তাপমাত্রা অনেকখানি বাড়িয়ে দিতে পারে, বুঝলি? এতো বেশি তাপমাত্রা যে জিনিসটার ঐ অংশে আগুন ধরে যায় --- মাইক্রোওয়েভ দিয়ে যেমনটা করা যায় ---।’ তারপর আরো কী কী সব বকতে থাকে সে। আমি আর শিবলি আনন্দিত চিত্তে এ প্রস্তাবে সায় দিই। মামা নিঃসন্দেহে এই গুলচাপা শুনিয়ে শুনিয়ে রেজার মাথাটার তাপমাত্রা অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়ে গেছেন। তাই ওর গরম মাথাটা মামার বিড়ির মতো জ্বলে ওঠার আগেই আমরা পাশের টেবিল থেকে এক জগ পানি নিয়ে রেজার মাথায় চটজলদি ঢেলে দিই।",False rg,"আমাদের আর কতো দীপকে হারালে নষ্ট-ভ্রষ্ট রাজনীতি বাংলাদেশ থেকে মুছে যাবে।। রেজা ঘটক সন্দেহভাজন হেফাজতকর্মীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিত্সাধীন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আরিফ রায়হান দীপ আজ মঙ্গলবার ২ জুলাই ২০১৩ তারিখে ভোর রাত সাড়ে তিনটায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মারা যায়। গত ৯ এপ্রিল ২০১৩ বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলে আরিফের মাথায় ও পিঠে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। আরিফ রায়হান দীপ বুয়েটের মেকানিকাল (যন্ত্রকৌশল) ডিপার্টমেন্টের নবম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও বুয়েট ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এবং বুয়েটের কবি নজরুল ইসলাম হলের ২২৪ নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন দীপ। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা গত ১৭ এপ্রিল বুয়েটের মেজবাহউদ্দীন নামের এক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। মেজবাহ বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি এম রশীদ হলের ৩০১ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা। মেজবাহ হেফাজতের সমর্থক বলে ডিবি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় দীপের ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় মেজবাহকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ডিবি কর্মকর্তারা দাবি করেন, জিজ্ঞাসাবাদে মেজবাহ বলেছেন, গত ৬ এপ্রিল ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশে আসা লোকজনকে খাবার সরবরাহ করায় একটি হলের মসজিদের ইমামকে মারধর করে পুলিশে দিয়েছিলেন দীপ ও তাঁর বন্ধুরা। এ জন্যই তিনি দীপের ওপর হামলা চালান। উল্লেখ্য, গত ৫ এপ্রিল রাতে শহীদ স্মৃতি হলের মসজিদের ইমাম হলের বাবুর্চিদের দিয়ে খিচুড়ি রান্না করিয়ে মতিঝিলে অবস্থানরত হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের জন্য পাঠান। তখন দীপসহ কয়েক শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ করেছিলেন। ওই রাতেই শিক্ষার্থীরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পরিচালক দেলোয়ার হোসেনকে জানান। পরে ইমাম আব্দুল আলিমকে সাময়িক বরখাস্ত করে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয় প্রশাসন। বুয়েট ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আমিনুল হক পলাশ বলেন, “ইমাম বরখাস্ত হওয়ার পর থেকেই বুয়েট শিক্ষার্থীদের একটি ফেসবুক গ্রুপ ‘বুয়েটিয়ান’ এ কিছু শিক্ষার্থী দীপকে নিয়ে আজেবাজে লেখালেখি শুরু করে। ইমামের বরখাস্তের পিছনে দীপের হাত রয়েছে বলেও প্রচার চালাতে থাকে তারা। এ সময় অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে দীপকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। এরই এক পর্যায়ে গত ৯ এপ্রিল সকাল ১১ টার দিকে নজরুল ইসলাম হলের ছাত্র দীপকে হলে ঢুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে মাথায় ও পিঠে গুরুতর জখম হন দীপ। তখন তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর এস এম নজরুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, আরিফের মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। একজন শিক্ষার্থীকে আরেকজন শিক্ষার্থীকে এভাবে আঘাত করে মেরে ফেলতে পারে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আরিফের উন্নত চিকিত্সার জন্য তাঁকে ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং সে অনুসারে কাজও এগিয়েছিল। কিন্তু সকল রাজনীতির মাথায় থুথু মেরে আজ ভোর রাতেই দীপ চলে গেলেন অজানার দেশে। স্কয়ার হাসপাতাল থেকে দীপের লাশ প্রথমে বুয়েট ক্যাম্পাসে নেয়া হয়। বেলা ১০টার দিকে এম এ রশিদ ভবনের সামনে তার প্রথম জানাযা হয়। জানাযায় বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দীপের বাবা ও ভাইসহ আত্মীয়স্বজনদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। জানাযার পর তার লাশ গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে পাঠানো হয়। পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার তারাবুনিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে দীপকে দাফন করা হবে। বুয়েটের উপাচার্য রফেসর এস এম নজরুল ইসলাম আরও জানান, বুয়েটের নিজস্ব তদন্তেও দীপকে কুপিয়ে আঘাত করার জন্য মেজবাহকে দায়ী করা হয়। তদন্তের পর মেজবাহকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। এছাড়া ওই মসজিদের ইমামকেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওদিকে মেজবার ভগ্নিপতি আশরাফুজ্জামান প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, তাঁরা আপাতত মেজবার মামলাটি নিয়ে আইনি লড়াইয়ে যাবেন না। তাঁদের আশঙ্কা, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের আইনি লড়াইয়ে গেলে আরও সমস্যায় পড়তে হবে। মেজবাহ বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছেন। আশরাফুজ্জামান বলেন, মেজবাহ এ ঘটনায় দুঃখিত। তবে তিনি (মেজবাহ) মনে করেন, দীপকে কুপিয়ে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি তাঁর (দীপের) প্রাপ্য ছিল। বুয়েটে দোয়া ও মিলাদ: আরিফ রায়হান দীপের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আগামী ৫ জুলাই ২০১৩, শুক্রবার বুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদে বাদ আসর দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। দীপের বাড়ি আমার ইউনিয়নে পাশের গ্রামে: পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামে আরিফ রায়হান দীপের গ্রামের বাড়ি। মাঝখানে মরা বলেশ্বর। ওপারে আমার বাড়ি। দীপের বাবার নাম আজম আলী। মায়ের নাম স্বপ্না বেগম। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। আমার এলাকার অনেকেই বুয়েট থেকে পাশ করেছে। বুয়েটে একটা ছেলেকে পড়ানো যে কি পরিমাণ পারিবারিক ছাড় দিয়ে মা-বাবাকে ছেলের পড়ার খরচ যোগাড় করতে হয়, তা যাদের ছেলেমেয়েরা বুয়েটে না পড়ে তারা কোনোদিন বুঝবে না। গ্রামের একটি ছেলে বুয়েটে চাঞ্চ পাওয়া মানে শহরের হাজার হাজার সুবিধাভোগী ছাত্রছাত্রীদের মেধার জোড়ে হারিয়ে তবেই সেই সোনার হরিণ মেলে। দীপ তার মা-বাবা-র ইচ্ছে পূরণ করে সেই সোনার হরিণ ছিনিয়ে নিতে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিল। আর আজ সেই দীপ নিভে গেল! এটা যে কি পরিমাণ কষ্টের আর বেদনার তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। মেজবাহ নামের যে ছেলেটি দীপকে কুপিয়েছিল, সেও বুয়েটের ছাত্র। তবে মৌলবাদীদের মন্ত্রে বখাটে এক অন্ধ। মেজবাহ বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও জাতে অন্ধ এক মৌলবাদী পিচাশ। ডিবি পুলিশের কাছে তার স্বীকারোক্তি থেকেই বোঝা যায়, আরেকজন মেধাবী ছাত্রকে কুপিয়ে সে মোটেও অনুতপ্ত নয়। কারণ, ধর্মের নামে রাজনীতির যে ভুল দর্শনে মেজবাহ অন্ধ সেই দর্শনের জোড়েই সে এখনো মনে করছে, যা করেছে ঠিক করেছে। মেজবাহ'র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। দ্রুত আদালতে এই নরঘাতকের যতো দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে ততো দ্রুত দীপের আত্মা শান্তি পাবে। বাংলাদেশে রাজনীতি কোন পথে? আওয়ামী লীগ নের্তৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় এসেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে এই কথা বলে। কিন্তু তারা নানান তালবাহানা করে বিচার কার্য ঝোলাতে ঝোলাতে সাড়ে চার বছর পার করেছে। অবস্থা দেখে মনে হয় তারা আগামী নির্বাচনেও একই ধুয়া তুলে ভোট চাইতে যাবেন। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি কেন তারা বন্ধ করে না? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেন ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে তামাশা করা হচ্ছে? চার সিটি কর্পোরেশানের নির্বাচনে হারার পরেও আওয়ামী লীগের হুশ হয় নি। মানুষের বিবেকের যখন মৃত্যু হয় তখন নাকি তাদের কোনো হুশই থাকে না। বাংলাদেশের রাজনীতির বিবেকরে অনেক আগেই মৃত্যু ঘটেছে। গরিব মেধাবী ছাত্রদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে ক্ষমতায় যাওয়ার পুরানো থিউরি আর কাজ দেবে না। ধর্ম নিয়ে খেলাও কোন শুভ ফল বয়ে আনবে না। শাহবাগের গণ-জাগরণ বিপ্লবের বিরুদ্ধে যখন জামায়াত শিবিরের ছদ্মনামে হেফাজতে ইসলাম ঢাকায় সমাবেশ করতে আসল, তখন আওয়ামী লীগ বড় ধার্মিক সেই তামাশা প্রমাণ করতে অনেক নাটক করলো। ব্লগারদের আটক করলো। গণ-জাগরণ মঞ্চ ভেঙে দিল। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের কোনো রোমাও ছিড়তে পারে নাই। চার সিটির নির্বাচনে এক হেফাজত মাঠে নেমেই এতো উন্নয়নের জোয়ার সব ভাসিয়ে দিল। এখন গাজীপুরের নির্বাচন ৬ জুলাই। এক হেফাজতকে দলে ভেড়াতে আওয়ামী লীগের রাতের ঘুম হারাম এখন। আরে ভাই ভুল রাজনীতি করলে আরো অনেক পরাজয় অপেক্ষা করছে সামনে। বিএনপি নিজেদের দুর্বলতা আড়াল করতে এতোদিন সরকার পতন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, তারেক জিয়ার কীর্তি, ইসলাম বাঁচাও, দেশ বাঁচাও অনেক প্রলাপ বকেছে। মানুষ বিএনপি'র আসল চেহারা চেনে। মানুষ সেই দুর্বিসহ শোষণ-শাসনের হাত থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু নরবরে মন্ত্রীসভা, সোনালী ব্যাংক কেলেংকারী, হল মার্ক কেলেংকারী, পদ্ম সেতু কেলেংকারী, রেলওয়ের কালো বিড়াল, ডেসটিনি মাল্টি বিসিনেস, প্রকাশ্যে বিশ্বজিৎ হত্যা, রানা প্লাজা ধ্বস, ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, দখল, খুন, ধর্ষণ, হামলা, দলীয় কোন্দল ইত্যাদি কয়েক শো কেলেংকারী যে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বুড়িগঙ্গায় ডোবাবে, সেই সব কেলেংকারী কিভাবে চাপা দেবে তারা? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রেখে জনগণকে কি ভোদাই মনে করে আওয়ামী লীগ? জনগণের ভোট কি বাংলা লিংক দামে পাইছেন আপনারা? বিএনপি'র সাংগঠিনক অবস্থা জাতীয় নির্বাচন মোকাবেলার মতো ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগের এতো এতো ব্যর্থতাই বিএনপি'র জন্যে সাপে-বর। আপনারা এখন আবার টিফকা চুক্তি করবেন আম জনতারে না জানিয়ে। সুন্দরবন ধ্বংস করতে ভারতের কাছে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবেন। বাংলাদেশটাকে কি তামাশা পাইছেন? কোই কোথাও তো শুনি না হরতালে বা হেফাজতের হামলায় অমুক মন্ত্রীর ছেলে মারা গেছে? তমুক বিএনপি নেতার ছেলে মারা গেছে? জয়ের উপর হামলঅ হয়েছে বা তারেক কোকোকে জনতা পিটিয়েছে? সাধারণ গরিব মানুষের ছেলেদের দিয়ে আর কতো আপনারা লাশের নষ্ট-ভ্রষ্ট রাজনীতি করবেন? আপনারা গ্রামের মেম্বার হবার যোগ্যতা নেই এমন লোককে মন্ত্রী বানাইছেন। দেশের ভাবমূর্তি তারা কিভাবে ভালো করবে? তাদের প্রথম যে যোগ্যতা দরকার, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দরকার, সেটাই তো নেই। ছাগল দিয়ে তো আর হাল চাষ হয় না রে ভাই। এখন অপেক্ষা এই নষ্ট রাজনীতির আম ছালা দুটোই যাওয়ার। একটা ছোট্ট পরামর্শ: সংবিধান সংশোধন করে দুইজন প্রধানমন্ত্রী বানানোর তকমা রেডি করেন। ছয় বছর পর পর সাধারণ নির্বাচন করার আই বানান। একজন প্রধানমন্ত্রী তিন বছরের বেশি দেশ শাসন করতে পারবে না এমন করুন। তাইলে আপনারা ভাগাভাগি করে ছয় বছর অন্তঃত নিশ্চিন্তে লুটপাট করতে পারবেন। জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা এখন আপনারা দুই রাজনৈতিক শিয়াল। হরতাল নিয়ে আপনারা সকালে যা বলেন বিকালে তা ভুলে যান। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হারলে আরো বেশি হরতাল হবে এ বিষয়ে এখনই গ্রান্টি দেওয়া যায়। আপনারা চুরি চামারি করেন। লুটপাট করেন। নিজেরা নিজেরা কামড়াকামড়ি করেন। কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু আপনারা প্রকাশ্যে জনগণ নিয়ে মিথ্যাচার করেন। বলেন, এটা জনগণে চায়। তামাশা পাইছেন? জনগণ শুধু শান্তি চায়। আর নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই যাচাই বাছাই করতে চায়। আপনারা পরিবেশটা আর নষ্ট কইরেন না। দোহাই আপনাদের। আর শত শত মায়ের কোল খালি করবেন না। একজন দীপ যে তার মায়ের কতো আদরের ধন ছিল তা আপনারা পুত্র না হারালে বুঝবেন না। বাংলাদেশে নষ্ট রাজনীতির আরেক বলি হল আমাদের গ্রামের ছেলে দীপের নিভে যাওয়া। এটা মেনে নেওয়া যায় না। দীপ হত্যার বিচার যে আগামী নির্বাচনের আড়ালে হারিয়ে যাবে তা এখনই বলে দেওয়া যায়। আপনারা বিচার টাও করতে পারেন না। ধিক আপনাদের নষ্ট রাজনীতিকে। শত ধিক আপনাদের রাজনীতি ব্যবসাকে। সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:২৪",False ij,"তিতুমীর ও ফকির মজনু শাহ্_ একটি তুলনামূলক আলোচনা ও মুসলিম বিশ্বের ভবিষ্যৎ। ফকির-দরবেশদের কামানের মুখে বেঁধে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অমানবিক শোষনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল বাংলার ফকির-সন্ন্যাসীরা। তাদের আন্দোলনে বাংলার আপামর জনসাধারন ও কৃষককুলের সমর্থন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। বাংলায় ফকির-বিদ্রোহে ফকির মজনু শাহ ও সায়্যিদ মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীরের ভূমিকা ছিল অনন্য। বাংলায় ফকির-সন্ন্যাসীদের বিদ্রোহকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সংগঠিত করেছিলেন ফকির মজনু শাহ। অবশ্য তাঁর প্রকৃত নাম জানা যায়নি-তিনি ফকির মজনু শাহ নামেই বাংলার জনগনের কাছে পরিচিত ছিলেন। তাঁর জন্ম দিল্লির কাছাকাছি হলেও আমৃত্যু তাঁর কর্মক্ষেত্র ছিল বাংলায়। অস্টাদশ শতকের মাঝামাঝি ফকির মজনু শাহ ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তুলতে থাকে। এ লক্ষ্যে তিনি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে বিশাল এক যোদ্ধাবাহিনী গঠন করেছিলেন। ইংরেজদের সঙ্গে তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে প্রায়ই মুখোমুখি সংঘাত বাঁধত। ১৭৮৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের কাছে এক তুমুল যুদ্ধে ইংরেজ সৈন্যদের কাছে মজনু শাহ পরাজিত হন। যুদ্ধে তাঁর বহু সংখ্যক অনুসারী নিহত হয়। ১৭৮৬-এর পর মজনু শাহ আর অভিযান পরিচালনা করেননি। ১৭৮৮ সালে মজনু শাহ মৃত্যুবরণ করেন। ২ মজনু শাহ যখন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে রত -সেই সময় ১৭৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার জেলার বশিরহাটের চাঁদপুর গ্রামে তিতুমীরের জন্ম হয়। তিতুমীরের পরিবারের লোকেরা নিজেদের হজরত আলীর বংশধর বলে দাবি করতেন। যা হোক। ১৮২২ সালে হজ্জব্রত পালনের জন্য মক্কাশরীফ যান। বিখ্যাত ইসলামি ধর্মসংস্কারক ও বিপ্লবী নেতা সায়্যিদ আহমদ বেরেলভী সে সময় মক্কা শরীফে ছিলেন। তিতুমীর তাঁর চিন্তাভাবনার সঙ্গে পরিচিত হন। সায়্যিদ আহমেদ তিতুমীরকে বোঝালেন: 'বাংলায় মুসলমানেরা শরীয়ত পালন করে না। তুমি তাগো গিয়া বুঝাও। আল্লায় বেদাত সহ্য করব না। বেরেলভী সাহেব আরও বললেন যে বিদেশি শক্তির কবলে পড়ে বাংলা পরাধীনতা হয়ে আছে। তুমি তারও একটা ব্যবস্থা কর।' ৩ হুজুরের দোওয়া নিয়ে ১৮২৭ সালে দেশে ফিরে এলেন তিতুমীর। তারপর বাংলার মাটিতে সহি ইসলাম প্রতিষ্ঠায় নানান পদক্ষেপ নিলেন। বিশেষ করে তাঁতি ও কৃষকদের মধ্যে তাঁর প্রভাব বৃদ্ধি পায়। তাঁতি ও কৃষকদের প্রকৃত সমস্যা উপলব্দি করতে পেরেছিলেন তিতুমীর- উপলব্দি করতে পেরেছিলেন জমিদারি শোষনের কদর্যরুপ; কাজেই, স্থানীয় জমিদারদের সঙ্গে তাঁর সংঘাত হয়ে উঠেছিল অনিবার্য। ইংরেজরা যেহেতু জমিদারের করের ওপরই নর্ভরশীল। কাজেই সে সংঘাতে অবিলম্বে ইংরেজরাও জড়িয়ে পড়ে। দিন দিন সংঘাতের তীব্রতা বাড়ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১৮৩১ সালে অক্টোবর মাসে নারকেল বাড়িয়ায় একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন তিতুমীর। যদিও ঐ বছরই ব্রিটিশ সৈন্যরা কামানের গোলায় কেল্লাটি মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়। ৪ তিতুমীরের স্থায়ীভাবে বাঁশের কেল্লা নির্মান ছিল এক হঠকারী সিদ্ধান্ত। কেননা, বিদ্রোহীর স্থির থাকতে নেই-তাকে অবিরত স্থান পরিবর্তন করতেই হয়। যে কারণে ফকির মজনু শাহ সম্বন্ধে মুয়ায্যম হুসায়ন খান লিখেছেন, He (ফকির মজনু শাহ) organised the sufi saints and the yogi sannyasis under a common platform, reported to have moved frequently between the western part of Bihar and the eastern extremity of Bengal mobilising the scattered fakirs and sannyasis and floating the spontaneous support of the professional classes and the common people of Bengal in his fight against the east india company. (বাংলাপিডিয়া) কাজেই, সেই সময়কার পরিস্থিতি বিশ্লেষন করে মনে হয় যে ফকির মজনু শাহর সামরিক কলাকৌশল তিতুমীরের তুলনায় অধিকতরো উন্নত ছিল । তিতুমীর কিছু বিষয় বিবেচনায় আনেননি। (১) ইংরেজদের বিরুদ্ধে ফকির মজনু শাহর সামরিক কলাকৌশল বিশ্লেষন। (২) ইংরেজরা কামানের গোলায় যখন মুগলদের প্রস্তরনির্মিত দূর্গ ভেঙ্গে দিচ্ছিল তখন বাঁশের প্রাচীরের শক্তি আর কতটুকু? তিতুমীর ছিলেন গোঁড়া শরীয়তপন্থি। পক্ষান্তরে, ফকির মজনু শাহ ছিলেন মাদারিয়া তরিকার সুফীসাধক। এই দুপক্ষের চিন্তার পার্থক্য আমরা আজও টের পাই।গোঁড়া শরীয়তপন্থিদের চিন্তাভাবনা ইষৎ ঘোলাটেই মনে হয়-যখন আমরা ইসলামী মিস্টিসিজমের প্রতি দিনদিন কৌতূহলী হয়ে উঠছি লালনের জন্যই। বিশিষ্ট লালন গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী গ্রন্থ পাঠ করে জানা যায়- লালনের নিয়ন্ত্রনেও বিশাল লাঠিয়ালবাহিনী ছিল; এবং লালনও কৃষকের ওপর স্থানীয় জমিদারদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। তিতুমীর স্থানীয় জমিদারদের কেবলি ‘হিন্দু’ মনে করেছেন-যা অযৌক্তিক। আগেও আমি একবার বলেছি, বিশেষ করে তাঁতি ও কৃষকদের মধ্যে তিতুমীরের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাঁতি ও কৃষকদের প্রকৃত সমস্যা উপলব্দি করতে পেরেছিলেন তিতুমীর- উপলব্দি করতে পেরেছিলেন জমিদারি শোষনের কদর্যরুপ; কাজেই, স্থানীয় জমিদারদের সঙ্গে তাঁর সংঘাত হয়ে ওঠে অনিবার্য। স্থানীয় জমিদাররা বেশিরভাগই ছিল হিন্দু। তবে মুসলিম হলেও ফল একই হত-এটা তিতুমীর জানতেন কিনা-আমার প্রশ্ন এই। উত্তরটা আমাদের অল্পবিস্তর জানা: গোঁড়া শরীয়তপন্থিদের চিন্তাভাবনা ইষৎ ঘোলাটেই হয়ে থাকে। যা হোক। তিতুমীরের ব্রিটিশবিরোধী ভূমিকার মূল্যায়ন অবশ্যই করবে। তবে তাঁর হঠকারী বাঁশের কিল্লা strategy নিয়ে মুসলমানের গর্ব করার কিছুই নাই। কেননা, বিধ্বংসী কামানের অধিকারী ব্রিটিশ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁর সামরিক কৌশলের অসারতা সহজেই বোঝা যায়। যে কারণে, পরবর্তী যুগের ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবীরা তিতুমীরের পথ নয়-বরং মাদারিয়া তরিকার মহান সুফীসাধক ফকির মজনু শাহর পথই বেছে নিয়েছিলেন। (এক্ষেত্রেও বাংলায় সুফীরাই এগিয়ে থাকল তথাকথিত শরীয়তপন্থিদের চেয়ে। ) ... reported to have moved frequently between the western part of Bihar and the eastern extremity ofBengal mobilising the ক্ষুদিরাম থেকে মাস্টারদা সূর্যসেন-এঁরা সবাই ফকির মজনু শাহর পথ অনুসরণ করে ক্রমাগত চলমান ছিলেন। কেননা, এঁরা সবাই জানতেন বিদ্রোহীর স্থির থাকতে নেই-তাকে অবিরত স্থান পরিবর্তন করতে হয়। এবং কামানের অধিকারী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বাঁশের কেল্লা নির্মান এক হঠকারী সিদ্ধান্ত। ৫ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কেন উত্তর কোরিয়ায় মার্কিন সৈন্যরা অনুপ্রবেশ করতে পারে নাই-আফগানিস্থানে প্রায় বিনা বাধায় করতে পেরেছে-সমকালীন ইতিহাসের এই ধাঁধাটি নিয়ে যখন আমি গভীর ভাবনায় মগ্ন হই-তখন আমার বারবার সায়্যিদ আহমদ বেরেলভী এবং তাঁর সুযোগ্য শিষ্য সায়্যিদ মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীরের নামটি কেন যেন মনে পড়ে যায়। এবং আমার মনে এই প্রশ্ন জাগে- হাজার হাজার বছর ধরে ফিলিস্তিনের জনগন ফিলিস্তিনে বাস করেও যা পারেনি মাত্র ৫০ বছরে ইহুদিরা সেখানে অনুপ্রবেশ করে তা পারল কী ভাবে? এবং আমি এই প্রশ্নে বিস্মিত হয়ে যাই যে, আশির দশকে কেন ইরান-ইরাক নিজেদের মধ্যে আত্মঘাতি যুদ্ধে লিপ্ত হল? সেই আত্মঘাতি যুদ্ধের বদলে গোপনে দুপক্ষই অভিন্ন তহবিল গঠন করে পারমানবিক অস্ত্র নির্মান করার উদ্যোগ গ্রহন করে নিজেদের প্রতিরক্ষা সূদৃঢ় করল না কেন-যে পরমানু প্রযুক্তি পেতে পারত ফিলিস্তিনও ? ফিলিস্তিন পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হলে ইসরাইল তাকে আক্রমন করার সাহস পেত কি? এসব প্রশ্নে আমি বিদ্ধ হতে হতে গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুসলিম বিশ্বের করুন ভবিষ্যৎটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকলে আমিও শিউরে উঠতে থাকি। তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৩৬",False hm,"গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও জাঙ্গিয়া রহস্য এক. আবদুল গোলাম হক নাক কুঁচকে বললেন, ""শেষ পর্যন্ত আমাকে ট্রেনে চড়ে চট্টগ্রাম যেতে হবে? য়্যাঁ? তা-ও অন্য লোকের ট্রেনে?"" সেক্রেটারি মিস জুলিয়া বললেন (ভাই, বিলিয়নেয়ারের বাড়ির বেড়ালটাকেও আপনি আপনি করে বলতে হয়, আর মিস জুলিয়া তো কুখ্যাত ক্রোড়পতি আবদুল গোলাম হকের বিশেষ প্রিয়পাত্রী আর সেক্রেটারি, তাঁকে আপনি না বলে শেষে লেখালেখির পাট খোয়াই আর কি), ""কিন্তু স্যার, আপনার নিরাপত্তার জন্যেই তো ...।"" ...[justify] এক. আবদুল গোলাম হক নাক কুঁচকে বললেন, ""শেষ পর্যন্ত আমাকে ট্রেনে চড়ে চট্টগ্রাম যেতে হবে? য়্যাঁ? তা-ও পরের ট্রেনে?"" সেক্রেটারি মিস জুলিয়া বললেন (ভাই, বিলিয়নেয়ারের বাড়ির বেড়ালটাকেও আপনি আপনি করে বলতে হয়, আর মিস জুলিয়া তো কুখ্যাত ক্রোড়পতি আবদুল গোলাম হকের বিশেষ প্রিয়পাত্রী আর সেক্রেটারি, তাঁকে আপনি না বলে শেষে লেখালেখির পাট খোয়াই আর কি), ""কিন্তু স্যার, আপনার নিরাপত্তার জন্যেই তো ...।"" আবদুল গোলাম হক গজগজ করতে লাগলেন, ""তাই বলে পরের ট্রেনে করে চট্টগ্রাম যাবো ...।"" মিস জুলিয়া বললেন, ""স্যার, বাংলাদেশে তো সব ট্রেনই পরের ট্রেন। সব ট্রেনই বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পত্তি। খালি কয়েকটা খেলনা ট্রেন আছে স্যার শিশুপার্ক আর ফ্যান্টাসি কিংডমে ...।"" আবদুল গোলাম হক খাপ্পা হয়ে গেলেন। বললেন, ""দ্যাখো মিস জুলিয়া, পদে পদে জ্ঞান দিতে এসো না! পয়সা খরচ করলে সব পাওয়া যায়। দাঁড়াও না, ফাঁড়াটা খালি কাটুক আগে, আমি ঢাকা-টু-চিটাগাং ট্রেন সার্ভিসের ব্যবসা শুরু করবো। একটা ট্রেন কিনতে কয় টাকা লাগে?"" মিস জুলিয়া তাঁর ল্যাপটপে খুটখুট করে নোট করতে করতে বললেন, ""দেখি স্যার ইন্টারনেটে সার্চ করে। ... কিন্তু স্যার, রেলওয়ে কি তাদের লাইনে আপনার ট্রেন চলতে দেবে?"" আবদুল গোলাম হক উত্তেজিত হয়ে পড়লেন, ""দিবে না মানে? একশোবার দিবে! দিতেই হবে! না দিলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে রেল চলাচল আমি বন্ধ করে দিবো!"" মিস জুলিয়া বললেন, ""জ্বি স্যার, তা তো অবশ্যই!"" আবদুল গোলাম হক বললেন, ""এক্ষুণি খোঁজ নাও, ট্রেন কিনতে কত টাকা লাগে।"" মিস জুলিয়া আমতা আমতা করে বললেন, ""স্যার, গুগলে তো ট্রেনের দাম পাওয়া যাচ্ছে না, সচলায়তনে জিজ্ঞেস করবো?"" আবদুল গোলাম হক বললেন, ""যাকে খুশি জিজ্ঞেস করো, আমার দাম জানা হলেই হয়!"" মিস জুলিয়া আবার খুট খুট করে টাইপ করতে লাগলেন। আবদুল গোলাম হক কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ""প্লেনে গেলে কী সমস্যা ছিলো?"" মিস জুলিয়া বললেন, ""প্লেনে স্যার একটু বিপদ নাকি ছিলো, উনি বললেন।"" আবদুল গোলাম হক বললেন, ""কী বিপদ?"" মিস জুলিয়া বললেন, ""তা তো স্যার আমাকে খুলে বলেননি। আমি জিজ্ঞেস করে ধমক খেলাম খামাকা।"" আবদুল গোলাম হক বললেন, ""থাক তাহলে। ঐ ব্যাটাকে খামাকা ঘাঁটিয়ে লাভ নেই। বলেছে যখন, তখন নিশ্চয়ই একটা কিছু বিপদ ছিলো!"" মিস জুলিয়া বললেন, ""জ্বি স্যার।"" আবদুল গোলাম হক একটু পর আবারও ক্ষেপে গেলেন। ""কিন্তু তাই বলে ট্রেনে? বাসে গেলেও তো হতো।"" মিস জুলিয়া বললেন, ""বাসে নাকি স্যার সবচেয়ে বেশি বিপদ। তাছাড়া আপনাকে তো লোকে চেনে জানে ...।"" আবদুল গোলাম হক বললেন, ""আরে, ট্রেনে কোন বিপদ নাই নাকি? টয়লেটের অবস্থা কী খারাপ জানো?"" মিস জুলিয়া বললেন, ""স্যার শহিদুলকে বলবো, টয়লেটে আপনার জন্য পটি ফিট করে দেবে নাহয় ...?"" আবদুল গোলাম হক গোঁ গোঁ করে বললেন, ""আচ্ছা, আবারও গেলে দেখা যাবে। আর টয়লেটে যাওয়াও তো এক কষ্ট। একটু আগে যখন বেরোলাম, করিডোরের বাতি গেলো নিভে। অন্ধকারে ধাক্কা খেলাম এক লোকের সাথে ... ওফ ... কী এক জ্বালা! এ কারণেই আমার এই দেশে থাকতে ইচ্ছা করে না। নিরিবিলিতে একটু টয়লেটে যাওয়ার উপায়ও নাই, মানুষ গিজগিজ করে!"" মিস জুলিয়া বললেন, ""ঠিকাছে স্যার, এরপর দরকার হলে আমি আর শহিদুল আপনার সাথে যাবো টর্চ নিয়ে।"" আবদুল গোলাম হক বললেন, ""ঠিকাছে ঠিকাছে! এইবার দ্যাখো ট্রেনের দাম কতো!"" মিস জুলিয়া বললেন, ""স্যার, সচলায়তনেও পেলাম না।"" আবদুল গোলাম হক বললেন, ""কেন, ওরা জানে না? মিস জুলিয়া বললেন, ""না স্যার, জানে তো না-ই, উল্টা মশকরা করছে। বলছে, আপনাকে উত্তম জাঝা আর বিপ্লব।"" আবদুল গোলাম হক গজগজ করে উঠলেন, ""যত্তোসব বখাটের আড্ডা ... আমি পরশুদিনই আবার দুবাই ফিরে যাবো!"" দুই. গোয়েন্দা ঝাকানাকা আনমনে ঘড়ি দেখছিলেন একটু পর পর। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার দুঁদে কর্তা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি, ওরফে কিংকু চৌধারি তাই কৌতূহলভরে প্রশ্ন করলেন, ""ব্যাপার কী স্যার? একটু পর পর ঘড়ি দেখছেন কেন?"" ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে তাকালেন। বললেন, ""ঘড়ি তো একটু পর পরই দেখতে হয়, চলছে কি না! ঘড়ি মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় যদি?"" কিংকু চৌধারি থতমত খেয়ে বললেন, ""তা ঠিক। কিন্তু সে তো আপনি না দেখলেও বন্ধ হবে।"" ঝাকানাকা বললেন, ""আরে কী আপদ! তাই তো চোখে চোখে রাখছি! বন্ধ হয়ে গেলেই এটা খুলে ফেলবো।"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""তারপর?"" ঝাকানাকা বললেন, ""তারপর ব্যাটারি পাল্টে ফেলবো। এই দেখুন, নতুন ব্যাটারি নিয়ে এসেছি সাথে।"" পকেট থেকে সেলোফেনের প্যাকেটে ভরা ব্যাটারি দেখালেন তিনি। কিংকু চৌধারি বললেন, ""তাহলে এখনই পাল্টে ফেলুন না, বার বার তাহলে আর ঘড়ি পাহারা দিতে হয় না।"" ঝাকানাকা বললেন, ""কেন, এখনো তো ঘড়ি চলছে, থামেনি তো!"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""তা ঠিক, কিন্তু ...।"" ঝাকানাকা বললেন, ""কিন্তু আর কিছুই না, আপনাদের আলসেমি! একটা লোক কাজ করে খাচ্ছে, এ ব্যাপারটা আপনারা পুলিশেরা সহ্য করতে পারছেন না। একটা ঘড়িকে দেখেশুনে রাখছি, এই তত্ত্বাবধান আপনার পছন্দ হচ্ছে না। কারণ আপনি পুলিশ। কোন কিছুই দেখেশুনে রাখা আপনাদের পছন্দ না। একটা কিছু হলে পরে তারপর আপনারা নড়েনচড়েন। আমার ঘড়িটা খোয়া গেলেই মনে হয় আপনি খুশি হন?"" কিংকু চৌধারি হেঁ হেঁ করে হাসলেন একটু। বললেন, ""যা-ই বলুন স্যার, গেলো গল্পে আপনার আন্দাজ মেলেনি একদম! বিষ্ণুমূর্তি স্যার, পাওয়া গেলো টুকরাটাকরা অবস্থায় ...।"" ঝাকানাকা বললেন, ""বাজে কথা বলবেন না জনাব চৌধারি। ভুল লোককে প্যাঁদানোর কারণেই মূর্তিটার এই হাল। ঠিক লোকগুলিকে প্যাঁদালে মূর্তি সোজা জাদুঘরে ফেরত আসতো অক্ষত অবস্থায়।"" কিংকু চৌধারি কিছু বলতে যাবেন, এমন সময় টিকেটচেকার এসে বললো, ""আপনাদের টিকেট প্লিজ।"" কিংকু চৌধারি পকেট থেকে টিকেট বার করে চেকারের হাতে দিলেন। চেকার আনমনে সেটার একটা পাতা ছিঁড়ে আরেকটা পাতায় খসখস করে টিকমার্ক দিয়ে টিকেট ফিরিয়ে দিলো। চেকার চলে যাবার পর ঝাকানাকা বললেন, ""সময় হয়েছে প্রায়, তৈরি হোন।"" কিংকু চৌধারি চমকে গিয়ে বললেন, ""কেন কেন?"" ঝাকানাকা বললেন, ""দেখুন, বদরু খাঁকে আমি প্রায় ছোটবেলা থেকে চিনি। সে-ও সবসময় ধরা খায় তার আলসে স্বভাবের জন্য। অবশ্য আপনারা ওরচেয়েও অলস, তাই আমি আপনাদের তাড়া না দিলে সে ধরা পড়ে না।"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""কিন্তু সময় হয়েছে বুঝলেন কিভাবে?"" ঝাকানাকা বললেন, ""এই চেকারকে আপনি চেনেন?"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""না, আমি কিভাবে চিনবো?"" ঝাকানাকা বললেন, ""আমি চিনি। এর নাম ইদ্রিস আলি। আজকে সকাল থেকে ওকে আমার লোক ফলো করছে। রাতে ট্রেনে ওঠার আগ পর্যন্ত সে নজরবন্দি ছিলো। আমার লোক জানিয়েছে, এই লোক খাঁটি ইদ্রিস আলি।"" কিংকু চৌধারি থতমত খেয়ে বললেন, ""তো?"" ঝাকানাকা বললেন, ""কিছুক্ষণের মধ্যেই ইদ্রিস আলি আক্রান্ত হবে বদরু খাঁ-র হাতে। চেকারের ছদ্মবেশ নিয়ে বদরু খাঁ ঢুকে পড়বে হক সাহেবের কামরায়।"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""কিন্তু হক সাহেবের কামরার আশেপাশে তো সাদাপোশাকের পুলিশ আছে পাহারায়! ওনার নিজস্ব সিকিউরিটির লোক শহিদুলকেও তো দেখলাম ট্রেনে!"" ঝাকানাকা বললেন, ""আমি কিছুক্ষণ আগে টয়লেটে গিয়েছিলাম, আপনার মনে পড়ে?"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""হুঁ, মনে পড়ে। বলেছিলেন, নাম্বার ওয়ান।"" ঝাকানাকা বললেন, ""হ্যাঁ। তখন গিয়ে দেখি, টয়লেটের মধ্যে কে বা কাহারা শহিদুলকে পেঁদিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে রেখে গেছে। বাধ্য হয়ে আমি জানালা দিয়ে নাম্বার ওয়ান করে এসেছি।"" কিংকু চৌধারি ধড়ফড় করে আসন ছেড়ে দাঁড়ালেন, ""বলেন কী? য়্যাঁ? সর্বনাশ ...!"" ঝাকানাকা বললেন, ""ব্যস্ত হবেন না। মাঝে মাঝে ট্রেনের জানালা দিয়ে নাম্বার ওয়ান করার অভ্যেস থাকা দরকার। আমি তো গেলবছর কাম্পুচিয়ায় প্লেনের জানালা দিয়ে নাম্বার টু পর্যন্ত করেছি ... আর এ তো সামান্য ট্রেন ...।"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""তাই বলে ... শহিদুলকে কে পেটালো?"" ঝাকানাকা বললেন, ""হয়তো বদরু খাঁ! হয়তো অজ্ঞান পার্টির লোক! হয়তো পিকলু পটল!"" কিংকু চৌধারি চমকে গিয়ে বললেন, ""পিকলু পটল! তার কথা আপনি জানলেন কী করে?"" ঝাকানাকা মুহাহাহাহাহাহা করে হেসে উঠলেন। বললেন, ""পিকলু পটলের কথা আমি জানবো না-ই বা কেন? যেভাবে আপনারা তার ছবি, জীবনী, চিঠিপত্র সব ছাপিয়ে দিচ্ছেন আপনাদের ভাড়াটে পত্রিকা আমোদী রসময়-এ! তার কথা ছেলেবুড়ো সকলেই জানে। পিকলু পটলের পোস্টার বিক্রি হচ্ছে দেখলাম আমার মহল্লায়। তাকে নিয়ে ইস্তফা মনোয়ার সুজুকি নাটক পর্যন্ত বানিয়ে ফেলেছে। তাকে নিয়ে ফালতু কবির প্রোডাকশনস এর সিনেমা তৈরি হচ্ছে, হাতে মারি! ... কোথায় থাকেন আপনি?"" কিংকু চৌধারি সাগ্রহে জিজ্ঞেস করলেন, ""নাটকটা দেখেছেন?"" ঝাকানাকা বললেন, ""সময় পাইনি। মিস মিলি দেখেছে বললো, ওর কাছ থেকে পরে সময় করে শুনে নেবেন। কিংবা ইউটিউবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন আছে কি না ...।"" কিংকু চৌধারি লজ্জা পেয়ে বললেন, ""না, মানে, মিস মিলি তো কিছু বললো না নাটকটা দেখে ...। আর ইউটিউব দেখতে বলছেন? ইন্টারনেটে লগ ইন করা-ই এক দায়, আর ইউটিউব তো কোন ছার ...!"" ঝাকানাকা বললেন, ""তবে আপনি যে পিকলু পটলের সন্ধান পেয়েই এ ট্রেনে আজ আমার সাথে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চড়েছেন, তা আমি কিভাবে জানলাম, সেটা আপনাকে বলা যাবে না। সেটা আমার গোপন রহস্য, পারলে আপনি সমাধান করুন গিয়ে।"" কিংকু চৌধারি মলিন মুখে বললেন, ""আর বলবেন না স্যার, হাড্ডিচর্বি এক হয়ে যাচ্ছে এই পিকলু শালার পেছনে ছুটতে গিয়ে! জেল থেকে পালিয়ে শালা আমার জীবনটা বরবাদ করে ছাড়ছে! সেদিন বিশ্বব্যাঙ্কের কান্ট্রি ডিরেক্টরের পকেট মেরেছে স্যার! আমাদের তো চাকরি টেকানো নিয়েই মুশকিল! বড় বড় স্যারেরা ফোন করে ধমকায় রোজ!"" ঝাকানাকা হাসলেন। বললেন, ""আপনার চাকরি অনেক আগেই যাওয়া উচিত ছিলো। অবশ্য আপনারটা গেলে পুলিশের আরো আরো কর্তারও যাওয়া উচিত। যাকগে, চলুন, আগে আমার শিকার পাকড়াও করি।"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""আগে মানে? স্যার, আপনি কি পিকলু পটলকে ট্রেস করে ফেলেছেন?"" ঝাকানাকা চোখ টিপে বললেন, ""ঐটা চার নাম্বার চ্যাপ্টারে গিয়ে জানতে পারবেন। এখন আপনার বন্দুকে গুলি ভরে নিন। বদরু খাঁ কিন্তু ভয়াবহ চিজ!"" কিংকু চৌধারি মাথা নেড়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে পিস্তল বার করতে গিয়ে থমকে গেলেন, তারপর আর্তনাদ করে বললেন, ""স্যার, আমার পিস্তল! আমার পিস্তল হারিয়ে গেছে স্যার!"" ঝাকানাকা গোঁফ চোমড়াতে চোমড়াতে বললেন, ""হারিয়ে গেছে না পিকপকেট হয়েছে?"" কিংকু চৌধারির কালোপানা মুখটা রাগে লাল হয়ে গেলো। তিনি হুঙ্কার ছেড়ে বললেন, ""বটে? কিংকু দারোগার পকেটে হাত! তবেরে শয়তান ...!"" ঝাকানাকা চোখ বুঁজে মুহাহাহাহাহাহা করে হাসলেন। বললেন, ""তাবৎ এশিয়ার সবচেয়ে ধুরন্ধর পকেটমার পিকলু পটল এই ট্রেনে আপনার সঙ্গী, তা জেনেও আপনি আপনার পিস্তল কী করে পকেটে গুঁজে ঘুরে বেড়ান আমি বুঝি না। আমার মতো শোল্ডার হোলস্টারে রাখতে পারতেন না?"" কিংকু চৌধারি ফ্যাকাসে মুখে বললেন, ""চিন্তার কিছু নাই স্যার, আমার ব্যাগে আরেকটা পিস্তল আছে।"" ঝাকানাকা বললেন, ""ঠিকাছে, ওটা বার করে গুলিটুলি ভরে নিন। বদরু খাঁ কিন্তু বাগে পেলে একদম ফুঁড়ে দেবে আপনাকে!"" কিংকু চৌধারি কেবিনের তাকের ওপর রাখা ব্যাগ নামিয়ে পিস্তল খুঁজতে লাগলেন। ঝাকানাকা শোল্ডার হোলস্টার থেকে নিজের বিখ্যাত ষোলঘরা রিভলভার ""ষোড়শী"" বার করে পরীক্ষা করতে লাগলেন। বদরু খাঁর সাথে প্রায়ই তাঁকে গুলিবিনিময় করতে হয়। বদরু খাঁর বারো ছররার দোয়াজদাহাম পিস্তলের সাথে মোকাবেলা করার জন্য জিঞ্জিরা থেকে বিশেষ অর্ডার দিয়ে তৈরি করা রিভলভার এই ষোড়শী, চোরডাকাতরা এর চেহারা দেখলেই অনেক সময় ঘাবড়ে গিয়ে বন্দুকপিস্তল ফেলে দেয়। কিংকু চৌধারি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সোজা হলেন। ""যাক, স্যার, এই পিস্তলটা খোয়া যায়নি। এটাতে সবসময় গুলি ভরাই থাকে ...।"" বলতে বলতে তিনি ঝাকানাকার রাগরক্তিম চেহারা দেখে থেমে গেলেন। ""কী ব্যাপার স্যার?"" ঝাকানাকা তাঁর ষোড়শীকে বাড়িয়ে ধরলেন কিংকু চৌধারির দিকে। কিংকু চৌধারি সেটা হাতে নিয়ে দেখলেন উল্টেপাল্টে। ""সে কি স্যার, গুলি ভরেননি কেন এখনো?"" ঝাকানাকা বললেন, ""দুপুরে আমি নিজের হাতে গুনে গুনে ষোলটা গুলি ভরেছিলাম এটাতে।"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""এখন খালি কেন?"" ঝাকানাকা বললেন, ""পিকলু পটলের কাজ। রিভলভারটা রেখে গেছে, তবে গুলিগুলো ঝেড়ে দিয়েছে!"" তিন. বদরু খাঁ ইদ্রিস আলির হাত পিছমোড়া করে বাঁধতে বাঁধতে বললো, ""ইদ্রিস আলি! ... বেশি চোট লাগেনি তো?"" ইদ্রিস আলির চোখ দিয়ে দরদর করে অশ্রু ঝরতে লাগলো। বদরু খাঁ গিঁট টেনে পরীক্ষা করে দেখতে দেখতে বললো, ""এই যে প্যাঁচটা কষিয়ে তোমাকে বাঁধলাম, এই গিঁট্টুর নাম জাহাজবন্ধন গিঁট্টু। মোগল আমলে এই গিঁট মেরে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরে বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজ ডকের সাথে বাঁধা হতো। এমনও হয়েছে, যে ঝড়ে দড়ি ছিঁড়ে গেছে, কিন্তু গিঁট অটুট রয়েছে! কিছুদিন আগে একটা ফারসী পুঁথি পাওয়া গিয়েছিলো সাতকানিয়ায়। পুঁথিটা আমিই চুরি করেছিলাম যাদুঘর থেকে। পথে যেতে যেতে বোরড হয়ে যেতে পারি ভেবে যাদুঘরের এক ফারসী-দুরস্ত কর্মকর্তাকেও কিডন্যাপ করেছিলাম সে কারণে। তিনি আমাকে সেদিন সারারাত মাইক্রোবাসে বসে বসে দুলে দুলে পুঁথি পড়ে আর অনুবাদ করে শুনিয়েছিলেন। ... আহ, ইতিহাস! বড় ইন্টারেস্টিং জিনিস। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাটা পাস করতে পারলে আমি হয়তো ইতিহাসের ছাত্রই হতাম! তো, ঐ পুঁথিতে এই গিঁট্টুর সব রহস্য এঁকে দেয়া ছিলো। ভোরবেলা যখন আমি চিলমারি হয়ে বর্ডার টপকাচ্ছি, তখন ভাবলাম, যাদুঘরের ভদ্রলোকের ওপরই এই গিঁট একটু পরীক্ষা করে যাই না কেন? দিলাম বেচারাকে গিঁট মেরে। আজ থেকে এক বছর আগের ঘটনা। এখনো বেচারা ঐ মাইক্রোবাসেই বাঁধা আছে। কোন শালার ব্যাটা খুলতে পারেনি ঐ দড়ি। ড্রাইভার বাধ্য হয়েছে গাড়িটা সস্তায় ঐ যাদুঘরওয়ালার বউয়ের কাছে বেচে দিতে। বেচারা এখন গ্যারেজে বাস করে কাটিয়ে দিচ্ছে জীবনটা। ... কী করে ছুটবে, বলো? গিঁট খোলার তরিকা জানি দুনিয়াতে কেবল আমি, আর পুঁথিটা যে গুজরাটির কাছে বিক্রি করেছি, সে।"" ইদ্রিস আলি ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলে, বলে, ""স্যার গো, রহম করেন!"" বদরু খাঁ এক ভুরু উত্তোলন করে বলে, ""স্যার? তুমি আমায় স্যার ডাকলে শেষ পর্যন্ত? যখন তোমাকে ভদ্রভাবে গিয়ে বলেছিলাম, ইদ্রিস আলি, চুপচাপ বোসো, তোমাকে কেবল একটু বেঁধে এখানেই, সীটের কোণায় বসিয়ে থুয়ে যাবো। তখন তো তুমি খুব শালার ব্যাটা বলে গালি দিয়েছিলে আমাকে। তোমার এত বড় সাহস, চড় তুলে আমাকে মারতেও এসেছিলে! তুমি জানো, আমার গায়ে মশা পর্যন্ত ভয়ে বসে না? আর বসলেও যে আমি কিছু করতে ভয় পেতাম, কারণ আমার নিজের গায়ে হাতো তোলার সাহস আমার নিজের পর্যন্ত নেই! এক পল্টন গুর্খা পেয়াদা কুকরি নিয়ে আমাকে সেবার মারতে এসেছিলো বার্মিংহ্যামে, দশটি বছর আগে, আজও নেপালে তাদের গ্রামে সন্ধ্যেবেলা তাদের কান্নার আওয়াজে লোকে টিভি দেখতে পারে না, এমনি পেঁদিয়েছিলাম সবক'টাকে! আর তুমি, ইদ্রিস আলি, একজন দুর্নীতিবাজ, ভুঁড়ো, টেকো টিকিটচেকার, যে কি না গত দশ বছরে একটা বার ডন বৈঠকও ভাঁজোনি, এসেছিলো আমাকে মারতে! ... প্রথমে ভেবেছিলাম, তোমাকে পিটিয়ে ছাতু করে টয়লেটে গুঁজে দেবো। কিন্তু টয়লেটটা সেই কখন থেকে কে যেন ভেতরে ঢুকে জাম করে রেখেছে, বাধ্য হয়ে আমাকে ট্রেনের জানালা দিয়ে নাম্বার টু সারতে হয়েছে, শালা! আর তোমাকে এখানে ফেলে যেতে হচ্ছে এই কেবিনে!"" ইদ্রিস আলি কাঁদতে কাঁদতে বললো, ""কেন মিছিমিছি গরীবের জান কালি করছেন স্যার? আমি আপনার কী ক্ষতি করলাম? খালি তো টিকেট দেখতে চেয়েছিলাম! ... এই অপরাধে আমাকে এরকম করে মারলেন? এখন আবার জাহাজমারা গিঁট দিয়ে বাঁধলেন? এ-ই কি আপনার ইনসাফ, স্যার?"" বদরু খাঁ মুহাহাহাহাহাহাহাহাহা করে হাসে। বলে, ""শুধুই কি টিকেট দেখতে চেয়েছিলে? টিকেট দেখাতে পারিনি বলে ঘুষ চাওনি? যখন বললাম, আমি ঘুষ দেই না, তখন বলোনি, পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেবে ঘুষ না দেয়ার অপরাধে? য়্যাঁ? তারপর যখন মিষ্টি করে বললাম এসো বেঁধে তোমার খাটনি ক্ষণিকের জন্যে লাঘব করে দিচ্ছি, তখন পাঞ্জা বাগিয়ে এলে আমাকে থাপড়াতে? এখন বাকিটা জীবন কাটাও এই ট্রেনে, এই কেবিনে। বাংলাদেশ রেলওয়ে তো আর তোমার বউয়ের কাছে এই বগিটা বেচে দেবে না, তোমার কপাল যাদুঘরঅলার চেয়ে খারাপ। কী আর করা, কর্মফল!"" ইদ্রিস আলি কাঁদতে কাঁদতে বলে, ""স্যার, আপনার বিচার আল্লায় করবে! এমন জুলুম আল্লা সহ্য করবে না! আল্লার আরশ কেঁপে উঠবে আজ আমার মাতমে। ভ্যাঁ ....!"" বদরু খাঁ হাসে মুহাহাহাহাহাহা করে। বলে, ""তোমার মাতম আল্লার আরশ তো দূরের কথা, এই কেবিন পেরিয়েই বেরোতে দেবো না!"" ইদ্রিস আলি বলে, ""না না স্যার, দোহাই আপনার, জানে মারবেন না!"" বদরু খাঁ বলে, ""জানে মারবো কি মারবো না, নির্ভর করছে তোমার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ওপর।"" ইদ্রিস আলি বলে, ""মানে?"" বদরু খাঁ বলে, ""মানে হচ্ছে, তোমার একটা মোজা খুলে সেটা আমি তোমার মুখে গুঁজে দেবো! যদি তোমার মোজা পরিষ্কার হয়, তুমি বেঁচে থাকবে, আর যদি আমার মোজার মতো ময়লা হয়, তুমি মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই মরে যাবে।"" ইদ্রিস আলি কিছু বলতে গিয়ে হঠাৎ টলে পড়ে যায় সীটের ওপর। বদরু খাঁ মুহুহুহুহুহু হেসে উঠে এক জোড়া গ্লাভস পরে নেয়, তারপর ইদ্রিস আলির একটা মোজা খুলে নিয়ে তার মুখটা কষে বাঁধে। তারপর ইদ্রিস আলির রেলওয়ের মনোগ্রাম আঁকা কোটটা নিজের শরীরের ওপর চাপায়। ""উঁহুহুহু। টাইট হচ্ছে।"" বদরু খাঁ একটু হতাশ হয়, তারপর ব্যাগ থেকে আয়না বার করে নিজেকে দেখে। বলে, ""নাহ, মানাচ্ছে না। আমাকে শালার শুধু কয়েদিদের ডোরাকাটা পায়জামাতেই যে কেন মানায় বুঝি না! নাহ ... শিগগীরই বুবি রসুলকে কিডন্যাপ করে আমার জন্য কিছু নতুন ফ্যাশনের জামাকাপড় ডিজাইন করাতে হবে!"" কেবিনের বাতি নিভিয়ে হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে বদরু খাঁ বেড়ালের মতো নিঃশব্দে এগিয়ে যায় আবদুল গোলাম হকের কেবিনের দিকে। কেবিনের দরজার সামনে কিছুক্ষণ কান পেতে এদিক ওদিক শোনে বদরু খাঁ। চারদিকে শুধু ট্রেনের ঝুকঝুক শব্দ। দরজায় টোকা দেয় সে। ""এক্সখিউজ মি, টিকিট প্লিজ!"" মিস জুলিয়া কেবিনের দরজা খুলে দেন, ""কে? ওহ, চেকার সাহেব?"" ভেতর থেকে আবদুল গোলাম হক বলেন, ""শহিদুল গাধাটা কোথায় গেলো? বদরু খাঁ কেবিনের ভেতর ঢুকে বিনীত একটা হাসি দেয়, ""টিকেট প্লিজ!"" মিস জুলিয়া তাঁর হাতব্যাগ থেকে গোলাপি খাম বার করেন একটা, সেটা থেকে বার করেন টিকিট। ""এই যে নিন।"" বদরু খাঁ মুগ্ধ হয়ে দ্যাখে মিস জুলিয়ার কান্ডকারখানা। তারপর বলে, ""বাহ, কী চমৎকার টিকেট! এটা রইলো আমার কাছে। পরে কাজে লাগবে।"" মিস জুলিয়া থতমত খেয়ে বলেন, ""মানে?"" বদরু খাঁ মধুর হাসি হেসে বলে, ""মানে খুব সহজ।"" এই বলে সে পকেট থেকে বার করে তার দেখতে-ভয়ানক-শুঁকতে-ভয়ানক-শুনলে-পরে-আরো-ভয়ানক দোয়াজদাহাম পিস্তল। মিস জুলিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান সীটের ওপরে। আবদুল গোলাম হক সটান দাঁড়িয়ে যান সীট ছেড়ে, ""হচ্ছেটা কী? বলি, হচ্ছেটা কী?"" বদরু খাঁ জিভ দিয়ে চুকচুক করে শব্দ করে। তারপর সে ফেরে উত্তেজিত আবদুল গোলাম হকের দিকে। ""ডাকাতি হচ্ছে, আবার কী? বসুন চুপটি করে। নইলে কিন্তু এই পিস্তল পুরোটা খালি করবো আপনার টাকের ওপর!"" আবদুল গোলাম হক মুখ চুন করে বসে পড়েন। বদরু খাঁ মিস জুলিয়ার পাশে বসে পড়ে। ""বড়ই সুন্দরী আপনার সেক্রেটারি, কী যেন নাম ... ওহ, হ্যাঁ, মিস জুলিয়া! একেবারে সুচিত্রা সেন! আপনার কপালটা চওড়া হলেও ভালো স্যার! সবারই একটা করে সুন্দরী সেক্রেটারি থাকে। আপনার আছে, মিস জুলিয়া। বদের হাড় গোয়েন্দা ঝাকানাকা বদমাশটারও একজন আছে, মিস মিলি। আমি কত খুঁজলাম একজন সেক্রেটারি, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলাম, বিশ্ববিখ্যাত দস্যুসম্রাট বদরু খাঁ একজন সুন্দরী, তন্বী, চালাকচতুর, চটপটে, পায়খানার পাইপ বেয়ে উঁচু বিল্ডিং আরোহণে পারদর্শী সেক্রেটারি প্রয়োজন। ... আমার শালা কপালটাই খারাপ!"" আবদুল গোলাম হক বললেন, ""পাও নাই?"" বদরু খাঁ বললো, ""নাহ! একজন চাক্কা সাবান ফটো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় রানার আপ যোগাযোগ করেছিলো, কিন্তু সে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে জানে না। এক সুন্দরী কম্পিউটার সায়েন্স পড়ুয়া মেয়ে অ্যাপ্লাই করলো, সে পায়খানার পাইপ তো দূরের কথা, সিঁড়ি বেয়েই উঠতে নারাজ। ... পায়খানার পাইপ বেয়ে যে মহিলা উঠতে পারেন, তিনি ইন্টারনেট ব্যবহারেও বেশ চটপটে ছিলেন, কিন্তু দেখতে স্যার অনেকটা আপনার মতোই, কালো, ভুঁড়ো, টেকো। সেক্রেটারি কি আর অমন হলে চলে, আপনিই বলুন?"" মিস জুলিয়া নড়েচড়ে উঠে বসেন। বদরু খাঁ মুগ্ধ কণ্ঠে বলেন, ""আপনি কি পায়খানার পাইপ বেয়ে উঁচু বিল্ডিঙে উঠতে পারেন?"" মিস জুলিয়া আবারও টলে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। বদরু খাঁ মাথা নাড়ে। ""নাহ, উনি বড় সুশীলা। ফিটের ব্যারাম আছে। ওনাকে দিয়ে হবে না। কাজের সময় ওনার নাকে চামড়ার জুতা ধরার সময় কই আমার? আবদুল গোলাম হক বললেন, ""কী চাও তুমি? রাতদুপুরে ট্রেনের কামরায় ঢুকে আমার সেক্রেটারির দিকে কুনজর দিচ্ছো? জানো, তোমাকে আমি পুলিশে দিতে পারি?"" বদরু খাঁ কেবিন কাঁপিয়ে হাসে ঠা ঠা করে, পাক্কা দুই মিনিট। তারপর বহুকষ্টে হাসি সামলে বলে, ""সাদা পোশাকের পুলিশের কথা বলছেন তো স্যার? সর্বমোট ছয়জন ছিলো। ইন ফ্যাক্ট, এখনও আছে, মরেনি। তবে ওনাদের অবস্থাও এই সফেদ মিস জুলিয়ার মতোই। ওনারাও ফিটের ব্যারামের শিকার। কারণটাও এই আমিই। মৃদু প্যাঁদাতে হয়েছে সকলকেই। এদের মধ্যে দু'জন আবার কমান্ডো ট্রেনিং পাওয়া, তাদের একটু বেছে প্যাঁদাতে হয়েছে। তবে ভয় নেই, বেঁচে উঠবে সকলেই। কাল সকাল সকাল চিটাগাং মেডিকেলে নিয়ে ভাঙা হাড়গুলি জোড়া দিতে পারলে চাকরিও টিকে যাবে।"" আবদুল গোলাম হকের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। তিনি কাঁদো কাঁদো গলায় বলেন, ""কী চাও তুমি, শয়তান?"" মিস জুলিয়া আবারও উঠে বসেন। বদরু খাঁ উঠে দাঁড়ায়, বলে, আমি আসলে আমাদের তিনজনের জন্যেই কিছু উপহার এনেছি। ... নিন ম্যাডাম, ব্যাগটা খুলুন।"" হাতের ব্যাগটা মিস জুলিয়ার দিকে এগিয়ে দেয় সে। মিস জুলিয়া ভয়ে ভয়ে ব্যাগটা খোলেন। সেটার ভেতর থেকে বার হয় একটা কালো স্কার্ফ, আর দুইটা লুঙ্গি। ""এসব কী?"" আবদুল গোলাম হক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। বদরু খাঁ হাসে ঠা ঠা করে। বলে, ""স্কার্ফটা হচ্ছে আপনার এই লাস্যময়ী সেক্রেটারি মিস জুলিয়ার জন্য। লুঙ্গিদু'টো আপনার আর আমার জন্যে।"" মিস জুলিয়া ফুঁসে উঠে বলেন, ""এর মানে কী?"" বদরু খাঁ চোখ টিপে বলে, ""মানে খুব সোজা। এখন আমি আর জনাব হক দু'জনেই এই লুঙ্গিদু'টি ব্যবহার করে কাপড় পাল্টাবো। আর আপনি যেহেতু এই দৃশ্য সহ্য করতে পারবেন না, তাই আপনি এই স্কার্ফটা দিয়ে নিজের চোখ বেঁধে বসে থাকবেন ন্যায়মূর্তির মহিলাটার মতো!"" আবদুল গোলাম হক উত্তেজনায় তোৎলা হয় পড়েন, বলেন, ""ক্কী ... ক্কী বলছো তুমি? কী-কী-কীসের কাপড় পাল্টাবো?"" বদরু খাঁ এবার ঘর কাঁপিয়ে হাসে। বলে, ""এলিমেন্টারি, মাই ডিয়ার হক! আপনার জাঙ্গিয়াতে যেসব অমূল্য হীরের টুকরো সেলাই করা আছে, সেই জাঙ্গিয়াটাই আপনি খুলে আমাকে দেবেন। আর আমি সেই জাঙ্গিয়াটা নিজে পরে আমারটা আপনাকে দিয়ে দেবো! মুহাহাহাহাহাহাহাহা! চার. কিংকু চৌধারি একটু অভিমান করেন, বলেন, ""চার নাম্বার চ্যাপ্টারে তো এসে পড়েছি, এখন একটু বুঝিয়ে বলুন না!"" ঝাকানাকা হাসেন। বলেন, ""আপনার সাদা পোশাকের লোকজনের হাল দেখলেন?"" কিংকু চৌধারি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, বলেন, ""হ্যাঁ! নির্মমভাবে পেঁদিয়েছে ব্যাটাদের। সবক'টাকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে।"" ঝাকানাকা বলেন, ""আপনার পুলিশ সব অজ্ঞান। হক সাহেবের দেহরক্ষী শহিদুলও অজ্ঞান। টিকেট চেকার ইদ্রিস আলি অজ্ঞান। বাকি রইলাম আমি, আপনি, মিস জুলিয়া, হক সাহেব আর বদরু গরুচোরাটা! এখন নাটকে আমরাই পাত্রপাত্রী।"" কিংকু চৌধারি বললেন, ""পিকলু পটল? পিকলু পটলের কী হবে?"" ঝাকানাকা বললেন, ""পিকলু পটলকে নিয়ে চিন্তা নেই। ওর একটা ব্যবস্থা হয়ে গেছে।"" কিংকু চৌধারি উত্তেজনায় সোজা হয়ে দাঁড়ান। ""য়্যাঁ? বলছেন কী স্যার?"" ঝাকানাকা বললেন, ""পিকলু পটল ছদ্মবেশে খুব ওস্তাদ, জানেন নিশ্চয়ই?"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""তা তো বটেই! কিন্তু হঠাৎ একথা বলছেন কেন স্যার?"" ঝাকানাকা হাসেন। কিংকু চৌধারি বলেন, ""আপনি কি বলতে চান, আমাদের মধ্যে কেউ একজন আসলে পিকলু পটল, ছদ্মবেশ নিয়ে আছে?"" ঝাকানাকা উদাস গলায় বলেন, ""হোলেও হোতে পারে! যা-ই হোক, মাথা ঘামানোর দরকার নেই এ নিয়ে। আসুন এখন বদরু খাঁকে সাইজ করা যাক।"" ওদিকে কেবিনের ভেতরে চলছে এক করুণ দৃশ্য। মিস জুলিয়া নিজে থেকেই স্কার্ফ দিয়ে নিজের চোখ বেঁধে বসে আছেন। আর আবদুল গোলাম হক দাঁত দিয়ে লুঙ্গি কামড়ে ধরে আছেন, যাকে বলে দাঁতে দাঁত চেপে। বদরু খা হাসিমুখে বলে, ""অণুবীক্ষণ লুঙ্গি, বাজারের সেরা লুঙ্গি! সাড়ে আটশো টাকা দিয়ে কেনা স্যার। দেখুন কি মসৃণ কলাপাতারঙা জিনিস। হেভি আরাম পাবেন স্যার পরে।"" আবদুল গোলাম হক নিজের জাঙ্গিয়া খুলতে খুলতে বলেন, ""গমমমমমমমমমফফফফফফফফফ ...!"" বদরু খাঁ বলে, ""আহাহা, আগে আন্ডি খুলুন, লুঙ্গির গিঁট বাঁধুন সহি কায়দায়, তারপর নাহয় আমার সুনাম গাইবেন দুয়েক কলি!"" আবদুল গোলাম হক এবার লুঙ্গির গিঁট দিতে দিতে বলেন, ""তুমি কিভাবে জানলে আমার এই হীরে চালানের কথা?"" বদরু খাঁ লাজুক হাসে। বলে, ""ফোর্বস এর ড়্যাঙ্কিঙে আমি এশিয়ার সবচেয়ে ভয়ানক দস্যু ছিলাম গত তিন বছর ধরে। তার আগে ছিলাম টানা চারবছর দ্বিতীয় স্থানে। আপনার এসব মামুলি হীরে চালানের কারবার জানা আমার সাগরেদদের কাজ। ... তবে আপনার বোধহয় মনে আছে, কিছুদিন আগে আপনার স্ত্রীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিলো ঠমক টিভির পক্ষ থেকে? ঢ্যাঙামতো এক মেয়ে সাংবাদিক গিয়েছিলো ইন্টারভিউ নিতে, যার পেছনে চিমটি কাটতে গিয়ে আপনি আঙুলে ব্যথা পেয়েছিলেন?"" আবদুল গোলাম হক চমকে ওঠেন। মিস জুলিয়া বলেন, ""মুনিয়া সরফরাজ!"" বদরু খাঁ মুগ্ধ হাসি দ্যায় মিস জুলিয়ার দিকে তাকিয়ে। বলে, ""ঠিক! মুনিয়া সরফরাজ সেজেই গিয়েছিলাম বটে! হাঁ স্যার, সিনসিয়ারলি ইয়োরস!"" আবদুল গোলাম হক চমকে ওঠেন আরো! ""সেদিনই আপনার স্ত্রীকে হিপনোটাইজ করে সব খবর বার করে নিয়েছি। উনি যে আপনার একটা জাঙ্গিয়াতে কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু অমূল্য হীরের টুকরো সেলাই করছেন বসে বসে, সে খবর তাঁর কাছ থেকেই পাওয়া। আর আপনি কবে চিটাগং যাচ্ছেন সে খবর তো টেলিফোনে একটু আড়ি পাতলেই জানা যায়!"" মিস জুলিয়া বলেন, ""স্যার, আপনাদের কি জামা পাল্টানো শেষ?"" বদরু খাঁ বলে, ""তিষ্ঠ, কাজ অতি অল্প অবশিষ্ট!"" আবদুল গোলাম হক এবার নিচু হয়ে পা গলিয়ে নিজের আন্ডি বার করে বদরু খাঁর হাতে দিতে গিয়ে থমকে যান। অস্ফূটে বলেন, ""এ কী!"" বদরু খাঁ হেসে ওঠে ঠা ঠা করে। ""গোলাপি? গোলাপি আন্ডি পরেন নাকি আপনি? তা-ও সবুজ ফুল আঁকা? ছি ছি স্যার, আপনার এ-ই রুচি! ... উঁহুহু মিস জুলিয়া, বাঁধন আলগা করে দেখবেন না এই জিনিস, আপনি আবারও ফিট খেতে পারেন! আমার নিজেরই তো গা গুলাচ্ছে দেখে! ... দুঃখ করবেন না স্যার! জাঙ্গিয়ার মতো জাঙ্গিয়া একটা দিচ্ছি আপনাকে। পুরুষের জাঙ্গিয়া হবে মিশকালো! আমারটা অবশ্য কেনার সময় ধূসর ছিলো, তবে এখন বেশ কালচে মেরে গেছে! আমার কপাল খারাপ, নেহায়েত কোটি কোটি টাকার হীরে সেলাই করা আছে এতে, তা না হলে আপনার জাঙ্গিয়া আমি জানালা দিয়ে ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দিতাম!"" এমন সময় হাট করে খুলে যায় দরজা, পিস্তল উঁচিয়ে ঘরে ঢোকেন গোয়েন্দা ঝাকানাকা, আর বেত উঁচিয়ে ঢোকেন কিংকু চৌধারি। ""খেল খতম, বদরু খাঁ!"" ঝাকানাকা গর্জে ওঠেন। ""পিস্তল মাটিতে না ফেললে গুনে গুনে তোর পোঁদে ছ'টা গুলি করবো! বদরু খাঁ পিস্তল মাটিতে ফেলে দেয় খটাস করে। কিংকু চৌধারি সযত্নে মিস জুলিয়ার চোখের বাঁধন খুলে দ্যান। ""আপনার কোন সমস্যা হয়নি তো মিস?"" মিস জুলিয়া টলে পড়ে যান। ঝাকানাকা বলেন, ""চৌধারি, যে কোন ভদ্রমহিলাই পুলিশ দেখে ভয় পাবেন। সেন্টু খাবেন না।"" বদরু খাঁ হাসে। বলে, ""পুলিশ না, তোকে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছে মিস জুলিয়া!"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""আমার মনে হয় এই গোলাপি জাঙ্গিয়া দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছে মিস জুলিয়া!"" ঝাকানাকা বলেন, ""থাকুন উনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে ময়লা একটা মোজা নাকের সামনে ধরলেই হবে।"" আবদুল গোলাম হক ফুঁপিয়ে ওঠেন, ""আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে!"" কিংকু চৌধারি বলেন, ""কী সর্বনাশ হলো আবার? জাঙ্গিয়া তো উদ্ধার হলো শেষমেশ!"" আবদুল গোলাম হক বলেন, ""ওটা আমার জাঙ্গিয়া নয়!"" বদরু খাঁ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। ""বটে?"" জাঙ্গিয়া উঁচিয়ে বলে সে। ""নিজের হাতে নিজের গা থেকে খুললেন, এখন পষ্টাপষ্টি অস্বীকার যাচ্ছেন? আপনারা, এই বিলিয়নেয়াররা পারেনও বটে! চোখের চামড়া নেই এক বর্গমিলিমিটারও!"" আবদুল গোলাম হক অসহায়রে মতো বলেন, ""হ্যাঁ, আমি এটা পরেছিলাম, এটা নিজেই খুলেছি একটু আগে, কিন্তু এটা আমার আন্ডি নয়! আমি সবসময় ফ্রান্সের গোঁগোঁ ব্র্যান্ডের জাঙ্গিয়া পরি। এটা গোঁগোঁ নয়! গোঁগোঁর জাঙ্গিয়াতে গোঁগোঁর লোগো থাকে।"" বদরু খাঁর হাসি এবার একটু শুকিয়ে আসে, সে জাঙ্গিয়াটা নেড়েচেড়ে টিপেটুপে দ্যাখে, তারপর আর্তনাদ করে ছুঁড়ে ফেলে দ্যায় এক কোণে। ""সাবান! সাবান!"" তারস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে সে। ""হীরা নাই এইটাতে! কোন কিছুই সেলাই করা নাই! শুধু শুধু এই হোঁৎকাটার আন্ডি ঘাঁটলাম এতক্ষণ! ডেটল! ডেটল!"" ঝাকানাকা হাসেন। ""হক সাহেব, আপনার জাঙ্গিয়াটা তাহলে কোথায়?"" আবদুল গোলাম হক সীটে ধপ করে বসে পড়ে লুঙ্গি দিয়ে নিজের চোখ মোছেন। ""জানি না!"" ডুকরে ওঠেন তিনি। ""সন্ধ্যাবেলা তো নিজের হাতে পরলাম!"" ঝাকানাকা বলেন, ""আমি বলছি আপনার জাঙ্গিয়ার কী হয়েছে! আপনার জাঙ্গিয়া পিকপকেট হয়েছে!"" আবদুল গোলাম হক সটান দাঁড়িয়ে যান। দাঁড়িয়ে যান বিস্মিত কিংকু চৌধারিও। থমকে যায় বদরু খাঁ। ""পিকলু পটল, এশিয়া তথা গোটা দুনিয়ার অন্যতম সেরা পকেটমার, বেশ কিছুদিন আগে জেল ভেঙে পালিয়েছে, এ তো বোধহয় জানেন!"" ঝাকানাকা বলে যান। ""জেল ভেঙে বেরিয়েই সে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মোবাইল, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নরের কলম, বিমানবাহিনীপ্রধানের বিয়ের আংটি আর বিশ্বব্যাঙ্কের কান্ট্রি ডিরেক্টরের মানিব্যাগ হাতিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সকলকে এক দফা কাঁচকলা দেখিয়েছে। আর ছদ্মবেশেও সে যথেষ্ঠ ঘাগু।"" আবদুল গোলাম হক বললেন, ""আমি সন্ধ্যাবেলা আমার হীরেসেলাই করা জাঙ্গিয়াটা পরলাম! আর আপনি বলছেন ওটা পিকপকেট হয়েছে?"" ঝাকানাকা বললেন, ""হ্যাঁ! পিকলু পটল, দুনিয়ার সকল পকেটমারের গুরু! আজ যখন আপনি ট্রেনে টয়লেটে যান, তখন মনে পড়ে, করিডোরের বাতি নিভে গিয়েছিলো? অন্ধকারে ধাক্কা খেয়েছিলেন এক লোকের সঙ্গে?"" আবদুল গোলাম হক অস্ফুটে বলেন, ""হ্যাঁ, কিন্তু ...!"" ঝাকানাকা বলেন, ""ওটাই ছিলো পিকলু পটল! ঐ সামান্য ধাক্কার সময়েই সে আপনার হীরেবসানো জাঙ্গিয়া খুলে নিয়ে এই গোলাপি সবুজ ফুল আঁকা বিশ্রী বাজেরুচির আন্ডিটা পরিয়ে দিয়েছিলো! জ্বি স্যার ... পিকলুর পক্ষেই কেবল এটা সম্ভব!"" বদরু খাঁ বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ে। ঝাকানাকা বলেন, ""কিন্তু আমার চোখকে ফাঁকি দেয়া অত সোজা নয়। কারণ ঠমক টিভির সাক্ষাৎকারের দিন আমিও ছিলাম ওখানে! বদরু খাঁ, মনে আছে, নাস্তা পরিবেশন করতে এসেছিলো ঢ্যাঙামতো একটা মেয়ে, যার পেছনে চিমটি কাটতে গিয়ে তুমি আঙুলে ব্যথা পেয়েছিলে?"" বদরু খাঁ অস্ফূটে বলে, ""নূরী ...!"" ঝাকানাকা সগর্বে বলেন, ""সিনসিয়ারলি ইয়োরস! নূরীর ছদ্মবেশেই গিয়েছিলাম ক্লু এর নুড়ি কুড়াতে! ঠমক টিভির সাংবাদিক সেজে আসা বদরু খাঁ আর রেডিও ব্রডগেজের আরজে গফুর সেজে আসা পিকলু পটল, দু'টোকেই শনাক্ত করেছি সেদিন। আর তাই আজ পিকলুকে এক নজর দেখেই চিনতে অসুবিধে হয়নি!"" কিংকু চৌধারি এবার মিস জুলিয়াকে হাত পিছমোড়া করে পাকড়াও করেন। ""বুঝেছি স্যার!"" গর্জে ওঠেন তিনি। ""পিকলু মিস জুলিয়ার ছদ্মবেশ নিয়েছে! আমার চোখকে ব্যাটা ফাঁকি দিতে পারবে না!"" ঝাকানাকা বিরক্ত হয়ে বলেন, ""খামাকা বেচারিকে ব্যথা দেবেন না চৌধারি। উনি পিকলু পটল নন! পিকলু আজ ট্রেনে উঠেছে হক সাহেবের বডিগার্ড শহিদুলের ছদ্মবেশে!"" কিংকু চৌধারি থতমত খেয়ে মিস জুলিয়াকে ছেড়ে দেন। আবদুল গোলাম হক আর্তনাদ করে ওঠেন, ""এই জন্যই তো বলি, শহিদুল হারামজাদাটাকে আজ চোখে পড়েনি কেন! আমার সামনেই আসেনি আজ!"" ঝাকানাকা বলেন, ""এসেছিলো, তবে অন্ধকারে! না এলে আপনার জাঙ্গিয়া চুরি হবে কখন?"" হক সাহেব লুঙ্গি দিয়ে অশ্রু মোছেন আবারো। কিংকু চৌধারি বলেন, ""কিন্তু স্যার, আপনি এতকিছু জানলেন কিভাবে?"" ঝাকানাকা বললেন, ""আমার কাজই তো পর্যবেক্ষণ, জনাব চৌধারি! আজ শহিদুল ওরফে পিকলুকে সন্দেহ হবার পর থেকেই ওকে চোখে চোখে রেখেছি। ও যখন করিডোরের বাতিটা খুলছে, তখন আমি আড়ালে দাঁড়িয়ে। তারপর হক সাহেব বেরোলেন, আমি আমার নাইটভিশন চশমা লাগিয়ে সব কান্ডকারখানা দেখলাম সিনেমার মতো। পিকলু পটলের হাতের কাজ অসাধারণ! এক লহমায় কেমন করে হক সাহেবের প্যান্টের ভেতর থেকে জাঙ্গিয়া একটা খুলে এনে আরেকটা পরিয়ে দিলো, তা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না! অসাধারণ!"" আবদুল গোলাম হক বললেন, ""এখন কথা হচ্ছে, আমার কোটি টাকা দামের জাঙ্গিয়াটা এখন কোথায়?"" ঝাকানাকা বললেন, ""বলছি দাঁড়ান! তারপর হক সাহেব টয়লেটে গেলেন, পিকলু পটল রওনা দিলো পাশের বগির টয়লেটের দিকে। আমি আর দেরি করলাম না, সোজা গিয়ে শুরু করলাম প্যাঁদানো। আচ্ছামতো পিটিয়ে অজ্ঞান করে হাতপা বেঁধে ওকে রেখে এসেছি ঐ টয়লেটে। আর জাঙ্গিয়াটা আসলে পকেটে রাখার সাহস পাইনি, তাই ওটা আমাকেই পরে থাকতে হয়েছে। তবে জাঙ্গিয়াটা গোঁগোঁ কোম্পানির হলেও আমার ঢোলা হয়েছে অনেক, জুত লাগছে না কিছুতেই।"" বদরু খাঁ সটান উঠে দাঁড়ায় এবার। ঝাকানাকা হাসেন। ""উহুঁ বদরু, কোন বেচাল দেখলেই তোর ভুঁড়ি ফাঁসিয়ে দেবো একদম!"" আবদুল গোলাম হক কৃতজ্ঞচিত্তে বলেন, ""ভাগ্যিস আপনাকে জানিয়ে চট্টগ্রাম রওনা হয়েছিলাম, নাহলে আজ যে কী ক্ষতি হতো! হীরেগুলি তো যেতই, প্রাণটাও যেতো এই ডাকুটার হাতে!"" ঝাকানাকা বলেন, ""কোন চিন্তা নেই! এই ব্যাটাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে তারপর আপনার জাঙ্গিয়া আপনাকে ফেরত দেবো হীরেসহ। বাহ, বদরু দেখি লুঙ্গি এনেছে একটা আমার জন্য! অনুবীক্ষণ লুঙ্গি নাকি, য়্যাঁ?"" বদরু খাঁ দাঁতে দাঁত পিষে বলে, ""রোসো! বদরু খাঁকে পুলিশে দেয়া এতো সহজ হলে বদরু পুলিশের কব্জাতেই থাকতো সারাজীবন!"" ঝাকানাকা কিছু বলতে যাবেন, চোখের পলকে বদরু কেবিনের চেইন ধরে টান দেয়। ট্রেন ব্রেক কষে হঠাৎ, সবাই টাল হারিয়ে পড়ে যায় এদিক ওদিক, বদরু খাঁ চোখের পলকে ট্রেনের জানালা খুলে বাইরে লাফিয়ে পড়ে। ঝাকানাকা টাল সামলে জানালার দিকে ছুটে যান, কিন্তু অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না। ঝাকানাকা বিড়বিড় করে বলেন, ""দাঁড়া, আসছে গল্পে যদি তোকে ইসকুরু টাইট না দিই, আমার নাম ঝাকানাকাই নয়!"" কিংকু চৌধারি মিস জুলিয়ার কাঁধ ধরে ঝাঁকি দ্যান, ""মিস, উঠুন! আর ভয় নেই!"" আবদুল গোলাম হক খ্যাঁক করে ওঠেন, ""খবরদার, আমার সেক্রেটারির গায়ে হাত দেবেন না!"" (সমাপ্ত) . . . গোয়েন্দা ঝাকানাকা! | Promote Your Page Too",False hm,"প্রবাসে দৈবের বশে ০০৮ আমার ভাষাপ্রীতির ইতিহাস নিয়ে অযথা প্যাঁচাবো না ভেবেছিলাম, কিন্তু একটু বলতে হচ্ছেই। মাতৃভাষা বাদে অন্য ভাষার প্রতি আমার একটা সহজাত টান সবসময় কাজ করে। ইংরেজি ভাষাটা লেখাপড়ার মধ্যে এত বিশ্রীভাবে গুঁজে দেয়া যে টিনটিন না থাকলে হয়তো আমি ভাষাটার প্রতি একটা বিতৃষ্ণা আরো দীর্ঘদিন অনুভব করতাম। বিটিভির চমৎকার সব সিরিয়াল আর বৃহস্পতিবারের মুভি অব দ্য উইকের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হয়। জন ""হ্যানিবল"" স্মিথের মতো চুরুট কামড়ে ধরে একদিন আমিও গড়গড় করে ইংরেজি বলতে পারবো, এ আত্মবিশ্বাস আমি প্রতি সপ্তাহেই নতুন করে ফিরে পেতাম। আমার অগ্রজ দীর্ঘদিন রুশ ভাষা শিখেছিলেন। ইংরেজি বাদে তৃতীয় একটা ভাষা আমার আগ্রহ প্রবলভাবে আকর্ষণ করেছিলো, বিশেষ করে সিরিলিক হরফ। রুসকি ইয়াজ্ক দ্লিয়াভজিয়েখ (সবার জন্যে রুশ ভাষা) লেখা সেই রহস্যময় বইগুলি মাঝে মাঝে উল্টেপাল্টে দেখতাম, কিন্তু সিরিলিক হরফ পর্যন্তই আমার দৌড়, আর পরবর্তীতে খুচখাচ ইয়ো তে লিউবলিউ ... সেই বইতে ছবি এঁকে দেখানো ছিলো কিভাবে গলার গভীর গহীন থেকে এক একটা শব্দ উগরে দিতে হয়, খুবই আগ্রহমারা পদ্ধতি সেটা, বিশেষ করে সদ্যকিশোরদের জন্য। রুশ ভাষা আমার আর শেখা হয়নি, ক্লাস সেভেনে উঠে জানতে পারলাম আরবী শিখতে হবে দু'বছর। আমার আরবীর পারিবারিক শিক্ষার দৌড় হরফ পর্যন্তই, আমার বাবার কাছ থেকে শেখা। সেই আক্ষরিক জ্ঞান সম্বল করে আমি স্কুলের আরবী শিক্ষকের কাছে পিঠ আর চিত্ত সমর্পণ করলাম। তখন মনে হতো তিনি আমার প্রতি অকারণ বিদ্বিষ্ট ছিলেন, তা না হলে গরুর মতো পেটাবেন কেন? তাঁর বেতের ভয়ে নয়, প্রচন্ড ক্রোধ আর বিদ্বেষ নিয়ে আমি আরবী চর্চা শুরু করি। বাসায় রাতের বেলা বসে বসে ইংরেজি ট্রান্সলেশন ফেলে আমি আরবী লেখা চর্চা করতাম, খুব গর্বের সাথে বলতে পারি, আমার আরবী লেখা মুক্তাক্ষরের মতো ছিলো। রাজুলুন আলিমুন থেকে বাড়তে বাড়তে মোটামুটি নাজমুল আদাব আর খায়রুল আদাবের চিপাগলিও আমি চর্চা করে ফেলি। ক্লাস সেভেন আর ক্লাস এইট, দু'বছরই আমি আরবীতে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছিলাম স্কুলে। ক্লাস নাইনে উঠে আমি দুইবছরের বিদ্বেষ ঝাড়ি আরবী বইগুলিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে। আমার আরবী জ্ঞানও অতি দ্রুত আবার রাজুলুন আলিমুনে নেমে আসে। স্কুলের টেস্টে আমার আশাতীত রকমের ভালো নাম্বার ছিলো ধর্মশিক্ষায়, কিন্তু এস এস সিতে লেটারও পাইনি। নটরডেম কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আমার সময় কিছুটা খারাপ যাচ্ছিলো। পিতৃবিয়োগের শোকের পাশাপাশি নতুন বন্ধুবৃত্ত গঠনের বিচিত্র প্রক্রিয়া, আর নটরডেম কলেজের পদার্থবিদ্যা ব্যবহারিক ক্লাসে একের পর এক ""রিপীট"" খেয়ে আমি একেবারে জেরবার হয়ে যাই, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কলেজে একরকম বন্দী। টেবিল টেনিস আর কতক্ষণ খেলা যায়, আমি লাইব্রেরির বিভিন্ন গলিঘুঁপচি ঘেঁটে অচিরেই ইতালিয়ান, ল্যাটিন আর স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষার বিশাল এক লিখিত রিসোর্স আবিষ্কার করি। ইতালিয়ান ভাষার ওপর তেমন বেশি বই ছিলো না, ল্যাটিনের ওপরও কম ছিলো, কিন্তু স্প্যানিশের ওপর কম করে হলেও গোটা দশেক ব্যকরণচর্চার ফাঁপা বই ছিলো। আমি সেগুলিকে বসে বসে সমাধানের চেষ্টা করতাম। শুধু বই পড়ে শেখা সেই তুচ্ছ স্প্যানিশ দিয়ে আমি ইয়াহুতে প্রথম বন্ধুত্ব করি এক মেক্সিকান বালিকা, আদ্রিয়ানা ওচোয়ার সাথে। আদ্রি পরবর্তীতে আমাকে ডিকশনারী, বই, চিঠি, কার্ড এবং অনেক মিষ্টি মেইল করে দীর্ঘদিন স্প্যানিশের প্রতি আমার ভালোবাসাকে জিইয়ে রেখেছিলো। কিন্তু বই পড়ে ভাষা শেখা যায় না। ভাষা লিখে, পড়ে, বলে, শুনে, ভেবে শিখতে হয়। যে কোন বিদেশী ভাষা শেখার উপায় হচ্ছে সেই ভাষাভাষিণী কোন তরুণীর সাথে প্রেম করা, কিন্তু ঢাকায় হিস্পানিক ভাষা শিক্ষাসুযোগ বা হিস্পানিক ভাষাভাষিণী প্রেমাস্পদা, দুই-ই অপ্রতুল। এ ভাষাটা আমার আজও শেখা হয়নি, পণ করে রেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশিক্ষাকেন্দ্রে আগামী সেমেস্টারে সুযোগ ও অর্থাগম ঘটলে স্প্যানিশ শিখেই ছাড়বোই ছাড়বো। এর পর আমার ভাষা শিক্ষা মোড় নেয় ফরাসীর দিকে। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে উদ্ভিন্নযৌবনা সব বালিকাদের সাথে দুই টার্ম ফরাসী শিখে আমি কিছুটা বিরতি নিই। আমার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন মিজানুদ্দিন খান (তখন শিক্ষক দেখে কোর্স বাছাই করা যেতো), জানিনা তিনি এখনও শেখান কি না, মাঝখানে শুনলাম কঙ্গো চলে গিয়েছিলেন। ফরাসীতে হঠাৎ বিরতি পড়ে কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে। বেশ মানসিক চাপের মধ্যে থেকে দুই হাজার দুই থেকে জার্মান শেখা শুরু করি গোয়েটে ইনস্টিটুটে। উদ্দেশ্য, নিজেকে ব্যস্ত রাখা। এরপর আবারও এপ্রিল থেকে জার্মান আর ফরাসী একসাথে শেখা শুরু করি। সে এক আপদ। ফরাসী ক্লাসে গিয়ে ইয়া বলে ফেলতাম, জার্মান ক্লাসে উয়ি। ফরাসী শিক্ষক স্বপন বর্মণও জার্মান শিখতেন, তিনি চোখ রাঙাতেন কেবল, মুখে কিছু বলতেন না। তো, সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাবিজাবির পর হয় ফরাসী, নয় জার্মান, নয় ফরাসী-জার্মান দুই-ই, নয়তো টিউশনি, আমি খুব আঁটো একটা রুটিনে ঢুকে পড়ি। আমার কান ফরাসী ভাষাকে মুখের ওপর না বলে দেয়। কোঁ কোঁ করে ফরাসী লোকজন কী বলে আমি কিছুই ধরতে পারি না, কিন্তু জার্মানটা আস্তে আস্তে সড়গড় হয়ে আসতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ফরাসী শেখায় ইস্তফা দিয়ে দিই দ্যো সঁ দ্যো শেষ করে। আমার বন্ধুদের অনেকেই খুব চোস্ত ফরাসী জানে, আমি ফরাসীমূর্খ হয়ে জার্মান শিখতে থাকি মালকোঁচা মেরে। আমার জার্মান শিক্ষায় বিশেষভাবে গতি এনে দেয় একটি বৃত্তি, গোয়েটে ইন্সটিটুটের প্রেমিয়েনষ্টিপেন্ডিয়ুম, বাহান্ন দিনের জন্য মিউনিখের গোয়েটে ইন্সটিটুটে আমি মিটেলষ্টুফে (মাধ্যমিক) পর্যায়ে জার্মান ভাষা শিখতে যাই। আমার কান আর মুখ দুটোই খুব ভালো তৈরি হয়ে গিয়েছিলো ঐ কোর্সের পর, তবে মুখটাকে আমি ২০০৫ এর শুরুর দিকে এসে হারিয়ে ফেলি, এখনও কিছুটা হাতড়ে জার্মান বলতে হচ্ছে। জার্মান ভাষার ওপর এ যাবৎ আমি চারটি পরীক্ষা দিয়েছি, তার প্রায় প্রতিটিই প্রায় হাগিয়ে দেয়ার মতো ছিলো। ২০০৩ এর জানুয়ারিতে যখন ৎসেট-ডে দিই, তার কয়েকদিন আগে বান্দরবন থেকে ফিরেছি সূর্যোৎসবের ট্রেকিং শেষ করে, হাতে পায়ে প্রচুর ব্যথা। ডিসেম্বরে যখন ৎসেটএমপে দিই, তখন পরীক্ষা রীতিমতো কঠিন হয়েছিলো, বিশেষ করে বায়ার্ন এর আঞ্চলিক টানে বলা জার্মান ছিলো হোয়রফেরষ্টেয়েনে (শুনে-বোঝা)। ২০০৬ এ দিই টেস্টডাফ, আর ২০০৭ এ এসে দিলাম ডেএসহা (বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্মান ভাষায় পরিচালিত কোন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য ভাষার পরীক্ষা)। টেস্টডাফ টোয়েফল বা আইইএলটিএসের মতো, সেটাতে আমি দুটি ইউনিটে নব্বই শতাংশের বেশি, একটিতে আশি শতাংশের বেশি পেলেও লিখিত পরীক্ষায় আশি শতাংশের কম নাম্বার পেয়েছিলাম বলে কাসেল বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে ডেএসহা দিতে একরকম বাধ্য করে। সেখানে আমাকে পেতে হবে সাতষট্টি শতাংশ। অনেক দুশ্চিন্তা আর বিরক্তি সম্বল করে পরীক্ষা দিয়ে ঊনআশি শতাংশ নাম্বার পেয়ে শেষমেশ ভর্তি হতে হয়েছে প্রোগ্রামে। টেস্টডাফ দিয়ে আমি রীতিমতো কাহিল হয়ে পড়েছিলাম, এতো প্রচন্ড ক্লান্তি আর কোন পরীক্ষা দিয়ে লাগেনি (জার্মান ভাষার পরীক্ষাগুলি সবই পাঁচ ঘন্টার ওপরে)। ডেএসহা তুলনামূলকভাবে সহজ, পাশ করে বুঝলাম, আশির কম পেলে চলবে না, সাতষট্টির ওপরে পেতে হবে। এই দীর্ঘ পরীক্ষার অভিজ্ঞতায় যা বুঝলাম, তা হচ্ছে, আমি জার্মান রুশের মতো না শিখে, আরবীর মতো ভুলে গিয়ে, স্প্যানিশের মতো অধরা রেখে, ফরাসীর মতো মাঝপথে থামিয়ে পার পাবো না। আমাকে জার্মান কুপিয়েই খেতে হবে। কাজেই আমার ওপর চাপিয়ে দেয়া এ পরীক্ষার ঝাল একমাত্র টিউটোনিক বালিকাদের ওপরই ঝাড়তে হবে। কাজেই কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুষ্টু মেয়েরা, ফোরজিখট!",False rg,"দশম সাধারণ নির্বাচন নিয়ে সংশয় ও পর্যালোচনা ।। নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। বাংলাদেশের সংসদের পূর্ণকালীন মেয়াদ ৫ বছর। সেই হিসেবে নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী'র পূর্ণমেয়াদ ৫ বছর। নবম সংসদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেথ হাসিনা শপথ নেন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। সেই হিসেবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী'র মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। ১৯৯০ সালের পর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক যাত্রা নতুন করে শুরু হলে নির্বাচিত সরকারের পূর্ণমেয়াদ ক্ষমতায় থাকার উদাহরণ আছে। ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল আর সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবার আগেই ১৯৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া শপথ নিয়েছিলেন ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ। আর ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত। মাঝখানে অবশ্য রাজনৈতিক অচলাবস্থায় স্বল্প সময়ের জন্য ষষ্ঠ সংসদ কার্যকর ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় ছিলেন ৫ বছর ১০ দিন। সপ্তম সংসদের মেয়াদ শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ১৪ জুলাই। আর মেয়াদ পূর্ণ হয় ২০০১ সালের ১৩ জুলাই। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা শপথ নেন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন। আর তিনি ক্ষমতায় ছিলেন ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত। অর্থ্যাৎ সংসদের মেয়াদ পূর্ণের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীও পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলেন। বরং প্রধানমন্ত্রী তখন কার্যত ক্ষমতায় ছিলেন ৫ বছর ২২ দিন। অষ্টম সংসদের মেয়াদ শুরু হয়েছিল ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর। আর অষ্টম সংসদ মেয়াদ পূর্ণ করে ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া শপথ নেন ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর। আর তিনি ক্ষমতায় ছিলেন ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত। অর্থ্যাৎ প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় ছিলেন ৫ বছর ১৯ দিন। অর্থ্যাৎ ১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে সংসদের মেয়াদ পূরণের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকেও পূর্ণ সময় ক্ষমতায় থাকার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। নবম সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ সালে আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়াদ শেষ হবে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে। বিগত ২২ বছরে বাংলাদেশে সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নজির নেই কেবলমাত্র ষষ্ঠ সংসদ ছাড়া। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী'র মেয়াদ পূর্তির আগেও ক্ষমতা হস্তান্তরেরও নজির নেই। বাংলাদেশের সংবিধানে যা-ই থাকুক না কেন, বিগত ২২ বছরের ইতিহাসে তেমনটি ঘটেনি। সেই হিসেবে বলা যায় নবম সংসদের মেয়াদ পূর্তির পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন আমরা আশা করতে পারি। কারণ, ওই সময়ের মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী'র মেয়াদও পূর্ণ হচ্ছে। সেই হিসেবে, আগামী ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ২৪ এপ্রিল ২০১৪ সালের মধ্যে যে কোনো সময় দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবার আসা যাক সংবিধানের কথায়। নবম সংসদে সংবিধানের পঞ্চাদশ সংশোধনী করা হয়েছে। সংবিধানের পঞ্চাদশ সংশোধনী অনুযায়ী, নির্দলীয় তত্ত্বাধায়ক সরকার ব্যবস্থা রহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি তাতে বলা হয়েছে, বর্তমান সংসদের অধীনেই পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সংসদের মেয়াদকালীন সময়ের ৯০ দিনের মধ্যেই। সেই হিসেবে, ২৪ অক্টোবর ২০১৩ থেকে ২৪ জানুয়াির ২০১৪ সালের মধ্যে দশম সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা। সেক্ষেত্রে বর্তমান সংসদ বহাল থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রীও বহাল থাকবেন। কিন্তু সে ধরনের একটি নির্বাচনে বাংলাদেশে সকল দলের অবাধ অংশগ্রহন কিভাবে নিশ্চিত হবে? যেখানে প্রধানবিরোধী দল বিএনপি বলছে, আওয়ামীলীগ নের্তৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা যাবে না। পাশাপাশি তারা সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুণর্বহাল করার জন্য আন্দোলন করছে। কিন্তু আওয়ামীলীগ নের্তৃত্বাধীন মহাজোট সরকার সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যেতে অনাগ্রহী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের প্রধান দুইটি দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয়ই নির্বাচন করার পক্ষে। আর সেই নির্বাচন করার জন্য উভয় দলই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে? আওয়ামীলীগ বলছে, সংবিধানের বাইরে কোনো অনির্বাচিত সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না। আর বিএনপি বলছে, নির্দলীয় সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে না। এর আগে অনুষ্ঠিত ৫ টি সিটি কর্পোরেশান নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করায় বিএনপি'র মধ্যে একটা ধারণা হয়েছে যে, নির্বাচন হলেই তারা জয়লাভ করে ক্ষমতায় যাবে। এছাড়া বাংলাদেশে বিগত ২২ বছরের রাজনৈতিক প্রবণতা হল, ক্ষমতাসীন দল পরবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছে। সেই হিসেবে এবার বিএনপি দশম নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় যাবে, এমনটি সরল সমীকরণ। ঠিক এই ভয়টি কাজ করছে আওয়ামীলীগের মধ্যে। ৫ টি সিটি নির্বাচনে হারার পর আগামী দশম সংসদ নির্বাচনেও হারার একটি ভয় তাদের মধ্যে কাজ করছে। যে কারণে, বিরোধীদলের দাবী অনুয়ায়ী, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবীকে তারা সব সময় প্রত্যাক্ষাণ করে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। বিপত্তি আর সংশয়টা সেখানেই। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে নির্বাচনের মাধ্যমে। ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন ছাড়া পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মোটামুটি নির্দলীয় সরকারের অধীনেই। সেটাকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন। কিন্তু সংসদীয় রাজনৈতিক পদ্ধতিতে, ক্ষমতার পালাবদল হবার কথা সংসদের মেয়াদ শেষ হলে চলমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সময়ে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচন পরিচালনা করবেন এবং নির্বাচনে বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। আর সেখানেই প্রধানবিরোধী দল বিএনপি'র আপত্তি রয়েছে। যার প্রধান কারণ, আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দেশের দুই প্রধান দলের মধ্যে আস্থাহীনতা এবং অবিশ্বাস। শুধু নির্দলীয় সরকারের অধীণে নির্বাচন চাওয়ার পেছনে প্রধান যুক্তি হল, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকলেও সেই নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ হয় না। কারণ, নির্বাচন কমিশনকে একটি অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রিটার্নিং অফিসার, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং অনেক সংস্থার সরাসরি সহায়তা নিতে হয়। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, ক্ষমতাসীন দলগুলো নির্বাচনের এই লেবেল প্লেয়িংটা এমনভাবে সাজিয়ে রাখেন যে, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বিরোধীদলের পক্ষে নির্বাচনী ফসল ঘরে তোলা অনেকটাই কষ্টকর হয়ে যায়। কারণ, নির্বাচনের সময় জেলা প্রশাসকগণ রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। প্রশাসন যেভাবে ঢেলে সাজানো হয়, সেই সাজানো প্রশাসনের অধীনে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষেই কাজ করার একটি প্রবণতা বিদ্যমান থাকতে পারে, এমন সন্দেহ আর আস্থাহীনতার কারণেই প্রধানবিরোধী দল সেই সাজানো লেবেল প্লেয়িং প্রশাসনের অধীনে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী হয় না। পাশপাশি আমরা দেখেছি, বিগত ৪টি নির্ললীয় নিরপেক্ষ সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে ক্ষমতাসীন দলের প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর যে প্রক্রিয়া সেটা প্রথমেই ভেঙে দিয়ে নতুন করে প্রশাসনকে সাজিয়ে সব দলের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার। তাই রাজনৈতিক অনাস্থার প্রধান জায়গাটি আসলে প্রশাসনের বিদ্যমান ব্যবস্থা। কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তার চেয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর বড় আশংকা থাকে প্রশাসন নির্বাচনকালীন সময়ে কতোটা নিরপেক্ষ থাকবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিহাস হল প্রশাসনকে দলীয়করণ করা একটি প্রধান কাজ হয়ে গেছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তখন সেই সরকার প্রশাসনকে নিজ দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে। যে কারণে প্রধানবিরোধী দলের সেই প্রশাসনের উপর আস্থাহীনতা থেকেই যায়। তবুও বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান দুই দলের নির্বাচনমুখী প্রবণতা দেথে ধারণা করা যায়, সংবিধানের নিয়ম অনুসরণ করে হয়তো একটি নির্বাচন ঠিকই অনুষ্ঠিত হবে। হয়তো সেটা উভয় দল দৃশ্যমান বা অদৃশমান সংলাপের মাধ্যমে একটি বোঝাপড়া হলেই সেই ঘটনাটি ঘটবে। আর সেক্ষেত্রে হয়তো সংসদ ভেঙে দিয়ে বর্তমান সংসদের কোনো গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিকে অস্থায়ী সরকার প্রধান করা হবে। যার অধীনে হয়তো দশজনের একটি ছোট্ট মন্ত্রীসভা থাকবে। যেখানে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলের সাংসদদের নেওয়া হবে। আর সেই অস্থায়ী সরকার হয়তো প্রশাসনকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে একটি নির্দলীয় সরকারের মত আচরণ করার চেষ্টা করবে। আর বর্তমান নির্বাচন কমিশনও সেক্ষেত্রে নতুন করে পুণর্গঠন করা হতে পারে। আর সেই নির্বাচনটি আগামী ডিসেম্বর মাসে অথবা মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হতে পারে। রাজনৈতিক ফিল্ডে দরকষাকষিতে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নিজ নিজ দলের পক্ষে দাবী আদায়ে একটি বিজয় মিছিলের অপেক্ষায় আছে। সেই বিজয় মিছিলে জনগণের কতোটা সম্পৃক্ততা থাকবে তারচেয়ে বড় কথা বিজয় মিছিল কে আগে করবে। একটা জিনিস খুব পরিস্কার সেটা হল, দেশের প্রধান দুইটি দল নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায় না। যে কোনো ভাবে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়াই তাদের প্রধান লক্ষ্য। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নের্তৃত্ব ধীরে ধীরে আসল রাজনীতিবিদদের ছেড়ে সাবেক আমলা, সাবেক আর্মি অফিসার, শিল্পপতি, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, কন্ট্রাকটর, আর নতুন করে সম্পদশালীদের হাতে চলে যাচ্ছে। যে কারণে, রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নের চক্রে নিপতিত একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আস্থাহীনতার সংকট দিন দিন আরো প্রকট হচ্ছে। আগামীতে প্রধান দুই দল যতোবেশি আসল রাজনৈতিক ব্যক্তির বাইরে দলীয় নমিনেশান প্রদান করবে ততোবেশি সেই দুবৃত্তায়ন ক্ষমতাশালী হবে। আর সেই দুষ্টচক্রের কোপানলে সৃষ্ট নানা অজুহাতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে থাকবে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে এই রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অর্থ, প্রতাপ, বিত্ত আর অসৎ উপায়ে অর্জিত পুঁজির দৌরাত্বে তাই বাংলাদেশ এখন অশান্ত। ধর্মীয় উগ্রবাদের প্রচ্ছন্ন আগ্রাসনও তাই ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর দেশের জনগণের সঙ্গে যতোটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, ঠিক উল্টো ততোটাই বিদেশী তাবেদারী শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ছে। রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে হুজুগে অবৈধ কার্যাকলাপ করার সুযোগ রয়ে যাচ্ছে। চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টির জন্য তাই বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি-ই দায়ী। আর ঝুঁকি থাকলেও সেই ঘোলাজলে দুষ্টু রাজনৈতিক ঘোড়াগুলো দাবিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই আগামী দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একটি সংশয়ও রয়ে যাচ্ছে। যদি কোনো কারণে আগামী সংসদ নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে বা আগামী বছরের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত না হয়, সেক্ষেত্রে আগামী গ্রিস্ম মৌসুমে জুন-জুলাই মাসে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাধারণ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ভারতে কোন দল ক্ষমতায় আসে তার উপরও অনেকটা নির্ভর করবে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে হুট করেই নির্বাচন কখন হবে, কোন সরকারের অধীনে হবে, সেই চূড়ান্ত কথাটি নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।",False fe,"চাই ত্রাণের স্বচ্ছ সদ্ব্যবহার চাই ত্রাণের স্বচ্ছ সদ্ব্যবহার ফকির ইলিয়াস --------------------------------------------------- বাংলাদেশে সাম্প্রতিক টর্নেডো ‘সিডর’-এর ঝাপটা প্রবাসী বাঙালিদের মনে দারুণভাবে রেখাপাত করেছে। প্রবাসীরা যেভাবে পারছেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসছেন। মানবিক প্রয়োজনে মানুষের সহযোগিতা হৃদয়ের উদারতা বাড়িয়ে দেয়। অন্যের দু:খে আমি দু:খী হতে পারছি­ এমন একটি আত্মতৃপ্তি চিত্তকে বলীয়ান করে। ‘সিডর’ আক্রান্তদের জন্য সাহায্যের প্রয়োজনে প্রবাসে নানা উদ্যোগ চলছে। সামনে শীতকাল। তাই এসব সর্বহারা মানুষকে আসন্ন শীতের হিমবাহ থেকে বাঁচাতে প্রচুর পরিমাণ শীতবস্ত্রের দরকার। প্রবাসের বিভিন্ন সংগঠন সে লক্ষ্যেও কাজ করছেন। দুর্গতদের জন্য ত্রাণ সাহায্য হিসেবে সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বেশ বড় অঙ্কের অর্থ সাহায্য পাওয়ার কথা আমরা পত্রপত্রিকায় দেখছি। সর্বমোট সাহায্যের যে পরিমাণ তার অঙ্ক নেহায়েত কম নয়। এ রকম বড় অঙ্কের অর্থ সাহায্য দিয়ে দুর্গত জেলাগুলোতে বড় ধরনের ত্রাণকর্ম, পুনর্বাসন ও গৃহনির্মাণ সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের দুটো জাহাজ বাংলাদেশে পৌঁছেছে সাহায্য করার জন্য। এই মানবিক সাহায্যের ঘটনা নিয়ে নানা কথা বলছে বাংলাদেশে একটা মহল। এরা কারা? কারা হিযবুত তাহরীরের নামে মিছিল, মিটিং, বিবৃতি দেয়ার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে তা দেশবাসীর না জানার কথা নয়। ‘আমেরিকা এলো’, ‘আমেরিকা এলো’ এমন একটি ধুয়া তুলে তারা তাদের মৌলবাদী স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা অতীতেও করেছে। আজও করছে। এবারের ঘটনায় এটাই প্রমাণিত হলো ওয়ান-ইলেভেনের পর বিভিন্ন পরিবর্তন সাফল্য সাধিত হলেও এই যে জঙ্গিবাদী ধর্মারা, তাদের তথাকথিত ‘হুঙ্কার’ মোটেই কমেনি। এই মহাদুর্যোগকালেও তারা ওসব জেলার মানুষের পাশে গিয়ে না দাঁড়িয়ে, ঢাকায় মিছিল করার চেষ্টা করছে। তা থেকেই বুঝে নেয়া সহজ, তাদের প্রকৃত মতলব কি। ‘সিডর’-এর থাবার পর দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় ‘বাংলাদেশ’ প্রায় প্রতিদিনই শিরোনাম। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ‘সিডর’-এর তাণ্ডবচিত্র দেখাচ্ছে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে। সেদিন চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে আমার চোখ গিয়ে থেমে গেল লন্ডন থেকে প্রচারিত বাংলা চ্যানেল ‘চ্যানেল এস’-এ। নিউইয়র্কে সময় তখন রাত সাড়ে ৯টা। লন্ডন স্খানীয় সময় রাত আড়াইটা। পাঁচ ঘন্টা সময়ের ব্যবধান। দেখলাম চ্যানেল এস-এ একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ধরনের কিছু একটা প্রোগ্রাম চলছে। দু’জন মাওলানা সিডর দুর্গতদের জন্য লাইভ ডোনেশন নিচ্ছেন। ডোনেশন হেল্প লাইনে ফোন করে দাতারা সরাসরি ইচ্ছামতো ডোনেশন দিচ্ছেন। প্রায় আধাঘন্টা আমি অনুষ্ঠানটি দেখলাম। পাঁচ পাউন্ড থেকে পাঁচ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত ডোনেশন দিলেন কেউ কেউ। অনুষ্ঠান উপস্খাপক জনৈক আনসারী বলছেন, যারা দুর্গত মানুষের জন্য ঘর বানিয়ে দিতে চান তারা তাও পারবেন। একটি কাঁচাঘর বানানোর খরচ আনুমানিক সাড়ে তিনশ’ পাউন্ড। দেখলাম, যারা দাতা তাদের সিংহভাগই মহিলা। এটা আমরা সবাই জানি লন্ডন প্রবাসী বাঙালিদের সিংহভাগই সিলেট বিভাগ অঞ্চলের। ওই রাতে ও মধ্যরাত পর্যì জেগে যারা লাইভ ডোনেশন দিচ্ছিলেন, তাদের প্রায় সবাই ছিলেন সিলেট অঞ্চলের। উপস্খাপক কখনও খাঁটি সিলেটী, কখনও শুদ্ধ বাংলায়, কখনও ব্রিটিশ উচ্চারণে ইংরেজিতে দান করার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছিলেন। লক্ষ করেছি, যারা দান করেছেন তারা সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে স্মরণ করেছেন নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা। কেউ বলেছেন, আমি ‘এত পাউন্ড’ দান করছি। আমার জান্নাতবাসী পিতা-মাতার জন্য দোয়া করবেন। উপস্খাপক বলেছেন, রাত সোয়া তিনটায় লাইফ দোয়া হবে টিভিতে। শরিক হবেন। মানুষের মন গলানো হচ্ছে এভাবে। পুরো বিষয়টি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে আমার মনে। প্রশ্নগুলোর পজেটিভ-নেগেটিভ দুটো দিকই আছে। আমরা বরাবরই লক্ষ করি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে যাওয়ার পর লাখ লাখ ডলার সাহায্য ওঠে। ত্রাণ তৎপরতা দেশে-বিদেশে জোরদার হয়। ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে আমরা মন্ত্রী-এমপিদের বাড়িতে, ত্রাণের ঢেউটিন, গুঁড়োদুধসহ প্রচুর সামগ্রীর সান পেয়েছি। এ রকম ত্রাণ চুরির ঘটনা আমরা আগেও শুনেছি যদিও হাতেনাতে ধরার সংখ্যা এবারই ছিল সবচেয়ে বেশি। আর তা সম্ভব হয়েছে পটপরিবর্তনের কারণেই। দেশে-বিদেশে যারা ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন, তারা সবটুকু ত্রাণ, অর্থ, বস্ত্রসামগ্রী আক্রান্ত মানুষের হাতে তুলে দেবেন তো? এ প্রশ্নটি এবারও আসছে সঙ্গত কারণে। কারণ ঘরপোড়ো প্রাণী তো সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পাবেই। আর্তপীড়িত বাঙালি জাতির অবস্খা আজ এর চেয়েও ভীতসন্ত্রস্ত। সৌদি আরব ও ইউরোপ, আমেরিকা থেকে যে পরিমাণ অর্থ সাহায্য পাওয়ার কথা রয়েছে তা দিয়ে পুনর্বাসনের বৃহৎ অংশ সম্পাদন করা সম্ভব বলে অনেকেই মনে করেন, যদি তা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে কাজে লাগানো যায়। তারপর তো থেকে গেল বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউএনসহ বড় বড় দাতার সাহায্য। এর মাঝে এবার ব্যক্তিগত, সামাজিক, সাংগঠনিক, উদ্যোগেও লাখ লাখ ডলার সংগ্রহের প্রচেষ্টা আমরা লক্ষ করেছি। সবার উদ্দেশ্য যদি মানবতার সেবাই হয়, তবে তার শতভাগ কাজে লাগালে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র দ্বীপাঞ্চল জেলাগুলোর আংশিক চেহারাই পাল্টে দেয়া সম্ভব। আমরা জানি, প্রবাসের এমনকি দেশের অনেক গৃহবধ, গ্রামীণ জনপদের মানুষ আছেন যারা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে টাকা পাঠানোর ধকল সইতে চান না। অনেকে সে পথও জানেন না। তাই তারা নিকটের কোন সংগ্রহকারী সংস্খা কিংবা ব্যক্তির হাতেই তাদের কষ্টের সঞ্চয়ের কিছু অর্থ তুলে দেন কিংবা দিতে চান। মাননীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা বলেছেন, তারা সব পরিস্খিতি মোকাবেলা করছেন। সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ বলেছেন, কাউকে না খেয়ে মরতে দেয়া হবে না। কিন্তু তারপরও সাম্প্রতিক যেসব খবর আমরা পত্রপত্রিকায় দেখছি, তা আমাদের শঙ্কা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কেউ কেউ বলছেন, ত্রাণ এখনও সব অঞ্চলে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বলা হচ্ছে, সমন্বয় সাধন করা সম্ভব হচ্ছে না। কেন সম্ভব সাধন করা যাচ্ছে না এর সঠিক কোন ব্যাখ্যা সরকারের কাছে আছে বলে মনে হচ্ছে না আপাতত। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন যারা সাহায্য করতে বাংলাদেশে গিয়েছেন, তারা একা কোথাও যাবেন না। তাদের সঙ্গে থাকবেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা, যাতে মেরিন সৈন্য নিয়ে কোন ভুলবুঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। এ জন্যই এই সরকারি উদ্যোগ। উদ্যোগটি ভাল নি:সন্দেহে। কিন্তু যারা, যেসব মিডিয়া, যেসব রাজনৈতিক মোর্চা, সেসব সংগঠন বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ তৎপরতাকে নানা বিশ্লেষণে অভিষিক্ত করে ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে চাইছে; এদের ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী উপকূলে গেলেই এত চেঁচামেচি করতে হবে কেন? জঙ্গিবাদী মোর্চায় যারা বাংলাদেশে শক্তি সঞ্চয় করেছে আমরা এদের কাউকে তো মাঠ পর্যায়ে দেখছি না ত্রাণকাজে। এই ফেরকা বিতরণ করে, এই ধম্রজাল সৃষ্টি করে যারা নানা বুলি আওড়ায় তারা থু থু দিয়ে আমেরিকাকে ভাসিয়ে দেয়ার কথাও বলেছে এই বাংলাদেশে। বাংলাদেশের সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিকূলতা, প্রতিবকতাকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষই রুখে দাঁড়িয়েছেন। ধ্বজাধারী যারা নেপথ্যে মতলব হাসিল করেছে, এদের উদ্দেশ্য কখনই মহৎ ছিল না। প্রয়াত মনীষী, পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব শ্রদ্ধেয় ড. আহমদ শরীফ একবার এক সেমিনারে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মধ্যস্বত্বভোগী বুর্জোয়াদের ভাগ্য মাঝে মাঝে খুলে দেয়। বিভিন্ন উৎস থেকে ত্রাণ এনে তারা নিজেরাই সাবাড় করে।’ বর্তমানে বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় নেই। তাই জাতির প্রত্যাশা অনেক। ঘর্ণিকবলিত এলাকাগুলোর বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্খা নেয়া এখন সময়ের দাবি। দেশে মানুষ বাড়ছে। ভমি বাড়ছে না। বিশ্বে খরতাপ, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চল বারবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথা বিশ্বের আবহাওয়াবিদরা বলছেন। এই সত্য মেনে নিয়ে সতর্ক হতে হবে। শক্তিশালী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, ধকল মোকাবেলার সব প্রস্তুতি নিতে হবে সরকারকেই। প্রাপ্ত ত্রাণগুলোর স্বচ্ছ সদ্ব্যবহার এই কাজগুলো ত্বরান্বিত করতে পারে নি:সন্দেহে। নিউইয়র্ক ২৭ নভেম্বর ২০০৭ ================================== দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ৩০ নভেম্বর ২০০৭ শুক্রবার সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০০৭ সকাল ৭:৫১",False rg,"এমপিওভুক্ত সো-কলড সুশীল সমাজ থেকে সাবধান !!! ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়। দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে ত্রিশ লাখ শহীদ, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানী, অসংখ্য পঙ্গুত্ব নিয়ে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর তাদের এদেশীয় দোসর জামায়াতে ইসলামী, আলবদর, আলশামস, রাজাকার ও বিহারী ছাড়া ওই সশস্ত্র সংগ্রামে গোটা সাড়ে সাত কোটি বাঙালি তখন এক সুতোয় গাঁথা ছিল। বাঙালি'র একজন নেতা ছিল 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান'। বাঙালি'র একটা শ্লোগান ছিল 'জয় বাংলা'। বাঙালি'র একটি অহংকার ছিল 'মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা'। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট ছিল যে দীর্ঘ আন্দোলনের সূত্রপাত। তারপর বাহান্ন'র ভাষা আন্দোলন, বাষট্টি'র ছাত্র আন্দোলন, ষিষট্টি'র ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনের হাত ধরে নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের বিনিময়ে এলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ডিসেম্বর মাস বাঙালি'র বিজয়ের মাস। একজন বাঙালি হিসেবে এটুকুই গর্বের। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সেই ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে গণ পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ১৬০টি আসন। জুলফিকার আলী ভুট্টো'র পাকিস্তান পিপল'স পার্টি পেয়েছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮১টি আসন। পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ + ৩০০ = ৬০০ আসনের মধ্যে পূর্ববঙ্গে আওয়ামী লীগ পেযেছিল ২৮৮টি আসন আর পশ্চিম পাকিস্তানে পাকিস্তান পিপল'স পার্টি পেয়েছিল ১৪৪টি আসন। গণ পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্টতা পেলেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেই প্রশ্নে ভুট্টো সাহেব বেঁকে বসলেন। তারপরের ইতিহাস সবারই জানা। সত্তরের নির্বাচনে যারা গণ পরিষদে প্রতিনিধি নির্বাচন হন, পরবর্তী সময়ে তারাই বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করলেন। সংবিধান প্রণয়ন কমিটি'র সেই দলে নের্তৃত্ব দিলেন ড. কামাল হোসেন। সেই সংবিধান ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংসদে পাস হয় আর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ সাল থেকে কার্যকর হয়। মূলত বাহাত্তরের সেই মূল সংবিধানই ছিল বাঙালি'র গর্ব করার মত আরেকটি বিষয়। যেখানে চারটি মূল নীতি ছিল। যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা ছিল। জাতীয়তার কথা ছিল। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ন্যায় নীতি ও সাম্যের কথাবার্তাও ছিল। তারপর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। যেখানে আওয়ামী লীগ পেল ২৯৩টি আসন (শতকরা ৭৩ভাগ ভোট), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ পেল ৫টি আসন (শতকরা ৭ভাগ ভোট), বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টি পেল ১টি আসন (শতকরা ৪ভাগ ভোট) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পেলেন ১টি আসন (শতকরা ১ভাগ ভোট)। এছাড়া মোট কাস্টিং ভোটের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর) শতকরা ৮ভাগ ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) শতকরা ৫ভাগ ভোট পেলেও সংসদে কোনো আসন পেলেন না। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনেই শতকরা ৮৫ভাগ ভোটের প্রতিনিধিরা সংসদে গেলেন। বাকী শতকরা ১৫ ভাগ ভোটারের কোনো প্রতিনিধি প্রথম সংসদেই ছিল না। কিন্তু দল হিসেবে তারা দেশের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ছিল। সংসদে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি পাবার সুযোগ থাকলে তখন দেশের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বৃহত্তম দলেরও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ তৈরি হত। সেই সুযোগ যে প্রচলিত ভোটের রাজনীতিতে ছিল না, ফলে তখন থেকেই বিরোধী পক্ষের আসল ষড়যন্ত্রের বীজ বপন যেমন শুরু হল, তেমনি ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতাকে আরো টেকসই ও পাকাপাকি করার একটা অযুহাত অনুসন্ধানও শুরু হল।তারপর ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই সংবিধানে প্রথম সংশোধনী আনা হল। যেটি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখী করা। সেই যে শুরু হল সংবিধানের সংশোধন যা এখন সর্বশেষ পঞ্জাদশে এসে ঠেকেছে। এ পর্যন্ত সংবিধানে যে ১৫টি সংশোধনী হয়েছে, তার মধ্যে বিতর্কিত সংশোধনী গুলো হল দ্বিতীয় সংশোধনী (জরুরী অবস্থা জারী করার বিধান), চতুর্থ সংশোধনী (রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ও একদলীয় গণতন্ত্র), পঞ্চম সংশোধনী (ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ), সপ্তম সংশোধনী (মার্শাল ল), অষ্টম সংশোধনী (প্রজাতন্ত্রের ধর্ম ইসলাম), নবম সংশোধনী (ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন), দশম সংশোধনী (সংসদে নারীদের জন্য ৩০টি সংরক্ষিত আসন), একাদশ সংশোধনী (সাহাবুদ্দিন আহমেদ ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট হবেন আবার প্রধান বিচারপতি পদে ফেরত যাবেন), ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার), চতুর্দশ সংশোধনী (সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ করা) ও পঞ্চাদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপ ও রাষ্ট্রের ধর্ম ইসলাম)। এছাড়া সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী ছিল ভারতের সঙ্গে ২৫বছরের শান্তি চুক্তি, ছিটমহল ও করিডোর বিনিময় এবং সীমানা নির্ধারণ। ষষ্ঠ সংশোধনীতে ছিল যেখানে সংবিধানের আর্টিকেল ৫১ ও ৬৬ কে সংশোধন করে বলা হয় যে, রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীগণের অফিস হবে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। আর দ্বাদশ সংশোধনীতে ছিল যেখানে প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকারের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ রহিত করা হয়। অর্থ্যাৎ মোট ১৫ সংশোধনী হলেও মাত্র চারটি সংশোধনী অর্থ্যাৎ প্রথম, তৃতীয়, ষষ্ঠ ও দ্বাদশ সংশোধনী ছিল মোটামুটি বিতর্কের ঊর্ধ্বে। বাকি এগারোটি সংশোধনী ছিল বিতর্কিত। সারা বছর আমরা সংবিধানের এতো যে দোহাই শুনি, সংবিধান নিয়ে এতো যে ক্যাচাল শুনি, সংবিধান নিয়ে কতো টকশো, কতো সেমিনার, কতো সভা-সমাবেশ, কিন্তু সংবিধানের বর্তমান চেহারাটি যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, তাতে এই সংবিধান যদি সাধারণ জনগণ এখন মুখস্থ করে এর স্বরূপ প্রকাশ করতে শুরু করে, তাহলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোশ সবার সামনে পুরোপুরি খুলে যাবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বর্তমান সংবিধান বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে গেছে বলে যারা গালভারী ঝাড়িঝুড়ি দেন, তারাও জানেন, এটা বাহাত্তরের সংবিধান থেকে কতোটা দূরে। বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রেরও একটা ধর্ম আছে যার নাম ইসলাম। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশের ধর্ম ইসলাম। আবার নেতারা মুখে ফেনা তুলে বলাবলি করেন, বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিন্তু সংবিধানে লিখে রেখেছেন রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। বর্তমান সংবিধান রচনায় তাড়াহুড়োর কারণে একটি জটিলের জটিলতা জনিত জটিলতায় একটি জটিল জগাখিচুড়িতে পরিনত হয়েছে। যা দিয়ে বাংলাদেশে ন্যায় নীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা তো সুদূরের ব্যাপার বরং রাষ্ট্রে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনাই একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও নির্বাচনের সময় সংসদ বহাল থাকবে! নিয়মতান্ত্রিক সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদ ভেঙ্গে যাবার পর কেবিনেট অন্তর্বতী সরকারের দায়িত্ব পালন করে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ বহাল থাকবে, একটা নামমাত্র অন্তর্বতী সরকারও থাকবে, নির্বাচনও হবে। আবার সেই নির্বাচন অন্যান্য সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে হয় সংসদ ভাঙ্গার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে। আর বাংলাদেশে সেটি একধাপ এগিয়ে সংসদ বহাল রেখে সংসদের মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান করা হয়েছে। আক্কেল একেবারে গুড়ুম!!! এর নাম বুঝিবা আওয়ামী বেআক্কেল!!! বাংলাদেশে একটি দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিতিশীরতা তৈরির সকল ক্ষেত্র পুরোপুরি নির্মাণ করা শেষ। এখন আগামী ৫ জানুয়ারি ২০১৪ দশম সাধারণ নির্বাচন হবে!!!ইতোমধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সহিংস আন্দোলনে মাঠ গরম করছে। সঙ্গে আছে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী-শিবির। সাধারণ জনগণের এই রাজনৈতিক খেলা দেখতে গিয়ে এখন নাভিশ্বাস চরমে।এতোক্ষণ ধান ভানতে কি শিবের গীত গাইলাম? তাহলে চলুন, আমাদের এমপিওভুক্ত সুশীল সমাজ নিয়ে একটু গুরুগম্ভীর কিছু আলোচনা করা যাক। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই হঠাৎ করেই এদেশে একটি উচ্চমার্গের সুশীল সমাজের উৎপত্তি ঘটে। এই শ্রেণীর কেউ কিন্তু ময়দানে যুদ্ধ করেনি। যুদ্ধের বিভিন্ন বিভৎস ছবি দেখিয়ে সভা সেমিনার করা শুরু করলো্। অর্থ্যাৎ দেশের সাধারণ মানুষের অর্জিত স্বাধীনতাকে তারা বিক্রি করে রুটি রোজগারের একটা উপায় খুঁজে পেলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই তথাকথিত সুশীল সমাজ একজন একজন করে নাম এমপিওভুক্ত করতে শুরু করলেন। এই শ্রেণীর অন্তর্ভুত্ত কারা? কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যারা যুদ্ধের সময় স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে নিরাপদ আশ্রয়ে ছিল। কিছু বেসামরিক আমলা, যারা যুদ্ধের সময় পরিবারসহ প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে গিয়ে কখন যুদ্ধ থামবে সেই আশায় দিন পার করেছিল। যুদ্ধ শেষে মুক্ত দেশে তারা এসেই কিছু পদ পদবি'র দাবিদার বনে গেল। কেউ কিছু প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান চালু করলো। ভবিষ্যতে যাতে সেই প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রকল্পের নামে নিরাপদে কিছু টাকা বানানো যায়। যা দিয়ে আরাম আয়াশে জীবন কাটানোই লক্ষ্য। সামরিক বাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাগণ, যারা পরবর্তী বিভিন্ন সামরিক সরকারে বড় বড় মন্ত্রী উপদেষ্টার দায়িত্ব পেলেন। যারা একটু নিম্নবর্গের তারা কি আর বসে থাকবে? তারা কেউ শ্রমিক নেতা সেজে বসে গেলেন। কারখানায় কাজ না করলেও নেতার গুনে তিনি অঢেল টাকা সম্পদের মালিক বনে গেলেন। বাদ থাকলো কারা? পেশাজীবীরা? তারা বসে থাকে কিভাবে? দেশের গতিপথ অনুমান করে তারা দুই শিবিরে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। আওয়ামী লীগ পেশাজীবী শ্রেণী ও জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী শ্রেণী। এই দলে আছে ডাক্তার, প্রকৌশলী, অ্যাডভোকেট, শিক্ষক, পলিটেকনিক, কৃষিবিদ, কে নেই? তারপরেও কেউ কেউ বাদ পড়লো!! তারা কি বসে থাকবে? মোটেও না। তারা শুরু করলো নানান বাহারি নামে এনজিও চালু প্রকল্প। কেউ আইন নিয়ে, কেউ মানবাধিকার নিয়ে, কেউ স্বাস্থ্য নিয়ে, কেউ শিক্ষা নিয়ে, কেউ ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে, কেউ বাসস্থান নিয়ে, কেউ ইমিগ্রেশান নিয়ে, কেউ পঙ্গুত্ব নিয়ে, কেউ বোবা কানা খোড়া নিয়ে, কেউ নারীদের অধিকার নিয়ে, কেউ শিশুদের অধিকার নিয়ে, কেউ মিডিয়া নিয়ে যে যেভাবে পারলো এনজিও গঠন করে দেশ সেবার নামে ঝাঁপিয়ে পরলো। সত্যি সত্যি কি এরা দেশ সেবার নামে ঝাঁপিয়ে পরলো? মোটেও না। হান্ড্রেট পারসেন্ট নো। তারা নিজেদের আখের গোছানোর একটা ধান্দা বের করলো। নতুন দেশ যে ধরনের উন্নয়ন মূলক কাজ পাক না কেন, এই নব্যগোষ্ঠীদের তাতে ভাগ দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হল। নানান বাহারি নামে সেই সব প্রকল্প চালু হল। বস্তুত এরা সবাই এমপিওভুক্ত সুশীল সমাজের নাগরিক। এরা সরকার ও বিরোধীদল রাষ্ট্রের যেটুকু লুটপাট করে অবশিষ্ট থাকে, সেই অবশিষ্ট অংশের পুরোটাই খেয়ে ফেলা এদের কাজ। আপনারা বলুন তো আইন ও শালিশ কেন্দ্র কি? একটি এনজিও। আর এর প্রধানগণ হলেন সুশীল সমাজের হত্যা কত্তা। বলুন তো গ্রামীণ ব্যাং কি? একটি এনজিও। এর প্রধান একজন নোবেল জয়ী বুদ্ধিজীবী। গরিবের টাকায় যার যতো পোদ্দারি। বলুন তো সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ বা সিপিডি কি? একটি এনজিও। যার প্রধানগণ দেশে থিংক ট্যাংক হিসেবে সকল সমস্যার সমাধান বাতলে দেন বিনা পয়সায়! বলুন তো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি কি? একটি এনজিও। যার প্রধানগণ দেশে কি পরিমাণ দুর্নীতি কে করেন, তা বিনা পয়সায় পরিমাপ করার দায়িত্বে রয়েছেন। বলুন তো উন্নয়নের জন্য সুশাসন বা সুজন কি? একটি এনজিও। যার প্রধান দেশে সুশাসন কিভাবে নিশ্চিত হবে বিনা পয়সায় সেই সব উপদেশ বিলি বণ্টন করেন। এমন হাজারো সুশীলদের নিয়ে হাজার হাজার ভাগে বাংলাদেশের প্রকৃত সম্পদ লুটপাট হচ্ছে। লুটপাট হচ্ছে সম্মিলিত ভাবে। এমপিওভুক্ত সুশীলরা আবার ভাগে একটু কম পড়লেই ভোল্ট পাল্টে উল্টো বিবৃতি বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। ভাগ ঠিক আছে তো জি হুজুর জি আচ্ছা জি জাহাপনা!আমাদের এই এমপিওভুক্ত সুশীলরাই দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নানান ধরনের কুটকথা ধার দেন। কুপরামর্শ দেন। ওয়াজ নছিয়ত করেন। তাদের বুদ্ধি-পরামর্শে যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, সেই দলের পকেট কাটার জন্য তারা নানান ফন্দি ফিকির করেন। রাতের ঘুম হারাম করে প্রাইভেট টেলিভিশনের টকশোতে মাতলামি করেন। কথা গুছিয়ে বলতে পারেন না, কিন্তু তিনি কত্তো বড় বুদ্ধিজীবী সুশীল। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর তবু সরাসরি জনগণের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করতে হয়। লোক দেখানো ভোটের নির্বাচন করতে হয়। এলাকার কালভার্ট ব্রিজ রাস্তা উন্নয়ন করতে হয়। চুরি চামারি দুর্নীতি'র কথা নাইবা কইলাম। কিন্তু এই যে এমপিওভুক্ত সুশীলরা, এদের চুরি-চামারি, দুর্নীতি কেউ কি কোনোদিন ধরেছে? জনগণের সঙ্গে সেই চুরি'র কোনো সম্পর্ক নেই। সেটা স্রেফ হিজ হিজ হুজহুজ ব্যাপার। এক ইউনুস কাহিনী ঘাটতে গিয়েই থলের বিড়াল বের হয়ে গেল! বাংলাদেশে যতো এনজিও আছে, সবগুলোতে খোঁজ লাগান, একই চিত্র পাবেন। মিডিয়ার সামনে বড় বড় বুলি ছাড়েন, আর প্রকল্পের গাড়িতে করে বাজারে যান। তেলের হিসাব পর্যন্ত ঠিক মতো লেখেন না। আর সরকারকে ট্যাক্সের বেলায় চোরা খাতা বের করে আয় ব্যয়ের একটা কাল্পনিক চেহারা হাজির করেন আমাদের এই তথাকথিত এমপিওভুক্ত সুশীলগণ। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে এই এমপিওভুক্ত সুশীল সমাজ। এদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নাই। এরা ঘূর্ণিঝড়ের ছবি দেখিয়ে বিদেশ থেকে বড় বড় দান মারেন। এরা মানববন্ধনের ছবি দেখিয়ে বড় বড় আন্তর্জাতিক এইড পান। এরা এসিরুমে বসে দেশের সকল সমস্যা নিয়ে সেমিনার করে কোটি টাকার বাজেট দেখান। এরা হল আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজ। এরা আবার এমপিওভুক্ত। সো, সরকার একটু খোঁজখবর নিলেই এরা বিরোধী পক্ষে সুর তোলেন। আবার গোপন বৈঠকে সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে দিনের বেলায় এরা কথিত সমাজ সেবায় ব্যস্ত দিন কাটান। এমনিতে তথাকথিত এমপিওভুক্ত সুশীল সমাজ থেকে সাধারণ জনগণ সব সময় দূরেই থাকে। আর এরা সাধারণ জনগণের নানান অসহায়ত্বের ছবি দেখিয়ে কোটি টাকার দান মারেন। এরা এতোই মুখোশধারী যে সাধারণ খালি চোখে এদের চেনার উপায় নেই। এদের সঙ্গে যদি আপনি কাজ করেন, তাহলেও বোঝার উপায় নেই। যদি এদের সঙ্গে আপনার কোনো কাজে বনিবনা না হয়, তাহলেই এদের চরিত্র হুট করেই ধরতে পারবেন। সো, সাধু এমপিওভুক্ত সো কলড সুশীল সমাজ থেকে সাবধান!!!",False mk,"বিএনপিকে বুঝতে হবে-দেশ অচল করা কোনো সমাধান নয় আমাদের সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সব কিছু করবেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী। আবার সংবিধানেই রাষ্ট্রপতিকে রাষ্ট্রের এক নম্বর ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আমাদের অভিভাবক। আর সেজন্য বর্তমান সঙ্কট নিরসনে রাষ্ট্রপতিকে শেষ ভরসা বলে মনে করছে দেশের সুশীল সমাজ থেকে সাধারণ মানুষ। গতকাল সকালের খবর-এ ‘রাষ্ট্রপতির দিকে তাকিয়ে আছে দেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ কাজে আসতে পারে। তবে সে উদ্যোগ কেমন হবে সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে কোথাও এর উল্লেখ নেই। রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বিএনপি বয়কট করেছিল। যেদিন সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ হল সেদিনই তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন এবং এর পরদিনই রাষ্ট্রপতি তাদের সময় দেন। রাষ্ট্রপতি নিজেকে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ নামে আখ্যায়িত করে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী তার যতটুকু ক্ষমতা আছে ততটুকু তিনি প্রয়োগ করতে পারবেন। নিশ্চয় বিরোধী নেতা জানেন রাষ্ট্রপতির কতটা ক্ষমতা আছে। সংবিধান অনুযায়ী সত্যিকারভাবেই রাষ্ট্রপতির করার কিছুই নেই। ইতোমধ্যে বিরোধী দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির বৈঠকের সারসংক্ষেপ বঙ্গভবন থেকে গণভবনে পৌঁছে গেছে। প্রধানমন্ত্রীও সংসদে বক্তব্য দেওয়ার সময় বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি তাকে অনুমতি দিয়েছেন। এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে-বাজার করা শেষ, রান্না করাও শেষ, টেবিলেও সাজানো হয়েছে, এখন শুধু খাবার গ্রহণটি বাকি। এখন রান্না কীভাবে হবে তা বলে লাভ নেই। আজ কালের মধ্যে তফসিল ঘোষণা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রায় সর্বত্র একটি নির্বাচনী আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে যে অবস্থানই নেওয়া হোক না কেন, আমরা জানি এ দেশের মানুষ নির্বাচনমুখী। আর গণতন্ত্রে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।প্রধানমন্ত্রী যেমন নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের ব্যাপারে অনড়, তেমনি বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যু নিয়ে হুমকিই দিয়ে যাচ্ছে। গত শুক্রবার এক জনসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেছেন, তফসিল ঘোষণা দিলেই দেশ অচল করে দেওয়া হবে। দেশ অচল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আদায় করার সময় এখনও কি আছে? কার বিরুদ্ধে এই হুশিয়ারি? দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী, দিনমজুর, সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে, না সরকারের বিরুদ্ধে। এক-একটি হরতাল মানে ২০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি। আরও তো রয়েছে প্রাণহানি, পঙ্গুত্ব, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিনষ্ট। এর আগে তিনি তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় ছাত্রদলকে বলেছিলেন, দুয়েকটি বাস পোড়ালেই আন্দোলন হবে না। আঠার দলের আরেক শরিক জামায়াতে ইসলামী তো তাণ্ডব চালিয়েই যাচ্ছে। সম্প্রতি সীতাকুণ্ডে তারা যা করছে তাতে একাত্তরে তাদের ভূমিকার কথাই আবার মনে করিয়ে দেয়। গত শুক্রবার জামায়াতের এক নেতা পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এই নেতা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিরোধিতা করেই এ স্পর্ধা প্রকাশ করেন।দেশ অচল করে বা পঞ্চাশ হাজার বর্গমাইল জ্বালিয়ে কোনো সমাধান হবে না। নির্বাচনের মাধ্যমেই সমাধান হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের শুনানিতে বা কানাডিয়ান সংসদ সদস্যদের প্রতিবেদনে অথবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পার্লামেন্টের প্রস্তাবে যা-ই আসুক, এ দেশ কীভাবে চলবে তা ঠিক করবে এদেশেরই জনগণ। এখনও সময় আছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। এ সুযোগ কাজে লাগান। জনগণের রায়ে নির্ধারিত হবে আগামীদিনের পথচলা।",False hm,"প্রবাসে দৈবের বশে ০২৬ ১. মরাল গ্রীবা যাকে বলে, তা-ই। আস্তে করে ঘাড়ে হাত রেখে ছুঁয়ে দেখলাম। বাদামী গায়ের রং, মসৃণ শরীরের বাঁক, এক কথায় অপূর্ব। কোমর জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে বসালাম, আলতো করে আঙুল রাখলাম নাইলনের ওপর। আহ, কতদিন পর পাচ্ছি এই স্পর্শ! দেশ ছাড়ার পর এই প্রথম, ঝাড়া চার মাস পর। কথাগুলি আমার স্প্যানিশ-ইংরেজি পারস্পরিক ভাষা শিক্ষা প্রকল্পের পার্টনার পাওলা সম্পর্কে শতভাগ খাটে, তবে তাকে কোলে নেয়ার সুযোগ হচ্ছে না তার নররূপী দানব বয়ফ্রেন্ডের কারণে। কোলে যাকে তুলে নিলাম সে আমার নতুন গীটার। চরম আর্থিক দুরবস্থার দিনে দুম করে কিনে ফেলা আমার নতুন ক্রোড়চারিণী। গীটারের দোকানে যে মিষ্টি বয়স্কা মহিলা বসেন, তিনি প্রথম দিন বেশ যত্ন করে দেখালেন তার গীটারের স্টক। সারা দোকান ভর্তি পিয়ানো, বাঘা বাঘা সব জিনিস, এক একটার নকশা তাকিয়ে দেখার মতো, দামও গগনচুম্বি। গীটারের দাম জেনে নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে সেদিনের মতো চলে আসলাম, মনে মনে হিসেব কষছি, আগামী কত মাস কী কী তুচ্ছ বিলাসিতা বাদ দিতে হবে। হপ্তা যেদিন ফুরোবে, সেদিন বিকেলে গিয়ে হানা দিলাম আবার। গীটারের ব্যাগ স্টকে নেই, বাসে করে যাবো শুনে মহিলা রীতিমতো ঘাম ঝরিয়ে গীটার প্যাক করে আমার হাতে তুলে দিলেন, সাথে পাঁচ ইউরো ডিসকাউন্ট। শহীদ কাদরী যেমন নিজের বাবা সৈয়দ খালিদ আহমেদ কাদরীর নামের সাথে দামেশকের ঝনঝনানিময় তলোয়ারের তুলনা করে নিজের প্রসঙ্গে বলেছিলেন, তিনি ডিঙি নৌকার মতো পলকা, তেমনি পলকা আমি, তারচেয়েও পলকা আমার এই কাগজের কফিনে মোড়া গীটার বগলে করে বেরিয়ে আসি। এক একটা সময় যখন খুব শূন্য লাগে সবকিছু, খুব অর্থহীন মনে হয় আর সব কিছুই, তখন একটা কিছু ধরে বসে থাকতে ইচ্ছা করে, হোক কারো হাত, হোক একটা গীটারের কেঠো ঘাড়। একটা কিছু বাজুক তবু আমার হাতে। আমার জীবনের প্রথম উপার্জন দিয়ে কেনা আমার গীটারটা এখন ঢাকায় পড়ে আছে আমার ঘরে। এগারো বছর আগে কেনা সেই গীটারটার কথা মনে পড়ছে এই পোস্ট লিখতে গিয়ে। আমার অনেক আমি-ঘন্টা ধীরে ধীরে বিষন্নতার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে ঐ গীটারটা ধরে থেকে। এই পোস্ট উৎসর্গ করছি আমার রংচটা গীটারকেই। ২. ক্লাস নাইনে আমি যে শিক্ষকের কাছে বন্ধুদের সাথে দল বেঁধে তাঁর বাড়িতে গিয়ে আলাদা করে গণিত শেখা শুরু করেছিলাম, তিনি সে বছরই বিয়ে করেছিলেন। ক্লাসে যে তিনি কোন অযত্ন নিয়ে গণিত শেখাতেন, এমনটা বলা ঠিক হবে না, তবে বাড়িতে আমাদের চাপের ওপর রেখে অঙ্ক করাতেন। তাঁর স্ত্রী, যতদূর স্মরণ করতে পারি, যথেষ্ঠ রূপবতী এবং আকর্ষণীয়া ছিলেন। একদিন পড়তে গিয়ে আমরা দেখি, স্যার বারান্দার গ্রিলে গাল ঠেকিয়ে উদাস হয়ে আকাশ দেখছেন। এক বন্ধু ফিসফিস করে জানালো, বিরহ। ভাবি নাকি বাপের বাড়ি গেছেন দু'দিন আগে। বিরহকাতরতায় আরো অনেককেই ভুগতে দেখেছি। একটা সময় আমিও ভুগেছিলাম, যখন আরো কচি আর কাঁচা ছিলাম। কিন্তু তিনদিন আগে ফট করে ইন্টারনেটছিন্ন হয়ে পড়ার পর নিজের শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতা লক্ষ করে বুঝলাম, আমি গভীরভাবে এই তথ্যবিনিময়ব্যবস্থার প্রেমে নিমজ্জিত। ইন্টারনেটের সাথে আমি আসলে বিবাহিত। পবিত্রগ্রন্থ হাতে কেউ এসে শুধু ""টিল ডেথ ইউ ডু পার্ট"" আর ""ইউ মে কিস দ্য নেট"" বলা বাকি। সমস্যা হচ্ছিলো কিছুদিন ধরেই, লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক গায়েব। টোটকা প্রয়োগ করলে আবার ফেরত আসে। পাশের ফ্ল্যাটের ডাঁসা জার্মান এক ছুকরি এক দুপুরে এসে হাজির, আমার নেট কাজ করে কি না জানতে। তার সাথে আলাপ করে জানলাম, আমার সমস্যার চেয়ে তার সমস্যা আরো গুরুতর, সে গত কয়েকদিন যাবৎ নেটহারা হয়ে ঘুরছে। সেদিন সন্ধ্যেবেলা আবার ঘরে ফিরে এসে পিসি ছেড়ে দেখি আমারও একই হাল। স্যামুয়েলকে পাকড়াও করলাম, সে জানালো, তার মাঝে মাঝে সমস্যা হয়, তবে এখন সে পরিজালিত অবস্থায় আছে, আমার কোন জরুরি মেইল করার দরকার হলে তার পিসি ব্যবহার করতে পারি। স্যামুয়েলকে কিভাবে বোঝাই যে নিজের বউ বাপের বাড়ি গেলে পরের বউকে ব্যবহারের সংস্কৃতিটা ভালো নয়? কাষ্ঠ হাসি হেসে বললাম, এস নের্ফট (মেজাজ খারাপ লাগছে)। স্যামুয়েল বুদ্ধি দিলো হখশুলরেশেনৎসেন্ট্রুমে অভিযোগ করতে। পরদিন ভোরে বেরিয়ে আমার শ্রীলঙ্কান প্রতিবেশিনী সরসীর সাথে দেখা। তাকে পাকড়াও করে জিজ্ঞেস করলাম নেটের কথা, সে মুখ কালো করে জানালো, ইতিমধ্যে দুইবার অভিযোগ করা হয়েছে, কিন্তু হাউসটিউটররা কোন সমাধান দিতে পারেনি। ক্লাসের পর গেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণনাকেন্দ্রে। সেখানে হোঁৎকা এক হার্ডি আর শুঁটকো এক লরেল বসা। আমার সমস্যার কথা বুঝিয়ে বলার পর হার্ডি জানালো, আমার আগেও অনেকে এসে এই অভিযোগ করে গেছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আমি বললাম, দ্যাখো আমি খুব কষ্টে আছি। কবে নাগাদ আবার ঘরে বসে নেট ব্যবহার করতে পারবো? লরেল জানালো, আসলে কোন সময়ের প্রতিশ্রুতি দেয়া সম্ভব নয়। আমি যেন মেওয়া চাষে মনোযোগ দিই। এর মধ্যে আবার এক ফ্যাকড়া, সিস্টেমটেখনিকের সিম্যুলেশন করা হয়নি। উপস্থাপনার খসড়া ডক্টর প্রিসের পছন্দ হয়নি। মেইলে সে এক নিষ্করুণ ঝাড়ি। গ্রুপের পক্ষ থেকে আমি যোগাযোগ করি সাধারণত, প্রিস সরাসরি জানতে চেয়েছেন, ""আপনার বাকি দুই সঙ্গী আসলে কী করে?"" বুধবার ক্লাসের পর কাফেটেরিয়াতে বসে বসে বাকি দুইজনের সাথে বসে সিম্যুলেশন শেষ করা গেলো। পরদিন আমাদের উপস্থাপনার কথা ছিলো, আগেভাগে পিছিয়ে দেবার অনুরোধ করায় চামড়া কিছুটা বাঁচলো, তবে ক্লাসে প্রিস কড়া গলায় জানিয়ে দিলেন, এমনটা আর বরদাশত করা হবে না। বাকি দুই গ্রুপের উপস্থাপনা শেষ হবার পর তাকে কিছুটা ভজিয়ে নরম করা গেলো। ইন্টারনেটের অভাবে নিশ্চয়ই আমার চেহারা স্কুলে আমার গণিতশিক্ষকের মতোই হয়েছিলো। ওলাফ আর ক্রিস্তফ জানতে চাইলো, কোন সমস্যা হচ্ছে কি না। আমি বললাম, হ রে ভাই, ইন্টারনেট নাই বাসায়, রাতে ঘুম আসে না! ওলাফ বিবাহিত মানুষ, সপ্তাহান্তে ড্যুসেলডর্ফে বউয়ের কাছে চলে যায় ছুটতে ছুটতে, সে বোধহয় আমার মর্মযাতনা বুঝলো কিছুটা। বর্বর ক্রিস্তফ খালি এক প্লেট ফ্রেঞ্চফ্রাই এনে সাধলো, ""খেতে চাইলে জলদি হাত চালাও।""",False rn,"পুদিনা পাতার অনেক গুন শতবর্ষী মানুষ নিয়ে আমাদের কৌতূহলের অন্ত নেই। পুদিনা পাতা প্রাচীনকাল থেকেই বেশ জনপ্রিয় ঔষধ হিসেবে পরিচিত।পুদিনা পাতা এক ধরনের সুগন্ধি গাছ। ইংরেজিতে যার নাম মিন্ট। এই গাছের পাতা তরি-তরকারির সাথে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে বেশি ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের বড়া তৈরির কাজে। পুদিনা এক প্রকারের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। বিশ্বের অনেক দেশেই পুদিনার গাছ জন্মে।এর বৈজ্ঞানিক নামঃ Mentha spicata । পুদিনায় রোজমেরিক এসিড নামের এক ধরনের উপাদান থাকে। এটি প্রাকপ্রদাহী পদার্থ তৈরীতে বাধা দেয়। ফলে অ্যাজমা হয় না। এছাড়াও এ ঔষধি প্রোস্টসাইক্লিন তৈরীতে বাধা দেয়। তাতে শাসনালী পরিষ্কার থাকে।পুদিনায় রয়েছে মনোটারপিন নামক উপাদান। এটি স্তন, লিভার এবং প্যানক্রিয়াসে ক্যান্সার হওয়া প্রতিরোধ করে। নিয়মিত পুদিনা পাতা খেলে ফুসফুস, কোলন এবং ত্বকের ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।মুখের স্বাদ বাড়াতেও এটি খুব কার্যকর।গরম পানিতে সামান্য পরিমাণ পুদিনা পাতা সেদ্ধ করে পান করুন।মুখে দুর্গন্ধ হলে পাতার রস জলে মিশয়ে কুলি করলে কাজ হয়। পুদিনার তাজা পাতা পিষে মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর যদি তা ধুয়ে ফেলা যায়, তা হলে মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যায়। ব্রণ ওঠাও বন্ধ হয়।পুদিনার পাতা পিষে রস করে তার ভেতর দু’তিন ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে তা পান করলে ক্লান্তিভাবও দূর হয়।কোনো কারণে কোনো ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার নাকের কাছে কিছু তাজা পুদিনা পাতা ধরুন। দেখবেন, জ্ঞান ফিরে পেয়েছে লোকটি।পুদিনার পাতা ভালো করে পিষে তার রস ভালো করে মাথায় ব্যবহার করেন। যাদের চুলে উকুন আছে, তারা খুব উপকার পাবেন।শরীরের ব্যথা দূর করতে পুদিনা পাতার চা খুব কাজে দেয়। মাথা ও পেট ব্যথা নিরাময়েও পুদিনার পাতা খুব উপকারী। অতিরিক্ত গরমে ছোট-বড় প্রায় সবারই খাবারে বদহজম বা ফুড পয়জনিংয়ের সমস্যা দেখা যায়। এই পাতা পেটের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমিয়ে খাবার হজমে সাহায্য করে। দেহের জন্য ক্ষতিকর অণুজীবগুলো ধ্বংস করে। পুদিনাপাতা রান্নার চেয়ে কাঁচা খাওয়াটাই উত্তম। এতে পুষ্টিগুণ বজায় থাকে বেশি। সর্দি, হাঁচি, কাশি দূর করতেও এই পাতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুদিনাপাতা, তুলসী পাতা, কাঁচা আদা, মধু মিশিয়ে খেলে ঠান্ডা লাগা দ্রুত ভালো হবে। পুদিনা পাতার লাচ্ছির রেসিপিটি জেনে নিন:-উপকরন গুলো হলো- টক দই –২ কাপ, পুদিনা পাতা কুচি – এক গুচ্ছ, বিট লবন –১/২ চা চামচ, চিনি –পরিমানমতো বা জিরোক্যাল এক প্যাকেট, জিরাগুড়া–এক চা চামচ, পানি-১/২ কাপ । এবার- সব উপকরণ ব্লেন্ডারে নিয়ে ভালো মতো ব্লেন্ড করুন। তারপর ফ্রিজে রেখে উপরে পুদিনা পাতা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন রিফ্রেশিং পুদিনা লাচ্ছি। এখন, মিষ্টি লাচ্ছি না চাইলে চিনি বাদ দিতে পারেন। ঝাল খেতে চাইলে কাঁচামরিচ দিতে পারেন। বিট লবন বেশি চাইলে তাও দিতে পারেন।বিট লবনের পরিবর্তে লবনও দেয়া যায়।এই রেসিপিটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাকে একটি ধন্যবাদ দিবেন ।ভাল থাকার জন্য দরকার ভাল খাবার। এতে স্বাস্থ্য থাকে ভাল ও মন থাকে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন। বেশী করে 'পুদিনা পাতা' খান। সুস্থ থাকুন ।ভাল থাকুন ও ভাল রাখুন আপনার পাশের মানুষটিকে।",False fe,"None লোকগাথার সমাজচিন্তাবেলাল চৌধুরী-----------------------------------------------------------------সমাজ সংস্কৃতিতে যে বিষয়টি আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি তার জীবনের দৈনন্দিন সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ বিষাদ-সব কিছুতেই যা জনজীবনে প্রতিনিয়ত প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। সংস্কৃতির সেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিকটি আজও চিন্তাশীল বুদ্ধিজীবীদের অবধিগম্য। অথচ জীবনের পরতে পরতে যে সংস্কৃতির প্রভাব আমরা নিয়ত অনুভব করি সমাজ-চেতনায় যার অবদান অনস্বীকার্য এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেই লোকগাথা নিয়ে কোনও বিস্তারিত আলোচনা দেখা যায় না।লোকগাথা শব্দ বন্ধটি নতুন কিছু না হলেও এর অন্তর্নিহিত বক্তব্য চির পুরাতন, আদিম ও শাশ্বত। এই গাথার মধ্যে বলতে গেলে রয়েছে এক ধরনের সাংবাদিকতা, লোকসংগীতের মিশেল। অথচ লিখিত সাংবাদিকতা আরম্ভ হওয়ার অনেক আগেই বিশ্বের প্রায় সবদেশের লোকসাহিত্যেই মৌখিক সাংবাদিকতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তার একেই এক বিশেষ অর্থে লোক সাংবাদিকতা বললে অত্যুক্তি হয় না। বিশেষ অর্থ এই জন্যেই বলা হল লোক-সাংবাদিকতা লোক-সাহিত্যেরই একটি অঙ্গস্বরূপ সেই সঙ্গে লিখিত রূপেও লোকসাহিত্য মিলছে। বর্তমান যান্ত্রিক অগ্রগতির ফলে মুদ্রণ মাধ্যম ও বৈদ্যুতিক মাধ্যমের রমরমা হলেও সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায় লোক মাধ্যমের গুরুত্ব অপরিসীম এবং মানবসভ্যতার সঙ্গে এইসব মাধ্যমের যোগাযোগ অবিচ্ছেদ্য। স্বভাবতই গণচেতনায় অন্য মাধ্যমগুলির তুলনায় লোক মাধ্যমের ব্যাপকতা ঢের বেশী। মুদ্রণ ও বৈদ্যুতিক মাধ্যমের তথ্য প্রচার একমুখী, ফলে গ্রহীতার কাছে এই প্রচার কতটা ফলপ্রসূ সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় না।সংবাদপত্রের সংবাদ নিরক্ষর দৃষ্টিহীন অভাবী লোকের কাছে আর বেতার ও টিভি চ্যানেলের সংবাদ গ্রাহক যন্ত্রহীনদের কাছে কোনো প্রভাবই ফেলে না। অন্যদিকে লোক মাধ্যম নির্বিবাদে পৌঁছে যায় সর্বস্তরের জনগণের কাছে।আদিমযুগে ঢাকের বাজনা দিয়ে দূরদূরান্তে খবর পাঠানোর ব্যবস্থা ছিল। এক সময়ে হিন্দু সমাজে বিপদাপদের আশঙ্কায় শঙ্খধ্বনি করে অন্যদের সতর্ক করে দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। অর্থাৎ জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম বা একমাত্র মাধ্যম ছিল লোকমাধ্যম। গণচেতনা বৃদ্ধিতে তাই জনগণের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কারজনিত মৌখিক মাধ্যমই সেখানে অধিক কার্যকরী ছিল। বিশেষ করে যে দেশে শতকরা ৮০-র অধিক মানুষ বসবাস করেন গ্রামাঞ্চলে এবং শিক্ষিতের হারও তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। স্বভাবতঃই গণসংযোগের ক্ষেত্রে লোকমাধ্যমেরই প্রয়োজনীয়তা তখনও অত্যন্ত বেশি। গণ শব্দের অর্থ বৃহত্তর জনসমষ্টি। গণ শব্দের সংজ্ঞা নিরূপণ বলা হয়- A mass is not simply a lot of people. but relaiovely barg mumber of persons, spatially dispersed and anonymus reaching to one or more of the same stimuli but acting individually without reard for one another. অর্থাৎ পরস্পর ভিন্নমুখী প্রতিবলয়ের জীব হলেও একই উদ্দীপনার সম্মুখীন হলে তাদের পারস্পারিক প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন ভিন্ন হতে বাধ্য।গণসংযোগের মূল সূত্র হল তথ্য বিনিময়। এই তথ্য বিনিময় বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন কোন ঘটনার বিবরণ জনগণকে শোষণের চিত্র, অনাচারও শাসকের শোষণ পীড়নের বিরুদ্ধাচারণ করা হয়েছে তেমনই দেশীয় সরকারের প্রবর্তিত নীতিরও বিরোধিতা করা হয়েছে।বল্লাল সেন কৃত ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র এই চতুবর্গ শ্রেণী বিভাজনের অসারতার প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জনগণকে সচেতন করেছেন ফকির দুদ্দুশাহ। গানটি হল-বল্লাল সেন শয়তানী দাগায়গোত্র জাত সৃষ্টি করে যায়।বেদান্তে আছে কোথায়, আমরা দেখি নাই।জাতি আর সম্প্রদায় মিলেভারত শ্মশান করিলেবিনয় করে দুদ্দু বলে, বুঝে দেখ ভাই।কৃষক এবং শ্রমিকের উপর শোষণের যাঁতাকল চেপে বসে আছে প্রথম থেকেই, কৃষক ও শ্রমিকের পরিশ্রমের ফসল ভোগ করছে সমাজের একদল স্বার্থপর মানুষ। এই শোষকদের মুখোশ খুলে দিতে সোচ্চার হয়েছেন লোককবি রমেশ শীল-আমার খুনে মোটর গাড়ী, তেতালা চৌতালা বাড়ীআমার খুনে রেডিও আর বিজলীবাতি জ্বলেআমি কৃষক তুমি মজুর দিনেরাতে খাটিদুই শক্তি এক হইলে তারা পিছু যাবে হটি।একসঙ্গে নিশ্বাস ছাড়ি, পর্বত উড়াইতে পারিদুশমন চক্রে চাও না ফিরি কী আছে তার মূলে ।।পার্বত্য ময়মনসিংহ জেলার হাজোং সম্প্রদায়ের উপর সেখানকার তৎকালীন জমিদার সুসং নানা অত্যাচার চালাতো। তার প্রতিবাদে হাজোংরা বিদ্রোহ করে এবং এই বিদ্রোহের কাহিনী জনগণের দরবারে পেশ করেন লোককবি নিবারণ পন্ডিত-মোদের দু:খের কথা কাহারে জানাইসারা বছর খাট্যা মরি প্যাটের ক্ষুধায় ভাই।শুনরে ও ভাই কৃষক যত হিন্দু মুছলমানঅন্নদাতা হইয়া আমরা কি পাই প্রতিদান।ম্যাঘে ভিজ্যা রইদে পুড়্যা ফলাইলাম ফসলসেই ফসলে পরের গোলা ভরিল কেবল।ধনী বণিক জমিদার আর বিদেশী সরকারচাইর ভূতে লুইট্যা খাইল মোদের সোনার সইংসার। ঃইত্যাদি।লোককবিরা শহরের মেকী সভ্যতার ধার ধারে না। বিজলী বাতি আর কলের জল চোখে দেখে না। সংবাদপত্র আর বেতারের ওজনকরা কথার সঙ্গেও তারা পরিচিত নয়, একথা ঠিক। কিন্তু তাদের গণচেতনা তথাকথিত বাবু ভুইঞাদের চাইতে যে কিছুমাত্র কম নয়, এ পরিচয় আপনারা শুধু টুসু গান কেন বাংলার অধিকাংশ লোকসঙ্গীতের মারফৎই পাবেন। এইসব গানই হল নিরক্ষর পল্লীবাসীদের সংবাদপত্র- এর মারফৎ তারা তাদের মত গঠন করবার সুযোগ পায়। লোকসঙ্গীতের এরকমই একজন ছিলেন চারণ কবি মুকুন্দ দাস। জন্মসূত্রে যদিও ছিলেন তিনি ঢাকার অদূরে বানারি গ্রামের। আদি বাস ছিল যঞ্জেশ্বর। পূর্ব পুরুষরা ছিলেন নৌকার মাঝি। পিতার কর্মসূত্রে গোটা পরিবারই নতুনকরে বসতি করেন বরিশালে। প্রথম জীবনে বেয়াড়া জীবন যাপনে অভ্যস্ত হলেও একেবারে তরুণ বয়সেই তৎকালীন নায়েবে নাজির বীরেশ্বর গুপ্তের কীর্তনের দলে যোগ দিয়ে সুখ্যাতি অর্জন করেন। বরিশালে যেসব খ্যাতিমান কীর্তনীয়ার দল আসর তাদের গান শুনে শুনে কীর্তন সংগীত গ্রন্থটি প্রকাশ করে।বিশশতকের গোড়ার দিকে এক ত্যাগী সাধুর কাছে দীক্ষা নিয়ে মুকুন্দ দাস বরিশালের মহাত্মা অস্বিনীকুমার দত্তের স্বদেশ মন্ত্রের প্রভাবে চারণ কবিতে পরিণত হন। বৈষ্ণব মন্ত্রে দীক্ষিত হলেও সাধন সংগীতে শ্যাম ও শামার অপূর্ব সমন্বয়ে গড়ে তোলেন ধর্মনিরডেক্ষতার ধারা। উপরন্তু নিজে গান ও যাত্রাপালা রচনার সঙ্গে সঙ্গে বরিশাল হৈতিষী পত্রিকায় নিয়মিত লিখতে শুরু করে। চারণ গানের মাধ্যমে গোটা দেশকে জাগিয়ে তোলেন। বিভিন্ন দেশবরেণ্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে স্বয়ং রবীন্দ্রনাও তার রচনায় চমৎকৃত হয়ে প্রচুর সাধুবাদ জানান। বিশেষ করে বিদেশী বর্জনে তার দেশাত্মবোধক গান ও স্বদেশী যাত্রা পালার জন্য তিনি বিদেশী শাসক শ্রেণীর কোষানলে পড়ে একের এক অগ্নি ঝরা গান বাধতে থাকেন। যার মধ্যে মাতৃপূজা গীত অঙ্কলন তার ছিল ধান গোলা ভরা। সে ইদুরেরা করল সারা। যার জন্য তাকে কারাদন্ড ভোগ ও জরিমানা দিতে হয়েছিল। তার ছিল ছেড়ে দে বঙ্গ নারী রেশমি চুড়ি কভুতার হাতে পরার মতো অগ্নিবর্ষী সব গান। অসহযোগ আন্দোলন ও আইন অন্যান্য আন্দোলনে তিনি ছিলেন পুরোধা পুরুষ। সাধন সঙ্গীত পল্লী সেবা ব্রহ্মচারিনী, পথ সাথী, সমাজ কর্মক্ষেত্র ছিল তার উল্লেখযোগ্য রচনা।একদিকে খরা, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, ঝড়-তুফান প্রভৃতি প্রকৃতির রোষ, অন্যদিকে অনাচার, অত্যাচার, কালোবাজারি প্রভৃতি অসৎ ব্যক্তিদের দুর্নীতি, সাধারণের জীবনকে করে তোলে অতিষ্ঠ। এদের কথা বলতে এগিয়ে আসেন লোক-কবিরাই, তাদের হাতের দোতারা, একতারা বা গুবগুবি নিয়ে আর কণ্ঠে থাকে শাণিত ক্ষুরধার শব্দের করুণ কাহিনী। অগ্নিবর্ষী গানের বাণীতে জনগণের চোখে যখন ঝরে আগুন তখন কিন্তু লোক-কবির চোখে জল, কানে তার মানুষের অসহায় কান্নার রোল। নেত্রকোনা মহকুমার কৃষক সমাবেশে আউলিয়া গায়ক রসিউদ্দীন হাজার হাজার শ্রোতার সামনে তুলে ধরে পঞ্চাশের মন্বন্তরের করুণ কাহিনী-আমার দু:খের অন্ত নাইদু:খ কারে বা জানাই।সুখের হপন ভাইঙলেরে মোর চুরাই বাজারে।বাইরে বাই, তেরশো পঞ্চাশের কথামনে কি কেউর পরে গো, মনে কি কেউর পরে।ক্ষুধার জ্বালায় কোলের ছাওয়ালমায়ে বিক্রি করে যে, চুরাই বাজারে ।।প্রশাসনিক নিপীড়ন ও নির্যাতনের কথাও সোচ্চারে প্রকাশ করেছেন লোক-কবিকুল।লোকসঙ্গীত কেবল গণচেতনা বৃদ্ধিতেই নয়, লোক-সাংবাদিকতার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যেই সমুজ্জ্বল। প্রতিবাদী গান বা গণজাগরণের গান যেমন আছে, তেমনি রয়েছে স্বাদেশিকতার গান, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের গান, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার গান, রয়েছে গণশিক্ষার গানও, যেমন সতীদাহ প্রথা রদ, নাবালিকা বিবাহ রদ, পরিবার-পরিকল্পনা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, জাতীয় সংহতি বজায় রাখা, পণপ্রথার বিরুদ্ধে গান, সামাজিক নানা কুসংস্কারের বিরোধী গানও। লোকগীতিতে রয়েছে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সংবাদ, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা আর রয়েছে আধুনিকতার অভিশাপের নানা কাহিনী। অর্থাৎ জনজীবনে যেসব ঘটনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে তার সবকিছুই স্থান পেয়েছে লোকসঙ্গীতে। গণচেতনা বৃদ্ধিতে তাই লোক-সাংবাদিকতার অবদান অসামান্য আর লোক-সাংবাদিকতার অন্যতম অঙ্গ লোকসঙ্গীত। [দৈনিক ইত্তেফাক /১৪ এপ্রিল ২০১০ ]",False fe,"রাষ্ট্রে যখন আর জনগণের কর্তৃত্ব থাকে না রাষ্ট্রে যখন আর জনগণের কর্তৃত্ব থাকে না ফকির ইলিয়াস========================================শঙ্কিত রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী নিজেই। বললেন, কে বা কারা নাকি আজানের সময়ও বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিচ্ছে। পানির কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে রাষ্ট্রের মানুষের জন্য সমস্যা ডেকে আনছে। এরা কারা? প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি এর সুরাহা করার চেষ্টা করছেন। গোয়েন্দারা নজরদারি বাড়িয়েছেন। রাষ্ট্রের উন্নয়নে দলবাজির হীনমন্যতা সব সময়ই বড় অন্তরায়। যারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকেন তাদের উচিত মতাদর্শের ঊধর্ে্ব ওঠে দেশের স্বার্থরক্ষা করা। বাংলাদেশে একদল ক্ষমতায় এলে অন্যদলের কর্মচারীদের শায়েস্তা করেন। এটা নতুন ঘটনা নয়। আমলা কিংবা শ্রমিক সংগঠনগুলোর নির্লজ্জ দলীয় সমর্থন বাংলাদেশে একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে কালে কালে।বাংলাদেশে যেন একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে। তা নতুন করে বলার কিছু নেই। একজন দক্ষ পুলিশ অফিসার গৌতম রায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে ঢাকায় নিহত হয়েছেন। হুজি নেতা বিলাত প্রবাসী গোলাম মোস্তফাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। হিযবুত তাহরীর প্রধান অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমদকেও শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে এই যে অপচেষ্টা চলছে তা দেশের মানুষের জন্য কোন মঙ্গলবার্তা বহন করছে না। বরং দেশের প্রজন্মের মনে ভয়ের আঁধার ছড়াচ্ছে। দেশের বিরোধীদলীয় নেত্রী খুলনায় বিশাল জনসভা করে ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন খুব দূরে নয়। ভোলার শূন্য আসনে হাফিজ উদ্দিন আহমদ পাস না করলেই আন্দোলনের ডাক দেয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছেন বেগম জিয়া। তিনি আরও বলেছেন, এমন মামলা দেয়া হবে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের নেতারা দৌড়ে কূল পাবে না।এ প্রসঙ্গে একটি কথা স্পষ্ট বলা প্রয়োজন মনে করি। ওয়ান ইলেভেনের পর বাংলাদেশে দু'বছর কেটেছে সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এ সময় অনেক মামলা হয়েছে অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধেও। নবম জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর এসব মামলার অবস্থা কি হয়েছে তা দেখেছে দেশবাসী। রাজনৈতিক মামলা দিয়ে বাংলাদেশে কাউকেই আটকে রাখা যায়নি। যাবেও না। বিএনপির যেসব নেতা বর্তমানে কারাগারে আছেন তাদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের জঘন্যতম অভিযোগ রয়েছে। আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, নাসিরউদ্দিন পিন্টুসহ নেতারা কিসব ঘটনার জনক- তা এখনও বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যাননি।বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেনের মতো পরিস্থিতির জন্য দায়ী ছিল বিএনপির গোয়ার্তুমি আর হাওয়া ভবনের পাষ-তা। তারা কিছুই পরোয়া না করে রাষ্ট্রপতিকেই 'সংবিধান সমুন্নত' রাখার দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানিয়েছিলেন। অথচ সেই সংবিধান রহিত করেই ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, তখন কোথায় গিয়েছিল বেগম জিয়ার 'সংবিধান সমুন্নত' রাখার তত্ত্বটি? এবং সেই ফখরুদ্দীন আহমদের সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বেগম জিয়াও। চারদলীয় জোটের পরাজয় যেভাবে অনিবার্য ছিল, সেভাবেই তা সম্পন্ন হয়েছে। আরও সত্য হচ্ছে, শত চেষ্টা করেও গেল দেড় বছরে বিএনপি তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সূচনা পর্বটিও শুরু করতে পারেনি।দুই.আমার বারবার মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে এখন আর গণমানুষের কর্তৃত্ব নেই। আর নেই বলেই সরকারি আমলা, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ মতবাদী দলের হয়ে জনগণের ওপর চড়াও হচ্ছেন। তারা জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করছেন।বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে সরকারি আমলা কর্মকর্তারা বিশেষ কোন দলের চাটুকার হয়ে যান না। তারা সরকারের পক্ষে কাজ করেন জনগণের স্বার্থরক্ষার জন্য। জনগণকে তারা কখনোই প্রতিপক্ষ ভাবেন না। ভাবতে পারেন না। বাংলাদেশে সরকারি ক্যাডার সার্ভিসকে দলীয়করণ করে যে ফায়দা লোটার প্রয়াস দলগুলো চালিয়েছিল, রাষ্ট্র এখন এর কুফল ভোগ করছে।এখানে আরও যে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা দরকার, তা হচ্ছে ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনীতিকরা বাংলাদেশের ক্যাডার সার্ভিসে তাদের লোক বসিয়েছে আরও একধাপ এগিয়ে। ব্যাংক, বীমা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, মিল কারখানায় তাদের অনুসারীদের তারা সেটআপ করেছে গেল ৩০ বছরে। এই যে মৌলবাদী শেকড়ের বিস্তৃতি, তা তারা ধর্মীয় চেতনা প্রতিষ্ঠার নাম দিয়ে করেছে দলীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য।এটা খুবই পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মদানকারী ৩০ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মুক্ত চিন্তার যে স্বদেশ গড়ে তোলার কথা ছিল, প্রগতিবাদী রাজনীতিকরা তা করতে পারেননি। ফলে অপশক্তি বিভিন্নভাবে বেড়ে উঠেছে আগাছার মতো।দলীয় বিবেচনায় কোন অপশক্তিকেই প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়। এ উদাহরণটি সৃষ্টি করতে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতেই হবে। দু'জন বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে দেশে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিচার বিভাগকে স্বাধীন রাখতে সর্বপ্রকার বির্তকই এড়িয়ে যেতে হবে রাষ্ট্রপক্ষকে। মনে রাখা উচিত, বিচার বিভাগ হচ্ছে জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল। এ বিশ্বাসটি যেন প্রজন্ম ধরে রেখে এগিয়ে যেতে পারে।মানুষ প্রতিদিন যে সূর্যোদয়ের স্বপ্ন দেখে তা হচ্ছে সৃজনশীল পরিবর্তন। এ পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন পরিশুদ্ধ মনন। বেড়ে উঠছে অপশক্তি। সমাজ সংস্কার তো দূরের কথা বরং শুদ্ধ সমাজকে ধ্বংসের জন্য তৎপর হচ্ছে একটি প্রতিক্রিয়াশীল মহল।যারা জনগণের ইচ্ছেকে ভুলুণ্ঠিত করার জন্য নানা ফন্দি-ফিকির করে, এরা কখনোই মানুষের কল্যাণকামী হতে পারে না। এ উপলব্ধিটি এখন খুবই জরুরি। দলীয় মতের ভিত্তিতে নয়, জাতীয় চেতনার আলোকেই দেশপ্রেমিক প্রজন্মের বেড়ে ওঠা বেশি প্রয়োজন। বাঙালি অনেক কিছুই পারেনি; কিছু পারবে না- এমন হতাশা গণমানুষের স্থায়ী দীর্ঘশ্বাস হওয়া উচিত নয়।নিউইয়র্ক ২১ এপ্রিল ২০১০ ----------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ২৩ এপ্রিল ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- ব্রেন্ডা মারি",False ij,"ইউরোপীয় রেনেসাঁয় ইবনে রুশদ এর ভূমিকা চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ শতকের ইউরোপীয় সমাজে বিস্ময়কর নবজাগরণের কারণ কি? যে কোনও সামাজিক পালাবদলের পিছনে নানাবিধ কারণ সক্রিয় থাকে, নবজাগরণের পিছনেও বিবিধ কারণ বিদ্যমান ছিল, এর মধ্যে বাইজান্টিয়াম বা পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যে গ্রিকভাষী পন্ডিত-শিল্পীদের ভূমিকা একটি। বাইজান্টিয়াম বা পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যে গ্রিকভাষী পন্ডিত-শিল্পীদের মধ্যে প্রাচীন গ্রিকদর্শন ও শিল্পকলার চর্চা ছিল। পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি - অর্থাৎ ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যেটি অটোমান তুর্কিদের দ্বারা অধিকৃত হয়ে গেলে গ্রিকভাষী পন্ডিত- শিল্পীরা নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে পশ্চিম ইউরোপে পাড়ি জমায়। এদের সঙ্গে ছিল ধ্রুপদি গ্রিক জ্ঞানবিজ্ঞান, যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সংস্পর্শে এসে ইউরোপ লাভ করে নবজাগরণের উদ্দীপনা। তবে এই যুগান্তকারী ঘটনারও প্রায় দুশো বছর আগে ইউরোপে আরও একটি গুরুত্বপূর্ন ঘটনা ঘটেছিল -যে ঘটনার সঙ্গে স্পেনের প্রথাবিরোধী মুসলিম দার্শনিক ইবনে রুশদ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এবং যে ঘটনাটি সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষন করলে ইউরোপীয় রেনেসাঁয় ইবনে রুশদ এর প্রত্যক্ষ ভূমিকাটি সুস্পস্ট হয়ে ওঠে।ঐতিহাসিকেরা মনে করেন, ইতালিতে সামন্ততন্ত্র ক্ষয়ের যুগে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দীতে বিকশিত নতুন পুঁজিবাদী সমাজ সৃষ্টির সহায়ক প্রগতিশীল চিন্তাধারার উদ্ভব হয়েছিল। এটি মূলত মার্কসবাদী ব্যাখ্যা। এখন প্রশ্ন হল, এই প্রগতিশীল চিন্তাধারার উদ্ভব হল কেন? হল এই কারণে যে-দ্বাদশ শতকে আরব অনুবাদের মাধ্যমে অ্যারিস্টটলের দর্শনের সঙ্গে ইউরোপের চিন্তাবিদদের পরিচয় ঘটে গেছে। আমরা যাকে আরব অনুবাদ বলছি, তাকে ইবনে রুশদ-এর দর্শন মনে করাই শ্রেয়। ইউরোপে প্রগতিশীল চিন্তাধারার উদ্ভবের পিছনে আরবকৃত গ্রিক অনুবাদ নয়- রুশদ এর অ্যারিস্টটলের দর্শনের ব্যাখ্যাই ছিল সক্রিয়। সে কথায় পরে আসছি। এবার বলি অ্যারিস্টটলের দর্শনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ইউরোপের মনোজগতে কী পরিবর্তন ঘটল। ইউরোপে তখন রক্ষণশীল খ্রিস্টীয় সমাজ- বদ্ধ সমাজ ... ইউরোপের চিন্তার জগৎটি ছিল অনেকটা গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর ভাববাদী ধারনার মতোই আচ্ছন্ন। অ্যারিস্টটলের ভাবনার জগতটি ঠিক সেরকমের নয়- প্লেটোর ছাত্র হলেও মৌলিক বিচারে অ্যারিস্টটলের অবস্থান প্লেটোর বিপরীত। প্লেটো মূলত ভাববাদী, তাঁর মনোভূমিটি ভাব-অনুভাবের অপার্থিব জগৎ। পক্ষান্তরে, ২৫০০ বছর পূর্বেও অ্যারিস্টটলের দৃষ্টিভঙ্গিটি ছিল বিস্ময়করভাবে প্রাগ্রসর ও বৈজ্ঞানিক। ভৌত জগতকে অ্যারিস্টটল যেখানে বাস্তবসম্মত পদ্ধতিতে বিচারবিশ্লেষন করেছেন, প্লেটো মানুষের মনকে পৃথিবী ছাড়িয়ে সুদূর বিমূর্ত অজানালোকে নিয়ে গিয়েছিলেন। অ্যারিস্টটল মানুষকে বাস্তব পৃথিবীতে তাকাতে বললেন।প্রাচীন গ্রিসের এই দুজন দার্শনিকের মানসজগতের এই যে পার্থক্য - তা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। যে কারণে, অ্যারিস্টটলই ঝিম মেরে থাকা ইউরোপীয় স্থবির মনকে বদলে দেওয়ার মূল কারিগর-প্লেটো নয়। (প্লেটো রঙ্গমঞ্চে উঠে আসবেন আরও পরে। সে ব্যাপারে পরে আলোচনা করব।) তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, ইউরোপীয় স্থবির মনকে বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অ্যারিস্টটলের সুযোগ্য ব্যাখ্যাকার ইবনে রুশদের ভূমিকাও কিন্তু কম নয়। যা হোক। বলছিলাম। দ্বাদশ শতকে আরব অনুবাদের মাধ্যমে অ্যারিস্টটলের দর্শনের সঙ্গে ইউরোপের চিন্তাবিদদের পরিচয় ঘটেছে। এখন প্রশ্ন হল: ইউরোপ এতকাল গ্রিক দর্শন থেকে কেন বঞ্চিত ছিল? অনুবাদের মাধ্যমেই কেন ইউরোপকে গ্রিক দর্শন গ্রহন করতে হল?‘টেরর অভ হিস্ট্রি’ বা ইতিহাসের সন্ত্রাস বলে ইউরোপের ইতিহাসে একটি কথা আছে। তো এই ‘টেরর অভ হিস্ট্রি’ কি? ‘টেরর অভ হিস্ট্রি’ হল: ইউরোপের প্রতি এক রোমান সম্রাটের জঘন্য অবিচার, যে অবিচারের ফলে ইউরোপজুড়ে জ্ঞানবিজ্ঞান বিবর্জিত এক ভয়ানক অন্ধকার কাল-এর সৃষ্টি হয়েছিল । এই অন্ধকার যুগের সূচনাকাল ৫২৯ খ্রিস্টাব্দে -এই কারণে যে- রোমান সম্রাট জাস্টিয়ান ৫২৯ খ্রিস্টাব্দে এক আদেশ জারী করে রোমান সাম্রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দর্শনশাস্ত্রের পঠন-পাঠন নিষিদ্ধ করেন। স্বাধীন চিন্তাভাবনার ওপর আক্রমন অবশ্য আরও আগে থেকেই সংঘটিত হচ্ছিল। ৩৯০ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগারটি ধর্মবিরোধী আখ্যা দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন বিশপ থিওফিলাস । ৪১৫ খ্রিস্টাব্দে নব্যপ্লেটোবাদী দার্শনিক ও জ্যোর্তিবিদ হাইপাশিয়াকে প্রকাশ্যে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করে ধর্মান্ধ খ্রিস্টানগন । তবে ৫২৯ খ্রিস্টাব্দের পরই গ্রিক দর্শন ইউরোপ থেকে সম্পূর্নরুপে অবলুপ্ত হয়ে পড়ে।গ্রিক দর্শন আশ্রয় পায় প্রাচ্যে। প্রাচ্যের পারস্যে। পারস্য ছিল উদার। খ্রিস্টীয় একেশ্বরবাদের গোঁড়ামিকে পারস্য পাত্তা দেয়নি। উপরোন্তউচ্চমার্গীয় দর্শনচর্চা বিদ্যমান ছিল পারস্যে । ৫২৯ খ্রিস্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্যে দর্শনচর্চা নিষিদ্ধ হওয়ার আগে ৫২১ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের সাসানিদ বংশের ১ম খসরু নৌসেরবান (নতুন শাহ) উপাধি ধারণ করে পারস্যের সিংহাসনে আরোহন করেন। অসাধারন মানুষ ছিলেন সম্রাট ১ম খসরু। ইরানি ঐতিহাসিকরা আজও সম্রাট ১ম খসরুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রোমান সাম্রাজ্যে দর্শনচর্চা নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই সাত জন গ্রিক দার্শনিক এথেন্স থেকে হাতে প্রাণ নিয়ে কোনওমতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সম্রাট ১ম খসরুর এঁদের আশ্রয় দেন। এর কারণ হয়তো সম্রাট ১ম খসরুর সঙ্গে রোমান সম্রাট জাস্টিয়ান এর বিরোধ। (আজকের ইরান-পাশ্চাত্য সঙ্কট নতুন কিছু নয়।) সে যাই হোক। ৫৪৯ খ্রিষ্টাব্দে সংগঠিত এক যুদ্ধে সম্রাট ১ম খসরুর অধীন পারসিক সেনাবাহিনী রোমানদের সম্পূর্নরুপে পরাস্ত করে। পরাজিত রোমান সম্রাট কে সম্রাট ১ম খসরু কয়েকটি শর্ত আরোপ করেন। এর মধ্যে অন্যতম হল: রোমান সম্রাট জাস্টিয়ান তাঁর সাম্রাজ্যে দার্শনিকদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করবেন। যা হোক। পারস্যে গ্রিক দার্শনিকগনের বসবাসের সুবাদে পারসিক ভাষায় গ্রিক দর্শনের অনুবাদ সম্পন্ন হয়। ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে আরবরা পারস্যে জয় করে। বিজিত রাজ্যের শিল্পসাহিত্য আরবরা ধ্বংস করে দিলে মানবসভ্যতা আজ এতদূর এগোত না। কার্যত সেরকম হয়নি। ৭০৪ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আরবি ভাষায় গ্রিক দর্শনের (প্রধানত প্লেটো, আরিস্টটল ও পিথাগোরাসের দর্শন) অনুবাদ সম্পন্ন হয়। আল কিন্দি (৮০০-৮৭০), আল ফারাবি (৮৭০-৯৫০), ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭) ও ইবনে রুশদ (১১২৬-১১৯৮) গ্রিক দর্শনের সঙ্গে পরিচিত হন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ আরিস্টটলের দর্শনের গুরুত্ব অনুভব করে আরিস্টটলের দর্শনের নিজস্ব ব্যাখ্যা করার তাগিদ বোধ করেন। আল ফারাবি আরিস্টটলের টীকাভাষ্য রচনা করলেও তাঁর ব্যাখ্যায় নব্যপ্লোটোবাদী ( আলেকজান্দ্রিয় মরমীবাদ) প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তবে এক্ষেত্রে ইবনে রুশদ অবশ্যই ব্যাতিক্রমী। তাঁর দর্শনে স্বাধীন চিন্তার স্ফূরণ লক্ষ করা যায়। তাঁর দর্শনের দুটি সিদ্ধান্ত ... (১) জগৎ শ্বাশত, জগৎ ঈশ্বরদ্বারা সৃষ্ট নয় । (২) আত্মা অমর নয়। কাজেই মৃত্যুর পর ব্যাক্তিগত পুনুরুর্জ্জীবন অসম্ভব। রুশদের রচনাবলী প্রথমে হিব্রু ও পরে লাতিন ভাষায় অনুদিত হয়ে দ্বাদশ শতকে ইউরোপ পৌঁছে যায় । রেনেসাঁর সহায়ক প্রগতিশীল চিন্তাধারার উদ্ভব ঘটিয়েছিল। ত্রয়োদশ শতকে লাতিন ভাষায় রুশদ রচনাবলী অনুবাদ করেন প্রখ্যাত পন্ডিত মাইকেল স্কট । এরপর ইউরোপের বিদগ্ধ মহলে সাড়া পড়ে যায়। পরবর্তী শতকগুলিতে ইউরোপের ভাবজগতে রুশদ-এর বক্তব্য গভীর প্রভাব ফেলতে থাকে । এ প্রসঙ্গে বারট্রান্ড রাসেল লিখেছেন: ‘পেশাদার দর্শনের অধ্যাপক ছাড়াও বিশালসংখ্যক মুক্তচিন্তার অধীকারীদের বলা হল Averroists বা রুদশবাদী ; বিশেষ করে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে রুশদের অনুরাগীর সংখ্যা ছিল ব্যাপক।’ (দ্র: হিস্ট্রি অভ ওয়েস্টার্ন ফিলসফি। পৃষ্ঠা, ৪২০) রুশদের সবচে বেশি প্রভাব পড়েছিল ফ্রান্সিসকান স¤প্রদায়ের ওপর। সম্প্রদায়টির প্রবর্তক সাধু ফ্রান্সিস (১১৮২-১২২৬) ত্রয়োদশ শতকে বিলাসিতায় নিমজ্জ্বমান পোপ ও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করেছিলেন।খ্রিস্টীয় গোঁড়ারা অবশ্য রুশদবাদী দর্শনকে মানবতা থেকে বিচ্যুত বলেছেন। কাজেই ধর্মতত্ত্বে রুশদদের অবস্থান ‘বিদ্রোহী’ হলেও ইউরোপজুড়ে স্বাধীন বুদ্ধিসম্পন্ন চিন্তাবিদেরা সমন্বয়ে অসংখ্য রুশদবাদী দার্শনিক দল গড়ে উঠেছিল। এই রকম একটি দলের নাম: ‘স্বাতন্ত্র্যের পুত্র।’ এরা বিশ্বকেই ঈশ্বর ভাবতেন এবং ভাবতেন জগতের বস্তুসমূহ ঈশ্বরের অংশ। ক্যাথলিক খ্রিষ্টান চার্চের বিচারালয় থেকে দেওয়া হয় এদের জীবন্ত দগ্ধ করার আদেশ ; রুশদবাদীরাও নতজানু না-করে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বিভেদের আগুনে । লক্ষ করুন, রুশদবাদী ‘স্বাতন্ত্র্যের পুত্র’ দলটিতে নারী সদস্যও ছিল! মাথা নত না-করে সে যুগের সত্য সন্ধানী নারীরাও অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন। রুশদের এমনই প্রভাব! সপ্তদশ শতকে ইউরোপীয় নবজাগরণ অবধি রুশদ-এর এই প্রভাব অব্যাহত ছিল। এরপর ইউরোপে রুশদ-এর প্রভাব হ্রাস পায়। যেহেতু তখন আরিস্টটলের প্রভাবই হ্রাস পাচ্ছিল। তখন বৈজ্ঞানিক যুগের সূচনা হয়েছে- আরিস্টটলের চিন্তাভাবনাকে বলা হচ্ছে যান্ত্রিক । আরিস্টটলের স্থলে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন প্লেটো। প্লেটোর ইনট্রোভার্ট ভাবের জগৎটি আধুনিক ইউরোপীয় রোমান্টিকেরা আপন আপন কল্পনার অনুষঙ্গে আবিস্কার করে উদবেলিত হয়ে উঠছেন। এই কারণেই বাংলার রোমান্টিক-শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রনাথের ভাবনার সাদৃশ্য প্লেটোর সঙ্গে -অ্যারিস্টটলের সঙ্গে নয়। বর্হিমূখি জগৎ অর্ন্তমূখী হয়েই তবে প্লেটোকে আবিস্কার করেছে। যে কারণে অস্টম-নবম শতকের আরব দার্শনিকেরা প্লেটোর গুরুত্ব উপলব্দি করতে পারেননি। কেননা, অস্টম-নবম শতক ছিল আরবদর্শনের প্রাথমিক যুগ। দর্শনের প্রথম স্তরে মন থাকে বর্হিমূখী। যেমন গ্রিক দর্শনের জনক থালেসের সময় গ্রিক দর্শন ছিল প্রাথমিক স্তরে, যে কারণে থালেস ছিলেন বর্হিমূখী। ইউরোপে রুশদের দর্শনকে কেন্দ্র করে নানারকম ব্যাখ্যাবিশ্লেষন চলছিল। অ্যারিস্টটলের সঙ্গে আরব সংশ্লিষ্টতা যেমন অনেক মুসলিম ধর্মবেত্তা (বিশেষ করে ইমাম আল গাজ্জ্বালী) মেনে নিতে পারেননি তেমনি অনেক ইউরোপীয় খ্রিস্টান ধর্মতাত্ত্বিকও মেনে নিতে পারেননি। এদের মধ্যে অন্যতম সেন্ট থমাস অ্যাকুইনাস (১২২৫-১২৭৪); তাঁর ২২ খন্ডে রচিত সুমমা থিওলজি গ্রন্থটি অ্যারিস্টটলের রচনাবলীর ওপর অ্যাকুইনাস এর নিজস্ব ব্যাখ্যা।অ্যারিস্টটলের দর্শনের ওপর ভিত্তি করে লেখা বলেই ত্রয়োদশ শতকে ইউরোপে প্রগতিশীল চিন্তাধারার উদ্ভবের পিছনে গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছিল। তবে অ্যাকুইনাস রুশদের মতন সাহসী ছিলেন না। যে কারণে খ্রিস্টীয় বিশ্বাস বিরোধী বক্তব্য উপস্থিত করার সাহস পাননি অ্যাকুইনাস। এর অবশ্য কারণ ছিল। অ্যাকুইনাস ছিলেন স্কলাস্টিক দার্শনিক। স্কলাস্টিক দার্শনিকগন ইউরোপের মধ্যযুগে খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে চার্চ ও অ্যারিস্টটলের দর্শনের সমন্বয় করেছেন। এই মতবাদে বিশ্বাসী দার্শনিকদের বলা হত স্কুলম্যান। স্কুল থেকেই স্কলাস্টিক।ইবনে রুশদ এবং সেন্ট থমাস অ্যাকুইনাস এর অ্যারিস্টটল বিষয়ক লেখার কারণে দেখা গেল ক্রমে অন্যান্য ইউরোপীয় পন্ডিতেরা অ্যারিস্টটলের দর্শনকে কেন্দ্র করে আলোচনা-সমালোচনা শুরু করেন। শুধু পন্ডিতেরাই নয় অ্যারিস্টটলের দর্শন সাধারণ মানুষও পড়বার সুযোগ পাচ্ছে। কাজেই অ্যারিস্টটলের দর্শন ঘিরে আলোচনা সমালোচনা অব্যাহত থাকে। সে যুগের সমস্যা সংক্রান্ত প্রশ্ন উত্থাপিত হতে থাকে-উত্তরও দেওয়া হতে থাকে অ্যারিস্টটলের দর্শনের আলোকেই...এবং অনিবার্যভাবেই রোমান ক্যাথলিক চার্চ ও পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বের প্রশ্নটিও ওঠে। মানে, মানবীয় মননের ওপর চার্চ কর্তৃত্ব করার অধিকার রাখে কি না-এই প্রশ্নটিই বড় হয়ে দাঁড়ায়। ফলে, ইউরোপীয় সমাজ থেকে গীর্জের শাসন (ও শোষন) ক্রমেই শিথীল ও দূর্বল হয়ে পড়তে থাকে। ইউরোপ ধর্মসংস্কারে পথে যেতে থাকে... এবং ...আশ্চর্য এই ...একইসঙ্গে চলতে থাকে আরব বিদ্বেষ।তখন বলছিলাম। ...তবে রুশদের মতামত নিয়ে নানারকম ব্যাখ্যাবিশ্লেষন চলছিল। অ্যারিস্টটলের সঙ্গে আরব সংশ্লিষ্টতা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। এক শ্রেণির সংকীর্ণচেতা লেখক ইউরোপ থেকে আরব লেখনি তথা রুশদবাদ নির্মূল করতে তৎপর হয়ে ওঠেন। পিদারক (১৩০৪-১৩৭৪) নামে একজন ইতালিও লেখক আরব তথা রুশদের চিন্তাভাবনা ইউরোপীয় পরিমন্ডল থেকে সমূলে উৎখাত করতে চাইলেন। পিদারক লিখলেন: “আরবীরা শিল্প ও জ্ঞানের কোনও চর্চা করেনি, তারা কেবল গ্রিক শিল্প সংস্কৃতির কিছু কিছু অংশ রক্ষা করে চলেছিল। এবং আমি বিশ্বাস করি আরবের নিকট ভালো কিছু আশা করা যায় না ...”রুশদের মতবাদের ওপর ইউরোপে দুইভাবে আক্রমন হয়েছিল। প্রথমত, ক্যাথলিক খ্রিষ্টান চার্চের বিচারালয় থেকে রুশদের অনুসারীদের দেওয়া হয় এদের জীবন্ত দগ্ধ করার আদেশ ; দ্বিতীয়ত, কতিপয় সংককীর্ণমনা লেখক আরব তথা রুশদকে উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে কলঙ্কিত করতে চেয়েছিল। লাভ হয়নি। ইতিহাস ইর্ষাকাতর বামনদের মনে রাখেনি, সভ্যতার জ্ঞানতীর্থে রুশদ তথা আরব অবদানকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ রেখেছে। শুরুতে প্রশ্ন রেখেছিলাম। চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ শতকে ইউরোপীয় নবজাগরণ কারণ কি? নবজাগরণ পিছনে নানাবিধ কারণের কথা উল্লেখ করেছিলাম, বলেছিলাম ইউরোপীয় নবজাগরণের পিছনে স্পেনের প্রথাবিরোধী মুসলিম দার্শনিক ইবনে রুশদ-এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ন! ইঙ্গিত দিয়েছিলাম, রেনেসাঁ পূর্ব সময়ের ঘটনাবলী সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষন করলে ইউরোপীয় রেনেসাঁয় ইবনে রুশদ এর প্রত্যক্ষ ভূমিকাটি সুস্পস্ট হয়ে ওঠে। কেননা, রেনেসাঁর অন্যতম কারণ গ্রিক তথা অ্যারিস্টটলের দর্শন নয়- অ্যারিস্টটলের দর্শনের স্বাধীন ব্যাখ্যা। যে ব্যাখ্যার সন্ধান ইউরোপ রুশদের লেখায় পেয়েছে। তৈরি হয়েছে আলোরণ, বিস্ময় ও বিনম্র শ্রদ্ধা । যে ব্যাখ্যা দাবী করে ... জগৎ ঈশ্বর-দ্বারা সৃষ্ট নয়, জগৎ অনন্ত ও শ্বাশত । ( বিংশ শতাব্দীর জ্যোর্তিবিজ্ঞানী নার্লিকারের স্টেডি স্টেট থিউরি?) আত্মা অমর নয়- যে কারণে মৃত্যুর পর ব্যাক্তিগত পুনুরুর্জ্জীবন সম্ভব নয়; এসব প্রথাবিরোধী শাণিত বক্তব্যই দীর্ঘকাল ধরে স্থবির হয়ে থাকা ইউরোপীয় সমাজের ভিতে আঘাত করেছিল, তারপর ধর্মসংস্কার আন্দোলন ও রেনেসাঁর দিকে ধাবমান করেছিল। রেনেসাঁর মূল শ্লোগান ছিল হিউম্যানিজম বা মানবতাবাদ। হিউম্যানিজম কি? স্বর্গীয় নির্দেশ নয়, মানবীয় কর্মকান্ডের মানবিক ব্যাখ্যাবিশ্লেষন । হিউম্যানিজম মানে ইবনে রুশদ, থমাস অ্যাকুইনাস বা ইমাম গাজ্জ্বালী নন। রুশদ বলেছেন, ধর্ম কিংবা দার্শনিক মতবিরোধ থাকলেও নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিটি ধর্ম ও দার্শনিক মতই সত্য। এমন বলার সৎসাহস থমাস অ্যাকুইনাস বা ইমাম গাজ্জ্বালীর নেই। রুশদ বলেছেন: “ঈশ্বর নির্বিকার; কাজেই মানুষের কর্মকান্ডে ঈশ্বরের তথাকথিত স্বর্গীয় হস্তক্ষেপের প্রশ্নই আসে না।” এই হচ্ছে হিউম্যানিজম। রুশদের স্বাধীন ও সাহসী বক্তব্য সেকালের খ্রিস্টবিশ্বাসী ইউরোপীয় সমাজে বিকল্প-ভাবনার দুয়ারটি খুলে দিয়েছিল। এই ভেবে আমি প্রায়শ শিহরিত হই যে -ইউরোপীয় রেনেসাঁর মহৎ অনুপ্রেরণাটি এসেছিল প্রাচ্যভূমি থেকেই ...আর সেটাই তো স্বাভাবিক ...প্রাচ্য যে -হাজার বছরের পুরনো জ্ঞানসাধনার পবিত্র পীঠস্থান ...নৈলে সম্রাট ১ম খসরুর মতন জ্ঞানসাধক সম্রাটের জন্ম পারস্যে হয় কি করে-রোমানদের পরাজিত করে যিনি শর্তারোপ করেছিলেন: রোমান সম্রাট জাস্টিয়ান তাঁর সাম্রাজ্যে যেন দার্শনিকদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করেন।তথ্যসূত্র: ক) রাহুল সাংকৃত্যায়ন : দর্শন দিগদর্শন (প্রথম খন্ড)খ) বার্ট্রান্ড রাসেল :হিস্টরি অভ ওয়ের্স্টান ফিলসফিগ) টি. জে লাভাইন: ফ্রম সক্রেটিস টু সার্ত্রেইবনে রুশদের জীবনী",False ij,"নেরুদার সাদা মৌমাছি কবি পাবলো নেরুদার জন্ম চিলি। ১৯০৪ সালের ১২ জুলাই। বলা হয়-তিনি চিলির তরুণতরুণীদের ভালোবাসার ভাষা শিখিয়েছিলেন। নেরুদার মৃত্যু -১৯৭৩ সালে। নেরুদার ‘সাদা মৌমাছি’ কবিতাখানি আমি পেয়েছি ‘টোয়েনটি লাভ পোয়েমস অ্যান্ড আ সং অভ ডেসপেয়ার’ বইয়ে। ‘সাদা মৌমাছি’ কবিতাখানি পড়ে ভালো লাগল বলে অনুবাদপ্রচেস্টা; যদিও জানি যে বিশ্বজগতে কবিতা এক অনুবাদ অসম্ভব বস্তু। ‘সাদা মৌমাছি’ সাদা মৌমাছি, তুমি আমার ভিতরে গুনগুন কর- তুমি মধু পান করে মাতাল ধোঁওয়ার ধীর কুন্ডলীতে তুমি ঘুরে ঘুরে উড়ছ আমি দিশেহারা, প্রতিধ্বনিশূন্য শব্দ, সকলই হারিয়েছে যে- অথচ যার সকলই ছিল। সর্বশেষ বাঁধন, আমার আকাঙ্খায় তুমি তোল ঝড় আমার বিরানভূমিতে তুমিই সর্বশেষ গোলাপ। আহ্, তুমি কী নিশ্চুপ! তোমার গভীর চোখ বন্ধ কর। রাত্রি নামছে ওহ্, তোমার শরীর এক সুগন্ধী ভাস্কর্য, নগ্ন। তোমার গভীর চোখে রাত্রি নামে ফুলের শীতল হাত আর গোলাপের কোল। সাদা শামুকের মতন তোমার স্তন তোমার নাভীর ওপর ছায়ার প্রজাপতিরা ঘুমাতে এসেছে। আহ্, তুমি কী নিশ্চুপ! এই নির্জনতায় তুমি নেই। বৃষ্টি ঝরছে। সমুদ্রবাতাস শঙ্খচিলদের তাড়িয়ে দিচ্ছে ভেজা রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটছে জল গাছের পাতারা বলছে ওদের শরীর খারাপ সাদা মৌমাছি, যখন তুমি আমার ভিতরে গুনগুন কর তুমি আবার সময়ে বাঁচ, তন্বি-নীরব। আহ্ তুমি কী নিশ্চুপ! কিন্তু, কবিতার কী মানে? যদ্দুর বোঝা গেল -সাদা মৌমাছি দেখে কবির অনুপস্থিত প্রেমিকার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। সাদা রঙের মৌমাছি হয়? মৌমাছির কি রং? ...তারপর সময় আর নেরুদার অনুপস্থিত প্রেমিকা একাকার হয়ে যায়। এই নির্জনতায় তুমি নেই। বৃষ্টি ঝরছে। সমুদ্রবাতাস শঙ্খচিলদের তাড়িয়ে দিচ্ছে ভেজা রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটছে জল গাছের পাতারা বলছে ওদের শরীর খারাপ অসাধারণ কবিতা। প্রেমের কবিতা। বলা হয় যে -তিনি চিলির তরুণতরুণীদের ভালোবাসার ভাষা শিখিয়েছিলেন। অন্য কারও কাছ থেকে আরও ভাল অনুবাদের প্রত্যাশায় নেরুদার ‘সাদা মৌমাছি’ কবিতাখানি ইংরেজি অনুবাদ তুলে দিলাম। White bee, you buzz in my soul, drunk with honey, and your flight winds in slow spirals of smoke. I am the one without hope, the word without echoes, he who lost everything and he who had everything. Last hawser, in you creaks my last longing. In my barren land you are the final rose. Ah you who are silent! Let your deep eyes close. There the night flutters. Ah your body, a frightened statue, naked. You have deep eyes in which the night flails. Cool arms of flowers and a lap of rose. Your breasts seem like white snails. A butterfly of shadow has come to sleep on your belly. Ah you who are silent! Here is the solitude from which you are absent. It is raining. The sea wind is hunting stray gulls. The water walks barefoot in the wet streets. From that tree the leaves complain as though they were sick. White bee, even when you are gone you buzz in my soul You live again in time, slender and silent. Ah you who are silent! সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:২৯",False rn,"সংখ্যালঘুরা কোথায় যাবে _ দলের শীর্ষনেতাদের মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর জামায়াত-শিবিরের নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট আলেম-ওলামারা। তাদের মতে, ইসলামে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের। সব ধর্মের মানুষকে সমানাধিকার ভোগ করার অধিকার ইসলাম দিয়েছে। কেউ যদি সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করে, তা ধর্মদ্রোহেরা শামিল। কোরআনে আল্লাহ সংখ্যালঘুদের ওপর কোনও ধরনের নির্যাতন করতে নিষেধ এবং নির্যাতন করলে কঠোর শাস্তির কথাও উল্লেখ করেছেন।কোনও ধর্মীয় উসকানিতে কান দেওয়া উচিত নয়। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, মন্দির ভাংচুর তো মসজিদ ভেঙে দেওয়ার মতো অপরাধ।ইসলাম সব মানুষের নিরাপত্তার কথা বলেছে, সহনশীলতার কথা বলেছে। ইসলাম একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধর্ম। কোনও ধর্মকে আঘাত করা ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না।সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলাই তাদের উদ্দেশ্য।সারা দেশে স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠি কর্তৃক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ী-ঘর, মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ চলছেই । শান্তি অশান্তি গলা ধরাধরি করে এগোবে--- স্থায়ী শান্তি বলে কিছু হয় না, তেমনি স্থায়ী অশান্তি নিয়েও মানুষ বাঁচে না। সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার পরপরই চট্টগ্রামের বাঁশখালী সদরের শীলপাড়ায় মন্দির পুড়িয়ে দেন জামায়ত-শিবিরের কর্মীরা। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নোয়াখালীসহ বেশ কিছু জেলায় চার দিন ধরে একটানা একতরফা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালানো হয়েছে এবং হচ্ছে। এ সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেড় হাজারের বেশি বাড়িঘর ও অর্ধশতাধিক উপাসনালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেককে নির্মমভাবে জখম করে হত্যা করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে। আগুন দিয়ে বাড়ির পর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৬ সালে ধ্বংস হওয়া দালাইলামা বৌদ্ধ মন্দির ছিল ঠিক দিঘীনালা বাজারের পরেই যেখানে পরবতীর্কালে একটি সামরিক চেকপোষ্ট বসানো হয়। এক সময় যেখানে মন্দির ছিল এখন সেখানে খালি জায়গায় মেশিনগান দিয়ে নিশানা চর্চা করা হয়। মন্দির বলতে এখন শুধুমাত্র কিছু ইট এবং সিমেন্টের ভিত পড়ে আছে। সৈন্য বাহিনীর সহায়তায় বসতিস্থাপনকারীরা ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয়। আশ্রমের কাছাকাছি অন্যান্য বৌদ্ধ মন্দির ছিল সেগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠি তথা নারী ও শিশু, সংখ্যালঘু এবং প্রতিবন্ধিদের অধিকার সুরক্ষাই হলো একটি সমাজের ন্যায় বিচারের মানদন্ড। বর্তমান সময়ে দেশের পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলে যে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে, তা হল সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং এই নির্যাতন নিয়ে নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের উদ্বেগের কারণ ।গত বছর কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের বৌদ্ধ উপাসনালয় এবং ঘরবাড়ি আক্রমন এবং সহিসংতার পর জামাতি তান্ডবের প্রেক্ষাপটেবৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষজন শঙ্কাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন বলে সংবাদপত্রে উঠে এসেছে।বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে হিন্দু-মুসলিম পাশাপাশি বসবাস করছে । সম্পূর্ণ আলাদা সম্প্রদায় হয়েও তাদের ভিতর রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি । পাশাপাশি বসবাস করলে অনেক সময় বিভিন্ন কারণে বিবাদ হতে পারে । যে বিবাদ ভাইয়ে ভাইয়ে হতে পারে, পরিবারে পরিবারে হতে পারে, হতে পারে প্রতিবেশির সাথে । গ্রামীণ সংস্কৃতি হতে এই বিবাদগুলোর উৎপত্তি হয়েছে । কিন্তু বাংলাদেশের গ্রামে কখনও হিন্দু - মুসলিম বিবাদ হয়নি । বিবাদগুলো হয়, জমি নিয়ে, রাস্তা নিয়ে, গ্রামীণ মতপার্থক্যের কারণে । সাম্প্রদায়িক সহিসংতা থেকে বড় প্রাপ্তি হলো সাধারণের মনযোগ ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। এবং বলতে দ্বিধা নেই যে স্থানীয় জনসমর্থনও ক্ষেত্রবিশেষে বাড়ে। জামায়াত সবসময়ই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তার প্রতিপক্ষ লক্ষ্যবস্তু হিসেবে গন্য করে। এটাই হয়ে আসছে। ১৯৬৪ সালে যখন ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধ হয় সেসময় এটা হয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়তো বাংলার মাটিতে হিন্দুত্ব সাফ করার জন্য পাকিস্থানের সেনাদের মোটিভেট করে আনা হয়েছিল। সাথে ছিল জামায়াতের গনহত্যা, ধর্মান্তরিতকরণ সহ যুদ্ধাপরাধ। ২০০১ সালে নির্বাচনের পরও আবার যে হিংসাত্মক সাম্প্রদায়িক সহিংস হামলা হয় তার নির্মম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রান্তিক মানুষজন। পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী আর বাঙ্গালি জনগণের ঐক্য-সংহতি স্থাপন করা অতি জরুরি। আত্মপরিচয় কেড়ে নিয়ে আমরা সেই ঐক্য-সংহতি ধবংস হতে দিতে পারি না। আমরা দাবি করি বৈচিত্র-বৈভবে সবাই একসাথে বাঁচি। সকলের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত হোক। ১৫ বছরের পুরোনো পার্বত্য শান্তি চুক্তি (১৯৯৭) অবিলম্বে বাস্তবায়ন হোক। সকল জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা হোক।",False rn,"আল্লামা শফীর ব্যক্তিগত জীবন আল্লামা শফীর ব্যক্তিগত জীবন: তিন স্ত্রী, সাত সন্তান। কোথায় জন্ম আল্লামা শফীর?আল্লামা শফীর জন্ম ভারতের বিহারে। প্রথমে বাংলাদেশের নোয়াখালিতে আসেন এবং সেখান থেকে পরবর্তীকালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ায় আস্তানা গাঁড়েন। হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রধানপদে নিজের নিয়োগকে বৈধতা দেওয়ার কারণে জন্মস্থান নিয়ে রহস্য সৃষ্টি করা হয়।কর্মজীবনের শুরু: পটিয়া বনাম হাটহাজারী আল্লামা শফী প্রথম পটিয়ার আল জামেয়া আল ইসলামি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। পটিয়া মাদ্রাসায় ঢুকে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে টেনে আনার চেষ্টা শুরু করেন তিনি। কিন্তু ব্যর্থ হন। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে মাদ্রাসা থেকে চলে আসেন। তারপর পটিয়াতেই জিরি মাদ্রাসায় কিছু সময় শিক্ষকতা করেন। পটিয়ার ওই দুটি মাদ্রাসা এখনও আল্লামা শফীর রাজনীতির বিরোধী-ব্লক হিসেবে কাজ করছে। আল্লামা শফীর মাদ্রাসা প্রধানের পদ আল্লামা শফী অতপর সাধারণ শিক্ষক হিসেবে চাকুরি নেন দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে। এই মাদ্রাসায় চাকরী নেয়ার পর আল্লামা শফী কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট করার জন্য ভয়ংকর ও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। যেভাবে মাদ্রাসা প্রধান হলেন আল্লামা শফী ১৯৮৪ সালে হাটহাজারীর মুহতামিম মাওলানা আবদুর রহিম (আব্দুল খালেদ) মারা যাওয়ার পর সে সুযোগ চলে আসে আল্লামা শফীর সামনে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় মুহতামিম নির্বাচনের নির্ধারিত আইন। হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার নিয়ম অনুসারে যোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে কেউ হাটহাজারীর বাসিন্দা হলে তিনিই হবেন মাদ্রাসা প্রধান। স্বাভাবিকভাবেই, অগ্রাধিকারভিত্তিতে মাওলানা রহিমের ভাই আল্লামা সেলিমের মুহতামিম হওয়ার কথা । কিন্তু আল্লামা সেলিমের কর্তৃত্ব কখনোই নিরঙ্কুশ হয়নি। নানান জটিলতার কারণ এই মাদ্রাসার ইমাম বা অভিভাবকের দায়িত্ব চলে যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমের খতিব উবায়দুল হকের কাছে। এদিকে আল্লামা সেলিমের বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগ তুলে মাদ্রাসা প্রাঙ্গনেই আল্লামা সেলিমকে মারাত্মকভাবে শারিরীক নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীকালে শাস্তি স্বরূপ আল্লামা সেলিমের মুহতামিম হওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যায়। পর্দার সামনে চলে আসেন আল্লামা আহমদ শফী। হাটহাজারীর স্থানীয় অনেক ব্যক্তিই মনে করেন, আল্লামা সেলিমের বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগটি তাকে ঘায়েল করার হাতিয়ার ছিল। কিন্তু মাওলানা সেলিমের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে মুহতামিম পদ থেকে তাকে দূরে থাকতে বাধ্য করা হলেও মাদ্রাসাটির প্রধান হওয়া সম্ভব ছিল না আল্লামা শফীর পক্ষে। অবশেষে বিএনপির দ্বিতীয় বারের শাসন আমলে আল্লামা শফী বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব ও মাদ্রাসা ইমাম মাওলানা উবায়দুল হকের সঙ্গে তার ঘনিষ্টতাকে কাজে লাগিয়ে এবং উবায়দুল হকের প্রভাব-প্রতিপত্তি ব্যবহার করে মাদ্রাসা প্রধানের পদটি দখল করেন। আল্লামা শফী হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম হওয়ার পরই রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। নানান চেষ্টার পর ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি সংগঠন তৈরী করেন এবং হেফাজতে ইসলামের সার্বিক কর্তৃত্ব নিয়ে নেন। হেফাজতে ইসলাম পরিণত হয় এক ব্যক্তি, এক নেতার সংগঠনে। হুজুরের স্ত্রীগণ?হাটহাজারী মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও জানেন না আল্লামা আহমদ শফীর স্ত্রী কত জন। বর্তমানে হুজুরের তিন জন মতান্তরে চারজন স্ত্রী বিদ্যমান। ৯২ বৎসরের জীবনে আল্লামা শফী অন্তত ছয় বার বিয়ে করেছেন। স্ত্রীদের মধ্য থেকে কারও মৃত্যু হলে, সে স্থান শূন্য থাকেনি। আল্লামা শফী প্রথম বিয়ে করেন ২৩ বছর বয়সে। আল্লামা শফী স্ত্রীদের নিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসার ভেতরেই একটি কমপ্লেক্সে বসবাস করেন। তবে ব্যক্তিজীবন নিয়ে গোপনীয়তা রাখার চেষ্টা করেন তাই তার পারিবারিক অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলাম কিংবা হাটহাজারী মাদ্রাসার নেতা-কর্মীদের দাওয়াত দেয়া হয় না। সন্তান সংখ্যা সাত আল্লামা শফীর মোট সাত সন্তান। এর মধ্যে চারজন কন্যা ও তিন জন পুত্র। এই সাত সন্তানের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন মেজ ছেলে আনাস মাদানী। অন্য দুই ছেলে গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়া থাকেন। তিন মেয়ের জামাই-ই মাদ্রাসায় শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত। আনাস মাদানী হাটহাজারী মাদ্রাসায় ‘বড় হুজুরের’ উত্তরসূরী হিসেবে পরিচিত। মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যে একমাত্র তার কক্ষটিই শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত ও অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত। বেহেশতী পয়গাম ২০০৮ সালের দিকে আল্লামা শফী হুজুর একদিন মাদ্রাসায় প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, তাঁর খোঁড়া মেয়েকে যে বিয়ে করবে, সে সরাসরি বেহেশতে যাবে। এই ঘোষণা সেই সময় হাটহাজারী এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি করে। এ মুহূর্তে হেফাজতের লোকজন এসব এড়িয়ে গেলেও তৎকালীন সময়ে এ ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। হেফাজতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান হুজুর তাঁর ঘোষণার পেছনের যুক্তিও তুলে ধরেছিলেন। হুজুর বলেছিলেন, একজন সতী, পরহেজগার, পঙ্গু নারীকে বিয়ে করলে এই বিয়েই হাসরের ময়দানে নাজাতের উসিলা হবে। আল্লামা শফীর এই ঘোষণার পরে হাটহাজারীর এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জামালউদ্দিন প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে আল্লামা শফীর শারীরিক প্রতিবন্ধী কন্যাকে বিয়ে করেন। পরবর্তীকালে জামালউদ্দিন তার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর প্রতি অবহেলা দেখালে প্রথম স্ত্রীর বড় সন্তান রোবায়েত বিন জামাল এ নিয়ে আল্লামা শফীর কাছে বারবার অভিযোগ করেন। কিন্তু এর কোন সুরাহা তারা পাননি বলে জানা যায়। হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রসংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি হাটহাজারীতে আল্লামা শফী ও তাঁর মাদ্রাসা নিয়ে নানান গল্প ফাঁদা হয়। এর একটি হচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্রসংখ্যা। সংখ্যা বাড়িয়ে বলার মাধ্যমে মাদ্রাসার গুরুত্ব যেমন তুলে ধরা হয় তেমনি ক্ষমতা প্রকাশ করতেও তা ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে ছাত্রসংখ্যা অনুদান পেতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সাধারণতভবে প্রচার রয়েছে হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রসংখ্যা বিশ থেকে ত্রিশ হাজার। কিন্তু আমাদের অনুসন্ধানে নিশ্চিত জানা গেছে – হাটহাজারী মাদ্রাসায় মোট ছাত্রের সংখ্যা কোনভাবেই আট হাজারের বেশি নয়।",False rn,"আমরা যতটা দূর চলে যাই-চেয়ে দেখি আরো কিছু ,আছে তার পরে ('এতো যে আমি ওখানে যাই,ওখানে পাই কাছে,ওখানে তার পায়ের কিছু চিহ্ন পড়ে আছে'।)মাঝে মাঝে একটা অদ্ভুত আবেগ আমার সব বোধবুদ্ধি লুপ্ত করে দেয়।তখন সব কথা আমার হারিয়ে যায়।চলতে চলতে পথ এক সময় শেষ হয়। কোনো সমুদ্র কিংবা পাহাড় কিংবা অরন্য কিংবা বিশাল দিগন্তের সামনে।তখন একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। পথ কি শেষ হয়ে এসেছে,না এখনো অনেকটা যেতে হবে!পৃথিবীতে প্রেমের চেয়ে শুদ্ধ সম্পর্ক আর কিছু নেই।শুধু মাএ প্রেমই সমস্ত পাঁচিল ভেঙ্গে দেয়,সমস্ত শৃঙ্গল ছিঁড়ে ফেলে।এই প্রেমের জন্য কেউ কেউ অমর কাব্য রচনা করে।কেউ তাজমহল বানায়।কেউ বা যুদ্ধে মৃত্যু বরন করেন।মানুষতো নিয়ত স্বপ্ন দেখে,তাই সে বেঁচে আছে।আবার স্বপ্ন যদি কখনো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়,তাহলে...।প্রতিনিয়ত চারপাশ থেকে নানা ভ্রান্তি আমাদের মনের স্বচ্ছতা কে ঘুলিয়ে দেয়।আমাদের আশে পাশে যে সব ভাঙ্গনের ছবি দেখি,তার পেছনে অন্য কোনো গভীর,অন্তঘার্তী এবং অসহনীয় কারন থাকে।পৃথিবীর কোনও নরনারী'ই চায় না হৃদয় ভেঙ্গে যাক।ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাক সমস্ত বন্ধন।""কোনো এক মানুষীর মনেকোনো এক মানুষের তরেযে-জিনিস বেঁচে থাকে হৃদয়ের গভীর গহরে!কোনো এক মানুষের তরেনক্ষএের চেয়ে আরো নিঃশব্দ আসনেকোনো এক মানুষের তরেএক মানুষের তরে-এক মানুষীর মনে!""মুক্ত পুরুষ,একই সঙ্গে অত্যন্ত পরোপকারী।সকলের জন্যই উনি হাত বাড়িয়ে রেখেছেন। ওর সাধ্যের মধ্যে যতটা পারেন মানুষের জন্য করেন,অথচ নিশ্চুপে।'গড বি মারসিফুল আনটু আস,অ্যান্ড শিঊ আস দ্য লাইট অফ হিজ কাঊন্টেন্যাস,অ্যান্ড বি মারসিফুল আনটু আস'।এর মানে বলতে হবে কি?প্রেয়ার বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে আছে।আমার ক্রুটিটা কোথায়?আমি কি পৃথিবীর থেকে বেশী চেয়ে ফেলেছি!তাই ব্রজপাতের মতো সহসা এই দুঃখ।এই বেদনা।এই এক আকাশ স্বপ্নহীন অন্ধকার আমার মাথায় ভেঙ্গে পড়েছে!আমি প্রতিদিন এই সবের উওর খুঁজি একাকী রাস্তায় হেঁটে হেঁটে।ভোরবেলা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হঠাৎ মনে হলো-মানানসই শব্দ সাজিয়ে মনের ভাব কাগজের ওপরে লিখা কি চাট্রিখানি কথা!পরিস্কার আকাশ।আজকাল ভোরে দিকে বেশ ঠান্ডা পরে।পৃথিবীর নিয়ম বড় অদ্ভুত।যাকে তুমি সবচেয়ে বেশী ভালোবাসো সে-ই তোমার দুঃখের কারন হবে।সেদিন বিকেলে মিতু আমাকে প্রশ্ন করে ছিল,কঠিন প্রশ্ন কবিতা কাকে বলে?এই নিয়েই তর্ক।কবিতা কাকে বলে?বড় কোনও কবির কাছে জানতে চাইলে,সে কবিতা নিয়ে চার ঘন্টার বক্তৃতা দিতে পারবেন।আমি দেখেছি,এক বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার পরপর চারদিন ওই বিষয়ে কথা বলেও শেষ করতে পারেননি।আট বছরের বাচ্চার কাছে আকাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে সে তার মতো করে বলবে, মাথার ঊপরে আকাশ।আকাশ নীল।আকাশে মেঘ জমে।''সারাদিন মিছে কেটে গেল,সারারাত বড্ড খারাপনিরাশায় ব্যর্থতায় কাটবে;জীবনদিনরাত দিনগত পাপ।''ক্ষয় করবার মতো ব্যবহার শুধুফনীমনসার কাঁটা তবুও তো স্নিগ্ধশিশিরে মেখে আছে,একটি শূন্যে নেই।সব জ্ঞানী পাপী পাখি ফিরে গেছে নীরে।না,না...,এটা তো মন খারাপের কবিতা।মন ভালো করার একটা কবিতা,কোনটা বলি...?কোন টা...?একদা এমনই বাদল শেষের রাতে-মনে হয় যেন শত জনমের আগে-সে এসে,সহসা হাত রেখে ছিল হাতে,চেয়েছিল মুখে সহজিয়া অনুরাগে।সে দিনও এমনই ফসলবিলাসী হাওয়ামেতে ছিলো তার চিকুরের পাকা ধানে;অনাদি যুগের যত চাওয়া,যত পাওয়াখুঁজেছিল তার আনত দিঠির মানে।একটি কথার দ্বিধা থর থর চুড়েভর করে ছিল সাতটি অমরাবতী।হিমি'র মুখে এক আকাশ মায়া।আমি বুঝি না একটা মানুষ এত মায়াবতী হয় কি করে?হিমি'র চোখ গভীর ভালোবাসায় ঝলমল করে।'হিমি' কে নিয়ে দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে ইচ্ছা করে।বিশাল সমুদ্রের পাড়ে,বেশ কিছু দিন।হিমি পড়বে নীল শাড়ি,শাড়ি টার মধ্যে ছোট ছোট সাদা ফুল থাকবে।দুই হাত ভরতি থাকবে কাঁচের চুড়ি।আমরা হাত ধরাধরি করে সমুদ্রে নামবো।আহ্ কি আনন্দ!এই আনন্দের স্বাধই আলাদা।যদি কখনো সে সময় এসে যায়-হিমি কি কখনো যাবে আমার সাথে?মেয়েটার যা রাগ!আচ্ছা হিমি বলে কি কেউ আছে?হিমি-কে আমি চাক্ষুস দেখিনি,পরিচয় ও নেই কিন্তু মনে হয় কত দীর্ঘ দিনের চেনা-জানা।ওর হাশি খুশিতে আনন্দ পাই,ব্যাথায় হই ব্যাথিত ।মানব জীবনের রুপ রস রহস্য ও হাসি কান্না বেদনা'র (আমার মনে হয়) অপূর্ব এক প্রকাশ এই হিমি'র মধ্যে।""Down the wayWhere the night's but I am sadTo say I am on my wayWon't be back for many a day.""",False mk,"এত ক্ষতি, তাহলে হরতাল কেন___ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা হরতাল কর্মসূচি জনজীবনে দুর্ভোগ তৈরি করা ছাড়াও অর্থনীতিতে হানছে চরম আঘাত। প্রতিটি হরতালে দেশের অর্থনীতি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে, ব্যবসা বাণিজ্যে ক্ষতি হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। দেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) হরতালের ক্ষতি সম্পর্কে একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে। সে হিসাবে বছরে ৪০ দিন হরতাল হলে ৬৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। প্রতিদিন গড়ে ক্ষতি হয় ১৬০০ কোটি টাকা। ডিসিসিআই তাদের পরিসংখ্যানে দেখিয়েছে, তৈরি পোশাক খাতে একদিনের হরতালে ৩৬০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। রাজস্ব ক্ষতি হয় ২৫০ কোটি টাকা। ক্ষুদ্র ব্যবসা ও পাইকারি বাজার, শপিংমল, শোরুমের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০০ কোটি টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা।এছাড়া পরিসংখ্যানে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। পর্যটনশিল্পের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা। স্টিল মিলস, সিরামিক, সিমেন্ট, রড, এডিবল অয়েল, কাগজসহ সব উৎপাদনকারী কারখানার একদিনের হরতালে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ কোটি টাকা। অপরদিকে একদিনের হরতালে শিক্ষা খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা।পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একদিনের হরতালে তাদের ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ১১০ কোটি টাকা। হরতালের কারণে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে তাদের ক্ষতি হয়েছে ৮০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।শুধু ১৯৯৯ সালেই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতি বছরে ক্ষতি হয়েছে ৮ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। হরতাল সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিন জানান, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি থাকবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে এমন কর্মসূচি কখনো কাম্য নয়। তিনি বলেন, আমাদের দেশ বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো এগিয়ে যাচ্ছে। যদি এই মুহূর্তে হরতালের মতো কর্মসূচির কারণে দেশ উন্নয়নে পিছিয়ে পড়ে তাহলে কখনো অর্থনীতির মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না। আর এজন্য আইন করে হরতাল বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এদিকে হরতালে সারা দেশের সঙ্গে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে পরিবহন শিল্পে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। হরতালের ক্ষতি সম্পর্কে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ খান জানান, সারা দেশে ৩ লাখ গণপরিবহন চলাচল করছে। হরতালে জেলা শহরগুলোতে পরিবহন চলাচল করে। কিন্তু রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোনো পরিবহন চলাচল করে না। বন্ধ থাকা পরিবহনের সংখ্যা ৬০ শতাংশ। প্রতিটি পরিবহনে প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার টাকা আয় হলে হরতালের কারণে সে আয় হচ্ছে না। সে হিসেবে প্রতিদিন পরিবহন ব্যবসায়ীদের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪৪ কোটি টাকা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গত বছর ৬ মাসে দেশে মোট ৫৫টি হরতাল-অবরোধ হয়েছে। এই সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতি হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮০ দিনের মধ্যে ওই হরতাল-অবরোধ হয়েছে।সিপিডির প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে একদিনের হরতালে ক্ষতি হয় ৮৯১ কোটি টাকা। হরতাল প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি হাজি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন, বেসরকারি হিসাবে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিদিন ৬০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। হরতালে অধিকাংশ দোকান খোলা থাকে কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা আসতে পারেন না। ফলে হরতালে প্রতিদিন মোট লেনদেনের ৭৫ শতাংশ হয় না। এতে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন।",False mk,"শীর্ষ জামায়াত নেতাদের সন্তানরা কেউ মাদ্রাসায় পড়ে না মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য যারা সারা দিন-রাত ওয়াজ নসিহত মায়া-কান্না করে সেই জামায়াত নেতাদের সন্তানরা কেউ মাদ্রাসায় পড়ে না। তারা পড়ে আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। কেউ কেউ আবার উচ্চশিক্ষা নিতে তাদের ভাষায় ইহুদি নাসারা দেশ ইউরোপ আমেরিকায় যায়। শীর্ষস্থানীয় যেসব জামায়াত নেতা তাদের ছেলেমেয়েদের ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত করে জামায়াতের ধর্ম ব্যবসামুখী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়নি তাদের মধ্যে আছেন যুদ্ধাপরাধের রায়ে আজীবন কারাদ-প্রাপ্ত কারাগারে মারা যাওয়া গোলাম আযম, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। যুদ্ধাপরাধী এসব জামায়াত নেতার ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসা শিক্ষার দ্বীনি জীবনযাপনের পরিবর্তে পাশ্চাত্য শিক্ষায় দীক্ষিত করে বিলাসী-আয়েশী জীবনের উপখ্যানের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।মতিউর রহমান নিজামী ॥ জামায়াত আমির নিজামীকে মঙ্গলবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যুদ্ধাপরাধের রায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। মতিউর রহমান নিজামী চার ছেলে ও দুই মেয়েসহ মোট ছয় সন্তানের জনক। ছোট ছেলে নাদিম তালহা এখনও ছাত্র হলেও বাকি পাঁচ সন্তানই প্রতিষ্ঠিত। সন্তানদের মধ্যে সবার বড় মেয়ে মোহসিনা ফাতেমা। তিনি পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তার স্বামী সাইফুল্লাহ মানসুর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে বিটিভির সংবাদ পাঠক ছিলেন। তবে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি আর সুবিধা করতে পারেননি। বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারী কলেজে শিক্ষকতা করছেন। বড় ছেলে ড. নাকিবুর রহমান পড়ালেখা করেছেন মালয়েশিয়ার আন্তজার্তিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ ভালই আছেন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনাতে। দ্বিতীয় ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। রাবেয়া ভূঁইয়া একাডেমিতে আইন বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে লন্ডন গিয়ে বার-এ্যাট-ল’ ডিগ্রী অর্জন করেছেন তিনি। ছেলেদের মধ্যে কেবল নাজিব মোমেনই দেশে অবস্থান করছেন। তিনি বর্তমানে হাইকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত। নিজামীর তৃতীয় ছেলে ডাঃ নাইমুর রহমান খালেদ। পড়াশোনা করেছেন পাকিস্তানের একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। ছোট ছেলে নাদিম তালহা মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়ালেখা করছেন। নিজামীর এই ছেলেই কেবল এখনও ছাত্র। ছাত্র হলেও মানবতাবিরোধী আন্তজার্তিক ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে রয়েছে তার ব্যাপক বিরোধিতা। প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ট্রাইব্যুনালবিরোধী বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান নিজামীর এই ছেলে।ছোট মেয়ে খাদিজা পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে লন্ডনের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। ছোট মেয়ের স্বামী ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম। তিনি এক সময় শিবির সেক্রেটারি ছিলেন। নজরুল ইসলাম বর্তমানে লন্ডনে আইন পেশায় নিয়োজিত।নিজামীর স্ত্রী সামসুন্নাহার নিজামীও পিছিয়ে নেই। তিনি গুলশানে একটি ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে জামায়াতের নারী শাখার আমিরের দায়িত্ব পালনকারী নেত্রীও নিজামীর স্ত্রী সামসুন্নাহার নিজামী।গোলাম আযম ॥ সদ্যপ্রয়াত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর অন্যতম গোলাম আযম। তার ছয় ছেলের একজনও মাদ্রাসায় পড়েননি। বড় সন্তান আব্দুল্লাহ হিল মামুন আল আযমী রাজধানীর খিলগাঁও গবর্নমেন্ট স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার থেকে অর্থনীতিতে এমএ করেছেন। দ্বিতীয় ছেলে আব্দুল্লাহ হিল আমিন আল আযমী খিলগাঁও গবর্নমেন্ট স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় বাংলাদেশ স্বাধীন হলে দেশত্যাগ করে লন্ডনে নিটিং ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। তৃতীয় ছেলে আব্দুল্লাহ হিল মোমেন আল আযমী সিদ্ধেশ্বরী স্কুল থেকে এসএসসি ও রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিকম পাস করেছেন। চতুর্থ ছেলে আব্দুল্লাহ হিল আমান আল আযমী ১৯৭৫ সালে সিলেট সরকারী অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি, ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ থেকে তৃতীয় বিভাগে এইচএসসি পাস করে ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। শুধু তাই নয়, সবার জন্য নির্ধারিত তারিখের এক মাস পর তিনি মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন। ২০০৯ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে কর্মরত অবস্থায় অবসরে যান। পঞ্চম ছেলে আব্দুল্লাহ হিল নোমান আল আযমী ঢাকা গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। ছোট ছেলে আব্দুল্লাহ হিল সালমান আল আযমী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি ও ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী অনার্সে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু শেষ করতে পারেননি। এরপর আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স করেন।আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ॥ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবাই আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত। বড় ছেলে আলী আহমেদ আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স সম্পন্ন করেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটিতে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েছেন। দ্বিতীয় ছেলে আহমেদ আহকিক রাজধানীর মগবাজার আইএস স্কুল কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি করেছেন ঢাকা কলেজ থেকে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে উচ্চশিক্ষা নেন। আরেক ছেলে আহমেদ মাবরুর আইএস স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করেন। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে অনার্স করার পর আল মানারাত ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজীতে মাস্টার্স করেছেন। একমাত্র মেয়ে তামরিনা রাজধানীর ভিকারুননিসা স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করেন। আল মানারাত ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছেন একমাত্র মেয়েটি।কাদের মোল্লা ॥ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর রায়ে মৃত্যুদ-ে দ-িত জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। তার চার মেয়ে ও দুই ছেলে পড়েছেন আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায়। কাদের মোল্লার মেয়ে আমাতুল্লাহ পারভীন ইস্পাহানী গার্লস স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। এরপর ইডেন কলেজ থেকে অর্নাস ও মাস্টার্স করেছেন। বড় ছেলে হাসান জামিল এসএসসি পাস করেছেন বাদশাহ ফয়সাল স্কুল থেকে। তেজগাঁও কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছেন। আরেক ছেলে আমাতুল্লাহ সায়মিন এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন ইস্পাহানী স্কুল ও কলেজ থেকে। অনার্স করেছেন হোম ইকোনমিক্স কলেজ থেকে। একই কলেজে ফুড এ্যান্ড নিউট্রেশন বিষয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়ন শেষ করেছেন। সেজো ছেলে হাসান মওদুদ রাইফেলস্ পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করে মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। আরেক মেয়ে আফতুল্লাহ লারদীন ইস্পাহানী গার্লস স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে বর্তমানে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছেন। ছোট মেয়ে আমাতুল্লাহ নাজনীন ইস্পাহানী গার্লস স্কুল ও কলেজে অধ্যয়ন শেষে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ছেন।মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ॥ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। তার ৫ ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে হাসান ইকবাল ওয়ামী এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন ন্যাশনাল ব্যাংক স্কুল ও কলেজ থেকে। ইসলামী ইউনিভার্সিটি থেকে মিডিয়া এ্যান্ড ম্যাস কমিউনিকেশনে অনার্স করেছেন, মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। অপর ছেলে হাসান ইকরাম এসএসসি ও এইচএসসি ন্যাশনাল ব্যাংক স্কুল ও কলেজ থেকে, অনার্সে ভর্তির অপেক্ষায় ছিলেন। আরেক ছেলে হাসান জামান এসএসসি ও এইসএসসি ন্যাশনাল ব্যাংক স্কুল থেকে, অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছেন মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটিতে। আরেক ছেলে হাসান ইমাম এসএসসি ও এইচএসসি ন্যাশনাল ব্যাংক স্কুল অধ্যায়ন করে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ অধ্যয়ন করছেন। আরেক ছেলে আহম্মদ হাসান জামান ও লেভেল পরীক্ষা দেবেন একাডেমিয়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে। মেয়ে আতিয়া মিরপুর লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে পড়ছে।মীর কাশেম আলী ॥ সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসির দ-ে দ-িত জামায়াতের অর্থ যোগানদাতার শীর্ষনেতা ধনকুবের মীর কাশেম আলী। তার দুই ছেলে তিন মেয়ে। ছেলে মোহাম্মদ বিন কাশেম (সালমান) আল মানারাত ইংরেজী মিডিয়াম থেকে এ লেভেল এবং ও লেভেল করেছেন। এরপর পাকিস্তান ডেন্টাল কলেজে পড়েছেন। আরেক ছেলে মীর আহমেদ বিন কাশেম (আরমান) আল মানারাত থেকে এ লেভেল এবং ও লেভেল সম্পন্ন করেন। এরপর লন্ডনে বার এট ল’ সম্পন্ন করেছেন। মেয়ে হাসিনা তাইয়্যেবা অনার্স এবং মাস্টার্স করেছেন হোম ইকোনমিক্স কলেজ থেকে। অপর মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া আল মানারাতে স্কুল ও কলেজ থেকে এ লেভেল এবং ও লেভেল সম্পন্ন করার পর আল মানারাত ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ পড়ছেন। আরেক মেয়ে তাহেরা হাসনিন আল মানারাতে অধ্যয়নরত।গোয়েন্দা প্রতিবেদন ॥ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়Ñ ইসলাম ধর্মকে বিক্রি করা জামায়াতের বড় ব্যবসা। ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে পারলেই ইহকাল ও পরকাল দুটোই নিশ্চিত। ইসলামী বিপ্লবের জন্য বাংলাদেশের মানুষকে ইসলামী শিক্ষা নিতে হবে। মাদ্রাসায় পড়তে হবে। দেশের কোমলমতি দরিদ্র ঘরের সন্তানরা জামায়াতের প্রচারণায়, অনেকে আবার বাধ্য হয়েই মাদ্রাসা শিক্ষায় পাঠায়। জামায়াতের ভাষায় নাস্তিক্যবাদী বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যালগুলোতে পড়ানো হয়। বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসা থেকে পাস করার পর দরিদ্র ঘরের সন্তানদের কোথাও ঠাঁই হয় না। সারাজীবন দারিদ্র্যের কশাঘাতে এই মওলানারা জীবন পার করেন অন্যের অনুগ্রহে। কোথাও মিলাদ পড়াতে বা কোরআন খতমে এসব মওলানাদের ডাক পড়ে। কেউ কেউ আবার ঝাড়ফুঁক করে কিছু আয় করেন। আর আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষিত তরুণদের কাছে এই মওলানারাই সমাজের অনগ্রসর। এ কারণে যে রাজনৈতিক দল ও মতাদর্শ দায়ী সে কারণের দিকে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত তরুণের কমই নজর, হয়ে ওঠে জঙ্গীবাদী। অথচ জামায়াত বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে নাস্তিকদের শিক্ষা হিসেবে প্রচার করে থাকে। আধুনিক শিক্ষার বিপরীতে দলটি মাদ্রাসা শিক্ষার পক্ষে জোর দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু দলটির নেতাদের সন্তানেরা কেউ মাদ্রাসায় পড়েন না। জামায়াত মাদ্রাসা শিক্ষার কথা বলে দরিদ্র ঘরের সন্তানদের মাদ্রাসা শিক্ষার দিকে ঠেলে দেয়। এ সুযোগে দলটি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের নিজেদের দলে টানে। দরিদ্র ঘরের এসব মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের টেনে আনা হয় হরতাল, পিকেটিং, পুলিশের গুলির সামনে। জামায়াতের মূল নেতৃত্বের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সন্তানেরা পড়াশোনা করেন আধুনিক পশ্চিমা ধাঁচের- তাদের ভাষায় ‘নাস্তিক শিক্ষা’র আধুনিক পাশ্চাত্য ধাঁচের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।গোলাম আযমের বইয়ে যা আছেÑশীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধী কারাবন্দী অবস্থায় মারা যাওয়া জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের একটি বই শিবিরের রাজনীতির হাতেখড়ি হওয়ার সময় পড়ানো হয়। গোলাম আযমের প্রণীত ‘শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী রূপরেখা’ পুস্তিকার ৭ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেনÑ ‘ইংরেজ প্রবর্তিত আধুনিক শিক্ষাই যদি আদর্শ শিক্ষা বলে প্রচারিত হয়, তাহলে এ শিক্ষার ফল দেখে কোন ইসলামপন্থী লোকই সন্তুষ্টচিত্তে এ ধরনের শিক্ষাকে সমর্থন করতে পারে না।’ ওই গ্রন্থের ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় গোলাম আযম উল্লেখ করেনÑ ‘পাশ্চাত্য মতাদর্শে বিশ্বাসীরা মানুষকে অন্যান্য পশুর ন্যায় গড়ে তুলবার উপযোগী শিক্ষাপদ্ধতির প্রচলন করেছেন। এ শিক্ষা দ্বারা মনুষ্যত্বের বিকাশ অসম্ভব।’ এই গ্রন্থের ২১ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেনÑ ‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের গোটা পরিবেশ একেবারেই ইসলামবিরোধী।’ জামায়াতের শীর্ষনেতার এ বইটি শিবিরের প্রতিটি স্তরে পড়ানো হলেও বাস্তবে জামায়াতের নেতাদের সন্তানদের কেউ মাদ্রাসা শিক্ষা ও পেশা বেছে নেয়নি। এমনকি গোলাম আযম তার বইয়ে ইসলামের দর্শন নিয়ে পাশ্চাত্য শিক্ষাকে ব্যঙ্গ করলেও তার ছয় ছেলের একজনকেও মাদ্রাসায় পড়াননি।- See more at: Click This Link সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:৪৫",False fe,"যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি সংগঠন _ সাফল্য-ব্যর্থতা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি সংগঠন : সাফল্য-ব্যর্থতা ফকির ইলিয়াস ================================== মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালিদের প্রাচীনতম সংগঠন ‘লীগ অব আমেরিকা’। এর সঙ্গে স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ যুক্ত থাকলেও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই সংগঠনটি স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বাঙালির বিজয়ের পর তা ‘বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা’ নামে আবির্ভূত হয়। উত্তর আমেরিকার বাঙালিদের ব্যাপক গোড়াপত্তন ঘটে মূলত আশির দশকে। এর আগে বেশকিছু প্রবীণ বাঙালি যুক্তরাষ্ট্রে বসতি গড়লেও এর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। পেশাজীবীরা পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে চললেও কোনো সংগঠন গড়ে তোলার ব্যাপারে তারা মনোযোগী হন আরও পরে। নিউইয়র্কে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউইয়র্ক’ গড়ে ওঠে প্রধানত সে রকম বন্ধু মহলের পারিবারিক আবহেই বলা যায়। এর পর আশির দশকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে। অভিবাসী বাংলাদেশিরা সংগঠন গড়ে তুলতে থাকেন। শিকাগো, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, নিউজার্সি, টেক্সাস, কানেকটিকাট, ফিলাডেলফিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড প্রভৃতি বাংলাদেশি অধ্যুষিত অঞ্চলে ছোট-বড় সংগঠন জন্ম নিতে থাকে। এই ধারাকে প্রসারিত করে প্রবাসী যুক্তরাষ্ট্রবাসী বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা জরুরি হয়ে পড়ে। বেশ কিছু সংগঠনের শীর্ষ ব্যক্তিদের চেতনা ও সমঝোতার মাধ্যমে ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস অন নর্থ আমেরিকা (FOBANA) জন্মলাভ করে। ১৯৮৭ সালে প্রথম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটন ডিসিতে। ১৯৮৮ সালে দ্বিতীয় সম্মেলন শুরু হয় নিউইয়র্কে। ফোবানার যাত্রা এভাবেই শুরু। যুক্তরাষ্ট্রে সংগঠন গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে নিউইয়র্ক সব সময়েই এগিয়ে ছিল। কারণ ক্রমবর্ধমান অভিবাসীর সংখ্যার আধিক্য নিউইয়র্কে সংগঠন গড়ে তোলা সহজসাধ্য করে তুলেছিল। ক্রমশ এভাবেই গড়ে উঠতে থাকে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন। ১৯৯০ সালে ‘ওপিওয়ান’ ভিসা লটারির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের আগমনের ভাগ্য আরেকদফা খুলে যায়। প্রচুর পরিমাণ বাঙালি তখন এই ভিসা পাওয়ার সুযোগ লাভ করেন। নিউইয়র্কে ‘বাংলাদেশ সংসদ’ নামের একটি মানবিক, সমাজকল্যাণমূলক সংগঠন এ সময় প্রচুর পরিমাণ ওপিওয়ান ভিসাপ্রাপ্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। ১৯৯০-১৯৯২ সালে ‘বাংলাদেশ সংসদ’-এর সাহায্যের ভূমিকা ছিল স্মরণীয়। এরপর সংগঠনটির সভাপতি ডা. আসাদ খানের অকাল মৃত্যুর কারণে সংগঠনটি স্থবির হয়ে যায়। পরে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ১৯৯০-পরবর্তী সময়ে নিউইয়র্কে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউইয়র্ক’ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে অভিবাসী সমাজকে নতুন প্রাণদানে সমর্থ হয়। মাতৃভূমি বাংলাদেশের নানা সুখে-দুঃখে সংগঠনটি বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসে, যা ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। ১৯৮৯-৯০ বছরগুলো প্রবাসে ও বাঙালিদের জন্য ছিল রাজনৈতিকভাবে অস্থিরতার বছর। স্বদেশে সামরিক জান্তার শেষ দাপট উত্তাল রেখেছিল প্রবাসী সমাজকে। এ সময়টিতে কমিটি ফর ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ নামের সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক কাজ করে যায়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসকের পতনের পর সংগঠনটি নিস্তেজ হয়ে পড়ে ক্রমশ। এর পরে সংগঠনটি ত্রিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। আর এভাবেই বেশ কিছু তরুণ স্বাপ্নিকের স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর জনপ্রিয়তাও বাড়তে থাকে ১৯৮৯-৯০ সাল থেকেই। ‘জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার’ গোড়াপত্তনের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংগঠন গড়ে তোলার ধরন, নতুন গতি সঞ্চার করে। এর পরে বিয়ানীবাজার সামাজিক সাংস্কৃতিক সমিতি, চট্টগ্রাম সমিতি, সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশন, নোয়াখালী সমিতিসহ প্রায় প্রতিটি বিভাগ ও জেলা-উপজেলাকে কেন্দ্র করে সংগঠন জন্মলাভ করতে থাকে। সংগঠনগুলো জন্মের ভালো দিক ছিল এতে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাসীদের সাহায্য, কর্মের ছোঁয়া সরাসরি পরশ পেতে থাকে। আর মন্দ দিকটি ছিল, নেতৃত্বের ভিন্নমত, দ্বন্দ্ব এবং জটিলতার কারণে বেড়ে যায় কোন্দল-কলহ। যা কিছু কিছু অশোভনীয় ঘটনারও সূত্রপাত করে। অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনাবলি সাধারণ প্রবাসীর মনোপীড়ারও কারণ হয়। এরপরে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রামভিত্তিক সংগঠনও গড়ে উঠেছে। তারা নিজ নিজ অঞ্চলে সৃজনশীল কাজ করছেন, এটাই ছিল প্রবাসী সমাজের ভরসা। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর প্রধান কার্যক্রম লক্ষ্য করা গেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা গঠনের মধ্য দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রীয় সরকার যদিও এখানে কোনো দেশের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিবন্ধনকে গ্রাহ্য করে না তার পরও চলছে এসব কার্যক্রম। একাধিক নেতানেত্রীর নামেও গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানার, যা সাধারণ প্রবাসী সমাজ কখনোই সহজে মেনে নেয়নি। নিতে পারেনি। বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো পালনে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার চেয়ে দলীয় মতাদর্শের এজেন্ডা বাস্তবায়নই প্রধান হিসেবে বিবেচ্য হয়েছে গেল দুদশক ধরে। ফলে এখানের নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের অনেক ইতিহাসের সত্য, উৎস, উপাত্ত জানা থেকে বঞ্চিত হয়েছে নানাভাবে। অথচ জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিলে এসব সংকীর্ণতা থেকে জাতিকে বাঁচানো যেত, প্রজন্মকে বাঁচানো যেত। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগঠনে ‘গণতন্ত্র’ চর্চার নামে নির্বাচনে লাখ লাখ ডলার খরচের মহড়াটি হচ্ছে অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। কারণ এতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় কাজ নয়, নেতৃত্বই হচ্ছে কারও কারও প্রধান অর্জনের বিষয়। নির্বাচনে যে অর্থ অপচয় হয় তা দিয়ে বাংলাদেশের যে কোনো অঞ্চলে মহৎ মানবতার সেবামূলক যে কোনো একটি প্রজেক্ট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। এই অভিযোগে সংগঠনগুলোর যেসব প্রাপ্তি সবার নজর কেড়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশিদের প্যারেড, বিভিন্ন সময় মূলধারার নির্বাচনে বাংলাদেশিদের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণ, নতুন প্রজন্মের অনেকের শিক্ষাক্ষেত্রে কৃতিত্ব ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে শুধু বনভোজন আর ইফতার মাহফিলের আয়োজনের মাধ্যমেই একটি সংগঠনের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। ঐক্যবদ্ধভাবে এখানে অনেক কিছুই করা সম্ভব। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে, বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি, সভ্যতা, কৃষি এবং ধর্মীয় আচারকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে এখানের সংগঠনগুলো ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে গেল দুই দশকে যেসব উজ্জ্বল সংগঠন অন্তর্দ্বন্দ্ব, পৃষ্ঠপোষকতার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে স্থবির, নিষ্ক্রিয় কিংবা জনপ্রিয়তা হারিয়েছে এর কটির নাম উল্লেখ করা জরুরি। বাংলাদেশ থিয়েটার অব আমেরিকা, বাংলাদেশ জার্নালিস্টস এন্ড রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেডব্লিউএ), যুক্তরাষ্ট্র সাহিত্য পরিষদ, বাংলাদেশ ফোরাম বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউইয়র্ক, বাংলাদেশ কালচারাল সেন্টার প্রভৃতি অন্যতম। নিউইয়র্কের মতো বাঙালি ঘনবসতিপূর্ণ নগরীতে একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা স্কুল চালানোর ব্যর্থতাও রয়েছে এখানের অভিবাসী সমাজের। ‘উত্তর আমেরিকা বাংলা কবিতা সম্মেলন’- বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় চিরতরে। উত্তর আমেরিকা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনও নানা অদৃশ্য কারণে গতি সঞ্চার করতে পারেনি। নজরুল সম্মেলনও আর নিয়মিতভাবে হচ্ছে না। লোকসাহিত্য সম্মেলন, উৎসবের নামে নিউইয়র্কে ছোটখাটো কিছু অনুষ্ঠানমালা আপামর প্রবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে বার বার। এর প্রধান কারণ হিসেবে আয়োজকদের ব্যর্থতা, হীনতাকেই দায়ী করেছেন প্রবাসীরা। খেলাধুলার ক্ষেত্রে প্রবাসীরা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অনুশীলন। ১৯৮৭-৮৮ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের জন্ম হয় উত্তর আমেরিকায়। এক্ষেত্রে বিশিষ্ট ক্রীড়ানুরাগী দেওয়ান আকমল চৌধুরীর ভূমিকা প্রবাসে মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। পরবর্তী সময়ে তা বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অব আমেরিকায় রূপ লাভ করে। স্পোর্টস কাউন্সিলের উদ্যোগে প্রতি গ্রীষ্মে নিউইয়র্কে ফুটবল লীগ আয়োজনের ধারাবাহিকতা গোটা বিশ্বের বাঙালি সমাজে ব্যাপকভাবে প্রশংসা কুড়ায়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে খেলোয়াড়রা এসে খেলায় অংশ নেন। এর পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রাক্তন খেলোয়াড় ও ক্রীড়ামোদীদের উদ্যোগে গঠিত হয় বাংলাদেশ স্পোর্টস ফাউন্ডেশন অব আমেরিকা। কিন্তু সংগঠনটি আশানুরূপ কর্মের বিশালতা বাড়াতে পারেনি। এছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ক্রিকেট, দাবা, ক্যারম প্রতিযোগিতার খবরও আমরা দেখেছি বিভিন্ন পত্রিকায়। গেল দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রে সাহিত্য সংস্কৃতি নির্ভর কোনো সংগঠন শক্ত ভিত্তি নিয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সংগীত প্রসারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস (বিপা)-এর মতো একটি জনপ্রিয় সংগঠন জন্ম নিলেও সাহিত্যভিত্তিক কোনো সংগঠন প্রতিষ্ঠায় কেউই এগিয়ে আসেননি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো সংবাদ মাধ্যমও এর ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসেনি। অথচ নতুন প্রজন্মকে বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি শেখাতে জানাতে এই কাজটি ছিল খুবই জরুরি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ২০০১-০৬ বছরগুলোতে নিউইয়র্কে বেশকিছু সাহিত্য কর্মকা- সাধন করলেও গেল দুবছর ধরে তাদের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। একটি কথা খুবই স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশিদের এখন স্থায়ী নিবাস। এখানে এখন আর কেউ সাময়িকভাবে অবস্থানের কথা ভাবছেন না। ভাবার কোনো অবকাশও নেই। কারণ এখানে জন্ম নেয়া প্রজন্ম যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের স্বদেশ-মাতৃভূমি বলেই মনে করে। তাই এখানের সংগঠনগুলোকেও ঢেলে সাজাতে হবে সেই চেতনার আলোকে। ঐক্য, সংহতি, সৃজনশীলতা এবং আধুনিকতার মাধ্যমেই পৌঁছে দেয়া সম্ভব বাঙালি জাতিসত্তার আলো, প্রজন্মের প্রাণে প্রাণে। ------------------------------------------------------------------------------ ---দৈনিক ডেসটিনি।ঢাকা।২৬ফেব্রুয়ারি২০০৮ মংগলবার প্রকাশিত। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৯:৩৮",False mk,"গ্রেনেড হামলার লক্ষ্য ছিলো শেখ হাসিনা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় ১৩টি শক্তিশালী গ্রেনেড বিস্ফোরণের পাশাপাশি গুলির ঘটনাও ঘটে। গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর যখন ঘাতকরা দেখে শেখ হাসিনা অক্ষত আছেন তখনই মূলত গুলির ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতা শেষ করে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার পরপরই গ্রেনেড বিস্ফোরণ শুরু হয়। গ্রেনেড বিস্ফোরণের বিকট শব্দের মধ্যে কিছু গুলির আওয়াজ শোনা যায়। সেসময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ও দলীয় নেতা-কর্মীরা নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে মানববর্ম তৈরির মাধ্যমে আগলে রাখেন শেখ হাসিনাকে। এরপর নিরাপত্তাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে তাঁর বুলেটপ্রুফ গাড়িতে তুলে ধানমন্ডির সুধা সদনে নিয়ে যান। শেখ হাসিনা যখন বুলেটপ্রুফ গাড়িতে উঠে ধ্বংসযজ্ঞস্থল ত্যাগ করছিলেন তখন তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করেও গুলি চালানো হয়। কিন্তু গাড়িটি বুলেটপ্রুফ হওয়ায় শেখ হাসিনা রক্ষা পান নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে।পরবর্তীতে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা তারেক রহমানের নির্দেশেই হয়েছিল। তিনি আরও অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থান হয়। আর এই উত্থানের পেছনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জড়িত ছিলেন। কামরুল ইসলাম আরো বলেন, খালেদা ও তারেক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিন্ন করে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিদেশে থাকা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন। কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শক্তি সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ২১ আগস্ট জননেত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।অন্যদিকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তও অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য ও শেখ হাসিনাকে হত্যা করার লক্ষ্যেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার জন্য জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে বলেন তিনি। সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত আরও বলেন, খালেদা জিয়ার সন্তান তারেক রহমান হাওয়া ভবনে বসে সমান্তরাল সরকার সৃষ্টি করে ইতিহাসের আরেকটি জঘন্যতম হত্যাকা-ের পরিকল্পনা করেছিল। সেসময় খালেদা জিয়া রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেও মাতৃস্নেহের কারণে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। সুরঞ্জিত খালেদা জিয়ার প্রতি অভিযোগ করে বলেন, তিনি হত্যা, ক্যু ও সাংবিধানিক ধারাকে বন্ধ করার রাজনীতি করছেন। খালেদা জিয়া যদি জনসমক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং জনগণ যদি তাকে ক্ষমা করে, তাহলেই তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিতে আসতে পারেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচারকে রাজনৈতিক দৃষ্টিতে না দেখার আহ্বান জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচার এখন বিচার বিভাগের হাতে। বিচারব্যবস্থার মাধ্যমেই সাংবিধানিক পন্থায় এই হামলার রায় চূড়ান্ত হবে।পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যন তারেক রহমানকে দায়ী করে বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশেই তার ছেলে তারেক রহমান এ হামলা ঘটিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে ২০০৪, ২০০৫, ২০০৬ সালের মতো দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটবে।২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত মামলা সম্পর্কিত তথ্যাদিএডিডি, প্রসিকিউশন ঢাকা এর ভাষ্যমতে-ক. মতিঝিল থানার মামলা নং-৯৭, তারিখ : ২২.০৮.২০০৪। ধারা-১২০ বি/৩২৪, ৩২৬, ৩০২, ৩০৭, ২০১, ১১৮, ১১৯, ২১২, ২১৭, ২১৮, ৩৩০, ১০৯, ৩৪ দণ্ডবিধি।খ. সম্পূরক অভিযোগ পত্র নং-৪৬২, তারিখ : ০২.০৭.২০১১। ধারা-১২০, বি/৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ২০১, ১১৮, ১১৯, ২১২, ২১৭, ২১৮, ৩৩০, ১০৯, ৩৪ দ-বিধি।গ. অভিযুক্ত আসামীর সংখ্যা- ৫২ জনঘ. মোট সাক্ষীর সংখ্যা- ৪৯১ জনঙ. তদন্তকারী সংস্থা-সিআইডিচ. বিচারাধীন আদালত-দ্রুত বিচার-ট্রাইব্যুনাল-১, ঢাকা।ছ. সর্বশেষ মামলার অবস্থা- ৬৯ জন সাক্ষীর জেরা শেষ হয়েছে। ৭০তম সাক্ষীর জেরা চলছে।জ. বিচারক- সাহেদ নূর উদ্দিনঝ. পাবলিক প্রসিকিউটর- অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান।২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত অন্য ধারায় দায়েরকৃত মামলা সম্পর্কিত তথ্যাদিক. মতিঝিল থানার মামলা নং-৯৭, তারিখ ২২.০৮.২০০৪। ধারা-১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইন (সংশোধিত ২০০২) এর ৩, ৪ ও ৬ ধারা।খ. সম্পূরক অভিযোগ পত্র নং- ৪৬৩, তারিখ ০২.০৭.২০১১। ধারা-১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইন (সংশোধিত ২০০২) এর ৩, ৪ ও ৬ ধারা।গ. অভিযুক্ত আসামীর সংখ্যা- ৫২ জন।ঘ. মোট সাক্ষীর সংখ্যা- ৪৯৫ জন।ঙ. তদন্তকারী সংস্থা- সিআইডিচ. বিচারাধীন আদালত-দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১, ঢাকা।ছ. মামলার সর্বশেষ অবস্থা- ৭০তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।জ. বিচারক- সাহেদ নূর উদ্দিনঝ. পাবলিক প্রসিকিউটর- অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান।গ্রেনেড হামলায় নিহত ও আহতরা২১ আগস্ট বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহতরা হলেন, মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল মাহবুবুর রশীদ (অব.), আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন ও ইসহাক মিয়া।আহতরা হলেন শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মোহাম্মদ হানিফ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা আখতার, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দীপ্তি, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন ও মামুন মল্লিক।গ্রেনেড হামলা মামলার সর্বশেষ অবস্থা২৪টি হত্যাকা- ও শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মীকে মারাত্মকভাবে আহত করার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইতিপূর্বে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু এবং ঢাকা সিটি ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফকে গ্রেপ্তার করে।২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ৭ বছর ও অধিকতর তদন্তের আদেশ হওয়ার প্রায় দুই বছর পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়। সম্পূরক এ চার্জশিট দাখিল করতে দুই বছরে ১৪ দফা সময় নেওয়া হয়। পরবর্তীতে এ মামলার তদন্তভার ন্যস্ত হয় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের ওপর। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই গ্রেনেড হামলার হত্যা ও বিস্ফোরকের পৃথক দুটি মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। সম্পূরক চার্জশিটে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নতুন ৩০ জনকে আসামী করা হয়। এতে এই মামলায় প্রথম এবং সম্পূরক চার্জশিটের মোট আসামী দাঁড়ায় ৫২ জনে। আসামীদের মধ্যে ৩৩ জন বর্তমানে কারাগারে আছেন। এদের মধ্যে একমাত্র জামিন পাওয়া আসামী হলেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৩ নং ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুর রহমান আরিফ। সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের সময় মোট ১৮ জন আসামী পলাতক ছিলেন। পরে ৬ পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে আত্মসমর্পন করে কারাগারে গেলে পলাতক আসামীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ জনে।পলাতক আসামীরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, মেজর জেনারেল এটিএম আমিন (অব.), লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার (অব.), জঙ্গি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, পুলিশের সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) মো. ওবায়দুর রহমান ও সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান।গ্রেনেড হামলার অধিকতর তদন্তকালে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা হলেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, লুৎফুজ্জামান বাবর, মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী (অব.), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম (অব.), মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা আব্দুর রউফ, সাইদুল ইসলাম ডিউক, লে. কর্নেল সাইদুল ইসলাম জোয়ারদার (বরখাস্ত), আরিফুর রহমান আরিফ, মাওলানা আবদুল সালাম, আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট ও আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে গোলাম মোস্তফা।অনেকদিন ধামাচাপা থাকার পর গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুন করে এ মামলার তদন্ত শুরু করে। ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডি এ সংক্রান্ত মামলা দুটির প্রথম অভিযোগপত্র দেয়। তাতে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই জঙ্গি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামী করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে মামলা দুটির অধিকতর তদন্তের উদ্যোগ নেয়। তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আরও ৩০ জনকে আসামী করে সম্পূরক চার্জশিট দেয় সিআইডি। নতুন এই ৩০ জনসহ মামলার এখন মোট আসামী ৫২। এদের মধ্যে তারেক রহমানসহ ১২ জন পলাতক আছেন।সম্পূরক চার্জশিটে নতুন ৩০ আসামী২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় নতুন আসামীরা হলেন- তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, আরিফুল ইসলাম আরিফ, মো. হানিফ, হুজি নেতা মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মুফতি আবদুর রউফ, মাওলানা আবদুল হান্নান, মাওলানা শেখ ফরিদ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মো. ইউসুফ ভাট, আবদুল মালেক, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম (অব.), মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী (অব.), মেজর জেনারেল এটিএম আমিন (অব.), লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার (বরখাস্ত), লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাইফুল ইসলাম ডিউক (অব.), মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান, উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, সিআইডির এএসপি আবদুর রশিদ, মুন্সি আতিকুর রহমান, তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন ও তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি (সিআইডি) খোদা বক্স চৌধুরী।এই ৩০ জনের মধ্যে শেষের ১১ জনকে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগরাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার প্রধান সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, হত্যা মামলায় নতুন ৩০ আসামীর মধ্যে তারেক রহমান, মুজাহিদ, বাবর, হারিছ চৌধুরী, রেজ্জাকুল হায়দার, আবদুর রহিম, কায়কোবাদ, আরিফুল ইসলাম, হানিফ ও ১০ জঙ্গি নেতাসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, হত্যার চেষ্টা এবং গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ-এ দণ্ডবিধির ১২০বি/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩০২/১০৯ ও ৩৪ ধারায় আদালত অভিযোগ গঠন করে।জোট সরকার আমলের সিআইডির প্রধান ও তিন তদন্ত কর্মকর্তা খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, মুন্সি আতিক ও আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহ ও বলপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের অপরাধে অভিযোগ গঠন করা হয়।সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, এটিএম আমিন, সাবেক দুই আইজিপি আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, খান সাঈদ হাসান ও ওবায়দুর রহমান খানের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার জন্য দণ্ডবিধির ২১২ ও ২১৭ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এছাড়া খান সাঈদ ও ওবায়দুর রহমানের বিরুদ্ধে আলামত ধ্বংস করার দায়ে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।এছাড়া সিআইডি কর্মকর্তারা ২০০০ সালে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা ও পরের বছর সিলেটে বোমা হামলা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে হুজি নেতা মুফতি হান্নানের সম্পৃক্ততার কথা জানতে পারেন। খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমীন, মুন্সী আতিক ও আব্দুর রশিদ তখন মুফতি হান্নানকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেননি। মূল আসামীদের বাঁচাতে তারা তা না করে পরস্পর যোগসাজশে জজ মিয়াসহ তিনজনের কাছ থেকে বলপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেন। আদালত এই চার জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১৮ ও ৩৩০ ধারায়ও অভিযোগ গঠন করেন।শেষ কথা২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হওয়ার পরও প্রায় আড়াই বছর ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। এই আড়াই বছরে জোট সরকার মামলার সামান্যতম অগ্রগতি করেনি। উপরন্তু জজ মিয়া নাটক, আওয়ামী লীগ কর্মী গ্রেপ্তারসহ নানা তালবাহানা করে মামলাটিকে একেবারে ফাইলবন্দি করে রেখেছিল। পরবর্তীতে সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলাটি উজ্জীবিত করে এবং বর্তমান সরকার মামলাটির অধিকতর তদন্তের কাজ শুরু করে। গ্রেনেড হামলা মামলাটি এখন দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল কোর্ট-১ ঢাকা জেলা আদালতে বিচারাধীন।দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে মামলাটির বিচার কার্যক্রম চললেও অন্যান্য দ্রুত বিচার মামলার মত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য এবং রাজনৈতিক স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য ধীরেসুস্থেই এগুচ্ছে। মামলাটির এখন যে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয়েছে তাকে আইনবিদরা বলছেন এটি একটি পূর্ণাঙ্গ চার্জশিট। এই চার্জশিটের আগে যা কিছু করা হয়েছে তাকে প্রহসনই বলা যায়। সম্পূরক চার্জশিটের বিচার প্রক্রিয়া যাতে প্রহসন দোষে দুষ্ট না হয় সেজন্য সরকার সর্বাত্মক সতর্কতা বজায় রাখছে।আশা করা যায় সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেরিতে হলেও এ মামলার রায় প্রকাশিত হবে। রায়ে দোষীদের শাস্তি হবে। এ ধরণের ঘটনায় কেউ যেন পার পেয়ে না যেতে পারে সেজন্য সরকার এই বিচার প্রক্রিয়াটিকে সর্বোচ্চ স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করছে। আজ হোক-কাল হোক মামলা যেভাবে গুছিয়ে আনা হয়েছে এবং চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ও সাক্ষীদের জেরা করা হচ্ছে তাতে বলা যায় এ ধরণের হামলার ঘটনায় জড়িতরা অবশ্যই শাস্তি পাবে। গ্রেনেড হামলার রাঘব বোয়ালরা এই মামলায় যথোপযুক্ত শাস্তি পেলে আশা করা যায় ভবিষ্যতে কেউ এ ধরণের কর্মকাণ্ড করার সাহস দেখাবে না। হত্যার রাজনীতি অনেকটাই কমে আসবে এবং এই বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে। স্বস্তি পাবে আহতরা ও নিহতদের স্বজনেরা। পাশাপাশি রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।",False mk,"চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাংলাদেশ-চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চার দশক অতিক্রম করেছে। অতীতে বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় যারা এসেছেন, সবাই চীনকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রাথমিক অবস্থায় চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ধরনটা কূটনৈতিক ও সামরিক বিষয়কেন্দ্রিক হলেও পরবর্তীতে সম্প্রসারিত হয়ে প্রাধান্য পেয়েছে অর্থনীতি-বাণিজ্য। অন্যদিকে ধীরে ধীরে চীনও বিশ্বে একটি অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফর করেন। গত ৩০ বছরে উচ্চপর্যায়ের কোনো চীনা নেতার এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৪১তম বার্ষিকীও উদযাপিত হয়েছে সম্প্রতি। সঙ্গত কারণে চীনা প্রেসিডেন্টের এই সফর আমাদের জন্য যেমন গৌরবের তেমনি দেশের সমৃদ্ধির স্বার্থেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যমতে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। আর এ বৈঠককে ঘিরে শুধু বাংলাদেশের জনগণই নয়, বরং বলা যেতে পারে বিশ্ববাসীরও দৃষ্টি ছিল। কেননা, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন এক উচ্চতায় পৌছেছে এরই মধ্যে। চীনের তৈরি পণ্য শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই পাওয়া যায়। জনবহুল একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও চীন কীভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ হয়ে উঠল, বর্তমান বিশ্বে তা যেমন আলোচনার বিষয়, তেমনিভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কও স্মরণ করার মতো। আমাদের বিপুল জনগোষ্ঠী রয়েছে, এই জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে চীনের কাছ থেকে শেখার রয়েছে অনেক কিছু। জানা গেছে, চীনা প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কর্ণফুলী ট্যানেল নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ-চীনের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে 'নতুন দিগন্তের উন্মোচন' বলে অভিহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, চীনের মতো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী একটি দেশ বাংলাদেশের পাশে থেকে নিরন্তর সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করলে বাংলাদেশের অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক শক্তি হিসেবেই বিবেচিত হবে। তা ছাড়া বাংলাদেশ-চীনের এই নবতর যাত্রা শেখ হাসিনার সরকারের একটি অন্যতম সাফল্য বললেও অত্যুক্তি হয় না। জানা যায়, 'ওয়ান-বেল্ট, ওয়ান রোড' নীতি ধরে এগিয়ে যাওয়া চীনের সহযোগিতা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে শি জিনপিংয়ের এই ঢাকা সফর। ঢাকা সফরকালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, চীন বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের 'গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার' বলে মনে করে। আর এ কারণেই চীন বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থার সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে কাজ করার জন্য প্রস্তুত। দুই দেশের সহযোগিতার সম্পর্ককে আমরা আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে চাই_চীনা প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্যের যথার্থতা প্রতিফলিত হয়েছে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে। অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশ যখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শিল্পায়ন আর বিনিয়োগের জন্য মুখিয়ে আছে; এমনই এক সময়ে চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর এবং সহযোগিতা নিঃসন্দেহে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বলাই বাহুল্য, চীন বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে গত চার দশকে গঠনমূলক ভূমিকা রেখেছে। অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা স্মরণ না করলেই নয়। যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, চীনের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়নি কেউ। বাংলাদেশ একটি দুর্বল অবকাঠামোর দেশ। এখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিনিয়োগ। অবকাঠামো ও শিল্পায়নের জন্য আগামী ১০ বছরে বিভিন্ন খাতে আমাদের প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ফলে আমরা মনে করি, চীনা প্রেসিডেন্টের এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় ভিত্তি পাবে। বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, যোগাযোগব্যবস্থা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা, ক্রীড়া প্রতিটি ক্ষেত্রেই চীনের সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪",False mk,"বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানো সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি এ-ই প্রথম গণবিরোধী ও আত্মঘাতী কর্মসূচি দেয়নি। বলা যায়, কঠিন বাস্তবতা বিএনপি নেতৃত্বকে পথ চিনিয়েছে। পত্রিকান্তরে জানা গেল, খালেদা জিয়া এরই মধ্যে জেলা পর্যায়ের নেতাদের আদেশ দিয়েছেন প্রস্তুতি নিতে। তিনি জেলা সফরে বেরোবেন। বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার আগে দলকে সুসংগঠিত করার যে পরামর্শ আমরা ২০০৮ থেকে দিয়ে আসছিলাম, অনেক কিছু হারিয়ে সাঁঝবেলায় এসে সেদিকেই দৃষ্টি দিলেন। বিএনপির পজিটিভ রাজনীতির আরেকটি পদক্ষেপের কথা ৮ মের পত্রিকায় দেখলাম। ছাত্রদল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি খুবই প্রয়োজনীয় দায়িত্ব ছিল বিএনপির জন্য। তবে এসব ক্ষেত্রে সাফল্য পেতে হলে বিএনপিকে গণতন্ত্র চর্চার পথে হাঁটতে হবে। অবশ্য এই জায়গাটিতে আসা বিএনপির জন্য সহজ হবে না। গণশক্তির ওপর শ্রদ্ধা দেখাতে না পারলে গণতন্ত্রের পথে হাঁটা কঠিন। যেখানে ঐতিহাসিকভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের এ যুগের নেতা-নেত্রীরা দলীয় বৃত্তে আটকে গিয়ে জনগণের দল হতে পারছেন না, সেখানে বিএনপির পক্ষে গণতন্ত্র চর্চা করা কঠিন। কারণ গণতান্ত্রিক চেতনাবিরোধী অবস্থান থেকে এই দলের জন্ম হয়েছিল। দীর্ঘ সময় বিএনপি সরকারে থেকেছে। কিন্তু সুশাসন প্রতিষ্ঠার কোনো চেষ্টা করেনি। দুর্নীতি আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থেকেছে।বিএনপির গণতান্ত্রিক হওয়ার পেছনে বড় বাধা জামায়াত বন্ধুত্ব। জঙ্গিবাদের সঙ্গেও বিএনপির পরোক্ষ যোগাযোগ আছে বলে জনরব রয়েছে। বলা যায়, জামায়াত এখন সিন্দবাদের বুড়োর মতো ভালোই চেপে বসেছে বিএনপির ঘাড়ে। এসব অশুভ যোগাযোগ ও অসৎ বন্ধুত্ব ঝেড়ে বিদায় করতে না পারলে বিএনপির পক্ষে গণতন্ত্রের পথে হাঁটা সম্ভব হবে না। ৯ মে একটি জাতীয় দৈনিকের খবর থেকে জানা গেল, বিএনপি জামায়াত বন্ধুত্ব ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে বড় বাধা তারেক রহমানের সবুজ সংকেতও নাকি পাওয়া গেছে। খবরটি সত্য হলে বিএনপির জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না।সাঁঝের বেলায় ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছাকে স্বাগতআমরা আশা করব, বিএনপি নেতারা নিকট অতীতে নিজেদের ভুল পথে হাঁটা নিয়ে আত্মসমালোচনা করেছেন। না হলেও বলব, অনন্যোপায় হয়ে অগত্যা চিন্তা করছেন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথে হাঁটার। কিন্তু আমরা মনে করি, এ পথ ধরে মোক্ষে পৌঁছার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এরই মধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে, বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দুটি ভিন্ন ভাবনার পক্ষ রয়েছে। লন্ডন থেকে তারেক রহমান একটি পক্ষ পরিচালনা করেন। এই পক্ষে আংশিকভাবে খালেদা জিয়ার অবস্থান রয়েছে। বিএনপির কিছু তরুণ ও মাঝারি তুর্কি আছেন এই দলে। বিএনপিপ্রধানের অফিস কর্মকর্তাদের অনেকেরই আশ্রয় তারেক রহমান। এই পক্ষের সবচেয়ে বড় মদদদাদা জামায়াত। এই গ্রুপের লক্ষ্য দ্রুত শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে বিএনপির রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী হওয়া। মদদদাতা জামায়াতের লক্ষ্য এদের উসকে দিয়ে রাজনীতির জল ঘোলা করা। আর সেই ঘোলা জলে নিজেদের সুবিধার মাছ ধরা।বিএনপির প্রাজ্ঞ রাজনীতিকদের উল্লেখযোগ্য অংশ অনিয়মতান্ত্রিক সন্ত্রাসী রাজনীতির সমর্থক নয়। কিন্তু তাঁরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে এবং বিএনপি নেত্রীর ক্ষমতাবলয়ের বাস্তবতায় এতটা শক্তিশালী নন যে প্রকাশ্যে ভূমিকা রাখবেন। তাই সাম্প্রতিক বিএনপির কট্টরপন্থীদের হঠকারী রাজনীতি চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া তাঁদের করার তেমন কিছু ছিল না।বিএনপি নেতা-নেত্রীরা মুখে না মানলেও ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়া বিএনপির বড় ভুল ছিল। বিএনপি নেতৃত্বের আশঙ্কামতো নির্বাচন গড়াপেটা করে আওয়ামী লীগ বিজয় ছিনিয়ে নিলেও রাজনৈতিক লাভ হতো বিএনপির। তেমন নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রচুর বিতর্ক হতো। সাধারণ মানুষের এক ধরনের সমর্থন চলে আসত বিএনপির পক্ষে, যা রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে শক্তিশালী অবস্থানে এনে দিত।কিন্তু কট্টরপন্থীদের ক্ষমতায় যাওয়ার অস্থিরতা বিএনপির বড় ক্ষতি করে দিল। নির্বাচন ঠেকানোর জন্য বিএনপির নাম ভাঙিয়ে জামায়াত-শিবির সাধারণ নিরপরাধ মানুষকে বোমায় ঝলসে দিয়ে, জীবন ছিনিয়ে নিয়ে, নানা নাশকতা করে দলটিকে গণ-আস্থা থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিল। অরাজকতা করে সরকারের পতন ঘটাতে যে ধরনের সাংগঠনিক শক্তি দরকার ছিল, তার প্রচণ্ড অভাব ছিল বিএনপির মধ্যে। অন্যদিকে সরকার সমঝোতায় না গিয়ে তার সব শক্তি নিয়ে বিএনপির আন্দোলন দমনে সক্রিয় থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য ছিল অনেক বেশি। যেহেতু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এ দেশের রাজনীতির ক্ষমতাধর কোনো পক্ষের ভেতর গণতন্ত্র চর্চার প্রতি নিষ্ঠা নেই, তাই মানুষের সহজাত রিপু প্রতিশোধপরায়ণতা জায়গা করে নেয়। নিয়মতান্ত্রিক পথে হাঁটার পক্ষে মনোবল এসব পক্ষের থাকে না। তা ছাড়া জামায়াত ও বিএনপির প্রতি আওয়ামী লীগের এবং দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার অভিযোগ তো রয়েছেই। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ না হয় ছেড়েই দিলাম। গ্রেনেড হামলার কথা বাদ দেব কেমন করে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, দেশবাসীর বড় অংশই, আমার ধারণা মতে বিশ্বাস করে, শেখ হাসিনাকে হত্যার একটি বিশেষ পরিকল্পনা ছিল। সব শেষে ৫ জানুয়ারি ২০১৪-এর নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াতের বীভৎস নাশকতা প্রভৃতির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিকে দলীয়ভাবে দুর্বল করে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারপক্ষের থাকতেই পারে। আর এই সত্যটি সামান্য দূরদর্শিতা প্রয়োগ করে বিএনপি নেতৃত্বের বিবেচনায় রাখা উচিত ছিল।কিন্তু জামায়াতের প্ররোচনায় ও প্রবাসী নেতার বিশেষ তাড়নায় আন্দোলনের নামে অবিবেচনাপ্রসূত হঠকারী সিদ্ধান্ত আরেকবার চাপিয়ে দিল বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকারপক্ষ এত দিনে বিএনপির ক্ষমতার উৎস শনাক্ত করে ফেলেছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সরকারি দমননীতির মধ্য দিয়ে জামায়াতকে অনেকটা কবজা করে ফেলে। অন্য শক্তি বিএনপির বিপুল কর্মী, সমর্থক ও নেতা। অরাজকতার রাজনীতি করে বিএনপি বল এরই মধ্যে সরকারের কোর্টে দিয়ে দিয়েছিল। তাই সরকারি শক্তির কবলে পড়ে ছত্রখান হয়ে গেল বিএনপির মাঠপর্যায়ের শক্তি। এর মধ্যে বিএনপি স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা না করেই লাগাতার অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর কর্মসূচি দিয়ে ফেলল। এই ধারার কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য তুমুল অরাজকতা সৃষ্টি করে সরকারের সব শক্তির উৎস অকার্যকর করে দেওয়া। আর এভাবেই সরকারের পতন ঘটানো। এ জন্য চাই বিপুল কর্মী-সমর্থকের মাঠ দখল করে ফেলা। চোরাগোপ্তা হামলা করে মানুষ পুড়িয়ে, সম্পদ ধ্বংস করে এর থেকে লক্ষ্য অর্জিত হয় না; বরং সাধারণ মানুষের সহানুভূতির জায়গা থেকে সরে আসা হয়। তা ছাড়া দীর্ঘ কালক্ষেপণে এ ধরনের হিংসাত্মক আন্দোলন থেকে ফল পাওয়া যায় না। ফল পেতে হলে অল্প কদিনেই দেশ অচল করে দিতে হয়। সরকারযন্ত্রকে অকার্যকর ও অসহায় করে ফেলতে হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মাঠে কর্মী-সমর্থক ও নেতাদের অভাবে বিএনপি একা হয়ে গেল। ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার হয়েও বিএনপি গণবিরোধী কর্মসূচি চালিয়েই যেতে লাগল। এভাবে দিন দিন বিএনপির আন্দোলন পরিণত হয়ে গেল আত্মঘাতী আন্দোলনে।বিএনপি নেতৃত্ব একসময় বাস্তবতার উঠোনে ঠিকই দাঁড়াল; কিন্তু তখন খুব অসহায় অবস্থা। নিজের তৈরি অচলায়তন থেকে বেরোনোর পথ পাচ্ছিল না। এমন প্রেক্ষাপটেই সরকারপক্ষ নিজেদের ইচ্ছাপূরণের পথ পেয়ে দ্বিতীয় লভ্যাংশ আদায়ের জন্য সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দিয়ে দিল। তবু ভালো, খালেদা জিয়া কট্টরপন্থীদের বলয় ভেঙে নির্বাচনে দলকে যুক্ত করলেন।শেষ বেলায় এসে তো এই বাস্তবতা আড়াল করার কারণ নেই যে দল পুনর্গঠন ছাড়া বিএনপির এখন আর এক পা-ও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই জয়-পরাজয়ের কথা না ভেবে নিয়মতান্ত্রিকতায় ফিরে আসার জন্য নির্বাচনে থাকা উচিত ছিল। অতি অসময়ে নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে বিএনপি আরেকবার ভুল করল। হতাশ করল কর্মী-সমর্থকদের। অতি অপব্যবহারে এরই মধ্যে হরতাল অকার্যকর করে দিয়ে বিএনপি জাতির জন্য একটি মহৎ কাজ করে দিয়েছে। যখন খোদ খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে হরতাল ডেকেও মাঠে-ময়দানে বিএনপির কোনো কর্মী, সমর্থক, নেতা খুঁজে পাওয়া গেল না, তখনই সম্ভবত কঠিন বাস্তবতা বিএনপি নেত্রীর সামনে দাঁড়িয়েছিল।সাঁঝবেলায় এসে হলেও এই বাস্তবতায় বিএনপি নেতৃত্ব মাটির উঠোনে নামতে পেরেছে। দল পুনর্গঠনের কর্মসূচি নিয়ে পথে নামতে চাচ্ছেন খালেদা জিয়া। এ দেশের রাজনীতির জন্য এটা বড় সুসংবাদ। অগণতান্ত্রিক অসুস্থ পরিবেশে বিএনপির মতো দলের দুর্বল অবস্থান দেশের জন্য অশনিসংকেত। দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই আমরা বিএনপির সাফল্য কামনা করি। কামনা করি, আর কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত বিএনপিকে বিভ্রান্ত করবে না। এ কে এম শাহনাওয়াজ স্যারের লেখা থেকে, দৈনিক কালেরকণ্ঠ ১২ মে ২০১৫ সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:০৫",False fe,"কবি কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার _ প্রকৃতির উঠোনে কবিতার বরপুত্র কবি কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার : প্রকৃতির উঠোনে কবিতার বরপুত্র ফকির ইলিয়াস --------------------------------------------------------------------------------- অকাল প্রয়াত কোনো কবির জন্য এলিজি লেখা বড় কঠিন কাজ| বড় বেদনার কাজ| চলে যাবার পর একজন কবির রচিত পংক্তিমালা যখন আমাদের সামনে উজ্জ্বল হয়ে তার অস্তিত্ব প্রকাশ করে তখন মনে হয়, আহা, এই কবির মুখোমুখি যদি আবার হতে পারতাম| যদি আরেকটিবার তাকে দেখতে পেতাম| প্রয়াত কবি কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার-এর কবিতা কর্ম হাতে নিয়ে আমার আজ বার বার তেমনটি মনে হচ্ছে| প্রকৃতির উঠোনে কবিতার বরপুত্র ছিলেন কিশওয়ার| আজ মনে হচ্ছে, তিনি তার জীবন, ভবিষ্যত, দর্শন এবং মিলন নিয়ে অনেক কথা আগাম জানতেন| আর জানতেন বলেই তা লিখে নিয়েছিলেন অনেক আগে| আরেক পৃথিবীর নীরব দর্শক হয়ে| “কবে আর বাসযোগ্য ছিলে-অবনী, ছিলে লিখেছে পর্ণো, হিজিবীজি এক কাল-কালান্তর, প্রাণবিহীন অবয়ব দুধে ধোয়া নয়- স্বর্গের ক্লিশে মিথ ভেঙেছে সময়” (বাসযোগ্য নয়/‘হৃদি’/জুন ১৯৯৭/শাহ শামীম সম্পাদিত) কিশওয়ারের কবিতায় প্রেম যে দ্যোতনা ছড়ায়-তার ব্যাপ্তি সবসময়ই অন্তর্মুখী| নিজেকে জানার পাশাপাশি সৃষ্টিকে জানার জন্য কবি ছিলেন উদগ্রীব| তার পঠন-পাঠনের ব্যাপ্তি রীতিমতো ছিল ঈর্ষণীয়| গণমানুষের কবি দিলওয়ারের পুত্র হিসেবে কবিতার ঘনিষ্ঠ আবহে বেড়ে উঠেছিলেন, যদিও, কিন্ত কবিতা নিয়ে পিতা কবির সাথে তার সারগর্ভ বিতর্ক শুনলে আমরা মুগ্ধ না হয়ে পারতাম না| তিনি যে কতো তীক্ষ্ণ সমালোচক ছিলেন তা তার রচনা সমগ্র-১ এর কিছু প্রবন্ধ পাঠ করলে বোঝা যায়| সব কবিই পরম সত্তার আলোয় মিশে আলোকিত হতে পারেন না| আমার সব সময়ই মনে হতো কবিতার রক্ত ও মণিষা নিয়েই জন্মেছেন তিনি| কবি দিলওয়ার, আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় দিলু ভাই-এর সাথে অগ্রজের সম্পর্কসুত্রে কিশওয়ার আমাকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করতেন| আমিও তাকে সেই কৈশোর থেকে জেনেছি পরম শ্রদ্ধায় ভালোবাসায়| দেখা হলেই আমাদের আলাপ শুরু হতো লেখালেখি দিয়ে| তীর্যক ভাষায় সত্যান্বেষী ছিলেন কিশওয়ার| দেখা হলেই শুরু করতেন এভাবে ‘চাচা, আপনার ঐ লেখাটি পড়লাম|’ ভালো লেগেছে, কিংবা ভালো লাগেনি ,তা বলে দিতেন খুব স্পষ্ট ভাষায়| কোনো রাখঢাক নেই| কোন লুকোচুরি নেই| অকপট সমালোচক ছিলেন তিনি| দুই. কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার ছিলেন আপাদমস্তক আধ্যাত্মিক ঘরানার কবি| তার কাব্যগ্রন্ত ‘সংঘর্ষ: আলো-অন্ধকার’ ১৯৮৯ সালে বের হবার পর তুমুল সাড়া জাগিয়েছিলো বাংলা সাহিত্যে| নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়ে কিশওয়ার উজ্জ্বল আলোয় দাঁড় করিয়েছিলেন পরমকে, মানব সত্তাকে| কবিতায় তার উচ্চারণ যে কতোটা তীক্ষ্ণ ছিল-এর প্রমাণ আমরা প্রতিটি পংক্তিতে পাই| “মৃত্যুর অবসান হলে সুর্য হবে আরেক পৃথিবী অপ্রকাশ্য প্রকাশের দু:খ সুখ ক্রোধের নির্মাণ জীবন স্পন্দন ছাড়া অসম্পুর্ণ লক্ষ বিশ্ব প্রেমের পুর্ণতায় জীবনের জয়ের প্রমাণ|” (প্রেমের পুর্ণতায়/সুনৃত, প্রথম সংখ্যা) স্রষ্টার পুরো নির্মাণশৈলীই ছিল কিশওয়ার-এর কবিতার বিচরণ ক্ষেত্র| তার অন্ত:চক্ষু এতোই দৃষ্টিমান ছিল, তিনি যখন কোন কবিতা লিখতেন, মনে হতো কোন নেপথ্য শক্তি যেন তাকে দিয়ে ঐ পংক্তিগগুলো বলাচ্ছে| কবিতা নিয়ে সাহসী সততা দেখাবার প্রচন্ড শক্তিও ছিল এই কবির| আশির দশকে আমরা যারা কবিতাকে ভালোবেসে মিলন-বিরহকে পুষ্পমাল্য করে পথ খুঁজছিলাম, কিশওয়ার ছিলেন তাদের সবার কাছে অহংকারসম| আমরা তাকে নিয়ে গর্ববোধ করতাম এজন্য| কারণ কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার-এর আবির্ভাব আশির দশকের বাংলা কবিতাকে শুধু সমৃদ্ধই করেনি নতুন বাঁক নির্মাণেও সাহায্য করেছে| তার কবিতায় আত্মান্বেষণ একজন তরুণতম কবির জন্য পথ প্রদর্শন হয়েই থেকে যাবে অনন্তকাল| একটি জীবনের পরম আরাধ্য বিষয় হচ্ছে শান্তি| কবি কিশওয়ার সেই শান্তির অমোঘ অন্বেষণে বার বার নিমগ্ন হয়েছেন আত্মদর্শনে| “পৃথিবীর আয়ুও একদিন ফুরিয়ে যাবে সৌন্দর্যের পরলোক, ভয়ংকরের পরলোক জেগে উঠবে দৃশ্য সীমায়| অনেকে হাঁটবে অতুলন পুষ্প কাননে অসংখ্য, দাহিত হবে কৃষ্ণ অনলে, অনিবার্য বিভাজন রেখা দেখা দেবে দিগন্তে প্রান্তরে| শুধু মানুষের সীমাবদ্ধ অন্তরে অনন্ত অসীম শান্তি অপয় হবে|” (অনন্ত অসীম শান্তি/ভুমিজ, প্রথম সংখ্যা ২০০৫) কিশওয়ার মানুষের, পরম মানুষের আগমন এবং প্রস্থান দৃশ্যের মাঝেই বার বার খুঁজেছেন সেইসব ভুমিপুত্র-ভুমি কন্যাদেরকে| কোথায় ছিলাম, কিভাবে এলাম, কোথায় যাবো,এমন কিছু জিজ্ঞাসা শাশ্বত সুর্যের মতো উঁকি দিয়েছে তার ছন্দে, তার অনুপ্রাসে| “তারা কি জানে না প্রতিটি পুরুষ পৃথিবীর ভুমিপুত্র আর প্রতিটি নারী পৃথিবীর ভুমিকন্যা যদি জেনে নিতে পারে ধ্যাণে জ্ঞানে এই বোধ তাহলে সার্থক হবে তমোজয়ী সত্তার প্রতিরোধ|” (ভুমিপুত্র ভুমিকন্যা/সুনৃত, ২য় সংখ্যা ২০০১) কি চমৎকার নির্দেশনা! একজন সফল কবিই পারেন এঁকে যেতে এমন ব্যঞ্জনার চিত্রকল্প| তার হাতেই রূপ, জীবন এবং মৃত্যু-বন্দনা হয়ে উঠে গোটা মানবমনের কণ্ঠস্বর| তিন. কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ারের কাব্যগ্রন্থ “সুষম দৃষ্টিতে”, “সংঘর্ষ, আলো-অন্ধকার”, “ছায়া শরীরীর গান”, ‘পাখির রাজার কাছে’, ‘চিবোয় প্রকৃতি’, “রচনা সমগ্র”, এবং প্রবন্ধগ্রন্ত ‘প্রবন্ধত্রয়ী’| একজন প্রকৃত কবির খুব বেশি লেখার প্রয়োজন হয় না| তার পরও জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, লিটল ম্যাগাজিন গুলোতে নিয়মিত লিখেছেন তিনি| উৎস প্রকাশন থেকে ২০০৫ এর বইমেলায় তার রচনাসমগ্র’ বের হবার পর বোদ্ধা পাঠকসমাজের ঘনিষ্ঠ আলোচনায় এসেছিলেন এই কবি আবারো| তার কাব্যগ্রন্থ ‘চিবোয় প্রকৃতি’ বের করেছিল ছোট কাগজ ‘সুনৃত’| সুনৃত সম্পাদক, আমার অনুজপ্রতিম কবি আহমদ সায়েম গ্রন্থটি আমাকে পাঠিয়েছিলেন এই সুদুর যুক্তরাষ্ট্রে| ঐ গ্রন্থের কবিতাগুলো পড়ে আমি বার বার আলোড়িত হয়েছিলাম| “তাপিত আত্মার ঘ্রাণে পরলোক প্রেমের কবিতা মৃত্যু নেই আজীবনে পৃথিবীতে দু:খের চিতা যে শিশু জন্মের পরে নিষিদ্ধ পল্লীর কারাগারে তার পাপ পুণ্যময় অবিশ্রান্ত সত্যের ইথারে|” (কয়েকটি পংক্তি/চিবোয় প্রকৃতি, ২০০২) এইতো আমাদের কবি কিশওয়ার! এই তো অহিংসার প্রতীক কবিপুত্র! তাকে যতোবার পড়েছি, ততোবারই রহস্য হয়ে সরল শুশ্রুষা যেন লুকোচুরি খেলেছে বুকের অনুরণনে| সৌর পৃথিবীর ছায়া কাছে এসে করতে চেয়েছে ঘন-আলিঙ্গন| ভালোবাসা হয়েছে শ্রেষ্ঠ বোধ বীক্ষণ| কবিতা মাঝে মাঝে ভুক নেয়| সুকান্ত, আবুল হাসান, সাবদার সিদ্দিকী, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কিংবা কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ারের এমন অকাল প্রয়াণ আমাদেরকে সে কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যুগে যুগে| কিশওয়ার কি জানতেন তিনি খুব বেশিদিন বাঁচবেন না? কবি পিতার কাঁধে শব হয়ে তিনি বিদায় নেবেন, তা কি জানতেন কিশওয়ার? আমার মনে হয়, কিশওয়ার তার নিয়তি জানতেন| আর জানতেন বলেই মৃত্যুকে নিয়ে তার অন্বেষা ছিল, নিজ মনের পৃষ্ঠায় লিখিত অক্ষর| “দৃশ্যের অতীত কেন্দ্রে যে অস্তিত্ব লোক আমার বিশ্বাস সেই ভর করেছে স্পর্শ এই সত্য বাস্তবতা নয় কোনো আষাঢ়ে বিষয় পরমেয় পথে গেলে পাবে পরিচয়| (পৃষ্ঠায় লিখিত অক্ষর/চিবোয় প্রকৃতি/২০০২) চার. ১৯৯৪ সালটি আমি পুরোটাই বাংলাদেশে কাটাই| সে বছর আমার জীবনে ছিল শ্রেষ্ঠ আড্ডার বছর| সিলেটের আলোচিত ট্যাবলয়েড পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক অনুপম’ অফিসে ছিল আমাদের নিয়মিত আড্ডা| অনুপমের নির্বাহী সম্পাদক কবি গল্পকার সারওয়ার চৌধুরী (বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমীরাত প্রবাসী) ছিলেন আড্ডার প্রধান সঞ্চালক| সে আড্ডার নিয়মিত সদস্য ছিলেন, কবি শাহ শামীম আহমেদ, মাশুক ইবনে আনিস, শামীম শাহান, মাহবুব লীলেন, জফির সেতু, ফজলুর রহমান বাবুল, নাজমুল হক নাজু, আহমেদুর রশীদ, শাহ তোফায়েল, ফয়জুর রহমান ফয়েজ, অকাল প্রয়াত কবি তুষার সাখাওয়াত, পারভেজ রশীদ মঙ্গল, সৌমিত্র দেব, মোস্তাক আহমাদ দীন, হেলাল আহমেদ, বাইস কাদিরসহ আরো অনেকে| এদের অনেকে এখন প্রবাসী| কেউ কেউ স্বদেশে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত| সে সময়ই আহমেদুর রশীদ (তখন আহমাদ রাশীদ নামে লিখতেন) তার সম্পাদিত 'শুদ্ধস্বর’-এর ক্রোড়পত্র করেন কবি কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ারকে নিয়ে| কিশওয়ার প্রায়ই থাকতেন আড্ডার মধ্যমনি| ‘শুদ্ধস্বরে’ আশির দশকের এই শক্তিমান অথচ নিভৃতচারী কবিকে নিয়ে ঋদ্ধ আলোচনা-লেখাগুলো ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল সে সময়ে| কথাটি আবারো বলি, কিশওয়ারের কবিতা নিয়ে আরো ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে| যে কবি ‘পাখির রাজার কাছে’ নামে নিজ কবিতার বইয়ের নামকরণ করতে পারেন, তিনি যে কতো বড় মহান প্রকৃতি প্রেমিক ছিলেন তা সহজেই অনুমেয়| আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী দিনের কোনো কবি, কিশওয়ারের কবিতার মর্ম উদ্ধারে আরো ব্রতী হবেন| আরো গভীর উন্মীলনে খুঁজবেন পংক্তির হৃদ্যতা| বুকটি কেঁপে উঠে, সেই সারল্যের হাসিমুখ কিশওয়ারকে আর কোনোদিন দেখতে পাবো না! হেসে হেসে আর বলবেন না,'' চাচা, আসুন কাকলী রেস্টুরেন্টের কাবাব-পরোটা খাবো|'' পাঁচ. ৮ ডিসেম্বর ২০০৭ ছিল কিশওয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। দিন চলে যায়। আমাদের বয়স বাড়ে । কমে আয়ু। কবিতার আয়ু কমে না। লিখিত হয় বারবার । খুব বেশী মনে হয় , আহা ! জীবনটা যদি কবিতা হতো। ------------------------------------------------------------------------------- ( লেখাটি তাঁর মৃত্যুর পর লিখিত। দৈনিক দেশবাংলা-তে প্রকাশিত। পরিমার্জন ও সংযোজন- ডিসেম্বর ২০০৭ ) সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ ভোর ৫:০৯",False rn,"আসুন পাকিস্তান দেশটি সম্পর্কে জানি পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ সব আর্থ-সামাজিক সূচকে এগিয়ে আছে । বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা শহর পাকিস্তানের করাচি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িতক চেতনার দেশ। ভারতও তাই। কিন্তু পাকিস্তান সেই দ্বিজাতি তত্ত্বকে আজো স্মরণ করে যাচ্ছে মহাধুমধামের মধ্য দিয়ে। এই দ্বিজাতি তত্ত্বের সৃষ্টি পাকিস্তানের কাছে থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা আশা করা সম্ভব কি? ধর্মের নামে দেশটিতে রক্তপাত চলছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জায় আত্মঘাতী হামলা হচ্ছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে দিন দুপুরে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে ভিন্ন ধর্মের মানুষদের। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। আমেরিকার দার্শনিক মারডেলের বলেছিলেন, ‘যতদিন ইসরাইল ও পাকিস্তানের মতো দুটি রাষ্ট্র টিকে থাকবে, ততদিন পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কোনো আশা নেই।’ পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অসংখ্য এবং বড় বড় অমীমাংসিত সমস্যা এখনও বিরাজমান। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য পাকিস্তানের কোনো সরকারই কখনও আগ্রহ বা সদিচ্ছা দেখায়নি। বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অস্তিত্বকে ধ্বংস করার জন্য দেশটির জন্ম থেকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকিয়েছে এবং এখনও পাকাচ্ছে। পাকিস্তান ভারতীয় উপমহাদেশের অংশ। ইসলামাবাদ পাকিস্তানের রাজধানী। করাচি দেশটির বৃহত্তম শহর। আত্মঘাতী গৃহযুদ্ধে দেশটি জর্জরিত। বিশ্বের ৩৭তম নিম্ন জিডিপির দেশ পাকিস্তান। নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের শীর্ষ ধনীদের একজন। রীতিমতো ধনকুবের প্রধানমন্ত্রী তিনি। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৪৭, ১৯৬৫ ও ১৯৯৯ সালে তিন তিনবার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এবং বাংলাদেশ নিয়ে ১৯৭১ সালে। পাকিস্তানে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন সেই পঞ্চাশের দশকে একজন বাঙালী, মৌলভী তমিজুদ্দিন খান। করাচির একটি প্রধান সড়ক এখনো তার নামে নামাঙ্কিত আছে। পাকিস্তানের গণতন্ত্র হত্যায় সে দেশের বিচারপতিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। প্রথম সমস্যা তালেবানি ও জাতিগত সন্ত্রাস । এমন কোন দিন নেই যেদিন কোথাও না কোথাও বোমা বিষ্ফোরণে নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে । পাকিস্তানের সাধারন জনগন দীর্ঘ ৬৬ বছরের দূঃশাসন আর অপশাসনে অতিষ্ঠ ।দেশে জ্বালানি ও অর্থনৈতক সংকট প্রকট । করাচি লাহোরের মতো শহরে দিনে বার হতে ষোল ঘন্টা পর্যন্ত লোড শেডিং হয় । জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৪% এর নীচে আর মূদ্রাষ্ফিতী ১১% এর উপর । কোন কোন মাসে তা ২৫% পর্যন্ত হয়েছে । আইন শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে অনেক আগে । স্বাস্থ ও শিক্ষা খাত কোন রকমে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে । দূর্নীতি পাকিস্তানে একটি শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে । তবে সব চেয়ে বড় চ্যলেঞ্জ হচ্ছে সেনা বাহিনীর সাথে সমঝোতা রেখে চলা । গত পাঁচ বছর সেনা বাহিনী বেশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে । আগামীতে সেনা বাহিনীর সাথে সরকারের সম্পর্ক কতটুকু ইতিবাচক হয় তাও দেখার বিষয় । মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে পাকিস্তানি জেনারেলদের অনেকেই লিখেছেন। যারা পড়েছেন তারা জানেন এসব বইয়ের প্রায় সবটাই মিথ্যাচারে ভরপুর। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের কাছে পাওনা অর্থ, সম্পদ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ভাগ পাওয়ার কথা ছিল। পাকিস্তান তা দেয়নি। বাংলাদেশে আটকে পড়া কয়েক লাখ অবাঙালি পাকিস্তানি নাগরিককে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেয়ার কথা ছিল। পাকিস্তান নানা গড়িমসির পরও তাদের সবাইকে ফেরত নেয়নি। বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদারদের এতো ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটনের পরও বঙ্গবন্ধুর সরকার স্বাধীনতা লাভের আড়াই বছরের মধ্যে পাকিস্তানের দিকে মৈত্রীর হাত বাড়ান এবং দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তিনি সব তিক্ততা ভুলে লাহোরে ছুটে গিয়েছিলেন এবং পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিলেন। ভুট্টোকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছিলেন, খরাব and let live- তোমরা বাঁচো এবং আমাদেরও বাঁচতে দাও।বাংলাদেশের এই উদারতা ও মহত্ত্বের প্রতিদান ভুট্টো এবং পাকিস্তান কীভাবে দিয়েছেন? ঢাকায় এসেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী মহলটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা চক্রের গোপন ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন। পাকিস্তান ’৭১ সালে বাংলাদেশে বর্বর গণহত্যা চালানোর জন্য আজ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ঘৃণা করে। একবার এক আফগান করাচী বিমানবন্দরে নেমে নিজে নিজেই তার জন্যে ভিআইপি ট্রিটমেন্ট দাবী করে বসলো। তার দাবী সে আফগানিস্তানের নৌমন্ত্রী। একথা শুনে ইমিগ্রেশনের অফিসারেরা তাকে পাগল ভেবে বসলো। তারা বললো যে যে দেশে নদী বা সমুদ্র নেই, সেই দেশে নৌমন্ত্রী আসে কোত্থেকে! তারা আফগানকে পাগল আখ্যায়িত করে তাড়িয়ে দিতে উদ্দত হলে আফগান মুচকি হেসে বলে আফগানিস্তানে নদী-সমুদ্র না থাকার কারনে যদি নৌমন্ত্রী না থাকতে পারে তবে রে ভোদাই তোদের পাকিস্তানে আইন ও বিচার মন্ত্রী এলো কোত্থেকে? পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় হলো পাকিস্তানের সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় । মুঘলদের পতনের পর ১৭৬৭ সালে লাহোর একটি শিখ রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়। পাকিস্তানে বসবাসরত বাঙালিদের একটি পল্লী আছে। পাকিস্তানে বাঙালিরা মারাত্বক ভাবে বৈষম্যের শিকার । পুলিশের অত্যাচারও তুঙ্গে, দোষ একটাই- তাঁরা বাঙালি । ( এই বাঙ্গালী হচ্ছে- ৭১ এ পালিয়ে যাওয়া রাজাকার ও তাদের পরিবার)যদি তারা ঐতিহাসিক ভুল থেকে শিক্ষা নেয় তাহলে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক পাকিস্তান। সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৪৪",False fe,"নির্বাচন হোক, গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ হোক নির্বাচন হোক, গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ হোকফকির ইলিয়াস=============================================না, শেষ কথা বলে কিছু নেই। এটা দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। হয়তো ঠিক বললাম না। ভারতে কি এমন ধারার রাজনীতি আমরা দেখি? না- সচরাচর এমন দেখা যায় না। লালু প্রসাদ যাদবের কথা মনে আছে? তিনি এখন কোথায়?ভারতে ঘটা করেই হল প্রায় ৩৮ কোটি টাকার পশুখাদ্য কেলেংকারির রায়। প্রতারণা, দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ছিল লালুর নামে। তাকে সেই তিন ক্ষেত্রেই দোষী সাব্যস্ত করলেন সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক। এ রায় তার জন্য জোর ধাক্কা। ভারতে রাজনীতি থেকে দুর্বৃত্তায়ন রুখতে সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশ জারি করে, দু’বছরের জন্য যদি কোনো সংসদ সদস্য বা বিধায়ক নিু আদালতেও দোষী সাব্যস্ত হন, সেক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে তার সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে।জেল থেকে দাঁড়ানো যাবে না ভোটেও।নিরাপত্তার কারণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাজা ঘোষণা করেন আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি লালু প্রসাদ যাদবকে ২৫ লাখ রুপি জরিমানাও করা হয়েছে। বিহারের সাবেক কংগ্রেসদলীয় মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রকে চার বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাকি আসামিদেরও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। সুপ্রিমকোর্টের রায়ের ফলে লালু ও জগদীশ শর্মা লোকসভার সদস্যপদ হারাবেন। উচ্চ আদালতে আপিল করবেন লালু। লালুর সঙ্গে এদিন অন্য ৪৪ জন অভিযুক্তও দোষী সাব্যস্ত হন। তার মধ্যে রয়েছেন বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্র, জেডিইউয়ের সংসদ সদস্য জগদীশ শর্মাসহ আরও বেশকিছু নেতা ও আমলা।বস্তুত দাগিদের বাঁচাতে যখন কেন্দ্রীয় সরকার অর্ডিন্যান্স আনে, তখন নিন্দুকরা বলতে শুরু করে পশুখাদ্য কেলেংকারি মামলার রায় লালুর বিরুদ্ধে গেলেও যাতে তার সদস্যপদ খারিজ না হয়, সেজন্যই কংগ্রেস সরকার চেষ্টা করছিল। পরে রাহুলের ‘বিদ্রোহে’ ভেস্তে যায় সব কিছুই। তাই শেষরক্ষা করা গেল না বিহারের বন্ধুকে।বাংলাদেশে বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছেন আদালাত। তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের কারাদণ্ড হয়েছে। মামলার আপিল হবে। এদিকে তারেক রহমানের এ খালাসের খবরে বিএনপি ঘরানায় আনন্দের বন্যা। স্বভাবতই সরকার এ রায়ের মাধ্যমে নিজেদের আরও স্বচ্ছতা দাবি করেছে। বলেছে, আমরা আইনি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। যদিও এটা না মেনে বিএনপি বলছে, তারেকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ সরকার প্রমাণই করতে পারেনি।তারেকের মামলার বিষয়টি এখন কমই গুরুত্ব পেয়েছে দেশের মানুষের কাছে। এর কারণ সামনেই নির্বাচন। কী হবে, কী হতে পারে, সেটাই মানুষের ভাবনার বিষয়। সরকার সেই ভাবনাকে জিইয়ে রেখেই নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দেশে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জেপির নেতারা শপথ নিয়েছেন। অনেকের চোখ ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দিকে। তার দলের মনোনীত মন্ত্রীরা শপথ নিয়েছেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। হতে পারে তা বাংলাদেশের ললাট লিখন। পাশ্চাত্যের উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো এ কথা মানে না। ডিবেট হয়। আলোচনা হয়। শাটডাউন হয়। কিন্তু তারপরও দেশের নাগরিকের অধিকার ও চাওয়া সমুন্নত থাকে। বাংলাদেশে তা হয়নি। কেন হয়নি- তা ভাবা দরকার সবারই।আমরা দেখছি, দীর্ঘদিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। তাই বলে কি ছাত্ররাজনীতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে? না হয়নি। বড় দলগুলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন না করে প্রকারান্তরে নিজেদের দলের সভাপতি-সম্পাদককেই ডাকসু-রাকসু-চাকসু ইত্যাদির ছায়া ( শ্যাডো ) ভিপি-জিএস বানিয়েছে। এরাই এখন দেশের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব। মেধাবীরা রাজনীতিতে আসেনি। এসেছে বড় দলগুলোর মদতপুষ্টরা। ছাত্র রাজনীতি কোনো দলই বাদ দেয়নি। দিতে পারেনি। বরং বিভিন্ন সরকারের সময় ছাত্র নামধারী কিছু সন্ত্রাসী-মাস্তান-টেন্ডারবাজরা লুটপাট করেছে। এ চেতনায় কি এদেশের মানুষ বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল? না- আনেনি। বীরের রক্তস্রোত এদেশে এখন যেন কপাটবন্দি ইতিহাস !বাংলাদেশকে ভোগ করছে একটি চক্র। এরা কারা? কী তাদের উদ্দেশ্য? এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজা প্রজন্মের জন্য দরকারি বিষয়। বাংলাদেশের রাজনীতি বিদেশ থেকে যেসব দাতা গোষ্ঠী ও মিত্ররা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের আসল পরিচয় আমরা জানি কি?একটা ছোট্ট ঘটনা বলি। তখন ইরাকে মার্কিন সেনাসন্ত্রাস চলছে। আমার প্রতিবেশী এক মহিলা আমাকে জানালেন, জ্বালানি তেলের দাম নিউইয়র্কে আজ সকালেই বেশ বেড়ে গেছে। আমি বললাম, সংবাদটা তো খারাপ বটেই । মহিলা ভ্রু কুঁচকে আরও বললেন, প্রভুর কাছে আশীর্বাদ কামনা কর। আমরা যেন ইরাকে জিতে আসতে পারি। না হয় তেলের দাম আরও বাড়বে। আমি বললাম, রক্তের বিনিময়ে আমরা তেল চাইব! এ হল মার্কিনি নীতি। এটা বাংলাদেশের রাজনীতিকরাও জানেন ভালো করেই। আর জানেন বলেই তারা তাদের সন্তানদের বিদেশে লেখাপড়া করাতে পাঠান। আর বাংলাদেশের প্রজন্ম পুড়ে হরতালের আগুনে।বাঙালির প্রথম স্বপ্ন ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সব ধর্মের মানুষের নিরাপদ আবাসস্থল। দেশ আমরা পেয়েছি। কিন্তু শান্তি পাইনি। শেষ কথা কিছু থাকবে না কেন? অহিংস রাজনীতি, মহান স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ এ জাতি ধারণ করতে পারছে না কেন পুরোপুরিভাবে? কেন এখনও রাজাকারের প্রেতাত্মা ভর করছে কিছু মানুষের মননে? দেশে নির্বাচন হোক। সেই নির্বাচনে গণমানুষের প্রত্যাশাপূর্ণ জয় হোক। আমরা গণতান্ত্রিক জাগরণ চাই। মনে রাখতে হবে, আজ ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ যা করছে, এর দ্বিগুণ হঠকারিতা করবে বিএনপি, তারা যখন ক্ষমতায় যাবে। তারাও বলবে, আমরা সংবিধান অনুযায়ী সবকিছু করছি। এ নিষ্ঠুরতায় পিষ্ট হতে হতেই দাঁড়াবে মানুষ। তবে এর জন্য আর কত সময় লাগবে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না।---------------------------------------------------দৈনিক যুগান্তর // ঢাকা // ২৩ নভেম্বর ২০১৩ শনিবার",False mk,"বিএনপিতে গৃহদাহ বিএনপিতে গৃহদাহ শুরু হয়েছে। এই দাহ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে। তৃণমূলের নেতারা কেন্দ্রের নেতাদেরকে আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী করছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা দোষ চাপাচ্ছেন তৃণমূল নেতাদের ওপর। এই অবস্থায় এই দাহ নেভানোর চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। বিএনপির সূত্র জানায়, বিএনপি গত চার বছর আন্দোলন করেছে। এরমধ্যে গত তিন ােসে আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে। এত আন্দোলনের পরও নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করে নির্বাচন করতে পারেনি। সরকার তাদের পরিকল্পনা মতো নির্বাচন করে সরকারও গঠন করেছে। বিএনপির এই ব্যর্থতার দায় কেউ নিতে চাইছেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা ব্যর্থতার দায় নিতে চান না। তারা দায় চাপাচ্ছেন বিএনপির মহানগর কমিটির ওপর। মহানগর কমিটির নেতাদের কারণেই ঢাকায় বিএনপির কোনো সাফল্য নেই বলে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে অভিযোগ করেছেন। তারা মনে করছেন ঢাকার বাইরে তৃণমূল নেতারা যতখানি আন্দোলন সফল করেছেন এই জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারাই নির্দেশনা দিয়েছেন। এই কারণেই সেখানে সাফল্য এসেছে।এই ব্যাপারে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা বলেছেন, তৃণমূল নেতারা সিনিয়র নেতাদের এই ধরনের কথা মেনে নিতে নারাজ। তারা খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন বিএনপি আন্দোলনের যতখানি সাফল্য এসেছে তা তৃণমূলের সাফল্য। এর কৃতিত্ব বিএনপি চেয়ারপারসনের আর তৃণমূল নেতাদের। চেয়ারপারসন কর্মসূচি দিয়েছেন। আন্দোলন সফল করতে বলেছেন, সেই অনুযায়ী আন্দোলন সফল হয়েছে। এই আন্দোলন ঢাকায় ব্যর্থ হয়েছে। তারা মনে করেন বিএনপি ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল ও সফল করেছে এটা ঢাকায় অর্ধেক হলেও এখানে সাফল্য আসত। কিন্তু ঢাকার নেতারা পুরোপুরি ব্যর্থ। তৃণমূল নেতাদের আরো অভিযোগ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই থেকে তিন জন নেতারা ছাড়া সবাই সরকারি দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক রেখে ব্যবসা বাণিজ্য করছেন। সরকারের স্বার্থ সিদ্ধি করেছেন। তারা নিজেদের সুবিধা দেখেছেন বলেই আন্দোলনের মাঠে ছিলেন না। গ্রেপ্তার হবেন এই অজুহাতে তারা পলাতক ছিলেন। আন্দোলনেও ছিলেন না। তারা পলাতক ছিলেন এটাই স্পষ্ট যে তারা ব্যর্থ। অকারণে পলাতক নেতাদেরও তালিকা করে তারেক রহমানের কাছে মাঠে হয়েছে। তারেক রহমান তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকেই আলাদা আলাদা রিপোর্ট নিয়েছেন। এদিকে তৃণমূল নেতাদের আরো অভিযোগ বিএনরি কোনো স্থায়ী কমিটির নেতা মাঠের নেতাদের কোনো পরামর্শ দেননি। নির্দেশনাও দেননি। সবারই মোবাইল এক পর্যায়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। এব্যাপারে ঢাকার পাশের একটি জেলার সভাপতি বলেন, আমাদের জেলায় যে আন্দোলন করেছি এই জন্য আমরা নিজেদের বুদ্ধিতেই সফল হয়েছি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন পলাতক ছিলেন তখনও স্থায়ী কমিটির নেতারা কোনো দিক নির্দেশনা দেননি। এদিকে মির্জা ফখরুরল ইসলাম আলমগীরও দেননি। মির্জা আলমগীরের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি আন্দোলনের তরি এগিয়ে নিয়ে গেলেও শেষ তিন মাসে তিনি তা ডুবিয়ে দিয়েছেন। তীরে এসে তরি ডোবানোর কাজটি মির্জা ফখরুল করেছেন। তার বিরুদ্ধে অনেক তৃণমূল নেতার অভিযোগ বিএনপি যখন তুমুল আন্দেলন করছে তখন ফখরুল ইসলাম সব মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তার পছন্দের কয়েকজন নেতার সঙ্গে নামকা ওয়াস্তে যোগাযোগ করেছেন। গ্রেপ্তার হবেন এই আশঙ্কায় পলাতক থেকেছেন। এদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও মির্জা ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে শমসের মবিন চৌধুরীর কাছে অভিযোগ করে জানতে চেয়েছেন, তিনি কি করছেন। শমসের মবিন বলেছেন তিনি কাজ করছেন। তারেক রহমান জবাবে বলেছেন তিনি যদি কাজই করবেন তাহলে কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করছেন না। তিনি কারো সঙ্গে যোগাযোগ না করে কি কাজ করছেন। তখন শমসের মবিন চৌধুরী আর এটা নিয়ে কথা বলতে পারেননি। এই অবস্থায় মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করার অভিযোগ উঠেছিল অক্টোবর ােস থেকেই। তারেক রহমানের অভিযোগের মধ্য দিয়ে এর সততা প্রকাশ পায়। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এখন আর তারেক রহমান বিশ্বাস করছেন না। তারেক রহমান এর আগে খন্দকার দেলওয়ার মারা যাওয়ার পর মির্জা ফখরুলকে মহাসচিব বানাতে চাননি। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ক্লিন ইমেজের তাকে পছন্দ করেন এবং দলের দায়িত্ব দেন। ওই সময়ে তারেক রহমান চাননি বলেই পরীক্ষামূলকভাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি এখনও ভারপ্রাপ্তই রয়েছেন। বিএনপির আগামী কাউন্সিলে তিনি পুরোপুরি ভারমুক্ত হবেন এমনটি গত বছর শোনা গেলেও এখন সেই সম্ভাবনা ক্রমশ কমে এসেছে। তারেক রহমান তাকে দলের মহাসচিবের দায়িত্ব দিতে আগ্রহী নন। তাকে নিয়ে নতুন করে ভাবছেন।এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিএনপির সব নেতারাই তাদের ব্যর্থতার ভার সরকারের ওপর চাপাতে চেয়েছেন। এই জন্য তারা বলেছেন, সরকার পুলিশ দিয়ে এমন ব্যবস্থা করেছে যে আমাদের পক্ষে আন্দোলনে নামার সুযোগ ছিল না। মাঠে নামলেই আমাদেরকে আটক করা হতো। কিন্তু আটক হয়ে লাভ নেই। তারা আরো বলেছেন, আটক না হওয়ায় তারা বাইরে ছিলেন বলে আন্দোলন এতখানি এগিয়ে নিয়ে আসতে পেরেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন তাদের ওই সব কথাবার্তায় ক্ষুব্ধ হয়েছে। হোনগর কমিটির নেতাদের ব্যর্থতার কথাও তিনি বলতে ছাড়েননি। এমনকি স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও তিনি স্থায়ী কমিটির নেতাদের ব্যর্থতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ওই নেতারা অবশ্য দোষ নিতে নারাজ বলেছেন, আমাদের ব্যর্থতা নয় ঢাকায় আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে মহানগর কমিটির নেতাদের কারণে। কিন্তু মহানগর কমিটি তা মেনে নিতো না। তারাও বিএনপি চেয়ারপারসনকে জানিয়েছেন তারা লাখ লাখ কর্মী নিয়ে উপস্থিত ছিলেন মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি পালন করার জন্য কিন্তু কেন্দ্রের একজন নেতা, দলের কোনো ভাইস চেয়ারম্যান, দলের কোনো সিনিয়র নেতা, দলের কোনো স্থায়ী মিটির সদস্য ওই সব নেতাকে কোনো নির্দেশনা দেননি। এমনকি তারা নিজেরাও মাঠে নামেননি। তারা মহানগর কমিটির ওপর দোষ দিয়ে লাভ করতে পারবেন না। কারণ তারা যদি সফলই হতেন তাহলে তারা অন্তত ২৯ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসে যেতেন। সেটা একটি নেতাও করেননি। মহানগর কমিটির ওপর দোষ চাপিয়ে তারা রেহাই পেয়ে যাবেন এটা মনে করার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপিকে এখন এক স্তরের নেতারা আরেক স্তরের নেতাদের ওপর দোষারোপ করার কারণে বিএনপির অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। ওই সব নেতাদের অনেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন ও তারেক রহমানেরও ভুল ধরছেন। তারা কেন নির্দেশনা দিতে পারেননি ব্যর্থ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি। বিকল্প নেতাদের দায়িত্ব দেননি এটা নিয়েও ভেতরে ভেতরে সমালোচনা করছেন। সব মিলিয়ে এনিয়ে বিএনপির ভেতরে গৃহদাহ আরো বাড়ছে। এই অবস্থায় বিএনপিতে এই দাহ নেভানোর জন্য তারেক রহমান ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মার্চ এপ্রিলের মধ্যেই কাউন্সিল করে দলে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হওয়া নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন নেতাদের সামনে নিয়ে আসতে চাইছে। এই জন্য তারেক রহমানের টেবিলে অনেক নেতার ভাগ্যই ঘুরপাক খাচ্ছে।এদিকে সরকারের জিরো টলারেন্সের কারণে এখন বেকায়দায় বিএনপি। কোনো পরিকল্পনাই সফল করতে পারছে না। একের পর এক পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় আপাতত নতুন কোনো পরিকল্পনা করতে পারছে না। কোনো কর্মসূচি দিলেই সরকার তা ব্যর্থ করে দিবে। নির্বাচন থেকে দূরে থেকে বিএনপি মনে করেছিল তারা আবার নির্বাচন দাবি করে আগাম নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে সফল হবে। এরই অংশ হিসাবে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ঠিক করেন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, জনসভা, পতাকা মিছিল, জেলায় জেলায় সফর করে সমাবেশ করে জনসচেতনতা গড়ে তুলবেন। এই পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো শুরু করেছিল। এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি সমাবেশ সোহরওয়ার্দী উদ্যোনে করতেও সক্ষম হয়েছেন। সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য উস্কানিমূলক এটা মনে করে আর কোনো কর্মসূচি না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই অনুযায়ী এখন বিএনপি ঢাকায় কোনো সমাবেশ করতে পারছে না। সরকার কোনো কর্মসূচির জন্য অনুমতি দিবে না। সেই সঙ্গে কোনো নেতা যাতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে তা পালনের জন্য কাজ করতে না পারেন সেই জন্য সব ব্যবস্থা করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বিএনপিকে ঠোকানোর জন্য সর্বদা সতর্ক রয়েছে। তারাও সরকারের আদেশ পালন করছে। এই জন্য কোনো কর্মসূচির অনুমতি দিচ্ছে না ডিএমপি কমিশনার। এই অবস্থায় বিএনপির নির্বাচন পরবর্তী শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও কর্মসূচি করে ব্যাপক জন সচেতনতা ও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনাও তা আপাতত ব্যর্থ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় বিএনপি এখন নতুন করে পরিকল্পনা করছে। এই পরিকল্পনা করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। একজন লন্ডনে বসেই পরিকল্পনা করছেন আর একজন ঢাকায়। আগামী দিনের আন্দোলন ও কর্মসূচি কেমন করে পালন করা হবে এই জন্য তারা কৌশল ঠিক করতে ঘন ঘন যোগাযোগ করছেন। একটার বিকল্প আরো একটা কর্মসূচি ঠিক করছেন। কিন্তু কোনোটাই যুতসই হচ্ছে না। এই অবস্থা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি তাদের আন্দোলন কর্মসূচি কী হবে তা নিয়ে। এই অবস্থায় মনে করছেন তাড়াহুড়া করে কোনো আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে একের পর এক ব্যর্থতার ইতিহাস লেখা হচ্ছে। এটা পার্টির জন্য ঠিক হচ্ছে না। এতে করে বিএনপির দূর্বলতাই প্রকাশ পাচ্ছে। এই মুহূর্তে বিএনপি আন্দোলন ও কর্মসূচিতে সফল হতে পারছে না এমন ইমেজ লাগানো যাবে না। এই অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে চিন্তিত। তারেক রহমানও বিভিন্ন পরিকল্পনা করছেন। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, আগামী দিনের জন্য বিএনপি অনেক পরিকল্পনাই আলোচনা করছে। কোনোটি এখনও সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা নয়। সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা করতে না পারলে ব্যর্থতাই লেখা হবে। এই জন্য বিএনপি ব্যর্থতার কোনো ইতিহাস লেখাতে চাইছে না। তিনি বলেন, এখন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান যুতসই আন্দোলন পরিকল্পনা করছেন। সেটা করতে গিয়ে তিনি মনে করছেন যে, যেটাই করা হোক না সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা করতে হবে। এই সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা করার জন্য তিনি এখন ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।এদিকে কী ধরনের আন্দোলনের কর্মসূচি বিএনপি ঠিক করছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একজন উপদেষ্টা বলেন, আমরা অপেক্ষায় আছি নতুন কর্মসূচির জন্য। তবে সহসাই তা হচ্ছে না। কারণ সরকার কোনো আন্দোলন করতে দিচ্ছে না। সরকার চেষ্টা করছে যে কোনোভাবেই হোক বিএনপিকে ঠেকাতে হবে। সরকার আমাদেরকে ঠেকাবে। এই জন্য প্রয়োজনীয় হলে দশ লাখ মারার দরকার হলেও সরকার তা মেরে ফেলবে। তবু বিএনপিকে আন্দোলন করতে দিবে না। এটা করতে না দেওয়ার জন্য সরকার সব চেষ্টা করছে। সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিলেও আমরা বসেও থাকবো না। আমরা সেইভাবেই এগোচ্ছি। সরকার যেটা করবে সেটা ঠেকাতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে কাজ করতে হবে। এই জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকায় বিএনপিতে সংস্কার করতে হবে। আগামী দিনে বিএনপিকে আন্দোলনের সফল হতে হলে ঢাকায় আন্দোলন করতে হবে। এখন ঢাকায় যে নেতৃত্ব রয়েছে এই নেতৃত্ব দিয়ে ঢাকায় আন্দোলন হবে না। তারা আগামী দিনে ঢাকায় কোনো আন্দোলন সফল করতে পারবে না। এই জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন এখন কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। সেই সঙ্গে তারা এটাও করতে চাইছেন না যে তারা কর্মসূচি ডাকবেন আর ডিমপি তা ব্যর্থ করে দিবে। সূত্র জানায়, তারেক রহমান ঢাকা শুদ্ধি করবেন। এই জন্য আগামী দিনে কাদেরকে ঢাকার দায়িত্ব দিবেন সেই জন্য নেতৃত্ব সম্পন্ন নেতা খুঁজছেন। ঢাকায় নেতাদের মধ্যে এনিয়ে এখন আতঙ্কও বিরাজ করছে। কারণ বেশ কয়েকেজন নেতা দায়িত্বশীল পদ থেকে ছিটকে পড়বেন। তারা গত চার বছরে ঢাকায় বিএনপির আন্দোলনের ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ওই সব নেতাদের ব্যক্তিগত বিদ্বেষ, স্বার্থ, হানাহানি, এক নেতা আরেক নেতাকে দেখতে না পারা, ওই নেতার ডাকে সাড়া না দেওয়া সব মিলিয়ে বিএনপির ঢাকায় আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির আন্দোলন আগামী দিনে সফল করতে হলে ঢাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে তা সফল করতে হবে। সেই হিসাবে আগামী দিনের জন্য নেতা খুঁজে বের করে এরপর দায়িত্ব দিবেন। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ঢাকাকে চারভাগে ভাগ করে চারটি কমিটি করে চারজন নেতাকে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব পশ্চিম এই চারভাবে ভাগ করে সভাপতি করবেন। মহাসচিবও করবেন। তবে চার ঢাকার মধ্যে সমন্বয় করার জন্য কোনো নেতাকে আহ্বায়ক করবেন না। আহ্বায়ক করা হলে ঢাকায় নতুন করে সমস্যা হবে। আন্দোলনও ব্যর্থ হবে। এদিকে ঢাকা চার ভাগে ভাগ হওয়ার পরিকল্পনা জানাজানি হওয়ায় ইতোমধ্যে ঢাকার নেতারা চিন্তিত। সূত্র জানায়, দলেল শুদ্ধি অভিযান, কাউন্সিল, উপজেলা নির্বাচন এই তিনটা সম্পন্ন করেই বেগম খালেদা জিয়াকে আন্দোলনে নতুন করে নামার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বিএপির সিনিয়র ভাইস চেয়্যারম্যান তারেক রহমান।",False ij,"ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শোষন ও স্বৈরাচার_ একটি ঐতিহাসিক দলিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বলতে আমরা কেবল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীই বুঝি। আসলে ঘটনা সেরকম নয়। ষোড়শ-সপ্তদশ শতকের ইউরোপের কয়েকটি দেশে বানিজ্যের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী গঠন করা হয়েছিল। যেমন, দিনেমার (ডেনিস) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী; ওলন্দাজ (ডাচ) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। তবে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীটি ভারতবর্ষের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত বলে আমাদের কাছে বেশি পরিচিত।ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীটি ব্যবসার নামে শোষন করেছিল। সেই শোষনের বিরুদ্ধে খোদ ইংল্যান্ডে প্রতিবাদ কম হয়নি। তেমনই এক প্রতিবাদ নিয়ে আজকের এই লেখা। আমরা অনেকেই জানি, কেপ অভ গুড হোপ জায়গাটি দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণ পশ্চিম কোণে, আটলান্টিক সমুদ্রের পাড়ে । ১৪৮৮ খ্রিস্টাব্দ। পর্তুগীজ নাবিক বারটোলোমেও দিয়াস। তিনি পর্তুগাল থেকে যাত্রা শুরু করে কেপ অভ গুড হোপ-এ উপনীত হলেন। এ খবরে ইউরোপে দারুন হইচই পড়ে গেল। তখন শোনা যাচ্ছিল- কেপ অভ গুড হোপেরও পুবে আরও একটি সমুদ্র রয়েছে। ভারত সমুদ্র। সে সমুদ্র পেরিয়ে নাকি যাওয়া যায় অগাধ সম্পদের দেশে। ইন্ডিজ-এ। আমরা কলম্বাসের নাম জানি: জাতে স্পেনীয়, দুর্ধষ নাবিক, নৌবিদ্যায় পটু। স্পেন কর্তৃপক্ষ তাকে পাঠাল ধনরত্মময় ইন্ডিজের উদ্দেশে। ১৪৯২ সাল। ইন্ডিজ যাবার পথে পথ ভুল করে পৌঁছে গেলেন ক্যারিবিয় দ্বীপে । সে সমস্ত আরেক কাহিনী। সেই পঞ্চদশ শতকটায় স্পেনের সঙ্গে রেষারেষি ছিল পর্তুগালের। পর্তুগাল কর্তৃপক্ষ ভাবছিল আমাদের আগেই ইন্ডিজে পৌঁছে কলম্বাস সেখানকার সম্পদ স্পেনের হাতে তুলে দেবে। পর্তুগালের রাজা তখন দ্বিতীয় জন। তিনি ইন্ডিজ অভিযানের কথা ভাবলেন। পর্তুগালের নৌ অভিযানের সময় ইংল্যান্ডের রাজা ছিলেন সপ্তম হেনরি। তার সময়েই প্রথম শোনা গেল ইন্ডিজের কথা। তখনও তিনি জানতেন না যে ইংল্যান্ডের ভাগ্য অদূর ভবিষ্যতে ইন্ডিজের ওপর কতখানি নির্ভর করবে। যা হোক। রাজা দ্বিতীয় জন আকস্মিকভাবে মারা গেলেন। তার স্থলাভিষিক্ত হলেন রাজা মানুয়েল। তিনিও ইন্ডিজ অভিযানের কথা ভাবলেন। কিন্তু কাকে দায়িত্ব দেওয়া যায়? রাজার কপালে ভাঁজ পড়ল। পর্তুগালের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের নাম সাইনেস। ওখানে ভাস্কো দা গামা এক প্রতিভাধর নাবিক জন্মেছিলেন- ১৪৬৯ খ্রিষ্টাব্দে। তরুন বয়েসে নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল গামা। রাজা মানুয়েল ভাস্কো দা গামার গুণের কথা শুনেছিলেন। তিনি গামাকে ইন্ডিজ অভিযানের দায়িত্ব দিলেন। ২০ মে। ১৪৯৮। পর্তুগাল থেকে যাত্রা শুরু করে গামার জাহাজ ভারতের কালিকট বন্দরে পৌঁছল। এই প্রথম কোনও ইউরোপীয় জাহাজ নৌপথে ভারতবর্ষে পৌঁছল। এই খবরে ইউরোপে তীব্র উত্তেজনা ছড়াল। ইউরোপে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল কে কার আগে ইন্ডিজ পৌঁছবে। দেখতে দেখতে ষোড়শ শতাব্দী এসে গেল। গামার দেখান পথ ধরে অনেকে ইউরোপীয় নাবিকই তখন ভারত ছাড়িয়ে আরও পুবের মালয় দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছে গেছে। ইউরোপের লোকে তখন ইন্ডিজ বা ইস্ট ইন্ডিজ (বা ইস্ট ইন্ডিয়া) বলতে বুঝত দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বীপপুঞ্জকে, বিশেষ করে মালয় দ্বীপপুঞ্জকে। আসলে ইউরোপে তখন ইন্ডিজ বলতে বোঝাত সমগ্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া। ব্যবসাবানিজ্য (এবং লুন্ঠনের উদ্দেশ্যে) বিভিন্ন দেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী গঠন করা হয়। যার কথা আগেই বলেছি। ২ ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। ১৬০০ সালে। এক বিশেষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল ঐ বেনিয়া কোম্পানীটি। সেই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষন করা যাক। পঞ্চদশ শতকটা ইংল্যান্ডের জন্য ছিল অশুভ। যুদ্ধ। প্লেগ। তাতে জনসংখ্যা হ্রাস। রাজ্যজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দারুন অবনতি হয়েছিল। সৃষ্টি হয়ে ছিল ব্যাপক অরাজকতা। সামন্ত প্রভূরা হয়ে উঠছিল শক্তিশালী। অবশ্য কুটির শিল্পের বিকাশ হয়েছিল। ঘরে ঘরে উলের কাপড় তৈরি হত। তাতে ভেড়ার লোমের চাহিদা বাড়ছিল। ফলে ভূস্বামীরা চাষবাস বন্ধ করে দিয়ে ভেড়া পালতে শুরু করে দিল। এ লক্ষ্যে তারা কৃষিজমি ঘিরে ফেলছিল। এভাবে চাষবাস না-হওয়ায় গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতি ধ্বসে পড়ে আর কী। এ রকম দারুণ বিপর্যয়কর সময়ে ইংল্যান্ড এক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজছিল। ১৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দ। সপ্তম হেনরি নিজেকে ইংল্যান্ডের রাজা ঘোষনা করলেন। এরপর পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে লাগল। কয়েকটি পদক্ষেপের পর ব্যবসাবানিজ্য গতি লাভ করে। রাজা কর বসালেন। যুদ্ধ না করে সে অর্থ বিনিযোগ করলেন। সপ্তম হেনরির মৃত্যুর পর ইংল্যান্ডের রাজা হলেন অস্টম হেনরি। (১৪৯১-১৫৪৭) ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দ। ইংল্যান্ড তখন এক বিপ্লবের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিল। ওই সময় রোমের (ক্যাথলিক র্গীজার) সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় ইংল্যান্ডের, খ্রিস্টীয় মঠতন্ত্রের অবসান ঘটে, পার্লামেন্টের বিকাশ লাভ করে, বিশেষ করে হাউস অভ কমন্স; প্রিভি কাউন্সিল গঠন করা হয়। তাই বলছিলাম ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এক বিশেষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। ততদিনে জয়েন্ট স্টক কোম্পানী গঠিত হয়ে গেছে। অস্টম হেনরি মারা গেলেন। ১৫৫৮ সাল। প্রথম এলিজাবেথ (১৫৩৩-১৬০৩) ইংল্যান্ডের রানী হলেন। তার সময়ে ইংল্যান্ড এক নতুন যুগে পা রাখল। যেমন তাঁর সময়েই পার্লামেন্ট ও প্রিভি কাউন্সিল সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাঁর সময়ই প্রোটেস্টান ধর্মটি ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রোথিত হয়ে যায়। তাতে ব্যবসার দারুন অগগ্রতি হয়। পন্ডিতেরা পুঁজিবাদের বিকাশ আর প্রোটেস্টান ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। স্পেনের ছিল দুর্দান্ত নৌশক্তি। তার বিরুদ্ধেও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে রানী প্রথম এলিজাবেথের সময়ই। সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও ঐ এলিজাবেথীয় সময়টা ছিল অনন্য। শেক্সপিয়ার, মার্লো রঙ্গমঞ্চ আলোকিত করে রাখলেন। স্পেনসার স্বাধীন চিন্তাকে। সে স্বাধীন চিন্তা তরঙ্গায়িত করল এমন কী অর্থনীতিকে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর পুরো নাম অবশ্য “ দি গর্ভনর অ্যান্ড কোম্পানী অভ মার্চেন্টস অভ লন্ডন ট্রেডিং ইনটু দি ইস্ট ইন্ডিজ।” ১৬০০ সাল। ৩১ ডিসেম্বর রানী। এলিজাবেথ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অরিজিনাল চার্টার অনুমোদন করেন। তবে, ব্যবসায়ীদের প্রতি রানীর একটা শর্ত ছিল। তা হল- খ্রিস্টান রাজপুত্রের সঙ্গে প্রতিযোগীতা করা যাবে না। না, লোভের রাজ্যে এরকম শর্ত মানা সম্ভব না। ১৬১২ সালে পর্তুগিজদের মুখোমুখি হয়েছিল ইংরেজরা। ভারতে। দুপক্ষের তুমুল লড়াই বেধেছিল। ঐ পর্তুগিজরাও ছিল খ্রিস্টান রাজপুত্র। যা হোক। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী পরিচালনা করেন একজন গর্ভনর। আর ২৪ জন নির্বাচিত ডাইরেক্টর। ৩ রানীর আজ্ঞা পেয়েই ইংল্যান্ডের বন্দরগুলি ভড়ে উঠল পূর্বগামী জাহাজে জাহাজে। তোলা হল পাল। হালে দক্ষ নাবিক। পাটাতনে সক্ষম কামান। জাহাজ ভাসল আটলানটিকে। তারপর পুবমুখো বাঁক নিল দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণ কোণে। তারপর ভারত সমুদ্র। ভারত মহাসাগরে ওলন্দাজ (ডাচ) ফরাসী ও পর্তুগীজ জাহাজ। তাদের সঙ্গে নিত্য কামানের গোলা বিনিময় হতে লাগল। (পরের) রতেœর এমনই লোভ! পুঁজির এমনই দাপট!! যাক। ইন্ডিজ যাত্রা করে প্রথম প্রথম নাকি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর জাহাজগুলি সেই জাপান অবধি চলে গিসল। দক্ষিণ চিন সাগর। মালয় সাগরে ভাসতে দেখা যেত পালতোলা ব্রিটিশ জাহাজ। নব্য জলদস্যু! যে দস্যুতার অনুমোদন দিয়েছেন উইলিয়াম শেক্সপীয়ারকে নিয়ে গর্ব করা সভ্য রাষ্ট্রের এক রানী! তখন মালয় সাগরে ওলন্দাজদের (ডাচরা) আনাগোনা। মালয় দ্বীপপুঞ্জে নেমে জাহাজ ভর্তি করে দারচিনি তুলছে। দেশে নিয়ে বিক্রি করবে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীও তাই করতে লাগল। জাহাজ ভরে কলা তুলতে লাগল। ফলে প্রতিযোগীতা তৈরি হল। ধীরে ধীরে দুপক্ষের মুখোশই গেল খুলে। অত্র অঞ্চলে, মানে মালয় দ্বীপপুঞ্জে বানিজ্যিক আধিপত্য নিয়ে বাধল সংর্ঘষ । পরে অবশ্য প্রতিযোগীতায় টিকতে না পেরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী মালয় সাগরে ছেড়ে চলে যায়। চোখ দেয় ভারতের দিকে। ৪ তখন বলছিলাম, পর্তুগালের নৌ অভিযানের সময় ইংল্যান্ডের রাজা ছিলেন সপ্তম হেনরি।তার সময়ে শোনা গেল ইন্ডিজের কথা। তিনি জানতেন না ইংল্যান্ডের ভাগ্য অদূর ভবিষ্যতে ইন্ডিজের ওপর কতটা নির্ভর করবে। ১৬০৯ সালে ইংল্যান্ডের রাজা ছিলেন প্রথম জেমস। তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর গুরুত্ব বুঝেছিলেন ঠিকই। তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কে একচেটিয়া ব্যবসা করার ব্যাপক অধিকার দিয়ে একটি শ্বাশত চার্টার প্রদান করেন। সেই শ্বাশত চার্টার নিয়ে ভারতবর্ষের পুব ও পশ্চিম উপকূলে ভেড়ে ইংরেজ বেনিয়া জাহাজ। তারপর তারা স্থানীয় শাসকদের সঙ্গে সমঝোতা করে। ১৬১০ ও ১৬১১ সালে তারা মাদ্রাজ (বর্তমান চেন্নাই) ও বোম্বে ( বর্তমান মুম্বাই) তে ফ্যাক্টরি ও বানিজ্যকুঠি নির্মান করে। অবশ্য অবাধ ব্যবসাবানিজ্যের সুবিধা সহজ হয়নি। তার কারণ আছে। সায়ালি জায়গাটা গুজরাটে। সুরাটের কাছে। ১৬১২ সাল। পর্তুগিজদের মুখোমুখি হল ইংরেজরা। দুপক্ষের তুমুল লড়াই হল। ভারতবর্ষের ইতিহাসে ঐ যুদ্ধটা সোয়ালি যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী জিতে যায়। এরপর থেকেই তারা ভারতবর্ষ জুড়েই আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। ১৬১৫। প্রথম জেমস তখনও ইংল্যান্ডের রাজা। তিনি স্যার টমাস রো কে তার প্রতিনিধি নিযুক্ত করে মুগলদের দরবারে পাঠান। মুঘল সম্রাট তখন জাহাঙ্গীর। (১৬০৫-১৬২৭) টমাস রো-এর মাধ্যমে মুগলদের সঙ্গে ব্রিটিশদের একটি বানিজ্যিক চুক্তি সম্পন্ন হয়। চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটিশরা ভারতে বসবাসের অধিকার পায়। সুরাট ও অন্যত্র ফ্যাক্টরি ও বানিজ্যকুঠি স্থাপন করার অধিকার পায়। বিনিময়ে ইউরোপের বাজারের জন্য ভারতীয় পন্যের অবাধ সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীর সন্তুষ্ট হয়ে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস-এর উদ্দেশে একটি চিঠি লিখেন । ৫ এর পরের ঘটনা আমরা জানি। ষোড়শ শতক ফুরিয়ে গেল। ব্রিটিশ বেনিয়ারা ভারতবর্ষজুড়ে তাদের থাবা বিস্তার করল । চিড় ধরল, টলে উঠল হাজার বছরের স্থির স্বয়ংসম্পূর্ন ভারতবর্ষের গ্রামগুলো। বাংলার গ্রামগুলো। এল সপ্তদশ শতক। আরও ৫৭ বছর কাটল। ১৭৫৭। পলাশীর যুদ্ধ। ক্ষমতার পালাবদল হল বাংলায়। দীর্ঘকাল বঙ্গবাসী বাংলার ক্ষমতায় নেই। এক বিদেশি শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে অন্য এক বিদেশি শাসকগোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতা চলে যায়। ১৭৬৫। দিউয়ানি লাভ ব্রিটিশ বেনিয়রা। বাংলা ও বিহারের কর আদায়ের ক্ষমতা পেল তারা। ১৭৭২ সাল। কোলকাতাকে নির্বাচিত করা হল ব্রিটিশ-বাংলার রাজধানী হিসেবে । কাজেই বাংলার পূর্বাঞ্চল ক্ষানিক পেছনে পড়ে রইল। আগে একবার বলেছি, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী পরিচালনা করেন একজন গর্ভনর। আর ২৪ জন নির্বাচিত ডাইরেক্টর। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর পক্ষে বাংলার গর্ভনর জেনারেল হলেন ওয়ারেন হেষ্টিংস। ডি ফেকটো (কার্যত, বৈধ ক্ষমতা থাক বা না-থাক) ক্ষমতা বলে বাংলা পরিচালনা করতে লাগল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। এভাবে শুরু হল বাংলার ইতিহাসে শোষন আর দূর্নীতির এক মর্মান্তিক অধ্যায়। সে প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক সিরাজুল ইসলাম লিখেছেন,The Palashi change did not bring about a great deal of income for the company as was reckoned by Clive before the episode. Rather, the company, which used to make great profits from its Bengal trade, was running at a loss after Palashi. The company's debts were increasing every year. The Court of Directors saw that the company officers had made Bengal their own sack of gold. All of them engaged in private trade without giving priority to the company's business. Clive was sent out again, entrusted with the most difficult agenda: making the company's investment in Bengal profitable. (বাংলাপিডিয়া) ৬ বাংলায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অনৈতিক কর্মকান্ডে ইংল্যান্ডের সচেতন জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছিল। তখন ব্রিটেনে চালর্স জেমস ফক্স ও ফ্রেডরিখ নর্থের কোয়ালিশন সরকার। চালর্স জেমস ফক্স ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কার্যক্রমকে দূষিত স্বৈরাচার বলে আখ্যায়িত করেছেন। ১৭৮৩ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এ প্রসঙ্গে একটি ভাষন দেন। ভাষনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকায় (মূল ইংরেজী) আমরা পাঠ করতে পারি। এই ভাষনটি তৎকালীন সচেতন মানুষের প্রতিক্রিয়া ফুটে উঠেছে। আমার মনে হয়, ভাষনটি পাঠের ফলে ব্রিটিশ গনতন্ত্রের বিকাশ সম্বন্ধে আমাদের ধারনা স্বচ্ছ হতে পারে। ভাষনটি পাঠ করতে করতে আমরা এও ভাবতে পারি যে ১৭৮৩ সালের দিকে মুগলদের চিন্তাভাবনা কি রকম ছিল। কতটা পিছিয়ে থাকার কথা ভাবছিল তারা? ভারতবর্ষ ও ইংল্যান্ডের সমাজচেতনার ফারাকটিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ফক্সের বক্তব্য। যাক। ফক্স বলছেন, Freedom, according to my conception of it, consists in the safe and sacred possession of a man's property, governed by laws defined and certain; with many personal privileges, natural, civil, and religious, which he cannot surrender without ruin to himself; and of which to be deprived by any other power is despotism. This bill, instead of subverting, is destined to give stability to these principles; instead of narrowing the basis of freedom, it tends to enlarge it; instead of suppressing, its object is to infuse and circulate the spirit of liberty. What is the most odious species of tyranny? Precisely that which this bill is meant to annihilate. That a handful of men, free themselves, should execute the most base and abominable despotism over millions of their fellow creatures; that innocence should be the victim of oppression; that industry should toil for rapine; that the harmless labourer should sweat, not for his own benefit, but for the luxury and rapacity of tyrannic depredation; in a word, that thirty millions of men, gifted by Providence with the ordinary endowments of humanity, should groan under a system of despotism unmatched in all the histories of the world. What is the end of all government? Certainly the happiness of the governed. Others may hold other opinions, but this is mine, and I proclaim it. What are we to think of a government whose good fortune is supposed to spring from the calamities of its subjects, whose aggrandizement grows out of the miseries of mankind? This is the kind of government exercised under the East India Company upon the natives of Hindustan; and the subversion of that infamous government is the main object of the bill in question. But in the progress of accomplishing this end, it is objected that the charter of the company should not be violated; and upon this point, sir, I shall deliver my opinion without disguise. A charter is a trust to one or more persons for some given benefit. If this trust be abused, if the benefit be not obtained, and its failure arise from palpable guilt, or (what in this case is full as bad) from palpable ignorance or mismanagement, will any man gravely say that that trust should not be resumed and delivered to other hands, more especially in the case of the East India Company, whose manner of executing this trust, whose laxity and languor have produced, and tend to produce, consequences diametrically opposite to the ends of confiding that trust, and of the institution for which it was granted? I beg of gentlemen to be aware of the lengths to which their arguments upon the intangibility of this charter may be carried. Every syllable virtually impeaches the establishment by which we sit in this House, in the enjoyment of this freedom, and of every other blessing of our government. These kinds of arguments are batteries against the main pillar of the British Constitution. Some men are consistent with their own private opinions, and discover the inheritance of family maxims, when they question the principles of the Revolution; but I have no scruple in subscribing to the articles of that creed which produced it. Sovereigns are sacred, and reverence is due to every king; yet, with all my attachments to the person of a first magistrate, had I lived in the reign of James II, I should most certainly have contributed my efforts and borne part in those illustrious struggles which vindicated an empire from hereditary servitude, and recorded this valuable doctrine, 'that trust abused is revocable.' No man, sir, will tell me that a trust to a company of merchants stands upon the solemn and sanctified ground by which a trust is committed to a monarch; and I am at a loss to reconcile the conduct of men who approve that resumption of violated trust, which rescued and re-established our unparalleled and admirable Constitution with a thousand valuable improvements and advantages at the Revolution, and who, at this moment, rise up the champions of the East India Company's charter, although the incapacity and incompetency of that company to a due and adequate discharge of the trust deposited in them by that charter are themes of ridicule and contempt to the world; and although, in consequence of their mismanagement, connivance, and imbecility, combined with the wickedness of their servants, the very name of an Englishman is detested, even to a proverb, through all Asia, and the national character is become degraded and dishonoured. To rescue that name from odium and redeem this character from disgrace are some of the objects of the present bill; and, gentlemen should, indeed, gravely weigh their opposition to a measure which, with a thousand other points not less valuable, aims at the attainment of these objects. Those who condemn the present bill as a violation of the chartered rights of the East India Company condemn, on the same ground, I say again, the Revolution as a violation of the chartered rights of King James II. He, with as much reason, might have claimed the property of dominion; but what was the language of the people? 'No; you have no property in dominion; dominion was vested in you, as it is in every chief magistrate, for the benefit of the community to be governed; it was a sacred trust delegated by compact; you have abused that trust; you have exercised dominion for the purposes of vexation and tyranny—not of comfort, protection, and good order; and we, therefore, resume the power which was originally ours; we recur to the first principles of all government—the will of the many, and it is our will that you shall no longer abuse your dominion.' The case is the same with the East India Company's government over a territory, as it has been said by my honourable friend [British statesman Edmund Burke], of two hundred and eighty thousand square miles in extent, nearly equal to all Christian Europe, and containing thirty millions of the human race. It matters not whether dominion arise from conquest or from compact. Conquest gives no right to the conqueror to be a tyrant; and it is no violation of right to abolish the authority which is misused… (Source: The Penguin Book of Historic Speeches. MacArthur, Brian, ed. Penguin Books, 1996.) ১৭৮৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে পার্লামেন্টারি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়। ৭ যা হোক। ১৮৫৮ অবধি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলায় তাদের শাসন ক্ষমতা বজায় রাখে । ব্রিটিশ সরকার ১৮৫৮ সালের “গভরমেন্ট অভ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট” বলে ভারত শাসনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। তথ্য নির্দেশ ১/ বাংলাপিডিয়া ২/ মাইক্রোসফট বিশ্বকোষ এনকার্টা ৩/ উইকিপিডিয়া সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২৯",False hm,"একটি মার্জারের অকালমৃত্যু রহস্য রহস্যগল্প লেখায় হাত দিলাম আবারও। ""চিহ্ন"" নিয়ে এগোচ্ছি না আপাতত, যদিও ওটার প্লট আমার নিজের কাছেই ভালো লাগছিলো। স্বল্প পরিসরের রহস্যগল্প লিখলে বরং সেটা শেষ করতে পারবো। ১. ""নিজের হাতে রেঁধে খাওয়ার তৃপ্তিটাই অন্যরকম।"" বলছিলেন বৃদ্ধ ভদ্রলোক, যাঁকে এখন থেকে চৌধুরী সাহেব বলাটাই ভালো শোনাবে। পুরো গল্পটা শোনার পর তাঁর আসল নাম নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করাটা শোভন হবে না। আর ... চৌধুরী তাঁর নাম হতেও পারে, না-ও হতে পারে। একটা হোলেও হোতে পারে পরিস্থিত আর কি ... হেঁ হেঁ হেঁ ...। আমি বা দুলাল কেউই নিজের হাতে রেঁধে খাওয়ার তৃপ্তি আজও পাইনি। আমরা মায়ের হাতের, ভাবির হাতের, পরিচারিকার হাতের নয়তো খাবারের দোকানের বাবুর্চির হাতের রান্না খেয়েই তৃপ্তি পাই। এমনকি নিজের হাতে রান্না করতে হচ্ছে না, এটা ভেবেই তৃপ্তিতে চোখ বুঁজে আসে। সাহস করে কথাটা চৌধুরী সাহেবকে বলি। তিনি নিঃশব্দে মুখ ব্যাদান করে হাসেন। ""হ্যাঁ। আমিও আপনাদের মতোই ভাবতাম, এই বছর দশেক আগ পর্যন্তও।"" ""বলেন কী?"" দুলালের মুখ দিয়ে থুতু বেরিয়ে আসে কথার ফাঁকে। ""দশ বছর ধরে নিজের রেঁধে খাচ্ছেন? আপনি তো মহাত্মা!"" চৌধুরী হাসেন মিটিমিটি। ""তা বলতে পারেন। স্বপাক আহারের অনেক ভালো দিক রয়েছে। নিজে বেছে, নিজে ধুয়ে, নিজে কুটে রাঁধার যে পরিশ্রম, তাতে আপনার শরীর মন রাঁধা খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়। অন্যের রান্না হ্যাকথু বলে সরিয়ে রাখা যায়। তাছাড়া নিজে রাঁধলে কিছুদিনের মধ্যেই আপনার হাতের মাপ ফাইন টিউন্ড হয়ে যাবে, শরীরের যতটুকু লাগবে, ততটুকুই দিতে পারবেন। তাছাড়া, রান্না তো খুব উঁচু দরের শিল্প। জীবন যোগানিয়া আর্ট। আপনি আপনার স্বাস্থ্যের ছবি আঁকবেন, মূর্তি গড়বেন, কবিতা লিখবেন পুষ্টি আর তৃপ্তি নিয়ে।"" দুলাল হাত নাড়ে। ""একেবারে গজল!"" চৌধুরী আবারও মুখ ব্যাদান করেন। ""একদম ঠিক!"" তবে আমি দুলালের সাথে কিছুতেই একমত হতে পারি না। যদিও জানি, চৌধুরীর সাথে তাল মিলিয়ে যেদিকে বৃষ্টি সেদিকে ছাতা ধরতে হবে। ম্যাগাজিনের জন্য আমাকে আর দুলালকে যোগাড় করতে হবে কুড়ি হাজার টাকার বিজ্ঞাপন। মোটে তিন হাজার জোটানো গেছে। সতেরো থেকে চৌধুরী পাঁচ দিলেই আমরা খুশি। চৌধুরী কিন্তু শুধু ঝুনাই নন, ঝানুও। আমার দিকে ফিরে ওরকম হাসি হাসি মুখ করেই বলেন, ""আপনি বোধহয় একমত নন?"" আমি দুলালের লাথি খাই পায়ে, হারামজাদাটা, কিন্তু বলি, ""আসলে, অভ্যাস একটা বড় সমস্যা আর কি ...।"" দুলাল রুষ্ট চোখে তাকায়, কিন্তু ও মা, চৌধুরী রীতিমতো বুড়ো আঙুল তুলে কুল সাইন দেখান আমাকে, যে ইঙ্গিত দেখিয়ে একবার ড়্যাব আঙ্কেলের পাল্লায় পড়ে কান ধরে ওঠবোস করেছিলো কী একটা আংরেজি মাধ্যমের কচি কিডস। ""ঠিক বলেছেন!"" চৌধুরী হাসেন এবার, খিক করে একটা শব্দ হয়। আমি দুলালের দিকে তাকাই। চৌধুরী সোফায় হেলান দেন। আনমনে বলেন, ""আসলেই, অভ্যাস একটা বিরাট সমস্যা। বুঝলেন? আমি যেমন শুরুতে বেড়াল না খাওয়াতে পেরে খুব সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম। খুব অস্বস্তি লাগতো। এমনিতে রান্নার হাঙ্গামা, তেল ঢালো, মশলা মাখাও, মাছ কাটো, মুরগি ছেলো ... অনেক হাঙ্গামার পর রান্নাবান্না করে যদি বেড়ালই খানিক না খেলো, বেড়ালে মুখই যদি না দিলো, কিভাবে খাবো? ... এ প্রশ্ন জাগতো সবসময়। পরে আস্তে আস্তে অভ্যাস পাল্টেছে। এখন রান্নাও ভালো লাগে, বেড়ালও দরকার হয় না।"" আমি আর দুলাল একজন আরেকজনের মুখ দেখি। কীসের বেড়াল? চৌধুরী সাহেব আনমনে একটা সব্জির বড়া তুলে নেন কাঁটাচামচে গেঁথে। তারপর কচকচিয়ে চিবিয়ে খাওয়া শুরু করেন। খেতে খেতেই বলেন, ""খাবার সময় কথা বলা ঠিক নয় একেবারেই। শ্বাসনালীতে একটা ট্র্যাফিক জ্যাম লেগে যেতে পারে। যাকে বলে বিষম খাওয়া। খেয়ে দেখেছেন কখনো, বিষম?"" দুলাল দুই কামড়ে একটা বড়া চিবিয়ে খেয়ে শেষ করে ফেলেছিলো প্রায়, চৌধুরী সাহেবের কথা শুনে কী একটা বলতে গিয়ে সে প্রায় বিষম খেয়ে মরে আর কি! আমি দুলালের মাথায় চাপড় দেই, সে ছলোছলো চোখে এদিক ওদিক তাকায়, কিন্তু কিছু বলতে পারে না, আর চৌধুরী সাহেব রীতিমতো ঊরুতে চাপড় মেরে হেসে ওঠেন খিক খিক করে। আমি না পারি কিছু একটা মুখ পুটে বলতে, না পারি সইতে। চৌধুরী সাহেব আনমনে মাথা দুলিয়ে খানিকক্ষণ হেসে বলেন, ""আপনারা বড় আনাড়ি। কেউ বিষম খেলে মাথায় চাপড় দিয়ে লাভ আছে? তাকে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে পাঁজা করে ধরে পাঁজরের ঠিক নিচে হাত বেঁধে চাপ দিতে হয়, যাকে বলে হাইমলিখ প্যাঁচ। উইকিপিডিয়া থেকে দেখে নেবেন আজই।"" রাগে আমার গা জ্বলে যায়, দুলালও দেখি চোখ গরম করে তাকায়। চৌধুরী হাসি হাসি মুখ করেই আরেকটা সবজির বড়া গাঁথেন কাঁটা চামচে। একটা কামড় দিয়ে চোখ বুঁজে বলেন, ""বহুদিন হলো বেড়াল ছাড়া খাচ্ছি। এখন এমনটাই অভ্যাস হয়ে গেছে। কী বলবো। অবশ্য কাবুল মরে যাবার পর অন্য কোন বেড়াল ওর স্থান নিতে পারতো কি না, আমার সন্দেহ আছে। সব ক্ষতি পূরণ করা যায় না।"" দুলাল জ্বলন্ত চোখে চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে খপ করে খাবলা দিয়ে একটা সব্জির বড়া তুলে নেয়। চিবোতে থাকে, কিছু বলে না। আমি বলি, ""কাবুল কে?"" চৌধুরী কাঁটা চামচে গাঁথা বড়া উঁচিয়ে বলেন, ""কে নয়, কী। কাবুল আমার পোষা বেড়াল ... ছিলো। প্রায় দশ বছর হলো কাবুল খুন হয়েছে। তারপরই তো রান্নাবান্নার জগতে ঢুকতে হলো আমাকে!"" আমি দুলালের দিকে তাকাই। দুলাল মুখে সব্জির বড়া নিয়ে চোখ গোলগোল করে তাকায় আমার দিকে। আমি বলি, ""কাবুল খুন হয়েছিলো? একটা বেড়ালকে খুন করতে যাবে কে?"" চৌধুরী একটু গম্ভীর হয়ে গেলেন দেখলাম। কাঁটা চামচ দিয়ে ঘ্যাঁচ করে একটা বড়া এফোঁড়ওফোঁড় করে দিয়ে বললেন, ""সে এক বিরাট গল্প। শুনতে চান?"" দুলাল কোঁৎ করে সব্জির বড়ার মন্ড পেটে চালান করে দিয়ে বলে বসলো, ""নিশ্চয়ই, কেন নয়?"" চৌধুরী বেশ খুশি হলেন শুনে। উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ""বেশ। চলুন আমার হেঁসেলে। গল্পগুজব এই বৈঠকখানায় বসে ভালো জমে না!"" চৌধুরী পেছন ফিরতেই আমি দুলালের দিকে তাকিয়ে দাঁত খিঁচাই। ২. অম্লান বদনে চৌধুরী দুলালের হাতে কয়েকটা আলু ধরিয়ে দ্যান। ""আলুর কিছু ব্যাপার আছে। যদিও চোখে দেখতে, বা চেখে দেখতে একটু কেমন যেন লাগে, কিন্তু আলুর মূল পুষ্টি হচ্ছে এর খোসায়। তবে আলুর খোসা আমি পছন্দ করি না। নিন, ধুয়ে ফেলুন আলুগুলি। তারপর চাক চাক করে কাটুন। মুরগি রান্না হবে।"" দুলালের চেহারাটা কাঁদো কাঁদো হয়ে আসে। আমি প্রমাদ গুনি। চৌধুরীর কী ক্ষতি করেছি, তা জানি না, কিন্তু তিনি বেছে বেছে কয়েকটা পেঁয়াজ বার করে দ্যান আমাকে। ""পেঁয়াজকে শিবরাম একটা গল্পে শতদল বলেছিলেন। আসলেই তাই। নিন, এই যে ছুরি। কুচি কুচি করে কাটুন একেবারে।"" দুলাল দাঁত বার করে একটু। চৌধুরী একটা কড়াই বসান চুলার ওপর। তারপর শুরু করেন অর্ধনিমীলিত চোখে গল্প। ""কাবুল আমার বড় আদরের বেড়াল ছিলো। অকালে মরে গেলো, আমার স্ত্রীর মতই।"" দুলাল আরেকটু হলেই আলুর সাথে নিজের হাতের তালুও চাক চাক করে কেটে ফেলছিলো আর কি। ঢোঁক গিলে সে বলে, ""আপনার স্ত্রী, মানে, উনিও অল্প বয়সে মারা গিয়েছিলেন?"" চৌধুরী চোখ খোলেন। ""না, তা-ই বললাম নাকি? অকালে মারা গিয়েছিলেন, তবে অল্প বয়সে নয়। চল্লিশ বেয়াল্লিশ হয়েছিলো বয়স। অল্প বয়সে মারা গেলে আমার সুবিধেই হতো।"" আমি বলি, ""ফোঁৎ!"" তারপর চোখের পানি মুছি। চৌধুরী সান্ত্বনা দ্যান। ""হুঁ, আসলেই দুঃখের ব্যাপার। আমার বয়স তখন আটচল্লিশ। কাবুলের ছয়। আমাদের একেবারে অনাথ করে দিয়ে আমার স্ত্রী মারা গেলেন, হার্ট অ্যাটাক করে। বড় প্রেমময়ী ছিলেন। শুধু রেগে গেলে মারপিট করতেন।"" দুলাল আবারও ভুল পোঁচ চালায় আলুর ওপর। ""মারতেন আপনাকে?"" ""আমাকে নয়, কাবুলকে।"" ""অ।"" আমি হতাশ হই। ""তিনি মারা গিয়ে আসলে কাজটা ভালো করেননি।"" ফ্রিজ খুলে একটা পোঁটলা বার করেন চৌধুরী। ""কেন?"" দুলাল বলে বসে। ""আমার স্ত্রী চমৎকার রান্না করতেন। তাঁর রান্না শুধু সুস্বাদুই নয়, নিরাপদও ছিলো।"" ""নিরাপদ? সে কীরকম?"" আমি জানতে চাই। ""আমার স্ত্রীর রান্না করা খাবার কাবুলকে খাওয়াতে হতো না। কাবুল অবশ্য খেতো, বেশ তৃপ্তি করে, চেটেপুটেই খেতো, তবে তাকে না খাইয়েও আমি খেতে পারতাম।"" আমার কাছে সবই বড় ধোঁয়াটে মনে হয়। ""আমার স্ত্রী মারা যাবার পর আমি বিপুল শোকগ্রস্ত হয়ে পড়ি। কয়েকটা দিন কোন রান্না করা খাবার মুখে তুলতে পারিনা। শুধু শুকনো মুড়ি চিবিয়ে কাটিয়ে দিই।"" চৌধুরী ধরা গলায় বলেন। ""ওফ!"" আমি চোখের জল মুছি পেঁয়াজ কুচাতে কুচাতে। একগাদা পেঁয়াজ কুচাতে দিয়েছেন চৌধুরী। ""আমার স্ত্রী যখন অসুস্থ ছিলেন, তখন আমাদের বাড়িতে তাঁর দেখাশোনা করতে আসে তাঁরই দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয়া। তিনিই তখন রান্নাবান্না করতেন। তাঁর রান্না খারাপ ছিলো এমন আমি বলবো না। ভালোই রাঁধতেন।"" হাতের পোঁটলাটা একটা গরম পানির গামলায় চুবিয়ে রাখেন চৌধুরী, মুরগির বরফ গলাতে হবে। ""তাই?"" আলু ছিলতে ছিলতে বলে দুলাল। ""আপনি তো আলুর মজাটাই মেরে দিচ্ছেন ওভাবে খোসা ছাড়াতে গিয়ে!"" চৌধুরী হাঁ হাঁ করে ওঠেন। ""ছাল ছাড়াতে গিয়ে তো মাংসই গায়েব করে দিচ্ছেন আলু থেকে! আরো পাতলা করে খোসা ছাড়ান!"" দুলাল থতমত খেয়ে দ্বিগুণ মনোযোগ দিয়ে আলু ছিলতে শুরু করে। ""তবে, আমার স্ত্রী মারা যান তাঁর রান্না করা এক বাটি স্যুপ খেয়েই।"" আমি আমার আঙুলটাই কুচিয়ে ফেলি আরেকটু হলে। ""য়্যাঁ?"" ""হুমম। আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না। এসে দেখি ঘরে ডাক্তার। ডাক্তার আবার আমার স্ত্রীর সেই আত্মীয়া, ফুলি যার নাম, তাঁর পরিচিত। সেই ডাক্তার জানালেন, হার্ট অ্যাটাক।"" ""আচ্ছা!"" দুলাল ঢোঁক গিলে বলে। ""কাজের বুয়া অবশ্য বলে, ফুলি একটু ভেজেটেবল স্যুপ বানিয়ে খাওয়ানোর সময় নাকি আমার স্ত্রী ধড়ফড় করে মারা যান।"" ""বলেন কী?"" আমি পেঁয়াজ কুচিয়েই চলি। ""ফুলি অবশ্য আমার খুব যত্ন করতো একদম শুরু থেকেই।"" চৌধুরী কাবার্ড থেকে মশলার কৌটো নামানো শুরু করেন। ""ওওওও!"" দুলাল গাধাটা আর মানুষ হবে না। ""ফুলি সেদিনই কাজের বুয়াকে বিদায় করে দেয়। বলে এখন তো কাজ কমে গেলো, আমার দেখাশোনা সে একাই করতে পারবে।"" ""আচ্ছা!"" বলি আমি। চৌধুরী এলাচ আর দারচিনি বার করেন। ""আমার স্ত্রীর সৎকারের পর আমি ঘরে এসে খুব একা বোধ করতে থাকি। বিশেষ করে খাবার সময়। এক বাটি মুড়ি চিবিয়ে শুয়ে পড়তাম রাতে। ফুলি অবশ্য নিজেই বাজার সদাই করে রান্না বান্না করতো, কিন্তু আমার মুখে রুচতো না।"" ""শোক জিনিসটা এমনই।"" বলি আমি। পেঁয়াজ কুচানো মোটে আদ্ধেকটা শেষ। চৌধুরী একটা কড়াইয়ে এলাচ আর দারচিনি শুকনো ভাজতে শুরু করেন। ""অবশ্য খিদে পেলে আমি হোটেল থেকে খেয়ে আসতাম। তন্দুরি রুটি দিয়ে গরমাগরম ভাজি কিংবা মাংসের ঝোল। হোটেলের খাবার তেমন সুস্বাদু না হলেও, নিরাপদ।"" দুলাল আমার দিকে পাংশু মুখে তাকায়। ""হপ্তাখানেক পরই আমি ফুলিকে বিয়ে করে ফেলি।"" বলেন চৌধুরী। আমি রীতিমতো চমকে উঠি। ""ফুলিই প্রস্তাবটা দেয়। বলে, তার আর কোন আশ্রয় নেই। আমার আশ্রয়ে যদি থাকতেই হয়, তাহলে বউ হয়ে থাকাটাই ভালো। তাহলে পাঁচজনে পাঁচরকম কথাবার্তা বলবে না। আমারও দেখাশোনা করার একজন লোক দরকার। ইত্যাদি।"" চৌধুরী খুন্তি দিয়ে এলাচ নাড়তে থাকেন। তারপর বয়াম খুলে কয়েকচামচ ঘি ছাড়েন কড়াইয়ে। ""তারপর?"" দুলাল জানতে চায়। ""ছাড়িয়েছেন খোসা? তারপর আবার কী? কাটুন মাপমতো। চাক চাক করে।"" চৌধুরী আমার দিকে ফেরেন, ""পেঁয়াজ কুচানো হলো?"" আমি সাশ্রুনয়নে তাঁর দিকে কুচানো পেঁয়াজ এগিয়ে দিই। তিনি কড়াইয়ে ভস ভস করে ঢালেন সব। ""ফুলি স্ত্রী হিসেবে মন্দ ছিলো না। মোটামুটি সুন্দরী, যুবতী, কথা কম বলতো, সব দিকে চোখা নজর রাখতো, ভালো রান্না করতো ... তবে তার রান্না ভালো হলেও, ঐ যে বললাম, নিরাপদ ছিলো না।"" দুলাল আলু কাটতে থাকে কচকচ করে। ""তারপর?"" ""বেশিদিন তো আর হোটেলে খাওয়া যায় না। আমি রাতে ঘরে ফুলির রান্না খেতে শুরু করলাম। ফুলি আবার রাতে খেতো না। আমার জন্য খাবার বেড়ে দিয়ে সে শুয়ে পড়তো।"" আমি কিছু বলি না। ""আমার বেশ যত্ন করতো ফুলি, কিন্তু একটাই দোষ ছিলো তার। রাতের বেলা ইনিয়ে বিনিয়ে কেবল নানা ঘ্যানঘ্যান। আমার নাকি বয়স হয়ে গেছে, আমার কিছু হলে সে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, ইত্যাদি নানা হাবিজাবি কথা।"" দুলাল আলু কাটতে কাটতে বলে, ""বলেন কী?"" ""তবে ফুলি ভালোই রান্না করতো।"" চৌধুরী কড়াইয়ের ওপর হলুদ, ধনিয়া, জিরা আর মরিচের গুঁড়ো ঢালেন বিভিন্ন মাপের কাঠের চামচ দিয়ে। ""আপনি খেতেন রোজ রাতে?"" ""তা খেতাম। তবে আগে কাবুলকে খাইয়ে দেখতাম। কাবুল ... আমার বড় প্রিয় বেড়াল ছিলো সে।"" ""কাবুলকে খাওয়াতেন কেন?"" দুলাল আলু কেটে একটা বাটিতে রাখে। ""কাবুলেরও তো ক্ষুধাতৃষ্ণা আছে। তাকেও তো খেয়ে পড়ে বাঁচতে হবে। তাই খাওয়াতাম।"" ""আপনার স্ত্রী ফুলি তখন কী করতেন?"" ""সে শুয়ে পড়তো।"" ""হুমমমম।"" বলি আমি। চৌধুরী এবার একটু আদা-রসুনের কুচি দিয়ে খুন্তি দিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকেন কড়াইয়ে। ""রাতের পর রাত ফুলি কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতো, আমার বীমার কাগজগুলিতে ওকে নমিনি করতে। আমার প্রথমা স্ত্রী কিছুটা মুখ পাতলা ছিলেন, তিনিই নাকি ফুলিকে একবার বিশদ বলেছিলেন সেসব কাগজের কথা।"" ""সবাইকে সব কিছু বলতে নেই।"" বলি আমি। ""ঠিক।"" চৌধুরী এবার গরম পানির গামলা থেকে পোঁটলা তুলে মুরগির মাংস বার করে কড়াইয়ে ছাড়েন। ""আপনারা কি কেউ সাত-আট মাস ভালোমতো না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন?"" ""নাহ!"" দুলাল মাথা নাড়ে। ""হুমমম। ফুলিকে বিয়ে করার আট মাস পর আমি শেষমেশ একদিন বীমার কাগজে ওর সইসাবুদ নিয়ে নমিনি পরিবর্তন করিয়ে আনি। এর আগে নমিনি ছিলেন আমার প্রথমা স্ত্রী, তাই কোন সমস্যা হয়নি। আরো কিছু টুকটাক পরিবর্তন করি বীমায়।"" ""বলেন কী?"" ""হুঁ। তার দিন আষ্টেক পরই কাবুল মারা যায়।"" চৌধুরীর মুখটা ভার হয়ে ওঠে। আমি মাথা দোলাই। ""সেদিন রাতে দুয়েক গ্রাস খাবার মুখে দিয়েই কাবুল ধড়ফড় করে মারা পড়ে।"" চৌধুরী খুন্তি দিয়ে কষানো মশলা মাংসের সাথে মেশাতে শুরু করেন। দুলাল ঢোঁক গিলে বলে, ""তারপর?"" ""আমি খুব দুঃখ পাই। আমার স্ত্রীর মৃত্যুর পর যেমন দুঃখ পেয়েছিলাম।"" ""কাবুলও হার্ট অ্যাটাক করেছিলো?"" ""হয়তো।"" চৌধুরী কড়াইয়ে লবণ মেপে দিয়ে একটা ঘুঁটুনি দেন আবার। ""বলেন কী?"" ""হুমমম। কাবুলকে খেতে না দিয়ে আমি খেলে আমারও হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারতো।"" দুলাল হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। ""কাবুল বড়ই নিরীহ বেড়াল ছিলো। চুরিদারি তেমন একটা করতো না। ঘরও ময়লা করতো না। শান্তশিষ্ট একটা প্রাণী। তার এমন হার্ট অ্যাটাকে আমার বড়ই দুঃখ হয়।"" ""হবারই কথা।"" আমি বলি। ""রাগও হয়।"" চৌধুরী বলেন। ""হবারই কথা।"" দুলাল বলে। ""রাগ কমানোর উপায় কী, জানেন?"" চৌধুরী কড়াইটা একটা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেন। ""কী?"" ""মাটিতে শুয়ে পড়া।"" চুলার আঁচ কমিয়ে দেন চৌধুরী। ""তারপর চোখ বুঁজে দম নিয়ে পড়ে থাকা। এতে করে এই চুলোর মতোই রাগের আঁচ পড়ে আসে।"" ""আচ্ছা? আপনি তখন তাই করলেন?"" ""হ্যাঁ।"" ""তারপর?"" ""ফুলি অন্যদিন ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু সেই রাতে সে দেখলাম উঠে এলো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সব দেখলো। কাবুলকে কষে একটা লাথি মারলো, সে নড়াচড়া করে না দেখে তারপর আমার নাকের কাছে হাত রেখে নিঃশ্বাস পড়ে কি না দেখলো। তারপর আমার বুকে মাথা রেখে শোনার চেষ্টা করলো শব্দ হয় কি না।"" ""তারপর?"" চৌধুরী বললেন, ""আমি তখন লাফিয়ে উঠে বসলাম।"" দুলাল বললো, ""য়্যাঁ?"" চৌধুরী বললেন, ""হুঁ। অনেক জোরে হয়ে গিয়েছিলো।"" আমি বললাম, ""তারপর?"" চৌধুরী বললেন, ""ফুলি আমাকে উঠে বসতে দেখে আঁতকে উঠলো রীতিমতো, তার মুখ সাদা হয়ে গেলো, তারপর বুক চেপে ধরে মাটিতে পড়ে গেলো।"" দুলালও আঁতকে উঠলো, ""বলেন কী?"" চৌধুরী বললেন, ""হুঁ। হার্ট অ্যাটাক। আলুগুলি কেটেছেন মাপমতো?"" ৩. খেতে বসে চৌধুরী বললেন, ""মুরগিটা কেমন হয়েছে?"" দুলাল চপচপ করে খেতে খেতে বললো, ""বেশ স্বাদ হয়েছে!"" চৌধুরী বললেন, ""হ্যাঁ। আমার অবশ্য নিজের রান্না ভালো লাগতে শুরু করেছিলো একটু দেরিতে। খান, আরাম করে খান। বেড়াল খাওয়াতে হবে না।"" আমি ভাত ঝোল দিয়ে মাখতে মাখতে বললাম, ""তারপর কী হলো?"" চৌধুরী খাবার ভালোমতো চিবিয়ে গিলে বললেন, ""সেই ডাক্তারকে খবর দিলাম। সে-ও তো আমার কথা শুনে আরেকটু হলেই হার্টফেল করেছিলো আর কি। তারপর ফুলির ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিয়ে ঘামতে ঘামতে বিদায় হলো। বেচারা। ফুলির সাথে তার বড় ভাব ছিলো।"" দুলাল বলে, ""য়্যাঁ?"" চৌধুরী বললেন, ""হ্যাঁ। অবশ্য ফুলি ওভাবে মারা যাওয়ায় আমাকে দেখাশোনা করার লোকের দস্তুরমতো অভাব পড়ে। কিন্তু আমি দেখলাম নিজেকে দেখেশুনে রাখার কাজটা খুব একটা কঠিন কিছু না, বিশেষ করে বীমার টাকাটা হাতে এসে যাবার পর।"" ""কোন বীমার টাকা?"" জানতে চাই আমি। ""ঐ যে, জীবন বীমা? আমার আর ফুলির যৌথ বীমা। একজন মারা গেলে আরেকজন পাওয়ার কথা ছিলো টাকাটা।"" ""বলেন কী?"" দুলাল হাঁ হয়ে যায়। ""হুমম। প্রথমে কেবল একপেশেই ছিলো বীমাটা। পরে ভেবে দেখেছিলাম, ফুলির হাতের রান্না ভালো হলেও নিরাপদ নয়। ভাবলাম, ওর কিছু হলে আমার তো যাওয়ার একটা জায়গা থাকতে হবে। সেটা যদি শেষমেশ রান্নাঘর হয় তো খরচাপাতির একটা ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়। তাই আরো কিছু টাকা যোগ করে বীমায় একটু রদবদল করে নিয়েছিলাম।"" আমি আর দুলাল, একজন আরেকজনের দিকে তাকাই শুকনো মুখে। চৌধুরী শুধু বিষণ্নমুখে বলেন, ""আহ, কাবুল! মুরগির মাংস সে বড় ভালোবাসতো। আমি আজও ভেবে পাই না, কেন সে ওরকম কাঁচা বয়সে হার্ট অ্যাটাক করে মরলো ...।""",False mk,"জাতীয় ঐক্য কতদূর দেশে জঙ্গি তত্পরতা নতুন না হলেও গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ হামলার পর থেকে জঙ্গিবাদের বিপদ সম্পর্কে আমরা সবাই যেন বেশি সচেতন হয়ে উঠেছি। জঙ্গিরা যখন একজন মানুষ হত্যা করে নিরাপদে সটকে পড়ছিল তখন আমরা অনেকেই একে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা হিসেবে দেখেছি এবং মনে করেছি এ ধরনের হত্যাকাণ্ড নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে গুলশান এবং শোলাকিয়ার ঘটনার পর আমাদের সবার কানেই পানি ঢুকেছে। জঙ্গিরা যে কতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং তারা যে যেকোনো মাত্রার নিষ্ঠুর সহিংসতা চালাতে সক্ষম সেটা বুঝতে পেরে আমরা সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছি। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বানও এখন বেশ জোরেশোরেই চারদিক থেকে উঠছে। রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিবৃন্দ সবাই এখন ঐক্যের কথা বলছেন।জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের কথা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে। আমার সাম্প্রতিক দু-একটি লেখায় রাজনৈতিক ঐক্য প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছি যে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় কোনো ধরনের ঐক্য সম্ভব নয়। বিএনপির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন না করলে আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে ঐক্য করবে না। কারণ আওয়ামী লীগ মনে করে দেশে জঙ্গিবাদ উত্থানের পেছনে বিএনপির বড় ভূমিকা রয়েছে। বিএনপির আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদেই দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের এই অভিযোগ বা ধারণা ভুল প্রমাণ করার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ বিএনপির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। বরং বিএনপি নেতারা একদিকে জঙ্গিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন, অন্য দিকে জঙ্গিবাদ উত্থানের জন্য সরকারকেই দায়ী করছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, দেশে গণতন্ত্র না থাকা এবং মানুষের কথা বলার অধিকার না থাকায় জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে।জঙ্গিবাদ নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণেই শুধু আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ঐক্য হবে না, তা নয়। এই দুই দলের মধ্যে আরো অনেক প্রশ্নেই রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব রয়েছে, যেগুলো দূর না করে ঐক্য গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। এই দূরত্ব দূর করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে কখনোই কোনো উদ্যোগ বা আগ্রহ দেখা যায় না। আমার এই মতের সঙ্গে বিএনপি সমর্থক কেউ একমত হবেন না। তারা বলবেন, বিএনপিকে দূরে ঠেলার দায় সরকার তথা আওয়ামী লীগেরই। বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার না দিয়ে, বিএনপিকে বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করে সরকারই দেশে অনাস্থার পরিবেশ তৈরি করেছে। সেজন্য আস্থার পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সেটা না করে সরকার দেশে যাই ঘটুক না কেন তার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে বিএনপিকে হেনস্থা করার কৌশল নিয়ে চলছে।সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির যে অভিযোগ তার সবটুকু হয়তো অমূলক নয়। তবে সরকার যে বিএনপির প্রতি কিছুটা মারমুখী নীতি নিয়েছে সেটার জন্য বিএনপিই মূলত দায়ী। অবশ্য এটা লম্বা বিতর্কের বিষয়। আজ সেদিকে না গিয়ে আমরা বরং দেখার চেষ্টা করি, বর্তমান পর্যায়ে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে কীভাবে আস্থা-বিশ্বাসের সম্পর্ক স্থাপন করা যেতে পারে। এটা স্বীকার করতেই হবে যে, আমাদের দেশের মানুষ মোটা দাগে দুই রাজনৈতিক শিবিরে বিভক্ত। এক শিবিরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, আরেকটার বিএনপি। অন্য মতের মানুষ অবশ্যই আছেন। কিন্তু তারা এই দুই দলের চাপের মধ্যে নিজেদের অবস্থান সব সময় আলাদাভাবে দৃশ্যমান করে তুলতে পারে না। ফলে আমাদের দেশে রাজনীতি আবর্তিত হয় মূলত এই দুই দলকে কেন্দ্র করেই। দুই দল দুই বিপরীত অবস্থানে থাকে বলেই আমাদের রাজনীতিতে সুস্থতা কম। দুই দল কেন নিজেদের মধ্যেকার বিদ্যমান বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগী হয় না সেটা অনেকের কাছেই রহস্যজনক বলে মনে হয়। কি করলে দুই দল কাছাকাছি আসতে পারে সে বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরামর্শ কেউ কেউ দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু যে হয়নি সেটা অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়।আমার কাছে দু-একজন জানতে চেয়েছেন, বিএনপি কি করলে আওয়ামী লীগের বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে বলে আমি মনে করি। আমি তাদের যে উত্তর দিয়েছি সেটাই এখানে পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরছি। আমি মনে করি, বিএনপিকে অবিশ্বাস করার অনেক কারণ আওয়ামী লীগের আছে। সবচেয়ে বড় কারণ জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে রাষ্ট্র ক্ষমতার যে পরিবর্তন ঘটে তার প্রধান বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের কোনো না কোনোভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি আওয়ামী লীগ ভুলতে পারে না। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সময় জিয়াউর রহমানের নাম নানাভাবেই এসেছে। তাছাড়া বিএনপি যেভাবে জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর সমান্তরালে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে এবং করছে সেটাও কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান অস্বীকার করার যে মূঢ়তা বিএনপি দেখিয়ে আসছে তা আওয়ামী লীগকে সারাক্ষণই পীড়িত করে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে কিংবা ক্ষমতার বাইরে থেকেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সৌহার্দ্য ও সমঝোতা তৈরি হওয়ার মতো কোনো কিছুই করেনি। এখন বিএনপির সামনে সুযোগ এসেছে পুরনো বিবাদ মিটিয়ে ফেলে নতুনভাবে সামনে অগ্রসর হওয়ার। বিএনপি যদি আন্তরিকভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধ মীমাংসা করতে চায় তাহলে এই আগস্ট মাসেই তারা তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারে।১৫ আগস্ট বাঙালির শোকের দিন। বেদনার দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একদল কুলাঙ্গার নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিএনপি নিজেদের গণতান্ত্রিক দল হিসেবে দাবি করলেও কখনো বঙ্গবন্ধু হত্যার নিন্দা করেছে বলে শোনা যায়নি। উল্টো খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকের দিনটিতে ঘটা করে জন্মদিন পালন করা শুরু করেন। অথচ এটা সবারই জানা যে, ১৫ আগস্ট তার প্রকৃত জন্মদিন নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার দিনটিকে নিজের জন্মদিন হিসেবে পালন করতে শুরু করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অত্যন্ত নিচু রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় দিয়েছেন। তার এই হঠাত্ জন্মদিন আবিষ্কারের বিষয়টি আমাদের দেশের রাজনীতিতে একটি স্থায়ী ক্ষত তৈরিতে বড় ভূমিকা পালন করেছে। এবার কি খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট কেক কেটে জন্মদিন পালন থেকে বিরত থাকবেন? যদি তিনি সেটা করেন এবং ১৫ আগস্ট তিনি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করতে যান তাহলে আওয়ামী লীগকে তিনি কিছুটা চাপের মধ্যে ফেলতে পারবেন। কিন্তু এমন ঔদার্য দেখানোর মতো মানসিকতা বেগম জিয়ার আছে কি ? বিএনপি যদি ১৫ আগস্ট অন্তত একটি বিবৃতি দিয়েও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে হত্যার রাজনীতির বিরুদ্ধে দলের অবস্থানের কথা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে তাহলে বলা যাবে যে জাতীয় সংকটের সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তোলার সদিচ্ছা বিএনপির রয়েছে। বিএনপি কি সেটা করবে ?১৭ আগস্টও বিএনপির সামনে সুযোগ আসবে নিজেদের জঙ্গি বিরোধী অবস্থান পরিষ্কার করার। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা তাদের উপস্থিতি জানান দিয়েছিল। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে এতো বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটানো অসম্ভব ছিল বলে তখন নানা মহল থেকেই অভিযোগ করা হয়েছিল। বিএনপি নেতাদের কারো কারো সঙ্গে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার কথা গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি বিষয়টি খুব বেশি আমলে নিয়েছে বলে মনে হয়নি। এখন বিএনপি ক্ষমতার বাইরে আছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি মদদের অভিযোগ এখনো উঠছে। এবার ১৭ আগস্ট উপলক্ষে বিএনপি এমন কিছু করতে পারে যা থেকে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ মানুষের কাছেও ভিত্তিহীন বলে মনে হবে। বিএনপি বিবৃতি দিয়ে কিংবা সমাবেশে বক্তৃতা দিয়ে জঙ্গিবাদ নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে। এক্ষেত্রে বিএনপিকে বলতে হবে যে ক্ষমতায় থাকতে জঙ্গিদের ব্যাপারে তারা পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেনি। তাদের অমনোযোগ কিংবা শৈথিল্যের কারণেই সে সময়ে জঙ্গিরা দেশে তাদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এখন সব দোদুল্যমানতা পরিহার করে বিএনপি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবেই দাঁড়াতে চায়। দলটি কথায় এবং কাজে এমন কিছু করবে না যা থেকে কারো মনে এমন ধারণা তৈরি হতে পারে যে তারা আসলে জঙ্গিবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ২১ আগস্টও বিএনপি নিজেদের ভুল স্বীকার করে আওয়ামী লীগের বিশ্বাস অর্জনের দিকে পা ফেলতে পারে। খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়ই ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আইভি রহমানসহ কমপক্ষে ২২ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন শেখ হাসিনাসহ দলের শত শত নেতা-কর্মী। শেখ হাসিনাসহ শীর্ষনেতাদের হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করাই ছিল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল উদ্দেশ্য। এতো বড় একটি হামলার ঘটনার দায় তখন সরকারে থাকা বিএনপি কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। বিএনপি নেতাদের কারো কারো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য এর মধ্যেই জানা গেছে। হাওয়া ভবন এবং বিএনপির ‘ভবিষ্যত্ কান্ডারি’ বলে পরিচিত তারেক রহমানের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি বিএনপি স্বীকার না করলেও অন্যদের কাছে তা সত্য বলেই মনে হচ্ছে। বিএনপির আরেক নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে আছেন। ২১ আগস্টের ঘটনাটি আওয়ামী লীগের কাছে ১৫ আগস্টের মতোই অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এখন বিএনপি কি তাদের তখনকার ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করবে ? যদি বিএনপি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, অভিযুক্তদের দল থেকে বের করে দেয় এবং ঘটনাটি খুবই গর্হিত ও নিন্দনীয় ছিল সেটা প্রকাশ্যে স্বীকার করে তাহলেই কেবল আওয়ামী লীগের কাছাকাছি যাওয়ার পরিবেশ তৈরি হতে পারে। ঐক্যের পথের বাধা দূর হতে পারে। বিএনপি কি তেমন পরিবেশ তৈরি করতে চায় ? সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৪৯",False rg,"এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে আম্পায়ারদের কলংক!! আইসিসি'র নতুন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আইসিসির সকল নির্বাহী কর্তৃত্ব মূলত আইসিসি'র চেয়ারম্যানের হাতেই ন্যাস্ত। নতুন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আইসিসি'র প্রেসিডেন্ট পদটি একটি অলংকারিক পদ মাত্র। ক্ষমতার দিক দিয়ে বরং আইসিসি'র চিফ এক্সিকিউটিভ অনেক শক্তিশালী। কিভাবে? বাংলাদেশ বনাম ভারত কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের চল্লিশতম ওভারে রুবেল হোসেনের চতুর্থ বলে রোহিত শর্মা যখন ক্যাচ আউট হন, তখন পাকিস্তানের আম্পায়ার আলীম ধর এটাকে নো বল কল দেন। আর ইংল্যান্ডের আম্পায়ার ইয়ান গৌল্ড তা সমর্থন করেন। এটাকে আইসিসি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের আ.হ.ম. মোস্তফা কামাল কড়া সমালোচনা করে বলেন, মনে হয়েছে এই খেলাটির ফলাফল আগে থেকেই নির্ধারন করা ছিল। তার জবাবে আইসিসি'র চিফ এক্সিকিউটিভ দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক উইকেট রক্ষক ডেভিড রিচার্ডসন বলেছেন, আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তকে এভাবে সমালোচনা করার একতিয়ার আইসিসি'র প্রেসিডেন্টের নাই। ওনার বক্তব্যকে আমরা আইসিসির নোট হিসেবে নিলাম। আইসিসি'র অফিসিয়াল হয়ে আম্পায়ারদের এভাবে উনি সমালোচনা করতে পারেন না। নো বল বিষয়ে মাঠে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তটি ছিল ৫০:৫০!!! ডেভিড রিচার্ডসনের বস কে? অবশ্যই আইসিসি'র চেয়ারম্যান ভারতের নারায়নাস্বামী শ্রীনিবাসন। আইসিসি'র সকল কর্তৃত্ব এখন যার হাতে। বাংলাদেশ বনাম ভারত কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটির অন্তত প্রধান তিনটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সাবেক গ্রেট ক্রিকেটারগণ যারা মাঠে উপস্থিত ছিলেন, তারা কে কি বলেছেন, একটু শুনি। ১. ধারাভাষ্যে থাকা অস্ট্রেলিয়ান সাবেক লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন বলেছেন, 'আম্পায়ারদের কিছু বাজে সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ হেরেছে বটে, কিন্তু ভারত জেতেনি। এটা নো বল ছিল না। খুবই বাজে সিদ্ধান্ত। আম্পায়াররা অবশ্যই প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারতেন'। ২. অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্যাপ্টেন রিকি পন্টিং বলেছেন, 'আম্পায়ারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আজ বাংলাদেশকে হারতে হয়েছে। আমি মনে করি, এই ম্যাচ যদি আবার খেলানো হয় তাহলে বাংলাদেশই জিতবে'। ৩. ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক গ্রেট ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারা বলেছেন, 'ম্যাচটি পাতানোর গন্ধ পাচ্ছি। বাংলাদেশকে জোর করে হারানো হয়েছে। আমি সরাসরি বলব, ভারত তথা সারাবিশ্বকে ক্রিকেট খেলাটা কি তা বুঝিয়ে দিয়ে গেল বাংলাদেশ'। ৪. ভারতের প্রাক্তন কোচ জন রাইট বলেছেন, 'ভারত ক্রিকেটে কলংঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছে'। ৫. দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক শন পোলক বলেছেন, 'গোটা ম্যাচ জুড়েই আমি বিস্মিত ছিলাম, আমি ভারতের এই জয় মেনে নিতে পারছি না। সত্যি, বাংলাদেশ দারুন ক্রিকেট খেলেছে। আমার এই মূহর্তে মনে পড়ছে সেই ক্রিকেট পাগল জাতির কথা, তারা নিশ্চয় বড় কিছু আশা করেছিল আর এটাই স্বাভাবিক'। ৬. শ্রীলংকার সাবেক অধিনায়ক ও ওপেনার সনথ জয়সুরিয়া বলেছেন, 'পুরো ভারতীয় ক্রিকেট দলকে বাংলাদেশ নিজেদের ক্ষমতার জানান দিয়েছে'। ৭. ভারতের সাবেক ক্যাপ্টেন সৌরভ গাঙ্গুলী বলেছেন, 'রায়নার এলবিডাব্লিউটা যে ক্লোজ ছিল সন্দেহ নেই। রোহিত শর্মার ডেলিভারিটা আউট ছিল, এই নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই। ওই কোমর সমান নিচু ফুলটসে আম্পায়ার আলীম দার কেন নো বল ডাকলেন তিনিই ভালো জানেন। কষ্ট লাগছে, সব ফেয়ার থাকলে হয়তো ম্যাচের রেজাল্ট ভিন্ন কিছু হলেও হতে পারতো। এই ম্যাচটা বাংলাদেশকে নয়, ভারতকে আগামী ম্যাচে ভোগাবে। কারণ তারা ম্যাচটা আম্পায়ারের সাহায্যে জয় পেয়েছে। গুড লাক টাইগার্স'।৮. অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক বলেছেন, 'অপরাধী হয়ে লিখছি, চিরচেনা এমসিজিতে বাংলাদেশকে বিপদে রাখার সব আয়োজন সম্পূর্ণ ছিল'। ৯. সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষণ বলেছেন, 'আমি মনে করি, পৃথিবীর সবচেয়ে সহনীয় ক্যাপ্টেন হলেন মাশরাফি। সুরেশ রায়না আর রোহিত শর্মার ক্রিজে থাকার কোন অধিকার নাই'। ১০. সাবেক ভারতীয় স্পিন বোলার হরভজন সিং বলেছেন, 'রিভিউ চাওয়ার পরও আউট দেয়া হলো না কেন'???১১. সাবেক উইন্ডিজ পেসার মাইকেল হোল্ডিং বলেছেন, '৯০ রানে ব্যাটিং করা রোহিতকে আউট না দেওয়াটা ছিল আম্পায়ারের ভুল'। ১২. ওয়েস্ট ইন্ডিজের হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল বলেছেন, 'রোহিতের ৪৭ আর রায়নার ৫৫ ছিল আম্পায়ারের দান, এটা ভুলবো না। বাংলাদেশ ইজ রিয়েল টাইগার'। ১৩. দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রায়াম স্মিথ বলেছেন, 'এটা অস্বাভাবিক সিদ্বান্ত, যার কোন প্রয়োজন ছিল না'। ১৪. ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসির হুসেইন বলেছেন, 'ইয়ান গৌল্ড, আলিম দার, স্টিভ ডেভিস, গুড জব বয়েস!!! তোমরা শুধু একটি দলকে না, একটি জাতিকেও মেরে ফেলেছো'। ১৫. ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যান, সাকিবের কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গী মনোজ তিউয়ারি বলেছেন, 'আমি বুঝলাম না শাকিব মাঠে কেন চুপ করে থাকলো? সে বড় মাপের একজন খেলোয়ার, তারপরেও আবার সে বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক। সে অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে, তার অভিজ্ঞতা বেশি। সে কেন চুপ করে থাকল?'১৬. ভারতের ৮৩ এর বিশ্বকাপ জয়ী ক্যাপ্টেন কপিল দেব বলেছেন, 'ক্রিকেট হেরেছে, কিন্তু ইন্ডিয়া জিতেছে'। ১৭. সাবেক নিউজিল্যান্ড ক্যাপ্টেন স্টিফেন ফ্লেমিং বলেছেন, 'নিশ্চয় বাংলাদেশ সেমি-ফাইনালিস্ট। তবে বাংলাদেশের বদলে ভারতকে দেখতে হবে এখন সিডনিতে। আইসিসি কি গোটা বিশ্বের এই কয়জন গ্রেট ক্রিকেটারদের মন্তব্যকে পাত্তাই দেবে না? কারণ, আইসিসি'র চেয়ারম্যান মিস্টার নারায়ানাস্বামী শ্রীনিবাসন হলেন, ইয়ান গৌল্ড, আলিম দার, স্টিভ ডেভিসদের বস। সেই সঙ্গে নতুন যোগ দিয়েছেন আইসিসির চিফ এক্সিকিউটিভ ডেভিড রিচার্ডসন। সেই সুযোগে এখন আলিম ধর আর ইয়ান গৌল্ড আইসিসি প্রেসিডেন্টকে মানহানির মামলারও হুমকি দিচ্ছেন। সাধু সাধু। আইসিসির মোড়ল ভারত যদি এখন ছলচাতুরি করে বিশ্বকাপও জেতে, তাহলে গোটা বিশ্বের মানুষ যে কথাটি এখন থেকে বিশ্বাস করবে সেটি হল- মিস্টার শ্রীনিবাসন এই খেলাটিকে আর জেনটেলম্যান খেলা রাখেননি। এটাকে তিনি ম্যাচ ফিক্সিং, বেটিং আর অসৎ উদ্দেশ্যে একটি বাণিজ্যের খেলায় পরিনত করেছেন। এবারের বিশ্বকাপের চার সেমি-ফাইনালিস্ট অলরেডি ঠিক হয়ে গেছে। প্রথম সেমি-ফাইনালে আগামী ২৪ মার্চ মঙ্গলবার অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকার। আর দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ২৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে ভারতের। তবে এই সুযোগে আগাম একটি কথা বলে রাখি, যদি সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতকে আবার আম্পায়ারগণ বাংলাদেশের মত কিছু বাজে সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে অস্ট্রেলিয়া কিন্তু বসে থাকবে না। মিস্টার শ্রীনিবাসনের থলের বেড়াল তখন এক ঝটকায় সব বের হয়ে যাবে। কারণটা একটু বলি, অস্ট্রেলিয়ার এর আগে সেমি-ফাইনালে হারার কোনো রেকর্ড নেই, যা ভারতের আছে। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে শ্রীলংকার কাছে ১৯৯৬ সালে ভারত কি করেছিল, কিভাবে গ্যালারিতে আগুন ধরিয়েছিল, সেই কথা কিন্তু আমরা ভুলিনি। সো, সাধু সাবধান। ওস্তাদেরও ওস্তাদ আছে।তবে বাংলাদেশ এবারের বিশ্বকাপে মাথা উচু করে খেলেছে। গোটা বিশ্বের সকল গ্রেট ক্রিকেটারদের প্রশংসা পেয়েছে। মাশরাফি দলকে যোগ্যভাবেই নের্তৃত্ব দিয়েছেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে সুন্দর মুহূর্তগুলোর জন্ম দিয়েছে, সেই ফুলগুলো সারা জীবন আমরা মনে রাখব। আর ছোটখাটো যেসব ভুলগুলো ছিল, আগামীতে আমরা সেই ভুলগুলো সুধরে যেন নিজেদের আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে পারি, সেদিকেই এখন বেশি মনযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন মাশরাফি এবার দলে একটি মাত্র পছন্দ দিয়েছিলেন, আল আমিনকে যেন দলে নেওয়া হয়। আল আমিন শেষ পর্যন্দ দলের সঙ্গে থাকলে বাংলাদেশের পেসারদের শক্তি সম্পর্কে গোটা বিশ্ব আরো ভালো ধারণা পেত। সেজন্য আল আমিনের চেয়ে আমি বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজমেন্টকেই দায়ী করতে চাই। টিম ম্যানেজমেন্টে যারা দলের সঙ্গে গিয়েছিলেন, তারা নিশ্চয়ই কোনো পিকনিকে যান নাই। সেখানে তাদের কিছু দায় দায়িত্ব ছিল। ঝিনাইদহের এক গ্রাম থেকে উঠে আসা একটি ছেলে এই প্রথম অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মত দেশে গেছে। এত অল্প বয়সে তার অনেক কিছুই দেখার ইচ্ছে জাগবে, এটাই স্বাভাবিক। গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা ছেলে হিসেবে আমরা শুধু কত কিছু দেখার জন্য এখানে সেখানে এমনিতেই ঘুরে বেড়াই। সেখানে আল আমিনকে দোষ দেই কিভাবে? একটি দলে টিম ম্যানেজারের কাজ কি রাতের বেলায় ডলার হাতে নিয়ে ক্যাসিনোর জুয়ার আসরে ঘুরঘুর করা নাকি দলে থাকা এসব তরুণ খেলোয়ারদের সারাক্ষণ এটা ওটা বোঝানো? বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজার শুধু ক্যাসিনোতেই যায় নি, গোটা দেশ যখন ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলায় আম্পায়ারদের বাজে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফুঁসছে, তখন তিনি ভারতীয় মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ দলের দুর্নাম করেছেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজমেন্টকে তাদের দায়িত্ব অবহেলার জন্য কঠোর সাজার ব্যবস্থার কথাও এখন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে ভাবতে হবে। একটি দলের টিম বলতে শুধু মাঠের এগারোজন খেলোয়াড়ই নন, গোটা টিমের সঙ্গে কোচ, ফিজিও, ম্যানেজার, ম্যানেজমেন্টে যারা থাকেন, রাষ্ট্রের টাকায় যারা বাইরে গিয়ে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাদের সবাইকে নিয়েই টিম। গোটা বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন কি কি করেছেন, কাদের স্বার্থে করেছেন, কেন এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে না বা কেন তার জন্য কোনো সাজার ব্যবস্থা হবে না, তা এখন খতিয়ে দেখার সময়। নইলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় বড় অর্জনের পথে এসব টুকটাক বিষয়ই বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। জয়তু টিম টাইগার্স। জয়তু বাংলাদেশ ক্রিকেট। ..................................ঢাকা ২২ মার্চ ২০১৫",False fe,"অভিবাদন বাংলাদেশ ! অভিবাদন বাংলাদেশ! ফকির ইলিয়াস ------------------------------------------------------------- অভিবাদন বাংলাদেশ! স্যালুট বাঙালি জাতি। আবার তারা দেখিয়ে দিয়েছে, এই জাতির স্বপ্ন ফুরিয়ে যায়নি। আবার তারা প্রদর্শন করেছে সেই মনন, যা একাত্তরে মুষ্টিবদ্ধ হয়েছিল একটি পতাকার স্বপক্ষে। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। বিজয়ের মাসে, আরেকটি মহাবিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে এই প্রজন্ম। তারা রায় দিয়েছে দিন বদলের পক্ষে। এদেশের নারীসমাজ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, এই দেশ সর্বশ্রেণীর ধর্মপ্রাণ মানুষের। এই দেশ মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িকদের নয়। এদেশের মেহনতি জনতা জানিয়ে দিয়েছে, জঙ্গিবাদ এবং তার গডফাদার-গডমাদারদের স্খান নেই ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তেভেজা বাংলার মাটিতে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই মহাজোটের বিশাল বিজয় প্রত্যাশিত ছিল যদিও, তবুও চমকে গেছে বিশ্ববাসী। কারণ সত্তরের নির্বাচনের পর এই প্রথমবারের মতো সুদৃঢ় প্রজ্ঞা দেখিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, অনেকটা একাত্তরের মতোই। দেখেছি, ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে অনেক স্বল্প পরিচিত নতুন প্রার্থী জিতে এসেছেন বিপুল ভোটে ধরাশায়ী করেছেন প্রবীণ কোন রাজনীতিককে। এর কারণ কি? কারণটি হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ একটি ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে চেয়েছে। তারা চেয়েছে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব দেশ পরিচালনার ভার তুলে নিক। নতুন মেধাবীরা এগিয়ে আসুক। হয়েছেও তাই। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, তৌহিদ জং মুরাদ, এডভোকেট শামসুল আলম টুকুর মতো তেজী তরুণরা পাস করেছেন এই তরুণ ভোটারদের ভোটেই। প্রবীণরা পাশে থেকে জুগিয়েছেন প্রেরণা। প্রমাণিত হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের তরুণরা রাষ্ট্র পরিচালনার সঠিক গাইডেন্সই পাচ্ছে এবং পাবে। এবারের নির্বাচনে বিশাল জয় হয়েছে বাংলাদেশে অসম্প্রাদিয়ক চেতনার। আমরা দেখেছি ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই’­ এই দাবি নিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রজন্ম রাজপথে দাঁড়িয়েছে ব্যানার হাতে। তারা রুখে দিয়েছে কুখ্যাত আল বদর রাজাকারদের। জঙ্গিবাদী পাষণ্ডরা পরাজিত হয়েছে শোচনীয়ভাবে। চারদলীয় জোটের সাবেক মন্ত্রীদের প্রায় সবাই পরাজিত হয়েছেন। তারা তাদের ক্ষমতাসীন সময়ে কি করেছিলেন সে হিসাবটি মিলিয়ে দেখলে তারা নিজেদের পরাজয়ের অনেক উপাত্ত পাবেন। এদের অনেকের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াই উচিত ছিল না। তারপর লজ্জার মাথা খেয়ে তারা প্রার্থী হয়েছিলেন। বিশেষ করে বলা যেতে পারে সাইফুর রহমান, মওদুদ আহমদ, খোন্দকার দেলোয়ার প্রমুখের কথা। ব্যক্তিগত জীবনে আমি সিলেট সদরের বাসিন্দা আর মৌলভীবাজারের জামাই। তাই সাইফুর রহমানের দু’টি আসনের প্রতিই আমার চোখ ছিল জাগ্রত। অত্যন্ত আনন্দ ও সাহসের সঙ্গে দু’টি আসনেই সাধারণ মানুষ সাইফুর রহমানকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। হযরত শাহজালাল (র.) আর তার অন্যতম সঙ্গী হযরত শাহ মোস্তফার (র.) মাটি সিলেট ও মৌলভীবাজার জানিয়ে দিয়েছে সেখানে কোন জালেম নেতার ঠাঁই নেই। গণমানুষের এই শাণিত বিজয় আমাকে আশান্বিত করেছে ব্যাপকভাবে। গৌরবান্বিত হয়েছি এই অঞ্চলের মানুষের ঐক্যবদ্ধতায়, সব দানবীয়তার বিরুদ্ধে। সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে সব ক’টিই ছিনিয়ে নিয়েছে মহাজোট। ১৭টিতে আওয়ামী লীগ এবং দু’টিতে জিতেছে জাতীয় পার্টি। বাংলাদেশের মানুষের এই মহাবিজয়ের দিনে আজ কিছু শোকস্মৃতি স্মরণ করে মনটাকে লাঘব করতে চাই। এই সিলেটের মুজাররদে ইয়ামেনি হযরত শাহজালাল (র,)-এর মাজারের পুকুরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। এই পবিত্র মাজার-মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে গিয়ে বোমা হামলার শিকার হন, সিলেট বিভাগেরই কৃতী সন্তান তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী। এই সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জে নিজ এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে শাহাদাতবরণ করেন দেশের কৃতী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। আর তা সবই ঘটে খালেদা-নিজামীর চারদলীয় জোটের দু:শাসনের কালে। জঙ্গিতন্ত্রের একটি খোয়াড়ে পরিণত করা হয়েছিল দেশটিকে। কোন হীন কাজটি করেনি তারা? তারপরও তারা পবিত্র সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছে, দেশে কোন জঙ্গি নেই। এমন মিথ্যার বেসাতির মধ্য দিয়েই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া একে একে উসকে দিয়েছিলেন তার পালিত মন্ত্রীদের। শেখ হাসিনার জনসভায় বোমা হামলার সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সম্পৃক্ত থাকার ঘটনা প্রমাণ করে কত জঘন্য হীনম্মন্য হয়ে উঠেছিল চারদলীয় জোট সরকার। কতটা উগ্র ছিল তারা। দেশের মানুষ ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে সেসব দুর্বৃত্তপনার সমুচিত জবাব দিয়েছেন। শেষ মুহর্তে এসে পল্টনের জনসভায় নির্বাচনী কৌশলে ‘ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি’ কামনা করেছিলেন খালেদা জিয়া। মনে করেছিলেন, এতে বোধহয় শেষ রক্ষা হতে পারে! না­তাও হয়নি, দেশের মানুষ বুঝে নিয়েছে জঙ্গিতন্ত্রের চালাকি। আর তাই শক্ত হাতে দমন করতে উদ্যত হয়েছে সব অশুভ শক্তিকে। এবারের নির্বাচনে বেশ কিছু বামপন্থি প্রজ্ঞাবান নেতাও জিতেছেন। জাসদের হাসানুল হক ইনু, মঈনুদ্দিন খান বাদল, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, এলডিপির কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ জিতেছেন। একটি আলোকিত বাংলাদেশ গঠনে এসব নেতা তাদের ধ্যানী মনন কাজে লাগাবেন বলে আমার বিশ্বাস। মনে রাখতে হবে বিজয় অর্জনের চেয়ে তা ধরে রাখা এবং ওয়াদাপরণ করা কঠিন কাজ। দু:খের সঙ্গেই বলতে হচ্ছে, চিহ্নিত আলবদর নেতারা এবার গণভোটে হেরে গেলেও, চট্টগ্রামে রাজাকার মুওদুদীপন্থি জামায়াতের দু’জন এমপি পাস করেছে। পাস করেছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী সা. কা. চৌধুরীও। এসব দুষ্টচক্র সম্পর্কে জাতিকে সজাগ থাকতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে তাদের গতিবিধি। বিজয়ের পর সিলেট-১ আসনের বিজয়ী প্রার্থী আবুল মাল আবদুল মুহিত চ্যানেল আইকে একটি তাৎক্ষণিক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জাতির দেয়া আমানত রক্ষার্থে ব্যাপক কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়াই হবে মহাজোটের কাজ। আমি আবেগাপ্লুত হয়েছি, যখন দেখেছি সিলেট-২ আসনের বিজয়ী আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমান চৌধুরী মুহিতকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন। অগ্রজপ্রতিম শফিকুর রহমান চৌধুরী দীর্ঘদিন ব্রিটেন প্রবাসী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে হবেন লাখ লাখ প্রবাসী বাঙালির প্রতিনিধি। ব্রিটেনে এই শফিকুর রহমান চৌধুরীর অনেক ত্যাগ ও আদর্শগত সংগ্রামের প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমি। তিনি তার সেই শাণিত চেতনা নিয়েই গণমানুষের পক্ষে সংসদে দাঁড়াবেন সে প্রত্যাশা করছি। মহাজোটের বিজয়ী সব সাংসদকে আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন। জয় বাংলা । নিউইয়র্ক / ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ ========================================= দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ২ জানুয়ারি ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৮:২৩",False rg,"ভূমিকম্প সম্পর্কিত কিছু জরুরী জানার বিষয় !!! ভূমিকম্প কেন হয়? কেন বিশেষ কিছু স্থানে ভূমিকম্প বেশী হয়? আবার কিছু স্থানে মোটামোটি ভূমিকম্প হয় না বললেই চলে? এ প্রশ্নগুলো বহু শত বছর ধরে মানুষকে ভাবালেও এর উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত। ১৯১২ সনে জার্মান বিজ্ঞানী আলফ্রের্ড ওয়েগনার পৃথিবীর মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এক সময় পৃথিবীর মহাদেশগুলো একত্রে ছিল যা কালক্রমে ধীরেধীরে একে অপরের থেকে দূরে সরে গিয়েছে। ওয়েগনারের এই তত্ত্বকে বলা হয় কন্টিনেন্টাল ড্রিফ্ট। এ তত্ত্ব বলে পৃথিবীর উপরিতল কতগুলো অনমনীয় প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলোকে বলা হয় ট্যাকটোনিক প্লেট। একেকটি ট্যাকটোনিক প্লেট মূলতঃ পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গলিত পদার্থের বাহিরের আবরণ যা একটি পাথরের স্তর। ভূ-স্তরে যা কিছু রয়েছে তা এই প্লেটগুলোর উপরে অবস্থিত।ট্যাকটোনিক প্লেটগুলো একে অপরের সাথে পাশাপাশি লেগে রয়েছে। এগুলো প্রায়ই নিজেদের মাঝে ধাক্কায় জড়িয়ে পড়ে। কখনও মৃদু, কখনও সজোরে। যেহেতু প্লেটগুলো শিলা দ্বারা গঠিত, তাই ধাক্কার ফলে তাদের মাঝে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয়। এই ঘর্ষণের মাত্রা অধিক হলে এক ধরনের শক্তি নির্গত হয় যা ভূ-স্তরকে প্রকম্পিত করে। যদিও ভূমিকম্পের আরও কারণ রয়েছে (যেমন আগ্নেয়গিরি), তবে এই কারণটিই অধিকাংশ ভূমিকম্পের জন্যে দায়ী।ভূমিকম্প বলতে পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনকে বোঝায়। হঠাৎ বুঝতে পারলেন আপনার ঘরের কোনো জিনিস নড়ছে, দেয়ালের ঘড়ি, টাঙানো ছবিগুলো নড়ছে, আপনিও ঝাঁকুনি অনুভব করছেন, তখন বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে।গোলাকার এই পৃথিবী অনেকগুলো ব্লকে বিভক্ত। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত মূল যে চারটি স্তর আছে এর মধ্যে কেন্দ্র থেকে প্রথম স্তরটি ১২০০ কিমি., ২য় টি ২৩০০ কিমি., ৩য় টি ২৮০০ কিমি. এবং ত্বকের স্তরটি মাত্র ৮০ কিমি. পুরু। সর্বশেষ বা ত্বকের এই স্তরটি সমস্ত পৃথিবী জুড়ে একটি স্তর নয় বরং বিভিন্ন ব্লক বা প্লেটে বিভক্ত যা ট্যাকটোনিক প্লেট (tectonic plates) নামে পরিচিত।ট্যাকটোনিক প্লেট একটির সাথে অন্যটির ঘর্ষনের সৃষ্টি হয়, আঘাত করে এবং কখনো পিছলে পরার ঘটনা ঘটে। দুটি ট্যাকটোনিক প্লেটের সংযোগ স্থলকে বলা হয় প্লেট বাউন্ডারি। একটি প্লেট যখন হঠাৎ করে অন্যটি থেকে স্লিপ করে তখন প্লেট বাউন্ডারি এলাকায় ভূমিকম্পের (earthquake) সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায় বড় ভূমিকম্পের আগে বার বার মৃদু আকারে ভূমিকম্প দেখা দেয়। এবং বড় ভূমিকম্পের পর সপ্তাহ, মাস এমনকি বছরান্তে মৃদু ভূমিকম্প ঘটতে দেখা যায়।ভূমিকম্প বা ভূকম্পন: ভূ মানে পৃথিবী আর কম্পন হলো কাঁপা; সোজাভাবে ভূমিকম্প হলো পৃথিবীর কেঁপে ওঠা। তার মানে পৃথিবী যখন কাঁপে তখন আমরা তাকে ভূমিকম্প বলি। পৃথিবীতে বছরে গড়ে কত ভূমিকম্প হয়, শুনলে কপালে উঠতে পারে চোখ। বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। তবে এগুলোর অধিকাংশই মৃদু যেগুলো আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে- প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু।আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ভূপৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সেটি অগভীর ভূমিকম্প, ভূমিকম্পের কেন্দ্র ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সেটি মধ্যবর্তী ভূমিকম্প এবং ভূমিকম্পের কেন্দ্র ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে সেটিকে গভীর ভূমিকম্প বলে।উপরের আলোচনা থেকে অনেকেই হয়তো ধারণা করে নিয়েছেন ভূমিকম্প বেশী হবার সম্ভাবনা থাকবে প্লেট বর্ডারে। হ্যা, আসলেই তাই। যেখানেই দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে সেখানেই ঘর্ষণ সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা থাকবে এবং এর ফল স্বরূপ হবে ভূমিকম্প। নিচের ছবিটি দেখুন। এই ছবিতে টেকটনিক প্লেটগুলো এবং সেগুলোর নাড়াচাড়ার গতি পথ দেখানো হয়েছে। জাপান, চিলি, হেইতি বা ইন্দোনেশিয়ার দিকে যদি তাকান তাহলে পরিষ্কার বুঝতে পারবেন কেন ঐ স্থানগুলোতে নিয়মিত বড় বড় ভূমিকম্প হয়ে থাকে। গোটা পৃথিবীতে মোট ১৩টি বড় টেকটনিক প্লেট এবং ছোট ছোট ৩০টি টেকটনিক প্লেট সমন্বয়ে গঠিত। ভূমিকম্পের কারণছোটবেলায় আমরা গল্প শুনতাম, পৃথিবীটা একটা বড় ষাঁড়ের শিংয়ের মাথায়। ষাঁড়টা যখন এক শিং থেকে অন্য শিংয়ে পৃথিবীটা নিয়ে যায় তখন সবকিছু কেঁপে ওঠে। আর ভাবতাম, এজন্যই ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের কারণ এটা নয় বটে, তবে পৃথিবীর গভীরে ঠিকই একটা পরিবর্তন হয়।সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে-১. ভূপৃষ্ঠজনিত২. আগ্নেয়গিরিজনিত৩. শিলাচ্যুতিজনিতভূমিকম্পের পরিমাপ:সিসমোগ্রাফ আবিষ্কারের আগে মানুষ শুধু বলতে পারত ভূমিকম্প হয়েছে। কিন্তু কোন মাত্রায় হলো, বলা সম্ভব ছিল না। আধুনিক সিসমোগ্রাফের বয়স প্রায় ১৫০ বছর। ভূমিকম্প মাপা হয় দুইভাবে- তীব্রতা এবং প্রচণ্ডতা বা ব্যাপকতা। ভূমিকম্পের মাত্রা মাপা হয় রিখটার স্কেলে। স্কেলে এককের সীমা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। রিখটার স্কেলে মাত্রা ৫-এর বেশি হওয়া মানে ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা।মনে রাখতে হবে, ভূমিকম্প এক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলেই এর মাত্রা ১০ থেকে ৩২ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে।রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা৫ - ৫.৯৯ মাঝারি৬ - ৬.৯৯ তীব্র৭ - ৭.৯৯ ভয়াবহ৮ - এর ওপর অত্যন্ত ভয়াবহবাংলাদেশের ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা সমূহ কী করে চিহ্নিত করা হলো?দুর্ভাগ্যবশতঃ আমাদের বাংলাদেশ ভারতীয়, ইউরেশিয় এবং মায়ানমার টেকটনিক প্লেটের মাঝে আবদ্ধ। ফলে এই প্লেটগুলোর নাড়াচাড়ার ফলে আমাদের দেশে মাঝেমাঝেই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তাছাড়া ভারতীয় এবং ইউরেশিয় প্লেট দুটো হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে রয়েছে এবং ১৯৩৪ সনের পর গত ২৫ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে নেপালে যে ভূমিকম্প হল এটাই প্লেটগুলোর সবচেয়ে বড় ধরনের নাড়াচাড়া। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই প্লেট দুটো হয়তো নিকট ভবিষ্যতে আরো নড়ে উঠবে যা বড় ধরনের ভূমিকম্পের কারণ হবে।টেকটনিক প্লেটের অবস্থান দেখলে বোঝা যায় যে, আমাদের উত্তর ও পূর্বে দুটো বর্ডার বা টেকনিকাল ভাষায় “ভূ-চ্যুতি” রয়েছে যা বাংলাদেশের ভূমিকম্পের কারণ। এজন্যে বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চল তথা সিলেট এবং ততসংলগ্ন এলাকা প্রবল ভূমিকম্প প্রবণ। এর পরের অংশগুলোও যেমন ঢাকা ও রাজশাহী শহরও ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। নিচের ছবিতে বাংলাদেশের মানচিত্রে লাল অংশ বেশী, হলুদ মাঝারি এবং সবুজ অংশ কম ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।১৮৯৭ সনের ১২ জুন ৮.৭ মাত্রার “দ্যা গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক” ভারতবর্ষকে আঘাত হানে যা আজও পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ভূমিকম্প হিসেবে পরিচিত। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভারতের শিলং শহর। তবে এর প্রভাব বর্তমান বাংলাদেশ সহ বহু দূর পর্যন্ত অনুভূতি হয়েছিল। সে সময়ের ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন মিশনারীদের বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়েছিল এই ভূমিকম্পের কারণে। এছাড়াও ঢাকায় ৪৫০ জনের মত নিহত হবার খবর পাওয়া গিয়েছিল, যা সেই সময়ের তুলনায় রীতিমত অনেক বড় সংখ্যা।এ ভূমিকম্পগুলোর একটা বৈশিষ্ট্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মোটামোটি প্রতি একশ বছর পরপর এই অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ১৯১৮ সন ছিল সর্বশেষ বড় ভূমিকম্পের বছর। এরপর প্রায় একশ বছর কেটে গিয়েছে কিন্তু আর কোন বড় ভূমিকম্প আঘাত করে নি বাংলাদেশকে, যা বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে। অনেক আবহাওয়াবিদ এটাও মনে করেন যে, ছোটছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের বার্তা বহন করে। সে হিসেবে বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প যে কোন সময় আঘাত হানতে পারে। আর যদি সেটা ঘটে, তাহলে সেটার ভয়াবহতা হবে মারাত্মক।ভূমিকম্পের সময় কী করা উচিত?বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাকিল আকতার বলেন, পরিকল্পিত নগরায়ন ছাড়া ভূমিকম্প সহনশীল নগর তৈরি করা সম্ভব না। তিনি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, এখানকার নগরায়ন যে দিকে হচ্ছে সেটা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাতেই হচ্ছে। ভূমিকম্প থেকে বাঁচার জন্য একটি শহরের প্রস্তুতির মধ্যে শহরের ভবনগুলো বিশেষ করে জরুরি সাহায্য যেমন হাসপাতাল, দমকলবাহিনীর ভবনগুলো ভূমিকম্প নিরোধক করতে হবে। শহরের মাঝে মাঝে খোলা মাঠ এবং খোলামেলা জায়গার খুব প্রয়োজন রয়েছে শুধুমাত্র ভূমিকম্পের সময় আশ্রয়স্থল নয় পরবর্তী আফটার শকের সময়গুলোতে সেখানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য কয়েকটি বাড়ি পরপর খোলা জায়গার বিকল্প নেই। ভূমিকম্পের সময় শক্তিশালী টেবিল বা এ ধনের আসবাবের নিচে আশ্রয় গ্রহণ করা উচিত। কোন অবস্থাতেই কাঁচের জানালার পাশে অথবা এমন দেয়াল যা পড়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে, তার পাশে অবস্থান নেয়া যাবে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি ভূমিকম্পের সময় আপনি বিছানায় থাকেন, তাহলে সেখানেই থাকুন এবং বালিশ দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখুন। তবে লক্ষ্য রাখবেন ঝাড়বাতি বা ফ্যান জাতীয় কিছু ঘরে থাকলে সেটা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন। আশেপাশে শক্ত পিলার থাকলে সেটার নিচে আশ্রয় নিন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে ভূমিকম্পের সময় অধিকাংশ মানুষ আহত অথবা নিহত হন ভূমিকম্প চলাকালিন অবস্থান পরিবর্তেনের সময়। তাই কোন অবস্থাতেই ভূমিকম্প হওয়ার সময় দৌড় দেয়া অথবা দ্রুত বিল্ডিং থেকে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। উঁচু দালানের টপ ফ্লোরে থাকলে ছাদে চলে যাওয়া নিরাপদ কিন্তু যদি দরজা বা রাস্তা পরিষ্কার জানা না থাকে তাহলে ঘরেই অবস্থান নেয়া উচিত। আপনি যদি বাহিরে থাকেন এবং ভূমিকম্প হয়, তাহলে বিল্ডিং থেকে দূরে থাকুন। ১৯৩৩ সনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের “লং বিচ আর্থকোয়েক”-এ অধিকাংশ মানুষ মারা গিয়েছিল যারা বিল্ডিং-এর বাহিরে ছিল। সে সময় বিভিন্ন স্থানে দেয়াল ধসে তাদের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া আপনি যদি ড্রাইভ করতে থাকেন এবং ভূমিকম্প অনুভব করেন, তাহলে গাছ, বিল্ডিং, বৈদুতিক খুঁটি ইত্যাদি থেকে দূরে নিরাপদ স্থানে গাড়ি পার্ক করে থেমে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।ভূমিকম্পের সময় কী করা উচিত--১. বাড়ির ভেতরে থাকলে টেবিল বা খাটের তলায় আশ্রয় নিন২. কোনও মজবুত আসবাব থাকলে শক্ত করে ধরে থাকুন৩. বাড়ির কোনও কোণে আশ্রয় নিন৪. হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকুন৫. ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়লে চোখ-মুখ ঢেকে রাখুন৬. ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়লে মুখে আওয়াজ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করুন ভূমিকম্পের সময় কী করা উচিত নয়--১. বাড়ির বাইরে থাকলে গাছ বা কোনও বহুতলের নীচে দাঁড়াবেন না২. বেশি নড়াচড়া করবেন না৩. কোনও দেওয়ালের কাছে দাঁড়াবেন না৪. গাড়িতে থাকলে ব্রিজে উঠবেন নাপ্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা মানুষের নেই। কিন্তু মানুষ সতর্ক হতে পারে। গত ২৫ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে নেপালে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে আট হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কুঁড়ি হাজারেরও বেশি মানুষ। তখন ভারত ও বাংলাদেশেও সেই ভূমিকম্পের তীব্র কম্পন টের পাওয়া গেছে। আজ ১২ মে ২০১৫ তারিখে আবার এভারেস্ট ও কাঠমান্ডুর মাঝখানে ৭.৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এরপর আফটার শক যে ভূমিকম্প হয়েছে তার মাত্রা ৬.৩। তবে আজকের ভূমিকম্পে নেপালে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তেমন বেশি নয়। আজও বাংলাদেশে এই ভূমিকম্প টের পাোয়া গেছে কিন্তু এটা ২৫ এপ্রিলের চেয়ে কম তীব্রতর ছিল।তথ্যসূত্র: বিভিন্ন পত্রিকা, ব্লগ, টেলিভিশনের নিউজ এবং বই। সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:৫৫",False